প্রথমেই আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। দ্বিতীয় যে কাজটা করতে চাই, তা হল- পরিচয় করিয়ে দিতে চাই আমার সহ-লেখক, প্রিয় বন্ধু ও সহ-শিক্ষকের সঙ্গে। কেইন আর আমি একসঙ্গে কাজ করছি প্রায় ৪০ বছর ধরে ঐ যে কেইন শার্প, ঐখানে। (হাততালি) তো, অনেক মানুষের মধ্যেই অবশ্যই আমি এবং বেশিরভাগ মানুষ, যাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি তাদের সবার মধ্যেই একধরণের সম্মিলিত অসন্তুষ্টি আছে। যেভাবে আমাদের চারপাশের জিনিসপত্রগুলো কাজ করছে, তা নিয়ে। যেভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে, তা নিয়ে। আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষকেরা যেন তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে ফেল করছে। আমাদের ডাক্তাররা ভালোমতো জানে না যে, আমরা কে। আমাদের জন্য তাদের খুব বেশি সময়ও নেই। আমরা অবশ্যই ব্যাঙ্কারদের উপর আস্থা রাখতে পারি না, আমরা অবশ্যই ব্রোকাদেরকেও বিশ্বাস করতে পারি না। তারা গোটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটারই বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল। আর এমনকি যখন আমরা নিজেদের কাজগুলোও করি, প্রায়ই, আমরা নিজেদেরকে আবিস্কার করি এমন একটা অবস্থানে, কোনটা আমরা মনে করি যে সঠিক জিনিস আর কোনটা প্রত্যাশিত, আকাংক্ষিত বা লাভজনক তো, যেদিকেই তাকাই না কেন, সবজায়গাতেই, আমরা দুশ্চিন্তা করি যে, যেসব মানুষদের উপরে আমাদের নির্ভর করতে হয়, তারা সত্যিকার অর্থে আমাদের স্বার্থগুলোর কথায় মন দেয় না। বা যদি মন দেয়ও, তাহলে আমরা ভয় পাই যে, আমাদের স্বার্থগুলো ভালোভাবে সংরক্ষণের লক্ষ্যে কী করা দরকার, তা নির্ণয়ের জন্য আমাদের সম্পর্কে তাদের যেটুকু জানা দরকার, সেটা তারা জানে না। তারা আমাদের বোঝে না। আমাদেরকে জানা বোঝার মতো সময়ও তাদের নেই। দুই ধরণের সাড়া আমরা প্রদান করে থাকি এই ধরণের সাধারণ অসন্তুষ্টিগুলো মোকাবিলার ক্ষেত্রে যদি জিনিসপত্র সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে প্রথম সাড়া হলো: চলো, আরও নিয়ম বানাই। চলো, প্রণয়ন করি একগুচ্ছ বিস্তারিত আইনি ক্রিয়াবিধি যেন নিশ্চিত করা যায় যে, মানুষ সঠিক কাজটাই করবে। শিক্ষকদের স্ক্রিপ্ট দেওয়া হোক ক্লাসরুমে অনুসরণ করার মতো যেন যদি তারা নাও জানে যে, তারা আসলে কী করছে, আর আমাদের বাচ্চাদের কল্যান সম্পর্কে তারা যদি পরোয়া নাও করে, তাহলেও যতক্ষণ তারা এই স্ক্রিপ্ট অনুসরণ করবে, ততক্ষণ আমাদের বাচ্চারা শিক্ষিত হতে থাকবে। বিচারকদের দেওয়া হোক কিছু বাধ্যতামূলক শাস্তির তালিকা বিভিন্ন অপরাধীদের উপর প্রয়োগ করবার জন্য যেন আপনাকে ভরসা করতে না হয় যে, বিচারক কিভাবে তার বিচারিক প্রক্রিয়া প্রয়োগ করছে। বিচারকদের যা করতে হবে, তা হলো শুধু তালিকায় দেখতে হবে যে, কোন ধরণের অপরাধের জন্য কোন ধরণের শাস্তি প্রযোজ্য হয়। নির্ধারণ করে দেওয়া হোক ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো সুদ হিসেবে বা ফিস হিসেবে কত অর্থ আদায় করতে পারবে বানাও আরও বেশি বেশি নিয়ম নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য আনকেয়ারিং একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যেগুলোর সাথে আমাদের লেনদেন করতে হয় অথবা -- অথবা হয়তো আর -- নিয়মগুলোর পাশাপাশি, দেখা যাক আমরা কিছু বুদ্ধিপূর্ণ সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত করতে পারি কি না। যেন যাদের সঙ্গে আমাদের লেনদেন করতে হয়, সেই মানুষগুলো যদি আমাদের স্বার্থগুলোর দিকে মন না-ও দেয় তাহলেও আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণটাই যেন তাদের নিজেদেরই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এই ম্যাজিক সুযোগ-সুবিধা ব্যবস্থার ফলে মানুষ সঠিক কাজটা করবে। এমনকি সেটা বিশুদ্ধ স্বার্থপরতার জায়গা থেকে হলেও। তো, আমরা শিক্ষকদের বোনাস প্রদান করি, যদি বড় পরীক্ষাগুলোতে তাদের শিক্ষার্থী বাচ্চাদের পাশের হার বেশি হয়। এভাবেই সাধারণত আমরা স্কুল ব্যবস্থার উৎকর্ষতা বিচার করি। নিয়ম আর সুযোগসুবিধা -- “লাঠি” আর “মূলা” আমরা একগুচ্ছ নিয়মনীতি পাস করেছি ফিন্যান্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রিগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৈতিক পতন মোকাবিলা করার জন্য আমরা পাস করেছি ডোড-ফ্রাঙ্ক আইন, আমরা গঠন করেছি নতুন কনস্যুমার ফিন্যান্সিয়াল প্রোটেকশন এজেন্সি। আপাতত এটুকুই জানা গেছে পেছন দরজা দিয়ে। এলিজাবেথ ওয়ারেনের মাধ্যমে হয়তো এই নিয়মগুলো সত্যি সত্যিই উন্নয়ন ঘটাবে ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানিগুলোর আচার আচরণের । আমরা দেখব, ভবিষ্যতে। এর সাথে, আমরা চেষ্টা করছি কিছু সুযোগসুবিধার বন্দোবস্ত করার পথ খুঁজে বের করার ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির লোকজনদের জন্যও যেন তারা আরও বেশি আগ্রহী হয় দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এমনকি তাদের নিজেদের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও, শুধুই স্বল্পমেয়াদী মুনাফার কথা না ভেবে তো, যদি আমরা সঠিক সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে তারা সঠিক কাজটা করবে — আর যেমনটা আমি বলেছিলাম – স্বার্থপরভাবে, আর যদি আমরা যথাযথ নিয়ম-কানুনের বন্দোবস্ত করতে পারি তাহলে তারা আমাদের একেবারে হাত পা বেঁধে ফেলে দেবে না। আর কেইন [শার্প] ও আমি নিশ্চিতভাবেই জানি যে, আপনাকে ব্যাংকারদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে হবে। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পতনগুলো থেকে যদি আমাদের কোন শিক্ষা নেওয়ার থাকে, তাহলে এটাই হলো সেই শিক্ষা। কিন্তু, আমরা যা বিশ্বাস করি, আর যা আমরা এই বইয়ে দাবি করেছি, তা হলো, এরকম কোন নিয়মকানুন নেই, কোনই ব্যাপার না যে, সেটা কত বিস্তারিত কোনই ব্যাপার না যে, সেটা কত সুনির্দিষ্ট। সেগুলো কতখানি যত্ন নিয়ে দেখভাল করা হচ্ছে বা প্রযুক্ত হচ্ছে। এরকম কোন নিয়মকানুন নেই যেটা আমাদেরকে এনে দেবে আমাদের যা চাই। কেন? কারণ ব্যাঙ্কাররা খুবই বুদ্ধিমান মানুষ। আর জলের মতো, তারা ফাটল খুঁজে বের করবে যে কোন নিয়মকানুনেই আপনি একধরণের একটা নিয়মগুচ্ছ বানালেন, নিশ্চিত করার জন্য যে, যেসব সুনির্দিষ্ট কারণে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটা “প্রায় ধ্বংস” হয়ে গিয়েছিল, তেমনটা যেন আর না হয়। কিন্তু এটা চিন্তা করা খুবই বোকামি হবে যে, অর্থনৈতিক পতনের এই উৎস বন্ধ করে দিয়েছেন মানে আপনি সম্ভাব্য সবধরণের অর্থনৈতিক পতনের উৎস বন্ধ করে দিয়েছেন। কাজেই, এটা শুধু একটা অপেক্ষার প্রশ্ন যে, পরের অর্থনৈতিক পতনটা কখন হবে। আর তারপর আমরা আশ্চর্যান্বিত হব যে, আমরা এত বোকা হয়ে কিভাবে থেকেছি যে, এটার বিরুদ্ধে আমরা নিজেদেরকে সুরক্ষা করিনি। খুব মরীয়াভাবে আমাদের যা দরকার, ভালো নিয়মকানুন ও যৌক্তিক, বুদ্ধিপূর্ণ সুযোগসুবিধার বাইরে, বা পাশাপাশি, তা হলো সদ্গুণ আমাদের দরকার চরিত্র। আমাদের এমন মানুষ দরকার যারা সঠিক জিনিসটা করতে চায়। আর সুনির্দিষ্টভাবে, যে সদ্গুণটা আমাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দরকার, যেটাকে অ্যারিস্টোটল বলতেন, “প্রায়োগিক প্রজ্ঞা”। প্রায়োগিক প্রজ্ঞা হলো নৈতিক ইচ্ছা সঠিক জিনিসটা করার আর নৈতিক দক্ষতা কোনটা সঠিক জিনিস তা খুঁজে বের করার। অ্যারিস্টোটল খুবই আগ্রহবোধ করতেন তার চারপাশে কাজ করা কারিগররা কিভাবে কাজ করে, সেটা দেখতে। আর তিনি খুবই মুগ্ধ হতেন এটা দেখে যে, কিভাবে তারা একেকটা অভিনব সমাধান তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ভাবন করছে অভিনব সমস্যাগুলোর জন্য। যে ধরণের সমস্যার মুখে তারা আগে কখনও পড়েনি। একটা উদাহরণ হলো, তিনি স্টোনম্যাসনদের কাজ করা দেখছিলেন। আইল অব লেসবস এ আর একসময় তাদেরকে নির্ণয় করতে হবে গোলাকার কলামের মাপ। আপনি একটু চিন্তা করে দেখেন, একটা রুলার ব্যবহার করে গোলাকার কলামের মাপ নির্নয় করা কিন্তু সত্যিই কঠিন। তো, তারা কী করল? তারা এই সমস্যাটার একটা চমৎকার সমাধান উদ্ভাবন করল। তারা এমন একটা রুলার বানাল, যেটাকে বাঁকানো যায়। যেগুলোকে আমরা আজকের দিনে ট্যাপ মেজার বলে ডাকি। নমনীয় রুলার একটা রুলার, যেটাকে বাঁকানো যায়। আর অ্যারিস্টোটল বলেছিলেন, “হাহ! তারা এটা প্রশংসা করেছে যে, কখনও কখনও গোলাকার কলাম ডিজাইনের জন্য, আপনাকে রুলারটা বাঁকাতেও হবে।” আর অ্যারিস্টোটল প্রায়ই বলতেন, অন্যান্য মানুষের সঙ্গে আলাপ করার সময় যে, আমাদের নিয়মকানুনগুলোকে বাঁকানোর দরকার। অন্য মানুষের সঙ্গে কাজ করার সময়, প্রয়োজন হয়, এমন এক ধরণের নমনীয়তা যা কোন নিয়মগুচ্ছ দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। প্রাজ্ঞ ব্যক্তিরা জানেন যে, কখন আর কিভাবে নিয়মকানুনগুলোকে বাঁকাতে হবে। প্রাজ্ঞ ব্যক্তিরা জানেন যে, কিভাবে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ভাবন করতে হবে। যেভাবে আমার সহলেখক কেন আর আমি এটাকে বর্ণনা করেছি, তারা অনেকটা জ্যাজ মিউজিসিয়ানদের মতো। নিয়মকানুনগুলো হলো পেজ-এ নোটের মতো। আর সেটা আপনাকে শুরুটা করিয়ে দেয়। কিন্তু তারপর আপনাকেই পেজের ঐ নেটগুলোকে ঘিরে সঙ্গীত রচনা করতে হবে। সেই নির্দিষ্ট মুহূর্তের সঠিক সমন্বয়তার বিচার করে আর নির্দিষ্ট কিছু সহযোগী বাদক নিয়ে। তো, অ্যারিস্টোটলের জন্য, ব্যাপারটা এরকম ছিল যে, যেকোন ধরণের রুল-বাঁকানো, রুলের ভিন্নতা খুঁজে বের করা ও সেটা প্রয়োগের ক্ষমতা আমরা এই দক্ষ কারিগরদের মধ্যে দেখতে পাই, ঠিক তেমনটাই থাকতে হবে, যদি আপনি হতে চান একজন দক্ষ নৈতিক কারিগর। আর অন্য মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে, প্রায় সবসময়ই, এক ধরণের নমনীয়তাই আপনার প্রয়োজন। একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি জানেন, কখন নিয়মগুলো বাঁকাতে হবে। একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি জানেন কখন তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ভাবন করতে হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি এই বাঁকানো বা নতুন প্রয়োগগুলো করবেন, সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য। যদি আপনি একজন নিয়মকানুন বাঁকাতে ও উদ্ভাবনে সক্ষম ব্যক্তি হন, আর সেটা যদি আপনি করেন বেশিরভাগই নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য, তাহলে আপনি যা করছেন তা হলো, অন্যান্য মানুষের উপর নির্মম নিয়ন্ত্রণ। কাজেই, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনি এই প্রাজ্ঞতাপূর্ণ চর্চাটা করবেন অন্য মানুষদের কল্যানের স্বার্থে। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। কাজেই, সঠিক জিনিসটা করার ইচ্ছাটার মতোই গুরুত্বপূর্ণ হলো, নৈতিক দক্ষতা। উদ্ভাবনের ক্ষেত্র ও ভিন্নতা খুঁজে বের করার দুটো একসাথে মিলিয়েই গড়ে ওঠে প্রায়োগিক প্রজ্ঞা। যেটাকে অ্যারিস্টোটল ভেবেছিলেন একটা প্রধান সদ্গুন। এবার আমি আপনাদের একটা উদাহরণ দেব যে, কিভাবে এই প্রাজ্ঞতাপূর্ণ চর্চাটা বাস্তবে কাজ করে। এটা মাইকেলের মামলার ঘটনাটা নিয়ে। মাইকেল একটা যুবক ছেলে। সামান্য বেতনের একটা চাকরি করে। তাই দিয়ে বউ-বাচ্চার দেখভাল করে। তার বাচ্চাটা প্যারোচিয়াল স্কুলে যেত। এরপর সে তার চাকরিটা হারায়। সে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কিভাবে তার সংসারের ভরনপোষণ করবে তা ভেবে এক রাতে, সে কিছু বেশিই মদ্যপান করে। আর একটা ট্যাক্সিচালককে ছিনতাই করে। হাতিয়ে নেয় ৫০ ডলার। সে এই ছিনতাইটা করেছিল বন্দুক ধরে। সেটা ছিল একটা খেলনা বন্দুক। মাইকেল ধরা পড়ে। অভিযুক্ত হয়। এ ধরণের অপরাধের সাজা পেনসিলভানিয়ার শাস্তিপ্রদান নীতিমালা অনুযায়ী কমপক্ষে হওয়া উচিৎ। দুই বছর- ২৪ মাস এক্ষেত্রে জজ, জজ লুইস ফোরের ভেবেছিলেন, এটার কোন মানেই হয় না। লোকটা এ ধরণের অপরাধ আগে কখনও করে নি। সে একজন দায়িত্বপূর্ণ স্বামী ও বাবা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। মরীয়া কিছু পরিস্থিতির মুখে পড়েই সে এমনটা করেছে। এখন এধরণের সাজা দেয়া হলে তা পরিবারটাকে আরও নড়বড়ে করে দেবে। আর তাই তিনি একটা শাস্তি উদ্ভাবন করলেন – ১১ মাস। আর শুধু এটাই না, তিনি মাইকেলকে প্রতিদিন বাইরে গিয়ে কাজ করারও সুযোগ করে দিলেন। জেলে কাটাও, দিনে বাইরে চাকরি করে আয় কর। মাইকেল করেছিল। সে তার শাস্তির মেয়াদ শেষ করেছিল। সে পূর্ণবাসিত হয়েছিল। নতুন একটা চাকরিও খুঁজে পেয়েছিল। আর পূর্ণমিলিত হয়েছিল তাদের পরিবার। আর মনে হয়েছিল, এটা একটা একধরণের শান্তিপূর্ণ জীবনের পথই নির্দেশ করে। গল্পের একটা আনন্দপূর্ণ পরিণতি। প্রাজ্ঞতাপূর্ণ উদ্ভাবনের কারণে। একজন প্রাজ্ঞ জজের দ্বারা কিন্তু এরপর ব্যাপারটা এরকম দাঁড়ালো যে, জনাব প্রসেকিউটর এতে খুশি হতে পারলেন না যে, জজ ফোরের শাস্তিদানের নীতিমালা অগ্রাহ্য করলেন ও নিজস্ব ব্যবস্থা উদ্ভাবন করলেন। ফলে, তিনি আপিল করলেন। তিনি আবেদন জানালেন অস্ত্রসহ ডাকাতির জন্য প্রযোজ্য সর্বনিম্ন সাজা দেওয়ার জন্য যদিও মাইকেল সেটা করেছিল একটা খেলনা অস্ত্র দিয়ে। অস্ত্রসহ ডাকাতির নুন্যতম সাজা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। তিনি আপিলটা জিতলেনও। মাইকেলকে ৫ বছর কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হলো। জজ ফোরেরও আইন অনুসরণ করতে বাধ্য হলেন। আর এই আপিলটা উঠেছিল তার পূর্বে প্রযুক্ত সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর। মাইকেল কারাগারের বাইরে চলে এসেছিল। একটা চাকরি করছিল। পরিবারের দেখভাল করছিল। আর তাকে আবার কারাগারে ফিরে যেতে হলো। জজ ফোরের করেছিলেন, যা তিনি করার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। আর তারপর তিনি বেঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। আর মাইকেল হারিয়ে গিয়েছিল। তো, এটা হলো একটা উদাহরণ, প্রাজ্ঞতার চর্চা ও প্রাজ্ঞতার অবদমন, উভয়ের ক্ষেত্রেই। প্রাজ্ঞতার অবদমনটা করা হচ্ছে নিয়মকানুন দিয়ে। যে নিয়মকানুনগুলো বানানো হয়েছে, অবশ্যই, যেন সবকিছু ভালোভাবে অনুষ্ঠিত হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য! এবার ধরেন, মিস ডিউয়ির কথা। ডিউয়ি টেক্সাস এলিমেন্টারি স্কুলের শিক্ষিকা। একদিন তিনি নিজেকে আবিস্কার করলেন একজন পরামর্শকদাতার শ্রোতা হিসেবে। যিনি শিক্ষকদের সহায়তার চেষ্টা করছেন যে, কিভাবে বাচ্চাদের পরীক্ষার নম্বর বেশি করানো যায়, যেন স্কুল অভিজাত শ্রেণীতে উন্নিত হয়। বড় পরীক্ষাগুলোকে বাচ্চাদের পাশের হারের ভিত্তিতে টেক্সাসের এ ধরণের সব স্কুলই একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এই মাইলফলকগুলো ছোঁয়ার জন্য আপনার জন্য থাকবে বোনাস আর নানারকম অন্যান্য সুযোগসুবিধা যদি আপনি অন্য স্কুলগুলোকে হারিয়ে টিকে থাকেন, তাহলে তো, পরামর্শদাতার পরামর্শটা ছিল: প্রথম, সময় নষ্ট করবে না সেই বাচ্চাদের পেছনে, যারা পাশ করবে। তুমি কী করছ বা না করছ, সেটা যেখানে কোন ব্যাপারই না। দ্বিতীয়, সময় নষ্ট করবে না সেই বাচ্চাদের পেছনে, যারা কোনভাবেই পরীক্ষায় পাশ করবে না, সে তুমি যাই কর না কেন। তৃতীয়, সময় নষ্ট করবে না সেই বাচ্চাদের পেছনে, যারা এই জেলায় এত পরে এসেছে যে, তাদের নম্বরটা গুনতির মধ্যে আসবে না। তোমার সমস্ত সময় আর মনোযোগ দাও সেই বাচ্চাদের দিকে যারা পাশ-ফেলের মাঝে ঝুলছে। তথাকথিত “ঝুলন্ত বাচ্চা”। যে বাচ্চাদের উপর তোমার হস্তক্ষেপ, তাদেরকে ফেল করে যাওয়া থেকে কোন মতে পাশ করিয়ে দিতে পারে। তো, মিস ডিউয়ি এটা শুনলেন। আর তিনি কিছুটা অস্বচ্ছন্দে মাথা নাড়ালেন। যেখানে সহকর্মী অন্যান্য শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে উল্লাস করছেন আর সমর্থনে মাথা ঝাঁকাচ্ছেন। যেন তারা একটু পরেই একটা ফুটবল ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন। আর মিস ডিউয়ির জন্য, এটা করার লক্ষ্যে তিনি শিক্ষক হন নি। এখন, কেইন আর আমি একেবারে সরলসাধা না, আমরা বুঝি যে, আপনার নিয়মকানুনের প্রয়োজন আছে। আপনাকে সুযোগ সুবিধার বন্দোবস্তও করতে হয়। মানুষকে জীবন ধারণ তো করতে হবে। কিন্তু সমস্যাটা হলো যে, এই নিয়মকানুন আর সুযোগসুবিধার উপর নির্ভরত নৈতিকতাহীন করে দেয় পেশাগত কাজকর্মগুলোকে পেশাগত কাজকর্মগুলোকে নৈতিকতাহীন করে দেয় দুই অর্থে। প্রথমত, তারা মনোবলহীন করে দেয় ব্যক্তি মানুষদের, যারা কাজকর্মগুলোর সঙ্গে যুক্ত আছেন। জজ ফোরের বেঞ্চ ছেড়ে চলে যান আর মিস ডিউয়ি হন পুরোপুরি মনোক্ষুন্ন। আর দ্বিতীয়ত, তারা খোদ কাজকর্মগুলোকেই নৈতিকতাহীন করে দেয়। পুরো চর্চাটাই হয়ে পড়ে নৈতিকতাহীন। চর্চা-করনেওয়ালারাও হয়ে পড়েন নৈতিকতাহীন। এটা এমন ধরণের মানুষ গড়ে তোলে মানুষজন সঠিক কাজটা করবে এটা নিশ্চিত করার জন্য যখন আপনি সুযোগসুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবেন, তখন আপনি এমন ধরণের মানুষ গড়ে তুলবেন যারা এই সুযোগ-সুবিধাগুলোর প্রতি নেশাগ্রস্থ হয়ে যাবে। এটাই বলা যায় যে, এই ব্যবস্থা এমন মানুষ গড়ে তোলে, যারা কাজ করবেই শুধু এই সুযোগ-সুবিধাগুলোর জন্য। এখন, সবথেকে তাক লাগানো ব্যাপারটা হচ্ছে যে, মনোবিজ্ঞানীরা এগুলো সবই জানেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে। মনোবিজ্ঞানীরা সবকিছুরই এই সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তিকরণের নেতিবাচক পরিণতিগুলোর ব্যাপারে জানেন প্রায় ৩০ বছর ধরে। আমরা জানি যে, ছবি আঁকার জন্য আপনি যদি শিশুকে পুরস্কার দেন, তাহলে তারা খোদ ছবি আাঁকানোটার দিকে নজর দেওয়াই ছেড়ে দেবে। শুধু ভাববে পুরস্কারটা নিয়ে। যদি আপনি শিশুকে বই পড়ার জন্য পুরস্কার দেন, তাহলে তারা বইয়ের মধ্যে কী আছে তা নিয়ে মাথা ঘামানো বাদ দেবে। শুধু ভাববে কতখানি পড়া হলো। আপনি যদি শিক্ষকদের পুরস্কৃত করেন বাচ্চাদের পরীক্ষা পাশের হার দেখে, তাহলে তারা বাচ্চাদের শিক্ষিতকরণ নিয়ে ভাবা বাদ দেবে। শুধু মনোযোগ দেবে বাচ্চাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে। যদি আপনি ডাক্তারকে পুরস্কৃত করেন বেশি পরিমাণ রোগী দেখার জন্য — যেটা এখন করাও হচ্ছে – তাহলে তারা আরও বেশি রোগী দেখবে। আবার যদি কম রোগী দেখার জন্য পুরস্কৃত করেন- তাহলে তারা কমই দেখবে। আমরা যা চাই, তা হলো এমন ডাক্তার, যিনি সঠিক পরিমাণ রোগী দেখবেন। সঠিক কারণের জন্য সঠিক পরিমাণ রোগী-- রোগীদের কল্যান্যার্থে সেবা প্রদান করবেন। মনোবিজ্ঞানীরা এগুলো কয়েক যুগ ধরেই জানেন। এখন নীতি নির্ধারকদের একটু এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে। তাদের উচিৎ, কিছু সময় মনোবিজ্ঞানীদের কথাও শোনা। সবসময় শুধু অর্থনীতিবীদদের কথা না শুনে আর এটা যে এই পথে চলতেই হবে, এমনটাও নয়। আমরা মনে করি, আমি আর কেইন যে, আশা করার মতো সত্যিকারের উৎসও আছে। আমরা একধরণের মানুষকে চিহ্নিত করেছি, এই ধরণের চর্চার মধ্যে থেকেও যাদেরকে আমরা বলি, বিচক্ষণ আইনভঙ্গকারী। এই ধরণের মানুষদেরকে প্রথাগত নিয়মকানুন মান্য করা ও সুযোগসুবিধাপ্রাপ্তির একটা ব্যবস্থার মধ্যে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু তারা নিয়মকানুনের আশপাশ দিয়ে একটা পথ বের করে, নিয়মনীতিগুলোকে দুর্বল করার পথ বের করে। তো, এখন এমন শিক্ষকেরা আছেন, যাদেরকে শিক্ষাদানের জন্য একটা স্ক্রিপ্ট অনুসরণ করতে হয়। আর তারা জানেন যে, যদি তারা এই স্ক্রিপ্ট অনুসরণ করেন, তাহলে বাচ্চারা কিছুই শিখবে না। আর তাই তারা স্ক্রিপ্টটা অনুসরণ করে ঠিকই, কিন্তু এটা তারা করে দ্বিগুন সময় লাগিয়ে। আর এরমধ্যে তারা কিছু বাড়তি সময় বের করে বাচ্চাদের শেখায়। যে পদ্ধতিতে বাচ্চারা সত্যিকার অর্থে কিছু শিখতে পারবে। তো, এঁরা হলেন কিছুটা ব্যতিক্রমী মানুষ। প্রতিদিনকার নায়ক। তাঁরা খুবই শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু এই ধরণের কর্মকাণ্ড লম্বা সময় ধরে চালিয়ে যাওয়া খুবই দুরুহ ব্যাপার। এমন একটা ব্যবস্থায় তারা কাজ করছেন যেখানে হয় তাদেরকে নির্মূল করা হবে বা উৎপীড়ণ করা হবে কাজেই বলা যায়, বিচক্ষণ আইনভঙ্গকারীরা, কিছুই না থাকার চেয়ে অনেক ভালো। কিন্তু এটা কল্পনা করা কঠিন যে, এরা খুবই দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকছেন। আরও বেশি আশাবাদী হওয়া যায় সেই মানুষদের নিয়ে, যাদেরকে আমরা বলি, ব্যবস্থা-পরিবর্তনকারী। এঁরা হলেন সেই মানুষ যারা কোন ব্যবস্থার নিয়ম-নীতিকে বোকা বানানোর চেষ্টা না করে বরং খোদ ব্যবস্থাটাকেই রুপান্তরের চেষ্টা করেন। আমরা এরকম অনেকগুলো উদাহরণ নিয়ে কথা বলেছি। একটা বিশেষ উদাহরণ হিসেবে বলা যায় জজ রবার্ট রাসেলের কথা। একদিন তিনি পড়েছিলেন গ্যারি পেট্টেনগিলের কেসটার সামনে। ২৩ বছর বয়সী পেট্টেনগিল ছিলেন একজন ভেট। যে সেনাবাহিনীতে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিল। কিন্তু তারপর ইরাকে গিয়ে সে পিঠে গুরুতর চোট পায়, আর তার ফলে তাকে চিকিৎসার জন্য বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়। সে বিবাহিত ছিল। সে সময় তার তৃতীয় বাচ্চা ভূমিষ্ট হতে যাচ্ছিল। সে পিটিএসডি-তে ভুগছিল পিঠের দুরাবস্থা, চারপাশের ভয়াবহ পরিস্থিতির ফলে আর সে গাঁজা খাওয়া শুরু করে তার কিছু কিছু উপসর্গ কমানোর জন্য সে তার পিঠের কারণে শুধু পার্ট-টাইম কাজ করতেই সক্ষম ছিল। ফলে সে তার পরিবারের দেখভাল ও খাদ্য সংস্থানের জন্য পর্যাপ্ত আয় করতে ব্যর্থ হচ্ছিল। তো, সে গাঁজা বিক্রি করা শুরু করে। নেশার জগতে পুরোপুরি তলিয়ে যায় সে তার পরিবারকে বের করে দেওয়া হয় বাড়ি থেকে। আর সমাজের কল্যানী সংস্থাগুলো হুমকি দিতে থাকে, বাচ্চাগুলোকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। শাস্তিবিধানের সাধারণ বিধিমালার অধীনে, জজ রাসেল হয়ত আর কোন সুযোগ পেতেন না পেট্টেনগিলকে লম্বা মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া ছাড়া মাদকাসক্তির অপরাধে কিন্তু এক্ষেত্রে জজ রাসেলের কাছে একটা বিকল্প ব্যবস্থা ছিল। কারণ তিনি ছিলেন একটা বিশেষ ধরণের কোর্টের আওতায়। তিনি ছিলেন, যেটাকে বলা হয়, যুদ্ধাহত সৈনিকদের জন্য গঠিত বিশেষ কোর্ট (ভেটেরানস কোর্ট)। এই ভেটেরানস কোর্ট-এ-- যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরণে কোর্ট প্রথমবারের মতো চালু করা হয় জজ রাসেল গড়ে তুলেছিলেন এই যুদ্ধাহত সৈনিকদের কোর্ট (ভেটেরানস কোর্ট)। এ ধরণের কোর্ট শুধুমাত্র য্দ্ধুাহত সৈনিকদের জন্য, যারা আইনভঙ্গ করেছে। আর তিনি এই কোর্ট তৈরি করেছিলেন কারণ বাধ্যতামূলক শাস্তিদানের আইন, বিচারিক প্রক্রিয়া থেকে বিচার জিনিসটাকেই বাদ দিয়ে দিচ্ছিল। কেউই অহিংস অপরাধীদের, বিশেষত অহিংস যুদ্ধাহত সৈনিক অপরাধীদের কারাগারে নিক্ষেপ করতে জায় না। তারা কিছু একটা করতে চায়, আমরা সবাই জানি, যেটাকে বলা হয় অপরাধী বিচার ব্যবস্থার ঘূর্ণায়মান দরজা, তা নিয়ে। আর ভেটেরানস কোর্ট যেটা করেছিল, তা হল, এটা অপরাধীদের বিবেচনা করেছিল একেকজন ব্যক্তিমানুষ হিসেবে। তাদের সমস্যার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের করা অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে অভিনব সাড়া প্রদানের চেষ্টা করেছিল। যেটা পরবর্তীতে অপরাধীদের সাহায্য করেছে পূর্ণবাসনের ক্ষেত্রে। আর একবার রায় শুনিয়ে দিয়েই ভেটেরানস কোর্ট নিজের কাজ শেষ করেনি। তারা অপরাধীদের পাশে থেকেছে। তাদের কাজকর্মের গতিবিধি অনুসরণ করেছে। এটা নিশ্চিত করার জন্য যে, অপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে একসাথে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, তা যেন যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। এখন ২২টা শহরে এই ধরণের ভেটেরানস কোর্ট কাজ করছে। কেন এই ধারণাটা ছড়িয়ে গেল? একটা কারণ হচ্ছে, জজ রাসেল ১০৮ জন অপরাধীকে পেয়েছিলেন তাঁর ভেটেরানস কোর্টে এ বছরের ফেব্র“য়ারী পর্যন্ত আর এই ১০৮ জনের মধ্যে, অনুমান করুন কতজনকে যেতে হয়েছে? বিচারব্যবস্থার ঘূর্ণায়মান দরজা দিয়ে কারাগারে একজনও না। একজনও না। যে কেউই ভিড়মি খেতে পারেন অপরাধী বিচার ব্যবস্থার এই ধরণের রেকর্ড দেখে তাহলে, এ ধরণের ব্যবস্থা-পরিবর্তকও আমরা পাচ্ছি। আর মনে হচ্ছে এটা কার্যকরীও। এরকম ব্যাঙ্কারও আছেন, , যিনি অলাভজনক কমিউনিটি ব্যাঙ্ক গড়েছেন, যা অন্যান্য ব্যাঙ্কারদেরও উৎসাহিত করেছে -- আমি জানি এটা বিশ্বাস করা কঠিন-- কিন্তু এটা এমন ব্যাঙ্কারদের উৎসাহিত করেছে, যারা কম আয়ের গ্রাহকদের মঙ্গলার্থে কাজ করেন। একটা প্রায় ভেঙ্গে পড়া কমিউনিটিতে অর্থ বিনিয়োগ করে তারা এটার পূর্ণগঠনে সাহায্য করছে। যদিও তাদের ঋণগ্রহীতারা সাধারণ মাপকাঠিতে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের ডিফল্ট রেট খুবই কম। কিন্তু ব্যাংকটা মুনাফাও করছে। ব্যাংকাররা তাদের ঋণগ্রহীতাদের পাশে থেকেছে। তারা শুধুই প্রথমে ঋণ গ্রহণ করে পরে সেই ঋণ বিক্রি করেনি। তারা ঋণগুলোর ক্ষেত্রে সেবা দিয়ে গেছে। তারা নিশ্চিত করেছে যে, ঋণগ্রহীতারা যেন অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। ব্যাংকিংটা সবসময়ই এরকম পথে ছিল না, যেমনটা আমরা এখন সংবাদমাধ্যমগুলোতে দেখতে পাই। এমনকি গোল্ডম্যান সাচও একসময় তার গ্রাহকদের যথার্থ সেবা প্রদান করতেন। এটা এমন একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার আগপর্যন্ত, যেখানে সে শুধু নিজের স্বার্থের কথাই ভাববে। ব্যাংকিংটাও সবসময় এরকম ছিল না। আর তার এভাবেই চলার কোন বাধ্যবাধকতাও নেই। এবার চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আরেকটা উদাহরণ। হারভার্ডের ডাক্তাররা চিকিৎসাবিজ্ঞানের পড়াশোনাকে এমনভাবে রুপান্তরের চেষ্টা করছেন, যেন আপনার মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় না হয়। ও সহানুভূুতিহীনতা তৈরি না হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের মধ্যেই এই বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে আর যে পদ্ধতিতে এটা করা হয়, তা হলো: তৃতীয় বর্ষের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে কিছু রোগী নির্বাচন করে দেওয়া হয়, যাদের পুরো এক বছর ধরে দেখভাল করতে হবে। তো, এই রোগীরা শুধু একটা জৈবিক ব্যবস্থা না। তারা শুধুই একটা অসুখ-সম্পর্কিত জিনিস না। তারা মানুষ। প্রাণযুক্ত মানুষ। একজন সার্থক ডাক্তার হয়ে উঠতে গেলে আপনাকে রোগীদের শুধু অসুখ না ভেবে প্রাণযুক্ত মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এর সাথে হয়ত এ নিয়ে প্রচুর পরিমাণ সাড়া পাওয়া যাবে একজন শিক্ষার্থী থেকে আরেকজন, ডাক্তারদের থেকে সমগ্র শিক্ষার্থীমহল। আর তার পরিণামে সেখানে হয়ত আমরা এরকম একটা প্রজন্ম পাব। আমরা আশা করি- এমন ডাক্তারের, যার কাছে পর্যাপ্ত সময় থাকবে, যে রোগীদের তিনি দেখবেন, তাদেরকে দেওয়ার মতো। আমরা দেখব তো, এধরণের অনেক অনেক উদাহরণ নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি। এদের প্রতিটিই দেখায় যে, সত্যিই একটা চরিত্র গড়ে তোলা ও উন্নয়ন করা সম্ভব। আর যথার্থ অর্থে একটা লক্ষ্য নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করাও সম্ভব। যেটাকে অ্যারিস্টোটল হয়ত বলতেন, প্রোপার টেলোস। আর কেইন ও আমি বিশ্বাস করি যে, , এটাই পেশাগত অনুশীলকারীরা সত্যিকার অর্থে চায়। মানুষ নিজেদেরকে পেতে চায় সদ্গুনসম্পন্ন অবস্থায় তারা সঠিক জিনিসটা করার অনুমতি পেতে চায়। তারা এরকম অনুভূতি চায় না যে, প্রতিদিন কাজ শেষে ঘরে ফেরার পর তাদের শরীর থেকে নৈতিক অবক্ষয়ের ময়লা ধুয়ে ফেলার জন্য স্নান করে ফেলতে হয়। অ্যারিস্টোটল ভেবেছিলেন যে, প্রায়োগিক প্রজ্ঞা হলো আনন্দময়তার চাবিকাঠি। আর তিনি ঠিকই ভেবেছিলেন। আজকাল মনোবিজ্ঞানে অনেক ধরণের গবেষণা হচ্ছে, মানুষ কিসে খুশি হয়, তা নিয়ে। আর গবেষণার পর গবেষণায় যে দুইটা জিনিস সবচেয়ে বেশি এসেছে তা হলো — আমি জানি, এটা হয়ত আপনাদের অনেককেই কিছুটা অবাক করবে – যে দুইটা জিনিস আনন্দময়তার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো: ভালোবাসা আর কাজ। ভালোবাসা: যে কমিউনিটিতে আপনি বাস করেন, সেখানকার এবং আপনার কাছাকাছি থাকা মানুষদের সঙ্গে সফলভাবে সম্পর্ক বজায় রাখা। আর কাজ: এমন ধরণের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকা যেটা অর্থবহ ও সন্তোষজনক। যদি আপনার এ দুটো থাকে, অন্য মানুষদের সঙ্গে ভালো সুদৃঢ় সম্পর্ক আর কাজ, যেটা অর্থবহ আর পরিপূর্ণ, তাহলে আপনার আর বেশি কিছু লাগে না। তো, ভালোভাবে ভালোবাসতে গেলে আর ভালোভাবে কাজ করতে গেলে আপনার চাই প্রাজ্ঞতা। নিয়মকানুন আর সুযোগসুবিধা আপনাকে কখনই বলে দেবে না যে, কিভাবে একজন ভালো বন্ধু হতে হয়, কিভাবে ভালো অভিভাবক হতে হয়, কিভাবে ভালো স্বামী/স্ত্রী হতে হয় কিভাবে ভালো ডাক্তার হতে হয়, ভালো উকিল, ভালো শিক্ষক হতে হয়। নিয়মকানুন আর সুযোগসুবিধা কখনই প্রাজ্ঞতার বিকল্প হতে পারে না। বরং শেষপর্যন্ত, আমাদের দাবি হল, প্রাজ্ঞতার আসলে কোন বিকল্পই নেই। আর প্রায়োগিক প্রজ্ঞা প্রয়োগের জন্য আত্মত্যাগমূলক কর্মকাণ্ড করারও প্রয়োজন পড়ে না। অনুশীলনের অংশ হিসেবে প্রায়োগিক প্রজ্ঞা দেয় নৈতিক ইচ্ছাশক্তি ও দক্ষতা সঠিক জিনিসটা করার -- অন্যদের দ্বারা সঠিকটা করানোর -- প্রায়োগিক প্রজ্ঞা আমাদের আরও দেয় আমাদের নিজেদের দিয়েও সঠিক জিনিসটা করানোর ইচ্ছাশক্তি ও দক্ষতা। ধন্যবাদ (হাততালি) আমার বড় চিন্তাটা আসলে একটা অতি খুদ্র চিন্তা যা উন্মচন করতে পারে কোটি কোটি মহান চিন্তার দ্বার যেগুলো এই মুহূর্তে আমাদের মনে সুপ্ত অবস্থায় আছে। এবং আমার ছোট্ট বুদ্ধি যা ওই চিন্তাগুলো উন্মচন করবে তা হচ্ছে ঘুম। (হাস্য) (করতালি) এই রুম হচ্ছে টাইপ-এ নারীদের রুম। এই রুমে আছে ঘুম বঞ্চিত নারীরা। আর আমি কষ্টের মধ‍্যদিয়ে শিখেছি, যে ঘুম কত দামি। আড়াই বছর আগে, আমি ক্লান্তির চোটে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। আমার মাথা ডেস্কে আঘাত খেয়ে, আমার গালের হাড় ভাংল, আমার ডান চোখে পাচটা সেলাই পড়ল। আর আমি যাত্রা শুরু করলাম ঘুমের মুল‍্য পুন:উদ্ধারের যাত্রা। এবং সেই চেষ্টায়, আমি পড়াশোনা করলাম আমি চিকিৎসক, বিজ্ঞানিদের সাথে দেখা করলাম এবং আমি এখানে আপনাদেরকে বলতে এসেছি যে আরও উৎপাদনশীল, আরো উদ্দিপ্ত, আরো আনন্দময় জীবনের উপায় হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমানো। (করতালি) এবং আমরা নারীরাই এই পথের অগ্রগামী হব এই নতুন আন্দলোন আর নারীবাদী উদ্দিপনার মধে‍্য। আমরা সতি‍্যই ঘুমিয়ে আমাদেরকে শির্ষ অবস্থানে নিয়ে যাব, আসলেই। (হাস্য) (করতালি) কারন দুঃখজনকভাবে, পুরুষদের জন্য ঘুমের ঘাটতি হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরুষত্বর চিহ্ন। আমি এর মাঝে এক লোকের সাথে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম যে গর্ব করে বলছিল যে সে গতরাত্রে মাত্র চার ঘন্টা ঘুমানর সুযোগ পেয়েছে। আর আমার বলতে ইচ্ছা করছিল ওকে --- কিন্তু বলিনি --- আমার বলতে ইচ্ছা হয়েছিল, "তুমি কি জান? যদি তুমি পাঁচ ঘন্টা ঘুমাতে তাহলে এই ডিনারটি আরও অনেক মজার হয়ে উঠত।" (হাস্য) এদিকে এখন এক ধরনের ঘুমের ঘাটতি নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে। বিশেষ করে এই ওয়াশিংটনে, যদি সকালের নাস্তার সময় কারোর সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন আর যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন, "আটটার সময় দেখা করলে কেমন হয়?" তারা সম্ভবত আপনাকে বলবে, "আটটা বেশি দেরি হয়ে যাবে আমার জন্য, কিন্তু ঠিক আছে, আমি এক গেম টেনিস খেলে নিতে পারব আর কয়েকটা কনফেরেন্স কল করে এরপর তোমার সঙ্গে দেখা করা যাবে আটটার সময়" আর এরা এর মানে বোঝাতে চায় যে তারা সাঙ্ঘাতিক ব‍্যস্ত আর উৎপাদনশিল, কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে তারা আসলে নয়, কারণ আমাদের এই মূহুর্তে, আমাদের প্রতিভাধর নেতারা আছেন ব‍্যবসায়ে, ফাইন্যানসে, রাজনিতিতে, যারা জঘন‍্য বাজে সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তো ভিষন মেধাবী হওয়া মানে এই না যে তুমি একজন ভালো নেতা, কারণ নেতৃত্বের নির্যাস হচ্ছে সেই হিমশৈল দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা টাইটানিক জাহাজকে আঘাত করার আগেই। আর আমাদের এখন অনেক বেশি হিমশৈল যেগুল আমাদের টাইটানিকগুলকে আঘাত করছে। আসলে, আমার এরকম একটি ধারণা তৈরি হচ্ছে যে যদি লেহ্ ভাইরা লেহমান ভাই এবং বোনেরা হত তাহলে হয়ত এখনও থাকতো আমাদের আশেপাশে। (করতালি) যেখানে সব ভাইরা যখন ব‍্যস্ত কেবল ২৪ ঘন্টা/৭ দিন ক্রমাগত যোগাযোগে থাকা হয়তবা কোন এক বোন হিমশৈলটি কে খেয়াল করতে পারত, কারন সে একটা সাড়ে সাত অথবা আট ঘন্টা ঘুম দিয়ে উঠে আসত আর তার বুঝে-দেখার ক্ষমতা থাকত পুরো পরিস্থিটাকে। তো এখনে আমরা যে মুখোমুখি হচ্ছি সব বিভিন্ন প্রকৃতির সঙ্কটের সাথে এই মূহুর্তে আমাদের এই পৃথিবীতে, যা কিছু আমাদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে ভালো, যা আরও আনন্দ, কৃতজ্ঞতা, বয়ে আনতে পারে, আমাদের জীবনে আরও কার্যকারিতা আনতে পারে, এবং আমাদের নিজস্ব পেশার জন্য ভাল হতে পারে, সেটা হবে বিশ্বের জন্যও সবচেয়ে ভালো। তাই আপনাদের কাছে আমার মিনতি যে আপনারা চোখ বন্ধ করুন আর আবিষ্কার করুন সব মহান উদ্ভাবনি চিন্তাগুলো যেগুলো ঘুমিয়ে আছে আমাদের অন্তরে, বন্ধ করুন আপনাদের ইঞ্জিন আর আবিস্কার করুন ঘুমের ক্ষমতা। ধন‍্যবাদ। (করতালি) কোরআনে স্বর্গ অর্থাৎ জান্নাতের কথা উঠলে ৭২ কুমারী কন্যার উল্লেখ অনেকেই শুনেছেন নিশ্চয়, তাদের নিয়ে পরে কথা হবে। তবে তথ্য এটাই, যে কোরআনের স্বর্গের যে বর্ণনা ৩৬ বার - 'স্রোতস্বিনি প্রবাহিকাদের দ্বারা সিঞ্ছিত বাগান' - বলে দেয়া আছে, আমাদের এই সুন্দর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল অনেকটা সেই রকম। আমি যেহেতু লেক ইয়ুনিয়নের জলের উপর হাউস-বোট এ থাকি,সেখানকার অপূর্ব সৌন্দর্যের মাঝে বসে স্বর্গের এই বর্ণনা-র যথার্ততা মর্মে মর্মে অনুভব করি। কিন্তু কেন বেশিরভাগ লোকেরাই কোরআনে দেয়া স্বর্গের বর্ণনা জানে না ? ভালো মনে কোরআন পড়তে শুরু করা অনেক অ-মুস্লিমদের দেখেছি, কোরআন পড়া শুর করেও তার সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে মাঝ পথেই হাল ছেড়ে দিতে। ইতিহাসকার থমাস কার্লাইল মুহাম্মদকে বিশ্বের মহানতম নায়কদের মধ্যে ফেলেন, কিন্তু উনি ও কোরআন পড়া নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন - 'প্রচন্ড কঠিন কাজ, খটোমটো , দুর্বোধ্য ঘ্যাঁট।' (হাসি) আমার মনে হয়, এই সমস্যার একটা কারণ কোরআনকে অন্য সকল বই এর মতোই সহজে পড়ে ফেলার চেষ্টা -- কোনো বৃষ্টির দূপুরে, শুয়ে শুয়ে পপ-কর্ন চিবোতে চিবোতে বই পড়া, ভাবটা এমন, যেন ভগবান স্বয়ং -- মনে রাখবেন কোরআন- পুরোটাই মুহাম্মদ কে বলা আল্লাহর বাণী -- যেন আর দশটা বেস্ট-সেলার লেখকের এর মতোই ! খুব কম সংখ্যক লোক সত্যি কোরআন পড়েন বলেই যেকেউ এবং সকলেই কোরআন উদ্ধৃত করে, যা বেশিরভাগ সময়েই ভুল। কথার টুকরো তুলে, ভেংগে-চুরে, নিজের 'সুবিধে মতো অর্থ' পেশ করা গোঁড়া কাঠ-মোল্লারাও প্রায়-ই করে থাকেন, আর কট্টর ইস্লাম-বিরোধিরাও। এবার বলি গত বসন্তের কথা, আমি মুহাম্মদ-এর জীবন-কাহিনী লেখা শুরু করতে যাচ্ছিলাম, তখন মনে হলো, আগে আমার কোরআনটা ঠিক করে পড়া উচিৎ মানে যতটা আমার সাধ্যে কুলায় আর কী! আমার আরবী-জ্ঞান ডিক্সনারী নির্ভর, তাই আমি চারটে নাম-করা অনুবাদ পাশা-পাশি ফেলে পড়বো ঠিক করলাম, প্রতিটা ছন্দ, তাদের উচ্চারণ আর মুল সপ্তম শতাব্দীর আরবী সংস্করণ সংগে রেখে। আমার একটা সুবিধে ছিল। আমার আগের বই টা শিয়া-সুন্নী বিভেদ নিয়ে ছিল, তাই সে সময় ইস্লামের প্রাচীনতম ইতিহাস নিয়ে আমায় প্রচুর চর্চা করতে হয়েছিল। ফলেই, কোরআনে ঘুরে ফিরে বার বার উল্লেখিত ঘটনাগুলো আমার মোটামুটি জানা ছিল। আমার জ্ঞানের দৌড় যতটুকু ছিল, তাতে কোরআন চর্চায় আমার স্থান এক বহিরাগতের মতো ছিল, যে কিছুটা জানে, কিছুটা অভিজ্ঞতাও রাখে, কিন্তু শেষ-মেশ, একটা বাইরের লোক, এক অবিশ্বাসী ইহুদী, যে কিনা অন্যদের ধর্ম-গ্রন্থ পড়ার চেষ্টা করছে! (হাসি) আমি তাই আস্তে আস্তে পড়া শুরু করলাম। (হাসি) আমি এই কাজের জন্য তিন সপ্তাহের সময় ধার্য করেছিলাম, অতি আত্মবিশ্বাসের চমৎকার নিদর্শন -- (হাসি) -- কারণ তিন সপ্তাহ গিয়ে ঠেকল তিন মাসে। ছোট আর বেশী রহস্যবাদী অধ্যায়গুলো আগে-ভাগে চট করে পড়ে নেওয়ার প্রলোভন পাশ কাটাতে হয়েছিল। কিন্তু যেই না মনে হতো, যে, হ্যাঁ, এবার কোরআন এর মর্মে পৌঁছতে পারছি, এবার ব্যাপারটা আয়ত্তে আসছে-- পরদিনই সেই ভাবটা ছু হয়ে যেত, আর সকালে বসে ভাবতাম, আমি অচেনা, কিন্ত তবু ও খুব চেনা এক জগতে যেন হারিয়ে গেছি। কোরান বলে, যে সে টোরাহ (ইহুদি ধর্ম-গ্রন্থ) আর গস্পেল (খ্রিস্টান ধর্ম-গ্রন্থ) এর বাণী নতুন করে বলতে এসেছে। তাই, কোরানের এক-তৃতীয়াংশ বাইবেল এর নানা চরিত্র, যেমন আব্রাহাম, মুসা, জোসেফ, মেরী আর যিশু-র কাহিনী বলে। ঈশ্বর নিজে, নিজের আগের ইয়াহ্য়া -র অবতারের মতোই, ইর্ষাপরায়ণ জোরের সঙ্গে অন্য আর কোন ঈশ্বর নেই, সাব্যস্ত করেন। ঊঁট, পাহাড়, মরুভুমির কুঁয়ো আর ঝরণার উল্লেখ আমায় সাইনাই মরভুমি ঘুরতে ঘুরতে কাটানো বছরটার কথা মনে পড়িয়ে দিছ্ছিল। আর সেই ভাষা, তার সুরেলা ছন্দ সেই বিকেলগুলোর কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছিল, যখন বসে বসে বেদূইন বুড়োদের মুখে, বেশ কয়েক ঘন্টা লম্বা মুখস্ত কাব্য কাহিনী শুনতাম। আর আমি তখন বুঝলাম কেন বলা হয়, যে কোরআন কে কোরআনের মতো জানতে হলে কোরআন কে আরবী তে জানতে হবে। ধরুন, ফাতিহাহ্ এর কথাই নিই, সাতটি আয়াতের প্রথম অধ্যায়, যা ঈশ্বরের এর প্রার্থনা ই শুধু নয়, ইসলামের শেমা-ইস্রায়েল (প্রমুখ প্রার্থনা) ও বটে। আরবীতে ফাতিহাহ্ মাত্র ২৯ শব্দের, কিন্তু অনুবাদের করলে দেখা যায় এটা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ শব্দে, আর তারপর ও, যত বেশী করেই না বলা, ততই মনে হয় সব বলা হল না ! আরবী উচ্চারণ শৈলী মন্ত্রমুগ্ধ করে দিতে পারে, যেটা শুধু পড়ে বোঝা যাবে না, শুনতে হবে, তর্কে তার্কীকতার চেয়ে অনুভুতির দরকার বেশী। দরকার সস্বর উচ্চারণ করা, যাতে এটার সংগীত জীভ আর কান ছুঁয়ে যেতে পারে। তাই ইংরেজীতে কোরআন নিজের ছায়া মাত্র, বা আর্থর আরবেরী নিজের করা অনুবাদ নিয়ে যা বলেছিলেন, 'সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা।' কিন্তু অনুবাদে সব যে হারিয়ে যায়, তা নয়। কোরআনে যেমন বলা আছে, তেমনই, সবুরে মেওয়া ফলে। অনেক আশ্চর্য করার মত জিনিষ ও আছে -- যেমন পরিবেশ নিয়ে একটু সচেতনতা, আর ঈশ্বরের সৃষ্টিতে মানুষের নিমিত্ত মাত্র হওয়ার বোধ, যার তুলনা বাইবেলে পাওয়া যায় না। তাছাড়া যেখানে বাইবেল কেবলমাত্র পুরুষদের সম্বোধন করে, কথ্যে ভাষ্য পুলিঙ্গ দ্বিতীয় আর তৃতীয় পুরুষ এ, সেখানে কোরআন কিন্তু মহিলাদের ও উদ্দেশ করে-- যেমন কোরআন বলে আস্থা রাখা পুরুষ আর আস্থা রাখা মহিলাদের কথা, সম্মাlনীয় পুরুষ আর সম্মানীয়া মহিলাদের কথা। বা কাফেরদের মারার সেই কুখ্যাত আয়াতের কথাই ধরুন। হ্যাঁ, আয়াত এটা বলে বটে, কিন্তু একটা বিশেষ প্রসঙ্গেঃ পবিত্র শহর মেক্কা বিজয়ের প্রস্তুতিতে, মেক্কা তে এমনিতে মার-পীট নিষিদ্ধ ছিল, আর লড়ার এই অনুমতি ও অনেক নিষেধ এর সঙ্গে দেওয়া। 'মেক্কা তে কাফেরদের মারতেই হবে ' নয়, বলা আছে 'মারতে পারো, যদি তার অনুমতি থাকে, কিন্তু রেয়াত এর মেয়াদ পুরো হয়ে গিয়ে থাকলে এবং তখন ই, যদি কোনো সন্ধি স্থাপন না হয়ে থাকে আর তাতে ও যদি ওরা তোমাদের কাবা যেতে বাধা দিয়ে থাকলে, এবং তখন ই, যদি ওরা প্রথমে আক্রমণ করে । কিন্তু তারপরে ও - ঈশ্বর দয়াময়, ক্ষমা করে দেওয়া ই শ্রেয় -- আর তাই, কার্যত, না মারলেই ভাল। (হাসি) তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার -- কোরআন কতটা উদার, মনে কট্টর গোঁড়ামি পোষন না করে দেখলেই তা দেখা যাবে। কোরআন বলে, 'কয়েকটি আয়াতের অর্থ সুস্পষ্ট, আর কয়েকটির একাধিক অর্থ হতে পারে।' কুটিল, কুচুটে লোকেরা এই অস্পষ্টতাটার ই ফায়দা তোলে, অশান্তি, লড়াই বাধিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে। একমাত্র ঈশ্বর ই সঠিক অর্থ কী, জানেন। 'ঈশ্বর সুক্ষ্ম', এই কথাটি (কোরআনে) বার বার ঘুরে ঘুরে আসে, আর সত্যি কথা বলতে, আমাদের যতটা বোঝানো হয়, কোরআন তার থেকে অনেক বেশী সুক্ষ্ম। যেমন ধরুন, সেই ছোট্ট বিষয় কুমারী আর স্বর্গ নিয়ে। এক্ষেত্রে প্রাচ্যের পুরোনো-পন্থী ধ্যান-ধারণার বিশেষ ভুমিকা আছে। এই প্রসঙ্গে যে শব্দ চার বার ব্যবহার করা হয়েছে, তা হল 'হুরী' যা বোঝানো হয় কাজল-নয়না ভারী বক্ষের কন্যা, অথবা গৌর গাত্রবর্ণা ভারী নিতম্বের কুমারী বলে। কিন্তু এ সব ব্যাখ্যান যে মুল আরবী শব্দ নিয়ে, সেটা হল - 'হুরী'। তাতে ভারী বক্ষ অথবা নিতম্ব তো কোথা ও নেই! (হাসি) কথাটার প্রয়োগ কিন্তু 'পবিত্র আত্মা", যেমন ধরুন দেবদুত --বোঝাতে ও হয়ে থাকতে পারে -- অথবা গ্রীক কৌরস্ বা কোর এর মতো চিরযৌবন এর প্রতীক হিসেবে। তবে সত্যি এটাই, যে কেউ ই ঠীক জানে না, আর আসল ব্যাপারটা তাই। কারণ কোরাআন খুব স্পষ্ট বলে, যে আপনি ' স্বর্গে নতুন রুপ ধারন করবেন ' আর আপনার ' সম্পূর্ণ অচেনা কোন রুপে আপনার পুনর্জন্ম হবে,' আমার কাছে সেটা কিন্তু কোন কুমারী কন্যা পাওয়ার থেকে বেশী আকর্ষক প্রস্তাব! (হাসি) আর হ্যাঁ ওই ৭২ এর সংখ্যা কোথাও নেই। কোরানে ৭২ কুমারী কন্যা-র উল্লেখ নেই। এই ধারণাটা ৩০০ বছর পরে এসেছে, আর বেশীরভাগ ইসলাম বোদ্ধারা ওই যে মেঘের উপর হার্প হাতে বসে থাকা লোকেদের খ্রীস্টান ধারনা-র মতোই মনে করেন। স্বর্গ কিন্তু এর থেকে একেবারেই আলাদা। স্বর্গ কৌমার্য্য নয়; স্বর্গ উর্বরতা। স্বর্গ প্রাচুর্য (কোরআনে) স্বর্গ ছোট ছোট নদীর জলে সিঞ্চিত বাগান। ধন্যবাদ। (হাত-তালি) আমি আসলে এখানে এসেছি সবার প্রতি একটা চ্যালেঞ্জ জানাতে। আমি জানি মানুষের কাছে অনেক রকম চ্যালেঞ্জই রাখা হয়েছে। আমি যে চ্যালেঞ্জটা জানাতে যাচ্ছি, তা হলো: আমাদের সময় হয়েছে শান্তি বলতে আসলেই কী বোঝায়, তা পূর্ণবিবেচনা করার। শান্তি মানে শুধু “Kumbaya, my Lord.” না। শান্তি মানে শুধু কবুতর আর রঙধনু নয়- তারা যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন। যখন আমি প্রতীক দেখি, রঙধনু বা কবুতরের তখন আমি ব্যক্তিগত প্রশান্তির কথা চিন্তা করি। আমি ধ্যানের কথা চিন্তা করি। এগুলোর মাধ্যমে, আমি যেটাকে শান্তি বলে বিবেচনা করি, তা আমার মাথায় আসে না । যেটা হলো ন্যায়বিচার ও সমতাযুক্ত একটা অর্জনযোগ্য শান্তি। এটা একটা অর্জনযোগ্য শান্তি, যেখানে এই দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষের, মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সবধরণের উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা থাকবে। থাকবে। যেখানে এই মানুষগুলোর কাছে সহজপ্রাপ্য হবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো যেন তারা এমনভাবে জীবনযাপন করতে পারে, যেখানে তারা চাহিদা থেকে মুক্তি ও ভয় থেকে মুক্তি পেতে পারবে। এটাকেই বলে মনুষ্য নিরাপত্তা। আমি পুরোপুরি শান্তিবাদী মানুষ না, আমার খুবই অটল অহিংস বন্ধু ম্যাইরিড ম্যাকগুইরের মতো। আমি বুঝি যে, মানুষ এত তালগোল পাকানো পরিস্থিতিতে আছে — ভালো শব্দ ব্যবহার করলাম, কারণ আমি আমার মাকে কথা দিয়েছি যে, অনেক মানুষের মধ্যে কোন অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করব না। আর আমি সত্যিই চেষ্টা করছি, মা। সত্যিই করছি। আমাদের অল্প কিছু পুলিশ দরকার; আমাদের অল্প কিছু সামরিক বাহিনী দরকার। কিন্তু সেটা অবশ্যই প্রতিরক্ষার জন্য। আমাদের পূর্ণবিবেচনা করা উচিত্ যে, কিভাবে আমরা নিরাপত্তা পেতে পারি। এই দুনিয়ায় নিরাপত্তা মানে এই না যে, আমাদেরকে পুরো দেশটাকেই আগাগোড়া অস্ত্রসজ্জিত করে রাখতে হবে। এর মানে এও না যে, অন্য দেশগুলোকেও সেইসব অস্ত্র দিয়ে মুড়ে দিতে হবে, যেগুলো আমরা তৈরি করি আর তাদের কাছে বিক্রি করি। নিরাপত্তা মানে এইসব টাকাগুলো খুবই যৌক্তিকভাবে ব্যবহার করা যেন, সত্যিকার অর্থেই পৃথিবীর দেশগুলোকে, পৃথিবীর মানুষগুলোকে নিরাপদ করে তোলা যায়। আমি ভাবছিলাম, কংগ্রেসের চলমান সাম্প্রতিক অধিবেশনের কথা যেখানে আমাদের প্রেসিডেন্ট ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিচ্ছেন START ভোট পাস করার জন্য আমি অবশ্যই START ভোট সমর্থন করি। কিন্তু তিনি ৮৪ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিচ্ছেন পরমানু আগ্নেয়াস্ত্র আধুনিকীকরণের জন্য! আপনি কী জানেন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য জাতিসংঘ যে অর্থের পরিমাণটা বলে সেটা ৮০ বিলিয়ন? এত অল্প পরিমান টাকা! আমি ভাবি যে, যদি আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকত! তা নেই। কিন্তু বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে এটা খুবই অল্প পরিমাণ টাকা। আর এটা ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে সেইসব অস্ত্রের পেছনে যেগুলো আমাদের সত্যিই কোন দরকার নেই। আর আমরা এগুলোর হাত থেকে মুক্তিও পাব না যদি না আমরা উঠে দাঁড়াই ও এগুলোর রুখে দেওয়ার জন্য সক্রিয় হই। আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, বিভিন্ন ধরণের যেসব কর্মকাণ্ডের কথা আমরা গত দুইদিন ধরে এখানে শুনছি, সেগুলোই হলো সেসব উপাদান যেগুলোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে সত্যিকারের মনুষ্য নিরাপত্তা। সেটা হতে পারে বন্য বাঘ রক্ষা, সেটা হতে পারে টার-সান্ড রুখা, এটা হতে পারে সেইসব চিকিত্সা যন্ত্রপাতির সহজপ্রাপ্যতা যা দিয়ে সঠিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়। এটা এরকম যে কোন কিছুই হতে পারে। এটা টাকাগুলোকে এইসব কাজে ব্যায় করার প্রশ্ন। এটা সত্যিকার অর্থেই সক্রিয় হবার প্রশ্ন। আমি গিয়েছিলাম হিরোশিমায়। কয়েক সপ্তাহ আগে আর সেখানে মহামান্য দালাই লামা উপস্থিত ছিলেন। আমরা শহরের হাজার হাজার মানুষের সামনে বসেছিলাম, আমরা আটজন নোবেল জয়ী সেখানে ছিলাম। আর তিনি একটু বদ লোক। তিনি যেন চার্চে একটা দুষ্টু বালকের মতো। আমরা সবাই একে অপরের দিকে তাকাতাকি করছিলাম আর অপেক্ষা করছিলাম আমাদের বক্তৃতার পালা আসার জন্য। এরকম পরিস্থিতিতে তিনি আমার দিকে ঝুঁকে বললেন, ‘জোডি, আমি একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী।’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, মহামান্য, আপনার পোশাক দিয়েই সেটা প্রকাশ পাচ্ছে।’ (হাসি) তিনি বললেন, ‘তুমি জানো আমি কিছুটা ধ্যান পছন্দ করি আর আমি প্রার্থনা করি।’ আমি বললাম, ‘এটা খুবই ভালো। খুবই ভালো। আমাদের দুনিয়ায় এটা খুবই দরকার। আমি এটা করি না, কিন্তু এটা খুবই ভালো।’ আর তিনি বললেন, ‘কিন্তু আমি সন্দেহগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। আমি আর বিশ্বাস করি না যে, শুধু ধ্যান-প্রার্থনা দিয়ে দুনিয়ায় বদল আনা সম্ভব। আমার মনে হয় আমাদের যা দরকার তা হলো সক্রিয় হওয়া।’ মহামান্য দালাই লামা- তাঁর পোশাকসমেত, তিনিই এখন আমার নতুন সক্রিয়তার নায়ক। আমি কথা বলেছি আং সাং সু চির সঙ্গে। কয়েকদিন আগে আপনাদের প্রায় সবাই-ই জানেন যে, তিনি তাঁর দেশ বার্মায় গণতন্ত্রের নায়ক। আপনারা সম্ভবত আরও জানেন যে, তিনি তাঁর জীবনের শেষ ২০ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই কারাগারে কাটিয়েছেন এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায়। তাঁকে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, আর আমরা এটা দেখার জন্য খুবই আগ্রহী যে, কতদিন তিনি মুক্ত থাকতে পারবেন। কারণ তিনি ইতিমধ্যেই রেঙ্গুনের রাস্তায় নেমে পড়েছেন। বিক্ষোভ করছেন পরিবর্তনের জন্য। তিনি রাস্তায় নেমে পড়েছেন, নিজের পার্টি নিয়ে কাজ করা শুরু করেছেন সেটা পূর্ণগঠনের জন্য। আমি তাঁর সঙ্গে অনেক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছি। তার মধ্যে একটা যেটা আমি বলতে চাই, অনেকটাই মিলে যায় মহামান্য দালাই লামার সঙ্গে। সু চি বলেছিলেন, আরও লম্বা একটা পথ পাড়ি দিতে হবে আমার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য কিন্তু আমি প্রচেষ্টা ব্যতিরেকে কোন আশায় বিশ্বাস করি না। আমি কোন পরিবর্তনের আশায় বিশ্বাস করি না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সেটা করার জন্য সক্রিয় না হচ্ছি।’ এবার বলব আমার আরেকজন নারী নায়কের কথা। তিনি আমার বন্ধু, ড. শিরীন এবাদি। প্রথম মুসলিম নারী যিনি নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন। তিনি নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন গত দেড় বছর ধরে আপনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করবেন, তিনি কোথায় থাকেন, নির্বাসিত অবস্থায় তাঁর বাস কোথায়? তিনি বলবেন, পুরো দুনিয়ার বিমানবন্দরগুলোতে। তিনি ক্রমাগত ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন কারণ তাঁকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয় তাঁর দেশে নির্বাচনের সময় আর বাড়ি চলে যাওয়ার বদলে তিনি অন্যান্য নারীদের সঙ্গে আলাপচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাঁদের নিয়ে তিনি একসঙ্গে কাজ করেন, যাঁরা তাঁকে বলে, ‘তুমি বাইরেই তাক। আমাদের তোমাকে বাইরেই দরকার। আমরা যেন তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারি, এখানে কী কী ঘটে চলেছে, তা যেন আমরা তোমাকে জানাতে পারি।’ দেড় বছর ধরে তিনি কথা বলে যাচ্ছেন তাঁর দেশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে ওয়াংগারি মাথাই — ২০০৪ সালের নোবেল পুরস্কার জয়ী। সবাই তাঁকে ডাকে “গাছ-মহিলা” বলে। কিন্তু তিনি গাছ মহিলার চেয়েও আরও অনেক কিছু। শান্তির জন্য কাজ করাটা খুব সৃজনশীল। এতে প্রতিদিনই কঠোর শ্রম দিতে হয়। যখন তিনি ঐসব গাছগুলো লাগাচ্ছিলেন, , আমার মনে হয় না বেশিরভাগ মানুষ সেসময় বুঝেছিল যে, একই সঙ্গে তিনি মানুষজনকে এই গাছ লাগানোর সঙ্গে সংযুক্ত করার মাধ্যমে, তাদের সঙ্গে নিজ দেশের কর্তৃত্বপরায়ন সরকারের হাত থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায়, সেই আলাপও করছিলেন। মানুষের একজায়গায় হওয়ার কোন সুযোগ ছিল না গ্রেফতার হওয়া বা জেলে যাওয়া পরিহার করে কিন্তু তারা একজায়গায় হয়ে যদি পরিবেশের জন্য গাছ লাগায়, তাহলে সেটা ঠিক আছে। এটা খুবই সৃজনশীল। শুধু প্রসিদ্ধ ব্যক্তিরাই নন, শিরিন, অং সাং সু চি, ওয়াঙ্গারি মাথাইয়ের মতো দুনিয়ার আরও অনেক নারী প্রতিনিয়ত একসঙ্গে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এই দুনিয়ার বদলের জন্য বার্মা নারী লীগ বার্মিজ নারীদের ১১টি স্বতন্ত্র সংগঠন একসঙ্গে কাজ করছে। কারণ সংখ্যায় শক্তি বাড়ে। একসঙ্গে কাজ করেই আমরা এই দুনিয়ার বদল ঘটাতে পারি। মিলিয়ন সিগনেচার ক্যাম্পেইন,y বার্মার নারীরা সম্মিলিতভাবে গড়ে তুলেছে, সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য। তাদের দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যখন একজনকে গ্রেফতার করা হয়, জেলে পোড়া হয়, তখন আরেকজন বেরিয়ে আসে, আন্দোলনে যুক্ত হয়। তারা এটা বুঝতে পেরেছে যে, যদি তারা একসাথে কাজ করে, তাহলেই শেষপর্যন্ত তারা পরিবর্তন আনতে পারবে নিজ দেশে মধ্যে মাইরেড ম্যাকগুইর, ডানপাশে বেটি উইলিয়ামস একসঙ্গে মিলে তাঁরা শান্তি আনছেন নর্দান আয়ারল্যান্ডে। খুব সংক্ষেপে একটা গল্প বলি। একজন আইআরএ গাড়ি চালককে গুলি করা হয়েছিল আর তার গাড়িটা ফেলে দেওয়া হয়েছিল পাশের সড়কের মানুষদের উপরে। ওখানে ছিল একটা মা ও তার তিন বাচ্চা। বাচ্চাগুলো ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিল। তিনি ছিলেন মাইরেডের বোন। এ ধরণের সহিংসতার মধ্যে পড়ে তীব্র শোক, হতাশা, পরাজয়ের বেদনায় মুষড়ে পড়ার বদলে মাইরেড ঝুলে গেলেন বেটির সঙ্গে। একজন গোঁড়া প্রোটেস্ট্যান্ড ও একজন গোঁড়া ক্যাথলিক। আর তারা রাস্তায় বেড়িয়ে পড়েছেন, “আর কোন সহিংসতা নয়” বলতে বলতে। আর তাঁরা সঙ্গে পেয়েছেন। হাজার হাজার মানুষকে, প্রথমদিকে বেশিরভাগই নারী, কিছু পুরুষ। তারা রাস্তায় নেমেছেন পরিবর্তনের জন্য। আর নর্দান আয়ারল্যান্ডে যে শান্তি এসেছে, সেটার পেছনে তাঁরাও রেখেছেন বড় ভূমিকা। আর তাঁরা এ নিয়ে এখনও কাজ করে চলেছেন। কারণ এখনও অনেক কিছু করার বাকি। এবার রিগোবেরটা মেঞ্চু টিম। তিনিও নোবেল পুরস্কার জয়ী। তিনি এখন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তিনি তাঁর দেশের আদিবাসী মানুষদের ধারণা দিচ্ছেন যে, গণতন্ত্র বলতে আসলে কী বোঝায়, কিভাবে দেশে গণতন্ত্র আনা যায়। তিনি তাদেরকে বলছেন ভোট দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে। কিন্তু এই গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট দেওয়াই না। এর মানে একজন সক্রিয় নাগরিক হওয়া। আমিও এইভাবে জড়িয়ে পড়েছিলাম, ল্যান্ডমাইন নিষিদ্ধ করার ক্যাম্পেইনে। কয়েকটি ব্যাপারের মধ্যে একটা, যে কারণে এই ক্যাম্পেইনটা কাজ করে যাচ্ছে, সেটা হলো আমরা মাত্র দুইটা এনজিও থেকে বিশ্বের ৯০টি দেশের হাজারটা এনজিওতে বেড়ে উঠেছি। ল্যান্ডমাইন নিষিদ্ধ করার সাধারণ দাবিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। এমনও মানুষ আছেন যারা আমাদের এই ক্যাম্পেইনে কাজ করেছে প্রতিদিন একঘন্টা, একমাস ধরে। তারা হয়ত এটুকু স্বেচ্ছাশ্রমই দিতে পারত। আবার আমার মতো সার্বক্ষনিক কর্মীও আছে। কিন্তু যা এখানে মুখ্য বিষয়, তা হলো সক্রিয়তা, একসঙ্গে, আমাদের সবার। যে পরিবর্তনটা আমরা আনতে চাই, সেটা নিয়ে। আমার দৃষ্টিতে, আজকের দিনে আমাদের এমন মানুষ দরকার, যে উঠে দাঁড়াবে আর সক্রিয় হবে শান্তি প্রত্যয়টার যথার্থ অর্থ তুলে ধরে এটা খুবই বাজে একটা দুনিয়া না। এটা প্রতিটা দিনই খুব কঠোর পরিশ্রম করার প্রশ্ন। আর যদি আমাদের সবাই, যারা ভিন্ন ধরণের জিনিসপত্র নিয়ে ভাবে, আর সেগুলো কার্যকর করার জন্য স্বেচ্ছাশ্রম দেয়, যে যেটুকু সময় পারে, তাহলে আমরা এই দুনিয়াটা বদলাতে পারব। আমরা এই দুনিয়াটাকে রক্ষা রতে পারব। আর আমরা অন্য কারও জন্য অপেক্ষা করতে পারি না। আমাদের নিজেদেরই এটা করতে হবে। ধন্যবাদ। হাততালি এখানে আসতে পেরে আমি ভীষন ভাগ‍্যবান। নিজেকে সতি‍্য অনেক সৌভাগ‍্যবান মনে হচ্ছে। এখানে আমার প্রতি যে সহানুভূতি প্রদর্শীত হয়েছে তাতে আমি অভিভূত। আমি আমার স্ত্রী লেসলি কে ডাকলাম, এবং ওকে বললাম, "তুমি জানো, এখানে কত ভাল মানুষ যে কত ভালো ভালো কাজ করার চেষ্টা করছেন। আমার মনে হয় আমি একদল দেবতার রাজে‍্য এসে হাজির হয়েছি।" এটা একটা বাস্তব অনুভূতি। যাইহোক আমি আসল কথায় ফিরি -- ঘড়ি তো আর বসে নেই। আমি একজন সরকারি স্কুল শিক্ষক, এবং আমি শুধু আমার সহকারির একটা গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। ওর নাম প‍্যাম মোরান ভার্জিনিয়ায়, আলবেমারলে কাউন্টি তে, ওই ব্লু রিজ পর্বতমালার পাদদেশে। ও ভিষণ হাই-টেক সহকারী। ও স্মার্ট বোর্ড ব‍্যবহার করে, ব্লগ লেখে, টুইট করে, ফেসবুক দেখে, ও এই যাবতিয় হাই-টেক কাজগুলো করে। ও একজন প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ িবষয়ক লিডার। কিন্তু তার অফিসে পুরোনো কাঠের, ক্ষয়ে যাওয়া টেবিল আছে, কিচেন টেবিল -- মুছে যাওয়া সবুজ রং, এই ভেঙ্গে পড়ল বলে মনেহয়। আমি বললাম, "প‍্যাম, তুমি এরকম আধুনিক, চৌকস একজন মানুষ কিন্তু এই পুরোনো টেবিলটা তোমার অফিসে কেন?" ও আমাকে বললো, "তুমি জানো, আমি সাউথওয়েস্টার্ন ভার্জিনিয়ায় বড় হয়েছি, ভার্জিনিয়ার গ্রামের কয়লা খনি আর চাষের ক্ষেতে বেড়ে উঠেছি, আর এই টেবিল ছিল আমার দাদার রান্নাঘরে। আমরা খেলাধুলা করে ফিরতাম, আর উনি ফিরতেন লাঙ্গল টেনে, কাজ সেরে, তারপর আমরা সবাই এই টেবিলটার চারপাশে বসতাম। আর বড় হওয়ার সাথে সাথে, আমি অনেক জ্ঞান বিজ্ঞানের কথা শুনি অনেক অন্তর্দৃষ্টি এবং প্রজ্ঞার কথা এসেছে এই টেবিলটার ওপাশ থেকে, আমি এই টেবিলটা কে প্রজ্ঞা টেবিল ডাকা শুরু করি। উনি যখন মারা যান, আমি এই টেবিলটা আমার অফিসে নিয়ে আসি, টেবিলটা আমাকে উনার কথা মনে করিয়ে দেয়। আর মনে করিয়ে দেয় এই ফঁাকা যায়গাটার চারপাশের সব ঘটনাগুলো।" আমি আপনেদেরকে যে প্রজেক্ট-এর কথা বলব সেটা হচ্ছে বিশ্ব শান্তি গেম, এবং কার্যত এইটাও একটা ফাঁকা যায়গা। আমি এটাকে ভাবতে ভালোবাসি.. ২১ শতকের জ্ঞানের টেবিল হিসেবে, সতি‍্যই। এই সবই শুরু হয়েছিল সেই ১৯৭৭ সালে। আমি তখন যুবক, এবং আমি তখন কলেজ ছাড়ছি আর ঢুকছি। আর আমার বাবা-মা ছিলেন ভীষণ ধৈর্য‍্যশীল, কিন্তু আমি তখন ভারতে অনিয়মিত ভাবে অবস্থান করছিলাম এক রহস‍্যময় অন্বেষণে। আমার মনে আছে আমি যখন শেষ বার ভারত থেকে ফিরলাম -- আমার লম্বা সাদা আলখাল্লা পরে সাথে বিশাল দাড়ি আর জন লেননের মত চশমা পরে, আমি বাবাকে বলেছিলাম, "বাবা, আমার ধারণা, আমি মনেহয় আধ‍্যাত্বিক প্রজ্ঞা খুঁজে পেয়েছি।" উনি বলেছিলেন, "যাইহোক আরো একটি জিনিস আছে যা তোমায় খুজতে হবে।" আমি বললাম, "বাবা, কী সেটা?" উনি বললেন "একটা চাকরি।" (হাসি) তো উনারা আমাকে কোন একটা ডিগ্রি নেয়ার বেপারে আকুতি জানালেন। তাই আমি নিলাম একটা ডিগ্রি এবং সেটা হোল শিক্ষার ওপর । এটা ছিল একটি পরীক্ষামূলক শিক্ষা কার্যক্রম। এইটা দঁাতের ডাকতারিও হতে পারত, কিন্তু ওই "পরীক্ষামূলক" শব্দটা সেখানে ছিল, আর তাই ওই কার্যক্রমে আমাকে যেতে হয়েছে। তারপর আমি একটা চাকরির ইন্টারভিউতে গেলাম ভার্জিনিয়ার রিচমন্ড পাবলিক স্কুলে, রাজধানী শহরে, একটা থ্রি-পিস সু‍্যট কিনলাম -- এই কর্মকান্ডে আমার প্রাপ্তি, আমার লম্বা দাড়িটা ছিল আর ছিল ঘন পঁেচানো চুল আর আমার প্ল‍্যাটফর্ম জুতা -- তখন ছিল ৭০ এর দশক -- আমি ঢুকলাম, বসলাম এবং আমার ইন্টারভিউ নেয়া হলো। এবং আমার ধারনা ওদের শিক্ষক নিয়গ দেয়া খুব দরকার ছিল, কারন ওখানে যে সুপারভাইজার ছিলেন, উনার নাম অ‍্যানা অ‍্যারো, বলেছিলেন আমি অসাধারণ প্রতিভাবান শিশুদের শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছি। এবং আমি এত হতবাক আর বিস্মিত হয়েছিলাম, আমি উঠে দাড়ালাম এবং বললাম, "যাইহোক, আপনাকে ধন‍্যবাদ, কিন্তু আমার কাজটা কী?" (হাসি) আলাদাভাবে প্রতিভাবান শিশুদের শিক্ষার বেপারটা তেমন গড়ে উঠেনি। আসলেও তেমন ব‍্যবহার উপযোগী কোন শিক্ষা উপকরণ ছিল না। তাই আমি বললাম, "আমি কী করব?" এবং উনার উত্তর আমাকে অবাক করেছিল। বিস্মিত করেছিল। উনার উত্তরটাই আমার পথ বেঁধে দিয়েছিল -- এরপরে আমার পুরো পেশাগত জীবনে ঐ কথাটাই মাথায় রেখেছি। উনি বলেছিলেন, "তুমি কী করতে চাও?" এবং ঐ প্রশ্নটাই সামনের পথ খুলে দিল। সেখানে কোন প্রোগ্রামের নিয়ম কানুন ছিল না, কোন নির্দেশিকাও ছিল না, প্রতিভাবানদের শিক্ষার স্ট‍্যান্ডার্ডও ছিল না -- সে রকম। এবং উনি এমন একটা পথ খুলে দিলেন, এর পর থেকে আমার যাত্রা চলতে থাকলো আমার ছাত্রদের পথ খুলে দেয়ার যাত্রা, ফঁাকা জমি তৈরির যাত্রা, যেখানে তারা সৃষ্টি করে, উপলব্ধি করে তাদের নিজেদের বোধ থেকে। এই ঘটনা ১৯৭৮ এর, এবং এরপর আমি আরও অনেক বছর শিক্ষকতা করেছি, আমার এক বন্ধু আমাকে এক নবীন ফিল্ম নির্মাতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তঁার নাম ক্রিস ফারিনা। ক্রিস ফারিনা তার নিজের পয়সায় আজকে এখানে এসেছে। ক্রিস, তুমি কি উঠে দঁাড়াবে যেন অন‍্যরা দেখতে পায় -- একজন স্বল্প বয়সী, দূরদর্শী ফিল্ম নির্মাতা, যে একটি ছবি বানিয়েছে। (তালি) এই চলচ্চিত্রটির নাম "বিশ্ব শান্তি এবং ৪র্থ শ্রেণীর অন‍্যান‍্য অর্জণ" ও আমাকে ছবিটি করার প্রস্তাব দেয় -- নামটা খুব ভালো হয়েছে। ও আমাকে ছবিটি করতে বলল, এবং বলল, "হঁা, হয়ত ছবিটি স্থানীয় টেলিভিশনে দেখাবে, এবং আমরা আমাদের বন্ধুদেরকে শুভেচ্ছা জানাতে পারব।" কিন্তু ছবিটি আসলেই অসংখ‍্য যায়গায় গেছে। এটি এখনো ঋণের মধে‍্য আছে, কিন্তু ক্রিস ব‍্যবস্থা করেছে, নিজে ত‍্যাগ স্বীকার করে, এই ছবিটি শেষ করতে। তো আমরা একটা সিনেমা বানালাম এবং দেখা গেল এটা শুধুমাত্র আমার গল্পের চেয়ে বেশি কিছু, শুধু একজন শিক্ষকের গল্পের চেয়ে বড়। এ এমন এক গল্প যা সমগ্র শিক্ষক এবং শিক্ষকতার সাক্ষ‍্য দেয়। এটি একটি সুন্দর জিনিস। এবং আজব বেপার হচ্ছে, যখন আমি ছবিটা দেখি -- আমার একটা ভয়ের অনুভূতি হয়েছিল দেখার সময় আমি নিজেকে আসলেও অদৃশ‍্য হয়ে যেতে দেখলাম। আমি দেখলাম যে আমার শিক্ষকেরা আমার মাঝ থেকে ফুটে উঠছে। দেখলাম, আমার হাই স্কুলের জ‍্যামিতি শিক্ষক মি. রাসেল এর সাইকেলের হাতলের মত গঁোফের নিচ দিয়ে বঁাকা হাসি। ওই হাসিটাই আমি হাসি -- ওটা উনার হাসি। আমি দেখলাম জ‍্যান পোলো'র ঝলকানো চোখ। এবং সেগুলো রাগে ঝলকায়নি, চোখদুটো চকচক করছিল ভালোবাসায়, ছাত্রদের প্রতি তঁার গভীর ভালোবাসা থেকে। আর আমারও মাঝে মাঝে এমন চোখ চকচক করে ওঠে। এবং আমি দেখলাম মিস এথেল জে. ব‍্যাংক্স কে যিনি মুক্তার গহনা আর হাই হীল জুতা পরে এলিমেনটারি স্কুলে আসতেন রোজ। আর উনার ছিল সেই প্রাচীন স্কুল শিক্ষকদের মত চাহনী। আপনারা জানেন আমি কোন চাহনীর কথা বলছি। (হাসি) "এবং আমি আমার পেছনে তোমাকে নিয়ে কথাও বলছি না, কারণ আমার মাথার পেছনেও চোখ আছে।" (হাসি) আপনারা সেই শিক্ষককে চেনেন তো? আমি ওই চাহনী খুব বেশি ব‍্যবহার করি না, কিন্তু ওই দৃষ্টি আমার ঝুলিতে মজুদ আছে। আর মিস ব‍্যাংক্স আমার গুরু হিসেবে সবসময় ছিলেন। আর তারপর আমি দেখলাম আমার নিজের বাবা-মা কে, আমার প্রথম শিক্ষক তঁারা। আমার বাবা, ভীষণ আবিষ্কার প্রবণ, স্পেস বিষয়ক চিন্তাবিদ। আর ও হচ্ছে আমার ভাই ম‍্যালকম, ওই যে ডান দিকে। এবং আমার মা, যিনি আমাকে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়িয়েছিলেন ভার্জিনিয়ার একটি বিচ্ছিন্ন স্কুলে, উনি ছিলেন আমার অনুপ্রেরণার উৎস। আর সতি‍্য, আমার এমন অনুভূতি হয়, যখন আমি সিনেমাটি দেখি -- আমার একটা ভঙ্গি আছে উনি করেন, এই রকম -- আমার মনে হয় আমি হচ্ছি উনার সব ভঙ্গিগুলোর ধারাবাহিক রুপ। আমি হচ্ছি উনার িশক্ষকতার এক ভঙ্গি। এবং সুন্দর জিনিসটা হল, আমি আমার মেয়েকে এলিমেন্টারি স্কুলে পড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলাম, মেডেলিন-এ। আর এভাবে আমার মা'এর ভঙ্গিগুলো অনেক প্রজন্মের মাঝে বহাল রয়ে যাচ্ছে। এটা একটা অদ্ভুত অনুভূতি এই পারিবারিক পরম্পরার ব‍্যপারটা। তাই আমি এখানে দঁাড়িয়ে আছি অনেক মানুষের কঁাধে ভর করে। আমি এখানে একা নই। এই মঞ্চে আজ অনেকেই আছেন। এবং এই বিশ্ব শান্তি গেমটি যা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই। এটা এভাবে শুরু হয়েছিলঃ এইটা মাত্র একটা চার-ফুট বাই চার-ফুট এর একটা প্লাইউড বোর্ড ১৯৭৮ সালে, মধ্য-শহরের একটা শহুরে স্কুলে। আমি আফ্রিকার ছাত্রদের জন‍্য একটা পাঠ তৈরি করছিলাম। আমরা সেখানে দুনিয়ার সমস্ত সমস‍্যাগুলোকে ঢুকাই, তারপর ভাবলাম, ওদেরকেই এগুলোর সমাধান করতে দিই। আমি লেকচার দিতে চাইনি অথবা শুধু বই পড়তে দিতে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম ওরা মিশে যাক এবং ওরা ওদের নিজেদের মাধ‍্যমেই শেখার অনুভূতিটা রপ্ত করুক। তো আমি ভাবলাম, ওরা তো গেম খেলতে ভালোবাসে। আমি কিছু একটা বানাব -- আমি অবশ‍্য বলিনি সেটা ইন্টার‍্যাকটিভ হবে। এই ইন্টার‍্যাকটিভ শব্দটি ১৯৭৮ সালে ব‍্যবহার হত না -- কিন্তু সেটি আসলে ইন্টার‍্যাকটিভ ছিল। তো আমরা গেমটি বানালাম, এবং তারপর থেকে সেটি বেড়ে উঠছে একটা চার-ফুট বাই চার-ফুট বাই চার-ফুট প্লেক্সিগ্লাস কাঠামো তে। এর আছে চারটি প্লেক্সিগ্লাস লেয়ার। এর একটা বাইরের দিকের লেয়ার আছে সাথে আছে কৃষ্ণগহ্বর আর স‍্যাটেলাইট এবং আছে গবেষণা স‍্যাটেলাইট আর মহাজাগতীক বস্তুর খনি। আছে আকাশ এবং মহাকাশ বিভাগ সাথে বড় বড় তুলার মেঘ যেগুলো আমরা এদিক সেদিক নাড়াই আছে আঞ্চলিক আকাশ সীমা এবং বীমান বাহিনী, একটি ভূমি এবং সমূদ্র সমতল আছে যেখানে গেমের হাজার হাজার খেলনা আছে -- এমনকি একটি সাগরতলের বিভাগও আছে সাথে আছে সাবমেরীন আর সমূদ্রতলবর্তী খনি। বোর্ডের চারপাশ জুড়ে চারটি দেশ আছে। বাচ্চারাই দেশগুলোর নাম ঠিক করে -- কিছু দেশ ধনী আর কিছু গরীব। তাদের বিভিন্ন সম্পদ আছে, বানিজি‍্যক এবং সামরিক। এবং প্রতে‍্যক দেশের একটি পরিচলনা পরিষদ আছে। সেখানে আছেন একজন প্রধান মন্ত্রী, সরাষ্ট্র সচিব, প্রতীরক্ষা মন্ত্রী এবং একজন সি.এফ.ও, অথবা অর্থ সচিব। আমি প্রধান মন্ত্রীর পদটা বেছে দেই ওদের সাথে আমার সম্পর্কের ভিত্তিতে। আমি তাদের দায়ীত্বের প্রস্তাব দিই, ওরা ইচ্ছা করলে তা না করতে পারে, এবং তখন তারা কেবিনেটে তাদের নিজেদের পদ নিজেরা বেছে নেয়। এখানে একটা বিশ্ব ব‍্যাংক আছে, অস্ত্র ব‍্যবসায়ী আছে এবং জাতিসংঘ আছে। একজন আবহাওয়ার দেবীও আছে যে দৈব পরিবর্তণশীল স্টক মার্কেট এবং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। (হাসি) এই শেষ নয়। এরপর আছে একটি ১৩ পাতার সমস‍্যবলীর ডকুমেন্ট যাতে ৫০ টি সমন্বীত সমস‍্যা আছে। যেন, এর মধে‍্য যদি একটা জিনিস বদলায় তো বাকী সব কিছুও বদলাবে। আমি ওদেরকে এই জটিলতার জালের মধে‍্য ফেলে দিই। ওরা আমার উপর আস্থা রাখে কারণ আমাদের মধে‍্য একটি সুগভীর, গাঢ় সম্পর্ক আছে। এবং এই এতসব সমস‍্যার সাথে, আমাদের -- যেমন -- জাতিগত এবং সংখ‍্যালঘু সংক্রান্ত উত্তেজনা রয়েছে; আমাদের আছে রাসায়নিক এবং পারমাণবিক দূষণ পারমাণবিক বিকীরণের বৃদ্ধি। সাগরে তেল নিসরণ, পরিবেশগত বিপর্যয়, জলসীমা সংক্রান্ত বিতর্ক, প্রজাতন্ত্রগুলোর ভাঙ্গন, ক্ষুধা-মহামারি, বিলুপ্তপ্রায় পশুপাখি এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। যদি আল গোর এখানে থাকেন, আমি অ‍্যাঙ্গোর-হার্ট এবং ভেনাবল স্কুল থেকে আমার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রদের আপনার কাছে পাঠাব কারণ ওরা পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার সমস‍্যা এক সপ্তাহে সমাধান করেছে। (হাসি) (তালি) এবং ওরা এইটা অসংখ্য বার করেছে। (হাসি) তো গেমের মধে‍্য আমার একজন অন্তর্ঘাতক আছে -- কোন একজন বাচ্চা -- সাধারণত কোন দুষ্টু বাচ্চা -- এবং আমি আমার দুষ্টু বাচ্চাদের কাজে লাগাই কারণ ওরা, বাহ্যত, গেমের মধে‍্য ওদের অবস্থান এবং দুনিয়াকে রক্ষা করছে। এবং ওরা গেমের সবকিছুর ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। ওরা চুপিসারে ভুল তথে‍্যর মাধ‍্যমে এটা করে থাকে এবং অসংলগ্ন আর অপ্রাসঙ্গিক তথে‍্যর মাধ‍্যমে, ওরা সবাইকে আরও গভীর ভাবে চিন্তা করাচ্ছে। অন্তর্ঘাতকেরা আছে, এবং আমরা সু জান এর 'দি আর্ট অফ ওয়ার' বইটিও পড়ি। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্ররা তা বুঝতে পারে -- নয় বছর বয়সী -- এবং ওরা এটি নিয়ন্ত্রণ ও ব‍্যবহার করতে পারে বুঝতে পারে কিভাবে, অনুসরণ না করা যায় -- শুরুতে ওরা অনুসরণ করে -- ক্ষমতা এবং ধ্বংসের পথ, যুদ্ধের পথ। ওরা অদুরদর্শী প্রতিকৃয়াগুলো এবং আবেগ তাড়িত চিন্তাগুলো উপেক্ষা করতে শেখে, ওরা সুদূর প্রসারী চিন্তা করাতে শেখে আরও সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে। স্টুয়ার্ট ব্র‍্যান্ড এখানে আছেন, এবং এই গেমের একটা আইডিয়া উনার কাছ থেকে এসেছে কোইভোলু‍্যশন ত্রৈমাসিক পত্রিকায় একটা লেখা শান্তিরক্ষী বাহিনী সম্পর্কে। এবং এই গেমে, মাঝে মাঝে ছাত্ররা সতি‍্য সতি‍্য শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠন করে। আমি কেবল মাত্র সময় দেখি। আমি শুধুমাত্র একজন পথ পরিষ্কারক, ব‍্যবস্থাপক। ছাত্ররায় গেমটি চালায়। আমার কোন ধরণের নীতি নির্ধারণী ক্ষমতা থাকে না-- যেই মাত্র ওরা খেলা শুরু করে। তো আমি আপনাদেরকে দেখাতে চাই... (ভিডিও) ছেলে: বিশ্ব শান্তি গেম ছেলেখেলা নয়। আপনি আসলে সারা বিশ্বের দেখভাল করতে হয় কিভাবে তার শিক্ষা পাচ্ছেন এ থেকে। দেখুন মি. হান্টার এটি করছেন কারন তিনি বলেন তার সময়টা অনেক বিশৃঙ্খলায় ভরা, এবং উনি আমাদেরকে বলতে চাচ্ছেন কিভাবে এই সমস‍্যা ঠিক করা যায়। জন হান্টার: আমি ওদেরকে দিয়েছিলাম একটি -- (তালি) আসলে, আমি ওদেরকে কিছু বলতে পারিনা, কারন আমি উত্তরটা জানিনা। এবং আমি তাৎক্ষণিক ওদেরকে সতি‍্যটা বলে দিই যে: আমি জানিনা। এবং যেহেতু আমি জানিনা, ওদেরকেই এই উত্তর খুজে বের করতে হবে। আর তাই আমি ওদের কাছ থেকে ক্ষমাও চেয়ে নিই। আমি বলি, "ছেলেমেয়েরা, আমি খুবই দুক্ষিত, কিন্তু সত‍্যটি হচ্ছে আমরা তোমাদের কাছে এই পৃথিবীটা এমন দুঃক্ষভারাক্রান্ত এবং বাজে অবস্থায় রেখে গেছি, এবং আমরা আশা করি তোমরা একে আমাদের জন‍্য ঠিক করে দিতে পারবে, এবং হয়ত এই গেমটি তোমাদেরকে এই কাজ কিভাবে করতে হয় তা শিখতে সাহায‍্য করবে।" এটি একটি একান্ত ক্ষমা প্রার্থণা, এবং ওরা এটিকে খুবই গুরুত্বের সাথে নেয়। এখন আপনারা হয়ত ভাবছেন এই যাবতিয় জটিলতা আসলে দেখতে কেমন হয়। আসলে গেমটি যখন শুরু হয়, এই হচ্ছে সেই চেহারা (ভিডিও) জ.হা: আচ্ছা, আমরা এখনকারমত আলোচনায় আসি। যাও (কথাবার্তা) জ. হা: তোমাদের কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই ক্লাসরুমের দায়িত্বে এখন কে আছে? এটি একটি গুরুতর প্রশ্ন: আসলেই দায়িত্বে কে আছে? আমি ক্লাসরুমের দায়িত্বটা ছাত্রদের উপর ছেড়ে দিতে শিখেছি ধীরে ধীরে। এর মাঝে একরকম বিশ্বাস এবং বোঝাপড়া আছে এবং নীতির প্রতি আস্থা আছে যা আমাকে এমনিতেই করতে হয় না আমি একজন নতুন শিক্ষক হিসেবে ভেবেছিলাম, আমাকে: ক্লাসরুমের প্রতে‍্যকটি কথপকথন এবং প্রতিকৃয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটি অসম্ভব। ওদের সম্বিলিত জ্ঞান আমার জ্ঞানের চেয়ে অনেক বেশি, এবং ওদের কাছে আমি প্রকাশে‍্য এটি স্বীকার করি। তো আমি আপনাদের সাথে দ্রুত কয়েকটি গল্প বলতে চাই কিছু রূপকথার মত ঘটনার গল্প। এই গেমে আমাদের সাথে ছিল একটি ছোট্ট মেয়ে, এবং ও ছিল সবচে গরীব দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রি প্রতিরক্ষা মন্ত্রি -- ওর ছিল ট‍্যাংক দল এবং বিমান বাহিনী এগুলো। এবং ও ছিল ভিষণ ধনী, তেল সমৃদ্ধ একটি দেশের প্রতিবেশি। কোন প্ররচণা ছাড়াই, হঠাৎ করে ও আক্রমণ করে বসল, ওর প্রধানমন্ত্রীর আদেশের বিরুদ্ধেই, ঐ পাশের দেশের তেল খনিগুলোতে, ও তেল খনির মজুদগুলোর ভেতরে মার্চ করে ঢুকল, চারপাশ ঘিরে ধরল, একটাও গুলি না চালিয়ে, দখল করল এবং আয়ত্বে রাখল। এবং ওই প্রতিবেশি রাষ্ট্র কোন ধরণের সামরীক তৎপরতা নিতে ব‍্যর্থ হল কারন ওদের যাবতিয় তেলের সরবরাহ তো বন্ধ হয়ে ছিল। আমরা সবাই ওর প্রতি মনক্ষুন্ন, "তুমি কেন এরকম করছ? এটা বিশ্ব শান্তি গেম। তোমার সমস‍্যাটা কী?" (হাসি) ও ছিল একটা ছোট মেয়ে, ওর নয় বছর বয়সে, গেমের যন্ত্রগুলো ধরে বলল, "আমি জানি আমি কী করছি।" ও এটা ওর মেয়ে বন্ধুদের বলেছিল। এর মধে‍্য একটা ফঁাক ছিল। এবং আমরা এ থেকে শিখলাম, আপনি আসলেই ট‍্যাংকওয়ালা এক নয় বছর বয়সী মেয়ের ধারে কাছে যেতে চাইবেন না। (হাসি) ওরা হচ্ছে কঠিনতম প্রতিপক্ষ। এবং আমরা খুবই মনক্ষুন্ন হলাম। আমি ভাবলাম আমি শিক্ষক হিসেবে ব‍্যর্থ হয়েছি। ও কেন এমন করবে? কিন্তু আমি গেমের আর কয়েকদিন পর দেখতে পেলাম -- এরকম সময় আসে যখন আমরা একটি দলের সাথে সমঝতার আলচনা করি -- আসলে সবগুলো দলের সাথেই আলাপ আলোচনার একটি সময় আছে, এবং প্রতে‍্যকটি দল এই সুযোগ পায়, এবং তখন আমরা বারবার আলাপ আলোচনা চালাতে থাকি, এভাবে একটি গেমের দিনে একটি দলের ভাগ পড়ে। তো গেমের কয়েক দিন পরে জানা গেল যে ওই ধনী রাষ্ট্রটি একটি সামরীক নীল নকশা করছিল সারা পৃথিবীকে শাসন করার জন‍্য। ওদের যদি শুধু তেলের সরবরাহ থাকত, তাহলে ওরা এটা করে ফেলত। ওই মেয়েটি ভেক্টর লাইন এবং ট্রেন্ড লাইন দেখে ওদের উদ্দেশ‍্য বুঝতে পেরেছিল আমাদের চেয়ে অনেক আগেই এবং বুঝতে পেরেছিল কী ঘটতে যাচ্ছে এবং ও একটি দার্শনীক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল একটি শান্তির গেমে আক্রমণ করে। এবং ও ক্ষুদ্র একটি যুদ্ধকে ব‍্যবহার করে বৃহৎ যুদ্ধকে নিবৃত করেছিল, তাই আমরা থামলাম এবং ভালো একটি দার্শনিকতাপূর্ণ আলোচনা হলো যে ওই ঘটনাটি ঠিক ছিল কিনা, শর্তপূর্ণ ভালো, নাকি ভুল। ওদেরকে যেসব চিন্তার মধে‍্য দিয়ে যেতে হয় এই হচ্ছে তার নমুনা, এবং পরিস্থিতি। আমি যদি এগুলো শিখাতে যেতাম তাহলে এমন করে ডিজাইন করা হত না। এইটা ওদের সম্মিলিত জ্ঞানের মধে‍্য দিয়ে স্বঃতস্ফুর্তভাবে এসেছে। (তালি) আরেকটি উদাহরণ, একটি খুবই সুন্দর ঘটনা ঘটেছিল। গেমে আমাদের একটি চিঠি আছে। তুমি যদি একজন সামরীক কমান্ডার হও এবং সেনাদল পরিচালনা কর -- বোর্ডের উপরে ওই ছোট্ট প্লাস্টিকের খেলনাগুলো -- এবং তুমি যদি ওদেরকে হারাও আমি ওদের কথা চিঠিতে রাখি। তোমাদেরকে ওদের বাবা-মা কে চিঠি লিখতে হবে -- তোমার কাল্পনিক সেনাদলের কাল্পনিক পিতামাতা -- ব‍্যাখ‍্যা করা হয় যুদ্ধে কী ঘটেছিল, পুরস্কার সমগ্রী এবং স্বান্তনার কথা। তাহলে তোমার যেন আরেকটু বেশি চিন্তা করতে হয় যুদ্ধ শুরু করার আগে। এবং এভাবে আমাদের এক পরিস্থিতির উদ্ভব হল -- এই গতবছর গরমের সময়, আলবেমারলে কাউন্টির অ‍্যাঙ্গোর-হার্ট স্কুলে -- আমাদের সামরীক কমান্ডারদের একজন উঠে দঁাড়ালো ওই চিঠিটি পড়ার জন‍্য এবং আরেকজন বাচ্চা উঠে দঁাড়াল এবং বলল, "মি. হান্টার, চলুন জিজ্ঞেস করি -- এখানে একজন অভিভাবক উপস্থিত আছেন।" সেদিন একজন অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন, উনি এমনিই ঘরের পেছন দিকে বসে ছিলেন। "চলুন আমরা ওই মা কে অনুরোধ করি চিঠিটি পড়ার জন‍্য। এটি যদি উনি পড়েন তাহলে ব‍্যপারটা আরও বাস্তব হয়ে উঠবে।" তো আমরা তাই করলাম, উনাকে বললাম, উনি খেলার ছলে চিঠিটি তুলে নিলেন। "অবশ‍্যই।" উনি পড়া শুরু করলেন। উনি একটি বাক‍্য পড়লেন। দুইটা বাক‍্য পড়লেন। তৃতীয় বাক‍্যটি পড়ার সময় উনি কঁেদে ফেললেন। আমার চোখেও পানি। সবাই বুঝল যখন আমরা কাওকে হারাই, বিজয়ীরা সেই মৃত‍্যুতে উল্লাস করে না। আমরা সবাই আসলে হারি। এটি একটি অসাধারণ ঘনটা এবং এক অদ্ভুত অনুধাবন। এ বেপারে আমার বন্ধু ডেভিড কী বলে সেটি আমি আপনাদেরকে দেখাব। ও অনেক যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করেছে। (ভিডিও) ডেভিড: আমাদের আসলেও যথেষ্ট পরিমান মানুষ ছিল আক্রমণের জন‍্য। মানে, আমরা আসলে বেশির ভাগ সময় ভাগ‍্যবান ছিলাম। কিন্তু এখন আমি আসলেই খুব আজব এটকা অনুভূতি হচ্ছে, কারন সান জু এক সপ্তাহে আমাকে যা বলেছিল আমি এখন সেই অবস্থায় আছি। কোন এক সপ্তাহে ও বলেছিল, যারা যুদ্ধে যায় এবং জিতে তারা আবার যুদ্ধে যেতে চাইবে, এবং যারা যুদ্ধে হারে তারা আবার যেতে চাইবে জেতার জন‍্য।" এবং আমি যুদ্ধে জিতছি, তাই আমি যুদ্ধে যাচ্ছি, আরও অনেক যুদ্ধে। এবং আমার মনেহয় এমন হয়ে ওঠাটা একটু অদ্ভুত যেমনটা সান জু বলেছিল। জ.হা: যতবার এটা দেখি আমি আমি শিহরীত হয়। এমন ধরনের ঘটনাই ঘটুক এমনটা চাইবেন আপনারা। এবং আমি সেটা ডিজাইন করতে পারি না, পরিকল্পনা করতে পারিনা, এবং এমনকি এটার টেস্টও করতে পারিনা। শুধু এটার স্বকীয় মূল‍্যায়ন করা যায়। আমরা জানি এটি শিক্ষার একটি আসল মূল‍্যায়ন। আমােদর কাছে প্রচুর তথ‍্য আছে, কিন্তু আমার ধারনা মাঝে মাঝে আমরা তথ‍্যকে ছাড়িয়ে যাচ্ছি বাস্তবে যা ঘটছে সেই সতে‍্যর কাছে পৌঁছাচ্ছি। আমি শুধু আমার তৃতীয় গল্পটি বলব। আমার বন্ধু ব্রেনানকে নিয়ে গল্প। আমারা স্কুলের পর এক সেশন খেলেছিলাম অনেক সপ্তাহ, প্রায় সাত সপ্তাহ, এবং আমরা ৫০ টি সমন্বীত সমস‍্যার সমাধান করে ফেললাম। এবং গেমটি যেভাবে জিততে হয়, পুরো ৫০ টি সমস‍্যাই সমাধান করতে হয় এবং প্রতে‍্যকটি দেশের সম্পদের পরিমাণ শুরুতে যা ছিল তারচে বাড়তে হবে। কেউ গরীব, কেউ ধনী। এমন অসংখ‍্য আছে। একবার বিশ্ব ব‍্যাংক এর প্রেসিডেন্ট ছিল এক তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। ও বলল, "ট্রিলিয়ন লিখতে কয়টা শুন‍্য লাগে? আমাকে এক্ষুনি এটা হিসাব করতে হবে।" কিন্তু ও গেমে অর্থনৈতিক নীতিমালা নির্ধারণ করছিল হাইস্কুলের যে ছাত্ররা ওর সাথে খেলছিল তাদের জন‍্য। তো যে দলটা সবচে গরীব ছিল তারা আরও গরীব হয়ে গেল। ওদের জয়ের কোন সম্ভাবনাই ছিল না। আর আমাদের ঘড়ি চারটার দিকে এগুচ্ছিল, আমাদের শেষ করার সময় -- তখন এক মিনিটমত বাকী ছিল -- আর পুরো ঘরজুড়ে তখন হতাশা জেঁকে বসেছে। আমার মনেহল, শিক্ষক হিসেবে আমি ব‍্যর্থ হতে চলেছি। আমার এইটা বোঝা উচিৎ ছিল যেন ওরা জিততে পারে। ওদের এরকম হেরে হওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। আমার কারনেই ওরা হেরে যাচ্ছে। আমি ভিষণ মনখারাপ হচ্ছিল এবং বিষন্ন মনে হচ্ছিল। এবং হঠাৎ, ব্রেনান আমার চেয়ারের পাশদিয়ে হেঁটে গেল ও ঘন্টাটি হাতে নিল, আমি যে ঘন্টাটি বাজাই কেবিনেটের কোন পরিবর্তন অথবা পুনঃআয়োজনের সংকেত হিসেবে, এবং ও তার চেয়ারে ফিরে গেল, ঘন্টাটি বাজালো। সবাই ওর চেয়ারের পাশে ছুটে গেল, চারপাশে চলছিল চিৎকার, হইচই চলছিল, সবাই তাদের কাগজপত্রগুলো উড়াচ্ছিল। ওরা অনেক কাগজপত্র পায় যেগুলোতে বিভিন্ন গোপন তথ‍্য থাকে। ওরা হাত-পা ছুড়াছুড়ি করছিল, দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াচ্ছিল। আমি জানতাম না ওরা কী করছিল। আমি আমার ক্লাসরুমের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম। প্রিন্সিপ‍্যাল আসলেন, আমি বোধহয় চাকরি হারাচ্ছি। অভিভাবকেরা জানালা দিয়ে তাকাচ্ছিলেন। এবং ব্রেনান তার চেয়ারের দিকে ফিরে গেল। সবাই তাদের যার যার আসনে ফিরে গেল। সে আবার ঘন্টা বাজাল। আর বলল, "আমাদের আছে" -- এবং ঘড়িতে ১২ সেকেন্ড বাকি ছিল -- "আমরা সবগুলো দেশ আমাদের যাবতিয় তহবিল একসাথে জড় করেছি। আমরা ৬০০ বিলিয়ন ডলার পেয়েছি, আমরা এই টাকা ওই গরীব দেশটিকে অনুদান হিসেবে দিতে চাই। এবং ওরা যদি তা গ্রহণ করে, তাহলে এটা ওদের সম্পদের মান বাড়াবে এবং আমরা গেমটি জিততে পারি। আপনি কি সম্মত হবেন?" ঘড়িতে তখন তিন সেকেন্ড বাকী আছে। সবাই তখন সেই দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে, এবং ও বলল, "হাঁ" এবং ওই গেমটি জেতা হল। স্বতঃস্ফুর্ত সমবেদনা এটি কখনো পরিকল্পনা করে হয়না, এটি ছিল অপ্রত‍্যাশিত এবং অনিশ্চিত ঘটনা। আমাদের খেলা প্রতে‍্যকটি গেম ভিন্ন। কিছু গেম হয় সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে, কিছু হয় অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে, কিছু গেম খেলা হয় যুদ্ধ নিয়ে। কিন্তু আমি মানুষ হওয়ার বাস্তবতাটা ওদের কাছে অস্বীকার করার চেষ্টা করতাম না। আমি ওদেরকে সেখানে যেতে দিতাম এবং, ওদের নিজেদের অভিজ্ঞতার মধে‍্য দিয়ে, রক্তপাতহীন পদ্ধতিতে শেখার মাধ‍্যমে ওরা যেটাকে ভুল হিসেবে দেখে সেটা করা থেকে কিভাবে বিরত থাকা যায়। এবং ওরা সঠিকটা কী সেটা খুঁজে বের করে ওদের নিজেদের মত করে, নিজেদের মাধ‍্যমেই। আর তাই এই গেমের মধ‍্য দিয়ে, আমি অনেক কিছু শিখেছি, কিন্তু আমি বলব যদি শুধুমাত্র ওরা কোন জটিল চিন্তার পদ্ধতি বেছে নিত অথবা কোন সৃজনশীল চিন্তা পদ্ধতি এই গেম থেকে এবং পৃথিবীর জন‍্য ভালো কিছু বের করে আনত, ওরা হয়ত আমাদের সবাইকে রক্ষা করবে। শুধুমাত্র যদি ওরা কিছু খঁুজে আনে। এবং আমার সকল শিক্ষকের পক্ষ থেকে যাঁদের কঁাধে ভর করে আজ আমি দঁাড়িয়ে, আপনাদের অসংখ ধন‍্যবাদ। ধন‍্যবাদ আপনাদের। (তালি) এই চমৎকার সঙ্গীতটি, মঞ্চে প্রবেশের সঙ্গীতটি - অপেরা আইদা থেকে ‘দি এলিফ্যান্ট মার্চ’ - আমার শেষকৃত্যর জন্য এই সঙ্গীতটাকেই বেছে নিয়েছি আমি -- (হাসি) -- আপনারা বুঝতেই পারছেন কেন। এটি যেন বিজয়েরই স্মারক সঙ্গীত । আমি কিছুই তখন অনুভব করব না, কিন্তু যদি আমি করতাম, বিজয়ের আনন্দকে আমি অনুভব করতাম শুধুমাত্র জীবন ধারন করার সুযোগ পাওয়ার জন্যই। আর এই চমৎকার গ্রহটিতে জীবন কাটানোর জন্য, আর আমাকে বোঝার সুযোগ দেয়ার জন্য যে প্রথমতঃ কেনই বা আমি এখানে ছিলাম, এখানে না থাকার আগে। আপনারা আমার অদ্ভুত ইংরেজী বাচনভঙ্গী কি বুঝতে পারছেন? অন্য সবার মত, গতকালের প্রানী জগত সংক্রান্ত অধিবেশন আমাকেও ভীষনভাবে মুগ্ধ করেছে। রবার্ট ফুল এবং ফ্রান্স ল্যান্টিং আর অন্যরা -- তাদের দেখানো বিভিন্ন জিনিসের সৌন্দর্য্য । শুধু একটু বেখাপ্পা ব্যাপার ছিল যখন জেফরী কাৎজেনবার্গ মাসটাং সম্বন্ধে বলছিলেন, “এই পৃথিবীর বুকে ঈশ্বরের সবচেয়ে চমৎকার সৃষ্টি।“ অবশ্যই, আমরা জানি যে উনি আসলে তা বোঝাতে চাননি, কিন্তু এই মুহুর্তে এই দেশে, আপনি বেশী সতর্ক হতে পারবেন না। (হাসি) আমি একজন জীববিজ্ঞানী, আর আমাদের এই বিষয়ের মুল প্রতিপাদ্য বিষয়টি হল: সৃষ্টি তত্ত্ব , প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব। সবজায়গায় পেশাজীবিদের মধ্যে, অবশ্যই এটি সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত। আমেরিকার বাইরে অপেশাজীবিদের মধ্যে, বিষয়টি মুলত উপেক্ষীত। কিন্তু আমেরিকায় অপেশাজীবি মানুষদের মধ্যে, এত তীব্র বৈরিতা উদ্রেক করে বিষয়টি - (হাসি) - যে বললে ভুল হবে না যে, আমেরিকার জীববিজ্ঞানীরা একটা যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছে । বর্তমানে খুবই দুশ্চিন্তার বিষয় এই যুদ্ধ, সাথে আমেরিকার একের পর এক রাজ্যের আদালতে ক্রমাগত মামলা আসছে, আমি মনে করি এ বিষয়ে আমার কিছু বলা উচিৎ। আপনারা যদি জানতে চান ডারউইনবাদ বিষয়টি সম্বন্ধে আমার কি বলার আছে, আমার ধারনা সেক্ষেত্রে আমার লেখা বইগুলো পড়ে দেখতে হবে আপনাদের, যেগুলো বাইরের বইয়ের দোকানগুলোতে আপনারা খুজে পাবেন না। (হাসি) সাম্প্রতিককালের আদালতের মামলাগুলো প্রায়শই ব্যস্ত সৃষ্টিবাদ বা ক্রিয়েশনিজমের তথাকথিত একটি নতুন সংস্করণ নিয়ে যা পরিচিত ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বা আই ডি হিসাবে। বিভ্রান্ত হবেন না, আই ডি কিন্তু নতুন কোন কিছু না। এটি কেবলমাত্র ভিন্ন নামে সৃষ্টিবাদ বা ক্রিয়েশনিজম। পুনঃ নামকরন -- ভাবনা-চিন্তা করেই শব্দটা ব্যবহার করলাম -- (হাসি) - কৌশলগত, রাজনৈতিক কারণের জন্য। তথাকথিত আইডি তাত্ত্বিকদের যুক্তিগুলো সেই একই পুরাতন সব যুক্তি, যা বার বার খন্ডন করা হয়েছে, সেই ডারউইনের সময় থেকে আজ পর্যন্ত। বিবর্তনবাদের জন্য কার্য্যকরী একটি লবী আছে যারা বিজ্ঞানের পক্ষে সংগ্রামকে সংগঠিত করে, এবং তাদের সাহায্য করার জন্য আমি আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্ঠা করি, কিন্তু তারা খুব বিচলিত বোধ করেন যখন আমার মত কেউ বলার জন্য সাহস করে যে আমরা একই সাথে নাস্তিক এবং বিবর্তনবাদী। আমাদেরকে তারা দেখেন সমস্যা তৈরীর কারন হিসাবে, কেন সেটা তো বুঝতেই পারছেন আপনারা। সৃষ্টিবাদীরা, যাদের স্বপক্ষে সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক যুক্তির অভাব আছে , তারাই নিরীশ্বরবাদের বিরুদ্ধে সাধারন ভীতির করনে সরে দঁাড়ান। জীববিজ্ঞান ক্লাসে আপানাদের ছেলেমেয়েদের বিবর্তন তত্ত্ব শেখান, আর তারা খুব শীঘ্রই মাদকদ্রব্য, চুরি-ডাকাতি আর যৌন বিকৃতির দিকে ঝুকে পড়বে। (হাসি) বাস্তবে, অবশ্য, পোপ থেকে শুরু করে শিক্ষিত ধর্মতাত্ত্বিকরা বিবর্তন তত্ত্বের পক্ষে তাদের সমর্থনে দৃঢ়। এই বইটি, কেনেথ মিলারের ”ফাইন্ডিং ডারউইন’স গড” (ডারউইনের ঈশ্বরের খঁোজে), আমার জানা মতে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকরী আক্রমন এবং এটা আরো বেশী কার্যকরী কারন বইটি লিখেছেন একজন ধর্মপ্রাণ খৃষ্টান। কেনেথ মিলারের মত মানুষকে বলা যায়, বিবর্তনবাদ লবির জন্য একটি অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি -- (হাসি) কারন আসল কথা হলো, তারা সেই মিথ্যাকে উন্মোচন করে যে, বিবর্তনবাদ, নিরীশ্বরবাদের সমতুল্য। অন্যদিকে আমার মত মানুষ, নাও নাড়াচ্ছে। কিন্তু এখন, আমি সৃষ্টিবাদীদের সম্বন্ধে ভালো কিছু কথা বলতে চাই। আমি সচরাচর এমন কিছু করি না, তাই খেয়াল করে শুনুন। (হাসি) আমি মনে করি তারা (সৃষ্টিবাদীরা) একটা ব্যপারে সঠিক। আমার মনে হয়, তারা সঠিক যে বিবর্তনবাদ মৌলিকভাবে ধর্মবিরুদ্ধ। আমি ইতিমধ্যেই বলেছি যে, পোপের মত অনেক বিবর্তনবাদী ব্যাক্তিগতভাবে, ধর্মপরায়নও, কিন্তু আমি মনে করি তারা নিজেদের বিভ্রান্ত করছেন। আমি বিশ্বাস করি ডারউইনবাদের সঠিক উপলব্ধি ধর্মীয় বিশ্বাসকে গভীর ভাবে ক্ষয় করে। এখন, এমন মনে হতে পারে যে, আমি নিরীশ্বরবাদ প্রচার করতে যাচ্ছি, আর আমি তাই আশ্বস্থ করতে চাই, আমি সেটা করতে যাচ্ছি না। এরকম একটা সুশিক্ষিত,জ্ঞানী আর সুশীল দর্শকমন্ডলীর সামনে - সেটা করলে তা চার্চের কয়ারের কাছে ধর্ম প্রচারের মত হবে। না, আমি আপনাদের উপর যা চাপাতে চাইছি -- (হাসি) এর বদলে আমি আপনাদের উপর যা চাপাতে চাইছি তা হলো জঙ্গী নিরীশ্বরবাদ। (হাসি) (হাত তালি) কিন্তু খুব নেতিবাচক ভাবে বলা হয়ে গেল ব্যপারটা। আমি যদি চাইতাম -- যদি আমি এমন কেউ হতাম যে ধর্মীয় বিশ্বাসকে রক্ষা করার ব্যাপারে উৎসাহী বিবর্তনবাদীয় বিজ্ঞানের ইতিবাচক শক্তি নিয়ে সেক্ষেত্রে আমি খুবই শঙ্কিত থাকতাম, সাধারনভাবে বিজ্ঞানের যে কোন শাখার জন্য, তবে বিশেষ করে বিবর্তনবাদ তত্ত্ব, যা পারে অনুপ্রাণিত আর বিস্মিত করতে, কারন সুনির্দিষ্টভাবে এটি নিরীশ্বরবাদী। যাহোক, যে কোন জৈব সৃষ্টি তত্ত্বে সবচেয়ে কঠিন সমস্যাটি হলো জীবিত সব কিছুর সুবিশাল পরিসংখ্যানীয় অসম্ভাব্যতাটাকে ব্যাখ্যা করা । ভালো নকশার সৃষ্টির দিকে পরিসংখ্যানের অসম্ভাব্যতা - জটিলতা শব্দটি দিয়ে একে বোঝানো যেতে পারে। সৃষ্টিবাদীদের সাধারণ যুক্তি - কেবল একটাই আছে, আর সব যুক্তি এই একজায়গায় শেষ হয়েছে - যার শুরু একটি পরিসংখ্যানজনিত অসম্ভাব্যতা থেকে। জীবিত প্রানীরা এতটাই জটিল, যে তাদের সৃষ্টি শুধুমাত্র ঘটনাক্রমে হয়নি; সুতরাং অবশ্যই তাদের একজন সৃষ্টিকর্তা আছে। এই যুক্তি অবশ্য নিজের পায়েই নিজে কুড়াল মারে। কোন একজন সৃষ্টিকর্তা, যিনি সত্যিকারে কোন জটিল কিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম তার নিজেকে আরো বেশী জটিল হতে হবে, এবং তা আমরা কথা শুরু কারার আগেই হতে হবে আমরা তঁার কাছে আর কী কী আশা করি সেই কথার আগেই। যেমন পাপের ক্ষমা করা, বিয়েতে আশীর্বাদ করা, প্রার্থনা শোনা -- -- যুদ্ধে আমাদের পক্ষে সাহায্য করা -- (হাসি) -- আমাদের যৌনজীবন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা এবং আরো অনেক কিছু। (হাসি) জীবের এই জটিলতার সমস্যা জীববিজ্ঞানের যে কোন তত্ত্বেরই সমাধান করতে হবে, এবং সৃষ্টির চেয়ে জটিলতর একজন সৃষ্টিকর্তাকে অনুমান করে এর সমাধান করা সম্ভব না। বরং এভাবেই সমস্যাটা আরো জটিল হয়ে উঠে। ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন এত আকর্ষনীয়ভাবে অভিজাত কারণ জটিলতার ব্যাখ্যা করার সমস্যাটির একটি সমাধান দেয় নিতান্তই সরল উপায়ে। মুলতঃ, বিবর্তনবাদ এ কাজটি করেছে একটি মসৃণ পথ প্রদর্শণের মাধ্যমে যা ধাপে ধাপে জটিলতা বৃদ্ধি ব্যাখ্যা করে। কিন্ত এখানে আমি শুধু বলতে চাই যে, ডারউইনবাদের মার্জিত সৌন্দর্য্যই ধর্মকে ক্ষয়িষ্ণু করে তোলে যেহেতু এটা এত মার্জিতভাবে সুন্দর, এত মিতব্যায়ী, এতই শক্তিশালী, আর অর্থনৈতিকভাবে এত শক্তিশালী। সুন্দর সাসপেনশন ব্রীজের মত দৃঢ়তা আছে এর। ঈশ্বর তত্ত্ব শুধুমাত্র বাজে একটি তত্ত্বই না। দেখা যাচ্ছে যে, নীতিগত ভাবে, এর যা করতে পারা উচিৎ তা করতেও এটা অক্ষম। সুতরাং কৌশল আর বিবর্তন লবীর প্রসঙ্গে ফিরে আসি, আমি যুক্তি দিতে চাই যে, বিবর্তন লবীর জন্য নাও নাড়ানোটাই ঠিক কাজ হবে। আমার সৃষ্টিবাদীদের আক্রমনের পদ্ধতি বিবর্তন লবীর মত নয়। আমার সৃষ্টিবাদীদের আক্রমনের পদ্ধতি হলো, পুরো ধর্ম জিনিসটাকেই আক্রমন করা, আর, এখন আমার একটা বিশেষ নিষিদ্ধ ব‍্যপার স্বীকার করে নেয়া প্রয়োজন, ধর্মের বিরুদ্ধে খারাপ কিছু বলার। আমি সেই কাজটা করবো, প্রয়াত ডগলাস অ্যাডামস এর কথায়, একজন প্রিয় বন্ধু, যদি TED এ সে কোনদিনও না এসে থাকে অবশ্যই তাকে আমন্ত্রণ জানানো উচিৎ ছিল। (রিচার্ড সল উরম‍্যান: উনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল) রিচার্ড ডকিন্স : তিনি আমন্ত্রিত হয়েছিলেন, ভালো, আমিও ভাবছিলাম, তাকে নিশ্চয় আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তিনি তার এই বক্তব্য, যা কেমব্রিজে রেকর্ড করা হয়েছিল, শুরু করেছিলেন; তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে। তিনি শুরু করেন এই ব‍্যাখ‍্যা দিয়ে, বিজ্ঞান কিভাবে এমন সব হাইপোথিসিস প্রমাণ করে কাজ করে যেগুলো ভুল প্রমাণিত হওয়ার ব‍্যপারে নাজুক - এরপর উনি বলতে থাকেন। আমি তাঁকে উদ্ধৃত করছি, "ধর্ম সাধারণত এভাবে কাজ করে না বলে মনে হয়। এর অন্তস্থলে কিছু মূল ধারণা আছে, যেগুলোকে আমরা বলি পবিত্র বা সমালোচনার উর্ধে। যার অর্থ হচ্ছে, এটি একটি ধারণা বা চিন্তা যার সম্বন্ধে আপনার কোন ধরণেরই খারাপ কিছু বলার অনুমতি নেই। কোন ভাবেই না। কেন না? কারণ আপনার অনুমতি নেই ব্যাস। (হাসি) কেন এমন হবে যে রিপাবলিক‍্যান বা ডেমোক্র‍্যাটদের মধ্যে কোন একটি দলকে সমর্থন করা প্রশ্নাতীতভাবে ঠিক, বা অর্থনীতির এই মডেল বনাম অন্যটা, উইন্ডোজ এর বদলে ম্যাকিনটোশ, কিন্তু কেমন করে মহাবিশ্বের শুরু হল তা নিয়ে কোন মতামত থাকা, যেমন কে সৃষ্টি করেছে এই মহাজগত -- না, এসব পবিত্র ব্যাপার। সুতরাং ধর্মীয় মতামতগুলোকে চ‍্যালেঞ্জ করতে আমরা অভ্যস্থ নই আর তাই ব্যপারটা খু্ব মজার হয়, রিচার্ডের কারনে এমন উন্মাদনা তৈরি হয় যখন ও এই কান্ডটা করে।” (রিচার্ড বলতে উনি আমাকে বুঝিয়েছেন, উনাকে না)। ”প্রত্যেকে উন্মত্ত হয়ে যায় ব্যপারটা নিয়ে। কারন আপনার এ্বইসব কিছু বলার কোন অনুমতি নেই, তারপরেও আপনি যদি যৌক্তিকভাবে দেখেন কোন কারনই নেই, কেন ঐসব অভিমতগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে বিতর্ক করা যাবে না অন্য যে কোন বিষয়ের মত, শুধুমাত্র আমারা নিজেদের মধ্যে কোনভাবে একমত হয়েছি এবিষয়ে এদের নিয়ে বিতর্ক করা যাবে না”, আর এখানেই শেষ ডগলাসের উদ্ধৃতিটা। আমার মতে বিজ্ঞান শুধুমাত্র ধর্মের জন্য ক্ষতিকরই না, ধর্মও বিজ্ঞানের জন্য ক্ষতিকর। যা মানুষকে শেখায় তুচ্ছ, অতিপ্রাকৃত অপব্যাখ্যা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে আর অন্ধ করে রাখে চমৎকার সত্যিকারের ব্যাখার প্রতি যা আমাদের নাগালের মধ্যেই আছে। এটি কতৃত্ত্ব, বিশ্বাস আর দৈববানীকে মেনে নিতে শেখায় প্রতিনীয়ত প্রমান চাইবার পরিবর্তে। এই যে ডগলাস অ্যাডাম্স, তার “লাষ্ট চান্স টু সি“ বই থেকে নেয়া অপুর্ব একটা ছবি। এখন এটা সাধারণ বৈজ্ঞানিক জার্র্নাল, দা কোয়ার্টারলী রিভিউ অব বায়োলজী। অতিথি সম্পাদক হিসাবে, আমি সম্পাদনা করতে যাচ্ছি একটি বিশেষ সংখ্যা এই প্রশ্নটি নিয়ে :“ডায়নোসরদের হত্যা করেছিল কি কোন উল্কাপিন্ড“ আর এর প্রথম রচনাটা একটি প্রামান‍্য বৈজ্ঞানিক গবেষনা পত্র যা প্রমান উস্থাপন করবে: “ কে - টি বাউন্ডারীতে ইরিডিয়ামের স্তর“ । ইউকাটানে পটাশিয়াম - আর্গন জ্বালামুখ, ইঙ্গিত দেয় যে , একটা উল্কাপিন্ড ডায়নোসরদের হত্যা করেছিল। খুব সাধারন একটা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ। এবার পরবর্তীটা, রয়্যাল সোসাইটির সভাপতি দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে শপথ করে বলেছেন - (হাসি) -- যে .. “ একটা উল্কাপিন্ড ডায়নোসরদের হত্যা করেছিল“ (হাসি) অধ্যাপক হাক্সটেনের কাছে ব্যক্তিগতভাবে গোপনে প্রকাশ পেয়েছে যে, যে .. “ একটা উল্কাপিন্ড ডায়নোসরদের হত্যা করেছিল (হাসি) অধ্যাপক হোর্ডলী বড় হয়েছেন সম্পুর্ন এবং প্রশ্নাতীত বিশ্বাসের সাথে -- (হাসি) যে .. “ একটা উল্কাপিন্ড ডায়নোসরদের হত্যা করেছিল “ অধ্যাপক হকিন্স প্রচার করেছেন একটি আনুষ্ঠানিক মতবাদ সকল অনুগত হকিন্সিয়ানদের অবশ্যই মানার নির্দেশ দিয়ে যে .. “ একটা উল্কাপিন্ড ডায়নোসরদের হত্যা করেছিল “ (হাসি) অবশ্যই এটা গ্রহণযোগ‍্য না। কিন্তু ধরুন - (হাত তালি) -- ১৯৮৭ সালে এক সাংবাদিক জর্জ বুশ (সিনিয়র) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি কি স্বীকার করেন সমান নাগরিকত্ব আর দেশপ্রেম আছে আমেরিকার নাস্তিকদের। জনাব বুশের উত্তর কুখ্যাতি লাভ করেছে। না, আমি জানি না যে, নাস্তিকরা নাগরিক হিসাবে বা দেশপ্রেমী হিসাবে বিবেচনা পেতে পারে কিনা। ঈশ্বরের অধীনে এটা এক জাতি“। বুশের গোড়ামী কোন বিচ্ছিন্ন ভুল ছিল না, যা কিনা হঠাৎ মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে এবং পরে প্রত্যাহার করে নেয়া হল। বার বার এর ব্যাখ্যা বা মন্তব্য প্রত্যাহার করার কথা বলার পরও তিনি তার অবস্থানে ন্থির ছিলেন। তিনি আসলে সেইটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। আরো একটি বিষয় হলো, তিনি জানতেন তার এই মস্তব্য নির্বাচনের জন‍্য কোন হুমকি হয়ে দঁাড়াবেনা বরং উল্টোটা হবে। ডেমোক্র‍্যাট আর রিপাবলিকান দুই দলই তাদের ধর্মপ্রীতি প্রদর্শন করে যদি তাদের নির্বাচনে জিততে হয়। দুই দলই ঈশ্বরের অধীনে এক জাতি স্লোগান দেয়। টমাস জেফারসন এদের সম্বন্ধে কি বলতেন ? ঘটনাক্রমে, আমি যদিও ব্রিটিশ হিসাবে খুব বেশি গর্ব বোধ করিনা, কিন্তু আপনি তুলনা না করে পারবেন না। (হাত তালি) ব্যবহারিক ক্ষেত্রে একজন নাস্তিক আসলে কে? একজন নাস্তিক হচ্ছে এমন কেউ যিনি ‘ইয়াওয়ে‘ সম্বন্ধে যেমন ভাবেন সেটা, ‘থর‘ অথবা ‘বাল‘ অথবা ‘সোনার বাছুর‘ সম্বন্ধে যে কোন ভদ্র খৃষ্টান যা ভাবে, সেরকমই। আগে যেমনটা বলেছি, প্রায় বেশীর ভাগ দেবতাদের ক্ষেত্রে আমরা সবাই নাস্তিক যাদের মানবজাতি কখনো বিশ্বাস করেছে। কেউ কেউ কেবল আরেকজন ঈশ্বর যোগ করেছে অবিশ্বাসের তালিকায় (হাসি) (হাত তালি) এবং যেভাবেই আমরা নিরীশ্বরবাদকে সংঙ্গায়িত করিনা কেন, অবশ্যই এটা একধরনের তাত্ত্বিক বিশ্বাস এই বিশ্বাস ধারন করার অধিকার আছে যে কারো, অ-দেশপ্রেমিক, নির্বাচন অযোগ্য অ-নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত না হয়ে। তাসত্ত্বে অনস্বীকার্য্য সত্যটি হলো, নিজেকে নাস্তিক হিসাবে দাবী করা মানে নিজেকে মিঃ হিটলার অথবা মিস বিলযেবাব হিসাবে পরিচয় দেবার মতন। এবং এর উৎস নাস্তিকদের সম্বন্ধে ধারনা যে তারা কোন এক ধরনের আজব, অগতানুগতিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। নিউ ইয়র্কার - এ নাটালি আনজিয়ার একটি বিষণ্ণ লেখা লিখেছিলেন, একজন নাস্তিক হিসাবে তিনি নিজেকে কতটা একাকী মনে করেন। স্পষ্টত তিনি নিজেকে অবরুদ্ধ সংখ্যালঘুদের দলে মনে করেন। কিন্ত আসলেই সংখ্যার দিক থেকে আমেরিকার নাস্তিকদের অবস্থান কোথায়? সাম্প্রতিক জরিপ কিন্তু বিস্ময়করভাবে আশাব্যাঞ্ছক তথ্য দিচ্ছে। খৃষ্টানধর্ম, অবশ্যই জনসংখ্যার সিংহভাগ জুড়ে আছে প্রায় ১৬০ মিলিয়নের কাছাকাছি। কিন্তু আপনাদের কী মনেহয়, দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রুপটি কাদের হতে পারে সহজাতভাবে সংখ‍্যাগুরু ২.৮ মিলিয়ন ইহুদী, ১.১ মিলিয়ন মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ আর অন্য সব ধর্মাবলম্বীদের মোট সংখ্যাকে পেছনে ফেলে? দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রুপটি, প্রায় ৩০ মিলিয়ন, যারা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বা ধর্মপালনকারী না হিসাবে চিহ্নিত করেছে। আপনারা নিশ্চয়ই ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন কেন ভোটপ্রার্থী রাজনীতিবিদরা প্রবাদতুল্যভাবে ভীতসন্ত্রস্ত থাকে যেমন ইহুদী লবীর ক্ষমতার মনে হয় যে, ইসরায়েলের অস্তিত্ত্বটাই নির্ভর করছে আমেরিকার ইহুদী ভোটের উপর, আবার একই সাথে ধর্মপালন না - কারীদের রাজনৈতিক বিস্মৃতির দিকে ঠেলে দিয়ে। এই ধর্মনিরপেক্ষ ভোট , যদি ঠিকমতো সংগঠিত করা যেত, তা ইহুদী ভোটের নয় গুন বেশী হত। তাহলে কেন অনেক উল্লেখযোগ্য আকারের একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কোন উদ্যোগ নেয় না তার রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহারের? বেশ, সংথ্যার কথা থাক, গুনগত দিক থেকে? কোন কি সম্পর্ক আছে, ইতিবাচক বা নেতিবাচক, বুদ্ধিমত্তা আর ধার্মিক হওয়ার প্রবণতায়? (হাসি) যে জরিপের কথা বলছি তা হল ARIS জরিপ, তারা তাদের তথ‍্য আর্থসামাজিক অবস্থা বা শিক্ষা আই কিউ বা অন্যকিছু অনুযায়ী ভাগ করেনি, কিন্তু মেনসা পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত প্রবন্ধে পল জি বেল ভবিষ‍্যৎ সম্পর্কে কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন। মেনসা, আপনারা জানেন, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যার সদস্য হলো উচু আইকিউ সম্পন্নরা। বিভিন্ন প্রকাশিত প্রবন্ধের একটি মেটা সমীক্ষায় বেল এই বলে শেষ করেন যে, ‘১৯২৭ থেকে এপর্যন্ত করা মোট ৪৩টি গবেষণায় বুদ্ধিমত্তা বা শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে ধর্মবিশ্বাসের সম্পর্ক শধুমাত্র ৪টি ছাড়া বাকী সবগুলো গবেষনায় উল্টা সম্পর্ক পাওয়া গেছে। তার মানে, যার বুদ্ধিমত্তা অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতা যত বেশী, তার ধার্মিক হবার সম্ভাবনা তত কম। বেশ, আমি সেই মুল ৪২ টা মুল প্রবন্ধ পড়িনি এবং মেটা-সমীক্ষা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারছি না কিন্তু এ ধরনের আরো কিছু গবেষনা হোক তা আমি অবশ্যই চাই। আর আমি জানি, আমি যদি এখানে একটু যোগাযোগ করি দর্শকদের মধ্যে অনেককেই পাওয়া যাবে যঁারা অনায়াসে এই প্রশ্নের সমাধানে একটা বড় আকারের গবেষণার জন্য অর্থসাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন, ব্যাপারটা গুরুত্বপুর্ন বলে প্রস্তাবটা তুললাম। আপনাদের কিছু পরিসংখ্যান জানানো যাক যা যথার্থভাবে প্রকাশিত এবং বিশ্লেষিত হয়েছে একটি বিশেষ গ্রুপের মধ্যে, বলতে গেলে, প্রখ্যাত বিজ্ঞানীরা ১৯৯৮ সালে লারসন এবং উইথাম আমেরিকার সেরা বিজ্ঞানীদের উপর একটা জরিপ চালায়। যারা ন্যাশনাল একাডেমী অফ সায়েন্স এর সদস্য নির্বাচিত হবার সন্মান অর্জণ করেছেন। আর এই বিশেষ গ্রুপের মধ্যে ব্যক্তিগত ঈশ্বরের অস্তিত্ত্বে বিশ্বাস একেবারে নেমে শতকরা সাত ভাগে পৌছেছে। প্রায় শতকরা ২০ ভাগ অ্যাগনষ্টিক বা অজ্ঞাবাদী আর বাকীদের নিরপেক্ষভাবে বলা যেতে পারে নাস্তিক। ব্যাক্তিগত অমরতা নিয়ে প্রায় একই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। জীববিজ্ঞানের বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই সংখ্যা আরো নীচে। শতকরা ৫.৫ ভাগ মাত্র ঈশ্বরের অস্তিত্ত্বে বিশ্বাস করেন, পদার্থ বিজ্ঞানীদের মধ্যে এটা মাত্র ৭.৫ ভাগ। আমি অন্যান্য ক্ষেত্রের বিদ্বান পন্ডিতদের মধ্যে এই সংখ্যাগুলো দেখিনি অন‍্য বিষয়গুলো যেমন ইতিহাস অথবা দর্শন। কিন্তু আমি অবাক হবো তাঁদেরটা যদি এর চেয়ে আলাদা হয়। সুতরাং, আমরা একটা সত্যিকারের উল্লেখযোগ্য অবস্থানে পৌছেছি। একটা অদ্ভুত অসামন্জ্ঞস্য আমেরিকার বুদ্ধিজীবি আর আমেরিকার ভোটারদের মধ্যে মহাজগতের প্রকৃতি সম্বন্ধে যে দার্শনিক মতামত সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেষ্ঠ আমেরিকান বিজ্ঞানীরা ধারন করেন এবং সাধারনভাবে সম্ভবত বেশীরভাগ বুদ্ধিজীবিরাও তাই, তা আমেরিকার ভোটারদের কাছে এত বেশী ঘৃণ্য যে সাধারন নির্বাচনে কোন প্রার্থী জনগনের কাছে তা স্বীকার করার সাহস পান না। যদি আমি ঠিক হয়ে থাকি, তার অর্থ দাড়ায় যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দেশটিতে সবচেয়ে উচু প্রতিষ্ঠানটিতে, যারা দেশটি সবচেয়ে ভালোভাবে চালাতে পারতো তাদেরই প্রবেশাধিকার নেই, বুদ্ধিজীবি সমাজ, যতক্ষণ না তারা তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে মিথ্যা বলতে প্রস্তুত সহজ ভাষায় আমেরিকার রাজনৈতিক সুযোগগুলো খুব বেশীভাবে পক্ষপাতদুষ্ট যারা একই সাথে বুদ্ধিমান আর সৎ তাদের বিরুদ্ধে। (হাত তালি) আমি এই দেশের নাগরিক নই, তাই আশা করি যে ব্যপারটা অশোভন ভাবা হবে না যদি আমি প্রস্তাব করি যে, কিছু একটা করতে হবে। (হাসি) আর আমি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছি সেই জিনিসটা আসলে কী। আমি TED এর যতটুকু দেখেছি, আমি মনে করি শুরু করার জন‍্য এটাই আদর্শ জায়গা আবার, এর জন্য প্রয়োজন অর্থ আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন আমেরিকার নাস্তিকদের প্রকাশে‍্য বেরিয়ে আসার জন‍্য প্রচারণা প্রয়োজন। (হাসি) সমকামীদের সংগঠিত করার প্রচারণার মত হতে পারে সেটা কয়েক বছর আগে যদিও আমরা আদৌ চাই না মানুষকে জোর করে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজেদের প্রকাশ করতে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে যারা নিজেরা ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছেন তারা ঐ ভ্রান্তধারনা ভেঙ্গে দিতে সহায়তা করবে যে, নাস্তিকদের নিশ্চয়েই কোন সমস্যা আছে। বরং উল্টোটাই, তারা প্রমান করবে যে, অনেক সময় নাস্তিকরা সেই ধরনের মানুষ যারা আপনাদের সন্তানদের জন্য ভালো অনুকরনীয় হতে পারে এমন ধরনের মানুষ যাকে বিজ্ঞাপনের নির্মাতারা তাদের দ্রব্য বিক্রি করার জন্য ব্যবহার করতে পারে সেই ধরনের মানুষ যারা এই রুমে বসে আছেন। পুরো ব্যপারটা স্নোবল ইফেক্টের মত হবে - একটা ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে, যেমন যত নাম আমরা পাবো, আরো বেশী আমরা সংখ্যায় বাড়বো। নন-লিনিয়ারিটি বা থ্রেসহোল্ড ইফেক্ট হতে পারে বটে। এই সংখ‍্যা যখনই একটা ক্রান্তিক সংখ‍্যা উত্তির্ণ করবে, তখন দ্রুত যোগদানেকারীর সংখ্যাও বেড়ে যাবে আনুপাতিক হারে। আর আবারো , এর জন্য দরকার অর্থ। আমার সন্দেহ ”নাস্তিক” শব্দটাই এখনও একটা প্রতিবন্ধক এর অর্থ আসলে যা তার থেকে অনেক বেশী আমাদেরকে আক্রান্ত করে এবং প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না হলে অনেকেই আনন্দের সাথে নিজেদের নিরীশ্বরবাদি হিসেবে প্রকাশ করতেন। তাহলে, পথটাকে মসৃন করতে অন্য কি শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে, চাকায় তেল দিতে, বা তেতো ট্যাবলেটকে মিষ্টি করতে? ডারউইন নিজে অ্যাগনষ্টিক শব্দটিকে পছন্দ করতেন -- তা কিন্তু শুধুমাত্র বন্ধু হাক্সলীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য না, যিনি শব্দটা প্রখম ব্যবহার করেছিলেন। ডারউউন বলেছিলেন, ”আমি কখনোই নাস্তিক ছিলাম না যে অর্থে ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব অস্বীকার করে নাস্তিকরা, আমি মনে করি এটা অ্যাগনষ্টিক বা অজ্ঞেয়বাদী আমারা মানসিক অবস্থার সবচেয়ে ভালো বর্ণনা হিসেবে বলা যেতে পারে।” এমনকি তিনি তার স্বভাবের বাইরে এডওয়ার্ড অ্যাভেলিং এর প্রতি বেশ বিরক্ত ছিলেন। অ্যাভেলিং ছিলেন একজন জঙ্গী নাস্তিক যিনি ডারউইনকে রাজী করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন নিরীশ্বরবাদ সম্পর্কে তার একটি বইয়ের উৎসর্গ গ্রহন করতে - ঘটনাচক্রে, এটা একটা মজার রটনার সৃষ্টি করেছে যে কার্ল মার্কস তার “দাস ক্যাপিটাল” ডারউইনকে উৎসর্গ করার চেষ্টা করেছিলেন, যা তিনি করেননি, আসলে তা করেছিলেন এডওয়ার্ড অ্যাভেলিং যা হয়েছিল তা হলো এডওয়ার্ড অ্যাভেলিং এর মিস্ট্রেস ছিলেন মার্কস এর মেয়ে, এবং যখন ডারউইন এবং মার্কস দুজনেই মারা যান মার্কস এর কাগজপত্র অ্যাভেলিং এর কাগজপত্রের সাথে মিশে গিয়েছিল এবং ডারউইনের চিঠি যেখানে লেখা ছিল,” প্রিয় মহোদয়, অনেক ধন্যবাদ, তবে আমি চাইনা আপনি আপনার বইটি আমার নামে উৎসর্গ করেন “ ভুলবশত ধারনা করা হয়েছিল চিঠিটা মার্কস -এর উদ্দেশ্যে লেখা । আর সেটাই এই পুরো ঘটনার জন্ম দেয়, যা আপনারা হয়ত আগেও শুনে থাকতে পারেন। এটা অনেকটা শহুরে গুজবের মত, যে মার্কস চেষ্টা করেছিলেন ’ দাস ক্যাপিটাল’ ডারউইনকে উৎসর্গ করতে। যাই হোক, এটা করেছিলেন এডওয়ার্ড অ্যাভেলিং, এবং তাদের দেখা হলে ডারউেইন তাকে চ‍্যালেঞ্জ করেছিলেন। ”কেন আপনারা আপনাদেরকে নাস্তিক বলেন?” অ্যাভেলিং মন্তব্য করেছিলেন ’‘অ্যাগনিষ্টিক'রা আসলে নাস্তিক, যারা সন্মান পাবার জন্য আর্জি জানাচ্ছেন, আর নাস্তিকরা হচ্ছেন আসলে অ্যাগনিষ্টিক যারা আক্রমনাত্মক হতে চান।” ডারউইন অভিযোগ করেছিলেন, ”কিন্ত আপনাদের কেন এমন আক্রমনাত্মক হতে হবে?” ডারউইন ভাবতেন যে, নিরীশ্বরবাদ বুদ্ধিজীবি সমাজের জন্য খারাপ কিছু না বরং হয়ত ভালো, তবে তা সাধারন মানুষ এর জন্য, তার উদ্ধৃতি ‘উপযুক্ত না।’ যা অবশ্যই, আমাদের পুরাতন বন্ধু, "নৌকা না নাড়ানোর" যুক্তি। আমাদের জানা নেই,অ্যাভেলিং ডারউইনকে বলেছিলেন কিনা, আরেকটু বিনয়ী হতে। (হাসি) কিন্তু যাই হোক, ব্যপারটা ১০০ বছর আগের। আপনারা ভাবেছেন, সেই সময় থেকে আমরা বড় হয়েছি। এবার আমার এক বন্ধুর কথা বলি, একজন বুদ্ধিমান স্খলিত ইহুদী, যে মাঝে মাঝে সাবাথ পালন করে কেবল সাংস্কৃতিক সৌহার্দের খাতিরে নিজেকে ব্যাখ্যা করেন একজন ‘টুথ ফেয়ারী অ্যাগনষ্টিক” হিসাবে। তিনি নিজেকে একজন নাস্তিক বলে পরিচয় দিতে চান না কারণ, নীতিগতভাবে, ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব প্রমান করা অসম্ভব, কিন্ত অ্যাগনষ্টিক নিজের খাতিরেই প্রস্তাব করে, ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব বা অস্তিত্ত্বহীনতা সমানভাবে সম্ভব। সুতরাং আমার বন্ধু কঠোরভাবে একজন টুথ ফেয়ারী অ্যাগনষ্টিক, কিন্তু ব্যপারটা ঠিক একরকম না, তাই না? ঈশ্বরের মত, সেজন্যই ‘টুথ ফেয়ারী অ্যাগনষ্টিক’ বাক্যটা। কিন্তু বার্ট্রান্ড রাসেল একই প্রস্তাব করেছিলেন মঙ্গল গ্রহের চারপাশে প্রদক্ষিনরত কাল্পনিক ’চায়ের পট’ রপক ব্যবহার করে আপনাকে কঠোরভাবে অজ্ঞেয়বাদী হতে হবে মঙ্গল গ্রহের চারপাশে প্রদক্ষিনরত কাল্পনিক চায়ের পট আছে কিনা সে বিষয়ে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এর অস্তিত্ত্বর সম্ভাব্যতাটিকে অস্তিত্ত্বহীনতার মত একই ভাবে দেখতে হবে। যে সব বিষয় নিয়ে আমাদেন কঠোরভাবে অ্যাগনষ্টিক হতে হবে তার তালিকা কিন্তু টুথ ফেয়ারী বা চায়েরপটেই শেষ হয়ে হয়নি, এ তালিকা অসীম। যদি আপনি তাদের কোন একটাকে বিশ্বাস করতে চান, ইউনিকর্ন বা টুথ ফেয়ারী বা চায়ের পট বা ইয়াওয়ে , কেন বিশ্বাস করবেন তা প্রমান করার দায়িত্ব আপনার উপর বর্তায় বাকী আমাদের উপর কোন দায়িত্ব নেই কেন না তা প্রমান করার জন্য আমরা, যারা নাস্তিক, তারা ফেয়ারী অবিশ্বাসী আর চায়েরপট অবিশ্বাসী, (হাসি) কিন্ত তা বলার জন্য আমরা আদৌ উৎসাহী নই। আর সেজন্য আমার বন্ধু টুথ ফেয়ারী অ্যাগনষ্টিক শব্দটি ব্যবহার করেছে যা বেশীর ভাগ মানুষ নাস্তিক বলবে তার একটি প্রতিনাম হিসাবে। তাসত্ত্বেও আমরা যদি আত্মগোপন করে রাখা নাস্তিকদের প্রকাশ্যে বের হয়ে আসার জন্যে উৎসাহিত করতে চাই, আমাদের আরো ভালো কিছু খুঁজে বের করতে হবে টুথ ফেয়ারী বা চায়ের পট অ্যাগনষ্টিক ছাড়া আমাদের ব্যানারে কিছু লেখার জন্য সুতরাং, ’হিউমানিষ্ট’ হলে কেমন হয় এর সুবিধা হল সারাবিশ্ব জুড়ে এদের সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক আছে এছাড়া জার্নাল আর অন্য সব কিছুই আছে জায়গামত আমার সমস্যা আপাত দৃষ্টিতে শুধুমাত্র এর মানবজাতি কেন্দ্রিকতা। ডারউইনের কাছ থেকে আমরা একটা জিনিস শিখেছি যে মানবজাতিই কি শুধুমাত্র একটা প্রজাতি কাছের বা দুরের আত্মিয় মিলিয়ে মিলিয়ন সংখ্যক জ্ঞাতিগোষ্ঠীর মধ্যে। আরো কিছু সম্ভাবনাময় শব্দ আছে যেমন ন্যাচারালিষ্ট, কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে সংশয়ের , কারন ডারউইনকে ভাবা যেতে পারতো একজন ন্যাচারালিষ্ট ন্যাচারালিষ্ট এর অর্থ অবশ্যই অতিপ্রাকৃতবাদীর বীপরিত। এবং এটা মাঝে মাঝে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । ডারউইন নিজে হয়ত সন্দেহের মধ্যে পড়ে যেতেন ন্যাচারালিষ্ট এর অন্য অর্থ সম্বন্ধে যা অবশ্যই তিনি ছিলেন এবং আমার ধারনা কেউ কেউ আছেন যারা একে ’নগ্নতাবাদ’ এর সাথে বিভ্রান্ত করে ফেলতে পারেন। (হাসি) এই ধরনের মানুষ হয়তো ঐ উন্মত্ত ব্রিটিশ জনতার অংশ হতে পারে যারা গত বছর একজন ’পেডিয়াট্রিশিয়ান’কে আক্রমন করেছিল ’পেডোফিল’ ভেবে (হাসি) আমার ধারনা সবচেয়ে ভালো বিকল্প হলো - অ-ঈশ্বরবাদী। এটার ঐ কঠিন ভাবটা নেই যে, নিঃসন্দেহে কোন ঈশ্বর নেই আর তাই সহজেই টুথ ফেয়ারী বা চায়েরপট অ্যাগনষ্টিকরা একে গ্রহণ করতে পারেন পদার্থবিদদের ঈশ্বরদের সাথে সম্পুর্নভাবে সামনজ্ঞস্য পূর্ণ। যখন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব - যেমন নাস্তিক - স্টিফেন হকিং বা আলবার্ট আইনস্টাইন এর মত মানুষরা ‘ঈশ্বর’ শব্দটি ব্যবহার করেন অবশ্যই সংক্ষিপ্ত রুপকার্থে পদার্থরবিজ্ঞানের সেই গভীর, রহস্যময় অংশকে বোঝাতে, যা আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। এসবের জন্য অ - ঈশ্বরবাদী শব্দটাই ভালো কাজ করবে, নাস্তিক শব্দটার মত এই শব্দটার বিরুদ্ধে একই রকম আতঙ্ক বা উন্মত্ত্ব প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু আমি মনে করি আসলে, বিকল্প উপায়টি হল নাস্তিক শব্দটা নিয়ে সমস্ত পৃথিবীর এত জ্বলনের কারনটাকে ভালোভাবে বোঝা, সুস্পষ্টতভাবে কারণ, এটি একটি নিষিদ্ধ শব্দ যা উন্মত্ত্ব আতঙ্কের রোমহর্ষক শিহরণ বহন করে। সেকারনে নাস্তিক শব্দটি দিয়ে সচেতন জনগষ্ঠি তৈরী করা বেশী কঠিন হতে পারে অ-ঈশ্বরবাদী শব্দটির তুলনায়, বা অন্য কোন অবিতর্কিত শব্দের তুলনায় কিন্তু যদি আমরা সফল হই ঐ ভয়ঙ্কর 'নাস্তিক', শব্দটি দিয়েই, এর রাজনৈতিক প্রভাব হবে আরো ব্যপক। আমি আগেই বলেছি, যদি আমি ধর্মানুসারী হতাম, আমি বিবর্তনবাদকে ভয় করতাম, আরেকটু বললে, যদি সঠিকভাবে বুঝতাম, তাহলে সাধারনভাবে বিজ্ঞানকেই ভয় পেতাম কারন, বিশ্ব সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী অনেক বেশী উত্তেজনাময়, অনেক বেশী কাব্যিক, যে কোন কিছুর চাইতে অনেক বেশী বিস্ময়কর ধর্মীয় কল্পনার দারিদ্রপীড়িত ভান্ডারের যে কোন কিছুর চেয়ে। সম্প্রতি প্রয়াত আরেকজন বীর, কার্ল সাগান, যেমন বলেছিলেন, কেন এমন হল,যে কোন প্রতিষ্ঠিত ধর্মই বিজ্ঞানকে বোঝার চেষ্টা করেছে এবং অনুধাবন করেছে সিদ্ধান্তে পৌছেছে, ”আমরা যা ভেবেছি এটাতো তার চেয়ে আরো ভালো ! মহাবিশ্ব আমাদের নবী যা বলেছেন তার চেয়ে অনেক বিশাল, অনেক সুক্ষ , অনেক সুন্দর ?” তার বদলে তারা বরেছে, না , না , না ! আমার ঈশ্বর ক্ষুদ্র ঈশ্বর, আমি চাই সে এরকমই থাকুক। নতুন কিংবা পুরাতন, কোন ধর্ম যা মহাবিশ্বের চমৎকারিত্বর উপর জোর দিয়েছে বিজ্ঞান যা উন্মুক্ত করেছে হয়তো আরো বেশী শ্রদ্ধা আর মুগ্ধতা আদায় করে নিতে পারতো যা সাধারন বিশ্বাস আদৌ ছুতে পারেনি এখন এখানে আছেন একদল এলিট শ্রতা, তাই আমি আশা করতে পারি আপনাদের মধ্যে শতকরা ১০ ভাগ ধার্মিক, আপনাদের অনেকেই সম্ভবত: আমাদের ভদ্র সামাজিক বিশ্বাসকে মেনে চলেন যে, ধর্মকে আমাদের শ্রদ্ধা করা উচিৎ কিন্তু আমি সন্দেহ করি, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গোপনে হয়তো আমার মতই ঘৃণা করেন ধর্মকে, (হাসি) যদি আপনি তাদের একজন হন, অবশ্যই আপনাদের মধ্যে অনেকে তা না কিন্তু আপনি যদি তাদের একজন হন, আমি আপনাকে বলছি, ধর্ম বিষয়ে বিনয়ী হওয়া বন্ধ করুন, জনসমক্ষে আপনার বিশ্বাস নিয়ে বের হয়ে আসুন, আর আপনি যদি ঘটনাক্রমে বিত্তশালী হয়ে থাকেন কিছু সময় দিন ভাববার, কিভাবে আপনি এই লক্ষ্যে কিছু অবদান রাখতে পারেন। এই দেশে ধর্মবিশ্বাসীদের লবী বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যথেষ্ট অর্থসাহায্যপুষ্ট, কর সুবিধার কথা তো বাদই দিলাম ফাউন্ডেশন যেমন টেম্পলটন ফাউন্ডেশন আর ডিসকভারী ইন্সটিটিউট আমাদের সামনে অগ্রসর হতে টেম্পলটন বিরোধী কিছু লাগবে। আমার বই যদি স্টিফেন হকিং এর বই এর মত বিক্রি হতো রিচার্ড ডকিন্স এর বই এর মত বিক্রি না হয়ে, আমিই সেটা করতাম। অনেকেই বলে, ”১১ সেপ্টেম্বর আপনাকে কতটুকু বদলে দিয়েছে?” বেশ, আমাকে বদলে দিয়েছে এভাবে। আসুন সবাই অতিরিক্ত শ্রদ্ধাশীল হওয়া বন্ধ করি। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। (হাত তালি) মনে করুন একটি বড় বিস্কোরণ ঘটল যখন আপনি ৩০০০ ফুট উপরে উঠছেন। মনে করুন একটি প্লেন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। মনে করুন একটি ইঞ্জিন চলছে ক্লাক, ক্লাক, ক্লাক,ক্লাক, ক্লাক,ক্লাক, ক্লাক, ক্লাক করছে। শুনতে ভয়াবহ লাগে। আসলে সেদিন আমার বসার জায়গাটা ছিল অদ্বিতীয়। আমি বসেছিলাম ১ডি'তে। আমি ছিলাম একমাত্র মানুষ যে ফ্লাইট অ্যাটেণ্ডেন্টের সাথে কথা বলতে পারে। তাই, আমি তাদের দিকে সোজাসুজি তাকালাম, এবং তারা বললো, "কোন সমস্যা নেই। আমরা সম্ভবত কয়েকটি পাখিকে আঘাত করেছি।" পাইলট ইতিমধ্যে বিমানকে ঘুরিয়ে নিয়েছে, এবং আমরা খুব একটা দূরে ছিলাম না। ম্যানহ্যাটন দেখা যাচ্ছিল। দুই মিনিট পরে, তিনটি জিনিস একসাথে ঘটলো। পাইলট বিমানকে হাডসন নদী বরাবর প্লেনকে ঘুরিয়ে নিতে লাগল। সেটা কিন্তু মূল গতিপথের অংশ ছিল না। (হাসি) তিনি ইঞ্জিন বন্ধ করে ফেললেন। এখন চিন্তা করুন শব্দহীন এক বিমানে আপনি বসে আছেন। এবং তখন সে তিনটি শব্দ বলে ওঠে-- আমার জীবনে শোনা সবচেয়ে আবেগহীন তিনটি শব্দ। সে বললো, "সংঘর্ষের জন্য প্রস্থুত হন।" আমার ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টের সাথে আর কথা বলার প্রয়োজন ছিল না। (হাসি) আমি তার চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম, সেখানে আতংক ছিল। জীবন শেষ। এখন আমি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে চাই তিনটি বিষয় যা আমি সেদিন নিজের সম্পর্কে বুঝেছিলাম। আমি শিখেছি যে সবকিছু বদলে যেতে এক মুহূর্ত লাগে। আমাদের এক একটা বাকেট লিস্ট আছে, আমাদের জীবনের কত চাহিদা আছে যা আমরা পূরণ করতে চাই, এবং আমি মনে করেছি সেসকল মানুষকে যাদের সাথে আমি পরিচিত হতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি, সেই সকল বাধা যা আমি অতিক্রম করতে চেয়েছি, সেই সকল অভিজ্ঞতা আমি নিতে চেয়েছিলাম এবং আমি কখনো পাইনি। পরে যখন আমি এসব নিয়ে ভেবেছি, আমার একটা প্রবাদের কথা মনে আসে, যা হচ্ছে, "আমি সবসময় বাজে ওয়াইন সংগ্রহ করি।" কারণ আমি আর আমার জীবনের কোন কিছুই অযথা ফেলে রাখতে চাই না। এবং সেই অত্যাবশর্কীয়তা, সেই উদ্দেশ্য, আমার জীবনকে সত্যি বদলে দিয়েছে। দ্বিতীয় যে জিনিসটি আমি শিখেছি সেইদিন- এবং এটা যখন জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিজ আমরা পার হয়ে যাই, যা আসলে খুব একটা বড় না- আমি চিন্তা করেছি, বাহ, আমি সত্যি একটি বিশাল অনুশোচনা অনুভব করেছি। আমি বেশ সুন্দরভাবেই আমার জীবন যাপন করেছি। আমার নিজের মনুষ্যত্ব এবং ভুলগুলো, আমি চেষ্টা করেছি সবকিছুতেই ভালো হয়ে উঠতে চেষ্টা করতে। কিন্তু আমার মনুষ্যত্ববোধে, আমি আমার আত্মমর্যাদাবোধকে প্রবেশ করতে দিয়েছি। এবং আমি যে সময়গুলো নষ্ট করেছি তার জন্য আমার অনুশোচনা হয় সেসকল বিষয়ে যেগুলো আসলে তেমন কিছুই ছিল না কিন্তু মানুষগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবং আমি আমার স্ত্রীর সাথে, আমার বন্ধুদের সাথে, মানুষের সাথে আমার সম্পর্কের কথা চিন্তা করলাম। এবং পরে, আমি যখন তা নিয়ে চিন্তা করেছি, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি আমার জীবন থেকে নেতিবাচক শক্তি পরিহার করবো। এটি নিঁখুত নয়, কিন্তু তা অনেক ভালো। আমার স্ত্রীর সাথে গত দুবছরে কোন রকম ঝগড়া হয়নি। এটা এক চমৎকার অনুভূতি। আমি এখন আর সঠিক হবার চেষ্টা করি না; আমি সুখে থাকাকেই বেছে নিয়েছি। তৃতীয় যে জিনিসটি আমি শিখেছি-- এবং এটা ঠিক যেমনটি আপনার মনের ঘড়িটি শুরু করে, "১৫,১৪,১৩।" আপনি দেখতে পাচ্ছেন পানি আসছে। আমি বলছি, "দয়া করে বিস্ফোরণ ঘটুক।" আমি চাইনা এই বস্তুটি ২০ টুকরা হয়ে যাক যেরকমটি আপনি দেখেন প্রামাণ্যচিত্রে। এবং আমরা যতই নিচে নামছিলাম, আমার এক অদ্ভূত অনুভূতি হচ্ছিল, মৃত্যু আসলে ভীতিকর নয়। এযেন আমরা আমাদের সারা জীবন ধরে এর জন্যই প্রস্তুত হচ্ছি। কিন্তু তা অনেক বেদনাদায়ক ছিল। আমি যেতে চাইছিলাম না; আমি আমার জীবনকে ভালবাসি। এবং এক বেদনা বা বিষণ্ণতা একটি চিন্তায় আটকে গেল, যা ছিল, আমার একটি জিনিসের জন্য আকাঙ্খা। আমি শুধুমাত্র আমার বাচ্চাদেরকে বড় হতে দেখতে চাই। এক মাস পরে, আমি আমার মেয়ের একটি মঞ্চাভিনয়ে ছিলাম-- প্রথম শ্রেণীর বাচ্চারা, তেমন দক্ষ আর প্রতিভাবান ছিল না ... ...কিন্তু তারপরও। (হাসি) এবং আমি বল করছি, আমি কাঁদছি, ছোট্ট শিশুর মত। এবং তা যেন হঠাৎ করেই আমার কাছে অর্থবহ হয়ে উঠল । সেই মুহূর্তে আমি উপলব্ধি করলাম, ওই দুটি বিন্দুতে জোড়া দিয়ে, একমাত্র যে জিনিসটিকে আমি আমার জীবনে গণ্য করতাম তা হচ্ছে একজন চমৎকার বাবা হওয়া। সবার উপরে, সবার উপরে, আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন ভালো বাবা হওয়া। আমাকে একটি অলৌকিক উপহার দেওয়া হয়েছিল, যাতে সেদিন আমি না মরে যাই। আমাকে আর একটি উপহার দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল ভবিষ্যত দেখতে পাওয়া এবং ফিরে আসা এবং ভিন্নভাবে বাঁচা। আমি আপনাদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আহ্বান করছি যে আপনারা যদি আজকেই, মনে করুন একই ঘটনা আপনার বিমানের সাথে ঘটছে- এবং দয়া করে যেন তা না ঘটে- কিন্তু মনে করুন, এবং আপনি কিভাবে বদলাবেন? আপনি কোন কাজটি করবেন যা আপনি মনে করেন আপনি করে ফেলবেন কারণ আপনি মনে করেন আপনি এখানে আজীবনের জন্য থাকবেন? আপনি কিভাবে আপনার সম্পর্কগুলোকে পরিবর্তন করবেন এবং তাদের মধ্যে থাকা নেতিবাচক শক্তিকে? এবং যেকোন কিছুর চেয়ে, আপনি কি আপনার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছেন সর্বোত্তম অভিভাবক হবার? ধন্যবাদ। (হাততালি) আমি ছোটবেলায় সবসময় সুপার হিরো হতে চাইতাম। আমি পৃথিবীটাকে রক্ষা করে সবাইকে সুখী করতে চাইতাম। কিন্তু আমি জানতাম এই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে আমার অসাধারণ শক্তি দরকার। তাই কল্পযাত্রায় ভর করতাম প্রায়ই হয়ত ক্রিপ্টন গ্রহ থেকে আন্তঃমহাজাগতিক বস্তু খুঁজতে, এ কাজে তেমন কোন ফলাফল না আসলেও তা বেশ মজার ছিল। বড় হয়ে বুঝলাম যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি আসলে সুপার পাওয়ারের কোন ভাল উৎস ছিল না, এর বদলে প্রকৃত বিজ্ঞানের পথে যাত্রা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম, আরও কার্যকরী সত্য খুঁজে পেতে। আমি যাত্রা শুরু করেছিলাম ক্যালিফোর্নিয়ায়, বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ বছর এর গবেষণা, যা একটা পুরনো বছরের বই থেকে শিক্ষার্থীদের ছবি পরীক্ষা করেছি্‌ল, তা থেকে তাদের জীবনের সফলতা ও সমৃদ্ধি পরিমাপ করতে চেষ্টা করেছিল। হাসি পরিমাপ করার মাধ্যমে, গবেষকেরা ধারণা করতে পেরেছিল যে ব্যাক্তির বৈবাহিক জীবন কতটা পরিপূর্ণ ও টেকসই হবে, (হাসি) সে সমৃদ্ধির প্রচলিত পরীক্ষায় কত পেতে পারে ও সে অন্যদের কে কতটা উৎসাহিত করবে। অন্য আরেকটি বছরের বইতে, ব্যরি ওবামার ছবি দেখে ধাক্কা খেলাম। যখন আমি প্রথম তার ছবিটা দেখলাম ভেবেছিলাম তার সুপার পাওয়ার বুঝি তার সুপার কলার থেকে এসেছে। (হাসি) কিন্তু এখন বুঝি এটা ছিল তার হাসি। আহা অন্য একটি! ২০১০ সালে ওয়েনে স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা যা - ১৯৫০ সালের আগের বড় বড় লীগ খেলোয়াড়দের বেইজবল কার্ডগুলো পরীক্ষা করে। গবেষকরা জানায়, একজন খেলোয়াড়ের হাসির পরিধি থেকে তার জীবনসীমা অনুমান করা যায়। যে খেলোয়াড়েরা তাদের ছবিতে হাসেনি তারা গড়ে ৭২.৯ বছর বেঁচেছিল, যেখানে যারা হাসছিল তারা গড়ে প্রায় ৮০ বছর বেঁচেছিল। (হাসি) তবে সুখবর হল আমরা জন্মসূত্রেই হাসি। আমরা মায়ের গর্ভে বাড়তে থাকা শিশুর হাসি দেখতে পারি থ্রিডি আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি ব্যবহার করে। শিশু যখন জন্ম নেয়, তারা সেই হাসিই হাসে তাৎক্ষণিক, বেশীর ভাগ ঘুমের মধ্যে। এমনকি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুরাও হাসে মানুষের আওয়াজ পেলে। হাসি হল মানুষের নূন্যতম জৈবিক একক অভিব্যক্তি। পাপুয়া নিউ গিনির একটি গবেষণায়, পল একম্যান, পৃথিবীর বিখ্যাত মৌখিক অভিব্যক্তির গবেষক, বলেন, ফোর নামক নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরাও, যারা পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন আর মানব ভক্ষণের প্রথা অনুসরণ করে (হাসি) তারাও আমাদের মতন হাসে যখন কোন ঘটনার বর্ণনা দেয়। তো পাপুয়া নিউ গিনি থেকে হলিউড বেইজিং এর সব আধুনিক শিল্পেও আমরা হাসি আর হেসেই আনন্দ ও সন্তুষ্ট ভাব প্রকাশ করি। এই রুমে ক'জন আছেন যারা দিনে প্রায় ২০ বার করে হাসেন? হাত তুলুন যদি তা করেন। ওহ, দারুণ। এই রুমের বাইরে, আমাদের এক তৃতীয়াংশের বেশী লোকে দিনে ২০ বারের বেশী হেসে থাকে, যেখানে আমাদের মধ্যে ১৪ শতাংশ হাসে দিনে পাঁচ বারের কম। আসলে, এই সুপার পাওয়ার আছে শিশুদের যারা দিনে প্রায় ৪০০ বারের মত হাসে। আপনি কি কখনো ভেবেছেন শিশুদের যারা বেশী হাসে তাদের আশেপাশে থাকলে, আপনিও কেন বেশী হাসেন? সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্ত গবেষণায় দেখা যায় যখন কেউ হাসে তখন তার উপর রাগ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন, কেন? কারণ হাসি বিবর্তনীয় রুপে সংক্রামক, আর এটা মুখের পেশীর উপর আমদের নিয়ন্ত্রণকে ও ছাড়িয়ে যেতে পারে। হাসিকে অনুকরণ করার শারীরিক অভিজ্ঞতা- আমাদের হাসি আসল না নকল তা বুঝতে সাহায্য করে, এভাবে যে হাসছে তার মনের অবস্থা বোঝা যায়। ফ্রান্সের ক্লেরমন্ড -ফ্লের‍্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুকরণের উপর এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, বিষয়কে বলা হয় মুখে পেন্সিল ধরে রেখে হাসি তৈরি করার পেশীগুলোকে চাপ দিয়ে হাসি নকল না আসল বের করতে বিষয়েরা পেন্সিল ছাড়া দারুণভাবে বিচার করতে পেরেছে কিন্তু মুখে পেন্সিল রেখে তারা ঠিকভাবে হাসি অনুকরণ করতে পারেনি ফলে তাদের বিচারও সঠিক হয়নি। (হাসি) 'দ্য অরিজিন অব স্পেসিস'এ চার্লস ডারউইন বিবর্তনের তাত্ত্বিকরণ করতে চেহারার অভিব্যক্তিতে যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা যায় তার এক তত্ত্ব দেন। তার তত্ত্বানুসারে,ভাল অনুভব করে হাসার চেয়ে হাসি নিজস্বভাবেই আমাদের ভাল অনুভব করায়। তার গবেষণায়, ডারউইন আসলে গুইলাম ডুশেন, ফরাসি নিউরলজিস্ট, কে উল্লেখ করেন তিনি মুখের পেশীগুলোয় তড়িৎ দিয়ে আবেশিত করে হাসির উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। দয়া করে বাসায় তা আবার চেষ্টা করবেন না। (হাসি) প্রাসঙ্গিক এক জার্মান গবেষণায়, গবেষকেরা এফএমআরআই ইমেজিং ব্যবহার করে মস্তিকের কার্যক্রম পরিমাপ করতে বোটক্স দেয়ার আগে ও পরে হাসির পেশীগুলোকে সংকোচন করতে। এ গবেষণার ফলাফল ডারউইনের তত্ত্ব সমর্থন করে, মৌখিক অভিব্যক্তি এমনভাবে নিউরাল কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত মস্তিকের অনুভূতিক বিষয়বস্তুকে পরিবর্তন করে , যা আমাদের ভাল অনুভব করায় যখন আমরা হাসি। হাসি আমদের মস্তিষ্ককে এমনভাবে উদ্দীপিত করে যা একটি বেশ ভাল সুখ উদ্দীপক যেমন চকোলেট এর উদ্দীপনার সাথেও মেলানো যায় না। ব্রিটিশ গবেষকেরা বলছে যে, একটি হাসি ২০০০ চকোলেট বারের সমান পরিমাণে মস্তিষ্কে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে। (হাসি) এমনকি-- একই গবেষণা প্রকাশ করেছে যে, ১৬০০০ পাউন্ড ক্যাশ পেয়ে যাওয়ার মতন উদ্দীপনা তৈরি করতে পারে হাসি। (হাসি) একটি হাসি যেন ২৫ হাজার ডলার। এটা কিন্তু খারাপ না। আর এভাবে ভেবে দেখুনঃ ২৫০০০ কে ৪০০ দিয়ে গুণ করে--- যেন কিছু ছেলেমেয়ে প্রতিদিন মার্ক জাকারবার্গের মতন অনুভব করছে। (হাসি) চকোলেট ছাড়াও, হাসি আপনাকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে। হাসি দুশ্চিন্তা বর্ধক হরমোনও কমাতে পারে যেমন, কর্টিসল, অ্যাড্রেনালাইন, ডোপামাইন, মন ভাল করার হরমোন বাড়াতে পারে যেমন এনড্রফিন্স আর সবমিলিয়ে রক্তচাপ কমাতে পারে। যদি এটাও যথেষ্ট না হয়, হাসি আপনাকে অন্যের চোখে সুন্দর দেখাতে পারে। পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বলছে, যখন আপনি হাসেন, তখন কেবল আপনাকে দেখতেই ভাল ও সৌজন্যপূর্ণ লাগে তা নয় কোন কাজ সফলভাবে শেষ করতে যা গুণাবলী লাগে সেসবের অধিকারী মনে হয়। তাই যখন নিজেকে দারুণ ও দক্ষ হিসেবে দেখতে চান, বা দুশ্চিন্তা কমাতে চান,বৈবাহিক সম্পর্কের উন্নতি করতে চান, বা যেন ক্যালরীর হিসাব-নিকাশ ছাড়াই খুব ভাল চকলেটের পুরো বাক্সই খেয়ে ফেলেছেন বা অনেকদিন ধরে অব্যবহৃত জ্যাকেটের পকেটে যেন ২৫ হাজার টাকা পেয়ে গেলেন, বা যখনই ইচ্ছে করবে সুপার পাওয়ার দিয়ে ভাল কোন কিছু করতে যা নিজেকে আর চারপাশের সবাইকে সাহায্য করবে একটি প্রলম্বিত, স্বাস্থ্যকর ও সুখী জীবন যাপনে, তাই হাসুন। (করতালি) আমি মনে করতাম যে TED এর শ্রোতারা হচ্ছেন বিস্ময়কর এক সমষ্টি যারা বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর, বুদ্ধিমান, মেধাবী, বাস্তব বুদ্ধি সম্পন্ন, বৈশ্বিক এবং এবং সৃষ্টিশীল মানুষ। এবং আমি মনে করি এটা সত্যি। যদিও, আমার এই বিশ্বাসের কারণ আছে যে আপনাদের অনেকে, যদিও অধিকাংশ না, নিজেদের জুতার ফিতা ভুলভাবে বাঁধেন। (হাসি) এখন আমি জানি এটা শুনতে হাস্যকর। আমি জানি এটা শুনতে হাস্যকর। এবং বিশ্বাস করুন, আমি সেই একই দুঃখ ভারাক্রান্ত জীবন অতিবাহিত করেছি তিন বছর আগে পর্যন্ত। এবং আমার সাথে যা হয়েছিল তা হচ্ছে যে আমি নিজের জন্য অত্যন্ত দামি একজোড়া জুতা কিনেছিলাম। কিন্তু সেই জুতোগুলোতে ছিল গোলাকার নাইলনের ফিতা, এবং আমি তাদেরকে বেঁধে রাখতে পারতাম না। তাই আমি দোকানে ফিরে গিয়েছিলান এবং দোকানদারকে বলেছিলাম, "আমি জুতাজোড়া খুবই পছন্দ করি, কিন্তু ফিতাগুলোকে ঘৃণা করি।" সে একবার জুতোজোড়ার দিকে তাকিয়ে বললো, "ওহ, আপনি ওগুলো ভুলভাবে বাঁধছেন।" তখন পর্যন্ত, আমি মনে করেছিলাম যে, ৫০ বছর বয়সের মধ্যে, আমি যে বিষয়টিতে অন্তত দক্ষ ছিলাম তা হচ্ছে নিজের জুতা বাঁধা। কিন্তু আসলে না-আমাকে দেখাতে দিন। এই যে এভাবে আমরা সকলে আমাদের জুতার ফিতা বাঁধা শিখেছি। এখন যা হয়েছে তা হচ্ছে-ধন্যবাদ। দাঁড়ান, আরো আছে। যা আসলে হয়েছে তা হচ্ছে, এই গিঁট বাঁধার একটি জোরদার এবংআরেকটি দুর্বল রূপ আছে, এবং আমরা শিখেছি কিভাবে দুর্বলটি দিতে হয়। এবং সেটা আপনি এভাবে বুঝতে পারবেন। আপনি যদি গিঁটের গোড়ায় ফিতা ধরে টানেন, আপনি দেখতে পাবেন যে এর ফাঁস নিজেকে জুতার লম্ব অক্ষ বরাবর স্থাপন করবে। এতাই হচ্ছে গেরোর দুর্বল রূপ। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই। আমরা যদি আবার শুরু করি এবং স্বাভাবিকভাবে অন্যদিকে যাই গেরোর পাশ দিয়ে, আমরা এটা পাই, গেরোর শক্ত রূপ। এবং আপনি যদি গেরোর নিচ থেকে ফিতা ধরে টান দেন, আপনি দেখতে পাবেন যে ফাঁস নিজেকে জুতার আড়াআড়ি অক্ষ বরাবর স্থাপন করে। এটা আরও শক্তিশালী গেরো। এবং এটা বারবার খুলবে না। এটা আপনাকে বারবার হতাশ করবে না, এবং শুধু তাই নয়, এটা দেখতে আরও ভাল। আমরা এটা আরও একবার করবো। (হাততালি) স্বাভাবিকভাবেই শুরু করুন, ফাঁসের অন্য দিক দিয়ে যান। এটা বাচ্চাদের জন্য একটু কঠিন, কিন্তু আমি মনে করি তারা এটা পারবে। গেরোটা টেনে দেখুন। এইযে দেখুন: জুতার গিঁটের শক্তিশালী রূপ। এখন, আজকের বিষয়বস্তুর সাথে সঙ্গতি রেখে, আমি যে কথাটি বলতে চাই--যা আপনারা ইতিমধ্যে জানেন-- যে কিছু সময় জীবনের যেকোন পর্যায়ের একটি ছোট সুবিধা অন্য পর্যায়ে প্রচণ্ড ভাল কিছু নিয়ে আসতে পারে। আপনাদের দীর্ঘায়ু এবং সাফল্য কামনা করি। (হাততালি) বাইরের আবরণ থেকে মনে হয় জনের সবকিছুই তার পক্ষে যাচ্ছিল। তিনি মাত্র চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন তাঁর নিউ ইয়র্কের ফ্ল‍্যাট বিক্রি করার জন্যে লক্ষ টাকা লাভে, এবং তিনি শুধুমাত্র পাঁচ বছর ধরে এর মালিক ছিলেন যেখান থেকে তিনি মাস্টার্স পাস করেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়টি মাত্র তাকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছিল, মানে, তিনি কেবলমাত্র বেতন নয় প্রথমবারের মত সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছিলেন, এবং যদিও, তার জীবনে সবকিছু বেশ ভাল ভাবে যাচ্ছিল, তিনি কষ্ট করছিলেন, মাদকাসক্তি এবং বিষন্নতার সাথে তিনি লড়ছিলেন। ১১ই জুন ২০০৩ এর রাতে, তিনি কিনার পর্যন্ত উঠলেন ম্যানহাটানের ব্রীজের বেড়ার উপর এবং তিনি নিচের ভয়ঙ্কর পানিতে ঝাঁপ দিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে -- না, অলৌকিকভাবে -- তিনি বেঁচে গেলেন। পড়ে তার ডান হাত ভেঙে চুরমার হয়ে গেল, তার প্রতিটি পাঁজরের হাড় ভেঙে গেল, ফুসফুস ছিদ্র হয়ে গেল, এবং তিনি ক্রমাগত চেতনা হরাতে লাগলেন ইস্ট নদীতে ভাসতে ভাসতে ব্রুকলিন ব্রিজের নিচ দিয়ে এবং ষ্ট্যাটেন আইল্যান্ড ফেরির পথে যেখানে ফেরির যাত্রীরা তার ব্যথার কান্না শুনতে পায়, তারা নৌকার ক্যাপটেনের সাথে যোগাযোগ করে ওরা কোস্ট গার্ডের সাথে যোগাযোগ করল যারা ইস্ট নদীর থেকে তাকে উদ্ধার করল এবং তাকে বেলেভিউ হাসপাতালে নিয়ে গেল। এবং এখানেই আসলে আমাদের গল্পের শুরু. কারণ একবার যখন জন নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন তার জীবনের সবকিছু আবার ঠিক করবেন -- প্রথমে শারীরিকভাবে, তারপর মানসিকভাবে এবং তারপর আধ্যাত্মিকভাবে তিনি দেখলেন যে খুব কম সাহায‍্য পাওয়া যায় তাদের জন্য যারা নিজেদের জীবন শেষ করতে চেষ্টা করেছেন তার মত করে। গবেষণায় দেখা যায় যে ১৯ হতে ২০ জন মানুষ যারা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন তারা ব্যর্থ হবেন। কিন্তু যারা বিফল হন তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৩৭ গুন বেশি দ্বিতীয়বারের চেষ্টায়। এটি সত্যিই একটি ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা যাদের সাহাযে‍্যর জন‍্য খুবই অল্প রিসোর্স আছে। এবং যা হয় যখন মানুষ তাদের নিজেদের জীবন আবার ঠিকঠাক করার চেষ্টা করে, আমাদের আত্মহত্যার ব্যাপারে বিধিনিষেধের কারণে, আমরা বুঝতে পারিনা আমাদের কী বলা উচিত, এবং প্রায়ই আমরা কিছুই বলি না। এবং এটা একাকীত্ব আরও বাড়িয়ে দেয় আর জনের মত মানুষগুলো এই একাকীত্বের মধে‍্য পড়ে। আমি জনের কাহিনী খুব ভালোভাবে জানি কারণ আমিই জন। এবং এটি, আজকে, প্রথমবারের মত কোন জনসাধারনের সামনে আমি স্বীকার করছি আমি যে আমি জীবনে কিসের মধে‍্য দিয়ে গেছি। কিন্তু ২০০৬ সালে একজন প্রিয় শিক্ষককে হারিয়ে এবং গত বছর একজন ভাল বন্ধুকে আত্মহত‍্যার পথে হারিয়ে, এবং গত বছর TEDActive এ বসে আমি জানতাম যে আমার নীরবতা থেকে আমাকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং আমার বিধি-নিষেধ পেরিয়ে আমাকে কথা বলতে হবে একটি চিন্তা সম্পর্কে যা ছড়িয়ে দেয়া জরুরী -- এবং সেটা হল যারা সেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুনরায় জীবনে ফিরে আসার তাদের আরও সম্পদ প্রয়োজন এবং আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন। যেমন ট্রেভর প্রকল্প বলছে, এটা আরো উন্নত হচ্ছে। আরো অনেক ভাল হচ্ছে। এবং আমি বেরিয়ে আসার প্রতিজ্ঞা করছি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের বাক্সো থেকে আপনাকে উৎসাহিত করতে, প্রেরণা দিতে যে যদি আপনি এমন কেউ হন যে আত্মহত্যার চেষ্টা বা চিন্তা করেছেন, কিংবা আপনি এমন কাউকে জানেন যে করেছে, এ বিষয়ে কথা বলুন, সাহায্য নিন। এটা একটি কথা বলার মত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এবং একটি চিন্তা যেটি ছড়িয়ে দেয়া জরুরী। ধন্যবাদ। (হাততালির শব্দ) আমার নাম জশুয়া ওয়াল্টার্স। আমি একজন শিল্পী। (বিটবক্সিং - মুখ দিয়ে বাদ্য বাজানো) হাসি হাততালি কিন্তু এই শিল্পী হওয়ার পাশাপাশি, আমাকে সনাক্ত করা হয়েছে বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত একজন হিসেবে। আমি এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছি। কারণ মঞ্চে যত বেশি পাগলাটে হই, ততই বেশি আনন্দদানকারী হয়ে উঠি আমি। আমার বয়স যখন ১৬ বছর, তখন সান ফ্রান্সিসকোতে প্রথমবারের মতো আমার উন্মাদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যেখানে আমার নিজেকে মনে হয়েছিল যীশু খ্রীষ্ট। হয়তো আপনারা এটাকে খুবই ভীতিকর বলে ভাবছেন। কিন্তু সত্যি কথা হলো, এমন কোন মাদক নেই, যা আপনাকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে, যেখানে আপনার নিজেকে যীশু খ্রীষ্ট মনে হবে। (হাসি) এরপর আমাকে পাঠানো হয়েছিল একটি মানসিক হাসপাতালে আর সেখানে, সবাই নিজেদের একক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করছে। (হাসি) সেখানে এখানকার মতো কোন দর্শক নেই, তাদের প্রস্তুতিমূলক মহড়ার সময় নির্ধারণ করার জন্য। তারা শুধুই অনুশীলন করছে। একদিন হয়তো তারা এখানে আসতে পারবে। তো, আমি যখন সেখান থেকে বের হলাম, তখন আমার রোগ নির্নয় করা হলো আর আমাকে ঔষুধপত্র দিলেন মনোরোগ চিকিৎসক “আচ্ছা, জোস, তোমাকে কিছু, তোমাকে কিছু জাইপ্রেক্সা দেওয়া যাক। ঠিক আছে? উমম.. হুম.. আপাতত আমার কলমে তো এটাই আসছে!” (হাসি) আপনাদের মধ্যেও অনেকে এই লাইনে আছেন। আমি দেখতে পাচ্ছি। আমি আপনাদের গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছি। তো, আমার স্কুলের প্রথমার্ধটা ছিল এই পাগলামি পর্বের সঙ্গে সংগ্রাম, আর দ্বিতীয় পর্বে ছিল এইসব ঔষুধপত্রের অধিক প্রয়োগ। যার ফলে আমি হাই স্কুলের অনেক সময় ঘুমিয়েই পার করেছি। দ্বিতীয়ার্ধটা ছিল একটা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থা, ক্লাসেও। যখন আমি সেখান থেকে বের হলাম, তখন আমার সামনে সুযোগ আসল বেছে নেওয়ার। হয় আমি অগ্রাহ্য করতাম আমার মানসিক অসুস্থতাকে বা সাদরে গ্রহণ করতাম আমার মানসিক দক্ষতাকে। বিউগল বাদ্য ইদানিং একটা আলোড়ন উঠেছে এই মানসিক অসুস্থতাকে ইতিবাচক হিসেবে পূর্ণবিবেচনা করার জন্য। অন্ততপক্ষে এটার হাইপোম্যানিক এলাকাটাকে। আপনাদের মধ্যে যারা জানেন না যে, এই হাইপোম্যানিয়া কী, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, এটা একটা নিয়ন্ত্রণহীন ইঞ্জিনের মতো। হয়তো একটা ফেরারি গাড়ির ইঞ্জিন, যেখানে কোন ব্রেক নেই। এখানকার অনেক বক্তার মধ্যে, আপনাদের অনেকের মধ্যেই এই সৃজনশীল প্রান্তটা আছে। আপনি হয়তো জানেন আমি কী নিয়ে কথা বলছি। আপনি এমন কোন কিছু করার জন্য তাড়িত হয়েছেন, যেটা সবাই আপনাকে বলেছে, সম্ভব না। জন গার্টনারের একটা বই আছে। বইটার নাম “দ্যা হিপোম্যানিক এজ”। যেখানে তিনি বলেছেন, ক্রিস্টোফার কলোম্বাস, টেড টার্নার, স্টিভ জবস আর তাঁদের মতো প্রায় সব বিজনেস গুরুদেরকেই এই প্রান্তসীমাটার সঙ্গে পাল্লা দিতে হয়েছে। আরেকটা বই লিখেছিলেন কে রেডফিল্ড জ্যামিসন। ৯০ এর দশকের মধ্যভাগে সেটার নাম ছিল “আগুন দিয়ে স্পর্শ করা”। সেখানে তিনি একটা সৃজনশীলতার দৃষ্টিকোন থেকে দেখছিলেন যে, কিভাবে মোজার্ট, বিটোফেন, ভ্যান গগ এই ম্যানিক ডিপ্রেসনের সঙ্গে জীবন কাটিয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছিলেন। তো, এই অসুস্থতার সবকিছুই খুব ইতিবাচক নয়। এখন, খুব সম্প্রতি, এই এলাকাটাতে আরও কিছু অগ্রগতি হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি লেখা এসেছিল, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে যার শুরুটা হয়েছিল “কিছুটা পাগলাটে হওয়া” দিয়ে। যেখানে বলা হয়েছিল, কিছু বিনিয়োগকারী এমন ধরণের কিছু ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা খুঁজছেন, যাদের মধ্যে এই ধরণের কিছু পাগলামির ধাঁচ আছে, আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কী বলতে চাচ্ছি। তাদেরকে হয়তো সম্পূর্ণ বাইপোলার ডিসঅর্ডারের লক্ষণযুক্ত না হলেও হবে। কিন্তু তাদের এই বাইপোলার ধারাটা থাকতে হবে। একদিকে আপনি নিজেকে যীশু খ্রীষ্ট ভাবতে পারেন। আর অন্যদিকে তারা হয়তো আপনাকে অনেক টাকার মালিক বানিয়ে দিতে পারে। (হাসি) এবার আপনার সিদ্ধান্ত। আপনার বেছে নেওয়ার পালা। আর সবাই এর মাঝখানেই আছে। সবাই আছে এর মাঝামাঝিতে। তো, হয়তো, জানেন তো, উন্মাদ হওয়ার মতো কোন জিনিস আসলে নেই। আর আপনার কোন একটা মানসিক অসুস্থতা সনাক্ত করা হয়েছে মানেই আপনি পাগল, তা না। কিন্তু হয়তো এর মানে আপনি সেইসব বিষয়ে অনেক স্পর্শকাতর, যেগুলো অন্য মানুষ দেখতে পায় না বা অনুভব করতে পারে না। হয়তো কেউই সত্যি সত্যি উন্মাদ না। হয়তো আমাদের সবারই কিছু পরিমাণ পাগলামির ধাঁচ আছে। কার কী পরিমাণ আছে, সেটা নির্ভর করে আপনি এই ধারার কোথায় আছেন তার উপরে। আর আপনি কী পরিমাণ ভাগ্যবান, তার উপরে। ধন্যবাদ (হাততালি এটা একটা দারুণ বিষয় যে আমরা এখানে এসেছি আলোচনা করতে রোগীদের সচেতনতার বছর নিয়ে| আজকে এর আগে আপনারা শুনেছেন সেইসব রোগীদের কথা যাঁরা নিজেদের পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতেই নিচ্ছেন, রোগীরা যাঁরা ​​বলছেন, "আপনি জানেন কি, আমি এই রোগের সম্ভাবনাসমূহ জানি, কিন্তু আমি আরও তথ্যের খোঁজ করছি| আমি নির্ধারণ করব কি আমার সাফল্যের শর্ত|" আমি আপনাদের বলতে চাই কীভাবে চার বছর আগে প্রায় আমি মারা যাচ্ছিলাম -- দেখলাম যে আমি, প্রায় সত্যিই, ইতিমধ্যে মৃতপ্রায়| এবং তখন আমি যা খুঁজে পেলাম তাকে বলা হচ্ছে ই-পেশেন্ট আন্দোলন -- এর মানে কী আমি আপনাদের বোঝাচ্ছি| আমি অনেকদিন ধরে ব্লগিং করছি পেশেন্ট ডেভ নামে, আর এই আবিষ্কারটা করে, আমি নিজের নতুন নামকরণ করলাম ই-পেশেন্ট ডেভ| "পেশেন্ট" বা "রোগী" শব্দটা সম্পর্কে বলি, যখন প্রথম আমি কয়েক বছর আগে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে জড়িত হতে শুরু করি এবং শুধুমাত্র একজন নৈমিত্তিক পর্যবেক্ষক হিসেবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সভা বা অধিবেশনে যেতে থাকি, আমি লক্ষ্য করি যে, মানুষজন রোগীদের সম্পর্কে কথা বলছে এমনভাবে যেন সে এমন কেউ যে এই ঘরের মধ্যে নেই, যেন সে কোন সুদূরের লোক| আমাদের আজকের কিছু আলোচনাতেও মনে হল, আমরা এখনও একইরকম আচরণ করি| কিন্তু আমি এখানে এসেছি আপনাদের বলতে, "পেশেন্ট" বা "রোগী" একটা প্রথম পুরুষ শব্দ নয়| আপনি, আপনি স্বয়ং, কোন হাসপাতালের বিছানায় নিজেকে খুঁজে পাবেন -- অথবা আপনার মাকে বা আপনার সন্তানকে -- অনেকেই মাথা নাড়ছেন, অনেকেই ভাবছেন "হ্যাঁ, আমি জানি আপনি ঠিক কী বলতে চাইছেন।" তাই যখন আপনি শুনবেন যে আজকে কী নিয়ে আমি কথা বলতে যাচ্ছি, প্রথমত, আমি এটাই বলতে চাই যে আমি এখানে এসেছি তাদের পক্ষ নিয়ে যে সব রোগীদের সাথে আমার দেখা হয়েছে, এবং যাদের সাথে আমার দেখা হয়নি| এই আলোচনা হচ্ছে রোগীদের আরো সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ানোর ব্যাপারে, স্বাস্থ্য পরিষেবার সহায়তা করার জন্য, এবং সেটাকে সংশোধন করার জন্যে| আমার হাসপাতালের একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার, চার্লি সাফরান, ও তাঁর সহকর্মী ওয়ার্নার স্লাক, বহু দশক ধরেই বলছেন যে স্বাস্থ্য পরিষেবায় সবচেয়ে অব্যবহৃত সম্পদ হলো রোগী| ওঁরা এটা বলছেন সেই সত্তরের দশক থেকেই| এখন আমি একটু পিছিয়ে যাই ইতিহাসের দিকে। এটা জুলাই ১৯৬৯ এর ঘটনা| আমি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র, এবং এটা সেই সময় যখন আমরা প্রথম চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করেছি| এবং এটা ছিল প্রথমবার যখন আমরা অন্য আরেক ভূপৃষ্ঠ থেকে দেখলাম -- সেই জায়গাকে যেখানে এখন আপনি আর আমি রয়েছি, যেখানে আমরা বাস করি| দুনিয়াটা বদলাচ্ছিল| তা এমনভাবে বদলাতে যাচ্ছিল যা কেউ আগে থেকে অনুমান করতে পারেনি| কয়েক সপ্তাহ পরে, উডস্টক ঘটলো| তিন দিন ধরে গানবাজনা আর ফুর্তি| এখানে, স্রেফ ঐতিহাসিক সত্যতার স্বার্থে, রইল আমার ওই বছরের একটা ছবি| (হাসি) হাঁ, ঢেউ খেলানো চুল, নীল চোখ -- সেটা সত্যিই কিছু ছিল| ওই ১৯৬৯ এর শরত্কালেই, সমগ্র বিশ্ব তালিকা প্রকাশিত হলো| এটি ছিল স্বয়ম্ভরতার একটা হিপি জার্নাল| আমরা ভাবি যে হিপিরা শুধুই প্রমোদলোভী ছিল, কিন্তু তাতে একটা জোরদার অংশ ছিল -- আমিও ছিলাম ওই আন্দোলনে -- একটা সুদৃঢ অংশ ছিল নিজের দায়িত্ব নেওয়া| এই বইয়ের শিরোনামের উপশিরোনাম হচ্ছে "সরঞ্জামের নাগাল"| এবং এখানে বলা হয়েছে যে কেমন করে নিজের বাড়ি বানাবেন, কী করে নিজের ফসল ফলাবেন, এমন সব জিনিস| ১৯৮০-র দশকে এই তরুণ ডাক্তার, টম ফার্গুসন, সমগ্র বিশ্ব তালিকার চিকিত্সা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন| এবং তিনি দেখলেন যে সবচেয়ে বেশি যে কাজটা আমরা করি চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যাপারে তা হল নিজেদের খেয়াল নিজেরাই রাখা| বস্তুত, তিনি বলেন যে ৭০-৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এভাবেই আমরা নিজেদের শরীর-স্বাস্থ্য সম্বন্ধে যত্ন নিই| এছাড়াও তিনি দেখলেন যে যখন স্বাস্থ্য পরিষেবা চিকিত্সা পরিষেবাতে পরিণত হয় কোনো গুরুতর রোগের কারণে, তখন প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় তথ্যের অভাব| আর যখন ওয়েব বা ইন্টারনেট এলো, তখন তা সবকিছু পাল্টে ফেলল, কারণ শুধু যে আমরা তথ্য খুঁজে পেতে পারলাম তাই নয়, আমরা আমাদের মতন লোকেদেরও খুঁজে পেলাম যারা সংগ্রহ করতে পারে, যারা আমাদের এনে দিতে পারে নানা প্রয়োজনীয় তথ্য| এবং তিনি তখন এই শব্দটির প্রণয়ন করলেন: ই-পেশেন্ট -- সজ্জিত, সক্রিয়, ক্ষমতাপ্রাপ্ত, সক্ষম| অবশ্যই, জীবনের এই পর্যায়ে তিনি আরো সৌম্য হয়েছেন আগের তুলনায়| এখন আমি ছিলাম একজন সক্ষম রোগী ওই শব্দটা শোনার অনেক আগে থেকেই| ২০০৬ সালে আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে, এবং বললাম, "আমার কাঁধে ব্যথা করছে|" আমার এক্স-রে করানো হলো, আর, পরেরদিন সকালে -- আপনারা হয়ত খেয়াল করেছেন, আপনারা যাঁরা কোনো শারীরিক সংকটে পড়েছেন এটা বুঝতে পারবেন| আজ সকালে কয়েকজন বক্তা ঠিক ওই তারিখটাও বলতে পারলেন যেদিন ওঁদের রোগটা ধরা পড়েছিল| আমার জন্য, সেটা ছিল সকাল ন'টা জানুয়ারী ৩, ২০০৭ তারিখে| আমি অফিসে ছিলাম, আমার ডেস্কটা ছিল পরিষ্কার; আমার দেয়ালে নীল পার্টিশন কার্পেট ছিল| ফোনটা বাজলো - এবং ওই প্রান্তে ছিলেন আমার ডাক্তারবাবু| তিনি বললেন, "ডেভ, আমি আপনার এক্স-রে টা দেখলাম আমার বাড়ির কম্পিউটার স্ক্রীনে।" তিনি বললেন, "আপনার কাঁধের সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু ডেভ, আপনার ফুসফুসে কিছু একটা আছে|" আর আপনি যদি ওই লাল ডিম্বাকৃতি অংশটা দেখেন, ওই ছায়াটা কিন্তু ওখানে থাকার কথা ছিল না| সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমি বললাম, "তাহলে আপনি আমাকে ওখানে ফিরে আসতে বলছেন?" তিনি বললেন "হ্যাঁ, আপনার বুকের একটা সিটি স্ক্যান করতে হবে|" সবশেষে আমি বললাম, "আমাকে কী কিছু করতে হবে?" তিনি বললেন -- ভেবে দেখুন, আপনার ডাক্তারবাবু আপনাকে এমন একটা উপদেশ দিচ্ছেন: "আপনি স্রেফ বাড়ি গিয়ে আপনার গিন্নির সাথে একটু সুরাপান করুন|" আমি ক্যাট স্ক্যান করালাম, এবং দেখা গেল এরকম পাঁচটা জিনিস আমার দুই ফুসফুসে আছে| তখন বোঝা গেল যে ওটা ক্যান্সার| আমরা জানতাম ওটা লাং ক্যান্সার নয়| অর্থাৎ অন্য কোথাও থেকে ওটা মেটাস্ট্যসাইজ করেছে| প্রশ্নটা হলো, কোথা থেকে? তাই আমি এবারে আল্ট্রাসাউন্ড করালাম| অনেক মহিলাই যা করিয়েছেন এবারে আমি সেটা করানোর সুযোগ পেলাম -- পেটে জেলী লাগিয়ে bzzzz করে। আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে এলেন| তিনি একজন পশু চিকিত্সক, অতএব তিনি অনেক আল্ট্রাসাউন্ড দেখেছেন| তিনি জানেন, আমি একটা কুকুর নই| কিন্তু আমরা যা দেখলাম - এটা একটা এম-আর-আই ছবি| এটা আল্ট্রাসাউন্ড ছবির চেয়ে বেশি স্পষ্ট| আমরা দেখলাম, ওই বৃক্ক(কিডনি)তে একটা বড় পিণ্ড| আর আসলে ঐরকম দুখানা ছিল| একটা সামনের দিকে বাড়ছিল এবং ইতিমধ্যেই ফেটে গিয়েছিল, আর সেটা বৃহদন্ত্রের সাথে লেগে গিয়েছিল| অন্যটা পেছনের দিকে বাড়ছিল আর সোলেয়াস মাংসপেশীর সাথে সেঁটে গিয়েছিল, সেটা নাকি আমাদের পিঠের একটা বড়সড় পেশী, যেটার নাম আমি আগে কখনো শুনিনি, কিন্তু হঠাৎই ওটা নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করলাম| আমি বাড়ি গেলাম| আমি গুগল করি নিয়মিত -- সেই ১৯৮৯ থেকে আমি অনলাইন হয়েছি কম্পিউসার্ভে| আমি বাড়ি ফিরে গেলাম, এবং আমি জানি আপনারা এখানে খুঁটিনাটি জিনিসগুলো পড়তে পারছেন না; সেটা অত জরুরীও নয়| আমার মূল কথা হচ্ছে যে আমি একটা প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা-বিষয়ক ওয়েবসাইটে গেলাম, ওয়েবএমডি (WebMD), কারণ আমি জানি কিভাবে আবর্জনা ছাঁটাই করতে হয়| আমার স্ত্রীকেও আমি খুঁজে পেয়েছিলাম অনলাইনেই| ওঁর সঙ্গে পরিচয়ের আগে, সন্ধান করে আমি কিছু নিম্নমানের ফলাফল পেয়েছিলাম| (হাসি) তাই আমি কিছু উচ্চ মানের তথ্য খুঁজছিলাম| বিশ্বাসযোগ্যতা একটা বড় কথা -- কোথাকার তথ্যগুলো বিশ্বাসযোগ্য? আমার শরীর কোথায় শেষ হচ্ছে আর কোথায় আক্রমণকারী শুরু হচ্ছে? এবং ক্যান্সার, হচ্ছে একরকমের টিউমার, যা আপনার নিজের শরীরের অংশ থেকেই জন্মায়| সেটা কী করে হয়? চিকিত্সার পরিসর কোথায় শুরু হয় আর কোথায় শেষ হয়? আমি যা পড়লাম ওয়েবএমডিতে: "পূর্বাভাস সন্তোষজনক নয় ক্রমবর্ধমান কিডনি ক্যান্সারের জন্যে| প্রায় সব রোগীর ক্ষেত্রেই কোনো উপশম নেই|" আমি এত বেশিদিন ধরে অনলাইন হচ্ছি যে জানি যদি আমার প্রথমে পাওয়া অনুসন্ধানের ফলাফল পছন্দ না হয়, আমি আরো বেশি খুঁজতে থাকি| এবং দেখতে পাই যে, অন্যান্য ওয়েবসাইটেও, যেগুলো এমনকি গুগলের তৃতীয় পাতার ফলাফলে আসে, "পরিণতি হতাশাজনক", "পূর্বাভাস ভয়ংকর|" আর আমি ভাবছি, "কী আপদ?" আমার তো একটুও শরীর খারাপ লাগছিল না| মানে, আমি সন্ধের দিকে একটু ক্লান্ত হয়ে যেতাম ঠিকই, কিন্তু তখন আমার বয়েস ছিল ৫৬| ধীরে ধীরে আমার ওজন কমছিল, কিন্তু আমার জন্যে, সেটাই তো আমাকে ডাক্তারবাবু করতে বলেছিলেন| সেটা সত্যিই একটা কিছু ছিল| আর এটা হচ্ছে চতুর্থ পর্যায়ের কিডনি ক্যান্সার এর ছবি শেষ অবধি যে ওষুধটা খেয়েছিলাম তারপরে| একদমই ঘটনাচক্রে আমার ফুসফুসে ওই জিনিসটা আসে| বাঁ পায়ের ফিমার, বাঁ পায়ের উরুর হাড়ে, ঐ যে আরেকটা| আমার একটা ছিল| শেষ অবধি আমার পা ভেঙ্গেছিল| আমি অজ্ঞান হয়ে ওটার ওপরে ভর দিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম, আর ওটা ভেঙ্গে গিয়েছিল| মাথার খুলিতেও একটা ছিল, ষোলকলা পূর্ণ করতে, আমার এই অন্যান্য টিউমার গুলোও ছিল -- এমনকি, যতদিনে চিকিত্সা শুরু হলো, আমার জিভেও একটা গজিয়েছিল| কিডনি ক্যান্সার আমার জিভে গজাচ্ছিল| এবং পড়লাম যে আমার অবশিষ্ট গড় আয়ু হচ্ছে ২৪ সপ্তাহ| এটা খুব খারাপ| আমি কবরে যাবার জন্যে তৈরী হচ্ছিলাম| আমি ভাবছিলাম, "আমার মায়ের মুখের চেহারা কেমন হবে আমাকে কবর দেবার দিনে?" আমাকে আমার মেয়ের সাথে বসতে হলো আর বলতে হলো, "এই হচ্ছে অবস্থা।" ওর সাথে ওর ছেলে-বন্ধুও ছিল| আমি বললাম, "আমি চাই না তোমরা তাড়াহুড়ো করে বিয়ে কর যাতে বাবা বেঁচে থাকতে থাকতেই করতে পারো|" এটা খুবই সিরিয়াস| কারণ আপনারা যদি ভাবেন যে কেন রোগীরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাহয্য করতে চাইবে, তাহলে এইটা ভেবে দেখুন| আমার ডাক্তারবাবু আমাকে একটা রোগীদের সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন, Acor.org একটা আশ্চর্য জিনিস, একটা ক্যান্সার রোগীদের নেটওয়ার্ক| খুব তাড়াতাড়ি তারা আমাকে বলল যে, "কিডনি ক্যান্সার খুব বেশি লোকের হয়না| কোন বিশেষজ্ঞ কেন্দ্রে যান| এর কোন চিকিত্সা নেই, কিন্তু একটা জিনিস মাঝেসাঝে কাজ করে -- তবে সাধারণত কাজ করেনা -- এটাকে বলে হাই-ডোসেজ ইন্টারলিউকিন| বেশিরভাগ হাসপাতালেই ওটা পাওয়া যায়না, সেইজন্যে কেউ জানায়ও না যে ঐরকম কোনো জিনিস আছে| আর ওদের আপনাকে আগেভাগেই অন্য কিছু দিতে দেবেন না| আর এখানে, চারজন ডাক্তারবাবু আছেন যাঁরা আমেরিকার এই অঞ্চলে থাকেন এবং ওই ওষুধটা দেন, এবং তাঁদের ফোন নাম্বার|" কেমন চমত্কার না? (হাততালি) এই হল কথা। এবারে দেখুন, চার বছর বাদে: আপনি কোনো ওয়েবসাইট পাবেন না যা রোগীর জন্যে ঐ তথ্যটা দেয়। সরকার অনুমোদিত, আমেরিকান ক্যান্সার সমিতি, কিন্তু রোগীরা জানেন তাঁদের যেটা জানা দরকার| এটা হলো রোগীদের নেটওয়ার্কের ক্ষমতা| এই আশ্চর্য জিনিসটা -- আবার আমি বলছি, আমার শরীরের শেষ কোথায়? আমার ক্যান্সারের ডাক্তারবাবুর সাথে আমি রোজ অনেক আলোচনা করি কারণ আমি চাই আমার কথাগুলোকে তথ্যের দিক দিয়ে যথাসম্ভব নির্ভুল রাখতে| তিনি বললেন, "আপনি জানেন, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা খুব ভালো ধরতে পারে আক্রমণকারীদের -- যে জীবাণুগুলো বাইরে থেকে আসে -- কিন্তু আপনার নিজের শরীরের কোন অংশ যদি বাড়তে থাকে, সেটা একদম অন্য ব্যাপার|" প্রকৃতপক্ষে আমি একটা মানসিক ব্যায়ামের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলাম, কারণ আমি একটা রোগীদের সহায়তা গোষ্ঠী গড়ে তুললাম একটা ওয়েবসাইটে, এবং আমার এক বন্ধু, আসলে আমার এক আত্মীয়, বলল, "দেখো ডেভ, এটা কে বানিয়েছে? তুমি কি নিজেকে এমন ভাবে দেখাবে যেন মানসিকভাবে নিজেকেই আক্রমণ করছ?" তখন আমরা ভালো করে ওটা নিয়ে পড়লাম| আর কী করে সেইসব হলো তার গল্প এই বইটাতেই আছে| যাইহোক, এইভাবেই সংখ্যাগুলো পাওয়া গেল| আমি যেরকম, হাসপাতালের ওয়েবসাইট থেকে সংখ্যাগুলো নিয়ে টিউমারের সাইজগুলো একটা স্প্রেডশীট-এ লিখলাম| সংখ্যাগুলো নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না| ঐ যে দেখছেন, ঐটা আমাদের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা| আশ্চর্য জিনিস - ঐ হলুদ লাইন দুটো হচ্ছে যখন আমি দু ডোজ ইন্টারলিউকিন পেলাম দু মাসের ব্যবধানে। আর দেখুন কিভাবে টিউমার সাইজগুলো হঠাত করে কমে গেল তার মধ্যে| অবিশ্বাস্য। কে জানে, যখন আমরা এর ঠিকঠাক ব্যবহার শিখে যাব তখন হয়তো এর আরো ভালো সদ্ব্যবহার করতে পারব| মোদ্দা কথা হলো যে বছর দেড়েক বাদে, আমি সেখানে ছিলাম যখন এই সুন্দরী তরুণী, আমার মেয়ে, বিয়ে করলো| আর যখন সে ওই সিঁড়ির ধাপগুলো বেয়ে নিচে নেমে এলো, এবং ওই মুহূর্তে শুধু ও আর আমি, আমি খুব খুশি যে ওকে ওর মাকে বলতে হয়নি, "ইশ, আজকে যদি বাবা এখানে থাকতেন!" এবং এটাই আমরা করি যখন আমরা স্বাস্থ্য পরিষেবাকে উন্নত করতে পারি| এবারে আমি সংক্ষেপে আরো দুয়েকজন রোগীর কথা বলতে চাই যাঁরা স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নত করার জন্যে যথসাধ্য করছেন| ইনি রেজিনা হলিডে, ওয়াশিংটন ডিসি'র একজন চিত্রকর, যাঁর স্বামী কিডনি ক্যান্সারে মারা যান আমার রোগ ধরা পড়ার বছরখানেক বাদে| এখানে তিনি দেয়ালে একটি ছবি আঁকছেন হাসপাতালে ওঁর স্বামীর ভয়ংকর শেষ কয়'সপ্তাহের ছবি| একটি জিনিস যা তিনি লক্ষ্য করেছেন সেটা হলো যে ওঁর স্বামীর মেডিকেল রেকর্ডগুলো এই কাগজের ফাইলে ভীষণ এলোমেলো| এবং তিনি ভাবলেন যে ,"দেখুন, যদি পুষ্টির তথ্যের একটা লেবেল থাকে কোনো খাবারের বাক্সের গায়ে, কেন সেইরকম সহজ কিছু থাকতে পারে না ডিউটিতে আসা প্রত্যেক নতুন সিস্টারকে বলার জন্যে, প্রত্যেক নতুন ডাক্তারকে, জানাতে আমার স্বামীর বর্তমান অবস্থার কথা?" তাই তিনি দেয়ালে এইরকম ছবি আঁকলেন চিকিত্সা সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে তাতে পুষ্টির লেবেলের মতন কিছু দিয়ে, ঐরকম কিছু, ওঁর স্বামীর ছবিতে| অতএব, গত বছরে, তিনি এই ছবিটা আঁকলেন| উনি আমার মতোই স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন| তিনি বুঝতে পারলেন যে এইরকম অনেক লোক আছেন যারা রোগীর বক্তব্য নিয়ে বই লিখেছেন যে সব কথা মেডিকেল সম্মেলনে শোনা যায় না| রোগীরা এইরকম অব্যবহৃত সম্পদ| আমার ভূমিকায় যেমন বলা হলো, লোকে জানেন আমি সবসময়েই বলে থাকি যে রোগীদের নিজেদের সম্পর্কিত সব তথ্য তাদের নিজেদের নাগালের মধ্যে থাকা উচিত| এবং সত্যি সত্যি আমি একটা সম্মেলনে বলেছিলাম বছর দুয়েক আগে, "আমার সব তথ্য আমাকে দিন, কারণ আপনাদের ওপরে ভরসা করা যায় না যে আপনারা ওগুলো যথাযথ রাখতে পারবেন।" ওঁর কাছে আমাদের যত্তসব তথ্য আবদ্ধ আছে -- এটা একটা pun (যমক) -- যা বাঁধন ভেঙ্গে বেরিয়ে আসছে, মুক্ত হয়ে পড়ছে -- বাঁধভাঙা সেই জল হলো আমাদের তথ্যের প্রতীক| আর আসলে, আমি একটা নতুন জিনিস করে দেখাতে চাই আপনাদের জন্যে| টুইটারে একজন লোক আছেন যাঁকে আমি জানি, বস্টনের কাছেই থাকেন, একজন স্বাস্থ্য-তথ্য-প্রযুক্তিকর্মী, যিনি এই ই-পেশেন্ট র‍্যাপ লিখেছিলেন| সেটা অনেকটা এইরকম| ♫ আমার যত্তসব তথ্য আমায় দিন ♫ ♫ আমি ডেভের মতনই ই-পেশেন্ট হতে চাই ♫ ♫ আমার যত্তসব তথ্য আমায় দিন, কারণ নিজেকে তো বাঁচতে হবে ♫ থাক অনেক হয়েছে - আর গাইছি না| (করতালি) অনেক ধন্যবাদ। অনেকটা সময় গেল ঐতে| (হাসি) এটা ভেবে দেখুন, কেন আইফোন আর আইপ্যাড এসবের অনেক তাড়াতাড়ি অগ্রগতি হয়, যদি তুলনা করে দেখি, আপনার নাগালের মধ্যে যেসব চিকিত্সার যন্ত্রপাতি আছে আপনার পরিবারের যত্ন নেবার জন্য? এখানে একটা ওয়েবসাইট দেখুন, VisibleBody.com, যেটা আমি হঠাৎ খুঁজে পেয়েছি| আমার মনে হল, "জানেন, আমি চিন্তা করছিলাম, আমার শরীরের ওই সোলিয়াস পেশীটা কী জিনিস?" যেকোনো জিনিস ক্লিক করেই সরাতে পারেন| আর আমি দেখলাম, "ঐ তো, ঐটা কিডনি আর ঐটা সোলিয়াস পেশী|" এবং ওটা ত্রিমাত্রিক ভাবে ঘোরাচ্ছিলাম আর বলছিলাম, "এইবারে আমি বুঝলাম|" আর তখনি আমার খেয়াল হলো যে গুগল আর্থের কথা মনে পড়ছে, যেখানে যে কোনো ঠিকানায় উড়ে যাওয়া যায়| আর আমি ভাবলাম, "এটা নিয়ে কেন আমার ডিজিটাল স্ক্যান তথ্যের সাথে লাগিয়ে নিজের শরীরের গুগল আর্থ বানাই না?" এই বছরে গুগল নতুন কি প্রকাশ করেছে? এখন গুগল বডি ব্রাউজার বেরিয়েছে| কিন্তু দেখুন, এটা কেবল দেয় সাধারণ তথ্য| এটা আমার নিজস্ব তথ্য নয়| কিন্তু যদি ওই বাঁধের পেছন থেকে তথ্য বের করে আনা যেত যাতে সফটওয়্যার আবিষ্কারকরা সেগুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারতেন, যেভাবে সফ্টওয়্যার আবিষ্কারকরা কাজ করতে ভালবাসেন, কে জানে তাহলে আমরা কি পেয়ে যেতে পারি| একটা শেষ গল্প: ইনি কেলি ইয়াং, একজন বাতের রোগী থাকেন ফ্লোরিডাতে| এটা একেবারে সাম্প্রতিক ঘটনা গত কয়েক সপ্তাহে যা ঘটছে। বাতের রোগী, যেমন তাঁরা বলেন নিজেদের -- ওঁর ব্লগের নাম RA Warrior (বাত যোদ্ধা) -- ওদের একটা বড় সমস্যা কারণ তাঁদের ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রে রোগের কোনো প্রকাশ্য লক্ষণ দেখা যায় না| এবং সেইজন্যে এটা বোঝা খুবই কঠিন যে রোগটার কেমন অবস্থা চলছে| আর কিছু ডাক্তারবাবু ভাবেন, "হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন, আপনি সত্যিই খুব ব্যথা পাচ্ছেন|" উনি অনলাইন অনুসন্ধান করে খুঁজে বার করলেন যে, হাড়ের পারমাণবিক স্ক্যান যা সাধারনত ক্যান্সারে ব্যবহৃত হয়, প্রদাহ হচ্ছে কিনা দেখাতে পারে| এবং তিনি দেখলেন যে যদি কোনো প্রদাহ না থাকে তাহলে স্ক্যানটা সমানভাবে ধূসর থাকে| তাই তিনি ওটা করলেন| আর রেডিওলজিস্ট রিপোর্ট দিলেন "কোনো ক্যান্সার নেই|" কিন্তু সেটা তো তিনি জানতে চাইছিলেন না| তাই তিনি আরেকবার ভালো করে দেখতে বললেন, ওঁর ডাক্তারবাবু সাংঘাতিক রেগে গেলেন| তিনি সিডিটা বার করলেন আবার| ডাক্তারবাবু বললেন, "আমার কথা যদি না মানেন, তাহলে চলে যান|" তাই তিনি স্ক্যান ছবির সিডিটা নিয়ে দেখতে বসলেন, আর ওই হট-স্পটগুলো সব লক্ষ্য করুন| আর এখন তিনি ব্লগে সক্রিয়ভাবে জড়িত আরো ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবার জন্যে সহায়তা খুঁজছেন| দেখুন, ইনি একজন ক্ষমতাপ্রাপ্ত রোগী -- কোনো ডাক্তারি প্রশিক্ষণ নেই| আমি, আপনি, হচ্ছি স্বাস্থ্য পরিষেবার সবচেয়ে অব্যবহৃত সম্পদ| উনি যা করতে পেরেছিলেন তার কারণ ওঁর কাছে মূল তথ্য সব ছিল| কত বড় ঘটনা ছিল এটা? TED২০০৯-এ টিম বার্নার্স-লী স্বয়ং, ওয়েব এর আবিষ্কর্তা, একটা বক্তৃতা দিয়েছিলেন যেখানে তিনি বলেন যে পরবর্তী বড় জিনিস হতে যাচ্ছে আপনার ব্রাউজার গিয়ে খুঁজে আনবে না তথ্য সম্পর্কে অন্যান্য লোকেদের লেখাজোখা, বরং মূল তথ্য| এবং ওঁর বক্তব্যের শেষে সবাইকে মন্ত্র বলার মতন করে বলিয়েছিলেন, "মূল তথ্য এক্ষুণি| "মূল তথ্য এক্ষুণি|" আর আমি আপনাদের বলছি, এই কটা শব্দ, দয়া করে বলুন, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির জন্যে: রোগীদের সাহায্য করতে দিন| রোগীদের সাহায্য করতে দিন| রোগীদের সাহায্য করতে দিন| রোগীদের সাহায্য করতে দিন| ধন্যবাদ| (করতালি) পৃথিবীর যত রোগী যারা দেখছেন এই সম্প্রচার (ওয়েবকাস্ট), ভগবান কল্যাণ করুন, প্রত্যেকের - রোগীদের সাহায্য করতে দিন| অনুষ্ঠান পরিচালক: আপনারও ভালো হোক| আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ| কয়েক বছর আগে আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন একটি একঘেয়ে জীবনে আটকে গিয়েছি, তাই ঠিক করেছিলাম অনুসরণ করবো বিখ্যাত আমেরিকান দর্শনিক, মর্গান স্পারলককে, আর ত্রিশ দিনের জন্য নতুন কিছু চেষ্টা করবো। পরিকল্পনাটি আসলে খুবই সাধারণ। এমন কিছু চিন্তা করা যা তুমি সবসময় নিজের জীবনে চেয়েছিলে এবং পরবতী ত্রিশ দিন সেটাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা করা। দেখা গেল ত্রিশ দিনই যথেষ্ট একটি নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে অথবা একটি অভ্যাস বাদ দিতে -- যেমন খবর দেখা -- তোমার জীবন থেকে। এই ত্রিশ দিনের চ্যালেঞ্জ পালন করতে গিয়ে কিছু জিনিস আমি শিখেছি। প্রথমটি হল পার হয়ে যাওয়া মাস গুলো ভুলে যাওয়ার পরিবর্তে, সময় গুলো আরও বেশি মনে রাখার মত হয়ে ওঠে । চ্যালেঞ্জের অংশ হিসেবে আমি এক মাসের জন্য প্রতিদিন একটি করে ছবি তুলি । এবং এখন আমি মনে করতে পারি আমি ঠিক কোথায় ছিলাম আর ঐ দিন আমি কি করছিলাম। আমি আরও দেখলাম যে আমি যত বেশি ও কঠিন ৩০ দিনের চ্যালেঞ্জ করা শুরু করলাম, আমার আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকলো। আমি একজন টেবিলে বসে থাকা কম্পিউটার ভক্ত থেকে এমন একজন মানুষে পরিণত হলাম যে কিনা কাজে যায় সাইকেলে- মজার জন্য। এমনকি গত বছর, আমি কিলিমাঞ্জারো পাহাড়ে উঠেছিলাম, যা আফ্রিকার সর্বোচ্চ পাহাড়। আমি এরকম রোমাঞ্চকর কাজ করার কথা কখনও ভাবিনি আমার এই ত্রিশদিনের চ্যালেঞ্জ শুরু করবার আগে। আমি আরও বুঝতে পারলাম যে কেউ যদি কোনকিছু খুব বেশি করে চায়, সে তা করতে পারে ৩০ দিনের জন্য। আপনি কি কখনো কোন উপন্যাস লিখতে চেয়েছেন? প্রতি নভেম্বরে, হাজার হাজার মানুষ চেষ্টা করে তাদের নিজেদের ৫০ হাজার শব্দের উপন্যাস লিখবার, একদম গোড়া থেকে, ৩০ দিনে। দেখা গেল, প্রতিদিনে আপনাকে ১,৬৬৭টি শব্দ লিখতে হবে একমাস ধরে। আর সেটাই আমি করেছিলাম। আর বলে রাখি এর গোপন রহস্যটা হচ্ছে ঘুমাতে না যাওয়া যতক্ষণ না আপনি দিনের বরাদ্দকৃত অংশটি লিখছেন। আপনি হয়তো ঘুম-বঞ্চিত হবেন, কিন্তু আপনার উপন্যাসটি শেষ হবে। তার মানে কি আমার বইটা যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী বিখ্যাত উপন্যাস? না। আমি ওটা একমাসে লিখেছিলাম। ওটা অত্যন্ত খারাপ হয়েছিল। কিন্তু জীবনের বাকি দিনগুলোতে কখনো জন হজম্যানের সাথে টেড এর অনুষ্ঠানে দেখা হলে, আমাকে বলতে হতো না, "আমি একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী।" না, না, আমি যদি চাই, আমি বলতে পারি, "আমি একজন ঔপন্যাসিক।" (হাসি) তাই শেষে এই একটা কথা বলতে চাই। আমি শিখেছি যে আমি যদি ছোট, স্থায়ী পরিবর্তন ঘটাই, যা আমি চালিয়ে যেতে পারি, সেগুলোর টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশী। বড়, অত্যুৎসাহী চ্যালেঞ্জও খারাপ কিছু নয়। আসলে, তার মাঝে অনেক মজা আছে। কিন্তু সেগুলো টিকে থাকার সম্ভাবনা কম। আমি যখন ৩০ দিনের জন্য মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম, একত্রিশতম দিনটা এমন ছিল। (হাসি) সুতরাং আপনাদের প্রতি আমার প্রশ্ন: আপনারা কিসের জন্যা অপেক্ষা করছেন? আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিচ্ছি আগামী ৩০ দিন ঠিক কেটে যাবে সে আপনি পছন্দ করুন বা না করুন, তাই এমন কিছুর কথা চিন্তা করুন না যা আপনি সবসময় করতে চাইতেন এবং সেটার জন্য একটু চেষ্টা করুন পরবর্তী ৩০ দিন। ধন্যবাদ। (হাততালি) অনেক ধন্যবাদ,ক্রিস। এখানে যারা উপস্থিত তারা বলছেন তারা ভীত। আমি জানি না আমি ভীত কিনা, এই প্রথম আমি এই রকম শ্রোতাদের সম্ভাষণ করছি। আর আমার কাছে আপনাদের দেখানোর মত কোন উজ্জ্বল প্রযুক্তি নেই। এখানে কোন স্লাইড নেই,তাই আপনাদের আমাকে নিয়ে সন্তূষ্ট থাকতে হবে। {হাস্যরোল} আজকে সকালবেলায় আমি আপনাদের কিছু গল্প আর এক্তটা আলাদা আফ্রিকার কথা বলব। আজকে সকালবেলায় আগেই আফ্রিকা সম্বন্ধে বহুশ্রুত একটা ইঙ্গিত ছিল,HIV/AIDS এর আফ্রিকা, ম্যালেরিয়ার আফ্রিকা, দারিদ্র্যের আফ্রিকা,দ্বন্দ্বের আফ্রিকা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের আফ্রিকা। এগুলো ঘটে চলেছে এটা সত্য, কিন্তু এমন একটা আফ্রিকাও আছে যার সম্বন্ধে আপনারা বেশি শোনেন নি। কখনও কখনও আমি হতভম্ব হয়ে যাই আর এর কারন সম্বন্ধে নিজেকে প্রশ্ন করি। এই আফ্রিকার পরিবর্তন হচ্ছে,ক্রিস এর ইঙ্গিতেই সেটা স্পষ্ট। এটাই সুযোগের আফ্রিকা। এই আফ্রিকার মানুষরাই নিজেদের ভাগ্য আর ভবিষ্যত গঠনের ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে চাইছে। এই আফ্রিকার লোকেরাই যৌথভাবে এটা করতে চাইছে। আজকে আমি এর সম্বন্ধে বলতে চাই। আজকে আমি আফ্রিকার পরিবর্তনের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই। ২০০৫ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর,তৈল-সম্পদে সমৃদ্ধ নাইজেরিয়ার একজন গর্ভনর মিঃ Diepreye Almieyeseigha, লন্ডন ভ্রমনের সময় লন্ডন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কারন ৮ মিলিয়ন ডলার তার ও তার পরিবারের নামে একটি সুপ্ত অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নাইজেরিয়ার ইকোনমিক আন্ড ফাইনানশিয়াল ক্রাইমস কমিশন এবং লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের যৌথ উদ্যোগে এই গ্রেপ্তার সম্ভবপর হয়েছিল- আমাদের সবথেকে সক্ষম এবং সাহসী মানুষ মিঃ নুহু রিবাডুর পরিচালনায় এটা হয়েছিল। Alamieyeseigha কে লন্ডন এ বিচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিছু ফাঁকফোকর থাকার দরুন তিনি নারীর ছদ্মবেশে লন্ডন থেকে নাইজিরিয়া পালিয়ে গিয়েছিলেন, অন্য অনেক দেশের মত আমাদের সংবিধানেও গভর্নর ও রাষ্ট্রপতিদের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশ জানানো যায় না ও তারা অব্যাহতি পেয়ে যান। কিন্তু কি ঘুটেছিলঃ তার ব্যবহার লোকদের মনে এতটাই ঘৃণার জন্ম দিল যে রাজ্যের বিচারসভার পক্ষে তাকে অভিযুক্ত করা ও তাকে তার অফিস থেকে বার করে দেওয়া সম্ভবপর হল। আজ Alam-এই নামেই আমরা ওকে সংক্ষেপে ডাকি-জেলে রয়েছে। এই গল্প তা থেকেই বুঝতে পারা যায় যে আফ্রিকার জনগন আর কোনমতেই তাদের নেতাদের দুর্নীতি সহ্য করবে না। এই গল্পটি থেকেই বোঝা যায় যে জনগন কিছু সংখ্যক অভিজাত লোকের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নিজেদের সম্পদের অপচয় চায় না, বরং নিজেদের হিতার্থে সম্পদের সঠিক নিয়ন্ত্রণ চায়। আর সেইজন্য আপনারা যখন দুর্নীতিগ্রস্ত আফ্রিকার কথা শোনেন- সবসময় দুর্নীতি- আমি চাই যে আপনারা জানুন যে জনগণ ও সরকার এর বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই চালাচ্ছে,আর এইভাবেই সাফল্য আসছে। এর মানে কি সমস্যা আর নেই? উত্তরটা হল "না"। এখনও অনেক পথ যেতে হবে,কিন্তু ইচ্ছা একটা রয়েছে। আর সাফল্যের কথা এই লড়াইয়ের মধ্যেই লেখা হবে। তাই যখন আপনারা দুর্নীতির ব্যাপারে শোনেন তখন ভাববেন না এব্যাপারে কিছু করা হচ্ছে না- ভাববেন না অপ্রতিরোধ্য দুনীতির জন্য কোন আফ্রিকান দেশে আপনি কাজ চালাতে পারবেন না। এটা ঘটনা নয়। লড়াইয়ের একটা ইচ্ছা রয়েছে আর অনেক দেশে এই লড়াই টা চলছে আর জিত ও হচ্ছে। আমার মত অন্যদের, নাইজেরিয়ায় যেখানে স্বৈরতন্ত্রের লম্বা ইতিহাস আছে, লড়াইটা চলছে আর আমাদের অনেক লম্বা পথ যেতে হবে। ব্যাপারটার সত্যতা হল যে এটা চলছেই। ফলাফল দেখা যাচ্ছেঃ বিশ্বব্যাঙ্ক ও অন্যান্য সংস্থার স্বাধীন নজরদারির ফলে অনেক ক্ষেত্রে দুনীতির হার কমের দিকে, আর সরকারপক্ষও উন্নতির স্তরে। আফ্রিকার ইকোনমিক কমিশন এর স্টাডি অনুযায়ী আফ্রিকার ২৮ টি দেশের সরকারের উন্নতির এক্তটা পরিস্কার চিত্র দেখা যায়। সরকার সম্বন্ধীয় এই আলোচনা শেষ করার আগে আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই। ওই লোকেরাই শুধু দুনীতির কথা বলে। যখনই তারা এটা নিয়ে আলোচনা করে তখন ই আপনারা আফ্রিকার কথা চিন্তা করেন। এটাই ভাবমূর্তিঃ আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলির। কিন্ত আমাকে এটা বলতে হবে ঃ যদি Alam লন্ডন এর আকাউন্ট এ ৮ মিলিয়ন ডলার জমা করতে পারে- যদি উন্নতিশীল দেশের লোকেরা বিদেশে বসে ২০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলে-যদি তারা এটা করতে পারে, ওটা কি তাহলে? ওটা কি দুনীতি নয়? এই দেশে,যদি আপনারা চুরি করা জিনিস পান,তাহলে কি আপনি অভিযুক্তের মধ্যে পড়েন না? তাই যদি আমরা এই ধরনের দুনীতির কথা বলি,তাহলে আমাদের এটাও ভাবা উচিত যে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে কি ঘটে চলেছে- অর্থ কোথায় যাচ্ছে আর এটা বন্ধ করার জান্যে কি করা দরকার। আমি এখন বিশ্বব্যাঙ্ক এর সাথে সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের কাজ অত্যন্ত উদ্যোগের সাথে করে চলেছি। যাতে করে উন্নতশীল দেশগুলির বিদেশে পাচার হওয়া টাকা আবার ফিরিয়ে আনা যায়। কারন যদি ২০ বিলিয়ান ডলার ফিরিয়ে আনতে পারি তাহলে এই ধরনের কিছু দেশগুলির পক্ষে যথেষ্ট হবে, যা অন্যান্য সমস্ত অনুদানের থেকেও বেশি হবে। {হাততালি} আর একটা কথা যা আমি বলতে চাই সেটা হল সংস্কার এর মানসিকতা। আফ্রিকানস্‌দের মতো আমরাও সবার দয়া এবং গ্রাহ্যের পাত্র। আমরা কৃতজ্ঞ, কিন্তু আমরা জানি যে সংস্কারের মানসিকতা থাকলে আমরাও আপন ভাগ্য গড়ে তোলার ভার নিজেরাই নিতে পারি। এবং এখন সমস্ত আফ্রিকান দেশগুলিতে এই উপলব্ধি হচ্ছে যে অন্যরা যা পারেনা তারা তা পারবে। তাদের তা করতেই হবে। আমরা সেই সমস্ত বাবা-মায়েদের আমন্ত্রণ করতে পারি যারা আমাদের সহায়তা করতে চান। কিন্তু আমাদের শুরু করতেই হবে। অর্থনীতি কে আমাদের পরিবর্তন করতেই হবে, পরিবর্তন করতে হবে নেতৃত্বের, আর বেশি গণতান্ত্রিক হতে হবে, পরিবর্তন এবং তথ্য সমন্ধে আরো খোলাখুলি হতে হবে। এবং এইভাবেই আমরা আফ্রিকা মহাদেশের একটি অন্যতম বৃহত্তম দেশ নাইজেরিয়াকে নিয়ে শুরু করেছিলাম। বস্তুত,নাইজেরিয়াতে না থাকলে আপনি আফ্রিকাতে নেই। আমি আপনাদের এটা বলতে চাই। {হাসি} আফ্রিকার নিম্ন-সাহারায় প্রতি চারজন আফ্রিকানদের মধ্যে একজন নাইজেরিয়ান। এবং এখানে ১৪০ মিলিয়ান উদ্যমশীল প্রকৃতির লোক আছে--বিশৃঙ্খল লোক-- কিন্তু খুব উত্‌সুক লোক। আপনার কখনো একঘেঁয়ে লাগবেনা। {হাসি} আমরা যেটা শুরু করেছিলাম, সেটা হল নিজেই নিজেদের সংস্কার করবার ভারের উপলব্ধি। এবং একজন নেতার ভরসায় যিনি এই সময় সংস্কার করতে ইচ্ছুক আমরা সর্ব্বব্যপী একটা সংস্কার অনুষ্ঠান আমাদের সামনে রেখেছিলাম। যেটা আমরা নিজেরাই তৈরি করেছিলাম। আন্তর্জাতিক মানিটারী ফান্ডও নয় এবং বিশ্বব্যাঙ্কও নয়, যেখানে আমি ২১ বছর কাজ করেছিলাম, এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত হয়েছিলাম। আপনাদের জন্যে কেউ এটা করবেনা। আপনাদের এটা নিজেদের স্বার্থে করতে হবে। আমরা এমন একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম যেখানে রাজ্যগুলি বানিজ্য সংক্রান্ত কার্যকলাপ বর্হিভুত ছিল। ব্যবসার সাথে এর কোন সম্পর্ক ছিলনা। রাজ্যের জিনিষপত্র এবং পরিষেবা সংক্রান্ত বানিজ্যের মধ্যে যুক্ত থাকা উচিত নয়। কারণ এরা অকর্মণ্য এবং অযোগ্য। সেইজন্যে আমরা বহু সংস্থাকে ব্যক্তিগত মালিকানায় হস্তান্তরিত করেছিলাম। {হাততালি} আমরা এর ফলস্বরূপ অনেক বাজারকে কে উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আপনারা কি বিশ্বাস করবেন, এই সংস্কারের আগে যেটা ২০০৩ সালের শেষে শুরু হয়েছিল, এবং যখন আমি অর্থমন্ত্রী হবার জন্যে ওয়াসিংটন ছেড়েছিলাম- আমাদের একটা টেলিকম কম্পানী ছিল যা পুরো ৩০ বছরের ইতিহাসে কেবলমাত্র ৪৫০০ ল্যান্ডলাইন ফোনের কানেকশন দিতে পেরেছিল। {হাসি} আমাদের দেশে ফোন থাকাটা একটা বিলাসিতা। আপনারা এটা পেতেন না। এর জন্যে আপনাদের ঘুষ দিতে হত। ফোন পাওয়ার জান্যে আপনাকে সব কিছু করতে হত। যখন প্রেসিডেন্ট ওবাসাঞ্জ সমর্থন করলেন এবং টেলিকম সেক্টরকে উন্মুক্ত করলেন, আমরা ৪৫০০ ল্যান্ডলাইন থেকে ৩২ মিলিয়ান জীএসএম লাইনে পৌঁছে গেলাম। এটা এখন চলছে। নাইজেরিয়ার টেলিকম মার্কেট পৃথিবীর মধ্যে চীন এর পরে দ্বিতীয় দ্রুততম। আমরা টেলিকম সেক্টরে বছরে প্রায় এক বিলিয়ান ডলারের বিনিয়োগ পাচ্ছি। কিছু স্মার্ট লোক ছাড়া এটা কেউ জানেনা। {হাসি} সাউথ আফ্রিকার এমটিএন কোম্পানী সবথেকে স্মার্ট যারা এই বানিজ্যে এসেছিলেন। আর আমি যখন তিন বছর অর্থমন্ত্রী ছিলাম তারা প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩৬০ মিলিয়ান ডলার লাভ করেছিল। নাইজেরিয়ার মতো গরিব দেশে ৩৬০ মিলিয়ান এর মতো একটা বাজার। যেখানে পার ক্যাপিটাল ইনকাম হল মাত্র ৫০০ ডলার। তার মানে এখানে বাজার আছে। তারা এটা অনেকদিন আড়ালে রেখেছিল, কিন্তু শীঘ্র এটা সকলে জেনে যায়। নাইজেরিয়ানরা নিজেরাই কিছু তারবিহীন টেলিকম কোম্পানী গড়ে তুলেছিল। এবং আরো তিন-চারটি কোম্পানী এর মধ্যে এসেছে। কিন্তু আরো বড় বাজার ওখানে আছে, যেটা লোকেরা জানেনা, বা তারা জানতে চায়না। সুতরাং আমরা যেটা করেছি সেটা হল ব্যক্তিগত মালিকানায় হস্তান্তর। আরো একটা জিনিষ আমরা করেছি সেটা হল আমাদের অর্থনীতিকে আরো নিয়ন্ত্রণে আনা। কারন কেউ আপনাদের সাহায্য বা সমর্থন করবেনা যদি আপনি নিজের সম্পত্তি নিজেই ঠিকভাবে না নিয়ন্ত্রন করেন। তৈল শিল্পে নাইজেরিয়ার একটা দুর্নীতির বদনাম আছে এবং তারা জনগণের টাকাও ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। সুতরাং আমরা কি করার চেষ্টা করেছি? আমরা সরকারী রাজস্ব সংক্রান্ত একটা আইনের পরিচিতি ঘটিয়েছি যাতে করে তেলের দাম আমাদের আয়ত্বের বাইরে এসেছে। আগে যখন আমরা তেলের ক্ষেত্রে যেকোনো বাজেটে অভ্যস্ত ছিলাম কারন অর্থনীতিতে তেল হল সর্ববৃহত রাজস্ব আয়ের সেক্টর। আমাদের রাজস্বের ৭০ শতাংশ তেল থেকে আসে। আমরা ওটার সংযোগ ছিন্ন করেছি,একবার আমরা তেলের দাম থেকে কিছু কম দামে বাজেট শুরু করেছিলাম ওই দামের থেকে কিছু বেশি আমরা সঞ্চয় করেছিলাম। আমরা জানতাম না যে এটা আমরা টেনে তুলতে পারি,এটা খুব বির্তকিত বিষয় ছিল। কিন্তু এটা অবিলম্বে যা করেছিল তা হল অস্থিতিশীলতা যেটা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে উপস্থিত ছিল- এমনকি তেলের দাম যখন খুব বেশি ছিল তখনও আমরা উন্নতিলাভ করেছি। যখন তাদের পতন হল,আমাদের ও পতন হল। আমরা তখন ওইরকম অর্থনৈতিক অবস্থায় কিছু পাওনা বা বেতন কাউকে দিতে পারিনি। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল। আমরাও বাঁচলাম,ঠিক আমার চলে আসার আগে, ২৭ বিলিয়ন ডলার। যাইহোক ওটা আমাদের ভান্ডারে জমা হল- আমি যখন ২০০৭ সালে পৌঁছলাম,আমাদের ভান্ডারে ৭ বিলিয়ন ডলার ছিল। আমি যখন ছাড়লাম তখন আমরা প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার এ পৌঁছে গেছি। আমাদের অর্থনীতি সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রিত হওয়ার দরুণ আজকে আমাদের ভান্ডারে ৪০ বিলিয়ন ডলার জমা হয়েছে। আর ওটা আমাদের অর্থনীতিকে ধরে রেখে একে স্থিতিশীল করেছে। আগে আমাদের মুদ্রার বিনিময় হার সবসময় ওঠানামা করত এখন তা বেশ স্থিতিশীল আর নিয়ন্ত্রিত,আর তাতে ব্যবসায়ীদের এই অর্থনীতিতে দামের পূর্বনির্ধারনযোগ্যতা থাকে। আমরা মুদ্রাস্ফীতিকে ২৮ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশ তে নামিয়ে এনেছি। আগের দশকে আমাদের GDP বৃদ্ধি গড়ে ২.৩ থেকে এখন ৬.৫ শতাংশ হয়েছে। তাই আমরা যা পরিবর্তন ও সংস্কার করেছি তার ফলাফল অর্থনীতিকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। আর সেটা খুব প্রয়োজনীয়,কারন আমরা তেল থেকে সরে গিয়ে ব্যবসাকে অন্যমুখী করতে চাই-আর সেখানে অনেক সুযোগ রয়েছে এই প্রকান্ড দেশে,আফ্রিকার অনেক দেশে- যেটা লক্ষ্যণীয় সেটা হল বৃদ্ধি কেবল তেলশিল্প থেকে আসে না,তেল ছাড়া অন্য শিল্প থেকে আসে। কৃষির উন্নতি ৮ শতাংশের ও বেশি হয়েছিল। টেলিকম শিল্প বৃদ্ধির সাথে সাথে গৃহ ও নির্মানকার্য, এরকম আরো কত। এটা আপনাদের সামনে ব্যাখ্যা করার জন্য বলছি যখন একবার আপনারা জাতীয় উতপাদন শীলতা কে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দেখবেন বিভিন্ন সেক্টরের সুযোগগুলো বড় আকার ধারন করবে। আমাদের কৃষিতেও সুযোগ আছে,যেমন আমি বলেছিলাম আমাদের কঠিন খনিজ পদার্থেও সুযোগ আছে। আমাদের অনেক খনিজ পদার্থ আছে যাতে কেউ কোনদিন বিনিয়োগ করেনি বা সেটা কেউ আবিষ্কার ও করেনি।আর আমরা উপলব্ধি করেছিলাম যে সঠিক বিচারব্যবস্থার অভাবে তা সম্ভব ও হবে না, না, সেটা ঘটে নি।আমরা একটা মাইনিং কোড পেয়েছি যেটা পৃথিবীর বেশ কিছু সর্বোত্তম দের সাথে তুলনীয়। আমাদের গৃহনির্মানশিল্পেও বেশ কিছু সুযোগ রয়েছে। ১৪০ মিলিয়ন লোকের দেশে কিছু ছিল না- শপিং মল যাকে আপনারা বলেন,সেটাও না। এটা একটা বিনিয়োগের সুযোগ ছিল যা জনগনের কল্পনাকে উত্তেজিত করেছিল। আর এখন যা পরিস্থিতি তাতে মলগুলি তাদের পরিকল্পনার থেকে চারগুন বেশি লেনদেন করছে। তাই বিশাল ব্যাপার এখন নির্মানকার্যে,স্থাবর সম্পত্তিতে বন্ধকী কারবারে। অর্থনৈতিক পরিষেবাঃ আমাদের ৮৯ টা ব্যাঙ্ক আছে। খুব বেশি জন তাদের আসল ব্যবসা করছে না। আমরা ৮৯ টা ব্যাঙ্ককে একত্রিত করে ২৫ টায় এনেছি যাতে তারা তাদের মূলধন বাড়াতে পারে-শেয়ার মূলধন। আর এটা ২৫ মিলিয়ন ডলার থেকে ১৫০ মিলিয়ন ডলার এ পৌঁছে গেছে। এই ব্যাঙ্কগুলি এখন একত্রিত,আর এই ব্যাঙ্কিং পদ্ধতির সোজাভাবে দাঁড়ানোটা বাইরের বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করেছে। ইউ কে র বার্কলে ব্যাঙ্ক ৫০০ ডলার আনছে। স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ১৪০ মিলিয়ন এনেছে। আমি আরো বলতে পারি।ডলার, শুধুই ডলার সিস্টেমের মধ্যে। আমরা বীমা সেক্টরের সাথে একই জিনিস করছি। তাই অর্থনৈতিক পরিষেবায় সু্যোগের শেষ নেই। অনেক আফ্রিকান দেশে পর্যটন শিল্পে একটা বিরাট সুযোগ রয়েছে। পূর্ব আফ্রিকা এইজন্য বিখ্যাত। বন্যজীবন,হাতির দল,এইসব। জনগণের উপকারে লাগবে এইভাবে পর্যটন বাজার সামলানো খুব গুরুত্বপূর্ন। তাহলে আমি কি বলতে চাইছি? আমি আপনাদের বলতে চাইছি যে এই মহাদেশে একটা নতুন হাওয়া বইছে। ২০০০ সাল থেকে মুক্তি আর গণতন্ত্রের একটা নতুন হাওয়া, দুই এর তিন ভাগেরও বেশি আফ্রিকান দেশগুলিতে অনেকগুলি রাজনৈতিক দলের গনতান্ত্রিক ভোট হয়। সবাই নিখুঁত নয় বা হবেও না, কিন্তু ধারাটা খুব স্পষ্ট। আমি আপনাদের বলতে চাইছি যে গত তিনবছর ধরে মহাদেশের গড় বৃদ্ধি এগিয়ে গেছে প্রতি বছরে ২.৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ। এটা অনেক OECD দেশের কার্যসম্পাদনের থেকে ভাল। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে সবকিছু বদলাচ্ছে। মহাদেশে দ্বন্দ্ব অনেক কম; এক দশক আগে প্রায় ১২ টা দ্বন্দ্ব থেকে ৩-৪ টে দ্বন্দ্বে এসে ঠেকেছে, এগুলির মধ্যে সবথেকে ভয়ংকর হল দারফুর। আর আপনারা জানেন মহাদেশের কোথাও কিছু ঘটলে মানুষের মধ্যে প্রাতিবেশিক প্রভাব পড়ে, মনে হয় পুরো মহাদেশটাই ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু আপনাদের জানা উচিত এই মহাদেশ নয়- এই মহাদেশ অনেক দেশ নিয়ে গঠিত,একটা দেশ নিয়ে নয়। যখন আমাদের দ্বন্দ্ব তিন চারে নেমে এসেছে, তার মানে এখন স্থিতিশীল,বর্ধিত অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করার প্রছুর সু্যোগ। এখানে এখন প্রচুর সুযোগ। বিনিয়োগ এর ব্যাপারে আমি একটা কথা উল্লেখ করতে চাই। আজ আফ্রিকানদের সাহায্য করার সবথেকে ভাল রাস্তা হল তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করা। আর সেটা করার সবথেকে ভাল রাস্তা হল তাদের চাকরি খুঁজতে সাহায্য করা। শিশুদের প্রাণরক্ষার জন্য ম্যালেরিয়ার সাথে লড়াই আর তার জন্য পয়সা খরচ কোন ব্যাপার নয়। আমি এটা বলতে চাইছি না। এটা ভাল। কিন্তু পরিবারের ওপর প্রভাবটা কল্পনা করুনঃ যদি বাবা-মা কোন কাজ পান আর তাদের ছেলেমেয়েরা স্কুল যেতে পারে, তাহলে তারা নিজেরাই ম্যালেরিয়ার সাথে যুদ্ধ করার জন্য ওষুধ কিনতে পারে। যদি আমরা এমন জায়গায় বিনিয়োগ করতে পারি যেখানে আপনি নিজেই নিজের টাকা তৈরী করতে পারেন চাকরি সৃষ্টি করে লোকেদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে, এটা কি একটা দারুণ সুযোগ নয়? এটা চলার পথ নয়? আর আমি বলতে চাই যে এই মহাদেশে সবথেকে ভাল বিনিয়োগকারী হল মহিলারা। {হাততালি} আমার কাছে একটা সি ডি আছে। আমি দুঃখিত আগে এটা না বলার জন্য। নাহলে, আপনারা দেখলে আমার ভাল লাগত। এটাতে আছে,"আফ্রিকাঃ ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।" এই ভিডিও টা আসলে পুরস্কার জিতেছে বছরের সেরা তথ্যচিত্রের। যে মহিলা এটি বানিয়েছেন তিনি তানজানিয়ায় যাচ্ছেন জুন মাসে তাদের একটি সেশনে যোগ দেওয়ার জন্য। আপনারা এটা দেখতে পাচ্ছেন, আফ্রিকানরা, বিশেষত আফ্রিকান মহিলারা সমস্ত বাধার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যবসা গড়ে তুলেছেন,অনেকেই এর মধ্যে বিশ্বমানের। এই ভিডিওর একজন মহিলা Adenike Ogunlesi, যিনি প্রথমে বাচ্ছাদের জামাকাপড় তৈরীটাকে নেশা হিসাবে নিয়ে পরে সেটা কে ব্যবসায় পরিনত করেছিলেন। অন্যান্য জায়গার উপাদান এর সাথে আফ্রিকার উপাদান মেশালেন। তারপর তিনি কর্ডুরয় দিয়ে ছোট একজোড়া ডাংরি বানালেন, সঙ্গে দিলেন আফ্রিকান উপাদান। খুবই সৃষ্টিশীল নক্সা। এটা এমন স্তরে পৌঁছে গেছে যে তিনি ওয়ল- মার্ট থেকেও অর্ডার পেয়েছিলেন। {হাসি} ১০,০০০ পিসের জন্য। এটা থেকেই দেখা যাচ্ছে যে আমাদের লোকেরা কর্মক্ষম। এবং আমাদের মহিলারা খুব পরিশ্রমীঃ তারা খুব মনযোগী;তারা খুব কাজের। আমি আপনাদের উদাহরণ দিতে পারিঃ রাওয়ান্ডার গাকুবা বিট্রিস,যে একটা ফুলের ব্যবসা খুলেছিল এখন প্রত্যেকদিন সকালবেলায় আমস্টারডাম এ ডাচ নীলামে ফুল রপ্তানি করছে, মহিলা ও পুরুষ মিলিয়ে ২০০ জনকে নিজের সাথে কাজ করার জন্যও নিয়োগ করছে। যাইহোক,এদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসা বাড়ানোর মূ্লধনের তীব্র অভাব অনুভব করছে, কেউই আমাদের দেশের বাইরের লোক্ কে বিশ্বাস করে না যেটা করা দরকার সেটা আমরা করতে পারি। বাজারের পরিপ্রেক্ষিতে কেউ চিন্তা করে না। কেউ সেখানে সুযোগের কথা চিন্তা করে না। আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে একটা কথা বলতে পারি যে এখন যারা সুযোগ হারাবে, তারা চিরজীবনের জন্য হারাবে। আপনি যদি আফ্রিকায় থাকতে চান তো বিনিয়োগের কথা ভাবুন। এই পৃথিবীর বিট্রিসেস,আডেনাইক দের কথা চিন্তা করতে হবে, যারা অসম্ভবকে সম্ভব করছে আর এইজন্য ই তারা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবেশ করছে,যেখানে একইসময় তারা তাদের মহিলা ও পুরুষ সঙ্গীসাথীদের উপার্জনের পথ সুগম করছে, আর সেইসঙ্গে সেইসব ঘরের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শেখার সুযোগ পাচ্ছে কারন তাদের বাবামায়েরা যথেষ্ট রোজগার আমি আপনাদের এই সুযোগের সদব্যবহার করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। যখন আপনি তানজানিয়ায় যাবেন,তখন ভালভাবে শুনুন, কারন আমি নিশ্চিত যে আপনারা বিভিন্ন কাজের কথা শুনবেন আপনাকে ব্যবসাতে জড়াতে সাহায্য করবে মহাদেশের ভালর জন্য,আপনার ভালর জন্য আর জনগণের মঙ্গলের জন্য। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। {হাততালি} আমার সবসময় কম্পিউটার এবং প্রযুক্তির জন্য একটি মোহ ছিল, এবং আমি কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছি আইফোন, আইপড টাচ এবং আইপ্যাডের জন্য । আমি আজ আপনাদেরকে সেগুলোর মধ্যে কটি দেখাতে চাই । আমার প্রথম অ্যাপ্লিকেশন ছিল 'আর্থ ফর্চুন' নামক একটি অনন্য ভাগ্যপরীক্ষক যেটি পৃথিবীর বিভিন্ন রং প্রদর্শন করবে আপনার ভাগ্যর উপর নির্ভর করে । আমার প্রিয় এবং সবচেয়ে সফল অ্যাপ্লিকেশন হল 'বাস্টিন জিবার' যা হলো -- (হাসি) যা একটি জাস্টিন বিবার হোয়াক-আ-মোল । (হাসি) আমি এটা তৈরি করেছিলাম কারণ স্কুলের অনেকেই তাকে একটু অপছন্দ করতো তাই আমি এটি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম । আমি এটি প্রোগ্রামিং করা শুরু করেছিলাম, এবং আমি এটিকে দু হাজার দশের ক্রিসমাসের ছুটির আগে উন্মুক্ত করেছিলাম । অনেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে আমি এগুলো কি করে বানিয়েছি? অনেক সময় এটির কারণ হল যে, যে ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে সেও একটি অ্যাপ্লিকেশন বানাতে চায় | আজকালকার দিনকালে অনেক বাচ্চারা খেলা খেলতে পছন্দ করে, কিন্তু এখন তারা খেলাও তৈরি করতে চায় যেটা কঠিন, কারণ অনেক বাচ্চারা জানে না যে প্রোগ্রাম বানানোর জন্য কোথায় যেতে হবে । মানে ফুটবলের জন্য, আপনি একটি ফুটবল দলে যেতে পারেন । বেহালার জন্য, আপনি বেহালার শিক্ষা নিতে পারেন | কিন্তু আপনি যদি একটি অ্যাপ তৈরি করতে চান তবে? এবং শিশুটির বাবা-মা হয়তো এইসবের কিছু করেছিলেন যখন তারা তরুণ ছিলেন, কিন্তু অনেক বাবা-মায়েরাই অ্যাপ লেখেননি। (হাসি) আপনি কোথায় যাবেন অ্যাপ্লিকেশন কিভাবে বানাতে হয় তা জানতে? আমি এভাবে এটির সমাধান করেছি, আমি এটা করেছিলাম । প্রথমত, আমি একাধিক অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষায় প্রোগ্রামিং করেছি মূল বিষয়গুলি বোঝার জন্য, যেমন পাইথন, সি, জাভা, ইত্যাদি । এবং তারপর আপেল আইফোন মুক্ত করল, এবং এটির সঙ্গে আইফোন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিট, এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিট হচ্ছে একটি প্রযুক্তির সম্ভার আইফোন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং প্রোগ্রামিং করার জন্য। এটি আমার জন্য সম্ভাবনার একটি সম্পূর্ণ নতুন বিশ্ব খুলে দিল, এবং সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিটের সঙ্গে একটু খেলার পরে, আমি কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশন, কিছু পরীক্ষা করার জন্য অ্যাপ তৈরি করলাম । তাদের মধ্যে একটি ছিল "আর্থ ফর্চুন", এবং আমি অ্যাপ স্টোরে এটি রাখতে প্রস্তুত ছিলাম, এবং তাই আমি আমার মা বাবাকে মানাই ৯৯ ডলার দেবার জন্য অ্যাপ স্টোরে আমার অ্যাপস যাতে রাখতে পারি । তারা সম্মত হন এবং আমার অ্যাপ্লিকেশন এখন অ্যাপ স্টোরে রয়েছে । আমি অনেক আগ্রহ এবং উৎসাহ পেয়েছি আমার পরিবারের কাছ থেকে, বন্ধু, শিক্ষক এবং এমনকি অ্যাপ স্টোরের লোকদের থেকেও, এবং সেটা আমাকে বিশাল সাহায্য করেছে | স্টিভ জবসের কাছ থেকে আমি অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি, এবং আমি স্কুলে একটি অ্যাপ্লিকেশন ক্লাব শুরু করেছি, এবং আমার স্কুলের একটি শিক্ষক আমার অ্যাপ্লিকেশন ক্লাবের জন্যে টাকা দিয়েছেন । স্কুলের যেকোনও ছাত্র এখানে আসতে পারে এবং শিখতে পারে কিভাবে অ্যাপ তৈরি করতে হয় । এভাবেই আমি অন্যদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারি । 'আইপ্যাড পাইলট প্রোগ্রাম' নামক একটি কার্যক্রম রয়েছে, এবং অল্প কিছু জেলায় চলছে এগুলো । আমি ভাগ্যবান এদের মধ্যে একটির অংশ হতে পেরে । একটি বড় বিষয় হল সেটা জানা যে, কিভাবে আইপ্যাড ব্যবহার করা উচিত, এবং আইপ্যাডে কি অ্যাপগুলো চালানো উচিত? তাই আমরা স্কুলে শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি তারা কি ধরনের অ্যাপস তারা চান তা জানতে । যখন আমরা অ্যাপ ডিজাইন করব এবং আমরা এটি বিক্রি করব, এটি স্থানীয় জেলার জন্যে বিনামূল্যে রাখব এবং অন্যান্য জেলায় বিক্রির পর এর থেকে প্রাপ্ত সব টাকা স্থানীয় শিক্ষা ফাউন্ডেশন গুলোতে যাবে । এখনকার দিনে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের তুলনায় একটু বেশিই জানে মনে হয় বিশেষ করে প্রযুক্তির ব্যপারে । (হাসি) সুতরাং -- (হাসি) ক্ষমা করবেন । (হাসি) তাই এটি শিক্ষকদের জন্য একটি সম্পদ, এবং শিক্ষকদের এই সম্পদ সনাক্ত করা উচিত এবং এটির ভালো ব্যবহার করা উচিত । (হাসি) আমি ভবিষ্যতে কি করতে চাই, এই বলে শেষ করতে চাই । প্রথমত, আমি আরো অ্যাপস এবং আরো খেলা তৈরি করতে চাই । একটি তৃতীয় পক্ষের কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছি অ্যাপ তৈরি করার জন্য । আমি অ্যান্ড্রয়েড প্রোগ্রামিং এবং তার উন্নয়ন শুরু করতে চাই, এবং আমি আমার অ্যাপ ক্লাব চালিয়ে যেতে চাই, এবং ছাত্ররা যাতে অন্যদের সাথে জ্ঞান ভাগাভাগি করতে পারে তার উপায় খুঁজতে চাই । ধন্যবাদ । (হাত তালি) ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, কাছে আসুন। আমি আপনাদের একটি গল্প বলব। একদা ঊনবিংশ শতকের জার্মানীতে, প্রচলিত ছিল বই। সেই সময়ে, এই বই-ই ছিল গল্প বলার রাজা। এটি ছিল সম্মানীয়। এটি পাওয়া যেত সর্বত্র। কিন্তু এটি ছিল কিছুটা একঘেয়েও। কারণ এর ৪০০ বছরের দীর্ঘ জীবনে গল্প-বলিয়েরা বইয়ের কোন পরিবর্তন আনেন নি, বিশেষ করে গল্প বলার বাহক হিসেবে। কিন্তু তারপর, একজন লেখক এলেন, এবং পরিস্থিতি চিরকালের জন্যে বদলে দিলেন। (বাজনা) তাঁর নাম ছিল লোথার, লোথার মেগেনডর্ফার। লোথার মেগেনডর্ফার এগিয়ে এলেন, এবং বললেন, "গেনুগ ইস্ট গেনুগ" (যখেষ্ট হয়েছে)! তিনি তাঁর কলম ধরলেন, তাঁর কাঁচি চালালেন। এই ব্যাক্তি গতানুগতিকতার ভাঁজে জড়িয়ে পড়তে অস্বীকার করলেন এবং ভাঁজ ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ইতিহাস লোথার মেগেনডর্ফারকে মনে রেখেছে এভাবে -- আর কীভাবে? -- বিশ্বের সর্বপ্রথম উদ্ভাবনকারী হিসাবে যিনি বাচ্চাদের পপ-আপ বই এর জনক। (বাজনা) এতে প্রীত হয়ে এবং চমৎকৃত হয়ে, সবাই আনন্দিত হয়ে উঠল। (হর্ষ প্রকাশ) তারা খুশী কারন তাদের গল্প বেঁচে গেছে, এবং এটি বিশ্বকে চলতে সাহায্য করেছে। লোথার মেগেনডর্ফার প্রখম ব্যক্তি নন যিনি গল্প বলার ধরনটিকে পাল্টান, এবং অবশ্যই তিনি শেষ ব্যক্তিও ছিলেন না। পরবর্তী গল্প-বলিয়েরা অনুধাবন করতে না পারলেও তাঁরা কিন্তু মেগেনডর্ফারের উদ্যমকেই লালন করেছেন, যখন তাঁরা অপেরা থেকে ভডেভিল, রেডিও সংবাদ থেকে রেডিও নাটক, স্থিরচিত্র থেকে চলচ্চিত্র থেকে সবাক চিত্র, রঙিন ছবি, ত্রিমাত্রিক ছবি, যা ভিএইচএস থেকে ডিভিডির মত মাধ্যমে এসেছে। এই মেগেনডর্ফারাইটিস রোগের মনে হয় কোন প্রতিকার নেই। এবং ইন্টারসেট আসার সাথে সাথে বিষয়টি আরও মজার হয়ে যায়। (হাসি) কারন, মানুষ শুধু তাদের গল্পগুলো বিশ্বজুড়ে প্রচার করতেই সক্ষম হয়নি, তারা তা করেছে অসংখ্য উপায় ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরুপ, একটি কোম্পানী একটি ভালবাসার গল্প বলছে তার নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে। তাইওয়ানের একটি প্রডাকশন স্টুডিও ত্রিমাত্রিক ছবিতে আমেরিকার রাজনীতির চিত্রায়ন করছে। (হাসি) এবং একজন ব্যাক্তি তাঁর বাবার গল্পগুলো বলছেন টুইটার নামের একটি প্লাটফর্ম ব্যবহার করে তার বাবার সব কদর্য বিষয়গুলো জানাতে। এবং এর পরে, সবাই থামলেন; এবং একটু ফিরে তাকালেন। এবং সবাই অনুধাবন করলেন যে, ৬০০০ বৎসরের এই গল্প বলার সময়ে তারা গুহার দেয়ালে শিকারের চিত্র থেকে ফেসবুকের দেয়ালে শেক্সপিয়ারকে চিত্রায়ণ সবই করেছেন। এবং এটি উদ্‌যাপন করার মত ব্যাপার। তবে গল্প বলার মূল ঢংটি অপরিবর্তিত রয়েছে। এবং বেশীরভাগ সময়ে, গল্পগুলো বারংবার বলা হয়েছে। তবে মানুষ যেভাবে গল্পগুলো বলে সেটা সবসময়ই পরিবর্তিত হয় খাঁটি, চিরন্তন নতুনত্ব নিয়ে। এবং তারা একজন মানুষকে স্মরণ করে, একজন চমৎকার জার্মানকে, যখনই নতুন কোন গল্প বলার প্রযুক্তি আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয়। এবং এর জন্যে, দর্শক-শ্রোতারা -- আমাদের প্রিয়, চমৎকার দর্শক-শ্রোতারা -- চিরজীবন সুখী খাকবেন। (হাততালি) প্রথমেই আমি আপনাদের যা দেখাতে চলেছি তা কিছু নতুন,গঠনমুলক এবং প্রযুক্তিগত যা প্রায় একবছর আগে মাইক্রোসফট এ নিয়ে আসা হয়েছে একে সি-ড্রাগন বলা হয় এটি একটি এমন এনভায়বনমেন্ট যেখানে আপনারা কাছাকাছি কিংবা দুরবর্তী যে কোন ভাবে যে কোনো জ়ায়গায় থেকে বহুল পরিমাণ ভিসুয়াল ডাটার সাথে যোগাযগ করতে পারেন। আমরা এখন অসংখ্য গিগাবাইটস এর ছবি দেখছি ধারাবাহিক ভাবে জুম করে,স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং নিজেদের ইচ্ছানুসারে রি অ্যারেঞ্জ করে আমরা যে তথ্যগুলো অথবা যে ছবিগুলো দেখছি তার আয়তনটাই বড় কথা নয়। এগুলোর বেশিরভাগ হল সাধারন ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছাবি, এবং উদাহরণ হিসেবে এই ছাবিটা লাইব্রেরী অফ কংগ্রেস থেকে নেওয়া যার রেঞ্জ ৩০০ মেগাপিক্সেল এতে কিছু যায় আসে না কারণ কেবল মাত্র যা সিস্টেম এর কাজ করার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে তা হল পিক্সেল এর সংখ্যা এই প্রযুক্তি খুব নমণীয় এবং নিজের ইচ্ছামত পরিবর্তন সাপেক্ষ দেখুন এটা হল একটা পুরো বই,এখানে ছবি নেই। ডিকেন্স এর লেখা এই বইটার এক একটা কলাম হল এক একটা অধ্যায় এটা যে কোন ছবি নয় এটা প্রমাণ করার জন্য আসুন আমরা এইভাবে দেখি যে এটা সতি একটা পাঠ্য,কোন ছবি নয়। হতে পারে ই-বুক পরার এটি একটি নকল পদ্ধতি। আমি এই পদ্ধতি আপনাদের প্রয়োগ করতে বলছি না। এটা অনেক বেশি বাস্তবসম্মত।দ্য গাডেণ এর অংশ। প্রত্যেকটা বড় চিত্র এক একটা সেকশনের শুরু। এবং এটা আপনাকে প্রচুর ম্যাগাজিন বা নিউজপেপার পরার পরার সত্যিকারের আনন্দ এবং অভিজ্ঞতা দেবে যা একটা সুপ্ত বহুমুখী প্রতিভা আমরা দ্য গারডিয়ান এর একটি বিশেষ অংশ নিয়ে আরো কিছু করছি, আমরা একটা সাধারন বিজ্ঞপ্তির থেকে আনেক বেশি রিসোলিউশোন যুক্ত নকল বিজ্ঞপ্তি তৈরী করেছি। এবং এর মধ্যে আনেক বেশি তথ্য আছে। আপনি যদি এই গাড়ীটার বা অন্য কোন মডেলের বা টেকনিকাল স্পেসিফিকেশন দেখতে চান তাহলে দেখতে পাবেন। এটা সত্যি কিছু আইডিয়া দেয় রিয়েল এস্টেট এর পর্দায় বাধা সম্বন্ধে। আমরা আশা করি এর মানে কোন পপ-আপ বা ওই ধরনের কোন বাজে জিনিসের দরকার নেই। ম্যাপিং হল এইধরনের প্রয়ুক্তির জন্য একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ গুলির মধ্যে একটি এবং এটি সমন্ধে বেশী কিছু বলার নেই কেবলমাত্র এটি ছাড়া যে এই ক্ষেত্রেও অনেক কিছু করার আছে। কিন্তু এগুলো হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব রাস্তা যেগুলো নাসা জিওস্পাটিয়াল ছবির ওপর আরোপ করা হয়েছে। এখন এই অব্ধি থাক,এবার অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। এখন সরাসরি সম্প্রচার করা হবে,আপনারা দেখতে পারেন। এই প্রযেক্টটির নাম ফটোসিনথ,; যা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটায়। এবং এর মধ্যে একটা হোল সীড্রাগণ আর অন্যটা কোনো সুন্দর কম্পিউটার ভিশন রিসার্চ যেটা তৈরি করেছেন ওয়াসিংটন ইউনিভার্সিটির গ্র্যজ়ুয়েট স্টুডেন্ট নোয়া স্ন্যভেলি, সহ-পরামর্শদাতা দিয়েছেন ইউ ডাবোলূর স্টিভ সিইজ, এবং মাইক্রসফট রিসার্চ-এর রিক জেলেস্কি।একটা সুন্দর কোলাবরেশন এটা ওয়েব এ সারাসরি দেখতে পাচ্ছেন,এটা সিড্রাগন এর দ্বারা হচ্ছে আপনার এগুলি দেখতে পান যখন আমরা এই ধরনের ভিউগুলো করি, ছবির একেবারে ভিতর পর্যন্ত দেখতে পারি এবং বিভিন্ন ধরণের মাল্টি রিশোলিউশান সম্পর্কে আভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু এখানে মহাকাশ সম্পর্কিত ছবিগুলো অর্থপুর্ণ।। কম্পিউটার ভিশন অ্যালগোরিদম এই ছবিগুলোকে একত্রিত করেছে, যাতে করে এই ছবিগুলো সত্তিকারের মহাকাশের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ করতে পারে সবকটি ছবি কানাডিয়ান রকিস এর কাছে গ্রাসি লেক এ তোলা যা কীছূ আপনারা দেখছেন এখানে সবই স্তায়ী স্লাইড শো অথবা দিগন্তপ্রসারী ছবি এবং এগুলির সাথে মহাকাশের একটা সম্পর্ক আছে। সময়াভাবের জন্য আমি হয়ত আপনাদের আর কোন এনভায়রনমেন্টের সাথে পরিচয় ঘটাতে পারব না কিছু আছে যেগুলো আরও বেশী মাহাকাশ সম্পর্কিত আমি এখন নোহার আসল ডাটা সেট এর কাছে আপনাদের নিয়ে যাব- আর এটা ফটোসিন্থ এর মুল অংশ থেকে নেওয়া যেটা আমরা গ্রীষ্মকালে করেছিলাম আমার মনে হয় আমি আপনাদের যেটা দেখাচ্ছি সেই ফটোসিন্থ টেকনোলজ়ী এই প্রযুক্তির প্রধান সহযোগকারী। এবং সেই এনভায়রনমেন্ট থেকে এটা এতটা পরিস্কার নয় যেটা আমরা ওয়েবসাইট এ দিয়েছি। কারন উকিলদের কথা আমাদের মাথায় রাখতে হয়েছিল। এবারে যেটা দেখাচ্ছি সেটা নোটরডাম ক্যাথিড়্রাল এর পুনর্গঠন এর পুরোটাই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ছবি থেকে সুরু করে সবকিছু।আপনি ফ্লিকর এ গিয়ে শুধু নোটতরডাম টাইপ করুন, আপনি কিছু টি-সার্ট পরা ছেলের ছবি আর ক্যাম্পাস এর ছবি পাবেন প্রতেকটা কমলা বংয়ের কোন এক একটা ছবিকে তুলে ধরছে এবং এই মডেল কে চিনে নিতে সাহায্য করছে। এবং এগুলি হল সব ফ্লিকর ছবি, আর এগুলো সব মহাকাশের সাথে সম্পকিত। এবং এইভাবে আমরা খুব সহজেই যাত্রা শুরু করতে পারব। হাততালি। আমি কোনো দিন মাইক্রসফট-এ কাজ করব ভাবি নি। আপনাদের এই ধরনের অভ্যর্থনায় আমি বাধিত। হাস্যরোল। আমার মনে হয় আপনারা বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা দেখতে পাচ্ছেনঃ এগুলো বিভিন্ন ধরনের সেলফোন থেকে শুরু করে পেশাদার এস এল আর , এগুলির বেশিরভাগ একসাথে এই এনভায়রনমেন্টে একত্রিত রয়েছে এবং এদের মধ্যে আমি কিছু খুঁজে বার করব এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মুখ বন্ধ। কোথাও কোথাও এখানে ধারাবাহিক ছবি-এখানে দেখুন। এটা আসলে নোটরডামের একটা পোস্টার যেটা সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। চলুন আমরা ছবির ভিতরে প্রবেশ করি সামনে থেকে ছবিটা দেখি। এখানে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হল আমরা সামাজিক পরিবেশের সাথে কাজ করতে পারি এটা এখন সকলের থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে,কালেকটিভ মেমারী থেকে পৃথিবীর রুপ খুঁজে বার করছে- আর সকলকে একত্রিত করছে। সব ছবিগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়েছে, এবং এগুলো কিছু একটার উদ্ভব ঘটাচ্ছে সব অংশের যোগফলের থেকে ওটা বড়। আপনারা একটা পুরো পৃথিবীর নমুনা দেখতে পাচ্ছেন। এটাকে আপনারা স্টিফেন ললার এর ভারচুয়াল আর্থ ওয়ার্ক এর লম্বা লেজ মনে করতে পারেন। এটা এমন একটা জিনিস যেটা জটিলতার মধ্যে গড়ে ওঠে লোকেরা যত এটা ব্যবহার করে,তত এর উপযোগিতা বেড়ে ওঠে ব্যবহারকারীদের ব্যবহার করার সাঙ্গে সাঙ্গে। তাদের নিজেদের ছবিগুলো অন্য কারোর ছবির সাথে মেটা-ডাটা দিয়ে ট্যাগ করতে হয়। কেউ যদি সব সাধু-সন্তদের তালিকাভুক্ত করতে চায় আর বলে যে ওরা কারা,তাহলে আমার নোটরডামের ক্যথিড্রাল এর ছাবিগুলো হঠাৎ করে ওই ডাটাগুলো পেয়ে আরো সুন্দর হয়ে ওঠে, আমি এটাকে মহাকাশে প্রবেশের একটা দিক হিসাবে ব্যবহার করতে পারি, আর সবার ছবি ব্যবহার করে আর ক্রস মোডাল ব্যবহার করে আর ক্রস ইউসার সামাজিক অভিজ্ঞতা দেয়। এবং অবশ্যই এসবের উপজাত পদার্থ হল প্রচন্ড সমৃদ্ধপূর্ণ ভার্চুয়াল মডেল পৃথিবীর প্রত্যেকটা আংশ শুধু আকাশে ওড়া বিমান অথবা উপগ্রহ থেকে সংগৃহীত ছবি নয়, কালেকটিভ মেমারী থেকে নেওয়া আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। হাততালি ক্রিস আন্ডারসনঃআমি কি এটা ঠিক মনে করতে পারি যে আপনার সফটওযার টি আগামী ভবিষ্যতে পৃথিবীর সমস্ত ছবিকে একত্রিত করতে পারবে? বি এ এঃহ্যাঁ নিশ্চয়।এটা দারুন কাজ করছে। আপনি চাইলে এটা একাধিক ছবির সাথে হাইপার লিঙ্ক করবে। এবং এটা ছবির ভিতরকার বিষয় বস্তুর সাহায্যে করতে পারে। এটা খুবই মূল্যবান জিনিস স্বচ্ছ তথ্য পাওয়াটা খূব আনন্দের। যেমন ধরুন আপনি কোন ছাবির জন্য ওয়েব ঁখুজছেন আপনি বাক্যটা লেখেন আর ওয়েব পেজ আপনার সামনে সেই ছবিটার সম্বান্ধে আনেক তথ্য নিয়ে আসে এটা কেমন হয় যদি আপনার সেই সমস্ত ছবি একে অপরের সাথে লিঙ্ক তৈরী করে? তাহলে বিপুল পরিমান তথ্য একে অপরের সাথে শব্দার্থগত ভাবে যুক্ত হয় এবং তার গুণগত মান খুব উন্নত হয় এটা একটা দারুন নেটওয়ার্ক এর ফল সি এঃব্লেজ,ভীষন ভালো আর প্রশংসনীয়। বি এ এ: অনেক ধন্যবাদ (বাদ্যসঙ্গীত) শুভ সন্ধ্যা । আপনারা সবাই জানেন, আমরা কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি আপনাদের কাছে এসেছি একটা ছোট প্রস্তাব নিয়ে যা আমাদের অর্থনৈতিক ভার লাঘব করতে পারে । এই চিন্তাটা আমার মাথায় এসেছে যখন আমি কথা বলছিলাম এম.আই.টি. র একজন পদার্থবিদ বন্ধুর সাথে । সে খুব কষ্ট করে আমাকে একটা জিনিস বোঝানোর চেষ্টা করছিল ঃ একটা সুন্দর এক্সপেরিমেন্ট এর ব্যাপারে যাতে লেজার ব্যবহার করে পদার্থকে শীতল করা হয়। সে আমাকে প্রথম থেকেই হতবুদ্ধি করে রেখেছিল, কারণ আলো কোন কিছুকে শীতল করতে পারে না । আলো বস্তুকে উত্তপ্ত করে। এটা ঠিক এই মুহূর্তেও ঘটছে । আমাকে এই মুহূর্তে আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছেন কারণ এই ঘরটি ১০০ কুইন্টাইলন এরও বেশি ফোটন দিয়ে ভরা, এবং সেগুলো এই জায়গার মধ্যে এলোমেলোভাবে প্রায় আলোর বেগে গতিশীল আছে । সবগুলোই ভিন্ন ভিন্ন রং এর , এগুলো ভিন্ন ভিন্ন কম্পাঙ্কে তরঙ্গায়িত হচ্ছে , এবং সেগুলো প্রত্যেক দেয়ালে প্রতিহত হয়ে ফিরে আসছে , এমনকি আমার গায়েও ধাক্কা খাচ্ছে , এবং সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু সোজাসুজি আপনার চোখের ভিতর উড়ে উড়ে আসছে। আর সে কারণেই আপনার মস্তিষ্কে আমার দাঁড়িয়ে থাকার চিত্র তৈরি হচ্ছে। এখন লেজার হচ্ছে একটা আলাদা জিনিস । এটা ফোটন ব্যবহার করে, কিন্তু সেগুলো সবগুলোই সিনক্রোনাইজড থাকে । আর আপনি যদি সেগুলোকে একটা রশ্মির মধ্যে ফোকাস করতে পারেন আপনি একটা অসাধারণ জিনিস পাবেন । লেজার দিয়ে আপনি এত সূক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন যে আপনি চোখের ভিতরে সার্জারী করতে পারবেন , আপনি এটাকে ব্যবহার করতে পারেন বৃহৎ পরিমাণের ডাটা জমিয়ে রাখতে , এবং আপনি একে ব্যবহার করতে পারেন চমৎকার পরীক্ষা দিয়ে , যা বোঝাতে আমার বন্ধুর বেগ পেতে হচ্ছিল । প্রথমে আপনি একটা বোতলে পরমাণুকে আবদ্ধ করে রাখেন । এটা তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করে পরমাণুকে আলাদা করে রাখে পরিবেশের নয়েজ থেকে এবং পরমাণুগুলো নিজেরা বেশ জবরদস্ত রকমে উদ্দাম, কিন্তু আপনি যিদি লেজার নিক্ষেপ করেন যেটা সূক্ষভাবে সঠিক কম্পাঙ্কে টিউন করা আছে, একটা পরমাণু সেই ফোটনগুলোকে শোষণ করে নিবে । এবং গতি হ্রাস করতে শুরু করবে। ধীরে ধীরে এটা শীতল হতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত এটা পরম শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছায় । এখন যদি আপনি সঠিক পরমাণুগুলো ব্যবহার করেন এবং সেগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণ শীতল করতে পারেন, উদ্ভট কিছু তখন ঘটবে । এটা আর কঠিন অবস্থায় থাকবে না, এটা তরল অথবা গ্যাসীয় অবস্থায় চলে যাবে। এটা পদার্থের এক নতুন অবস্থায় উত্তীর্ণ হবে যাকে আমরা বলি সুপারফ্লুইড । পরমাণুগুলো তাদের নিজস্ব পরিচয় হারিয়ে ফেলে, এবং কোয়ান্টাম পৃথিবীর নিয়ম তখন বলবৎ হয় , এবং একারণেই সুপারফ্লুইড তার এসব অদ্ভূত বৈশিষ্ট্যগুলো পায়। উদাহারণস্বরূপ, আপনি যদি সুপারফ্লুইড এর ভিতর দিয়ে আলো চালনা করেন , এটা ফোটনের গতি হ্রাস করে ফেলতে পারে, এর বেগ ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত নিয়ে আসা সম্ভব । আরেকটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হল যে এটা প্রবাহিত হতে পারে কোনরকম সান্দ্রতা কিংবা ঘর্ষণ ছাড়াই । তাই আপনি যদি বোতলের মুখ খুলে ফেলেন , তাহলে এটা আর ভিতরে অবস্থান করে না । একটা পাতলা ফিল্ম ভিতরের দেয়াল বেয়ে উঠে আসে , উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাইরে নিঃসৃত হয় । অবশ্যই , যে মুহূর্তে এটা বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে আসে, এবং এর তাপমাত্রা এমনকি এক ডিগ্রির ভগ্নাংশের কাছাকাছি বেড়ে যায়, এটা সাথেসাথে সাধারণ পদার্থের রূপে ফিরে আসে। সুপারফ্লুইড হল আমাদের আবিষ্কৃত জিনিসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক । আর এটাই আসলে বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব আনন্দ ঃ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা আমাদের সংস্কার থেকে মুক্ত হই । কিন্তু পরীক্ষা নিরীক্ষাতেই গল্প শেষ না, কারণ আপনাকে অন্য মানুষের মাঝে এই জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে। আমি পারমাণবিক জীববিজ্ঞানে পি.এইচ.ডি করেছি । অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা কি নিয়ে কথা বলে তার খুব কমই আমি বুঝতে পারি । আমার বন্ধু আমাকে যখন ঐ এক্সপেরিমেন্টটা বোঝানোর চেষ্টা করছিল, আমার মনে হচ্ছিল সে যতই বলছে, ততই আমার বুঝে উঠতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ আপনি যখন কাউকে সামগ্রিক ধারণা দিতে চেষ্টা করেন একটা জটিল বিষয় সম্পর্কে, এর সারমর্ম উপলব্ধি করার জন্য, যত কম শব্দ ব্যবহার করবেন, ততোই ভালো। সত্যি বলতে, একদম কোন শব্দ ব্যবহার না করাই হয়ত আদর্শ হতে পারে । আমি ভেবে দেখেছি, আমার বন্ধু আমাকে বোঝাতে পারত পুরো এক্সপেরিমেন্টটাই নেচে নেচে । অবশ্যই, প্রায়শই মনে হয় আপনার যখন আসল প্রয়োজন , তখন আপনার চারপাশে কোন নৃত্যশিল্পীকেই আপনি খুঁজে পাবেন না। এখন, এটা কিন্ত পাগলের প্রলাপ না , যতখানি এটা শোনাচ্ছে । আমি চার বছর আগে একটা প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছিলাম যার নাম দিয়েছিলাম "আপনার পি এইচ ডি" কে নাচান । শব্দ দিয়ে তাদের গবেষণাকে ব্যাখ্যা না করে বরং বিজ্ঞানীদের তা ব্যাখ্যা করতে হবে নাচ ব্যবহার করে । এবং বিস্ময়করভাবে, এটা আসলে কাজ করেছে। নাচ আসলেই বিজ্ঞান বোঝার কাজকে সহজ করে দিতে পারে। আমার কথাকে পাত্তা দেয়ার দরকার নেই । ইন্টারনেটে যান এবং সার্চ করুন "Dance Your Ph.D." আপনি শত শত বিজ্ঞানীকে খুঁজে পাবেন যারা আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে । সবচেয়ে বিস্ময়কর যে জিনিসটি আমি এই প্রতিযোগীতার আয়োজন করতে গিয়ে শিখেছি তা হল কিছু বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় সরাসরি নৃত্যশিল্পীদের ব্যবহার করছেন। উদাহারণস্বরূপ, মিনেসোটা ইউনিভার্সিটিতে ড্যাভিড ওড্ডি নামক একজন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনীয়ার আছেন, যিনি কোষের চলন সম্পর্কে গবেষণা করতে নৃত্যশিল্পীদের সাথে কাজ করছেন । নৃত্যশিল্পীরা এটা করছে তাদের নৃত্যাকৃতি পরিবর্তন করে করে । যখন এক দিকের রাসায়নিক সিগনাল শেষ হয়ে আসে, এটা কোষকে এর অন্য দিকের আকৃতি বাড়ানোর জন্য উদ্দীপ্ত করে । কারণ কোষ ক্রমাগত পরিবেশের সংস্পর্শ আসছে আর টানছে । আর সেটা কোষকে সঠিক দিকে প্রবাহিত হতে সমর্থ করছে। কিন্তু যেটা বাইরে থেকে ধীরস্থির আর কমনীয় দেখায় ভিতরে তাকালে সেটা কিন্তু ভীষণ বিশৃঙ্খল । কারণ কোষগুলো তাদের আকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে অনমনীয় আমিষ তন্তুর কাঠামো দিয়ে, আর সেই ফাইবারগুলো ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে । কিন্তু যত দ্রুত সেগুলো বিস্ফোরিত হয়, এর শেষপ্রান্তে ততই আমিষ যুক্ত হয় এবং দীর্ঘতর হতে থাকে, তাই এটা ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে একদম একইরকম থাকার জন্য । ড্যাভিড এর গাণিতিক মডেল তৈরি করছে এবং সে এটা তার গবেষণাকক্ষে পরীক্ষা করছে , কিন্তু সেটা করার আগে, সে নৃত্যশিল্পীদের সাথে কাজ করছে সেটা নিয়ে কি ধরণের মডেল তৈরি করা যেতে পারে তা বুঝে ওঠার জন্য । এটা আসলে বেশ কার্যকর ব্রেইনস্টর্মিং , আর যখন আমি ড্যাভিড এর গবেষণা সম্পর্কে জানার জন্য তার ওখানে গেলাম, সে আমাকে বোঝানোর জন্য নৃত্যশিল্পীদের ব্যবহার করল প্রচলিত পদ্ধতির পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবহার না করে । আর এখানেই আমি আমার বিনীত অনুরোধ করব । আমার মনে হয় পাওয়ারপয়েন্টে তৈরি বাজে উপস্থাপনা আমাদের বিশ্ব অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ । (অট্টহাস্য)(হাততালি) এটা অবশ্য নির্ভর করে আপনি কিভাবে এর মাপযোখ করছেন, অবশ্যই, কিন্তু একটা হিসাবে দিনপ্রতি ২৫০ মিলিয়ন ডলারের অপচয়ের উল্লেখ রয়েছে । সেখানে ধরে নেয়া হয়েছে আমাদের প্রেজেন্টেশনের দৈর্ঘ্য হচ্ছে আধা ঘন্টা গড়ে চার জন দর্শকের জন্য ৩৫,০০০ ডলারের মত স্যালারীসহ, এবং এটা বেশ রক্ষণশীলভাবেই ধরে নিয়েছে যে যাবতীয় প্রেজেন্টেশনের এক চতুর্থাংশ সম্পূর্ণরূপে সময়ের অপচয়স্বরূপ এবং পরিষ্কার ভাবে আমরা জানি প্রত্যেকদিন ৩০ মিলিয়ন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি হয়, যেটা যোগ করলে বছরে অপচয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ বিলিয়ন ডলার । অবশ্যই এটা শুধু আমাদের বসে থেকে পাওয়ারপয়েন্ট দেখে অপব্যয়িত সময়। অন্য খরচও আছে, কারণ পাওয়ারপয়েন্ট হচ্ছে একটা টুল, আর অন্য সব টুলের মতৈ, এটার অপপ্রয়োগ হতে পারে এবং হবে । আমার দেশের সিআইএ এর একটা কন্সেপ্ট যদি ব্যবহার করি তাহলে বলা যায় এটা দর্শকদের অনুভূতিশীল করে তুলতে সাহায্য করে । এটা তাদের সুন্দর ছবি, আর অপ্রয়োজনীয় তথ্য দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে । এটা প্রতিযোগীতার এক অবাস্তব বিভ্রম তৈরি করে, সাধারণত্বের বিভ্রম তৈরি করে, এবং সবচেয়ে সর্বনাশের ব্যাপার হল, এটা বোধগম্যতা সম্পর্কেও বিভ্রান্ত করে তোলে। আমার দেশে এখন ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণের বোঝা । আমাদের নেতারা অবিশ্রান্তভাবে টাকা বাঁচানোর ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং উপায় খুঁজছেন । আদর্শ হিসেবে নেয়া হয়েছে কলাবিভাগের সরকারী সহায়তার পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়া। উদাহারণ হিসেবে দেখুন, কলাবিভাগের জাতীয় বৃত্তির পরিমাণ, ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট, এই প্রোগ্রামকে বাতিল করে দিলে সাথেসাথেই আমাদের জাতীয় ঋণ কমে আসবে শতকরা ১০০০ ভাগের এক ভাগ হারে । কেউ কোনভাবেই এই সংখ্যাগুলোর সাথে একমত হতে পারছে না। যাহোক, একবার আমরা যদি কলাবিভাগের সরকারী ফাণ্ড বন্ধ করে দেই, কিছু অসুবিধাও সৃষ্টি হবে। বেকারদের সারিতে শিল্পীদের স্থান উঁচু হবে। অনেকেই মাদকাসক্তি আর পতিতাবৃত্তিতে নেমে পড়বে , আর সেটা নিশ্চিতভাবেই শহুরাঞ্চলে সম্পত্তির দাম অনেক কমিয়ে দেবে। এসব কিছুই আমরা যা সঞ্চয় করে রাখতে চাচ্ছি, সেটাকে নির্মুল করে দেবে। আমি এখন তাই বিনীতভাবে আমার ধ্যানধারণা অনুযায়ী প্রস্তাব করব, যেটা আমার আশা, সূক্ষ আপত্তিরও সম্মুখীন হবে না । একবার আমরা যদি শিল্পীদের জন্য সরকারী সহায়তাকে বাদ দেই, চলুন তাদেরকে কাজে ফিরিয়ে আনি পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবহার থামিয়ে । আমি প্রস্তাব করছি পরীক্ষা হিসেবে, আমরা শুরু করতে পারি আমেরিকান নৃত্যশিল্পীদের দিয়ে। যাহোক, তারা কিন্তু শিল্পীদের মধ্যেও সবচেয়ে বিরল হয়ে পড়ছে ! ! প্রায় জখম অবস্থা আর খুব মন্থর গতির আরোগ্য লাভ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থার কারণে । তার চেয়ে বরং আমাদের পি এইচ ডি কে নৃত্যে উপস্থাপন করে, আমরা আমাদের জটিল সমস্যাগুলোকে নাচের মাধ্যমে বোঝাতে নৃত্যশিল্পীদের ব্যবহার করতে পারি। চিন্তা করে দেখুন আমাদের রাজনীতিবিদরা নাচ ব্যবহার করছেন এটা বোঝানোর জন্য যে কেন আমাদের বাইরের একটি দেশে আক্রমণ করা উচিত অথবা একটা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংককে জামিন দিয়ে মুক্তি দেয়া উচিত । এটা অবশ্যই সাহায্য করবে। অবশ্যই দূর কোন ভবিষ্যতে , কোনদিন, অনুপ্রেরণা দেয়াররও প্রযুক্তি আসবে পাওয়ারপয়েন্ট এর থেকেও শক্তিশালী কিছু আবিষ্কৃত হতে পারে, নৃত্যশিল্পীদের নৃত্য সম্পাদনাকে অলঙ্কৃত টুল হিসেবে চিন্তা করা হবে। যাহোক, আমি সেই দিনে বিশ্বাস করি , আমরা হয়ত এই বর্তমান আর্থিক দুর্ভোগ অতিক্রম করে যাব। হয়ত তখন আমাদের এই আয়েস করাটা সাধ্য কুলোবে - দর্শক হিসেবে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে বসে না থেকে মানুষকে(নৃত্যশিল্পীদের) বিভিন্ন ভঙ্গিতে,আকারে গতিশীল দেখতে পারব । (বাদ্যসঙ্গীত) (হাততালি) "ফiঙ্গাস রোগ কি চেস্টনাট করবে নির্মূল?- তা তো নয় কৃষকের আকাঙ্ক্ষা। সুপ্ত শিখা মূলে প্রজ্বলিত হতে থাকে আর বিস্তার করে শাখা-প্রশাখা। নতুন পরজীবী যেদিন আসবে ফাঙ্গাসের বেলা সেদিনই ফুরোবে ।" বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, পূর্ব আমেরিকান চেস্টনাট গাছের সংখ্যা ছিল প্রায় চারশত কোটি, যা ফiঙ্গাস সংক্রমণের কারনে প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ফiঙ্গাস হচ্ছে গাছের সব থেকে ভয়ংকর পরজীবী, যেসব গাছের মধ্যে আছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলও। আজকের দিনে কি চিন্তা করা যায় যে, ফiঙ্গাস সংক্রমনের কারণে পৃথিবী জুড়ে বছরে শত শত কোটি ডলারের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে? যেই ফসল দিয়ে পঞ্চাশ কোটি মানুষের খাদ্য-চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এবং এর পরিণাম ভয়াবহ, এর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দুর্ভিক্ষের প্রকোপ, কৃষক এবং পরিবেশকদের বিশাল আকারের আর্থিক ক্ষতি, ভোক্তাদের জন্য উচ্চমূল্য এবং ফাঙ্গাসের মাইকোটক্সিন বিষ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যতম। আমরা যেসব সমস্যায় পড়ি তা হচ্ছে এসব ভয়ংকর রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা করার জন্যে বর্তমানে ব্যবহৃত পদ্ধতি যেমন- জেনেটিক নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজে লাগানো, বদলি ফসল অথবা বীজ এর পরিমার্জন ইত্যাদি এখনো সীমিত অথবা ক্ষণস্থায়ী। এগুলোকে সবসময় নবায়ন করতে হয়। এ কারণেই, আমাদের খুব তাড়াতাড়ি আরও কার্যকরী পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে এবং এর জন্যে জৈবিক প্রক্রিয়া শনাক্তকরণ গবেষণা প্রয়োজন, যা নতুন ফাঙ্গাসবিরোধী চিকিৎসার ক্ষেত্রে টার্গেট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ফাঙ্গাসের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এরা নড়তে পারে না এবং কেবল জটিল একটি নেটওয়ার্ক গঠনের জন্য বিস্তার লাভের মাধ্যমে জন্মায়, যার নাম মাইসেলিয়াম। ১৮৮৪ সালে, অ্যান্টন দে বারি, উদ্ভিদ রোগবিদ্যার জনক, সর্বপ্রথম অনুমান করেন যে, ফাঙ্গাস এক ধরনের সংকেত দ্বারা পরিচালিত হয় যা এর আশ্রয়দাতা গাছ থেকে আসে, এর মানে হচ্ছে এই গাছের কাছ থেকে তারা আশ্রয় পাচ্ছে, তাই এই সংকেতগুলি বাতিঘরের মত কাজ করে, যার দ্বারা ফাঙ্গাস তার অবস্থান, বৃদ্ধির দিক নির্ণয় করে এবং শেষ পর্যন্ত আক্রমণ করে গাছে বসতি স্থাপন করে ফেলে। তিনি জানতেন যে এই সংকেতগুলিকে সনাক্ত করা গেলে বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার উন্মুক্ত হয়ে যাবে যা পরবর্তীতে ফাঙ্গাস এবং উদ্ভিদের আন্তঃসংযোগে বাধা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করা যাবে। যদিও, ওই সময়কালে যথাযথ পদ্ধতির অভাবে তিনি এই প্রক্রিয়াটিকে আণবিক স্তরে সনাক্ত করতে পারেননি। পরিশোধন এবং জিনোমিক পরিবর্তনগত পদ্ধতি অবলম্বন এবং একটি কৌশলগত পন্থা ব্যবহার করে সরাসরি হাইফাল বৃদ্ধির পরিমাপ সম্ভব হওয়ায়, আজ আমি আপনাদের আনন্দের সাথে বলছি যে, ১৩০ বছর পর, আমার প্রাক্তন দল এবং আমি শেষ পর্যন্ত গাছের সেরকম সংকেত সনাক্ত করতে পেরেছি একটি রোগজনক ফাঙ্গাস এবং আশ্রয়দাতা গাছের মধ্যেকার আন্তঃসংযোগ গবেষণা করে, ফাঙ্গাস ফিউসারিয়াম অক্সিস্পোরাম এবং এর অন্যতম আশ্রয়দাতা, টমেটো গাছ। এছাড়াও, আমরা নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছি ফাঙ্গাসের যেসকল সংকেত-গ্রহণকেন্দ্র এ সকল সংকেত গ্রহণ করে এবং এর ফলে ফাঙ্গাসের ভিতরে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া ঘটে আর কিভাবে গাছের দিকে ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে এসব বৈশিষ্ট্য। (হাত তালি) ধন্যবাদ। (হাত তালি) এ ধরনের জৈবিক প্রক্রিয়া বুঝতে পারলে নতুন ধরনের বহুবিধ যৌগ পাওয়া যাবে, যা নতুন ফাঙ্গাস বিরোধী চিকিৎসা উদ্ভাবনে ব্যবহার করা যাবে। এবং এ সকল চিকিৎসা ফাঙ্গাস এবং গাছের মধ্যেকার আন্তঃসংযোগকে, হয় গাছের সংকেত প্রেরণ ব্যবস্থায় বাধা দিয়ে অথবা ফাঙ্গাসের সংকেত গ্রহণ ব্যবস্থায় বাধা দিয়ে নষ্ট করে দিবে। ফাঙ্গাস সংক্রমন ফসল কে ধ্বংস করে দিয়েছে। এছাড়া আমরা বর্তমানে এমন একটা সময়ে বাস করছি যেখানে ফসল উৎপাদন এর চাহিদা ক্রমেই ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে। এবং এর মূলে রয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীবাশ্ম জালানির চাহিদা। ফাঙ্গাস এবং এর আশ্রয়দাতা গাছের মধ্যকার আন্তঃসংযোগ এর জৈবিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের ধারনা, যেমন টমেটো গাছের ক্ষেত্রে, গাছের ফাঙ্গাস রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে আরও কার্যকরী পদ্ধতি তৈরি করার পথে এক বিশাল অগ্রগতি। আর এর ফলে মানুষের জীবনের সমস্যা সমাধান, খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। ধন্যবাদ। (হাত তালি) উনিশ শ আশির দশকে সমাজতান্ত্রিক পূর্ব জার্মানিতে আপনি একটি টাইপরাইটা্রের মালিক হলে তা সরকারের কাছে নিবন্ধন করতে হোতো। আপনাকে নিবন্ধন করতে হোতো একটি লিখিত নমুনা আপনার টাইপরাইটার থেকে। এবং এটা করা হোতো যাতে সরকার বের করতে পারে যে কোথা থেকে লেখাটা আসছে। যদি তারা এমন কাগজ পেত যাতে অশুভ চিন্তা স্থান পেয়েছে, তারা খুঁজে বের করতে পারতো কারা এই চিন্তার জন্ম দিয়েছে। এবং পশ্চিমের আমরা বুঝতে পারতাম না, কিভাবে কেউ এটা করতে পারে, বাক-স্বাধীনতার উপর এটা কি পরিমাণ শৃংখল এনে দেয়। আমরা এটা কখনোই আমাদের দেশে করতাম না। কিন্তু আজ ২০১১ তে এসে যদি আপনি একটি রঙ্গিন লেজার প্রিণ্টার কিনতে যান যেকোন বড় লেজার প্রিন্টার প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে এবং একটি পৃষ্ঠা মুদ্রণ করেন, তবে সেই পাতায় দেখা যাবে অনেক হালকা হলুদ ফোটা একটি নকশায় মুদ্রিত হচ্ছে প্রতিটি পৃষ্ঠায় যা পৃষ্ঠাটিকে মৌলিক করে তুলে আপনার এবং আপনার প্রিন্টারের কাছে। এই ঘটনা আজকে ঘটছে আমাদের সাথে। এবং কেউ এব্যাপারে কোন কথাই বলছে না। এবং এটি একটি উদাহরণ কিভাবে আমাদের নিজেদের সরকার প্রযুক্তি ব্যবহার করছে আমাদের, 'নাগরিক'দের বিরুদ্ধে। এবং এটি আজ অনলাইন সমস্যাগুলোর তিনটি প্রধান উৎসের একটি। আমরা যদি অনলাইন জগতে সত্যিকার অর্থে কি হচ্ছে তার দিকে দৃষ্টি দেই, তাহলে আমরা আক্রমণকারীর ভিত্তিতে আক্রমণগুলোকে সাজাতে পারি। আমাদের তিনটি প্রধান দল আছে। আছে অনলাইন অপরাধী। যেমন এখানে, ইউক্রেনের কিয়েভ নগরী থেকে আছেন মি. দিমিত্রি গোলুবোভ। অনলাইন অপরাধীদের উদ্দেশ্য বোঝা খুবই সহজ। তারা টাকা উপার্জনের জন্য কাজটা করে। তারা অনলাইন আক্রমণকে ব্যবহার করে অনেক টাকা উপার্জন করে। এবং এর পরিমাণ অনেক। আমাদের কাছে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে অনলাইন মিলিয়নেয়ার (লাখপতি), মাল্টিমিলিয়নেয়ার (কোটিপতি), যারা তাদের অর্থ উপার্জন করেছে তাদের আক্রমণ থেকে। যেমন এস্তোনিয়ার টারটু অঞ্চলের ভ্লাদিমির সাস্তসিন। আছেন আলফ্রেড গোঞ্জালেস। এখানে স্টিফেন ওয়াট। ইনি হলেন বিয়র্ন সান্দিন। এরা হলেন ম্যাথিউ এন্ডারসন, তারিক-আল-দাউর এবং আরও আরও অনেকে। এই ব্যক্তিরা তাদের সম্পদ অনলাইনে তৈরি করেছেন, কিন্তু তারা যে পন্থায় তা তৈরি করেছেন তা অনৈতিক তারা ব্যাংকিং ট্রোজানের মত জিনিস ব্যবহার করেছেন আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ আত্বসাৎ এ যখন আমরা অনলাইনে ব্যাংকিং করি, অথবা প্রবেশচাবি দিয়ে আমাদের ক্রেডিট কার্ড তথ্য সংগ্রহ করেছেন যখন আমরা অনলাইন শপিং করেছি একটি আক্রান্ত কম্পিউটার দিয়ে। ইউ এস সিক্রেট সার্ভিস, দুই মাস আগে, এই স্যাম জেইনের সুইস অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করে এবং সেই ব্যাংক আক্যাউন্টে ১৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার ছিল যখন তা বাজেয়াপ্ত করা হয়। মি. জেইন এখন নিজে ফেরারী, কেউ জানে না সে কোথায়। এবং আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি আজ আমাদের যে কারো অনলাইন আক্রমণের শিকার হবার সম্ভাবনা প্রবল বাস্তব জগতের চেয়ে/তুলনায়। এবং এটা খারাপের দিকে যাবে এটাই স্বাভাবিক। ভবিষ্যতে, অধিকাংশ অপরাধ অনলাইনে সংঘটিত হবে। দ্বিতীয় প্রধান আক্রমণকারী্র দল যাদের আমরা আজ দেখছি তারা টাকার দ্বারা উদ্বুদ্ধ নয়। তাদের অনুপ্রেরণা অন্যকিছু- প্রতিবাদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ তারা, উদ্বুদ্ধ একটি মতের দ্বারা, হাসি তাদের অনুপ্রেরণা। 'অ্যানোনিমাস' এর মত গোষ্ঠী গত ১২ মাসে উঠে দাঁড়িয়েছে এবং তারা অনলাইন আক্রমণের ক্ষেত্রে এক বড় খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। তাহলে এরাই হল তিন প্রধান আক্রমণকারীঃ অপরাধকারী টাকার জন্য করে, অ্যানোনিমাসের মত হ্যাক্টিভিস্টরা করছে প্রতিবাদের জন্য, কিন্তু শেষ গোষ্ঠীটি হচ্ছে সরকারসমূহ যারা আক্রমণ করছে। এরপর আমরা তাকাই ডিজিনোটারের মত ঘটনার দিকে। এটি একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ, কি হতে পারে যখন সরকারসমূহ নিজেদের নাগরিকদের আক্রমণ করে। ডিজিনোটার হচ্ছে নেদারল্যাণ্ডের একটি স্বীকৃতিদানকারী কর্তৃপক্ষ- অথবা বলা চলে ছিল। এটি দেউলিয়া হবার পথে ছিল গত হেমন্তে , কারণ তাদের অনলাইন ব্যবস্থা হ্যাক হয়েছিল। কেউ তাদের অনলাইন ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করে এবং সম্পূর্ণরূপে হ্যাক হয়ে যায়। এবং আমি গত সপ্তাহে ডাচ সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে একটি বৈঠকে প্রশ্ন করেছি, আমি প্রশ্ন করেছি, দলটির একজন দলনেতাকে তিনি কোন প্রমাণ পেয়েছেন কিনা যে মানুষ মারা গিয়েছে ডিজিনোটার হ্যাকের ঘটনায়। এবং তার উত্তর ছিল হ্যাঁ। তাহলে কিভাবে এই ধরনের হ্যাকের কারণে মানুষ মারা যায়? আসলে 'ডিজিনোটার' একটি সি এ তারা সনদ বিক্রি করে। আপনি এই সনদপত্রগুলো দিয়ে কি করেন? আপনার একটি সনদপত্র লাগবে যদি আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকে যার আছে এইচটিটিপি , এসএসএল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা, জিমেইলের মত ব্যবস্থা/সেবা। এখন আমরা সকলে অথবা আমাদের একটি বড় অংশ জিমেইল অথবা তাদের কোন প্রতিদন্দ্বীর সেবা ব্যবহার করে কিন্তু এইসেবাগুলো খুবই জনপ্রিয় সমগ্রতাবাদে বিশ্বাসী দেশসমূহে যেমন ইরান, যেখানে ভিন্নমতাবম্বীরা বিদেশী সেবা যেমন জিমেইল ব্যবহার করে কারণ তারা জানে এসব সেবা অনেক বেশি বিশ্বস্ত স্থানীয় সেবাসমূহের চেয়ে এবং তারা এসএসএল সংযোগ দ্বারা সংকেতায়িত, সুতরাং স্থানীয় সরকার নাক গলাতে পারে না তাদের আলোচনায়। অবশ্য সরকারসমূহ করতে পারে, যদি তারা বিদেশী সার্টিফিকেট যাচাইকারীকে হ্যাক করে। এবং জাল সার্টিফিকেট প্রদান করে। এবং ঠিক এই ঘটনাটি ঘটেছে ডিজিনোটারের ক্ষেত্রে। আরব বসন্তের ব্যপারগুলো কি? এবং যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে, উদাহরণস্বরূপ, মিসরে? আসলে মিশরে দাঙ্গাকারীরা লুট করে মিসরীয় গোয়েন্দা পুলিশের সদরদপ্তর ২০১১ সালের এপ্রিলে এবং তারা যখন ভবনটিতে লুটপাট চালাচ্ছিলো তারা অনেক নথি পেয়েছে। এই নথিসমূহের মধ্যে 'ফিনফিসার' নামে একটি দস্তাবেজ ছিল। এবং সেই বাণ্ডিলের মধ্যে কিছু কাগজ ছিল জার্মানির একটি কোম্পানির যারা মিসরীয় সরকারকে বিক্রি করেছিল কিছু সরঞ্জাম আড়ি পাতার জন্য এবং তা ছিল অনেক বড় মাপের-- দেশের সকল নাগরিকের যোগাযোগের উপর। তারা এই যন্ত্র বিক্রি করেছিল দুই লাখ ৮০ হাজার ইউরোয় মিসরীয় সরকারের কাছে। এই কোম্পানির সদর দপ্তর ঠিক এইখানে। সুতরাং পশ্চিমা সরকারগুলো সমগ্রতাবাদী সরকারসমূহকে যন্ত্র সরবরাহ করছে তাদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই কাজ করার জন্য। কিন্তু পশ্চিমা সরকারগুলো এই কাজ তাদের নিজেদের দেশেও করছে। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানিতে কয়েক সপ্তাহ আগে কথিত স্টেট ট্রোজান পাওয়া গিয়েছিল, যা জার্মান সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত একটি ট্রোজান তাদের নিজেদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার জন্য। যদি আপনি একটি অপরাধ মামলার সন্দেহভাজন হন, এটা আসলে স্বাভাবিক যে, আপনার ফোনে আড়ি পাতা হবে। কিন্তু আজ তা এর বাইরেও প্রসারিত। তারা আপনার ইন্টারনেট সংযোগে আড়ি পাতবে। এমনকি তারা স্টেট ট্রোজানের মতন জিনিস ব্যবহার করবে আপনার কম্পিউটারকে ট্রোজান দ্বারা আক্রান্ত করবার জন্য, যা তাদের সাহায্য করে আপনার যোগাযোগের উপর নজর রাখতে, আপনার অনলাইন আলোচনা শুনতে, আপনার পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করতে। এখন আমরা যখন একটু গভীরে চিন্তা করি এইসব বিষয়ে, মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত " আচ্ছা, অবস্থা শুনতে খারাপ মনে হচ্ছে, কিন্তু তা আসলে আমাকে প্রভাবিত করে না কারণ আমি একজন বৈধ নাগরিক। তাহলে আমি কেন উদ্বিগ্ন হবো? কারণ আমার লুকানোর কিছু নেই।" এবং এটি একটি যুক্তি, যার কোন মানে হয় না। গোপনীয়তা আরোপ করা হয়। গোপনীয়তা আলোচনার বিষয় নয়। এটা গোপনীয়তার বিরুদ্ধে নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়। এটি নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার প্রশ্ন। এবং আমরা হয়তো আমাদের সরকারকে বিশ্বাস করবো এই মুহূর্তে, এখানে ২০১১ তে যেকোন অধিকার আমরা ছেড়ে দেবো ভালো কোন কিছুর জন্যে। তাহলে আমরা কি বিশ্বাস করি, আমরা কি অন্ধের বিশ্বাস করি, কোন ভবিষ্যৎ সরকারকে, যে সরকার আমাদের থাকবে আজ থেকে ৫০ বছর পর? এবং এগুলো হলো সেসব প্রশ্ন যেগুলো নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হতে হবে আগামী ৫০ বছরের জন্য। আমি এখান থেকে শুরু করব। এটি একটি হাতে লেখা পোস্টার যা একটি ছোট পারিবারিক বেকারীতে টাঙানো ছিল ব্রুকলিনে আমাদের পুরোনো পাড়ায় ... এটি বেশ কয়েক বছর আগের কথা। এই দোকানে অমন একটি মেশিন ছিল যা চিনির প্লেটে ছাপাতে পারত। ছোটরা তাদের আঁকা নিয়ে আসত এবং তা দোকানে একটি চিনির প্লেটে ছাপা হত তাদের জন্মদিনের কেকের সজ্জার জন্যে। কিন্তু দু:খের বিষয়, ছোটরা আঁকতে ভালবাসত কার্টুন চরিত্রগুলোকে। তারা লিটল মারমেইড (ছোট মৎসকন্যা) আঁকতে ভালবাসত, তারা হয়ত আঁকত একটি স্মার্ফ (ছোট্ট নীল মানুষ), বা একটি মিকি মাউস। কিন্ত পরে দেখা গেল, এটা একটা বেআইনি ব্যাপার - ছোটদের আঁকা মিকি মাউস কোন চিনির প্লেটে ছাপানো। কারণ এতে কপিরাইট লঙ্ঘন করা হয়। তবে কপিরাইট নিয়ে কড়াকড়ি করা বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্মদিনের কেকের জন্যে সত্যিই একটি ঝামেলার কাজ, তাই সেই কলেজ বেকারী বলল, "ব্যাপার কী জানো, আমরা এই ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছি। তুমি যদি শখের শিল্পী হও, তাহলে আমাদের মেশিন আর ব্যবহার করতে পারবে না। তুমি একটা চিনিতে ছাপানো জন্মদিনের কেক চাইলে, তোমাকে ব্যবহার করতে হবে আমাদের কোনো একটা পূর্বনির্ধারিত ছবিই - যা পেশাদার শিল্পী দিয়ে আঁকানো।" কংগ্রেসে এখন দুটি বিল পাশের জন্যে রয়েছে। একটির নাম সোপা, অপরটির নাম পিপা। সোপা (এসওপিএ) মানে হচ্ছে স্টপ অনলাইন পাইরেসী অ্যাক্ট (অনলাইন চৌর্যবৃত্তি রোধে আইন)। এটি সেনেট প্রস্তাব করেছে। পিপা (পিওপিএ) মানে হচ্ছে প্রটেক্ট আইপি (আইপি সংরক্ষণ), যা আবার সংক্ষেপিত করা হয়েছে এই থেকে: 'প্রিভেন্টিং রিয়াল অনলাইন থ্রেটস টু ইকনমিক ক্রিয়েটিভি্টি আন্ড থেফট অফ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি' - কারণ, কংগ্রসের কর্মীরা যাঁরা এইসব নাম দেন তাঁদের হাতে সময়ের অভাব নেই। এবং সোপা এবং পিপা যা করতে চায় তা হল এই - তারা খরচ বাড়াতে চায় কপিরাইট পালন কার্যক্রমের, এতদূর পর্যন্ত যাতে লোকজন তাদের ব্যবসার ওই অংশটা তুলে দিতে বাধ্য হয় যেখানে তারা অপেশাদারদের সুযোগসুবিধা দিতে পারছিল। আর তারা যেভাবে সেটা করতে চাইছে তা হল সেইসব সাইটকে খুঁজে বের করতে যেগুলো কপিরাইট লঙ্ঘন করছে তুলনায় বেশি - যদিও সেইসব সাইট কিভাবে শনাক্ত করা হবে সে সম্পর্কে বিলে বেশি কিছু বলা নেই - এবং তারা সেইসব সাইটকে ডোমেইন নেম-এর সিস্টেম থেকে বাদ দিতে চায়। তারা সেইসব সাইটকে ডোমেইন নেম-এর সিস্টেম থেকে উপড়ে ফেলতে চায়। এখন ডোমেইন নেম এর সিস্টেমটি হচ্ছে সেই ব্যবস্থা যা পঠনযোগ্য ডোমেইন নাম, যেমন 'গুগুল.কম'-কে সেইসব সংখ্যাভিত্তিক ঠিকানায় রুপান্তর করে যা কম্পিউটার বুঝতে পারে - যেমন ৭৪.১২৫.২২৬.২১২। এখন এই ধরনের সেন্সরশিপ মডেলের সমস্যা হচ্ছে, যেখানে একটি বিশেষ সাইট খুঁজে বের করা এবং সেইসব সাইটকে ডোমেইন নাম-এর সিস্টেম থেকে বাদ দেবার চেষ্টা করা হয়, যে সেটি আদৌ কাজ করে না। এবং আপনি হয়ত ভাববেন যে সেটি এই আইনের জন্যে একটি বিশাল সমস্যা, কিন্তু কংগ্রেস মনে হয় এ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়। এখন, এটি কাজ না করার কারণ হচ্ছে এই - যে আপনি ৭৪.১২৫.২২৬.২১২ এটি সরাসরি আপনার ব্রাউজারে টাইপ করতে পারেন অথবা ক্লিক করার মত একটি লিংক তৈরি করে নিতে পারেন, এবং আপনি এখনও গুগল সাইটে যেতে পারবেন। তাই নিয়ন্ত্রণের এ স্তর এই সমস্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা আইনকে সমস্যাযুক্ত করে তোলে। এখন যদি বুঝতে হয় যে কংগ্রেস কীভাবে এমন একটি বিল তৈরি করল যেটি তার লক্ষ্য পূরণই করবে না, কিন্তু অনেক ক্ষতিকর পারিপার্শ্বিক সমস্যার সৃষ্টি করবে, তাহলে আপনাকে এর প্রেক্ষিত সম্পর্কে জানতে হবে। এবং এর পূর্বেকার ঘটনা হচ্ছে এই: আইন হিসেবে সোপা, পিপা তৈরি করেছিল মিডিয়া কোম্পানীগুলো, বিশেষ করে যেগুলো বিংশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একটি মিডিয়া কোম্পানীর জন্যে বিংশ শতাব্দী বেশ ভাল সময় ছিল, কারণ একটা খুবই সুবিধাজনক ব্যাপার ছিল দুষ্প্রাপ্যতা। আপনি যদি একটি টিভি শো বানাতে চাইতেন, তাহলে এটাকে অন্যান্য টিভি শোর সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হত না। এটিকে কেবল ভাল করতে হত সেই দুটি অন্য শোর চেয়ে যারা একই সময় প্রচারিত হচ্ছে - যেটা খুবই সরল একটা ধাপ প্রতিযোগিতায় নামার জন্যে। যার মানে হচ্ছে যে যদি আপনি গতানুগতিক বিষয়বস্তু বানাতেন, তাও আপনি এমনি-এমনিই যুক্তরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশ মানুষকে দর্শক হিসেবে পেতেন - কোটি কোটি দর্শক - শুধুমাত্র এমন কিছু করার জন্যে যা খুব খারাপ না হলেই চলবে। এ যেন আপনাকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে টাকা ছাপানোর লাইসেন্স এবং এক ব্যারেল কালি, বিনে পয়সায়। কিন্তু প্রযুক্তি এগিয়ে চলেছে, এবং তা এগোতে চায়। এবং ধীরে ধীরে, বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে, এই দুষ্প্রাপ্যতা উবে যেতে শুরু করে - এবং আমি ডিজিটাল প্রযুক্তির কথা বলছি না; আমি বলতে চাইছি অ্যানালগ প্রযুক্তির কথা। ক্যাসেট টেপ, ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডার, এমন কি নিরীহ জেরক্স মেশিনও নতুন সুযোগের সৃষ্টি করেছে যা আমাদের এমন সব কাজ করতে সাহায্য করেছে যা মিডিয়া ব্যবসায়ীদের চমকে দিয়েছে। কারণ দেখা গেল যে আমরা শুধু নির্জীব দর্শক নই। আমরা শুধু ভোগ করতে চাই না। আমরা ভোগ করতে ভালোবাসি ঠিকই, কিন্তু প্রতিবারই যখন নতুন নতুন প্রযুক্তি আসে দেখা যায় যে আমরা সৃষ্টি করতেও চাই এবং তা অপরের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। এবং সেটা মিডিয়া ব্যবসায়ীদের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় -- এটি তাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে প্রতিবারই। জ্যাক ভ্যালেন্টি, যিনি প্রধান তদ্বিরকারী মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকার, একদা ভয়ঙ্কর ভিসিআর'কে জ্যাক দা রিপারের সাথে তুলনা করেছিলেন, আর গরীব, অসহায় হলিউডকে বাসায় নিরাপত্তাহীন বসে থাকা রমণীর সাথে। তাদের বাগাড়ম্বর ছিল এমনটাই। আর তাই মিডিয়া ব্যবসায়ীরা রীতিমত অনুনয় করেছে, অনুরোধ করেছে, দাবী করেছে যে কংগ্রেস যেন কিছু করে। এবং কংগ্রেস সত্যিই কিছু করেছে। নব্বই দশকের প্রথম দিকেই তারা সেই আইনটি পাশ করে যা সবকিছুকে পালটে দেয়। সেই আইনটিকে বলা হয় অডিও হোম রেকর্ডিং অ্যাক্ট যা ১৯৯২ সালে পাশ হয়। এই আইন যা বলেছে তা হল, দেখুন, যদি কেউ রেডিও থেকে টেপে রেকর্ড করে এবং তার বন্ধুদের সাথে তা ভাগ করে নেয়, তবে তা বেআইনি নয়। সেটা ঠিক আছে। টেপে রেকর্ড করা, রিমিক্স করা আর বন্ধুদের সাথে ভাগ করায় বেআইনি কিছু নেই। তবে আপনি যদি অনেক উঁচু মানের কপি করেন এবং তা বিক্রি করেন, সেটা তাহলে বেআইনি। তবে এই টেপ নিয়ে কাজকর্ম, সেটা ঠিক আছে, সমস্যা নেই। এবং তারা ভেবেছিল যে বিষয়টা তারা বোঝাতে পেরেছে, কারণ তারা পরিস্কার ভাবে আলাদা করে দিয়েছে কোন ভাবে কপি করা বেআইনি এবং কোনটি নয়। কিন্তু মিডিয়া ব্যবসায়ীরা এরকমটা চায় নি। তারা চেয়েছে যে কংগ্রেস যেন কপি করার ব্যাপারটিকে পুরোপুরি বেআইনি করে। তাই যখন ১৯৯২ সালের অডিও হোম রেকর্ডিং অ্যাক্ট পাশ হয়, মিডিয়া শিল্প এই ভাবনা বাদ দেয় যে আইনগত আর বেআইনিভাবে কপির তফাত করা হোক, কারণ এটা পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল যে কংগ্রেস যদি তাদের পরিকল্পনা মত এগোয়, তাতে হয়ত বা নাগরিকদের অধিকার বাড়াবে যেন তারা নিজেদের বিনোদন জগৎ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তাই ওরা নতুন এক উপায় খোঁজা শুরু করে। তাদের অনেক সময় লাগে এই নতুন পরিকল্পনা করতে। তাদের এই পরবর্তী পরিকল্পনা পূর্ণ রূপ নেয় ১৯৯৮ সালে - যাকে বলা হল ডিজিটাল মিলেনিয়াম কপিরাইট অ্যাক্ট। এটি একটি জটিল আইন ছিল, যার অনেক শাখা-প্রশাখা। কিন্তু এই আইনের মূল বিষয়টি ছিল এই যে, এটা আইনসঙ্গত যে আপনাকে বিক্রি করা যাবে কপি করা যায়না এমন ডিজিটাল বিষয়বস্তু - যদিও কপি করা যায়না এমন ডিজিটাল মেটেরিয়াল কি সেটা বোঝা দুস্কর। এটা হয়ত হবে এমন যা এড ফেল্টন একদা বলেছিলেন, "যেন লোককে এমন পানি দেয়া যা ভেজা নয়।" বিট'কে কপি করা যায়। এটাই কম্পিউটার করে। এটাই তার সহজাত কাজ। তাই এই কার্যকারিতাকে এড়িয়ে কপি করা যায় না এমন বিট'কে বিক্রি করতে গিয়ে, ডিএমসিএ এও বৈধ করে দিয়েছে যেন আপনাকে বাধ্য করা যায় সেই সব সিস্টেম ব্যবহার করতে যা আপনার কম্পিউটারের সহজাত কপি কার্যকারিতাকে পরিবর্তন করে। প্রতিটি ডিভিডি প্লেয়ার এবং গেম প্লেয়ার এবং টেলিভিশন এবং কম্পিউটার যা আপনি বাড়ি নিয়ে এসেছেন -- কেনার সময় আপনি যা পেতে যাচ্ছেন তা সম্পর্কে যা-ই ভেবে থাকুন না কেন -- তাতে খবরদারী করতে পারে বিষয়বস্তু তৈরির কোম্পানিগুলো, যদি তারা ভেবে থাকে যে আপনাকে ওই কন্টেন্ট বিক্রি করার সময় সেই শর্তটা আরোপ করবে। আর এটা নিশ্চিত করার জন্যে যে আপনি যাতে ব্যাপারটি বুঝতে না পারেন, অথবা যন্ত্রগুলোর পূর্ণ সদ্‌ব্যবহার করতে না পারেন কম্পিউটারের সহজাত কার্যকলাপগুলো করার জন্যে, তারা এটাও বেআইনি করে রেখেছে যেন আপনি কোনো চেষ্টা না করেন সেগুলোতে পুন:স্থাপন করার তাদের কন্টেন্ট কপি করার ক্ষমতা। ডিএমসিএ আইন সেই সময়কে নির্দেশ করে যখন মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি সেই আইনি ব্যবস্থার উপর আস্থা হারায় যা আইনগত এবং বেআইনি কপি করাকে আলাদা করে দেখে, এবং কপি করা একেবারেই প্রতিরোধে তৎপর হয় প্রযুক্তিগত উপায়ের সাহায্যে। এখন এই ডিএমসিএ আইনের অনেক ধরনের জটিল প্রভাব ছিল এবং আছে, তবে বিষয়বস্তু ভাগ করে নেওয়া বন্ধ করতে তাদের উদ্যোগ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ করেনি। এবং যে কারণে এটি কাজ করেনি তা এই যে ইন্টারনেট আসলে অনেকগুণ বেশি জনপ্রিয় এবং অনেক শক্তিশালী যা কেউ চিন্তাও করতে পারেনি। সেই রকমারি গানের রেকর্ড করা টেপ, ফ্যান ম্যাগাজিন এসব কিছুই অতি নগন্য, যদি তুলনায় আনি এখন বর্তমানে যে সব জিনিষ দেখছি ইন্টারনেটের সাহায্যে। আমরা এমন এক বিশ্বে আছি যেখানে অধিকাংশ আমেরিকান নাগরিক বিশেষ করে ১২ বছরের উপরে যারা একে অপরের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিষয়বস্তু ভাগাভাগি করে। আমরা লেখা ভাগাভাগি করি, আমরা ছবি ভাগাভাগি করি, আমরা অডিও ভাগাভাগি করি, আমরা ভিডিও ভাগাভাগি করি। এর মধ্যে কিছু জিনিষ ভাগাভাগি করি যা আমরা নিজেরা তৈরি করি। কিছু ভাগাভাগি করি যা আমরা খুঁজে পাই। কিছু জিনিষ ভাগাভাগি করি যা আমাদের খুঁজে পাওয়া জিনিষ দিয়ে তৈরি, এবং এ সব কিছুই বিষয়বস্তুর ইন্ডাস্ট্রিকে ভীত করে তোলে। তাই পিপা আর সোপা হচ্ছে দ্বিতীয় রাউন্ড। তবে যেখানে ডিএমসিএ ছিল শল্যচিকিৎসার মত -- আমরা আপনার কম্পিউটারের ভেতর ঢুকে দেখব, আমরা আপনার টেলিভিশনের ভেতর ঢুকব, আপনার গেইম মেশিনকে উল্টে-পাল্টে দেখব, এবং তাদের বিরত করব সেই সব কাজ করা থেকে যেটা তারা করবে বলে দোকানে বলা হয়েছিল -- পিপা আর সোপা হচ্ছে পরমাণু বোমার মত বিধ্বংসী আর তারা বলছে, আমরা পৃথিবীর যে কোনো স্থানে যাব এবং বিষয়বস্তু সেন্সর করব। এখন, আমি যেমন বলেছি, এটা করার প্রক্রিয়া হচ্ছে যে আপনাকে এমন সবাইকেই ধরতে হবে যারা ওই আইপি অ্যাড্রেস-এর প্রতি দিকনির্দেশ করে। আপনাকে তাদের সার্চ ইঞ্জিন থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে, আপনাকে তাদের অনলাইন ডাইরেক্টরি থেকে সরিয়ে নিতে হবে, আপনাকে তাদের ব্যবহারকারীদের তালিকা থেকে সরিয়ে দিতে হবে। এবং যেহেতু ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশী কন্টেন্ট তৈরী করে যারা তারা গুগল বা ইয়াহু নয়, তারা হচ্ছে আমরা, আমাদের বিরুদ্ধেই পুলিশকে লেলিয়ে দেয়া হয়। কারণ শেষ পর্যন্ত, সত্যিকারের প্রবন্ধক হবে পিপা এবং সোপা'র বাস্তবায়নে আমাদের একে অপরের মধ্যে বিষয়বস্তু ভাগাভাগি করার ব্যাপারটি। তাই পিপা ও সোপা যেটা করার ঝুঁকি নিচ্ছে তা হল একটি বহু পুরোনো আইনি ধারণা, যে দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তকে নির্দোষ বলে ধরা, এবং একে উল্টে ফেলা -- নির্দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত অপরাধীই। আপনি ভাগাভাগি করতে পারবেন না আমাদেরকে না দেখানো পর্যন্ত যে আপনি এমন জিনিস ভাগাভাগি করছেন না যা আমরা পছন্দ করি না। হঠাৎ করেই, কোনো কিছু আইনি বা বেআইনি প্রমাণ করার দায় আমাদের উপর এসে বর্তায় এবং সেই সব সেবার উপরও বর্তায় যা আমাদের নতুন কিছু সুবিধা দিতে পারত। এবং যদি এক পয়সাও খরচ হয় একজন ব্যবহারকারীর উপর নজরদারি করতে, তাহলে সেই ব্যবস্থাটি ধ্বসে যাবে যার লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী আছে। তাই এই ইন্টারনেটই তারা চাইছে। এমন চিন্তা করুন, যেন ওই চিহ্নটি সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে -- কেবল এই যে সেটি কলেজ বেকারীর কথা বলছে না, ধরুন এটি ইউটিউবের সম্পর্কে বলছে অথবা ফেইসবুক এবং টুইটারের সম্পর্কে। ধরুন এটি টেড-এর বিষয়েও বলছে, কারন মন্তব্যরাশির উপর নজরদারি করা যায় না কোনো সুলভ মূল্যে। সোপা আর পিপার সত্যিকারের প্রতিফলন তাদের প্রস্তাবিত চিত্রের থেকে অনেক ভিন্ন। মূল হুমকিটা হচ্ছে, আসলে এই যে প্রমাণ করার দায়ভারটা উল্টিয়ে দেয়া, যেখানে আমাদের হঠাৎ করে সবাইকেই চোর হিসেবে মনে করা হবে সেই প্রতিটি ক্ষণেই যখনই আমাদের সুযোগ দেয়া হবে নতুন কিছু সৃষ্টি করার জন্য বা তৈরী বা ভাগাভাগি করার জন্যে। এবং যারা আমাদের এইসব ক্ষমতা দিচ্ছে -- যেমন ইউটিউব, ফেইসবুক, টুইটার বা টেড -- তাদের নতুন কাজ হবে আমাদের উপর নজরদারি করা, নয়ত আইন ভঙ্গে সহায়তা করার জন্যে নিজেরা দোষী হওয়া। আপনি দুটো কাজ করতে পারেন একে বন্ধ করার জন্যে -- একটি সরল কাজ এবং একটি জটিল কাজ, একটি সহজ এবং একটি কঠিন কাজ। সহজ এবং সরল কাজটি হচ্ছে: আপনি যদি আমেরিকার একজন নাগরিক হন, আপনার সিনেটর, আপনার অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিকে ফোন করুন। যখন আপনি দেখবেন যেইসব লোকের তালিকা যারা সোপা বিলটিতে সই করেছে, অথবা পিপা আইনে স্বাক্ষর দিয়েছে, আপনি দেখবেন যে তারা সবাই অনুদান পেয়েছে কোটি কোটি ডলার, প্রথাগত মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির তরফ থেকে। আপনার কাছে কোটি কোটি ডলার নেই, কিন্তু আপনি আপনার জনপ্রতিনিধিকে ফোন করতে পারেন, এবং আপনি তাদের মনে করিয়ে দিতে পারেন যে আপনার ভোটাধিকার আছে, এবং আপনাকে চোর ভাবার অধিকার কারও নেই, এবং আপনি বলতে পারেন যে আপনি চান যেন ইন্টারনেটকে যেন না ঘাঁটানো হয়। এবং যদি আপনি আমেরিকার নাগরিক না হন, আপনার পরিচিত আমেরিকার নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে একই কাজ করতে বলতে পারেন। কারণ এটি একটি জাতীয় সমস্যা মনে হলেও কেবল তাতেই সীমাবদ্ধ নয়। এই ইন্ডাস্ট্রিগুলো সন্তুষ্ট থাকবে না শুধু আমাদের ইন্টারনেট ভেঙে দিয়ে। এটি যদি অচল করতে পারে, তারা দুনিয়ার সবার জন্যই অচল করে দেবে। এই হল সহজ কাজটি। এটি তো সরল কাজ। কঠিন ব্যাপারটি হল: প্রস্তুত থাকুন, কারণ আরও অনেককিছু অপেক্ষা করছে আপনার জন্যে। সোপা স্রেফ কোইকা'র একটি সহজ সংস্করণ, যেটা গত বছর প্রস্তাবিত হয়েছিল, কিন্তু পাশ হয়নি। এবং এই সব কিছুরই উৎস হচ্ছে ডিএমসিএ বাস্তবায়নের ব্যর্থতা, বিশেষ করে প্রযুক্তির সাহায্যে ভাগাভাগি করা বন্ধ করতে। এবং ডিএমসিএ-র মূল আবার সেউ অডিও হোম রেকর্ডিং আইন, যা ওইসব ইন্ডাস্ট্রির জন্য ছিল চিন্তার বিষয়। কারণ এই পুরো ব্যাপারটাই, যখন তারা ইঙ্গিত করে যে কেউ আইন ভাঙ্গছে এবং তারপর তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে তা প্রতিষ্ঠা করে, সেটা একদমই আরামপ্রদ নয়। "আমরা সেটা করতে চাই না," বলছে কন্টেন্ট ইন্ডাস্ট্রি। এবং তারা চাইছে যেন এটা করার দরকারই না পড়ে। তারা চায় না যেন কোনো আইনগত পার্থক্য থাকুক আইনগত আর বেআইনি শেয়ারিং এর মধ্যে। তারা এই ভাগাভাগি করার পরো ব্যাপারটিকেই বন্ধ করতে চাচ্ছে। পিপা আর সোপা কোন বিশেষ কিছু না, এগুলো অস্বাভাবিক কিছু না, এগুলো কোন বিশেষ ঘটনা না। এই আইনগুলো কেবল সেই স্ক্রু'র পরবর্তী চাপ, যা ২০ বছর ধরে চলে আসছে। এবং আমরা যদি এদের পরাজিত করতে পারি, এবং আমি আশা করছি যে আমরা পারব, আরও হয়ত আসবে। কারন যতক্ষণ না আমরা কংগ্রেসকে বোঝাতে পারছি যে মেধাসত্ত্ব চুরির ব্যাপারটি রোধ করার পন্থা হচ্ছে যেভাবে ন্যাপস্টার, ইউটিউব ইত্যাদির সাথে মেধাসত্ত্ব চুরি নিয়ে লড়া হয়েছিল, যা হল সমস্ত প্রমাণ উপস্থাপনসহ একটি বিচার এবং সত্যগুলি বের করে প্রতিরোধের উপায় নির্ধারণ করা যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে হয়ে থাকে। এভাবেই এর ব্যবস্থা করতে হবে। এর মধ্যে, সবচেয়ে কঠিন কাজটি হচ্ছে তৈরি থাকা। কারন পিপা এবং সোপার সত্যিকারের উদ্দেশ্য আপনার জানা। টাইম ওয়ার্নার চাচ্ছে যাতে আমরা আবার সোফায় ফিরে বসে পড়ি শুধুমাত্র দর্শক হয়ে - কোন কিছু তৈরি না করে, ভাগাভাগি না করে - এবং আমাদের বলা দরকার, "না।" ধন্যবাদ। (হাততালি) আমি আজ এখানে আমার তোলা ছবি দেখাতে এসেছি। কিন্তু এটাকে কি ছবি বলব? এটা অবশ্যই ছবি তবে ক্যামেরা দিয়ে তোলা সম্ভব নয়। ১৫ বছর বয়সে যেদিন প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা সেদিন থেকেই আমি আলোকচিত্রে আগ্রহী হই। ছবি আঁকার নেশা মিশেছিল ছবি তোলাতেও, যদিও কিছুটা ভিন্নতা ছিল। ক্যামেরা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আগে পরিকল্পনা করে নিতে হয়। ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার সময় ট্রিগার চাপার পর আর কিছু করার থাকে না। আলোকচিত্র তাই ঠিক সময়ে, ঠিক জায়গায় থাকার চেয়েও অনেক বেশি কিছু বোঝায়। আমি মনে করি যে কেউই তা করতে পারবে। তাই আমি ভিন্ন পথে এগোলাম, ন্তুন কিছু করতে চাইলাম ক্যামেরা দিয়ে। যেমন, এই ধরণের আলোকচিত্র ব্যস্ত রাস্তার ধারে নির্মাণ কাজ চলছে। কিন্তু এক অভিনব চমক রয়েছে এতে। উপরন্তু এটা বাস্তববাদিতাকেও ধারণ করে। আবার এই ধরণের ছবিগুলোর-- হোক রঙ্গিন বা আলো-আঁধারি, বিষয়বস্তু একটাই বাস্তববাদিতাকে ধারণ করা। এক্ষেত্রে বাস্তববাদিতা বলতে আমি চিত্র-বাস্তববাদিতা বোঝাচ্ছি। মূলত এটা এমন কিছু না যা সরাসরি তোলা যায় কিন্তু এরকম চিত্রধারণ সম্ভব আমি তা দেখাতে চাই। এমন কিছু ছবি যা বোঝার জন্য কিছুক্ষ্ণ ভাবতে হবে। আমার কাছে ছবি তোলা মানে কোন মুহূর্ত ধারণ করা নয়, বরং একটি ধারণার চিত্রায়ণ। এই ধরণের ছবিকে বাস্তব করে তোলার কৌশলটা কী? এটা কি রঙের উপর নির্ভর করে? না অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়ের উপর? আলো কি ভূমিকা রাখে? দৃষ্টি বিভ্রম তৈরি হয় কী করে? অনেক সময় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও দায়ী। প্রকৃতপক্ষে, দ্বিমাত্রিক তলে চেনা জগতকে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে এই বিভ্রম তৈরি করা যায়। বাস্তববাদিতা মূলত এমন নয়, কিন্তু আমরা এমনি ভাবি। আমার মতে মূল বিষয়গুলি খুব সহজ। আমি এগুলো ধাঁধাঁ হিসেবে দেখি, যেখানে বিভিন্ন সূত্র জোড়া লাগিয়ে বাস্তবের বিকল্প রূপ তৈরি করা যায়। একটা উদাহরণ দেখাচ্ছি। এখানে ৩টি সুষম ভৌত বস্তু দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে আমরা এগুলো দেখি, কিন্তু বিশেষভাবে এই ৩টিকে সাজালে নতুন এক বস্তু দেখা যায়, মনে হয় এরা বাস্তবে থাকতে পারে, কিন্তু এটা বাস্তবে হয় না, আমরা মস্তিষ্ককে ধোঁকা দেই, কারণ যেসব ঘটনা ভিত্তিহীন সেসব মস্তিষ্ক গ্রহণ করে না। আমার ছবি মেলানোর ক্ষেত্রেও আমি একই কাজ করি। সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়গুলি জোড়া লাগাই। একটা ছবিকে বাস্তব করে তোলে সেসব জিনিস যেগুলো আমাদের চারপাশেই থাকে কিন্তু আমরা গুরুত্ব দেই না। ছবি জোড়া দেওয়ার সময় এই ছোট বিষয়েই খেয়াল রাখতে হবে, নয়তো মস্ত ভুল হয়ে যাবে। কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে আমার মতে ৩টি সহজ ধাপ রয়েছে। দেখাই যাচ্ছে, এই ছবিগুলো খুব সাধারণ। কিন্তু একসাথে মিলিয়ে এমন অসাধারণ কিছু বানানো সম্ভব। ১ম নিয়ম - সংযোজনের প্রতিটা ছবিরই একটা সাধারণ বিষয়বস্তু থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, সবগুলি ছবিতেই একই রকম আলোর প্রক্ষেপণ থাকবে। এই দুইটি ছবিরই সে গুণগুলো রয়েছে একই উচ্চতা এবং একই ধরনের আলোয় তোলা এগুলো। তৃতীয় ছবিটি এমনভাবেই বানানো হয়েছে যাতে কোথায় ছবি দুইটি শুরু ও শেষ হয়েছে তা কোনভাবেই বোঝা না যায়। কী করে এই ছবি এল তা যেন বোঝা সম্ভব না হয়। দুইটি ছবির সীমারেখায় রঙের পার্থক্য, উজ্জ্বলতা মেলাতে হবে, ক্ষেত্রের গভীরতা, বিবর্ণ রঙ ইত্যাদি আলোকচিত্রের নিয়ামকের মধ্যে ভারসাম্য এনে আমরা ছবি দুইটির পার্থক্য দূর করতে পারি এবং এটাকে একক আলোকচিত্রে রূপ দিতে পারি, যদিও অনেক ছবিরই একাধিক স্তর থাকতে পারে। আরেকটি নমুনা দেখা যাক- (হাসি) হয়তো মনে হচ্ছে এখানে একটাই দৃশ্য রয়েছে যার নিচের অংশে কারসাজি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সম্পূর্ণ ছবিটা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন স্থানে তোলা ছবি থেকে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি কোন জায়গা খোঁজার চেয়ে তা তৈরি করা সহজ, কারণ তাহলে তোমাকে তোমার ভাবনার সাথে আপোষ করতে হবে না। তবে এরজন্য যথেষ্ট ভাবতে হবে। এই চিন্তা যখন শীতকালে আমার মাথায় এল, আমি জানতাম আমার ছবির টুকরো টুকরো অংশগুলি পরিকল্পনা করার ও বিভিন্ন জায়গা খুঁজে বের করার জন্য অনেক সময় রয়েছে। আমি একবার মাছ ধরতে গিয়ে এই মাছটার ছবি তুলি। তটভূমি গুলি বিভিন্ন সময়ে তোলা। এক পাথুরে গর্ত থেকে নিয়েছি জলনিমগ্ন অংশটুকু। ওপরের বাড়িগুলি একটু লালচে করেছি যাতে তা সুইডিশ দেখায়। আলোকচিত্রকে বাস্তব দেখানো পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে। আমি আগে ভাবি, হাতে আঁকি তারপর ছবিগুলো জোড়া লাগাই। প্রতিটা ছবি অনেক চিন্তার ফসল। যদি তুমি খুব ভাল ছবি তুলতে পার, তবে ফলাফল ও ভাল হবে, এবং বাস্তব বলে মনে হবে। আমাদের চারপাশে সবকিছুই আছে, আমাদের সৃজনশীলতা , কল্পনা প্রবণতা আমাদের স্বতন্ত্র করে। ধন্যবাদ সবাইকে। (করতালি) হাই। আমি কেভিন আলোকা, আমি ইউটিউবের ট্রেন্ডস ম্যানেজার। এবং আমি পেশাগতভাবে ইউটিউবের ভিডিও দেখি। এটি সত্যি। তাই আমরা আজ কিছু বলব যে কিভাবে ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এবং সেটি কেন উল্লেখ্য। আমরা সবাই তারকা হতে চাই -- নামকরা ব্যক্তিত্ব, গায়ক, কৌতুকাভিনেতা -- আর যখন আমি ছোট ছিলাম, এগুলো হওয়া অনেক, অনেক কঠিন ছিল। কিন্তু এখন ওয়েব ভিডিও এই কাজ সহজ করে দিয়েছে যাতে আমাদের মধ্যে যে কেউ বা আমাদের যে কোন উদ্ভাবনীমূলক সৃষ্টি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে বর্তমান বিশ্বের সংস্কৃতির এক অংশ হিসেবে। আপনাদের মধ্যে যে কেউ ইন্টারনেটে বিশ্বখ্যাত হতে পারেন আগামী রোববারের মধ্যে। কিন্তু বর্তমানে ইউটিউবে মোট ৪৮ ঘন্টারও বেশী পরিমাণের ভিডিও আপলোড হচ্ছে প্রতি মিনিটে। এবং তার মধ্যে, খুব অল্প একটি অংশই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং শয়ে শয়ে দর্শক পেয়ে একরকম সাংস্কৃতিক বিশেষত্ব পায়। তো কিভাবে এটা হয়? তিনটি বিষয় আছে: রুচিনির্মাণকারী, অংশগ্রহণের জন্যে তৈরি সমাজ আর প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে কোন কিছু হওয়া। ঠিক আছে, চলুন। (ভিডিও) বিয়ার ভাসকেজ: ওহ, ঈশ্বর। ওহ, ঈশ্বর। ওহ, ঈশ্বর! উউ... ওহহ.... ওয়াও.... কেভিন: গত বছর, বিয়ার ভাসকেজ এই ভিডিও পোস্ট করেছিলেন যা তিনি ইয়োসেমাইট জাতীয় উদ্যানের পাশে তাঁর বাড়ি থেকে তুলেছিলেন। ২০১০ সালে, এটি ২ কোটি ৩০ লক্ষ বার দেখা হয়েছিল। (হাসি) এখানে একটি চার্ট রয়েছে যাতে বোঝা যাবে যে কখন এটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে - তা হলো গত গ্রীষ্মে। কিন্তু বিয়ার কখনও ভাবেন নি যে তিনি একটি জনপ্রিয় ভিডিও বানাচ্ছেন। তিনি শুধু তাঁর দেখা একটি রংধনু সবাইকে দেখাতে চাচ্ছিলেন। কারণ সেটাই আপনি করবেন যখন আপনার নামের মিল রয়েছে ইয়েসোমাইট পাহাড়ের ভাল্লুকের সাথে। (হাসি) আসলে তিনি প্রকৃতি নিয়ে অনেক ভিডিও পোস্ট করেছেন। এবং এই ভিডিওটি আসলে পোস্ট করা হয়েছিল অনেক দিন আগে, সেই জানুয়ারীর শীতে। তাহলে কি ঘটল এখানে? এর মূলে, জিমি কিমেল। জিমি কিমেল একটি টুইট বার্তা পোস্ট করেছিলেন যেটি পরবর্তীতে ভিডিওটির বর্তমান সাফল্যের জন্যে যে জনপ্রিয়তা প্রয়োজন সেটি এনে দিয়েছে। কারন জিমি কিমেলের মত রূচিনির্মাতারা নতুন এবং কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়বস্তু খুঁজে বেড়ান প্রতিনিয়ত এবং তুলে ধরেন অনেক দর্শক-শোতার কাছে। (ভিডিও) রেবেকা ব্ল্যাক: ♫ আজ শুক্রবার, শুক্রবার। উপভোগ করব শুক্রবার। ♫ ♫ সবাই চাইছে সপ্তাহান্ত, সপ্তাহের শেষ। ♫ ♫ শুক্রবার, শুক্রবার। ফুর্তি করছি শুক্রবারে। ♫ কেভিন: আপনি নিশ্চয়ই ভাবেননি যে আমরা এই আলোচনাটা করতে পারব এই ভিডিওটির প্রসঙ্গ না এনে। রেবেকা ব্ল্যাকের "শুক্রবার" এ বছরের সবচেয়ে পরিচিত ভিডিওগুলির মধ্যে একটি। এ বছরে প্রায় ২০ কোটি দর্শক এটি দেখেছে। এখানে চার্টে দেখা যাচ্ছে ব্যাপারটি। এবং "জোড়া রংধনু"র ভিডিওর মত, মনে হয়েছে হঠাৎ করেই যেন এটি উদয় হয়েছে। তাহলে এই দিনে কি হয়েছিল? দিনটি শুক্রবার ছিল, এটি সত্য। এবং যদি আপনি চিন্তা করেন যে অন্যান্য দিনগুলি কী ছিল যে দিনগুলিতে বেশী দেখা হয়েছে, তাও ছিল শুক্রবার। (হাসি) কিন্তু এ দিনটির ব্যাপারটি কি? এই বিশেষ একটি শুক্রবার? ব্যাপারটি হল টশ.O এটির প্রচার করেছিল এবং অনেক ব্লগ এটি নিয়ে লিখেছিল। মিস্ট্রি সায়েন্স থিয়েটারের মাইকেল জে নেলসন ছিলেন সেই প্রথম ব্যক্তিদের একজন যিনি এই ভিডিও নিয়ে একটি কৌতুক করেছিলেন টুইটারে। কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল যে একজন বা একাধিক রুচিনির্মাণকারী এই বিষয়টা তুলে ধরেছে্ন এবং তাঁরা তা ভাগ করে নিয়েছেন বিশাল সংখ্যক দর্শক-শ্রোতার সাথে, যা ব্যাপারটিকে ত্বরান্বিত করেছে। এবং এভাবেই এই কমিউনিটির জন্ম হয় সেইসব লোকদের নিয়ে যারা নিজেদের মধ্যে এই কৌতুক উপভোগ করে। এবং তারা তখন এটি নিয়ে কথা বলা শুরু করে এবং এটি নিয়ে নানারকম কাজ করে। এবং এখন "ফ্রাইডে (শুক্রবার)" গানটির ১০,০০০ প্যারোডি বের হয়েছে। এমনকি প্রথম সাত দিন, সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলি নিয়েও একটি করে প্যারোডি গান ছিল। (হাসি) বিংশ শতকের একমুখী বিনোদনের বিপরীতে এই কমিউনিটির অংশগ্রহণ আমাদের এই বিস্ময়কর ঘটনাতে অংশ নিতে সাহায্য করে - এটি ছড়িয়ে বা এটি দিয়ে নতুন কিছুর সূচনা করে। (সঙ্গীত) তো "নিয়ান ক্যাট" একটি পৌনঃপুনিক অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র পৌনঃপুনিক যন্ত্রসঙ্গীত সহ। এটা এরকম, ঠিক এরকম। এটি এ বছর পাঁচ কোটি লোক দেখেছে। আর যদি মনে করেন যে এটি অদ্ভুত, আপনার জানা উচিৎ যে এর একটি তিন ঘন্টা দীর্ঘ সংস্করণ রয়েছে যা চল্লিশ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। (হাসি) এমনকি বেড়ালেরাও দল বেঁধে এই ভিডিও দেখেছে। (হাসি) বিড়ালেরা দেখেছে যে অন্য বিড়ালেরা এই ভিডিও দেখছে। (হাসি) তবে যা এখানে গুরুত্বপূর্ণ তা হল যে এটি যে শৈল্পিকতাকে উদ্বুদ্ধ করেছে এই প্রযুক্তিময়, রসকষহীন ইন্টারনেট সংস্কৃতিতে। এটি নিয়ে রিমিক্সও হয়েছে। (হাসি) কেউ একজন পুরোনো যুগের সংস্করণ বানিয়েছে। (হাসি) এবং এর পর এটি আন্তর্জাতিক হয়ে গেল। (হাসি) এভাবে একটি পূর্ণ রিমিক্স কমিউনিটি গড়ে উঠল যার জন্ম স্রেফ একটি কৌতুক থেকে এবং যাতে আমরা সবাই অংশ নিতে পারি। কারন আমরা এখন আর শুধু উপভোগ করি না, আমরা অংশগ্রহণ করি। এবং এমন যে হতে পারে তা কে আগে ভাবতে পেরেছে? কে ভেবেছে "জোড়া রংধনু" বা রেবেকা ব্ল্যাক এর সাফল্যের কথা বা "নিয়ান বিড়াল?" আপনি কি এমন কিছু পূর্বে লিখে দিতে পারতেন যাতে পুরো ব্যাপারটি অনুমান করা যেত? এমন একটি বিশ্ব যেখানে মোট দুই দিন দৈর্ঘ্যের ভিডিও প্রতি মিনিটে আপলোড হয়, শুধুমাত্র যা সত্যিকার অর্থেই মৌলিক এবং অভূতপূর্ব তাই-ই কেবল স্বাতন্ত্র্য ও পরিচিতি লাভ করতে পারে। যখন আমার এক বন্ধু আমায় বলে যে আমার একটি মজার ভিডিও দেখা উচিৎ যেখানে একজন লোক সাইকেলের জরিমানার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে নিউ ইয়র্কে, আমি স্বীকার করছি আমি খুব আগ্রহী ছিলাম না। (ভিডিও) কেসি নিসটাট: আমি সাইকেলের রাস্তায় না চলার কারণে ফাইন দিয়েছি, কিন্তু অনেক সময়ই পথে বাধা থাকে যা আপনাকে সাইকেলের লেনে চলতে দেয় না। (হাসি) কেভিন: সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে, হাস্যরসের মাধ্যমে, কেসি নিস্টাট তার মজার চিন্তাটি ৫০ লক্ষ জনকে দেখতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাই এই প্রক্রিয়াটি সত্যি আমরা নান্দনিক যা কিছুই করি না কেন তার জন্যে। তাই এসব আমাদেরকে একটি বিরাট প্রশ্নের সম্মুখীন করে তোলে... (ভিডিও) বিয়ার ভাসকেজ: এটার মানে কি? ওহহহহ। (হাসি) কেভিন: এটার মানে কি? রুচিনির্মাণকারী, শৈল্পিক অংশগ্রহণকারী কমিউনিটি, সম্পূর্ণরূপে অপ্রত্যাশিত কিছু, এসবই একটি নতুন ধরনের মিডিয়া এবং একটি নতুন ধরনের সংস্কৃতির চরিত্র যেখানে যে কেউ অংশ নিতে পারে এবং দর্শক-শ্রোতাই জনপ্রিয়তা নির্ধারণ করে। মানে, যা আগে বলেছিলাম, জাস্টিন বিবা্র, বর্তমান বিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয় তারকা, তার শুরু কিন্তু ছিল ইউটিউব থেকে। কাউকে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা প্রকাশে অনুমতি নিতে হয় না এবং আমরা সবাই কিছুটা দায়িত্ব বা মালিকানা বোধ করতে পারি আমাদের নিজস্ব জন-সংস্কৃতিতে। এবং এগুলি পুরনো মিডিয়ার চরিত্র নয়, এবং আমাদের বর্তমান মিডিয়ার সঙ্গেও ততটা মেলে না, তবে এরাই ভবিষ্যতের বিনোদন জগৎকে নির্ধারণ করবে। ধন্যবাদ। (হাততালি) আমার বয়স যখন নয় বছর আমি প্রথমবারের মত গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে যাই। এবং আমার মা আমাকে একটি ব্যাগ গুছিয়ে দেন বইয়ে ভরা, যা আমার কাছে মনে হয়েছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটা বিষয়। কারণ আমার পরিবারে বইপড়া ছিল অন্যতম দলীয় কাজ। এটি আপনার কাছে সামাজিকতা বিরোধী কিছু মনে হতে পারে, কিন্তু আমাদের জন্য এটা ছিল সামাজিক হবার ভিন্ন এক পদ্ধতি। আপনার আছে আপনার পরিবারের উষ্ণতা যারা আপনার ঠিক পাশেই বসে আছে, কিন্তু পাশাপাশি আপনি স্বাধীন আপনার ভেতরকার দুঃসাহসিক অভিযানের জগতে ঘুড়ে বেড়ানোর জন্য। এবং আমার এই ধারণা ছিল যে ক্যাম্প এমন কিছু একটা হবে, এর থেকেও ভাল কিছু। (হাসি) আমার কল্পনা ছিল ১০ জন বালিকা একটি কেবিনে বসে আছে আরামে বই পড়ছে একই রকম রাতের পোশাক গায়ে। (হাসি) ক্যাম্প ছিল অনেকটা মদ ছাড়া মদ খাবার উৎসব। এবং প্রথম দিনেই আমাদের মন্ত্রণাদাত্রী আমাদের সবাইকে একসাথে করলেন। শেখালেন একটি উল্লাস ধ্বনি এবং তিনি বললেন আমরা সেই গ্রীষ্মের বাকি দিনগুলোতে প্রতিদিন তা করবো ক্যাম্পের মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য। এবং সেটা ছিল অনেকটা এরকমঃ "আর-ও-ডাব্লিউ-ডি-আই-ই, এইভাবে আমরা রাউডি বানান করি। রাউডি, রাউডি, চল রাউডি (উচ্ছৃংখল) হই।" ইয়েহ। কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারতাম না কেন আমাদের এত উচ্ছৃংখল হতে হত, অথবা কেন আমাদের এই শব্দটি ভুলভাবে বানান করতে হত। (হাসি) কিন্তু আমি উল্লাস প্রকাশ করলাম। আমি উল্লাস প্রকাশ করলাম আর সবার সাথে। আমি আমার সর্বোত্তম চেষ্টা করলাম। এবং আমি অপেক্ষা করতাম সেই সময়ের জন্য যখন আমি কোলাহলের বাইরে যেতে পারি এবং আমার বই পড়তে পারি কিন্তু প্রথমবারের মত আমি যখন আমার ব্যাগ থেকে বই বের করলাম, বাঙ্কের সবচেয়ে চটপটে মেয়েটি আমার কাছে এলো এবং জিজ্ঞেস করলো, "তুমি এরকম শান্ত ভাব দেখাচ্ছো কেন?" শান্ত, অবশ্য, সম্পূর্ণ বিপরীত আর-ও-ডাব্লিউ-ডি-আই-ই (উচ্ছৃংখল) এর। এবং আমি যখন এটা আবার দ্বিতীয়বার চেষ্টা করলাম, মন্ত্রণাদাতা আমার কাছে এলেন চেহারায় এক চিন্তিত অভিব্যক্তি নিয়ে এবং তিনি আমাকে বারবার ক্যাম্পের প্রাণচঞ্চলতা সম্পর্কে বোঝালেন এবং বললেন আমরা সকলেই যেন অনেক পরিশ্রম করি বহির্মুখী হবার জন্য। এবং তাই আমি আমার বইগুলো সরিয়ে রাখলাম, আমার ব্যাগের ভিতরে, এবং আমার বিছানার নিচে, এবং তারা সেখানেই থাকলো গ্রীষ্মের বাকি দিনগুলোতে। এবং আমি এই কারণে কিছুটা অপরাধবোধ অনুভব করলাম। আমার মনে হল বইগুলোর কোনভাবে আমাকে দরকার ছিল, এবং তারা আমাকে ডাকছে এবং আমি তাদেরকে পরিত্যাগ করেছি। কিন্তু আমি তাদের পরিত্যাগ করলাম এবং আমি গ্রীষ্মের শেষে বাড়িতে পরিবারের কাছে ফেরার আগ পর্যন্ত ব্যাগ খুললাম না। এখন, আমি গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পের একটি গল্প বলবো। আমি এরকম আরো ৫০টি গল্প বলতে পারতাম- যতবার আমি এই বার্তা পেয়েছি যে কোনভাবে আমার শান্ত এবং অন্তর্মুখী থাকাটা প্রয়োজনের দিক থেকে ঠিক পন্থা ছিল না, এবং আমার বহির্মুখী হিসেবে পাশ করার জন্য আরও চেষ্টা করা দরকার। আমি সবসময় ভিতরে ভিতরে অনুভব করতাম যে এটা ভুল এবং অন্তর্মুখীরা তাদের মত করে যথেষ্ট অসাধারণ। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে আমি এই অনুভূতিকে নাকচ করে এসেছি এবং আমি একজন ওয়াল স্ট্রীট আইনজীবি হলাম, এতকিছু থাকতে, একজন লেখিকা হওয়ার পরিবর্তে- যা আমি সব সময় হতে চেয়েছিলাম আংশিক কারণ ছিল যে আমি নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম যে আমি সাহসী ও দৃঢ়প্রত্যয়ীও হতে পারি। এবং আমি সবসময় জনবহুল পানশালাগুলোতে যেতাম যখন আমি সত্যিই চাইতাম আমার বন্ধুদের সাথে প্রীতিভোজে অংশ নিতে। এবং নিজেকে অস্বীকার করে এসব সিদ্ধান্ত নিতাম এতটাই আত্মমগ্নভাবে যে, আমি নিজেই বুঝতাম না আমি এই সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছি। এখন, অধিকাংশ অন্তর্মুখী মানুষ এরকম করে থাকে, এবং এটা নিশ্চিতভাবে আমাদের ক্ষতি, কিন্তু এটা আমাদের সহকর্মীদেরও ক্ষতি, এবং আমাদের সমাজের ক্ষতি। একটু সাড়ম্বর শোনালেও, এটা বিশ্বের ক্ষতি। কারণ যখন সৃজনশীলতা এবং নেতৃত্বের প্রশ্ন আসে, তখন আমাদের অন্তর্মুখীদের যে কাজে তারা সেরা তার জন্য দরকার। জনসংখ্যার অর্ধেক থেকে এক তৃতীয়াংশ অন্তর্মুখী- অর্ধেক থেকে তৃতীয়াংশ। সুতরাং তার অর্থ আপনার পরিচিত প্রতি দু'জন বা তিনজনের একজন। সুতরাং আপনি নিজেও যদি অন্তর্মুখী হয়ে থাকেন, আমি বলছি আপনার সহকর্মী এবং আপনার স্বামী বা স্ত্রী ও সন্তান এবং যারা এই মুহূর্তে ঠিক আপনার পাশে বসে আছে- প্রত্যেকেই এই পক্ষপাতের স্বীকার যা আমাদের সমাজে অনেক গভীর এবং বাস্তব। আমরা সকলেই অনেক অল্প বয়স থেকে তা অন্তরীণ করে রাখি। আমরা যা করছি তার কোন ভাষা ছাড়াই। এখন এই পক্ষপাতকে ঠিকভাবে দেখতে হলে আমাদের বোঝা দরকার অন্তর্মুখিতা কি। এটা লাজুক স্বভাব থেকে ভিন্ন। লাজুক হওয়ার অর্থ সামাজিক বিবেচনাকে ভয় করা। অন্তর্মুখিতা অন্যদিকে অনেকটা, আপনি কিভাবে উত্তেজনায় সাড়া দেন, যার মধ্যে সামাজিক উত্তেজনাও রয়েছে। এভাবে বহির্মুখীরা কামনা করে বিপুল পরিমাণ উত্তেজনা, যেখানে অন্তর্মুখীরা অনুভব করে তারা সবচেয়ে জীবন্ত, সবচেয়ে বেশি চালিত এবং সবচেয়ে বেশী সক্ষম যখন তারা শান্ত পরিবেশে থাকে। এসব জিনিস আবার সবসময় অনন্যসাপেক্ষ নয়- কিন্তু অধিকাংশ সময়। সুতরাং চাবিকাঠি হচ্ছে আমাদের প্রতিভাকে সর্বোচ্চ করে তোলা আমাদের নিজেদেরকে আমাদের নিজেদের জন্য সঠিক উদ্দীপনার জগতে মেলে ধরা। কিন্তু এখন এখানেই পক্ষপাত এসে পড়ে। আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো, আমাদের স্কুলগুলো এবং আমাদের কর্মক্ষেত্র, অধিকাংশ নকশা করা হয়েছে বহির্মুখীদের জন্য, এবং বহির্মুখীদের অনেক উদ্দীপনা দরকার। এবং বর্তমানে আমাদের এই বিশ্বাস ব্যবস্থা রয়েছে যে, যাকে আমি বলি 'নতুন দলগতচিন্তা', যা হচ্ছে-সকল সৃজনশীলতা এবং উৎপাদনশীলতা আসে অদ্ভূতভাবে দলগত প্রচেষ্টায়। সুতরাং আপনি যদি এখনকার নমুনা শ্রেণিকক্ষের কথা চিন্তা করেনঃ আমি যখন স্কুলে যেতাম, আমরা সারি করে বসতাম। আমরা সারি করে এই ধরনের ডেস্কে বসতাম, এবং আমরা আমাদের কাজগুলো অনেকটা স্বাধীনভাবেই করতাম। কিন্তু ইদানীং, আদর্শ শ্রেণীকক্ষে কতগুলো ডেস্ক আছে- চার অথবা পাঁচ অথবা ছয় অথবা সাতটি বাচ্চা মুখোমুখি বসা। এবং বাচ্চারা অগণিত দলীয় কাজে নিয়োজিত আছে। এমনকি গণিত এবং সৃজনশীল লেখার মত বিষয়ে, যা আপনি মনে করতে পারেন নির্ভর করে একক চিন্তারাজির উপর, বাচ্চাদের কাছে থেকে এখন আশা করা হয় তারা কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করবে। এবং সেই সব বাচ্চাদের মধ্যে যারা পছন্দ করে নিজেদের মত চলতে বা কাজ করতে, তাদেরকে দেখা হয় বাউণ্ডুলে হিসেবে অথবা এরচেয়ে খারাপ, সমস্যা হিসেবে। এবং অধিকাংশ শিক্ষক এই বিশ্বাসে প্রতিবেদন করেন যে আদর্শ ছাত্র মাত্রই বহির্মুখী অন্তর্মুখীর অপররূপ, যদিও অন্তর্মুখীরা অন্যদের চেয়ে ভালো গ্রেড পেয়ে থাকে এবং তারা অধিকতর জ্ঞানী, গবেষণা অনুযায়ী। (হাসি) হ্যাঁ, একই কথা সত্য আমাদের কর্মক্ষেত্রের জন্য। এখন, আমাদের অনেকেই পরিকল্পিত খোলা অফিসে কাজ করে, দেয়াল ছাড়া, যেখানে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের সহকর্মীদের কথা এবং নজরের সম্মুখীন হচ্ছি। এবং যখন নেতৃত্বের প্রসঙ্গে আসে, অন্তর্মুখীদের নিয়মিত বাদ দেওয়া হচ্ছে নেতৃত্বের পদে, যদিও অন্তর্মুখীরা অনেক সতর্ক হয়, বড় ধরনের ঝুঁকি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে- যা আমরা সকলেই ইদানীংকালে সুনজরে দেখি। এবং অ্যাডাম গ্রান্ট, হোয়ারটন স্কুলে একটি আকর্ষণীয় গবেষণায় পেয়েছেন যে অন্তর্মুখী নেতারা বহির্মুখীদের চেয়ে অধিক ভাল ফলাফল সরবরাহ করে, কারণ তারা যখন অতি-সক্রিয় কর্মচারীদের ব্যবস্থাপনা করে, তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই কর্মচারীদের তাদের নিজেদের চিন্তা মত কাজ করতে দেন, অন্যদিকে একজন বহির্মুখী, অন্ধিকাংশ ক্ষেত্রে, নির্বোধের মত, সবকিছু নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন যে তারা তাদের নিজেদের সীলমোহর লাগিয়ে দেন সবকিছুর ওপর এবং অন্যদের চিন্তা-ভাবনা সেক্ষেত্রে সহজে উঠে আসবে না। এখন এক্ষেত্রে বলতে হয়,, আমাদের ইতিহাস রূপান্তরে ভূমিকা রাখা নেতারা অন্তর্মুখী। আমি আপনাদের কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। এলেনর রুজভেল্ট, রোজা পার্ক, গান্ধী- এরা সকলেই নিজেদের বর্ণনা করেছেন শান্ত এবং নরমসুরে কথা বলেন এমন মানুষ হিসেবে এবং এমনকি লাজুক হিসেবে। এবং তারা সকলেই লোকচক্ষুর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন, যদিও তাদের শরীরের প্রতিটি অস্থি তাদের বলেছে তা না করতে। এবং দেখা যাচ্ছে এর নিজস্ব কিছু বিশেষ ক্ষমতা আছে, কারণ মানুষ এটা অনুভব করে এই মানুষগুলো হাল ধরে ছিলেন, এ কারণে নয় যে তারা অন্যদের দিক নির্দেশনা দিতে পছন্দ করতেন এবং এ কারণে নয় যে অন্যরা যেন তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে; তারা সেখানে ছিলেন কারণ তাদের কোন উপায় ছিল না, কারণ তাদের নিজেদের যা ভালো মনে হয়েছে তাই দিয়ে তারা চালিত হয়েছিলেন। এখন এই মুহূর্তে আমি মনে করি এটা বলা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমি আসলে বহির্মুখীদের ভালবাসি। আমি সবসময় বলতে পছন্দ করি আমার কিছু প্রিয় বন্ধু বর্হিমুখী, আমার স্বামীসহ। এবং অবশ্যই আমরা বিভিন্ন সময়ে অন্তর্মুখী/বহির্মুখী বর্ণালীতে পড়ি। এমনকি সাইকোলজিস্ট কার্ল ইয়াং যিনি প্রথম এই পরিভাষা প্রচলন করেন, বলেন যে বিশুদ্ধ অন্তর্মুখী বলে কিছু নেই অথবা বিশুদ্ধ বহির্মুখী। তিনি বলেছেন যে এমন মানুষ কেবলমাত্র পাগলা-গারদেই থাকতে পারে, যদি সে আসলেই থেকে থাকে। এবং কিছু মানুষ ঠিক মাঝখানে পড়ে অন্তর্মুখী/বহির্মুখী বর্ণালীতে, এবং আমরা এদেরকে বলি এম্বিভার্টস। এবং আমি প্রায়ই মনে করি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সবকিছু তাদেরই আছে। কিন্তু আমাদের অনেকেই নিজেদেরকে চিহ্নিত করতে পারি যেকোন এক ধরনের হিসেবে। এবং আমি যা বলছি তা হচ্ছে সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে আমাদের আরও ভাল ভারসাম্য দরকার। আমাদের আরও ভারসাম্য দরকার এই দুই ধরনের মাঝে। বিশেষত এটি গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীলতা এবং উৎপাদনশীলতার প্রশ্নে, কারণ মনোবিদরা সৃজনশীল মানুষদের জীবনের দিকে আলোকপাত করে যা পেয়েছেন তা হচ্ছে যে সব মানুষ ভাবনা চিন্তা বিনিময়ে ভালো এবং চিন্তাকে অগ্রসর করাতে পারে্ন, কিন্তু যাদের মধ্যে গুরুতর পর্যায়ের অন্তর্মুখী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এবং এর কারণ নির্জনতা সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই ডারউইন, দীর্ঘক্ষণ হাঁটতেন বনের মধ্য দিয়ে এবং নৈশভোজের আমন্ত্রণ জোরালোভাবে প্রত্যাখান করতেন। থিওডোর গিসেল, যিনি ডক্টর সিউস নামে পরিচিত, তিনি তার অনেক বিস্ময়কর আবিস্কারের স্বপ্ন দেখেছেন তার নির্জন বেল টাওয়ারের অফিসে বসে যা কিনা তার বাড়ির পেছনে ক্যালিফোর্নিয়ার লা হোল্লাতে অবস্থিত। এবং তিনি আসলে ভীত ছিলেন বাচ্চাদের সাথে পরিচিত হবার ক্ষেত্রে যারা তার বই পড়তো এই ভয়ে যে বাচ্চারা আশা করতো তিনি সান্টা ক্লজের মত হাস্যোজ্জ্বল কেউ হবেন এবং তারা হতাশ হবে তার এরকম চাপা স্বভাব দেখে। স্টিভ ওয়াজনিয়াক প্রথম অ্যাপল কম্পিউটার আবিষ্কার করেন একা নিজের জায়গায় বসে থেকে হিউলেট-প্যাকার্ড অফিসে যেখানে তিনি সেসময়ে কর্মরত ছিলেন। এবং তিনি বলেন যে তিনি এই বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠতেন না যদি না তিনি যখন বেড়ে উঠছিলেন তখন বাড়ি না ছেড়ে যাওয়ার মত অন্তর্মুখী হতেন। এখন অবশ্য, এর অর্থ এই নয় যে আমরা সহযোগিতা করা বন্ধ করে দিবো- এবং এক্ষত্রে স্টিভ ওয়াজনিয়াক, স্টিভ জবসের সাথে একত্র হয়েছিলেন অ্যাপল কম্পিউটার চালু করবার জন্য- কিন্তু এর অর্থ এই যে নি:সঙ্গতা এক্ষেত্রে একটি বিষয় এবং কিছু মানুষের জন্য তা হচ্ছে তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের বাতাস। এবং আমরা শতকের পর শতক ধরে নি:সঙ্গতার সীমাতিক্রমী ক্ষমতা সম্পর্কে জানি। শুধু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা অদ্ভূতভাবে তা ভুলতে শুরু করেছি। আপনি যদি পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলোর দিকে তাকান, আপনি পাবেন অন্বেষণকারী- মুসা, যীশু, বুদ্ধ , মুহাম্মদ- অন্বেষণকারী যারা নিজেদের মত করে পথ চলা শুরু করেছিলেন একা বন্ধুর পথে যেখানে তারা গভীর কিছু উন্মোচন ও আত্মোপলব্ধি করেছিলেন যা তারা পরবর্তীতে লোকালয়ে নিয়ে এসেছেন। সুতরাং বন্ধুর পথে যাওয়া ছাড়া কোন উন্মোচন সম্ভব নয়। যদিও কোন চমক নেই তবুও আপনি যদি সমসাময়িক মানসিকতার দিকে একটু খেয়াল করেন। দেখা যাবে যে, এমনকি আমরা একদল লোকের সাথে থাকতে পারবো না যদি না আমরা সহজাতভাবে তাদের মতামত প্রতিফলিত বা নকল না করি। এমনকি ব্যক্তিগত এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাপারেও যেমন কে আপনাকে আকর্ষণ করে, আপনি আপনার আশেপাশের মানুষের বিশ্বাস অনুকরণ করা শুরু করবেন এমনকি আপনি বুঝতেও পারবেন না যে আপনি তা করছেন। এবং দলগুলো চমৎকারভাবে দলে থাকা প্রভাবশালী এবং মহিমান্বিত ব্যক্তিদের মতাদর্শ অনুসরণ করে, যদিও ভালো বুদ্ধি এবং ভালো বক্তার মধ্যে সংযোগ খুব কমই থাকে, তাদের সম্পর্ক থাকে শূন্যের কোঠায়। মানে হচ্ছে শূন্য। সুতরাং... (হাসি) আপনি হয়তো সেই লোকটিকে অনুসরণ করছেন যার কাছে শ্রেষ্ঠ ধারণাগুলো আছে আবার হয়তো বা না। এবং আপনি কি সত্যি তা সুযোগের হাতে ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন? সবার জন্য এর চেয়ে নিজেরদের স্ব স্ব পথ ধরা, দলীয় শক্তির বিকৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের আপন ধারণার সৃষ্টি করা, এবং তারপর একাত্ম হয়ে দল গঠন করা, যাতে তারা একটি সুসংগঠিত পরিবেশের মধ্য দিয়ে যেতে পারে এবং তারপর সেখান থেকে নিয়ে চলা। এখন এর সবকিছুই যদি সত্য হয়, তাহলে আমরা কোথায় ভীষণভাবে ভুল করছি? আমরা কেন এইভাবে আমাদের স্কুলগুলো এবং অফিসগুলো পরিচালনা করছি? এবং কেন আমরা এসব অন্তর্মুখীদের অপরাধী বোধ করাচ্ছি যখন তারা চাচ্ছে কিছু সময়ের জন্য তাদের মত থাকতে? এর একটি উত্তর আমাদের সংস্কৃতির গভীরে রয়েছে। পশ্চিমা সমাজগুলো, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে, কাজের লোকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে সবর্দাই চিন্তাশীল লোকদের তুলনায় এবং 'চিন্তাশীল' লোকদের তুলনায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শুরুর দিনগুলোতে, আমাদের যাপিত জীবনকে ইতিহাসবিদরা বলেন "নৈতিক শক্তির সংস্কৃতি", যেখানে আমরা তখনো মানুষকে মূল্য দিতাম তাদের ভিতরের গুণাবলীর জন্য এবং তাদের নীতিঘটিত সততার জন্য। এবং আপনি যদি সে যুগের স্ব-সহায়ক বইগুলোর দিকে লক্ষ্য করেন, তাঁদের সবগুলোর শিরোনাম ছিল অনেকটা এরকম "চরিত্র, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বস্তু" এবং সেসব বইতে আদর্শ হিসেবে ছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন যার নম্র এবং বিনয়ী হিসেবে সুখ্যাতি ছিল। রালফ ওয়াল্ডো এমারসন তাকে "উর্ধ্বতন দ্বারা অসন্তুষ্ট না হওয়া এক ব্যক্তি" হিসেবে অভিহিত করেন। কিন্তু এরপর আমরা বিংশ শতকে এসে পড়লাম এবং নতুন এক সংস্কৃতিতে প্রবেশ করলাম যাকে ইতিহাসবিদরা ব্যক্তিত্বের সংস্কৃতি বলে থাকেন। যা ঘটেছে তা হচ্ছে আমরা একটি কৃষিজীবি অর্থনীতি থেকে বড় বড় বাণিজ্যের এক বিশ্বে বিকাশ লাভ করেছি। এবং হঠাৎ করেই মানুষ ছোট শহরগুলো থেকে নগরীতে চলে আসছে। এবং আজীবনের পরিচিত মানুষগুলোর পাশে কাজ করার পরিবর্তে এখন তাদের নিজেদেরকে প্রমাণ করতে হচ্ছে অপরিচিত মানুষের মাঝে। সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে, ব্যক্তিগত মাধুর্য ও আকর্ষণ এবং উৎসাহ সঞ্চারের মত গুণ হঠাৎ করেই খুব গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠেছে। এবং নিশ্চিতভাবেই, স্ব-সহায়ক বইগুলো তাদের প্রয়োজন মেটাতে পরিবর্তিত হয়েছে এবং তারা এরকম নাম ধারণ করে " কিভাবে বন্ধু জিতবেন এবং মানুষকে প্রভাবিত করবেন।" এবং তারা তাদের আদর্শ হিসেবে বড় বিক্রয়কুশলীদের প্রচার করে। সুতরাং এই হচ্ছে আজকের বিশ্ব যেখানে আমরা বাস করছি। এটাই হচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। এখন এসব কথা বলার অর্থ এই না যে সামাজিক দক্ষতা গুরুত্বহীন, এবং আমি দলগত প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করার কথাও বলছি না। একই ধর্মগুলো যা তাদের প্রিয়পাত্রদের নির্জন পাহাড়ের চূড়ায় পাঠায় তারা আরও শেখায় ভালোবাসতে এবং বিশ্বাস করতে। এবং আমরা বিজ্ঞান এবং অর্থনীতির মত বিষয়ে আজ যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি তা এতই বিশাল এবং জটিল যে আমাদের অনেক লোককে একসাথে দরকার সমাধানের জন্য এক সাথে কাজ করতে। কিন্তু আমি বলছি যে যত বেশি স্বাধীনতা আমরা অন্তর্মুখীদের দিবো, তত বেশি তারা তাদের অনন্য আপন সমাধান নিয়ে হাজির হবে এসব সমস্যা সমাধানে। সুতরাং এখন আমি আপনাদের দেখাতে চাই আমার ব্যাগে আজ কি আছে। অনুমান করুন তো? বই। আমার সাথে এক ব্যাগ ভর্তি বই আছে। এখানে মারগারেট এটউডের "বিড়ালের চোখ" এই যে এখানে মিলান কুন্ডেরার একটি উপন্যাস। এবং এখানে "দ্বিধায় থাকায় মানুষদের জন্য নির্দেশনা" মাইমোনিডস-এর। কিন্তু এই বইগুলো আসলে আমার বই না। আমি এইগুলো আমার সাথে এনেছি কারণ এগুলো আমার পিতামহের প্রিয় লেখকেরা লিখেছেন। আমার পিতামহ একজন ইহুদি ধর্মযাজক ছিলেন এবং বিপত্নীক ছিলেন যে একাকী ব্রুকলিনের একটি ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে বাস করতেন এবং আমি যখন বেড়ে উঠছিলাম, তখন আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল সেটি। এর আংশিক কারণ ছিল জায়গাটি স্নিগ্ধ এবং নির্মল অনুভূতি দিয়ে পরিপূর্ণ ছিল এবং কিছুটা তা বই দিয়ে ভরা ছিল বলে। অ্যাপার্টমেন্টের প্রতিটা টেবিল, প্রতিটা চেয়ার তাদের আসল কর্ম পরিহার করেছিল বইয়ের স্তুপকে দোলানোর কাজে জায়গা দেবার জন্যে। আমার পরিবারের বাকী সবার মতো আমার পিতামহ পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিল বই পড়া। এছাড়াও তিনি তার গির্জার সমাবেশ ভালবাসতেন, এবং আপনি এটা বুঝতে পারতেন তার অভিভাষণ শুনে ৬২ বছরের প্রতি সপ্তাহে যতদিন তিনি র‍্যাবাই (ইহুদি ধর্মযাজক) ছিলেন। সে প্রতি সপ্তাহের পড়া বইগুলো থেকে বিশেষ অংশ চয়ন করতেন এবং সে এই অংশগুলোর সাথে প্রাচীন এবং মানবিক চিন্তার সমন্বয় ঘটাতেন। এবং সব জায়গা থেকে মানুষ আসতো তার কথা শোনার জন্যে। কিন্তু আমার পিতামহের একটি বিষয় ছিল। তার আনুষ্ঠানিক ভূমিকার পিছনে, তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী এবং অন্তর্মুখী- এতটাই যে তিনি যখন অভিভাষণ দিতেন তার অন্যের চোখে তাকিয়ে তা বলতে সমস্যা হত। ঠিক একই সমাবেশের সামনে যেখানে তিনি ৬২ বছর ধরে কথা বলে গেছেন। এমনকি বেদির বাইরে আপনি যদি তাকে কথা বলার জন্য ডাকতেন তিনি প্রায়ই অপরিপক্কের মত কথা বলা শেষ করতেন এই ভয়ে যে তিনি হয়তো আপনার অনেক সময় নিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু তিনি যখন চুরানব্বই বছর বয়সে মারা গেলেন, পুলিশকে তার বাড়ির আশেপাশের রাস্তা বন্ধ করে দিতে হল মানুষের ঢলকে জায়গা করে দেবার জন্যে যারা এসেছিল তাদের শোক প্রকাশ করতে। তাই ইদানীং আমি আমার পিতামহের উদাহরণ থেকে শিক্ষা নেবার চেষ্টা করছি নিজের মত করে। আমি কিছুকাল আগে অন্তর্মুখিতা নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছি, এবং তা লিখতে আমার সময় লেগেছে সাতটি বছর। এবং আমার জন্যে, এই সাতটি বছর ছিল পরম সুখের, কারণ আমি এই সময়ে পড়ছিলাম, লিখছিলাম, আমি চিন্তা করছিলাম, গবেষণা করছিলাম। এটা ছিল আমার নিজের মত একাকী পিতামহের লাইব্রেরিতে তার মত সময় কাটানো। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই আমার কাজ হয়ে গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন, এবং আমার কাজ হচ্ছে এখানে এই বিষয়ে কথা বলা, অন্তর্মুখিতা নিয়ে কথা বলা। (হাসি) এবং যা ছিল আমার জন্য অনেক কঠিন, কারণ আমি যতটা সম্মানিত বোধ করছি এই মুহূর্তে আপনাদের মাঝে এসে, এটা আমার স্বাভাবিক সামাজিক পরিবেশ না। সুতরাং আমি প্রস্তুত হয়েছি এইসব মুহূর্তের জন্যে যতটা আমার পক্ষে সম্ভব হয়। আমি গত বছর জনসম্মুখে কথা বলার অনুশীলন করেছি যে সুযোগই আমি পেয়েছি না কেন। এবং আমি একে বলি, "বিপজ্জনকভাবে কথা বলার বছর।" (হাসি) এবং তা আসলে অনেক সাহায্য করে। কিন্তু আমি আপনাদের বলব, তারচেয়েও বেশি সাহায্য করে আমার ইন্দ্রিয়, আমার বিশ্বাস, আমার আশা যে যখন আমাদের আচরণের প্রসঙ্গ আসে অন্তর্মুখিতা, শান্ত, নি:সঙ্গতার মত বিষয়ে আমরা সত্যিকার অর্থেই প্রস্তুত হই নাটকীয় পরিবর্তনের। আমি বোঝাচ্ছি, আমাদের। তাই এখন আমি আপনাদের রেখে যাচ্ছি কাজ করবার তিনটি আহ্বান জানিয়ে তাদের উদ্দেশ্য যারা এই দর্শন গ্রহণ করেছেন। এক নম্বরঃ সারাক্ষণের এই দলীয় কাজ করবার পাগলামি বন্ধ করুন। বন্ধ করুন। (হাসি) ধন্যবাদ। (করতালি) এবং আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যা আমি বলছি, কারণ আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি আমাদের অফিসগুলোর উচিত উৎসাহিত করা অপরিকল্পিত, আড্ডাবাজি ধরনের সংযোগ- আপনি জানেন, যে ধরনের যেখানে মানুষ একসাথে হয় এবং অপ্রত্যাশিতভাবে বা দৈবভাবে চিন্তা বিনিময় করে। এটি চমৎকার। এটি অন্তর্মুখী এবং বর্হিমুখী উভয়ের জন্যে চমৎকার। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন আরো অনেক গোপনীয়তা এবং আরও অনেক স্বাধীনতা এবং কাজের ক্ষেত্রে আরও অনেক স্বতন্ত্রতা। স্কুলেও একই জিনিস। আমাদের দরকার বাচ্চাদের অবশ্যই শেখানো একসাথে কাজ করা, কিন্তু আমাদের আরও শেখানো দরকার কিভাবে তারা নিজেরা স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে পারে। এটা বিশেষভাবে দরকার বর্হিমুখী বাচ্চাদের জন্যে। তাদের এককভাবে কাজ করা দরকার কারণ এককভাবে কাজ করতে গেলেই ভিতর থেকে গভীর চেতনা আসে। আচ্ছা। দুই নাম্বারঃ বন্যতার বা আদিমতার কাছে যাও। বুদ্ধের মত হও, নিজের মত করে উন্মোচন করো। আমি বলছি না যে আমাদের সবার এখনই চলে যেতে হবে এবং জঙ্গলে নিজেদের কেবিন বানাতে হবে এবং আর কখনো নিজেদের সাথে কথা বলব না, কিন্তু আমি বলছি যে আমরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করতে পারি এবং নিজদের মাথার ভিতরে যেতে পারি কিছুটা বেশি সময়ের জন্যে। তিন নম্বরঃ নিজের ব্যাগের ভিতরে একটি ভালভাবে দৃষ্টি দেন এবং কেন আপনি তা সেখানে রেখেছেন। সুতরাং বহির্মুখীরা, আপনাদের ব্যাগগুলোও হয়তো বই দিয়ে ভরা, অথবা তারা স্যাম্পেনের গ্লাস দিয়ে ভরা অথবা স্কাইডাইভিং এর সরঞ্জাম দিয়ে। তা যাই হোক না কেন, আমি আশা করি আপনি যখনই সুযোগ পাবেন তা বের বের করবেন এবং আমাদেরকে অভিভুত করবেন আপনার শক্তি এবং প্রফুল্লতা দিয়ে। কিন্তু অন্তর্মুখীদের ক্ষেত্রে, আপনি আপনার মতো থাকায়, সম্ভবত আপনার প্রেরণা রয়েছে আপনার ব্যাগের ভেতরের জিনিস রক্ষা করার ক্ষেত্রে। এবং তা ঠিক আছে। কিন্তু মাঝে মাঝে,একটু মাঝে মাঝে আমি আশা করি অন্যদের দেখানোর জন্যে আপনারা আপনাদের ব্যাগগুলো খুলবেন, কারণ বিশ্বকে আপনাদের দরকার এবং এর দরকার আপনার যা বহন করছেন। সুতরাং আমি মঙ্গল কামনা করি আপনাদের সকল সম্ভাব্য যাত্রায় এবং নরম সুরে কথা বলার সাহসের ক্ষেত্রে। অনেক ধন্যবাদ। (তালি) ধন্যবাদ। ধন্যবাদ। (তালি) সাম্প্রতিককালের স্বত্বসংরক্ষণ বিতর্ক যেমন যুক্তরাষ্ট্রে সোপা এবং ইউরোপে এসিটিএ চুক্তি খুবই ভাবোদ্দীপক ছিল। এবং আমি মনে করি কিছুটা আবেগহীন, পরিমাণগত যুক্তি প্রয়োগ এই বিতর্কে অনেক মাত্রা যোগ করতে পারে। আমি তাই প্রস্তাব করতে চাই যে আমরা যেন ব্যবহার করি ও সাহায্য নিই স্বত্বসংরক্ষণ একদম সাম্প্রতিকতম গণিতের যখনই আমরা এই বিষয়ে কথা বলবো। যেমন ধরুন, সম্প্রতি চলচ্চিত্র এসোসিয়েশন প্রকাশ করলো যে আমাদের অর্থনীতি প্রতি বছর ৫৮ বিলিয়ন ডলার হারায় শুধুমাত্র কপিরাইটজইনিত চুরির কারণে। এখন এই সংখ্যাটা নিয়ে তর্ক করার চেয়ে, একজন স্বত্বসংরক্ষণ বিষয়ক গণিতজ্ঞ বিষয়টি বিশ্লেষণ করবে এবং সে খুব তাড়াতাড়ি আবিষ্কার করবে যে এই অর্থ অডিটোরিয়াম থেকে শুরু করে ওশান বুলভার্ড পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে ওয়েস্টিন পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে এবং এরপর হয়তো মঙ্গল গ্রহ পর্যন্ত... (হাসি) যদি আমরা খুচরো পয়সা ব্যবহার করি। এখন এটা খুবই শক্তিশালী, অনেকে বলবে ভয়ংকরভাবে শক্তিশালী, অন্তর্দৃষ্টি কিন্তু নৈতিকতার দিক থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ আমরা শুধু কয়েকটা পাইরেটেড ছবির প্রকল্পিত খুচরো দাম নিয়ে কথা বলছি না, এটা আসলে প্রকৃত অর্থনৈতিক ক্ষতি। এটা সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টার ফলন নষ্ট হওয়ার সমান; আর তার সাথে পুরো ফলের ফলন, সাথে গম, তামাক, চাল, শোরঘাম-- সে শোরঘাম যাই হোক- শোরঘামের ফলন নষ্ট হওয়ার সমান। কিন্তু অর্থনীতির প্রকৃত লোকসান সনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব যদি না আমরা কপিরাইটের অংক ব্যবহার করি। এখন সংগীতের রাজস্ব বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার করে কমছে নেপস্টার প্রথম বাজারে আসার পর থেকে। সুতরাং আমরা যা খুঁজছি এটা তার একটি অংশ। কিন্তু সম্পূর্ণ চলচ্চিত্রের রাজস্ব থিয়েটার, হোম ভিডিও এবং পে-পার-ভিউ মিলিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং টিভি, স্যাটেলাইট এবং কেবলের রাজস্বও অনেক বেড়েছে। অন্যান্য জিনিসের বাজারও যেমন বই এবং রেডিও এর বাজার আগের চেয়ে ভাল। তাহলে এই যে একটা বড় অংশের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না তা কিন্তু একটা ধাঁধাঁ। (হাসি) (হাততালি) যেহেতু এর বড় উপাদান গুলোর বাজার ঐতিহাসিক ভাবে যে ধাঁচে বৃদ্ধি পাওয়া উচিৎ ঠিক সেই ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, অতিরিক্ত প্রবৃদ্ধিতে পাইরেসি বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, কিন্তু স্বত্বসংরক্ষণের অংক আমাদের বলে যে এটা তাহলে এমন এক বাজারে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে যার কোন ঐতিহাসিক ধাঁচ নেই-- এমন একটা বাজার যা ৯০-এর দশকের আগে ছিল না। আমরা এখানে যা দেখতে পাচ্ছি সেটা রিংটোন পাইরেসির অন্তর্নিহিত মূল্য। (হাসি) ৫০ বিলিয়ন ডলার এক বছরে, যদি প্রতিটা রিংটোন ৩০ সেকেন্ডের হয়, এই টাকায় এমন রিংটোনের জন্য যথেষ্ট হবে যা এখনকার সময় থেকে প্রাগৈতিহাসিক সময় পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। (হাসি) এটা সত্য। (হাততালি) আমার এক্সেল আছে। (হাসি) চলচ্চিত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকেরা আমাদের বলে যে, আমাদের অর্থনীতি ৩৭০০০০ এর চেয়েও বেশি চাকুরি হারায় এই চুরির কারণে, যা খুবই বেশী, আপনি যদি ৯৮ সালের কথা চিন্তা করেন, কারণ শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো ইঙ্গিত দেয় যে চলচ্চিত্র এবং ভিডিও শিল্পসমূহ ২৭০০০০ লোককে চাকরি দিয়েছিল। অন্যান্য তথ্য মতে সংগীত শিল্পের সাথে জড়িত ছি ৪৫০০০ লোক। এবং এই চাকরিচ্যুতি ঘটেছে ইন্টারনেট আসার পরপর এবং ঐ সব বিষয়বস্তু চুরি হওয়ার পরে, আর এর ফলে বিষয়বস্তুর বাজারে সৃষ্টি হয়েছে ঋণাত্মক কর্মসংস্থান। এবং এটা অনেকগুলো হতবুদ্ধি করে দেওয়ার মত পরিসংখ্যানের একটা, যেটা নিয়ে কপিরাইটের গণিতবিদদের প্রতিদিন কাজ করতে হয়। আর কিছু মানুষ মনে করেন যে স্ট্রিং তত্ত্ব কঠিন। (হাসি) এখন এটা হচ্ছে কপিরাইট গণিতবিদদের বাক্স থেকে পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত। এটা একদম নিখুঁত পরিমাণ ক্ষতি যা মিডিয়া কোম্পানিগুলোর হয় যখন একটি স্বত্বসংরক্ষিত গান বা চলচ্চিত্র চুরি হয়। হলিউড এবং কংগ্রেস এই সংখ্যা অংক করে বের করেছে যখন তারা শেষবারের মত একসাথে বসে স্বত্বসংরক্ষণের ক্ষতির উন্নতির চেষ্টা করেছিল এবং এই আইন প্রণয়ন করেছিল। অনেকে মনে করে এই সংখ্যা একটু বেশী বড়, কিন্তু স্বত্বসংরক্ষণের গণিতবিদরা যারা মিডিয়া লবির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ, তারা একটু অবাক এই কারণে যে প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির কারণে এটাকে চক্রক্রমিক হারে বাড়ানো হয়নি । যখন প্রথম এই আইনটি করা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল এমপিথ্রি প্লেয়ারে ১০ টি গান শোনা যেত। এবং তা ছিল বড়দিনের একটা জনপ্রিয় উপহার। কারণ কোন বখাটে ছেলে চাইবে না যে সাড়ে দশ লাখ টাকা মূল্যের চোরাই মাল তাদের পকেটে থাকুক। (হাসি) (হাততালি) এখনকার দিনে একটা আইপড ক্লাসিকে ৪০০০০ গান থাকতে পারে, যা প্রায় ৮০০ কোটি টাকা মূল্যের, চোরাই করা মিডিয়া। (হাততালি) অথবা প্রায় ৭৫ হাজার চাকরি। (হাসি) (হাততালি) এখন আপনি হয়তো স্বত্বের এই অংকটাকে অদ্ভুত মনে করবেন, কিন্তু এটার কারণ হল এটা এমন একটা বিষয় যেটা অভিজ্ঞদের হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভালো। তাহলে এখনকার মত এপর্যন্তই। আমি আশা করবো আপনারা পরের বার আমার সাথে অংশগ্রহণ করবেন যখন আমি একাধারে বিজ্ঞান এবং তথ্যভিত্তিক একটি অনুসন্ধান চালাবো আমেরিকান অর্থনীতির ওপরে বাইরের গ্রহের জীবদের দ্বারা সংগঠিত সংগীত পাইরেসির প্রভাব নিয়ে । অনেক ধন্যবাদ। (হাততালি) ধন্যবাদ (হাততালি) আমার নাম টেইলর উইলসন। আমার বয়স ১৭ বছর। এবং আমি একজন পারমাণবিক পদার্থবিদ, যা বিশ্বাস করা হয়তো একটু কঠিন, কিন্তু আমি তাই। এবং আমি বলতে চাই যে পারমাণবিক সংযোজন হবে সেই বিন্দু, যে সেতুবন্ধননের ব্যাপারে টি. বুন পিকেন্স কথা বলেছেন যেখানে আমাদের নিয়ে যাবে। সুতরাং নিউক্লিয়ার সংযোজন আমাদের শক্তির ভবিষ্যৎ। এবং দ্বিতীয়ত, তরুণরা আসলেই পৃথিবী বদলে দিতে পারে। সুতরাং আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন-- (হাততালি) আপনারা আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, তো তুমি কিভাবে জান আমাদের শক্তির ভবিষ্যৎ কি? আমি একটি সংযোজন চুল্লি তৈরি করি যখন আমার বয়স ১৪ বছর। ওটা হলো আমার পারমাণবিক সংযোজন চুল্লির ভেতরের অংশ। আমি এই প্রকল্প তৈরি শুরু করি যখন আমার বয়স ১২ কি ১৩ বছর। আমি সিদ্ধান্ত নেই একটি তারা তৈরি করবার। এখন আপনাদের অনেকেই হয়তো বলছেন, পারমাণবিক সংযোজন বলে কিছু নেই। আমি সংযোজন শক্তির কোন পারমাণবিক কারখানা দেখি না। এটি কোন সাম্যাবস্থা সৃষ্টি করে না। এটি প্রদেয় শক্তির চেয়ে বেশি শক্তি উৎপাদন করে না, কিন্তু এটি কিছু বিস্ময়কর কাজ করে। এবং আমি এটির সন্নিবেশ ঘটাই আমার গ্যারেজে করি। এবং এখন এটি রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব নেভাডা, রেনোর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। এবং এটি সংযোগ যা হচ্ছে হাইড্রোজেনের মাঝে অতিরিক্ত এক নিউট্রন। সুতরাং এটি সূর্যের অভ্যন্তরে ঘটে চলা প্রোটনের চেইন বিক্রিয়ার মতই। এবং আমি এদেরকে এত জোরে আঘাত করছি যে হাইড্রোজেন জোড়া লেগে যায়, এবং এই প্রক্রিয়ায় আরও কিছু সহ-উৎপাদ প্রস্তুত হয়, এবং সেগুলোকে ব্যবহার করি। সুতরাং গত বছর, আমি জয় করি ইন্টেল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রকৌশল মেলা। আমি সনাক্তকারী একটি যন্ত্র তৈরি করি যা হোমল্যাণ্ড সিকিউরিটির বর্তমান সনাক্তকারী যন্ত্রসমূহকে প্রতিস্থাপন করে। শত শত ডলার খরচে, আমি উন্নততর এক পদ্ধতি তৈরি করি যা হাজার হাজার ডলার খরচে তৈরি সনাক্তকারী যন্ত্রের সংবেদনশীলতাকে অতিক্রম করে। আমি এটি আমার গ্যারেজে তৈরি করি। (হাততালি) এবং আমি মেডিক্যাল আইসোটোপ উৎপাদনের এক পদ্ধতি তৈরি করেছি। বহু লক্ষ ডলার খরচে তৈরি গবেষণাগারের স্থলে আমি তৈরি করেছি একটি যন্ত্র, যা স্বল্প পরিমাণে এই আইসোটোপগুলো উৎপাদন করতে পারে। ঐ যে পেছনে আমার ফিউশন চুল্লি। এই যে আমি আমার ফিউশন চুল্লির নিয়ন্ত্রক কাঠামোতে। ওহ, অন্যদিকে, আমি আমার গ্যারেজে ইউরিনিয়ামের ইয়েলোকেক তৈরি করি যাতে আমার পারমাণবিক প্রকল্প ইরানিদের মত উন্নত এবং আধুনিক হয়। হয়তোবা আমি তা স্বীকার করতে চাই না। এইযে আমি সুইজারল্যাণ্ডের জেনেভা শহরে অবস্থিত সার্ন-এ, যা হচ্ছে পৃথিবীর প্রখ্যাত কণা বিষয়ক পর্দাথবিজ্ঞানের গবেষণাগার। এবং এইযে আমি প্রেসিডেন্ট ওবামা'র সাথে, তাকে আমার হোমল্যাণ্ড নিরাপত্তার সংক্রান্ত গবেষণা দেখাচ্ছি। (হাততালি) তাহলে ৭ বছরের পারমাণবিক গবেষণার মধ্যে আমি একটি স্বপ্নের সূচনা করি একটি বয়ামে তারা তৈরি করবার, একটি তারা আমার গ্যারেজে, এবং আমি এর শেষে প্রেসিডেন্টের সাথে পরিচয় হবার সুযোগ পাই এবং এমন কিছু তৈরি করি যা আমার মতে পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে, এবং আমি মনে করি, অন্য তরুণরাও তা করতে পারে। অনেক ধন্যাবাদ সবাইকে। (হাততালি) এমন একটা ব্যাপার এসে দাঁড়িয়েছে যে যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার বা নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছে না আর তাই প্রযুক্তি এই কায়িক পরিশ্রম এর ব্যাপারে কি করছে তাই নিয়ে অনেক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আর যখনি আমি এই কথোপকথন নিয়ে ভাবি, এটা আমায় আন্দোলিত করে কারন এই ব্যাপারটা সত্যিকার টপিক নিয়ে ফোকাস করছে আর একই সাথে এটা আসল ব্যাপারটা পুরোপুরি মিস করে ফেলছে। যে টপিক এই বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দু, তা হলো যে এই যে এত ডিজিটাল প্রযুক্তি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে, অথবা অন্যভাবে বলা যায়, আসলে এভাবে রোবটগুলো আমাদের চাকরিগুলো কেড়ে নিচ্ছে? এবং কিছু অভিযোগ আছে যে আসলে তেমনি হচ্ছে! গ্রেট রিসেশন শেষ হয়েছিল যখন আমেরিকার জিডিপি তার কিছুটা ধীরগতির অর্থনীতি তার উপরের দিকে ওঠার গতি ফিরে পেল আর কিছু অর্থনৈতিক সূচকগুলোও ঠিকঠাক ফিরে আসতে শুরু করল এবং তারা খুব তাড়াতাড়ি এর স্বাভাবিক গতি ফিরে পেল। বাণিজ্যিক লাভও ছিল বেশ ভাল। এমনকি আপনি যদি ব্যাংক গুলোর লাভ দেখেন, তাহলে দেখবেন তারা আগে যা ছিল, তার চেয়েও ভালো অবস্থায় আছে। আর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আর সফটওয়্যারের উপর বাণিজ্যিক বিনিয়োগ ছিল অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি! ব্যবসাগুলো তাদের চেকবুকগুলো ভালভাবে ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছিল। কিন্তু তারা যা করছিল না, তা হল নিয়োগ করা। তাই এই লাল সীমারেখা হলো চাকরি আর জনসংখ্যার অনুপাত, অন্য কথায়, আমেরিকার কর্মক্ষম লোকেদের শতকরা হার যাদের কাছে চাকরি আছে। আর আমরা দেখতে পাই এটা সেই গহ্বর তৈরি করেছিল গ্রেট রিসেশনের সময় যা এখনো আগের অবস্থায় ফিরে আসে নি। কিন্তু এটা আসলে শুধু রিসেশন এর গল্প নয়। আমরা যে যুগ অতিক্রম করলাম তাতে চাকরির বৃদ্ধি ছিলো বরাবরই কম। সেটা খুব ভালো ভাবে বোঝা যায় যখন আমরা এটাকে অন্য যুগ গুলোর সাথে ভুলনা করি এবং ২০০০ এর দিকে আমরা এমন একটা অবস্তায় এসেছি যখন আমরা দেখছি যুগটির শুরুর চেয়ে শেষের দিকে এসে আরও কম মানুষ কাজ করছে! এ রকম কিছু আসলে আপনি দেখতে চান না। আপনি যদি একটা গ্রাফ আকেঁন যেখানে সম্ভাব্য চাকরিদাতা আর দেশের চাকরির সংখ্যাটা প্লট করা হবে, আপনি এই ফারাকটা দেখবেন শুধু বড় হচ্ছে আর হচ্ছে! এবং গ্রেট রিসেশন এর সময় এটা বিশাল আমি কিছু হিসেব করেছি। আমি শেষ ২০ বছরের জিডিপি বৃদ্ধি আর শেষ ২০ বছরের কায়িক শ্রমক্ষমতার বৃদ্ধি নিয়েছি এবং সেগুলো একদম সোজাসাপ্টা ভাবে উপস্থাপন করে দেখাতে চেয়েছি এই অর্থনীতি আরও কত চাকরি বৃদ্ধি করা দরকার এবং এই রেখাটিই আমি পেয়েছি। এটা কি ভাল না খারাপ? এটা সরকারের উপস্থাপন যাতে কর্মক্ষম লোকজন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। যদি এই বাণী সত্যিই নির্ভূল হয় তবে সেই ফারাক আর বন্ধ হবে না। কিন্তু সমস্যাটা হলো, আমি মনে করিনা এই বাণীগুলো সত্য হবে! বিশেষভাবে আমি মনে করি, আমার উপস্থাপন একটু বেশিই আশাব্যঞ্জক কেননা যখন আমি এটা করেছি, আমি ভাবছিলাম যে ভবিষ্যৎ আবার আগের মত হতে যাচ্ছে যেখানে শ্রমদক্ষতা বাড়ছে, আর সত্যি কথা হলো আমি তা বিশ্বাস করি না। কারন আমি যখন চারদিকে দেখছি, আমি মনে করি আমরা এখনো প্রযুক্তির শ্রমশক্তির উপর প্রভাবটা দেখিই নি। মাত্র কয়েক বছর আগে, আমরা দেখেছি ডিজিটাল যন্ত্রগুলো তাদের বিভিন্ন কলা এবং ক্ষমতা গুলো দেখাচ্ছে যা তাদের কাছে আগে কখনো ছিল না। আর তা আসলে আমরা মানুষেরা যা করে জীবিকা নির্বাহ করি, তা করে ফেলছে। আমি কিছু উদাহরন দেই ইতিহাস জুড়ে আপনি দেখবেন, যদি আপনি কিছু চেয়েছেন যে কোন কিছু এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রুপান্তরিত হোক, আপনার দরকার হত একজন মানুষকে। এখন আমাদের কাছে বিভিন্ন ভাষায় জ্ঞানী, মূহুর্তেই তা করার ক্ষমতার অধিকারী অটোমেটিক ভাষানুবাদ করার সুবিধা বিনে পয়সায় পাচ্ছি বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে, যেমন উন্নত মুঠোফোন গুলোতে। আর আমাদের অনেকেই সেগুলো ব্যবহার করেছি এবং আমরা জানি যে এগুলো একদম নিখুঁত নয়, তবে যথেষ্ট কার্যকরী। ইতিহাস থেকে দেখবেন, যখন আপনি চেয়েছন যে কোন কিছু লিখিত হোক কোন আর্টিকেলে কোন রিপোর্ট, আপনার দরকার হবে কোন ব্যক্তির। কিন্তু আর নয়! এই যে এই আর্টিকেল যেটা ফোর্বস অনলাইনে এসেছে এ্যাপেলের আয় নিয়ে এটা লেখা হয়েছে একটা অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। এটা শুধু কার্যকর নয়, এটা নিখুঁত! অনেকে এর দিকে তাকাবেন এবং হয়ত বলবেন যে, "হ্যাঁ ঠিক আছে ওগুলো খুব নির্দিষ্ট করে দেওয়া আর বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবীরা আসলে নানা বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী, এবং তারা নানা বিষয়ে দক্ষতা ও পারদর্শিতার অধিকারী, যা তারা সময়ের সাথে পরিবর্তন হওয়া ব্যাপারগুলো নিয়ে কাজ করতে সক্ষম আর সেটা আসলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা অনেক কঠিন।" এমন একজন দারুন চিত্তাকর্ষক বুদ্ধিজীবী হলেন আমাদের এ সময়ের এক ব্যক্তি - কেন জেনিংস। তিনি "জিওপ্যারডি" নামের কুইজ শো টি ৭৪ বার একটানা জিতেছেন, ৩০ লক্ষের বেশি ডলার জিতেছেন! ঐ যে দেখুন সবার ডানে কেন দাড়িঁয়ে আছেন আইবিএম এর ওয়াটসন সুপার কম্পিউটারের পাশে তিন - এক এ "জিওপ্যারডি" শোতে হারার পর! তাই আমরা যখন দেখি যে প্রযুক্তি আসলে এই বুদ্ধিজীবীদের কি করতে পারে, আমি চিন্তা করতে থাকি এই সর্ব বিষয়ে পারদর্শী লোকেদের ব্যাপারে আসলে তেমন বিশেষ কিছু নেই। বিশেষত আমরা যখন সিরি কে ওয়াটসন এর সাথে লাগিয়ে দেই আর প্রযুক্তির এমন ব্যবহার শুরু করি যখন তা আমরা কি বলি তা বুঝতে পারে এবং আমাদের সাথেও সেভাবে তা বলতে পারে। সিরি এখন নিখুঁত কিছু হওয়া থেকে অনেক দূরে এবং আমরা সেটা নিয়ে, এর ভুলগুলো নিয়ে মজা করতে পারি, কিন্তু আমাদের এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে যদি সিরি আর ওয়াটসন এর মুরের ল অনুযায়ী উন্নতি ঘটানো সম্ভব হয়, যেটা সম্ভবত হবেও, সেভাবে ৬ বছর নাগাদ তারা শুধু দ্বিগুন বা চারগুন নয়, তারা এখনকার চেয়ে ১৬ গুন বেশি উন্নত হবে! তাই আমি ভাবতে শুরু করেছি যে, তখন বুদ্ধি লাগে এমন অনেক কাজগুলো এর দ্বারা প্রভাবিত হবে! আর ডিজিটাল টেকনোলজি শুধু বুদ্ধির কাজ গুলোতেই প্রভাব ফেলবে না, এগুলো জড়জগতের নানা জায়গাতেই কাজ করা শুরু করবে। আমার সুযোগ হয়েছিল কিছুদিন আগে গুগুলের স্বয়ংক্রিয় গাড়িতে চড়বার, আর সেটা আসলে যেমনটা শোনাচ্ছে, সে রকমি দারুন ছিলো। (হাসি) আর আমি একদম সাক্ষী দিতে পারি যে, এটা ইউ.এস ১০১ এর থামা আর সাথে সাথে যাওয়ার অবস্থাও খুব ভালোভাবে পার হয়েছিল! আমেরিকার প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ আছে যারা শুধু ট্রাক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। আমি মনে করি তাদের মধ্যে বেশ কিছু এই প্রযুক্তি দিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আর এই মূহুর্তে মানুষের মত রোবটগুলো প্রায় আদিম পর্যায়ে আছে। তারা বেশি কিছু করতে পারে না। কিন্তু সেগুলো খুব দ্রুতই উন্নতি করছে আর ডারপা, যেটা কিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের বিনিয়োগের ব্যাপারগুলো দেখে, এই উন্নতির পথ আরও সুগম করার চেষ্টা করছে। তাই, অল্প কথায়, হ্যাঁ এই রোবটগুলো আমাদের চাকরিগুলো নিয়ে নিতেই আসছে! স্বল্পমেয়াদে আমরা চাকরির বৃদ্ধিটা আর উদ্দীপিত করতে পারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিয়ে আর পরিকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ করে, কেননা আজকের রোবটগুলো এখনো ব্রীজ মেরামত করার যোগ্যতা অর্জন করে নি। কিন্তু খুব বেশি দূরে নয়, আমি মনে করি, এই রুমে যারা আছেন, তাদের অনেকের জীবনকালের মাঝেই আমরা সেই অবস্থার মাঝে পড়ব যখন আমাদের অর্থনীতি অনেক উৎপাদনক্ষম হবে, কিন্তু এতে মানুষের কাজ করার তেমন দরকার পড়বে না। আর এই পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া হবে আমাদের সমাজের অন্যতম বড় একটা ব্যাপার! ভল্টায়ার এর কারণের একটা সারমর্ম করেছেন। তিনি বলেছেন, "কাজ আমাদের তিনটা শয়তান থেকে বাচাঁয়ঃ একঘেয়েমি, অনৈতিক্তা আর প্রয়োজনীয়তা।" কিন্তু এত কিছুর পরও, আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনো ডিজিটাল এই জগতের একজন আশাবাদী ব্যক্তি এবং আমি ভীষনভাবে বিশ্বাস করি যে এই ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলো যেটা আমরা তৈরি করছি, আমাদের এক আদর্শ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে, কোন ভয়ানক ভবিষ্যতের দিকে নয়। আর যদি এর ব্যাখা দিতেই হয়, তবে একটা ভীষন বড় রকমের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে চাই। আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি কি? এখন, যদি আমি কিছু উত্তরের কথা বলি যা এই প্রশ্ন উত্তোলনের পর পেয়েছিলাম। এটা একটা চমৎকার প্রশ্ন ছিল যা নিঃসীম এক বিতর্কের জন্ম দিত, কেননা কিছু মানুষ পূর্ব এবং পশ্চিমের নানা দর্শনের কথা তুলবে যা কি না অনেক মানুষের এই পৃথিবী সম্পর্কে ধারনা বদলে দিয়েছে! আর যখন অন্যেরা বলবে যে, "না, আসলে সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটা হয়েছে তা হলো বিভিন্ন ধর্মের সৃষ্টির পেছনে ঘটা ঘটনাগুলো, যেগুলো মানব সভ্যতাকে বদলে দিয়েছে এবং অগনিত মানুষের চিন্তাধারা বদলে দিয়েছে। তখন আবার অনেকেই বলবে যে, "আসলে যেটা সভ্যতাগুলো বদলেছে, যেটা পরিবর্তন ঘটিয়েছে, এবং যেটা মানুষের জীবন একদম বদলে দিয়েছে তা হলো সাম্রাজ্যগুলো। তাই মানুষদের মাঝে সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলো হলো বিজয়ের আর যুদ্ধের।" আর তখনি দেখবেন আরেক দল বলে উঠবে, "প্লেগের কথা কিন্তু ভুলে যেও না।" (হাসি) কিছু আশাব্যঞ্জক উত্তরও রয়েছে এই প্রশ্নের, যেমন কিছু মানুষ আমাদের অনুসন্ধানের যুগের কথা বলে, এবং কি করে আমাদের এই বিশ্বের দুয়ার খুলে গেলো। অনেকে হয়ত বুদ্ধিগত অর্জনগুলো যেমন গণিতে আমাদের অর্জনের কথা বলবে যা আমাদের এই বিশ্বকে সত্যিকারভাবে বুঝতে সাহায্য করেছিলো। অনেকেই আবার ঐ সময়ের কথা বলে যখন বিজ্ঞান আর কলার অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছিল। আর এই বিতর্ক এমনিভাবে চলতেই থাকবে। এটা শেষ হবার নয়, এর উপসংহারও নেই এবং এর শুধুমাত্র একটা করে উত্তরও নেই। কিন্তু আপনি যদি আমার মত একটু গুরু হন তাহলে আপনি বলবেন, "তথ্যগুলো কি বলে?" আর সত্যিই যদি আপনি গ্রাফে প্লট করা শুরু করেন যে কি আমাদের কাছে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ, যেমন পৃথিবীর জনসংখ্যা বা সামাজিক উন্নয়ন মাপা কিংবা কোন সমাজের উন্নতির পর্যায় তবে এই উপায়ে আপনি দেখবেন যে মানব সভ্যতার বড় ঘটনাগুলোতে এই বাকঁ গুলো যেন অনেক বেশি বেকেঁ যাচ্ছে। আর তাই আপনি যখন এভাবে তথ্য গুলো প্লট করতে থাকবেন, আপনি অনেক তাড়াতাড়ি অনেক অদ্ভুত সিদ্ধান্তে পৌছাবেন! আপনি আসলে এই সিদ্ধান্তে পৌছাবেন যে এই ঘটনাগুলো আসলে তেমন ব্যাপকভাবে কিছু করে নি! (হাসি) এগুলো এক বিন্দু পরিমান বাকঁ খাওয়াতে পারে নি বক্ররেখাটিকে। (হাসি) কিন্তু একটা ঘটনা আছে, একটা উন্নতির গল্প যা এই মানবসভ্যতার রেখা একদম ৯০ ডিগ্রির একটা বাকঁ এনে দিয়েছে! আর সেটা প্রযুক্তির গল্প! বাষ্প ইঞ্জিন আর এর সাথের অন্য প্রযুক্তিগুলো যেটা পৃথিবীব্যাপী শিল্প বিপ্লবের সূচনা করেছিল এবং তা মানব সভ্যতাকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছে যে, ইতিহাসবিদ ইয়ান মরিসের ভাষায়, এটা এর আগে যা কিছু উন্নতি হয়েছিল, তা যেন একটা ঠাট্টার মত মনে হতে লাগাতে শুরু করেছিল! আর তারা এটা করেছিল আমাদের পেশীর ক্ষমতাকে অসীমের সাথে গুণ করে, পেশীর সব সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে! এখন আমরা সেই অবস্থার মাঝে আছি, যখন আমরা আমাদের মস্তিষ্কের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি আর সেই সাথে অসীমের সাথে আমাদের মানসিক শক্তিকে গুণ করছি। আর কেন এটা আমদের পেশীর সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেয়ে বড় কিছু নয়? তাই আমি নিজের কথা বারবার বলার ঝুঁকি নিয়েও বলতে চাই, যখন আমি দেখি এই ডিজিটাল প্রযুক্তি আসলে এখন কি করতে চলেছে, আর আমাদের যাত্রার আসলে অনেক বাকি আছে এবং আমি দেখি কি হতে চলেছে আমাদের এই অর্থনীতিতে আর আমাদের সমাজে। আমার একমাত্র উপসংহার হলো যে, আমরা আসলে কিছুই দেখিনি! সব চেয়ে ভালো সময় এখনো সামনে। আমি একটা উদাহরন দেই। অর্থনীতি শক্তি দিয়ে চলে না। এটা মূলধন দিয়েও চলে না, কায়িক শ্রম দিয়েও না। অর্থনীতি চলে চিন্তাগুলো দিয়ে! আর তাই সৃষ্টির কাজ, নতুন ধারার চিন্তা তৈরির কাজ হল সবচেয়ে শক্তিশালী মৌলিক কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা আমরা কোন অর্থনীতিতে করতে পারি। এবং এভাবেই আসলে নতুন কিছু আমরা করে আসছি। আর আমরা এমনি প্রায় একি রকম মানুষও খুঁজে পাব! (হাসি) আমরা তাদের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বের করে আনব, তারপর তাদের অন্য সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠাব এবং নতুন কিছু ঘটার অপেক্ষা করব। এখন -- (হাসি) -- একজন সাদা মানুষ হিসেবে যে তার পেশাদার জীবনের পুরো অংশই এমআইটি আর হার্ভাডে কাটিয়ে এসেছে, আমার এতে কোন আপত্তি নেই। (হাসি) কিন্তু অন্য অনেকের আপত্তি আছে এবং তারা আসলে ভোজসভায় হঠাৎ করে ঢুকে পড়েছে আর ভোজসভার ড্রেস কোড যে নতুন কিছু সৃষ্টি তা বেমালুম ভুলে গেছে! (হাসি) আর এই যে এখানে দেখুন টপ কোডার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা আর আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলে দিতে পারি, এতে কারো কিছু এসে যায় না যে কোথায় এই বাচ্চাগুলো বড় হয়েছে, কোথায় স্কুলে গেছে অথবা তারা দেখতে কেমন। অন্যরা শুধু ভাবে এদের কাজের মান নিয়ে, তাদের চিন্তার মান নিয়ে। এবং আমরা বারবার এটা হতে দেখি এই প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে। নতুন কিছু তৈরির প্রয়াস তাই এখন আরো উন্মুক্ত, আরো ব্যাপক, আরো স্বচ্ছ এবং আরো মেধা নির্ভর, এবং তাই হতে থাকবে - এমআইটি বা হার্ভাড যাই মনে করুক না কেন এবং আমি এই উন্নতি নিয়ে এর চেয়ে বেশি খুশি হতে পারবনা! আমি প্রায়শই শুনি "হ্যাঁ, আমি সবই মানছি, কিন্তু প্রযুক্তি আসলে ধনী দেশগুলোর জন্যে একটা মাধ্যম এবং যেটা হচ্ছে যে এই ডিজিটাল যন্ত্রগুলো পিরামিডের নিচের হতভাগা মানুষগুলোর জন্য কিছুই করছে না।" আমি পরিস্কারভাবে এর উত্তরে বলতে চাইঃ সব বাজে কথা। পিরামিডের এই নিচতলা আসলে এই প্রুযুক্তি থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ রবার্ট জেনসেন একটা দারুন গবেষণা করেছেন কিছু পূর্বে তিনি গভীরভাবে ভারতের কেরালার জেলে গ্রামগুলোতে কি হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা যখন প্রথমবারের মত মোবাইল পেল এবং আপনি যখন ত্রৈমাসিক অর্থনীতির জার্নালে লিখবেন, আপনাকে অত্যন্ত কাঠখোট্টা আর সতর্কভাবে লিখতে হবে, কিন্তু আমি যখন তার লেখাটা পড়লাম, আমার মনে হলো জেনসন যেন চিৎকার করে আমাদের বলছেন দেখ দেখ এটা একটা বিশাল ঘটনা। দাম স্থির হচ্ছে, মানুষ তাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে পারছে। অপচয় কম হলো না, এটা যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। আর সেই সাথে ঐ গ্রামগুলোর ক্রেতা আর বিক্রেতাদের জীবন বেশ ভালোভাবে বদলে গেলো। এখন আমার মনে হয় না যে জেনসন অনেক ভাগ্যবান ছিলেন আর এমন এক জায়গায় গিয়ে পড়েছিলেন যেখানে প্রযুক্তি কিছু গ্রামের চেহারা বদলে দিচ্ছিল। ওখানে যা হলো তা খুব সতর্কের সাথে তিনি লিখে রাখলেন যা কিনা প্রযুক্তি কোন পরিবেশ বা মানব সমাজে প্রথমবারের মত এলে হয়। এই মানুষগুলোর জীবন, তাদের কল্যাণ দারুনভাবে উন্নতি লাভ করল। তাই আমি যখন এই প্রমাণাদি গুলো দেখি এবং ভাবতে শুরু করি আমদের সামনে কি আসছে, আর আমি ভীষণরকম ডিজিটাল বিশ্বের প্রতি আশাবাদী হয়ে পড়ি এবং ভাবতে শুরু করি ঐ চমকপ্রদ কথাগুলো যা পদার্থবিৎ ফ্রিম্যান ডাইসন বলেছেন হয়ত আসলেই অত্যুক্তি নয়। এটাই একটা নির্ভুল মূল্যায়ন যা আমাদের চারপাশে ঘটছে। আমাদের এই ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলো অনেক বড় উপহার! আর তাই আমরা অনেক ভাগ্যবান এমন একটা সময়ে বাস করতে পেরে যখন কি না এই প্রযুক্তি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে, আর এর মাত্রা বড় হচ্ছে এবং সেই সাথে আরও গভীরে ছড়িয়ে পড়ছে এই বিশ্বে। তাই হ্যাঁ, রোবটগুলো আমাদের চাকরিগুলো নিয়ে নিচ্ছে কিন্তু এর উপর ফোকাস করলে আসল ব্যাপারটা একদম মিস হয়ে যায়। আর সেটা হল যে, আমরা সময় পাচ্ছি অন্য কিছু করবার আর আমরা যা করতে চলেছি, সে ব্যাপারে আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী, আর সেটা হলো এই বিশ্ব হতে দারিদ্রতা, দাসত্ব আর দুর্দশা থেকে মুক্তি। আমি বিশ্বাস করি আমরা শিখতে চলেছি কি করে আর সহজ উপায়ে এই ধরিত্রীতে বাস করা যায়। আমি প্রবলভাবে আস্থা রাখি এই ডিজিটাল যন্ত্র আর মাধ্যমগুলোর উপরে যার গভীরতর ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা এটাকে এত উপকারী করে ফেলব যে এটা আগে যা কিছু এসেছিল, সব কিছুকে একদম একটা নিরেট ঠাট্টা বানিয়ে দেবে। আমি শেষ করব সেই ব্যক্তির কথা দিয়ে যে কি না ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্নয়নের একদম প্রথম সারিতে বসে ছিল আমাদের পুরোনো বন্ধু কেন জেনংস। আমি তার সাথে আছি। আমি তার কথা গুলোর পুনরাবৃত্তি করতে চাই, "আমি নিজে অন্তত স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের নতুন কম্পিউটার মহারাজদেরকে" (হাসি) ধন্যবাদ সবাইকে। (করতালি) সেলোর মূর্ছনা শুরু হল তুমি আমায় খুঁজে পেলে তুমি আমায় খুঁজে পেলে খুঁজে পেলে অনেক ভাঙ্গা স্মৃতির গহীনে তোমার অবিচল অবিচল ভালোবাসায়। তুমি দোলালে আমায় তুমি দোলালে আমায় দোলালে আমায় বিনিদ্র রজনী জুড়ে তোমার অবিচল অবিচল ভালোবাসায়। (সেলোর মূর্ছনা চলছে) (তালে তালে টোকা) তুমি আমায় খুঁজে পেলে তুমি আমায় খুঁজে পেলে, খুঁজে পেলে অনেক ভাঙ্গা স্মৃতির গহীনে তোমার অবিচল তোমার অবিচল অবিচল ভালোবাসায়। আর দোলালে আমায় আমায় দোলালে, দোলালে আমায় বিনিদ্র রজনী জুড়ে তোমার অবিচল অবিচল ভালোবাসায়। (সঙ্গীত শেষ হল) (করতালি) ধন্যবাদ। (করতালি) আমার নাম ক্যামেরন রাসেল, এবং আমি গত বেশ কয়েকবছর ধরে মডেলিংয়ের কাজ করছি। সঠিকভাবে বলতে গেলে দশ বছর। এবং আমার মনে হচ্ছে এই মূহুর্তে রুমের সবাই একটু অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে আছেন কারণ,আমার হয়তো এই জামাটা পরা ঠিক হয়নি। (হাসি) সৌভাগ্যক্রমে আমি বাড়তি জামা এনেছি বদলানোর জন্য। TED'র মঞ্চে এটাই প্রথম কোন জামা বদলানো, তাই,বলা যায় আপনারা সৌভাগ্যবান যে এর সাক্ষী হতে পারছেন। আমার আসাটা মহিলাদের কারো কাছে অপ্রীতিকর লাগলে, আমাকে এখন বলার দরকার নেই, পরে আমি ট্যুইটারে দেখতে পাব। (হাসি) আমি বলতে চাই যে, আমি প্রায় নিশ্চিত আমাকে নিয়ে আপনাদের ধারণা ১০ সেকেন্ডে বদলে দিতে পারব। সবাই এটা করতে পারে না। এই হিলগুলো তেমন আরামদায়ক না, ভালো হয় আমি যদি এগুলো না পরি। এই সোয়েটারটা মাথার উপর দিয়ে পরাটাই সবচেয়ে ঝামেলার কারণ তখন আপনারা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসবেন, তাই এটা মাথায় থাকার সময় কেউ কিছু করবেন না। এবার সব ঠিকাছে। তো,আমি এটা কেন করলাম? কারণ জামাটা অদ্ভুত ছিলো। (হাসি) আচ্ছা... (হাসি) তবে এই ছবিটির মত অতো অদ্ভুত ছিলনা আশা করি। ছবি হয়তো শক্তিশালী, কিন্তু একটা ছবি শুধুমাত্র বাহ্যিক দিকটাই প্রকাশ করে। আমাকে নিয়ে আপনাদের যে ধারণা ছিল, তা আমি ছয় সেকেন্ডে বদলে দিয়েছি। এবং এই ছবিটায় যেমন দেখতে পাচ্ছেন, বাস্তব জীবনে কোনদিন আমার কোনো প্রেমিক ছিলনা। আমার খুবই অস্বস্তি লাগছিলো, এবং ফটোগ্রাফার আমাকে বলছিলো পিঠটা বাঁকা করতে এবং ছেলেটার চুলে হাত রাখতে। আর অবশ্যই,সার্জারির দাগ বা দু'দিন আগে কাজের ফলে চামড়ার যে তামাটে ভাবটা হয়েছিল সেটা ঢেকে রাখতে, আসলে আমরা দেখতে যেমন তা বদলানোর জন্য নিজেরা তেমন কিছু করতে পারিনা, আর বাহ্যিক এবং অপরিবর্তনীয় হলেও আমরা কীরকম দেখতে তা আমাদের জীবনে বেশ বড় একটা প্রভাব ফেলে। তাই আজকে,আমার জন্য, সাহসী হওয়া মানে সৎ হওয়া। এবং,একজন মডেল হওয়ার কারণেই আমি এই মঞ্চে আসতে পেরেছি। আমি এই মঞ্চে আসতে পেরেছি কারণ আমি একজন সুন্দর,ফর্সা চামড়ার মেয়ে, এবং মডেলিংয়ে আমাদের মত মেয়েদের বলা হয় যৌন আবেদনময়ী। এখন আমি সেসব প্রশ্নের উত্তর দিব যেগুলো মানুষ আমাকে সবসময় জিজ্ঞেস করে, কিন্তু চমকপ্রদ সত্যের সাথে। তো,প্রথম প্রশ্নটা হচ্ছে আমি কীভাবে মডেলিংয়ে আসলাম? আমি সবসময় উত্তর দেই "ওহ! আমাকে ওমনভাবেই তৈরি করা হয়েছিল," কিন্তু এর মাধ্যমে আসল সত্যিটা প্রকাশ পায়না। আমি আসলে মডেল হতে পেরেছি কারণ আমি জীনগত লটারি জিতেছিলাম এবং আমি একটা ঐতিহ্যের সুবিধাভোগী, আপনারা হয়তো ভাবছেন ঐতিহ্যটা কী। আচ্ছা,গত কয়েকশতাব্দী ধরে আমরা সৌন্দর্যকে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ও তারুণ্য আর প্রতিসাম্যতা যা প্রকৃতিগতভাবেই আমরা লাভ করি সেগুলোর ভিত্তিতে ব্যাখ্যা না করে লম্বা,সরু দেহ এবং কমনীয়তা ও ফর্সা চামড়া দিয়েও ব্যাখ্যা করছি। এবং এই ঐতিহ্যের জন্যেই আমি সুবিধা পেয়েছি, এবং এই ঐতিহ্যের কারণেই আমি টাকা আয় করতে পারছি। আর আমি জানি দর্শকদের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছেন যাদের এই ব্যাপারে সংশয় আছে, এবং কোন কোন ফ্যাশন সচেতন হয়তো বলতে চাচ্ছেন, "দাঁড়ান।নাওমি,টায়রা,জোয়ান স্মলস,লু ওয়েন। এরা?" প্রথমেই আমি মডেলদের সম্পর্কে আপনাদের জানাশোনার প্রশংসা করছি,দারুণ! (হাসি) কিন্তু দুর্ভাগ্যবশঃত আপনাদের জানাতে চাচ্ছি যে ২০০৭ সালে, এনওয়াইইউ এর একজন অতি উৎসাহী পিএইচডি ছাত্র রানওয়ের সকল মডেলদের সংখ্যা গুণেছিলেন, ভাড়া করা প্রত্যেক মডেলকে, এবং সবমিলিয়ে ৬৭৭ জন মডেলের মধ্যে অশেতাঙ্গ ছিল মাত্র ২৭ জন, বা ৪ ভাগেরও কম। এরপরে যে প্রশ্নটা সবাই সবসময় জিজ্ঞেস করে তা হচ্ছে, "বড় হলে আমিও কি মডেল হতে পারব?" এর প্রথম উত্তরটা হচ্ছে,"আমি জানিনা, আমি এর দায়িত্বে নেই।" কিন্তু দ্বিতীয় উত্তরটা, যা আমি আসলে এই ছোট মেয়েদের বলতে চাই তা হচ্ছে "কেন? তুমি তো যেকোন কিছুই হতে পারো। তুমি হতে পারো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, কিংবা পরবর্তী ইন্টারনেটের আবিষ্কারক অথবা একজন নিনজা হৃদচিকিৎসক কবি, এটা হতে পারলে দারুণ হবে,কারণ তুমিই প্রথম হবে এরকম কেউ।" (হাসি) কিন্তু এত দারুণসব জিনিস থাকার পরেও তারা যেন বলতে চায়, "না,না,ক্যামেরন,আমি মডেল হতে চাই," তখন আমি বলি, "তাহলে আমার বস হও।' কারণ আমি কোনকিছুর দায়িত্বে নেই। আবার তুমি অ্যামেরিকান ভোগের প্রধান সম্পাদকও হতে পারো কিংবা এইচএনএম এর সিইও অথবা পরবর্তী স্টিভেন মাইসেল। তুমি বড় হলে মডেল হতে চাও এটা বলার মানে হচ্ছে তুমি বড় হলে সেই লটারিটা জিততে চাও। কিন্তু এটা তোমার হাতে নেই এবং তাতে ভালোই হয়েছে, আর এটা কোন ক্যারিয়ার গড়ার রাস্তা নয়। এই দশ বছর মডেলিংয়ে থাকার পরে আমি যা শিখেছি তা আপনাদের দেখাব, কারণ হৃদচিকিৎসকদের মত অত না দেখে, ব্যপারটার মূলে আমরা এখনই যেতে পারি। তো,যদি ফটোগ্রাফার ওইখানে থাকে, সুন্দর একটা এইচএমআই'র মত আলোটা ওইখানে, আর মক্কেল যদি বলেন যে, "আমরা একটা হাঁটার দৃশ্য চাই," এই পা'টা আগে যাবে,সুন্দর আর বেশিক্ষণধরে, এই হাতটা পেছনে যাবে,এই হাতটা সামনে আসবে, মাথাটা থাকবে এক-চতুর্থাংশে, আর তুমি শুধু পেছন থেকে সামনে আসবে, খালি এটাই করো, এরপর তুমি পেছনে তোমার কাল্পনিক বন্ধুদের দিকে তাকাবে, ৩০০, ৪০০, ৫০০ বার। (হাসি) এটা হয়তো অনেকটা এরকম দেখাবে। (হাসি) আশা করি মাঝখানেরটার মত ওত অদ্ভুত দেখাবেনা। সেটা ছিল...আমি জানিনা সেখানে কী ঘটেছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে, আপনি স্কুল শেষ করেছেন, আপনার একটি বায়োডাটা আছে, আপনি কয়েকটা চাকরি করেছেন, এরপর আপনি আর কিছুই বলতে পারবেন না। আপনি যদি বলেন আপনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চান কিন্তু আপনার বায়োডাটায় লেখা থাকে, "অন্তর্বাস মডেলিং:১০ বছর," মানুষ আপনাকে দেখে মুচকি হাসবে। এর পরের প্রশ্নটা হচ্ছে, "তারা কি সব ছবিই সম্পাদনা করে?" হ্যাঁ, তারা প্রায় সব ছবিই সম্পাদনা করে থাকেন, কিন্তু যা ঘটছে এটা তার একটা ছোট্ট অংশ মাত্র। এটা আমার তোলা প্রথম ছবি এবং সেবারই আমি প্রথমবার বিকিনি পরেছিলাম, আর তখনও আমার মাসিক শুরু হয়নি। হয়তো একটু ব্যক্তিগত বিষয়ে চলে যাচ্ছি, কিন্তু আমি ছিলাম একজন তরুণী। এটা তার কয়েকমাস আগে তোলা, দাদীর সাথে আমাকে যেমন দেখাচ্ছিলো। সেম ডে'র প্রচ্ছদে আমি, এটা তোলার সময় আমার বন্ধু এসেছিল। এটা আমি একটা পার্টিতে, ফ্রেঞ্চ ভোগে ছবি দেয়ার কয়দিন আগে। এখানে আমি সকার দলে এবং ভি ম্যাগাজিনে। আর এটায় বর্তমানে আমি যেমন আছি। এবং আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে এই ছবিগুলো আসলে আমার ছবি না। এগুলোকে তৈরি করা হয়েছে। এবং এগুলো তৈরি করা হয়েছে একদল পেশাদারদের দিয়ে, যাদের মধ্যে ছিল হেয়ার স্টাইলিস্ট, মেকাপ আর্টিস্ট,ফটোগ্রাফার ও স্টাইলিস্টগণ আর তাদের সহকারীরা এবং প্রি-প্রোডাকশন ও পোস্ট-প্রোডাকশন, এবং তারা এটা বানিয়েছেন। আমি না। এরপর যে প্রশ্নটা লোকেরা আমাকে সবসময় জিজ্ঞেস করে, "তুমি কি ফ্রি'তে কিছু পাও?" (হাসি) আমার অনেক অনেক ৮-ইঞ্চি হিল আছে যেগুলো আমি কখনো পরিনি, অবশ্য শুরুতে পরতাম, কিন্তু আমার ফ্রিতে পাওয়া জিনিসগুলো হচ্ছে বাস্তব জীবনে পাওয়া, আর এই বিষয়ে কথা বলতেও আমাদের ভালো লাগেনা। আমি ক্যামব্রিজে বেড়ে উঠেছি, এবং একবার আমি ভুলে টাকা ফেলে একটা দোকানে চলে গিয়েছিলাম আর তারা আমাকে জামাটা এমনিই দিয়ে দেয়। কিশোরী থাকতে আমি আমার এক বন্ধুর সাথে গাড়ি চালিয়েছিলাম ও ছিলো বাজে ড্রাইভার, আর ও নিয়ম ভাঙ্গে এবং অতি অবশ্যই, আমাদের আটকানো হয়েছিল, কিন্তু "দুঃখিত,অফিসার" বলতেই তারা আবার আমাদের রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছিল। আর আমি এগুলো ফ্রি পেয়েছিলাম আমি দেখতে কেমন সেজন্যে, এইজন্যে না যে আমি কে,এবং অনেক লোক আছেন যারা ঝামেলায় পড়েন তারা দেখতে কেমন এই জন্যে, তারা কারা এইজন্যে না। আমি নিউইয়র্কে থাকি,এবং গতবছর, ১৪০,০০০ টিনএজারকে আটক করে তল্লাশি করা হয়েছিল, এর মধ্যে ৮৬% ছিল কালো এবং ল্যাটিনো, আর তাদের বেশিরভাগই ছিলো তরুণ, আর নিউইয়র্কে মাত্র ১৭৭,০০০ জন কালো এবং ল্যাটিনো তরুণ থাকে, তাই,তাদের জন্য, "আমাকে কি আটকানো হবে? ", এটা কোন প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হচ্ছে "আমাকে আর কতবার আটকানো হবে? কখন আমাকে আটকানো হবে?' আজকে কথা বলার জন্য গবেষণা করার সময় আমি জানতে পারি যে,যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ বছর বয়সী মেয়েদের ৫৩% তাদের শরীরকে পছন্দ করেনা, এবং ১৭ বছর হতেই সংখ্যাটা ৭৮% হয়ে যায়। তো,সর্বশেষ যে প্রশ্নটা মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করে, "মডেল হওয়ার অনুভূতি কেমন?" এবং আমার মনে হয় তারা যে উত্তরটা খোঁজে তা হলো, "তুমি যদি একটুখানি চিকন হও, আর তোমার যদি উজ্জ্বল চুল থাকে, তাহলে তুমি সুখী আর দুর্দান্ত থাকবে।" এবং যখন আমরা ব্যাকস্টেজে থাকি, আমরা অনেকটা এরকম উত্তরই দেই। আমরা বলি যে,"এরকম ঘোরাফেরা করা আর এরকম সৃষ্টিশীল,উদ্যমী,অনুরাগী মানুষদের সাথে কাজ করাটা আসলেই দারুণ।" এবং এসব সত্যি, কিন্তু এটা মুদ্রার মাত্র একটা পিঠ, কারণ যেসব কথাগুলো আমরা ক্যামেরার সামনে কখনোই বলিনা, এবং আমি কখনো ক্যামেরার সামনে বলিনি,তা হলো, "আমি নিরাপদবোধ করিনা।" আমি নিরাপদবোধ করিনা কারণ আমাকে প্রত্যহ ভাবতে হয় আমাকে কেমন দেখাচ্ছে। আর আপনারা যদি কখনো ভেবে থাকেন যে, "আমার যদি আরো সরু উরু আর উজ্জ্বল চুল থাকে,আমি কি আরো সুখী হব?" তাহলে আপনারা একদল মডেলদের সাথে কথা বলুন, কারণ তাদের সবচেয়ে সরু উরু,সবচেয়ে উজ্জ্বল চুল,আর সবচেয়ে দারুণ জামা আছে, কিন্তু তারাই খুব সম্ভবত এই গ্রহের সবচেয়ে অনিরাপদবোধকারী নারী। যখন আমি আজকে কি বলবো তা লিখছিলাম, আমি বুঝতে পারি যে সৎভাবে দু'দিক বজায় রাখা খুবই কঠিন, কারণ, একদিকে আমার বেশ অস্বস্তি হবে এখানে এসে এটা বলা যে, "দেখ,আমি এত সুবিধা পেয়েছি কারণ সবই আমার পক্ষে ছিল," তবে এর সাথে আমার এটা বলতেও খারাপ লাগবে যে, "এবং এটা আমাকে সবসময় সুখী করেনি।" তবে সবচেয়ে কঠিন ছিল লিঙ্গ এবং বর্ণবৈষম্যর একটা ঐতিহ্যকে সবার সামনে প্রকাশ করা যেখানে আমি নিজেই ওটার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। কিন্তু আমি খুশি এবং গর্বিত এখানে আসতে পেরে এবং আমি মনে করি এখানে আসতে পারাটা দারুণ ব্যাপার ১০ বা ২০ বা ৩০ বছর আর আমার ক্যারিয়ারে আরো কিছু এজেন্সি যোগ হওয়ার আগেই, কারণ তখন হয়তো আমি বলতাম না কীভাবে আমি আমার প্রথম কাজ পেলাম, কিংবা আমি কীভাবে কলেজের বেতন দিয়েছিলাম সেটাও হয়তো বলতাম না, যেটাকে এখন মনে হচ্ছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমার কথার যদি কোন সারবস্তু থাকে, আশা করি সেটা হচ্ছে, আমরা মেনে নিতে পারব যে, আমাদের পাওয়া সাফল্য কিংবা ব্যর্থতায়, ছবির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ধন্যবাদ (হাততালি) আমার বয়স যখন ১১ আমার মনে আছে এক দিন সকালে জেগে উঠে দেখি বাসাতে আনন্দের আবহ বইছে আমার বাবা বিবিসি'র খবর শুনছিলেন তার ছোট ধুসর রঙের রেডিও'তে তার মুখে ছিল বিরাট হাসির চিহ্ন যা সচরাচর খুব কম দেখা যেত তার মাঝে কারণ অধিকাংশ খবরই তাকে নিরাশ করতো। বাবা চিৎকার করে বললেন, "তালেবানরা পালিয়ে গেছে।" তখন আমি জানতাম না কথাটার অর্থ কি, কিন্তু আমি বাবাকে ভীষণ উৎফুল্ল হতে দেখলাম। তিনি আমাকে বললেন, "তুমি এখন বিদ্যালয় এ যেতে পারবে" সেই সকালের কথা আমি কোনদিন ভুলবো না। সত্যিকারের বিদ্যালয়ে পড়াশুনা। তোমাদের বলি, আমার বয়স যখন ছয় তখন তালিবানরা আফগানিস্তান দখল করে নেয় এবং মেয়েদের বিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাই, পরবর্তী ৫ বছর আমি ছেলেদের বেশ ধরে আমার বড় বোনকে পাহারা দিয়ে গোপনে বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতাম কারণ তখন মেয়ে একা বের হওয়া নিষেধ ছিল। আমাদের শিক্ষিত হবার জন্য এটাই ছিলো একমাত্র উপায়। প্রতিদিন আমরা ভিন্ন পথে রওনা হতাম যেন কেউ আমাদের সন্দেহ না করে যে আমরা কোথায় যাচ্ছি। বাজারের থলেতে আমাদের বইগুলো লুকিয়ে রাখতাম যেন বাইরে থেকে মনে হয় আমরা শুধু বাজার করার জন্য বের হয়েছি। বিদ্যালয়টি একটি বাসার মধ্যে ছিল, যেখানে আমরা ১০০ জন একটি ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতাম। শীতকালে ভালই লাগত কিন্ত গ্রীষ্মে ভীষণ কষ্ট হত। আমরা সবাই -শিক্ষক, ছাত্রী এবং অভিভাবগবৃন্দ এটা বুঝতে পারতাম আমরা আমাদের জীবনের ঝুকি নিচ্ছি। তালেবানদের সন্দেহের কারণে প্রায়ই বিদ্যালয়টি এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ হয়ে যেত। আমরা শংকায় থাকতাম যে তালেবানরা আমাদের সম্পর্কে জেনে গেছে। তারা কি আমাদের অনুসরণ করছে? তারা কি আমাদের অবস্থান সম্পর্কে জানে? আমরা শঙ্কিত ছিলাম, কিন্তু তারপরও আমরা চাইতাম বিদ্যালয়টি থাকুক। আমার ভাগ্য ভালো যে এমন একটি পরিবারে বেড়ে উঠেছি যেখানে শিক্ষা ছিল আশির্বাদ আর মেয়েরা ছিল ঐশ্বর্য । আমার নানা তার সময়ের একজন অসামান্য মানুষ ছিলেন। আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত গ্রামের একজন একরোখা মানুষ, যিনি তার মেয়ে, আমার মাকে, তার বাবার নিষেধ অমান্য করে জোর করে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আমার শিক্ষিত মা একজন শিক্ষিকা হয়েছিলেন। এই যে তিনি এখানে । প্রতিবেশী মেয়েরা যেন পড়তে পারে তিনি ২ বছর আগে অবসর নিয়েছেন আমাদের বাসাতে বিদ্যালয় বানাতে। এবং আমার বাবা - এই যে তিনি- তিনি তার পরিবারের প্রথম যিনি শিক্ষিত হয়েছিলেন। তাদের সন্তানেরা এমনকি মেয়েরা নানা বাধা আর তালিবান হুমকির সত্তেও বিদ্যা অর্জন করবে, এ নিয়ে তাদের কোনো দ্বিধা ছিল না। তিনি অশিক্ষাকে সন্তানদের জন্য বিপদের কারণ মনে করতেন। আমার মনে আছে, তালিবান আমলে এমন একটা সময় ছিল আমি আমদের জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে যেতাম আর সর্বদা অন্ধকার ভবিষৎ নিয়ে শংকিত থাকতাম। আমি হাল ছেড়ে দিতে চাইতাম, কিন্তু আমার বাবা, আমায় বলতেন, শোনো মেয়ে, তোমার জীবনে যা তোমার, তার সবকিছু তুমি হারিয়ে ফেলতে পারো। তোমার সম্পদ চুরি হয়ে যেতে পারে। যুদ্ধের কারণে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হতে পারে। কিন্তু তোমার শিক্ষার মত একটি সম্পদ চিরদিন তোমার কাছে রয়ে যাবে, আর তাই তোমার বিদ্যালয়ের বেতনের জন্য যদি আমাদের রক্ত বিক্রি করতে হয়, তবে আমরা তাই করব। তাই তুমি কি চাও না লেখাপড়া চালিয়ে যেতে? এখন আমার বয়স ২২ বছর। এমন এক দেশে বেড়ে উঠেছি যা আজ ধংশপ্রাপ্ত যুগের পর যুগ যুদ্ধের ফলে। আমার মত ছয় শতাংশের কম নারী উচ্চ বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হতে পেরেছে, আর আমার পরিবার যদি আমার শিক্ষার ব্যাপারে দায়িত্বশীল না হত, আমিও আজ তাদের মত হতাম। তাই আজ আমি মিডলবারি কলেজের একজন গর্বিত স্নাতক। (হাততালি) আমি যখন আফগানিস্তানে ফিরে আসি, আমাকে অভিনন্দন জানাতে প্রথম এগিয়ে আসেন আমার নানা, যিনি তার কন্যাদের শিক্ষিত করে তলার সাহস দেখানোর জন্য নির্বাসনে ছিলেন শুধু আমার ডিগ্রী অর্জনের জন্য তিনি যে গর্বিত ছিলেন তাই নয়, বরং আমি ছিলাম প্রথম ডিগ্রী অর্জনকারী নারী, এবং কাবুলের রাস্তায় তাকে সাথে নিয়ে গাড়ি চালানো প্রথম নারী। (হাততালি) আমার পরিবার আমার ওপর আস্থা রাখে। আমি বড় সপ্ন দেখি, কিন্তু আমার পরিবার তার থেকেও অনেক সপ্ন আমাকে নিয়ে দেখে। আর সে কারণেই আমি ১০x ১০ এর দুত হতে পেরেছি, যা নারী শিক্ষা নিয়ে বিশ্ব ব্যপী কর্মকান্ড পরিচালনা করে। সে কারণে আমি sola তে সম্পৃক্ত হয়েছি, যা আফগানিস্তানে মেয়েদের জন্য প্রথম এবং সম্ভবত একমাত্র বোর্ডিং স্কুল যেখানে মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া এখনো ঝুকিপূর্ণ। আনন্দের বিষয় হলো আমি আমার স্কুলের ছাত্রীদের মাঝে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ইচ্ছা দেখতে পাই। আর তাদের অভিভাবক ও বাবারা ঠিক সেই ভাবে প্রেরণা দেন, যেমনটা আমি পেয়েছি, সে হোক না যত বড় বাধা আর বিরোধিতার শংকা। আহমেদ সে রকম একজন বাবা। এটা তার আসল নাম নয়, কিন্তু সে আমার এক ছাত্রীর বাবা প্রায় এক মাস আগে আহমেদ ও তার মেয়ে যখন sola থেকে তাদের গ্রামে ফিরছিল, মাত্র কয়েক মিনিট এর জন্য রাস্তায় পুতে রাখা বোমার আক্রমন থেকে প্রাণে বেঁচে যায়। বাড়িতে ফিরে আসার সাথে সাথে তার বাড়ির ফোন বেজে উঠলো, অপরিচিত কন্ঠ তাকে হুমকি দিয়ে বলল আহমেদ যদি তার মেয়েকে আবার বিদ্যালয়ে পাঠায়, তারা আবার এমন আক্রমনের শিকার হবে। আহমেদ জবাব দিল, "যদি পারো, আমাকে এখনি মারো।" কিন্তু তোমাদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারণে আমার মেয়ে ভবিষত আমি নষ্ট হতে দিব না আফগানিস্তান নেয়ে আমার উপলব্ধি এই যে এখানের কিছু ধারণা পশ্চিমা চিন্তার সম্পূর্ণ বিপরীত, যেমন আমার মত প্রতেকের সাফল্যের পিছনে বাবার ভূমিকা রয়েছে যিনি তার মেয়ের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন আর মেয়ের সাফল্যের মাঝে নিজের সাফল্যে দেখতে পেয়েছিলেন। আমাদের সাফল্যের পিছনে মায়েদের কোনো ভূমিকা নেই ইটা বলা ভুল। বরং তারা তাদের মেয়েদের উজ্জল ভবিষৎ এর প্রথম উদোক্তা , কিন্তু আফগানিস্তানের মত সমাজের প্রেক্ষিতে পুরুষদের সাহায্য আমাদের একান্ত প্রয়োজন আমার মনে আছে,তালিবান আমলে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তেও, শত শত মেয়ে বিদ্যালয়ে পড়তে যেত. কিন্তু আজ আফগানিস্তানে ত্রিশ লক্ষের অধিক মেয়ে বিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছে। (হাততালি) আমেরিকায় থেকে আফগানিস্তাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে দেখায়। আমি দেখেছি আমেরিকানরা এই পরিবর্তনকে প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষণ মনে করে। আমার ভয় হয় এই পরিবর্তন বেশিদিন টিকবে না মার্কিন যৌথ বাহিনী চলে যাওয়ার পর। কিন্তু আফগানিস্তানে ফিরে আসার পর যখন দেখি, আমার বিদ্যালয়ে ছাত্রীরা আসছে এবং তাদের অভিভাবকবৃন্দ এখানে আসার প্রেরণা দিচ্ছে, আমি তখন প্রতিশ্রুতিময় ভবিষ্যৎ আর আমূল পরিবর্তনের আভাস পাই। আমার কাছে আফগানিস্তান একটি অসীম সম্ভাবনা ও প্রতিশ্রুতি'র দেশ এবং প্রতিটা দিন SOLA 'র মেয়েরা আমাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমার মত তারাও এখন বড় স্বপ্ন দেখছে। সবাইকে ধন্যবাদ। (হাততালি) আমি এখানে এসেছি আপনাদের দেখাতে যে কিভাবে যা আপনি দেখতে পারেন না তা অনেক মজার হতে পারে দেখতে পেলে। আপনি এখন দেখতে যাচ্ছেন একটি নতুন, সহজলভ্য এবং উদ্দীপক প্রযুক্তি যা আমাদের ভাবতে বাধ্য করবে কিভাবে আমরা আমাদের জীবনকে পানিনিরোধী করতে পারি। আমার কাছে এখন যা আছে তা হচ্ছে একটি কাঠের টুকরা যার অর্ধেকটা আমরা ন্যানোপ্রযুক্তির একটি স্প্রে'র প্রলেপ দেওয়া যা কিনা যেকোন পদার্থের উপর অর্পন করা যাবে। এটাকে বলা হয় সর্বদা-অতি শুষ্ক, এবং আপনি যখন তা কোন পদার্থে প্রয়োগ করবেন পদার্থটি একটি সুপারহাইড্রোফোবিক ঢালে পরিণত হয়। এখন এটা একটি সিণ্ডার ব্লক, অলেপিত, এবং আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে এটা সরন্ধ্র, এটা পানিশোষণ করে। কিন্তু এরপর আর নয়। রন্ধ্রী কিংবা রন্ধ্রিহীন। তাহলে অতিপানিরোধী মানে কি? অতিপানিরোধী বা সুপারহাইড্রোফোবিক হচ্ছে কিভাবে আমরা একটি তলে কোন পানির বিন্দুকে পরিমাপ করি। তা যত গোলাকার হবে, তত হাইড্রোফোবিক এটা হবে, এবং এটা যদি অত্যন্ত গোলাকার হয়, তবে তা হবে সুপারহাইড্রোফবিক। একেবারে নতুন পলিশ করা গাড়ির ক্ষেত্রে পানির অনুগুলো প্রায় ৯০ ডিগ্রির মত দেবে। একটি উইণ্ডশিল্ড প্রলেপ আপনাকে দেবে প্রায় ১১০ ডিগ্রি। কিন্তু এইযে আপনারা দেখছেন ১৬০ থেকে ১৭৫ ডিগ্রি, এবং মনে রাখতে হবে ১৫০ ডিগ্রির উপরে যেকোন কিছুই সুপার হাইড্রোফোবিক। তাই, প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে, আমার সাথে যা আছে তা হচ্ছে একজোড়া দস্তানা, এবং আমরা একটি দশ্তানাকে ন্যানোপ্রযুক্তির প্রলেপ দিয়ে প্রলেপন করেছি। এবং দেখা যাক আপনারা আমাকে বলতে পারেন কিনা কোনটি, এবং আমি আপনাদের একটু আভাস দেব। আপনি কি আন্দাজ করতে পারছেন কোনটী শুকনো? আপনার কাছে যখন ন্যানোপ্রযুক্তি এবং ন্যানোবিজ্ঞান আছে, যা ঘটেওছে তা হচ্ছে আমরা এখন অণু এবং পরমাণু দেখতে পাই এবং সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি অনেক ভাল কাজের জন্য। এবং আমরা এখানে অনেক ক্ষুদ্রের কথা বলছি। আপনারা যেভাবে ন্যনোপ্রযুক্তি পরিমাপ করেন তা হচ্ছে ন্যানোমিটার, এবং এক ন্যানোমিটার হচ্ছে এক মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ, এবং এইরকম একটি স্কেল প্রয়োগ করা, যদি আপনার একটি ন্যানোকণা থাকে যার পুরুত্ব এক ন্যানোমিটার এবং আপনি এদেরকে যদি পাশাপাশি রাখেন এবং এরা যদি সংখ্যায় ৫০ হাজার হয়, আপনি যা পাবেন তা হছে একটি মনুষ্য চুলের বেধ। তাই আসলে এটা খুবই ছোট, কিন্তু খুবই কাজের। এবং এটা শুধুমাত্র পানির ক্ষেত্রেই কাজ করে যে তা নয়। এটা অনেক পানি নির্ভর পদার্থ যেমন কনক্রিট, পানি নির্ভর রঙ, কাদা, এবং কিছু পরিশোধিত তেল। আপনি কিন্তু পার্থক্যটি বুঝতে পারছেন। এবার চলুন পরের প্রদর্শনীতে আমরা জানালার শার্সির কাচ নিয়েছি এবং এর বাইরের দিকে প্রলেপ দিয়ে দিয়েছি, আমরা এর চারপাশে একটি ন্যানোপ্রযুক্তির প্রলেপের কাঠামো দিয়ে দিয়েছি, এবং আমরা এই হালকা সবুজ রঙের পানি ঢালতে যাচ্ছি একদম মাঝখানে, এবং আপনারা দেখতে পাবেন, এটা গ্লাসের উপর ছড়িয়ে যাচ্ছে যেমনটা আপনি সাধারণত ভেবে থাকেন। শুধুমাত্র সে সব সময় ছাড়া যখন তা প্রলেপটাকে আঘাত করে, এটা থেকে যায়, এবং আমি তখন এটাকে বাধ্য করতে পারি না চলে যাওয়ার জন্য। এটা হল সেই ভয় যা পানির জন্য। (হাততালি) তাহলে এখানে কি ঘটছে? কি হচ্ছে আসলে স্প্রে প্রলেপের পৃষ্ঠটি আসলে ন্যানোকণায় ভরা যার কারণে সমতলটি রুক্ষ এবং উচু-নিচু তল। আপনি হয়তো ভেবেছেন তা মসৃণ হবে, কিন্তু আসলে তা নয়। এবং এর মাঝে কোটি কোটি ফাঁকা জায়গা আছে, এবং এই জায়গাগুলো ন্যানোকণার সাথে উপরে থাকা বায়ু কণাগুলোকে গ্রহণ করে এবং পুরো পৃষ্ঠটিকে বায়ু দ্বারা আচ্ছাদন করে রাখে। এযেন অনেকটা একটা বায়ুর ছাতা পুরো বস্তুটি জুড়ে, এবং এই আচ্ছাদনটাকেই পানি এসে আঘাত করে, সাথে কাঁদা, এমনকি কংক্রিট এসে আঘাত করে, এরপর তা পিছলে পড়ে যায়। তাই আমি যদি এই বস্তুটিকে পানির ভিতরে দিয়ে দেই, আপনি দেখতে পারবেন একটি রূপালি প্রতিফলিত প্রলেপ এর চারপাশে এবং এই রূপালি প্রতিফলক প্রলেপ হচ্ছে সেই বায়ুর আস্তরণ যা প্যাডেলটাকে রক্ষা করছে পানির স্পর্শ থেকে, এবং এটি শুকনো। সুতরাং ব্যবহারগুলো কি কি? আমি বোঝাতে চাইছি, আপনাদের অনেকেই হয়তো এখন ভাবছেন নিজে নিজেই। যেই এই প্রযুক্তি দেখে উৎসাহিত হয়ে ওঠে এবং বলে, "ওহ, আমি এটা এই কাজে ব্যবহার করতে পারি। এই কাজে, ঐ কাজে..." সাধারণভাবে ব্যবহারটা হচ্ছে যেকোন কিছু যেখানে পানিনিরোধক দরকার। আমরা নিশ্চিতভাবে আজ তা দেখেছি। এটা যেকোন কিছু হতে পারে, যেমনঃ বরফনিরোধক, কারণ যদি পানি না থাকে, তাহলে বরফও থকবে না। এটা হতে পারে মরিচানিরোধক। পানি নেই তো মরিচাও নেই। সেটা এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল হতে পারে। পানি ছাড়া, ব্যাক্টেরিয়া বাঁচতে পারবে না। এবং এটা এমন পদার্থও হতে পারে যার নিজের থেকেই পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন। সুতরাং চিন্তা করুন কিভাবে এরকম একটা জিনিস আপনা কাজের ধারা বদলে ফেলতে সহায়তা করতে পারে। এবং আমি আপনাদের রেখে যাচ্ছি একটি শেষ প্রদর্শনীর সাথে, কিন্তু তা করবার আগে, আমি আপনাদের বলতে চাই ধন্যবাদ, এবং ছোট চিন্তা করুন। (হাততালি) এটা হতে যাচ্ছে। অপেক্ষা করুন। ঘটবার জন্য অপেক্ষা করুন। ক্রিস এণ্ডারসনঃ (হাসি) [ দুই মিনিট পর...] সে সকল ধরনের সমস্যায় পড়েছিল মেডিক্যাল গবেষণা অংশের দিক থেকে। এইযে হচ্ছে! (হাততালি) আজকে আমি আপনাদের দেখাবো একটি বৈদ্যুতক বাহন যার ওজন বাইসাইকেলের চেয়ে কম, যা আপনি নিজের সাথে বহন করতে পারবেন যেখানে সেখানে, যা আপনি সাধারণ একটি বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে ১৫ মিনিটে চার্জ দিতে পারবেন, এবং যা দিয়ে আপনি ১,০০০ কিলোমিটার যেতে পারবেন প্রায় এক ডলার মূল্যের বিদ্যুত দিয়ে। কিন্তু আমি যখন বৈদ্যুতিক বাহন শব্দটি ব্যবহার করছি, মানুষ তখন যানবাহনের কথা ভাবছে। তারা গাড়ি নিয়ে ভাবে এবং মোটরসাইকেল এবং বাইসাইকেল, এবং যেগুলো আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করি। কিন্তু আপনি যদি অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন, তাহলে আপনি আরও আকর্ষনীয়, আরও মহৎ কিছু চিন্তা করতে পারবেন। তো আমরা একটা কিছু বানালাম। আমার পকেটে এর কিছু অংশ আমার সাথে আছে। এইযে এটা হচ্ছে মোটর। এই মোটরের যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি আছে আপনাকে স‍্যান ফ্রান্সিসকোর পাহাড়ে ঘন্টায় ২০ মাইল বেগে নিয়ে যাবার, যা হচ্ছে ঘন্টায় ত্রিশ কিলোমিটারের মত, এবং এই ব্যাটারী, এইযে এখানে যার ক্ষমতা প্রায় ছয় মাইলের মত, বা ১০ কিলোমিটার, যা আমেরিকায় গাড়ির গড় চলাচলের মোটামুটি অর্ধেক পুরণ করার জন‍্য যথেষ্ট। কিন্তু এইসব বেপারের সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে আমরা এগুলো কিনেছি খেলনার দোকান থেকে। এগুলো পেয়েছি রিমোট চালিত খেলনা উড়োজাহাজ থেকে। এবং এগুলোর কার্যক্ষমতা এত ভাল হয়েছে যে আপনি যদি যানবাহন সম্পর্কে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করেন, আপনি সত্যি অনেককিছু বদলে দিতে পারেন। তাই আজকে আমরা আপনাদের একটি উদাহরণ দেখাবো কিভাবে আপনারা এটা ব্যবহার করতে পারবেন। ব্যাপারটা কি পরিমাণ মজার তা লক্ষ্য করুন, সেই সাথে এটাও দেখুন যে এটি কি পরিমাণ বহনযোগ্যতা আনে যা স‍্যান ফ্র‍্যানসিস্কোর মত একটি শহরের সাথে আপনার যোগাযোগ আমূল পরিবর্তিত করে দিতে পারে। (বাজনা) [ছয় মেইল চলার ক্ষমতা] [সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় প্রায় ২০ মাইল] [পাহাড় বেয়ে উঠছে] [শক্তি রূপান্তরক ব্রেকিং ব্যবস্থা] (হাততালি) (হর্ষধ্বনি) এখন আমরা আপনাদের দেখাতে যাচ্ছি এটা কি করতে পারে। এটা খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আপনার হাতে ধরা একটি রিমোট আছে তাই আপনি খুব সহজে গতি, ব্রেক নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এমনকি পেওছনে যেতে পারেন চাইলে, এটির ব্রেকও আছে। এটা যে কী পরিমাণ হালকা তা অভাবনীয়। আমি বোঝাতে চাইছি এটা এমন একটা জিনিস যা আপনি যখন তখন তুলে নিতে পারেন এবং রওনা দিতে পারেন যেকোন জায়গায়। তো আমি আপনাদের সামনে রেখে যাব কিছু আকর্ষণীয় তথ‍্য এই প্রযুক্তি এবং এধরনের যানবাহনের বিষয়ে। এটি ২০ ভাগ কম শক্তি ব‍্যবহার করে গাড়ির তুলনায় প্রতি মাইল বা কিলোমিটার ভ্রমণের জন‍্য, তার মানে হচ্ছে যে শুধুমাত্র এরা দ্রুত চার্জই হয়না বরং খুব সস্তায় তৈরি করা যায়, এবং তা আপনার শক্তি ব্যবহারের ফুটপ্রিণ্ট কমিয়ে দেয় আপনার পরিবহন ব্যবহারের দিক থেকে। তাই কি পরিমাণ শক্তি দরকার এই রুমের প্রত্যেক মানুষের এই শহরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য তার দিকে না তাকিয়ে এখন আপনি অন্য দিকে তাকাতে পারবেন এবং যাতায়াত ব‍্যবস্থাও পরিবেশগতভাবে টেকসই হবে। সুতরাং পরবর্তীতে আপনি যখন কোন বাহন নিয়ে ভাববেন আমি আশা করব, আমাদের মত আপনিও নতুন কিছু নিয়ে চিন্তা করবেন। ধন্যবাদ। (হাততালি) তাহলে আমি কথা বলবো আমার ক্যাম্পাসের সফলতা নিয়ে, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যাণ্ড, বাল্টিমোর কাউন্টি, ইউএমবিসি, সকল ধরনের ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য, কলা এবং মানবিক বিভাগের এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের জন্য। যা আমাদের কাহিনীকে বিশেষভাবে গুরুত্ববহ করে তোলে তা হচ্ছে আমরা আমাদের ছাত্রদের একটি গ্রুপের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি যারা কিনা একাডেমিক দিক থেকে অনেক উপরে নয়-- বিভিন্ন বর্ণের শিক্ষার্থীরা, ছাত্ররা যারা বিভিন্ন বিষয়ে সংখ্যালঘু। এবং যে বিষয়টি গল্পটিকে অনন্যসাধারন করে তোলে তা হচ্ছে আমরা সাহায্য করতে শিখেছি, আফ্রিকান-আমেরিকান ছাত্রদেরকে, ল্যাটিনো ছাত্রদেরকে, স্বল্প আয়ের পরিবার থেকে আসা ছাত্রদেরকে, যেন তাঁরা পৃথিবীর অন্যতম সেরা কিছু বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী হতে পারে। এবং তাই আমি শুরু করি আমার বাল্যকালের এক গল্প দিয়ে। আমরা সকলেই আমাদের বাল্যকালের অভিজ্ঞতার ফসল। মাঝেই মাঝেই আমার ভেবে অবাক লাগে যে ৫০ বছর পার হয়ে গেছে যখন আমি বার্মিংহাম এলাব্যামাতে ৯ম শ্রেণিতে ছিলাম। আমি এমন একজন ছিলাম যে সব বিষয়ে এ পেতে পছন্দ করতো, যে কিনা গণিত ভালবাসতো, যে পড়তে ভালবাসতো, এমন একজন যে কিনা তার শিক্ষকদের বলতো-- যখন শিক্ষক ক্লাসে বলতো, "এইযে দশটি সমস্যা।" এই স্থূলকায় ছেলেটি বলতো, "আমাদের আরও ১০টি সমস্যা দাও।" এবং পুরো ক্লাস বলতো, "চুপ থাকো, ফ্রিম্যান।" এবং প্রতিদিনই সেখানে লাথি দেওয়ার জন্য কেউ না কেউ নিয়োজিত থাকতো। এবং তাই আমি সবসময় এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করতামঃ "তাহলে আমরা কিভাবে আরও বেশি শিশুদের পাবো যারা শিখতে ভালবাসে?" এবং বিস্ময়করভাবে, চার্চে এক সপ্তাহে যখন আমি সত্যিকার অর্থেই ওখানে থাকতে চাইনি এবং আমি তখন রুমের পেছনের দিকে গণিতের সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত ছিলাম, আমি শুনলাম একজন বলছেঃ "আমরা যদি এখানে বার্মিংহামে বাচ্চাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করাতে পারি, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে দেখাতে পারি যে এমনকি বাচ্চারা ঠিক আর ভুলের পার্থক্য বোঝে এবং বাচ্চারা আসলেই সবচেয়ে ভাল যোগ্য শিক্ষা চায়।" এবং আমি তখন উপরে তাকালাম এবং বললাম, "কে এই লোক?" এবং তারা বললো যে লোকটার নাম ড. মার্টিন লুথার কিং। এবং আমি বাবা-মা কে বললাম যে, "আমাকে যেতে হবে। আমি যেতে চাই। আমি এর অংশ হতে চাই।" এবং তারা বললো, "অবশ্যই নয়।" (হাসি) এবং আমাদের সেইসময় একটা কঠিন সময় গিয়েছিল। এবং সেই সময়ে, সত্যি বলছি, আপনি আপনার অভিভাবকের মুখের উপর কথা বলতেন না। এবং কোনভাবে আমি বলেছিলাম, "তুমি জানো, তোমরা যে ভন্ড। তোমরা আমাকে এখানে যেতে বাধ্য করেছিলে, আমাকে শুনতে বাধ্য করেছিলে। মানুষটা চায় আমি যেন যাই আর এখন তোমরা বলছো না।" এবং তারা সারারাত এটা নিয়ে ভাবলো। এবং পরেরদিন সকালে তারা আমার রুমে আসলো। তাঁরা সারারাত ঘুমান নি। তাঁরা আসলেই কাঁদছিলেন এবং প্রাথনা করছিলেন এবং ভাবছিলেন, "আমরা কি আমাদের ১২ বছর বয়সীদের এই কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করতে দেবো এবং হয়তোবা তাদের জেলে যেতে হবে?" শেষমেশ তাঁরা এটা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এবং তাঁরা যখন আমাকে বলবার জন্য এলেন, প্রথমে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। এবং এরপর আমি হঠাৎ করেই কুকুর আর আগুনের নল নিয়ে ভাবা শুরু করলাম, এবং আমি সত্যি ভয় পেয়ে গেলাম, সত্যই। এবং একটা বিষয় যা আমি সবসময় মানুষের সামনে তুলে ধরি তা হচ্ছে মাঝে মাঝে যখন মানুষ খুব সাহসী কিছু করে, এর মানে এই না যে তারা খুবই সাহসী। এর সোজা অর্থ হচ্ছে তারা বিশ্বাস করে তাএর এটা করতে হবে। আমি উন্নত শিক্ষা বা উচ্চশিক্ষা চেয়েছিলাম। আমি চাইনি কেউ আমার হাতে বই ধরিয়ে দিক। আমি জানতে চেয়েছিলাম যে স্কুলে আমি গিয়েছি তাদের যে শুধু ভাল শিক্ষকই আছে যে তা নয়, তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদও আছে। এবং এই পরীক্ষার ফলাফলস্বরূপ, সপ্তাহের মাঝখানে, আমি যখন জেলের মধ্যে ছিলাম, ড. কিং এসেছিলেন এবং আমাদের অভিভাবকদের সাথে নিয়ে বলেছিলেন, "তোমরা বাচ্চারা ইদানীংকালে যা কর তার একটি প্রভাব যারা এখনও জন্মায়নি তাদের উপর পড়বে।" আমি সাম্প্রতিক সময়ে বুঝতে পেরেছি যে যুক্তরাষ্ট্রের আজকের দুই-তৃতীয়াংশ লোক ১৯৬৩ সালে জন্মগ্রহণ করেনি। এবং তাদের জন্য, তারা যখন বার্মিংহামে বাচ্চাদের সংগ্রামের কথা শোনে, অনেক দিক থেকেই, তারা যদি টিভিতে দেখে, এটা আমাদের কাছে "লিংকন" ছবিটির মাধ্যমে ১৮৬৩ দেখার মতঃ এটা ইতিহাস। এবং আসল প্রশ্নটি হচ্ছে, কি শিক্ষা আমরা সেখান থেকে পেয়েছি? আসলে সত্যিকার অর্থে, আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলঃ বাচ্চাদের যাতে যথেষ্ট ক্ষমতা প্রদান করা হয় তাদের নিজেদের শিক্ষার দায়িত্ব নেবার জন্য। তাদেরকে শেখানো হতে পারে কোন কিছু জানা এবং প্রশ্ন করার ধারণাটিকে ভালবাসার বিষয়ে আবেগপ্রবণ হতে। এবং এটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি, মেরীল্যাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বাল্টিমোর কাউন্টি, ইউএমবিসি, সেই ১৯৬৩ তে প্রতিষ্ঠিত হয় যে বছর আমি ড. কিং এর সাথে জেলে গিয়েছিলাম। এবং যে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্বপূর্ণ করেছিল তা হচ্ছে মেরীল্যাণ্ড হলো দক্ষিণে, যা আপনারা জানেন, এবং সত্যিকার অর্থে, এটা ছিল আমাদের স্টেটের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এমন এক সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে সময়ে সকল গোত্রের মানুষ সেখানে যেতে পারতো। এবং যেকারণে আমাদের কালো-সাদা সবধরনের ছাত্র ছিল যারা ক্লাস করতো। এবং ৫০ বছর ধরে এটা এক পরীক্ষা। পরীক্ষাটি হচ্ছেঃ এটা কি আদৌ সম্ভব আমাদের দেশে এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে সকল প্রেক্ষাপটের এবং বর্ণের মানুষ আসতে পারবে এবং জ্ঞান অর্জন করবে এবং একসাথে কাজ করা শিখবে এবং কিভাবে নেতৃত্ব দান করা যায় তা শিখবে। এবং একে অন্যকে এই পরীক্ষায় সহযোগিতা করবে? এখন এক্ষেত্রে যা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ আমার জন্য তা হচ্ছে ঃ আমরা পেয়েছিলাম যে আমরা অনেক কিছু করতে পারি কলা, মানবিক এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে। এবং আমরা তাতে কাজ করা শুরু করলাম, অনেক বছর ধরে ষাটের দশকে। এবং আমরা অনেককে তৈরি করতে পেরেছিলাম আইন বিভাগে, মানবিক শাখার সকল বিভাগে। আমরা বিখ্যাত শিল্পী তৈরি করেছি। বেকেট হচ্ছে আমাদের কবি প্রতিভা। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী থিয়েটারে বা মঞ্চে সুযোগ পায়। এটা চমৎকার এক কাজ। আমরা যে সমস্যাটির মুখোমুখি হয়েছিলাম, আমেরিকা এখনো প্রতিনিয়ত তার মুখোমুখি হচ্ছে-- যে বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা, কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীরা সাফল্য লাভ করছিল না। কিন্তু আমি যখন পরিসংখ্যানের দিকে তাকালাম, আমি যা খুঁজে পেলাম তা হচ্ছে, সত্যিকার অর্থেই, সাধারণভাবে সকল ছাত্রই, অনেক বেশি সংখ্যায় পেরে উঠছিল না। এবং এর ফলস্বরূপ, আমরা এমন কিছু করতে চাইলাম যা তাদের সাহায্য করে, প্রথমত, নিচের দলটা, আফ্রিকান-আমেরিকান ছাত্ররা এবং এরপর হিস্প্যানিক ছাত্রদের, এবং সমাজসেবক রবার্ট এবং জেন মেয়েরহোফ বললেন, "আমরা সাহায্য করতে চাই।" রবার্ট মেয়েরহোফ বলেছিলেন, "কেন আমি টিভিতে কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেদের নিয়ে যা ই দেখি তা হয় বাস্কেটবল নিয়ে অথবা কিছু নেতিবাচক ঘটনা নিয়ে? আমি একটা পার্থক্য সৃষ্টি করতে চাই, আমি চাই ইতিবাচক কিছু তৈরি করতে।" আমরা এই ধারণাগুলো গ্রহণ করলাম এবং আমরা এই মেয়েরহোফ বৃত্তি কর্মসূচি চালু করলাম। এবং এই কর্মসূচী বিষয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হল আমরা অনেক কিছু শিখেছি। এবং প্রশ্ন হলঃ কিভাবে আমরা আমাদের দেশকে সামনে নিয়ে যেতে পারি আফ্রিকান আমেরিকান তৈরি করে যারা বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলে পিএইচডি বা এমডি ডিগ্রি সম্পন্ন করবে? এটা একটি বড় বিষয়। আমাকে এর জন্য একটু হাততালি দেন। এটা অবশ্যই একটি বড় বিষয়। এটা একটি বড় বিষয়। সত্যি এটা বড়। (হাততালি) আপনি দেখছেন, অধিকাংশ মানুষ বুঝতে পারে না যে এটা শুধুমাত্র সংখ্যালঘুরা নয় যারা বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে ভাল করে না। সত্যি বলতে, আমরা এখানে আমেরিকানদের নিয়ে বলছি। আপনি যদি তা না জেনে থাকেন, যেখানে ২০ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপ্যানিক যারা বিজ্ঞান বা প্রকৌশলকে প্রধান বিষয় নিয়ে শুরু করে বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে গ্রাজুয়েট হয়ে বের হবে, মাত্র ৩২ ভাগ সাদা ঐসব ক্ষেত্রকে প্রধান বিষয় হিসেবে নিয়ে সেইসকল বিষয়ে সফল এবং গ্রাজুয়েট হয়ে বের হয়, এবং ৪২ ভাগ এশিয়ান-আমেরিকান, এবং তাই, আসল প্রশ্ন হচ্ছে, চ্যালেঞ্জটা কি? আসলে এর অংশবিশেষ হচ্ছে, কে-১২। আমাদের কে-১২ কে আরো শক্তিশালী করতে হবে। কিন্তু অন্যান্য অংশকে আমাদের ক্যাম্পাসে বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের সংস্কৃতির সাথে কাজ করতে হবে আপনি জানেন বা না জানেন, অনেক ছাত্র যাদের উচ্চ স্যাট নম্বর রয়েছে এবং এপি ক্রেডিটেও উচ্চ নম্বর রয়েছে যারা আমাদের দেশের অধিকাংশ স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যায় তারা তাদের প্রথম বছর শুরু করে মেডিক্যাল অথবা প্রকৌশলের কোর্স দিয়ে এবং পরবর্তীতে তারা তাদের প্রধান বিষয় বদল করে ফেলে। এবং সত্যি কথা বলতে এক নম্বর কারণ যা আমরা পেয়েছি তা হচ্ছে যে তারা প্রথম বছরের বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে ভাল করেনি। বাস্তবিক, আমরা আমেরিকার সর্বত্র প্রথম বছর বিজ্ঞান ও প্রকৌশলকে বলি, আগাছা পরিষ্কার করা কোর্স বা বাধা সৃষ্টিকারী কোর্সগুলো। আপনাদের মধ্যে কতজন চেনেন এমন কাউকে যে কিনা মেডিক্যাল বা প্রকৌশলে পড়া শুরু করেছে এবং পরবর্তী এক বা দুই বছরে তাদের প্রধান বিষয় পরিবর্তন করেছে ? এটা একটা আমেরিকান প্রতিযোগিতা। এই কক্ষে থাকা অর্ধেকের জন্য। আমি জানি। আমি জানি। আমি জানি। এবং এবিষয়ে মজার বিষয় হচ্ছে অধিকাংশ ছাত্রই বিচক্ষণ এবং কাজ করতে পারে। আমাদের উপায় বের করতে হবে কিভাবে তাদেরকে কাজে লাগানো যায়। তাহলে কোন চারটা কাজ আমরা করেছি সংখ্যালঘু ছাত্রদের সহায়তা করার জন যা কিনা এখন সকল সাধারণ ছাত্রদের সহায়তা করছে? নম্বর একঃ উচ্চ আকাঙ্খা। এজন্য শিক্ষার্থীদের একাডেমিক প্রস্তুতি বুঝতে হবে-- তাদের নম্বর, কোর্সের দৃঢ়তা, তাদের পরীক্ষা দেবার দক্ষতা, তাদের আচরণ, তাদের পেটের ক্ষুধা, তাদের কাজের জন্য অনুরাগ, কাজ করতে পারা। এবং এই অবস্থায় থেকে ছাত্রদের সহায়তা করতে প্রস্তুত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এটা বুঝতে হবে যে কঠোর পরিশ্রম পার্থক্যটা সৃষ্টি করে। আমার কিছুই আসে যায় না তুমি কতটা বুদ্ধিমান অথবা তুমি নিজেকে কতটা বুদ্ধিমান ভাবো। বিচক্ষণ মানেই আপনি সহজেই শেখার জন্য তৈরি। আপনি যদি শেখার জন্য উৎসাহিত হন এবং আপনি যদি ভালো প্রশ্ন করতে চান। আই.আই. রাবি, একজন নোবেল পুরষ্কারপ্রাপ্ত, বলেছেন যে তিনি যখন নিউ ইয়র্কে বড় হয়ে ওঠেন, তার বন্ধুদের অভিভাবকরা , বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করতো "আজ স্কুলে কি শিখেছো?" দিনের শেষে। এবং সে বললো, এর পরিবর্তে, তার ইহুদি মা তাকে বলতো, "ইজ্জি, তুমি কি আজকে ভালো কোন প্রশ্ন করেছো?" এবং তাই উচ্চ আকাঙ্খার সাথে কৌতুহল জড়িত এবং তরুণদের কৌতুহলী হতে উৎসাহিত করা উচিত। এবং এই সকল উচ্চাশার ফলস্বরূপ, আমরা এমন ছাত্রদের খুঁজতে শুরু করি যাদের সাথে আমরা কাজ করতে পারি দেখার জন্য কিভাবে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি, শুধুমাত্র বিজ্ঞান আর প্রকৌশলে টিকে থাকবার জন্য নয়, বরং শ্রেষ্ঠ হবার জন্য। কৌতূহলোদ্দীপক একটি উদাহরণঃ একজন যুবক যে কিনা প্রথম কোর্সে সি পেয়েছিল এবং মেডিক্যাল স্কুলে যেতে চেয়েছিল, আমরা তাকে বলেওছিলাম, "আমরা চাই তুমি কোর্সটা আবার কর, কারণ তোমার একটি শক্ত ভিত্তি থাকতে হবে যদি তুমি পরবর্তী ধাপে যেতে চাও।" প্রতিটি ভিত্তিই পরবর্তী ধাপে পার্থক্য সৃষ্টি করে। সে কোর্সটি আবার নিয়েছিল। সেই যুবকটি পরবর্তীতে ইউএমবিসি থেকে গ্রাজুয়েট হয়েছিল, এবং সে ছিল প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ যে কিনা পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে এম.ডি/ পিএইচডি করেছিল। সে এখন হার্ভাডে কাজ করে। চমৎকার গল্প। তার জন্য একটু হাততালি। (হাততালি) দ্বিতীয়ত, এটা শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাওয়া মানের বিষয় না। পরীক্ষায় পাওয়া মান গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। একজন তরুণীর অনেক ভাল গ্রেড ছিল পরীক্ষায়, কিন্তু টেস্টের নম্বর অতটা ভালো ছিল না। কিন্তু তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। সে একদিনও স্কুল বাদ দেয়নি, কে-১২। তার ভেতরে আগুন ছিল। সেই তরুণীটি তার পথে এগিয়ে গিয়েছিল, তার এখন একটি এমডি/পিএইচডি আছে হপকিন্স থেকে। সে এখন ফ্যাকাল্টিতে, মনোরোগবিদ্যায় যথেষ্ট দখল , নিউরোবিজ্ঞানে পিএইচডি। সে এবং তার উপদেষ্টার অধিকারপ্রাপ্তি আছে ভায়াগ্রার দ্বিতীয় ব্যবহারের উপর ডায়বেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে। তার জন্য বড় করে, বড় করে হাততালি। (হাততালি) এবং তাই উচ্চ আশা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, ছাত্রদের মাঝে সম্প্রদায় গড়ে তুলবার ধারণা। আপনারা সবাই জানেন, অধিকাংশ সময় বিজ্ঞান আর প্রকৌশলে আমরা একা একা কাজ করি। ছাত্রদের দলে কাজ করা শেখানো হয় না। এবং এইটাই আমরা করি গ্রুপের সাথে , তাদের নিজেদেরকে বুঝতে সাহায্য করা, তাদের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তোলা, একজন আর একজনকে সহায়তা প্রদান করা, কিভাবে ভাল প্রশ্ন করতে হয় তা শেখা, কিন্তু সাথে সাথে এটাও শেখা কিভাবে উত্তর দিতে হয় পরিষ্কারভাবে। আপনারা যেমন জানেন, নিজের জন্য ভাল ফল অর্জন এক জিনিস, অন্যকে ভালো করতে সাহায্য করা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। এবং এই দায়িত্বশীলতা অনুধাবন অনেক বড় পার্থক্য সৃষ্টি করে একজন মানুষের মাঝে। তাই এসকল ছাত্রদের মাঝে সম্প্রদায় গড়ে তোলা, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয়ত, গবেষকরাই গবেষক তৈরি করতে পারে ধারণাটা আপনি যে অর্থেই বলেন না কেন যেমন শিল্পী তৈরি করে নতুন শিল্পী অথবা আপনারা বলছেন যারা মানবিক বিজ্ঞানের শাখায় প্রবেশ করছে, যে বিভাগ বা বিষয়ের হোক না কেন- বিশেষ করে বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলে, যেমনটা শিল্পে, উদাহরণস্বরূপ- আপনার বিজ্ঞানীদের দরকার যারা ছাত্রদেরকে কাজে লাগাবে। এবং তাই আমাদের ছাত্ররা নিয়মিত বিজ্ঞানাগারে কাজ করছে। এবং একটা ভাল উদাহরণ যার প্রশংসা আপনারা সবাই করবেনঃ কয়েক বছর আগে এক তুষারঝড়ের সময়, আমাদের ক্যাম্পাসের একজন সত্যি সত্যি তার পরীক্ষাগারে কাজে ফিরে এলো কয়েকদিন পর, এবং তাদের সকল ছাত্রই পরীক্ষাগার ছেড়ে চলে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের প্যাকেটজাত খাবার ছিল। তারা পরীক্ষাগারে কাজ করছিল, এবং তারা কাজটাকে স্কুলের কাজ হিসেবে দেখেনি, দেখেছে তাদের জীবন হিসেবে। তারা জানতো তারা এইডস গবেষণায় কাজ করছে। তারা অসাধারণ কিছু প্রোটিনের নকশা নিয়ে কাজ করছিল। এবং মজার বিষয় হল যে তারা সবাই একই কাজে ব্যস্ত ছিল। এবং সে বললো, "এর চেয়ে ভাল এটা হতে পারে না।" এবং এরশেষে, আপনি যদি আপনার সম্প্রদায়কে সাথে পেয়েছেন এবং আপনাদের উচ্চ আশা রয়েছে এবং আপনাদের গবেষক রয়েছে যারা আরও গবেষক তৈরি করতে পারে, আপনাদের এমন লোক থাকতে হবে যেকিনা একজন ফ্যাকাল্টির সদস্য হিসেবে ছাত্রদের সাথে যুক্ত হতে চাইছে, এমনকি শ্রেণীকক্ষেও। আমি জীবনেও এমন একজন ফ্যাকাল্টির সদস্যকে ভুলবো না যে কর্মচারীদের ডেকে বলছে, "আমার ক্লাসে একজন যুবক আছে, একজন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক, এবং সে মনে হচ্ছে তার কাজের ব্যাপারে উৎসাহী নয়। সে নোট নিচ্ছিল না, আমাদের তার সাথে কথা বলতে হবে।" যে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হচ্ছে শিক্ষক প্রতিটি শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করছিল বোঝার জন্য যে কে সত্যি সত্যি যুক্ত ছিল এবং কে না এবং সে বলছিল, "দেখি আমি কিভাবে তাদের সাথে কাজ করতে পারি। আমার সহকারীদের নিয়ে আসি আমাকে সাহায্য করবার জন্য।" এটা এই রকমভাবে যুক্ত ছিল সবকিছুর সাথে। সেই যুবক এখন আসলে ডিউকে নিউরোপ্রকৌশলের ফ্যাকাল্টির সদস্য। (তার জন্য বড় করে এক হাততালি) (হাততালি) এবং এখন এর গুরুত্ব হচ্ছে এই যে আমরা এখন এই মডেল দাঁড় করিয়েছি যা মানুষকে সাহায্য করছে, শুধুমাত্র মাননির্ধারণে নয় বরং কি কাজ করছে তা নির্ণয়ে। এবং আমরা যা শিখেছি তা হচ্ছে আমাদের চিন্তা করতে হবে আমাদের কোর্স নতুন করে সাজানো নিয়ে। এবং এই কারণে আমরা রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান নতুন করে সাজিয়েছি। কিন্তু এখন আমরা মানবিক এবং সামাজিক বিজ্ঞান শাখাকে নতুন করে সাজাতে চাচ্ছি। কারণ অনেক ছাত্র ক্লাসে একঘেয়ে বোধ করে। আপনারা কি তা জানেন? অনেক ছাত্রই, কে-১২ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু বসে থাকতে চায় না এবং কারো কথা শূনতে চায় না। তারা কাজে নিয়োজিত হতে চায়। এবং আমরা যা করেছি- আপনারা যদি আমাদের রসায়ন আবিষ্কার কেন্দ্রের ওয়েবসাইটের দিকে তাকান, আপনারা দেখতে পাবেন যে সকল দেশের মানুষ সেখানে আসে দেখতে কিভাবে আমরা আমাদের কোর্সগুলোকে নতুন করে সাজাচ্ছি, সহযোগিতার উপর, প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর প্রাধান্য প্রদান করা হচ্ছে, আমাদের জৈবপ্রযুক্তির কোম্পানিগুলোর সমস্যা আমাদের ক্যাম্পাসে ব্যবহার করা হচ্ছে, এবং ছাত্রদের তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করা হয় না, কিন্তু তাদের তত্ত্ব নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হচ্ছে। এবং এটা এত ভালো কাজ করছে যে আমাদের মেরীল্যাণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় বেশি বেশি করে কোর্সগুলকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এটাকে বলা হয় একাডেমিক উদ্ভাবন। এবং এসব কিছুর অর্থ কি তাহলে? এখন এর অর্থ হচ্ছে, শুধুমাত্র বিজ্ঞান আর প্রকৌশলে নয়, আমাদের এখন শিল্প-কলা, মানবিক এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম আছে এমনকি শিক্ষক প্রশিক্ষণ, বিশেষকরে মেয়েদের জন্য আইটি শিক্ষা। আপনি যদি না জেনে থাকেন তবে বলি, ২০০০ সাল থেকে ৭৯ ভাগ হ্রাস ঘটেছে মেয়েদের সংখ্যায় যারা কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রধান বিষয় হিসেবে নেয়। এবং আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হচ্ছে পার্থক্যটা সৃষ্টি হবে শিক্ষার্থীদের মাঝে গোষ্ঠী গঠনের মাধ্যমে। যেখানে মেয়েদের, তরুণ সংখ্যালঘু ছাত্রদের এবং সাধারণভাবে সকল ছাত্রকে বলা হবে, তুমি এটা করতে পারো। এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ হল যে তাদেরকে সুযোগ দেওয়া একটি গোষ্ঠী গঠনের যেখানে শিক্ষকরা তাদের কাজে টেনে নেবে এবং আমরা ধার্য করবো কি কাজ করে এবং কি কাজ করে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, একজন ছাত্রের যদি নিজের সম্পর্কে আত্মবোধ থাকে, তাহলে স্বপ্ন এবং মূল্যবোধ এক বিস্ময়কর ব্যবধান সৃষ্টি করতে পারে এই ক্ষেত্রে। আমি ১২ বছর বয়সে যখন বার্মিংহামের জেলে, আমি চিন্তা করতাম, "আচ্ছা আমার ভবিষ্যৎ কেমন হবে?" আমার কোন ধারণাই ছিল না বার্মিংহামের এই ছোট্ট বালকটির পক্ষে একদিন সম্ভব হবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট হওয়া যেখেন ১৫০টি দেশের শিক্ষার্থী আছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র টিকে থাকতে আসে না, যেখানে তারা ভালবাসে শিখতে, যেখানে তারা সেরা হতে পছন্দ করে, যেখানে তারা একদিন বদলে দেবে দুনিয়াকে। অ্যারিস্টটল বলেছিল, "উৎকর্কষতা কখনো দুর্ঘটনা হতে পারে না। তা সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য, অকৃত্রিম অধ্যবসায় এবং অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার ফসল। তা অসংখ্য বিকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের প্রতিনিধিত্ব করে।" এবং এরপর সে এমন কিছু বললো যা আমাকে শিহরিত করেছিল। সে বললো, "সুযোগ নয়, ইচ্ছাই নির্ধারণ করে আপনার লক্ষ্য।" সুযোগ নয়, পছন্দ বা ইচ্ছাই নির্ধারণ করে আপনার লক্ষ্য, স্বপ্ন এবং যোগ্যতা। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। (হাততালি) আমি সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু কৌতূহলোদ্দীপক জিনিস লক্ষ্য করেছি। যেকোন বিপজ্জনক কিছুর জন্য বৈধতা অনুমতির দরকার হয়। যেমন গাড়ি চালাতে শেখা, একটি বন্দুক কেনা, বিবাহ করা। (হাসি) আসলেই তা সবকিছুর ক্ষেত্রে সত্যি কেবলমাত্র প্রযুক্তির ছাড়া। কিছু কারণে, এটার জন্য কোন আদর্শ সিলেবাস নেই, কোন প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেই। তারা খালি আপনাকে আপনার কম্পিউটার দিয়ে দেয় এবং তারপর আপনাকে বের করে দেয়। আপনি তা কিভাবে শিখবেন? অসমোসিসের মত করে। কেউ কখনও বসে থাকে না এবং আপনাকে বলবে, "এইযে এভাবে এটা কাজ করে।" তাই আজ আমি আপনাদের ১০টা জিনিস বলতে যাচ্ছি যা আপনারা ভাবতেন যে সবাই জানে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে এসব কেউই জানে না। ঠিক আছে, প্রথমত, ওয়েবে, আপনি যখন ওয়েবে এবং আপনি যখন নিচে নামতে চান, মাউস ধরবেন না এবং স্ক্রলবার ব্যবহার করবেন না। সেটা একটা ভয়াবহ সময় নষ্টের ব্যাপার। আপনি এটা করবেন যদি আপনাকে ঘন্টা প্রতি বেতন দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে স্পেসবার চাপুন। স্পেসবার এক পেজ নিচে আপনাকে নিয়ে যাবে। সিফট বোতামটা চেপে ধরে থাকুন উপরের পেজে যেতে। সুতরাং এক পেজ নামতে স্পেসবার। এটা যেকোন কম্পিউটারের যেকোন ব্রাউজারে কাজ করবে। এছাড়াও ওয়েবে আপনি যখন কোন এইরকম ফর্ম পুরন করছেন যেমন আপনার ঠিকানা আমি ধরে নিচ্ছি আপনি ট্যাব বোতামটায় চাপ দিয়ে কিভাবে এক বক্স থেকে অন্য বক্সে যেতে হয় তা জানেন। কিন্তু যে পপ-আপ তালিকা এসে পড়ে যেখানে আপনি আপনার বিভাগ দেন তার ক্ষেত্রে? পপ-আপ তালিকা খুলবেন না। সেটা আপনার ক্যালরির এক ভয়াবহ অপচয়। আপনার বিভাগের নামের প্রথম অক্ষরটি লিখুন, যতক্ষণ না পাচ্ছেন ততক্ষণ লিখতে থাকুন। সুতরাং আপনি যদি কানেক্টিকাট চান, সি, সি, সি লিখুন। আপনি যদি টেক্সাস চান, লিখুন টি, টি এবং আপনি সাথে সাথেই পেয়ে যাবেন এমনকি পপ-আপ মেন্যুও ওপেন করতে হবে না আপনাকে। এছাড়া ওয়েবে, যখন লেখাগুলো খুবই ছোট, আপনি যা করতে পারেন তা হচ্ছে কন্ট্রোল বোতাম ধরে থেকে চাপ দিন প্লাস, প্লাস, প্লাস। যতবার প্লাস চাপ দিবেন তত বার লেখা বড় হতে থাকবে। এটা সব কম্পিউটারেই কাজ করে, সব ওয়েব ব্রাউজারে, অথবা মাইনাস, মাইনাস, মাইনাস যদি আবার ছোট পেতে চান। আপনি যদি অ্যাপল এর ম্যাক ব্যবহার করেন, কন্ট্রোলের বদলে কমাণ্ড ব্যবহার করবেন। আপনি যখন ব্ল্যাকবেরী, অ্যাণ্ড্রয়েড, আইফোন থেকে লিখছেন আপনার যতিচিহ্ণ লিখবার জন্য যতিচিহ্ন লে-আউটে যাবার দরকার নেই দাড়ি দেবার জন্য এবং এরপর একটি স্পেস এবং এরপর পরের শব্দটির প্রথম অক্ষর বড় হাতের লেখার জন্য। শুধুমাত্র স্পেসবারটা দুইবার চাপুন। ফোন আপনার হয়ে পিরিয়ড, স্পেস এবং বড় অক্ষর বসায়। শুধু স্পেস, স্পেস। এটা সত্যি চমৎকার। এছাড়া মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে, সকল ফোনেই আপনি যদি কাউকে আবার ফোন করতে চান যাকে আপনি আগে ফোন করেছিলেন, আপনার যা করতে হবে তা হচ্ছে কল বোতামে চাপ দিন, এবং তা আপনার শেষ ফোন নাম্বারকে বক্সে এনে দেয়, এবং এই সময় আপনি আবার কল বোতামে চাপ দিন, দেখবেন ফোন যাচ্ছে। তাই আপনার সাম্প্রতিক কললিষ্টে যেতে হবে না, তাই আপনি যদি কাউকে ফোন করতে চাচ্ছেন, আপনি শুধুমাত্র কল বোতামে চাপ দিন। এইযে, এটা এমন এক জিনিস যা আমাকে পাগল করে ফেলে। যখন আমি আপনাকে কল করি এবং আপনার ভয়েস মেইলে একটা মেসেজ রেখে যাই, আমি আপনাকে বলতে শুনি, " মেসেজ রেখে যান।" এবং এরপর আমাকে ১৫ সেকেণ্ড ধরে নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেন মনে হয় ৪৫ বছর ধরে আমাদের এন্সারিং মেশিন ছিল না! (হাসি) আমি তিক্ত নই। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে একটি কিবোর্ড শর্টকার্ট আছে যা আপনাকে সরাসরি 'বিপ'এর কাছে নিয়ে যায়। এন্সারিং মেশিনঃ টোনের পরপরই-বিপ। ডেভিড পোগঃ দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ক্যারিয়ারসমূহ একই সংক্ষেপ বা শর্টকার্ট গ্রহণ করেনি, তাই বিভিন্ন কোম্পানির জন্য বিভিন্ন। তাই এই কাজের জন্য আপনার উপর নির্ভর করছে আপনি যে মানুষটিকে ফোন দিচ্ছেন তার কোম্পানির উপর। আমি কিন্তু বলিনি এটা সম্পূর্ণ পারফেক্ট হবে। ঠিক আছে, আপনাদের অধিকাংশ মনে করে গুগুল হচ্ছে যেকোন ওয়েবপেজ দেখার জন্য, কিন্তু তা অভিধান হিসেবেও কাজ করে। যেমন 'define' শব্দটি লিখুন এবং এরপর যে শব্দটি সম্পর্কে আপনি জানতে চান তা লিখুন। আপনার কিন্তু কোন কিছুতে ক্লিকও করতে হবে না। সংজ্ঞা যখনই আপনি টাইপ করছেন এসে পড়ে। এ ছাড়াও এটি একটি সম্পূর্ণ এফএএ ডাটাবেজ। এয়ারলাইনের নাম এবং ফ্লাইটের নাম টাইপ করুন। আপনি দেখতে পাবেন ফ্লাইটটি কোথায়, গেট নাম্বার, টার্মিনাল নাম্বার, কতক্ষণে তা অবতরণ করবে। আপনার এর জন্য কোন অ্যাপের দরকার নেই। এটা আবার একটি একক এবং মুদ্রা রূপান্তর। আবার, আপনাকে যেকোন ফলাফলে ক্লিক করতে হবে না। খালি বক্সটিতে টাইপ করুন এবং এইযে আপনার উত্তর। আমরা যখন বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলছি , আপনি যখন হাইলাইট করতে চান-- এটা শুধুই একটি উদাহরণ। (হাসি) আপনি যখন একটি শব্দকে হাইলাইট করতে চান। দয়া করে নিজের জীবনটাকে একে টেনে নষ্ট করবেন না একজন শিক্ষানবিসের মত মাউস টেনে। দুইবার ক্লিক করুন শব্দটিতে। ২০০ দেখুন। আমি ডাবল ক্লিক করি। একদম নিঁখুতভাবে শব্দটিকে সনাক্ত করে। আরও, যা হাইলাইট করেছেন তা মুছে ফেলবেন না। আপনি তার উপরেই টাইপ করতে পারবেন। এটা সকল প্রোগ্রামেই। আরও, আপনি ডাবল ক্লিক করতে পারেন, টেনে একটি শব্দ করে হাইলাইট করতে থাকুন। আরো অনেক নিঁখুত। আবার, মুছে ফেলার কষ্ট করবেন না। এর উপরে খালি লিখুন। (হাসি) শাটারের বিলম্বকাল হচ্ছে সেই সময় যা শাটার বোতামে চাপ দেওয়া এবং ক্যামেরা যে সময়ে ছবিটি নেয় তার মধ্যেকার দূরত্ব। ১০০০ ডলারের নিচের যেকোন ক্যামেরায় এটা অতি ব্যাহতকারী এক বিষয়। (ক্যামেরার ক্লিক) (হাসি) এর কারণ ক্যামেরার সময় লাগে ফোকাস এবং আলোকসম্পাতের সময়কাল পরিমাপ করতে, কিন্তু আপনি যদি একটু আগে ফোকাস করেন আলতো চাপ দিয়ে, এবং আঙ্গুল চেপে ধরেন পরে, কোন শার্টার সময়ের বিলম্ব ঘটে না! আপনি এখন তা সব সময় পাবেন। আমি এই মাত্র আপনার ৫০ ডলারের ক্যামেরাকে ১০০০ ডলারের ক্যামেরায় পরিণত করেছি একটু কৌশল খাটিয়ে। এবং শেষ কৌশল হিসেবে, এটা অনেক সময় ঘটে যে আপনি হয়তো কোথাও বক্তৃতা দিচ্ছেন এবং কোন কারণে শ্রোতারা স্লাইডের দিকে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে না তাকিয়ে! (হাসি) এরকম যখন হয়, এটা ঘটে কিনোটে, পাওয়ার পয়েন্টে, এটা সকল প্রোগ্রামেই ঘটে, আপ্নারা যা করবেন তা হচ্ছে বি অক্ষরে চাপ দিবেন, বি হচ্ছে ব্ল্যাকাউটের আদ্যক্ষর, স্লাইড পুরো অন্ধকার হয়ে যাবে এবং সবাই তখন আপনার দিকে তাকাবে, এবং আপনি যখন আবার শুরু করতে চাইবেন আপনি আবার বি চাপুন, এবং আপনার যদি গতি থাকে, আপনি ডাব্লিউ বোতামে চাপ দিতে পারেন, পুরো সাদা হয়ে যাবে স্ক্রীন, এবং তারপর আপনি আবার ডাব্লিউ চাপ দেন স্লাইড ফিরে আসবে। সুতরাং আমি জানি আমি খুব তাড়াতাড়িই করছি। আপনি যদি কোন কিছু বুঝতে না পেরে থাকেন, আমি আপনাকে অত্যন্ত আনন্দের সাথে এই কৌশলগুলো পাঠাতে পারি। এরমধ্যে সবাইকে অভিনন্দন। আপনারা সবাই আপনাদের ক্যালিফোর্নিয়া প্রযুক্তির অনুমতিপত্র পেয়ে গেছেন। একটি চমৎকার দিন উপভোগ করুন। (হাততালি) আপনি যা করছেন, এই মুহূর্তে, ঠিক এই মুহূর্তে, তা আপনাকে মেরে ফেলছে। গাড়ি বা সুদ বা এই যে ছোট মোবাইল যন্ত্র যা আমরা সাথে রাখি তার চেয়েও বেশী, যে প্রযুক্তি আপনারা প্রতিদিন ব্যবহার করছেন এই যে, আপনার ভুঁড়ি। এখনকার দিনে মানুষ প্রতিদিন ৯.৩ ঘণ্টা বসে থাকে, যা কিনা আমাদের ঘুমানোর সময় ৭.৭ ঘণ্টার চেয়ে বেশী। বসে থাকার প্রাদুর্ভাব খুবই বেশী, আমরা এমনকি এই প্রশ্নও করি না যে আমরা কতক্ষণ সেটা করছি, এবং অন্য সবাই করছে তাই, আমাদের এটা মনেও হয় না যে আমরা যা করছি তা ঠিক নয়। এইভাবে, বসে থাকা হয়ে গেছে আমাদের প্রজন্মের জন্য ধূমপানের সমান। অবশ্যই এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব রয়েছে, ভয়ংকর কিছু, কোমর ছাড়াও। ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার, সরাসরি ভাবে আমাদের শারীরিক সক্রিয়তার অভাবের সাথে যুক্ত, প্রকৃতপক্ষে ১০ শতাংশ উভয়ের জন্য। ৬ শতাংশ হৃদরোগের ক্ষেত্রে, সাত শতাংশ টাইপ দুই ডায়াবেটিসের জন্য, যার কারণে আমার বাবা মারা গিয়েছিলেন। এখন, এই পরিসংখ্যানের যে কোন একটা আমাদের উপলব্ধি করায় যে, আমাদের বসে থাকা কম করতে হবে, কিন্তু আপনি যদি আমার মত হয়ে থাকনে, তবে আপনি উপলব্ধি করবেন না। যা আমাকে সক্রিয় করেছে তা হচ্ছে সামাজিক মেলামেশা। কেউ একজন আমাকে একটি সভায় ডেকেছিল, কিন্তু আমাকে বসাতে পারেননি একটা নিয়মিত ধরনের সভাস্থলে এবং আমাকে বললেন, "আমি কালকে আমার কুকুরকে হাঁটাতে নিয়ে যাবো। তুমি যাবে সাথে?" এটা হয়তো আপনার কাছে অদ্ভুত মনে হবে, এবং আসলে, সেই প্রথমবার দেখা করার সময়, আমার মনে আছে আমি ভাবছিলাম, "পরবর্তী প্রশ্নটা আমাকেই করতে হবে।" কারণ আমি জানতাম যে আমি হাঁপিয়ে যাবো ওই কথোপকথনের সময়। এবং তবু, আমি এই ধারণাটা নিয়েছিলাম এবং তা আমার নিজের করেছিলাম। তাই এক কাপ কফির জন্য দেখা করার পরিবর্তে অথবা কৃত্রিম আলো জ্বালা সভাস্থলের পরিবর্তে, আমি মানুষজনকে বলতে লাগলাম হেঁটে হেঁটে কথা বলতে এবং দেখা করতে, যেটা সপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ মাইলের মত হতো। ওটা আমার জীবনকে বদলে দিয়েছিল। কিন্তু তার আগে, যা আসলে ঘটেছিল তা হচ্ছে আমি এটাকে মনে করতাম যে, আপনি আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারেন, অথবা আপনি আপনার দায়ের ব্যবস্থা করতে পারেন, এবং একটিকে পাবার জন্য অপরটিকে খোয়াতে হয়। এখন, কয়েকশ মিটিং হেঁটে করবার পর, আমি কিছু জিনিস শিখেছি। প্রথমত, এক অভাবনীয় জিনিষ হল বাক্সের বাইরে আসার যা আপনাকে বাক্সের বাইরে ভাবতে সাহায্য করে। প্রকৃতি অথবা ব্যায়াম যাই বলুন না কেন, এটা আসলে কাজ করে। এবং দ্বিতীয়, এবং সম্ভবত সবচেয়ে প্রতিফলিত বিষয়, যে আমাদের প্রত্যেকে কি পরিমাণ সমস্যা এর বিরুদ্ধে তুলে ধরতে পারি যখন আমরা তেমন প্রকৃতির হই না। এবং আমরা যদি সমস্যাটার সমাধান করতে যাই এবং বিশ্বের দিকে তাকাই একটু ভিন্নভাবে, সেটা ব্যবসা বা শাসনপ্রক্রিয়া অথবা পরিবেশগত বিষয়, বা নতুন নিয়োগ সৃষ্টি নিয়ে হোক না কেন হয়তো আমরা চিন্তা করতে পারি কিভাবে এই সমস্যাগুলোকে নতুন ভাবে সাজানো যায় যাতে দুটো জিনিসই ধরে রাখা যায়। কারণ এটা যখন ঘটে, এই হেঁটে কথা বলার ধারণাটা, তখনই সবকিছু করার যোগ্য, দীর্ঘস্থায়ী আর স্থিতিশীল হয়। তো এই কথোপকথনটা আমি পশ্চাৎ দেশ নিয়ে শুরু করেছিলাম তাই আমি এটা শেষ করবো সারমর্ম দিয়ে, যা হচ্ছে, হাঁটুন এবং বলুন। হেঁটে বলুন। আপনি ভেবে অবাক হবেন কিভাবে মুক্ত বাতাস নতুন চিন্তার সঞ্চার করতে পারে, এবং যেভাবে আপনি কাজ করে থাকেন, আপনি একদম নতুন কিছু চিন্তা-ভাবনা আপনার জীবনে আনবেন। (ধন্যবাদ) (হাততালি) অনেক ধন্যবাদ আপনাদের। ১২ বছর আগে আমি আমেরিকাতে চলে এসেছিলাম আমার স্ত্রী টেরি আর দুই সন্তানকে নিয়ে। সত্যি কথা বলতে, আমরা আসলে লস এঞ্জেলসে চলে এসেছিলাম-- (দর্শকের হাসি) এটা ভেবে যে আমরা আমেরিকাতে চলে আসছিলাম, কিন্তু যাই হোক, এটা ছিলো একটা ছোট বিমান ভ্রমণ- লস এঞ্জেলস থেকে আমেরিকা পর্যন্ত। ১২ বছর আগে এসেছিলাম এখানে আর যখন এলাম, আমাকে অনেক কিছু বলা হয়েছিলো, যেমন, "আমেরিকানরা বিদ্রূপ বুঝতে পারে না।" এ ধারণা খুঁজে পেয়েছেন কখনো? এটা সত্য নয়। এ দেশের আনাচে কানাচে আমি ভ্রমণ করেছি। এমন কোন প্রমাণ আমি পাই নি যে আমেরিকানরা বিদ্রূপ বুঝতে পারে না। এটা সেসব সাংস্কৃতিক উপকথার একটি, যেমন, "ব্রিটিশরা গম্ভীর প্রকৃতির।" আমি জানি না মানুষ কেন এটা চিন্তা করে। যে দেশেরই মুখোমুখি হয়েছি আমরা, সেটাকেই আক্রমণ করে দখল করেছি। (হাসি) কিন্তু এটা সত্য নয় যে আমেরিকানরা বিদ্রূপ বুঝতে পারে না, কিন্তু আমি চাই আপনারা জানুন যে, মানুষ আপনাদের অজান্তে আপনাদের সম্পর্কে সেটাই বলছে। জানেন তো, ইউরোপে আপনি যখন বৈঠকখানা থেকে চলে যান, মানুষ বলে, ভাগ্য ভালো আপনার উপস্থিতির সময় কেউ বিদ্রূপাত্মক ছিলো না। কিন্তু আমি জানলাম যে, আমেরিকানরা বিদ্রূপ বোঝে যখন এ আইনের কথা জানতে পারলাম- "বাদ যাবে না কোন শিশু।" কারণ, যে ব্যক্তিই ঐ শিরোনামের কথা ভেবে থাকেন না কেন, তিনি বিদ্রূপ বোঝেন, তাই নয় কি? কারণ-- (হাসি) (হাততালি) কারণ, এটা লক্ষ লক্ষ শিশুকে বাদ দিচ্ছে। এখন আমি দেখতে পাই যে, কোন আইনের জন্য সেটা খুব একটা আকর্ষণীয় নাম নয়: লক্ষ লক্ষ শিশু বাদ পড়ে যায়। আমি তা দেখতে পাচ্ছি। পরিকল্পনাটা কী? ঠিক আছে, আমরা প্রস্তাব করি যেন লক্ষ লক্ষ শিশু বাদ পড়ে যায়, এবং এটা এভাবেই কাজ করতে যাচ্ছে। এবং এটা সুন্দরভাবে কাজ করছে। দেশের (আমেরিকার) কিছু জায়গায় ৬০% শিশু হাই স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। আমেরিকার আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোতে এ হার হলো শতকরা ৮০ ভাগ শিশু। আমরা যদি সে সংখ্যাকে অর্ধেক করতাম, একটা অনুমান হলো, তা আমেরিকার অর্থনীতিতে একটা নীট মুনাফা তৈরি করতো যার পরিমাণ ১০ বছরে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটা একটা ভালো অংক, তাই নয় কি, যা আমাদের করা উচিত? একটা বড় ধরনের অর্থ আসলে ব্যয় হয় (স্কুল থেকে) ঝরে পড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। কিন্তু এই ঝরে পড়ার ঝামেলাটা বিশাল সমস্যার ছোট একটা অংশ মাত্র, যেটা দেখা যায়। এটা সেসব শিশুকে বিবেচনা করে না যারা স্কুলে আছে কিন্তু স্কুল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, যারা এটাকে (স্কুলকে) উপভোগ করে না, যারা এখান (স্কুল) থেকে প্রকৃতপক্ষে লাভবান হয় না। আর এর কারণ এটা নয় যে, আমরা যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করছি না। আমেরিকা শিক্ষা ক্ষেত্রে অন্য অধিকাংশ দেশের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে। (আমেরিকার) ক্লাসগুলোর আকার অনেক দেশের ক্লাসগুলোর চেয়ে ছোট। এবং প্রতি বছর শত শত উদ্যোগ নেয়া হয় শিক্ষাকে উন্নত করার জন্য। সমস্যা হলো, এর সবকিছু ভুল দিকে যাচ্ছে। তিনটি মূলনীতি রয়েছে যেগুলোর উপর ভিত্তি করে মানুষের জীবন বিকশিত হয়, এবং এগুলো অসঙ্গতিপূর্ণ হয় শিক্ষার সংস্কৃতির মাধ্যমে যেখানে অধিকাংশ শিক্ষককে পরিশ্রম করতে হয় আর অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে সহ্য করে টিকে থাকতে হয়। প্রথম মূলনীতি হলো, মানুষ প্রাকৃতিকভাবে আলাদা ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। আমি কি আপনাদের জিজ্ঞাসা করতে পারি, আপনাদের মধ্যে কতজনের নিজের ছেলেমেয়ে রয়েছে? ঠিক আছে। অথবা নাতি-নাতনি। দুই ছেলেমেয়ে বা তারও বেশি? ঠিক আছে। আর বাকি সবাই এরকম ছেলেমেয়ে দেখেছেন। (দর্শকের হাসি) ঘুরঘুর করতে থাকা ছোট ছোট মানুষ। আমি একটা বাজি ধরবো আপনাদের সাথে, এবং এ বাজিতে জেতার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। আপনাদের যদি দুই বা তার বেশি ছেলেমেয়ে থাকে, আমি বাজি ধরছি যে, তারা একজন আরেকজনের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই নয় কি? তাই নয় কি? (হাততালি) আপনারা তাদেরকে কখনো গুলিয়ে ফেলবেন না, ফেলবেন কি? যেমন, "তোমরা কে কোনজন? আমাকে মনে করিয়ে দাও। তোমাদের মা আর আমি রং দিয়ে তোমাদের চেনার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি, যাতে আমরা গুলিয়ে না ফেলি। "বাদ যাবে না কোন শিশু"- আইনের অধীনে যে শিক্ষা, তা বৈচিত্র্যের উপর নয়, বরং প্রথাগত বাধ্যবাধকতার উপর প্রতিষ্ঠিত। স্কুলগুলোকে যা করতে উৎসাহিত করা হয় তা হলো, কৃতিত্ব অর্জনের একটা খুব সীমিত গণ্ডির মধ্যে শিশুরা কী করতে পারে তা খুঁজে বের করা। "বাদ যাবে না কোন শিশু"- আইনের অন্যতম ফলাফল হিসাবে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছোট হয়ে এসেছে তথাকথিত স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) শিক্ষাক্রমে। তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি এখানে বিজ্ঞান আর গণিতের বিরুদ্ধে বলতে আসি নি। ঠিক তার বিপরীতে, এগুলো দরকারী, কিন্তু যথেষ্ট নয়। প্রকৃত শিক্ষাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে শিল্পকলাতে, মানবিক বিভাগে, শারীরিক শিক্ষাতে। অনেক শিশু, দুঃখিত, ধন্যবাদ -- (হাততালি) -- বর্তমানে আমেরিকার একটা আনুমানিক হিসাব হলো, শতকরা ১০ ভাগের মতো শিশু বিভিন্ন লক্ষণসহ ধরা পড়ছে, যাকে বলা হচ্ছে অমনোযোগের অসুখ। এডিএইচডি (অমনোযোগের অসুস্থতা)। আমি বলছি না যে, এমন ব্যাপার বলে কিছু নেই। আমি শুধু বিশ্বাস করি না যে, এটি এমন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার মতো। আপনারা যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিশুদের বসিয়ে রাখেন অফিসের নিচু মানের কাজ করানোর জন্য, অবাক হবেন না যদি তারা ছটফট করতে শুরু করে, জানেন তো? (হাসি) (হাততালি) অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুরা মানসিক কোন সমস্যাতে ভুগছে না। তারা কষ্ট পাচ্ছে শৈশবের কারণে। (দর্শকের হাসি) এবং আমি এটা জানার কারণ হলো, আমি আমার প্রথম জীবন কাটিয়েছিলাম একজন শিশু হিসাবে। আমি পুরো ব্যাপারটার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। শিশুরা সবচেয়ে ভালো করে একটা উদার পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে, যা তাদের বিভিন্ন ধরনের মেধার প্রশংসা করে, শুধু সেসব মেধার ছোট একটা অংশকে নয়। আর, যা হোক, শিল্পকলা গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে নয় যে, এগুলো গণিতের স্কোর ভালো করে। এগুলো (শিল্পকলা) গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা শিশুসত্তার বিভিন্ন অংশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, যেগুলো অন্যথায় অধরা থেকে যায়। দ্বিতীয়টি (মূলনীতি) হলো, ধন্যবাদ - (হাততালি) দ্বিতীয় যে মূলনীতি মানুষের জীবনের বিকাশকে এগিয়ে নিয়ে যায়, তা হলো- জানার আগ্রহ। আপনারা যদি একজন শিশুর জানার আগ্রহকে জ্বালিয়ে দিতে পারেন, তারা প্রায় সময় এর বেশি সাহায্য ছাড়াই শিখবে। শিশুরা হলো সহজাত শিক্ষার্থী। এটা একটা আসল কৃতিত্ব এ বিশেষ ক্ষমতাকে অসুবিধায় ফেলে দেয়া, অথবা দমিয়ে দেয়া। জানার আগ্রহ হলো অর্জনের চালিকাশক্তি। আমি যে কারণে এটা বলি, যদি আমি এভাবে বলতে পারি, বর্তমান সংস্কৃতির অন্যতম ফলাফল হলো শিক্ষকদের পেশাদারিত্বকে কেড়ে নেয়া। বিশ্বে এমন কোন ব্যবস্থা বা কোন দেশে এমন স্কুল নেই যা তার শিক্ষকদের চেয়ে ভালো। শিক্ষকরা হলেন স্কুলের সাফল্যের জীবনদাতা। কিন্তু শিক্ষাদান একটি সৃজনশীল পেশা। ঠিক ভাবে চিন্তা করলে, শিক্ষাদান বক্তৃতাদানের একটা ব্যবস্থা নয়। জানেন তো, আপনারা শুধু জ্ঞানদানের জন্য সেখানে নেই। খুব ভালো শিক্ষকরা সেটা করেন, কিন্তু খুব ভালো শিক্ষকরা আরো যা করেন তা হলো- পরামর্শ দেন, উদ্দীপিত করেন, অনুপ্রেরণা যোগান, শিক্ষাকাজে (শিক্ষার্থীদের) জড়িত করেন। দেখুন, পরিশেষে শিক্ষা হলো শেখার ব্যাপার। যদি কোন কিছু শেখা না হয়, তাহলে সেখানে কোন শিক্ষাকাজ চলছে না। এবং মানুষ প্রচুর সময় ব্যয় করতে পারে শেখার উপর কখনো কোন আলোচনা ছাড়াই শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করার মাধ্যমে। শিক্ষার মূল লক্ষ্যই হলো মানুষকে শেখার কাজটা করানো। আমার একজন বন্ধু, পুরানো বন্ধু-- আসলে অনেক পুরানো, সে আর জীবিত নেই। (হাসি) এটা ততটুকুই পুরানো হতে পারে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে। কিন্তু সে চমৎকার একজন মানুষ ছিলো, চমৎকার এক দার্শনিক। সে কাজ আর অর্জনের অর্থের পার্থক্য নিয়ে কথা বলতো। জানেন তো, আপনারা কোন একটা কাজে জড়িত থাকতে পারেন, কিন্তু সেটা আসলে অর্জন করতে পারছেন না, ডায়েটিংয়ের মতো। এটা একটা খুব ভালো উদাহরণ, জানেন তো। এই তো তিনি। ডায়েটিং করছেন। উনার কি ওজন কমছে? না, কমছে না আসলে। শিক্ষাদান হলো এমন একটা শব্দ। বলতে পারেন, "উনি ডেবোরাহ, ৩৪ নং রুমে আছেন, তিনি শিক্ষাদান করছেন।" কিন্তু কেউ যদি কিছু না শেখে, তিনি হয়তো শিক্ষাদানের কাজে জড়িত আছেন কিন্তু আসলে কাজটা সম্পূর্ণ করছেন না। একজন শিক্ষকের ভূমিকা হলো শেখার কাজকে সহজ করা। এই তো। এবং আমি মনে করি, সমস্যার অংশ হলো, শিক্ষার মূল সংস্কৃতি কেন্দ্রীভূত হয়েছে শিক্ষাদান আর শেখার উপর নয়, বরং পরীক্ষার উপর। পরীক্ষা প্রয়োজনীয়। মানোপযোগী করা পরীক্ষাগুলোর একটা গুরুত্ব আছে। কিন্তু তাদের উচিত নয় শিক্ষার মূল সংস্কৃতিতে পরিণত হওয়া। তাদের উচিত বিশ্লেষণধর্মী হওয়া। তাদের উচিত সাহায্য করা। (হাততালি) আমি যদি একটা ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য যাই, আমি কিছু মানসম্মত পরীক্ষা চাই। আসলেই চাই। আমি জানতে চাই আমার কোলেস্টেরলের পরিমাণ যা একটা মানসম্মত স্কেলে অন্য সবার কোলেস্টেরলের পরিমাণের সাথে তুলনা করা। আমি এমন একটা স্কেলের ভিত্তিতে এটা জানতে চাই না যা ডাক্তার তার গাড়িতে উদ্ভাবন করেছেন। "আপনার যে পরিমাণ কোলেস্টেরল, তাকে আমি বলি লেভেল কমলা।" "তাই নাকি? সেটা কি ভালো?" "আমরা জানি না।" কিন্তু শেখার কাজকে যাদের সাহায্য করা উচিত, তাদের উচিত নয় এ কাজকে ব্যাহত করা, যা প্রায় সময় এটা (পরীক্ষা) করে। ফলে জানার আগ্রহের জায়গায় আমাদের যা আছে তা হলো নিয়মনীতি পালনের একটা সংস্কৃতি। আমাদের শিশু এবং শিক্ষকদের উৎসাহ দেয়া হয় নিয়মমাফিক সমাধান পদ্ধতি অনুসরণ করতে, কল্পনা আর জানার আগ্রহের শক্তিকে সক্রিয় করার পরিবর্তে। এবং তৃতীয় মূলনীতিটি হলোঃ মানুষের জীবন সহজাতভাবে সৃজনশীল। এ কারণে আমাদের সবার বিভিন্ন জীবনবৃত্তান্ত রয়েছে। আমরা আমাদের জীবন সৃষ্টি করি, এবং আমরা যখন তাদের মধ্য দিয়ে যাই, তখন তাদের পুনরায় সৃষ্টি করতে পারি। এটা হলো একজন মানুষ হবার সাধারণ রীতি। এটার কারণে মানুষের সংস্কৃতি এত কৌতুহলোদ্দীপক ও বিচিত্র এবং প্রগতিশীল। আমার কথা হলো, অন্য প্রাণীদের হয়তো কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা থাকতে পারে, কিন্তু তার তেমন কোন প্রমাণ নেই, আছে কি? যা আমাদের বেলায় আছে? আপনার একটা কুকুর থাকতে পারে। এবং কুকুরটার হয়তো মন খারাপ হতে পারে। কিন্তু এটা রেডিওহেড (একটি ইংরেজি ব্যান্ডদল) শোনে না, শোনে কি? (হাসি) এবং এক বোতল জ্যাক ড্যানিয়েলস (এক ধরনের হুইস্কি) নিয়ে বসে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। (হাসি) এবং আপনি বলেন, "তুমি কি হাঁটতে আসতে চাও?" সে বলে, "না, আমি ঠিক আছি। তুমি যাও। আমি অপেক্ষা করবো। কিন্তু ছবি তুলো।" আমরা সবাই আমাদের নিজেদের জীবন সৃষ্টি করি বিকল্প ও সম্ভাবনাগুলোকে কল্পনা করার অবিরাম এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, এবং শিক্ষার অন্যতম ভূমিকা হলো সৃজনশীলতার এ শক্তিগুলোকে জাগিয়ে তোলা ও উন্নত করা। এর বদলে আমাদের যা আছে তা হলো কোন কিছুকে মানোপযোগী করে তোলার একটা সংস্কৃতি। এটাকে সেরকম হতে হবে না। আসলেই হতে হবে না। ফিনল্যান্ড নিয়মিতভাবে শীর্ষে থাকে গণিত, বিজ্ঞান ও রিডিংয়ের ক্ষেত্রে। এখন, আমরা শুধু জানি তারা সেগুলোতে ভালো করে কারণ, বর্তমানে সেটাই পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষার অন্যতম সমস্যা হলো এটা। তারা অন্য কিছু খোঁজে না যেগুলো সমান গুরুত্ব বহন করে। ফিনল্যান্ডে কাজের ব্যাপারটা হলো এমনঃ তারা ঐ শিক্ষাক্রমগুলো (গণিত, বিজ্ঞান ও রিডিং) নিয়ে পড়ে থাকে না। শিক্ষার বেলায় তাদের একটি খুব উদার পন্থা রয়েছে যা মানবিক বিভাগ, শারীরিক শিক্ষা, শিল্পকলাকে অন্তর্ভুক্ত করে। দ্বিতীয়ত, ফিনল্যান্ডে কোন কিছুকে মানোপযোগী করে তোলার পরীক্ষা ব্যবস্থা নেই। কিছুটা আছে, কিন্তু তা এমন কিছু নয় যা মানুষকে সকালে ঘুম থেকে ওঠায়। এটা এমন কিছু নয় যা তাদেরকে ডেস্কে ধরে রাখে। এবং তৃতীয় বিষয়টা হলো, সম্প্রতি আমি একটা বৈঠকে ছিলাম ফিনল্যান্ডের কিছু লোকের সাথে, আসল ফিনিশ, এবং আমেরিকান ব্যবস্থা থেকে একজন ব্যক্তি ফিনল্যান্ডের লোকদের বলছিলেন যে, "স্কুল থেকে ঝরে পড়াদের বেলায় আপনারা ফিনল্যান্ডে কী করেন?" আর তাদেরকে কিছুটা হতবুদ্ধি দেখালো, এবং তারা বললেন, "আসলে আমাদের এমন কেউ নেই। কেনই বা আপনি স্কুল থেকে ঝরে পড়বেন? যদি কেউ সমস্যায় পড়ে, আমরা তাড়াতাড়ি তাদের কাছে যাই ও সাহায্য করি আর সমর্থন দিই।" এখন মানুষ সবসময় বলে, "জানেন তো, আপনি ফিনল্যান্ডকে আমেরিকার সাথে তুলনা করতে পারেন না।" না। আমি মনে করি ফিনল্যান্ডে প্রায় পাঁচ মিলিয়নের মতো জনসংখ্যা রয়েছে। কিন্তু আপনারা এটা আমেরিকার একটা প্রদেশের সাথে তুলনা করতে পারেন। আমেরিকার অনেক প্রদেশে এর চেয়ে কম মানুষ রয়েছে। আমার কথা হলো, আমি আমেরিকার কিছু প্রদেশে গিয়েছি এবং আমি ছিলাম সেখানকার একমাত্র মানুষ। (হাসি) আসলেই। সত্যি। আমি চলে যাবার সময় সেগুলোকে তালাবদ্ধ করতে বলা হয়েছিলো। (হাসি) কিন্তু বিশ্বে ভালো করতে থাকা সব ব্যবস্থা যা করে তা বর্তমানে, দুঃখজনকভাবে, আমেরিকার ব্যবস্থাগুলোতে সুস্পষ্ট নয়-- সবকিছু যদি বিবেচনা করি। একটা হলোঃ তারা (ভালো করা ব্যবস্থাগুলো) শিক্ষাদান আর শিক্ষালাভকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে। তারা স্বীকার করে যে, ছাত্রছাত্রীরাই শিখছে এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ছাত্রছাত্রীদের, তাদের জানার আগ্রহকে, স্বাতন্ত্র্যকে ও সৃজনশীলতাকে। এভাবেই আপনারা তাদের শেখার কাজটা করাতে পারেন। দ্বিতীয়ত, তারা শিক্ষকতার পেশাকে একটা খুব উঁচু পদমর্যাদা দিয়ে থাকে। তারা স্বীকার করে যে, আপনারা শিক্ষার উন্নয়ন ঘটাতে পারেন না যদি শিক্ষাদানের জন্য খুব ভালো মানুষকে নির্বাচন না করেন এবং যদি তাদের নিয়মিত সমর্থন ও পেশাদারি উন্নয়নের সুবিধা দিয়ে না থাকেন। পেশাদারি উন্নয়নে বিনিয়োগ করা একটা ক্ষতি নয়। এটা একটা বিনিয়োগ, এবং সফলতা অর্জনকারী আর সব দেশ এটা ভালোভাবে জানে, হোক সেটা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং বা সাংহাই। তারা জানে যে, এটাই হলো ব্যাপার। এবং তৃতীয়ত, তারা দায়িত্ব ছেড়ে দেয় স্কুল পর্যায়ের উপর, এ কাজটা করানোর জন্য। দেখুন, এখানে একটা বড় পার্থক্য রয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে 'রাষ্ট্রীয় আদেশ ও নিয়ন্ত্রণ নীতি' গ্রহণের বেলায়-- কিছু কিছু ব্যবস্থাতে যা হয়ে থাকে। জানেন তো, কেন্দ্রীয় সরকারগুলো বা প্রাদেশিক সরকারগুলো মনে করে তারা সবচেয়ে ভালো জানে এবং তারা আপনাদের বলবে কী করতে হবে। সমস্যা হলো যে, শিক্ষা আমাদের আইন-প্রণয়নকারী সভাকক্ষগুলোতে পরিচালিত হয় না। এটা ঘটে ক্লাসরুম ও স্কুলগুলোতে, আর যারা এটা করেন তারা হলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, এবং আপনারা যদি তাদের সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতাকে খর্ব করেন, এটা (শিক্ষা) কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আপনাকে এটা মানুষদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। (হাততালি) এ দেশে চমৎকার কাজ হচ্ছে। কিন্তু আমাকে বলতে হবে যে, এটা ঘটছে শিক্ষার মূল সংস্কৃতি এমন হবার পরও, এ সংস্কৃতির কারণে এটা ঘটছে না। এটা যেন সবসময় বিপরীমুখী তীব্র বাতাসের দিকে মানুষের জাহাজ চালানোর মতো। এবং আমি মনে করি এর কারণ হলো যে, বর্তমান অনেক নীতি শিক্ষার যান্ত্রিক ধারণার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষা যেন একটা কারখানাজাত প্রক্রিয়া যেটাকে শুধু ভালো উপাত্ত থাকলে উন্নত করতে পারা যাবে, এবং আমি মনে করি, কিছু নীতিনির্ধারকের মনে এ ধারণা রয়েছে যে, আমরা যদি এটাকে (শিক্ষাকে) যথেষ্ট ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিই, আমরা যদি এটাকে শুধু ঠিকঠাক করি, এটা ভবিষ্যতে সম্পূর্ণভাবে কাজ করবে। এটা করবে না, এবং কখনো করে নি। মূলকথা হলো যে, শিক্ষা একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা নয়। এটা একটা মানবীয় ব্যবস্থা। এটা মানুষদের নিয়ে, যারা হয় শিখতে চায় অথবা শিখতে চায় না। স্কুল থেকে ঝরে পড়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীর একটা কারণ আছে যার শিকড় রয়েছে তাদের নিজের জীবন-কাহিনীতে। তারা হয়তো এটাকে (স্কুল) ক্লান্তিকর মনে করতে পারে। তারা হয়তো এটাকে অপ্রাসঙ্গিক মনে করতে পারে। তারা হয়তো মনে করতে পারে যে, এটা তাদের স্কুলের বাইরের জীবনের সাথে বেমানান। গল্পগুলোতে সাধারণ মোড় রয়েছে, কিন্তু তারা সবসময় অনন্য। সম্প্রতি আমি লস এঞ্জেলসে একটি বৈঠকে ছিলাম -- তাদেরকে বলা হয় বিকল্প শিক্ষা কার্যক্রম। এসব কার্যক্রম পরিকল্পনা করা হয়েছে শিশুদের শিক্ষাকাজে ফেরানোর জন্য। তাদের নির্দিষ্ট সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তারা খুব ব্যক্তিঘনিষ্ঠ। তাদের আছে শিক্ষকদের জন্য শক্ত সমর্থন, জনসাধারণের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আর একটি উদার ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পাঠ্যক্রম, এবং প্রায়ই এমন কর্মসূচি যেগুলো শিক্ষার্থীদের স্কুলের ভেতরে ও বাইরে অন্তর্ভুক্ত করে। এবং তারা (কার্যক্রমগুলো) ভালোভাবে কাজ করে। আমার কাছে আগ্রহের বিষয় হলো, এগুলোকে বলা হয় "বিকল্প শিক্ষা।" জানেন? এবং সারা বিশ্বের প্রমাণ হলো, যদি আমরা সবাই তা করতাম, বিকল্প শব্দটার কোন প্রয়োজন থাকতো না। (হাততালি) কাজেই আমি মনে করি, আমাদেরকে আলাদা একটি উপমা বেছে নিতে হবে। আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, এটি (শিক্ষা) একটি মানবীয় ব্যবস্থা, এবং কিছু পরিস্থিতি রয়েছে যেগুলোর ভেতর মানুষ উন্নতি লাভ করে, আর কিছু পরিস্থিতির অধীনে উন্নতি লাভ করে না। সর্বোপরি আমরা সবাই প্রাকৃতিক জীব, এবং স্কুলের সংস্কৃতি অপরিহার্য। সংস্কৃতি একটি মৌলিক শব্দ, তাই নয় কি? আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে ডেথ ভেলী নামে একটা জায়গা খুব একটা দূরে নয়। ডেথ ভেলী আমেরিকার সবচেয়ে গরম আর শুষ্ক জায়গা, এবং সেখানে কিছু জন্মায় না। সেখানে কিছু জন্মায় না, কারণ সেখানে বৃষ্টি হয় না। অতএব, ডেথ ভ্যালী। ২০০৪ সালের শীতকালে ডেথ ভ্যালীতে বৃষ্টি হয়েছিলো। খুব অল্প সময় ধরে সাত ইঞ্চি বৃষ্টি হয়েছিলো। এবং ২০০৫ সালের বসন্তে একটা অনন্যসাধারণ ব্যাপার ঘটলো। ডেথ ভেলীর পুরোটা ফুলের গালিচা হয়ে গিয়েছিলো অল্প সময়ের জন্য। এটা যা প্রমাণ করেছিলো তা হলো, ডেথ ভেলী নিষ্প্রাণ নয়। এটা ঘুমন্ত। এর উপরিভাগের ঠিক নিচে রয়েছে সম্ভাবনার বীজ যেগুলো সঠিক পরিস্থিতির অপেক্ষা করছে আর প্রাকৃতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে, যদি পরিস্থিতি ঠিক থাকে, জীবন অবশ্যম্ভাবী। এটা সবসময় ঘটে থাকে। আপনারা একটা এলাকা, একটা স্কুল, একটা জেলার কথা ধরুন, পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটান, মানুষকে দিন সম্ভাবনার ভিন্ন একটা অর্থ, ভিন্ন ধরনের প্রত্যাশা, সুযোগের বড় একটা পরিসর, শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্কগুলোকে পরিচর্যা ও মূল্যায়ন করুন, মানুষকে স্বাধীনতা দিন সৃজনশীল হবার ও তারা যা করে তাতে নতুনত্ব আনার, এবং যেসব স্কুল সক্রিয় হওয়া থেকে বঞ্চিত ছিলো, তাদেরও এ স্বাধীনতা দিন। খুব ভালো নেতারা সেটা জানেন। শিক্ষাক্ষেত্রে নেতৃত্বের প্রকৃত ভূমিকা-- এবং আমি মনে করি এটা সত্য জাতীয় পর্যায়, প্রদেশ পর্যায়ে, স্কুল পর্যায়ে-- রাষ্ট্রীয় আদেশ ও নিয়ন্ত্রণ নীতিতে নয় এবং তা হওয়া উচিত নয়। নেতৃত্বের আসল ভূমিকা হলো পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, সম্ভাবনার একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা। এবং আপনারা যদি তা করেন, মানুষ তাতে সাড়া দেবে আর এমন কিছু অর্জন করবে যা আপনারা পুরোপুরি অনুমান করেন নি আর প্রত্যাশা করতেও পারতেন না। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের একটা চমৎকার উক্তি রয়েছে। "পৃথিবীতে তিন ধরনের মানুষ রয়েছেঃ যারা উদ্যমহীন, যারা কিছু পায় না, পেতে চায় না, তারা এ ব্যাপারে যেকোন কিছু করবে। এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা তৎপর, যারা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে আর তাতে মনোযোগ দিতে প্রস্তুত। এবং কিছু মানুষ রয়েছে যারা পদক্ষেপ নেয়, যারা সেটা বাস্তবে পরিণত করে।" এবং আমরা যদি আরো বেশি মানুষকে উৎসাহিত করতে পারি, সেটা হবে একটা আন্দোলন। আর যদি আন্দোলনটা যথেষ্ট শক্তিশালী হয়, তা, প্রকৃত অর্থে, একটা বিপ্লব হবে। এবং সেটাই আমাদের প্রয়োজন। অনেক ধন্যবাদ। (হাততালি) অনেক ধন্যবাদ আপনাদের। (হাততালি) সবকিছুই একে অন্যের সাথে সম্পৃক্ত। একজন সিনেকক ইন্ডিয়ান হিসেবে আমি তা জেনেই বড় হয়েছি। আমরা ছোট একটি জেলে গোত্র বাস করি একদম লং আইল্যাণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে নিউইয়র্কের সাউথাম্পটন শহরের কাছে। আমি যখন ছোট বালিকা, গরমের দিনে আমার পিতামহ আমাকে বাইরে নিয়ে সূর্যের নিচে বসে থাকতেন। আকাশে কোন মেঘ ছিল না। কিছুক্ষণপর আমি ঘামতে শুরু করলাম। এবং সে আকাশের দিকে দেখিয়ে বললো, "দেখো, তুমি কি ওটা দেখতে পাচ্ছো? ওটা তোমারি একটি অংশ। ওটা তোমার পানি যা মেঘ তৈরি হতে সাহায্য করে যা বৃষ্টি হয়ে উদ্ভিদদের খাদ্য প্রদান করে প্রানিদের খাদ্য যোগায়।" আমার চলতে থাকা বিষয়গুলো প্রকৃতির ভিতর যার ক্ষমতা আছে জীবনের সবকিছুর যোগসঙ্গ ব্যাখ্যা করার, আমি ঝড়ের পিছনে ছুটতে শুরু করি ২০০৮ সালে যখন আমার মেয়ে বললো, "মা, এটা তোমার করা উচিত।" আর তাই তিন দিন বাদে, অনেক দ্রুত গাড়ি চালিয়ে, আমি নিজেকে খুঁজে পেলাম এক বিশেষ ধরনের দানবাকৃতির মেঘ-'সুপার সেল' এর পেছনে, যা কিনা আঙ্গুলফলের সমান আকারের শিলাবৃষ্টি সৃষ্টি করতে পারে, এবং সাথে জমকালো ঘূর্ণিঝড়, যদিও শতকরা মাত্র দুই ভাগ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এই মেঘগুলো এত বড় হয় যে মাঝে মাঝে তা ৫০ মাইল লম্বা এবং প্রায় ৬৫, ০০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উঠতে পারে। মেঘগুলো এত বিশাল হতে পারে যে, তা পুরো দিনের আলোকে ঢেকে ফেলে, অন্ধকার সৃষ্টি করে এবং এক অশুভবোধ ভিতরে কাজ করে তাদের নিচে দাঁড়িয়ে থাকবার সময়। ঝড়ের পিছন ছুটে বেড়ানো একটি স্পর্শগ্রাহ্য অভিজ্ঞতা। আপনার পিছনে একটি উষ্ণ, আর্দ্র বায়ু বয়ে যায় এবং পৃথিবী, গম , ঘাস আর আয়নিত কণার গন্ধ। এবং এরপর মেঘের মাঝে রঙ আছে শিলা তৈরি, সবুজ এবং ফিরোজা নীল। আমি বজ্রপাতকে সম্মান করতে শিখেছি। আমার চুল দাঁড়িয়ে যেত। (হাসি) আমি মজা করছিলাম। (হাসি) ঝড়গুলোর ব্যাপারে যে বিষয়টি আমাকে উৎসাহিত করে তোলে তা হচ্ছে এদের চলাফেরা, যেভাবে তারা ঘুরপাক খায় এবং তরঙ্গায়িত হয়, তাদের বিশাল মেঘরাজিকে সাথে নিয়ে। তারা পরিণত হয় আকর্ষণীয় দানবে। আমি যখন তাদের ছবি তুলি, আমি আমার পিতামহের দেওয়া শিক্ষাটা না মনে করে পারি না। আমি যখন মেঘের নিচে দাঁড়াই, আমি শুধুমাত্র একটি মেঘ দেখি না বরং আমার যা দেখার সৌভাগ্য হয় তা হচ্ছে সেই একই শক্তি, সেই একই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে যা সহায়তা করেছে সৃষ্টি করতে নক্ষত্রপুঞ্জ, আমদের সৌরজগত, আমাদের সূর্য এবং এই পৃথিবীও। আমার সকল সম্পর্ক। ধন্যবাদ। (হাততালি) আফ্রিকায় বসবাস করা মানে কিনারা ঘেঁষে থাকা, সেটা রূপক হিসেবে নেওয়া যাক বা সম্পূর্ণ আক্ষরিক অর্থে যখন আমরা ২০০৮ সালের আগের যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা ভাবি । যদিও মানুষের মেধা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিরাট অগ্রগতি ইউরোপ এবং বাকি বিশ্বে ঘটে গেছে, তবু আফ্রিকা খানিকটা বিচ্ছিন্নই ছিল। আর সেটার পরিবর্তন ঘটলো, প্রথমে জাহাজের মাধ্যমে যখন এল রেনেসাঁ, বৈজ্ঞানিক বিপ্লব আর তার সঙ্গে শিল্প বিপ্লব। আর এখন এসেছে ডিজিটাল বিপ্লব। এই বিপ্লবগুলো সমান ভাবে বণ্টিত হয়নি সব দেশ ও মহাদেশে। কখনোই হয়নি। এই যে, এটা অন্তঃসামুদ্রিক ফাইবার অপটিক কেবলের একটা মানচিত্র যেটা আফ্রিকাকে বিশ্বের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করে। যেটা আমাকে সবথেকে বেশি আশ্চর্য করে সেটা হল আফ্রিকা তার ভৌগোলিক সীমানা পার করেছে। আফ্রিকা বাকি বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর হয়েছে নিজের সঙ্গে। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে, কিন্তু কিছু বাধা এখনও রয়ে গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই উশাহিদির আবির্ভাব। ২০০৮ সালে আমরা যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম সেটা হল তথ্যের আদান প্রদানের অভাব। ২০০৮ সালে একবার যোগাযোগ ব্যাবস্থার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, যখন কেনিয়াতে নির্বাচনের পরে হিংসার সূত্রপাত ঘটে। সেটা খুব দুঃখজনক সময় ছিল। সেটা খুব কঠিন সময় ছিল। তাই আমরা একসঙ্গে হলাম আর সফটওয়্যার তৈরি করলাম যার নাম উশাহিদি। সোয়াহিলিতে উশাহিদির মানে "ইস্তাহার" বা "সাক্ষী"। আমি খুব ভাগ্যবান যে আমি দুজন অদ্ভুত ভালো সহযোগীর সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি। এই হচ্ছে ডেভিড আর এরিক। আমি ওদের অন্য মায়ের পেটের ভাই বলি। নিশ্চয়ই আমার কোথাও কোন জার্মান মা আছেন। আর প্রথমে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছিলাম নির্মাণ করতে আর উশাহিদির বিকাশ ঘটাতে। তথ্য সংগ্রহ করাই ছিল এই সফটওয়্যারের উদ্দেশ্য এস এম এস, ই-মেল আর ইন্টারনেট থেকে, আর একটা মানচিত্রে সেটা চিহ্নিত করা যাতে আপনি দেখতে পারেন যে কোথায় কি ঘটছে, আর তথ্য আপনার দৃষ্টিগোচর হয়। আর সেই প্রাথমিক নমুনার পরে, আমরা বিনামূল্যে বিতরণ করার জন্য ওপেন সোর্স সফটওয়্যার বানাতে শুরু করলাম যাতে অন্যদের আমাদের মতো শূন্য থেকে শুরু করতে না হয়। একই সময়, আমরা প্রতিদানও দিতে চাইছিলাম স্থানীয় প্রযুক্তিবিদ গোষ্ঠীকে যারা আমাদের সাহায্য করেছিল উশাহিদির বিকাশে আর সেই শুরুর দিনগুলোতে আমাদের পাশে ছিল। আর এই কারণেই আমরা নাইরোবিতে আই-হাব এর প্রতিষ্ঠা করলাম, একটা সত্যিকারের জায়গা যেখানে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি, আর এটা এখন কেনিয়ার প্রযুক্তিগত বাস্তুতন্ত্রের একটা অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ। আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে এটা করতে পেরেছিলাম যেমন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন আর ওমিদিয়ার নেটওয়ার্ক। আর আমরা এই সফটওয়্যারের পরিকল্পনার বিকাশ ঘটাতে পেরেছিলাম, আর কিছু বছর পরে এটা হয়ে উঠলো খুব প্রয়োজনীয় একটা সফটওয়্যার। আর আমরা বিহ্বল হয়েছিলাম যখন এটা হাইতিতে ব্যাবহার করা হল যেখানে নাগরিকরা জানাতে পারে কোথায় তারা আছে আর তাদের কি প্রয়োজন, আর পারমানবিক সঙ্কটের ফলে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয়তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে, আর জাপানে সুনামিতে। এখন, এই বছর ইন্টারনেট কুড়ি বছর পূর্ণ করবে। আর উশাহিদির বয়স হবে পাঁচ। উশাহিদি শুধুমাত্র আমাদের দ্বারা সৃষ্ট একটা সফটওয়্যার না, এটা একটা দল, আর একটা গোষ্ঠীও যেটা এই প্রযুক্তির এমন ব্যাবহার করছে যা আমরা ভাবতে পারিনি আমরা ভাবিনি যে এতগুলো মানচিত্র তৈরি হবে সারা পৃথিবী জুড়ে। আছে সঙ্কট মানচিত্র, নির্বাচনের মানচিত্র, দুর্নীতির মানচিত্র, আর এমনকি পরিবেশ পর্যবেক্ষণের গণ মানচিত্র। আমরা বিহ্বল যে যার উৎপত্তি কেনিয়াতে সেটা সারা বিশ্বের মানুষের কোনও না কোন ভাবে কাজে লাগছে তারা যে বিভিন্ন সমস্যার সাম্মুখীন হচ্ছে তার মোকাবিলা করতে। আমরা আরও কিছু করছি এই ধারনাকে কাজে লাগাতে যার ভিত্তি সমষ্টিগত মেধা। যেমন আমি, একজন নাগরিক হিসাবে, যদি আমার কোন যন্ত্রের মাধ্যমে কোন তথ্য অন্যদের জানাই, আপনি জানতে পারবেন যে কি ঘটছে, আর আপনিও যদি সেটা করেন, তাহলে আমরা একটা বৃহত্তর চিত্র পেতে পারি যে কি ঘটছে। আমি কেনিয়াতে ২০১১ সালে ফেরত যাই। এরিক আসে ২০১০ এ। খুবই আলাদা বাস্তব। আমি থাকতাম শিকাগোতে যেখানে ইন্টারনেটে যোগাযোগের কোন অভাব ছিল না। আমাকে কোনোদিন ব্ল্যাকআউটের মোকাবিলা করতে হয়নি। আর কেনিয়াতে বাস্তব চিত্র পুরোপুরি অন্যরকম, আর একটা জিনিষ যেটা থেকে গেছে এত উন্নতি আর ডিজিটাল বিপ্লবের পরেও, সেটা বিদ্যুতের সমস্যা। দিনের পর দিন এর সঙ্গে মোকাবিলা করার যে হতাশা সেটা খুবই বিরক্তিকর হতে পারে। ব্ল্যাক আউট মজার ব্যাপার না। কল্পনা করুন যে আপনি কাজ শুরু করতে বসলেন, আর হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেল, আর আপনার ইন্টারনেট যোগাযোগও তার সঙ্গেই গেল, তো আপনাকে এবার ভাবতে হবে, আচ্ছা, এখন মোডেমটা কোথায়, আর আমি এটা থেকে ওটাতে বদল করবো কি করে? আর তখনই, কি হয়? আপনাকে এই কাজটাই আবার করতে হয়। এটাই কেনিয়ার বাস্তব, যেখানে আমরা বর্তমানে আছি, আর আফ্রিকার অন্যান্য অংশেও। অন্য যে সমস্যার আমরা সম্মুখীন হচ্ছি সেটা হল, যোগাযোগের খরচ এখনও একটা সমস্যা। আমাকে পাঁচ কেনিয়ান শিলিং খরচ করতে হয়, বা .০৬ আমেরিকান ডলার যদি আমি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা চীনে একটা কল করি। আন্দাজ করুন যে রোয়ান্ডা, ঘানা বা নাইজেরিয়াতে কল করতে কত খরচা হয়? তিরিশ কেনিয়ান শিলিং। খরচ বেড়ে ছয় গুণ হয়ে যায় আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে। আর তাছাড়া, আফ্রিকার ভেতর সফর করার সময়, বিভিন্ন মোবাইল সরবরাহকারীর জন্য আপনাকে আলাদা আলাদা সেটিং করতে হবে। এই বাস্তবের সঙ্গেই আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। তাই উশাহিদিতে মজা করে আমরা বলি, "যেটা আফ্রিকাতে কাজ করছে, সেটা সব জায়গায় কাজ করবে।" [বেশীরভাগ মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করেন ক্রিয়া নির্ধারণের জন্য। আমরা ক্রিয়া দিয়ে প্রযুক্তি পরিচালনা করি।] কি হবে যদি আমরা অতিক্রম করতে পারি এই সমস্যা অনির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট আর বিদ্যুতের আর যোগাযোগের খরচ কম করতে পারলে? আমরা কি ক্লাউডকে কাজে লাগাতে পারবো? আমরা একটা গণ মানচিত্র তৈরি করেছি। তৈরি করেছি উশাহিদি। আমরা কি এই প্রযুক্তিগুলোকে কাজে লাগাতে পারি বিভিন্ন দেশে ঘোরার সময় চটপট নেটওয়ার্ক বদল করার জন্য? তাই আমরা মনোযোগ দিলাম মোডেম এ যা ইন্টারনেট ব্যাবস্থার একটা জরুরী অঙ্গ আর নিজেদের জিজ্ঞেস করলাম কেন আমরা যে মোডেম বর্তমানে ব্যবহার করছি সেটা একটা আলাদা পারিপার্শ্বিকের জন্য তৈরি, যেখানে সর্বত্র ইন্টারনেট আছে, যেখানে সর্বত্র বিদ্যুত সরবরাহ আছে, অথচ আমরা এখানে নাইরোবিতে বসে আর আমাদের কাছে এই বিলাসিতাগুলো সহজলভ্য নয়। আমরা মোডেমকে অন্য ভাবে ডিজাইন করতে চাইলাম। উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য, আমাদের পরিস্থিতির জন্য, আর আমাদের বাস্তবের জন্য। কেমন হত যদি আমরা আরও মসৃণ সংযোগ ব্যাবস্থা পেতে পারতাম? এটা হল বিআরসিকে। এটা ইন্টারনেটের ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করে, যাতে কখনো বিদ্যুত চলে গেলে, এটা স্বয়ংক্রিয় ভাবে সবথেকে কাছের জিএসএম নেটওয়ার্কে সংযোগ স্থাপন করে। আফ্রিকাতে মোবাইল সংযোগ ব্যবস্থা বিস্তৃত। এটা কার্যত সব জায়গায় আছে। বেশীরভাগ শহরে অন্তত পক্ষে থ্রি জি সংযোগের ব্যবস্থা আছে। তো সেটা ব্যবহার করলে কেমন হয়? আর তাই আমরা এটা তৈরি করলাম। অন্য যে কারণে আমরা এটা তৈরি করেছি সেটা হল, যখন বিদ্যুত চলে যায়, এটাতে আট ঘন্টা চলার মত ব্যাটারি থাকে, তো আপনি কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, আপনি কার্যক্ষম থাকতে পারেন, আর মোটের ওপর আপনার মানসিক চাপ কম হয়। আর গ্রামীণ অঞ্চলে এটাই হতে পারে সংযোগ সাধনের প্রাথমিক উপায়। উশাহিদির সফটওয়্যার চেতনা এখনও কাজ করে যখন আমরা নিজদের প্রশ্ন করি যে আমরা ক্লাউডকে কিভাবে ব্যবহার করে বুদ্ধিমত্তা আরও বাড়াতে পারি যাতে আপনি বিভিন্ন নেটওয়ার্ক পরীক্ষা করতে পারেন, আর যখন আপনি ব্যাকআপে বদল করবেন, আপনি দ্রুততম নেটওয়ার্ক বেছে নিতে পারেন, তো আমাদের কাছে একাধিক সিম ব্যাবহারের ক্ষমতা থাকবে, যাতে আপনি একাধিক সিম ব্যাবহার করতে পারেন, আর যদি কোন নেটওয়ার্ক বেশী দ্রুত হয়, তো আপনি সেই নেটওয়ার্কই ধরতে পারবেন, আর যদি সেই নেটওয়ার্কের সংযোগ তেমন ভালো না হয়, তো আপনি পরেরটা ধরে নেবেন। আপনাকে যে কোনও জায়গায় সংযোগ স্থাপন করতে দিতে পারাটাই হল উদ্দেশ্য। লোডের সামঞ্জস্য বজায় রাখলে এটা করা যায়। আরেকটা যে জিনিসে আমরা আগ্রহী - - আমাদের পছন্দ হল সেন্সর -- এই পরিকল্পনা যে একটা প্রবেশ পথ তৈরি করা যায় ইন্টারনেটে সংযোগের জন্য। কল্পনা করুন এমন একটা আবহাওয়া দপ্তর যেটা এটাতে যুক্ত হতে পারে। এটা স্বয়ং সম্পূর্ণ একটা একক হিসাবে নির্মিত হওয়ার জন্য আপনি এটাতে যুক্ত করতে পারেন একটা স্যাটেলাইট মডিউল যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ইন্টারনেট সংযোগ সম্ভব হয়। প্রতিকূলতা নতুন ভাবনার জন্ম দেয়, আর আমরা কিভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী কোডার আর নির্মাণকারীদের কেনিয়ার সমস্যাসঙ্কুল পরিকাঠামোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করতে পারি? আর আমাদের ক্ষেত্রে, আমরা সমস্যার সমাধান শুরু করলাম আমাদের নিজেদের বাড়ির উঠোন থেকে। এটাতে সমস্যা কম ছিল না। আমাদের দলটা মূলত ভারবাহী জীবের মত কম্পোনেন্ট নিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনিয়াতে। আমাদের খুব চমকপ্রদ কথাবার্তা চলত সীমানার শুল্ক বিভাগের এজেন্টদের সঙ্গে। "আপনি কি নিয়ে আসছেন?" আর স্থানীয় আর্থিক সংস্থানগুলো হার্ডওয়্যার প্রকল্পগুলোর কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তাই আমরা এটা কিকস্টার্টারের ওপর ন্যস্ত করেছিলাম, আর আজ আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বহু লোকের সহযোগিতায়, শুধু এখানেই নয়, অনলাইনেও, বিআরসিকে-র পথ চলা শুরু হয়ে গেছে, আর এবার শুরু হবে এটা বাজারে আনার চিত্তাকর্ষক অধ্যায়। আমি এটা বলে শেষ করবো যে, আমরা যদি এটার সমাধান করতে পারি স্থানীয় বাজারের ক্ষেত্রে, তাহলে সেটার প্রভাব পড়বে শুধুমাত্র নাইরোবির কোডারদের ওপর না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর যাদের দরকার নির্ভরযোগ্য সংযোগ ব্যবস্থা, আর এটা সংযোগ স্থাপনের খরচও কমিয়ে দেবে, আর আশা করা যায় আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। আমারা মনে করি যে ডিজিটাল অর্থনীতির মূল উপাদান হল সংযোগ ব্যবস্থা আর বাণিজ্যিক উদ্যম। বিআরসিকে হল আমাদের অবদান আফ্রিকাবাসীদের সংযুক্ত রাখার জন্য, আর বিশ্বব্যপি ডিজিটাল বিপ্লবকে চালনা করতে ওদের সাহায্য করার জন্য। ধন্যবাদ। (হাততালি) যখন আমরা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলি, তখন কিছু বিশেষ টাইপের ব্যক্তিদের কথা মনে পরে। যেমন ভূতপূর্ব সোভিয়েতের ক্ষমতা পাগলরা। সাপারমুরাত নিয়াযভ, এদের মধ্যে একজন। ২০০৬ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত, তিনি তুর্কেমিনস্তান এর সবচেয়ে ক্ষমতাধর শাসক ছিলেন, যেটা মধ্য এশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ একটা দেশ। তিনি রাষ্ট্রীয় ফতোয়া জারি করতে খুব ভালবাসতেন। এবং একটায় মাসের নাম বদলে নতুন নামকরণ হয়েছে তার নিজের নাম এবং তার মা'র নাম অনুসারে । তিনি লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করতেন এক উদ্ভট ব্যক্তিত্বকে জনপ্রিয় করার জন্য, এবং তার চরম গৌরব ছিল সেই বিল্ডিং যা কি না ৪০ ফুট উঁচু সোনার পাত দিয়ে মোড়া তার নিজের মূর্তি, যা রাজধানীর মুখ্য চত্বরে সদম্ভে দাঁড়িয়ে সূর্যকে অনুসরণ করে ঘুরতে থাকতো। সে একটু অস্বাভাবিক ধরনের ব্যক্তি ছিল। আর আছে সেই অতি আলোচিত আফ্রিকান স্বৈরশাসক অথবা মন্ত্রী অথবা সরকারী কর্মকর্তা। টেওডোরিন ওবায়াং। তার বাবা ছিলেন ইকোইটোরিয়াল গিনির আজীবনের জন্য নিযুক্ত প্রেসিডেন্ট, এটা পূর্ব আফ্রিকার একটা দেশ যা ১৯৯০ সাল থেকে লক্ষ্য লক্ষ্য ডলার এর তেল রপ্তানি করেছে যদিও এর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস ভয়াবহ। এর অধিকাংশ মানুষই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে যদিও এর মাথা পিছু আয়ের পরিমাণ পর্তুগালের সমান। তো ওবিয়াং জুনিয়র কি করলেন ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যালিবুতে একটি ৩০ মিলিয়ন ডলার এর বিলাসবহুল বাড়ী কিনলেন। আমার বাড়িটার সদর দরজা পর্যন্ত গেছিলাম। আমি আপনাদের বলতে পারি ওটা একটা জাঁকালো বাড়ি। উনি ১৮ মিলিয়ন ইউরোর শিল্প সংগ্রহ কিনেছেন ইভস সেন্ট লরেন্ট নামের একজন ফ্যাশন ডিজাইনার এর থেকে, এক গাদা চমৎকার স্পোর্টস গাড়ী, যার একেকটার দাম মিলিয়ন ডলার-- আর হ্যাঁ,এবং একটা গালফস্ট্রিম জেট ও। এখন ঘটনা হল: এই কিছু দিন আগে পর্যন্ত উনি সরকারী বেতনই আয় করতেন যা ৭০০০ ডলার এরও কম। আর আছেন ড্যান এতেত। উনি নাইজেরিয়ার প্রাক্তন খনিজ তেলের মন্ত্রী ছিলেন প্রেসিডেন্ট আবাচার সময়ে, এবং দেখা গিয়েছিল যে,উনি টাকার অবৈধ লেনদেনের এর সাথেও জড়িত ছিলেন। আমরা অনেকটা সময় খরচ করেছি ১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে তদন্ত করতে-- সত্যি বলছি,পুরো ১ বিলিয়ন ডলারের-- তেলের লেনদেন যার সাথে উনি জড়িত ছিলেন, এবং আমরা যা জানতে পারলাম তা খুবই জঘন্য, কিন্তু সে সম্পর্কে আরও কথা পরে হবে। তো এটা ধরে নেওয়া খুবই স্বাভাবিক যে দুর্নীতি ঘটে অন্য জায়গায় কোথাও, কিছু স্বৈরাচারী লোভী মানুষ এবং কিছু অসৎ ব্যক্তি যা ঘটায় অন্য কোন দেশে যার সম্পর্কে ব্যক্তিগত ভাবে আমরা খুব কম জানি আর নিজেদের সেটার থেকে বিযুক্ত মনে করি আর এর কোন প্রভাব অনুভব করি না। কিন্তু সত্যিই কি এসব অন্য কোথাও হয়? হুম,যখন আমি ২২ বছরের ছিলাম,আমার কপাল খুবই ভাল ছিল। আমার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কাজটা ছিল আফ্রিকান আইভরিতে অবৈধ ব্যবসা নিয়ে তদন্ত করা। এবং এভাবেই আমার দুর্নীতির সাথে সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে। ১৯৯৩ সালে আমি আর আমার দুই বন্ধু সাইমন টাইলর এবং পেত্রিক এলেই, গ্লোবাল উইটনেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনা করি। আমাদের প্রথম প্রচারাভিযান শুরু হয় কম্বোডিয়ার যুদ্ধের তহবিলের গোঁজামিল নিয়ে। তো কিছু বছর পরে, ১৯৯৭ সালে, আমি তখন অ্যাঙ্গোলায় গোপনে ব্লাড ডায়মন্ড নিয়ে তদন্ত করছি। আমার মনে হয় আপনারা সবাই সিনেমাটা দেখেছেন, হলিউড এর ছবি "ব্লাড ডায়মন্ড", যাতে মুল অভিনেতা থাকেন লেওনারদো ডিক্যাপ্রিও। উম্, আমাদের কাজের মাধ্যমে কিছু তথ্য সামনে এলো। লন্ডা, যেখানে প্রচুর ব্যক্তি ল্যান্ড মাইনের শিকার হয়েছিল যারা রাস্তায় থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিল আর যুদ্ধে অনাথ হওয়া শিশুরা রাস্তার নীচে নর্দমায় থাকছিল, এবং সংখ্যায় খুব কম,খুবই ধনী উচ্চবিত্ত কিছু মানুষ যারা সবসময় আলোচনা করতো ব্রাজিল এবং পর্তুগাল এ কেনাকাটি করতে যাওয়ার। এবং এটা ছিল একটা অদ্ভুত জায়গা। তো আমি একটা গরম আর বদ্ধ হোটেল রুম এ বসে আছি খুবই কাতর অবস্থায়। কিন্তু এই ব্যাপারটা ব্লাড ডায়মন্ড নিয়ে ছিল না। কারণ আমি ওইখানের অনেকের সাথে কথা বলেছি যারা কিনা একটা অন্য সমস্যার কথা বলল: যেটা কিনা একটা বিশাল আর আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যাপ্ত দুর্নীতির চক্র যাতে লাখ লাখ তেলের ডলার গায়েব হয়ে যাচ্ছে, এবং যেটা কিনা সেই সময়ে খুবই ছোট একটা প্রতিষ্ঠান ছিল খুব কম লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ , সেটা এতো বিশাল ব্যাপারের মোকাবিলা কিভাবে করবে সেটা ভাবাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আর যেই দিনগুলোতে আমি, এবং আমরা সকলেই যারা প্রচার এবং তদন্ত করছিলাম, বারংবার একটা জিনিস দেখলাম যে কিভাবে দুর্নীতি বিশ্বজুড়ে, অনেক বড় আকারে ঘটা সম্ভব হয়, আসলে এইটা শুধু লোভ অথবা ক্ষমতার অপব্যবহার নয় অথবা আমরা যে অস্পষ্ট কথাটা বলি, " দুর্বল শাসনকার্য", সেটা নয়। আমি বলতে চাইছি যে নিশ্চয়ই এগুলো সবই থাকে কিন্তু দুর্নীতি আসলে সম্ভব হয় বিশ্বজুড়ে কিছু সাহায্যকারীদের ক্রিয়াকাণ্ডের মাধ্যমে। তো এখন ফিরে যাওয়া যাক সেই মানুষদের কথায় যাদের কথা আমি একটু আগে বলেছিলাম। এখন,তাদের প্রত্যেককে আমরা তদন্ত করেছি, এবং তারা নিজেরা একা এই কাজগুলো করার ক্ষমতা রাখেন না। যেমন ধরুন ওবিয়াং জুনিয়রের কথা। তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া কখনই বিলাসবহুল বাড়ি এবং নামি-দামি শিল্প সংগ্রহের মালিক হতে পারতেন না। তিনি আন্তর্জাতিক বহু ব্যাঙ্কের সঙ্গে ব্যবসা করতেন। প্যারিস এর একটি ব্যাংকে ওনার পরিচালনাধীন কোম্পানির অ্যাকাউন্ট ছিল, যার একটার মাধ্যমে শিল্পদ্রব্যের কেনা বেচা চলত, এবং আমেরিকান ব্যাংকগুলো, অবৈধভাবে ৭৩ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে আসে, যার কিছু ওই ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়িটি কেনার জন্য ব্যয় করা হয়েছিল। এবং সে এই সবকিছুতে তার নিজের নামে করেনি। সে ভুয়ো কোম্পানির নাম ব্যবহার করেছে। সে একটা নাম ব্যবহার করেছে সম্পত্তি কেনার জন্য,এবং আরেকটা, যেটা আরেকজনের নামে ছিল, সেটা ওই সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের বিপুল খরচ চালানোর জন্য। আর আছেন ড্যান এতেত। তিনি যখন তেল মন্ত্রী ছিলেন, তিনি একটি তেল এর ব্লক, যার মূল্য এখন বিলিয়ন ডলারের বেশী, উপহার দিয়েছিলেন একটা কোম্পানিকে, আর আন্দাজ করুন তো, হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন তিনি নিজেই এইটার গোপনে মালিক ছিলেন। এখন, এর অনেক পরে এটার হাতবদল ঘটে নাইজেরিয়ান সরকার এর দাক্ষিণ্যে-- এবার আমাকে কি বলছি সেটা নিয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে --- শেল এবং ইতালিয়ান এনি-র অধীনস্থ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে, যা সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানিদের মধ্যে দুটি। তো সত্যিকার অর্থে, দুর্নীতির যে মূল ইঞ্জিন তার ব্যাপ্তি ইকোইটোরিয়াল গিনি অথবা নাইজেরিয়া অথবা তুরকেমেনিস্তানের মত দেশের সীমানার তুলনায় অনেক বেশী। এই ইঞ্জিন আসলে আমাদের আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং সিস্টেম দ্বারা চালিত হয়, যার মূলে আছে নামহীন ভুয়ো কোম্পানির সমস্যা, এবং যে গোপনীয়তা আমরা বজায় রাখি বড় বড় তেল,গ্যাস এবং খনন কাজের জন্য, এবং, সবচেয়ে বড় কারণ হল, আমাদের রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা কারণ তারা নিজেদের বাগাড়ম্বরকে গুরুত্ব দিতে অথবা অর্থপূর্ণ ও সুসম্বন্ধ প্রণালীতে এর মোকাবিলা করতে পারে না। এখন সবার শুরুতে ব্যাংকগুলোকে ধরা যাক , উম্ম, আমি এটা আপনাদের বললে আপনারা কেউ আশ্চর্য হবেন না যে ব্যাংক কালো টাকা গ্রহণ করে, কিন্তু তারা তাদের লাভকে প্রাধান্য দেয় অন্যান্য আরও ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত থেকে। যেমন ধরুন, মালায়শিয়ার সারাওয়াক এ। এই অঞ্চলে, বনভূমির মাত্র ৫ শতাংশ বেঁচে আছে। মাত্র ৫ শতাংশ। তো এটা কীভাবে সম্ভব? আসলে এর কারণ হল ক্ষমতাভোগীদের একটা দল আর তাদের পৃষ্ঠপোষকরা যারা লাখ লাখ ডলার আয় করছে ব্যাপক হারে গাছ কাটার কারবারকে সমর্থন করে বহু বছর ধরে। তো আমরা গোপনে তদন্ত করতে একজন তদন্তকারী পাঠালাম যে লুকিয়ে এই ক্ষমতাভোগী শাসকশ্রেণীদের মিটিং গোপনে ভিডিও করবে আর ওই ফুটেজে যা দেখা গেল তা কিছু লোককে খুবই রাগান্বিত করেছে, এবং আপনারা ইউ টিউব এ ভিডিওটি দেখতে পারেন, কিন্তু এর মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে, যা কিনা আমরা দীর্ঘদিন যাবত সন্দেহ করে আসছি, এটা দেখায় যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কিভাবে, পরবর্তী কালে তার অস্বীকার করা সত্ত্বেও, তার নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমি এবং বন এর লাইসেন্স ব্যবহার করেছেন নিজের এবং তার পরিবারের সম্পত্তির বৃদ্ধি ঘটানোর জন্য। এবং HSBC, আসলে আমরা জানি যে HSBC টাকা যোগান দিয়েছিল অঞ্চলের সবচেয়ে বড় কাঠকাটার কোম্পানিকে যারা কিনা সারাওয়াক এবং অন্যত্র অরণ্য বিনাশের জন্য দায়ী ছিল। যদিও এটা করতে গিয়ে ব্যাংক তাদের নিজেদের স্থায়িত্বের নীতি লঙ্ঘন করেছিল, কিন্তু এটি ১৩০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছে। এখন আমরা সব দুষ্কর্মের কথা ফাঁস করার একটু পরেই, এই বছরের শুরুর দিকে সব দুষ্কর্মের কথা প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ব্যাংক তাদের নীতি পর্যালোচনা করার ঘোষণা দিল। আর এটা কে কি উন্নতি বলা যায় ? হতে পারে, কিন্তু আমরা খুবই কড়া নজরদারির মধ্যে রাখব ঘটনাটা। এবং তারপর ঐদিকে আবার অজ্ঞাতনামা ভুয়ো কোম্পানির সমস্যা তো আছেই। আমার মনে হয় আমরা সবাই শুনেছি এগুলোর কথা, এবং আমরা সবাই জানি যে তাদের সেই লোকেরা আর কোম্পানিরা ব্যবহার করে যারা তাদের প্রতি সমাজের যা ন্যায্য প্রাপ্য সেটা এড়াতে চায়, সহজ কথায় বললে একে ট্যাক্স বলা হয়। কিন্তু আসলে যে জিনিসটা পর্দার আড়ালে থেকে যায় সেটা হল শেল কোম্পানিগুলো কিভাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ চুরি করত, যে অর্থ সমাজের পরিবর্তন আনতে সক্ষম গরিব দেশ গুলোতে। বস্তুত আমরা যে দুর্নীতির বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত করেছি, তার প্রত্যেকটায় ভুয়ো কোম্পানির নাম উঠে এসেছে, এবং মাঝেমধ্যে এটা বের করা দূরহ হয়ে দাঁড়ায় যে কারা এই কাণ্ডে আসলে জড়িত। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-এর একটি গবেষণায় ২০০ টি দুর্নীতির ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। দেখা যায় যে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে অজ্ঞাতনামা শেল কোম্পানির নাম ব্যাবহার করা হয়েছে, যার সবমিলিয়ে মূল্য প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলার। এখন এর মধ্যে বহু কোম্পানি ছিল আমেরিকা অথবা গ্রেট ব্রিটেন, আর এর বিদেশী অঞ্চল এবং উপনিবেশ গুলোর, এবং তো এটি শুধু দেশের বাইরের সমস্যা নয়, এটি দেশের সমস্যাও বটে। তাহলে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে, শেল কোম্পানিগুলোই গোপন চুক্তিগুলোর কেন্দ্রে থাকে যা কিনা সমাজের উচ্চবিত্তদের উপকারে লাগে সাধারণ মানুষদের কোন লাভ হয় না । সাম্প্রতিক কালে আমরা একটি চমকপ্রদ ঘটনার তদন্ত করেছি যে কিভাবে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো-র সরকার মূল্যবান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খনি ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপ এর শেল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। তো আমরা ওই দেশে আমাদের তথ্য সরবরাহকারী লোকেদের সঙ্গে কথা বললাম,, কোম্পানির সব নথিপত্র এবং অন্যান্য তথ্যাদি খুঁটিয়ে দেখলাম পুরা ছবিটা জোড়া লাগানোর জন্য। এবং আমরা এটা দেখে ত্রস্ত হলাম যে এই শেল কোম্পানিগুলো খুব তাড়াতাড়ি তাদের সম্পত্তি মুনাফার লোভে লন্ডনের খুব বড় আন্তর্জাতিক খনন কোম্পানিকে বেচে দিয়েছে। এখন, কফি আন্নান এর নেতৃত্বাধীন, আফ্রিকা প্রোগ্রেস প্যানেল হিসাব নিকাশ করে দেখেছে যে এই লেনদেনের কারণে কঙ্গো-র প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ডলার এর মতন লোকসান হয়েছে । এটা দেশটির বার্ষিক স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতের বাজেটের প্রায় দিগুণ। এবং কঙ্গোর নাগরিকরা, তারা কি তাদের অর্থ কোনোদিন ফিরে পাবে? বলতে গেলে, এই প্রশ্নের, আর কে এইটার সাথে জড়িত ছিল এবং আসলে কি হয়েছিল, এই সব প্রশ্নের উত্তর তালা বন্ধ হয়ে থাকবে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপের গোপন কোম্পানির গোপন নথির মধ্যে বা অন্য কোথাও যদি না আমরা সবাই এটা নিয়ে কিছু করি। আর তেল, গ্যাস এবং খনন কোম্পানিগুলো ধরা যাক, আচ্ছা, এদের ব্যাপারে কথা বলা ক্লিশে মনে হতে পারে। ওই বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সব জায়গায় দুর্নীতি আছে, তাহলে শুধু ওই বিভাগ নিয়ে মাথা ঘামান কেন? উম্ম, কারণ এখানে হারানোর ভয় অনেক বেশী। ২০১১ সালে, প্রাকৃতিক খনিজ রপ্তানি মূল্য সাহায্যের জন্য দেওয়া অর্থের মোট পরিমাণ থেকে প্রায় ১৯ গুণ বেশী ছিল আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকায়। ১৯ গুণ। এখন এই টাকায় প্রচুর বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় আর হাসপাতাল এবং ব্যবসা শুরু করা যায়, যার অনেকগুলো তৈরি হয়নি আর কোনোদিন তৈরিও হবে না কারণ এই টাকার অনেকটাই চুরি হয়ে গেছে। এখন ফিরে যাওয়া যাক তেল এবং খনন কোম্পানিগুলোর কথায়, এবং ফিরে যাই ড্যান এতেত এবং সেই ১ বিলিয়ন ডলার এর চুক্তির কথায়। এবং আমাকে মাফ করবেন কারণ পরের অংশটা আমি পড়ে শোনাবো কারণ এইটা একটি ঘটমান বিষয়, এবং আমাদের আইনজীবীরা এই বিষয়টা নিয়ে তলিয়ে দেখেছে এবং তারা চায় যে আমি এটা সঠিক ভাবে বলি । এখন, আপাতভাবে চুক্তিটি বেশ সিধে মনে হয়। এই ব্লকটির জন্য শেল এবং এনি এর অধীনস্থ কোম্পানি নাইজেরিয়ান সরকার কে টাকা দিয়েছে। নাইজেরিয়ান সরকার ঠিক সেই পরিমাণ অর্থ, এক ডলারেরও এদিক ওদিক না করে একটা ভুয়ো কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছে যে কোম্পানির গোপনে মালিক হল এতেত। এখন, একজন অর্থ কেলেঙ্কারি অপরাধীর জন্য এটা খারাপ কিছু না কিন্তু কথা হল, মাসের পর মাস তদন্ত করে এবং শত শত কোর্ট এর দলিল পড়ার পর, আমরা প্রমাণ পেলাম যে আসলে শেল এবং এনি অনেক আগে থেকেই জানত যে ফান্ড এর সব টাকা ভুয়ো কোম্পানিতে স্থানান্তরিত হবে, এবং সত্যি কথা বলতে, এটা বিশ্বাসজনক নয় যে তারা জানত না যে কাদের সাথে তারা চুক্তিটা করছে। এখন, এই ধরনের চুক্তি করে সব টাকা কোথায় গেল তা বের করার জন্য এই ধরনের কঠোর প্রচেষ্টার প্রয়োজন হওয়া উচিৎ না। আমি বলতে চাইছি, এগুলো রাষ্ট্রের সম্পদ। এগুলো রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকদের উপকারের জন্য ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু কোন কোন দেশে, নাগরিক ও সাংবাদিকরা যারা এই ধরনের সংবাদ প্রকাশ করেন তাদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কয়েকজন তাদের জীবনের ঝুঁকিও নিয়েছেন এই কাজ করার জন্য। এবং সব শেষে, এমনও কিছু মানুষ আছেন আছে যারা বিশ্বাস করেন যে দুর্নীতি অপরিহার্য। এভাবেই কিছু ব্যবসা করা হয়। এটি পরিবর্তন করা অত্যন্ত জটিল এবং কষ্টকর। তো এর পরিনাম কি? আমরা এটা মাথা পেতে মেনে নিই। কিন্তু একজন প্রচারক এবং তদন্তকারী হিসেবে, প্রবীণ সৈনিক আমার দৃষ্টিভঙ্গি অন্যরকম, কারন আমি দেখেছি এটা দ্রুতগতিতে এগোলে তার পরিণাম কি হতে পারে। তেল এবং খনি শিল্পের কথাই ধরুন, এখন পুরো বিশ্বব্যাপী নতুন স্বচ্ছতার মানদণ্ড তৈরি হচ্ছে যা কিনা এই ধরনের কিছু সমস্যা মোকাবিলা করতে পারবে। ১৯৯৯ সালে, যখন গ্লোবাল উইটনেস তেল কোম্পানিগুলোকে তাদের লেনদেন স্বচ্ছ করতে আহ্বান জানিয়েছিল, কিছু কিছু মানুষ এই চিন্তাধারার চরম সরলতা নিয়ে উপহাস করেছিল। কিন্তু সত্যিকার অর্থে পৃথিবীর সব জায়গা থেকে শত শত সুশীল সমাজ গোষ্ঠী একসাথে মিলে যুদ্ধ করছে স্বচ্ছতার পক্ষে, এবং এখন তা ক্রমেই প্রথা ও আইনে পরিনত হচ্ছে। পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ তেল এবং খনির কোম্পানিগুলো এখন স্বচ্ছতা আইনের আওতাভুক্ত। দুই তৃতীয়াংশ। তো পরিবর্তন ঘটছে। এটাই অগ্রগতি। কিন্তু আমরা এখনো সেখানে পৌছতে পারিনি,অনেক দূরে এখনো। কারণ এটা শুধু ওই ওখানে কোথাও যে দুর্নীতি ঘটছে সেটার প্রশ্ন নয়, তাই তো? বিশ্বায়নের এই যুগে,দুর্নীতি একটা পৃথিবী ব্যাপী কারবার, এবং যার জন্য প্রয়োজন পৃথিবী ব্যাপী সমাধান, যাকে আমাদের সকলকে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে সমর্থন ও কায়েম করতে হবে, এখানেই। ধন্যবাদ। (হাততালি) যদি আমরা বানর থেকে বিবর্তিত হই, তাহলে এখনো কেন বানরের অস্তিত্ত্ব আছে? (হাসি) তার কারণ আমরা বানর নই আমরা মাছ। (হাসি) তুমি যে একটি মাছ এবং কোন বানর নও এটি আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বোঝার জন্য যে আমরা কোথা থেকে এসেছি | আমি যুক্তরাষ্ট্রের এক বৃহত্তম বিবর্তন সংক্রান্ত প্রাণিবিদ্যার বিভাগে পড়াই। এবং যখন আমার ছাত্ররা বুঝতে পারে কেন আমি তাদের সব সময় মাছ বলে ডাকি, তখন আমি জানি আমি আমার কাজ সুসম্পন্ন করেছি। কিন্তু আমাকে সবসময় পড়ানো শুরু করতে হয় কিছু পৌরাণিক দৃঢ়বিশ্বাসকে খন্ডন করে। কেননা সঠিকভাবে এটি না জেনে আমাদের অনেককেই ভুল বিবর্তনবাদ শেখানো হয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের বলতে শেখানো হয় "বিবর্তন তত্ত্ব"। আসলে এঋানে অনেক তত্ত্ব আছে, যেটি প্রক্রিয়া অনুযায়ী তথ্য উপাত্তের সাথে সঠিকভাবে মিলে যায় সেটিই সঠিক ভাবে বিদ্যমান থাকে। আমরা যেটিকে উৎকৃষ্ট মেনে নেই সেটি হলো ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন। এটি সেই তত্ত্ব যা বিশ্লেষণ করে যে জীব প্রকৃতির সাথে মানানসই তারা বেঁচে থেকে বংশবৃদ্ধি করতে পারে, আর যাঁরা পারে না, ধীরে ধীরে তাদের মৃত্যু হয়। আর এটাই তাঁদের পরিণাম। আর বিবর্তন এতটাই সহজ। এবং এটিই চূড়ান্ত বাস্তবতা। বিবর্তন তেমন একটি বাস্তবতা যেমনটি "মধ্যাকর্ষন তত্ত্ব"। আর আপনি সহজেই এটি প্রমাণ করতে পারেন। শুধু আপনার নাভির দিকে তাকানো প্রয়োজন যা অন্যান্য ডিম্বাশয়ী স্তনপায়ীর সাথে মিলে যায়। অথবা আপনার মেরুদন্ড যেটি অন্যান্য মেরুদন্ডী প্রাণীর সাথে মেলে, বা আপনার ডিএনএ যা মাইল যায় পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর সাথে| হঠাৎ করে বৈশিষ্ট্যগুলি মানুষের মধ্যে আসেনি সেগুলো এসেছে বিভিন্ন পূর্বপুরুষ থেকে, শুধু আমাদেরই নয়, তাদের সব বংশধরদের। কিন্তু প্রথম দিকে আমরা এভাবেই জীববিদ্যা শিখিনি, তাই নয় কি? আমরা শিখি উদ্ভিদ এবং ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে আদিম জিনিসগুলি, এবং মাছ বৃদ্ধি দেয় উভচর প্রাণী বৃদ্ধি দেয় সরীসৃপ প্রাণী এবং স্তনপায়ী প্রাণী তারপর আপনি পান আপনাকে, এই পুরোপুরি নির্ভুল বিবর্তিত প্রাণী লাইনের শেষে কিন্তু জীবন একটি লাইন বিকশিত হয় না, এবং এটি শেষ হয় না আমাদের দিয়ে | কিন্তু সবসময় আমাদেরকে বিবর্তন প্রদর্শন করা হয় কিছুটা এর মত, একটি বানর এবং একটি শিম্পাঞ্জী, কিছু বিলুপ্ত মানুষ, সব এগিয়ে এবং অবিচলিত মার্চে উপরে আমাদের হয়ে উঠছে |. কিন্তু তারা আমরা হয় না যতটা আমরা তারা হব না। আমরা বিবর্তনের লক্ষ্যও নই। কিন্তু এটার ব্যাপার কী ? কেন আমাদের বিবর্তন সঠিক পথে বুঝতে হবে? কারণ, বিবর্তন ভুল বোঝাবুঝি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু আপনি সেই আগেরকালের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন না, "আমরা কোথা থেকে এসেছি?" সঠিক বিবর্তন না জেনে| ভুল বোঝাবুঝি অনেক দৃঢ় এবং দুর্নীতিগ্রস্ত মতামত সৃষ্টি করছে, আমরা কিভাবে আচরণ করা উচিত পৃথিবীতে অন্যান্য জীবন, এবং কিভাবে আমরা একে অপরের সঙ্গে আচরণ করা উচিত জাতি ও লিঙ্গ অনুযায়ী | সুতরাং চল চার বিলিয়ন বছর আগে । এই একক কোশযুক্ত জীব থেকে আমরা সবাই এসেছি | প্রথমত, এটি উত্থাপিত দেয় অন্য একক কোশযুক্ত জীবন, কিন্তু এগুলো এখনও এই দিন পর্যন্ত বিকশিত হচ্ছে, এবং অনেকেরা বলে হবেআর্কিয়া এবং ব্যাকটেরিয়া যে এই দলের সবচেয়ে বেশি হচ্ছে এই গ্রহের সবচেয়ে সফল| তারা অবশ্যই আমাদের যাওয়া পরেও ভাল থাকবে | প্রায় তিন বিলিয়ন বছর আগে, বহুমুখীত কোশযুক্ত জীবন বিবর্তিত হয় এটা অন্তর্ভুক্ত করে আপনার ছত্রাক এবং আপনার গাছপালা এবং আপনার পশুদের | প্রথম প্রাণী যে দাঁড়া বিকাশ করেছিল, ছিল মাছেরা | তাই টেকনিক্যালি, সমস্ত মেরুদন্ডী প্রাণী হচ্ছে মাছ , তাই টেকনিক্যালি, আপনি এবং আমি মাছ। সুতরাং বলেন না আমি আপনাদের সতর্ক করি নি এক মাছ বংশ নিয়ে জমিতে আসলো এবং বৃদ্ধি দেয়, অন্যান্য জিনিসগুলির মধ্যে, স্তন্যপায়ী এবং সরীসৃপ প্রাণী | কিছু সরীসৃপ প্রাণী পাখি হয়ে গেল, কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী বনমানুষ হয়ে গেল, কিছু বনমানুষ হল লেজ যুক্ত বানর, এবং অন্যদের মহান উল্লুক হয়ে, অন্তর্ভুক্তে বিভিন্ন মানুষের প্রজাতি হয়। সুতরাং আপনি দেখেন, আমরা বানর থেকে বিবর্তিত হই নি, কিন্তু আমরা তাদের সাথে ভাগ করি একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ। সব সময়, জীবন আমাদের চারপাশে বিকাশিত হচ্ছে: আরো ব্যাকটেরিয়া, আরো ছত্রাক, প্রচুর মাছ, মাছ, মাছ | যদি আপনি এখনো বলতে না পারেন- হ্যাঁ, তারা আমার প্রিয় শ্রেণী। (হাসি) জীবন যেমন বিকশিত হয়, এটি বিলুপ্ত হতে থাকে। বেশিরভাগ প্রজাতি বেচেঁ থাকে কয়েক মিলিয়ন বছরের জন্য | সুতরাং আপনি দেখেন, অধিকাংশ জীবন পৃথিবীতে আজ আমাদের চারপাশে আমরা দেখি হচ্ছে , প্রায় আমাদের প্রজাতির একই বয়সের। সুতরাং এটা অহঙ্কার, এটা স্ব কেন্দ্রীয় ভাবা যে, ''ওহ, উদ্ভিদ এবং ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে আদিম, এবং আমরা এখানে এসেছি একটি বিবর্তনবাদী মিনিটের জন্য, তাই আমরা একভাবে বিশেষ। " ভাবুন জীবন হচ্ছে একটি বই, অসমাপ্ত বই নিশ্চিত । আমরা শুধু প্রতিটি অধ্যায়ের শেষ কয়েক পৃষ্ঠা দেখতে পাচ্ছি | আপনি যদি দেখেন আট মিলিয়ন প্রজাতি যাদের সঙ্গে আমরা এই গ্রহ ভাগ করি, তাদের সবাই ভাবুন বিবর্তনের চার বিলিয়ন বছরের | এরা সব তার পণ্য । আমরা সবাই ভাবুন তরুণ পাতার মত করে জীবনের এই প্রাচীন এবং বৃহদাকার গাছে আছি, সবাই অদৃশ্য শাখা দ্বারা সংযুক্ত শুধু একে অপরের সাথেই নয়, কিন্তু আমাদের বিলুপ্ত আত্মীয়দের এবং আমাদের বিবর্তনবাদী পূর্বপুরুষ সাথে । একটি জীববিজ্ঞানী হিসাবে, আমি এখনও শিখতে চেষ্টা করছি , অন্যদের সঙ্গে, কিভাবে সবাই একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হয়, কে কার সাথে সম্পর্কিত | সম্ভবত এটি এখনও ঠিক আমাদেরকে ভাবা জল থেকে আসা ছোট একটা মাছ হিসাবে | হ্যাঁ, এক যে হাঁটা এবং কথা বলা শিখেছে, কিন্তু এক যার এখনও অনেক কিছু শেখার আছে আমরা কে এবং আমরা কোথা থেকে এসেছি সম্পর্কে | ধন্যবাদ | (হাততালি) আমি আজকে একটি স্বীকারোক্তি দিতে চাই। তবে প্রথমে, আপনারা আমাকে ছোট্ট একটা স্বীকারোক্তি দিবেন। গত বছর-- আচ্ছা, আপনারা সবাই হাত তুলে সাঁয় দিবেন। কেউ কি তুলনামূলকভাবে ছোটখাট চাপের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন? গিয়েছেন কেউ? মাঝারি মাত্রার চাপের মধ্য দিয়ে কারা কারা গেছেন? এবার বলুন কারা প্রচন্ড চাপের ভিতর দিয়ে গেছেন? হ্যাঁ, আমারও একই অবস্থা। কিন্তু এটা আমার স্বীকারোক্তি নয়। আমার স্বীকারোক্তি হচ্ছে- আমি একজন স্বাস্থ্য-মনোবিজ্ঞানী, তাই আমার কাজের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষকে আরো সুখী এবং আরো স্বাস্থ্যবান করে তোলা। কিন্তু আমার এখন ভয় হচ্ছে যে, একটা বিষয় আমি মানুষকে শিখাচ্ছি গত ১০ বছর ধরে, যা ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি করছে, আর সেটা মানসিক চাপের সাথে সম্পর্কিত। বছরের পর বছর আমি মানুষকে বলে যাচ্ছি, চাপ আপনাকে অসুস্থ করে তোলে। এটা সবকিছুর ঝুঁকিই বাড়িয়ে দেয়; সাধারণ ঠান্ডা থেকে শুরু করে হৃদরোগের অসুখ পর্যন্ত। মূলত, আমি মানসিক চাপকে একপ্রকার শত্রুতে পরিণত করেছি। কিন্তু এই ব্যাপারে আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছি, এবং আজকে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আনতে চাই। একটি জরিপ দিয়ে শুরু করি যা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, চাপ নিয়ে আমার ভাবনাটার পুনর্মূল্যায়ণ করতে। এই জরিপটি আট বছর ধরে আমেরিকার ৩০,০০০ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে অনুসরণ করেছে। এবং তারা শুরু করতো প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে, এভাবে- "গত বছর আপনি কি পরিমাণ চাপের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন?" তারা আরো জিজ্ঞেস করতো, "আপনি কি মানসিক চাপকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে বিশ্বাস করেন?" এবং পরে তারা সাধারণ মৃত্যু রেকর্ড থেকে বের করলো যে এর মধ্যে কারা মারা গেছে। (হাসি) ঠিক আছে। প্রথমে কিছু খারাপ খবর দেই। যে মানুষগুলো বছরে পূর্ববর্তী বছর প্রচন্ড চাপের ভেতর দিয়ে গিয়েছিল, তাদের ৪৩ শতাংশ বেশি মৃত্যুঝুঁকি ছিল। কিন্তু সেটা শুধুমাত্র সেইসব মানুষদের জন্য সত্য ছিল যারা এটাও বিশ্বাস করতো যে চাপ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। (হাসি) যাদের প্রচন্ড চাপের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও চাপকে ক্ষতিকর বলে মনে করেনি, তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি ছিল না। আসলে তারা সবচেয়ে নিম্ন মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছিল জরিপের অন্যদের চেয়ে। এমনকি যাদের তুলনামূলকভাবে চাপ কম ছিল তাদের চেয়েও। এখন, গবেষকেরা হিসাব করে বের করলেন যে, যেই আট বছর তারা মৃত্যুর সংখ্যা গুণছিলেন, ১,৮২০০০ আমেরিকান এই সময়কালের ভেতর অকালে মৃত্যুবরণ করে, মানসিক চাপের কারণে নয়, বরং মানসিক চাপ যে স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ এই বিশ্বাসের কারণে। (হাসি) সেই হিসেবে প্রত্যেক বছর মৃত্যুসংখ্যা দাঁড়ায় ২০,০০০ এর উপর। এখন, যদি এই হিসাব সঠিক হয় তাহলে, অর্থ দাঁড়ায় যে চাপকে স্বাস্থ্যহানিকর মনে করাটা গত বছর আমেরিকায় মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণগুলোর মধ্যে ১৫তম স্থানে অবস্থান করেছে, কারণ স্কিন ক্যানসার, এইডস এবং মানবহত্যার চেয়েও বেশি মানুষ এতে মৃত্যুবরণ করেছে। (হাসি) বুঝতেই পারছেন যে কেন এই গবেষণার ফলফল আমার জন্য ভীতিকর ছিল। যেখানে আমি মানুষকে এই কথা বলার পেছনে প্রচুর শক্তি খরচ করে আসছি যে, মানসিক চাপ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই এই গবেষণাটি আমাকে ভাবালোঃ মানসিক চাপের ব্যাপারে ধারণার পরিবর্তন স্বাস্থ্যের কোন উন্নতি সাধন করে কিনা। আর এক্ষেত্রে বিজ্ঞানের জবাব- হ্যাঁ করে আপনি যখন চাপের ব্যাপারে আপনার ধারণা বদলাবেন, তখন আপনি চাপের সময় আপনার শরীরের প্রতিক্রিয়াতেও পরিবর্তন আনতে পারবেন। এখন এটা কিভাবে কাজ করে সেটা ব্যাখ্যা করার জন্য, আমি চাচ্ছি আপনারা সবাই মনে করুন যে, আপনারা অংশগ্রহণ করছেন একটি গবেষণাতে, যা আপনাকে মানসিক চাপ দেয়ার জন্য নকশাকৃত। এটাকে বলে সামাজিক চাপ পরীক্ষা। আপনি গবেষণাগারে আসবেন, এরপর আপনাকে বলা হবে আপনার ব্যক্তিগত দুর্বলতাগুলোর উপর বিনা প্রস্তুতিতে পাঁচ মিনিট কিছু বলার জন্য, যখন আপনার ঠিক সামনে বসে থাকবে মূল্যায়নকারীদের একটি দক্ষ দল, আর চাপ নিশ্চিত করার জন্য, আপনার মুখের সামনে থাকবে উজ্জ্বল আলোকরাশি এবং ক্যামেরা, কিছুটা এরকমই। (হাসি) আর মূল্যায়ণকারীরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আপনাকে নিরুৎসাহজনক তবে ইঙ্গিতপূর্ণ প্রতিক্রিয়া জানানোর কাজে। এই রকম। (শ্বাসত্যাগ) (হাসি) এখন যেহেতু আপনার মনোবল অনেকটা ভেঙ্গে গেছে, দ্বিতীয় পর্বের জন্য প্রস্তুতি নিনঃ একটি গণিত পরীক্ষা। এবং আপনার অজ্ঞাতসারে, আপনাকে এসময় হয়রান করার জন্য পরীক্ষক আগে থেকেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। এখন আমরা সবাই মিলে এটা করবো। ব্যাপারটা আনন্দের হবে। আমার জন্য। ঠিক আছে। (হাসি) আপনারা সবাই ৯৯৬ দিয়ে শুরু করে উলটো দিকে গুণতে থাকুন, প্রত্যেকবার সাত বিয়োগ করে। উচ্চস্বরে গুণতে থাকুন, যতো তাড়াতাড়ি পারেন, ৯৯৬ দিয়ে শুরু করুন। শুরু হচ্ছে এখন! (দর্শকেরা গণনা করছে) আরো তাড়াতাড়ি করুন। দয়া করে আরো তাড়াতাড়ি করুন। আস্তে হচ্ছে কিন্তু। (দর্শকেরা গণনা করছে) থামুন, থামুন, থামুন, থামুন। ঐ লোকটা একটা ভুল করে ফেলেছে। আমরা আবার একেবারে প্রথম থেকে শুরু করতে যাচ্ছি। (হাসি) এই কাজটা আপনারা বেশী ভালো পারেন না, তাই না? তো, আপনারা ধারণা করতে পারছেন। আপনাদের নিয়ে সত্যিই এই গবেষণা করা হলে আপনারা হয়তো কিছুটা হলেও চাপে পড়তেন। হয়তো আপনার বুকও ধক ধক করতো। হয়তো বা আপনি ঘন ঘন নিশ্বাস নিতেন কিংবা ঘামতে শুরু করতেন। আর সাধারণত, এই শারীরিক পরিবর্তনগুলোকে আমরা দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ হিসেবে ব্যাখ্যা করি, কিংবা মনে করি এগুলো চাপের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারার লক্ষণ। কিন্তু তার বদলে আপনি যদি এগুলোকে দেখেন আপনার শরীরে শক্তি সঞ্চারিত হওয়ার লক্ষণ হিসেবে, যা আপনাকে আপনার এই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রস্তুত করছিল? আসলে এই কথাগুলোই বলা হয়েছিল কিছু অংশগ্রহণকারীদেরকে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত একটি গবেষণাতে। সামাজিক চাপ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার আগে তাদেরকে শেখানো হয়েছিল- চাপের প্রতিক্রিয়াকে উপকারী হিসেবে ভাবতে। শেখানো হয়েছিল, বুকের ধকধকানি আসলে আমাদেরকে কাজের জন্য প্রস্তুত করে, তখন ঘনঘন শ্বাস প্রশ্বাস নেয়াটা কোন সমস্যা না, বরং এতে আপনার মস্তিষ্ক বেশি অক্সিজেন পায়। আর যারা মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়াকে ভাবতে শিখেছিল তাদের কাজের জন্য সহায়ক হিসেবে, তারা চাপের মধ্যেও ছিল অবিচল, কম উদ্বিগ্ন, বেশী আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে অসাধারণ লেগেছে তাদের চাপের শারীরিক প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি। এখন, চাপের যেকোন সাধারণ প্রতিক্রিয়ায় আপনার হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যায়, এবং আপনার রক্তনালিকাগুলিও তখন এই কারণে সংকুচিত হয়। আর এটাও একটা কারণ যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী দুশ্চিন্তাকে অনেক সময় হৃদরোগের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়। সবসময় এই অবস্থায় থাকাটা আসলে স্বাস্থ্যকরও নয়। কিন্তু এই গবেষণাটিতে, অংশগ্রহণকারীরা যখন তাদের চাপের প্রতিক্রিয়াকে উপকারী মনে করলো, তাদের রক্তনালী শিথিল থাকলো, ঠিক এরকম। তাদের হৃদযন্ত্র তখনও স্পন্দিত হচ্ছিল, কিন্তু এটি একটি অধিক স্বাস্থ্যবান হৃদযন্ত্রের নমুনা। আসলে এটি দেখতে মনে হচ্ছে অনেকটা আনন্দ এবং সাহসের মুহূর্তে এটি যেই অবস্থায় থাকে সেই রকমই। পুরো এক জীবনব্যাপী চাপের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে, এই একটি জীবতাত্ত্বিক পরিবর্তনই পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে, ৫০ বছর বয়সে মানসিক চাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক আর ৯০ বছর বয়সেও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার মধ্যে। আর মানসিক চাপ সংক্রান্ত নতুন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ঠিক এটাই বলছে যে, আপনি চাপের ব্যাপারে যা যা চিন্তা করেন সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তাই একজন স্বাস্থ্যমনোবিজ্ঞানী হিসেবে আমার উদ্দেশ্য বদলে গেছে। আমি আর আপনাদের চাপ থেকে মুক্ত করতে চাই না। আমি আপনাদেরকে চাপে পারদর্শী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর আমরা শুধু সামান্য মধ্যস্থতা করেছি। যদি আপনি তখন হাত তুলেন ও বলেন যে গত বছর আপনি অনেক চাপের মধ্যে ছিলেন, তাহলে হয়তো আমরা আপনার জীবন বাঁচিয়েছি, কারণ আশা করি পরেরবার যখন আপনার হৃদপিণ্ড চাপের কারণে স্পন্দিত হবে, আপনি আমার এই কথাগুলি মনে করবেন এবং আপনি নিজের মনে ভাববেন, আসলে আমার শরীর আমাকে আমার লক্ষ্যে অবিচল থাকতে সাহায্য করছে। এবং যখনই আপনি চাপকে এভাবে দেখেন, আপনার শরীর আপনাকে বিশ্বাস করে, এবং চাপের প্রতিক্রিয়াও আরো স্বাস্থ্যবান্ধব হয়ে ওঠে। তো, আমি বলেছিলাম যে, আমি এক দশকেরও বেশি সময় ভয়ঙ্কর চাপের মধ্যে ছিলাম যা থেকে পরে নিজেকে মুক্ত করতে হয়েছে। তাই আমরা আরেকবার মধ্যস্থতা করতে যাচ্ছি। আমি আপনাদের বলতে চাই, মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে কম উপলব্ধ দিকগুলোর মধ্যে একটি সম্পর্কে, এবং সেটি হচ্ছেঃ চাপ আপনাকে সামাজিক করে তোলে। চাপের এই দিকটি বুঝতে হলে, আগে অক্সিটোসিন নামক একটি হরমোন সম্পর্কে কথা বলা দরকার, এবং আমার জানামতে অক্সিটোসিন ইতোমধ্যে হরমোন হিসেবে যথেষ্ট পরিচিতি পেয়েছে। এমনকি এর একটা সুন্দর ডাকনাম আছে- আলিঙ্গন হরমোন, কারণ, যখন আপনি কাউকে আলিঙ্গন করেন, তখন এটি নিঃসৃত হয়। কিন্তু শুধু এটুকু বললে অক্সিটোসিন সম্পর্কে কমই বলা হবে। অক্সিটোসিন একটি স্নায়ু-হরমোন। এটি আপনার মস্তিষ্কের সামাজিক বোধকে উন্নত করে। এটি আপনাকে এমন কিছু করার প্রেরণা দেয়, যা পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কগুলোকে শক্তিশালী করে। অক্সিটোসিনের প্রভাবের কারণেই আপনি পরিবার-পরিজনের সংস্পর্শে আসতে চান। এটি আপনার সহানুভূতি বৃদ্ধি করে। এমনকি এটি আপনাকে ইচ্ছুক করে তুলে সহযোগীতা করার জন্য, তাদেরকে যাদের নিয়ে আপনি ভাবেন। এমনকি কেউ কেউ অক্সিটোসিন নিঃশ্বাসের সাথে আলাদাভাবে গ্রহণ করার ব্যাপারে মত দিয়েছেন, যাতে আমরা আরো সমবেদনাসম্পন্ন এবং আরো যত্নশীল হতে পারি। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ অক্সিটোসিন সম্পর্কে যেটা জানেনা সেটা এখন বলছি। এটি একটি চাপ হরমোন। আপনার পিটুইটারি গ্রন্থি এই উপাদানটির যোগান দেয় চাপের প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে। এটি আপনার চাপের প্রতিক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত, ঠিক আপনার হৃদপিণ্ডে স্পন্দন সৃষ্টিকারী আড্রেনালিনের মতোই। আর যখন চাপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়, তখন এটি আপনাকে সাহায্য অন্বেষণ করতে তাগিদ দেয়। আপনার মানসিক চাপের জৈবিক প্রতিক্রিয়া আপনার অনুভূতিগুলো কারো কাছে প্রকাশের জন্য তাড়া দেয়, সেগুলো চেপে না রেখে। আপনার চাপের প্রতিক্রিয়া এটা নিশ্চিত করতে চায় যে- আপনি খেয়াল করবেন যখন আপনার জীবনে আপনি অন্য কাউকে লড়তে দেখবেন, যাতে আপনারা পরস্পরকে সহায়তা করতে পারেন। জীবনে যখন সমস্যা আসে, তখন আপনার মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়াগুলো আপনার জন্য দাবি করে কিছু মানুষের সাহচর্য, তাদের যারা আপনাকে নিয়ে ভাবে। এখন, চাপের এই দিকটা জানলে আপনি কিভাবে স্বাস্থ্যবান হতে পারবেন? তো অক্সিটোসিন শুধু আপনার মস্তিষ্কের উপরই কাজ করে না। এটা আপনার দেহের উপরও কাজ করে, আর দেহের উপকারে এর প্রধান একটি ভূমিকা হচ্ছে- চাপের প্রভাব থেকে আপনার রক্তসংবহন্তন্ত্রকে রক্ষা করা। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রদাহরোধী । এটি চাপের সময় আপনার রক্তনালীকে শিথিল রাখতেও সহায়তা করে। তবে আমার পছন্দের শারীরিক প্রভাব হচ্ছে, হৃদযন্ত্রের উপর এর প্রভাব। এই হরমোনের জন্য আপনার হৃদপিন্ডে উদ্দীপক স্নায়ুকোষ আছে, এবং অক্সিটোসিন হৃদপিণ্ডের কোষকে পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং যেকোন চাপ সংক্রান্ত ক্ষয়-ক্ষতি হতে আরোগ্য করে। চাপের হরমোন আপনার হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী করে। আর অসাধারণ একটা ব্যাপার হচ্ছে যে, এই সবগুলো শারীরিক সুবিধাবলী যা যা অক্সিটোসিনের আছে, তার সবই সামাজিক যোগাযোগ এবং সহযোগীতার মাধ্যমে বেড়ে যায়। তাই আপনি যখন মানসিক চাপে ভুগছে এরকম অন্য কারোর শরণাপন্ন হন, সহায়তা চাওয়ার জন্য কিংবা কাউকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে, তখন আপনি এই হরমোন বেশি পরিমাণ নিঃসরণ করেন, আপনার চাপের প্রতিক্রিয়া আরো স্বাস্থ্যসম্মত হয়, এবং আপনি কার্যত চাপ থেকে আরো তাড়াতাড়ি মুক্তি পান। আমার কাছে এটা অসাধারণ লাগে, যে আপনার চাপের প্রতিক্রিয়ার একটি নিজস্ব পদ্ধতি আছে চাপকে প্রতিরোধ করার জন্য, এবং সেই পদ্ধতিটি হচ্ছে পারস্পরিক বন্ধন। আমি আপনাদেরকে আরেকটি গবেষণার কথা বলে শেষ করতে চাই। এবং ভালো করে শুনুন, কারণ এই গবেষণাটিও একটি জীবন বাঁচাতে সক্ষম। এই গবেষণাটি আমেরিকার প্রায় ১০০০ জন প্রাপ্তবয়স্ককে পর্যবেক্ষণ করেছে। এবং তাদের বয়সের ব্যপ্তি ছিল ৩৪ থেকে ৯৩ এর মধ্যে, এবং তারা গবেষণা শুরু করলো এটা জিজ্ঞেস করে যে, "গত বছর আপনি কি রকম চাপের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন?" তারা আরো জিজ্ঞেস করেছিল, "আপনারা কতটুকু সময় ব্যয় করেছেন আপনাদের বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী এবং আশেপাশের মানুষদের সাহায্য করার পেছনে? এবং এরপর তারা পরবর্তী পাঁচ বছর সাধারণ রেকর্ডসমূহ ঘেটে বের করেন যে কে কে মারা গেছেন। আচ্ছা, তো খারাপ খবরটা আগেঃ জীবনের প্রত্যেকটি বড় ধরণের চাপের অভিজ্ঞতা, যেমন টাকাপয়সার সমস্যা কিংবা পারিবারিক সমস্যা, এগুলো মৃত্যুর ঝুঁকি শতকরা ৩০ ভাগ বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু -- এবং আমি আশা করি আপনারা এতক্ষণে একটি "কিন্তু" আশা করছেন -- কিন্তু সেটা সবার জন্য সত্যি ছিল না। যেসব মানুষ অপরের কল্যাণে সময় ব্যয় করেছিল তাদের মধ্যে চাপজনিত কারণে মৃত্যুসংখ্যা বৃদ্ধি একেবারেই দেখা যায় নি। একেবারে শূন্য। অন্যের প্রতি যত্নই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এবং তাই আমরা আবারো দেখছি যে, আপনার স্বাস্থ্যের উপর চাপের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো অবশ্যম্ভাবী নয়। আপনি যেভাবে চিন্তা করেন এবং যেভাবে কাজ করেন তা আপনার চাপের অভিজ্ঞতায় রূপান্তর ঘটাতে পারে। আপনি যখন আপনার চাপের প্রতিক্রিয়াকে সহায়ক হিসেবে দেখবেন বলে স্থির করেন, তখন আপনি সাহসিকতার জৈবিক প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটান। আর যখন আপনি চাপে থাকা অন্য কারো সাথে যোগাযোগ করবেন বলে স্থির করেন, তখন আপনি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন। এখন, আমি বলছি না যে জীবনে আরো বেশি তীব্র মানসিক চাপের অভিজ্ঞতার দরকার আছে। কিন্তু এই শিক্ষা আমাকে মানসিক চাপ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারণা দিয়েছে। চাপ আমাদেরকে নিজেদের হৃদয়ে প্রবেশের সুযোগ দেয়। সেই হৃদয় যা অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং একই সাথে আনন্দ ও অর্থ খুঁজে পায় অন্যদের সাথে যোগাযোগের মধ্যে। হ্যাঁ, আপনার প্রকম্পিত ভৌত হৃদয়, যা আপনাকে তেজ ও শক্তির যোগান দেয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। এবং আপনি যখন চাপকে এভাবে দেখার চেষ্টা করবেন, তখন আপনি শুধু চাপ মোকাবেলা করাতেই ভালো হবেন তা নয়, আপনি আসলে একটি অতি গভীর সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন। আপনি আসলে বলছেন যে, জীবনের সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলায় আপনি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারেন। এবং আপনি স্মরণ করছেন যে, আপনার কখনো একাকি সেগুলোর সম্মুখীন হতে হবে না। ধন্যবাদ। (তালি) ক্রিস অ্যান্ডারসনঃ আপনার কথাগুলো অসাধারণ লাগলো। আমার কাছে এটা চমকপ্রদ লাগলো যে, চাপ সম্পর্কিত একটা বিশ্বাস কারো সম্ভাব্য আয়ষ্কালে এতো বড় পার্থক্য তৈরি করতে পারে। কিন্তু কেউ পরামর্শ চাইলে কোন উপদেশটি দিবেন, মানে, জীবনযাত্রার ধরণ বাছাই করার ক্ষেত্রে, চাপযুক্ত আর চাপবিহীন এই দুই ধরণের পেশার মধ্যে কোনটি বেছে নিবে সেটা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ? চাপের কাজটি বেছে নেয়া কি এখানে একই রকম যুক্তিসঙ্গত, ধরুন যদি আমি বিশ্বাস করি যে আমি এটিকে সামাল দিতে পারবো? কেলি: হ্যাঁ। আর একটি বিষয় আমরা নিশ্চিত জানি যে- নির্দিষ্ট লক্ষ্যের পিছে ছোটাটা বেশি স্বাস্থ্যকর, অস্বস্তি বা চাপ এড়ানোর চেয়ে। এবং তাই আমি বলবো যে, সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে- সেটার পিছনে ছোটা, যেটা আপনার জীবনকে অর্থবহ করে এবং তারপর নিজের উপর আস্থা এনে পরবর্তী সকল চাপ মোকাবেলা করা। ক্রিসঃ অনেক অনেক ধন্যবাদ, কেলি। খুবই ভালো বলেছেন। (তালি) বেশ, আমি একটা গল্প বলতে চাচ্ছিলাম আমার নতুন বইটি লেখার সময় যেটি আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল এবং এই গল্পের ঘটনাটি ঘটেছিল ৩০০০ বছর আগে, যখন ইসরাইল রাজ্যের শৈশবকাল চলছিল। এবং ঘটনাটি ঘটেছিল শেফেলাহ নামক এক জায়গায় যা আজকের ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত। এবং যে কারনে ঘটনাটি আমাকে আচ্ছন্ন করেছিল তা হল আমি ভেবেছিলাম আমি এটা বুঝতে পেরেছি, এবং তখন আবার ঘটনাটিতে ফিরে গিয়েছিলাম এবং তখন উপলদ্ধি করলাম যে আমি এটাকে একেবারেই বুঝতে পারিনি। প্রাচীন প্যালেস্টাইনের পূর্ব সীমান্তের বরাবর একটি পর্বতশ্রেণী ছিল। যা আজকের দিনে ইসরাইল রাষ্ট্রের পূর্ব সীমান্ত। এবং এই পর্বতশ্রেণীর মধ্যেই প্রাচীন নগর সমুহ অবস্থিত, ওই এলাকার নগর সমুহ, যেমন, জেরুসালেম, বেথলহেম, হেব্রন। এবং তারপরে আছে একটি উপকূলীয় সমভূমি - ভূমধ্যসাগরের তিরে, যেখানে আজকের দিনের তেলআবিব শহর। এবং এই উপকূলীয় সমভূমি এবং এই পর্বতশ্রেণীর সংযোগ কারী এলাকাটির নাম ছিল শেফেলাহ, যা ছিল পূর্ব-পশ্চিম বরাবর সারিবদ্ধ কতগুলো উপত্যকা ও ঢালের শ্রেনী, এবং আপনি শেফেলাহ বরাবর যেতে পারেন, শেফেলাহর ভিতর দিয়ে যেতে পারেন এই উপকূলীয় সমভূমি থেকে ওই পর্বতশ্রেণীতে। এবং ইসরাইলে গিয়ে থাকলে জানবেন যে শেফেলাহ হচ্ছে ইসরাইলের সবচেয়ে নয়নাভিরাম অংশ। চমৎকার একটি এলাকা, আছে ওক গাছের জঙ্গল এবং গমের ক্ষেত আর আঙ্গুরের বাগান। কিন্তু ওই এলাকার ইতিহাসে অধিকতর জরুরী এটি যে ভুমিকা পালন করেছে, এর একটি সত্যিকারের কৌশলগত ভুমিকা ছিল, যার মাধ্যমে আক্রমণকারী সৈন্যদলেরা ওই উপকুলের সমভূমি থেকে পথ করে নিয়ে পর্বতশ্রেণীতে উঠে গিয়ে সেখানে বসবাসকারীদেরকে ভীত করে তুলত। এবং ৩০০০ বছর আগে ঠিক এটাই হয়েছিল। প্যালেস্টাইনিরা, যারা কিনা সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল ইসরাইল রাজ্যের, তাঁরা এই উপকূলীয় সমভূমিতে বাস করতো। তাদের আদি নিবাস ছিল ক্রিট দ্বীপে। তাঁরা ছিল সমুদ্র-বিহারী জাতি। এবং তাঁরা হয়ত যাত্রা শুরু করাছিল শেফেলাহ এর কোনও একটি উপত্যাকার ভিতর দিয়ে ওই পর্বতশ্রেণীর পানে, কারন তাঁরা চেয়েছিল সেই উঁচু জমিটা দখল করতে যেটি বেথলহেমের লাগোয়া এবং এর মাধ্যমে ইসরাইল রাজ্যকে দুভাগ করতে। এবং রাজা সোল এর নেতৃত্বাধীন ইসরাইল রাজ্য স্পষ্টতই এটি বুঝতে পেরেছিল, এবং সোল তাঁর বাহিনীকে পাহাড় থেকে নামিয়ে আনলো এবং এলাহ উপত্যাকায় তাঁরা প্যালেস্টাইনিদের মুখোমুখি হল, যেটি ছিল শেফেলাহ এলাকার অন্যতম নয়নাভিরাম উপত্যাকা। এবং ইসরাইলিরা উত্তরের ঢাল বরাবর অবস্থান নিল, এবং প্যালেস্টাইনিরা অবস্থান নিল দক্ষিনের ঢাল বরাবর, এবং এভাবেই দুই দল বসে বসে সপ্তাহ পার করে দিল এবং একে অপরকে দেখতে থাকলো, এমনই অচলাবস্থা। কেউ কাউকে আক্রমন করছে না, কারন আক্রমন করতে হলে আপনাকে পাহাড় থেকে উপত্যাকায় নেমে আসতে হবে এবং তারপরে অন্য পাশে উঠতে হবে, আর তখনই আপনি পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পরবেন। তাই শেষমেশ এই অচলাবস্থা কাটাতে, প্যালেস্টাইনিরা তাঁদের সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধাকে নামালো সেই উপত্যকার মেঝেতে, আর সে হুঙ্কার দিল এবং ইসরাইলিদেরকে বলল, "তোমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধাকে নীচে পাঠাও, আর আমরা দুজনই এর সুরাহা করবো।" প্রাচীন কালের যুদ্ধকান্ডের একটা প্রচলিত প্রথা ছিল এই দ্বন্দ্বযুদ্ধ। এটি ছিল বিবাদ নিষ্পত্তি করার একটি উপায় যেখানে বড় যুদ্ধের রক্তপাত এড়ানো সম্ভব হত। এবং যে প্যালেস্টাইনিকে পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের দানবাকৃতি বীর পালোয়ান। সে ছিল ছয় ফিট নয় ইঞ্চি। সে ছিল ঝলমলে ব্রোঞ্জের তৈরি বর্মে আপাদ মস্তক আবৃত, এবং তাঁর ছিল একটি তলোয়ার আর ছিল একটি বর্শা আর ছিল তাঁর বল্লম। একেবারে সাংঘাতিক ভয়ঙ্কর। আর সে এতই ভয়ালদর্শন ছিল যে ইসরাইলিদের কেউ তাঁর সাথে লড়ার সাহস করে নি। এ যেন মৃত্যুর আহ্বান, তাই না? তাঁরা কোনভাবেই তাঁকে পরাস্ত করার কল্পনাও করতে পারেনি। এবং পরিশেষে একমাত্র একজনই সামনে এগিয়ে এল - এক নবীন রাখাল বালক, আর সে সোল এর সামনে গিয়ে বলল, "আমি তাঁর সাথে লড়ব।" এবং সোল বলেছিল, "তুমি ওর সাথে পারবে না। এটি পাগলামি। তুমি বাচ্চা ছেলে। আর সে একজন বীর পালোয়ান।" কিন্তু রাখাল ছেলেটি নাছোড়বান্দা। সে বলল, "না, না, না, আপনি বুঝতে পারছেন না, আমি আমার পশুপালকে রক্ষা করে চলেছি বছরের পর বছর সিংহ আর নেকড়ের হাত থেকে। আমি মনে করি আমি পারবো।" আর সোল ছিল অনোন্যপায়। তাঁর হাতে আর কেউ ছিলনা যে এগিয়ে আসবে। তাই তিনি বললেন, "বেশ তবে তাই হোক।" এবং তখন ছেলেটির দিকে ফিরে বললেন, "কিন্তু তোমাকে তো এই বর্ম পড়তে হবে। তুমি এভাবে যেতে পারো না।" তাই তিনি রাখাল ছেলেটিকে তাঁর বর্মটি দেবার চেষ্টা করলেন, এবং রাখাল ছেলেটি বলল, "না।" সে বলল, "আমি এসব পড়তে পারবো না।" বাইবেলের ভাষায়, "আমি এটি পড়তে পারি না কারন আমি এর জন্য পরিণত নই," অর্থাৎ, "আমি আগে কখনও বর্ম পড়িনি। এটা পাগলামি করা হবে।" তাই এর বদলে সে নীচে নেমে আসলো এবং পাঁচটি পাথরের টুকরা তুলে নিল এবং তাঁর রাখালের ঝুলিতে রাখলো এবং সেই দানবের মুখোমুখি হবার জন্য পাহাড়ের ঢাল বেয়ে হেঁটে নেমে গেল। এবং দানবটা সেই মানবমূর্তিকে এগিয়ে আসতে দেখলো, এবং হুংকার দিয়ে বলল, "কাছে আয় যেন আমি তোর মাংস খাওয়াতে পারি ঊর্ধ্বাকাশের পাখিদেরকে আর প্রান্তরের পশুদেরকে।" এভাবেই সে ছেলেটিকে বিদ্রূপ করছিল যে আসছিল তাঁর সাথে লড়তে। আর রাখালছেলেটি ক্রমশ কাছে এগিয়ে আসতে থাকলো, এবং দানবটি দেখল ছেলেটির হাতে একটা লাঠির মত জিনিস। শুধু ওটাই তাঁর সাথে ছিল। কোনও অস্ত্র নয়, কেবলমাত্র এই রাখালের লাঠি। এবং সে বলল -- রীতিমত অপমানিত বোধ করে -- "আমি কি একটি কুকুর যে তুমি লাঠি নিয়ে আমার কাছে আসবে?" এবং রখালছেলেটি তাঁর পাথরগুলির একটি নিল, পকেট থেকে বের করে তাঁর সেই বিশেষ গুলতিতে আটকিয়ে নিল এবং সেটি ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে ছুঁড়ে দিল এবং সেটি দানবের দুই চোখের ঠিক মাঝ বরাবর গিয়ে লাগলো -- ঠিক এখানে, তাঁর দেহের সবচেয়ে নাজুক স্থানটিতে -- এবং সে হয় মারা গেল কিংবা অজ্ঞান হয়ে ভূপাতিত হল এবং রাখাল ছেলেটি দৌড়ে উঠে গিয়ে তাঁর তলোয়ারটি নিল এবং দানবের মাথাটি কেটে নিল। এবং সে দৃশ্য দেখে প্যালেস্টাইনিরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে গেল। আর নিশ্চিতভাবেই, সেই দানবের নাম ছিল গলিয়াথ এবং রাখাল বালকের নাম ছিল ডেভিড, আর যে কারনে সেই গল্পটি আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল, আমার বইটি লেখার পুরো সময় জুড়ে, তা হল, এই গল্পের যা কিছুই আমি জানতাম বলে মনে করতাম তা সবই ভুল বলে প্রতীয়মান হল। তো, এই গল্পে, ডেভিডকেই আন্ডারডগ হিসাবে ধরে নেয়া হয়েছে, তাই না? বস্তুতপক্ষে, ডেভিড আর গলিয়াথ - এই পরিভাষাটি একটি উপমা হিসাবে ভাষায় প্রবেশ করেছে যার অর্থ অসম্ভাব্য বিজয় - ভীষণ শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্বলের বিজয়। এখানে আমরা কেন ডেভিডকে আন্ডারডগ বলি? বেশ, তাঁকে আন্ডারডগ বলা যায় কারন সে ছিল নেহায়েত একটি বালক, একটি ছোট্ট বালক, আর গলিয়াথ ছিল বিশাল, পরাক্রমশালী দানব। এছাড়াও তাঁকে আমরা আন্ডারডগ বলি কারন গলিয়াথ একজন ঝানু যোদ্ধা, আর ডেভিড একটি মামুলী রাখালছেলে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে কারনে তাঁকে আন্ডারডগ বলি তা হল কী কী অস্ত্র-শস্ত্র তাঁর কাছে ছিল -- যেখানে গলিয়াথ সুসজ্জিত ছিল যাবতীয় আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র, এই ঝলমলে দেহ বর্ম এবং একটি তলোয়ার আর একটি বর্শা ও বল্লম আর ডেভিডের সম্বল ছিল শুধু এই গুলতি। বেশ, এই বাক্যটা দিয়ে শুরু করা যাক - "ডেভিডের সম্বল ছিল শুধু এই গুলতি," কারন এখানেই আমরা প্রথম ভুলটি করি। প্রাচীনকালের যুদ্ধকান্ডে তিন ধরনের যোদ্ধা ছিল, অশ্বারোহী, যাঁরা ঘোড়া কিংবা রথে চড়ে যুদ্ধ করতেন, ছিল ভারী-পদাতিক, পায়ে হাঁটা সৈন্যদল, ঢাল-তলোয়ার সজ্জিত সসস্ত্র পদাতিক - আর কিছু বর্ম ও সাথে থাকতো। এবং ছিল গোলন্দাজ বাহিনী, আর তাঁরা ছিল তীরন্দাজ, কিন্তু, মুলতঃ, গুলতিবাজ বিশেষ। আর এই গুলতিবাজদের অস্ত্র ছিল একটি চামড়ার থলে আর তাতে আটকানো দুটি লম্বা দড়ি। আর তাঁরা রাখতো একটা গুলি, হয় পাথর কিংবা সীসার বল, ওই থলির ভিতরে, আর তাঁরা এভাবে এটাকে চক্রাকারে ঘোরাতো আর দড়িদুটির একটি ছেড়ে দিত, আর এভাবেই গুলিটিকে ছুঁড়ে দেয়া হত লক্ষ্য বস্তুর দিকে। ডেভিডের কাছেও এটাই ছিল, আর এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে এই গুলতি যেই সেই গুলতি নয়। এটা যা ভাবা হয় সেটা নয়, ঠিক তো? বাচ্চাদের খেলনা নয়। বাস্তবে এটি অবিশ্বাস্য রকম বিধ্বংসী একটি অস্ত্র। ডেভিড যখন এটাকে এভাবে ঘোরাচ্ছিল, সম্ভবতঃ এটাকে সে পাক খাওয়াচ্ছিল - সেকেন্ডে ছয় বা সাত বার করে, আর তার মানে, ছোঁড়ার পরে পাথরটি অত্যন্ত দ্রুত ছুটে যাচ্ছিল, সম্ভবতঃ সেকেন্ডে ৩৫ মিটার বেগে। এটি একটি বেসবলের চেয়েও যথেষ্ট দ্রুতগতির, এমনকি শ্রেষ্ঠতম নিক্ষেপকের ছোঁড়া বলের চেয়েও যথেষ্ট দ্রুত। তদুপরি, এলাহ উপত্যাকার পাথরগুলি সাধারন শিলা ছিল না। ওগুলো ছিল বেরিয়াম সালফেট, এগুলি সাধারন পাথরের চেয়ে দ্বিগুন ঘনত্বের। নিক্ষেপণ তত্ত্বের হিসাবে, ডেভিডের ছোঁড়া পাথরটির আঘাত করার ক্ষমতা মোটামুটিভাবে ততটাই ছিল যতটা একটি .৪৫ ক্যালিবারের বন্দুকের থাকে। এটি সাংঘাতিক রকমের একটি বিধ্বংসী অস্ত্র। অভ্রান্ততা, ঐতিহাসিক নজীর থেকে জানা যায় যে গুলতিবাজেরা -- অভিজ্ঞ গুলতিবাজেরা আঘাত করতে পারতো এবং ২০০ গজ দূর থেকেও শিকারকে পঙ্গু এমনকি হত্যা করতে পারতো। মধ্যযুগের সূচিকর্ম থেকে জানা যায় যে এইসব গুলতিবাজেরা উড়ন্ত পাখিকেও আঘাত করতে সক্ষম ছিল। তাঁরা ছিল সাংঘাতিক নিখুঁত লক্ষ্যভেদী। ডেভিড যখন অবস্থান নিল - আর গলিয়াথ থেকে ২০০ গজও দূরে ছিল না। সে গলিয়াথের বেশ কাছেই ছিল -- যখন সে অবস্থান নিয়ে গলিয়াথের দিকে জিনিসটা ছুঁড়েছিল, তাঁর সকল আশা আকাঙ্ক্ষা সেখানেই পুঞ্জিভূত ছিল যেন সে গলিয়াথকে তাঁর সবচেয়ে নাজুক স্থানটিতে আঘাত করতে পারে - ঠিক তাঁর দু'চোখের মাঝখানে। প্রাচীন যুদ্ধকাণ্ডের ইতিহাস ঘাঁটলে আপনি বার বার দেখতে পাবেন যে গুলতিবাজেরাই পদাতিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিত, তা সে লড়াইটা যে ধরনেরই হোক না কেন। তো, গলিয়াথ কি ছিল? সে ছিল একজন ভারী পদাতিক, এবং ইসরাইলিদেরকে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আমন্ত্রন জানানোর সময় সে আশা করেছিল যে তাঁকে আরেকজন ভারী পদাতিকের সাথে লড়তে হবে। যখন সে বলে, "কাছে আয়, যেন আমি আকাশের পাখি আর ময়দানের পশুদেরকে তোর মাংস খাওয়াতে পারি," সেখানে মূল কথাটি ছিল "কাছে আয়।" আমার কাছে আয়, কারন আমরা লড়তে যাচ্ছি, হাতাহাতি, ঠিক এরকম। সোল ও তেমনটিই ভেবেছিলেন। ডেভিড বলেছিল, "আমি গলিয়াথের সাথে লড়ব," আর সোল তাকে তাঁর বর্মটি দিতে চেয়েছিল, কারন সোল ভেবেছিল, "ওহ, যখন বললে 'গলিয়াথের সাথে লড়ব,' তখন তুমি 'তাঁর সাথে হাতাহাতি লড়াই করবে,' পদাতিকের সাথে পদাতিক।" কিন্তু ডেভিডের মনে এরকম কোন ইচ্ছাই ছিল না। সে এভাবে তাঁর সাথে লড়বে না। কেনই বা লড়বে? সে রাখাল-বালক। এই পুরো সময়টা সে কাটিয়েছে এই গুলতির সাহায্যে সিংহ আর নেকড়ের হাত থেকে তাঁর পশুপালকে রক্ষা করে। এখানেই তাঁর শক্তি নিহিত। তাই, সে সেই রাখাল, সু-অভিজ্ঞ - একটি সাংঘাতিক অস্ত্র চালনায়, মুখোমুখি হয়েছে এক কুঠারধারী দানবের বিরুদ্ধে যার বর্মের ওজন শত পাউন্ড আর তাঁর অবিশ্বাস্য রকমের ভারী অস্ত্রসস্ত্র যেগুলো কিনা স্বল্প-দুরত্বের লড়াইয়ের উপযোগী। গলিয়াথের অবস্থা ছিল শিকারীর সামনে স্থির বসে থাকা হাঁসের মত, একেবারেই সুযোগ বিহীন। তাহলে ডেভিডকে কেন আমরা আন্ডারডগ বলে বেড়াই? আর কেন তাঁর এই বিজয়কে আমরা অসম্ভব বলে অভিহিত করি? এখানে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ব্যাপার রয়েছে। এমন নয় যে আমরা ভুল বুঝেছি, শুধু ডেভিড আর তাঁর ও অস্ত্রপাতিকে, আমরা গলিয়াথকেও গভীরভাবে ভুল বুঝেছি। গলিয়াথকে যেমনটি মনে হয়, সে আসলে তেমন নয়। বাইবেলের এই কাহিনীতে সব ধরনের ইঙ্গিত দেয়া আছে, সে সময়কার ঘটনাগুলো বেশ গোলমেলে আর তাঁর ওই বীর পালোয়ান ইমেজের সাথে ঠিক খাপ খায় না। প্রথমতঃ, বাইবেল বলছে যে গলিয়াথ একজন পরিচারকের সহায়তায় উপত্যাকায় নেমে এসেছিল। এটা বেশ অদ্ভুত, তাই না? এখানে এক বীর পালোয়ান ইসরাইলিদেরকে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আমন্ত্রণ ছুঁড়ে দিচ্ছে। তাঁকে কেন হাত ধরে যেতে হবে, সম্ভবতঃ এক তরুন বালকের হাত ধরে, লড়াই-এর স্থানের দিকে? দ্বিতিয়তঃ, বাইবেলের কাহিনীতে বিশেষভাবে বিদ্ধৃত আছে যে, গলিয়াথ কি রকম শ্লথগতির ছিল, আরেকটি উদ্ভট ব্যাপার, যখন বর্ণনা করবেন সে সময়কার সবচেয়ে শক্তিশালী পালোয়ানকে আর সেখানেই রাজ্যের যত অদ্ভুত বিষয় - প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য গলিয়াথ কতটা সময় নিয়েছিল, যখন সে ডেভিডকে দেখলো। তো, ডেভিড পাহাড় থেকে নেমে আসছে, আর স্পষ্টতই সে কোনপ্রকার মল্লযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল না। এমনটি কোথাও নেই যে সে বলছে, "আমি তোমার সাথে এভাবে লড়তে যাচ্ছি।" এমনকি তাঁর কাছে কোনও তলোয়ারও ছিল না। এব্যাপারে কেন গলিয়াথের কোনও প্রতিক্রিয়া নেই? কী হতে যাচ্ছে এব্যাপারে মনে হচ্ছে সে যেন একেবারেই নিশ্চিত ছিল। আর তারপর সে ডেভিডের প্রতি সেই অদ্ভুত মন্তব্যটি করলঃ "আমি কুকুর নাকি যে তুমি লাঠিগুলো নিয়ে আমার কাছে এসেছ?" লাঠিগুলো? ডেভিডের কাছে মাত্র একটি লাঠি ছিল। বেশ, দেখা যাচ্ছে যে, এখানে যথেষ্ট মাত্রায় জল্পনা-কল্পনা আছে, চিকিৎসক সমাজে, কয়েক বছর ধরে যে সেখানে কি এমন কিছু ছিল যা গলিয়াথ সম্পর্কে মূল ধ্যান ধারনার পরিপন্থী, এই সব আপাত অসঙ্গতিসমূহ ব্যাখ্যা করার উদ্দেশ্যে অনেক লেখালেখি হয়েছে প্রথমটি ছিল ১৯৬০ সালের ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল জার্নালে, আর সেখান থেকে জল্পনার ডালপালা গজাতে শুরু হয়, প্রথমেই আসে গলিয়াথের উচ্চতার ব্যাপারটি। তো, গলিয়াথ ছিল ঘাড়ে-মাথায় অনেক উঁচু - তাঁর সময়ের যে কোনও যোদ্ধার চেয়ে। আর সাধারণত যখন কেউ এতটা অস্বাভাবিক আকার ধারন করে, তখন তার একটা ব্যাখ্যা থাকে। তো, দানবীয়তার সবচেয়ে সাধারন রূপ হল এক্রোমেগালি নামে পরিচিত একটি দশা, আর এক্রোমেগালি হয়ে থাকে মস্তিষ্কের একটি টিউমারের কারনে যেটি আপনার পিটুইটারি গ্রন্থিতে অবস্থান করে, যার কারনে অতিরিক্ত পরিমানে হিউম্যান গ্রোথ হরমোন তৈরি হয় আর ইতিহাস জুড়ে, বেশীরভাগ বিখ্যাত দানবদেরই এক্রোমেগালি ছিল। তাই সর্বকালের সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তিটি ছিলেন রবার্ট ওয়াডলোও নামের একজন যিনি ২৪ বছর বয়সে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত বেড়ে চলছিলেন আর তিনি ছিলেন ৮ ফিট ১১ ইঞ্চি। তাঁর এক্রোমেগালি ছিল। দ্যা জায়ান্ট নামে পরিচিত কুস্তিগীর আন্দ্রের কথা মনে আছে? সুবিখ্যাত। তাঁর এক্রোমেগালি ছিল। এমনকি আব্রাহাম লিংকনেরও এক্রোমেগালি ছিল বলে কানাঘুষা শোনা যায়। অস্বাভাবিক লম্বা যে কারোর বেলায় সবার আগে এই ব্যাখ্যাতেই আমরা উপনীত হই। আর এক্রোমেগালির সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু সুস্পষ্ট পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে, প্রধানত দৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত। পিটুইটারির এই টিউমারটি যখন বড় হতে থাকে, প্রায়শই মস্তিষ্কের দৃষ্টি সংশ্লিষ্ট স্নায়ুসমুহের উপর চাপ দিতে থাকে, ফলশ্রুতিতে এক্রোমেগালি আক্রান্ত ব্যাক্তিরা হয় ডাবল-ভিশন না হয় সাংঘাতিক রকমের হ্রস্ব-দৃষ্টি সম্পন্ন হয়ে থাকেন। তাই যখন লোকজন জল্পনা-কল্পনা শুরু করল যে গলিয়াথের গোলমালটা কোথায় ছিল, তাঁরা বলেছেন, "আরে দাঁড়ান! এঁ তো দেখেতে শুনতে তাঁদের সাথে নিদারুন ভাবে মিলে যাচ্ছে যাঁরা এক্রোমেগালিতে আক্রান্ত।" আর এটার থেকে সেদিনের তাঁর অদ্ভুত আচরণের অনেক কিছু স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়। কেন সে এত শ্লথগতির ছিল আর কেন তাঁকে হাতে ধরে উপত্যাকায় নামাতে হয়েছিল পরিচারকের সহায়তায়? কারন সে নিজে নিজে পথ চলতে পারতো না। কেন সে ডেভিড সম্পর্কে এতটা বিস্ময়করভাবে অনবহিত ছিল যে সে বুঝতে পারেনি যে ডেভিড তাঁর সাথে লড়তে আসেনি - একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত? কারণ সে দেখতে পেত না। যখন সে বলে, "কাছে আয় যেন আমি তোর মাংস খাওয়াতে পারি ঊর্ধ্বাকাশের পাখিদেরকে আর প্রান্তরের পশুদেরকে।" এই "আমার কাছে আয়" কথাটিও তাঁর অক্ষমতা সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়। আমার কাছে আয় যেন আমি তোকে দেখতে পাই। আর তারপরে, "আমি কি একটা কুকুর যে তুই লাঠিগুলি নিয়ে আমার কাছে এসছিস?" সে দুইটা লাঠি দেখেছে যদিও ডেভিডের কাছে ছিল মাত্র একটা। তাই, পাহাড়ের উপরে অবস্থান নেয়া ইসরাইলিরা নীচে তাঁকে দেখে ভেবেছিল সে বোধহয় এহেন মহা পরাক্রমশালী এক শত্রু। তাঁরা যা বুঝতে পারেনি সেটা হল তাঁর এই আপাত শক্তির উৎসের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। আর আমি মনে করি যে এখানে আমাদের জন্য এক অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। দেখে যতটা মনে হয়, দানবেরা ততটা শক্তিশালী বা ক্ষমতাধর নয়। আর মাঝে মাঝে রাখালছেলের ঝুলিতে একটি গুলতি থাকে। ধন্যবাদ। (করতালি) গত আড়াই বছর ধরে আমি হাতেগুনা কয়েকজন শিশু মনোবিজ্ঞানীদের একজন অথবা একমাত্র শিশু মনোবিজ্ঞানী যে শরণার্থী ক্যাম্প - উপকূল এবং উদ্ধারকারী নৌকায় কাজ করছি গ্রীস এবং মেডিটেনানিয়ার সাগরে এবং আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে আমরা সেখানে মানসিক স্বাথ্যের চরম অবনতি দেখছি যেটি আমাদের সবার উপরে প্রভাব ফেলবে এবং আমাদের পৃথিবী বদলে দিবে আমি হাইফায় থাকি কিন্তু এখ্ন আমি সারা সময় বাইরেই কাটাই যখন আমি গ্রীক আইল্যান্ড অব লেসবোস এ ছিলাম এবং মেডিটেরানিয়ার উদ্ধার নৌকায় ছিলাম উপকুলে হাজার হাজার শরণার্থী নৌকা এসেছিলো এবং এগুলো ১৫ লাখ শরণার্থী দিয়ে পুর্ণ ছিলো তাদের চার ভাগের এক ভাগ ছিলো শিশু যারা যুদ্ধ ও দুর্দশা থেকে পালিয়ে এসেছে প্রতি নৌকায় বিভিন্ন দুর্দশা মানুষ ছিলো সিরিয়া,ইরাক,আফগানস্থান এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে শুরুমাত্র শেষ তিন বছরে, বারো হাজার শরণার্থী জীবন হারিয়েছে এবং হাজার হাজার শরণার্থী হারিয়েছে তাদের মন এই পাশবিক ও মর্মান্তিক আভিজ্ঞতার কারনে আমি আপনাদের উমরের ব্যপারে বলতে চাই সে ছিলো একজন ৫ বছর বয়সী সিরিয়ান শরণার্থী সে কিনা লেসবোস এর উপকূলে একটি মানুষবোঝাই রাবারের নৌকায় করে এসেছে সে কাদছিলো এবং ভয়ে ছিলো। বুঝতে পারছিলো কি হচ্ছে সে একটি নতুন ভীতি তৈরি করার আগ মুহুর্তে ছিলো আমি জানতাম এটাই সোনালী সময় একটি ছোটো মুহুর্ত আমি তার জীবনকাহিনী বদলাতে পারি আমি জীবনকাহিনী বদলাতে পারি যা সে নিজেকে সারাজীবন বলতে আমি তার মেমোরি বদলাতে পারি আমি আমার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ওর মার সাথে হাত মিলানোর সময় বললাম আদেনি এলওয়াদ ও ক্ষুদি নাফাস "ছেলেটাকে আমাকে দিয়ে একটু জিরিয়ে নিন' ওর মা ওকে আমার কাছে দিলো উমর আমার দিয়ে ভয়ে ভয়ে ভিজা চোখে তাকিয়ে বলল আমানো শুহু হাদা? এটা কি? পুলিশের হেলিকোপ্টাররের দিকে আঙ্গুল দিয়ে 'এটা হেলিকোপ্টার; এটা তোমার ছবি তুলবে বড় ক্যমেরার দিয়ে কারন শুরুমাত্র বড় এবং শক্তিশালী সুপারহিরো যারা তোমার মত,তারাই সমুদ্র পাড়ি দিতে পারে উমর কান্না থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো আনা বাতাল? আমি একজন হিরো? আমি উমারের সাথে পনের মিনিট ধরে কথা বললাম এবং ওর আভিভাবকদের কিছু নির্দেশনা দিলে মেনে চলার জন্য এই ছোটো মানসিক প্রাথমিক চিকিৎসা মানসিক আঘাতের সমস্যা কমিয়ে দেয় এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা যা ভবিষ্যতে হতে পারে যা উমরকে শিক্ষা গ্রহনের জন্য প্রস্তুত করবে এবং কর্মক্ষেত্রে যোগদান এবং পরিবার গঠনের্ব সাহায্য করতে? কিভাবে? ভালো মেমোরিগুলো মনে করিয়ে যা আমাদের এমিগদালায় সংরক্ষিত থাকে এটি মানুষের আবেগ সংরক্ষন কেন্দ্র এই মেমোরিগুলো বাজে মেমেরিগুলোর সাথে লড়াই করবে যদি তারা আবার এক্টিভ হয় ভবিষ্যতে উমরকে সমুদ্রের বাতার শুরুমাত্র তার দুঃখকষ্টের কথা মনে করাবে না কারন উমরের কাছে এটি এখন এটি সাহসিকাতার গল্প এটিই সোনালী সময়ের শক্তি যা দুঃখকে বদলিয়ে নতুন কাহিনি তৈরি করতে পারে কিন্তু উমর ৩৫০,০০০ শিশুর মধ্যে মাত্র একজন যে যথাযথ মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পেয়েছে সাড়ে তিন লক্ষ এবং আমার মানসিক স্বাথ্যের প্রফেশনার ব্যক্তি প্রয়জন উদ্ধারকারী দলে যোগ দেওয়া তাদের কাজের সময় এইজন্য আমি এবং আমার স্ত্রী ও বন্ধুরা মিলে গঠন করেছি "হিউমিনিটি ক্রু" প্রথিবির অল্পকিছু সংস্থার মধ্যে একটি যারা মানসিক স্বাথ্যসেবা এবং প্রাথমিক মানসিক চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ শরনার্থীদের এবং বিচ্ছিন্ন জনগনকে তাদের যথাযত প্রাথমিক মানসিক চিকিৎসা প্রদানে আমরা চার ধাপ বিশিষ্ট একটি মানসিক প্ল্যান বের করেছি যা শরনর্থীদের প্রতিটি পদক্ষেপে সাহায্য করবে যা শুরু হয় সাগরের মধ্যে,উদ্ধারকারী নৌকার ভিতরে মানসিক জীবনরক্ষক হিসেবে এবং পরে ক্যাম্পে,হসপিতালে এবং আমাদের অনলাইন ক্লিনিকের মাধ্যমে যা সীমান্ত ভেঙ্গে দেয় এবং ভাষাকে জয় করে এবং বিভিন্ন দেশে পাগলাগারদ বন্ধ করে দেয় ২০১৫ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে 'হিউমিনিটি ক্রু" ১৯৪ জন ডেলিগেশন ছিলো যারা যোগ্য এবং প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী ও থেরাপিস্ট আমরা ২৬০০০ ঘন্টা মানসিক সেবা প্রদান করেছি ১০০০০ এর ও বেশি শরনার্থীকে আমরা সবাই কিছু না কিছু করতে পারি এই মানসিক স্বাথ্যের অবনতি রোধে আমরাদের স্বীকার করার উচিত আমাদের শুরুমাত্র দেহের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়জন নয় বরং মনের জন্য ও প্রয়জন মনের উপর প্রভাব দেখা যায় না তেমন কিন্তু সারা জীবনের জন্য সেখানে ক্ষতি হতে পাড়ে আমাদের ভোলা উচিত নয় যে কি মানুষ ও অন্য পশুকে আলাদা করে এটা আমাদের সুন্দর মন যা আমাদের রয়েছে আসেন সবাই উমরকে বাচানো চেস্টা অরি সবাইকে ধন্যাবাদ ( হাততালি) (হাততালি) (হাততালি) আমার তখন ১০ বছর বয়স বাবার সঙ্গে তাঁবুতে অবকাশযাপন করতে গেছিলাম অ্যাডিরোন্ড্যাক পর্বতে, ওটা একটা অরণ্য অঞ্চল যেটা নিউ ইয়র্ক রাজ্যের উত্তর অংশে অবস্থিত। দিনটা খুব সুন্দর ছিল। জঙ্গলটা আলো ঝলমলে ছিল। রোদ পড়ে গাছের পাতা গুলো রঙিন কাচের মত ঝক ঝক করছিল, আর আমরা যে পথটা অনুসরণ করছিলাম সেটা যদি না থাকতো তাহলে আমাদের প্রায় এমন লাগতো যেমন ওই মাটিতে আমরাই প্রথম মানুষ যারা পা ফেলেছি। আমরা আমাদের ক্যাম্পস্থলে উপস্থিত হলাম। ওটা খাড়া পাহাড়ের গায়ে লাগানো একটা চালা যার নীচে একটা অপূর্ব, স্ফটিক স্বচ্ছ ঝিলের শোভা দেখা যায়, আর তখনই আমি একটা জঘন্য ব্যাপার আবিষ্কার করলাম। ওই হেলান চালার পিছনে একটা আস্তাকুড়, প্রায় ৪০ বর্গ ফুটের যেটা পচা আপেলের শাঁস আর দুমড়ানো অ্যালুমিনিয়াম তবক আর পরিত্যক্ত জুতো দিয়ে ভরা ছিল। আর আমার অবাক লেগেছিল, আমি খুব রেগে গেছিলাম, আর আমি হতবুদ্ধি হয়ে গেছিলাম। যে সব শিবিরবাসী এত অলস যে তারা যেটা নিয়ে আসে সেটাও নিয়েও যায় না, তারা কি চিন্তা করে যে তাদের আবর্জনা কে পরিষ্কার করবে? এই প্রশ্নটা আমার মনে থেকে গিয়েছিল, আর প্রশ্নটা একটু সরল হয়েছিল। আমাদের আবর্জনা কে পরিষ্কার করে? সেটা আপনি যেভাবেই ভাবুন বা এই আমাদের যেখানেই স্থাপন করুন, আমাদের আবর্জনা ইস্তাম্বুলে কে পরিষ্কার করে? রিও তে আমাদের আবর্জনা কে সরায় বা প্যারিস কিংবা লন্ডনে? এই এখানে নিউ ইয়র্কে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিভাগ আমাদের আবর্জনা পরিষ্কার করে, যার পরিমাণ হল ১১,০০০ টন আবর্জনা আর ২,০০০ টন রিসাইকেল যোগ্য বর্জ্য। আমি এই মানুষগুলোকে ব্যক্তিগত ভাবে জানতে চেয়েছিলাম। আমি বুঝতে চাইছিলাম যে এই কাজটা কারা করতে চায়। ওই উর্দিটা পড়তে আর এই দায়িত্বের বোঝা বইতে কেমন লাগে? তাই আমি ওনাদের সঙ্গে নিয়ে একটা গবেষণামূলক কার্যক্রম শুরু করলাম। আমি ওই ট্রাকে চড়ে ঘুরলাম আর ওই রাস্তায় হাঁটলাম আর পুরো শহরে লোকের সাক্ষাৎকার নিলাম বিভিন্ন অফিস আর দপ্তরে, আর আমি অনেক কিছু জানতে পারলাম, কিন্তু তবু আমি ছিলাম একজন বাইরের লোক। আমার আরও ভেতরে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। আর তাই আমি একজন জঞ্জাল কর্মীর কাজ নিলাম। এখন আমি শুধু ট্রাকে চড়ছিলাম না। আমি ট্রাক চালাচ্ছিলাম। আর আমি যান্ত্রিক ঝাঁটা চালাতাম আর বরফ সাফাই করতাম। ওটা একটা অসাধারণ মর্যাদার আর চমকপ্রদ ভাবে শিক্ষণীয় কাজ ছিল। সবাই গন্ধের কথা জিগ্যেস করে। ওটা ছিল কিন্তু ওটা আপনারা যতটা ভাবেন ততটা ব্যাপক ছিল না, আর যে সব দিনে ওটা খুব বেশী থাকে, আপনি খুব তাড়াতাড়ি ওটাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। ওজনটাতে অভ্যস্ত হতে অনেক সময় লাগে। আমি এমন লোকদের জানতাম যারা এই কাজে বহু বছর আছে তবু তাদের শরীর তখনও টন কে টন জঞ্জালের গুরুভার প্রতি সপ্তাহে শরীরের ওপর বহন করতে অভ্যস্ত হচ্ছে। আর আছে বিপদের ভয়। শ্রমিক পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুযায়ী জঞ্জাল সাফাই দেশের ১০ টা সবথেকে বিপদজনক কাজের একটা, আর আমি জানতে পেরেছিলাম কেন। আপনি সারাদিন যানবাহনের স্রোতে ঢোকা বেরুনো করেন, আর ওগুলো আপনার চারধারে সাঁই সাঁই করে চলে। এরা শুধু আপনাকে ছাড়িয়ে আগে যেতে চায়, তাই প্রায়ই গাড়ির চালক মনোযোগ দেয় না। সেটা কর্মীদের জন্য খুবই খারাপ। আর তাছাড়া জঞ্জালে এমনিতেই বিভিন্ন ঝুঁকি থাকে আর প্রায়ই সেগুলো ট্রাকের পিছন থেকে ছিটকে পড়ে আর ভয়ানক ক্ষতি ঘটায়। আমি জঞ্জালের নিরবচ্ছিন্নতা সম্পর্কেও জানতে পারলাম। আপনি যখন ফুটপাথ থেকে নেমে আসেন আর একটা শহরকে একটা ট্রাকের পিছন থেকে দেখেন, আপনি বুঝতে পারেন যে জঞ্জাল নিজে একটা প্রাকৃতিক শক্তির মত। এটার আসা কখনো বন্ধ হয় না। এটা শ্বাসপ্রশ্বাস বা রক্তসঞ্চালনের মত। এটাকে অবিরত সচল থাকতে হবে। আর আছে এর সঙ্গে জড়িত কলঙ্ক। আপনি উর্দিটা পরার সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য হয়ে যান যতক্ষণ না কেউ কোন কারণে আপনার ওপর অসন্তুষ্ট হয় যেমন যখন আপনি আপনার ট্রাক দিয়ে গাড়ি চলার রাস্তা আটকে দেন বা আপনি কারো বাড়ির খুব কাছে বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নেন, বা আপনি একই রেস্তোরাঁয় কফি খেতে যান, আর তখন ওরা এসে আপনাকে ঘৃণার চোখে দেখবে, আর আপনাকে জানিয়ে দেবেন যে ওরা আপনাকে ওনাদের ত্রিসীমানায় দেখা পছন্দ করেন না। আমার এই কলঙ্কের ব্যাপারটা খুব উদ্ভট মনে হয়, কারণ আমি বিশ্বাস করি যে জঞ্জাল সাফাই কর্মীরা আমাদের শহরের রাস্তার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শ্রমশক্তি আর এর তিনটে কারণ। ওরা জনস্বাস্থ্যের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক। ওনারা যদি প্রতিদিন জঞ্জাল না সরান দক্ষতা আর সক্রিয়তার সঙ্গে, ওগুলো ওদের আধার থেকে উপচে পড়বে আর তার ফলে যে বিপদের সৃষ্টি হয় সেটা আমাদের অস্তিত্বকে বাস্তবিক ভাবে বিপন্ন করে। যে সব রোগভোগ কয়েক দশক বা শতক ধরে নিয়ন্ত্রণে আছে সেগুলোর আবার প্রাদুর্ভাব ঘটবে আর আমাদের সর্বনাশ ঘটাবে। অর্থনৈতিক কারণেও ওদের প্রয়োজন আছে। আমরা যদি পুরনো জিনিষ ফেলে দিতে না পারি, নতুন জিনিষ রাখার জায়গা থাকবে না, আর তখন অর্থনীতির চাকা ব্যয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে থেমে থেমে ঘুরবে। আমি পুঁজিবাদের স্বপক্ষে বলছি না, আমি শুধু ওদের পরস্পরের সম্পর্কটা তুলে ধরছি। আর যেটা আছে সেটাকে আমি বলি আমাদের গড়পড়তা প্রয়োজনীয় প্রাত্যহিক গতি। এটা দিয়ে আমি শুধু বোঝাতে চাই আমরা আজকের দিনে আর যুগে কত দ্রুত চলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমরা সাধারণত কফির কাপ, বাজারের ব্যাগ বা জলের বোতল সারাই করা, পরিষ্কার করা বা সঙ্গে করে ঘোরা নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমরা ওগুলো ব্যবহার করি, ছুঁড়ে ফেলে দিই আর ওগুলোকে ভুলে যাই, কারণ আমরা জানি যে অন্য দিকে একটা শ্রমশক্তি আছে যেটা এই সব কিছু সরিয়ে নিয়ে যাবে। তাই আজ আমি জঞ্জাল সাফাই সম্পর্কে চিন্তা করার এমন দুটো রাস্তা বাতলাতে চাই যেটা হয়ত ওটার কলঙ্ক মোচন করতে পারবে আর ওনাদের টেনে আনতে পারবে একটা মানবিক আর দীর্ঘজীবী শহর কিভাবে গড়ে তোলা যায় সেই আলোচনায়। আমার মনে হয়, ওনাদের কাজ খানিকটা গণ প্রার্থনার মত। ওনারা প্রতিদিন একটা নিয়মিত ছন্দে রাস্তায় কাজ করে যান। ওনারা অনেক শহরে উর্দি পড়ে থাকেন। আপনি জানেন যে ওনারা ঠিক কখন আসবেন। আর ওনাদের কাজের জন্যই আমরা আমাদের কাজ করতে পারি। ওনারা যেন এক ধরণের ভরসা। ওনারা যে প্রবাহ বজায় রাখেন সেটা আমাদের নিজেদের থেকে সুরক্ষিত রাখে, আমাদের নিজেদের আবর্জনা আর পরিত্যক্ত জিনিষপত্র থেকে, আর এই প্রবাহ সব সময় বজায় রাখা জরুরি যাই ঘটে যাক না কেন। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের পরের দিন আমি রাস্তায় একটা জঞ্জালের ট্রাকের গরগর শব্দ শুনতে পেলাম, আর আমি আমার নবজাত ছেলেকে তুলে নিয়ে নীচের তলায় দৌড়ে গেলাম আর দেখলাম একজন লোক তার কাগজ রিসাইকেলের নির্দিষ্ট পথে কাজ করে যাচ্ছেন যেমন তিনি করেন প্রতি বুধবার। আর আমি ওনাকে ওনার কাজ করার জন্য ধন্যবাদ দেওয়ার চেষ্টা করলাম সব দিনের মধ্যে সেই দিনটাতেই কিন্তু আমি কাঁদতে লাগলাম। আর উনি আমার দিকে দেখলেন, আর শুধু মাথা নাড়লেন, আর উনি বললেন, "আমরা ঠিক থাকবো। আমরা ঠিক থাকবো।" এর কিছু পরেই আমি জঞ্জাল সাফাই নিয়ে আমার গবেষণা শুরু করি, আর আমার সঙ্গে সেই লোকটার আবার দেখা হয়। ওনার নাম পলি, আর আমরা অনেক বার একসঙ্গে কাজ করেছি, আর আমরা ভালো বন্ধু হয়ে গেছিলাম। আমি বিশ্বাস করতে চাই যে পলি ঠিক বলেছিল। আমরা ঠিক থাকবো। কিন্তু আমরা একটা প্রজাতি হিসেবে কিভাবে এই গ্রহে টিকে থাকবো সেটাকে পুনর্বিন্যাস করার আমাদের এই প্রচেষ্টায় আমাদের অবশ্যই অন্তর্গত করতে হবে আর বিবেচনা করতে হবে সব রকম মূল্যের, শ্রমের যে মানবিক মূল্য আছে তারও। আর আমাদের ভালো ভাবে জানতে হবে যারা সেই কাজ করে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে, তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা কিভাবে ধারণা করবো, আমরা কি ভাবে গঠন করবো এমন একটা দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা যেটা হয়ত আমাদের ফুটপাথের পাশে করা রিসাইকেলের কাজ যেটা কিনা ৪০ বছরের একটা অসামান্য সাফল্য, তার থেকে পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর সারা বিশ্বের অন্যান্য দেশে পৌঁছে দেবে, আর আমাদের জন্য একটা আরও প্রশস্ত দিগন্ত উন্মোচিত করবে যেখানে আমরা অন্যান্য রকমের জঞ্জাল কম করার সম্পর্কে ভাবতে পারবো যে জঞ্জালের উৎস উৎপাদন ও শিল্প। আমরা যখন জঞ্জাল নিয়ে কথা বলি আমরা ভাবি পৌর জঞ্জালের কথা যেটা দেশের জঞ্জাল প্রবাহের তিন শতাংশ। এটা একটা চমকপ্রদ পরিসংখ্যান। তাই আপনার দিনপ্রবাহে আপনার জীবন প্রবাহে পরের বার যখন কাউকে দেখবেন যার কাজ আপনার জঞ্জাল পরিষ্কার করা, একটু সময় করে ওনাদের স্বীকৃতি দেবেন। একটু সময় করে ধন্যবাদ জানাবেন। (হাততালি) মানব মস্তিষ্কের বিশেষ অভিনবত্ব কোথায়? আমরা অন্যান্য প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করে থাকি অথচ তারা আমাদেরকে নিয়ে গবেষণা করতে অক্ষম, কিভাবে এরকম হল? মানব মস্তিষ্কে এমন কী আছে যা অন্যদের নেই? এমন কী করতে পারে যা অন্য প্রানীদের মস্তিষ্ক পারে না? দশ বছর আগে আমি যখন এই প্রশ্ন গুলোর ব্যাপারে আগ্রহী হই, সে সময়ে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে ভিন্ন ভিন্ন মস্তিষ্ক কি ভাবে গঠিত তা তাঁরা জানেন। পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ হাতে না থাকার পরেও অনেক বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে, মানুষ সহ সকল স্তন্যপায়ী প্রানীর মস্তিষ্ক একই রকম ভাবে গঠিত, কোনো মস্তিষ্কের ভিতরে মোট নিউরনের সংখ্যা সব সময়েই সেই মস্তিষ্কের আকারের সমানুপাতিক। তার মানে হল, সমান আকারের দুটি মস্তিষ্কে, যেমন, সমীহ জাগানো ৪০০ গ্রাম ওজনের এই দুটি মস্তিষ্কে সমান সংখ্যক নিউরন থাকবে। এখন, নিউরন যদি মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরন কর্মকাণ্ড সম্পাদনের একক হয়, তাহলে এই দুটি মস্তিষ্কের অধিকারী দুজনের একই রকম বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা থাকার কথা। কিন্তু আসলে, এদের একজন একটি শিম্পাঞ্জী আর অন্যজন একটি গরু মাত্র। হতেও পারে যে, গরু সম্প্রদায়ের একটি সু-উন্নত আভ্যন্তরীণ মনোজগৎ রয়েছে এবং তাঁরা এতটাই বুদ্ধিমান যে তাঁরা ইচ্ছা করেই আমাদেরকে তা বুঝতে দেন না, কিন্তু আমরা তাঁদের মাংস খাই। আমি মনে করি, বেশীরভাগ মানুষই এটা মানবেন যে, শিম্পাঞ্জীরা গরুর চেয়ে অনেক বেশী জটিল, বিশদ ও সহজে পরিবর্তন যোগ্য আচরণ করতে সক্ষম। তাই, প্রাথমিক ভাবে এটি এই ইঙ্গিত দেয় যে, "সব মস্তিষ্ক একই ভাবে গঠিত" - কথাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। তারপরেও আগানো যাক। সব মস্তিষ্ক যদি একই ভাবে গঠিত হয় এবং আমরা যদি ভিন্ন ভিন্ন আকারের মস্তিষ্ক বিশিষ্ট প্রাণীদের মধ্য তুলনা করি, বড় আকারের মস্তিষ্কে সব সময় ছোট মস্তিষ্কের চেয়ে বেশি নিউরন থাকবে, এবং যার মস্তিষ্ক যত বড়, সে তত বেশি বুদ্ধিমান হবে। অর্থাৎ কিনা, প্রাণী জগতে যার মস্তিষ্ক সবচেয়ে বড়, সেই সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। এবং, এখানেই যত বিপত্তি - আকারের দিক থেকে আমাদের মস্তিষ্ক প্রাণীকুলে সবচেয়ে বড় নয়! এ তো দেখছি ভালো ফ্যাসাদ! আমাদের মস্তিষ্কের ওজন ১.২ থেকে ১.৫ কিলোগ্রামের মধ্যে, এদিকে হাতীদের মস্তিষ্কের ওজন চার থেকে পাঁচ কিলোগ্রামের মধ্যে, আর একটি তিমির মস্তিষ্কের ওজন নয় কিলোগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে, আর তাই বিজ্ঞানীরা এরকম একটি আপ্ত-বাক্যের শরণ নিয়ে বলতেন - "অবশ্যই আমাদের মস্তিষ্কে অসাধারণ কিছু আছে" - এতে যদি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতার কোনো ব্যাখ্যা মেলে। বাস্তবিক পক্ষেই এটি অনন্য সাধারণ কিছু হবে, গতানুগতিক নিয়মের একেবারেই ব্যতিক্রম! তাদেরটা আকারে বড় হতে পারে, কিন্তু আমাদেরটা বেশি উন্নত, এবং এটা আরও বেশি উন্নত হতে পারত, যেমন, যত বড় হওয়ার কথা, তার চেয়ে এটি বেশ বড়, আমাদের সেরেব্রাল কর্টেক্সটিও এই মাপের হওয়ার কথা না, যদি আমাদের দেহের আকার বিবেচনা করি। ফলে আমরা খানিকটা বাড়তি কর্টেক্স পাচ্ছি যা দিয়ে শরীর পরিচালনা করার পাশাপাশি বাড়তি কিছু মজাদার কাজও করা সম্ভব। এটা এজন্যে যে, মস্তিষ্কের আকার সাধারণত দেহের আকারের সাথে সঙ্গতি রেখে চলে। অর্থাৎ, প্রধানত যে কারণে আমরা বলছি যে - আমাদের মস্তিষ্ক এত বড় হওয়ার কথা না - সেই কারণটি আমরা আসলে পেয়েছি আমাদের সাথে অতিকায় বানরদের তুলনার মাধ্যমে। গরিলারা আমাদের চেয়ে আকারে দুই থেকে তিন গুন বড় হতে পারে, অতএব তাদের মস্তিষ্কের আকারও আমাদেরটার চেয়ে বড় হবার কথা, কিন্তু বাস্তবে এটি সম্পুর্ন উল্টো! গরিলার চেয়ে আমাদের মস্তিষ্ক তিন গুন বড়। মানব মস্তিষ্ককে আবারও অসাধারণ মনে হবে যদি এর এনার্জি ব্যবহারের পরিমাণ বিবেচনা করা হয়। যদিও ওজনের দিক দিয়ে এটি আমাদের দেহের মাত্র ২ শতাংশ, কিন্তু শুধুমাত্র মস্তিষ্কের পেছনেই আমাদের শরীরের দৈনিক এনার্জি চাহিদার ২৫ শতাংশ ব্যয় হয়। তার মানে, মোট ২,০০০ ক্যালরির মধ্য থেকে ৫০০ ক্যালরিই ব্যয় হয় শুধুমাত্র মস্তিষ্ককে সচল রাখতে। তো, যত বড় হবার কথা তার চেয়ে মানব মস্তিষ্ক ঢের বড়, যা উচিত ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি এনার্জি ব্যবহার করে, অতএব এটি অসাধারণ। আর গল্পের এখান থেকেই আমার অস্বস্তির সূত্রপাত। জীববিদ্যায় আমরা সে সব নিয়ম খোঁজার চেস্টা করি যা সকল প্রাণী এবং মোটা দাগে সব জীবের ক্ষেত্রে প্রজোয্য, তাহলে বিবর্তনের এই নিয়ম গুলো কেন অন্যদের বেলায় খাটলেও আমাদের ক্ষেত্রে খাটেনা? হয়ত এই মূল ধ্যান ধারনাটিতেই কিছু গলদ আছে - যে, সকল মস্তিষ্ক একই ভাবে গঠিত। হতেও পারে যে, একই আকারের দুটি মস্তিষ্ক সম্পুর্ন ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক নিউরন দিয়ে গঠিত। হয়ত একটি সুবিশাল মস্তিষ্কের মোট নিউরনের সংখ্যা অন্য একটি মাঝারি আকারের মস্তিষ্কের চেয়েও কম। হয়ত প্রানীকুলে মানব মস্তিষ্কেই সবচেয়ে বেশি নিউরন থাকে, তা সে যে আয়তনেরই হোক না কেন, বিশেষ করে, সেরেব্রাল কর্টেক্স এ। তাই আমার কাছে এখন এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে - মানব মস্তিষ্কে কি পরিমাণ নিউরন আছে? অন্যান্য প্রানীদের তুলনায় সংখ্যাটা কি রকম? এখন, আপনারা হয়ত শুনেছেন বা পড়েছেন যে, আমাদের মগজে ১০০ বিলিয়ন নিউরন রয়েছে, তাই দশ বছর আগে সহকর্মীদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কেউ জানেন কি এই সংখ্যার হিসাবটা কিভাবে এলো? কিন্তু কেউ ই জানতেন না। আমি নিজেও অনেক বই-পত্র ঘেঁটে চলেছি, এই সংখ্যাটির আদি সূত্রের সন্ধানে, কিন্তু কখনও পাইনি। মনে হচ্ছে আসলে কেউ কখনও গণনাই করেন নি যে, কতগুলি নিউরন আছে মানব মস্তিষ্কে, কিংবা অন্য প্রানীদের মস্তিষ্কে? তাই মস্তিষ্কে কোষের সংখ্যা গণনা করার জন্য আমার একটি নিজস্ব পদ্ধতি বের করেছি, আর এটা মূলত তৈরি হয়েছে মগজকে তরলে দ্রবীভূত করার উপরে ভিত্তি করে। এটা এভাবে কাজ করে - একটি মস্তিষ্ক বা তার কিছুটা অংশ নিন, এবার সেটাকে ডিটারজেন্ট এ দ্রবীভূত করুন, এর ফলে কোষ প্রাচীরগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু নিউক্লিয়াস গুলো ঠিকই আস্ত থেকে যাবে ফলে আপনি একটি মুক্ত নিউক্লিয়াস এর ঘন দ্রবন পাবেন ঠিক এরকম দেখতে, যেন একটি পরিষ্কার স্যুপ। এই স্যুপের ভিতরে সেই সব নিউক্লিয়াস আছে যে গুলো একদা একটি ইঁদুরের মস্তিষ্কে ছিল। এখন, মজার ব্যাপার হল, যেহেতু এটি স্যুপে পরিণত হয়েছে, আপনি এটাকে ঝাঁকিয়ে নিউক্লিয়াসগুলোকে এই তরলের মাঝে সুষমভাবে ছড়িয়ে দিতে পারবেন, এর ফলে এখন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে এই সুষম মিশ্রণ থেকে কেবল মাত্র চার পাঁচটি নমুনা পর্যবেক্ষণ করলেই আপনি নিউক্লিয়াসগুলোকে গুনতে পারবেন, আর বলতে পারবেন ওই মগজটিতে কতগুলি কোষ ছিল। এটি সহজ, এটি সোজা-সাপ্টা এবং সত্যিই খুব কম সময় নেয়। তো এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে আমরা নিউরন গুনেছি, এ পর্যন্ত কয়েক ডজন বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর, এবং আমরা জেনেছি যে, সকল মস্তিষ্ক একইভাবে গঠিত নয়! ইঁদুর গোত্র এবং বানর গোত্রের কথা ভাবি, ইঁদুরদের বেলায়, বড় আয়তনের মাথার নিউরনগুলিও গড় আয়তনে বড় হয়, ফলে বেশ দ্রুত হারে তাদের মস্তিষ্ক স্ফীত হয়ে আয়তনে বড় হয় কিন্তু সেই গতিতে নিউরনের সংখ্যা বাড়ে না। কিন্তু বানর গোত্রের মস্তিষ্কে নিউরন সংখ্যায় বাড়ে, এক একটি নিউরনের গড় আয়তন তেমন একটা বাড়ে না, এটা খুবই সাশ্রয়ী পদ্ধতি - মস্তিষ্কে নিউরনের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। ফলশ্রুতিতে একটি বানরের মগজে সর্বদা সম আয়তনের একটি ইঁদুরের মগজের চেয়ে বেশী নিউরন থাকবে, এবং মস্তিষ্কের আয়তন যত বড় হবে, এই পার্থক্যও তত বেশী হবে। বেশ, তাহলে আমাদের মস্তিষ্কের ব্যাপারটা কি? আমরা দেখেছি, আমাদের আছে, গড়ে ৮৬ বিলিয়ন নিউরন, এদের ১৬ বিলিয়ন আছে সেরেব্রাল কর্টেক্সে, আর আপনি ধরে নিতে পারেন যে, সেরেব্রাল কর্টেক্স বিশেষ কিছু কর্মকাণ্ডের হোতা, যেমন সচেতনতা এবং যুক্তিসম্মত ও বিমূর্ত যুক্তি চর্চা, এবং এই ১৬ বিলিয়ন হচ্ছে নিউরনের সর্বোচ্চ সংখ্যা যা কোনও কর্টেক্স ধারণ করতে পারে, আমি মনে করি এটাই সহজতমভাবে ব্যাখ্যা করে আমাদের এই নজরকাড়া বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতাকে। কিন্তু একই সাথে এই ৮৬ বিলিয়ন নিউরন থাকাটাও বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। যেহেতু দেখা যাচ্ছে যে মস্তিষ্কের আয়তন এবং নিউরনের সংখ্যার মধ্যেকার সম্পর্কটাকে গানিতিকভাবে বর্ণনা করা সম্ভব, আমরা মানব মস্তিষ্ক নিয়ে হিসাব কষে বলতে পারি ইঁদুর গোত্রের জন্য এমন একটি মস্তিষ্কের আকার কেমন হবে। হুম, একটি ইঁদুর গোত্রের মগজে ৮৬ বিলিয়ন নিউরন থাকতে হলে এটির ওজন হবে ৩৬ কিলোগ্রাম! এটি সম্ভব নয়। এমন বিশাল ওজনের একটি মস্তিষ্ক বিধ্বস্ত হয়ে যাবে তার নিজের ওজনের চাপে, এবং এই অসম্ভব মগজটি ধারণ করতে ৮৯ টন ওজনের একটি দেহ লাগবে। এটি দেখতে আদৌ আমাদের মত মনে হচ্ছে না। ফলে ইতিমধ্যেই আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ উপসংহারে পৌঁছেছি, আর তা হল - আমরা ইঁদুর গোত্রীয় নই। মানব মস্তিষ্ক একটি বড় আয়তনের ইঁদুর মস্তিষ্ক নয়। দেখতে পাচ্ছি, ইদুরের তুলনায় আমরা বেশ অসাধারণ, হ্যাঁ, তবে তুলনাটা খুব একটা যথাযথ নয়, যখন আমরা জানি যে আমরা ইঁদুর গোত্রীয় নই। আমরা প্রাইমেট বর্গের, তাই কেবল অন্য প্রাইমেটদের সাথে তুলনা করলেই সেটা যথাযথ হবে। এবং হিসাব করলে, দেখবেন যে, প্রাইমেট বর্গের কোনো প্রা্ণীর ৮৬ বিলিয়ন নিউরন থাকতে হলে তার মগজের ওজন হবে প্রায় ১.২ কিলোগ্রাম, এটা মনে হয় ঠিকই আছে, ৬৬ কিলোগ্রাম ওজনের একটি দেহে, যেটা আমার ক্ষেত্রে পুরোদস্তুর সঠিক, এতে করে আমরা পাই খুবই প্রত্যাশিত এবং সাংঘাতিক গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্তঃ আমি একটি প্রাইমেট! এবং আপনারা সবাই প্রাইমেট! এবং ডারউইনও তাই ছিলেন। আমার ভাবতেই ভালো লাগে যে, ডারউইন হয়তো ব্যাপারটাকে সত্যিই তারিফ করতেন। তাঁর মস্তিষ্ক, আমাদেরগুলোর মতই, অন্যান্য প্রাইমেটদের মস্তিষ্কের আদলে তৈরি হয়েছিল। তাই, মানব মস্তিষ্ক হয়তো একটি চমকপ্রদ জিনিস, হ্যাঁ, এটি অসাধারণ, কিন্তু তা নিউরনের সংখ্যার কারণে নয়। এটা নেহায়েতই একটি বড় প্রাইমেট মস্তিষ্ক। আমি মনে করি এটি একটি বিনীত ও সংযত প্রত্যাশা হবে যে, এটি প্রকৃতিতে আমাদের অবস্থানটা মনে করিয়ে দেবে। তাহলে এটা এত বেশী শক্তি খায় কেন? বেশ, অন্যরা এটা দেখিয়েছেন যে, কি পরিমা্ণ শক্তি ব্যবহৃত হয় মানব এবং অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীর মস্তিষ্কে, এবং এখন জেনেছি কি পরিমাণ নিউরন নিয়ে এক একটি মস্তিষ্ক গঠিত, হিসাবটা জানি। এবং এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মানুষ ও অন্যান্য মস্তিষ্ক প্রায় একই পরিমাণ শক্তি টানে, যা কিনা প্রতি বিলিয়ন নিউরনের জন্য প্রতিদিন ৬ ক্যালরি করে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের মোট এনার্জি চাহিদার পরিমাণ একটি মামুলী সরল রাশি যা কিনা তার নিউরনের সংখ্যার উপর নির্ভরশীল, এবং দেখা যাচ্ছে যে মানব মস্তিষ্ক ঠিক সেই পরিমা্ণ শক্তি ব্যবহার করে যেরকমটি আমরা অনুমান করি। তাই কি কারণে মানব মস্তিষ্ক এত বেশী শক্তি ব্যবহার করে তা খুবই সোজা - এখানে বিশাল সংখ্যক নিউরন আছে। এবং যেহেতু আমরা প্রাইমেট বর্গের এবং দেহের মাপের তুলনায় নিউরনের সংখ্যা অনেক বেশী অন্যান্য বর্গের প্রাণীদের চেয়ে, তাই তাদের তুলনায় আমাদের মস্তিষ্কের শক্তির চাহিদাও বিশাল, কিন্তু এমনটি হয়েছে শুধুমাত্র আমরা প্রাইমেট বলে, আমরা অসাধারণ বলে নয়। তাহলে, শেষ প্রশ্নঃ কিভাবে আমাদের নিউরনের সংখ্যা এমন অস্বাভাবিক রকম বেশী হল? এবং বিশেষ করে গ্রেট এপস (গরিলা, ইত্যাদি) যখন আমাদের চেয়ে আকারে বড় দেহের, তাদের কেন আমাদের চেয়ে বেশী নিউরন বিশিষ্ট বড় আকারের মস্তিষ্ক নেই? যখন বুঝতে পেরেছিলাম যে এটা কতটা ব্যয় বহুল যখন মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমা্ণ নিউরন থাকে, তখন বুঝলাম, এর হয়ত কোনো সরল ব্যাখ্যা আছে। প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয়া অসম্ভব যদি দেহ এবং নিউরন সংখ্যা দুটোই অনেক বড় হয়। তাই অঙ্ক কষলাম। হিসাবের একপাশে লিখলাম একটি প্রাইমেট প্রতিদিন কি পরিমান এনার্জি পায় কাঁচা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে, আর অন্য পাশে লিখলাম, কি পরিমান এনার্জি একটি নির্দিষ্ট আকারের দেহে ব্যবহৃত হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক নিউরন বিশিষ্ট মস্তিষ্ক দ্বারা কি পরিমান এনার্জি ব্যবহৃত হয়, এবং সেই কম্বিনেশনটি খুঁজলাম দেহের আকার এবং নিউরনের সংখ্যার, যা একটি প্রাইমেট এর উপযুক্ত যদি সে খাবারের পেছনে দিনে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ঘণ্টা ব্যয় করত। এবং আমরা যা পেয়েছি তা হল, যেহেতু নিউরনগুলি অনেক বেশী শক্তি টানে, তাই দেহের আয়তন এবং দেহস্থ নিউরনের সংখ্যার মাঝে একটি ভারসাম্য রয়েছে। তাই যে প্রাইমেটটি প্রতিদিন আট ঘণ্টা ধরে খাবার খায় তার মস্তিষ্কে সর্বোচ্চ ৫৩ বিলিয়ন নিউরন থাকা সম্ভব, এবং সেক্ষেত্রে তাঁর দেহের ওজন হবে অনুর্ধ ২৫ কিলোগ্রাম। এর চেয়ে বেশী ওজনের দেহ হলে নিউরনের সংখ্যা কমতে হবে। অর্থাৎ, হয় দেহের আয়তন বড় হবে না হয় নিউরনের সংখ্যা বেশী হবে, প্রাইমেটদের মত করে খাবার খেলে দুটো একসাথে পাওয়া যাবে না। এই শারীরবৃত্তিক সীমাবদ্ধতা কাটানোর একটা উপায় আছে, তা হল, খাদ্য খাওয়ার পিছনে প্রতিদিন আরও অধিক সময় ব্যয় করা, কিন্তু এতে বিপত্তি দেখা দিতে পারে, এবং একটি নির্দিষ্ট সীমার পরে এটি রীতিমত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গরিলা বা ওরাংওটাং এর দেহে ৩০ বিলিয়ন নিউরন থাকা সম্ভব, খাদ্য খাওয়ার পিছনে দিনে আট ঘণ্টা করে সময় ব্যয় করলে, এবং তারা খুব বেশী হলে এ পর্যন্তই যেতে পারে। প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা ধরে খাওয়াটা মনে হচ্ছে প্রাইমেটদের জন্য বাস্তব সম্মত সীমা। আমাদের বেলায় ব্যপারটা কি রকম? আমাদের আছে ৮৬ বিলিয়ন নিউরন আর ৬০ থেকে ৭০ কিলোগ্রাম ওজনের একটি দেহ, হিসাব অনুযায়ী আমাদের দরকার ছিল ৯ ঘণ্টা ধরে প্রতিদিন খাদ্য খাওয়া, যা কিনা একেবারেই অবাস্তব। আমরা যদি প্রাইমেটদের মত করে খেতাম তাহলে আমরা এরকম হতে পারতাম না। তাহলে কিভাবে আমরা এরকম হলাম? বেশ, আমাদের মস্তিষ্ক যদি সে পরিমান এনার্জি ব্যয় করে, যে পরিমান করা উচিত, এবং আমরা পারিনা প্রতিদিনের জেগে থাকা প্রতিটা মুহূর্ত খাবারের পেছনে ব্যয় করতে, সেক্ষেত্রে, একমাত্র সত্যিকারের বিকল্প হল, কোনো উপায়ে বেশী পরিমান এনার্জি আহরন করা একই পরিমান খাবার থেকে। এবং মজার ব্যাপার হল, এটা পুরোপুরি মিলে যায় যা আমাদের পূর্বপুরুষেরা আবিস্কার করেছিলেন বলে জানি দেড় মিলিয়ন বছর আগে, যখন তাঁরা রান্না করার পদ্ধতি আবিস্কার করেছিলেন। রান্না করা মানেই আগুন ব্যবহার করে শরীরে ঢোকানোর আগেই খাবারটাকে অনেকখানি হজম করে নেয়া। রান্না করা খাবার অনেক নরম, তাই সহজে চিবানো যায় এবং সহজেই মুখের ভিতরে সম্পূর্ণ পিষে ফেলা যায়, ফলে খাবারটি পুরোপুরি হজম করা সম্ভব হয় এবং দেহের মধ্যে শোষিত হয়। যা কিনা অনেক কম সময়ে খাদ্য থেকে অনেক বেশী এনার্জি দেয়। অর্থাৎ, রান্না করার ফলে আমরা কিছু বাড়তি সময় হাতে পাই যা দিয়ে প্রতিদিন আমরা আকর্ষণীয় কিছু করতে পারি, আমাদের নিউরন ব্যবহার করে, অন্য কিছু - খাবার নিয়ে চিন্তার বদলে, খাবার খোঁজা এবং গলধকরন করার বদলে, সারাদিন ধরে। তাই রান্না করার ফলে, যা এক সময়ে ছিল একটি বিশাল বোঝা, এই বিশাল, অত্যাধিক নিউরন সমৃদ্ধ বিপদজনক রকম খরুচে মস্তিষ্কটি এখন হয়ে গেছে এক প্রধান সম্পদ, এখন আমরা যেমন ব্যাপক সংখ্যক নিউরনের জন্য এনার্জির বন্দোবস্ত করতে সক্ষম, তেমনি পাশাপাশি তাদের দিয়ে নানান কৌতূহলোদ্দীপক কাজ করিয়ে নিতে পারি। তাই আমার মতে এটাই ব্যাখ্যা করে, কেন মানব মস্তিষ্ক বিবর্তনের এক পর্যায়ে এত দ্রুত এতটা বড় হয়ে গেছে, যেখানে বাকী সময়টা সে নেহায়েৎ একটি প্রাইমেট মস্তিষ্ক ছিল। রান্নার বদৌলতে এহেন বিশাল মস্তিষ্ক থাকার সুবাদে আমরা অতিদ্রুত কাঁচা খাবার থেকে পৌঁছে গেছি সংস্কৃতিতে, কৃষিকাজে, সভ্যতায়, মুদি খানায়, বিদ্যুতে, রেফ্রিজারেটরে। এসব কিছুর সহায়তায় আজকাল আমরা প্রয়োজনীয় সবটুকু এনার্জি পেয়ে যাই যা সারাদিন চলার জন্য যথেষ্ট, মাত্র একবার বসলেই - আপনার প্রিয় ফাস্ট ফুড জয়েন্ট এ। আর তাই, যা একসময় সমাধান হিসাবে এসেছিল তা এখন সমস্যাতে পরিণত হয়েছে, এবং এমনই পরিহাস! আমরা সেই কাঁচা খাবারের মাঝেই সমাধান খুঁজেছি। তো মানুষ হওয়ার কি ফায়দা? আমাদের এমন কী আছে যা অন্য কোনও প্রানীর নেই? আমার উত্তর - আমাদের আছে সর্বোচ্চ সংখ্যক সেরেব্রাল কর্টেক্স এর মধ্যেকার নিউরন, আর আমি মনে করি এটাই সবচেয়ে সহজভাবে আমাদের এই নজরকাড়া বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতাকে ব্যাখ্যা করে। এবং আমরা এমন কী করি যা অন্য কোনও প্রানী করতে পারে না, এবং যাকে আমি সেই মূল কারণ বলে বিশ্বাস করি যা আমাদেরকে দিয়েছে এই বিশাল, সর্বোচ্চ সংখ্যক নিউরন বিশিষ্ট একটি কর্টেক্স? মাত্র দু'টি শব্দে, আমরা রাঁধি। অন্য কোনও প্রানী খাবার রাঁধে না। শুধুমাত্র মানুষেরা করে। এবং আমি মনে করি, এভাবেই আমরা মানুষ হয়েছি। মানব মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা খাদ্যের প্রতি আমার চিন্তা ভাবনা পাল্টে দিয়েছে। এখন আমি আমার রান্না ঘরের দিকে তাকাই আর প্রণাম করি, আর পূর্বপুরুষদেরকে ধন্যবাদ জানাই এটা উদ্ভাবনের জন্য, যা আমাদের মানুষ বানিয়েছে। আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। (করতালি) (জলজ শব্দ) তো এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল একুয়ারিয়াস, যা সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত একটি গবেষণাগার কি লারগো সমুদ্র সৈকত থেকে চার মাইল দূরে। ভূমি থেকে ৬০ ফুট নিচে। নাসা এই বৈরি পরিবেশকে ব্যবহার করে নভোচারী এবং জলচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য। এবং গত বছর, তারা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তা ঘুরে দেখবার জন্য। সকল ছবি নেওয়া হয়েছিল আমাদের মুক্ত আরওভি থেকে, যা ছিল আমাদের নিজেদের গ্যারেজে তৈরি একটি রোবট। আরওভি'র পূর্ণাঙ্গ রূপ রিমোট চালিত যান, যা আমাদের ক্ষেত্রে বোঝায় যে আমাদের ছোট রোবটটি সরাসরি ভিডিও পাঠায় অতি সূক্ষ্ম তিথারের মাধ্যমে কম্পিউটারে। এটা মুক্ত উৎসের সাহায্যে তৈরি, যার অর্থ আমরা এর কোড এবং নকশার নথিগুলো প্রকাশ করি এবং অন্যদের সাথে বিনিময় করি অনলাইনে। যেকেউ তা পরিমার্জন করতে পারে অথবা উন্নয়ন বা পরিবর্তন করতে পারে ডিজাইন। এটা মূলত ভিন্ন অংশ দিয়ে তোইরি করা হয়েছে এবং প্রায় ১০০০ ভাগ সস্তা, জেমস ক্যামেরনের ব্যবহৃত আরওভি'র তুলনায় যা কিনা টাইটানিকের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। সুতরাং আরওভি নতুন কিছু নয়। এগুলো আছে প্রায় দশকের পর দশক ধরে। বিজ্ঞানীরা সমুদ্র গবেষণার কাজে আরওভি ব্যবহার করে। তেল ও গ্যাস কোম্পানি তা ব্যবহার করে অনুসন্ধান এবং নির্মাণের কাজে। আমরা যা তৈরি করেছি তা মৌলিক কিছু নয়। কিন্তু আমরা এটি যেভাবে তৈরি করেছি তা হচ্ছে মৌলিক। তাই আমি আপনাদের ছোট্ট গল্পটি বলতে চাই কিভাবে এর সূত্রপাত হয়েছিল। তো কয়েক বছর আগে, আমার বন্ধু এরিক এবং আমি ঠিক করেছিলাম যে আমরা এই সমুদ্র তলদেশের গুহাটি অনুসন্ধান করে দেখতে চাই যা সিয়েরাসের নিচে অবস্থিত। আমরা হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণ বিষয়ে গল্পটি শুনেছিলাম যা কিনা স্বর্ণ খোঁজার যুগে ডাকাতি হয়েছিল, এবং আমরা সেখানে যেতে চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের কোন অর্থ ছিল না এবং আমাদের হাতে কোন যন্ত্র ছিল না তা করবার জন্য। তাই এরিকের মাথায় রোবট তৈরির একটি প্রাথমিক নকশা ছিল, কিন্তু আমরা সকল অংশ সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলাম না, সেমুহূর্তে আমরা তাই করেছিলাম যা অন্যান্যরা আমাদের জায়গায় থাকলে করতো: আমরা ইন্টারনেটের আশ্রয় নিলাম সাহায্যের জন্য। আরও নির্দিষ্টভাবে, আমরা এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করলাম, ওপেনআরওভি ডট কম (openROV.com) এবং যেখানে আমাদের উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা তুলে ধরলাম প্রথম কয়েক মাস আমি আর এরিক ছিলাম শুধু ফোরামে আমরাই খালি কথা বলতাম, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি, আমরা কিছু উত্তর পেতে শুরু করি, প্রস্তুতকারক এবং সৌখিন লোকদের কাছ থেকে, এবং তারপর আসল পেশাদার সমুদ্র প্রকৌশলীরা যাদের কিছু পরামর্শ ছিল আমরা কি করতে পারি সে বিষয়ে। আমরা এতে কাজ করতে থাকলাম, আমরা অনেক কিছু শিখলাম। আমরা প্রোটোটাইপ বানাতে থাকলাম এবং শেষমেষ আমরা সিধান্ত নিলাম আমরা গুহায় যাব। আমরা প্রস্তুত ছিলাম। এরমধ্যেই, আমাদের ছোট অভযান গলেপ পরিণত হয়েছে, এবং তা নিউ ইয়র্ক টাইমস কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এবং আমরা তাতে প্রচণ্ডভাবে অভিভূত হয়েছিলাম মানুষের কাছ থেকে সাড়া পেয়ে যারা এই কিটটি চেয়েছিল যা দিয়ে তারা নিজেরাই একটি মুক্ত আরওভি বানাতে পারবে। তাই আমরা ঠিক করলাম প্রকল্পটিকে কিকস্টাটারে দেবার জন্য, এবং যখন আমরা দিয়েছিলাম, আমরা আমাদের অর্থায়নের উদ্দেশ্য তুলে ধরেছিলাম, এবং দুই ঘন্টার মধ্যে আমাদের পর্যাপ্ত অর্থ ছিল এটি তৈরি করার জন্য। কিন্তু তখন আমাদের কিভাবে বানাতে হয়-তা জানা বাকি। মানে হল, আমাদের শিখতে হয়েছিল কিভাবে ছোট পর্যায়ের উৎপাদন কাজ করতে হয়। তাই আমরা তাড়াতাড়ি তা আমাদের গ্যারেজে শিখলাম যদিও তা যথেষ্ট বড় জায়গা ছিল না আমাদের প্রসারণশীল কর্মযজ্ঞের জন্য। কিন্তু আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছিলাম, আমরা সকল যন্ত্রাংশ তৈরি করেছিলাম যার জন্য টেকসপকে অনেক ধন্যবাদ, যা আমাদের জন্য অনেক বড় সাহায্য ছিল, এবং আমরা এই কিটগুলোকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়েছিলাম গত বছরের ঠিক বড়দিনের আগে, এটা ছিল কয়েক মাস আগের ঘটনা। কিন্তু আমরা এরমধ্যেই ভিডিও পেতে শুরু করেছিলাম এবং পৃথিবীর সবখান থেকে ছবি তো ছিলই, যার মধ্যে এন্টার্ক্টিকায় বরফের তলদেশে তোলা এই ছবিটি ছিল। আমরা আরো জেনেছিলাম যে পেঙ্গুইন্রা রোবট পছন্দ করে। (হাসি) তাই আমরা সবগুলো ডিজাইন অনলাইনে প্রকাশ করছি, সবাইকে উৎসাহিত করার জন্য যাতে তারা নিজেরা এগুলো গড়ে তুলতে পারে। আর একমাত্র এইভাবেই আমরা তা করতে পারতাম। ওপেন সোর্স বা মুক্ত উৎস হবার কারণে, আমরা তৈরি করেছিলাম এরকম বিন্যস্ত একটি গবেষণা ও উন্নয়নের নেটওয়ার্ক, এবং আমরা যেকোন অর্থায়িত গোষ্ঠীর তুলনায় অনেক দ্রুত এগোচ্ছি। কিন্তু এই রোবটগুলো আসলে গল্পের অর্ধেক অংশ মাত্র। এর সত্যিকার সম্ভাবনা, দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনা, হচ্ছে এই ডিআইই সমুদ্র অনুসন্ধানী গোষ্ঠীর সাথে যা কিনা পৃথিবীর সবখানেই গড়ে উঠেছে। আমরা কি আবিষ্কার করতে পারি যখন হাজার হাজার এরকম যন্ত্র সমুদ্রে ঘুড়ে বেড়ায়? আপনারা হয়তো ভাবছেন গুহাটির কথা। আমরা কি স্বর্ণ পেয়েছিলাম? নাহ, আমরা কোন স্বর্ণ খুঁজে পাইনি, কিন্তু আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে আমরা যা পেয়েছি তা স্বর্ণের চেয়েও অতি মূল্যবান। তা ছিল সম্ভাবনা ভবিষ্যতের এক ঝলক সমুদ্র অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে। এটা এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যা আর আজ শুধুমাত্র জেমস ক্যামেরনের দুনিয়ার নয়, বরং এমন কিছু যাতে আমরা সকলেই অংশ নিতে পারি। এটি সমুদ্র তলদেশের এক জগত যা আমরা একসাথে সবাই আবিষ্কার করছি। ধন্যবাদ। (হাততালি) আমি ম্যাকেন্না পোপ। আমার বয়স ১৪ বছর, এবং আমার বয়স যখন তেরো, আমি সর্ববৃহৎ খেলনা কোম্পানির একটিকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম যে, খেলনানির্মাতারা, এ জগতে, হাসব্রো, যেভাবে তারা তাদের সবচেয়ে বিক্রিত পণ্যটি বাজারজাত করার কাজ করে। আমি তাহলে আপনাদের এ সম্পর্কে একটু বলি। আমার একটি ভাই আছে, গ্যাভিন। যখন এই পুরো ব্যাপারটা ঘটে, তার বয়স তখন চার বছর। সে রান্না করতে ভালবাসতো। সে সব সময় সকল উপকরণ ফ্রিজ থেকে বের করে এবং তাদেরকে মেশাতো, বলার প্রয়োজন নেই, খাওয়ার অযোগ্য এক মিশ্রণ, অথবা অদৃশ্য ম্যাকারনি এবং পনির বানানো। সে প্রচণ্ডভাবে এক রাঁধুনী হতে চাইতো। এবং তার জন্য সহজে রান্না করা যায় ওভেনের চেয়ে ভালো উপহার কি হতে পারে যে কিনা রাঁধুনী হতে চায়? আমি বুঝাতে চাইছি আর কি, আমাদের সবারই সেগুলো ছিল যখন আমরা ছোট ছিলাম। এবং সে খুব করে সেটি চাইছিল। কিন্তু এরপর সে একটু জিনিস বুঝতে পারলো। বিজ্ঞাপনগুলোতে এবং ইজি বেক ওভেনের বাক্সগুলোতে, হাসব্রো এগুলো তৈরি করেছিল মেয়েদের জন্য বিশেষভাবে। এবং তারা যেভাবে এটি করেছে তা হচ্ছে তারা মেয়েদেরকে শুধুমাত্র বাক্সে অথবা বিজ্ঞাপনে প্রদর্শন করতো, এবং ওভেনের গায়ে ফুলেল এক নকশা থাকতো সব সময়। এবং তার রঙ হতো উজ্জ্বল গোলাপী এবং রক্তিম, মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট করা কিছু রঙ, তাই না? তাই এটা এক ধরনের বার্তা পৌঁছে দিত যে মেয়েরাই শুধুমাত্র রান্না করতে সক্ষম; ছেলেরা নয়। এবং তা আমার ভাইকে প্রচণ্ডভাবে নিরুৎসাহিত করেছিল। সে মনে করেছিল রাঁধুনী হওয়ার ইচ্ছাটা তার পোষণ করা উচিত হয়নি, কারণ তা ছিল এমন একটা কাজ যা মেয়েরা করে। মেয়েরা রান্না করতো; ছেলেরা না, এই ছিল সেই বার্তাটি যা হাসব্রো সবাইকে দিচ্ছিল। এবং আমি এরপর চিন্তা করলাম, ঈশ্বর, আমার হাতে যদি এটা বদলে দেবার কোন উপায় থাকতো, যে আমার কথা হাসব্রো কর্তৃপক্ষ শুনতে পেতো যাতে আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারি এবং বলতে পারি তারা কি ভুল করছিলো এবং তাদেরকে তা পরিবর্তন করতে বলতে পারতাম। এবং এর ফলে আমার একটি ওয়েবসাইটের কথা মনে পড়ে যার সম্পর্কে আমি কয়েক মাস আগে জেনেছিলাম এর নাম ছিল চেঞ্জ ডট ওআরজি। চেঞ্জ ডট ওআরজি অনলাইনে মানুষের কাছে আবেদন পৌঁছে দেবার একটি প্লাটফর্ম যেখানে আপনি একটি আবেদন তৈরি করতে পারেন এবং তা অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারেন। সকল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, রেড্ডিট, টাম্বলর এর মাধ্যমে, আপনি যা কিছু চিন্তা করতে পারেন তার সবকিছুই ব্যবহার করে। এবং তাই আমি একটি আবেদন তৈরি করি একটি ইউটিউব ভিডিও এর সাথে যা আমি আবেদনের সাথে যুক্ত করে দেই; মূলত হাসব্রোকে এই বলে যে, তারা যেভাবে তা বিপণনের কাজ করে তা পরিবর্তন করতে, ছেলেদেরকে বিজ্ঞাপনগুলোতে, বাক্সগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করতে, এবং সর্বোপরি তাদেরকে কোন নির্দিষ্ট লিঙ্গের রঙে প্রস্তুত না করতে। এর এই আবেদন সাড়া পেতে শুরু করে-- অনেক দ্রুত, আপনারা ভাবতেও পারবেন না তা কত দ্রুত। সকল জাতীয় পত্রিকার লোক এসে আমার সাক্ষাৎকার নিতে শুরু করলো এবং সে অনুভূতি ছিল অসাধারণ। তিন সপ্তাহের মধ্যে, হয়তো সাড়ে তিন, আমার আবেদনে ছেচল্লিশ হাজার সাক্ষর পরেছিল। (হাততালি) ধন্যবাদ তাই, বলার অপেক্ষা রাখে না, তা আমাকে অত্যুৎসাহিত করেছিল। পরবর্তীতে, হাসব্রো নিজেরা আমাকে তাদের প্রধান অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল যাতে তারা নিজেরা যেতে পারে এবং উন্মোচন করতে পারে আমার কাছে তাদের নতুন ইজি-বেক পণ্য যার রঙ ছিল কাল, সোনালী এবং নীল। এটা ছিল আমার জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি। এটা ছিল অনেকটা, "ঊইলি ওয়াংকা এবং চকলেট ফ্যাক্টরি"র মত। এই জিনিসটা জিনিস ছিল অসাধারণ। সেই সময়ে আমি যেটা বুঝতে পারিনি তা হচ্ছে, এই যে, আমি একজন কর্মীতে পরিণত হয়ে গিয়েছি, আমি কিছু বদলে দিতে পারি, যা আমি একজন খুকী হিসেবে, অথবা হয়তো বিশেষত একজন খুকী হিসেবে, আমার কথা গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনার বক্তব্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমি আপনাদের বলতে চাচ্ছি যে এটা সহজ হবে না, এবং এটা আমার জন্য সহজ ছিল না, কারণ আমি অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি। মানুষ অনলাইনে, এবং এমনকি কখনো বাস্তবিক জীবনে, আমার এবং আমার পরিবারকে অসম্মান করেছে, এবং আমাকে বলেছে কিভাবে পুরো বিষয়টি সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়, এবং তা আমাকে সত্যিকার অর্থেই নিরুৎসাহিত করে। এবং আসলে, আমার কাছে কিছু উদাহরণ আছে, কারণ এর চেয়ে ভাল প্রতিশোধ কি হতে পারে তাদের বুদ্ধিহীনতা প্রকাশ করা ছাড়া? তাহলে দেখা যাক। একজন ব্যবহারকারী ছিল যার নাম লিকুইডসোর২৯-- আকর্ষণীয় নাম ব্যবহারকারীদের দেখা যাচ্ছে- " জঘন্য উদারপন্থি মায়েরা তাদের সন্তানদের সমকামী বানাচ্ছে "; লিকুইডসোর২৯, আসলেই? আসলেই? ঠিক আছে। আবার হোয়াইটবয়৭৭এজিএস লিখেছেঃ " মানুষের সব সময় কিছু দরকার (মহিলা কুকুর) এর জন্য"; জেফরি গুটিরেজ লিখেছেনঃ " হায় ঈশ্বর! চুপ কর। তুমি শুধু টাকা আর মনোযোগ চাও "; এরকমই ছিল মন্তব্যগুলো যা আমাদের সত্যিকার অর্থেই নিরুৎসাহিত করে ভবিষ্যতে যেকোন ধরনের পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে কারণ আমি ভেবেছিলাম, মানুষ এসব নিয়ে ভাবে না, মানুষ মনে করে এসব হচ্ছে সময়ের অপচয়, এবং মানুষ আমার ও আমার পরিবারের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে। এটা আমাকে ব্যথিত করে এবং তা আমাকে ভাবতে বাধ্য করে, কি দরকার ভবিষ্যতের জন্য পরিবর্তন আনার? কিন্তু তারপর আমি কিছু অনুধাবন করলাম। যাদের ঘৃণা করা দরকার তারা ঘৃণা করবে। আসুন, আমার সাথে বলুন। এক, দুই, তিনঃ যাদের ঘৃণা করা দরকার তারা ঘৃণা করবে। তাই আপনাকে যারা ঘৃণা করে তাদের ঘৃণা করতে দিন, আর আপনি আপনার পরিবর্তন করার কাজ চালিয়ে যান, কারণ আমি জানি আপনি পারবেন। আমি এই জনতার দিকে তাকিয়ে দেখি, এবং আমি দেখি ৪০০ মানুষ যারা বাইরে এসেছে কারণ তারা জানতে চায় তারা কিভাবে একটি পরিবর্তন ঘটাতে পারে, এবং আমি জানি আপনি পারেন, এবং যারা ঘরে বসে দেখছেন তারাও পারেন কারণ আপনার এত কিছু করবার আছে এবং যাতে আপনি বিশ্বাস করেন, এবং আপনি তা সকল সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারেন, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, রেড্ডিট, টাম্বলার এর মাধ্যমে, এবং যা কিছু ভাবতে পারেন তার সব কিছুর মধ্য দিয়ে। এবং আপনি সেই পরিবর্তনে আনতে পারেন। আপনি তা নিতে পারেন যা আপনি বিশ্বাস করেন এবং একে একটি হেতুতে পরিণত করতে পারেন এবং পরিবর্তন করতে পারেন। এবং সেই স্ফুলিং যার কথা আপনারা আজ সারাদিন ধরে শুনলেন, আপনি সেই স্ফুলিঙ্গটি যা আপনার মধ্যে আছে তাকে ব্যবহার করুন এবং একে আগুনে পরিণত করুন। ধন্যবাদ। (হাততালি) সার্ভারঃ আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি, স্যার? গ্রাহকঃ আহ, দাঁড়াও দেখি। সার্ভারঃ তাওয়ায় ঝলসানো নিবন্ধিত ভুল যা কিনা সূক্ষ্ম অসৎ তথ্য, বাইনারী রোল, র‍্যাম স্যান্ডউইচ, কনফিকার ফিটারগুলো, এবং পলিমরফিক ড্রেসিংসহ একটি স্ক্রিপ্টিং সালাদ এবং গ্রিল করা কোডিং কাবাব। গ্রাহকঃ আমি একটি র‍্যাম স্যান্ডউইচ চাই এবং আপনাদের বানানো সেরা এক গ্লাস কোড ৩৯। সার্ভারঃ আপনি কি কোন ডেজার্ট পছন্দ করবেন, স্যার? আমাদের বিশেষত্ব হচ্ছে ট্রেকিং বিস্কুট। গ্রাহকঃ আমি এক থোকা জমবি ট্রেকিং কুকি পছন্দ করতাম, ধন্যবাদ। সার্ভারঃ এখনি আনছি স্যার। আপনার খাবার একটু পরেই পরিবেশোন করা হবে। (হাততালি) মায়া পেনঃ আমি যেদিন থেকে চক হাতে ধরতে পারি সেদিন থেকেই আমি আঁকি। এবং আমি আমার আঁকা দিয়ে ফ্লিপ বোর্ড বানাই তিন বছর বয়স থেকে। সেই বয়সে, আমি আরো জেনেছিলাম অ্যানিমেটর কি। টিভিতে একটি প্রোগ্রাম হতো চাকরি বিষয়ক যা অধিকাংশ বাচ্চারাই জানতো না। আমি যখন বুঝতে পারলাম একজন অ্যানিমেটর টিভিতে দেখানো কার্টুন বানায়, আমি সাথে সাথে বলেছিলাম, আমি বড় হয়ে এটা হতে চাই।" আমি জানি না আমি তা মনে মনে নাকি জোরে বলে ফেলেছিলাম কিন্তু তা ছিল আমার জীবনের একটি বড় লক্ষ্য নির্ধারণকারী মুহূর্ত। অ্যানিমেশন এবং শিল্প আমার জীবনের প্রথম ভালবাসা। আমার প্রযুক্তির প্রতি ভালবাসাই 'বিদ্বেষপূর্ণ পদসমূহ' ধারণার আবির্ভাব ঘটায়। আমার কম্পিউটারে একটি ভাইরাস ছিল, এবং আমি অপসারণ করার চেষ্টা করছিলাম, এবং হঠাৎ করেই, আমি চিন্তা করলাম, যদি এমন হয় যে কম্পিউটারের ভিতরে ভাইরাসদের একটি নিজস্ব জগত থাকে? হয়তো একটি রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে তারা সাক্ষাৎ করে এবং ভাইরাসি কার্যকলাপ করে? এবং এইভাবেই, "বিদ্বেষপূর্ণ পদসমূহ" এর সৃষ্টি হয়। আমার বয়স যখন চার বছর, আমার বাবা আমাকে দেখিয়েছিলেন কিভাবে একটি কম্পিউটারের অংশসমূহ আলাদা করতে হয় এবং তা আবার জোড়া লাগাতে হয়। সেই থেকে প্রযুক্তির প্রতি আমার ভালবাসার শুরু। আমি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তৈরি করি এইচটিএমএল এ, এবং আমি জাভাস্ক্রিপ্ট এবং পাইথন শিখছি। আমি এছাড়াও একটি অ্যানিমেটেড ধারাবাহিকে কাজ করছি যার নাম "দ্য পলিনেটরস।" এই ধারাবাহিকটি হচ্ছে আমাদের পরিবেশে থাকা মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগনিষিক্তকারীদের এবং তারা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে। যদি উদ্ভিদসমূহ পরাগনিষিক্তকারীদের দ্বারা পরাগায়িত না হয়, তাহলে সকল জীব, আমরাসহ, যারা উদ্ভিদের উপর নির্ভর করে খাবারে জন্য, তারা না খেয়ে থাকবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এইসব দুর্দান্ত প্রাণিদের নিয়ে একটি সুপারহিরো দল তৈরি করবার। (হাততালি) (জোরে জোরে পা ফেলানো) (সঙ্গীত) (গর্জন) পরাগনিষিক্তকারীঃ ডিফোরেস্টসাউরাস, আমার জানা উচিত ছিল। আমার অন্যান্য পরাগনিষিক্তকারীদের এখনই ডাক দিতে হবে! (সঙ্গীত) ধন্যবাদ। (হাততালি) আমার সকল অ্যানিমেশন চিন্তা থেকে শুরু হয়, কিন্তু এই চিন্তাগুলো কি? চিন্তা-ভাবনা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। চিন্তাগুলো সুযোগ এবং নতুনতার সৃষ্টি করে। ধারণা এবং চিন্তা জগতের সবকিছু বদলে দেয়। যদি নতুন নতুন চিন্তা না থাকতো, আমরা প্রযুক্তি, ওষুধ, শিল্প, সংস্কৃতির এই পর্যায়ে থাকতাম না, এবং আমরা কিভাবে আমাদের জীবন কাটাতাম ভাবা যায়? আমার বয়স যখন আট বছর, আমি আমার চিন্তাগুলো নিয়ে আমার ব্যবসা শুরু করলাম যার নাম দিলাম 'মায়া'স আইডিয়াস', এবং আমার অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, জগতের জন্য মায়ার চিন্তা। (হাসি) এবং আমি পরিবেশ বান্ধব কাপড় ও অন্যান্য জিনিস বানাই। আমার বয়স এখন ১৩, এবং যদিও আমি আমার ব্যবসা শুরু করেছিলাম ২০০৮ সালে, আমার শৈল্পিক যাত্রার সূচনা হয়েছে তারও অনেক আগে। আমি শিল্প দ্বারা প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত হয়েছিলাম এবং আমি চেয়েছিলাম তা সকল কিছুর সাথেই সংযুক্ত করতে, এমনকি আমার ব্যবসা। আমি বাসার ভিতরে বিভিন্ন ধরনের কাপড় খুঁজে পেতাম, এবং বলতাম ,"এটা একটা স্কার্ফ অথবা টুপি হতে পারে।" এবং আমার নকশার জন্য এই চিন্তাগুলো থাকতো। আমি খেয়াল করেছি আমি যখন আমার সৃষ্টিকে পরিধান করি, মানুষ আমাকে থামায় এবং বলে, "দারুণ, অনেক সুন্দর লাগছে। আমি কোথায় তা পেতে পারি?" এবং আমি চিন্তা করলাম, আমি আমার নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারি। এখন আমার কোন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ছিল না আট বছর বয়সে। আমি শুধু জানতাম আমি সুন্দর কিছু সৃষ্টি করতে চাই যা পরিবেশের জন্য নিরাপদ এবং আমি কিছু একটা ফেরত দিতে চাইছিলাম। আমার মা আমাকে সেলাই করতে শিখিয়েছিলেন, এবং আমাদের পিছনের বারান্দায় বসে আমি সেলাই করতাম এবং রিবন দিয়ে ছোট ছোট মাথার ব্যাণ্ড তৈরি করতাম, এবং আমি সবগুলো জিনিসের নাম লিখে রাখতাম এবং প্রতিটি জিনিসের দাম। আমি টুপির মত আরো অনেক কিছু তৈরি করা শুরু করেছিলাম, স্কার্ফ এবং ব্যাগ। খুব তাড়াতাড়ি, আমার জিনিসগুলো সারা পৃথিবীজুড়ে বিক্রি হতে শুরু করলো, এবং আমার গ্রাহকেরা রয়েছেন ডেনমার্ক, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং অন্যান্য দেশে। এখন আমার নিজের ব্যবসা সম্পর্কে অনেক কিছু শেখার আছে, ব্র্যান্ডিং এবং বিপণন বিষয়ে, আমার গ্রাহকদের সাথে সম্পৃক্ত থাকা, এবং দেখা কি সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হয়েছে এবং কোনটা সবচেয়ে কম। তাড়াতাড়ি, আমার ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটোলো। তারপর একদিন, ফোর্বস ম্যাগাজিন আমার সাথে যোগাযোগ করলো যখন আমার বয়স ১০ বছর। (হাসি) তারা আমাকে এবং আমার কোম্পানিকে ফিচার করতে চেয়েছিল তাদের লেখায়। এখন আমাকে অনেক মানুষ জিজ্ঞাসা করে, কেন আমার ব্যবসা পরিবেশ-বান্ধব? আমার ছোটবেলা থেকেই পরিবেশ এবং এর প্রাণিদের সংরক্ষণ বিষয়ে প্রবল আগ্রহ আছে। আমার অভিভাবকেরা আমাকে খুব ছোটবেলায় শিখিয়েছেন কিভাবে পরিবেশকে তার দান ফিরিয়ে দিতে হয় এবং কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। আমি শুনেছিলাম কিভাবে কাপড়ে ব্যবহৃত কিছু রঙ অথবা জিনিসগুলো বানানোর প্রক্রিয়া মানুষ এবং জগতের জন্য কি পরিমাণ ক্ষতিকর, তাই আমি আমার নিজের গবেষণা শুরু করি, এবং আমি আবিষ্কার করলাম যে এমনকি রঙ প্রয়োগ শেষ হবার পরও, বর্জ্য নিয়ে কিছু জটিলতা আছে যা পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, রঙ করার পাউডার চূর্ণ অথবা শুকিয়ে যাবার পর পাউডার ফেলে দেওয়া। এই কার্যকলাপ বাতাসকে দূষিত করতে পারে, যা যেকারো বা যেকোনো প্রাণির জন্য বিষাক্ত। তাই আমি যখন আমার ব্যবসা শুরু করি, আমি দুটো বিষয় জানতামঃ আমার সকল পণ্য পরিবেশ বান্ধব হতে হবে, এবং আমার লাভের ১০ থেক ২০ ভাগ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা এবং পরিবেশবিষয়ক সংস্থায় যাবে। (হাততালি) আমি অনুভব করি আমি নতুন চেতনার উদ্যোক্তাদের একজন যারা শুধুমাত্র সফল ব্যবসায়ী হতে চায় না, বরং টেকসই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। আমি অনুভব করি আমি আমার গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে পারবো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কোনকিছু বিসর্জন না দিয়ে। যারা কিনা এক সবুজ আগামীকাল পাবে। আমরা এক বড়, বিভিন্ন এবং সুন্দর পৃথিবীতে বাস করি, এবং তা আমাকে আরো আগ্রহী করে তোলে একে রক্ষার ক্ষেত্রে। কিন্তু নিজের মাথায় তা থাকাটাই যথেষ্ট নয় যা সারা পৃথিবী জুড়ে ঘটে যাচ্ছে। একে হৃদয়ের মাঝে নিতে হবে, কারণ আপনি যখন হৃদয়ে তা নিয়ে যাবেন, তখনই আন্দোলনের সূত্রপাত হবে। ঠিক সেই মুহূর্তে সুযোগ এবং নতুনত্য এর সুযোগ সৃষ্টি হয়, এবং ঠিক এই কারণেই চিন্তারা জীবন্ত রূপ লাভ করে। ধন্যবাদ। সবার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। (হাততালি) ধন্যবাদ (হাততালি) প্যাট মিচেলঃ তাহলে, আপনারা শুনলেন মায়া কথা বলেছে সেই অভিভাবকদের কথা যা এই অসাধারণ মহিলাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। কারা তারা? প্লিজ, পেন দম্পতি, আপনারা একটু--আহ! (হাততালি) এই মুহুর্তে কোনো এক উচ্চাকাঙ্খী শিক্ষক, রচনা করছেন একটি ৬০ পাতার প্রবন্ধ, সেকেলে কোনো শিক্ষাতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে, যেটি হয়ত কোনো এক মৃত শিক্ষাবিদের মস্তিস্ক-প্রসূত, আর ভাবছেন তার এই কাজটি, যা নিয়ে তিনি এখন ব্যস্ত, আদৌ জড়িত কিনা তার নিজের ইচ্ছে বা স্বপ্নের সাথে; শিক্ষক হিসেবে তার ইচ্ছে, জীবন বদলে দেওয়ার, জীবনে জাদুর ছোঁওয়া আনার ইচ্ছে। এই মুহূর্তে কোনো এক অভিকাঙ্খী শিক্ষক, কোনো এক শিক্ষক-প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে, শুনছেন কোনো এক অধ্যাপকের অবিরাম বকবকানি ছাত্রদের আগ্রহ ধরে রাখার বিষয়ে, অত্যন্ত ক্লান্তিকর, বিচ্ছিন্ন এক ভাষণে। এই মুহূর্তে একজন নতুন পাশ করা শিক্ষক পাঠ পরিকল্পনা করছেন, বুঝতে চেষ্টা করছেন শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন মান বা পরিমাপ বুঝতে চেষ্টা করছেন ছাত্রদের যথাপোযুক্ত মূল্যায়ন কীভাবে করা যায় এবং ভাবছেন বারে বারে, 'নভেম্বর অবধি বেশী হাসিখুশী ভাব দেখান যাবে না,' কারণ তাঁকে এমনই শেখানো হয়েছিল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এই মুহূর্তে কোনো এক ছাত্র ভাবছে কী ভাবে তার অভিভাবকদের বিশ্বাস করানো যায় যে সে অসুস্থ, গুরুতর অসুস্থ আর তাই, আগামীকাল সে স্কুলে যেতে পারবে না। অন্য দিকে, ঠিক এই মুহূর্তে আছেন এমন অনেক প্রতিভাবান শিক্ষক যাঁরা তথ্য বিতরণ করছেন, এমন আকর্ষণীয়, আগ্রহ-উদ্দীপক বিতরণ, যে বিমহিত ছাত্ররা একেবারে তাদের আসনের প্রান্তে চলে এসেছে, অপেক্ষা করছে কখন এক বিন্দু ঘাম এই ব্যক্তিটির কপাল থেকে চুঁইয়ে পড়বে, আর তারা তাঁর জ্ঞান নিজেদের মধ্যে শুষে নেবে। এই মুহূর্তে আছেন আর এক ব্যক্তি যাঁর সামনে রয়েছেন মনোযোগী দর্শকবৃন্দ, এমন এক ব্যক্তি যিনি শোনাচ্ছেন এক বিস্ময়কর বৃত্তান্ত এমন এক জগতের যার কথা সমবেত দর্শকেরা কোনোদিন কল্পনা করেননি বা শোনেননি। তবুও চোখ বুজলে, তাঁরা সহজেই কল্পনা করে নিতে পারেন এই জগত কারন গল্প বলার কায়দাটি চিত্তাকর্ষক। এই মুহূর্তে আছেন এমন এক ব্যক্তি যিনি দর্শকদের বলতে পারেন হাত তুলতে এবং তাদের হাত তোলা অবস্থাতেই রাখতে যতক্ষণ না তিনি বলছেন, "এবার হাত নামিয়ে নিতে পারেন।" এই মুহূর্তে। লোকে তখন বলতেই পারে যে "ক্রিস, তুমি এমন লোকের কথা বললে যাঁরা এক ক্লান্তিকর, উদ্দীপনাহীন শিক্ষন পাঠক্রমের শিকার আবার তাঁদের কথাও বললে যাঁরা মনগ্রাহী শিক্ষাপ্রদানের মাধ্যমে ছাত্রদের আগ্রহ বজায় রাখেন। শিক্ষা জগতের কথা ভাবতে গেলে, বিশেষত শহুরে শিক্ষা ব্যাবস্থার কথা ভাবলে, দেখা যাবে যে এই দুই রকমের শিক্ষকেরা পরস্পর কে বাতিল করে দেবেন, সুতরাং, এদের থাকা না থাকা মোটের ওপর প্রভাবহীন।" তবে প্রকৃতপক্ষে, আমি যাদের কথা বলছিলাম, দক্ষ নিয়ন্ত্রনকারী শিক্ষক হিসেবে, দক্ষ আখ্যান-নির্মাতা হিসেবে, এই সুদক্ষ গল্প-বলিয়েরা সাধারণ ক্লাসরুম থেকে অনেক দূরে। যাঁরা শিক্ষাদানের নিপুণ কলায় সুদক্ষ, যাঁরা পারেন শ্রোতাদের মনোযোগ রাখতে, তাঁরা জানেনই না শিক্ষক প্রশিক্ষনের বিশেষ পাঠক্রম বা সার্টিফিকেট কী। এমন কী, হয়ত তাঁদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়-প্রদত্ত এমন কোনো উপাধিও নেই যাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বলা যায় যে তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে। আমার কাছে, এটা অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার। দুঃখ এই জন্য, কারণ এঁরা শিক্ষাগ্রহনের প্রক্রিয়ায় বিশেষ আগ্রহী নন, তবু এরা দক্ষ ও কার্যকরী শিক্ষক হতে চান, কিন্তু অনুকরণীয় কোনো আদর্শ নেই এদের জন্য। এই প্রসঙ্গে আমি তুলে ধরতে চাই মার্ক টোয়েনের বক্তব্য। টোয়েন বলতেন, সঠিক প্রস্তুতি অথবা শিক্ষাদান, এতটাই প্রভাবশালী হতে পারে যে দুর্বল নীতিবোধের মানুষও নৈতিক দৃঢ়তা গঠন করতে সক্ষম হয়, দুরাচার সদাচারে বদলে যেতে পারে, মানুষের মনে আমূল পরিবর্তন আসতে পারে, রুপান্তর হতে পারে মানুষ দেবদূতে। যাঁদের কথা আমি একটু আগে বলছিলাম, তাঁরা শিক্ষাদানে যথাযথভাবে তৈরী, তবে কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে নয়, বরং আগ্রহ-উৎপাদনকারী জায়গাগুলিতে তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে। বলুন দেখি, এমন জায়গাগুলি কোথায়? নাপিতের দোকানে, র‍্যাপ কন্সার্টে, আর খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে, পাবেন কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জায়। আমি পেন্টেকোস্ট-অনুপ্রাণিত শিক্ষনবিজ্ঞান নিয়ে কিছু চিন্তা ভাবনা করেছি। আপনাদের মধ্যে ক'জন কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জায় গেছেন? দু একজনের হাত দেখতে পাচ্ছি। কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জায় তাদের যাজক প্রায়শই ধর্ম নির্দেশনা শুরু করতে গিয়ে খেয়াল করেন যে আগে দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে, সুতরাং তিনি প্রায়ই শব্দক্রীড়াচ্ছলে শুরু করেন তাঁর বক্তব্য প্রথম প্রথম, আর তারপর তিনি কয়েক মুহূর্তের স্বল্প বিরতি নেন, আর খেয়াল করেন, "এ কী! এরা তো দেখি এখনো পূর্ণ মনোযোগ দেয়নি আমার কথায়।" সুতরাং তিনি বলে ওঠেন, "সবাই বলুন দেখি, আমেন?" শ্রোতাবৃন্দঃ আমেন ক্রীস এমডীনঃ আমেন বলুন, শুনি। শ্রোতাবৃন্দঃ আমেন। ক্রীস এমডীনঃ সহসা, শ্রোতারা সবাই আবার সজাগ। যাজক শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য তাঁর সামনের বেদীটিতে হা্ত ঠুকে আওয়াজ করতে থাকেন, কথা শুরু করেন অত্যন্ত নীচু স্বরে, যখন তিনি চান যে শ্রোতারা তাঁর কথায় মনোনিবেশ করুক। আর ঠিক এমন দক্ষতাই চাই আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে, ছাত্রদের মনোযোগ ধরে রাখার জন্য। তবে কেন শিক্ষক প্রশিক্ষণ পাঠক্রমগুলিতে শুধুই তত্ত্ব পড়নো হয় শুধুই মানদন্ড ও গুনাগুন পরিমাপকের আলোচনা হয় যার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক দক্ষতার, সম্পর্ক নেই সেই জাদুর যার দ্বারা শ্রোতাদের অথবা ছাত্রদের আগ্রহ ধরে রাখা যায়? তাই আমার বক্তব্য হল, শিক্ষক প্রশিক্ষণ পাঠক্রমের মূল কাঠামোটির পরিবর্তন করা দরকার, পাঠ্যসূচীর ওপর বিশেষ গুরুত্ব থাকুক, ক্ষতি নেই, তাত্ত্বিক আলোচনারও গুরুত্ব থাকুক, ক্ষতি নেই, তবে শুধু পাঠ্যসূচী বা শুধু তত্ত্ব আলোচনা সফল শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণের জাদুর অভাবে অনেকটাই অর্থহীন। লোকে বলে, "জাদু তো কেবল ভোজবাজি, আর কিছু নয়।" এমন শিক্ষকও আছেন যাঁরা বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তাঁদের এই বিশেষ দক্ষতা নিয়ে স্কুলে পড়ান, ও সফল ভাবে ছাত্রদের আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখেন। তাঁদের দেখে প্রশাসনের কর্তারা বলেন "বাহ! ইনি তো বেশ ভালো পড়ান! স্কুলের বাকি শিক্ষকেরাও তার মত দক্ষ হলে মন্দ হত না।" যখন এমন শিক্ষকের এই বিশেষ দক্ষতার বিবরণ দিতে অনুরোধ করা হয়, উত্তর আসে, "উনি জাদু জানেন।" কিন্তু আমার বক্তব্য হল, এই জাদুবিদ্যে সমস্ত শিক্ষকদের শেখানো সম্ভব। এ জাদু শেখানো সম্ভব। জাদু শেখানো সম্ভব। প্রশ্ন হল, কীভাবে? উপায় হল লোককে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া যেখানে এমন জাদু ঘটছে। আপনি যদি আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন উচ্চাভিলাসী শিক্ষক হতে চান তাহলে আপনাকে বের হতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের গন্ডি ছেড়ে আর পা রাখতে হবে পাড়ায়। ঘুরে আসুন পাড়ার নাপিতের দোকানে ঘুরে আসুন কোনো কৃষ্ণাঙ্গের গির্জায় আর ভাব করুন ওই মানুষগুলির সাথে যারা পারেন দর্শকদের অংশগ্রহণে আগ্রহী করতে। লক্ষ্য করুন তারা কী করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষক-প্রশিক্ষণ ক্লাসে আমি একটি প্রকল্প শুরু করেছি, যাতে প্রতিটি ছাত্র সেখানে এসে বসে র‍্যাপ কন্সার্ট দেখে। তারা দেখে র‍্যাপাররা স্টেজে কীভাবে ঘোরেফেরে কীভাবে তাঁরা তাঁদের অঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে কথা বলেন। ছাত্রেরা লক্ষ্য করতে শেখে কীভাবে র‍্যাপাররা স্টেজে সগর্বে হাঁটেন। তারা শোনে এরা কীভাবে বিভিন্ন রূপক ও অলঙ্করণের দ্বারা সাদৃশ্যের উপস্থাপনা করেন। এভাবে ছাত্রেরাও শিখতে শুরু করে এই কৌশলগুলি। ক্রমাগত আনুশীলনের ফলে এই কৌশলগুলিই জাদুখেলার চাবিকাঠি হয়ে ওঠে। তারা বুঝতে শেখে যে একটি ছাত্রের দিকে কেবল স্থির দৃষ্টিতে ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকতে পারলে, একটি শব্দ পর্যন্ত বলার প্রয়োজন হয়না। কারন ছাত্রেরা জানে, যে এর মানে আপনি চান আরও বেশী। আমরা যদি শিক্ষক প্রশিক্ষণের আমূল রূপান্তর করতে পারি, শিক্ষদের এই বিশেষ জাদুশিক্ষায় পারদর্শী করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে, তাহলে ছু-মন্তর! নির্জীব ক্লাস হবে মূহুর্তেই সজীব। এ ভাবে আমরা পারব সুপ্ত কল্পনাশক্তি আবার জাগ্রত করতে, শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে। ধন্যবাদ। (করতালি) সময়টা হচ্ছে ১৯০২ সালের শরৎকাল। প্রেসিডেন্ট থিয়োডোর রুজভেল্টের একটু অবসরের প্রয়োজন হয়েছিল হোয়াইট হাউজের কাজ থেকে। তিনি তখন একটা ট্রেনে করে মিসিসিপি গেলেন কালো ভালুক শিকার করতে। জায়গাটা ছিল শহর থেকে একটু দূরে নাম স্মিডস্। প্রথম দিনে কোনো শিকারের দেখা পেলেন না। সবার জন্য এটা খুব হতাশাজনক ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে কুকুরেরা একটা ভালুককে বাগে পেল, যদিও অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তখন হাল ছেড়ে দিয়ে ক্যাম্পে ফিরে গেছেন দুপুরের খাওয়া খেতে। তাঁর শিকারের সহকারী ভালুকটাকে রাইফেলের বাট দিয়ে মাথায় আঘাত করে সেটাকে একটা গাছের সাথে বেঁধে ফেলে তারপর বিউগল বাজিয়ে রুজভেল্টকে আসার আহবান করলেন যাতে প্রাণীটাকে গুলি করার মর্যাদাটা প্রেসিডেন্ট পান। ভালুকটা মেয়ে। আহত ভালুকটা বিমূঢ় আর আর অনেক স্বল্প ওজনের ছিল আর দেখতে ছোটোখাটো। রুজভেল্ট যখন ভালুকটাকে গাছের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখলেন তিনি আর গুলি করতে পারলেন না। তাঁর মনে হল এটা একটা অমর্যাদাকর কাজ হবে। কিছুদিন পরে এই ঘটনা স্মরণযোগ্য করে রাখা হলো ওয়াশিংটনের একটা রাজনৈতিক কার্টুনের মাধ্যমে। শিরোনাম "মিসিসিপিতে অসমাপ্ত কাজ" সেখানে আঁকা হলো রুজভেল্ট বন্দুক নামিয়ে দাঁড়িয়ে ভালুকটিকে জীবন দিলেন। ভালুকটা মাটিতে বসে। ভয়ার্ত খোলা দুটো চোখ আর মাথার সাথে ছোট্ট দুটো কান খাড়া। দেখে এতো অসহায় মনে হবে আমাদেরও মনে হবে একে জড়িয়ে ধরে প্রবোধ দেই। সেই সময়ে এই কার্টুন এতো পরিচিত ছিল না। কিন্তু এখন যদি কেউ কার্টুনটার দিকে তাকায় এটাকে চিনতে এক মুহূর্ত দেরি হবে না। আরে এটাতো টেডি বিয়ার। আসলে এভাবেই টেডি বিয়ারের জন্ম। খেলনা প্রস্তুতকারকেরা কার্টুন থেকে টেডি বিয়ারের অবয়বটা গ্রহণ করেন। তারপর এর আদলে একটা মখমলের খেলনা বানান। নাম পর্যন্ত দেয়া হয় রুজভেল্টের নামে। টেডির বিয়ার। এখানে আমি নিজেও একটু অপ্রস্তুত এই স্টেজে এসে আমি আপনাদেরকে আমার বক্তৃতার সময় থেকে শত বছরের পুরানো একটা গল্প শোনাচ্ছি শত বছরের পুরানো একটা গল্প শোনাচ্ছি চিরেচ্যাপ্টা করার যায় এমন একটা খেলনার আবিষ্কারের কথা। এই গল্পের ভেতরে আরো খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা গল্প আছে। কিভাবে প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের আমূল পাল্টে যায়। আর সাথে সাথে এখনকার পৃথিবীতে আমাদের শোনা গল্প কিভাবে প্রকৃতিকে পাল্টে দেয়। টেডি বিয়ারের কথা আবার ভাবুন। অতীতের দিকে না তাকালে এটা অবশ্যই মনে হবে ভালুক মানেই আদুরে তুলতুলে আর কে না তার বাচ্চা এই গুলটুশ খেলনাটা নিয়ে খেলতে না দেয়। কিন্তু ১৯০২ সালের দিকে ভালুককে কেউ আদুরে তুলতুলে ভাবতো না। অথচ ভালুকের চেহার কিন্তু সেই একই। কিন্তু তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এইরকম ছিল না। ১৯০২ সালে ভালুক মানেই কিম্ভূতকিমাকার একটা প্রাণী। ভালুককে ভীষণ ভয় পেত বাচ্চারা। সেই সময়কার দিনে ভালুকের কারণে মানুষেরা নানা বিপদে পড়তো। আর সকার ধারাবাহিকভাবে ভালুক ও তার সাথে অন্যান্য ভয়ানক প্রাণী যেমন নেকড়ে এসব ধারাবাহিকভাবে বিলীন করে দিচ্ছিল। এদেরকে খুব ভয়ানকভাবে অন্যদের কাছে পরিচিত করানো হতো। এদেরকে বলা হতো খুনী কেননা এরা মানুষের গৃহপালিত পশুদের খেয়ে ফেলতো। একজন সরকারী জীববিজ্ঞানী ভালুকের মতো প্রাণীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন। তিনি বললেন এখনকার আধুনিকে বিশ্বে এসব প্রাণীদের কোনো দরকার নেই। এদেরকে সম্পূর্ণ সরানোর উদ্যোগ নেয়া হলো। দশ বছরে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ নেকড়ে হত্যা করা হলো। প্রকৃত বিচরণস্থান থেকে ৯৫ শতাংশ ভালুককে সরিয়ে দেয়া হলো। একসময় যেই জায়গা দিয়ে তিন কোটি বাইসন এই স্থলভাগ দিয়ে বিচরণ করতো। এইরকম গল্পও শোনা যেত পালে পালে এই পশুদের রাস্তা দেয়ার জন্য ট্রেন আটকা পড়তো চার কি পাঁচ ঘন্টার জন্যে। ১৯০২ সালের দিকে মনে হয় শ'খানেক ভালুক আর অবশিষ্ট ছিল। আমি বলতে চাইছি এই টেডি বিয়ারের জন্ম কিন্তু এই ভয়ানক হত্যাযজ্ঞের সময়েই। এটা পরিষ্কার যে কিছু মানুষ মন থেকে এই হত্যাযজ্ঞ মেনে নিতে পারছিল না। আমেরিকা ভালুককে ভয় পায় আর ঘৃণা করে। কিন্তু হঠাৎ করে আমেরিকার শখ চাপলো ভালুককে একটা আলিঙ্গন করে জড়িয়ে ধরে। গত কয়েক বছর ধরে এই বিষয়টা আমাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে। কিভাবে আমরা প্রাণীদের কথা ভাবি কিভাবে তাদেরকে আমরা অনুভব করি। তাদেরকে আমরা কিভাবে অনুমান করি সেটা কিভাবে আমাদের চিন্তায় স্থান নেয়। একটা ভীষণ প্রতিকূল অবস্থায় আমাদের অবস্থান যেখানে পৃথিবীর অর্ধেক প্রাণবৈচিত্র্য এই শতাব্দীর শেষভাগে হারিয়ে যাবে। কেন আমরা কেবল বিশেষ কিছু প্রজাতি নিয়ে চিন্তিত কিন্তু অন্যদের ব্যাপারে গা নেই। সমাজবিজ্ঞানের একটা নতুন শাখা এইসব প্রশ্নকে আলোর মুখ দেখাচ্ছে তারা উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছে কিছু কিছু প্রাণী নিয়ে কেন আমাদের অদ্ভূত গোলমেলে ভাবনা আর কিভাবে সেগুলোর জন্ম। এই শাখার গবেষণাপত্রগুলো আমি খুব মন দিয়ে পড়েছি বেশ সময় নিয়ে। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি এইসব গবেষণাত ফলাফল নানামুখী আর বিচিত্র। কয়েকটা স্বতসিদ্ধ আমার বেশ মন কেড়েছে। নিউ ইয়র্ক এর অভিজাত পাড়ায় কেউ যত বেশি টিভি দেখবে সে ততো বেশি এই ভয়ে আক্রান্ত হবে এই ভেবে যে তাকে কালো ভালুক তাড়া করবে। তোমরা যদি কোনো আমেরিকানকে বাঘ দেখাও তারা এই ভেবে নিবে যে বাঘটা মেয়ে। ছেলে না। একটা নকল সাপ আর একটা নকল কাছিম রাস্তার ওপর রেখে দেয়া হলে গাড়ির চালকেরা যতোবার সাপটাকে চাপা দেয় কাছিমটাকে ততোবার দেয় না। তিন শতাংশের মতো চালক ইচ্ছে করেই প্রাণীটাকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা সার্ফ করার সময় কোনো ডলফিন দেখলে বেশি বিমোহিত হয়। আটষট্টি শতাংশ মা যারা নিজেরা নিজদের আত্মমর্যাদায় বিশ্বাস রাখে নিজেদেরকে পিওরিনার বিজ্ঞাপনের নৃত্যরত বিড়ালের সাথে নিজেদের গুলিয়ে ফেলে (হাসি)। আমেরিকানরা ভাবে লবস্টার পায় রা থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তবে বোকা। তুর্কি মোরগেরা ভোঁদর থেকে বেশি ভয়ানক পান্ডা গুবরে পোকার চেয়ে দ্বিগুণ সুন্দর। বোঝা যাচ্ছে এইসব সম্পর্কের কিছু কিছু শারীরবৃত্তিক। আমাদের মতো দেখতে প্রাণীদের প্রতি আমরা বেশি সমব্যথী। বিশেষত যখন এরা দেখতে মানুষের বাচ্চার মতো। বড়ো চোখ। মুখ সামনের দিকে। সাথে গোলাকার মুখ। যেন গুঁটিসুটি পাকানো। তাই আমরা যখনো বড়োদিনের কার্ড পাই মিনিসোটার কোনো বড়ো খালার কাছ থেকে কার্ডের ওপরে সাথে হাসিখুশি কোনো পেঙ্গুইন গ্লিসেয়ার বে-উলফ মাকড়শার ছবি দেয়া কার্ড কিন্তু পাই না। কিন্তু এটাওতো বাইরের অবয়বের। তাই না? একটা সামাজিক সীমানার মধ্যে আমরা প্রাণীদের নিয়ে ভাবি আমরা এইসব প্রাণীদের নিয়ে গল্প বলি এবং অন্যান্য সকল গল্পের মতো এইসব গল্প সময় বা পারিপার্শ্বিক অতিক্রম করে কখনো বলা হয় না। সুতরাং আবার একবার ভাবুন কিভাবে সেই ভয়ানক কিম্ভূত ভালুক হয়ে গেলো আমাদের প্রিয় টেডি বিয়ারে। কারণটা কি? আমেরিকা শহর বাড়ছিল তখন। সেই প্রথম অনেক মানুষ একসাথে শহরে বাস করা শুরু করেছে প্রকৃতির কাছ থেকে আমরা একটু একটু দূরে যাচ্ছি। এটা এমন একটা জায়গা যেখানে ভালুক নিয়ে আমরা রোমাঞ্চ পর্যন্ত করতে পারি। প্রকৃতিকে আমরা এতো ভালভাবে ও শুদ্ধভাবে ভালো লাগাতে থাকি কারণ সেখান থেকে আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সুতরাং একটা চক্র ঘুরে বেড়াচ্ছে সব প্রাণীদের নিয়ে। একটা চক্রের মধ্যে আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি যেখানে প্রাণীদের আমরা পিশাচ বানিয়ে সমূলে নির্মূল করছি যখন করতে করতে শেষ সীমানায় এসে পৌছাচ্ছি তখন ঘুরে দাড়িয়ে তার প্রতি অনুরাগ দেখাচ্ছি। একবার পেশিপ্রদর্শন করছি। তারপর নিজেরাই সীমা হারিয়ে ফেলছি আমাদের ক্ষমতার দৌড় নিয়ে। উদাহরণ হিসেবে এই চিঠিটা। এটা এরকম হাজারো বাচ্চার কাছ থেকে পাঠানো চিঠি আর আঁকা-ছবি যেগুলো পাঠানো হয়েছিল বুশ প্রশাশনের কাছে। মেরুভল্লুক বাঁচানোর আর্জি নিয়ে। বিপন্নপ্রায় প্রাণী রক্ষা আইনের আওতায় এসব চিঠি পাঠানো হয়েছে ২০০০ সালের শেষের দিকে। পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে যখন চারিদিকে মানুষ সরব হওয়া শুরু করেছে। তখন আমরা দেখছিলাম এক টুকরো বরফ খন্ডের ওপর একটা মেরুভল্লুক গোমরামুখে দাঁড়িয়ে। এসব ফাইলের দিকে তাকিয়ে আমি দিনের পর দিন কাটিয়ে দিলাম। আমি সত্যিই এগুলো ভালোবাসতাম। যেমন এটা আমার খুব প্রিয়। দেখতে পাচ্ছেন একটা মেরুভল্লুক ডুবে যাচ্ছে আর লবস্টার আর হাঙ্গর সেটাকে খেয়ে ফেলছে। এই চিঠিটা এসেছে ফ্রিটস্ নামের এক বাচ্চার কাছ থেকে পরিবেশ পরিবর্তনের একটা সমাধান সে বের করে ফেলেছে। ইথানলের একটা দ্রবণ থেকে সে সমাধান বের করে ফেলছে। লিখেছে- আমি মেরিভল্লুকদের নিয়ে খুব চিন্তিত। আমি ওদের ভীষণ ভালোবাসি। গমের রস থেকে সবাই গাড়ির তেল ব্যবহার করতে পারে। ইতি ফ্রিটস্। দুশো বছর আগে যারা আর্ক্টিকে অনুসন্ধানে যেতো লিখতো কিভাবে মেরিভল্লুকেরা লোলুপ দৃষ্টিতে তাদের নৌকার দিকে তাকানোর দৃশ্য এমনকি ভল্লুকের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পরেও সেই দৃষ্টির হেরফের হতো না। কিন্তু এখনকার বাচ্চারা মেরিভল্লুকের দিকে সেই চোখে তাকায় না। এমনকি আমরাও ১৯৮০ দিকে মেরুভল্লুকের দিকে এভাবে তাকাতাম না। আমরা ভাবতাম এসব প্রাণী আর্ক্টিকের ত্রাস কিন্তু দেখুন জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে আমাদেরকে প্রাণীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিচ্ছে। রক্তলোলুপ মানুষ হত্যাকারী থেকে কিভাবে মেরুভল্লুক এখন নরমসরম নিমজ্জমান একটা প্রাণী। আমরা যখন এটা নিয়ে ভাবি ১৯০২ সালের টেডি বিয়ারের গল্পের পরিণতির কথা আমদের মনে আসে। কারণ তখন আমেরিকা মোটামুটি এই অঞ্চলের পুরোটা নিজের দখলে এনেছে। আমরা তখন কেবল এইসব ভয়ানক পিশাচ প্রাণীদের সাফা করতে ব্যস্ত ছিলাম। সমাজের হাত সব জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে সবচেয়ে চূড়ায় পর্যন্ত গিয়ে। ঘটনাক্রম এমন যে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণী পর্যন্ত আমাদের কাছে তুলতুলে আর ক্ষতিহীন শিকার। এই টেডি বিয়ারের নেপথ্যে আরো একটা গল্প আছে। অনেক লোক সেই কথা বলে না। আমি এখানে সেটার কথা বলবো। যদিও রুজভেল্টের ১৯০২ সালের শিকারের পরপরেই এই খেলনার বাজার দখল করতে বেশি সময় লাগে নি। কিন্তু অনেক লোকি ভেবেছে এটা একটা রাজনৈতিক খেলনা উপাদান যখন প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়বে তখনি এর বিক্রিবাট্টা কমে যাবে। রুজভেল্টের উত্তরাধিকারী ছিলেন ১৯০৯ সালে উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট। উনি যখন সিংহাসনে বসতে যাবেন তখন খেলনা প্রস্তুতকারকেরা উচাটন পরে বিশাল খেলনা বের করার জন্যে। তবে সে যাত্রায় ভালো ফল আসেনি। প্রেসিডেন্টের আগমন উপলক্ষ্যে আটলান্টায় আয়োজন করা হয়েছে এক বিশাল ভুরিভোজনের। মূল অনুষ্ঠানের আগে থেকেই চারিদিকে সবার চাউর খাবারের তালিকার দিকে। তারা প্রেসিডেন্টকে দক্ষিণের মুখরোচক একটা খাবারের ব্যবস্থা করলো। যেটা পরিচিত 'পসাম অ্যান্ড ট্যাটার' নামে। একটা পুরো পসাম আলুর ওপরে রেখে রোস্ট করা হবে আর অনেকসময় পসামের লেজটা পরিবেশন করা হয় যেন বড়ো আকারের একটা নুডল। টাফটের টেবিলে যেটা এসেছিল সেটার ওজন ১৮ পাউণ্ড। খাবারের পরে অর্কেস্ট্রা পরিবেশনা শুরু করলো। উপস্থিত দর্শকেরাও সেখানে যোগ দিল। হঠাৎ করে টাফটের সামনে সেখানেকার স্থানীয় সমর্থকেরা উপহার নিয়ে আসলো উপহার আর কিছুই নয়- একটা নাদুশনুদুশ খেলনা পসাম। তার আবার নকশা করা চোখ আর লোমহীন কান। এটাই হচ্ছে সেই খেলনা পসাম সেটা প্রেসিডেন্ট টাফটের প্রেসিডেন্সির প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে রুজভেল্টের টেডি বিয়ারকে পাশ কাটিয়ে। নাম দেয়া হলো "বিলি পসাম"। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে জর্জিয়ার বিলি পসাম কোম্পানি সারাদেশ ব্যাপী এই পণ্যের বিপননের ব্যবস্থা করে ফেলেছে। লস অ্যাঞ্জেলস্ টাইমস্ বেশ দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা দিয়েছে- টেডি বিয়ার এখন পেছনের আসনে গিয়ে বসেছে। সামনের চার কি আট বছর আমেরিকার বাচ্চারা এখন বিলি পসাম নিয়ে খেলবে। শুরু হলো তখন পসাম-জ্বর। পোস্টকার্ড, পিন কফির দুধের পাত্র- সর্বত্র পসামের মেলা। এমনকি কাঠির ওপর পসাম নিয়ে বাচ্চাদের পতাকার মতো করে খেলনা। এতো এতো প্রচারণা বা বিপণনের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এই খেলনার আয়ু ছিল খুব অল্প সময়ের জন্যে। এই খেলনা ছিল চরম রকমের ফ্লপ। এই সামগ্রীর কথা বছর শেষ হতে না হতেই সবাই ভুলে গেল। বিলি পসাম এমনকি বড়োদিনের দেখা পর্যন্ত পেল না। সেটা যেকোনো খেলনা সামগ্রীর জন্য চরম বিয়োগান্তক। এই ব্যর্থতার দুটো ব্যখ্যা হতে পারে। প্রথমটা স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান। আমি সেটা এখানে জোরেই বলবো- পসাম দেখতে খুবই পচা (হাসি) গুরুত্বের কথা এই যে বিলি পসামের গল্প্টা মার খেয়ে যায় যখন সেটা তুলনায় আসে টেডি বিয়ারের পেছনের গল্পের সাথে। মানবসভ্যতার গল্পের দিকে যদি তাকাই তখন দেখতে পাবো ভালুক আমাদের কাছে কিভাবে চিত্তাকর্ষক কারণ ভালুক আমাদের থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমাদেরকে হুমকি ধামকি দেখিয়ে তারা আমাদের সমান্তরালেই বসবাস করেছে। মিসিসিপিতে রুজভেল্ট যখন শিকারে গেলেন এই ধারণাটা পাল্টে যায়। গাছের সাথে দড়ি বাঁধা সেই ভালুক হয়ে যায় সব ভালুকের প্রতিনিধি। সুতরাং এসব প্রাণীর বাঁচা কিংবা মরা সব মানুষের মর্জির ওপরে। ভালুকের অস্তিত্বের জন্য এই বার্তা খুবই অশুভ ইঙ্গিত। সাথে এটা আমাদের সম্পর্কে একটা অনিশ্চিত বার্তা দেয়। এমনকি একটা প্রাণীর অস্তিত্ব আমাদের উপর সর্বাংশে নির্ভর করে। এক শতাব্দী পরে আমরা সবাই ভাবতে বসেছি পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে। অস্বস্থিটা এখন আরো ভয়ানক। এখন আমরা যেই সময়ে আছি, বিজ্ঞানীরা যেটার নাম দিয়েছে- "আস্থার সাথে সংরক্ষণ" আমরা প্রকৃতিকে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছি সেখান থেকে নিজেকে সারানোর ক্ষমতা প্রকৃতির নেই। বিপন্নপ্রায় প্রাণীরা কেবল তখনই রক্ষা পাবে যদি তাদের বিচরনের জায়গা থেকে আমরা একেবারেই সরে আসি। সেই জায়গায় আমরা হাত দিয়ে বসেছি সেখান থেকে হাত সরানোর উপায় নেই। সুতরাং আমাদের সামনে অনেক কাজ। আমরা শকুনদের শেখাচ্ছি যেন তারা বিদ্যুতের তারে না বসে। সারসকে শেখাচ্ছি যেন তারা শীতে দক্ষিণে যায় প্লেনের নিচে দিয়ে উড়ে। নকুলকে প্লেগ সিরাম খাওয়াচ্ছি। পিগমি খরগোশের বিচরণ খেয়াল করছি ড্রোন দিয়ে। সুতরাং প্রাণীদের দিক থেকে ঘৃণার দৃষ্টি সরিয়ে অনেক কয়টা প্রজাতির সংরক্ষণে আমরা ক্ষুদ্রপর্যায়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে কোন প্রাণীগুলোর ওপরে আমাদের বেশি নজর? সেটা নির্ভর করছে কোন প্রাণী নিয়ে আমরা বিশ্বাসযোগ্য গল্প বলছি যাদের নিয়ে আমরা লেগে থাকবো বলে স্থির করেছি তারা। সংরক্ষণ করা আর গৃহপালিত করার মধ্যে সীমানা তাই ঘোলাটে। সুতরাং আমি যে গল্প বলছি সেটা খুব বিষয়ভিত্তিক হতে পারে হতে পারে অযৌক্তিক কিংবা রোমাঞ্চভরা অথবা চাঞ্চল্যকর। অনেক সময় সত্যতার সাথে মিল না রেখেও কাজ এগোচ্ছে। তাই "আস্থার সাথে বসবাসের" যুগে এসব গল্পের একটা তাৎপর্য আছে। কারণ এখন আমরা একটা প্রাণীকে নিয়ে কিভাবে ভাবি সেটার ওপর তার অস্তিত্ব নির্ভর করে। এসব বরঞ্চ অনেক বেশি কার্যকর বাস্তুবিদ্যার বইতে যা লেখা আছে তার চাইতে। গল্প বলার এখন দাম আছে। আবেগের মূল্য আছে। আমাদের কল্পনা স্থান নিয়ে বাস্তুসংস্থানের শক্তি হিসেবে। হয়তো টেডি বিয়ার সেখানে কিছুটা ভূমিকা রেখেছে কারণ মিসিসিপিতে রুজভেল্ট আর ভালুকের উপাখ্যান একটা প্রতিকী বর্ণনা। সমাজের একটা বিশাল দায়িত্বের গোড়াপত্তন হয় সেখান থেকে। যদিও একাত্তর বছর সময় লেগেছে বিপন্নপ্রায় প্রাণীরক্ষা আইন পাস করাতে। আসলে সমাজের মূল্যবোধ শেখার ব্যাপারটা এই একটা দৃশ্যে অনেকটা ধরা পড়ে অসহায় ভালুকটা গাছের সাথে বাঁধা। আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তার প্রতি করুণা দেখালো। ধন্যবাদ। (হাততালি) (আঁকঃ ওয়েন্ডি ম্যাকনটন) আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি পর্যায়ে আমরা এমন সব সিদ্ধান্ত নেই, যেগুলো অসামান্য প্রভাব ফেলে আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের উপর। কিন্তু যখন আমাদের প্রাপ্তি ঘটে, তখন আমরা ব্যাপারটাতে আগের মতো এতো রোমাঞ্চ পাই না। একারণে দেখবেন মানুষ যৌবনে অনেক টাকা খরচ করে উল্কি অপসারণ করার জন্য, যেটা আঁকার জন্য কিনা সে কৈশোরে অনেক টাকা ব্যয় করেছিল। মধ্যবয়স্করা তাদের সাথেই তাড়াতাড়ি বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়, যাদের বিয়ে করার জন্য তারা অল্পবয়সে তোড়জোড় করেছিল। বয়স্করা যা ঝেড়ে ফেলার জন্য পরিশ্রম করে, মধ্যবয়স্করা সেটা অর্জন করতেই কিনা কঠোর পরিশ্রম করেছিল। এরকম আরো অনেক উদাহরণ। একজন মনোবিজ্ঞানী হিসেবে যে প্রশ্নটি ভেবে আমি অবাক হই সেটি হচ্ছে- আমরা কেন এমন সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যার কারণে ভবিষ্যতে আমরাই আবার এতো বেশি পরিতাপ করি? এখন, আমি মনে করি এর একটা কারণ -- যা আমি আজ আপনাদের বোঝাতে চাই সেটা হচ্ছে- আমাদের একটি আদি ভুলধারণা আছে সময়ের ক্ষমতা সম্পর্কে। আপনারা সবাই জানেন যে মানুষের বয়স যতো বাড়তে থাকে, তার পরিবর্তনের প্রবণতাও ততোই কমতে থাকে, খেয়াল করে দেখবেন- আপনার বাচ্চারা প্রতি মিনিটে পরিবর্তিত হচ্ছে কিন্তু আপনার বাবা-মায়েরা বছরেও পরিবর্তিত হয় না। কিন্তু জীবনের কোন সে জাদুকরী সময় যখন পরিবর্তনের গতি হঠাৎ করে অনেক বেশি পরিমাণে কমে যায়? কিশোর বয়সে? যৌবনে? নাকি বৃদ্ধ বয়সে? উত্তর যা পাওয়া গেছে তা হল- বেশিরভাগ মানুষের জন্য সময়টা হচ্ছে- "এখন", তো এই এখনটা যেখানে বা যেক্ষেত্রেই ঘটুক না কেন। তো আজ আমি আপনাদেরকে যেই মন্ত্রণা দিতে চাই সেটা হচ্ছে- আমরা সবাই একটি বিভ্রান্তির মধ্যে বসবাস করছি, বিভ্রান্তি এটা যে- আমরা মনে করি যে, আমরা আমাদের ব্যক্তিগত ইতিহাসের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি এবং আমরা সেই মানুষই হয়েছি যেমনটা আমাদের হওয়ার কথা ছিল এবং বাকি জীবন ঠিক তেমনটাই থাকবো। আমার কথার যথার্থতা প্রমাণে কিছু তথ্য দেই। একটি গবেষণার কথা বলি যেটি সময়ের সাথে সাথে ব্যক্তির চিন্তাধারার পরিবর্তন নিয়ে কথা বলে। এখানে তিন রকম চিন্তা আছে। যার সবই এখানকার সবাই ধারণ করে। কিন্তু আপনি সম্ভবত জানেন, বিকাশের সাথে সাথে ও আপনার বয়সের সাথে সাথে এই চিন্তাধারাগুলোর সমন্বয়েও রূপান্তর ঘটবে। কিন্তু কিভাবে? তো, আমরা হাজার হাজার মানুষকে জিজ্ঞেস করেছি। আমরা অর্ধেককে বলেছি অনুমান করতে যে- তাদের চিন্তাভাবনায় আগামী দশ বছরে কতোটুকু পরিবর্তিত হবে, আর বাকিদের জিজ্ঞেস করলাম যে- তাদের চিন্তাভাবনা গত দশ বছরে কি পরিমাণে পরিবর্তিত হয়েছে। আর তাতে আমরা আসলে মজার একটি বিশ্লেষণ করতে পেরেছিলাম, কারণ এটি আমাদেরকে দুই ধরণের অনুমানের মধ্যে বা ১৮ এবং ২৮ বছর, এই দুই বয়সের মানুষের উপাত্তসমূহেরর মধ্যে তুলনা করতে এবং মাঝখানের সময়টা নিয়ে এরকম বিচার-বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে। তো আমরা যা পেলাম... প্রথমত আপনারা ঠিক, বয়সের সাথে সাথে পরিবর্তন হ্রাস পায়। কিন্তু দ্বিতীয়ত আপনারা ভুল, কারণ পরিবর্তনের মাত্রাটা আমরা যতোটুকু ভাবি তার ধারেকাছেও নয়। আমাদের উপাত্তগুলোতে দেখা যায়, ১৮ থেকে ৬৮ পর্যন্ত বয়সগুলোতে, মানুষ একটা বিষয় চরমভাবে ভুল বুঝে। তারা অনুমান করতে পারে না যে, আগামী দশ বছরে তারা কি পরিমাণ পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা এটাকে "ইতিহাসের সমাপ্তি" বিভ্রম বলে অভিহিত করে থাকি। জিনিসটার তাৎপর্য্য বুঝতে চাইলে, সরলরেখা দুটি যুক্ত করুন। এবং আপনি দেখবেন যে ১৮ উত্তীর্ণরা নিজেদের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন সম্পর্কে সেই ধারণা পোষণ করে, যেই পরিমাণে ৫০ এ উত্তীর্ণদের চিন্তা পরিবর্তিত হয়। তো, এটি শুধু মূল্যবোধের ক্ষেত্রেই নয়। আরো সব বিভিন্ন ধরণের ক্ষেত্রেও। যেমন- ব্যক্তিত্ব। আপনারা অনেকেই জানেন, মনোবিজ্ঞানীরা এখন বলে থাকেন যে- মানুষের ব্যক্তিত্বের মোট পাঁচটি মৌলিক মাত্রা আছেঃ নৈরাশ্যবাদ, উদারনৈতিক মানসিকতা, বন্ধুসুলভ মানসিকতা, বহির্মুখীতা এবং ন্যায়পরায়ণতা। আবার, আমরা মানুষকে প্রশ্ন করি, পরের দশ বছরে তারা কতটুকু পরিবর্তন আশা করে। আর গত ১০ বছরে তাদের কিরকম পরিবর্তন হয়েছে, এবং আমরা যা পেলাম, আর আপনারা বারবার এই চিত্রটি দেখে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন, কারণ আবারো পরিবর্তনের হার আমাদের বয়সের সাথে কমতে থাকে, কিন্তু যেকোন বয়সেই মানুষ একটা ব্যাপারকে অবমূল্যায়ন করে যায়, সেটা হচ্ছে যে পরবর্তী দশকে তাদের ব্যক্তিত্বে কি পরিমাণে পরিবর্তন ঘটবে। আর এটি শুধু কিছু ক্ষণস্থায়ী বিষয় যেমন- মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব এসব ক্ষেত্রে নয়। আপনি মানুষকে জিজ্ঞেস করতে পারেন তাদের পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারে, কিংবা তাদের বাছবিচার সম্পর্কে। উদাহরণসরূপ, আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধুর নাম মনে করুন, আপনার প্রিয় অবকাশ যাপন, আপনার কি কি শখ আছে কিংবা আপনার পছন্দের গানের ধরণ। মানুষ এগুলো বলতে পারে। আমরা অর্ধেক মানুষকে জিজ্ঞেস করলাম, "আপনি কি মনে করেন যে, আগামী দশ বছরে এগুলো সব পরিবর্তিত হবে?" এবং বাকি অর্ধেককে বললাম, "গত দশ বছরে কি এগুলোতে পরিবর্তন ঘটেছে?" এবং আমরা পেলাম, আচ্ছা, এতক্ষণে আপনারা এটি দুবার দেখে ফেলেছেন এবং আবারো দেখুনঃ মানুষ অনুমান করে যে, তাদের এখন যেই বন্ধু আছে ১০ বছর পর তাদের সেই একই বন্ধু থাকবে, তারা এখন যেই ছুটিগুলো কাটিয়ে মজা পায়, ১০ বছর পর তাতেই মজা পাবে, আর এক্ষেত্রেও বয়সে ১০ বছরের বড় লোকগুলোই বলেছিল যে, "হ্যাঁ, দেখুন, পরিবর্তন আসলেই হয়েছে।" এখন, তাতে কি আসে যায়? এটি কি শুধুই ভুল অনুমানেরই একটি রূপ, যার কোন ফলাফল নেই? না, কিছুটা আসে যায় এবং আমি কারণটি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝাচ্ছি। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে। এই মুহূর্তে মনে করার চেষ্টা করুন- আজকে আপনার প্রিয় সঙ্গীতজ্ঞ কে এবং ১০ বছর আগে আপনার প্রিয় সঙ্গীতজ্ঞ কে ছিল। আমি আপনাদেরকে সাহায্য করার জন্য আমারগুলো উল্লেখ করলাম। তো আমরা মানুষজনকে বললাম এটি অনুমান করার জন্য যে- তারা এখন কতো টাকা খরচ করতে রাজি আছে, তাদের এখনকার প্রিয় সংগীতজ্ঞের কনসার্ট আগামী ১০ বছর পর উপভোগ করার জন্য, এবং গড় হিসেবে, তাদের মতে তারা সেই টিকেটের পেছনে ১২৯ ডলার খরচ করতো। অথচ যখন আমরা জিজ্ঞেস করলাম যে তারা এখন কি পরিমাণ টাকা খরচ করবে তাদের দশ বছর আগের প্রিয় তারকাকে দেখার জন্য, তখন তারা মাত্র ৮০ ডলারের কথা বললো। তো, পুরোপুরি যুক্তিশীল কোন দুনিয়াতে, এই দুইটি টাকার অঙ্ক একই হবে, কিন্তু আমরা বেশি খরচ করে ফেলি আমাদের বর্তমান পছন্দকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে। কারণ আমরা এই পছন্দ বেশিদিন টিকে থাকবে মনে করে ভুল বুঝি। কেন এমন হয়? আমরা আসলে পুরোপুরি নিশ্চিত না, কিন্তু সম্ভবত এর কারণ এটা যে- আগের কথা মনে করা সহজ হলেও ভবিষ্যতে কি হবে সেটা কল্পনা করা কঠিন। আমরা মনে করতে পারি দশ বছর আগে আমরা কেমন ছিলাম, কিন্তু আমরা কল্পনা করতে পারি না যে আমরা কেমন হতে যাচ্ছি, এবং এই কারণে এরপর আমরা ভুলবশত এটা ধরে নেই যে- এমনটা আসলে ঘটবে না। দুঃখিত! মানুষজন যখন বলে "আমি এটা কল্পনাও করতে পারি না", তখন তারা সাধারণত এটা নিজেদের কল্পনাশক্তির অভাবের কারণেই বলে, কারণ আসলে এটা নয় যে, ঘটনাটি ঘটার সম্ভাবনা কম। সব কথার শেষ কথা- সময় একটি ক্ষমতাধর শক্তি। এটি আমাদের রুচির পরিবর্তন ঘটায়। আমাদের মূল্যবোধকে পুণর্গঠিত করে, ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আনে। আমরা এই সত্যটা উপলব্ধি করি ঠিকই, তবে ঘটে যাওয়া অতীতের ক্ষেত্রে। যখন আমরা অতীতে ফিরে তাকাই কেবল তখনই আমরা অনুভব করি, এক যুগে কি রকম পরিবর্তন হয়। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই, বর্তমান যেন একটা জাদুকরি সময়। এটি চলমান সময়ে দুটি সময়ের সন্ধিক্ষণ। এটি এমন একটি মুহুর্ত যখন অবশেষে আমরা নিজেদেরকে খুঁজে পাই। মানব জাতি একটি চলমান প্রক্রিয়া যারা ভুল করে ভাবে যে তাদের আর কোন পরিবর্তন হবে না। আপনি এখন মানুষটা ততোটাই অস্থায়ী, ক্ষণজীবী এবং সাময়িক, ঠিক যতোটা আপনি পূর্বে বিভিন্ন সময়ে ছিলেন। আর এই পরিবর্তনশীলতাই আমাদের জীবনের একমাত্র ধ্রুবক। (ধন্যবাদ) (তালি) এমন একটি জটিল সিদ্ধান্তের কথা ভাবো খুব শীঘ্রই তুমি যার মুখোমুখি হবে। এটা হতে পারে দু'টি পেশার মধ্যে-- শিল্পী নাকি হিসাবরক্ষক-- অথবা কোথায় বাস করবে-- শহরে নাকি শহর থেকে দূরে বা দু'জন ব্যক্তির মধ্যে কাকে বিয়ে করবে-- তুমি বেটি (Betty) অথবা ললিতাকে বিয়ে করতে পারো। বা এখন সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া যায় কিনা, বা অসুস্থ বাবা-মা কে তোমার সাথে রাখা নিয়ে, সন্তানকে এমন ধর্মীয় দীক্ষায় বড় করে তোলা তোমার সঙ্গী যে ধর্ম অনুসরণ করে কিন্তু যা তুমি পছন্দ কর না। বা তোমার সারা জীবনের সঞ্চয় দান করে দিবে কি না। এ ধরণের জটিল সিদ্ধান্ত আরও বড়কিছু ও গুরুত্বপূর্ণ, যা তোমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জটিল সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক সময় ভীষণ কষ্টদায়ক, মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাড়ায়, ঘুমের মাঝে যেমন দাঁত দিয়ে কামড় লেগে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আসলে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা ভুল ধারণা করি, এগুলো যে ভূমিকা পালন করে আমাদের জীবনে জটিল সিদ্ধান্তকে সঠিকভাবে বুঝতে পারলে তা আমাদের অভ্যন্তরীণ লুকানো শক্তি উন্মোচন করে। একটি সিদ্ধান্ত তখনই কঠিন হয়ে উঠে যখন তার সাথে নানা বিকল্প সম্পর্কিত থাকে। যখন আমরা সহজ সিদ্ধান্ত নেই তখন একটি বিকল্প অপরটি অপেক্ষা ভাল হয়। জটিল সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে, একটি বিকল্পের কিছু ভাল দিক থাকে, অপরটির আবার অন্য দিক থেকে কিছু ভাল দিক থাকে, সবমিলিয়ে দু'টি বিকল্পের কোনটিই কোনটির চেয়ে ভালো নাও হতে পারে । তুমি ভাবতে থাকো কোন চাকুরীতে থাকা ঠিক হবে শহরের বর্তমান চাকুরিতে নাকি জীবনকে চেনা পরিবেশ থেকে সরিয়ে দেশের আরও বেশী চ্যালেঞ্জিং কোন কাজে কারণ ছোট কাজটা করার কিছু ভাল দিক আছে, আবার এখান থেকে চলে গেলে তা অন্য দিক থেকে ভাল, এবং সব মিলিয়ে, কোনটি অপরটির চেয়ে ভাল নয়। এটা ভাবা ঠিক নয় যে, সব জটিল সিদ্ধান্তই বড় কোন বিষয় হবে। যেমন, তুমি সকালের নাস্তায় কি খাবে তা নিয়ে ভাবছ। তুমি বেশী আঁশযুক্ত গমের সিরিয়াল খাবে নাকি একটি চকলেট ডোনাট খাবে। ধর, এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনের বিষয়গুলো হলঃ স্বাদ কতটুকু ও স্বাস্থ্যকর কি না। একদিকে, সিরিয়াল তোমার জন্য ভাল, কিন্তু অপরদিকে, ডোনাটের স্বাদ বেশী, সব মিলিয়ে, কোনটিকে অপরটির চেয়ে ভাল বলা যায় না, তাই এটা একটি জটিল সিদ্ধান্ত। ছোট ছোট পছন্দগুলো বুঝতে পারাও জটিল হতে পারে অনেক সময়, কখনো বড় জটিল সিদ্ধান্তকে চিহ্নিত করাও যায় না। বলা যায়, সকালের নাস্তায় কি খাবো তা আমরা বের করতে পারি, হয়ত আমরা এটাও বের করতে পারি ছোট্ট শহরের চাকরি করব নাকি শহর থেকে দূরের কোন নতুন চাকরি নিয়ে শহর ছাড়ব। এটা ভাবা উচিৎ না যে আমরা বোকা তাই এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। যখন আমি কলেজ গ্র্যাজুয়েট হলাম, আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি দুটি পেশার মধ্যে- দর্শন ও আইন। আমি দর্শন খুব ভালবাসতাম। দার্শনিক হিসেবে তুমি দারুণ দারুন জিনিস শিখতে পারবে, এবং আরাম কেদারায় বসেই তুমি হয়ত এসব শিখতে পারবে। কিন্তু আমি একটি সাধারণ অভিবাসী পরিবার থেকে এসেছি যেখানে বিলাসিতার ধারণা ছিল একটি পোর্কের জিহ্বা ও জেলি স্যান্ডউইচ আমার টিফিন বাক্সে নেয়ার মত, তাই সারাজীবন চিন্তা করে আরাম কেদারায় কাটানো, আমার জন্য তেমনই এক ভাবনা ছিল, এটা আমার কাছে অতিরজ্জন ও বোকামী লাগছিল। তাই আমি একটি হলুদ প্যাড (নোট প্যাড) নিলাম, আমি মাঝখানে একটা রেখা টানলাম, এবং আমি দু'টি বিকল্পের ভাল-মন্দ দিকগুলো খুঁজে বের করতে চেষ্টা করলাম। আমার মনে আছে আমি মনে মনে ভাবছিলাম, যেন কেবল আমিই জানি আমার জীবনে এক একটি পেশা কেমন হতে পারে। যদি কেবল সৃষ্টিকর্তা বা Netflix আমাকে একটি DVD পাঠিয়ে দিত সম্ভাব্য দু'টি পেশার ভবিষ্যত , আমি শুরু করতে পারতাম। আমি এদেরকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করতাম, আমি দেখতে পারতাম, কোনটি বেশী ভাল, এবং সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হত। কিন্তু আমার সেরকম কোন DVD পাইনি। আর যেহেতু কোনটি বেশী ভাল, তা আমি বের করতে পারিনি, আমি তাই করেছি, যা বেশীর ভাগ মানুষ করে, জটিল সিদ্ধান্ত নিতেঃ আমি সবচেয়ে নিরাপদ রাস্তাটাই বেছে নিলাম। বেকার দার্শনিক হয়ে থাকার ভয়ে আমি একজন আইনজীবী হয়ে গেলাম। এবং আমি আবিষ্কার করেছিলাম, আইন পেশায় আমি ঠিক খাপ খাইনি। আমি আসলে সেরকম ছিলাম না। তাই এখন আমি একজন দার্শনিক, এবং আমি জটিল সিদ্ধান্ত নিয়ে পড়াশুনা করি, এবং আমি তোমাদের বলতে পারি যে, অজানার প্রতি ভয়, একটি ভুল ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত জটিল সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তা একটি সাধারণ সমস্যা, উৎসাহিত না হতে পারার জন্য। এটা একটি ভুল ধারণা যে কঠিন সিদ্ধান্তে একটি বিকল্প অপরটি থেকে অপেক্ষাকৃত ভাল হবে, কিন্তু আমরা অনেক বোকার মত তা ভাবি, এবং যেহেতু আমরা জানি না, তাই আমরা সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ উপায়টি বেছে নেই। যদি দু'টি বিকল্পকে পাশাপাশি রেখে বিবেচনা করি, সম্পূর্ণ তথ্যসহ , তখনও সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হতে পারে জটিল সিদ্ধান্তগুলো আমাদের অজ্ঞতার কারণে জটিল নয়; এগুলো জটিল কারণ এতে কোন সর্বোচ্চ ভাল কোন বিকল্প নেই। এখন, যদি সবচেয়ে ভালো কোন উপায় না-ই থাকে, যদি দু'টি বিকল্পের মধ্যে একটিকে অপরটি থেকে সুবিধাজনক বলা না যায়, তবে দু'টি বিকল্প সমান ভাবে ভাল বলতে হবে। তাই এটা বলা যায় জটিল সিদ্ধান্তগুলো জটিল কারণ এখানে সকল বিকল্পই সমানভাবে ভাল । কিন্তু এটা ঠিক হতে পারে না। যদি বিকল্পগুলো সমান ভাল হয়, তোমার তবে একটি পয়সা টস করলেই হয়, এবং এভাবে চিন্তা করাটা ভুল হতে পারে, তুমি কিভাবে দু'টি পেশার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিবে, থাকার জায়গা কাকে বিয়ে করবেঃ একটি পয়সা টস কর। আরেকটি কারণে বলা যায়, জটিল সিদ্ধান্তকে সমান দু'টি বিকল্প থেকে কেবল পছন্দ করার বিষয় নয়। মনে কর, দু'টি পেশা থেকে তোমাকে একটি বেছে নিতে হবে তুমি বিনিয়োগকারী ব্যাংকার হতে পারো বা একজন গ্রাফিক শিল্পী হতে পারো। এ ধরণের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় ভাবতে হয়, যেমন, তুমি কাজটা আগ্রহের সাথে করবে কিনা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়, পরিবার গড়ে তোলার যথেষ্ঠ সময় পাবে কি না ইত্যাদি। শিল্পী হতে গিয়ে তুমি হয়ত নতুন ধরণের উন্নত চিত্র অভিব্যাক্তির সাথে পরিচিত হবে। ব্যাংকিং পেশা হয়ত তোমাকে আরও উন্নত নতুন ধরণের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ শিখাবে। মনে কর এই দুই পেশার মধ্যে যে কোনটাই তুমি পছন্দ কর না কেন এদের কোনটিই অপরটির চেয়ে বেশী ভাল নয়। এখন মনে কর আমরা যে কোন একটিকে কিছুটা ভাল বলছি। মনে কর, ব্যাংক এর পেশায় মাসে তুমি ৫০০ ডলার বেশী পাবে । তাহলে কি এখন এই অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংকিং পেশাকে শিল্পী পেশা অপেক্ষা ভাল করে তুলল? আবশ্যিক ভাবে নয়। অপেক্ষাকৃত বেশী বেতন ব্যাংকিং পেশাকে আগের তুলনায় ভাল ভাবাচ্ছে বটে, কিন্তু শিল্পী না হয়ে ব্যাঙ্কার হওয়ার জন্য এটি যথেষ্ঠ নাও হতে পারে। কিন্তু যদি কোন একটি পেশার কেবল একটি দিক আরেকটু ভাল হলেই সেই পেশাকে অপরটির চেয়ে ভাল করতে না পারে, তাহলে দু'টি পেশা সমান ভাবে ভাল হতে পারত না।যদি তুমি দু'টি বিষয় থেকে শুরু কর যা সমানভাবে ভাল, আর একটিকে কিছুটা ভাল অবস্থানে নিয়ে যাও, তবে এটা অপরটির চেয়ে অবশ্যই ভাল হবে। কিন্তু কঠিন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এরকম ঘটে না। তাই আমরা ধাঁধায় পড়ে যাই। আমাদের দু'টো চাকুরী আছে। কোনটিকে অন্যটি থেকে খারাপ বলা যাচ্ছে না, কিন্তু সমান ভাবে ভালও নয়। তাহলে আমাদের কোনটি বেছে নেয়া উচিৎ? মাঝে মাঝে মনে হতে পারে এখানে কিছু ভুল হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়াটাই সমস্যাযুক্ত হতে পেরে আর তুলনা করা যে অসম্ভব। কিন্তু তা সঠিক হতে পারে না। আসলে এটা এমন না যে তুলনাযোগ্য নয় দু'টি বিষয় থেকে আমরা একটিকে বেছে নিচ্ছি। আমরা দু'টি চাকুরীর ভাল দিকগুলো মূল্যায়ন করছি, এমন নয় যে নয় সংখ্যা আর এক প্লেট ডিমভাজির গুনাগুনের কথা বলছি। দু'টি পেশার গুনাগুনের মধ্যে তুলনা আমরা করে থাকি, আর এমন সিদ্ধান্ত আমরা প্রায়ই নিয়ে থাকি। আমার মনে হয় ধাঁধাটা হয় কারণ আমরা মূল্যবোধ নিয়ে এক অচিন্তনশীল ধারণা করি। আমরা মনে করি যে মূল্যবোধ, যেমন, ন্যায়, সৌন্দর্য, মমতা, এগুলো বৈজ্ঞানিক ভাবে পরিমাপ করার মত, যেমন দৈর্ঘ্য, ভর ও ওজন পরিমাপ করি । মনে কর একটি তুলনামূলক প্রশ্ন, যেখানে মূল্যবোধের বিষয় নেই , যেমন দু'টি স্যুটকেসের মধ্যে কোনটি ভারী। তিনট সম্ভাবনা আছে। ওজন বেশী বা কম হবে বা সমান সমান হবে। ওজনের মত এ ধরণের গূনগুলোকে বাস্তব সংখ্যা দিয়ে উপস্থাপন করা যায়-এক, দুই, তিন ইত্যাদি-- দুটি বাস্তব সংখ্যার মধ্যে কেবল তিনটি সম্ভাবনা থাকতে পারে। একটি সংখ্যা বড়, ছোট, বা একটি আরেকটির সমান। কিন্তু মূল্যবোধের ক্ষেত্রে তা নয়। এনলাইটমেন্ট -পরবর্তী সৃষ্টি হিসেবে, আমাদের প্রবণতা হল এটা ভাবা যে বৈজ্ঞানিক চিন্তাই হল এ জগতের সকল গুরুত্বপূর্ণ ভাবনার চাবিকাঠি, কিন্তু মূল্যবোধের জগত বিজ্ঞানের জগত থেকে আলাদা। একটি জগতের বিষয়গুলো বাস্তব সংখা দিয়ে পরিমাপ করা যায়। অপরটির বিষয়গুলোকে তা করা যায় না। আমাদের এটা ভাবা ঠিক নয় যে দৈর্ঘ্য , ওজনের পৃথিবীর কাঠামোর মত ঔচিত্যের পৃথিবীর কাঠামো একই, আমাদের কি করা উচিৎ তার কাঠামোও একই। তাই আমদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ-- শিশুর আনন্দ, বাবা-মার প্রতি তোমার যে ভালবাসা-- বাস্তব সংখ্যা দিয়ে উপস্থাপন করা যায় না, তাই এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কেবল তিনটি সম্ভাবনাই আছে -- একটি বিকল্প অপরটির চেয়ে ভাল, মন্দ বা অপরটির সমান। আমাদের একটি নতুন, চতুর্থ সম্পর্কের কথা বলা প্রয়োজন ভাল, মন্দ বা সমান ছাড়িয়ে, যা জটিল সিদ্ধান্ত নিতে কি সমস্যা হয় তা বর্ণনা করবে আমি এই বিকল্পটিকে বলতে চাই "সমান সমান"। যখন বিকল্পগুলো সমান সমান তুমি কোনটি বেছে নিবে তখন তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে, কিন্তু একটি বিকল্প অপরটি অপেক্ষা ভাল নয়। তার পরিবর্তে, বিকল্পগুলোর একই পাশাপাশি মূল্য আছে, একই শ্রেণীর মূল্য আছে, কিন্তু তাদের সাথে ভিন্ন ধরণের মূল্যবোধ জড়িত। এজন্যই সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন এক্ষেত্রে। জটিল সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো এভাবে নিলে তা আমরা যা জানি না তা তুলে ধরে। আমাদের সকলেরই যুক্তি করার ক্ষমতা আছে। মনে কর তুমি এমন এক পৃথিবীতে আছো যেখানে সকল সিদ্ধান্তই এত সহজ ভাবে নেয়া যে, সেখানে সবসময় সবচেয়ে ভাল একটি বিকল্প থাকে। যদি একটি বিকল্প সর্বোচ্চ ভাল হয়, তবে সেটা তোমার পছন্দ করা উচিৎ, কারণ বৌদ্ধিক হওয়ার অংশ হিসেবে আমরা খারাপ কিছু করার চেয়ে ভালটাই করি, সেটাই পছন্দ করি যা কে সবচেয়ে বেশী যুক্তিযুক্ত করতে পারি। এমন একটি জগতে, আমরা বেশী যুক্তি দেখাতে পারি গোলাপী মোজা না পরে কালো মোজা পরতে, ডোনাট না খেয়ে সিরিয়াল খেতে, শহর থেকে দূরে না থেকে শহরে বাস করতে, ললিতাকে বিয়ে না করে বেটি কে বিয়ে করতে। সহজ সিদ্ধান্তে পরিপূর্ণ এমন জগতে আমরা যুক্তির কাছে দাসে পরিণত হতাম। তুমি যখন তা ভাববে, তা বিশ্বাস করা পাগলামী- যে যুক্তিগুলো তুমি চাও সেগুলো তোমাকে বলে ,দেয় কোনটি সবচেয়ে বেশী যুক্তিসঙ্গত তোমার নির্দিষ্ট শখের ব্যাপারে, তুমি যে বাড়িতে বাস কর সেই নির্দিষ্ট বাড়ির বিষয়ে যে নির্দিষ্ট পেশায় তুমি জড়িত তার বিষয়ে। কিন্তু তুমি যখন এমন কোন বিকল্পের মুখোমুখি হবে যা কিনা সমান সমান -কঠিন সিদ্ধান্তগুলো- আর তুমি যুক্তি খুঁজে বের করবে কোনটি তুমি বেছে নিবে- কোন একটি শখ, বাড়ি বা চাকুরী। যখন বিকল্পগুলো সমান সমান থাকে, আমরা কি করব তা ঠিক করতে পারি না। আমাদের যুক্তিগুলো নির্ধারণ করে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তা ভুল হল কিনা। এখানে, জটিল সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে , আমাদের যে মূল্যবোধের শক্তি তা উপলব্ধি ও ব্যবহার করতে হয়, তোমার জন্য তুমি যে উপায়ে যুক্তি খুঁজে বের কর, তা তোমাকে এমন এক ব্যক্তিতে পরিণত করে যার জন্য তোমার কাছে শহরের জীবনে থাকার চেয়ে শহরের বাহিরে বাস করা বেশী আকাঙ্খিত হয়ে উঠে। যখন আমাদের দু'টি সমান সমান বিকল্প থেকে একটি বেছে নিতে হয়, আমরা আসলে একটি অসাধারণ কাজ করতে পারি। আমরা আমাদের নিজস্ব সত্তাকে কোন বিকল্পের পেছনে রাখতে পারি। আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। এই তো আমি। আমি ব্যাংকিং পেশার জন্য। আমি চকোলেট ডোনাটের জন্য। জটিল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এই উত্তরগুলো হয়ে যায় বৌদ্ধিক বা যৌক্তিক উত্তর, কিন্তু এটা এমন হওয়া ঠিক নয় যে যুক্তি আমাদের আদেশ করবে। বরং এটা আমাদের তৈরি যুক্তিগুলোর সাহায্যে আমাদের জন্য যথাযথ হবে। যখন আমরা আমাদের জন্য যুক্তি বের করি কোন এক ধরণের ব্যাক্তি হওয়ার জন্য, আমরা সেই ব্যক্তিটি হওয়ার জন্য হৃদয় থেকে চেষ্টা করি। তুমি বলতে পার এভাবে আমরা নিজেদের জীবনের জীবন লেখ্য লিখতে পারি। তাই যখন আমরা জটিল সিদ্ধান্ত নেয়ার মুখোমুখি হই, কোন বিকল্পটি বেশী ভাল তা ভেবে দেয়ালে মাথা ঠোকা উচিৎ নয়। আসলে সবচেয়ে ভাল বলে কোন বিকল্প নেই । আমাদের এখানে নিজেদের ভিতর যুক্তি খোঁজা উচিৎ, বাহির পর্যবেক্ষণ করে যুক্তি বের করার চেয়ে। আমি কি হতে চাই? তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পার তুমি কি গোলাপী মোজা পরবে, সিরিয়াল খাবে কি , শহর থেকে দূরে বাস করা ব্যাংকার হবে কি, আর আমি ভাবতে পারি কালো মোজা পরা, শহুরে ডোনাট খেতে পছন্দ করে সেই ব্যাক্তিটি হতে পারি কি। জটিল সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তা ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হবে। এখন, যারা এক্ষেত্রে মূল্যবোধের ক্ষমতার চর্চা করে না তারা যাযাবর ধরণের। আমরা এ ধরণের মানুষ চারপাশে দেখি। আমি উদ্দেশ্যহীন ভাবে একজন আইনজীবী ছিলাম। আইন পেশায় আমি আমার ক্ষমতা প্রয়োগ করিনি। আমি আইনজীবী পেশার জন্য উপযুক্ত ছিলাম না। এ ধরণের উদ্দেশ্যহীন লোকেরা তাদের গল্প লেখার ভার পৃথিবীর উপর ন্যস্ত করে। তারা কি করবে তা নির্ধারণ করে -- যান্ত্রিক উপহার ও শাস্তি- তাদের তা বাহবা দেয়, এক ভয় থেকে তারা সহজ উপায়টি বেছে নেয়। তাই জটিল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যা করতে হয়ঃ গভীরভাবে ভাব যেখানে তুমি তোমার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে, যা তুমি হতে পারবে, আর জটিল সিদ্ধান্তের ভিতর দিয়ে, তুমি সেই ব্যাক্তিটিই হয়ে যাও। মানসিক কষ্ট আর ভয়ে না থেকে, জটিল সিদ্ধান্তগুলো আসলে আমাদেরকে মানুষের এক অবস্থার বিশেষত্ত্ব উদযাপনের অমূল্য সুযোগ এনে দেয়, তা হল, যে যুক্তিগুলো আমাদের পছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করে, ভুল বা সঠিক হোক না কেন, কখনো কখনোও সে যুক্তিগুলো হেরে যায়, আর জটিল সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা যুক্তি বের করতে পারি আমাদের জন্য, সে ক্ষমতা আমাদের আছে; এভাবে আমরা এক একজন স্বতন্ত্র মানুষ হয়ে উঠি। আর তাই জটিল সিদ্ধান্তের সময়গুলো কোন অভিশাপ নয় বরং তা ঈশ্বরপ্রদত্ত। ধন্যবাদ। (করতালি) শুভ অপরাহ্ন। আমার নাম উলদুস। আমি রাশিয়ার একজন ফটো-ভিত্তিক শিল্পী। আমি প্রায় ছয় বছর আগে আমার এ কাজ শুরু করি, বিদ্রূপাত্মক কিছু আত্মপ্রতিকৃতির দ্বারা, জাত, লিঙ্গ ও সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়াতে -- ["আমি রাশিয়ান।আমি মাদকদ্রব্য,বন্দুক,অশ্লীল দ্রব্য বিক্রি করি বাচ্চাদের সাথে !"] ["ভদকা = জল।আমি ভদকা ভালবাসি!"] (হাসি) কোন বার্তা পাঠাতে আমি ফোটোগ্রাফির সাহায্য নি।["আমায় বিয়ে করুন,আমার ভিসার প্রয়োজন"] আজ, আমি এখনও ক্যামেরা সামনে অভিনয় করি ও বিস্ময়কর-নারীর মত সাহসী হতে চেষ্টা করি। আমি অর্থপূর্ণ বার্তা, নান্দনিক সৌন্দর্য, রচনা, বিদ্রূপ এবং নিদর্শন জিনিসপত্রের উপর কেন্দ্র করি। আজ,আমি আপনাদের আমার প্রকল্প সম্পর্কে বলব, যা হতাশাজনক রোমান্টিক নামকরণ করা হয়। তা আমার শিল্প,বা প্রাক রাফায়েলট্রি ব্রাদারহুড ইংল্যান্ডের ১৯ শতাব্দীর চিত্র। আমি চিত্রটি নি ও তাতে নতুন মানে প্রদান করি, রাশিয়ায় সমসাময়িক সমস্যার বিষয় কথা বলে, যা আকর্ষণ করে সাধারণ মানুষদের যারা অভিনেতা নন কিন্তু যাদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গল্প আছে। এই ছেলেটি এক পেশাদার নর্তক, মাত্র ১২ বছর বয়স, কিন্তু মাধ্যমিক স্কুলে, সে তার নৃত্য ক্লাস লুকিয়ে ফেলে নিষ্ঠুরতার মুখোশের নিচে, তার সহপাঠকদের সাথে একত্রিত হওয়ার চেষ্টায়, যাদের কোন ব্যক্তিত্ব নেই। কিন্তু এই ছেলেটির লক্ষ্য ও স্বপ্ন আছে কিন্তু সে তা লুকিয়ে রাখে সামাজিক স্বীকৃতির চেষ্টায়,কারণ আলাদা হওয়া সহজ নয়, বিশেষ করে রাশিয়াতে। পরবর্তী প্রতিকৃতি ব্যাখ্যা রূপক। ইনি নিকিতা, সেন্ট পিটার্সবার্গের এক বারের নিরাপত্তা রক্ষী। তিনি বলেন,"আমি যদি রেগে থাকি আপনার আমায় ভালো লাগবেনা", হাল্ক ছবির এক উদ্ধৃতি, কিন্তু আমি কখনো তাকে এইরকম রেগে যেতে দেখিনি। তিনি তার সংবেদনশীলতা এবং রোমান্টিক দিকটি লুকিয়ে রাখেন,কারণ রাশিয়ায়,লোকেদের মধ্যে, রোমান্টিক হওয়াটা ভালো দেখায়না, কিন্তু মহিলাদের মাঝে আক্রমনাত্মক হাল্কের মতন ব্যাবহার করাটা মানায়। (হাসি) কখনও কখনও, আমার প্রকল্পে, আমি একটি চিত্রকে এক নতুন অর্থ এবং নতুন প্রলোভন দান করি। কখনও, আমি মুখের বৈশিষ্ট্য তুলনা করি ও কখনো শব্দের সঙ্গে খেলা করি: বিদ্রূপ, লোহার মানুষ, ইস্তিরি করার লোক। (হাসি) শিল্পকলার মাধ্যমে, আমি সামাজিক সমস্যাগুলি আমাদের কথোপকথনের মধ্যে নিয়ে আসি যা রাশিয়ায় আমাকে ঘিরে রয়েছে। রাশিয়ায় বিয়ের সম্পর্কে বিস্ময়কর বিষয়, যে ১৮, ১৯-বছর বয়সী মেয়েরা বেশিরভাগই প্রস্তুত ও বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে। আমাদের শৈশব থেকে শেখানো হয়, সফল বিবাহ মানে সফল জীবন, তাই বেশিরভাগ মেয়েই একটি ভাল স্বামী পেতে যুদ্ধে নেমে পরে। এবং আমার সম্পর্কে কি? আমি ২৭ বয়সী রাশিয়ান সমাজের জন্য, আমি একটি বৃদ্ধ দাসী এবং বিয়ের ক্ষেত্রে আশাহীন। সেই কারণে আমি মেক্সিকান যোদ্ধার মুখোশ পরে, একটি বিয়ের পোশাক পরে, অতিরিক্ত মরিয়া আমার ক্ষেত্রে। কিন্তু মনে রাখবেন,বিদ্রূপই মূল, মেয়েদের নিজেদের লক্ষ্যের, স্বপ্নের, ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করার লড়াইতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় অনুপ্রাণিত করায়। সাহসী হন।বিদ্রূপ করুন-- এটা সাহায্য করবে। মজা করুন এবং কিছু জাদু তৈরী করুন। (হাততালি) আমার নাম ম্যাক। বাচ্চাদের কাছে মিথ্যা বলা আমার কাজ, কিন্তু আমার মিথ্যাগুলো শুনলে সত্যি মনে হয়। আমি বাচ্চাদের বই লিখি, পাবলো পিকাসো এর একটি উদ্ধৃতি আছে, "আমরা সবাই জানি শিল্প কোন সত্য নয়, শিল্প হল এমন এক মিথ্যা যা আমাদেরকে সত্য অনুধাবন করায় অন্তত যে সত্য বুঝানো হয়েছে। একজন শিল্পীকে সে পদ্ধতি জানতে হয় যা দিয়ে তার মিথ্যার সত্যতা প্রমাণ করা যায় এই কথাটা যখন আমি প্রথম শুনি তখন আমি কিশোর এবং কথাটা আমার খুব পছন্দ হয়ে যায় যদিও আমার কোন ধারণা ছিল না এর মানে কি (হাসি) আমি ভাবলাম, তোমরা জানো যা নিয়ে আমি আজকে কথা বলতে এসেছি সত্য এবং মিথ্যা, কল্পনা এবং বাস্তবতা। তো, আমি কিভাবে এই পেঁচানো কথাগুলোর জট ছাড়াবো? চলো পাওয়ার পয়েন্টে একটা ভেনচিত্র দেখি। ["সত্যি, মিথ্যা"] (হাসি) তাহলে এখানে দেখা যাচ্ছে, বুম্। আমাদের কাছে আছে সত্যি এবং মিথ্যা সাথে একটি ছোট জায়গা, দুইয়ের কিনারে, ঠিক মাঝে দুইদিকেই দখল করে আছে, সেটাই শিল্প। ঠিক আছে। ভেনচিত্র। (হাসি) (হাততালি) কিন্তু এটা আসলে খুব কাজের না। যে জিনিসটা আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছিল এই কথাটা এবং সাহিত্য রচনার শিল্প, তা হচ্ছে, বাচ্চাদের সাথে কাজ করা। আমি এক কালে সামার ক্যাম্পের উপদেষ্টা ছিলাম। আমি কাজটা করতাম কলেজের গ্রীষ্মের ছুটিতে, এবং কাজটা আমার খুব পছন্দের ছিল। একবার এটা ছিল চার থেকে ছয় বছর বয়সীদের খেলাধুলা বিষয়ক সামার ক্যাম্প। আমার কাজ ছিল চার বছর বয়সীদের রাখা, কাজটা ভালো, কারণ চার বছর বয়সীরা খেলতে পারে না, এবং আমিও পারি না। (হাসি) আমি খেলা খেলি চার বছর বয়সীদের মতই, তো যেটা হয় এই বাচ্চাগুলো কোনের চারপাশে বল ড্রিবল করে, এবং ক্লান্ত হয়ে যায় এবং তারা হয়তো এরপর কোন গাছের নিচে যায় যেখানে আমি আগে থেকেই বসে আছি -- (হাসি) -- এবং আমি তখন গল্প বানিয়ে তাদের শোনাতাম এবং আমি তাদের আমার জীবনের গল্প বলতাম। বলতাম কিভাবে আমি সপ্তাহশেষে বাড়ি ফিরতাম এবং ইংল্যান্ডের রানীর জন্য গোয়েন্দাগিরি করতাম কিছুদিনের মধ্যে, অন্য বাচ্চারাও যারা আমার গ্রুপের না তারাও আমার কাছে এসে বলতো, "তুমি ম্যাক, তাই না? তুমিই সেই ব্যক্তি যে ইংল্যান্ডের রানীর জন্য গোয়েন্দাগিরি করে।" আমি আমার সারাজীবন অপেক্ষা করতাম যে অপরিচিত কেউ আমাকে এই কথাটা জিজ্ঞেস করবে কল্পনা করতাম, সে হবে পরিপাটি রাশিয়ান নারী, কিন্তু,তুমি জানো,বার্কলি, ক্যালিফোর্নিয়ায় তুমি যা পাবে তা হল চার বছর বয়সীদের। এবং আমি বুঝতে পারলাম আমি যে গল্পগুলো শোনাই সেগুলো সত্যি যেভাবে আমি সেগুলো জানি এবং আকর্ষণীয়। আমার সবচেয়ে বড় সাফল্য --আমি এটা কখনই ভুলবো না-- সেখানে একটা ছোট মেয়ে ছিল রাইলি নামের। সে অনেক ছোট। এবং সে প্রতিদিন তার দুপুরের খাবার বাইরে নিয়ে আসতো এবং সে ফল ছুড়ে ফেলত। সে ফলটা নিতো, তার মা তাকে প্রতিদিন একটা করে বাঙ্গি দিতো, এবং সে ফলটা ঝোপে ছুড়ে ফেলতো তারপর সে ফল থেকে প্রক্রিয়াজাত খাবার খেত আর পুডিং এর কাপ, এবং আমি তাকে বলতাম, "রাইলি, তুমি এটা করতে পারো না তোমাকে ফল খেতে হবে।" সে আমাকে প্রশ্ন করতো, " কেন?" আমি বলতাম,"তুমি যদি ঝোপে ফল ছুড়ে ফেল, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি, জায়গাটা বাঙ্গি দিয়ে ভরে যাবে।" একারনেই আমার মনে হয় আমি এখন বাচ্চাদের গল্প শোনাই তাদের পুষ্টিবিদ হওয়ার বদলে। তারপর রাইলি বলতো,"এটা কখনই হবে না। এটা হতেই পারে না।" তাই ক্যাম্পের শেষদিনে, আমি খুব ভোরে উঠলাম এবং একটা ফুটি আনলাম মুদি দোকান থেকে এবং আমি সেটা ঝোপে লুকিয়ে রাখলাম, তারপর দুপুরের খাবারের সময়, আমি বললাম,"রাইলি কেন তুমি একবার ওদিকটায় যেয়ে একবার দেখে আসছো না তুমি কি করেছ।" এবং -- (হাসি)-- সে আস্তে আস্তে ঝোপের ভিতর দিয়ে গেল, এবং তার চোখগুলো খুব বড় হয়ে গেল, এবং সে ফুটিটার দিকে দেখালো যেটা কিনা তার মাথার থেকেও বড় ছিল, অ্যান্ড তারপর সব বাচ্চারা দৌড়ে সেখানে গেল এবং টার চারপাশে জড় হল এবং একটা বাচ্চা বলল,"আচ্ছা, ওটার উপরে একটা স্টীকার কেন?" (হাসি) এবং আমি বললাম,"একই কারণে আমি বলি তোমাদের স্টীকারগুলো ঝোপে ছুড়ো না। এগুলো ময়লার ঝুড়িতে ফেল। তুমি যখন এটা করো তখন এটা পরিবেশ নষ্ট করে। এবং রাইলি তারপর ফুটিটা সারাক্ষণ বহন করে বেড়ালো, এবং সে খুব গর্বিত ছিল। এবং রাইলি জানত সে সাত দিনে একটা ফুটি চাষ করেনি। সাথে সে এটাও জানত যে সে করেছিল, এবং এটা একটা অদ্ভুত জায়গা, কিন্তু এটা এমন একটা জায়গা যেখানে শুধু বাচ্চারাই যেতে পারে। এটা যেকোনো কিছু হতে পারে। এবং শিল্প আমাদেরকে সে জায়গায় নিতে পারে। সে ঐ জায়গাটায় ছিল, একেবারে মাঝে, সে জায়গাটাকে তুমি শিল্প বলতে পারো অথবা সাহিত্য। কিন্তু আমি এটাকে বলবো বিস্ময়। এটাকেই কোলরিজ বলেছিলেন ইচ্ছাকৃত দোদুল্যমান অবিশ্বাস অথবা কাব্যিক বিশ্বাস, সেসব সময় যখন কোন একটা গল্প, যতই আজব হোক, তাতেও সত্যের কিছু আভাস থাকে, এবং তারপর তুমি তা বিশ্বাস করতে পারবে। কেবল বাচ্চারাই সেখানে যেতে পারে না বড়রাও পারে, এবং আমরা সেখানেই যাই যখন আমরা পড়ি। এজন্যই দুইদিনের মধ্যে, মানুষ ডাবলিনে নামবে ব্লুমসডের হাঁটার সফরে অংশ নিতে এবং "ইলুসিয়াস" এ হওয়া সবকিছু দেখতে যদিও তার কিছুই সংঘটিত হয়নি। বা তারা লন্ডনে যাবে এবং বেকার স্ট্রীট দেখতে যাবে শুধু শার্লক হোমসের বাসা দেখতে, যদিও ২২১বি শুধু একটা সংখ্যা যেটা লেখা আছে এমন একটা ভবনে যেটার কখনি এই ঠিকানাটা ছিল না। আমরা জানি এই চরিত্রগুলো আসল না, কিন্তু তাদের জন্য আমাদের আসল অনুভূতি আছে। এবং আমরা এটা পারি, আমরা জানি এই চরিত্রগুলো আসল নয়, এবং সাথে আমরা এটাও জানি যে তারা আসল। বাচ্চারা এসব জায়গায় বড়দের থেকে অনেক সহজে যেতে পারে, এবং এজন্যই আমি বাচ্চাদের জন্য লিখতে ভালবাসি। আমার মনে হয় বাচ্চারাই সবচেয়ে ভালো শ্রোতা গুরুগম্ভীর কোন কথাসাহিত্যের। আমি যখন বাচ্চা ছিলাম, আমি গোপন দরজা সম্পর্কিত গল্পের জন্য পাগল ছিলাম, "নারনিয়া" এর মত জিনিসের জন্য যেখানে তুমি কোন পোশাকের আলমারি খুলবে এবং এর ভিতর দিয়ে কোন জাদুর দেশে চলে যাবে। এবং আমি এটা বিশ্বাস করতাম যে গোপন দরজা আসলেও আছে আমি তাদের খুঁজতাম ও চাইতাম ওর মধ্য দিয়ে যেতে আমি চাইতাম ঐ কল্পনার দেশে বাস করতে,যা আমি সবসময় মানুষের আলমারির দরজা খুলতাম। (হাসি) আমি আমার মায়ের ছেলেবন্ধুর আলমারির ভেতর দিয়ে চলে যেতাম, এবং সেখানে কোন গোপন জাদুর দেশ ছিল না। সেখানে কিছু অদ্ভুত জিনিস থাকতো, যেটা আমার মনে হয় আমার মায়ের জানা উচিত ছিল। (হাসি) এবং আমি তাকে এ নিয়ে সব বলে দিতে আনন্দ পেতাম। কলেজের পরে, আমার প্রথম চাকরি ছিল এরকম কোন গোপন দরজার পিছনে কাজ করা নিয়ে। এই জায়গার নাম ৮২৬ ভ্যালেন্সিয়া। এটা ৮২৬ ভ্যালেন্সিয়া স্ট্রীটে অবস্থিত সান ফ্রান্সিকোর মিশন নামক জায়গায়, আমি যখন সেখানে কাজ করতাম,ওখানে ম্যাকসুইনিস নামের একটা প্রকাশনা সংস্থার সদর দফতর ছিল একটা অলাভজনক লেখার কেন্দ্র ছিল ৮২৬ ভ্যালেন্সিয়া, এবং তার সামনে একটা অদ্ভুত দোকান ছিল। এই জায়গাটা খুচরা ব্যবসার জন্য, এবং সান ফ্রান্সিসকোতে, তারা আমাদের ব্যতিক্রম কিছু করতে দেবে না, সেজন্য যে লেখক এ জায়গাটার প্রতিষ্ঠাতা, উনার নাম ছিল ডেভ এগারস উনি নিয়ম মেনে নিলেন, উনি বললেন,"ঠিক আছে, আমি এখানে জলদস্যুদের প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান বানাবো।" এবং তিনি তাই করেছিলেন। (হাসি) এটা খুবই সুন্দর। এটা পুরোটা কাঠের তৈরি। সেখানে ড্রয়ার থেকে তুমি কমলা নিতে পারবে এতে তোমার স্কার্ভি হবে না। তাদের অনেক রঙের আইপ্যাচ আছে। কারন বসন্তকালে, জলদস্যুরা বনে যেতে চায়। তুমি জানো না।কালো রঙটা বিরক্তিকর। প্যাস্টেল। অথবা চোখ,সেগুলোও অনেক রঙের, কেবল কাঁচের চোখ,তুমি কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চাও তার ভিত্তিতে। এবং দোকানটায়, অদ্ভুত যদিও, মানুষ আসে এবং জিনিসপত্র কেনে, তারা শেষ পর্যন্ত দোকানের পিছনে থাকা আমাদের টিউটরিং সেন্টারের জন্য ভাড়াও পরিশোধ করে কিন্তু আমার কাছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যেটা,আমি মনে করি তুমি যে ধরনের কাজ করো, বাচ্চারা আসবে এবং শিখবে তোমার লেখা থেকে, এবং যখন তোমাকে এরকম অদ্ভুত,ছোট, কল্পনার দেশে যেতে হবে তোমার লেখাও জন্য, এটা তুমি কি ধরনের লেখা তৈরি করো তার উপর প্রভাব ফেলবে। এটা এমনই একটা গোপন দরজা যার মধ্য দিয়ে তুমি যেতে পারো। তো, আমি ৮২৬ লস আঞ্জেলেস চালানো শুরু করলাম, এবং আমার কাজ ছিল দোকানটা ওখানে তৈরি করা। তো আমরা তৈরি করলাম একো পার্ক টাইম ট্রাভেল মার্ট। ওটা আমাদের নীতিঃ "তুমি যখনই থাকো, আমরা তখন আগে থেকেই আছি।" (হাসি) এবং এটা লস আঞ্জেলেসের সানসেট বোলিভার্ডে। আমাদের বন্ধুসুলভ কর্মচারীরা সবসময় প্রস্তুত আপনাকে সাহায্য করার জন্য। তারা সকল যুগের। এমনকি ১৯৮০ দশকের,শেষের ছেলেটার মত, তারা নিকট অতীতের। এরা হচ্ছে মাসের সেরা কর্মচারী, যাদের মধ্যে আছে চেঙ্গিস খান,চার্লস ডিকেন্স অনেক শ্রেষ্ঠ মানুষ আমাদের দেয়া পদবি দিয়ে উঠে এসেছে। এটা আমাদের ওষুধধালয় বিভাগ। আমাদের কিছু পেটেন্ট করা ওষুধ আছে, ক্যানোপিক জার তোমার অঙ্গের জন্য, সাম্যবাদী সাবান যাতে লেখা আছে, "এটা তোমার সারা বছরের সাবান।" (হাসি) আমাদের স্লাশ বানানোর মেশিনটি ভেঙে গেছে দোকান খোলার রাতে এবং আমরা জানতাম না আমাদের কি করতে হবে। আমাদের স্থপতি লাল সিরাপে আবৃত হয়ে গিয়েছিল। দেখে মনে হচ্ছিলো সে কাউকে খুন করেছে, যেটা কোন প্রশ্নই না অন্তত এই বিশেষ স্থপতির জন্য, এবং আমরা জানতাম না কি করা উচিত, এটা দোকানের লক্ষণীয় বস্তু।তাই আমরা "বিকল, গতকাল আসুন।"লেখাটা এর উপর দিয়ে দিলাম। (হাসি) এবং এটা শেষ পর্যন্ত স্লাশের থেকেও ভালো কৌতুকে পরিণত হল। তাই আমরা লেখাটাকে ওখানে এভাবেই রেখে দিলাম। ম্যামোথের টুকরা। এগুলা প্রতিটার ওজন ৭ পাউন্ডের মত। বর্বর নিবারক। এটা সালাদ এবং পপৌরিতে পূর্ণ -- যা বর্বররা অপছন্দ করে। মৃত ভাষা। (হাসি) জোঁক, প্রকৃতির ক্ষুদ্র চিকিৎসক। ভাইকিংদের সুগন্ধি, যেটা অনেকগুলো সুন্দর গন্ধে পাওয়া যায়; পায়ের নখ, ঘাম এবং পচা সবজি,পোড়াকাঠের ভস্ম। কারণ আমরা বিশ্বাস করি এক্স বডি স্প্রে শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই পাওয়া যাওয়া উচিত। তোমার হাতের নিচে নয়। (হাসি) এটা হচ্ছে রোবটদের আবেগের চিপ যাতে রোবটরা ভালবাসা অথবা ভয় অনুভব করে। আমাদের বেশি বিক্রি হয় অপরের কষ্টে সুখের অনুভূতি,যেটা আমরা কখনো আশাও করিনি। (হাসি) আমরা ভাবতেও পারিনি এরকম কিছু হবে। এর পেছনে একটা অলাভ উদ্দেশ্য আছে,বাচ্চারা "শুধু কর্মীদের জন্য"লেখা দরজা দিয়ে ঢুকে শেষে একটা জায়গায় পৌঁছায় যেখানে তারা বাড়িরকাজ করে এবং গল্প লেখে ও ছায়াছবি বানায় এবং এটা একটা বই প্রকাশের অনুষ্ঠান যেখানে বাচ্চারা পড়বে। একটা ত্রৈমাসিক প্রকাশিত হয় যেটা কেবল বাচ্চাদের লেখা দিয়েই তৈরি যারা প্রতিদিন স্কুলশেষে আসে, আমরা বই প্রকাশের অনুষ্ঠান করি, এবং তারা কেক খায় এবং তাদের অভিভাবকদের পড়ে শোনায় এবং শ্যাম্পেনের গ্লাসে দুধ খায় এটি একটি খুব বিশেষ জায়গা, কারণ এটা বাইরে থেকে দেখলে কোন অদ্ভুত জায়গা মনে হয়, এখানের রসিকতাগুলো আসলে কোন রসিকতা নয় তুমি কল্পনার কোন স্তর পাবে না, এবং আমি এত ভালবাসি, এটা কল্পনার একটি ছোট অংশ যা বাস্তব দুনিয়ায় অধ্যুষিত। আমি এটাকে একটা বইয়ের ত্রিমাত্রিক রূপ হিসেবে চিন্তা করি। মেটাফিকশন বলে একটা শব্দ আছে, এবং সেটা হচ্ছে গল্পের মাঝে গল্প নিয়ে, এবং বর্তমানে এর ই সময় চলছে। সর্বশেষ এর ভালো সময় গেছে ১৯৬০ এর দশকে জন বার্থ এবং উইলিয়াম গ্যাডিস এর হাত ধরে, কিন্তু এটা সবসময়ই ছিল। গল্প বলার শুরু থেকেই এটা আছে। এবং মেটাফিকশন এর একটা কৌশল হল মঞ্চের পর্দা উন্মোচন করা।তাই না? যখন একজন অভিনেতা দর্শকদের দিকে তাকায় এবং বলে,"আমি একজন অভিনেতা, এগুলো কেবল মঞ্চের অংশ।" এবং এই সৎ মুহূর্তেও, আমি তর্ক করব,মিথ্যার খাতিরে, কিন্তু এর হওয়া উচিত ছিল উপন্যাসের কৃত্রিমতার পুরোভূমি আমার জন্য,আমি উল্টোটাই পছন্দ করি। যদি আমি মঞ্চের পর্দা উন্মোচন করি, আমি চাই উপন্যাস পালিয়ে যাক এবং বাস্তব দুনিয়ায় চলে আসুক। আমি চাই প্রতিটা বই একেকটা গোপন দরজা হোক যা খুলে যায় এবং গল্পগুলোকে বাস্তবে বের হতে দেয়। এ কারণে আমি এ জিনিসটা আমার বইয়ে রাখার চেষ্টা করি। এখানে একটা উদাহরন দেই। এটা আমার লেখা প্রথম বই। এটার নাম "বিলি টুইটারস এবং তার নীল তিমি সমস্যা।" এটা একটা বাচ্চাকে নিয়ে যে একটা নীল তিমি পায়। কিন্তু এটা ছিল একটা শাস্তি এবং এটা তার জীবনকে বিষিয়ে তোলে। এবং তাই এটা এক রাতে ফেডআপ দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। (হাসি) এবং তার এটাকে স্কুলেও নিয়ে যেতে হত। সে সান ফ্রান্সিসকো থাকে -- একটা নীল তিমি রাখার জন্য অনেক কঠিন শহর। অনেক বাধা,ভুসম্পত্তি ব্যবসা শিখরে। এই বাজারটা পাগল। বইয়ের বহিরাবরনের নিচে এটা রয়েছে, এবং এটাই বহিরাবরনের নিছের দিকের আবরণ, এবং এখানে একটা বিজ্ঞাপন রয়েছে যেটা ৩০ দিনের জন্য ঝুঁকিহীন সুযোগ দিচ্ছে একটা নীল তিমির জন্য। তুমি কেবল ঠিকানা দেয়া স্ট্যাম্প লাগানো একটা খাম পাঠিয়ে দিলেই আমরা তোমাকে একটা তিমি পাঠাবো। এবং বাচ্চারা এটার জন্য লেখে। তো এখানে একটা চিঠি।যাতে লেখা, "প্রিয় কর্মচারিগণ, আমি ১০ ডলার বাজি ধরতে পারি যে তোমরা একটা নীল তিমি পাঠাতে পারবে না। এলিয়ট গ্যানন (বয়স ৬)।" (হাসি)(হাততালি) তো এলিয়ট এবং অন্য বাচ্চারা যারা এগুলো পাঠায় তারা একটা চিঠি পায় একটা নরওয়েজিয়ান আইন সংস্থা থেকে - (হাসি) - যেখানে বলা আছে কাস্টমস আইনে পরিবর্তন আসার কারণে, তাদের তিমি সোনইয়োনফিরজে রেখে দেয়া হয়েছে, যেটা অনেক সুন্দর ফিরজ, এরপর সোনইয়োনফিরজ এবং এবং নরওয়েজিয়ান খাবার নিয়ে কথা বলতে থাকে।এগুলো অবান্তর। (হাসি) কিন্তু এটা শেষ করে এটা বলার মাধ্যমে তোমার তিমি তোমার কথা শোনার জন্য খুবই আগ্রহী। সে একটা ফোন নাম্বার পায়, তুমি ফোন করতে এবং তোমার বার্তা রেখে যেতে পারো, এবং যখন তুমি ফোন করবে এবং বার্তা পাঠাতে যাবে, তুমি একটা বার্তা শুনতে পাবে, যেটা কেবল একটা তিমির শব্দ এবং তারপর একটা বিপ, যেটা সত্যি বলতে অনেকটাই তিমির শব্দের মত, এবং তারা তাদের তিমির একটা ছবিও পায়। এটা হচ্ছে র‍্যান্ডলফ, এবং র‍্যান্ডলফ নিকো নামের এক বাচ্চার তিমি যেকিনা প্রথমদিকে যোগাযোগকরা বাচ্চাদের একজন, আমি তোমাদের নিকোর পাঠানো কিছু বার্তা শোনাই। এটা নিকোর পাঠানো প্রথম বার্তা। (অডিও)নিকোঃ হ্যালো,নিকো বলছি। আমি তোমার মালিক,র‍্যান্ডলফ।হ্যালো। তো এটা প্রথমবারের মত আমি তোমার সাথে কথা বলছি, এবং আমি হয়তো খুব শীঘ্রই তোমার সাথে আবার কথা বলবো।বিদায়। ম্যাক বার্নেটঃ তো নিকো ফিরতি ফোনকল পাঠালো, ঘন্টাখানেক পড়ে। (হাসি) এটা হচ্ছে নিকোর পাঠানো বার্তাগুলোর মধ্যে আরেকটা। (অডিও)নিকোঃহ্যালো,র‍্যান্ডলফ, আমি নিকো বলছি। আমি তোমার সাথে অনেকদিন কথা বলি না, কিন্তু আমি তোমার সাথে কথা বলেছি শনিবার এবং রবিবার, হ্যাঁ,শনিবার ও রবিবার, তাই এখন আমি তোমাকে আবার কল করলাম তোমাকে হ্যালো বলার জন্য এবং আমি কল্পনা করি তুমি এখন কি করছো, এবং হয়তো আমি তোমার আবার যোগাযোগ করব আগামীকালকে অথবা আজকে, তাহলে আমি তোমার সাথে পড়ে কথা বলবো, বিদায়। তো সেদিন সে আবার যোগাযোগ করল। সে র‍্যান্ডলফকে ২৫টা বার্তা পাঠিয়েছিল চার বছর ধরে। তুমি তার সম্পর্কে সবকিছুই জানতে পারবে তার দাদি যে তাকে অনেক ভালবাসে এবং তার দাদি,যাকে সে কিছুটা কম পছন্দ করে- (হাসি)- এবং তার মিলানো ক্রসওয়ার্ড পাজল সম্পর্কে এবং এটা হচ্ছে-আমি নিকোর আর একটা বার্তা শোনাবো। এটা নিকোর পাঠানো ক্রিসমাসের বার্তা। [বিপ](অডিও)নিকোঃহ্যালো,র‍্যান্ডলফ, আমি তোমার সাথে অনেকদিন কথা বলিনি বলে দুঃখিত। আমি অনেক ব্যস্ত ছিলাম কারণ স্কুল খুলে গেছে, তুমি সম্ভবত জানো না, যেহেতু তুমি একটা তিমি,তাই তুমি জানো না, এবং আমি তোমাকে এটা বলতে কল দিয়েছি যে, তোমার ক্রিসমাস শুভ হোক। তো একটা ভালো ক্রিসমাস উদযাপন করো, এবং,বিদায় র‍্যান্ডলফ,শুভবিদায়। এমবিঃ পরে আমি নিকোকে পাই, আমি তার থেকে ১৮ মাস কোন বার্তা পাইনি, এবং সে ২ দিন আগে একটা বার্তা পাঠিয়েছে। তার কণ্ঠস্বর সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে, কিন্তু সে তার পরিচর্কাযাকারীকে ফোনটা ধরিয়ে দেয়, এবং তার পরিচর্যাকারীও র‍্যান্ডলফের সাথে অনেক ভালো ব্যবহার করে। কিন্তু নিকোই হচ্ছে সেরা পাঠক আমি আশা করতে পারি। আমি চাইবো আমি যাদের জন্য লিখতাম তাদের যে কেউ সেই জায়গাটায় আবেগ দিয়ে থাকুক আমি যা তৈরি করছি তা দিয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবান অনুভব করি। নিকোর মত বাচ্চারাই সেরা পাঠক, এবং তারা আমাদের সেরা গল্পগুলোরই যোগ্য। অনেক ধন্যবাদ। (হাততালি) মানবতা TED এর মঞ্চের মধ্যমণি, কিন্তু আমি প্রাণিদের হয়ে কিছু বলতে চা্‌ই যাদের দেহ, মন এবং আত্মা আমাদের প্রফুল্ল করে। কয়েক বছর আগে, ভ্যাঙ্কুভারের কাছেই এক দ্বীপের উপজাতি বৃদ্ধের সাথে সৌভাগ্যবশত দেখা হয়েছিল। তার নাম জিমি স্মিথ, এবং তিনি আমাকে একটি গল্প শুনিয়েছিলেন যা তাদের গোত্রের ভেতরে কেবল বলা হত, তারা নিজেদেরকে 'কুইকোয়াহাসুতোনোক' বলে পরিচয় দিত। অনেক বছর আগে, তিনি আমাকে বললেন, পৃথিবীর সকল প্রাণী এক ছিল। যদিও তারা বাইরে থেকে দেখতে ভিন্ন ছিল, কিন্তু ভেতরে তারা সবাই একই, এবং সময় সময়ে তারা একত্রিত হতো বনের ভেতরে এক পবিত্র গুহায় তাদের একত্রিত হওয়াকে উৎযাপন করতে। তারা যখন পৌঁছাতো, তখন সবাই শরীরের চামড়া খুলে ফেলতো। দাঁড়কাক তার পালক, ভাল্লুক তার পশম, এবং স্যামন আঁশ খুলে ফেলতো, এবং তারপর তারা সবাই নৃত্য করতো। কিন্তু একদিন, এক মানুষ সেই গুহায় এসে উপস্থিত হলো এবং প্রাণীদের কাণ্ড দেখে হাসতে লাগলো। কারণ সে কিছু বুঝতে পারছিলো না। বিব্রতবোধকারী প্রাণীরা পালিয়ে গেল, এবং সেটাই ছিল শেষবার যখন তারা নিজেদেরকে এভাবে উন্মোচিত করেছিলো। প্রাচীন জ্ঞান হচ্ছে যে তাদের বিভিন্ন পরিচয়ের নিচে, সকল প্রাণীই এক, যা আমার জন্য এক শক্তিশালী অনুপ্রেরণা। আমি পশম, পালক এবং আঁশ পার করে ভেতরে যেতে চাই। আমি চামড়ার নিচে যেতে চাই। এক দৈত্য হাতির অথবা অতি ক্ষুদ্র গেছো ব্যাং যার সম্মুখীন হই না কেন আমার লক্ষ্য হচ্ছে তাদের সাথে আমাদের সেতুবন্ধন করা, চোখে চোখ রেখে। আপনি হয়তো ভাবছেন, আমি কখনো মানুষের ছবি তুলি কিনা? অবশ্যই। মানুষ আমার ছবিতে সবসময় উপস্থিত। তা সে যেভাবেই হোক না কেন, হয়তো কচ্ছপের প্রতিকৃতিতে অথবা চিতাবাঘ অথবা সিংহ। আপনার খালি শেখা লাগবে কিভাবে তাদের বাহিরের খোলস ভেদ করে ভেতরে দেখা যায়। একজন আলোকচিত্রী হিসেবে, আমি চেষ্টা করি আমাদের জেনেটিক গঠনের মধ্যেকার পার্থক্যকে অতিক্রম করতে এবং আমাদের মধ্যে যেসব মিল আছে সেগুলোকে শ্রদ্ধা করতে। আমি যখন আমার ক্যামেরা ব্যবহার করি, আমি আমার খোলস ফেলে দেই গুহার সেই প্রাণীদের মতো যাতে আমি দেখাতে পারি, তারা আসলে কেমন। যেহেতু প্রাণীদের মাঝে আমাদেরই চিন্তা করবার শক্তি রয়েছে আমরাই পারি জীবনের জটিলতায় অলৌকিকতা আনতে। যেহেতু জগতের নাগরিকেরা সমস্যায় রয়েছে, এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব জীববৈচিত্র্যের নাটকীয় ক্ষতি রোধ করা। কিন্তু যেহেতু মানুষের রয়েছে হৃদয় আমরা সকলেই জীবনের ঐক্যের মধ্যে আনন্দ করতে পারি, এবং সম্ভবত আমরাই বদলাতে পারি পবিত্র গুহায় যা একদা ঘটেছিল। চলুন সবাই মিলে নৃত্যে যোগদানের একটি উপায় বের করি। ধন্যবাদ। (হাততালি) আমি এটা বেশী লোককে বলিনি, কিন্ত আমার চিন্তায়, আমার আছে হাজারও গোপন পৃথিবী, তারা চলছে, সবগুলো- একই সময়ে। আমি একজন অটিস্টিকও। লোকেরা সাধারণত অটিজম কে চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট কিছু ছক-বাধা বৈশিষ্ট্য দিয়ে, কিন্তু বাস্তবে, আমরা বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরুপ, আমার ছোট ভাই, সে অতি মাত্রায় অটিজমে আক্রান্ত। সে বাকপ্রতিবন্ধী। সে কোন কথা বলতে পারে না। কিন্তু আমি কথা বলতে ভালবাসি। লোকে অনেক সময় অটিজমকে ভাবে তা কেবল অংক ও বিজ্ঞান পছন্দ করা ছাড়া আর কিছুনা কিন্তু আমি এমন অনেক অটিস্টিককে চিনি যারা সৃষ্টিশীল হতে ভালবাসে। কিন্তু তা একটি স্টেরিওটাইপ (গৎবাধা) ধারণা, কোন বিষয়ে স্টেরিওটাইপ হওয়া বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক নয়। উদাহরণস্বরুপ, বেশীর ভাগ লোকেই অটিজমকে "রেইন ম্যান" এর সাথে তুলনা করে এটা সাধারণত ধরে নেয়া হয় যে, প্রত্যেক অটিস্টিক ব্যক্তিই যেন ডাস্টিন হফম্যান, এটি সত্য নয়। কিন্তু এরকম শুধুই অটিস্টিকদের সাথে হয়না। দেখেছি LGBTQ দের (সমকা্মী, অন্যান্য লিঙ্গ) সাথে, নারী, POCদের(শ্বেতাঙ্গ ছাড়া অন্য বর্ণ) সাথে এমন হয়। লোকে বৈচিত্র্যকে এত ভয় পায় যে তারা ছোট বাক্সে সব খাপে মিলাতে চায় একেবারে নির্দিষ্ট কিছু চিহ্ন দিয়ে। এটা আসলে এমন কিছু যা বাস্তব জীবনে আমার সাথে হয়েছিল। আমি গুগলে খুঁজি,"অটিস্টিক মানুষ.." এবং এটি দেখিয়েছিলো যেমন গুগলে টাইপ করলে দেখা যায়। আমি গুগলে খুঁজেছিলাম,"অটিস্টিক মানুষেরা.." এবং সবচেয়ে উপরে ফলাফল এল "শয়তান" লোকে প্রথমে এটিই ভাবে যখন তারা অটিজম নিয়ে ভাবে। তারা জানে। (হাসি) আমি অটিস্টিক, এ কারণে আমি যা করতে পারি- তা বরং আমার যোগ্যতা, কোন অযোগ্যতা নয় - আমার অত্যন্ত প্রখর কল্পনাশক্তি আছে। আমি একটু বিশ্লেষণ করে বলি। যেন প্রায়ই আমি দুই পৃথিবীতে হাঁটছি একটি বাস্তব জগৎ, আমরা যেখানে আছি এবং অপরটি আমার মনোজগৎ, এবং প্রায়ই আমার মনের জগৎ অনেক বেশী জীবন্ত আমার বাস্তব জগৎ অপেক্ষা। যেমন, আমি সহজেই নিজের মনে হারিয়ে যাই অটিস্টিক হবার সুবিধা হল- ছোট কোন বাক্সে আমি নিজেকে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করিনা। তোমার সেই কাজ করার কোন দৃঢ় ইচ্ছা নেই। তুমি তাই খুঁজো, যা তুমি করতে চাও, তুমি কিছু করার উপায় খুঁজে নাও , এবং তা করতে থা্কো। যদি নিজেকে কোন বাক্সের খাপেখাপে মিলাতে হত, তবে আমি এখানে থাকতাম না, যা আমার এখন আছে, তার অর্ধেক অর্জনে ব্যর্থ হতাম। যদিও কিছু সমস্যা আছে। অটিস্টিক হবার কিছু সমস্যা আছে, এবং অতি কল্পনাশক্তি থাকারও সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে সাধারণত স্কুল সমস্যা হতে পারে কিন্তু শিক্ষকের কাছে বুঝিয়ে বলাও দিনের পর দিন তাদের পাঠদান অত্যন্ত বিরক্তিকর তুমি গোপনে আশ্রয় নিচ্ছো তোমার মনোজগতে, যেখানে ঐ পাঠের কোন স্থান নেই, এটি বেশ সমস্যা তৈরি করে। (হাসি) আবার, যখন আমার কল্পনা থেমে যায়, আমার দেহ একটি নিজস্ব জীবন পায়। যখন আমার আপন জগতে উত্তেজনাকর কিছু ঘটে, আমি যেন চলতেই থাকি। আমি সামনে-পেছনে দুলতে থাকি, অথবা মাঝে মাঝে চিৎকার করি। এটি আমাকে এত শক্তি দেয় যে, আমাকে কিছু শক্তি নিঃসরণ করতে হয় । কিন্তু আমি এটা শৈশব থেকেই করে আসছি, যখন আমি একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে ছিলাম। আমার বাবা-মার কাছে তা ছিল আদরণীয়, তাই তারা ভাবেনি, কিন্তু যখন আমি স্কুলে গেলাম, তারা তা আর আদরণীয় বলে মনে করল না। কারণটি হতে পারে কেউ সেই মেয়েটির বন্ধু হতে চায় না যে পাটিগণিত ক্লাসে চিৎকার করতে শুরু করে। এবং যা সাধারণত এই সময়ে ও বয়সে ঘটে না, আবার হতে পারে কেউ অটিস্টিক একটা মেয়ের বন্ধু হতে চায় না। লোকে তাঁর সংস্পর্শে আসতে চায় না যে তাদের সাথে মিশতে পারেনা বা পারবে না স্বাভাবিক ট্যাগ করা বাক্সটির ভিতরে। কিন্তু আমি এটার সাথে মানিয়ে নিয়েছি, কারণ তা গমের খোসা থেকে গম আলাদা করার মত, আমি এভাবে খাঁটি ও সত্যিকার মানুষ খুঁজে পাই, আমি এই মানুষগুলোকে আমার বন্ধু হিসেবে পাই। কিন্তু তুমি কি ভেবেছো, স্বাভাবিক আসলে কি? এটার মানে কী? মনে কর,যদি তা হয় তোমার সবোর্চ্চ প্রশংসা "বাহ, তুমি সত্যি স্বাভাবিক একজন।" (হাসি) কিন্তু প্রশংসা হলো, "তুমি একজন ব্যতিক্রম" "তুমি প্রচলিত পথে যাওনি" তা হলো " তুমি অসাধারণ" তাই লোকে যদি এইরকম হতে চায়, তবে কেন লোকে স্বভাবিক হতে এত উদ্গ্রীব? ব্যক্তির উজ্জ্বল স্বতন্ত্র আলোকে নির্দিষ্ট করা কেন ? লোকে বৈচিত্র্য এত ভয় পায় যে তারা সবাইকে বাধ্য করে, এমনকি তাদেরকেও, যারা স্বাভাবিক হতে চায় না বা পারে না কিছু প্রতিষ্ঠান আছে LGBTQ দের জন্য বা অটিস্টিকদের জন্য, তাদের স্বাভাবিকে রুপান্তর করতে এখন লোকে এভাবে স্বাভাবিক হতে চেষ্টাও করে- যা হতাশাজনক। সব মিলিয়ে, আমি আমার অটিজম ও আমার কল্পনা নিয়ে বাণিজ্য করব না । আমি অটিস্টিক, কিন্তু- আমি BBC তে তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করেছি, আমি একটি বই লিখছি, আমি এখানে কথা বলছি- এটা অসাধারণ- এবং আমি যা পেয়েছি তার মধ্যে অন্যতম হলো, আমি মনে করি আমি পেয়েছি, আমি যোগাযোগের উপায় খুঁজে পেয়েছি আমার ছোট ভাই-বোনের সাথে, যারা বাকপ্রতিবন্ধী। তারা কথা বলতে পারেনা। লোকে বাকপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে লিখতে চায় না কিন্তু এটা বোকামি, কারণ আমার ছোট ভাইবোন হলো শ্রেষ্ঠ ভাইবোন, যা একজন আশা করতে পারে। তারা সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আমি তাদের ভালবাসি এবং তাদের অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশী যত্ন করি। তোমাদের কাছে একটি প্রশ্ন রেখে যাচ্ছিঃ আমরা যদি কারো মনের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারি, সে অটিস্টিক হোক বা না হোক, কাউকে স্বাভাবিক হতে না পারার জন্য শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে, অনন্য হতে পারাকে উদযাপন করি না কেন তাকে উৎসাহ দেই না কেন, যে তার কল্পনাকে অবাধ করে দেয়? ধন্যবাদ। (করতালি) আমি চাই তোমরা নিজেকে সৈনিক হিসেবে কল্পনা কর যেন যুদ্ধের ময়দানের ভেতর দিয়ে দৌড়াচ্ছ। এখন, তোমার পায়ে গুলি লেগেছে, যা তোমার ফেমরাল আরটারিকে বিভক্ত করেছে। এখন এই রক্তক্ষরণ অনেক আঘাতমূলক এবং এটি তোমাকে তিন মিনিটের ভিতর মেরে ফেলতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, যে সময়ে সেবাকর্মী এসে পৌঁছাবে তোমার কাছে, সেবাকর্মীর বেল্টে যা আছে তা বের করতে পাচ মিনিটেরও বেশি, সময় নিবে প্রেসার প্রয়োগে ঐ রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে। এখন এই সমস্যাটি শুধু একটি বড় সমস্যা নয় মিলিটারির জন্য, এটি একটি বিরাট সমস্যা যা মহামারি আকার ধারণ করেছে পুরো মেডিক্যাল ফিল্ডে, যা হচ্ছে আমরা একটি ক্ষতকে কিভাবে দেখব এবং কিভাবে তাড়াতাড়ি আমরা রক্তপাত বন্ধ করব এমন ভাবে যা কাজ করবে আমাদের শরীরে। তাই এখন, আমি গত চার বছর ধরে কাজ করছি স্মার্ট বায়ো উপাদান এর উপর, যা আসলে সেই উপাদান যা কাজ করবে শরীরের সাথে, শরীরকে সুস্থ করার জন্য এবং এটি শরীরের ক্ষতকে স্বাভাবিক ভাবে আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য করবে। তো এখন, এটি করার আগে আমরা দেখব আসলে কিভাবে আমাদের শরীর কাজ করে এখন, এখানে আমরা সবাই জানি যে শরীর কোষ দিয়ে তৈরি। কোষ হচ্ছে জীবনের প্রাথমিক একক। কিন্তু অনেকেই জানে না আর কি কি জীবনের উপাদান। আসলে দেখা যাচ্ছে যে আপনার কোষ এসব জটিল জালের ফাইবারের ভিতর বসে থাকে প্রোটিন এবং চিনি যেগুলো অতিরিক্ত সেলুলার ম্যাট্রিক্স নামে পরিচিত। তো এখন, ইসিএম আসলে একটি জাল যা কোষগুলোকে নিজেদের স্থানে ধরে রাখে, আপনার টিস্যুর জন্য কাঠামো প্রদান করে, কিন্তু এটি কোষের জন্যও একটি আবাস প্রদান করে। এটি তারা কি করছে তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে , কোথায় তারা, এবং তাদেরকে বলে কিভাবে কাজ করতে এবং আচরণ করতে হবে। এবং দেখা যায় যে এসব অতিরিক্ত সেলুলার ম্যাট্রিক্স শরীরের প্রতিটি অংশের থেকে ভিন্ন। আমার ত্বকের ইসিএম আমার যকৃতের ইসিএম এর থেকে ভিন্ন এবং একই অঙ্গের বিভিন্ন অংশের ইসিএম আসলে বিভিন্ন হয়, এজন্য এটি খুবই কষ্টকর এমন একটি উপাদান পাওয়া যা স্থানীয় কোষীয় ম্যাট্রিক্সের সাথে প্রতিক্রিয়া দিবে। যেটি আমরা অবিকল করার চেষ্টা করছি। তাই এখন, দৃষ্টান্তস্বরূপ, রেইনফরেস্টের কথা ভাব তোমার চাঁদোয়া আছে, চাঁদোয়ার নিচের জায়গা আছে, এবং তুমি বনের ভূমি পাচ্ছ। এখন বনের এইসব অংশ বিভিন্ন গাছপালা নিয়ে গঠিত এবং বিভিন্ন প্রাণী তাদেরকে আবাস বলে ঠিক তেমনি, এই কোষীয় ম্যাট্রিক্স, অবিশ্বাস্য ভাবে বৈচিত্র্যময় তিন বিস্তারে। এছাড়াও, এই কোষীয় ম্যাট্রিক্স সব ক্ষত নিরাময়ের জন্য দায়ী, তাই আপনি যদি শরীরের কাটার কথা কল্পনা করেন, তাহলে আপনাকে এই খুবই জটিল ইসিএম পুনর্নির্মাণ করতে হবে যাতে এটি আবার গঠিত অর্থাৎ নিরাময় হতে পারে, এবং একটি দাগ, আদতে, আসলে দুর্বল ভাবে গঠিত কোষীয় ম্যাট্রিক্স। তাই এখন, আমার পিছনে একটি অ্যানিমেশন কোষীয় ম্যাট্রিক্স এর। সুতরাং আপনি দেখুন, আপনার কোষ এই জটিল জালের ভিতর অবস্থান করে এবং আপনি কলা জুড়ে অগ্রগমন করলে কোষীয় ম্যাট্রিক্স পরিবর্তিত হয়। তাই এখন অন্য প্রতিটি প্রযুক্তি যা বাজার এ আছে আনুমানিক শুধুমাত্র দুটি বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কোষীয় ম্যাট্রিক্সের, তার মানে এটি উপযোগী নয় শরীরের কলার জন্য। আমি যখন নবীন ছিলাম এনওয়াইএউ তে আমি আবিষ্কার করলাম যে আপনি আসলে ছোট ছোট পলিমার টুকরা যা উদ্ভিদ হতে প্রাপ্ত নিয়ে এবং সেগুলো ক্ষত এর সামনে একত্রিত করতে পারেন। তাই, আপনার যদি রক্তক্ষরণ হতে থাকে ক্ষত থেকে যেমনটি আমার পিছনে, আপনি চাইলে আমাদের উপাদান ক্ষতের উপর লাগাতে পারেন, এবং অনেকটা লেগো ব্লক এর মত, এটি আপনার শরীরের স্থানীয় কলার সাথে মিলিত হবে। এর মানে আপনি যদি এটিকে যকৃতের উপর লাগান, এটি এমন জিনিসে পরিণত হয় যা যকৃতের মত দেখতে, এবং আপনি যদি ত্বকের উপর লাগান, এটি এমন জিনিসে পরিণত হয় যা দেখতে ত্বকের মত। তাই আপনি যখন এই জেলটি লাগান, এটি আসলে আপনার শরীরের স্থানীয় কলার সাথে মিলিত হয়। এখন, এটির বিভিন্ন ধরনের প্রয়োগ আছে , কিন্তু প্রাথমিক চিন্তা হচ্ছে, যেখানেই আপনি এটি লাগাবেন আপনি এটিকে আবার মিলিত করতে পারবেন সাথে সাথেই। এখন, এটি হচ্ছে কৃত্রিম ধামনিক রক্তপাত — রক্ত সতর্কতা — মানুষের দ্বিগুণ ধমনি চাপে. সুতরাং এখন এই ধরনের রক্তপাত খুবই আঘাতদায়ক এবং যেমনটি আমি বলেছিলাম, এটি বন্ধ করতে পাঁচ মিনিট বা তারও বেশি চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এখন, আমার যতটুকু সময় লাগে রক্তপাত উপস্থাপন করতে ততোক্ষণে আমাদের উপাদানটি রক্তপাত বন্ধ করবে, এবং এটি যেহেতু আসলে লাগানোর সাথে সাথেই কাজ শুরু করে শরীরের আরোগ্য লাভে, তাই এটি মিলিত হয় মাংসের টুকরোর উপরে এবং এরপর রক্ত আসলে উপলব্ধি করতে পারে যে এটি হচ্ছে এবং এটি তখন ফাইব্রিন প্রস্তুত করে, যা খুবই দ্রুত জমাট তৈরি করে দশ সেকেন্ডেরও কম সময়ে। এখন এই প্রযুক্তি — ধন্যবাদ। (করতালি) এখন এই প্রযুক্তি, জানুয়ারির ভিতর পশু-চিকিৎসকদের হাতে থাকবে, এবং আমরা কাজ করছি খুবই সতর্কতার সাথে কিভাবে এটি ডাক্তারদের হাতে পৌঁছে দেওয়া যায়, আশা করি পরবর্তী বছরের ভিতর। কিন্তু আবার আমি আপনাদের কল্পনা করতে বলব যেন আপনারা সৈনিক যুদ্ধ ময়দানের ভিতর দিয়ে দৌড়াচ্ছ । এখন, আপনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হলেন এবং তিন মিনিটের ভিতর রক্তপাতেের জন্য মারা যাওয়ার পরিবর্তে, আপনি আপনার বেল্ট থেকে একটি ছোট জেলের প্যাক বের করলেন এবং একটি বোতাম টেপার মাধ্যমে, আপনি নিজের রক্তক্ষরণ বন্ধ করলেন এবং আপনি তাড়িতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছেন। ধন্যবাদ সবাইকে। (করতালি) আমাদের বিশ্বে বহু মহামানব আছেন। কিন্তু তাদের মহাশক্তিটা সবচেয়ে নিকৃষ্ট: অদৃশ্যতা যেমন সংগ্রাহকেরা যে কর্মীরা জীবন ধারণের জন্য রিসাইকেল যোগ্য উপাদান সংগ্রহ করেন। সামাজিক বৈষম্য, বেকারত্ব এবং বর্জ্য সংগ্রহ প্রণালীর অপ্রতুলতার ফলে সৃষ্ট হওয়া কঠিন বর্জ্যের প্রাচুর্যই সংগ্রাহকদের জন্ম দিয়েছে। সংগ্রাহকরা একটি ভারী, সৎ এবং পুরো জনগোষ্ঠীর জন্য হিতকারী একটি কাজ সাধন করেন। কিন্তু এজন্য তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। এখানে ব্রাজিলে, তারা প্রকৃতপক্ষে রিসাইকেল করা বর্জ্যের ৯০ শতাংশ এরা সংগ্রহ করেন। বেশীর ভাগ সংগ্রাহকরা একা কাজ করেন, তারা রাস্তা থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ করেন ও অতি অল্প দামে জাঙ্ক ইয়ার্ডে বিক্রি করেন। তারা তাদের ব্যাগ, শপিং কার্ট, বাইসাইকেল এবং কাহোসাসে ৩০০ কিলোরও বেশী সংগ্রহ করে থাকেন। ওয়াগন হল কাঠ আর ধাতু দিয়ে তৈরি করা ঠেলাগাড়ি যা ব্রাজিলের বহু রাস্তায় দেখা যায়, গ্রাফিতি আর রাস্তার চিত্রের মতই। আর এভাবেই এই প্রান্তিক মহামানবদের আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। আমি একজন গ্রাফিতি শিল্পী এবং সক্রিয়তাবাদী আর আমার সৃষ্টির প্রকৃতি হল সামাজিক, পরিবেশগত এবং রাজনৈতিক। ২০০৭ সালে আমি আমার সৃষ্টি দেওয়ালের বাইরে ওয়াগনে নিয়ে যাই, আমার বার্তার এক নতুন নাগরিক সমর্থন রূপে। কিন্তু এইবার আমি সংগ্রাহকদের কণ্ঠস্বর দিয়েছিলাম। এই উদ্দেশ্যের সঙ্গে হাস্যরস ও কলা যোগ করার ফলে এটার আবেদন আরও বেড়েছিল, যা সংগ্রাহকদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সাহায্য করেছিল আর তাদের আত্ম সম্মান বৃদ্ধি করেছিল। এছাড়াও, তারা এখন রাস্তায়, সার্বজনীন ও সামাজিক প্রচার মাধ্যমে বিখ্যাত। সুতরাং ব্যাপারটা হল, আমি এই বিশ্বে ঝাঁপ দিয়েছিলাম আর সেই থেকে এই কাজ করা বন্ধ করিনি। আমি বহু শহরে ২০০-রও বেশী ওয়াগন চিত্রিত করেছি এবং সারা বিশ্ব থেকে প্রদর্শনী এবং ভ্রমণের আমন্ত্রণ পেয়েছি। আর আমি অনুধাবন করেছি যে সংগ্রাহকরা শুধুমাত্র ব্রাজিলেই অদৃশ্য নয়। আমার তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে আর্জেন্টিনা, চিলি, বলিভিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, টার্কি আর এমনকি জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত দেশেও। আর তখনি আমি উপলব্ধি করেছি যে আমার এই কাজের জন্য আরও লোক চাই কারণ এটা একটা খুব বড় চ্যালেঞ্জ। আর তখন আমি একটি সহযোগিতা মূলক আন্দোলন শুরু করি যার নাম আমার কাহোসা মনোহারি কর -- (হাসি) -- যা একটি বিশাল গণ সাহায্যে চালিত কার্যক্রম। ধন্যবাদ। (করতালি)। তো আমার কাহোসা মনোহারি কর একটি বিশাল গণ সাহায্যে চালিত কার্যক্রম যা সংগ্রাহক এং তাদের ওয়াগনকে সাহায্য করে। সংগ্রাহকদের ভালো থাকার পেশাদার ও স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীরা সাহায্য করেন, যেমন চিকিৎসক, দাঁতের ডাক্তার, পদ চিকিৎসক, কেশ সজ্জাকারী, অঙ্গমর্দন চিকিৎসক এবং আরও অনেকে। এছাড়াও, তাদের নিরাপত্তা শার্ট, দস্তানা, বর্ষাতি, আর শহরকে হাই ডেফিনিশনে দেখার জন্য চশমা দেওয়া হয়, যখন তাদের ওয়াগনগুলির আমাদের অসামান্য স্বেচ্ছাসেবীরা সংস্কার সাধন করেন। আর সেগুলিও নিরাপত্তা সামগ্রী পায়: রিফ্লেক্টিভ টেপ, হর্ন, আয়না। আর সব শেষে একজন সড়ক শিল্পী চিত্রিত করেন এবং সেটি বিশাল চলমান কলা প্রদর্শনীর অংশ হয়ে ওঠে। আমার কাহোসা মনোহারি কর সাও পাওলো, রিও ডি জেনিরো ও কুরিটিবার রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু অন্যান্য ব্রাজিলের বাইরের শহরের চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা TEDx এর অনুপ্রেরণায় Pimpx তৈরি করেছি, আর এটা হল আমার কাহোসা মনোহারি কর-র একটি সরল, নিজে-কর, গণ সাহায্যে চালিত সংস্করণ। তাই এখন সকলে যোগদান করতে পারে। দুই বছরে ১৭০-রও বেশী সংগ্রাহক, ৮০০ স্বেচ্ছাসেবক ও ২০০ সড়ক শিল্পী এবং ১,০০০ এরও বেশী দাতা আমার কাহোসা মনোহারি কর আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। যাদের কাজ স্থানীয় স্কুলে রিসাইকেল শিখনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই সংগ্রাহকরা এখন অদৃশ্যতা পিছনে ফেলে রেখে আরও সম্মানিত এবং মূল্যবান হয়ে উঠছেন। তাদের মনোহারি ওয়াগনের সাহায্যে তারা অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তাদের আয় ও জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি করছেন। তো এবার আমি আপনাদের আপনার শহরের সংগ্রাহক এবং অন্যান্য অদৃশ্য মহামানবদের দেখার এবং তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার চ্যালেঞ্জ জানাতে চাই। বিশ্বকে অখণ্ড ভাবে, কোনও সীমান্ত বা চৌহদ্দি ছাড়া দেখার চেষ্টা করুন। বিশ্বাস করুন বা না করুন, সারা বিশ্বে ২০০ লক্ষেরও বেশী সংগ্রাহক আছেন। তাই পরের বার যখন আপনি অদের একজনকে দেখবেন, ওদের আমাদের সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ রূপে দেখুন। মুইতো অরবিগাদো, ধন্যবাদ। (করতালি)। গত কয়েক শতাব্দী ধরে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র আমাদের জগতে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। সূক্ষ্ম বস্তু, প্রাণ এবং অবয়বসমূহের জগতটাকে আমাদের সামনে উন্মোচিত করেছে যেগুলো এতই ছোট যে খালি চোখে দেখা সম্ভব না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এর অবদান অসামান্য। আজ আমি এক নতুন ধরনের অণুবীক্ষণ যন্ত্র আপনাদের কাছে পেশ করতে চাই, পরিবর্তন দেখার অণুবীক্ষণ যন্ত্র। এটা সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মত আলোকবিদ্যা ব্যবহার করে না ছোট জিনিসকে বড় করে দেখবার জন্য, বরং তার বদলে এটি ভিডিও ক্যামেরা এবং ইমেজ প্রসেসিং ব্যবহার করে বস্তু এবং মানুষের সূক্ষ্মতম নড়াচড়া কিংবা রং এর হেরফেরকে আমাদের সামনে তুলে ধরে, যে সকল তারতম্য খালি চোখে ধরা অসম্ভব। এবং এটি আমাদেরকে একেবারে নতুন ভাবে জগতকে দেখতে দেয়। তো, রং এর হেরফের বলতে আমরা কি বুঝি? যেমন ধরুন, আমাদের চামড়ার রং এর সামান্য পরিবর্তন হয় যখন এর নীচ দিয়ে রক্ত বয়ে যায়। পরিবর্তনটা অতীব সূক্ষ্ম, একারনে, যখন আপনি অন্য একজনের দিকে তাকান, যখন পাশে বসা কারো দিকে তাকান, তাদের চামড়া বা মুখের রং এর পরিবর্তনটা আপনি দেখতে পাবেন না। স্টিভের এই ভিডিওটির দিকে তাকালে এটাকে একটি স্থির চিত্র বলে মনে হবে, কিন্তু এটাকে যখন আমাদের এই নতুন, বিশেষ দূরবীক্ষণ দিয়ে দেখি, তখন সহসাই আমরা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই। এখানে যা দেখা যাচ্ছে তা হল, স্টিভের চামড়ার রঙের সূক্ষ্ম পরিবর্তন, দৃশ্যমান করার জন্য এগুলোকে ১০০ গুন বিবর্ধিত করা হয়েছে। আমরা আসলে এখানে মানুষের নাড়ীর স্পন্দন দেখতে পাচ্ছি। স্টিভের হৃদস্পন্দন কত দ্রুত চলছে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আবার একই সাথে তা র মুখমণ্ডলের রক্ত সঞ্চালনের প্রকৃত চিত্রটাও দেখতে পাচ্ছি। এবং এটা করি, কেবল নাড়ীর স্পন্দন দৃশ্যমান করার জন্য নয়, প্রকৃতপক্ষে হৃদস্পন্দনের হারকে অনুধাবন করার জন্যেও করি, এবং হৃদস্পন্দনের হার মাপার জন্যেও করি। আর সাধারন ক্যামেরা ব্যবহার করেই আমরা এটি করতে পারি এবং রোগীর শরীর স্পর্শ না করেই। সুতরাং দেখতে পাচ্ছেন, এখানে আমরা একটি নবজাতকের হৃদস্পন্দনের হার বের করেছি সাধারন একটি ডি এস এল আর ক্যামেরায় তোলা ভিডিও থেকে এবং হৃদস্পন্দনের হার যা বের করেছি তা হাসপাতালে পর্যবেক্ষণ করা প্রমিত পরিমাপের মত একই মাত্রায় নিখুঁত। এবং এমনকি এটি আমাদের ধারনকৃত ভিডিও না হলেও চলবে প্রকৃতপক্ষে অন্য ভিডিও দিয়েও এই কাজটি করতে পারি তাই, এখানে আমি "Batman Begins" ছবিটা থেকে একটি ক্লিপ নিয়েছি, ক্রিস্টিয়ান বেলের নাড়ীর স্পন্দন দেখাতে। (হাসির রোল) এবং আপনি হয়তো জানেন যে সে মেক-আপ নিয়ে আছে, এই আলোর কারনে কাজটি বেশ দুরূহ হয়ে যাচ্ছে, তা সত্ত্বেও, কেবল এই ভিডিও থেকেই আমরা তাঁর নাড়ীর স্পন্দন বের করেছি এবং খুব ভালোভাবেই এটা দেখাতে পারছি। বেশ, তাহলে আমরা কিভাবে এগুলো করতে পারছি? আমরা মূলতঃ আলোর হেরফের বিশ্লেষণ করছি এই ধারণকৃত ভিডিওর প্রতিটি পিক্সেলে, সময়ের সাপেক্ষে, এবং এই হেরফেরকেই একটু চাগিয়ে দিয়েছি, দেখার সুবিধার্থে এগুলোকে আমরা বড় করেছি, কঠিন বিষয়টি হল, এই সংকেতগুলোর, যে হেরফের গুলো নিয়ে আমাদের কারবার, সেগুলো খুবই সূক্ষ্ম, তাই আমাদেরকে খুবই যত্নবান হতে হবে, যখন এদেরকে আলাদা করবেন, ভিডিওগুলোতে সর্বদা-বিদ্যমান এই গোলমালের ভ্রান্তি থেকে। তাই আমরা কিছু চাতুর্য্যময় ইমেজ-প্রোসেসিং কৌশল ব্যবহার করেছি, যাতে করে, অত্যন্ত নিখুঁত পরিমাপ পাওয়া যায়, ভিডিওটির প্রতিটি পিক্সেলের রং এর, এবং সময়ের সাথে এই রং বদলানোর ধরনের, আর এরপরে আমরা এই পরিবর্তন গুলোকে বহুগুণে পরিবর্ধিত করি। এই ধরনের বর্ধিত কিংবা বিবর্ধিত ভিডিওগুলি তৈরি করার জন্য আমরা এগুলোকে আরও বড় করে তুলি, যা আসলে আমাদেরকে এই পরিবর্তনগুলো দেখায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, এভাবে শুধু রঙের সূক্ষ্ম তারতম্য দেখানোই নয়, পাশাপাশি সূক্ষ্ম নাড়াচাড়া গুলোও দেখানো যায়, আর এটা একারণেই যে, আমাদের ক্যামেরায় ধারণকৃত আলোকরশ্মি শুধু যে বস্তুর রঙের হেরফেরের ফলে পরিবর্তিত হয়, এমনটি নয়, এছাড়া বস্তুর নাড়াচাড়ার ফলেও পরিবর্তিত হয়। তাই, এটি আমার মেয়ে, যখন তার বয়স প্রায় দুই মাস। আমি প্রায় তিন বছর আগে এই ভিডিওটি ধারন করেছিলাম। এবং নতুন পিতামাতা হিসাবে আমরা চাচ্ছিলাম আমাদের বাচ্চারা সুস্থ্য থাকুক, অর্থাৎ তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে, তাঁরা জীবিত, অবশ্যই। তাই আমিও এরকম একটা বেবি-মনিটর জোগাড় করেছিলাম, যেন আমি আমার ঘুমন্ত মেয়েকে দেখতে পারি। এবং একটি গড়-পড়তা বেবি মনিটরে যা দেখতে পাবেন সেটি মোটামুটি এরকম। আপনি ঘুমন্ত শিশুটিকে দেখতে পাবেন, কিন্তু এখানে খুব বেশী কোন বার্তা পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে খুব বেশী কিছু দেখতে পাচ্ছি না। এটা কি ভালো হতো, কিংবা আরও বার্তাবহ হতো, কিংবা আরও উপকারী হতো, যদি আমরা এভাবে দৃশ্য গুলি ওভাবে না দেখে এভাবে দেখতাম? তাই, এখানে আমি নাড়াচাড়া গুলোকে নিলাম এবং ৩০ গুন বিবর্ধিত করলাম, আর এখন স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি, আমার মেয়ে নিশ্চিতভাবেই জীবিত এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। (হাসির রোল) এখানে একটি পাশাপাশি তুলনামূলক চিত্র। তাই আবার, আদি ভিডিওটিতে, মূল ভিডিওটিতে, দেখার মত খুব বেশী কিছু নেই, কিন্তু এই নড়াচড়া কে বিবর্ধিত করলে তার নিশ্বাস-প্রশ্বাস অনেক বেশী দৃশ্যমান হয়। এবং দেখা যাচ্ছে, আরও অনেক ঘটনা আছে যেগুলো আমরা আমাদের এই নতুন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দৃশ্যমান ও বিবর্ধিত করতে পারি। শরীরের মধ্যে আমাদের শিরা ও ধমনী সমূহ কিভাবে স্পন্দিত হচ্ছে তা দেখতে পারছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের চোখ ক্রমাগত নড়ছে এই রকম টলোমলো ধরনের নড়াচড়া। এবং এগুলি আসলে আমারই চোখ, এবং আবার, এই ভিডিওটি আমার মেয়ের জন্মের অব্যবহিত পরে ধারনকৃত, দেখতেই পাচ্ছেন, আমি খুব একটা ঘুমাতে পারিনি। (হাসির রোল) এমনকি একজন মানুষ যখন নিথর হয়ে বসে থাকেন, তখনও আমরা সেখান থেকে প্রচুর তথ্য পেতে পারি তার শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরন সম্পর্কে, মুখের সামান্য অভিব্যাক্তি সম্পর্কে। এসব নড়াচড়াকে ব্যবহার করে আমরা হয়তো আমাদের ভাবনা কিংবা অনুভুতি সম্পর্কে জানতে পারবো। সূক্ষ্ম যান্ত্রিক নড়াচড়াকেও আমরা বিবর্ধিত করতে পারি, যেমন ইঞ্জিন সমুহের কম্পন, যা যন্ত্রের সমস্যা গুলো চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করতে ইঞ্জিনিয়ারদেরকে সাহায্য করবে, কিংবা দালান ও স্থাপনা সমূহ বাতাসে কিভাবে কাঁপে ও বল প্রয়োগে কি প্রতিক্রিয়া করে তা দেখাবে। এই ব্যাপার গুলোকে পরিমাপ করার নানান পদ্ধতি মানব সমাজের জানা আছে, কিন্তু এই নড়াচড়াকে পরিমাপ করা এক জিনিস, আর এই নড়াচড়া গুলোকে বাস্তবে ঘটতে দেখাটা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। এবং এই নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করার পর থেকেই আমরা এর কোড অনলাইনে উন্মুক্ত করে দিয়েছি যেন অন্যরা এটি ব্যবহার ও পরীক্ষা করতে পারে। এটি ব্যবহার করা একেবারেই সোজা। এটি আপনার নিজের ভিডিও নিয়েও কাজ করতে পারে। এমন কি কোয়ান্টা রিসার্চ এর সহযোগীরা এই দারুন ওয়েব সাইটটি বানিয়েছেন যেখানে আপনার ভিডিওটি আপলোড করে অনলাইনেই প্রসেস করতে পারবেন তাই, এমনকি কম্পিউটার বিজ্ঞান কিংবা প্রোগ্রামিং এর কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও আপনি অবলীলায় এই অণুবীক্ষণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করতে পারবেন এবং আমি আপনাদেরকে গোটা দুই উদাহরন দেখাতে চাই, যে, অন্যরা এটি দিয়ে কি করেছে। দেখুন, Tamez85 নামের একজন ইউটিউব ব্যবহারকারী এই ভিডিওটা বানিয়েছেন। এই ব্যবহারকারীকে আমি জানি না, কিন্তু তিনি আমাদের কোড ব্যবহার করেছেন গর্ভকালীন পেটের সামান্য নড়াচড়াকে বিবর্ধিত করার জন্য। এটি রীতিমত রোমাঞ্চকর । (হাসির রোল) লোকজন তাদের হাতের নাড়ীর স্পন্দনকে বিবর্ধিত করার জন্য এটা ব্যবহার করেছে আর আমরা জানি যে, গিনিপিগ ব্যবহার না করা পর্যন্ত এটাকে চোস্ত বিজ্ঞান বলা যাবে না, এবং আপাতত এই গিনিপিগটিকে টিফনী নামে ডাকা হয়, এই ইউটিউব ব্যবহারকারীর দাবী, এটি বিশ্বের প্রথম ইঁদুর গোত্রীয় প্রাণী যার নড়াচড়াকে বিবর্ধিত করা হয়েছে। এটির সাহায্যে আপনিও এরকম শিল্পকর্ম বানাতে পারবেন দেখুন, ইয়েলের এক ডিজাইনের ছাত্রী এই ভিডিওটি আমার কাছে পাঠিয়েছে। সে দেখতে চেয়েছিল, কোন পার্থক্য আছে কিনা তার সহপাঠীদের নড়াচড়ার ধরণে। সে সবাইকে স্থাণুর মত দাড় করিয়ে তাদের নড়াচড়াকে বিবর্ধিত করল এটা স্থির চিত্রকে সজীব হয়ে উঠতে দেখার মত, আর এই সবগুলি উদাহরনের চমৎকার দিকটি হচ্ছে যে, এগুলি নিয়ে আমাদেরকে কিছুই করতে হয়নি। আমরা কেবল একটি নতুন উপায় যুগিয়েছি মাত্র, জগতকে দেখার একটি নতুন উপায়, আর তখন লোকজন এটাকে ব্যাবহারের আরও মজাদার, নতুন ও অভিনব সব উপায় খুঁজে বের করল। কিন্তু আমরা এখানেই থেমে যাইনি। এই যন্ত্রের সাহায্যে জগতকে শুধু নতুন ভাবে দেখা ই নয়, আমাদের সক্ষমতাকে এটি নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে আর ক্যামেরা নিয়ে করা আমাদের কর্মকাণ্ডের পরিধি অনেকগুন বাড়িয়ে দেয়। তাই বিজ্ঞানী হিসেবে আমরা কৌতূহলী হলাম, বস্তুজগতের আর কোন ঘটনায় সূক্ষ্ম নড়াচড়ার উৎপত্তি হয় যেগুলোকে আমরা আমাদের ক্যামেরা দিয়ে পরিমাপ করতে পারি? আর শব্দ হল সেই রকম একটি ঘটনা, যার প্রতি সম্প্রতি আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রিভুত হয়েছে। শব্দ, আমরা জানি যে, মূলতঃ এটি হচ্ছে পরিবর্তন, বাতাসের চাপের, যা বাতাসের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। এই চাপ-তরঙ্গ কোন বস্তুকে আঘাত করলে সেই বস্তুটিতে সূক্ষ্ম কম্পন তৈরি হয়, ঠিক একারণেই আমরা শব্দ শুনতে পারি এবং রেকর্ড করতে পারি। কিন্তু দেখা গেল, শব্দের দ্বারা দৃশ্যমান নড়াচড়াও তৈরি হয়। এই নড়াচড়াগুলো আমরা দেখতে পাই না কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন ক্যামেরাগুলো এই নড়াচড়া দেখতে পায়। তো, দুটো উদাহরণ দেখা যাক, এটি আমি, আমার দুর্দান্ত সংগীত প্রতিভার প্রমান দিচ্ছি। (সংগীত) (হাসির রোল) এবং গলা সাধার সময়ে আমার কণ্ঠদেশের একটি হাই-স্পীড ভিডিও ধারন করলাম। এখানেও, ভিডিওটি ভাল করে দেখলেও, আপনি খুব বেশি একটা কিছু দেখতে পাবেন না, কিন্তু যখন এর নড়াচড়াকে ১০০ গুন বিবর্ধিত করি, তখন সব নড়াচড়া ও কম্পন দৃশ্যমান হয়ে যায়, ঘাড়ে অবস্থিত এগুলো শব্দ উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত। এই ভিডিওতে এর নিদর্শন দেখা যাচ্ছে। আমরা এও জানি, অনেকে গান গেয়ে কাঁচের পানপাত্র ভাঙতে সক্ষম, যদি তিনি উপযুক্ত সুরটা ধরেন। তাই এখানে আমরা একটি সুর বাজাতে যাচ্ছি এটির কম্পাঙ্ক এই গ্লাসের অনুনাদ-কম্পাঙ্কের সমান পাশে রাখা একটি লাউড-স্পীকার থেকে আসছে। যখন সুরটা বাজালাম এবং তার কম্পনের মাত্রা ২৫০ গুন বিবর্ধিত করলাম, গ্লাসটি কিভাবে কাঁপছে তা আমরা খুব পরিস্কার ভাবেই দেখতে পাচ্ছি এবং এই শব্দের প্রতিক্রিয়ায় সেটির অনুরণন ও দেখতে পাচ্ছি। এটি এমন কিছু নয় যা আপনি হরহামেশা দেখতে পাবেন। কিন্তু এটি আমাদের ভাবনার খোরাক যুগিয়েছে। এটি আমাদেরকে এই ক্ষ্যাপাটে বুদ্ধিটা দিয়েছে। আমরা কি পুরো প্রক্রিয়াটা উল্টো দিকে চালাতে পারি এবং ভিডিও দেখে শব্দ উদ্ধার করতে পারি, শব্দ তরঙ্গের ধাক্কায় বস্তুতে উৎপন্ন সূক্ষ্ম সেই সব কম্পন বিশ্লেষণ করে? এবং মুলত যে শব্দ থেকে এই কম্পনসমুহ উৎপন্ন হয়েছিল সেই শব্দেই পুন-রূপান্তর করতে পারি? এভাবে আমরা নিত্য নৈমিত্তিক জিনিসপত্র গুলোকে এক একটা মাইক্রোফোনে পরিনত করতে পারি। এবং ঠিক এই কাজটাই আমরা করেছি। দেখুন, এখানে টেবিলের উপরে চিপসের একটি খালি প্যাকেট পরে আছে, এবং আমরা এই চিপসের প্যাকেটটিকে মাইক্রোফোনে পরিনত করতে যাচ্ছি, এটিকে ভিডিও ক্যামেরায় ধারন করে এবং শব্দ তরঙ্গের ফলে উদ্ভুত সূক্ষ্ম নড়াচড়াকে বিশ্লেষণ করে। এটি হচ্ছে সেই শব্দ যা আমরা এই ঘরের ভিতরে বাজিয়েছিলাম, (সঙ্গীতঃ "মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব") এবং এটি সেই চিপসের প্যাকেটের ধারণকৃত হাইস্পিড ভিডিও। এটিকে আবারও চালাই। এই ভিডিওতে যা কিছু ঘটছে আপনার তা দেখার কোন সম্ভাবনাই নেই, যদি শুধু এটি দেখতে থাকেন, কিন্তু এখানে এই সেই শব্দ যা আমরা পুনরুদ্ধার করেছি ভিডিওটিতে লুকানো সূক্ষ্ম কম্পন বিশ্লেষণ করে। (সঙ্গীতঃ "মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব") আমি এটিকে ডাকি -- ধন্যবাদ -- (করতালি) আমি এটিকে দৃষ্টিলব্ধ মাইক্রোফোন বলে ডাকি। আমরা আসলে ভিডিওর সংকেত দেখে শব্দ সংকেত বের করে আনি। এবং আপনাদেরকে এখানে এই নড়াচড়ার মাত্রা সম্পর্কে একটু ধারনা দিচ্ছি, একটি বিকট শব্দের ধাক্কাতেও চিপসের এই প্যাকেটটি এক মাইক্রোমিটারের কম নড়বে, এটি এক মিলিমিটারের হাজার ভাগের এক ভাগ। এমনই সূক্ষ্ম এই নড়াচড়া, যেগুলোকে আমরা এখন ধরতে সক্ষম হচ্ছি, বস্তুগুলো থেকে আলো কিভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে, কেবলমাত্র তা পর্যবেক্ষন এবং ক্যামেরায় ধারন করার মাধ্যমে। আমরা অন্যান্য বস্তু থেকেও শব্দ পুনরুদ্ধার করতে পারি, যেমন গাছ। (সঙ্গীতঃ "মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব") এবং এমনকি আমরা কথাও পুনরুদ্ধার করতে পারি। দেখুন, ঘরের ভিতরে একজন কথা বলছেন। কন্ঠস্বরঃ মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব হুজ ফ্লীচ ওয়াজ হোয়াইট এজ স্নোও এন্ড এভরিহোয়ার দ্যাট মেরী ওয়েন্ট, দ্যাট ল্যাম্ব ওয়াজ শিওর টু গোও। মাইকেল রুবিনস্টেইনঃ এবং এখানে সেই পুনরুদ্ধার করা কন্ঠস্বর, স্রেফ এই চিপসের প্যাকেটের ভিডিও থেকে উদ্ধার করা। কন্ঠস্বরঃ মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব হুজ ফ্লীচ ওয়াজ হোয়াইট এজ স্নোও এন্ড এভরিহোয়ার দ্যাট মেরী ওয়েন্ট, দ্যাট ল্যাম্ব ওয়াজ শিওর টু গোও। মা রুঃ আমরা "মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব" ব্যবহার করেছি কারন, কথিত আছে যে এগুলোই সেই প্রথম শব্দমালা যা ১৮৭৭ সালে টমাস এডিসন তার ফনোগ্রাফ যন্ত্রে ধারন করেছিলেন। এটি ছিল ইতিহাসের প্রথম শব্দ ধারন যন্ত্রগুলির একটি। এটি মুলতঃ শব্দকে একটি ডায়াফ্রাম এর দিকে ধাবিত করতো, যেটি একটি সূঁচকে প্রকম্পিত করত যা রাংতার উপরে এই শব্দ তরঙ্গকে খোদাই করেছিল, রাংতাটি একটি বেলনের গায়ে মোড়ানো ছিল। এখানে এডিসনের ফনোগ্রাফ যন্ত্রে শব্দ ধারন এবং সেটিকে পুনরায় বাজানোর প্রদর্শনী হচ্ছে। (ভিডিও) কণ্ঠস্বরঃ টেস্টিং, টেস্টিং, ওয়ান টু থ্রি। মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব হুজ ফ্লীচ ওয়াজ হোয়াইট এজ স্নোও এন্ড এভরিহোয়ার দ্যাট মেরী ওয়েন্ট, দ্যাট ল্যাম্ব ওয়াজ শিওর টু গোও। টেস্টিং, টেস্টিং, ওয়ান টু থ্রি। মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব হুজ ফ্লীচ ওয়াজ হোয়াইট এজ স্নোও এন্ড এভরিহোয়ার দ্যাট মেরী ওয়েন্ট, দ্যাট ল্যাম্ব ওয়াজ শিওর টু গোও। মা রুঃ আর এখন, ১৩৭ বছর পরে, আমরা প্রায় একই মানের শব্দ উদ্ধার করতে সক্ষম কিন্তু, কেবলমাত্র শব্দের কারনে বস্তুর কম্পনকে ক্যামেরার সাহায্যে পর্যবেক্ষন করে, এবং এটি করতে পারি, এমনকি যদি ক্যামেরাটি থাকে বস্তুটির থেকে ১৫ ফুট দূরে, শব্দ নিরোধক কাঁচের দেয়ালের ওপাশে। তো, এক্ষেত্রে যে শব্দমালা আমরা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি তা হল, কন্ঠস্বরঃ মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব হুজ ফ্লীচ ওয়াজ হোয়াইট এজ স্নোও এন্ড এভরিহোয়ার দ্যাট মেরী ওয়েন্ট, দ্যাট ল্যাম্ব ওয়াজ শিওর টু গোও। মা রুঃ আর হ্যাঁ, নজরদারি - এই প্রায়োগিক দিকটি ই সবার আগে আমাদের মনে উঁকি দিয়েছে। (হাসির রোল) কিন্তু অন্য অনেক ক্ষেত্রেও এটি উপযোগী হতে পারে। হয়তো আগামিতে এটিকে আমরা ব্যবহার করতে পারবো, যেমন ধরুন, শূন্যস্থানের ওপাশের শব্দকেও পুনরুদ্ধার করতে পারবো, কারন শূন্যস্থানের ভিতর দিয়ে শব্দ যেতে পারে না, কিন্তু আলো যেতে পারে। আমরা কেবল অন্বেষণ শুরু করেছি মাত্র, এই নতুন প্রযুক্তির সম্ভাব্য অন্যান্য ব্যাবহারের। এটি সেসব বস্তুগত প্রক্রিয়া দেখাচ্ছে যে গুলো আমাদের জানা অথচ সেগুলো আজ পর্যন্ত আমরা আমাদের চোখে দেখতে পারিনি। এই যে এখানে আমাদের দলটি। আজকে এখানে যা কিছু আপনাদেরকে দেখালাম তা সবই এঁদের সহযোগিতার ফল, এই যে অসাধারন ব্যক্তিবর্গকে এখানে দেখছেন, এবং আমাদের ওয়েবসাইট ঘুরে আসতে উৎসাহ দিচ্ছি আর সাদর আমন্ত্রন জানাচ্ছি, নিজে চেষ্টা করে দেখুন, এবং আমাদের সাথে যোগ দিয়ে সূক্ষ্ম নড়াচড়ার জগতটাকে উন্মোচন করুন। ধন্যবাদ। (করতালি) বর্তমানে আমি একজন পর্যটন সংগঠক ও শান্তি-নির্মাতা, কিন্তু আমি শুরু করেছিলাম অন্যভাবে। যখন আমি বছর সাতেকের ছিলাম, মনে আছে দূরদর্শনে একদিন দেখলাম লোকে পাথর ছুঁঁড়ছে, মনে হয়েছিল এটা বুঝি খুব মজার ব্যাপার । সুতরাং আমিও রাস্তায় নেমে পাথর ছোঁড়া শুরু করলাম, এটা না বুঝেই, যে পাথরগুলি ইজরায়েলিদের গাড়ির ওপর ছোঁড়ার কথা। তার বদলে, আমি আমার পড়শির গাড়িতে আঘাত করলাম।(সমবেত হাসি) বলা বাহূল্য আমার এমন দেশপ্রেমে তাঁরা খুশী হলেন না। এটি আমার ভাইয়ের সাথে আমার ছবি এই ছোট ছেলেটি আমি, জানি আপনারা কী ভাবছেনঃ "বেশ তো মিষ্টি দেখতে ছিলে, তোমার এমন দশা হল কীভাবে? কিন্তু আমার ভাই, যে আমার থেকে বড়, আঠারো বছর বয়সে কারাদন্ড পায়, পাথর ছোঁড়ার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে। সে পাথর ছুঁড়েছে তা স্বীকার করতে অসম্মত হওয়ায় তাকে মারধর করা হয়। ফলে সে গুরুতরভাবে আহত হয়, ও কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটে। আমি তখন ক্রুদ্ধ, ক্ষুব্ধ, প্রতিশোধের জন্য মরিয়া কিন্তু এই অস্থিরতা কমে এল আমি যখন প্রায় আঠারো। আমার মনে হল যে কর্মসংস্থানের জন্য হিব্রু ভাষাটি জানা দরকার এবং হিব্রু পড়তে গিয়ে প্রথম পরিচিত হলাম এমন ইহুদিদের সাথে যাঁরা সৈনিক নন। তাঁদের সাথে আমার সখ্যতা হল ছোটখাট ব্যাপারের মধ্যে দিয়ে, যেমন পল্লীগীতি, প্যালেস্তানিয়দের জন্য যেটা বেশ বিচিত্র এক ব্যাপার। অবশ্য এই সময়েই আমি এটাও উপলব্ধি করি যে আমাদের মাঝে আছে ক্রোধের দেওয়াল, ঘৃনা ও অজ্ঞতার দেওয়াল, যা আমাদের আলাদা করে রেখেছে। বুঝলাম জীবনে কী ঘটল তা তেমন গুরুত্বপূর্ন নয়। যা গুরুত্বপূর্ন, তা হল আমার প্রতিক্রিয়া। সুতরাং, আমি ঠিক করলাম আমার জীবন নিয়োজিত করব এই বিভেদের দেওয়ালগুলি ভাঙ্গতে। এই কাজটি আমি বিভিন্ন ভাবে করি । পর্যটন এগুলির মধ্যে একটি, তাছাড়া আছে গনমাধ্যম ও শিক্ষা। হয়ত ভাবছেন, পর্যটন কীভাবে পরিবর্তন আনবে? এতে কি দেওয়াল ভাঙ্গবে? হ্যাঁ। পর্যটন সেরা অনুমোদনযোগ্য উপায় এ দেওয়াল ভাঙ্গার ও একে অন্যের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করার ও মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন করার। ২০০৯ সালে আমি মেজদি ট্যুরসের সহপ্রতিষ্ঠাতা হই, এমন এক উদ্যোগ যার লক্ষ্য হল সামাজিক মেলবনন্ধন। দুজন ইহুদি বন্ধুর সাথে শুরু করি এটি, আর আমরা যা করি, যা করেছিলাম, ধরুন জেরুসালেমে, থাকবেন দুজন ভ্রমন সঙ্গী, একজন হবেন প্যালেস্তনীয়, অন্যজন ইজরায়েলী, যাঁরা সফর নির্দেশনা করবেন একসাথে, কথা বলবেন ইতিহাস ও কাহিনি, স্থপতি ও বিবাদের, সম্পূর্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। আমি একবার কবি নামে এক বন্ধুর সাথে একটি সফর আয়োজন করেছিলাম শিকাগোর এক দল ইহুদি পর্যটকদের নিয়ে, জেরুসালেমে... তাঁদের নিয়ে একটি প্যালেস্তানীয় উদ্বাস্তু শিবিরে গেলাম, আর সেখানে আমরা সবাই মিলে খেলাম দারুন এক খাবার। যাইহোক, ইনি আমার মা। ভীষন জমাটি মানুষ। আর এইটি হল মকলুবা, একটি প্যালেস্তানীয় খাবার। নামটির মানে হল 'উল্টো।' এটি ভাত ও মুরগীর মাংসের পদ, এবং এটি তৈরী করে উলটে দিতে হয়। এটি একটি অত্যন্ত সুস্বাদু পদ। এটি সকলে একসাথে খাওয়া হবে। তারপর ইজরায়েলী ও প্যালেস্তানীয় যৌথ সংগীত-দলের গান হল, আর সাথে হল বেলি ডান্স। আপনারা যদি বেলি ডান্স না জেনে থাকেন, আমি না হয় পরে শিখিয়ে দেব। যখন যাওয়ার সময় হল, দুপক্ষই কাঁদতে লাগল, কারন কারোরই এই মজলিশ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিল না। তিন বছর পরেও সেই আত্মীয়তা রয়ে গেছে। ভাবুন তো, যদি এক কোটি মানুষ যাঁরা প্রতি বছর আন্তর্জাতিক ভ্রমন করেন, তাঁদের শুধুমাত্র বাসে করে এক দিক থেকে অন্যদিকে না নিয়ে গিয়ে এক হোটেল থেকে অন্য হোটেলে না নিয়ে গিয়ে, শুধু বাসের জানলা দিয়ে লোকজন বা জায়গার ছবি না তুলে যদি প্রকৃত অর্থে লোকের সাথে মেলামেশা করানো যেত। জানেন, আমার মনে আছে ইউ কে থেকে আসা একটি মুসলমান দলের কথা যাঁরা গিয়েছিলেন এক কট্টর ইহুদি পরিবারে আর একসাথে করেছিলেন তাঁদের শুক্রুবারের পবিত্র সান্ধ্যভোজন, তাঁরা একসাথে খেয়েছিলেন হামিন, একটি ইহুদি পদ, এক ধরনের ঝোল, এবং তাঁরা ক্রমে উপলব্ধি করলেন, যে একশ বছর আগে, তাঁদের পূর্বপুরুষেরা উত্তর আফ্রিকার একই জায়গা থেকে এসেছিলেন। এটি আপনার ফেসবুকের ছবির পাতা নয়। এটি দুর্যোগ পর্যটন নয়। এটি পর্যটনের ভবিষ্যত, আমি আপনাকে নিমন্ত্রন করছি ভ্রমনের ধারনা পাল্টাতে। এটি আমরা সারা বিশ্ব জুড়ে করতে শুরু করেছি, আয়ারল্যান্ড থেকে ইরান থেকে তুর্কি, সমাজ পাল্টানোর জন্য আমা্দের যেখানে যেতে হবে, সেখানেই যাব। ধন্যবাদ (করতালি) আমি একজন ব্লগার, চিত্রনির্মাতা ও একজন কসাই এবং আমি ব্যাখ্যা করবো কিভাবে এই পরিচয়গুলো একত্রিত হয় এর সূত্রপাত চার বছর আগে, যখন আমি এবং আমার এক বন্ধু রমজানের প্রথম রোজা ভাংলাম নিউ ইয়র্ক শহরের একটি ব্যস্ততম মসজিদে। সারা রাস্তাজুড়ে দাড়িওয়ালা ও টুপি পড়া মানুষের ভিড়। যেকোন এফবিআই গোয়েন্দার জন্য যা দুঃস্বপ্ন। (হাসি) কিন্তু এই সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে আমরা জানতাম তা কতটা আন্তরিক ও উষ্ণ। বছরের পর বছর ধরে, আমি দেখেছি এই পরিসরকে মৃত ও শীতল পাথর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমান অভিজ্ঞতা যা গৎবাধা। এই ক্ষীণদৃষ্টি দেখে হতাশাগ্রস্থ হয়ে, আমার এবং আমার বন্ধু মাথায় এক বুদ্ধি আসলোঃ অন্য কোন প্রদেশের অন্য কোন মসজিদে রমজানের প্রতিটি রোজা ভাঙ্গবার এবং একটি ব্লগে সেই গল্পগুলো শেয়ার করা। আমরা এর নাম দিলাম, "ত্রিশ দিনে ত্রিশ মসজিদ"। এবং আমরা ৫০টি প্রদেশের প্রত্যেকটিতে গাড়ি চালিয়ে গেলাম। এবং ১০০ এর বেশি মুসলমান সম্প্রদায়ের কথা শেয়ার করলাম, কম্বোডিয়ান থেকে আগত এল এ প্রকল্পের শরনার্থী থেকে দক্ষিণ ক্যারোলিনাতে বসবাসকারী কালো সুফিরা। যা ফুটে এলো তা হচ্ছে সুন্দর ও জটিল এক যুক্তরাষ্ট্র। প্রচার মাধ্যমের কারণে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা মুসলিম সম্প্রদায়ে আবার গেল। কিন্তু যা সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ছিল তা হচ্ছে সারা বিশ্বের মানুষ তাদের নিজস্ব ৩০ মসজিদ প্রকল্প নিয়েছিল অনুপ্রাণিত হয়ে। এমনকি দু'জন এনএফএল ক্রীড়াবিদ ছিল যারা লীগ থেকে বিশ্রাম নিয়েছিল এটি করার জন্য। একদিকে যখন বিশ্বজুড়ে ৩০ মসজিদ প্রকল্প জনপ্রিয়তা লাভ করছিল আমি তখন একটি চলচ্চিত্রের কাজে পাকিস্তানে। আমার সমন্বয়কারী, ওমর এবং আমি আমাদের অনেক বন্ধুর সাথে সহনশীলতার শেষ সীমায় পৌছেছি। চলচ্চিত্রের নাম 'এই পাখিদের হাঁটাএই পাখিরা কথা বলে।" এটি নিরঙ্কুশ পথশিশুদের নিয়ে বানানো, যারা সংগ্রাম করছে পরিবারের জন্য কিছু একটা করবার। আমাদের বিষয়ের কেন্দ্রে ছিল যুব এবং পরিবারের অনৈক্য, কিন্তু আমাদের বন্ধুরা বারবার চাপ দিচ্ছিল ড্রোন এবং পরিকল্পিত হামলা নিয়ে মন্তব্য করতে যাতে চলচ্চিতটি আরও সাম্যঞ্জস্যপূর্ণ হয়, যা ঐ মানুষগুলোর গল্পের মধ্য দিয়ে প্রকাশ বিষয়কে সামাজিক-রাজনৈতিক এক প্রতীকে রূপ দেয়। অবশ্যই, আমরা তাদের কথা শুনিনি, এর পরিবর্তে, আমরা আমাদের ভালবাসায় ভাষা এবং যৌবনের উচ্ছলতা দিয়ে জিতে নিয়েছি। আমাদের সিনেমার পিছনে বিষয়সূচি শুধুমাত্র সহানুভূতি ছিল, এক অনুভূতি যা আমাদের অংশের বিশ্ব থেকে নির্মিত চলচ্চিত্রে নেই বললেই চলে। এবং 'এই পাখিদের হাঁটা' চলচ্চিত্রটি মেলা এবং মঞ্চে আন্তর্জাতিকভাবে দেখানো করা হয়। অবশেষে আমি আমার নিউ ইউর্কের বাসায় পা রাখলাম, এবং অতিরিক্ত সময়, এবং কোন প্রকৃত আয় নেই। আমার স্ত্রী আমাকে আরও বেশি করে রান্না করবার কাজ দেয়। এবং যখনই আমি স্থানীয় কসাইয়ের দোকানে যাই হালাল মাংস কিনতে, কিছু একটা ঠিক মনে হতো না, যারা জানেন না তাদের জন্য হালাল শব্দটি মাংসের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যা ইসলামিক নিয়ম মেনে জবাই করা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে,যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ হালাল মাংস মান আমার ধর্মে বিশ্বাসীদের প্রত্যাশার সমান হয়ে উঠতে পারেনি। আমি যতই এই অনৈতিক চর্চা সম্পর্কে শিখেছি ততই লঙ্ঘিত আমি অনুভব করলাম কারণ আমার নিজের সম্প্রদায়ের ব্যবসাসমূহ এই গোঁড়ামির সুযোগগুলো ব্যবহার করছিলো। তাই, আবাগের তীব্র গতি এবং কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই, আমি এবং আমার কয়েক বন্ধু ইস্ট ভিলেজ ফ্যাশন ডিস্ট্রিক্টে একটি মাংসের দোকান চালু করি। (হাসি) আমরা এর নাম দিয়েছি 'হনেস্ট চপস', এবং আমরা প্রাকৃতিকভাবে প্রাণিদের বড় করছি এবং এই হালাল মাংস শ্রমজীবি মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে আনার চেষ্টা করছি। এর মত কোনকিছুই যুক্তরাস্ট্রে নেই। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে আমাদের দোকানের ৯০% মুসলমান নন। অনেকের জন্য এটাই প্রথম ইসলামের সংস্পর্শে আসা এরকম এক ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে। তো এরকম বিসদৃশ প্রকল্প-- (হাসি)-- অস্থিরতার ফসল। এই প্রকল্পগুলো সেই সব ব্যবসায়ী ও স্বাথান্বেষীদের জন্য প্রতিক্রিয়া যারা কষ্ট করে আমার বিশ্বাস ও সম্প্রদায়কে অতিসরলীকরণ করতে। এবং তাদের যন্ত্রকে হারানোর একটাই পথ তা হছে ভিন্ন নিয়মে খেলা। আমাদের অবশ্যই একটি সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। আস্থার সঙ্গে, প্রবেশাধিকারের সঙ্গে, ভালবাসার সঙ্গে, যে ভালবাসা কেবল আমরা আনতে পারি আমাদেরকে অবশ্যই কোন ক্ষমা ছাড়াই আমাদের বিশ্বাসকে পুনুরুদ্ধার করতে হবে প্রতিটি চলন্ত ছবি, প্রতিটি মাংসের কোপে, কারণ আমরা যদি আমাদের গল্পকে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সাদা করে ফেলি আমাদের শুধুমাত্র পতনই হবে না, বরং আমরা তাদের দ্বারা পেষিত হবো যাদের অনেক বেশী টাকা ও অন্যান্য সম্পদ রয়েছে আমাদের গল্প বলার জন্য। কিন্তু সৃষ্টিশীল সাহসের জন্য আহ্বান নতুনত্ব বা প্রাসঙ্গিকতার জন্য নয়। তা এই জন্যে যে আমাদের সম্প্রদায় যথেষ্ট মৌলিক এবং যথেষ্ট সুন্দর। তারা আমাদের কাছে দাবি করেন আপোসহীন উপায় স্বীকৃত ও সম্মানিত হবার জন্য। ধন্যবাদ (হাততালি) একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার ও প্রযুক্তিবিদ হিসাবে, আমি বেশ কয়েকটি নাগরিক প্রযুক্তি প্রকল্পের উপর কাজ করেছি বহু বছর ধরে সিভিক কারিগরিকে মাঝে মাঝে "টেক ফর গুড" হিসাবে উল্লেখ করা হয় মানবিক সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তি ব্যবহার হয় এটি ২০১০ সালে উগান্ডাতে, একটি সমাধানে কাজ করা হয়, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে তাদের মোবাইল ফোনে সরকারি নজরদারি এড়ানোর জন্য ভিন্নমত প্রকাশ করার জন্য। একই প্রযুক্তি পরে উত্তর আফ্রিকাতে মোতায়েন করা হয় অনুরূপ উদ্দেশ্যে, সক্রিয় কর্মী সংযুক্ত থাকতে সাহায্য করতে সরকার যখন ইচ্ছাকৃতভাবে সংযোগ বন্ধ করছিল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একটি উপায় হিসেবে কিন্তু অনেক বছর ধরে, এই প্রযুক্তি সম্পর্কে আমার মনে ভাবনা জাগে এবং আমি যা নিয়ে কাজ করি, একটি প্রশ্ন যা আমাকে ক্ষুব্ধ করে, তা হচ্ছে আমরা যদি প্রযুক্তি গুণাবলী সম্পর্কে ভুল করে থাকি এবং কখনও কখনও যদি সক্রিয়ভাবে আঘাত করে সেই জনগোষ্ঠীকে যাদেরকে আমরা সাহায্য করতে চাই? বিশ্বের প্রযুক্তি শিল্প এই ধারণার অধীনে কাজ করতে থাকে যে আমরা মহান জিনিষ নির্মাণ করলে এটা ইতিবাচকভাবে সবাইকে প্রভাবিত করবে যেকোনো ভাবে, এই প্রবর্তিত সবার কাছে পৌঁছাতে কিন্তু সেটা সবসময় হয় না আমি এই প্রযুক্তির অন্ধ বিজয়্কারিত্তকে "ট্রিকল ডাউন টেকোনমিক্স" বলছি একটি ফ্রেজ ধার করছি (হাসি) আমরা মনে করি যে যদি আমরা কয়েক জনের জন্য ডিজাইন করি, এই প্রযুক্তি সবার কাছে পৌঁছবে কিন্তু সেটা সবসময় হয় না প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন অনেকটা ধন-সম্পদের মতন আচরণ করে এগুলো কিছু লোকের কাছে শক্তিশালী হয়ে থাকে এবং কখনও কখনও সময় তারা জনসাধারণের কাছে যাবার উপায় খুঁজে পায় আপনারা নিশ্চই ছুটির দিনে দু:খদায়ক শাসনব্যবস্থা নিয়ে লড়াই করছেন না তাই আমি কিছু উদাহরণ দিচ্ছি যা আপনাদের পরিচিত হতে পারে আজকের এই "ওয়ারেবাল টেকনোলজি" এবং স্মার্টফোন এর যুগে মানুষের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ট্র্যাক করার একটি বড় তোলপাড় চলছে এপ্লিকেশন আপনার "calorie" বার্ন করা ট্র্যাক করছে আপনি বেছি বসে থাকেন না হাটা চলা করেন, তাও দেখছে এই প্রযুক্তি রোগীর খাওয়া দাওয়া এবং চিকিৎসায় অনেক সুবিধা করে দিচ্ছে ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা এই ধরনের দক্ষতাসম্পন্ন আশা করাতে শুরু করে দিয়েছে এই ডিজিটাল সরঞ্জাম যখন চিকিৎসার মধ্যে স্থান পায় এবং ডিজিটালরূপে প্রস্তুত হয়ে ডিজিটালরূপে দরিদ্র যারা তাদের কি হয়? চিকিৎসা অভিজ্ঞতা তাদের জন্যে কেমন হয় যাদের ৪০০ ডলারের ফোন বা ঘড়ি নেই তাদের প্রতিটি চলাফেরা ট্র্যাকিং করার জন্যে ? তারা কি চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর একটি বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে ? তাদের অভিজ্ঞতার কি পরিবর্তিত হয়েছে? অর্থের জগতে "বিট কয়েন" এবং "ক্রিপ্টো কারেন্সি" টাকা পরিচালনার ব্যাপারে বৈপ্লবিক হয়ে দাড়িয়েছে কিন্তু এই প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অনেক বেমানান বাধা একই রকম ফোন, ডিভাইস, সংযোগ ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়ে পরে যখন তা করেন না, প্রক্সি এজেন্ট খুঁজে পেতে পারেন যেখানে অংশগ্রহণ করতে কিছু পরিমান টাকা প্রয়োজন হয় তাই আমার প্রশ্ন হচ্ছে সেই সম্প্রদায়ের কি হয়, যারা নোট ব্যবহার করে যখন বিশ্ব ডিজিটাল মুদ্রার দিকে এগুচ্ছে আরেকটি উদাহরণ আমার শহর ফিলাডেলফিয়া থেকে: আমি সম্প্রতি একটি পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম সেখানে তারা বেচে থাকার সমস্যা নিয়ে ভুগছে তহবিল ক্রমেশে কমে আসছে তারা অনেক কাজ কমিয়ে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করছে এই কাজের একটি উপায় হচ্ছে বইগুলো ডিজিটালকরণের "ক্লাউড" এ নিয়ে যাওয়া এটা বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত আপনি বাড়ি থেকেই বই গ্রহণ করতে পারেন স্কুলে যাওয়া আসার মধ্যে অনুসন্ধান করতে পারেন কিন্তু এগুলো হচ্ছে অনুমান যে বাড়িতে আপনার এগুলো অধিগত করার উপায় আছে এবং আপনার ফোন আছে এবং ফিলাডেলফিয়াতে, অনেক বাচ্চাদের নেই তাদের শিক্ষার অভিজ্ঞতার চেহারাটা কি রকম এইসব "ক্লাউড" ভিত্তিক লাইব্রেরির মাঝখানে শিক্ষার একটি মৌলিক অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়? কিভাবে তারা প্রতিযোগিতামূলক থাকবে? একটি শেষ উদাহরণ পূর্ব আফ্রিকা থেকে সেখানে জমির মালিকানা ডিজিটাল করার আন্দোলন হয় কয়েকটি কারণে অভিবাসী সম্প্রদায়, পুরোনো প্রজন্মের মৃতু্য এবং ত্রুটিপূর্ণ লিখিত বিবরণ এইসব কারণে মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে তাই এই সব তথ্য অনলাইন রাখার জন্য একটি বড় আন্দোলন চলছিল সব জমির মালিকানার ট্র্যাক রাখার জন্য এগুলো "ক্লাউড" রেখে দিন, এবং জনসমাজকে দিয়ে দিন অনিচ্ছাকৃত ফল হলো এই যে বিনিয়োগকারী, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার এই সব প্লট কেনা শুরু করে দিয়েছে জনসমাজের অধীনে থেকেই কারণ তাদের এইসব প্রযুক্তিতে এক্সেস আছে এবং সংযোগও আছে যে এই কাজ সম্ভব করে এটাই হচ্ছে এই দুটো উদাহরণের মধ্যে সংযোগের বিষয় আমরাদের প্রযুক্তির অনিচ্ছাকৃত ফলাফল প্রকৌশলী হিসাবে, প্রযুক্তিবিদ হিসেবে, আমরা কখনও কখনও কার্যক্ষমতা থেকে দক্ষতাকে প্রাধান্য দেই আমরা ফলাফলের চেয়ে কিছু করা নিয়ে বেশি চিন্তা করি এখানে পরিবর্তন প্রয়োজন আমদের গড়া প্রযুক্তির ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা করার দায়িত্ব আছে, যেহেতু এগুলো বিশ্বের নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার হচ্ছে নব্বই দশকের শেষের দিকে বিনিয়োগ এবং ব্যাংকিং জগতে নৈতিকতা বজায় রাখার জন্য উদ্যম সৃষ্টি হয়েছিল ২০১৪সালে এইরকম একটি কিছু করার জন্যে বেশ দেরী করছি কারিগরি ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আপনারা পরবর্তীতে যখন বড় কিছু করার সম্পর্কে চিন্তা করবেন, উদ্যোক্তা হিসেবে, প্রকৌশলী হিসেবে, নির্মাতা হিসাবে, আপনারা আপনাদের কাজের অনিচ্ছাকৃত পরিণাম নিয়ে ভাবুন নির্মাণ করা জিনিস নিয়ে ভাবুন সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করাই হচ্ছে আসল নতুনত্ব ধন্যবাদ (হাত তালি) আমি মস্তিস্ক নিয়ে পড়াশোনা করার জন‍্যই বড় হয়েছিলাম কারণ আমার ভাই দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিল: সিজোফ্রেনিয়া। আর তার বোন হিসেবে ও পরে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে, আমি বুঝতে চেয়েছিলাম যে কেন আমি স্বপ্ন দেখতে পারি, আমার স্বপ্নগুলোকে মেলাতে পারি বাস্তবের সঙ্গে, এবং কিভাবে আমি আমার স্বপ্নগুলোকে সতি‍্য করতে সমর্থ হই? আর আমার ভাইয়ের মস্তিস্ক আর তার সিজোফ্রেনিয়ায় কী আছে যে, সে তার স্বপ্নগুলো মেলাতে পারে না একটা সর্বজনগ্রাহ্য বাস্তবতার সঙ্গে, বরং সেগুলো ভ্রমে পরিণত হয়? তাই আমি আমার পেশাগত জীবনকে উৎসর্গ করেছি গবেষণায় গুরুতর মানসিক ব্যাধিগুলো নিয়ে। আর আমার দেশের বাড়ি ছেড়ে পাড়ি জমালাম ইন্ডিয়ানা থেকে বোস্টনে, ওখানে আমি কাজ করা শুরু করলাম হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের, প্রফেসর ড. ফ্রান্সাইন বেনেসের গবেষণাগারে মনোবিজ্ঞান বিভাগে। আর ঐ গবেষনাগারে আমরা প্রশ্ন তুলছিলাম যে, "বিভিন্ন ব্যক্তিদের মস্তিস্কের মধ্যে জৈব পার্থক্যটা কী যাদেরকে স্বাভাবিক মানুষ বলে বিবেচনা করা হয় তাদের তুলনায় সেইসব মানুষের মস্তিস্কের পার্থক্যটা কী যাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে সিজোফ্রেনিয়া, সিজোএফেক্টিভ বা বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগী হিসেবে?" তো উত্তরের খোঁজে আমরা মস্তিস্কের সুক্ষ-সার্কিটগুলো সনাক্ত করছিলাম। মস্তিষ্কের কোন কোষটা কোন কোষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কোন কোন রাসায়নিক পদার্থ এখানে যুক্ত হচ্ছে কী পরিমাণে যুক্ত হচ্ছে? তো আমার জীবনটা অনেক অর্থবহ হয়ে উঠেছিল কারণ সারাদিন আমি এই ধরণের গবেষনার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম এরপর সন্ধ্যায় ও সপ্তাহিক ছুটিতে আমি কাজ করতাম ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব মেন্টাল ইলনেস (NAMI)-র প্রবক্তা হিসেবে। কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর হঠাত করেই সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর আবিস্কার করলাম যে, আমার নিজেরই একটা মানসিক বিপর্যয় চলছে। আমার মস্তিস্কের বাম পার্শ্বে একটা রক্তনালী ছিঁড়ে যায়। আর এরপর চারটা ঘন্টা আমি দেখলাম আমার মস্তিস্ক পুরোপুরি টালমাটাল হয়ে গেছে কোন তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ব্যাপারে। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের ঐ সকালে আমি হাঁটতে, কথা বলতে, পড়তে, লিখতে এমনকি আমার জীবনের কোন ঘটনা মনে করতেও পারছিলাম না। আমি যেন হয়ে গিয়েছিলাম একজন পূর্ণ বয়স্ক নারীর শরীরে একটা ছোট্ট শিশু। আপনারা যদি কখনো একটা মানুষের মস্তিস্ক দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন যে, এখানে দুইটা অংশ একে অপরের থেকে পুরোপুরিই আলাদা। আর আমি আপনাদের জন্য একটা সত্যিকারের মস্তিস্ক নিয়ে এসেছি। তো, এটা হচ্ছে একটা সত্যিকারের মনুষ্য মস্তিস্ক। এইটা সামনের দিকের অংশ। আর এই পেছনের দিকে স্পাইনাল কর্ড ঝুলছে। এভাবেই এটা আমার মাথার মধ্যে বসানো থাকে। আর আপনি যদি এই মস্তিষ্কের দিকে তাকান, তাহলে স্পষ্টতই দেখতে পাবেন যে দুইটা সেরেব্রাল করটেক্স একে অপরের থেকে পুরোপুরিই আলাদা। আপনাদের মধ্যে যারা কম্পিউটারের কার্যপ্রণালী বোঝেন, আমাদের ডান অংশটা কাজ করে প্যারালাল প্রসেসরের মতো অন্যদিকে বাম অংশের তুলনা দেওয়া যায় সিরিয়াল প্রসেসরের সঙ্গে। এই দুইটা অংশ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে করপাস কোলোসামের মাধ্যমে। যেটা তৈরি হয়েছে ৩০০ মিলিয়ন এক্সোনাল ফাইবার দিয়ে। কিন্তু এছাড়া মস্তিস্কের এই দুইটা অংশ একে অপরের থেকে পুরোপুরিই ভিন্ন ধরণের। কারণ তারা তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে ভিন্নভাবে দুইটা অংশের চিন্তাধারাও পুরোপুরি ভিন্ন ধরণের তাদের কাজ করার জায়গাও ভিন্ন ধরনের। আর সাহস নিয়ে বললে তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও আলাদা রকমের। অনুগ্রহ করে, ধন্যবাদ। খুবই ভালো লাগল। আমাদের মস্তিস্কের ডানদিকের অংশটার কাজকারবার সবকিছুই বর্তমান সময়টাকে নিয়ে। এর সবকিছুই "এখন এবং এই মুহূর্ত" নিয়ে। ডানদিকটা চিন্তা করে ছবির মাধ্যমে। সবকিছু শেখে কাইনেসথেটিক‍্যালি, আমাদের দেহের নড়াচড়া অনুযায়ী। এখানে ক্রমাগতভাবে তথ্য, শক্তিতরঙ্গ আকারে সমগ্র স্নায়ুতন্ত্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর তারপর এটা সুবিশাল একটা কোলাজ নিয়ে বিস্ফোরিত হচ্ছে এই বর্তমান মুহূর্তটা দেখতে কেমন, বর্তমান মুহূর্তটার গন্ধ কেমন? স্বাদ কেমন, এটার অনুভূতি কেমন, এটা শুনতে কেমন। আমি একটা শক্তিসত্তা রুপে সংযুক্ত আছি আমার চারপাশের সব শক্তিসমূহের সাথে, আমার এই ডান মস্তিস্কের সচেতনতা দিয়ে। আমরা একেকটা শক্তিসত্তা হিসেবে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত আছি একটা মনুষ্য পরিবার হিসেবে, এই ডান মস্তিস্কের সচেতনতা দিয়ে। আর এখন, এই মুহূর্তে এই দুনিয়ার আমরা সবাই ভাই ও বোন। এখানে এসেছি দুনিয়াটাকে আরও সুন্দর একটা জায়গা বানাতে। আর এই মুহূর্তে আমরা পরিপূর্ণ, আমরা একক, আর আমরা সুন্দর। আমার বামদিকের অংশটা, আমাদের বামদিকের অংশটা পুরোপুরিই আলাদা জায়গা এটা চিন্তা করে রৈখিক ও পদ্ধতিগতভাবে এর কাজকারবার অতীত ও ভবিষ‍্যত নিয়ে। এটা তৈরি হয়েছে এমনভাবে যেন তা বর্তমানের বিশাল কোলাজটার ভার নিতে পারে সে প্রতিটা তথ্যের বিস্তারিত তথ্য, তার সম্প্রসারণ, এবং সেগুলোর আরও বিস্তারিত ব‍্যখ‍্যা হাজির করে। তারপর এটা সেই তথ্যগুলোকে শ্রেনীবদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে। অতীতে আমরা যা শিখেছি, তার সঙ্গে এগুলোকে মেলায় ও তার উপর ভিত্তি করে ভবিস্যতে আমাদের কী কী সুযোগ তৈরি হয় সেগুলোর হিসাব করে। আমাদের বাম মস্তিস্কটা চিন্তা করে ভাষার মাধ্যমে। মস্তিস্কের এই অংশটাই সংযোগ তৈরি করে দেয় আমার অন্তর্জগত ও বর্হিজগতের এইটাই সেই আওয়াজ, যা আমাকে বলে, "শোন মনে রাখো তোমাকে বাড়ি ফেরার পথে কলা কিনে নিয়ে যেতে হবে। আর সকালে সেটা খেতে হবে। এই হিসাবমাফিক বুদ্ধিমত্তাটাই আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে, কখন আমাকে কাপড় কাচতে হবে। কিন্তু সম্ভবত তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই ছোট্ট কণ্ঠটাই আমাকে বলে যে, ”আমি আছি” ”আমি আছি”। আর যতক্ষণ আমার বাম মস্তিস্ক আমাকে বলে যে, ”আমি আছি”, আমি আলাদা হয়ে যাই। আমি হয়ে যাই একটা একক দৃঢ় ব্যক্তিসত্তা। আমার চারপাশের শক্তি প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই আপনাদের থেকেও। আমি আমার মস্তিস্কের এই অংশটাই হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার স্ট্রোকের সেই সকালে সেদিন সকালে আমি ঘুম থেকে উঠেছিলাম আমার বাম চোখের পেছনে প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে। পুড়ে যাওয়ার মত ব্যাথাটা সেইরকম যেমনটা আমাদের হয় ঠান্ডা আইসক্রিমে কামড় দিলে। ব‍্যথাটা আমাকে জাপটে ধরছে,-- আবার ছেড়ে দিচ্ছে। তারপর আবার জাপটে ধরছে, আবার ছেড়ে দিচ্ছে। আর এই ধরণের ব্যাথার অভিজ্ঞতা আমার জন্য ছিল খুবই অস্বাভাবিক। তো, আমি ভাবলাম, ঠিক আছে। আমি স্বাভাবিকভাবে আমার রোজকার রুটিন শুরু করি। কাজেই আমি উঠলাম আর আমার কার্ডিও গ্লিডারে চড়ে বসলাম। এটা পুরো শরীরের ব্যায়ামের একটা যন্ত্র। আর আমি সেটাতে ব্যায়াম শুরু করার পর, উপলব্ধি করলাম, মেশিনের বারগুলোকে আঁকড়ে ধরে থাকা নিজের হাতগুলোকে আমার মনে হতে থাকল আদিম নখরযুক্ত পশুর হাতের মতো আমি ভাবলাম, “এটা খুবই অদ্ভুত।” নিচের দিকে পুরো শরীরের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, ‘ওয়াও! আমি একটা কিম্ভুত সদৃশ জিনিস।’ আমার চেতনা দুরে সরে যাচ্ছে আমার সাধারণ-- বাস্তবতার উপলব্ধি থেকে, যেখানে আমি সেই ব‍্যক্তি মেশিনের উপরে দাঁড়ানো এইসব অভিজ্ঞতার সম্মুখিন, রহস‍্যময় একটা যায়গায় যেখানে আমি নিজেই এইসব অভিজ্ঞতা প্রত‍্যক্ষ করছি আর সবকিছু মিলিয়ে ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত, সেই সাথে আমার মাথাব্যাথা আরও চরম আকারে বাড়তে থাকল। তো, আমি মেশিন থেকে নেমে এলাম। বসার ঘরের মেঝেতে হাঁটাহাটি করতে লাগলাম। আর তখন আমি উপলব্ধি করলাম যে, আমার দেহের ভিতরের সবকিছুই খুব ধীরগতির হয়ে গেছে। আমার প্রত্যেকটা ধাপই পড়ছে খুব ধীরগতিতে এবং সুচিন্তিতভাবে। আমার গতির কোন প্রবাহ নেই, আর আমার উপলব্ধির ক্ষমতার জায়গাটা এতই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছিল, তো, আমি আমার অভ্যন্তরীন ব্যবস্থার দিকে মনোনিবেশ করলাম বাথরুমে এসে গোসলের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় আমি বাস্তবিকই আমার শরীরের ভিতরের কথাবার্তা শুনতে পেলাম আমি শুনলাম, একটা ছোট্ট স্বর বলছে, “ঠিক আছে। তুমি পেশি, তোমাকে শুরু করতে হবে। তুমি পেশি, তুমি আরাম কর।” আর তারপর আমি আমার নিয়ন্ত্রণ হারালাম আর দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলাম। আর আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম যে, আমি আর কোনভাবেই আমার দেহের সীমানা নির্ধারণ করতে পারছি না। মনে করতে পারছি না যে, আমার শুরু কোথায় আর শেষ কোথায়, কারণ মনে হচ্ছিল আমার হাতের অনু পরমানুগুলো মিশে গেছে দেয়ালের অনু পরমানুগুলোর সঙ্গে। আর একটা জিনিসই আমি সনাক্ত করতে পারছিলাম তা হলো একটা শক্তি -- শক্তি আমি নিজেকেই প্রশ্ন করলাম, “আমার সমস্যা টা কী? কী হচ্ছে এসব?” আর এই মুহূর্তে আমার মস্তিস্কের কাথাবার্তা -- আমার বাম অংশের কথাবার্তাগুলো -- পুরোপুরি নিশ্চুপ হয়ে গেল। যেন কেউ রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে মিউট বাটন চেপে দিয়েছে। পুরোপুরি শব্দহীন। আর প্রথমে আমি প্রথমবারের মতো নিজেকে একটা নিশ্চুপ মস্তিস্কের মধ্যে পেয়ে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর খুব দ্রুতই আমার চারপাশের শক্তির চমৎকারীত্বে মজেছিলাম। আর আমি যেহেতু আমার দেহের সীমানা নির্ধারণ করতে পারছিলাম না, তাই আমার নিজেকে বিশাল ও সুবিস্তৃত মনে হচ্ছিল। চারপাশের সব শক্তির সাথে নিজেকে একাত্ম মনে হচ্ছিল। আর সেটা ছিল খুবই সুন্দর অনুভূতি। তারপর হঠাৎই আমার বাম মস্তিস্ক জীবিত হয়ে অনলাইনে আসল আর আমাকে বলল, “হেই! আমাদের সমস্যা হয়েছে। আমাদের সমস্যা হয়েছে। আমাদের সাহায্য নিতে হবে।” আর আমি শুরু হয়ে গেলাম, “আহ্হ্! আমার সমস্যা হয়েছে। আমার সমস্যা হয়েছে।” তো এটা এরকম, “আচ্ছা আচ্ছা। আমার সমস্যা হয়েছে।” কিন্তু তারপরেই আমি আবার ডান মস্তিস্কের সচেতনতায় ফিরে গেলাম। আমি এই জগতটাকে আদর করে তাইরে নাইরে দুনিয়া বলতে পছন্দ করি। কিন্তু এটা ছিল খুবই সুন্দর। চিন্তা করেন, বাহ্যিক দুনিয়ার সাথে মস্তিস্কের যে কথোপকথনকারীটা আপনাকে সংযুক্ত রাখে, সেটা আপনার থেকে পুরোপুরিই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে কেমন লাগতে পারে। তো, এই জায়গায় থাকা আমার কাছে, আমার চাকরি চাকরি সংক্রান্ত যে কোন চাপ-দুশ্চিন্তা, সব হাওয়া হয়ে গেছে। আর আমার শরীরের মধ্যে নিজেকে খুব হালকা লাগছে। আর ভাবেন যে, বাহ্যিক দুনিয়ার সঙ্গে সব সম্পর্ক, সেগুলোর মধ্যকার চাপ দুশ্চিন্তার কথাগুলোও সব গায়েব হয়ে গেছে। আর আমি এই শান্তিপূর্ণ অবস্থাটা অনুভব করছি। একবার ভাবুন যে, ৩৭টা বছরের সব আবেগপূর্ণ লটবহর ঝেড়ে ফেলতে পারলে কেমন লাগত! (হাসি)। আমি খুবই ফুর্তিতে ছিলাম -- স্ফুর্তি। এটা খুবই সুন্দর একটা অনুভূতি ছিল আর তারপর আবার আমার বাম মস্তিস্ক অনলাইনে চলে আসল আর বলল, "হেই! তোমাকে মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের সাহায্য নিতে হবে।” আর আমি ভাবছি, “আমাকে সাহায্য নিতে হবে। মনোযোগ দিতে হবে।” তো, আমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। আর খুবই যান্ত্রিকভাবে পোশাক পরে হাঁটতে লাগলাম। ভাবছিলাম, ‘আমাকে কাজে যেতে হবে। কাজে যেতে হবে। আমি কি গাড়ি চালাতে পারব? গাড়ি চালাতে পারব? আর এইসময় আমার ডানহাত পুরোপুরি প্যারালাইজড হয়ে গেল। তারপর আমি বুঝতে পারলাম, “ওহ! ঈশ্বর! আমার চৈতন্য লোপ (স্ট্রোক) হচ্ছে। আমার স্টোক হচ্ছে!” আর তার পরের ঘটনা হলো, আমার মস্তিস্ক বলছে, “বাহ! এটা কী চমৎকার! (হাসি) এটা কী মজার! কতজন মস্তিস্ক বিজ্ঞানী নিজেই নিজের মস্তিস্কটা এভাবে ভেতর থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পায়?” (হাসি) তারপরেই আমার মাথায় আসল যে, “কিন্তু আমি খুবই ব্যস্ত একটা মহিলা! (হাসি) আমার কোন স্ট্রোকের সময় নাই!” তো, তারপরে ভাবলাম, “ঠিক আছে, আমি এই স্ট্রোক হওয়া আটকাতে পারব না। তো, এটা এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে সামলিয়ে তারপর আমি আমার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসব। ঠিক আছে, তাহলে আমাকে সাহায্য নিতে হবে। আমার অফিসে ফোন করতে হবে।” কিন্তু সেখানকার নাম্বারটা আমার মনে পড়ল না। তখন মনে হলো আমার অফিসে কিছু ভিজিটিং কার্ড আছে সেখানে আমার নম্বরটা লেখা আছে। তারপর আমি আমার কাজের ঘরে গেলাম, আর তিন ইঞ্চি মোটা কার্ডের বান্ডিলটা বের করলাম। আর আমি কার্ডের উপরের দিকে দেখলেও আমার বিজনেস কার্ডটা দেখতে কেমন, সেটা আমি মনের চোখে পরিস্কার দেখতে পেলেও আমি কিছুতেই বলতে পারছিলাম না যে, এটা আমার কার্ড কি না, কারণ আমি যা দেখতে পাচ্ছিলাম তার সবই শুধু পিক্সেল আর বর্ণগুলোর পিক্সেল মিশে যাচ্ছিল প্রতীকগুলোর পিক্সেল ব্যাকগ্রাউন্ডের পিক্সেলের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল, আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না তারপর আমাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে আমি যাকে বলি একটা 'স্পষ্টতার ঢেউ' এর জন‍্য আর তখন হয়তো আমি আবার স্বাভাবিক বাস্তবতায় পুনরায় সংযুুক্ত হতে পারছি। আর বলতে পারছি যে, এই কার্ডটা নয়। এই কার্ডটা নয়। এই কার্ডটা নয়। এভাবে তিন ইঞ্চি পুরু বান্ডিলটার এক ইঞ্চি পর্যন্ত যেতে আমার সময় লাগল ৪৫ মিনিট। আর এই ৪৫ মিনিটের মধ্যে আমার বাম মস্তিস্কের রক্তক্ষরিত অংশটা আরও বড় হয়েছে। আমি নাম্বার বুঝতে পারছি না। টেলিফোন বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমার এই একটা পরিকল্পনাই আছে। কাজেই আমি ফোন প্যাডটা নিলাম আর এখানে রাখলাম, বিজনেস কার্ডটা নিলাম, আমি এইখানে রাখলাম, আর এখন আমি কার্ডের হিজিবিজি আকৃতিগুলোর সঙ্গে মেলাতে থাকলাম ফোনপ্যাডের হিজিবিজি আকৃতিগুলোকে। কিন্তু তারপর আবার হয়তো আমি চলে গেলাম সেই তাইরে নাইরে দুনিয়ায়, পরে আবার সচেতন হয়ে আর মনে করতে পারলাম না যে আমি ইতিমধে‍্যই কোন নাম্বারের বোতাম চেপেছি। তাই (কোন পর্যন্ত চেপেছি এটা মনে রাখার জন্য) আমি প্যারালাইজড ডানহাতটাকে ফোনপ্যাডের ওপর রেখে একটা স্ট্যাম্পের মতো ব্যবহার করতে হলো যেন, আমি স্বাভাবিক বাস্তবতায় ফিরে আসার পরে বলতে পারি যে, “হ্যাঁ, আমি এই নাম্বারটা ইতিমধ্যেই ডায়াল করেছি।” এভাবে, পুরো নাম্বারটা ডায়াল করা যখন শেষ হলো আমি ফোন ধরে শুনছি। আর আমার সহকর্মী ফোনটা ধরল আর বলল, “হুউ্ হুউ্ হুউ্ হুউ্” (হাসি)। আর আমি নিজে নিজে ভাবলাম, “ওহ! ঈশ্বর! তাকে একটা সোনালী শিকারী কুকুরের মতো শোনাচ্ছে!” আর তারপর আমি তাকে বললাম আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমি বললাম, “আমি জিল! আমার সাহায্য দরকার!” আর কথাটা আমার কানে শোনালো, “হুউ্ হুউ্ হুউ্ হুউ্” আমি ভাবলাম, “ওহ! ঈশ্বর! আমাকে একটা সোনালী শিকারী কুকুরের মতো শোনাচ্ছে!” চেষ্টা না করার আগ পর্যন্ত আমি বুঝতেই পারিনি, জানতামই না যে আমি ভাষা বলতে বা বুঝতে পারব না। কিন্তু সে বুঝেছিল যে, আমার সাহায্য লাগবে। আর সে তা করেওছিল। তার কিছুক্ষণ পরে, আমি বস্টনের এক হাসপাতাল থেকে ম্যাসাচুসেটস-এর আরেকটা হাসপাতালে যাচ্ছিলাম অ্যাম্বুলেন্সে করে। আর আমি যেন একটা ছোট ভ্রুণের বলের মতো কুঁকড়ে গেলাম। যেন শেষ কিছু বাতাস নিয়ে উড়তে থাকা একটা বেলুন। আর ঐ সেই বেলুনের মতো, আমার মনে হলো, আমার শক্তি আমাকে ছেড়ে যাচ্ছে। মনে হলো, আমার আত্মা আত্মসমর্পণ করল আর সেই মুহূর্তে, আমি জেনেছিলাম যে, আমি আর আমার জীবনের নির্দেশক নই। আর যদি চিকিৎসকেরা আমার দেহটা রক্ষা না করে ও আমাকে জীবনের দ্বিতীয় সুযোগ না দেয় তাহলে এটাই হয়তো আমার পারাপারের মুহূর্ত। সেই দিন দুপুরে যখন সজাগ হলাম, তখন এটা আবিস্কার করে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম যে, আমি এখনও বেঁচে আছি। যখন মনে হয়েছিল আমার আত্মা আত্মসমর্পন করছে তখনই আমি জীবনকে চিরবিদায় বলে দিয়েছিলাম। ি ভিন্ন বাস্তবতার জগত নিয়ে ফিরে এসেছে। স্নায়ুতন্ত্র বাহিত যেসব তরঙ্গ মস্তিস্কে আসছিল, সেগুলো মনে হচ্ছিল বিশুদ্ধ যন্ত্রণা। আলো আমার মস্তিস্ক যেন পুড়িয়ে দিচ্ছিল দাবানলের মতো। আর শব্দগুলোও এত জোরে আর বিশৃঙ্খল মনে হচ্ছিল যে, আমি ঐ চেঁচামেচি থেকে একটা স্বরও আলাদাভাবে সনাক্ত করতে পারছিলাম না। আমি শুধু চাইছিলাম পালিয়ে যেতে। কারণ আমি অন্য আরেকটা জগতে আমার দেহের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারিনি, নিজেকে মনে হয়েছিল বিশাল ও বিস্তির্ণ যেন একটা জ্বীন এই মাত্র প্রদীপ থেকে মুক্তি পেয়েছে। আর আমার আত্মা উড়ে বেড়াচ্ছিল মুক্তভাবে। যেন একটা বিশাল তিমি সাঁতড়ে বেড়াচ্ছে শব্দহীন আনন্দময় সমুদ্রে। নির্বান আমি নির্বান লাভ করেছিলাম। আমি সেই চিন্তাটাও মনে করতে পারলাম যখন আমি ভেবেছিলাম আর কোনভাবেই এই সুবিশাল নিজেকে আমার এই ছোট্ট দেহটার মধ্যে ফেরাতে পারব না। কিন্তু তারপরই আমি উপলব্ধি করলাম, “কিন্তু আমি এখনও বেঁচে আছি। এখনও বেঁচে আছি। আর আমি নির্বান প্রাপ্ত হয়েছি। আর যদি আমি নির্বান লাভ করে এখনও বেঁচে থাকতে পারি, তাহলে জীবন্ত অন্য সবাই-ই নির্বান লাভ করতে পারে। আর আমি এমন একটা দুনিয়ার ছবি কল্পনা করলাম যেটা সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, করুনাময়, সৌহার্দপূর্ণ মানুষে পরিপূর্ণ, যারা সবাই জানে যে, তারা যে কোন সময়ে এই জগতটাতে আসতে পারে তারা ইচ্ছানুযায়ী মস্তিস্কের ডান অংশে আসতে ও এই শান্তি লাভ করতে পারে। আর তখন আমার উপলব্ধি হলো যে, এই অভিজ্ঞতাটা কী অসাধারণ একটা উপহার হতে পারে এই স্ট্রোকের অন্তদৃষ্টিটা কত বড় ভূমিকা রাখতে পারে আমরা কীভাবে আমাদের জীবন ধারণ করব তা বুঝতে। এটাই আমাকে সুস্থ হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে। আমার মস্তিস্কের রক্তক্ষরণের আড়াই সপ্তাহ পরে, চিকিৎসকেরা অপারেশন করে একটা গল্ফ বলের আকৃতির রক্তপিণ্ড বের করে যেটা আমার মস্তিস্কের ভাষা কেন্দ্রের দিকে চাপ দিচ্ছিল। এখানে, আমি আমার মা এর সঙ্গে, তিনি আমার জীবনের একজন সত্যিকারের দেবী। পুরোপুরি সুস্থ হতে আমার আট বছর লেগেছিল তো, আমরা কে? আমরা হলাম এই বিশ্বব্রক্ষাণ্ডের জীবনী-শক্তি ক্ষমতা, দুইটা কার্জক্ষম হাত ও দুইটা সৃজনশীল মস্তিস্ক সমৃদ্ধ। আর আমাদের সেই ক্ষমতা আছে, প্রতিমুহূর্তে বেছে নেওয়ার যে, কিরুপে বা কিভাবে আমরা দুনিয়ায় বাঁচতে চাই। এখনই এইমূহূর্তে আমি সচেতনভাবে আমার ডানমস্তিস্কের জগতে পা রাখতে পারি। যেখানে আমরা আছি। আমি এই বিশ্বব্রক্ষাণ্ডের জীবনী-শক্তি ক্ষমতা। আমি এই ৫০ ট্রিলিয়ন চমৎকার অনুগুলোর জীবনী-শক্তি ক্ষমতা যা দিয়ে আমি গড়ে উঠেছি। এই পুরোটার সাথে আমি একাত্ম। বা আমি আমার বাম মস্তিস্কের সচেতনতায় প্রবেশ করতে পারি যেখানে আমি একটা একক ব্যাক্তিসত্তায় পরিণত হই, একটা নিরেট বস্তু। চারপাশের প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন, আপনাদের থেকে বিচ্ছিন্ন, আমি ড. জিল বোলটে টেলর: বুদ্ধিজীবী, স্নায়ুঅনুতাত্ত্বিক। আমার মাথার ভেতরে এই রকমের ‘আমরা’-রা আছি। আপনি কোনটা বেছে নেবেন? কোনটা বেছে নেবেন আপনি? আর কখন? আমি বিশ্বাস করি যত বেশি সময় আমরা ডান মস্তিস্কের গভীর আত্ম শান্তি লাভ প্রক্রিয়া চালাতে পারব তত শান্তিপূর্ণ জীবন আমরা দুনিয়াকে দিতে পারব। আর ততই বেশি শান্তিময় হবে আমাদের পৃথিবীটা। আর আমি ভাবছিলাম, এইটা একটা ধারণাটা প্রচারের দাবি রাখে। এই মানচিত্রটা নিউ ইয়র্ক শহরের যা কিনা ১৯৩৭ সালে জেনারেল ড্রাফটিং কোম্পানি তৈরি করে এটা মানচিত্র তৈরি আঁকিয়েদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়, কারন এটার নিচের দিকে ক্যাটস্কিল পবর্ত অবস্থিত। সেখানে ছোট এক শহর ছিল যার নাম রোসকো-- এটা আরও সহজ হবে যদি আমি এটিকে এখানে দেখাই-- এই হচ্ছে রোসকো, আর তার ঠিক উপরেই আছে রকল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক, তারপর এর উপরে আছে একটি ছোট শহর যার নাম অ্যাগলো, নিউ ইয়র্ক। অ্যাগলো, নিউ ইয়র্ক, মানচিত্র আঁকিয়েদের কাছে খুবই জনপ্রিয়, কারণ এটি একটি কাগুজে শহর। এটি স্বত্ব ফাঁদ হিসেবেও পরিচিত। যেহেতু নিউ ইয়র্কের আকারের কারণে-- আমার এবং তোমার মানচিত্র দেখতে একই হবে, তাই মানচিত্রকরেরা প্রায়ই তাদের মানচিত্রে মেকি জায়গা বসিয়ে দেন , তাদের স্বত্ব রক্ষা করার জন্য। কারণ তখন যদি আমার মেকি জায়গা তোমার মানচিত্রে দেখা যায়, তাহলে আমি নিশ্চিত হব যে তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছ। অ্যাগলো নামটি তৈরি করা হয়েছে সেই দুইজনের নামের ১ম অক্ষর হিজিবিজিভাবে লিখে, আরনেসট অ্যাল্পারস এবং অটো জি লিন্ডবারগ, এবং তারা ১৯৩৭ সালে এই মানচিত্র প্রকাশ করেন। কয়েক দশক পরে র‍্যান্ড ম্যাকনেলি একটি মানচিত্র প্রকাশ করেন যেখানে অ্যাগলো, নিউ ইয়র্ক এক জনমানবহীন স্থানে দুটি কাদামাটির রাস্তার একই ছেদবিন্দুতে অবস্থিত। যাই হোক, জেনারেল ড্রাফ্‌টিং এ তখনকার অবস্থা স্বভাবতই অনুমেয়। তারা তখনই র‍্যান্ড ম্যাকনেলিকে ডেকে বলল, "আমরা তোমাকে ধরে ফেলেছি! আমরাই অ্যাগলো, নিউ ইয়র্ক বানিয়েছি।, এটা একটা বানোয়াট জায়গা। একটা কাগুজে শহর। আমরা তোমার নামে মামলা করব!" র‍্যান্ড ম্যাকনেলি তখন বলল, "না, না, না, না, অ্যাগলো সত্যি জায়গা।" যেহেতু মানুষজন দুটি কাদামাটির রাস্তার ছেদবিন্দুতে-- (হাসি) অ্যাগলো নামের এক জায়গার খোঁজে ওই জনমানবহীন স্থানে বারবার যেতে লাগলো-- কেউ একজন অ্যাগলো, নিউ ইয়র্ক নামে এক জায়গা তৈরি করল। (হাসি) সেখানে একটি গ্যাস স্টেশন, জেনারেল স্টোর, আর চূড়ায় দুটি বাড়ি ছিল। (হাসি) এটি একজন ঔপন্যাসিকের কাছে অবশ্যই একটি লোভনীয় রুপক, কারণ আমরা সবাই বিশ্বাস করতে চাই যে আমরা যেসব কথা লিখে রাখি সেগুলো আমরা যে পৃথিবীতে বাস করি সেটিকে বদলে দিতে পারে। আর এজন্যই আমার তৃতীয় বইয়ের নাম "পেপার টাউন্স"। কিন্তু অবশেষে যে মাধ্যমে এটি সম্পন্ন হয় তার চেয়ে আমাকে বেশি আকর্ষণ করে, এই ঘটনাটি নিজে। এটা বলা সহজ যে আমাদের পৃথিবীই এর মানচিত্রকে আকার দেয়, তাই না? যেমন পৃথিবীর সার্বিক আকৃতি স্পষ্টতই আমাদের মানচিত্রগুলোকে প্রভাবিত করবে। কিন্তু আমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয় যে বিষয়টা তা হল আমাদের মানচিত্র তৈরি করার ধরন কিভাবে খোদ পৃথিবীটাকেই বদলে দেয়। কারণ পৃথিবীটা সত্যিই অন্যরকম হত যদি উত্তর নিচের দিকে থাকত। এবং পৃথিবী অন্যরকম হত যদি আলাস্কা এবং রাশিয়া মানচিত্রের উল্টো দিকে না থাকত। আর পৃথিবীটা হত ভিন্ন এক জায়গা যদি আমরা ইউরোপকে এর আসল আয়তনে দেখাতাম। আমাদের তৈরি পৃথিবীর মানচিত্রই পৃথিবীকে বদলে দেয়। আমরা যেভাবে আমাদের-- একরকম ব্যাক্তিগত মানচিত্রাঙ্কনের উদ্যোগকে বেছে নেই, তা আমাদের জীবনের মানচিত্র গড়ে দেয়, আর ক্রমে তা গড়ে দেয় আমাদের জীবন। আমি বিশ্বাস করি যে আমরা যা মানচিত্রে আঁকি তা আমাদের জীবনযাপনকে পাল্টে দেয়। এবং আমি একে, যেমন, কোন গোপন অপরাহ'র অ্যাঞ্জেল নেটওয়ার্ক, যেমন, চিন্তা-দ্বারা-ক্যান্সার-আরোগ অর্থে বলছি না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে তুমি জীবনে কোথায় যাবে তা মানচিত্র তোমাকে দেখাতে না পারলেও, তারা তোমাকে দেখাবে তুমি কোথায় যেতে পারো। খুব কম সময়ই তুমি এমন জায়গায় যাবে যেটি তোমার ব্যাক্তিগত মানচিত্রে নেই। তো ছোটবেলায় আমি খুবই বাজে ছাত্র ছিলাম। আমার জিপিএ সর্বদাই ২ এর আশেপাশে থাকতো। আর আমার মনে হয় আমি এত বাজে ছাত্র ছিলাম কারণ আমার মনে হত শিক্ষা হচ্ছে কতগুলো বাধা যা আমার সামনে দাঁড় করানো হয়েছিল, এবং আমাকে সাবালকত্ব অর্জন করতে হলে এগুলো অতিক্রম করতে হবে। আর আমি এই বাধাগুলো পার করতে চাই নি, আমি প্রায়ই তা করতাম না কারণ এগুলো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক মনে হত, আর তখন লোকজন আমাকে ভয় দেখাত, যেমন, তারা আমাকে বলত যে এসব "[আমার] স্থায়ী কাগজপত্রে লেখা থাকবে," অথবা, "তুমি কখনো ভাল চাকরি পাবে না।" আমি ভাল চাকরি চাই নি! এগারো বা বারো বছর বয়সে আমি যতদূর বুঝতাম, ভাল চাকরিজীবীরা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠত, (হাসি) আর তারা সবচেয়ে প্রথমে যা করত তা হল একটা কাপড় নিজেদের গলায় জড়িয়ে নেওয়া। তারা আক্ষরিকভাবে নিজেদের গলায় ফাঁস পরাতো, আর তারপর তারা চাকরিতে যেত, তা যাই হোক না কেন। সুখী জীবনের জন্য এটি কোন রেসিপি নয়। এই মানুষগুলো-- আমার প্রতীক-আচ্ছন্ন, বারো বছর বয়সী কল্পনায়-- যেই মানুষগুলো সকালবেলা তাদের অন্যতম প্রথম কাজ হিসেবে নিজেদের গলায় ফাঁস পরাচ্ছে, তারা কোনভাবেই সুখী হতে পারে না। কেন আমি এই বাধাগুলো পার করতে চাইবো, স্রেফ এটিকে চূড়ান্ত হিসেবে পাওয়ার জন্য? সেটি একটি ভয়াবহ সমাপ্তি! এরপর, আমি যখন দশম শ্রেণিতে পরতাম, আমি একটি স্কুলে ভর্তি হলাম, ইন্ডিয়ান স্প্রিংস স্কুল, একটি ছোট বোর্ডিং স্কুল, বারমিংহাম, আলাবামার বাইরেই। আর হঠাৎই আমি একজন শিক্ষার্থী হয়ে গেলাম। আর আমি তা হলাম,কারণ আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম শিক্ষার্থীদের একটি গোষ্ঠীর মাঝে। এমন কিছু মানুষের মাঝে নিজেকে পেলাম যারা বুদ্ধিবৃত্তি ও অংশগ্রহণকে উদযাপন করে, আর যারা আমার শ্লেষপূর্ণ, নিরুত্তাপ বিচ্ছিন্নতাকে চতুর, বা মজার ভাবত না, বরং এটি ছিল খুব জটিল ও বাধ্যকারি সমস্যার প্রতি একটি সাধারণ ও নীরস প্রতিক্রিয়া। আর তাই আমি শিখতে শুরু করলাম, কারণ শেখা ছিল চলনসই। আমি শিখলাম যে কিছু অনন্ত সেট অন্য অনন্ত সেটের চেয়ে বড়, আরও শিখলাম পাঁচমাত্রার কাব্য কি এবং কেন তা মানুষের কানে শ্রুতিমধুর। আরও শিখলাম যে গৃহযুদ্ধ ছিল একটি জাতীয়করণ সংঘর্ষ, আমি পদার্থবিদ্যা শিখলাম আমি শিখলাম যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও নিমিত্তকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়-- প্রসঙ্গক্রমে, এ সবকিছুই, আমার জীবনকে আক্ষরিক অর্থে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করেছে। এবং এটা সত্যি যে আমি এদের বেশিরভাগই আমার "চাকরি"র জন্য ব্যবহার করি না, কিন্তু আমার জন্য সেটি কোন বিষয় নয়। বিষয় হল মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা। মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যার প্রক্রিয়া কি? এটা হল, ধরো, জাহাজে করে কোথাও যাওয়া, আর চিন্তা করা, "আমার মনে হয় আমি এই জায়গাটুকুর ছবি আঁকব," আর তারপর ভাবা, "হয়ত ছবি আঁকার মত এখানে আরও কিছু জায়গা আছে।" আর তখনি আমার শেখার শুরু হল। এটা সত্যি যে আমার কিছু শিক্ষক আমাকে পরিত্যাগ করেননি, এবং আমি সৌভাগ্যবান ছিলাম তাদেরকে পাওয়ার জন্য, আমার মধ্যে বিনিয়োগ করার কোন কারণ নেই, এমন ভাবার অবকাশ আমি প্রায়ই তাদের দিতাম। কিন্তু আমার হাই স্কুলে শেখা অনেক কিছুই ক্লাসরুমের ভিতরে কি হত সে ব্যপারে ছিল না, তা ছিল ক্লাসরুমের বাইরে কি হত সে বিষয়ে। উদাহরনস্বরুপ, আমি বলতে পারি যে, "শীতের বিকেলের আলোতে আছে এক তির্যকতা-- যা ক্যাথেড্রাল সুরের মত ভারাক্রান্ত করে দেয়--" এর কারণ এই নয় যে আমি হাই স্কুলে থাকতে এমিলি ডিকিন্সনের কবিতা মুখস্থ করেছিলাম, বরং এ কারণে যে আমার স্কুলে একটা মেয়ে ছিল, আর তার নাম ছিল আমানডা, আর আমি তাকে পছন্দ করতাম, আর সে এমিলি ডিকিন্সনের কবিতা পছন্দ করত। আমি তোমাদের বলতে পারি সুযোগ ব্যয় কি, তার কারণ হল আমি একদিন আমার সোফায় বসে সুপার মারিও কার্ট খেলছিলাম, তখন আমার বন্ধু এমেট এসে দাঁড়াল, আর বলল, ''তুমি কতক্ষন ধরে সুপার মারিও কার্ট খেলছ?'' আমি বললাম, "কি জানি, মনে হয়, ছয় ঘণ্টা?" আর ও বলল, "তুমি কি ভেবে দেখেছ যে যদি তুমি ওই ছয় ঘণ্টা বাস্কিন-রবিন্স এ কাজ করতে, তাহলে তুমি ৩০ ডলার আয় করতে, সুতরাং এক হিসেবে, তুমি এইমাত্র সুপার মারিও কার্ট খেলার জন্য ৩০ ডলার খরচ করলে?'' আমি বললাম, 'আমি এতে সম্মত," (হাসি) কিন্তু আমি শিখলাম সুযোগ ব্যয় কি। আর এভাবেই আমার জীবনের মানচিত্র আরও ভাল হতে থাকল। এটা আরও ভাল হতে থাকল, এতে নতুন জায়গা যুক্ত হল এমন আরও জিনিস ছিল যা ঘটতে পারে, এমন অনেক ভবিষ্যৎ যা আমি পেতে পারি। এটা কোন আনুষ্ঠানিক, শৃঙ্খলাবদ্ধ শিখন প্রক্রিয়া ছিল না, এবং আমি এটা খুশিমনে স্বীকার করছি। এটি ছিল অসম এবং সামঞ্জস্যহীন, এমন অনেক কিছুই ছিল যা আমি জানতাম না। আমি হয়ত ক্যান্টরের ধারণাটা জানতাম যে কিছু অসীম সেট অন্যান্য অসীম সেটের চেয়ে বড়, কিন্তু এই ধারনার পেছনে যে ক্যাল্কুলাস কাজ করত তা বুঝতাম না। আমার হয়ত সুযোগ ব্যয়ে সম্পর্কে ধারণা ছিল, কিন্তু আমি হ্রস্বীকৃত আয়ের নীতি জানতাম না। শেখাকে মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা হিসেবে কল্পনা কর্‌ একে কতগুলো বাধা হিসেবে কল্পনা করার চেয়ে ভাল, যেগুলো তোমাকে পার করতে হবে, কারণ তুমি কিছু উপকূলীয় রেখা দেখতে পাবে, আর এতে তোমার ইচ্ছে হবে আরও দেখতে। আর তাই আমি এখন কিছুটা ক্যাল্কুলাস বুঝি, যা ওসব জিনিসের পেছনে কাজ করে। তাহলে, আমার একটা শেখার গোষ্ঠী ছিল হাইস্কুলে, তারপর আমি কলেজে অন্য একটা পেলাম, আর তারপর অন্য একটা, যখন আমি 'বুকলিস্ট' নামে এক ম্যাগাজিনে কাজ শুরু করলাম, যেখানে আমি বিস্ময়করভাবে পড়ুয়া মানুষদের সাথে সহকারী হিসেবে কাজ করতাম। আর তারপর আমি একটা বই লিখলাম। আর সব লেখকরা যা করার স্বপ্ন দেখে তাই করলাম। অবিলম্বে আমার চাকরি ছেড়ে দিলাম। (হাসি) আর হাই স্কুল ছাড়ার পর প্রথমবারের মত আমি নিজেকে কোন শিখন গোষ্ঠীর সাহচর্য ছাড়া খুঁজে পেলাম, আর তা ছিল দুর্বিষহ। আমি এটা ঘৃণা করতাম। এই দুই বছরে আমি অনেক অনেক বই পড়লাম। আমি স্তালিন সম্পর্কে বই পড়েছি, আর পড়েছি কিভাবে উজবেক লোকজন মুসলিম হিসেবে পরিচিতি পেল, আর পড়েছি কিভাবে পারমাণবিক বোমা বানাতে হয়, কিন্তু আমার মনে হত আমি নিজেই নিজের জন্য বাধার সৃষ্টি করছি, আর সেগুলো পার করছি, যেখানে আমার উত্তেজনা বোধ করা উচিত শিক্ষার্থীদের একটা সম্প্রদায়, মানুষের একটা সম্প্রদায়ের অংশ হওয়ার , যারা সবাই একটা মানচিত্রাঙ্কনের উদ্যোগে সম্পৃক্ত, যার কাজ আশেপাশের পৃথিবীটাকে আরও ভাল করে বোঝা ও এর মানচিত্র আঁকা। আর তারপর, ২০০৬ সালে, আমি এই লোকটার সাথে পরিচিত হলাম। তার নাম হল জে ফ্র্যাঙ্ক। আমি আসলে তাকে দেখি নি, শুধু ইন্টারনেটে পরিচিত হয়েছি। জে ফ্র্যাঙ্ক তখন একটা অনুষ্ঠান চালাত, যার নাম "দ্যা শো উইথ জে ফ্র্যাঙ্ক," আর আমি এটিকে আবিষ্কার করলাম, আর এটিই ছিল একজন গোষ্ঠীভুক্ত শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রত্যাবর্তন। এখানে জে লাস ভেগাস সম্পর্কে কথা বলছেঃ (ভিডিও) জে ফ্র্যাঙ্কঃ লাস ভেগাস তৈরি হয়েছিল এক বিরাট, গরম মরুভূমির মাঝে। এখানে প্রায় সবকিছুই অন্য কোন জায়গা থেকে আনা হয়েছিল-- বিভিন্ন ধরনের পাথর, গাছ, ঝর্ণা। এই মাছগুলো অতটাই বেমানান, যতটা আমার উরন্ত শূকর। এই জায়গার তুলনায় এর চারপাশের ঝলসানো মরুভুমি যেমন, এর মানুষগুলোও তেমন। সমস্ত পৃথিবীর অনেক জিনিস এখানে পুনঃনির্মিত হয়েছে, তাদের ইতিহাস থেকে দূরে, আর যারা এগুলোকে ভিন্নভাবে অনুভব করে, তাদের থেকে দূরে। কখনো উন্নতিসাধন করা হয়েছে-- এমনকি স্ফিঙ্কসএর নাকও বদলে ফেলা হয়েছে। এখানে এমন মনে করার কোন কারণ নেই যে তুমি কিছু হারাচ্ছ। আমার কাছে এই নিউ ইয়র্ক তেমনি যেমনটা অন্য সবার কাছে। সবকিছুই প্রসঙ্গবহির্ভূত, তার মানে প্রসঙ্গ সবকিছুর অনুমতি দেয়ঃ স্ব-পার্কিং, ইভেন্ট সেন্টার, হাঙ্গর শৈল। স্থানের এই জালকরন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে একটা হতে পারে, কারণ এটা কোন একজনের না, এটা সবার। আজ সকালে হেঁটে বেড়ানোর সময় আমি লক্ষ্য করলাম যে প্রায় সব দালানই হল বিশাল সব আয়না যা সূর্যের আলো মরুভূমিতে প্রতিফলিত করছে। এগুলো অন্য আয়নার মত নয়, যা কোন জায়গায় নিহিত তোমার একটি বাহ্যিক চিত্র প্রদান করে, বরং এগুলো খালি ফেরত আসে। জন গ্রীনঃ ওই দিনগুলোর জন্য স্মৃতিকাতর হয়ে যাই যখন অনলাইন ভিডিওতে পিক্সেল দেখা যেত। (হাসি) জে শুধু একজন মহৎ সর্বজনীন বক্তা নন, তিনি একজন অসাধারন সমাজ নির্মাতাও বটে, আর এই ভিডিওগুলোকে ঘিরে যে লোক-সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে তা অনেকভাবে ছাত্রদের একটি সম্প্রদায়ও ছিল। তো আমরা সবাই মিলে জের সাথে দাবা খেলতাম, আর আমরা তাকে হারিয়ে দিলাম। আমরা এক যুবককে যুক্তরাষ্ট্রের এপার থেকে ওপারে গাড়ি ভ্রমনে নেওয়ার জন্য সংগঠিত হলাম। আমরা পৃথিবীকে একটা স্যান্ডুইচে পরিনত করলাম একজনকে দিয়ে পৃথিবীর এক প্রান্তে এক টুকরো পাউরুটি ধরিয়ে, আর তার ঠিক অপর প্রান্তে, আরেকজনকে দিয়ে আরেক টুকরো পাউরুটি ধরিয়ে। আমি জানি এগুলো অর্থহীন চিন্তা, কিন্তু একইসাথে এগুলো "শিক্ষামুলক" চিন্তা, আর এটাই ছিল আমার কাছে সবচেয়ে উত্তেজনাকর, তুমি অনলাইনে গেলে এরকম অনেক গোষ্ঠী খুঁজে পাবে। টাম্বলার এ ক্যাল্কুলাস ট্যাগ ফলো করো, দেখবে অনেকেই ক্যাল্কুলাস সম্বন্ধে অভিযোগ করছে, তবে তুমি তাদেরও দেখতে পাবে যারা এসব অভিযোগ পুনঃব্লগ করছে, এই যুক্তি দেখিয়ে যে ক্যাল্কুলাস মজাদার এবং সুন্দর, আর এই উপায়ে তোমার অসামাধানযোগ্য সমস্যা নিয়ে ভাবতে পারো। তুমি যেতে পারো রেডিটে এবং খুঁজতে পারো সাব-রেডিট, যেমন, "ইতিহাসবিদকে জিজ্ঞেস করো" বা "বিজ্ঞানকে জিজ্ঞেস করো," যেখানে তুমি এসব ক্ষেত্রের ব্যাক্তিদের অনেক ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারো, যেগুলো খুবই গুরুতর থেকে খুবই মজার। কিন্তু আমার কাছে, যে শিক্ষার্থীদের গোষ্ঠী সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক যা ইন্টারনেটে এই মুহূর্তে গড়ে উঠছে তা হল ইউটিউব, আমি স্বীকার করছি, আমি পক্ষপাতি। তবে আমি মনে করি যে অনেকভাবেই ইউটিউবের পাতা একটি শ্রেণীকক্ষের মত। যেমন, "মিনিট পদার্থবিজ্ঞান," এক ব্যাক্তি যিনি পৃথিবীকে পদার্থবিজ্ঞান শেখাচ্ছেনঃ (ভিডিও) মূল কথায় আসা যাক। ৪ জুলাই, ২০১২ পর্যন্ত, হিগস বোসন হচ্ছে সর্বশেষ মৌলিক অংশ যা কণা পদার্থবিজ্ঞানের প্রমাণ মডেল হিসেবে গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কৃত। তবে তুমি হয়ত জানতে চাইতে পারো, কেন হিগস বোসন প্রমাণ মডেলের অন্তর্ভুক্ত, ইলেকট্রন, ফোটন এবং কোয়ার্ক এর মত সুপরিচিত কণার পাশাপাশি যদি এটি সেই ১৯৭০ এর দশকে আবিষ্কৃত না হয়ে থাকে? ভাল প্রশ্ন। প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, ইলেকট্রন যেমন ইলেকট্রন ক্ষেত্রে একটি উদ্দীপনা, হিগস বোসনও তেমনি একটি কণা যা সর্বপরিব্যাপ্ত হিগস ক্ষেত্রে একটি উদ্দীপনামাত্র। অপরদিকে হিগস ক্ষেত্র আমাদের দুর্বল নিউক্লিয় বলের মডেলে অপরিহার্য অংশগ্রহন করে। বিশেষত, হিগস ক্ষেত্র ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে কেন এটি এত দুর্বল। পরের ভিডিওতে আমরা এ বিষয়ে আরও কথা বলব, কিন্তু যদিও দুর্বল নিউক্লিয় তত্ত্ব ১৯৮০ এর দিকে নিশ্চিত করা হয়, সমীকরণগুলোতে, হিগস ক্ষেত্র এই দুর্বল বলের সাথে এত জটিলভাবে মিশ্রিত যে, এখন পর্যন্ত আমরা এর আসল এবং স্বাধীন অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে অক্ষম। জগ্রীঃ বা এটি আমার একটি ভিডিও যা আমি "ক্র্যাশ কোর্স" অনুষ্ঠানের জন্য বানিয়েছিলাম, ১ম বিশ্বযুদ্ধ নিয়েঃ (ভিডিও) প্রাথমিক কারণ ছিল অবশ্যই সারায়েভোতে অস্ট্রিয়ান আর্চডিউক ফ্রানয ফারডিনান্ড এর গুপ্তহত্য, যা জুন ২৮, ১৯১৪ তে বসনিয়-সার্ব জাতীয়তাবাদী গ্যাভ্রিলো প্রিন্সিপ দ্বারা সঙ্ঘটিত হয়। উল্লেখযোগ্য যে বিংশ শতাব্দীর প্রথম বড় যুদ্ধ শুরু হয়েছিল সন্ত্রাস হিসেবে। তো ফ্রানয ফারডিনান্ডকে তার চাচা সম্রাট ফ্রানয জোসেফ খুব একটা পছন্দ করতেন না-- ওটা একটা গোঁফ বটে! কিন্তু তারপরও, ওই গুপ্তহত্যা অস্ত্রিয়াকে চালিত করল সার্বিয়াকে চরমপত্র দিতে, যার ফলে সার্বিয়া অস্ট্রিয়ার কিছু দাবি মেনে নিল, কিন্তু সব নয়, পরিণামে অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করল। আর তখন রাশিয়া, সার্বিয়ার সাথে মিত্রতার কারনে তার সৈন্যসমাবেশ করল। জার্মানির যেহেতু অস্ট্রিয়ার সাথে মিত্রতা ছিল, সে রাশিয়াকে তা বন্ধ করতে বলল, রাশিয়া যখন তা করতে ব্যর্থ হল, তখন জার্মানি তার নিজের সৈন্যসমাবেশ করল, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল, অটোমানদের সাথে মিত্রতা দৃঢ় করল, এবং ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করল, কারণ, জানোই তো, ফ্রান্স। (হাসি) আর এটা শুধু পদার্থবিজ্ঞান এবং বিশ্ব ইতিহাস নয় যা মানুষ ইউটিউবের মাধ্যমে শিখতে চাইছে। এই হল বিমূর্ত গণিত সম্পর্কে একটি ভিডিও। (ভিডিও) তো তুমি হলে আমি, আর তুমি আবারও গণিত ক্লাসে এসেছ, কারণ এটা প্রতিদিন তোমাকে অনুপ্রাণিত করে। আর তুমি শিখছ, কি জানি, অসীম ক্রমের যোগফল। এটা হাইস্কুলের বিষয়, তাই না? যেটি অদ্ভুত, কারণ এটি একটি মজার বিষয়, তবে তারা কোন না কোনভাবে এটিকে ধ্বংস করে দেয়। আমার মনে হয় এজন্যই তারা অসীম ক্রমকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে। তো, একটা চিত্তবিক্ষেপের জন্য, যা বোধগম্য, তুমি আঁকাআঁকি করছ আর ভাবছ যে "সিরিজ" এর বহুবচন কি হওয়া উচিত উপস্থিত বিষয় নিয়ে ভাবার বদলেঃ "সিরিজেস," "সেরি," "সেরিজেন," আর "সেরি?" নাকি একবচন বদলে হওয়া উচিতঃ একটা "সিরি," বা "সেরাম," ঠিক যেমন "শীপ" এর একবচন হওয়া উচিত "শুপ।" কিন্তু জিনিসের এই ধারণাটা যেমন ১/২+১/৪+১/৮+১/১৬ অচিরেই এক এর দিকে আগায়, কাজে আসে যদি, ধরো, তুমি হাতির একটা রেখা আঁকতে চাও, প্রতিটা যাতে পরেরটার লেজ ধরে থাকেঃ সাধারণ হাতি, তরুণ হাতি, বাচ্চা হাতি, কুকুর-আকারের হাতি, কুকুরছানা-আকারের হাতি, আর একদম জনাব দন্ত থেকে তার পর পর্যন্ত। যা সামান্য পরিমাণে হলেও অসাধারণ, কারণ তুমি এক লাইনে অসীম সংখ্যক হাতি দাঁড় করাতে পারবে, এবং তারপরেও এটা নোটবুকের একটা পাতায় আঁটবে। জগ্রীঃ শেষে, এই হল ডেসটিন, "স্মার্টার এভরি ডে" থেকে, যে কথা বলছে কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সম্পর্কে, আর বিড়াল, যেহেতু এটা ইউটিউবঃ (ভিডিও) এই যে, আমি ডাসটিন। "স্মার্টার এভরি ডে" তে আবারও স্বাগতম। তোমরা হয়ত লক্ষ্য করেছ যে বিড়ালরা সর্বদা তাদের পায়ের উপর ভর করে পড়ে। আজকের প্রশ্ন হলঃ কেন? সকল সহজ প্রশ্নের মত, এটারও একটা জটিল উত্তর রয়েছে। যেমন, আমি অন্যভাবে প্রশ্নটা করছিঃ একটা বিড়াল কিভাবে উপর থেকে পড়ার সময় উল্টো থেকে সোজা হয়ে যায়, কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র লঙ্ঘন না করেই? (হাসি) জগ্রীঃ তো, এই চারটা ভিডিওর মধ্যে মিল হলঃ এদের সবগুলোকে ইউটিউবে পাঁচ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে। আর এই মানুষগুলো ক্লাস্রুমে বসে এগুলো দেখছে না, বরং তারা সেই শিক্ষার্থীগোষ্ঠীর অংশ যেগুলো এইসব চ্যানেল দ্বারা তৈরি হচ্ছে। আর আমি আগেই বলেছি যে ইউটিউব আমার কাছে একটা ক্লাসরুমের মতো, আর অনেক ভাবেই এটা তাই, কারণ এই হল শিক্ষক-- এটা একটা চিরাচরিত ক্লাসরুমের মতইঃ এই হল শিক্ষক, তারপর শিক্ষকের নিচে হল ছাত্ররা, আর এরা সবাই মিলে আলোচনা করছে। আর আমি জানি যে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ইউটিউব কমেন্টের কুখ্যাতি আছে, কিন্তু সত্যি কথা হল এই, তুমি যদি এসব চ্যানেলের কমেন্টে যাও, যা তুমি পাবে তা হল এর বিষয়বস্তু নিয়ে ব্যস্ত মানুষজন, যারা বিষয়বস্তু নিয়ে কঠিন, জটিল প্রশ্ন করছে, আর অন্যরা ওসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। আর যেহেতু ইউটিউব পাতা এমনভাবে সাজানো যে, যে পাতায় আমি তোমার সাথে কথা বলছি সেটা ঠিক একই-- যেখানে আমি তোমার সাথে কথা বলছি তা একই পাতায় আছে যেখানে তোমার কমেন্ট আছে, তুমি কথোপকথনে একটা সরাসরি এবং বাস্তব এবং সক্রিয় উপায়ে অংশগ্রহণ করছ। আর আমি যেহেতু সাধারণত কমেন্টে থাকি, আমি তোমার সাথে অংশগ্রহণ করতে পারছি। আর তুমি খুঁজে পাচ্ছ তা যাই হোক না কেন, বিশ্ব ইতিহাস, বা গণিত, বা বিজ্ঞান, বা যাই হোক। তুমি আরও দেখছ তরুণদের যারা বিভিন্ন যন্ত্র এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন শাখা ব্যবহার করছে বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণের বিভিন্ন জায়গা তৈরি করার জন্য। যেসব বিদ্রূপাত্মক বিচ্ছিন্নতা আমরা মিম এবং অন্যান্য ইন্টারনেট প্রচলনের সাথে জড়াই-- যেমন, "একঘেয়ে লাগছিল। ক্যাল্কুলাস আবিষ্কার করলাম।" বা, এখানে হানি বু বু শিল্প পুঁজিবাদের সমালোচনা করছেঃ ["উদারনৈতিক পুঁজিবাদ কোনভাবেই মানবতার মঙ্গল নয়। বরং বিপরীত; এটা বর্বর, ধ্বংসাত্মক চূড়ান্ত নাস্তিকবাদের বাহক।"] যদি তুমি বুঝতে না পারো ও কি বলছে...হ্যাঁ। আমি সত্যি বিশ্বাস করি যে এই জায়গাগুলো, এই গোষ্ঠীগুলো, শিক্ষার্থীদের একটা নতুন প্রজন্মের জন্য হয়ে গেছে, সেই ধরনের গোষ্ঠী, সেই মানচিত্রাঙ্কনের গোষ্ঠী যেখানে আমি হাই স্কুলে থাকতে ছিলাম, তারপর আবার ছিলাম কলেজে থাকতে। আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে, এই গোষ্ঠীগুলোকে আবার খুঁজে পাওয়া আমাকে শিক্ষার্থীদের একটা গোষ্ঠীর সাথে আবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, আর আমাকে উৎসাহ দিয়েছে প্রাপ্তবয়স্কতায়ও একজন শিক্ষার্থী হতে, যাতে আমার আর মনে না হয় যে শিক্ষা শুধু তরুণদের জন্য। ভি হার্ট এবং "সূক্ষ্ম পদার্থবিজ্ঞান" আমাকে পরিচয় করিয়েছে এমন অনেক জিনিসের সাথে যা আমি আগে জানতাম না। আর আমি জানি যে ফিরে ফিরে শুনি সেই জ্ঞানের যুগের ফরাসী বৈঠকখানায়, বা আলগঙ্কউইন গোল টেবিলে, আর ইচ্ছে হয়, "ইস, আমি যদি ওসবকিছুর অংশ হতে পারতাম, আমি যদি ডরথি পার্কার এর কৌতুক শুনে হাসতে পারতাম!'' কিন্তু আমি তোমাদের বলতে এসেছি যে এই জায়গাগুলো এখনো আছে, তাদের অস্তিত্ব আছে। তাদের অস্তিত্ব আছে ইন্টারনেটের কোণায় কোণায়, যেখানে বৃদ্ধরা যেতে ভয় পায়। (হাসি) আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে আমরা যখন ১৯৬০ এর দিকে অ্যাগলো, নিউ ইয়র্ক আবিষ্কার করলাম, যখন আমরা অ্যাগলো কে সত্যি করলাম, তখন আমরা মাত্র শুরু করছিলাম। ধন্যবাদ। (হাততালি) বিজ্ঞানের এক উদীয়মান শাখার সাথে আপনাদেরকে পরিচয় করাতে চাচ্ছি, যেটি এখনও অনেকটা কল্পনাশ্রয়ী অথচ সাঙ্ঘাতিক রকমের রোমাঞ্চকর, এবং যা নিঃসন্দেহে খুবই দ্রুতবর্ধমান। কোয়ান্টাম জীববিদ্যা খুব সরল একটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজেঃ কোয়ান্টাম মেকানিক্স, সেই অদ্ভুত এবং বিস্ময়কর এবং ওজস্বী তত্ত্ব যা অণু-পরমাণুর সেই সূক্ষ্ম জগতে প্রযোজ্য যা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নশাস্ত্রকে এতভাবে খতিয়ে দেখছে, সে কি জীবকোষের গভীরেও সদা ক্রিয়াশীল? অন্য ভাষায়ঃ এমন কোন প্রক্রিয়া, পদ্ধতি, ঘটনা আছে কি যেগুলো জৈব অঙ্গে ঘটমান এবং যেগুলোর ব্যাখ্যা কেবলমাত্র কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাহায্যে করা যেতে পারে? এখন, কোয়ান্টাম বায়োলজি কোন নতুন বিদ্যা নয়; সেই ১৯৩০ এর প্রথমভাগ থেকেই এটি চলে আসছে। কিন্তু এটা মাত্র এক দশকের মত হবে, যখন সযত্ন গবেষণা -- যা বর্ণালিবীক্ষণ ব্যবহার করে বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাবে করা হয় -- সেখানে কিছু সুনির্দিষ্ট কাজকারবারের পরিষ্কার, পাকাপোক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে যেগুলো ব্যখ্যা করতে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর দরকার হয় কোয়ান্টাম বায়োলজিতে একীভূত হয় কোয়ান্টাম পদার্থবিদ, প্রাণরসায়নবিদ, আর অণু-জীববিদেরা -- একান্তই বহুমাত্রিক এক জ্ঞানের ক্ষেত্র এটি আমি এসেছি কোয়ান্টাম ফিজিক্স থেকে, অর্থাৎ আমি একজন অণু পদার্থবিদ। আমি তিন দশকেরও বেশি কাটিয়েছি কোয়ান্টাম মেকানিক্স কে আত্মস্থ করার প্রচেষ্টায় কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, নীলস বোর, বলেছিলেন, তুমি যদি এতে বিস্ময়াবিষ্ট না হও, তাহলে তুমি এটি বোঝোনি। তাই আমি খুশিই বোধ করি কেননা আমি এখনও এতে বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে আছি এটি একটি ভালো লক্ষণ। অর্থাৎ বিশ্বের একেবারে সূক্ষ্মতম কাঠামো নিয়ে আমি জ্ঞানচর্চা করি -- যেগুলো কিনা বস্তুজগতের মূল উপাদান। যদি আয়তনের পর্যায়ক্রমে চিন্তা করি, কোন একটি নিত্যদিনের বস্তু নিয়ে শুরু করি, যেমন টেনিস বল, এবং ক্রমান্বয়ে ছোট আকারের দিকে যেতে থাকি -- সূচের ছিদ্র থেকে জীবকোষ, তারপরে ব্যাকটেরিয়া, তারপরে এনজাইম -- অবশেষে পৌঁছে যাবেন সূক্ষ্ম বস্তুদের জগতে। এখন, আপনারা হয়তো ন্যানোটেকনোলজি নামটা শুনে থাকবেন। এক ন্যানোমিটার হল এক মিটারের বিলিয়ন ভাগের একভাগ। আমার চর্চার ক্ষেত্র হচ্ছে নিউক্লিয়াস, পরমাণুর গভীরে অতি ক্ষুদ্র একটি বিন্দু। তুলনার বিচারে এটি আরও ক্ষুদ্র। এটাই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এলাকা, এবং পদার্থবিদেরা ও রসায়নবিদেরা লম্বা সময় পেয়েছেন এটিকে জানার ও খতিয়ে দেখার। অপরদিকে, আমার মতে, জীববিদগণ বেশ হাল্কা ভাবেই শুরু করেছিলেন। তাঁদের অণুর বল-কাঠি মডেল নিয়েই তাঁরা বেশ তৃপ্ত। (হাসির রোল) বলগুলি হচ্ছে পরমাণু, আর কাঠিগুলি হচ্ছে তাদের মধ্যেকার বন্ধন আর পরীক্ষাগারে তাঁরা যখন এটি বানাতে পারেন না, আজকাল, তাঁদের খুবই শক্তিশালী কম্পিউটার আছে যেগুলো এসব সুবিশাল অণুর প্রতিরূপ বানিয়ে দেবে। এটি লাখ খানেক পরমাণু দিয়ে তৈরি একটি প্রোটিন। এটিকে ব্যাখ্যা করতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের খুব বেশি গভীরে যাবার কোনো দরকার নেই। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবির্ভাব হয়েছিল ১৯২০ এর দশকে। এটি কতগুলো চমৎকার ও জবরদস্ত গানিতিক নিয়ম ও ধারণা যা দিয়ে অতি সূক্ষ্ম বস্তুদের জগতকে ব্যাখ্যা করা যায়। এবং এটি আমাদের নিত্যদিনের জগতের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা এক জগত, অযুত-নিযুত পরমাণু দিয়ে তৈরি। জগতটি সম্ভাবনা আর দৈবযোগের উপরে ভিত্তি করে তৈরি। এটি একটি ধোঁয়াশাময় জগত। এটি একটি ভুতুড়ে জগত, যেখানে বস্তুকণারা ছড়িয়ে যাওয়া তরঙ্গের মত আচরণও করতে পারে। আমরা যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা কোয়ান্টাম ফিজিক্স কে ধরে নেই, বস্তুজগতের মুল ভিত্তি হিসাবে, তাহলে এটি বলাতে অবাক হবার কিছু নেই যে, কোয়ান্টাম ফিজিক্সের উপরেই জৈব রসায়ন দাঁড়িয়ে আছে। মোটের উপর, এটি সেই বিধান দেয় যা ব্যাখ্যা করে, কিভাবে পরমাণুগুলো জোট বেঁধে জৈব অণু তৈরি করে। জৈব রসায়নের জটিলতার পরিধি বাড়ালেই আমরা পাই অণু-জীববিদ্যা, যা নিশ্চিতভাবেই প্রাণে গিয়ে দাঁড়ায়। এটি এরকমই, এতে অবাক হবার কিছু নেই। প্রায় অবধারিত একটা ব্যাপার। আপনি বলেন, "হ্যাঁ, জীবিতাবস্থাকে ব্যখ্যা করতে হলে শেষমেশ কোয়ান্টাম মেকানিক্সেরই দ্বারস্থ হতে হবে" কিন্তু এটা অন্য সবকিছুর জন্যই প্রযোজ্য। এবং নিযুত-কোটি পরমানুদিয়ে তৈরি সব জড় বস্তুর জন্যও প্রযোজ্য। মূলতঃ কোয়ান্টামের এক পর্যায়ে আমাদেরকে এই অদ্ভুতুড়ে ব্যাপারগুলো খতিয়ে দেখতেই হবে কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে আমরা এটিকে ভুলে যেতে পারি। কারণ, নিযুত-কোটি পরমাণু যখন একত্রিত হয় তখন কোয়ান্টামের এই অদ্ভুত ব্যাপারগুলো স্রেফ হাওয়া হয়ে যায়। কোয়ান্টাম জীববিদ্যা এমনটি নয়। কোয়ান্টাম জীববিদ্যা এতটা অবধারিত নয়। অবশ্যই কোন কোন আণবিক পর্যায়ে জীবনের ভিত্তিমূল কোয়ান্টাম মেকানিক্সেই প্রথিত। কোয়ান্টাম জীববিদ্যার কাজ হল খুঁজে দেখা সেসব অনবধারিত -- অনির্দিষ্ট ধারনাগুলো, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অন্তর্ভুক্ত এবং দেখা যে, এগুলোর নিশ্চিতভাবে কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে কি না প্রাণ এর কর্মপন্থা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে। এটি আমার যথাযথ উদাহরণ, সেই অননুমেয়তার যা কোয়ান্টাম জগতে বিরাজমান। ইনি একজন কোয়ান্টাম স্কীচালক। দেখা যাচ্ছে তিনি অখণ্ডই আছেন, তিনি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবান, তারপরেও মনে হচ্ছে তিনি একই সময়ে গাছটির দুইপাশ দিয়ে চলে এসেছেন। বেশ, এরকম পথচিহ্ন যদি দেখে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই ভাববেন যে এটি নির্ঘাত কোন ভোজবাজি ছিল। কিন্তু কোয়ান্টাম জগতে সবসময়েই এমনটি ঘটে থাকে বস্তুকণারা একই সময়ে দুই জায়গায় অবস্থান করতে পারে। তারা একই সময়ে একাধিক কাজ করতে পারে। বস্তুকণারা বিস্তারনশীল তরঙ্গের মত আচরণ করতে পারে। এটি রীতিমত ঐন্দ্রজালিক মনে হয়। প্রায় শতবর্ষ ধরে পদার্থবিদ এবং রসায়নবিদেরা এই অদ্ভুতুড়ে ব্যাপারের সাথে অভ্যস্ত হবার চেষ্টায় আছেন। আমি জীববিজ্ঞানীদেরকে দোষ দেবোনা যে তাঁদের কোয়ান্টাম মেকানিক্স জানার কোন আগ্রহ ছিল না। দেখুন, অদ্ভুতুড়ে হলেও এটি কিন্তু খুবই কেতাদুরস্ত; এবং আমরা পদার্থবিদেরা পরীক্ষাগারে এটি বজায় রাখতে খুবই সচেষ্ট। আমরা গোটা ব্যবস্থাটির তাপমাত্রা পরম শূন্যে নামিয়ে আনি, আমরা বায়ুশূন্য স্থানে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাই, বাইরের যে কোন প্রভাব থেকে এটিকে আমরা মুক্ত রাখি। জীবন্ত জীবকোষের ভেতরকার উষ্ণ, গোলমেলে, জগাখিচুড়িময় অবস্থা থেকে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। জীববিদ্যা নিজেই, যদি অণু জীববিদ্যার কথা ধরেন, খুব ভালো ভাবেই জীবনের প্রক্রিয়া সমূহ বর্ণনা করতে পারে, রসায়ন -- রাসায়নিক বিক্রিয়া হিসাবে। আর এইসব সংক্ষেপক, পরিনামদর্শী রাসায়নিক বিক্রিয়া, দেখায় যে, আর পাঁচটা জিনিস আর জীবন মূলতঃ একই উপাদানে তৈরি, এবং আমরা যদি স্থূল জগতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে ভুলে থাকতে পারি, তাহলে জীববিজ্ঞানের জগতেও এটিকে ভুলে থাকতে পারবো। বেশ, কিন্তু একজন এমনটি মানতে চাননি। আরউইন শ্রডিংগার, যিনি শ্রডিংগারের বেড়ালের জন্য বিখ্যাত, একজন অস্ট্রিয়ান পদার্থবিদ। ১৯২০ এর দশকের কোয়ান্টাম মেকানিক্সের স্থপতিদের একজন। ১৯৪৪ সালে তিনি "জীবন কি?" নামে একটি বই লেখেন এটি সাঙ্ঘাতিক রকমের প্রভাব ফেলেছিল। এটি ফ্রান্সিস ক্রিক এবং জেমস ওয়াটসনকে প্রভাবিত করেছিল, যারা ডিএনএ এর ডাবল-হেলিক্স গঠন আবিষ্কার করেছিল। এই বইয়ের একটি বর্ননা ভাষান্তর করে তিনি বলেছিলেনঃ আণবিক পর্যায়ে জীবন্ত অবয়বগুলোতে সুনির্দিষ্ট বিন্যাস আছে, খুবই ভিন্ন রকমের একটি সংগঠন যা থার্মোডায়নামিক্স জনিত অণু পরমাণুর বিশৃঙ্খল ধাক্কা-ধাক্কির চেয়ে ভিন্ন, যেটি একই রকমের জটিল জড় বস্তুতে দেখা যায়। বাস্তবমে জীবন্ত বস্তুরা এই শৃঙ্খলা মেনে চলে বলেই ননে হয়, একটা সংগঠনে, ঠিক পরম শূন্য তাপমাত্রায় নামিয়ে আনা জড় বস্তুদের মত, যেখানে কোয়ান্টামের প্রভাবসমুহ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে এই সংগঠনের - এই শৃঙ্খলার মাঝে অসাধারণ কিছু আছে জীবন্ত কোষের অভ্যন্তরে। তাই শ্রডিংগার ধারনা করেছিলেন, জীবনের উপরে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভূমিকা থাকতে পারে। এটা খুবই কল্পনাপ্রসূত ও সুদূরপ্রসারী একটি ধারনা, এবং বাস্তবে এটি খুব বেশিদূর আগাতে পারেনি। কিন্তু প্রথমেই যেমনটি বলেছিলাম, গত দশক যাবত এক্ষেত্রে অনেক পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ হয়েছে যেগুলো দেখিয়েছে যে জীববিজ্ঞানের কিছু কিছু সুনির্দিষ্ট প্রপঞ্চ কোয়ান্টাম মেকানিক্স আশ্রিত বলে মনে হয়। এরকম কয়েকটি রোমাঞ্চকর ঘটনা সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাতে চাই। এটি কোয়ান্টাম জগতের অন্যতম বহুল-বিদিত প্রপঞ্চ, কোয়ান্টাম টানেলিং। বামপাশের বক্সে দেখা যাচ্ছে তরঙ্গসুলভ বিস্তারনশীল বিন্যাস যা কোয়ান্টাম পদার্থ -- ইলেকট্রনের মত কণাসমূহে দেখা যায়, যেটি দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসা কোন ছোট বল নয়। এটি একটি নির্দিষ্ট সম্ভাব্যতা বিশিষ্ট একটি তরঙ্গ যা ভেদ করতে সক্ষম কোন নিরেট দেয়াল, যেন একপাশ থেকে অন্যপাশে চলে যাওয়া কোন ভূত। ডানপাশের বক্সে একটি অনুজ্জ্বল আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছেন। কোয়ান্টাম টানেলিং অনুসারে একটা কণা একটা অভেদ্য দেয়ালে ধাক্কা খেলেও কোনভাবে, একেবারে ভোজবাজীর মত, এক পাশ থেকে অদৃশ্য হয়ে অন্য পাশে পুনরাবির্ভুত হয়। এটার সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা হল, আপনি যদি একটা বলকে দেয়ালের উপর দিয়ে ছুঁড়তে চান, তাহলে ওটাকে ওই দেয়াল পার হবার মত পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করতে হবে। কোয়ান্টাম জগতে আপনাকে এভাবে দেয়ালের উপর দিয়ে ছুঁড়তে হবে না, এটাকে দেয়ালে ছুঁড়লেও চলবে, এবং নির্দিষ্ট একটি ধনাত্মক সম্ভাবনা থাকবে যে, এটি একপাশে অদৃশ্য হয়ে অন্যপাশে আবির্ভুত হবে। এটি কিন্তু কোন কল্পকথা নয়। আমরা এতে খুশি -- বেশ, "খুশি" শব্দটা এখানে যথার্থ নয় (হাসির রোল) আমরা এতে অভ্যস্ত। (হাসির রোল) প্রতিনিয়তই কোয়ান্টাম টানেলিং ঘটে চলছে; সত্যি বলতে, এর ফলেই সুর্য আলো দেয়। কণাগুলো সেখানে পরস্পর একীভূত হয়, আর সুর্য্য কোয়ান্টাম টানেলিং এর মাধ্যমে হাইড্রোজেন কে হিলিয়ামে পরিণত করে। ৭০ এবং ৮০র দশকে ফিরে যাই, তখন উদ্ঘাটিত হল যে কোয়ান্টাম টানেলিং ঘটে থাকে এমনকি জীব কোষের অভ্যন্তরেও। এনজাইমগুলো, যারা জীবের মুল চালিকাশক্তি, রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রভাবক -- এনজাইমগুলো জৈব অণু যারা জীব কোষের ভিতরকার রাসায়নিক বিক্রিয়াতে গতি সঞ্চার করে অনেক অনেক গুন বেশি গতি সঞ্চার করে। এবং কিভাবে এটি ঘটে তা বরাবরই রহস্যাবৃত ছিল। বেশ, এটা উদ্ঘাটিত হল যে, এনজাইমগুলো বিবর্তিত হয়েছে একটি কৌশল রপ্ত করতে, যা অতিপারমাণবিক কণাগুলোকে স্থানান্তর করে, যেমন ইলেকট্রন এবং অবশ্যই প্রোটন, কোয়ান্টাম টানেলিং এর মাধ্যমে অণুর এক অংশ থেকে অন্য অংশে। এটি কার্যকর, এটি ক্ষিপ্রগামী, এটি অদৃশ্য করতে পারে -- একটি প্রোটন একজায়গা থেকে অদৃশ্য হয়ে অন্য জায়গায় দৃশ্যমান হতে পারে। এনজাইমের সাহায্যেই এমনটি ঘটে থাকে। সেই ৮০র দশকে এটি নিয়ে গবেষণা হয়েছিল, বিশেষ করে বার্কলের একটি গ্রুপ, জুডিথ ক্লিনম্যান। যুক্তরাজ্যস্থ অন্যান্য গ্রুপগুলিও সম্প্রতি নিশ্চিত করেছে যে, এনজাইমগুলো আসলেই এমনটি করে থাকে। আমার গ্রুপের করা গবেষণাতেও -- আমি যেমনটি বলেছি, আমি একজন পরমাণু পদার্থবিদ, কিন্তু আমি উপলদ্ধ্বি করেছি কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে ব্যবহার করতে পারি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই হাতিয়ারকে ব্যবহার করতে পারি। একটি প্রশ্ন আমরা করে থাকি ডিএনএ মিউটেশন এর পেছনে কোয়ান্টাম টানেলিং এর কোন ভূমিকা আছে কি না? অধিকন্তু, এটি কোন নতুন ধারনা নয়; এটি একেবারে ৬০ এর দশকের গোড়ায় নিয়ে যাবে। ডিএনএর দুই তন্তু, সেই দুই প্যাঁচ বিশিষ্ট গঠন, দাসা-কাঠি দিয়ে পরস্পর আটকানো; যেন একটি মোচড়ানো মই। এবং মইয়ের এই দাসা-কাঠিগুলো হল হাইড্রোজেন বন্ধন -- এখানে প্রোটনগুলি দুই তন্তুর মাঝখানে আঠা হিসেবে কাজ করে। তাই, আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখা যায় তারা ধরে রেখেছে এই বিশাল অণু গুলিকে -- নিউক্লিওটাইড গুলোকে -- একসাথে। আরেকটু নিবিড়ভাবে দেখা যাক। এটি আসলে কম্পিউটারে বানানো একটি প্রতিরূপ। মঝের ওই সাদা বল দুটো হল প্রোটন, এবং দেখতেই পাচ্ছেন, এটি একটি দ্বি-হাইড্রোজেন বন্ধন। একটি একদিকে বসে আছে; আর অন্যটি উল্টোদিকে খাড়া নেমে যাওয়া তন্তু দুটির সাপেক্ষে, যেগুলি এখানে দৃশ্যমান নয়। এমনও হতে পারে যে প্রোটন দুটি লাফ দিয়ে জায়গা বদল করল। সাদা বল দুটোকে লক্ষ্য করুন। এরা একপাশ থেকে লাফিয়ে অন্যপাশে চলে যেতে পারে। এই সময়ে যদি প্রতিলিপি তৈরির প্রাথমিক ধাপ হিসেবে, ডিএনএর তন্তু দুটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এবং প্রোটন দুটি বেঠিক অবস্থানে থেকে যায়, তাহলে এটি একটি মিউটেশনে পর্যবসিত হতে পারে। আধা শতাব্দী ধরে এটি আমাদের জানা। প্রশ্ন হল, এরকমটি ঘটার সম্ভাবনা কেমন, আর যদি ঘটেই তাহলে তা কিভাবে ঘটে? তারা কি এই দেয়ালের উপর দিয়ে যাওয়া বলদুটির মত লাফিয়ে জায়গা বদলায়? না কি তারা কোয়ান্টাম টানেলিং করে, এমন কি পর্যাপ্ত শক্তি না থাকা সত্ত্বেও? প্রাথমিক নিদর্শনে এখানে কোয়ান্টাম টানেলিং এর ভূমিকা থাকতে পারে বলেই মনে হয়। আমরা এখনও জানিনা, এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ; এটি এখনও একটি উন্মুক্ত প্রশ্ন। এটি কল্পনা নির্ভর, কিন্তু এটি সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির একটি যে, মিউটেশন প্রক্রিয়ায় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভূমিকা আছে, নিশ্চিতভাবেই এটির একটি বড় প্রভাব আছে, নির্দিষ্ট ধরনের কিছু মিউটেশন বোঝার ক্ষেত্রে, এমনকি সম্ভবত, ক্যান্সার কোষে পর্যবসিত করা মিউটেশনগুলোর ক্ষেত্রেও। জীববিজ্ঞানের অঙ্গনে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আরেকটি উদাহরণ হল কোয়ান্টাম কোহেরেন্স, জীববিজ্ঞানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়ার মাঝে, সালোক-সংশ্লেষণঃ বৃক্ষ এবং ব্যাকটেরিয়া সূর্যালোক গ্রহণ করে, এবং জৈববস্তু তৈরির কাজে সেই সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে। কোয়ান্টাম বস্তুর একই সময়ে একাধিক স্থানে থাকার ব্যাপারটাকেই কোয়ান্টাম কোহেরেন্স বলে। এটি সেই কোয়ান্টাম স্কি-চালক। ওটি একটি বস্তু যা তরঙ্গের মত আচরণ করে, যাতে করে এটি কেবল কোন একদিকে ভ্রমণ না করে, বরং একই সময়ে একাধিক পথে ধাবিত হতে পারে। কয়েক বছর আগে, তাবৎ বিজ্ঞানী সমাজ রীতিমত স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল যখন পরীক্ষালব্ধ প্রমাণসহ একটা প্রকাশিত রচনায় দেখানো হল যে, ব্যাকটেরিয়ার অভ্যন্তরে কোয়ান্টাম কোহেরেন্স ঘটে থাকে, যেগুলো সালোক সংশ্লেষণে সক্ষম। ধারনা করা হয় ফোটন, যা কিনা আলোর কণিকা, সুর্য্যালোক কণিকা, আলোর এই দলাগুলিকে কোষস্থ ক্লোরোফিল অণুগুলো আটকিয়ে ফেলে, তারপরে সেগুলোকে বিক্রিয়া-কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়, যেখানে সেগুলো রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত হয়। আর শুধুমাত্র একটা পথ অনুসরণ করে তারা সেখানে যায় না; তারা প্রত্যেকে একই সময়ে একাধিক পথ অনুসরণ করে, যাতে করে বিক্রিয়া-কেন্দ্রে যাবার পথগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর গুলোকে খুঁজে নিতে পারে বিকিরিত তাপ রূপে শক্তির কোন অপচয় না করেই। জীবকোষের অভ্যন্তরে কোয়ান্টাম কোহেরেন্স ঘটে চলেছে। চমকপ্রদ একটি ধারণা, এবং প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নতুন নতুন নিবন্ধের সাথে নিত্য নতুন প্রমাণও হাজির হচ্ছে, নিশ্চিত করছে যে, এটি আসলেই ঘটছে। এই অপরূপ, চমৎকার ধারনাটি হল আমার তৃতীয় এবং শেষ উদাহরণ। এটি এখনও অনেকটাই কল্পনাশ্রিত, কিন্তু আমাকে এটা আপনাদের সামনে তুলতেই হবে। এই ইউরোপিয়ান রবিনগুলি স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে পরিভ্রমণ করে একেবারে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত, প্রতি বছর শরতে, আর অন্য অনেক জলজ প্রাণী এবং এমনকি কীট-পতঙ্গের মত, তারা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে অনুভব করে করে পথ চিনে নেয়। কিন্তু, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রটি খুবই খুবই দুর্বল; ফ্রিজে লাগানো চুম্বকটির চেয়েও শতভাগ দুর্বল, কিন্তু তারপরেও কিভাবে যেন জৈব বস্তুর ভেতরকার রসায়নকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। সন্দেহের কোন অবকাশ নেই -- জার্মান এক পক্ষীবিশারদ জুটি, ওলফগ্যাং ও রসউইথা উইল্টস্কো, সেই ৭০ এর দশকে এটি নিশ্চিত করেছেন, রবিনগুলি কোনভাবে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে অনুভব করেই তাঁদের পথ খুঁজে নেয়, দিকনির্দেশনা দেবার জন্য -- এ যেন দেহস্থিত এক কম্পাস। কিভাবে এটি ঘটে? এটাই ছিল ধাঁধাঁ, রহস্য বেশ, এখন এখানে একমাত্র তত্ত্বটি হল -- আমরা জানিনা তত্ত্বটি সঠিক কি না, কিন্তু এটিই এক্ষেত্রে একমাত্র তত্ত্ব -- কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট নামক এক প্রপঞ্চের মাধ্যমে এটি ঘটে থাকে। রবিনগুলির চোখের রেটিনার ভিতরে -- আমি ফাজলামো করছি না -- রবিনের রেটিনার মাঝে ক্রিপ্টোক্রোম নামে এক ধরনের প্রোটিন আছে, যেটি আলোক-সংবেদী। এই ক্রিপ্টোক্রোমের ভেতরে একজোড়া ইলেকট্রন কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট অবস্থায় থাকে। তো, কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট হল সেই অবস্থা যখন দুটি কণার মাঝে বিস্তর দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কিভাবে যেন তারা পরস্পর সংযুক্ত হয়ে থাকে। এমনকি আইনস্টাইনও এই ধারনাটাকে ঘৃণা করতেন; তিনি এটাকে বলতেন "দূরবর্তী ভুতুড়ে কাজকারবার" (হাসির রোল) তাই, স্বয়ং আইনস্টাইন এটাকে পছন্দ না করলে বাকি সবাই তো অস্বস্তি বোধ করতেই পারি। কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট অবস্থায় একটি অণুর ভিতরে দুটি ইলেকট্রন খুব সুচারু তালে নেচে চলে যেটি খুবই সংবেদনশীলতা দেখায় পাখিটির উড়ন পথে, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সাপেক্ষে। আমরা জানিনা এটিই যথাযথ ব্যাখ্যা কি না, কিন্তু ওয়াও! এটি কি রোমাঞ্চকর হবে না যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্স পাখিদেরকে পথ চেনায়? কোয়ান্টাম জীববিদ্যা এখনও বলতে গেলে আঁতুড় ঘরেই আছে। এটি এখনও কল্পনানির্ভর। কিন্তু আমার বিশ্বাস এটি বিজ্ঞানের দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। আমি এও মনে করি যে আগামী দশকে বা কাছেপিঠে, আমরা উদ্ঘাটন করতে শুরু করব যে, এটি আসলে প্রাণ ছেয়ে আছে -- যে প্রাণ বিবর্তিত হয়ে কোয়ান্টাম জগতকে সদ্ব্যবহার করার কৌশল রপ্ত করে চলছে। দেখতে থাকুন, অচিরেই আরও চমক আসছে! ধন্যবাদ। (করতালি) হাত তুলুন যদি আগে কখনো এই প্রশ্নটির সম্মুখীন হয়ে থাকেন- "তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?" এখন যদি অনুমান করতে বলি যে, যখন আপনাকে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনার বয়স কতো ছিল তাহলে কি বলবেন? আঙ্গুল দেখালেই চলবে। তিন, পাঁচ, তিন, পাঁচ, পাঁচ, ঠিক আছে। এখন হাত তুলুন যদি এই প্রশ্নটি অর্থাৎ "তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?" প্রশ্নটি কখনো আপনার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল (হাসি) যে কোন দুশ্চিন্তা। আমিই এমন একজন যে কখনো এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি "তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?" দেখুন, সমস্যা এটা না যে আমার কোন কিছুতে আগ্রহ ছিল না। সমস্যা যে আমার অনেক কিছুতেই আগ্রহ আছে। স্কুলে পড়ার সময় আমি ইংরেজি, গণিত ও কলা পছন্দ করতাম এবং আমি ওয়েবসাইটও বানাতাম। আর "ফ্রাস্ট্রেইটেড টেলিফোন অপারেটর" নামক পাঙ্ক ব্যান্ডের হয়ে আমি গিটার বাজাতাম। আপনারা হয়তো আমাদের কথা শুনেছেন। (হাসি) এটা মাধ্যমিক স্কুলের পরেও চলতে থাকলো। এবং এক পর্যায়ে এসে আমি নিজের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য খেয়াল করা শুরু করি যে যখন কোন একটা বিষয়ে উৎসাহী হয়ে উঠতাম আমি তাতে ডুব দিতাম এবং একদম একাত্ম হয়ে যেতাম, আর সেটা যেই বিষয়ই হোক না কেন, তা আমি রপ্ত করে ফেলতাম। তারপর আমি এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছাতাম যখন বিষয়টা খুব একঘেয়েমি লাগতো। এবং সাধারণত আমি যেভাবেই হোক সেটাতে লেগে থাকার চেষ্টা করতাম, কারণ, ইতোমধ্যে আমি অনেক বেশী সময় এবং শক্তি এবং মাঝে মধ্যে অর্থও এই ক্ষেত্রটাতে দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু ক্রমশঃ এই একঘেয়েমি, এবং সেই অনুভূতি যেমন- আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি, এটা আর প্রতিযোগীতামূলক বলে মনে হচ্ছে না-- সেটা অনেক বেশী করেই মনে হতো। এবং তাই আমাকে সেটা বাদ দিতে হতো। কিন্তু তারপরই আমি অন্য কোন বিষয়ে কৌতুহলী হয়ে উঠতাম, আগের বিষয়টার সাথে একদম সম্পর্কহীন কোন কিছু, এরপর তাতে ডুব দিতাম। আর একদম একাত্ম হয়ে যেতাম এবং ভাবতাম- "আহা! আমার পছন্দের বিষয় খুঁজে পেয়েছি" তারপর আমি আবার সেই অবস্থায় এসে পৌঁছাতাম, যখন আবার আমার একঘেয়ে লাগা শুরু হতো। এবং অবশেষে আমি সেটাও করা বাদ দিয়ে দিতাম। কিন্তু তারপরেই আমি নতুন ও একদম ভিন্ন আরেকটা জিনিস আবিষ্কার করতাম। আর সেটাতে ডুব দিতাম। এই প্রবণতাটি আমার অনেক দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, দুটি কারণে। প্রথম কারণটি ছিল, আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে, কিভাবে আমি এরমধ্যে কোন একটাকে শেষ পর্যন্ত পেশা হিসেবে বেছে নিবো। আমি ভেবেছিলাম যে আমাকে অবশেষে কিছু একটা বেছে নিতেই হবে, আর আমার অন্য পছন্দের বিষয়গুলো ত্যাগ করতে হবে। এবং একঘেয়েমির কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আরেকটি কারণেও এটা আমাকে ভাবিয়ে তুলতো, সেটা আরেকটু বেশী ব্যক্তিগত কারণ। আমি দুশ্চিন্তা করতাম যে এটাতে কিছু একটা গোলমাল আছে, এই যে আমি কোন কিছুর সাথেই লেগে থাকতে পারি না, এটা আমার সমস্যাই বটে। আমার দুশ্চিন্তা ছিল- হয়ত আমি প্রতিশ্রুতি দিতে ভয় পাই, কিংবা আমার এলোমেলো জীবন-যাপন, কিংবা আমার আত্ম-বিনষ্টকারী বৈশিষ্ট্য কিংবা নিজের সাফল্যের ব্যাপারেও ভয়ে থাকি। আপনারা যদি আমার গল্পের সাথে এই অনুভূতিগুলোকে সম্পৃক্ত করতে পারেন, তাহলে, আমি আপনাদেরকে বলবো নিজেদের একটি প্রশ্ন করতে, যেই প্রশ্নটি তখন আমার নিজেকে করতে পারলে ভালো হতো। নিজেকে প্রশ্ন করুন- আপনি এটাকে অস্বাভাবিক হিসেবে চিহ্নিত করা শিখেছেন কোথা থেকে? এই যে কয়েকটা কাজ একসাথে পছন্দ করাটা। আমি বলছি এটা কোথা থেকে শিখেছেনঃ আপনি এটা শিখেছেন আমাদের সমাজ থেকে। আমাদেরকে প্রথমে জিজ্ঞেস করা হয়, "বড় হয়ে কি হতে চাও?" যখন আমাদের বয়স মাত্র পাঁচ বছর। আর সত্যি কথা বলতে কি ওই বয়সে আপনি কি বললেন সেটা আসলে কেউ গুরুত্বও দেয় না। (হাসি) এটাকে একটা সহজ-সরল প্রশ্ন হিসেবেই দেখা হয়, বাচ্চাদের কাছ থেকে চমৎকার কিছু উত্তর পাওয়া যায়, যেমন, "আমি নভোচারী হতে চাই", কিংবা "আমি একজন ব্যালে নাচিয়ে হতে চাই" অথবা "আমি বড় হয়ে ডাকাত হব"। এখানে হ্যালোউইন এর পোশাকও সন্নিবেশ করুন। (হাসি) কিন্তু আমরা বারবার এই প্রশ্নটার সম্মুখীন হতেই থাকি, যতোই আমরা বড় হতে থাকি; তবে সেটা বিভিন্ন রূপে, উদাহরণসরূপ- হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় তারা কলেজে আবশ্যক বিষয় হিসেবে কোনটি নিবে। এবং একটা পর্যায়ে এসে, "তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও" এই প্রশ্নটা এক সময়কার নিষ্কলুষ চর্চা থেকে পরিণত হয় এমন একটা কিছুতে যা আমাদের রাতে ঘুমাতে দেয় না। কেন? দেখুন, যেখানে এই প্রশ্ন বাচ্চাদেরকে তারা কি হবে সেই স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করে, সেখানে এটি তারা যে কতো কিছু হতে পারতো সেই স্বপ্ন দেখতে উৎসাহ দেয় না। আসলে, এটা তার উল্টোটাiই করে, কারণ যখন কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করবে- তুমি কি হবে? আপনি ২০টি ভিন্ন উত্তর দিতে পারবেন না, যদিও মুরব্বিরা মুচকি হাসতে পারেন এবং বলতে পারেন- "বাহ! খুব ভালো, কিন্তু তুমি একসাথে বেহালা নির্মাতা এবং মনোবিজ্ঞানী হতে পারবে না। তোমাকে বাছাই করতে হবে।" ইনি হচ্ছেন ডক্টর বব চাইল্ডস (হাসি) আর তিনি একজন বেহালা নির্মাতা এবং সাইকোথেরাপিস্ট। আর ইনি এমি অং, যিনি একজন ম্যাগাজিন সম্পাদক থেকে পরে অঙ্কনশিল্পী, উদ্যোক্তা, শিক্ষক এবং উদ্ভাবনী পরিচালক হয়েছেন। কিন্তু বেশিরভাগ বাচ্চারা এই মানুষদের সম্পর্কে জানেই না। তারা যেটা শুনে তা হচ্ছে- তাদেরকে একটা কিছু বাছাই করতে হবে। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা এর চেয়ে বেশি কিছু। সংকীর্ণভাবে মনোযোগ নিবদ্ধ করা জীবনের ধারণা আমাদের সমাজে বেশ আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয়। এটা হচ্ছে অনেকটা নিয়তির ধারণার মতো বা বলা যায় সেই একটি মাত্র প্রকৃত লক্ষ্য, বা এই ধারণা যে আমাদের প্রত্যেকের একটা মাত্র গুরুদায়িত্ব আছে যা আমরা করার জন্য এসেছি পৃথিবীতে আমাদের জীবদ্দশায়, এবং আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে যে সেটা কি এবং সেটার পিছনেই জীবনটাকে উৎসর্গ করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি এরকম না হয়ে থাকেন? যদি আপনি অনেকগুলো বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন? এবং কয়েকটি বিভিন্নধরণের কাজ আপনি করতে চান? আচ্ছা, এই ক্ষেত্রে সমাজে আপনার মতো একজনের কোন জায়গা নেই। তাই আপনি একা বোধ করতে পারেন। আপনার কাছে মনে হতে পারে আপনার কোন লক্ষ্য নেই। এবং আপনার এটাও মনে হতে পারে যে নিজেরই কোন সমস্যা আছে। --আপনার কোন সমস্যা নেই -- কারণ আপনি হচ্ছেন একজন "মাল্টিপটেনশিয়ালাইট" বা "বহু গুণে গুণান্বিত একজন"। (হাসি) (তালি) একজন মালটিপটেনশিয়ালাইট অনেক বিষয়ে কৌতূহল এবং সৃজনশীল সাধনা সমৃদ্ধ একজন মানুষ। এটা আসলে কমই বলা হলো। শব্দটাকে তিন ভাগে ভাগ করলে বোধ হয় একটু সুবিধা হবেঃ মালটি, পটেনশিয়াল এবং আইট। আপনি কাছাকাছি অর্থের অন্য শব্দগুলোর কোন একটাও ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, পলিম্যাথ বা রেনেসাঁ মানব। আসলে, ইতিহাসে রেনেসাঁর সময়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা দেখানোটাকেই আদর্শ হিসেবে ধরা হতো। বারবারা শের আমাদেরকে উল্লেখ করেন "স্ক্যানারস" বলে। আপনার যেই নাম খুশি ব্যবহার করুন অথবা নিজেই একটা নাম বানিয়ে নিন। যদিও এটা আমার কাছে আলাদা সম্প্রদায়ে ভাগ হয় যাওয়ার মত মনে হচ্ছে, আমরা সবার পরিচয় যে অভিন্ন হবে তা মানতেও রাজি না। (হাসি) অনেকেই সহজে ভাবে আপনার বহুক্ষেত্রে যে সম্ভাবনা আছে সেটা আপনার একটা সীমাবদ্ধতা বা দুর্দশা, যা থেকে আপনাকে নিস্তার পেতে হবে। কিন্তু আমি যা জেনেছি মানুষের সাথে কথা বলে, এবং তাদের মতামতগুলো সম্পর্কে আমার ওয়েবসাইটে লিখে, তা হচ্ছে- এইরকম হওয়ার জন্য প্রচন্ড কিছু শক্তিমত্তার দরকার হয়। আমি এখন তিনটি সুপার পাওয়ারের কথা বলবো, যেগুলো একজন মাল্টিপটেনশিয়ালাইট ধারণ করে। ১ নাম্বার- একাধিক বুদ্ধির সমন্বয়। মানে হচ্ছে- দুই বা ততোধিক ক্ষেত্রকে এক করা এবং তাদের সমন্বয়ে নতুন কিছু তৈরি করা। শ হোয়াং এবং র‍্যাচেল বিংক্সের অভিন্ন আগ্রহের বিষয়বস্তুগুলো ছিল- মানচিত্রবিজ্ঞান, উপাত্ত প্রদর্শন, ভ্রমণ, গণিত এবং নকশা, যখন তারা মেশু প্রতিষ্ঠা করেন। মেশু হচ্ছে ক্রেতার পছন্দ ও ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী অলংকার তৈরির একটি প্রতিষ্ঠান। শ এবং র‍্যাচেল এমন ভিন্নধর্মী বুদ্ধি বের করতে পারলেন তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার অসাধারণ সমন্বয়ের কারণেই। উদ্ভাবন আসে একাধিক বিষয়ের সমন্বয়েই। আর সেখান থেকেই আসে নতুন নতুন ধারণাগুলো। আর মাল্টিপটেনশিওলাইটগণ তাদের সকল ক্ষেত্র ও প্রেক্ষাপট সাথে নিয়েই, এই সমন্বয় বিন্দুগুলোতে পৌঁছাতে সক্ষম হন। মাল্টিপটেনশিওলাইটের দ্বিতীয় বৃহৎ শক্তিমত্তা হচ্ছে- দ্রুত শেখা। যখন মাল্টিপটেনশিওলাইটরা কোন কিছুতে আগ্রহী হয়ে ওঠে, আমরা আশাবাদী হয়ে উঠি। আমরা যা যা অর্জন করতে পারবো তার সবই পর্যবেক্ষণ করি। আমরা শিক্ষানবিশ হতে খুব অভ্যস্ত, কারণ আমরা আগে অনেকবার বহুক্ষেত্রে শিক্ষানবিশ হয়েছিলাম, আর এর মানে হচ্ছে, আমরা ভয় পাই না- নতুন কোন কিছু চেষ্টা করে দেখতে এবং গতানুগতিক স্বাচ্ছন্দ্যকর পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসতে। আরও আছে, অনেক দক্ষতাই এক বিষয় থেকে আরেক বিষয়ে স্থানান্তর করা যায়, এবং আমরা আগের শেখা জ্ঞানগুলো প্রত্যেক নতুন শেখার ক্ষেত্রটাতে কাজে লাগাতে পারি। তাই আমরা আসলে সবসময় শূন্য থেকে শুরু করি না। নোরা ডান হচ্ছেন একজন পরিপূর্ণ পরিব্রাজক এবং ফ্রিল্যান্স (মুক্তপেশা) লেখিকা। শিশুকালে কনসার্ট-পিয়ানোবাদক হিসেবে তার একটা অবিশ্বাস্য দক্ষতা ছিল, সেটা হলো পেশীর স্মৃতির উন্নতিসাধন। এখন তার জানামতে তিনিই সবচেয়ে দ্রুতগতির মুদ্রাক্ষরিক। (হাসি) লেখিকা হওয়ার আগে নোরা ছিলেন একজন আর্থিক পরিকল্পনাকারী। তাকে বিক্রয়ের সূক্ষ্মতর বিষয়গুলিও শিখতে হয়েছে যখন তিনি তার চর্চা শুরু করছিলেন, আর এখন এই দক্ষতা তাকে সম্পাদকদের দৃষ্টি আকর্ষণকারী দরখাস্ত লিখতে সাহায্য করে। আপনাকে যা টানে সেটা করতে যাওয়াটা আসলে কোনভাবেই সময়ের অপচয় নয়, এমনকি যদি একসময় সেটা ছেড়েও দেন। আপনি সেই জ্ঞানটা পুরোপুরি ভিন্ন একটা ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবেন, এমনভাবেই যেটা আপনি প্রথমে হয়তো ভাবতেও পারেননি। মাল্টিপটেনশিওলাইটদের তৃতীয় বড় শক্তি হচ্ছে- খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা। এটা হচ্ছে প্রয়োজন অনুসারে রুপান্তরিত হতে পারার ক্ষমতা, আর সেটা যেকোন অবস্থায়। এব কাহুডো কখনো একজন ভিডিও পরিচালক, আবার কখনো একজন ওয়েব ডিজাইনার, কখনো একজন উদ্ভাবনী উদ্যোগের পরামর্শক, আবার কখনো একজন শিক্ষক, এবং মনে হয় কখনো কখনো একজন জেমস বন্ডও। (হাসি) তিনি একজন মূল্যবান ব্যক্তি কারণ তিনি ভালো কাজ করেন। এমনকি তিনি আরো মূল্যবান কারণ তিনি বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন, ক্লায়েন্টদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে। 'ফাস্ট কোম্পানি ম্যাগাজিন' এই খাপ খাওয়ানোর দক্ষতাকে চিহ্নিত করেছে বিকশিত হওয়ার জন্য এককভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দক্ষতা অর্জন করতে হবে এই একুশ শতকে, সেটা হিসেবে। অর্থনৈতিক বিশ্ব এতো দ্রুত এবং অনিশ্চিতভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে যে, যে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকেই পরিবর্তনশীলভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে দ্রুত বর্ধনশীল বাজারের চাহিদা পূরণ করতে। নতুন ভাবনাগুলো সংশ্লেষণ, দ্রুত শেখা এবং খাপ খাওয়াতে পারাঃ এই তিনটি দক্ষতাতেই মাল্টিপটেনশিওলাইট মানুষেরা খুবই পারদর্শী হয়ে থাকে, এবং তারা এই তিনটি দক্ষতাই হারাতে পারে যদি তাদের লক্ষ্য সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়। সমাজ হিশেবে আমরা সুবিধাভোগীও হতে পারি এদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে তাদেরকে তাদের মতো হওয়ার জন্য। এই মুহূর্তে পৃথিবীতে আমাদের অনেকগুলো জটিল ও বহুমুখী সমস্যা আছে। এবং এগুলো সমাধানের জন্য আমাদের সৃষ্টিশীল এবং চিন্তাশীল মানুষ দরকার। এখন, ধরুন আপনি সহজাত ভাবেই একজন বিশেষজ্ঞ ধরনের মানুষ। আপনি মায়ের গর্ভ থেকেই ঠিক করে এসেছেন যে আপনি একজন শিশু বিষয়ক নিউরোসার্জন হতে চান। চিন্তার কিছু নেই, আপনারও কোন সমস্যা নেই। (হাসি) আসলে, কিছু সেরা দল তৈরি হয়েছে বিশেষজ্ঞ এবং মাল্টিপটেনশিওলাইটের সমন্বয়ে। বিশেষজ্ঞরা বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে ধারণা বাস্তবায়িত করতে পারে, আর মাল্টিপটেনশিওলাইটেরা প্রকল্পের মধ্যে ভিন্নমুখী জ্ঞানের ঔদার্য নিয়ে আসে। এটি সুন্দর একটি জুটি। কিন্তু আমাদের সবারই জীবন ও পেশাজীবনকে ঢেলে সাজানো উচিৎ আমাদের ইচ্ছা ও পারঙ্গমতা অনুযায়ী। এবং দুঃখজনকভাবে, মাল্টিপটেনশিওলাইটদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুপ্রাণিত করা হয় পুরোপুরি তাদের বিশেষজ্ঞ সঙ্গীদের মতো একমুখী হওয়ার জন্য। তাই এটা থেকে বলা যায়, এই বক্তৃতা থেকে যদি আপনি একটি জিনিস নিয়ে যান, আমি আশা করি সেটা হবে- আপনার অন্তর্নিহিত আকাঙ্খাটাকে আলিঙ্গন করুন সেটা যাই হোক না কেন। যদি আপনি সহজাতভাবে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন, তাহলে যেকোন মূল্যে, একমুখী বিশেষজ্ঞ হোন। সেখানেই আপনি সবচেয়ে ভালো কাজ করবেন। কিন্তু এই রুমের মাল্টিপটেনশিওলাইটদের উদ্দেশ্যে, আপনাদেরসহ যারা এই মাত্র বুঝতে পারলেন গত ১২ মিনিটের মধ্যে, যে আপনিও একজন। (হাসি) আপনাদেরকে আমি বলবো, আপনার আকর্ষণের বিষয়গুলোকে আলিঙ্গন করুন। অজানার পথে আপনার কৌতুহলগুলোকে অনুসরণ করুন। দক্ষগুলোর সমন্বয় বিন্দুগুলো বের করুন। অন্তর্নিহিত নকশাকে সাদরে গ্রহণ করলে আমরা আরো সুখী, নির্ভেজাল জীবনযাপন করতে পারবো। এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরত্বপুর্ণ- আমরা বহু গুণে গুণান্বিতজন, পৃথিবীর দরকার আমাদেরকে। ধন্যবাদ। (তালি) (গান) এই বৃহৎ মহাবিশ্বের কোথাও না কোথাও অন্য অনেক গ্রহ নিশ্চয়ই আছে, যা জীবন দিয়ে ভরপুর, কিন্তু কেন আমরা তা দেখতে পাই না? এই নিয়ে এনরিকো ফার্মির ১৯৫০ সালে দেওয়া একটা উক্তি আছে "সবাই কোথায়?" ষড়যন্ত্র তাত্তিকরা বলে ইউএফও-রা সবসময়ই ঘুরে যাচ্ছে এ বিশ্ব আর সে খবরগুলো ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সত্যি বলতে সেগুলো আসলে ততটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিন্তু সেটা একটা ধাধাঁর জন্ম দেয়। গেল বছরগুলোতে কেপলার মানমন্দির নিকটবর্তী তারাগুলোর কাছে শত শত গ্রহ খুঁজে পেয়েছে, আর আপনি যদি সেই উপাত্তের হিসেবে কল্পনা করে দেখেন, তাহলে দেখা যাবে এমন ১০ হাজার কোটি গ্রহ আছে শুধুমাত্র আমাদের ছায়াপথে। যদি প্রতি ১০,০০০ এর মধ্যে একটিতে এমন আবহাওয়া থাকে যার মধ্য দিয়ে জীবনের সৃষ্টি হয়, তারপরেও অন্তত ৫০ লক্ষ গ্রহ পাওয়া যাবে যাতে জীবন-উপযোগী উপাদান থাকতে পারে এবং তা শুধু মিল্কিওয়েতেই! ধাধাঁটা এখানেই আমদের পৃথিবী বিগ ব্যাং এর ৯ লক্ষ কোটি বছর পরে গঠিত হয়েছে অথচ যে অগণিত তারা আছে আমাদের ছায়াপথে সেগুলো অনেক আগেই গঠিত হবার কথা এবং সেগুলোতে জীবন সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে পৃথিবীর চেয়ে কোটি, অথবা অন্তত অনেক লক্ষ বছর আগে। যদি তাদের মাঝে অল্প কিছুও বুদ্ধিমান জীবের জন্ম দেয় এবং সেগুলো বিভিন্ন প্রযুক্তির সৃষ্টি করে, তাহলে সে প্রযুক্তি ১০ লক্ষ বছরের মত সময় পাবে আর জটিলতর এবং আর ক্ষমতার অধিকারী হতে! আমাদের পৃথিবীতে আমরা দেখেছি কি করে চমকপ্রদভাবে প্রযুক্তি গত ১০০ বছরে এগিয়ে গেছে! ১০ লক্ষ বছরের মাঝেই, একটা উন্নত ভিনগ্রহের সভ্যতা একটা ছায়াপথের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে, হয়ত তৈরি করতে বিশাল শক্তি সঞ্চয়ী যন্ত্র কিংবা বসতস্থাপনকারী স্পেসশীপের বহর অথবা রাতের আকাশ ছবি এঁকে ভরিয়ে ফেলতে পারে। অন্তত আপনি আশা করবেন যে তারা তাদের অস্তিত্ত জানান দেবেই নিজ থেকে অথবা অন্য কোন ভাবে সাধারন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সিগনালের মাধ্যমে অথবা অন্য কোন উপায়ে! অথচ আমরা বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রমাণ দেখতে পারছি না। কিন্তু কেন? এর বিভিন্ন উত্তর হতে পারে! এগুলোর মধ্যে কিছু রহস্যময়! হতে পারে একটি দারুন রকমের বুদ্ধিমান সভ্যতা আমাদের ছায়াপথ অধিকার করে ফেলেছে এবং সেই সাথে কঠোরভাবে যোগাযোগবিহীনভাবে বসবাস করছে কারন তারা হয়ত ভয় পায় কোন প্রতিযোগী সভ্যতার ব্যাপারে। তারা হয়ত কোথাও বসে আছে ধ্বংস করার জন্য যদি কেউ হুমকি স্বরূপ হয়ে দাড়াঁয়। কিংবা তারা হয়ত অতটা বুদ্ধিমান নয়, অথবা হয়ত বুদ্ধিমত্তার যে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নততর প্রযুক্তি তৈরি করার সামর্থ্য জন্মায়, তা হয়ত অনেক বেশি দূর্লভ আমাদের ভাবনার চেয়েও। এই যেমন, আমাদের পৃথিবীতে তা হয়েছে মাত্র ৪শ কোটি বছর আগে। হয়ত আমরা অনেক বেশি ভাগ্যবান! হতে পারে আমরা আমাদের ছায়াপথের প্রথম সে রকম সভ্যতা। অথবা এমনটা হতে পারে যে, সভ্যতাগুলোই তার নিজেকে ধ্বংস করার বীজ নিয়ে চলে তার নিজস্ব সৃষ্টিগুলো নিজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারার অক্ষমতার কারনে। তবে এর কিছু আশাব্যঞ্জক উত্তরও আছে। যেমন ধরুন, আমরা কিন্তু অত ভালভাবে খুঁজে দেখছি না। এবং আমরা এর পেছনে খুব কম অর্থ ব্যয় করছি! আমাদের ছায়াপথের সব তারার মাঝে খুব অল্প কিছু তারাই ভালভাবে দেখা হয়েছে কোন সিগনালের আশায়। কিংবা হতে পারে আমর ঠিক দিকে খুজঁছি না। হতে পারে যখন সভ্যতাগুলো উন্নত হতে থাকে, তারা অনেক তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করার এমন সব প্রযুক্তি আবিস্কার করে ফেলে যা অনেক বেশি উন্নত এবং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের চেয়েও বেশি কার্যকরী। হতে পারে যা কিছু হয় তা হয়ত এই নতুন আবিস্কার হওয়া ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জির এর ভেতরে হয়, যা এই মহাবিশ্বের বেশিরভাগ ভরের জন্য দায়ী। অথবা আমরা হয়ত ভুল মাপে দেখছি। হয়ত বুদ্ধিমান সভ্যতাগুলো উপলব্ধি করতে পেরেছে যে জীবন হল শুধু কিছু জটিল ধারার তথ্য যারা নানাভাবে নিজেদের মাঝে যোগাযোগ করে একটা সুন্দর উপায়ে, আর সেটা অনেক ভালো ভাবে সম্ভব একটা ছোট পরিসরে! পৃথিবীতে যেমন স্টেরিও সিস্টেম গুলো একটা বেঢপ অবস্থা থেকে ছোট হয়ে একটা সুন্দর আইপডে পরিণত হয়েছে, তেমনি হয়ত উন্নত জীবনগুলো ছোট করে ফেলেছে যেন পরিবেশের উপর চাপ কম পড়ে। হয়ত তারা নিজেদের আনুবীক্ষনীক করে ফেলেছে। হয়ত এই সৌরজগৎ ভিনগ্রহের মানুষ দিয়ে ভরে গেছে, অথচ আমরা তা বুঝতেও পারছি না। হতে পারে আমাদের মাথার এই চিন্তাগুলোই এক ধরনের এলিয়েন জীবন। নাহ, ভাবনাগুলো মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে! মনে হয় ভিনগ্রহের মানুষগুলো আমাকে ওটা বলিয়ে নিয়েছে! কিন্তু এটা একটা মজার ধারনা যে হয়ত এই চিন্তাগুলোর নিজেদের একটা জীবন আছে আর তারা তাদের স্রষ্টাদের চেয়েও বেশি বাচঁতে পারে। হতে পারে আমরা যাকে জীবন বলি তা আসলে শুধু একটা পর্যায়। এমনটা হতে পারে, পরবর্তী ১৫ বছরের মাঝে আমরা হয়ত বর্ণালিবীক্ষন দিয়ে সত্যিকার তথ্য দেখতে পাব যা থেকে আমরা বুঝতে পারব আশেপাশের কোন গ্রহ গুলো জীবনধারনের জন্য উপযোগী! আর এর মাঝে সেটি(SETI) দ্য সার্চ ফর এক্সট্রা টেরিস্ট্রিয়াল ইনটেলিজেন্স তাদের তথ্যগুলো জন সাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছে যাতে লক্ষ লক্ষ বিজ্ঞানী নাগরিকরা, যার মাঝে আপনিও থাকতে পারেন, এমন শক্তি এনে দেবে জনসমাজকে যেন তারা এই খোজেঁ যোগ দিতে পারে। আর এই পৃথিবীতে অসাধারন সব পরীক্ষা চলছে একদম শুরু থেকে জীবন সৃষ্টি করার। জীবন আমাদের পরিচিত ডি.এন.এ লিপি থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন কিছুও হতে পারে। আর এ সব কিছুই আমাদের সাহায্য করবে এটা বুঝতে যে আসলেই আমাদের এই মহাবিশ্ব কি জীবন দিয়ে ভরপুর বা আমরা সত্যিই একা কি না! যে উত্তরই হোক না কেন, এটা দারুন অনুপ্রেরণাজনক। কারন যদি আমরা সত্যিই একা হয়ে থাকি, এবং এই ব্যাপারটা যে আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি আর এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করতে পারি এটাই হয়ত এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আর আপনার জন্যে আমার একটা দারুন খবর রয়েছে! জ্ঞান এর সন্ধান আর তা বোঝা কখনই নিরানন্দকর কিছুতে পরিণত হয় না। বরং ঠিক এর উল্টোটা হয়। যত বেশি জানা যায়, এই পৃথিবীর সব কিছু আরো অসাধারন মনে হয়। আর এই পাগল করা সম্ভাবনা আর উত্তর খুঁজে না পাওয়া প্রশ্ন গুলোই আমাদের সামনে নিয়ে যায়! আর তাই বাচুঁন আগ্রহ নিয়ে ! আমি চেষ্টা করছি অন্য একটি গ্রহ খুঁজে বের করতে যেখানে জীবনের সন্ধান পাওয়া যাবে। আমি এই গ্রহটা খালি চোখে অথবা এখন পর্যন্ত বানানো সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়েও দেখি না। কিন্তু আমি জানি গ্রহটার অস্তিত্ব আছে। এবং প্রকৃতিতে বিদ্যমান অসঙ্গতি বুঝতে পারা এব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। আমাদের পৃথিবীতে যেখানে পানি আছে, জীবন আছে। তাই আমরা এমন সব গ্রহ খুঁজি যেগুলো তাদের নক্ষত্র থেকে সঠিক দূরত্বে। এই দূরত্বে, চিত্রে নীল কালিতে দেখানো বিভিন্ন তাপমাত্রার নক্ষত্রের জন্য, গ্রহগুলো যথেষ্ট উষ্ণ হতে পারে, যেখানে পানি প্রবাহিত হতে পারবে। যেরকমটা লেক এবং সাগরে হয়, যেখানে জীবন থাকতে পারে। কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানী তাদের সময় এবং শক্তি এই নক্ষত্র থেকে এই দূরত্বের গ্রহ খুঁজে পেতে ব্যয় করছেন। তাদের কাজ যেখানে শেষ হয় সেখান থেকে আমার কাজ শুরু। আমি সেইসকল গ্রহের জলবায়ুর মডেল তৈরি করি। এবং তা যেকারণে গুরুত্বপূর্ণঃ দূরত্ব ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হয় যা একটি গ্রহের জীবনের পক্ষে অনুকূল। শুক্র গ্রহের কথাই ধরুন। এর নাম রোমান ভালবাসা এবং সৌন্দর্যের দেবীর নামে। এর ভয়াবহ, গগনচারী চেহারার কারণে কিন্তু মহাকাশযানের মাধ্যমে পাওয়া পরিমাপ ভিন্ন গল্প প্রকাশ করে। পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৯০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় সীসা গলে যায়। এর ঘন বায়ুমণ্ডল এর জন্য দায়ী, সূর্যের থেকে দূরত্বের কোন সম্পর্ক নেই। তা স্টেরয়েডের উপর গ্রীণহাউজ প্রভাব সৃষ্টি করে, সূর্য থেকে পাওয়া তাপ ধরে রাখে, এবং পৃষ্ঠের তাপমাত্রা অসহনীয় করে ফেলে। প্রথমে শুক্র সম্পর্কে যা ধারণা করা হয়েছিল বাস্তব তার থেকে অনেক ভিন্ন। আমাদের নিজেদের সৌরমন্ডল থেকে থেকে এরকম শিক্ষা নিয়ে, আমরা শিখেছি যে গ্রহের বায়ুমণ্ডল এর জলবায়ু এবং জীবনের বাহক হবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি না এসব গ্রহের বায়ুমণ্ডল কেমন হতে পারে কারণ গ্রহগুলো তাদের নক্ষত্রের তুলনায় আরও অনেক ক্ষুদ্র এবং আমাদের থেকে অনেক দূরে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের কাছে গ্রহগুলোর মধ্যে যেটা পৃষ্ঠে পানির প্রবাহ সমর্থন করে তার নাম, গ্লিজ ৬৬৭ সিসি(Cc)-- অনেক সুন্দর নাম, তাইনা? সুন্দর ফোন নম্বর নামের জন্য। গ্রহটা প্রায় ২৩ আলোকবর্ষ দূরে। তা প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন মাইল দূরে। নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণরত সুদূর গ্রহের জলবায়ুর গঠন পরিমাপের চেষ্টা করা কঠিন এক কাজ। এটা অনেকটা গাড়ির হেডলাইটের আলোয় এক মাছিকে উড়ে যেতে দেখার চেষ্টা করা। এখন কল্পনা করুন যে গাড়িটা ১০০ ট্রিলিয়ন মাইল দূরে। এবং আপনি মাছিটা সঠিক রঙ জানতে চাইছেন। তাই আমি কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করি পরিমাপ করার জন্য যে কি ধরনের আবহাওয়া গ্রহটির প্রয়োজন জীবনের উপযোগী জলবায়ু এবং পানির জন্য। এইযে এখানে একজন শিল্পীর কল্গনায় কেপলার-৬২এফ গ্রহ,, পৃথিবীর সাথে তুলনা করে। েটা প্রায় ১২০০ আলোকবর্ষ দূরে, এবং পৃথিবীর তুলনায় মাত্র ৪০% বড়। এনএসএফ এর অর্থায়নে আমাদের প্রকল্প বের করেছে যে, গ্রহটিতে প্রবাহিত পানি থাকার মতো যথেষ্ট উষ্ণতা রয়েছে, মডেলগুলো বিভিন্ন জলবায়ু ও কক্ষপথের ঘূর্ণন বিবেচনায় করা হয়। তাই আমি চাইবো ভবিষ্যতের টেলিস্কোপগুলো যেন এই গ্রহগুলোর খোঁজ নেয়, জীবনের অস্তিত্বের খোঁজে। গ্রহগুলোর পৃষ্ঠে বরফের উপস্থিতিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ুর ক্ষেত্রে। বরফ, দীর্ঘ লাল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে, এবং হ্রস্ব, নীল আলো প্রতিফলিৎ হয়। যেকারণে এই হিমশৈলটি ছবিতে নীল দেখাচ্ছে। সূর্যের লাল আলো বরফের মধ্যে শোষিত হচ্ছে। একমাত্র নীল আলো তলদেশে পৌছায়। এরপর তা আমাদের চোখে প্রতিফলিত হয় এবং আমরা নীল বরফ দেখতে পাই। আমার মডেল দেখায় যে, অপেক্ষাকৃত শীতল নক্ষত্র প্রদক্ষিণরত গ্রহ আসলে উষ্ণ নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করা গ্রহের চেয়ে উষ্ণ হতে পারে। অন্য অসঙ্গতিও আছে - বরফ শীতল নক্ষত্রগুলো থেকে দীর্ঘ তরঙ্গের আলো শোষণ করে। এবং এই আলো আর তাপ, বরফকে উত্তপ্ত করে। জলবায়ু মডেল ব্যবহার করে কিভাবে এসব অসঙ্গতি গ্রহ নক্ষত্রের আচরণকে প্রভাবিত করে তা অন্বেষণ করা জীবনের অস্তিত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এবং এটা করা কোন বিষয় নয় যে এই বিষয়ে আমি একজন বিশেষজ্ঞ। আমি একজন আফ্রিকান-আমেরিকান মহিলা জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও পাশ্চাত্য দর্শন বিষয়ে প্রশিক্ষিত অভিনেত্রী যে রূপসজ্জা করতে ভালবাসে এবং, ফ্যাশন পত্রিকা পড়ে। তাই প্রাকৃতিকভাবেই আমি প্রকৃতির এই অসঙ্গতির মহাত্ম বুঝতে পারি। (হাসি) (হাততালি) ...এবং কিভাবে সবাইকে অন্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধানের কথা জানাতে পারে। আমার প্রতিষ্ঠান, রাইজিং স্টারগার্লস, স্কুলপড়ুয়া মধ্যবয়সী কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের জ্যোতির্বিদ্যা শেখায় থিয়েটার, লেখা এবং ভিজুয়াল আর্ট ব্যবহার করে। এটা আর একটা অসঙ্গতি-- বিজ্ঞান এবং শিল্প কখনো একসাথে যায় না। কিন্তু দুটোর সমন্বয় এই মেয়েদেরকে পরিপূর্ণ করে গড়ে তোলে, তারা প্রতিনিয়ত শিখছে, এবং হয়তো একদিন তারা বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের খাতায় নাম লেখাবে যারা আসলে অসঙ্গতিতে ভরা। এবং তাদের নিজস্ব পটভূমি ব্যবহার করে, আবিষ্কার করবে যে আমরা আসলেই এই জগতে একা নই। ধন্যবাদ। এই স্লাইড শো টা আমি দুবছর আগে প্রায় দু হাজার বার দিয়েছিলাম। আজ সকালের এই ছোট স্লাইড শো টা আমি এটা একদম প্রথম বার দেখাচ্ছি,তাই- ঠিক আছে আমি এটাকে আর বাড়াতে চাই না, আমি আসলে বার টা কে নিচে করতে চাইছি। কারন আমি এটাকে একসাথে এনেছি চ্যালেঞ্জ এর মুখমুখি দাঁড়াব বলে। ক্যারেন আমস্ত্রং এর দারুন উপস্থাপনা আমায় মনে করিয়ে দেয় যে ধর্ম সত্যি বোঝবার জিনিস। এটা শূধু বিশ্বাস নয়,এটা আচরন। হয়ত আশাবাদ সম্বন্ধে আমরা এক ই কথা বলব। আমরা কোন সাহসে আশাবাদী হব? আশাবাদ কে কখন কখন বিশ্বাস এবং বুদ্ধিদীপ্ত দৃষ্টিভঞী হিসেবে বর্ননা ক্কয়া হয়, মহাত্মা গান্ধী র একটা বিখ্যাত উক্তি, "তুমি পৃথিবীতে যা পরিবতন চাও তা নিজের মধ্যে আন।" এবং ফলাফল সম্বন্ধে আমরা আশাবাদী হতে চাইলে সেটা আপনা থেকেই হাবে। বিশ্বাস থেকেই আসবে,শুধু বিশ্বাস নতুন ব্যবহারের জন্ম দেবে।কিন্তু "আচরন" শব্দটী এই আলোচনায় অনেকসময় ভুল ভাবে বোঝানো হয়। আমি পরিবর্তনের পক্ষে যে নিজের বাড়ির জন্যে লাইট বাল্ব,সংকরায়নে পক্ষপাতী, এবং আমি আমার বাড়ীর ওপরে ৩৩ তি সৌর প্যানেল লাগইয়ে ছিলাম। এবং ভূতাপীয় কূয়ো খোঁড়া এবং সেই ধরনের অনেক কিছু করেছিলাম। কিন্তু লাইট বাল্ব পালটানোর মতন গুরুত্বপুরর্ণ হল আইন পালটানো। এবং যখন আমরা প্রতিদিন আমাদের ব্যবহার পাল্টাই আমরা কখন কখন আমাদের নাগরিকত্ব এবং আমাদের গণতন্ত্রের দিক্তটা ছেড়ে দি,আশাবাদী হওয়ার তাড়নায়, আমাদের গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসাবে প্রচন্ড রকমের অ্যাকটিভ হতে হয়। জলবায়ু সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আমাদের গণতন্ত্র সমস্যার সমাধান করতে হয়। হাততালি। এবারে এক্তটা কিছু বলার আছে। অনেকদিন ধরে আমি এই গল্পটা বলার চেষ্টা করে চলেছি। কিছুদিন আগে একজন ভদ্রমহিলা আমায় ওটা মনে করিয়ে দিয়েছেন যিনি আমার টেবিল এর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, হেঁটে চলে যাবার সময় তিনি সুধু আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তার বয়স সত্তরের ওপর, তাকে দেখে খুব দয়ালু মনে হচ্ছিল।আমি এব্যাপারে কিছু চিন্তা ই করিনি যতখন না পর্যন্ত তাকে টেরিয়ে দেখেছি উনি উল্টোদিক থেকে হেঁটে আসছিলেন, আমার দিকে তাকাতে তাকাতে। আর তাই আমি তাকে বল্লাম,"আপনি কেমন আছেন?" এবং তিনি বলেছিলেন, "তুমি জান,তুমি যদি তোমার চুলগুলো কালো রঙ করতে,তোমায় দেখতে একদম আল গোরে র মত লাগত হাস্যরোল) অনেক বছর আগে যখন আমি অল্পবয়ষ্ক কংগ্রেসম্যান ছিলাম, নিউক্লিয়ার অস্ত্র নিয়ন্ত্রন আর নিউক্লিয়ার অস্ত্র দৌড় প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমি এক্তটা ভয়ানক সময় কাটিয়েছিলাম। আর সামরিক ইতিহাসবিদ রা আমায় অন্বেষণের সময় শিখিয়েছিলেন যে সামরিক দ্বন্দ্বকে তিনটি পর্যায় ভাগ করা যায়ঃ স্থানীয় যুদ্ধ, আঞ্চলিক অথবা রঙ্গমঞ্ছের যুদ্ধ,এবং যেটা খুব গুরুত্ত্বপুর্ন আর বিরল সেটা হল ভৌগোলিক,বিশ্বযুদধ।রণনীতির দ্বন্দ্ব। এবং প্রত্যেক স্তরের যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন আলাদা আলাদা সম্পদ এর বন্টন একটা স্বতন্ত্র আগমন, একটা আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক মডেল। পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি সেই তিনটি পর্যায়ের এর মধ্যে পড়ে, আর এর মধ্যে যেটা নিয়ে আমরা ভাবি সেটা হল স্থানীয় পরিবেশগত সমস্যাঃ বাতাস দূষণ,জল দূষণ, স্তূপাকার আবর্জনা। কিন্তু সেখানে আর একটা আঞ্চলিক পরিবেশগত সমস্যা আছে যা হল অম্লবর্ষা,এটা ছড়িয়ে আছে মধ্যপশ্চিম থেকে উত্তরপূর্ব পর্যন্ত ,এবং পশিম ইউরোপ থেকে আর্ক্টিক, এবং মধ্যপশ্চিম থেকে মিসিসিপি থেকে গালফ অফ মেক্সিকোর মৃত অঞ্চল পর্যন্ত। আরো আনেক সমস্যা রয়েছে।কিন্তূ জলবায়ু সমস্যা হল সবথেকে বিরল ও গুরুত্বপুর্ণ ভৌগোলিক দ্বন্দ্ব। প্রত্যেকটি জিনিস ই খতিগ্রস্ত। এখন আমাদের সঠিক পালটা জবাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এখন আমাদের দরকার বিশ্বব্যাপী সচেতনতা যা আমাদের নতুন শাক্তি উত্‌পাদনে,শক্তি সংরখনে,কর্মখমতা বৃদ্ধিতে এবং এক্তটা লো কার্বন অর্থনীতি গঠনে বিশ্বজ়োড়া উত্তরণ হবে। আমাদের অনেক কাজ করার আছে। আমরা সম্পদ ও রাজনৈতিক ইচ্ছাকে সচল করতে পারি। কিন্তু সম্পদকে সচল করতে হলে রাজনৈতিক ইচ্ছাকেও সচল করতে হবে। এখন আমি আপনাদের এই স্লাইডগুল দেখাব। আমি ভাবছি লোগো দিয়েই শুরু করব। এখানে যেটা নেই সেটা হল উত্তর মেরুর বরফ টুপি। গ্রীণল্যান্ড এখন ও আছে। ২৮ বছর আগে উত্তর মেরুর বরফ টুপিটা গ্রীষ্মের শেষে পড়া জলবিষুব এর মত লাগছিল। শেষবার যখন পতন হয়েছিল তখন আমি কলোরাড র বোল্ডার এ দ্য স্নো ডাটা সেন্টর এ গিয়েছিলাম আর এখানে মন্টেরে তে ন্যাভাল পোস্টগ্র্যাজুয়েট ল্যাবরেটরীর গবেষকদের সাথে কথা বলেছিলাম। গত ২৮ বছরে এটাই ঘটেছে। সঠিকভাবে যদি বিবেচনা করা যায় তাহলে এর আগের রেকর্ডসাল ছিল ২০০৫। শেষবারের বরফপতন গবেষকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। উত্তর মেরুর বরফ টুপির আয়তন ভৌগলিক দিক দিয়ে অপরিবর্তনীয় থাকে। কিন্তু একই সাইজ আর নেই, বরং ঠিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত আয়তন, মোটামুটিভাবে স্টেট অফ আরিজ়োনার সমতুল্য। এই পরিমান টা ২০০৫ এ অদৃশ্য হয়ে পূর্ব মিসিসিপির আয়তনের সমতুল্য হয়ে গেহিল। যেটুকু অতিরিক্ত অংশ অদৃশ্য হয়েহিল সেটা হিল শেষ বরফ পতনের সমতুল্য। এটা আবার শীতকালে ফিরে আসে, কিন্তু স্থায়ী বরফ হিসাবে নয়,পাতলা বরফ হিসেবে। এই অংশটা দুর্বল। পড়ে থাকা অংশ টা গরমকালে খুব কম করে হলেও পাঁচ বছারের মধ্যে গলে যেতে পারে। এটা গ্রীণল্যান্ড এর ওপর একটা চাপ সৃষ্টি করে। আগেই সুমেরু বৃত্তের কাহে আলাস্কা তে একটা বিখ্যাত গ্রাম গড়ে উঠেহে। নাসা র সাম্প্রতিক কালের গবেষনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে এটা কুমেরু প্রদেশের নিউফাউন্ডল্যান্ড এর একটি শহর। কমবেশি বরফ গলার যে পরিমান তার আয়তন ক্যালিফর্নিয়ার আয়তনের সমান। "ওরাই সুসময় ওরাই দুঃসময়"ঃএটাই ইংরাজী সাহিত্যের বিখ্যাত প্রারম্ভিক বাক্য আমি সংখেপে "টেল অফ টু প্ল্যানেট" সম্বন্ধে কিহু বলতে চাই। পৃথিবী আর শুক্রগ্রহ সম আয়তনের। পৃথিবীর ব্যাস শুক্রের থেকে প্রায় ৪০০কিমি বেশি,কিন্তু মূলগত ভাবে এক আয়তনের। এদের মধ্যে কার্বনের পরিমান ও এক। কিন্তু পার্থক্যটা হল পৃথিবীর বেশিরভাগ কার্বন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ থেকে নির্গত হয়ে ভূগরভে তেল,কয়লা,প্রাকৃতিক গ্যাস হিসাবে জমা হয়েছে। শুক্র গ্রহে বেশিরভাগ কার্বন ই বায়ুমন্ডলের মধ্যে রয়েহে। পার্থক্যটা হল আমাদের গড় তাপমাত্রা ৫৯ ডিগ্রী। আর শুক্রগ্রহে এই তাপমাত্রা ৮৫৫ । বর্তমান পরিস্থিতি তে বেশিরভাগ কার্বন ভূগর্ভ থেকে তুলে ফেলে বায়ুমন্ডলে রেখে দেওয়াই প্রাসংগিক। শুক্রগ্রহ সূর্যের কাছাকাছি বলেই নয়, এটা মার্কারীর থেকে তিনগুন বেশি উত্তপ্ত, যেটা সূর্যের ঠিক ডানদিকে অবস্থিত। এখন যে ছবিটা আপনারা দেখলেন সেটা পুরান হবিগুলোর মধ্যে একটা, এগুলো দেখাবার কারন হল সংখেপে আপনাদের সি এস আই দেওয়া বিশ্ব বিজ্ঞান সম্প্রদায় এর মতে মানুষের তৈরী এই বিশ্বদূষন বায়ুমন্ডলের স্তরকে মোটা করে তুলছে, ইনফ্রারেড বর্হিগমনের রাস্তা অবরুদ্দ করছে। আপনারা সকলেই জানেন,গত আই পি সি সি সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা জিজ্ঞাসা করেছেন"আপনারা কতটা নিশ্চিত?" তারা জবাব দিয়েছেন"৯৯ শতাংশ" চীনদেশীয়রা আপত্তি তুলেছিলেন,আর তাই আপোষ মীমাংসার পর সংখ্যাটা দাড়িঁইয়েছে "৯০ শতাংশের ও বেশি"। এখন অবিশ্বাসীরা বলবেন,এক মিনিট দাঁড়ান, এটা ভিন্ন জিনিস ও হতে পারে- এই শক্তি সূর্য্যের থেকে আসতে পারে,যদি সেটা সত্যি হয় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার এর সঙ্গে সঙ্গে নিম্ন বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হবে,যদি এটা আরো বেশি প্রবেশ করে, যদি এটার বাইরে বেরবার পথ অবরুদ্ধ হয়,তবে আপনারা এখানে আরও বেশি ঠান্ডা ও গরম পাবেন।এটা হল নিম্ন বায়ুমন্ডল। এখানে স্ত্র্যাটোস্ফিয়ারঃআরও ঠান্ডা। সি এস আই;জলবায়ু এবারে এক্তট সুখবর। ৬৮ শতাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করে যে মানুষ ই বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ার জন্য দায়ী ৬৯ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে যে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার পিছনে একটি তাতপ্ররয রয়েছে। উন্নতি ও কিছু হয়েছে, কিন্তু এর চাবিকাঠি রয়েহে,চ্যালেঞ্জ এর মোকাবিলা করার কথা উঠলে তাপমাত্রা নিয়ে আলোচনা সব থেকে শেষে হয়। গরজের ই অভাব রয়েছে। ঘটনা বিশ্লেষণে আপনাদের আগ্রহ থাকলেও আপনারা কোন গরজ অনুভব করেন না, আপনারা এতে কি পান? যাইহোক,জলবায়ু রখখার জ়োট ্যেটার প্রধান হিসাবে আমি সমসাময়িক টেলিভিশন এর সাথে যুক্ত হয়েছি-যারা ্প্রো-বোণো তা করেছিল, এরা একটা বিশ্বজ়োড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিজ্জাপন দিয়ে সকলকে সচেতন করেছিল। এরাই বিজয়ী। এন বি সি-আমি এখানে এখন সব কটি নেটওরক দেখাব-এন বি সি বড় বড় সাংবাদিক রা ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মণোনীত ক্যান্ডিডেট দের ৯৫৬ টি প্রশ্ন করেছিলেনঃ এদের মধ্যে দূটো জলবায়ু সমস্যা নিয়ে।এ বি সিঃ ৮৪৪ টা প্রশ্ন,টার মধ্যে দূটো জলবায়ু সমস্যার। ফক্স ঃদুটো। সি এন এন ঃ দুটো। সি বি এস ঃ শূন্য হাসি থেকে কান্না। এটিই সবচেয়ে পুরোন তামাকের বিজ্ঞাপন। আমরা যেটা করছি সেটাই এখানে দেখান হচ্ছে। এই দেশগুলির গ্যাসোলিনের ব্যবহার আপনারা দেখছেন।এগুলি আমাদের ছবি। এগুলি উন্নত দেশের ছবি নয়। উন্নত দেশগুলি আমাদের অনুসরন করছে এবং তাদের দুলকি চাল ছেড়ে দ্রুতগতিতে চলতে আরম্ভ করেছে। ♪এই বছরে তাদের ক্রমসঞ্চিত নির্গমন কে তুলনা করা যেতে পারে ১৯৬৫ সালের সঙ্গে। খুব নাটকীয়তার সঙ্গে তারা এটা সম্পন্ন করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে তারা যদি পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারে তাহলে নিশ্চয় তারা ১৯৮৫ সাল এ ফিরে যেতে পারবে। সম্পদশীল দেশগুলি যদি উন্নতির পথ থেকে সরে যায় তাহলে আমাদের সমস্যা থেকেই যাবে। কিন্তু আমরা উন্নতশীল দেশগুলিকে প্রযুক্তি দিয়েছি ও সমস্যা সৃষ্টিকারী চিন্তাভাবনা গুলোকে চিনে নিতে সাহায্য করেছি। এটা বলিভিয়ায় অবস্থিত। তিরিশ বছরের ওপর অনুসন্ধান কার্য কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে আপনারা দেখতে পাবেন। ষাটের দশক। সত্তরের দশক,আশির দশক,নব্বই এর দশক।আমাদের এটা বন্ধ করতে হবে।এবং সুখবর হল যে আমরা পারব। আমাদের প্রযুক্তি আছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। পৃথিবীতে দারিদ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আর সম্পদশীল দেশগুলির নির্গমন বন্ধের চ্যালেঞ্জ, সবের ই এক্তটা সাধারন সমাধান। লোকে বলে,"সমাধান টা কি?" সেটাও আছে। কার্বনের দাম চড়াও। আমাদের দরকার co2 ট্যাক্স,পখখপাতশূন্য রাজস্ব, নিয়োগ এর ওপর থেকে চাপ হটাতে বিসমার্ক আবিষ্কৃত এই নিয়ম অত্যন্ত কার্যকরী উনিশ শতক থেকে কিছু জিনিস পরিবর্তিত হয়েছে। আমাদের এই গরীব পৃথিবীতে দারিদ্রের বিরুদ্ধে আমাদের দাবীকে সোচ্চার করার সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু সমস্যা সমাধানের পথ ও খুজে বার করতে হবে। আমরা যদি জলবায়ু সমস্যার সমাধান না করি তাহলে উগান্ডা র দারিদ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা তাতপর্যহীন হয়ে যাবে। গরীব দেশগুলির দবিগুলি তত সোচ্চার হয় না। এই প্রস্তাব টি ইউরোপের এক্তটা আলোচ্য বিষয়। এটা নেচার ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া।এর আলোচ্য বিষয় সৌরশক্তির পুনর্ব্যবহার,তথাকথিত সুপারগ্রিড এর সঙ্গে সংযুক্ত যা ইউরোপের সমস্ত উন্নতশীল দেশগুলির বৈদুতিক শক্তির যোগানদার উচ্চ ভোল্টসম্পন্ন ডি সি কারেন্ট। এটা আকাশকুসুম কল্পনা নয়,এটাও করা যায়। এটা আমাদের নিজেদের অর্থনীতির স্বার্থে করতে হবে। সাম্প্রতিক সংখ্যা অনুযায়ী পুরোন মডেলটি ঠিক কাজ করছে না। এখন তোমাকেই অনেক বড় বিনিয়গের পথ করে নিতে হবে। যদি তুমি আলকাতরা বা নরম শিলার তেল এ বিনিয়োগ কর,তাহলে তোমার পোর্টফোলিও টা নিম্নমানের কার্বন পরিসম্পদে ঠাসা বলে মনে করতে হবে। এবং এটি একটা পুরান মডেলের ওপরে নির্ভর করে আছে। কথায় আছে,নেশাখোর দের দেহের শিরাগুলি সব নখের ডগায় চলে আসে যখন তাদের হাত-পা পড়ে যায়। আলকাতরার বালি আর নরম শিলা তৈরী সেই একই জিনিস। আমার মনে হয় এখানে কিছু বিনিয়োগ আছে যেগুলি সত্যি কাজের। একাজে আমার এক্তটা ঝুঁকি আছে,তাই একটা দায়িত্ত্ব না নেওয়ার ব্যাপার এসে যায়। এটা হল ভূতাপীয়,সৌরশক্তি উত্তপাদন, উচ্চমানের ফটোভ্যাল্টেক্স,আর এগুলি হল কর্মখমতা আর সংরখণ। এই স্লাইডগুলি আপনারা আগেও দেখেছেন যদিও এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। শুধু দুটি দেশ অনুমোদন দেয় নি- আর এখন সুধু একজন ই অনুমোদন দিতে বাকি। অষ্ট্রেলিয়ায় এক্তটা ভোট হয়েছিল। অষ্ট্রেলিয়ায় এক্তটা প্রচার-অভিযান চালানো হয়েছিল যেখানে টেলিভিজন,ইন্টারনেট আর রেডিও র বিজ্ঞাপন বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় জনগনের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা হয়েছিল। আমরা ২৫০ জন কে তালিম দিয়েছিলাম যারা অষ্ট্রেলিয়ার প্রত্যেক শহর ও গ্রামে স্লাইড শো দেখিয়েছিল। এর জন্য আরো অনেক কিছু করা হয়েছিল, কিন্তু নতুন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে তার প্রথম পদখেপ হল কিয়েটো নিয়ে অষ্ট্রেলিয়ার যে পরিস্থিতি তা পরিবর্তন করা, এখন ভয়াবহ খরার ফলে এদের মধ্যে এক্তটা আংশিক সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে। এটা লানিয়ের লেক। আমার বন্ধু হেইদি কালিনস বলেহিলেন যেমন করে আমরা হারিকেন এর নামকরন করেছিলাম তেমন করে যদি খরার নামকরন করি তাহলে সেটা দ;পশ্চিম এর ক্যাটরিনা হবে, এবং সেটা আটলান্টা র দিকে সরে যাবে। আমরা এই ধরনের খরার জন্য বসে থাকতে পারিনা অষ্ট্রেলিয়া কে এর রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করতে হবে। আর সুখবর আছে।ইউ এস এর ৭৮০ তা শহর কিয়েটো কে সমর্থন করহে এবং আমার মনে হয় আমি একজনকে দেখেছি ওখানে যেতে সবকিছুকে একত্রিত করার জন্য। আমরা কিছুদিন আগে শুনেছিলাম যে একক হিরো হবার মূল্য এখন কিছুই নেই এটা একটা গতানুগতিক বাঁধাধরা নিয়মে পরিনিত হয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্মের হিরোদের প্রয়োজন। আমরা যারা ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকার লোক আর পৃথিবীর বাদবাকি লোক আজকের দিনে তাদের সকলের খুব ভাল করে বোঝা উচিত যে ইতিহাস আমাদের বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে- যেমন করে জিল বল্ট টেলর আমাদের দেখিয়েছিল যে এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার পর সে যখন বিখিপ্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছিল তখন কেমন করে সে তার নিজের জীবন বাঁচিয়েছিল। এখন আমাদের সংস্কৃতি এলোমেলো অবস্থার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে আছে জাগতিক আপতকালীন ব্যবস্থা। এবং বর্তমান প্রজন্মের কাছে আমাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যর বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পথ খুঁজে বের করতে হবে। খুব ভাল হত যদি আমি সঠিক ভাবে আপনাদের বোঝাতে পারতাম। একদল এমন নায়ক যাঁরা পৃথিবীতে গনতন্ত্র এনেছিলেন। এবং আরেকদল যাঁরা কৃতদাস ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেছেন। এবং নারীদের ভোট দেওয়ার অধিকার প্রতিষ্টা করেছিলেন। আমরাও পারি। কিন্তু এটা বলবেন না এসব আমাদের আয়ত্তের বাইরে। আমরা ইরাক যুদ্ধের জন্য ব্যয়িত সাতটি দিন যদি পেতাম, তাহলে আমরা সমাধানের মোকাবিলা করতে পারতাম। আমারাও করতে পারি। সর্বশেষে, আমি আশাবাদি। কারন আমি বিশ্বাস করি যে কড়া চ্যালেনজ়ের মুখে পড়ে আমাদের মোকাবিলা করার ক্ষমতা বিক্ষিপ্ত হওয়ার কারন আর চ্যালেঞ্জ এর বেড়ে ওঠা আমরা ইতিহাস থেকেই জেনেছি। কখন কখন লোকেরা জলবায়ু সমস্যা নিয়ে সুধু একথাই বলে যে "এটা কি সাঙ্ঘাতিক। আমাদের কাছে এটা একটা বোঝা"। আমি আপনাদের নতুন করে ভাবতে বলব আমাদের মানবজাতির ইতিহাসে ক্ততগুল প্রজন্মের কাছে আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার সু্যোগ হয়েছে? এক্তটি চ্যালেঞ্জ আমাদের কাছে যা দাবি করে তা আমাদের ভাবার বাইরে।আমার মনে হয় আমাদের এই চ্যালেঞ্জটা অত্যন্ত আনন্দের এবং কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহন করা উচিত যাতে এই প্রজন্ম আজ থেকে হাজার বছর পরেও সংগীতানুরাগী অর্কেষ্ট্রা বাজিয়ে,কবি ও গায়কদের দ্বারা বন্দিত হবে এদের সংগীতের মধ্যে ধ্বনিত হবে তাদের জয়গান এরা বল্বে,তারাই ছিল সেই মানুষ যারা সমস্যার সমাধান করেছিল আর এক্তটা উজ্জ্বল আর আশাবাদী মানব ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। আমরাও চেষ্টা করি। ধন্যবাদ। ক্রিস আন্ডারসনঃ TED এর অনেক মানুষের কাছে ডিজাইন এর ব্যাপারটা খুব দু;খজনক দিনের শেষে ভোটিং কাগজের মধ্যে যে ডিজাইন থাকে সেটা খুব খারাপ- একটা বাজে ডিজাইন মানেই হল তোমাদের গলা শোনা যায় নি তার মানে গত আট বছরে এই পরিস্থিতিতে আপনি আপনার স্বপ্নকে সফল করতে পারনি। এটা অত্যন্ত দুঃখের। আল গোরেঃ আপনার কোন ধারনা নেই{হাস্যরোল} সি এঃ আপনি যখন আপনার নিজের দলের যোগ্য লোকদের দেখবেন পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে পরিকল্পনা করছে আপনি কি উত্তেজিত হবেন? এ জিঃ এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন কারন,একদিকে আমি মনে করি প্রজাতন্ত্রের মণোনীত রা খুব উজ্জ্বল কিছু নির্বাচিত ব্যক্তি আছেন যেমন জন ম্যাক্কেন ও আর দুজন চূড়ান্ত পর্যায় এর নির্বাচিতরা যারা গনতন্ত্রের মণোনয়ন এ অংশ নিয়েছেন তারা সকলেই জলবায়ু সমস্যা সম্বন্ধে স্বতন্ত্র ধারনা এগিয়ে থাকার মানসিকতায় বিশ্বাসী এদের তিনজন ই নেতৃত্বের জন্য আবেদন করেছে। এদের তিনজন ই বর্তমান প্রশাসন থেকে অনেক্ত টাই আলাদা। পরিকল্পনা ও প্রস্তাব কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় এদের তিনজনের ভূমিকা আছে। প্রশ্ন সহু্যোগে প্রচার এর সংলাপ গুলি সাজান হয়েছে- এবং এগুলি লীগ এর রক্ষনশীল ভোটরদের দ্বারা একত্রিত করা হয়েছে যাইহোক,সমস্ত প্রশ্নগুলির বিশ্লেষন এবং বিতর্কের বিষয়গুলি ওরয়েলীয়ান লেবেল এর দ্বারা নিবেদিত। "ক্লিন কোল"। কেউকি দেখেছেন? প্রত্যেকটা বিতর্কের বিষয় ক্লিন কোল দ্বারা নিবেদিত। নির্গমনের পরিমান এখন অনেক কম। সংলাপের সমৃদ্ধি এবং পরিপূর্নতা আমাদের গনতন্ত্রে ভিত্তিস্থাপনের জন্যে কোনো অনুপ্রেরনা যোগাতে পারেনি। তাই তারা ঠিককথা বলছেন তাদের মধ্যে যেই মনোনীত হোন্ না কেন- সেই ঠিককাজ করবেন। কিন্তু আমি আপনাদের একটা কথা বলছিঃ আমি যখন ১৯৯৭ সালে কিয়েটো থেকে মনে প্রচন্ড খুশি নিয়ে ফিরে এলাম এটা ভেবে যে আমরা বাধা ভেঙে বেরিয়ে আসতে পেরেছি, এবং তারপর ইউনাইটেড স্টেটস এর সেনেট এর মুখোমুখি লড়াই করেছি, ১০০ জন সেনেটার এর মধ্যে সন্ধির স্বীকৃতির জন্যে মাত্র মাত্র ১ জন ভোট দিতে ইছহুক ছিল। ভোটপ্রাথীদের সাথে সাধারন জনগনের মতের মিল থাকা আবশ্যক। এই চ্যালেঞ্জ হোলো আমাদের পুরো সভ্যতার একটি অংশ। CO2 হল সভ্যতার নিশ্বাস মোচন। এবং এখন আমরা এটাকে একটা ছাঁচে ফেল্ব।নকশা পরিবর্তনের জন্যে প্রয়োজন একটা সুযোগ,একটা মাপ,একটা দ্রুত পরিবর্তনের হাওয়া যা অতীতে কোনোদিন ছিলনা। সেইজন্য আমি প্রথমে বলেছিলাম, আশাবাদী হয়ে কোনো কাজ করুন, কিন্তু একজন কর্মঠ নাগরিক হোন। চাহিদা-লাইট বাল্ব চেঞ্জ করো, কিন্তু আইন পরিবর্তন করো। বিশ্বসন্ধিগুলির মধ্যে পরিবর্তন আনুন। এবার আমাদের সরব হতে হবে। আমাদের এই গনতন্ত্রের সমস্যার সমাধান করতে হবে-এই গনতন্ত্রের- এই গনতন্ত্রের মধ্যে কাঠিন্য আছে। তারো পরিবর্তন দরকার। ইন্টারনেট এ যান। এর ব্যবহার শিখুন। লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করুন। একজন সচেতন নাগরিক হয়ে উঠুন। আইনানুগ নির্দেশ জারি করে সমস্ত নতুন কয়লা উত্‌পাদনকারী কারখানা বন্ধ করতে হবে। এগুলির CO2 জমা করার ক্ষমতা নেই। যার মানে হোলো আমাদের খুব শীঘ্র পুনর্ব্যবহারকারী উত্‌স্যগুলি বানাতে হবে। এখন কেউই এই পরিমাপে কথা বলেছেননা। কিন্তু আমার বিশ্বাস নভেম্বর এর মধ্যে এগুলি সুম্ভব। জলবায়ু রক্ষাকমিটি দেশজোড়া প্রচার অভিযান শুরু করতে চলেছে- তৃণমুল স্তরে সচেতনতা, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, রেডিও,সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন- জেলে, শিকারী থেকে শুরু করে গার্লস স্কাউট সকলের যৌথ প্রচেষ্টায় এটি সম্ভবর হয়েছে। আমাদের সাহাজ্যের দরকার।সাহাজ্যের। সিএঃ যেহেতু এখন থেকে আপনার নিজস্ব ভুমিকা শুরু হল, আপনি কি এর থেকে বেশি কিছু করতে চান? এজিঃ আমার মনে হয় যে এই প্রশ্নের উত্তর যদি আমি দিতে পারতাম? বাকমিনিস্টার ফুলার লিখেছিলেন, "যদি ভবিষ্যতে সমস্ত মানবসভ্যতা আমার ওপরে নির্ভর করে, তাহলে আমি কি করব? আমি কেমন হব? সবকিছু নির্ভর করছে আমাদের ওপরে, কিন্তু কেবলমাত্র লাইট বাল্ব দিয়ে কাজ হবেনা। এখানে আমরা বেশির ভাগ আমেরিকান। আমাদের দেশ গনতান্ত্রিক। আমরা পরিবর্তন আনতে পারি, কিন্তু সেটা দ্রুততার সঙ্গে আনতে হবে। আমাদের চাই খুব উঞ্ছুদরের সচেতনতা। এবং সেটা তৈরি করা খুব কঠিন- কিন্তু সচেতনতা আসছে। একটা পুরানো আফ্রিকার প্রবাদ আছে যে "যদি তুমি তাড়াতাড়ি যেতে চাও তবে একলা চলো। আর যদি তুমি অনেকদুর যেতে চাও তবে একলা চলো। আমাদের খুব তাড়াতাড়ি অনেকদূর যেতে হবে। তাই সচেতনতায় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিশ্রুতিতে পরিবর্তন। জরুরি অবস্থার একটি নতুন ধারনা। এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো সুযোগে নতুন প্রসংসা। সিএঃ আলগরে, টিইডি তে আসার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। এজিঃ অসংখ্য ধন্যবাদ। মত্স্যবিজ্ঞান মাছ নিয়ে গবেষণা এটা দেখতে বড় বিরক্তিকর শব্দ, আসলে এটা সম্পূর্ণ উত্তেজনাপূর্ণ, কারন এটা জ্ঞানের এক মাত্র শাখা যার সাথে ''ইয়েলো'' আছে। (হাসি) এখন, সুশীল দর্শক হিসেবে, আপনারা জানেন, ইয়েলো মানে, আপনি একবার বাঁচবেন কারন আমাদের শুধু একটা জীবন আছে। আমি জীবনে যা করার স্বপ্ন দেখেছি সেভাবে জীবন যাপন করতেছি: পৃথিবীর গোপন বিষ্ময় দেখে নতুন প্রজাতি খুঁজে। এবং এটাই আমাকে করতে হয়। সাম্প্রতিক বছরে আমি গুহাতে প্রজাতি খুঁজেছি, এবং বেরিয়ে এসেছে যে, অনেক প্রজাতির গুহার মাছ আছে। আপনাকে শুধু জানতে হবে কোথায় দেখতে হবে, এবং হয়ত কিছুটা চিকন হতে হবে। (হাসি) গুহামাছ আমাকে অনেক কিছু বলতে পারে জীববিদ্যা এবং ভূতত্ত্ব সম্পর্কে। তারা আমাকে বলেতে পারে কিভাবে তাদের চারপাশের ভূখন্ড পরিবর্তিত হয় ও সরে যায়, এই ছোট গর্ত গুলতে আটকা পরে, এবং তারা অন্ধ হয়ে আমাকে বলতে পারে, দৃষ্টির বিবর্তন সম্পর্কে। এখন, মাছের চোখ আছে যা ঠিক আমাদেরই মত। সব মেরুদন্ডী এবং প্রত্যেক মাছ প্রজাতি খাপ খায়িয়ে নিতে শুরু করে এই অন্ধকার, ঠান্ডা, গুহার পরিবেশে, অনেক অনেক প্রজন্ম ধরে, তারা তাদের চোখ এবং চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলে যতদিন না তারা এই চোখবিহীন মাছটার মত পরিণত হয়। এখন, প্রত্যেকটি গুহার প্রজাতি কিছুটা আলাদাভাবে আবির্ভূত হয়। এবং প্রত্যেকের বলার মতএকটি এলাদা জৈবিক ও ভূতত্ত্বিক গল্প আছে, এবং এ জন্যই এটা অনেক উত্তেজানপূ্র্ণ যখন নতুন একটা প্রজাতি পাই। এটি আমাদের দ্বা্রা বর্ণনাকৃত দক্ষিণ ইন্ডিয়ানার নতুন একটি প্রজাতি। আমরা এটার নাম দিয়েছি আম্বল্যপ্সিস হুসিএরি ইন্ডিয়ানার গুহামাছ। (হাসি) কেনটাকি'র গুহামাছরা এদের নিকট আত্নীয় অতিকায় গুহা্র। তারা আলাদা হয়ে যায় যখন ওহাইয়ো নদী তাদের আলাদা করে কয়েক লক্ষ বছর আগে। এবং এই সময়ে তাদের মধ্যে এই সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট আবির্ভূত হয় জেনেটিক স্থাপত্যে তাদের অন্ধত্বের পিছনে। রোডোপসিন নামে একটি জিন আছে যা দৃষ্টিশক্তি জন্য খুব সংকটপূর্ণ। যা আমাদের আছে এবং এই প্রজাতিরও আছে, শুধু একটি প্রজাতি এই জিনের সব কার্যক্রম হারিয়ে ফেলেছে, এবং অন্যরা এটা ব্যবহার করে। এটাই এই সুন্দর প্রাকৃতিক গবেষণা সূত্রপাত করে যেখানে আমরা আমাদের দৃষ্টির পিছনের জিনকে দেখতে পাই, এবং কিভাবে আমরা দেখি তার মূল কারণ পাই। কিন্তু এই গুহামাছের জিনগুলো গভী্র ভূতাত্ত্বিক সময় সম্পর্কেও বলতে পারে, হতে পারে এই প্রজাতি গুলোর চেয়ে বেশি নয়। মাদাগাস্কার থেকে আমরা নতুন একটা প্রজাতি বর্ননা করি আমরা যার নাম দেই টাইফেলোট্রিস মারায়বি। যার মানে মালাগাসি ভাষায় 'বড় অসুস্থতা', এই প্রজাতি সংগ্রঽ করার জন্য আমরা কত অসুস্থ হয়ে গেসিলাম বোঝাতে। এখন এটা বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, মৃত জিনিসের ডুবন্ত গর্তে সাতার কাটা এবং বাদুরের বিষ্ঠা ভর্তি গর্তে যাওয়াটা জীবনে বুদ্ধিমান কোন সিদ্ধান্ত না, কিন্তু ইয়েলো। (হাসি) আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা সত্বেও এদের আমি ভালবাসি, কারন মাদাগাস্কার এর এই প্রজাতিগুলো নিকট আত্নীয়রা ৬০০০ কিলোমিটার দূরে, অস্ট্রেলিয়ার গুহামাছ। এখণ ৩ ইঞ্ছি দীর্ঘ একটা গুহামাছ কখনো পারেনা ভারতীয় সাগর সাতার কেটে পার হতে, এই প্রজাতিগুলোর ডিএনএ তুলনা করে আমরা যা পেয়েছি তা হচ্ছে যে তারা ১০ কোটি বছর আগে আলাদা হয়ে গছে। অথবা যখন দক্ষিণ মহাদেশ একসাথে ছিল। আসলে এই প্রজাতি গুল একদমই স্থান পরিবর্তন করেনি মাহাদেশ তাদের আলাদা করে দিয়েছে। এবং তারা তাদের ডিএনএ'র মাধ্যমে আমাদের দিয়েছে সঠিক গঠন ও মাপ যে কিভাবে এই প্রচীন ভূতাত্ত্বিক ঘটনার তারিখ ও সময় নির্ণয় করতে হয়। এখন, এই প্রজাতি এখানে অনেক নতুন আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি এর নাম বলার কিন্তু আমি বলতে পারি এটি মেক্সিকো থেকে পাওয়া নতুন একটি প্রজাতি এবং এটি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এটি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত কারণ এটি যেখান থেকে এসেছে একমাত্র পরিচিত গুহাটি ধ্বংস হয়েছে বাধ বানানোর সময়। দুর্ভাগ্যবশত গুহা মাছের জন্য, ভূপৃষ্ঠের নিচের পানি আবাস আমাদের খাবার পানিরও প্রধান উৎস। আমরা আসলে এখনো জানিনা, কারা তাদের নিকট আত্নীয়। মানে হচ্ছে মেক্সিকোতে আর কিছু নেই, হতে পারে কিউবাতে কিছু আছে, অথবা ফ্লোরিডা অথবা ভারতে। কিন্তু এটা যাইহোকনা কেন, এটা আমাদের ক্যারিবিয়ান ভূতত্ত্ব নিয়ে নতুন কিছু বলবে অথবা কিভাবে রোগ নির্ণয় হবে কিছু নির্দিষ্ট অন্ধত্ব প্রতিকারে। আমি আশা করি, এই প্রজাতি বিলুপ্ত হওার আগেই আমরা আবিষ্কার করব। এবং আমি আমর একটি জীবন খরচ করতে যাচ্ছি একজন মৎস্যবিদ্যাবিশারদ হিসেবে আবিষ্কার ও রক্ষণের চেষ্টা করে এসব নম্র ছোট অন্ধ গুহামাছদের যা আমাদের পৃথিবী্র ভূতত্ত্ব নিয়ে অনেক কিছু বলতে পারে এবং আমরা কিভাবে দেখি তার জীববিদ্যা। ধন্যবাদ। (হাততালি) এক মুহূর্তের জন্য ভাব যে তুমি এক ভয়ংকর যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিক।হয়ত কোন রোমান পদ-সৈনিক বা মধ্যযুগের তীরন্দাজ বা হয়ত কোন জুলু যোদ্ধা। একটি ব্যাপার স্থান-কাল ভেদে ধ্রূব। তোমার অ্যাড্রেনাল বেড়ে আছে, তোমার কাজ নিয়ন্ত্রিত কিছু গভীর বদ্ধমূল প্রতিবর্তী ক্রিয়া দ্বারা যা তোমার শত্রূকে হারাতে ও তোমাকে বাঁচাতে দরকার। এখন, নিজেকে অন্য এক ভূমিকায় ভাব, ভাব তুমি স্কাউট। স্কাউটের কাজ কাউকে আক্রমন করা/ নিজেকে বাঁচানো না। স্কাউটের কাজ বোঝা। স্কাউট বের হয়, ভূমির ম্যাপ তৈরি করে সম্ভাব্য সমস্যা চিহ্নিত করে। স্কাউট শেখার আশা করে, যেমন কোন ব্রীজ আছে কিনা, সুবিধামত জায়গায়- নদীর ধারেই। তবে স্কাউট আসলে নির্ভুল ভাবে জানতে চায় বাস্তব সত্য জানতে চায়। আর্মিতে সৈনিক ও স্কাউট- দু'টিই দরকার। এ ভূমিকাদের আমাদের মানসিকতা হিসেবে ভাবা যায়-এক রূপক হিসেবে যে কিভাবে পাই প্রাত্যহিক জীবনের তথ্য ও ধারণা আমি আজ যা বলতে চাই- সঠিক বিচার করতে, অনুমান করতে, ভাল সিদ্ধান্ত নিতে যা লাগে তা হল তোমার মানসিকতা কি ধরণের। বাস্তব উদাহরণ দিতে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি ১৯ শতকের ফ্রান্সে। যেখানে এক বিরাট রাজনৈতিক স্ক্যান্ডালের সূচনা করেছিল সাধারণ দেখতে এ কাগজের টুকরাটি। ১৮৯৪ সালে ফ্রেঞ্চ জেনেরাল স্টাফরা তা আবিষ্কার করেছিল এটা ময়লার বাক্সে ছেড়া পড়ে ছিল, তারা যখন তা জোড়া লাগালো, আবিষ্কার করল, তাদের র‍্যাঙ্কের কেউ জার্মানীতে আর্মির গোপন তথ্য বিক্রি করছে। তাই তারা বিশালাকারে তদন্ত শুরু করল, আর তাদের সন্দেহ খুব দ্রুত এই লোকের উপর হল, আলফ্রেড ড্রাইফাস। তার রেকর্ড খুব ভাল ছিল, অতীতে খারাপ কাজ নেই, কোন সূত্র নেই বলার মত। সে ছিল একা ইহুদি অফিসার আর্মি র‍্যাঙ্কে। তখন ফ্রেঞ্চ আর্মি ভীষণ ইহুদি-বিরোধী ছিল। তারা ড্রাইফাসের হস্তাক্ষর এক মেমোর সাথে মেলালো ও সিদ্ধান্ত নিল তা মিলে গেছে। যদিও হাতের লেখা বিশারদ তাতে তত আত্নবিশ্বাসী ছিলেন না। কিন্তু সেটা ব্যাপার না। তারা ড্রাইফাসের বাড়ি গেল ও খুঁজলো নজরদারির কোন চিহ্ন পাওয়া যায় কিনা। তারা তার ফাইল দেখল কিন্তু কিছুই পেল না। তারা ভাবল ড্রাইফাস শুধুই অপরাধী না, চালাকও কারণ তারা যাওয়ার আগেই সে সব প্রমাণ লুকিয়ে ফেলেছে। এরপর, তারা তার ব্যক্তিগত ইতিহাস ঘাটল যদি তাকে অপরাধী প্রমাণ করা যায়। তারা তার শিক্ষকদের সাথে কথা বলল, জানলো সে বিদেশী ভাষা শিখেছে, মানে জীবনে অন্য সরকারের সাথে ক্ষতিকর কিছু করার নিশ্চিত ইচ্ছা। শিক্ষকেরা বলল, তার স্মরণশক্তি খুব ভাল ছিল এসব খুব সন্দেহজনক, তাই না? কারণ গুপ্তচরকে বেশ কিছু জিনিস মনে রাখতে হয়। তাই মামলার কাঠগোড়ায় ড্রাইফাস অপরাধী সনাক্ত হল। তাকে পাবলিক স্কয়ারে নিয়ে যাওয়া হল, প্রথা অনুসারে ইউনিফর্ম থেকে পদাঙ্ক খোলা হল তার তলোয়ার ভেঙ্গে দু'টুকরো করা হল। ড্রাইফাসের পদাবনতি হল। তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হল দক্ষিন আমেরিকার সাগরতীরে শয়তানের দ্বীপে। সে ওখানে গেল, সারাদিন একা থাকল, চিঠির পর চিঠি লিখল ফরাসি সরকারকে, কেস আবার খুলতে বলল যেন তারা বুঝতে পারে সে নিরপরাধ ছিল। ফ্রান্সে তা ছিল সমাপ্ত কেইস। আমার ভাবতে অবাক লাগে, ড্রাইফাসের কেস এ অফিসারেরা কেন এত নিশ্চিত ছিল যে ড্রাইফাসই অপরাধী ছিল। তুমি ভাবতে পারো, তারা সব বানিয়েছে যে তাকে ইচ্ছা করে অপরাধী বানাতে। ইতিহাসবিদেরা তা মনে করেন না। যতদূর জানি, অফিসারেরা ভাবত ড্রাইফাসের বিরুদ্ধে কেস শক্ত ছিল। যা তোমাকে ভাবাতে পারেঃ আসলে মানব মনে কি এমন অভেদ্য প্রমাণ থাকে যা কাউকে অপরাধী চিহ্নিত করে বাধ্য করে? বিজ্ঞানীরা একে বলে,''উদ্দেশ্যমূলক যুক্তি'' যখন আমাদের অবচেতন প্রেষণা, চাহিদা ও ভয়, তথ্যকে আমাদের মত করে ভাবতে সাহায্য করে। কিছু তথ্য, কিছু ধারণাকে আমাদের পক্ষের মনে হয় আমরা সেসব জেতাতে চাই, সেসব রক্ষা করি। আর অন্য তথ্য বা ধারণা গুলো শত্রূ হয়ে যায়, ওগুলোকে আমরা বাদ দিতে চাই। তাই আমি উদ্দেশ্যমূলক যুক্তিকে বলি ''সৈনিক মানসিকতা'' তোমরা হয়ত কোন ফ্রেঞ্চ-ইহুদি অফিসারকে অপরাধী করনি, আমার মনে হয়, কিন্তু অনেক খেলা দেখ, বা রাজনীতিতে দেখেছ যে তোমার টিমকে যখন রেফারি বলে যে ফাউল করেছে তুমি অনেক কারণ খোঁজ যে কেন রেফারি ভুল। কিন্তু রেফারি অন্য টিমকে বিচার করলে তুমি বল- ভাল হয়েছে। এটা একটা কাছাকাছি উদাহরণ হতে পারে। বা তুমি হয়ত একটা আর্টিকেল পড়েছ যা কিছু বিতর্কীয় নীতি পরীক্ষা করেছে যেমন মৃত্যুদন্ড। গবেষকেরা বলে, তুমি যদি মৃত্যুদন্ড সমর্থন কর কিন্তু প্রবন্ধে বলা আছে, মৃত্যুদন্ড কার্যকরী উপায় না তবে তোমার উদ্দেশ্য হবে প্রবন্ধটি দুর্বল- এর কারন খোজা।কিন্তু যদি প্রবন্ধ বলে, মৃত্যুদন্ড আসলে কাজ করে, বলবে এটা ভাল স্টাডি। যদি মৃত্যুদন্ড সমর্থন না কর, তবেও তা। আমরা কোন পক্ষকে জেতাতে চাই তার উপর আমাদের বিচারক্ষমতা অবেচতন ভাবে গভীরভাবে প্রভাবিত, এটা সার্বিক এটা আমাদের স্বাস্থ্য-ভাবনা, সম্পর্ক, কাকে ভোট দিব, কি সঠিক বা নৈতিক সবই নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্দেশ্যমূলক যুক্তি বা সৈনিক মানসিকতার যা আমার কাছে ভয়ংকর লাগে এটা আসলেই কতটা অবচেতন। আমরা ভাবি আমরা নৈব্যক্তিক ও শুদ্ধ মনের তাও কোন নিরপরাধ লোকের জীবন নষ্ট করতে পারি যাহোক, ড্রাইফাসের গল্প এখানেই শেষ না ইনি হলেন কর্ণেল পিকার্ট। ফ্রেঞ্চ আর্মির আরেক উচু র‍্যাংকের অফিসার সেও ভাবত ড্রাইফাস অপরাধী,আর্মির অন্যদের মত সে ভাবত সে কার্যকারণ গত ভাবে অপরাধী কিন্তু একসময় তার সন্দেহ হলঃ আমরা যদি ড্রাইফাসের বিষয়ে সবাই ভুল হই? যদি ড্রাইফাসের জেলে থাকলেও যদি জার্মানীর পক্ষে স্পাইং এর প্রমান পাওয়া যায়? আরও আবিষ্কার হল যে আরেক অফিসারের হাতের লেখা একেবারে মেমোর সাথে মিলে গেছে ড্রাইফাসের লেখার চেয়েও বেশী সে তার উর্ধ্বতনদের এ বিষয়ে জানালো তারা মানল না , তারা তাদের মতের পেছনে যৌক্তিকতা দিল আর্মিতে অন্য কেউ ড্রাইফাসের হাতের লেখা নকল করতে শিখেছে সে ড্রাইফাসের পরে স্পাইং করতে শুরু করেছে ড্রাইফাস তাই এখনও অপরাধী। পিকার্ট ড্রাইফাসকে নিরপরাধ প্রমাণ করেছিল ১০ বছরে সেই সময়ের কিছুটা সেও জেলে ছিল আর্মির প্রতি অবিশ্বাসী কাজের জন্য অনেকেই বলে এ গল্পের নায়ক পিকার্ট নয় কারণ সে জিউ-বিরোধী, যা আমিও মনে করি। ব্যক্তিগতভাবে, আমি মনে করি পিকার্ট প্রশংসনীয় তার জিউশ-বিরোধিতার জন্য কারণ তারও পক্ষপাতী হওয়ার কারণ ছিল অন্য অফিসারের মতই কিন্তু তার উদ্দেশ্য ছিল সত্য খোজার যা সব ছাড়িয়ে গেছে। তাই আমার মতে পিকার্টের আছে 'স্কাউট মানসিকতা', তা হল কোন ধারণা জেতানো বা অন্য ধারণা হারানো না বরং সত্য যা শুধু মাত্র তা-ই দেখতে চাওয়া যতটা সম্ভব সৎ ও নিখুত ভাবে,তা সুন্দর, প্রীতিকর বা সুবিধামত নাও হতে পারে এ মানসিকতার প্রতি আমি ব্যক্তিগতভাবে আসক্ত স্কাউট মানসিকতা কি কারণে হয়-গত কয়েক বছর আমি পরীক্ষা করেছি কেন কিছু মানুষ অন্তত কিছু সময় পূর্বধারণা/ পক্ষপাতিত্ব ও উদ্দেশ্য থেকে বেরিয়ে এসে ফ্যাক্ট বা প্রমাণগুলোকে নৈবর্ক্তিকভাবে দেখতে চায়? উত্তর হল- আবেগিক। সৈনিক মানসিকতা নিজের ভাবনা রক্ষা করার মধ্যে আছে, স্কাউট মানসিকতাও তাই। তবে তাই। তবে তা ভিন্ন আবেগের মধ্যে নিহিত। যেমন, স্কাউট জানতে কৌতুহলী।তাদের ভাল লাগে তাদের ভাল লাগে যখন তারা নতুন কিছু জানে বা ধাপে ধাপে কোন ধাধার সমাধান করে তাদের পূর্ব ধারণা যখন ভুল হয়ে যায় তারা তখনও কৌতুহলি থাকে তাদের মূল্যবোধও ভিন্ন তাদের মতে নিজের বিশ্বাস ঝালিয়ে নেয়াই উত্তম ঝালিয়ে নেয়াই উত্তম তারা বলে না- যারা নিজের মন পরিবর্তন করে তারা দুর্বল এসবের উপরে, স্কাউটরা ভারসাম্যে রাখে। মানে,তারা কতটা সঠিক বা ভুল তার সাথে তাদের নিজস্ব মূল্যে জড়িত না তাদের বিশ্বাস হতে পারে, মৃত্যুদন্ড ভাল গবেষণায় যদি তা না পাওয়া যায়, তারা বলে 'ওহ্‌। আমি ভুলও হতে পারি। এর মানে এই না যে আমি খারাপ বা বোকা।'এ ধরণের বৈশিষ্ট্য থেকে গবেষকেরা বলে যা আমিও পেয়েছি- ভাল বিচার পাওয়া যায়। এখান থেকে যা নিতে পার- এই বৈশিষ্ট্য দ্বারা তুমি কত স্মার্ট বা তুমি কত জানো তা বলে না। এদের সাথে আই কিউ এর সম্পর্ক নেই এরা হল বরং তুমি কি অনুভব কর। আমি সেইন্ট-এক্সপেরীর কাছে ফিরতে চাই 'দ্য লিটল প্রিন্স' এর লেখক। তিনি বলেন, ''যদি তুমি একটা জাহাজ বানাতে চাও, অন্যদের কিছু কাঠ জোগাড় করতে বলোনা, আদেশ দিও না, কাজ ভাগ করে দিও না, বিশাল ও অন্তহীন সাগরের প্রতি আকুল হতে বল'' অন্য কথায়, আমি বলব, নিজেদের বা সমাজের বিচারক্ষমতা উন্নত করতে , আমাদের সবচেয়ে যা দরকার তা যুক্তি, উপমা, সম্ভাব্যতা, অর্থনীতি নয়, যদিও ওসবের গুরুত্ব আছে। আমাদের বেশী দরকার স্কাউট মানসিকতার নীতি প্রয়োগ করা আমরা যেভাবে অনুভব করি তা পরিবর্তন করে শেখা প্রয়োজন -লজ্জ্বিত না হয়ে গর্ব করতে যখন দেখি আমরা ভুল ছিলাম কোন বিষয়ে।শিখতে হবে কিভাবে আত্মরক্ষামূলক না হয়ে কৌতুহলি থাকা যায়, যখন বিশ্বাসের বিপরীত তথ্য পাই যে প্রশ্ন আমি তোমাদের করতে চাইঃ কি তোমার কাছে সবচেয়ে আকাঙ্খিত? তুমি শুধু নিজের বিশ্বাস রক্ষায় আকুল? নাকি এ পৃথিবী পরিষ্কারভাবে দেখতে আকুল? ধন্যবাদ। (হাততালি) আমি অত্যন্ত খুশি আজ এখানে এসে। আমি খুশি আপনারা আজ এখানে এসেছেন, এটা শুনতে একটু অদ্ভুদ লাগবে। আমি খুশি আমরা সকলে আজ এখানে আছি । "এখানে" বলতে আমি এখানে অথবা ওখানে বোঝাতে চাইনা। কিন্তু এখানে। মানে পৃথিবীতে। এবং "আমরা" বলতে আমি আমাদের কথা বলছিনা যারা এই মুহূর্তে অডিটোরিয়ামে উপস্থিতি, কিন্তু প্রাণ, পৃথিবীর সকল প্রাণীর কথা বলছি- (হাসি ) জটিল থেকে নিয়ে একক কোষের, মোল্ড থেকে নিয়ে মাশরুম উধরন্ত ভাল্লুক অবধি। (হাসি ) সব থেকে মজাদার জিনিস হল, পৃথিবী আমাদের জানা একমাত্র জায়গা যেখানে প্রাণ রয়েছে- ৮.৭ মিলিয়ন প্রজাতি। আমরা অন্যান্য জায়গায়ও সন্ধান করেছি, হয়তো অতটা ভালো ভাবে নয়, কিন্তু আমরা করেছি এবং কিছু পাইনি। পৃথিবীতেই একমাত্র আমরা প্রাণের সন্ধান পেয়েছি। পৃথিবী কি বিশেষ? এই প্রশ্নের উত্তর আমি ছোটবেলা থেকে জানতে চেয়েছি, এবং আমি সন্দেহ করি যে ৮০শতাংশ মানুষ এই অডিটোরিয়ামে এই প্রশ্নটির উত্তর জানতে চেয়েছে। অন্য কোনো গ্রহ সৌর জগতে ও তার বাইরে- প্রাণ বজায় রাখতে পারে কিনা, সেটা বোঝার আগে আমাদের জানার দরকার যে এখানে প্রাণ বজায় থাকার জন্য কি প্রয়োজন। দেখা যায় ৮.৭ মিলিয়ন প্রজাতির মধ্যে, প্রাণীদের শুধুমাত্র তিনটে জিনিস লাগে। একদিকে পৃথিবীর সকল প্রাণীর প্রয়োজন শক্তি। আমাদের মতন জটিল প্রাণী তাদের শক্তি আহরণ করে সূর্য থেকে, কিন্তু মাটির গভীরে থাকা প্রাণী তাদের শক্তি আহরণ করে রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে বিভিন্ন শক্তির উত্স প্রত্যেক গ্রহে পাওয়া যায়। অন্য দিকে, সকল প্রাণীর দরকার হয় খাবার ও পুষ্টি। এবং এটা মনে হয় একটা কঠিন কাজ,বিশেষত যদি আপনাদের দরকার হয় একটি সরস টমেটো। (হাসি ) যাই হোক, পৃথিবীর সকল প্রাণী তাদের পুষ্টি আদায় করে শুধুমাত্র ছটি রাসায়নিক পদার্থ থেকে, এবং এই রাসায়নিক পদার্থ গুলি পাওয়া যায় আমাদের সৌর জগতে সকল গ্রহে। এতে মধ্যবিত্ত জিনিসটি লম্বা মেরুর মতন দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেটি সব চেয়ে কঠিন অর্জন করা। মুস নয়,এটা জল। (হাসি ) যদিও মুস ব্যাপারটা হলে বেশি ভালো হতো। (হাসি ) হিমায়িত জল নয়, বায়বীয় জল নয়, তরল জল। সকল প্রাণীর এটাই প্রয়োজন বেঁচে থাকার জন্য। সৌরজগতে বেশিরভাগ গ্রহে তরল জল পাওয়া যায়না, এই জন্য আমরা সেখানে প্রাণ খুঁজিনা। সৌরজগতে বাকি গ্রহে প্রচুর পরিমান জল থাকতে পারে, পৃথিবীর চেয়ে বেশি, কিন্তু সেই জল আটকে রয়েছে বরফের খোলের নিচে, এবং তা পাওয়া খুব কঠিন, সেইখানে কোনো প্রাণ আছে কিনা সেটা জানা আরো কঠিন। তাহলে কিছুমাত্র গ্রহ আর বাকি রইলো ভাবার জন্য। চলুন আমরা এই সমস্যাটা আর একটু সহজ করেনি। একটু গ্রহের পৃষ্ঠতলের শুধুমাত্র জলীয় পানির ব্যাপারে ভাবা যাক। আমারদের সৌর জগতে শুধুমাত্র তিনটি এমন গ্রহ আছে, সূর্যের থেকে দূরত্ব এবং পৃষ্ঠতলে জলীয় পানি উপস্থিত থাকার অনুযায়ী: শুক্র, পৃথিবী এবং মঙ্গল। বায়ুমণ্ডল এমন হওয়া উচিত যাতে পানি তরল থাকে। প্রচন্ড সাবধান ঐরকম বায়ুমণ্ডলের ব্যাপারে। বায়ুমণ্ডল যেন অতিরিক্ত গরম, বা অতিরিক্ত ঠান্ডা না হয়, নাহলে শুক্র এর মতন অত্যন্ত গরম বায়ুমণ্ডল হয়ে যাবে, এবং তাতে তরল পানি থাকবেনা। কিন্তু বায়ুমণ্ডল যদি খুব পাতলা এবং অত্যন্ত ঠান্ডা হয়, তাহলে মঙ্গলের মতন ঠান্ডা আবহ হয় যাবে। তাহলে শুক্র খুব গরম এবং মঙ্গল খুব ঠান্ডা। পৃথিবীর তাপমাত্রা সঠিক। আপনি আমার পিছনে এই ছবি আলোর দিকে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছেন সৌর্যজগতে প্রাণ কোথায় টিকতে পারবে। গোল্ডিলকের মতন সমস্যা এটা, এবং এটি এত সহজ যে একটা বাচ্চাও এটা বুঝতে পারবে. যাইহোক, আমি আপনাদের দুটো জিনিস মনে করাতে চাই গোল্ডিলকের গল্প থেকে, যেটি নিয়ে হয়তো আপনারা ভাববেননা কিন্তু যেটি এই প্রসঙ্গে জরুরি। প্রথমত: যদি মা ভাল্লুকের বাটি খুব ঠান্ডা থাকে যখন গোল্ডিলক ঘরে হেটে ঢোকে, তার মানে কি এটা যে বাটিটা সবসময়ই ঠান্ডা ছিল? নাকি হয়তো কোনো এক সময় তার তাপমাত্রা ঠিক ছিল? গোল্ডিলক্স ঘরে কোন সময় ঢুকেছে তাতে উত্তরটি রয়েছে যেটা আমরা এই গল্পে পাই। একই জিনিসটি বাকি গ্রহের ক্ষেত্রে সত্য। এটি স্থায়ী নয়. এটা পাল্টাতে থাকে। এটি বিভিন্ন আকার ধারণ করে। বায়ুমণ্ডল ও তাই করে। আমি আপনাদের একটি উদাহরণ দেই। এটি আমার সবচেয়ে প্রিয় ছবি মঙ্গলের। এটি সবচেয়ে সুন্দর ছবি নয়, এটি সবচেয়ে সাম্প্রতিক ছবি নয়, কিন্তু এটি একটি ছবি যেখানে দেখতে পাচ্ছি নদীর তীর গ্রহের পৃষ্ঠতলে; নদীর তীর যা তৈরী হয়েছে প্রবাহিত তরল পানির দ্বারা; নদীর তীর যা তৈরী হতে একশো হাজার বছর লেগে যায়. এটা মারসে এখন হওয়া সম্ভব নয়। মারসের বায়ুমণ্ডল এখন খুব পাতলা এবং শীতল জলকে তরল রাখার জন্য। এই ছবিটি দেখে আপনারা বুঝতে পারছেন যে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে পরিবর্তন হয়েছে , এবং বড়ো রকমের পরিবর্তন। এবং এটি বাসযোগ্য অবস্থা থেকে পরিবর্তন হল, কারণ প্রাণ বজায় রাখার তিনটি প্রধান প্রয়োজনীয় জিনিশ অনেক আগে উপস্থিত ছিল। সেই বায়ুমণ্ডলেটি কোথায় গেল, যা জলকে তরল রেখেছিলো পৃষ্ঠতলে? একটি ধারণ হল যে তা ভেসে বেরিয়ে গেছে। বায়ুমণ্ডলের পদার্থগুলি অনেক শক্তি পেয়েছিল পৃথিবীর আকর্ষণের থেকে ভেসে বেরোনোর জন্য, সম্পূর্ণভাবে স্পেসে ভেসে চলে যাওয়ার জন্য। এবং বায়ুমণ্ডলের সমস্ত দেহের সাথেই এটি হয়। ধূমকেতুর ল্যাজ থাকে,যার দ্বারা বায়ুমণ্ডলে ভেসে যাওয়ার কথা প্রমাণিত হয়. কিন্তু শুক্রেরও একটা বায়মন্ডল আছে যা সময়ের সাথে ভেসে বেরিয়ে যায়, এবং মঙ্গল আর পৃথিবীরও এটা আছে. এটি শুধু পরিমানের ব্যাপার। তাই আমরা জানতে চাইবো সময়ের সাথে কতটা ভেসে বেরিয়ে গেছে যাতে আমরা এই পরিবর্তনটি বোঝাতে পারি। বায়ুমণ্ডল ভেসে বেরিয়ে যাওয়ার শক্তি কথা থেকে পায়? পদার্থরা ভেসে বেরোনোর শক্তি কথা থেকে পায়? দুরকম উপায় আছে,যদি আমরা ব্যাপারগুলি একটু কমিয়ে বলি। এক নম্বর, সূর্যের আলো। বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত পদার্থরা সূর্যের আলো শুষে নেয় এবং তা পদার্থগুলিকে গরম করে তোলে। হ্যা,আমি নাচ্ছি,কিন্তু তারা-- (হাসি ) হে ঈশ্বর, আমার বিয়েতেও না। (হাসি ) তারা প্রচুর পরিমান শক্তি পায় পৃথিবীর আকর্ষণ শক্তি থেকে ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য, শুধুমাত্র গরম তাপের দ্বারা। দ্বিতীয়ত তারা শক্তি পায় সৌরবায়ুর থেকে। ভর,বস্তু,কণার এগুলি সূর্যের পৃষ্ঠতল থেকে বেরিয়ে আসে, এবং এগুলি সৌর্যজগতে ছড়িয়ে পরে ৪০০ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ডের গতিতে, কখনো আরো বেগে সৌর্যঝড় এর সময়, তারা আন্তগ্র্রহের মধ্যে দিয়ে বয়ে যায় গ্রহ এবং তাদের বায়ুমণ্ডলের দিকে, এবং তারা হয়তো শক্তি প্রদান করে যার দ্বারা বায়ুমণ্ডল ভেসে বেরিয়ে যেতে পারে। আমি এই বিষয় আগ্রহী,কারণ এটি জড়িয়ে রয়েছে বসবাসযোগ্যতার সাথে। আমি এর আগে বলেছিলাম গোল্ডিলকসের গল্পে দুটি মুদ্রা কথা রয়েছে যেটি আমি আপনাদর মনে করিয়ে দিতে চাই, দ্বিতীয় জিনিসটি একটু বেশি সূক্ষ্ম। যদি বাবা ভাল্লুকের বাটি খুব গরম, এবং মা ভাল্লুকের বাটি খুব ঠান্ডা থাকে, তাহলে বাচ্চা ভাল্লুকের বাটি আরো বেশি ঠান্ডা হয়া উচিত নয় কি আমরা যদি প্রবণতাটা অনুসরণ করি? যেই জিনিসটি আপনি গোটা জীবন মেনে চলেছেন, সেটার ব্যাপারে আরেকটু ভেবে দেখলে কিন্তু বুঝবেন এটা এতটা সোজা নয়। আর অবশ্যই সূর্য থেকে এক গ্রহের দূরত্ব তার তাপমাত্রা নির্ধারণ করে। এটা যেন বসবাসযোগ্যতা বজায় রাখার অবস্থায় থাকে। কিন্তু অন্য জিনিসের ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে। হয়তো এটা বাটিটারই কোনো ব্যাপার যেটা গল্পের শেষ অংশটি নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে, যেটি সঠিক। আমি আপনাদের সাথে এই সব গ্রহের অনেক চরিত্রগত ব্যাপারে কথা বলতে পারি যা প্রভাব ফেলে বসবাসযোগ্যতার উপর, কিন্তু আমার গবেষণার স্বার্থপরতার কারণে এবং এ কারণে যে আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি ক্লীকারটা ধরে আর আপনারা সেটা করতে পারছেননা (হাসি ) আমি ২মিনিট চৌম্বকক্ষেত্রর সম্পর্কে কথা বলতে চাই। পৃথিবীর দুটো আছে,মঙ্গল এবং শুক্রের নেই। চৌম্বকক্ষেত্র গ্রহের অনেক অভ্যন্তরে তৈরী হয় বৈদ্যুতিকভাবে তরল উপাদান আবহ করে যাতে পৃথিবীর চারিদিকে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরী হয়। আপনাদের যদি একটা কম্পাস থাকে আপনারা জানবেন উত্তর দিক কোনটা শুক্র আর মঙ্গলেরটা নেই। আপনাদের যদি কম্পাস থাকে শুক্র বা মঙ্গলে আপনারা হারিয়ে যাবেন। (হাসি ) এটা কি বসবাসযোগ্যতা প্রভাবিত করে? কি ভাবে? অনেক বৈজ্ঞানিকরা মনে করে এই চৌম্বকক্ষেত্র বায়ুমণ্ডলকে ঢালের মতন রখ্যা করে, যাতে সৌর্যবায়ুর পথ ঘুরে যায় গ্রহের চারিদিকে বল ক্ষেত্রর উপর প্রভাব ফেলার মতন যা জুড়ে রয়েছে ওই পদার্থের বৈদ্যুতিক আধানের উপর। আমি মনে করি তা গ্রহেরন্য ঠিক সালাদে হাচ্চি রাখার ঢালের মতন। (হাসি ) আর হ্যা,আমার সহকর্মীরা যারা এটা পরে দেখবে বুঝতে পারবে যে আমাদের সম্প্রদায় ইতিহাসে প্রথমবার সৌর্যবায়ুকে শ্লেষ্মার সাথে তুলনা করা হয়েছে। (হাসি ) তাহলে প্রভাবটা এটা যে পৃথিবী হয়তো রক্ষিত বিলিয়ন বছর ধরে, কারণ আমাদের একটি চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে। বায়ুমণ্ডল ভেসে বেরিয়ে যেতে পারেনি। আরেক দিকে মঙ্গল রক্ষিত নয় কারণ তাতে চৌম্বকক্ষেত্র নেই, এবং বিলিয়ন বছর ধরে, হয়তো অনেকটাই বায়ুমণ্ডল ভেসে বেরিয়ে গেছে তাই আমরা আজ এক বাসযোগ্য গ্রহের জায়গায় এরকম দেখি। অন্য বৈজ্ঞানিকরা ভাবে চৌম্বকক্ষেত্রটি জাহাজের পালের মতন কাজ করে, যাতে গ্রহরা অনেক বেশি ভাবে সৌর্যবায়ুর সাথে গর্ভনাটিকা করতে পারে যেটা তাদের একার পক্ষ্যে সম্ভব নয়। পালগুলি সৌর্যবায়ুর থেকে শক্তি পায়। চৌম্বকক্ষেত্রটি শক্তি পায় সৌর্যবায়ু থেকে যা তাদের বেশি করে বায়ুমণ্ডলে ভেসে যেতে সাহায্য করে। এটা একটি ধারণা যা পরীক্ষা করে দেখতে হবে, কিন্তু তার প্রভাব এবং তা কিভাবে কাজ করবে সেটি বোঝা যাচ্ছে। কারণ আমরা জানি সৌর্যবায়ুর শক্তি আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এসে জমা হচ্ছে. সেই শক্তি চৌম্বকক্ষেত্রর দ্বারা পরিচালিত হয়ে মেরু অঞ্চলে এসে পৌঁছায়, যাতে সুন্দর অরোরা তৈরী হয়। যদি আপনারা কখনো তা দেখে থাকেন, এটি অপূর্ব। আমরা জানি শক্তি পৃথিবীর ভিতরে ঢুকে আসছে। আমরা মাপার চেষ্টা করছি কতগুলি পদার্থ বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে এবং চৌম্বকক্ষেত্র তাদের কোনভাবে সাহায্য করছে কিনা। আমি আপনাদের একটি সমস্যার কথা বলছি, যার কোনো উত্তর আমার কাছে নেই। আমাদের কাছে এর সমাধান নেই। কিন্তু আমরা এর উপর কাজ করছি, কিভাবে কাজ করছি? আমরা এই তিনটি গ্রহে মহাকাশযান পাঠিয়েছি এবং তাদের মধ্যে কিছু গ্রহের কখ্যপথে ঘুরছে,তাদের মধ্যে মাভেন মহাকাশযান মঙ্গলের কখ্যপথে ঘুরছে, যার সাথে আমি জড়িত এবং জেটি ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওটি তৈরী করা হয়েছে বায়ুমণ্ডলের পলায়ন মাপার জন্য। আমাদের একই পরিমাপ আছে শুক্র আর মঙ্গলের জন্য। সব পরিমাপ পেয়ে যাওয়ার পর, আমরা এগুলিকে একত্র সংগ্রহ করে,বুঝবো এই গ্রহগুলি কিভাবে সম্পর্ক করে তাদের বায়ুমণ্ডলের সাথে, এবং পরিবেশের সাথে। এরপর আমরা বিবেচনা করবো চৌম্বকক্ষেত্র বাসযোগ্যর জন্য প্রয়োজন কিনা। একবার যদি আমরা এটার উত্তর পেয়ে যাই তাহলে আর আমাদের চিন্তা নেই। মানে গভীর চিন্তার দরকার নেই এবং আর্থিক ভাবেও। (হাসি ) প্রথমত, এই প্রশ্নের উত্তরটি আমাদের অনেক কিছু শেখাবে তিনটি গ্রহের সম্পর্কে, শুক্র,পৃথিবী এবং মঙ্গল, শুধু এই ব্যাপারেই নয় যে তারা কি ভাবে গর্ভনাটিকা করে পরিবেশের সাথে, এটাও যে বিলিয়ন বছর আগে তারা বাসযোগ্য ছিল কিনা,বহু কাল আগে। এটা আমাদের বায়ুমণ্ডলের ব্যাপারে শেখাবে যা আমাদের চারিদিকে এবং কাছে রয়েছে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি আমরা যা শিখি এই গ্রহের থেকে তা আমরা প্রয়োগ করতে পারি বাকি সব বায়ুমণ্ডলের ক্ষেত্রে,যে সব গ্রহও যা আমরা এখন পর্যবেক্ষণ করছি বাকি তারাদের চারিদিকে উদাহরণ, কেপলার মহাকাশযান, যা তৈরী এবং নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বোল্ডার থেকে, সেটি এক ডাকটিকিটের সমান আকাশের অংশ পর্যবেক্ষণ করছে বেশ কিছু বছর ধরে, এবং তা হাজার গ্রহ খুঁজে বার করেছে-- শুধু এক ডাকটিকিট সমান আকাশের অংশে জেটি আকাশের বাকি অংশ থেকে কোনো রূপেই আলাদা নয়। ২০ বছরে আমরা, আমাদের সৌর্য জগতে শুন্য থেকে শুরু করে এখন এত গ্রহের কথা জেনেছি, যে আমরা এখন জানিনা কোন গ্রহটি আগে তদন্ত করা উচিত। যেকোনো লিভার সাহায্য করবে। কেপলাররের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এবং আরো অনেক একই রকম পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আমরা এখন বিশ্বাস করি, আমাদের মিল্কি ওয়ে ছায়াপথে, ২০০ বিলিয়ন তারার মধ্যে, প্রত্যেকটি তারার অন্তত ১টি গ্রহ রয়েছে. তাছাড়া, অনুমান সুপারিশ করে অন্তত ৪০ থেকে ১০০ বিলিয়ন গ্রহ প্রাণ বজায় রাখার অবস্থায় রয়েছে শুধুমাত্র আমাদের ছায়াপথে। আমাদের কাছে সে সমস্ত গ্রহের পর্যবেক্ষণ আছে, কিন্তু আমরা এখনো জানিনা কোন গ্রহ বসবাস যোগ্য। এটি একটি লাল অকুস্থলের ফাঁদে পরে যাওয়ার মতন -- (হাসি ) একটি স্টেজে এবং এটা জানা যে বাইরে আরো দুনিয়া রয়েছে এবং নিদারুণভাবে তাদের সম্বন্ধে আরো জানতে চাওয়া, তাদের জিজ্ঞাসা করতে চাওয়া শুধু এই আশায় যে হয়তো আরো এক দুজন আছে ঠিক আপনাদের মতন। আপনারা সেটা করতে পারবেননা। সেখানে যেতে পারবেননা এখন। এবং তাই আপনাদের সে সকল অস্ত্রের প্রয়োগ করতে হবে যা আপনারা তৈরী করেছেন শুক্র,পৃথিবী, মঙ্গলের জন্য, আপনাদের সে গুলি প্রয়োগ করতে হবে এই পরিস্থিতিতে, এবং আশা করতে হবে যে আপনারা ন্যায্য অনুমান করছেন এই সমস্ত তথ্য দিয়ে, এবং আপনারা নির্ধারণ করতে পারবেন সঠিক প্রার্থী বাসযোগ্য গ্রহের রূপে এবং কোনগুলি নয়। এবং সবশেষে, এখনকার মতন অন্তত, এটি হলো আমাদের লাল অকুস্থল, ঠিক এখানে। এটি একমাত্র গ্রহ যেটা আমরা জানি বাসযোগ্য, যদিও খুব সিগ্রি আরো কএকটির সন্ধান পাব। কিন্তু এখনকার মত এটি একমাত্র গ্রহ যে বাসযোগ্য, এবং এটি আমাদের লাল অকুস্থল, আমি খুশি আমরা সকলে এখানে আছি। ধন্যবাদ। (সাধুবাদ) আমি একজন রাঁধুনি এবং খাদ্যবিশারত কিন্তু আমি শিক্ষক পরিবারের সন্তান আমার বোন শিকাগো তে বিশেষ শিক্ষার্তীদের শিক্ষক| আমার বাবা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যিনি ২৫বছর ধরে পঞ্চম শ্রেণীতে শিক্ষাদান করেছেন| আমার পিসি এবং কাকা অধ্যাপক ছিলেন| আমার ভাই বোনেরা সবাই শিক্ষকতা করেন আমার পরিবারে প্রায় সবাই শিক্ষকতা করেন,শুধু আমি ব্যতিক্রম, তারা আমায় শিখিয়েছে যে সঠিক উত্তর পেতে হলে সঠিক প্রশ্ন করতে হবে সুতরাং আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজনিত ফলাফলের উন্নতি করার জন্য সঠিক প্রশ্ন কি হতে পারে? এখানে অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আছে আমি মনে করি নিচের উক্তিগুলি আলোচনার এটা সঠিক জায়গা: আমরা একজন শিশুর মানসিক বৃদ্ধি এবং তার দৈহিক বৃদ্ধির মধ্যে সম্পর্ক কি বুঝি? আমাদের বাচ্চারা কি শিখবে বলে আমরা আশা করতে পারি যদি তাদের খাদ্যতালিকায় শুধুই শর্করা থাকে কিন্তু পুষ্টির জায়গা খালি থাকে? তারা কি শিখবে যদি যদি তারা ক্ষুদার্থ থাকে? আমরা যে এত সম্পদ তাদের স্কুল এ দিচ্ছি, একবার দাঁড়িয়ে নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে: সত্যি কি আমরা আমাদের সন্তানদের সফলতার জন্য সঠিক পদক্ষেপ করছি? কিছু বছর আগে, আমি "Chopped" নামক এক রান্ধন প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলাম| চারজন রাঁধুনি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন তাদের রান্নার গোপনীয় উপাদান নিয়ে কে সবথেকে ভালো রান্না করতে পারে. কিন্তু এই এপিসোড টি বিশেষ ছিল. সাধারণত চারজন প্রবল উদ্দীপনাপূর্ণ রাঁধুনি প্রচারের আলোয় আসার চেষ্টা করে- যার সম্বন্ধে আমার কোনো ধারণা নেই-- (হাসি) এই রাঁধুনিরা ছিলেন স্কুলের রাঁধুনি আপনারা যাদের "লাঞ্চ লেডিস" বলেন, আমি অনুরোধ করছি আপনারা তাদের "স্কুলের রাঁধুনি" বলুন এইসমস্ত মহিলারা- ভগবান সহায় হন এই সমস্ত মহিলাদের প্রতি - তারা হাজার হাজার ছেলে মেয়েদের জন্য রান্না করে প্রতিদিন, প্রাতরাশ ও দুপুরের খাবার,শুধুমাত্র $2.68 তে প্রতি দুপুরের খাবারের পিছু , এর মধ্যে খাবারের জন্য বরাদ্ধ এক ডলার| এই এপিসোড এ, প্রধান খাবারের গোপনীয় উপাদান ছিল কিনওয়্যা আপনারা স্কুলের খাবার বহুদিন আগে খেয়েছেন, এবং এখন আমরা খাবারের পৌষ্টিকতা বাড়িয়েছি অনেক, কিন্তু কিনওয়্যা এখনো প্রধান খাদ্য রূপে বেশিরভাগ স্কুলের রান্নারঘরে ব্যাবৃত নয় (হাসি) সুতরাং ইটা একটা চ্যালেঞ্জ| আমি একটা পদের কথা কোনোদিন ভুলতে পারবোনা যেটা রান্না করেছিলেন চেরিল বারবারা নামক ভদ্রমহিলা. চেরিল ছিলেন কোনেটিকাট এর একটি হাই স্কুল কমুনিটির পুষ্টি বিভাগের পরিচালক. উনি সুস্বাদু পাস্তা রান্না করেছিলেন| এটি অপূর্ব ছিল| এটি ছিল পাপ্পারডেলে এর সাথে ইতালিয়ান সসেজ, কালে,পার্মেসান চেজে| এটার স্বাদ রাস্তার খাবারের মতন সুন্দর ছিল, কিন্তু- তিনি কিনওয়্যা অর্ধসিদ্ধ করে তা রান্নায় দিয়ে দিয়েছিলেন| এইটা একটা অদ্ভুত সিদ্ধান্ত ছিল, এবং এইটা ভীষণ কর মর করছিলো| (হাসি) সেইজন্য আমি তাকে অভিযুক্ত করার শুরে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কেন এইভাবে রান্না করলেন| চেরিল বললেন, "প্রথমত আমি জানিনা কিনওয়্যা জিনিসটা কি"| (হাসি) "কিন্তু আমি এটুকু জানি যে আজ সোমবার, এবং আমার কমুনিটির হাই স্কুল এ, আমি এদিন পাস্তা রান্না করি "| চেরিল ব্যাখ্যা করলেন যে ওনার বেশিরভাগ বাচ্চাদের, সপ্তাহান্তে কোনো খাবার থাকেনা| শনিবারে কোনো খাবার থাকেনা| রবিবারেও কোনো খাবার থাকেনা| সেইজন্য তিনি পাস্তা রান্না করতেন যেটা জানতেন বাচ্চারা ঠিক খাবে| যেটা তাদের গায়ে লাগবে, তিনি বললেন. যাতে তাদের পেট ভরবে| সোমবার দেখাযায়, তার বাচ্চাদের খিদের নাভিশ্বাস এতটাই ওঠে তাদের পড়াতে মন বসেনা শুধু মাত্র খাবারের কথা ই তারা চিন্তা করে| শুধুমাত্র খাদ্য| পরিসংখ্যা ও তাই বলে| আচ্ছা বাচ্চাদের প্রসঙ্গে আশা যাক| বাচ্চাদের দিনের মূল খাবার প্রাতরাশ সম্বন্ধে আলোচনা করা যাক| আলাপ করুন এলিসন এর সাথে. তার বারো বছর বয়স, সে অত্যন্ত চালাক এবং সে বড়ো হয় এক প্রকৃতিবিজ্ঞানী হতে চায়| যদি এলিসন এমন একটি স্কুল এ যায় যেখানে প্রতিটি বাচ্চাকে পুষ্টিকর প্রাতরাশ দেয়া হয়, তাহলে কি হয়| তাহলে তাদের পুষ্টিকর খাদ্য,যেমন ফল ও দুধ,যেখানে নুন ও চিনির মাত্রা কম থাকে, এমন খাদ্য পাবার সম্ভবনা বাড়ে| এলিসনের অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায় স্থূলস্তার মাত্রা কম হবে| তাকে চিকিৎসকের কাছে কম যেতে হবে. তার উদ্বেগ ও বিষন্নতা কম হবে| তুলনামূলক ভাবে তার ব্যবহার ,উপস্থিতি ও যথাকালীনতা সঠিক হবে| কেন? কারণ তার জন্য স্কুল এ ভালো খাবার অপেক্ষা করছে| সামগ্রিক ভাবে এলিসন এর সাস্থ স্কুল এর অন্যান্য বাচ্চাদের থেকে ভালো হবে| তাহলে সে সব বাচ্চাদর ক্ষেত্রে কি হবে যাদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য স্কুলে নেই| আলাপ করুন টমির সাথে| তার ও বয়স ১২. সেও এক চমৎকার শিশু| সে এক চিকিৎসক হতে চায়| টমি যখন স্কুলের শিশু বিভাগে, তখন সে গণিত এ দুর্বল ছিল| যখন সে তৃতীয় বিভাগে ছিল তখন, তার গণিত ও পঠনে কম নম্বর এসেছিলো| বোঝা যাচ্ছিলো ১১বছর বয়সে তাকে একই শ্রেণীতে পুনরায় থাকতে হবে| গবেষণায় দেখা যায়,যে বাচ্চারা ধারাবাহিক ভাবে পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ করছেনা,বিশেষত প্রাতরাশ, তাদের মধ্যে জ্ঞানের প্রকাশ কম হচ্ছে| এই সমস্যাটি কতটা বিস্তারিত? দুর্ভাগ্যবশত এটা বহুদূর বিসৃত| দুটি পরিসংখানে দেখে মনে হচ্ছে এই সমস্যার দুটি প্রান্ত,কিন্তু আসলে এটি একটি মুদ্রার দুটি দিক| এক দিকে, ১/৬ আমেরিকাবাসি খাদ্যের দিক থেকে নিরাপত্তাহীন, এর মধ্যে ১৬ মিলিয়ন বাচ্চা- প্রায় ২০ শতাংশ- খাদ্য নিরাপত্তাহীন| শুধুমাত্র নিউ ইয়র্ক শহরে, ৪৭৪,০০০ বাচ্চা ,যারা ১৮ বছরের নিচে প্রত্যেক বছরে ক্ষুদার্ত থাকে| এটা বিস্ময়কর| অন্য দিকে, অপুষ্টি এই দেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ| এবং যে সমস্ত বাচ্চার সম্পর্কে আলোচনা করছি তাদের ১/৩ ভাগ শিশু দিয়াবেটিসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে. সমস্ত কিছু নিয়ে বিচার করলে দেখা যাচ্ছে এদের মধ্যে বেশির ভাগ বাচ্চাই একই সমস্যার শিকার, তাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে তারা যে সমস্ত অস্বাস্থ্যকর ও সস্তা খাবার পায়ে,যেটা তাদের পরিবার জোগাড় করতে পারে তাই গ্রহণ করে| মাসের শেষে, কাজের সময় কমিয়ে দেওয়ায়, মজুরি ও কমে যায়, ফলে তারা সামান্য খাবার ও জোগাড় করতে পারেনা| কিন্তু আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারি. তাইনা? আমরা এর উত্তর জানি| আমার হোয়াইট হাউসের কাজের একটি অংশ ছিল, আমরা কিছু স্কুল নিয়ে একটি সমীক্ষা আরম্ভ করেছিলাম,যেখানে ৪০ শতাংশ বাচ্চা দারিদ্রসীমার নিচে থেকে আসে,আমরা সেখানে বিনাপয়সায় প্রাতরাশ ও মধ্যাহ্নভোজ দিতাম প্রতিটি বাচ্চাকে| এই প্রোগ্র্যামটি খুবই সফলতা পেয়েছিলো কারণ এটা আমাদের একটা বিরাট বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করেছিল যেটা ছিল বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাবার পাওয়ার বিসয়| এটা ছিল মর্যাদা হানির বাধা| স্কুল আরম্ভের আগে প্রাতরাশ দেয়া হতো, এবং এটা শুধুমাত্র গরিব বাচ্চাদের দেয়া হতো| এর থেকে জানা যেত কারা গরিব এবং কাদের সরকারের সহযোগিতার প্রয়োজন আছে| বাবা মার রোজগার কম বা বেশি যাই হোক,বাচ্চাদের মধ্যে গর্ববোধ আছে তা নিয়ে| তাহলে কি দেখা যায়? যে সমস্ত স্কুল এই সমীক্ষা শুরু করেছিল তাদের বাচ্চাদের গণিত ও পঠনে ১৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছিলো| ১৭.৫ শতাংশ| গবেষণায় দেখা যায় যখন শিশুরা ধারাবাহিক ভাবে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে, তাদের স্নাতক হওয়ার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়| ২০ শতাংশ| যখন আমরা বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাবার দি, তখন তাদের উন্নতিলাভের সম্ভাবনা বাড়ে, শ্রেণীকক্ষের ভিতর ও বাইরে| আমার কথা বিশ্বাস না হলে,তোমাদের দনা মার্টিনের সাথে কথা বলা দরকার| আমি দনা মার্টিনকে পছন্দ করি| দনা মার্টিন হলো ব্রুক কাউন্টির স্কুলের পুষ্টি বিভাগের অধিকর্তা, বায়নেসবোরো,জর্জিয়াতে| ব্রুক কাউন্টি হচ্ছে সব থেকে গরিব জেলা যেটা দেশের পঞ্চম গরিবতম প্রদেশ| এবং ১০০ শতাংশ ডোনার শিক্ষার্তীরা দারিদ্রসীমার সমান্তরালে বা নিচে বাশ করে| কিছু বছর আগে, পুষ্টির যে নতুন মান চালু করা হয়েছিল, দনা তা আরো অগ্রসর করতে চেয়েছিলেন, এবং নিজস্ব তৈরী করা পুষ্টির মান বাস্তবায়ন করেন| তিনি খাদ্যতালিকা উন্নত করে তাতে ফল, সবজি ও খাদ্যশস্য যুক্ত করেছিলেন| শ্রেণীকক্ষয়ে প্রাতরাশ বিতরণ ও আরম্ভ করেন| তিনি রাতের খাবারের ব্যবস্থা করলেন| কেন? বেশিরভাগ বাচ্চাই বাড়িতে গিয়ে রাতের খাবার আর খেতোনা| তারা কিভাবে সারা দিলো? বাচ্চার খাবার পছন্দ করত. তাদের এই পুষ্টি ভালো লাগতো এবং ক্ষুদার্ত বোধ না করায় তাদের ভালো লাগতো। কিন্তু ডোনার সবথেকে বোরো সমর্থকরা অপ্রত্যয়শী জায়গা থেকে এসেছিল। তার নাম এরিক পার্কার, তিনি ছিলেন প্রধান ফুটবল কোচ ব্রুক কাউন্টি বেয়ার্সের। পার্কার অনেক বছর ধরেই মাঝারি মাপের ফুটবল দলকে কোচ করতেন। দলটি মাঝারি ধরণের সফলতা পেত- একটি ফুটবল মনস্ক দেশের উনিয়নের এটা হতাশার কারণ ছিল। যে বছর দনা খাদ্যতালিকা পরিবর্তন করলেন, বেয়ার্স রা শুধুমাত্র ডিভিশন তাই জেতেনি, স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপ তও জিতেছে, পীচ কাউন্টিকে হারিয়ে। ২৮-১৪| (হাসি ) কোচ পার্কার এই সফলতাটি দনাকে উৎসর্গ করেছিলেন| যখন আমরা আমাদের বাচ্চাদের মৌলিক পুস্তিপ্রদান করি, তারা উন্নতিলাভ করে| এটা দেয়ার দায়িত্ব শুধুমাত্র চেরিল বা দনার নয়| দায়িত্ব আমাদের সবার| আমাদের বাচ্চাদের মৌলিক পুষ্টি দেওয়াটা শুরুর প্রথম পর্যায়| আমরা যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির মুখোমুখি হই,তার একটা ক্ষুদ্রাকার নকল আমি এখানে প্রদর্শন করলাম| যদি আমাদের নিজেদের পুষ্টির দিকে মনোযোগ দি, তাহলে আমরা একটি স্থিশীল ও নিরাপদ পৃথিবী পাবো; আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হবে; আমরা আমাদের সাস্থব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারি এবং আমরা অনেক আগে এগোতে পারি যাতে পৃথিবী আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের উন্নতি নিশ্চিত করে| খাদ্য এমন একটা জায়গা দখল করে যেটা আমাদের সামগ্রিক প্রচেষ্টায় প্রভাব ফেলে| আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে: সঠিক প্রশ্নটি কি? কি হবে যদি আমরা আরো পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করি? তাহলে তার প্রভাব কি হবে? চেরিল বারবারা, দনা মার্টিন, কোচ পার্কার এবং ব্রুক কাউন্টি বেয়ার্স - আমার মনে হয় এনারা উত্তর তা জানেন| আপনাদের সবাই কে ধন্যবাদ জানাই| (সাধুবাদ) আমরা কেন ভাবি যে পুরুষ রচিত কাহিনীগুলোরই একমাত্র জাগতিক গুরুত্ব রয়েছে, এবং নারীদের গল্পগুলো নিছক মেয়েলী বলেই গণ্য করা হবে? আমার দাদীর যখন ১২ বছর বয়স তখন তাঁর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হলো। তাঁর ১৪টি সন্তান ছিলো। আমার মা ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দিলেন। তিনি একজন সম্পাদক ছিলেন। আমি একজন নাট্যশালা পরিচালক হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক অর্জন করেছি , এবং আমার এই অগ্রগতির জন্য সম্পূর্ণভাবে সেসব অপরিচিত মানুষদের কাছে আমি ঋণী যারা নারীর অধিকার, ভোট প্রদান, শিক্ষার অধিকার ও অগ্রগতির জন্য লড়েছেন। আর আমি এভাবেই চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, নিশ্চয়ই আপনারাও তাই। কেন নয়? (প্রশংসা ধ্বনি) তাই আমি সাত বছর পূর্বে, ওয়াও,সমগ্র বিশ্বের নারী, নামক একটি উৎসব শুরু করলাম, এবং বর্তমানে এটি পাঁচটি উপমহাদেশের ২০ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একটি দেশ হলো আফ্রিকা মহাদেশের সোমালিল্যান্ড। তো আমি গত বছর সেখানে ভ্রমণে গিয়েছিলাম, এবং সেখানে গিয়ে গুহার ভেতরটা দেখা খুব উপভোগ্য ছিল। লাস গীল গুহা। তো, বিশ্বের প্রাচীনতম গুহাচিত্রের কিছু সেই গুহাগুলোয় বিদ্যমান। ধারণা করা হয় এই গুহাচিত্রগুলো আনুমানিক ৯,০০০ থেকে ১১,০০০ বছরের পুরোনো। শিল্পঃ বিবর্তনের পর থেকে মানুষ যা কিছু করে আসছে। এভাবেই আমরা নিজেদের সম্পর্কে বলি, নিজেদের পরিচয় উপলব্ধি করি, আমাদের পারিপার্শ্বিক পর্যবেক্ষণ করি, একে অপরের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি কেননা আমরা আমাদের জীবনের অর্থ বুঝতে চাই। এখানেই শিল্পের প্রয়োজনীতা। এই ছোট্ট ছবিটার দিকে একটু তাকান। আমার মনে হচ্ছে এটা একটি ছোট্ট মেয়ের ছবি। আমি ভাবলাম, মেয়েটি দেখতে কিছুটা আমার মতো যখন আমি ছোট ছিলাম। এবং চিন্তা করলাম, বাহ, এই তারুণ্যে ভরা, হাসিখুশি ছবিটি কে আঁকলো? তারপর আমি গুহার কিউরেটরকে জিজ্ঞাসা করলাম। বললাম, "যারা এইসব এঁকেছিলো সেইসব নারী ও পুরুষদের সম্পর্কে আমাকে বলুন।" এবং তিনি আমার দিকে সম্পূর্ণ বক্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, "নারীরা এইসব ছবি আঁকেনি।" এরপর আমি বললাম, "বেশ, এটা তো ১১,০০০ বছর আগের কথা।" বললাম, "আপনি কিভাবে জানলেন?" (হাসি) তিনি বললেন, "নারীরা এসব করতে পারে না। পুরুষেরা এইসব এঁকেছে। নারীরা নয়।" আসলে, আমি তেমন অবাক হইনি, কেননা এরকম আচরণ আমি ক্রমাগতভাবে দেখে এসেছি একজন নাট্যশালার পরিচালক হিসেবে সারা জীবনে। আমাদের সবসময় বলা হয় যে স্বর্গীয় জ্ঞান আসে পৌরুষের সাথে সাথে, এখন সেটি হতে পারে ইমাম, পুরোহিত, রাব্বি কিংবা পবিত্র পুরুষ ব্যক্তিত্ব। একইভাবে, আমাদের বলা হয় পৌরুষের মধ্যেই উদ্ভাবনী প্রতিভা নিহিত, বলা হয় যে পৌরুষই একমাত্র যা আমাদের পরিচয় সম্পর্কে জানাতে সক্ষম, এবং পৌরুষই জাগতিক কাহিনী বলবে আমাদের সবার পক্ষ হয়ে, যেখানে নারী শিল্পীরা আসলে শুধু কথা বলবে নারীর অভিজ্ঞতা, সমস্যাসমূহ নিয়ে যেগুলো শুধুমাত্র তাদের নিজেদের সাথেই সম্পর্কযুক্ত এবং পুরুষদের ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া -- আর সত্যি শুধুমাত্র কিছু পুরুষদের প্রতি। এবং এটা এক ধরণের দৃঢ় বিশ্বাস, যা আমাদের শেখানো হয়, যেটা আমি মনে করি দারুনভাবে প্রতিপন্ন করে যে আমরা কি বিশ্বাস করতে সত্যি প্রস্তুত যে নারীদের গল্পও আসলে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করতে প্রস্তুত না থাকি যে নারীদের গল্পেরও গুরুত্ব রয়েছে, তাহলে নারী অধিকারের সত্যি কোন গুরুত্ব নেই, এবং সত্যিকার অর্থে কোন পরিবর্তনও ঘটবে না। আমি আপনাদেরকে গল্পের দুইটি উদাহরণ দিতে চাই যেগুলোকে বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়ঃ "ই.টি." এবং "হ্যামলেট"। (হাসি) তো আমার দুই সন্তান যখন ছোট ছিলো -- ক্যারোলিনের বয়স তখন ৮ এবং রবির ৫ বছর -- আমি ওদের "ই.টি." দেখাতে নিয়ে গেলাম। সেটা ছিলো একটি ছোট্ট এলিয়েনের চমৎকার এক কাহিনী যে শেষ পর্যন্ত এক আমেরিকান পরিবারে আসে যেখানে রয়েছে মা, দুই ভাই এবং একটি বোন, কিন্তু সে তো তার বাড়িতে যেতে চায়। শুধু তাই নয়, কিছু খুব বাজে বিজ্ঞানীরা তার ওপর কিছু পরীক্ষা করতে চায়, এবং তারা ওকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। তো বাচ্চারা একটা পরিকল্পনা করলো। তারা ঠিক করলো যে তারা ওকে স্পেসশিপে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে যত দ্রুত সম্ভব, এবং ওরা ঝটপট ওকে বাইসাইকেলের ঝুড়িতে নিয়ে সাঁই সাঁই করে চালিয়ে গেলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, দুষ্টু লোকেরা এর মধ্যেই বুঝতে পেরেছে এবং তাদের পিছু নিয়েছে আর তাদের কাছে আছে সাইরেন, আছে বন্দুক, তাদের কাছে আছে বিদ্যুতিন, সব মিলিয়ে খুবই ভয়াবহ, এবং তারা প্রায় বাচ্চাদেরকে ধরেই ফেলেছে, তারা মনে হয় শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠবে না। তখন হঠাৎ, জাদুর মত, বাইকটি বাতাসে উড়াল দিলো, মেঘের ওপরে, চাঁদের ওপরে, এবং তারা এবার "ই.টি." কে বাঁচাবে। তো আমি আমার বাচ্চাদের দিকে তাকালাম, রবি তখন আহ্লাদে আটখানা, সে তখন তাদের সাথে, ই.টি. কে বাচাচ্ছে, সে তখন খুবই সুখী একটা ছেলে। এরপর আমি ক্যারোলিনের দিকে তাকালাম, সে তখন হাপুস নয়নে কাঁদছে। আমি বললাম, "কি হয়েছে?' আর সে বলল, "আমি কেন ই.টি. কে বাঁচাতে পারিনা? আমি কেন আসতে পারি না?" এরপর হঠাৎ করেই আমি বুঝতে পারলামঃ তারা কয়েকটা বাচ্চা ছিলো না; তারা ছিলো কয়েকটা ছেলে -- সবগুলো ছেলে। এবং ক্যারোলিন, যে কিনা ই.টি এর প্রতি এতো অভিভূত ছিলো, তাকে উদ্ধার কার্যে আমন্ত্রনই জানানো হয়নি, এবং সে খুবই মর্মাহত এবং অপমানিত বোধ করেছে। তো আমি স্টিভেন স্পিলবার্গকে লিখলাম -- (হাসি) (প্রশংসা ধ্বনি) বললাম, "আমি ঠিক জানিনা আপনি বুঝতে পারেন কিনা যা ঘটেছে তার মনোস্তাত্বিক গুরুত্ব, এবং আপনি কি এর চিকিৎসার বিল দিতে প্রস্তুত?" (হাসি) বিশ বছর পর, আমি তাঁর কাছ থেকে একটি শব্দও এর প্রতিউত্তরে পাইনি, কিন্তু আমি এখনো আশাবাদী। (হাসি) কিন্তু আমার মনে হলো বিষয়টা মজার, কেননা আপনারা যদি পরিদর্শন করেন উঁনি ই.টি নিয়ে কি করতে চেয়েছেন তিনি বেশ স্পষ্টভাবে বলেছেন, "আমি চেয়েছি পৃথিবী বুঝতে পারুক যে আমাদের উচিৎ ভেদাভেদকে ভালোবেসে আলিঙ্গন করা।" কিন্তু যেকোন ভাবেই হোক তিনি মেয়েদের ভেদাভেদের বিষয়টিকে অন্তর্ভূক্ত করেননি তাঁর চিন্তাধারায়। তিনি ভেবেছিলেন যে তিনি সমগ্র মানবতা নিয়েই গল্প লিখছেন। ক্যারোলিনের মনে হয়েছে তিনি একঘরে করেছেন মানবজাতির অর্ধভাগকে। তিনি ভেবেছিলেন তিনি মানুষের উদারতা নিয়ে গল্প লিখছেন; আর ও ভেবেছে তিনি একটি বালকের বীরোচিত অভিযান রচনা করেছেন। এবং এটা খুব সাধারণ ব্যাপার। পুরুষরা মনে করেন যে তাদের ওপরেই বৈশ্বিক যোগাযোগের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে, কিন্তু সত্যি, তা কিভাবে হয়? পুরুষরা তাদের চোখ দিয়ে দেখা এবং তাদের লাভ করা অভিজ্ঞতা থেকে লিখছেন। আমাদেরকে অবশ্যই এসব স্বচক্ষে দেখতে হবে। আমাদেরকে প্রস্তুত হতে হবে পিছনে ফিরে দেখার জন্য, আমাদের সকল বই, চলচ্চিত্র, সব প্রিয় জিনিসের মাধ্যমে, এখন মনে করুন, "আসলে, এটা লিখেছিলেন একজন পুরুষ শিল্পী -- শিল্পী নয়। আমাদের এটা বুঝতে হবে যে বেশিরভাগ কাহিনীগুলোই একজন পুরুষের পরিপ্রেক্ষিত থেকে লেখা হয়েছে। যাতে কোন অসুবিধা নেই, কিন্তু তারপরেও নারীদের ৫০ শতভাগ অধিকার থাকা দরকার মঞ্চ, চলচ্চিত্র, উপন্যাস, এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে। চলুন এবার "হ্যমলেট" নিয়ে কথা বলা যাক। হওয়া বা না হওয়া। সেটাই সাধারণ প্রশ্ন। কিন্তু আমার প্রশ্ন এটা নয়। আমার প্রশ্ন হলোঃ একজন তরুণী হিসেবে আমাকে কেন শেখানো হলো যে এটিই মানবীয় উভয়সঙ্কট এবং মানবীয় অভিজ্ঞতার সর্বোত্তম উদাহরণ? এটি একটি অসাধারণ গল্প, কিন্তু আসলে, এটি একটি যুবকের কাহিনী যে এই ব্যাপারে ভীত যে, একটি পুরুষতান্ত্রিক জগতে সে শক্তিশালী অবয়ব হয়ে উঠতে পারবে না যদি সে তার বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে না পারে। বিকল্প হিসেবে আত্মহত্যার ব্যাপারটি নিয়ে সে আমাদের অনেক কিছু বলে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ওফেলিয়া হলো সেই ব্যক্তি যে সত্যি আত্মহত্যা করে, যখন সে তার মাধ্যমে অপমানিত এবং অবমাননার শিকার হয়, এখানে ওফেলিয়ার অনুভূতির ব্যাপারে পাঠকদেরকে বলার কোন সুযোগই নেই। এবং যখন ওফেলিয়ার পালা শেষ হলো, সে তার মার দিকে নজর দিলো, কেননা মূলত, তার চাচাকে ভালোবাসার দুঃসাহস তিনি দেখিয়েছিলেন এবং সঙ্গম উপভোগ করতে চেয়েছিলেন। (হাসি) এটি একটি দারুণ গল্প, কিন্তু এটি শুধু পুরুষদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সঙ্কট এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার গল্প। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছিলো যে এটি মানুষের গল্প, যেখানে মাত্র দুটি নারীর উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও। এবং আমি যদি পুনরায় উপলব্ধি করতে না পারি, আমি সবসময় ভাববো যে পুরুষদের গল্পের চেয়ে নারীদের গল্পকে কম প্রাধান্য দেওয়া হয়। একজন নারীর "হ্যামলেট" লিখতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা একটু ভিন্নভাবে লিখতেন, এবং সেটি কখনো বৈশ্বিক পরিচিতি পেতো না। মার্গারেট অ্যাটউড বলেছেন, "যখন একজন পুরুষ থালা-বাসন ধোয়ার কথা লেখেন, এটি বাস্তবতা। যখন একজন নারী এই কাজ করার কথা লেখেন, এটি একটি হতভাগ্য বংশগত বিধান।" (হাসি) তো, এটি শুধু তৎকালীন সময়েই বিদ্যমান ছিলো তা নয়। মানে, আমি যখন ছোট ছিলাম, আমি মরিয়া হয়ে একজন নাট্যশালা পরিচালক হতে চেয়েছিলাম, আমার পুরুষ প্রভাষক আমাকে বলেছিলেনঃ "বেশ, ব্রিটেনে তিনজন নারী পরিচালক রয়েছেন", তিনি বললেন, "জুড।" "জোয়ান নাইট, যে একজন সমকামী, তারপর জোয়ান লিটলউড, যিনি অবসরপ্রাপ্ত, এবং বাজ গুডবডি, যিনি কিছুদিন আগে আত্মহত্যা করেছেন। তো, এই তিনজনের মধ্যে তুমি কে হতে চাও?" (হাসি) এখন, সমকামী নারীর প্রতি বিরক্তিকর নিন্দা বাদ দিলে, সত্যি বলতে, তিনি আমাকে অপমান করতে চেয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, আমার পরিচালক হতে চাওয়ার ইচ্ছেটা ছিলো হাস্যকর। এবং আমার কন্ডাক্টর বান্ধবী, মারিয়ান আসলপকে যখন এটা বললাম, সে বললো,"হ্যাঁ, আসলে আমার সঙ্গীতের শিক্ষকও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, "মেয়েরা কন্ডাক্ট করে না।" কিন্তু এতোগুলো বছর পর, আমরা আমাদের সফলতা অর্জন করেছি। আপনি ভাবছেন, "বেশ, এখন সবকিছু ভিন্ন।" সত্যি বলতে এখনও সবকিছু ভিন্ন নয়। ইদানিংকালে প্যারিস কনসার্ভেটরের বর্তমান মহাপরিচালক বলেছেন, "প্রচুর শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয় একটি সিম্ফনি কন্ডাক্ট করতে, এবং নারীরা বেশ দুর্বল।" (হাসি) শিল্পী জর্জ বেসলিটস বলেছেন, "বেশ, সত্য বলতে নারীরা ছবি আঁকতে পারে না। -- তারা বেশি ভালো ছবি আঁকতে পারে না।" দুই বছর আগে লেখক ভি.এস. নাইপল বলেন, "আমি দুইটি অনুচ্ছেদ পড়ে সাথে সাথেই বলে দিতে পারি তা একজন নারীর লেখা কিনা, এবং আমি তা পড়া বন্ধ করে দিই কেননা তা আমার পড়ার যোগ্য নয়।" দর্শকঃ আরে! এবং তা এভাবেই চলতে থাকে। আমাদের একটি পথ খুঁজতে হবে যাতে তরুণী এবং নারীরা এটি ভাবা বন্ধ করেন যে তাদের কথার কোন গুরুত্ব নেই, এবং তাদের গল্প-কথক হওয়ার কোন অধিকার নেই। কেননা একবার যদি আপনি অনুভব করেন যে আপনি কেন্দ্রস্থলে এসে দাঁড়াতে পারবে না এবং বিশ্বের প্রতিনিধি হয়ে বলতে পারবেন না, আপনার মনে হবে যে আপনি ছোট এবং নির্দিষ্ট গোষ্টীকেই শুধু কিছু দিতে পারবেন। আপনি ছোট পরিসরে ছোট কাজ করতে চাইবেন, আপনার অর্থনৈতিক ক্ষমতা কমে যাবে, আপনি খুব কম দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারবেন, এবং শিল্পী হিসেবে আপনি কম সম্মানিত হবেন। এবং আমরা এই বিশ্বে অবশ্যই শিল্পীদের অসাধারণ, বিশিষ্ট স্থান দিয়ে থাকি, কেননা তাঁরাই আমাদের গল্প-কথক। এখন, আপনি যদি শিল্পী না হয়ে থাকেন তাহলে কেন এটি গুরুত্ব বহন করবে? মনে করুন আপনি একজন হিসাবরক্ষক বা উদ্যোক্তা কিংবা একজন চিকিৎসাবিদ অথবা একজন বিজ্ঞানীঃ আপনি কি নারী শিল্পীদের গুরুত্ব দেবেন? অবশ্যই, আপনাকে দিতেই হবে, কেননা আপনারা যেহেতু এই গুহা-চিত্র থেকে দেখতে পাচ্ছেন, সকল সভ্যতা, সমগ্র মনুষ্যজাতি মানুষের গল্প বলার জন্য চিত্রশিল্পীদের ওপর নির্ভর করেছে, এবং মানুষের গল্প যদি সর্বশেষে পুরুষদের দ্বারাই বলা হয়, আমার কথা বিশ্বাস করুন, সেটা হবে শুধু পুরুষদেরই গল্প। কাজেই চলুন পরিবর্তন আনি। চলুন আমাদের সকল প্রতিষ্ঠানেই পরিবর্তন আনি, শুধুমাত্র পশ্চিমেই নয়। ভুলে যাবেন না -- নারীদের উদ্ভাবনী শক্তি ধরে রাখার অসক্ষমতার এই ধারণা নাইজেরিয়া, চীন, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মেয়েদেরকেও বলা হচ্ছে। সারা বিশ্বেই, মেয়ে এবং নারীদের বলা হচ্ছে যে তারা উদ্ভাবনের এই অনুপ্রেরণা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে না। এবং আমি আপনাদের জিজ্ঞাসা করতে চাইঃ আপনারা কি তা বিশ্বাস করেন? আপনারা কি বিশ্বাস করেন যে নারীরাও পারে সৃজনশীল প্রতিভাধর হতে? (সাধুবাদ এবং প্রশংসা ধ্বনি) বেশ, তাহলে অনুগ্রহ করে এগিয়ে আসুন, নারী শিল্পীদের সমর্থন দিন, তাদের শিল্পকর্ম কিনুন, জোর দিয়ে বলুন যে তাদের কথাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়, এমন মঞ্চ খুঁজে দিন যেখানে তাদের কথা অন্যরা শুনবে। এবং মনে রাখবেনঃ যে এক অর্থে, আমরা যদি বিশ্বের এই সময়কে অতিক্রম করতে চাই যেখানে আমরা জানি যে আমরা অসমকক্ষ, একমাত্র শিল্পীদেরই এই বিশ্বকে ভিন্নভাবে কল্পনা করতে হবে। এবং আমি সকল শিল্পী, নারী এবং পুরুষদেরকে আহ্বান করছি, একটি লিঙ্গ বৈষম্যহীন পৃথিবী কল্পনা করার জন্য। চলুন তা আঁকি। চলুন এতে রঙ করি। এর সম্পর্কে লিখি।এর চিত্রধারণ করি। এবং আমরা যদি তা কল্পনা করতে পারি, তাহলে আমাদের সেই শক্তি এবং উদ্যম থাকবে তার উদ্দেশ্যে আগানোর জন্য। আমি যখন এই ছোট্ট মেয়েটিকে দেখি, ১১,০০০ বছর পূর্বের, আমি জানতে চাই এখনকার একটি ছোট্ট মেয়ে পারবে সেখানে দাঁড়িয়ে ভাবতে যে তার স্বপ্ন দেখার অধিকার রয়েছে, তার গন্তব্য নির্ধারণ করার অধিকার রয়েছে এবং সারা বিশ্বের প্রতিনিধি হয়ে তার বলার অধিকার আছে, তার জন্যে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং প্রশংসিত করা হবে। ধন্যবাদ। (প্রশংসা ধ্বনি) (সংগীত) সোফি হাভলি-ওয়েড: আচ্ছা, আপনাদের দাঁড়াতে হবে না, কিন্তু ... আমরা আপনাদের স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি -- (হাসি) তাই আপনাদের আমাদের সাথে নাচতে। হবে এবং আমাদের কাছে এই নাচটি, নিপুন ভাবে আগে থেকে সাজানো রয়েছে-- বেত্তা লেম্মে: সত্যিই সহজ। স হ ও:এবং আমরা এইরকম ভাবে আমাদের কব্জি নাড়াবো, এবং আপনারা এটা আমাদের সাথে করবেন। এবং আপনারা দাঁড়াতে পারেন। (সঙ্গীত) (গান) আমি জানি আমি একটি হাতও তুলিনি (উভয় গান) আমি জানি আমি তা ধরিনি তা এসেছিলো, তা এসেছিলো, তা গেছিলো, তা গেছিলো, তা দ্রুত জয় করেছিল আমি সেখানে ছিলাম তারপর ছেড়ে দিয়েছিলাম আউ! আমি জানি আমি একটি হাতও তুলিনি আমি জানি আমি তা ধরিনি তা এসেছিলো, তা এসেছিলো, তা গেছিলো, তা গেছিলো, এটা দ্রুত জয় কোরলো আমি সেখানে ছিলাম তারপর ছেড়ে দিয়েছিলাম আউ! ব ল: (কথা) এই নিন আপনারা! (সঙ্গীত) স হ ও: আমাদের আর একটা পরিবেশন আসছে। এটি একটি আঙ্গুল-নির্দেশনা নাচ। (সঙ্গীত) যারা বসে আছেন, আমি তাদের আঙ্গুল উপরে তোলা দেখতে চাই। হ্যা! (গান) আমি জানি আমি একটি হাতও তুলিনি (উভয় গান) আমি জানি আমি তা ধরিনি তা এসেছিলো, তা এসেছিলো, তা গেছিলো, তা গেছিলো এটা দ্রুত জয় কোরলো আমি সেখানে ছিলাম তারপর ছেড়ে দিয়েছিলাম আ ... (হাততালি) আউ! (সঙ্গীত) (হাততালি সংগীতের সাথে) (সঙ্গীত) আ ... স হ ও :(কথা) আছে, হাত নাড়ান। (উভয় গান) আমি জানি আমি একটি হাতও তুলিনি আমি জানি আমি তা ধরিনি তা এসেছিলো, তা এসেছিলো, তা গেছিলো, তা গেছিলো এটা দ্রুত জয় কোরলো আমি সেখানে ছিলাম তারপর ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি জানি আমি একটি হাতও তুলিনি আমি জানি আমি তা ধরিনি তা এসেছিলো, তা এসেছিলো, তা গেছিলো, তা গেছিলো এটা দ্রুত জয় কোরলো আমি সেখানে ছিলাম তারপর ছেড়ে দিয়েছিলাম (সঙ্গীত) টুকের হাল্পেরন: আমি যা ভেবেছিলাম আপনারা তার চেয়ে বেশি মাজেদার। (হাসি) (সঙ্গীত) আউ! (হাততালি) স হ ও:আপনাদের অত্যন্ত ধন্যবাদ। (হাততালি) কোন কিছুর জন্য একাগ্রভাবে মনোযোগ দেয়া খুব একটা সহজ কাজ না, তাই কি? তার কারন আমাদের মনোযোগ এক সময়ে বিভিন্ন দিকে চলে যায়, আর আসলে মজার বিষয় হলো যদি আপনি ফোকাস থাকতে পারেন। অনেকে ভাবে যে মনোযোগ দেয়া মানে ফোকাস থাকা, কিন্তু এটি আসলে আমাদের মস্তিষ্ক কি বাদ দিচ্ছে তাও নির্দেশ করে। দুটি উপায় আছে, আপনি আপনার মনোযোগ নিয়ন্ত্রন করুন। প্রথমত, আছে মুক্ত মনোযোগ, মুক্ত মনোযোগে, কোনোকিছুর দিকে আপনি তাকান যাতে আপনি মনোযোগ দিতে পারেন। তারপর বদ্ধ মনোযোগ। বদ্ধ মনোযোগে, আপনি কোন কিছুর দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আপনি চোখ দিয়ে দেখেন না। এক সেকেন্ড ড্রাইভিং এর কথা ভাবুন। আপনার মুক্ত মনোযোগ, আপনার চোখের দিক সামনের দিকে থাকে, কিন্তু ওটাই আপনার বদ্ধ মনোযোগ যেটা অনবরত চারপাশ স্ক্যান করছে, যেখানে আসলে আপনি দেখছেন না। আমি একজন গননিয়ক স্নায়ুবিজ্ঞানী এবং আমি জ্ঞানীয় মস্তিষ্ক-যন্ত্র ইন্টারফেসগুলো নিয়ে কাজ করি, অথবা মস্তিষ্ক এবং কম্পিউটার একত্রে নিয়ে আসি। আমি মস্তিস্কের চক্রগুলো ভালবাসি। মস্তিস্কের চক্রগুলো আমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এইগুলোর উপরেই আমরা কম্পিউটারের মডেল তইরি করতে পারি। এবং এই মডেলগুলোকে ভিত্তি করে কম্পিউটার নির্ধারণ করতে পারে যে আমাদের মস্তিষ্ক কত ভাল কাজ করছে। এবং এটি যদি ভাল কাজ না করে, তবে এই কম্পিউটারগুলো একটি সহায়ক হিশাবে কাজ করবে থেরাপির জন্য। কিন্তু এটার ও কিছু মানে আছে। কারণ ভুল চক্র পছন্দ করলে আমরা ভুল মডেল পাবো এবং সেকারণে ভুল থেরাপি। ঠিক? মনোযোগের ক্ষেত্রে, আমরা যেটা পারি আমাদের মনোযোগ পরিবর্তন করি শুধুমাত্র চোখ দিয়ে নয় চিন্তা করেও্‌ একারণেই বদ্ধ মনোযোগ কম্পিউটারের অন্যরকম মডেল। তাই আমি জানতে চাইলাম যে মস্তিস্কের তরঙ্গ চক্রগুলো কি যখন আপনি মুক্তভাবে অথবা যখন আপনি বদ্ধভাবে দেখেন। আমি তার জন্য একটি পরীক্ষা প্রস্তুত করলাম। এই পরীক্ষাতে দুটি ঝিকিমিকি বর্গক্ষেত্র আছে। তার মধ্যে একটি অন্যটির চেয়ে ধীরগতিতে ঝিকিমিকি করে। এটা নির্ভর করে যে আপনি কোন ঝিকিমিকির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। মস্তিস্কের নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশও ওই একই গতিতে অনুরণিত হবে যেভাবে ঝিকিমিকিটা অনুরণিত হবে। তাই মস্তিস্কের সংকেত নিরিক্ষা করলে, আমরা বের করতে পারি আপনি ঠিক কোথায় দেখছেন অথবা আপনি মনোযোগ দিচ্ছেন। তাই আপনার মস্তিষ্কে কি হচ্ছে যখন আপনি মুক্ত মনোযোগ দেন তা দেখার জন্য আমি অন্যদের সোজা যেকোনো একটি বর্গের দিকে তাকাতে এবং তাতে মনোযোগ দিতে বললাম। এই ক্ষেত্রে, আমরা দেখলাম যে এই ঝিকিমিকি বর্গক্ষেত্রগুলো মস্তিস্কের সংকেতে দেখা যাচ্ছিল যেটা তাদের মাথার পিছন থেকে আসছিল, যেটা আপনার দৃষ্টির তথ্য সঞ্চালোনের জন্য দায়ী। কিন্তু আমি খুবই উৎসুক ছিলাম এটা দেখার জন্য, আপনার মস্তিষ্কে কি হয় যখন আপনি বদ্ধ মনোযোগ দেন। তাই এইক্ষেত্রে আমি অন্যদের বললাম পর্দার মাঝখানে দেখার জন্য এবং তাদের চোখ না ঘুরিয়ে, মনোযোগের জন্য বর্গগুলোকে এরিয়ে। যখন আমরা এটা করলাম, আমরা দেখলাম যে, দুটো ঝলকানির গতিই মস্তিস্কের সংকেতে দেখা দিল, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, কেবল একটি, যেটাতে মনোযোগ দিচ্ছিল, সেটার সংকেত বেশি ছিল। তাই মস্তিষ্কে কিছু না কিছু ছিল যেটা তথ্যগুলো নিয়ন্ত্রণ করছিল তাই, ওই বস্তুটা মস্তিস্কের প্রধানত সম্মুখ অংশের কার্যক্রম শুরু করেছিল আপনার মস্তিস্কের সম্মুখ অংশই দায়ী উচ্চতর জ্ঞানীয় কার্যক্রমের জন্য। সম্মুখ অংশটি, এটা মনে হয় যে এটি ছাঁকনি হিশাবে কাজ করে চেষ্টা করে তথ্যশুধু ডান ঝিকিমিকি থেকে তথ্য নিতে যেটাতে আপনি মনোযোগ দিচ্ছেন এবং যেটা অবজ্ঞা করা হয়েছে তার তথ্য আসতে বাঁধা দেয়। মস্তিষ্কের ছাঁকনির ক্ষমতা আসলতই মনোযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেটা কিছু মানুষে অনুপস্থিত উদাহরণ স্বরূপ, যাদের ADHD আছে। তাই যার ADHD আছে সে এইসব বাঁধা রোধ করতে পারে না এবং এই জন্য তারা একটি কাজে অনেক সময়ের জন্য মনোযোগ দিতে পারে না। কিন্তু যদি এই লোকটি একটি নির্দিষ্ট কম্পিউটার গেম খেলতে পারত কম্পিউটারের সাথে তার মস্তিষ্ক সংযোগ দিয়ে এবং তারপর তার মস্তিষ্ক প্রশিক্ষন দিয়ে যাতে এইসব বাধাগুলো থামাতে পারত? আচ্ছা, ADHD শুধু একটা উদাহরণ আমরা এইসব জ্ঞানীয় মস্তিষ্ক-যন্ত্র ইন্টারফেস ব্যবহার করতে পারি অন্যান্য অনেক জ্ঞানীয় ক্ষেত্রে। এটা ছিল কিছু বছর আগে যে আমার দাদা স্ট্রোক করল এবং কথা বলার সম্পূর্ণ ক্ষমতা হারালো। সে সবাইকে বুঝতে পারত কিন্তু উত্তর দেয়ার কোন উপায় ছিল না এমনকি লিখতেও পারত না কারণ সে নিরক্ষর ছিল তাই সে চুপ থেকেই মারা গেল। সেই সময়টা আমার মনে পরেঃ যদি আমাদের একটি কম্পিউটার থাকত যেটা তার কথা বলে দিত? এখন, আমি অনেক বছর ধরে এই ক্ষেত্রে আছি আমি আশা করি এটা সম্ভব। চিন্তা করুন যদি আমরা মস্তিষ্কের চক্রগুলো খুঁজে পাই যখন মানুষ চিন্তা করে ছবি অথবা এমনকি অক্ষরের। যেমন A অক্ষর ভিন্ন মস্তিষ্কের চক্র দেয় B অক্ষর থেকে এবং আরও আছে। একদিন কম্পিউটার কি পারবে না, যারা কথা বলতে পারেনা তাদের হয়ে যোগাযোগ করতে? যদি একটি কম্পিউটার কোমায় থাকা মানুষের চিন্তাগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করে? আমরা এখনো সেখানে পৌঁছাইনি, কিন্তু গভীর মনোযোগ দিন আমরা সেখানে জলদি পৌঁছে যাব। ধন্যবাদ। হাততালি। তো, আমি ভীত। এই মুহূর্তে, এই মঞ্চে, আমি ভয় অনুভব করি। এই জীবনে, আমি খুব বেশি লোকের সাথে পরিচিত হইনি যারা সাথে সাথে স্বীকার করবে যে তারা ভীত। এবং আমি মনে করি এর কারণ ভিতরে ভিতরে, তারা জানে কত সহজে ভয় ছড়িয়ে পড়ে। বুঝতে পারছেন যে, ভয় অনেকটা রোগের মতো। যখন তা ছড়িয়ে পড়ে, অনেকটা বন্য আগুনের মতো। কিন্তু কি ঘটে যখন, সেই ভয়ের সম্মুখীন অবস্থায়, তোমার যা করণীয় তা করতে হবে? এটাকেই বলা হয় সাহস। এবং ভয়ের মতোই, সাহসও সংক্রামক। আমি পূর্ব সেন্ট লুইস, ইলিনয় থেকে আসছি। এটা একটা ছোট শহর সেন্ট লুইস, মিসৌরি থেকে মিসিসিপি নদী পার করে যেতে হয়। আমি সেন্ট লুইসের আমার পুরোটা জীবন কাটিয়েছি। যখন মাইকেল ব্রাউন জুনিয়র, একজন সাধারণ কিশোর, ফার্গুসান, মিসৌরিতে পুলিশের গুলিতে ২০১৪ সালে মারা যায় -- অন্য এক জায়গায়, সেন্ট লুইসের উত্তরে-- আমার মনে আছে আমি ভেবেছিলাম, এই কিশোর প্রথম কিশোর নয়, এবং সে শেষ নয় যে আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু দেখুন,তার মৃত্যু ভিন্ন ছিল। যখন মাইককে মেরে ফেলা হয়, আমার মনে আছে সেই শক্তির কথা যারা ভয়কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। শোককাতর সম্প্রদায়ের প্রতি পুলিশের প্রতিক্রিয়া শক্তি প্রয়োগ করার উদ্দেশ্য ভয় ঢোকানো: সামরিককৃত পুলিশ বাহিনীর ভয়, কারাবাস, জরিমানা। এমনকি মিডিয়া চেষ্টা করেছিল আমাদের একে অপরকে ভয় পাওয়াতে গল্পটা ঘুরিয়ে দিয়ে। এবং এসব কিছুই অতীতে হয়তো কাজ করেছে। কিন্তু যেমনটা আমি বলছিলাম, মাইকেল ব্রাউনের মৃত্যু এবং সম্প্রদায়ের প্রতি যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে তা ফার্গুসন এবং সেন্ট লুইসের আশেপাশে অনেকগুলো প্রতিবাদের সূত্রপাত ঘটায়। যখন আমি ঐ প্রতিবাদগুলোতে চতুর্থ অথবা পঞ্চম দিন যোগ দেই, তখন তা সাহসের কারণে নয়, তা করেছিলাম অনুশোচনা থেকে। দেখুন, আমি কৃষ্ণাঙ্গ।আমি জানিনা আপনারা লক্ষ্য করেছেন কিনা। (হাসি) কিন্তু আমি সেন্ট.লুইসে বসে থাকতে পারতাম না, যা কিনা ফার্গুসন থেকে কয়েক মিনিট দূরে, এবং গিয়ে না দেখে থাকাটা অসম্ভব ছিল। তাই আমি সেখানে গিয়ে নিজে দেখলাম। আমি যখন ওখানে পৌছালাম, আমি একটা অভিনব জিনিস দেখলাম। আমি দেখলাম রাগ, অনেকখানি। কিন্তু আমি যা বেশি পেলাম তা হচ্ছে ভালবাসা। মানুষের নিজেদের জন্য ভালবাসা, নিজেদের সম্প্রদায়ের জন্য ভালবাসা। এবং তা ছিল চমৎকার। যতক্ষণ পর্যন্ত না পুলিশ আসলো। এরপর অন্য এক অনুভূতি যুক্ত হলো কথপোকথনে: ভয়। এখন, আমি মিথ্যা বলবো না; আমি যখন সেই সাঁজোয়া যানবাহন দেখেছিলাম, এবং সব সরঞ্জাম এবং এত এত বন্দুক এবং এত এত পুলিশ আমি আতংকগ্রস্থ ছিলাম - ব্যক্তিগতভাবে। এবং আমি যখন চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম, আমি দেখলাম অনেক মানুষের মধ্যে ঠিক একই বোধ হচ্ছে। কিন্তু আমি আরও দেখলাম অনেকের মধ্যে অন্যকিছুও আছে। সেটা হচ্ছে সাহস। দেখুন,এই মানুষগুলো চিৎকার করেছে, এবং তারা হুঙ্কার দিয়েছে, এবং তারা পুলিশের কারণে পিছু হটেনি। তারা আসলে সেই অবস্থাতেও ছিল না। এবং সেই সময়ে আমি বোধ করলাম আমার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসছে, তাই আমিও চিৎকার করলাম সবার সাথে। এবং আমি খেয়াল করলাম সবাই আমার পাশে একই কাজ করছে। এবং সেই অনুভূতির মতো কোন অনুভূতি ছিল না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আরও বেশি কিছু করবো। আমি বাড়ি গেলাম, আমি চিন্তা করলাম: আমি একজন শিল্পী। আমি শিল্প বানাই। তাই আমি প্রতিবাদের জন্য নির্দিষ্ট জিনিস বানানো শুরু করলাম। যে জিনিস অস্ত্র হবে একটি আধ্যাত্মিক যুদ্ধে, যা মানুষকে কণ্ঠস্বর দেবে এবং যা তাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী করবে। আমি একটা প্রকল্প হাতে নিলাম যেখানে আমি বিক্ষোভকারীদের হাতের ছবি তুলেছি এবং সেগুলো ভবনে এবং দোকানে ঝুলিয়েছি। আমার লক্ষ্য ছিল সচেতনতা এবং মনোবল বাড়ানো। এবং আমি মনে করি, এক মিনিটের জন্য হলেও আমি তা করতে পেরেছি। তারপর আমি ভাবলাম, আমি এইসব মানুষদের গল্প অন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। আমি দেখছিলাম সেই মুহূর্তে সাহসী হওয়াকে। এবং আমি এবং আমার বন্ধু, এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং অংশীদার সাবাহ ফোলান শুধুমাত্র তাই করেছে আমাদের প্রামান্যচিত্র নিয়ে। "কাদের সড়ক?" আমি এক ধরনের মাধ্যমে পরিণত হয়েছিলাম আমাকে যত সাহস দেওয়া হয়েছিল তার। এবং আমি মনে করি এটা আমাদের কাজ শিল্পী হিসেবে। আমি মনে করি আমাদের কাজের মাধ্যমে আমাদের সাহসের বার্তাবাহক হতে হবে। এবং আমি মনে করি আমরা প্রাচীর হিসেবে থাকি স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে এবং সেই সব মানুষের মধ্যে যারা ক্ষমতা ব্যবহার করে ভয় এবং ঘৃণা প্রচার করতে, বিশেষ করে এরকম সময়ে। তাই আমি আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চাই। সমস্ত মুভার এবং সেকারদের, চিন্তাবিদ নেতাদের: আপনারা কি করবেন আপনাদের উপহার দিয়ে আমাদেরকে প্রতিদিনের বাঁধন থেকে মুক্ত করতে? কারণ, আমি প্রতিদিন ভয়ে থাকি। আমি এমন একটা সময় মনে করতে পারি না যখন আমি ভীত ছিলাম না। কিন্তু একবার যখন আমি বুঝতে পেরেছি যে ভয় আমার ভিতরে দেওয়া হয়েছে আমাকে অবশ করার জন্য নয়, বরং আমাকে রক্ষা করার জন্য, এবং আমি একবার যখন তা বুঝতে পারি, কিভাবে সেই ভয়কে কাজে লাগানো যায়, আমি শক্তি খুঁজে পেয়েছি। ধন্যবাদ। (হাততালি) অ্যালগরিদম সব জায়গায় উপস্থিত| তারা পরাজিতদের বিজয়ীদের থেকে আলাদা করে| বিজয়ীরা একটি ভালো চাকরি বা ক্রেডিট কার্ড অফার পায়| ক্ষতিগ্রস্তরা একটা সাক্ষাৎকারও পায়না বা তাদের বীমার জন্য বেশি টাকা দিতে হয়| আমাদের গোপন সূত্র দিয়ে মাপা হচ্ছে যা আমরা বুঝতে পারিনা এবং যার বিরুদ্ধে আবেদন করার ব্যবস্থা নেই | তাই এই প্রশ্নটা ওঠে: যদি অ্যালগরিদম গুলো ভুল হয়ে তাহলে কি হবে? অ্যালগরিদম নির্মাণের জন্য দুটি জিনিসের প্রয়োজন: আপনার দরকার তথ্য,অতীতে কি ঘটেছে, এবং সাফল্যের একটি সংজ্ঞা, আপনি কি খুঁজছেন এবং কিসের জন্য প্রত্যাশী | আপনি দেখে এবং বিবেচনা করে একটি অ্যালগরিদম কে শেখান | অ্যালগরিদমটি সাফল্যের সাথে কি যুক্ত তা প্রকাশ করে। কোন পরিস্থিতি সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়? বাস্তবে সবাই অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। তারা লিখিত কোডে তা প্রকাশ করেনা | একটি উদাহরণ নিন | আমি প্রতিদিন এক অ্যালগরিদম ব্যবহার করে আমার পরিবারের জন্য খাবার বানাই| আমার জন্য তথ্য হল রান্নাঘরের সকল উপাদানগুলি, আমার সময়, আমার উচ্চাকাঙ্খা, এবং আমি সেই তথ্যগুলি সংগঠিত করি | আমি খাবার হিসাবে রামেন নুডলস এর প্যাকেজগুলো গণনা করিনা | (হাসি ) আমার কাছে সাফল্যের বর্ণনা হল: আমার বাচ্চারা সবজি খেলে একটি আহার সফল হয় | এটা আলাদা হত যদি আমার ছোট ছেলে এই কাজের কর্মকর্তা হত | সে বলত আহার সফল তখনি হবে যখন সে অনেক নিউটেলা খেতে পারবে | কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমি সফলতার বর্ণনা ঠিক করে দিচ্ছি| আমি কর্মকর্তা | আমার মতামত গুরুত্বপূর্ণ | এটা অ্যালগরিদমের প্রথম নিয়ম। অ্যালগরিদম কিছু মতামত যা কোডের মধ্যে উদ্ভিত করা থাকে| এটি অধিকাংশ মানুষ যা ভাবে এর সম্পর্কে তার চেয়ে ভিন্ন| তারা মনে করেন অ্যালগরিদমগুলি উদ্ধেষপূর্ণ এবং সত্য এবং বৈজ্ঞানিক। এটি একটি বিজ্ঞাপনের কৌশল| একটি বিজ্ঞাপনের কৌশলের মতন অ্যালগরিদমের দ্বারা আপনাদের ভীতি বাড়ানো হয়, যাতে আপনারা অ্যালগরিদমকে বিশ্বাস করেন এবং ভয় পান কারণ আপনারা অঙ্ককে বিশ্বাস করেন এবং ভয় পান| বিগ ডাটা এ অন্ধ বিশ্বাস করলে অনেক ভুল হতে পারে| ইনি কিরি সোয়ার্স|তিনি ব্রুক্লিনের এক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান| ২0১১ সালে, তিনি আমাকে বলেছিলেন যে তার শিক্ষকদের একটি জটিল, গোপন অ্যালগরিদম দিয়ে অবহিত করা হচ্ছে জাকে বলা হয় "মূল্য-সংযোজন মডেল।" আমি তাকে বলেছিলাম, "আচ্ছা, সূত্রটা কী, তা আমাকে দেখিয়ে দাও। আমি আপনাকে এটা ব্যাখ্যা করব|" তিনি বলেন, "আমি সূত্রটি পেতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমাদের শিক্ষা বিভাগ আমাকে বলল এটি গণিত এবং আমি তা বুঝতে পারবনা|" আরো খারাপ হতে পারে| নিউইয়র্ক পোস্ট তথ্য অধিকারের স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী আবেদন করে সমস্ত শিক্ষকের নাম এবং নম্বরের ও সেগুলি শিক্ষক-শিষ্টাচারের রূপে প্রকাশ করে। যখন আমি সূত্রগুলো পাওয়ার চেষ্টা করি, সোর্স কোড গুলো, একই পথে, আমায় বলা হয়ে যে আমায় তা দেওয়া হবেনা| আমায় বাধা দেওয়া হয়| আমি পরে জানতে পারলাম নিউ ইয়র্কে কারোই সেই কোড জানা নেই| কেউ তা বুঝতোনা | তারপর একদিন এক শিক্ষিত মানুষ জড়িয়ে পড়লেন, গ্যারি রুবিনস্টাইন| তিনি লক্ষ্য করলেন নিউ ইয়র্ক পোস্টের তথ্যে ৬৬৫ শিক্ষকের দুটি নম্বর ছিল| এটা তখনই সম্ভব যদি তারা সপ্তম এবং অষ্টম দুই শ্রেণীতেই অঙ্ক পড়ান| তিনি এগুলি চিত্র লেখন করেন। একটি দাগ একটি শিক্ষককে বোঝায়| (হাসি ) এটা কি? (হাসি) এরকম ব্যক্তিগতভাবে মূল্যায়ন করা সঠিক না। এটি প্রায় একটি এলোমেলো সংখ্যা উৎপাদক। (তালি) কিন্তু তাই ছিল| ইনি সারা ওয়াসকি | তাকে ওয়াশিংটনে,ডিসি স্কুল জেলার ২০৫ জন অন্যান্য শিক্ষকের সাথে বহিষ্কার করা হয়, যদিও তার স্কুলের প্রধান ও বাচ্চাদের পিতামাতাদের থেকে ভালো সুপারিশ ছিল। আমি জানি আপনারা এখানে কি ভাবছেন, বিশেষত যারা তথ্য বৈজ্ঞানিক এবং এ.আই বিশেষজ্ঞ| আপনারা ভাবছেন,"আমরা কখনো এরকম অসঙ্গত অ্যালগরিদম তৈরী করবোনা|" কিন্তু অ্যালগরিদমে ভুল হতে পারে, এমনকি ভাল উদ্দেশ্যর সঙ্গে গভীরভাবে ধ্বংসাত্মক প্রভাব থাকতে পারে। ঠিক যেভাবে খারাপ ভাবে নকশা করা একটি বিমান যেমন মাটিতে ভেঙে পড়তে পারে, একটি খারাপ ভাবে পরিকল্পিত অ্যালগরিদমও দীর্ঘ সময় ধরে চলে, ক্ষয় করতে পারে| ইনি রজার আইলেস | (হাসি ) তিনি ১৯৯৬ সালে ফক্স নিউজ প্রতিষ্ঠা করেন। ২0 জনের বেশি মহিলা যৌন হয়রানি সম্পর্কে অভিযোগ করেছে। তারা জানিয়েছে যে তাদের ফক্স নাউসে সফলতা হাসিল করতে দেওয়া হয়নি| গত বছর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন কিন্তু আমরা দেখছি সমস্যাগুলি অব্যাহত। তাই প্রশ্নটি ওঠে: পাল্টানোর জন্য ফক্স নিউজের কি করণীয়? কি হবে তারা যদি নিয়োগের প্রক্রিয়াটি একটি মেশিন-লার্নিং অ্যালগরিদম দিয়ে প্রতিস্থাপন করে? তা শুনতে ভালো লাগে তাইনা? এ বিষয় ভাবুন। তথ্যটি কি হবে? একটি যুক্তিসঙ্গত পছন্দ হল ফক্স নিউজের সর্বশেষ ২১ বছরের অ্যাপ্লিকেশন। যৌক্তিক। এবং সাফল্যের বর্ণনাটি কি হবে? একটি যৌক্তিক উত্তর হল, ফক্স নিউজে কারা সফলতা লাভ করেছে? ধরুন যে চার বছর কাজ করেছে এবং অন্তত যার একবার পদোন্নতি হযেছে। যৌক্তিক শোনাচ্ছে। এবং তারপর অ্যালগরিদমটিকে শেখানো হবে। এটা কীভাবে সাফল্যের দিকে পরিচালিত হবে তা জানতে লোকেদের সন্ধান করতে প্রশিক্ষণ করা হবে, ঐতিহ্যগত ভাবে কোন অ্যাপ্লিকেশন সাফল্যলাভ করেছে সেই বর্ণনার দ্বারা। এবার ভাবুন কি হবে আমরা যদি এটা বর্তমানে একদল আবেদনকারীদের উপর প্রয়োগ করি। তাহলে তা নারীদের বাদ দিয়ে দেবে কারণ নারীরা এক সময় সফল ছিলনা। অন্ধের মতন অ্যালগরিদম প্রয়োগ করলে তা যৌক্তিক হয়না তা ন্যায্য হয়না। তা আমাদের অতীতের ব্যবহারগুলো, পুনরায় অনুসরণ করে। তারা স্থিতাবস্তায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি প্রয়োগ করে। যদি পৃথিবীতে সবাই নিখুঁত হত তাহলে তা ঠিক ছিল,কিন্তু তা নয়। এবং বেশিরভাগ সংস্থায় লজ্জাজনক কোন মামলা হয় না, তবে সেখানকার তথ্য বিজ্ঞানীদের তথ্যগুলি অনুসরণ করতে বলা হয়, সঠিকতায় গুরুত্ব দিতে বলা হয়। ভাবুন তার মানে কি। যেহেতু আমাদের সকলের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব রয়েছে,এর মানে তা কোন রকমের প্রাধান্য বা ধর্মানুশাসনকে শ্রেণীবদ্ধ করে। চিন্তাশীল পরীক্ষা নিরীক্ষা, কারণ আমার তা ভাল লাগে: একটি সম্পূর্ণ পৃথকীকৃত সমাজ -- জাতিগতভাবে পৃথকিত, সমস্ত শহর, সমস্ত এলাকা এবং যেখানে আমরা পুলিশকে সংখ্যালঘু প্রতিবেশীদের অপরাধের খোঁজে পাঠাই। গ্রেপ্তারের তথ্য খুব পক্ষপাতদুষ্ট হবে। তা ছাড়া,আমরা যদি তথ্য বৈজ্ঞানিদের খুঁজে বার করে তাদের টাকা দিয়ে ভবিষ্যতে কোন জায়গায় অপরাধ ঘটবে তা জানার জন্য তাহলে কি হবে? সংখ্যালঘুদের পরিবেশে। বা এটা জানতে পরের অপরাধীটি কে হবে? একজন সংখ্যালঘু ব্যাক্তি। তথ্য বিজ্ঞানীরা তাদের মডেলের সঠিকতার সম্পর্কে প্রশংসা করবে, এবং তারা সঠিক। কিন্তু,বাস্তবতটা অতটা তীব্র নয় কিন্তু, অনেক শহরে পৃথকীকরণ বিরাজমান এবং আমাদের কাছে প্রমান আছে সেই পক্ষপাতমূলক বিষয় এবং আমরা সে সব হটস্পটগুলির উপস্থিতি আন্দাজ করি যেখানে পরের অপরাধটি ঘটবে। এবং আমরা পূর্বাভাস করি এক একটি অপরাধ, ব্যক্তিদের অপরাধ। সংবাদ সংস্থা প্রোপাবলিকা সম্প্রতি একটি "অপরাধপ্রবণতা ঝুঁকি" অ্যালগোরিদমের দিকে তাকিয়ে দেখেছে, যা ফ্লোরিডায় ব্যাবহার করা হয় বিচারকদের দ্বারা শাস্তি প্রদানের সময়। বার্নার্ড,বাঁদিকের কালো মানুষটিকে ১০ এ ১০ নম্বর দেওয়া হয়। ডাইলান, ডান দিকে,পায় ১০ এ ৩। ১০ এ ১০,অর্থাৎ উচ্চ ঝুঁকি। ১০ এ ৩,অর্থাৎ নিম্ন ঝুঁকি। তাদের দুজনের কাছেই নেশার পদার্থ পাওয়া যায়। দুজনেরই অপরাধের তালিকায় নাম, ডাইলান আগে এক গুরুতর অপরাধে জড়িত ছিল কিন্তু বার্নার্ড তা নয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনার যত উচ্চতর নম্বর, আপনার লম্বা শাস্তি পাওয়ার সম্ভবনাটাও অতটা বেশি। কি হচ্ছে এটা? তথ্য পাচার। এই প্রক্রিয়ার দ্বারা প্রযুক্তিবিজ্ঞানীরা কালো বক্স অ্যালগোরিদমগুলির মধ্যে কুশ্রী সত্য লুকিয়ে রাখে এবং তাদের উদ্দেশ্য বলে; কল্যাণকামী বলে। যখন তারা গুপ্ত, গুরুত্বপূর্ণ এবং ধ্বংসাত্মক হয়, আমি এই অ্যালগোরিদমগুলির এক নামকরণ করেছি: "গণিতের দ্বারা ধ্বংসের অস্ত্র।" (হাসি ) (হাততালি) তারা সব জায়গায় উপস্থিত, এবং এটা কোন ভুল নয়। এগুলি কিছু বেসরকারি সংস্থা যা তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিছু ব্যক্তিগত অ্যালগোরিদম বানাচ্ছে। এমনকি যেগুলোর বিষয় আমি আলোচনা করলাম শিক্ষক ও সরকারি পুলিশের বিষয়ে, সেগুলো কিছু বেসরকারি সংস্থা তৈরী করে তা সরকারি সংস্থাদের কাছে বিক্রি করেছে। তারা এটাকে তাদের "গোপন সস" বলে-- তাই আমাদের সেই বিষয়ে জানতে দিতে চায়না। এটি বেসরকারি ক্ষমতা। তারা অবর্ণনীয় কিছু ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে লাভ করছে। আপনারা হয়তো ভাবছেন, যেহুতু এইগুলো বেসরকারি বিষয়ে এবং প্রতিযোগিতা রয়েছে, তাহলে হয়তো স্বাধীন বাজার এই সমস্যার সমাধান করবে। তা হবেনা। অসৎ পথে অনেক টাকা আয় হয়। এছাড়া,আমরা অর্থনৈতিক যুক্তিসঙ্গত প্রতিনিধি নই। আমরা সকলে পক্ষপাতদুষ্ট। আমরা সবাই বর্ণবাদী সে সকল রূপে যা হয়তো আমরা চাইনা, বা হয়তো জানিনা, কিন্তু আমরা জানি, সামগ্রিকভাবে, কারণ সমাজতাত্ত্বিকরা বারবার তাদের পরীক্ষার দ্বারা তা উল্লেখ করেছেন, যেখানে তারা একগুচ্ছ চাকরির আবেদনপত্র পাঠায়, সকলের সমান যোগ্যতা থাকে কিন্তু তার মধ্যে কারো নাম ভাল শোনায় কারো শোনায় না, এবং এটা সবসময় হতাশাজনক, ফলাফলটা - সবসময়। কাজেই আমরাই পক্ষপাতদুষ্ট, এবং আমরা সেই দোষটা অ্যালগোরিদম মধ্যে প্রদান করি কোন তথ্য সংগ্রহ করা হবে তা বলে দিয়ে, ঠিক যেমন আমি রামেন নুডলস সম্পর্কে ভাবতে পছন্দ করিনা-- আমি মনে করি এটি অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু অতীতের প্রথাগুলির উপর নির্ভর থেকে এবং সফলতার সংজ্ঞা বেছে নিয়ে,আমরা অ্যালগোরিদমগুলিকে ত্রুটিহীন মেনে নিতে পারি কি? আমরা পারিনা। আমাদের উচিত তা যাচাই করা । আমাদের ন্যায্যতা যাচাই করতে হবে। ভাল খবর হল,আমরা তাদের ন্যায্যতা পরীক্ষা করতে পারি। অ্যালগরিদমগুলিকে জেরা করা যেতে পারে, এবং তারা প্রত্যেকবার সত্যিটাই বলবে। আমরা তা ঠিক করতে পারি।আমরা তাদের ভাল করে তুলতে পারি। আমি এটাকে বলি অ্যালগরিদমিক নিরীক্ষা, এবং আমি এ বিষয়টি আপনাদের বোঝাবো। প্রথম, তথ্য অখণ্ডতা পরীক্ষা। যে অপরাধপ্রবণতা ঝুঁকি অ্যালগরিদমগুলির সম্পর্কে বললাম, একটি তথ্য অখণ্ডতা পরীক্ষার অর্থ হবে আমরা এটা শিকার করি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সাদা এবং কালো দুজনরাই একই পরিমানে নেশা করে অথচ একটি কালো মানুষের গ্রেফতার হওয়ার সম্ভবনা বেশি-- এলাকার উপর নির্ভর করে সম্ভবত চার বা পাঁচ গুণ বেশি। অন্য ধরণের অপরাধের মধ্যে এই পক্ষপাতিত্ব কিরকম রয়েছে, এবং কীভাবে আমরা এর জন্য দায়ী? দ্বিতীয়ত, আমাদের সাফল্যের সংজ্ঞা সম্পর্কে ভাবা উচিত, তা নিরীক্ষা করা দরকার। মনে আছে-সেই নিয়োগের অ্যালগরিদমের কথা যা আমি আলোচনা করলাম। কাউর চার বছর পর যদি একবার পদোন্নতি হয়? সে এক সফল কর্মী, কিন্তু এটি একটি এমন কর্মী যে তার সংস্কৃতির দ্বারা সমর্থন পায়। এটিও খুব পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। আমাদের সেই দুটি জিনিস আলাদা করা উচিত। আমরা উদাহরণ হিসাবে একটি অন্ধ অর্কেস্ট্রা শ্রুতি কল্পনা করতে পারি। যারা নিজেদের শিল্প পেশ করছে তারা একটি চাদরের পিছনে। আমি ভাবতে চাই এক দল মানুষ যারা তা শুনছে তারা নির্ণয় নিয়ে নিয়েছে যে তারা কি শুনতে চায় এবং কোনটা প্রয়োজনী এবং কোনটা অপ্রয়োজনী, এবং তারা এর দ্বারা বিভ্রান্ত হচ্ছেনা। যখন এরূপ অন্ধ অর্কেস্ট্রা অডিশন শুরু হয়, অর্কেস্ট্রায় মহিলাদের সংখ্যা পাঁচগুন্ বেড়ে উঠতে দেখা যায়। আমাদের পরবর্তী কাজ, সঠিকতা বিবেচনা করা। এই জায়গায় শিক্ষকদের জন্য তৈরী মূল্য-যুক্ত মডেলটি অবিলম্বে নিষ্ফল হবে। কোন এলগোরিদমই সম্পূর্ণ নিখুঁত নয় অবশ্য, তাই আমাদের উচিত প্রতিটি আলগোরিদমের ত্রুটি বিবেচনা করা। এতে ভুল কতটা সাধারণ, এবং কাদের বিষয় এই মডেল ব্যর্থ হয়? এই ব্যর্থতার খরচ কি? এবং অবশেষে, আমাদের অ্যালগরিদমের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিবেচনা করতে হবে, প্রতিক্রিয়ার বৃত্তমান পথগুলি প্ররোচিত করে। এটি বিমূর্ত শোনায় , ভাবুন যদি ফেইসবুকের প্রকৌশলীরা এটি ভেবে থাকতেন আমাদের বন্ধুদের পোস্ট গুলো আমাদের দেখানোর আগে। আমার আরও দুটি বার্তা আছে, এক তথ্য বিজ্ঞানীদের জন্য। তথ্য বিজ্ঞানীরা: আমাদের সত্যের সালিশ হতে হবেনা। আমাদের এই বৃহত্তর সমাজে নৈতিক আলোচনাগুলির অনুবাদক হওয়া উচিত। (হাততালি) এবং বাকিদের জন্য, যারা তথ্য বৈজ্ঞানিক নন: এটি অংকের পরীক্ষা নয়। এটি একটি রাজনৈতিক যুদ্ধ। আমাদের অ্যালগরিদমের জমিদারির বিরুদ্ধে দায়বদ্ধতা দাবি করতে হবে। (হাততালি) 'বিগ ডাটা' এ অন্ধবিশ্বাসের যুগ শেষ করতে হবে| ধন্যবাদ | (হাততালি) এই কাজটি এখনো চলছে কিছু মন্তব্যের উপর যা কিনা টেডে (TED) দুই বছর আগে বলা হয়েছে যার বিষয় ছিলো কিভাবে টীকা (ভেক্সিন) জমা করা যায়। (সংগীত) এই বিশ্বে ১.৬ বিলিয়ন মানুষ বিদ্যুত পায় না না পায় হিমায়ন ব্যবস্থা বা জমাকৃত জ্বালানি এটা একটা সমস্যা এটার প্রভাব পড়েঃ রোগ ছড়াতে খাদ্য এবং ওষুধ সংরক্ষণে এবং জীবনের মানের উপর তো এই হচ্ছে পরিকল্পনাঃ সস্তা হিমায়ন ব্যবস্থা যা বিদ্যুত... ... প্রপেন, গ্যাস, কেরোসিন বা কোন সীমিত জ্বালানি ব্যবহার করে না এখন সময় কিছু তাপগতিবিদ্যার ২৯ বছর আগে, আমার এ্কটি তাপসম্বন্ধীয় শিক্ষক ছিলো তিনি শোষণ এবং ঠা্ন্ডা রাখার পদ্ধতি নিয়ে কথা বলেছেন। এই বিষয়টি এমনি একটি বিষয় ছিলো যা আমার মাথায় গেথে গেছে। এটা অনেকটা স্টারলিং ইঞ্জিনের মতো ছিলোঃ এটা ঠান্ডা ছিলো কিন্তু আ্পনারা জা্নতেন না এটা নিয়ে কি করা যায়। এবং এটি ১৮৫৮ সালে ফারদিনান্দ কেরী নামে এক মানুষ আবিস্কার করেছিল, কিন্তু তিনি এটি দিয়ে কোন কিছুই নির্মাণ করতে পারেন নি সেই সময়ের যন্ত্রের কারণে। ১৯২৮ সালে, একজন অত্যুৎসাহী ক্যানেডিয়ান মা্নুষ নাম পাওয়েল ক্রোসলি একটি বস্তু বাজারযাত করেছিলেন আইসবল নামে, এবং এটি সত্যিই একটি সুন্দর পরিকল্পনা ছিলো, এবং আমি একটু পরেই বলছি এটা কেন কাজ করে নি, কিন্তু শুনে রাখুন এটা কিভাবে কাজ করে। দুইটি গোলক আলাদা ভাবে দুরত্বে রাখানো আছে। একটি গোলকের মধ্যে তরল পদার্থ, পানি ও এমোনিয়া এবং অন্যটা বাষ্পকে ঘনীভুত করে তরল করার জন্য যন্ত্র। তারপর আপনি একটা পার্শ্ব গরম করুন, গরম পার্শ্বটা। এমোনিয়া বাষ্পিত হয় এবং এটা আবারো অন্য পার্শ্বে ঘন হয়। তারপর এটাকে রুমের তাপমাত্রায় ঠান্ডায় হতে দিন, এবং তারপর, যখন এমোনিয়া আবারো বাষ্পিত হয় এটাকে পানির সাথে মিশ্রিত করুন গরম পার্শ্বে ফিরে আসুন, এটা একটা শক্তিশালী ঈষৎ ঠান্ডা প্রভাব তৈরী করে। সুতরাং এটা একটা চমৎকরার ধারণা ছিল, এটা কাজ করলো না। কারণ এমোনিয়া ব্যবহার করলে বিশাল বড় চাপের সৃষ্টি হয় যদি সেগুলোকে ভুলভাবে গরম করা হয়। এটা ৪০০ পিএসআই এ্রর চেয়ে বেশী ছিল। এমোনিয়া বিষাক্ত ছিল। এটা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এটা একটা মজার চিন্তা ছিল। সুতরাং ২০০৬ সালের বড় ব্যাপার ছিল এই যে আসলেই অনেক বড় হিসেবের কাজ করা যায়। তাই আমরা সম্পূর্ণ স্টানফোর্ডের থার্মোডাইনেমিক্স বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। অনেক হিসেবী তরল গতিবিজ্ঞান। আমরা প্রমাণ করেছিলাম যে বেশী ভাগ এমোনিয়া শীতলকরণ সারনীবন্ধ ভুল ছিল। আমরা কিছু অবিষাক্ত ঠান্ডীয়করণ পেয়েছি যা কিনা কম উত্তাপের চাপে কাজ করে। ইংল্যান্ডের এক দল থেকে নিয়ে আসা - সেখানে অনেক বড় শীতল মানুষ আছে, ফলাফল এমনি হয়েছে যে, ইংল্যান্ডে একটি বড় পরীক্ষামূলক পাল/মাস্তল তৈরী করা হয়েছিল, এবং এই সত্যটি প্রমানিত হয় যে আমরা কম চাপের, অবিষাক্ত হিমায়্নযন্ত্র তৈরী করতে পারি। সুতরাং এই উপায়ে এটা কাজ করে। এটা একটি চুলো জ্বালানোর আগুনের উপরে রাখুন। পৃথিবী বেশি ভাগ মানুষরেই চুলো জ্বালানোর আগুন আছে। সেটা উটের মলই হোক কিংবা কাঠ। এটা ৩০ মিনিট ধরে গরম করানো হয়, তারপর এক ঘন্টা ধরে ঠান্ডা করা হয়। একটি কৌটার মধ্যে রাখুন এবং এটা ২৪ ঘন্টা ধরে হিমায়ন করবে। এটা দেখতে এরকম। এটা পঞ্চম অনুরূপ। এটা এখনো শেষ হয়নি। এটার ওজন প্রায় আট পাউন্ড, এবং এটা এভাবে কাজ করে আপনি এটা ১৫ লিটার পাত্রে রাখুন, প্রায় তিন গ্যালন, এটা বরফ হওয়া পর্যন্ত ঠান্ডা করুন বরফ হওয়ার তিন ডিগ্রি উপরে ২৪ ঘন্টার জন্য ৩০ ডিগ্রী পরিবেশে। এটা সত্যিই অনেক সস্তা। আমরা ভাবছি যে আমরা এসব অনেক পরিমাণে প্রায় ২৫ ডলারসে তৈরী করতে পারব, কম পরিমাণে প্রায় ৪০ ডলারসে। এবং আমরা ভাবছি আমরা হিমায়ন তৈরী করতে পারব যা সবারই থাকবে। ধন্যবাদ। (হাততালি) আজ, আমি এ.আই এবং আমাদের সম্পর্কে কথা বলতে যাচ্ছি। এআই গবেষকরা সবসময় বলে যে মানুষদের চিন্তা করতে হবে না, কারন শুধুমাত্র মেশিনের মাধ্যমে করা চাকরিগুলি শেষ হয়ে যাবে। এটা কি সত্য? তারা বলেছেন যে এ.আই নতুন চাকরি তৈরি করবে, তাই যারা তাদের চাকরি হারাবে তারা নতুন একটি পাবে। অবশ্যই। কিন্তু আসল প্রশ্ন হচ্ছে: যারা এ.আইর কাছে তাদের চাকরি হারাতে পারে তাদের মধ্যে নতুন মধ্যে কজন নতুন চাকরি পেতে সক্ষম হবে, বিশেষ করে যখন এ.আইর শেখার ক্ষমতা আমাদের মধ্যে অনেকের চেয়ে বেশি ? আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি: আপনি কি মনে করেন যে ২0২0 সালের মধ্যে এ.আই একটি শ্রেষ্ঠ বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষাটি পাস করবে? আচ্ছা অনেকেই। কিছুজন হয়তো বলবেন,"অবশ্যই, হ্যাঁ!" এখানে একতাই হচ্ছে সমস্যা। এবং অন্য কেউ কেউ বলতে পারে, "সম্ভবত, কারণ এ.আই ইতিমধ্যেই একজন শীর্ষ গো খেলোয়াড়কে পরাজিত করেছে।" এবং অনেকে বলতে পারে, "না, কখনও না। এর অর্থ আমরা এখনো উত্তরটা জানিনা তাইতো? এই কারনেই আমি টোডিই রোবট প্রজেক্ট শুরু করলাম, জাপানের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়,টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ পরীক্ষা পাস করে এমন একটি এ.আই তৈরি করার জন্য। এই আমাদের টোডাই রোবট। এবং, রোবটের মস্তিষ্ক দূরবর্তী সার্ভারে কাজ করছে।এটি এখন ১৭ শতকের শেষের দিকের উপকূলবর্তী কারবারের সম্পর্কে একটি 600-শব্দ প্রবন্ধ রচনা করছে। এটা কেমন শোনাচ্ছে? কেন আমি উচ্চতার চিহ্ন হিসাবে প্রবেশিকা পরীক্ষাটি বেঁচে নিয়েছি? যেহেতু আমি মনে করি আমাদের মানুষের তুলনায় বিশেষ করে দক্ষতা ও দক্ষতার উপর এ.আই এর কর্মক্ষমতা অধ্যয়ন করতে হবে, যা কেবলমাত্র মানুষের দ্বারা এবং শুধুমাত্র শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হয় বলে মনে করি আমরা। টোডাই,জাপানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ করার জন্য আপনাকে দুটি ভিন্ন ধরনের পরীক্ষায় পাস করতে হবে। প্রথম একটি একাধিক-পছন্দ শৈলীতে একটি জাতীয় মানসম্মত পরীক্ষা। আপনাকে সাতটি বিষয় বেছে নিতে হবে এবং একটি উচ্চ নম্বর অর্জন করতে হবে-- ৮৪ শতাংশ বা আরও অধিক সঠিক উত্তর-- তাহলে আপনি টোডাইর দ্বারা প্রস্তুত করা দ্বিতীয় স্তরের লিখিত পরীক্ষাটি লেখার অনুমতি পাবেন। তাই আমি প্রথমে আধুনিক এ.আই কিভাবে কাজ করে তা বোঝাতে চাই, "জেওপারডি" প্রতিযোগিতাটি একটি উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করে। এখানে একটি সাধারণ "জেওপারডি!" প্রশ্ন: "মোজর্টের শেষ সিম্ফনি এবং এই গ্রহের নাম এক।" মজাদার বিষয় একটি "জেওপারডি!" প্রশ্ন সর্বদা কিছু জিজ্ঞাসা করে, সবসময় "এক" সঙ্গে শেষ হয়: "এক" গ্রহ, "এক" দেশ, "এক" শিলা সঙ্গীতজ্ঞ, ইত্যাদি। অন্য কথায়, "জেওপারডিতে!" বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়না, কিন্তু একক প্রকার, যা আমরা "ফ্যাক্টইড প্রশ্ন" বলি। আপনারাকি এর উত্তরটা জানেন? আপনারা যদি উত্তরটি না জানেন এবং এখন জানতে চান, তাহলে আপনারা কি করবেন? আপনারা গুগল করেন, তাইতো? কেন না? কিন্তু আপনাকে উপযুক্ত শব্দগুলি নির্বাচন করতে হয় যেমন "মোৎসার্ট," "শেষ" এবং "সিম্ফনি" খোঁজার জন্য। মেশিন মূলত একই কাজ করে। তারপর এই উইকিপিডিয়ার পৃষ্ঠাটি শীর্ষস্থানীয় হয়। তারপর মেশিনটি পৃষ্ঠাটি পড়ে। না। দুর্ভাগ্যবশত, ওয়াটসন, সিরি এবং টোডাই রোবটের মতন আধুনিক এ.আই,কেউই পড়তে পারেনা। কিন্তু অনুসন্ধান এবং অপ্টিমাইজেশনে তারা খুব ভাল। এটি দেখবে যে "মোজর্ট," "শেষ" এবং "সিম্ফনির" মতন শব্দগুলি বারবার দেখা দিচ্ছে এখানে। সুতরাং যদি একটি শব্দ যা এক গ্রহের নাম এবং যা বারবার দেখা দিচ্ছে বাকি শব্দগুলোর সাথে,তাহলে সে সেটাই উত্তর হিসাবে বেঁচে নেবে। এ ভাবেই ওয়াটসন উত্তরটি "জুপিটার," খুঁজে পায় ক্ষেত্রে। আমাদের টোডাই রোবট একইভাবে কাজ করে, কিন্তু ইতিহাস বিষয় হ্যা-না উত্তর বেশি ভালো দিতে পারে যেমন, "'শার্লিমেন মাগিয়ার্সদের পরাজিত করেছিল।' এই বাক্য সত্য না মিথ্যা? " আমাদের রোবট একটি যুক্তি-যুক্ত প্রশ্ন উত্থাপন শুরু করে, যেমন:"শার্লিমেনটি [এই ব্যক্তির মতন কাউকে] পরাজিত করেছে " সে ক্ষেত্রে "আভার" নয় কিন্তু "ম্যাজিয়ারদের" নাম প্রথমে আশে। এই বাক্যটি মিথ্যা হতে পারে। আমাদের রোবট পড়তে পারেনা, বুঝতে পারেনা, কিন্তু এটি বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানগত ভাবে সঠিক। দ্বিতীয় পর্যায়ে লিখিত পরীক্ষার জন্য, এই ধরনের একটি ৬০০-শব্দ প্রবন্ধ লিখতে হবে: [১৭ তম শতাব্দীতে পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সামুদ্রিক বাণিজ্যের উত্থান,পতন সম্পর্কে আলোচনা কর] এবং আগে যেমন দেখানো হয়েছে, আমাদের রোবট পাঠ্যপুস্তক ও উইকিপিডিয়া থেকে বাক্যগুলি একত্রিত করেছে, একত্রিত করে তাদের অপ্টিমিজি করেছে,এবং এটি একটি রচনা লিখেছে কোনো কিছু না বুঝে। (হাসি) তবে আশ্চর্যজনকভাবে,এটি বেশিরভাগ ছাত্রের চেয়ে ভালো লেখা লিখেছে। (হাসি) গণিতের ক্ষেতে কি হচ্ছে? একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় গণিত-সমাধান মেশিন "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা" শব্দটির জন্মের পর থেকে একটি স্বপ্ন ছিল, কিন্তু এটি গাণিতিক পর্যায়ে রয়েছে দীর্ঘ, দীর্ঘ সময়ের জন্য। গত বছর, আমরা অবশেষে একটি সিস্টেম উন্নয়ন করতে সফল হই যা শেষ থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরের সমস্যা সমাধান করতে পারে, এইটার মতন। এই মূল সমস্যাটি জাপানি ভাষায় লেখা হয়েছে, এবং সাধারণ ভাষায়ে লিখিত সমস্যাগুলি গ্রহণ করাতে আমাদেরকে একে ২,000 গাণিতিক সূত্র এবং 8,000 জাপানি শব্দ শেখাতে হয়েছে। এবং এটি মূল সমস্যাগুলিকে মেশিন-পাঠযোগ্য আকারে অনুবাদ করছে। অদ্ভুত, কিন্তু এখন এটি সমাধান করার জন্য প্রস্তুত, আমার মনে হচ্ছে। যাও এবং এটি সমাধান করো। হ্যাঁ! এটি এখন সাঙ্কেতিক গণনা করছে। এমনকি আরো অদ্ভুত, কিন্তু সম্ভবত এটি মেশিনের সবচেয়ে মজার বিষয়। (হাসি) এখন এটি একটি নিখুঁত উত্তর উৎপাদন করছে, যদিও ইটা একটা প্রমাণ যে পড়তে পারা অসম্ভব,এমনকি গণিতজ্ঞদের জন্যও। যাইহোক, গতবছর আমাদের রোবট গণিতের দ্বিতীয় পর্যার লিখিত পরীক্ষায়ে শীর্ষ এক শতাংশের মধ্যে ছিল। (সাধুবাদ) ধন্যবাদ। সে কি টোডাইতে প্রবেশ করতে পারলো? না, আমি যেরকম আশা করেছিলাম সেরকম নয়। কেন? কারণ এটি কোন অর্থ বুঝতে পারে না। ইংরেজিতে পরীক্ষায়ে করা এর এক সাধারণ ত্রুটি আমি আপনাদের দেখাবে। [নেট: আমরা প্রায় বুকস্টোর পৌঁছে গেছি।শুধু আর কয়েক মিনিট। সুনিল: দাড়া ______ নট: ধন্যবাদ! এটা সবসময় ঘটে ...] দুইজন লোক কথা বলছে। আমাদের মধ্যে, যারা এই পরিস্থিতি বুঝতে পারছি- [১। "আমরা অনেক্ষন হেঁটেছি।" ২. "আমরা প্রায় এসে গেছি।" ৩. "আপনার জুতা ব্যয়বহুল দেখতে।" ৪. "আপনার শ্যুলেস খোলা আছে।"] এটা স্পষ্ট যে সংখ্যা চারটি সঠিক উত্তর, ঠিক? কিন্তু টোডাই রোবট দ্বিতীয় সংখ্যাটি বাঁচলো, গভীর-শিক্ষার টেকনোলজি ব্যবহার করে ১৫ বিলিয়ন ইংরেজির বাক্য পড়ার পরও। আচ্ছা, তাই এখন আপনারা হয়ত বুঝতে পারছেন আমি যা বললাম: আধুনিক এ.আই পড়েনা, বুঝতে পারেনা। তারা কেবল অভিনয় করে যেন তারা পারে। এটি একটি বন্টন গ্রাফ যাতে বর্ণনা করা হচ্ছে সেই অর্ধ মিলিয়ন ছাত্রদের যারা টোডায়ের মতন সেই একই পরীক্ষা দিয়েছে। এখন আমাদের টোডাই রোবট শীর্ষ ২০ শতাংশের মধ্যে ফল লাভ করে, এবং এটি জাপানের মধ্যে ৬০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পাস করতে সক্ষম ছিল-- কিন্তু টোডাই নয়। কিন্তু দেখুন এটি কীভাবে ভবিষ্যৎ সাদা-কলার শ্রমিকদের আয়তনের বাইরে । আপনাদের মনে হতে পারে আমি আনন্দিত। আমার রোবট সর্বত্র ছাত্রদের অতিক্রম করেছে। পরিবর্তে, আমি উদ্বিগ্ন ছিল। কিভাবে এই নির্বোধ মেশিন ছাত্রদের চেয়ে বেশি সক্ষম হতে পারে-- আমাদের শিশুদের চেয়ে বেশি? তাইনা? আমি মানবজাতির মধ্যে কি ঘটছে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকগুলি ও সহজ একাধিক পছন্দের ক্যুইজ থেকে শত শত বাক্য নিলাম, এবং উচ্চ বিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রদের উত্তর জিজ্ঞাসা করলাম। এখানে একটি উদাহরণ: [বৌদ্ধ ধর্মে ছড়িয়ে পড়ে.., ক্রিয়াস্টিয়ানিটি..এবং ওশেনিয়া, এবং ইসলাম ...] অবশ্যই, মূল সমস্যাগুলি জাপানী ভাষায়, তাদের মাতৃভাষায় লিখিত হয়। [___টি ওশেনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ১. হিন্দুধর্ম ২. খ্রিস্টান ৩. ইসলাম ৪. বৌদ্ধ ধর্ম] স্পষ্টতই, খৃষ্টানিটি উত্তর, তাই না? এটা লিখিত! এবং টোডাই রোবট সঠিক উত্তর বেছে নেয়, কিন্তু উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ব্যর্থ হয় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে। আপনাদের কি মনে হয় এই সমস্যাটি শুধু জাপানে? আমার তা মনে হয়না, কারণ জাপান সর্বদা প্রথমের দিকের স্থান লাভ করেছে,ওএসডি পিসা পরীক্ষায়, যার দারা ১৫ বছরের বাচ্ছাদের গণিত, বিজ্ঞান ও পড়ায় কর্মক্ষমতা মান করা হয় প্রত্যেক ৩ বছরে। আমরা বিশ্বাস করি যে সবাই শিখতে এবং ভাল শিখতে পারে, যতদিন আমরা ওয়েবে ভাল শিক্ষার উপকরণ সরবরাহ করে তাদের কাছে তুলে দিতে পারবো ইন্টারনেটের মাধ্যমে যা তারা বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু এমন বিস্ময়কর উপকরণ কেবলমাত্র যারা ভাল পড়তে পারে তাদের উপকার করতে পারে,এবং যারা ভাল পড়তে পারে তাদের শতাংশ আমাদের প্রত্যাশার তুলনায় কম হতে পারে। আমরা মানুষরা কিভাবে এ.আইর সঙ্গে সহাবস্থান করবো এই বিষয় আমাদের দৃঢ় প্রমানের উপর ভিত্তি করে, সাবধানে চিন্তা করা উচিত। একই সময়ে, আমাদের তাড়াতাড়ি ভাবতে হবে কারণ সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ধন্যবাদ। (সাধুবাদ) ক্রিস অ্যান্ডারসন: নোরিকো, আপনাকে ধন্যবাদ। নোরিকো আরআই: ধন্যবাদ। সিএঃ আপনার বক্তৃতাতে, আপনি সুন্দরভাবে এ.আই কিরকম ভাবনা-চিন্তা করে তা বোঝালেন, তারা কোন আশ্চর্যজনক কাজটি করতে পারে এবং কোনটা পারেনা।কিন্তু-- আমি কি আপনাকে সঠিকভাবে বুঝলাম যে,আপনি কি সত্যিই মনে করেন যে আমাদের শিক্ষার একটি জরুরি বিপ্লব দরকার যাতে আমরা আমাদের শিশুদেরকে সাহায্য করতে পারি সে সব কাজ করতে যা মানুষরা এ.আইদের চেয়ে ভালো করে? নএ: হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ। কারণ আমরা মানুষ অর্থ বুঝতে পারি। এটা এমন একটা জিনিস যা এ.আইতে খুব কম। কিন্তু বেশীরভাগ শিক্ষার্থীই মুখস্ত করে কোনো অর্থ না বুঝে, যাতে সেটা আর জ্ঞান না, শুধু মুখস্ত করা হয়, এবং এ.আইও একই জিনিস করতে সক্ষম। সুতরাং আমাদের একটি নতুন ধরনের শিক্ষার কথা ভাবতে হবে। সিএ: জ্ঞান থেকে,মুখস্ত বিদ্যা থেকে,অর্থের দিকে এগিয়ে যাওয়া। নএ: এমএম-হুম। সি এ : ভাল,শিক্ষাবিদদের জন্য একটি প্রতিযোগিতা আছে।তোমাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ। ধন্যবাদ । (সাধুবাদ) পৃথিবীতে দুটি শক্তিশালী ঘটনা ঘটেছে: বিশ্ব উষ্ণায়নের উত্থান এবং নারী ও মেয়েদের উত্থান। তাদের মধ্যে সম্পর্কটি প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়, কিন্তু লিঙ্গের মধ্যে ন্যায্যতা রাখা আমাদের গ্রহের সমস্যাগুলির একটি মূল উত্তর। আমি তা বিস্তরে আলোচনা করব। গত কয়েকটি বছর ধরে, "প্রজেক্ট ড্রাউনডাউন নামক এক প্রচেষ্টায় আমি কাজ করছি।" আমাদের দল বায়ুমন্ডলে তাপ-ফাঁদ, জলবায়ু-পরিবর্তিত নির্গমনকে হ্রাস করার সমাধানগুলির জন্য মানবতার জ্ঞানকে প্রয়োগ করেছে-- "কোনদিন, হয়তো, যদি আমরা ভাগ্যবান হই" সে সকল সমাধানগুলি নয়, বরং সেই ৮০টি সর্বোত্তম পদ্ধতি ও প্রযুক্তি যা ইতিমধ্যে হাতে রয়েছে: সৌর ও বায়ু সহ পরিষ্কার, নবায়নযোগ্য শক্তি; সবুজ ভবন, উভয় নতুন এবং আনুষঙ্গিক যুক্ত; ব্রাজিল থেকে চীন দক্ষ পরিবহন; বাতাবরণকে বাঁচিয়ে রাখা সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির মাধ্যমে; বর্জ্য হ্রাস এবং তার মান উদ্ধার করা; মাটি পুনরুজ্জীবিত করে তোলার জন্য ভালো উপায়ে খাদ্য উদপাদন করা; কম মাংস এবং বেশি সবজি আহার করা; এবং নারী ও মেয়েদের ন্যায্যতা আয় করানো। লিঙ্গ এবং জলবায়ু অনিবর্তনীয় ভাবে জড়িত। নির্গত বস্তু কমানোর প্রচেষ্টা নির্ভর করে উঠে দাড়ানোর উপর প্রথমে, এই প্রসঙ্গে একটু বলতে চাই। আমরা অত্যাবশ্যকতা, তীব্রতা এবং সুযোগের পরিস্থিতিতে আছি যার সম্মুখীন মানবজাতি এর আগে কখনো হয়নি। এখনো পর্যন্ত, আমাদের প্রতিক্রিয়াগুলি পর্যাপ্তর কাছাকাছিও ঠ্যাকে নি। কিন্তু,আপনারা তা ইতিমধ্যে জানেন। আপনারা নিজেদের মনে ও প্রানে তা জানেন। আমরা প্রত্যেকে গ্রহের জীবিত ব্যবস্থার একটি অংশ, প্রায় ৭.৭ বিলিয়ন মানুষের সাথে এবং ১.৮ মিলিয়ন পরিচিত প্রজাতিগুলির সাথে একত্রিত। আমরা নিজেদের মধ্যে সেই সংযোগ অনুভব করতে পারি। আমরা সেই ভঙ্গনটি আনুভব করতে পারি। এবং অনুভব করতে পারি এইটির নিরাময়ের জন্য আল্প সময় রয়েছে। পৃথিবী, যা আমাদের বাড়ি, আমাদেরকে অবশ্যই একটি ভালো উপায় উত্থাপন করতে বলছে, এবং দ্রুত। আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, প্রতিদিন নিজের চোখ পুরোপুরি খুলে রাখা নিজের ভাঙা হৃদয়টি খুলে ধরে রাখার সমান। এটি একটি দুঃখের বিষয় যা আমি খুব কমই বলি, যদিও আমার কাজ আমায় কণ্ঠস্বরের উপর জোর দিতে বাধ্য করে। আমি নিজেকে মনে করাই যে হৃদয়টি সহজেই ভেঙ্গে যেতে পারে,অথবা এটি প্রসস্ত হতে পারে। একটি ভাঙা খোলা হৃদয় জাগ্রত এবং জীবিত। এটি কর্মের জন্য ডাক দেয়। এটি পুনরুত্পাদনশীল, প্রকৃতির মত, ধ্বংসপ্রাপ্ত মাটির পুনরুদ্ধার ঘটায়, নতুন করে জন্ম নেয়। জীবন জীবনের দিকে, নিরাময়ের দিকে পূর্ণতার দিকে চলতে থাকে। এটি একটি মৌলিক পরিবেশগত সত্য। এবং আমরা, আমরা সবাই, আমরা জীবনী শক্তি এর মধ্যে , নারী, মেয়েদের এবং জগতের উষ্ণায়নের মধ্যে প্রাথমিক সংযোগ জীবন নয় কিন্তু মৃত্যু। সচেতনতা বাড়ছে যে জলবায়ু প্রভাবগুলি বর্তমান দুর্বলতার কারণে নারী ও মেয়েদেরকে কঠিন আঘাত করেছে। স্থানচ্যুতির ঝুঁকি বেশি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আহত হওয়া বা হত্যার ঝুঁকি ও বেশি রয়েছে। দীর্ঘকালীন দুর্ভিক্ষের কারণে বাল্যবিবাহ হতে পারে যেহেতু পারিবারে অভাব লেগে থাকে বন্যার সময় কষ্টে জীবন যাপন করতে গিয়ে মেয়েরা পতিতাবৃত্তির জালে পড়তে পারে। এই প্রকার আরো অনেক কিছু ঘটতে পারে। নিউ অর্লিন্স থেকে নাইরোবি পর্যন্ত এই গতিশীলতাগুলি দারিদ্রের অবস্থার অধীনে সবচেয়ে বেশি তীব্র। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গল্প এখানে শেষ হয়। কিন্তু আজ নয়। আরেকটি ক্ষমতায়ন সত্য দেখা দিতে চায়। লিঙ্গ সমতার বিষয় জয় লাভ করা, বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয় জয় লাভ করার সমান। এই সংযোগটি তিনটি প্রধান এলাকায় প্রাধান্য পায়, তিনটি এলাকায় যেখানে আমরা নারী ও মেয়েদের অধিকার সুরক্ষিত করতে পারি, স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে এবং একই সময়ে নির্গমন প্রতিরোধ করতে পারি। নারী বিশ্বের প্রধান কৃষক। নিম্ন আয়ের দেশে তারা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ খাদ্য উৎপাদন করে, প্রায় পাঁচ একরেরও কম জমির উপর কাজ করে। "স্মলহোল্ডার" শব্দটির অর্থ তাই বোঝায়। পুরুষের তুলনায়, মহিলা স্মলহোল্ডারদের জমির অধিকার, ক্রেডিট এবং মূলধন, প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি সহ সম্পদগুলিতে কম প্রবেশাধিকার রয়েছে। তারা পুরুষদের তুলনায় দক্ষ এবং দক্ষতার সাথে খামার করে, কিন্তু সম্পদ ও অধিকারের এই পরিষ্কার নথিভুক্ত বৈষম্যর মানে নারীরা একই পরিমাণ জমিতে কম খাদ্য উৎপাদন করে ঐ ফাঁক বন্ধ করলে, খামার ফলন ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি হবে। অর্থাৎ একই বাগান বা একই মাঠ থেকে ২0 থেকে ৩০ শতাংশ বেশি খাদ্য উদপাদন হবে। ক্ষুধা, সাস্থ, পরিবারের আয় সব কিছুর উপরই প্রভাবনীয়-- তা সুস্পষ্ট। জলবায়ুর সাথে এর সম্পর্কটি অনুসরণ করা যাক। মানুষের খাদ্য উদ্পাদনের জন্য জমির প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যবশত, বনগুলিকে প্রায়ই এটি সরবরাহ করার জন্য সাফ করা হয় এবং অরণ্যবিনাশ নির্গমনের কারণ। কিন্তু যদি বিদ্যমান খামার যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন করে তবে বনগুলির হ্রাসের সম্ভাবনা কম। সুতরাং একটি তরঙ্গের প্রভাব রয়েছে। আমাদের উচিত মহিলা "স্মলহোল্ডারদের" সমর্থন করা, উচ্চ ফলন অনুধাবন করা, বন ফসল বাঁচানো এবং বনজীবীর শক্তি বজায় রাখা। প্রকল্প ড্রডাউন অনুমান করে যে কৃষিে বৈষম্য মোকাবেলা করে এখন এবং ২০৫০ সালের মধ্যে দুই বিলিয়ন টন নির্গমন প্রতিরোধ করতে পারে। এটার প্রভাব পৃথিবী জুড়ে বাড়ির পুনর্ব্যবহারযোগ্যকরার সমান। এই বৈষম্য মোকাবেলা করে নারীরা সে সকল অসুবিধার সাথে লড়াই করতে পারবে যা জড়িয়ে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য উদ্পাদনের সমস্যার সাথে। চাষে জীবন শক্তি আছে। সর্বশেষ, গণনা অনুযায়ী, ১৩০ মিলিয়ন মেয়েরা এখনও স্কুলে উপস্থিত হওয়ার মৌলিক অধিকার পায়ে না। ফাঁকটি মাধ্যমিক স্কুলের শ্রেণীতে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই অনেকগুলি মেয়ের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি অনুপস্থিত। শিক্ষা অর্থাৎ নারী এবং তাদের সন্তানদের জন্য ভাল স্বাস্থ্য, আরও ভাল আর্থিক নিরাপত্তা, ঘরে সমাজে বৃহত্তর সুবিধা, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনশীল অবস্থাটিকে ভ্রমণ করার বেশি ক্ষমতা। শিক্ষার অর্থ বিকল্প, অভিযোজন, শক্তি। এটি কম নির্গমনের কারণ হতে পারে। বিভিন্ন কারণে, যখন আমাদের শিক্ষার সময় বেশি হয়, তখন আমরা সাধারণত বিয়ে দেরিতে করি এবং কম বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করি। সুতরাং আমাদের পরিবার ছোট হয়। স্বতন্ত্র পর্যায়ে যা ঘটে তা বিশ্বে এবং সময়ের সাথে যোগ দেয়। একের পর এক, স্কুলে যাওয়ার অধিকার প্রভাবিত করে কতজন মানুষ বেঁচে থাকছে এবং এটির জীবনব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। এটি শুধুমাত্র কারণ নয় মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য। এটি একটি অর্থপূর্ণ ফলাফল। শিক্ষা একটি মুদ্রার একটি দিক। অন্যটি পরিবার পরিকল্পনা: উচ্চমানের, স্বেচ্ছাসেবক প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা পাওয়া। অপ্রকল্পিত ভাবে না করে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী বাচ্চা গ্রহণ করা স্বায়ত্তশাসন ও মর্যাদার ব্যাপার। তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ৪৫ শতাংশ গর্ভাবস্থা অপ্রকল্পিত। নিম্ন আয়ের দেশে দুইশো চৌদ্দ মিলিয়ন মহিলারা বলে যে তারা গর্ভবতী হওয়ার সময়টি নিজেরা ঠিক করতে চায় কিন্তু তারা গর্ভনিরোধক ব্যবহার করছেনা। নারীর চাহিদার কথা শোনা, তাদের প্রয়োজন মেটানো, ন্যায় এবং সুস্থতার অগ্রগতি করা: এগুলোই পরিবার পরিকল্পনার, লক্ষ্য হওয়া উচিত। এতে জনসংখ্যার বৃদ্ধি কমানো একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, যদিও একটি শক্তিশালী। এটি খাদ্য, পরিবহন, বিদ্যুৎ, ভবন, পণ্য এবং বাকি সকলের জন্য নাটকীয়ভাবে চাহিদা হ্রাস করতে পারে, যার ফলে নির্গমন হ্রাস পায়। শিক্ষা ও পারিবারিক পরিকল্পনার ফাঁকগুলি বন্ধ করুন, এবং তাতে মধ্য শতাব্দীর মাঝামাঝি, আমরা পৃথিবীতে বসবাসকারী এক বিলিয়ন কম মানুষ খুঁজে পেতে পারি, যদি আমরা এর চেয়ে বেশি কিছুই আর না করি। প্রজেক্ট ড্রডাউন অনুযায়ী, এক বিলিয়ন কম লোকের অর্থ আমরা প্রায় ১২০ বিলিয়ন টন নির্গমন এড়াতে পারি। প্রভাবের সেই স্তরে, লিঙ্গ সমতা পরিষ্কার জলবায়ু পুনরুদ্ধারের শীর্ষ সমাধান। প্রভাবের সেই স্তরে, লিঙ্গ সমতা বায়ু টারবাইন ও সৌর প্যানেল ও বনের সাথে সমান। শিক্ষা এবং নিজের পছন্দ প্রকাশ করার মধ্যে জীবন শক্তি আছে। একটি কথা পরিষ্কার করা যাক: এর অর্থ এই নয় যে নারী ও মেয়েশিশুরা সবকিছু ঠিক করার জন্য দায়ী। (হাসি) যদিও আমরা সম্ভবত তা করব। (হাসি) (সাধুবাদ) কৃষি, শিক্ষা ও পারিবারিক পরিকল্পনায় নারীরদের সমতা: এটি ড্রডাউন সমাধানগুলির মধ্যে উল্লেখ করা একটি সমাধান। একসঙ্গে, তারা সম্ভাবনার একটি প্রতিচিত্র গঠন করে। এই সম্পর্কে আমি আরো পরিষ্কার করে বলতে চাই: জনসংখ্যার সমস্যা উৎপাদন বা ভোগ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। মানব পরিবারে কিছু অংশ ক্ষতিকারকভাবে বড় ক্ষতি করে, অন্যেরা বহিরাগত অবিচার ভোগ করে। যারা সবচেয়ে ধনী -- তারা সবচেয়ে বেশি দায়ী। আমাদের সবচেয়ে বেশি কাজ আছে। লিঙ্গ-জলবায়ু সংযোগ নেতিবাচক প্রভাব অতিক্রম করে এবং শক্তিশালী সমাধান অতিক্রম করে। নারী গ্রহের পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর ও এই গ্রহের পরিবর্তনের প্রতিনিধি, কিন্তু এখনো আমরা প্রায়শই অনুপস্থিত বা এমনকি প্রবাদতুল্য টেবিল থেকে নিষিদ্ধ। যখন আমরা কথা বলি আমাদের প্রায়ই উপেক্ষা করা হয় বা চুপ করানো হয়।পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ করার সময় আমাদের খুব প্রায়ই অতিক্রম করা হয়। এক বিশ্লেষণ অনুসারে, মাত্র ০.২ শতাংশ জনসাধারণের তহবিলগুলি বিশেষ করে নারী ও পরিবেশের দিকে যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী মাত্র ১১০ মিলিয়ন ডলার, গত বছর এক বাস্কোয়্যাত পেইন্টিং কেনার জন্য একটি ব্যক্তি সমান পরিমান ব্যয় করে থাকে। এই শক্তিগুলো শুধুমাত্র অন্যায় না, এগুলি আমাদের ব্যর্থতার কারণ হয়ে ওঠে। দ্রুত, মূলত ভাবে সমাজকে পুনরায় সাজানোর জন্য, আমাদের প্রতিটি সমাধান ও প্রতিটি সমাধানকারী, প্রতিটি মন, প্রতিটি হৃদয়, প্রতিটি জোড়া হাতের প্রয়োজন। আমরা প্রায়শই পদক্ষেপের জন্য একটি সহজ রাস্তা চাই, কিন্তু এই সমস্যাটি একটি ঘটনা বিবরন করা পাতার চেয়ে বেশি এবং একটি তালিকার চেয়েও বেশি দাবি করে। আমাদের বৈচিত্র্যকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের একটি বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে শক্তি খুঁজে পেতে হবে ও আরও কাজ করতে হবে। আপনি জানেন আপনার বিশেষ শক্তি কোনটি। আপনি একজন শিক্ষক, কৃষক, নিরাময়কারী, নির্মাতা, প্রচারক, জ্ঞান-রক্ষক। আপনি কিভাবে সমস্যার সমাধান করার জন্য নিজের অস্ত্রের জোড়া লাগাতে পারেন? একটি ভূমিকা আমি আপনাকে সকল কে পালন করার কথা বলতে চাই: বার্তাবহের ভূমিকা। এই এক মহান জাগরণের সময়। আমাদের উচিত গ্রহের অবস্থা সম্পর্কে নীরবতা ভেঙ্গে দেওয়া; জলবায়ু বিজ্ঞান সম্পর্কে নির্মিত বিতর্ক অতিক্রম করা; সমাধানগুলি নিয়ে কথা বলা; একটি ভাঙ্গা খোলা হৃদয়ের সঙ্গে সত্য কথা বলা;শেখানো উচিত যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে,আমাদের লিঙ্গের মধ্যে ন্যায্যতা রাখাটা আবশ্যক। এবং এই আপাতদৃষ্টিতে দেখা অসম্ভব মুকাবিলার মুখোমুখি, নারী ও মেয়েশিশুদের প্রয়োগ করা একটি শক্তিশালী সম্ভাবনা। এটি একটি মহৎ জিনিস যে আমরা এ মুহূর্তে জীবন্ত যা সকলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই পৃথিবী, আমাদের বাড়ি, আমাদের সাহসী হতে আহ্বান করছে, আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে আমরা সবাই এর মধ্যে একসাথে আছি - নারী, পুরুষ, সমস্ত লিঙ্গ সনাক্তকারী মানুষ, সব জীবিত প্রাণী। আমরা জীবনী শক্তি, এক পৃথিবী, এক সুযোগ। আসুন এটি দখল করা যাক। ধন্যবাদ। (সাধুবাদ) ক্লিনিকাল পরীক্ষাগুলিতে কয়েক দশক ধরে গবেষণা ও বহু বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পর, এখনও ক্যান্সারের ঔষধ সরবরাহের সমস্যা রয়েছে। আমরা এখনো রুগীদের কেমোথেরাপি দি, যা এতটাই অনির্দিষ্ট যে তা ক্যান্সার কোষগুলির সাথে শরীরের সুস্থ কোষগুলিকেও ধ্বংস করে। হ্যাঁ, আমরা আরো চিকিত্সাগত মাদকদ্রব্য উন্নত করেছি,তবে সেগুলিকে টিউমারের মধ্যে প্রবেশ করানোটা এখনও একটি মুকাবিলা, ও সেগুলি অন্যান্য অঙ্গগুলিতেও জমা হয়ে ওঠে বা প্রস্রাবের দ্বারা বেরিয়ে যায়, এবং বর্জ্য হয়। এবং আমার মতো এরকম ক্ষেত্রগুলি বেরিয়েছে যেখানে আমরা এইসব মাদকদ্রব্যকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করি যখন তা শরীরের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে। কিন্তু এই পরিবর্তনগুলি সমস্যার ও আমরা আরও পরিবর্তন প্রয়োগ করি এগুলির সংশোধনের জন্য। তাই আমি বলতে চাই আমাদের আরো ভালো ঔষধ বিতরণের পদ্ধতির প্রয়োজন। এবং আমার প্রস্তাব, কেন না আমরা মানুষের তৈরী উপায়ের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপায়ের সাহায্য নি? প্রতিরোধক কোষগুলি বহুমুখী যানবাহনের মতো আমাদের শরীরের মধ্যে ভ্রমণ করে, টহল দেয় রোগের লক্ষণগুলি ধরার জন্য এবং শরীরের কোনো ক্ষতর কাছে এসে পৌঁছায় আঘাত পাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই। তাই আপনাদের কাছে জিজ্ঞাসা: যদি প্রতিরোধক কক্ষগুলি আমাদের দেহে আঘাত বা রোগের জায়গায় ভ্রমণ করে তবে কেন না তাদের সাথে আর একটা যাত্রী যোগ করে দেওয়া জাক? কেন না আমরা প্রতিরোধক কক্ষগুলি ব্যবহার করে শরীরে ঔষধ পৌঁছে দি ও আমাদের বৃহত্তম রোগগুলির সমাধান করি? আমি এক বায়োমেডিকাল ইঞ্জিনিয়ার, এবং আমি আপনাদের একটি গল্প বলতে চাই কিভাবে আমি প্রতিরোধক কোষের দ্বারা ক্যান্সারের বৃহত্তম সমস্যাগুলিকে সামলাই। আপনারা কি জানেন ৯০ শতাংশেরও বেশি ক্যান্সারের মৃত্যু তার বিস্তারের কারণে হতে পারে? তাই আমরা যদি ক্যান্সার কোষকে প্রাথমিক টিউমার অবস্থা থেকে দূরবর্তী স্থানে পৌঁছাতে বাধা দিতে পারি, আমরা ক্যান্সারকে তার পথে থামাতে সক্ষম হব ও মানুষের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারব। এই বিশেষ কাজটি করার জন্য, আমরা লিপিডের তৈরি একটি ক্ষুদ্র কোনা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম,যে উপাদান আপনাদের কোষের গঠনেও উপস্থিত। এবং আমরা দুটি বিশেষ অণু যোগ করেছি। এককে ই-সিলেক্টিন বলা হয়, যা আঠার মতন ক্ষুদ্র কণাকে প্রতিরোধক কোষের সাথে যুক্ত করে। দ্বিতীয়টি ট্রায়াল বলা হয়।ট্রায়াল এক আরোগ্যক্ষম ঔষধ যা ক্যান্সার কোষকে হত্যা করে কিন্তু স্বাভাবিক কোষকে নয়। এবার যখন এই দুজনকে একত্রিত করে, আপনি চাকা সমেত একটি হিংশ্র মৃত্যু যন্ত্র পান। এটা পরীক্ষা করার জন্য আমরা একটি ছুঁচোর উপর গবেষণা করি। আমরা এই ক্ষুদ্র কনাগুলি ঢোকাই এবং তা খুব দ্রুত আবদ্ধ হয় রক্তের স্রোতের মধ্যে উপস্থিত প্রতিরোধক কোষের সাথে। তারপর আমরা ক্যান্সারের কোষগুলি ঢোকাই যাতে তারা অনুকরণ করে সেই পদ্ধতি যার দ্বারা সেগুলি পুরো শরীরে ছড়িয়ে পরে। এবং আমরা খুব উত্তেজনাপূর্ণ কিছু খুঁজে পাই। আমরা দেখলাম আমাদের চিকিৎসা করা দলে, ৭৫ শতাংশের বেশি ক্যান্সার কোষ যা আমরা আগে শরীরে প্রবেশ করিয়েছিলাম তা মারা গেছে বা মারা যাচ্ছে ,২৫ শতাংশের তুলনায়। সুতরাং কল্পনা করুন: কম সংখ্যক কোষগুলি প্রকৃতপক্ষে শরীরের ভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হল। এবং এটি শুধুমাত্র চিকিত্সা শুরুর দু ঘন্টা পরে। আমাদের ফলাফল আশ্চর্যজনক ছিল, এবং আমাদের কিছু বেশ আকর্ষণীয় চাপ ছিল। আমার প্রিয় শিরোনাম ছিল, "আঠাল বল ক্যান্সারের বিস্তার থামায়।" (হাসি) আমি আপনাদের বলে বোঝাতে পারবোনা আমার পুরুষ সহকর্মীরা কতটা প্রসন্ন ছিল, এটা ভেবে যে তাদের আঠাল বল একদিন ক্যান্সার নিরাময় করবে। (হাসি) কিন্তু আমি আপনাদের জানাতে পারি তারা কিছু সুন্দর,উত্তেজনাপূর্ণ টি-শার্ট তৈরি করেছে। এই আমার প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল রোগীদের সাথে কথা বলায় যেখানে তারা জিজ্ঞাসা করেছিল এই চিকিৎসা কি ভাবে তাদের কাছে সহজলভ্য হবে। এবং আমি নিজের গাছে এই গল্পগুলি রেখে দি যা আমাকে বিজ্ঞান, বিজ্ঞানী ও রোগীদের গুরুত্ব সম্পর্কে স্মরণ করতে সাহায্য করে। এখন আমাদের দ্রুত-কাজের ফলাফলগুলি খুবই আকর্ষণীয় ছিল, কিন্তু আমাদের এক দীর্ঘস্থায়ী প্রশ্ন ছিল: আমাদের চটচটে বল, আমাদের কণা যা প্রতিরোধক কোষগুলির সাথে যুক্ত, আসলে কি তারা ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিরোধ করতে পারে?তাই আমাদের পশু মডেলের সাহায্যে আমরা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাই। আমাদের প্রাথমিক তুমুরগুলি ছোট ছিল আমাদের চিকিৎসা করা পশুদের মধ্যে,অনেক কম কোষ প্রচলিত ছিল, এবং দূরবর্তী অঙ্গগুলির মধ্যে টিউমার বোঝা কম ছিল বা ছিলোনা। এটি শুধুমাত্র আমাদের এবং আমাদের আঠাল বলের জন্য একটি জিত ছিলনা। মাদক বিতরণে আমার জন্য এটি একটি জিত ছিল, এবং এটি একটি নমুনার স্থানান্তর, এক বিপ্লবের প্রতিনিধি ছিল- শুধুমাত্র ঔষধ ব্যবহার করা, ঔষধ শরীরে দিয়ে তা সঠিক জায়গায় পৌঁছানোর অপেক্ষা করা থেকে নিয়ে আজ প্রতিরোধক কোষ শরীরে ঔষধ বিতরণের কাজে ব্যবহার করা পর্যন্ত। এই উদাহরণের জন্য, আমরা দুটি অণু, ই-সিলেক্টিন এবং ট্রায়াল ব্যবহার করেছি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে,আপনি যে সকল ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন তা অবিরাম। এবং আমি ক্যান্সার সম্পর্কে বললাম, কিন্তু রোগ যেখানেই যায় সাথে যায় প্রতিরোধক কোষগুলি। তাই এটি কোন রোগের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। কল্পনা করুন প্রতিরোধক কোষগুলির দ্বারা আমরা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষত-সারানোর ঔষধ শরীরে পৌঁছে দিতে পারবো মেরুদণ্ডে আঘাতের পর, বা প্রতিরোধক কোষগুলির সাহায্যে ঔষধ প্রদান করতে পারবো রক্ত-মস্তিষ্কের বাধা অতিক্রম করে,পার্কিনসন্স বা আল্জ্হেইমেরস রোগ সারানোর জন্য। এইসব ধারণাগুলি আমায় বিজ্ঞান সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দেয়।এবং আমি যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে অনেক প্রতিশ্রুতি ও সুযোগ দেখতে পাচ্ছি। ধন্যবাদ। (হাততালি) আমি এখানে এসেছি আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রশংসা, শ্রদ্ধা আর ধন্যবাদের গুরুত্ব নিয়ে, আর কিভাবে এদের স্পষ্ট এবং অকৃত্রিমভাবে প্রকাশ করা যায়। এবং যেভাবে আমি এই বিষয়ে উৎসাহিত হয়েছিলাম তা হচ্ছে আমি নিজের মাঝে লক্ষ্য করেছিলাম, যখন আমি বেড়ে উঠছিলাম এবং কয়েক বছর আগে পর্যন্তও, যে আমি হয়তো কাউকে ধন্যবাদ দিতে চাই , কারো প্রশংসা করতে চাই, কারো কাছ থেকে নিজের প্রশস্তি শুনতে চাই এবং তা চিন্তা করবার পরই আমি থেমে যেতাম। আর আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম, কেন? আমি লজ্জা পেতাম, আমার অস্বস্তি হত। এবং তখন আমার প্রশ্ন হয়ে হয়ে দাঁড়ালো, আমিই কি একমাত্র মানুষ যে কিনা এমন করে? তাই, আমি অনুসন্ধান করবার সিদ্ধান্ত নিলাম । আমার ভাগ্য ভালো যে আমি পুনর্বাসন প্রকল্পে কাজ করি, আর তাই আমি এমন মানুষদের দেখতে পাই যারা নেশার কবলে পড়ে জীবন ও মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এবং কখনও কখনও এটার কারন হয় সাধারণ কিছু যেমন কারও কারও মনঃকষ্টের কারণ হল যে তাদের বাবা তাদের নিয়ে কতটা গর্বিত সেটা বলার আগেই মারা গেছে। কিন্তু তারপর, তারা সব বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের কাছে থেকে জানতে পারে যে, ওদের বাবা ওদেরকে নিয়ে যে গর্বিত ছিলেন সেটা বাকি সবাইকে বলেছেন, কিন্তু তিনি ছেলেকে কখনো বলেননি। কারণ তিনি জানতেন না তার ছেলের সেটা শোনার দরকার ছিল। তাই, আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কেন আমাদের যা দরকার তা চাই না? আমি এক ভদ্রলোককে চিনি, ২৫ বছর ধরে বিবাহিত, যে কিনা অপেক্ষা করছে তার স্ত্রীর কাছ থেকে এটা শোনার জন্য, "উপার্জন করার জন্য ধন্যবাদ, এর জন্যই আমি বাড়িতে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে পারছি।" কিন্তু উনি জিজ্ঞাসা করবেন না। আমি একজন মহিলাকে চিনি যিনি এই ব্যাপারে যথেষ্ট ভাল। উনি সপ্তাহে একবার স্বামীর সাথে দেখা করেন এবং বলেন, "আমি চাই যে তুমি আমাকে বাড়ির সব কাজ আর বাচ্চাদের জন্য যা করি তার জন্য ধন্যবাদ দাও।" এবং ওনার স্বামী বলেন, "ওহ, এটা অসাধারণ, এটা দারুন।" এবং প্রশংসা অবশ্যই আসল হতে হবে, কিন্তু উনি সেটার দায়িত্ব নেন। এবং আমার এক বন্ধু, এপ্রিল, যে আমার বাল্যবন্ধু, সে তার বাচ্চাদের ধন্যবাদ দেয় তাদের নিজেদের কাজ করার জন্য। সে বলে, "যদিও তাদের নিজেদেরই কাজটা করার কথা তাও ধন্যবাদ দেব না কেন?" তাই, প্রশ্ন হচ্ছে, কেন আমি এটা আটকাচ্ছিলাম? কেন অন্য মানুষরা বলে না, ভিতরে আটকে রাখে? আমি কেন বলতে পারি, "আমি আমার পছন্দের মাংস খাবো, আমার ছয় সাইজের জুতো দরকার," কিন্তু আমি বলতে পারি না, "তুমি কি আমাকে এইভাবে প্রশংসা করবে?" এবং এর কারণ হচ্ছে আমি আপনাদেরকে আমার সম্পর্কে সমালোচনামূলক তথ্য দিচ্ছি। আমি আপনাদের বলছি আমি কোথায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করি। আমি আপনাদের বলছি যে আমার কোথায় আপনাদের সাহায্য দরকার। এবং আমি আপনাদের, আমার কাছের লোকেদের, শত্রু মনে করছি। কারণ আপনারা এই তথ্য নিয়ে কি করতে পারেন? আপনারা আমাকে অবহেলা করতে পারেন। আপনারা এর অপব্যবহার করতে পারেন। অথবা আপনারা হয়তো আমার অভাব পূরণ করতে পারেন। আমি আমার সাইকেলটাকে সাইকেলের দোকানে নিয়ে যাই- আমার এটা দারুণ লাগে- একই সাইকেল, তবু ওরা ওটাতে কিছু করে যাকে বলে চাকার ভারসাম্য পুনর্স্থাপন করা। দোকানের লোকটি বলে, "জানো, তুমি যখন চাকাটির ভারসাম্য পুনর্স্থাপন কর, তখন এটা বেশি ভালো ভাবে ব্যবহার করা যায়।" আমি আমার পুরনো সাইকেলটাই ফিরে পাই, আর ওরা সেই পুরনো সাইকেলের চাকার ছোটখাটো ত্রুটি সারিয়ে দেয়, আমার কাছে সাইকেলটি আড়াই বছর ধরে আছে তবু সেটা এখনও নতুনের মত। তাই, আমি আপনাদের সকলকে চ্যালেঞ্জ করবো। আমি চাই আপনারা নিজেদের জীবনের চাকাগুলোর ভারসাম্য পুনঃ স্থাপন করুন- যে প্রশংসা আপনি শুনতে চান সে বিষরে সৎ থাকুন। আপনার কি শোনা প্রয়োজন? বাড়িতে আপনার স্ত্রীর কাছে যান- গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করুন-তার কি প্রয়োজন? বাড়িতে আপনার স্বামীর কাছে যান-তার কি প্রয়োজন? বাড়ি যান এবং এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করুন, এবং তারপর আপনার চারপাশের মানুষদের সাহায্য করুন। এবং এটা করা সহজ। এবং কেন আমরা এই বিষয়ে মাথা ঘামাবো? আমরা বিশ্ব শান্তি নিয়ে কথা বলি। আমরা কিভাবে বিভিন্ন সংস্কৃতি, বিভিন্ন ভাষা নিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি? আমি মনে করি এটা শুরু হয় বাসা থেকেই, একই ছাদের নিচ থেকে। তাহলে, আসুন প্রথমেই আমরা আমাদের নিজেদের আঙ্গিনায় এটা ঠিক করি। এবং আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার সব শ্রোতাদের অসাধারণ স্বামী, অসাধারণ মা, বন্ধু, কন্যা, পুত্র হওয়ার জন্য এবং হয়তো কেউ আপনাকে কখনো এটা বলেনি, কিন্তু আপনি প্রকৃত অর্থেই ভাল কাজ করেছেন। এবং ধন্যবাদ এখানে উপস্থিত হবার জন্য, এখানে উপস্থিত হয়ে নিজেদের চিন্তা দিয়ে বিশ্বকে বদলে দেবার জন্য। ধন্যবাদ (হাততালি) এখনই শুরু করা যাক। আচ্ছা এক মিনিট (খুব দ্রুত নড়াচড়া করে) ঠিক আছে (হাসি) ওহ দু:খিত। ( সংগীত) (বীটবক্সিং) ধন্যবাদ। (হাততালি) জুন ২০১৬ সালে, ব্রেক্সিট ভোটের পর, ব্রিটেন যেদিন হটাৎ জানতে পারে যে তারা ইউরোপীয়ন ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, অবজার্ভার সংবাদপত্রে আমার উকের সম্পাদক তখন আমাকে দক্ষিণ ওয়েলস যেখানে আমি বড়ো হয়েছি, সেখানে ফিরে যেতে বলে একটি রিপোর্ট লেখার জন্য । এবং তাই আমি এব্বু ভাল নামক একটি শহরে যাই। এটি এখানে । এটা দক্ষিণ ওয়েলস উপত্যকায়, যা এক বিশেষ জায়গা। সুতরাং এটি খুব সমৃদ্ধ, শ্রম-শ্রেণী সংস্কৃতির ছিল এবং এটি ওয়েলশের পুরুষ গায়কদল ও রাগবি ও কয়লার জন্য বিখ্যাত। কিন্তু যখন আমি কিশোর ছিলাম, তখন কয়লা খনি ও ইস্পাত কাজ বন্ধ হয় যায়, এবং পুরো এলাকাটি ধ্বংস হয় যায়। এবং আমি সেখানে গিয়েছিলাম কারণ এটি দেশের সর্বোচ্চ "ছাড়" ভোট পাওয়ার মধ্যে একটি ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ৬৮ শতাংশ যারা ভোট দিয়েছেন তারা এই এলাকার। এবং আমি জানতে চাইলাম কেন। যখন আমি সেখানে যাই, তখন আমি একটু অবাক হই, কারণ শেষ বার যখন আমি ইবব্ল ভেল গিয়েছিলাম, এটি এরকমই দেখতে লেগেছিলো। এবং এখন, এটি এরকম দেখছিলো। এটি ছিল একটি নতুন ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ডের কলেজ যা পরবর্তীকালে ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের দ্বারা পরিচালিত হয়। এবং এটি এক নতুন স্পোর্টস সেন্টার যা ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড পুনর্জন্ম প্রকল্পের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয়ন ইউনিয়ন দ্বারা অর্থায়ন করা হচ্ছে। এবং এটি নতুন ৭৭ মিলিয়ন পাউন্ডের সড়ক সংস্কার প্রকল্প, এবং এটি এক নতুন ট্রেন লাইন, এক নতুন রেলওয়ে স্টেশন, এবং এগুলি ইউরোপীয়ন ইউনিয়ন দ্বারা অর্থায়ন করে তৈরী। এবং এটি কোনো গোপন বিষয় নয়, কারণ এরকম সর্বত্র বড় লক্ষণ রয়েছে। [ইইউ তহবিল: ওয়েলসে বিনিয়োগ] (হাসি) এই শহরের চারপাশে হেঁটে, এক অযৌক্তিক অদ্ভুত অনুভূতির সম্মুখীন হলাম। এবং এটি আরো আশ্চর্য হয়ে উঠলো যখন আমি এই যুবককের সম্মুখীন হলাম এই স্পোর্টস সেন্টারের সামনে। এবং তিনি আমাকে বলেন যে তিনি ছেড়ে যাওয়ার জন্য ভোট দিয়েছেন, কারণ ইউরোপীয়না ইউনিয়ন তার জন্য কিছুই করেনি। তিনি এই বিষয় বিরক্ত ছিলেন। এবং প্রায় পুরো শহরে, সকল মানুষ আমাকে একই জিনিস বলেছিল। তারা বলেছিল যে তারা নিয়ন্ত্রণ পুনরায় গ্রহণ করতে চায়, যা তাদের প্রচারণার এক মূল কথা ছিল। এবং তারা আমাকে বলেছিল যে তারা অভিবাসীদের ও শরণার্থীদের উপর বিরক্ত।তারা আর সহ্য করতে পারছিলো না। যা অদ্ভুত ছিল। কারণ চারিদিকে,আমি কোন অভিবাসী বা উদ্বাস্তুদের সাথে দেখা পাইনি। এক পোলিশ মহিলার সাথে আলাপ হয় যিনি আমাকে বলেন যে তিনিই আসলে শহরের একমাত্র বিদেশী। এবং যখন আমি পরিসংখ্যান লক্ষ্য করি, আমি আবিষ্কার করি যে ইবব্লু ভ্যালীতে দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন সংখ্যায় অভিবাসীরা উপস্থিত। এবং তাই আমি একটু আশ্চর্য ছিলাম, কারণ আমি বুঝতে পারছিলাম না লোকেরা তাদের তথ্য কথা থেকে পাচ্ছিল। কারণ ডানপন্থী সংবাদপত্রগুলিতেই অভিবাসন সম্পর্কে সব গল্প ছাপা হতো। এবং এই জায়গাটি এক বাম শ্রম দুর্গ। কিন্তু এক নিবন্ধটি বের হওয়ার পর এই মহিলা আমার সাথে যোগাযোগ করেন। এবং তিনি ইবব্ল ভেল থেকে এসেছিলেন, ও তিনি আমাকে সমস্ত জিনিস সম্পর্কে জানান যা তিনি ফেসবুকে দেখেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করি, "কি দেখেছেন? "।তখন তিনি বলেন, এটি অভিবাসন,ও বিশেষত তুরস্ক সম্পর্কে ভয়ঙ্কর উপাদান ছিল। তাই আমি এটি খোঁজার চেষ্টা করি। কিন্তু সেখানে কিছুই ছিল না। লোকেরা যা দেখেছে বা তাদের খবরের ফিডগুলিতে কী উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল তার কোনও সংরক্ষণাগার ছিলোনা। কোনো কিছুর খোঁজ পাওয়া সম্ভব ছিলোনা, সব কিছু অন্ধকার ছিল। এবং এই গণভোট ব্রিটেনের জন্য চিরকালের মতো গভীর প্রভাব ফেলবে -- এটি ইতিমধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে: ওয়েলস এবং উত্তর পূর্বের খনন কাজ গুলিকে প্রতিস্থাপন করার জন্য যে জাপানী গাড়ী নির্মাতারা এসেছিলেন-তারা ইতিমধ্যেই ব্রেক্সিটের কারণে ফিরে যাচ্ছে। এবং এই পুরো গণভোটটি অন্ধকারে ঘটেছিল, কারণ এটি ফেসবুকে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবং ফেসবুকে যা ঘটে তা ফেসবুকেই থাকে, কারণ শুধুমাত্র আপনি আপনার নিউজ ফিড দেখতে পান,এবং তারপর এটি অদৃশ্য হয়ে যায়,তাই এই বিষয় কিছু গবেষণা করা অসম্ভব। সুতরাং আমাদের কোন ধারণা নেই যে তাদের কোন বিজ্ঞাপন দেখানো হয়েছিল বা কি ভাবে প্রভাবিত করা হয়েছিল, বা জনসাধারণের লক্ষ্যবস্তুতে কোন তথ্য ব্যবহার করা হয়েছিল। বা কারা বিজ্ঞাপনগুলি স্থাপন করেছিল,বা কত টাকা ব্যয় করেছিল, এমনকি তারা কোন জাতীয়তার ছিল। কিন্তু ফেসবুক তা করে। ফেসবুকের কাছে এই উত্তরগুলি আছে, এবং এটা আমাদের দিতে তা অস্বীকার করে। আমাদের সংসদ মার্ক জুকারবার্গকে ব্রিটেনে আসতে এবং আমাদের এই উত্তর দিতে বলেছিল। এবং প্রতিবার, তিনি এই উত্তর দিতে অস্বীকার করেছেন। এবং আপনারা ভাবছেন কেনো। কারণ আমি এবং অন্যান্য সাংবাদিকরা আবিষ্কার করেছি যে গণভোটের সময় একাধিক অপরাধ ঘটেছে। এবং তা ফেসবুকে ঘটেছে। কারণ ব্রিটেনের ক্ষেত্রে, নির্বাচনে অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ আমরা সীমাবদ্ধ রেখেছি। এবং এটি কারণ ১৯ শতকের মানুষেরা আক্ষরিকভাবে টাকা সমেত চলাফেরা করে ভোটারদের কিনতে পারত। সুতরাং এটি থামানোর জন্য আমরা কঠোর আইন পাস করিয়েছিলাম। কিন্তু সেই আইন এখন আর কাজ করে না। এই গণভোট প্রায় সম্পূর্ণরূপে অনলাইন অনুষ্ঠিত হয়। আপনি ফেসবুকে বা গুগল বা ইউটিউব বিজ্ঞাপন গুলিতে যেকোনো পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারেন এবং কেউ জানতে পারবেনা কারণ এগুলি কালো বাক্সের মতো। এবং এটি এখানে ঘটেছে। আমরা আসলে এই বিষয় সম্পূর্ণ পরিমানে কোন ধারণা নেই। কিন্তু আমরা জানি যে ব্রেক্সিট ভোটের শেষ দিনগুলিতে অফিসিয়াল "ভোট লেভ" প্রচারণার আর একটি বিভাগ যাদের নির্বাচন কমিশন দ্বারা অবৈধ ঘোষণা করা হয় তারা প্রায় এক কোটি পাউন্ডের মধ্যে তিন কোটি পাউন্ড লন্ডন করা হয়, এবং ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়। এবং এই অবৈধ নগদের সাথে, "ছাড়ার ভোট" ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়।এই ধরণের বিজ্ঞাপনের দ্বারা। [তুরস্কের ৭৬ মিলিয়ন মানুষ ইইউ যোগদান করে] এটি একটি মিথ্যা, সম্পূর্ণ মিথ্যা। তুরস্ক ইউরোপীয়ন ইউনিয়ন যোগদান করছেনা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করার বিষয়ে কোন আলোচনাও নেই। এবং আমাদের অধিকাংশই, আমরা এই বিজ্ঞাপনগুলি কখনও দেখেনি, কারণ আমরা তাদের লক্ষ্য ছিলামনা। "ছাড়ার ভোট" একটি ক্ষুদ্র সংখক মানুষকে চিহ্নিত করে যাদের প্রভাবিত করা যাবে ও তারাই শুধু এইগুলো দেখেছে। আর এখন আমরা এসব দেখতে পাচ্ছি কারণ সংসদ ফেসবুকে হস্তান্তর করতে বাধ্য করেছে। ও হয়তো আপনি মনে করছেন, "আচ্ছা,এটি কয়েকমাত্র অতিরিক্ত খরচ ছিল। এটি কয়েকটি মিথ্যা।" কিন্তু ব্রিটেনের ১০০ বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় নির্বাচনী প্রতারণা ছিল। এই নির্বাচনটি এক প্রজন্মের ছিল যা শুধুমাত্র এক শতাংশ নির্বাচোকদের উপর নির্ভরশীল ছিল। এবং গণজাগরণ মঞ্চে এটি একমাত্র অপরাধ ছিল। আরেকটি গোষ্ঠী ছিল, যার নেতৃত্বে ইনি ছিলেন নিগেল ফারেজ, ট্রামের ডানদিকের একজন। এবং তার গ্রুপ, "লিভ.ইউ" - এটা আইন ভেঙ্গেছিল। এটি ব্রিটিশ নির্বাচনী আইন এবং ব্রিটিশ তথ্য আইন ভঙ্গ করে, এবং এটি পুলিশকেও জানানো হয়েছে। এবং এই ব্যক্তিটি, আরন ব্যাংক, তিনি এই প্রচারণার তহবিল করেন। এবং একটি সম্পূর্ণ আলাদা ক্ষেত্রে, আমাদের জাতীয় অপরাধ সংস্থা যা ফবিয়াই সমতুল্য তাদের হাথে তুলে দেয়া হচ্ছে,কারণ আমাদের নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে তাদের জানা নেই যে তার অর্থগুলি কোথা থেকে এসেছে। অথবা এটি আদৌ ব্রিটিশ ছিল কিনা। আর আমি সেই মিথ্যা কথাগুলির মধ্যে যাব না যা অ্যারন ব্যাংক রাশিয়ান সরকারের সাথে তার গোপন সম্পর্কের বিষয় বলেছে। অথবা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে নিগেল ফারেজ ও ট্রামের বন্ধু রজার স্টোনর, যিনি এখন অভিযুক্ত,তাদের সাক্ষাতের অদ্ভুত সময়, দুটো বিশাল উইকিলিক্স ডাম্পের ঠিক আগেই, এই ঘটনাগুলি উভয়ই ঘটেছে ডোনাল্ড ট্রামকে উপকৃত করার জন্য। কিন্তু আমি আপনাদের বলব ব্রেক্সিট এবং ট্রাম্প আন্তরিকভাবে জড়িত ছিল। এই লোকটি আমাকে বলেন যে ব্রেক্সিট ট্রাম্পের পেট্রি ডিশ ছিল। এবং আমরা জানি যে একই মানুষ, একই কোম্পানি, একই তথ্য, একই কৌশল, ঘৃণা এবং ভয় ব্যাবৃত হয়েছে। তারা ফেসবুকে এই সকল জিনিস পোস্ট করে। এবং আমি এটা মিথ্যা বলতে চাইনা, [সমীকরণ ছাড়া অভিবাসী থাকা আক্রমণের সমান] কারণ এটি আমাকে ঘৃণাজনক অপরাধের মধ্যে ফেলি। আমি আপনাদের বলতে চাই যে বিশ্বজুড়ে ঘৃণা ও ভয় অনলাইন বপন করা হচ্ছে। শুধু ব্রিটেন ও আমেরিকা নয়, ফ্রান্সে এবং হাঙ্গেরি ও ব্রাজিল এবং মায়ানমার এবং নিউজিল্যান্ডে। এবং আমরা জানি যে এই অন্ধকার উপগ্রহ আমাদের একসাথে বেঁধে রেখেছে। এবং এটি প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রবাহিত হচ্ছে।কিন্তু উপরে যা ঘটছে আমরা তার কেবলমাত্র ক্ষুদ্র এক অংশ দেখতে পাই।এবং আমি কেবলমাত্র এই অন্ধকারের ভেতরে কিছু খুঁজে পেয়েছি কারণ আমি ট্রাম্পের সাথে ফারজের সম্পর্কটি দেখতে শুরু করেছিলাম, কেমব্রিজ এনালিটিকা নামক একটি সংস্থায়। এবং আমি বহু ম্যাশ কাটিয়েছি এক প্রাক্তন কর্মচারী উইলিকে খুঁজে বের করতে। এবং তিনি আমাকে জানান কিভাবে কোম্পানিটি, ট্রাম্প এবং ব্রেক্সিট উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করেছিল, মানুষের ব্যক্তিত্বের অনুযায়ী তাদের ভেদাভেদ করেছে তাদের সকলের ভয়গুলি বুঝতে এবং যাতে তাদের সঠিক ফেসবুক বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য বানানো যায়। এবং এটি করা হয় অবৈধভাবে ফেসবুক থেকে ৮৭ মিলিয়ন মানুষের প্রোফাইল সংগ্রহ করে। ক্রিস্টোফারকে শিকার করাতে এটা পুরো এক বছর লেগেছিল। এবং আমি নিজেকে একটি বৈশিষ্ট্য লেখক থেকে এক তদন্তকারী প্রতিবেদকে পরিণত করি। তিনি অসাধারণ ভাবে সাহসী ছিলেন, কারন এই কোম্পানির মালিক ছিলেন রবার্ট মার্সারের, এক কোটিপতি যিনি ট্রাম্পের মালিকানাধীন ছিলেন এবং তিনি প্রকাশনায় বাধা দেওয়ার জন্য আমাদের বহুবার মামলা করার হুমকি দেন। কিন্তু আমরা অবশেষে সেখানে পৌঁছাই ও প্রকাশনায় এক দিন এগিয়ে ছিলাম। আমরা আরেকটি আইনি হুমকি পেয়েছিলাম। এই সময় ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার থেকে নয়, ফেসবুকের থেকে।এরা বলে আমরা প্রকাশ করলে, তারা মামলা করবে। আমরা তাও প্রকাশ করলাম। (সাধুবাদ) ফেসবুক, তুমি ইতিহাসের ভুল দিকে ছিলে। এবং তুমি ইতিহাসের ভুল দিকে আছো - আমাদের এই উত্তরগুলি দিতে অস্বীকার করে। এবং এজন্যই আমি আজ এখানে আছি।সিলিকন ভ্যালির দেবতাদের সামনাসামনি উদ্দ্যেশ করতে। (সাধুবাদ) মার্ক জুকারবার্গ ... (সাধুবাদ) এবং শেরিল স্যান্ডবার্গ ও ল্যারি পেজ ও সার্জি ব্রিন ও জ্যাক ডোরসে, এবং আপনাদের কর্মচারী ও বিনিয়োগকারীদেরও। ১০০ বছর আগে,সাউথ ওয়েলস কয়লা খনিতে সবচেয়ে বড় বিপদ গ্যাস ছিল। নীরব এবং মারাত্মক এবং অদৃশ্য। এ কারণেই তারা বায়ু পরীক্ষা করতে প্রথমে ক্যানারি পাঠিয়েছিল।এই বিশাল, বিশ্বব্যাপী, অনলাইন আবহা যাতে আমরা সবাই এখন বাস করছি,আমরা ব্রিটেনে সেই ক্যানারিগুলি। শত শত নির্বাচনী আইন প্রযুক্তি দ্বারা ব্যাহত হওয়ার পরিনাম হল আমাদের এখনকার পশ্চিম গণতন্ত্রের রূপ আমাদের গণতন্ত্র ভেঙ্গে গেছে, আমাদের আইন আর কাজ করে না, এবং আমি এটি আমি বলছি না, আমাদের সংসদ এটির একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।আপনি আবিষ্কার করেছেন যে এই প্রযুক্তি আশ্চর্যজনক। কিন্তু এখন, এটি এক অপরাধের দৃশ্য। এবং আপনাদের কাছে প্রমাণ আছে। এবং এটা যথেষ্ট নয় যদি আমি বলি যে ভবিষ্যতে আপনারা আরও ভাল করবেন।কারণ এটি আবার ঘটা থেকে বাধা দেওয়ার জন্য, তাই আমাদের সত্য জানতে হবে। এবং হয়তো আপনি মনে করেন, "আচ্ছা, কয়েকমাত্র মাত্র বিজ্ঞাপন।এবং মানুষ তার থেকেও চালাক, তাই না?" তাতে আমি বলব, "আমি আপনাদের সৌভাগ্য কামনা করছি। "কারণ ব্রেক্সিট ভোটটি দেখায় যে উদার গণতন্ত্র ভেঙ্গে গেছে। এবং আপনারা এটা ভেঙেছেন। এটা গণতন্ত্র নয় -- অন্ধকারে মিথ্যা ছড়ানো হয়েছে, যার জন্য অবৈধ নগদ দেওয়া হয়েছে, ঈশ্বর জানেন কথা থেকে। এটি পরাভব এবং আপনারা আনুষাঙ্গিক। (সাধুবাদ) আমাদের সংসদ বিশ্বের প্রথম যারা আপনাদের ধরার চেষ্টা করেছে, এবং তারা হেরেছে।ব্রিটিশ শাসনের নাগালের বাইরে আপনারা- এবং শুধুমাত্র ব্রিটিশ শাসন নয় এবং এখানে নয়টি দেশের সংসদ রয়েছে যাদের সামনে মার্ক জুকারবার্গ আসতে অস্বীকার করেছেন এবং প্রমাণ দিতে চাননি। এবং আপনারা বুঝতে পারছেননা যে এটা আপনাদের চেয়ে বড়ো।এবং এটা আমাদের সকলের চেয়ে বড়ো।এবং এটি বাম বা ডান নয় বা "ছেড়ে দিন" বা "অবশিষ্ট থাকুন" বা ট্রাম্প বা নার বিষয় নয়।এটি আসলে একটি মুক্ত এবং ন্যায্য নির্বাচন আবার সম্ভব কিনা তা নিয়ে। কারণ এখন যা অবস্থা, আমি তা মনে করিনা। এবং তাই আমার প্রশ্ন, আপনারা কি চান? আপনারা কি চান ইতিহাস আপনাদের এ ইভাবে মনে রাখে: আধিপত্যবাদের পখ্যপাতি যা বিশ্বজুড়ে বেড়ে উঠছে? কারণ আপনারা লোকেদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে গেছিলেন। এবং আপনারা এখন স্বীকার করতে চাইছেননা যে ওই একই প্রযুক্তি এখন আমাদেরকে পৃথক করছে। এবং অন্যদের কাছে আমার এটা প্রশ্ন, যে আপনারা কি চান আপনারা কি চান: যে তারা ছাড়া পেয়ে যাক,এবং একই সময় আমরা বসে আমাদের ফোন নিয়ে খেলব এবং আমাদের চারি দিকে অন্ধকার ঘিরে ধরুক?দক্ষিণ ওয়েলসের ইতিহাস অধিকারের জন্য এক যুদ্ধ। এবং এটি একটি কসরত নয়-- এটি বিবর্তনের একটি বিন্দু। গণতন্ত্র নিশ্চিত নয়, এবং এটি দুর্লভ নয়, আমাদের এর জন্য লড়তে হবে এবং কোনো ভাবেই প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর হাথে এত ক্ষমতা ছাড়া যাবেনা। এটা আপনাকলে, আমাকে, এবং সকল ক করতে হবে। আমাদের নিজের ক্ষমতা ফেরত পেতে হবে। (সাধুবাদ) (সাধুবাদ) (সাধুবাদ) (সাধুবাদ) এই প্রশ্নটি আমকে কৌতুহলী করে রেখেছে যে, আমরা কি একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এর বিকাশ অথবা উন্নয়ন ঘটাতে পারি কি-না। এমন একটি চেতনা, যা আমাদের দেবে অবাধ প্রবেশাধিকার এবং অনায়াস সম্পুরক তথ্য প্রপ্তির সুযোগ অথবা এমন তথ্য যা অন্য কোথাও রয়েছে। যা হয়ত আমাদের কোন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধন্ত নেয়ার জন্য সহায়ক হতে পারে যখন যা কিছুর মুখমুখি আমরা হচ্ছি। আপনাদের অনেকে হয়ত দ্বিমত পোষন করবেন যে আচ্ছা, এ যুগের সেল ফোন কি এখন এই কাজ গুলি করছে না? কিন্তু আমার উত্তর হবে ‘না’। যখন আপনি এখানে TED এ কার সাথে মিলিতো হন এবং এইটা হচ্ছে বছরের সেরা মিলনস্থল -- আপনি এটা করেন না যে, কারো সাথে করমরদন করার পর-- বললেন ‘একটু দাঁড়ান.. আমি আমার ফোনটা বের করে আপনাকে একটু Google করে নিই?" অথবা, আপনি যখন সুপারমার্কেটে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন লম্বা একটা সারির মুখে হরেক রকমের টইলেট পেপার ভিড়ে, আপনি এটা করেন না যে, সেল ফোনে কোনো ব্রাউজার খুলে কোন ওয়েবসাইটে গিয়ে সিদ্ধান্তটা নেয়া যে এতসব টয়লেট পেপারের ভিড়ে কোনটা কেনা পরিবেশগত কারনে সব চেয়ে উপযুক্ত হবে? আসলে আমাদের সহজ কোন উপাই নাই এই সব তথ্য পাওয়ার, যা আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং করনিয় সম্মন্ধে। এবং এই কারনে মিডিয়া ল্যাবে আমার গবেষনা পরিষদ বেশ কিছু আবিস্কার এর উন্নয়ন সাধন করে চলেছেন এই সমস্ত তথ্যে আমাদের প্রবেশাধিকার দিতে আরেকটু সহজতর উপায়ে, ব্যবহারকারির অভ্যাস বদলানোর কোন প্রয়জনীয়তা ছাড়াই। আর আমি এখানে উদঘাটন করতে যাচ্ছি আমাদের সাম্প্রতিক প্রচেস্টা, এবং এ পর্যন্ত সব চেয়ে সফল প্রচেস্টা এই কাজটা অবশ্য এখনো অনেকটাই প্রক্রিয়াধিন এই মুহূর্তে আমি আসলে সেই যন্ত্রটি পরে আছি আমরা কোনো রকমে এটা জোড়াতালি দিয়ে নিয়ে এসেছি এমন সব উপাদান এর সাহায্যে যা সহজলভ্য আর, যাই হোক, এর খরচ মাত্র ৩৫০ ডলার বর্তমানে। আমি পরে আছি একটি ক্যামেরা, একটি অতিসাধারন ওয়েবক্যাম, একটি বহন যোগ্য, ব্যাটারি চালিত প্রক্ষেপন যন্ত্র, সাথে একটি ছোট আয়না। এই সহায়ক যন্ত্র গুলো আমার পকেটে থাকা সেল ফোনের সাথে যোগাযোগ রাখে যা কিনা তথ্য আদানপ্রদানকারি এবং কম্পিউটার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ভিডিও চিত্রটিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমার ছাত্র প্রনব মিস্ত্রি কে সেই হচ্ছে আসল প্রতিভাবান যে এই যন্ত্রটি বাস্তবায়নের কাজ করছে এবং এই পুরো ব্যবস্থাটির নকশা প্রস্তুত করছে। আমরা দেখছি কিভাবে যন্ত্রটি যে কোনো তলকে বেছে নিতে দিচ্ছে এবং তার হাত কে তথ্যচিত্র গুলোর সাথে দ্বি-পাক্ষিক আদানপ্রদানের কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে যা তার সামনে দৃশ্যমান। যন্ত্রটি চারটি বিশেষ আঙ্গুলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। এই ক্ষেত্রে, সে পরেছে কয়েকটি সাধারন মার্কার ক্যাপ যা হয়ত আপনার চিনতে পেরেছেন। কিন্তু যদি আপনি আরেকটু সুন্দর কিছু চান তবে আপনি আপনার নখ কে বিভিন্ন রঙ্গে সাজিয়ে নিতে পারেন। ক্যামেরাটি মূলত এই চার আঙ্গুলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে এবং তাঁর করা যে কোনো ইশারা কে চিন্হিত করে তো সে যেতে পারে, ধরুন, লং বিচ এর ম্যাপ এ, জুম ইন, জুম আউট ইত্যাদি করতে পারে। এই যন্ত্রটি চিন্হযুক্ত ইশারাকেও সনাক্ত করতে সক্ষম যেমন ছবি তোলার ইশারা, এটি আপনার সামনে যা কিছু রয়েছে, তারই ছবি তুলে ফেলে। এবং যখন সে মিডিয়া ল্যাব এ ফেরত আসে সে যে কোনো দেয়াল বেছে নিতে পারে এবং তার তোলা ছবি গুলোকে প্রক্ষেপ করতে পারে, সেগুলোকে বাছতে এবং সাজাতে পারে, এবং আকৃতি পরিবর্তন ইত্যাদি করতে পারে, এবং এসব কিছুই শুধু সাধারন ইশারার সাহায্যে। তো আপনাদের অনেকেই হয়ত দুই বছর আগে এখানে ছিলেন এবং জেফ হান এর ডেমোটি দেখে থাকবেন অথবা অনেকে ভাবছেন ‘এটা কি Microsoft Surface Table এর মতো মনে হচ্ছে না?’ এবং হ্যাঁ, আপনি সেখানেও সাধারন ইশারার মাধ্যমে, উভয় হাতের ব্যবহার প্রভৃতির মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকেন। কিন্তু এখানে পার্থক্য হল, আপনি যে কোনো তলই ব্যবহার করতে পারবেন, আপনি বেছে নিতে পারেন যে কোনো তল, যদি আর কিছুই না পাওয়া যায় আপনার হাতও ব্যবহার করতে পারেন এই দৃশ্যমান তথ্যগুলোর সাথে যোগাযোগের জন্য যন্ত্রটি পুরপুরি বহনযোগ্য, এবং হতে পারে... (করতালি) তো, একটি গুরুত্বপুর্ন পার্থক্য হলো, এইটা পুরপুরি পরিবহন যোগ্য। আরেকটি আরও গুরুত্বপুর্ন পার্থক্য হলো, গন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এটার উৎপাদন খরচ বর্তমানের মেবাইল ফোনের চেয়ে বেশি হবে না এবং প্রক্রিতপক্ষে এটার মড়কের বাক্সটা তেমন বড় কিছু হবে না-- দেখতে আরো চমকপ্রদ হবে আমি আমার গলায় এখন যেটা পরে আছি তার চেয়ে। আপনাদের অনেক কে এই কল্পনায় ফেলে দেয়া যায় যে এটাকি টম ক্রুজ এর ‘Minority Report’এর মত চমতকার হবে, যে কারনে আমরা এই যন্ত্রটি নিয়ে সত্যই উত্তেজিত, তা হল এটি সত্যই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের মত কাজ করতে পারে যা আপনাকে প্রাসঙ্গিক তথ্য দেয় সব কিছু সম্মন্ধে যা আপনার সামনে আছে। তো আমরা এখানে দেখছি, প্রনব সুপারমার্কেটে ঢুকছে এবং সে কিছু পেপার টাওয়েল কিনছে। এবং, সে যখনি কোন পন্য হাতে নেয়, যন্ত্রটি তা শনাক্ত করতে পারে যে পন্যটি সে তুলে নিচ্ছে হয় ছবি শনাক্ত করন অথবা 'মার্কার প্রযুক্তি'র মাধ্যমে, এবং তাকে সবুজ অথবা কমলা সঙ্কেত দিয়ে থাকে। সে আরো বাড়তি তথ্য চাইতে পারে। তো, এখনে এই বাছাইতে সুনির্দিষ্ট ভাবেই ভাল বাছাই হয়েছে, তার ব্যক্তিগত পছন্দের কথা ভাবলে। আপনাদের মধ্যে কেও কেও হইত অধিক ব্লিচ যুক্ত টইলেট পেপারই নিতে চাইবেন পরিবেশগত ভাবে দায়িত্বশীল পছন্দের চাইতে। (হাসি) সে যদি বই এর দোকানে একটি বই নেয় সে এটার অ্যামাজন মুল্যায়নও পেয়ে যাবে। এটা বইএর মলাটের ওপরেই দৃশ্যমান হয়ে যায়। এইটা আমাদের আগের বক্তা জুয়ানের বই, যাই হোক বইটা অ্যামাজনে দারুন ভালো মুল্যায়ন পায়। এবং তাই প্রনব বইটির পাতা উল্টায় এবং বইটি সমন্ধে বড়তি তথ্য দেখতে পারে-- পাঠকের মন্তব্য, হয়ত বা তার প্রিয় সমালচকের মতামত এবং এরকম আরো অনেক কিছু। সে যদি একটা নির্দিষ্ট পাতায় যায় সে হয়তো খুঁজে পায় কোনো দক্ষ ব্যক্তি অথবা আমাদের কোনো বন্ধুর লেখা পাদটিকা যা তাকে কিছুতা বাড়তি তথ্য প্রদান করে যা ওই নির্দষ্ট পাতায় যা আছে সেই সমন্ধে। খবরের কাগজ পাঠ করা কখনই সেকেলে হয়ে যাবে না। (হাসি) যে ঘটনা টি আপনি পড়ছেন তা নিয়ে আপনি পেতে পারেন ভিডিও টীকা আপনি পেতে পারেন সর্বশেষ খেলার স্কোর, ইত্যাদি। এইটা বেশ বির্তকিত একটা বেপার। (হাসি) আপনি যখন TED এ কারো সাথে ভাব বিনিময় করেন, আপনি হয়তো কিছু শব্দ মালা দেখতে পারেন যে শব্দগুলো ওই ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত তাদের ব্লগ অথবা ব্যক্তিগত ওয়েব সাইট এ। এই ক্ষেতে এই ছাত্র ক্যামেরা ইত্যাদি সম্পর্কে আগ্রহী বিমানবন্দর যাবার পথে, আপনি আপনার বোর্ডিং পাসটি হাতে নিলে, এটা বলে দিতে সক্ষম যে আপনার ভ্রমন বিলম্বিত হয়েছে, অথবা গেট নম্বর পরিবর্তন হয়েছে, ইত্যাদি। এবং, যদি আপনার বর্তমান সময় জানার প্রয়োজন পড়ে এটা একটা ঘড়ি আঁকার মতই সহজ-- (হাসি) (করতালি) আপনার হাতে। তো, আমরা এখন পর্যন্ত এত দূর আসতে সমর্থ হয়েছি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে যা আমাদের দেবে অবাধ এবং অনায়াস সম্পুরক তথ্য প্রপ্তির অধিকার আমরা যা কিছুর মুখোমুখি হই তার সম্পর্কে। আমার ছাত্র প্রনব, যে সত্যি এর পেছনের মূল প্রতিভা, যা আমি আগেই বলেছি। (করতালি) অনেক বেশি করতালি তার প্রাপ্য। কারন আমার মনে হয়, সত্যই গত তিন মাসে সে খুব একটা ঘুমাবার সুযোগ পায়নি। এবং তার প্রেমিকাও সম্ভবত খুব একটা খুশি নয় তাকে নিয়ে। কিন্তু এটা এখন ও সম্পুর্ন নয়, অনেকটাই প্রক্রিয়াধিন কে জানে, আরো দশ বছরে হয়ত আমরা চুড়ান্ত ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সম্পন্ন বুদ্ধিমত্তা পেয়ে যাব। ধন্যবাদ। (করতালি) আমি এই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে ডারউইনের উপর বক্তৃতা করি, এবং সচরাচর যা নিয়ে আমি আলোচনা করি তা হল ডারউইনের এক আশ্চর্যজনক যুক্তি-বিপর্যাস। ওই শিরোনামটি, ওই বাক্যটি, আমি নিয়েছি একজন সমালোচক, একজন প্রাচীন সমালোচকের থেকে; এবং এই পরিচ্ছেদটি আমার বিশেষ প্রিয়, যা আমি আপনাদের পড়ে শোনাতে চাই। এই যে তত্ত্বটি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়, তাতে সম্পূর্ণ অজ্ঞতাই হচ্ছে মূল নির্মাতা, তাই সমগ্র ব্যবস্থাটির মূল তত্ত্ব হিসাবে আমরা ঘোষণা করতে পারি, যে একটি নিখুঁত এবং সুন্দর যন্ত্র তৈরি করতে সেটি কী ভাবে তৈরি করতে হয় তা জানার প্রয়োজন নেই। খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, এই বক্তব্যটিই বোঝাচ্ছে ওই তত্ত্বের মূল বক্তব্যটি এবং অল্প কথায় প্রকাশ করছে ডারউইনের সামগ্রিক বক্তব্যকেও; যিনি, যুক্তির এক আশ্চর্যজনক বিপর্যাসের দ্বারা, মনে করেন যে সম্পূর্ণ অজ্ঞতা আসলে যথার্থই যোগ্য সৃষ্টির দক্ষতার পিছনে কারণ হিসাবে সম্পূর্ণ জ্ঞান-এর স্থান নেওয়ার জন্য। ঠিক। ঠিক। আর কী আশ্চর্য বিপর্যাস। একটি সৃষ্টিতত্ত্ববাদী প্রচারপত্রে এই দারুণ অংশটি ছিল: পরীক্ষা নম্বর দুই: আপনি কি এমন কোনো বাড়ির কথা জানেন যার কোনো স্থপতি নেই? হ্যাঁ / না। আপনি কি এমন কোনো ছবির কথা জানেন যার কোনো আঁকিয়ে নেই? হ্যাঁ / না। আপনি কি এমন কোনো গাড়ির কথা জানেন যার কোনো নির্মাতা নেই? হ্যাঁ / না। যদি উপরের কোনো প্রশ্নে "হ্যাঁ" উত্তর দিয়ে থাকেন, তবে ব্যাখ্যা করুন। আ-হা! এটা সত্যিই এক আশ্চর্যজনক যুক্তি-বিপর্যাস। আপনি ভাববেন, এটা যুক্তিযুক্তই বটে যে সৃষ্টির জন্য একজন বুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তা প্রয়োজন। কিন্তু ডারউইন দেখিয়েছেন যে তা নেহাতই ভুল। আজকে অবশ্য আমি ডারউইনের অন্য চমকপ্রদ বিপর্যাসটি নিয়ে বলব, যেটিও প্রথমে একই রকম আশ্চর্যজনক মনে হয়, এবং প্রায় একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। এটা ভাবা যৌক্তিক যে আমরা চকোলেট কেক খেতে ভালোবাসি কারণ তা মিষ্টি। পুরুষেরা এরকম নারীর প্রতি আকৃষ্ট হন, কারণ তাঁরা সেক্সি। আমরা শিশুদের পছন্দ করি কারণ তারা সুন্দর। আর অবশ্যই, আমরা কৌতুক শুনে হাসি কারণ সেগুলো মজাদার। কিন্তু এগুলো সবই উলটো। আসলেই। এবং ডারউইন আমাদের দেখিয়েছেন যে তা কেন। মিষ্টি দিয়েই শুরু করি। আমাদের মিষ্টি-প্রীতি আসলে একরকম বিবর্তিত শর্করা-নির্ণায়ক, কারণ শর্করায় অনেক খাদ্যশক্তি আছে, এবং তাই আমাদের মস্তিস্ক তা পছন্দ করতে শিখেছে, স্থুল ভাবে বলতে গেলে, এই করণেই আমরা মিষ্টি ভালোবাসি। মধু খেতে মিষ্টি কারণ আমরা তা পছন্দ করি, এমন নয় যে "আমরা মধু খেতে পছন্দ করি কারণ তা মিষ্টি।" মধুর 'স্বকীয় মিষ্টত্ব' বলে কিছু নেই। গ্লুকোজ অণু-দের দিকে অনন্তকাল ধরে চেয়ে থাকলেও আপনি বুঝতে পারবেন না যে তাদের স্বাদ মিষ্টি লাগে কেন। এরা মিষ্টি কেন, তা বুঝতে গেলে আপনাকে আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরে তাকাতে হবে। তাই, আপনি যদি ভাবেন যে প্রথমে মিষ্টত্ব বলে কিছু ছিল, আর আমরা বিবর্তিত হয়েছি সেই মিষ্টত্ব-কে পছন্দ করার জন্য, তাহলে আপনি উলটো ভাবছেন; এরকম ধারণা ভুল। এটা ঘটেছে ঠিক বিপরীত ভাবে। আমাদের মস্তিষ্কের বিবর্তনের সাথে সাথে মিষ্টত্বের উদ্ভব হয়েছে। এবং এই তরুণীদেরও কোনো 'অন্তর্নিহিত আবেদন' নেই। এবং এই ব্যপারটা ভালোই যে এমন কিছু নেই, কারণ যদি থাকত, তাহলে প্রকৃতির বড় একটা সমস্যা হত: শিম্পাঞ্জি'দের দিয়ে কী করে প্রজনন করানো যাবে? এখন আপনি ভাবতে পারেন, আচ্ছা, একটা উপায় আছে: দৃষ্টিবিভ্রম। হ্যাঁ, সেটা একটা উপায় বটে, তবে তার চেয়ে সহজতর একটা পথ আছে। তাদের মস্তিষ্ককে এমনভাবে সাজানো, যে তারা ওই চেহারাকেই পছন্দ করে, এবং তারা তাই-ই করে। ব্যাস, এইটুকুতেই হয়। ষাট লাখ বছর ধরে, আমরা আর শিম্পাঞ্জিরা আলাদা পথে বিবর্তিত হয়েছি। অদ্ভুতভাবে, আমাদের শরীর লোমহীন হয়েছে; কিন্তু তাদের হয় নি, যে কারণেই হোক। যদি আমরা তেমন না হতাম, তাহলে হয়ত এমন-ই সবচেয়ে সেক্সি বলে গণ্য হত। আমাদের মিষ্টি-প্রীতি হচ্ছে উচ্চ-শক্তি-প্রদায়ী খাদ্যের প্রতি বিবর্তন-সৃষ্ট স্বভাবগত আকর্ষণ। তা চকোলেট কেকের জন্য পরিকল্পিত ছিল না। চকোলেট কেক একপ্রকার অতিপ্রাকৃত উদ্দীপক। এই শব্দটির স্রষ্টা নিকো টিনবার্গেন, যিনি গাল-দের উপর তাঁর বিখ্যাত পরীক্ষাটি করেছিলেন, যেখানে তিনি দেখেছিলেন, গাল-দের ঠোঁটের উপর ওই কমলা বিন্দুটি -- তিনি যদি বিন্দুটিকে আরো বড় একটা কমলা দাগ বানিয়ে দেন তাহলে গাল-এর ছানারা সেটায় আরো জোরে ঠোকরাতে থাকে। এটা তাদের জন্য এক অতি-উদ্দীপক ছিল, এবং সেটা তারা খুবই পছন্দ করত। আমরা দেখি, এই যেমন ধরুন, চকোলেট কেকের ক্ষেত্রেও যে সেটা একটা অতিপ্রাকৃত উদ্দীপক, আমাদের মনের জন্য। এবং অতিপ্রাকৃত উদ্দীপক অজস্র আছে, চকোলেট কেক তার মধ্যে একটা। সেক্সি-ভাবের জন্যও অনেক অতিপ্রাকৃত উদ্দীপক আছে। এমন কি সুন্দর ভাবের জন্যও অতিপ্রাকৃত উদ্দীপক আছে। একটা ভালো উদাহরণ দিই। এটা দরকারি যে আমরা শিশুদের ভালোবাসি, এবং আমাদের তাদের প্রতি বিতৃষ্ণা না জন্মায়, এই ধরুন, নোংরা ডায়াপারের জন্য। তাই শিশুদের দরকার আমাদের মনোযোগ এবং যত্ন আকর্ষণ করা, এবং বাস্তবিক তারা তাই করে। ও, ভাল কথা, এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মায়েরা তাদের নিজেদের শিশুর নোংরা ডায়াপারের গন্ধই পছন্দ করেন। অতএব প্রকৃতি বহু স্তরে তার প্রভাব রাখে। কিন্তু যদি, শিশুরা যেমন দেখতে তেমন না হত, তারা যদি এইরকম দেখতে হত, তাহলে এমন চেহারাই আমাদের স্নেহাষ্পদ বলে মনে হত, আমরা এমনই দেখতাম -- আমরা এমনই ভাবতাম, যে ওহ ঈশ্বর, আমি একেই বুকে জড়িয়ে ধরতে চাই। এই হল সেই আশ্চর্যজনক বিপর্যাস। আচ্ছা, অবশেষে, মজা'র বিষয়ে। আমার উত্তর হল, এ-ও ঠিক ওই একই ঘটনা, ঠিক একই ঘটনা। এইটা কঠিনতর, কারণ এর ব্যাপারটা ঠিক প্রকট নয়। তাই আমি এটাকে শেষে আলোচনা করার জন্য রেখে দিই। এবং এটার সম্বন্ধে আমি খুব বেশি কিছু আলোচনা করতে পারব না। কিন্তু আপনাকে বিবর্তনের দৃষ্টিতে দেখতে হবে, আপনাকে ভাবতে হবে, কোন কঠিন কাজটা যেটা করা প্রয়োজন -- যেটা জটিল কাজ, কাউকে-না-কাউকে করতে হবে --- তাই এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যে আমরা একটা শক্তিশালী, স্বকীয় পুরষ্কার পাই, যদি আমরা সফল হই। এবার আমরা, আমি ও আমার সহকর্মীরা, মনে হয়, একটা উত্তরে পোঁছতে পেরেছি। এটা একটা স্নায়বিক ব্যবস্থা, যা গড়ে উঠেছে আমাদের মস্তিষ্ককে পুরষ্কৃত করবার জন্য, একটা ক্লান্তিকর একঘেয়ে কাজ করার পর। এই চিন্তাধারার জন্য আমাদের স্লোগান হল এই যে এটা ত্রুটি সংশোধনের আনন্দ। বিস্তারিত আলোচনা করার সময় নেই, তবে এটুকু বলব যে কেবল কয়েক ধরনের সংশোধনের কাজই কিন্তু ওই পুরষ্কার পায়। এবং আমরা যা করছি, তা হল হাস্যরসকে স্নায়ু-বিজ্ঞানের তদন্তে ব্যবহার করা, মজা'কে অন/অফ করে, একটা কৌতুককে পরিবর্তন করে করে -- না, এখন এটা মজার লাগছে না... ওহ, এখন লাগছে... আরেকটু মজা বাড়িয়ে দেখি... না, এখন আর মজার নেই... এই ভাবে, আমরা আসলে কিছু শিখতে পারি আমাদের মস্তিষ্কের গঠন সম্পর্কে, তার প্রক্রিয়াগত গঠন সম্পর্কে। ম্যাথু হার্লি এর প্রধান লেখক। আমরা এটাকে 'হার্লি মডেল' নাম দিয়েছি। তিনি একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী, রেজিনাল্ড অ্যাডামস একজন মনস্ত্বত্ত্ববিদ, আর আছি আমি, আমরা একসাথে এই তত্ত্বগুলিকে একটা বইয়ের রূপ দিচ্ছি। আপনাদের অনেক ধনবাদ। আমি দারিদ্র্য বিষয়ে ২০ বছরেরও বেশী কাজ করছি, তাই এটা বিদ্রূপাত্মক যে যেই সমস্যা এবং যেই প্রশ্নের সঙ্গে আমি অধিকাংশ সময় মুখোমুখি হই তা হল দারিদ্র্যকে আসলে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এর অর্থ কি? প্রায়ই, আমরা ডলারের সংজ্ঞায় চিন্তা করি -- যারা দিনে দুই বা তিন ডলারের কম আয় করে। কিন্তু তবুও দারিদ্র্যের জটিল প্রক্রিয়ায় আয়কে শুধুমাত্র একটি চলক হিসাবে দেখা উচিত। কারণ আসলে এই পরিস্থিতি পছন্দ এবং স্বাধীনতার অভাবের ব্যাপার। এবং আমার একটি অভিজ্ঞতা আরো স্পষ্ট করে দিয়েছে আমার এই জ্ঞানকে। এটা কেনিয়ায় ঘটেছিল, এবং আমি আপনাদেরকে এ বিষয়ে বলতে চাই। আমি আমার বান্ধবী সুসান মেইসিলাসের সাথে ছিলাম, যিনি একজন ফটোগ্রাফার, মাথারে ভ্যালি বস্তিতে। এখন, মাথারে ভ্যালি আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন বস্তি। এটা নাইরোবি থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে অবস্থিত, এবং এটি এক মাইল লম্বা এবং প্রায় এক মাইল চওড়া, যেখানে পাঁচ লক্ষেরও বেশী মানুষ অতি ক্ষুদ্র টিনের কুঁড়েঘরগুলোতে ঠাসাঠাসি করে বসবাস করে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম, ভাড়াটে হিসাবে, প্রায়ই একটা রুমে আট থেকে দশ জন। এবং এটা পতিতাবৃত্তি, সহিংসতার, মাদকতার জন্য কুখ্যাত: বেড়ে ওঠার জন্য কঠিন এক জায়গা। এবং যখন আমরা সংকীর্ণ গলিগুলোর ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম, এটি রীতিমত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ছোট বাড়িগুলোর পাশ ঘেঁষে.যাওয়া নর্দমার ময়লা জল এবং আবর্জনায় পা না দেওয়া। কিন্তু একই সময়ে এটি অসম্ভব ছিল মানুষের প্রাণবন্ততা না দেখা, সেখানে বসবাসকারীদের আকাঙ্ক্ষা এবং উচ্চাশা: মহিলারা তাদের শিশুদের গোসল করাচ্ছেন, তাদের কাপড় ধুয়ে, সেগুলো বাইরে ঝুলিয়ে শুকাচ্ছেন। আমার এক মহিলার সাথে পরিচয় হয়, মামা রোজ, যিনি ৩২ বছর ধরে একটি সামান্য টিনের কুঁড়েঘর ভাড়া করছেন, যেখানে তিনি তার সাত সন্তানদের নিয়ে বসবস করেন। একটি জোড়া বিছানায় চারজন ঘুমায়, এবং মাটি এবং লিনোলিয়ামের মেঝের উপর তিনজন। এবং তিনি তাদের স্কুলে পাঠান কিয়স্ক থেকে জল বিক্রি্র টাকায়, এবং ভেতরের ছোট দোকান থেকে সাবান এবং রুটি বিক্রি করে। সেদিন ছিল শপথ পাঠের পরের দিন, এবং আমাকে স্মরণ করিয়ে দিল মাথারে কিভাবে পৃথিবীর সাথে এখনও সংযুক্ত। এবং আমি দেখলাম রাস্তার কোণে ছেলেমেয়েরা এবং তারা বললো "ওবামা, তিনি তো আমাদের ভাই!" এবং আমি বললাম "ওবামা আমার ভাই, তাহলে তোমরাও আমার ভাই।'' এবং তারা বিভ্রান্ত হয়ে তাকালো এবং তারপর বললো, ''হাই ফাইভ!'' এবং এখানেই আমার জেইনের সাথে পরিচয় হয়। আমি তার মুখে উদারতা এবং নম্রতা দেখে অবিলম্বে মুগ্ধ হলাম। এবং আমি তাকে তার গল্প বলতে বললাম। সে আমাকে তার স্বপ্নের কথা বলতে শুরু করলো। সে বললো, " দুটো ছিল। আমার প্রথম স্বপ্ন ছিল একজন ডাক্তার হওয়ার, এবং দ্বিতীয়টি ছিল একজন ভাল মানুষকে বিয়ে করার যে আমার এবং আমার পরিবারের সাথে থাকবে, কারণ আমার মা ছিলেন একজন একক মা, এবং স্কুলের ফিস দেওয়ার সামর্থ্য তার ছিল না। তাই আমার প্রথম স্বপ্ন পরিত্যাগ করতে হল এবং আমি দ্বিতীয়টির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম। " তার ১৮ বছর বয়সে বিয়ে হল, তার পরপরই সে একটি শিশুর জন্ম দিল। এবং যখন সে ২০ এ পরিণত হল, সে দ্বিতীয়বারের মত গর্ভবতী হল, তার মা মারা যায় এবং তাঁর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায় - অন্য মহিলাকে বিয়ে করে। তাই সে আবার মাথারেতে চলে আসলো, কোন আয়, কোন দক্ষতা, কোন টাকা ছাড়া। এবং পরিশেষে সে পতিতাবৃত্তিতে যুক্ত হলো। এটি আমরা প্রায়ই যেভাবে মনে করি সেভাবে হয় না। সে রাত্রে প্রায় ২০জন মেয়েদের সাথে শহরে যেত, কাজের খোঁজে, এবং কখনও কয়েক পয়সা সাথে নিয়ে আসতো, মাঝে মাঝে খালি হাতে। এবং সে বললো, "জানেন, দারিদ্র্য খারাপ ছিল না। খারাপ ছিল অপমান এবং বিমূঢ়তা। " ২০০১ সালে তার জীবন বদলে গেল। তার একজন বান্ধবী ছিল যে জামী বোরা নামের একটি সংস্থা সম্পর্কে শুনেছিল যা মানুষকে ঋণদান করবে, যত গরীবই হোক না কেন, যতক্ষণ আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ সঞ্চয় জমা দেবেন। তাই সে এক বছরে ৫০ ডলার সঞ্চয় করলো, এবং ঋণ গ্রহণ করতে শুরু করলো এবং সময়ের সাথে সাথে একটি সেলাই মেশিন কিনতে সক্ষম.হল। সে দরজির কাজ শুরু করলো। এবং তা পরিণত হল তার বর্তমান পেশায়, যা হল পরোক্ষ পোশাক বাজারে প্রবেশ করা, এবং প্রায় তিন ডলার এবং ২৫ সেন্টের বিনিময়ে সে একটি পুরানো বল গাউন ক্রয় করে। সেগুলো আপনার দেওয়া কিছুও হতে পারে। এবং সে ঝালর এবং ফিতা দিয়ে সেগুলোর নবরূপ দান করে এবং এই বাহারি কাপড়্গুলো মহিলাদের কাছে বিক্রি করে তাদের মেয়েদের সুইট ১৬ বা প্রথম হোলি কমিউনীয়নের জন্য -- জীবনে সেই মুহুর্তগুলোর জন্য যা মানুষ উদযাপন করতে চায় সকল অর্থনৈতিক স্তরের মানুষ। এবং সে সত্যিই ভাল ব্যবসা করে। আসলে, আমি তাকে লক্ষ্য করছিলাম রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ফেরি করার সময়। এবং কিছু বুঝে উঠার আগেই, তার চারপাশে মহিলারা ভিড় করলো, এসব জামাকাপড় কেনার জন্য। এবং আমি ভাবছিলাম, তার জামাকাপড় বিক্রয় পর্যবেক্ষণ করতে করতে, এবং এছাড়াও যেই গয়না সে তৈরি করে, যে এখন জেইন দিনে চার ডলারের বেশী আয় করে। এবং বহু সংজ্ঞা দ্বারাই সে আর দরিদ্র নয়। কিন্তু সে এখনও মাথারে ভ্যালিতে বসবাস করে। এবং তাই সে সেখান থেকে সরে আসতে পারছে না। সে সব নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে বসবাস করছে, এবং বাস্তবিকই, জানুয়ারিতে, জাতিগত দাঙ্গার সময়, তাকে তার বাসা থেকে তাড়ানো হয়েছিল এবং একটি নতুন খুপরি খুঁজতে হয়েছিল যেখানে তাকে বসবাস করতে হবে। 'জামী বোরা' এটা বোঝে যে যখন আমরা দারিদ্র্য সম্পর্কে কথা বলছি, আমাদের সকল অর্থনৈতিক স্তরের মানুষের দিকে তাকাতে হবে। এবং তাই এ্যাকুমেন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের থেকে সহিষ্ণু পুঁজি, ঋণ এবং বিনিয়োগ নিয়ে যা তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী হবে, তারা কম খরচে একটি হাউজিং উন্নয়ন নির্মান করলো, নাইরোবির কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় এক ঘন্টা দূরত্বে। এবং তারা এটি পরিকল্পনা করলো জেইনের মত ক্রেতাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতার উপর জোর দিয়ে। জেইনকে ১০ শতাংশ বন্ধকী দিতে হবে -- সর্বমোট মূল্যের, বা সঞ্চয়ের ৪০০ ডলার। এবং তারপর তারা তার বন্ধকী মিলিয়ে দেখে তার সামান্য কুঁড়েঘরের ভাড়ার সাথে। সামনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, সে হতে যাচ্ছে এই আবাসন উন্নয়নে বসবাস করতে যাওয়া প্রথম ২০০ পরিবারের একজন। যখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তার কিছু ভয় লাগে কি না, অথবা সে মাথারে থেকে কিছুর অনুপস্থিতি অনুভব কিনা, সে বললো, "আমি কি ভয় করবো যা ইতিমধ্যে আমি মুখোমুখি হই নি? আমি এইচআইভি পজিটিভ. আমি সব কিছুর সঙ্গেই মোকাবিলা করেছি।'' এবং সে বললো, "আমি কিসের অভাব অনুভব করব? আপনার কি মনে হয় আমি সহিংসতা বা মাদকের অভাব বোধ করব? গোপনীয়তার অভাব? নাকি চিন্তা করা আমার শিশুরা বাড়ি ফিরবে কি না দিনের শেষে?'' সে বললো "যদি আপনি আমাকে ১০ মিনিট সময় দেন আমার ব্যাগ গোছানো হয়ে যাবে। " আমি বললাম, "তাহলে তোমার স্বপ্নের কি হবে?" এবং সে বললো, "হ্যাঁ, জানেন, আমি ছোটবেলায় যা ভাবতাম আমার স্বপ্ন কিন্তু ঠিক তেমন আর নেই। কিন্তু যদি আমি এটা নিয়ে চিন্তা করি, আমি একজন স্বামী চেয়েছিলাম, তবে আমি সত্যিই যা চেয়েছিলাম তা হল একটি স্নেহশীল পরিবার এবং আমি আমার ছেলেমেয়েদের খুব ভালবাসি, এবং তারাও আমাকে ভালবাসে।'' সে বললো, "আমি মনে করেছিলাম আমি একজন ডাক্তার হতে চাই, তবে আমি যা আসলে চেয়েছিলাম তা হল এমন একজন হতে যে পরিসেবা এবং আরোগ্য এবং নিরাময় করে। এবং আমি তাই আমার যা কিছু আছে তা নিয়ে সুখী, যে সপ্তাহে দুই দিন আমি এইচআইভি রোগীদের পরামর্শ দেই। এবং আমি তাদের বলি, 'আমার দিকে তাকাও। তুমি মৃত নয়। তুমিও এখনো জীবিত। এবং যদি বেঁচে থা্কো তোমাকে কাজ করে যেতে হবে। '' এবং সে বললো, "আমি একজন ডাক্তার নই যে বড়ি বিতরণ করে। কিন্তু হয়তো এই আমি, আমি আরো ভালো কিছু দিতে পারি কারণ আমি তাদের আশা দেই। " এবং এই অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে, যেখানে আমরা নিজেদের ভয়ে গুটিয়ে নিচ্ছি আমি মনে করি সেখানে আমাদের উচিত জেইনকে অনুকরণ করে হাত বাড়ানো, চিনতে পারা যে দরিদ্র হওয়ার মানে সাধারণ হওয়া নয়। কারণ যখন ব্যবস্থা ভেঙে যায়, যেমন আমরা বিশ্বজুড়ে দেখতে পারছি, এটা আবিষ্কার এবং উদ্ভাবনের জন্য একটি সুযোগ। এটা একটি সুযোগ একটি সত্যিকার বিশ্ব গড়ে তোলার যেখানে আমরা পরিষেবা এবং পণ্য সরবরাহ করতে পারব সব মানুষের জন্য, যাতে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে এবং পছন্দ করতে পারেন। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি এখানেই মর্যাদার শুরু। আমরা বিশ্বের জেইনদের কাছে ঋণী। এবং ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ, আমরা আমাদের নিজেদের কাছে এ ব্যাপারে দায়বধব্। ধন্যবাদ। (তালি) যদি আপনি আজ এখানে থাকেন-এবং আপনি থাকায় আমি খুবই খুশি - আপনারা নতুন নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন সম্বন্ধে সবাই নিশ্চয় শুনেছেন কিভাবে আমাদের রক্ষা করবে। যাইহোক, যখন আমরা টিইডিতে ছিলাম না, তখন প্রায়ই বলা হতো যে একটি বাস্তব নিরবচ্ছিন্নতা নীতির কার্যক্রম শুধুমাত্র সম্ভব নয়, নিউইয়র্ক শহরের মতো একটি বড় , নাগরিক অঞ্চলে। এবং এর কারণ হল বেশীরভাগ জনগণেরই মতামত দেওয়ার ক্ষমতা আছে, সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই, তারা সত্যিই মনে করেন না যে তারা বিপদের মধ্যে আছেন। যে কারণে আজ আমি এখানে এসেছি, তার একটি কারণ হল একটি কুকুর: ১৯৯৮ সালে আমি একটি পরিত্যক্ত কুকুরের বাচ্চাকে ফিরে আসতে দেখেছিলাম। আমি যেরকম প্রত্যাশা করেছিলাম সে তার থেকে বেশ বড় কুকুর হয়েছিল। যখন সে আমার জীবনে এসেছিল, তখন আমরা নদীর পূর্বভাগের সন্নিহিত অঞ্চলে পরিকল্পিত বিশাল আবর্জনা সুযোগসুবিধার সম্পর্কিত বিষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলাম, এই ঘটনাটি সত্ত্বেও যে নিউইয়র্ক শহরের ছোট অংশ ইতিমধ্যেই সমস্ত শহরের ৪০ শতাংশের বাণিজ্যিক আবর্জনার মোকাবিলা করছে। একটি পয়ঃনিষ্কাশন প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট, একটি পয়ঃনিষ্কাশন আবর্জনার প্লান্ট, চারটি বিদ্যুত উত্পাদনকারী প্লান্ট, পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় খাবার বন্টন কেন্দ্র, এরকম অন্যান্য কারখানা যেগুলিতে প্রতি সপ্তাহে ৬০০০০ হাজারের বেশী ডিজেল ট্রাক আসাযাওয়া করে। শহরের মধ্যে এই জায়গাটিতে উদ্যান ও মানুষের অনুপাত সবচেয়ে কম। সেইজন্য উদ্যান বিভাগ নদীর সন্নিকটের পরিকল্পনার উন্নতি করার সহায়তার জন্য ১০০০০ ডলার বীজের অনুদানের জন্য আমাকে যোগাযোগ করেছিল। আমি ভেবেছিলাম তারা হয়তো বাস্তবিকভাবেই কিছু ভাল ভেবেছেন, কিন্তু সেটা বেশ সরল ব্যাপার ছিল। আমি আজীবন ঐ জায়গায় ছিলাম, এবং আপনি ঐ নদীতে পৌঁছাতে পারেন নি তার কারণ সুযোগসুবিধাগুলি যেগুলি সম্পর্কে আমি আগেই বলেছি। তারপর, একদিন সকালে যখন আমার কুকুরের সঙ্গে জগিং করছিলাম, সে আমাকে টেনে ধরেছিল আবর্জনা স্তূপের দিকে, যেটি, আমার মনে হয় অন্যতম একটি বেআইনি আবর্জনার স্তূপ ছিল। সেখানে আবর্জনা ও অন্যান্য জঞ্জালের স্তূপ ছিল , যেগুলি সম্বন্ধে আমি এখানে উল্লেখ করব না কিন্তু সে আমাকে টানছিল -এবং অবাক কান্ড, এগুলির শেষে নদী ছিল। আমি জানতাম যে এই ভুলে যাওয়া ছোট রাস্তা - শেষ হয়ে যায়, কুকুরের মত পরিত্যক্ত যেটি আমাকে সেখানে নিয়ে যায়,সেটি ছিল অমূল্য এবং আমি জানতাম এর ফলে নতুন দক্ষিণ ব্রঙ্কসে গর্বের সঙ্গে সমাজের নব জীবনসঞ্চার শুরু হবে। এবং আমার নতুন কুকুরের মতো, আমি যা কল্পনা করেছিলাম তার থেকেও এটা একটি বড় ধারণা ছিল। আমরা এই ব্যাপারে অনেক সমর্থন পেয়েছিলাম। এবং হান্ট পয়েন্ট রিভারসাইড পার্কটি প্রথম নদী সন্নিহিত পার্ক যেটা সাউথ ব্রঙ্স-এ ৬০ বছরের বেশী আগে ছিল। আমাদের প্রভাব খাটানোর ফলে ১০,০০০ মার্কিন ডলারের ৩০০ গুণ বেশী বীজের অনুদান একটি তিন মিলিয়ন ডলারে পার্কে দেওয়া হয়েছিল। এবং,আসন্ন পাতা ঝরার সময়ে, আমি সত্যি - আমার প্রেমীর সঙ্গে বিয়ের শপথ বিনিময় করতে যাচ্ছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। তিনি সেই লোক যিনি সবসময় আমাকে এখানে পাঠিয়ে দেন। হাস্যরোল, হাততালি কিন্তু আমাদের মধ্যে যারা পরিবেশগত বিচার সংক্রান্ত কমিউনিটিতে বাস করি তারা কয়লাখনিতে ক্যানারী পাখির মত। আমরা এখনই সমস্যা অনুভব করি, এবং এই সমস্যা কিছুক্ষণ থাকে। পরিবেশগত বিচার, আপনাদের মধ্যে তাদের জন্য, যারা এই শব্দটির সঙ্গে হয়তো পরিচিত নন, এর অর্থ এইরকম হয়: কোন কমিউনিটিকেই অন্য কোনকিছুর থেকে বেশী পরিবেশগত বোঝা এবং কম পরিবেশগত সুবিধাতে ভারাক্রান্ত করা উচিত নয়। দুভার্গ্যজনকভাবে, জাতি এবং শ্রেণী হল দুটি চুড়ান্ত বিশ্বাসযোগ্য সূচক যেমন পার্ক এবং গাছে কেউ ভাল জিনিস পেতে পারে এবং কেই বিদ্যুত শিল্প এবং বর্জ্য নিষ্কাশনের মত বাজে জিনিষও পেতে পারে। আমেরিকার কালো মানুষ হিসাবে, আমি এমন একটা জায়গায় থাকি, যেখানে বায়ু দূষণের ফলে আমার স্বাস্থ্যের প্রতি ঝুঁকি একজন সাদা মানুষের তুলনায় দ্বিগুণ। আমি একটি বিদ্যুত শিল্প বা একটি রাসায়নিক শিল্প সুবিধা থেকে হাঁটা দূরত্বে পাঁচগুণ কাছে থাকি। এই জায়গা ব্যবহারের সিদ্ধান্তের ফলে যে চরম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার ফলস্বরূপ স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং অ্যাজমার মত রোগ দেখা দিয়েছে কোন ব্যক্তি কেন তাদের বাড়ী ছেড়ে এই বিষাক্ত জায়গায় হাঁটতে আসবে? আমাদের ২৭ শতাংশ স্থূলতার হার খুবই উচ্চ মাত্রার, এমনকি এই দেশের জন্যেও, এবং এর সঙ্গে আসছে ডায়াবেটিস। সাউথ ব্রঙ্কস-এর প্রতি চারটি বাচ্চার মধ্যে একটির অ্যাজমা আছে। আমাদের এখানে অ্যাজমার ফলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার, জাতীয় গড়ের তুলনায় সাতগুণ বেশী। এই প্রভাবগুলি প্রত্যেকের জীবনেই পড়ছে। এবং আমরা সকলে খুব কষ্ট করে কঠিন বর্জ্য পদার্থের মূল্য দিই, দুষণের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা এবং আরও জঘন্যভাবে, আমাদের কালো যুবক একং ল্যাটিনোদের কারারুদ্ধ করার খরচ, যাদের মধ্যে অকথিত পরিমাণ অব্যবহৃত সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের বাসিন্দাদের ৫০ শতাংশ দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে। আমাদের মধ্যে ২৫ শতাংশ বেকার। নিম্ন-রোজগারের নাগরিকরা প্রায়ই প্রাথমিক চিকিত্সার জন্য আপতকালীন কেন্দ্রে যায়। এর ফলে করদাতাদের বেশ মূল্য দিতে হয় এবং কোন সুবিধা হয় না। গরিব লোকেরা শুধু গরিবই নয়, তারা এখনও অস্বাস্থ্যকর। সৌভাগ্যবশতঃ , আমার মত অনেক লোক আছে, যারা এর সমাধান করার চেষ্টা করছে যে তারা সাময়িকভাবে কম-রোজগেরে কালো কমিউনিটির জীবন নিয়ে সমঝোতা করবে না, এবং দীর্ঘকাল পরে আমাদের ধ্বংস করবে না। আমরা কেউই সেটা চাইনা, এবং আমাদের সকলের সাধারণভাবে সেটা আছে। কাজেই এ ছাড়া আমাদের সকলের আর কি আছে? হ্যাঁ, সবার আগে, আমরা সকলেই অসাধারণ সুন্দর- হাসিরোল- হাইস্কুল, কলেজ, পাশ করেছি, স্নাতকোত্তর ডিগ্রী পেয়েছি বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করেছি, আমাদের কিশোর বয়সে কারো বাচ্চা হয় নি, অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম, কখনও কারারূদ্ধ হই নি, ঠিক আছে। ভাল। হাস্যরোল কিন্তু, কালো মহিলা হওয়া ছাড়াও, আমি অন্যান্য ব্যাপারে আপনাদের বেশীর ভাগের থেকেই আলাদা। আমি আমার প্রতিবেশী এলাকায় প্রায় অর্ধেক বাড়ি পুড়ে যেতে দেখেছি। আমার বড় ভাই লেন্নী ভিয়েতনামের যুদ্ধে লড়াই করেছিল, আমাদের বাড়ী থেকে কিছু ব্লককে গুলি করে নামাতে হবে। ভগবান যিশু, আমি রাস্তার ধারে একটি ফাটল ধরা বাড়িতে বড় হয়েছি। হ্যাঁ, আমি ঘেটোর একটি গরিব, কালো বাচ্চা। এই জিনিসগুলিই আমাকে আপনাদের থেকে আলাদা করেছে। কিন্তু যে জিনিসগুলো আমাদের মধ্যে একই আছে, আমাদের কমিউনিটির বেশীরভাগ লোকের থেকে আমাকে সেটা আলাদা করেছে, এবং আমি এই দুটি পৃথিবীর মাঝখানে আছি, এবং সঙ্গে আছে অন্যদের ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই করার জন্য আমার যথেষ্ট আন্তরিক ইচ্ছে। কাজেই, আমাদের জন্য সবকিছু এত আলাদা হয়ে গেল কিভাবে? ৪০-এর মেসের দিকে, আমার বাবা - একজন পুলম্যান কুলি, একজন ক্রীতদাসের ছেলে- সাউথ ব্রঙ্কস-এর হান্টস পয়েন্ট সেকশনে একটি বাড়ি কিনেছিলেন, এবং এর কয়েক বছর পর আমার মাকে বিয়ে করেছিলেন। সেইসময়, কমিউনিটির বেশিরভাগ লোকই ছিল সাদা, শ্রমিক-শ্রেণীর প্রতিবেশী। আমার বাবা একা ছিলেন না। এবং যেহেতু অন্যরা তাকে পছন্দ করতেন, তাদের নিজের মত আমেরিকার স্বপ্ন নিয়ে তাকে অনুসরণ করতেন, সাউথ ব্রঙ্কস-এ এবং দেশের বিভিন্ন শহরে সাদাদের পলায়ন খুব সাধারণ ব্যাপার হয়েছিল। ব্যাঙ্কগুলি রেড-লাইনিং প্রয়োগ করেছিল, যেখানে আমাদের নিয়ে শহরের নির্দিষ্ট অংশ, যে কোন ধরণের বিনিয়োগ বন্ধ বলে বিবেচিত হয়েছিল অনেক বাড়ির মালিকই বিশ্বাস করতেন যে তাদের বাড়িগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া এবং তারপর বীমার অর্থ সংগ্রহ করা ঐ অবস্থায় বিক্রী করার চেয়ে বেশী লাভজনক- মৃত বা আহত আগের কোন ভাড়াটেই টিকে থাকে না। হান্টস পয়েন্ট আগে ছিল কাজের-জন্য-চল কমিউনিটি, কিন্তু এখন বাসিন্দাদের না আছে কাজ, না হেঁটে যাওয়ার জন্য বাড়ি। একটি জাতীয় হাইওয়ের নির্মাণ আমাদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে নিউ ইয়র্ক স্টেটে, রবার্ট মোসেস একটি হাইওয়ে সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ওয়েস্টচেস্টারের বিত্তবান কমিউনিটির বাসিন্দাদের কাছে ম্যানহাটানে যাওয়া আরও সহজ করা। সাউথ ব্রঙ্কস,যেটি এর মধ্যিখানে অবস্থিত, কোন সুযোগ পায় না বাসিন্দাদের বাড়িগুলি ধ্বংস করার জন্য প্রায়ই এক মাসেরও কম নোটিশ দেওয়া হয়। ৬০০,০০০ লোক বাড়িছাড়া হয়েছিল। সাধারণ প্রত্যক্ষকরণ ছিল যে সাউথ ব্রঙ্কস-এ শুধুমাত্র দালাল, ধান্দাবাজ এবং গণিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। এবং যদি আপনাকে আপনার আগেকার দিনগুলির কথা বলা হয়, কোন ভাল জিনিসই আপনাদের কমিউনিটি থেকে আসছে না,এটাই হল সবচেয়ে বাজে এবং খারাপ, কিভাবে এটি আপনার উপর প্রতিফলিত হবে না? কাজেই এখন, আমার পরিবারের সম্পত্তি অমূল্য,এটি আমাদের ঘর ছিল এবং আমাদের সমস্তকিছু ছিল, এটি বাঁচান সৌভাগ্যবশতঃ আমার জন্য, ঐ বাড়ি এবং এর মধ্যের ভালবাসা এবং এর সঙ্গে সবসময় শিক্ষকদের, মেন্টরদের, বন্ধুদের সাহায্য যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। এখন, এই গল্পটা গুরুত্বপূর্ণ কেন? কারণ পরিকল্পনার দিক থেকে, অর্থনেতিক নিম্নমানের জন্য পরিবেশগত মান নিম্ন হয়, যার ফলে সামাজিক মানও নিম্ন হয়। ১৯৬০-এ যে বিনিয়োগ বন্ধ হয়েছিল তার ফলে সমস্ত পরিবেশগত অবিচার আসতে শুরু করেছিল পুরানো আঞ্চলিকতা এবং জমি-ব্যবহারের নিয়ম এখনও এইদিনে ব্যবহৃত হচ্ছে আমার প্রতিবেশী এলাকায় দুষণের সুবিধা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। এই কারণগুলি কি বিবেচনা করা হয় যখন জমি-ব্যবহারের নিয়ম ঠিক কার হয়? এই সিদ্ধান্তগুলি কত খরচসাপেক্ষ? কে এই খরচ মেটাবে? কে লাভ করবে? স্থানীয় কমিউনিটি যা করছে, তার মধ্যে কোনকিছু কি যুক্তিযুক্ত? এটা ছিল "পরিকল্পনা" - এর মধ্যে আমাদের সবচেয়ে ভাল উদ্দেশ্য কিছু ছিল না। এরপর আমরা অনুভব করলাম যে, এখন আমাদের নিজেদের পরিকল্পনা নিজেদের করার সময় এসেছে সেই ছোট্ট পার্কটা যেটার কথা আপনাদের আগেই বলেছি, সেটা ছিল সাউথ ব্রঙ্কস-এ সবুজ বিপ্লবের প্রথম ধাপ নির্মাণ। আমি এক-এবং-সোয়া মিলিয়ন ফেডারেল পরিবহন সংক্রান্ত অনুদানের জন্য লিখেছিলাম নদীর ধারে একটি সমতল চত্বরের পাশে বাইক যাওয়ার রাস্তাসহ পরিকল্পনার ডিজাইন করার জন্য যানবাহন সংক্রান্ত নিরাপত্তা, বর্জ্য পদার্থের সঠিক নিষ্কাশন এবং অন্যান্য সুবিধা সম্বন্ধে শারীরিক উন্নতির সহায়তা জানিয়ে যে জনগনের নীতি, সেটি যদি সঠিকভাবে করা যায়, তবে কমিউনিটির জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সমঝোতা করতে হয় না। তারা শারীরিকভাবে আরও সক্রিয় হওয়ার সুযোগ দেয়, এবং সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নতিও হয় বাইকের দোকান, সরবতের দোকানের কথা চিন্তা করুন প্রথম-ধাপ প্রজেক্টের নির্মাণের জন্য আমরা ২০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছি এটা হল লাফায়েট এভিনিউ - এবং এটি পুনরায় ডিজাইন করেছেন ম্যাথিউ-নীলসেন ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্টস। একবার এই পথটা তৈরী হয়ে গেলে, এটি সাউথ ব্রঙ্কসকে যুক্ত করবে রান্ডাল আইল্যান্ড পার্কের ৪০০ একরেরও বেশী জমির সঙ্গে বর্তমানে আমরা ২৫ ফুট জলাশয় দিয়ে বিচ্ছিন্ন আছি, এই যোগসূত্রটি হলে এটা পরিবর্তিত হবে। যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশকে আমরা সমৃদ্ধ করি, এর প্রাচুর্য আমাদের আরও বেশী ফিরিয়ে দেয়। আমরা ব্রঙ্কস ইকোলজিক্যাল স্টিওয়ার্ডশীপ ট্রেনিং নামে একটি প্রজেক্ট-এর কাজ করি, যেটা বাস্তুসংস্থান পুনরূদ্ধার-এর ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান-এর ট্রেনিং দেয়, যাতে আমাদের কমিউনিটির মানুষদের এইসব ভাল-মাইনের চাকরীতে প্রতিযোগিতা করার মত ক্ষমতা থাকে। আস্তে আস্তে, আমরা এই অঞ্চলে গ্রীন কলার কাজের বীজ বুনছি- তারপর যাদের নিজেদের পরিবেশে অর্থনেতিক এবং ব্যক্তিগত উভয় ক্ষেত্রেই খুঁটি আছে শেরিডিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে হল রবার্ট মোসেসের সময়ের অব্যবহৃত একটি স্মারক, প্রতিবেশী অঞ্চলগুলো যেগুলো এর দ্বারা পৃথকীকৃত হয়েছে,তাদের কোন সুবিধা না করেই নির্মিত হয়েছ। এমন কি, খুব ভীড়ের সময়ও, এটি প্রায় অব্যবহৃতই থাকে। কমিউনিটিতে একটি বিকল্প পরিবহন পরিকল্পনা করেছিল যেটির ফলে হাইওয়েটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখন সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের একত্রিত করার সুযোগ এসেছে পুনরায় খতিয়ে দেখা কিভাবে ২৮ একর জমি পার্ক-এর জন্য আরও ভালভাবে ব্যবহার করা যায়, ব্যয় বহনযোগ্য বাড়ী এবং স্থানীয় অর্থনেতিক উন্নয়ন আমরা নিউ ইয়র্ক শহরের প্রথম সবুজ এবং ঠান্ডা ছাদও বানিয়েছিলাম আমাদের অফিসের ছাদের উপর প্রকল্পের প্রদর্শনীও করেছিলাম। ঠান্ডা ছাদগুলি হল অত্যন্ত প্রতিফলনকারী তল যেগুলি সুর্যের তাপ শোষণ করে না এবং ওগুলি ঘরবাড়ী বা বায়ূমন্ডলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। সবুজ ছাদগুলি মাটি এবং ছোট গাছের তৈরী। দুটোই পেট্রোলিয়াম জাতীয় ছাদ বানানোর সামগ্রীর বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায়। পেট্রোলিয়াম জাতীয় ছাদ-যেগুলি তাপকে শুষে নেয়, শহরে “হিট আইল্যান্ড” প্রভাবকে বাড়িয়ে তোলে এবং সূর্যের তাপে সেগুলির আয়ু কমে আসে, যেগুলি আমাদের নিঃশ্বাসের মধ্যে ঢুকে যায়। সবুজ ছাদ ৭৫ শতাংশ বৃষ্টি নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারে তাই এগুলি শহরে পাইপ লাগানোর দামী উপায় থেকে নিষ্কৃতি দেয় – যেগুলি স্বাভাবিকভাবে, প্রায়ই পরিবেশ অনুযায়ী খনি এলাকায় থাকে। এবং যেগুলি আমাদের ছোট্ট বন্ধুদের বাসস্থান প্রদান করে! তাই – (হাস্যরোল) – খুব ঠান্ডা! যাই হোক, এই প্রকল্পের প্রদর্শনী আমাদের সবুজ ছাদ সংস্থাপন ব্যবসার একটি স্প্রিংবোর্ড যেটি দক্ষিণ ব্রঙ্কসে কাজ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সক্রিয়তা নিয়ে আসবে। (হাস্যরোল)(হাততালি) আমি এটাও পছন্দ করি। যাইহোক, আমি জানি ক্রিস আমাদের বলেছে এখানে কোন কিছু আন্দোলন চলবে না, কিন্তু যেহেতু আমার প্রতি সকলেরই লক্ষ্য রয়েছে: আমাদের বিনিয়োগকারী দরকার। আন্দোলনের সমাপ্তি। অনুমতি নেওয়ার থেকে ক্ষমা চাওয়া ভাল। যাইহোক – (হাস্যরোল) (হাততালি) ঠিক আছে। ক্যাটরিনা, ক্যাটরিনার আগে, দক্ষিন ব্রঙ্কস এবং নিউ অরলিন্স-এ নবম ওয়ার্ডের মধ্যে অনেক মিল ছিল। দুটো জায়গাতেই প্রচুর গরীব লোক বসবাস করে, দুটো জায়গায়ই সাংস্কৃতিক প্রবর্তনের উপযোগী স্থানঃ হিপ-হপ এবং জ্যাজের কথা ভাবুন। দুটিতেই নদী সন্নিহিত কমিউনিটি যেখানে শিল্প এবং বাসস্থান উভয়েরই একে অপরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। ক্যাটরিনার পরবর্তী কালে, আমাদের মধ্যে এখন অনেক মিল দেখা যায়। আমাদের সবথেকে বেশী অবহেলিত এবং অপমানিত হতে হয়েছিল আসাবধানতা নিয়ামক এজেন্সী, ক্ষতিকর আঞ্চলিকতা এবং শিথিল সরকারি বাধ্যবাধকতা দ্বারা। নয় নম্বর ওয়ার্ড বা দক্ষিন ব্রঙ্কস ধ্বংস কোনভাবেই আটকানো যেত না। কিন্তু নিজেদের কি করে বাঁচাতে হয় সে বিষয়ে আমরা মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছিলাম। আমরা শহরের অশুভ প্রভাবের রাষ্ট্রীয় চিহ্নের থেকেও বেশী কিছু। বা যে সমস্যাগুলি সমাধান করতে হবে সেগুলি বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রেসিডেন্টের শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দ্বারা সমাধান করা যাবে না। এখন আমরা কি গলফ কোস্টকে দক্ষিণ ব্রঙ্কসের মতন এক বা কয়েক দশক ধরে নষ্ট হতে দিতে পারি? অথবা আমরা কি সাবলীল পদক্ষেপ নেব এবং তৃণমূল কর্মীদের কাছ থেকে ঘরোয়া ‌উত্স-এর মাধ্যমে কিছু শিখবো যারা আমাদের মত সমাজে মারিয়া হয়ে জন্ম নিয়েছে? এখন শুনুন, আমি আশা রাখি না যে কোন একক ব্যক্তি, সংস্থা অথবা সরকার এই পৃথিবীকে একটি সুন্দর জায়গায় পরিণত করতে পারবে কারন এটি সঠিক এবং নৈতিক। আজকের এই প্রদর্শনীটি কেবলমাত্র সেইসকল পরিস্থিতিগুলিই উপস্থাপন করছে যেগুলি আমি পেরিয়ে এসেছি, তার একটি ছোট্ট অংশ। আপনাদের কোন আন্দাজ নেই। কিন্তু আমি আপনাদের পরে বলবো যদি আপনারা জানতে চান। কিন্তু—আমি এটির শেষ কথা, অথবা কারও ধারণা সম্বন্ধে জানি, যেটি অবশেষে জনগণকে অনুপ্রাণিত করে। আমি " ট্রিপল বটম লাইন" সম্বন্ধে যা বলতে চেয়েছি, সেই ব্যাপারেই আমি উত্সাহী যেটিতে একটি স্থায়ী উন্নয়ন হতে পারে। উন্নয়ণ যেগুলির মাধ্যমে সকলের সুনিশ্চিত ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে: উন্নয়নকারী, সরকার এবং সমাজ যেখানে এই প্রকল্পগুলি গঠিত হয়। বর্তমানে, নিউইয়র্ক শহরে এমনটি হচ্ছে না। এবং আমরা বিভিন্ন ধরনের সমন্বিত শহুরে পরিকল্পনার ঘাটতিগুলি নিয়ে কাজ করছি। দক্ষিণ ব্রঙ্কস-এ প্রস্তাবিত বিগ-বাক্স এবং স্টেডিয়ামের উন্নতির জন্য সরকারের অনুদান আসতে পারে। কিন্তু শহুরে সংস্থাগুলির মধ্যে অপর্যাপ্ত সমন্বয়সাধন আছে যে কিভাবে ক্রমবর্ধমান গাড়ি চলাচল, দূষণ এবং কঠিন বর্জ্য-এর একত্রিত প্রভাব মোকাবিলা করবে। এবং উন্মুক্ত জায়গার উপর এর প্রভাব। এবং আঞ্চলিক অর্থনীতিতে তাদের প্রস্তাব এবং চাকরী বিকাশের দিকে তাদের কাজকর্ম এতটাই ঢিলে যে সেটি হাস্যকর। কারণ, সবচেয়ে আগের ব্যাপারটি হল যে, পৃথিবীর সবথেকে ধনী খেলার দল দুটি খুব ভাল কমিউনিটি পার্ককে ধ্বংস করে, তার পরিবর্তে রুথের দ্বারা নির্মিত বাড়িটি প্রতিস্থাপন করছে। এখন আপনাদের কাছে আমি যে পরিসংখ্যান দিয়েছিলাম তার থেকেও কম থাকবে। এবং যদিও দক্ষিন ব্রঙ্কসে ২৫ শতাংশেরও কম বসবাসকারীদের কাছে গাড়ি আছে, এই প্রকল্পটির মধ্যে হাজার খানেক নতুন গাড়ি রাখার জায়গা অর্ন্তভুক্ত আছে কিন্তু সার্বজনীন পরিবহনের ব্যাপারে উদাসীন। এখন, এই বৃহত্তম তর্ক থেকে যেটা বাদ পড়ে যাচ্ছে সেটা হল একটি ব্যয়-মুনাফার বিশ্লেষণ স্থির না করা, একটি অস্বাস্থ্যকর™ পরিবেশসংক্রান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা যুক্ত সমাজ বনাম গঠনগত, সহনীয় পরিবর্তনগুলির। আমার সংস্থা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং অন্যদের সাথে কাজ করছে এই বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করার জন্য। এখন একটা জিনিস সোজাসুজি ভাবে বুঝে নেওয়া উচিত। আমি সংস্কার বিরোধী নই। এটি আমাদের শহর, কোন জংলী জায়গা নয়। এবং আমি আমার ভিতরের পুঁজিপতিদের আঁকড়ে ধরে আছি। এবং আপনাদের সকলের মধ্যেই নিশ্চয় তাই আছে, এবং যদি না থাকে, তাহলে আপনাকে হতে হবে। তাই উন্নয়নকারীরা যে টাকা রোজগার করছে এই নিয়ে আমার কোন আক্ষেপ নেই। এমন অনেক উদাহরণ আছে এটা দেখানোর জন্য যে সহনীয়,™ সামাজিক-বন্ধুত্বপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমেও টাকা কামানো যায়। টেডস-এর দুই সহকর্মী বিল ডোনাহ্‌ এবং এমোরী লোভিন্স-- যাইহোক আমার দুই নায়ক—করে দেখিয়েছে যে আপনি আসলে সেটি করতে পারেন। আমার সেইসব বিকাশ কার্যে অসুবিধে আছে যেগুলি স্বার্থ লাভের জন্য রাজনৈতিক অরক্ষিত সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে। যা চলছে সেটি আমাদের সবার জন্য একটি লজ্জাজনক ব্যাপার। কারন যে ভবিষ্যত আমরা গড়ি সেই ভবিষ্যতের জন্য আমরা নিজেরা ই দায়ী। কিন্তু একটা জিনিষ যেটা আমি করি তা হল বেশী সম্ভাবনার জন্য নিজে নিজে স্মরণ করা যেটি অন্য শহরের বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে শেখা বিশ্বায়নের ব্যাপারে এটাই আমার বক্তব্য। বোগোটার কথাই ধরুন। গরীব, ল্যাটীন এবং বন্ধুকের হিংসা এবং ড্রাগ পাচারকারীদের মধ্যে ঘেরা দক্ষিন ব্রংক্সের বদনামের সাথে যার খুব মিল আছে। কিন্তু ১৯৯০-এর পরবর্তী কালে দিকে এই শহরটিতে এনরিক পেনালোসা নামে একটি খুব প্রভাবশালী মেয়র ছিলেন। তিনি জনসংখ্যাতত্ত্ব সম্বন্ধে দেখতেন। অল্প সংখ্যক বোগাটানোসদের কাছেই গাড়ি ছিল, কিন্তু তবু শহরের অতিরিক্ত সম্পদ এদের পরিষেবায় নিবেদিত ছিল যদি আপনি মেয়র হন, আপনি এই ব্যাপারে কিছু করতে পারেন। তার প্রশাসন পৌরসভার প্রধান রাস্তাগুলিকে পাঁচ সারির থেকে তিন সারির করে দিয়েছিল ওইসব রাস্তায় গাড়ি রাখা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল, পথচারীদের হেঁটে চলা রাস্তা চওড়া করে দিয়েছিল এবং মোটোর বাইকের জন্য রাস্তা বানিয়েছিল, জনসাধারণের জন্য বাজার বানিয়েছিল এবং সারা বিশ্বে সবচেয়ে দক্ষ বাস পরিষেবা প্রণালী বানিয়েছিল। ওনার এই চমকপ্রদ প্রচেষ্টার জন্য, ওনার উপর সন্দেহ উত্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু যেই লোকেরা দেখল যে সেইসব বিষয়গুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে যেগুলি তাদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের প্রতিফলন ঘটায়, অদ্ভুত জিনিষ হতে লাগলো। লোকেরা রাস্তায় আবর্জনা ছড়ানো বন্ধ করে দিয়েছিল। অপরাধের হার কমে গিয়েছিল। কারণ রাস্তাগুলি জনসাধারণের দ্বারা প্রাণবন্ত ছিল। তার প্রশাসন শহরের বেশ কয়েকটি সমস্যার একসাথে মোকাবিলা করেছিল এবং তাও তৃতীয়-বিশ্বের মতো অনেক কম টাকার বাজেটে আমি দুঃখিত। এই দেশে প্রতি আমাদের কোন অজুহাত নেই। কিন্তু আসল ব্যাপারটি হল যে, এই মানুষ-সবার আগে কার্যপ্রণালীর মানে এই নয় যে যেসব ব্যক্তির গাড়ি চালানোর সার্মথ্য আছে তাদেরকে উত্যক্ত করা, কিন্তু সুযোগ তৈরী করা যাতে সব বোগানটানোস বসবাসকারীরা অংশগ্রহন করতে পারে এই শহরের পুনর্জন্ম। বেশি সংখ্যক জনগনের ক্ষতি করে যে অল্পজনের উন্নয়ন করা উচিত নয় এই বিচারটিকে এখনও আমেরিকায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বোগোটার উদাহরণ এই চিন্তাশক্তিকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা আছে যদিও আপনার উপর প্রভাবশালী হওয়ার আশীর্বাদ আছে। এবং সেইজন্যই আপনারা এখানে আছেন এবং যেসব তথ্য আমরা আদানপ্রদান করি সেটির মূল্য বোঝেন। আপনার নিজের প্রভাব ব্যবহার করুন সব জায়গায় পুরোপুরি স্থায়ী পরিবর্তনের সমর্থনে। এটির ব্যাপারে টেইডে শুধু কথা না বলে। এটি একটি সর্ব-রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা যেটা আমি তৈরী করতে চাইছি এবং যেমন আপনারা সকলেই জানেন, রাজনীতি হল ব্যক্তিগত ব্যাপার। নতুন কালোকে সবুজ বানাতে আমাকে সাহায্য করুন। আরও সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করুন। এটিকে নিজের নৈশভোজের এবং পানীয়ের সময়ে কথাবার্তার অংশ বানিয়ে ফেলুন। পরিবেশ এবং আর্থিক ন্যায়ের জন্য লড়াইয়ে আমাকে সাহায্য করুন। ট্রিপল-বটম-লাইন প্রাপ্তির জন্যে বিনিয়োগকে সমর্থন করুন। নিরবচ্ছিন্নতাকে গণতান্ত্রিক করতে সবাইকে একমঞ্চে আনতে আমাকে সাহায্য করুন এবং এই ব্যাপারটির উপর জোর দেওয়া যে সম্পূর্ণ যোজনার আলোচনা যেন সব জায়গায় হয়। ভাল, আমার হাতে আরো কিছু সময় আছে! শুনুন – ঐদিন প্রাতঃরাশের পরে যখন মিঃ গোরের সাথে আমি কথা বললাম আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কিভাবে পরিবেশগত ন্যায় সংক্রান্ত সক্রিয়তাবাদী তার নতুন বাণিজ্যিক যোজনায় অর্ন্তভুক্ত হতে যাচ্ছেন। তার উত্তর ছিল একটি অনুদান অনুষ্ঠান। আমি মনে করি না যে তহবিলের ব্যপারে জিঞ্জাসা করছি না সেই ব্যাপারটা নিশ্চয় উনি বুঝতে পারেন নি। আমি ওনাকে একটি প্রস্তাব দিচ্ছিলাম।(হাততালি) যেটি আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলছিল সেটি হল যে উপর থেকে নিচে যাওয়ার ব্যাপারটি এখনও বর্তমান। এখন, আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমাদের টাকার দরকার।(হাসি) কিন্তু সিদ্ধান্ত-গ্রহন প্রক্রিয়ার সময়ে তৃণমূল দলগুলিকে মঞ্চে দরকার যে ৯০ শতাংশ শক্তি যেটা মিঃ গোরে আমাদের মনে করান যেটা আমরা প্রতিদিন ব্যয় করি নিজের শক্তি,বুদ্ধি এবং কষ্টার্জিত অভিজ্ঞতা সেটির সাথে যোগ করবেন না।(হাততালি) আমি এত দূর থেকে আপনাদের সাথে এমনি করে দেখা করতে এসেছি। আমার প্রচেষ্টা বৃথা হতে দেবেন না। একসাথে কাজ করে, আমরা খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠা সেইসব ছোট্ট দলগুলির একটি হতে পারি যাদের সত্যি করে এটা বিশ্বাস করেন যে আমরা পৃথিবীকে বদলে ফেলতে পারি আমরা এই সন্মেলনে জীবনের অনেক অনেক আলাদা বৃত্তি থেকে এসেছি কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমরা সকলে একটি প্রচন্ড শক্তিশালী জিনিষের অংশীদার আমাদের কাছে হারানোর কিছুই নেই এবং জেতার জন্য সবকিছু আছে। সিয়াও বেলোস!(হাততালি) গতবছর আমি এই স্লাইডদুটি দেখিয়েছিলাম, যে উত্তর মেরুর বরফ আচ্ছাদন মোটামুটি গত ত্রিশ লাখ বছর ধরে নিচের দিকের ৪৮ রাজে‍্যর সমান ছিল, ৪০ শতাংশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে, কিন্তু এই চিত্র আসলে ঐ সমস‍্যাটির ভয়াবহতাকে বরং খাটো করে কারন এই চিত্রে বরফের পুরুত্ব দেখানো হয়না। উত্তর মেরুর বরফ আচ্ছাদন, এক হিসাবে, দুনিয়ার জলবায়ু ব‍্যবস্থার চলমান হৃদপিন্ড। যা শীতকালে প্রসারিত হয় আর গৃষ্মকালে সংকুচিত হয়। পরের স্লাইডে আমি আপরাদেরকে দেখাব গত ২৫ বছরে যা ঘটেছে তার একটা তড়িৎচিত্র (ফাস্ট ফরওয়ার্ড) স্থায়ী বরফ দেখানো হয়েছে লাল রঙে। দেখা যাচ্ছে, এটা গাঢ নীল এর দিকে প্রসারিত হচ্ছে। যা কিনা বার্ষিক শীতকালীন বরফ। এবং যা গৃষ্মকালে সংকুচিত হয়। তথাকথিত স্থায়ী বরফ, পঁাচ বছর বা তার বেশি পুরনো, আপনি দেখতে পাচ্ছেন, প্রায় রক্তের মত শরীর থেকে ছলকে বের হচ্ছে। গত ২৫ বছরে এটি এখান থেকে, এখানে এসে দঁাড়িয়েছে। এটি একটি সমস‍্যা কারন, এই উষ্ণতা উত্তর মহাসাগর জুড়ে জমে থাকা ভূপৃষ্ঠকে গরম করে তুলছে যেখানে প্রচুর পরিমান জমাটবঁাধা কার্বন রয়েছে যখন এটা গলে, তখন, তা বিভিন্ন অনুজীবের দ্বারা মিথেন'এ পরিনত হয়। বায়ুমন্ডলের সামগ্রিক 'বৈশ্বয়ীক উষ্ণতা বৃদ্ধি' (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) দূষণের সাথে তুলনা করলে, এই পরিমাণ দ্বিগুন হতে পারে যদি আমরা ঐ প্রান্ত বিন্দু অতিক্রম করি। এরই মাঝে আলাস্কার কিছু অগভীর খালে পানি থেকে ক্রমাগত মিথেন বুদবুদ বের হচ্ছে। আলাস্কা বিশ্ববিদ‍্যালয়ের অধ‍্যাপক কেটি ওয়াল্টার গত শীতে আরেকটি দলের সাথে ওরকম আরেকটি অগভীর খালে গিয়েছিলেন। ভিডিও: ওহ! (হাসি) আল গোর: উনি ঠিক আছেন। প্রশ্নটি হচ্ছে আমরা ঠিক থাকব কী না। এবং আরেকটি কারন হচ্ছে, এই বিশাল তাপ ধারক গ্রীনল‍্যান্ডকে উত্তরদিক থেকে উত্তপ্ত করে ফেলছে। এটি একটি বার্ষিক গলনশীল নদী। কিন্তু এই গলনের পরিমান অন‍্য যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এটি হচ্ছে দক্ষিন-পশ্চিম গ্রীনল‍্যান্ডের ক‍্যাঙ্গারলুসিক নদী আপনি যদি জানতে চান সমূদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কিভাবে বাড়ে ভূপৃষ্ঠের বরফ গলার মাধ‍্যমে এই হচ্ছে সেই যায়গা যেখানে এটি সমূদ্রে মেশে। এই প্রবাহগুলো ভীষণ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুনিয়ার অন‍্যপ্রান্ত, অ‍্যান্টার্কটিকায় (দক্ষিন মেরু) রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম বরফ স্তুপ। গতমাসে বিজ্ঞানিরা জানিয়েছেন এই সমগ্র মহাদেশ এখন বরফের ঋণাত্মক ভারসামে‍্যর উপর দঁাড়িয়ে আছে। এবং পশ্চিম অ‍্যান্টার্কটিকা, গড়ে উঠেছে কিছু সমূদ্রতলবর্তি দ্বীপ এর উপর যা বিশেষভাবে দ্রুত গলনশীল। যা সমূদ্রপৃষ্ঠ হতে ২০ ফিট এর সমান, গ্রীনল‍্যান্ডের মত। তৃতীয় বৃহত্তম বরফস্তুপ, হিমালয় এর চঁুড়ায় দেখুন নতুন হ্রদ, যা কয়েক বছর আগেও ছিল হিমবাহ। সারা দুনিয়ার ৪০ ভাগ মানুষ তাদের সুপেয় পানির অর্ধেক পেয়ে থাকে ওই বরফগলা প্রবাহ থেকে। আন্দিজ এলাকায়, এই হিমবাহ হচ্ছে শহরের পানিয় জলের উৎস। এই প্রবাহগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু যখন এরা থাকেনা, তখন পানিয় জলেরও অনেকটাই চলে যায়। ক‍্যালিফোর্নিয়াতে সিয়েরা তুষারস্তুপ (স্নোপ‍্যাক) ৪০ ভাগ কমে গেছে। যা জলাধারগুলোকে আঘাত করছে। এবং আপনার পড়া ভবিষ‍্যদ্বাণীগুলো, সতি‍্য গুরুতর। দুনিয়াজুড়ে এই শুষ্কতার কারনে অগ্নিকান্ডের পরিমান নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। সেই সাথে পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে চলেছে নিতান্তই অস্বাভাবিক এবং অভুতপুর্ব গতিতে। গত ৩০ বছরে ৪ গুন বেশি হয়েছে তার আগের ৭৫ বছরের চেয়ে। এটি পুরোপুরি একটি অস্থিতিশীল চিত্র। আপনি যদি ইতিহাসের প্রেক্ষিতে দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন ঘটনা কথায় যাচ্ছে। গত ৫ বছরে আমরা ৭০ মিলিয়ন টন কার্বনডাইঅক্সাইড পরিবেশে যোগ করেছি প্রতি ২৪ ঘন্টায় -- আর সাগরের পানিতে প্রতিদিন ২৫ মিলিয়ন টন। পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার দিকে ঠিকমত নজর দিন, আমেরিকা থেকে, বেড়ে পশ্চিম দিকে, এবং ভারতীয় উপমহাদেশের উভয় দিকে, সাগরে অক্সিজেনের চরম শুন‍্যতা দেখা দিয়েছে। বৈশ্বয়ীক উষ্ণতা বৃদ্ধির একক বৃহত্তম কারন হচ্ছে জীবাশ্ম জালানীর ব‍্যবহার, সাথে আছে বৃক্ষনিধন, যা মাত্র ২০ ভাগ। তেল একটা সমস‍্যা, আর কয়লা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুতর সমস‍্যা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে দুই এর মধে‍্য একটি সবচে বড় কার্বন নিসরক রাষ্ট্র, চীনের সাথে যৌথ ভাবে । এবং আরও অনেক কয়লা বিদ‍্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাবনা আছে। কিন্তু আমরা এর আমূল পরিবর্তণের সুত্রপাত দেখতে পাচ্ছি। এইগুলো গত কয়েক বছরে বাতিল করা হয়েছে বদলে কিছু বিকল্প সবুজ ব‍্যবস্থা প্রস্তাবিত হয়েছে। (করতালি) যাইহোক এ নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দ্বন্দ আছে আমাদের দেশে। এবং এই কয়লা শিল্প আর এই তেল শিল্প গত অর্থবছরে এক বিলিয়ন ডলারের চারভাগ খরচ করেছে 'পরিচ্ছন্ন কয়লা'র প্রচারে, যা আসলে একটি স্ববিরধী ভিত্তিহীন প্রচারণা। এই ছবিটি আমাকে আরেকটি ছবির কথা মনে করিয়ে দেয়। (হাসি) ক্রিসমাসের সময়, আমার বাড়ি টেনেসীতে, এক বিলিয়ন গ্যালোন কয়লার গাদ ছড়িয়ে পড়ে। আপনারা হয়ত ঘটনাটি খবরে দেখেছেন। এইটা, সারা দেশের মধে্য, আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘটনা আমেরিকায়। এইটা ক্রিসমাসের সময়কার ঘটনা। এর মধে‍্য একটা কয়লা ইন্ডাস্ট্রির বিজ্ঞাপন ছিল এইটা। ভিডিও: ♪ ♫ কয়লা মানব ফ্রস্টি একজন হাসিখুশি, সুখী মানুষ। এই আমেরিকায় এমন অনেক আছে, এবং সে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায‍্য করে। কয়লা মানব ফ্রস্টি প্রতিদিন আরও পরিচ্ছন্ন হচ্ছে। সে সহজলভ‍্য এবং আদরনীয়, এবং শ্রমিকেরা তাদের প্রাপ‍্য মজুরী পাচ্ছে। আল গোর: পশ্চিম ভার্জিনিয়ার বেশিরভাগ কয়লার উৎস হচ্ছে এইটা। ম‍্যাসী কোল কম্পানির প্রধান হচ্ছেন পাহাড়চুড়ার খনিগুলোর সবচেয়ে বড় খনিওয়ালা। ভিডিও: ডন ব্ল‍্যাঙ্কেনশিপ: আমাকে এই বেপারটা আগে পরিষ্কারভাবে বুঝতে দাও। আল গোর, ন‍্যান্সি পেলোসি, হ‍্যারি রিড, তঁারা জানেননা তঁারা কী নিয়ে কথা বলছেন। আল গোর: তাই 'জলবায়ূ রাক্ষা ঐক‍্যজোট' দুটি প্রচারাভিযান শুরু করেছে। এটা হচ্ছে ওই দুটির একটি, একটির অংশ। ভিডিও: অভিনেতা: 'কোলার্জি'তে আমরা জলবায়ু পরিবর্তণকে ভিষণ গুরুত্বপূর্ণ আমাদের ব্যবসা উপর হুমকি হিসেবে দেখি । সেই জন‍্য আমরা আমাদের প্রথমিক লক্ষ‍্য হিসেবে ধরেছি একটি বড় অংকের টাকা খরচ করে কিছু বিজ্ঞাপনী কর্মকান্ডের মাধ‍্যমে জল ঘোলা করতে হবে এবং বের করে আনতে হবে কয়লার আসল সত‍্যগুলো। আসল কথা হচ্ছে, কয়লা ময়লা নয়। আমাদের ধারনা কয়লা পরিষ্কার -- গন্ধও ভালো। তাই জলবায়ূ পরিবর্তণ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এটা আমাদের হতে ছেড়ে দিন। (হাসি) ভিডিও: অভিনেতা: পরিষ্কার কয়লা, আপনারা এর কথা অনেক শুনেছেন। তো চলুন এই অভিনব পরিষ্কার কয়লা প্রস্তুতের প্রকৃয়া দেখে আসি। অসাধারণ! যন্ত্রপাতিগুলো অবশ‍্য একটু বেশি শব্দ করে। কিন্তু এইটা হচ্ছে পরিষ্কার কয়লা প্রযুক্তির শব্দ। এবং যখন কয়লা পুড়ানো হচ্ছে বৈশ‍্যয়ীক ঊষ্ণতা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারন, সেখানে এই অসাধারন পরিষ্কার কয়লা প্রযুক্তি আপনি দেখতে পাচ্ছেন সবকিছু বদলে দিয়েছে। সময় নিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখুন, এই হচ্ছে আজকের পরিষ্কার কয়লা প্রযুক্তি। আল গোর: শেষ পর্যন্ত এই ভালো বিকল্প ব‍্যবস্থা আমাদের অর্থনৈতিক লক্ষ‍্য এবং আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার লক্ষ‍্য দুটোকেই এক সুতোয় গঁাথে। ভিডিও: বক্তা: আমেরিকা এখন সমস‍্যায় জর্জরিত, এই অর্থনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা, জলবায়ূ সংক্রান্ত সমস‍্যা। এই সবগুলোকে এক সূত্রে গঁাথে, আমাদের কার্বন প্রধান জ্বালানীর নেশা, যেমন নোংরা কয়লা এবং বিদেশি তেল। কিন্তু এখন এই মোক্ষম সমাধান আমাদেরকে এই সমস‍্যা থেকে উদ্ধার করবে। ১০০ ভাগ পরিষ্কার বিদ‍্যুত দিয়ে আমেরিকাকে নতুন করে বিদ‍্যুতায়ীত করা হবে, ১০ বছরের মধে‍্য। এটা আমেরিকাকে আবার কার্যক্ষম করার একটা পরিকল্পনা, যা আমাদেরকে আরও নিরাপদ করবে, এবং বৈশ‍্যয়ীক ঊষ্ণতা রোধ করতে সাহায‍্য করবে। অবশেষে, একটি সমাধান যা আমাদের সমস‍্যার দূর করার জন‍্য যথেষ্ট। আমেরিকাকে নতুনভাবে বিদ‍্যুতায়ীত করা হোক। আরও নতুন কিছুর সন্ধান করুন। আল গোর: এই ছিল সর্বশেষ। ভিডিও: বক্তা: আমেরিকাকে নতুনভাবে বিদু‍্যতায়ীত করার প্রসঙ্গ। এইটা হচ্ছে দ্রুততম পদ্ধতিগুলোর একটা যা আমাদের নির্ভরশীলতা বন্ধ করবে পুরোনো নোংরা জ্বালানীগুলোর থেকে, যেগুলো আমাদের এই পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। ব‍্যক্তি: ভবিষ‍্যৎ এখন এখানে। বাতাস, সূর্য, একটি নতুন বিদু‍্যত গ্রিড। ব‍্যক্তি #২: নতুন বিনিয়গ, উচ্চ বেতনের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করার লক্ষে। বক্তা: আমেরিকাকে নতুনভাবে বিদু‍্যতায়ীত করা হোক। বাস্তবতাকে আলিঙ্গনের এটাই সময়। আল গোর: একটা পুরোনো আফ্রিকান প্রবাদ আছে, "আপনি যদি দ্রুত যেতে চান, তো একা যান। আর যদি দুরে যেতে চান, তাহোলে একসাথে যান।" আমাদেরকে দুরে যেতে হবে, তবে দ্রুত। সবাইকে অসংখ‍্য ধন‍্যবাদ। (করতালি) কেন অনেক মানুষ সফলতা অর্জন করে এবং তারপর ব্যর্থ হয়? এর একটি বড় কারণ আমরা মনে করি, সফলতা একমুখী পথ। তাই আমরা তার সকল কিছুই করি যা আমদের সফলতার পথে নিয়ে যায় কিন্তু এরপর আমরা সেখানে পৌঁছে যাই। আমরা ধরে নেই আমরা পৌঁছে গেছি আমরা আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গাটায় বসে থাকি, এবং আমরা সেসকল কাজ করা ছেড়ে দেই যা আমদের সফল করেছে। এবং এরপর বেশি সময় লাগে না আমাদের নিচে যেতে। এবং আমি আপনাদের বলতে পারি তা ঘটে, কারণ তা আমার সাথে ঘটেছে। সফলতায় পৌছার পর, আমি কষ্ট করেছিলাম, নিজেকে তাগিদ দিয়েছিলাম। তারপর হঠাৎ করেই থেমে যাই, কারণ আমি বুঝতে পারি,"ওহ, দেখো, আমি পে্রেছি। আমি এখন চুপচাপ বসে একটু আরাম করতে পারি।" সফলতায় পৌছার পর আমি সবসময় উন্নতি করার এবং ভাল কাজ করবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তখন আমি থেমেছি কারণ আমি বুঝতে পেরেছি, "এইযে, আমি যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষ। আমার আর উন্নতির দরকার নেই।" সফলতায় পৌছার পর আমি ভাল এবং নতুন চিন্তা ভাবনা ভাল ভাবেই করতে পারছিলাম। কারণ আমি তার সকল কিছুই করেছিলাম যা আমাকে নতুন চিন্তা বা ধারণার দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু তারপর আমি থামলাম, কারণ আমি বুঝতে পারলাম আমি এখন আকর্ষণীয় এবং আমার চিন্তা ভাবনা করার জন্য কাজ করার দরকার নেই, কারণ ভাবনাগুলো জাদুর মতো করে আমার মাথায় এসে পড়বে। এবং এরপর যা এসেছে তা হচ্ছে শুধুমাত্র সৃজনশীল বাধা। আমি কোন নতুন ধারণা বা চিন্তারই জন্ম দিতে পারছিলাম না। সফলততায় পৌছার পর, আমি সবসময় মক্কেল আর প্রকল্পেই দৃষ্টি নিবন্ধ করতাম, এবং টাকাকে প্রাধান্য দিতাম না। এরপর চারপাশ থেকে টাকা আসতে থাকে। এবং এর ফলে আমার মনোযোগ অন্যদিকে সরে গেল। এবং হঠাৎ করেই আমি ফোনে আমার স্টকব্রকার এবং ভূসম্পত্তির দূতের সাথে কথা বলছিলাম, যখন আমার মক্কেলদের সাথে কথা বলা উচিত ছিল। এবং সফলতা অর্জনের পর, আমি সবসময় তাই করতাম যা আমি ভালবাসি। কিন্তু এরপর আমি এমন সবকিছুর সাথে জড়িয়ে পড়লাম যা আমি ভালবাসতাম না, যেমন ব্যবস্থাপনা। আমি দুনিয়ার সর্বনিকৃষ্ট ব্যবস্থাপক, কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আমার এটা করা উচিত, কারণ আমি ছিলাম, কোম্পানির প্রধান। এরপর খুব শ্রীঘ্রই আমার মাথার উপর একটু একটু করে কালো মেঘ জমতে থাকল এবং এইযে আমি, বাইরে অনেক সফল, কিন্তু ভিতরে অনেক বিষণ্ণ। কিন্তু আমি পুরুষ, আমি জানি কিভাবে তা ঠিক করতে হয়। আমি একটি দ্রুতগতির গাড়ি কিনলাম। (হাসি) কিন্তু তা সাহায্য করেনি। আমি যথেষ্ট দ্রুত ছিলাম , কিন্তু আগের মতই বিষণ্ণ। তাই আমি একজন ডাক্তারের কাছে গেলাম, আমি বললাম, "ডাক্তার, আমি যা খুশি তাই কিনতে পারি। কিন্তু আমি সুখি নই। আমি বিষণ্ণ। এটা সত্য ওরা যা বলে, এবং আমি তা বিশ্বাস করিনি যতক্ষণ পর্যন্ত তা আমার সাথে হয়েছে। কিন্তু টাকা সুখ কিনতে পারে না।" সে বললো, "না, কিন্তু তা প্রোজ্যাক কিনতে পারে।" এবং এরপর সে আমাকে বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠবার জন্য ওষুধ দেয় । এবং হ্যাঁ, কালো মেঘগুলো একটু চলে গিয়েছিল, এর সাথে সাথে আমার প্রকল্প এবং কাজগুলো, কারণ আমি আমার মত ভেসে চলেছিলাম। আমি তখন মক্কেলদের নিয়ে তেমন চিন্তিত ছিলাম না। (হাসি) এবং মক্কেলড়া ফোন দিত না। (হাসি) কারণ তারা দেখতে পারছিল আমি আর তাদের সেবা করছিলাম না, আমি শূধুমাত্র নিজের কাজই করছিলাম। তাই তারা তাদের অর্থ এবং প্রকল্প নিয়ে অন্যদের কাছে চলে যায় যারা তাদের ভালো সেবা দিতে পারবে। এরপর বেশি সময় লাগেনি আমার ব্যবসা পড়ে যেতে, একেবারে শেকোয় উঠতে, আমি ও আমার অংশিদার, থম, আমাদের কর্মচারীদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম। এরপর আমরা শুধুমাত্র দুইজন ছিলাম এবং আমরা প্রায় পড়ে যাচ্ছিলাম। এবং তা ছিল অনেক ভাল। কারণ কোন কর্মচারী না থাকার কারনে, কাউওকে ব্যবস্থাপনা করার কিছু ছিল না। তাই আমি সেই সকল প্রকল্পে আবার কাজ করা শুরু করি যেগুলো আমি ভালবাসতাম। আমি আমার আনন্দ পেতে শুরু করলাম, আমি কঠোর পরিশ্রম করা শুরু করলাম এবং, দীর্ঘ গল্পকে ছোট করে বললে, আমি তার সকল কিছুই করেছিলাম যা আমাকে সফলতার কাছে আবার নিয়ে যায়। কিন্তু এটা কোন দ্রুত ভ্রমণ ছিল না। মোট সাত বছর লাগে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যবসা বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হয়ে ওঠে। এবং আমি যখন আবার সেই আটটি মূলনীতি মেনে চলা শুরু করি, আমার মাথার উপরের কালো মেঘ অদৃশ্য হয়ে গেছে একেবারেই। এবং একদিন আমি উঠে পড়ি এবং বলি, "আমার আর প্রোজ্যাক দরকার নেই।" এবং আমি তা ছুড়ে ফেলেছিলাম এবং এরপর আর লাগেনি আমার। আমি শিখেছি যে সফলতা একমুখী যাত্রা নয়। এটা এরকম দেখায় না; এটা অনেকটা এরকম দেখায়। এ এক চলমান যাত্রা। এবং আমরা যদি চাই "সফলতা থেকে ব্যর্থতার লক্ষণ" এড়াতে, আমরা এই আটটি মূল নীতি মেনে চলি, কারণ এভাবেই আমরা শুধুমাত্র সাফল্য অর্জন করি যে তা নয়, এভাবেই আমরা একে ধরে রাখি। সুতরাং আপনাদের চলমান সাফল্যকে শুভ কামনা। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। (হাততালি) এখন যদি প্রেসিডেন্ট ওবামা আমাকে গণিতের পরবর্তী জার হবার আমন্ত্রণ জানান, তাহলে তার জন্য আমার একটি পরামর্শ থাকবে যা আমি মনে করি এ দেশের গণিত শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশাল এক উন্নতি ঘটাবে। এবং তার প্রণয়ন হবে সহজ এবং সস্তা। আমাদের গণিতের যে পাঠ্যসূচি আছে তা গড়ে উঠেছে পাটিগণিত এবং বীজগণিতের উপর ভিত্তি করে। এবং এরপর যা কিছু আমরা শিখি তা একটি বিষয়ের দিকে আমাদের নিয়ে যায়। এবং সবার ওপরের এই বিষয়টি হল ক্যালকুলাস। এবং আমি এখানে বলতে চাই যে আমি মনে করি সবার ওপরের এই বিষয়টি সঠিক বিষয় নয়... আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য সঠিক বিষয়টি, যা সব হাই স্কুল স্নাতকদের জানার কথা- হওয়া উচিত পরিসংখ্যান: সম্ভাব্যতা এবং পরিসংখ্যান। (তালি) আমি বোঝাতে চাচ্ছি, আমাকে ভুল বুঝবেন না। ক্যালকুলাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের চিন্তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফসল এই ক্যালকুলাস। পরিবেশের সূত্রসমূহ ক্যালকুলাসের ভাষায় লেখা রয়েছে। এবং প্রতিটি শিক্ষার্থী যে কিনা গণিত, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, অর্থনীতি পাঠ করে তাদের প্রত্যেকের অবশ্যই ক্যালকুলাস শেখা উচিত কলেজ জীবনের প্রথম বছরের মধ্যে। কিন্তু আমি এখানে বলতে চাই, গণিতের একজন অধ্যাপক হিসেবে, যে খুব কম মানুষ ক্যালকুলাস ব্যবহার করে একটি সচেতন, অর্থবহ উপায়ে, তাদের দৈনন্দিন জীবনে। অন্যদিকে, পরিসংখ্যান-এমন একটি বিষয় যা আপনার প্রতিদিন ব্যবহার করা উচিত এবং আপনি করতে পারবেন। ঠিক? এটি একটি ঝুঁকি। এটি একটি পুরস্কার। এটি এলেমেলো। এটা হচ্ছে তথ্য বুঝতে পারা। আমি মনে করি, যদি আমাদের শিক্ষার্থীরা যদি আমেরিকার সকল নাগরিক-- সম্ভাব্যতা এবং পরিসংখ্যান সম্পর্কে জানতো, আমরা আজ এই অর্থনৈতিক বিশৃংখলার মধ্যে থাকতাম না।(হাসি) (তালি) শুধু তাই নয়- ধন্যবাদ- শুধু তাই নয় যদি আমরা তা সঠিকভাবে শেখাতে পারি, তা অনেক মজার হবে। আমি বোঝাতে চাচ্ছি, সম্ভাব্যতা এবং পরিসংখ্যান যা হচ্ছে অনেকটা খেলা আর পাশা খেলার অংক করার মত, মজার। যা হচ্ছে গতিধারা বিশ্লেষণ করা। এটা হচ্ছে ভবিষ্যদ্বানী করা। দেখুন, পৃথিবী বদলে গেছে অ্যানালগ থেকে ডিজিটালে। এবং সময় হয়েছে আমাদের গণিতের পাঠ্যসূচি অ্যানালগ থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করবার, ধ্রুপদী, অবিরাম গণিত থেকে আরো আধুনিক, বিচ্ছিন্ন গণিত, এলেমেলো, তথ্যের অনিশ্চয়তার গণিতে পরিণত করা-- যা হচ্ছে সম্ভাব্যতা এবং পরিসংখ্যান। সংক্ষেপে, আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্যালকুলাসের কৌশল শেখার পরিবর্তে আমি মনে করি আরও বেশি অর্থবহ কিছু শিখতো যদি তাদের সবাই জানতো গড় থেকে দুই আদর্শ বিচ্যুতি মানে কি। এবং আমি এটাই বোঝাতে চাচ্ছি। অনেক ধন্যবাদ। (তালি) এই ক্যারিয়ার জটিলতা, আমার বেলায় যা প্রায়ই ঘটে, প্রায়ই, বিশেষত, রোববার সন্ধ্যায়, ঠিক যখন সূর্য অস্ত যেতে শুরু করে, এবং যখন আমার ব্যক্তিগত আকাঙ্খাগুলো আর আমার জীবনের বাস্তবতার মাঝে দুরত্ব, এত কষ্টদায়কভাবে উঠে আসে যে শেষ পর্যন্ত বালিশে মুখ গুঁজে আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদি। আমি এত সব বলছি, এত সব বলছি এজন্যই যে এটা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত কোন সমস্যা নয় বলেই আমি মনে করি । আপনি হয়ত ভাবতে পারেন আমি ভুল বলছি, কিন্তু আমার মনে হয় আমরা এমন এক সময়ে বসবাস করছি যখন আমাদের জীবন নিয়মিতভাবেই আক্রান্ত হচ্ছে ক্যারিয়ার সংকটে, মূহুর্তেই যখন আমরা আমাদের জীবন ও আমাদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে যা জানি বলে ভাবতাম তা এক ভীতিকর বাস্তবতার মুখোমুখি পৌছায়। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন সম্ভবত সুন্দরভাবে জীবনযাপন করা সহজতর। সম্ভবত বর্তমানেই পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায়, ধীর স্থির থাকা,ক্যারিয়ার বিষয়ক দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা সবচেয়ে কঠিন। আমি এখন তাকাতে চাই সেইসব কিছু কারণের দিকে যেগুলোর জন্য আমরা আমাদের ক্যারিয়ার নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত । কেন আমরা ক্যারিয়ার সংকটের শিকার হচ্ছি? কেনই বা আমরা আলতো করে বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। আমাদের এই কষ্টের একটি কারণ হল আমাদেরকে ঘিরে থাকা অহংকারী লোকজন। এখন আমার কিছু দুঃসংবাদ দেয়ার আছে, বিশেষ করে যারা বাইরে থেকে অক্সফোর্ডে এসেছেন। দম্ভের একটা সত্যিকারের সমস্যা আছে। কারণ মাঝেমাঝে যুক্তরাজ্যের বাইরের মানুষজন কল্পনা করেন -- যে দম্ভ হচ্ছে বিলেতি লোকেদের বৈশিষ্ট্যমূলক ব্যাপার একে তাঁদের দেশের বাড়ি আর উপাধির সাথে সম্পর্কিত করে ফেলেন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে সেটা সত্য নয়। উন্নাসিকতা একটি বৈশ্বিক ব্যাপার। আমরা একটি বৈশ্বিক সংস্থা। এটা একটা বৈশ্বিক ব্যাপার। এটা বিদ্যমান। উন্নাসিকতা মানে কী? উন্নাসিক/দাম্ভিক হচ্ছে সে, যে আপনার সম্পর্কে খুব অল্প জানে এবং সেই ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে সে আপনার সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা কল্পনা করে নেয়। সেটাই উন্নাসিকতা। একটি বহুল প্রচলিত উন্নাসিকতা যা বর্তমানে বিদ্যমান তা হল পেশাবিষয়ক উন্নাসিকতা। যেকোন পার্টিতে গেলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনাকে এর মুখোমুখি হতে হয়। আপনি যখন প্রশ্নবিদ্ধ হন একবিংশ শতাব্দীর সেই সুপরিচিত প্রশ্নের, "আপনি কি করেন?" এবং আপনার উত্তর অনুযায়ী, কেউবা আপনার সাথে দেখা হয়ে অত্যধিক আনন্দিত হন, আর কেউবা নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কেটে পড়ার অজুহাত দেন। (হাসি) এখন উন্নাসিক ব্যক্তির বিপরীতে কাউকে দাঁড় করাতে চাইলে তিনি হবেন আপনার মা। (হাসি) আপনার মাকেই যে হতে হবে তা নয়, আমার মাও হতে পারে, কিন্তু, একজন আদর্শ মায়ের মতই, যিনি আমাদের সফলতা নিয়ে মাথা ঘামান না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অধিকাংশ মানুষই আমাদের মা নন। বেশিরভাগ মানুষ বেশ কঠোরভাবেই সামঞ্জস্য রাখে তার ব্যয়িত সময় এবং ভালোবাসা, -- রোমান্টিক ভালোবাসা নয়, যদিও সেটাও একটা ব্যাপার -- সর্বজনীন ভালোবাসা, সম্মান, তারা আমাদের জন্য যতটুকু করতে ইচ্ছুক, বেশ কঠোরভাবেই তা সীমিত রাখেন আমাদের সামাজিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। আর আমাদের ক্যারিয়ার নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হওয়ার এগুলোই অনেক বড় কারণ এবং অবশ্যই পার্থিব সামগ্রী নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠারও একই কারণ। আপনারা প্রয়ই শুনে থাকবেন, যে আমরা অত্যন্ত বস্তুবাদী এক সময় অতিবাহিত করছি, আমরা সবাই অনেক লোভী মানুষ। আমি আমাদেরকে বিশেষ করে বস্তুবাদী বলে মনে করি না। আমার মনে হয় আমরা যে সমাজে বসবাস করছি যে সমাজ খুব সাদামাটাভাবে নির্দিষ্ট কিছু আবেগিক প্রতিদানকে পার্থিব সামগ্রীর অর্জন হিসেবে চিহ্নিত করে। আসলে পার্থিব বস্তু আমরা চাইনা। আমাদের চাওয়া হচ্ছে ঐ পুরষ্কার। আর বিলাসদ্রব্যের কথা ভাবার এটি একটি নতুন উপায়। এখন থেকে কাউকে ফেরারীতে (দামী গাড়ি) চড়ে বেড়াতে দেখলে ভাববেন না যে, "ইনি একজন লোভী মানুষ।" বরং ভাবুন, "ইনি হলেন অস্বাভাবিকরকম কমজোর এবং ভালোবাসার কাঙ্গাল।" অন্যভাবে বললে -- (হাসি) ঘৃণার বদলে সমবেদনা দেখান। এছাড়াও আরও কারণ আছে -- (হাসি) অন্য অনেক কারণ আছে, যে জন্য সম্ভবত আজকাল কঠিনতর হয়ে গেছে আগের যেকোন সময়ের থেকে সুস্থির থাকা। একটি কারণ হচ্ছে ক্যারিয়ার নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা, এটা নিয়ে অবশ্য মতবিরোধ আছে কারণ ক্যারিয়ার নিয়ে আমাদের এই প্রত্যায়াশাকে ভালো নজরে দেখা হয়। মানুষের ইহকালের অর্জন নিয়ে এর আগে এত সুউচ্চ প্রত্যাশা আর কখনই ছিল না। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা শুনে থাকব যে, যেকারো পক্ষেই যেকোন কিছু অর্জন করা সম্ভব । আমরা সামাজিক শ্রেণীতন্ত্রের যুগ পার করে এসেছি। আমরা এখন যে সিস্টেমে বাস করছি তাতে যে কেউই চাইলে যে কোন উঁচু পর্যায়ে উঠে যেতে পারে। এটা একটা চমৎকার আইডিয়া। পাশাপাশি এটা একটা সাম্যবাদী চেতনা। আমরা সবাই আসলে সমান। শ্রেণীবিভাগের কোন স্পষ্ট প্রকট ব্যবস্থা এখন আর নাই। এর অবশ্য সত্যিকারের একটা বড় সমস্যা আছে, আর সেটা হল ঈর্ষা। ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতার কথা বলা আবার নিষিদ্ধ, কিন্তু আধুনিক সমাজে বহুল প্রচলিত কোন আবেগ যদি থেকে থাকলে সেটা অবশ্যই ঈর্ষা। আর এটা সাম্যবাদী চেতনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আমি বুঝিয়ে বলছি, আমার মনে হয় এখানে উপস্থিত অথবা যারা দেখছেন সবার ক্ষেত্রেই, ইংল্যাণ্ডের রাণীর প্রতি ঈর্ষাণ্বিত হওয়াটা একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। যদিও আপনাদের যে কারও তুলনায় তিনি অনেক বেশি ধনী। এবং তার একটা বিশাল বাড়ি আছে। আমাদের তার প্রতি ঈর্ষাণ্বিত না হওয়ার কারণ হল তিনি খুবই অন্যরকম। তিনি আসলেই খুব অদ্ভুত। তার সাথে কোন তুলনা চলে না। তিনি হাস্যকরভাবে কথা বলেন। তিনি এসেছেন এক অদ্ভুত জায়গা থেকে। তাই আমরা তার সাথে কোন তুলনা করি না। আর যখন কারও সাথে তুলনা করা যায় না, তাকে ঈর্ষাও করা যায় না। বয়স কিংবা অতীত কিংবা পরিচিতির দিক থেকে দুটো মানুষ যত কাছাকাছি, ঈর্ষার উদ্ভব হওয়ার ভয়ও তত বেশি -- প্রসঙ্গক্রমে একারণেই স্কুল পুনর্মিলনীতে আপনাদের কখনই যাওয়া উচিত নয়। কারণ তুলনা করার জন্য সহপাঠিদের চেয়ে সুবিধাজনক আর কেউ নয়। কিন্তু আধুনিক সমাজের সাধারণ সমস্যা হল, এটা পুরো পৃথিবীটাকেই একটা স্কুল বানিয়ে ফেলেছে। সবাই জিনসের প্যান্ট পরছে, সবাই এক। আবার, তারা সমান নয়। সাম্যের সাথে অসাম্য গভীরভাবে সম্পর্কিত হয়ে আছে। যেটা ভীষণ চাপের সৃষ্টি করে, করতে পারে । সপ্তদশ শতাব্দীতে ফরাসী অভিজাত শ্রেণীর অঙ্গীভূত হতে পারা যেরকম অসম্ভব ছিল, তেমনি বর্তমানে বিল গেটসের মত ধনী হওয়াটাও সম্ভবত একই রকম অসম্ভব। কিন্তু ব্যাপার হল, আমরা এখন সেভাবে অনুভব করি না। আমাদেরকে অনুভব করতে বাধ্য করা হচ্ছে, ম্যাগাজিন, মিডিয়া, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে, যদি আপনার এনার্জি থাকে, প্রযুক্তিবিষয়ক কিছু বুদ্ধিদীপ্ত আইডিয়া থাকে, একটা গ্যারেজ থাকে, আপনিও বড় কিছু শুরু করে দিতে পারেন। (হাসি) আর এর পরিণাম অনুভূত হয় বইয়ের দোকানে গিয়ে। বড় কোন বইয়ের দোকানে গিয়ে স্বাবলম্বিতা বিষয়ক সেকশনের দিকে তাকালে, যেটা আমি প্রায়ই করে থাকি, আজকাল স্বাবলম্বিতা বিষয়ে প্রকাশিত বইগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, শুধু দুই ধরণের বই আছে, প্রথম ধরণের বইয়ে বলা হয়ে থাকে, "আপনি পারবেন। আপনাকে দিয়েই হবে। সবকিছু সম্ভব।" দ্বিতীয় ধরণের বইয়ে আত্মবিশ্বাসহীনতা কাটিয়ে উঠার উপায় সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে; সহজভাবে বললে একে 'আত্মস্পৃহার অভাব', একটু রূঢ় ভাবে একে বলা যায় "নিজের ব্যাপারে অনেক নিচু ধারণা থাকা"। এই দুই এর মধ্যে সত্যিকারের একটা সম্পর্ক আছে, একটা সমাজ যা তার মানুষকে বলতে থাকে তাদের দিয়ে সব সম্ভব এবং একই সাথে আত্মবিশ্বাসের অভাবের অস্তিত্ত্ব থাকা -এই দুয়ের মাঝে আসলেই সম্পর্ক আছে। তাই এটা আসলে একটা প্রায় পুরোপুরি ঠিক ব্যাপারেও যে বাজে প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে তারই উদাহরণ। সম্ভবত আরেকটি কারণে আমরা আরও বেশি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হচ্ছি আজকের দুনিয়াতে আগের চেয়ে অনেক বেশি আমাদের ক্যারিয়ার নিয়ে, সামাজিক পদমর্যাদা নিয়ে। এটা আবার বেশ সুন্দর একটা ধারণার সাথে সম্পর্কযুক্ত, সেই সুন্দর ধারণাটা হচ্ছে গুণতন্ত্র। সবাই - বামপন্থী, ডানপন্থী রাজনীতিবিদ সবাই, স্বীকার করবে যে, গুণতন্ত্র হচ্ছে একটা অসাধারণ ব্যাপার। এবং আমাদের সকলেরই আমাদের সমাজকে আরও বেশি বেশি গুণতান্ত্রিক করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করা উচিত। গুণতান্ত্রিক সমাজ বলতে আসলে কি বোঝায়? গুণতান্ত্রিক সমাজে যেকেউই মেধা, শক্তি আর সামর্থ থাকলে সবচেয়ে উঁচু অবস্থানে পৌঁছতে পারে। কোনকিছুই তাকে বাধা দিতে পারে না। এটা একটা চমৎকার আইডিয়া। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যদি আপনি সত্যিই এমন একটি সমাজে বিশ্বাস করেন যেখানে মেধা থাকলেই উঁচুস্তরে ওঠা যায়, অনেক উঁচুস্তরে ওঠা যায়, আপনি কিন্তু একই সাথে এটাও ইঙ্গিত করছেন, খুব বাজেভাবে বললে, আপনি এমন একটি সমাজে বিশ্বাস করছেন যেখানে কেউ কেউ অযোগ্যতার কারণে নীচুস্তরে থাকতে বাধ্য। একটু ঘুরিয়ে বললে, আপনার জীবনে আপনার অবস্থান আকস্মিক কোন কিছু নয়, বরং আপনার মেধার গুণে অর্জিত এবং যথোচিত। আর এতে করে ব্যর্থতাকে আরও ভীষণ কষ্টকর বলে মনে হয়। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, মধ্যযুগে, ইংল্যাণ্ডে, খুব গরীব মানুষকে দেখলে, তাকে বলা হত "দুর্ভাগা"। আক্ষরিক অর্থে, যার ভাগ্য খুব খারাপ, সে এককথায় দুর্ভাগা। বর্তমানে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে সমাজের নীচু স্তরের কাউকে দেখলে তাদেরকে সম্ভবত বেশ নির্দয়ভাবেই "লুজার" বলে আখ্যায়িত করা হয়। একজন হতভাগ্য ব্যক্তি আর একজন পরাজিত ব্যক্তির মাঝখানে অনেক ফারাক। আর তা প্রকাশ করে ৪০০ বছরধরে পরিবর্তণশীল সমাজকে আর আমাদের জীবনের পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী সেই বিশ্বাসকে। এখন এটা আর ঈশ্বর নন, বরং আমরাই। আমরাই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছি। যদি সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলে তাহলে তা খুবই উল্লাসজনক, কিন্তু ব্যাপক বিপদ যখন তার উলটোটা ঘটে । এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ, সমাজবিদ এমিল ডারখাইমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, একেবারে নিকৃষ্ট পর্যায়ে, আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি পায়। বিশ্বের অন্য যেকোন স্থানের তুলনায় উন্নত স্বতন্ত্রবাদী দেশগুলোতে আত্মহত্যার ঘটনা অনেক বেশি। এবং এর কারণ হল, মানুষ তার জীবনে ঘটিত ব্যাপারগুলোকে খুবই ব্যক্তিগতভাবে নেয়। তাদের সাফল্যের পেছনে আছে তারা নিজেরা ।তাদের ব্যর্থতার পেছনেও তারা নিজেরাই । আমি এতক্ষণ যেসব মানসিক চাপের কথা বললাম তার থেকে মুক্তির কি কোন উপায় আছে? মনে হয় আছে। আমি কিছু উপায়ের প্রতি আলোকপাত করতে চাই। গুণতন্ত্রের কথাই ধরা যাক। এই আইডিয়া যাতে বলা হচ্ছে, প্রত্যেকে যে যার অবস্থানে বর্তমানে আছে, সেটাই আসলে তার প্রাপ্য অবস্থান। আমার মনে হয় এটা একটা ফালতু আইডিয়া, পুরোপুরি পাগলামি। আমি বামপন্থী কিংবা ডানপন্থী যে কোন রাজনীতিবিদকেই যেকোন মার্জিত গুণতান্ত্রিক আইডিয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন করব। আমি নিজেই গুণতান্ত্রিক, ওই অর্থে। কিন্তু আমি মনে করি প্রকৃত গুণতান্ত্রিক সমাজ তৈরি করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করাটা অপ্রকৃতিস্থ। এটা অসম্ভব স্বপ্ন। এমন একটা সমাজের আইডিয়া যেখানে আক্ষরিকভাবে সবাই এমনভাবে বিন্যস্ত যেখানে যোগ্যরা উঁচুতে আর আযোগ্যরা নীচুতে, এবং তা যেভাবে হওয়া উচিৎ সেভাবেই হচ্ছে, এমনটা হওয়া অসম্ভব। এলোমেলো ভাবে অনেক রকমের পরিস্থিতিরই জন্ম হতে পারে। দুর্ঘটনা, জন্ম সংক্রান্ত দুর্ঘটনা, মানুষের জীবনে আসা আকস্মিক দুর্ঘটনা, রোগব্যধি ইত্যাদি। আমরা কখনই সেগুলোকে সমাজে বিন্যস্ত করতে পারব না। ঔচিত্য অনুসারে মানুষকে কখনই বিভাজিত করতে পারব না। "ঈশ্বরের নগরী" তে সেন্ট অগাস্টিনের একটা চমৎকার উদ্ধৃতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। যেখানে তিনি বলেছেন, "কোন মানুষকে তার পদমর্যাদানুযায়ী বিচার করা পাপ।" আধুনিক ইংরেজিতে সেটার অর্থ দাঁড়াবে, কারও সাথে কথা বলা উচিৎ নাকি অনুচিৎ -সেটা তার বিজনেস কার্ড দেখে ভেবে নেয়াটা একটা পাপ। মানুষের পদমর্যাদাকে এত গুরুত্ব দেয়া উচিত নয়। সেন্ট অগাস্টিনের কথানুসারে, প্রত্যেকটা জিনিসকে তার যথোপযুক্ত জায়গায় অধিষ্টিত করতে শুধু ঈশ্বরই পারেন। মহাবিচারের সেই দিনেই তিনি সেটা করবেন দেবদূতদের নিয়ে শিঙ্গা ফুঁকে, আকাশ হয়ে যাবে উন্মুক্ত। উন্মাদের চিন্তা, আমার মত, আপনিও যদি ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে থাকেন। তা সত্ত্বেও এই আইডিয়াতেও কিছু মূল্যবান ব্যাপার আছে। অন্যকথায়, মানুষকে বিচার করার সময় যেন তা লাগামছাড়া না হয়ে যায়। একটা মানুষের সত্যিকারের মূল্য কখনই জেনে উঠা সম্ভব নয়। সেটা সবার নিজেদের অজ্ঞাত ব্যাপার। সেটা আমরা জেনে ফেলেছি বুঝিয়ে দেয়াটা অনুচিত। সান্ত্বনা এবং স্বস্তির উৎস আরও একটি আছে। আমরা যখন জীবনে ব্যর্থ হওয়ার কথা ভাবি, ব্যর্থতার কথা ভাবি, শুধু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ই নয়, সম্মান হারানোর ভয়ও অনেক গুলো কারণের মধ্যে একটি। অন্য মানুষের বিচার আর ব্যঙ্গকেও আমরা ভয় পাই। এবং এটা সত্যিই আছে। এখনকার এক নম্বর ব্যঙ্গাত্মক সংগঠন হিসেবে আপনারা সংবাদপত্রগুলোর কথা তো জানেন। সপ্তাহের যে কোন দিনের সংবাদপত্র খুললেই আপনারা অনেক মানুষের বিপরযস্ত জীবনের চিত্র দেখতে পাবেন। কেউ ভুল মানুষের সাথে শুয়েছে। কেউ ভুল জিনিস গ্রহণ করেছে। ভুল আইন প্রণীত হয়েছে। যে কোনটাই হোক। ব্যঙ্গ করার জন্য যথেষ্ট। এককথায় তারা ব্যর্থ হয়েছে। এবং তাদেরকে পরাজিত হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এখন এর বিকল্প কি কিছু আছে? আমি মনে করি পাশ্চাত্য ঐতিহ্য থেকেই আমরা অতি চমৎকার বিকল্প খুঁজে পাব, সেটা হল ট্রাজেডি। বিয়োগান্তক শিল্প, যার বিকাশ ঘটেছে গ্রীসের নাট্যশালায়, পঞ্চদশ খ্রিষ্টপূর্বে, বিয়োগান্তক শিল্প হচ্ছে এমন একটা অপরিহার্য শিল্প যেখানে মানুষের ব্যর্থতাকে চিত্রায়িত করা হয়, এবং তাদের মতে, কিছুটা সমবেদনা দেখানো হয়। নিত্যকার জীবনে যেটা সাধারণত ঘটে না। কয়েক বছর আগের কথা আমার মনে পড়ছে যখন আমি এই সব ব্যাপার নিয়ে ভাবছিলাম। আমি "দ্য সানডে স্পোর্ট" দেখতে গিয়েছিলাম, একটা ট্যাবলয়েড সংবাদপত্র, যেটা পড়ার পরামর্শ কিন্তু আমি আপনাদেরকে দিচ্ছি না, যদি না এর কথা আপনারা ইতিমধ্যেই জেনে থাকেন। আমি ওদের সাথে পাশ্চাত্য শিল্পের কিছু অসাধারণ ট্রাজেডির ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিলাম। আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে, একটা অন্তঃসারশূন্য ঘটনাকে শনিবার বিকেলে খবরের ডেস্কে সংবাদ হিসেবে আনতে হলে তাদেরকে কিভাবে সেটা সাজাতে হয় । আমি তাদেরকে ওথেলোর গল্প বললাম। তারা ওথেলোর কথা জানত না, কিন্তু তারা বেশ উৎসাহিত হল। (হাসি) আমি তাদেরকে ওথেলোর গল্পকে খবরের শিরোনাম হিসেবে রাখতে বললাম। তারা সেটাকে বানালো "প্রেমান্ধ অভিবাসীর হাতে সিনেটরের কন্যা নিহত" খবরের শিরোনাম জুড়ে চাপিয়ে বসলো। আমি তাদের মাদাম বভারির ঘটনাকে প্লট হিসেবে দিলাম। যেটা তাদেরকে খুব আগ্রহী করে তুলেছিল। আর তারা লিখল "ক্রেডিট প্রতারণার পর শপিং প্রেমী যূবতীর আর্সেনিক গিলে আত্যহত্যা" (হাসি) এর পরেরটা আমার সবচেয়ে পছন্দের| এই লোকগুলো, এদের নিজেদের মত করে (এরকম ঘটনা বিকৃত করার ব্যাপারে) একেকটা প্রতিভা| এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় - সফোক্লিসের "মহান রাজা অডিপাস" "মায়ের সাথে সেক্স অন্ধত্বের কারণ" (অট্যহাসি) (হাততালি) এক দৃষ্টিকোণ থেকে, যদি স্পেকট্রামের এক প্রান্তে সহানুভুতিকে রাখা হয় তাহলে আসবে ট্যাবলয়েড সংবাদপত্র। স্পেক্ট্রামের অন্য প্রান্তে থাকবে ট্রাজেডি আর ট্রাজিক (বিয়োগান্তক) শিল্প। আমার ধারণা আমি ট্রাজিক শিল্পে কি ঘটছে তা আমাদের সবার কিছুটা হলেও যে শেখা উচিৎ সে ব্যাপারে বলতে চাচ্ছি। হ্যামলেটকে হতভাগা বলতে পারা এক উন্মাদ হলেই সম্ভব। হ্যামলেটের ভাগ্য যদিও খারাপ ছিল, তারপরেও তাকে 'লুজার' বলা যায় না। আর আমি মনে করি ট্রাজেডি আমাদেরকে ঠিক এই শিক্ষাটাই দিচ্ছে। এবং এটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমি বুঝতে পারি। আধুনিক সমাজের আরেকটা ব্যাপার আর এই যে এত উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে, আমাদের সমাজে এমন কিছু নাই যার কেন্দ্রে মানুষ নাই। আমরাই বিশ্বে প্রথম সমাজ যেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের কে ছাড়া আর কাওকে পূজা করিনা। নিজেদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা অনেক উচু| আর আমাদের সেরকমই হওয়া উচিত। চাঁদে আমরা মানুষ পাঠিয়েছি। আমরা অসাধারণ অনেক কিছুই করেছি। তাই আমাদের নিজেদের পূজা করার প্রবণতা তৈরী হয়েছে। আমাদের বীরেরা সবাই মানুষ। এটা সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিস্থিতি। অধিকাংশ সমাজেই এর কেন্দ্রে অপার্থিব কিছুর উপাসনা চলে। খোদা, আত্মা, প্রাকৃতিক শক্তি, মহাবিশ্ব, যা কিছুই হোক মানুষ ভিন্ন অন্য কিছুর উপাসনা করা হয়। আর আমরা কিছুটা হলেও সেই অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছি, আমার মনে হয়, একারণেই আমরা বিশেষত প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট হই। স্বাস্থ্যের ওয়াস্তে নয়, যদিও প্রায়ই সেরকম দোহাই দিয়েই এটাকে উপস্থাপন করা হয়, কারণ মানব বসতি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার এটা একটা উপায়। আমাদের নিজেদেরই সৃষ্ট প্রতিযোগিতা থেকে নিষ্কৃতির পথ। এবং আমাদের নাটকীয়তা থেকেও। আর সেজন্যই আমরা হিমবাহ আর সমুদ্র দেখে মজা পাই, বৈশ্বিক পরিধির বাইরে থেকে একে পর্যবেক্ষণ করতে উপভোগ করি। আমরা অলৌকিক কিছুর নাগাল পেতে ভালোবাসি, এবং আমাদের জন্য সেটা চরম ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় আমি আসলে সাফল্য আর ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলে আসছিলাম। আর সাফল্যের একটা খুবই মজার ব্যাপার হল যে আমরা মনে করি যে এর অর্থ আমরা সবাই জানি। যদি আমি আপনাদেরকে বলি যে এই পর্দাটার পিছনে কেউ একজন আছেন যিনি একজন অত্যন্ত সফল ব্যক্তি, সাথেসাথেই আপনাদের মাথায় নির্দিষ্ট কিছু চিন্তা চলে আসবে। আপনারা হয়ত ভাববেন ঐ লোক টির নিশ্চয়ই অনেক টাকা, অথবা কোন না কোন ক্ষেত্রে তিনি যশ খ্যাতি অর্জন করেছেন। সাফল্য নিয়ে আমার ব্যক্তিগত তত্ত্ব হল - ওহ! আমি নিজে কিন্তু একজন ব্যক্তি যার কিনা সাফল্যে ব্যাপক কৌতুহল। আমি আসলেই সফল হতে চাই। আমি সবসময়ই ভাবি, "আর কিভাবে আমি আরও বেশি সফল হতে পারি?" কিন্তু যতই বয়স হচ্ছে, সাফল্য শব্দটার অর্থ সম্পর্কেও আমার মতপ্রভেদ তৈরি হচ্ছে। সাফল্য সম্পর্কে আমার যা উপলব্ধি সেটা বলা যাক। আপনার পক্ষে সবকিছুতে সফল হওয়া সম্ভব নয়। আমরা কর্মজীবন আর ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য নিয়ে অনেক কথা শুনে থাকি। বাজে কথা। আপনার পক্ষে সব পাওয়া সম্ভব নয়। আপনি পারবেন না। তাই সাফল্যের যে কোন দর্শনকেই মানতে হবে যে এটা আসলে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আর সেই ক্ষতির উৎস কোথায়? আমি মনে করি, যে কোন বিচক্ষণ জীবনই স্বীকার করবে, যেরকমটা বললাম, এমন কিছু একটা থাকবেই যেটাতে আমরা সফল হতে পারছি না| একটা সফল জীবন সম্পর্কেই ভাবা যাক না, অধিকাংশ সময়ই, সফলভাবে জীবনযাপন বলতে আমরা যে ধারণা পোষণ করি, তা আমাদের নিজেদের ধারণা নয়। অন্য কোন মানুষের কাছ থেকে আনা। বিশেষত, পুরুষ হলে, তার বাবার আর মহিলা হলে, তার মায়ের কাছ থেকে আনা। মনঃসমীক্ষণ বিজ্ঞান প্রায় ৮০ বছর ধরে এই বার্তা আমাদের কানে বাজিয়ে আসছে। কেউই যথেষ্ঠ মনযোগ দিয়ে তা শুনছে না, কিন্তু আমার প্রগাঢ় বিশ্বাস যে আসলে তা সত্যি। আর আমরা যাবতীয় মেসেজ গলাধঃকরণ করি সবকিছু থেকে, টেলিভিশন, বিজ্ঞাপন প্রচার, ইত্যাদি! এগুলো প্রচণ্ড রকম প্রভাববিস্তারকারী মাধ্যম যেগুলো আমাদের চাওয়া আর ব্যক্তিগত দর্শনকে সংজ্ঞায়িত করে। যখন আমাদের বলা হল যে ব্যঙ্কিং খুবই সম্মানজনক একটা পেশা আমাদের অনেকেই ব্যঙ্কিং এ ঢুকল। আর যখন ব্যাঙ্কিং আর তত বেশি সম্মানজনক নয়, আমরা ব্যাঙ্কিং এ আমাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। আমরা পরামর্শ নেয়ার ব্যাপারে বড়ই উদার। তাই আমি যুক্তি দেখাচ্ছি যে আমাদের নিজেদের সাফল্যের ধারণাকে পরিত্যাগই নয়, সেগুলো আদৌ আমাদের কিনা তাও আমাদের নিরূপণ করা উচিৎ। আমাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনায় আমাদের মনোনিবেশ করা উচিৎ। সেগুলো যে আমাদের তা এবং আমাদের উচ্চাভিলাষগুলোর সত্যিকার স্রষ্টাও আমরা কিনা তা নিশ্চিত হওয়া উচিত। কারণ আপনি যা চান তা না পেতে পারাটা একটা যথেষ্ট বাজে ব্যাপার, কিন্তু এরকম ধারণা থাকা তার থেকেও খারাপ যে আপনি যা চেয়েছিলেন এবং আপনার যাত্রা সমাপ্তিতে যা পেলেন প্রকৃতপক্ষে, আপনি তা মোটেও চান নি। তাই আমি এখানেই শেষ করতে চাই। যাই হোক, আমি আসলেই জোর দিতে চাই সফলতার অর্থের উপর। কিন্তু আমাদের কারও কারও ধারণাগুলো যে অদ্ভূত তা আমরা যেন স্বীকার করি। আমাদের সাফল্যের ধারণাকে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে। চলুন নিশ্চিত করি যে আমাদের সাফল্যের ধারণাগুলো সত্যিকারভাবেই আমাদের নিজেদের। অনেক ধন্যবাদ। (করতালি) ক্রিস এন্ডারসনঃ অসাধারণ! আপনি কিভাবে সামঞ্জস্য রাখেন এই ধারণাটির ব্যাপারে -- যে কাউকে এরকম 'লুজার' ভাবার ধারণাটা খারাপ, সাথেসাথে আপনার জীবনের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণকে অনেক লোক মিলে ছিনিয়ে নিচ্ছে সেটাও। এবং এমন একটা সমাজে, যেখানে সেটা অনুপ্রাণিত হয়, সম্ভবতঃ কাউকে জয় আর কাউকে পরাজয় বরণ করতেই হয়। এলেইন ডে বোটনঃ হ্যাঁ | আমার মনে হয় আমি খুব সামান্যই জয় আর পরাজয়ের অনিশ্চিত এই প্রক্রিয়ার উপর আলোপাত করতে চেয়েছি। কারণ আজকাল আমরা সবকিছুর ন্যায্যতার উপর খুবই জোর দেই। এবং রাজনীতিবিদরা সবসময়ই ন্যায়বিচার নিয়ে কথা বলেন। আমি কিন্তু ন্যায়বিচারে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখি, আমি শুধু এটাই ভাবি যে এটা অসম্ভব। তাই আমাদের সামর্থ অনুসারে সবকিছুই করা উচিৎ, আমাদের সেই অন্বেষণের জন্যও যাবতীয় সামর্থ দিয়ে কাজ করা উচিৎ। কিন্তু দিন শেষে আমাদের এটা মনে রাখা উচিৎ যে কারোরই মুখোমুখি আমরা হই না কেন, তাদের জীবনের ঘটনাগুলো যেরকমই হোক না কেন, সবকিছু এলোমেলো করে দেয়ার মত দুর্দান্ত কিছু থাকবেই। আর এটা বোঝার অবকাশ তৈরি করতেই আমি চেষ্টা করছি। তা না হলে আমরা ওই ন্যায্য এর চিন্তায় অবরূদ্ধ হয়ে পড়তে পারি। ক্রিস এন্ডারসনঃ তার মানে কি আপনি বিশ্বাস করেন একটি সফল অর্থনীতির সাথে আপনার এই উদার, নম্র কর্মদর্শণকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব? অথবা আপনার কি তা অসম্ভব বলে মনে হয় ? আমরা যে এর উপর এত বেশি জোর দিচ্ছি সেটারই কি আসলে কোন মানে নেই? এলেইন ডি বোটনঃ এরকম চিন্তা খুবই আতঙ্কদায়ক যে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি কাজ আদায় করে নেয়া যায়, এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা যত বেশি নির্দয় হবে, মানুষের মনোভাব তত বেশি প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। নিজের আদর্শ বাবা হিসেবে কাকে আপনার পছন্দ বলে আপনারা ভাবতে চান? আপনার আদর্শ বাবা এমন কেউই যে কিনা বলিষ্ঠ কিন্তু আবার কোমল। আর এই সীমাটি নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। আমাদের এমন বাবাদের প্রয়োজন, যারা সমাজের দৃষ্টান্তস্থাপনকারী প্রবর্তক ধাচের মানুষ দুই চরমসীমাকে এড়িয়ে, যার একপ্রান্তে কর্তৃত্বপরায়ণ স্বৈরাচারী কঠোর শাসক, আর অন্য প্রান্তে, লম্পট, নীতিবিবেকহীন কেউ। ক্রিস এন্ডারসন: এলেইন ডে বোটন এলেইন ডে বোটনঃ অনেক ধন্যবাদ (করতালি) আমার বয়স যখন সম্ভবত ১২ বছর ছিলো, আমার বাবা আমাকে ব্রাসেলস এ মহাশুন্যের উপর একটা প্রদর্শনী তে নিয়ে গিয়েছিলেন, জায়গাটা এখান থেকে কাছেই। সেটা সম্ভবত ১৯৮৮ সালের কথা। তারমানে, এটা কোল্ড ওয়ারের পরের কথা। তখন আমেরিকান এবং রাশিয়ানদের মধ্যে বড়ত্বের লড়াই চলছিলো, প্রদর্শনী তে এটা সেটা আনা নিয়ে। নাসা বিশাল একটা স্পেস শাটল এনেছিলো। কিন্তু রাশিয়ানরা এনেছিলো মির স্পেস স্টেশন। এটা ছিলো আসলে ট্রেনিং মডিউল, এর ভিতরে গিয়ে সব কিছু দেখা যেতো। এর সবকিছুই ছিলো বাস্তব-- কোথায় কোন বাটন ছিলো, কোথায় কোন তার ছিলো, নভোচারীরা কোথায় খেতো, কোথায় কাজ করতো। তারপর যখন আমি বাড়ি ফিরলাম, আমি প্রথমেই, স্পেসশিপ আঁকা শুরু করলাম। এগুলা সাইন্স ফিকশনের স্পেসশিপ ছিলোনা। এগুলা আসলে টেকনিক্যাল ড্রয়িং ছিলো। এগুলো ছিলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ, যেগুলোর দ্বারা পুরো কাঠামোটা তৈরি হবে। কোথায় তার থাকবে, কোথায় স্ক্রুগুলো থাকবে। সৌভাগ্যবশত, ... আমি একজন স্পেস ইঞ্জিনিয়ার হইনি, কিন্তু আমি একজন আর্কিটেক্ট হয়েছি। এগুলো হচ্ছে কয়েকটা প্রজেক্ট, যেগুলোর সাথে, আমি গত দেড় যুগ ধরে সম্পৃক্ত ছিলাম। এই সবগুলো প্রজেক্ট বিভিন্নরকম আকৃতির, কারন, এগুলো বিভিন্নরকম পরিবেশের জন্য তৈরি। তাদের বিভিন্নরকম সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর আমি মনে করি, ডিজাইন ততই আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে, আপনি যত কঠিন সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হবেন। এখন, এই প্রকল্পগুলি সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে আছে। কয়েক বছর আগে, এই মানচিত্রটি যথেষ্ট ভালো ছিল না। এটা ছিলো খুবই ছোট। আমাদেরকে এটা যোগ করতে হয়েছিলো, কারন আমরা চাঁদের উপর একটা প্রজেক্ট করতে যাচ্ছিলাম ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সির জন্য; তারা আমাদেরকে বলেছিলো চাঁদের জন্য একটা আবাসস্থল ডিজাইন করার জন্য এবং আরেকটা ছিলো নাসার জন্য, মঙ্গল গ্রহের উপর, এটি ছিলো মঙ্গলে একটি বাসস্থান চিত্রায়নের একটি প্রতিযোগিতা। যখনই আপনি নতুন কোন স্থানে যাবেন, একজন আর্কিটেক্ট হিসেবে, এবং কোনকিছু ডিজাইন করার চেষ্টা করবেন, আপনি স্থানীয় স্থাপত্যের দিকে লক্ষ্য করবেন, সেখানে যেসব উদাহরণ রয়েছে। অবশ্য, চাঁদের ক্ষেত্রে, এটা একটু কঠিনই, কারন সেখানে শুধু এটা রয়েছে। শুধুমাত্র এপোলো মিশন সমূহ। সর্বশেষ আমরা যখন সেখানে গিয়েছিলাম, তখনো আমার জন্মই হয়নি, আর সেখানে আমরা মাত্র তিন দিনের মত ছিলাম। তাই, আমার জন্য, এটা অনেকটা দীর্ঘ ক্যাম্পিং ট্রিপ এর মত, তাই না, কিন্তু বেশ ব্যায়বহুল একটা ট্রিপ। এবার, আসল কথা হচ্ছে, আপনি যখনই চাঁদ বা অন্য কোন গ্রহে কোন কিছু নির্মান করতে চাইবেন, তখনই, আপনি এটাকে কিভাবে সেখানে নিয়ে যাবেন? প্রথমত, উদাহরনস্বরূপঃ চাঁদে এক কেজি ওজনের জিনিস নিয়ে যেতে, খরচ পড়বে প্রায় দুই লাখ ডলারের মত, খুবই ব্যায়বহুল। তাই, আপনি এটিকে খুবই হালকা রাখতে চাইবেন। দ্বিতীয়ত, স্থান। স্থান সীমিত। ঠিক? এটা হচ্ছে, আরিয়ানা পাঁচ রকেট। সেখানে যে স্থান রয়েছে, তা প্রায় সাড়ে চার মিটার বাই সাত মিটার এর মত, খুব বেশি নয়। তাই, এটাকে হতে হবে একটা আর্কিটেকচারাল সিস্টেম, যা একই সাথে কম্প্যাক্ট এবং হালকা হবে, আর, আমার কাছে এমন একটা জিনিস আছে। এটা খুবই কম্প্যাক্ট, এবং খুবই হালকা। এবং, আসলে, একটু আগেই আমি এটা তৈরি করেছি। কিন্তু, এখানে একটা সমস্যা আছে, বাতাস ভরা জিনিস খুব ঠুনকো হয়। তাই এদেরকে নিরাপদে রাখতে হয়, বিশেষ করে, আপনি যখন চাঁদের মত কঠিন কোন পরিবেশে যাবেন। ব্যাপারটা এভাবে দেখুন, মুন বেস এর তাপমাত্রার পার্থক্য ২00 ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। বেসের এক পাশের তাপমাত্রা 100 ডিগ্রী সেলসিয়াস হতে পারে এবং অন্যপাশের তাপমাত্রা হতে পারে মাইনাস 100 ডিগ্রী সেলসিয়াস। আমাদের নিজেদেরকে এটা থেকে রক্ষা করতে হবে। চাঁদের কোন চৌম্বক ক্ষেত্রও নেই, যার অর্থ হচ্ছে, যে কোনও রেডিয়েশন - সোলার রেডিয়েশন বা মহাজাগতিক রেডিয়েশন - চন্দ্রপৃষ্ঠে আঘাত করবে। আমাদের নিজেদেরকে এটা থেকেও রক্ষা করতে হবে। নভোচারীদেরকে এটা থেকে রক্ষা করতে হবে। আর, তৃতীয়ত, তবে, অবশ্যই শেষ টা নয়, চাঁদের কোন বায়ুমন্ডল নেই, যার অর্থ হচ্ছে, যে উল্কাগুলি এর দিকে আসবে সেগুলো আকাশেই পুড়ে যাবে না, সেগুলো চন্দ্রপৃষ্ঠে আঘাত করবে। আর এই কারনেই চাঁদে এত গর্ত। নভোচারীদেরকে এগুলো থেকেও রক্ষা করতে হবে। তাহলে, আমাদের ঠিক কি ধরনের কাঠামো দরকার? আসলে, সবচেয়ে সেরা জিনিস হচ্ছে, একটি গুহা, কারন, গুহার উপরে অনেক বড় স্তুপ থাকবে, আর আমাদের বিশাল স্তুপ দরকার। আমাদের স্তুপ দরকার,-- নিজেদেরকে তাপমাত্রা থেকে বাঁচাতে, রেডিয়েশন থেকে বাঁচাতে, এবং উল্কাপাত থেকে বাঁচাতে। তাহলে, এভাবেই আমরা সমস্যাটার সমাধান করবো। আপনি যেমনটা দেখতে পাচ্ছেন, আমাদের এই নীল অংশটা রয়েছে। যেটা হচ্ছে মুন বেসের ফোলানো অংশ। থাকার জন্য এবং ল্যাবের জন্য এটাতে অনেক জায়গা থাকবে, আর এটার সাথে সংযুক্ত থাকবে একটা সিলিন্ডার, সাহায্যের জন্য সকল উপকরণ এটাতে থাকবে, সমস্ত লাইফসাপোর্ট উপকরণ, এবং এয়ারলক থাকবে এতে। এবং এগুলোর উপর থাকবে, গম্বুজের মত একটা কাঠামো, এটা আমাদেরকে রক্ষা করবে, এর আকৃতি বিশাল হবে। এই নির্মান উপাদান গুলো আমরা কোথায় পাবো? আমরা কি পৃথিবী থেকে কংক্রিট এবং সিমেন্ট চাঁদে নিয়ে যাবো? অবশ্যই না! কারন, এগুলো খুবই ভারী। এটা অনেক বেশি ব্যায়বহুল। তাই আমরা স্থানীয় উপাদান ব্যাবহার করবো। আমরা পৃথিবীতেও স্থানীয় উপাদান দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। যেকোন দেশে বা যেখানেই আমরা কোন কিছু নির্মান করি, আমরা দেখি যে স্থানীয়ভাবে কি কি উপাদান পাওয়া যায় চাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা হচ্ছে যে, এর স্থানীয় উপাদানগুলো কি কি? আসলে, ওখানে বেশি কিছু নেই। সত্যি বলতে, একটা জিনিসই শুধু আছে। মুনডাস্ট, বা, অভিনব বৈজ্ঞানিক নাম, রেগোলিথ, মুন রেগোলিথ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটা সর্বত্রই রয়েছে, ঠিক? চন্দ্রপৃষ্ঠ এটি দ্বারা আচ্ছাদিত। এটি প্রায় 20 সেন্টিমিটার থেকে কয়েক মিটার পর্যন্ত পুরু। কিন্তু এটি দ্বারা আমরা নির্মান করবো কিভাবে? আমরা আসলে 3D প্রিন্টার ব্যাবহার করবো। আমি যদি আপনাদের কাউকে জিজ্ঞেস করি যে, একটি 3D প্রিন্টার কি? আপনারা সবাই হয়তো ভাবছেন যে, এটা হয়তো এই আকারের কিছু একটা এবং এটা এই আকারের জিনিস প্রিন্ট করবে। আমি অবশ্যই বিশাল একটি 3D প্রিন্টার চাঁদে আনতে যাচ্ছি না আমার মুন বেস প্রিন্ট করার জন্য। আমি এটার মত অনেক ছোট ডিভাইস ব্যাবহার করবো। এটা একটা ছোট ডিভাইস, ছোট একটা রোবট রোভার, যার ছোট একটা বেলচা আছে, এবং এটা গম্বুজে রেগোলিথ নিয়ে আসবে তারপর এটা রেগোলিথ এর পাতলা একটা স্তর তৈরি করবে, আর তারপর এটিকে নিরেট করার জন্য একটা রোবট থাকবে স্তরে স্তরে, কয়েকমাস পরে, যতদিন পর্যন্ত পুরো বেস তৈরি না হবে। আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে আমরা একটা নির্দিষ্ট কাঠামো প্রিন্ট করছি, এখানে আমার কাছে এর ছোট একটা উদাহরন রয়েছে। আমরা এটাকে ক্লোজড-সেল ফোম কাঠামো বলি। অনেকটাই প্রাকৃতিক মনে হচ্ছে। যে কারনে, আমরা এটা ব্যাবহার করছি, খোলের মত কাঠামোর অংশ হিসেবে, সেটা হচ্ছে, আমরা নির্দিষ্ট কিছু অংশকে নিরেট করতে চাই, তার মানে, আমাদেরকে পৃথিবী থেকে কম পরিমাণ বাইন্ডার আনতে হবে, এবং এটা অনেক হালকা হবে। এবার-- কোন কিছু ডিজাইন করা এবং তারপর সেটাকে প্রতিরক্ষামূলক গম্বুজ দিয়ে ঢেকে দেয়ার এই পদ্ধতি আমরা আমাদের মঙ্গলের প্রজেক্টেও ব্যাবহার করেছি। আপনি এখানে তিনটি গম্বুজ দেখতে পাচ্ছেন। আর আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, প্রিন্টারগুলো গম্বুজের কাঠামো প্রিন্ট করছে। চাঁদ এবং মঙ্গলের মধ্যে বিরাট পার্থক্য আছে, এটা একটু ব্যাখ্যা করি। এই ছবিটিতে আপনি দেখতে পাচ্ছেন পৃথিবী ও চাঁদের আকার, এবং তাদের দূরত্ব, প্রায় চার লক্ষ কিলোমিটার। আর তারপর আমরা যদি মঙ্গলে যাই, পৃথিবী ও মঙ্গলের দূরত্ব-- আর এই ছবিটি তুলেছে রোভার কিওরিওসিটি, মঙ্গল থেকে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে। আপনি হয়ত কোনরকমে বিন্দুটি দেখতে পাচ্ছেন, ওটা পৃথিবী, 40 লক্ষ কিলোমিটার দূরে। এখানে এই দূরত্বের কারনে সমস্যাটা হচ্ছে, এটা পৃথিবী এবং চাঁদের দূরত্বের চেয়ে হাজার গুন বেশি, অনেক অনেক দূরত্ব, কিন্তু এর সাথে সরাসরি রেডিও যোগাযোগ ও নেই, উদাহরনস্বরুপঃ কিওরিওসিটি রোভারের সাথেও নেই তাই আমি এটাকে পৃথিবী থেকে দূর-নিয়ন্ত্রন করতে পারবোনা। আমি বলতে পারবোনা, "ওহে, মঙ্গলের রোভার, বামে যাও," কারন সিগন্যালটি মঙ্গল গ্রহে পৌঁছাতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগবে। তারপর রোভারটি হয়তো বামে যাবে, তারপর আরো ২০ মিনিট লাগবে, রোভারটি আমাকে এটা বলতে, যে, "ও হ্যাঁ, আমি বামে গেছি।" সুতরাং এই দূরত্বের ফলে, রোভার এবং রোবটগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। এর আরেকটা সমস্যা হচ্ছে যে মঙ্গলের মিশন খুবই ঝুঁকিপূর্ন। আমরা এটা কয়েকসপ্তাহ আগেই দেখেছি। যদি অর্ধেক মিশনই মঙ্গলে না পৌঁছায়, তাহলে? তখন আমরা কি করবো? আসলে, একটা বা দুইটা রোভার বানানোর বদলে, যেমনটা আমরা চাঁদে করেছি, আমরা শত শত রোভার বানাবো। এটা অনেকটা উই এর ঢিপির মত। আমি যদি অর্ধেক উইকে ঢিপি থেকে সরিয়ে নিই, তারপর ও তারা ঢিপিটা তৈরি করতে পারবে। সময় হয়তো কিছুটা বেশি লাগবে। এখানেও একই ব্যাপার। যদি আমাদের অর্ধেক রোভার বা রোবট নাও পৌঁছায় তবুও, সময় কিছুটা বেশি লাগলেও, আমরা এটা তৈরি করতে পারবো। এখানে তিন ধরনের রোভার রয়েছে। পেছনে আপনি খননকারী রোভার দেখতে পাচ্ছেন। যেটি রেগোলিথ খননে খুবই পারদর্শী। তারপর রয়েছে ট্রান্সপোর্টার রোভার। রেগোলিথ নিয়ে সেগুলো কাঠামো পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারদর্শী। এবং তারপর, শেষ রোভারটি, ছোট ছোট পা সহ, সবচেয়ে ছোটটি, তাদেরকে বেশি নড়াচড়া করতে হবে না। তারা রেগোলিথ এর একটা স্তরের উপর বসবে এবং সেগুলোকে একত্রে মাইক্রোওয়েভ করবে, এবং স্তরে স্তরে গম্বুজের কাঠামো তৈরি করবে। এবার-- আমরা এটা পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছি, আমরা একটা ওয়ার্কশপে গিয়েছি, এবং আমরা আমাদের রোবটের ঝাঁক তৈরি করেছি। এই যে...। আমরা এরকম ১০ টা বানিয়েছি। এটা একটা ছোট্ট ঝাঁক। এবং আমরা ৬ টন বালি নিয়েছি, এবং আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, এই ছোট্ট রোবটগুলো আসলে বালি সরাতে কতটুকু সক্ষম, এক্ষেত্রে... পৃথিবীর বালি। এবং এগুলো দূর-নিয়ন্ত্রিত ও ছিলোনা। ঠিক? কেউ তাদেরকে ডানে বা বামে যেতে বলছিলো না, অথবা নির্দিষ্ট কোন পথ ও বলে দেয়নি। না। তাদেরকে একটা কাজ দেওয়া হয়েছিলো। এই এলাকা থেকে এই এলাকায় বালি সরাও। এবং তাদের সামনে যদি পাথর বা এরকম কোন বাধা পড়ে, তাদের নিজেদেরকেই এর সমাধান করতে হয়েছে। অথবা তারা যদি অন্য একটি রোবটের সামনে আসে, তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হতে হয়েছিলো। অথবা তাদের অর্ধেক যদি নষ্ট হয়ে যেতো, তাদের ব্যাটারি ফুরিয়ে যেতো, তাহলেও তাদেরকে কাজটা শেষ করতে হতো। আমি প্রতুলতা সম্পর্কে কথা বলেছি। কিন্তু সেটা শুধু রোবটের ক্ষেত্রেই নয়। সেটা বাসস্থানের ক্ষেত্রেও। আমরা মঙ্গলের প্রজেক্টে তিনটা গম্বুজ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারন, একটা যদি না পৌঁছায়, তাহলেও, অন্য দুইটা মিলে একটা বেস তৈরি করবে। এর প্রধান কারন হচ্ছে, প্রত্যেকটি গম্বুজের মেঝেতে, একটি লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম নির্মিত আছে। এর ফলে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে, আরে, এটা একটা পাগলাটে ব্যাপার। আপনি একজন আর্কিটেক্ট হয়ে স্পেসের সাথে সম্পৃক্ত হতে গেলেন কেন? কারণ এটি একটি প্রযুক্তিগত ক্ষেত্র। আমি আসলে সত্যিই বিশ্বাস করি যে, একটি সৃজনশীল অথবা ডিজাইন দৃষ্টিকোণ থেকে, আপনি সত্যিই কঠিন এবং জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। এবং আমি সত্যিই মনে করি যে, ডিজাইন এবং আর্কিটেকচারের একটি স্থান রয়েছে, আন্তগ্রহ বাসস্থানের মত প্রজেক্টের ক্ষেত্রে। ধন্যবাদ। (হাততালি) বেশ কয়েক বছর ধরেই আমি হতাশায় ভুগছি, কারণ ধর্মীয় ইতিহাসবিদ হিসেবে, আমি তীব্রভাবে সচেতন হয়ে উঠেছি সমবেদনার ধারণার প্রতি যেটা আছে সবগুলো প্রধান ধর্মীয় বিশ্বাসের কেন্দ্রে। প্রতিটি ধর্মই এই ধারণাটিকে তাদের নিজেদের মতো করে গড়ে তুলেছে, যেটাকে ডাকা হয় ‘স্বর্ণালী বিধি’ নামে। কখনও এটা আসে ইতিবাচক রুপে -- “অন্যদের সঙ্গে এমন আচরণ কর, যেমনটা তুমি নিজের ক্ষেত্রে প্রত্যাশা কর।” আর সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এটার নেতিবাচক রুপটাও-- “কারও সঙ্গে এমন কিছু করো না যেটা তুমি চাও না যে, কেউ তোমার সঙ্গে করুক।” নিজেকে জিজ্ঞাসা করে খুঁজে বের কর যে, কোন জিনিসগুলো তোমাকে যন্ত্রণা দেয় আর তারপর কোন পরিস্থিতিতেই সেই জিনিসগুলো করো না, যা অন্যদের জন্যও যন্ত্রণা বয়ে আনবে। আর মানুষ সবসময়ই সমবেদনার এই ধারণার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। শুধু একারণে না যে, এটা শুনতে ভালো লাগে। বরং এটা সত্যিই কাজে লাগে। মানুষ দেখেছে যে, যখন তারা এই স্বর্ণালী বিধির প্রয়োগ ঘটায়, যেমনটা কনফুসিয়াস বলেছেন, ‘প্রতিদিন ও প্রতিটা সময়’, ব্যাপারটা এরকম না যে আপনি শুধু একটা নির্দিষ্ট সময়ে এটা করলেন আর তারপর ফিরে গেলেন লোভসর্বস্ব- আত্মকেন্দ্রিক জীবনে। বরং এই স্বর্ণালী বিধির প্রয়োগ যদি প্রতিটা সময়ই করা যায়, তাহলে আপনি আপনার দুনিয়ার কেন্দ্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারবেন। আপনি নিজের সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারবেন। আর এটাই আপনাকে নিয়ে আসবে, যাকে আমরা ডাকি ঈশ্বর-নির্বান-রাম-তাও প্রভৃতি নামে, তার সান্নিধ্যে। এটা এমন এক অভিজ্ঞতা যা আমাদের আত্মকেন্দ্রিক অস্তিত্বের সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এই ব্যাপারটা যে আপনার ধর্মীয় জীবনের সঙ্গে এতটা গভীরভাবে সম্পর্কিত এটা আপনি বেশিরভাগ সময়েই জানতে পারেন না। কারণ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, বেশিরভাগ সময় যখন ধর্মীয় মানুষরা, ধর্মীয় নেতারা একত্রিত হন, তখন তারা ধর্মের দুর্বোধ্য সব মতবাদ নিয়ে আলোচনা, অন্য ধর্মের প্রতি বিষেদাগার, সমকামিতা বা এই ধরণের জিনিসপত্রের বিরোধিতা করে সময় কাটান। বেশিরভাগ সময়ই মানুষ সত্যিই সংবেদনশীল হতে চায় না। আমি এধরণের ধর্মীয় মানুষদের সমাবেশে কথা বলার সময় মাঝেমধ্যে তাদের মুখে একধরণের বিদ্রোহী অভিব্যক্তি দেখেছি। কারণ মানুষ সবসময়ই নিজেকে সঠিক বলে দাবি করতে চায়। And that of course defeats the object of the exercise. এখন, আমি টেডের প্রতি এত কৃতজ্ঞ কেন? কারণ তারা আমাকে বের করে এনেছে আমার বই-কেন্দ্রিক জগত থেকে। আমাকে নিয়ে এসেছে একবিংশ শতাব্দিতে সুযোগ করে দিয়েছে অনেক বড় পরিসরের দর্শকের সামনে কথা বলার। যেমনটা আমি আগে কখনো পাই নি। আমি এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলার একটা তাগিত অনুভব করেছি। আমরা যদি স্বর্ণালি বিধিটা বৈশ্বিকভাবে প্রয়োগ করার সুযোগ না পাই, আমরা যদি সব মানুষকেই (সে যেই হোক না কেন) আমাদের নিজেদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করতে না পারি, তাহলে আমার সন্দেহ হয় যে আমরা আদৌ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে একটা ক্রমবিকাশমান দুনিয়া রেখে যেতে পারব কিনা। আমাদের সময়ের কাজটা, আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় কাজটা হচ্ছে, এমন একটা বৈশ্বিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে (আমি যেমনটা বলেছি) সব মানুষ একসঙ্গে শান্তিতে থাকতে পারবে। আর এই কাজে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর যেখানে একটা বড় অবদান রাখার কথা, সেখানে তারা আবির্ভূত হচ্ছে একটা সমস্যা হিসেবে। আর অবশ্যই স্বর্ণালী বিধিতে যারা বিশ্বাস করে তাঁরা শুধুই ধর্মীয় মানুষ নন। সকল নৈতিকতার উত্স হচ্ছে সহানুভূতির এই মনোকল্পিত কর্মকাণ্ডটা। নিজের জায়গায় অন্য একজনকে স্থাপন করা। আর তাই আমার মনে হয়, আমাদের কাছে সুযোগ আছে বেছে নেওয়ার। একদিকে আমরা ঝুঁকে পড়তে পারি, আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের গোঁড়া ও অসহিষ্ণু দিকগুলোর দিকে বা ফিরে যেতে পারি সেই রাবাইয়ের কাছে। রাবাই হিল্লেল, যীশু খ্রীষ্টের সমসাময়িক এক ইহুদি নেতা। পাগান ধর্মাবলম্বীরা তাঁকে এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে পুরো ইহুদি ধর্মের সারাংশ বলতে বলেছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘যেটা তোমার কাছে ঘৃণিত, এমন কোন কাজ প্রতিবেশিদের সঙ্গে করো না। এইটাই তোরাহ। বাকি সবকিছু এর বিস্তারিত বর্ণনা।’ আর এই রাবাই ও চার্চের প্রথমদিকের মানুষেরা বলেছিলেন যে, ধর্মগ্রন্থের ঘৃণা ও বিদ্বেষ উত্পাদনকারী কোন ব্যাখ্যা দেওয়া অনৈতিক। আমাদের এই চেতনাটাই পুনরুদ্ধার করতে হবে। আর এটা এমনি এমনিই হয়ে যাবে না। কারণ এক আওন্ধ ভালবাসা আমাদের একমুখী করে রাখে। আমাদেরকেই এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। আর আমরা এটা করতেও পারব আর যেধরণের আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে TED পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তা দিয়ে। ইতিমধ্যেই আমি প্রচণ্ড উত্সাহব্যঞ্জক সাড়া পেয়েছি আমাদের সহযোগীদের কাছ থেকে। সিঙ্গাপুরে, আমরা এমন একদল মানুষকে পেয়েছি যাঁরা এই সমবেদনার সনদটি নিয়ে কাজ করছে, তাদের সমাজে উদ্ভুত নানা বিভাজন মোকাবিলা করতে। আর সংসদেরও কিছু সদস্য এটাকে প্রয়োগ করতে চেয়েছেন রাজনৈতিকভাবে। মালয়েশিয়ায়, একটা শিল্প প্রদর্শণী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে প্রধানসারির শিল্পীরা অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন আর তাদেরকে দেখাবেন যে, সমবেদনার ধারণা আছে সবধরণের শিল্পের গোড়াতেও। আর পুরো ইউরোপজুড়ে, মুসলিম সম্প্রদায় নানা ধরণের অনুষ্ঠান, আলোচনা সভার আয়োজন করছেন, যেখানে তারা বলছেন যে, এই সমবেদনার ধারণা আছে ইসলামসহ সবধরণের ধর্মীয় বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু এটা এখানেই থেমে যেতে পারে না। শুরু করার উদ্যোগ নিয়েই এটা শেষ হতে পারে না। আমরা ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টিতে খুবই ভুল করে এসেছি, বিমূর্ত সব মতবাদে বিশ্বাস স্থাপনের উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে। ধর্মীয় শিক্ষা অবশ্যই কর্মতত্পরতার দিকেও নিয়ে যেতে হবে। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটা নিয়ে কাজ করে যাব। আর আমি আমার সঙ্গীদের কাজ করতে বলব দুইটা দিক নিয়ে -- সমবেদনার ধারণাটি সম্পর্কে মানুষকে জানানো ও তাদের মধ্যে উদ্দিপনা তৈরি করা। জানানোর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বর্তমানে করুণা বা সমবেদনার ধারণা আমাদের ভিতর থেকে ঝড়ে পড়েছে। মানুষ প্রায়শই এমনটা ভাবে যে, কারও জন্য দুঃখ বোধ করাটাই সমবেদনা প্রকাশের স্বরুপ। কিন্তু এইভাবে চিন্তা করলে বলা যায় অবশ্যই আপনি সমবেদনার ধারণাটা বুঝতে পারেননি। শুধু চিন্তা করলেই হবে না, কাজেও আপনার চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আমি এই কাজে গণমাধ্যমকে সংযুক্ত করতে চাই। কারণ গণমাধ্যম অনেক সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে সমাজে প্রতিষ্ঠিত বাধাধরা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে। অন্য মানুষ সম্পর্কে আমাদের ধারণা, যেগুলো মানুষকে একে অপরের থেকে বিভক্ত করে রাখে। সামাজিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমি তরুণদের প্রতিও এই সক্রিয়তার স্বাদ নেওয়ার, সমবেদনাপূর্ণ জীবনধারায় জীবনযাপন করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানাবো। আর এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, এই জীবনধারা দাবি করে সংবেদনশীল, সূক্ষ বুদ্ধিমত্তা, শুধু কিছু ভাবপ্রবণ আবেগই যথেষ্ট নয়। আমি বুদ্ধিজীবিদের প্রতি আহ্বান জানাবো, এই সমবেদনা সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু বিভিন্ন এলাকার মানুষের সংস্কৃতিতে কিভাবে ছড়িয়ে আছে তা খুঁজে বের করার জন্য। আর সম্ভবত সবকিছুর উপরে, মানুষের বোধকে জাগাতে হবে বিদ্বেষপূর্ণ ধারাভাষ্যের বিরুদ্ধে যেন এই সনদটা থাকার কারণে, তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাস যাই হোক বা তাতে কোন ঘাটতি থাকুক কেন, তাঁরা বিদ্বেষ বা ঘৃণাপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ করার মতো সক্ষম বলে ভাবতে পারবেন নিজেদেরকে যেগুলো আসে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে, এই ঘরানার শীর্ষপর্যায় থেকে। কারণ আমরাই এই দুনিয়াটা বদলাতে পারি। আমাদের সেই সক্ষমতা আছে। সমবেদনার সনদটা অনলাইনে প্রকাশ করার কথাটা আমি কখনোই ভাবিনি। আমি সেই পুরোনো দুনিয়ার মধ্যেই আটকে ছিলাম। যেখানে একটা ঘরের মধ্যে কিছু বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞরা বসে থাকেন আর পরস্পরের প্রতি রহস্যময় বক্তব্য দেন। আর এইসময়ে TED আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয় চিন্তাভাবনা উপস্থাপন করার নতুন পদ্ধতির সঙ্গে । এটাই TED এর সবচেয়ে চমত্কার বিষয়। এই ঘরে, অনেক ধরণের চিন্তাভাবনা করার মানুষ আছেন। আমরা যদি সবার চিন্তাধারা একসঙ্গে মেলাতে পারি, তাহলে আমরা এই দুনিয়াটাকে বদলাতে পারব। আর অবশ্যই কিছু কিছু সমস্যা তো মনেই হবে দুর্লঙ্ঘ্য। আমি শেষ করতে চাই একটা উদ্ধৃতি দিয়ে ব্রিটেনের এক লেখক, তাঁকে আমি খুব বেশি উদ্ধৃত করি না। সি.এস লুইস। কিন্তু তাঁর একটা লেখা আমার মাথায় গেঁথে গেছে আমি স্কুলে থাকার সময় এটা পড়েছিলাম ‘দ্য ফোর লাভস’ বইয়ে তিনি বলেছেন ঘনিষ্ঠ প্রেমসম্পর্কের কথা, যখন দুইটা মানুষ একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আর তারপর তিনি এই সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করেছেন বন্ধুত্বের। যেখানে দুইটা মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশাপাশি দাঁড়ায়, তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে একটা সাধারণ লক্ষ্যের দিকে। আমাদের একে অপরের প্রেমে না পড়লেও চলবে। কিন্তু আমরা তো বন্ধু হতে পারি। আর আমি এই ধারণার সঙ্গে একমত। আমি এটা খুবই গভীরভাবে টের পেয়েছি, ভিভেতে আমাদের ছোট্ট বিতর্ক আলোচনার সময় যে, যখন বিভিন্ন চিন্তাধারার মানুষ একত্রিত হয়, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে একটা সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য, তখন তাদের ভিন্নতাগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আর তখন আমরা শিখি বন্ধুত্ব। আর আমরা শিখি যে, কিভাবে একত্রে বাস করতে হয়, কিভাবে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে হয়। অনেক ধন্যবাদ। (হাততালি) শুভ সকাল। কেমন আছেন আপনারা? সময়টা খুব ভাল গেছে এখানে, তাই না? আমি এই পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আমি অপার্থিব মজা পেয়েছি। এমনকি দেখুন, আমি চলেই যাচ্ছি! (হাসি) এই আলোচনাসভায় আরো তিনটি বিষয়বস্তু ছিল, তাই না, যেগুলো আলোচিত হয়েছে, এর সাথে সম্পর্কযুক্ত একটা বিষয় নিয়ে আমি এখন কথা বলতে চাই। একটা হচ্ছে মানুষের সৃজনশীলতার অসাধারণ একটি প্রমান যা এখানকার সব উপস্থাপনার মধ্যে এবং সব মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। দেখুন বিভিন্ন এই ব্যাপারগুলো আর এর বিস্তৃতি। দ্বিতীয়টা হচ্ছে এটা আমাদেরকে এমনি এক জায়গায় নিয়ে এসেছে যে আমরা জানি না কী ঘটতে যাচ্ছে, ভবিষ্যৎ নিয়ে বলছি আর কি। কোন ধারণা নেই এটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে। আমার শিক্ষা বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ আছে -- আসলে কি, আমি দেখি যে সবারই শিক্ষা নিয়ে আগ্রহ আছে। আপনি কি বলেন? আমি এটাতে অনেক মজা পাই। আপনি যদি কোথাও রাতের খাবারের দাওয়াতে যান এবং বলেন যে, আপনি শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন -- অবশ্য, আপনি অধিকাংশ সময়ই রাতের খাওয়ার দাওয়াতে থাকেন না, যদি আপনি শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন। (হাসি) আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয় না। এবং উৎসাহী হয়ে আপনাকে কেউ উলটো জিজ্ঞেসও করে না। এটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগে। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয়, এবং এটা যদি আপনি কাউকে বলেন, জানেনই তো, তারা হয়ত বলল "আপনি কি করেন?" এবং আপনি বললেন আপনি শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন, আপনি দেখবেন তাদের মুখ একদম সাদা হয়ে যাবে। তারা বলবে, "হে ঈশ্বর! আমিই কেন?" পুরো সপ্তাহে এক রাতই আমি বের হয়েছি যা কিনা বরবাদ হয়ে গেল।" (হাসি) কিন্তু আপনি যদি তাদের শিক্ষার কথা জিজ্ঞেস করেন, তাহলে তারা আপনার পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দেবে। কারণ এটা সেসব জিনিসের মধ্যে একটা যা নিয়ে সবার একটা গভীর চিন্তা থাকে, ঠিক না? যেমন ধর্ম, এবং টাকা-পয়সা এবং আরও কিছু জিনিস। শিক্ষা নিয়ে আমার বিশাল আগ্রহ, এবং আমার মনে হয় সবারই। এটার প্রতি আমরা এতো গুরুত্ব দিচ্ছি খানিকটা এজন্য যে শিক্ষাই আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানাতে পারে যা আমরা এমনিতে ধরতে পারি না। যেমন চিন্তা করে দেখুন, এই বছর যেসব শিশু স্কুল শুরু করবে, তারা অবসর নেবে ২০৬৫ সালে। কারোর কোন ধারনাই নেই -- গত চারদিনে বিশেষজ্ঞদের ভাবনা সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও, যে পৃথিবীটাকে কেমন দেখাবে সামনের পাঁচ বছরে। তবুও আমাদের তার জন্য শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে। তাই এখানে পূর্বাভাস না পাওয়ার ব্যাপারটা আমি মনে করি, অস্বাভাবিক। আর তৃতীয়টা হচ্ছে আমাদের সবার সম্মতি যে সত্যিকারেই কিছু অসাধারণ ক্ষমতা শিশুদের আছে -- যেমন তাদের নতুনত্বকে ধারন করার ক্ষমতা। এই যেমন ধরুন গত রাতের সিরিনাকে; সে ছিল একটা চমক, তাই না? আমরা দেখেছি সে কি করতে পারে। এবং সে ব্যাতিক্রম, কিন্তু আমার তা মনে হয় না, অর্থাৎ পুরোটা শৈশবই সবার থেকে ব্যাতিক্রম নয়। এখানে ব্যাপারটা হল অসাধারণ নিষ্ঠা, যার মাধ্যমে সে নিজের প্রতিভাকে খুঁজে পেয়েছে। আমার কাছে বিবাদের কথা হল সব শিশুরই মুগ্ধ করার মত প্রতিভা আছে। এবং আমরা সেগুলোকে খুব নিষ্ঠুরভাবে নষ্ট করি। তাই আমি শিক্ষা নিয়ে কথা বলতে চাই এবং সৃজনশীলতা নিয়ে কথা বলতে চাই। আমার কথা হল এখন শিক্ষাক্ষেত্রে সাক্ষরতার মত সৃজনশীলতা একই রকম গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমাদেরও উচিত এটাকে একই চোখে দেখা। (তালি) ধন্যবাদ আপনাদের। এতটুকুই ছিল আমার কথা। অনেক ধন্যবাদ আপনাদের। (হাসি) যাইহোক এখনো ১৫ মিনিট বাকি। তো, আমি জন্ম নিলাম... আর... না... (হাসি) সম্প্রতি খুব সুন্দর একটা গল্প শুনেছি -- সেটা বলতে আমার খুব ভাল লাগে -- গল্পটা ছয় বছরের এক ছোট্ট মেয়ের ছবি আঁকার ক্লাস নিয়ে। সেদিন সে পিছনে বসে ছবি আঁকছিল, তার শিক্ষিকা জানিয়েছেন এমনিতে মেয়েটা কখনোই মনোযোগ দিত না, কিন্তু সেইদিন সে মনোযোগ দিচ্ছিল। শিক্ষিকা অভিভূত, তিনি মেয়েটার কাছে গেলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কী আঁকছ?" মেয়েটা উত্তর দিল, "আমি ঈশ্বরের ছবি আঁকছি।" শিক্ষিকা বললেন, "কিন্তু ঈশ্বর দেখতে কেমন, তা তো কেউ জানে না।" মেয়েটা বলল, "কয়েক মিনিট পরেই তারা জানতে পারবে।" (হাসি) ইংল্যান্ডে, যখন আমার ছেলের বয়স চার ছিল -- সত্যি কথা বলতে, সবখানেই ওর বয়স চার ছিল। (হাসি) বলতে গেলে, ও যেখানেই গেছে, ওর বয়স চারই ছিল প্রতি বছর। (হাসি) ও বড়দিনের নাটকে অভিনয় করেছিল। আপনাদের কাহিনীটা মনে আছে? (হাসি) না! কাহিনিটা বেশ বড়। মেল গিবসন ওটার সিকুয়াল নির্মাণ করেছেন। আপনারা হয়তো দেখেছেন: "ন্যাটিভিটি টু।" কিন্তু জোসেফের চরিত্রটা পেল জেমস, সেটা নিয়ে আমরা খুব শিহরিত ছিলাম। আমরা সেটাকে অন্যতম প্রধান চরিত্র বলে ভেবেছিলাম। পুরো জায়গাটা দর্শকে ঠাসাঠাসি হয়ে গিয়েছিল, টিশার্টে লেখা ছিলঃ "জেমস রবিনসন আজ জোসেফ!" (হাসি) ওকে কোন কথাই বলতে হয়নি, কিন্তু আপনারা তো জানেনই একটা সময় তিনজন রাজা আসেন। তারা উপহার সাথে আনেন, এবং আনেন সোনা, ফ্রাংকিনসেন্স (সুগন্ধি আঠা) আর ম্যার (সুগন্ধি নির্যাস)। এটা সত্যিই হয়েছিল। আমরা সেখানে বসে ছিলাম আর আমার মনে হল তখন ওরা পাট ভুলে গেছে, কারণ পরে আমরা ছোট্ট ছেলেটার সাথে কথা বললাম, জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কি ঠিক আছ?" সে উত্তর দিল, "হ্যা, কেন? কিছু কি ভুল হয়েছে?" ওরা গুলিয়ে ফেলেছিল, ব্যস। যাক, তো সেই তিনটি ছেলে এল -- চার বছর বয়সী, মাথায় তোয়ালে পেঁচানো অবস্থায় -- তারা ওই বাক্সগুলোকে নিচে রাখলো, প্রথম ছেলেটা বলল, "আমি তোমার জন্য সোনা এনেছি।" দ্বিতীয় ছেলেটা বলল, "আমি তোমার জন্য ম্যার (সুগন্ধি নির্যাস) এনেছি।" আর তৃতীয় ছেলেটা বলল, "ফ্রাংক এটা পাঠিয়েছে" (হাসি) শিশুদের মধ্যে এখানে সাধারণ একটা ব্যাপার হল, ওরা সুযোগ নেয়। ওরা যদি কিছু নাও জানে, তবুও ওরা তা চেষ্টা করে দেখে। ঠিক বলেছি? ওরা ভুল করাকে ভয় পায় না। আমি বলছি না যে ভুল করা আর সৃজনশীলতা একই কথা। আমরা যেটা জানি সেটা হল আপনি যদি ভুল করতে প্রস্তুত না থাকেন, তবে আপনি কখনোই মৌলিক কিছু করতে পারবেন না -- যদি ভুল করতে প্রস্তুত না থাকেন। আর যতদিনে এসব শিশুরা পূর্ণবয়স্ক হয়, অধিকাংশই এই ক্ষমতাটা হারিয়ে ফেলে। ওরা নিজের ভুল করা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এবং আমরা কিন্তু এভাবেই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো চালাচ্ছি। আমরা ভুলকে কলঙ্কিত করি। আমরা এখন এমন জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা চালাচ্ছি যেখানে ভুল করাকে একবারেই নিকৃষ্ট হিসেবে ধরা হয়। আর তার ফল হল, আমরা মানুষকে শিক্ষিত করে তার নিজের সৃজনশীলতার বাইরে এনে ফেলছি। পিকাসো বলে গেছেন -- "সব শিশুই জন্মগতভাবে শিল্পী।" সমস্যাটা হল, বড় হওয়ার সাথে সাথে সেই শিল্পীসত্তাকে ধরে রাখা। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি যে, আমরা সৃজনশীলতার ভিতরে বেড়ে উঠি না, ক্রমান্বয়ে আমরা এর বাইরে যেতে থাকি। ভালভাবে বললে, শিক্ষিত হয়ে আমরা এর বাইরে যেতে থাকি। কেন এমন হয়? পাঁচ বছর আগ পর্যন্তও আমি স্টার্টফোর্ড-অন-এভানে থাকতাম। এমনকি, আমরা স্টার্টফোর্ড থেকেই লস এঞ্জেলসে এসেছি। আপনারা বুঝতেই পারছেন কতটা নিখুঁত ছিল অবস্থান্তরটা ! (হাসি) আসলে, আমরা থাকতাম স্নিটারফিল্ডে, স্টার্টফোর্ডের একটু বাইরে, যেখানে শেক্সপিয়ারের বাবার জন্ম। নতুন কোন ভাবনায় আটকে গেলেন? আমি কিন্তু আটকেছিলাম। শেক্সপিয়ারেরও যে বাবা আছে, তা আপনি কখনো চিন্তা করেন না, করেন কি? কারন আপনারা নিশ্চয়ই শেক্সপিয়ারকে শিশু হিসেবে চিন্তাই করেন না, তাই না? সাত বছরের শেক্সপিয়ার? আমি কখনোই ভাবিনি। বলতে চাচ্ছি যে, সেও কখনো সাত বছরের শিশু ছিল। সেও কোন শিক্ষকের ইংরেজি ক্লাসে যেত তাই না? সেটা কতটা বিরক্তিকর হতে পারে? (হাসি) "আরো ভালভাবে চেষ্টা কর" (হাসি) শেক্সপিয়ারের বাবা তাকে বিছানায় পাঠিয়ে বললেন "এখুনি ঘুমাতে যাও।" "পেন্সিলটা রেখে দাও। আর এভাবে কথা বলা বন্ধ কর। এটা সবাইকে মাথা খাচ্ছে।" (হাসি) সেকথা থাক, আমরা স্টার্টফোর্ড থেকে লস এঞ্জেলস চলে এলাম, আমি এই অবস্থান্তর সম্পর্কে একটা কথা বলতে চাই, আমার ছেলে আসতে চায়নি। আমার দুই সন্তান। ছেলের বয়স এখন ২১, মেয়েটার ১৬ । ছেলেটা আসতে চায়নি লস আঞ্জেলসে। ও পছন্দ করত, কিন্তু ওর ইংল্যান্ডের এক প্রেমিকা ছিল। সে-ই ছিল আমার ছেলের জীবনের ভালবাসা, সারাহ। ও তাকে এক মাস ধরে চিনতো। (হাসি) আবার বলছি, ওরা ওদের সম্পর্কের ৪র্থ বার্ষিকী পালন করেছে, কারণ ১৬ বছর বয়সে এটা একটা বিশাল সময়। প্লেনের মধ্যে আমার ছেলের মন খুব খারাপ ছিল। আর ও বলছিল, "আমি আর কখনো সারাহ-র মত কাউকে খুঁজে পাবো না।" সত্যি বলতে কি, আমরা কিন্তু এসব দেখে খুশি হয়েছিলাম, (হাসি) কেননা মেয়েটাই আমাদের ওই দেশ ছাড়ার প্রধান কারন ছিল! (হাসি) কিন্তু কিছু একটা আঘাত করে যখন কেউ আমেরিকায় আসে এবং যখন কেউ বিশ্বভ্রমনে বের হয়: বিশ্বের সব শিক্ষাব্যবস্থাই বিভিন্ন বিষয়ে একই ক্রম মেনে চলে। প্রত্যেকটায়। আপনি যেখানেই যান না কেন। আপনি ভাববেন হয়তো অন্যরকম হতে পারে, কিন্তু তা নয়। সবচেয়ে উপরে আছে গনিত আর ভাষা, তারপর মানবিক, আর সবচেয়ে নিচে শিল্পকলা। বিশ্বের সব জায়গায়। এবং অধিকাংশ ব্যাবস্থাতেই আবার শিল্পকলার মধ্যেও উঁচুনিচু আছে। চিত্রকলা আর সংগীতকে সাধারনত স্কুলগুলোতে উচ্চমর্যাদা দেয়া হয় নাট্যকলা আর নৃত্যের তুলনায়। এই দুনিয়ায় একটা শিক্ষাব্যাবস্থাও এমন নেই যেখানে প্রতিদিন নাচ শেখানো হয় যেমন করে আমরা প্রতিদিন অংক করাই। কেন? কেন নেই? আমি মনে করি এটাই জরুরি। আমি মনে করি, অংক খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নৃত্যও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চারা সারাক্ষণ নাচবে যদি তাদের অনুমতি দেয়া হয়, আমরাও কিন্তু তেমনি। আমাদের সবারই দেহ আছে, তাই না? আমি কি কোথাও ভুল বললাম? (হাসি) সত্যি বলতে কি, শিশুরা যখন বড় হয়, আমরা তাদের কোমরের থেকে শেখাতে শুরু করি আর তারপর উপরে উঠতে উঠতে আমরা তাদের মাথার দিকে নজর দেই। তারপর হালকাভাবে একদিকে। আপনাকে যদি বাইরের কেউ হিসাবে শিক্ষাক্ষেত্র ঘুরিয়ে এনে জিগ্যেস করা হত, "কিসের জন্য, এই জনশিক্ষা?" আমার মনে হয় আপনি বলতেন -- আপনি যদি ফলাফলের দিকে তাকান, মানে যারা সত্যিই এটার মাধ্যমে সফল; যারা যা যা করার দরকার, তার সব করে, যারা সকল সামাজিক খ্যাতি পায়, যারা বিজয়ী -- আমার মনে হয় আপনাদের বলতে হবে যে পুরো বিশ্ব জুড়ে জনশিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গড়ে তোলা। তাই না? তারাই তো পরীক্ষায় প্রথম হওয়া ছাত্র। আমিও এরকমই একজন ছিলাম, তাই আরকি। (হাসি) আর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পছন্দ করি, কিন্তু তাদেরকে মানুষের অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উঁচুদরের হিসেবে দেখা উচিত নয়। এটা জীবনযাপনের একটা উপায় মাত্র, অন‍্য একটা উপায়। কিন্তু এরা জানতে বেশ আগ্রহী, তাদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই বলছি। আমার অভিজ্ঞতা বলে প্রফেসরদের মাঝে জানার আগ্রহ রয়েছে -- সবার না, কিন্তু অধিকাংশেরই -- তারা তাদের মাথার ভিতরে বসবাস করে। তারা উপরেই বসবাস করে, এবং হালকাভাবে এক দিকে হেলে। তারা সত্যিই সত্যিই বিমূর্ত, শরীর বিহীন। তারা তাদের শরীরের দিকে তাকায় আর একে তাদের মাথার বাহন হিসেবে বিবেচনা করে, তাই না? (হাসি) এটা তাদের মাথাকে মিটিঙে নিয়ে যাওয়ার একটা পরিবহন। যদি "দেহ-বহির্ভূত সত্তা" অভিজ্ঞতার আসল প্রমাণ পেতে চান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটা আবাসিক সভায় যান এবং সেই পার্টির শেষ রাতে নাচানাচির অনুষ্ঠানে হঠাৎ করে উদয় হোন। (হাসি) সেখানে আপনি দেখতে পাবেন -- পূর্ণবয়স্ক নারী-পুরুষেরা যন্ত্রণা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অপেক্ষা করছেন পার্টি শেষ হওয়ার, যাতে তারা বাড়ি গিয়ে এটা সম্পর্কে একটা গবেষণামূলক রচনা লিখতে পারেন। এখন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ধর্ম "প্রতিষ্ঠানিক যোগ্যতা"-র উপর ঠিক করা হয়েছে। এখানে একটা কারণ আছে। বিশ্বে এই পুরো ব্যাবস্থাটা উদ্ভাবন করা হয়েছে ১৯ শতকে। সত্যিই তার আগে কোন জনশিক্ষা ব্যাবস্থা ছিল না। এ সব এসেছিল শিল্প-বিপ্লবের প্রয়োজন মেটাতে। তাই শিক্ষার ক্রমধারা দুইটি পর্যায়ে বিভক্ত হল। প্রথমত, যেসব বিষয় কাজের ক্ষেত্রে উপকারী, সেগুলো উপরের দিকে আছে। তাই আপনি যখন ছোট ছিলেন তখন আপনার কিছু ভাল লাগার বিষয়কে খুব যত্নে এড়িয়ে চলতেন, সেগুলোকে মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন, এই ভয়ে যে ওগুলো নিয়ে পড়লে আপনি কখনো কোন কাজকর্ম পাবেন না। ঠিক কিনা? সংগীত চর্চা কোর না, তুমি সংগীতশিল্পি হবে না; ছবি এঁক না, তুমি শিল্পী হবে না। বিনীত পরামর্শ -- এখন, এটা গভীরভাবে ভুল। একটা বিপ্লব এখন পুরো বিশ্বকে গ্রাস করেছে। আর দ্বিতীয়ত হল প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা, যেটা আসলেই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ‍্যতাকে দেখার ভঙ্গি বদলে ফেলছে, কারন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মত করেই ব্যবস্থাটি তৈরি করেছে। আপনারা চিন্তা করলে দেখবেন, আসলে বিশ্বে জনশিক্ষার পুরো ব্যাবস্থাটাই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের একটা দীর্ঘায়িত ব্যাবস্থা। আর তার ফল হল, অনেক উচ্চমানের মেধাবী, উজ্জ্বল, সৃষ্টিশীল মানুষ নিজেদের তা মনে করে না। কারন তারা যে বিষয়ে ভাল ছিল, স্কুলে তার কোন মুল্য ছিল না, অথবা কলঙ্কজনক ছিল। এবং আমার মনে হয় এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। ইউনেস্কো-র মতে, ইতিহাসের শুরু থেকে যত মানুষ স্নাতক করেছে, আগামী ৩০ বছরে এর সংখ্যা তার থেকেও বেশি হবে। আরো মানুষ, আর তা হল আমরা এতক্ষন যেসব নিয়ে কথা বললাম তার সমষ্টি -- অর্থাৎ প্রযুক্তি আর কাজের রুপান্তরের উপর এর প্রভাব, এবং জনসংখ্যা তত্ত্ব আর বিশাল জনসংখ্যার বিস্ফোরণ। হঠাৎ করেই, ডিগ্রী এখন মূল‍্যহীন। সত্যি কিনা? আমি যখন ছাত্র ছিলাম, ডিগ্রী থাকা মানেই চাকরী নিশ্চিত ছিল। তবুও কারো চাকরী না থাকা মানে ছিল সে চাকরী করতেই চায় না। আর সত্যি কথা, আমিও চাইনি। (হাসি) কিন্তু এখন ডিগ্রী থাকলেও বাচ্চারা প্রায়ই বাড়িতে ছুটে আসে ভিডিও গেম খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য, কারণ চাকরীর জন্য এম.এ. দরকার, যেখানে আগের চাকরীতে বি.এ. করলেই চলতো, আর এখন অন্যগুলোর জন্য পিএইচডি দরকার। এটা প্রতিষ্ঠানিক স্ফীতির একটা প্রক্রিয়া। এটা ইঙ্গিত করে যে শিক্ষার পুরো গঠনটা আমাদের পায়ের তলাতেই বদলে যাচ্ছে। আমাদের বুদ্ধির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি মৌলিকভাবে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে আমরা তিনটি জিনিস জানি। প্রথমত, এটা বহুমুখী। আমরা বিশ্বকে সেসব রূপে চিন্তা করি যা আমরা অভিজ্ঞতায় অনুভব করেছি। আমরা চিন্তা করি চাক্ষুষ, শব্দের মাধ্যমে, উপলব্ধির মাধ্যমে। আমরা চিন্তা করি বস্তুনিরপেক্ষ ভাবে, নড়াচড়ার মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত, বুদ্ধিবৃত্তি প্রগতিশীল (গতিময়)। গতকাল বিভিন্ন উপস্থাপনায় আমরা যা দেখলাম, আপনারা যদি মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকলাপের দিকে খেয়াল করেন তাহলে দেখতে পাবেন বুদ্ধিবৃত্তির পারস্পরিক ক্রিয়া বিস্ময়কর। মস্তিষ্ক বিভিন্ন কামরায় বিভক্ত নয়। এমনকি, সৃজনশীলতা -- যাকে আমি মূল্যবান মৌলিক চিন্তা করার প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করি -- দৃষ্টিভঙ্গির সৃজনশীলতা আমাদের বিভিন্ন শৃঙ্খল দ্বারা নয়, বরং মনের মুক্ত কার্যকলাপ দ্বারা বিকশিত হয়। মস্তিষ্ক উদ্দেশ্যমূলকভাবে -- বলে রাখি, মস্তিষ্কের দুই খণ্ডকে একত্র করে "করপাস ক্যালোসাম" নামের স্নায়ু-রশ্মি। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা তুলনামুলকভাবে মোটা। গতকাল হেলেনের কথা থেকে বলছি, আমার মনে হয় এই জন্যেই মেয়েরা একসাথে বহুকাজ ভালভাবে করে। এটা সত্যি, তাইনা? এটা নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও আমি আমার ব্যক্তিগত জীবন থেকে জেনেছি। আমার স্ত্রী হয়তো বাড়িতে রান্না করছে -- যেটা খুব কম হয়, ভাগ্য ভাল। (হাসি) কিন্তু ধরুন, সে রান্না করছে -- না, সে কিছু জিনিসে খুব ভাল -- কিন্তু বুঝতেই পারছেন, সে হয়তো রান্না করছে, সে ফোনে মানুষজনের সাথে কথা বলছে, সে ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলছে, সে ছাদ রঙ করছে, সে ওখানে ওপেন-হার্ট সার্জারিও করছে। (হাসি) আমি যদি রান্না করতে যাই, দরজা বন্ধ থাকে, বাচ্চারা বাইরে থাকে, ফোন তার জায়গায় থাকে, আমার স্ত্রী আসলে আমার বিরক্ত লাগে। আমি বলি, "টেরি, প্লিজ, আমি এখানে ডিম ভাজতে চেষ্টা করছি। আমাকে বিরক্ত কর না।" (হাসি) আসলে, আপনারা সেই পুরানো দার্শনিক তত্ত্বটা জানেন, বনের মধ্যে কোন গাছ পড়লে কেউ যদি তা না শোনে, তবে কি তা হয়েছে? মনে পড়ে সেই পুরানো চেস্টনাট? আমি অতিসম্প্রতি একটা টিশার্ট দেখেছি, তাতে লেখা "একজন পুরুষ যদি বনের মধ্যে নিজের মনের কথা বলে, আর কোন নারী যদি তা শুনতে না পায়, তবুও কি সে ভুল?" (হাসি) আর বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে তৃতীয়ত হল, এটা স্পষ্ট। এই মুহূর্তে আমি একটা নতুন বই লিখছি "এপিফেনী (Epiphany)", এটা বিভিন্ন মানুষের সাক্ষাৎকারের ধারার উপর ভিত্তি করে বানানো যে তারা কিভাবে নিজেদের প্রতিভা আবিস্কার করেছেন। এই পর্যায়ে যেভাবে তারা এসেছেন, তা দেখে আমি মুগ্ধ। এটা সত্যি ঘটেছে যখন আমি একজন চমৎকার মহিলার সঙ্গে কথা বলছিলাম, যার কথা হয়তো অধিকাংশ মানুষই শোনেনি, তার নাম জিলিয়ান লিন -- আপনারা তার নাম শুনেছেন? কেউ কেউ হয়তো শুনেছেন। সে একজন নৃত্যপরিকল্পনাকারী (কোরিওগ্রাফার) এবং এমন একজন যে নিজের কাজ জানে। সে "ক্যাটস্‌" এবং "ফ্যান্টম অব দ্য অপেরা" করেছে। সে অসাধারণ। আমি ইংল্যান্ডের রয়্যাল ব্যালের পরিচালনা পর্ষদে ছিলাম আপনারা বুঝতেই পারছেন। (হাসি) সে যাক, জিলিয়ান আর আমি একদিন একসাথে লাঞ্চ করছি, আমি বললাম "জিলিয়ান, তুমি নৃত্যশিল্পী কিভাবে হলে?" সে বলল এটা খুব মজার; ও যখন স্কুলে ছিল, ও সত্যিই খুব হতাশ ছিল। স্কুলটা ত্রিশের দশকে ওর অভিভাবকের কাছে লিখেছিল, "আমাদের মনে হচ্ছে জিলিয়ানের কোন শিক্ষাজনিত অসুস্থতা আছে।" ও মনোযোগ দিতে পারত না; অস্থিরতায় ভুগতো। মনে হয়, একাল হলে তারা বলতো ওর ADHD (অতিমাত্রায় মনোযোগের অভাবজনিত রোগ) আছে। তাইনা? কিন্তু সেটা ছিল ১৯৩০ সালের দিকে, আর তখনো তো ADHD উদ্ভাবিত হয়নি। তখন সেটা খুব সুলভ অবস্থায় ছিল না। (হাসি) মানুষ জানতোই না যে তাদের এটা হতে পারে। সে যাক, ও এক বিশেষজ্ঞের কাছে গেল। সেখানে ওক-কাঠের দেয়ালের ঘরে ওর মা'র সাথে, ওকে শেষদিকের একটা চেয়ারে বসতে দেয়া হল। ও সেখানে ২০ মিনিটের মত বসে রইল, ততক্ষন সেই লোকটা ওর মায়ের সঙ্গে জিলিয়ানের স্কুল সম্পর্কিত সব সমস্যা নিয়ে কথা বলতে লাগলো। কারণ ও লোকজনদের বিরক্ত করত; ওর বাড়ির কাজ করতে সবসময় দেরী হত; আরও কত কী, আট বছরের ছোট শিশু -- শেষে, ডাক্তারটি এসে জিলিয়ানের পাশে বসে বলল, "জিলিয়ান, তোমার মা যা কিছু বলেছেন আমি তা শুনেছি। আর এখন তার সাথে আমার গোপনে কিছু কথা বলতে হবে।" সে বলল, "এখানেই অপেক্ষা কর। আমাদের ফিরতে দেরী হবে না। বেশি সময় নেব না" তারপর তারা তাকে রেখে চলে গেল। কিন্তু যাওয়ার আগে ডাক্তারটি তার রেডিও অন করে দিল, যেটা তার ডেস্কের উপরই রাখা ছিল। ঘর থেকে বের হয়েই ডাক্তারটি ওর মাকে বলল, "শুধু দাড়িয়ে ওকে দেখতে থাকুন।" আর ঠিক যেই মুহূর্তে তারা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, ও উঠে গিয়ে বাজনার সাথে সাথে নাচছিল। তারা কয়েক মিনিট ধরে এটা দেখলো, তারপর সে আমার মায়ের দিকে ঘুরে বলল, "মিসেস লিন, জিলিয়ান অসুস্থ নয়, ও একজন নৃত্যশিল্পী। ওকে নাচের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিন।" আমি জিগ্যেস করলাম, "তারপর কি হল?" ও বলল, "মা তাই করেছিল। আমি আপনাকে বোঝাতে পারব না সেটা কত চমৎকার ছিল। আমরা একটা ঘরে হাঁটছিলাম যেটা সম্পূর্ণ আমার মত মানুষ দিয়ে ভর্তি। যারা স্থিরভাবে বসে থাকতে পারত না। যাদের চিন্তা করতে হলেই নাচতে হত।" যাদের চিন্তা করতে হলেই নাচতে হত। ওরা ব্যালে করত, ট্যাপ করত, য্যাজ করত; ওরা আধুনিক নাচ করত; সমসাময়িক নাচ করত। এরপর, রয়্যাল ব্যালে স্কু্লে নিয়োগের জন্য ও পরীক্ষা দিল ও একক নৃত‍্যশিল্পী হয়ে গেল; রয়্যাল ব্যালেতে ও চমৎকার একটা কর্মজীবন পেল। অবশেষে ও রয়্যাল ব্যালে স্কুল থেকে স্নাতক শেষ করল এবং নিজের কোম্পানি গঠন করল -- দ্য জিলিয়ান লিন ড্যান্স কোম্পানি -- এন্ড্রু লয়েড ওয়েবার-এর সাথে ওর দেখা হল। ইতিহাসের কিছু অত্যন্ত সাফল্যময় সংগীতধর্মী নাটক সৃষ্টিতে জিলিয়ানের অবদান রয়েছে; ও লক্ষ লক্ষ মানুষকে আনন্দ দিয়েছে; আর ও একজন কোটিপতি; অন্য কেউ হলে হয়তো ওকে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করাতো আর বলতো শান্ত হয়ে থাকতে। এখন, আমি মনে করি... (তালি) আমার যা মনে হয়.. (হাততালি) এটা যেখান থেকে এসেছে তা হলঃ আল গোর সেই রাতে পরিবেশ নিয়ে যা বলেছে এবং র‍্যাচেল কারসন "বৈপ্লবিক পরিবর্তন" কে যেভাবে তুলে ধরেছে। আমি বিশ্বাস করি যে ভবিষ্যতের জন্য আমাদের একমাত্র আশা হল মানুষের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে নতুন ধারনা গ্রহন করা, যেখানে আমরা মানুষের ক্ষমতার ঐশ্বর্য সম্পর্কে আমাদের ধারনাকে নতুন করে গঠন করবো। শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের মনকে এমনভাবে দুর্বল করে তুলেছে যে আমরা খোলা খনি দিয়ে পৃথিবী ছেয়ে ফেলেছিঃ শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য। ভবিষ্যতে, এটা আমাদের কাজে আসবে না। আমরা যেই মৌলিক নীতির উপরে ভিত্তি করে শিশুদের শিক্ষা দিচ্ছি তা নিয়ে আমাদের আবার চিন্তা করতে হবে। জোনাস সল্কের একটা চমৎকার বানী হল, "যদি পৃথিবীর সব পোকামাকড় ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে তার ৫০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে বাকি সব জীবও ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি পৃথিবীর সব মানুষ ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে তার ৫০ বছরের মধ্যে বাকি সকল প্রকারের জীব সমৃদ্ধি লাভ করবে।" আর সে ঠিকই বলেছে। এখানে TED যা উদযাপন করছে তা হল, মানুষের কল্পনাশক্তির উপহার। আমাদের সচেতন হতে হবে যেন আমরা এই উপহারকে বিচক্ষনভাবে কাজে লাগাই আর যেসব ঘটনা সম্পর্কে এখানে জানলাম সেগুলোকে এড়াতে পারি। আর এটা করার একমাত্র উপায় হল নিজের সৃজনশীল ক্ষমতাকে এর প্রকৃত ঐশ্বর্য নিয়ে দেখা, আর সন্তানদের আমাদের আশা হিসেবে দেখা কারন ওরা সত্যিই তাই। এবং আমাদের কাজ হল তাদের সম্পূর্ণ সত্ত্বাকে শিক্ষিত করা, যাতে তারা ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে পারে। যাই হোক -- আমরা আমাদের সেই ভবিষ্যতকে দেখতে না পেলেও, ওরা পারবে। আমাদের কর্তব্য হল সেখান থেকে কিছু গঠন করতে ওদের সাহায্য করা। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি সমবেদনার কথা বলছি ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে এবং সম্ভবত আমার বিশ্বাস খুব ভাল চোখে দেখা হয় না যেহেতু ইহা সমবেদনার ভিত্তিতে স্থাপিত। কিন্তু বিষয়টির সত্যতা হলো ভিন্ন। আমাদের পবিত্র গ্রন্থ, আল-কোর'আন, ১১৪ টি অধ্যায় সম্বলিত এবং প্রতিটি অধ্যায়ের শুরু হয় যাকে আমরা বলি বিসমিল্লাহ যা মূলত বোঝায় "পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে" অথবা জনাব রিচার্ড বাটন এর মতে- এই রিচার্ড বাটন সেইজন নন যিনি এলিজাবেথ টেলরের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, বরং তিনি জনাব রিচার্ড বাটন যিনি ইহার শতাব্দী পূর্বে বসবাস করতেন এবং যিনি একজন বিশ্ব বিখ্যাত পর্যটক ছিলেন এবং বহু সাহিত্যের অনুবাদক ছিলেন, অনুবাদ করেন "দয়াশীল ও দয়ালু ইশ্বরের নামে" এবং কোরানের একটি বক্তব্যে, যা মুসলমানদের মতে মানবতার তরে ইশ্বরের বাণী ইশ্বর তাহার নবীকে বলছেন- যাহাকে আমরা বিশ্বাস করি নবীগনের মাঝে শেষ নবী যাহার শুরু আদম দিয়ে, নুহু, মুসা, ইব্রাহিম, যিশু খ্রিস্ট হয়ে মুহাম্মদ এ শেষ হয়-- যে, "আঁমি তোমাকে প্রেরণ করিনি, হে মুহাম্মদ, মানবতার তরে 'রহমত' ব্যতিত, 'দয়ার উৎস' ব্যতিত" মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য এবং বিশেষ করে মুসলিম হিসেবে, যাদের উদ্দেশ্য এবং যাদের লক্ষ্য নবীর পথ অবলম্বন করা নিজেদের নবীর মত করে তৈরি করা । এবং মহানবী তাহার এক বর্ণনায় বলেন, "আল্লাহর বৈশিষ্ট্যাবলী দিয়ে নিজেকে বিভূষিত কর।" এবং স্বভূমিকায় ঈশ্বর বলেন যে তাঁহার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সমবেদনা- বাস্তবিকই, কোরান বর্ণিত যে "ঈশ্বর নিঁজেকে নিবন্ধিত করেছেন সমবেদনায়" অথবা "অলংকৃত করেছেন সমবেদনায়"-- সুতরাং, সমবেদনার উৎস হওয়া আমাদের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য হতে হবে সক্রিয় সমবেদনশীল, সমব্যথী গণ এবং সমব্যথী বক্তাগণ এবং সমব্যথী কর্মীগণ । সবই ঠিক আছে এবং সবই ভালো, তবে কোথায় আমরা ভুল করি, এবং পৃথিবীতে আমাদের সমবেদনার মাঝে ঘাটতি কোথায়? এর উত্তরে, আমরা আধ্যাত্মিকতার পথে দেখি প্রত্যেক ধর্মীয় ঐতিহ্যে, বাহিরের পথ এবং ভিতরের পথ আছে, অথবা আছে বাহ্য পথ এবং আভ্যন্তরীণ পথ ইসলামের অভ্যন্তরীণ পথের জনপ্রিয় নাম যা সুফিবাদ বা আরবিতে "তাসাউফ" এবং এই বিদ্বানগণ বা এই শিক্ষকগণ এই সুফী ঐতিহ্যের আধ্যাত্মিক শিক্ষকগণ, আমাদের নবীর শিক্ষা এবং উদাহরণকে তুলে ধরেন যা আমাদের শিক্ষা দেয় আমাদের সমস্যার মূল কোথায় । একটি যুদ্ধে যেখানে নবীজি যুদ্ধরত ছিলেন, তিনি তার অনুসারীদের বললেন,"আমরা একটি ক্ষুদ্রতর যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তন করছি বৃহত্তর যুদ্ধে, বৃহত্তর সংগ্রামে।" এবং তারা বললেন,"হে আল্লাহর রসূল, আমরা যুদ্ধক্লান্ত, আমরা কিভাবে আরেকটি বৃহত্তর যুদ্ধে যাব?" তিনি বললেন,"এটা নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, অহংকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ।" মানুষের সমস্যার মূল কারণ হয়ে থাকে আত্মঅহমিকা যা "আমি" এর বর্হিপ্রকাশ। জনপ্রিয় সুফি শিক্ষক রুমি, যিনি আপনাদের সবার কাছে পরিচিত একটি ঘটনায় তিনি একজন ব্যক্তির কথা বলেন যে তার বন্ধুর বাড়িতে যায় এবং দরজায় কড়া নাড়ে এবং একটি কন্ঠ উত্তর দেয়,"কে?" "এটা আমি" বা শুদ্ধভাবে বলতে "ইহা আমি" যেভাবে আমরা ইংরেজিতে বলি। কন্ঠটি বলল,"দূর হও।" বহু বছরের জিজ্ঞাসা,লড়াই আর সাধনা, প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ফেরত এলেন । আরো নম্রতার সাথে, তিনি দরজায় পুনরায় কড়া নাড়লেন । কন্ঠটি জিজ্ঞাস করে,"কে সেখানে?" তিনি উত্তর দিলেন,"তুমি,হে পাষান" দরজা খুলল এবং কন্ঠটি বলল, "ভিতরে আসুন,এ ঘরের কক্ষে দুটি "আমি"র স্থান নেই।" -দুটি প্রধান অক্ষর "আমি"-এই চোখ নয়- বরং "দুটি অহংকার" এর জন্য এবং রুমির ঘটনাগুলো হলো আধ্যাত্মিক পথের রূপক সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতিতে একটি "আমি"র বেশি কোনো স্থান নেই এবং তা হলো স্বর্গীয় "আমি" আমাদের একটি শিক্ষা যাকে ঐতিহ্যগতভাবে হাদিসে কুদস বলা হয়- সৃষ্টিকর্তা বললেন,"হে আঁমার বান্দা" বা "আঁমার সৃষ্টি, আঁমার মানব সৃষ্টি, আঁমার প্রিয় কোনো কিছু দ্বারা আমার সন্নিকটে আসে না বরং ঐ কর্ম দ্বারা যা আঁমি পালন করতে বলি" এবং আপনারা যারা কর্মকর্তা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমি কি বলছি আপনি চান আপনার কর্মচারী তাই করুক যা আপনি তাদের করতে বলছেন যদি তারা তা করে তবে তারা আরো একটু বেশি করতে পাবে কিন্তু এও ভুলে যান না আপনি কি করতে বলেছেন এবং সৃষ্টিকর্তা বলেছেন,"আঁমার বান্দারা প্রতিনিয়ত আঁমার সন্নিকটে আসতে থাকে, বেশি কর্ম সাধন দ্বারা যা আঁমি তাদের করতে বলেছি"- অধিক কৃতিত্ব, আমরা বলতে পারি- "যতক্ষণ পর্যন্ত না আঁমি তাকে ভালবাসি এবং যখন আঁমি আঁমার বান্দাকে ভালবাসি,"সৃষ্টিকর্তা বলছেন, "আঁমি ঐ চক্ষু হয়ে যাই যা দিয়ে ও দেখে, ঐ কর্ণ যা দিয়ে ও শুনে, ঐ হস্ত যা দিয়ে ও ধরে, ঐ পা যুগল যা দিয়ে ও চলে, ঐ হৃদয় যা দিয়ে ও অনুধাবন করে" ইহা স্বর্গীয়তার সহিত আপনসত্তার একাত্ততা ইহাই আমাদের আধ্যাত্মিক পথের এবং সাথে অন্যান্য সকল বিশ্বাসের শিক্ষা ও উদ্দেশ্য । মুসলিমরা যীশুখ্রিস্টকে সূফীবাদের গুরু মানে, একজন মহান নবী এবং দূত যিনি এসেছিলেন আধ্যাত্মিক পথের গুরুত্ব অনুধাবন করাতে । যখন তিনি বলেন, " আমি-ই সত্ত্বা, এবং আমি-ই পথ," এবং যখন মহানবী মুহাম্মাদ(স) বলেন, "যে আমাকে দেখেছে সে স্রষ্টাকে দেখেছে," এটা কারন তাহারা স্রষ্টার এমন এক উপকরন হয়েছিলেন, যে তাহারা স্রষ্টার দলের এমন অংশ হয়েছিলেন - যাহার মাধ্যমে স্রষ্টার বক্তব্য প্রকাশ পেয়েছে, এবং তাহারা নিজেদের সত্ত্বা ও নিজেদের অহংকার হতে অভিনয় করেননি । সহানুভূতি এ পৃথিবীতেই দেয়া হয়েছে, এটা আমাদের মাঝেই আছে । আর আমাদেরকে যা করতে হবে তা হল আমাদের অহংকারকে পথ থেকে সরাতে হবে, আত্মপ্রাধান্য/আত্মম্ভরিতা কে পথ থেকে দূর করতে হবে । আমি নিশ্চিন্ত, সম্ভবত আপনারা এখানে সকলে, বা নিশ্চিতভাবে আপনাদের সিংহভাগ অনুধাবন করেছেন যাকে আপনারা আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা বলতে পারেন, যেখানে আপনার জীবনের এক মুহূর্তের, এক সেকেন্ডের, হয়তোবা এক মিনিটের, অহংকারের সীমানা দূরীভূত হয়েছে । এবং সেই সময়ে, আপনি মহাজগতের সাথে একাত্মতা অনুধাবন করেছেন - একজন যে ঐ জলের ধরা সহ, একজন যে সকল মানুষের সাথে, একজন যে স্রষ্টার সাথে - এবং আপনি অনুধাবন করেন যে আপনি অবস্থান করছেন সকল শক্তি মাঝে, সকল বিস্ময় মাঝে, গভীরতম ভালবাসার মাঝে, ক্ষমা ও করুনার গভীরতম অনুভুতির মাঝে যা আপনি আপনার জীবনে কখনো অভিজ্ঞতা পেয়েছিলেন । সেই মুহূর্তটি ই আমাদেরকে সৃষ্টিকর্তার উপহার - সেই উপহার, যখন কিছুক্ষণের জন্য, তিনি সে সীমানা তুলে নেন যেখানে আমরা জোর দিয়ে বার বার বলতে থাকি "আমি, আমি, আমি, আমার, আমার, আমার" বরং এর পরিবর্তে রুমির গল্পের সেই মানুষদের মত, আমরা বলি, "ওহে, ইহা শুধু তোমরা । তোমরাই সব । এবং ইহা হলাম আমরা । এবং আমরা, এবং আমি, এবং আমরা হলাম তোমাদের একটি অংশ । হে, স্রষ্টা! হে, অভীষ্ট! আমাদের সত্তার সূত্র এবং আমাদের ভ্রমনের শেষ, তুমি যে আবার আমাদের হৃদয় ভঙ্গকারী । তুমিই সেই যাহার অভিমুখে আমরা সবাই, যাহার উদ্দেশ্যে আমরা বেচে থাকি, এবং যাহার উদ্দেশ্যে আমরা মৃত্যুবরন করব । এবং যাহার উদ্দেশ্যে আমরা আবার সকলে পুনরুজ্জীবিত হব তুলে ধরতে কতটুকু পর্যন্ত আমরা নিজেদের করুনাময় সত্ত্বা করতে পেরেছি ।" আমাদের আজকের বার্তা, এবং আমাদের আজকের উদ্দেশ্য, এবং আপনারা যারা আজ এখানে উপস্থিত আছেন, এবং এ সমবেদনার প্রতিনিধি যার উদ্দেশ্য, মনে করিয়ে দেয়া । কোরআন এ জন্যই সর্বদা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একে অপরকে মনে করিয়ে দিতে । কারন সত্যের জ্ঞান আমাদের সকল মানুষের মাঝেই আছে । আমরা সবাই তা জানি । আমাদের সবার এতে অনুপ্রবেশ আছে । অপরিনতরা হয়ত একে বলেছে "অবচেতন" আমাদের অবচেতনার মাধ্যমে, আপনার স্বপ্নে - কোরআন আমাদের ঘুমন্ত অবস্থাকে বলে "ক্ষুদ্রতর মৃত্যু" "অস্থায়ী মৃত্যু" - নিদ্রাবস্থায় আমরা স্বপ্ন দেখি, কল্পনা করি, আমাদের অনেকেই আবার নিজেদের শরীর থেকে বাহিরে ভ্রমন করি এবং আমরা অনেক সৌন্দর্য দেখি আমরা স্থানের সীমাবদ্ধতা যা আমরা জানি তা থেকেও বাহিরে ভ্রমন করি, এমনকি কালের সীমাবদ্ধতার বাহিরেও যা আমরা জানি । কিন্তূ এ সকলই ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করার জন্য যাঁহার মূল নাম পরম করুনা প্রদর্শনকারী, পরম করুনাময় ঈশ্বর, খোদা, যে নামেই ডাকতে চান, আল্লাহ, রাম, ওম, আপনি যে নামেই তাঁকে ডাকেন না কেন বা স্বর্গীয়তার উপস্থিতি উপলব্ধি করেন, ইহা ই কেন্দ্রবিন্দু পরম সত্তার, পরম ভালবাসার এবং ক্ষমা ও করুনার, এবং পরম জ্ঞান এবং বিজ্ঞতার, যাকে হিন্দুগন বলে "সতচিদানন্দ"। ভাষা ভিন্ন, কিন্তু উদ্দেশ্য একই। রুমির আছে ভিন্ন কাহিনী তিনজনকে ঘিরে, একজন তুর্কি, একজন আরব- এবং তৃতীয় বাক্তি আমি ভুলে গিয়েছি, ধরে নিন একজন মালয় একজন আঙ্গুর চাইলেন,একজন, ধরে নিন ইংরেজ- একজন চাইলেন এনেব, এবং একজন চাইলেন গ্রেইপ এবং তারা মারামারি এবং ঝগড়া করলো কারণ আমি গ্রেইপ চাই, আমি এনেব চাই, আমি আঙ্গুর চাই এটা না জেনেই যে শব্দ তারা ব্যবহার করছেন তা বিভিন্ন ভাষায় একই বাস্তবতা বহন করে এখানে একটি মাত্র চরম বাস্তবতাকে সংজ্ঞায়িত করা যায় একটি পরম স্বত্তাকে সংজ্ঞায়িত করা যায়, কারন পরম হলো, সংজ্ঞানুযায়ী, একক এবং অবিমিশ্র ও একবচন এখানে একটি সত্তার সম্পূর্ণ মনোনিবেশ, চেতনার সম্পূর্ণ কেন্দ্রীকরণ, সজ্ঞানতার, সম্পূর্ণ সঠিক করুনা ও ভালবাসাকে স্বর্গীয়তার মূল উৎস সংজ্ঞায়িত করে এবং ইহা অবশ্যই মানব হবার মূল উপকরন যা মানবতাকে সংজ্ঞায়িত করে, জীববিজ্ঞানের ভিত্তিতে, তা আমাদের শারীরবৃত্ত, কিন্তূ সৃষ্টিকর্তা মানবতাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন আমাদের আধ্যাতিকতা দ্বারা, আমাদের চরিত্র দ্বারা । এবং কোর'আন এ বলা হয়েছে, ত্বিনি ফেরেশতাগনকে উদ্দেশ্য করিলেন এবং বলিলেন, "আমি আদমকে মাটি হইতে গঠন করিয়াছি। এবং তাহাকে আমার আত্না দ্বারা ধৌত করিয়াছি, সুতরাং তাহার অধোমুখে পতিত হও ।" ফেরেশতারা পতিত হয়েছিলেন, তবে মানব শরীরের নিকট নয়, বরং মানব আত্নার নিকট । কেন? কারন আত্না, মানব আত্না, স্বর্গীয়ধৌতের এক স্বরূপ বহন করে, এক স্বর্গীয় আত্নার স্বরূপ । ইহা বাইবেলের ভাষায়ও প্রকাশিত হয়েছে আমাদেরকে শিখানো হয়েছিল যে আমরা স্বর্গীয়রূপে সৃষ্ট হয়েছিলাম । স্বর্গীয়রূপ কি? স্বর্গীয়রূপ হল পরম সত্তা, সম্পূর্ণ সজ্ঞানতা এবং পরিপূর্ণ জ্ঞান ও বিচক্ষণতা এবং পরিপূর্ণ করুনা ও ভালবাসা এবং, এ কারণে আমাদের মানুষ হবার জন্য বৃহৎস্বার্থে মানুষ হবার জন্য যা বুঝায়, আনন্দ অনুভুতির সাথে মানুষ হবার জন্য যা বুঝায় - তা হল আমাদেরকেও প্রকৃত সেবক হতে হবে আমাদের মধ্যকার বহমান স্বর্গীয় শ্বাস - প্রশ্বাসের, এবং অন্বেষণ করতে হবে আমাদের মধ্যকার সত্তার গুন নিখুঁত করতে, বেঁচে থাকতে, সামগ্রিকতার তরে; বিজ্ঞতা, উপলব্ধি, সচেতনতার বৈশিষ্ট্য, এবং দয়াশীল ও স্নেহশীল সত্ত্বার বৈশিষ্ট্য । আমার বিশ্বাসের প্রথা হতে আমি এটাই বুঝি, এবং এটাই আমি বুঝি অন্য সকল বিশ্বাসের প্রথা অধ্যয়ন শেষে, এবং এই একই মঞ্চে আমাদের সকলকে একত্রে দাঁড়াতে হতে হবে । এবং যখন আমরা সকলে এই একই মঞ্চে দাঁড়াব, আমি মানতে বাধ্য যে আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরি করব । এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, আজ আমরা এমন এক প্রান্তে অবস্থান করছি এবং যেখানে, আপনাদের মত মানুষরা যারা আজ এখানে আছেন, আমরা ঈসাঈ বানী ফিরত আনতে পারি । যেখানে তিনি এক সময়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যখন মানুষ তাদের তরবারিকে লাঙ্গলে পরিনত করবে এবং যুদ্ধ শিখবে না বা যুদ্ধ করবেও না । আমরা মানব ইতিহাসের এক পর্যায়ে উপনিত হয়েছি, যেখানে আমাদের আর কোনো উপায় নেই ; আমাদেরকে অবশ্যই, আমাদের উচিত অহংবোধকে অবনমিত করা, অহংকারকে নিয়ন্ত্রণ করা, হোক তা বাক্তিগত অহংকার, নিজস্ব্ব অহংকার, পারিবারিক অহংকার, জাতীয় অহংকার- এবং চলুন সকল কিছু এক এককের উদ্দেশ্যে নিবেদন করি । ধন্যবাদ এবং সৃষ্টিকর্তা আপনাদের অনুগ্রহ করুন । (হাততালি) এই গত কয়েক বছর আগে আমার চোখ খুললো নির্মাণ শিল্পের অন্ধকার দিকগুলোর ব‍্যপারে। ২০০৬ সালে, কিছু তরুণ কাতারী ছাত্র আমাকে অভিবাসী শ্রমিকদের ক‍্যাম্প দেখাতে নিয়ে গেছিল। আর তারপর থেকে আমি শ্রমিক অধিকারের প্রকাশিত বিষয়গুলোর দিকে নজর দিয়েছি। গত ছয় মাসে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩০০ এর বেশী গগনচুম্বি অট্টালিকার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে অথবা বাতিল করা হয়েছে। এই সব অট্টালিকার শিরণামের আড়ালে ঢাকা পড়ে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া নির্মাণ শ্রমিকদের ভাগ্য। এরকম ১১ লাখ শ্রমিক। মূলত ভারতীয়, পাকিস্তানি, শ্রিলংকান, এবং নেপালি, এইসব শ্রমিকেরা সবকিছুর ঝুঁকি নিয়ে দেশে তাদের পরিবারের জন্য পয়সা রোজগার করে। তারা ওই দেশে যাওয়ার জন্য একজন দালালকে হাজার হাজার ডলার দেয়। আর যখন তারা পৌঁছায়, তারা নিজেদেরকে লেবার ক্যাম্পে আবিষ্কার করে যেখানে কোন পানি নাই, শিতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নাই, এবং তাদের পাসপোর্টগুলো নিয়ে নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সহজেই স্থানিয় অফিসের লোকজন এবং ঊর্ধতন কর্তিপক্ষের দিকে আঙ্গুল উঁচানো যায়, কিন্তু ৯৯ ভাগ শ্রমিক নিয়োগ করে বেসরকারি সংস্থাগুলো। আর তাই আমরা হয়ত আরও বেশি অথবা সমানভাবে, দায়বদ্ধ। বিল্ডসেফ ইউ.এ.ই এর মত সংগঠনগুলো তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই সংখ্যাগুলো আসলেই অবাক করার মত। আগস্ট ২০০৮ এ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অফিশিয়ালরা বলেন দেশের ১,০৯৮ টি লেবার ক্যাম্পের ৪০ শতাংশ ন্যূনতম স্বাস্থ্য ও অগ্নি নিরাপত্তা বিধি লংঘন করেছে। আর গত গৃষ্মে, ১০,০০০ এরও বেশি শ্রমিক বিক্ষোভ করেছে তাদের বেতন না দেওয়া, খাবারের জঘন্য মান, আর অপ্রতুল বাসস্থানের জন্য। আর তখনই অর্থনৈতিক পতন ঘটল। ঠিকাদারেরা যখন সর্বস্বান্ত হয়েছে, যেমন তারা আর সবার মত বাড়তি সুবিধা ভোগ করেছে, কিন্তু পার্থক্যটা হোল ওই শ্রমিকগুলোর সবকিছু হারিয়ে যায়, কাগজপত্র, পাসপোর্ট, দেশে ফেরার টিকেট, সব। বর্তমানে, এই মুহূর্তে, হাজার হাজার শ্রমিককে কাজ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দেশে ফেরার কোন উপায় নাই। এবং কোন পথ খোলা নাই, তাদের এখানে আসার কোন প্রমাণ নাই। এরাই হচ্ছে উত্থান-আর-পতনের উদ্বাস্তু। প্রশ্ন হচ্ছে, একজন নির্মাণ পেশাজীবি হিসেবে, একজন স্থপতি হিসেবে, প্রকৌশলি, একজন ডেভেলপার হিসেবে, আপনি যদি জানেন যে এগুলো ঘটছে, কারণ আমরা প্রতি সপ্তাহে সাইটে যাচ্ছি, আপনি কি অপরাধবোধে ভোগেন নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যপারটা চোখেই পড়ে না? চলুন আমরা পরিবেশগত কর্মকান্ডের ব্যপারটা ভুলে যাই। বরং চলুন আমাদের নৈতিক কর্মকান্ডের কথা ভাবি। এর মধ্যে কী এমন মাহাত্য আছে যে আমরা জিরো-কার্বন, জ্বালানী সচেতন ইমারত বানাচ্ছি, এবং শ্রমিকেরা এই স্থপতিক নিদর্শণ তৈরি করছে যখন তা নিতান্তই অনৈতিক? ইদানিং আমাকে বলা হচ্ছে যে আমি নাকি অতিসচেতন পথে চলছি। কিন্তু, এই বিষয়ে সোজা ভাষায় বললে, এই অতিসচেতনতা ছাড়া আর কোন রাস্তা নাই। তো আসুন আমরা ভুলে না যাই, এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আসল খেসারত কারা দিচ্ছে। আর আমরা যেমন চিন্তায় থাকি আমাদের পরবর্তি চাকরির জন্য, পরবর্তি কোন ডিজাইনের কাজ পেতে পারি, আমাদের শ্রমিকদেরকে রাখার জন্য। আসুন আমরা ভুলে না যাই এই লোকগুলোর কথা, যারা আসলেই কাজ করতে গিয়ে মারা পড়ছে। ধন্যবাদ। (তালি) পুরাণের কার্যাবলী অনুধাবন করতে গেলে যেটা একজন প্রধান বিশ্বাস অফিসারের করার কথা, আপনাকে একটা গল্প শুনতে হবে গণেশের, গণেশ হচ্ছেন সেই হাতির মাথাওয়ালা দেবতা যিনি গল্পকারদের অনুলেখক। আর তাঁর ভাই দেবতাদের সেনাপতি, কার্তিক। এই দুই ভাই একদিন একটা দৌড় প্রতিযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁরা গোটা পৃথিবী তিনবার চক্কর দিবেন। কার্তিক তাঁর বাহন ময়ুরে চড়ে বসলেন আর মহাদেশ, পাহাড়-সমুদ্র প্রদক্ষিণ করতে বেরোলেন। তিনি ঘুরলেন একবার, দুইবার, তিনবার। কিন্তু তাঁর ভাই গণেশ, শুধু তাঁর পিতামাতাকে প্রদক্ষিন করলেন। একবার, দুইবার, তিনবার, আর বললেন, ‘আমি জিতেছি।’ ‘কিভাবে?’, জিজ্ঞাসা করলেন কার্তিক। তখন গণেশ বললেন, ‘তুমি ঘুরেছ ‘এই পৃথিবী’ আর আমি ঘুরেছি ‘আমার পৃথিবী’। আর কী?’ আপনি যদি ‘এই পৃথিবী’ আর ‘আমার পৃথিবী’র পার্থক্য বুঝতে পারেন, তাহলে আপনি পার্থক্য বুঝতে পারবেন বাস্তবতা আর পুরাণ কথার। ‘এই দুনিয়াটা’ বস্তুবাদী, যৌক্তিক, সার্বজনীন, সত্যনির্ভর, বিজ্ঞানসম্মত। আর ‘আমার দুনিয়াটা’ মনঃকল্পিত। আবেগপূর্ণ, ব্যক্তিগত। এটা অনুধাবন, ভাবনা, অনুভব, স্বপ্ন। এটা সেই বিশ্বাস ব্যবস্থা, যা আমরা বহন করি। এটা সেই পৌরানিক এলাকা, যেখানে আমরা বাস করি। ‘এই পৃথিবীটা’ আমাদের বলে, কিভাবে এই দুনিয়াটা কাজ করে, কিভাবে সূর্য ওঠে, কিভাবে আমরা জন্মগ্রহণ করি। আমার পৃথিবী’ আমাদের বলে যে, কেন সূর্য‍্য ওঠে, কেন আমরা জন্ম নিই। প্রত্যেকটা সংস্কৃতিই নিজেদের বোঝার চেষ্টা করে: ‘কেন আমাদের অস্তিত্ব আছে?’ আর প্রতিটা সংস্কৃতিই নিজেদের জীবনের একটা স্বতন্ত্র বোঝাপড়া নিয়ে হাজির হয়। নিজেদের গড়ে তোলা পুরাণকথাগুলো নিয়ে হাজির হয়। সংস্কৃতি গড়ে ওঠে প্রকৃতির সংস্পর্শে। আর আমাদের পূর্বপুরুষদের এই বোঝাপড়া প্রবাহিত হয়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। গল্প, প্রতীক, প্রথার মাধ্যমে। যেগুলো সবসময়ই যৌক্তিকতার প্রতি উদাসীন। আর তাই, যখন আপনি এগুলো ঘাঁটতে যান, আপনি বুঝতে পারেন যে, বিভিন্ন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দুনিয়া সম্পর্কে বোঝাপড়া দাঁড় করায়। ভিন্ন ভিন্ন মানুষ জিনিসপত্র দেখে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। এই হলো আমার দুনিয়া, আর ঐটা তোমার দুনিয়া। আর আমার দুনিয়া সবসময়ই তোমার থেকে ভালো। কারণ আমার দুনিয়া যৌক্তিক। আর তোমার দুনিয়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তোমারটা বিশ্বাস। তোমারটা অযৌক্তিক। এটাই হলো সভ্যতার সংঘাতের ভিত্তি। এর শুরু, খ্রীষ্টপূর্ব ৩২৬ সালে। সিন্ধু নদীর ধারে, বর্তমান পাকিস্তানে। এই নদী থেকেই ভারত তার নাম পেয়েছে। ইন্ডিয়া, ইনডাস। আলেক্সান্ডার, তরুণ মেসেডোনিয়ান, সেখানে এক মানুষের দেখা পেয়েছিলেন, যাকে তিনি ডেকেছিলেন, "নাগাসন‍্যাসী" মানে ‘নগ্ন, জ্ঞানী ব্যক্তি।’ আমরা জানি না তিনি কে ছিলেন। হয়তো বা তিনি একজন জৈন সৈন‍্যাসী, বাহুবলির মতো। গোমাতেস্বরা বাহুবলি, তাঁর আবাস এই মহীসুর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। বা হয়তো তিনি শুধুই একজন যোগী, পাথরের উপরে বসে আকাশ, চাঁদ-সূর্য দেখছিলেন। আলেক্সান্ডার প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তুমি কী করছ?’ আর সেই জিমনোসোফিস্ট উত্তর দিয়েছিলেন, "আমি শুন‍্যতা অনুভব করছি।" তারপর পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, "তুমি কী করছ?" তখন আলেক্সান্ডার বলেছিলেন, "আমি বিশ্বজয় করছি।" আর তাঁরা দুজনেই হেসেছিলেন। দুজনেই ভেবেছিলেন যে, আরেকজন কী বোকা! নাগাসন‍্যাসী ভেবেছিলেন, ‘কেন সে বিশ্বজয় করছে? এটা অর্থহীন।’ আর আলেক্সান্ডার ভেবেছিলেন, ‘কেন সে ওখানে বসে আছে? কিছুই করছে না? কীরকম জীবনের অপচয়।’ দৃষ্টিভঙ্গির এই পার্থক্যটা বুঝতে হলে আমাদের বুঝতে হবে আলেক্সান্ডারের মনোঃকল্পিত সত্যটাকে -- তার পুরাণ, আর তাঁর মনোজগতের আদল গড়ে দেওয়া সেই পৌরানিকতাকে। আলেক্সান্ডারের মা, তাঁর অভিভাবক, তাঁর শিক্ষক অ্যারিস্টোটল তাঁকে শুনিয়েছেন হোমারের ইলিয়াডের কাহিনী। তাঁরা আলেক্সান্ডারকে বলেছেন অ্যাকিলিস নামের সেই মহান নায়কের কথা। যিনি, যখন কোন যুদ্ধে অংশ নিতেন, তখন জয় ছিল সুনিশ্চিত। কিন্তু যখন তিনি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতেন, তখন পরাজয় ছিল অনিবার্য। ‘অ্যাকিলিস ছিলেন সেই মানুষ, যিনি ইতিহাসের গতি পাল্টাতে পারতেন। একজন নিয়তি নির্ধারক মানুষ। আর তোমাকেও এরকম হতে হবে আলেক্সান্ডার।’ এটাই শুনেছিলেন তিনি। ‘তোমার কার মতো হওয়া উচিত্ না? সিসিফাসের মতো। যে সারাদিন ধরে একটা পাথরখণ্ড পাহাড়ের উপরে তোলে কিন্তু প্রতিরাতেই সেটা আবার নিচে গড়িয়ে পড়ে। এমনভাবে জীবনযাপন করো না যেটা একঘঁেয়ে, সাধারণ ও অর্থহীন। আকর্ষণীয় হয়ে ওঠো!! -- গ্রীক বীরদের মতো, জ্যাসনের মতো, যে সমুদ্র পাড়ি দিয়েছিল অ্যারগোনাটসের সঙ্গে আর নিয়ে এসেছিল সোনালী পালক। থেসিয়াসের মতো দর্শনীয় হও। যে গোলোকধঁাধায় ঢুকে মহিষ মাথার মাইনোটরকে হত্যা করেছিল। যখন তুমি কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে, তখন জিত -- কারণ যখন তুমি জিতবে, তখন বিজয়ের সেই উল্লাসের মধ্য দিয়ে তুমি দেবতাদের অমৃতের কাছাকাছি যেতে পারবে।’ কারণ, দেখুন, গ্রীকরা বিশ্বাস করে যে, আপনার জীবন একটাই, আর যখন আপনার মৃত্যু হয়, তখন আপনাকে স্টিক্স নদী পার হতে হবে। আর যদি আপনি একটা অসাধারণ জীবন কাটাতে পারেন, তাহলে আপনি ইলিসিয়ামে সাদর অভ্যর্থনা পাবেন। বা ফ্রেঞ্চরা যেটাকে ডাকে "সঁাজ-ইলিসি" -- (হাসি) -- বীরদের স্বর্গ। কিন্তু সেই নাগাসন‍্যাসী এই ধরণের কোন গল্প শোনেননি। তিনি খুবই ভিন্ন ধরণের কিছু কাহিনী শুনেছিলেন। তিনি শুনেছিলেন ভরত নামে এক মানুষের কথা। যার নাম অনুসারে ভারতের নামকরণ হয়েছে। ভরতও বিশ্বজয় করেছিলেন। আর তারপর তিনি গিয়েছিলেন পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলের সর্ববৃহত্ পর্বতের চূড়ায়। যার নাম মেরু। আর তিনি সেখানে পতাকা স্থাপন করে ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন যে, "আমি এখানে প্রথমে এসেছি।" কিন্তু যখন তিনি সেই পর্বতের চূড়ায় পৌঁছালেন, তখন দেখলেন যে, চূড়াটা ইতিমধ্যেই তাঁর আগের বিশ্বজয়ীদের স্থাপন করা অগনিত পতাকায় ছেয়ে আছে। প্রত্যেকেই দাবি করছে, "আমি এখানে প্রথম এসেছি... এটাই ভেবেছিলাম এখানে আসার আগ পর্যন্ত।" আর আকস্মিকভাবে এই অসীমের দৃশ্যপটে, ভরতের নিজেকে খুবই গুরূত্বহীন মনে হলো। সেই নাগাসন‍্যাসী এই পুরাণকথাই শুনেছিলেন। তিনিও কিছু নায়কের কথা শুনেছেন। যেমন রাম -- রঘুপতি রাম, আর কৃষ্ণ, গোবিন্দ হরি। কিন্তু তাঁরা ভিন্ন দুইটা অভিযানের পৃথক দুইটি চরিত্র নন। তাঁরা একজন নায়কেরই দুইটা ভিন্ন ভিন্ন জীবনকালের চরিত্র। যখন রামায়ন শেষ হয়, মহাভারত শুরু হয়। যখন রাম মৃত্যুবরণ করেন, কৃষ্ণ জন্ম নেন। কৃষ্ণ যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তিনিই আবার ফিরে আসবেন রামের রূপে। ভারতীয়দের বিশ্বাসেও একটা নদী আছে যেটা জীবিত ও মৃতদের দুনিয়াকে পৃথক করে। কিন্তু আপনি এটা শুধু একবারই পার করেন না। আপনার যাওয়া-আসা চলতে থাকে অনবরত। এটাকে বলে বৈতরণী। আপনি এটা পার করেন বারবার, বারবার। কারণ, দেখুন, ভারতে কোনকিছুই চিরকালের জন্য থাকে না, এমনকি মৃত্যও। আর তাই এখানে দেবী মাতার বিশাল মূর্তি বানিয়ে পূজা করা হয় ১০ দিন ধরে। আর কী করেন আপনি এই ১০ দিন পর? বিসর্জন দিয়ে দেন নদীতে। কারণ এটারও একটা সমাপ্তি আছে। আর পরের বছর, আবার তিনি ফিরে আসবেন। যা চলে যায়, তা আবার ফিরে আসে। আর এই নিয়ম শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই না, দেবতাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনি দেখেন যে, দেবতাদেরও ফিরে আসতে হয় বারবার, বারবার, বারবার । রাম রুপে, কৃষ্ণ রুপে। তাঁরা শুধু সীমাহীন জীবন ধারণ করেন তাই না, সেই একই জীবন তাঁদের ধারণ করতে হয় ভিন্ন ভিন্ন সময়কালে। যতক্ষণ না সবকিছুরই পরিসমাপ্তি ঘটে। ‘গ্রাউন্ডহগ ডে।’ (হাসি) দুইটা ভিন্ন ভিন্ন পুরাণকথা। কোনটা ঠিক? দুইটা ভিন্নধর্মী পৌরানিকতা, দুনিয়াকে দেখার দুইটা পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি। একটা একরৈখিক, একটা আবর্তনশীল। একটা বিশ্বাস করে যে, এটাই একমাত্র জীবন। আরেকটার বিশ্বাস, এটা অনেকগুলো জীবনের একটি। আর তাই, আলেক্সান্ডারের জীবন নির্ধারক একটিই। তাই তাঁর জীবনের মূল্য দাঁড়ায় তাঁর সামগ্রিক অর্জনগুলোর সমষ্টি। আর সেই নাগাসন‍্যাসীর জীবন নির্ধারক অসীম। কাজেই, তিনি যাই করুন না কেন, ফলাফল সবসময়ই শূণ্য। আর আমার বিশ্বাস, এটাই সেই পৌরানিক ভিত্তি যা থেকে ভারতীয় গণিতবিদরা শূণ্য সংখ‍্যাটি আবিস্কার করেছিলেন। কে জানে! আর এটা আমাদের নিয়ে যায় কাজ-কারবারের উপর পুরাণের প্রভাবের কাছে। যদি আলেক্সান্ডারের বিশ্বাস তাঁর আচরণকে প্রভাবিত করে, যদি নাগাসন‍্যাসীর বিশ্বাস তাঁর আচরণকে প্রভাবিত করে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই এটা আমরা যে কাজ-কারবারের সঙ্গে যুক্ত আছি, সেটাকেও প্রভাবিত করে। আপনি দেখেন যে, ব্যবসা-বাণিজ্যটা কিভাবে হয় সেটা নির্ভর করে বাজারের আচরণের উপর, ব্যবসায়িক সংগঠনের আচরণের উপর। আর যদি আপনি পৃথিবীর সংস্কৃতিগুলোর দিকে দৃষ্টি দেন, তাহলে আপনাকে শুধু তাদের পুরাণকথাগুলোকে বুঝতে হবে। তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, তাদের আচরণ কেমন এবং তারা কিভাবে ব্যবসা করে। খেয়াল করুন। যদি আপনার জীবন একবারের জন্য হয়, পৃথিবীর অনেক জায়গার এক-জীবন সংস্কৃতির মতো তাহলে আপনার মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকবে একমুখী যুক্তি, চূড়ান্ত সত্য, আদর্শকরণ, সন্দেহাতীত বিষয়াদি নিয়ে। অলঙ্করণের ক্ষেত্রে দেখা যাবে একমুখী প্যাটার্ন। কিন্তু আপনি যদি এমন সংস্কৃতিতে থাকেন যেখানে জীবনটা আবর্তনশীল ও অন্তহীন জন্মে বিশ্বাস করে তাহলে যুক্তি বিন্যাসের ক্ষেত্রে দেখবেন অস্পষ্টতা, মতামতযুক্ত পরিস্থিতিভিত্তিক চিন্তাভাবনা। সেখানে সবকিছুই আপেক্ষিক। কোন রকমের -- (হাসি) প্রায়। (হাসি) আপনি শিল্পকলার দিকে তাকান। ব্যালে-নর্তকীদের কথা ভাবুন, পারফরমেন্সের ক্ষেত্রে তারা কতটা একরৈখিক। আর এবার আপনি তাকান ভারতীয় ধ্রুপদী নর্তকীদের দিকে। কুচিপুড়ি, ভারতনাট্যম নৃত‍্যশিল্পিরা কতটা বৈচিত্রপূর্ণ। (হাসি) এবার ব‍্যবসা-বানিজে‍্যর কথা ভাবুন। আদর্শ ব্যবসায়িক মডেল: রুপকল্প, লক্ষ্য, মূল্যবোধ, প্রক্রিয়া। শুনে মনে হয় অনেকটা যেন উষর জনহীন প্রান্তর থেকে প্রতিশ্রুতির দেশে যাত্রা, যেখানে নেতার হাতে আছে ঐশিক আদেশ। যদি আপনি সেটা মেনে চলেন তাহলে চলে যাবেন স্বর্গে। কিন্তু ভারতে কোন ‘সেই’ প্রতিশ্রুতির দেশ নেই। এখানে 'অনেক' প্রতিশ্রুতির দেশ আছে। সেটা নির্ভর করবে সমাজে আপনার অবস্থানের উপরে, আপনি জীবনের কোন পর্বে আছেন তার উপরে। এখানে কাজ-কারবার কোন প্রতিষ্ঠানের দ্বারা পরিচালিত হয় না। পরিচালিত হয় ব্যক্তিমানুষের স্বভাব-বৈশিষ্ট্য দিয়ে। এটা সবসময়ই নির্ভর করে রুচির উপরে। এটা সবসময়ই আমার রুচির ব্যাপার। উদাহরণ হিসেবে ভারতীয় সঙ্গীতের দিকে তাকান, এখানে কোন ঐকতানের ধারণা নেই। এখানে নেই কোন অর্কেস্ট্রা পরিচালক। এখানে একজন পারফরমার দাঁড়িয়ে থাকে এবং সবাই তঁাকে অনুসরণ করে। আর আপনি এই পরিবেশনাটিকে কখনও দ্বিতীয়বার হুবহু করতে পারবেন না। এখনে কোন ডকুমেন্টেশন বা চুক্তির ব্যাপার নেই। এখানে সবকিছুই সংলাপ ও বিশ্বাস। এটা অপরের আনুগত্য বা ইচ্ছা মেনে নেওয়ার ব্যাপার না। এটা ঐক্যমত্যে পৌঁছিয়ে, নিয়মনীতি ভেঙ্গে বা বাঁকিয়ে কাজটা করে ফেলার ব্যাপার-- এখানে বসে থাকা ভারতীয় মানুষদের দিকে তাকান, আপনি তাদেরকে হাসতে দেখবেন; তারা জানেন আমি কী নিয়ে বলছি। (হাসি) আর এবার তাকান তাদের দিকে যারা ভারতে ব্যবসা-বানিজ্য করেছেন, আপনি তাদের মুখে একটা ক্রোধ দেখতে পাবেন। (হাসি) (হাততালি) এটাই ভারতের বর্তমান অবস্থা। এখানকার বাস্তবতা গড়ে উঠেছে একটা আবর্তনশীল বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে। তো, এটা ক্রমাগত পরিবর্তনশীল, অধিকমাত্রায় বৈচিত্রপূর্ণ, বিশৃঙ্খল, অনিশ্চিত অর্থবিশিষ্ট্য, অননুমেয়। আর মানুষের এসব নিয়ে কোন আপত্তি নেই। এরকম পরিস্থিতিতে এবার আসছে বিশ্বায়ন। আসছে আধুনিক, প্রাতিষ্ঠানিক চিন্তাধারার দাবি, যেটার গোড়া পোঁতা আছে একবারের জীবনধারণের সংস্কৃতিতে। ফলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটা সংঘাত। যেমনটা একবার হয়েছিল সিন্ধু উপত্যকায়। এটা আবশ্যম্ভাবী। আমি এটা ব্যক্তিগতভাবে উপলব্ধি করেছি। আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষিত। আমি শল্যচিকিৎসা পড়তে চাইনি। জিজ্ঞাসা করবেন না কেন। আমি পুরাণকথা খুবই ভালোবাসি। এটাই আমি শিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোথাও এই বিষয়টা পড়ানো হয় না। কাজেই, আমার নিজে থেকেই এটা শিখতে হয়েছে। আর এই পুরাণ এখনও কোন চাকরির ব্যবস্থা করে না, এখন পর্যন্ত। (হাসি) কাজেই, আমাকে একটা চাকরি নিতে হয়েছে। আমি কাজ করতাম ঔষুধ শিল্পে। কাজ করতাম স্বাস্থ্যসেবা শিল্পে। কাজ করতাম বিপণন কর্মী হিসেবে, জ্ঞানকর্মী, প্রশিক্ষককর্মী হিসেবে। আমি এমনকি ব্যবসায়িক পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছি। তৈরি করেছি ব্যবসায়ের উপায় ও কৌশল। আর সেসময় ভারতীয়দের সঙ্গে লেনদেন করার সময় আমি আমার আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান সহকর্মীদের মুখে একটা ক্রোধ দেখেছি। একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন কোন ভারতীয়কে বলা হলো, একটা হাসপাতালে ঔষুধের চালান পাঠানোর প্রক্রিয়া বলেন। ধাপ ক, ধাপ: খ, ধাপ: গ, প্রায়। (হাসি) এই ‘প্রায়’কে আপনি কিভাবে বিবেচনা করবেন? এটাকে আপনি একটা চমত্কার ছোট্ট সফটওয়ারে কিভাবে ঢোকাবেন? পারবেন না। আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গিটা অন্যদের দিতে চাই। কিন্তু কেউই সেটা শোনার মতো আগ্রহ দেখায়নি, ফিউচার গ্রুপের কিশোর বিয়ানির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগপর্যন্ত। তিনি ভারতে সবচেয়ে বড় রিটেইল চেইন বিগ বাজারের প্রতিষ্ঠাতা। আর তাদের গোটা ভারতজুড়ে ৫০টি শহরে ২০০টিরও বেশি ধরণের দোকান আছে। তিনি কাজ করছেন খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ ও গতিশীল বাজার নিয়ে। আর তিনি খুবই সহজজ্ঞানে জানতেন যে, জাপান, চীন, ইউরোপ বা আমেরিকায় যে সেরা চর্চাটা গড়ে উঠেছে, সেটা ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। তিনি জানতেন যে প্রাতিষ্ঠানিক ধারার চিন্তাভাবনা ভারতে কাজ করবে না। কাজ করবে ব্যক্তিভিত্তিক চিন্তা। ভারতের পুরাণভিত্তিক কাঠামোটা সম্পর্কে তাঁর একটা বোঝাপড়া ছিল। তো, তিনি আমাকে এখানকার প্রধান বিশ্বাস অফিসারের দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। বলেছিলেন যে, ‘আমি বিশ্বাসগুলোকে সারিবদ্ধ করতে চাই’ শুনতে খুবই সহজ মনে হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাসটা কোন পরিমাপযোগ্য জিনিস না। আপনি এটাকে মাপতে পারবেন না। আপনি এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। তো, কিভাবে আপনি এই বিশ্বাস গড়ে তুলবেন? আপনি কিভাবে মানুষের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে সেটা ভারতীয়তার দিকে নিয়ে যাবেন? এমনকি আপনি যদি ভারতীয়ও হন, তবুও এটা সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাপার না। এটা স্পষ্ট কিছু না। তো, আমি সংস্কৃতির একটা আদর্শ মডেল ধরে কাজ করা শুরু করলাম। যেটা হলো গল্প, প্রতীক, আচার অনুষ্ঠান গঠন করা। এরকম একটা আচার আপনাদেরকে বলি। এটা দর্শনের হিন্দু রীতির উপর ভিত্তি করে গড়া। হিন্দুদের মধ্যে ঐশিক আদেশ জাতীয় কোন ধারণা নেই। কাজেই, জীবনে কোনকিছু সঠিক বা ভুল করা জাতীয় কোন জিনিস এখানে নেই। ঈশ্বরের সামনে কিভাবে দাঁড়াবেন সে ব্যাপারেও আপনি নিশ্চিত নন। আপনি যখন কোন মন্দিরে যান, তখন আপনি ঈশ্বরের দর্শন চান। আপনি চান যে, ঈশ্বর যেন আপনাকে দেখেন। আর একারণেই দেবদেবীদের খুব বড় বড় চোখ থাকে। বড়, পলকহীন চোখ, কখনও কখনও রুপার তৈরি। যেন তাঁরা আপনাকে ভালোমতো দেখতে পারেন। কারণ সঠিক-ভুল সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত নন। কাজেই আপনি চান একটা ঈশ্বরিক সহানুভূতি। ‘তুমি শুধু জান যে, আমি কোথা থেকে এসেছি। কেন আমি এমনটা করেছি।’ (হাসি) ‘আমি কী করেছি, কেন আমি প্রক্রিয়াটা নিয়ে ভাবি নি। তুমি শুধু অনুগ্রহ করে আমাকে বুঝে নিও।’ আর এটার উপর ভিত্তি করে আমরা দলপতিদের জন্য একটা আচার-অনুষ্ঠান বানিয়েছিলাম। দলপতি তার প্রশিক্ষণ শেষ করার পর যখন একটা দোকানের দায়িত্ব নিতে যাবে, তখন আমরা তার চোখ বেঁধে দিতাম।তারপর তাকে ঘোরানো হতো তার জামানতকারী, ক্রেতা, তার পরিবার, তার দল, তার বসের সামনে। তাকে তার কেপিএ, কেপিআই পড়ে শোনানোর পর হাতে চাবি দেওয়া হতো। আর তারপর খুলে দেওয়া হতো তার চোখ। আর অনিবার্যভাবে তার চোখে দেখা যেত জলের কনা। সে ব্যাপারটা বুঝতে পারত। সে বুঝতে পারত যে, সফল হতে গেলে তাকে একজন ‘পেশাজীবী’ হতে হবে না। সব ধরণের আবেগ-অনুভূতি বিসর্জন দেওয়ার কোন প্রয়োজন তার নেই। সফলতা পেতে হলে তাকে শুধু এই মানুষগুলোকে নিজের দুনিয়ার অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। তাদেরকে খুশি করতে হবে। বসকে খুশি করতে হবে। সবাইকে খুশি করতে হবে। ক্রেতাদের খুশি করতে হবে। কারণ ক্রেতারাই ঈশ্বর। শুধু এই সংবেদনশীলতাটাই আমরা চেয়েছিলাম। একবার যখন এই বিশ্বাসটা তাদের মধ্যে ঢুকে যাবে, তার আচরণে সেটার প্রভাব পড়বে। তার ব্যবসায় প্রভাব পড়বে। আর ঘটেও এমনটা। তো, এবার আমরা আবার ফিরে যাই আলেক্সান্ডার ও সেই নাগাসন‍্যাসীর কাছে। সবাই আমাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘কোন পথটা ভালো, এইটা নাকি ঐটা?’ আর এটা খুবই বিপদজনক প্রশ্ন। কারণ এটা আপনাকে নিয়ে যাবে মৌলবাদ ও সহিংসতার পথে। কাজেই আমি এই প্রশ্নের কোন উত্তর দেব না। আমি আপনাদের দেব একটা ভারতীয় উত্তর। ভারতীয় মাথা নাড়া। (হাসি) (হাততালি) পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে, পরিণতির উপর নির্ভর করে, আপনার পন্থা বেছে নিন। কারণ এই দুইটি পন্থাই মানুষের গড়ে তোলা। এগুলো সাংস্কৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবে নয়। কাজেই পরবর্তীতে আপনি যখন কোন অচেনা মানুষের সঙ্গে পরিচিত হবেন, তখন আমার অনুরোধ যে, আপনি স্মরণ করবেন আপনার একটা মনোজাগতিক সত্য আছে, যেটায় আপনি বাস করেন। ঠিক তেমনটা তারও আছে। এটাকে বোঝার চেষ্টা করবেন। আর যখন আপনি এটা বুঝতে পারবেন তখন আপনি আবিস্কার করবেন চমকপ্রদ কিছু। আপনি আবিস্কার করবেন যে, অজস্র পুরাণের মধ্যেই নিহিত আছে চিরন্তন সত্য। কে সবটা দেখেছে? বরুনের ছিল এক হাজার চোখ, ইন্দ্রের একশটি। আমার-আপনার? মাত্র দুইটা। ধন্যবাদ। নমস্তে। (হাততালি) আপনারা জানেন, ভ্রমণের তীব্র আনন্দের মধ্যে অন্যতম এবং জাতিবৈশিষ্ট্যের গবেষণায় গভীর তৃপ্তির মধ্যে অন্যতম হল সেইসব মানুষের মধ্যে বসবাস করার সুযোগ পাওয়া যারা প্রাচীন প্রথা ও রীতিনীতি বিস্মৃত হননি, যারা এখনও বাতাসে তাদের অতীতের স্পর্শ পান, বৃষ্টিস্নাত পাথরে অতীতকে ছুঁতে পারেন, গাছগাছালির তেতো পাতা চিবিয়ে তার স্বাদ পান। শুধু জানার জন্য যে, জাগুয়ার পুরোহিত আকাশগঙ্গা পার হয়েও অন্তহীন ভাবে হেঁটে চলেছে, অথবা ইনুইট জাতির প্রাজ্ঞজনদের পৌরাণিক কাহিনীর সুরের অনুরণন এখনও বেজে চলেছে, অথবা ওই হিমালয়ে বৌদ্ধরা এখনও ধর্মীয় অনুশাসনকেই মেনে চলে, সত্যিই মনে পড়ে নৃতত্ত্বের একটি বিস্ময়কর প্রকাশ, এবং এটি একটি ধারণা যে, যে পৃথিবীতে আমরা বাস করি তা আজীবন বিদ্যমান থাকে না কিন্তু কেবল বাস্তবের একটি নমুনা, এক গুচ্ছ নির্দিষ্ট উপযোগী পছন্দের পরিণাম অনেক প্রজন্ম আগে, যা আমাদের পূর্বপুরুষরা তৈরী করেছিলেন, তবুও সফলভাবেই করেছিলেন। এবং অবশ্যই, আমরা সকলে একই উপযোগী অপরিহার্য গুণই ভাগ করে নিই। আমরা সকলে জন্ম গ্রহণ করি। আমরা সবাই আমাদের সন্তানদের এই পৃথিবীতে নিয়ে আসি আমরা সকলে দীক্ষিত হই মৃত্যুর অপ্রতিরোধ্য বিছিন্নতাকে আমাদের মানিয়ে চলতে হয়, তাই এতে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয় যে আমরা সকলে গান গাই, সকলে নাচি আমাদের সকলের মধ্যে একটি শিল্পীসত্তা আছে কিন্তু চমকপ্রদ ব্যাপারটি হল গানের অনন্য ছন্দ, প্রত্যেকটি সংস্কৃতিতে নাচের তাল। এবং হয় এটি বোর্ণিও-এর জঙ্গলে পিনান, অথবা হাইতির ভুডু পুরোহিতের সহায়ক অথবা উত্তর কেনিয়ার কাইসুট মরুভূমির যোদ্ধারা, এন্ডিস্‌ পর্বতমালার কুরানডেরো অথবা সাহারার মাঝখানে একটি ক্যারাভ্যানসেরাই। এটি ঘটনাক্রমে তিনি, যে ব্যক্তির সাথে আমি মরুভুমিতে যাত্রা করেছিলাম একটি মাস আগে, অথবা উমোলাংমার চড়াইয়ে একটি চমড়ি গাই-এর পালক, এভারেস্ট, পৃথিবীর ধরিত্রী মা। এরা সকলে আমাদের শেখায় যে থাকার আরও অন্য পথ আছে, চিন্তা করার আরও অন্য পথ আছে, পৃথিবীতে নিজের অবস্থান বা পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়ার অন্যন্য উপায়। এবং এটি একটি ধারণা, যদি এটির ব্যপারে আপনি চিন্তা করেন, আপনাকে আশায় ভরিয়ে তুলতে পারে। এখন, পৃথিবীর অসংখ্য সংস্কৃতি একত্রিত হয়ে আধ্যাত্মিক জীবনের এবং সাংস্কৃতিক জীবনের একটি জাল তৈরী করে যেটি গ্রহটিকে আবৃত করে, এবং গ্রহটির ভাল থাকা ততটাই জরুরী যতটা একটি প্রাণের জৈবনিক জালের জরুরী, যেটি আপনারা জীবমন্ডল হিসাবে জানেন। এবং জীবনের এই সাংস্কৃতিক জালকে আপনি হয়তো নৃকুল ভাবতে পারেন এবং নৃকুলকে আপনি ব্যাখ্যা করতে পারেন সব ভাবনা, স্বপ্ন,প্রবাদ কল্পনা, প্রেরণা, অর্ন্তজ্ঞান এবং যা কিছু চেতনার প্রারম্ভিক অবস্থা থেকে মানব কল্পনার মধ্যে একত্রিত অবস্থা। নৃকুল হল মানবতার সবচেয়ে বড় উত্তরাধিকার। আমরা সকলে যা আছি, এটি তারই চিহ্ন। এবং আমরা কতটা জিজ্ঞাসু প্রজাতি হতে পারি। এবং যার ফলে জীবমন্ডল অত্যধিক নষ্ট হয়ে হয়ে গেছে, সেইরকমই নৃকুলমন্ডলও খুবই -দ্রুতগতিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কোন জীববিজ্ঞানীই, উদাহরণস্বরূপ, এটি করার পরামর্শ দেওয়ার দুঃসাহস করবে না যে সমস্ত প্রজাতির ৫০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশী অবলুপ্তির কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে কারণ এটি সঠিক নয়, এবং তবুও - জৈবিক বিভিন্নতার মধ্যে এটি সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা, যা আমরা সবচেয়ে আশাবাদী ঘটনা হিসাবে মানি সাংস্কৃতিক বিভিন্নতার এটি একটি ছোট অংশ এবং ভাষা লোপ অবশ্যই এর একটি ভাল চিহ্ন। যখন এই কক্ষে উপস্থিত প্রত্যেকে জন্মগ্রহন করেছিলে এই দুনিয়াতে ৬০০০০ ভাষায় কথা বলা হত এখন, একটি ভাষা শুধুমাত্র একটি শব্দসংগ্রহ নয় 68 00:03:06,000 --> 00:03:08,000 অথবা ব্যাকরণ নিয়মাবলীর একটি সমষ্টি নয় অথবা ব্যাকরণ নিয়মাবলীর একটি সমষ্টি নয় ভাষা মানুষের মনের একটি ভাব প্রকাশ করে ভাষা একটি মাধ্যম যার দ্বারা প্রত্যেক বৈশিষ্ট্য সংস্কৃতির আত্মা এই স্থূল পৃথিবীতে আসে প্রত্যেকটি ভাষা মনের মধ্যের একটি প্রাচীন জঙ্গল একটি জল সম্ভার,একটি ভাব, আধ্যাত্মিক সম্ভাবনার একটি বাস্তুতন্ত্র। এবং এই ৬০০০ ভাষার, এই যে আজ আমরা মনটেরেতে বসে আছি শিশুদের কানে এই ভাষার অর্ধেক পৌঁছয় না। এগুলি আর বাচ্চাদের শেখানো হয়না যার মানে হল, কোন ফলপ্রসূ পরিবর্তন না হলে সেগুলি শেষ হয়ে যাবে। নৈঃশব্দের মধ্যে ডুবে যাওয়ার থেকে নিঃসঙ্গ আর কি হতে পারে ভাষা বলতে পারা নিজেদের লোকের মাঝে আপনি একা, নিজের পূর্বপুরূষদের জ্ঞান আগে নিয়ে যাওয়ার যদি কোন রাস্তা না থাকে অথবা বাচ্চাদের প্রতিশ্রুতি বোঝার কোন উপায় না থাকে এবং তাও, সেই ভয়ানক পরিণতি যে কারও দশা হতে পারে পৃথিবীর যে কোন জায়গায় প্রতি দু- সপ্তাহের মধ্যে কারণ প্রত্যেক সপ্তাহে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মারা যান এবং নিজের সাথে কবরে নিয়ে যান শেষ অক্ষর 87 00:03:56,000 --> 00:03:58,000 একটি প্রাচীন ভাষার একটি প্রাচীন ভাষার এবং আমি জানি যে আপনাদের মধ্যে কয়েকজন বলবেন ,"এটা ভাল নয় কি? পৃথিবী আরও সুন্দর জায়গা হয়ে উঠবে না কি যদি আমরা সকলে একটি ভাষায় কথা বলি?" এবং আমি বলব," খুব ভাল, আমাদের সেই ভাষাটি ইয়োরুবা বানানো উচিত। সেই ভাষাটি ক্যান্টোনিজ বানানো উচিত সেই ভাষাটিকে কোগি বানানো উচিত এবং আপনি হঠাত করে আবিষ্কার করবেন যে এটি কিরকম লাগবে নিজের ভাষায় কথা না বলতে পারা। এবং তাই,আমি চাই আজ আপনাদের সাথে খানিকটা আপনাদের নিয়ে নৃকুলের মধ্য দিয়ে যাত্রা - 97 00:04:20,000 --> 00:04:22,000 করাতে নিয়ে যাচ্ছি, এর মাধ্যমে আপনাদের এটা বোঝাতে 98 00:04:22,000 --> 00:04:26,000 চেষ্টা করছি যে আপনারা কি হারাচ্ছেন করাতে নিয়ে যাচ্ছি, এর মাধ্যমে আপনাদের এটা বোঝাতে চেষ্টা করছি যে আপনারা কি হারাচ্ছেন এখন, আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ভুলে যান 100 00:04:34,000 --> 00:04:36,000 যে আমি যখন বলি " জীবন ব্যতীত করার বিভিন্ন উপায় আছে," যে আমি যখন বলি " জীবন ব্যতীত করার বিভিন্ন উপায় আছে," আমি সত্যি করে জীবিত থাকার বিভিন্ন উপায়ের উপর জোর দিতে চাই যেমন, উদাহরণস্বরূপ, উত্তরপশ্চিম আমাজোনের বারাসানের এই বাচ্চাটি এনাকোন্ডার মানুষ যারা বিশ্বাস করেন যে পৌরাণিক কথা অনুসারে তারা দুধ নদী থেকে উঠে এসেছিল পূর্বদিক থেকে পবিত্র সাপের পেটের মধ্যে এখন, এরা হল মানুষ যারা ধারণাহীনভাবে নীল রং-কে সবুজ রং থেকে আলাদা করতে পারে না কারণ স্বর্গের ছাতের সাথে জঙ্গলের ছাতকে এক করে দেখা হয়েছে যেটির উপর লোকেরা বিশ্বাস করে। তাদের একটি অদ্ভুত ভাষা এবং বিবাহের নিয়ম আছে 112 00:05:03,000 --> 00:05:05,000 যেটিকে কথায় বলা যেতে পারে নিজের ভাষার বাইরে অন্যগোত্রে বিয়ে যেটিকে কথায় বলা যেতে পারে নিজের ভাষার বাইরে অন্যগোত্রে বিয়ে আপনাকে এমন একজনকে বিয়ে করতে হবে যে অন্য ভাষায় কথা বলে 114 00:05:08,000 --> 00:05:10,000 এবং এইগুলি পৌরাণিক অতীতের মধ্যে শিকড় গেড়ে আছে এবং এইগুলি পৌরাণিক অতীতের মধ্যে শিকড় গেড়ে আছে তবুও এই লম্বা বাড়িগুলিতে অদ্ভুত ব্যাপার এই হল যে যেখানে ছটা থেকে সাতটা ভাষায় কথা বলা হয় আন্তঃবিবাহের জন্য আপনি কাউকে একটি ভাষা প্রয়োগ করতে শুনবেন না। 119 00:05:19,000 --> 00:05:22,000 তারা কেবল শোনে এবং তারপর বলতে শুরু করে তারা কেবল শোনে এবং তারপর বলতে শুরু করে অথবা, যেইসব রোমাঞ্চকর প্রজাতি যাদের সাথে আমি থেকেছিলাম তাদের মধ্যে একটি হল উত্তরপূর্ব ইকুয়াডোরের ওয়াওরানি একটি বিস্ময়কর প্রজাতির লোকজন যাদের সাথে প্রথমবার ১৯৫৮ সালে শান্তিপূর্ণভাবে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছিল ১৯৫৭ সালে, পাঁচজন ধর্মপ্রচারক সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছিল এবং একটি মস্ত বড় ভুল করেছিল তারা আকাশ থেকে নিজেদের আট ইঞ্চি বাই দশ ইঞ্চির চকচকে ছবি ফেলেছিল যেটিকে আমরা বন্ধুত্বের ইঙ্গিত বলে বলব, তারা এটা ভুলে গিয়েছিল যে এই বর্ষণসিক্ত বনাঞ্চলের মানুষগুলি 129 00:05:43,000 --> 00:05:46,000 কোন দিন দ্বি-মাত্রিক কিছু দেখে নি কোন দিন দ্বি-মাত্রিক কিছু দেখে নি তারা জঙ্গল ভুমি থেকে এই ছবিগুলি কুড়িয়েছিল মুখের পিছনে দেখার চেষ্টা করেছিল ছবির আকার বা আকৃতি বুঝতে কিচ্ছু খুঁজে না পেয়ে ভেবেছিল যে এগুলি হল ডেকে পাঠানোর চিঠি শয়তানের কাছ থেকে, তাই তারা পাঁচ ধর্মপ্রচারককে বল্লমবিদ্ধ করে মেরে ফেলেছিল কিন্তু ওয়াওরানিরা কেবল বহিরাগতদেরই তীরবিদ্ধ করে নি তারা একে অপরকেও তীর বিদ্ধ করেছিল ৫৪ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হল একে অপরকে তীরবিদ্ধ করা আমরা আগের আট পুরুষের বংশবৃত্তান্ত খুজেঁ বার করি, এবং আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর দুটি দৃষ্টান্ত খুঁজে পাই এবং আমরা যখন ওখানকার মানুষদের উপর একটু চাপ সৃষ্টি করি তারা জানায় যে একজন লোক এত বৃদ্ধ হয়ে গেছিল যে সে মরার অবস্থায় ছিল, তাই তারা এমনিতেই তাকে বল্লম বিদ্ধ করে মেরে ফেলেছিল। (হাসি)কিন্তু একই সময়ে তাদের স্পষ্ট জ্ঞান ছিল জঙ্গলের ব্যাপারে যেটি কিনা এতটাই বিস্ময়বিহ্বল 144 00:06:20,000 --> 00:06:23,000 তাদের শিকারীরা ৪০ কদম দূর থেকে জানোয়ারের প্রস্রাবের গন্ধ পেয়ে যেত 145 00:06:23,000 --> 00:06:26,000 এবং বলতে পারত কি জানোয়ারের সেটা 146 00:06:26,000 --> 00:06:28,000 ৪০ দশকে, আমাকে একটা চমতকার কাজে নিয়োগ করা হয়েছিল তাদের শিকারীরা ৪০ কদম দূর থেকে জানোয়ারের প্রস্রাবের গন্ধ পেয়ে যেত এবং বলতে পারত কি জানোয়ারের সেটা ৪০ দশকে, আমাকে একটা চমতকার কাজে নিয়োগ করা হয়েছিল যখন হারভাডে আমার অধ্যাপক আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি হাইতি যেতে ইচ্ছুক কি না, গুপ্ত সমাজ সম্বন্ধে জানতে, যেগুলি ডুভেলিয়ার এবং টোনটোন মাকুটসের বলের ভিত্তি ছিল, এবং জোম্বি বানানোর জন্য বিষ পাওয়ার জন্য অবশ্যই এই উত্তেজনার মধ্য থেকে সঠিক কথা জানার জন্য, আমাকে ভোডুনের এই চমকপ্রদ বিশ্বাস সম্বন্ধে এবং ভুডু কোন শয়তানের জাদুর নিয়ম নয়, তা বুঝতে হয়েছিল পক্ষান্তরে, বিশ্বব্যাপী এটি একটি জটিল অধিবিদ্যা হিসাবে মানা হয়। এটি কৌতূহলোদ্দীপক। যদি আমি আপনাকে পৃথিবীর মহান ধর্মগুলির নাম বলতে বলি, আপনি কি বলবেন? খ্রীষ্টধর্ম, ইসলাম, বৌদ্ধ, জুডাইজম, আরও কোন ধর্ম। 161 00:06:59,000 --> 00:07:01,000 সবসময় কোন না কোন মহাদেশ বাদ পড়ে, সবসময় কোন না কোন মহাদেশ বাদ পড়ে, এরকম মানা হয় যে উপ-সাহারীয় আফ্রিকায় কোন ধর্মবিশ্বাস মানা হয় না। নিশ্চয়, তারাও মানত এবং ভুডু তো গভীর ধর্মবিশ্বাসের শুদ্ধিকরণ ছিল সেটা এসেছিল দাস প্রথা যুগের দুঃখজনক সমাপ্তির কারণে কিন্তু ভুডু কিসের জন্য এত কৌতূহলোদ্দীপক সেটা হল যে এর মধ্যে জীবিত এবং মৃতের মধ্যে যে সম্বন্ধ আছে সেইজন্য,জীবিতরা আত্মাকে জন্ম দেয় আত্মাদের জলের তলা থেকে ডেকে তোলা যায় 172 00:07:21,000 --> 00:07:23,000 নাচের তালে প্রতিফলিত করে নাচের তালে প্রতিফলিত করে সাময়িক ভাবে জীবিতর শরীর থেকে আত্মাকে আলাদা করে যাতে কিনা কিছু চকিত সময়ের জন্য, পূজারীর সহায়কেরা ভগবানে পরিণত হয় এটাই যারা ভুডু করে তারা বলতে ভালবাসে যে"তোমরা সাদা চামড়ার মানুষেরা গির্জায় গিয়ে ভগবানের ব্যাপারে বল আমরা মন্দিরে নাচ করি এবং ভগবান হয়ে যায় এবং যেহেতু তোমাদের উপর ভর হয়, তোমাদের আত্মারা বশ করে কি করে তোমাদের অনিষ্ট হতে পারে? তাই আপনি এই চমকপ্রদ প্রদর্শন দেখতে পারেন: ভুডু তান্ত্রিকেরা ভর করা অবস্থায় জলন্ত কয়লা বিনা দ্বিধায় ধরছে মনের ক্ষমতার অদ্ভুত একটি নিদর্শন যেটি শরীরকে প্রভাবিত করে অত্যন্ত উত্তেজনার অবস্থায় যখন অনুঘটিত হয় এবার, যেইসব মানুষদের সাথে আমি থেকেছি, সবথেকে অসাধারন হল উত্তর কলম্বিয়ার সিয়েরা নেভাডা ডে সান্তা মার্টার কোগী প্রাচীন তাইরোনা সভ্যতার উত্তরসূরী কলোম্বীয়ায় ক্যারেবিয়ান উপকূলবর্তী এলাকায় ঘন বসতি প্রভুত্ব স্থাপনের সময়ে, 192 00:08:10,000 --> 00:08:13,000 এই লোকগুলি একটি বিচ্ছিন্ন আগ্নেয়গিরির স্তূপ পর্বতে পিছিয়ে গিয়েছিল এই লোকগুলি একটি বিচ্ছিন্ন আগ্নেয়গিরির স্তূপ পর্বতে পিছিয়ে গিয়েছিল যেটি ক্যারীবিয়ান উপকুলবর্তী সমতলের উপর উঠে আছে একটি রক্তরঞ্জিত মহাদেশে, এই লোকদের এককভাবে স্পেনীয়রা কখনই জয় করতে পারে নি আজ পর্যন্ত, তারা একটি ধর্মীয় পুরোহিতমন্ডলীর দ্বারা শাসিত কিন্ত পূরোহিতমন্ডলীর জন্য প্রশিক্ষণ কিন্তু অসাধারণ কমবয়সী পুরোহিতদের নিজের পরিবার থেকে দূরে নিয়ে যাওয়া হয় তিন এবং চার বছর বয়সে লোকচক্ষুর অন্তরালে অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীর ছায়ায় বিচ্ছিন্ন করে রাখে ১৮ বছরের জন্য হিমবাহের কাছে পাথরের কুটীরে দুটি নয়-বছরের সময়কাল জেনে বুঝেই নির্বাচন করা হয় ন-মাসের গর্ভধারণের সময়কাল তারা তাদের স্বাভাবিক মায়ের জঠরে কাটায়, সেটা অনুকরণ করার জন্য এখন তারা রূপান্তরিতভাবে মহান ধরিত্রী মায়ের গর্ভে থাকে এবং এই সম্পূর্ণ সময়ের জন্য তাদের মধ্যে সমাজের ভাল মূল্যবোধগুলি ঢুকে যায়, মূল্যবোধ যেগুলি প্রার্থনার মধ্যে বজায় থাকে এবং তাদের এই প্রার্থনাই এককভাবে সংসারকে টিকিয়ে রাখে - বা আমরা বলতে পারি বাস্তুতন্ত্রের -ভারসাম্য। এবং এই আশ্চর্য দীক্ষার পরে, একদিন হঠাত তাদের বাইরে আনা হয় এবং ১৮ বছর বয়সে জীবনে প্রথমবারের জন্য, তারা একটি সূর্যোদয় দেখে। এবং প্রথম আলোকে জানার এই স্বচ্ছ মুহুর্তে যখন সূর্য অসাধারণ সুন্দর নিসর্গপ্রকৃতিকে আলোর ধারায় ধুইয়ে দেয়, তাদের এতদিনের যা কিছু বিমূর্ত শিক্ষা সেটা চমকপ্রদ গৌরবের সাথে সত্যি হয়ে ওঠে। এবং পুরোহিত পিছেনে ফিরে বলেন "আপনারা দেখুন? এটা ঠিক তেমনই যেমন আমি বলেছিলাম। এটা খুবই সুন্দর। এটাকে আপনাদের রক্ষা করতে হবে" তারা নিজেদের বড় ভাই বলে এবং তারা আমাদের বলে ছোট ভাই, এবং তারা এই বিশ্বসংসার নষ্ট করার জন্য আমাদের দায়ী করে। এখন, এই শ্রেণীর দীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যখন আমরা বিশেষ স্থানের লোক ও প্রকৃতির বিষয়ে চিন্তা করি, আমরা রুশোকে আহ্বান করি এবং এর সাথে আদর্শায়িত আদিমানবের যে পুরানো রটনা তার কথা মনে করে যেটি এর সহজতার মধ্যেই একটি জাতিভেদের ভাবনা, বা বিপরীতপক্ষে, আমরা থোরেউকে আহ্বান করি এবং বলি আমাদের তুলনায় এইসব লোক পৃথিবীর আরও কাছে আছে। হ্যাঁ, স্থানীয় লোকরা আবেগপ্রবণও না আবার পুরানো দিনের কথায় দুর্বলও হয় না। তাদের জন্য অনেক ঘরও নেই আসমতের ম্যালেরিয়াপ্রবণ জলাজমিতে বা তিব্বতের হাড়কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়ায় স্থান হয় না, কিন্তু তবুও তারা সময় ও রীতির প্রয়োগ করে পৃথিবীর পরম্পরাগত আধ্যাত্মিকতা এগিয়ে নিয়ে যায় যা সচেতনতার ধারণার উপর ভিত্তি করে হয় না, কিন্তু এটির ভিত্তি হল অন্তর্শক্তির সূক্ষ্মতা এই ধারণা যে পৃথিবী নিজেই শুধুমাত্র বর্তমান থাকতে পারে কারণ এটি মানব চেতনার দ্বারা ভাবা হচ্ছে এখন এর অর্থ কি? এর অর্থ হল অ্যান্ডিস পর্বতমালাবাসী কোন ছোট বাচ্চা যার মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মায় যে পর্বত হল অপুর আত্মা যে তার ভাগ্য নির্ধারণ করে সে মনের দিক থেকে ভিন্ন মানুষ হবে এবং এই সংসার বা সেই স্থানের সঙ্গে তার একটি ভিন্ন সম্পর্ক হবে যা মোন্টানার সেই ছোট বাচ্চার থেকে ভিন্ন যাকে এই বলা হয়েছে যে পর্বত হল স্তুপীকৃত পাথর যা খোদাই করা হয় সেটি আত্মাই হোক বা ধাতুই হোক, তা অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তিবিশেষ এবং প্রাকৃতিক সংসারের মধ্যে সম্পর্ক দেখানোর লক্ষণ খুবই চমকপ্রদ আমি ব্রিটিশ কলম্বিয়ার জঙ্গলে বড় হয়েছি যেখানে বিশ্বাস করা হত যে জঙ্গলের অস্তিত্ব হল কাটার জন্য যা আমাকে একজন অন্য মানুষ তৈরী করেছে কোয়াগিউতে যে আমার বন্ধুরা আছে, তার চেয়ে ভিন্ন তারা বিশ্বাস করে যে সেইসব বনেই হুক্সহুকুরা বাস করে এবং কাকের বাঁকানো ঠোঁট এবং পৃথিবীর উত্তরভাগে বাস করত নরখাদক আত্মারা, আত্মারা, যাদের প্রয়োজন তাদের হামাতসা দীক্ষা দিতে হবে। এখন, যদি আপনি এই ধারণাটির দিকে লক্ষ্য করতে শুরু করেন যে এই সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবিকতা সৃষ্টি করতে পারে আপনি এর কিছু অসাধারণ আবিষ্কার বুঝতে শুরু করতে পারেন। এই গাছটির দিকে দেখুন। । এটি একটি ছবি, গত এপ্রিলে আমি উত্তর-পশ্চিম আমাজনে নিয়েছিলাম। এটি আয়াহুয়াস্কা,যার সম্বন্ধে আপনারা অনেকেই হয়তো শুনেছেন, ওঝার কৌশলের সর্বশক্তিধর চিত্তপ্রভাবকারী 268 00:11:19,000 --> 00:11:21,000 পদার্থ, যা আয়াহুয়াস্কাকে এত আকর্ষক করেছে পদার্থ, যা আয়াহুয়াস্কাকে এত আকর্ষক করেছে সেটা এই পদার্থের শুধু ভেষজ গুণই নয়, এর সম্বন্ধে বিশদ জ্ঞান। এটি দুটি ভিন্ন উত্স থেকে তৈরী করা হয়। একদিকে, আছে উডী লায়না যার মধ্যে আছে বীটা-কার্বোলিন, হার্মাইন হার্মালিন, হালকা অলীক শুধু লতা নিতে হবে মনে হয় যেন একধরণের নীল ধোঁয়া আপনার চেতনাকে ছুঁয়ে যায় কিন্তু এটি সাইকোট্রিয়া ভিরিডিস নামক কফি গাছের পাতার সঙ্গে মেশানো হয় গাছটির মধ্যে খুব শক্তিশালী ট্রিপটামাইন থাকে, যা ব্রেনের সেরোটোনিন, ডাইমিথাইলট্রিপটামাইন ৫-মিথক্সিডাইমিথাইলট্রিপটামাইন এর খুব কাছাকাছি যদি আপনি কখনও ইয়োনোমামি দেখে থাকেন নাক দিয়ে নস্যি টানা যে জিনিসটা তারা একটি ভিন্ন বস্তু থেকে তৈরী করে যার মধ্যে থাকে মিথক্সিডাইমিথাইলট্রিপটামাইন এই পাউডারকে নাক দিয়ে টানার মানে হল রাইফেলের ব্যারেল থেকে বেরোনো গুলিতে বিদ্ধ হওয়া 289 00:12:14,000 --> 00:12:21,000 অদ্ভূত চিত্রের সঙ্গে একত্রিত হওয়া এবং বিজলীর সমুদ্রের মধ্যে পড়ে যাওয়া। অদ্ভূত চিত্রের সঙ্গে একত্রিত হওয়া এবং বিজলীর সমুদ্রের মধ্যে পড়ে যাওয়া। এটি বাস্তবতাকে বিকৃত করে না এটি বাস্তবতাকে বিশ্লেষণ করে। প্রকৃতপক্ষে, আমি আমার অধ্যাপক রিচার্ড ইভান শালটেসের সঙ্গে তর্ক করতাম - তিনি এমন একজন লোক, যিনি ১৯৩০ সালে মেক্সিকোতে সাইকেডেলিক যুগের তার ম্যাজিক মাশরুম নিয়ে খ্যাত হয়েছিলেন। আমি সবসময় তর্ক করতাম যে আপনি এই ট্রিপটামাইনগুলিকে অলীক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করতে পারবেন না কারণ এই সময় আপনি তার প্রভাব পাচ্ছেন অলীক মায়া বোঝার জন্য একটিও ঘর নেই। কিন্তু ত্রাইপ্টামাইনের ব্যাপারটি হল যে এটি মুখ দিয়ে গ্রহন করা যায় না কারণ একধরনের এনজাইম এগুলির গুণ বদলে ফেলে যেটি স্বাভাবিকভাবেই মানুষের পেটে পাওয়া যায় যাকে মোনোএমাইন অক্সিডেজ বলা হয় সেগুলি মুখ দিয়ে নেওয়া যায় শুধুমাত্র অন্য কোন সাথে যেটি MAO এর গুণ বদলে ফেলে এখন, আশ্চর্যের জিনিস হল যে গ্রীষ্মমন্ডলীয় গাছে পাওয়া যায় বিটা-কারবোলাইন্স হল নিখুঁত ধরনের মাও নিবারক যেটি দরকার ট্রাইপ্টামাইনকে কাজ করানোর জন্য। তাইলে আপনি নিজেকে একটি প্রশ্ন করুন ৮০,০০০ প্রজাতির গাছের মধ্যে থেকে কি করে এই মানুষগুলি গঠনগত দিক থেকে অসম্পর্কিত দুটি গাছ খুঁজে পায় যেগুলি এইভাবে একত্রিত/একসাথে করলে, এক ধরনের জৈবিক রসায়ন তৈরী হয় যেটা কিনা জোড়া লাগানো অংশের থেকে অনেক বেশি প্রভাবশালী যাই হোক, আমরা সেই বিখ্যাত পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে সফলতা, ব্যবহার করি যেটি কিনা বিফলে পর্যবসিত হয় 315 00:13:26,000 --> 00:13:29,000 কিন্তু আপনি ইন্ডিয়ানদের জিজ্ঞেস করুন, এবং তারা বলবে, “গাছগুলি আমাদের সথে কথা বলে"। কিন্তু আপনি ইন্ডিয়ানদের জিজ্ঞেস করুন, এবং তারা বলবে, “গাছগুলি আমাদের সথে কথা বলে"। ভাল কথা, এটার মানে কি? এই কোফান আদিবাসিদের মধ্যে ১৭টি প্রজাতির আয়াহুয়াসকা আছে, যেগুলি তারা খুব দূর থেকেই জঙ্গলের মধ্যে চিনে ফেলে যেগুলি আমাদের চোখে একইরকম দেখতে লাগে। 320 00:13:42,000 --> 00:13:44,000 এবং যখন আপনি তাদের জিজ্ঞেস করবেন যে ওরা এই প্রজাতিকে কিভাবে চিহ্নিত করে, 321 00:13:44,000 --> 00:13:47,000 তারা উত্তর দেয় যে “আমি ভেবেছিলাম যে আপনি গাছ-পালার ব্যাপারে এবং যখন আপনি তাদের জিজ্ঞেস করবেন যে ওরা এই প্রজাতিকে কিভাবে চিহ্নিত করে, তারা উত্তর দেয় যে “আমি ভেবেছিলাম যে আপনি গাছ-পালার ব্যাপারে আমার বলার মানে হল, আপনি কি কিছুই জানেন না?” এবং আমি বললাম , “না” ভাল, তাহলে আপনি ১৭টি প্রজাতির প্রত্যেকটি নিন এবং পূর্ণিমার রাত্রে এগুলি বিভিন্ন সুরে আপনার কাছে গান গেয়ে ওঠে হ্যাঁ, এই সব আপনাকে হারভাড থেকে পিএইচডি পেতে সাহায্য করবে না, কিন্তু এটি ফুলের পাপড়ি গোনার চেয়ে অনেক বেশি মজার এখন হাততালি সমস্যা-সমস্যা হল যে আমাদের মধ্যে যারা স্থানীয় লোকেদের অসুবিধার সাথে সহানুভুতিশীল তারাও এদের প্রাচীন এবং কালো ভাবি কিন্তু কোনভাবে সেগুলি ইতিহাসে দাগের সাথে মিশে যায় কিন্তু বাস্তবিক সংসার, মানে আমাদের পৃথিবী, চলতে থাকে হ্যাঁ, সত্যি হল যে বিংশ শতাব্দী, এখন থেকে ৩০০ বছর পরে সময়টাকে মনে করা হবে না যুদ্ধ বা প্রযুক্তিগত বিকাশের জন্য 337 00:14:21,000 --> 00:14:23,000 কিন্তু একটি শতাব্দী যখন আমরা দাঁড়িয়ে দেখছিলাম কিন্তু একটি শতাব্দী যখন আমরা দাঁড়িয়ে দেখছিলাম এবং হয় তাতে ক্রিয়াশীল হয়ে অথবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে জৈবিক এবং সাংস্কৃতিক বিভিন্নতার ধংসকে মেনে নিয়েছি পৃথিবীর বুকে। এখন, সমস্যা পরিবর্তন নয়। সব সময়ে সব সংস্কৃতি সবসময় একটি তালে মগ্ন থাকে নতুন জীবনের আশায় এবং সমস্যা শুধুমাত্র প্রযুক্তি নয়। সিওয়াক্স ইন্ডিয়ানেরা নিজেদের সিওয়াক্স বলা বন্ধ করে নি যখন তারা তীর ধনুক ত্যাগ করে দিয়েছিল যেমন আমেরিকানরা নিজেদের আমেরিকান বলা বন্ধ করে নি যখন তারা ঘোড়া গাড়ি ছেড়ে দিয়েছিল এটা পরিবর্তন বা প্রযুক্তি নয় যেটি নৃকুলের একতার জন্য ক্ষতিকারক। এটা হল শক্তি। প্রভুত্বের ভয়ঙ্কর চেহারা। সারা পৃথিবীতে যেদিকেই আপনি তাকাবেন, আপনি আবিষ্কার করবেন যে মুছে যাওয়ার এই সংস্কৃতিগুলির ভাগ্যে নেই। 354 00:15:01,000 --> 00:15:03,000 এরা হল প্রগতিশীল মানুষ এরা হল প্রগতিশীল মানুষ যারা বিতাড়িত এমন শক্তির দ্বারা বেশী শক্তির দ্বারা বাইরের দিকে বিতাড়িত হচ্ছেন হয় এটি পেনানের জন্মভূমিতে খুব তাড়াতাড়ি জঙ্গল কেটে সাফ করে ফেলা; পেনেন হল দক্ষিনপূর্ব এশিয়ায় সারাওয়াকের যাযাবর একদল মানুষ যারা এক পুরূষ আগে জঙ্গলে স্বাধীনভাবে বাস করত এবং এখন দাসবৃত্তি এবং বেশ্যাবৃত্তিতে নেমে গেছে (নদীর তীরে) যেখানে আপনি দেখতে পারবেন যে নদীটি নোংরায় ভর্তি হয়ে গেছে যেটি মনে হবে যে বর্নিয়োর অর্ধেক ময়লা দক্ষিন চিনের সমুদ্রে নিয়ে গিয়ে ফেলে। যেখানে জাপানি মালবাহক জাহাজেরা দাঁড়িয়ে থাকে জঙ্গল থেকে কাটা কাঠের গুঁড়ি তোলার জন্য অথবা ইয়ানোমামির ক্ষেত্রে এটি একটি অস্বাভাবিক বস্তু যেটি বেরিয়ে আসে সোনার খোঁজ পাওয়ার পর। অথবা যদি আমরা যাই তিব্বতের পাহাড়ে যেখানে আমি বর্তমানে অনেক গবেষণা করছি আপনি রাজনৈতিক প্রভুত্বের ভয়ঙ্কর চেহারা দেখতে পাবেন আপনি নিশ্চয় জানেন, যে সারা পৃথিবীতে নিন্দিত, কিন্তু ইথানোসাইড মানুষের জীবনধারনের ধংস, কেবল নিন্দিতই নয় কিন্তু সারা বিশ্বে—অনেক দেশে—সেটি প্রশংসা করা হয় এই বলে যে এটি বিকাশের একটি অংশ। এবং আপনি তিব্বতিদের দুঃখ বুঝতে পারবেন না যতক্ষন না আপনি সবচেয়ে নিচু স্তরে গিয়ে মিশতে পারছেন আমি একবার পশ্চিম চিনের চেংডু থেকে ৬,মাইল ভ্রমন করেছিলাম রাস্তা দিয়ে দক্ষিণপূর্ব তিব্বত দিয়ে লাসা অবধি একজন কম বয়সী সহকর্মীর সাথে, এবং যখন আমি লাসা পৌঁছোলাম তখনই আমি আসল চেহারাটি দেখতে পেয়েছিলাম যেটি পরিসংখ্যানের পেছনে লুকানো 385 00:16:23,000 --> 00:16:24,000 যেটির ব্যাপারে আপনি শুনতে পান যেটির ব্যাপারে আপনি শুনতে পান ৬,০০০ পবিত্র মঠকে গুঁড়িয়ে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১,২০ লাখ মানুষকে ক্যাডাররা মেরে ফেলেছিল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সময়। এই যুবকটির পিতার উপর পানচেন লামার দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার মানে ওনাকে তক্ষুনি মেরে ফেলা হয়েছিল যখন চিন আক্রমণ করেছিল 392 00:16:39,000 --> 00:16:41,000 তার আঙ্কল এই ঝামেলার সময় ধর্মগুরুর সাথে পালিয়ে গেছিলেন তার আঙ্কল এই ঝামেলার সময় ধর্মগুরুর সাথে পালিয়ে গেছিলেন এবং লোকদের নিয়ে নেপালে চলে গিয়েছিলেন। তার মাকে বন্দি করা হয়েছিল ধনী হওয়ার জন্য এই সাজা তাকে দু বছর বয়সে জেলে চালান করা হয়েছিল মায়ের স্কার্টের তলায় লুকিয়ে কারণ তিনি তার থেকে আলাদা হয়ে থাকতে পারছিলেন না। যে দিদি এই সাহসী কাজটি করেছিল তাকে একটি শিক্ষা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। একদিন সে ভুল করে মাওয়ের একটি বাহুবন্ধের উপর ভুল করে পা রেখে দিয়েছিল এবং এই অপরাধের জন্য তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল তিব্বতিদের দুঃখ সহ্য করা অসম্ভব কিন্তু সেখানের মানুষদের বেঁচে থাকার ইচ্ছে অসাধারণ। এবং শেষে একটাই বিকল্পে পৌঁছান যেতে পারে অথবা আমরা কি বৈচিত্র্যহীনতার একরংগা এই পৃথিবীতে বাস করতে চাই? 408 00:17:19,000 --> 00:17:22,000 অথবা আমরা কি বিচিত্রতার বহুরংগা পৃথিবীকে সাদরে গ্রহণ করতে চাই?409 00:17:22,000 --> 00:17:25,000 বিখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ মার্গারেট মেড, মারা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন অথবা আমরা কি বিচিত্রতার বহুরংগা পৃথিবীকে সাদরে গ্রহণ করতে চাই? বিখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ মার্গারেট মেড, মারা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন যে তার সব চেয়ে বড় ভয় হল যে যেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এই বৈশিষ্ট্যহীন অনিয়তকার পৃথিবীর জাতিগত চিত্রের দিকে আমরা কেবল দেখতেই পারব না যে মানুষের সকল চিন্তাশক্তি একটি ছোট চিন্তাধারায় বদলে গেছে কিন্তু এটাও যে আমরা একদিন ঘুম থেকে জেগে উঠব এটা ভুলে গিয়ে যে সেখানে অন্যান্য সম্ভাবনাও ছিল এবং এটি সবিনয়ে মনে করে যে আমাদের প্রজাতি গত ১৫০,০০০ বছর ধরে বেঁচে আছে পাষাণ যুগের সেই বিপ্লব- - যেটি আমাদের কৃষি প্রদান করেছিল যে সময়ে আমরা বীজের প্রতি ঝুঁকে তার বশীভূত হয়ে পড়েছিলাম 420 00:17:54,000 --> 00:17:56,000 ওঝার ঝাড়ঁফুকের মন্ত্র সরে গিয়ে ওঝার ঝাড়ঁফুকের মন্ত্র সরে গিয়ে পুরোহিতমন্ডলীর শ্লোক জায়গা করে নিয়েছিল, আমরা আনুক্রমণ বিশেষজ্ঞতা অতিরিক্ত রচনা করেছি যেটি কেবল ১০,০০০ হাজার বছর আগেই হয়েছে 424 00:18:02,000 --> 00:18:04,000 এই আধুনিক উতপাদনশিল্প-সংক্রান্ত পৃথিবী যেটিকে আমরা জানি এই আধুনিক উতপাদনশিল্প-সংক্রান্ত পৃথিবী যেটিকে আমরা জানি সেটি কেবল ৩০০ বছর পুরানো। এবার, এই নবীন ইতিহাস আমাকে পরামর্শ দেয় না যে আমাদের কাছে সব সমস্যার সমাধান আছে যেগুলি আসছে শতাব্দীতে আমাদের সম্মুখীন হতে হবে যখন পৃথিবীর এইসব অসংখ্য সংস্কৃতিকে মানুষ হওয়ার মানে জিজ্ঞেস করা যায়, তারা ১০,০০০ বিভিন্ন স্বরে উত্তর দেয়। এবং এই গানের মধ্যে দিয়ে আমরা জানতে পারি এই সম্ভাবনার যে আমরা কারাঃ একটি পূর্ণ সচেতন প্রজাতি সম্পূর্ণ সচেতনভাবে নিশ্চিত করতে পারি যে সমস্ত মানুষ এবং গাছপালা বেড়ে ওঠার একটি রাস্তা খুঁজে বার করে নেয়। এবং আশাবাদের মহালগ্ন উপস্থিত আছে এই ছবিটি আমি তুলেছিলাম ব্যাফিন দ্বীপের উত্তর প্রান্তে যখন আমি কিছু ইনউইট প্রজাতির লোকেদের সথে ছোট সাদা তিমি শিকারে গিয়েছিলাম এবং এই লোকটি, ওলাইউক, তার দাদুর একটি দারুণ গল্প বলেছিল কানাডা সরকার সবসময় এত সদয় নয় ইনুইট লোকেদের প্রতি, এবং ১৯৫০ এর দশকে নিজেদের প্রাধান্য স্থাপন করার জন্য, আমরা তাদের বসতি স্থাপন করতে জোর দিয়েছিলাম এই বয়স্ক মানুষটি ছেড়ে যেতে নারাজ ছিল তার পরিবার তার তার জীবনের জন্য ভয় পেয়ে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র, যন্ত্রপাতি নিয়ে চলে গিয়েছিল্ এখন, আপনাকে বুঝতে হবে যে ইনউইটেরা ঠান্ডাকে ভয় পায় নি। তারা তার লাভ উঠিয়েছিল তাদের গাড়ির চাকাগুলি আসলে মাছের তৈরী ক্যারীবউ খোলে মোড়া তাই, এই মানুষটির দাদু উত্তর মেরুর রাত্রিকে বা যে ঠান্ডা হাওয়া বওয়াকে ভয় পেতেন না তিনি সহজ ভাবে বাইরে বেরোলেন, সিল মাছের তৈরী নিজের পায়জামা খুললেন এবং নিজের হাত আবৃত করলেন। এবং যেই বিষ্ঠা ঠান্ডায় জমে যেতে লাগলো তিনি সেটিকে একটি ব্লেডের আদলে তৈরী করতে থাকলেন তিনি সেই বিষ্ঠার তৈরী ছুরির ধারে থুতু ছিটিয়ে দিলেন এবং যেই সেটি জমে শক্ত হয়ে গেল, তিনি সেটা দিয়ে একটি কুকুরকে মেরে ফেললেন তিনি সেই কুকুরের ছাল ছাড়ালেন এবং সেটি দিয়ে একটি বর্ম বানালেন কুকুরের মেরুদন্ড দিয়ে একটি ভাল গাড়ি বানালেন তারপর পাশে দাঁড়ানো একটি কুকুরকে বাঁধলেন এবং বরফের চাঁই এর উপর হারিয়ে গেলেন, সেই তৈরী ছুরিটি তার বেল্টে আঁটকানো ছিল খালি হাতে বেরনোর কথা বলুন এবং এটি, অনেক ভাবে হাততালি ইনউইট লোকেদের চাপের মুখে ভেঙ্গে না পড়ার একটি নিদর্শন এবং পৃথিবীর সকল মানুষদেরও ১৯৯৯-এর এপ্রিলে কানাডা সরকার ইনুউইট লোকেদের সব নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছিল একটি জায়গা যার ক্ষেত্রফল ক্যালিফর্নিয়া এবং টেক্সাসের মিলিত ক্ষেত্রের থেকে বড় এটি আমাদের নতুন বাসস্থান। এটিকে নুনাভুট বলা হয়। এটি একটি স্বাধীন রাজ্য। তারা সকল খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে। একটি চমকপ্রদ উদাহরণ কিভাবে একটি রাষ্ট্র-প্রদেশ পৌঁছাতে পারে - এর লোকদের পুনরূদ্ধার চায় এবং শেষে, আমার মনে হয় এটা খুবই স্পষ্ট আমাদের জন্য যারা ভ্রমণ করেছেন পৃথিবীর দূরস্থ স্থানে এটি বোঝাতে যে সেইগুলি একেবারেই দুর্গম নয়। সেগুলি কারও জন্মভূমি। সেগুলি মানুষের চিন্তাধারার শাখাপ্রশাখা চিহ্নিত করে যেগুলি সময়ের শেষে ফিরে যায়। এবং আমাদের সকলের জন্য, এই বাচ্চাদের স্বপ্ন,আমাদের বাচ্চাদের স্বপ্নের মতই আশার উন্মুক্ত ভূগোলের অংশ হয়ে যায়। তাই, আমরা ন্যাশন্যাল জিওগ্রাফিতে চেষ্টা করছি যে, আমরা বিশ্বাস করি যে নেতারা কখনো কিছু সম্পূর্ণ করতে পারে না আমরা বিশ্বাস করি যে বিতর্ক হাততালি আমরা বিশ্বস করি যে ত্বকের সাহায্যে কিছু বোঝান যায় না, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে গল্প বলে আমরা পৃথিবী বদলে ফেলতে পারি, এবং তাই আমরা সম্ভবত সবথেকে ভাল গল্প বলিয়ে সংস্থান পৃথিবীর মধ্যে। প্রতি মাসে আমাদের ওয়েবসাইট ৩৫০ লক্ষ বার খোলা হয়। ১৫৬টি দেশে আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল দেখান হয়। আমাদের পত্রিকা কয়েক লক্ষ মানুষে পড়ে। এবং আমরা যেটা করছি সেটা বেশ কয়েকটি পর পর ঘটনা ইথনোস্পেয়ারে যেটিতে আমরা আমাদের দর্শকদের সাংস্কৃতিক বিস্ময়ের সম্বন্ধে একটি জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। যেখানে তারা চমত্কৃত না হয়ে থাকতে পারবেন না তারা যেটা দেখছেন, এবং আশা করা যায়, সেইজন্য আঁকড়ে ধরবেন, একে একে নৃতত্ত্বের মূল গুপ্ত বিষয়টিকে। যে এই পৃথিবীর ভিন্ন ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে যে আমরা বেঁচে থাকার পথ খুঁজতে পারি একটি সত্যিকারের বহুসাংস্কৃতিক পৃথিবীতে যেখানে সকল মানুষের জ্ঞান সাহায্য করতে পারে সকলের একসাথে ভাল থাকার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ হাততালি এটা সত্যিকার অর্থে দুই ঘন্টার একটি উপস্থাপনা যা আমি উচ্চ বিদ্যালয়ে দিয়ে থাকি, যা ৩ মিনিটে কমিয়ে ফেলেছি। এবং এর সূত্রপাত একটি উড়োজাহাজে, TED এ আসার পথে, সাত বছর আগে। এবং আমার পাশের আসনে একজন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কিশোরী বসে ছিল ও সে অত্যন্ত গরীব পরিবার থেকে এসেছিল। এবং সে জীবনে কিছু করতে চেয়েছিল, সে সাধারণ ছোট একটি প্রশ্ন করেছিল। সে বলেছিল, "সফলতার পথে কি ধাবিত করে?" এবং আমার সত্যিকার অর্থেই খারাপ লেগেছিল, কারণ আমি তাকে কোন সদুত্তর দিতে পারিনি। তাই আমি প্লেন থেকে নেমে TED এ আসলাম। এবং আমি ভাবি, আহ, আমি এক ঘর ভর্তি সফল মানুষের মাঝে! তাহলে আমি কেন তাদের জিজ্ঞাসা করি না কি তাদের সফল হতে সাহায্য করেছিল, এবং সেই বার্তাটা বাচ্চাদের কাছে পৌঁছে দেই? তাই এইযে আমরা এখানে, সাত বছর আর ৫০০ সাক্ষাৎকার শেষে, আমি আপনাদের বলবো কোন বিষয়টি সফলতার দিকে আমাদের ধাবিত করে এবং তা TED নায়ক হতে সাহায্য করে। এবং প্রথম বিষয়টি হচ্ছে প্রবল উৎসাহ। ফ্রিম্যান থমাস বলেন, "আমি আমার প্রবল উৎসাহ দ্বারা ধাবিত হই।" TED এর নায়কেরা কাজ করে ভালবাসা থেকে; টাকার জন্য নয়। ক্যারল কোলেটা বলেন, "আমি যা করি তা করার জন্য আমি অন্য সবাইকে অর্থ দিব।" এবং সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছেঃ আপনি যদি ভালবাসার জন্য করে থাকেন, অর্থ যেকোন ভাবেই হোক আসবে। কাজ! রুপার্ট মার্ডক আমাকে বলেন, "এটা মূলত পরিশ্রম। কোনকিছু সহজে অর্জিত হয় না। কিন্তু আমার এসব করতে অনেক মজা লাগে।" সে যে শব্দটা ব্যবহার করলো তা কি 'মজা'? রুপার্ট? হ্যাঁ। TED এর নায়কেরা মজা পায় কাজ করতে। এবং তারা অত্যন্ত পরিশ্রম করে। আমি খুঁজে বের করলাম, তারা আসলে কাজাসক্ত নয়, তারা হচ্ছেন সফলতার কাজাভক্ত । ভাল! এলেক্স গার্ডেন বলেন,"কোনকিছুতে সফল হতে হলে পুরো নাক ডুবিয়ে মাঠে নামতে হবে। এবং তাতে অত্যন্ত অভিজ্ঞ হতে হবে।" এখানে কোন জাদু কাজ করে না; এটা চর্চার ফসল, চর্চা আর চর্চা। এবং তা লক্ষ্যকেন্দ্রিক। নরমান জেয়িসন আমাকে বলেন, "আমার মনে হয় সফলতা হচ্ছে কিজেকে একটা লক্ষ্যে স্থির করা।" এবং ধাক্কা দেওয়া! ডেভিড গেল্লো বলেন, "নিজেকে ধাক্কা দাও।" শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে, তোমার নিজেকে ধাক্কা দিতে হবে, ধাক্কা আর ধাক্কা।" নিজেকে ধাক্কা দিতে হবে লাজুকতা এবং আত্মদ্বন্দ্বের মাঝে। গোল্ডি হন বলেন, " আমার সবসময় আত্মদ্বন্দ্ব ছিল। আমি যথেষ্ট ভাল ছিলাম না; আমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছিলাম না। আমি মনে করেছিলাম যে আমি এতদূর আসতে পারবো না। " এখন এটা কখনওই সহজ কাজ নয় নিজেকে ধাক্কা দেওয়া। এবং যেকারণে তারা মাদেরকে উদ্ভাবন করেছেন। (হাসি) ফ্র্যাঙ্ক গেরি-ফ্র্যাঙ্ক গেরি আমাকে বলেন, " আমার মা সবসময় আমাকে ঠেলতেন।" সেবা কর! সেরউইন নুল্যাণ্ড বলেন, " ডাক্তার হিসেবে সেবা করতে পারাটা আমার জন্য ছিল অত্যন্ত সম্মানের।" এখন অনেক বাচ্চা আমাকে বলে তারা বিত্তশালী হতে চায়। এবং প্রথম যে কথাটা আমি তাদের বলি, তা হচ্ছেঃ " ঠিক আছে, তুমি তোমার নিজেকে সেবা করতে পারো না; তোমার অন্যদের যেকোন মূল্যের সেবা প্রদান করতে হবে। কারণ এই উপায়েই মানুষ আসলে বড়লোক হয়।" ভাবনা! TED নায়ক বিল গেটস বলেন, "আমার একটি ভাবনা ছিলঃ পৃথিবীর প্রথম মাইক্রো-কম্পিউটার সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা।" আমি বলবো, তা অত্যন্ত ভাল একটি ভাবনা ছিল। এবং এই সৃষ্টিশীলতার পেছনে কোন যাদু কাজ করে না- এটা আসলে কতগুলো সাধারণ জিনিস ঠিকমত করা। এবং আমি অনেক প্রমাণ দিব। বিরতিহীন! জো ক্রাউস বলেন, " বিরামহীনতাই হচ্ছে আমাদের প্রথম কারণ সফলতার।" আপনাকে ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে বিরতিহীনভাবে চেষ্টা করতে হবে। যার অর্থ আসলে, "সমালোচনা, বাতিল, জঘন্য মানুষ এবং চাপ।" (হাসি) সুতরাং, বড়--প্রশ্নের উত্তর খুবই সাধারণঃ ৪০০০ ডলার খরচ কর এবং TED এ আসো। অথবা বেরথ হয়ে, অন্য আরো আটটা কাজ কর- এবং বিশ্বাস কর, এই আটটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয় যা সফলতার দিকে ধাবিত করে। ধন্যবাদ TED নায়কদের তাদের সাক্ষাৎকারের জন্য! আমি আপনাদের দেখাব কিভাবে সন্ত্রাসবাদ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকে। ১৫ বছর আগে এক বন্ধুর কাছ থেকে আমি একটা ফোন কল পাই। ও সেই সময়ে রাজনৈতিক বন্দীদের অধিকারের বিষয়ে কাজ করত ইতালির জেলখানাগুলোতে। সে রেড ব্রিগেডস- এর সদস্যদের সাক্ষাৎকার নেবার ব্যপারে আমার আগ্রহ জানতে চাইল। তো অনেকের-ই হয়তো মনে আছে, রেড ব্রিগেডস ছিল একটি সন্ত্রাসী, মাকর্সবাদী সংগঠন যেটি ইতালিতে বেশ সক্রিয় ছিল ৬০ এর দশক থেকে শুরু করে ৮০'র দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত। তাদের কৌশলের অংশ হিসেবে রেড ব্রিগেডস-এর সদস্যরা কখনো কারো সাথে কথা বলত না, এমনকি তাঁদের আইনজীবিদের সাথেও না। তাঁরা নিরবে তাঁদের চিহ্নিত স্থানগুলোতে অবস্থান করত, আর মাঝে-মাঝে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে দেখা হত। ১৯৯৩ সালে তাঁরা সশস্ত্র সংগ্রামের পরিসমাপ্তির ঘোষনা করে। এবং তাঁরা কিছু মানুষ এর তালিকা করে যাদের সাথে তাঁরা কথা বলবে, আর তাঁদের কাহিনী শোনাবে। এবং আমি ছিলাম সেই মানুষদের একজন। যখন আমার সেই বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন তাঁরা আমার সাথে কথা বলতে চায়, সে আমাকে বলেছিল যে সংগঠনের নারী সদস্যরা আসলে আমার নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি সমর্থন করেছিল। বিশেষ করে একজন ব্যক্তি প্রস্তাবটি করেছিল। সে ছিল আমার ছোটবেলার বান্ধবী। সে রেড ব্রিগেডস্‌ এ যোগ দিয়েছিল এবং সংগঠনটির একজন নেতা হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই আমি তা জানতাম না যেদিন সে গ্রেফতার হল তার আগ পর্যন্ত। সত্যি বলতে কি, আমি পত্রিকা পড়ে জানতে পারি। যে সময়ে বন্ধুর ফোনটা পেয়েছিলাম আমি তখন মাত্র সন্তান লাভ করেছি, আমি সফলভাবে একটি কোম্পানির স্টক বিক্রয়ের কাজ সম্পন্ন করি যে কোম্পানির সাথে আমি কাজ করতাম, আর এরকম একটা সময়ে দেশে গিয়ে প্রচন্ড নিরাপত্তাবেষ্টিত জেলখানাগুলোতে ঘুরাঘুরি করাটা আমার ভাবনাতেও ছিলনা। কিন্তু ঠিক ওই কাজটাই আমি করলাম কারণ আমি জানতে চাচ্ছিলাম কোন্‌ বিষয়টা আমার সবচে কাছের বন্ধুকে একজন সন্ত্রাসীতে পরিণত করল, আর কেন সে আমাকে কখনো তাঁর দলে নেবার চেষ্টা করলনা। (হাসি) (তালি) একারণে, আমি ঠিক তাই করলাম। যাক, আমি উত্তর বেশ দ্রুতই পেলাম। আমি আসলে ব‍্যর্থ হয়েছিলাম সন্ত্রাসীদের মনস্তাত্তিক বিশ্লেষণে। রেড ব্রিগেডস-এর মূল কমিটি আমাকে বেশ একরোখা হিসেবেই বিচার করেছিল আমার একজন ভাল সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার বেপারে অতি রক্ষণশীলতার কারনে। অন্যদিকে আমার বন্ধু একজন ভাল সন্ত্রাসী ছিল কারণ সে নির্দেশ পালনে বেশ ভাল ছিল। তাছাড়া,সন্ত্রাসকে সে ভালভাবেই গ্রহণ করেছিল। কারণ সে বিশ্বাস করত যে বাঁধা দূর করার এটাই একমাত্র উপায়, সে সময়ে যা কিনা বদ্ধ গনতন্ত্র নামে পরিচিত ছিল, ইতালি, যে দেশটা একি দলের দ্বারা ৩৫ বছর ধরে পরিচালিত ছিল, হল সশস্ত্র সংগ্রাম। একিসময়, আমি যখন রেড ব্রিগেডস-দের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম, আমি এও আবিষ্কার করলাম যে তাঁদের জীবন রাজনীতি বা মতাদর্শ দ্বারা বাঁধা নয়, বরং অর্থনীতি দ্বারা পরিচালিত। তাঁরা সবসময়ই টাকার অভাবে থাকত। তাঁরা সবসময়ই টাকার খোঁজে ছিল। যাই হোক, অনেকেই যেটা বিশ্বাস করতে পারেনা, সন্ত্রাসবাদ আসলে একটি বেশ ব্যয়বহুল কর্মকান্ড। একটা ধারণা দেই, ১৯৭০ এর দশকে, রেড ব্রিগেডস এর বাৎসরিক ব্যবসার পরিমান ছিল সাত মিলিয়ন ডলার। সেটা এখন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। এখন, বুঝতেই পারছেন, আপনি যদি আন্ডারগ্রাউন্ড-এ থাকেন, এই পরিমান অর্থ যোগাড় করা সত্যি কঠিন। তবে বিষয়টা এও ব্যাখ্যা দেয়, কেন যখন আমি তাঁদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম, আর পরে যখন অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনগুলোর-ও নিলাম, মধ্যপ্রাচ্যের আল-জারকাওয়ি এর সদস্যরাও যাঁদের মধ্যে ছিল, সবাই অতিমাত্রায় অনিচ্ছুক ছিল মতাদর্শ বা রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে। কারণ তাঁদের কোন ধারণাই ছিল না। যেকোন সন্ত্রাসী সংগঠনের রাজনৈতিক দর্শন নেতৃত্তের দ্বারা গৃহিত হয়, যা, সাধারণত, কখনই পঁাচ-সাত জন মানুষের বেশি না। বাকিরা কেবল দিন কাটায় টাকার খোঁজে। যেমন ধরুন, একবার আমি সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম রেড ব্রিগেডস এর এক অস্থায়ী সদস্যের। সে ছিল একজন মনোবিজ্ঞানী। সে নৌকা চালাতে ভালবাসত। সত্যিকার অর্থেই সে একজন আগ্রহী নাবিক ছিল। আর তাঁর বেশ সুন্দর একটা নৌকাও ছিল। আর সে আমাকে বলেছিল যে তাঁর জীবনের সেরা সময়টা ছিল যখন সে রেড ব্রিগেডস-এর সদস্য ছিল। আর সে প্রতি গ্রীষ্মে নৌকা নিয়ে আসা-যাওয়া করত লেবানন থেকে, যেখানে সে সংগ্রহ করত পিএলও এর কাছ থেকে পাওয়া সোভিয়েত অস্ত্র-সস্ত্র, আর সেগুলো সার্দেগনা পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যেত যেখানে ইওরোপের অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনগুলো যেত আর তাঁদের অস্ত্রের ভাগ বুঝে নিত। ঐ কাজের জন্য রেড ব্রিগেডস কে রীতিমত ফি দেয়া হত, যেটা দিয়ে তাঁদের সংগঠনের খরচ যোগান হত। তো, যেহেতু আমি একজন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ আর আমি অর্থনীতির ভাষায় চিন্তা করি, হঠাৎ করেই আমি চিন্তা করলাম, হয়ত এখানে একটা ব্যপার আছে। হয়ত একটা সম্পর্ক আছে, কোন ব্যবসায়িক যোগাযোগ, একটার সাথে আরেকটা সংগঠনের। কিন্তু যখন কেবল আমি সাক্ষাৎকার নিলাম মারিও মরেত্তির, রেড ব্রিগেডস এর প্রধান, যে কিনা আলদো মোরো কে অপহরণ করে মেরে ফেলেছিল, উনি ছিলেন ইতালীর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, তখনই আমি আসলে বুঝতে পারলাম যে সন্ত্রাসবাদ আসলে একটা ব্যবসা। আমি তাঁর সাথে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম ইতালীর একটি উচ্চমাত্রার নিরাপত্তা বেষ্টিত জেলে। আর যখন আমরা খাচ্ছিলাম, আমার বিশেষভাবে মনে হচ্ছিল যেন আমি লন্ডন শহরে ফিরে গিয়েছি, আর যেন কোন ব্যংকার বা অর্থনীতিবিদের সাথে বসে খাবার খাচ্ছি। ঐ লোকটা একেবারে আমার মতই চিন্তা করছিল। তাই, আমি ঠিক করলাম যে আমি সন্ত্রাসবাদের অর্থনীতির উপর গবেষণা করব। স্বাভাবিকভাবেই, কেউ আমার কাজে আর্থিক সাহায্য দিতে চায়নি। আসলে, আমার মনে হয় অনেক মানুষ ভেবেছিল আমি খানিকটা পাগল। বুঝতেই পারেন, যে এই মহিলাটা বিভিন্ন সংস্থায় গিয়ে ঘুরাঘুরি করছে আর টাকা চাচ্ছে, সন্ত্রাসবাদের অর্থনীতি নিয়ে সারাক্ষণ ভাবছে। তাই, শেষে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিলাম যা, এখন বুঝতে পারি, আমার জীবন পালটে দিয়েছিল। আমি আমার কোম্পানিটা বিক্রি করে দিলাম, আর গবেষণার টাকা নিজেই ব্যবস্থা করলাম। আর যেটা আমি আবিষ্কার করলাম তা হল এই যৌথ বাস্তবতা, আরেকটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, আমাদেরটার মতন-ই চালু রয়েছে, যেটা অস্ত্র-সংগঠনগুলোর দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। আর তার চেয়েও ভয়াবহ বিষয় হল যে এই ব্যবস্থা প্রতি পদক্ষেপে অনুসরন করেছে আমাদের নিজেদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিবর্তনকে, আমাদের পশ্চিমা পুঁজিবাদকে। আর এক্ষেত্রে তিনটি প্রধান ধাপ রয়েছে। প্রথমটি হল সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। দ্বিতীয়টি হল সন্ত্রাসবাদের বেসরকারিকরণ। আর তৃতীয়টি, স্বাভাবিকভাবেই, সন্ত্রাসবাদের বিশ্বায়ন। যাক, সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, ছিল স্নায়ুযুদ্ধের বৈশিষ্ট্য। এটা ছিল সেই সময় যখন দুই পরাশক্তি প্রক্সি যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, তাদের প্রভাব বলয়ের সীমানা বরাবর, অস্ত্র-সংগঠনগুলোকে পুরোপুরিভাবে অর্থসাহায্য তারা দিত। আইনি আর বেআইনির এক মিশ্র কর্মকান্ড চলছিল। তাই, অপরাধ আর সন্ত্রাসের যোগাযোগ বেশ আগেই স্থাপিত হয়েছিল। আর এর সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হল, নিকারাগুয়ার কন্ট্রারা, যেটা সি আই এ তৈরী করেছিল, ইউ এস কংগ্রেস দ্বারা যেটি আইনসম্মতভাবেই অর্থায়িত হত, আর আইন-বহির্ভুতভাবে অর্থায়ন করেছিল রিগ্যান প্রশাসন গোপন অপারেশনের মাধ্যমে, যেমন, ইরান-কন্ট্রা সম্পর্ক। তারপর আসল ৭০ এর শেষ দিক, ৮০ এর দশকের প্রথমভাগ, আর কিছু গ্রুপ বেশ সফল্ভাবেই সন্ত্রাসবাদের বেসরকারিকরণ সফলভাবেই সম্পন্ন করছিল। তাই, তারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা থেকে স্বাধীন হয়ে, নিজেরাই নিজেদের অর্থায়ন শুরু করে। এক্ষেত্রেও আমরা একধরনের মিশ্রন দেখি আইনী ও আইনবহির্ভুত কর্মকান্ডের। যাই হোক, আরাফাত লভ্যাংশ পেত হাশিষ পাচারের থেকে বেকা ভ্যলি থেকে, যেটা কিনা সিরিয়া ও লেবাননের মধ্যে পড়েছে। এবং আই, আর,এ, যেটা বেসরকারি যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করত উত্তর আয়ারল্যন্ডের, ঠিক একি কাজ করত। তাই, প্রত্যেকবার বেলফাষ্টে যখন কেউ ট্যক্সি তে চড়ে নিজের অজান্তেই, আসলে, আই আর এ কে সে অর্থায়ন করে। কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা এসেছিল, সত্যিকার অর্থে, বিশ্বায়ন আর ডি-রেগুলেশনের সাথে। এই সময় অস্ত্র-সংগঠনগুলো, আর্থিকভাবেও, নিজেদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়ে উঠে। কিন্তু বড় ব্যপার হল, তারা অপরাধ জগৎ - এর সাথে রীতিমত ব্যবসা শুরু করে। আর তারা একসাথে পাচার করত তাদের অবৈধ ব্যবসাজনিত অর্থ, একই সূত্রের মাধ্যমে। এই সময়ই আমরা বহুজাতিক সশস্ত্র সংগঠন আল-কায়েদার জন্ম দেখতে পাই। এটা এমন এক সংগঠন যা সীমানার বাইরেও অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। তাছাড়া এটি হামলা চালাতেও সক্ষম একাধিক দেশে। তো, ডিরেগুলেশন আবার দূর্বৃত্ত অর্থনীতিকেও ফিরিয়ে আনে। তাহলে, দূর্বৃত্ত অর্থনীতি কাকে বলে? দূর্বৃত্ত অর্থনীতি একটি শক্তি যা সর্বদাই ইতিহাসের পেছনে অশুভ অভিলাষ নিয়ে অবস্থান করেছে। বড় ধরনের পরিবর্তনের সময় এটা ফিরে আসে, বিশ্বায়ন সেরকমই একটি পরিবর্তন। এটা সে ধরনের সময় যখন অর্থনীতির উপর রাজনীতির কর্তৃত্ত হারিয়ে যায়। আর অর্থনীতি হয়ে পড়ে দূর্বৃত্ত শক্তি যা আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করে। এরকম ঘটনা পূর্বেও ঘটেছে। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সময় এরকম ঘটেছে। শিল্প বিপ্লবের সময় এরকম ঘটেছে। এবং এটা আসলেই আবার ঘটেছে বার্লিন দেয়ালের পতনের সাথে। এখন, আমি হিসেব করেছি এই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কতটা বড় ছিল, যেটা অপরাধ, সন্ত্রাস আর অবৈধ অর্থনীতি দ্বারা গঠিত ছিল ৯-১১ এর পূর্ববর্তী সময়ে। অবিশ্বাস্যভাবে এটার পরিমান ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এটা ট্রিলিয়নের হিসাবে, বিলিয়ন নয়। এটা প্রায় যুক্তরাজ্যের জিডিপির দ্বিগুন, পরিমানটা দ্রুত আরো বাড়বে, যদি দেশটার ভবিষ্যৎ বিবেচনায় আনা যায়। (হাসি) এখন, ৯-১১ পর্যন্ত, এই পুরো অর্থের পরিমান ইউ এস এর অর্থনীতিতে চলে যেত কেননা অর্থের বড় অংশটাই ইউ এস ডলারে নিয়ন্ত্রিত ছিল আর মুদ্রা পাচারও চলছিল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে। বিপুল পরিমান এই অর্থের ঢোকার রাস্তা ছিল বাইরে অবস্থিত (মূলত ব্যংকিং খাত) ব্যবস্থাপনাগুলো। কাজেই, এটা ছিল অর্থের প্রবেশের গুরুত্তপূর্ণ পথ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে। তাই, আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ যোগানের হিসেব দেখলাম, যুক্তরাষ্ট্রের টাকা যোগান হল সেই পরিমান ডলার যা ফেডারেল রিজার্ভ প্রতি বছর ছাপায় ডলারের বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য, যা, অন্য কথায়, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। তাই, যখন আমি সেইসব হিসেব দেখলাম, আমি খেয়াল করলাম যে ১৯৬০ এর দশকের শেষ থেকে ওই ডলারের একটি বাড়ন্ত অংশ আসলে যূক্তরাষ্ট্র থেকে উধাও হচ্ছিল, কখনই ফিরে না আসার জন্যেই। ওগুলো ছিল সেই টাকা যা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সুটক্যসে অথবা কন্টেইনারে করে, ক্যাশ করে অবশ্যই। ওগুলো সেই টাকা যা অপরাধীরা আর মূদ্রা পাচারকারীরা নিয়ে যাচ্ছিল। এগুলো সেই টাকা যা দিয়ে সন্ত্রাসের বৃদ্ধিতে ব‍্যবহৃত হয়েছিল, অবৈধ আর দুষ্কৃতকারী অর্থনীতির অর্থায়নও করা হয়েছিল। তো, দেখতেই পাচ্ছেন, সম্পর্কটা কিরকম? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হল এমন একটি দেশ যা বিশ্বের রিজার্ভ কারেন্সির মত। এর মানে কি? এর মানে হল এর এমন একটা সুবিধা আছে যা অন্য দেশগুলোর নাই। এটি বিশ্বের মোট ডলারের পরিমানের বিপরীতে ধার করতে পারে। এই সুবিধাকে বলা হয় সেইনিওরে (Feudal Lord এর ধারণা থেকে) অন্য কোন দেশ এরকম করতে পারেনা। অন্য সব দেশ, যেমন যূক্তরাজ্য কেবল সেই পরিমান অর্থের বিপরীতে ধার করতে পারে যে পরিমান তার দেশের অভ্যন্তরে চলমান আছে। তো, এটা হল সেই সম্পর্কের প্রভাব যে সম্পর্ক রয়েছে অপরাধ, সন্ত্রাস আর অবৈধ অর্থনীতির, আর আমাদের অর্থনীতির মধ্যে। ১৯৯০ এর দশকে ইউ এস অপরাধ, সন্ত্রাস আর অবৈধ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ধার করছিল। আমরা এরকমভাবেই এই বিশ্বে আমরা কাছাকাছি অবস্থান করি। এখন, পরিস্থিতি বদলেছে, অবশ্যই, ৯-১১ এর পরে, কারণ জর্জ বুশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছেন। এই যুদ্ধের একটা বিষয় হল প্যট্রিয়ট এক্ট এর আবির্ভাব। তো, অনেকেই আপনারা জানেন যে এই এক্ট এমন একটি আইন যা মার্কিনিদের স্বাধীনতা ব্যপক আকারে খর্ব করেছে সেগুলোকে রক্ষার নামে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। কিন্তু ওখানে একটি অধ্যায় আছে যেটা মূলত অর্থ-সংক্রান্ত। এবং এটি হল, আসলে, একটি মূদ্রা পাচার-রোধী আইন। এই আইনটা ইউ এস ব্যংক, আর ইউ এস এর রেজিষ্ট্রি আছে এরকম বিদেশী ব্যংকগুলোকে নিষেধ করেছে অফ-সোর প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ব্যবসা করতে। এর ফলে, ডলারে মূদ্রা পাচার আর ইউএস অর্থনীতির মধ্যকার পথ বন্ধ হয়ে গেল। এটা আমেরিকার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো অধিকার দিল যেকোন ডলারের আদানপ্রদােন নজরদারি করার বিশ্বের যে প্রান্তেই তা হোক না কেন। এখন, বুঝতেই পারছেন, এর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল আন্তর্জাতিক অর্থ আর ব্যংকিং খাতের পক্ষ থেকে। সকল ব্যংকার রা তাঁদের ক্লায়েন্ট দের বললঃ "ডলার নিয়ে চলে যাও আর অন্য কোথাও লগ্নি কর"। তো, ইউরো তখন নতুন মূদ্রা হিসেবে এসেছে যা ব্যবসা আর লগ্নির জন্য সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে। এবং মানুষজন ঠিক এই কাজটা করল। কেউ-ই চায়না যে ইউ এস এর আর্থিক কর্তৃপক্ষ তাঁদের সম্পর্কের সীমা নির্ধারণ করুক, ক্লায়েন্ট দের সাথের সম্পর্কের উপর নজরদারী করুক। একিরকম ঘটনা ঘটল, আসলেই, অপরাধ আর সন্ত্রাসের জগতেও। মানুষ তাঁদের মূদ্রা পাচারের কর্মকান্ড সরিয়ে নিল যূক্তরাষ্ট্র থেকে ইওরোপের দিকে। কেন এটা ঘটল? কারণ হল Patriot Act টা ছিল আসলে একক আইন। এটা কেবল যূক্তরাষ্ট্রেই করা হয়েছিল। আর এটা কেবল ইউ এস ডলারের ক্ষেত্রেই করা হয়েছিল। ইওরোপে একিরকমের আইন করা হয়নি। তাই, ছয় মাসের মধ্যেই ইওরোপ হয়ে গেল বিশ্বের মূদ্রা পাচার কর্মকান্ডের মূলকেন্দ্র। তাই, এরকমই অসাধারন সম্পর্ক রয়েছে অপরাধ জগতের সাথে সন্ত্রাসের জগতের আর আমাদের নিজেদের জীবনের সাথে। তো কেন আমি আপনাদের এই কাহিনী শোনালাম? আমি বলেছি কারণ আপনাকে অবশ্যই অনুধাবণ করতে হবে যে অন্য এক জগত আছে যা পত্রিকার শিরোনামের বাইরে অবস্থান করে, যা আপনার বন্ধু ও পরিবারের সাথের ব্যক্তিগত সম্পর্ক-কেও জড়িয়ে আছে। যা আপনাকে বলা হয় তা নিয়ে আপনার উচিৎ প্রশ্ন করা, এমনকি আমি আজকে যা বললাম সেগুলো নিয়েও। (হাসি) এটাই একমাত্র উপায় অন্ধকারের দিকে পা বাড়ানোর আর দেখার। আর বিশ্বাস করুন, এটা ভীতিকর হবে। এটা চমকে দেবার মত হবে, তবে এতা আপনাকে আলোকিত করবে। আর, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বিষয়টা একঘেঁয়ে হয়ে উঠবে না। (হাসি) (তালি) আমি আজ আপনাদের সামনে মনুষ্য মস্তিস্ক নিয়ে কথা বলতে চাই, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এই বিষয়টা নিয়েই গবেষণা করি। এক মুহূর্তের জন্য এই সমস্যাটা নিয়ে একটু ভাবুন। এই হল একটা মাংস পিণ্ড, মোটামুটি তিন পাউন্ড ওজনের, যেটা আপনি আপনার হাতের তালুর মধ্যেই ধরতে পারেন। কিন্তু এটা এই আর্ন্তনক্ষত্রিক জগতের বিশালত্বকেও ধারণ করতে পারে। এটা অসীমের অর্থকে ধারণ করতে পারে, এটা নিজের অস্তিত্বের অর্থ নিয়েও প্রশ্ন করতে পারে, প্রশ্ন করতে পারে ঈশ্বরের প্রকৃতি নিয়েও। আর এটা সত্যিই এই দুনিয়ার সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস। এটাই মনুষ্য প্রজাতির কাছে একটা বিশাল রহস্য; কিভাবে এ-সব কিছু এল? তো, এই মস্তিস্কটা, যেমনটা আপনি জানেন, তৈরি হয়েছে নিউরন দিয়ে, আমরা এখানে নিউরনগুলোকে দেখছি। পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের মস্তিস্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন থাকে। আর মস্তিস্কের মধ্যে এই প্রতিটি নিউরন যোগাযোগ করে প্রায় ১০০০ বা ১০,০০০ অন্যান্য নিউরনের সঙ্গে । এটা মাথায় রেখে, মানুষ হিসেব করেছে যে এই পরিমাণ মস্তিস্ক কার্যকলাপের বিন্যাস ও সমাবেশ -এর অঙ্কটা মহাবিশ্বের সব মৌলিক কনিকার সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যায়। তো, আপনি কিভাবে এই মস্তিস্ক নিয়ে জানাশোনা শুরু করবেন? একটা পদ্ধতি হলো, সেইসব রোগীদের নিয়ে পরীক্ষা করা যাদের মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশে ক্ষত আছে এবং এটার উপর নির্ভর করে তাদের আচরণের পরিবর্তন পর্যালোচনা করা। এটা নিয়েই আমি TED এ গতবার কথা বলেছি। আজ আমি একটা ভিন্ন ধরণ নিয়ে কথা বলব, যেটা হলো: মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশে বিদ্যুতায়ন করা, যেন সত্যি সত্যিই মস্তিস্কের একেকটা স্বতন্ত্র স্নায়ুকোষের কার্যকলাপ রেকর্ড করা যায়। এটা মস্তিস্কের স্নায়ুকোষগুলোর কর্মকাণ্ডে একধরণের আড়িপাতার মতো ব্যাপার। এখন, খুব সম্প্রতি একটা আবিস্কার হয়েছে গবেষক দলের দ্বারা ইতালির পারমায়, জিয়াকোমো রিজোলাত্তি ও তাঁর সহকর্মী, সেটি হলো, এক ধরণের গুচ্ছ নিউরণের উপস্থিতি যাদেরকে বলা হয় দর্পণ/আয়না নিউরন, যেগুলো থাকে মস্তিস্কের সামনে, ফ্রন্টাল লোবে। এখন, জানা গেল যে এক ধরনের নিউরন গুচ্ছ আছে যা হলো সাধারণ মোটর কমান্ড নিউরন যা মস্তিস্কের সামনে থাকে, যা বিগত ৫০ বছর ধরে জানা ছিল। এই নিউরনগুলো সক্রিয় হবে, যখন কোন ব্যক্তি কোন নির্দিষ্ট একটা কাজ করতে যাবেন। উদাহরণ হিসেবে, যদি আমি এটা করতে যাই, একটা আপেলের কাছে পৌঁছাতে চাই ও সেটা ধরতে চাই, তাহলে আমার মস্তিস্কের সামনে থাকা একটা মোটর কমান্ড নিউরন সক্রিয় হবে যদি আমি বস্তুটার কাছে পৌঁছে যাই ও সেটা কাছে টানি, তাহলে আরেকটা নিউরণ সক্রিয় হবে। আমাকে নির্দেশ দিবে সেই বস্তুটা ধরে ফেলতে এইগুলো হলো মোটর কমান্ড নিউরন। এটাই আমরা জানি একটা লম্বা সময় ধরে। কিন্তু রিজোলাত্তি যা পেয়েছেন, তা হলো এই নিউরনগুলোরই একটা সাবসেট। সম্ভবত এগুলোর ২০ শতাংশ মতো। এই নিউরনগুলো সক্রিয় হবে, যখন আমি অন্য কাউকেও ঐ একই কাজ করতে দেখব। তো, এগুলো সেই নিউরন, যেটা সক্রিয় হবে যখন আমি নিজে কোন কাজ করতে যাব এবং তখনও, যখন আমি জো-কে কোন একটা বস্তুর কাছে পৌঁছাতে ও ধরতে দেখব। আর এটা সত্যিই তাক লাগানোর মতো। কারণ ব্যাপারটা এরকম যে, এই নিউরনগুলো অন্য মানুষদের দৃষ্টিভঙ্গিটাও গ্রহণ করছে। এই নিউরনগুলো মস্তিস্কের মধ্যে একটা অপ্রকৃত বাস্তবতা নকল করে অন্য মানুষদের কার্যকলাপের । এখন, এই মিরর নিউরনগুলোর গুরুত্বটা কোথায়? একটা হলো, এগুলো নিশ্চিতভাবেই কোন ব্যক্তিকে অনুকরণ ও তার সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করা জাতীয় জিনিসের সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ একটা জটিল কাজ অনুকরণ করতে হলে আমার মস্তিস্ককে অন্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারতে হবে। তো, এটা অনুকরণ করা ও কারও সমকক্ষ হতে পারার জন্য জরুরি। আচ্ছা, এটা গুরুত্বপূর্ণ কেন? এবার আমরা নজর দেই পরবর্তী স্লাইডে। তো, আপনি কিভাবে এই অনুকরণ করেন? কেনই বা এটা গুরুত্বপূর্ণ? মিরর নিউরন আর অনুকরণ, কারও সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা? এখন আমরা একটু নজর দেই সংস্কৃতির দিকে। মনুষ্য সংস্কৃতি প্রত্যয়টার দিকে। আপনি যদি প্রায় ৭৫ হাজার থেকে একশ হাজার বছর পিছিয়ে গিয়ে মানুষের বিবর্তনটা দেখেন, তো দেখবেন, প্রায় ৭৫ হাজার বছরের কাছাকাছি সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটেছিল। আর সেটা হলো একটা তড়িত্ উত্থান ও দ্রুতই খুব দক্ষতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড, যেগুলো মানুষেরই বিশেষত্ব, যেমন হাতিয়ার ব্যবহার। আগুন, বাসস্থানের ব্যবহার এবং অবশ্যই ভাষার ব্যবহার। এবং অন্য কোন মানুষের চিন্তা অনুমান করতে পারার ও সেই মানুষের আচরণ অনুধাবন করতে পারার ক্ষমতা। এই সবকিছুই হয়েছিল তুলনামূলক দ্রুততার সঙ্গে। যদিও মনুষ্য মস্তিস্ক তার বর্তমান আকারটা পেয়েছিল প্রায় তিন বা চারশ হাজার বছর আগে। কিন্তু একশ হাজার বছর আগে এই সবকিছু ঘটেছিল খুবই খুবই দ্রুত। আর আমার দাবি হলো, এ সবকিছুর মূলে ছিল একটা সুক্ষ মিরর নিউরন ব্যবস্থার উদ্ভব। যেটা আপনাকে অন্য মানুষদের কাজের অনুকরণ ও তার সমকক্ষ হতে সামর্থ্য যোগায়। তো, তার ফলে যখন কোন গোষ্ঠীর একজন সদস্য একটা আকস্মিক আবিস্কার করে ফেলে, ধরেন, আগুনের ব্যবহার বা নির্দিষ্ট কোন হাতিয়ারের ব্যবহার আবিস্কার করে ফেলে, তখন পরবর্তীতে তা বিস্মৃত হয়ে যাওয়ার বদলে এটা দ্রুতই সমগ্র জনমানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হয়। তো, এর ফলে বিবর্তনটা হঠাত্-ই হয়ে পড়ে লামারকিয়ান বিবর্তন। ডারউইনিয়ান বিবর্তন না হয়ে, ডারউইনিয়ান বিবর্তন খুব ধীরগতির, এটা নেয় কয়েকশ হাজার বছর। একটা পোলার বিয়ার থেকে কোট বানাতে এটা নেয় কয়েক হাজার প্রজন্ম। হয়ত একশ হাজার বছর। কিন্তু একটা মানুষ, একটা বাচ্চা, শুধু তার মা-বাবাকে একটা পোলার বিয়ার মেরে ফেলে সেটার চামড়াটা গায়ে জড়াতে দেখে। আর একধাপেই সেটা শিখে ফেলে। একটা পোলার বিয়ার যা শিখতে একশ হাজার বছর সময় নেয়, সেটা একটা মানুষের বাচ্চা ৫ মিনিটেই শিখতে পারে। বা ১০ মিনিটে। আর যখন এটা শেখা হয়ে গেল, তখন তা বাকি জনসমষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে যায় গানিতিক হারে।] এটাই হলো ভিত্তি। জটিল কাজগুলোর অনুকরণ করতে পারাই হলো, যেটাকে আমরা বলি সংস্কৃতি আর এটাই সভ্যতার ভিত্তি। এখন, মস্তিস্কে আরেক ধরণের মিরর নিউরণ আছে, যেগুলো কিছুটা ভিন্ন ধরণের কাজে সম্পৃক্ত থাকে। কোন কাজের জন্য যেমন মিরর নিউরন থাকে, তেমনি কিছু মিরর নিউরন আছে স্পর্শ অনুভবের ক্ষেত্রে। অন্যভাবে বলা যায়, যদি কেউ আমাকে স্পর্শ করে, আমার হাত স্পর্শ করে, তাহলে মস্তিস্কের, সেনসোরি অঞ্চলের স্টোমাটোসেন্সরি কোরটেক্স-এর নিউরন সক্রিয় হবে। কিন্তু, এই একই নিউরন, কিছু ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে উঠবে, যখন আমি অন্য কোন মানুষকেও স্পর্শ পেতে দেখব। এটা অন্য মানুষের স্পর্শ পাওয়ার অনুভূতির সঙ্গেও একাত্ম বোধ করছে। তো, এই নিউরনগুলো বেশিরভাগই সক্রিয় হবে, যখন আমি শরীরের বিভিন্ন অংশে স্পর্শানুভূতি লাভ করব। ভিন্ন ভিন্ন অংশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিউরন সক্রিয় হবে। কিন্তু এগুলোর একটা সাবসেটও সক্রিয় হবে, যদি আমি শুধু অন্য কাউকে শরীরের সেই একই অংশে স্পর্শ পেতে দেখি। তো, এখানে আবার আমরা কিছু নিউরন পাচ্ছি, যেগুলো অন্য কারো স্পর্শানুভূতির সঙ্গে একাত্মতা জানাচ্ছে। এখন, তাহলে প্রশ্নটা ওঠে যে: যদি আমি শুধু অন্য একজন ব্যক্তিকে স্পর্শ পেতে দেখি, তাহলে আমি কেন বিভ্রান্ত হয়ে যাই না, আর কেন শুধু অন্য ব্যক্তির স্পর্শানুভূতি দেখে আমি আক্ষরিকভাবেই সেই স্পর্শ অনুভব করি না? আমি বলতে চাচ্ছি যে, আমি ঐ ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলাম, কিন্তু আমি তো সত্যি সত্যিই সেই স্পর্শটা অনুভব করলাম না। এর কারণ হচ্ছে, আপনার ত্বকে কিছু রিসেপটর আছে। স্পর্শ ও ব্যাথা অনুভবের রিসেপটর। এগুলো আপনার মস্তিস্কে ফিরে যায়, আর গিয়ে বলে, “চিন্তা করো না, তোমাকে স্পর্শ করা হয় নি।” তো, অন্য ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের মাধ্যমে আপনি সত্যি সত্যিই স্পর্শ অনুভব করেন না। এছাড়া হয়তো আপনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়তেন ও তালগোল পাকিয়ে ফেলতেন। আচ্ছা। তো, এই রিসেপটরগুলোর ফিরতি সাড়া, মিরর নিউরনের সিগন্যালগুলোকে বাতিল করে দেয়। ফলে আপনি সচেতনভাবে সেই স্পর্শ অনুভব করেন না। না। কিন্তু যদি আপনি আপনার একটা হাত সড়িয়ে ফেলেন, আপনি হাতটাকে অবশ করে ফেলেন, আপনি আমার হাতে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে ব্রাচিয়াল প্লেক্সাস অবশ করে ফেললেন, এখন আমার হাত একেবারে সাড়াহীন। এর মধ্য দিয়ে আর কোন অনুভূতি প্রবাহিত হচ্ছে না। এখন যদি আমি আপনাকে স্পর্শ পেতে দেখি, তাহলে আমি সত্যি সত্যিই আমার হাতে সেই স্পর্শ অনুভব করতে পারব। অন্যভাবে বললে, আপনি আপনার ও অন্য মানুষদের মধ্যে বিদ্যমান দেয়াল সড়িয়ে দিয়েছেন। তো, আমি এদেরকে ডাকি গান্ধি নিউরন বলে, বা একাত্মতার নিউরন । (হাসি) আর এটা কোন বিমূর্ত রূপক অর্থে না। আপনাকে, তার কাছ থেকে অন্য মানুষদের কাছ থেকে দূরে সড়িয়ে রেখেছে আপনার ত্বক। ত্বকটা সড়িয়ে ফেলুন, আপনি আপনার মাথায় অন্য মানুষদের স্পর্শানুভূতিও অনুভব করতে পারবেন। আপনি আপনার ও অন্য মানুষদের মধ্যে বিদ্যমান দেয়াল সরিয়ে ফেলতে পারবেন। আর এটাই, বেশিরভাগ প্রাচ্য দর্শনের ভিত্তি, যে, অন্য মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সত্যিকারের কোন স্বাধীন-স্বতন্ত্র মনুষ্য সত্তা নেই। যারা দুনিয়াটা পর্যবেক্ষণ করছে, অন্য মানুষদের পর্যবেক্ষণ করছে। আপনারা, বস্তুত শুধু ফেসবুক বা ইন্টারনেট দিয়েই যে সংযুক্ত আছেন, তা-ই নয়। বরং আপনারা সত্যিকার অর্থে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত আছেন আপনাদের নিউরন দিয়ে। আর এই মুহূর্তে এই ঘরে এই নিউরনগুলোর একটা বন্ধন আছে। তারা কথা বলছে পরস্পরের সঙ্গে। আর সত্যিই কোন ভিন্নতা নেই। আপনার সচেতনতা ও অন্য কারও সচেতনতার মধ্যে আর এটা কোন আউল-ফাউল দর্শন না। এটা গড়ে উঠেছে আমাদের স্নায়ুবিজ্ঞানের গোড়ার দিককার বোঝাপড়া থেকে। আপনার কাছে অলীক হাতওয়ালা কোন ব্যক্তি আছে। যদি হাতটা সড়িয়ে দেওয়া হয় আর আপনার কাছে ঐ অলীক হাতটা আসে, তখন যদি আপনি অন্য কাউকে স্পর্শ পেতে দেখেন, তাহলে আপনি আপনার ঐ অদৃশ্য হাতে সেই স্পর্শ অনুভব করবেন। আরও মজার জিনিস হলো, যদি আপনি আপনার ঐ অলীক হাতটাতে ব্যাথা অনুভব করেন, তাহলে আপনি অন্য কোন ব্যক্তির হাত মালিশ করে দিতে দেখলেও আপনার ব্যাথার নিরাময় অনুভব করতে পারবেন। একদম যেন, এই নিউরনগুলো আপনাকে ব্যাথার উপশম করে দিচ্ছে শুধুই অন্য কারও হাত মালিশ করতে দেখে। তো, এবার আমার শেষ স্লাইড। দীর্ঘদিন যাবত মানুষ বিজ্ঞান ও মানবিক— এই দুইটাকে জ্ঞানচর্চার দুইটা পৃথক শাখা হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। সি.পি.স্নো বলেছেন দুইটা ভিন্ন সংস্কৃতির কথা। একদিকে বিজ্ঞান, অন্যদিকে মানবিক। কখনোই এই দুইয়ের মিলন হয়নি। মিরর নিউরন ব্যবস্থার কার্যকলাপের উপর দৃষ্টিপাত করে আমি বলতে চেয়েছি, এটা আপনাকে সুযোগ করে দেয় সচেতনতা, আত্মসত্তার উপস্থাপন, কী আপনাকে অন্য মানুষদের থেকে পৃথক করে রাখে, কিভাবে আপনি অন্য মানুষদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আরেকবার চিন্তা করার, এমনকি সংস্কৃতি ও সভ্যতার উদ্ভব কেমন করে হলো তা নিয়েও। যে বিষয়গুলো খোদ মনুষ্য প্রজাতিরই বিশেষত্ব। ধন্যবাদ। (হাততালি) ধরুন আপনি আমেরিকার কোন এক রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন এবং একজন জাপানী ভদ্রলোক আপনার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করছে, "মাফ করবেন, এই ব্লকটির নাম কি?" এবং আপনি বলবেন, "দু;খিত, আসলে এটি ওক স্ট্রিট এবং ঐযে এলম স্ট্রিট। এটি ২৬ নম্বর, আর ঐযে ২৭ নম্বর।" সে বলে, " ঠিক আছে, কিন্তু ঐ ব্লকটির নাম কি তাহলে?" আপনি বলবেন,"আসলে ব্লকের তো নাম হয় না। রাস্তার নাম হয়; ব্লক হচ্ছে শুধুমাত্র রাস্তাগুলোর মাঝে নামহীন জায়গা।" সে চলে যায়, একটু বিভ্রান্ত ও হতাশ। এখন, ধরুন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন জাপানের কোন রাস্তায়, আপনি আপনার পাশের মানুষটিকে বললেন, "মাফ করবেন, এই রাস্তাটির নাম কি?" তারা বলবেন, "ওহ, ওটা হচ্ছে ব্লক ১৭ এবং এটি ব্লক ১৬।" এবং আপনি বলবেন ,"ঠিক আছে, কিন্তু এই রাস্তাটির নাম কি?" এবং তারা বলবে, "আসলে রাস্তার কোন নাম নেই। ব্লকের নাম আছে। এইযে গুগল ম্যাপে দেখুন। ব্লক ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯। সকল ব্লকেরই নাম আছে, এবং রাস্থাগুলো হচ্ছে ব্লকের মাঝের নামহীন জায়গা। এবং আপনি তখন বলবেন, "ঠিক আছে, তাহলে আপনারা কিভাবে বাড়ির ঠিকানা বলেন?" সে বলে, "সহজ, আমরা আছি এখন ৮ নম্বর এলাকায়। ব্লক ১৭, বাড়ি নম্বর ১।" তুমি বলবে, "আচ্ছা, কিন্তু আশেপাশে হাঁটার সময় খেয়াল করলাম যে বাড়ির নম্বর ক্রমানুসারে নেই।" সে বলে, " অবশ্যই আছে। বাড়ির নম্বর দেওয়া হয়েছে তাদের নির্মাণের ক্রমানুসারে। যেকোন রাস্তায় সর্বপ্রথম নির্মিত বাড়িটি হচ্ছে বাড়ি নম্বর এক। দ্বিতীয় নির্মিত বাড়িটি হচ্ছে বাড়ি নম্বর দুই। তৃতীয়টি তিন নম্বর। খুবই সহজ এবং স্বাভাবিক।" তাই, আমি ভালবাসি যে কখনো কখনো আমাদের জগতের বিপরীত দিকে যেতে হয় এই উপলব্ধির জন্য যে অনেক অনুমানের অস্তিত্ব আমাদের জানাও ছিল না, এবং আমাদের ধারণার বিপরীত ধারণাও বর্তমান। উদাহরণস্বরূপ, চীনের ডাক্তাররা যা বিশ্বাস করেন যে, তাদের দায়িত্ব আমাদের সুস্থ রাখা। তাই, যে মাসে আপনি সুস্থ আপনি তাদের পারিশ্রমিক দেবেন, এবং যখন আপনি অসুস্থ তারা কোন পারিশ্রমিক পাবে না কারণ তারা তাদের কাজে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা ধনী হয় যখন আপনি সুস্থ, অসুস্থ নন। (হাততালি) অধিকাংশ সংগীতে, আমরা 'এক' কে মনে করি নিচুস্বর, স্বরলিপির শুরু: এক, দুই, তিন, চার। কিন্তু পশ্চিম আফ্রিকান সংগীতে, 'এক' কে ধরা হয় পংক্তির শেষ হিসেবে, বাক্যের শেষে অনেকটা দাড়ির মত। তাই, আপনি তা শুধু সংগীতে শুনতেই পাবেন না বরং তারা এভাবেই তাদের গান গণনা করে থাকেন। দুই, তিন, চার, এক। এবং এই স্বরলিপিও সঠিক। (হাসি) কথিত আছে যে ভারত সম্পর্কে আপনি যাই বলুন না কেন তা যেমন সত্য, তেমনি বিপরীতটিও সত্য। তাই, ভুলে যাবেন না, TED বা অন্য কোথাও আপনার যে বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তাটি রয়েছে বা যে চিন্তাটি সম্পর্কে আপনি শুনেছেন , তার বিপরীত ধারণাটিও সত্য হতে পারে। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। এখন আমি যা করতে যাচ্ছি তা হচ্ছে আপনাদের সামনে ভারতের সর্বশেষ নাটকটি উপস্থাপন করবো-- হয়তো পৃথিবীর- সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে চলা ধারাবাহিক , যা হচ্ছে ক্রিকেট। এবং হয়তোবা এটি চলবে আরও বহুকাল ধরে, কারণ এটা আমার মত মানুষকে জীবনধারণে সহায়তা করে। একটি সাধারণ টিভি নাটকে যা থাকে তার সবই এর রয়েছেঃ এর আছে ভালবাসা, আনন্দ, সুখবোধ, দু;খ, কান্না, হাসি, অনেক প্রতারণা, চক্রান্ত। এবং সব ভালো ধারাবাহিকের মত, তা ২০ বছর সামনে চলে যায় যখন দর্শকদের আগ্রহ পরিবর্তন হয়। এবং ঠিক এটাই ক্রিকেট করেছে। তা ২০ বছর সামনে চলে গেছে যা হচ্ছে ২০ ওভারের খেলা। এবং এই বিষয়ে আমি আজকে কথা বলবো, কিভাবে একটি ছোট্ট পরিবর্তন অনেক বড় একটি বিপ্লবের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু এটা সবসময় এরকম ছিল না। ক্রিকেট সবসময় এরকম গতিময় প্রজন্মের খেলা ছিল না। একটা সময় ছিল যখন আপনি ক্রিকেট খেলতেন, আপনি টেস্ট ম্যাচ খেলতেন কোন সময়সীমা ছাড়া, আপনি খেলে যেতেন যতক্ষণ না খেলা শেষ হতো। এবং ১৯৩৯ এর মার্চে একটি খেলা হয়েছিল যা শুরু হয়েছিল ৩রা মার্চ এবং শেষ হয়েছিল ১৪ই মার্চ। এবং তা শেষ হয়েছিল এই কারণে যে ইংলিশ ক্রিকেটারদের ডারবান থেকে কেপটাউন যেতে হতো যা হচ্ছে ট্রেনে দুই ঘন্টার যাত্রা, ১৭ই মার্চ ছেড়ে যাওয়া জাহাজ ধরার জন্য, কারণ পরের জাহাজের সময় অনেকদিন পর ছিল। সুতরাং, খেলা মাঝখানেই শেষ হয়েছিল। এবং একজন ইংলিশ ব্যাটসম্যান বলেছিল," আপনি জানেন? আর আধা ঘন্টা খেলা হলে আমরা ম্যাচটা জিতে যেতাম।" (হাসি) ১২ দিন খেলার পর আরও আধা ঘন্টা দরকার ছিল। এর মাঝে অবশ্য দুটি রবিবার ছিল এবং রবিবার চার্চে যাবার দিন, সুতরাং রবিবার খেলা হতো না, এবং একদিন বৃষ্টি হয়েছিল, সেদিন তারা সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিয়েছিল। কিন্তু ভারত ক্রিকেটের প্রেমে পড়ার কারণ রয়েছে। কারণ আমাদের জীবনের গতি ক্রিকেটের মত ঠিক একই রকম। (হাসি) মহাভারতও এরকম ছিল, ছিল না? দিনের বেলা যুদ্ধ হত, এরপর সূর্যাস্ত হত, এবং সবাই ঘরে ফিরে যেত। এবং তখন রণকৌশল নিয়ে চিন্তা করা হত, এবং পরের দিন আবার তারা ফেরত আসতো এবং যুদ্ধ করতো এবং আবার ঘরে ফিরে যেত। মহাভারত এবং ক্রিকেটের একমাত্র পার্থক্য এইযে, ক্রিকেটে সবাই বেঁচে থাকে পরের দিন ফিরে আসার জন্য। রাজকুমারেরা খেলার পৃষ্ঠপোষক হত, এই কারণে না যে তারা খেলাটাকে ভালোবাসতো, বরং এই কারণে যে তা ব্রিটিশ শাসকদের প্রতি তাদের অনুরাগ প্রকাশের একটি মাধ্যম ছিল। কিন্তু আরও একটি কারণ আছে যে কারণে ভারত ক্রিকেটের প্রেমে পড়েছে, যা হচ্ছে, খেলার জন্যে দরকার একটিমাত্র কাঠের টুকরা এবং একটি রাবার বল, এবং যেকোন সংখ্যক মানুষ যে কোন জায়গায় তা খেলতে পারবে। এই যে দেখুনঃ আপনি আবর্জনার মাঝে খেলতে পারবেন কয়েকটি পাথরের সাহায্যে, আপনি একটি ছোট্ট গলিতে খেলতে পারবেন-- আপনি আশেপাশে কোথাও মারতে পারবেন না, কারণ আপনার ব্যাট দেয়ালকে আঘাত করবে, শীতাতপ যন্ত্র আর তার এর দিকে খালি লক্ষ্য রাখবেন। (হাসি) আপনি খেলতে পারবেন গঙ্গার তীরে, সেটা গঙ্গার মতই অপরিষ্কার অনেকদিন ধরে। অথবা অনেকগুলো খেলা একসাথে চলতে পারবে ছোট্ট একটি মাঠে, যদিও আপনি হয়ত জানেন না কোন খেলাটাতে আপনি আসলে আছেন। (হাসি) সুতরাং আপনি দেখতেই পাচ্ছেন, আপনি যেকোন জায়গায় খেলতে পারবেন। কিন্তু আস্তে আস্তে খেলাটা চলতে থাকলো, আপনি জানেন, অবশেষে। আপনার কাছে সবসময় ৫ দিন থাকে না। সুতরাং আমরা বদলালাম, এবং ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেলা শুরু করলাম। এবং এরপর এক বড় দুর্ঘটনা ঘটলো। ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনে আমরা কোনকিছুই ইচ্ছে করে ঘটাই না, দুর্ঘটনা ঘটে এবং মাঝেমাঝে আমরা ঠিক জায়গা মতই ঠিক সময়ে উপস্থিত থাকি। এবং আমরা ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জিতলাম। এবং হঠাৎ করেই আমরা ৫০ ওভারের খেলার প্রেমে পড়ে গেলাম, এবং আমরা কার্যত প্রতিদিন তা খেলা শুরু করলাম। ৫০ ওভারের খেলা যেকোন জায়গার চেয়ে বেশি হতে লাগলো। কিন্তু আরও একটি বড় তারিখ আছে। ১৯৮৩ হচ্ছে যখন আমরা বিশ্বকাপ জিতেছিলাম। ১৯৯১-৯২ সালে আমরা এক অর্থমন্ত্রীকে পেলাম এবং একজন প্রধানমন্ত্রী যারা বিশ্বকে ভারতের দিকে তাকানোর সুযোগ দিতে আগ্রহী ছিলেন, গুপ্ত এবং রহস্যময় এক রাষ্ট্রের তিলক এই সংরক্ষণবাদী দেশটা থেকে ঘোঁচাতে। এবং আমরা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে ভারতে প্রবেশাধিকার দিলাম। আমরা কাস্টমস শুল্ক কমালাম, আমরা আমদানি শুল্ক কমালাম, এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এখানে আসতে শুরু করলো, তাদের বহুজাতিক বাজেট নিয়ে, যারা জনপ্রতি আয়ের দিকে নজর দিল, এবং ভারতের সম্ভাবনাসমূহ তাদের মাঝে সারা জাগালো, এবং তারা এমন কোন মাধ্যম খুঁজছিল যা সকল ভারতীয়ের কাছে পৌঁছাতে পারে। এবং ভারতে এই ধরনের মাধ্যম দুটি রয়েছে - এক বাস্তব, আর একটি লিখিত। লিখিতটা হচ্ছে যা আপনি সিনেমার পর্দায় দেখতে পান, বাস্তবটা হচ্ছে ক্রিকেট। তাই আমার সামনে এই মুহূর্তে বসে থাকা আমার আমরা এক বন্ধু, পেপসি'র রবি ধারিয়াল সিদ্ধান্ত নিল সে এই ক্রিকেটকে পৃথিবীর সবখানে নিয়ে যাবে। এবং পেপসি একটি বড় বিপ্লব ছিল, কারণ তারা ক্রিকেটকে সবজায়গায় নিয়ে যেতে শুরু করলো। এবং ক্রিকেট আরও বড় কিছু হয়ে উঠতে শুরু করলো; ক্রিকেট সম্পদ আনা শুরু করলো। টেলিভিশন ক্রিকেট সম্প্রচার করা শুরু করলো। অনেকদিন ধরে টেলিভিশন বলেছিল, "আমরা ক্রিকেট সম্প্রচার করবো না যদি না আমাদের সম্প্রচারের জন্য অর্থ দেওয়া হয়।" তারপর তারা বললো,'আচ্ছা, পরবর্তী খেলার স্বত্ত্বগুলো ৫৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি হয়। তার পরের স্বত্ত্ব বিক্রি হল ৬১২ মিলিয়ন ডলারে।" সুতরাং, এটা অনেকটা বক্ররেখার মত। এবং তখন আরও একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে আমাদের ক্রিকেটে। ইংল্যাণ্ড ২০ ওভারের ক্রিকেট উদ্ভাবন করলো, এবং বললো," বিশ্বকে অবশ্যই ২০ ওভারের খেলা খেলতে হবে।" যেভাবে ইংল্যাণ্ড ক্রিকেট খেলা উদ্ভাবন করেছিল এবং বাকী বিশ্বকে খেলতে বাধ্য করেছিল। তাদের হয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। (হাসি) তাই ভারতকে টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে হয়েছিল বাধ্য হয়ে। ভারত টি২০ বিশ্বকাপ খেলতে চায়নি। কিন্তু আমরা খেলতে বাধ্য হয়েছিলাম ৮-১ ব্যবধানে। এবং এরপর নাটকীয় কিছু ঘটনা ঘটলো। আমরা ফাইনালে উঠলাম, এবং তারপর সেই মুহূর্তে, যা সবসময় অনন্য এক স্থানে থাকবে, সবার জন্য, এইযে দেখুন। (দর্শক উল্লাস প্রকাশ করছে) পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান ফিল্ডারদের পার করার চেষ্টা করছে। ঘোষকঃ এবং জিসান ধরে ফেলল। ভারত জিতেছে! এক লোমহর্ষক ম্যাচ টিটোয়েন্টি ফাইনাল হিসেবে। ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়ান। (উল্লাস প্রকাশ) ভারত, টিটোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ান। এক অসাধারণ খেলা হয়েছিল, এম এস ধোনি বাতাসে ভেসে ধরেছিল। কিন্তু মিসবাহ-উল-হক, অসাধারণ এক খেলোয়াড়। অনেক, অনেক বড় এক সাফল্যঃ ভারত, বিশ্ব টিটুয়েন্টি বিজয়ী। হার্সা ভোগলেঃ হঠাৎ করেই ভারত যেন ২০ অভার ক্রিকেটের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারলো। দুর্ঘটনা, অবশ্য এই যে, ব্যাটসম্যান মনে করলো বোলার অনেক জোরে বল করছে। (হাসি) যদি সে জোরে বল করতো, বল সেখানেই যেত যেখানে যাবার কথা তার ছিল, কিন্তু তা গেল না। এবং আমরা হঠাৎ করে আবিষ্কার করলাম যে আমরা এই খেলায় ভাল করতে পারি। এবং এটা আরও যা করেছিল তা হল এটা হঠাৎ করে এই গর্বের কাছে নিয়ে গেল যে ভারত এক্ষেত্রে বিশ্বে শ্রেষ্ঠ হতে পারে। এটা এমন এক সময়ে ছিল যখন বিনিয়োগ আসা শুরু করেছে, ভারত তার নিজের সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী বোধ করছে। একারণে গর্বের এক অনুভূতি ছিল আমরা যা করছিলাম তাতেই। এবং আমাদের সকলের মঙ্গলার্থে, ইংরেজরা আবিষ্কারে অত্যন্ত দক্ষ, এবং তারা পৃথিবীর সকলকে সেসবে অনেক দক্ষ হতে দেয়। (হাসি) সুতরাং ইংল্যাণ্ড টিটোয়েন্টি ক্রিকেট উদ্ভাবন করেছে, এবং ভারতকে তা ছিনতাই করতে অনুমতি দিয়েছে। এটা আমরা তা সরাসরি নিয়ে নিয়েছি, যেরকম তা। (হাসি) এবং আমরা আমাদের নিজস্ব টিটোয়েন্টি লীগ চালু করলাম। ছয় সপ্তাহ, শহর বনাম শহর। এটা আমাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন এক জিনিস ছিল। আমরা সবসময় শুধুমাত্র আমাদের দেশকে সমর্থন দিয়েছি-- দুটি দিক যে দুটি সম্পর্কে ভারত সবসময়ই গর্বিত ছিল তাদের দেশ, দেশকে মাঠে প্রতিনিধিত্ব করা। একটি ছিল যুদ্ধ, ভারতীয় সেনাবাহিনী, যেটা প্রায়শই ঘটতো না। আরেকটি ছিল ভারতীয় ক্রিকেট। এখন, হঠাৎ করেই আমাদের শহরের লীগগুলো সমর্থন করতে হতো। কিন্তু যেসব মানুষ এসব শহুরে লীগের সাথে জড়িত হচ্ছিল তারা সবাই ছিল পশ্চিমা জগত থেকে উদীপ্ত। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে খেলাধূলার লীগের জন্য বিখ্যাত। এবং তারা বলে, "আমরা ভারতে আকর্ষণীয় এক লীগ গড়ে তুলবো।" কিন্তু ভারত কি তার জন্য প্রস্তুত ছিল? কারণ ক্রিকেট, অনেকদিন ধরে ভারতে আয়জিত হচ্ছিল। তা কখনো বিপনণ বা বিক্রি হয়নি- তা আয়োজন করা হত। এবং দেখুন তারা কি করেছে আমাদের সুন্দর, মনোরম, সহজ পারিবারিক খেলাকে। হঠাৎ করেই, আপনার সামনে তা ঘটছে। (সংগীত) এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যা আর সকল লীগের সাথে তুলনীয়। এটা এমন এক ভারত যা রণতরী কিনছে। এটা এমন এক ভারত যা জাগুয়ার কিনছে। এটা এমন এক ভারত যা প্রতি মাসে নিউজিল্যাণ্ডের জনসংখ্যার দ্বিগুণের বেশি মোবাইল ফোন বাজারে নামাচ্ছে। সুতরাং, এটা এক ভিন্ন ভারত। কিন্তু এই ভারত আবার অনেকটা গোঁড়া বা প্রচলিত মতে বিশ্বাসী যা আধুনিক হতে পেরে খুবই খুশি, কিন্তু তা মানুষকে বলতে চাইতো না। এবং তাই, তারা বিস্ময়াভিভূত হয়েছিল যখন চিয়ারলিডার্স ভারতে এসে উপস্থিত হল। সবাই গোপনে তাদের দেখতো, কিন্তু সবাই দাবি করতো তারা দেখে না। (সঙ্গীত) (হাসি) ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন মালিকরা আগেকার রাজপুত্র নয়। তারা আমলাও নয় যাদের খেলাধূলায় আসতে বাধ্য করা হয়েছিল, যারা আসলে একে ভালবাসতো না। এই লোকগুলো ছিল বড় বড় রাশভারি কোম্পানির মালিক। তাই তারা ক্রিকেটের প্রচারণা শুরু করলো বড় আকারে, ক্রিকেটের ক্লাবগুলোর প্রচয়ারনাও বড় আকারে শুরু করলো। এবং তাদের বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করবার সামর্থ্য ছিল আমি বোঝাতে চাচ্ছি যে আইপিএল এর ছিল ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার এবং তা মাঠে একটি বল গড়ানোর আগেই, এক দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার টেলিভিশন রাজস্ব হিসেবে ১০ বছরের জন্য, এবং আরও ৭০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পাওয়া গেছে ফ্রাঞ্চাইজগুলো থেকে যারা টাকা দিচ্ছিল। এবং তাদেরকে নিজ নিজ শহরে আপিল করতে হতো, কিন্তু তাদেরকে এই কাজটা করতে হবে পশ্চিমাদের মত, ঠিক? কারণ আমরা লীগ চালু করছি। কিন্তু তারা যে কাজে সবচেয়ে ভাল ছিল তা হল তারা বিষয়টাকে স্থানীয় করে ফেলতে পেরেছিল। তাই, আপনাদেরকে একটি উদাহরণ দিচ্ছি কিভাবে তারা করেছিল- ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড এর মত করে প্রচারণা নয়, কিন্তু একদম মুম্বাই ধরনের প্রচারণা। এই যে দেখুন। (সঙ্গীত) অবশ্য, অনেকে বলেছে, "হয়তো তারা খেলার চেয়ে ভাল নাচতে পারে।" (হাসি) কিন্তু তা ঠিক আছে। এটা আরও যা করেছিল তা হল, এটা বদলে দিয়েছিল আমাদের ক্রিকেটকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি। সব সময়, আপনি যদি একজন তরুণ ক্রিকেটারকে চাইতেন, আপনি তাকে তুলে আনলেন স্থানীয় গলি থেকে, আপনার নিজের শহরের এবং আপনি ভীষণ গর্বিত এই ব্যবস্থার যা তরূণ উদীয়মান খেলোয়াড় সৃষ্টি করছে। এখন, হঠাৎ করে, আপনি যদি একটা বল মারতেন-- ধরুন মুম্বাই একটা বল মারছে, উদাহরণস্বরূপ, তাদের কালবাদেবীতে যেতে হত না অথবা শিবাজী পার্ক অথবা কোথাও যেখানে তাদের একত্র করা যেতো, তারা ত্রিনিদাদে যেতে পারে। এটা ছিল নতুন ভারত, নয় কি? এটা ছিল নতুন দুনিয়া, যেখানে আপনি যেকোন উৎস থেকে পেতে পারতেন যতক্ষণ আপনি সঠিক পণ্যটি সঠিক মূল্যে নিতে পারছেন। এবং হঠাৎ করেই যেন ভারতীয় ক্রিয়াজগত বাস্তবে জেগে উঠেছে এমনভাবে যেন আপনি সবচেয়ে ভাল পণ্যটি সবচেয়ে ভাল মূল্যে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে পেতে পারেন। তাই, মুম্বাই ইণ্ডিয়ানরা ত্রিনিদাদ ও টোবাগো থেকে ডুয়াইন ব্রাভোকে উড়িয়ে নিয়ে আসে এক রাতে। এবং তার যখন আবার ফিরে যেতে হল ওয়েস্ট ইণ্ডিজে, তখন তারা জিজ্ঞেস করলো, "তোমার কখন পৌছাতে হবে?" সে বললো, "আমাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেখানে থাকতে হবে, যেকারণে আমাকে আজকেই যেতে হবে।" আমরা বললাম, "না, না, না। তোমার কখন যেতে হবে সেটা বিষয় নয়; বিষয় হচ্ছে তোমার কখন পৌছাতে হবে?" এবং সে বললো, "আমাকে পৌছাতে হবে এক্স তারিখে। " এবং তারা বললো, "ভাল, তুমি এক্স বিয়োগ একদিন পর্যন্ত খেলবে।" সুতরাং, সে হায়দ্রাবাদে খেললো, এবং এরপর সরাসরি চলে গেল খেলা শেষে, চলে গেল স্টেডিয়াম থেকে হায়দ্রাবাদ এয়ারপোর্টে, একটি প্রাইভেট সংস্থার জেটপ্লেনে- প্রথমে পর্তুগালে রিফুয়েলিং করে, পরবর্তীতে ব্রাজিলে; সে ঠিক সময়ে ওয়েস্ট ইণ্ডিজে পৌছে গেল। (হাসি) ভারত কখন এত বড় পরিসরে চিন্তা করতে পারেনি। কখনো ভারত বলতে পারেনি, , " আমার একজন খেলোয়াড় প্রয়োজন যে খেলবে একটি ম্যাচ আমার পক্ষে, এবং আমি তাকে প্রাইভেট সংস্থার জেটপ্লেন ব্যবহার করে তাকে আবার কিংস্টন, জ্যামাইকাতে পৌছে দিব। যাতে সে সেখানেও খেলতে পারে।" এবং আমি চিন্তা করে দেখলাম, "বাহ, আমরা পৃথীবীতে একটি পর্যায়ে এসে পৌছেছি, তোমরা জানো?" আমরা একটি পর্যায়ে পৌছে গেছি। আমরা বড় কিছু ভাবছি।" কিন্তু এটা আরও যা করেছে তা হল এটা ভারতীয় ক্রিকেটে দুটো সবচেয়ে গুরুরত্বপূর্ণ উপাদানের মিলন ঘটিয়েছে, যা হচ্ছে ক্রিকেট এবং ভারতীয় চলচ্চিত্রের। সেখানে আছে ক্রিকেট এবং চলচ্চিত্র। এবং তারা একসাথে হয়েছে কারণ চলচ্চিত্রের মানুষগুলো এখন ক্লাবগুলোর মালিক হচ্ছে। এবং তাই, মানুষ এখন খেলা দেখতে যাচ্ছে প্রীতি জিনতাকে দেখতে। তারা ক্রিকেট খেলা দেখতে যাচ্ছে শাহরুখ খানকে দেখতে। এবং মাঝে মাঝে অদ্ভূত কিছু ঘটে। আমরা এখন ভারতীয় ক্রিকেটে গান এবং নাচ ব্যবহার করছি। এবং তাই এর মধ্যে প্রতিনিয়ত ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রভাব বিস্তার করছে। এবং অবশ্যই, আপনি যদি প্রীতি জিনতার পক্ষে থাকেন- এইযে সেরকমটি দেখতে পাচ্ছেন এই ক্লিপটিতে- আপনি যদি ভাল করেন আপনি প্রীতি জিনতাকে আলিঙ্গন করতে পারছেন। সুতরাং এটাই ছিল সবচেয়ে বড় কারন ভাল করবার। এইযে দেখুন-- সবাই প্রীতি জিনতাকে দেখছে। (সঙ্গীত) এবং এরপর অবশ্য শাহরুখ খান কলকাতার দর্শকদের মুগ্ধ করছেন। আমরা সবাই কলকাতায় খেলা দেখেছি, কিন্তু আমরা কখনও এরকম কোনকিছু দেখিনিঃ শাহরুখ, বাংলা সংগীতের সাথে, সবাইকে নাচাচ্ছেন, কলকাতার পক্ষে--ভারতের পক্ষে নয়, বরং কলকাতার পক্ষে। কিন্তু এটা একবার দেখুন। (সঙ্গীত) একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা একজন পাকিস্তানি খেলোয়াড়কে আলিঙ্গন করছে কারণ তারা কলকাতায় জয়লাভ করেছে। আপনি কি ভাবতে পারেন? এবং আপনি কি জানেন পাকিস্তানি ক্রিকেটার কি বলেছিল? (হাততালি) "ইস, আমি যদি প্রীতি জিনতার দলে খেলতে পারতাম!" (হাসি) কিন্তু আমি মনে করি আমি এই সুযোগটি গ্রহণ করবো-- এখানে কিছু মানুষ আছেন পাকিস্তান থেকে। আমি খুবই খুশি যে আপনারা এখানে কারণ আমি মনে করি আমরা দেখাতে পারি যে আমরা একসাথে থাকতে পারি এবং বন্ধু হতে পারি, তাই না? আমরা একসাথে ক্রিকেট খেলতে পারি, আমরা বন্ধু হতে পারি। সুতরাং আপনাদের অনেক ধন্যবাদ আশার জন্য, আপনারা যারা পাকিস্তান থেকে এসেছেন। (হাততালি) অবশ্যই সেখানে সমালোচনাও ছিল। তারা বলেছিল, " খেলোয়াড়দের কেনা-বেচা করা হয়? তারা কি শস্য? তারা কি গরু?" কারণ আমাদের নিলামের ব্যবস্থা ছিল, আপনারা দেখুন। তুমি কিভাবে একজন খেলোয়াড়ের মূল্য নির্ধারণ কর? এবং তাই যে নিলাম হল তাতে লোকজন সত্যিকার অর্থেই বলতে লাগলো, "ধুর, এত এত মিলিয়ন ডলার এই এই খেলোয়াড়ের জন্য।" এই যে। (সঙ্গীত) নিলামকারীঃ ১৫ লক্ষ ডলারে। চেন্নাই। শেন ওয়ার্ন ৪৫০,০০০ ডলারে বিক্রিত। এইচবিঃ হঠাৎ করেই যে খেলায় খেলোয়ারেরা ৫০ রুপি পেত দিনে অর্থাৎ ২৫০ রুপি একটি পাঁচদিনের টেস্ট ম্যাচের জন্য, কিন্তু আপনি যদি ৪ দিনে শেষ করেন তবে পেতেন মাত্র ২০০। বর্তমানে সবচেয়ে ভাল ভারতীয় খেলোয়াড় যারা প্রতিটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে-- বা একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়-- তাদের আদর্শ চুক্তি হচ্ছে ২২০,০০০ ডলার এক বছরে। এখন তারা ৫০০,০০০ ডলার পাচ্ছে মাত্র ৬ দিনের কাজে। এরপর এন্ড্রু ফ্লিনটফ ইংল্যাণ্ড থেকে এসে পড়লো, সে প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলার পেল এবং ফিরে গিয়ে বললো, " আমি চার সপ্তাহের জন্য, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড আর স্টিভ জেরার্ডের চেয়ে বেশি আয় করছি, এবং আমি ফুটবলারদের চেয়ে বেশি আয় করছি, অবিশ্বাস্য।" এবং সে কোথা থেকে এই অর্থ আয় করছে? ভারতের একটি ছোট ক্লাব থেকে। আপনি কি কখনও ভাবতে পেরেছেন এরকম একটি দিন আসবে? দেড় মিলিয়ন ডলার ছয় সপ্তাহের কাজের জন্য। তা আসলে খারাপ না, ঠিক না? তাই, ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার মাঠে একটি বল গড়াবার আগেই। ভারত যা করছিল, তা হচ্ছে বিশ্বের সেরাদের মাঝে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করছিল। এবং একটি বড় ব্রাণ্ডে তা পরিণত হল। ললিত মোদী তখন বিজনেস টুডে'র প্রচ্ছদ পাতায়। আইপিএল ভারতের সবচেয়ে বড় ব্র্যাণ্ড হল। এবং, আমাদের নির্বাচনের কারণে, তা সাউথ আফ্রিকায় সরিয়ে নিতে হলো, এবং আমাদের টুর্নামেন্টটি তিন সপ্তাহের মধ্যে শুরু করতে হলো, একটি পুরো টুর্নামেন্টকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সরিয়ে ফেলা। কিন্তু আমরা তা পেরেছি। আপনি কি জানেন কেন ও কিভাবে? কারণ আর কোন দেশ আমাদের মত ধীরগতিতে কাজ করে না কোন অনুষ্ঠানের তিন সপ্তাহের আগে, এবং কেউ আমাদের চেয়ে দ্রুত কাজ করে না শেষের তিন সপ্তাহে। (হাততালি) আমাদের জনসংখ্যা, যা আমরা অনেকদিন ধরে ভেবেছিলামা আমদের সমস্যা, হঠাৎ করে আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদে পরিণত হল কারণ আরও অনেক মানুষ তা দেখছিল-- বড় একটি ভোক্তাশ্রেণী-- সবাই আসছে ক্রিকেট খেলা দেখতে। আমরা আবার ক্রিকেটকে ভারতের একমাত্র খেলায় পরিণত করেছি, যা একটি দুর্ভাগ্য, কিন্তু ভারতে আর সকল খেলা ক্রিকেটকে ধাক্কা দিয়ে বড় করেছে, যা আমাদের সময়ের জন্য একটু ট্র্যাজিক। এখন, যাবার আগের শেষ মুহূর্তে-- এসকল কিছুর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনেক সময় ধরে, ভারত একটি দরিদ্র দেশ, ধূলা, ভিক্ষুকরা, সাপুড়ে, ময়লা, দিল্লি বেলি- মানুষ আসার আগে দিল্লি বেলির কাহিনী শুনেছে। এবং, হঠাৎ করে, ভারত হয়ে উঠেছে সু্যোগের জায়গা। সারা বিশ্বের ক্রিকেটরা বললো, "তুমি জানো, আমরা ভারতকে ভালবাসি। আমরা ভারতে খেলতে ভালবাসি।" এবং তা শুনতে ভালো লেগেছে, তুমি জানো? আমরা বললাম, "ডলার আসলে খুবই শক্তিশালী।" তুমি ভাবতে পারো, তোমার দৃশ্যপটে ডলার এবং সেখানে আর কোন দিল্লি বেলী নেই। সেখানে কোন ধূলা নেই, কোন ভিক্ষুক নেই, সাপুড়ের দল হাওয়া হয়ে গেছে, সবাই চলে গেছে। এটা তোমাকে বলছে আসলে কিভাবে ধনতন্ত্র কাজ করে। ঠিক এইভাবে, শেষ পর্যন্ত, একটি ইংরেজদের খেলা যা ভারত জবরদস্তি শিখে গেল, কিন্তু টিটোয়েন্টি আগামী বিশ্বের অগ্রদূত হতে যাচ্ছে। তুমি যদি খেলাকে পৃথিবীময় নিয়ে যেতে চাও, এটা হতে হবে সবচেয়ে কম সময়ের জন্য। আপনি একটি অসীম টেস্টকে চায়নাতে নিতে পারবে না এবং ১৪ দিন ধরে বসে থেকে কোন ফলাফল পাবে না, অথবা আপনি এটাকে পৃথিবীর সবর্ত্র নিতে পারবেন না। সুতরাং টিটোয়েন্টি এ কাজগুলোই করছে। আশা করা যায়, এটা সবাইকে আরও ধনী করবে এবং খেলাটাকে বড় করবে এবং আশা করা যায় এটা ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারদের আরও বেশি সুযোগ দেবে ধারাভাষ্য দেবার। অনেক ধন্যবাদ। ধন্যবাদ। (তালি) একদিন, লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের কলামলেখক স্টিভ লোপেজ হাঁটছিলেন লস অ্যাঞ্জেলসের শহরের কেন্দ্রস্থলের রাস্তা দিয়ে তখন তিনি চমৎকার একটা সঙ্গীত শুনেছিলেন আর এর উৎস ছিল একটা মানুষ একজন আফ্রিকান-আমেরিকান মানুষ। আকর্ষণীয়, রুক্ষ, গৃহহীন, তিনি একটা বেহালা বাজাচ্ছিলেন, যেটাতে ছিল মাত্র দুইটা তার। আর আমি যে গল্পটা বলছি সেটা হয়তো আপনাদের অনেকেই জানেন। কারণ এটা নিয়ে স্টিভের কলাম হয়েছিল একটা বইয়ের ভিত্তি। যেটাকে আবার পরে চলচ্চিত্র রূপও দেওয়া হয়েছিল। হয়েছিল। যেখানে স্টিভ লোপেজের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রবার্ট ডউনি জুনিয়র আর জ্যামি ফক্স নিয়েছিলেন নাথানিয়েল অ্যান্থনি আয়ার্স- এর ভূমিকা। নাথানিয়েল আয়ার্স হচ্ছেন জুইলিয়ার্ড প্রশিক্ষিত সেই ডবল বাস যন্ত্রের বাদক সম্ভাবনাময় পেশাগত জীবন খন্ডিত হয়েছিল প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়া নামক করুণ অসুখটার কারণে। নাথানিয়েলকে জুইলিয়ার্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়। মানসিকভাবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত একটা অবস্থার মধ্যে দিয়ে তাকে যেতে হয়েছে। আর তার ৩০ বছর পরে তিনি বসবাস করছেন, গৃহহীনভাবে। লস অ্যাঞ্জেলসের শহরের কেন্দ্রস্থলের স্কিড রো সড়কে| আমি সবাইকে অনুপ্রাণিত করব স্টিভের বইটা পড়তে বা সিনেমাটা দেখতে শুধু এটা বোঝার জন্যই না যে, কী ধরণের চমৎকার একটা বন্ধন গড়ে উঠেছিল এই দুজন মানুষের মধ্যে, বরং এটা বোঝার জন্যও যে, কিভাবে সঙ্গীত সেই বন্ধনটার আদল গড়েছে। আর শেষপর্যন্ত আর শেষ অবধি সেটাই সহায়ক হলো -- নাথানিয়েলকে সড়ক থেকে তুলে আনার জন্যে সহায়তার জন্য। আমি মি. আয়ার্সের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম ২০০৮ সালে, দুই বছর আগে। ওয়াল্ট ডিজনি কনসার্ট হলে। সেইমাত্রই তিনি বিটোফেনের প্রথম ও চতুর্থ সিম্ফোনির অনুষ্ঠান শুনেছিলেন। আর তারপর মঞ্চের পেছনে এসে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি খুবই আমুদে আর বন্ধুত্বপূর্ণভাবে কথা বলছিলেন ইয়ো-ইয়ো মা ও হিলারি ক্লিনটনান্ড নিয়ে যে, আর কিভাবে ডজার্স কখনই বিশ্ব পর্যায় জিততে পারবেনা । আর বিটোফেনের চতুর্থ সিম্ফোনির শেষ মুভমেন্টে ছলচাতুরিপূর্ণ প্রথম বেহালা প্যাসেজের কাজটাই সবকিছুর কারণ। আর আমরা সঙ্গীত নিয়েই কথা বলছিলাম। তার কয়েকদিন পরে আমি স্টিভের কাছ থেকে একটা ইমেইল পেলাম যে, নাথানিয়েল থেকে বেহালার একটা পাঠ নিতে আগ্রহী| এখন আমার এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, নাথানিয়েল কোনরকম চিকিৎসা নিতে আপত্তি জানান। কারণ যখন তিনি চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে গেছেন তখন সেগুলো ছিল শক থেরাপি, থোরাজিন আর হাতকড়া। এই ভয়টা পুরো জীবনে সবসময়ই তার সাথে থেকেছে। কিন্তু তার পরিণতিতে, তিনি এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তার এই স্কিজোফ্রেনিক পর্বগুলোতে যেগুলোর সবথেকে বাজে ধরণটা হতে পারে যে, তিনি উন্মাদনায় ফেটে পড়েন ও তারপর দিনকতক গায়েব থাকেন। ঘুড়ে বেড়ান স্কিড রো-র রাস্তায় রাস্তায়। তিনি, তার নিজেরই ভীতিগুলোর কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়েন। তার নিজ মস্তিস্ক সৃষ্ট নিদারুণ যন্ত্রণাই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর নাথানিয়েল এরকম উত্তেজিত একটা পর্যায়েই ছিলেন, আমরা আমাদের প্রথম পাঠ শুরু করেছিলাম, ওয়ার্ল্ড ডিজনি কনসার্ট হলে। তার চোখে ছিল এক ধরণের উন্মাদ দৃষ্টির ঝলক। তিনি হারিয়ে গিয়েছিলেন। আর তিনি কথা বলছিলেন কিছু অদৃশ্য শয়তান আর ধোঁয়া নিয়ে। আর কিভাবে কোন একজন তাকে ঘুমের মধ্যে বিষ দিচ্ছিল। আর আমি ভয় পেয়েছিলাম। নিজের জন্য না, বরং আমি ভয়ে ছিলাম যে, আমি তাকে হারিয়ে ফেলব। তিনি তার একটা সেই ধরণের পরিস্থিতিতে তলিয়ে যাচ্ছেন। আর যে, আমি তাঁর সঙ্গে বেহালাটার যে সম্পর্ক, তা নষ্ট করে ফেলব যদি আমি কথা বলা শুরু করি স্কেল, অ্যারপেজিও, আর অন্যান্য সব উত্তেজক ধরণের বেহালা শিক্ষণবিজ্ঞানের নীতিমূলক ব্যাপার নিয়ে। (হাসি) কাজেই, আমি বাজাতে শুরু করলাম। আমি বাজিয়েছিলাম বিটোফেনের বেহালা কনসার্টোর প্রথম মুভমেন্ট। আর বাজাতে বাজাতে, আমি বুঝেছিলাম যে, একটা সুস্পষ্ট পরিবর্তন ঘটছে নাথানিয়েলের চোখগুলোতে| যেন কোন অদৃশ্য ওষুধ তার উপর কাজ করছে। যেন একটা রাসায়নিক বিক্রিয়া, যেখানে আমার সঙ্গীতটা কাজ করছে অনুঘটক হিসেবে। আর নাথানিয়েলের উন্মাদনা ধীরে ধীরে রুপান্তরিত হয়ে যেতে থাকল বোঝাপড়ায়, এক শান্ত কৌতুহলে এবং মহিমায়। আর আশ্চর্যজনকভাবে তিনি তার বেহালাটা তুলে নিলেন আর বাজাতে শুরু করলেন। ... বেহালা সংগ্রহের অংশবিশেষ তিনি তখন আমাকে পুরো করতে বললেন মেনডেলসোন, চাইকফস্কি, সিবেলিয়াস। আর আমরা সঙ্গীত নিয়েই কথা বলা শুরু করলাম। বাখ থেকে বেটোফেন, ব্রাহমস, ব্রুকনার, সব “ব”-গুলো, বারটোক থেকে সুদূরবিস্তৃত ইসা-পেক্কা সালোনেন পর্যন্ত। আর আমি বুঝেছিলাম যে, সঙ্গীত সম্পর্কে তার যে শুধু বিশ্বকোষ পরিমাণ জ্ঞানই আছে তাই নয়, বরং তিনি এই পরিমাণ সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন ব্যক্তিগত জীবনেও। তিনি এটা নিয়ে এত আবেগ আর সমঝদারিত্ব নিয়ে কথা বলছিলেন যেমনটা আমরা বলি, আমাদের সহকর্মীদের সঙ্গে। লস অ্যাঞ্জেলস ফিলহারমোনিক এ আর এভাবে বাজাতে বাজাতে, সঙ্গীত নিয়ে কথা বলতে বলতে মানুষটা রুপান্তরিত হয়ে গেলেন ভ্রম-বাতুলতার লক্ষণাক্রান্ত মানসিক বিক্ষিপ্ত রোগী থেকে যে হাঁটছিল রাস্তায় রাস্তায় লস অ্যাঞ্জেলসের শহরের কেন্দ্রস্থলে রুপান্তরিত হয়ে গেলেন একটা মনোমুগ্ধকর, পন্ডিত সমুজ্জ্বল জুইলিয়ার্ড-প্রশিক্ষিত সঙ্গীতজ্ঞে। সঙ্গীত হলো ওষুধ। সঙ্গীত আমাদের পরিবর্তিত করে। আর নাথানিয়েলের জন্য সঙ্গীত হলো মানসিক সুস্থতা। কারণ সঙ্গীত তাকে সুযোগ করে দেয় তার চিন্তাভাবনা ও ভ্রমগুলোকে গ্রহণ করার আর সেগুলোকে নিজের কল্পনা ও নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে বাস্তব একটা আদল দেওয়ার। আর এটা একটা পালিয়ে থাকার উপায় তার নির্যাতিত অবস্থা থেকে| আর আমি বুঝেছিলাম যে, এটাই শিল্পের মূল নির্যাস। এটাই হয়তো সেই কারণ, যে কারণে আমরা সঙ্গীত সৃষ্টি করি। এমন কিছু গ্রহণ করি যেটা আমাদের সবারই একেবারে মূলগত জায়গায় বিরাজ করছে। আমাদের আবেগ, আর আমাদের এই শৈল্পিক দৃষ্টি দিয়ে, আমাদের সৃজনশীলতা দিয়ে আমরা আমাদের ঐ আবেগ-অনুভূতিগুলোকে বাস্তবে রুপ দিতে সক্ষম হই। আর সেই প্রকাশের বাস্তবতা আমাদের সবার কাছে পৌঁছায়, আমাদেরকে তাড়িত করে, উৎসাহিত করে, একাত্ম করে। আর নাথানিয়েলের জন্য, সঙ্গীত তাকে ফেরায় একটা বন্ধুঘেরা পরিবেশে। সঙ্গীতের মুক্ত হবার ক্ষমতা তাকে ফিরিয়ে আনে একটা সঙ্গীতানুরাগীদের পরিবারে যারা তাকে বোঝে, যারা তার প্রতিভার স্বীকৃতি দেয়, শ্রদ্ধা করে। আর আমি সবসময়ই নাথানিয়েলের সঙ্গে সঙ্গীত-চর্চা করব, সে আমরা ওয়ার্ল্ড ডিজনি কনসার্ট হলেই থাকি বা স্কিড রো-তে। কারণ তিনি আমাকে মনে করিয়ে দেন যে, কেন আমি মিউজিসিয়ান হয়েছি। ধন্যবাদ (হাততালি) ব্রুনো জিউস্সানি: ধন্যবাদ, ধন্যবাদ আপনাকে রবার্ট গুপ্তা (হাততালি) এখন এমন কিছু বাজাতে যাচ্ছি, যেটা আমি নির্লজ্জের মতো চুরি করেছি চেলিস্টদের কাছ থেকে। কাজেই, দয়া করে, মাফ করে দেবেন। (হাসি) (সঙ্গীত) (হাততালি) আজ আমি আপনাদের সামনে দঁাড়িয়ে আছি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে, শোনাতে এসেছি গত ছয় বছরে আমার পথচলার গল্প সেবামূলক কর্মকান্ডে, ও শিক্ষা ক্ষেত্রে । আমি কোনো প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একাডেমিক নই। অভিজ্ঞ কোনো সমাজকর্মীও নই। আমি ২৬ বছর ছিলাম কর্পরেট জগতে, চেষ্টা করেছি, কিভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক করে তোলা যায়। তারপর ২০০৩ সালে আমি চালু করলাম পরিক্রমা হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন আমার রান্নাঘরের টেবিলে বসে। ফাউন্ডেশনের প্রথম কাজ হিসেবে আমরা বস্তিগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। আপনি হয়ত জানেন, প্রায় বিশ লক্ষ মানুষ বাস করে ব্যাঙ্গালোরের মোট আটশোটি বস্তিতে। আমরা সবগুলো বস্তিতে যেতে পারিনি, কিন্তু আমরা যদ্দুর পেরেছি তত বেশি সংখক বস্তিতে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা এসব বস্তিতে ঘুরে বেড়িয়েছি, এমন সব বাসা খুঁজে বের করেছি, যেখানে ছেলে-মেয়েরা কখনোই স্কুলে যেত না। আমরা বাবা-মায়েদের সাথে কথা বলেছি, তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আমরা বাচ্চাদের সাথে খেলাধূলা করেছি, আর খুব ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছি। পরিশ্রান্ত, কিন্তু মনে ছিল কিছু ছবি কিছু উজ্জ্বল মুখ, ঝলমলে চোখ, সেগুলো নিয়ে ঘুমাতে গেছি। শুরু করার ব্যাপারে আমরা সবাই খুব উত্তেজিত ছিলাম। কিন্তু সংখ্যাগুলো দেখে থমকে গেলাম। দুই কোটি শিশু যাদের বয়স চার থেকে চৌদ্দ বছরের মধ্যে, তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা, কিন্তু যায় না। দশ কোটি শিশু যরা স্কুলে যাচ্ছে, কিন্তু পড়তে পারেনা। সাড়ে বারো কোটি শিশু সাধারণ অংক করতে পারেনা। আমরা আরো শুনেছি যে পঁচিশ হাজার কোটি ভারতীয় রুপি সরকারী স্কুলগুলোর পেছনে বরাদ্দ ছিল। এর নব্বই শতাংশ খরচ হয় শিক্ষকদের আর কর্মচারীদের বেতন হিসেবে। এবং তারপরেও ভারতে কর্মক্ষেত্রে শিক্ষকদের অনুপস্থিতির হার পৃথিবীতে প্রায় সর্বচ্চ, এখানে প্রতি চারজনে একজন শিক্ষক সারা বছরে একটি দিনের জন্যও তার কর্মক্ষেত্রে যাননা। এই পরিসংখ্যানগুলো একেবারে মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো, অভাবনীয়, আর আমাদেরকে প্রতিনিয়ত জিজ্ঞেস করা হয়েছে আমরা কবে শুরু করবো? কতোগুলো স্কুল দিয়ে শুরু করবো ? কতোজন বাচ্চা পাবো ছাত্র হিসেবে? আমরা প্রতিষ্ঠানের আকার বাড়াবো কিভাবে? আমরা অনেকগুলো স্কুল বানাবো কিভাবে? ওরককম অবস্থায় ঘাবড়ে না যাওয়া, ভয় না পাওয়া-ই অস্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু আমরা পাহাড়সম কাজে হাত দিলাম, এবং বললাম, "পরিসংখ‍্যান নিয়ে খেলাটা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।" আমরা একবারে একটা শিশুর দায়িত্ব নেবো। আমরা তাকে সরাসরি স্কুলে পড়াবো। কলেজে পাঠাবো। তাকে একটা সুন্দর জীবন আর সুন্দর জীবিকার জন‍্য প্রস্তুত করব। এভাবে শুরু হলো আমাদের পরিক্রমার পথ চলা। পরিক্রমার প্রথম স্কুলটা ছিলো একটা বস্তিতে। সেখানকার সত্তর হাজার অধিবাসী দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করতো। আমাদের প্রথম স্কুলটা ছিলো ওই বস্তির মধ্যে একটা বাড়ির ছাদের উপরে। দোতলা বাড়ির। বস্তির একমাত্র দোতলা বাড়ির ছাদে। আর সেই ছাদের উপরে কোনো পাকা ছাওনি ছিল না, শুধু ছিল অর্ধেকটা টিন শেড। সেটাই ছিল আমাদের প্রথম স্কুল। ছাত্রসংখ্যা ১৬৫ জন। ইন্ডিয়ায় শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় জুনে। আর জুন মাসে বৃষ্টি হয়। মাঝেমধ্যেই আমরা সবাই টিন শেডের নীচে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম, কখন বৃষ্টি শেষ হয়, তার অপেক্ষায়। ও গড, সেটা ছিল একটা চমৎকার বন্ডিং এক্সারসাইজ। সেদিন আমরা সবাই যারা এক ছাদের নীচে দাঁড়িয়ে ছিলাম, আজও আমরা সবাই একসাথেই আছি। এরপর তৈরী হলো দ্বিতীয় স্কুলটা। তারপর তৃতীয়, চতুর্থ স্কুল, তারপর হলো একটা জুনিয়র কলেজ। ছয় বছর পরে এখন আমাদের চারটা স্কুল আর একটা জুনিয়র কলেজ আছে। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা এগারোশো জন। এরা আঠাশটি বস্তি আর চারটি এতিমখানা থেকে আসে । (তালি) আমাদের স্বপ্নটা খুবই সাধারণ। এদের প্রত্যেকটা শিশুকে যেন স্কুলে পাঠাতে পারি, তৈরি করতে পারি, বাঁচার জন্য, শিক্ষিত হবার জন্য এবং একই সাথে শান্তিতে বাঁচার জন্য এখনকার এই যুদ্ধে ভরা বিশৃঙ্খল বিশ্বায়নের যুগে। ইদানিং, বিশ্বায়নের কথা বললেই ইংরেজির কথাও চলে আসবে। তাই আমাদের সবগুলো স্কুলই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। কিন্তু তারা জানে একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে বস্তির ছেলে-মেয়েরা ভালো ইংরেজি বলতে পারেনা। তাদের পরিবারে কেউ কখনো ইংরেজিতে কথা বলেনি। তাদের প্রজন্মে কেউ কখনো ইংরেজিতে কথা বলেনি। কিন্তু এই ধারনাটা যে কত ভুল! ভিডিওঃ মেয়েঃ আমি অ্যাডভেঞ্চার টাইপের বই পড়তে পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে আছে আলফ্রেড হিচকক এবং [অষ্পষ্ট] এবং হার্ডি বয়েজ। আর হ্যারি পটার। যদিও তিনটার ধরণই আলাদা। একটা হলো ম্যাজিক নিয়ে। অন্য দুইটা গোয়েন্দাগিরির উপরে। আমি বইগুলো পছন্দ করি কারণ বইগুলোর মধে‍্য কিছু স্পেশাল বেপার আছে, বইগুলোতে ব্যবহার করা শব্দগুলো, এবং এগুলোর লেখার ধরণ। মানে, একবার আমি একটা বই ধরলে সেটা শেষ না করে উঠতে পারিনা। এমনকি একটা বই শেষ করতে সাড়ে চার ঘন্টার মতো লাগলেও না। অথবা সাড়ে তিন ঘন্টা। কিন্তু আমি শেষ না করে উঠি না। ছেলেঃ আমি বেশ গবেষণা করে কিছু তথ‍্য পেলাম পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী গাড়িগুলোর ব্যাপারে। আমার পছন্দ Ducati ZZ143, কারণ এটা সবচেয়ে দ্রুতগামী পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী মটর সাইকেল। এছাড়াও আমার Pulsar 220 DTSI পছন্দ। কারণ এটা ইন্ডিয়ার দ্রুততম বাইক। যাইহোক, আপনারা যে মেয়েটাকে দেখলেন, তার বাবা রাস্তার পাশে ফুল বিক্রি করে। আর এই ছেলেটা গত পাঁচ বছর ধরে আমাদের স্কুলে আসছে। তবে মজার ব্যাপারটা কি দেখেছেন? পৃথিবীর সব ছোট ছেলেই দ্রুতগামী বাইক পছন্দ করে। ছেলেটা এখনো সেরকম বাইক দেখেনি, চড়েনি তো অবশ‍্যই, তবে গুগল সার্চের মাধ্যমে ও এটা নিয়ে অনেক গবেষণা করে ফেলেছে। আমারা যখন আমাদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো চালু করেছিলাম আমরা বেছে নিয়েছিলাম সবচেয়ে সেরা কারিকুলামটি। আই সি এস ই কারিকুলাম। এবং এবারও, এমন অনেকেই ছিল যারা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছিলো। বলেছিলো, "তোমার কি মাথা খারাপ? এইসব ছেলে-মেয়ের জন্য এতো কঠিন কারিকুলাম বেছে নিচ্ছো?" ওরা কখনোই পেরে উঠবে না।" আমাদের বাচ্চারা শুধু ভালোমত পেরেছে তাই নয়, তারা অসাধারণ হয়ে উঠেছে। আপনারা শুধু একরার এসে দেখে যান আমাদের স্কুলের ছেলে-মেয়েরা কতখানি ভাল করছে। আমাদের আরো একটা ভুল ধারনা আছে যে, বস্তির বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর বেপারে আগ্রহী নয়, বরং তারা শুধু চায়, সন্তানদের দিয়ে কাজ করাতে। এটাও সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। পুরো পৃথিবীজুড়ে সব বাবা-মাই চায়, তাদের সন্তান যেনো তাদের চাইতে ভালোভাবে জীবন যাপন করে। তবে তাদের বিশ্বাস করাতে হবে যে, পরিবর্তনটা আসলেই সম্ভব। ভিডিওঃ (হিন্দী) অভিভাবকদের আশি শতাংশ আমাদের সবগুলো শিক্ষক-অভিভাবক মিটিং-এ অংশগ্রহণ করেন। মাঝেমধ্যেই এটা একশো ভাগও হয়ে যায়। অনেক সুবিধাপ্রাপ্ত স্কুলগুলোর চেয়েও যা অনেক বেশি। বাবারাও আসতে শুরু করেছেন। মজার ব্যাপার হলো, প্রথমদিকে আমাদের স্কুলে বাবা-মায়েরা হাজিরা খাতায় বুড়ো আঙ্গুলের ছাপ দিতো। এখন তারা সেখানে তাদের নাম সই করা শুরু করেছে। বাচ্চারাই তাদের শিখিয়েছে। বাচ্চাদের শেখানোর ক্ষমতা আসলেই অসাধারণ। এই কয়েক মাস আগে মানে গত বছরের শেষের দিকে আমাদের কাছে কিছু সন্তানের মায়েরা এসে বললেন, "আমরা লেখা পড়া শিখতে চাই। আপনারা শেখাতে পারবেন?" আমরা স্কুলের পরে ক্লাস নেয়া শুরু করলাম অভিভাবকদের জন‍্য, মায়েদের জন‍্য। ২৫ জন মা নিয়মিত লেখাপড়া শিখতে আসেন আমাদের প্রক-স্কুল শিক্ষা কার্যক্রমে। আমরা এই প্রগ্রামটাও চালিয়ে যেতে চাই এবং আমাদের অন্যান্য স্কুলগুলোওে চালু করতে চাই। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের বাবাদের আটানব্বই ভাগই মদ্যপ। তাহলে আপনারা বুঝতেই পারছেন, কত কষ্টকর এবং ভয়াবহ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠা শিশুরা আমাদের কাছে আসে। আমরা এই বাবাদের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে পাঠাতে হয়েছে তারপর তারা যখন ফিরে আসে, নেশামুক্ত হয়ে, আমরা তাদের একটা চাকরি দেয়ার চেষ্টা করি যেন তারা আবার নেশার পথে ফিরে না যায়। আমাদের স্কুলে এরকম তিনজন বাবা আছেন, যাদের আমরা রান্নাবান্না শিখিয়েছি। আমরা তাদের পুষ্টি, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয় শিখিয়েছি। আমরা তাদেরকে রান্নাঘর বানাতে সাহায্য করেছি। এবং এখন তারা স্কুলে বাচ্চাদের খাবার সরবরাহ করে। তারাও কাজটা খুব ভালোমত করে, কারণ তাদের বাচ্চারাই এই খাবারগুলো খাচ্ছে। কিন্তু সবচে বড় কথা হচ্ছে, জীবনে এই প্রথমবারের মতো তারা সম্মান পাচ্ছে, তারা এমন কিছু একটা করছে, যেটা গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক ছাড়া আমাদের স্কুলের নব্বই ভাগ কর্মচারীই ছাত্রদেরই বাবা-মা অথবা পরিবারের সদস্য। আমরা অনেক প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি, বাচ্চারা যেনো স্কুলে আসে, এটা নিশ্চিত করার জন্যে। ছাত্রদের বড়ো ভাই-বোনদের জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিং, যাতে করে ছোটদের স্কুলে আসতে বাধা দেয়া না হয়। আমাদের আরো একটা ভুল ধারনা আছে যে, এই ছেলে-মেয়েরা মূলধারার সাথে মিশে যেতে পারবেনা। আপনারা এখন এই ছোট্ট মেয়েটাকে দেখুন মেয়েটা হলো আঠাশজন ছেলেমেয়ের একজন বাকি সবাই ছিল সুবিধাভোগি স্কুল থেকে আসা, স্কুলগুলো ছিল দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভাল স্কুল আর ওরা ডিউক ইউনিভার্সিটির ট্যালেন্ট আইডেনটিফিকেশন প্রোগ্রামে নির্বাচিত হয়েছে। তাদেরকে আহমেদাবাদের আই আই এম এ পাঠানো হয়েছিল। ভিডিওঃ মেয়েঃ [অস্পষ্ট] যখনই আমরা এটা দেখি [অস্পষ্ট] আই আই এম এর ওই ক‍্যাম্পে যাওয়াটা ছিল আমাদের জন্য একটা গর্বের বিষয় এবং আমরা ওই ক্যম্পে গেছি। ওখানে সবাই খুব ফ্রেন্ডলি ছিলো। অনেকের সাথেই আমার বন্ধুত্ব হয়েছে। এবং আমি বুঝতে পারছিলাম আমার ইংরেজি আগের চে আরো উন্নত হয়েছে, ওখানে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে গল্প করা এগুলোর ফলে। ওখানে ওরা এমন ছেলেমেয়েদের সাথে মিশেছে যাদের সামাজিক স্ট‍্যান্ডার্ড ভিন্ন, ভিন্ন মানসিকতার, এবং পুরোপুরি ভিন্ন সমাজ থেকে আসা। আমি প্রায় সবার সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়েছি। বন্ধু হিসেবে তারাও খুব ভাল। ওদের মধ্যে কিছু আমার খুব ভাল বন্ধু হয়েছে, তাদের কেউ কেউ দিল্লীতে থাকে, কেউ কেউ থাকে মুম্বাইতে। এমনকি এখনও আমাদের ফেসবুকের মাধ‍্যমে যোগাযোগ আছে। এই আহমেদাবাদ সফরের পরে আমি যেন পুরো বদলে গেছি সবার সাথে আমি এখন মিশতে পারি। আগে ভাবতাম আমি আসলে এরকম না। আমি কারো সাথে সহজে মিশতে পারি না। সহজেই কারো সাথে কথা বলতে পারি না। এখন আমার ইংরেজি উচ্চারণ আগের চাইতে অনেক ভালো হয়েছে। আমি ফুটবল, ভলিবল, ফ্রিসবি, অনেক খেলা শিখেছি। আমি ব্যাঙ্গালোরে আসতে চাচ্ছিলাম না। ওখানেই থাকতে চাচ্ছিলাম। খাবারগুলো কি সুন্দর! আমার খুব ভালো লেগেছে। আসলেই খুব সুন্দর। খাবারগুলো খেতে আমার অনেক মজা লেগেছিল [অস্পষ্ট] বেয়ারা এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করতো, "জ্বী ম্যাম, আপনি কি খাবেন?" এটা শুনতে আমার অনেক ভাল লাগতো ! ( হাসি ) ( তালি ) এই মেয়েটা একটি বাসায় কাজ করতো, স্কুলে পড়তে আসার আগে । আর আজ সে একজন নিউরোলজিস্ট হতে চায়। আমাদের স্কুলের ছেলে-মেয়েরা খেলাধূলাতেও খুব ভালো করছে। ভাল থেকে আরো ভাল করছে। একটা ইন্টার স্কুল অ্যাথলেটিক কম্পিটিশন হয় প্রতি বছর ব্যাঙ্গালোরে, পাঁচ হাজার ছাত্র-ছাত্রী এতে অংশ নেয় শহরের সেরা ১৪০ টা স্কুল থেকে। আমাদের স্কুল গত তিন বছর ধরে সেরা স্কুল এর পুরোষ্কার পেয়ে আসছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঘরে ফিরছে ব্যাগ ভর্তি করে মেডেল নিয়ে, সাথে প্রচুর ভক্ত আর বন্ধুও তৈরি করছে। গত বছরেই কিছু বাচ্চা কয়েকটি অভিজাত স্কুল থেকে আমাদের স্কুলে অ্যাডমিশন নিতে এসেছিল। আমাদেরও নিজস্ব স্বপ্নের দলও আছে। এটা কিভাবে সম্ভব? এতো আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে আসে? বহির্জগতের সাথে ওদের সাক্ষাতের কারনে? আমাদের কিছু প্রফেসর আছেন এম আই টি, বার্কলে, স্ট‍্যানফোর্ড থেকে এবং ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অভ সায়েন্স থেকে যঁারা এখানে আসেন এবং আমাদের শিশুদের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব গবেষণা, বিষয়ে শিক্ষা দেন যা ক্লাসরুমের গন্ডির অনেক বাইরে। চিত্রশিল্প, সঙ্গিত কে ধরা হয় এখানে থেরাপি এবং ভাব প্রকাশের মাধ‍্যম হিসেবে। আমরা এও বিশ্বাস করি যে ভেতরের জিনিসটাই হলো আসল। অবকাঠামো নয়, টয়লেট বা লাইব্রেরি নয়, স্কুলটাতে আসলে কী হচ্ছে, সেটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে মানুষ শিখতে পারবে, কারণ খুঁজে দেখতে পারবে, আবিষ্কার করতে পারবে, সেটাই সত্যিকারের শিক্ষা। আমরা যখন পরিক্রমার কাজ শুরু করি, তখন নিজেরাও জানতামনা আমরা কোনদিকে যাচ্ছি। আমরা ব‍্যবসার পরিকল্পনা করার জন্য ম্যাকিনজি-কে হায়ার করিনি। তবে আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে আজ আমরা যেটা চাই সেটা হলো একবারে একজন করে শিশুকে দিয়ে শুরু করা। সংখ্যা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাবোনা। এবং আমরা আসলেই দেখতে চাই শিশুটি তার পরিপূর্ণ জীবন চক্র সম্পূর্ণ করুক। এবং তার সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে বের করে আনুক। আমরা আকারে বিশ্বাস করিনা আমরা বিশ্বাস করি কোয়ালিটিতে, আকার এবং সংখ্যা বৃদ্ধি আপনা আপনিই হবে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন আমাদের সাহায্য করছে। এবং আমরা এখন আরও অনেক স্কুল খুলতে সক্ষম। কিন্তু আমরা শুরু করেছিলাম এই চিন্তা থেকে, যে একবারে একটি করে শিশু। এই পাঁচ বছর বয়সের ছেলেটার নাম পরশুরাম। সে ভিক্ষা করত বাস স্টপের পাশে কয়েক বছর আগে, সেখান থেকে ওকে একটি এতিমখানায় নিয়ে যাওয়া হয়, গত সাড়ে চার মাস ধরে ও আমাদের স্কুলে আসছে। ও এখন কিন্ডার গার্টেনে পড়ে ও এখন ইংরেজিতে কথা বলা শিখেছে। আমাদের একটা মডেল আছে যার মাধ্যমে শিশুরা ইংরেজি বলতে পারে এবং বুঝতে পারে তিন মাসের মধ্যে। পরশুরাম আপনাদের ইংরেজিতে তৃষ্ণার্ত কাক, কুমির এবং জিরাফের গল্প বলতে পারবে। আপনি যদি জিজ্ঞাসা করেন সে কি করতে পছন্দ করে ? ও তখন বলবে, "আই লাইক স্লিপিং, আই লাইক ইটিং, আই লাইক প্লেয়িং।" এবং আপনি যদি ওকে জিজ্ঞেস করেন 'ও কী করতে চায় তখন 'ও বলবে, "আই ওয়ান্ট টু হর্সিং।" "হর্সিং" মানে ওর ভাষায় ঘোড়ার পিঠে চড়া। পরশুরাম প্রত্যেকদিন আমার অফিসে আসে। ও আসে পেট মালিশের জন‍্য, কারণ ওর বিশ্বাস, এতে করে আমার ভাগ্য ভালো হবে। আমি যখন পরিক্রমার কাজ শুরু করি তখন আমার মধ্যে এক ধরণের ঔদ্ধত্য কাজ করছিল, যেন আমি পুরো পৃথিবীকে বদলে দেবো। কিন্তু আজ, আমি নিজেই বদলে গেছি। আমার ছেলে-মেয়েদের সাথে আমিও পাল্টে গেছি। আমি ওদের কাছ থেকে কত কিছু যে শিখেছি, ভালোবাসা, সহানুভূতি, কল্পনাশক্তি, আর এমন সৃজনশীলতা। পরশুরামই হলো পরিক্রমা সবে শুরু করেছে কিন্তু এখনো অনেক পথ যেতে হবে। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, পরশুরাম আর কয়েক বছর পরে TED কনফারেন্সে আপনাদের সামনে কথা বলবে । ধন্যবাদ। ( তালি ) উপস্থিত সুধীবৃন্দ, টেডে আমরা নেতৃত্বদান নিয়ে অনেক কথা বলি এবং কিভাবে আন্দোলন করতে হয় তা নিয়ে বলি। আসুন এখন আমরা দেখি কিভাবে একটি আন্দোলন শুরু হয়, বিস্তার লাভ করে এবং শেষ হয়। এর সবই আমরা দেখবো তিন মিনিটের কম সময়ে এবং তা বিশ্লেষণ করে শিক্ষা নেব। প্রথমেই, আপনারা সবাই জানেন নেতা হওয়ার জন্য সাহস দরকার উঠে দাঁড়ানোর জন্য এবং উপহাসের মোকাবেলা করবার জন্য। কিন্তু সে যা করছে তা অনুসরণ করা খুবই সহজ। সুতরাং এই তার প্রথম অনুসারী যার কাঁধে আছে একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব; সে সবাইকে দেখাবে কিভাবে অনুসরণ করতে হয়। এখন দেখুন নেতা তাকে সমকক্ষ রূপে আলিঙ্গন করছে। তাই এখন আর বিষয়টি নেতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটা এখন তাদের বিষয়, বহুবচন। এখন দেখুন সে তার বন্ধুদের আহ্বান জানাচ্ছে। আপনি যদি এখন খেয়াল করেন তো দেখবে যে প্রথম অনুসারী আসলে নেতৃত্বেরই এমন একটা রূপ যার সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। এভাবে সামনে এসে দাঁড়াবার জন্য সাহসের দরকার হয় । প্রথম অনুসরণকারী হচ্ছে সেই জন যে এক একলা পাগলকে নেতায় পরিণত করে। (হাসি) (হাততালি) এবং এইযে দ্বিতীয় অনুসারী। এখন সে একা পাগল না, দুটো পাগলও না-- তিনজন মানেই ভিড়, আর ভীড় মানেই সংবাদ। তাই আন্দোলন জনসম্মুখে হতে হবে। নেতাকে দেখানোই শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, তার অনুসারীদের দেখানোও গুরুত্বপুর্ণ কারণ আপনি দেখবেন নতুন অনুসারীরা পুরনো অনুসারীদের অনুকরণ করে, নেতাকে নয়। এখন, আরও দু'জন লোক আসলো, এবং এর পরপরই আরও তিনজন। এখন গতি সঞ্চারিত হবে। এটাই হল নির্ধারণ মুহূর্ত। এখন আমরা একটা আন্দোলন পেলাম। সুতরাং, দেখুন যে, যত বেশি লোক যোগ হচ্ছে, ঝুঁকিও ততো কম হচ্ছে। তাই যারা এর আগে সীমানায় দাঁড়িয়ে ছিল, এখন তাদের আর কারণ নেই সেখানে থাকবার। তাদেরকে এখন আর আলাদা করা হবে না, উপহাসের স্বীকার হতে হবে না, কিন্ত তারা যদি চটপটে হয় তো এই জনপ্রিয় ভিড়ে সামিল হতে পারবে। (হাসি) তাই আগামী এক মিনিট ধরে, আপনি তাদেরকে দেখতে পারবেন যারা ভীড়ের মাঝে থাকতে চায় কারণ শেষমেশ তাদের নিয়ে ঠাট্টা করা হবে ভীড়ে যোগদান না করার জন্য। এবং ঠিক এভাবেই আপনি একটি আন্দোলন গড়ে তোলেন। কিন্তু আসুন আমরা যা শিখলাম তার সংক্ষেপে আরেকবার দেখে নিই। তো প্রথমে, আপনি যদি এই ধরনের হয়ে থাকেন, এইযে শার্টহীন নৃত্যরত লোকটার মত যে একা দাঁড়িয়ে আছে, আপনার প্রথম অনুসারী কজন কে সমকক্ষ হিসেবে সযত্নে লালন করার গুরুত্ব মনে রাখবেন যাতে এটা পরিষ্কার থাকে যে এইসব আন্দোলনের জন্য, আপনার নিজের জন্য নয়। ঠিক আছে, কিন্তু আমরা হয়তো আসল শিক্ষাটাই অনুধাবণ করতে পারিনি. সবচেয়ে বড় শিক্ষা, আপনি যদি খেয়াল করে থাকেন-- আপনি কি ধরতে পেরেছেন?-- সেটা হল নেতৃত্বকে অতি মাত্রায় মহিমান্বিত করা হয়। হ্যাঁ, শার্টহীন লোকটি ছিল প্রথম, এবং সে সকল কৃতিত্বের অধিকারী হবে, কিন্তু আসলে প্রথম অনুসারীই ছিল যে একজন একা পাগলকে একজন নেতায় পরিণত করেছিল তাই, আমাদের সবাইকে যেহেতু বলা হয় নেতা হতে হবে, সেটা আসলেই খুবই অকার্যকরী। আপনি যদি সত্যই একটি আন্দোলন শুরু করতে চান, আপনার অনুসরণ করবার সাহস থাকতে হবে অন্যদের দেখাতে হবে কিভাবে অনুসরণ করতে হয় এবং আপনি যখন এক একলা পাগলকে খুঁজে পাবেন যে কিনা মহৎ কিছু করছে, আপনার সাহস থাকা উচিত তার প্রথম অনুসারী হিসেবে দাঁড়ানোর এবং যোগদান করার। এবং একাজের আদর্শ একটি স্থান হচ্ছে টেড। ধন্যবাদ (হাততালি) প্রথমত, আমি একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করতে চাইঃ আপনাকে শেষ কবে ছেলেমানুষ বলে ডাকা হয়েছিল? আমার মতন ছোটদের ক্ষেত্রে, "ছেলেমানুষ" বলে সম্বোধীত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। যখনই আমরা কোন অযৌক্তিক আবদার করি, বা কোন দায়িত্বহীন আচরণ করি, অথবা সাধারণ কোন আমেরিকান নাগরিক হওয়ার অন্য কোন চিহ্ন দেখাই, আমাদের শিশুসুলভ বলা হয়, যা আমাকে আসলেই বিরক্ত করে। যাই হোক, এই ঘটনাগুলো একবার দেখুনঃ সাম্রাজ্যবাদ এবং ঔপনিবেশিকতা, বিশ্বযুদ্ধ, জর্জ ডব্লিউ বুশ। নিজেকেই জিজ্ঞাসা করুনঃ কে দায়ী? বড়রা। তাহলে, বাচ্চারা কি করেছে? আনা ফ্র‍্যাঙ্ক তার ইহুদীনাশ এবং হত্যালীলার প্রবল কাহিনীর মধ্য দিয়ে হাজারজনকে আলোড়িত করেছে, রুবি ব্রিজেস যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত পৃথকীকরণ বন্ধ করতে সাহায্য করেছে, এবং, সাম্প্রতিককালে, চার্লি সিম্পসন হাইতির জন্য ১২০,০০০ পাউন্ড জোগাড় করতে সাহায্য করেছে তার ছোট বাইকে চড়ে। তো, এইসব উদাহরণ থেকে প্রমানিত হয়, যে বয়সের সাথে এসবের কোনই সম্পর্ক নেই। ছেলেমানুষ শব্দটির সাথে জড়িত লক্ষণগুলো বড়দের মাঝে এত সচরাচর দেখা যায় যে আমাদের উচিৎ এই বয়স-বিভেদী শব্দটা উচ্ছেদ করে দেওয়া যখন এটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং যুক্তিহীন চিন্তা-ভাবনার সাথে জড়িত আচরণের সমালোচনা করতে ব্যবহার করা হয়। (হাততালি) ধন্যবাদ। কিন্তু আবার, কে বলতে পারে যে এই বিশেষ ধরনের যুক্তিহীন চিন্তা-ভাবনাগুলোর আসলেই কোন দরকার নেই পৃথিবীতে? হয়ত আপনার আগে কোন বিশাল পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু নিজেকে থামিয়েছেন, এই ভেবেঃ এটা অসম্ভব বা এটা অনেক দামী বা এটা থেকে আমার কোন লাভ হবে না। ভাল হোক বা খারাপ হোক, আমাদের শিশুদের তেমন কিছু যাই আসেনা যখন কিছু না করার কারন ভাবতে হয়। শিশুদের মাঝে অফুরন্ত অনুপ্রাণীত উচ্চাশা এবং আশাবাদী ভাবনা, থাকতে পারে, যেমন আমার ইচ্ছা কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না বা এক স্বর্গরাজ‍্য যেখানে সব কিছু অবারিত। আপনাদের মাঝে ক'জন এখনো এরকম স্বপ্ন দেখেন এবং এই সম্ভাবনাগুলোতে বিশ্বাস করেন? মাঝেমাঝে ইতিহাসজ্ঞান এবং নিখঁুত স্বর্গরাষ্ট্র তৈরীর আদর্শগুলোর ব‍্যর্থতার ইতিহাস একটি বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে কারন আপনি জানেন যদি সবকিছু বিনা পয়সায় পাওয়া যেত, তাহলে খাবার-দাবার শেষ হয়ে আসত, এবং দুর্লভ হয়ে উঠত যা একটি জটিলতা তৈরি করত। অন্যদিকে, আমরা শিশুরা এখনো নিখঁুত জিনিসের স্বপ্ন দেখি। এবং এটা একটি ভাল বেপার কারণ কোন কিছুকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হলে, প্রথমে সেটার স্বপ্ন দেখতে হবে। বিভিন্নভাবে, আমাদের কল্পনা করার সাহস সম্ভাবনার সীমা অতিক্রম করতে সাহায্য করে। যেমন ধরুন, টাকোমা, ওয়াশিংটনে অবস্থিত কাঁচের জাদুঘরে, আমার দেশ - ইয়াহু ওয়াশিংটন - (হাততালি) শিশুদের কাঁচ-নকশা বলে একটি প্রোগ্রাম আছে এবং শিশুরা তাদের নিজেদের কল্পনা থেকে কাঁচে নকশা আঁকে। এখন, ওখানকার নিজস্ব শিল্পী বলেন যে তাঁরা তাঁদের কিছু শ্রেষ্ঠ চিন্তাগুলো এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে পেয়েছেন কারণ বাচ্চারা কোন সীমাবদ্ধতার চিন্তা করে না বিশেষ করে বিভিন্ন আকৃতির কাঁচ বানানো যে কতটা কঠিন হতে পারে। তারা শুধু ভাল কিছু করার চিন্তা করে। যখন আপনারা কাঁচের কথা চিন্তা করেন, তখন হয়ত আপনারা রঙ্গিন শিহুলি নকশা বা ইতালীয় পাত্রের কথা ভাবেন, কিন্তু বাচ্চারা কাঁচ-শিল্পীদের সেই সীমা অতিক্রম করতে বাধ্য করে এবং হৃদয়ভঙ্গ সাপ এবং বেকন-বালকের জগতে, যার আপনি দেখতে পাচ্ছেন 'মাংস-দৃষ্টি' আছে। (হাসি) এখন, আমাদের অন্তর্নিহিত জ্ঞান কোন অন্তর্দৃষ্টি হওয়া লাগবে না। শিশুরা বড়দের কাছে থেকে এমনিতেই অনেক কিছু শেখে, এবং আমাদের অনেক কিছু দেয়ার আছে। আমি মনে করি বড়দের উচিৎ শিশুদের কাছ থেকে শেখা শুরু করা। আমি আমার বেশিরভাগ বক্তৃতা দেই একটি শিক্ষা সভার, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীগণের সামনে, এবং আমার এই তুলনাটা পছন্দ। খালি একজন শিক্ষক ক্লাসের সামনে থেকে ছাত্রদের বলছেন এটা করো, ওটা করো, এরকম হওয়া উচিৎ নয়। ছাত্রদেরও উচিৎ তাদের শিক্ষকদের শেখানো। প্রাপ্তবয়স্কদের এবং শিশুদের মাঝে শিক্ষা দান করা পারস্পারিক হওয়া উচিৎ। দুর্ভাগ্যক্রমে, বাস্তব পরিস্থিতি একটু ভিন্ন, এবং এর অনেকটাই বিশ্বাস, বা তার অনুপস্থিতির কারনে। যখন আপনি কাউকে বিশ্বাস করেন না, তখন আপনি তাদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন, ঠিক কিনা। যদি আমি আমার বড় বোনের ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতার বেপারে সন্দেহ করি এই ১০ শতাংশ সুদ ফেরত দেয়ার বেপারে, যা আমি গতবার ওর ঋণের উপর ধার্য করেছিলাম, আমি তাকে আর কোন ঋণ দিতে পারব না যতক্ষন না সে তা শোধ করে। (হাসি) সত্যি কাহিনী কিন্তু। প্রাপ্তবয়স্করা বাচ্চাদের প্রতি বেশিরভাগক্ষেত্রে একটি অবরোধসুলভ মনোভাব পোষণ করে যা স্কুলের নীতিমালার প্রতিটি "এটা করো না," "ওটা করো না" থেকে স্কুলের ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ পর্যন্ত বিচরণ করে। ইতিহাস দেখায় যে শাসনব‍্যবস্থা তখনি অত্যাচারী হয়ে উঠে যখন তাদের কর্তৃত্ব সংশয়পূর্ণ হয়ে উঠে। এবং, যদিও প্রাপ্তবয়স্করা স্বৈরাচারীদের পর্যায়ে হয়ত বা নয়, নিয়মকানুনের বেলায় বাচ্চাদের খুব কম, বা কোনই, মতামত থাকেনা, যখন বাস্তবে এই বেপারটা পারস্পারিক হওয়া উচিৎ, অর্থাৎ বড়দের উচিৎ ছোটদের কাছ থেকে শেখা এবং তাদের মতামত বিবেচনা করা। এখন বাধার থেকেও খারাপ যা তা হল যে প্রায়ই বড়রা ছোটদের কর্মক্ষমতাকে হেয় করে। আমরা সংপৃষ্ট হতে পছন্দ করি, কিন্তু যখন আমাদের থেকে কম আশা করা হয়, বিশ্বাস করুন, তখন আমাদের পুরো ভরাডুবি হবে। আমার নিজের বাবা-মা আমার এবং আমার বোনের প্রতি আর যাই হোক, কম আশা পোষণ করেনি। তারা আমাদের ডাক্তার বা উকিল বা ওইরকম কিছু হতে বলেনি, কিন্তু আমার বাবা আমাদেরকে এরিস্টটল এবং জীবাণুদের বিরুদ্ধে অগ্রগামী যোদ্ধাদের কাহিনী পড়ে শুনিয়েছেন, যখন অন্যান্য অনেক শিশুরা শুনেছে "বাসের চাকাগুলো ঘুরে বেড়ায় বারবার।" আমরা সেটাও শুনেছি, কিন্তু "অগ্রগামী জীবাণুনাশকারী" বেশি জোস্‌। (হাসি) চার বছর বয়স থেকে আমি লিখতে ভালবাসি, এবং যখন আমার ছয় বছর বয়স আমার মা আমাকে আমার নিজস্ব মাইক্রোসফট ওয়ার্ড সহ ল্যাপটপ কিনে দিয়েছে। ধন্যবাদ বিল গেটস এবং ধন্যবাদ মা। সেই ছোট ল্যাপটপে আমি ৩০০-র বেশি ছোটগল্প লিখেছি, এবং আমার ইচ্ছা ছিল ওগুলো প্রকাশিত হোক। একটা বাচ্চা প্রকাশিত হতে চায়, এই আস্পর্ধার দিকে ব্যঙ্গ না করে, বা আমাকে বড় হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে না বলে, আমার বাবা-মা আমাকে অনেক সমর্থন করেছিল। অনেক প্রকাশকরা এতটা উৎসাহিত ছিল না। এক বড় শিশু-সাহিত্য প্রকাশক ব্যঙ্গ করে বলেছিল যে তারা শিশুদের সাথে কাজ করে না। শিশু-সাহিত্যের প্রকাশক শিশুদের সাথে কাজ করে না? আমি ঠিক জানি না, কিন্ত এখানে একটা বড় মক্কেলকে বিদায় করা হচ্ছে। (হাসি) একজন প্রকাশক, এ্যাকশন প্রকাশনী, এই ঝুঁকি নিতে এবং আমাকে বিশ্বাস করতে, এবং আমি কি বলতে চাই তা শুনতে রাজি ছিল। তারা আমার প্রথম বই, "উড়ন্ত আঙ্গুলগুলো", প্রকাশ করেছে - যা আপনারা এখানে দেখতে পাচ্ছেন - এবং সেখান থেকে শুরু করে, শত শত বিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়ে, হাজার হাজার শিক্ষকদের জ্ঞাপিত করে, শেষে, আজকে, আপনাদের সামনে এই আমি। আমি আপনাদের আজকের মোনযোগের তারিফ করি, কারণ তা প্রমাণ করে যে আপনারা আসলেই গ্রাহ্য করেন, আপনারা কান পেতে শুনেন। কিন্তু এই রঙ্গিন ছবিতে একটা সমস্যা আছে যে বাচ্চারা বড়দের থেকে অনেক বেশি ভলো হয়ে উঠছে। শিশুরা বড় হয় এবং ঠিক আপনাদের মতনই হয়। (হাসি) কিন্তু, আসলেই পুরো আপনাদের মত, সতি‍্য? লক্ষ্যটা হচ্ছে বাচ্চাদের আপনাদের মত প্রাপ্তবয়স্ক নয়, বরং তার চেয়েও ভাল মানুষ হিসেবে বড় করা, যা হয়তবা একটু কষ্টকর হবে আপনাদের সাফল্যের কথা চিন্তা করলে, কিন্তু কোন কিছুর অগ্রগতি যেভাবে হয় তার কারণ হল নতুন প্রজন্ম এবং নতুন যুগ পূর্বের চেয়ে আরো উন্নত হয়ে গড়ে উঠে। এই কারণেই আমরা এখন আর অন্ধকার যুগে নেই। জীবনের যাত্রায় আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, শিশুদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেওয়াটা বাধ্যতামূলক যাতে আমরা বড় হয়ে আপনাদেরকে চমকে উড়িয়ে দিতে পারি। (হাসি) বড়রা এবং সহ TEDsters, আপনাদের উচিৎ শিশুদের কথা শোনা এবং তাদের কাছ থেকে শেখা এবং আমাদেরকে বিশ্বাস করা এবং আমাদের কাছ থেকে আরো বেশি আশা করা। আপনাদের আজই কান পেতে দিতে হবে, কারন আমরা আগামীর পথপ্রদর্শক, যার মানে আমরাই আপনাদের যত্ন নিতে যাচ্ছি যখন আপনারা বুড়ো এবং জরাগ্রস্ত হবেন। একটু দুষ্টামি করলাম, আরকি। কিন্তু, আসলেই, আমরাই হব পরবর্তী প্রজন্ম, যারা এই বিশ্বকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসবে। আর, যদি কোন কারণে আপনার মনে হয় যে এইসবের কোনই অর্থ নেই আপনার কাছে, মনে রাখবেন যে ক্লোনিং এখন সম্ভব, এবং তাহলে আবার আপনাকে শৈশব কাটাতে হবে, যখন আপনার ইচ্ছা করবে কেউ আপনার কথা শুনুক ঠিক আমার প্রজন্মের মতন। এখন এই বিশ্বে দরকার সুযোগ নতুন নেতৃত্বের এবং নতুন চিন্তা-ভাবনার জন‍্য। শিশুদের এখন দরকার নেতৃত্ব দেওয়ার এবং সফল হওয়ার সুযোগ। আপনারা কি এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে প্রস্তুত? কারণ এই পৃথিবীর সংকটগুলো এই মানব-পরিবারের বংশগত দায় হওয়া উচিৎ নয়। ধন্যবাদ। (হাততালি) ধন্যবাদ। ধন্যবাদ। আপনি তখন কিভাবে ব্যাখ্যা করেন, যখন কোন কিছু আশানুরূপভাবে ঘটে না? অথবা আরো ভালোভাবে বললে, আপনি তখন কিভাবে ব্যাখ্যা করেন যখন অন্যরা এমন কিছু অর্জন করে ফেলে যা সবার ধারণার বাইরে ছিল বলেই মনে হয়? উদাহরণস্বরূপঃ 'অ্যাপল' কেন এতো উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন? বছরের পর বছর, তারা আরো বেশী সৃজনশীল হয়েছে, তাদের সকল প্রতিযোগীদের চেয়ে। আর অথচ তারা কেবল একটা কম্পিউটার কোম্পানি। তারা অন্য আর সবার মতোই। তাদের আওতায় আছে একই রকম একই মেধাসম্পন্ন কর্মী, একই রকম সহায়তাকারী সংস্থা, একই পরামর্শদাতারা, একই সংবাদ মাধ্যম। তাহলে কেন এটা মনে হয় যে তাদের কাছে অন্যরকম কিছু একটা আছে? কেন মার্টিন লুথার কিং জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন? তিনি তো আর একমাত্র লোক নন যিনি নাগরিক অধিকার-পূর্ব আমেরিকাতে ভুক্তভোগী ছিলেন। এবং নিশ্চিতভাবে তিনি তখনকার একমাত্র বাগ্মী বক্তা ছিলেন না। তাহলে তিনি কেন? এবং কেন রাইট ভ্রাতৃদ্বয় সমর্থ হলো মানব উড্ডয়নের নিয়ন্ত্রিত ও যান্ত্রিক পদ্ধতি বের করতে, যখন নিশ্চিতভাবেই আরো অনেকে ছিল, যারা ছিল আরো বেশী সক্ষম, আরো বেশী পুঁজিসমৃদ্ধ-- তবু তারা যান্ত্রিক শক্তি দ্বারা মানুষ উড়ানোতে সফল হয়নি। আর এক্ষেত্রে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় জয়ী হয়। তার মানে এখানে অন্য কোন ব্যাপার আছে। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে আমি একটা জিনিস আবিষ্কার করেছিলাম। আর এই আবিষ্কারটি পৃথিবী যেভাবে চলে বলে আমার ধারণা ছিল সেটাকে আমূল বদলে দিয়েছে। এবং এমনকি আমূল বদলে গেছে যে পন্থায় আমি পৃথিবীতে কার্যসম্পাদন করি সেটাও। যেটা বুঝলাম তা হলো, নিশ্চয়ই একটা মিলবিন্যাস আছে। যেটা বুঝলাম সেটা হলো, প্রেরণার উৎস পৃথিবীর সকল বড় নেতাগণ এবং প্রতিষ্ঠানগুলো সেটা অ্যাপল, মার্টিন লুথার কিং , রাইট ভ্রাতৃদ্বয় যেই হোক না কেন, তারা সবাই ঠিক একভাবে চিন্তা করে, একই নিয়মে কাজ করে এবং একই উপায়ে যোগাযোগ করে। এবং সেটা অন্য যেকারো পন্থা থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত পন্থা। আমি শুধু এটাকে বিধিবদ্ধ করেছি, এবং এটা সম্ভবত পৃথিবীর সরলতম ধারণা। আমি এর নাম দিয়েছি স্বর্ণবৃত্ত। 'কেন? ', 'কিভাবে? ', 'কি?' এই ছোট ধারণাই ব্যাখ্যা করে, কেন কিছু প্রতিষ্ঠান এবং নেতা অনুপ্রাণিত করতে পারে আর বাকিরা পারে না। আমি শব্দগুলো খুব দ্রুত সংজ্ঞায়িত করছি। এই গ্রহের প্রত্যেক মানুষ বা প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান শতভাগ জানে যে তারা কি করছে। কেউ কেউ জানে যে সেটা 'কিভাবে' করতে হবে, এটাকে আপনি আপনার মূল্যমাণ প্রস্তাবনা বলেন বা আপনার নিজস্ব প্রক্রিয়া বা ইউএসপি যা-ই বলেন। কিন্তু খুব কম মানুষ বা প্রতিষ্ঠানই জানে যে তারা যা করছে সেটা তারা কেন করছে। এই "কেন" দ্বারা আমি শুধু লাভের কথা বলছি না এটা একটা ফলাফল, এটা সবসময়ই একটা ফলাফল। কেন দ্বারা আমি বুঝিয়েছি- আপনার লক্ষ্য কি? আপনার উদ্দেশ্য কি? কোনটি আপনার বিশ্বাস? আপনার প্রতিষ্ঠানটি কেন গড়ে উঠেছে? সকালে কেন আপনি ঘুম থেকে উঠেন? এবং মানুষজন কেন আপনাকে গুরুত্বের সাথে নিবে? ফলাফল হিসেবে, আমরা যেভাবে ভাবি, কাজ করি, যোগাযোগ করি সবই যে উল্টাভাবে বাহির থেকে ভেতরে করি তা স্পষ্ট। আমরা সবচেয়ে স্পষ্ট দিয়ে শুরু করে দুর্বোধ্যতর বিষয়ে যাই। কিন্তু আলোকিত নেতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলো-- তাদের আকার যা-ই হোক না কেন, তাদের ইন্ডাস্ট্রি যেটাই হোক না কেন- তারা সবাই চিন্তা, কাজ এবং যোগাযোগ করে ভেতর থেকে বাইরের রীতিতে। আপনাদেরকে একটি উদাহরণ দেই। আমি অ্যাপলের ডিভাইস ব্যবহার করি কারণ এগুলো বোঝা সহজ এবং সবাই এটা বুঝে। অ্যাপল যদি অন্যদের মতো হতো, তাদের যেকোন বিপণন বার্তা হতে পারতো এরকমঃ "আমরা বানাই সেরা কম্পিউটার। আকর্ষণীয় ডিজাইন বিশিষ্ট, সহজ ব্যবহার এবং ব্যবহারকারী বান্ধব। আজই কিনে ফেলুন।" "অ্যাঁ" বেশিরভাগ এভাবেই যোগাযোগ স্থাপন করে। এভাবেই বেশিরভাগ বিপণন এবং বিক্রয় সংঘটিত হয়, এভাবেই আমরা ব্যক্তিগত যোগাযোগও স্থাপন করি। আমরা বলি যে আমরা কি করবো, আমরা বলি যে কেন আমরা সবার চেয়ে ভিন্ন, আর এর থেকে আমরা এক ধরণের ফলাফল আশা করি, পণ্য বিক্রয়, ভোট বা এরকম কিছু একটা। এটা আমাদের নতুন ল ফার্ম- আমাদের আছে বড় মক্কেল বিশিষ্ট সেরা আইনজীবীগণ, আমরা মক্কেলদের সেবায় সদা নিয়োজিত। আমাদের নতুন গাড়িটি দেখুন- এটা কম তেলে অনেক দূর যায়, এর সিটগুলো চামড়া দিয়ে তৈরি। আমাদের গাড়িটি কিনুন। কিন্তু এগুলো অনাকর্ষণীয় দেখুন অ্যাপল কিভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে। "আমাদের সব কাজেই আমরা বর্তমানে বিরাজমান অবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করায় বিশ্বাসী। আমরা বৈচিত্রময় চিন্তা করায় বিশ্বাসী। আমাদের বর্তমানকে চ্যালেঞ্জের পদ্ধতি- আমাদের পণ্যগুলোকে আকর্ষণীয় ডিজাইনে বানানো, সহজ ব্যবহার এবং ব্যবহারকারী বান্ধব করা। আমরা কিভাবে যেন অসাধারণ সব কম্পিউটার বানিয়ে ফেলি। কিনতে চান একটা?" একেবারেই ভিন্ন, ঠিক না? আপনি আমার থেকে কম্পিউটার কিনতে প্রস্তুত। আমি শুধু তথ্যগুলোর ক্রম উল্টে দিয়েছি। এখান থেকে যেটা প্রমাণিত হয় সেটা হচ্ছে- আপনি কি করছেন মানুষের আগ্রহ সেখানে নয়। মানুষের আগ্রহ 'আপনি কেন কাজটি করছেন' সেটা নিয়ে। এটাই ব্যাখ্যা করে যে কেন এই রুমের প্রত্যেকটি মানুষ অ্যাপলের কাছ থেকে কম্পিউটার কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তবে এছাড়াও আমরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি অ্যাপলের এমপিথ্রি প্লেয়ার অথবা অ্যাপলের মোবাইল ফোন, অথবা অ্যাপলের ডিভিআর কেনাতেও। যেমনটা বলেছিলাম, অ্যাপল কেবল একটা কম্পিউটার কোম্পানি। কোনকিছুই তাদেরকে কাঠামোগত দিক থেকে অন্য প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা করে না। তাদের প্রতিযোগীরা এই পণ্যগুলো প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে সমানভাবে যোগ্য। আসলে তারা চেষ্টাও করেছে। কয়েক বছর আগে, গেইটওয়ে ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টেলিভিশন নিয়ে আসল। তারা ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভি বানানোয় অসম্ভব দক্ষ। তারা অনেক বছর ধরে ফ্ল্যাট-স্ক্রিন মনিটর বানাচ্ছে। কিন্তু কেউ কিনলো না। ডেল নিয়ে আসলো এমপিথ্রি প্লেয়ার এবং পিডিএ, এবং তারা অনেক মানসম্মত জিনিস বানায়, আর তারা নিখুঁত সুন্দর ডিজাইনের পণ্য তৈরি করতে পারে-- কিন্তু কেউ কিনল না। আসলে এখন বলছি কিন্তু আমরা চিন্তাও করতে পারি না যে ডেল থেকে এমপিথ্রি প্লেয়ার কিনব। কেন একটা কম্পিউটার কোম্পানি থেকে কিনবেন? কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত এটাই করছি। আপনার কাজে নয়, মানুষের আগ্রহ আপনার কাজের উদ্দেশ্যতে। যে কারো কাছে পণ্য বিক্রয় করা কখনো কারো ব্যবসার উদ্দেশ্য হয় না। উদ্দেশ্য এমন মানুষদের সাথে ব্যবসা করা যাদের এবং আমার বিশ্বাস একই সুতোয় গাঁথা। সেরা অংশটা হচ্ছে: আমি যা যা বললাম তার কোনটাই আমার অভিমত নয়। এগুলো আমাদের জীবতাত্ত্বিক মূলে প্রোথিত আছে। মনস্তত্ত্ব নয়, জীবতত্ত্ব। আপনি যদি একটা মানুষের মস্তিষ্কের প্রস্থচ্ছেদের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন উপর থেকে নিচে মস্তিষ্ক আসলে বিভক্ত থাকে তিনটি মুখ্য উপাদানে যেগুলো স্বর্ণবৃত্তের সাথে পুরোপুরিই সম্পর্কযুক্ত । আমাদের আধুনিকতম মস্তিষ্ক মানে আমাদের হোমো স্যাপিয়েন্স মস্তিষ্ক, আমাদের নিওকর্টেক্স , "কি" স্তরের সাথে সম্পর্কিত। নিওকর্টেক্সের কাজ হচ্ছে আমাদের সকল যুক্তিসংক্রান্ত ও বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাভাবনা এবং আমাদের ভাষা নিয়ে। ভিতরের দুইটি স্তর মিলে তৈরি হয় আমাদের লিম্বিক মস্তিষ্ক। আর লিম্বিক মস্তিস্ক আমাদের সকল অনুভূতি সৃষ্টির পেছনে কাজ করে, যেমন- বিশ্বাস এবং বিশ্বস্ততা। এটা আরো দায়ভার গ্রহণ করে মানুষের সকল আচরণের এবং সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের, এবং ভাষার ক্ষেত্রে এর কোন কাজ নেই। অন্যভাবে বললে, আমরা যখন বাহির থেকে ভিতর পদ্ধতিতে যোগাযোগ করি, হ্যাঁ, তখন মানুষজন অনেক বেশি পরিমাণ জটিল তথ্য বুঝতে পারে, যেমন: বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা এবং সত্যতা এবং গঠন। সে তাড়িত হয় না শুধু তার আচরণের ক্ষেত্রে। আমরা যখন ভেতর থেকে বাহির রীতিতে যোগাযোগ করি, তখন সরাসরি মস্তিষ্কের সেই অংশের সাথে কথা বলি যা আমাদের আচরণকে প্রভাবিত করে, এবং এরপর আমরা যে বিষয়গুলো বলেছি ও করেছি এর উপর মানুষকে বিচার-বিবেচনা করতে দেয়া হয়। এখান থেকেই সহজাত সিদ্ধান্তগুলো আসে। মাঝে মাঝে এমন হয়, ধরেন আপনি কারো কাছে সকল সত্য এবং চিত্র তুলে ধরলেন, আর সে বললো, "আমি সকল প্রকৃত ঘটনা এবং বর্ণনা বুঝেছি, কিন্তু কোথায় যেন একটা সমস্যা!" কেন আমরা "কোথায় যেন একটা সমস্যা" কথাটা ব্যবহার করি? কারণ আমাদের মস্তিষ্কের যেই অংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজ করে তা ভাষা নিয়ন্ত্রণ করে না। আমরা সর্বোচ্চ যেটা বলতে পারি, "আমি জানি না। কোথায় যেন একটা সমস্যা আছে।" আবার মাঝে মাঝে আপনি বলেন যে, আপনি মনে প্রাণে চেষ্টা করছেন। বলতে না চাইলেও বলতে হচ্ছে যে, শরীরের অন্য কোন অংশ আপনার চালচলন নিয়ন্ত্রণ করছে না। এটা আসলে ঘটছে এখানে, আপনার লিম্বিক মস্তিষ্কে, মস্তিষ্কের সেই অংশটিতে যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করে, ভাষা নয়। কিন্তু যদি না জানেন যে আপনি যা করছেন সেটা কেন করছেন, যেখানে মানুষ সাড়া দেয় আপনি কোন কাজ কেন করছেন সেটাতে, তাহলে কিভাবে মানুষ রাজি হবে আপনাকে ভোট দিতে, অথবা আপনার থেকে কিছু কিনতে, বা আরো জরুরী কিছু যেমন, বিশ্বস্ত হতে এবং আপনি যেই কাজ করেন সেই কাজের অংশ হতে চাইতে। তোমার যা আছে সেটা যাদের দরকার তাদের কাছে বিক্রয় করাই উদ্দেশ্য নয়। লক্ষ্য তার কাছে বিক্রয়, যার সাথে তোমার বিশ্বাস এক সুতোয় গাঁথা। যাদের চাকরি প্রয়োজন তাদেরকে নিয়োগ করাটাই আসলে উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য যাদের সাথে তোমার বিশ্বাসের মিল থাকবে তাদের নিয়োগ দেয়া। আপনারা জানেন, আমি সবসময় একটা কথা বলি যে, যদি আপনি কাজ পারে বলে কোন লোক নিয়োগ দেন তাহলে সেই লোক আপনার টাকার জন্য কাজ করবে। কিন্তু যদি আপনাদের বিশ্বাস একই হয়, তাহলে তারা আপনার জন্য তাদের সর্বোচ্চ শ্রমটা দিবে। এক্ষেত্রে রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের চেয়ে ভালো উদাহরণ আর নেই। বেশিরভাগ মানুষই স্যামুয়েল পিয়েরপন্ট ল্যাংলির ব্যাপারে জানে না। ২০ শতকের শুরুর দিকে মানব উড্ডয়নের যন্ত্র আবিষ্কার ছিল সবচেয়ে আধুনিক ও চলমান প্রযুক্তি। সবাই এটা করার চেষ্টা করছিল। আর স্যামুয়েল পিয়েরপন্ট ল্যাংলির কাছে ছিল, যাকে বলে, একেবারে সাফল্যের রেসিপি। এমনকি এখনো মানুষকে যদি প্রশ্ন করেন, "কেন আপনার পণ্য বা কেন আপনার প্রতিষ্ঠানের লোকসান হলো?" তাহলে সবাই আপনাকে ঠিক একই কথা বলবে যা এই তিনটি জিনিসের সমন্বয়: নিম্নমানের পুঁজি, অদক্ষ কর্মী এবং বাজারের মন্দা অবস্থা। সবসময় এই তিনটি কারণই দেখানো হয়, আসুন এগুলো পর্যবেক্ষণ করি। স্যামুয়েল পিয়েরপন্ট ল্যাংলিকে যুদ্ধ বিভাগ ৫০,০০০ ডলার দিয়েছিল উড়ার এই মেশিনটা তৈরির জন্য। তাই টাকা কোন সমস্যা ছিল না। হার্ভার্ডে তার একটা সদস্যপদ ছিল এবং তিনি স্মিথসোনিয়ানে কাজ করতেন আর সবার সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। তিনি তখনকার সব মেধাবী মুখগুলোকে চিনতেন। তিনি যত টাকা দিয়ে পারা যায় সেরা মেধাবীদের সাথে চুক্তি করলেন এবং বাজারের অবস্থাও ছিল চমৎকার। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস তাকে সব জায়গাতেই অনুসরণ করতো, এবং সবাই-ই ল্যাংলিকে সমর্থন দিচ্ছিল। তাহলে কেন আমরা কখনোই স্যামুয়েল পিয়েরপন্ট ল্যাংলির নামই শুনিনি? ওদিকে, কয়েকশ মাইল দূরে ওহায়ো এর ডেইটন এ, অরভিল এবং উইলবার রাইট, তাদের কাছে সাফল্যের রেসিপি বলতে আমরা যা বুঝি তার কিছুই ছিলনা। তাদের টাকার অভাব ছিল; তারা স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে অর্থ যুগিয়েছিল তাদেরই সাইকেলের দোকান থেকে। রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের দলের একজন মানুষেরও কলেজ শিক্ষা ছিল না, এমনকি অরভিল এবং উইলবারেরও না। আর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস তাদেরকে কখনোই অনুসরণ করেনি। ভিন্নতা যা ছিল সেটা হচ্ছে- অরভিল এবং উইলবার রাইট একটা কারণ বা উদ্দেশ্য বা বিশ্বাস দ্বারা তাড়িত হয়েছিল। তারা বিশ্বাস করতো যে তারা যদি এই উড়ার যন্ত্রটি আবিষ্কার করতে পারে, তবে তা পৃথিবীর কার্যধারা বদলে দিবে। স্যামুয়েল পিয়েরপন্ট ল্যাংলি ছিল ভিন্ন। সে ধনী হতে চেয়েছিল, এবং বিখ্যাত হতেও চেয়েছিল। সে ফলাফলের পিছনে ছুটেছিল। তার আকাঙ্ক্ষা ছিল ধন-সম্পত্তি। তবে এবার দেখি আসুন, দেখি শেষমেশ কি ঘটলো। যেই মানুষগুলো রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের স্বপ্নের উপর আস্থা রেখেছিল সেই মানুষগুলো নিজেদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে তাদের সাথে কাজ করেছিল; আর অন্যেরা কাজ করেছিল শুধু টাকার জন্য। রাইট ভ্রাতৃদ্বয় যেদিন যেদিন উড়ার জন্য বেরোত সে ব্যাপারে শোনা যায় যে, তাদের মোট পাঁচ সেট যন্ত্রাংশ নিতে হতো। কারণ রাতের খাবারের আগ পর্যন্ত তারা পাঁচ-পাঁচবার ভূপাতিত হতো। এবং অবশেষে ১৯০৩ সালের ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ, রাইট ভ্রাতৃদ্বয় উড়তে সক্ষম হলো। আর এটা দেখার জন্য সেখানে কেউ ছিল না। আমরা এই ঘটনাটা জনলাম ঘটনার কয়েকদিন পর। ল্যাংলি যে ভুল বিষয় দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল তার আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে: যেদিন রাইট ভ্রাতৃদ্বয় উড়তে পারলো, সেদিন সে চেষ্টাটি বাদ দিল। সে বলতে পারতো, "ভাই, তোমাদের আবিষ্কারটি অসাধারণ হয়েছে, তবে আমি আরো উচ্চতর প্রযুক্তি নির্মাণ করবো", কিন্তু সে বলেনি। সে প্রথম হয়নি, সে টাকাপয়সা পায়নি, সে বিখ্যাত হয় নি, তাই সে অব্যাহতি দিল। আপনার কাজে নয়, মানুষের আগ্রহ আপনার কাজের উদ্দেশ্যতে। যদি আপনি আপনার বিশ্বাসের কথা বলেন, তাহলে তারা আকৃষ্ট হবে যাদের বিশ্বাস ঠিক আপনার মতোই। কিন্তু একই বিশ্বাসের মানুষকে আকৃষ্ট করাটা কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ? ল অব ডিফিউশন অব ইনোভেশন নামে একটা সূত্র আছে। আপনি যদি সূত্রটি না জানেন, পরিভাষাটি অন্তত জানার কথা। আমাদের জনসংখ্যার প্রথম ২.৫% হচ্ছেন আমাদের উদ্ভাবকেরা। পরবর্তী ১৩.৫% জনগণ হচ্ছেন আমাদের প্রথম ক্রেতাগণ। এর পরের ৩৪% হচ্ছে শুরুর সংখ্যাগুরু, শেষের সংখ্যাগুরুগণ এবং পিছিয়ে পরা লোকজন। এইসব মানুষের টাচ ফোন কেনার একমাত্র কারণ হচ্ছে- তারা রোটারি ফোন আর কিনতে পায় না। (হাসি) আমরা সবাই বিভিন্ন সময়ে এই স্কেলের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করি। কিন্তু ল অব ডিফিউশন অব ইনোভেশন আমাদেরকে বলে যে, আপনি যদি সাধারণ বাজারে কোন একটি ধারণার সাফল্য বা গ্রহণযোগ্যতা আশা করেন, আপনি তা পাবেন না যতক্ষণ না আপনি পৌছাবেন এই গুরুত্বপূর্ণ বিন্দুতে যেটা ১৫ এবং ১৮ শতাংশ বাজার অনুপ্রবেশ এর মাঝামাঝি অবস্থিত, আর তখনই কাজ হয়। আমি ব্যবসা নিয়ে আলাপ ভালোবাসি, "নতুন ব্যবসায় আপনার কনভার্শন কত?" তারা আপনাকে গর্বের সাথে বলবে, "এইতো, ১০% শতাংশ" ঠিক আছে, আপনি ১০% ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে পারেন। সবারই এমন ১০% আছে "যারা জিনিসটা কিনবে"। এভাবেই আমরা তাদের বর্ণনা করি, ঠিক? এটা আসলে সহজাত একটা অনুভূতি, "আরে, ওরা তো কিনবেই"। সমস্যা হচ্ছে- যারা এটা কিনবে তাদেরকে কিভাবে চিনবো? আর যারা কিনবে না তাদেরকেই বা কিভাবে চিনবো? তাই এখানে আসলে একটা ছোট ফাঁক আছে, যেটা আপনাকে বন্ধ করতে হবে, জেফরি মুর যাকে বলেন, "ফাটল অতিক্রম করা"-- কারণ, আপনি দেখেন, শুরুর সংখ্যাগরিষ্ঠরা কোনকিছু চেষ্টা করে দেখবে না যদি না অন্য কেউ প্রথমে সেটার অভিজ্ঞতা লাভ করে। আর এই উদ্ভাবক এবং একেবারে প্রথম ক্রেতারা, এই লোকগুলো, তারা তাদের অন্তরের কথা শুনতে পছন্দ করে। তারা আরো স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সেসব সজ্ঞামূলক সিদ্ধান্ত নিতে যেগুলো চালিত হয় পৃথিবীর ব্যাপারে তাদের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে, কি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে কেবল সেটা দ্বারা নয়। এরা হচ্ছে সেই লোকজন যারা ছয় ঘন্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়েছিল প্রথম যেই আইফোন আসবে সেটি কেনার জন্য, যেখানে তারা এক সপ্তাহ পর সরাসরি কিনতে পারতো। এরা হচ্ছে তারা, যারা ৪০০০০ ডলার খরচ করেছিল, ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভি কেনার জন্য যখন সেগুলো প্রথম বের হল, যদিও তখন প্রযুক্তিটি নিম্নমানের ছিল। এবং যাই হোক, তারা তা করেনি প্রযুক্তিটি অসাধারণ ছিল ভেবে; তারা তাঁদের নিজেদের জন্যই করেছে। কারণ তারা প্রথম হতে চেয়েছিল। আপনার কাজ নয়, মানুষের আগ্রহ আপনার কাজের উদ্দেশ্যতে এবং আপনি যা করেন সেটা সহজেই প্রমাণ করে যে আপনি কি বিশ্বাস করেন। আসলে মানুষ এমন সব কাজই করবে যা তাদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে। যেই কারণে সেই লোকটা প্রথম ছয় ঘন্টার মধ্যে আইফোন কিনেছিল, ছয় ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিল, এগুলো আসলে পৃথিবীর ব্যাপারে তাদের বিশ্বাস, এবং তারা নিজেদের যেভাবে দেখাতে চেয়েছিল: যে তারাই প্রথম। আপনার কাজ নয়, মানুষের আগ্রহ আপনার কাজের উদ্দেশ্যতে। তাই একটা বিখ্যাত উদাহরণ দেই। ডিফিউশন অব ইনোভেশনের সূত্রের একটা বিখ্যাত ব্যর্থতা এবং একটা বিখ্যাত সাফল্য। প্রথমে, ব্যর্থতার কথা বলি। এটা একটা বাণিজ্যিক উদাহরণ। আমরা আগেই বলেছি, সাফল্যের রেসিপি হচ্ছে মূলধন এবং দক্ষ জনবল এবং বাজারের অনুকূল অবস্থা। তাহলে আপনি সাফল্য পাবেন। "টিভো" এর দিকে দেখেন। আট থেকে নয় বছর আগে টিভো যখন প্রথম বাজারে আসলো তখন থেকে আজকের দিন পর্যন্ত, তারা হচ্ছে বাজারের একমাত্র সর্বোচ্চ-গুণগত মানের পণ্য। সহজ হিসাব, কোন বিতর্কও নেই। তাদের প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ ছিল। বাজারের অবস্থাও ছিল অসাধারণ। এমনকি ক্রিয়াপদ হিসেবেও টিভোর চল আছে। আমি আমার ফেলনা টাইম ওয়ার্নার ডিভিআর এর উপর জিনিসপত্র টিভো করি। (হাসি) কিন্তু টিভো একটা বাণিজ্যিক ব্যর্থতা। তারা টাকা আয় করতে পারেনি। এবং যখন তারা প্রথম আইপিও বাজারে ছাড়ল, তাদের শেয়ারের মূল্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ডলার। এবং তারপর তা নেমে গেল, আর ১০ এর উপরে উঠতে পারেনি। আসলে, আমার মনে হয় না এখন এটা ছয়ের উপরে কেনাবেচা হয়, অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। কারণ দেখেন, যখন টিভো তাদের পণ্য বাজারে ছাড়লো তারা আমাদের বললো যে তাদের কি কি আছে। তারা বললো, "আমাদের একটি পণ্য আছে যাতে লাইভ টিভি থামিয়ে রাখা যায়, বিজ্ঞাপন বাদ দেয়া যায়, লাইভ টিভিতে পুনরায় দেখা যায় এবং আপনার দেখার অভ্যাস মনে রাখে আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই।" তখন নেতিবাচক চিন্তার লোকগুলো বললো, "আমরা তোমাকে বিশ্বাস করি না। আমদের এটা দরকার নেই। আমরা এটা পছন্দও করি না। আমাদের ভয় দেখাচ্ছ।" কি হতো যদি তারা এভাবে বলতো, "যদি আপনি এই ধরনের মানুষ হন যে কিনা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পছন্দ করেন তার নিজের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে, তাহলে আপনার জন্যই আমদের একটা পণ্য আছে। এটা লাইভ টিভিকে থামানো, বিজ্ঞাপন এড়ানো, আপনার দেখার অভ্যাস মনে রাখা ইত্যাদি করতে পারে। আপনার কাজ নয়, মানুষের আগ্রহ আপনার কাজের উদ্দেশ্যতে। এবং আপনি যা করেন সেটা সহজেই প্রমাণ করে যে আপনি কি বিশ্বাস করেন। এবার ডিফিউশন অব ইনোভেশন সূত্রের সফল একটি উদাহরণ দেই। ১৯৬৩ সালের গ্রীষ্মে, ২৫০,০০০ মানুষ ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মলে হাজির হয়েছিল ড. কিং এর বক্তৃতা শুনবে বলে। মানুষকে কোন দাওয়াত পৌছান হয় নি, এবং তখন তারিখ টিক দিয়ে রাখার জন্য কোন ওয়েবসাইটও ছিল না। তাহলে কিভাবে ঘটলো সেটা? আচ্ছা, আমেরিকাতে শুধুমাত্র ড. কিং ছিলেন না যিনি অসাধারণ বক্তৃতা দিতে পারেন। তিনিই একমাত্র আমেরিকান নন যিনি ভুক্তভোগী ছিলেন নাগরিক অধিকার পূর্ববর্তী আমেরিকাতে। আসলে, তার কিছু মতামত ভালোও ছিল না। তবে তার একটা গুণ ছিল। তিনি মানুষকে বলে বেড়াতেন না যে আমেরিকার কি কি পরিবর্তন দরকার। তিনি মানুষের কাছে গিয়ে তাঁর বিশ্বাসের কথা বলতেন। "আমি বিশ্বাস করি, আমি বিশ্বাস করি, আমি বিশ্বাস করি," তিনি বলতেন। আর যেসব মানুষ একই জিনিস বিশ্বাস করতো, তারা তাঁর উদ্দেশ্যটিকে নিজেদের করে নিল এবং তারা অন্য মানুষদেরকেও বললো। এবং এদের কেউ কেউ আবার গঠনপ্রণালী তৈরি করলো তথ্য বাহিরে আরো মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। এবং দেখুন কি হল, ২৫০,০০০ মানুষ উপস্থিত হল সঠিক দিনে এবং সঠিক সময়ে, তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্য। কত জন মানুষ ওনার জন্য উপস্থিত হয়েছিল? শূন্য জন। তারা সবাই এসেছিল কেবলই নিজের জন্য। আমেরিকা সম্পর্কে তারা যা বিশ্বাস করতো সেটাই তাদের শক্তি যুগিয়েছে আট ঘন্টার বাস ভ্রমণ করে ওয়াশিংটনে মধ্য আগস্টের সূর্যের নিচে দাঁড়াতে। এটা আসলে তাদের বিশ্বাস, আর এটা কালো ও সাদার ব্যাপার ছিল না। সেদিন ২৫% উপস্থিত দর্শক ছিল সাদা চামড়ার। ড. কিং বিশ্বাস করতেন যে পৃথিবীতে দুই ধরনের আইন আছে: শাসকগোষ্ঠীর সৃষ্ট আইন আর মানুষের আইন। যতদিন পর্যন্ত মানুষের আইন শাসকের তৈরি করা আইনের সাথে সংগতিপূর্ণ হবে না ততদিন বিশ্বে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। এটা সত্যি যে নাগরিক অধিকার আন্দোলনই তাকে তাঁর জীবনে একটা উদ্দেশ্য এনে দিয়েছে। আমরা তাকে অনুসরণ করেছি, তাঁর জন্য নয়, আমাদের নিজেদের জন্যই। যাই হোক, তাঁর ভাষণের নামঃ "আমার একটি স্বপ্ন আছে"। "আমার একটি পরিকল্পনা আছে" নয়। (হাসি) এখনকার রাজনীতিকদের দেখুন, তাদের ১২ দফা বিশাল পরিকল্পনা দেখুন। তাদের দ্বারা কেউ অনুপ্রাণিত হয় না। কারণ কেউ কেউ শুধুই নেতা এবং কেউ কেউ নেতৃত্ব দেন। নেতাদের হাতে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ থাকে, কিন্তু যারা নেতৃত্ব দেন তারা আমাদের অনুপ্রাণিত করেন। তারা স্বতন্ত্র মানুষ বা প্রতিষ্ঠানই হোক। আমরা অনুসরণ করি যারা নেতৃত্ব দেয় তাদেরকে, অনুসরণ করতে হবে বলে নয়, বরং আমরা অনুসরণ করতে চাই বলেই। আমরা অনুসরণ করি যারা নেতৃত্ব দেয় তাদেরকে, তাদের জন্য নয়, আমাদের নিজেদের জন্যই। আর সেইসব মানুষই এই "কেন" দিয়ে শুরু করেন যারা তাদের আশেপাশের মানুষদের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম বা যারা খুঁজে পেতে সক্ষম নিজের উদ্বুদ্ধকারীদের। অনেক অনেক ধন্যবাদ। (তালি) চার বছর আগে এখানে ছিলাম, মনে আছে, সে সময় এই বক্তৃতাগুলো অনলাইনে দেওয়া হত না; যতদূর মনে পড়ছে বাক্সে ভরে দেওয়া হত টেডস্টারদের, এক সেট ডিভিডির বাক্স, সবাই সেলফে তুলে রেখে দিত। এখনো সেখানেই আছে। (হাসি) ক্রিস আমাকে ফোন করেছিলো, আমার সেই বক্তৃতা দেওয়ার এক সপ্তাহ পর বলল, "ভাবছি বক্তৃতাগুলো আমরা অনলাইনে দেব। আপনারটাও দিই?" আমি বললাম, "নিশ্চয়ই।" আর আজ চার বছর পরে, আমার সেই বক্তৃতা নাকি দেখেছে চল্লিশ... মানে, ডাউনলোড করা হয়েছে চল্লিশ লক্ষ বার। তার মানে আমার তো মনে হয় মোটামুটি ২০ দিয়ে গুণ করলে কত জন দেখেছেন সেই সংখ্যাটা পাওয়া যেতে পারে। আর ক্রিসের বক্তব্য, চারিদিকে নাকি ভীষণ ক্ষুধা আমার ভিডিও-র। (হাসি) (হাততালি) ... আপনাদের পায় না ? (হাসি) এখন, সেই পুরো ঘটনাটাই ছিল একটা ভূমিকা যাতে আমি আপনাদের জন্য আর এক বার পেশ করতে পারি, তাহলে শুরু করি। (হাসি) আল গোর বলেছিলেন সেই TED কনফারেন্সেই যেটায় চার বছর আগে আমিও বলেছিলাম, বলেছিলেন পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে। আমি সেটা উল্লেখ করেছিলাম আমার আগের বক্তৃতার শেষে। সেই সূত্র ধরেই আমি শুরু করতে চাইছি কেননা সত্যি বলতে কি, সময় ছিল মাত্র ১৮টা মিনিট, হ্যাঁ, যা বলছিলাম ... (হাসি) দেখুন, আল গোর ঠিকই বলেছিলেন। মানে, আবহাওয়ার একটা বড়সড় বিপর্যয় সত্যিই চোখে পড়ার মত, আর আমার মনে হয় লোকে যদি এটা বিশ্বাস না করে, ওদের আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়া উচিত। (হাসি) কিন্তু আমি ভাবছি দ্বিতীয় একটা পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা, যেটা একই রকম মারাত্মক, যার উৎসগুলোও একই, আর একই রকম গুরুত্বের সাথে যা আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। আমি বলতে চাইছি -- আর এখন আপনি বলতেই পারেন, "দেখুন, আমি বেশ আছি। একটা পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে আছি; দ্বিতীয়টার আমার দরকার নেই।" কিন্তু এই বিপর্যয় প্রাকৃতিক সম্পদের নয়, যদিও আমি মনে করি সেটা আজ বাস্তব, বিপর্যয়টা মানব সম্পদের। আমি মনে করি, মূলতঃ, বেশ কিছু বক্তা গত কয়েকদিনে যেমন বলেছেন, যে, আমরা অপচয় করে চলেছি আমাদের প্রতিভার। অসংখ্য মানুষ তাদের জীবন যাপন করে চলেছে তাদের প্রতিভা সম্বন্ধে কোনো পরিষ্কার ধারণা ছাড়াই, অথবা আদৌ বলার মত কোন প্রতিভা আছে কিনা সেটা না জেনেই। বিভিন্ন ধরণের লোকের সঙ্গে আমার দেখা হয় যারা মনে করে না তারা কোন কিছু সত্যি ভাল পারে। আসলে, আমি পৃথিবীটাকে দুভাগে ভাগ করি এখন। জেরেমি বেন্থাম, উপযোগবাদের বিশাল দার্শনিক, একবার এই তর্ক জুড়ে দেন। তিনি বললেন, "জগতে দুরকমের মানুষ আছে, যারা জগতকে দু ভাগে ভাগ করে, আর যারা করে না।" (হাসি) আর হ্যাঁ, আমি করি। (হাসি) নানান ধরণের লোকের সঙ্গে আমার দেখা হয় যারা যে কাজটা করেন সেটা করে আনন্দ পান না। জীবনটাকে পার করে দেন সেই কাজে কোনক্রমে লেগে থেকে। যে কাজ করেন তা থেকে তেমন কোন আনন্দ পান না। আনন্দ পাওয়ার বদলে, বরং সহ্য করে যান। সপ্তাহটা শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্তু আমি এরকমও লোকের দেখা পাই যাঁরা যা করেন ভালবেসে করেন অন্য কিছু করার কথা ভাবতে পারেন না। যদি ওঁদের বলেন, "এই কাজ আর করবেন না," ওঁরা আপনার কথাই বুঝতে পারবে না। কারণ তাদের কাজ তাদের পেশা নয়, সেটা তাদের পরিচয়ও। ওঁরা বলবেন, "কিন্তু এইটাই তো আমি। এই কাজ ছেড়ে দেওয়াটা বোকামো হবে,কারণ এই কাজটা আমার মনের সবচেয়ে কাছাকাছি।" অবশ্য অধিকাংশ লোকের ক্ষেত্রে এটা সত্যি নয়। আসলে, উল্টোটাই মনে হয় ঠিক। জোর দিয়েই বলা যায় খুব কম লোকের ক্ষেত্রেই এটা সত্যি। আর আমি মনে করি অনেকগুলো সম্ভাব্য ব্যাখ্যা আছে এটার। আর তার মধ্যে প্রধান হল শিক্ষা, কারণ শিক্ষা, একভাবে বলা যায়, দূরে ঠেলে দেয় অসংখ্য মানুষকে তাদের সহজাত প্রতিভা থেকে। আর মানব সম্পদগুলো প্রাকৃতিক সম্পদের মতই; অনেক সময়ই নীচে চাপা পড়ে থাকে। খুঁজে বের করতে হয়। ঠিক সামনেই ছড়ানো থাকে না। এমন সব পরিস্থিতি তৈরী করতে হয় যাতে তারা নিজেদেরকে প্রকাশ করে। এখন আপনারা ভাবতে পারেন শিক্ষাই তো সে কাজটা করে। কিন্তু প্রায়ই শিক্ষা সেটা করে না। পৃথিবী জুড়ে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার হচ্ছে এই মুহূর্তে। কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়। সংস্কার এখন আর কোন কাজের নয়, কেননা সেটা হল একটা অকেজো কাঠামোকে জোড়াতালি দেওয়া মাত্র। যা আমাদের প্রয়োজন -- এবং যে শব্দগুলো বার বার উচ্চারিত হয়েছে গত কয়েকদিনে -- সেটা বিবর্তন নয়, বরং বিপ্লব, শিক্ষাক্ষেত্রে। এই ব্যবস্থাকে বদলে দিতে হবে অন্য কিছুতে। (হাততালি) অনেক বাস্তব চ্যালেঞ্জের একটা হল মৌলিক উদ্ভাবন শিক্ষাক্ষেত্রে। উদ্ভাবন কঠিন কাজ কারণ, এর মানে এমন কিছু করা যা মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খুব সহজ মনে করে না। এর মানে যাকে আমরা স্বতঃসিদ্ধ বলে মেনে নিই তাকে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়া, যে সব জিনিস আমরা মনে করি স্পষ্টই প্রতীয়মান তাকে চ্যালেঞ্জ করা। একটা বিশাল সমস্যা সংস্কারের বা বদলে দেবার ক্ষেত্রে হ'লো কমন সেন্সের জুলুম -- সেই সব ব্যাপার যা মানুষ মনে করে, "এটা অন্য কোনভাবে করা যাবে না, কারণ এটা এভাবেই করা হয়"। আব্রাহাম লিঙ্কনের দারুণ এক উক্তি কয়েকদিন আগে পেয়ে গেলাম, এই মুহূর্তে ওঁকে কোট করলে আমার মনে হয় আপনারা খুশিই হবেন। (হাসি) ডিসেম্বর ১৮৬২-তে উনি এ কথা বলেন কংগ্রেসের দ্বিতীয় বার্ষিক সভায়। আমার বলা উচিত যে, সে সময় যে কী হচ্ছিল, সে সম্বন্ধে আমার কোন ধারণা নেই। ব্রিটেনে আমরা আমেরিকার ইতিহাস পড়াই না। (হাসি) বরং চেপে রাখি। জানেন আপনারা, এটাই আমাদের পলিসি। (হাসি) কোন সন্দেহ নেই যে দারুণ কিছু একটা হচ্ছিল ১৮৬২-র ডিসেম্বরে, আমাদের মধ্যে আমেরিকান যাঁরা জানেন সে কথা। লিঙ্কন বলেছিলেনঃ "যে সব মতবাদ শান্ত অতীতের জন্য প্রযোজ্য, তা অস্থির বর্তমানের জন্য যথেষ্ট নয়। সময়টা সমস্যায় পাহাড়ে ভরে উঠেছে, আর আমাদের সেই সময়ের সাথে সাথে উঠে দাঁড়াতে হবে।" আমার দারুণ লেগেছে। সময়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো নয়, সময়ের সাথে দাঁড়ানো । "যেহেতু আমাদের ক্ষেত্রটা নতুন, তাই আমাদের চিন্তা করতে হবে নতুনভাবে আর কাজ করতে হবে নতুনভাবে। আমাদের নিজেদের শৃঙ্খলমুক্ত করতে হবে আর তখনই আমরা দেশকে রক্ষা করতে পারব।" আমার ভাল লেগেছে "শৃঙ্খলমুক্ত" শব্দটা জানেন এর কি মানে? নানান ধ্যান-ধারনার কাছে আমরা দাসখত লিখে দিয়েছি, সেগুলো আমরা প্রশ্নাতীত বলে মেনে নিয়েছি যেন সেগুলোই প্রকৃতির বিধান, যেমনটি ঘটে থাকে। আর আমাদের বহু ধ্যান-ধারণাই তৈরি হয়েছে, এই শতাব্দীর পরিস্থিতিকে মোকাবেলার জন্য নয়, বরং বিগত শতকগুলির পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু আমাদের মন এখনো সেই সব ধ্যান ধারণায় সম্মোহিত। আর সেই ধ্যান ধারণার বেশ কিছু থেকে আমাদের নিজেদের শৃঙ্খলমুক্ত করতে হবে। এখন, এটা তো করার চেয়ে, বলা সোজা । এটা জানা খুব কঠিন, কী কী জিনিস আপনি ধরে নিয়ে বসে আছেন। কারণ আপনি তো সেগুলো ধরে নিয়েই বসে আছেন। তাহলে এমন কিছু আপনাদের জিজ্ঞেস করি যা আপনারা হয়তো ধরে নিয়ে বসে আছেন। এখানে আপনাদের মধ্যে কতজনের বয়স ২৫-এর ওপরে? এটা কিন্তু আপনাদের ধরে নেওয়া বলে আমি মনে করছি না। আমি নিশ্চিত এটা আপনারা ভাল করেই জানেন। ২৫-এর নীচে এখানে কেউ আছেন কি? বেশ। এখন, যাঁরা ২৫-এর ওপরে আপনারা কি আপনাদের হাতটা একটু ওপরে তুলবেন যদি হাতঘড়ি পরে থাকেন? বেশ অনেকেই তো আমাদের মধ্যে, তাই না? একঘর টিনএজারদের একই জিনিস জিজ্ঞেস করুন টিন এজাররা হাত ঘড়ি পরে না। আমি বলছি না যে ওরা পরতে পারে না, বা ওদের অনুমতি দেয়া হয় না, ওরা পরতে পছন্দই করে না। আর কারণটা হল, আপনি জানবেন, আমরা বড় হয়েছি প্রাক-ডিজিটাল সংস্কৃতিতে, আমাদের মধ্যে যারা ২৫-এর ওপরে তাঁরা। তাই আমাদের, যদি কটা বাজল জানতে চাওয়া হয়, কিছু পরতে হয় হাতে, সময় বলবার জন্য। ছোটরা এখন বাস করে এমন একটা পৃথিবীতে যেটা ডিজিটাইজড, আর সময়টা, ওদের কাছে, চারিদিকে। হাতে ঘড়ি পরার ওরা কোন কারণই খুঁজে পায় না। আর হ্যাঁ, অবশ্যই আপনাদেরও হাতে ঘড়ি পরার কোন প্রয়োজন নেই; সব সময় পরে এসেছেন, এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন এই যা। আমার মেয়ে কখনো ঘড়ি পরে না, আমার মেয়ে কেট, বয়স ২০। ও তো কোন কারণই খুঁজে পায় না। ওর ভাষায় "ঘড়ি তো মাত্র একটাই কাজ করতে পারে।“ (হাসি) "ভাবখানা যেন, ঘড়ি এতটাই ফালতু জিনিস !" আর আমি বলে উঠি, "না, না, ঘড়িতে তারিখও দেখা যায়।" (হাসি) "এটাও একাধিক কাজ করে।" কিন্তু দেখুন, শিক্ষাক্ষেত্রেও অনেক কিছুতে আমরা শৃঙ্খলিত। আপনাদের কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাক। সেগুলোর মধ্যে একটা হল সরলরৈখিক এক ধারণা, এখানে শুরু হল, আপনি এক ট্র্যাক ধরে এগোলেন, যদি আপনি সব ঠিকঠাক করেন, আপনি সক্ষম হবেন বাকি জীবনটা গুছিয়ে নিতে। যারা TED-এ বক্তব্য রেখেছেন প্রত্যেকে আভাসে আমাদের জানিয়েছেন, বা কখনও সরাসরি, অন্য কোনো গল্পে, যে, জীবন সরলরৈখিক নয়, জীবন জৈবিক, বহুমাত্রিক। আমরা আমাদের জীবনটাকে গড়ে তুলি পারস্পরিক নির্ভরতার মধ্য দিয়ে একই সাথে আমরা আমাদের প্রতিভা খুঁজে নেই সেই সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেগুলো আমাদের গড়তে সাহায্য করে। কিন্তু জানেন, আমাদের মাথায় ঢুকে বসে আছে এই সরলরৈখিক সূত্রটা। আর শিক্ষার শীর্ষশিখর সম্ভবতঃ কলেজে ঢোকা। আমার মনে হয় সবার মাথার মধ্যে ঢুকে গেছে যে কলেজে পড়তেই হবে, যে কোনো ধরণের কলেজে। আমি বলছি না যে কলেজে যাওয়া উচিত নয়, কিন্তু সবার প্রয়োজন নেই যাওয়ার, আর সকলের এখনই যাওয়ার প্রয়োজন নেই। হয়তো পরে যাবে, এক্ষুনি নয়। কিছুদিন আগে আমি সান ফ্রান্সিস্কোয় গিয়েছিলাম বইয়ে অটোগ্রাফ দিতে। এক ভদ্রলোক একটা বই কিনছে, বয়স ৩০-এর ঘরে। আমি বললাম, "কী কর?" ও বলল, "আমি দমকল বাহিনীতে কাজ করি।" আমি বললাম, "কত দিন ধরে তুমি দমকল বাহিনীতে কাজ কর?" ও বলল, "সব সময়, আমি সব সময় দমকল বাহিনীতে কাজ করি।" আর আমি বললাম, "তা, কবে ঠিক করলে?" “ছোটবেলাতেই", সে বলল, "আসলে, আমার ক্ষেত্রে সমস্যাটা স্কুল থেকেই, কারণ স্কুলে, সবাই দমকল বাহিনীতে কাজ করতে চাইত।" "আর আমি সত্যিই দমকল বাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলাম।" আরো বলল "যখন উঁচু ক্লাসে উঠলাম, আমার শিক্ষকরা ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিল না। একজন শিক্ষক যিনি ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেননি, তিনি বললেন আমি জীবনটাকে নষ্ঠ করছি, যদি আমি সত্যিই দমকল বাহিনীতে যোগ দিতে চাই, বলেছিলেন আমার কলেজ-এ যাওয়া উচিত, পেশাদার হওয়া উচিত, বলেছিলেন আমার মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা, আর আমি আমার প্রতিভা নষ্ট করছি।" সে বলে গেলো, "খুবই অপমানকর, কারণ উনি গোটা ক্লাসের সামনে কথাগুলো বলেছিলেন,আমার ভীষণই খারাপ লেগেছিল। কিন্তু আমি এটাই চেয়েছিলাম, আর যেই স্কুল ছাড়লাম, দমকল বাহিনীতে আবেদন করলাম আর সুযোগও পেয়ে গেলাম।" ও বলে গেল, "জানেন, কিছুক্ষণ আগেই সেই মানুষটির কথা ভাবছিলাম, কয়েক মিনিট আগে যখন আপনি বক্তব্য রাখছিলেন, ওই সেই শিক্ষকের কথা," ও বলল, " কারণ ছয় মাস আগে আমি ওঁকে প্রাণে বাঁচিয়েছি।" (হাসি) সে বলল, "চূর্ণ-বিচূর্ণ এক গাড়ির মধ্যে ছিলেন উনি, আমি তাকে টেনে বের করে আনি, সিপিআর দিই, আর ওঁনার স্ত্রীকেও বাঁচাই।" ও তারপর বলল, "মনে হয় আমার সম্পর্কে আগের থেকে এখন ওঁর ধারণা ভাল হয়েছে।" (হাসি) (হাততালি) জানেন, আমি মনে করি, জনসমাজ নির্ভর করে নানান ধরণের প্রতিভার ওপর, কোন এক মাত্র দক্ষতার ওপর নয়। আর আমাদের সমস্ত চ্যালেঞ্জের কেন্দ্রে -- (হাততালি) সমস্ত চ্যালেঞ্জের কেন্দ্রে রয়েছে মানুষের দক্ষতা সম্বন্ধে আমাদের ধারণাকে নতুন করে রূপ দেওয়া এবং মানুষের বুদ্ধি সম্বন্ধে। সরলরৈখিক ব্যাপারটা একটা সংকট। যখন আমি এল.এ তে এলাম প্রায় ন বছর আগে, একটা নীতির বর্ণনা দেখেছিলাম, উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই ভাল ছিল, যেটায় বলা ছিল,"কলেজের শুরু কিন্ডারগার্টেনে।" না, কখনই না। (হাসি) একেবারেই নয়। সময় থাকলে, এ বিষয়ে বিস্তারিত যেতে পারতাম, কিন্তু নেই। (হাসি) কিন্ডারগার্টেনের শুরু কিন্ডারগার্টেনে। (হাসি) আমার এক বন্ধু একবার বলেছিল, "জানো, তিন বছর বয়সের শিশু ছ বছরের শিশুর অর্ধেক নয়।" (হাসি) (হাততালি) ওরা তিন বছরেরই। কিন্তু একটু আগেই আমরা যে শুনলাম, কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়ার‌ যা প্রতিযোগিতা আজকাল, ঠিক কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়ার‌, শিশুরা তো এখন তিন বছর বয়সেই ইন্টারভিউয়ের সামনে। বাচ্চারা বসে আছে একদল ভাবলেশহীন বিশেষজ্ঞের সামনে, ওদের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে, (হাসি) পাতা ওল্টাচ্ছেন আর বলছেন, "ব্যাস্ এইটুকুই?" (হাসি) (হাততালি) "৩৬ মাস কাটিয়ে দিলে, আর এটুকুই?" (হাসি) "কিছুই তো করে উঠতে পারো নি, বল। প্রথম ছ মাস তো মায়ের দুধ খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছ, যা দেখতে পাচ্ছি।" (হাসি) দেখছেন, কেমন ভয়ংকর ব্যাপার, কিন্তু এগুলোই মানুষকে আকর্ষণ করে। আরেকটা বড় ব্যাপার হচ্ছে ছাঁচে গড়ে তোলা। আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে গড়ে তুলেছি ফাস্ট ফুডের মডেলে। এই সম্পর্কে জেমি অলিভার বলছিলেন সেদিন। আপনারা জানেন তো যে কেটারিং-এ গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য দু-রকমের মডেল আছে। একটা হল ফাস্ট ফুড, যেখানে সব কিছু একটাই নির্দিষ্ট মানের। আর এক ধরণ হল জ্যাগাট আর মিশেলিন রেঁস্তোরার মত, যেখানে সবকিছু একটাই নির্দিষ্ট মানের নয়, বিশেষ অবস্থায় বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। আর আমরা ফাস্ট ফুড মডেলের শিক্ষা ব্যবস্থার কাছে নিজেদেরকে বিক্রি করে দিয়েছি। আর সেটা আমাদের মনোবল, আমাদের শক্তিকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে যেভাবে ফাস্ট ফুড নিঃশেষিত করছে আমাদের দেহকে। (হাততালি) আমার মনে হয় আমাদের কয়েকটা জিনিস এই প্রসঙ্গে বুঝে নিতে হবে। এক হল মানুষের প্রতিভা ভীষণ রকমের বৈচিত্র্যে ভরা। মানুষের প্রবণতাগুলোও নানান ধরণের। খুব সম্প্রতি আমি টের পেয়েছি যে ছোটবেলায় আমাকে একটা গীটার দেওয়া হয়েছিল মোটামুটি একই সময়ে যখন এরিক ক্ল্যাপটন ওর প্রথম গীটারটা পায় আপনারা জানেন, এরিকের জন্যে গীটারটা কাজে দিয়েছিলো, ব্যাস এটুকুই শুধু বলছি। (হাসি) অন্য দিকে, আমার জন্যে দেয়নি। আমি ওটাকে দিয়ে কাজ করাতে পারিনি যত ঘন ঘন, বা যত জোরেই ওটা বাজাবার চেষ্টা করি না কেন। ওটা কাজ করতই না। কিন্তু ব্যাপারটা শুধু এটুকুই নয়। ব্যাপারটা উদ্দীপনার। অনেক সময়ই লোকে যে জিনিস খুব ভাল পারে সেগুলোকে পাত্তাই দেয় না। ব্যাপারটা আন্তরিক উদ্দীপনার, কোন্‌ জিনিসটা আমাদের আত্মিক শক্তিকে জাগায়। আর যেটা আপনি করছেন সেটাই যদি আপনি করতে ভালবাসেন, ভাল পারেন, সময়ের গতিই পুরো বদলে যায়। আমার স্ত্রী এর মধ্যেই একটা উপন্যাস লেখা শেষ করে ফেললেন, আমার মনে হয় দারুণ একখানা বই, কিন্তু টানা বহুক্ষণ ধরে ওঁকে দেখতে পাওয়া যেত না। আপনি জানেন, যদি আপনি যেটা আপনি ভালবাসেন সেটাই করেন , এক ঘন্টাকে পাঁচ মিনিট বলে বোধ হয়। যদি আপনি যা করছেন তা আপনার মনের সুরে না বাজে, পাঁচ মিনিটকে মনে হয় এক ঘন্টা। বহু মানুষ যে পড়াশোনা ছেড়ে চলে যাচ্ছে তার কারণ হল সেই শিক্ষা ওঁদের মনের রসদ জোগাতে পারছে না, সেই শিক্ষা ওঁদের শক্তি, ওঁদের আগ্রহের যথেষ্ট খোরাক নয়। সুতরাং আমি মনে করি আমাদের উপমাগুলো পাল্টাতে হবে। আমাদের সরে আসতে হব কারখানার মডেলে তৈরি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে, পণ্য উৎপাদনকারী কারখানার মডেল থেকে, যা নির্ভর করে আছে সরল রৈখিক পদ্ধতির ওপর ছাঁচে গড়ে তোলা আর মানুষদের দলে দলে ভাগ করার ওপর আমাদের যেতে হবে এমন একটা মডেলে যেটা অনেকটা কৃষিকাজের নীতির মত করে তৈরী। আমাদের বুঝে নেওয়া দরকার মানুষের বৃদ্ধি একটা যান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়, এটা একটা জৈবিক প্রক্রিয়া। আর মানুষের উন্নতির পরিণতির ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না; আপনি শুধু, একজন কৃষকের মত অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারেন যার মাধ্যমে মানুষ বেড়ে উঠতে পারে। তাই যখন আমরা শিক্ষার সংস্কার করতে চাই বা পরিবর্তন করতে চাই, সেটা কিন্তু একটা ব্যবস্থার ক্লোন তৈরি করার মত নয়। তা অনেক ব্যবস্থাই আছে, কেআইপিপি-র মত, এটা বেশ ভাল ব্যবস্থা। অনেক দারুণ দারুণ মডেল আছে। ব্যাপারটা হল অবস্থার প্রেক্ষিতে এটাকে ছাত্রের জন্য তৈরি করে নেওয়া, এবং শিক্ষাকে ব্যক্তিগত করা সেই ব্যক্তির উপযোগী করে, আসলে যাকে আপনি শেখাচ্ছেন। আর সেটা করাটাই, আমি মনে করি আগামীদিনের চাবিকাঠি কারণ ব্যাপারটা তো আর একটা নতুন পন্থাকে দাঁড়ি-পাল্লায় মাপজোখ করা নয়; ব্যাপারটা শিক্ষাক্ষেত্রে একটা আলোড়ন সৃষ্টি করার যেখানে মানুষ নিজেই নিজের পন্থা আবিষ্কার করে নেবে, অবশ্যই সঙ্গে থাকবে বাইরের সাহায্য যার ভিত্তি হবে একটা ব্যক্তিগত পাঠক্রম। এখন, এই ঘরে, অনেকে আছেন যাঁরা প্রতিনিধিত্ব করছেন অনন্য সাধারণ সব সম্পদের -- ব্যবসায়, মাল্টিমিডিয়ায়, ইন্টারনেটে। এসব প্রযুক্তি শিক্ষকদের অসাধারণ প্রতিভার সঙ্গে মিলিয়ে শিক্ষায় বিপ্লব ঘটানোর সুযোগ এনে দিচ্ছে। আমি অনুরোধ করব আপনাদের এতে সামিল হতে কারণ এটা গুরুত্বপূর্ণ, শুধু আমাদের জন্য নয়, বরং আমাদের শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু আমাদের পণ্য তৈরীর কারখানার মডেল পাল্টে চাষাবাদের মডেলে আসতে হবে, যেখানে প্রত্যেকটা স্কুল সাফল্য পেতে পারে। যেখানে শিশুরা জীবনকে প্রত্যক্ষ করতে পারে। কিংবা বাড়িতে, যদি তারা বাড়িতেই পড়াশোনা করতে মনস্থ করে পরিবারের সঙ্গে বা বন্ধুদের সঙ্গে। স্বপ্ন নিয়ে বেশ কিছু কথা হয়েছে গত কয়েকদিনে। আর আমি চাইছি খুব কম সময়ে -- কাল রাত্রে নাতালি মারচাণ্ট-এর গানে আমি ভীষন আপ্লুত পুরোন দিনের কবিতা ফিরিয়ে দেওয়া গান। আমি আপনাদের খুব কম সময়ে একটা ছোট কবিতা পড়ে শোনাতে চাইছি ডাব্লু, বি, ইয়েটসের, যাঁকে হয়তো আপনারা জানেন। ওঁর প্রেমিকাকে লেখা, মড গন, কবি দুঃখ করছেন যে প্রেমিকা ওঁর কাছ থেকে, যা চেয়েছিলেন বলে ওঁর মনে হয়, তিনি তা দিতে পারেন নি তাই বলছেন, "আমার কাছে আছে অন্য কিছু, যা নাও হতে পারে তোমার মনের মত।" ইয়েটস বলছেনঃ থাকত যদি বসনখানি অমরাবতী আঁকা, সোনার জলে আঁকা আর রূপোলী আলোয়, নীলাভ আর আবছা আর ঘনবর্ণ বসন রাত্রির আর আলোর আর আলো-আঁধারির, বিছিয়ে দিতেম বসনখানি তোমার চরণতলে; কিন্তু আমি নিঃস্ব বলে, কেবল আছে স্বপ্ন মোর; বিছিয়ে দিলেম তোমার চরণ তলে; সাবধানে চরণ ফেলো কারণ তুমি চরণ ফেলছ আমার স্বপ্নে।" প্রতিদিন, আনাচে কানাচে আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের স্বপ্ন ছড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের পায়ের তলে। আমাদের পা ফেলতে হবে সাবধানে। ধন্যবাদ। (হাততালি) অনেক ধন্যবাদ। বাড়ি উৎপন্ন করব কেন? কারন আমরা তা করতে পারি। এই মুহূর্তে, আমেরিকা এক ক্রমিক বেদনার মধে‍্য আছে। এবং তার জন‍্য একটা কারন আছে, হুমম। আমাদের আছে McPeople, McCars, McHouses. একজন স্থপতি হিসেবে, আমাকে এরকম একটা কিছুর মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তো এমন কী প্রযুক্তি আছে যা আমাদেরকে বিশালা আকৃতির বাড়ি তৈরি করতে সাহায‍্য করবে? যাইহোক, প্রায় ২৫০০ বছর হতে এটি চলে আসছে । এটাকে বলে গাছকে একত্রে জোড় দেওয়া, অথবা গাছের কলম করা, অথবা একাধিক বস্তুকে জোড় দিয়ে একত্রিত করে একক দৈহীক, সংবহনতন্ত্রের অংশে পরিণত করা। এবং আমরা ভিন্ন কিছু করছি এর আগে যা করেছিলাম তার থেকে। আমরা তাতে বুদ্ধিমত্তার নির্জাস মিশিয়ে দিই। কাঠামো তৈরির জন‍্য আমরা CNC লেদ ব‍্যাবহার করি এক্ষেত্রে উপ-প্রাসঙ্গিক বস্তু, গাছকে প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট চেহারা দেয়ার জন‍্য যা একটি বাড়িতে পরিণত হয় যাকে আমরা বলি ফ‍্যাব ট্রি হ‍্যাব। এটি প্রকৃতির সাথে মানিয়ে যায়। এটি নিজেই আসলে প্রকৃতি। ঠিক, বাড়িটাই আসলে ল‍্যান্ডস্কেপ। এবং আপনি কোটি কোটি এমন বাড়ি বানাতে পারেন। এবং এটা উত্তম, কারন এরা কার্বন শুষে নেয়। এরা নিখঁুত। আপনি এর মধে ১০ কোটি পরিবারকে রাখতে পারেন, অথবা উপশহরগুলোকে সরিয়ে আনতে পারেন, কারন এগুলো হচ্ছে এমন বাড়ি যা নিজেই প্রকৃতির অংশ। গ্রামের পূর্ব-উৎপাদনের কথা কল্পনা করুন -- এতে প্রায় ৭ থেকে ১০ বছর লাগে -- এবং এখানে সবকিছুই পরিবেশ বান্ধব। যাইহোক আমরা শুধু এই সব্জি বাড়িই বানাচ্ছি না, আমরা গবেষণারে-উৎপন্ন-মাংস দিয়েও ঘর গড়ছি, অথবা বলতে পারেন যেটার উপর আমরা এখনো গবেষনা করছি ব্রুকলীন এ, যেখানে, একটি স্থাপত‍্য অফিস হিসেবে, প্রথম বারের মত, একটি আনবিক কোষ জীববিজ্ঞান গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে এবং জৈবিক পূণর্বিকাশ মূলক ঔষধ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে আর টিস‍্যু ইঞ্জিনিয়ারিং এবং চিন্তা শুরু করুন ভবিষ‍্যৎ কী হবে যদি স্থাপত‍্য আর জীববিজ্ঞান এক হয়ে ওঠে। তো আমরা গত কয়েক বছর ধরে এগুলোই করছি, আর এই হচ্ছে আমাদের গবেষণাগার। আর আমরা যা করি তা হচ্ছে 'উৎপাদন' শুকর থেকে অতিকৌষীক ম‍্যট্রিক্স এর উৎপাদন। আমরা একটা রূপান্তরিত ইংকজেট প্রিন্টার ব‍্যবহার করি। এবং আমরা জ‍্যামিতিক নকশা প্রিন্ট করি। আমারা জ‍্যামিতিক নকশা প্রিন্ট করি যেখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সামগ্রি বানানোর ব‍্যপার থাকে যেমন, আপনি জানেন, জুতা, চামড়ার বেল্ট, হাতব‍্যাগ, ইত‍্যাদি, যেখানে অনুভূতিশীল কোন প্রাণীর ক্ষতি করা হয়না। এতে কোন প্রণী হত‍্যা করা হয়না, এই মংস আসে টেস্টটিউব থেকে। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে এক্ষেত্রে বাড়ি উৎপাদনের জন‍্যও এমনটা করা উচিৎ। তো এই হচ্ছে একটি নমুনা খাড়া দেয়াল, একটি স্থাপতিক নির্মাণ। এবং এটি হচ্ছে একটি ছেদচিত্র আমাদের মংস-বাড়ির প্রস্তাবনার, যেখানে আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমরা ইনসুলেশন হিসেবে ফ‍্যাটি কোষ ব‍্যবহার করি বাতাসের চাপ রোধের জন‍্য সিলিয়া আর দরজা জানালার জন‍্য স্ফিংকটার পেশী ব‍্যবহার করা হচ্ছে। (হাসি) এবং আমরা জানি এটা ভীষণ কুৎসিত। এটা ইংলিশ টিউডর অথবা স্প‍্যানিশ কলোনিয়াল হতে পারত, কিন্তু আমরা মোটামুটি এই চেহারাটা িনয়েছি। এবং এটি মোটামুটি তৈরি হয়েছে, অন্তত একটি নির্দষ্ট অংশ হয়েছে। প্রগে আমাদের একটি বড় শো হয়েছিল। এবং আমরা এটাকে ক‍্যাথিড্রালের সামনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যেন ধর্মকে এই মাংসের বাড়ির মুখোমুখি করা যায়। সেই জন‍্যই আমরা ঘরবাড়ি 'উৎপন্ন' করছি। অনেক ধন‍্যবাদ। (করতালি) আমার এখনও স্কুলের ঐদিনটার কথা মনে পড়ে যেদিন আমাদের শিক্ষক বলেছিলেন যে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৩ বিলিয়নে পরিণত হয়েছে, এবং সেটা ছিল ১৯৬০ সাল। আমি এখন পৃথিবীর জনসংখ্যা তখন থেকে কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে কিভাবে পরিবর্তিত হবে তা নিয়ে কথা বলব, কিন্তু আমি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করব না, যেমনটা আমি আমার ১ম ৫টা TEDTalks এ করেছি। বরং, আমি এগিয়ে গিয়েছি, এবং আমি আজকে চালু করছি, একটি সম্পূর্ণ নতুন অ্যানালগ শিক্ষাদানের প্রযুক্তি যা আমি IKEA এর কাছ থেকে শিখেছি: এই বাক্সটি, এই বাক্সটি ১ বিলিয়ন মানুষ ধারণ করে। এবং আমাদের শিক্ষক আমাদের বলেছিলেন ১৯৬০ সালে শিল্পোন্নত পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ১ বিলিয়ন। তিনি বলেছিলেন উন্নয়নশীল পৃথিবীতে জনসংখ্যা ছিল ২ বিলিয়ন। এবং এরা পরস্পর থেকে দূরে থাকতো একটা অনেক বড় ফাঁক ছিল শিল্পোন্নত পৃথিবীর ১ বিলিয়ন এবং উন্নয়নশীল পৃথিবীর ২ বিলিয়নের মাঝে। শিল্পোন্নত পৃথিবীতে, মানুষ ছিল স্বাস্থ্যবান, শিক্ষিত, ধনী এবং তাদের পরিবার ছিল ছোট। এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি গাড়ি কেনা। এবং ১৯৬০ সালে প্রত্যেক সুইডিস সঞ্চয় করছিল এরকম একটি ভলভো গাড়ি কেনার জন্য। সুইডেনের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল এরকম। কিন্তু এর বিপরীতে, অনেক দূরের উন্নয়নশীল পৃথিবীতে, একটি সাধারণ পরিবারের আকাঙ্ক্ষা ছিল ঐদিনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা। তারা সঞ্চয় করতো যাতে তারা একজোড়া জুতা কিনতে পারে। যখন আমি বেড়ে উঠেছিলাম তখনকার পৃথিবীতে এক বিশাল দূরত্ব ছিল। এবং পশ্চিমা বিশ্ব ও অন্যদের মাঝের এই দূরত্ব পৃথিবী সম্পর্কে এক ধরণের মানসিকতা সৃষ্টি করেছে যা আমরা এখনও আভিধানিক অর্থে ব্যবহার করি যখন আমরা “পশ্চিমা বিশ্ব” এবং “উয়ন্ননশীল পৃথিবী” নিয়ে কথা বলি। কিন্তু পৃথিবী বদলেছে এবং এই মানসিকতা ও শ্রেণিবিন্যাসের উন্নয়ন এবং তা উপলব্ধি করাটা জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে। এবং সেটাই আমি দেখাতে চাচ্ছি, কারণ ১৯৬০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে যা হয়েছে তা হল বিস্ময়করভাবে ৪ বিলিয়ন মানুষ পৃথিবীর জনসংখ্যাতে যোগ হয়েছে। শুধুমাত্র দেখুন কত বেশি। পৃথিবীর জনসংখ্যা যখন আমি স্কুলে যেতাম তখন থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। এবং অবশ্যই, পশ্চিমা বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, অনেকগুলো কোম্পানি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে, তাই পশ্চিমা বিশ্ব চলে এসেছে এখানে। এখন শুধুমাত্র একটি গাড়ি থাকাই তাদের আকাঙ্ক্ষা নয়। এখন তারা অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটি কাটাতে চায় এবং তারা উড়োজাহাজে চড়তে চায়। সুতরাং এই হচ্ছে তাদের এখনকার অবস্থা। এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সফলরাও স্থানান্তরিত হয়েছে এবং আমরা তাদের অর্থনৈতিকভাবে উদীয়মান বলে থাকি। তারা এখন গাড়ি কিনছে। এবং একমাস আগে যা ঘটেছে তা হল চাইনিজ কোম্পানী গিলি ভলভো কোম্পানীকে কিনে নিয়েছে এবং তখন পরিশেষে সুইডিসরা বুঝল যে পৃথিবীতে অনেক বড় কিছু একটা ঘটে গিয়েছে। (হাসি) সুতরাং তারা এখন এখানে। এবং দুঃখজনক ঘটনা হল এখানে যে ২ বিলিয়ন আছে যারা খাদ্য এবং জুতার জন্য সংগ্রাম করছে, তারা এখনও ঠিক ততটাই দরিদ্র যতটা তারা ৫০ বছর আগে ছিল। নতুন যেটা ঘটেছে তা হল এখানে আমাদের রয়েছে সবচেয়ে বেশি বিলিয়নের স্তুপ, এখানকার ৩ বিলিয়ন, যারাও অর্থনৈতিকভাবে উদীয়মান দেশ কারণ তারা স্বাস্থ্যবান, তুলনামূলকভাবে সুশিক্ষিত এবং তাদেরও নারীপ্রতি দুইটি বা তিনটি সন্তান রয়েছে, যেমনটি রয়েছে ধনী দেশগুলোর। এবং তাদের বর্তমান আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে স্বভাবতই একটি সাইকেল কেনা এবং পরবর্তীতে একটি মোটরসাইকেল কেনা। কিন্তু এই হচ্ছে আমাদের বর্তমান পৃথিবী, যেখানে কোন দূরত্ব নেই। কিন্তু সবচেয়ে দরিদ্রদের থেকে সবচেয়ে ধনীদের ধনীদের দূরত্ব এখন যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু পৃথিবী এখন ধারাবাহিক, হাটা, সাইকেল চালানো, গাড়ি চালানো এবং আকাশে ওড়া, মানুষ রয়েছে সর্বস্তরে, এবং তাদের অধিকাংশই মাঝের কোন একটা অংশে অব্স্থান করছে এই হল আমাদের বর্তমান বিশ্ব ২০১০ সালে। এবং ভবিষ্যতে কি ঘটতে যাচ্ছে? আমি অনুমান করছি ২০৫০ সালের কথা। আমি সাম্প্রতিক সময়ে সাংহাই গিয়েছিলাম, এবং আমি শুনেছি চীনে কী ঘটছে, এবং আমি প্রায় পুরোপুরি নিশ্চিত যে তারা তাল মিলিয়ে চলবে যেমনটি জাপান করেছে। সব ধরণের পূর্বানুমান বলছে যে এই ১ বিলিয়ন শুধুমাত্র ১ থেকে ২ বা ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এটি (দ্বিতীয়টি) বৃদ্ধি পাবে ৭-৮ শতাংশ এবং তারা এখানে এসে থামবে। এরা তখন প্লেনে চড়বে। এবং এরা নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্য আয়ের দেশগুলো যারা উদীয়মান অর্থনীতির দেশ, তারাও অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে যাবে এবং শুধুমাত্র, কিন্তু যদি শুধুমাত্র, আমরা সঠিক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির পিছনে বিনিয়োগ করি-- যাতে আমরা ভয়ানক জলবায়ু পরিবর্তন এড়াতে পারি এবং তুলনামূলক কমদামে শক্তি পেতে পারি- তাহলে তারা একেবারে এখানে চলে আসবে। এবং তারা তখন ইলেকট্রিক গাড়ি কেনা ‍শুরু করবে। আমরা এরকমই কিছু একটা দেখতে পাবো। তাহলে একদম দরিদ্র ২ বিলিয়নের কী হবে? এখানে থাকা একেবারে দরিদ্র ২ বিলিয়নের কী হবে? তাদের কী উন্নতি ঘটবে? এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি চলে আসে কারণ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে এখনই আমরা প্রতি নারীতে ২ বা ৩ টি সন্তান দেখতে পাই, পরিবার পরিকল্পনা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি শেষ হতে চলেছে। এখানে(দরিদ্রদের মাঝে), জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং এই (দরিদ্রতম) ২ বিলিয়ন, আগামী কিছু দশকে, ৩ বিলিয়নে বৃদ্ধি পাবে, এবং তারপর তারা ৪ বিলিয়নে বৃদ্ধি পাবে। এমন কিছুই নেই-- একটি নিউক্লিয়ার যুদ্ধ যেমনটি আমরা কোনদিন দেখিনি ছাড়া- যা এটি ঘটাকে বন্ধ করতে পারে। কারণ ইতিমধ্যেই এটা (বৃদ্ধি) শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু যদি এবং শুধুমাত্র যদি, (দরিদ্রতমরা) দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পায়, শিক্ষা পায়, নবজাতক মৃত্যুর হার কমে, একটি বাইসাইকেল এবং একটি মোবাইল ফোন কিনতে পারে এবং এখানে আসতে পারে, তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ২০৫০ সালে বন্ধ হয়ে যাবে। এই পর্যায়ে কোন মানুষ থাকতে পারবে না যারা খাদ্য এবং জুতার জন্য সংগ্রাম করে কারণ তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি চলতেই থাকবে। এবং কেন সেটা আমি দেখাচ্ছি একটু অতীতে যেয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এখানে পর্দায় রয়েছে আমার জনসংখ্যা বাবলগুলো। প্রত্যেকটি বাবল এক একটি দেশ। তাদের আকার তাদের জনসংখ্যা। এক একটি রঙ এক একটি মহাদেশ বুঝাচ্ছে। হলুদ রঙের যারা, তারা আমেরিকা গাঢ় নীল আফ্রিকা; বাদামী হল ইউরোপ; সবুজ হল মধ্যপ্রাচ্য এবং হালকা নীল হল দক্ষিণ এশিয়া। এটা ভারত এবং এটা চীন। আকার হল জনসংখ্যা। এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি নারীপ্রতি সন্তান সংখ্যা: ২ জন, ৪ জন, ৬ জন, ৮ জন-- বড় পরিবার, ছোট পরিবার। ১৯৬০ সাল। এবং এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি কত শতাংশ শিশু জন্মের পর স্কুল শুরু করা পর্যন্ত বেঁচে থাকে: ৬০ শতাংশ, ৭০ শতাংশ, ৮০ শতাংশ, ৯০, এবং প্রায় ১০০ শতাংশ, যেমনটি আমরা দেখে থাকি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী এবং স্বাস্থ্যকর দেশগুলোতে। কিন্তু দেখুন, এটি হল সেই পৃথিবী, ১৯৬০ সালে যেটি নিয়ে আমার শিক্ষক কথা বলতেন: এখানে পশ্চিমা বিশ্বের ১ বিলিয়ন-- শিশু বেঁচে থাকার উচ্চহার, ছোট পরিবার-- এবং বাকিরা, উন্নয়নশীল দেশগুলোর রংধনু, যেখানে পরিবার বড় এবং শিশু বেঁচে থাকার হার কম। কি ঘটেছে? আমি পৃথিবীকে চালু করে দিচ্ছি। এই আমরা চললাম। দেখতে পাচ্ছেন, যত বছর কেটে যাচ্ছে, শিশু বেঁচে থাকার হার বাড়ছে? তারা সাবান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রতিষেধক, পেনিসিলিন পাচ্ছে এবং তারপর পরিবার পরিকল্পনা। পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে। যখন তাদের শিশু বেঁচে থাকার হার ৯০ শতাংশে পৌছাচ্ছে তখন পরিবার ছোট হচ্ছে, এবং মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ আরব দেশগুলোই সেখানে চলে গিয়েছে (ছোট পরিবারগুলোতে) দেখুন, বাংলাদেশ ভারতের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। পুরো উদীয়মান পৃথিবী পাশ্চাত্য বিশ্বের সাথে যোগ দিয়েছে ভালো শিশু বেঁচে থাকার হার এবং ছোট পরিবার নিয়ে, কিন্তু আমাদের এখনো দরিদ্রতম ১ বিলিয়ন রয়েছে। আপনারা কি দেখতে পাচ্ছে দরিদ্রতম ১ বিলিয়ন, আমার এই (দুটি) বাক্স যেগুলো এখানে রয়েছে? তারা এখনো এখানে রয়েছে। এবং তাদের এখনো শিশু বেঁচে থাকার হার মাত্র ৭০ থেকে ৮০ ভাগ, যার অর্থ যদি আপনার ৬টি সন্তান জন্ম নেয়, তবে কমপক্ষে চারজন বেঁচে থাকবে পরবর্তী প্রজন্মে। এবং জনসংখ্যা এক প্রজন্মে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সুতরাং একমাত্র পথ যা জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে রোধ করতে পারে তা হল শিশু বেঁচে থাকার হার যদি আমরা উন্নত করতে পারি ৯০ শতাংশে। সেই কারণে গেটস্ ফাউন্ডেশন, ইউনিসেফ এবং সাহায্যকারী সংস্থাগুলো যে বিনিয়োগ করছে, দরিদ্রতম দেশগুলোর সরকারের সাথে সেগুলো খুবই ভালো; কারণ সেগুলো আমাদের সত্যিকার অর্থে সাহায্য করছে একটি স্থিতিশীল জনসংখ্যায় পৌছানোর জন্য। আমরা ৯ বিলিয়নেই থামতে পারি যদি আমরা সঠিক কাজগুলো করি। শিশু বেঁচে থাকাই নতুন সবুজ। শিশু বেঁচে থাকাই শুধুমাত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করবে। এবং এটা কি ঘটবে? আসলে, আমি আশাবাদী মানুষ নই, নিরাশাবাদী মানুষও নই। আমি একজন খুবই সম্ভাবনায় বিশ্বাসী মানুষ। এটি একটি নতুন শ্রেণি যেখানে আমরা আবেগকে সরিয়ে রাখি এবং বিশ্লেষণাত্মকভাবে পৃথিবীকে নিয়ে কাজ করি। এটি করা সম্ভব। আমরা আরও অনেকটা শুধুমাত্র পৃথিবী পেতে পারি। সবুজ প্রযুক্তির সাহায্যে এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে দারিদ্রতা দূর করে, এবং বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণের দ্বারা পৃথিবীটা এরকম হতে পারে। এবং দেখুন পুরাতন পশ্চিম এখন কোথায়। স্মরণ করুন যখন এই নীল বাক্সটি একা ছিল, এগিয়ে ছিল সারা পৃথিবীতে, নিজেই নিজের জীবন উপভোগ করছিল। এটি আর (কখনোই) হবে না পুরাতন পশ্চিমের ভূমিকা হবে আধুনিক বিশ্বের ভিত্তি হিসেবে কাজ করা-- এর বেশিও না, কমও না। কিন্তু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ভালোভাবে এটি করুন এবং অভ্যস্ত হন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। (তালি) ১০ বছর আগে, আমি গ্লোবাল ডেভলপমেন্ট শেখানোর কাজ নিয়েছিলাম সুইডিশ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টদের জন্য,সেটা ছিল প্রায় ২০ বছর আফ্রিকার ইনস্টিটিউশনের সঙ্গে যারা আফ্রিকায় হাঙ্গার নিয়ে স্টাডি করছে, একসঙ্গে সময় কাটানোর পরে তাই আমি পৃথিবীর সম্পর্কে জানবার জন্য কিছুটা আশা করেছিলাম এবং আমি আমাদের মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে ,কারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটে,শুরু করেছিলাম একটি আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স নাম গ্রোবাল হেল্থ ৷ কিন্তু যখন আপনি সেই সুযোগটি পান, আপনি কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়েন ৷ আমি ভেবেছিলাম , এই সব ছাত্ররা আমাদের কাছে আসছে প্রকৃতপক্ষে আপনি যতটা হাইযেস্ট গ্রেড পেতে পারেন সুইডিশ কলেজ সিস্টেমে- তাই তারা হয়তো সব কিছু জানতে পারে আমি তাদের কি শেখাতে যাচ্ছি ৷ তাই তারা যখন এসেছিল আমি একটা প্রি-টেস্ট নিয়েছিলাম ৷ এবং সেগুলোর মধ্যে একটা প্রশ্ন যার থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি সেটা হল : "এই পাঁচটি জুড়ির মধ্যে কোন দেশের শিশুদের সবথেকে বেশী মৃত্যু হয় ?" এবং আমি তাদের একসঙ্গে রাখি, যাতে দেশের প্রত্যেকটি জুড়িতে, একের অপরের থেকে দ্বিগুণ পরিমাণে শিশুদের মৃত্যু হয় ৷ এবং এর মানে এই হয় যে তথ্যের অনিশ্চয়তার থেকে এটি অনেক বেশী বড় পার্থক্য আমি আপনাকে এখানে পরীক্ষায় ফেলব না, কিন্তু এটি হল তুর্কী, যেখানে এটি সবথেকে বেশী, পোল্যান্ড, রাশিয়া, পাকিস্তান এবং সাউথ আফ্রিকা এবং এইগুলি ছিল সুইডিশ ছাত্রদের রেজাল্ট ৷ আমি এটা করেছিলাম তাই আমি পেয়েছিলাম গোপন বিরাম, যেটি খুবই সংকীর্ণ, এবং আমি আনন্দিত হয়েছিলাম, অতি অবশ্যই : পাঁচটির মধ্যে একটি ১.৮ সঠিক উত্তর সম্ভব ৷ তার মানে এই যে ইন্টারন্যাশলান হেল্থ-এর একজন প্রফেসরের জন্য একটা জায়গা ছিল-- (হাসি) এবং আমার কোর্সের জন্য ৷ কিন্তু একদিন বেশী রাতে, যখন আমি রিপোর্ট তৈরী করছিলাম আমি সত্যিই আমার আবিষ্কার উপলব্ধি করেছিলাম ৷ আমি দেখিয়েছি সুইডিশ টপ স্টুডেন্টরা পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে তাত্পর্যপূর্ণভাবে শিম্পাঞ্জিদের থেকে পৃথিবীর সম্বন্ধে কম জানে (হাসি) কারণ শিম্পাঞ্জি আধা সঠিক স্কোর করবে যদি আমি তাদের শ্রী লঙ্কা এবং তুর্কীর সঙ্গে দুটো কলা দি ৷ ওরা অর্ধেক কেসে সঠিক হবে ৷ কিন্তু ছাত্ররা সেখান নেই৷ আমার কাছে না জানাটা সমস্যা ছিল না এটি ছিল পূর্বকল্পিত ধারণা৷ আমি করোলিন্সকা ইনস্টিটিউটের প্রফেসারদের একটি অনৈতিক স্টাডিও করেছি৷ (হাসি) যারা মেডিসিন-এ নোবেল প্রাইজ দেয় এবং তারা সেথানকার শিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে সমতুল্য ৷ (হাসি) এটা সেই জায়গা যেখানে আমি অনুভব করেছি যে প্রকৃতই যোগাযোগের প্রযোজন আছে, কারণ পৃথিবীতে কি ঘটছে তার তথ্য এবং প্রত্যেক দেশের শিশুদের স্বাস্থ্যর বিষয়ে অতি সচেতন ৷ আমরা এই সফ্টওয়্যারটি করেছি যেটি এইভাবে ডিসপ্লে করে- এখানে প্রত্যেকটি বাবল্ একটি দেশ এখান এই দেশটি হল চীন৷ এই হল ভারত৷ এই বাবলের সাইজ হল জনসংখ্যা, এবং এই অ্যাক্সিসে এখানে আমি ফার্টিলিটি রেট যোগ করছি কারণ আমার ছাত্ররা, তারা কি বলেছে যখন তারা পৃথিবীর দিকে তাকিয়েছে, এবং আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, "তোমরা পৃথিবীর সম্বন্ধে কি প্রকৃতপক্ষে কি ভাবো ?" ওয়েল,প্রধানতঃ আমি প্রথম আবিষ্কার করেছিলাম যে পাঠ্য বইটা ছিল টিনটিন (হাসি) এবং তারা বলেছে," এই পৃথিবী এখনও ' উই ' এবং ' দেম' এবং উই হল পাশ্চাত্য জগত এবং দেম হল তৃতীয় বিশ্ব " আমি বলেছিলাম " এবং পাশ্চাত্য জগত বোলতে আপনি কি বোঝাতে চাইছেন ?" " ওয়েল, সেটা হল দীর্ঘ জীবন এবং ছোট পরিবার, এবং তৃতীয় বিশ্ব হল ছোট জীবন এবং বড় পরিবার " তাই এটাই আমি এখানে ডিসপ্লে করতে পারি ৷ আমি এখানে ফার্টিলিটি রেট দিয়েছি৷ মহিলা প্রতি এক, দুই, তিন, চার থেকে ৮ টি শিশু পর্যন্ত সমস্ত দেশের পরিবারের সাইজের ওপর----১৯৬২ থেকে -১৯৬০ পর্যন্ত আমাদের খুব ভাল তথ্য আছে এজ়ায়গায় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। এখানে আমি কিছু দেশের ৩০ থেকে ৭০ বছর সময়ের মধ্যে দেখেছি জন্মমুহুর্তে বেঁচে থাকার হার। এটা ১৯৬২ সালের কিছু শিল্পসমৃদ্ধ দেশ। এইসব দেশে ছিল ছোট ছোট পরিবার আর লম্বা জীবন। আর এইগুলি ছিল উন্নতশীল দেশঃ এইসব দেশে ছিল বড় বড় পরিবার আর সেই অনুপাতে ছোট ছোট জীবন। এখন দেখা যাক ১৯৬২ থেকে কি ঘটেছে? আমরা পরিবর্তন টা দেখতে চাই। ছাত্র রাই কি ঠিক?এখনও কি এটা দুরকমের দেশ? অথবা এই উন্নতশীল দেশগুলিতে কি ছোট ছোট পরিবার বাস করছে? অথবা এগুলিতে কি লম্বা জীবন লাভ করা মানুষ ই বাস করছে? দেখা যাক। আমরা তখন পৃথিবীর ছবি দেখান বন্ধ করে দিয়েছিলাম।এটা ইউ এন এর পরিসংখ্যান যা দেখান হচ্ছে।আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন? এদিকটা চীনদেশ,এরা সুস্বাস্থ্যের বিরুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছে,উন্নতি করছে। সমস্ত সবুজ লাতিন আমেরিকার দেশগুলি স্বপক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের এই হলুদ অংশগুলি সব আরবজাতির দেশ, এদের পরিবার সব বড়,কিন্তু এদের কাছে লম্বা জীবন ,কিন্তু বড় পরিবার নয়। নীচের এই সবুজ টা হল আফ্রিকার মানুষ। এরা এখনও এখানে রয়েছে। এটা ভারতবর্ষ। ইন্দোনেসিয়া খুব তাড়াতাড়ি এগোচ্ছে। {হাসি} এটা আশির দশক,বাংলাদেশ তখন ও আফ্রিকান দেশগুলির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এখন,বাংলাদেশ এ আশির দশকে এক্তটা মির‌্যাকেল ঘটে গেছেঃ ইমামরা পরিবার পরিকল্পনায় উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছে। তারা ওই অবধি এগিয়ে যেতে পেরেছে। ৯০ এর দশকে এইচ আই ভি মহামারীর আকার ধারন করাতে আফ্রিকার দেশগুলির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেল আর অন্যরা সবাই লম্বা জীবন আর ছোট পরিবারের পক্ষে অগ্রসর হল আর আমরা সম্পূর্ন নতুন পৃথিবী পেলাম। {হাততালি} এখন আমি ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা আর ভিয়েতনামের সরাসরি তুলিনা করব। সাল ১৯৬৪ঃ আমেরিকায় ছোট পরিবার আর লম্বা জীবন; ভিয়েতনামের বড় বড় পরিবার আর ছোট ছোট জিবন।এর ফলে কি হল যুদ্ধকালীন সময়ে যে তথ্য তাতে দেখা গেল প্রায় সকলের মৃত্যু হলেও বেঁচে থাকার সম্ভাবনায় একটা উন্নতি দেখা গেল। বছরের শেষে ভিয়েতনামে পরিবার পরিকল্পনা শুরু হল ও তারা ছোট পরিবার গঠনে আগ্রহী হল। আর ওপরের এই ইউনাইটেড স্টেটস পরিবার কে ছোট রেখে লম্বা জীবনে আগ্রহী হল।আর এখন আশির দশকে এরা সাম্যবাদী পরিকল্পনা ছেড়ে বাজার অর্থনীতির দিকে ঝূঁকেছে, আর এটা সামাজিক জিবনের থেকেও দ্রুততর বেগে চলেছে। আর আজ ২০০৩ সালের ভিয়েতনামে সেই ১৯৭৪ সালের ইউনাইটেড স্টেটস এর যুদ্ধশেষে যে পরিবারের আয়তন ও জীবন প্রত্যাশা ছিল,একই রকম আছে। আমার মনে হয় আমরা যদি তথ্যগুলো না দেখি তাহলে এশিয়ার যে সাংঘাতিক পরিবর্তন তার অবমূল্যায়ন করব, আর এটা অর্থনৈতিক পরিবর্তনের আগে এক্তটা সামাজিক পরিবর্তন। এবারে আমরা অন্য প্রসঙ্গে যাব যেখানে আমরা রোজগারের জগতে বন্টন দেখাতে পারব। এটা মানুষের রোজগারের একটা বিশ্ববন্টন। দিনপ্রতি এক ডলার,দশ ডলার অথবা একশো ডলার। এখানে ধনী দরিদ্রের কোন পার্থক্য নেই। এটা একটা অলীক কল্পনা। এখানে এক্তটা ঢিপি মত আছে। কিন্তু এখানে লোক আছে। এবং আমরা যদি রোজগার শেষ হওয়ার জায়গাটা দেখি তাহলে দেখব যে- এটা হল ১০০ শতাংশ পৃথিবীর এক বছরের রোজ়গার। ২০ শতাংশ ধণীশ্রেষ্ঠ্ররা ৭৪ শতাংশ র মত নিয়ে নিচ্ছে,আর ২০ শতাংশ গরিব রা প্রায় দু শতাংশ র মত নিতে পারছে। এর থেকে বোঝা যায় যে উন্নতশীল দেশগুলির ধারনা খুব ই সন্দেহজনক।আমরা সাহায্যর কথা চিন্তা করি,যেমন এখানে লোকেরা ওদিকের লোকেদের সাহায্য দিচ্ছে। কিন্তু মাঝখানে, পৃথিবীর জনসংখ্যার বেশিরভাগ টাই রয়েছে,এবং এখন তারা ২৪ শতাংশের মত রোজগার পাচ্ছে। আমরা এটা অন্যভাবে শুনেছিলাম। এবং এরা কারা? আলাদা দেশগুলি কোথায়? আমি আপনাদের আফ্রিকা দেখাচ্ছি। এটা আফ্রিকা। বিশ্বের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ,বেশিরভাগটাই দারিদ্রের কবলে। এটা OECD.একটী ধনী দেশ। U N এর কান্ট্রি ক্লাব। আর এরা এইখানে ওপর দিকে রয়েছে। আফ্রিকা আর OECD মাঝখানে ঝুঁকে রয়েছে। এটা হল লাতিন আমেরিকা। লাতিন আমেরিকায় ধনী থেকে দরিদ্র সবকিছু রয়েছে, এই পৃথিবীতে এদের কিছু অভাব নেই। এর ঠিক ওপরে আমরা পূর্ব ইউরোপ,পূর্ব এশিয়া আর দক্ষিণ এশিয়া কে রাখতে পারি। ১৯৭০ সালে এটাকে কেমন দেখতে লাগত? তখন এখান্টা আরো উঁচু ছিল। আর এখানে যারা চরম দারিদ্রের মধ্যে বাস করত তারা ছিল এশিয়ান। বিশ্বে তখন এশিয়ার দারিদ্র্য টাই এক্তা সমস্যা ছিল। এবং আমি যদি এখন বিশ্বকে সাম্নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে আপনারা দেখতে পাবেন যে,যখন জনসংখ্যা বর্ধিত হচ্ছে তখন কোটি কোটি এশিয়ান দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসছে আর কিছু সংখ্যক দারিদ্র্যের মধ্যে প্রবেশ করছে। এই ধরন টাই এখন চলছে। বিশ্বব্যাঙ্কের সর্বশ্রেষ্ঠ আলোকপাত হল যে এটাই ঘটবে আমরা একটা অবিভক্ত বিশ্বের অধিকারী হব। সবথেকে বেসি লোক আমরা মাঝখানে পাব। নিশ্চয় এটা লগ অয়্যরিথমিক এর মাপ, কিন্তু আমাদের অর্থনীতির ধারনা টা শতাংশ বৃদ্ধির সাথে গড়ে ওঠে। এটার মধ্যে আমরা শতাংশ হারে বৃদ্ধির সম্ভাবনা কেই দেখতে পাচ্ছি,যদি আমি এটাকে পরিবর্তন করে পরিবারের রোজগার না নিয়ে মাথাপ্রতি রোজগার নি,আর গ্রস গৃহস্থালী সামগ্রীর একক তথ্যগুলিকে আঞ্চলিক তথ্যে পরিনত করি, আর আমি যদি নিচের এই অঞ্চল্ টা কে নি তাহলে বুদবুদ যে আকার সেটাই জনসংখ্যা। আর আপনারা ওখানে OECD এবং আফ্রিকার নিম্ন সাহারা অঞ্চল পাবেন, আমি আপনাদের এবার আরব দেশে নিয়ে যাব, যা আফ্রিকা এবং এশিয়া দু জায়গা থেকে এসেছে,আমরা এদের আলাদা আলাদা রাখব, আমরা এটার কক্ষপথ কে বাড়াতে পারি, আর আমি এটাকে শিশু অস্তিত্বরক্ষার মত একটা সামাজিক মূল্যবোধ যুক্ত করে এর একটা নতুন মাত্রা আনতে পারি। এখন ওয়ি কক্ষপথের জন্য আমার কাছে টাকা আছে,আর আমার কাছে শিশুদের অস্তিত্ব রক্ষার সম্ভাবনা আছে। কিছু কিছু দেশে ৯৯.৭ শতাংশ শিশুরা পাঁচ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে; অন্যরা সুধু ৭০। এবং এখানে দেখা যাচ্ছে OECD,লাতিন আমেরিকা,পূর্ব ইউরোপ,পূর্ব এশিয়া আরব দেশ,দক্ষিণ এশিয়া আর আফ্রিকার নিম্ন-সাহারা অঞ্চল এর মধ্যে এক্তটা ফাঁক রয়েছে শিশু অস্তিত্ব রক্ষা আর টাকার মধ্যে রৈখিকতা অত্যন্ত প্রখর। আমি এখন আফ্রিকার নিম্ন-সাহারা অঞ্চলটা ভাগ করব। এখানে স্বাস্থ্য আছে এবং সুস্বাস্থ্য আছে ওপরে এবার আমি এখানে যাচ্ছি আর আফ্রিকার নিম্ন-সাহারা অঞ্ছলকে দেশ অনুযায়ী ভাগ করছি। এবং যখন এটা বিস্ফোরিত হবে দেশের বুদবুদ এর আয়তন টা জনসংখ্যার আয়তনের মত হবে। এর নিচে সিয়েরা লিওন। ওপরে মরিশাস। মরিশাস হচ্ছে প্রথম দেশ যারা বাণিজ্যের বেড়া টপকে তাদের দেশের চিনি বিক্রি করতে পেরেছিল। তারা ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকার মত তাদের বোনা কাপড় সমানুপাতে বিক্রি করতে পেরেছিল। আফ্রিকার মধ্যে বিরাট একটা পার্থক্য রয়েছে। এখানে ঘানা ঠিক মাঝখানে রয়েছে। সিয়েরা লিওন এ মানবিকতার সাহায্য। ট তুমি ছুটি কাটাতে যেতে পার।আফ্রিকার মধ্যে প্রচন্ড বৈচিত্র্য রয়েছে যেটা আমরা খুব কম দেখতে পাই। আমি এখন দক্ষিণ এশিয়াকে ভাগ করতে পারি। ভারত মাঝখানে অবস্থিত এক্তটা বড় বুদবুদ। আফগানিস্তান আর শ্রীলঙ্কার মধ্যে এক্তটা বিশাল পার্থক্য রয়েছে। আমি আরব দেশকে বিভক্ত করতে পারি। কেমন করে? একই জলবায়ু, একই সভ্যতা একই ধর্ম। বিশাল পার্থক্য। এমনকি প্রতিবেশীদের মধ্যেও। ইয়েমেন, গৃহযুদ্ধ। ইউনাইটেড আরব এমিরেটস্‌,পয়সা যা সমান ভাবে এবং সুন্দর ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। কাল্পনিক গল্প নয় এটা।এবং এর মধ্যে ওই দেশে বসবাসকারী বিদেশী শ্রমিকের সন্তানরা ও রয়েছে। আপনি যা চিন্তা করেন তার চেয়ে ডাটা অনেক ভাল। অনেকে বলে ডাটা ভাল নয়। সেখানে এক্তটা অনিশ্চিত সীমারেখা রয়েছে। কিন্তু আমরা পার্থক্যটা দেখতে পাইঃ কাম্বোডিয়া,সিঞ্জাপুর। তথ্যের দুর্বলতার থেকেও পার্থক্যটা অনেক বড়। পূর্ব ইউরোপঃ সোভিয়েত অর্থনীতি অনেকদিন পর সম্পূর্ন নতুনভাবে সেজে উঠেছে। এটা হল লাতিন আমারিকা। আজকে আমাদের কিউবায় গিয়ে লাতিন আমেরিকার সুস্থ রাষ্ট্র খুঁজতে হয় না। আজ থেকে কিছু বছর পর চিলি র শিশুমৃত্যুর হার কিউবার থেকে অনেক কম হাবে। আর এখানে OECD র উচ্চ রোজগার সম্পন্ন দেশগুলি আমরা দেখতে পারছি। আমরা এখানে বিশ্বের পুরো নকশা টা দেখতে পাচ্ছি, যেটা কমবেশি এর মতই। আর যদি আমরা ১৯৬০ সালে পৃথিবী কেমন ছিল তা দেখতে যাই তাহলে এটা চলতে শুরু করবে। ইনি মাও সে-তুং। ইনি চীনদেশের স্বাস্থ্য ফিরিয়েছিলেন। তারপর উনি মারা যান। এরপর দেং জিয়াওপিং এসে চিনদেশের অর্থনীতি কে চাঙ্গা করেছিলেন,চীন কে তিনি আবার মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনেছিলেন। এবং আমরা দেখছি দেশগুলি বিভিন্ন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই দেশের উদাহরন পাওয়া খুব শক্ত যে দেশ পৃথিবীর নকশাটা তুলে ধরবে। আমি এখানে এখন আপনাদের ১৯৬০ সালে নিয়ে যাব। এটা দক্ষিণ কোরিয়া,এর সাথে আমি ঐখানের ব্রাজিল তুলনা করব। লেবেলটা আর এখানে পাওয়া যাচ্ছে না।এইখানে উগান্ডা আছে,আমি এর সাথে এখন তুলনা করব, এটাকে আমি সামনের দিকে এইভাবে নিয়ে যাচ্ছি। আর আপনারা দেখতে পাচ্ছেন দক্ষিন কোরিয়া কি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে ব্রাজিলের গতি অনেক শ্লথ। আমি যদি আপনাদের আবার পিছনে নিয়ে যাই,এইখানে,আর আমরা যদি কিছু চিহ্ন এদের ওপর রাখি।এইভাবে, আপনারা আবার দেখতে পাবেন যে উন্নতির যে গতি সেটা ভীষন আলাদা রকমের,আর দেশগুলি কমবেশি একই হারে টাকা আর স্বাস্থ্যের মত এগোচ্ছে,কিন্তু এটা দেখা যায় যে আপনি আরো দ্রুতগতিতে এগোতে পারেন যদি আপনি প্রথমে ধনী না হয়ে প্রথমে স্বাস্থ্যবান হন। আর সেটা দেখাবার জন্য আপনি united Arab Emirate এর দিকে এটা রাখতে পারেন। এরা এইখান্থ থেকে এসেছিল,এক্তটা খনিজের দেশ। এরা সব তেলটুকু তুলে নিয়েছিল আর অনেক টাকার মালিক হয়েছিল,কিন্তু স্বাস্থ্য সুপারমার্কেট এ কিনতে পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্যের জন্য আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে। ছেলেমেয়েদের স্কুল এ পাঠাতে হবে। আপনাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আপনাদের জনগনকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এবং শেখ সায়েদ এটা খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছিলেন তেলের দাম পড়া সত্তেও তিনি তার দেশকে এইখানে তুলে এনেছিলেন। পৃথিবীর অনেক বেশি মূলস্রোতের দিকে, ফিরে আসার ছবিটা আমরা পেলাম যেখানে সব দেশগুলি অতীতের তুলনায় বর্তমানে তাদের টাকার সুযোগ্য ব্যবহার করেছে এখন যদি দেশগুলির গড় তথ্যের দিকে আপনারা দেখেন তাহলে কমবেশি তারা এইরকম দেখাবে। এখন গড় তথ্যের ব্যবহার অত্যন্ত বিপদজনক, কারন এখানে দেশগুলির মধ্যে বহু পার্থক্য রয়েছে। যদি আমি এইখান্ টায় দেখি তাহলে আমরা দেখতে পাব যেখানে আজকের উগান্ডা আছে সেখানে ১৯৬০ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ছিল। যদি আমি উগান্ডা কে ভাগ করি, তাহলে দেখা যাবে উগান্ডার মধ্যেই বহু পার্থক্য রয়েছে।এগুলি উগান্ডার কুইন্টিলস। ২০ শতাংশ ধনী উগান্ডান রা এখানে আছে। এখানে নিচে দরিদ্রতমরা রয়েছে। যদি আমি দক্ষিণ আফ্রিকা কে ভাগ করি,এটা এইরকম হবে। যদি আমি নিচের দিকে যায় তাহলে আমি নাইজের কে দেখতে পাব,যেখানে এক্তটা ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, শেষে এটা ঠিক একরকম। ২০ শতাংশ নাইজের এর দরিদ্র সম্প্রদায় এইখানে, আর ২০ শতাংশ দক্ষিণ আফ্রিকার ধনীসম্প্রদায় এইখানে, এখনও আমরা আফ্রিকার সমস্যা সমাধানের আলোচনায় ইচ্ছুক। আফ্রিকায় পৃথিবীর সবকিছুই রয়েছে। HIV ওষূধের বিশ্বজোড়া সুগম্যতা নিয়ে আপনারা আলোচনা করতে পারেন না কারন এটা নিচের মত একি নীতিতে কুইন্টিল রয়েছে। বিশ্বের উন্নতি ভীষনভাবে প্রাসঙ্গিক হওয়া দরকার,আর এটা আঞ্চলিক স্তরে সম্পর্কিত হও্যার কোন প্রয়োজন নেই।আমাদের অনেক বেশি বিস্তৃত হওয়া উচিত। আমরা দেখি যে ছাত্ররা এটা ব্যবহার করতে পেরে খুব উত্তেজিত হয়। এমনকি যারা পলিসি তৈরী করেন ও কর্পোরেট সেক্টর এর লোকেরা পৃথিবীর এই পরিবর্তন টা দেখতে চান। কিন্তু এটা হয়না কেন? আমাদের কাছে যা ডাটা আছে কেন আমরা তা ব্যবহার করিনা? ইউনাইটেড নেসন এর ন্যাশানাল স্ট্যাটিস্টিকাল এজেন্সি, ইউনিভার্সিটি এবং অন্যান্য বেসরকারী সংস্থার কাছে আমাদের ডাটা আছে। কারন ডাটাগুলি ডাটাবেসের মধ্যে সুপ্ত আছে। জনগন আছে, ইন্টারনেট আছে, কিন্তু আমরা সেগুলিকে ঠিকমত ব্যবহার করিনা। পৃথিবীতে যে সমস্ত তথ্য পরিবর্তন হচ্ছে সেগুলি সরকারী তথ্য নয়। এই ধরনের কিছু এমন ওয়েবপেজ আছে কিন্তু ডাটাবেস থেকে তারা কিছু উপকারী তথ্য সরিয়ে নিয়েছে। আসলে লোকেদের এর জান্যে মুল্য দিতে হয়েছে। বোকা বোকা পাসওয়ার্ড এবং একঘেঁয়ে পরসংখ্যান। {হাসি} {হাততালি} কিন্তু এভাবে হবেনা। তাহলে কি দরকার? আমাদের কাছে ডাটাবেস আছে। আপ্অনারা যা চাইছেন তার মতন এটা নতুন নয়। আমাদের কাছে খুব ভাল ডিজাইন টুল আছে। এবং আরো অনেক সংযোজনা হচ্ছে। তাই আমরা একটা নন্‌প্রফিট ভেঞ্চার তৈরি করেছি যার নাম--লিঙ্কিং ডাটা টু ডিজাইন-- আমরা এটাকে গ্যাপমাইন্ডার বলি, লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে আপনাদের সতর্ক করা হয়, মাইন্ড দা গ্যাপ। তাই আমরা ভেবেছিলাম গ্যাপ মাইন্ডার উপযুক্ত। এবং আমরা সফটওয়ার লিখতে শুরু করেছিলাম যেগুলি এই ধরনের ডাটাকে লিঙ্ক করতে পারে। এবং এগুলি খুব কঠিন ছিলনা। এগুলি করতে কয়েক বছর লেগেছিল, এবং আমরা অ্যানিমেশন প্রযোজনা করেছিলাম। আপনারা একটা ডাটাসেট নিতে পারেন এবং সেখানে রাখতে পারেন। আমরা মুক্তহস্তে ইউ এন তথ্য দেওয়া শুরু করেছি। কিছু ইউ.এন.সংস্থা। কিছু দেশ তাদের ডাটাবেসকে বাইরে পাঠাবার প্রস্তাব গ্রহন করেছে, কিন্তু যেটা আমদের সত্তিকারের দরকার সেটা হল, নিশ্চয় একটা অনুসন্ধান কার্য। অনুসন্ধান কার্য হল সেই জিনিস যেখানে ডাটাকে অনুসন্ধান উপযুক্ত ছাঁচে হুবহু তুলে ধরে পৃথিবীকে দেখাতে পারি। আমরা যখন চারদিকে যাই তখন কি শুনি? আমি মুখ্য পরিসংখান ইউনিটের ওপর নৃতাত্ত্বিক গবেষণা করেছি। প্রত্যেকে বলেন "এটা অসম্ভব। এটা করা জায়না। আমাদের তথ্যগুলি বিস্তারিত ভাবে এতটাই অদ্ভুত যে এটা অন্যদের মতন অনুসন্ধান যোগ্য নয়। আমরা এই ডাটাটিকে বিনা পয়সায় ব্যবসায়ী বা ছাত্রদের হাতে তুলে দিতে পারিনা" কিন্তু এটাই আমরা দেখতে চাই তাইনা? জনগনের হিতার্থে এই তথ্যটি নিচে রয়েছে। আমরা ইন্টারনেট এর মধ্যেই নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিতে চাই। এবং এর মধ্যে একটি গুরুতর দিক হল এদের অনুসন্ধানযোগ্য করে তোলা, এবং তখনি লোকেরা বিভিন্ন ডিজাইন টুল ব্যবহার করে এর মধ্যে অ্যানিমেটার এর প্রয়োগ ঘটাবে। এবং আমার কাছে খুব ভাল একটা খবর আছে। এই সুখবরটি হল যে বর্তমান ইউ.এন পরিসংখ্যানের নতুন সর্বময় কর্তা বলেননি যে,এটা অসম্ভব। তিনি খালি বলেছেন,"আমরা পারবনা"। {হাসি} সত্যি খুব চতুর লোক, তাইনা? {হাসি} সুতরাং আগামী বছরগুলিতে ডাটার ক্ষেত্রে অনেক কিছু ঘটার সম্ভাবনা আমরা দেখতে পারছি। সম্পুর্ন নতুন রুপে আমরা রোজগার বন্টন দেখতে পাব। এটা ১৯৭০ সালের চীনের রোজগার বন্টন। এটা ১৯৭০ সালের ইউনাইটেড স্টেট এর। প্রায় কোনো ওভারল্যাপ ই নেই। আর এতে কি হয়েছে? আর এতে যেটা হয়েছে সেটা হলঃ চীন এগিয়ে চলেছে।এটা মটেই আর একরকম নেই। আর এটাই এখানে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, ইউনাইটেড স্টেটকে এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় একটা ভুতের মতন। তাইনা? {হাসি} এটা বেশ ভয়ের। কিন্তু আমার মনে হয় তথ্য পাওয়াটা খুব গুরুত্বপুর্ন। আমরা সত্যি এটা দেখতে চাই। এটা না দেখিয়ে আমি আপনাদের প্রতি ১০০০ ইন্টারনেট ইউজার দেখিয়ে শেষ করতে চাই। এই সফটওয়ারে, আমরা খুব সহজেই বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৫০০ রকম বৈচিত্র দেখাতে পারি। এটা পরিবর্তনে কিছু সময় নেবে। কিন্তু এই কক্ষপথগুলিতে আপনি আপনাদের ইচ্ছামতো যেকোনো বৈচিত্র খুব সহজেই পেতে পারেন। এবং এটা করা হয় এই ডাটাবেসগুলি ফ্রীতে খোঁজার জন্ন্যে এবং আবার সেগুলিকে বোঝার জন্যে গ্রাফিক ফর্মাটে পেতে গেলে। সংখ্যাতত্ববিদরা এগুলি পছন্দ করেনা, কারন তারা বলে যে এগুলি বাস্তব নয়; এবং আমাদের স্ট্যাটিস্টিকাল এবং অ্যানালিটিকাল পদ্ধতি থাকা দরকার। কিন্তু এটা অনুমান নির্ভর। পৃথিবী নিয়ে এখানেই আমি শেষ করছি। ওখানে ইন্টারনেটের আগমন হচ্ছে। ইন্টারনেট ইউজার এর সংখ্যা দেখুন এইভাবে বাড়ছে। এটা হল মাথাপ্রতি জিডিপি। এবং এটা দেখুন একটা নতুন প্রযুক্তি আসছে, কিন্তু তারপর আশ্চর্যজনক ভাবে এটা দেশগুলির অর্থনীতির সাথে কি সুন্দর ভাবে খাপ খাচ্ছে। তাই ১০০ ডলারের কম্পিউটার খুব গুরুত্বপুরন হবে। কিন্তু এটা একটা সুন্দর প্রবনতা। এটা যেন পৃথিবীটা সমতল হয়ে যাচ্ছে। তাইনা? এই দেশগুলি অর্থনীতির থেকেও বেশী ওপরে উঠে আসছে এবং বছরের পর বছর এরকম ভাবেই অনুসরন করবে, ঠিক সেইভাবে যেভাবে আমি আপনাদের জনগন প্রদত্ত ডাটা নিয়ে করার জন্যে দেখতে চাই। অসংখ্য ধন্যবাদ। {হাত্তালি} যে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আমি আজ আপনাদের সাথে কথা বলতে চাই তা খুব কমই পত্রিকার সামনের পৃষ্ঠায় আসে। যদিও এটা একটি বিরাট বিষয় মাত্রায় এবং গুরুত্বে। দেখুন, আপনারা সবাই ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেছেন; এটা তো TEDGlobal। কিন্তু আমি আশা করি আপনাদের কিছু জায়গায় নিয়ে যাব যেখানে আপনারা আগে কখন যাননি। তো, চলুন আমরা প্রথমে চীন থেকে শুরু করি। এই ছবিটি দুই সপ্তাহ আগে তোলা হয়েছিল। আসলে, একটি ইঙ্গিত হল যে আমার স্বামীর কাঁধের উপর ছোট ছেলেটি এইমাত্র হাইস্কুল থেকে পাশ করেছে। (হাসি) কিন্তু এটি তিয়েনআনমেন স্কয়ারে। আপনারা অনেকেই সেখানে গেছেন। এটা প্রকৃত চীন নয়। আসুন আপনাদের সত্যিকারের চীনে নিয়ে যাই। এটি দাবিয়ান পর্বতমালায় অবস্থিত মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের প্রত‍্যন্ত এলাকায়। ডাই মাঞ্জু এই গল্পের শুরুতে ১৩ বছর বয়সী মেয়ে সে তার বাবা মা দুই ভাই এবং বড়-চাচীর সঙ্গে থাকে। ওদের একটি কুঁড়েঘর আছে যেখানে কোন বিদ্যুত নেই, পানির লাইন নেই, কোন হাতঘড়ি নেই, কোন বাইসাইকেল নেই। এবং তারা এই দারুণ ঐশ্বর্য ভাগ করে একটি বিশাল শূকরের সাথে। ডাই মাঞ্জু ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ত যখন তার মা বাবা বললেন, ''আমরা তোমাকে স্কুল থেকে সরিয়ে ফেলবো কারণ ১৩-ডলার স্কুলের বেতন আমাদের জন্য খুব বেশি হয়ে যায়। তুমি তোমার বাকি জীবন ধান ক্ষেতে কাজ করবে। তোমার উপর কেন আমরা এই অর্থ অপচয় করব?" প্রত‍্যন্ত এলাকায় মেয়েদের ক্ষেত্রে এমনই ঘটে থাকে। দেখা গেল যে ডাই মাঞ্জু ছিল তার শ্রেণীর সেরা ছাত্রী। সে তবুও স্কুলে যেতে দু ঘন্টার পথ পাড়ি দিত এবং বুঝতে চেষ্টা করতো প্রতিটি ক্ষুদ্র কথা যা দরজার ফাঁক দিয়ে শোনা যেত। তার সম্পর্কে আমরা নিউ ইয়র্ক টাইমসে লিখেছিলাম। আমরা প্রচুর অনুদান পেয়েছিলাম -- বেশিরভাগই ১৩-ডলারের চেক, কারণ নিউ ইয়র্ক টাইমস এর পাঠককুল খুবই উদার ছোট পরিমাণে দানের বেপারে। (হাসি) কিন্তু তারপর, আমরা একটি টাকা ট্রান্সফার পেয়েছিলাম ১০,০০০ ডলারের। আসলেই ভালো মানুষ। স্কুলের প্রধানের কাছে আমরা সেই অর্থ হস্তান্তর করলাম। তিনি খুব খুশি হলেন। তিনি ভাবলেন, "ওহ, আমি স্কুলটির সংস্কার করতে পারব। আমি সব মেয়েদেরকে বৃত্তি দিতে পারব।" যদি তারা কঠোর পরিশ্রম করে এবং স্কুলে থাকে। সুতরাং ডাই মাঞ্জু মূলত মাধ্যমিক স্কুল শেষ করেছিল। ও' উচ্চ বিদ্যালয়ে গেল। হিসাববিদ্যা রপ্ত করতে সে কর্মমুখী স্কুলে গেল। ও' চাকরির সন্ধানে গেল দক্ষিনের গুয়াংডং প্রদেশে। ও' একটি চাকরি পেল, তারপর চাকরি খুঁজতে থাকল ওর সহপাঠীদের এবং বন্ধুদের জন্য। ও' তার পরিবারকে টাকা পাঠাত। ওরা একটি নতুন বাড়ি নির্মাণ করল, এই বাড়িতে পানির লাইন ছিল, বিদ্যুৎ ছিল, একটি সাইকেল ছিল, শূকর ছিলনা। আমরা যা দেখলাম এটি একটি প্রাকৃতিক গবেষণা। একটি বহিরাগত বিনিয়োগে যা পাওয়া দুর্লভ মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে। এবং অনেক বছর ধরে, ডাই মাঞ্জুকে অনুসরণ করে, আমরা দেখতে পেলাম যে সে একটা দুষ্ট চক্র থেকে বেরিয়ে এবং একটি সুনীতিপূর্ণ চক্রে প্রবেশ করতে পারলো। সে কেবল নিজের স্বকীয় শক্তি পরিবর্তন করল না, সে তার গৃহস্থালির পরিবর্তন করল, পরিবার পরিবর্তন করল, তার গ্রামের পরিবর্তন করল। গ্রামটি সতি‍্যকার অর্থে অনন‍্য হয়ে উঠল। নিশ্চই, সে সময় চীনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উন্নতির ছোঁয়া লেগেছিল, কিন্তু তারা একটি রাস্তা নির্মাণ করতে পেরেছিল তাদেরকে চীনের বাকি অংশের সাথে যোগ করতে। এবং এটি আমাকে নিয়ে আসে আমার "Half the Sky" এর দুই প্রধান মতবাদের প্রথমটিতে। এবং সেটা হল মূল নৈতিক চ্যালেঞ্জ এই শতাব্দীর হল লিঙ্গ বৈষম‍্য। ১৯তম শতকে ছিল দাসত্ব। ২০ শতাব্দীতে ছিল টোটালিটারিয়ান মতবাদ। আমাদের সময়ের প্রতিপাদ‍্য হচ্ছে সেই নিষ্ঠুরতা যা এত মানুষ বিশ্বজুড়ে সম্মুখীন হচ্ছে তাদের লিঙ্গের কারণে। তাই আপনারা কেউ কেউ চিন্তা করতে পারেন, ''এটা তো বাড়াবাড়ি। তিনি বাড়িয়ে বলছেন।'' তাহলে, আমার আপনাদের কাছে এই প্রশ্ন। আপনারা কতজন মনে করেন পৃথিবীতে পুরুষদের সংখ্যা বেশী নাকি নারীদের বেশী? আমি একটা ভোট নিচ্ছি। আপনারা কতজন মনে করেন পৃথিবীতে পুরুষদের সংখ্যা বেশী? একটু হাত তুলুন। অল্প কয়েকজন -- আপনারা কতজন মনে করেন পৃথিবীতে নারীদের সংখ্যা বেশী? আচ্ছা, আপনাদের বেশিরভাগই। তবে, আপনাদের এই দ্বিতীয় দলের যারা, আপনারা ভুল। এটা সত্য ইউরোপে এবং পশ্চিমে, যখন নারী ও পুরুষ খাদ্য এবং স্বাস্থ্যের সমান অধিকার পায়, নারীদের সংখ্যা বেশী। আমরা বেশীদিন বাঁচি। কিন্তু বিশ্বের বাকি বেশিরভাগ জায়গায়, এটা ঠিক নয়। আসলেও, জনসংখ‍্যাবিদেরা দেখিয়েছেন যে ৬ কোটি থেকে ১০ কোটির মত নিখোঁজ নারী আছে বর্তমান জনসংখ্যায়। এবং, আপনারা জানেন, এটি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, গত অর্ধ শতাব্দীতে, অধিক পরিমাণ নারীর বৈষম‍্য জনিত কারণে মৃত্যু ঘটেছে যা সমস্ত যু্দ্ধক্ষেত্রের সকল নিহতের সংখ‍্যার চেয়ে বেশি এই বিংশ শতাব্দীতে। কখনো এটা সনোগ্রামের কারণে হয়। মেয়েদের জন্মের আগেই গর্ভপাত করা হয় যখন সম্পদ অভাব থাকে। এখানে যেমন এই মেয়েটি, ইথিওপিয়ার একটি প্রতিপালন কেন্দ্রে রয়েছে। পুরো কেন্দ্রটি তার মত মেয়েদের দিয়ে ভরা ছিল। লক্ষণীয় বিষয় হল যে তার ভাইয়েরা, একই পরিবারে থেকে, সম্পূর্ণই ভাল ছিল। ভারতে, জীবনের প্রথম বছর, শূন্য থেকে এক বছর বয়সে, ছেলে এবং মেয়ে শিশুরা মূলত একই হারে বাঁচে কারণ তারা বুকের দুধের উপর নির্ভর করে, এবং স্তন কোন ছেলের প্রতি অগ্রাধিকার দেখায় না। এক থেকে পাঁচ বছর বয়সে, মেয়েরা ৫০ শতাংশেরও বেশী মৃত্যুরহারে মারা যায় ছেলেদের তুলনায়, সারা ভারতে। "Half the Sky" এর দ্বিতীয় মতবাদ হল যে, চলুন আমরা সব সঠিক এবং ভুলের নৈতিকতা সরিয়ে রাখি, এবং একটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তব মাত্রায়, আমরা মনে করি যে দরিদ্রতা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার একটি অন্যতম উপায় হল মেয়েদের শিক্ষিত করা এবং মহিলাদের প্রথাগত জনশক্তিতে নিয়ে আসা। দরিদ্র, উদাহরণস্বরূপ। এর তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, জনসংখ‍্যার আধিক‍্য হলো দারিদ্র্যের একটি ক্রমাগত কারণ। এবং আপনারা জানেন, যখন একটি ছেলেকে শিক্ষিত করা হয়, তার পরিবারে সাধারণত কম সন্তান জন্ম নেয়, কিন্তু খুব সামান্য। যখন একটি মেয়েকে শিক্ষিত করা হয়, সে উল্লেখযোগ্যভাবে কম সন্তান জন্ম দেয়। দ্বিতীয় কারণটি হল এটি অর্থব্যয়ের উপর নির্ভর করে। এটি দারিদ্র্যের একটি নোংরা, গোপন তথ্যর মত, যেটা হল, গরিব মানুষেরা কেবলমাত্র খুব সামান্য আয় করে না, কিন্তু, তারা যা আয় করে, তারা খুব বুদ্ধি করে ব্যয় করে না। এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যা খরচ করা হয় তার অধিকাংশই পুরুষরাই করে থাকে। তাই গবেষণায় দেখা যায়, যদি আপনি তাকান সেই মানুষদের দিকে যারা দিনে দুই ডলারের নীচে বসবাস করে - একটি দারিদ্র্যের মান - এই বেতনের দুই শতাংশ যায় এই বাস্কেটে, শিক্ষার ক্ষেত্রে। ২০ শতাংশ যায় একটি ঝুড়িতে যেটার মধ্যে রয়েছে মদ, তামাক, মিষ্টি পানীয় এবং পতিতাবৃত্তি এবং উৎসব। যদি আপনি চার শতাংশ নিয়ে এই ঝুড়িতে যোগ করেন, আপনি একটি আমূল রূপান্তরিত প্রভাব দেখতে পাবেন। সর্বশেষ কারণটি হল মহিলারা সমস্যা নয়,বরং সমাধানের একটি অংশ। আপনার হাতে থাকা সামান‍্য সম্পদের ব্যবহার প্রয়োজন। ডাই মাঞ্জুর মত কাউকে ব্যবহার না করাটা হচ্ছে সম্পদের অপচয়। বিল গেটস খুব ভাল বলেছিলেন যখন তিনি সৌদি আরবে ভ্রমণ করছিলেন। তিনি কথা বলছিলেন আপনাদের মতনই শ্রোতাদের সামনে। তবে, এর মাঝে দুই তৃতীয়াংশের পর একটি বেড়া ছিল। এই পাশে ছিল পুরুষ, এবং তারপর বেড়া, এবং অপর পাশে ছিল মহিলারা। এবং ঘরের এপাশ থেকে কেউ দাঁড়িয়ে বললেন, "মিস্টার গেটস, আমাদের এখানে সৌদি আরবে আমাদের লক্ষ্য হল পৃথিবীর শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে একটি হওয়া প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। আপনি কি মনে করেন আমরা এটা করতে পারব?'' বিল গেটস শ্রোতাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, "যদি আপনারা আপনাদের দেশের অর্ধেক সম্পদ পুরোপুরি না ব্যবহার করেন, কোন ভাবেই আপনারা শীর্ষ ১০ এর কাছাকাছি কোথাও যেতে পারবেন না।'' সুতরাং তিনি হলেন আরব এর বিল। (হাসি) তাহলে নির্দিষ্ট কিছু চ্যালেঞ্জ কেমন দেখাবে। আমি বলব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নারী পাচার। এবং আমি এই ব্যাপারে শুধু দুইটি কথা বলব। দাসব্যবসার শীর্ষে দাসত্ব ১৭৮০-এ: প্রায় ৮০,০০০ ক্রীতদাসদের আফ্রিকা থেকে নিউ ওয়ার্ল্ডে আনা হয়েছিল। এখন, আধুনিক দাসত্ব: স্টেট ডিপার্টমেন্টের খসড়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৮০০,০০০ - ১০ গুণেরও বেশি দাসকে আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে পাচার করা হয়েছে। এবং এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয় যারা দেশের সীমানার মধ্যে পাচার হয়, যা একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। এবং যদি আপনি তাকান অন্য কোনো বিষয়, এর বিপরিতে, সেই সময়ে একটি ক্রীতদাসের মূল্য ছিল প্রায় ৪০,০০০ ডলার আজকের অর্থে। আজকে আপনি একটি পাচারকৃত মেয়েকে কিনতে পারেন কয়েকশ ডলার দিয়ে, যার মানে সে আসলে আরো সহজে ছুঁড়ে ফেলার যোগ‍্য। কিন্তু আপনি হয়ত জানেন, উন্নতি হচ্ছে কাম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের মত জায়গায়। আমরা এমন একটি বিশ্বের আশা করি না যেখানে মেয়েদের কেনা বেচা বা হত্যা করা হয়। বিষয়সূচির দ্বিতীয়টি হল প্রসবকালীন মৃত্যু। আপনি জানেন পৃথিবীর এই অংশে সন্তানের জন্ম, একটি চমৎকার ঘটনা। নাইজারে, প্রতি সাতজন মহিলাদের মধ্যে একজন প্রসব করার সময় মারা যেতে পারেন। সারা বিশ্বে, প্রতি দেড় মিনিটে প্রসবকালীন একজন মহিলার মৃত্যু ঘটে। বেপারটা এমন নয় যে আমাদের প্রযুক্তিগত সমাধান নেই, কিন্তু এই মহিলাদের বিরুদ্ধে তিনটি সমস‍্যা ওঁৎ পেতে আছে: তারা গরিব, তারা গ্রাম্য এবং তারা নারী। আপনি জানেন, প্রত্যেক মহিলা যারা মারা যান, ২০ জন মহিলা বেঁচে থাকেন কিন্তু আহত হয়ে বেঁচে থাকেন। এবং সবচেয়ে বিধ্বংসী আঘাত হচ্ছে প্রসবকালীন ভগন্দর। এটি বাধাপূর্ণ প্রসবের কারণে সৃষ্ট হওয়া ছিদ্র যা একজন মহিলাকে বেগ-ধারণে অক্ষম করে দেয়। আমি আপনাদের মাহবুবার সম্পর্কে বলি। সে ইথিওপিয়ার বাসিন্দা। ১৩ বছর বয়সে তার মতের বিরুদ্ধে তার বিয়ে হয়। সে গর্ভবতী হয়, বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন‍্য সে ঝোপের মধে‍্য দৌড়ে যায়, কিন্তু আপনারা জানেন, তার শরীর ছিল খুবই অপূর্ণাঙ্গ, এবং শেষ পর্যন্ত তার বাধাপূর্ণ প্রসববেদনা হল। বাচ্চাটি মারা গেল এবং অবশেষে তার ভগন্দর - রোগ হয়ে গেল। সুতরাং তার মানে সে ছিল বেগ-ধারণে অক্ষম; সে মলমূত্রাদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না। এক কথায়, সে দুর্গন্ধ ছড়াতো। গ্রামবাসীরা ভেবেছিল সে অভিশপ্ত; তারা তাকে নিয়ে কি করবে বুঝতে পারছিল না। তাই শেষমেশ তারা গ্রামের কিনারে একটি কুঁড়েঘরে তাকে রেখে দিল। তারা দরজা ভেঙে দিল যাতে হায়েনারা রাত্রে তাকে আক্রমণ করতে পারে। সেই রাতে, ওই কুঁড়েঘরে একটি লাঠি ছিল। সেই লাঠি দিয়ে সে হায়েনাদের সঙ্গে লড়াই করল। এবং পরের দিন সকালে, সে জানত যে যদি সে নিকটবর্তী গ্রামে যেতে পারে যেখানে একটি বিদেশী ধর্মপ্রচারক ছিল, সে বেঁচে যাবে। যেহেতু তার স্নায়ুতে কিছু যখম ছিল, সে সমস্ত পথ হামাগুড়ি দিয়ে গেল -- ৩০ মাইল -- সেই দোরগোড়ায়, অর্ধমৃত অবস্থা। বিদেশী ধর্মপ্রচারক দরজা খুললেন, তিনি জানতেন ঠিক কি ঘটেছিল, তাকে আদ্দিস আবাবায় কাছের ভগন্দর-রোগ হাসপাতালে নিয়ে গেল, এবং তাকে ঠিক করা হল একটি ৩৫০-ডলারের অপারেশনের মাধ‍্যমে সেখানে ডাক্তার এবং নার্সেরা লক্ষ্য করলেন যে সে শুধুমাত্র একজন সারভাইভার নয়, সে সত্যিই চালাক, এবং তারা তাকে একজন নার্স হিসেবে তৈরি করলেন। তাই এখন, মাহবুবা, সে অনে‍্যর জীবন রক্ষা করছে শত শত, হাজার হাজার মহিলাদের। সে সমস্যার সমাধানের অংশ হয়ে গেছে, সমস‍্যার অংশ নয়। সে একটি দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে একটি সুনীতিসম্পন্ন চক্রে প্রবেশ করেছে। আমি কিছু চ্যালেঞ্জের কথা বলেছি, এখন কিছু সমাধানের বিষয়ে আলাপ করতে চাই, এবং কিছু অনুমেয় সমাধান রয়েছে। আমি সেগুলো ইঙ্গিত করেছি: শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক সুযোগ। সুতরাং অবশ্যই, যখন আপনি একটি মেয়েকে শিক্ষিত করে তোলেন, তখন পরিণত বয়সে তার বিয়ে করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়, তার সন্তান ধারণ করার প্রবণতা পরিণত বয়সে দেখা যায় এবং সে কম সন্তান নেয়ার চেষ্টা করে, এবং তার যে সন্তান রয়েছে তাদের আরও আলোকিতভাবে শিক্ষিত করে তোলে। অর্থনৈতিক সুযোগের মাধ‍্যমে, এটি পরিবর্তন আনতে পারে। আপনাকে সায়মার সম্পর্কে বলি। সে পাকিস্তানের লাহোর শহরের বাইরের ছোট একটি গ্রামে থাকে। এবং সেই সময়ে, ওর অবস্থা ছিল শোচনীয়। সে প্রতিদিন মার খেত তার স্বামীর হাতে, যে ছিল বেকার। সে জুয়াড়ি ধরনের ছিল - এবং তাই চাকরির অযোগ্য -- এবং তার হতাশার ক্ষোভ তার স্ত্রীর উপর ওঠাতো। যখন সে তার দ্বিতীয় কন্যা জন্ম দিল, তার শাশুড়ী তার ছেলেকে বললেন, "আমি মনে করি তোমার দ্বিতীয় বিয়ে করা উচিত। সায়মা তোমাকে পুত্রসন্তান দিবে না।'' এটা ছিল যখন সে তার দ্বিতীয় কন্যা জন্ম দিল। সে সময়ে, গ্রামে একটা ক্ষুদ্র ঋণের সংস্থা ছিল যারা তাকে ৬৫ ডলারের ঋণ দিল। সায়মা টাকাটি নিয়ে একটি সূচিকর্মের ব্যবসা শুরু করলো। ব্যবসায়ীরা তার এমব্রয়ডারি পছন্দ করলেন; সেগুলো খুব ভাল বিক্রি হল, এবং তারা আরো চাইতে লাগলেন। এবং যখন সে পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে পারছিলনা, সে গ্রামের অন্যান্য মহিলাদের কাজে নিল। খুব শীঘ্রই গ্রামের ৩০জন মহিলা তার সূচিকর্ম ব্যবসায় কাজ করতে লাগলো। এবং তারপর, যখন তার সমস্ত সূচিকর্ম পণ্য গ্রাম থেকে বাজারে পরিবহণের দরকার হলো তার পন‍্য পরিবহণের জন‍্য কারোর সাহায্যের প্রয়োজন পড়ল, তখন সে তার স্বামীকে নিযুক্ত করলো। সুতরাং এখন তারা একসাথে কাজ করছে। তার স্বামী পরিবহন ও বিতরণের কাজ করে, এবং সে উৎপাদন ও উৎসের দিকটা দেখে। এবং এখন তাদের তৃতীয় মেয়ে হয়েছে, এবং মেয়েরা, তাদের সবাইকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা হচ্ছে কারণ সায়মা জানে কোনটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। যা আমাকে এনেছে চূড়ান্ত বিষয়ে, যেটা হল শিক্ষা। ল্যারি সামারস্, যখন তিনি বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ছিলেন, একবার বলেছিলেন যে, "এটা হতে পারে যে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ মুনাফা হচ্ছে উন্নয়নশীল বিশ্বে মেয়েদের শিক্ষায়। আমি আপনাদের বিয়াত্রিস বিরার ব্যাপারে বলি। বিয়াত্রিস উগান্ডায় থাকত কঙ্গো সীমানার কাছে, এবং ডাই মাঞ্জুর মত সে স্কুলে যায়নি। আসলে, সে কখনোই স্কুলে যায়নি, ভুল করেও একদিনও না। তার বাবা মা আবার বললেন, "তার উপর আমরা কেন টাকা ব্যয় করব? সে তার জীবনের অধিকাংশ সময় পানি আনা-নেওয়ার পিছনে ব্যয় করবে।'' তো, সেই সময়ে, একটি ঘটনা ঘটল, কানেকটিকাটে একটি গ্রুপ ছিল কানেকটিকাট নিয়ান্টিক সামাজিক গির্জা গ্রুপ নামে। তারা একটি প্রতিষ্ঠানে দান করলো আরকানসাস ভিত্তিক হাইফার ইন্টারন্যাশনাল নামক প্রতিষ্ঠান। হাইফার আফ্রিকাতে দুটি ছাগল পাঠালো। তার মধ্যে একটি ছাগল বিয়াত্রিসের বাবা মার হাতে পড়ে। এবং ছাগলটির যমজ বাচ্চা হল। যমজ বাছুরগুলো দুধ দিতে শুরু করলো। তারা নগদ অর্থের জন্য দুধ বিক্রি করতে লাগল। টাকা জমতে শুরু করলো, এবং বেশ শীঘ্রই বাবা মা বললেন, ''আমাদের যথেষ্ট টাকা আছে। চল বিয়াত্রিসকে স্কুলে পাঠাই।'' তাই নয় বছর বয়সে, বিয়াত্রিস প্রথম শ্রেণীতে পড়া শুরু করলো -- কারণ সে আগে কখনোই স্কুলে যায়নি ছয় বছরের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। যাই হোক, সে স্কুলে যেতে পেরেই খুব খুশি ছিল। সে তার ক্লাসের শীর্ষে উঠে গেল। সে তার ক্লাসের শীর্ষস্থান বজায় রেখেছিল প্রাথমিক স্কুলে, মাধ্যমিক স্কুলে, এবং তারপর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে, সে জাতীয় পরীক্ষাগুলোয় চমৎকার ফলাফল করেছিল, তাই সে হয়ে ওঠে তার গ্রামের প্রথম ব্যক্তি, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল বৃত্তি পেয়ে। দুই বছর আগে, কানেক্টিকাট কলেজ থেকে সে পাস করেছে। তার সমাবর্তণের দিন, সে বললো, "আমি দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবতী মেয়ে একটি ছাগলের কারণে। " (হাসি) এবং সেই ছাগলটির দাম ছিল $১২০। তাই আপনি দেখতে পারছেন কেমন জীবন পরিবর্তনশীল হতে পারে সামান্যটুকু সাহায্য। কিন্তু আমি আপনাকে একটা বাস্তবতা পরীক্ষা দিতে চাই। দেখুন: ইউ.এস. এইড, মানুষকে সাহায্য করা সহজ কাজ নয়। এবং ইউ.এস. এইড এর সমালোচনা করে বই প্রকাশিত হয়েছে। বিল ইস্টারলির বই আছে। একটি বই আছে "ডেড এইড" নামে। আপনি জানেন, সমালোচনাগুল কিন্তু ন্যায্য; এটা সহজ নয়। লোকে বলে কিভাবে সব পানির কূপ প্রকল্পের অর্ধেকই, এক বছর পরে ব্যর্থ হয়েছে। আমি যখন জিম্বাবুয়েতে ছিলাম, আমরা গ্রামের প্রধানের সাথে একটি জায়গা পরিদর্শন করছিলাম -- তিনি একটা মাধ্যমিক স্কুলের জন্য টাকা তুলতে চেয়েছিলেন - এবং একটু দূরে কিছু নির্মাণ কাজ চলছিলো। এবং আমি বললাম, "ওটা কি?" তিনি বিড়্ বিড়্ করে কিছু বললেন। দেখা গেল যে এটা একটি ব্যর্থ সেচ প্রকল্প। কয়েক গজ দূরে ছিল একটি ব্যর্থ মুরগীর খামার। এক বছরের মাথায়, সব মুরগি মারা যায়, এবং কেউ সেখানে আর মুরগি রাখতে চাচ্ছিলেননা। এটা সত্য, আমরা মনে করি যে আপনি অদরকারী জিনিস বিদেয় করতে গিয়ে দরকারিটাও ফেলে দেন না; আপনি আসলে আরও উন্নতি করে থাকেন। আপনি আপনার ভুল থেকে শেখেন, এবং ক্রমাগতভাবে আরও উন্নতি করে থাকেন। আমরাও মনে করি যে প্রতে‍্যক ব‍্যক্তি পরিবর্তন আনতে পারেন এবং তাদের তাই করা উচিত, কারণ আমরা সবাই মিলে, একটি আন্দোলন তৈরি করতে সাহায্য করতে পারি। পুরুষ এবং নারীর সমন্বীত একটি আন্দোলন যা সামাজিক পরিবর্তন আনতে প্রয়োজন, পরিবর্তন যা বিবেচনায় আনবে এই বিশাল নৈতিক চ্যালেঞ্জ। তাই, আমি জিজ্ঞেস করছি, এটাতে আপনি কী বা করতে পারেন? আপনি হয়ত জিজ্ঞাসা করছেন। আপনি কেন চিন্তিত হবেন? আমি শুধু দুটি জিনিস আপনাদের কাছে রেখে যাব। এক যে গবেষণায় দেখায় যে একবার আপনার পার্থিব সব চাহিদাগুলি পূরণ হওয়ার পর -- যা আমাদের অধিকাংশ, আমাদের সবার, এখানে এই রুমে উপস্থিত - আমাদের আছে -- গবেষণায় দেখা যায় যে জীবনে খুব কম জিনিস আছে যা আসলে আপনার সুখের মাত্রা বাড়াতে করতে পারে। সেগুলোর মধ্যে একটি হল নিজের চেয়ে বড় কোনো উদ্দেশ্যে অবদান রাখা। এবং দ্বিতীয়টি হলো, আমি একটা ক্ষুদ্র স্মৃতিচারণ দিয়ে শেষ করব। যেই গল্পটি হল দারফুরে একজন সাহায্য কর্মীর। একজন মহিলা ছিলেন যিনি দারফুরে কাজ করেছিলেন, এমন সব জিনিস দেখেছিলেন যা কোন মানুষের দেখা উচিত নয়। সেখানে তার সারা সময়, তিনি শক্ত ছিলেন, তিনি ছিলেন অবিচল। তিনি কখনো ভেঙে পড়েননি। এবং তারপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত আসলেন এবং ছুটিতে ছিলেন, বড়দিনের ছুটি। তিনি তার নানীর বাড়ির পিছনের উঠোনে ছিলেন, এবং তিনি কিছু দেখলেন যা তার চোখে জল নিয়ে এলো। তা ছিল একজন পাখির খাবার সরবরাহকারী। তিনি উপলব্ধি করলেন যে তার বড় ভাগ্য এমন দেশে জন্মগ্রহণ করা যেখানে আমাদের নিরাপত্তা প্রদান করা হয়, যেখানে আমাদের কেবল খাবার নয়, জামাকাপড় ও ঘর-বাড়ির ব্যবস্থা করতে পারি, কিন্তু বন্য পাখিদেরও বন্দোবস্ত করতে পারি তাই তারা শীতকালে ক্ষুধার্ত যাতে না যায়। এবং তিনি তা উপলব্ধি করলেন যে বিশাল ভাগ্যের সাথে আসে বিশাল দায়িত্ব। এবং তাই, তাঁর মত, আপনি, আমি, আমরা সবাই জীবনের লটারি জিতেছি। তাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়: আমরা কিভাবে এই দায়িত্ব পালন করব? সুতরাং, এই হল উদ্দেশ্য। এই আন্দোলনে যোগ দিন। আরো সুখী বোধ করুন এবং প্রথিবীকে বাঁচাতে সাহায্য করুন। অনেক ধন্যবাদ। (হাত তালি) সবাই দয়া করে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্যের কথা চিন্তা করুন। সত্যিই সত্যিই- আপনি কিছুটা সময় নিতে পারেন। আপনাকে এটা অনুভব করতে হবে বোঝার জন্য। কিছুটা সময় নিন এবং আপনার ব্যক্তিগত সবচেয়ে বড় লক্ষ্যের কথা চিন্তা করুন, ঠিক আছে? কল্পনা করুন আপনি এখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আপনি তা করে ফেলবেন। ভাবুন আপনি কেবলমাত্র পরিচিত হয়েছেন এরকম কাউকে তা বলে দিচ্ছেন। কল্পনা করুন তারা আপনাকে অভিনন্দিত করছে এবং তাদের কাছে আপনার অবস্থান কতটা উপরে। এটা ভাবতে ও বলতে অবশ্যই ভালো লাগে তাই না? আপনি কি নিজেকে লক্ষ্যের আরও এক ধাপ কাছে মনে করছেন না? মনে হচ্ছে না তা ইতিমধ্যে আপনার অস্তিত্বের একটি অংশ হয়ে উঠেছে? আসলে, দুঃসংবাদ- আপনার আসলে মুখ বন্ধ রাখা উচিত ছিল। কারণ সেই সুখানুভূতির কারণে আপনি এখন কাজটি করার ক্ষেত্রে কম তাগিদ অনুভব করবেন। বারবার মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে আপনার লক্ষ্য কাউকে বলে দিলে তা আপনি পূরণ করবেন এ সম্ভাবনা কমে যায়। যখনই আপনার কোন লক্ষ্য থাকে, সেখানে কিছু ধাপ থাকে এবং কিছু কাজ থাকে যা করা লাগে যাতে তা অর্জন করা যায়। আদর্শগতভাবে, আপনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হবেন না যদি না আপনি সত্যিই কাজটা করে থাকেন। কিন্তু যখন আপনি আপনার লক্ষ্যের কথা বলবেন এবং তারা যখন তা স্বীকার করবে, মনস্ততত্ত্ববিদরা দেখেছেন যে এটাকে বলা হয় "সামাজিক সত্যতা" মনকে প্রতারণা করে বোঝানো যায় কাজটি হয়ে গেছে। এবং তখন যেহেতু আপনি সন্তুষ্টি অনুভব করেছেন আপনি কাজটি করতে কম আগ্রহ বোধ করবেন। (হাসি) তাই এটা চিরাচরিত ধারণার বিপরীতে যায় যা হচ্ছে - আমরা আমাদের লক্ষ্যের কথা বন্ধুদের বলবো। যাতে তারা আমদের লক্ষ্যে যাবার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে। আসুন তাহলে, প্রমাণের দিকে তাকাই। ১৯২৬ সালে কুর্ট লিউইন, সামাজিক মনস্ততত্ত্ববিদ্যার জনক, এর নাম দিয়েছিলেন, "প্রতিস্থাপন"। ১৯৩৩ সালে বেরা মাহলার পেলেন, যখন কোন চিন্তা অন্যদের দ্বারা প্রশংসিত হয়, তখন অবাস্তব বিষয়ও বাস্তব মনে হয়। ১৯৮২ সালে পিটার গোলউইজার এবিষয়ে আস্ত একটি বই লিখেছিলেন এবং ২০০৯ এ, তিনি কিছু নতুন পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছিলেন। তা অনেকটা এরকমঃ ১৬৩ জন ৪টি ভিন্ন পর্যবেক্ষণে- সবাইকে তাদের ব্যক্তিগত লক্ষ্য সম্পর্কে লিখতে বলা হয়েছিল। তখন অর্ধেকের বেশি লোক তাদের লক্ষ্যের প্রতি অঙ্গীকারের কথা ঘোষণা করে এবং বাকি অর্ধেক কিছু বলে না। তারপর সবাইকে ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল কাজ করবার জন‍্য যা তাদেরকে তাদের লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাবে, কিন্তু তাদেরকে বলা হয়েছিল তারা যেকোন সময়ে থামতে পারে। এখন, যারা তাদের মুখ বন্ধ রেখেছিল, তারা পুরো ৪৫ মিনিট কাজ করেছিল, গড়ে, এবং যখন পরবর্তীতে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা বলেছিল যে তারা অনুভব করেছিল যে তাদের লক্ষ্য অর্জনে আরও অনেকদূর যেতে হবে। কিন্তু যারা ল ক্ষ্য ঘোষণা দিয়েছিল তারা হাল ছেড়ে দিয়েছিল গড়ে ৩৩ মিনিট পরে এবং পরে যখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তারা বলেছিল তারা মনে করে তারা লক্ষ্যের অনেক কাছে ছিল। সুতরাং, এটা যদি সত্য হয়, আমরা কি করতে পারি? আপনি আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে ঘোষণা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। নিজেকে বাহবা দেওয়ার কাজটা পরে করা যেতে পারে যা সামাজিকভাবেও হতে পারে এবং আপনি কিন্তু বুঝতে পারেন যে আপনার মন বলাটাকে কাজ করা হিসেবে ধরে নিয়েছে। কিন্তু আপনার যদি কোন কিছু নিয়ে কথা বলতেই হয় আপনি তা এমন ভাবে বলতে পারেন যাতে তা আপনাকে কোন রকম সন্তুষ্টি না দেয় যেমন, "আমি সত্যি এই ম্যারাথনে অংশ নিতে চাই, তাই আমার সপ্তাহে ৫ বার প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত এবং আমাকে লাথি দিয়ো যদি আমি তা না করি, ঠিক আছে?" সুতরাং শ্রোতাবৃন্দ, পরবর্তীতে যখনই আপনি আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে কাউকে বলতে যাবেন, আপনি কি বলবেন? (নীরবতা) আসলেই তাই, চুপ থেকে ভালো করেছেন। (হাততালি) যাই হোক, এইটা মোটামুটি একটা জানা কথা ওখানে লেখা আছে। আমি এই বাক‍্যটি নিয়ে কাজ শুরু করি ১২ বছর আগে, এবং আমি শুরি করেছিলাম উন্নয়নশীল দেশগুলো নিয়ে, কিন্তু আপনারা এখানে এসেছেন সারা দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তো আপনি যদি আপনার দেশের মানচিত্রের কথা চিন্তা করেন, আমার ধারণা আপনি বুঝতে পারবেন যে সারা দুনিয়াতে প্রতে‍্যকটি দেশের জন‍্যই, আপনি ছোট ছোট বৃত্ত এঁকে বলেত পারবেন যে, "এই হচ্ছে সেই জায়গাগুলো যেখানে কোন ভালো শিক্ষক যাবেন না।" এবং সেই সাথে, ওইগুলো হচ্ছে সেই জায়গা যেখান থেকে সমস‍্যাগুলো তৈরি হয়। আমাদের আসলে একটা উল্টো ধরণের সমস‍্যা আছে। ভালো শিক্ষকেরা শুধুমাত্র সেই সব জায়গায় যাবেন না যেখানে তাঁদেরকে সবচে বেশি দরকার। আমি ১৯৯৯ সালে শুরু করি একটা গবেষণার মাধ‍্যমে এই সমস‍্যাটার প্রতি মনোযোগ দিই, নয়া দিল্লি তে এটি ছিল খুবই সাধারণ একটা পরীক্ষা। আমি আসলে একটা কম্পিউটারকে নয়া দিল্লির একটি বস্তির দেয়ালে সেঁটে দিয়েছিলাম। বাচ্চারা কালেভদ্রে স্কুলে যেত। এবং ওরা কোন ইংরেজী জানত না। ওরা আগে কোনদিন কম্পিউটারও দেখেনি, এবং ইন্টারনেট কি জিনিস তাও ওরা জানত না। আমি এতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট লাগালাম -- এটি মাটি থেকে মোটামুটি তিন ফুট উঁচুতে -- চালিয়ে দিয়ে রেখে চলে আসলাম। এর পর, আমরা কিছু মজার ব‍্যপার খেয়াল করলাম, আপনারা সেগুলো দেখতে পাবেন। আমি এই নিরীক্ষাটি সারা ভারতজুড়ে বারবার করেছি£ এবং তারপর দুনিয়ার বিশাল অংশজুড়ে করেছি এবং খেয়াল করলাম যে বাচ্চারা সেটাই করতে শিখবে যা তারা করতে শিখতে চায়। এইটা হচ্ছে আমাদের করা প্রথম পরীক্ষা -- আপনাদের ডান দিকে এক আট বছর বয়সী ছেলে ওর ছাত্রীকে পড়াচ্ছে, এক ছয় বছর বয়সী মেয়ে, ছেলেটা ওকে শিখাচ্ছিল কিভাবে ব্রাউজিং করতে হয়। এই মাঝের ছেলেটা মধ‍্য ভারতীয় -- এইটা রাজস্থানের একটি গ্রাম, সেখানে বাচ্চারা নিজেরাই নিজেদের গান রেকর্ড করেছে তারপর ওরা একে অন‍্যকে সেটা বাজিয়ে শুনিয়েছে, আর এই কাজে ওরা নিজেরা পুরোপুরি মজা পেয়েছে। ওরা এই সব কাজ চার ঘন্টার মধে‍্য করেছে প্রথম কম্পিউটার দেখার পর। আরেক দক্ষিণ ভারতীয় গ্রামে, এই ছেলেরা একটা ভিডিও ক‍্যামেরা জড়ো করেছে ওরা একটি ছুটন্ত মৌমাছির ছবি তুলতে চেষ্টা করছিল। ওরা এইটা Disney.com থেকে ডাউনলোড করেছে। অথবা এই ওয়েবসাইটগুলোর কোন একটা থেকে, ওদের গ্রামে কম্পিউটার স্থাপনের ১৪ দিন পর। শেষ পর্যন্ত, আমরা এই উপসংহারে পৌঁছলাম যে শিশুদের দল কম্পিউটার আর ইন্টারনেট থেকে নিজেরাই শিখতে পারে, তারা কোথায় আছে কার সাথে আছে সেইটা গুরুত্বপুর্ণ নয় এই সময়, আমি আরেকটু বেশি আশাবাদী হয়ে উঠলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম শিশুরা কম্পিউটার দিয়ে আর কী করতে পারে তা দেখার আমরা ভারতের হায়দ্রাবাদে একটা পরীক্ষা দিয়ে শুরু করলাম, সেখানে আমি একদল শিশুকে দিলাম -- ওরা গভীর তেলেগু টানে ইংরেজী বলত আমি ওদেরকে একটা কম্পিউটার দিলাম সাথে কথা-থেকে-লেখা যায় এমন সফটওয়‍্যার, যেটা এখন উইন্ডোজের সাথে বিনামূল্যে পাওয়া যায়, তারপর ওদের বললাম ওর মধে‍্য কথা বলতে তো ওরা যখন ওই সফটওয়‍্যারে কথা বলল, কম্পিউটার হাবিজাবি লেখা শুরু করল, তখন ওরা বলল, "আমরা যা বলছি এই কম্পিউটার তো তার কিছুই বুঝতে পারে না" তো আমি বললাম, "হ‍্যাঁ, আমি এইটা এখানে দুই মাসের জন‍্য রেখে যাব তোমরা নিজেদের কথাগুলো কম্পিউটারকে বোঝাও।" তখান বাচ্চারা বলল, "আমরা সেটা করব কিভাবে?" আমি বললাম, "আমি আসলে জানিনা।" (হাসি) তারপর আমি চলে গেলাম। (হাসি) দুই মাস পর -- এবং এইটা এখন নথিভুক্ত তথ‍্য প্রযুক্তি বিষয়ক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন জার্নালে -- যে ওদের উচ্চারণের টান বদলে গিয়েছিল এবং অদ্ভুতভাবে তা নিরপেক্ষ ব্রিটিশ উচ্চারণের খুব কাছাকাছি যেভাবে আমি কথা-থেকে-লেখা'র সফটওয়‍্যারটিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। অন‍্যভাবে বললে, ওরা সবাই জেম্স টুলি'র মত করে কথা বলছিল| (হাসি) তাহলে ওরা নিজে নিজেই তা করতে সক্ষম হয়েছিল এর পর, আমি আরও নিরীক্ষা শুরু করলাম বিভিন্ন বিষয়ের উপর যে ওরা নিজেরাই হয়ত বিভিন্ন কাজ করতে শিখবে একবার কলম্বো থেকে আমি একটা অদ্ভুত টেলিফোন কল পেলাম, স্বর্গত আর্থার সি. ক্লার্ক এর কাছ থেকে, উনি বললেন, "আমি দেখতে চাই কী ঘটনা ঘটে চলেছে।" উনি ভ্রমণে অপারগ ছিলেন, তো আমিই গেলাম ওঁর কাছে উনি দুটি মজার বিষয় বললেন, "কোন মেশিন যদি কোন শিক্ষকের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে, তবে তাই হওয়াই উচিত।" (হাসি) ওঁর বলা দ্বিতীয় কথাটি ছিল, "শিশুদের যদি আগ্রহ থাকে, তাহলে শিক্ষা নিজে নিজেই ঘটে।" আর আমি সেটা করছিলাম হাতেনাতে, তাই বারবার আমি এই ঘটনা দেখি আর ওঁর কথা ভাবি। (ভিডিও) আর্থার সি. ক্লার্ক: এবং ওরা নিশ্চয়ই মানুষকে সাহায‍্য করতে পারে, কারন শিশুরা খুব দ্রুত কোন কিছু চালাতে শিখে এবং ওদের যেটা পছন্দ সেটা খুঁজে বের করে ফেলে আর যখন তুমি আগ্রহ পাবে তখনই তুমি শিখবে। সুগতা মিত্র: আমি এই পরীক্ষাটি দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যাই ও হচ্ছে ১৫ বছর বয়সী বালক (ভিডিও) বালক: ...শুধু বলবেন, আমি গেম খেলতে ভালোবাসি পশুপাখি পছন্দ করি, আর গান শুনতে ভালোবাসি সু.মি: এবং আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কি ইমেইল পাঠাও?" ও তখন বলল, "হ‍্যাঁ, আর ওই ইমেইলগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে সাগর পাড়ি দেয়" এইটা ক‍্যাম্বোডিয়ায়, ক‍্যাম্বোডিয়ার পল্লী এলাকায় -- মোটামুটি একটা বোকাসোকা ধরনের অঙ্কের গেম,¥ যেটা কোন বাচ্চাই বাসায় অথবা ক্লাসরুমে খেলবে না ওরা যেটা করত তা হলো, ওরা গেমটা আপনাদের দিকে ছুঁড়ে মারত ওরা বলত, "এইটা খুবই বোরিং" আপনারা যদি এইটা ওই উঠানে রেখে আসেন, আর সব বড়রা যদি চলে যান, তাহলে ওরা একজন আরেকজন কে বড়াই করে দেখাবে যে কে কী করতে পারে এই ছেলেমেয়েরা এখানে তাই করছে ওরা মনে হয় গুণ করার চেষ্টা করছে এবং সমগ্র ভারতে, দুই বছরের মাথায়, বাচ্চারা ওদের বাড়ির-কাজগুলো নিয়ে গুগল করা শুরু করে দিল শিক্ষকেরা বললেন, এর কারণে ওদের ইংরেজি বিদ‍্যার ভীষণ উন্নতি হয়েছে -- (হাসি) দ্রুত উন্নতি এবং সব ধরণের জিনিসের উন্নতি, ওঁরা বললেন, "ওরা তো সব গভীর চিন্তাবিদে পরিণত হয়েছে, এবং আরো কত কী যে শিখছে!” (হাসি) এবং সত্যিই তাই হয়েছিল আমার মতে, কোনকিছু যদি গুগলে থাকে, তাহলে সেইটা মাথার মধ্যে নিয়ে বোঝাই করার দরকারটা কী? তাই পরবর্তী চার বছরের মাথায়, আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছুলাম যে একদল শিশু ইন্টারনেট চালিয়ে শিক্ষা বিষয়ক সফলতা নিজেরাই অর্জন করতে পারে। এই সময়ে, বেশ কিছু টাকা নিউক‍্যাসেল বিশ্ববিদ‍্যালয়ে এলো ভারতীয় স্কুল-শিক্ষার উন্নয়নের উদ্দেশে‍্য তো নিউক‍্যাসেল থেকেই আমাকে ফোন দিল। আমি বললাম, "আমি এটা দিল্লি থেকে করব।" ওরা বলল, "এই রকম কোন উপায় নেই যে আপনি বিশ্ববিদ‍্যালয় তহবিলের দশ লাখ পাউন্ড দিল্লিতে বসে কাজে লাগাবেন।" তাই ২০০৬ সালে, আমি একটা মোটাতাজা ওভারকোট কিনলাম এবং নিউক‍্যাসেলে রওনা দিলাম। আমি বিশ্ববিদ‍্যালয় ব‍্যবস্থাপনার সীমারেখাটা পরীক্ষা করতে চাইলাম। নিউক‍্যাসেল থেকে আমি প্রথম যে এক্সপেরিমেন্টটা করলাম সেইটা আসলে ভারতেই করা হলো। এবং আমি নিজের জন‍্য একটা অসম্ভব লক্ষ‍্য ঠিক করলাম তামিল ভাষাভাষী ১২ বছর বয়সী শিশু দক্ষিন ভারতীয় একটা গ্রামে নিজেদেরকে বায়োটেকনলজী শিখাতে পারে ইংরেজি তে নিজে নিজে? আমি ভাবলাম, আমি ওদের কে পরীক্ষা করব। ওরা শূন্য পাবে। আমি ওদেরকে উপকরণগুলো দিয়ে আসব। আমি ফিরে এসে পরীক্ষা নেব। ওরা আবার শুন‍্য পাবে। আমি ফিরে যাব এবং বলব, "হ‍্যাঁ, কিছু বিশেষ বিষয় শেখানোর জন‍্য শিক্ষকের দরকার আছে।" আমি ২৬ টা শিশুকে ডাক দিলাম ওরা সবাই এলো, আমি ওদেরকে বললাম যে এই কম্পিউটারে আসলেই খুবই কঠিন কিছু বিষয়ের তথ‍্য আছে তোমরা যদি কিছুই না বোঝো তাহলেও আমি অবাক হব না এগুলো সব ইংরেজী তে আছে, আর আমি এখন যাচ্ছি (হাসি) তো এভাবে আমি ওদেরকে রেখে চলে গেলাম আমি দুই মাস পর ফিরে এলাম, এবং ওই ২৬ টা বাচ্চা হেঁটে হেঁটে এলো, সবাইকে খুব বেশি শান্ত দেখাচ্ছিল আমি বললাম, "ভালো কথা, তোমরা কি ওই জিনিসগুলো দেখেছিলে?" ওরা বলল, "হ‍্যাঁ, আমরা দেখেছিলাম।" "তোমরা কি কিছু বুঝতে পেরেছো?" "না, কিচ্ছু বুঝিনি।" তো আমি বললাম, "যাই হোক, তোমরা কত দিন ধরে জিনিসগুলো দেখেছ তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছ, যে তোমরা কিছুই বোঝনি?" ওরা বলল, "ওগুলো আমরা প্রতে‍্যকদিনই দেখি।" তো আমি বললাম, "তাহলে গত দুই মাস ধরে তোমরা একটা জিনিস দেখছ যার কিছুই তোমরা বোঝনি?" তখন একটা ১২ বছর বয়সী মেয়ে হাত তুলল এবং বলল, আসলে, "ডিএনএ অনুগুলোর অস্বাভাবিক প্রতিলিপি তৈরী হলে জেনেটিক রোগ হয়, এইটা ছাড়া আমরা আর কিছুই বুঝিনি।" (হাসি) (হাত তালি) (হাসি) আমার এইটা প্রকাশ করতে তিন বছর লাগল। এই কিছুদিন হোল এইটা ব্রিটিশ শিক্ষা প্রযুক্তি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধে‍্য যারা আমার গবেষণাটি বিচার করেছিলেন তাদের একজন বললেন, "এইটা এত ভালো যে সতি‍্য মনে হয় না," ওই কথাটা খুব একটা সুবিধার ছিল না যাই হোক, এর মধে‍্য একটা মেয়ে নিজে নিজে শিখেছিল কি করে একজন শিক্ষিকা হওয়া যায় আর তারপর এই যে ওখানে ওই মেয়েটা মনে রাখবেন, ওরা কিন্তু ইংরেজী পড়েনি আমি শেষের কিছু অংশ সম্পাদনায় বাদ দিয়েছি যখন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, "নিউরনটা কোথায়?" আর ও বলেছিল, "নিউরন টা? নিউরন টা?" এরপর ও তাকিয়ে এমন করল। সেই ভাবখানা যেমনই হোক, খুব একটা ভালো ছিল না যাইহোক ওদের স্কোর শুন‍্য থেকে ৩০ ভাগে উন্নীত হল, যেটা এই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অসম্ভবের কাছাকাছি কিন্তু ৩০ শতাংশ তো পাস মার্ক না তো আমি দেখলাম যে ওদের এক বন্ধু আছে এক স্থানীয় হিসাবরক্ষক, বাচ্চা মেয়ে, ওরা মেয়েটার সাথে ফুটবল খেলত আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কি ওদেরকে পাস করার মত বায়োটেকনলজি শিখাতে পারো?" ও বলল, "আমি কিভাবে শিখাব? আমি ওই বিষয়ে কিছু জানিনা তো।" আমি বললাম, "না, এক্ষেত্রে দাদিমাদের পদ্ধতি কাজে লাগাও।" ও বলল, "সেইটা কেমন?" আমি বললাম, "এই মনে করো, তোমাকে যা করতে হবে তা হল ওদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকো আর সব সময় ওদের প্রসংশা করতে থাক। ওদেরকে শুধু বল, "আহ এইটা ভালো। অসাধারণ হচ্ছে। কী জিনিস এইটা? আবার করতে পারবে? আমাকে এমন আরও কিছু দেখাতে পারবে?" ও দুই মাস ধরে এই কাজ করল আর স্কোর পৌঁছাল ৫০ শতাংশে, যা নয়া দিল্লির অভিজাত স্কুলগুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বায়োটেকনলজি শিক্ষকের মাধ‍্যমে পাওয়া যায় তো আমি নিউক‍্যাসলে ফিরে আসলাম ওই ফলাফলগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম যে এখানে কিছু একটা ঘটে চলেছে যা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব‍্যপারের দিকে মোড় নিচ্ছে। এভাবে, বিভিন্ন সব প্রত‍্যন্ত অঞ্চলে নিরীক্ষার পর, আমি আমার কল্পনার সবচে প্রত‍্যন্ত অঞ্চলে চলে আসলাম (হাসি) দিল্লি থেকে মোটামুটি ৫,০০০ মাইল দুরে গেট্সহেড নামের ছোট্ট শহরে গেট্সহেডে, আমি ৩২ জন শিশু নিলাম, এবং আমি ওই পদ্ধতিটা কে আরও ঝালাই করা শুরু করলাম আমি ওদেরকে চার জনের দলে ভাগ করলাম আমি বললাম, "তোমরা নিজেরাই তোমাদের চার জনের দল তৈরি কর প্রতে‍্যক চারজনের দল একটা করে কম্পিউটার পাবে চারটা করে নয়" মনে রাখুন, আমার সেই 'দেয়ালের ফুটো'র ঘটনাটি "তোমরা দল বদল করতে পারবে এক দল অন‍্য দলের সাথে কথা বলতে পারবে, যদি তুমি তোমার দল পছন্দ না কর, ইত‍্যাদি ক্ষেত্রে তুমি অন‍্য দলের কাছে চলে যেতে পারো, ওদের ঘাড়ের উপর দিয়ে দেখতে পার যে ওরা কী করছে, তারপর নিজের দলে ফিরে এসে দাবি করতে পার যা শিখেছ সেইটা তোমার নিজের বুদ্ধি আর আমি ওদেরকে ব্যাখ্যা দিলাম যে, তোমরা হয়ত জানো, যে অসংখ‍্য বৈজ্ঞানিক গবেষনার কাজ এভাবেই হয়ে থাকে (হাসি) (করতালি) বাচ্চারা উৎসাহের সাথে আমার পেছনে লেগে গেল আর বলল, "এখন, আপনি আমাদেরকে দিয়ে কী করাতে চাইছেন?" আমি ওদরেকে ছয়টা GCSE প্রশ্ন দিলাম প্রথম দলটি, /সবচেয়ে ভালো দল, ২০ মিনিটের মধে‍্য সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিল সবচে খারাপ দলটি নিল ৪৫ মিনিট ওরা যা কিছু জানত তার সব ওরা ব‍্যবহার করেছে -- নিউজ গ্রুপ, গুগল, উইকিপিডিয়া, আসক জীভ্স, ইত‍্যাদি শিক্ষকেরা বললেন, "এতে কি গভীর শিক্ষা হচ্ছে?" আমি বললাম, "আচ্ছা, আসুন দেখি চেষ্টা করে আমি দুই মাস পর ফিরে আসব ওদের একটা লিখিত পরীক্ষা নিব কোন কম্পিউটার থাকবে না, একে অনে‍্যর সাথে কথা বলতে পারবে না, ইত‍্যাদি" আমি যখন ওদের কম্পিউটার আর দলগুলোসহ পরীক্ষাটি নিয়েছিলাম তখন ওদের গড় স্কোর ছিল ৭৬ শতাংশ তারপর আমি যখন গবেষণা করছিলাম, যখন ওদের লিখিত পরীক্ষা নিলাম দুই মাস পর, ওদের স্কোর দাঁড়াল ৭৬ শতাংশে ক‍্যমেরার মত স্মৃতি ক্ষমতা ছিল শিশুগুলোর মধে‍্য, আমি সন্দেহ করলাম কারণ ওরা একে অনে‍্যর সাথে আলোচনা করছে একা একজন শিশু একটা কম্পিউটারের সামনে সেইটা করবে না আমার আরও বেশ কিছু ফলাফল আছে, যেগুলো মোটামুটি অবিশ্বাস‍্য, স্কোরগুলো এমনভাবে সময়ের সাথে বাড়তে থাকে কারণ ওদের শিক্ষকেরা বলেন ওই গবেষণা সেশন শেষ হওয়ার পরও, শিশুরা বিষয়গুলো নিয়ে গুগল করতে থাকে এই বিলেতে, আমি এক ডাক দিলাম সব ব্রিটিশ দিদা - দেরকে, আমার কুপ্পাম গবেষণার পর যাইহোক, আপনারা জানেন, সেখানে অনেক তেজস্বী মানুষজন পাওয়া গেল, ব্রিটিশ দিদারা| তাদের মধে‍্য থেকে ২০০ জন তৎক্ষনাত স্বেচ্ছা সেবক হিসেবে লেগে পড়লেন। (হাসি) ওঁদের সাথে আমার চুক্তিটা হল তাঁরা আমাকে এক ঘন্টা করে ব্রডব‍্যান্ড ইন্টারনেটে সময় দিবেন, তাদের বাসায় বসেই, সপ্তাহে এক দিন করে তো ওঁরা তাই করলেন এবং এই গত দুই বছর ধরে, ৬০০ ঘন্টারও বেশি উপদেশ দেওয়া নেওয়া চলেছে স্কাইপের মাধ‍্যমে, আমার ছাত্ররা এটি ব‍্যবহারের পর এর নাম দিয়েছে 'দিদা ক্লাউড' দাদিমা ক্লাউড ওখানে বসেন আমি তাদেরকে যেই স্কুলে আমি চাই সেখানেই কাজে লাগেতে পারি (ভিডিও) শিক্ষক: তোমরা আমাকে ধরতে পারবে না তোমরা বলো তোমরা আমাকে ধরতে পারবে না শিশুরা: তোমরা আমাকে ধরতে পারবে না শিক্ষক: আমি হচ্ছি আদারুটি মানব শিশুরা: আমি হচ্ছি আদারুটি মানব শিক্ষক: ভালো করেছ তোমরা, খুব ভালো ... সু.মি: গেট্সহেডে ফিরে আসি, এক ১০ বছর বয়সী বালিকা হিন্দুধর্মতত্বের গভীরে ঢুকে পড়ে ১৫ মিনিটের মধে‍্য আপনি জানেন, যে বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা দুইটা শিশু একটা TEDTalk দেখে ওরা আগে ফুটবলার হতে চেয়েছিল ৮ টি TEDTalk দেখার পর, ও লিওনার্দো দা ভিঞ্চি হতে চায় (হাসি) (করতালি) এইটা খুবই সহজ জিনিস এই সেই জিনিস যেটা আমি এখন তৈরী করছি একে বলা হয় সোল্স: স্ব-সঙ্গঠিত শিক্ষার পরিবেশ| আসবাবপত্রের নকশা তৈরী হয়ে গেছে যেন শিশুরা বিশাল সব শক্তিশালী পর্দার সামনে বসতে পারে, শক্তিশালী ব্রডব‍্যন্ড সংযোগ, কিন্তু দলগতভাবে ওরা যদি চায় তাহলে ওরা 'দিদা ক্লাউড'এ কল করতে পারে এই হচ্ছে নিউক‍্যাসলে একটা 'সোল' এই মধ্যস্থতাকারি একজন ভারতীয়, তো আমরা এভাবে কদ্দুর যেতে পারি? এই শেষ ছোট্ট একটা কথা বলে শেষ করব মে মাসে আমি তোরিনো গেছিলাম আমার ১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের দল থেকে সবগুলো শিক্ষককে ভাগিয়ে দিলাম আমি কেবল ইংরেজী বলতে পারি, আর ওরা শুধু ইতালিয়ান বলে, সুতরাং আমাদের যোগাযোগের কোন উপায় ছিল না| আমি ব্ল‍্যাকবোর্ডে ইংরেজি প্রশ্ন লেখা শুরু করলাম বাচ্চারা সেটার দিকে তাকিয়ে বলল, "কী?" আমি বললাম, "যাইহোক, এইটা কর" ওরা লেখাটিকে গুগলে টাইপ করল, ইতালিয়ান ভাষায় অনুবাদ করে নিল, এবং ওরা ইতালিয়ান ভাষার গুগলে ফিরে গেল ১৫ মিনিট পর ... পরবর্তী প্রশ্ন: কোলকাতা কোথায়? এই প্রশ্নের জন‍্য ওরা মাত্র ১০ মিনিট সময় নিল এরপর আমি বেশ কঠিন একটা প্রশ্ন দিয়ে দেখলাম| পীথাগোরাস কে ছিলেন, তিনি কী করেছিলেন? কিছুক্ষণের জন‍্য নীরবতা, তারপর ওরা বলল, "আপনি বানান ভুল লিখেছেন এইটা হবে পিতাগোরা (Pitagora) এবং এরপর, ২০ মিনিটের মধে‍্য, ওদের পর্দায় সেই সমকোনী ত্রিভুজ উদয় হওয়া শুরু করল এই ঘটনা আমার শিরদাঁড়ার মধে‍্য দিয়ে কাঁপুনি বয়ে গেল| এরা সব ১০ বছর বয়সী শিশু লিখা: আরও ৩০ মিনিটের মধে‍্য এরা আপেক্ষিকতার সূত্রে পৌঁছাত। আর তারপর? (হাসি) (করতালি) সু.মি: তো আপনারা জানেন কী ঘটেছিল? আমার ধারণা আমরা কেবলমাত্র হাতড়ে বেড়িয়েছি একটা স্ব-সঙ্গঠিত ব‍্যবস্থার মধে‍্য দিয়ে একটা স্বপ্রণদিত ব‍্যবস্থা এমন একটা ব‍্যপার যেখানে গঠনতন্ত্র উঠে আসে বাইরের কোন সক্রিয় মধ্যস্থতা ছাড়াই স্ব-সঙ্গঠিত ব‍্যবস্থা নতুন কিছুর উদ্ভবও দেখায়, যা আপনা থেকেই ঘটা শুরু হয় এই ব‍্যবস্থার মধে‍্য, যা হয়ত কখনই পরিকল্পনা করা হয়নি সেই জন‍্যই আপনারা এরকম প্রতিক্রিয়া দেখান, কারণ আপাতদৃষ্টিতে এগুলো অসম্ভব মনে হয় আমার মনে হয় আমি এখন একটা ধারণা করতে পারি -- শিক্ষা একটি স্ব-সঙ্গঠিত ব‍্যবস্থা, যেখানে শেখার বেপারটি একটি এর মধে‍্য থেকে উঠে আসা ঘটনা এটি গবেষণার মাধ‍্যমে প্রমাণ করতে আরও কয়েক বছর লেগে যাবে, কিন্তু আমি চেষ্টা করব কিন্তু এরই মধে‍্য, একটি আরেক পদ্ধতি আছে একশ কোটি শিশু, আমাদের দরকার ১০ কোটি সংস্থাপক ব‍্যক্তি -- এই পৃথিবীতে তার থেকে অনেক অনেক বেশি ব‍্যক্তি আছেন -- এক কোটি সোল্স, ১৮,০০০ কোটি ডলার আর ১০ বছর আমরা সবকিছু বদলে ফেলতে পারি| ধন‍্যবাদ (করতালি) কল্পনা করুন আপনি চাচ্ছেন-একটি উপহার আপনি আপনার হয়ে তা কল্পনা করে দিচ্ছি। তেমন বড় না- একটি গলফ বলের আকারের সমান। এখন একে কল্পনা করুন উপহারের মোড়কে মোড়ানো অবস্থায়। অবশ্য তার আগে আমি আপনাকে দেখাচ্ছি কি আছে ভেতরে, আমি আপনাকে বলবো, এটি আপনার জন্য অবিশ্বাস্য কিছু কাজ করবে। এটি আপনার পুরো পরিবারকে এক সাথে করবে। আপনি ভালবাসা এবং আপনার মূল্য অনুভব করবেন যেমনটি আগে কখনো বোধ করেননি এবং বন্ধু এবং সহযোগীদের সাথে পুণর্মিলিত হবেন যাদের কাজ থেকে বহু বছরে কোন সাড়া পাননি। ভক্তি এবং শ্রদ্ধাবোধ আপনাকে অভিভূত করবে। এটি আপনার জীবনের প্রাধান্যগুলোকে পুণর্মূল্যায়ন করবে। আপনার ইন্দ্রিয়গুলোকে আধ্যাত্মিকতা ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে নতুন সংজ্ঞা দেবে। আপনার দেহে নতুন এক চেতনা এবং বিশ্বাসের জন্ম হবে। আপনা জীবনীশক্তি আপনার শব্দকোষ প্রসারিত হবে, নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হবে, এবং আপনার জীবনযাত্রা হবে পূর্বের তুলনায় স্বাস্থ্যকর। এবং ভাবুন আপনার থাকবে আট সপ্তাহের একটি ছুটি, যেসময়ে আপনাকে আসলেই কিছু করতে হবে না। আপনি অগণিত ভোজ করবেন, ট্রাকভর্তি ফুলেরা আসবে, মানুষ আপনাকে বলবে, " তোমাকে অনেক ভাল দেখাচ্ছে। তুমি কি কোন কিছু করেছো?" এবং আপনি পাবেন ভাল ঔষুধের অসীম যোগান। আপনি প্রতিদ্বন্দিত এবং উদ্বুদ্ধ হবেন, হবেন প্রণোদিত এবং নম্র। আপনার জীবন নতুন এক অর্থ পাবে, পাবে শান্তি, স্বাস্থ্য, প্রশান্তি, সুখবোধ, নির্বাণ। মূল্য? ৫৫ হাজার ডলার, এবং যা আসলেই এক অবিশ্বাস্য চুক্তি। এতক্ষণে আপনারা অস্থির হয়ে উঠছেন কি তা জানার জন্য এবং কোথায় পাওয়া যায় জানতে। আমাজন সাইটে কি তা পাওয়া যায়? এর উপরে কি অ্যাপলের লোগো লাগানো আছে? অপেক্ষারতদের কি কোন তালিকা রয়েছে? আসলে না, এই উপহারটি আমার কাছে আসে প্রায় পাঁচ মাস আগে। এটি দেখতে অনেকটা এরকম ছিল যখন তা মোড়কে আমার কাছে আসে-- ততটা সুন্দর নয়। এবং এটি, এবং তারপর এটি। এটি ছিল মূল্যবান দুর্লভ রত্ন-- একটি ব্রেন টিউমার, হেমাঞ্জিওব্লাস্টোমা-- এমন এক উপহার যা খালি দিতেই থাকে। এবং এখন আমি যদিও ঠিক আছি, আমি চাই না আপনারা এই উপহারটি পান। আমি নিশ্চিত নই যে আপনারা উপহারটি চাইবেন। কিন্তু আমার ক্ষমতা থাকলে আমি আমার অভিজ্ঞতা পরিবর্তন করতাম না। এটি গভীরভাবে আমার জীবনকে পরিবর্তন করেছে এমনভাবে যা আমি আশা করিনি যেসব আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। তাই পরবর্তীতে যখন আপনি কোন অপ্রত্যাশিত, অনাকাংখিত এবং অনিশ্চিত অবস্থার সম্মুখীন হবেন, বিবেচনা করে দেখবেন হয়তো তা কোন উপহার। (হাততালি)