label
stringclasses 6
values | text
stringlengths 1.57k
117k
| is_valid
bool 1
class |
---|---|---|
rn | এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী আমাদের চারপাশে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন গাছ-গাছালি লতাপাতা ফলমূলে রয়েছে অনন্য ভেষজগুণ। যা আধুনিক যুগের অনেক রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি ওষুধের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কার্যকর। তেমনিভাবে রয়েছে ঝুলে যাওয়া ত্বক। চোখের তলায় বলিরেখা, নেতিয়ে পড়া বিবর্ণ চুলকে পুরনো লাবণ্য ফিরিয়ে দেয়ার জাদুকরী প্রাকৃতিক শক্তিও লুকিয়ে আছে গাছগাছালি, শিকড়-বাকড়ে।আমাদের আগের প্রজন্মের নারীরা রূপচর্চা করতেন এসব প্রাকৃতিক ভেষজগুণসম্পন্ন গাছ, লতা-পাতা, ফুল-ফল দিয়ে।এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী আমাদের সবারই সুপরিচিত একটি ভেষজ উপাদান।ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে এলোভেরার ব্যবহার পাওয়া যায় সেই খৃীষ্টপূর্ব যুগ থেকেই। alovera তখন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এলোভেরার অনেক গুণের কথা আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে ত্বকের দাগ দূর করার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অনন্য।মুখ এবং ত্বকের দাগ দূর করতে এলোভেরা বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরিন দুইভাবেই কাজ করে।এলাভেরার টনিক বানাতে হলে আপনাকে এলোভেরার কচিপাতা যোগার করতে হবে। এজন্য আপনি স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করতে পারেন, অথবা বাড়িতেই টবে লাগাতে পারেন এলোভেরার চারা।প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পান করলে, প্রাকৃতিক ভাবেই পেতে পারেন দাগহীন ত্বক। ব্রণ এবং সানবার্ণ থেকেও এটি আপনাকে মুক্তি দেবে। প্রাচীন কালেও রানী ক্লিওপেট্রা, সম্রাট আলেকজান্ডার, বাদশাহ সোলায়মান, নেপোলিয়ন এবং ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মত বিখ্যাত মানুষেরা অ্যালোভেরা ব্যবহার করতেন এবং মহাত্মা গান্ধী।ঘৃতকুমারী গাছটা দেখতে অনেকটাই কাঁটাওয়ালা ফণীমনসা বা ক্যাকটাসের মতো। অ্যালোভেরা ক্যাক্টাসের মত দেখতে হলেও, ক্যাক্টাস নয়। এটা একটা লিলি পরিবারের উদ্ভিদ যেমন পেঁয়াজ ও রসুন। এটা পেঁয়াজ বা শাপলা-পদ্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতাগুলো বর্শা আকৃতির লম্বা, পুরু ও মাংসল। পৃথিবীতে প্রায় ২৫০ রকমের অ্যালোভেরা জন্মে, তবে মাত্র দু’রকমের অ্যালো বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয়।ঘৃতকুমারী কোষ্ঠকাঠিন্য ও খুশকির ভালো ওষুধ।গোটা বিশ্ব জুড়ে এই গাছের জুস বা রস ক্যাপসুল বা জেলের আকারে বিক্রি হচ্ছে। এই জেলের ভেতরে আছে বিশটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা থেকে বিজ্ঞানীরা বলেন প্রাণের সৃষ্টি। মেছতা দূর করার আরেকটি উপাদান হলো এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী পাতার জেল। এই জেলের রয়েছে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করার ক্ষমতা। ডায়েরিয়া সারাতেও ঘৃতকুমারীর রস দারুণ কাজরে।ঘৃতকুমারীতে রয়ছে ২০ রকমের খনিজ। মানবদেহের জন্য যে ২২টা এমিনো এসিড প্রয়োজন তার ৮ টি এতে বিদ্যমান। এছাড়াও ভিটামিন A, B1, B2, B6, B12, C এবং E রয়েছে। ঘৃতকুমারী পাতার রস, ২-৪ চামচ করে দিনে একবার খেলে যকৃতের ক্রিয়া বৃদ্ধি করে৷ একজিমা ঘৃতকুমারী শাঁস প্রতিদিন নিময়ম করে কয়েক সপ্তাহ লাগালে চুলকানি খেকে আরাম পাওয়া যায়৷কোমরে ব্যথা হলে শাঁস অল্প একটু গরম করে মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায় ৷ মিসরীয় লোককাহিনী থেকে জানা যায়, সৌন্দর্যবর্ধন করে যে প্রকৃতিকন্যা তার লাতিন নাম এলোভেরা ওরফে ঘৃতকুমারী। ঘৃতকুমারী পাতার রস যকৃতের জন্য উপকারী।বাংলায় নাম তরুণী ঔষধি গাছ হিসারে এর অনেক কদর। তবে বাংলার মানুষ একে ঘৃতকুমারী নামেই বেশী চিনে। এর আর একটি নাম আছে তা হলো কুমারী ।দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণে ঘৃতকুমারীর রস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ঔষধির কাজ করে। ঘৃতকুমারীর রস হাড়ের সন্ধিকে সহজ করে এবং দেহে নতুন কোষ তৈরি করে। এছাড়া হাড় ও মাংশপেশির জোড়াগুলোকে শক্তিশালী করে।এক চামচ ইসবগুলের ভুসি ও দুই চামচ অ্যালোভেরার রস পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেয়েই দেখুন। বাড়তি মেদ পালানোর পথ পাবে না। দূর হবে বাতের ব্যথাও। অ্যালোভেরার রস মাথার তালুতে ঘষে এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। চুল গজাবে। মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বকের দাগ দূর করে ত্বক করে তুলবে আরও উজ্জ্বল।ঘৃতকুমারীর শরবতঃ উপকরণ: ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা ১টি, পানি ১ গ্লাস, মধু ১ চা-চামচ। প্রণালি: ঘৃতকুমারীর ভেতর থেকে শাঁস নিয়ে পানি ও মধু দিয়ে মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। তারপর গ্লাসে পরিবেশন। এই শরবত খেলে ত্বক ভালো হবে। পেট পরিষ্কার থাকবে।শীতকালে খুশকি দূর করতে মেহেদিপাতার সঙ্গে ঘৃতকুমারী, অ্যালোভেরা মিশিয়ে লাগাতে পারেন চুলে। | false |
rn | টিভির রিমোট জোরে জোরে টিপি, চড় থাপ্পড় দিই, তবুও নতুন ব্যাটারি লাগানোর কথা মাথায় আসে না ১। আমার মেয়ে, যাহরা তাবাসুম রোজা। (পরী) ২। নারী স্বাধীনতা হাস্যকর একটা ব্যাপার । আজ থেকে ৫০ বছর আগে বা এখন নারী স্বাধীনতা কতটা তফাত হয়েছে ! এখন অনেক বেশী স্বাধীন, মিলিটারিতে যাচ্ছে, হিমালয়ে উঠছে, ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে লেখা-পড়া শিখছে, চাকরি করছে ! তবু বুকে হাত দিয়ে কোনো মেয়ে বলতে পারবে না, সত্যি কতটা স্বাধীনতা পেয়েছে তারা । সত্য কথা হলো, ছেলেরা যতটা ছাড়বে ঠিক ততটাই জমি পাবে তারা । ৩। এক চোর গভীর রাতে এক বাড়িতে চুরি করতে গেলো... ওখানে আলমারি খুলতে গিয়ে দেখরো দরজার একপাশে নিচে লেখা..."এই বাটন টিপলে আলমারি খুলে যাবে।" চোর যখনি বাটনটা টিপল... তখনি সাইরেন বাজল... আর পুলিশ এসে চোরকে ধরে নিয়ে গেল।যাওয়ার সময় চোরটা বলতে লাগলো, "দুনিয়া থেকে মনুষ্যত্ব উঠে গেছে... কাউকে বিশ্বাস করা যায় না !!!!!" ৪। ‘কান্না পেলে কাঁদতে হয়’।‘কান্না’ একটি ভাষা।যদি বলি ‘মেয়েটি কাঁদছে’, সাধারণ একটি বাক্যের মতোই সবাই একবাক্যে বুঝে নিচ্ছে, মেয়েটি কান্না নামক একটি সাধারণ প্রক্রিয়ার ফলাফল প্রকাশ করছে কান্নার মাধ্যমে। হয়তো কেউ চিমটি কেটেছে বা মেরেছে, তাই সে কাঁদছে। হতে পারে ‘ভেউ ভেউ’ করে কাঁদছে অথবা নীরবে কাঁদছে এবং চোখ দিয়ে টলটল পানিও ঝরছে, যাকে আমরা অশ্র“ বলি। যদি বলি ‘কাঁদছে মেয়ে কষ্ট পেয়ে’, কোন পরিবর্তন কি চোখে পড়ে? ‘তোমরা যদি/ মারতে আসো/ কাঁদবো আমি/ ভ্যাঁ- করে’ ।আকাশ তো আকাশই, বুকের মধ্যেও কি আকাশ থাকে! সেটা কেমন আকাশ? আকাশের প্রতিরূপ? কিভাবে? এই আকাশের মতোই ওই আকাশটাতেও কি তেমনি যা কিছু থাকার কথা, সব থাকে? ওখানে মেঘও জমে, কীভাবে? কিসের মেঘ? তা আবার গলে গলে ঝরেও! কেন ঝরে? কোথায় ঝরে? ৫। এক বিল্ডিংএ আগুন লাগার পর সবাইকে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার কাজ চলছে......হেলিকপ্টারের রশিতে দশ জন লোক ঝুলে আছেন। নয়জন সাধারণ মানুষ ও একজন নেতা। তো ওজন বেশি হয়ে যাওয়ায় হেলিকপ্টারের ড্রাইভার বলল..."ওজন বেশি হয়ে গেছে একজনকে রশি ছেড় দিতে হবে" কিন্তু কেউ রশি ছাড়লো না।তখন নেতা বলল, "ঠিক আছে আমি দেশের জন্য আমার জীবন উত্সর্গ করলাম"এই কথা শুনে বাকি নয়জন হাতে তালি দিতে গিয়ে নিচে পড়ে গেলো।আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ গুলোও ঐ নয়জন লোকের মত.... ৬। মেয়েটি চলে যাচ্ছিল- ছেলেটি আবার ডেকে বলল- শুনুন আমাকে একটা বার্গার আর কোক খাওয়াবেন প্লীজ ? খুব ক্ষুধা লাগছে । মেয়েটি ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে ছেলেটির দিকে বাড়িয়ে দিল । ছেলেটি হেসে বলল- আমি আপনার কাছে টাকা চাইনি- বলেছি বার্গার আর কোক খাওয়াবেন কিনা । মেয়েটি বলল- আচ্ছা, চলুন । তারা একটি ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে বসল । বাইরে কি গরম ! আর দোকানের ভেতরটা বরফের মতন ঠান্ডা ! বেশীর ভাগ ফাস্টফুডের দোকানে ইংলীশ গান বাজে । কিন্তু এই দোকানটাতে বাজছে বাংলা গান - পথ ছাড়ো ওগো শ্যাম কথা রাখো মোর এমন করে তুমি আঁচল ধোরো না এখনি যে শেষ রাত হয়ে যাবে ভোর ! ( আহা, কি মিনতি ! ) মেয়েটি একটা বার্গার আর কোক ছেলেটির সামনে রেখে বলল খেয়ে নিন । ছেলেটি বলল- আপনি কিছু খাবেন না ? মেয়েটি বলল- আমি বাসা থেকে খেয়ে বের হয়েছি । ছেলেটি বার্গার খেতে খেতে বলল- দেখুন ওপাশের কোনার টেবিলটায় দু'টা ছেলে মেয়ে বসে আছে- তারা টেবিলের নীচে পা ঘষাঘষি খেলছে । মেয়েটি বলল- চুপ করে খানতো । খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না । সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১১ | false |
hm | গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও বইমেলা রহস্য ঝাকানাকা বাদামের খোসা ভাঙতে ভাঙতে বললেন, "আপনি ঠিক জানেন তো? নাকি শুধুমুধু সাত টাকা খরচ করালেন আমাকে দিয়ে?" দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি বুক ঠুকে বললেন, "একেবারে ঘোড়ার মুখ থেকে খবর এনেছি স্যার! বদরু খাঁ এ মেলাতেই আছে।" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বললেন, "এই মেলায় কমসে কম হাজার পাঁচেক লোক আছে এখন। সন্দেহের তালিকাটা একটু বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে না?" এই বলে কচমচিয়ে বাদাম খান তিনি। কিংকু চৌ...[justify] ঝাকানাকা বাদামের খোসা ভাঙতে ভাঙতে বললেন, "আপনি ঠিক জানেন তো? নাকি শুধুমুধু সাত টাকা খরচ করালেন আমাকে দিয়ে?" দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি বুক ঠুকে বললেন, "একেবারে ঘোড়ার মুখ থেকে খবর এনেছি স্যার! বদরু খাঁ এ মেলাতেই আছে।" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বললেন, "এই মেলায় কমসে কম হাজার পাঁচেক লোক আছে এখন। সন্দেহের তালিকাটা একটু বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে না?" এই বলে কচমচিয়ে বাদাম খান তিনি। কিংকু চৌধারি সলজ্জ কণ্ঠে বলেন, "সেজন্যেই তো আপনাকে নিয়ে এলাম স্যার। জনা পাঁচেক হলে তো আমিই পারতাম। পঞ্চাশ জন হলেও সমস্যা হতো না। কিন্তু পাঁচ হাজারের ভেতর থেকে একজনকে বার করা আমার পক্ষে একটু মুশকিল।" ঝাকানাকা বলেন, "বটে? তা, পাঁচজন থাকলে আপনি কিভাবে কাজ করতেন? আপনার মোডুস অপেরান্ডি একটু শুনে দেখি?" কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, আমার কর্মপদ্ধতি তো আপনার কাছ থেকেই শেখা! কষে প্যাঁদাতাম পাঁচটাকেই!" ঝাকানাকা বলেন, "তারপর?" কিংকু চৌধারি বলেন, "চারজন স্বীকার করে ফেলতো যে তারাই বদরু খাঁ, ছদ্মবেশে মেলায় এসেছে গা ঢাকা দেবার জন্যে। একজন স্বীকার করতো না। ওটাই হচ্ছে আমাদের আসল পাজি বদরু খাঁ!" ঝাকানাকা উদ্ভাসিত মুখে বলেন, "আপনার উন্নতি হচ্ছে আমার সাথে মিশে মিশে। ব্রাভো!" কিংকু চৌধারি লাজুক মুখে বাদাম ভাঙেন। ঝাকানাকা বলেন, "এই সাত টাকা কিন্তু আমি বিল করবো। টিকিটের দু'টাকা আর বাদামের পাঁচ টাকা।" কিংকু চৌধারি বললেন, "নিশ্চয়ই স্যার, নিশ্চয়ই! ... কিন্তু আমার খুব কৌতূহল হচ্ছে, এতো লোকের ভেতর থেকে বদমাশ বদরুকে কিভাবে ছেঁকে বার করবেন তা জানার জন্যে!" ঝাকানাকা বললেন, "আজ আপনিই কিছু গোয়েন্দাগিরি করুন না। আমি বরং আপনাকে সহযোগিতা করি।" কিংকু চৌধারি খুশি হয়ে বললেন, "ঠিকাছে স্যার! ... যতটা কঠিন ভাবছিলাম, ততটা কঠিন বোধহয় নয়! যেমন ধরুন, বদরু খাঁ ছয় ফুটের ওপরে লম্বা!" ঝাকানাকা বিরসমুখে বাদাম খেতে খেতে বললেন, "অ্যাতো অ্যাতোদিন ধরে বদরুর পেছনে ছুটে ছুটে এ-ই শিখলেন? জানেন না সে ছদ্মবেশে কত পাকা একটা বদমাশ? পাঁচফুট বা সাতফুট লম্বা কোন লোক বা মেয়েলোক সেজে থাকা তার জন্যে কোন ব্যাপারই না। চাইলে সে ল্যাম্পপোস্টের ছদ্মবেশও ধরে থাকতে পারে!" কিংকু চৌধারি একটু মিইয়ে যান। বলেন, "স্যার লবণ খাবেন?" ঝাকানাকা তপ্ত কণ্ঠে বলেন, "আপনার নুন খেলেও গুণ গাইতে পারবো না ...।" কিংকু চৌধারি বলেন, "না স্যার, বলছিলাম বাদামের সাথে লবণ খাবেন কি না।" ঝাকানাকা বলেন, "ওহ, আচ্ছা ... হুমম! আসুন তার আগে কিছু বই দেখা যাক। বইমেলায় এসে বই না দেখে বাদাম খাওয়া ঠিক না।" কিংকু চৌধারি প্রথম স্টল গুলবুলিস্তান প্রকাশনীতে হানা দ্যান, "আপনারাই তো বকর বিন আবু কাশেমের "বিকিনি নয়, বোরখা" উপন্যাসটি প্রকাশ করেছেন এবার?" স্টলদার ভদ্রলোক পান চিবাতে চিবাতে বলেন, "জ্বে। তবে এখন তো পাবেন না। অষ্টম মুদ্রণের কাম চলতে আছে, কাইলকে বিকালে একবার আইসেন।" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বললেন, "আপনি অ্যাতো কিছু জানেন কিভাবে?" কিংকু চৌধারি উদ্ভাসিত মুখে বলেন, "কী যে বলেন স্যার, সেই ছোটবেলা থেকে বকর বিন আবু কাশেমের পাৎলা পাৎলা বই পড়ে আসছি ...।" ঝাকানাকা সন্দিগ্ধ চোখে একবার দ্যাখেন শুধু কিংকু চৌধারিকে, কিছু বলেন না। কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, যদি গোলাগুলি করতে হয়, তাহলে তো বিপদ। অ্যাতো অ্যাতো মানুষ মেলায় ...।" ঝাকানাকা ক্রুর হাসেন। বলেন, "তাকে একবার শনাক্ত করতে পারলে গোলাগুলি নিয়ে আর চিন্তা নেই। পিটিয়ে তক্তা করবো ব্যাটাকে, বন্দুক পিস্তল উঁচিয়ে ধরার আগেই!" কিংকু চৌধারি বলেন, "প্রত্যেকটা লোকের সাথে কথা বলে বাজিয়ে দেখা তো মুশকিল স্যার। বদরু খাঁকে আমরা ধরবো কিভাবে?" ঝাকানাকা মৃদু হাসেন, নিমীলিত নয়নে বাদাম চিবান কিছুক্ষণ। তারপর বলেন, "বদরু খাঁ বেশ ভালোমতোই জানে যে তাকে এখানে খোঁজ করা হবে। কাজেই হেঁজিপেঁজি কোন বইয়ের ক্রেতা সেজে বেরোতে গেলে তার ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। আমার ধারণা, সে এখানে লেখক বা লেখিকা সেজে কোথাও ঘাপটি মেরে আছে।" কিংকু চৌধারি একটু গুম মেরে গেলেন। বললেন, "স্যার, সন্দেহজনক লোকের লিস্ট তো খুব একটা ছোট হলো না। মেলায় কমসে কম শ'পাঁচেক লেখকলেখিকা আছেন এখন।" ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, "নয়গুণ কাজ কমিয়ে দিলাম আপনার, তারপরও ঘ্যান ঘ্যান করছেন আমার সুন্দরী সেক্রেটারি মিস মিলির মতো। ওর সঙ্গে মিশে মিশে আপনার দারোগাপনা ক্রমশ কমে যাচ্ছে, খিটখিটে মহিলাদের মতো হয়ে উঠছেন আপনি।" কিংকু চৌধারির মুখটা একটু বিষন্ন হয়ে পড়ে। ঝাকানাকা বলেন, "আপনি কি লেখক আর ক্রেতার মধ্যে তফাৎ করতে পারেন?" কিংকু চৌধারি এবার একটু খুশি হন। খুশি খুশি মুখে বলেন, "তা পারি স্যার। লেখক থাকেন স্টলের ভেতরে, নিজের বইয়ে অটোগ্রাফ দিতে থাকেন। আর ক্রেতা স্টলের বাইরে দাঁড়িয়ে সেই বইয়ে অটোগ্রাফ নিতে থাকেন।" ঝাকানাকা মৃদু হাসেন। "হুমম! কিন্তু কিছু লেখক আছেন যারা সবসময় অটোগ্রাফ দেন না। তারা বাইরে কোথাও জটলা পাকিয়ে ভাব ধরেন আর বিড়ি পান করেন।" কিংকু চৌধারি বললেন, "আমরা দুই পদের লেখককেই বাজিয়ে দেখতে পারি স্যার। সন্দেহজনক মনে হলে তাদের গালে লাল কালি দিয়ে একটা ঢ্যাঁড়া কেটে চালান করে দিতে পারি। পরে থানায় নিয়ে গিয়ে আচ্ছা করে পেঁদিয়ে ...।" ঝাকানাকা হাসেন মুহাহাহাহা করে। বলেন, "আপনার এই আচরণ দেখলে বাকি লেখকরাই পেঁদিয়ে আপনার খাল তুলে দেবে। হুঁশিয়ার! বদরু খাঁকে চিহ্নিত করতে হবে একবারে, অনেকের থেকে তাকে পেঁদিয়ে বাছাই করার সুযোগ আপনি পাবেন না। আপনার আচরণে সন্দেহজনক কিছু থাকলে সে আবারও ঘাপটি মারবে, হয়তো মিশে যাবে বাকি সাড়ে চার হাজার ক্রেতার ভিড়ে। তখন অনুসন্ধানের কাজটা মাটি হবে। কাজেই হুঁশিয়ার!" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে বললেন, "কিন্তু স্যার, আমাদের ছদ্মবেশও তো বেশ পাকা!" ঝাকানাকা বললেন, "হ্যাঁ! ভুলে যাবেন না, আপনি ফকিরুন্নেসা নুন কলেজের ছাত্রীর ইউনিফর্ম গায়ে দিয়ে ছুকরি সেজে হাঁটছেন। দারোগার আচরণ আপনাকে মানায় না। আপনাকে হতে হবে চপলা তন্বী, চকিতহরিণপ্রেক্ষণা, লীলালাস্যে এদিক ওদিক বই দেখে বেড়ান।" কিংকু চৌধারি বেজার হয়ে বললেন, "কিন্তু স্যার, আমার মতো ছয়ফুট লম্বা পালোয়ান লোকের গায়ে এই ইউনিফর্ম ঠিক মানাচ্ছে না। তন্বী সেজে থাকতে বেজায় কষ্ট হচ্ছে আমার। তাছাড়া আমার শরীর হচ্ছে স্যার যাকে বলে রোমশ। চপলা তন্বীদের কি স্যার আমার মতো গা ভর্তি লোম থাকে?" ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে বললেন, "তা তো জানি না। থাকতেও পারে। আপনি আপনার কার্ডিগানের হাতা না গোটালেই হবে।" কিংকু চৌধারি ঝাকানাকাকে আড়চোখে দেখে বললেন, "স্যার, আপনার ছদ্মবেশটাও কিন্তু ঐ যাকে বলে সন্দেহজনকই হয়েছে। আজকাল মহিলারা ঠিক এভাবে শাড়ি পরেন না।" ঝাকানাকা বাদাম চিবাতে চিবাতে বললেন, "আপনি জানলেন কিভাবে এতকিছু?" কিংকু চৌধারি লজ্জানম্র হাসি দেন একটা। বলেন, "মিস মিলির কাছ থেকে মাঝে মাঝে টুকটাক শিখেছি স্যার ... উনি এ ব্যাপারে বেশ নলেজ রাখেন দেখলাম ...!" ঝাকানাকা বললেন, "রাখাই উচিত, তিনি যেহেতু শাড়িটাড়ি পরেন। ইন ফ্যাক্ট, আমার শাড়িটার কুচি ঠিক করতে পারছিলাম না, সেটা মিস মিলিই কুচিয়ে দিয়েছে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "কিন্তু ফুলহাতা ব্লাউজ তো আজকাল প্রায় কেউই পরেন না স্যার!" ঝাকানাকা বিরক্ত হয়ে বললেন, "আহ, শীতের দিনে একজন ভদ্রমহিলা ফুলহাতা ব্লাউজ পরতেই পারেন! অত ত্যানা প্যাঁচান ক্যানো!" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে বলেন, "না মানে, বলছিলাম যে, আমরা কি জিন্স আর টি-শার্ট পরে আসতে পারতাম না?" ঝাকানাকা কটমটিয়ে তাকিয়ে থেকে বললেন, "মেয়েদের জিন্সের প্যান্ট আপনাকে ফিট করবে না, আমাকেও না। আর টি শার্ট পরলে আপনার লোমগুলির কী ব্যাখ্যা দেয়া যেতো?" কিংকু চৌধারি বলেন, "ওহহো, তাই তো! কিন্তু স্যার, আমরা কেন মেয়ে সাজলাম?" ঝাকানাকা বললেন, "লেখকদের একটু ইয়ে থাকে মেয়েদের ব্যাপারে। ওখানেই আসল লেখক আর নকল লেখকের ব্যাপারটা আলাদা করা যায়। খাঁটি লেখক আমাদের দেখলে একটু নখড়ামো করতে বাধ্য। কিন্তু বদরু খাঁ তা করবে না। ওখানেই ফস্কা গেরো, আর তার পরপরই বজ্রআঁটুনি!" কিংকু চৌধারি সন্দিগ্ধ কণ্ঠে বললেন, "কিন্তু স্যার, ছয়ফুট লম্বা ঘাড়ে-গর্দানে দুইজন মহিলাকে দেখেও কি লেখকরা অমন করবেন?" ঝাকানাকা মুচকি হেসে বললেন, "লেখকদের ব্যাপারে আপনার ধারণা দেখছি নিতান্তই নাবালকোচিত! আমার গোঁফটা না কামিয়ে আসলেও চলতো, বুঝলেন?" কিংকু চৌধারি বিড়বিড় করে বললেন, "কী ঘেন্না, কী ঘেন্না ...!" চলতে চলতে একটা স্টলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন ঝাকানাকা। স্টলের ভেতর এক সুদর্শন তরুণ লেখক ঘ্যাঁচঘ্যাঁচ করে বইয়ে সই করছেন। ঝাকানাকা বললেন, "এ ছোকরাকে তো লেখক পাড়ায় আগে দেখিনি কখনো! দেখুন তো ভালো করে, বদরুর মতো মনে হয় কি না?" কিংকু চৌধারি বললেন, "না স্যার, ইনি নবীন ঔপন্যাসিক অমিত আহমেদ, এবারই প্রথম উপন্যাস বেরিয়েছে, গন্দম!" ঝাকানাকা বললেন, "অ্যাক্ট ন্যাচারালি। যান, ওর একটা বই কিনে সই নিয়ে আসুন।" কিংকু চৌধারি যথাসম্ভব লীলালাস্যে এগিয়ে গিয়ে একটা বই কিনে বাড়িয়ে ধরলেন অমিত আহমেদের দিকে। "অটোগ্রাফ প্লিজ!" ছয়ফুট লম্বা "ফকিরুন্নেসা নুনের ছাত্রী"র বাজখাঁই এই অনুরোধ শুনে অমিত আহমেদ ঘাবড়ে গেলেন, কাঁপা কাঁপা হাতে বইটা নিয়ে বললেন, "কী নাম লিখবো?" কিংকু চৌধারি বললেন, "ইয়ে, লিখুন, মিলির জন্যে!" অমিত আহমেদ সই করে দিলেন। কিংকু চৌধারি বই নিয়ে ফিরে আসার পর ঝাকানাকা বললেন, "বটে? গন্দম নিয়ে যাচ্ছেন মিস মিলির জন্যে?" কিংকু চৌধারি বলেন, "কী করবো স্যার, মেয়ের নাম আর মাথায় আসছিলো না!" ঝাকানাকা গম্ভীর গলায় শুধু বললেন, "হুমম!" কিছুদূর এগোতেই একটা ফাঁকা জায়গা, সেখানে অনেকগুলি টিভি ক্যামেরা জটলা করছে, মাঝে ছোটখাটো মোটাসোটা এক গুঁফো ভদ্রলোক, মাইক হাতে অমায়িকমুখে বলছেন, "এখন যাঁর সাথে কথা বলবো, তিনি লেখেন সচলায়তন নামের এক অলীক স্থানে, যেখানে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল লেখকদের সমাগম ঘটে প্রতিনিয়ত ... কথা বলছি আরিফ জেবতিকের সাথে।" স্বাস্থ্যবান ভুঁড়িওয়ালা এক যুবক সহাস্যে কথা বলতে থাকেন গুঁফো ভদ্রলোকের সাথে। কিংকু চৌধারি ফিসফিস করে বলেন, "ব্যাটার গোঁফটা দেখেছেন? উচ্চতা কমিয়ে এনেছে ফুটখানেক, কিন্তু গোঁফটা ছাঁটতে ভুলে গেছে তাড়াহুড়োয়!" ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে বললেন, "উনি লুৎফর রহমান রিটন! আপনি দেখছি লেখকপাড়ায় খুব একটা যাতায়াত করেন না! আমার তো বরং সাথের ঐ বিটকেলটাকে সন্দেহ হচ্ছে!" কিংকু চৌধারি বললেন, "কে, আরিফ জেবতিক? না স্যার, উনিও নামকরা ঔপন্যাসিক! এ বছর বেরিয়েছে "তাকে ডেকেছিলো ধূলিমাখা চাঁদ!" সচলায়তনে নিয়মিত লেখেন।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! ঐ বিটকেল ওয়েবসাইটটায়? শালারা কতদিন ধরে আমাকে লটকে রেখেছে, অ্যাক্টিভেট করার নামগন্ধ নেই! সেদিন একটা ছড়া লিখলাম, সেটা প্রথম পাতায় প্রকাশ করলোই না!" কিংকর্তব্যবিমূঢ় বললেন, "স্যার, চলেন আমরা মেয়ে সেজে সচলায়তনে ঢুকি! মেয়ে দেখলে ব্যাটাদের চিত্ত চুলবুল করতে পারে, তখন আমাদের অ্যাকাউন্ট সচল হয়ে যাবে!" ঝাকানাকা বিমর্ষ গলায় বললেন, "আরে মেয়ে সেজেই তো চেষ্টা করেছিলাম, লাভ হয়নি!" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে চুপ করে গেলেন। আমলকি প্রকাশনীতে ঢুকে কিছুক্ষণ ছড়ার বই আর হরতুকি প্রকাশনালয়ে ঢুকে কিছুক্ষণ ছবির বই ঘেঁটেঘুঁটে আবার মেলার পথে নামলেন দু'জন। ঝাকানাকা বললেন, "কবিদের আড্ডায় একটু যেতে হবে। ওখানে ঘাপটি মেরে থাকা সহজ। একটু টালটক্কর কথাবার্তা বলে কবি সেজে বসে পড়া যায়।" কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, শুনেছি কবিদের গায়ে বোঁটকা গন্ধ হয়। বদরু খাঁ কি ছদ্মবেশের সাথে ছদ্মগন্ধও ধারণ করতে পারে?" ঝাকানাকা বললেন, "গন্ধ কোন ব্যাপার নয়। সুগন্ধী স্প্রে যখন পাওয়া যায়, দুর্গন্ধী স্প্রেও পাওয়া যাবে। নাক নয়, চোখ আর কানকে কাজে লাগান।" কবিদের জটলার কাছে যেতেই তাদের মধ্যে একটা চিত্তচাঞ্চল্য ঘটে। জনৈক ফ্রেঞ্চকাট আর লুঙ্গির ওপর টিশার্ট পরা কবি অস্ফূটে বলে ওঠেন, "নারী!" একটা কলরব ওঠে, "নারী, নারী!" ঝাকানাকা থমকে দাঁড়ান। "বেশি কাছে যাওয়া যাবে না, এগুলো মনে হচ্ছে সত্যিকারের কবি। দেখুন তো ঠাহর করে, চেনা যায় কি না?" কিংকু চৌধারি বললেন, "তা যায় স্যার। এরা সব বৃদ্ধ শাইসু আর তার চ্যালাচামুন্ডা!" ঝাকানাকা বলেন, "হুমম! অন্য কবিদের জটলা চেক করে দেখতে হবে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "চলুন স্যার ওখানটায় যাই।" এরপর ঘন্টাখানেক ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন কবিদের আড্ডা পর্যবেক্ষণ করতে করতে দুই গোয়েন্দা ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। এক জটলায় মাহমুদ খাদি সবাইকে চা-ডালপুরি খাইয়ে উদাত্ত কণ্ঠে আবৃত্তি করছেন শৈশবের স্বরচিত কবিতা, অন্য কোণায় কবি রাসেল ডটডটডট মৃদু কণ্ঠে কবি বৃদ্ধ শাইসুর কবিতার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছেন, আরেক জটলায় মহিলা কবি ধনুপমা ভৈরবী ফিতা কেটে উদ্বোধন করছেন কবিতার বই "পিয়াল তরুর কোলে", আরেক কোণায় কবি হলুদ ঘোগ হাসিমুখে সবুজ ঘুড়া আর নীল ডাগদারের গল্প শোনাচ্ছেন এক ছিপছিপে বিশালবক্ষা তরুণীকে, তো আরেক প্রান্তে পুরনো দিনের বাঘা বাঘা কবিরা স্মৃতিচারণ করছেন পুরনো বইমেলার কথা। আর চতুর্দিকে বনবন পনপন করে ঘুরছে টেলিভিশন ক্যামেরা আর রেডিওর মাইক্রোফোন। হঠাৎ এক বিদঘুটে চেহারারা লোক এসে ঝাকানাকার পথরোধ করে দাঁড়ালো। "চ্যানেল হাটিকুমরুল থেকে আমি শাহনেওয়াজ মন্টু, বইমেলা থেকে সরাসরি রিপোর্ট করছি। এক্সকিউজ মি আপা, আপনি কী কিনলেন?" ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে বললেন, "আমি আমার বাচ্চার জন্য একটা ছড়ার বই খুঁজছি, কিন্তু পাচ্ছি না। এই বইমেলায় শুধু দুষ্টু দুষ্টু বড়দের কবিতার বই বেরিয়েছে, ছোট্টমণিদের জন্যে কিছু বেরোয়নি, জানেন?" শাহনেওয়াজ মন্টু বললেন, "একজন দর্শক আমাদের জানিয়েছেন এই বইমেলায় ছোট্টমণিদের জন্য কিচ্ছু বেরোয়নি! ... এবার কথা বলছি আপনার সাথে ... আপনার হাতে ওটি কার বই?" কিংকু চৌধারি মিহি গলায় বলেন, "অমিত আহমেদের গন্দম!" শাহনেওয়াজ মন্টু বললেন, "আমরা দেখতে পাচ্ছি তরুণীদের মধ্যে গন্দম ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ বেড়েই চলছে, নিশ্চয়ই ডাল মে কুছ কালা হায়! চ্যানেল হাটিকুমরুল থেকে শাহনেওয়াজ মন্টু, বইমেলা, ঢাকা!" এই বলে সে মাইক বন্ধ করে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় আরেকদিকে, পেছনে ক্যামেরা হাতে তাড়া করে একজন। ঝাকানাকা বললেন, "খুব সাবধান! আরো এক চক্কর মারতে হবে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "চলুন স্যার!" কিছুদূর এগিয়ে যেতেই ঝাকানাকা থমকে গেলেন। "দেখুন!" কিংকু চৌধারি বললেন, "কে স্যার? ... ওহ, উনি? লেখক মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী।" ঝাকানাকা বললেন, "সাপ্তাহিক কচুবনের সাহিত্য পাতার মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী?" কিংকু চৌধারি স্মিত মুখে বললেন, "স্যার, কচুবন বহুদিন হলো দৈনিক হয়ে গেছে। আগে সাপ্তাহিক ছিলো স্যার। ঐ যে, ঠ্যালার পর ঠ্যালা বের হতো আগে ... মজার মজার চুটকি থাকতো, হেঁ হেঁ হেঁ ...।" ঝাকানাকা গম্ভীর গলায় বললেন, "কিন্তু মেঘদুধের সাথে ওটা কে?" মেঘদুধ মুর্শিদাবাদীর পাশে এক মাঝারি উচ্চতার কুর্তাপরা ভদ্রলোককে দেখা যায়, তাঁর হাতে আবার একটি কলম। কিংকু চৌধারি বললেন, "হবে স্যার, কোন হোমড়াচোমড়া কবিসাহিত্যিক!" ঝাকানাকা বললেন, "খেয়াল করে দেখুন, মেঘদুধ ওনার জুতোর ফিতা বেঁধে দিচ্ছে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "তা দিতে পারে স্যার। বড় কবিসাহিত্যিকদের ফাইফরমাশ খাটা মেঘদুধ সাহেবের একটা হবি বলতে পারেন। লেখক হতে গেলে এগুলো একটু আধটু নাকি করতে হয়, উনি বলেন।" ঝাকানাকা বললেন, "করুক গিয়ে। কিন্তু অত হোমড়াচোমড়াই যদি হবে, তাহলে সঙ্গের লোকটাকে আমরা চিনি না কেন? অচেনা লোকের ফরমায়েশ কি মেঘদুধ খাটে?" কিংকু চৌধারি চমকে উঠে বললেন, "তাই তো!" ঝাকানাকা এক মূহুর্ত দেরি করেন না। চোখের পলকে শাড়ি হাঁটুর ওপর তুলে তীব্রবেগে ঝাঁপিয়ে পড়েন সেই কুর্তাপরা ভদ্রলোকের ওপর। আর শুরু হয় এক অশৈলী কান্ড! মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী এক পাশে সরে গিয়ে বক্তৃতা দেয়া শুরু করে, "দেখুন গুন্ডাদের কান্ড! তারা আক্রমণ করেছে বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় লেখক মুখতারুজ্জামান জুলিয়াসের ওপর! এরা সন্ত্রাসী, জাতির শত্রু। এদের চিনে রাখুন।" ওদিকে মুখতারুজ্জামান জুলিয়াসের ছদ্মবেশ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে ঝাড়া সাড়ে ছয়ফুট লম্বা এক মুশকো দৈত্য, যার শরীরে টগবগ করছে পেশী। এক হুঙ্কার ছেড়ে সে বলে, "তবে রে!" ঝাকানাকাও শাড়িপেটিকোটব্লাউজ ছুঁড়ে ফেলে হুঙ্কার দিয়ে বলেন, "তবে রে!" শুরু হয় এক ভীষণ হুটোপুটি। বইমেলার মাটি কেঁপে কেঁপে ওঠে তার তান্ডবে। মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলে। কিন্তু বেশিক্ষণ লড়াই চলে না। ঝাকানাকা বদরু খাঁ-র পেটে এক ভীষণ কনুইয়ের গুঁতো বসিয়ে দ্যান কর্সিকার মাফিয়াদের কাছে শেখা কায়দায়, আর বদরু খাঁ ঝাকানাকার ঘাড়ে কষায় এক ভীষণ কায়দার রদ্দা, যা কি না একমাত্র হনলুলুর এক গোপন মারকুটে সম্প্রদায়ই শুধু মারতে জানে। আর তার পরপরই সে উল্কার মতো ছুটে হারিয়ে যায় বইমেলার বাইরের আঁধারে। ঝাকানাকা টলতে টলতে উঠে দাঁড়ান। "শালা, ফস্কে গেলো ...!" মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী চেঁচাতে থাকে, "দেখুন, গুন্ডাদের কান্ড দেখুন। এরা হামলা করে মুখতারুজ্জামান জুলিয়াসের ওপর, দেখুন!" কিংকু চৌধারি গিয়ে কড়া গলায় ধমক দ্যান, "ইস্টুপিট, মুখতারুজ্জামান জুলিয়াস এগারো বছর আগে মারা গেছেন!" মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী চমকে ওঠে। "কিন্তু উনি যে বললেন ঐটা সাংবাদিকদের ষড়যন্ত্র ছিলো, উনি মরেন নাই!" ঝাকানাকা দাঁত কিড়মিড় করে বলেন, "মূর্খ!" কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, ব্যথা পেয়েছেন?" ঝাকানাকা বলেন, "আহ্লাদ পরে হবে, চলুন সরে পড়ি, ঐ দেখুন ক্যামেরা হাতে দৌড়ে আসছে সব! আন্ডারওয়্যার পরে সাক্ষাৎকার দেয়ার বড়ো হ্যাপা!" (সমাপ্ত) . . . গোয়েন্দা ঝাকানাকা! | Promote Your Page Too | false |
fe | ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন ও বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির আলো ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন ও বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির আলোফকির ইলিয়াস=============================================ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নির্বাচন শেষ হয়েছে। কনজারভেটিভ পার্টি আবারো সে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসছে। সেটাই অনুমান করেছিলেন পশ্চিমা বিশ্লেষকরা। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন ডেমোক্রেটরা ক্ষমতায় থাকে, তখন তারা পারতপক্ষে চায় ব্রিটেনে লেবার পার্টি ক্ষমতায় না আসুক! না কথাটা আমার নয়। তা একজন মার্কিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আমাকে বলেছিলেন। কারণ তখন আমেরিকার ‘চেক এন্ড ব্যালেন্স’ বিষয়টি নাকি সুবিধার হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করেছেন ব্রিটিশরা। বিজয়ের পর হাস্যোজ্জ্বল ক্যামেরন তার ভাষণে এ বিজয়কে সবার জন্য ‘মধুরতম বিজয়’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা এক জাতি, এক দেশ, অখণ্ড ব্রিটেন চাই। নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ক্যামেরনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ক্যামেরন।অন্যদিকে ব্রিটিশ লেবার পার্টিতে নেমে এসেছে হতাশার ছায়া। লেবার পার্টির নেতা এড মিলব্যান্ড পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি গভীর দুঃখ প্রকাশ ও হতাশা ব্যক্ত করে দলীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করেছেন লিব-ডেম নেতা ও উপ-প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ ও ইউকিপ নেতা নাইজেল ফারাজও।নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর ৬৫০টি আসনের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টি সবাইকে অবাক করে দিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ৩৩১টি আসন পেয়েছে। সরকার গঠনে তাদের প্রয়োজন ৩২৬ আসন। ২০১০ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি ৩০৭ আসন পেয়েছিল। অন্যদিকে লেবার পার্টি ২০১০ সালে ২৫৮টি আসন পেলেও এবার ২৩২টি আসন পেয়েছে। অন্যদিকে কনজারভেটিভদের জোটসঙ্গী উপ-প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (লিব-ডেম) শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছে। ২০১০ সালে তারা ৫৭টি আসনে জয় পেলেও এবার মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে তারা। ওই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পাওয়ায় লিব-ডেমের সঙ্গে জোট বেঁধে কনজারভেটিভ পার্টি জোট সরকার গঠন করে।ভোটের হিসাবে কনজারভেটিভরা ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে। লেবার পার্টি পেয়েছে ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট। এ ক্ষেত্রে দুই দলেরই ভোটের পরিমাণ বেড়েছে। লিবারেল ডেমোক্রেট ২০১০ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম মাত্র ৭ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে। নির্বাচনে মোট ৬৬ দশমিক এক শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। লিবারেল ডেমোক্রেটদের বেশিরভাগ ভোট কনজারভেটিভদের বাক্সে পড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। দল হিসেবে লেবার পার্টি হেরে গেছে। এই দলের বেশ কিছু দক্ষ এমপি পাস করেছেন। পাস করেছেন বাংলাদেশি ব্রিটিশ তিনজন এমপি। রোশনারা আলী, রূপা হক ও টিউলিপ সিদ্দিকী। এরা সবাই ব্রিটেনে বিশ্বমানবতার পক্ষে কাজ করবেন সেটাই আমাদের ভরসা। এবারের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকীর অংশগ্রহণ ছিল একটি আলোচিত ঘটনা। তিনি যখন নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রচার শুরু করেন তখনই একটি পক্ষ নানা ধরনের অপপ্রচারে হামলে পড়ে।শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর মেয়ে টিউলিপ লন্ডনের মিচামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত এবং সিঙ্গাপুরে। ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি হ্যাম্পস্ট্যাড এন্ড কিলবার্নে বসবাস করছেন। এই এলাকায় স্কুলে পড়েছেন ও কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্মেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে।মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হওয়া টিউলিপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন অথরিটি এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গেও কাজ করেছেন। ২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এ বিষয়ে মিডিয়ায় কথা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভাই রেদোয়ান সিদ্দিক ববিসহ স্থানীয় লেবার পার্টির নেতারা। আর এমন নোংরামি-অপপ্রচারের কারণে খোদ টিউলিপের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীও বিব্রত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।শেখ রেহানা, রেদোয়ান সিদ্দিক ববি, লেবার পার্টির নেতা ও টিউলিপের নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, টিউলিপের বিজয় ঠেকাতে নিন্দনীয়ভাবে সক্রিয় ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী একটি চক্র। তারা এমনই অপপ্রচার ও নোংরামির আশ্রয় নিয়েছে যে- টিউলিপের প্রতিদ্ব›দ্বী টোরি দলীয় প্রার্থী সায়মন মারকাজকেও বিব্রত হতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এই উত্তরসূরির বিরুদ্ধে কেবল অপপ্রচারই নয়, তাকে ভোট না দিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভোটারদের হুমকি-ধামকিও দিয়েছে ওই চক্র।তাদের অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই বিএনপি-জামায়াতের একটি বিশাল চক্র টিউলিপের আসন হ্যামস্টেড ও কিলবার্নের ভোটারদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার শুরু করে। এসব অপপ্রচারের মধ্যে ছিল- টিউলিপের খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফর ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনসহ নেতাদের সঙ্গে একটি গ্রুপ ছবি নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার। ওই ছবি ব্যবহার করে ব্রিটিশ মূলধারার ডানপন্থী পত্রিকা ডেইলি মেইলে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করা হয়। তার পেছনে রসদ সরবরাহে চক্রটি সক্রিয় ছিল। এ নিয়ে ইংল্যান্ড থেকে বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশার পাঠানো রিপোর্ট বিভিন্ন মিডিয়ায় আলোচিত হচ্ছে। সবচেয়ে দুঃখজনক কথা হচ্ছে, বিলাতের স্থানীয় বাংলা সাংবাদ মাধ্যমে বুক ফুলিয়ে চক্রটির কেউ কেউ এমন প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন যে, তারা নিজেরা লেবারের সমর্থক। কিন্তু একমাত্র টিউলিপের বিজয় রুখতেই হ্যামস্টেড ও কিলবার্ন এলাকায় টোরি প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। নির্বাচনের দিন নিজ নিজ উদ্যোগে গাড়ি দিয়ে টোরি সমর্থক অনেক ভোটারকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে দেখা গেছে এদের অনেককে।কেবল তাই নয়, স্থানীয় বাংলাদেশি ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে টিউলিপ জিতলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘ইসলামবিরোধী অপশাসন’ দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেও অপপ্রচারও চালায় চক্রটি। এমনকি একজন বয়স্ক বাঙালি নারীর ঘরে ঢুকে টিউলিপকে ভোট না দিতে এমনভাবে শাসানো হয় যে, ওই নারীর এক কিশোরী মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে বলেও বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন শেখ রেহানা। এই ঘটনায় টিউলিপের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী সায়মনও বিব্রত বলে জানান তিনি। এর কারণ কি? শুধু তাই নয়- খবর বেরিয়েছে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকতে পূর্ব লন্ডনে মৌলবাদী ও ধর্মীয় নেতারা হুমকি দিয়েছেন। এ কথা জানিয়েছেন সেখানকার মুসলিম ভোটাররা। ওখানে মৌলবাদীদের প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। ওই সব প্রচারপত্রে বলা হয়, ভোট দেয়ার অর্থ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, ভোট দিও না মুসলিম থাক। মৌলবাদীরা প্রচার করে ভোট দেয়া হারাম। ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে জনগণকে ভোট না দেয়ার আহ্বান সংবলিত কিছু প্রচারপত্র পাওয়া গেছে। ভোটের দিন টাওয়ার হ্যামলেটসে দুই ধরনের প্রচারপত্র বিলি করা হয়। একটি লিফলেটে লেখা ছিল, ‘ভোট দিও না’ এবং ‘মুসলমান থাকো, ভোট দিও না’। এতে আরো বলা হয়, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কারো শাসন করার অধিকার নেই।’ আরেকটিতে বলা হয়, ‘সতর্কতা! মানবসৃষ্ট আইনের জন্য ভোট দেয়া আল্লাহর সঙ্গে শিরক।’ টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শুরুর দিকে একই ধরনের পোস্টার দেখা যায় ওয়েলসের গেঞ্জটাউনে, যেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে একটা বড় অংশ মুসলমান। মৌলবাদী ধর্ম প্রচারক আনজেম চৌধুরী নামের একজন অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ভোটবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন। টাওয়ার হ্যামলেটসের একটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আইএসের লোগো সংবলিত একটি লিফলেট দেয়া হয়, যাতে ‘গণতন্ত্র প্রত্যাখ্যান করো’, ‘মুসলমান থাকো’ এবং ‘ভোট দিও না’ লেখা ছিল। টাওয়ার হ্যামলেটসের লেবার পার্টির কাউন্সিলর দারোস উল্লাহ বলেছেন, ‘এই এলাকার ছোট একটি গোষ্ঠী’ গণতন্ত্র ও সভ্য দুনিয়ার প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে পুরো মুসলিম জনগোষ্ঠীর বদনাম করছে।একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, একটি পরাজিত শক্তি সক্রিয় সর্বত্র। এর বেশ কিছু কারণ আছে। বিশেষ করে জাতির জনক শেখ মুজিব এসব অপশক্তির টার্গেট হন সেই ১৯৭২ সালেই। তিন বছরের মাথায় তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বেঁচে যান তার দুকন্যা, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ঘাতকরা ধরে নিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু মুজিবের আদর্শ এই দুনিয়া থেকে তারা মুছে ফেলেছে। কিন্তু বাস্তবতা আজ ভিন্ন বড় পরিসরে। কথায় আছে- রাখে আল্লাহ-মারে কে! বাংলাদেশের রাজনীতিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির উজ্জ্বল মুখ যারা, তারা আজ বেশ সপ্রতিভ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ শাসন করছেন। তার অন্য মেয়ে শেখ রেহানা কাজ করছেন সামাজিক বিভিন্ন সেক্টরে। শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় কাজ করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে। বাংলাদেশ ও এই প্রজন্মের কাছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে দিতে তিনি কাজ করছন নিরলসভাবে।প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়েমা হোসেন তার কাজের সেক্টর হিসেবে এমন একটি বিষয় বেছে নিয়েছেন, যা এই সময়ে বিশ্বে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘অটিজম’ নিয়ে আন্দোলন করছেন তিনি। স¤প্রতি তিনি জাতিসংঘে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না থাকলেও বাংলাদেশের অটিস্টিক শিশুদের জন্য সবসময় কাজ করে যাবো। উল্লেখ্য, তিনি বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় এডভাইজরি কমিটির চেয়ারপারসন এবং বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ।স¤প্রতি জাতিসংঘে বাংলাদেশ ও কাতার স্থায়ী মিশন এবং অটিজম গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অটিজম স্পিকস’র যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘে আয়েজিত আলোচনা সভায় ‘বিশ্ব অটিজম স¤প্রদায়ের জন্য বিজ্ঞান, সহযোগিতা ও উত্তর’ শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ে বক্তব্য দেন সায়মা হোসেন। তিনি তার বক্তব্যে অটিজম মোকাবেলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে তার বক্তব্য দেন। তিনি একে একে বিভিন্ন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অটিজমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এ যাবৎকালের সব উদ্যোগ এবং সাফল্য তুলে ধরেন।আলোচনায় অংশ নিয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, উন্নয়নশীল বিশ্বে অটিজম মোকাবেলায় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার, সীমিত সেবা, সেবাদানকারীদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের অভাব এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের বেশ কিছু তরুণ সদস্য এখন রাজনীতিতে। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস তাদেরই একজন। তার ওপরও আক্রমণ করেছিল ঘাতক চক্র। যে কথাটি না বললেই নয়, জাতির জনকের রাজনীতির চেতনা আলোকিত হচ্ছে আজ বিশ্বব্যাপী।একটি বিষয় নিয়ে লিখেই লেখাটা শেষ করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি খুব জরুরি কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত ৪০ বছর ধরে ‘গোলামির চুক্তির’ বিষয়টি ছিল অপপ্রচার। এখন সবাই উপলব্ধি করছে, কত বড় মিথ্যা ছিল এটি। আজ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক চুক্তির পথ ধরেই বাংলাদেশে বড় অর্জন এসেছে। এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশ যে লাভবান হয়েছে, তা আজ প্রমাণিত। সীমান্ত বিষয়ক বিলে ভারতের একজন সংসদ সদস্যও সীমান্ত বিলে আপত্তি করেনি। সর্বসম্মতিক্রমে এ বিলটি ভারতের লোকসভায় পাস হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। সবাই এক হয়ে বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দিয়েছে- এটিও একটি বিরল দৃষ্টান্ত। ১৯৭৪ সালের ওই চুক্তির সমালোচনা করে এলেও ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সব সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের অন্য দলগুলোর সরকারের উদ্যোগহীনতার কথাও বলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। আজ বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্র। সেই বীজ বপণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। হ্যাঁ- জাতির জনকের রাজনীতির চেতনা আজ বিশ্বে আলো ছড়াচ্ছে। প্রতিপক্ষ কে কী বললো তাতে কিছুই যায় আসে না। কারণ কোনো সূর্যকে ঢেকে রাখা যায় না।-------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৬ মে ২০১৫ প্রকাশিত | false |
hm | জেনেসিস ছিলাম কত আয়েশ করে আরামসে এক ঘায়ে সব ঘুচিয়ে দিলো আরাম সে ফাঁসতে হলো তার জিলিপির চক্করে নইলে বিভুঁই জঙ্গলে এই পাথর দিয়ে কুড়াল গড়ে মস্ত বড় শক্ত এমন বৃক্ষ কাটি, ভাবছো সে কি শখ করে? স্বর্গে ছিলাম ঝুটঝামেলা বাদ দিয়ে ফলটা শুধু পাড়তে হতো হাত দিয়ে মূলটা শুধু খুঁড়তে হতো ভুঁই ফেঁড়ে এমন সুখের জায়গা ছেড়ে য়্যাম্নে আমায় পটিয়ে এনে বিদঘুটে জঙ্গলের মাঝে কুড়াল দিয়ে কাঠ কাটানোর তুই কে রে? সকল কথা এখন নাহয় কই খুলে কুড়ালখানা নামিয়ে রেখে বই খুলে সেদিন ছিলো স্বর্গে চিরবসন্ত ঈভের গায়ে রঙিন পাতার বসন তো মিষ্টি হাওয়ায় ভাসছে পাখির কূজন গো আমার কানে মুখ রেখে আর আমার কাঁধে হাত রেখে আর আমার গায়ে হেলান দিয়ে ফিসফিসিয়ে ঈভ বলে কী, সুজন গো, আর এখানে ভাল্লাগে না, পালাই চল ঐ পৃথিবী, ঐখানে সব চালাই চল স্বর্গে শুধু নিষেধ বিধি লাখ কোটি তারচেয়ে চল বাজিয়ে দেখি ভাগ্যটি ঐ পৃথিবী, সব আমাদের মুঠোয় রে এইখানে ক্যান থাকবো বাঁধা সুতোয় রে চল ওখানে নিয়ম কানুন তুই আর মুই নতুন করে লিখবো গিয়ে আমরা দুই হাঁপিয়ে গেছি, বুকে ধরে না দম রে, চল না সোনা যাই পালিয়ে ঐ যে দূরের নীল পৃথিবী, চারটি ঋতুর সাত সায়রের তেরো নদীর তেপান্তরের মাঠের পারে যাই পালিয়ে আদম রে! দিব্যি ছিলাম খোশ মেজাজে, হয় তো তাই চুপটি আমি, ঈভ একেলা কয় কথাই বিকেল সেদিন ঢালছিলো রোদ স্বর্ণালি রামধনুতে পেখম খোলা বর্ণালি গাছের পাতায় হাসছিলো রোদ ঝলমলে ঝিলের জলে ভাসছিলো ফুল টলমলে ঈভের কথায় নিষিদ্ধ কোন সুর ছিলো হাওয়ায় সে কোন ঘর পালাবার বাঁধন ছেঁড়ার শেকল খোলার নিয়ম ভাঙার ফিসফিসে গান মন্ত্র হয়ে ঝাপটে ডানা উড়ছিলো যতই বলি, স্বর্গ ছেড়ে যাই যদি কী করবো ধর ঐ পৃথিবী, ঐখানে ফলমূল কোনোটা নাই যদি? কী খাবো আর কই ঘুমাবো তুই আর মুই? কীসের নিচে গুঁজবো মাথা আমরা দুই? নতুন খিদে নতুন তিয়াস পায় যদি নতুন নিয়ম লিখতে গিয়ে নতুন নতুন সমস্যাতে নিত্য ফেঁসে আমরা দু'জন পুরোনো লোক হাঙ্গামাতে হঠাৎ টেঁসে যায় যদি? স্বর্গে সময় থমকে আছে, তুই আর মুই চিরযুবা রইবো টিকে আমরা দুই ঐ পৃথিবী, চারটি ঋতুর চার ডানা ঝাপটে সময় চালাচ্ছে তার কারখানা ঐ পৃথিবী, ঐখানে সব হয় বুড়ো সুর বুড়ো আর তাল বুড়ো আর লয় বুড়ো স্বর্গে সবাই জোয়ান, কেউই নয় বুড়ো এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে চারটি ঋতুর সাত সায়রের তেরো নদীর তেপান্তরে আমরা দু'জন নতুন নিয়ম লিখতে গিয়ে হবোই হবো নির্ঘাত নিশ্চয় বুড়ো! ঈভ, পাজি সে, আমার বুকে মুখ ঘষে (চাল চালে খুব বিটকেলে আর সূক্ষ্ম সে) ফিসফিসিয়ে ভোলায় আমায় কানকথায় আসল কথা এড়িয়ে গিয়ে আনকথায় নিষেধ বিধি হাজার মেনে রই জোয়ান তফাত তাতে কী, বুড়ো আর হই জোয়ান? মন দিয়ে শোন, একটা কথা কই জোয়ান একটা কথা বলবো তোকে, রাখবি মনে, লাগবে কাজে, ঐ পৃথিবীর সাত সায়রের তেরো নদীর তেপান্তরে আমরা যখন বুড়িয়ে গিয়ে আগের মতো এমনটি আর নই জোয়ান! কী কথা, সে শুধাই যখন, ঈভ হাসে সন্ধ্যা ঘনায়, স্বর্গে তারার দীপ ভাসে হাওয়ায় জ্বলা জোনাক বলে সঙ্কেতে হিসাব মেলে সর্বদা কি অঙ্কেতে? হাস্নুহেনার গন্ধ বলে, ভয় কি রে? স্বর্গে শুধু একঘেয়েমির ভূতটা এসে ঝাপটে ডানা কানের কাছে গুনগুনিয়ে যায় বলে ঐ আদম রে, এই ঈভটা এসব কয় কী রে? হঠাৎ বুঝি, খুব পুরোনো স্বর্গ রে চলছে ধুঁকে তার কাঠামো নড়বড়ে তার ভরসা কেবল আমার বিশ্বাসে দিচ্ছে আমায় কেবল তারই হিস্যা সে হাওয়ায় রোদে জল জ্যোছনায় ফলমূলে কিন্তু রাখে লুকিয়ে সে তার ছল মূলে প্রতিটি দিন একই শুরু, এক অন্ত কাটতো তখন কাটছে যেমন এখন তো নেই নতুনের চিহ্ন, কোনো চমক নাই মেঘ আছে, নাই বজ্রপাতের ধমক নাই সূর্য আছে, চাঁদ আছে, তা-ও গ্রহণ নাই চকমকি আর বৃক্ষ আছে, দহন নাই হাওয়ার ছোঁয়ায় পুলক আছে ঘূর্ণি নাই শীতের ভোরে ঝুলকুয়াশার উড়নি নাই কাটবে বছর যদি "নাই"য়ের গীত শুনাই ঈভের কথাই ঠিক, আমাদের খুব পুরোনো স্বর্গে শুধু ভান আছে আর মুখোশ আছে, কিন্তু নতুন নাই, অজানা নাই, অচেনা নাই, এখানে আমার জন্য কিচ্ছু নাই! ঈভের হাতে হাত রেখে কই, চল কাটি যাই পৃথিবী, গোছাই তল্পিতল্পাটি কিন্তু হঠাৎ আকাশ চিরে বিষস্বরে হুহুঙ্কারে হাজির স্বয়ং ঈশ্বরে! আদম, বাছা, হচ্ছে কীসব দুষ্টুমি? দিব্যি ছিলে স্বর্গে ভীষণ খুশ তুমি কান দিও না ঈভের ওসব ফিসফাসে সুখ সকলই স্বর্গে, আর এই বিশ্বাসে, আদম তুমি পা বাড়ালে ঐ পানে থাকতে হবে জীবন বাকি ঐখানে রইবে না আর যুবা, হবে বৃদ্ধ রে কী লাভ বলো ফালতু এসব জিদ ধরে? স্বর্গে থাকো, স্বর্গে খেলো, স্বর্গেতে কাটাও সময় তোমরা দুজন ঘর পেতে। ঈভ ছোটে আর আমিও ছুটি প্রাণপণে খিড়কি খোলা পাছদেয়ালের ডানকোণে পেরিয়ে গেলে আমরা দুজন মুক্ত রে শ্বাস নেবো ঐ নীল পৃথিবীর বুক ভরে স্বর্গ তোমায় বিদায় জানাই দুইজনই নিচ্ছি মোরা নতুন করে ভুঁইযোনি দোর পেরোনোর সময় বজ্রনির্ঘোষে ঈশ্বরের শ্বাস শুনি, বেশ দীর্ঘ সে আমায় একা স্বর্গে ফেলে যাস তোরা জানিস না কি করলি সর্বনাশ তোরা করলি আমায় এমন বড় হতাশ তুই! আগল ঠেলে মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখি, একলা বুড়ো হাতটি গালে ঠেকিয়ে কাঁদে অঝোর ধারে, ফিসফিসিয়ে সঙ্গে বলে, তথাস্তুই! স্বর্গ থেকে এই পৃথিবী দূর অতি ঈভ জানে না, তাই হলো এই দুর্গতি দুজন ছিলাম এক অপরের হাত ধরে হাওয়ার তোড়ে তার কি আছে সাধ্য রে ফসকে বাঁধন দুজন গেলাম দুইদিকে এদিক পানে আমি, আর ঈভ উইদিকে আকাশ চিরে দুজন নামি ভিন দেশে অচিন দেশে ঈভ, আমি অচিন দেশে ভাগ্যে সুখের বরাদ্দখান কম বলে আছড়ে পড়ি সাগরতীরের জঙ্গলে ঈভ কোথা কোন মেরুর দেশ কি মরুর দেশ কোথায় আছে হতচ্ছাড়ি নিরুদ্দেশ গাছ কেটে তাই নৌকা বানাই তার খোঁজে পাত্তা পেলে অ্যায়সা থাপড় মারবো যে চুল ধরে তার ঠেঙিয়ে বেদম তার পরে শুনতে হবে সেই কথা তার ঘাড় ধরে কোন কথাটা শুনলে পরে এইখানে সাতটি সায়র তেরো নদী যেইখানে হাওয়ার হাতে পাথর পাহাড় ক্ষয় গুঁড়ো চারটি ঋতুর চাকায় চড়ে হয় বুড়ো লাগবে কাজে আমরা যখন হই জোয়ান কিংবা যখন ঘুরলে বছর নই জোয়ান আমরা দুজন, যখন একা, এই ভুঁয়ে রইবো একে অন্যজনের হাত ছুঁয়ে গ্রীষ্ম দুপুর, সন্ধ্যা শরত, হিম রাতে বর্ষা আকাশ মেঘের চাদর নিংড়াতে সাতটি সায়র, তেরো নদীর এই পারে ভাবছি ঈভের কথা, কেবল সে-ই পারে ঐ কথাটা বলতে আমায়, তাই আগে পেরিয়ে সায়র ঈভের কাছে যাই আগে মারো জোয়ান হেঁইয়ো সামাল হেঁইয়ো রে ঈভের দেখা পাওয়ার আগে কে জেনেসিস কী জেনেসিস কোন জেনেসিস? নেই জেনেসিস নেই ওরে! | false |
mk | ভারত থেকে বিদ্যুৎ বিদ্যুতের ব্যাপারে আরও একটি সুখবর পাওয়া গেছে। এবার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলো। অর্থাৎ ভারতের বিদ্যুত এখন বাংলাদেশে। অবশ্য এটাই ভারত থেকে প্রথমবারের মতো বিদ্যুত আমদানি নয়। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর ভারত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুত আমদানি শুরু হয়। বাংলাদেশের ভেড়ামারা এবং ভারতের বহরমপুরে সাবস্টেশন স্থাপন করা হয় সে সময়। সেবার ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত থেকে আমদানি শুরু হয়। এটি পর্যায়ক্রমে ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। সেবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুত সঞ্চালন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। বুধবারও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এজন্য কুমিল্লা থেকে ত্রিপুরা অংশে মোট ৫৪ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে উভয় দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ২৮ কিলোমিটার এবং ভারত অংশে ২৬ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন এই গ্রিড লাইনটি ত্রিপুরার সুরজমনি নগর থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লাকে সংযুক্ত করেছে। জানা গেছে, এতে প্রতিইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ভারতের টাকায় ৫ রুপী। তবে বিদ্যুত না নিলে আমাদের কোন টাকা দিতে হবে না।বিদ্যুত হচ্ছে দেশের অন্যতম চাহিদাগুলোর একটি। আমাদের দেশের বড় সমস্যাগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে বিদ্যুত। বহু সমস্যায় জর্জরিত ছিল এই বিদ্যুত খাতটি। নানা সময়ে দুর্নীতির কালো মেঘ ঢেকে রেখেছিল এই সেক্টরটিকে। বর্তমান সরকার প্রথম ধাপে ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে। সরকারের জন্য সে সময় বিদ্যুত একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছিল। সরকার এ ক্ষেত্রে অনেকটা সফল হয়েছে। কারণ ক্ষমতা গ্রহণের সময় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩২৬৮ মেগাওয়াট। প্রতিদিনই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। তাই চাহিদার তুলনায় উৎপাদনের একটা ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। এ জন্য আমদানিসহ অঞ্চলভিত্তিক কয়েকটি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করতে হয়েছে সরকারকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসায় এই ঘাটতি অনেকটাই কমার সম্ভাবনা রয়েছে।বিদ্যুত ছাড়া কোন দেশের সমৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব। কৃষি, শিল্প থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন সবকিছুই বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। যেহেতু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম তাই উন্নয়নের স্বার্থে বিদ্যুতের উৎপাদন ও বিতরণ বাড়াতে হবে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশই নয়, আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। ইতোমধ্যে ছিটমহল, করিডর, তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা, সীমান্ত বিরোধসহ দেশটির সঙ্গে আমাদের নানা সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে সুষ্ঠুভাবে সমাধানের পথে এগুচ্ছে। এই বিদ্যুত আমদানির মধ্য দিয়ে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানের পথ আরও প্রশস্ত হবে বলে সবার বিশ্বাস। সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:০৫ | false |
fe | None একজন প্রজ্ঞাবান মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর সম্পাদিত দৈনিক মুক্তকন্ঠ তে নিয়মিত লিখতাম আমি। ফোনে কথা বললেই বলতেন,আরে পরিযায়ী পাখি যে ! দেশে ফিরছেন কবে ?আমি বলতাম , ফিরবো কে জি ভাই ! ফেরার জন্যইতো বিদেশে এসেছি ।ফেরা কি হবে আমার ? জানি না। আজ কে জি ভাই চলে গেলেন । যেখান থেকে কেউ কোনোদিনই ফিরে না। তাঁকে নিয়ে তিনজন বিশিষ্ট জনের তিনটি লেখা এখানে তুলে রাখলাম ।কে জি মুস্তাফার প্রয়াণকিংবদন্তীতুল্য নেতাকামাল লোহানী-----------------------সাংবাদিকতা জগতের এক কিংবদন্তিতুল্য নেতার মৃত্যু হলো। তাঁর মৃত্যুতে আমরা একজন দক্ষ সাংবাদিক যেমন হারালাম, তেমনি হারালাম একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিককে। কে জি মুস্তাফার সাংবাদিক সত্তার বাইরেও যে রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা ছিল, সেটি ছিল প্রগতিশীল ও আদর্শভিত্তিক। তাই তাঁর জীবনে আন্দোলন-সংগ্রামে জেল-জুলুম ও নির্যাতন-নিপীড়নও সহ্য করতে হয়েছে। তিনি ভাষাসৈনিক ছিলেন। বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি উত্থাপিত হয়েছিল এ বঙ্গের ছাত্রসমাজের কাছ থেকে, তখন কে জি মুস্তাফা ছিলেন পূর্ববঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য। এ ভাষা আন্দোলনের রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের পর যখন অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার স্ফুরণ ঘটল ওই তরুণ ছাত্রসমাজের মধ্যে, তখন জন্ম নিয়েছিল একটি নতুন ছাত্র সংগঠন, যার নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন। এ সময় পূর্ববঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে ছাত্র ফ্রন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করার দায়িত্ব যাঁদের হাতে ছিল, তিনি ছিলেন তাঁদের একজন। সে কারণে ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে এ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কে জি মুস্তাফার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তিনি সত্য ভাষণে অকপট ছিলেন এবং যেকোনো সংকটে চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে পারঙ্গম ছিলেন। অসাধারণ ছিল তাঁর সাহস।আমার স্মৃতিতে যত দূর মনে পড়ে, আমি তাঁকে প্রথম দেখেছিলাম ১৯৫৩ সালে ঢাকায় পুঁথিপত্র প্রকাশনীর ঘরে। এটি শুধু দোকান ছিল তা-ই নয়, রাজনীতি ও সংগ্রামের প্রয়োজনে পুঁথিপত্র একটি প্রকাশনী সংস্থায়ও পরিণত হয়েছিল। এর স্বত্বাধিকারী ছিলেন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ সুলতান এবং এম আর আখতার মুকুল। এ প্রতিষ্ঠানটিই ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সম্মেলনের সময় ছিল যোগাযোগের কেন্দ্র। এখানেই প্রথম তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি তখন কমিউনিস্ট পার্টির তরফ থেকে নতুন ছাত্র সংগঠনটির সংযোগ রক্ষা করছিলেন।এরপর কে জি ভাইয়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয় সাংবাদিকতা করতে গিয়ে। ১৯৫৫ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আমি তখন দৈনিক মিল্লাত নামে একটি পত্রিকায় সবে প্রবেশ করেছি। তিনি তখন দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। পরে কে জি ভাই দৈনিক সংবাদ ছেড়ে দৈনিক ইত্তেফাকে চলে যান। কিন্তু কিছুদিন পরই বাংলা সংবাদপত্র ছেড়ে তিনি ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেন। দীর্ঘকাল তিনি সাংবাদিক হিসেবে এ পত্রিকায় কাটিয়েছিলেন। এখানে একটি কথা বলে রাখি, কে জি ভাইয়ের সাংবাদিকতার জীবন শুরু আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেহাদে। পরে তিনি বেশ কিছুদিন দৈনিক আজাদে কাজ করেছেন। নিপুণ সাংবাদিকের দক্ষতা ছাড়াও কে জি মুস্তাফা সাংবাদিক ইউনিয়নের একজন প্রতিষ্ঠাতা এবং জাঁদরেল সংগঠক ছিলেন। তিনি কেবল দুই বঙ্গেই নয়, সারা পাকিস্তানেই সাংবাদিক সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম সেক্রেটারি জেনারেল ও পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাংবাদিকদের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল অবিসংবাদিত।মুক্তিযুদ্ধ-উত্তরকালে কে জি মুস্তাফা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে কূটনৈতিক পেশায় যোগ দেন। প্রথমে লেবানন ও পরে ইরাকে সফলতার সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। শুনেছি, তাঁর প্রতিভাদীপ্ত কূটনৈতিক জীবনের প্রশংসা যখন লেবাননের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধুর কাছে করেছিলেন, তখন উত্তরে বঙ্গবন্ধুও গর্বের সঙ্গে বলেছিলেন, আমি তো তোমার দেশে আমার এক বন্ধুকেই পাঠিয়েছি।কিন্তু পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু যখন সপরিবারে নিহত হলেন, তারপর ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমানের আমলে তাঁকে কূটনৈতিক পদ থেকে প্রত্যাহার করে দেশে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত হয়ে তিনি ইরাকের রাজধানী বাগদাদেই থেকে গিয়েছিলেন এবং ইরাক থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত ইংরেজি সাময়িকী বাগদাদ টুডের সম্পাদনার দায়িত্বও গ্রহণ করেছিলেন। আর সেখানেই সপরিবারে দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হয়েছিল।দেশের সুস্থ অবস্থা ফিরে আসার পর কে জি মুস্তাফাও দেশে ফিরে এলেন। অনেক দিন বসে থাকার পর তিনি আবার সাংবাদিকতায় যোগ দিয়েছিলেন এবং চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণ তাঁর হাত দিয়েই বেরিয়েছিল।এ ছাড়া ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মুক্তকণ্ঠের সম্পাদকও ছিলেন। পরে তিনি ইংরেজি ও বাংলায় কলামও লিখতে শুরু করেছিলেন। অসুস্থ হওয়ার বেশ কিছুদিন আগ পর্যন্ত তিনি নিয়মিত দৈনিক জনকণ্ঠে তাঁর লেখা চালিয়ে গিয়েছেন। বছরাধিককাল হলো তিনি আর লিখতে পারছিলেন না।কে জি মুস্তাফার সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে আমার একটি যোগাযোগ ছিল। সাংবাদিক ইউনিয়ন করতে গিয়ে বহুবার আমরা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন কাউন্সিল অধিবেশনে মিলিত হয়েছি। তাতে ইউনিয়ন সম্মেলন পরিচালনায় তাঁর দক্ষতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় পেয়েছি। পরবর্তীকালে আমি যখন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলাম, তখন আমরা যেকোনো সংকটে পড়লে তাঁর কাছ থেকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ পেয়েছি। পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি জেনারেল কিংবা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দিতেন। আমার মনে আছে, আইয়ুব খানের আমলে যখন আমরা সামরিক শাসকের জারি করা সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধকারী কালা-কানুনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, তখন তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আমাদের যেমন সাহস দিয়েছে, তেমনি আন্দোলনকে সফল করতে সহায়তা করেছে। আইয়ুবের জারি করা এ প্রেস অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম ছিল সর্বাত্দক। সে সময় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব খবরের কাগজ ১৭ দিন পর্যন্ত বন্ধ ছিল, ওই ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্বের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন কে জি মুস্তাফা। এ আন্দোলনে সাংবাদিকদের পাশে গণমাধ্যমের অন্যান্য শাখার কর্মীরাও এসে জমায়েত হয়েছিলেন যেমন, তেমনি সারা পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এ আন্দোলনে আমাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। যা সম্ভব হয়েছিল কে জি মুস্তাফা, আসরার আহমদ, মিনহাজ বার্না, আবদুল্লাহ মালিক, আই এ রহমান প্রমুখের নেতৃত্বে।কে জি মুস্তাফা ছিলেন আদর্শিক রাজনীতির একজন সংগ্রামী পুরুষ। সাংবাদিক হিসেবে একজন দক্ষ কারিগর। ইউনিয়ন নেতা হিসেবে একজন বলিষ্ঠ সাহসী ব্যক্তিত্ব। আবার সাংবাদিকরা যেকোনো ক্ষেত্রে গিয়ে যে সফলতা অর্জন করতে পারেন, তা তিনি কূটনীতিক হিসেবে সফল হয়ে প্রমাণ করেছেন। তিনি আমাদের মধ্যে অমর হয়ে থাকবেন।---------------------------------------------------------------------সাহস ও আদর্শের প্রতিকৃতিহারুন হাবীবকে জি মুস্তাফার মৃত্যুসংবাদটি খুব একটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। কারণ কে জি ভাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পেঁৗছেছিলেন। তাঁর বয়স বিবেচনা করলেই বোঝা যায়। কাজেই আমাদের সর্বজনশ্রদ্ধেয় কে জি ভাইয়ের মৃত্যু আমাকে অতটা বিস্মিত করেনি। সঙ্গে সঙ্গে এও আমাকে বলতে হবে, কে জি মুস্তাফার মৃত্যুতে আমাদের সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতার ভুবনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়ে গেল তা সত্যি সত্যি বেদনার।আমি মূলত মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন থেকে ফিরে সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশ করেছিলাম। কিন্তু কে জি ভাই আমাদেরও দুই প্রজন্ম আগে থেকে অর্থাৎ পাকিস্তান আমলের শুরু থেকেই সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তানের সাংবাদিকতা জগতে মধ্যমণি হয়ে নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছিলেন। সে সময় কেজি ভাইয়ের মতো সুবিশাল সাংবাদিকের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে পরিচয়ের সুযোগ হয়ে ওঠেনি। পুরনো প্রেসক্লাব ভবনে যখন গেছি চা কিংবা অন্যান্য খাবার খেতে তখন কে জি মুস্তাফাকে সরাসরি দেখেছি। প্রথমদিকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করেছি। কিন্তু ও রকম প্রখর ব্যক্তিত্বশীল একজন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে বেশি কিছু বলার সাহস আমাদের মতো তরুণদের হয়ে ওঠেনি। খুব বেশি দীর্ঘ নন; কিন্তু সুঠামদেহী। মাথায় বেশ ঝাঁকড়া চুল। এর মধ্যে কে জি ভাই তখনকার পাকিস্তান অবজারভারের বিশাল ব্যক্তিত্বশীল সাংবাদিক। কাজেই দূরত্ব স্বভাবতই ছিল। আজ কে জি ভাই তাঁর প্রিয় স্বদেশভূমি ছেড়ে চলে গেলেন চিরদিনের জন্য। কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরা কতজনে কে জি মুস্তাফার সাংবাদিক কৃতিত্ব এবং ঐতিহ্য জানেন তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কে জি মুস্তাফা ছিলেন সাবেক পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের শীর্ষস্থানীয় নেতা। তাঁর আহ্বানেই তৎকালীন পাকিস্তানে সংবাদপত্রে সফল ধর্মঘট পালিত হয়। আমি তখনো সাংবাদিকতায় ঢুকিনি; কিন্তু কে জি ভাইয়ের নেতৃত্বে সেই যে সাংবাদিকদের ধর্মঘট, যা তখনকার আইউববিরোধী আন্দোলনকে এগিয়ে দিয়েছিল, তা ভাবতে আজও আমার বিস্ময় হয়। সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সেদিনকার পাকিস্তানে কে জি ভাই যে দক্ষ এবং সাহসী নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন তা আমাদের সাহসী ইতিহাসের অংশ।কে জি ভাই অসাধারণ বাগ্মী ছিলেন, সাংবাদিকদের শীর্ষস্থানীয় নেতা। ৬০-এর দশকে সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তানে সাংবাদিকতার যে অবিস্মরণীয় বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তার অন্যতম কিংবা প্রধানতম কারিগর ছিলেন কে জি মুস্তাফা। আমার মনে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে তিনি সর্বপ্রথম অংশগ্রহণ এবং দক্ষ সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সেই সুবাদে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু কে জি মুস্তাফাকে ইরাকের রাষ্ট্রদূত করেন। আমার সুযোগ হয়েছিল সেদিন জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে কে জি মুস্তাফাকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজনে থাকার। এরপর বহুদিন তিনি দেশে ছিলেন না, কারণ এরই মধ্যে ১৯৭৫ সালে পরিবারের লোকজনকে হত্যা করা হয়। তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারকে পাল্টে দিয়ে নানান ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসন জেঁকে বসে। এই শাসকরা মুক্তিযুদ্ধের সাড়ে ৩ বছরের মাথায় বাংলাদেশের প্রগতির চাকা টেনে ধরে। কে জি ভাই সারা জীবন প্রগতিশীল রাজনীতির পক্ষে কাজ করেছেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়েছেন, পাকিস্তানি সেনাশাসকদের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। সেই কে জি মুস্তাফা কী করে বাংলাদেশের ভীষণ দুর্ভাগ্য মেনে নেবেন? কাজেই কে জি ভাই স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেছেন বিদেশের মাটিতে। বছরের পর বছর তিনি ঘরে ফেরেননি।আমার ঠিক মনে পড়ে না কে জি মুস্তাফা কোন সালে দেশে ফিরেছেন। তবে দেশে ফিরে তিনি তাঁর জীবনের আরেকটি অধ্যায় শুরু করেন সাংবাদিকতায়। যুক্ত হন দৈনিক সংবাদের সঙ্গে। চট্টগ্রামের পূর্বকোণের সঙ্গে, শেষ পর্যন্ত সাবেক দৈনিক মুক্তকণ্ঠ পত্রিকার সঙ্গে। কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি, কে জি ভাইকে আমরা সেদিনকার তরুণ সাংবাদিকরা চিনতাম সেই সাহসী দুর্ধর্ষ মানুষ, যিনি পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা হিসেবে নিজের সাহস ও যোগ্যতা প্রদর্শন করেছিলেন, সেই কে জি ভাইকে আমরা আর কখনো ফিরে পাইনি।একদিকে তাঁর বয়স বেড়েছিল, অন্যদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির টানাপড়েনে কে জি মুস্তাফা ক্রমান্বয়েই নিজের মধ্যে গুটিয়ে পড়ছিলেন। মাঝে মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই নির্দিষ্ট সময় জাতীয় প্রেসক্লাবে বসতেন। তাকে ঘিরে বসতেন প্রবীণ ও নবীন সাংবাদিকরা। কে জি ভাই ধীরস্থিরভাবে তার বক্তব্য রাখতেন। কখনো তার ক্ষুরধার যুক্তি, তাঁর জীবনবোধ এবং দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা উপহার দিতেন আমাদের মতো নতুন প্রজন্মের সংবাদকর্মীদের। কিন্তু একটি বিষয় আমাকে উল্লেখ করতে হবে, কয়েক বছর আগে কে জি ভাই যখন নিয়মিতভাবে প্রেসক্লাবের কেবিনে বসতেন, তখন বেশিরভাগ সময় তিনি হয় নির্বাক কিংবা আনমনে চিন্তা করতেন। আমাদের মতো নবীনদের তাঁকে প্রশ্ন করে বেশি কিছু জানার সুযোগ হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে আমি কে জি ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ কখনো পাইনি, আজ কৃতজ্ঞচিত্তে একটি ঘটনার কথা মনে করতে চাই। সম্ভবত ২০০০ সালে আমি তখন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কলম ধরি এবং সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকি বলে আমাকে নিয়ে তখনকার সাম্প্রদায়িক শক্তির মুখপত্রগুলো লাগাতার অপপ্রচার চালাতে থাকে। সেই অপপ্রচারের মাত্রা এক সময় এতটাই তীব্র হয় যে, আমি ব্যক্তিগতভাবে ওদের বিরুদ্ধে আমার জীবনে আরেকটি যুদ্ধ শুরু করতে বাধ্য হই। ঠিক সেই সময়ই বেশ কয়েকটি কাগজে কে জি মুস্তাফা তাঁর ক্ষুরধার লেখনীতে আমার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর সেই সমর্থনকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।বাংলাদেশের সাংবাদিকতার আকর এবং চরিত্র আজ আধুনিক জামানার হয়েছে। শত শত নতুন সংবাদকর্মী এই পেশায় যোগ দিয়েছেন। আমি মনে করি, কে জি ভাইয়ের হাতে আমাদের সাংবাদিকতার যে ভিত্তি গড়ে উঠেছিল, সে ভিত্তি ছিল আদর্শ, সাহস ও নৈতিকতার। আমরা যেন সেই সাহস, আদর্শ ও নৈতিকতাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সেই প্রার্থনাই করব। আমি জানি না, কে জি ভাই তাঁর আত্দজীবনী লিখে গেছেন কি না। যদি না লিখে থাকেন তাহলে তাঁর জীবনী বাংলাদেশের নতুন সাংবাদিকদের অবশ্যই জানার সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। কে জি ভাইয়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইল।--------------------------------------------------------------------কিংবদন্তিতুল্য মানুষটি চলে গেলেনআবেদ খানকে জি ভাই চলে গেলেন। আমাদের সাংবাদিকতা পেশার বর্তমান প্রজন্ম বুঝতে কি পারবে, কোন মানুষটি নিঃশব্দে লোকান্তরিত হলেন? সাংবাদিকতা পেশা যদি এককভাবেও কারো কাছে ঋণী থাকে তিনি হলেন কে জি ভাই-খন্দকার গোলাম মুস্তাফা। অনন্য রুচিবোধ, অসাধারণ নীতিনিষ্ঠা, অতুলনীয় সততা এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব তাঁকে কিংবদন্তির মানুষে পরিণত করেছিল।কে জি ভাইয়ের সাংবাদিকতার সূচনা কলকাতায়-বিভাগপূর্ব কাল থেকেই। সাতচলি্লশের পর ঢাকায়। বাম রাজনীতির প্রতি একনিষ্ঠ কে জি মুস্তাফার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি কখনো পেশার সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শকে জড়িয়ে ফেলেননি। আবার এই কে জি মুস্তাফাই সাংবাদিকদের অধিকার, দাবি-দাওয়া নিয়ে পাকিস্তানব্যাপী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। একই সঙ্গে ভাষা আন্দোলনেও দিয়েছিলেন সক্রিয় নেতৃত্ব। রাজনৈতিক কারণে কখনো কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন, আবার কখনো মাসের পর মাস আত্দগোপন করে থেকেছেন। এ তো গেল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের কথা। সাংবাদিক হিসেবে কিংবা সাংবাদিকদের সংগঠক হিসেবেও তিনি একই রকম উজ্জ্বল। আজ যাঁরা প্রবীণ সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত, তাঁদেরও অনেকেরই পেশাজীবন শুরু হয় তাঁর হাতে। আবার তিনি ছিলেন নিখিল পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘদিন, সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি। পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বাকস্বাধীনতা হরণকারী নীতির বিরুদ্ধে সে সময় দেশব্যাপী সাংবাদিকদের যে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার পুরোভাগে ছিলেন কে জি মুস্তাফা। সেই আন্দোলনের মুখে আইয়ুবের সামরিকজান্তাকে হার মানতে হয়েছিল এবং সর্বপ্রথম গঠিত হয়েছিল সাংবাদিকদের বেতন বোর্ড রোয়েদাদ। আজ সাংবাদিকতা পেশা যে মর্যাদা পেয়েছে, সাংবাদিকদের যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে, তার জন্য কে জি মুস্তাফার অবদান অবশ্যই মনে রাখতে হবে। প্রায় ষাট বছরের পেশাগত জীবনে কখনো তিনি নীতি কিংবা আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।কে জি ভাইকে আমি প্রথম দেখেছি একজন বাম রাজনীতিক হিসেবে, আমার কৈশোরকালে। আমাদের বাড়ির রাজনৈতিক আবহের মধ্যে। মাঝে মাঝে রাতের বেলায় অল্প সময়ের জন্য আসতেন তিনি। এরপর দেখেছি পত্রিকা অফিসে। আজাদে, সংবাদে, ইত্তেফাকে, অবজারভারে-সেই পাকিস্তান আমলে। ছোটখাটো মানুষ কিন্তু অসামান্য ব্যক্তিত্ব। সিদ্ধান্ত প্রদানে সামান্যতম দ্বিধা নেই। সত্য কথাটি উচ্চারণে সামান্যতম কুণ্ঠা নেই।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর আদর্শগত ভিন্নতা ছিল সেই পাকিস্তান আমল থেকেই। কিন্তু তা কোনো অবস্থাতেই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে আক্রান্ত করেনি। বঙ্গবন্ধুর চেয়ে কয়েক বছরের ছোট ছিলেন বটে, তবে বন্ধুত্বের সম্পর্কে তা কোনো বাধা হয়নি কখনোই। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তাঁকে ইরাক এবং ইয়েমেনের রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দেন। নির্দ্বিধায় কে জি ভাই সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তাঁর নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু তারপর তিনি দেশে ফেরেননি। থেকে যান ইরাকে-যোগ দেন বাগদাদের একটি জাতীয় দৈনিকে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে। ১৯৮৪ সালের দিকে ইরাকের বাগদাদে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় আমার। মুখে স্নেহসিক্ত হাসি। তারও বেশ কিছুকাল পরে তিনি দেশে ফেরেন। কিছুকাল বিরতির পর প্রত্যাবর্তন ঘটে সাংবাদিকতা পেশায়ও। একটি নতুন দৈনিকের দায়িত্ব গহণ করেন তিনি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত থাকেননি সেখানে। ফিরেছিলেন দৈনিক সংবাদ পত্রিকায়ও। সেখানেও বেশি দিন থাকা হয়নি। তখন তাঁর বয়স হয়েছে-কমে এসেছে গুরুদায়িত্ব বহনের ক্ষমতাও। তারপর কিছুকাল থেকেছেন লেখালেখির ভেতরে। শেষ পর্যন্ত অবসর।আমাদের সাংবাদিকতা জগৎটি ক্রমশ অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে। পাকিস্তান আমলে এই পেশার নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের অনেককে আমরা হারিয়েছি ইতিমধ্যেই। কেবল মুসা ভাই আছেন, ফয়েজ ভাই আছেন, নির্মল দা আছেন, লোহানী ভাই আছেন-তবে নিষ্ঠুর সময় তাঁদের কর্মক্ষমতা হরণ করেছে অনেকখানি। কিন্তু তারপর? এক অপরিসীম শূন্যতা-সর্বগ্রাসী শূন্যতা কে জানে কোথায় নিয়ে যাবে এই পেশাকে! আমাদের দুর্ভাগ্য, কে জি ভাই তাঁর সুবিশাল অভিজ্ঞতার এবং কর্মজীবনের কোনো সঞ্চয় রেখে যেতে পারলেন না তাঁর উত্তরাধিকারদের জন্য।আমরা কালের কণ্ঠের সাংবাদিক-কর্মচারী-পৃষ্ঠপোষক ও শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষ থেকে জনাব কে জি মুস্তাফার স্মৃতির প্রতি জানাই আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।------------------------------------------------------------------লেখাগুলো দৈনিক কালের কন্ঠ / ১৪ মার্চ ২০১০ - থেকে | false |
fe | জাতিসংঘে একুশের ভাস্কর্য ও বাংলা ভাষার অগ্রযাত্রা জাতিসংঘে একুশের ভাস্কর্য ও বাংলা ভাষার অগ্রযাত্রাফকির ইলিয়াস==================================এটি বাঙালির একটি সাংস্কৃতিক বিজয়। ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’ ও ‘বাঙালির চেতনামঞ্চ’ এর যৌথ উদ্যোগে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সামনে নির্মিত হলো একুশের ভাস্কর্য। এটি থাকবে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে দাগ হ্যামারশোল্ড প্লাজায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, ‘এর আগে আমি জাপানে দায়িত্ব পালনকালে প্রবাসীদের সহায়তায় টোকিওতে স্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনে সক্ষম হয়েছি। নিউইয়র্কেও স্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনে আপনাদের সবার আন্তরিক সহায়তা চাই। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ায় জাতিসংঘের সামনে স্থায়ী একটি শহীদ মিনারের দাবি আজ সার্বজনীনতা পেয়েছে। তাই তা অপূর্ণ থাকবে বলে মনে করি না।’নিউইয়র্কের ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’ ও ‘বাঙালির চেতনামঞ্চ’ এর উদ্যোগে ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘের সামনে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্য রাতে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করে প্রবাসী বাঙালিরা শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। তাদের উদ্যোগেই স্থাপিত এবারের ভাস্কর্যটির নকশা করেছেন অলিম্পিক স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিল্পী খুরশীদ সেলিম। আর এটি নির্মাণ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান শিল্পী মৃণাল হক।উত্তর আমেরিকায় বাঙালির একুশ উদযাপনের দীর্ঘ ইতিহাসে এই ভাস্কর্য স্থাপন একটি যুগান্তকারী ঘটনার সৃষ্টি করেছে। বিশ্বসভায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদায় যেভাবে অমর একুশকে সম্মানিত করা হয়েছে তেমনিভাবে ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত মাসব্যাপী ভাস্কর্যটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে ম্যানহাটানের ১ম এভিনিউ ও ৪৭ স্ট্রিটের কর্নারে। পেছনে জাতিসংঘের সদর দপ্তর আর বিভিন্ন দেশের সারি সারি পতাকা আর তার সামনে থাকছে একুশের এই ভাস্কর্য।২০১৫ সালের শুরুতে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী একুশের ভাস্কর্য স্থাপনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিটি অব নিউইয়র্ক পার্ক অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ডিপার্টমেন্ট জানুয়ারি ২০১৬ মাসের প্রথম সপ্তাহে এক চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে এই ভাস্কর্য স্থাপনের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। এর আগে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিনেটর হোজে পেরেটা’র প্রস্তাবনায় ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেন। ‘মুক্তধারা’ এবং ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ’ নামে দুটি সংস্থা ও সংগঠনের উদ্যোগে বইমেলা শুরু হয় নিউইয়র্কে ১৯৯২ সালে। ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ’ ছিল মূলত একঝাঁক শাণিত তরুণের সাংস্কৃতিক ফোরাম। প্রকাশে বাংলা ভাষা সাহিত্য, সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং লালন করার প্রত্যয় নিয়েই জন্ম নেয় এই সংগঠনটি। মহান ভাষা দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ চত্বরে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন ও শুরু হয় এই মুক্তধারা ও বাঙালির চেতনা মঞ্চের উদ্যোগে। নিজ কাঁধে বইয়ের বাক্স বহন করে ফিরে বইমেলা জমাবার প্রত্যয়ী ছিলেন মুক্তধারার কর্ণধার শ্রী বিশ্বজিত সাহা। আমি দেখেছি, চোখে বুকে একটিই স্বপ্ন, প্রবাসে পরিশুদ্ধ পাঠক শ্রেণি গড়ে উঠবে। আমি এখনো ভাবি, এক সময়ের তুখোড় সাংবাদিক বিশ্বজিত সাহা তো প্রবাসে এসে অন্য পেশাও গ্রহণ করতে পারতেন। তিনি তা করেননি কেন? করেননি এ জন্য, বাংলা ভাষা-সাহিত্য সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন প্রবাসী বাঙালির মাঝে। প্রশ্নটির উত্তর আমি এখন পেয়ে যাই খুব সহজে। যখন দেখি জ্যাকসন হাইটেসের সুপরিসর ‘মুক্তধারা’ গ্রন্থকেন্দ্রে বসে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা ড. হুমায়ুন আজাদ, আনিসুল হক, হাসান আজিজুল হক, সমরেশ মজুমদার তাদের বইয়ে পাঠককে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন, দিয়েছেন। নিউইয়র্কে ১৯৯২ সালে প্রথম বইমেলাটির উদ্বোধক ছিলেন ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত। ১৯৯৩ সালে কবি শহীদ কাদরী মেলা উদ্বোধন করেন। ১৯৯৪ সালে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ১৯৯৫ সালে পুরবী বসু, ১৯৯৬ সালে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ১৯৯৭ সালে হুমায়ুন আহমেদ, ১৯৯৮ সালে সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, ১৯৯৯ সালে দিলারা হাশেম, ২০০০ সালে ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, ২০০১ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বইমেলা উদ্বোধন করেন। ২০০১ সালে দশম বইমেলার বর্ণিল আয়োজনে একযোগে এসেছিলেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, হুমায়ুন আহমেদ ও ইমদাদুল হক মিলন। ২০০২ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন ড. হুমায়ুন আজাদ। ২০০৩ সালে কবি জয়গোস্বামী আসেন উদ্বোধক হিসেবে। মুক্তধারার উদ্যোগে ২০০৪ সালে দুটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ওই বছর নিউইয়র্কর বইমেলা উদ্বোধন করেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও লসএঞ্জেলেসে রাবেয়া খাতুন। ২০০৫ সালের বইমেলার উদ্বোধক ছিলেন ড. আবদুন নূর। ২০০৬ সালে পঞ্চদশ বইমেলা উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আঙ্গিকে বইমেলা শুরু হয়েছে ২০০৭ সাল থেকে। বইবিপণী ‘মুক্তধারা’র সহযোগী সংগঠন ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশনে’র উদ্যোগে বইমেলা রূপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবে। এই উৎসবের অংশ হিসেবে চারটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৭ সালে। নিউইয়র্কে ড. গোলাম মুরশিদ, ডালাসে ড. আনিসুজ্জামান, লস এঞ্জেলেসে সমরেশ মজুমদার এবং নিউজার্সিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এসব বইমেলা উদ্বোধন করেন।২০০৮ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি রফিক আজাদ। ২০০৯ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন হাসান আজিজুল হক। ২০১০ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। ২০১১ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন তপনরায় চৌধুরী। ২০১২ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন শামসুজ্জামান খান। ২০১৩ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। ২০১৪ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি মহাদেব সাহা। ২০১৫ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।খুবই আনন্দের কথা, বিশ্বজিত সাহা ও মুক্তধারা আমাদের এই পঁচিশ বছরে এসব গুণীজনের সান্নিধ্য পাবার সুযোগ করে দিয়েছে। অভিবাসী প্রজন্মের হাতে লেগেছে এসব মহান মানুষের হাতের পরশ। সময় এসেছে অভিবাসী লেখকদের মূল্যায়ন করার। যেসব বাঙালি লেখক উত্তর আমেরিকায় বাংলা ভাষায় লেখালেখি করেন তাদের সম্মান জানাবার। অনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানানো যেতে পারে আমেরিকায় জন্ম নেয়া প্রজন্মকে, যারা ইংরেজি ভাষায় লেখালেখি করছে।একুশের চেতনা এবং বইমেলাকে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আরো তৎপরতা বাড়াবার সময়টিও এসেছে এখন। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বড় বড় সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এই বইমেলার স্পনসর হতে পারে। তারা নিজ নিজ স্টেটে সম্মিলিতভাবে গ্রীষ্মকালীন সময়ে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনকে আহ্বান করে বইমেলা করতে পারেন বিভিন্ন উইকএন্ডে। আমি প্রস্তাব করি, ২০১৬ সালের বইমেলায় বিষয়টি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের সংগঠনগুলোর কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হোক মুক্তধারার পক্ষ থেকে। একটি সমন্বয় কমিটি করে বিভিন্ন স্টেটে তৎপরতা শুরু করা হোক।এবারের একুশের ভাস্কর্য জাতিসংঘের সামনে তাক লাগিয়ে দিয়েছে অনেক পর্যটককে। তারা জানছেন বাংলাদেশ, বাংলা ভাষার কথা। গেল ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের নেতৃত্বে জাতিসংঘের এক প্রতিনিধি দল ভাস্কর্য দেখতে গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।নিউইয়র্কে আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে একুশের গ্রন্থমেলার ২৫ বছর পূর্তি। জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯ মিলনায়তনে একুশের নতুন গ্রন্থ নিয়ে অনুষ্ঠিত এই গ্রন্থমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আমন্ত্রিত লেখক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যোগ দিচ্ছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, আনোয়ারা সৈয়দ হকসহ বিশিষ্ট লেখকরা। একুশ উপলক্ষে প্রকাশিত নতুন বইগুলো এই মেলায় স্থান পাবে। এ ছাড়া প্রকাশিত হচ্ছে একুশ উপলক্ষে বিশেষ স্মারকগ্রন্থ ‘বাঙালির চেতনা’। এই যে চেতনা- এটাই অভিবাসী প্রজন্মের শিকড়ের সন্ধান। বিদেশে বাংলা ভাষার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই।----------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:০৯ | false |
rn | বাংলা সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (দশ) শেষ পর্ব ৯১। 'আয়না' লেখক- আবুল মনসুর আহমেদ। তৎকালীন সমাজের কিংবা জাতীয জীবনে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে যেসব অসঙ্গিত লেখককে পীড়া দিয়েছে তাই তিনি তির্যক বাণীভঙ্গিতে লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর কালজয়ী সৃষ্টি আয়না নামক গল্পগ্রন্থে। আবুল মনসুর আহমেদের প্রথম ব্যঙ্গ গল্প সংকলন আয়না। গল্পগুলোর রচনাকাল ১৯২২ সাল থেকে ১৯২৯ সাল অর্থাৎ বিশ শতকের বিশের দশক। গল্পগুলো প্রথম সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। আয়নার উৎসর্গপত্রে আবুল কালাম শামসুদ্দীন-এর প্রতিটি উদ্ধৃতিটি ছিল এরকম: “বন্ধুরা বলেছেন, এই বইয়ে আমি সবাইকে খুব হাসিয়েছি। কিন্তু এ্ই হাসির পেছনে যে কতটা কান্না লুকানো আছে, তা তুমি যেমন জান, তেমন আর কেউ জানে না।”৯২। 'মুক্তচিন্তা' লেখক- রতনতনু ঘোষ একজন প্রাবন্ধিক ও গবেষক। মুক্তমনারা বইটি খুবই পছন্দ করবেন আশা করি। ৯৩। 'তিস্তাপারের বৃত্তান্ত' লেখক– দেবেশ রায়। তিস্তাপারের বৃত্তান্ত সমাজবাস্তবতা নির্ভর এক প্রকল্পায়ণ কথাসাহিত্য, যা পরিত্রাণহীন সত্যের দর্শন থেকে নেতিদেশ ও দৈশিকতার দর্শণয়িত পথ অভিসারী। এপিকধর্মী এই উপন্যাসের ক্রমপুষ্টিকরণ যে নির্দিষ্ট টাইম এবং স্পেস থেকে উৎসারিত, তা এক আকাশের হাঁ-মুখ থেকে নেমে আসা নদীবিস্তৃতিকে পুরায়ত জনপদের ঐকান্তিক ইতিহাস বলে দায়ী করে। ৯৪। 'উদ্ধারণপুরের ঘাট' লেখক– অবধূত। অবধূত ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক ও তন্ত্রসাধক। তাঁর প্রকৃতনাম দুলালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। জন্ম কলকাতার ভবানীপুরে। পুত্র অমল মুখোপাধ্যায়ের জন্মের পর প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যু হলে উজ্জ্বয়িনীর মহাকাল মন্দিরে সন্ন্যাস (অবধূত) গ্রহণ করেন। অবধূত ছদ্মনামে তিনি একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ৯৫। 'বারো ঘর এক উঠোন' লেখক– জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে মনে হয় বারো রকমের গল্পকে তিনি যেন বর্ণিত আখ্যানের মধ্যে অদৃশ্য সুতো দিয়ে জুড়ে দিয়েছেন। মনে হয় উপন্যাসের বর্ণিত আখ্যানের সর্বত্রই, তলে অবতলে গভীরে, ক্রমশই গল্পের সম্মোহনী ছায়া-প্রচ্ছয়া ঘনীভূত হচ্ছে। উপন্যাসের মধ্যে বারবার গল্পশিল্পের অতিরিক্ত এই সংক্রমণ, তার প্রভাব, তার আধিক্য, উপন্যাস রচনার কারুকৃতিকে অনেকাংশেই কিন্তু নষ্ট করে দিয়েছে। ৯৬। 'সাদা খাম' লেখক– মতি নন্দী। এই গ্রন্থে ধরা পড়েছে প্রতারণা ও স্বীকারোক্তির এক আশ্চর্য সংঘাত, আর্তনাদের ভেতর রূপান্তরিত মানুষের সংবেদ; যা সংশয় ও ফলশ্রুতির ভেতরে চিরকালীন জিজ্ঞাসা ফেলে রেখে, পাঠককে অনুসন্ধানী করে তোলে।৯৭। 'নুন চা' লেখক– বিমল লামা। বইয়ের ফ্লাপ থেকেঃ ভৌগোলিক তরঙ্গ জমে ছিল পাহাড় হয়ে। তারই খাঁজে খাঁজে নিস্তরঙ্গ জীবনের নুনকথা। টয় ট্রেনর মতো ধারাবাঁধা নিসর্গের ভেতর দিয়ে ওঠা নামা। অপরূপ কিন্তু জীর্ণ। নিরাপদ কিন্তু অস্বাধীন। একথা বুঝতে সময় লাগেনা উরগোনের যখন লাল পতাকার পাশ দিয়ে উঠে এলো সবুজ নিশান। লাল সবুজের দ্বৈরথে তৈরি হল হলুদ শিখা। পুড়তে লাগল ঘরবাড়ি। ক্ষেত গোয়াল। স্মৃতি আর স্বপ্ন। নিসর্গের দাউ দাউ চিতা। তবু লুকিয়ে ভালো বাসতে ছাড়ে না জুনি। জীবন বাজি রেখে ভালো বাসতে চায় উরগেনকে। জ্বলন্ত চিতার ফাঁকেই খুঁজে নিতে চায় কোনো স্নিগ্ধ কোণ। নিভৃতে শুধু ভালোবাসবে বলে। কিন্তু যেই নিভৃতের খোঁজ মেলার আগেই বুনো মোষের মতো তেড়ে আসে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলে জুনিকে। তার যোনির ভেতর ঢেলে দেয় তপ্ত গরল। কিন্তু জুনি যেন নিজেকে অভিযোজিত করতে চায় ভালোবাসার সংশ্লেষকের মতো। ভালোবাসতে চায় বহিরাগ গরলকেও। আর সেখানেই শুরু হয় তার সমান্তরাল এক লড়াই। সবার হয়ে কিন্তু একা একা। রাজনীতির নিশানে যখন আকাশ ঢাকে, জুনি পড়ে থাকে মাটি কামড়ে, পৃথিবীর দিকে পিঠ করে, এগোতে চায় আর এক পৃথিবীর দিকে। পৃথিবীটাকে অবাক করে, হতবাক করে। ৯৮। 'গড় শ্রীখন্ড', ও 'রাজনগর' লেখক– অমিয়ভূষণ মজুমদার। অমিয়ভূষণ মজুমদারের প্রথম প্রকাশিত রচনা হল একটি নাটক। প্রথম উপন্যাস গড় শ্রীখণ্ড – ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় সঞ্জয় ভট্টাচার্য সম্পাদিত পূর্বাশা পত্রিকায় ১৩৬০ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা থেকে। গড় শ্রীখণ্ড আবহমান বাংলার উপন্যাস। ভারত স্বাধীনতার আগে-পরের সময়কালে পদ্মাপাড়ে স্থাপিত এ উপন্যাসের কাহিনী। রাজনগর-এর কাহিনী শেষ ১৮৮৩-তে। নয়নতারাতে নয়নতারাও রাজচন্দ্রের মুহূর্তিক শারিরীক সম্পর্কের ফসল যুবক কুমারনারায়ণকে দিয়ে উপন্যাসটি শেষ করা হয়েছে। মানবমন ও সমাজের বিচিত্র অনালোকিত জগতই তাঁর আরোধ্য। বিশ্বসাহিত্যে সিরিয়াস ধারার একজন বুভুক্ষু পাঠক অমিয়ভূষণ মজুদার তাঁর মনন ও শৈলী দিয়ে সে সকল জগতকেই চিত্রায়িত করেছেন। গত পঞ্চাশ বছরের বাংলা উপন্যাসে তাঁর অমোঘ উপস্থিতি আমাদেরকে নিরন্তর প্রাগ্রসর করেছে। ৯৯। 'ক্রান্তিকাল' ও 'কেয়াপাতার নৌকা' লেখক– প্রফুল্ল রায়। ‘"ক্রান্তিকাল" বইটি পড়লে বোঝা যাবে ভারতীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের স্বাধীনতার আকুতি। এই উপন্যাসটি অবলম্বনে ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক শেখর দাস "ক্রান্তিকাল" নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন। যেখানে রূপা গাঙ্গুলী, সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়সহ অনেক বাঘা বাঘা অভিনেতা-অভিনেত্রী অভিনয় করেছেন। কেয়াপাতার নৌকো’র পরবর্তী খণ্ড ‘শতধারায় বয়ে যায়’ এবং তারও পরবর্তী খণ্ড ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’। তিনটি উপন্যাসই আকারে মহাকাব্যিক। অসামান্য ক্ষমতাসম্পন্ন এইঔপন্যাসিক সারা জীবন জুড়ে পুরস্কারও পেয়েছেন প্রচুর। এই লেখকের আরেকটি বইয়ের কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না। তারই রচিত আরো একটি বই ঈশ্বরপুত্র। এই বইটির ঘটনাপ্রবাহ আবর্তিত হয়েছে মাইকেল সমরেশ দত্ত নামের এক বিপত্নীক মানুষকে ঘিরে। মাইকেল সমরেশ দত্ত আদর্শহীন মানুষদের মধ্যে বিরলতম চরিত্র। বহুজন হিতায় নিজেকে সপে দিয়েছে সে। বহু দুঃস্থ, সম্বলহীনের পরম আশ্রয় সে। নারী পাচার চক্রের কবল থেকে একটি সরল গ্রাম্য যুবতীকে বাচাতে গিয়ে কোন মূল্য দিতে হয় তাকে তাই নিয়ে এই আশ্চর্য আখ্যান ঈশ্বরপুত্র। ১০০। 'মহাস্থবির জাতক' লেখক– প্রেমাঙ্কুর আতর্থী। প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর জন্ম ১৮৯০ সালে। 'মহাস্থবির জাতক'-এর প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় 'মহাস্থবির' (প্রেমাঙ্কুর আতর্থী) লিখেছিলেন: "মানুষের জীবনের কাহিনীই সব-চাইতে বিচিত্র উপন্যাস - উপন্যাসের ঘটনা ও চরিত্রের জন্য আশা করি কারও কাছে কোনও জবাবাদিহিতে পড়তে হবে না"। চার-খণ্ডের সম্পূর্ণ বইটি লিখে ও বলে শেষ করতে ওঁর লেগেছিল কুড়ি বছর। চতুর্থ খণ্ড প্রকাশিত হয় প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর মৃত্যুর পরে। এই খণ্ডটি লেখার সময়ে তিনি প্রায় দশ বছর শয্যাশায়ী ছিলেন। কবি উমা দেবীকে মুখে মুখে বলতেন, আর তিনি সেগুলো লিপিবদ্ধ করতেন। চতুর্থ পর্ব-এর নিবেদনে উমা দেবী লিখেছিলেন: "মহাস্থবির জাতকের প্রথম পর্ব যখন লেখা হচ্ছিল, তখন একদিন কথা প্রসঙ্গে (প্রেমাঙ্কুর আতর্থী) বলেছিলেন, যে, পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত সময়ের কথাই তিনি লিপিবদ্ধ করবেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই তিনি সে ইচ্ছে ত্যাগ করেন।" 'বাংলা সাহিত্যের যে ১০০টি বই আপনাকে পড়তেই হবে' শেষ হয়ে গেল। মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে গেল। এখন বেশ কিছু ভাল বই এই তালকায় দিতে পারিনি।চারিদিকে এত্ত এত্ত বইয়ের ছড়াছড়ি যেন বইয়ের মেলা । এত বই কি এক জীবনে পড়া করা সম্ভব ? সম্ভব নয় । এক্ষেত্রে একটি কাজ করা যেতে পারে , প্রখ্যাত লেখকদের সেরা উপন্যাসগুলো পড়া যেতে পারে । আমি এভাবেই পড়ার চেষ্টা করি । আমি এরকম একটি লিস্ট তৈরী করেছি , আমার মতে এগুলি বাংলাসাহিত্যের অবশ্যপাঠ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে পড়বে । অনেক উপন্যাস বাদ পড়তে পারে , আবার অনেক লেখক বাদ পড়তেও পারেন , সেক্ষেত্রে সেটি আমার অজ্ঞতা ধরে নেবেন । একজন লেখকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস কোনটি এটা নিয়ে মতানৈক্য থাকতে পারে । আশা করি, সত্যিকার পড়ুয়ারা এই বই গুলো পড়েছেন, সব গুলো না পড়া হলেও কিছু কিছু যে পড়েছেন তা আমি জানি। আর যারা পড়েননি তারা আজ থেকেই বই গুলো সংগ্রহ করে পড়তে শুরু করে দেন। ১০০ টা বই শেষ করতে দুই-তিন বছরের মত সময় লাগবে। সবাই ভাল থাকুন।আগামীকাল থেকে, 'ইংরেজি সাহিত্যের যে ১০০টি বই আপনাকে পড়তেই হবে' শুরু করবো। সাথেই থাকুন। | false |
ij | কৃষ্ণমূর্তির শিক্ষা Thought is time. Thought is born of experience and knowledge which are inseparable from time and the past. Time is the psychological enemy of man. ভারতের এক তেলেগু ব্রাহ্মন পরিবারে বিশ্বখ্যাত দার্শনিক জিদ্দু কৃষ্ণমূর্তির জন্ম ১৮৯৫ সালের ১১ মে । কৈশরেই প্রখ্যাত থিওসোফিস্ট লীপবেটার এ্যানি বেসান্ত প্রমূখের সঙ্গে পরিচয়। তারা কিশোর কৃষ্ণর ভিতরে আলোকের সন্ধান পেয়েছিলেন। তারপর তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে ওঠা। জীবনভর ভ্রমন করেছেন কৃষ্ণমূর্তি। ধ্যান, মানবিক সম্পর্ক, মনের সরুপ কী ভাবে বিশ্বসমাজে শুভ পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। তাঁর শান্তিবাদী সৌম সিগ্ধতায় মুগ্ধ হয়ে অনেকেই তাঁকে দ্বিতীয় বুদ্ধ বলে অবহিত করতেন। আমৃত্যু অজস্র বই লিখেছেন কৃষ্ণমূর্তি। উল্লেখযোগ্য তিনটি গ্রন্থ হল: “প্রথম ও শেষ মুক্তি”, “একমাত্র বিপ্লব”, ও “কৃষ্ণমূর্তির নোটবই।” ১৯৮৪ সালে অর্জন করেছেন জাতিসংঘের শান্তি পদক । বিশ্বশান্তির স্বপক্ষে ৯০ বছর বয়েসে ভাষণ দিয়েছেন জাতিসংঘে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বাস করতেন কৃষ্ণমূর্তি। ওখানেই মারা যান। ১৯৮৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। মৃত্যুর আগে নাকি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, কত কথাই তো বললাম, কই মানুষ তো বদলালো না! কৃষ্ণমূর্তির মূল ভাবনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। The core of Krishnamurti's teaching is contained in the statement he made in 1929 when he said: "Truth is a Pathless land." Man cannot come to it through any organization, through any creed, through any dogma, priest or ritual, not through any philosophic knowledge or psychological technique. He has to find it through the mirror of relationship, through the understanding of the contents of his own mind, through observation and not through intellectual analysis or introspective dissection. Man has built in himself images as a fence of security--religious, political, personal. These manifest as symbols, ideas, beliefs. The burden of these images dominates man's thinking, his relationships and his daily life. These images are the causes of our problems for they divide man from man. His perception of life is shaped by the concepts already established in his mind. The content of his consciousness is his entire existence. This content is common to all humanity. The individuality is the name, the form and superficial culture he acquires from tradition and environment. The uniqueness of man does not lie in the superficial but in complete freedom from the content of his consciousness, which is common to all mankind. So he is not an individual. Freedom is not a reaction: freedom is not choice. It is man's pretence that because he has choice he is free. Freedom is pure observation without direction, without fear of punishment and reward. Freedom is without motive; freedom is not at the end of the evolution of man but lies in the first step of his existence. In observation one begins to discover the lack of freedom. Freedom is found in the choiceless awareness of our daily existence and activity. Thought is time. Thought is born of experience and knowledge which are inseparable from time and the past. Time is the psychological enemy of man. Our action is based on knowledge and therefore time, so man is always a slave to the past. Thought is ever-limited and so we live in constant conflict and struggle. There is no psychological evolution. When man becomes aware of the movement of his own thoughts he will see the division between the thinker and the thought, the observer and the observed, the experiencer and the experience. He will discover that this division is an illusion. Then only is there pure observation which is insight without any shadow of the past or of time. This timeless insight brings about a deep radical mutation in the mind. Total negation is the essence of the positive. When there is negation of all those things that thought has brought about psychologically, only then is there love, which is compassion and intelligence. আরও জানতে চাইলে http://www.tamilnation.org/sathyam/sathyam.htm সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:০৯ | false |
mk | জঙ্গি মুক্ত বাংলাদেশ চাই___ বেশ কয়েকটি জনসভা এবং বৈঠকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি নির্মম সত্য কথা উচ্চারণ করে জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘জঙ্গিবাদের উত্থান বিএনপি-জামায়াতের কারণে।’ বিশ্বনেতৃবৃন্দ একই কথা একটু অন্যভাবে বলেছেন। যেমন, স্থানীয় সময় শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর বিকালে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতি থাকলে, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হলে, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ মুক্ত থাকলে- আমরা স্বস্তি পাই। কারণ সে পরিবেশে জঙ্গি বা সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশে অবস্থান নিয়ে ভারত কিংবা আশপাশের দেশে নাশকতা চালানোর সুযোগ পায় না।’ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হয়েছে এবং বাংলাদেশের আপামর মানুষ এখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার বলে মত দেন মনমোহন সিং। কেবল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নন বিশ্বের অনেক শীর্ষ নেতারা একই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেন জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। কারণ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আবহমান বাংলা সবসময়ই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর ছিল। এ সেদিন পর্যন্ত অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের আগেও এদেশে জঙ্গিবাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর শাসন-কালোত্তর টানা ২১ বছর সামরিক শাসকদের মদদে দেশের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদের জন্ম হয়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার ক্ষমতায় এলে পটভূমি পাল্টে যায়। মৌলবাদী গোষ্ঠী মাথা তুলে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জঙ্গিরা তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসীন হলে জঙ্গিরা গা-ঢাকা দেয়। আত্মগোপনে থাকা এসব জঙ্গি ও জঙ্গি সংগঠন মহাজোট সরকারের শেষ সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে আবারও মাথা তোলার চেষ্টা করছে। আর সংগঠনগুলোর সবই একই নেটওয়ার্কে অর্থাৎ হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি)-এর কার্যক্রম অনুসরণ করে নাশকতার বিস্তৃত কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছে।১৯৯২ সালে আফগান-ফেরত মুজাহিদদের মাধ্যমেই বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম শুরু হয়। তাদের অনুসৃত পথে এখন শতাধিক জঙ্গি সংগঠন রয়েছে দেশে। নেতৃত্বে আছে আফগান-ফেরত মুজাহিদদের কেউ না কেউ। বরগুনা থেকে ১২ আগস্ট গ্রেফতারকৃত ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সদস্যরা সংগঠিত হচ্ছিল হুজির সাবেক নেতা ও ফাঁসিতে মৃত্যুবরণকারী শায়খ আবদুর রহমানের আদর্শে। মূলত হুজির পূর্বসূরিদের ‘সশস্ত্র বিপ্লব’-এর মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের ‘অসম্পন্ন’ কাজ সম্পন্ন করতে নেমেছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায়, জঙ্গিদের কার্যক্রম প্রায় কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য সরকারের শেষ সময়ে নাশকতার সৃষ্টি করে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে তারা। তারা হেফাজতের সঙ্গে মিশেও সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছিল; ব্যর্থ হয়ে নিজেরা নাশকতার ছক তৈরি করছে দেশজুড়ে। উল্লেখ্য, আফগান-ফেরত কয়েক হাজার মুজাহিদ আলাদা আলাদা সংগঠনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে। হুজি, জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ ও আনসারুল্লাহ’র নীতি ও আদর্শ একই।শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসীন হয়ে গত পৌনে পাঁচ বছরে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোর দিকে অগ্রসর হয়েছে। এ সময় সরকার ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং বামপন্থি সর্বহারাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে। কিন্তু ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু হলে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির দেশে অরাজকতা ও নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। অন্যদিকে চলতি বছর হেফাজতে ইসলামের আবির্ভাব ঘটলে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত কিছু জঙ্গি সংগঠন। এদের সকলের মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো। ফলে এ সরকারের আমলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও, তাদের কারণে খানিকটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ২০১২ সাল পর্যন্ত বর্তমান সরকারকে ১৮টির মতো সন্ত্রাসী কর্মকা- মোকাবেলা করতে হয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে মারা পড়েছে ৪৬ জন। ৩৫টির মতো ইসলামী দলের নাশকতা ব্যর্থ করেছে পুলিশ-র্যাবের যৌথবাহিনী। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৬১৬ জঙ্গিকে যারা হুজি, ইসলামী ছাত্রশিবির, জেএমবি, হিযবুত তাহেরির ও হিযবুত তাওহিদের সদস্য।যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী নেতাদের মুক্ত করার জন্য দেশব্যাপী যে নাশকতার সৃষ্টি করা হয় সে পরিস্থিতিতে আরও বেশ কিছু শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয় পুলিশ। এক হিসেবে, ২০১২ সাল পর্যন্ত৭৭টি নাশকতার ঘটনায় ১২৪৪ জন ক্যাডারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূলত ইসলামী জঙ্গি গ্রেফতারে সাফল্য রয়েছে অনেক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর পুলিশ ছাত্র শিবিরের ১০৭ ক্যাডারকে গ্রেফতার করে। এর আগে ৬ নভেম্বর একই অভিযোগে সারাদেশ থেকে ২০৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। চলতি বছর যেমন, তেমনি ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর র্যাব বরগুনা থেকে হিযবুত তাহেরির ৮ ক্যাডারকে গ্রেফতার করে। সে বছরের ১২ আগস্ট ব্যাপক নাশকতার পরিকল্পনা করার জন্য মিটিংয়ে বসলে ঢাকার পান্থপথের একটি রেস্টুরেন্ট থেকে হিযবুত তাওহিদের ৩৫ ক্যাডারকে গ্রেফতার করে র্যাব। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল করার চেষ্টা করলে কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে র্যাব ও পুলিশ গ্রেফতার করেছে একাধিক জনকে। এদের মধ্যে কেবল হিযবুত তাওহিদ নয়, জেএমবি’র নেতারাও রয়েছে।২০১২ সালের ৫ মার্চ র্যাব খুলনা ও সাভার জোনের দুই প্রধান জেএমবি নেতাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এর আগে ঢাকার উত্তরা থেকে ৯ জানুয়ারি জেএমবি নেতা বাংলা ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ এমদাদুল হক উজ্জ্বলকে গ্রেফতার করে পুলিশ প্রশাসন। জেএমবি’র অর্থ লেনদেনের প্রধান তাহা মোহাম্মদ ফাহিমকে সঙ্গীসহ গ্রেফতার করা হয় একই মাসের ৮ তারিখে। চৌদ্দজন নেতাসহ ৩৪ জন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট সর্বহারাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে যেমন জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকা- নির্মূল করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে, তেমনি যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকদের নাশকতা ও জঙ্গিপনার জবাব দিতে হচ্ছে সরকারকে। বিশ্বব্যাপী সকলের কাছে একথা পরিষ্কার যে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে জামায়াত-শিবির দেশের মধ্যে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ঘাপটি মেরে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই জামায়াত-শিবির সক্রিয় হয় দেশ-বিদেশে। গত বছর বিচারের রায় দেওয়া আরম্ভ হলে তারা আরও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে। তখন ৫ নভেম্বর থেকে টানা ৯ দিন নাশকতায় লিপ্ত হয় তারা। অপরাধীদের মুক্তি দাবি করে উগ্রবাদীরা বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা চালায়।এ পরিস্থিতিতে ১৪ নভেম্বর ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন যে, বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করা হবে। যত বাধা ও হামলা আসবে তত দ্রুত নিষ্পন্ন হতে থাকবে মামলা এবং একে একে রায় ঘোষিত হবে। সে বছরই ২৫ নভেম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর রেজিস্টেশন বাতিল করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় আসীন হলে এসব অপরাধীদের যে মুক্তি দেওয়া হতে পারে সে সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়। কারণ অপরাধীদের ফাঁসির রায় ঘোষিত হলেও তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়নি।উল্লেখ্য, বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুকেন্দ্রিক আন্দোলনের সুযোগে জঙ্গিদের তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল হলে বিএনপি দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধের ডাক দেয়। গত বছর নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের আন্দোলনের নামে সহিংসতায় মারা যায় ২ জন, ৪০ জন পুলিশসহ আহত হয় ২৯০ জন। ৭০টির মতো বোমা হামলা চালায় বিরোধী সমর্থকরা। পুলিশের ৫টিসহ গাড়ি পোড়ানো হয় ৫০টি। ভাঙচুর করা হয় আরও ১৫০টি। সরকার বিএনপির দাবিকে অযৌক্তিক হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা বারবারই বলে আসছে। কারণ পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ ৬ হাজার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে সক্ষম বলে তারা মনে করেন। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে জঙ্গি দমনের বিষয়ে অভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সন্ত্রাস নির্মূলে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ‘বন্দি-বিনিময় চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। উপরন্তু সীমান্তে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী ব্যতীত কাউকে গুলি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ও চলতি বছর উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ঢাকা থেকে ভারতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান হয়েছে। এর আগে মার্কিন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের প্রশংসা করা হয়েছে।‘এ দেশের মাটিতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানো কঠিন’- এ শিরোনামে সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের মাটিতে কাজ চালানো সন্ত্রাসীদের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাস নিয়ে ৩০ মে ওয়াশিংটনে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। ২০১২ সালের পরিস্থিতি নিয়ে ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোরিজম ২০১২’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন করা হয়েছে।উল্লেখ্য, বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘সন্ত্রাস দমন আইন-২০০৯’ পাস করে। সে আইনকে যুগোপযোগী করার প্রয়োজন দেখা দেয় বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ধরণ দ্রুত পাল্টানোর ফলে। এজন্য সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) মানদ- অনুসরণ করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরপর গত বছর এক দফা আইনটি সংশোধন করা হয়। কিন্তু তারপরও আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক মহল থেকে অনুরোধ আসে। এসব বিষয় যুক্ত করতেই সরকার আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১১ জুন জাতীয় সংসদে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল ২০১৩ পাস হয়েছে। এ বিলের গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ইন্টারনেটভিত্তিক সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রতিরোধে বাস্তবসম্মত ধারাসমূহের অন্তর্ভুক্তি। কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা সংগঠন ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকা- করলে সাক্ষ্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এ সংক্রান্ত তথ্যগুলো প্রমাণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা যাবে। অন্যদিকে, এ বিলে জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ধারা যুক্ত হয়েছে। আল কায়েদার সম্পদ বাজেয়াপ্ত, অস্ত্র বিক্রি ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং জঙ্গিবাদে অর্থায়নে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নেওয়া দুটি প্রস্তাবও আইনে পরিণত করা হয়েছে।আইন, বিচার ও নিবিড় নজরদারির জন্য বাংলাদেশে জঙ্গিরা সুবিধা করতে পারছে না। র্যাবের মিডিয়া উইং থেকে জানা গেছে, বোমা হামলা ও অন্যান্য ধর্মীয় উগ্রপনার কারণে মামলার বিচারে ২০১২-১৩ সালে ৫৮ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনের যাবজ্জীবন এবং ১০ জনের ফাঁসির দ-াদেশ হয়েছে। মামলা ও বিচারপ্রক্রিয়ার দ্রুততা জঙ্গিবাদ নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ২০১২ সালের ১৩ মার্চ দ্রুত বিচার আদালত-৪ জেএমবি নেতা মামুনর রশীদকে মৃত্যুদ- দেয় ২০০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপারের অফিসে বোমা হামলার অভিযোগে। সে ঘটনায় ১৬ জন আহত হয়েছিল। এছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০১২ সালের ১৮ মার্চ সিআইডি ঢাকা কোর্টে বেগম জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে।মূলত বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়মিত জঙ্গিদের কার্যক্রম নজরদারি করা হচ্ছে। তারা যাতে সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। একইসঙ্গে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এদেশের। নাশকতা ও সহিংসতা গণতন্ত্রকামী মানুষকে আকৃষ্ট করে না। বরং যারা নাশকতা ও সহিংসতা করবে বা এর পৃষ্ঠপোষকতা দেবে, তাদের প্রতি ক্রমাগত ঘৃণাই প্রকাশ করবে জনগণ। আর জঙ্গিমুক্ত স্বস্তিকর বাংলাদেশই জনগণের প্রত্যাশিত সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। | false |
rn | সবাই ধৈর্য্য ধরুন, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে জামায়াত শিবিরের তান্ডবে- রাস্তায় বের হলে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা নিয়ে শঙ্কা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। সাধারন জনগন পুলিশ আর জামায়াত শিবিরের সংঘর্ষে পড়ে প্রান হারাচ্ছে ।যারা প্রান হারাচ্ছে তারা হয়ে যায় শিবির কর্মী । পুলিশের গুলিতে কেউ মারা গেল সেও হয়ে যায় শিবির কর্মী । কিন্তু আমার মনে হয়- জামায়াত শিবির এবং পুলিশের সংঘর্ষে সাধারন মানুষ মারা যাচ্ছে । আসল বদমাশ গুলার কিচ্ছু হচ্ছে না । তারা সংঘর্ষ শুরু করে দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে । আর যে দু'চার জন ধরা পড়ছে এবং মারা যাচ্ছে - তারা পথচারী । যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ে জামায়াত শিবির কুত্তা পাগল হয়ে গেছে । তারা ভয়াবহ কিছু করার জন্য ওৎ পেতে আছে । তারা যে কোনো সময়- যে কোনো জায়গায় বড় রকমের হামলা চালাতে পারে । শুধু শাহবাগ এলাকায় বাংলার দামাল ছেলেরা থাকে না, সারা বাংলাতেই বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা আছে । কাজেই, সারা বাংলায় নিরাপত্তা বাড়াতে হবে ।মন্দির ভেঙ্গে লাভটা কি ? আজ সারাদেশে ৫০ জন নিহত হয়েছে । সারাদিন বাসায় বন্দী হয়ে থাকতে ভালো লাগে ? রাস্তার পাশের দোকান থেকে যে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা খাবো সেই উপায়ও নেই । সব দোকান বন্ধ। হুটহাট রাস্তায় দৌড় ঝাঁপ শুরু হয় । পুলিশ এসে মার শুরু করে। ধরে থানায় নিয়ে যায় । একথায় বলে না- পাটায় পুতায় ঘষাঘষি মরিচের দফা শেষ, সাধারন জনগনের অবস্থা হয়েছে এই রকম ।জামাতা শিবির পতিহত করার জন্য শুধু পুলিশ ব্যাব আর বিজিবি দিয়ে হবে না । আর্মি নামানো হোক । জামাত শিবির দেশ থেকে কেবারে নিচিহ্ন করা হোক ।দেশের মানুষের জান-মালের ১০০% নিশ্চতা দেওয়া উচিত সরকারের ।জামায়াত শিবির এইবারের বইমেলাটা আনন্দহীন করে দিলো । তার উপর বইমেলাতে শুধু বাংলা একাডেমী'র আধিপত্যটা আমার ভালো লাগে না ।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি এই দেশের প্রধান । সুখে দুঃখে আপনি ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই । সারা দেশের মানুষ আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । জামায়াত শিবিরের হাত থেকে আমাদের বাঁচান । তারা সারা দেশে হলি খেলায় মেতে উঠেছে । টিভিতে এখন খবর দেখতে ভয় লাগে । শাহবাগ থেকে তো কেউ গাড়িতে আগুন দেয়নি, কাউকে হত্যা করেনি, মন্দির ভাঙ্গেনি, বরং টানা ২৪ দিন পার হয়ে গেল শান্তি পূর্ণভাবে । সাঈদী'র ফাসির রায় হয়ে গেছে । এখন সাঈদী'র উচিত তার দলকে বলা- তান্ডব বন্ধ করো । আমি ৭১ এ পাপ করেছি, তার শাস্তি আমাকে দেওয়া হয়েছে । এখন তোমরা ( জামায়াত শিবির ) তান্ডব বন্ধ করে দেশকে ভালোবাসো । দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করো । আমি দেশের সাথে বেঈমানী করে যে মহা ভুল করেছি- তোমরা সেই ভুল করো না। তাহলেই তো সমস্ত ঝামেলা শেষ হয়ে যায় । দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে । একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল, আমাকে তুই বাউল করে, সঙ্গে নিয়ে চল, জীবন মরণ মাঝে, তোর সুর যেন বাজে। আমরা আমা্দের দেশটাকে অনেক ভালোবাসি ।সবাই ধৈর্য্য ধরুন, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ উপর থেকে সব কিছু দেখছেন । জয় বাংলা । | false |
fe | বাঙালির দ্রোহ , বাঙালির খাদ্যাভাস বাঙালির দ্রোহ, বাঙালির খাদ্যাভাস ফকির ইলিয়াস=========================================কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে গেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গেল এক সপ্তাহে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সাহায্য চেয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমদ চৌধুরী জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ সাহায্য চেয়েছেন। এদিকে ‘ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন উপাত্ত, নিদর্শন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ নিয়ে এসব ফ্যাক্টস এবং ডকুমেন্টস জোগাড় করেছে কমিটি। যে দেশে গণহত্যা সংঘটিত হয় সে দেশে পাঁচ দশক পরও বধ্যভমি আবিষ্কৃত হতে পারে। বিভিন্ন নিদর্শন, সাক্ষী এবং উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে সেসব বধ্যভমির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে একাত্তরে যা ঘটেছে তা একটি নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সে ভয়াবহ দৃশ্যের স্মৃতি বহন করে এখনও অনেক মানুষ বেঁচে আছে।‘চ্যানেল আই’তে একটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান প্রতি দিন প্রচারিত হয়। ‘মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানটি উপস্খাপনা করেন দেশের বিশিষ্ট নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। এই অনুষ্ঠানে দিবসভিত্তিক উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বর্ণনা করেন একেকজন অতিথি। সেসব স্মৃতি জাগানিয়া বেদনাবিধুর দিনগুলোর বর্ণনা শুনলে কোন মানুষেরই স্খির থাকার কথা নয়। একাত্তরের মার্চ-পরবর্তী সময়ে কি জঘন্যভাবে গণহত্যা ঘটিয়েছে পাক হানাদাররা!বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে জাতিসংঘের সাহায্য চাওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের আরেকদফা দৃষ্টি কেড়েছে, তা সাক্ষী করে বলা যায়। এ বিষয়ে একটি সুরাহা করার চেষ্টা যদি সরকারের আন্তরিকভাবে থেকে থাকে তবে, তা এগিয়ে নিতে সব প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি দীর্ঘ সতেরো বছর বিভিন্ন তথ্য, তত্ত্ব, উপাত্ত সংগ্রহ করে এই তালিকা প্রণয়ন করেছে। বিচার কার্যের প্রয়োজনে এই তালিকাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেখার বিষয় হচ্ছে, জনগণের চোখকে অন্য প্রবাহে ঘুরিয়ে দেয়া। এ কাজটি দু’ভাগে ঘটে থাকে বাংলাদেশে। একটি রাজনীতিকদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে। আর অন্যটি রাজনীতিক, সমাজ নিয়ন্ত্রকদের পরোক্ষ মদদে। যেহেতু বাংলাদেশে চলমান সময়ে প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক পেশিশক্তি দেখানোর সুযোগ নেই তাই। পরোক্ষভাবে তা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে কোন কোন রাজনৈতিক দল।আমরা লক্ষ্য করছি জাতি যখন যুদ্ধাপরাধী, ঘাতক, দালালদের বিচারের দাবিতে নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তখন! দ্রব্যমূল্যের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়ে একটি মহল এই প্রবাহকে ভিন্ন খাতে ঠেলে দিতে চাইছে। আমরা জানি বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী একটি শক্তিশালী মহল রয়েছে যারা সরাসরি দেশে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ইন জোগায়। তারা সামাজিক প্রতিপত্তিকে কাজে লাগিয়ে এক ধরনের ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানোর চেষ্টা করে যত্রতত্র। আজকের বাংলাদেশে সেই চক্রটি আবার বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে। এমনকি প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে বসে থাকা আমলারাও ধর্মীয় ঋজুতায় এদের কাছে নত হয়ে, তাদের পারপাস সার্ভ করতেই তৎপর হয়ে পড়েন। বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বাড়ার এই চরম সঙ্কট এবং ‘দুর্ভিক্ষের পদধ্বনির প্রাক্কালে এই চক্রটির ওপর বিশেষভাবে নজরদারি রাখা প্রয়োজন বর্তমান সরকারের। মনে রাখতে হবে যে, কোন কািক্ষত প্রত্যাশা চুরমার করে দিতে পারে পরাজিত আলবদর প্রজন্মরা। যারা এই দেশমাতৃকাকে এখনও মনেপ্রাণে ভালবাসে না।দুইসেনাপ্রধান মি. মইন উ আহমেদ তাৎক্ষণিক চালের বাজার ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনিও সেখানে এ বিষয়টি পরোক্ষভাবে বলেছেন যে, একটি মহল কৌশলে বাজার চড়া রাখার ফন্দি-ফিকির করে যাচ্ছে। সেনাপ্রধান আরও বলেছেন, এদের বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্খা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর।দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উদ্যোগ হিসেবে মজুদদার, মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা দেখছি, মৌলবাদী দলগুলোর রাজনৈতিক নেতারা বলতে শুরু করেছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণই প্রধান ইস্যু হওয়া দরকার। ঘাতক দালালদের বিষয়টি নাকি তাদের মতে ‘মীমাংসিত’। কে মীমাংসা করেছে, কীভাবে মীমাংসিত হয়েছে, তা দেশের জনগণ কিছুই জানেন না। যে খুনি তার অপরাধের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দণ্ডভোগ করে না সে ইস্যু তো অমীমাংসিত থেকেই যায়। এবং তা কয়েক যুগ পরও মীমাংসিত হতে পারে। যেমন এখনও বুড়ো নাৎসিবাদীদের বিচার হচ্ছে। তাদের দাঁড় করানো হচ্ছে কাঠগড়ায়।বর্তমান সেনাপ্রধানের কার্যসীমার মেয়াদ একবছর বাড়িয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। বলা হয়েছে জনস্বার্থে এই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী সেনাপ্রধান জুন ২০০৯ সাল পর্যন্ত পদে থাকবেন।এদিকে ২০০৮-এর ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার দৃঢ়তা ব্যক্ত করেছেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে ডিসিদের সে নির্দেশই দিয়েছেন যাতে তারা সার্বিক প্রস্তুতি রাখেন। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা ও সমর্থন প্রশ্নাতীত। সব মিলিয়ে আমরা ধরে নিচ্ছি, নির্বাচন এ বছরের মধ্যেই তারা সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা এ বছর নির্বাচন হবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া তার আইনজীবীর মাধ্যমে জানিয়েছেন দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। বর্তমান সরকার বনাম সম্মিলিত রাজনৈতিক দল, এই দু’পক্ষের কথা প্রবাহিত হচ্ছে বিভিন্ন মেরুতে। এর মধ্যে সরকারের শীর্ষ স্খানীয় কিছু ব্যক্তি কথা বলছেন, দেশের মানুষের খাদ্যাভাস পরিবর্তন নিয়ে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বাঙালি জাতিকে ভাতের বিকল্প হিসেবে আলু খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কিংবা করা উচিত। এক সময় ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ বলে একটা সুপরিচিত ছিল এ জাতির। সেই মাছ এখন ক্রমান্বয়ে অগ্নিমূল্য ধারণ করেছে বাংলাদেশে। মাছের ঝোল এখন অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো। চৌদ্দ কোটি মানুষের দেশে যেখানে প্রায় ছয় কোটি মানুষই অভুক্ত থাকছে সেদেশে ভাতের বদলে আলু খাওয়ার পরামর্শ দান কিছুটা বাকপটুতা বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।আলুর খাদ্য গুণগত কি তা নিয়ে কাউকে হয়তো সহজে বুঝানো যাবে। কিন্তু সবাইকে বুঝানো যাবে না। আলু পশ্চিমা দেশগুলোতে খুব আদৃত খাদ্য। ফেন্সঞ্চ ফন্সাই, ম্যাশড পটেটো, পটেটো সালাদ, এমনকি ইন্ডিয়ান ফুড হিসেবে ‘আলু টিক্কা’, ‘পটেটো রোল,’ ‘কারি পটেটো’ আইটেমগুলোও অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু এই ধনিক শ্রেণীর খাদ্য মেন্যু কি বাংলাদেশের হতদরিদ্র জনগণের বেলায় প্রযোজ্য? না, তা কোন মতেই প্রযোজ্য নয়। আর নয় বলেই ধনী বাঙালিরা ফাস্টফুডের দোকানে দু’চারটা আলু চপ’ গিললেও, আলুকে মেইনডিশ হিসেবে নিতে এখনও অভ্যস্ত নন। তাই এই তত্ত্ব যে হালে পানি পাবে না, তা এর প্রবক্তারাও ভাল জানেন। চাইলেই সবকিছু চালিয়ে দেয়া যায় না। বাঙালিকে ভাতের বদলে আলু খাওয়ানো যেমন যাবে না, তেমনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও মুছে ফেলা যাবে না বাঙালির হৃদয় থেকে। যে শিশু জন্মেই শুনেছে তার পিতা মহান স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, সে দ্রোহী হয়েই বড় হবে সব অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে। সে বিচার চাইবেই সেসব ঘাতক রাজাকারের। একটি সংবাদ বেশ আলোচিত হচ্ছে দেশে-বিদেশে। সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ একজন মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্রের প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে। সেনাপ্রধান বলেছেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান দেখাতেই, খুনের সাজাপ্রাপ্ত আসামি রাখাল চন্দ্রের প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছেন তিনি। সেনাপ্রধানের এই বদান্যতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে তার চেয়ে বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বর্তমান সেনাপ্রধান, যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক পুনর্বাসন এবং ঘাতক দালালদের বিচার কার্যটি সম্পন্ন করে যেতে পারেন। তার মেয়াদ বেড়েছে এক বছর। সে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের এই প্রত্যাশাটিও।নিউইয়র্ক, ০৯ এপ্রিল ২০০৮--------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ১১ এপ্রিল ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত | false |
rg | কিভাবে পালাকার নাট্যদল গঠিত হল_ কিছু সত্য কথন। পর্ব এগারো। রেজা ঘটক পালাকারের শুরুর দিকে আমিন নিলয়ে আমাদের সঙ্গে থাকতো বসনিয়ান হ্যারি। দুই মুকুল ততোদিনে আমিন নিলয় ছেড়ে অন্য বাসায় গেছে। আমিন নিলয়ে তখন আমাদের সঙ্গে গেস্ট হিসেবে আছে সুদত্ত চক্রবর্তী পবনের চট্টগ্রামের বন্ধু স্বপন। স্বপন খুব ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত করে। ভালো তবলা বাজাতে পারে স্বপন। এছাড়া বান্দরবানের কনটাকটারির কাজ রেখে ঢাকায় এসেছিল আমাদের বন্ধু পুলক বিশ্বাস। এসেই আমিন নিলয়ের তারুণ্যের প্রেমে পড়ে গেল পুলক। পরে পুলক আমাদের গেস্ট থেকে হোস্টে পরিনত হল। তো, একদিন সন্ধ্যায় আমরা সবাই লাকি হোটেলে চা খাচ্ছি। হ্যারির কোনো খবর নাই। হ্যারিকে খুঁজতে পবন আমিন নিলয়ে ঢু মারলো। না কোথাও হ্যারি নেই। বাথরুমেও নাই। কোথায় গেল হ্যারি? হ্যারি হ্যারি বলে চিৎকার করে আমিন নিলয় গরম করে তুলেছে পবন। হ্যারির কোনো সারাশব্দ নাই। হঠাৎ একেবারে সামনের রুমে জানালার নিচে সাদা মতো কিছু একটা দেখলো পবন। কাছে গিয়ে দেখলো হ্যারি ফ্লোরে শুয়ে উল্টোপাশের চারতলার ব্যালকনিতে বসা এক তরুণির সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছে। পবনের মাথায় এলো না হ্যারি যদি আলনার আড়ালে লুকিয়ে অন্ধকারে বসে এভাবে কন্ট্রাক করার চেষ্টা করবে তরুণি কি তা টের পাবে? পবন আমাদের বারান্দায় গিয়ে তরুণিকে এক নজর দেখে নিল। আর ঘোষণা দিল, এই হ্যারি, লুকিয়ে না করে এই ব্যালকনিতে বসে যা খুশি করো। তোমারে তো শালা দেখাই যায় না। যাহোক, হ্যারি পবনের সাথে চা খেতে লাকি হোটেলে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল। হ্যারির প্রেমের চেষ্টার ঘটনা জানাজানি হওয়াতে হ্যারি একটু মুড অফ। নাছিম বললো, চলো হ্যারি, আজ আমি তোমার সাইবার ক্যাফের স্পন্সর। আমিন নিলয়ের দিনগুলোতে হ্যারি-পবন আর হ্যারি-নাছিম মাঝে মাঝেই একটা যুদ্ধ হতো। সাধারণতঃ আমরা অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা গান-বাজনা করে শেষ রাতে ঘুমাতে যাই। সামনের রুমের ফ্লোরে একেবারে বামপাশের উত্তর দিকের দেয়াল থেকে ডানপাশের ওয়াল ঘুরে পূর্ব পাশের ওয়াল ঘুরে দক্ষিণ পাশের জানালার কাছের আলনা পর্যন্ত পাশাপাশি একটার পর একটা বালিশ পাতা হয়। তারপর আগে শুইলে আগে পাইবে ভিত্তিতে যে যা মতো শুয়ে পড়ি আমরা। আমাদের সবার মাথা উত্তর দিক ঘুরে আবার পূর্ব দিকে। সবার পা দক্ষিণ দিকে আর পশ্চিম দিকে। অনেকটা হরিণের ঘুমানোর স্টাইলের মতো। সবার পা প্রায় এক জায়গায়। তো পূর্ব দিকে মাথা দিয়ে ঘুমানোর চাঞ্চ পেল পবন, তার পাশে স্বপন, তার পাশে হ্যারি, তার পাশে অজয়। আর উত্তর দিকে মাথা দিয়ে ঘুমানোর চাঞ্চ পেল মনি'দা, তার পাশে আমি, তার পাশে রিয়াজ, তার পাশে নাছিম, তার পাশে পুলক। আর উপর থেকে দেখলে পুলকের পাশেই আবার পবন। অর্থ্যাৎ মনি'দা টু অজয় সবাই পাশাপাশি সার্কেল হয়ে শোয়া আর কি। তো, শেষ রাতে হ্যারি উঠে কিচেনে গেল। গিয়ে খুন্তি আর তরকারির চামচ নিয়ে এলো। এনে স্বপন আর হ্যারি'র মাঝখানে তা রাখলো। প্রায় সবাই তখনো সজাগ। ঘটনা কি? অজয় উঠে লাইট জ্বালিয়ে দিল। হ্যারির হাতে খুন্তি আর লম্বা চামচ। নাছিম জানতে চাইলো ঘটনা কি? হ্যারি কিছু বলে না। মনি'দা জানতে চাইলো, কি হইছে হ্যারি? সকালে অফিস আছে, এখন একটু ঘুমাইতে দাও না? হ্যারি তখন উচ্চারণ করলো, শালা আবার হাত দিলেই এই অস্ত্র দিয়ে দেবো, শালা। আমরা সবাই বুঝলাম, স্বপন আর হ্যারির মধ্যে কিছু একটা ঘটেছে। যাক শেষ পর্যন্ত পবন একটা বিচার করলো। হ্যারিকে হয় স্বপনের পাশেই ঘুমাতে হবে। কারণ ওই রুমে আর কোনো মাথা দেবার জায়গা নাই। নতুবা ভেতরের রুমে মেইন দরজার সামনে একটা তিন টাকির খাট আছে। খাট না বলে ওটাকে দোলনা বলা যায়। ওটায় বসে আমরা বাইরে যাবার সময় কেটস বা জুতা পড়ি আরকি। শেষ পর্যন্ত হ্যারি খুন্তি আর চামচ নিয়ে সেই দোলানার খাটে গিয়ে শুইলো। গোলাম সফিকের লেখা 'শিলারি' নাটকটি তখন মুকুলের নির্দেশনায় বরিশালের শব্দাবলী নাট্যদল বরিশালে প্রযোজনার আয়োজন করেছিল। 'শিলারি' নাটকের সবগুলো গানই পবনের সুর করা। আমরা উঠতে বসতে হাঁটতে খাইতে সেই গান শব্দ করে গাইতাম। 'ঘোড়া উত্রা, নামে চলি, বলি- কইন্যা......' আহা কি সুর!!! ওই গানগুলো পবন যখন সুর করে প্রায় প্রত্যেকটি গানে তবলার বায়া বাজিয়ে তাল দিয়েছিলাম আমি। পবনের সুর করা অনেক গানেই আমি আউলা ঝালা কিছু তাল দিতাম। ওটাই প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেল। পরে অজয়ের মতো বাঘা তবলচিদের সেই তাল বাজাতে একটু ঝামেলাই হতো। বারণ, আমার বাজানো তালের কোনো সুনির্দিষ্ট তাল ছিল না। কিন্তু একটা লয় অবশ্যই থাকতো। পবন সকালে অফিসে যাবার সময় হ্যারি যেখানে ঘুমোচ্ছে সেই খাটে বসেই জুতা পড়ছে। আর গুনগুন করে গাইছে- 'ঘোড়া উত্রা, নামে চলি, বলি- কইন্যা.......' দোলনার খাট পবন আরো দুলুনি দিচ্ছে ইচ্ছে করেই। অমনি হ্যারি খুন্তি আর চামচ নিয়ে লাফিয়ে উঠলো। সেই থেকে হ্যারি'র প্রধান অস্ত্র খুন্তি আর চামচ আমিন নিলয়ে সঙ্গি হল। আমরা সেই রহস্যের বিষয় স্বপন বা হ্যারি কারো কাছেই কোনোদিন জানতে পারিনি। কিন্তু আমরা যখনই বাইরে থেকে হ্যারি সহ আমিন নিলয়ে ঢুকতাম। উল্টোপাশের চারতলা থেকে গোলআলু বা পেঁয়াজ ছুড়ে মারতো সেই তরুণি। আমাদের কখনো পেঁয়াজ না থাকলে আমরা শুধু সামনের রুমে গিয়ে জোরে জোরে বলতাম, পেঁয়াজ নাই তো এখন তরকারি হবে কিভাবে? কিছুক্ষণ পরে চারতলা থেকে পেঁযাজ ঢুবঢুব করে পরা শুরু করতো। পরে নাছিম ব্যালকুনিতে গিয়ে জানান দিতো যে আর লাগবে না। যথেষ্ট হয়েছে। হ্যারি'র প্রেমটা সেই পেঁয়াজ ছোরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইলো। ২০০২ সালের জাপানে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় হ্যারি ওর আসল বান্ধবী মাদোকার কাছে যাবার জন্যে ঢাকা থেকে রওনা হল। টোকিও এয়ারপোর্টে বিশ্বকাপের টিকেট নেই সেই অযুহাতে হ্যারিকে আর জাপানে ঢুকতে দেওয়া হল না। হ্যারিকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটা বিমানে তারা মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিল। সেখানে ভিসা না থাকার কারণে হ্যারিকে ছয় মাস জেলে থাকতে হল। হায়রে জীবন! চলো সবাই মিলে গাই- ''ঘোড়া উত্রা নামে চলি বলি, জাদু কাটা ধোমালিয়া, দুইটি স্রোতধারা, মেঘালয় থেকে নামি আত্মহারা; এক নালেতে মিলিত হই, বঙ্গতে আসিয়া ধন্য, ঘোড়া উত্রা নামে চলি বলি, কইন্যা; একদিকেতে আছে গেরাম, নামে কাঞ্চনপুর, তাতে সুন্দরী মহুয়ার বাড়ি; আরেক দিকে কাজলকান্ডা, দেওয়ানা মদিনা ঘুমাই আছে নদের চাঁদ আর কুমির বুকে, বলিরে সেকথা দুপুর সাঁঝে, শুনলে সেকথা কইন্যা দুঃখ পাবে। ঘোড়া উত্রা নামে চলি বলি, কইন্যা.....'' গানটি লিখেছেন গোলাম সফিক। সুর করেছেন সুদত্ত চক্রবর্তী পবন। 'শিলারী' নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছিল আমিনুর রহমান মুকুল। আর 'শিলারী' নাটকটি প্রযোজনা করেছিল বরিশালের নাট্যদল শব্দাবলী। ৭-৮ বছরের একটি মেয়ে এই গানটি অসাধারণভাবে করেছিল। আর সঙ্গে ছিল শব্দাবলী'র অসাধারণ কোরাস দল। চল সবাই মিলে গাই- ঘোড়া উত্রা নামে চলি বলি, কইন্যা.....'' ......................চলবে............................. সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:০৫ | false |
hm | পিচ্চিতোষ গল্প ০৯: দাদিভাইয়ের বাগান বাবুনের দাদিভাইয়ের খুব বাগানের শখ। কিন্তু বাবুনরা থাকে চারতালার ওপরে। ছাদে উঠতে গেলে আরো দু'তলা টপকাতে হবে দাদিভাইকে, আর নিচে তো কোন জায়গাই নেই, গোটাটাই বাড়ি। ঢাকায় একটা শুষ্কংকাষ্ঠং বাড়িভরা গিজগিজে এলাকায় থাকে বাবুনরা। বাবুনের ঘরের জানালা দিয়ে পাশের বাড়ির ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরূম আর আধখানা ডাইনিং রূম দেখা যায়, আর অনেক কষ্ট করে ঘাড় বাঁকা করলে কার্নিশ এড়িয়ে এক চিলতে আকাশ চোখে পড়ে। রান্নাঘর থেকে অনেকখানি আকাশ দেখা যায় বটে, কিন্তু সেখানে অনেকদিন ধরে একটা ছয়তালা বাড়ির কাজ চলছে, বাবুন তাই রান্নাঘরের জানালা দিয়েও কিছু দেখে না। বারান্দায় দাঁড়ালে কিছুটা আকাশ চোখে পড়ে। একটা বড়সড় আম গাছ আছে পাশের বাড়িতে, সেখানে একটা কাকের বাসাও আছে। উল্টোদিকে গুল্টুদের বাসা দেখা যায় বারান্দায় দাঁড়ালে, গুল্টুর বাবা সেখানে মাঝে মাঝে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খান। বাবুন বারান্দায় গেলেই দাদীভাইয়ের বাগানের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। কী নেই সেখানে? মস্তবড় এক টবে ঝাকড়া একটা কাঁচামরিচের গাছ, তাতে মরিচ পেকে টুকটুকে লাল হয়ে ঝুলতে থাকে। পাশের টবেই আছে একটা ধনেপাতার গাছ। তার পাশে একদম জঙ্গুলে একটা সুগন্ধী পাতার গাছ। তারপাশে একটা মেহেদি গাছ। বাবুনের দাদীভাই সবকিছুরই খুব যত্ন করেন। বাবুন একদিন ভোরবেলা বারান্দায় গিয়ে দেখে, মরিচগাছে সাদা জাল বাঁধা। দাদীভাই গাছে পানি দিচ্ছিলেন প্লাস্টিকের মগ দিয়ে, বাবুন জিজ্ঞেস করে জানলো, চড়ুই পাখি মরিচ গাছের বাচ্চা মরিচগুলোকে খুঁটে খুঁটে খেয়ে ফেলে বলেই এই জাল দিয়ে গাছটাকে বাঁচানো হচ্ছে। বাবুন অবশ্য মাঝে মাঝে বারান্দায় চাল ছড়িয়ে রাখে চড়ুইপাখিগুলির জন্য, কিন্তু এ কথা সে আর দাদীভাইকে বলেনি। বাবুনের বন্ধু ঝুমঝুমের মা-ও বারান্দায় বাগান করেন, কিন্তু ঝুমঝুমদের বাড়ির বারান্দা অনেক বড়, আর সেখানে মস্ত সব ফুলের গাছ। ঝুমঝুমদের বাড়িতে গেলে বাবুনের খুব ভালো লাগে, কেমন মস্ত বড় বড় ওদের ঘরগুলো। ঝুমঝুমের মা খুব নরম গলায় কথায় বলেন, মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলেন, "বাবুরা, তোমরা খেলা করো, কিন্তু ফুলের গাছকে ব্যথা দিও না কিন্তু!" বাবুন দেখেছে, কেউ ঝুমঝুমদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ঝুমঝুমের মা খুব উৎসাহ করে নিজের বাগান দেখান। "এই যে, এটা হচ্ছে সেই ফুলের গাছটা, যেটা ঝুমঝুমের বাবা নেপাল থেকে নিয়ে এসেছিলো। আমি অনেক ক্যাটালগ ঘাঁটলাম, কিন্তু এটার ছবিও দেখিনি, নামও খুঁজে পাইনি। ঝুমঝুমের বাবা এর নাম দিয়েছে ঝালবেগুন ফুল। আপনিই বলুন, এরকম মিষ্টি হলুদ ফুলের নাম ঝালবেগুন রাখার কোন মানে আছে? আর বেগুন কখনো ঝাল হয় ...?" বাবুন একদিন মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলো, "আমার দাদীভাইও বারান্দায় বাগান করেছেন!" ঝুমঝুমের মা বললেন, "তাই নাকি? কী কী ফুল আছে সে বাগানে?" বাবুনের মুখটা একটু শুকিয়ে গিয়েছিলো। দাদীভাইয়ের তো ফুলের বাগান নেই, শুধু খাবার জিনিসের বাগান। বাবুন আমতা আমতা করে বলে, "অনেক ফুল, নাম জানি না তো।" ঝুমঝুমের মা বলেন, "তুমি তোমার দাদীভাইকে জিজ্ঞেস কোরো, তিনি তোমাকে ফুলের নাম শিখিয়ে দেবেন। আর চলো, আমার বাগানের ফুলগুলোকে চিনিয়ে দিই। ... এই যে দেখছো, এটার নাম দুর্বারাণী, দেখেছো কী সুন্দর নীল ছোট ছোট ফুল ...?" বাবুন বাড়ি ফিরে গম্ভীর হয়ে থাকে। দাদীভাই জঙ্গুলে সুগন্ধী পাতা কাঁচি দিয়ে কেটে চা বানিয়ে খান, কিন্তু সেটাতে কোন ফুল ধরে না। ধনে পাতার গাছে যে ফুল ধরে তা চড়ুইয়ের চোখে পড়লেও মানুষের চোখে দেখা মুশকিল। মেহেদি গাছে শুধু পাতা হয়। মরিচ গাছের ফুল নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। বাবুনের মনটা খারাপ হয়ে যায়। ঝুমঝুমের মা একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে বাবুনকে বলেন, "চলো বাবুন, তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিচ্ছি। তোমার দাদীভাইয়ের বাগানটাও দেখে আসি।" বাবুন খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। ঝুমঝুমের মা তো গিয়ে কোন ফুল দেখতে পাবেন না, মরিচ দেখতে পাবেন অবশ্য। কিন্তু মরিচ তো ফুল না, পেকে যত লালই হোক না কেন। বাবুন যে মিথ্যা কথা বলেছে, তা তো আজ ঝুমঝুমের মা জেনে যাবেন। ঝুমঝুমদের আইসক্রীমের মতো ঠান্ডা গাড়িটার ভেতরে বসে বাবুনের ছোট্ট হৃৎপিন্ড ধুকধুক করতে থাকে। ঘন্টা বাজাতই বাবুনের দাদীভাই খুব যত্ন করে ঝুমঝুমের মা-কে ডেকে নিয়ে যান। "তুমিই বাবুনের বন্ধু ঝুমঝুমের মা? কী মিষ্টি একটা মেয়ে তুমি! ঝুমঝুমও এসেছে দেখি। বসো বসো। দাঁড়াও তোমাদের হালুয়া খেতে দিই।" ঝুমঝুমের মা বলেন, "খালা, আপনার বাগান দেখতে এসেছি। বাবুন বলছিলো আপনি নাকি বারান্দায় বাগান করেছেন?" বাবুনের দাদীভাই হাসেন এ কথা শুনে। বলেন, "বাবুন বললো এ কথা? হুমম! আচ্ছা দেখাচ্ছি বাগান। বসো।" বাবুন মুখ শুকনো করে নিজের ঘরে গিয়ে , বাবাকে নকল করে পায়চারি করে কিছুক্ষণ। বাবুনের দাদীভাই দুটো চীনামাটির ছোট্ট প্লেটে হালুয়া নিয়ে ঝুমঝুম আর ঝুমঝুমের মা-কে খেতে দেন। তারপর নিজের ঘর থেকে একটা অ্যালবাম এনে দেখাতে থাকেন। "এই যে, আমার বুলু। এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। এই যে, রাজশাহীতে ছিলাম তখন। দ্যাখো বুলু কত দুষ্টু ছিলো, বারান্দার গ্রিল বেয়ে উঠে বাঁদরামো করছে। ... আর এই যে আমার আরেক ছেলে টুনু, এখন তো বাড়িতেই থাকে না, ছেলেবেলায় খুব ভীতু ছিলো, বাড়ির বাইরে বেরোতেই ভয় পেতো, এই যে দ্যাখো খেলার মাঠে গিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে। ওর কাকা কোথায় যেন যাচ্ছিলো ক্যামেরা নিয়ে, দেখতে পেয়ে ছবি তুলে রেখেছে। ... আর এই যে, বাবুনের বাবা, কাঠের তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করছে ওর মামার সাথে ...।" বাবুন ছবিগুলো অনেক বার দেখেছে, দেখে আসছে সেই ছোট্টবেলা থেকে। বুলু কাকার আরো অনেক ছবি আছে আরো অ্যালবামে, টুনু কাকারও। দাদীভাইয়ের আলমারির ড্রয়ারে আরো অনেকগুলি পুরনো অ্যালবাম, সেখানে আরো আরো ছবি। ঝুমঝুমের মা মনোযোগ দিয়ে ছবিগুলো দেখে টুকটুক করে হালুয়া ভেঙে খেতে থাকেন। ঝুমঝুম বাবুনকে ভ্যাংচায়। ছবি দেখা শেষ হলে ঝুমঝুমের মা বলে, "খালা, আপনার বাগানে কী কী ফুল আছে?" বাবুনের দাদীভাই হাসেন। বলেন, "আছে একটা ফুল। আসো, দেখে যাও।" বাবুন অবাক হয়ে যায়। দাদীভাইয়ের বাগানে আবার ফুল কোথায়? বারান্দায় গিয়ে বাবুন অবাক হয়ে যায়। মস্ত একটা সাদা ফুল ফুটে আছে, তার পাশে আরেকটা মাঝারি ফুল। কী ফুল এটা? জানতে চান ঝুমঝুমের মা-ও। "ও মা, কী সুন্দর! এটা কী ফুল? কোথায় পেলেন?" বাবুনের দাদীভাই হাসেন শুধু। ঝুমঝুমের মা কাঁচামরিচ, ধনে পাতা, মেহেদি আর সুগন্ধী পাতার গাছও দেখেন মন দিয়ে। দাদী ভাই কিছু মেহেদি পাতা ছিঁড়ে একটা খামে ভরে দেন ঝুমঝুমের হাতে। ঝুমঝুম আর তার মা চলে যাবার পর বাবুন দাদীভাইয়ের হাত ধরে বলে, "দাদীভাই, এটা কী ফুল?" দাদীভাই হাসতে থাকেন। বলেন, "এটা পেঁয়াজের ফুল! তুই লোকজনকে এই বাগানের কথা বলে বেড়াস? ছি ছি ছি!" দাদীভাই হাসতেই থাকেন। বাবুন হাসে না। সে বুঝতে পারে, যতই যত্ন করুক না কেন, বারান্দার বাগানটার দিকে দাদীভাইয়ের তেমন টান নেই। দাদীভাইয়ের বাগানটা আছে তাঁর আলমারিতে, ঐ পুরনো অ্যালবামগুলোর মধ্যে। | false |
rg | ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের মধুর প্রতিশোধ !!! একেই বলে মধুর প্রতিশোধ। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ আজ টাইগার্সদের জন্য গর্বিত। দেড়শো কোটি'র ভারতকে এক ফুঁতে কেমন উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। আমরা ১৯ মার্চ মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালের ভারতের সেই বহুল বিতর্কিত ম্যাচের কথা একদম ভুলি নাই। আমরা আইসিসি'র চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসনকে একটা উচিত শিক্ষা দেবার জন্য ঠিক তিন মাস ঘোর অপেক্ষায় ছিলাম। বিশ্বকাপের ওই বিতর্কিত ম্যাচের পর আজ ভারত প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হল। এবং আজকেই ৭৯ রানের জয় ছিনিয়ে নিয়ে টাইগার্স বাহিনী বিশ্বকাপের মুধর প্রতিশোধ নিল। ভারত ক্যাপ্টেন এমএস ধোনি'র কণ্ঠে তাই বার বার বাংলাদেশের পেসারদের প্রশংসা। ধোনিকে ধন্যবাদ যে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটিতে বসে পরাজয়ের স্বাদ গ্রহনের সময় আরেকটি কথা স্বীকার পাবার জন্য। ধোনি বলেছেন, বৃষ্টি ভারতীয় বোলিংকে কিছুটা সুবিধা এনে দিয়েছে। নইলে ৩৩০ রানের বেশি হতে পারতো বাংলাদেশের স্কোর। মানে পরোক্ষ ভাবে ধোনির মুখে টাইগার্সদের ব্যাটিংয়েরও প্রশংসা। কিন্তু ধোনি যেটা জানেন না সেটা হল, আজ আমাদের লক্ষ্য ছিল ৩৫০ রান করার। বৃষ্টি সেই সুযোগ টাইগার্সদের দেয়নি। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় বোলাররা কিছু বাড়তি সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশকে ৪৯.৪ ওভারে ৩০৭ রানে আটকাতে সক্ষম হয়।কিন্তু মাশরাফি বাহিনী শুধু জয়ের জন্যই মুখিয়ে ছিল না, মধুর প্রতিশোধের জন্য তিনটা মাস অপেক্ষার প্রহর গুনেছে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটিতে ১৬ কোটি বাংলাদেশীকে সাক্ষি রেখেই সেই মধুর প্রতিশোধ আসল। এ জয় বড় গৌরবের। এ জয় বড় কঠিন স্বপ্নে বোনা দুর্গম দুঃসাহসী জয়। ভারত ৪ ওভার খেলা বাকি থাকতেই ২২৮ রানে অলআউট। টাইগার্সদের কাছে ভারতের ৭৯ রানের বিশাল লজ্বার পরাজয়। বিশ্বকাপের বিতর্কিত ভারতীয় জয়ের বিপরীতে মাশরাফি বাহিনী'র এ বড় মধুর প্রতিশোধ। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ১৯ মার্চ মেলবোর্নে ভারত টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে করেছিল ৩০২ রান। আজ মধুর প্রতিশোধের ক্ষণে বাংলাদেশ সেই রান টপকে করেছে ৩০৭ রান। বিতর্কিত সেই ম্যাচে ৪৫ ওভারে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৯৩ রানে। ভারত জিতেছিল ১০৯ রানে। আজ ভারত ৪৬ ওভার খেলার সুযোগ পেয়েছিল। রান তুলেছিল ২২৮। কিন্তু ৭৯ রানের দীর্ঘ পাহাড় টপকানোর মত সামর্থ্য ভারতীয় শিবিরে একবারের জন্যও নজরে আসেনি। কেমন অসহায় আত্মসমর্পন!মুশফিকুর রহিম ১৩ ও ১৫ রানে ধাওয়ানকে দুই বার জীবন না দিলে ভারতের উদ্ভোধনী জুটিতে আজ ৯৫ রান আসতো না। সেক্ষেত্রে ভারত আরো আগে অলআউট হয়ে যেত। শেষ পর্যন্ত তাসকিন আহমেদের বলে ধাওয়ানের গ্লাভস ছুঁয়ে আসা বল গ্লাভসবন্দি করে তৃতীয় প্রচেষ্টায় সফল হন মুশফিক। তাতেই ভাঙে ১৬ ওভার স্থায়ী ওই জুটি। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের ভারতীয় সেঞ্চুরিয়ান রোহিত শর্মা (১৩৭)কে আজ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের ডেব্যু হওয়া তরুণ পেসার মোস্তাফিজ শিকার করলেন। অভিষিক্ত এই বাঁহাতি পেসারের বল একদমই বুঝতে পারেননি ৬৩ রান করা রোহিত শর্মা। মাশরাফি'র হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যায় রোহিত। বিপদে পড়ে ভারত। পরের ওভারে আবারো আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। তার স্লোয়ার ডেলিভারিতে নাসিরকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান অজিঙ্কা রাহানে। নাসির হোসেনের দুর্দান্ত ক্যাচ ধরা দেখেই ভারতীয় শিবির ততক্ষণে টলমল হয়ে যায়। ২৫তম ওভারে মোস্তাফিজ ধোনির সঙ্গে প্রচণ্ড ধাক্কা খেলেন। নাকি মিস্টার ধোনি মোস্তাফিজকে সহ্য করতে পারছিলেন না বলে ইচ্ছে করেই ধাক্কা লাগালেন! ওইটুকু পিচ্ছি ছেলেরে বুইড়া ধোনি পাক্কা হাড্ডিগুড্ডি লইয়া যে ঐতিহাসিক ধাক্কা দিলেন, বাপরে বাপ। গ্যালারির দর্শকরা পর্যন্ত ব্যথায় চিক্কর দিলেন!২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালে ফ্রান্সের গ্রেট ফুটবলার জিনেদিন জিদান ইতালি'র মার্কো মাতারাজ্জিকে গুরুর মত গুতা দিয়েও ইতালির কাছে সম্মানজনক ৫-৩ গোলে টাইব্রেকারে হেরেছিল। কিন্তু গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের ক্রিকেট ক্যাপ্টেন এমএস ধোনি বাংলাদেশের অভিষেক হওয়া নাবালক মোস্তাফিজকে কনুই দিয়ে গুতা মারলেও ৭৯ রানের চরম পরাজয় এড়াতে পারেনি। দুনিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে এবং এমএস ধোনির ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এই 'কনুই-গুতা' জিদানের 'গরুর গুতার' মত চির-কলংকময় হয়ে থাকবে। কিন্তু আশ্চার্যের ব্যাপার হল, আইসিসি এখন পর্যন্ত এমএস ধোনিকে কোনো সাজা দেয়নি।তারপর? ১২ ওভার মোস্তাফিজ মাঠের বাইরে। ৩৭ তম ওভারে মাঠে ফিরে দুই ওভারের টানা পাঁচ বলের মধ্যে ভারতীয় তিন ব্যাটসম্যানকে ঘায়েল করলেন সেই ধোনির লগে ঘাই খাওয়া ১৯ বছরের তরুণ পেসার মোস্তাফিজ। ড্রেসিংরুমে শুশ্রূষা নিয়ে ৩৭তম ওভারে ফিরলেন মুস্তাফিজ। আর ওই ওভারের চতুর্থ আর পঞ্চম বলে ফেরালেন সুরেশ রায়না আর রবিচন্দন অশ্বিনকে। হ্যাটট্রিকটা হলো না। বহু কষ্টে হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেন ভুবনেশ্বর কুমার। কিন্তু যা হয়েছে সেটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক মহানায়কের গল্পগাথা হয়ে থাকবে। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে ফেরালেন রবীন্দ্র জাদেজাকেও। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে মোস্তাফিজের অভিষেকেই ৫ উইকেট! ১৯৫ রানে নেই ভারতের ৮ উইকেট! ম্যাচ শেষে মোস্তাফিজের বোলিং বিশ্লেষণ ৯.২ ওভার ৫০ রান ৫ উইকেট। ডেব্যু ওডিআই-তে ৫ উইকেট। সাবাস বাঘের বাচ্চা। তাই আজকে টাইগার্সদের মধুর প্রতিশোধের জয়ে প্লেয়ার অব ম্যাচ সেই মোস্তাফিজুর রহমান।ঘরের মাটিতে এটি বাংলাদেশের টানা নবম জয়। যে জয় দিয়ে একদিনের ক্রিকেটে র্যাঙ্কিংয়ের সাত নম্বর জায়গা নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। আহা এমন না হলে মধুর প্রতিশোধ!বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে বাংলাদেশ যে দল নিয়ে খেলেছিল, আজ সেই দলের নয় জন খেলেছেন। কেবল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জায়গায় লিটন দাশ আর ইমরুল কায়েসের বদলে দলে একজন বাড়তি পেসার তরুণ মোস্তাফিজ। বাকি নয় জন তামিম, সৌম্য, মুশফিক, শাকিব, সাব্বির, নাসির, মাশরাফি, রুবেল, তাসকিন সবাই ছিলেন আজকের দলে। ভারতের জন্য আরো লজ্বা পাওয়ার জায়গাটি হল, আজ বাংলাদেশ দলের যে দুইজন নতুন খেলেছে, তাদের দুজনেরই আজ একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হল। এমন দুর্দান্ত মধুর প্রতিশোধের মাধ্যমে অভিষেক। আহা নয়ন জুড়িয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। আজ ইনিংসের সূচনায় ১৫.৪ ওভার খেলার সময় বাংলাদেশের রান যখন ১ উইকেট ১১৯, তখন বৃষ্টি এসে খেলা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এই বৃষ্টি ভারতীয় বোলারদের জন্য কিছুটা সহায়ক হলেও তা বাংলাদেশের জয়কে ঠেকিয়ে দিতে পারেনি। বাংলাদেশের অপর ব্যাটসম্যান লিটন দাশের একদিনের ক্রিকেটে অভিষেকটা অবশ্য ছন্দময় হল না। মাত্র ১৩ বল খেলে অশ্বিনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন লিটন। ব্যাপার না, অভিষেক ম্যাচে অনেকেরই এমন হয়। তাছাড়া সর্বনাশা বৃষ্টিটা না হলে লিটনকে ওভাবে এলবিডব্লিউ'র ফাঁদে ফেলানো হয়তো সম্ভব হতো না। লেট ইয়োর ড্রিম অন ব্যাবি। লিটন দাশ, জাস্ট পরের দুই ম্যাচে আজকের এই হতাশার চিন্থ একদম মনে রাখার দরকার নেই। আজ টাইগার বাহিনী জিতেছে। এটাই বড় কথা। ভারতের বিপক্ষে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে, এটাই আসল কথা। আমরা পেছনের সকল ব্যর্থতা ভুলে সামনে এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখি। লিটন তোমার মোটেও বিচলিত হবার কোনো কারণ নেই। জাস্ট তোমার স্বাভাবিক খেলাটাই খেল।আজকেও ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেছেন রোহিত শর্মা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ রান করেছেন সুরেশ রায়ানা। আজকের ম্যাচে কোনো দলের কারো সেঞ্চুরি নেই। ভারতীয় দলে একমাত্র রোহিত শর্মা হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন। বিপরীতে বাংলাদেশ দলে হাফ-সেঞ্চুরি তিনটি। তামিম ৬০, সৌম্য ৫৪, শাকিব ৫২। এছাড়া সাব্বির করেছেন ৪১, যা রায়ানার চেয়ে এগিয়ে। বোলিংয়ে বাংলাদেশের অভিষিক্ত মোস্তাফিজ ৯.২ ওভার বল করে ৫০ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন। ধোনির সঙ্গে ধাক্কা না খেলে বেচারা হয়তো দশ ওভার কোটা পূরণ করে ৬ উইকেট পেতে পারতেন! বাংলাদেশের পক্ষে ২১ রানে তাসকিন ২টি ও ৩৩ রানে শাকিব ২টি এবং অবশিষ্ট উইকেট ৫১ রানের বিনিময়ে নেন ক্যাপ্টেন মাশরাফি, দ্য নড়াইল এক্সপ্রেস।ভারতের পক্ষে ৫১ রানে অশ্বিন পেয়েছেন ৩টি উইকেট। আর ৩৭ রানে কুমার ২টি ও ৫৮ রানে যাদব ২টি উইকেট নেন। এছাড়া জাদেজা ৪৮ রানে ১টি ও মোহিত শর্মা ৪.৪ ওভারে ৫৩ রানে ১টি উইকেট নেন। অতিরিক্ত রান দেওয়ায়ও ভারত পিছিয়ে। ভারতীয় বোলাররা দিয়েছে অতিরিক্ত ১৭ রান, যেখানে বাংলাদেশ দিয়েছে মাত্র ১০ রান। ফলে ম্যাচের ফলাফল, বাংলাদেশের ৩০৭ রানের জবাবাে ৪৬ ওভারে ভারত ২২৮ রানে অলআউট। বাংলাদেশের কাছে ভারতের লজ্বাজনক ৭৯ রানের পরাজয়। বিশ্বকাপের সেই কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ আমি দেখেছিলাম শাকুর ভাইয়ের (শাকুর মজিদ) বাসায়। শাকুর ভাইকে সেদিন বলেছিলাম, বাসায় ঢোল নাই? শাকুর ভাই জবাবে বলেছিলেন, কী করবা? বলেছিলাম, বাজাবো। কিন্তু শ্রীনিবাসনের সেই বহুল বিতর্কিত ম্যাচ বাংলাদেশ হেরে গেলে আমার কোলে বসে শাকুর ভাইয়ের সেই ঢোল বড় করুণ আর্তি তুলেছিল। যা আমি আজও ভুলতে পারিনি। তাই আজকের ম্যাচে আমি ইচ্ছে করেই বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখিনি। একবারও মনের ভুলে খেলার খবরে চোখ বুলাইনি। আমি বাংলাদেশের ব্যাটিং শেষ হলে শুধু স্কোরটা জেনে নিয়েছিলাম, যে বাংলাদেশ ৩০৭ করেছে। ভারতের টার্গেট ৩০৮। তারপর ভেতরে ভেতরে এক গভীর কষ্ট নিয়ে শুধু অপেক্ষা করেছি। শাহবাগে আড্ডায় বসে এক কবি বন্ধু'র মোবাইল রেডিওতে ধারাভাষ্য শুনে দম আটকে রেখেছিলাম কিছুটা সময়। এক সময় বন্ধুর মোবাইলে একটা ফোন আসল। ওই সময় মোস্তাফিজ কেবল রোহিতকে দিয়ে আজকের টর্নেডো অভিযান শুরু করেছে। আমরা অন্যদের চিৎকার শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম, আরেকটা আউট। আমরা হিসাব করছিলাম আউট নাম্বার তিন। কিন্তু কে আউট? রোহিত না রাহানে? আমরা বন্ধুরা তখন আকুল আবেদন করছিলাম, এই বলে, মামা কথা কওয়া শেষ কর। মামা শেষ কর। তারপর ফোনে কথা বলা শেষে জানলাম রোহিত আউট। তখন আর আড্ডায় বসে থাকার ধৈর্য রইল না। সবাই বাসার উদ্দেশ্যে ছুটলাম। মধুর প্রতিশোধের এই জয় না দেখে থাকা যায় না। পরে বাসায় এসে পেলাম সেই মোস্তাফিজের জোড়া আউট। অল্পের জন্য হেটট্রিক হল না বেচারার! আজ খেলা যত শেষের দিকে গড়াচ্ছিল, বাংলাদেশ যখন নিশ্চিত জয়ের বন্দরের দিকে ছুটছে, তখন শাকুর ভাইকে খুব মিস করেছি। ইস, আজকের জয়টার সময় যদি শাকুর ভাই পাশে থাকতেন। তৃতীয় ম্যাচটা শাকুর ভাইয়ের সঙ্গে দেখার ইচ্ছে রইল। আজ নিশ্চয়ই আমি না গেলেও শাকুর ভাইয়ের সেই ঢোল হৈ হৈ রৈ রৈ করে তাকঢুম ঢাকঢুম বেজেছে। নাকি শাকুর ভাই'র ঢোল আজ কেউ ফাটিয়ে ফেললো! এই পরাজয় ভারতের দীর্ঘ দিন মনে থাকার কথা। কারণ বিশ্বকাপের বিতর্কিত জয়ের পর সেই বাংলাদেশের কাছে এমন শোচনীয় পরাজয়ের গ্লানি যে ধোনি বাহিনীকে দীর্ঘদিন অস্বস্তি দেবে, সে কথা কানা বগার ছাও জানে। ও বগা তুই চাস কী? পান্থা ভাত পাস কি? একটা যদি পাই, অমনি ধরে গাপুস গুপুস খাই। আজ মোস্তাফিজ ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের যেভাবে বগার মত গাপুস গুপুস করে সাবার করে দিলেন, তা বাংলাদেশের ক্রিকেটে চিরদিন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট। ................................১৯ মার্চ ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৫৯ | false |
rn | আজ সামু পড়ে যা যা জানলাম ১। ইদানিং লোকজন খুব বেশি কবিতা লিখছে। আর আমি খুব বেশি বিরক্ত হচ্ছি। সেই সব কবিতা অতি অখাদ্য।বড় বড় কবিতা। কবিতা'য় গভীরতা তৈরি করতে গিয়ে কঠিন সব শব্দ ব্যবহার করছে। যার যা মন চায়- তাই'ই লিখছে। কবিতা ছাড়া কি লেখার আর কিছু নেই? লেখার বিষয়ের তো অভাব নেই। কি বালছাল লিখে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সস্তা কবিদের কলম গুলো ভেঙ্গে যাক। আমি আপনাদের কবিতা পড়ি না। আমি একজন শিক্ষক এর সাথে এই সব সস্তা কবিদের নিয়ে- আলোচনা করলাম। শিক্ষক বললেন, তারা কবিতা লিখছেন- ভালো কথা। তারা তো কারো কোনো ক্ষতি করছে না। সস্তা কবিতা লিখতে লিখতে একদিন তারা মহান সব কবিতা লিখে ফেলবেন। তারা তো জঙ্গী হচ্ছে না, মাদক বিক্রি করছে না। তাদের সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা-সব কবিতায় ঢেলে দিচ্ছে। তাদেরকে সম্মান করা উচিত। ভালোবাসা উচিত।স্যারের কথা আমার মনে ধরেছে। ২। বাংলাদেশে কম করে হলেও পাঁচ লাখ বিহারি আছে। এদের মধ্যে দেড় লাখ আবার ভোটার। তারা সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ও নাগরিক সুবিধা ভোগ করছে। সব রকম নাগরিক সুবিধা নিলেও এর বিপরীতে সেবামূল্য পরিশোধ করছে না।১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান আলাদা হয়ে যায়। ওই সময় পাকিস্তান সরকার কৌশলে তাদের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশে থাকার ব্যবস্থা করে। ১৯৫২ এবং ১৯৭১ এ এই সব বিহারি'রা পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। এখনও পাকিস্তানের জন্য ওদের অনেক ভালোবাসা আছে। ওদেরকে পাকিস্তানে পাঠানো উচিত। ওদের ভিতর বাংলাদেশ নিয়ে কোন মায়া নাই। প্রতিটা বিহারি ক্যাম্পে দেদারছে মাদক বিক্রি হয়।৩। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু বাংলাদেশে স্কুল কলেজ গুলোতে অনেক খরচ। জাতীর স্বার্থে শিক্ষার দিকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। নয়তো দেশ ও জাতি পিছিয়ে যাবে। দেশের প্রবৃদ্ধি হার যত'ই বাড়ুক। সহজ সরল সত্য হলো- আমাদের দেশের বেশির ভাগ পরিবার'ই দরিদ্র। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ খুব'ই কম থাকে। জাতির সম্পদ আছে, সবাইকে ফ্রি পড়তে দেয়া হোক, আমি মনে করি, সবকিছুর আগে, নাগরিকের শিক্ষার অধিকার।৪। অনেক বইয়ের দোকান এখন হয়েছে কাপড়ের দোকান। এটা খুব দুঃখজনক। যে কোন বিচারেই শ্রাবণ প্রকাশনী নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়নি। এটা কোন মতেই সমর্থণযোগ্য না। তারা তো বই'ই বিক্রি করে, অস্ত্র নয়। ভালো বই হলে পড়ুয়া'রা গ্রহন করবে, মন্দ বই হলে বর্জন করবে। সত্যিকারের বই পড়ুয়ারা কেন কঠিন জিনিশ। আসলে, বাংলা একাডেমি'র সকল ক্ষমতা থাকা উচিত লেখক প্রকাশকদের হাতে। তারাই এর ভাগিদার। বাংলা একাডেমি'র লোকজনের চেয়ে আমাদের দেশের লেখক আর প্রকাশক'রা বাংলা সাহিত্যকে অনেক বেশি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।৫। যার নাম শুনলে শ্রদ্ধায় মাথা নত করি। গর্বে আবার মাথা উচু করে দাঁড়াই। যার হাত ধরে এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল তিনি সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি হাজার বছররের শ্রেষ্ট বাঙ্গালিদের অন্যতম একজন। অন্তর দিয়ে বুঝতে পারি। অনুভব করতে পারি। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৭ | false |
hm | সিয়েন আনিয়োস দে সোলিদাদ ডয়েচলান্ডে এক বছর কেটে গেলো আমার। এক বছর হয়ে এলো, ছেড়ে এসেছি আমার মা-কে, বন্ধুদের, আমার ঘরটাকে, আমার কম্পিউটার-গীটার-বই-ঝুল-কাগজেরগাদা-ভূমিশয্যাকে, ছেড়ে এসেছি আমার কাজ, আড্ডা আর ইতস্তত ঘোরাফেরা, ছেড়ে এসেছি সর্বশেষ যে মিষ্টি মেয়েটি আমাকে অযথাই ভালোবাসার অঙ্গীকার করেছিলো, তাকে, ছেড়ে এসেছি বারান্দা দিয়ে দেখা কয়েক টুকরো আকাশ, বারান্দার পাশে গাছের ডালে কাকের বাসায় কয়েকটি নীলচে ডিম, ছেড়ে এসেছি উল্টোদিকের বাড়ির আলসেতে শুয়ে থাকা আহত বানর, ছেড়ে এসেছি ডাইনিং হলের সোফায় শুয়ে টিভি দেখা, ছেড়ে এসেছি শহরের বৃষ্টি আর রোদ। আরো পেছনে চলে যাই। ছেড়ে এসেছি স্কুল থেকে ফিরে রান্নাঘরে বসে আমার মায়ের সাথে স্কুলের গল্প করতে করতে জানালা দিয়ে দেখা এক টুকরো নীল আকাশের ব্যাকগ্রাউন্ডে শিমুল গাছটাকে, বারান্দার ফ্রেমে উল্টোদিকের বাড়ির বিশাল কৃষ্ণচূড়াকে, আমার শৈশবকৈশোরের প্রিয় বন্ধুরা, যাদের গায়ে এখনো আমার শৈশবের গন্ধ লেগে আছে, ছেড়ে এসেছি ছুটির দিনে আমার বাবার সাথে বসে ক্যারাম খেলা। ছেড়ে এসেছি এক একটি আশ্চর্য সৌরভে ভরা মাতাল দিন, মনে হয় এই তো সেদিন আমার ভাইয়ের বাইসাইকেলের রডে চড়ে বিকেলে ঘুরতে বেরিয়েছি, হাঁটতে বেরিয়েছি আমার বোনের হাত ধরে কৃষ্ণচূড়া গাছে ছাওয়া রাস্তা ধরে, স্কুল থেকে ফেরার পথে ঝগড়া করছি বন্ধুর সাথে। আবারও সামনে আসি। ছেড়ে এসেছি প্রথম প্রেম, প্রথম বিচ্ছেদ, প্রথম সঙ্গম, প্রথম চুম্বন, প্রথম প্রত্যাখ্যান, প্রথম সাক্ষাৎ, প্রথম দায়িত্ব, প্রথম গর্জন। যাবতীয় প্রথমকে হারিয়ে অপ্রথমের পেছনে ছুটে চলি কেবল। মাঝে মাঝে এদের জন্যে কাতর হয়ে থাকি। চলে আসার কিছুদিন আগে খুব মনে পড়ছিলো শৈশবের জীবনকে, যেখানে আমরা কয়েকজন একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে পরম স্বস্তির সাথে অনেকগুলো বছর বেঁচে ছিলাম, আমরা ভাইবোনবাবামা, যাঁদের কেউ এখন মৃত, বাকিরা ছড়িয়ে পড়েছি পৃথিবীর মহাদেশগুলোয়। আমার মায়ের হাঁটু জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম খুব, “কোথায়, আম্মা, কোথায় গেলো দিনগুলি?” আমার রুগ্না দুর্বল ছোট্ট মা সেদিন সবলা হয়ে ওঠেন শৈশবের দিনগুলির মতো, তিনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেন, “চলে গেছে বাবা, দিনগুলি চলে গেছে। ঐ দিনগুলি আবার আসবে, তোমার বাচ্চাদের জন্য। তাদের বোলো, তোমার বাবা, তোমার মা, তোমার ভাই তোমার বোনরা কেমন সুন্দর ছিলে, কত ভালো ছিলে একসাথে। তোমার স্কুলের কথা বোলো তাদের, বোলো তোমার বইগুলির কথা, তোমার বন্ধুদের কথা, তোমার সবকিছুর কথা ... কাঁদে না, আমার বাজান, কাঁদে না ...।“ আমি কাঁদি শুধু। মায়ের সাথে কথা হয় না দীর্ঘদিন। এই দীর্ঘ নিঃসঙ্গ প্রবাসে প্রতি রাতেই নিজের বুকের ভেতরে তাঁর অশ্রুপাতের শব্দ শুনি। অনাগত সন্তানদের অভাবে গল্পগুলি বলি সচলের অদেখা বন্ধুদের, যাঁরা সন্তানের মতোই আপন হয়ে কাছে থাকেন। আর এই এক বছরেই কাটিয়ে চলি শত শত বছরের নিঃসঙ্গতা। জমতে জমতে আমার ঘরে নিঃসঙ্গতাই হয় সবচেয়ে শরীরী, সবচেয়ে আপন, সে হয় আমার মা, আমি হই তার কোলের শিশু, আর স্মৃতির স্তন্যপান করে চলি। | false |
mk | মার্চ এবং বাংলাদেশ মার্চ বাঙালির জীবনে এক অনন্য মাস। এই মাসেই প্রতিরোধ সংগ্রামের ডাক এসেছিল পাকিস্তানি জান্তাদের বিরুদ্ধে। গোটা বাংলা জ্বলে উঠেছিল। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে একাত্তরের মার্চ ছিল উত্তাল। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত মুক্তির ডাক এসেছিল এই মার্চেই, তাই বাঙালি নতুন করে শপথ নেয়। শাণিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে।ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় মার্চের প্রতিটি দিনই অত্যন্ত ঘটনাবহুল ও তাত্পর্যময়। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠন মাসজুড়েই নানা কর্মসূচি পালন করে। গণমাধ্যমও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অগ্নিঝরা মার্চের মহিমাকীর্তন করে। তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চে পাকিস্তানি জান্তার ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালিয়ে নির্বিচারে বাঙালি নিধন, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া, গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা, সর্বোপরি মুক্তিকামী জনতা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের জন্য আনুষ্ঠানিক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে এই মার্চ থেকেই। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর বাঙালি যে তার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে এগোচ্ছিল তা নির্ধারিত হয়ে যায় এই মার্চেই। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় অনেক কিছু। যে ভাষণে বঙ্গবন্ধু তাঁর বজ্রনিনাদ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ঘোষণার পর বাঙালির মধ্যে দেখা গেল এক নতুন উজ্জীবন। তাদের আর বুঝতে বাকি রইল না স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে এবার একটা কিছু করতেই হবে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেই বঙ্গবন্ধু ‘যার হাতে যা আছে’ তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বললেন। ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি’ বলে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন। এই দুর্গ গড়ে তোলার অর্থ যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা তা বুঝতে কারো বাকি রইল না। শত্রুর মোকাবিলা করার দৃপ্ত আহ্বানও ভেসে উঠল তাঁর বজ্রকণ্ঠে। ‘তোমরা ব্যারাকে থাকো’ বলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিও তিনি উচ্চারণ করলেন সতর্কবাণী। প্রয়োজনে খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়ার কথাও বললেন তিনি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যে ম্যান্ডেট তিনি পেয়েছিলেন বস্তুত সেই ম্যান্ডেটই তাঁকে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। যে কারণে বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ড উপহার দিতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন।পাকিস্তানের শোষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিল দীর্ঘদিন থেকে। এ দেশের তরুণ-তরুণী, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই সেদিন এই একটি কণ্ঠের মন্ত্রমুগ্ধে আবিষ্ট হয়ে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য যার যার মতো করে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। স্বাধীনতা ও মুক্তির ঐকতানে বাঙালি জাতি জাতি-ধর্ম-বর্ণ, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নির্বিশেষে এক হয়। এরই মধ্যে নানা কূটকৌশল চালাতে থাকে তত্কালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হন্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে চতুরতার সঙ্গে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে তারা। এভাবেই ঘনিয়ে আসে ২৫ মার্চের কালরাত্রি।পাকিস্তানি জান্তারা ভারী অস্ত্র, কামান নিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের নামে এ দেশের ছাত্র, জনতাসহ নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্মম হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইনসেও হামলা চালায়। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে গোটা জাতি। ‘যার হাতে যা আছে’ তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে যায় এ দেশের মুক্তিপাগল মানুষ। শুরু হয় ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম।দুই.এ বছর স্বাধীনতার ৪৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এবারের মার্চ এসেছে এমন একসময়, যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায়। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁর সরকার এর মধ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে। চিহ্নিত চার যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দণ্ডও কার্যকর হয়েছে। অনেকেই এখন কারাগারে। তাদের বিচার চলছে, যারা এ দেশের লাখ লাখ মানুষকে হত্যায় সহায়তা করেছে, মা-বোনদের তুলে দিয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। তাই এ দেশের আপামর জনতার দাবি যুদ্ধাপরাধের বিচার। কেননা রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের বিচার সম্পন্ন হলেই আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম প্রকৃত অর্থে পূর্ণতা পাবে।যুুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতে ইসলামী ও তার সহযোগী ছাত্রসংগঠনের ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক চেহারাটি সবার কাছে ক্রমেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। সে সময় জামায়াতের নেতাকর্মীরা এ দেশে পাকিস্তানি হানাদারদের সবচেয়ে বড় সহযোগী ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যা, লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে তারা গভীরভাবে জড়িত ছিল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে নানা কারণে তাদের অপরাধের বিচার সম্পন্ন হয়নি। পরবর্তীকালে সামরিক শাসকরা জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে। এ সময় থেকেই জামায়াত গোপনে জঙ্গি তত্পরতা ছড়িয়ে দিতে থাকে।বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে জামায়াতের জঙ্গি তত্পরতা বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। মূলত বিএনপির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জামায়াতের জঙ্গি কর্মীরা সারা দেশে তাদের গোপন ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল। জামায়াত যে এ দেশের প্রগতিশীল রাজনীতিকে ধ্বংসের জন্য গভীরভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং সরকারকে অবশ্যই সারা দেশে জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। কিন্তু সংগঠন হিসেবে এখনো নিষিদ্ধ নয় জামায়াত। যুদ্ধাপরাধের বিচারে আদালতের পর্যবেক্ষণে জামায়াতকে অপরাধী সংগঠন বলা হয়েছে। জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিও দীর্ঘদিনের। কাজেই সময় এসেছে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতাকারী শক্তিকে জিইয়ে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন অসম্ভব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ মার্চে আত্মোপলব্ধি করতে হবে স্বাধীনতার মাধ্যমে কী অর্জন আমাদের। এটা ঠিক স্বাধীনতা লাভের ৪৫ বছরে প্রাপ্তি যেমন আছে, তেমনি আছে না পাওয়ার বেদনাও। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে। আর্থিক সক্ষমতার দিক থেকে এটা অনেক বড় অর্জন। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ। উড়াল সেতুসহ অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। শিক্ষা, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য খাতেও হয়েছে প্রভূত উন্নতি। যুদ্ধাপরাধের বিচারে শীর্ষস্থানীয় চার রাজাকারের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরও অনেক বড় প্রাপ্তি। তবে এখনো অনেক অপ্রাপ্তি রয়ে গেছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে দেশের অনেক মানুষ। শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ উত্পাদন বাড়লেও এখনো সারা দেশে বিদ্যুৎ পৌঁছানো যায়নি। বেকারত্ব, যানজট, পরিবেশদূষণ, নদী দখলের মতো সমস্যা রয়েই যাচ্ছে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে। নগরায়ণের কারণে মানুষজন শহরমুখী। ফলে শহরে জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে। কমে যাচ্ছে কৃষি জমি।সর্বব্যাপী দুর্নীতি রোধ করা যাচ্ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কার্যকর হতে পারেনি। রাজনৈতিক সংস্কৃতিরও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নতি ঘটেনি। পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাসের কারণে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে একমত হতে পারছে না রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই। এরই মধ্যে জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক সমস্যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। সামাজিক অসহিষ্ণুতা, অবক্ষয়, কুসংস্কার দূর হচ্ছে না। লেখক, প্রকাশক, ব্লগার, শিশুহত্যার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তাদের মরণ থাবা বসাচ্ছে। এই অবস্থায় একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, দুর্নীতি ও শোষণ-বঞ্চনাহীন দারিদ্র্যমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিতে হবে চেতনাদীপ্ত মার্চে। সার্থক করতে হবে শহীদের আত্মদান।অত্যাচার, নিপীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্মারক মাস হিসেবে মার্চ প্রতিবারই আমাদের নতুন করে পথ দেখায়। তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সব দেশপ্রেমিক দলকে চেতনাদীপ্ত মার্চে নতুন করে শপথ নিতে হবে। সব অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবে তা করতে হবে রাজনৈতিক সংহতি ও ঐক্য বজায় রেখেই। সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:০১ | false |
rn | নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে___ (পর্ব - তিন) হুমায়ূন আহমেদের অজানা বিষয়ের আজ লিখব তৃতীয় পর্ব। আপনাদের ব্যাপক সাড়া পেয়ে আমি মুগ্ধ। আগের দু'টি পর্ব ফেসবুকে অনেক গুলো পেজে এবং গ্রুপে পোষ্ট করা হয়েছে। হাজার খানিক মানুষ লেখাটি পছন্দ করেছেন। তারা আমাকে বলেছেন, যে যা খুশি বলুক, লেখা চালিয়ে যান। আমাদের ভাল লাগছে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, হেমিংওয়ের লেখা পড়ে আমরা কখনোই বুঝতে পারি না যে, হেমিংওয়ে নিজেকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারেন। তিনি অসম্ভব জীবনবাদী একজন লেখক। তাঁর লেখা পড়ে যদি তাঁকে আমরা বিচার করতে যাই, তাহলে কিন্তু আমরা একটা ধাক্কা খাব। মায়কোভস্কি পড়ে কখনোই বুঝতে পারব না যে, মায়কোভস্কি আত্মহত্যা করার মানুষ। আমরা কাওয়াবাতা পড়ে কখনো বুঝতে পারব না যে, কাওয়াবাতা হারিকিরি করে নিজেকে মেরে ফেলবেন। এঁরা প্রত্যেকেই জীবনবাদী লেখক। জীবনবাদী লেখকদের পরিণতি দেখা গেল ভয়ংকর। তার মানে কী? তার মানে কী দাঁড়ায়? লেখকরা কি সত্যি সত্যি তাঁদের লেখায় নিজেকে প্রতিফলিত করেন? নাকি তাঁদের শুদ্ধ কল্পনাকে প্রতিফলিত করেন? হুমায়ূন আহমেদ নাস্তিক ছিলেন না। নামাজ পড়তেন। যদিও তিনি মাঝে মাঝে তার লেখাতে ধর্ম নিয়ে রসিকতা করতেন। এক সাক্ষাৎকারে হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, মেঘের ওপর বাড়ি বইটা লিখতে গিয়ে প্রধান যে সমস্যা হয়েছে, সেটা ধর্মীয়। মৃত্যুর পরবর্তী জগত্ নিয়ে যদি আমি এমন কিছু লিখি, যেটা ধর্মের সঙ্গে মেলে না, তাহলে ধর্মবিশ্বাসী লোকজন তো রাগ করবে। তবে এই বিষয় নিয়ে আগেও বই লেখা হয়েছে। আমাদের এখানে প্রথম এই বিষয় নিয়ে যিনি লেখেন, তিনি বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়। বইটার নাম দেবযান। এই বইয়ে তিনি মৃত্যুর পরের জগতের অনেক বর্ণনা দিয়েছেন। মৃত্যু নিয়ে প্রায়ই ভাবি। মৃত্যুর পরের জগত্ নিয়েও অনেক ভাবনা-চিন্তা করেছি। সম্ভবত এটা থেকেই মেঘের উপর বাড়ি বইটার ভাবনা মাথায় এসে থাকবে। হুমায়ূন আহমেদ ডাক্তারের কাছে যেতে ভয় পেতেন। হসপিটালের ওষুধের যে গন্ধ, এটা একেবারে সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদকে অসংখ্যবার ডাক্তারদের কাছে যেতে হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ তার এক জীবনে বহুবার বলেছেন তার জীবনে শ্রেষ্ঠ নারী হচ্ছেন গুলতেকিন। হুমায়ূন আহমেদ একা থাকতে পছন্দ করতেন না। সব সময় তিনি চাইতেন তাঁর সব প্রিয় মানুষেরা তাকে ঘিরে থাকুক। তাঁর নাটক-সিনেমারর শূটিং চলাকালে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর পরিবারেই সদস্যদের নিয়ে যেতেন। মাকে নিয়ে যেতেও ভুলতেন না। এ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদ রচিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩৩৪টি (তবে একটি বইয়ের গল্প অন্যরকম। বইটি লিখেছিলেন দু’জন মিলে। বেরিয়েছিল ১৯৮৯ সালে। প্রকাশ করেছিল জনপ্রিয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সূচীপত্র। বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলায় সর্বাধিক বিক্রির তালিকাতেও বইটির নাম উঠেছিল। বইয়ের নামটিও ছিল বেশ দীর্ঘ, ‘কাদের সিদ্দিকীর গ্রন্থ সমালোচনা ও সুদীর্ঘ সাক্ষাৎকার।’ ভেতরে-বাইরে লেখকদ্বয়ের নামও সংযোজিত ছিল : হুমায়ূন আহমেদ ও সালেম সুলেরী।) হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখা ৩২টি বই এবং হুমায়ূন আহমেদ অংকিত ৩৪টি পেইন্টিং রয়েছে। হুমায়ুন আহমেদ খুব একটা ধার্মিক ছিলেন না। তবে মাঝে মাঝে নামাজ পড়তেন কিন্তু রোজা রাখতে পারতেন না। মৃত্যুর আগে আমাদের মহানবী কে নিয়ে একটা মহান লেখা শুরু করেছিলেন। এক পর্ব লিখে শেষ করেছিলেন- যা অনন্যা ঈদ সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। (এই লেখার মজার একটা ইতিহাস হুমায়ূন আহমেদ নিজেই লিখে গেছেন।) সুনীল, শীর্ষেন্দু এবং সমরেশ মজুমদার হুমায়ূন আহমেদকে অনেক পছন্দ করতেন। তারা ঢাকা আসলে অবশ্যই হুমায়ূন আহমেদের সাথে দেখা করে যেতে ভুলতেন না। সুনীল তো একেবারে নুহাশ পল্লীতে চলে যেতেন। অনেক বার নুহাশ পল্লীর পুকুরে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে বসে থাকতেন। একবার পুকুরে নামলে এক ঘন্টার আগে উঠতেন না। হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় বইয়ের সংখ্যা অনেক। তিনি একবার তাঁর পাঠকদের জন্য একটা লিস্ট বানিয়ে ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ সব সময় তাঁর কাছের মানুষদের তাঁর প্রিয় বইগুলো পড়তে দিতেন। এবং অনেকেই সেই বই গুলো ফেরত দিতেন না। হুমায়ূন আহমেদ অসংখ্য মানুষের প্রতিভা বিকশিত করে দিয়েছিলেন। যেমন কুদ্দুস বয়াতি, বারি সিদ্দিকি, এস আই টুটুল, সেলিম চৌধুরী এরকম অসংখ্য নাম বলা যায়। তারপর সিনেমার নায়ক-নায়িকার সংখ্যাও কম নয়। মেহের আফরোজ শাওন বলেছেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম হুমায়ূন আহমেদ লিখতে বসেছেন। ঘুম থেকে উঠে এই দৃশ্য দেখে কি যে ভাল লাগত । এটা আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া। নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদ দু'টা লিচু গাছ আছে। তাঁর একটা তিনি রেখেছেন শুধু পাখিদের জন্য। অন্যটা ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য। কবি শামসুর রাহমানের সাথে আমি তাল মিলিয়ে বলতে চাই- সৃষ্টিশীল মানুষদের কম পক্ষে ৫০০ বছর বেঁচে থাকা উচিত। আমার সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আমি একজন ফোটোগ্রাফার হয়েও স্যারের একটাও ছবি তুলতে পারি নি। এই দুঃখ আমি কোথায় রাখি? (বন্ধুরা হুমায়ূন আহমেদের অজানা কথা কি আপনাদের ভাল লাগছে? যদি ভাল লাগে আওয়াজ দিয়েন। আপনাদের আওয়াজের উপর নির্ভর করছে পরবর্তী পর্ব লেখা হবে কি হবে না।) ছুটির দিনে আমি ও পরী। (লেখার সাথে এই ছবির কোনো সামঞ্জস্য নেই।) সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩৮ | false |
fe | নেমে যাও শোকপাথর নেমে যাও শোকপাথর ফকির ইলিয়াস ===================================== জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল শুনানির রায় হয়েছে। ১৯ নভেম্বর ২০০৯ বাঙালি জাতির ইতিহাসে আরেকটি স্মরণীয় দিন। মাননীয় আদালত পাঁচজন দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি আসামির আাপিল খারিজ করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে বারোজন ঘাতকের ফাঁসির পূর্ববর্তী রায় কার্যকর থেকেছে। বাংলাদেশ আবারো বিজয়ী হয়েছে। আবারো গণমানুষের স্বপ্ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলার মাটিতে। সুবিচার পেয়েছে এই সবুজ শ্যামল প্রকৃতি। ১৯ নভেম্বর ২০০৯ সকাল, যখন ঢাকায় রায়টি প্রকাশিত হওয়ার ক্ষণ, নিউইয়র্কে তখন ১৮ নভেম্বর বুধবার মধ্যরাত। রাত ১০টা থেকেই বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলের বিশেষ বুলেটিনগুলো দেখছিলাম। শুনছিলাম সেই দেশাত্মবোধক গানগুলো যেগুলো এখনো মনের কোণে ডাক দিয়ে যায়- ‘একবার যেতে দে'না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’। এই সময়টুকু ছিল প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালির জন্যই একটি গভীর অপেক্ষার প্রহর। আমি যখন জেগে আছি তখন অনলাইনে দেখলাম আরো অনেকেই জেগে পাহারা দিচ্ছেন সেই সময়বিন্দুকে। লন্ডনে কবি আহমদ ময়েজ, কানাডায় কবির আসলাম, সিডনিতে তৌফিক মুরাদ, ক্যালিফোর্নিয়ায় সুমন্ত তাপস- নবীন-প্রবীণ অনেক মানুষের এই জেগে থাকা। ভাবি, কেন জেগে আছেন তারা? উত্তর পেয়ে যাই সাথে সাথেই। এরা সবাই একটি সুবিচারের প্রত্যাশা করছেন। এরা একটি জাতির কলঙ্ক মোচনের ক্ষণটুকুকে বুকে টানতে চাইছেন। হাঁ, এই জাতি এটাই প্রমাণ করবে- এই মাটিতে খুনি দুর্বৃত্তদের ঠাঁই নেই। এই ভূমি লক্ষ শহীদের পবিত্র রক্তে শানিত। আমি যখন অনলাইনে বন্ধু-বেষ্টিত হয়ে এসব ভাবছি, তখনই আমার মনে পড়ে যায়, ১৫ আগস্ট ’৭৫- এর সেই নৃশংস সকালটির কথা। প্রতিদিনের মতো সকালের সংবাদ শোনার জন্য আমাদের ফিলিপস রেডিওটি অন করেছি মাত্র। না, প্রতিদিনের মতো ঘোষক-ঘোষিকার সুললিত কণ্ঠ নেই আজ। প্রায় চেঁচিয়ে একটি কর্কশ কণ্ঠের আওয়াজ- “আমি মেজর ডালিম বলছি। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে।” কথাগুলো শুনেই চমকে উঠি। কী বলছে এসব? আমি তখন একজন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। ‘ছোটদের রাজনীতি’, ‘ছোটদের অর্থনীতি’র পাঠ নিয়েছি ক’বছর আগেই। শুনে খুবই মর্মাহত হই। কী করবো ভেবে পাই না। ‘জাতির বৃহত্তর স্বার্থ’ ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা’ কথা দুটো বুকে বিদ্ধ হতে থাকে বারবার। এরপর থেকেই সবকটি ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে থাকি আমি। মাত্র কয়েক মাসের মাঝেই কোটি বাঙালির মতো আমিও জেনে যাই- ঘাতকদের ভাষায় ‘জাতির বৃহত্তর স্বার্থ’ মানে কাদের কী স্বার্থ ছিল। আমরা দেখতে থাকি, কীভাব কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজ, মশিউর রহমান যাদু মিয়ারা কার হাত ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলো। কীভাবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পেতে থাকলো কুখ্যাত রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনীর নেপথ্য ও প্রকাশ্য নায়করা। বাড়তে থাকলো তাদের দাপট। দুই. বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য, বর্বরোচিত, অমানবিক অধ্যাদেশটি ছিল ‘ইনডেমনিটি বিল’। পনেরোই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার করা যাবে না- এ মর্মে যে আইনটি জারি করা হয় তা রহিত করতে লেগে যায় বাঙালির একুশটি বছর। এখানে সবিনয়ে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাই, তা হচ্ছে- এই হত্যাকাণ্ডটি যদি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডই ছিল তাহলে শেখ রাসেল, সুকান্ত বাবুর মতো অবোধ শিশু এবং মিসেস শেখ জামালের মতো অন্তঃসত্ত্বা নারীকে কেন প্রাণ দিতে হয়েছিল? কেন খুনিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ওপর। যিনি একটি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবের ছায়া হয়েছিলেন জাতির প্রতিটি দুঃসময়ে। সয়েছিলেন সব কষ্টের বোঝা। কী অপরাধ ছিল তাদের? আসলে একটি জাতি, একটি রাষ্ট্রসত্তাকে পঙ্গু করার জন্যই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। এর হোতা ছিল তারাই, যারা প্রকৃতপক্ষে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি। তারা চেয়েছিল, পাকিস্তানি খানে-দাজ্জালদের দোসর -তাঁবেদার হয়েই থাকতে। আজকের এই সুবিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষণে আমার বারবার চরম ঘৃণায় মনে আসছে খুনিদের পৃষ্ঠপোষক সেই খন্দকার মোশতাকের কথা। জাতির জনকের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে যে খুনি পাপীষ্ঠদেরকে মদদ জুগিয়েছিল। এ প্রজন্ম যদি আজ তার মরণোত্তর বিচারও দাবি করে তবুও হয়তো তাদের ক্ষোভ প্রশমিত হবে না। বারবার যে প্রশ্নটি আমার মনে আসছে তা হচ্ছে- ১৯৭৫ সালের পনেরই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সময় দেশে সুসংহত সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী থাকার পরও তারা কেন কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যকে কঠোর হস্তে দমাতে এগিয়ে এলো না। বঙ্গবন্ধু যদি তৎকালীন সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহকে বলেই থাকেন ‘সফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি আক্রমণ করেছে, তুমি ফোর্স পাঠাও’ -তারপরও সফিউল্লাহ কেন সেদিন তার বাহিনী নিয়ে ধানমণ্ডি অভিমুখে ছুটলেন না? কেন সেদিন খুনিদের প্রতি পাল্টা গোলাবর্ষণ করা হলো না? আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, কোনো বিদ্রোহ কিন্তু তখন দেশব্যাপী হয়নি। কিছু খুনি মর্মান্তিকভাবে জাতির জনককে সপরিবার হত্যা করেছে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে এরা রাষ্ট্রক্ষমতা হাতিয়ে নেয়ার ধৃষ্টতা দেখাতে পারতো না। এই কাপুরুষোচিত আচরণের দায় কে নেবে আজ? পনেরোই আগস্টের বেনিফিশিয়ারি হতে নেপথ্যে ধাপে ধাপে ষড়যন্ত্রকারীরা তৈরিই ছিল। তা না হলে মুজিব হত্যাকাণ্ডের নির্মম ঘটনার পরপরই তথাকথিত শান্তির পতাকাধারী কিছু দেশ অতি উৎসাহী হয়ে তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল কেন? কী ছিল তাদের নেপথ্য উদ্দেশ্য? এরকম অনেক প্রশ্নই তোলা যাবে। এর অনেক উত্তরই জানেন দেশবাসী। সব চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় হয়েছে। বাঙালি জাতি জিতেছে ঠিক একাত্তরের মতোই। আমি টিভির সংবাদে শুনেছি, রায় ঘোষণার সময় বিএনপির সিনিয়র নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আদালতে ছিলেন। তিনি তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। উল্লেখ করা দরকার, এই মওদুদ আহমদ শেখ মুজিবের স্নেহভাজন ছিলেন। তার কি উচিত ছিল না একজন খ্যাতিমান আইনজীবী হিসেবে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক, এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, ব্যারিস্টার তাপস প্রমুখের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। না তিনি তা করেননি। কেন করেননি? একটি ঐতিহাসিক ক্ষণের সহযাত্রী হতে তার কি অসুবিধা ছিল? রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের বর্ষীয়ান আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক। তিনি বলেছেন, রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক। তিনি জোর দিয়ে বলছেন, আজই করা হোক। রফিকুল হক উদাহরণ টেনেছেন জিয়াউর রহমান হত্যা মামলার ক্ষেত্রে রায় বিকেল সাড়ে তিনটায় হওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ছটায়ই কার্যকর করার নজির রয়েছে। খুবই সত্যি যে, গোটা দেশের মানুষই এ রায় দ্রুত কার্যকর দেখতে চান। এ জন্য বিদেশে অস্থানরত বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরও দেশে ফিরিয়ে আনার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য মিত্র দেশসমূহের, জাতিসংঘের, বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সাহায্য গ্রহণ করা উচিত। পলাতক খুনিরা এখনো বিদেশে থেকে নানাভাবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, শান্তি-সমৃদ্ধির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বিশেষ করে লিবিয়ায় যে খুনিরা রয়েছে এদের ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা দরকার। সুবিচার সবসময়ই প্রজন্মের মননকে প্রসন্ন করে। তারা সাহস পায় সত্যের পক্ষে থাকতে। তারা এগিয়ে এসে বুকে ধারণ করে সত্যের আলোক রেখা। বাংলাদেশে যারা এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, তারা অচেনা নয়। এদেরকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করতে হবে। মনে রাখতে হবে এসব অপশক্তি নানা ছলছুতোয় বারবার ছোবল দিতে চাইবে। বাঙালি জাতি গেলো চৌত্রিশ বছর যে শোকপাথর বহন করে চলেছে, সময় এসেছে তা ঝেড়ে ফেলার। সময় এসেছে জাতি হিসেবে বাঙালির মাথা উঁচু করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। ২০ নভেম্বর ২০০৯ ------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ । ঢাকা । ২১ নভেম্বর ২০০৯ শনিবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৯ | false |
hm | উপন্যাস লেখা আমি খুব সংকোচ আর সংশয় নিয়ে একটা উপন্যাস লেখায় হাত দিয়েছি। কাজটা শুরু করে মনে হয়েছে, রবাহূতের মতো অনধিকার প্রবেশ করছি কোনো গম্ভীর অট্টালিকায়। ওখানে আমাকে মানায় না। আমার দৌড় যে ছোটগল্প পর্যন্ত, সে-ও আমি অনুভব করি। ঐ উপন্যাস লিখতে বসে আমার মাথায় গল্প ঘোরে। তাদের শাসন করতে যেয়ে আমার উপন্যাস আর বাড়ে না। রুগ্ন শিশুর মতো সে পড়ে আছে আমার খসড়া খাতার বারান্দায়, নিচে মাঠে হাসছে খেলছে আমার গল্পগুলি। চরিত্রের নাম নিয়ে একটা সমস্যায় পড়ে যাই বারবার, মাথায় আসতে চায় না কোনো নাম। কীবোর্ডে আঙুল রাখার পর একটি চরিত্রের নাম বেরিয়ে আসে আপনাআপনি, রাশেদ। রাশেদ আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু, তার সাথে যোগাযোগ নেই দীর্ঘদিন, স্ত্রীপুত্রক্যারিয়ার নিয়ে মগ্ন রাশেদকে ফোন করে কি জানাবো, দোস্ত, আমি একটা উপন্যাস লিখছি, তোর নামটা ব্যবহার করতে চাই একটা চরিত্রে, ঠিকাছে তো? তারপর থেমে যাই, কারণ উপন্যাস এগোয় না। সে একটা শিশু, একদিন সে খেলতে গিয়েছিলো মাঠে, সেখানে ল্যান্ডমাইনে তার একটা পা উড়ে গেছে, তার এখন একটা পা, বদলে সে পেয়েছে একটা ক্রাচ, সে আর হাঁটে না, সে খোঁড়াতেও চায় না, তাই সে দিনমান বসে থাকে দেয়ালে হেলান দিয়ে, রাস্তা দিয়ে হাঁটছে ছুটছে আমার গল্পেরা। উপন্যাসের শুরু রাশেদের হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া নিয়ে। রাশেদের সাথে জেগে ওঠে উপন্যাসটা। ঘুম ভেঙে রাশেদ নিজেকে খোঁজে, নিজের অবয়বটুকু চিনতে চায়, আর কিমাশ্চর্যম, উপন্যাসটাও সে চেষ্টাই করে। তাকে আরেকটু কায়া দেবার জন্যে প্রয়োজন হয় একটি নারী চরিত্রের, যাকে রাশেদ ফোন করবে অকালে ভেঙে যাওয়া ঘুমের রাতে, যে রাতে ঘুমায় সবকিছু, ঘুমায় তার হোটেল, ঘুমায় যশোর শহর, শুধু ফোনের নাগালের অপরপ্রান্তে জাগ্রত থাকে একটি যুবতী। তার নাম কী রাখা যায়? মাথায় অনেক নাম আসে, সাথে আসে দ্বৈরথ। ক'জনকে ফোন করে জিজ্ঞেস করবো? ক'জনকে ফোন করার উপায় আছে আর? সুজন চৌধুরীকে টোকা দিই গুগলটকে। বলি, একটা মেয়ের নাম দ্যান দাদা। সুজন্দা উদার, বলেন, উলফাত আরা রাখো। খটকা লাগে। রাশেদের ফোনের ওপাশে জেগে থাকা মিষ্টি মেয়েটার নাম উলফাত আরা রাখবো? ভাবি। তারপর মনে হয়, সে বড় অন্যায় হবে। আবারও টোকা দিই সুজন্দাকে। বুঝিয়ে বলি, মেয়েটা অনেক মিষ্টি। উলফাত আরা সে হতেই পারে না। সুজন্দা বলেন, উম্মে কুলসুম? বেজায় বিরক্ত হই। বুঝিয়ে বলি, মেয়েটা দেশেই থাকে, অস্ট্রেলিয়া নয়। উম্মে কুলসুমরা লুপ্ত হয়েছে রাশেদের জগত থেকে। রাশেদ যাকে ফোন করবে, তার নামটা হওয়া উচিত এমন, যার নাম ঘন রাতে ফোন করে উচ্চারণ করতে ভালো লাগে। উম্মে কুলসুম ভোরের অ্যালার্মের মতো। সুজন্দা এবার ভেবেচিন্তে বাতলে দ্যান, শৈলী। শৈলী? আহ। ভালো লাগে নামটা। নাম্বার জানা থাকলে রাশেদের পেছনে লাথি মেরে সরিয়ে আমিই কল দিতাম। কিন্তু জট খুলে যায় তখনকার মতো। রাশেদ ফোন হাতে নিয়ে কল দেয় শৈলীকে। এরপর কিছুটা এগোয় আমার উপন্যাস। তারপর আবার সে থেমে পড়ে। স্কুল ছুটি, ওর বাবা ওকে নিতে আসেনি এখনো। চারদিকে শোরগোল করে ঘরে ফিরছে আমার গল্পরা, উপন্যাসটা দরজার পাশে চুপ করে বসে আছে একটা জারুল গাছের নিচে। শেষ করবো, নিশ্চয়ই শেষ করবো একদিন, তারপর প্রকাশায়তনের প্রকাশকের কাছে নিয়ে যাবো ওকে। পারবো, নিশ্চয়ই পারবো। | false |
ij | গল্প_ ধস নীলুফার আজ সকালে শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দরদাম করে এক কেজি চিংড়ি মাছ কিনলেন। রাফি চিংড়ির মালাইকারী পছন্দ করে, অনেকদিন রাঁধা হয় না, আজ রাঁধবেন। গতকালই নারকেল কুড়ে রেখেছেন। নিজেই পেঁয়াজ আর টমাটো কাটলেন, আজ বুয়া আসেনি; ফ্রিজে অবশ্য আদা-রসুন বাটা ছিল। চিংড়ি পরিস্কার করতে সময় লাগল, কালো শিরাগুলি ফেলে দেওয়ার সময় বিরক্তি লাগে। মুনিয়া আজ ঘরে ছিল। ও তো কম্পিউটার ছেড়ে রান্নাঘরে আসবে না। একটা প্রাইভেট ইউনিভাসিটিতে পড়ছে মুনিয়া। নীলুফার দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। দিন দিন মেয়েটা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। ঘরে থাকলে সারাক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে থাকে, নয়তো টিভি দেখে, নয়তো কানে মোবাইল ঠেকিয়ে কার কার সঙ্গে কথা বলে। তবে রেজাল্ট ভালোই করছে, কখন যে পড়ে মেয়েটা বোঝাই যায় না। কড়াইয়ে তেল গরম হয়ে ধোঁয়া উঠছে। ২/৪টা গরম মশলা ফেলার সময় কী ভাবে হাতে ফোস্কা পড়ল। মুহূর্তেই নীলুফারের গোলপানা ফরসা মুখটা ব্যথায় বিকৃত হয়ে যায়। মনের পর্দায় তখনও ছেলের মুখটা ভাসছিল । আহ্, কতদিন হয়ে গেল ছেলেকে চিংড়ির মালাইকারী রেঁধে খাওয়ানো হয় না। ছেলে পেট পুরে ভাতের সঙ্গে মাখিয়ে চিংড়ির মালাইকারী খাবে, মায়ের রান্নার তারিফ করবে, গোপন সুখ অনুভব করবেন নীলুফার - জীবনে এইসব বিন্দু বিন্দু সুখ আছে বলেই তো বেঁচে থাকার এত আনন্দ। রাফি আজ দুপুরের আগে আগেই ফিরল। ততক্ষণে রান্না শেষ। গোছল সেরে এসে খেতে বসল রাফি। গায়ের রং ওর বাবার মতোই- শ্যামলা, বেশ নাদুসনুদুস চশমা পরা মিষ্টি একটা মুখ। কেমন অস্থির-অস্থির ভাব। ভাত মাখতে মাখতে রাফি বলল, মা আমার ল্যাপটপের কি হল?চিংড়ির মালাইকারী দেখে রাফি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল না দেখে নীলুফার দমে গেলেন। কত কষ্ট করে রাঁধলাম। হাতও পুড়ল। তা ছাড়া সকালের বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলেন। ভিজে শাড়ি পরে অনেকক্ষণ থাকতে হয়েছে। দীর্ঘশ্বাস চেপে নীলুফার বললেন, ল্যাপটপের কথা তোর বাবাকে বলেছি। তোর বাবা বলল, ওর তো একটা কম্পিউটার আছে। এখন আবার ল্যাপটপের কী দরকার। মুহূর্তেই রাফির নরম মুখটা কেমন কঠোর হয়ে উঠল। কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গে বলল, উহঃ মা, তুমি বুঝতে পারছ না। আজকাল ঘনঘন কারেন্ট যাচ্ছে। ল্যাপটপ হলে সুবিধা হয়। আজকাল সবাই ইউনিতে ল্যাপটপ নিয়ে যাচ্ছে।নীলুফার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। রাফির বাবা সরকারি চাকরি করে। সৎ অফিসার হিসেবে সুনাম আছে শরীফুলের। এ জন্য চাপা গর্ব অনুভব করেন নীলুফার। রাফির সহপাঠীদের বাবারা সব কেমন কে জানে? নীলুফারের দেশের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান। মাস কয়েক আগে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগভাঁটোয়ারা করে লাখ দুইয়েক টাকা পেয়েছেন নীফুফার, বিপদ-আপদের জন্য তুলে রেখেছেন, ফিক্সড ডিপোজিট করার কথাও ভাবছেন। সেই টাকা থেকেই এখন ছেলের হাতে ল্যাপটপ কেনার টাকা তুলে দিতে হবে। নীলুফার ছেলেকে বললেন, আচ্ছা, ল্যাপটপ কেনার টাকা তোর বাবা না দিক আমি দেব। কত লাগবে?ফিফটি। রাফির মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ফিফটি। ঠিক আছে।থ্যাঙ্কস মা।নীলুফার লক্ষ করলেন, রাফি ঠিক খাচ্ছে না। ভাত নাড়ছে কেবল। কি রে, খাচ্ছিস না যে- রান্না ভালো হয়নি? না, মা। রান্না ভালো হয়েছে। তা হলে?বেইলি রোডে জেমস আর বর্ষর সঙ্গে দেখা। রাওয়া ক্লাবের কনসার্টের কথা বলেছি না তোমাকে?হ্যাঁ।সেই কনসার্টের টাকা পেলাম। ও। রাফি একটা ব্যান্ডে বেজ গিটার বাজায়। মাঝেমাঝে টাকা-পয়সা পায়।আমি, জেমস আর বর্ষ সুইসে ঢুকে কোক- বার্গার খেলাম। ও। নীলুফার আড়চোখে আঙুলের ফোস্কার দিকে তাকালেন। ছেলে খেয়ে আসবে জানলে এত কষ্ট করে রাঁধার কী দরকার ছিল। আজ সকালে শান্তিনগর বাজারে বৃষ্টিতে ভিজতে হল। বাজার করার সময় বৃষ্টি এলে কী যে বিচ্ছিরি অনুভূতি হয় তা ভূক্তভোগী মাত্রই জানে। রাফি আবার বেরিয়ে গেল।এ্যাই, এ্যাই, রাফি তুই কই যাচ্ছিস আবার এখন?প্র্যাকটিস আছে মা। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নীলুফার। রাফি অল্প হলেও মিউজিক করে আয় করে । মাকে কখনও গিফট দিতে মনে থাকে না ওর। অথচ, এ মাসে দু-বার মোবাইল সেট চেঞ্জ করল। মেয়েটাও কেমন দূরে সরে যাচ্ছে। ক’দিন আগে মুনিয়া অদ্ভূত কান্ড করল। বিকেলের দিকে মেয়ের সঙ্গে বসে টিভি দেখছিলেন নীলুফার। হঠাৎই একটা ফোন পেয়ে হুড়মুড় করে নিচে নেমে গেল মুনিয়া । ‘এ্যাই, এ্যাই কই যাচ্ছিস তুই’-বলেও লাভ হয়নি। দ্রুত বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন নীলুফার । নিচে উঁকি দিয়ে দেখলেন একটা নীল রঙের দামি গাড়ি থেমে আছে। মুনিয়া ঝুঁকে কার সঙ্গে কথা বলছে। নীলুফার অবাক। কে গাড়িতে? মুনিয়া ফিরে এলে কত কথা জিজ্ঞেস করলেন নীলুফার। আমার এক ফ্রেন্ড এসেছিল। মুনিয়া বলল।ফ্রেন্ড তো ওপরে এল না কেন? সে বিজি মা। বিজি? মুনিয়া চুপ করে থাকল । ২রাত এগারোটার পর বেইলি রোডর অফিসার্স ক্লাবের কাছে এই জায়গাটা ঝিমঝিম করে। ঢাকা শহরের কেন্দ্রে এমন নির্জন রাস্তা বিরল। হঠাৎ হঠাৎ গাড়ির শব্দ ভেসে আসে। তারপর আবার চুপচাপ। তখন নাইট গার্ডের হুইশেলের শব্দ কিংবা কুকুরের ডাক। কিংবা রাস্তা কাঁপিয়ে চলে যায় একটি মালবাহী ট্রাক। বারান্দায় ভাসে ইউক্যালিপটাসের গন্ধের সঙ্গে মিশে ডিজেলের গন্ধ । আজকাল অনেক রাত অবধি অন্ধকার বারান্দায় বেতের চেয়ারে নীলুফার স্বামীর পাশে বসে থাকেন। ছেলেমেয়ে দুটি অনেক দূরে সরে গেছে। নীলুফার-শরীফুল দম্পতি এই ফাঁকে আবার কাছাকাছি এসেছে । নীফুফার স্বামীর পাশে বসে বুকে হাত রাখেন ... যেন হাত না রাখলে স্বামীর হৃৎপিন্ডটা ঠিক জায়গায় স্থির থাকবে না, ছিটকে বেরিয়ে যাবে। বছর দুয়েক আগে প্রচন্ড বুকের ব্যথায় অফিসে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন শরীফুল । এই টেস্ট-সেই টেস্ট করার ডাক্তার বাইপাস করাতে বললেন। বাইপাস আর করা হয়ে ওঠেনি। তার কারণ আছে। শরীফুল সৎ অফিসার, অগাধ টাকার যোগান নেই তার। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধানদেনা করে দু লাখ টাকা অব্দি জমিয়েছিলেন। ঠিক তখই মুনিয়া ইন্টামিডিয়েট পাস করে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়বে বলে কান্নাকাটি শুরু করল। নীলুফার-শরীফুল দম্পতি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। কেননা, রাফিও প্রাইভেটেই পড়ে। নীলুফার-শরীফুল দম্পতির ইচ্ছে ছিল মেয়ে অর্থনীতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে । মুনিয়া এখন একটা প্রাইভেটে বি বি এ পড়ছে। ওর ভর্তি ও সেমিষ্টার ফি-র জন্য টাকাটা রাখতে হল, বাইপাস আর করা হয়ে ওঠেনি। তখন একবার দেশের জমি বিক্রির কথা ভাবা হয়েছিল। শরীফুল বাধা দিয়েছিলেন। বাতাকান্দির এক নিভৃত গাঁয়ে তার ছেলেবেলা কেটেছে। যে বাড়িতে শরীফুলের জন্ম, সে বাড়িটাকে বাতাকান্দির লোকে বলত ‘মন্ডল বাড়ি’। ছেলেবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর জামালউদ্দীন চাচা মানুষ করেছেন। জামালউদ্দীন চাচা বিরাট হৃদয়ের মানুষ। বড় ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের নিজের ছেলেমেয়ের মতো দেখতেন। জামালউদ্দীন চাচা বিশেষ করে শরীফুলকে ভীষণ আদর করতেন। বর্ষার সময় নৌকায় বসিয়ে জামালউদ্দীন চাচা কই কই নিয়ে যেতেন। ওপরে মেঘকালো বর্ষার আকাশ, নিচে বিলের কালচে পানি, সেই পানিতে শাপলা-শালুক, পাড়ের উচুঁ ডাঙ্গায় ঘাস, একটা বক কি মাছরাঙা পাখি আর গাবগাছ। এই শহরের ইটকাঠ ফুঁড়ে সে গন্ধ এখনও পান শরীফুল ...নীলুফার বললেন, মুনিয়া আজ ওর মোবাইল হারিয়েছে, কাল দশ হাজার টাকা চেয়েছে। নতুন মোবাইল কিনবে। এ কথায় শরীফুলের বিষন্ন বোধ করেন। বুকেরওপর স্ত্রীর কবোষ্ণ স্পর্শ টের পান। যেন ওখানটায় হাত না রাখলে এ শহরের একজন বিমর্ষ পুরুষের হৃৎপিন্ডটা ঠিক জায়গায় স্থির থাকবে না, ছিটকে বেরিয়ে যাবে। অন্ধকারে ভেসে ওঠে মুনিয়ার মুখ। মেয়ের প্রতি অন্ধ ভালোবাসা আর সীমাবদ্ধ সাধ্যের ছিদ্রহীন চক্রের মাঝখানে ছটফট করছেন শরীফুল ইসলাম মন্ডল । শাপলা-শালুকময় বিলের পানির জলজ গন্ধ আর প্রবোধ দেয় না। বাতাকান্দির জমি এবার বিক্রি না করলেই নয় । নীলুফার ফিসফিস করে বললেন।অহ্। শরীফুলের কন্ঠ থেকে একটি অস্ফুট আর্তনাদ বেরিয়ে এল। নিচের নির্জন সড়কে একটি ট্রাক চলে যায়। হর্নের তীক্ষ্ম শব্দে চমকে উঠলেন । শরীফুল টের পেলেন ওই ট্রাকের চাকা তার শৈশবের সবুজ গ্রামের ওপর দিয়ে দাঁত বসিয়ে চলে যাচ্ছে। আর অদৃশ্য রাহু গ্রাস করতে আসছে সবকিছু। নীলুফার ফিসফিস করে বললেন, ফোন করে জামালউদ্দীন চাচা আসতে বল। আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে, আমাদের সংসার ধ্বসে যাচ্ছে। বাতাকান্দির জমি এবার বিক্রি না করলেই নয় । ঠিক আছে। নিষ্প্রাণ স্বরে বললেন শরীফুল।৩রাতে ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছিলেন নীলুফার। ইন্ডিয়ান চ্যানেলের এই হিন্দি সিরিয়ালটা কখনও মিস করেন না তিনি। হিন্দি সিরিয়ালটার মূল থিম নারীর সঙ্কট, টেনশন। তবে সোয়েতা তিওয়ারির প্রতিপক্ষ অসুখ নয় নারী; স্বামীর অফিসের সুন্দরী সেক্রেটারি ...সন্ধ্যার পর থেকে আজ শরীফুলের শরীর খারাপ লাগছিল । ঘরে শুয়ে আছে সে। মাঝেমাঝে ভীষণ টেনশন হয়-কখন কী হয়ে যায়।রাফি যে গিটারটা বাজায় তাতে ধবধব ধবধব শব্দ হয়। নীলুফার বিরক্ত হলেন। সন্ধ্যার পর একবারও বাবার ঘরে গেল না, এখন আবার গিটার বাজাচ্ছে। উঠে ছেলের ঘরের দরজায় নক করলেন দু-বার। তারপর নব ঘুরিয়ে দরজা খুললেন। ঘরটা অন্ধকার। কেবল টেবিল ল্যাম্প জ্বলে আছে। সিগারেটের গন্ধও পেলেন। এ নিয়ে অনেক চিৎকার চেচাঁমেচি হয়ে গেছে। লাভ হয়নি। আস্তে রাফি, তোর বাবার শরীর খারাপ। নীলুফার চাপা স্বরে বললেন। ওহ্, তোমাদের জন্য ঠিক মতো প্র্যাকটিসও করতে পারব না। রাফি চিৎকার করে ওঠে। নীলুফার দ্রুত দরজা বন্ধ করে দেন। বুকটা ভীষণ কাঁপছে। আজকাল অল্পতেই বুকে তোলপাড় হয়। ড্রইংরুমে এসে বসলেন আবার। সারা শরীরে ঘাম টের পেলেন। ঘরে টিউব লাইট জ্বলে ছিল। হিন্দি সিরিয়ালে মন বসল না। একটু পর মুনিয়া এসে পাশে বসল। চশমা পরা মুখটায় কেমন ঘোর ঘোর ভাব। চুল সরিয়ে বলল, মা, কাল আমার বার্থ ডে। তোমার মনে আছে?আছে। মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করলেন নীলুফার। বললেন, ভাবছি পায়েস করব। কাল তোর ক’জন ফ্রেন্ড আসবে রে? মুনিয়া বলল, না মা। কাল কেউ আসছে না। আসছে না! মানে? নীলুফার অবাক হয়ে গেলেন। মুনিয়া কলেজে পড়ার সময় জন্মদিনে ওর ক্লাসমেটরা আসত। শম্পা, জেসমিন, নীপা। ওরা সব ভিখারুনন্নেছায় মুনিয়ার সঙ্গে পড়ত। মুনিয়া বলল, এখন আর ঘরে কেউ বার্থ ডে পার্টি করে না। খামাখা ঝামেলা ... বরং বন্ধুদের রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়ায়। আমিও কাল বন্ধুদের নিনফাসে নিয়ে গিয়ে খাওয়াব।নিনফাস কই রে?গুলশান।ও।মা?বল।কাল আমার টাকা লাগবে?কত? নীলুফার টের পেলেন মাথার দু-পাশের শিরা দপদপ করছে। তুমি জাস্ট তিন হাজার দিও মা। বাকিটা আমি দিব।ওহ্ । তিন হাজার!নীলুফার টের পেলেন। বুকের ভিতরে কে যেন জোরে জোরে হাতুরি পেটাচ্ছে। মাথার চুলের ভিতর ঘাম ছড়িয়ে যায়। পরশু দিন রাফিকে ল্যাপটপ কেনার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলেন। কী কুলার কিনবে হবে বলে আরও দু হাজার টাকা চেয়ে নিল...বাবার বাড়ির টাকা হু হু করে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভীষণ অস্থির লাগছে। ওদিকটায় শব্দ হল। রাফি । ঘর থেকে বেরিয়ে দ্রুত পায়ে মেইন গেটের দিকে চলে যাচ্ছে । ‘এ্যাই, এ্যাই এত রাতে কই যাচ্ছিস তুই’। ‘এ্যাই, রাফি’! নীলুফার চেঁচিয়ে উঠলেন। তবে চিৎকার করে ডেকে লাভ হল না। একবারও মায়ের দিকে না-ফিরে দরজায় বিকট শব্দে বন্ধ করে বেরিয়ে যায় রাফি।মুনিয়া বলল, মা, তুমি অত চেঁচিও না। রাফি এখুনি ফিরে আসবে।তুই ... তুই জানলি কী করে? নীলুফারের ডাঙায় তোলা মাছের মতন খাবি খাওয়া অবস্থা। ওর সিগারেট শেষ মা। ও সিগারেট কিনতে যাচ্ছে । বলতে বলতে মুনিয়া উঠে দাঁড়াল। অনেক ক্ষণ হল ফেসবুকে লগইন করা হচ্ছে না। বুকের ভিতরে সে জন্য চাপা কষ্ট হচ্ছে। মুনিয়া গত সপ্তাহে আদিত্যদের সঙ্গে বান্দরবান থেকে ঘুরে এল, সেই সব ছবিই আপলোড করেছে ও । বন্ধুরা কে কি কমেন্ট করছে সে সব জানার জন্য ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছে ...এই মুহূর্তে ঠিক ওর সামনেই ওর মায়ের অসহায় ফ্যাকাশে বাস্তব মুখটা কী কারণে চোখে পড়ল না ওর ... ৪জামালউদ্দীন মন্ডল একটা রিকশা নিয়ে দুপুরের আগে আগে সদরঘাটে পৌঁছে গেলেন। তারপর খোঁজ খবর করে বাতাকান্দিগামী লঞ্চে উঠলেন । শরীর ভীষণ দূর্বল ঠেকছে, শরীরে কামড়ে ধরছে রোদ, মন ভীষণ দমে আছে। এই শেষ, ঢাকা শহরে তিনি আর কোনওদিনও আসবেন না । ঢাকা শহরের লোকেরা ভীষণ লোভী হয়। বাতাকান্দির জমি বিক্রির টাকা অন্য কারও হাতে পাঠিয়ে দেবেন শরীফুলের হাতে। লঞ্চে বেশ ভিড়। দোতলার কেবিনে জায়গা পেলেন না। কেউই সিট ছেড়ে দিল না। বৃদ্ধদের আজকাল বাংলাদেশে কেউই সমীহ করে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হইয়া কী লাভ হইল ...এমন ভাবনায় আক্রান্ত হয়ে কেবিনের বাইরে এসে দাঁড়ালেন জামালউদ্দীন। কালো ব্যাগটা রাখলেন পায়ের কাছে। রেলিংয়ের কাছে রোদ তীব্র । ওপাশে বুড়িগঙ্গার কালো পানি বিচ্ছিরি গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেই কালো রঙের পানির ওপরে ভাদ্র মাসের রোদ পড়ে ঝিকমিক করছিল। নদীর পানিতে থুতু ফেললেন জামালউদ্দীন - যা তিনি কখনও করেন না। তার মুখ গম্ভীর দেখায়। এবার ঢাকায় এসে জামালউদ্দীন মন্ডলের বড় ভাইয়ের ছেলে শরীফুলের বাড়িতে গিয়ে দুঃসংবাদ শুনলেন । শরীফুলের বউ নিলুফার অবিলম্বে বাতাকান্দির জমি বিক্রির জন্য চাপ দিল। গোটা আটেক তাল নিয়ে গিয়েছিলেন। তা নিয়ে হাসাহাসি। শরীফুলের বউ নিলুফার বলল, চাচা, আপনি তাল আনতে গেলেন কেন? আজকালকার ছেলেমেয়েরা কি এসব খায়? আপনি মাছ আনতে পারতেন। নিদেন পক্ষে হাঁস-মুরগী। ... আরে, হাঁস-মুরগী আনা কি সহজ কথা। আজকাল আর শরীরে কুলায় না। তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন। তা ছাড়া শরীফুলের ছেলেমেয়েরা বৃদ্ধ জামালউদ্দীনকে এড়িয়ে গেছে। এসব কারণেই ঢাকা শহরের ওপর বীতশ্রদ্ধ জামালউদ্দীন । ... এই শেষ, ঢাকা শহরে তিনি আর কোনওদিনও আসবেন না । বড় ভাই, মানে-শরীফুলের আব্বা, কামালউদ্দীন মন্ডলের সঙ্গে সেই পাকিস্তান আমলে ১৯৬৪ সালে প্রথম ঢাকা শহরে এসেছিলেন জামালউদ্দীন। বড় ভাই ইন্তেকাল করেছেন স্বাধীনতার পরপরই। সেই ভাইয়ের ছেলেমেয়েরা এখন দেশে-বিদেশে আছে, বড় একটা গ্রামে আসে না। বড় ভাইয়ের দশ কানি সম্পত্তি তিনিই দেখাশোনা করে আসছেন, কাগজপত্রও সব তার কাছে। শরীফুলের বউ নীলুফার এখন সেই জমি বিক্রি করতে চাপ দিচ্ছে। নাউজুবিল্লাহ্ । বাপদাদার ভিটেমাটি কেউ বিক্রি করে! মন্ডল বাড়ির ইজ্জত বলে কথা। বাতাকান্দির লোকে কী বলবে। তা ছাড়া জমি দশ কানি আর নাই। নিজের ভাগের জমি ফতুর হয়ে গেছে কবে! তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন জামালউদ্দীন মন্ডল, বড় ছেলে কফিলউদ্দীন ব্যবসার নামে টাকা-পয়সা নষ্ট করল-তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই বড় ভাইয়ের জমিতে হাত দিতে হয়েছে । জমি এখন আছে মাত্র তিন কানি। শরীফুল আর শরীফুলের বউ এতকাল খোঁজখবর করেনি। জামালউদ্দীন মন্ডলের ছোট মেয়ে লাইলীর বিয়ে বাকি, বিয়ে এক প্রকার ঠিক, পাত্রপক্ষকে নগদ টাকা দিতে হবে, তা ছাড়া অন্যান্য খরচও আছে, ... মন্ডল বাড়ির ইজ্জত বলে কথা। মেজ মেয়ের জামাই আবদুর রেজ্জাক মালয়েশিয়া যাবে বলে বছর খানেক ধরে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে ... বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে রোজিনা প্রায় ছয় মাস ধরে বাপের বাড়ি পড়ে আছে। এই শান্ত লক্ষ্মী মেজ মেয়েটি জামালউদ্দীন মন্ডলের বড় প্রিয়। লঞ্চটা মাত্র ছেড়েছে। হঠাৎই জামালউদ্দীন হৃৎপিন্ডে তীব্র আলোরন টের পেলেন। তিনি রেলিং ধরে সিদে হয়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করলেন। শরীরটা ভীষণ কাঁপছে। মুখের ওপর খর রোদের ঝাঁক ঝাঁক তীক্ষ্ম তীর এসে পড়েছে, সেই অদৃশ্য বর্শা ফলকের খোঁচায় রক্তে আর ঘামে ভিজে যাচ্ছে সে মুখ, আর মাথার ভিতরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে লক্ষ লক্ষ মৌমাছির গুঞ্জন, বুকের বাঁ পাশে ব্যথা করতে থাকে, সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট টের পান, দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে যায় ... রোদের রং বদলে কেমন কালচে হয়ে উঠল যেন ...মেরুদন্ডের নিচ থেকে উঠে আসছে গভীর যন্ত্রণার স্রোত ...তারপর বুড়িগঙ্গার কালো পানি থেকে দুটি বিশাল রোমশ কালো হাত ধীরে ধীরে বৃদ্ধকে গ্রাস করতে উঠে আসতে থাকে ... | false |
hm | প্রবাসে দৈবের বশে ০৩৭ ১. সেদিন ভোরে স্বপ্নে দেখলাম, বিয়ে করেছি। বউ দুইজন। দুইজনই হাসিহাসিমুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তাদের গায়ে জামাকাপড় তেমন ছিলো না। আমি গলা খাঁকারি দিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম যে কিছু পর্দাপুশিদা জগতে অতীব জরুরি, পরস্ত্রীর গায়েই কেবল বস্ত্রসঙ্কট মানায়। জবাবে শুনলাম বাসন মাজার আওয়াজ হচ্ছে। এত সুন্দর স্বপ্নটা ভেঙে খান খান হয়ে গেলো হারামজাদা উগোর জন্য। উগো আমার নতুন মিটবেভোনার (ফ্ল্যাটমেট)। ভাস্কো দা গামার দেশের লোক। পয়লা দিন থেকেই খিটিমিটি লেগে আছে ওর সাথে, কেন কে জানে। এমনিতে সে লোক খারাপ নয়, কিন্তু রাত দেড়টা পর্যন্ত রেডিও ছেড়ে গান শোনে। শুধু শুনলেই সমস্যা ছিলো না, সে বেশ উদাত্ত কণ্ঠে রেডিওর সাথে গলা মিলিয়ে গান গায়। পরদিন পরীক্ষা, রাত জেগে পড়ছি, এই অভূতপূর্ব ক্যাকোফোনিতে তাজ্জুব লেগে গেলো। এই দেশে পা রাখার পর থেকেই বাস করছি আশ্চর্য নৈঃশব্দ্যের মধ্যে, শহরের বেশ সুনসান অংশে বাস করি, আর রাত দশটার পর পড়শিরাও একেবারে চুপ মেরে যায়। সেখানে এই মাঝরাতে কোন চুদির্ভাইয়েরা এইসব গোলমাল করে? দরজা খুলে উত্তর পেলাম, উগো আর তার রেডিও। রেডিওর বোন নাই। উগোর আছে। পরীক্ষা দিয়ে এসে উগোকে মিষ্টি করে বুঝিয়ে বললাম, বাপু হে, গান শোনো, গান গাও, খুব ভালো কথা, কিন্তু রাতের বেলা একটু আস্তে শুনলে কেমন হয়? উগো লজ্জিত হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুরু করলো রান্নাঘরের বদনাম। রান্নাঘর ময়লা। পরিষ্কার করা প্রয়োজন। বুঝলাম, স্যামুয়েল কতো ভালো লোক ছিলো। উগো খুবই পরিচ্ছন্ন, আর আমি কিছুটা উচ্ছন্নে গেছি বললেই চলে। রান্নাঘর যতদূর সম্ভব পরিষ্কার করলাম সেদিন বসে বসে। নতুন কেউ এলে রান্নাঘর পরিষ্কার করে দেয়াই রেওয়াজ, আমিও এসে একেবারে পরিষ্কার পেয়েছি সবকিছু। গ্রীষ্মভাগ শুরু হয়েছে কোর্সের। আবারও সেই সপ্তাহে আটাশ ঘন্টা ক্লাস। যদিও আবহাওয়ার লক্ষণ ভালো না, মাঝে রীতিমতো তুষারপাত হলো কয়েকদিন ধরে, আর এখন চলছে টিপটিপ বৃষ্টির দিন। দিনের আলো নেভে সোয়া আটটার দিকে। ক্লাস ফাঁকি দেয়ার বদভ্যাস তৈরি হয়েছে, সেটাকে গলা টিপে খুন করার ধান্ধায় আছি। হাতে আগাথা ক্রিস্টির বিশাল এক সংগ্রহ, সেটাই পড়ছি গোগ্রাসে। মার্ডার অব রজার অ্যাক্রয়েড, ডেথ কামস অ্যাজ দ্য এন্ড (সেবা প্রকাশনী থেকে এর ভাবানুবাদ বেরিয়েছিলো, "কামিনী"), আ পকেটফুল অব রাই, ক্যাট অ্যামাং দ্য পিজিয়নস শেষ করে গতকাল শেষ করলাম অনবদ্য মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস। ক্রিস্টির লেখা খাই আলুর চিপসের সাথে, দুটোই মচমচে। সিনেমাটা দেখার সুযোগ পেয়েও দেখিনি বইটা পড়বো বলে, এখন মনে হচ্ছে সিনেমাটাও দেখা জরুরি। ২. দ্রোহীকে অনলাইনে পেয়ে ফিসফিসিয়ে জানতে চাইলাম, একসাথে জোড়া বউ পাওয়া যাবে কি না। দ্রোহী চুপিচুপি জানালেন, তিনি ৫০% সফলতা অর্জন করেছেন এ কাজে। বাকি ৫০% নিয়ে আপাতত এগোচ্ছেন না, প্রথম এবং একমাত্র বউ জানলে নাকি সমস্যা হতে পারে। তবে আমার খাতিরে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। দুই বান্ধবী, বা দুই খালাতো বোন হলেও চলবে শুনে তিনি একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছেন (কেন, কে জানে?)। সিয়ামিজ যমজে আমার আপত্তির কথা শুনে মুষড়ে পড়েছেন একেবারে। একটা বউ নিয়েই তিনি হিমসিম খাচ্ছেন, আমি কী ভেবে এক জোড়া বউ চাইছি, সেটার কৈফিয়ৎ তলব করলেন কিছুক্ষণ। পাশাপাশি এ-ও জানালেন, আমার কুমতলবের ছাপ নাকি আমার শিঙালো ছড়ায় পড়েছে, সম্ভাব্য স্ত্রীযুগল দৈবাৎ সেসব ছড়া পাঠ করলে আমাকে সম্মার্জনী হাতে তাড়া করতে পারেন। আমি খুবই হতাশ হলাম এসব শুনে। আমি যে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও কর্মঠ যুবক, তা আমার প্রতিটি শিঙালো ছড়ার পংক্তিতেই ফুটে আছে বলে আমার ধারণা ছিলো। প্রাঞ্জল বাংলা ভাষায় বলে দেয়া আছে, আমি কী করতে চাই। তারপরও যদি আমার দুই বউ আমাকে ঝাড়ু মারতে আসে, তা খুবই গ্লানিকর ব্যাপার হবে বলে আমার মনে হয়। দ্রোহী জানালেন, স্বপ্ন সফল করার ব্যাপারে যদি আমি সিরিয়াস হয়েই থাকি, তাহলে কর্মঠ হতেই হবে, নাহলে অনেক সমস্যা হতে পারে (একটা বউ থাকার সমস্যাকে মনে মনে দুই দিয়ে গুণ করেই বললেন কি না বোঝা গেলো না) । কিন্তু তিনি একই সাথে ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগলেন, দুটো বউ কেন? দুটো বউ কেন? বিষয়টা বুঝিয়ে বললাম। ব্যাপারটার চার্মই আলাদা। লোকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো, এরা আমার বউ। তারপর ধরা যাক, সচলায়তনে পোস্ট দেবার সময় হাঁক পাড়বো, ছোট বউ! চা দিও!! আরো আরো সম্ভাবনার কথা ভাবতেই খুব ভালো লাগে। শরীর কন্টকিত হয় রীতিমতো। দ্রোহী একটু আনমনা হয়ে বললেন, দেখি বাসায় গিয়ে ...। আমি বললাম, আপনি বাসায় গিয়ে কী দেখবেন? দ্রোহী শুধু বললেন, আপনার আইডিয়াটা কিন্তু ভালো! | false |
rg | অপারেশান সার্চ লাইট_ একটি অনুসন্ধান।। রেজা ঘটক ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মির ১৪ ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসাইন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী পাকিস্তান চিফ অব আর্মি স্টাফের কাছে অপারেশান সার্চ লাইটের খসড়া উত্থাপন করেন। পাকিস্তানের কোয়েট্টা থেকে ১৬ ইনফেন্ট্রি ডিভিশান ও খাড়িয়ান থেকে ৯ ডিভিশানকে পূর্ব পাকিস্তানে মুভ করানো হল। পাকিস্তানের যে সকল সেনা অফিসার অপারেশান সার্চ লাইটের পরিকল্পনায় দ্বিমত পোষণ করেন তাদেরকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল। পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর ও জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল শাহবাজ ইয়াকুব খান ও ভাইস এডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ এহসানকে তাঁদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল। লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের নতুন গর্ভনর ও জিওসি করা হল। ১৭ মার্চ ১৯৭১ সালে জেনারেল হামিদ টেলিফোনে জেনারেল রাজাকে অপারেশান অথরিটি প্রদান করেন। ১৮ মার্চ সকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে জেনারেল রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী অপারেশান পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করেন। লাইট ব্লু অফিসিয়াল প্যাডে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ১৬ প্যারায় ৫ পৃষ্ঠার পরিকল্পনা লিখলেন। রাও ফরমান আলী লিখিত পরিকল্পনার অবজেক্টটিভগুলো ছিল নিম্নরূপ- 1. Impose curfew at 0110 hrs and close telephone/telegraph/radio station and shut all presses down 2. Seal off the city by taking over road, rail and river communication and patrol river 3. Arrest Sheikh Mujib and 15 top Awami League leaders during operation 4. Conduct house to house search in Dhanmondi and Hindu areas 5. Subdue Dhaka University, EPR HQ and Rajarbagh police line, disarm 2nd and 10th EBR 6. Take over and protect Ammunition factory at Gazipur and Arms depot at Rajendrapur. রাও ফরমান আলী লিখিত পরিকল্পনার সামরিক দিক ছিল নিম্নরূপ- Pakistani plan of action for Dhaka, as drawn up by Maj. Gen. Farman, was: 1. 13th Frontier Force to stay in cantonment as reserve and provide security 2. 43rd Light Ack Ack regiment was to secure Tejgaon airport 3. 22nd Baluch regiment would disarm the EPR and seize wireless at Pilkhana EPR HQ 4. 32nd Punjab was to neutralize Rajarbag Police line 5. 18th Punjab was to fan out and secure Nawabpur and old Dhaka 6. 31st Field was to secure Second capital, Mohammadpur and Mirpur 7. A platoon from 3 SSG was to capture Sheikh Mujib 8. 22nd Baluch and 32nd Punjab was to neutralize Dhaka University “rebels” 9. 22 Baluch would be reinforced at Pilkhana পরিকল্পনা সফল করার জন্যে যে সকল পদপে নিতে হবে সেগুলো ছিল নিম্নরূপ- 1. Operation to be launched simultaneously all across East Pakistan. 2. Maximum number of political and student leaders, and those among cultural organizations and teaching staff to be arrested. 3. Operation must achieve 100% success in Dhaka. Dhaka University would be occupied and searched. 4. Free and greater use of fire authorised for securing cantonments. 5. All internal and international communications to be cut off, including telephone, television, radio and telegraph. 6. All East Pakistani (Bengali) troops to be neutralised by seizing weapons and ammunition. 7. To deceive the Awami League, President Yahia Khan to pretend to continue dialogue, even if Mr. Bhutto disagrees, and to agree to Awami League demands. জেনারেল রাও ফরমান আলী অপারেশানের দায়িত্বে থাকবেন এবং জেনারেল খাদিম সকল ব্রিগেডে স্পেশাল টাক্সের খবর পৌঁছে দেবেন। অপারেশান শুরুর আগে সকল বাঙালি অফিসার ও সৈন্যদেরকে নিরস্ত্র করা হবে এবং ইমিডিয়েট হত্যা করা হবে। আর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে মিটিংয়ের সময় শেখ মুজিবকেও গ্রেফতার করা হবে। ২০ মার্চ ফ্লাগ স্টাফ হাউজে জেনারেল হামিদ ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান হাতে লেখা পরিকল্পনা আবার রিভিউ করেন। তখন জেনারেল হামিদ বাঙালি সৈন্যদের ইমিডিয়েট খুন করায় আপত্তি জানালেন। তবে নিরস্ত্র করার পক্ষে সায় দিলেন। পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ওই নীল নকশায় একটি পরিবর্তন আনলেন। মিটিংয়ের সময় শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা যাবে না। গ্রেফতার করতে হবে অপারেশান শুরুর ঠিক আগ-মুহূর্তে। ফাইনাল নকশা সকল ব্রিগেড ও পাক সেনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হলো। ঢাকায় ৫৭ ইনফেন্ট্রি ডিভিশানের দায়িত্বে ব্রিগেডিয়ার জাহানজাব আরবাব, কুমিল্লায় ৫৩ ইনফেন্ট্রি ডিভিশানের দায়িত্বে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শাফি, রংপুরে ২৩ ইনফেন্ট্রি ডিভিশানের দায়িত্বে ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহ খান মালিক এবং যশোরে ১০৭ ইনফেন্ট্রি ডিভিশানের দায়িত্বে ব্রিগেডিয়ার এআর ডুরানিকে দেওয়া হলো। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হলো একজন বাঙালি অফিসারের উপর। যাতে কোনো রকম তথ্য ফাঁস না হয় সেজন্যে। ব্রিগেডিয়ার এমএইচ মজুমদারকে দেওয়া হলো চট্টগ্রামের দায়িত্ব। ২০টি এফ-৮৬ জেট বিমান, ৩টি টি-৩৩ যুদ্ধ বিমান, ৪টি মিল মি-৮, ৪টি এল্লুট-৩ হেলিকপ্টার এবং ১টি সি-১৩০ হারকিউলিস বিমান পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আনা হল। রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শরীফকে পূর্ব পাকিস্তান নৌবাহিনীর দায়িত্ব দেওয়া হল। চারটি গানবোট পাঠানো হল রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্যে। অতিরক্তি সাহায্যের জন্যে রাখা হল একটি পেট্রোলবোট বালাঘাট ও ডেসট্রয়ার পিএনএস জাহাঙ্গীর। অপারেশান শুরুর পর পাকিস্তান থেকে বাড়তি সাহায্যের প্রয়োজন হলে আসবে ডেসট্রয়ার পিএনএস বাবর। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মাত্র ৬টি বাঙালি রেজিমেন্ট ছিল। ১ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন যশোরে ১০৭ নং ব্রিগেটের অধীনে। ২ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন জয়দেবপুরে, ঢাকার ৫৭ নং ব্রিগেডের অধীনে। ৩ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন সৈয়দপুরে, রংপুরের ২৩ নং ব্রিগেডের অধীনে। ৪ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন কুমিল্লায় ৫৩ নং ব্রিগেডের অধীনে। ৮ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন চট্টগ্রামে, পাকিস্তানে ট্রেনিংয়ে যাবার জন্যে শিপমেন্ট অবস্থায়। এটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রায় ৭৫ ভাগ আর্মি শক্তি কভার করে, যা ওই সময় পাকিস্তানে শিপট হচ্ছিল। চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারের ২০০০ জন বাঙালি সৈন্য এবং নতুন প্রতিষ্ঠিত ৯ম ও ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা তখন ঢাকার ১৪ ডিভিশানের অধীনে প্রশিক্ষণরত। বাঙালি সেনা অফিসাররা তখন কেবল ১ নং, ২ নং ও ১০ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিংয়ের দায়িত্বে। বাকী ৩টি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিংয়ের দায়িত্বে পাক সেনা অফিসারগণ। পাকিস্তানের প্যারা মিলিটারি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে তখন ১৫০০০ বাঙালি সৈন্য। তাদেরকে ১৭ টি অপারেশনাল উইংয়ে ৭ সেক্টরে ১৫০ জন করে ভাগ করা হল। এক একটি উইংয়ে আবার ৩ থেকে ৬ টি কোম্পানি ইউনিট। এক একটি কোম্পানিতে আবার ১৫ থেকে ২০ জন করে বাঙালি সৈন্যকে ভাগ করা হল। আবার এক একটি প্লাটুনে ভাগ করা হল ২০ থেকে ৩৫ জন বাঙালি সৈন্য। তাদের সবাইকে বর্ডারের ক্যাম্পগুলোতে পোস্টিং দেওয়া হল। ২৫০০ জন ইপিআর সৈন্যকে তখন ঢাকায় ইপিআর সদর দফতরে বদলি করা হল। যাদের সবাই পাকিস্তানী। ২৪ ও ২৫ মার্চ পাক সেনাবাহিনীর সিনিয়র জেনারেলরা হেলিকপ্টারে করে সকল ডিভিশন, ব্রিগেড ও গ্যারিসন ভিজিট করলেন এবং পাক অফিসারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন। জেনারেল হামিদ, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল জেনারেল মিত্থ্য, পিন্সিপাল স্টাফ অফিসার কর্নেল সাদউল্লাহ মিলে সকল গ্যারিসন কমান্ডারদের ভিজিট করলেন। জেনারেল রাও ফরমান আলী গেলেন যশোর ভিজিটে, জেনারেল খাদিম গেলেন কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে, ব্রিগেডিয়ার ইল ইদরাস ও কর্নেল সাদউল্লাহ গেলেন রংপুর ভিজিটে। সকল পাক আর্মি অফিসারদের তারা নকশার পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিলেন। ঢাকায় পাক সেনাদের খাদ্য সাপ্লাই নিশ্চিত করতে পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আসলেন মেজর জেনারেল কামার আলী মির্জা ও ব্রিগেডিয়ার হ্যারিসন। ঢাকার অদূরে রাজেন্দ্রপুরে বিমান যোগে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নামানো হল। ৯০০০ টন গোলাবারুদ ও অস্ত্র নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়লো এমভি স্বাত। পাকিস্তান এয়ার লাইন্সে সাদা পোষাকে প্রচুর পরিমাণ পাক সেনা ঢাকায় আসলো। অতিরিক্ত ১৩ এফএফ ও ২২ বালুচ তখন ঢাকায় আসলো। ২৫ মার্চের মধ্যে পাক সেনাবাহিনী এভাবে নিজেদের সকল কর্মকাণ্ড গুছিয়ে নিল। ব্রিগেডিয়ার এমএইচ মজুমদার বাঙালি সৈন্যদের উপর হামলা করতে অস্বীকৃতি জানালে ২৪ মার্চ তাঁকে জয়দেবপুরে ২ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি করা হল। তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হল ব্রিগেডিয়ার এমএইচ আনসারীকে, যিনি একজন পাক সেনা অফিসার। ২২ মার্চ ঢাকার ৫৭ নং ব্রিগেট মেজর খালেদ মোশাররফকে কুমিল্লার ৪ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে টুআইসি করে বদলি করা হল। ২৩ মার্চ ২ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ হাসানকে অপসারণ করা হল। তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হল লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিবউদ্দীনকে, যিনি একজন পাক আর্মি অফিসার। সকল রেজিমেন্টে পাক আর্মি অফিসারদের কমান্ডিং দায়িত্ব দেওয়া হল। বাঙালি অফিসারদের পাকিস্তানে বদলি করা হল। অনেক বাঙালি সাধারণ সৈন্যকে ছুটিতে বাড়িতে পাঠানো হল। সকল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে একশান প্লানের বাইরে দায়িত্বে রাখা হল। আর এসব খবরাখবর বাঙালিদের অজান্তে করা হল খুব সাবধানে। যাতে বাঙালি অফিসার বা সৈন্যরা কিছুই বুঝতে না পারে। ২৫ মার্চের সন্ধ্যার মধ্যে পাক সেনাদের এই ধরনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হল। ২৫ মার্চ রাত ১২ টা ১ মিনিটে অপারেশান সার্চ লাইট শুরু হল। ঢাকায় কমান্ডিংয়ের দায়িত্বে রইলেন স্বয়ং জেনারেল রাও ফরমান আলী। তিনি অপারেশান সাকসেস করতে কিছু জরুরী পদক্ষেপ গ্রহন করলেন। রাত ১১ টায় সারা দেশে কার্ফ্যু জারী করলেন। সকল টেলিফোন লাইন কেটে দিলেন। সকল রেডিও স্টেশান বন্ধ করে দিলেন। সকল পত্রিকা অফিস বন্ধ করে দিলেন। ঢাকা থেকে সড়কপথ রেলপথ ও নৌপথ বন্ধ করে দিলেন। রাত ১২ টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সহ ১৫ জন টপ আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করলেন। ঢাকার ধানমণ্ডি ও হিন্দুপ্রধান এলাকায় বাড়ি বাড়ি তল্লাসি অভিযান শুরু করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা ইপিআর হেড কোয়ার্টার, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও ঢাকার ২ নং ও ১০ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সকল বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করা হল। গাজীপুরের অস্ত্র কারখানা নিয়ন্ত্রণে নিলেন এবং সকল গোলা বারুদ রাজেন্দ্রপুরে শিপট করালেন। ঢাকায় ১৪ ডিভিশানের সদর দফতর, ৫৭ নং ব্রিগেট, ১৮ ও ৩২ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট (নের্তৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজ), ১৩ ফ্রনটিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট (নের্তৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদ হাসান), ৪৩ নং লাইট এ্যাক এ্যাক রেজিমেন্ট (নের্তৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাফায়াত আলী), ৩ নং কমান্ডো ব্যাটালিয়ন (নের্তৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল জেডএ খান), ১৯ সিগন্যাল রেজিমেন্ট (নের্তৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইফতেখার হুসাইন) এবং ১৪৯ নং ইনফেন্ট্রি ওয়ার্কশপ ঢাকার ক্রাক ডাউনে অংশগ্রহন করে। পাকিস্তান এয়ার ফোর্সকে তেজগাঁও বিমান বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়। এছাড়া ১৪টি এম-২৪ চ্যাফি ট্যাংক নিয়ে ২৯ ক্যাভারলি রেজিমেন্টকে ঢাকার স্কোয়াড্রন সদরে প্রস্তুত রাখা হয়। এছাড়া ঢাকায় ৫৭ নং ব্রিগেডের ও ১৪ ডিভিশিানের সকল ইঞ্জিনিয়ারিং, সাপ্লাই ও মেডিকেল ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় প্রস্তুত রাখা হয়। ঢাকায় জেনারেল রাও ফরমান আলী যেভাবে ক্রাক ডাউনের নের্তৃত্ব দেন সেই চিত্র কাগজে লেখা সম্ভব নয়। তবু পাক জেনারেলের পারিকল্পনা যেভাবে কাজ করলো সেগুলো এখানে বলার চেষ্টা করছি- ক্যান্টনমেন্টের সিকিউরিটি রা রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে ১৩ নং ফ্রন্টিয়ার ফোর্সকে ক্যান্টনমেন্টে রাখা হল। ৪৩ নং লাইট এ্যাক এ্যাক রেজিমেন্টকে রাখা হল তেজগাঁও এয়ার পোর্টে। ২২ নং বেলুচ রেজিমেন্টকে পাঠানো হল পিলখানায় ইপিআর বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র ও আত্মসমর্পণ করানোর জন্যে, যাতে তারা দ্রুত ওয়ারলেসের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। ৩২ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টকে পাঠানো হল রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বাঙালি পুলিশদের নিরস্ত্র ও আত্মসমর্পণ করানোর জন্যে। ১৮ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টকে পাঠানো হল পুরান ঢাকা ও নওয়াবপুরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্যে। ৩১ নং ফিল্ড ফোর্সদের পাঠানো হলো মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্যে। ৩ নং এসজিজি ব্যাটালিয়নের এক প্লাটুন সৈন্য পাঠানো হল ধানমণ্ডি শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করতে। ২২ নং বেলুচ রেজিমেন্ট ও ৩২ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিল। পরে ২২ নং বেলুচ রেজিমেন্ট পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নিল। মাত্র ৬ ঘণ্টায় গোটা ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্যে জেনারেল রাও ফরমান আলী পাক সেনাদের নির্দেশ দিলেন। ১০ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সহজেই পাক সেনারা নিরস্ত্র করলেন। ৩১ নং ফিল্ড ফোর্স সহজেই মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের নিয়ন্ত্রণ নিল। লেফটেন্যান্ট কর্নেল জেডএ খান ও মেজর বেলালের কমান্ডো দল সহজেই শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হল। মেজর বেলালের কমান্ডো দল ঘোষণা দিলেন যে, দ্য বিগ বার্ড হ্যাজ বিন ক্যাগড। কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেনের মৃত্যু সংবাদ উর্দুতে প্রচার করা হল। পাক মিলিটারিরা তখন তাজউদ্দীন ও ভুঁইঞাকে খুঁজতে লাগলেন। তারা ঘোষণা দিলেন, কালো পতাকা এবং বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ফেলতে। যারা এই নির্দেশ অমান্য করবেন তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেন। ২২ নং বেলুচ রেজিমেন্ট পিলখানার বাঙালি সৈন্যদের প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণে নিল সারা রাত মুখোমুখি গুলি বিনিময়ের পর। ১৮ নং ও ৩২ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আওয়ামী লীগের নিরস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক ও নেতাকর্মী এবং ছাত্রদের গণহারে গুলি করে হত্যা করলো। তারপর তারা পুরান ঢাকায় হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় সারা রাত গণহারে ব্যাপক ধ্বংস লীলা খুন ধর্ষণ লুটপাট চালালো। রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে কিছু বাঙালি পুলিশ সদস্য অস্ত্রসহ বুড়িগঙ্গা পারিয়ে ওপারে কেরনিগঞ্জে আশ্রয় নিল। রাজারবাগ পুলিশ লাইন এলাকায় ব্যাপক হত্যা, জ্বালাও পোড়াও লুটপাট চললো সারা রাত। পাক আর্মি ২৫ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিলের মধ্যে তাদের পরিকল্পিত নকশার সবকিছু সম্পন্ন করলো। পাক সেনারা শহীদ মিনার গুড়িয়ে দিলো। দৈনিক ইত্তেফাক ভবন, দৈনিক পিপল ভবন, রমনার কালী মন্দির জ্বালিয়ে পুড়িয়ে গুড়িয়ে দিল। শুধু তারা ব্যাপক হারে আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হল। গোটা পূর্ব পাকিস্তানে তখন শুধু লাশ আর লাশ। যেসব বাঙালি পুলিশ সদস্য, ইপিআর সদস্য বা সেনা সদস্য পাক আর্মিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন বা ধরা পরেছিলেন বা নিরস্ত্র হয়েছিলেন তাঁদেরকে পরবর্তীতে বিনা বিচারে হত্যা করা হল। কাউকে কাউকে কারাগারে আটকে রাখা হল। ২৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে পিআইএ বোয়িং ও সি-১৩০ বিমানে করে পাক সেনাবাহিনীর ৯ নং ও ১৬ নং ডিভিশানকে ঢাকায় আনা হল। ২ মর্টার ব্যাটারিজ ও ২ উইং ইপিসিএএফকে বিপুল পরিমাণ টক্সি ও থাল স্কাউটসসহ ঢাকায় জড়ো করা হল। সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৬ | false |
rn | আজ ব্লগ পড়ে যা-যা জানলাম_শিখলাম ১। জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করছে রাস্তার জ্যাম। ভাবতে ভালো লাগে, একদিন রাস্তায় কোনো জ্যাম থাকবে না। রাস্তার দুই পাশে থাকবে নানান রঙিন ফুলের গাছ। পথচারী'রা ফুলের সুবাস নিতে নিতে হেঁটে যাবে গন্তব্যে। বাচ্চাদের জন্য থাকবে খেলা-ধূলার নানান সামগ্রী। মোড়ে মোড়ে থাকবে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। ছোট বড় পরিছন্ন দোকানে থাকবে নানান মজাদার খাবারের ব্যবস্থা। বড় বড় রাস্তার মোড়ে থাকবে এলইডি। ব্রেকিং নিউজ গুলো তারা নিয়মিত প্রচার করবে। অন্য সময় সরাসরি ক্রিকেট খেলা দেখাবে। ছিনতাই হবে না, পকেটমার হবে না। যাত্রী ছাউনী গুলোতে থাকবে মনোরম পরিবেশ। থাকবে ঝকঝকে টয়লেট। রাস্তাঘাটে চলাচলরত কোনো নারীর দিকে কোনো পুরুষ কুৎসিতভাবে তাকাবে না। দৌঁড়ে দৌঁড়ে বাসে উঠতে হবে না- থাকবে সুশৃংখল বাস স্টপেজ। ২। মেয়েরা যদি ছেলেদের ওয়াশরুমে ভুল করে চলে যায়, তাহলে এটা সামান্য একটা ভুল। আর ছেলেদের ক্ষেত্রে সেটা হবে বিকৃত রুচির অধিকারী।৩। ফুটপাত দিয়ে হাঁটা যায় না। হকার'রা দখল করে আছে। খুব রাগ লাগে। কিন্তু যখন তাদের উচ্ছেদ করা হয়- খুব খারাপ লাগে। কষ্ট হয়। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বলব, হকারদের দরকার আছে, কারন নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত প্রায় বেশিরভাগ মানুষই এদের কাছ থেকে কেনাকাটা করেন। হকার'রা তো এই দেশের'ই নাগরিক। তাদের পরিবার আছে, সন্তান আছে, বেচেঁ থাকার অধিকার আছে। কিছু দিন পর-পর এরকম উচ্ছেদ অভিযান চালালে- দরিদ্র মানুষগুলো কোথায় যাবে?৪। পৃথিবীর নিয়মটাই এমন যে কিছু মানুষ থাকবে সুখী আর অন্য দিকে কিছু মানুষ থাকবে দুঃখী। ৫। আই লাভ ইউ ট্রাম্প। ট্রাম্পকে নিয়ে যা সবাই ভাবছে তা ঠিক না। ট্রাম্প প্রকৃতপক্ষেই একজন ভাল মানুষ। ওবামা থেকে ট্রাম্প অবশ্যই উত্তম। মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি আর আইএসের জন্ম দিয়ে যে শান্তিতে নোবেল পায় সে যে কতটুকু ভাল তা বোঝা যায়। ট্রাম্প আর যা-ই করুক অন্তত পৃথিবীতে সন্ত্রাস বাড়তে দিবেনা এটা নিশ্চিত থাকুন।৬। জীবনানন্দ দাশের 'বনলতা সেন' কবিতাটি পড়েননি এমন পাঠক খুব কমই পাওয়া যাবে। অদ্ভুত একটা কবিতা। বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দকে বলেছিলেন- ‘প্রকৃত কবি এবং প্রকৃতির কবি’। কবিতাটি প্রথম প্রকাশ করেছিলেন কবি বুদ্ধদেব বসু তাঁর কবিতা পত্রিকায়। আপাত দৃষ্টিতে 'বনলতা সেন' একটি প্রেমের কবিতা যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বনলতা সেন নাম্নী কোনো এক রমণীর স্মৃতি রোমন্থন। এডগার এলেন পো'র 'টু হেলেন' কবিতার সাথে 'বনলতা সেন' কবিতাটির খুব বেশি মিল। জীবনানন্দ দাশ আজ থেকে ৮৩ বছর আগে বরিশালে বসে এই কবিতাটি লিখেছিলেন। জীবনানন্দের কবিতায় সুস্পষ্ট বক্তব্য ও দর্শন আছে। কবি এই কবিতায় যে রহস্য তৈরি করেছেন সেই রহস্য এখনো ধোয়াশা। গোপালচন্দ্র রায় একবার কবিকে জিজ্ঞাসাও করেছিলেন, ‘দাদা, আপনি যে লিখেছেন নাটোরের বনলতা সেন, এই বনলতা সেনটা কে? এই নামে সত্যি আপনার পরিচিত কেউ ছিল নাকি?’ উত্তরে কবি শুধুমাত্র একগাল মুচকি হাসি দিয়েছিলেন। কবি কখনো নিজের অজান্তেও এই বিষয়ে কারো কাছে কিছু বলেননি। বাঘা বাঘা সব গবেষকরাও বছরের পর বছর গবেষণা করে এই ‘বনলতা সেন’ রহস্য উদঘাটন করতে পারেন নি।হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,আমারে দু’দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন। চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতি দূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা সব পাখী ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;থাকে অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন। ৭। এই পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ জীবনে কিছুই পায়নি। শিক্ষা, বাসস্থান, খাদ্য, বিনোদন, চিকিৎসা অথবা ভালোবাসা, কিছুই না। জীবনে কিছু না পেয়েই তখন তারা ধর্মটাকে আঁকড়ে ধরে। আজ একটি কিশোরী মেয়ে আমাকে জানালো সে সারাদিনে ৩০০ ইট ভেঙ্গে ২৪০ টাকা পায়। সারাদিন কাজ করার পর হাত ঠোসা পরে যায়, অবশ লাগে।৮। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য- আমাদের সমাজে কালো মেয়েদের চাহিদা নেই। রবীন্দ্রনাথ যতই বলুক- ' কালো? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।' সহজ সরল সত্য কথা হলো- জন্মের পর থেকেই তারা সংসারের বোঝা। কালো রঙের মেয়েরাও যে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করতে পারে তা আমাদের অনেকেরই অজানা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে গায়ের রঙ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। ব্যাক্তির গুনই তাদের কাছে মুখ্য বিষয়।৯। শীতকাল হলো ওয়াজ মাহফিল এর সময়। শহরে-গ্রামে সব জায়গায় বিশাল ওয়াজ মাহফিলের ব্যবস্থা করা হয়। বক্তারা তাদের আঞ্চলিক ভাষায় অতি রসালো ভাবে ওয়াজ করেন। দশ হাত দূরে দূরে মাইক লাগানো হয়। আমাদের দেশ যদি উন্নত কোন দেশ হতো, তাহলে শব্দ দুষনের জন্য এদের অবশ্যই জেল জরিমানা হতো। সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৫৮ | false |
rg | ডুবেরচরের নির্বাচন!! মোল্লা বাড়ির কুতুব মোড়লের সঙ্গে কেউ যেনো গাড়লের মতো তরল না খায়, সে বিয়ষে সবাইকে হুশিয়ার করেছিলেন এ বছরের এমপি কেনডিডেট মোসলেম মাতবর। পরিবর্তনের ধারায় নতুন রাজনীতি করার অঙ্গিকার নিয়ে ডুবেরচর হাইস্কুলে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় মোসলেম মাতবরের সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন তার কুয়েত প্রবাসী মেজে ছেলে আলহাজ্ব গরিবে নেওয়াজ এবং ডুবেরচর হাইস্কুলের এসিসট্যান্ট হেডমাস্টার কোরাম ব্যাপারি। মোসলেম মাতবরের ছেলে গরিবে নেওয়াজ সভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, এলাকার মুরুব্বিদের নামাজ পড়ার সুবিধার জন্য একটি দোতলা মসজিদ তিনি নির্মাণ করে দেবেন। কোরাম মাস্টার বলেছিলেন, এলাকার উন্নয়নের জন্য আগামীতে আমরা মোসলেম মাতবরের মত যোগ্য প্রর্থীকেই এমপি নির্বাচিত করতে চাই। আর স্বয়ং মোসলেম মাতবর বলেছিলেন, আমার দুই ছেলে বিদেশে থাকে। দুই জন হজ্ব করেছে। আমারও হজ্ব করার নিয়ত আছে। আমার টাকা পয়সার কোনো অভাব নাই। এখন জীবন সায়ান্থে এলাকার জন সাধারণের উন্নয়নে বাকি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। ডুবেরচরের সাবেক এমপি কুতুব মোড়লকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছিলেন, লোকটাকে আগে আমি পছন্দ করতাম। আমি নিজেও আগে তার নির্বাচনী প্রচারে কাজ করেছিলাম। কিন্তু গাড়লটা তরল ছাড়তে পারলো না। আমাদের ধর্মে যে জিনিস নিষিদ্ধ করা হয়েছে, উনি সেই জিনিস নিয়ে পড়ে থাকেন। তাই এখন ওনার সঙ্গ ছাড়ার সময় এসেছে। ডুবেরচর হাইস্কুলের জনসভার খবর কে বা কারা যেনো কুতুব মোড়লের কানে দিল। কুতুব মোড়ল চিকন বুদ্ধির লোক। অনেক কাজের গোপন ভিডিও আর ছবি তুলে রাখেন সবার অজান্তে। মোসলেম মাতবর ইলেকশন করবে শুনে সেই পুরানা ভিডিও আর ছবির আড়ত নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। এক সময় পেয়ে গেলেন যুবক বয়সে মোসলেম মাতবরের সঙ্গে মদ্যপানের একটা পরম মুহূর্তের ছবি। ছবিটি কয়েক হাজার কপি ওয়াশ করার জন্য তিনি ব্যস্ত হয়ে গেলেন। শহর থেকে ফিরে ডুবেরচর বাজারে তিনিও একটা জনসভার আয়োজন করলেন। এলাকার বিশিষ্ট লোকজন সেই জনসভায় এসেছেন। কিছু উৎসাহী কর্মী সেই ছবি সবার মধ্যে বিতরণ করছেন।কুতুব মোড়ল জনসভায় কয়েকটি মাত্র কথা বললেন। কিভাবে মোসলেম মাতবরের দুই ছেলে গরিবে নেওয়াজ আর শরীফে নেওয়াজকে পাসপোর্ট ভিসা করিয়ে কুয়েতে পাঠাতে সহয়তা করেছিলেন সেই ইতিহাস। আর মোসলেম মাতবরকে তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, বন্ধু মনে করেন, প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও তার কোনো উপকার লাগলে তা করতে রাজি বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কুতুব মোড়ল আরো জানালেন, মসজিদের পুরান ইমামকে হঠানো নিয়ে কে রাজনীতি করেছিল, তা আপনাদের মনে আছে। আমরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। কিন্তু মানুষের আসল সত্যটা জানার অধিকার আছে। দুই মাস পর...মোসলেম মাতবরের দুই ছেলে গরিবে নেওয়াজ আর শরীফে নেওয়াজ বাবার নির্বাচনী প্রচারাভিযানে প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করলেন। অনেককে শাড়ি লুঙ্গি কিনে দিলেন। অনেকের ঘরের ছাউনি তুলে দিলেন। অনেককে গরু ছাগল কিনে দিলেন। অনেককে পড়াশুনার খরচ দিলেন। অনেকের মেয়ের বিয়ের খরচ দিলেন। আরো অনেক অনেক জনহিতকর কাজ তারা করতে লাগলেন।নির্বাচনের দিন...সবাই খুব উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট দিলেন। মোসলেম মাতবর খুব হাসিখুশি। নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জিতবেন বলে সাংবাদিকদের জানালেন। কুতুব মোড়ল চুপচাপ। তিনি কর্মীদের বলে রেখেছেন, রেজাল্ট পাওয়ার পরে যেনো কোনো ধরনের পরিবেশ নষ্ট না হয়। জয় পরাজয় আমরা হাসিমুখে মেনে নেব। ডুবেরচরের মানুষ সারা রাত ভারী উৎকণ্ঠা নিয়ে পার করলো। পরদিন সকাল সাড়ে দশটায় ডুবেরচরের রেজাল্ট ঘোষিত হল। এক লাখ উন সত্তর হাজার ছয়শো আঠাশ ভোট পেয়ে কুতুব মোড়ল বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোসলেম মাতবর পেয়েছেন তেপান্ন হাজার দুইশো বাহাত্তর ভোট। মোল্লা বাড়ির ভেতর সবাই উল্লাসে ফেটে পড়ল। কিন্তু কুতুব মোড়ল চুপচাপ। তিনি তিন জন কর্মী নিয়ে মোসলেম মাতবরের বাড়িতে গেলেন। মোসলেম মাতবরকে বললেন, যা হবার হয়েছে। আমরা দুই বন্ধু আগের মতোই এক সাথে কাজ করব। চল, আমার বাড়ি। তারপর একটি বিজয় মিছিল বের হল। সেই মিছিলের সামনে সদ্য নির্বাচিত এমপি কুতুব মোড়ল আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোসলেম মাতবর। দু'জনের গলায় ফুলের মালা। সবাই শ্লোগান দিচ্ছে- কুতুব ভাইয়ের জন্য, ডুবেরচর ধন্য। মোসলেম ভাইয়ের জন্য, ডুবেরচর ধন্য। আমার ভাই তোমার ভাই, কুতুব ভাই মোসলেম ভাই। মিছিলটি কুতুব মোড়লের উঠোনে গিয়ে শেষ হয়।মিছিলের অনেকেই ছিল মোসলেম মাতবরের দুই ছেলের দেওয়া শাড়ি লুঙ্গি পরা। সবাই খুব হাসিখুশি। কেবল সেই জয় উল্লাসে একজন মানুষের মুখের দিকে তাকানো যায় না। তিনি মোসলেম মাতবর। দশ দিন পর...কুতুব মোড়ল শপথ নিতে ঢাকায় গেলেন। মোসলেম মাতবরও গেলেন। শপথ নেবার পরে এয়ারপোর্ট যাবেন কুতুব মোড়ল। কেননা রাত দশটায় মোসলেম মাতবর ওমরা হজ্ব করতে যাবেন সৌদি আরব... | false |
mk | সেনাবাহিনী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান নয় গত ৮ ডিসেম্বর দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত ‘দেশটা কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হতে চলেছে!’ শীর্ষক কলামে সেনাবাহিনী ও সেনানিবাস নিয়ে বেশ কিছু আপত্তিকর প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়েছে। শুরু থেকেই লেখক অযাচিতভাবে বিষোদগার করেছেন সংবেদনশীল সংস্থাসমূহের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্র কর্তৃক জমি অধিগ্রহণের ইতিহাস বহু পুরনো। ব্রিটিশ আমলের আগে মুঘল সম্রাটদের সম্রাজ্যে ভূমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদও ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বরং ব্রিটিশ আমলে ভারতবর্ষে ভূমির মালিকানা নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন ও নিয়মনীতি প্রণীত হয়। আর তাদের শাসনকালের অবসান হলে ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়; রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও ব্যক্তিগত স্বার্থ উভয়ই প্রতিষ্ঠা পায়। অর্থাৎ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ‘উন্নয়ন কাজে’ জমি অধিগ্রহণ করা হলে তা দেশের স্বার্থেই করা হয়ে থাকে। এ জন্য ফসলি জমি নিয়ে মঞ্জুরুল হকের দীর্ঘশ্বাস আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৪নং অনুচ্ছেদে ‘প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্বে সম্পত্তি গ্রহণের’ অধিকার সরকারকে দেয়া হয়েছে। অথচ কলাম লেখক কয়েকটি এনজিও কর্তৃক উপস্থাপিত ভাষ্যকে চূড়ান্ত বিবেচনা করেছেন। উপরন্তু সেনাবাহিনীকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।গত নভেম্বর (২০১৪) মাসে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ৮টি এনজিও যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সেনা স্থাপনা নির্মাণকে ‘অন্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সেনাবাহিনী বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দায়িত্বে নিয়োজিত নেই। কোথাও কোনো নিবর্তনমূলক ক্ষমতাও প্রয়োগ করছে না। অথচ অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আটটি এনজিও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছে। তাদের মতে, ‘আজ আমরা গ্রামের কথা বলছি, শহরেরও তো অর্ধেক জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনীর জন্য। এ জন্য আমাদের তীব্র প্রতিবাদ করতে হবে। যেখানে জনগণের প্রতিকার চাওয়ার কিছু থাকে না সেখানে আমরা কোন মুখে বলি গণতন্ত্রের মধ্যে বাস করি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি অথচ ন্যূনতম অধিকার নিয়ে বাস করতে পারছি না।’ সেনানিবাস প্রতিষ্ঠাসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য জমি অধিগ্রহণ একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তার সঙ্গে নিশ্চয় মানবাধিকার, সুশাসনকে সম্পর্কিত করে মায়াকান্নার সুযোগ কম। বরং অধিকৃত ভূমি জনগণের পক্ষে আছে কিনা তা দেখা দরকার। সংগঠনগুলোর পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের রামুতে ১ হাজার ৮০০ একর, বান্দরবানের রুমায় ৯৯৭ একর, পাবনার চাটমোহরে ১ হাজার ৪০৮ একর এবং নোয়াখালীর হাতিয়া ও চট্টগ্রামের স›দ্বীপ উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর কৃষিজমি সেনাবাহিনীকে বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর ফলে কৃষিজমি ও বাস্তুভিটা থেকে প্রায় ৭ হাজার মানুষ উচ্ছেদ হবে। শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর নামে কত জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তার হিসাব দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠতে হয়েছে বলে মন্তব্য লিখেছেন ওই কলাম লেখক। আমার পর্যবেক্ষণ ভিন্ন। কারণ কোথায় সেনানিবাস প্রতিষ্ঠিত হবে সেটা একেবারেই রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষার বিষয়। জনগণ কিংবা এনজিওর ভাবনার বিষয় নয়। উপরন্তু সেনাবাহিনী একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং তার গুরুত্ব অপরিসীম। সে কারণে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় তার নীতিনির্ধারণে জড়িত। তা ছাড়া সেনানিবাসের জন্য প্রস্তাবিত ভূমি বরাদ্দের পরিমাণ একেবারেই স্বল্প। ফসলি জমি কমে যাওয়াতে খাদ্য ঘাটতির প্রসঙ্গ অবান্তর। কারণ বিশ্বের অনেক দেশে ফসলি জমি নেই কিন্তু তারা কি উন্নয়নের শিখরে আরোহণ করেনি? স্বাধীনতা অর্জনের ৪৪ বছরে পদার্পণ অর্থাৎ বয়সের মাপে আমাদের দেশ ধনী কিংবা গরিব হওয়ার বিষয়ে অথবা কতদূর এগিয়ে গেল সে সম্পর্কে মূল্যায়নে খুব বেশি কঠোর হওয়ার দরকার নেই। কারণ ভারত অথবা মিসরের ২ হাজার বছরের রাষ্ট্রীয় ইতিহাস এবং স্বাধীনতার অনেকদিন অতিবাহিত হলেও তারাও খুব বেশি এগিয়েছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। অন্যদিকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড মাত্র দেড়শ বছরে উন্নয়নের যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা তাদের ধনী রাষ্ট্রের তকমা এনে দিয়েছে। আবার অনেক সময় রাষ্ট্রের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই সে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের অঢেল প্রাপ্তিকে নির্দেশ করে থাকেন; অথচ যা একেবারে ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে পরিগণিত। কারণ ক্ষুদ্র সীমানা আর আশি শতাংশ পার্বত্য ও ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা নিয়ে জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি কিভাবে হয়েছে? সেখানে আবাদি জমি নেই বললেই চলে, পশুপালনের জন্য চারণভূমি কম, তবু শিল্প-কারখানায় কাঁচামাল আমদানি করে বিশ্বব্যাপী তাদের পণ্যসামগ্রী ছড়িয়ে দিয়েছে জাপানিরা। কেবল নিজেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা কি যথেষ্ট ছিল না? সুইজারল্যান্ডে নারকেল গাছের প্রাচুর্য নেই অথচ তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চকোলেট উৎপাদনকারী রাষ্ট্র। ক্ষুদ্র দেশটিতে বছরের মাত্র চার মাস শস্য উৎপাদনের জন্য উপযোগী আবহাওয়া থাকে। অথচ তারাই দুগ্ধ উৎপাদনে বিশ্বের নন্দিত ও আদর্শ হিসেবে স্বীকৃত রাষ্ট্র। দেশটি শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বসবাসের সর্বোত্তম জায়গা হিসেবে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে এখনো। ওই কলাম লেখকের এসব ইতিহাস জানা থাকলে বাংলাদেশের কিছু ভূমি সেনানিবাসের নামে বরাদ্দ হলে আর্তনাদ করার কথা নয়। অর্থাৎ ইতিহাস চেতনার অভাব ও অন্যের অপতৎপরতার কথা না ভেবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্যকে যথার্থ ধরে নেয়ার কুফল পাচ্ছি আমরা।প্রসঙ্গত মনে রাখা দরকার, সরকারের প্রতি অনুগত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের অহংকার। এ জন্য সেনাবাহিনীকে জনগণের বা সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করার ব্যাপারে একটি পক্ষ সবসময়ই সচেষ্ট থাকে। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কী এমন অনিয়ম হয়েছে যে, আটটি এনজিও একযোগে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে? এনজিওগুলো কি রাজনৈতিক দল বা পেশাজীবী, দর কষাকষির এজেন্ট? যদি তা না হয়, তাহলে কিভাবে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে সরকারের কাছে দাবি জানাতে পারে? তবে কি এনজিওগুলো সরকারের কোনো দুর্বলতার সুযোগ নিতে যাচ্ছে? সঙ্গত কারণেই সরকারের জোর নজরদারি ও অতিসত্বর সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। অবশ্য এ কথা সত্য ‘অত্যাবশ্যক প্রয়োজনে’ সেনাবাহিনীকে সারা দেশে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। তা ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডিওএইচএস ওয়ান, টু, থ্রি নামে একাধিক আবাসিক এলাকা রয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে সেসবের জন্যও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনার মতো বড় বড় শহরের জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সবকিছুই করা হয়েছে নিয়মরীতি মেনেই। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্রবাহিনী। এ বাহিনীকে আঘাত করার অর্থ হলো দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে এবং অবমূল্যায়ন করে তাদের কোণঠাসা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে চিহ্নিত ৮টি এনজিও এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক চিহ্নিত কয়েকটি পত্রিকা।১৩ নভেম্বর (২০১৪) ডেইলি স্টারে ‘পদ্মা সেতুর পাশে নতুন সেনানিবাস’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রথম পাতায় উপস্থাপিত হয়েছে। পরের দিন দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় কৃষিজমি ও বনভূমিতে সেনানিবাস বা অন্য কোনো স্থাপনা না করার জন্য ৮টি এনজিও সংগঠনের দাবির সংবাদও প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়। এ দুটি সংবাদপত্র একে অপরের ব্যবসায়িক পার্টনার। সংবাদ সম্মেলনের উক্তি উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় বলা হয়েছে, ‘দেশের দুজন সাবেক রাষ্ট্রপতিকে সেনাসদস্যরা হত্যা করেছে। তারা বারবার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। আর তারা আমাদের সুরক্ষার নামে জনগণের জমি, বনভূমি ও ভূমি দখল করছে।’ সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে এভাবে ঢালাওভাবে সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করা কি ঠিক? গুটিকয়েক লোক অন্যায় করলে তার জন্য সমগ্র সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করা উচিত নয়। কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর নাম সংযুক্ত দেখে কেউ কেউ সেনাবাহিনীর ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশ নেয়ার ঘোরতর বিরোধিতা করে থাকেন যা একেবারে অযৌক্তিক। অথচ সেনা পরিচালিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বেশি। এ দেশের অন্যতম পুরনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে সেনাকল্যাণ সংস্থা; যার উদ্দেশ্য স্পষ্টত জানানো হয়েছে তাদের নিজস্ব প্রকাশনায় : ‘অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে নানারকম সেবামূলক সহায়তা দেয়ার উদ্দেশে প্রতিষ্ঠিত এ সংস্থাটি বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ইউনিট বা প্রকল্পের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তান আমলে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান ছিল যার নাম ছিল ফৌজি ফাউন্ডেশন এবং স্বাধীনতার পর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সহায়-সম্পদ নিয়ে ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করে।’ ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করে সেনাকল্যাণ সংস্থা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং দীর্ঘ সময় তাদের ব্যবসায়ী কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্কের ঊর্দ্ধে থেকেছে। ৪০ বছর পর তারই সূত্রে অন্যান্য ব্যবসায়ী তৎপরতা পরিচালিত হলে সুশীল সমাজের মাথাব্যথার কারণ কী? ধারাবাহিক ব্যবসা প্রসারে সেনাকল্যাণের অবদান স্বীকার করতেই হবে। সেনাকল্যাণ সংস্থার বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের মতোই বাণিজ্য করছে সেনাবাহিনীর আরেকটি কল্যাণমূলক সংস্থা- আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। ১৯৯৮ সালে এ ট্রাস্ট কোম্পানি আইনে রেজিস্ট্রি করা হয়। আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ১৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ট্রাস্টই বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনা করছে। যাদের সেবা ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। সেনাবাহিনীকে তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জমি দেয়ার কথা জানা গেছে। তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে মান সংরক্ষণের প্রতিযোগিতায় আনতে পারবে বলে আমাদের ধারণা।উল্লেখ্য, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সেনাবাহিনী দেশ ও জাতির সম্পদ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালিদের ওপর যে গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করেছিল তা থেকে মুক্ত স্বাধীন স্বদেশভূমি ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে ওঠা সেনাবাহিনী এ দেশের গর্ব। মুক্তিযুদ্ধে রক্তঝরা সে দিনগুলোতে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে সর্বস্তরের জনসাধারণের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জাতির যে কোনো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনী সদাপ্রস্তুত থাকে। শুধু দেশে নয়, আমাদের সেনাবাহিনী বহির্বিশ্ব থেকেও দেশের জন্য সম্মান ও মর্যাদা বয়ে আনছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসিত ভূমিকা পালন করার কারণে কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত ধন্যবাদ জানিয়ে গেছেন বাংলাদেশে এসে। আমেরিকার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল এ দেশে এসে আমাদের শান্তিরক্ষীদের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। মনে রাখতে হবে, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড চলছে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার উপমহাদেশে আলকায়েদার শাখা খোলার ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছে। ডিসেম্বর (২০১৪) ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছে। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণই জানান দিয়েছে দেশের বাইরে বসেও এ দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার ছক আঁকা সম্ভব। এ পরিস্থিতিতে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করছে। তা ছাড়া সেনাবাহিনীর ব্যয় সম্পর্কে কথা বলার অধিকার কোনো এনজিওর নেই। কারণ সশস্ত্রবাহিনী দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের ব্যয় মেটানো হয় জাতীয় বাজেট থেকে। নিয়মিত তা নিরীক্ষণ করেন সরকারের অডিটর জেনারেল। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যেভাবে প্রতিরক্ষা বাজেট হয়, বাংলাদেশেও একইভাবে হয়। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই সব দেশের প্রতিরক্ষা বাজেট গোপন রাখা হয়। মূলত জমি অধিগ্রহণের সঙ্গে প্রতিরক্ষা নীতির বিষয়ে এনজিওগুলো যে প্রশ্ন তুলেছে, তা তারা তুলতে পারে না। কারণ সশস্ত্রবাহিনীর অস্তিত্ব ও নীতির বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ আছে। এ জন্য এনজিও এবং তাদের সমর্থকগোষ্ঠী কর্তৃক সেনাবাহিনী ও সেনানিবাস সম্পর্কে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন নাগরিক সমাজের তীব্র নিন্দা জানানো দরকার। | false |
mk | উগ্রবাদের অবাঞ্ছিত প্রসার ও বাংলাদেশ বাংলাদেশে এখন আর না খেয়ে কেউ মরে না। এখন আর দারিদ্র্যের কশাঘাতে বিপর্যস্ত হয় না কারো জীবন। কমে গেছে মঙ্গা, খরা, ভুখা প্রভৃতি শব্দের ব্যবহারও। এখন সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের কাজ যেমন আধুনিক সেতু, মহাসড়ক, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল ইত্যাতি প্রকল্পগুলো বাংলাদেশই বাস্তবায়ন করে। আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, সীমাবদ্ধ সম্পদ, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, আন্তর্জাতিক কুটিলতাসহ নানা প্রতিকূলতা কোনোভাবেই এ দেশকে উন্নয়নের সিঁড়ি হতে বিচ্যুত করতে পারছে না। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে গোটা বিশ্ব যখন নিরাপদ আবাসনের দাবিতে অস্থির, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর নাভিশ্বাস, সে সময়ে হেসে-খেলে প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ। কুইক রেন্টাল, উড়াল সেতু, মেট্রোরেলের মতো ব্যয়বহুল প্রকল্পগুলো একের পর বাস্তবায়িত হচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে সময়োপযোগী ও দূরদর্শী নতুন প্রকল্পও। আয়তনের দিক থেকে ছোট্ট একটি দেশ। ছোট সংসারের ছোট অর্থনীতি, ছোট লেনদেন, ছোট প্রবৃদ্ধি—এই পরিচয় সত্ত্বেও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা যে দৃষ্টান্ত রেখেছি সেটি দক্ষিণ এশিয়াতেই শুধু নয়, বরং সমগ্র পৃথিবীতেও হই চই ফেলেছে। সামাজিক উন্নয়নের যে ধারা এখানে সূচিত হয়েছে, তা স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রকট দরিদ্রতাকে মুছে ফেলতে পেরেছে, কয়েক বছর আগেও যা কল্পনা করা কঠিন ছিল। খাবার ও বাসস্থানের অভাব ঘুচে গেছে মানুষের, চিকিত্সাসেবা এখন খুব কাছাকাছি এসেছে, ওষুধের মূল্যও হাতের নাগালে, মানুষের আয়ের ক্ষমতা বেড়েছে, নারী-পুরুষ বৈষম্য কমেছে, নারীরা এখন আর বন্দী নয় বরং অনেক ক্ষেত্রেই তারা এখন পুরুষের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে, শিশুরা এখন দলবেঁধে বিদ্যালয়ে যায়, ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে বিদ্যুত্, সামাজিক নিরাপত্তায় সরকার অনেক বেশি তত্পর।সহজভাবে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা ও দেশের উন্নয়নে সাহসী পদক্ষেপের জন্য যুগে যুগে বিচক্ষণ নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়। এমন বিদগ্ধ এক দূরদর্শী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। দীর্ঘ চার দশক পর বঙ্গবন্ধু-তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আবার বাংলাদেশ সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। মানুষের অভাব মোচন, সুখে শান্তিতে বসবাস ও উন্নয়ন ধারাবাহিকতার এমন নিয়মিত অধ্যায় দেশেল শত্রুদের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। নিজেদের আধিপত্য রক্ষা ও বাংলাদেশের উন্নয়নযজ্ঞ ব্যাহত করতে আবার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে তারা। কাজে লাগানো হয় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক লবিকে।মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, যানবাহনে আগুন দেওয়া, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালানো, হরতাল, অবরোধ প্রভৃতি নেতিবাচক রাজনৈতিক কর্মসূচি মন গলাতে পারেনি দেশের মানুষের। গণতন্ত্র রক্ষার অভিযাত্রা হিসেবে সরকারের সকল কর্মসূচিকে দ্বিধাহীনচিত্তে সমর্থন দিয়েছে, সমর্থনের ধারা অব্যাহত রেখেছে এ দেশের মানুষ। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে আন্তর্জাতিক এজেন্ডা নিয়ে রাজনীতি করা দলগুলো হিংস্র হয়ে ওঠে। গুপ্তহত্যা, অপহরণ, গুমসহ বিধ্বংসী কর্মসূচিতে মেতে ওঠে তারা। এরই অংশ হিসেবে বিরতি দিয়ে দিয়ে খুন করা হয় দেশের নিরপরাধ মানুষকে। দেশকে বিশ্বমাঝে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরতে একের পর এক বিদেশি নাগরিক হত্যা করা হয়। এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে সরকারি আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, চার্চের যাজক, টেম্পলের ভিক্ষুসহ সাধারণ নাগরিক। সর্বশেষ রাঙ্গামাটিতে বৌদ্ধ ভিক্ষু, ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাস ও তার বন্ধু তনয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম খন্দকার, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনু এ তালিকারই অংশ। দেশকে পেছনে ফেলতে, ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদনে মরিয়া একটি গোষ্ঠীর অপতত্পরতার অংশ হিসেবে এ হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হচ্ছে, বিতর্ক নেই। যদিও আমাদের প্রেক্ষিতে এ ঘটনা পুরাতন কিছু নয়। বাংলাদেশের অভ্যুদয় যাত্রাটাই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি বিশ্ব পরাশক্তির অন্যতম কয়েকটি দেশসহ তাদের মিত্ররা। লাল সবুজের ছোট্ট এ দেশটির স্বাধিকার ইস্যুতে তাদের ভ্রু কুঁচকে ওঠে। বক্তৃতা, বিবৃতি, চাপ প্রয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতার বরাদ্দ বন্ধসহ নানা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ হুমকি দিতে থাকে তারা। বাংলাদেশের নতুন পরিচয়ের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর একরোখা আন্দোলনই দেশকে বিশ্বমাঝে নতুন পরিচয় এনে দেয়। সেই দেশটিই আজ বিশ্বে নতুন আইকন।যেহেতু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে, সেহেতু আকাশের মতো প্রতিক্ষণ পাল্টাচ্ছে এর ধরন ও রং। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের উত্থানে তালেবান, ধর্মীয় জঙ্গি, জেহাদি সৈন্য, আইএস প্রভৃতি নানা মাত্রার ব্যবহূত হচ্ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে এ দেশকেও জঙ্গিবাদের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ এক নেতার ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক নেতার সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকের সংবাদ ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে, মুসলিম দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ভূলুণ্ঠিত করে এ ধরনের বৈঠক কেবল রাজনৈতিক অস্তিত্বের দেউলিয়াত্বই ঘোষণা করে না, ক্ষমতার জন্য তাদের ঘৃণ্য ও ধ্বংসাত্মক পরিচয়ও উন্মোচন করে। বিষয়টি এজন্যে তাত্পর্যপূর্ণ যে, এর সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তাজনিত বিষয় ছাড়াও রয়েছে সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার প্রশ্ন। ভৌগোলিক অবস্থান, বিশ্ববাণিজ্যের মেরুকরণে গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিটসহ আমাদের অবস্থান পরাশক্তিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অন্যদিকে আমাদের ভেতরগত স্থিতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত সার্বিক উন্নয়ন ও প্রগতি। অগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণ এই ক্ষণে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ বিশেষত ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, এর সঙ্গে উত্কণ্ঠা বাড়ছে আমাদেরও। এই উত্কণ্ঠা একদিকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে— আমাদের সজাগ করছে সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে, অন্যদিকে এই উত্কণ্ঠা যখন মাত্রাতিরিক্ত ও অসাবধানী প্রচারণায় রূপ নিচ্ছে তখন সেটি কিন্তু ভিন্ন বিবেচনায় প্রকাশ পাচ্ছে। দেশব্যাপী অব্যাহত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এখানে বিদেশিদের হত্যা করা হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের কঠোর অবস্থান ও দেশবাসীর সচেতনতার কারণে এ গোষ্ঠী কখনোই সুবিধা করতে পারেনি।সন্দেহ নেই, ধর্মের প্রতি অতিরিক্ত অনুরাগ, নাস্তিকতার আবরণে উগ্রবাদীসহ নানা চরিত্রের একটি গোষ্ঠী এখন দেশকে অশান্ত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত করাই তাদের লক্ষ্য। যে কোনোভাবে সরকারকে ক্ষমতা থেকে উত্খাতের একমাত্র এজেন্ডাই তাদের শেষ লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে সকল অপতত্পরতা চলছে দ্রুতগতিতে। বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। এ দেশের সিংহভাগ মানুষ ধর্মপরায়ণ। বিশ্বমানচিত্রে পরিচিত উদারপন্থি এক সার্বভৌমত্বের স্বত্বাধিকারী বাংলাদেশ। এ কারণে হয়তো সহজেই ধর্মীয় উগ্রবাদের আঁঁচ এদেশের প্রাচীরে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। মুসলিম ও ইসলাম যেহেতু ধর্মীয় জঙ্গিবাদের মূল প্রচারণায় ব্যবহূত হচ্ছে, সেহেতু বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্তকরণও স্বাভাবিক। তবে এই ষড়যন্ত্র কতটুকু হালে পানি পাবে তা দেখার বিষয় বটে। আশার কথা হলো বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের রয়েছে সমৃদ্ধ, সহিষ্ণু ও উদার সংস্কৃতি, যা উগ্রপন্থার সঙ্গে কোনোকালেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। অন্যদিকে বাঙালি মুসলমান হিসেবে আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাপরায়ণ ও সহিষ্ণু। উগ্রপন্থা কার্যকর হওয়ার কোনো আশঙ্কা তাই দূর ভবিষ্যতেও এখানে অবান্তর।সাম্প্রতিক কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু দেশি-বিদেশি সংস্থা ও গণমাধ্যম বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদের ভিত্তিভূমি হিসেবে চিহ্নিত করতে তত্পর হয়ে ওঠে। তবে রঙচঙ মেখে অতি উত্সাহী হয়ে সংবাদ পরিবেশনের পেছনের প্রেক্ষাপট বিবেচনাও জরুরি। মাঝে-মধ্যে বাংলাদেশে ভিনদেশি উগ্রবাদীরা শেকড় গাড়তে আগ্রহী হয়েছে, তখনই এ অপতত্পরতা লক্ষ করা গেছে। তবে এটাও উল্লেখ্য যে, যখনই এই অপতত্পরতা আমাদের নজরে এসেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা তার মূলোত্পাটনে সফলও হয়েছি। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের যে সকল স্থানে সন্ত্রাসবাদের নামে যুদ্ধ এবং অস্থিতিশীলতা চালু আছে, বা যে অঞ্চলগুলো বিভিন্ন পরাশক্তির প্রতিযুদ্ধের ভূমি হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে তার শানেনুজুলও কারো অজানা নয়। বিশ্ব নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এই অস্বস্তিকর বিশ্বব্যবস্থার জন্য দায়ী করছেন সাম্রাজ্যবাদী লোলুপ দৃষ্টিকে। স্বার্থান্বেষী এই অশুভ শক্তিগুলো পৃথিবীতে গণতন্ত্র ও স্থিতির কথা বলে, উগ্রবাদ দমনের কথা বলে দীর্ঘমেয়াদি হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে, এর সঙ্গে আছে অস্ত্র ও তেল বাণিজ্য, যদিও সেগুলো একান্তই পলিটিক্যাল ডিসকোর্স বা রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়।বাংলাদেশ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূচকে আঞ্চলিক অনেক দেশের তুলনায় প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে। তৈরি পোশাক, ওষুধ, দক্ষ জনশক্তি, পর্যটন শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলও আমরা পাচ্ছি হাতেনাতেই। যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সার্বিক প্রগতির ধারাকে বিভিন্ন কৌশলে রোধ করতে চায় তাদের বড় পরিকল্পনার অংশ কি না এই জঙ্গি-উত্থান-পর্ব সেটি অবশ্যই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। দেশে দেশে উগ্রপন্থিরা তাদের যে মিশন নিয়ে এগিয়ে চলেছে, বিশ্বমঞ্চে এসব উগ্রপন্থি নাটকের কুশীলব এবং অনুঘটকের সে ভ্রান্ত ধারণা এদেশের মাটিতে কোনোদিনও সফল হবে না, কিছু পথভ্রষ্ট এবং অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের বিকৃত চিন্তায় যেমন বাঙালি কোনোদিন সায় দেয়নি, ঠিক তেমনি পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়— এবারের পর্বেও তারা হতাশ হবেন।দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে প্রতিটি নাগরিককে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যারা উগ্রপন্থার বিকাশ চায়, দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে পরাজিত করতে চায়, স্বাধীন দেশের স্থপতি, ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের বিব্রত করতে চায়, তাদের হারাতে হলে আমাদেরও শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। আগামীর এই লড়াই হবে দেশকে বাঁচানোর। দেশের যে সঞ্জীবনী শক্তি সেই ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে সমুন্নত রেখে দেশ ও জনগণকে রক্ষার লড়াইয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলকে এক কাতারে এসে দাঁড়ানো এখন সময়ের অনিবার্য দাবি। দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে আরো তত্পর হতে হবে। অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। কোথায় কোথায় তারা আস্তানা গাড়তে চায়, তা খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিটি নাগরিককে তথ্য দিয়ে, ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করে এ আন্দোলনে অংশ নিতে হবে। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে দেশের প্রয়োজনে কথা বলতে হবে। তবেই সম্ভব হবে জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদের শেকড় উপড়ানো। অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:৪৬ | false |
rn | ঈদ সংখ্যা সাপ্তাহিক 'এই সময়' আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন। ঈদ মানেই- আনন্দ আর আনন্দ। বাংলাদেশে অনেক দৈনিক পত্রিকা আছে, ম্যাগাজিন আছে, সাপ্তাহিক পত্রিকা আছে। ছোটবেলায় আমি ঈদ সংখ্যা মানেই বুঝতাম নুরজাহান বেগম সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকা। বিশাল ‘বেগম’ ঈদ সংখ্যা এক সময় ঘরে ঘরে শোভা পেতো। মহিলাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই পত্রিকায় উপন্যাস-গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ-রম্য রচনা ছাড়াও সেলাই-রান্নাসহ নানা বিষয় স্থান পেতো। বেগম’র ঈদ সংখ্যার আরেকটি বিশেষত্ব ছিল সকল লেখিকার ছবি ছাপানো। লেখকের তালিকাই সকলেই মহিলা। আমার মাকে এই পত্রিকা পড়তে দেখতাম। যারা সাহিত্য ভালোবাসেন তাদের কাছে ঈদের ঈদ সংখ্যাগুলো এক অন্যরকম আনন্দ নিয়ে উপস্থিত হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকা হচ্ছে- সাপ্তাহিক 'এই সময়'। আমি এই পত্রিকায় কাজ করি, এই জন্য বলছি না। আপনি সারা বাংলাদেশের যে কোনো পত্রিকা স্টলে খোঁজ করলেই জানতে পারবেন এর পাঠকপ্রিয়তার কথা। দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। এই পত্রিকায় দেশের স্বনামধন্য ব্যাক্তিরা নিয়মিত লিখে থাকেন। লেখকরা সারা বছর ঈদ সংখ্যায় লেখার জন্য পরিকল্পনা করে লেখালেখি শুরু করেন। গত কয়েক বছর ধরে শুধু মাত্র ঈদ সংখ্যার জন্য অনেক নতুন পাঠকের জন্ম হয়েছে। তরুণ পাঠিক-পাঠিকা ঈদ সংখ্যার জন্য এক আকাশ অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকেন। বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং ঈদ সংখ্যা এদেশের লেখক এবং পাঠক আজীবন টিকিয়ে রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস। পাঠকের কাছে আমরা সেজন্য কৃতজ্ঞ। কম করে হলেও এবছরও ২৫ টা ঈদ সংখ্যা বের হবে। আমি গত দশ বছর ধরে সব গুলো ঈদ সংখ্যা কিনছি- পড়ছি। একটা ঈদ সংখ্যায় সব রকম অর্থাৎ সব স্বাদের লেখা পাওয়া যায়। সব ধরনের পাঠকের জন্যই পড়ার কোনো না কোনো উপাদান থাকে ঈদ সংখ্যাটিতে। একটা ঈদ সংখ্যা প্রস্তুত করতে অনেক মানুষের পরিশ্রম করতে হয়। লেখা সংগ্রহ করা, প্রুফ দেখা, বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা, প্রচ্ছদ তৈরি করা আরও অনেক কিছু। পত্রিকা অফিসের সবাই খুব ব্যস্ত সময়ত পার করছে। টেলিভিশনে ঈদের নাটকের ফাঁকে ফাঁকে যেরকম বিজ্ঞাপন দেখানো হয় ঈদ সংখ্যার লেখার ফাঁকে ফাঁকেও যে বিজ্ঞাপন থাকেও সেটা কী আপনারা লক্ষ্য করেছেন? আমি মনে করি, যে কোনো পত্রিকা অফিসে বিজ্ঞাপন বিভাগের কাজটা অনেক বেশি পরিশ্রমের।আমরা জানি, আপনারা সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে 'এই সময়' ঈদ সংখ্যার জন্য এক আকাশ অপেক্ষা করে বসে আছেন। আগামী ২৩ তারিখ থেকে সারা বাংলাদেশের যে কোনো পত্রিকা স্টলে পাওয়া যাবে। এই ঈদ সংখ্যাটিকে নির্ভুল ও আকর্ষণীয় করতে আমরা চেষ্টার ত্রুটি রাখি নাই। আপনারা অবশ্যই সাপ্তাহিক 'এই সময়' এর ঈদ সংখ্যা এক কপি কিনবেন এবং পড়বেন। আপনাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা অবশ্যই আমাদের জানাবেন। বুকে হাত রেখে বলতে পারি- আমাদের ঈদ সংখ্যাটি পড়ে আপনারা নিরাশ হবেন না। ঈদ সংখ্যার কথা বলতে হলে অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় শাহাদত চৌধুরী সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’র ঈদ সংখ্যার কথা। ঈদের নির্মল আনন্দে মেতে উঠুক সবাই। সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:০৯ | false |
hm | মেঘদলের শহরবন্দী ১. জ্যারেড ডায়মন্ড তাঁর কোনো একটা বইতে [থার্ড শিম্পাঞ্জি সম্ভবত] পাপুয়া নিউগিনিতে এক অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছিলেন। বলে রাখা ভালো, "সভ্য" জগতের কাছে পাপুয়া নিউগিনি আবিষ্কৃত হয়েছে, একশো বছরও পেরোয়নি। বলা চলে, যন্ত্রসভ্যতা থেকে সুদীর্ঘ সময় দূরে থেকে পাপুয়া নিউগিনি একটা সময় আদিম মানব সমাজের একটা কপি হিসেবে বিবেচিত হতো দীর্ঘদিন। পাপুয়া নিউগিনির অনেক অঞ্চলে এখনও বহিরাগতদের পা পড়েনি, তাই ধরে নেয়া যায়, আজ থেকে তিন দশক আগে ডায়মন্ড যখন তাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তখন তারা অসংখ্য ছোটো ছোটো আদিম গোত্র হিসেবেই ছিলো। ডায়মন্ড দেখেছিলেন, এক গোত্রের সাথে আরেক গোত্রের সমানসংখ্যক মানুষের দেখা হলে তারা সাধারণত বসে আলোচনা করে, উভয়পক্ষের পরিচিত কোনো লোক আদৌ আছে কি না। তা না হলে, পরিচিতদের পরিচিত কেউ। তা-ও না হলে, পরিচিতদের পরিচিতদের পরিচিত কেউ ...। এই আলাপে আসলে উঠে আসে একটা কারণ, কেন এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ধরে খুন করবে না। জ্যারেড ডায়মন্ড একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ধর্মের উদ্ভবও অনেকটা এমনই, যখন ঘনসন্নিবিষ্ট গোত্রগুলি পরস্পরের সাথে সংঘাত কমিয়ে আনার জন্যে অভিন্ন কোনো টোটেমের আশ্রয় নিতো। যেন ডক্টর ইইইভল বলছে অস্টিন পাওয়ারসকে, "উই আর নট সো ডিফরেন্ট .. ইউ অ্যান্ড আই!" গান নিয়েও গানশোনা মানুষের স্পর্শকাতরতা বেশি, অনেকটা টোটেমের মতোই ব্যাপারটা। গানের রুচি ভিন্ন হবার কারণে এমন মানুষকেও অপরের সাথে রূঢ়তম আচরণ করতে দেখেছি, যে হয়তো পারতপক্ষে গলা চড়িয়ে কথাও বলে না। আমার অভিজ্ঞতা বলে, এক একটা গান মানুষের স্মৃতির এক একটা বড় চাঙড়ের সাথে জড়িয়ে থাকে, সেই গান সম্পর্কে অপরের প্রতিক্রিয়া শুনলে মানুষের সেই স্মৃতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতায় আঘাত পড়ে। উদাহরণ দিই, একটা পুরনো দিনের হিন্দি গান আছে, হাম তুম ইয়ে বাহার, দেখো রং লায়া পেয়ার, বরসাত কি মাহিনে মে। এই গানটার সাথে আমার টিনটিন ইন টিবেট পাঠের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। যখনই এই গানটা আমি শুনি, আমার সেই দিনটার কথা মনে পড়ে। শুধু ঐ একটা দিন নয়, আমি ঐ সময়টায় ফিরে যাই। আজ কেউ যদি বলেন, এই গানটা একটা বালের গান (গানটা খুব আহামরি ভালো কিছু নয়), তাহলে আমার ঐ স্মৃতিসংযোগটুকুতেও আঘাত লাগবে। কিন্তু এই ছাড়টুকু আমাকে দিতে হবে, কারণ আমি আশা করতে পারি না, ঐ গানের সাথে অন্য কারো সুখস্মৃতি জড়িতে থাকবেই থাকবে। আমার প্রিয় বহু গান নিয়ে আমি বন্ধুদের মুখে কটূক্তি শুনেছি, কিন্তু আমার বলার কিছু নেই, কারণ গান সম্পর্কে ভালো লাগা বা মন্দ লাগার পূর্ণ অধিকার সকলে সংরক্ষণ করে। আহত হই বা বিরক্ত হই, যখন গান ভালো বা খারাপ লাগার ঔচিত্য নিয়ে কথা হয়। আমার কোনো গান ভালো লাগলে কেন তা আমার ভালো লাগলো, সেটা ব্যাখ্যা করার বাধ্যবাধকতা আমার নেই, তেমনি খারাপ লাগলেও কোথাও কৈফিয়ত জমা দেবার প্রয়োজন আমার হবে না। কিন্তু দেখেছি, এই ভালো লাগা আর খারাপ লাগা ব্যাপারটা নিয়ে পাশাপাশি থাকা একটা খুব কঠিন কাজ। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে বিদ্রুপ করেন, তারপর তিক্ততা শুরু হয়, এবং তা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া থামে না। ধর্ম নিয়ে আমরা সংবেদনশীল, কিন্তু গানের ব্যাপারে আমাদের সংবেদনশীলতা প্রায় ধর্মবোধের কাছাকাছিই। পাপুয়া নিউগিনির ঐ লোকগুলি কিন্তু "অসভ্য" নয়, তারা খুনোখুনি করে জৈবভৌগলিক সংস্কৃতির কারণে, টেরিটোরিয়ালিজম বা অঞ্চলকাতরতা সেখানে টিকে থাকার জন্যে একটা অবশ্যপালনীয় শর্তের মতো। গানের ছুতোয় বকাবকি গালাগালি মারামারি পর্যন্ত দেখেছি, যদিও আমাদের এমন কোনো শর্ত মানতে হয় না। ২. পাপুয়া নিউগিনি পর্যন্ত হাতড়ে লেখা দীর্ঘ গৌরচন্দ্রিকার কারণ হচ্ছে, "মেঘদল" নামের গানের দলটার অ্যালবাম "শহরবন্দী" আমার কাছে ভালো লাগেনি। সচলায়তনে আমার পাঠকেরা আমাকে কিছু কড়া কথা শোনানোর আগে তাই ইস্পাতের অন্তর্বাস পরে নিলাম। অবশ্য বেহুলার বাসরও লৌহনির্মিত ছিলো, তাই খুব আশাবাদী থাকছি না। আমার কাছে মনে হয়, গান ভালো লাগে চারটা কারণে। এক, যদি গানটা কোনো সুখময় ঘটনার সাথে গেঁথে যেতে সক্ষম হয়। দুই, যদি গানটা বিক্ষিপ্ত, আহত মনে পুল্টিশ লাগাতে পারে। পরবর্তীতে এই পুল্টিশের স্মৃতি শ্রোতার মনে টোটকার মতোই কাজ করে। তিন, যদি গানটার কথা ভালো লাগে। অধিকাংশ রবীন্দ্রসঙ্গীতকে এই ক্যাটেগোরিতে রাখা যায়। চার, যদি গানটার সুর ভালো লাগে, যেমন এ আর রাহমানের বেশ কিছু গান, সেগুলির লিরিক্স নিতান্তই রান-অফ-আ-মিল (এর বাংলা কী করা যায়? কলের সেমাই?), সুরের গুণে উতরে গেছে এবং মনে ছাপ ফেলেছে। আর পরিস্থিতি ভেদে এই চার কারণের মধ্যে যে কোনো সংখ্যক কারণের মিশ্রণে বহু যৌগ কারণে কোনো গান ভালো লাগতে পারে। মেঘদলের নাম আমি শোনার আগে কয়েক বছর আগে দেখেছি পোস্টারে, "বৃষ্টি ও মেঘদলের গান" শিরোনামে। সম্ভবত তারা সেই একই মেঘদল। ভিন্ন মেঘদল হলেও আমার আপত্তি নেই। মেঘদলের দুই কণ্ঠশিল্পীর মধ্যে একজনের কণ্ঠ দুর্ধর্ষ। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে আমি তাঁর নাম জানি না, তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে সুকণ্ঠ বলে ডাকবো। দ্বিতীয় যিনি গাইছেন, তিনি দুষ্কণ্ঠ নন। সুকণ্ঠ থেকে তাঁকে আলাদা করার জন্যে তাঁকে ডাকছি অন্যস্বর। সুকণ্ঠের গাওয়া গানগুলির মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে "নির্বাণ" আর "রঙিন ফেরেশতা"। তাঁর কণ্ঠের সাথে এই দু'টির সুর আর কথার ত্রিবেণীসঙ্গম সবচেয়ে যথাযথ হয়েছে বলে মনে হয়েছে। গান দু'টির সাথে সহকণ্ঠ আর অর্কেস্ট্রেশন মিশেছে মসৃণভাবে। গান দু'টি সহজ, ছিমছাম, অনাড়ম্বর ... কাঁচের চুড়ির মতো। নির্বাণ কিছু বিষাদ হোক পাখি নগরীর নোনা ধরা দেয়ালে কাঁচপোকা সারি সারি নির্বাণ, নির্বাণ ডেকে যায় ।। কিছু ভুল রঙের ফুল ফুটে আছে আজ পথে কিছু মিথ্যে কথার রং আমাদের হৃদয়ে ।। এখনও এখানে নীরবে দাঁড়িয়ে অগণিত প্রতিশোধ জাগে আত্মার ভেতরে কিছু মাতাল হাওয়ার দল শোনে ঝোড়ো সময়ের গান এখানে শুরু হোক রোজকার রূপকথা কিছু বিষাদগ্রস্ত দিন ছিলো প্রেমিকার চোখে জমা আলো নেই, রোদ নেই, কিছু বিপন্ন বিস্ময় ক্ষমাহীন প্রান্তর জুড়ে আমাদের বেঁচে থাকা রঙিন ফেরেশতা মন গেছে মেঘের বাড়িতে আকাশ দিয়েছে ডুব মাতাল তারা রাতের সাথে হেসেই হবে খুন। আমার সারা গায়ে তোমার শহরের ধূলো মেখে জ্বলছি বিপুল অন্ধকারে একই রাস্তায়, একই পৃথিবীর জলে জ্বলছি বিপুল অন্ধকারে শহরের কাছে রেখেছি জমা ময়লা জামার দাগ রঙিন ফেরেশতা উড়ে বসে ভাবনায় চাঁদের ব্লেডে যাচ্ছে কেটে মুহূর্ত মুহূর্ত রঙিন ফেরেশতা উড়ে বসে ভাবনায় অন্যস্বরের গলায় খাপ খেয়েছে "চার চার চৌকো" গানটা। কিন্তু গানটার মধ্যে "কিক" নেই। মন্থর, গানের কথাও ঢিলেঢালা। কিন্তু শিল্পীর অন্য দু'টি গানের তুলনায় ("আবার শহর" আর "ঠিক ঠাক") এই গানের জন্যে তাঁর কণ্ঠ বেশি লাগসই মনে হয়েছে। চার চার চৌকো জানালায় আমায় দেখে হাতটা বাড়ায় আকাশ দেখে দিচ্ছি ছুট মাথার ভেতর শব্দজট আমার চোখে লাগায় চার চার চৌকো জানালায় আকাশ আমার আমি তোমার কাছে যাবো আমার চৌকো আকাশ আমি তোমার ... চার চার চৌকো জানালায় ওপরের গানটার সাথে এটার তুলনা করলে বোঝা যাবে, গানটায় কেন "কিক" নেই। শ্রোতার কানে "শহরবন্দী"র সম্পদ বোধহয় এর বাকি গানগুলিই। ফোনে, স্কাইপে, মেসেঞ্জারে, ফেসবুকে শুনছি আর দেখছি অন্য গানের পংক্তিগুলোই। কিন্তু গান হিসেবে আমার ভালো লাগেনি, মনে হয়েছে কবিতায় সুর দেয়া হয়েছে, কিন্তু তারা যেন একে অন্যের সাথে মেশেনি। সব কবিতা লিরিক্যাল হয় না বোধহয়। মেঘদলের এই অ্যালবামের বাকি গানগুলোতে হঠাৎ হঠাৎ চমৎকার কিছু পংক্তি ছিটকে বেরিয়ে এসেছে গান থেকে আলাদা হয়ে। তার কাব্যগুণের প্রশংসা না করে পারি না, কিন্তু সঙ্গীতগুণে স্পৃষ্ট হই না। তবে একটি বৈশিষ্ট্য প্রায় প্রতিটি গানেই স্পষ্ট, পারকাশন খুব চমৎকার। "মুঠোফোন" গানটি যেমন, অর্কেস্ট্রেশন চমৎকার, শিল্পীর স্পষ্ট, ভরাট উচ্চারণে গাওয়া গান, কিন্তু "হ্যালোজেন রোদ চিলতে বারান্দায় টিকটিকি তাই বলছে ভবিষ্যৎ" অংশে এসে গানটা তার শুরুর মাধুর্য হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে হয়েছে। "রোদের ফোঁটা" গানটির অর্কেস্ট্রেশন এক কথায় চমৎকার, কিন্তু মন্থর লয়ে সুর ভালো লাগেনি। "দূর পৃথিবী" গানটি শুরু হয়েছে চমৎকারভাবে, কিন্তু সুর পড়ে গেছে কিছুদূর যেয়ে। "কুমারী" গানটিকে মনে হয়েছে "তোমাকে প্রেমের আগে তোমার প্রেমকেই ভালোবাসি" পংক্তিটিকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠা একটি গান। ভালো লাগেনি "পাথুরে দেবী"। "শহরবন্দী" গানটির কথা, সুর, পরিবেশন সবই সুন্দর, কিন্তু এই গানটিই হয়তো পরের প্যারায় যা বলতে চেয়েছি, তার সারাংশ ধারণ করে, তাই ভালো লাগে না, চাপ লাগে বুকে। বিষাদ গানের অন্যতম উপকরণ, মানুষ সবসময় কাঁদতে পারে না বলেই গান শোনে বা গান গায়। কিন্তু এই গানগুলি একটু মন দিয়ে শুনলে টের পাওয়া যায়, দুয়েকটা বাদে বাকি গানগুলিতে বিষাদ নেই, একটা আশ্চর্য হাল-ছেড়ে-দেয়া নৈরাশ্যবাদিতা আছে। গানগুলোর চোখে অশ্রুর আভাস নেই, ঠোঁটের কষে মার খাওয়া রক্তের দাগ আছে। বেশির ভাগ গানের কথাই শহরের হাতে বন্দী, সেসব গানে শহর ভিলেন, সেসব গানে শহর প্রত্যাক্রান্ত হচ্ছে শিল্পীর হাতে। নাম না বললেও এই শহরকে চিনি খুব ভালো করেই, বাংলাদেশে এমন নিষ্ঠুর, এমন কদর্য শহর আর দু'টো নেই। এই শহর মানুষকে নষ্ট করে এখন কবির ওপর চড়াও হয়েছে। এই শহরের ওপর অভিমান-মাৎসর্য্যের সময় মনে হচ্ছে ফুরিয়ে এসেছে, এই শুয়োরের বাচ্চা শহরকে লাত্থি মেরে চূর্ণ করে দেয়া দরকার। শহরবন্দী নামটি খুব মানানসই হয়েছে অ্যালবামের জন্যে, কিন্তু গান কি শহরবন্দী হওয়া উচিত? এই শহরের মানুষ কি তাহলে নিজের ঘরে, চলতে ফিরতে এমপিথ্রি প্লেয়ারে, খোলা আকাশের নিচে সমাবেশে এই নৈরাশ্যে মাখা গান শুনে যাবে? কবিতা অনেকরকম, কিন্তু গান কি আসলেই অনেকরকম? গান বিষাদের হোক, হর্ষের হোক, ক্রোধের হোক, কিন্তু নিরাশাশ্রয়ী না হোক। মেঘদলের কবিরা যখন গান লিখছেন, এই কথাটি অন্তত বিবেচনা করুন। তাঁদের পরবর্তী অ্যালবামের গানগুলি আগ্রহভরে শুনবো। গানগুলি শুনেছি রায়হান আবীরের সৌজন্যে। তাকে ধন্যবাদ জানাই। | false |
mk | ২০১৪ তেই নির্বাচন চায় বিএনপি!!! হাউ ফানি !!! বিএনপি আশা করছে তারা রাজনৈতিক আন্দোলন করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে যে সরকার এই বছরেই নির্বাচন দিবে। সরকারের সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে সমঝোতা হবে এ প্রেক্ষিতে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে। সরকার ২০১৯ সাল পর্যন্ত নির্বাচন পিছিয়ে নিতে যেতে চাইছে সেটা পারবে না বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন। তবে বিএনপি নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, এখনও তাদের দলের ভিত্তি সুদৃঢ় নয়। নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতিও নেই। গত বছর আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর দলের সাংগঠনিক অবস্থা যা ছিল তার চেয়ে বেশি উন্নত হয়নি। বেগম খালেদা চেষ্টা করেছেন দল গোছাতে, তবে পারেননি।সূত্র জানায়, এর আগে যারা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন তাদের অনেকেই এবার থাকছেন না। সেখানে যোগ্য নেতাদের আনার চেষ্টা চলছে। তবে এখনও ৬৪ জেলায় কমিটি পুনর্গঠন করতে পারেনি, ঢাকায় কমিটি করার কথা ছিল, সেই কমিটি করতে পারেনি। আগামী দুই মাসেও তা করতে পারবে না। ঢাকার আহবায়ক মির্জা আব্বাস অবশ্য বলেছেন সময় বেঁধে দিয়ে কমিটি হবে না। কবে নাগাদ ঢাকা সংগঠিত হবে সেটা বিএনপিও জানে না। এই অবস্থায় তারা নির্বাচন আশা করছে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ২০১৪ সালেই ক্ষমতাসীনরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। স্বাধীনতা ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি করেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ক্ষমতাসীনরা বলেন- আগামী ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচন নয়। কিন্তু আমি মনে করি, তাদের এই কথায় কোন ভিত্তি নেই। কারণ এই বছরেই সরকার নির্বাচন দেবে।এদিকে সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, এই বছরে নির্বাচন হবে এটা বিএনপির কল্পনা বিলাশ। তারা বাস্তবে নেই বলেই এটা কল্পনা করছে। কারণ তারা জানে যে, তাদের দল নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত নয়। নির্বাচন করার জন্য দলের কাউন্সিল করা দরকার তাও করতে পারেনি। আবার নির্বাচনের জন্য যে রকম প্রস্তুতি থাকা দরকার তাও নেই। তাদের দাবি সরকার পূরণ করবে না এটা জানার পরও তারা সংলাপের আশা করছে। এটা নিশ্চিত যে, বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে না। সংলাপ না হলে সমস্যার সমাধান হবে না।সূত্র জানায়, সরকার বিএনপির শক্তি সম্পর্কে অবহিত। এখন বিএনপির এমন অবস্থা যে এক ছাত্রদলকেই সামলাতে পারছে না। বিদ্রোহীরা সব তোলপাড় করে দিচ্ছে। সেখানে তাদের অন্য জেলায় ও মহানগরীতে কমিটি করতে গেলে কি হবে। যেই দলের নেত্রীর তার দলের নেতা কর্মীদের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই, ছাত্রদের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই, সেই দল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে কেমন করে। বিএনপির ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে যা হচ্ছে ও হলো তাতে স্পষ্ট যে তারা আগামী দিনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত না। যেখানে তারা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত নয় সেখানে তারা কিভাবে আশা করে সরকার বিএনপির সঙ্গে বসেই তাদের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ করে দিবে। সরকার মনে করছে, বিএনপি এখন সবচেয়ে দূর্বল অবস্থায় আছে। এতটা খারাপ অবস্থায় কখনো তারা ছিল না।ওই মন্ত্রী বলেন, এই বছরের বাকি আর আছে দুই মাস নয়দিন। এই অবস্থায় কোনভাবেই নির্বাচন হবে না এটা তারা জানে না। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন করার জন্য ৯০ দিন সময় ধরা হয়। যেখানে এই বছরের ৯০ দিন সময়ও নেই সেখানে তারা কেমন করে আশা করে যে নির্বাচন হবে। দেশে এমন কোন জরুরি অবস্থা তৈরি হয়নি কিংবা দেশের মানুষ কোন অশান্তিতে নেই যে নির্বাচন দিতে হবে। তা ছাড়াও বিএনপি ক্ষমতা থেকে ও বিরোধী দলের আসন থেকে সরে যাওয়ার পরও মনে করে তাদের অবস্থা আগের মতো আছে। তারা স্বপ্ন দেখছে। এই কারণে বাস্তবতা মেনে নিচ্ছে না। বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপির সঙ্গে সরকার কোন আলোচনা না করলেও সরকারের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বিএনপিকে সরকার ফোন করবে কিংবা আলোচনা করবে এটা সম্ভব নয়।আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, সরকার নির্বাচন যথা সময়েই করবে। আগাম নির্বাচন করার মতো কোন পরিবেশ তৈরি হয়নি। জনগণ এই সরকারকে পাঁচ বছর থাকার ম্যানডেট দিয়েছে। সেখানে জনগণের ম্যানডেট নিয়েই সরকার মেয়াদ পূরণ করবে। আমি অন্তত সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোন আলোচনার প্রয়োজন এখন আছে বলে দেখি না। তারা নিজেরা ইচ্ছে করে নির্বাচন বর্জন করেছে। এখন এমন কিছুই হয়নি যে তাদেরকে ক্ষমতায় আনার পথ তৈরি করে দিতে সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে ও নির্বাচন দিবে। বিএনপির দাবিও যুক্তিসঙ্গত ও সংবিধান সম্মত নয়। এই সরকারকে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কেউ অবৈধ বললেও সাম্প্রতিককালে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকারকে সবাই মেনে নিয়েছে। স্পীকারের ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া এর বড় প্রমাণ। কারণ তাকে যারা ভোট দিয়ে নির্বাচন করেছেন তারাও নির্বাচিত প্রতিনিধি। সরকারকে অবৈধ মনে করলে ভোট দিতো না। তাই বিএনপি যতই মনে করুক এই বছরে নির্বাচন হবে, আসলে তা হবে না।এদিকে গয়েশ্বর রায় আরো বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ট্রেন দিয়ে ট্রেনে এনেও বাংলাদেশে আটকে রাখতে পারবেন না। কারণ জয়ের দুর্নীতি যখন ফাঁস হবে ওই সময়ে তাকে বিদেশে আশ্রয় নিতে হবে। তখন সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশে আসার কথাও চিন্তা করতে পারবে না। তিনি এটাও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আয়ু আর বেশি দিন নেই।প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, যদিও সরকার বার বারই বলে আসছে প্রধানমন্ত্রীর জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা চলছে। এটা আগেও হয়েছে। এই জন্য সবাই সতর্ক রয়েছে। ভারত থেকেও সতর্ক করা হয়েছে। শেখ হাসিনা এই জন্য ভীত নন। সাহস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবেন দৃঢ়তার সঙ্গেই। এই কারণে বিএনপি যতই ষড়যন্ত্র করুক কোন লাভ হবে না।এদিকে গয়েশ্বর আরো বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের ভাইস মিনিস্টার এক বৈঠকে আমাকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি পারবে না। কারণ বিএনপি সভ্য ও আওয়ামী লীগ একটি অসভ্য দল। চীনের ভাইস মিনিস্টারের বক্তব্যের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে, এই সরকার বিদেশিদের কাছে বৈধতা পায়নি। সরকার সংসদে বিচারপতিদের অভিশংসন আইন পাশ করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার চক্রান্ত করছে। এমন সময় আসবে যখন বিচারপতিরাই তাদের চাকরি স্থায়ী করতে আওয়ামী লীগের নেতাদের এই আইনের মাধ্যমেই জেলে পাঠাবে।সূত্র জানায়, বিএনপি আগামী দুই মাসের মধ্যে সরকারের পতন ঘটিয়ে কিংবা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারবে বলে বিএনপির অনেক নেতাই মনে করছেন। তবে একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, দুই মাসের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য যে পরিকল্পনা দরকার তা নেই। পরিকল্পনা না থাকলে হবে না। আন্দোলনের রূপরেখা চুড়ান্ত হয়নি। বার বার বলা হচ্ছে বিএনপি আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। আসলে এটা মুখে বললেও বিএনপির প্রকৃত পক্ষে আন্দোলনের জন্য পুরো প্রস্তুতি নেই। বিএনপি নিজেও জানে যে এই সময়ের মধ্যে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করলে বিএনপি সফল হতে পারবে না। এর আগে ঢাকায় যে ভাবে আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে এবারও। তার চেয়েও খারাপ আন্দোলন ব্যর্থ হবে। এই কারণে ভয়ে কঠোর কর্মসূচিও দিচ্ছে না। সরকারকে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে, কিন্তু এবার কর্মসূচি দিলে তা সফল না হলে সমস্যা বাড়বে। নতুন করে আর আন্দোলনের সুযোগ থাকবে না।বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, নেতা কর্মীদের মধ্যে নতুন করে আন্দোলন নিয়ে উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি করা প্রয়োজন। সেটা হচ্ছে না। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশের বিভিন্ন জেলায় সফর করছেন। জনগণকে আন্দোলনের জন্য উজ্জীবীত করার চেষ্টা করছে। সরকারের বিরুদ্ধে প্রচরণাও চালাচ্ছেন। নীলফামারী জেলা সফরের পর আরো তিনটি জেলা সফর করবেন। এরপর নতুন জেলারও নাম ঘোষণা করবেন। তিনি বলেন, এতে বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সরকারের দোষগুলো মানুষ বুঝতে পারছে ও জানতে পারছে কিন্তু তারা মাঠে নেমে আসছে না। তারা মাঠে নামলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সফল করতে সময় লাগবে না। কিন্তু তারা নামলে সরকারের জিরো টলারেন্সের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারবে কিনা এনিয়ে দোটানায়ও রয়েছে। বিএনপির বিভিন্ন নেতাও এনিয়ে দোটানায় রয়েছেন। মামলা, হামলার ভয়ে ও ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কায় মাঠে নামতে চাইছে না। ফলে বিএনপির আন্দোলন সফল হবে এই বছরেই এমন সম্ভাবনা দেখছে না অনেকেই।এদিকে সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়া ঈদের পরে যে আন্দোলনের কথা বলেছিলেন সেই আন্দোলন আপাতত হচ্ছে না। কারণ এখনও সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ বিএনপির পক্ষে সরকার হটানোর জন্য আন্দোলনে নামার কথা ভাবছে না। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিশ্বও সরকারকে বেশি চাপ দিচ্ছে না। তারা কেউ কেউ সরকারকে অবৈধ বললেও নিজেদের স্বার্থেই সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। সেই জন্য সরকারের উপর এই বছরেই নির্বাচন করার জন্য যে রকম চাপ আসার কথা ছিল সেটা নেই। এই কারণে সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে তাদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে চাইছে।এই ব্যাপারে সরকারের একজন মন্ত্রী বলে, বিএনপি হুমকি ধামকি দিচ্ছে। তারা আওয়ামী লীগের সামনে এসে দাঁড়াবে কেন। সেই সুযোগ কোথায়। দেশের জনগণ কি চাইছে যে বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করুক।বিএনপি জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপের আশায় আন্দোলন সফল করার পরিকল্পনা করলেও তাতে আপাতত কোন সাফল্য আসছে না। সরকারের সঙ্গে ইতোমধ্যে ৫ নির্বাচনের বিরুদ্ধে থাকা বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। তারা মনে করছে, সরকার আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য সব ধরনেরই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সুসম্পর্কও রেখে চলেছে। এই কারণে বিএনপি অন্তর্জাতিক শক্তির বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেও আন্দোলনে সফল হবে এমন নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। সেটা পেলে তারা কঠোর কর্মসূচি দিবে। | false |
ij | আউলচাঁদ প্রচলিত লোককাহিনী অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার উলা গ্রামের পান ক্ষেতে একটি নবজাতক শিশু পাওয়া গিয়েছিল। সময়টা ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দ। তো ওই পান ক্ষেতের মালিক ছিলেন মহাদেব বারুই নামে এক সম্পন্ন কৃষক। বারুই দম্পতি ছিল নিঃসন্তান। সুতরাং শিশুটি কে তিনি কোলে তুলে বাড়ি নিয়ে এলেন। স্বামীর কোলে ফুটফুটে একটি শিশু দেখে মহাদেবের স্ত্রীর খুশি দেখে কে। ভগবান শিশুটিকে পানক্ষেতে রেখে গেছেন। ভগবান ছাড়া আর কে। মহাদেবের বউ শিশুটির নাম রাখলেন পূর্নচন্দ্র। হয়তো পরিত্যক্ত শিশুটির মুখটি ছিল পূর্ণচন্দ্রের ন্যায় টলটলে। পরবর্তীতে, হরিহর ঠাকুরের কাছে সংস্কৃত ভাষা অধ্যায়ন করেছিল বালক পূর্ণচন্দ্র। সংসার কী কারণে টানল না। তরুন বয়েসে পূর্ণচন্দ্র গৃহত্যাগ করল। ফকির বেশে ঘুরে বেড়াল এখানে সেখানে। গয়া হরিদ্বার বৃন্দাবন নীলাচল। এক মুসলিম সুফির সঙ্গে মিশে বুঝল জাতপাত মিছে। সবই আল্লার সৃস্টি। এ সময় লোকে তাঁকে দেখে বলল আউলচাঁদ । কেন? কে জানে। দীর্ঘকাল তীর্থ ভ্রমন সেরে কাঁচড়াপাড়ার নিকটবর্তী ঘোষপাড়ায় রামশরণ পালের বাড়িতে থিতু হলেন আউলচাঁদ। ক্রমে ক্রমে তাঁর ব্যাক্তিত্বের মহিমা ছড়াল। লোকে তাঁর কাছে আসতে লাগল। জীবন ও জগতের ব্যাখ্যা শোনার জন্য। আউলচাঁদ কি কারণে ঈশ্বরকে বলতেন কর্তা। তাঁর সাধনার প্রধান মাধ্যম ছিল গান। তিনি তাঁর অনুসারীদের বলতেন ঈশ্বর বা খোদাজ্ঞানে কর্তার উপাসনা করতে। তৎকালীন লোকেরা এ কারণে এদের বলত- কর্তাভজা। আউলচাঁদের শিষ্যরা তাঁকে চৈতন্যদেবের অবতার মনে করত। আউলচাঁদ লোভ মোহ কাম ক্রোধকে নৈতিক পাপ বলে মনে করতেন। সৎপথে থেকে ও মিথ্যাকথা পরিহার করে নৈতিকভাবে ধর্মকর্ম করবে। লোকে কেঁদে বলত, আহা। কী শুনলাম! দীক্ষা দিন প্রভূ। প্রথমে রামশরণসহ বাইশ জন শিষ্যকে দীক্ষা দিলেন আউলচাঁদ। এ ভাবেই কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সূত্রপাত। একদিন শিষ্যদের ডেকে আউলচাঁদ বললেন, দেখ। এরা আমায় আশ্রয় দিয়েছে। রামশরণ আর তার বউ। তোমরা রামশরণকে “কর্তাবাবা” বলো। ওর বউ সরস্বতী দেবী কে বলো “কর্তামা”। কেমন? আচ্ছা। তাই হবে। শিষ্যরা সমস্বরে বলল। কালক্রমে সম্প্রদায়টি কলকাতা চব্বিশ পরগনা সুন্দরবন ও সিলেট অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তার কারণ আছে। কর্তাভজা সম্প্রদায়টি ধর্ম বা নর-নারীর পার্থক্য স্বীকার করত না। মানবতাবাদী বহু উপকরণ ছিল সম্প্রদায়টিতে। কাজেই কর্তাভজা সম্প্রদায়ে হিন্দু-মুসলিম উভয় স্রোত এসে মিশেছিল। তবে সদ্গোপ কলু মুচি ও বৈষ্ণব শ্রেণির সংখ্যাই ছিল বেশি। ১৭৭০ সালে আউলচাঁদ দেহরক্ষা করেন। আউলচাঁদের মৃত্যুর পর রামশরণ পালের স্ত্রী সরস্বতী দেবীই সম্প্রদায়টির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। উৎস: বাংলাপিডিয়া। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:৫১ | false |
fe | যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে ফকির ইলিয়াস ========================================= একটি অশুভ চক্র আবারো গোটা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার পাঁয়তারা শুরু করেছে। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে হুমকি দেয়া হয়েছে। বোমা হামলা করা হয়েছে সাংসদ ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের গাড়িতে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া যখন শেষ পর্যায়ে তখন একটি মহল তৎপর হয়েছে ঘোলাজলে মাছ শিকারে। এদিকে প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার তার মেয়াদ শেষ করতে পারবে না। মেয়াদ শেষের আগেই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। খালেদা জিয়ার এই দম্ভোক্তির জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, এমন হুমকি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। একটি নির্বাচিত সরকারকে এমন হুমকি প্রকারান্তরে অশুভ শক্তিকেই সমর্থন মাত্র। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের ওপর আক্রমণের ঘটনায় বেশ কজন গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মাঝে কুখ্যাত খুনি কর্নেল রশিদের মেয়ে মেহনাজ রশিদও রয়েছেন। রিমান্ডে মেহনাজ রশিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নানা রকম চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশিত হচ্ছে মিডিয়ায়। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যাচ্ছে, মেহনাজ রশিদের সঙ্গে একজন সামরিক উচ্চপদস্থ অফিসার ফজলুল বারীর বিয়ে হয়েছিল। জেনারেল বারী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ওয়ান-ইলেভেনের পর ওয়াশিংটনে সামরিক এটাসে নিযুক্ত হন। মেহনাজ বলেছেন, ওই সময় একটি মহল নাকি চেয়েছিল কুখ্যাত খুনিদের রাজনৈতিক দল ফ্রিডম পার্টি আবার পুনর্গঠিত হোক। এবং এটাও নাকি তাদের প্রত্যাশা ছিল, এই দল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে। মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির কোনো নামগন্ধও থাকবে না! এ বিষয়ে একটি কথা স্পষ্ট করা খুব দরকার। বাংলাদেশে ফ্রিডম পার্টি বা এ ধরনের কট্টরপন্থী, ডানপন্থীদের প্রকৃত রাজনৈতিক মিত্র কে বা কারা তা জনগণের অজানা নয়। কারা খুনি রশিদ-ফারুকের দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে টিকে থাকতে সাহায্য করেছিল, তাও জানেন রাষ্ট্রের আপামর মানুষ। তাই এই শক্তি পুনর্গঠিত হলে কারা লাভবান হবে, কাদের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা পাওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে- সেই সরল সমীকরণটি কারো না বুঝার কথা নয়। তাহলে কি ওয়ান-ইলেভেনের পর জে. বারীর মতো ডানপন্থী সামরিক অফিসারদেরকে দিয়ে সেই শেষ ইচ্ছেই বাস্তবায়িত করতে চেয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া? নেপথ্যে থেকে তার দলই নাড়ছিল সব কলকাঠি? প্রশ্নগুলো খুব সঙ্গত কারণেই আসছে। দেশের জনগণ সেইসব ষড়যন্ত্র পাল্টে দিয়েছে। তারা ওয়ান-ইলেভেনের অশুভ চক্রকে জয়ী হতে দেয়নি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ অবাধ ও স্বাধীনভাবে ভোট প্রয়োগ করতে পেরেছে। আর সে কারণেই বিএনপির আসন সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র আটাশের কোঠায়। পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যাওয়ায় বেগম জিয়া এবং তার দলের চরম ক্ষোভ হতেই পারে। কিন্তু এখন মেহনাজ রশিদের দেয়া তথ্যের বরাত তো সেসব সত্যই উন্মোচিত করছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার চিরতরে থামিয়ে দিতে ইনডেমনিটি বিল পাস করা হয়। খুনিদেরকে স্বদেশে এবং বিদেশে পালিয়ে যেতে, প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করা হয় সর্বাত্মকভাবে। সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী শক্তিকে খুনিদের পরিপূরক হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এভাবে অবৈধ, অগণতান্ত্রিক, হীনউদ্দেশ্যপূর্ণ মতলব যদি হাসিল করা না হতো তবে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) এবং তারই জামাতি সংস্করণ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বাজাদল কিংবা বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতো না। এখানে উল্লেখ করা দরকার ‘বাজাদল’ বাংলায় ছোট নামটি পছন্দ না হওয়ায় জেনারেল জিয়া দলের নাম ‘বিএনপি’ ডাকার জন্যই সবাইকে আদেশ দেন। সেই থেকেই ইংরেজি আদ্যক্ষর নিয়ে বিএনপি যাত্রা শুরু করে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে আন্দোলন করার নানা সূত্র খুঁজছে একটি মহল। ভোলার একটি আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ জসিম উদ্দিন আহমদের সংসদ সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাওয়ার পর সেই আসনে উপনির্বাচন নিয়েও ইস্যু খুঁজছে বিএনপি। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামকে মাঠে নামানো হয়েছে। তা করানো যেতেই পারে। কিন্তু বেগম জিয়া এতো অধৈর্য হচ্ছেন কেন? তারেক-মামুনরা হাওয়া ভবনের ছায়াতলে বাংলাদেশে যে দখলের রাজনীতি, সন্ত্রাসীচক্র, জঙ্গিবাদী বাংলাভাই-শায়খ রহমান গড়ে তুলেছিল তখন তো তিনি তা দমনে ভূমিকা নেননি। বরং বাবর-আমান-মিলন-লালু-ফালু চক্র আস্কারা পেয়েছে হাওয়া ভবনের পৃষ্ঠপোষকতায়। আব্দুস সালাম পিন্টু কিংবা নাসিরউদ্দিন পিন্টু, দৌড় সালাহউদ্দিনরা দখলের ত্রাস সৃষ্টি করেছিল সরকারি বাহিনীর মদদে। ২০০১-২০০৬ সালে বাংলাদেশে কি করেনি এই চক্র। তা তো দেশবাসী ভুলে যাননি। ভুলে যাওয়ার নয়। না হলে সাইফুর, দেলোয়ারের মতো নেতারা সাংসদ হতে পারলেন না কেন? বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদী মানসিকতা, উগ্র রাজনৈতিক আচরণ তীব্রভাবেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপরও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপি, ক্ষমতার হাত বদলের গন্ধ খুঁজে বেড়াচ্ছেন বেগম জিয়া। বর্তমান সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকার্যের রায় সম্পন্ন করা। ঘাতক-দালালদের বিচার কাজ শেষ করা। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার সুসম্পন্ন করা। হঠাৎ করেই ভারত ইস্যুর পাশাপাশি মায়ানমার ইস্যু টেনে এনে রাজনীতিতে তপ্ত বাতাস বইয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। মায়ানমার আসলে কোনো রণসজ্জায় সজ্জিত হচ্ছে না, এমন সংবাদ পত্রপত্রিকায় আমরা দেখছি। তারপরও এক ধরনের জুজুর ভয় ছড়িয়ে গণমানুষের চোখকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ডানপন্থী মৌলবাদী, জঙ্গিবাদের মদদদাতা যে চক্রটি এই জুজুর ভয় দেখাবার পাঁয়তারা করে মায়ানমার তাদের তালিকায় নতুন সংযোজন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান করাই বুদ্ধিমত্তার কাজ। বাংলাদেশকে সে কথাটি মনে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। এই সময়ে যে সাহস ও প্রত্যয়টির প্রধান প্রয়োজন তা হচ্ছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। একটি মৌলবাদী মোর্চা সংগঠন ‘হিজবুত তাহরীর’কে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার পর তা নিয়েও নানা কুৎসা ছড়াচ্ছে এই মহল। তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে নাকি বাংলাদেশ তা করেছে। আমার কথা হচ্ছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র অনুরোধ করে থাকে তা হলেও তো ক্ষতি নেই। কারণ এই তাত্ত্বিক সংগঠনটি ২০০১ সাল থেকেই বাংলাদেশে জিহাদি জোশের ফিল্ডওয়ার্ক করে আসছে। তা তাদের বিলি করা বইপত্র পড়লে সহজেই বুঝা যায়। এ বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এই সংগঠনটি নানা উগ্রবাদী সেমিনারের আয়োজন করার পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোটা বিশ্বব্যাপী এই সংগঠনটির কার্যক্রম নিষিদ্ধের জন্য জোর তৎপরতা শুরু করে। আমরা জানি হীনমন্যরা কখনোই জয়ী হয় না। হতে পারে না। জয়ী হয় সৎমানুষের কাফেলা। তাই ষড়যন্ত্রের দরজায় বসে যারা গোঁফে তেল দিয়ে কাঁঠাল ভাঙতে চাইছে, তাদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারকে কঠোরতম সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারে ৩৪ বছর লাগার কথা ছিল না। এই বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর হোক। আর কালক্ষেপণ যেন না হয়। ২৭ অক্টোবর ২০০৯ ------------------------------------------------------------------ দৈনিক ভোরের কাগজ।ঢাকা।৩০ অক্টোবর ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- গ্যাভিন মরগান সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:১০ | false |
rn | তুই রাজাকার তুই রাজাকার তুই রাজাকার মানব জন্মের নামে হবে কলঙ্ক হবেএরকম দুঃসময়ে আমি যদি মিছিলে না যাই, 'ক' তে কাদের মোল্লা... তুই রাজাকার !'গ' তে গোলাম আযম... তুই রাজাকার !'দ' দেলোয়ার হোসেন সাঈদী... তুই রাজাকার !'ন' মতিউর রহমান নিজামী... তুই রাজাকার !'স' সাকা...তুই রাজাকার !'ম' আলী আহসান মুজাহিদ... তুই রাজাকার ! চারিদিকে এখন যুদ্ধাপরাধী দের বিচারের দাবি।সবাই মিলে আওয়াজ তুলে, বদলে দিতে রায়- আয় শাহবাগে আয়।মানুষ যখন তার কাঙ্খিত কোন কিছু না পায় বা হারিয়ে ফেলে তখন উচিৎ-অনুচিৎ, মুলক-অমুলক, ন্যায়-অন্যায় অনেক কিছুই চিন্তা করে। এই মূহুর্তে গোটা জাতি তথা বাঙালী একটি জিনিস হারিয়ে ফেলেছে, তা হলো সরকারের উপর আস্থা। আমার আড়াই বছরের মেয়ে মাধুর্য এসে বলছে, " মা আমিও রাজাকার মারবো" শুনে আমি হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলাম, " কিভাবে মারবে মা"? সে কোথা থেকে তার বাবার একটা স্যান্ডেল নিয়ে এসে দরজায় কয়েকটা বাড়ি দিয়ে বলল, "এইভাবে..."ঃ)...... (-লিনা আপা ) শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগশাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ শাহাবাগ ।মুজিবনগরের পর বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি গৌরবময় স্থানের নাম হলো শাহবাগ ।এতবড় অপরাধ করে এই শাস্তি হলে অপরাধের মাত্রা আরো বাড়বে।বাংলাদেশ কোনো একটা একক বিষয়ে, একক দাবিতে সবাই এক সাথে পথে নামলো।জনতার দাবী উপেক্ষা করার সুযোগ নাই।টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ায় ঢেউ/মাফ পাবে না রাজকারদের কেউ।প্রায় পঁচিশ হাজার লোক জমায়েত হয়ে আন্দোলন করছে। মুখরিত হচ্ছে আকাশ বাতাশ। প্রতীকী ফাঁসিতে ঝুলছে কাদের মোল্লা। সরকার যে কাজ করেছে তার প্রতিবাদ করছে সবাই।কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণার পর সর্বপ্রথম অনলাইন ব্লগাররাই এর প্রতিবাদে শাহবাগে একটি প্রতিবাদ সভা ডাকে। ফলে গতকাল বিকেল থেকেই "ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক" নামের সংগঠনের ব্যানারে শাহবাগে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট শুরু হয়। যোগ দেয় কিছু ব্লগার। তৈরি করা হয় সংহতি মঞ্চ। আমরা সকল রাজাকারের বিচার বাংলার মাটিতে দেখতে চাই। সে যে দলেরই হোক না কেন? বিএনপি, জামাত, আওয়ামীলীগ- সব দলের রাজাকারের বিচার চাই। সরকার না পারে জনগনের হাতে ছেড়ে দিক, আমরাই বিচার করবো। | false |
hm | প্রবাসে দৈবের বশে ০৩৫ সেদিন ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো ঝড়ের শব্দে। কাসেল এমনিতেই বেশ হাওয়ালো শহর, কিন্তু যাকে অন্তত আমি ঝড় বলি, তেমন কিছু এ পর্যন্ত দেখিনি। জানালায় বাতাসের ঝাপটা শুনে বুঝলাম, শুধু বাতাস নয়, তুষারও আছে সাথে। পরে শুনলাম এই ঝড় বয়ে গেছে পুরো মহাদেশের ওপর দিয়ে। সুমন চৌধুরী একটু বেরিয়েছিলেন ভোরবেলা, তিনি সেদিন বিকেলে বিরসমুখে জানালেন, আমার তো ঝড়ের শব্দে ঘুম ভেঙেছে, আর তিনি ঝড়ে ভিজে চুপচুপে হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, কাজেই এ নিয়ে আর ফালতু আলাপ যাতে না হয় ...। এ কয়দিন ব্যস্ত ছিলাম পরীক্ষা নিয়ে। বিয়োমাসে, মানে জৈববস্তু নিয়ে পরীক্ষা, গোটা সেমিস্টারের সবচেয়ে একঘেয়ে আর চাপ ফেলার কোর্স ছিলো এটা। হপ্তায় একদিন টানা চার ঘন্টা বকর বকর। রসায়ন আমার অপছন্দের বিষয়, কোনমতে টেনেটুনে পাশ করে এসেছি এতে সারাজীবন, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়তো হবে না। কোর্সটার দুটো টুকরো ছিলো, এক অংশে জৈববস্তুর নানারকম তাত্ত্বিক ব্যবচ্ছেদ, অন্য অংশে এর রাসায়নিক গুণযাচাই। শেষের অংশ যে প্রফেসর নিয়েছেন, তিনি খুব নিষ্ঠার সাথে পড়ালেও সকলেই তাকে একটু সমঝে চলে বদমেজাজের কারণে। পরীক্ষার হলে তার নমুনা দেখলাম। এখানে পরীক্ষার আগে পরীক্ষা দপ্তরে নিবন্ধন করতে হয় নাম, ছাত্র ক্রমিক আর স্বাক্ষরসহ। এই পরীক্ষা দপ্তরের ব্যাপারটাও একেক বিভাগের জন্যে একেক রকম। ইলেকট্রোটেকনিক বা ইনফরমাটিক এর ছাত্ররা অনলাইনে ফটাশ করে এই কাজ সেরে ফেলে কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই, আর আমরা যারা এরএকোয়াড্রাটলার, তাদের সিঁড়ি ভেঙে দাপাদাপি করে যেতে হয় বিভাগের পরীক্ষা দপ্তরে, সেখানে খিটখিটে ফ্রাউ মারিনেল্লির কাছে গিয়ে রেজিস্টার খাতায় নামধাম লিখতে হয়। পরীক্ষার কমপক্ষে চৌদ্দদিন আগে এই কর্মটি সাধন করা না হলে পরীক্ষা দেয়ার কোন অধিকার থাকে না ছাত্রের। আমি যেমন একটা সেমিনারের মৌখিক পরীক্ষায় সময়মতো নিবন্ধন করতে পারিনি, সেজন্যে আবার পরীক্ষা দপ্তর থেকে ফর্ম নিয়ে তাতে পরীক্ষকের অনুমোদনসূচক স্বাক্ষর নিয়ে জমা দিতে হয়েছে। হের রোরিগ এবং হের লাঙ্গে অবশ্য কোন রকম ঝামেলা করেননি, ফর্মে সই করে দিয়ে উল্টো আমার হাতে আরেকটা ফর্ম ধরিয়ে দিয়ে বলেছেন, "এবার তাহলে আপনিও একটা সই করে দিন এখানে!" পরীক্ষার হলে এক বেচারা প্রফেসর ক্লোজের কাছে এই একই অনুরোধ নিয়ে এসেছে। এই প্রথম কোন জার্মান প্রফেসরকে রাগারাগি করতে দেখলাম। হোয়রজাল ৎস্বাই কাঁপিয়ে এক গর্জন শুনলাম, "এখানে পরীক্ষা চলছে! তার কিছু নিয়ম কানুন আছে! আপনি বেরোন!" নিবন্ধন করতে দেরি হয়ে গেলে যে ফর্ম দিয়ে পার পাওয়া যায়, সে ফর্ম নিয়ে স্বাক্ষরের জন্যে অনুরোধ করতে ক্লোজে আরো ক্ষেপে গেলেন! "আপনি সময়মতো নিবন্ধন করেননি! কথা শেষ! যান এখান থেকে!" হলের আরেক প্রান্ত থেকে সেই ছোকরার এক বন্ধু বিরক্ত হয়ে বললো, "হের ক্লোজে, একটু বিবেচনা করুন!" ক্লোজে পাঁই করে ঘুরে বললেন, "বিবেচনা করে আপনার বন্ধুকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বাস!" আমি মনে মনে কপালকে ধন্যবাদ দিলাম। ঐ পরীক্ষার জন্যে নিবন্ধনের শেষ দিনে কর্মটি সেরে এসেছিলাম। সময়ের এক ফোঁড় না দিলে অসময়ে যে অগুনতি ফোঁড়েও যে কাজ হয় না, তা দেখে শিখলাম। ক্লোজে অবশ্য পরিচয়পত্র যাচাই করার সময় আমাকেও ভোগালেন খানিকটা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্রে ছবি থাকে না এখানে, কেন জানি না, লোকজনকে তাই ছবিসহ তাদের পেরজোনালআউসভাইজ সাথে রাখতে হয়। আমার পেরজোনালআউসভাইজ বা ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র আমার পাসপোর্ট, তার একটা কপি করে সঙ্গে রেখেছিলাম সৌভাগ্যক্রমে, ক্লোজে আমার মাত্রিকেলনুমার মিলিয়ে দেখে খটখটে গলায় অবিকল পুলিশের মতো করে বললেন, "লিখটবিল্ডআউসভাইজ বিটে!" ছবিসহ পরিচয়পত্র বার করে দেয়ার পর তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আমার খোমাটিকে পরখ করে দেখলেন। সেই পরীক্ষার একদিন পর, অর্থাৎ আজ আবার ছিলো ব্যবস্থাকৌশলের পরীক্ষা। এই ক'দিন পড়তে পড়তে চোখ ব্যথা হয়ে গেছে। ব্যবস্থা কৌশল বেশ গোলমেলে বিষয়, আগের বছরের কোন পরীক্ষার প্রশ্নও কারো কাছে নেই, কী আসতে পারে পরীক্ষায়, তা জিজ্ঞেস করলে প্রফেসর প্রিস গম্ভীর মুখে শুধু বলেন, "যা পড়ানো হয়েছে তা থেকেই একটা কিছু আসবে।" গতকাল রাতে যখন মোটামুটি একবারের মতো সবকিছু পড়ে শেষ করেছি, তখন পর পর দু'টো মেইল এলো। প্রথমটা পাঠিয়েছে আমারই কোন এক সহৃদয় সহপাঠী, সে জানিয়েছে, ভাইসব, তোমরা শুধু অমুক অমুক জিনিস পড়লেই চলবে না, প্রিসের ওয়েবসাইটে আরো কিছু জিনিস তুলে দেয়া হয়েছে, সেগুলোও দেখো। দ্বিতীয় মেইলে টাকলু রোলান্ড জানিয়েছে, আগামীকাল স্ট্রাইক, ট্রাম বাস চলবে না। আরো পড়তে হবে শুনে মেজাজ খিঁচড়ে গিয়েছিলো, স্ট্রাইকের কথা শুনে বুঝলাম, পৃথিবীতে কিছু শব্দকে কেন লোকে খারাপ কথা হিসেবে রেখে দিয়েছে। এর আগেও একবার স্ট্রাইকের ভেতর হেঁটে হেঁটে পরীক্ষা দিতে গেছি। আর হবি তো হ পরীক্ষা আবার ইংশুলে, সেই দূর ভিলহেল্মসহোয়ার আলেতে, আমার বাসা থেকে পায়ে হেঁটে সত্তর মিনিট লাগে যেতে। সেদিন রাস্তায় যেখানে আমার বুলগেরিয়ান সহপাঠী স্লাভের সাথে দেখা হয়েছিলো, প্রায় সেই একই জায়গায় আজ দেখা হয়ে গেলো ওলাফের সাথে। সে স্ট্রাইকের কথা জানতো না, ঘর ছেড়ে বেরিয়েছে তার ঢাউস ল্যাপটপ নিয়ে, তার মেজাজ আরো খারাপ। পথে চলতে চলতে চোখে পড়লো বিক্ষোভ মিছিল। এখানে মিছিলের আগে পিছে পুলিশের গাড়ি থাকে কয়েকটা। জার্মান পুলিশ একটি দর্শনীয় বস্তু, দৈর্ঘ্যপ্রস্থে পৃথিবীর বেশিরভাগ দুষ্কৃতীর চেয়ে বড় হয় তারা। বিক্ষুব্ধ জনতা কোনরকম বেচাল করলে সোজা এসে পিটিয়ে ঠান্ডা করতে তারা সদা প্রস্তুত। মিছিল যারা করে, তারা আমাদের মতো কাঁচভাঙা বা গাড়ি পোড়ানোতে এখনও হাত পাকাতে পারেনি, এরা কয়েকটা লাউডস্পীকার আর হুইসেল-পতাকা নিয়ে মাঠে নামে। পতাকা নাড়াতে নাড়াতে হুইসেলে এক সাথে ফুঁ দেয়, আর লাউডস্পীকারে তাদের পালের গোদাবৃন্দ জলদগম্ভীর স্বরে দাবিদাওয়া জানাতে থাকে। মনে মনে ভাবলাম, এদের সবার আউসবিল্ডুং (প্রশিক্ষণ) করানো উচিত পল্টন ময়দানে নিয়ে গিয়ে। পরীক্ষা শেষ করে খুব হালকা লাগছিলো আজ। এমনিতেই বহুদিন পর লেখাপড়া শুরু করেছি, রীতিমতো চাপ পড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গেলে। চার বছর আগে কঠিন ম্যালেরিয়ায় ভুগে প্রায় মরতে বসেছিলাম, তার পর থেকে লক্ষ্য করে দেখেছি, আগের মতো আর অঙ্ক করতে পারি না। পর পর দু'টো পরীক্ষার ঝামেলা শেষ হবার পর আজ সুমন চৌধুরীর বাড়ি গিয়ে উৎপাত করলাম। হের চৌধুরীর কানাডীয় প্রতিবেশী ভিনসেন্ট কাসেল ছেড়ে চলে গেছে, যাবার আগে দুই বোতল খাসা ওয়াইন রেখে গেছে পড়শীদের জন্যে, তার একটি আমি আর চৌধুরী মেরে দিলাম আজ। দুই হাজার ছয়ের অর্ধশুষ্ক ডর্নফেল্ডার সবসময়ই খাচ্ছি, কিন্তু আজকেরটা রীতিমতো খাসা ছিলো। ভিনসেন্টের পবিত্র স্মৃতির উদ্দেশ্যে কিছু অপবিত্র স্নেহবাক্য বর্ষণ করলাম মনে মনে। গতকাল এমনিই হঠাৎ কী মনে করে খুঁজতে খুঁজতে অনলাইনে পেয়ে গেলাম আগাথা ক্রিস্টির সত্তরটি রহস্যোপন্যাস। ডাউনলোড করে ছি। সামনের ক'টা দিন স্বাভাবিকভাবেই সচলে একটু অচল মেরে যাবো। ষ্ট্রোয়মুংসমাশিনেন এর ওপর কষা পরীক্ষা তো আছেই, ক্রিস্টির অনেক না পড়া উপন্যাস এখন নাগালের মধ্যে। | false |
rn | রবীন্দ্রনাথ ও গৌতম বুদ্ধ আমার সবচেয়ে প্রিয় দুজন ব্যক্তিত্ব ''একদিন চাঁদ উঠবে না-একদিন সারাদিন সূর্য উঠবে না। একদিন চুল কাটতে যাব না সেলুনে একদিন জনসংখ্যা কম হবে এ শহরে, একদিন সারাদিন কোথাও যাব না।''। ------------- গুন'দার কবিতা। এই পৃথিবীতে অনেক ধরনের মানুষই রয়েছেন। কিছু দুষ্টলোক সব জায়গায় থাকে। মক্কা- মদীনা বা গুলিস্তান- সদরঘাট। তারা থাকবেই। তারা অশান্তি সৃষ্টি করবে। এই কাজটা করে তারা বিপুল আনন্দ পায়। সমালোচনা করা আর অশান্তি সৃষ্টি কিন্তু এক ব্যাপার নয়। ধরুন, একদল লোক একটা মসজিদ বা একটা মন্দির ভেঙ্গে ফেলল (মসজিদ-মন্দির ভেঙ্গে ফেলা কখনই ভালো কাজ নয়) তখন মানুষ দু'দলে ভাগ হয়ে যাবে। একদল বলবে- ভেঙ্গে ভালোই করছে। দরকার নেই কোনো উপাসনালয়। আরেকদল বলবে- না ভাঙ্গা মোটেও ঠিক হয়নি। খুবই জঘন্য কাজ হয়েছে। এই নিয়ে তর্ক, আলোচনা-সমালোচনা চলতেই থাকবে। আমার কথা হলো- এই আলোচনা সমালোচনা করে কোনো লাভ নেই। এতে দেশ বা সমাজের কোনো উপকার হবে না। আমি মনে করি, ফালতু আলোচনা-সমালোচনা বা তর্ক-বিতর্ক বাদ দিয়ে- প্রথমে নিজের পরিবার তারপর দেশকে ভালোবাসলে- তাতে পরিবার, দেশ এবং জাতির জন্য মঙ্গল হবে। মানুষ জন্মগতভাবে কখনই খারাপ থাকে না। জন্মের পর পরিবেশগত কারণে বা অন্য কোনো বাস্তব কারণে খারাপের পথে অগ্রসর হয়। তবু সব মানুষের ভেতরেই একটি পবিত্র সত্ত্বা রয়েছে। কাজেই, একটাই জীবন। তাই ভালো থাকুন, ভালো বাসুন। নিজেকে ও প্রিয়জনদের ভালো রাখুন। প্রায় চার বছর আগে সামু ব্লগের ব্লগার জামিলা শফী সিদ্দীকি ভালো মানুষের সংজ্ঞা, দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “যে মানুষের জীবদ্দশায় তার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি-তিনিই ভালো মানুষ।”আমরা অনেকেই নিজের ত্রুটি নিজে দেখি না। প্রতিটি মানুষের রয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। ব্লগ এ ঝগড়া বিবাদ না করে, কাউকে অপমান বা কটু কথা না বলে আমরা সাধারন মানুষের মধ্যে ব্লগ ও ব্লগার সম্পর্কে যে ভ্রান্ত ধারনা আছে সেই ভ্রান্ত ধারনা মুছে দিয়ে তাদেরকে আমরা ব্লগের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বোঝাতে এবং ব্লগমুখী করে তুলতে আমরা সবাই একতাবদ্ধভাবে কাজ করে যাব এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। সকল ব্লগারকে মনে রাখতে হবে, বাগস্বাধীনতা মানে বাক-স্বেচ্ছাচারিতা নয়। অশ্লীল বা আক্রমণাত্মক ভাষা দিয়ে নয়। এটা তাঁদের জ্ঞানের দেউলিয়াত্বই শুধু প্রমাণ করে। সবকিছুকে খুব বেশি ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। এটা জানবেন যে পৃথিবীতে সবাই সবকিছু পারেন না, পৃথিবীতে সবকিছু সবার জন্য নয়। বারাক ওবামা'র এই কথাটি আমার খুব ভালো লাগে- ''যখন তুমি কোন একজন মানুষকে ভিন্নভাবে বিচার করো সে কারো কী ক্ষতি করছে তা না দেখে বরং সে শুধু অন্যরকম এজন্যে, তখনই স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হয়।'' আমি সারাদিন অফিস করি, তারপর বাসায় ফিরে বাজার করি। বউ রান্না করে- রাতে খেয়ে, ছাদে গিয়ে কিছুক্ষন গল্প-গুজব করে এক আকাশ আনন্দ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। খুব সাধারন জীবন যাপন করি। বলা যায় মোটামোটি আনন্দময় জীবন পার করছি। আর যারা আমার এই আনন্দ নষ্ট করে তাদের সাথে আমি সম্পর্ক রাখি না। ভাই বন্ধু আত্মীয় স্বজন অথবা কোনো দুষ্ট ব্লগার যে-ই হোক না কেন তাদের সাথে আমি থাকতে চাই না। কথায় আছে দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো। আহমদ ছফা'র এই কথাটি আমার অনেক প্রিয়- ''আমার কাছে ঈশ্বর-চিন্তা আর মানুষের অমরতার চিন্তা সমার্থক। কেউ যদি আমাকে আস্তিক বলেন বিনা বাক্যে মেনে নেব। আমি আস্তিক। যদি কেউ বলেন নাস্তিক আপত্তি করব না। আস্তিক হোন, নাস্তিক হোন, ধর্মে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আমি কোন বিবাদের হেতু দেখতে পাইনে। আমার অভীষ্ট বিষয় মানুষ, শুধু মানুষ। মানুষই সমস্ত বিশ্বাস, সমস্ত মূল্যচিন্তা, সমস্ত বিজ্ঞানবুদ্ধির উৎস।'' আমার বন্ধু রফিক দুবছর আগে হঠাত নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। সে একদিন আড্ডায় আমাকে বলেছিল- ''ব্লগিংটাকে সিরিয়াস হিসেবে নিবেন না। বরং ভার্চুয়াল হিসেবে নেন। তাহলে ভাল থাকবেন।'' মানুষকে ভালোবাসুন। জীবনে অর্থ খুজে পাবেন। ছোট্ট এই জীবনে কোন কিছুই থাকবে না, থাকবে শুধু ভালোবাসা। মানুষকে ভালোবাসলে আপনিও মানসিকভাবে প্রশান্তিতে থাকবেন। শুধু মানুষকে নয়, পশু-পাখি, সবকিছুকেই ভালোবাসুন। ভালোবাসলেই কেবল ভালোবাসা পাবেন। হে আল্লাহ আমাদের একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন, সুম্মা আমীন। ( এই লেখার সাথে কি ছবি বা কোন ছবি দেয়া যায়- ভেবে পেলাম না। হাতের কাছে যে ছবি পেলাম দিয়ে দিলাম। দয়া করে আপনারা বিরক্ত হবেন না। নিজের ভালো লাগা, আনন্দলাগা, সুখ দুঃখ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে ভালো লাগে। আশা করি আমার ভুল ক্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন। আপনার সবার মঙ্গল কামনা করছি।) সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২১ | false |
rg | আমার লেখার ভূবন___ খুৃব ছোটবেলায় আমি মায়ের কাছে খুব গল্প শুনতাম। গল্প শুনতে আমার খুব ভালো লাগতো। অনেক সময় একই গল্প আমি মায়ের কাছে বারবার শুনতে চাইতাম। তখন আমার মধ্যে একটা ছোট্ট জিজ্ঞাসা কাজ করতো। মা আগের বলা সেই একই গল্পটি নতুন করে আবার বলে কিনা? কিংম্বা নতুন করে বলার সময় কিভাবে বলেন? নতুন করে বলার সময় কি কি নতুন বিষয় সেখানে যোগ হতো সেটা ছিল আমার কোয়ারি। তো আমি খুব সচেতনভাবে লক্ষ্য করতাম যে, প্রতিবারেই মায়ের বলা সেই গল্পে নতুন কিছু যোগ হচ্ছে। আর আগের বলা কিছু কিছু জিনিস বিয়োগ হচ্ছে। তখন আমার সেই গল্প নিয়ে মায়ের কাছে আরো অনেক জিজ্ঞাসা থাকতো। আর গল্প শোনার নেশাটা আরো বেশি সতেজ হতো। আমরা অনেকগুলো ভাইবোন। আটভাই চারবোন। মোট বারোজন। তো, আমার একেবারে বড় দুই ভাই খুব ছোটবেলায় মারা যায়। একেবারে বড় ভাই মারা যায় কলেরায়। তার তখন বয়স হয়তো দুই আড়াই বছর। তারপর আবার পরের ভাইয়ের জন্ম। সেই ভাইটার বয়স ঠিক ওরকম দুই আড়াই বছর হবার পর পানিতে ডুবে সেও মারা গেল। পরপর দুই ছেলের মৃত্যুতে তখন আমার মা অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। তারপর তিন বছরের মাথায় আবার পরের ছেলের জন্ম। তখন মা মানসিকভাবে আবার রিদ্ধ হতে থাকলেন। তখন তো আর পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপার ছিল না। তাই একে একে আমরা জন্ম নিতে থাকলাম দুই আড়াই বছর গ্যাপ দিয়ে। প্রথম দুই ভাই মারা যাবার পর জন্ম নিল একে একে দুই ছেলে আর তিন মেয়ে। তারপর আমার জন্ম পরপর তিন বোনের পরে। আমার পরে আবার একটা ভাই। তারপর একেবারে ছোট বোন। তারপর আবার পরপর দুই ভাই। ততোদিনে আমার বড় ভাই বিয়ে করেছেন। তার ঘরেও ছেলের জন্ম হয়েছে। তো আমার সেই ভাতিজা'র চেয়েও আমার একেবারে ছোট ভাইটা বছর খানেক ছোট। কিন্তু এক ঈদের দিনে সেই ভাইটাও ডায়রিয়ায় মারা গেল। আমার মা আবার সেই পুরানা মানসিক দুরাব্যাধিতে ভুগতে লাগলেন। ততোদিনে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার বড় তিনটা বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় দুই ভাই বিয়ে করেছেন। তাদের ছেলেমেয়ে হচ্ছে। আমাদের প্রচুর আত্মীয়স্বজন। যখনই বাড়িতে যাই, দেখতাম আমাদের বাড়িতে কোনো না কোনো পক্ষের মেহমান রয়েছে। আমার দাদু ভাইয়ের দুই বউ। বড় দাদী হল আমার বাবা'র মা। তার গর্ভে জন্ম নিল তিন ছেলে পাঁচ মেয়ে। আর ছোট দাদী'র গর্ভে জন্ম নিল এক ছেলে আর তিন মেয়ে। মানে আমার বাপ-চাচা-ফুফুরাও বারোজন। আমাদের বিশাল সংসার। একান্নবর্তী পরিবার। দাদুভাই মারা যাবার আগে সেই বিশাল সংসার ভাগ হল। কিন্তু ছোট দুই চাচা আলাদা হলেও আমার বাবা আর মেজো চাচা একত্রে থাকলেন। ততোদিনে ফুফুদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারাও বেড়াতে আসলে আমাদের ঘরেই ওঠেন। বাড়িতে আমাদের সব সময় দলবেধে ভাত খেতে হত। আর তিন চার পালায় দীর্ঘ সময় ধরে সেই খাবার খাওয়া চলতো। সারা বছর অনেকটা পিকনিকের মতো। একেবারে কম মানুষ বাড়িতে থাকলে সেই সংখ্যাও কুঁড়ির কম হবে না। তো আমার চারপাশে অসংখ্য কারেক্টার। আমি খেয়াল করলাম, প্রত্যেকটা ক্যারেক্টারের কিছু কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। আমার ভাইদের মধ্যে একমাত্র আমিই কালো, বাকিরা সবাই ফরসা। আবার আমার চেহারায় দাদুভাইয়ের চেহারার অনেক মিল। তাই ফুফুরা সবাই আমাকে বাবা ডাকতো। আমার আট ফুফু'র সবারও অনেক ছেলেমেয়ে। শুধুমাত্র নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যেই আমরা অনেকে সমবয়সি ছিলাম। যে কারণে দলবেধে অনেক জায়গায় ঘুরতাম। পরিবারের বাইরেও প্রচুর বন্ধুবান্ধব ছিল। আমি বড় হয়েছি গ্রামে। তাই মাধ্যমিক পর্যন্ত গ্রামের প্রায় সকল প্রান্ত দূরদূরান্ত আমার চলাফেরার আওতায় ছিল। দশগ্রামে নানান উৎসব পার্বনে দলবেধে প্রচুর অংশগ্রহন করেছি। সেই সব অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ খুব কাছ থেকে উৎসুকের মতো উপভোগ করতাম। আমাদের গ্রামে এখনো ইলেকট্রিসিটি যায়নি। এখন বাজার পর্যন্ত গেছে। তো, কেবল রেডিও ছিল বিনোদনের মাধ্যম। এছাড়া আমরা পালিয়ে পালিয়ে তাস খেলতাম। ফুটবল ছিল প্রধান খেলা। নৌকাবাইচ, পুতুলনাচ, যাত্রা, গরুর লড়াই, হাডুডু খেলা, ফুটবল খেলা, মোরগ লড়াই, আর স্কুলের নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। মোটকথা, গ্রাম-বাংলার সকল আচারে-বিচারে, আড়ংয়ে, লাঠিখেলায়, ঈদে-পূজায় বিক্ষিপ্ত ঘোরাঘুরি ছিল একেবারেই মামুলি ব্যাপার। পড়াশুনার কাজটি ঠেক রেখে এগুলোতে অবাধে যাতায়াত করার সুযোগ ছিল। আরেকটা মজার জিনিস ছিল যে, প্রায় বছর বলেশ্বরের নৌকাবাইচের দিন আমি দলছুট হয়ে নদীর ওপার চলে যেতাম। আর সন্ধ্যায় যখন মেলা ভাঙতো তখন আমি ভুলে যেতাম যে, আমি নদীর ওপারে। তো, লোকজনের সাথে অন্ধকার পথে হাঁটতে হাঁটতে একসময় বুঝতাম আমি হারিয়ে গেছি। ওদিকে বাড়িতে অন্যদের সাথে না পৌঁছানোতে বাড়ির সবাই আমাকে তল্লাশি শুরু করতো। পরদিন বা তার পরের দিন আমাকে পাওয়া যেতো নানান তল্লাশি চালানোর পর। বাড়িতে আসার পর কিছু উত্তম-মধ্যম অবশ্য পিঠে পড়তো। কিন্তু সেই হারানোর ব্যাপারটা আমি খুব এনজয় করতাম। এক অন্যরকম অনুভূতি হত। আমি হারিয়ে গেছি, কোন গ্রামে গেছি, কিছুই জানি না। বাড়িঘরের পরিচয় দিয়ে, লোকজনের সহায়তায় পরে বাড়ি ফেরা। আমার এই হারানোর অভ্যাসটার কারণে পরে অনেক উৎসবে আমার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হত। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, উৎসবের দিন কারো সেই কথা মনে থাকতো না। আর আমি ঠিকই হারিয়ে যেতাম। তখন স্কুলের বইয়ের বাইরে গল্পের বই পড়ার কোনো সুবিধা ছিল না। লুকিয়ে লুকিয়ে দুই-চারটা বই পড়তাম। তাও শরৎচন্দ্র, নিহাররঞ্জন, বিমল মিত্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের কিছু বই। বড়দের পড়ার টেবিলে এ ধরেনর বই কিছু পাওয়া যেতো। আমাদের পাঠ্যবইয়ের সাথে চয়নিকা নামে একটা গল্পের বই ছিল ঐচ্ছিক। ওটা পড়তেই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো। আমি উপরের ক্লাসের চয়নিকা বইও অ্যাডভান্স পড়ে ফেলতাম। কলেজে গেলাম মফস্বল শহরে। কলেজে ওঠার পর কিছু কিছু গল্পের বই আর উপন্যাস পড়ার সুযোগ হল। কলেজের পাঠাগারের প্রায় সব বই আমি পড়ে ফেলেছি। আমি ক্লাস কামাই দিয়ে লুকিয়ে সেই বই পড়তাম। পড়ায় আমার খুব নেশা ছিল। সেটা এখনো আছে। বাদামের ঠোঙ্গায় কি লেখা আছে, কালিজিরার প্যাকেটে কি লেখা আছে, বাজার থেকে কাগজের যতো ঠোঙ্গা আসতো তা সব আমি খুটিয়ে খুটিয়ে পড়তাম। আমার ওসব পড়তে ভালো লাগতো। তখনো জানতাম না যে, আমি বড় হয়ে লেখক হব। স্কুলের পরীক্ষায় প্রায় প্রতি বছর একটা রচনা আসতো- 'তোমার জীবনের লক্ষ্য'। ওটা আমি যতোবার লিখেছি, ততোবার উল্টাপাল্টা কিছু একটা বানিয়ে বানিয়ে লিখেছি। স্যার কিন্তু নম্বর দিতেন। অন্যদের চেয়ে নতুনত্বের কারণে ভালো নম্বরই পেতাম। একবার লিখলাম, বড় হলে আমি বিপদভঞ্জনের কির্তনের দলের ঢোলক হব। আমাদের গ্রামের বিপদভঞ্জনের একটা কির্তনের দল ছিল। প্রতি বছরই হরিসভার কির্তনের সময় বিপদভঞ্জনের দল গান গাইতো। আমার সেই গান ভারী ভালো লাগতো। তো, পরীক্ষার খাতায় ঢোলক হবার কথা লিখে নম্বর পেয়ে একটু চমকে গেলাম। আবার সাহসও পেলাম। মনে মনে অবশ্য একটা রিক্স নিয়েছিলাম। কারণ, অন্য ছাত্ররা কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ শিক্ষক ইত্যাদি লিখছে। আমার কপালে হয়তো বেতের বারি আছে, এ ধরনের আতংকে থাকতাম। কিন্তু রেজাল্টের সময় ভালো নম্বর পাওয়ায় সেই দুঃসাহস পরবর্তী সময়ে আরো বেড়ে গেল। আমাদের স্কুল থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ আর ১৬ ডিসেম্বরে তিনটি ম্যাগাজিন বের হত। সেখানে কেউ কবিতা, কেউ গল্প, কেউ প্রবন্ধ লিখত। তো, সেখানে আমি 'শেয়াল' নিয়ে এক গল্প লিখে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। কলেজে ওঠার পর সেই লেখালেখি আরো বেড়ে গেল। আমার বড় ভাই একটু আধতু কবিতা লিখতেন। তার লেখার ডায়েরি ছিল। আমি চুরি করে সেই কবিতা পড়তাম। আর সেই একই কবিতা আবার নিজের মতো করে নিজের খাতায় লিখতাম। উভয় কবিতার থিম এক হলেও আমার শব্দ ব্যবহার ছিল আলাদা। একবার ধরা খেয়ে বড় ভাইয়ের কাছে বেদম মার খেয়েছিলাম। কারণ, সেটা ছিল তার প্রেমের কবিতা। প্রেমটা ছিল অনেকটা ওপেন সিক্রেট। আমি সেই ঘটনায় নাক গলানোতে ওই মার খেতে হয়েছিল। তারপর লিখতাম লুকিয়ে। হয়তো অংক খাতার মধ্যে দুই পৃষ্ঠা ফাঁকা রেখে দিতাম। সেখানে পরে গল্প লিখতাম। আমার বড় ভাইয়ের অভ্যাস ছিল, আমার সব খাতা চেক করা। খাতা চেকের আগে লুকিয়ে সেই পাতা ছিড়ে অন্য কোথাও গুজে রাখতাম। আবার ধরাও খেতাম। তো, কলেজ শেষ করে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলাম, নগরে আসলাম, রাজধানীতে আসলাম, তখন আমারে আর পায় কে? আমার লেখার খাতা তখন আর বাড়িতে নিতাম না। এভাবে লেখালেখিতে হাত পেকে গেল। প্রথম দিকে কবিতা লিখতাম। সেগুলো ঠিক কবিতা হত না। অনেকটা ছড়ার মত ছন্দ্ব মিলিয়ে লেখার চেষ্টা আরকি। আমাদের গ্রামে রনজিৎ রায় নামে একজন লোক ছিলেন, অনেক ভালো কবিতা লিখতেন। তার লেখা কবিতা পড়ে আমি স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুরস্কারও পেয়েছিলাম। তো আমার কবিতাগুলো মাঝে মাঝে সেই দাদাকে দেখাতাম। দাদা অনেক শব্দ ঠিক করে দিতেন। কেন সেটা কবিতা হচ্ছে না, তা বুঝিয়ে দিতেন। রনজিৎ দা'র শখ ছিল বিমান বানানোর। যে কারণে তাকে আমার খুব ভালো লাগতো। রনজিৎ দা, বাঁশ, সুতা আর সিমেন্টের বস্তার কাগজ দিয়ে বড় সাইজের বিমানের মতো দেখতে ঘুড়ি বানালেন। সেই ঘুড়ি আকাশে ওড়ানোর পর নাটাই গাছের সঙ্গে বেধে রাখতে হত। নইলে ছোটদের উড়িয়ে নিয়ে যেতো। রনজিৎ দা'র সেই ঘুড়িতে আমরা ছোটবেলায় অনেক উড়েছি। ভারী মজা লাগতো সেইসব কর্মকাণ্ড। রনজিৎ দা দূরের কোনো এক স্কুলের প্রাইমারির শিক্ষক ছিলেন। অবসরে তিনি এসব করতেন। তার এই সব কাজ আমার খুব ভালো লাগতো। রনজিৎ দা খুব ভালো ছবি আঁকতেন। আমাদের প্রায় সবার ছবি তিনি সেই ছোটবেলায় এঁকেছিলেন। তো, একবার আমি রনজিৎ দাকে আমার গল্পের নায়ক বানিয়ে একটা গল্প লিখলাম। নাম পাল্টে দিয়েছিলাম। পড়ার পর সবাই বললো, এই গল্পের সঙ্গে তো রনজিৎ মাস্টারের অনেক কিছু মিল আছে। শুধু একটা ছাড়া। সেটা কি? আমি গল্পের নায়ককে দেখিয়েছিলাম, সে শুধু জল খেয়ে বাঁচে। আর অমাবস্যা-পূর্ণিমায় সে হারিয়ে যায়। তখন পৃথিবীর কোথাও তাকে পাওয়া যায় না। সে তার বানানো বিমানে করে ওই সময় ঘুরতে যায় অন্য গ্রহে। তো, রনজিৎ দা আমার সেই গল্পটির খবর শুনে আমাকে ডেকে বললেন, তোমার গল্পটি কাকে নিয়ে লেখা? বললাম, আপনাকে নিয়ে। তো, দাদা বললো, তুমি কবিতা না লিখে গল্প লেখার চেষ্টা কর। তোমার গল্প খুব ভালো হয়। প্রথম দিকের গল্প লিখতাম গল্প না বুঝেই। কিন্তু সেই গল্পে নতুন কিছু তাজ্জ্বব ব্যাপার থাকতো। পরে ধীরে ধীরে সেটা আরো শক্ত করেছি। আমার গল্পের চরিত্ররা একটু ভিন্ন টাইপের। হয়তো আমাদের গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ভিক্ষুক মহিলা, যিনি রোজ আমার মায়ের কাছে আসতেন। গল্প করতেন। খেতেন। যাবার সময় কিছু চাল-ডাল-পিঁয়াজ নিয়ে যেতেন। যা আমি খুটিনাটি খেয়াল করতাম। তো, সেই মহিলা আমার গল্পে চরিত্র হয়ে হাজির হতো। কিংম্বা ব্যতিক্রমি কোনো চরিত্র, যার সাথে অন্যদের খুব একটা মিল নেই, সে হতো আমার গল্পের চরিত্র। আমার প্রথম গল্পের বই 'বুনো বলেশ্বরী'তে নয়টি গল্প আছে। একটা গল্প মহাজাগতিক নিয়ে। সেখানে মৃত চরিত্ররা কথা বলে। জীবিত কেউ কথা বলে না। একটা গল্প আছে জেলখানা নিয়ে। সেখানে জেলের সর্দার কিভাবে জেলে বসে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন, তা বলা হয়। একটা গল্প আছে একজন কবিরাজকে নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যিনি ছিলেন কলকাতায়। তো, সবাই যখন এপার থেকে পালিয়ে ওপারে যাচ্ছিলেন, সেই কবিরাজ তখন তার এক শিক্ষক বন্ধু'র মেয়েকে নিয়ে এপারে আসেন। ওই মেয়েটি তার বাবার চিতা দেখতে চেয়েছিল। আমার দ্বিতীয় গল্পের বই 'সোনার কংকাল'। সেখানেও নয়টি গল্প। 'সোনার কংকাল' গল্পটিতে একটা ছেলে তার মায়ের লাশ চুরি দিয়ে চুরি বিদ্যায় হাতেখড়ি হয়। আরেক গল্পে একজন লোককে ফাঁসি দেওয়ার কারণে নগরের তরুণ-তরুণি জুটিরা ২১ দিন পরপর দলবেধে সুইসাইট করে। আমার তৃতীয় গল্পের বই 'সাধুসংঘ'। সেখানেও নয়টি গল্প। এক গল্পে বিনা খরচে চাঁদে যাবার একটা ঘটনা আছে। আরেক গল্পে এক জিনের বাদশাহ কিভাবে মানুষের সম্পদ লুন্ঠন করে, সেই গল্প আছে। আমার চতুর্থ গল্পের বই 'ভূমিপুত্র'। সেখানে মোট সাতটি গল্প। একটি গল্প আছে সুনামি নিয়ে। চরিত্র ইন্দোনেশিয়ার। একটা আছে দুই পাগল নিয়ে। আমার গল্পে জাগতিক, মহাজাগতিক ব্যাপার স্যাপার থাকে। কিছু বাস্তব কিছু অবাস্তব ভৌতিক ব্যাপারও থাকে। কোথাও হয়তোে দেয়ালই একটা চরিত্র। আবার কোথাও হয়তো গাছ একটা চরিত্র। গল্পের প্রয়োজনে এসব বিষয় আমার অটোমেটিক চলে আসে। শিশুদের নিয়ে আমি প্রচুর শিশুতোষ গল্প লিখি। আমার এ পর্যন্ত তিনটি শিশুতোষ গল্পের বই বের হয়েছে। 'গপ্পো টপ্পো না সত্যি', ময়নার বয়স তোরা' আর 'বয়োঃসন্ধিকাল'। লেখার প্রস্তুতি'র কথা বললে সেটা আসলে প্রচুর পড়াশুনা আর ভ্রমণ। আমি যতো ঘুরতে পারি ততো বেশি আমার গল্পের চরিত্র পাই। আগে যা পেতাম তাই পড়তাম। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে বাছাই বই পড়া শুরু করি। এখন বা্ছাইয়ের বাইরে না পারলে পড়ি না। রবীন্দ্রনাথ, সুনীল, বুদ্ধদেব, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, মাক্সিম গোর্কি, খুশবন্ত সিং, এমিলি ব্রন্টি, ভার্জিনিয়া উলফ, গাব্রিয়েল মার্কেজ, সালমান রুশদি, এরিক মারিয়া রিমার্ক, রমা রলা, হুমায়ূন আজাদ, এরকম অনেকে আমার প্রিয় লেখক। আমি যখন এদের লেখা পড়ি, গল্পের ভেতরের গল্পটা বোঝার চেষ্টা করি। এদের লেখার টেকনিকটা আমি খুব প্রাণ দিয়ে ধরার চেষ্টা করি। শব্দ প্রয়োগ, বাক্য গঠন, ডায়লগ, শব্দের ব্যঞ্জনা, দ্যোতনা, তুলনা, প্রতিশব্দের ব্যবহার এগুলো খুব আমাকে টানে। আমি পড়ার সময় শুধু পড়ার কাজটি করিনা, প্রত্যেকটা লাইনের কারুকাজগুলো'র আমি খুটিনাটি খুব সচেতনভাবেই খেয়াল করি। আমার আরো কয়েকজন প্রিয় লেখকের নাম বলতে চাই। নতুবা মেন্টালি আমি স্বস্থি ফিল করছি না। তারা হলেন- জুল ভার্ন, আগাথা ক্রিস্টি, আফগান-আমেরিকান লেখক খালেদ হোসেইনী, মিলান কুন্ডেরা, জাপানি লেখক ওসামু দোজাই। এরা সবাই আমার খুব নমস্য লেখক। এদের লেখা পড়ার পর নিজেকে আর লেখক মনে হয় না। মনে হয় পাঠক। আফগান-আমেরিকান লেখক খালেদ হোসেইনী'র সঙ্গে আমার মাঝে মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে মত বিনিময় হয়। আমি খুব উপভোগ করি যে, এতো ব্যস্ত একজন লেখক, অথচ আমার সঙ্গে মত বিনিময় করেন। লেখার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার অভিজ্ঞতা। সেটা শব্দের প্রতি, বাক্য গঠনের প্রতি, তুলনা, রূপক সবক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য। এই কাজগুলো আমি বেশি বেশি পড়ার কারণে রপ্ত করতে পেরেছি। কোনো একটা গল্প লেখার আগে আমার মাথায় সেই গল্পের কোনো একটা ঘটনা খুব ঘুরপাক খায়। মাথায় দীর্ঘ সময় ধরে সেই ঘটনা ঘুরপাক খায়। মোটামুটি একটা ডিটেইল চিত্র মাথায় আসার পরেই আমি লেখা শুরু করি। লিখতে লিখতে সেই গল্পের বাকি অংশ অটোমেটিক এসে যায়। এটা অনেকটা নিজের মনের সাথে নিজের মনের তর্ক-বিতর্কের মতো। সেই বিতর্কে বিজয়ী পক্ষের সমর্থণ নিয়েই আমি লিখতে শুরু করি। আর আমার গল্প আমি লেখার পর বারবার পড়ি। প্রতিবার পড়ার ফাঁকে নতুন কিছু বিষয় যোগ হয়। এভাবে ধীরে ধীরে একটা গল্প, গল্প হয়ে ওঠে। কখনো হয়তো এক লাইন নোট করে রাখি। যে কোন ধরনের থিম। পরে হয়তো ওটা থেকে গল্পটা লেখার একটা সূত্র পাই। লেখার আগে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয় নিজের মনের সাথে নিজের। সেই বিতর্কের অবসান ঘটে লেখার মাধ্যমে। আমি নিজেও জানি না আমার লেখা গল্পগুলো ঠিক গল্প হয় কিনা। তবে আমার কাছের লেখক বন্ধুদের সঙ্গে আমি আমার গল্প নিয়ে প্রায়ই কথা বলি। তাদের পরামর্শটা মন দিয়ে শুনি। আমাকে কেউ ভিজিট করলে তাকে অন্তত আমার সদ্য লেখা গল্পটা শুনতে হয়। এটা প্রায় অবধারিত একটা ব্যাপার। গল্প শোনানোর পর তার মতামতকে আমি খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবি। আমার গল্পের প্রথম পাঠক আমি। আর অন্য পাঠকের মতামত আমি খুব গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করি। ১৯৯০ সাল থেকে প্রায় আমার খাবার যেমন নিজে রান্না করি, তেমনি রান্না করার সময় মাথায় আসা থিমটি নিয়ে আমি নানাভাবে এক্সপারিমেন্ট করি। আমার মনে হয় গল্প হল রান্না করার মত বিষয়। রান্নার মাল-মসলা, জিনিসপত্র যেমন প্রত্যেকটা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একটা একটু কমবেশি হলে রান্না করা খাবার আর স্বাদ হয় না। তেমনি গল্পের সব নারী নক্ষত্র ঠিকঠাক না হলে গল্প ঠিক আর গল্প হয়ে ওঠে না। আবার গল্প অনেকটা ফুটবল খেলার মত। মাঝ মাঠ থেকে বলে কিক দিয়ে হঠাৎ গোল হলেও সেটা গোল। কিন্তু সেই গোলে দর্শকরা তেমন একটা আনন্দ হয়তো পায় না বলেই আমার ধারণা। কিন্তু বলটি যখন অনেক খেলোয়ারের পা ঘুরে নানান কসরত করে জাদুর ভেলকি দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত গোল হয়, তখন সেটা থেকে দর্শক বেশি আনন্দ পায়। গল্প অনেকটা গোল করার মত ব্যাপার। গোলটা আমি কতো ভাবে ভেলকি দেখিয়ে কতো দক্ষতার সঙ্গে দৃষ্টিনন্দনের বদলে সেখানে মনের সৃজন মিলিয়ে করতে পারলাম সেটাই বড় কথা। গল্প আমি নিজের জন্য লিখি। লিখতে না পারলে মাথার মধ্যে ঝাঁঝাঁঝিঁঝিঁ করে। লেখা শেষ হলেই রিলিফ পাই। পাঠকের জন্য তো অবশ্যই। গল্প লেখার পর তা যখন একজন পাঠক হিসেবে আমি প্রথম পড়ি, তখন ধরে নেই এটা অন্য এক ব্যক্তির লেখা। তখন আমি এডিটরের দায়িত্ব পালন করি। একটু কাটছাট করি। বাক্য শব্দ পরিবর্তন করি। গল্পটাকে গল্প হয়ে ওঠায় সাহায্য করি। গল্প লেখা শেষে যতোবার সেটি পড়ি, ততোবার এই কাজটি আমি করি। কিন্তু লেখার সময় মোটেও খবরদারিটা করি না। সেটা করতে গেলে তার ছিড়ে যায়। লেখার মুডটা নষ্ট হয়ে যায়। গল্পের চরিত্রগুলোর যা যা করার কথা তা ঠিক ঠাক করলো কিনা তা যাচাই বাছাই করি। নিজের গল্পের নিজে পাঠক ও এডিটর হিসেবে কাজটি শেষ করার পর সাধারণ পাঠকের জন্য তা উন্মুক্ত করি। যে গল্প আমি এখনো লিখিনি, ভবিষ্যতে লিখব বলে ঠিক করেছি বা মাথায় সেই গল্পের প্লট ঘুরপাক খাচ্ছে, তা আমি কারোর সাথেই শেয়ার করি না। এটা আমার নিজের সঙ্গে নিজের এক ধরনের খেলার মত। এটা একান্তই আমার। লেখা শেষে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করি, এডিট করার পর। আমি যখন রি-রাইট করি, তখনো অনেক গল্পের অনেক জায়গায় অনেক পরিবর্তন করি। তখন পাঠকের পরামর্শকে কিছু কাজ করার মনে করলে, করি। এখন লিখছি একটা ত্রিলজি। একই চরিত্র নিয়ে তিনটি উপন্যাস। বসনিয়ার যুদ্ধের উপর এই উপন্যাস। অনেকটা ঐতিহাসিক উপন্যাস হবে হয়তো। আমার বউ বসনিয়ার নাগরিক। বসনিয়ার যুদ্ধটা সে ফেস করেছে। সেই অভিজ্ঞতা আমি যা শুনেছি এবং ইতিহাস ও আমার পড়াশুনা মিলিয়ে এটা করতে চেষ্টা করছি। আমার বউয়ের বাবা আবার নেপালি নাগরিক। তো, তিন দেশ বসনিয়া, নেপাল ও বাংলাদেশ এই উপন্যাসে ঠাই পাবে। তাছাড়া আমার বউয়ের বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে। সেগুলো থেকে মজার মজার ঘটনা হয়তো এখানে থাকবে। এখনো জানি না ঠিক কিভাবে থাকবে। তবে নানাভাবে আমি সেগুলো এক্সপারিমেন্ট করার চেষ্টা করব। আগামীতে কি লিখব জানি না। বেঁচে থাকার উপর লেখা চলবে। জীবনের অন্য কাজগুলো বাদ দিয়ে তো আর শুধু লেখা চলে না। সে কাজগুলোর পাশাপাশি যতোটুকু লেখা যায়, লিখব। একটা শিশুতোষ ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লিখছি। এটা দিয়ে ফিল্ম বানাবো। প্রায় ১৫ বছর আমি নানা বিষয়ে গবেষণা করেছি। বাংলাদেশের ৫৯ টা জেলা তন্ন তন্ন করে ঘুরেছি। তারপর প্রায় ৫ বছর ফিল্মের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত। তাই ফিল্ম বানানো একটা কাজের মধ্যে পড়ে। আমি শিশুদের জন্য ফিল্ম বানাবো। তবে গল্পের সঙ্গে আমার জীবনের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলবে। এটুকু বলতে পারি। গল্প লিখব। যতো ধরনের গল্প মাথায় আছে সব লিখব, এটুকু বলতে পারি। আমার প্রথম উপন্যাস 'মা' বের হয়েছে ২০১২ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। আরেকটা সমালোচনা গ্রন্থ 'শূন্য দশমিক শূন্য' বের হয়েছে ২০১১ সালে। এছাড়া একটি উপন্যাস এখন প্রায় শেষের পথে। আগামী বইমেলায় হয়তো এটি প্রকাশ পাবে। তাছাড়া একটি প্রবন্ধের বই আগামী বইমেলায় প্রকাশ পাবে। ২৫-৩০ জন প্রয়াত ব্যক্তিকে নিয়ে। আর গল্পের বই তো অবশ্যই একটা থাকবে আগামী বইমেলায়। এইটুকু আপাতত আপডেট। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৩ | false |
mk | ২১ আগস্টের ভয়াল স্মৃতি ___ আমাদের সুন্দর জীবনটাই হারিয়ে গেছে। ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও কষ্টের তীব্রতা এতটুকুও কমেনি। গ্রেনেডের ঘাতক স্পিøন্টারের সঙ্গেই আমাদের নিত্য বসবাস। বিভীষিকাময় সেই ভয়াল দিনটির কথা মনে হলে এখনও মৃত্যু যেন হাতছানি দেয়। ভয়াল ঘটনাটির নারকীয় স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় সবসময়। তখন জীবনযন্ত্রণা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আরও শক্ত করে। হিংস্র শ্বাপদের ভয়ঙ্কর ছোবল থেকে প্রাণটা বাঁচলেও মরণঘাতী গ্রেনেডের স্পিøন্টারের যন্ত্রণাদগ্ধ অভিশাপ নিয়েই চলছে রাজনৈতিক জীবন। আমৃত্যু আমাদের এই জীবনযন্ত্রণা ভোগ করেই পথ চলতে হবে।২১ আগস্ট সেই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রাশিদা আক্তার রুমাসহ জীবন্মৃত হয়ে ৯ বছর ধরেই পথচলা আহত নেতাকর্মীরা এভাবেই তাঁদের প্রতিদিনের যন্ত্রণাদগ্ধ জীবনের কথা তুলে ধরেন।মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের সেই ভয়ঙ্কর-বিভীষিকাময় রক্তাক্ত ২১ আগস্ট আজ। বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার নবম বার্ষিকী। সভ্যজগতের অকল্পনীয় এক নারকীয় হত্যাকা- চালানো হয় ২০০৪ সালের এই দিনে। গ্রেনেডের হিংস্র দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। রক্ত-ঝড়ের প্রচ-তায় মলিন হয়ে গিয়েছিল বাংলা ও বাঙালীর মুখ। জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ এদিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে।শোকাবহ-রক্তাক্ত আগস্ট মাসেই আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর টার্গেট থেকে ঘাতক হায়েনার দল গ্রেনেড দিয়ে রক্তস্রোতের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশস্থলে। টার্গেট ছিল এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নেতৃত্বশূন্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতেই ঘাতকরা চালায় এই দানবীয় হত্যাযজ্ঞ। জাতির সামনে আবারও স্পষ্ট হয়ে ওঠে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধস্পৃহা। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সময়ই খোদ রাজধানীতে প্রকাশ্যে চালানো হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত মারণাস্ত্র গ্রেনেড দিয়ে এই ভয়াল ও বীভৎস হামলা। ওই সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকেই যে এই নারকীয় হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, তা তদন্তের মাধ্যমে জাতির সামনে আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে।হিংস্র শ্বাপদের ভয়াল ছোবলে সেদিন মানবঢাল রচনা করে নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা করতে পারলেও ওই নৃশংস হামলায় ঝড়ে পড়েছিল বেগম আইভি রহমানসহ ২৪টি তরতাজা প্রাণ। আহত হওয়া পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর অনেকেই ঘাতক গ্রেনেডের স্পিøন্টারের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়েই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। হাত-পা-চোখসহ দেশের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গুত্ববরণ করে জীবনধারণ করছে। ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ হানিফ মাথায় বিঁধে থাকা স্পিøন্টারের জীবনযন্ত্রণা ভোগ করেই শেষ মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়েছেন।গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতে সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল ঘাতকচক্র। ঘাতকের গ্রেনেড হামলায় রীতিমতো রক্তগঙ্গা বইয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের প্রাঙ্গণ। সন্ত্রাসবিরোধী আওয়ামী লীগের শান্তির সমাবেশকে ঘিরে কোলাহলপূর্ণ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল বীভৎস মৃত্যুপুরীতে। সুপরিকল্পিত ও ঘৃণ্য এই গ্রেনেড হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত ও শোকাবহ আগস্টে আরেকটি ১৫ আগস্ট সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছিল পরাজিত ঘাতকচক্র। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে হায়েনাদের হামলার ধরনও ছিল রক্তাক্ত ১৫ আগস্টের মতোই।ভয়াল সেই হামলায় মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে বেঁচে গেলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হারিয়েছেন তাঁর দু’কানের স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি। সেদিনের গ্রেনেড হামলায় আহত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকেও ওইদিন তাঁর প্রিয়পতœী আইভি রহমানকে হারানোর শোক নিয়েই এ পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়েছে না ফেরার দেশে। আহত পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী দেহে স্পিøন্টার নিয়ে, হাত-পা-চোখ হারিয়ে জীবন্মৃত অবস্থায় অভিশপ্ত জীবন কাটাচ্ছেন। অসংখ্য নেতাকর্মীকে চিরদিনের জন্য বরণ করতে হয়েছে পঙ্গুত্ব, অন্ধত্ব। বীভৎস ওই হামলার ঘটনায় দেশে-বিদেশে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করলেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং আলামত নষ্ট করার নানা চক্রান্ত প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী।তবে এই ভয়াল ও নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তা সময়ের ব্যবধানে দেশবাসীর সামনে প্রকাশ পেয়েছে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ওই বীভৎস হামলার সঙ্গে জড়িত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ উগ্র জঙ্গীবাদের সশস্ত্র ক্যাডাররা। এই ভয়াল গ্রেনেড হামলা ৯ম বার্ষিকীতে নিহতদের পরিবার ও আহতরা দ্রুত এই কাপুরুষোচিত হামলার নায়ক ও নেপথ্যের মদদদাতাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।এই লোমহর্ষক গ্রেনেড হামলার ঘটনা ধামাচাপা, ভিন্ন খাতে প্রবাহিত ও আলামত নষ্টসহ হেন কোন কাজ নেই যা করে যায়নি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। হাওয়া ভবনে বসে তখন জজ মিয়ার নাটক সাজানোর ঘটনা এখন দেশবাসীর মুখে মুখে। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে ২১ আগস্ট মামলা অধিকতর তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এই হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের উৎসের সন্ধান পেয়েছে তারা। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অনেক রাঘববোয়ালদের জড়িত থাকার প্রমাণও তাদের হাতে।নারকীয় এই গ্রেনেড হামলার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন ঘাতকচক্রের বিচার হয়নি। এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইতোপূর্বে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু এবং ঢাকা সিটি ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফকে গ্রেফতার করে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ৭ বছর ও অধিকতর তদন্তের আদেশ হওয়ার প্রায় ২ বছর পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়। সম্পূরক এ চার্জশিট দাখিল করতে দুই বছরে ১৪ দফা সময় নেয়া হয়।এরপর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আকন্দ পরবর্তীতে তদন্ত করেন। তিনি একই বছরের ৩ জুলাই গ্রেনেড হামলার হত্যা ও বিস্ফোরকের পৃথক দুই মামলায় সিআইডির সম্পূরক অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। নতুন সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানসহ নতুন ৩০ জনকে আসামি করা হয়। সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের সময় মোট ১৮ জন পলাতক ছিলেন। পরে ৬ পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে গেলে পলাতক আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ জনে।ফ্লাশব্যাক : ২১ আগস্ট ২০০৪ ॥২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। সেদিনটি ছিল শনিবার। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাজার হাজার মানুষের স্রোত সমাবেশটিতে। সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল হওয়ার কথা। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শেষে শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। বক্তব্যও শেষ করে ফেলেন।সময় তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগুতে থাকলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। মুহূর্তেই শুরু হলো নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক গ্রেনেড। আর জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে। শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে খই ফোটার মতো একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৩টি গ্রেনেড হামলার বীভৎসতায় মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। রক্তগঙ্গা বইয়ে যায় এলাকাজুড়ে।ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল শেখ হাসিনা। পরিস্থিতির তাৎপর্য বুঝতে ট্রাকে অবস্থানরত নেতৃবৃন্দ ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মানবঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যাকে। নেতা ও দেহরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও পরম করুণাময়ের অশেষ রহমতে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।আরেকটি রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট ঘটাতে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি ১৩টি গ্রেনেড মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা; গ্রেনেডের আঘাতে পরাস্ত করতে না পেরে ওইদিন শেখ হাসিনার গাড়িতে ঘাতকরা ছুঁড়েছিল বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি। একেবারে পরিকল্পিত ও টার্গেট করা ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গুলি ভেদ করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাচ। কিন্তু ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত বুলেট থেকে শেখ হাসিনাকে রক্ষায় বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব) মাহবুবুর রশীদ।পরিকল্পিত হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে শেখ হাসিনা ফিরে এলেও ওইদিন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এই ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলার পর সেদিন স্পিøন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন শত শত মানুষ। আকস্মিক মৃত্যু আর রক্তস্রোতে ল-ভ- শান্তিপ্রিয় অসংখ্য মানুষের হাত-পা সহ মানবদেহের বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। কারও হাত নেই, কারও পা উড়ে গেছে। রক্তে ভিজে লাল হয়ে যায় পিচঢালা কালো পথ। অস্থায়ী সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে রক্তের অনাহূত আল্পনা, শত শত মানুষের আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার জন্য, প্রাণ বাঁচানোর জন্য মুমূর্ষুদের আকৃতি, কাতর আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য।যাঁরা নিহত হন ॥২১ আগস্টের সেই রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সবমিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। নারী নেত্রী আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে একই বছরের ২৪ আগস্ট মারা যান। আহত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহত অন্যরা হলেন শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব) মাহবুবুর রহমান, হাসিনা মমতাজ, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (সবার প্রিয় আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম।রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ॥রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে এক বাণীতে বলেন, হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে দেশ ও জাতির ইতিহাসে এরকম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে বিপন্ন করার জন্য প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এখনও সক্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ ও ঐক্য গড়ে তুলতে হবেপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি কলঙ্কময় দিন। এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়নের ধারাকে স্তব্ধ করে দেয়া। হত্যা, ষড়যন্ত্র, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিসাত করে বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করা। তিনি বলেন, সত্যকে কখনো ধামাচাপা দেয়া যায় না। তাই আজ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেক কুশীলব এই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কোন ভবনে বসে কারা এই হামলার নীলনক্সা করেছিল তা স্পষ্ট হয়েছে। আমি আশা করি, ২১ আগস্টের হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা এবং তাদের মদদদাতাদের সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের চির অবসান হবে। আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।কর্মসূচিভয়াল-বীভৎস ২১ আগস্ট পালনে নেয়া হয়েছে বিস্তারিত কর্মসূচী। হামলারস্থল আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বসানো হয়েছে সকল শহীদের প্রতিকৃতি দিয়ে তৈরি অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ। সেদিনের সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বড় বড় আলোকচিত্র লাগানো হয়েছে পুরো এলাকায়। বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউসহ আশপাশের এলাকায় নেয়া হয়েছে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।আওয়ামী লীগের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলাস্থলে ২১ আগস্টের শহীদদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এবং সেখানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রীর যোগদান।স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সহযোগী সংগঠন গ্রেনেড হামলাস্থল আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হামলার সময়কে স্মরণ করে বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে অস্থায়ী বেদির সামনে দুই মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন ও মোমবাতি প্রজ্বলন করবে।দলের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য দল ও সহযোগী সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। | false |
mk | দেশের বিশাল অর্জন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে নতুন উচ্চতায় পেঁৗছেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশের এ অর্জন বিশাল। এর ফলে সারা পৃথিবী এখন বাংলাদেশকে নতুনভাবে চিনবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন। কর্মসংস্থান বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে। আন্তর্জাতিক ঋণ গ্রহণে বাংলাদেশকে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকির দেশ বিবেচনা করা হবে। একদা যে বাংলাদেশকে 'তলাবিহীন ঝুড়ি' বলা হতো, সেই বাংলাদেশের ঝুড়ি পরিপূর্ণ হতে চলেছে।বিশ্বব্যাংকের হালনাগাদ তালিকায় বাংলাদেশের নিম্ন মধ্যম আয়ের ধাপে পেঁৗছানোর খবর প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল সারাদিনই তা ছিল মানুষের মুখে মুখে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় অর্জন। বাংলাদেশের জন্য গৌরবময় এ অর্জনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মধ্যম আয়ের দেশ হতে বাংলাদেশের ২০২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যে পেঁৗছাবে।বাংলাদেশ 'নিম্ন'তে থাকতে চায় না। সব সময় 'উচ্চ'তে উঠতে চায়। বিশ্বব্যাংক বলেছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে ধারাবাহিক উন্নতির কারণে বাংলাদেশ এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।বিশ্বব্যাংক বুধবার রাতে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে দেশের হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করে। সংস্থাটি গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশের পাশাপাশি কেনিয়া, মিয়ানমার ও তাজিকিস্তান এবার নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বিশ্বব্যাংক দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছে_ একটি হচ্ছে নিম্ন মধ্যম আয়ের, অন্যটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশ এখন থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত হবে। প্রতিবছর ১ জুলাই বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে মাথাপিছু আয় অনুসারে দেশগুলোকে চারটি আয় গ্রুপে ভাগ করে। যাদের মাথাপিছু জাতীয় আয় এক হাজার ৪৫ ডলার বা তার নিচে, তারা নিম্ন আয়ের দেশ। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে এ তালিকাতেই ছিল। বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮০ ডলার, যা ২০১৩ সালে ছিল এক হাজার ১০ ডলার। অবশ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এক হাজার ৩১০ ডলার।প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের এ স্বীকৃতি মর্যাদার। এটি বড় অর্জন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, একসময় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে দরিদ্র দেশের মডেল বলত। এখন তারাই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের স্বীকৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের ঋণমান বেড়ে যাবে। আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ঋণপত্র আরও গ্রহণযোগ্য হবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। এফবিসিসিআইর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ সমকালকে বলেছেন, বাংলাদেশের এই স্বীকৃতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করবে। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ২০২১ সাল নাগাদ দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।অর্থনীতিবিদরা যা বলেন :নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ কী কী সুবিধা পাবে_ জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, এটি একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে এগিয়ে যাচ্ছে, এই উত্তরণ তারই প্রমাণ। এর ফলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা যাবে। বিনিয়োগকারীরা আগের তুলনায় আস্থা পাবেন। আন্তর্জাতিক ঋণদাতারা বাংলাদেশকে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকির দেশ মনে করবেন। তবে বাংলাদেশের এই অর্জন নিয়ে খুব বেশি আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সামনের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনেক কম সুদে এবং অপেক্ষাকৃত সহজ শর্তে ঋণ পায়। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঋণ দেয় এর অঙ্গ সংস্থা আইডিএ। আইডিএর ঋণ পায় এক হাজার ২১৫ ডলার মাথাপিছু আয়ের নিচে থাকা দেশ। সে হিসেবে এখনই বাংলাদেশ আইডিএ ঋণের বাইরে যাবে না। আরও কয়েক বছর পরে হয়তো বাংলাদেশ আইডিএ ঋণ পাবে না। বাংলাদেশকে এ বিষয়টি মাথায় রেখে এগোতে হবে। বাংলাদেশ আগামী তিন বছরের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে বিভিন্ন উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশে পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্তসহ অগ্রাধিকারমূলক যে বাজার সুবিধা রয়েছে, তার বেশিরভাগই থাকবে না। সুতরাং উচ্চ মধ্যম আয় এবং উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে এখন থেকে ওই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন।গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের নিচের শ্রেণীতে স্থান পেয়েছে। এর কারণ, গত ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রবৃদ্ধি মোটামুটিভাবে ৬ শতাংশের ঘরে আছে। পর পর তিন বছর অর্থনীতিতে ধারাবাহিক সাফল্য এসেছে। এর ফলে বাংলাদেশ প্রত্যাশিত সময়ের আগেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ উন্নীত হয়েছে। পাকিস্তান, নাইজেরিয়াও এই গ্রুপে রয়েছে। কিন্তু তারা এখনও দারিদ্র্য ও সংঘাতের মধ্যে আছে। ভারত ও শ্রীলংকার মতো দেশ এখনও নিম্ন মধ্যম আয়ের গ্রুপে। অনেক দেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে আটকে গেছে। ১৯৬০ সালে এই শ্রেণীতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে মাত্র ১৬টি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ মাত্র এই শ্রেণীতে ঢুকল। বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো_ অগ্রগতি চলমান রাখা, মানুষের প্রত্যাশা মেটানো এবং সমাজে বৈষম্য কমিয়ে আনা। বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের ক্যাটাগরিতে সম্মানজনক অবস্থায় পেঁৗছাতে হলে শিক্ষা, সুশাসন, অবকাঠামো, সরকারি সেবা প্রভৃতির উন্নতিতে এ-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক সংস্কার দরকার।অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া :মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে মর্যাদা পেলেও বিশ্ববাণিজ্যে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশের সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংকের এ স্বীকৃতি মর্যাদার। তবে উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেবে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের বোর্ডসভায় এটি অনুমোদিত হতে হবে। এ জন্য আরও তিন-চার বছর অপেক্ষা করতে হবে। গতকাল সচিবালয়ে সফররত ভুটানের অর্থমন্ত্রী লিয়ন পো ন্যামগে দরজির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ৪০ বছরে নিম্ন আয়ের দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। এখান থেকে বেরিয়ে আসাটা এক ধরনের প্রমোশন। এটি বড় অর্জন, বাংলাদেশের জন্য গরিমার। তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংককে আমরা কিছু বলি নাই। তারা নিজে থেকেই স্বীকৃতি দিয়েছে। সে জন্য খুশি লাগছে।'বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বব্যাংকের এ ঘোষণা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রথম ধাপ। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়। ২০২১ সালের আগেই হবে। স্বাধীনতার পরে অনেকে অনেক রকম মন্তব্য করেছিলেন উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাংক বলেছিল, বাংলাদেশ একটা দরিদ্র দেশের মডেল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশ একটা তলাবিহীন ঝুড়ি। এখন তারাই বলছে, বাংলাদেশ একটি উদাহরণ। আবার সবাইকে অবাক করে সেই বিশ্বব্যাংকই বলেছে, বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, একসময় বিদেশের সাহায্যনির্ভর দেশ বলা হতো। এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ; খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। এখন দেশের অর্জিত সম্পদ, রেমিট্যান্স ও রফতানি একসঙ্গে যোগ করলে আমদানির কাছাকাছি। বাংলাদেশের বাজেট এখন প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা।উপরে উঠেছে ১০ দেশ :বাংলাদেশের পাশাপাশি কেনিয়া, মিয়ানমার ও তাজিকিস্তান এবার নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। মঙ্গোলিয়া ও প্যারাগুয়ে নিম্ন থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে উঠেছে। আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি, সিসিলি ও ভেনিজুয়েলা উচ্চ মধ্যম থেকে উচ্চ আয়ের দেশের কাতারে ঢুকেছে। গৃহযুদ্ধের কারণে দক্ষিণ সুদান নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে নেমে নিম্ন আয়ের তালিকায় চলে গেছে। সবচেয়ে মাথাপিছু আয় বেশি ইউরোপের মোনাকোর, যার পরিমাণ এক লাখ ডলারের বেশি। যা সবচেয়ে কম মাথাপিছু আয়ের দেশ মালয়ের (২৫০ ডলার) চেয়ে ৪০০ গুণ বেশি। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ এতদিন ছিল নিম্ন আয়ের দেশ। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ মানদণ্ড অনুযায়ী, মাথাপিছু আয় এক হাজার ৪৫ ডলার পর্যন্ত নিম্ন আয়ের দেশ। আর এক হাজার ৪৬ থেকে চার হাজার ১২৫ ডলার পর্যন্ত নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। উচ্চ মধ্যম আয়ের সীমা হলো চার হাজার ১২৬ থেকে ১২ হাজার ৭৩৫ ডলার। উচ্চ আয়ের দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার। মোট জাতীয় আয় হলো একটি দেশের সব জনগণের (প্রবাসীসহ) আয়। মোট জাতীয় আয়কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে মাথাপিছু আয় বের করা হয়। বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতি এবং বিনিময় হার বিবেচনায় নিয়ে 'এটলাস' পদ্ধতিতে প্রতিটি দেশের মাথাপিছু আয় হিসাব করে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে নেপাল, আফগানিস্তানসহ ৩১টি দেশ নিম্ন আয়ের তালিকায়। নিম্ন মধ্যম আয়ের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ ৪৮টি দেশ। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের সংখ্যা ৫৪টি। আর উন্নত দেশ হয়েছে ৭৮টি। http://www.samakal.net/2015/07/03/147278 সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:১৯ | false |
mk | নেতৃত্ব নিয়ে হেফাজতে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ! আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ভবিষ্যৎ নেতা নির্ধারণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। বর্তমান আমির বয়োবৃদ্ধ শাহ আহমদ শফী চট্টগ্রাম নগরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার বিকেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংগঠনের মজলিসে শূরার একটি অংশ আমির হিসেবে দেখতে চায় শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে। আরেকটি অংশের পছন্দ বর্তমান মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীকে। আবার আরেকটি পক্ষ আমির হিসেবে চায় দলের প্রভাবশালী নায়েবে আমির মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে। এই তিন পক্ষের একটি পক্ষের সখ্য আছে জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে। একটি অংশ সুসম্পর্ক বজায় রাখছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে।এ পরিস্থিতিতে বুধবার হাটহাজারীতে হেফাজত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর পক্ষে সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এতে হেফাজতের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে_ রাজনৈতিক সহিংসতা ও ক্রসফায়ারে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে দেশের সব মাদ্রাসা ও মসজিদে নিয়মিত দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা করা।হেফাজতের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে সম্প্রতি মাওলানা আজিজুল হক বলেন, 'আহমদ শফী যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এ পদ নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। তবে তার অবর্তমানে কে হেফাজতের হাল ধরবেন তা নির্ধারণ করবে মজলিসে শূরার সদস্যরা।' আমির পদে একাধিক আগ্রহী ব্যক্তি থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের সংগঠনে উত্তরাধিকার সূত্রে আমির হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এলেম, বয়স, আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও শারীরিক যোগ্যতা বিবেচনা করে আমির নির্ধারণ করবেন মজলিসে শূরার সদস্যরা।' আমির নির্ধারণে হেফাজতে ইসলামে কোনো প্রতিযোগিতা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।জানা গেছে, শাপলা চত্বরের সমাবেশ ও নির্বাচন ইস্যু নিয়ে গত এক বছর ধরেই হেফাজতের নেতাদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। বিএনপির চলমান আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিয়েও আছে বিভক্তি। হেফাজতের একটি অংশ বিএনপি ঘোষিত হরতাল-অবরোধে একাত্মতা পোষণের পক্ষে। এ অংশই সম্প্রতি সুদ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য ও হিজাব পরা নিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে তাদের মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করার দাবি জানায়। এমনকি হেফাজতকে দিয়ে হরতালেরও ঘোষণা দিয়েছিল তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা হেফাজতের আরেকটি অংশের তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত আর বাস্তবায়ন হয়নি এ ঘোষণা। বর্তমান আমির শাহ আহমদ শফীও রাজনৈতিক ইস্যুতে হেফাজতকে জড়ানোর বিপক্ষে।সংগঠনের একটি অংশ মধ্যপন্থি হলেও হেফাজতে ইসলামের অধিকাংশ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ আছে বিএনপি ও জামায়াতের। এ অংশের নেতৃত্বে আছেন গ্রেনেড বিস্ফোরণের আসামি ও হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি ইজহার। তিনি পলাতক থাকায় সক্রিয় আছেন দুই যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দিন রুহী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ। ৫ জানুয়ারি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের একজন হাটহাজারী থেকে ও আরেকজন রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচন করতেন বলে গুঞ্জন ছিল। তথ্যসূত্র: দৈনিক সমকাল | false |
ij | আনুশকা শঙ্কর। আনুশকা শঙ্কর। আনুশকার শঙ্করের জন্ম:৯ জুন ১৯৮১ । জন্ম লন্ডনে হলেও ৭ বছর বয়েস থেকে বাস করছেন ক্যালিফের্নিয়ায়। আট বছর বয়েস থেকে সেতার শেখা শুরু। ১৩ বছর বয়েসে প্রথম শ্রোতাদের সামনে বাজান। আনুশকা শঙ্কর যতই লন্ডন-নিউ ইয়র্ক করে বেড়াক না কেন। সত্য হল এই যে- আনুশকা শঙ্কর আমাদের যশোরের মেয়ে। তার মানে আনুশকার বাপ-দাদাদের বাড়ি এককালে যশোরেই ছিল। আনুশকার বাবা পন্ডিত রবিশঙ্কর এখনও সেসব কথা গর্ব ভরে বলেন। পূর্ব বাংলায় ১৯৭১ সালে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী নৃশংস গনহত্যা চালালো। সেই নির্মম গনহত্যা সম্পর্কে বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য রবিশঙ্কর সে সময় জর্জ হ্যারিসনদের নিয়ে নিউইয়র্কে একটি কনর্সাট করলেন। কেন? ঐ জন্যই। তিনিও বাংলার সন্তান। তাঁরও বাপ-দাদারা এককালে বেঁচে ছিলেন যশোরের সবুজশ্যামল কোনও গাঁয়ে। আনুশকা শঙ্কর গুণী বাপের গুণী মেয়ে। যে কজন বাঙালি কন্যা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে আনুশকা শঙ্কর তাদের অন্যতম। সেতারে হাতেখড়ি মেয়েবেলায়; বাবার কাছে। এমন সৌভাগ্য হয় ক’জনের বলুন? রবিশঙ্করও কম সৌভাগ্যবান নন। কেন বললাম কথাটা? তাঁর এক মেয়ে ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের শিকড় ছুঁয়েছে তো অন্য মেয়ে ইংরেজি গানের পাখি। হ্যাঁ। আমি নোরা জোন্সের কথাই বলছি। ওর কথা আজ থাক। ওর কথা অন্যদিন বলব। বলছিলাম, আনুশকা শঙ্করের সেতারে হাতেখড়ি মেয়েবেলায়; বাবার কাছে। এমন সৌভাগ্য হয় কজনের বলুন? এর আরও গভীর দিক রয়েছে। সে কথাই আজ না হয় বলি। সেতার হচ্ছে ভারতবর্ষে হিন্দুমুসলিম সাংস্কৃতিক মিলনের প্রতীক। সেই মিলনের প্রতীক নিয়ে আনুশকা শঙ্কর প্রতি মাসেই পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তের সঙ্গীত তৃষ্ণার্ত মানুষের কাছে। ও যেখানেই যায়। যাই বাজায়। আমি ভাবি যে আমাদেরই যশোরের একটি স্মার্ট সুন্দরী আর প্রতিভাবান মেয়ে নিজেই হিন্দুমুসলিম সাংস্কৃতিক মিলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তা সেতার কেমন বাজায় আনুশকা? নিচের লিঙ্কটা ক্লিক করে কষ্ট করে ডাউনলোড করেন দেখুন। তারপর বুঝতে পারবেন। ইউটিউবেও ওর অনেক গুলি ক্লিপ পাওয়া যায়। হয়তো এই বাজনাটা শোনার পর আপনার সামনে একটি দুয়ার খুলে যেতেও পারে। Click This Link আনুশকার কিছু অন্যরকম ছবি Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৪৭ | false |
hm | উৎপল শুভ্র, অ্যালা এট্টু থামেন এই লেখার শুরুতে যেটা পরিষ্কার করা প্রয়োজন, আমিও উৎপল শুভ্রের মতোই ক্রিকেটমূর্খ। খেলাটা দেখি, উপভোগ করি, কিন্তু একটা ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেনসি করার যোগ্যতা আমার নাই। তবে লিডারশিপ আর মিডিয়া প্রেশার নিয়ে আমার ধারণাটা ক্রিকেটজ্ঞানের চেয়ে স্বচ্ছ। উৎপল শুভ্রের মতোই। উৎপল শুভ্রের লেখা আমার ভালো লাগে না। ক্রীড়া সাংবাদিক যখন ক্রীড়া মাতবর হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, লেখায় রিপোর্টিঙের চেয়ে যখন সালিশির সুর বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আগামাথা না বুঝে লাইনের পর লাইন হাবিজাবি যখন লিখে যায় কেউ, তখন পাঠক হিসেবে বিরক্তি লাগে। আমার পাঠক জীবনের বয়স আড়াই দশকেরও বেশি, উৎপল শুভ্রের লেখক জীবনের চেয়ে সেটি অনেক বড়, বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময়। কাজেই পাঠক হিসেবে আমি কিছু কথা বলতেই পারি। এ যাবত উৎপল শুভ্র তার লেখায় যত ক্রিকেটমূর্খতার পরিচয় দিয়েছে, তার প্রস্থচ্ছেদ নিয়ে আমি বসতে চাই না। আমি ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ তারিখে প্রথম আলোতে প্রকাশিত তার একটি সাক্ষাৎকার দিয়ে শুরু করতে চাই। সেখানে সাকিবকে করা শুভ্রের প্রশ্নগুলো পর পর সাজাচ্ছি পাঠকের সুবিধার জন্যে। টসে হেরে ফিল্ডিং নেওয়ার পর প্রতিপক্ষ ৩৭০ রান করে ফেললে কথা তো হবেই। আপনার জবাবটা কী হবে? পরে বোলিং করায় সমস্যা বলছেন, আগে বোলিং করেও তো ভালো কিছু হলো না। কোথায় এলোমেলো হয়ে গেল সব? আমজনতার মুখে মুখে একটা কথা ফিরছে, বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করলে ভারত চাপে পড়ে যেত। আপনি একমত? ঠিক আছে, আপনি ক্রিকেটীয় যুক্তিবুদ্ধি দিয়েই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটিং-তাণ্ডবের সময় কখনো ‘ভুলই করলাম কি না’ মনে হয়নি? আলোচনাটা কি টিম মিটিংয়ে হয়েছে, নাকি টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে? প্রশ্নটা আবার করছি, ভারত ৩০ ওভারেই ২ উইকেটে ১৬৯ করে ফেলার পর সিদ্ধান্তটা ঠিক হয়েছে কি না, এ নিয়ে নিজের মধ্যে একটুও দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়নি? সিদ্ধান্তটা বুমেরাং হয়ে যাওয়ার মূল কারণ কী? ৩৭০ হয়ে যাওয়ার প্রত্যক্ষ কারণ তো বীরেন্দর শেবাগ। ও যখন ওভাবে মারছিল, অসহায় লাগছিল না? শেবাগ যেদিন খেলে, সেদিন তো ফিল্ডিং সাজানোই কঠিন... শেবাগীয় তাণ্ডবের সময় নিজেকে উদ্দীপ্ত রেখেছেন কীভাবে? এই ম্যাচ নিয়ে এমন হাইপ, মাঠভর্তি দর্শক—টস করতে নামার সময় কি একটু নার্ভাস লাগছিল? ৩৭১ টার্গেট হয়ে গেলে অধিনায়কের কী-ই বা বলার থাকে! তার পরও জিজ্ঞেস করি, ব্যাটসম্যানদের আপনি কী বলেছিলেন? কিন্তু শেষটা কি ভালো হলো? শেষ ৫ ওভারে মাত্র ১৯ রান, তিন শ হলে মানসিকভাবে আরেকটু চাঙা থাকতেন না? এই ম্যাচের পর দলের অবস্থা কী? [সূত্র] এই সাক্ষাৎকারের পদে পদে সাকিবের মুখ থেকে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে যে টসে জিতে ফিল্ড করার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিলো। এইখানে আমার একটা প্রশ্ন, আমরা কি সাকিব আল হাসানকে বিনা যোগ্যতায়, বিনা প্রশিক্ষণে, বিনা বিশ্লেষণে বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে মাঠে পাঠিয়েছি? টসে জিতে কী করতে হতো, সেটা কি সাকিব বাংলাদেশের কোনো আবুল-কুদ্দুস-সোলায়মান বা উৎপল শুভ্রের চেয়ে কম বোঝে? খেলাটা তো সে তার দল নিয়ে খেলতে নেমেছে, এবং এই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর আরো পাঁচটা ম্যাচ এই রাউন্ডে সাকিবের নেতৃত্বে খেলা হবে, সেগুলোতে ইতিবাচক ফল হলে সামনে আরো। দেশের মাটিতে চলমান একটা বিশ্বকাপে জাতীয় দলের ক্যাপ্টেনের মুখ থেকে নিজের পছন্দসই কথা বের করার চেষ্টার নাম ক্রীড়া সাংবাদিকতা? আমরা কি কেউ বুঝতে পারছি, সাকিব নামের এই ২৩ বছরের পোলাটার কান্ধে কী পরিমাণ প্রেশার আমরা দিয়ে রেখেছি? পাঠক, নিজের ২৩ বছরের কথা চিন্তা করুন। কোথায় কীসে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, দিচ্ছেন, দেবেন? কী আকারের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছিলেন? এই যুবকের হাতে আমরা ষোলো কোটি মানুষের পতাকা তুলে তাকে খেলতে নামিয়েছি, খেলার পরপরই উৎপল শুভ্র গোছের ক্রিকেটমূর্খদের ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যানের মুখে বিব্রত হবার জন্য? কেউ যদি মনে করেন, সাকিবের চেয়ে ক্রিকেট বেশি বোঝেন, ঘরে বসে হাউকাউ না করে মাঠে গিয়ে করে দেখান। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যারা দর্শকের সারিতে বসে, তাদের মধ্যে একজনও সাকিবের চেয়ে কোনো অংশে বেশি যোগ্য নয়। যোগ্য হলে সে দর্শকের সারিতে বসে থাকতো না। তবে যে কেউ ক্রীড়া সাংবাদিক হতে পারে, এটা উৎপল শুভ্রকে দেখে বোঝা যায়। একটা চলমান টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের ক্যাপ্টেনকে এইভাবে মিডিয়া লিঞ্চিঙের চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই। সাকিব টসে জিতে ব্যাটিং করুক আর ফিল্ডিং করুক, কাজটা তাকেই করতে হয়, এবং বিপুল বিশাল চাপ কাঁধে নিয়েই করতে হয়। ২৩ বছর বয়সে উৎপল শুভ্রের একটা কুতকুত টিমের নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতাও ছিলো না, আর সে নেমে গেছে বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্যাপ্টেনের টসে জিতে নেয়া সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিলো, সেটা তারই মুখ থেকে চাপ দিয়ে বের করার কাজে। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে শহর থেকে ফকির খেদানো হয়েছে শুনলাম। এখন আমি দাবী জানাচ্ছি, উৎপল শুভ্র এবং উৎপল শুভ্রজাতীয় অকালকুষ্মাণ্ড, যারা ক্রীড়া সাংবাদিকতায় এসে সিনে সাংবাদিকদের মতো গুটিবাজি আর গুড় লাগানো ছাড়া গত ষোলো বছরে আর কিছু করতে পারেনি, তাদের শহর থেকে দূরে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় বাকিটা সময় ডিটেনশনে রাখার, অথবা রাষ্ট্রীয় মিশনে লিবিয়ায় পাঠিয়ে দেয়ার (শুনেছি ওখানে নেট ফোন সব বন্ধ)। খেলোয়াড়দের বিনা চাপে খেলতে দিন, তাদের সেরা খেলাটা আমাদের উপভোগ করতে দিন। জাতীয় দলের ক্যাপ্টেনকে যদি উঠতে বসতে এইসব উৎপাতের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে তার কাছ থেকে আমরা সেরা খেলা আশা করবো কীভাবে? উৎপল শুভ্ররা, অ্যালা থামেন। কলমের মুখ খাপে ঢুকিয়ে চুপচাপ বিশ্বকাপ দেখেন। আমরা টাইগারদের সাথে আছি, রামছাগলদের সাথে না। ম্যাৎকার আর লাদিবর্ষণ থামান, আমাদের ক্যাপ্টেনকে বিরক্ত করবেন না। | false |
mk | নারীরাও জঙ্গি জঙ্গি দমনে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আশাব্যঞ্জক হলেও এই অপশক্তিকে পুরোপুরি দমন করা যায়নি। এখন নারী ও কিশোরদেরও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে, যারা জঙ্গিবাদে দীক্ষিত। জঙ্গি নেতা সুমনের স্ত্রী শারিকা ও তানভীর কাদেরীর কিশোর ছেলে আসিফ কাদেরীর আত্মহত্যা প্রমাণ করে, তারা শুধু দীক্ষাই নেয়নি, বিশ্বাসে অটল। অবশ্য নারীদের জঙ্গিবাদে দীক্ষিত হওয়ার প্রবণতার প্রমাণ মিলেছে অনেক আগেই। গত আগস্ট মাসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসকসহ পাঁচ তরুণী গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় নারী জঙ্গিদের বিষয়টি নতুন করে সবার সামনে চলে আসে। এই পাঁচ তরুণীর জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে র্যামব। অভিযোগপত্র চূড়ান্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। বেশ কিছুদিন থেকেই দেখা গেছে, পুরষদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরাও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। জঙ্গিবাদে আস্থা স্থাপন করে একাধিক পরিবার নিরুদ্দেশ হয়েছে। ঢাকার আশকোনায় যে নারী সদস্যদের পাওয়া গেছে, তারাও জঙ্গি নেতাদের স্ত্রী ও সন্তান। এই প্রবণতা আমাদের সমাজের জন্য ভালো নয়।চলতি বছর দেশে জঙ্গিবিরোধী বহু সফল অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর এসব অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ ও র্যােব। এরপর গত ছয় মাসে পরিচালিত আটটি অভিযানে ২৮ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। কিন্তু দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। সাময়িক দুর্বলতা কাটিয়ে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে তারা। আশকোনার মতো আরো অনেক বাড়িতে মিথ্যা পরিচয়ে আশ্রয় নিয়ে সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে তারা। আগে ব্যক্তিকে টার্গেট করা হতো। এখন পরিবারকে টার্গেট করে জঙ্গিবাদে ভেড়ানো হচ্ছে। এই প্রবণতা রোধ করার কাজে গুরুত্ব দিতে হবে।জঙ্গিবাদ নির্মূলের কাজটি সহজ নয়। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞতা নিয়েও উন্নত অনেক দেশ জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অনেক জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেখান থেকে অর্থ ও অস্ত্রের জোগান আসাও অসম্ভব নয়। এর আগে পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানের সময় উদ্ধার হওয়া কাগজপত্রে তার প্রমাণও মিলেছে। রাজধানীর আশকোনার বাড়িতে অভিযানের আগেও দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বেশ কিছু জঙ্গি আস্তানায় সফল অভিযান পরিচালনা করেছে। বেশ কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গি নেতা এসব অভিযানে নিহত হয়েছে। অনেককে জীবিত ধরা হয়েছে। কিন্তু তার পরও জঙ্গি নির্মূল করা যায়নি। চাপের মুখে কৌশল পরিবর্তন করেছে জঙ্গিরা। কাজেই জঙ্গিবিরোধী অভিযান আরো জোরদার করার কোনো বিকল্প আপাতত নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে আত্মগোপনে যাওয়া জঙ্গিদের খুঁজে বের করতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে জঙ্গিদের আশ্রয়স্থল সন্ধানের পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৬ | false |
mk | দিশেহারা বিএনপি, জামাত সব ধ্বংস করে দিল অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে ফায়দা লুটতে গিয়ে বিরোধী দল বিএনপি নিজেই এখন দিশেহারা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত গণধিকৃত জামায়াত-শিবিরকে পাঁচ বছর ধরে আন্দোলনের নামে নাশকতায় মদদ দিয়ে বিএনপি-ই যেন এখন জামায়াতের বি টিম। কর্মসূচীতে মিলছে না জনগণের সাড়া, তবু কা-জ্ঞনহীনের মতো হরতাল-অবরোধ দিয়েই যাচ্ছে। নেই কোন সাংগঠনিক শক্তি, আটকের ভয়ে নেতারা চলছেন পীঠ বাঁচিয়ে। খোদ চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েও তাদের মাঠে নামাতে পারছেন না। আর বিএনপির আশীর্বাদে দেশজুড়ে একাত্তরের চেহারা নিয়ে বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত-শিবির। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার টেলিফোন পেয়ে দেশজুড়ে নাশকতায় নেমে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী চালিয়ে যাচ্ছে তা-ব। তাদের টার্গেট এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বিএনপি-জামায়াতের বাধা উপেক্ষা করে ভোট দেয়ার কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চলছে বর্বরোচিত হামলা। অনেক স্থানে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার পর মন্দিরে আশ্রয় নিয়েও রক্ষা পাচ্ছে না সংখ্যালঘুরা। ঘটনায় আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক কৌশলে একের পর এক ব্যর্থতা, অন্যদিকে জামায়াতের নাশকতার দায়ে জনরোষে বিএনপি নেতাকর্মীরা হয়ে পড়ছেন দিশেহারা।নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বিএনপির। মাঠের আন্দোলনে হাল ছেড়ে দিয়েছে দলটির সাধারণ কর্মীরা। নির্বাচনের আগে ঢাকা অভিমুখে ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ সফল না হওয়ায়, আর টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী অকার্যকর হয়ে পড়ায় নেতাকর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। সর্বশেষ বুধবার পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ কর্মসূচীতে কোথাও বিএনপির কাউকে দেখা যায়নি। বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, তাঁরা শেষ আশা হিসেবে এখনও বিদেশী কূটনীতিকদের দিকে চেয়ে আছেন। দলটির আশা, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশের কূটনীতিকদের বদৌলতে দ্রুত সংলাপ ও নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ভোট প্রতিহত করার মতো কোন পরিস্থিতি তাঁরা তৈরি করতে পারেননি। এ কারণে দলটির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা আন্দোলনে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ মাঠপর্যায়ের নেতারা বলছেন, মাঠের আন্দোলন জোরদার না হলে কেবল কূটনীতিকদের ওপর ভরসা করে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করা যায় না। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় অতীতে আওয়ামী লীগও অনেক ক্ষেত্রে বিদেশী কূটনীতিকদের ওপর নির্ভর করেছে। তবে তারা একই সঙ্গে মাঠে শক্তি প্রদর্শন করে তৎকালীন সরকারকে চাপে রাখতে পেরেছিল। কিন্তু বিএনপি সেভাবে মাঠের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চাপে ফেলতে পারেনি। বরং বিএনপি অনেকটা গিলে খেয়ে ফেলেছে জামায়াত-শিবির। মাঠে কেউ নেই তবু বিএনপির কর্মসূচী বলতেই এখন হরতাল আর অবরোধ। সংবাদ সম্মেলন কিংবা তালেবান জঙ্গীদের মতো অজ্ঞাত স্থান থেকে হরতাল ডেকেই শেষ। আগের দিন সন্ধ্যায় গাড়ি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করে আতঙ্ক ছড়ানো হয়। কিন্তু হরতালে নেতাকর্মীরা কেউ আর মাঠে থাকেন না। দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ দেয়া হচ্ছে, যাতে বিএনপির কোন লাভ না হলেও ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। ভিডিও বার্তা দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও রাজনৈতিক কর্মসূচী দিয়ে রাজপথ গরম করার চেষ্টায়ও ফল মিলছে না বিরোধী জোটের। দেশে প্রথম এই ভিডিও বার্তার প্রচলন শুরু করে জামায়াত-শিবির। নিজেদের মিছিল পিকেটিংয়ের সচিত্র প্রতিবেদনও পাঠানো হয় মিডিয়াগুলোতে। বর্তমানে রাজনৈতিক কোণঠাসা অবস্থায় থাকা বিএনপিও একই পদ্ধতি হাতে নিয়েছে। সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন লন্ডন থেকে একটি ভিডিও বার্তায় দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার ডাক দেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওইদিনই দলের বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ঘোষণা দেন।কিন্তু কোন ভিডিও বার্তায় দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া কর্মসূচী পালনে নেতারা মাঠে না থাকায় অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন নিচের সারির নেতারাও। আর কর্মীরা পড়েছেন বিপাকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের সকল অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এখন আবারও কর্মসূচী ঘোষণা করা হচ্ছে। তবে এসব কর্মসূচীতে সহিংসতা ছাড়া আর কিছুই না হওয়ায় মাঠপর্যায়ের সমর্থকরা হতাশ। সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটায় এসব কর্মসূচী থোড়াই কেয়ার করছেন তারা। হরতালের মধ্যে এখন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট লেগে যাচ্ছে। সাধারণ যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক। হরতাল ভেঙ্গে কাজে নেমে পড়েছে মানুষ। কারণে-অকারণে একই কর্মসূচী দিয়ে হরতাল অবরোধকে যেন ভোঁতা কর্মসূচীতে পরিণত করেছে বিএনপি। তার পরেও চলছে সেই একই কর্মসূচী। বিএনপির অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, পরীক্ষার মাঝে হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী বন্ধ তো দূরের কথা, খালেদা জিয়া পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্নœ অভিভাবকদের সাক্ষাতই দিচ্ছেন না। তাই ‘এ’ এবং ‘ও’ লেভেলের পরীক্ষাকে রাজনৈতিক কর্মসূচীর বাইরে রাখার অনুরোধ জানাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কাছে গেলেও বাসভবনের সামনে থেকেই হতাশা নিয়ে ফিরলেন উদ্বিগ্নœ অভিভাবকরা। ফলে গেল বছরের মতো আবারও হরতাল-অবারোধের কবলে পড়ল ‘ও’ লেভেল ‘এ’ লেভেলের বাংলাদেশের হাজার হাজার পরীক্ষার্থী। কর্মসূচীর কারণে ইতোমধ্যেই স্থগিত হয়েছে দুটি পরীক্ষা। পরের পরীক্ষার অবিষ্যতও নিশ্চিত। সঙ্কটের এখানেই শেষ নয়, পরীক্ষার রাতে হলেও কর্মসূচী টানা ২৪ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে চললে ওই পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে নাÑ এমন খবরে পুরো সেশন হারানোর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের ইংলিশ মিডিয়ামের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মতো বিষয় নিয়েও বিএনপি চেয়ারপার্সনের একগুঁয়েমি আচরণে হতাশ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অভিভাবকদের সাক্ষাত না দেয়ার ঘটনার খবরে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বলছেন, মুখে দেশ ও জনগণের কথা বলে এ ধরনের আচরণ মানায় না।বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার এ মুহূর্তে বড় সমস্যা হলো, নিজ দলের কোন কোন নেতাকে তিনি বিশ্বাস করবেন বা করবেন না, সেটা ঠিক করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। মাসের পর মাস ধরে তিনি যেভাবে রাজপথে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামার চেষ্টা করেছেন, দলের নেতাকর্মীদের সেভাবে নামাতে পারেননি। বুধবার রাতে দলটির এক নেতা হতাশা প্রকাশ করে বলছিলেন, ম্যাডামের আস্থাহীনতা এমন পর্যায়ে যে, স্থায়ী কমিটির সভার শুরুতে খালেদা নেতাদের মুঠোফোন জব্দ করে রাখেন। ম্যাডামের ভয় নেতারা সভার তথ্য পাচার করেন। সর্বশেষ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেত নেতা। আটক নেতাদের নিয়ে দলের অবস্থানে হতাশ সাধারণ কর্মীরা। বড় বড় নেতারা আটক হলেও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি মাহবুবুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, গ্রেফতারের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন বা যাঁরা করেছেন তাঁরাই এসব বিষয়ে জানেন। সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও দলের নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেও কোন কথা বলেননি স্থায়ী কমিটির এ সদস্য। জানা গেছে, হরতাল-অবরোধে জনরোধ যে অবস্থাতেই থাক না কেন, লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। কা-জ্ঞানহীন এ কর্মসূচীতে জনরোষ বাড়ছেই। ‘ও’ লেভেলের পরীক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর অভিভাবক রুকসানা আমীন পত্রিকা অফিসে টেলিফোন করে বলছিলেন, হরতাল ও অবরোধ দিয়ে বিরোধী দলের কী লাভ হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। এতে শুধু সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ মারা যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে; পুড়ে যাচ্ছে ছোট ছোট বিদ্যালয়, পুড়ে যাচ্ছে ছোট ছোট বাচ্চার স্বপ্নগুলো, আর বন্ধ হয়ে আছে শত শত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শত শত দিন ধরে। ফলে সাধারণ মানুষ বিরোধী দলের ওপর চরম বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। এমনকি অন্যেরা গাড়ি পোড়ালেও বদনাম হচ্ছে বিরোধী দলের। তার মতে, এ অবস্থায় বিরোধী দল যদি হরতাল-অবরোধ বন্ধ করে অন্য কোন বুদ্ধি বা পন্থা বা সমঝোতায় না যায়, তাহলে তারা মানুষের আস্থা হারাবে। তিনি বলেন, আজ (বুধবার) থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা। কিন্তু বিরোধী দলের একগুঁয়েমির দরুন এ ২০ হাজার পরীক্ষার্থী হারাচ্ছে তাদের একটি মূল্যবান শিক্ষা বছর। অভিভাবকরা বিরোধী দলের নেতার বাসায় ধরনা দিয়েও বিফল হয়ে ফিরে এসেছেন। তিনি দেখা দেননি। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, তাঁদের এ আন্দোলন শুধু সরকারের বিরুদ্ধে নয়, শিক্ষার বিরুদ্ধেও। আমরা শিক্ষা ও শিক্ষার্থীকে জিম্মি করা আন্দোলন থেকে মুক্তি চাই।বিএনপির আশীর্বাদে দেশজুড়ে একাত্তরের চেহারা নিয়ে বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত-শিবির। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার টেলিফোন পেয়ে দেশজুড়ে নাশকতায় নেমেছিল স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী। এখনও চলছে তা-ব। তাদের টার্গেট এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বিএনপি-জামায়াতের বাধা উপেক্ষা করে ভোট দেয়ার কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চলছে বর্বরোচিত হামলা। অনেক স্থানে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার পর মন্দিরে আশ্রয় নিয়েও রক্ষা পাচ্ছে না সংখ্যালঘুরা। ঘটনায় আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিন বেশ কয়েকটি জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার পর ওই এলাকাগুলোয় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের দিন যশোরের অভয়নগর ও দিনাজপুর সদর এলাকায় হিন্দুদের কয়েকটি গ্রামে বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সাতক্ষীরাতেও হামলা হয়েছে। জামায়াত-শিবিরকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। বিএনপির ছায়া পেয়ে এখন আদালতে ক্রিমিনাল সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত জামায়াত-শিবিরের ঔদ্ধত্য ও নাশকতামূলক কর্মকা- বাধাহীন হয়ে পড়ছে। একদিকে দেশজুড়ে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত উগ্রবাদী এ গোষ্ঠীর হত্যাকা-, অগ্নিসংযোগসহ লাগামহীন ভয়াবহ তা-ব, অন্যদিকে নাশকতা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকারের ব্যর্থতায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে ঘাতক যুদ্ধাপরাধীধের মুুক্তির নামেই প্রকাশ্যে মাসের পর মাস একাত্তরের ভয়াবহ চেহারা নিয়ে হত্যা, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, নাশকতা চালালেও সরকার কেন কঠোর এ্যাকশনে যাচ্ছে না? অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যম স্বাধীনতা বিরোধী এ গোষ্ঠীর নাশকতার আগাম খবর দিলেও তা মোকাবেলার প্রশাসন কেন নীরব? কেন প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়ে নাশকতা চালালেও ওদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার? এখানেই শেষ নয়, জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচীসহ দলীয় কর্মকা- সারাদেশে পরিচালিত এখন ই-মেইলে ও এসএমএসে চললেও তা নজরদারিতেই আনতে পারছে না প্রশাসন।উল্টো পবিত্র ধর্মের অবমাননাকর কথা লিখেছেন-ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলে ‘আমার ব্লগ’ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জামায়াত-শিবির বিরোধী এ জনপ্রিয় ব্লগ বন্ধের সঙ্গে আটক করা হয় ব্লগারদের। অথচ রহস্যজনকভাবে দেশজুড়ে নাশকতার কেন্দ্র ‘বাঁশের কেল্লা’সহ জামায়াত-শিবিরের সব ব্লগ আর ব্লগাররা আছে বহাল তবিয়তে। প্রতিমুহূর্তে পবিত্র ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ, জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে জেগে ওঠা তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে কোন বাধা ছাড়াই। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে সাধারণ মুসল্লিদের। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত বিভিন্ন ধর্ম, মত ও শ্রেণী-পেশার লাখো কর্মী-সমর্থককে ‘নাস্তিক’ প্রমাণ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে মিথ্যা তথ্য ও ছবি। জামায়াতের গোপন কর্মকা- নিয়ে সরকার ও প্রশাসন যেন অন্ধকারে হাতরাচ্ছে। জানা গেছে, কেবল এবারই নয় প্রতিটি নির্বাচনের আগে ও পরে জামায়াতসহ উগ্রবাদী গোষ্ঠী একই কায়দায় তা-ব চালায় সংখ্যালঘুসহ প্রগতিশীল জনগোষ্ঠীর ওপর।তবে বিএনপির আশীর্বাদে এবারের তা-বের পেছনে আছে অন্য কারণও। সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে এখন দেশজুড়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে নাশকতা চলছে আন্তর্জাতিক মহলের নজর কাড়তেও। এ ইস্যুতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারলে সঙ্কট সমাধানের নামে বিদেশীদের নাগ গলানোর একটা সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা জামায়াতের।নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ে সহিংসতা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করার পরও সবার নাকের ডগায় এক প্রিসাইডিং অফিসারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হলো নির্বাচনকালীন যাতে কোন ধরনের সহিংসতা না হয়, সে জন্য মাঠে পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন। কিন্তু নির্বাচনের আগের দিন দেখলাম একজন প্রিসাইডিং অফিসারকে দুর্বৃত্তরা সবার নাকের ডগায় পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করল। ভোট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ করা হলো; তাও দেখলাম। ঝাঁপ দিয়ে শীতের মধ্যেও অতিরিক্ত সময় পানিতে থাকতে দেখলাম। গণমাধ্যমের কল্যাণে দেখেছি, অনেক মানুষ অন্য দেশে পাড়ি দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনুনয়-বিনয় করে তাদের রাখা হয়েছে। অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের যে এত আশ্বস্ত করা হলো, তাতে আশানুরূপ কোন কর্মদক্ষতার প্রমাণ নেই। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকার যেন ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে হয়েছে। এ ব্যর্থতা যেন প্রলম্বিত না হয়, এ ব্যর্থতা প্রলম্বিত হওয়া মানে হচ্ছে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, লুটতরাজ প্রলম্বিত হওয়া। ব্যর্থতার অর্থ হতে পারে আমাদের দেশের ওপর বিরাট একটি জনগোষ্ঠীর আস্থা উঠে যাওয়া। প্রলম্বিত হওয়ার আরেকটি অর্থ হতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে বাংলাদেশ, সে অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যেতে পারে। | false |
rn | মিছে কথা বললেও সুখ হয় (নাই বা হলো কালজয়ী খ্যাতি তোমার,যায় যদি যাক মুছে তোমার নামের রেখা কালের পটের ক্ষেএ থেকে দুঃখ কিসের?ঘটছে এমন হরহামেশা নানা যুগে,যে সাধনে রইলে সেটাই অটুট থাকুক জীবন জুড়ে।-শামসুর রাহমান)ঘুম থেকে উঠেই দেখি মা খুব হৈচৈ করছে।আমার মা এক দারুন দয়ালু মহিলা,খুবই নরম মনের মানুষ।কত লোক যে মিথ্যা কথা বলে মা'র কাছে সাহায্যের জন্য এসে আজ পর্যন্ত কেউ খালি হাতে ফিরে যায়নি।পরে মা যখন জেনেছে মিথ্যা বলে ঠকিয়েছে,তখন মা'র মন খারাপ হয়েছে।মা বলে-যারা মনে করে অন্যকে ঠকিয়ে নিজে খুব জিতেছে তাদের মতো বোকা পৃথিবীতে আর নেই।মানুষ কখনো অন্যকে ঠকাতে পারে না,আসলে তারা নিজেরাই ঠকে।আব্বা'র সঙ্গে আমার সম্পর্ক টা কেমন যেন।একটু দুরের।খুব কম কথা হয়।কখনো কখনো এমনও হয়েছে,অনেকদিন আব্বা'র সাথে দেখা হয় না।হঠাৎ মুখোমুখি দেখা হতেই চমকে গেছি।চেনা বয়স্ক লোক লেখলে আমর বয়সী বিনীত ধরনের ছেলেরা যা করে,সালাম দেওয়ার জন্য ডান হাত উঠে যায় কপালে,আমার তেমন হয়েছে।কিছু কিছু মানুষের জন্মই নেয় এক ধরনের ক্ষমতা নিয়ে।এটা বশ করার ক্ষমতা।সবার এই ক্ষমতা থাকে না।আমার আব্বা'র এই অমূল্য ক্ষমতা আছে।আজ বাংলা বৈশাখ মাসের ২০ তারিখ।কথায় বলে,কুকুরের কাজ ও নেই আবার অবসরও নেই।আমার হয়েছে এমন অবস্থা।বিকেলে হাঁটতে বের হয়েছি।আজ হাঁটতে ভালো লাগছে না।ইচ্ছা করছে কারো কাছে যাই।কার কাছে যাবো?আসলে সবাই চায় মাঝে মাঝে কারো কাছে আশ্রয় মাথা পেতে নিতে,কিছু চিরন্তন সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে।কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া বা জড়ানোর ইচ্ছা টাকেই তো প্রেম বলে।সেই আদিকাল থেকেই তো এই কামনা মানুষ কে তাড়িত করছে।মানুষ কারো চেহারা দেখে প্রেমে পড়ে না।আর যখন প্রেমে পড়ে তখন সে বন্যের মতো প্রেমে পড়ে।মানুষ পরস্পরের মাঝে খুঁজে ফেরে এক অনাবিল প্রশান্তি।এর রসায়ন টা কি?ছেলে মেয়ে গুলো আসলে স্রেফ প্রেমে মজতেই ইচ্ছুক।কে চায়এর জটিল রসায়ন জেনে প্রেমে পড়তে!"চাই না এমন কোনো নারী,যে মানবে না আমার সমস্ত দাবী,সে রকম তালা বন্ধ ঘরে লোভ নেই যে ঘরের সব গুলো চাবিআমার নিকট থাকবে না।যা চাই তা পুরোপুরি চাই,আমি চাই দিতে আর নিতে পুরোটাই।"মেয়েরা কি সব পারে?আমার ধারনা পারে।আমি নারী প্রগতিতে বিশ্বাসী।অবাধ নারী স্বাধীনতাতেও।তবে একটা কথা বিশ্বাস করি না যে,কেবল পুরুষরাই নারীর উপর নির্যাতন চালায়।হাজার বছরের ইতিহাসে দেখা যায়,কোনো পুরুষই সর্বতোভাবে কোনো নারীকে জয় করতে পারেরনি,শৃঙ্গখলিত হয়েও নারী রয়ে গেছে অপরাজিত।পুরুষের কাছে অধরা।(তসলিমা নাসরিনের সাথে আমি একমত।)নারীর পূর্নতার জন্য তো পুরুষদের দরকার ও আছে।তবে কোনো বিশেষ পুরুষের সান্নিধ্য ছাড়াই হয়তো নারীরা ভবিষ্যতে পূর্নতা পাবে।আধুনিক নারীর সংখ্যা আধুনিক পৃথিবীতে হয়তো প্রতিদিন ক্রমশই বাড়তে থাকবে।মানিয়ে নেওয়া,কিছু স্বাধীনতা,ভালো লাগা,রুচি,সাজ-শর্জ্জা ইত্যাদিতে নারীদের এখন প্রবল আপওি প্রতিদিন বাড়তে থাকবে।অনেকে কাছে ডাকার চেয়ে দুরেই ঠেলে দেয়।তাতে আমি কিছু মনে করি না।মানুষের খারাপ দিকটা আমি মনে রাখি না।আমি মনে রাখি মানুষের ভালো দিকটা।ভালো আচরন টা,ভালো কথাটা,ভালো গুনটা।ইদানিং আমার মাথাটা প্রায়ই এলোমেলো হয়ে যায়।তারপরও আমার মেমোরি খুব সার্ফ।চট করেই মানুষের মনের ভেতরটা আমি কখনো কখনো দেখে ফেলি।কে কী বলবে আগে থেকেই বুজতে পারি,কী জানতে চাইবে তাও বুঝতে পারি।আমার স্বভাব হচ্ছে কথা চেপে রাখতে পারি না বা লুকাতে পারি না।কোনো একটা ভুল করলেই প্রিয় মানুষের কাছে ধরা পড়ে যাই। যা মেনে নিতে পারিনা তা পরিস্কার ভাবে বলে দেই।প্রতিবাদ করার জায়গায় অবশ্যই প্রতিবাদ করি।তাতে যদি কেউ মনক্ষু ন্ন হয়,হবে।আমার কিছু করার নেই।একটি দীর্ঘশ্বাস।আমার মনে হয়,ঠিক কি যে মনে হয় তা বর্ননা করে বোঝানো শক্ত-অবর্ননীয় একটা বেদনা আমার সারা বুক জুড়ে টনটন করে বিষ ফোঁড়ার মতো।... এত দুঃখ কেন আমার!সারারাত বিছানায় শুয়ে এলোমেলো কথা ভাবতে ভাবতে ছটফট করি,অস্থির হয়ে পড়ি।চোখ ইষৎ লাল হয়ে পড়ে।কোথায় বা কার কাছে গেলে এই অস্থিরতা কমে যাবে?অস্থিরতা নিয়ে পথে পথে হাঁটি।কিসের এতো অস্থিরতা জানি না।বুকের ভেতর হাজার হাজার অন্য কোনো ভুবনের সব শুন্যতা হাহাকার করে উঠে।নীলা আপা,প্রায়ই বলেন- 'মানুষের জীবনে দুঃখের বড় প্রয়োজন।অনেক দুঃখ অনেক যন্তনা।মানুষের স্বভাবের সঙ্গে সমুদ্রের অনেক মিল।সমুদ্র কখনো শান্ত কখনো উচ্ছসিত।সমুদ্র এতো বিশাল।কি সাংগাতিক তার আওয়াজ।সব কিছু ভাসিয়ে নেওয়ার মতো তার ভয়ঙ্কর ক্ষমতা।অফুরন্ত পানি।তবু কেউ সেই পানি খেতে পারে না।সমুদ্র তার বিশাল ক্ষমতার জন্য যাতে অহংকার না করতে পারে সে জন্য ইশ্বর তার পানিতে এক চিমটি লবন দিয়ে দিয়েছেন।ইশ্বর!"Love is not heart of life.Love is only part of life."এই যে বিশাল নীলগিরি পাহাড় তার যেমন মূল্য আছে,তেমনি এক টাকা বা পাঁচ টাকা কয়েন এর মূল্য আছে।প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা মূল্য আছে।কোন মানুষের কোন একটি বিশেষ দিক ভাল লেগে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষটি আমাদের কাছে বড় হয়ে উঠে।আমাদের ভালোবাসাই তাকে বড় করে তুলে!আমাদের জীবনে কিছুদিন আগেও যে ছিলো দশজন মানুষের একজন,সে হঠাৎ 'একাদশ' হয়ে ওঠে।তার পর ....।যদি ভালোবাসা পাই আবার শুধরে নেবো জীবনের ভুল গুলি;যদি ভালোবাসা পাই শীতের রাতের শেষে মখমল দিন পাবো,যদি ভালোবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো আর সমুদ্র সাঁতরাবো।যদি ভালোবাসা পাই আমার আকাশ হবে দ্রুত শরতের নীল। | false |
rg | অপারেশন সার্চলাইট এবং আজকের শপথ।। রেজা ঘটক অপারেশন সার্চলাইট এবং আজকের শপথ ।। রেজা ঘটক ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ট্যাংক, মেশিনগান, কামান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে নিরিহ বাঙালির ওপর। সেই রাতে নির্বিচারে যে নরহত্যা করা হয়েছে বিশ্বের ইতিহাসে তা কালোরাত্রী নামে আর বাঙালির হৃদয়ে স্বজন হারানোর সাক্ষী হয়ে আছে। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো, সেনা প্রধান টেক্কা খান, জেনারেল এএকে নিয়াজী আর তাদের দোসররা মিলে অপারেশন সার্চ লাইট নামে যে নীল নকশা করে তা ওই রাতে বাস্তবায়ন করা হয়। এই অপারেশনের প্রধান টার্গেট ছিল পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক স্বাধীনতার লড়াইকে চিরতরে গুড়িয়ে দিয়ে অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার নামে এদেশের নারী পুরুষ নির্বিচারে সবাইকে হত্যা করা। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পৃথিবী এক রাতে এতো নির্বিচারে হত্যা আর কোনদিন প্রত্যক্ষ করেনি। সেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ গোটা ঢাকায় এক সাথে নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির ওপরে ঝাঁপিয়ে পরে পাক সাঁজোয়া বাহিনী। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে তারা নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ বৃদ্ধা ভিখারী পথচারী লেখক কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক শিক্ষক উকিল ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারী শ্রমিক মজুর রিকশাচালক স্বর্ণকার কর্মকার ব্যবসায়ী মুদি দোকানি কাঁচামাল বিক্রেতা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যারিস্টার শিল্পী আর্টিস্ট পেশকার সবাইকে। গোটা ঢাকা মাত্র কয়েক ঘণ্টায় এক মৃতপুরীতে পরিণত হয়। লাশে লাশে ঢেকে যায় রাজপথ মাঠ ঘাট পথ স্টেশন ঘরবাড়ি কলোনি আবাসিক এলাকা বস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস মার্কেট দালানকোঠা পার্ক হাটবাজার পত্রিকা অফিস মেঠোপথ দুর্বাঘাস। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। পৃথিবী নির্বাক। ইতিহাসে অমন পরিকল্পিত সংঘবদ্ধ হত্যা আর একটাও নেই। বিশেষ করে এই হত্যার বিপরীতে সেই রাতে কোনো প্রতিরোধ বা পাল্টা হামলা ছিল না। ছিল না কোনো দয়া মায়া মমতা। ছিল না কোনো বাছবিচার নির্বিচার। সারা ঢাকা শহর তথন এক রক্তের শহর। সারা ঢাকা নগরী তখন এক মৃতপুরী। চারিদিকে শুধু শকুন আর পাক হায়ানা। পৃথিবীর ইতিহাসে সেই নির্বিচারে গণহত্যার এখন পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি। এখন পর্যন্ত সেই হত্যার কোনো রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা প্রার্থণা হয়নি। হয়নি কোনো ক্ষতিপূরণ। হয়নি কোনো আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার। হয়নি কোনো দায় স্বীকার। হয়নি কোনো সম্পদ ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্র“তি। হয়নি কোনো রাষ্ট্রীয় চুক্তি যার আওতায় পাকিস্তান সব কিছুর ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। অথবা হয়নি কোনো পরিকল্পিত দাবী যার আওতায় পাকিস্তান অন্তত বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ায়। আমরা সেই গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো জোড়ালো দাবী আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপন করতে পারিনি। পারিনি পাকিস্তানকে কোনো ধরনের বিচারের সম্মুখিন করতে। আমরা ৩৯ বছরে আসলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারিনি। এটা জাতী হিসাবে আমাদের চরম ব্যর্থতা। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেউলিয়ত্ব আর স্বার্থপর রাজনীতির চরম বহিপ্রকাশ হল আমরা এখনো শুধু মুখে বড় কথা বলি আর কর্মে একেবারে গোবর গনেশ। ২৫ মার্চের সেই গণহত্যা থেকে বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যার পরিণতি পরবর্তী নয় মাসের গণযুদ্ধ। আরো হত্যা আরো লাশ। আরো ধর্ষণ আরো লুপটরাজ। আরো জ্বালাও পোড়াও আরো ধ্বংস। গোটা বাংলাদেশ এক ধ্বংস ¯তূপে পরিণত হয়। খালী হয় ত্রিশ লাখ মায়ের কোল। ধর্ষিত হয় আট লাখ বাঙালি বীরাঙ্গনা মা। শেষ হয়ে যায় এদেশের আড়াই লাখ বুদ্ধিজীবী পেশাজীবী নরনারী। শেষ হয়ে যায় গোটা বাংলাদেশ। সব শেষ সব শেষ শুধু প্রাণ হাতে বেঁচে থাকল ধুকধুক বাংলাদেশ। একটা প্রলয় মনুষ্য সৃষ্ট ধ্বংসলীলার পর ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নিল। যারা বেঁচে থাকল তাদের দায়িত্ব পরল দেশটাকে আবার সোনায় সোনায় ভরিয়ে দেবার। কিন্তু তারা কী তাই করল? নাকী তারা নিজেদের স্বার্থ নিয়েই টানা হেঁচরা শুরু করল। তারা আবার নতুন করে চুরি লুটতরাজ হত্যা দখল শুরু করল। তারা কারা? তারা আমাদের এই সোনার বাংলার শাসক। তারা আমার এই সোনার বাংলার ঘাতক। তারা আমার এই স্বাধীন দেশের শোষক। তারা আমার এই খাঁটি মাটির রক্তচোশক। তারা আমার এই বাংলাদেশের ক্ষমতাবান মুর্খ রাজনীতিক। তারা আমার এই সোনার বাংলার মানুষ খেকো নতুন পিচাশ। তারা আমার এই নতুন বাংলার নয়া শকুন। তারা কারা? তারা আওয়ামীলীগ। তারা বিএনপি। তারা জাতীয় পার্টি। তারা জামাতী ইসলামী। তারা দালাল। তারা ডাকাত। তারা লুটকারী। তারা হত্যাকারী। তারা ক্ষমতাসীন। তারা বিরোধীদল। তারা সাংসদ। তারা চেয়ারম্যান। তারা কেয়ার নেন বাংলাদেশের। কীভাবে? চুরি করে। ডাকাতি করে। লুটতরাজ করে। দুর্নীতি করে। দখল করে। ছিনতাই করে। ক্ষমতা দেখিয়ে। শাসিয়ে শোষণ করে। তারা কারা? তারা পাক হানাদারদের নব্য দোসর। তারা কারা? তারা রাজনীতির নামে স্বর্থপর এক শ্রেনী শাসক। ৩৯ বছরে তারা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই দেখেনি। তারা এখনো লুটতরাজ করছে। এখনো ছিনতাই করছে। এখনো দুর্নীতি করছে। এখনো শাসন করছে আর ভাগাভাগি করছে। কাদের মধ্যে ভাগাভাগি? নিজেদের মধ্যে। নিজেরা কারা? আওয়ামীলীগ। বিএনপি। জাতীয় পার্টি। জামাতী ইসলামী। দিবস পালন এদের একটা উপলক্ষ্যমাত্র। চুরিতে তারা থামেনি। ডাকাতিতে তারা থামেনি। ছিনতাইতে তারা থামেনি। দখলে তারা থামেনি। শাসনে তারা থামেনি। শোষণে তারা থামেনি। মিটিংয়ে তারা থামেনি। মিছিলে তারা থামেনি। চিৎকারে তারা থামেনি। মিথ্যা বলায় তারা থামেনি। ধন সম্পদ বৃদ্ধিতে তারা থামেনি। বিদেশ সফর করতে তারা থামেনি। বিদেশে টাকা পাচার করতে তারা থামেনি। মানুষ হত্যা করতে তারা থামেনি। মিথ্যা মামলা করতে তারা থামেনি। ওমরা হজ করতে তারা থামেনি। মোটকথা নিজেদের স্বার্থ তারা মোটেও ভোলেনি। তারা মোটেও থামেনি। নাটক করতে তারা ভোলেনি। নাটক দেখাতে তারা হটেনি। ক্ষমতা যে কী তারা তা ভোলেনি ছাড়েনি। বাংলাদেশ গত ৩৯ বছরে শুধু ভাগ হয়েছে। বাংলাদেশ গত ৩৯ বছরে শুধু লুট হয়েছে। বাংলাদেশ গত ৩৯ বছরে শুধু ধর্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশ গত ৩৯ বছরে শুধু পুড়েছে। বাংলাদেশ গত ৩৯ বছরে শুধু নিঃশেষ হয়েছে। এজন্য কারা দায়ী? দায়ী আমাদের গত ৩৯ বছরের শাসক। দায়ী আমাদের গত ৩৯ বছরের শোষক। দায়ী আমাদের গত ৩৯ বছরের ক্ষমতাসীন ভণ্ড রাজনীতিক। তারা কারা? তারা আওয়ামীলীগ। তারা বিএনপি। তারা জাতীয় পার্টি। তারা জামাতী ইসলামী। তারা মুখোশ পরা স্বার্থপর খুনি টেক্কাখানদের দোসর। তারা মুখোশ পরা একদল চটুল চাটুকর। তারা একদল স্বার্থপর ভণ্ড রাজনীতির বাঁদর। তারা একদল রক্তখোর হায়ানার আসর। তারা একদল মিথ্যেচারী বদমায়েস খাটাস। তারা একদল নরখাদক পিচাশ। গত ৩৯ বছরে বাংলাদেশ এদের থেকে এক মিনিটের জন্য রেহাই পায়নি। গত ৩৯ বছরে বাংলাদেশ এদের থেকে এক দিনের জন্য মুক্তি পায়নি। গত ৩৯ বছরে বাংলাদেশ এদের থেকে একটা মাসের জন্য রক্ষা পায়নি। গত ৩৯ বছরে বাংলাদেশ এদের থেকে একটা বছরের জন্যও স্বস্থিতে থাকতে পারেনি। এরা গত ৩৯ বছরে বাংলাদেশের অবশিষ্ট সম্পদটুকু নিজেদের মধ্যে শুধু ভাগ বাটোয়ারা করার এক কঠিন খেলায় মেতে রয়েছে। আমার বাংলাদেশ ভাগ হয়ে যাচ্ছে। আমার বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমার বাংলাদেশ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে। এই নব্য হায়ানার দোসরদের হাত থেকে আমার বাংলাদেশকে বাঁচাতে এখনই প্রয়োজন কঠিন শপথ এবং সে অনুযায়ী নতুন প্রজন্মকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। এই দায়িত্ব কার? এই দায়িত্ব আমার আপনার সকলের। এই দায়িত্ব ছাত্র শিক্ষক শ্রমিক কৃষক সকলের। এই দায়িত্ব পেশাজীবী বুদ্ধিজীবী কর্মজীবী সকলের। এই দায়িত্ব মাঝি মাল্লা মুটেরার। এই দায়িত্ব স্বর্ণকার কর্মকার পেশকারের। এই দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব প্রদান আর দখলের। এই দায়িত্ব কর্তৃত্ব স্থাপনের নয় মোটেও পূর্ব দোসরদের নকলের। এই দায়িত্ব মা বোন ভাই সবাই সকলের। এই দায়িত্ব ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যারিস্টার উকিলের। এই দায়িত্ব তাঁতী জেলে ছুতার কুমার কামারের। এই দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের আমাদের সকলের। চলবে ... চলবে ... আপনারা নিচের লিংকটা পড়তে পারেন।। Click This Link সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:২৮ | false |
hm | আসুন, ১ মার্চ ভারত বনধ করি প্রথমে একটা ভিডিও দেখি আমরা। এটি ইতিমধ্যেই বহুলপ্রচারিত, এক গরুচালানীকে ধরে বিবস্ত্র করে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের কয়েক জওয়ান, তার এগারো মিনিটব্যাপী অসম্পাদিত দৃশ্য। পশ্চিম বাংলার অনন্দবজর পত্রিকায় [১] এই ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পেছনে পাকিস্তানী গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের কালো হাত থাকার আশঙ্কা ব্যক্ত হয়েছে। খবর পড়ে নয়াদিল্লির ভাবনা যা জানা যায়, তা হচ্ছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মিষ্টি পড়শীয়া প্রেমের বৃহস্পতি যখন তুঙ্গাভিমুখী, তখন পাড়ার যমদূত মস্তান দাদা হয়ে আইএসআই এই উলঙ্গ চলচ্চিত্র ছড়িয়ে দুটি প্রেমিক হৃদয়কে আহত করার চক্রান্ত চালাচ্ছে। অনন্দবজর যুক্তি হিসেবে সীমান্তের ঐ অঞ্চলে মৌলবাদী শক্তি, বাংলাদেশের ভেতরে দৌড়ের ওপর থাকা জামাত আর কলকাতায় পাকিস্তানী হাই কমিশনার শাহিদ মালিকের আগমনকে তুলে ধরেছে। কিন্তু অনন্দবজরের রিপোর্টে বিএসএফের এই মারধরের সমালোচনার কোনো গন্ধ নেই, তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়া নিয়েই তাদের যত মাথাব্যথা। সুরটা এমন, নাহয় ন্যাংটা করে মেরেছেই, তাই বলে ভিডিও ছড়িয়ে দিবি রে পাগ্লা? আমরা দুইদিন পরপরই সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী নাগরিকের মৃত্যুর খবর পাই। ভারতীয় পত্রিকায় ছাপা হয় বিজিবি ও বাংলাদেশী চোরাচালানী আর আতঙ্কবাদীদের খবর। ঐসব গোলাগুলি বা মারধরের ভিডিও আমরা দেখতে পাই না বলে দুই বিপরীত মেরুর খবর নিয়ে আমরা নানা হাউকাউ করি। সেই হাউকাউ সামাজিক মিডিয়ার অলিখিত নিয়মে সূচকীয় হারে কমে আসে। একদিন, বড়জোর দুইদিন থাকে আমাদের চোটপাটের আয়ু। তারপর যেই লাউ, সেই কদু। ভারতীয় সীমান্তসেনারা সবসময় বলে, তারা আত্মরক্ষার জন্যে গুলি ছোঁড়ে। আমাদের র্যাবও ক্রসফায়ারের অজুহাত হিসেবে ঐ কথাই বলে। কাণ্ডজ্ঞানের বলে আমরা এই আত্মরক্ষার অজুহাতকে অবিশ্বাস করতে শিখেছি। গরু হোক আর ফেনসিডিল হোক, সশস্ত্র বিএসএফের সাথে কিশোর-তরুণেরা লুঙ্গির নিচে কামান-বন্দুক নিয়ে চালানের মাল বাঁচাতে যুদ্ধ করবে, এই গল্প বিশ্বাস করি না আমরা। এই ভিডিওতেও আমরা দেখেছি, আরো অনেক লোক গরু নিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছে, ধরা পড়েছে এক যুবক। তার লুঙ্গি বিএসএফ আমাদের খুলে দেখিয়েছে, আমরা কোনো অস্ত্রশস্ত্রের আলামত দেখিনি। আত্মরক্ষার জন্যে তাকে ন্যাংটা করে পেটাচ্ছে না বিএসএফ, পেটাচ্ছে বিশুদ্ধ ধর্ষকাম চরিতার্থ করার জন্য। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে তারা ছয় সাতজন মিলে ফুটখানেক খাটো এক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে উলঙ্গ করে সাপমারা ধোলাই দিচ্ছে। আমাদের প্রতিক্রিয়া প্রথমেই ধাবিত হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে। ব্লগে-ফেসবুকে দীপু মণিকে খুব তিরস্কার করি আমরা। নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে মহাজোট সরকারকেও একচোট ধুই। ধুই না শুধু নিজেকে। এই কথা সত্য, বর্তমান সরকার ভারতের প্রতি যথোপযুক্ত দৃঢ়তার সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ উপস্থাপনে ও চরিতার্থ করতে বিফল হয়েছে বহুবার। কিন্তু সেই বিফলতা নাগরিক হিসেবে আমাদের নিজেদের দায়ভারকে হালকা করে না। বিএসএফ কি একই ভাবে সীমান্তে কোনো চীনাকে পেটাতে পারবে? কোনো নেপালী বা ভূটানীকে? কিংবা শ্রীলঙ্কার কোনো নাগরিককে নিজের দেশের জমিতে উলঙ্গ করে মারবে? একজন আফগান বা একজন তাজিককে? এমনকি, একজন পাকিস্তানীকে? আমার ধারণা, তারা তা করবে না। আমাদের দেশের লোককে বিএসএফ এভাবে পেটায় বাংলাদেশীদের ব্যাপারে তাদের সামাজিক ধারণা, প্রশিক্ষণ, নির্দেশনা আর অভিজ্ঞতার ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে। বিএসএফ বাংলাদেশীদের সমপর্যায়ের মানুষ জ্ঞান করে না। পৃথিবীতে বহু বড় দেশের সাথে ছোটো গরীব দেশের সীমান্ত রয়েছে, সেখানে সীমান্ত রক্ষীরা কিশোরদের গুলি করে মারে না, যুবকদের ন্যাংটা করে পিটায় না। এই মার বিএসএফ গরুচালানীদের দিচ্ছে না, এই মার ভারতের আমলাযন্ত্র দিচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিককে। যেভাবে আমাদের দেশে কাজের লোক পিটায় কিছু মাদারচোদ আর তাদের বৌ। এই পীড়নের পেছনে সবচেয়ে বড় যে চালিকাশক্তি, সেটা যত না ঘৃণা, তারচেয়ে বেশি তাচ্ছিল্য। এই তাচ্ছিল্য কি একদিনে তৈরি হয়েছে? না। এই তাচ্ছিল্য তৈরি হয়েছে দশকের পর দশক ধরে। আমাদের দেশের লোক আজ মার খাচ্ছে আমাদের আত্মসম্মানজ্ঞানের সামগ্রিক অভাবের কারণে। আমরা বছরের পর বছর ধরে নির্বিকারভাবে ভারতের বাজারে পরিণত হচ্ছি আমাদের মোটা চামড়ার কারণে। ভারতের আমলাযন্ত্রের চোখে আমরা গরীব ছোটোলোক, যাদের মূল কাজ ভারতের পণ্য ক্রয় ও ভোগ। না, ভুল বললাম, গরীব প্রতিবেশীও নয়, ভারতের আমলাযন্ত্র আমাদের দেখে বারান্দার নেড়িকুকুর হিসেবে, পান থেকে চুন খসলে যাকে পিটানো বা নিধন করা যায়। আমরা প্রচুর হাঁকডাক করি, আবার মারলে খবরাছে গোছের হুমকিধামকি দিই, তীব্র নিন্দা জানাই, সরকারকে গালি দেই, মন্ত্রীকে গালি দেই, কিন্তু নাগরিক হিসাবে আমাদের সামগ্রিক, পরিকল্পিত, দীর্ঘমেয়াদী কোনো প্রতিরোধ কি আছে? আমরা কি নাগরিক হিসেবে একজোট হয়ে ভারতের আমলাযন্ত্রকে কোনো সঙ্কেত দিয়ে জানাতে পেরেছি, যে আমরা কুকুর নই, আমরা মানুষ, প্রাপ্য সম্ভ্রম আমাদের দেখাতে হবে? আমি মনে করি আমরা পারিনি। আমাদের সিংহভাগ লোক, যারা ফেসবুকে ব্লগে পত্রিকায় টিভিতে চিৎকার করে গলার রগ ফাটাচ্ছে, তারা সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ভারতের আমলাযন্ত্রের চোখে বাংলাদেশকে ছোটো করার কাজ করে যাচ্ছে সমানে। আমরা নির্বিকারভাবে ভারতের পণ্য ভোগ করছি, ভারতের সেবা ভোগ করছি, ভারতের টিভি দেখছি, ভারতের সিনেমা খাচ্ছি, নিজেদের ঘরোয়া উৎসবে পর্যন্ত আপাদমস্তক ভারতীয় সাজে সেজে হিন্দি গানের তালে হিন্দি সিনেমায় দেখানো কৌশলে পাছা নাচাচ্ছি। আর ফেসবুকে-হাটেমাঠে বলছি এই সরকার ভারতের দালাল। ভারতের পণ্য-সেবা-ফূর্তি কিছুই যখন আমরা বিসর্জন দিতে পারছি না, একটা দিন এই ভোগের ঢলে বিরতি দিয়ে কি আমরা ভারতের আমলাযন্ত্রকে একটা সঙ্কেত দিতে পারি, যে আমাদের ন্যাংটা করে পিটানোকে আমরা ভালো চোখে দেখি না? সোপা-পিপার বিরুদ্ধে উইকিপিডিয়ার ডাকা উইকি বনধের উদাহরণটা দেখুন। সিনেটে সোপা-পিপার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহৃত হবে, এমন আভাস পাওয়ার পরও কিন্তু উইকি কর্তৃপক্ষ পিছিয়ে আসেনি, তারা ২৪ ঘন্টার জন্য উইকি বনধ ডেকে অহিংস মৌন প্রতিবাদ জানিয়েছে। এবং তাতে কাজও হয়েছে। সারা পৃথিবী জুড়ে লোকে টের পেয়েছে (মার্কিন আইন প্রণেতারাও), সোপা-পিপার মস্তানি চলবে না। আমরাও একই কাজ করতে পারি। সারা দেশ জুড়ে আমরা একটি নির্দিষ্ট দিনে ভারতের পণ্য-সেবা-ফূর্তি বর্জন করে হাবিবুর রহমান নামে ঐ গরীব লোকটা, যে আপনার পাতে পরিবেশনের জন্যে গরু আনতে দারাপুত্রপরিবার ফেলে প্রাণ হাতে করে সীমান্ত টপকে ভারতে গিয়েছিলো, তাকে নগ্ন করে পশুর মতো পেটানোর প্রতিবাদ জানাতে পারি। গরীব মার খায় দেখে আমাদের গায়ে লাগে না, কারণ আমরা নিশ্চিন্তে থাকি, আমরা ভদ্রলোক, আমাদের তো কিছু হবে না। আজ হাবিবুর গরু আনতে মার খেয়েছে, আমরা চুপ করে আছি। কাল আপনি বাবার চিকিৎসা করাতে বা বউকে নিয়ে হানিমুনে যাওয়ার পথে ভারতের মাটিতে একই রকম মার খাবেন না, সেটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন? হাবিবুর রহমান একজন গরু চোরাচালানী, কারণ আপনি গরু খান। হাবিবের উলঙ্গ নিতম্বে লাঠির বাড়িটা আপনার গালেও এসে পড়েছে। টের পান? মার্চ ১ হোক আমাদের ভারত বনধের দিন। এই দিন আমরা ভারতের কোনো জিনিস কিনবো না, ভারতের কোনো সেবা নেবো না, ভারতের কোনো চ্যানেল দেখবো না। আগের আটত্রিশ দিন আসুন আমরা এই ডাক ছড়িয়ে দিই, সবাইকে জানাই। পরিচিত সবাইকে বলি, নিজেদের আত্মসম্মানের কথা স্মরণ করিয়ে দিই। আমরা কুকুর নই, আমরা মানুষ। আমাদের মানুষের মর্যাদা দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, এখন থেকে সীমান্তে একজন বাংলাদেশীও যদি নিহত বা আহত হয়, আমরা পরদিন বাংলাদেশে ভারত বনধ পালন করবো। পারবেন? না পারলে প্যান্টের নিচে পাছার চামড়াটা মোটা করুন। কারণ বিএসএফের পরবর্তী ন্যাংটো ভিকটিম আপনিই। তথ্যসূত্র [১] মারের ছবি প্রচারে পাক-হাতই দেখছে নয়াদিল্লি, প্রেমাংশু চৌধুরী, ২০-০১-১২, অনন্দবজর | false |
hm | ভাস্কর্য ও স্থাপত্যকীর্তি প্রস্তাব পাণ্ডবদার এই পোস্টটি পড়ে একটি চিন্তার উদয় হয়েছিলো মাথায়, মন্তব্যে তা শেয়ারও করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে এতে আরো মাংস যোগ করে পোস্ট আকারে শেয়ার করাই ভালো। আমাদের দেশে ভাস্কর্য ও স্থাপত্যকীর্তিগুলোর মধ্যে পর্যটক আকর্ষণী শক্তি অর্জন করতে পেরেছে শহীদ মিনার আর শহীদ স্মৃতিসৌধ। এর মধ্যে শহীদ মিনার কেবল একটি ভাস্কর্য নয়, এটির প্রতীকমূল্য অপরিসীম, এটি সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত। দূরদেশেও বাংলাদেশীরা সংখ্যা ও সামর্থ্যে গুরুত্ব অর্জন করতে পারলে নির্মাণ করে একটি শহীদ মিনার। আর সারা দেশ জুড়ে শহীদ মিনার বিস্তৃত হলেও এর মূল্যায়ন দিবসকেন্দ্রিক। আমি প্রস্তাব করতে চাই পর্যটক আকর্ষণ করার মতো একটি ভাস্কর্য ও স্থাপত্যকীর্তির, যা ঢাকা থেকে দূরে হবে (ঢাকা শহরে আর একটিও মানুষ আকর্ষণ করার মতো নির্মাণকর্মের প্রয়োজন নেই। শহরটি মানুষ ও অমানুষের চাপে কাঁপছে। একে গণধর্ষণের হাত থেকে নিস্তার দিয়ে এর ওপর থেকে মানুষ ও অমানুষের ভিড় দূর করা জরুরি)। সারা বছর পর্যটনের জন্যে উপযোগী হবে। বিশেষ বিশেষ দিবসের জন্যেও এর কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। এটি হতে হবে আলোকচিত্র-আবেদনসম্পন্ন। এর সামনে পর্যটকদের ছবি তোলার আগ্রহ হতে হবে তীব্র। এগারোটি বালিঘড়ি সম্পন্ন একটি বিস্তৃত ভাস্কর্যখচিত স্থাপত্যকীর্তির প্রস্তাব করছি আমি। এই বালিঘড়িগুলি হবে একটি বিশাল কলামের গায়ে প্রোথিত, কলামটি সজ্জিত হবে বিভিন্ন থিমের ভাস্কর্যে। কলামগুলি থাকবে একটি চত্বরের ওপর। দশটি বালিঘড়ি নির্দেশ করবে দশক, একটি নির্দেশ করবে এক বছর। প্রতি নববর্ষে ভোরে সূর্যোদয়ের পর একবাৎসরিক বালিঘড়িটির সাতরঙ বিশিষ্ট দানাগুলোর শেষটিও নিচে নেমে আসবে, সেদিন একে ঘিরে পালিত হবে উৎসব। পরদিন ভোরে বালিঘড়িটিকে উল্টে দেয়া হবে, তাই একে ৩৬৪ দিনের আয়ু নিয়ে তৈরি করতে হবে। দশবাৎসরিক বালিঘড়িগুলির দানা হবে ভিন্ন ও একক রঙের, এদের পূর্তি ঘিরে পালিত হবে দশকবরণ উৎসব। সূর্যের আলো এই বালিঘড়িগুলিকে পূর্ণভাবে আলোকিত করবে। এই গোটা কীর্তিকে ঘিরে থাকবে বিভিন্ন রঙের ফুলের কেয়ারি ও সরোবর। বাংলার ঋতুভিত্তিক জল ও স্থলপুষ্পের একটি বিস্তৃত প্রোগ্রাম অনুসৃত হবে বছর ভর, ফুলের বাগানের আকৃতি ও ফুলের প্রকৃতি নিসর্গনকশাবিদ ও উদ্যানবিদেরা এক সাথে বসে ঠিক করবেন। শরতের প্রথম দিনে এই কমপ্লেক্স থেকে শুরু হবে বেলুন উৎসব, প্রকান্ড গ্যাসভর্তি রঙিন বেলুনে চড়ে সেদিন পর্যটকেরা ভ্রমণ করবেন। বছরের যে কোন সময় পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থার জন্যে গোটা কম্পলেক্স থেকে কিছুদূরে গড়ে উঠবে ডরমিটরি ও রেস্তোরাঁ। এই কেন্দ্রটি গড়ে উঠতে পারে বগুড়া বা চাঁপাইনবাবগঞ্জে, কিংবা মঙ্গাআক্রান্ত উত্তরবঙ্গের কোন উঁচু জায়গায়, যেখানে বন্যার পানি পৌঁছায় না। শারদোৎসবকে জনপ্রিয় করতে পারলে, ফসলশূন্য কার্তিকে পর্যটনই হতে পারে স্থানীয়দের আয়সংস্থানের একটি বড় উৎস। আপনাদের মতামত জানান। ধন্যবাদ। | false |
fe | বাংলা কবিতার মূলধারা _ বিবর্তনের স্পন্দন বাংলা কবিতার মূলধারা : বিবর্তনের স্পন্দন ফকির ইলিয়াস ================================== বাংলা কবিতার মূলধারা কী, সে সম্পর্কে বিভিন্ন উদাহরণ উপস্থাপন করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ আত্মিকভাবে যেসব পঙ্ক্তিমালাকে গ্রহণ করে নিয়েছে, সে সময়ে সেগুলোই হয়ে উঠেছে বাংলা কবিতার মূলধারা। বৈষ্ণব পদাবলি, ধর্মীয় শ্লোক, চর্যাপদ -থেকে শুরু করে এক সময়ে খনার বচনের মতো পঙ্ক্তিও মুখে মুখে ফিরেছে। জননন্দিত হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, কালে কালে কিন্তু কবিতার ধারা বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঠক-পাঠিকার রুচিও বদলেছে। গ্রহণ এবং বর্জনের স্রোতের মধ্যেই নির্মিত হচ্ছে এবং হয়েছে সব নতুন বিবর্তনের স্পন্দন। একজন মরমি কবি বাউল সাধক ফকির আরকুম শাহের একটি গান এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। ‘তুমি আমি, আমি তুমি জানিয়েছি মনে/বিচিতে জন্মিয়া গাছ বিচি ধরে কেনে/এক হইতে দুই হইলো প্রেমেরই কারণ/সে অবধি আশিকের মন করে উচাটন/বন্ধু নিরধনিয়ার ধন/কেমনে পাইমুরে কালা তোর দরশন।’ বীজ থেকে গাছ জন্ম নেয়। আবার সেই গাছই ধারণ করে নিজের বীজ। এই বিজ্ঞানসম্মত ‘রিসাইক্লিং প্রসেস’, সে চেতনা উঠে এসেছে একজন মরমি সাধকের পঙ্ক্তিমালায়। আমার মতে, এ চক্রাকারে ঘূর্ণনের মাধ্যমেই নির্মিত হচ্ছে- হয়েই যাচ্ছে; একটি ভাষা সাহিত্যের, কবিতার মূলধারা। বেশিদূর না গিয়ে তিরিশের দশকের পঞ্চকবির সাধনার কথাই ধরা যাক। পাঁচজনের মধ্য থেকে টিকে থেকেছেন সর্বজনীনভাবেই জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্র ছায়া-পরবর্তী সময়ে বাঙালি পাঠক তার কাব্যরুচিকে বিভিন্নভাবে আস্বাদনে ব্রতি হয়েছে। জনপ্রিয় সমিল ছন্দের কবিতা লিখে জসীমউদ্দীন ‘পল্লীকবি’ খ্যাতি পেয়েছেন। বেগম সুফিয়া কামাল পৌঁছে গেছেন বাঙালির ঘরে ঘরে। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে সেই কালই সহায়ক হয়ে এসব কবির খ্যাতিকে শিখরে পৌঁছিয়েছে। সেসব কবিতা কি বাংলা কবিতার মূলধারা অংশ নয়? পঞ্চাশের দশকে বাংলা কবিতায় নতুন বাঁক নির্মাণের চেষ্টা আমরা গৌরবের সঙ্গে লক্ষ্য করি। এ সময়ে আহসান হাবীব, হাসান হাফিজুর রহমানের মতো কবিরা তাদের পরিশুদ্ধ ধীশক্তি দিয়ে নিজস্ব সাক্ষরতা প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হন। বাংলা কবিতাকে নবতর পরিপূর্ণতা দিতে এগিয়ে আসেন শামসুর রাহমান। তার কর্মযজ্ঞের ব্যাপৃতি বাংলা কবিতার নান্দনিকতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। জীবন ও রাজনীতির পাঁজর ছিঁড়ে শামসুর রাহমান লিখেন, ' স্বাধীনতা তুমি’ কিংবা ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’- এ রকম বেশকিছু কবিতা। বাংলা কবিতার মূলধারার স্তম্ভ নির্মাণে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলন বিস্ময়কর ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলা কবিতার খাতাকে শুধু সমৃদ্ধই করেনি, দিয়েছে বহমান বিশ্বকবিতার মাঠে সোনালি ফসল। যা কি-না যে কোনো ভাষার কবিতার মতোই শক্তিশালী, সাবলীল। বিশ্ব কবিতার খামার থেকে কবিতার বীজ সংগ্রহ করা, নৈর্ব্যক্তিক উপাদান, উপাত্ত এবং উৎসের সল্পব্দানকে আমি কোনোমতেই খাটো করে দেখি না। বিভিন্ন বক্তব্য, বিভিন্ন ভাষায় সমান উজ্জ্বলতা পায় না। প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শও সব কবির দ্বারা সমানভাবে আহরিত হয় না। তাই অন্য কোনো ভাষার কবিতার প্রতি মন আকৃষ্ট হলেই তা যে প্রভাব ফেলবে বা ফেলতে পারে, তাও আমি বিশ্বাস করি না। ইউরোপীয় কবিতা, পারস্য কবিতার প্রভাব বয়ে বেড়িয়েছে এমন কথাও বলেন কেউ কেউ। দক্ষিণ আমেরিকা, আফিদ্ধকার কবিতা ও ভাববিনিময় করে নিজস্বতা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বেরর বিভিন্ন সাহিত্যে ফোকলোর লিটারেচারের বিবর্তন আমরা লক্ষ্য করি। লোকজ আবহ, আধ্যাত্মিক চেতনা, মরমিবাদ নিয়ে কবিতা লিখেছেন মার্কিন কবি অ্যালেন গিনসবার্গ, ডব্লিউ এস মারউইন, জন অ্যাশবেরিসহ অনেক বিশিষ্ট কবি। আনন্দের কথা হচ্ছে, পাশ্চাত্যে এসব কবি বিশেষভাবে সম্মানিত হন। আদৃত হন। বাংলার লোককবি, মরমি কবিরা সেভাবে সম্মানিত হওয়ার সুযোগ পান না। এটা পরিতাপের বিষয় বৈকি! বাংলা কবিতার স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন সময়ে। আল মাহমুদের ‘সোনালি কাবিন গুচ্ছ’, নির্মলেন্দু গুণের ‘হুলিয়া’, শহীদ কাদরীর ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা’, রফিক আজাদের ‘ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাব’সহ এ রকম বেশ কিছু পঙ্ক্তিমালা বাঙালি পাঠককে শাণিত করেছে। আমরা লক্ষ্য করছি, এ সময়ে বেশকিছু তরুণ কবি বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় দেহতত্ত্ব, প্রেমতত্ত্ব, কামতত্ত্ব, বিরহ-বিচ্ছেদ তত্ত্বসহ মরমিবাদের নানা চিত্রকলা, উপমা ব্যবহার করে কবিতা লিখছেন। কালে এগুলোও মূলধারার প্রতীক বলে বিবেচিত হবে, সে বিশ্বাস আমি করেই যাচ্ছি। আধুনিক কবি, লোককবি, সবার সম্মিলিত সাধনার মাধ্যমেই নির্মিত হচ্ছে বাংলা কবিতার মূলধারার মাঠ। ------------------------------------------------------------------------------ দৈনিক সমকাল। ৪ এপ্রিল ২০০৮,শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৭:০২ | false |
hm | আছায্য পাটীগণিত ০১: খন্দকার, ইকবাল, মতি মশহুর মাসিক পত্রিকা কিশোর আলোর অনিয়মিত তারকা লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বিডিনিউজ২৪.কমে একটি কলাম প্রকাশ করেছেন, "ইতিহাসের ইতিহাস" শিরোনামে [সূত্র]। লেখাটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য এই পদটির কোনো বাংলা মনে হয় আর করা হয়নি, উপসেনানায়ক বলা যেতে পারে সম্ভবত) এয়ার ভাইস মার্শাল আবদুল করিম খন্দকারকে অপমান করা বিষয়ে। সম্প্রতি এ কে খন্দকার স্বনামধন্য কিশোর মাসিক কিশোর আলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রথমা প্রকাশন থেকে একটি আত্মজৈবনিক গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন, তার শিরোনাম "১৯৭১: ভেতরে বাইরে"। অধ্যাপক ইকবাল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাঁর অনুরাগের প্রকৃতি ও ইতিহাস বর্ণনা করে মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক হিসেবে খন্দকারকে উপস্থাপন করে দুঃখ করে বলেছেন, যখন আমি আবিষ্কার করেছি একটি বইয়ের বিষয়বস্তুর কারণে এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারকে অপমান করার চেষ্টা করা হচ্ছে তখন বিষয়টি আমাকে গভীরভাবে আহত করেছে। এ কে খন্দকারকে কীভাবে কে কোথায় অপমান করার চেষ্টা করেছে, তার বিশদ বর্ণনায় অধ্যাপক ইকবাল যাননি, কেবল তার কারণটিকে সামনে এনেছেন। তিনি গভীর ক্ষোভ নিয়ে বলছেন, আমরা আমাদের দেশে একজন মানুষকে তাঁর নিজের মত প্রকাশের জন্যে এভাবে অসম্মান করব আমি সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। খন্দকারের লেখা বইটি আমি পুরোটা পড়িনি, বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে অধ্যাপক ইকবালও বিস্তারিত কিছু বলেননি, কিন্তু গুণী মানুষেরা কোনো কথা না বলেও অনেক কিছু বলে ফেলতে পারেন। রবি ঠাকুর এ ধরনের গুণীদের ওপর বিলা হয়ে লিখেছিলেন, তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মতো অধৈর্য হলে আমাদের চলবে না। একটু একটু করে পড়ে বুঝতে হবে, অধ্যাপক ইকবাল কী বলতে চেয়েছেন। লেখার প্রারম্ভিক অংশ পড়ে বোঝা যায়, এ কে খন্দকার তাঁর বইতে এমন কিছু মত প্রকাশ করেছেন, যার প্রতিক্রিয়ায় কোনো এক রহস্যময় দুরুচ্চার্য মহল তাঁকে অপমান করার "চেষ্টা" করেছে। মানীর মান রক্ষার দায়িত্ব সকলেরই। কিন্তু মানীর মান রক্ষায় স্বয়ং মানীর কি কোনো দায় নেই? এ কে খন্দকার মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক, তাঁকে কে সেধে সেধে বিনা কারণে অপমান করতে চাইবে? কিন্তু খন্দকার নিজে কি নিজের এই পরিচয়ের প্রতি সুবিচার করেছেন? যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জাফর ইকবাল তাঁর গভীর অনুরাগের কথা কয়েক প্যারা ধরে বিবৃত করেছেন, সে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিই কি খন্দকার সুবিচার করেছেন? কই, মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক এবং একটি স্বাধীন দেশের বিমানবাহিনী প্রধানের গর্বিত পরিচয় নিয়ে তিনি তো ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ফৌজদারি অপরাধী খন্দকার মুশতাকের প্রতি অকম্পিত কণ্ঠে আনুগত্য প্রকাশে এতটুকু পিছপা হননি? তখন কি মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টির গায়ে কাদার ছিটে লাগেনি? অধ্যাপক ইকবাল তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, হয়তো ব্যাপারটা খেয়াল করার ফুরসত পাননি তখন। জেনারেল জিয়াউর রহমান যখন সশস্ত্র বাহিনী থেকে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা আর সৈনিকদের বিদ্রোহের অজুহাতে নামমাত্র বিচারে বা বিনা বিচারে ধরে ধরে ফাঁসি দিলেন, যে বিমানবাহিনীর প্রধান এ কে খন্দকার স্বয়ং কয়েক বছর আগেও ছিলেন, সে বিমানবাহিনীকে জিয়া যখন প্রায় মুক্তিযোদ্ধাশূন্য করে ফেললেন, তখন মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক কোথায় ছিলেন? জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রদূত হিসেবেই কি তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন না তখন? মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টি কি তখন আলমারিতে তুলে রাখা ছিলো? অধ্যাপক ইকবাল তখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, হয়তো ব্যাপারটা খেয়াল করার ফুরসত পাননি তখন। কামরুল হাসান যাকে বলেছিলেন "বিশ্ববেহায়া", সেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, যিনি জেনারেল মঞ্জুরসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের মৃত্যুর জন্যে দায়ী বলে নানা কৌতূহলোদ্দীপক বিবৃতি ও প্রতিবেদন আমরা পত্রিকায় পড়তে পাই, সেই এরশাদের কেবিনেটে যখন মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক এ কে খন্দকার পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে যোগ দিয়ে এরশাদের ধর্ম মন্ত্রী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দোসর রাজাকার মওলানা মান্নানের সহকর্মী হিসাবে কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করে গেলেন, তখন পরিচয়টি কোথায় ছিলো? তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রী থাকার সময় যখন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পরিচয় মুছে ফেলা হলো, তখন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে অভীষ্ট ধরে সাধিত মহান মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়কের পরিচয়টি লজ্জায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলো কি? অধ্যাপক ইকবাল তখন দেশের বাইরে, এসব খোঁজ রাখার ফুরসত পাননি বোধহয়। মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টির ওপর অতীতে অকাতরে ত্যাগ করা রহস্যময় হলদেটে তরলের দাগ এড়িয়ে অধ্যাপক ইকবালের কাছে এ কে খন্দকার কেবল সেক্টর কমাণ্ডারস ফোরামেরই প্রধান, যিনি অধ্যাপক ইকবালের সঙ্গে এক গাড়িতে পাশে বসে থেকে তাঁকে শিহরিত হওয়ার অমূল্য সুযোগ করে দেন। অধ্যাপক ইকবালের ভাষ্যে, মনে আছে তিনি এবং তাঁর সহযোদ্ধারা একবার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন এবং এয়ারপোর্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত পথটুকু আমি গাড়িতে তাঁর পাশে বসে এসেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের এ রকম একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের পাশে বসে আছি চিন্তা করেই আমি শিহরিত হয়েছিলাম। অধ্যাপক ইকবাল হয়তো অনেক আগেই মার্কিন সিনেটর ড্যানিয়েল প্যাট্রিক ময়নিহানের নাম শুনে থাকবেন, আমি মোটে সেদিন শুনলাম। এই ভদ্রলোক বলেছিলেন, You are entitled to your opinion. But you are not entitled to your own facts. এই কথাটুকু একটু থেমে, মন দিয়ে পড়ে, হৃদয়ঙ্গম করে বাকি কথাগুলো শুনুন। এ কে খন্দকার তাঁর বইতে মোটা দাগে অভিমত (opinion) দিতে গিয়ে কিছু ঘটনাকে বাস্তবতার (fact) রূপ দিতে চেয়েছেন। এ কে খন্দকারের অভিমত প্রকাশের অধিকার রয়েছে, কিন্তু সে অভিমতের সমর্থনে নিজের অভিলাষ অনুযায়ী বাস্তবতা উৎপাদনের অধিকার তাঁর নেই। শুধু তাঁর কেন, কারোই নেই। তিনি নিজের অভিমতের পক্ষে যায়, এমন একটি গুজব (যা কিনা সেই গুজবের প্রাথমিক ধারকেরা নিজেরাই ক্ষমা চেয়ে নাকচ করেছেন [সূত্র]) নিজের বইতে গুঁজে দিয়ে বলেছেন, শেখ মুজিব ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তাঁর ভাষণের শেষে জয় পাকিস্তান বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া নিয়েও খন্দকার তথ্যসূত্র সমর্থিত গ্রন্থনার বিপরীতে গিয়ে অভিমত দিয়েছেন। ইতিহাস নিয়ে অভিমত দিতে গেলে যে ডিউ ডিলিজেন্স ইতিহাস লেখকের কাছ থেকে পাঠক আশা করে, তার ব্যাপক ঘাটতি বইটিতে রয়েছে বলেই অনেক পাঠক অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এ কে খন্দকার তাঁর পাঠককে প্রবঞ্চিত করেছেন এখানেই। বইটি তিনি লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়ে, কিন্তু সে পরিচয়টির প্রতি কোনো সুবিচার তিনি করেননি। মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টির প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে যেভাবে তিনি অতীতে ফৌজদারি অপরাধীর প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন, যেভাবে এ মহান পরিচয়টিকে তিনি ধরাশায়ী করে ক্ষমতা জবরদখলকারীর রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন, যেভাবে এ পরিচয়ের মুখে চুনকালি দিয়ে তিনি আরেক ক্ষমতা জবরদখলকারীর কেবিনেটে রাজাকারের সহকর্মী হয়েছিলেন, একই অবহেলায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টির মান ডুবিয়ে অসত্যভাষণের মাধ্যমে পাঠককে ঠকিয়েছেন। তিনি যা বলেছেন, তা সত্য হিসাবে প্রমাণ করতে পারেননি, কেবলই এক বৃদ্ধের ব্যক্তিগত হিসাবনিকাশতাড়িত অসংলগ্ন অভিমত তিনি পাঠককে গছিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়কের এ ভীমরতি কি সহজে মেনে নেওয়া যায়? মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফসল আজকের তরুণ পাঠকের কি ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হওয়ার অবকাশ খন্দকার নিজেই করে দেননি? কিন্তু আমপাঠকের মতো অধ্যাপক ইকবাল ক্ষুব্ধ বা অপমানিত কিছুই হননি। তিনি শুধু "মন খারাপ" করেছেন, তাও বেশি নয়, "একটু"। আগেই বলেছি এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের বইটি পড়ে আমার একটু মন খারাপ হয়েছে। এই তথ্যসূত্র-অসমর্থিত ও পরের-মুখে-ঝাল-খাওয়া বইটি লিখে খন্দকার মুক্তিযুদ্ধ ও নিজের মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টিকে অপমান করেছেন, এটা বোঝার মতো পরিপক্কতা হয়তো অধ্যাপক ইকবালের এখনও আসেনি। সবার মান-অপমান বোধ একরকম নয়, আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু এরপর খুব বিস্মিত হয়ে দেখি, খন্দকার যে অসত্য কথাগুলো বইতে বলেছেন বলে জাফর ইকবাল ব্যবচ্ছেদ করে দেখিয়েছেন, সেই ব্যবচ্ছেদের পরও অধ্যাপক ইকবাল বলছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলে একটা কথা আছে, মাওলানা আবুল কালাম আজাদও তাঁর মত প্রকাশ করার জন্য ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ নামে একটা বই লিখেছিলেন। সেই বই পড়ে বইয়ের সংক্ষিপ্ত একটা রূপ ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। পুরো বইটি পড়ে অনেকে মনে কষ্টে পেতে পারে বলে তিনি বলেছিলেন তাঁর মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পরে যেন পুরো বইটি প্রকাশ করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পর আমরা সেই বইটি পড়ার সুযোগ পেয়েছি। কাজেই ইতিহাসে সত্য যুক্ত করার জন্যে সময় নেওয়ার উদাহরণ পৃথিবীতে আছে– একজন মানুষকে অসম্মান করা হবে জানলে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এখানে এসে বিভ্রান্ত ও হতচকিত হয়ে যাই। লেখার এক অংশে যেখানে অধ্যাপক ইকবাল নিজেই খন্দকারের বইতে গ্রন্থিত অসত্যকে কাটাছেঁড়া করে পাঠককে দেখালেন, একটু পর তিনিই আবার বলছেন, ইতিহাসে "সত্য" যুক্ত করার জন্য সময় নেওয়ার উদাহরণ আছে। ব্যাপারটা কেমন আঁশটে হয়ে গেলো না? অধ্যাপক ইকবাল কি ঘুরিয়ে এটাই বললেন না, যে খন্দকারের বইটি ইতিহাসে সত্য যুক্ত করে? এ কেমন স্ববিরোধিতা? আর অধ্যাপক ইকবাল কি অভিমত আর সত্যের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন? মাওলানা আজাদের বইতে যা লেখা আছে, সেটি মাওলানা আজাদের অভিমত, যা সত্য হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে। আজ যদি কেউ একটা বইতে লেখে, অধ্যাপক ইকবালের হাত রোজ রাত একটার সময় লম্বা হতে হতে হতে হতে শোবার ঘর থেকে ডাইনিং রুমে এসে ফ্রিজ খুলে একটা প্যাটিস বের করে নিয়ে আবার ছোটো হতে হতে হতে হতে ডাইনিং রুম থেকে শোবার ঘরে চলে যায়, এটা কি পঞ্চাশ বছর পর প্রকাশ করলেই সত্য হিসাবে ধরে নিতে হবে? বাস্তব উদাহরণ থেকে কিন্তু আমরা দেখতে পাই, ইতিহাসে মিথ্যা যুক্ত করার জন্য দীর্ঘ সময় নেওয়ার উদাহরণই বরং কিছু জোচ্চোর প্রকাশক আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে। অধ্যাপক ইকবাল বই পড়ে যে "একটু" মন খারাপ করেছেন, সে ক্ষত তিনি সারাবার জন্যে ধর্ণা দিয়েছেন প্রথমা প্রকাশনের কাছে। এবং সে আলাপচারিতার বিবরণ থেকে আমরা জানতে পারি, বইটির কোনো পাণ্ডুলিপি নেই, বইটি লেখা হয়নি, বরং খন্দকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বইটি "প্রস্তুত" করা হয়েছে। মনের সেই "একটু খারাপ" ভাবকে সারানোর ঔষধ হিসাবে "মনের সান্ত্বনা"র জন্যে অধ্যাপক ইকবাল প্রথমা প্রকাশনের কাছ থেকে এই প্রস্তুতির ওপর একটু পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রার্থনা করেছেন। অধ্যাপক ইকবাল লেখার এ পর্যায়ে এসে তাঁর অনুরাগভাজন খন্দকারকে নিষ্কৃতি দেওয়ার একটি উপায়ও খুঁজে পেয়েছেন। বইটি লেখার দায়ভার কি শুধু লেখকের? প্রকাশককেও কি খানিকটা দায়ভার নিতে হবে না? আপত্তিকর কিংবা বিতর্কিত কিছু লিখে একজন লেখক সমালোচনা আর অসম্মান সহ্য করবেন এবং সেই সমালোচনা আর অসম্মান বিক্রি করে প্রকাশক অর্থ উপার্জন করবেন সেটি কেমন কথা? আমরা কি কোনোভাবে প্রকাশককেও দায়ী করতে পারি? এ ব্যাপারে অধ্যাপক ইকবালের সঙ্গে আমি সর্বাংশে সহমত পোষণ করি। এবং দেখতে পাই যে তিনি খন্দকারের বইটিকে "আপত্তিকর" হিসাবে উল্লেখ করছেন। কিন্তু এই "আপত্তিকর" রচনাকে তিনি লেখার আরেক অংশে "মত প্রকাশের স্বাধীনতা" হিসাবেও উল্লেখ করছেন। অর্থাৎ, তাঁর দাবিটি হচ্ছে, যারা মানী লোক, তাদের মত আপত্তিকর হলেও আমরা পাঠকেরা, যাদের কেবল অপমানিত হওয়ার সুযোগ আছে, তারা কিছু বলতে পারবো না। বললে যদি মানী লোকটি অপমানিত হন? অধ্যাপক ইকবাল, যিনি খন্দকারের বইটি পড়ে অপমানিত হন না, মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়কের মুখে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অসত্য অসংলগ্ন কথা শুনে ক্ষুব্ধ হন না, অতীতে তাঁর নিজের হাতে মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টিকে ভূলুণ্ঠিত করার উদাহরণ গোপন রেখে কেবল সেক্টর কমাণ্ডারস ফোরামে তাঁর নেতৃত্বের কথাটুকুই বলেন, কায়দা করে চেপে গেলেন, স্বয়ং সেক্টর কমাণ্ডারস ফোরামের অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধনায়কেরা কী তীব্র ভাব ও ভাষায় খন্দকারের বইটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন [সূত্র]। সেইসাথে অধ্যাপক ইকবাল এক আছায্য পাটীগণিতেরও সন্ধান দিয়েছেন আমাদের। তিনি আবিষ্কার করেছেন, এই "আপত্তিকর" বইটি লেখার দায়ভার যদি বইটির প্রকাশক মতি কিছুটা নেয়, তাহলে খন্দকার তাঁর সম্মান আবার ফেরত পাবেন। তাঁর কাছে সম্মান বিষয়টি বিস্কুটের মতো, আর অপমান সেই বিস্কুট কেড়ে নেওয়ার মতো। যদি কেউ কুকর্মের ভাগিদার হিসেবে হাজির হয়, তাহলে খন্দকার অর্ধেক বিস্কুট ফেরত পাবেন, এমনই মনে হয় তাঁর প্রস্তাব শুনলে। আমার খুব ইচ্ছে আমাদের সবার কাছে সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকারের বক্তব্যের দায়ভার প্রকাশক খানিকটা হলেও গ্রহণ করে তাঁকে যেন তাঁর সম্মানটুকু ফিরিয়ে দেয়। অধ্যাপক ইকবাল তুচ্ছ ব্লগ-ফ্লগ পড়ে সময় নষ্ট করবেন না জানি। তারপরও বিনয়ের সঙ্গে তাঁকে বলি, বইটি বিক্রি করে যে অর্থ প্রথমা প্রকাশন উপার্জন করছে, তার একটি নির্দিষ্ট শতাংশ কি খন্দকার রয়্যালটি হিসাবে পাচ্ছেন না? তাঁর অসম্মানের বিনিময়ে মতি প্রকাশক একলাই কামাচ্ছে, ওনাকে কি কিছুমিছু দিচ্ছে না? দ্বিতীয়ত, এ কে খন্দকার তো হামাগুড়ি দেওয়া শিশু নন, যে ওনাকে ভুলিয়েভালিয়ে বই "প্রস্তুত" করে মতি ওনাকে অপমানের দিকে ঠেলে দেবে। উনি সবকিছু জেনে বুঝে যেমন খন্দকার মুশতাকের কাছে আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন, সবকিছু জেনেবুঝে যেমন জিয়ার রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন, সবকিছু জেনেবুঝেই যেমন এরশাদের মন্ত্রী আর মাওলানা মান্নানের সহকর্মী হয়েছিলেন, তেমনই এ বইটাও সবকিছু জেনেবুঝেই লিখেছেন (আসলে "প্রস্তুত" করতে সহায়তা করেছেন)। মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়ক পরিচয়টিকে বাংলাদেশে সবচেয়ে অপমান যদি কেউ করে থাকে, তিনি আবদুল করিম খন্দকার নিজেই। এতো কথার পর মুখে চলে আসা থুতু গিলে ফেলে তৃতীয় অনুরোধটা বিনয়ের সঙ্গেই করি, মুক্তিযুদ্ধের উপসেনানায়কের অসম্মান বিক্রি করে পয়সা কামানো মতি প্রকাশকের পত্রিকা কিশোর আলোতে পরবর্তী লেখাটি কী নিয়ে লিখবেন স্যার? | false |
mk | জঙ্গিদের কোপানলে সাধারণ মানুষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিককে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার পথে রাজশাহীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসার কাছে দুর্বৃত্তের চাপাতির কোপে জীবন দিতে হলো। নির্দয়ভাবে হত্যা করা হলো একজন সুহূদ শিক্ষককে। রাজনীতিতে যুক্ত থাকেননি, দলবাজি করেননি এবং দলীয় বা সামাজিক কোন্দলের ভিতরে তাঁকে কখনও দেখা যায়নি। শিক্ষকতা নিয়ে নিবিষ্ট থেকেছেন। অহমিকামুক্ত আলোকিত জীবনযাত্রার পথে চলা ব্যক্তিটির ঝোঁক ছিলো সংস্কৃতির দিকে। বিনোদনের খোঁজে তানপুরা বাজাতেন একাকীত্বে আর একটি গানের স্কুল খুলতে চেয়েছিলেন নিজ গ্রামে যা একসময় জেএমবি নেতা বাংলা ভাইয়ের দুর্গ ছিলো। নাস্তিক-আস্তিক লড়াইয়ে তার পক্ষপাত ছিলো না। নিজ গ্রামে মসজিদও বানিয়েছেন এবং মাদ্রাসায় চাঁদাও দিয়েছেন নিয়মিত। সকলের শ্রদ্ধাভাজন হয়েও অলক্ষ্যে জঙ্গি হামলার লক্ষ্যবস্তু বনে গেলেন।ক্ষোভ ও প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গন। ইসলামি মৌলবাদীদের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪জন প্রথিতযশা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার শিক্ষককে জীবন দিতে হয়েছে বিগত একযুগে। গতবছরের ১৫ নভেম্বর লালনভক্ত অধ্যাপক শফিউল ইসলাম ভুইয়াকে একই কায়দায় দুর্বৃত্তরা খুন করে। আনসার আল ইসলাম নামের জঙ্গি দল দায় স্বীকার করলেও পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। অধ্যাপক তাহের আহমেদ খুন হন ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। তাঁকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন তার সহকর্মী শিক্ষক ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতাসহ দু’জন। হাইকোর্ট দণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন। ২০০৪ সালে অধ্যাপক ইউনুছকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলেন দু’জন জেএমবি নেতা কিন্তু পরবর্তীতে তা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হয়। এবারের হত্যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মার্কিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ টুইট বার্তা দিয়ে প্রকাশ করলো আন্তর্জাতিক জঙ্গি ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দায় স্বীকার। বাংলাদেশে গতবছর থেকে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট হামলার ধারাবাহিক দায় স্বীকারের বার্তাবাহক হিসাবে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ আবর্তিত হয়েছে যার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিশ্চিত করেনি। গত নভেম্বরে ঢাকায় ইতালি নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যার পর থেকে বাংলাদেশে আইএস বা আল-কায়েদা হত্যার তথাকথিত দায় স্বীকার অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের সরকার আইএস-এর অস্তিত্ব মেনে নেয়নি এখনও পর্যন্ত। আইএসের মূল লক্ষ্যের ভরকেন্দ্র এখনও পাশ্চাত্য কেন্দ্রিকতা থেকে সরে আসেনি। সরকারের অবস্থানের বিপরীতে বিদেশি বন্ধুরা কোন নতুন তথ্যের জোগান না দেয়ায় সরকার অবস্থানে অনড়। জামায়াত নেতা মোল্লা কাদেরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ফাঁসির রায় না হওয়ার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠা তরুণদের গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হলে ব্লগার রাজীব হায়দার রাতের আঁধারে কুপিয়ে খুন হন নাস্তিকতার অপরাধে। পরবর্তীতে অভিজিত্ রায়সহ অন্তত পাঁচজন ব্লগারখ্যাত ব্যক্তিকে নির্মমভাবে হত্যার বলি হতে হয়েছে। মুক্তচিন্তা চর্চারত ব্লগারদের নাস্তিকতার দায়ে খুন করা ইমানি দায়িত্ব বানিয়ে হত্যার দর্শন সৃষ্টি করে জঙ্গিরা, যদিও আইএস জন্মের অনেক আগে থেকেই চাপাতি-হত্যার কৌশল প্রয়োগ করে কোপানো হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে। কবি শামসুর রাহমানকেও হত্যার চেষ্টা করেছিল দেশীয় জঙ্গিরা।মনোজগতের যুদ্ধে স্বাধীন চিন্তার আগ্রাসনকে সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে ইসলামি জঙ্গিবাদ। চিন্তার মুক্তধারাকে রুখতেই চিন্তকদের হত্যার কৌশল অনেকদিন থেকেই মৌলবাদীরা অনুসরণ করে আসছে। ইদানীংকালের টার্গেটগুলোর মধ্যে বহুমাত্রিকতার অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রথমদিকে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা ও চেতনার খ্যাতিমান ধারকদের টার্গেট করা হয়েছে, প্রগতিশীল লেখকদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে হত্যা করে আস্তিক-নাস্তিক লড়াইয়ের সূচনা করা হয়। মুক্তচিন্তার চর্চা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় বলে অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেন। অপ্রত্যক্ষ কৌশল হিসাবে ধর্ম নিয়ে লেখালেখি বন্ধে মনোযোগী হয়ে পড়তে দেখা যায় প্রশাসনকে। কিন্তু চোরে শোনে না ধর্মের কাহিনীর মত সন্ত্রাসীরা বিদেশিদের উপর হামলা শুরু করে, আবার দিক পরিবর্তন করে খ্রিস্টান ধর্মযাজক ও হিন্দু পুরোহিতদের টার্গেট করে। ধর্মান্তরিত হয়ে যাওয়া মানুষদের লাশ ফেলতে শুরু করে এবং অন্যান্য তরিকার অনুসারী পীর মাশায়েকদেরও হত্যা করে। অপরদিকে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করতে গোষ্ঠীগতভাবে শিয়া, আহমেদিয়া জামায়াত, মারফতি, মুরশিদ, বাউল সাধক, সাধু-সন্ন্যাসীসহ মন্দির, মাজার, সাধু আস্তানা ও মসজিদকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।ইদানীংকালে নাস্তিক তকমার বাইরে থাকা ব্যক্তিদের জীবনধারাকে উপলক্ষ্য করে হত্যার তালিকায় নেয়া হচ্ছে। জ্ঞানের মহিমায় মহিমান্বিত, উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলা সার্বজনীন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গের অনুসারীসংখ্যা গুণিতক হারে বাড়ে, ফলে জঙ্গিবাদের প্রসারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। মূল কথায় বাঙালিত্বকে উগ্রবাদীরা ইসলাম-বিরোধী সংস্কৃতি বিবেচনা করে। ফলে শিক্ষক ও লেখকরা সহজেই জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তু বনে যাচ্ছেন যার পেছনে সংঘাতী দর্শনের সম্পৃক্ততার চেয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নন্দিত বা নিন্দিত দৃষ্টি বেশি অনুঘটক হিসাবে কাজ করছে। “আইএস” নাম যুক্ত হলে গণমাধ্যমের আকর্ষণ ও জায়গা দুটোই বেশি পাবার সম্ভাবনায় থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিদের গোপন ও বর্বর হামলার তালিকায় নিরস্ত্র ও নিরীহ মানুষের নাম যোগ হচ্ছে। যাদের হত্যার সহজ শিকার বানিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যাবার নিশ্চয়তার সুযোগ অনেক বেশি। একক ও অরক্ষিত ব্যক্তিকে আক্রমণ করার সুবিধাকে কাজে লাগাচ্ছে বাংলাদেশের জঙ্গিগোষ্ঠী। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করা দৃষ্টির অগোচরে থাকা গুণী মানুষগুলোকে খুন করে আইএসের বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জিত হবার কোন সুবিধা না ঘটলেও গণমাধ্যমের কারণে ‘আইএস’-এর কমবেশি ব্রান্ডিং হচ্ছে নিঃসন্দেহে। বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদের বীজ রোপণ করেছে জামায়াতে ইসলামীর মতো মৌলবাদী দল। ইসলামি শাসনব্যবস্থা কায়েমের দর্শন নিয়ে জন্ম হওয়া দলটি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সমস্ত সুযোগ নিয়ে বেড়ে উঠেছে। পুঁজিবাদী শক্তিগুলোর সাথে ইসলামি মৌলবাদী গোষ্ঠীর অন্তরঙ্গতা যেমন অনেক পুরোনো। ঠিক তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের বাদশাহদের অবারিত আর্থিক আনুকূল্য নিয়ে এদেশে তরতর করে বেড়ে উঠেছে ইসলামী মৌলবাদীরা। সৃষ্টি করেছে বিশাল আর্থিক সাম্রাজ্য।মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি বাদশাহরা নিজেদের রাজ্য ও সম্পদ সুরক্ষিত করতে পুঁজিবাদী বিশ্বের সখ্যতাকে নিরাপত্তার ভিত্তি হিসাবে গণনা করেছে। আইএসের দার্শনিক ভিত্তি সুন্নি ও ওয়াহাবি আকিদা যার দক্ষিণ এশীয় সংস্করণ হয়েছে মওদুদীবাদ। মৌলবাদী দলের গণতান্ত্রিক চরিত্রের আড়ালে লুকিয়ে থাকা উগ্রবাদী সহিংস দর্শন থেকে ইসলামিক স্টেটকে আলাদাভাবে দেখার ভুল থেকে “মডারেট ইসলাম” নামের তত্ত্বের জন্ম যা উগ্রবাদীদের সুরক্ষা দেবার পশ্চিমা কৌশল।আইএসের জন্ম ও উত্থান নিয়ে অনেক হাইপোথেসিস থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সমীকরণ ভিন্নমুখী প্রবাহ তৈরি করছে। সৌদি-মার্কিন সম্পর্কের টানাপোড়েন, ইরান নিয়ে মার্কিনীদের নতুন সম্ভাবনাময়ী ধারণা কৌশল, ইয়েমেন যুদ্ধের চোরাবালিতে সৌদিদের আটকে পড়া, আইএস বিরোধী যুদ্ধে আরব দেশগুলোর নেতিবাচক ভূমিকা, মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আধিপত্য থেকে নতুন মেরুকরণের প্রভাব বাংলাদেশের মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী শক্তির অস্তিত্ব কম্পমান ঠিক তখনি আইএস-এর পত্রিকা দাবিক-এর পাতায় আবির্ভূত হলো বাংলাদেশের আইএস প্রধান শেখ ইব্রাহিম আল হানিফ নামের কাল্পনিক চরিত্র। ভৌতিক গল্পের মতো সুখপাঠ্য হলেও বস্তুনিষ্ঠতার অনুপস্থিতি সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এড়ালেও বিশ্লেষকদের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারেনি। বাংলাদেশে দীর্ঘসময় ধরে চলা জঙ্গি-বিরোধী অভিযানে জঙ্গি সংগঠনগুলো কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অস্তিত্ব সংকটে থাকা মৌলবাদী রাজনীতি আগের মত পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারছে না। ফলে জঙ্গি দলগুলোর টুকরো টুকরো অংশগুলো স্বভাবতই টিকে থাকার শেষ ও নতুন কৌশল হিসাবে সংগোপনে কিলার সেল বানিয়ে আচমকা হামলা করে অরক্ষিত ও নিরীহ মানুষকে খুন করে নিজেদের অস্তিত্বকে ধরে রাখার চেষ্টা চালাবে এতে অবাক হবার কিছু নেই। জিহাদি উজ্জীবনী সুধা আগের মত কাজে না লাগায় জঙ্গিরা হতাশাগ্রস্ত। নাস্তিক-আস্তিকের লড়াইয়ে মানুষের সমর্থন ধরে রাখতে সুযোগ বুঝে যে কাউকে হত্যা করে গণমাধ্যমে টিকে থাকার দেশীয় জঙ্গিদের নতুন কৌশলের বলি হতে হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় অধ্যাপককে।বাংলাদেশে জঙ্গিদের হত্যাকাণ্ডগুলোকে আইএস তকমা লাগানোর ফলে সরকার সম্ভবত অযাচিত বিদেশি হস্তক্ষেপ ঠেকাতে বাধ্য হয়েছে “আইএস নেই” অবস্থানে যেতে। অপরদিকে হত্যার ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অনেক আগ্রহ দেখাচ্ছে এবং আইএসের উপস্থিতি খুঁজতে ব্যতিব্যস্ত। ক্রমাগতভাবে আইএসের দায় স্বীকারের বিপরীতে সরকারের অস্বীকারের বিতর্ক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের আকর্ষিত উপাদানে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের জঙ্গিবিরোধী শূন্য সহিষ্ণুতা নীতির প্রশংসার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে জঙ্গি নির্মূলে সাফল্যের ঘাটতি বা নিষ্ক্রিয়তা এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কুফল নিয়েও সমালোচনা বাড়ছে। ধর্মীয় অনুভূতির আঘাত থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে নাস্তিক মেরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সহানুভূতি কুড়াচ্ছে ভেবে উস্কানি ঠেকাতে উত্সাহী হয়ে কিছু মন্তব্য করায় আন্তর্জাতিক মহলে সমাদৃত হয়নি এবং জঙ্গি নির্মূলে পূর্বের অনড় অবস্থানের শিথিলতা হিসাবে মনে করতে শুরু করেছে।জঙ্গিবাদী মতাদর্শে নৈতিকতার জায়গা খুব ছোট। যারা নিরীহ মানুষ মারতে কুণ্ঠিত নয় তাদের কাছে ধর্মীয় অনুভূতি একটি ছুতো মাত্র। অধ্যাপক রেজাউল করিমের হত্যা সেটাই আবার প্রমাণ করলো কারণ তিনি নাস্তিকতার দৃশ্যমান কোন কাজ করেছেন বলে জানা যায়নি। তথাপি তাঁর বিরুদ্ধে নাস্তিকতার আহবান জানানোর অভিযোগ করেছে বলে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের টুইটে জানা যায়। আইএস নিয়ন্ত্রিত জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব বাংলাদেশে দৃশ্যমান না হলেও ইন্টারনেটের সুবাদে বারে বারে প্রচারিত হচ্ছে। নিজ অস্তিত্বকে জাহির করার মত সক্ষমতা সৃষ্টির বদলে সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করার নিজ ক্ষমতা জাহির করার প্রবণতা নিঃসন্দেহে সাংগঠনিক দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ।গণমাধ্যম বা আন্তর্জাতিক মহলে তোলপাড় হলেও দেশের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা বোধের আস্থার ক্ষয় ধরেছে সেটা মানতেই হবে। নীরব ও আচমকা হামলা থেকে নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। চিন্তা-চেতনার স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক মননশীল জীবনধারাকে চাপাতির কোপের ভয়ে শঙ্কায় জীবন কাটাতে হবে, জঙ্গিরা ইচ্ছামত সময়ে, পছন্দমত ব্যক্তিকে ধর্মের দোহাই দিয়ে বা জিহাদের নামে কতল করবে এবং রাষ্ট্র দর্শকের মতো চেয়ে থাকবে না এটাই মানুষের দাবি। রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ ও দর্শন যারা স্বাধীনভাবে ধারণ ও চর্চা করেন সক্রিয় রাজনীতি না করলেও তাদের মধ্যেই রাষ্ট্র বাস করে। হাজার বছরের লালিত সংস্কৃতি ধর্মীয় চাপাতির কোপানলে পড়লেও সংস্কৃতি চর্চা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার অফুরন্ত বিকাশের মধ্যেই নিহিত থাকবে গণতন্ত্র। মনন, মেধা এবং জীবনযাত্রার উপর অপশক্তির বর্বরোচিত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকে রুখতে রাষ্ট্রের অবস্থান হতে হবে অত্যন্ত স্থির, অনড় এবং স্বচ্ছভাবে দৃশ্যমান। আঘাত বন্ধে সনাতনী আইন-কানুন কাঙ্ক্ষিত নিরাপত্তা দিতে পারছে না বলে একের পর এক খুন হয়েই চলেছে। হত্যা বন্ধে প্রয়োজনে এসকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নতুন ব্যবস্থা চালু করতে হবে যাতে নিশ্চিতভাবে পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়। মেজর জেনারেল মো. আব্দুর রশীদ (অব সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ সকাল ১০:২৭ | false |
rg | টিআইবি'র Strong Verb & Weak বিনোদন !! ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সংক্ষেপে টিআইবি। যাদের ডোনারগণ হলেন ১. Department for International Development (DFID), ২. Danish International Development Agency (DANIDA), ৩. Norwegian Government, ৪. Swedish International Development Cooperation Agency (SIDA), ৫. United Nations Development Programme (UNDP) ও ৬. Swiss Agency for Development and Cooperation (SDC)। টিআইবি'র বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টি মেম্বার মোট ৯ জন। এরা হলেন-১. অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, চেয়ারপারসন২. লেখিকা ও সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সেক্রটারি জেনারেল৩. জনাব মাহফুজ আনাম, ট্রেজারার৪. এম হাফিজউদ্দিন খান, সদস্য৫. অ্যাডভোকেট তওফিক নেওয়াজ, সদস্য৬. সৈয়দা রুহি গজনবি, সদস্য৭. রোকেয়া আফজাল রহমান, সদস্য৮. এটিএম শামসুল হুদা, সদস্য৯. লেখক প্রফেসর সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামআর এই সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক হলেন ডক্টর ইফতেখারুজ্জামান। তো টিআইবি কি কাজ করে বাংলাদেশে? বাংলাদেশে দুর্নীতি কমাতে এবং সুশাসন প্রমোট করতে নানা ধরনের ক্যাম্পেইন করেন। সেই ক্যাম্পেইন কাদের নিয়ে করেন? কিছু এনজিও আর তাদের পোষ্য কিছু ভাড়াটের নিয়ে। সেই ক্যাম্পেইনে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কতোটা সচেতন হচ্ছে? এটা তো ভাই সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্য কোনো প্রোগ্রাম না, এটা হল যারা দুর্নীতি করেন আর দেশ শাসন করেন, তাদেরকে সঠিক পথ নির্দেশ দানের একটা প্রকল্প। এটা প্রথম বাংলাদেশে কে শুরু করেছিলেন? প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমেদ। তখন বাংলাদেশে সরকার প্রধান কে ছিলেন? শেখ হাসিনা তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তখন টিআইবি কি ঘোষণা দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল? দুর্নীতিতে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন। পরপর তিনবার টানা দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবার পর কি হল? বিএনপি সরকার গঠন করলো। তারপর কি হল? বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন খেতাবটি হারালো। তারপর কি হল? দেশে একটি ওয়ান ইলেভেনের সরকার কায়েম হল। সেই সরকারে কারা ছিলেন? অনেকেই ছিলেন। তাদের মধ্যে কয়জন এই টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য? মাত্র তিনজন। কিন্তু সেই সরকার তো ছিল ১১ জনের। সেখান থেকে মাত্র তিনজন? না, ওই সময় যিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন তিনিও টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। তা বুঝলাম, কিন্তু এখন দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান কত? আজ ৩রা ডিসেম্বর টিআইবি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে সারা বিশ্বে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬তম। তাহলে কি বাংলাদেশের দুর্নীতি কমেছে? না কমেনি, তবে বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনে দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন হয় নি। ও আচ্ছা দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাহলে সবাই যে বলাবলি করে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। হলমার্ক সোনালী ব্যাংক কেলেংকারী হয়েছে। শেয়ারবাজার কেলেংকারী হয়েছে। এগুলোর কি অবস্থা? এগুলো কি টিআইবি তাদের হিসেবে ধরেনি? মনে হয় ধরেছে, কিন্তু সেটা দৃশ্যমান নয়। অদৃশ্যমান। তা বাংলাদেশ দুর্নীতিতে এবার কত স্কোর করলো? ২৭। মাত্র ২৭? গত বছর কত স্কোর ছিল? ২৬। আর গত বছর দুর্নীতিতে বাংলাদেশের সিরিয়াল সারা বিশ্বে কত ছিল? গত বছর ১৩তম অবস্থানে ছিল। তাইলে তো মনে হয় দুর্নীতি কমেছে। নইলে ১৩ থেকে ১৬তে কেমনে যায়? আরে সেটা অন্য হিসাব। অন্য হিসাব মানে? বিশ্বের অন্যান্য দেশে দুর্নীতি আরো বেড়েছে তাই বাংলাদেশের দুর্নীতি সে তুলনায় ততোটা দৃশ্যমান নয়। ও আচ্ছা সেই কথা।তো ভাই, এ বছর চ্যাম্পিয়ন হইলো কারা?সোমালিয়া, উত্তর কোরিয়া ও আফগানিস্তান। তিনজন এবার চ্যাম্পিয়ন? হ ভাই তিনজন। সোমালিয়া আর আফগানিস্তান তো এমনিতেই গরিব। হেরা কিসে দুর্নীতি করলো? তাদের দেশে যেসব বিদেশী সাহায্য সহযোগিতা যায়, তাই হেরা দুর্নীতি কইরা লুটপাট করছে। আর উত্তর কোরিয়ায়? হেরা খালি মিসাইল বানাইব। টেহাটুহা নাই আবার এই কয় মিসাইল বানাইছি। এই কয় দাগাইয়া দিলাম। খালি আওয়াজ পারে হেরা। হের লাই হেগো এবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করা হইছে। তো সবচেয়ে কম দুর্নীতি কারা করে? ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড। দুইজন? হ দুইজন। হেরা সবচেয়ে ভালা দেশ। হেগো দেশে কোনো এসব আকাম কুকাম নাই কা। ভাই ডানিডা কোন দেশী ডোনার যেনো? ডানিডা তো ডেনমার্কের এইডা সক্কলেই জানে, আর আপনে জানেন না। না মানে জানি, কিন্তু ডানিডারে এক নাম্বারে রাইখা বাকী ডোনারদের একটু ছোডো করা হইলো না? না্কি হেরা এবার টেহাটুহা কম দিছে? ভাই আপনি কি কইতে চান?না কইছিলাম কি, যেমন ধরেন ব্রিটিশ-আমেরিকান ডিএফআইডি আছিল, সুইডেনের সিডা আছিল, সুইজারল্যান্ডের এসডিসি আছিল, নরওয়ের সরকার আছিল, এমনকি খোদ জাতিসংঘের ইউএনডিপি-ও আছিল। হেগো সক্কলরে বাদ দিয়া ডেনমার্কের নাম দেইখা একটু চমকি গেলাম আরকি। আর নিউজিল্যান্ড, হেরা তো টেহাটুহা-ই দেয় না। হেরা কেমন কি? ভাই ভবিষ্যতে আরো ডোনার লাগবো না। এইডা সেই ক্যাম্পেইনের অংশ কিনা। ও আচ্ছা। তো ভাই, ডেনমার্ক আর নিউজিল্যান্ডের স্কোর কত? হেগো স্কোর ৯১। তো হেগো স্কোর তো ১০০ হইলো না। মানে হেগো দেশেও কিছু অদৃশ্যমান দুর্নীতি হয় মনে হচ্ছে। কেন আপনার তা মনে হয় কেন? এই যে ১০০-এর মধ্যে হেরা ১০০ পাইলো না। ৯ নাম্বার কম পাইলো। এই ৯ নাম্বারের হিসাব কোই যাইবো? আরে দুরো মিঞা, আপনে একটা আজাইরা প্যাচাল পারতাছেন? হেরা এবার বেশি ডোনেট করছে। হেগো ভালো কইবো না তো আপনারে ভালো কইবো?আচ্ছা ভাই, একটা কথা জিগামু? জিগান? কি জিগাইতে চান?ওয়ান ইলেভেনের সরকারে যারা ছিল, হেরাও নাকি দুর্নীতি করছিল? তখন বাংলাদেশের অবস্থা কি ছিল? তখন খুব ভালা ছিল, খুব ভালা। তো তারা দেশ ছাইড়া বিদেশে পাড়ি দিছিল ক্যান? আরে দুরো মিঞা, হেই কথা মুই জানুম কেমনে? ভাই, আরেকটা শেষ কথা জিগামু? জিগান, আপনে যতো পারেন জিগান? ভাই, কয়টা দেশে এই দুর্নীতি'র চিত্র প্রকাশ করা হয়েছে? সারা বিশ্বে একযোগে মোট ১৭৭টি দেশে আজ এই দুর্নীতি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। ভাই, ১৭৭টা দেশে এই রিপোর্ট একযোগে প্রকাশ করতে যে টেহাটুহা খরচ হইছে, সেই থেইকা কি কোনো উল্টা পাল্টা হয় নাই? মানে যারা এই রিপোর্ট প্রকাশ করলেন, হেরা কি আজকের খরচের হিসাবটা একটু এদিক সেদিক করেন নাই? যতোদূর শুনেছি, এনজিওরা সব হিসাব নিকাশ একটা বানানো কাগজে লেখে। সঠিক হিসাবের খাতা কাউরে দেখায় না। তো ১৭৭টা দেশে একযোগে দুর্নীতি রিপোর্ট প্রকাশের যে খরচে, সেই খরচে যে এদিক সেদিক হইতে পারে সেটা অনুমান কইরা কইছি আরকি! আপনে বানান করেন তো বিনোদন? বিনোদন? ব-য় ই-কার, ন-য় উ-কার, দ-য় উ-কার, আর দন্ত ন, বিনোদন। আপনে বানা্ন কইরা যা কইলেন, তা তো হইছে বিনুদুন! এ্যাঁ? তাইলে আবার করি? না থাক, এবার করতে গেলে আপনে ব-তেও উ-কার মারবেন মিঞা। তখন আর তা বিনোদন থাকবে না। আপনে মিঞা স্ট্রং ভার্ব আর ইউক ভার্ব বোঝেন? এইডা হইলো গিয়া স্ট্রং ভার্বের বিনোদন। আর আপনে কইতাছেন ইউক ভার্বের বিনুদুন!!! | false |
rn | শার্লক হোমস-কে নিয়ে লেখা একটি ক্ষুদ্র গল্প । #### সকালে খাবার টেবিলে বসার পর থেকেই ওয়াটসন মন দিয়ে সঙ্গীকে লক্ষ্য করছিলো। হোমস মুখ তুলতেই তার নজরে এলো। "কি নিয়ে ভাবছো এতো।" "ভাবছি তোমাকে নিয়ে।" "আমাকে নিয়ে!" "হ্যাঁ। ভাবছিলাম, তোমার চিন্তা করার কায়দাটা নিতান্তই মামুলী, অথচ লোকেদের এখনও তাতে কী আগ্রহ -- সেটা অবশ্য আনন্দেরই কথা। " "ঠিকই বলেছো", হোমস বলল। "সত্যি কথা বলতে কি, আমার মনে পড়ছে আমিও এক সময়ে ঐ একই কথা বলেছিলাম।" "তোমার চিন্তা-ভাবনার ধরণটা সহজেই শেখা যায়", ওয়াটসন একটু বাঁকা ভাবেই মন্তব্য করল। "নিঃসন্দেহে", হোমস মুচকি হেসে বলল, "বোধহয় তুমি নিজেও আমি কি ভাবে চিন্তা করি তার উদাহরণ দিতে পারো। দেবে।" "সানন্দে", ওয়াটসন উত্তর দিলো। "আমি বলতে পারি আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পর্যন্ত তুমি কিছু নিয়ে খুব ভাবছো।" "চমত্কার!" হোমস বলল, "কি করে তুমি সেটা বুঝলে।" "কারণ তুমি নিজে সব সময়ে ফিটফাট থাকো, কিন্তু আজকে দাঁড়ি কামাতে ভুলে গেছো।" "সত্যি, তুমি চালাক", হোমস বলল। "আমার কোনও ধারণাই ছিল না যে তুমি এতো যোগ্য চ্যালা। তোমার তীক্ষ্ণ চোখে আর কিছু ধরা পড়েছে।" "হ্যাঁ। তোমার বার্লো নামে একজন মক্কেল আছে এবং তুমি তার সমস্যার সমাধান করতে পারো নি।" "ওরে বাবা, সেটা তুমি কি করে জানলে।" "ওর খামটার বাইরে নাম লেখা আছে। তুমি খামটা খুলে বিরক্তি প্রকাশ করে ভুরু কুঁচকে পকেটে রেখে দিলে। " "নাঃ, তোমার পর্যবেক্ষণ শক্তি আছে। আর কিছু বলতে পারো।" "আমার ধারণা হোমস, তুমি ফাটকাবাজি শুরু করেছো।" "সেটা কি করে বুঝলে, ওয়াটসন।" "তুমি খবরের কাগজ খুলে সোজা শেয়ার মার্কেটের পাতায় চলে গেলে, তারপর তোমার হর্সোচ্ছ্বাস শুনলাম।" "এটাও দারুণ বলেছো, ওয়াটসন। আর কিছু।" "হ্যাঁ, হোমস। তুমি ড্রেসিং গাউন না পরে, তোমার কালো কোটটা পরেছো। তারমানে তুমি কোনও নামিদামি অতিথির অপেক্ষায় আছো।" "আর কিছু।" "নিঃসন্দেহে আরও অনেক কিছু খুঁজে বার করতে পারি; শুধু কয়েকটা বললাম তোমাকে দেখাতে যে, অন্যরাও তোমার মতোই চালাক।" "এক আধজন নিশ্চয়, তবে সবাই নয়। আমার আশঙ্কা তুমি ঐ পরের দলেরই একজন।" "তারমানে।" "প্রিয় বন্ধু, তোমার সিদ্ধান্তগুলো ঠিক যেরকম হবে ভেবেছিলাম সেরকম কিন্তু হল না।" "তারমানে আমি ভুল বলেছি।" "একটু বোধহয় ভুলই বলেছো। তুমি যা পরপর বললে সেগুলোই ধরি। আমি দাঁড়ি কামাই নি, কারণ আমার ক্ষুরটা ধার দিতে পাঠিয়েছি। আমি কোট পরেছি, কারণ আমার মন্দভাগ্য যে, সকাল সকাল আমাকে আজ ডেণ্টিস্টের কাছে যেতে হবে। তার নাম বার্লো, এবং চিঠিটা সেই অ্যাপয়েণ্টমেণ্টের কথাটাই মনে করিয়ে দেবার জন্য পাঠানো হয়েছে। শেয়ার কেনা-বেচার পাশের পাতাটাই ক্রিকেটের পাতা। সেখানে দেখছিলাম সারে-র দল কেণ্ট-এর বিরুদ্ধে লড়াইটা কিরকম করল। যাইহোক, তুমি চালিয়ে যাও। আমার চিন্তা-ভাবনার করার কায়দাটা সত্যিই মামুলি, তুমি নিঃসন্দেহে শিগগিরি রপ্ত করতে পারবে।" আর্থার কোনান ডয়েল এটি সম্ভবতঃ শার্লক হোমস নিয়ে লেখা আর্থার কোনান ডয়েল-এর ক্ষুদ্রতম গল্প। গল্পটি পাওয়া যাবে: শার্লোকিয়ান.নেট-এ । গল্পটির অন্য একটি অনুবাদ পাওয়া যাবে প্রসাদ সেনগুপ্তের লেখা গবেষণামূলক গ্রন্থ 'আর্থার কোন্যান ডয়েল - জীবন ও সাহিত্য' গ্রন্থে। প্রকাশক প্রেসিডেন্সী লাইব্রের্রী সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:০৮ | false |
hm | প্রবাসে দৈবের বশে ০৫১ ১. ভালো যাচ্ছে না দিনগুলি। আগামী পরশু একটা বড়সড় পরীক্ষা আছে। কয়েকটা জায়গা থেকে ঝাড়ি খাওয়ার আশঙ্কা বুকে নিয়ে হেলেদুলে পড়ে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ বন্ধের কারণে ঘুমের চক্র কিছুটা কেৎরে গিয়ে আবার আমাকে নিশাচর বানিয়ে ছেড়েছে। প্রায় ভোর পর্যন্ত জেগে থেকে দুপুরের দিকে উঠি, ওঠার পর বিশ্বজগৎ বিরস লাগে। এলাচ দিয়ে চা বানিয়ে খাই, মাঝে মাঝে বিস্কুট দিয়ে। সেইসব বিস্কুট, যেগুলি এক সেকেন্ডের চেয়ে এক মাইক্রোসেকেন্ড বেশি পরিমাণ সময় চায়ে চুবিয়ে রাখলে মনের দুঃখে গলে জল হয়ে যায়। সেটাকে তৎক্ষণাৎ আরেকটা বিস্কুট দিয়ে উদ্ধার করার চেষ্টা করলে সেটার পরিণতিও আগেরটার মতোই হয়। এই রাহু সেই শৈশব থেকে পিছে লেগে আছে আমার। বিস্কুটনির্মাতাদের কাছে আকুল আবেদন, আপনাদের বিস্কুটগুলি আরেকটু শক্ত করে বানান। চায়ে চুবাইয়া চুবাইয়া খাইতে দ্যান এই গরীবকে। পিলিজ। ২. বিস্কুট শক্ত করার প্রসঙ্গেই আরেক কিচ্ছা মনে পড়লো। সেদিন আমার বিভিন্ন তড়িৎডাক ঠিকানায় জমে থাকা স্প্যামবার্তাগুলি খুঁটিয়ে দেখছিলাম। পৃথিবীতে বহু লোককে মনে হলো আমার পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য (এবং প্রস্থ) নিয়ে চিন্তিত। তারা অসংখ্য স্প্যাম মেইলে তাদের সেই উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেইলের শিরোনামে তাদের বক্তব্যগুলো কয়েকটা ক্যাটেগরিতে পড়ে, অনেকটা এমন, আমার দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই, কারণ তাদের শরণাপন্ন হলেই আমি আমার বেচারা প্রত্যঙ্গকে (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলের মতোই) দীর্ঘায়িত করতে পারবো। বিভিন্ন মেইলে বিভিন্ন বৃদ্ধির আশ্বাস, কেউ চার ইঞ্চি, কেউ তিন ইঞ্চি, কেউ দুই ইঞ্চি। আমার দুশ্চিন্তার অবশ্যই কারণ আছে, কারণ আমার বান্ধবীর সন্তুষ্টির কথা আমি মোটেও ভাবছি না, এবং এখনও পর্যন্ত তাদের শরণাপন্ন হইনি। আমি যেন অবিলম্বে তাদের শরণাপন্ন হই। এখনই, এই মূহুর্তেই আমার উচিত একটি প্রত্যঙ্গদীর্ঘায়ক যন্ত্র কিনে কাজে নেমে পড়া, এবং আমার স্ত্রীকে জন্মদিনে চমকে দেয়া (কার জন্মদিন তা স্পষ্ট নয়)। আমি যেন অনুগ্রহ করে একটি বিশেষ বড়ি সেবন করে আমার বিস্কুট দীর্ঘকালযাবৎ শক্ত রাখি। তা না হলে চরম পস্তান পস্তাবো। আমি কি জানি, মেয়েরা কী চায়? জানি না। জানলে প্রত্যঙ্গদীর্ঘায়ক কিনতে এতো দেরি করতাম না। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড়ে একটি বিশেষ প্যাকেজ অফার করা হচ্ছে। দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ, উভয়ই দরাজ হবে। আমি যেন জ্ঞানী হই, বান্ধবীর মুখে যেন তৃপ্তির হাসি ফোটাই। স্ত্রীদের ও বান্ধবীদের প্রতি এতদিন ধরে চর্চিত আমার এই অবহেলা ও অনীহার কারণে লজ্জাই লাগলো একটু। আমি কেমন আছি, কী খেয়ে কী পরে কী করে বেঁচে আছি, এই জিজ্ঞাসা নিয়ে সারা জীবনে মনে হয় সব মিলিয়ে অঙ্গুলিমেয়সংখ্যক মেইল পেয়েছি, আর অজানা অচেনা সব ঠিকানা থেকে এমন আহ্বান ভেসে আসছে, কেমন কেমন যেন লাগে। যদিও "নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা" টাইপ একটা ফুটানগিরির আভাস রয়েছে এই প্রস্তাবে, তারপরও স্প্যাম মেইল ট্র্যাশে পাঠাই। সবকিছুর সাথে মাস্তানি ভালো নয়। ৩. আমার নতুন পড়শী তাজিকিস্তানের ছেলে, নাম বাহুদুর। আসলেই বাহাদুর ছেলে, ফ্ল্যাটে আসার কয়েকদিনের মাথায় সে তার ঘরের দরজা লাথি মেরে ভেঙে ফেলেছে। বিষ্যুদবার রাতে বাসায় ফিরে দেখি তার দরজা ফ্রেম থেকে খোলা, সে লাপাত্তা। উঁকিঝুঁকি মেরে দেখলাম খুনখারাবা হলো কি না, তারপর থতমত খেয়ে নিজের ঘরে ফিরে গেলাম। আজ সে এসে জানালো, সেদিন সে ঘরে ঢুকতে গিয়ে চাবি দিয়ে অনেক চেষ্টা করেছে, তালা খুলতে পারেনি। রাত হয়ে গেছে দেখে সে বাধ্য হয়ে অনেক কষ্টে দরজা ভেঙে ঢুকে নিজের জিনিসপত্র আর টাকাপয়সা নিয়ে চলে গেছে বোখুম। আগামীকাল কর্তৃপক্ষকে জানাবে ঘটনা কী। বাহাদুর মারবুর্গে ছিলো, তার দেশোয়ালি বন্ধুবান্ধবরাও থাকে নর্ডরাইন ভেস্টফালেনের দিকে। ওদিককার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে, কাসেলে এসে তার কিছুই ভাল্লাগছে না। আমি মনে মনে ভাবলাম, সর্বনাশ, কাসেলের লোকজনের কপালে দুঃখই আছে তাহলে। ৪. মূলত গরু আর ভেড়ার মাংসই খাই আমরা এখানে। মুরগি কদাচিৎ। আমি বরাহমাংস মাঝে মাঝে খাই, যখন রান্নার ইচ্ছা কম থাকে, তখন স্টেক ভেজে খেয়ে ফেলি চটপট। জিনিসটার স্বাদ খুব একটা সুবিধার না, কোনমতে চলে আর কি। বছরে দুয়েকদিন সুপারমার্কেটে হরিণের মাংস মেলে। খরগোশের মাংস ভুনা খাবার ইচ্ছে অনেকদিনের, কিন্তু শেষমেশ আর কেনা হয় না। এরইমাঝে কয়েকদিন আগে বলাই জানালেন, খাসির মাংস খাওয়া হবে। পরিচিত আরেক ভদ্রলোকের সহকর্মী একটা কসাইখানা থেকে ছাগল কাটিয়ে আনতে পারবে, আমরা শুধু তার কাছ থেকে জবাই করা ছাগলটা নিয়ে এলেই হবে। আমি আর হের চৌধুরী শহর থেকে একটু বাইরে সেই লোকের কর্মস্থল থেকে প্যাকেট করা ছাগল নিয়ে এলাম। আস্ত ছাগল ঘরে কাটার মতো যন্ত্রপাতি কারোই নেই, তাই সেটাকে ঘাড়ে করে নিয়ে যেতে হলো আমাদের তুর্কি দোকানে। তুর্কি মাংসবিক্রেতার সাথে গত কয়েক মাসে হৃদ্যতা হয়ে গেছে মাংস কেনার সুবাদে, সে কোন চার্জ না রেখেই নিপুণভাবে ত্রিভুজটাকে কেটেকুটে সাইজ করে দিলো। মাংস কাটাও একটা শিল্প হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। দুই মিনিটের মধ্যে একটা আস্তছাগল কেটেকুটে ছোট একটা পোঁটলায় ভরে নিয়ে এলাম। সেদিন বলাই ও হের মুনশির সৌজন্যে প্রায় বছরখানেক পর আবার কাচ্চি বিরিয়ানি খেলাম। ৫. খই ভাজার ফাঁকে ফাঁকে সেদিন ইউটিউবে দেখলাম মাইকেল মুরের বাউলিং ফর কলাম্বাইন আর সিকো। লোকটাকে ফারেনহাইট ৯/১১ দেখার পর পরই খুব পছন্দ করি, তার মাত্রা আরো দুই পর্দা চড়ে গেলো এই দু'টো দেখে। অনবদ্য। | false |
mk | আল কায়েদার পাঠানো ভিডিও আল কায়েদার নয় এবং কিছু কথা সত্যি কিছু কিছু বিষয় অনেক গর্বের; আবার গর্ব করতেও নেই। কথিত আল কায়েদারি ভি ডি ও নিয়ে একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলাম, যা অনেকটা ক্লু হিসাবে কাজ করে। মনে হয় ভিডিও টি আল কায়েদার নয়, এটি আমিই মে বি প্রথম বলি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)'র দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকেই আল-কায়দা প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরির কথিত অডিও বার্তাটি ছাড়া হয় । ইতোমধ্যেই দেশে জিহাদোলজি ডট নেট (jihadology.net) নামের ওই ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে বিটিআরসি। কিন্তু এখনো সাইট টি যে কোন সাধারণ ব্রাউজার দিয়েই দেখা যাচ্ছে। এখন এই ছাড়ার পেছনে অবশ্যই জামাত শিবিরের কেও না কেও যুক্ত আছে বলেই আমি নিশ্চিত। প্রমাণিত হওয়ার অপেক্ষায় থাকলাম। যেহেতু বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে গেছে আল কায়েদার বি ডি ও টি আল কায়েদার নয়, তবু কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনা করি বার্তাটি নিয়ে- টেপটি আল কায়েদার নয়, প্রমাণিত হওয়ার পূর্বের কথাঃ স্বাধীন বাংলাদেশকে এই প্রথম বারের মত কোন জঙ্গি সংগঠন হুমকি প্রধান করার প্রশ্ন উথেছিল। বাংলাদেশে যেখানে প্রতিনিয়ত বি ডি ও বার্তা আসছে বিভিন্ন দলের, সেখানে আল কায়েদা ভি ডি ও বার্তার আদলে-অডিও বার্তা! বাংলাদেশে প্রযুক্তির হাওয়া লেগে বাংলাদেশ কত এগিয়ে গেছে সে বিষয় ধারণা নেই আল কায়েদা প্রধান আল জাওয়াহিরির বা এর পেছনে যারা ছিল তাদের । নতুবা তিনি যে ভি ডি ও বার্তা পাঠিয়েছেন সেখানের বক্তব্যগুলো অডিও আকারে হতো না। "বাংলাদেশ: ম্যাসাকার বিহাইন্ড এ ওয়াল অব সাইলেন্স" শীর্ষক এই ভিডিও নামের অডিও বার্তাটি ২৮ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের। বার্তার শুরুতেই ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের উপর হামলার স্থির চিত্র দেখানো হয়! ভেবে দেখার বিষয় বার্তাটি এসেছেও ১৫ তারিখে! গত বছরের ১৫ তারিখেই একজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছিল, জামাতীদের বিপক্ষে কথা বলার অপরাধে। সাথে সাথে একটি ট্যাগ জুড়ে হয় নাস্তিকতা! আর সেই ১৫ তারিখেই এসেছে আল কায়েদার বার্তা। কেন জানি সব কিছুই ৫ সংখ্যা ভিত্তিক! লাদেনের উত্তরসূরি বলেন “বাংলাদেশ আজ এমন এক ষড়যন্ত্রের শিকার, যাতে ভারতীয় দালাল, পাকিস্তানের দুর্নীতি-গ্রস্ত সেনা নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্ষমতা-লোভী, বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিবিদরাও জড়িত।” তিনি আরও দাবি করেন, "ইসলাম ও এই উপমহাদেশের মুসলমানদের রক্ষায় ৬০ বছরের বেশি সময় আগে তারা পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল। আর আজ আমরা যে পাকিস্তান দেখি, সেখানে শরিয়ার কোনো স্থান নেই।" পরবর্তী সময়ে তিনি বলেন “ ৪০ বছর আগে তারা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিল স্বাধীনতা এবং জনগণের মুক্তির জন্য। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ আজ পরিণত হয়েছে বিরাট এক কারাগারে, যেখানে মুসলমানদের সম্মান ও পবিত্র স্থান অপবিত্র করা হচ্ছে। ক্রুসেডার কসাইদের হয়ে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে হত্যা-নির্যাতন।” এই তিনটি কোটেশন ও পুরো বক্তব্য ঘেঁটে তা থেকে আমি চারটি পয়েন্ট বের করার চেষ্টা করেছি। ১. পাকিস্তান সৃষ্টি, ২. ভারতীয় দালাল, ৩. আমেরিকার হস্তক্ষেপ,৪. ধর্মীয় স্থানের অপবিত্রতা। ৪ টি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করলে অনেক বিশয়ই স্পষ্ট হয়ে উঠার কথা। আমরা জানি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামের একটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়, দ্বি জাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে। ভারতবর্ষের এক অংশে মুসলিমদের বসবাস, অন্য অংশ হিন্দুস্থানে হিন্দু ভাইয়েরা। বহু বছরের আশা আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হবে বলেই ধারণা ছিল সকলের। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে ভিন্ন। মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও, পাকিস্তানের ভিন্ন ভিন্ন অংশে মুসলমানরাই নির্যাতিত হয়েছে, যেমন পূর্ব বাংলায়। আবার দেশ বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর প্রতিটি স্থানেই দাঙ্গা হাঙ্গামা ছিল নিত্য দিনের ব্যাপার। মুসলিম লীগ নামের দলটি সরকার গঠনের পর থেকেই জন বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে থাকে। হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মননে যে পাকিস্তান সৃষ্টির ইচ্ছে ছিল, সে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও বঞ্চিত হয়েছি অর্থ ভিত্ত ও বহুদিক থেকে আমরা। কলকাতাকে দিয়ে দেওয়া হয় হিন্দুস্থানের অধীনে। কেননা পাকি জাতি মানেই লোভী জাতি, ক্ষমতায় বসার জন্যে জুলফিকার আলী ভুট্টো ইংরেজদের বিরুদ্ধাচরণ করেন। ফলে হারাতে হয় কলকাতাকে। অর্থাৎ পাকিস্তান শুধুমাত্র মুসলিমদের অধিকার রক্ষার জন্যে সৃষ্টি হলেও এখানে থাকার কথা ছিল ধর্মে ধর্মে সমতা। তখনকার সময়ের প্রীতিটি নেতাই অন্য ধর্মের লোকদের শ্রদ্ধা করতেন। আর অজ্ঞরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নির্যাতন করতো, আর প্রতিটি নেতাই সামাজিক ভারসাম্য, ধর্মীয় ভারসাম্য বজায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতি করে গেছেন আজীবন। আমেরিকা ও ভারতকে বরাবরই ভয় পায় প্রতিটি জঙ্গি গোষ্ঠী। আবার এদের সাথে জঙ্গি গোষ্ঠীর রয়েছে একটি সু সম্পর্ক। জঙ্গি সংগঠনগুলো একটি দেশকে টার্গেট করবে, আর জঙ্গি নিধনের নামে ঐ দেশে ক্ষমতাবান দেশগুলো নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে গড়ে তুলবে ঘাঁটি। ফলে লাভবান হবে ঐ দুটি দেশ। অনেক ক্ষেত্রে স্বয়ং আমেরিকা নিজেরাই জঙ্গি সংগঠনের উৎপাদক! কেননা জঙ্গি সংগঠনের নাম করে যে ব্যবসা চলছে, সেটিই এখন পৃথিবীর বড় ব্যবসা। কোন দেশে ঘাঁটি গড়ে তুলতে পারলেই সে দেশের সকল সম্পদ শান্তি রক্ষার নামে নিজের দেশে লুটপাট করে নেওয়া যাবে। স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নিজেদের অবস্থান গড়ে তোলার সঠিক পথ টি হচ্ছে সেই দেশে জঙ্গি গোষ্ঠী উৎপাদন করে আবার নিধন করা। এদিকে একটি বার্তা ইতিমধ্যে চলে এসেছে, আমেরিকা আল কায়েদার হুমকির ব্যাপারে নজর রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর সূত্রে জানা যায় তাদের মন্তব্য অনেকটা এ রকম- "আমরা এই বার্তা সম্পর্কে অবগত আছি।রাজনৈতিক সহিংসতারও বিরুদ্ধে আমরা। জাওয়াহিরি বাংলাদেশ সম্পর্কে যা বলেছেন আমরা তা নাকচ করছি। বাংলাদেশ একটি উদার, সহনশীল মুসলিম দেশ যেখানে আল-কায়েদার মতো উগ্রবাদের স্থান নেই।" পাঠক আগেই বলেছিলাম আমেরিকা শান্তি কায়েমের নামে সব কিছু করতেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, লেখাটি শেষ করার পর এই আমেরিকার নিউজটি নজরে আসে। সংযুক্ত করার লভ সামলাতে পারলাম না। তাই যুক্ত করে দেওয়া। এবার ভেবে দেখুন পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? ধর্মীয় স্থানের অপবিত্রতা বা ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে বাংলাদেশে কোন দিন কোন বাঁধা আসে নি এবং এই রাষ্ট্র কায়েম থাকা পর্যন্ত কোন দিনও রাষ্ট্র কোন দিন ধর্মের বিপক্ষে যাবে না। অনেকের হয়ত জানা নেই কিছু দিন আগে সৌদি আরবে কোরআন প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হওয়া তিনজনই বাংলাদেশী, এবং একজন আমাদের ময়মনসিংহের ছেলে। বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা কিছু দিন আগে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। দুই দফায় অনুষ্ঠিত হওয়া এই ইজতেমা বাংলাদেশের গর্ব। এখানেই চাইলেই আমরা এটাকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারি, কিন্তু ইজতেমা নিয়ে কোন বাণিজ্য নেই বাংলাদেশ। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের মুসলিম উম্মাহ এখানে অংশ নিচ্ছেন কোন বাঁধা বা বিপত্তি ছাড়াই, এমনকি লক্ষাধিক লোকের মধ্য থেকে নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছে। এ নিয়ে সরকারকে তেমন ভাবতে হচ্ছে না। কেও কি বলতে পারবেন, বাংলাদেশের কোথাও কোন মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে? বরঞ্চ অন্য ধর্মের ধর্মীয় স্থানে হামলা চালিয়েছে উগ্র মৌলবাদ। শত শত উদাহরণ আছে, কোনটা রেখে কোনটা দেব! আল কায়েদা প্রধান আমাদের দেশে হেফাজত নামে একটি দলের আবির্ভাব ঘটেছে তাও জেনে গেলেন!! আল কায়েদা প্রধান তাদের কথা বলেন এমন করে “বাংলাদেশের রাজপথে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। তাদের অপরাধ ছিল একটাই- ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের সঙ্গে কতিপয় বিপথগামী নাস্তিক্যবাদির যোগসাজশের প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমেছিল।” আল কায়েদা প্রধানের সখ্যতা রয়েছে জামাতের সাথেও। তিনি জামাতের দিকে ইঙ্গিত করে আরও বলেন-“শত শত আলেমকে কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। তাদের আটক করে জেলে পাঠানো হচ্ছে, বিচারের মুখোমুখী করা হচ্ছে; কোনো অপরাধ না থাকার পরও মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো সাজা দেয়া হচ্ছে। তাদের একমাত্র দোষ ছিল ইসলামবিরোধীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।” যদিও দুটি দলই আল কায়েদার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ৫ মের ঘটনা আল কায়েদা কীভাবে জেনে গেল? জামাতের অনেক নেতাকে আঁটকে রাখা হয়েছে, তা তো জানার কথাই ছিলো! লক্ষ্য করে দেখবেন কি, কোন মসজিদের ইমামের বিন্দুমাত্র সম্মানহানি হয়েছে কোন দিন? বা মসজিদ ভিত্তিক তাবলীগ জামাতের দিকে কেও কী কোন সন্দেহের তীর ছুড়েছে? বরঞ্চ তাবলীগ জামাতের লোকদেরকে সম্মানের সহিত আমজনতা নিজের বাসায় নিয়ে খাওয়া দাওয়া করায়, অথবা মসজিদে খাবার পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে বাংলাদেশে কোন ক্ষেত্রে ইসলামের রক্ষা হচ্ছে না! এটা কি পাকিস্তান যে, মসজিদেও বোমা হামলা হবে? অথবা আফগান, বাসার বাইরে যেতে হলেই মেকাপ পড়ে নিতে হবে? এখানের হিন্দু-মুসলমান ভাই-ভাই, পর-পুরুষ বলতে এখানে তেমন কোন শব্দ নেই। আর বোরকা, মেকাপ পড়লেই কী এখানে কোন বাঁধা দেওয়া হচ্ছে? শত শত আলেম বলতে তিনি যুদ্ধাপরাধীর বুঝিয়েছেন, কেননা সেইসব নগণ্য লেবাস ধারী মুসলিম ছাড়া আর কেও নির্যাতিত হচ্ছে না। যুদ্ধাপরাধীদের নির্যাতন করা হচ্ছে না, বরঞ্চ পাপের ফসল উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সৌদি আরবে চুরি করলে আঙুল কেটে ফেলার রেওয়াজ রয়েছে, তাহলে আমাদের দেশে মানবতা-বিরোধী অপরাধের জন্যে অবশ্যই ফাঁসি থাকবে এটাই স্বাভাবিক! সৌদি কে নিয়ে যেমন আল কায়েদার চুলকনি নেই ঠিক তেমনি বাংলাদেশ নিয়েও চুলকানি রগ না থাকাই উচিৎ। আর যদি কোন কারণে এই চুলকানি দেখা দেয়, তার উপযুক্ত শাস্তি বিধানের জন্যে বীর বাঙালীরা রয়েছেন। জাওয়াহিরি বলেন “আমি আপনাদের ইন্তিফাদা এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।” এখানে কী তিনি হত্যার ইন্তিফাদা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহবান জানাচ্ছেন? অথবা ওয়ান ইলিভেন? মুসলিম উম্মাহর সকলেরই মনে আছে, হজরত মুহাম্মদ(সঃ) কী বলে গেছেন! ধর্ম চর্চার জন্যে তিনি রেখে গেছেন কুরআন ও সুন্নাহ। পবিত্র গ্রন্থ কোরআনের পরেই অবস্থান সহীহ হাদিসের, যেহেতু কোরআন ও হাদিস ইমামদের হাতে রয়েছে; তাহলে আবার নতুন করে কোন ইন্তিফাদা? সর্বশেষ বলতে চাই, এই ভি ডি ও বার্তার সাথে জামাত শিবির তথা হেফাজতের সম্পর্কও থাকতে পারে বলে আমার অভিমত। জামাত শিবিরের দ্বারা সব কিছুই সম্ভব, হয়ত বিরাট অঙ্কের টাকা খরচ করে এই ভি ডি ও বানিয়েছে। কিন্তু এখানে আরেকটা সংশয় থেকে যায়, জানুয়ারি নাগাদ আমেরিকার তৈরি করা একটি রিপোর্টে এই বিষয়টি উঠে আসছিল। কিন্তু কোন তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয় নি ঐ রিপোর্টে। ১৫ তারিখে অন লাইনে প্রকাশিত বি ডি ও টির বিষয় কী করে তাদের আগেই জানা সম্ভব হল! সময় এসেছে সব কিছু হিসেব মিলিয়ে দেখার, তবে এও বলে দিতে পারি ৫ সংখ্যা বিশিষ্ট দিনে বাংলাদেশে আরও অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। বর্তমানেঃ হিসেব মিলে গেছে এখন, ভি ডিও টি আল কায়েদা পাঠায়নি। আমেরিকা থেকে এটি অন লাইনে প্রথম আপলোড হয় এবং এখনো বলছি এই আপলোডের পেছনে অবশ্যই জামাত শিবিরের হাত রয়েছে। সেটাও খুঁজে বের করা সময়ের কাজ মাত্র। Source: http://bangladeshpress.com সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৪৯ | false |
hm | অনুবাদ ১. সেবা প্রকাশনীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কখনো দ্বিধা করি না। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি কাজী আনোয়ার হোসেনের উদ্যোগকে। তাঁর নামে প্রকাশিত হলেও শুনেছি কাজগুলো বেশিরভাগই অন্যের করা (সত্যিমিথ্যা যাচাই সম্ভব নয়, তবে বইয়ের ফ্রিকোয়েন্সি তেমনটিই নির্দেশ করে), সেই আড়ালে থাকা লেখকদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাই সবসময়। শেখ আবদুল হাকিম, নিয়াজ মোরশেদ, জাহিদ হাসান, রকিব হাসান, সেলিম হোসেন টিপু ... এক একটা নাম শৈশবের এবং কৈশোরের সেই অসম্ভব সুন্দর সময়গুলির সাথে মিশে আছে। আপনারা যেখানেই থাকুন, খুব ভালো থাকুন, দীর্ঘায়ু হোন, আমার সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞ অভিবাদন গ্রহণ করুন। ২. সেবা প্রকাশনী যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে দিয়েছিলো আমার এবং আমার মতো আরো অনেকের জন্যে, তা হচ্ছে বিশ্ব সাহিত্যের ক্লাসিকগুলোর চমৎকার ঝরঝরে অনুবাদ খুব স্বল্পমূল্যে তুলে দিয়েছিলো আমাদের হাতে। আমি ইংরেজিতে বই পড়তে শুরু করেছি কলেজে উঠে, তার আগে পুরো একটা বই পড়ে বোঝার মতো ইংরেজি জ্ঞান ছিলো না। কিন্তু প্রাইমারি স্কুলে থাকতেই পড়ে শেষ করেছি অনেক ক্লাসিক। সহজ ভাষায়, সহজ ভঙ্গিতে করা সেইসব অনুবাদ আমার মনে রস যুগিয়েছে, আমার কল্পনাকে উসকে দিয়েছে। এখনও মনে করতে পারি, অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট পড়ে কী তীব্র কষ্ট অনুভব করেছিলাম (জাহিদ হাসানকে ধন্যবাদ আবারও), আমি যুদ্ধ কেন, বড় আকারের মারপিটও দেখিনি তখন, কিন্তু পলের বন্ধুরা সবাই যখন এক এক করে মারা যাচ্ছে, আমি বই বন্ধ করে কাঁদছিলাম হু হু করে। এই বইটা যদি আমি কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে পড়তাম, আমি হয়তো দুঃখটা অনুভব করতাম না সেভাবে। পলের বন্ধুরা মরলে আমার সেই বয়সে তখন আর কিছু যেতো আসতো না। আমার বয়স তখন কত, এগারো? ঐ বয়সের একজন কিশোরের কাছে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের মতো একটি মহৎ উপন্যাস পৌঁছে দেয়ার জন্যে সেবা প্রকাশনী ধন্যবাদার্হ। খটমটে, আক্ষরিক অনুবাদ হলে আমি হয়তো বিরক্ত হতাম, বইটা শেষ না করেই হয়তো উঠে পড়তাম, হয়তো শেষে গিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচতাম, যখন প্রজাপতি দু'টো পলের করোটি ছেড়ে উড়ে চলে যায় অন্য কোথাও, কিন্তু জাহিদ হাসানের অনুবাদটি এতো নরম, এতো হৃদয়গ্রাহী যে তা গভীর ছাপ ফেলেছিলো মনের মধ্যে। পরবর্তী ইংরেজি সংস্করণটি পড়ে অনুভব করেছি, তাঁর কাজটি খুব একটা সহজ ছিলো না। সেবা প্রকাশনীর সেই সময়ের লেখকরা শক্তিমান অনুবাদক ছিলেন, তাঁরা কিছুটা স্বাধীনভাবে খানিকটা ছাড় দিয়ে অসাধারণ সব অনুবাদকর্ম হাজির করেছেন আমাদের সামনে। ইংরেজির পায়ে পায়ে অবোধ শিশুর মতো ঘোরেফেরেনি তাঁদের অনূদিত লেখাগুলো, কিছুটা স্বতন্ত্র থেকে স্বাদ যোগ করেছে। পরবর্তীতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে প্রচুর অনুবাদকর্ম পড়েছি, সেই সাবলীল গতি আর ভঙ্গি না পেয়ে হতাশ হয়েছি খুব। ৩. আমি অনুবাদের কাজ শুরু করি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মাঝামাঝি এসে। কোথাও প্রকাশ করার জন্যে নয়, সময় (দুঃসময়ও বলা যেতে পারে) কাটানোর জন্যেই। মার্ক টোয়েনের কিছু গল্প আর আজিমভের কিছু কল্পবিজ্ঞানগল্প। অনুবাদের কাজটি যে কতটা খাটুনির হতে পারে, তখন তা একেবারে রগেমজ্জায় অনুভব করি। সেবা প্রকাশনীর অনুবাদকবৃন্দের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা বহুগুণিত হয় সেই অনুবাদের কাজগুলো করতে গিয়ে। আজিমভের গল্পগুলির অনুবাদ হয়তো কঠিন নয়, কিন্তু তার স্বাদ বজায় রাখতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়। ইংরেজি আর বাংলা ভাষার "গতি" একরকম নয়, ইংরেজিতে যা পড়ে চমৎকৃত হই, নিজের করা তার বাংলা অনুবাদ পড়ে ইচ্ছা করে নিজের গালে চড় বসাতে। সব দুঃসময়ই কেটে যায় একসময়, তাই অনুবাদের কাজে আমিও ক্ষান্ত দিই। অনূদিত গল্প পড়া হয়েছে প্রচুর, বেশিরভাগই ইংরেজিতে, সেখানেও অনুবাদকের দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। গার্সিয়া মার্কেজের বেশিরভাগ লেখাই পড়েছি এডিথ গ্রসমানের অনুবাদে, মূল স্প্যানিশ তো চোখে দেখিনি, কিন্তু লেখাগুলো গভীরভাবে স্পর্শ করেছে আমাকে। বাংলায় অনুবাদকর্ম পড়তে গেলে তাই অনুবাদের জড়তা খুব দ্রুত হতাশ করে আমাকে, যদিও নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, ঝরঝরে অনুবাদ কী ভীষণ কষ্টসাধ্য একটি কাজ। বাংলায় জি. এইচ. হাবীবের করা শার্লক হোমসের অনুবাদ পড়ে যেমন ভালো লাগেনি, একটা কিছুর অভাব বোধ করেছি। অনুবাদকের কষ্টগুলো পাঠকের অনুধাবন করা মুশকিল। যিনি অনুবাদ করছেন, তিনি অন্য একটা ভাষায় গল্প বা উপন্যাসটিকে পাঠ করেছেন, সেই অন্য ভাষার ভঙ্গিটি তাঁর কাছে পরিচিত, সেই ভাষার রস তিনি আস্বাদন করছেন অনুবাদের প্রতিটি মূহুর্তে। অথচ তাঁকে হয়তো ভিন্ন ভঙ্গিতে, ভিন্ন ছাঁচে ঢালতে হচ্ছে সে রস, আর সেটি হয়তো প্রায়ই সম্ভব হচ্ছে না। বাংলা বাক্যে ঢুকে পড়ছে অন্য ভাষার ভঙ্গি। এই হংসমধ্যে বকো যথা এড়ানো এক ভীষণ কষ্টসাধ্য কাজ। অনুবাদক হিসেবে যখন আমি চাইছি, পাঠক এ ব্যাপারটি অনুভব করে কিছুটা ছাড় দিয়ে পড়ুন লেখাটি, পাঠক হিসেবে আমি হয়তো একপাশে সরিয়ে দিচ্ছি অন্য কারো করা অনুবাদকর্ম। এ এক বিষম জ্বালা। আক্ষরিক অনুবাদের কষ্টসাধ্য কাজ এড়িয়ে ভাবানুবাদের সমস্যা অন্য জায়গায়। তাতে মূল লেখার রসটুকু অনেকখানি ফেলে আসতে হয় পথে। যাঁর লেখা আমি অনুবাদ করবো, তাঁর লেখার মণিমুক্তোগুলো ফেলে শুধু ঝিনুকের খোসা পাঠকের সামনে ধরার মতো পরিস্থিতি দাঁড়ায় তখন। ৪. বহুদিন হয়ে গেলো, সেবা প্রকাশনীর নতুন কোন বই পড়া হয়নি। আশা করছি তাঁরা এখনও তাঁদের মহৎ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। টিফিনের পয়সা জমিয়ে জমিয়ে এখনও কি বাচ্চারা খাওয়া ফেলে, পড়া ফেলে, টিভি ফেলে পড়ছে বইগুলো? এখনও কি বাচ্চারা অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট পড়ে কাঁদে পলের বন্ধু কাৎসিনস্কির মৃত্যুতে, রূদ্ধশ্বাসে সময় গুণতে থাকে আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ পড়তে পড়তে, জলদস্যু হবার স্বপ্ন দেখে লং জন সিলভারের বর্ণনা পড়ে? দেশ থেকে বহুদূরে বসে তা-ই কামনা করি, পড়ুয়ায় ছেয়ে যাক আমাদের দেশটা, তাদের ভেতরটা বর্ণিল হয়ে উঠুক বিশ্বসাহিত্যের রঙে। | false |
rg | বাংলাদেশে নির্বাচন কালীন সরকার ও রাজনৈতিক সদস্যার সমাধানে সাতটি মহাষৌধ!!! বাংলাদেশের নির্বাচন কালীন সমস্যা ও বিরোধ নিস্পতি করতে গণ-প্রতিনিধিত্বশীল সরকার হয়তো সবচেয়ে কার্যকর একটি উদ্যোগ হতে পারে। কিন্তু গণ-প্রতিনিধিত্বশীল সরকার কেমন হতে পারে, তার একটি রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করব এখানে। যে কেউ আমার মতামতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, একমত হতে পারেন বা নতুন হাইপোথিসিস নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। নির্বাচন কালীন সরকার নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো বিরোধ সৃষ্টি না হয় সেজন্য এই কাঠামোর অবতারণা। আমাদের জাতীয় সংসদে মোট ৩০০ আসনে এখন সরাসরি নির্বাচন হয়। এটাকে ভাগ করতে হবে সবার আগে। আমাদের যেহেতু ৬৪টি জেলা। ছোট হোক বড় হোক ৬৪ জেলার জন্য ৬৪টি আসনে হবে নতুন কাঠামোতে সরাসরি নির্বাচন। কোন সরকারের অধীনে সেই নির্বাচন হবে? আর বাকী আসনগুলো কিভাবে বণ্টন করা হবে? সেই আলোচনায় পরে আসছি। তার আগে নির্বাচন কালীন সরকার কিভাবে হবে তার একটি সমাধান দেবার চেষ্টা করি। নবম জাতীয় সংসদে মোট ৫১ টি কমিটি ছিল। সেখানে সবচেয়ে শক্তিশালী কমিটি ছিল কার্য উপদেষ্টা কমিটি। সেখানে স্পিকারের নের্তৃত্বে মোট ১৫ জন সদস্য ছিল। এই ১৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে নির্বাচন কালীন সরকার। আর আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সেই সরকারের নের্তৃত্ব দেবেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি। অর্থ্যাৎ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কালীন সরকার হবে রাষ্ট্রপতি'র নের্তৃত্ব মোট ১৬ সদস্যের। তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচন কালীন সরকারের পূর্ণাঙ্গ চেহারাটি হবে এরকম- ১. অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, রাষ্ট্রপতি ও নির্বাচন কালীন সরকারের প্রধান ২. ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ৩. শেখ হাসিনা ৪. বেগম খালেদা জিয়া ৫. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৬. শওকত আলী ৭. সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ৮. মোঃ আব্দুস শহীদ ৯. সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ১০. শেখ ফজলুল করিম সেলিম ১১. তোফায়েল আহমেদ ১২. মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া ১৩. এম. কে. আনোয়ার ১৪. আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মোঃ রহমত আলী ১৫. রাশেদ খান মেনন ১৬. আবদুল মতিন খসরু এদের মধ্যে রাষ্ট্রপতি ছাড়া বাকী সবাই নবম জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। রাষ্ট্রপতির নের্তৃত্বে এঁরাই নির্বাচন কালীন সরকার পরিচালনা করবেন। ক. সরাসরি নির্বাচন হবে ৬৪ জেলায় ৬৪ আসনে যেটি হবে সংসদের উচ্চ কক্ষ: বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় সরাসরি ৬৪ আসনে নির্বাচন হবে। অর্থ্যাৎ প্রতি জেলায় জনগণের সরাসরি ভোটে একজন মাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন। এই ৬৪ জন সাংসদ নিয়ে গঠিত হবে সংসদের উচ্চ কক্ষ। এটাকে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের কংগ্রেস। অর্থ্যাৎ কেবল জাতীয় সংসদের কংগ্রেসের জন্য বা উচ্চ কক্ষের জন্য সরাসরি নির্বাচন হবে। যেখানে জনগণ সরাসরি ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে কংগ্রেসের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। এই ৬৪ জন সাংসদ থেকে দশম জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটি গঠন করতে হবে। আগামীতে এই কার্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে ১০ জন। অর্থ্যাৎ একাদশ বা দ্বাদশ বা পরের সংসদ নির্বাচনগুলো ১০ সদস্যের কার্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের নিয়ে যে নির্বাচন কালীন সরকার হবে, তারা পরিচালনা করবে। যখন যাঁরা সেই কমিটিতে থাকবে। নির্বাচন কালীন সরকার নিয়ে ক্যাচাল বন্ধের জন্য এছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তখন আগামী দশম জাতীয় সংসদে যখন এই ১০ সদস্যের কার্য উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হবে, সবাই আগে ভাগেই জেনে যাবে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন কালীন সরকারে কে বা কারা থাকছেন। আর রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে সেই সরকার পরিচালনা করবেন। যাতে নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তৈরি না হয়। খ. সংসদের নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি পরিষদ হবে ২২০ সদস্যের: রাজনৈতিক দলগুলোর আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে গঠিত হবে সংসদের নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি পরিষদ। প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য সংখ্যা হবে ২২০ জন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬৪ জেলায় রাজনৈতিক দলগুলো'র প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে এই ২২০ আসন ভাগ হবে। ৬৪ আসনে রাজনৈতিক দলগুলো শতকরা যতো ভোট পাবে, সেই দল প্রতিনিধি পরিষদে বা সংসদের নিম্নকক্ষে শতকরা ততো আসন পাবে। প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হারই এই আসন বণ্টন নির্ধারণ করবে। গ. বিশেষ গণ-প্রতিনিধি বা স্পেশাল মেম্বর অব পার্লামেন্ট হবে ১৬ সদস্যের: সংসদের উচ্চকক্ষ বা কংগ্রেস এবং নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি পরিষদের ৬৪ + ২২০ = ২৮৪ জন সাংসদ মিলে জাতীয় সংসদের ১৬ জন বিশেষ গণ-প্রতিনিধি বা স্পেশাল মেম্বর অব পার্লামেন্ট গঠন করবেন বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, জাতীয় খেলোয়ার, কৃষক নেতা, শ্রমিক নেতা, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ইত্যাদির সমন্বয় থাকবে। সংসদের এই বিশেষ গণ-প্রতিনিধি সব সময় একবারের জন্যই নির্বাচিত হবেন। পরের জাতীয় সংসদে যাতে দেশের আরো বরণ্য ব্যক্তিরা এই সুযোগ পান, সে কারণেই এই ১৬ সদস্যের বিশেষ গণ-প্রতিনিধিরা জাতীয় সংসদে একবারের জন্য নির্বাচিত হবেন। ঘ. সরকার গঠন কিভাবে হবে: সংসদের উচ্চকক্ষ বা কংগ্রেস এবং নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি পরিষদের ২৮৪ আসন মিলে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, সেই দল সরকার গঠন করবে। অর্থ্যাৎ সরকার গঠন করতে কোনো একটি দল বা জোটকে মিনিমাম কংগ্রেস ও প্রতিনিধি পরিষদ মিলিয়ে মোট ১৪৩টি আসনে সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করতে হবে। ঙ. সরকারের মেয়াদ: দশম সংসদ থেকে সরকারের মেয়াদ হবে ৪ বছরের। কারণ, ৫ বছর অনেক দীর্ঘ সময়। বাংলাদেশকে একটি উন্নয়ন মডেল হিসেবে অগ্রসর হতে হলে সরকারের মেয়াদ কম হওয়াই যুক্তিযুক্ত। চ. সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্ত: জাতীয় সংসদে বর্তমানে প্রচলিত ৫০ সদস্যের নারী আসনের সুবিধা দশম সংসদে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করছি। কারণ, ১৬ সদস্যের বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে অনেকটা সংরক্ষিত আসনের মতোই কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতাবান গণ-প্রতিনিধিদের সুপারিশ করেছি। সংরক্ষিত নারী আসন জাতির জন্য একটা লজ্বার বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয়। ছ. সাংসদের অবসর গ্রহনের বয়স হবে ৬০ বছর: আগামী দশম জাতীয় সংসদে সাংসদদের অবসর গ্রহনের বয়স সীমা চালু করার আইন পাশ করতে হবে। বাংলাদেশে ৬০ বছর বয়সের পর মানুষের আর স্বাভাবিক কাজকর্ম করার মতো শক্তি বা সামর্থ যথেষ্ট থাকে না। তাছাড়া দেশ পরিচালনার মত একটি সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ৬০ বছরের বেশি বয়সি মানুষের কর্মক্ষমতা না থাকারই কথা। সাংসদদের সর্বোচ্চ বয়স সীমা হবে ৬০ বছর। তারপর তারা স্বেচ্ছায় অবসরে যাবেন। নতুন প্রজন্মের জন্য জায়গা বা সুযোগ করে দেবার জন্য এই অবসর গ্রহনের অপসান। অর্থ্যাৎ ৬০ বছরের পর আর কেউ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবে না। বাংলাদেশে নির্বাচন কালীন সরকার নিয়ে জটিলতা দূর করার জন্য আমার এই সুপারিশমালা একটি স্থায়ী টিকা হতে পারে। যদি সদিচ্ছা নিয়ে সকল রাজনৈতিক দল এবং দেশের মানুষ এটা গ্রহন করেন। নবম জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের নিয়ে যদি রাষ্ট্রপতির নের্তৃত্ব নির্বাচন কালীন সরকার গঠিত হয়, তাহলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে আর কোনো সদস্যা থাকবে না। কারণ, দশম জাতীয় সংসদে যে ১০ সদস্যের কার্য উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হবে, ওটাই রাষ্ট্রপতির নের্তৃত্ব নির্বাচন কালীণ সরকার পরিচালনা করবে। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের একটি স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। নতুবা ৫ বছর পর পর বিরোধীদলের সহিংস আন্দোলন কেবল বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্র যাত্রাকে ব্যাহত করবে। আমার এই সপ্ত সুরের বটিকায় যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হয়, তাহলে কোনো দিন এই অমীমাংসিত বিষয়টির সমাধান হবে না। সদস্যা বছরের পর বছর আরো বাড়বে বলেই আমি মনে করি। আশা করি, সপ্ত সুরের বটিকা রাজনৈতিক সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের পথে সবাইকে নতুন চিন্তার খোরাক জোগানোর পাশাপাশি, স্থায়ী সমাধানের পথে অগ্রসর হতে পথ নির্দেশিকা দেবে। সবাই ভালো থাকবেন। শান্তিতে থাকবেন। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৬ | false |
ij | রোমান সভ্যতার গোড়ার কথা। ইতালির মানচিত্র। এখানেই এককালে গড়ে উঠেছিল রোমান সভ্যতা। রোমান সভ্যতার বিস্তার ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ থেকে আরম্ভ করে ৪র্থ খ্রিস্টাব্দ অবধি। ঐ সময় ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চল ওদের শাসনাধীন হয়েছিল। কী ভাবে ক্ষুদ্র এক লাতিন জাতিসত্ত্বা হয়ে উঠেছিল প্রায় অর্ধেক পৃথিবীর ভাগ্যনিয়ন্তা - তা মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক বিস্ময়কর অধ্যায়ই বটে। খ্রিস্টপূর্ব ৭৫০। দক্ষিণ ইতালির উপদ্বীপে প্রায় ৫০টি মতো নগররাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল গ্রিকরা। ইতালির উত্তর দিকটাকে বলা হয় তুসকানি। ওখানে এটরুসকান নামে এক জনগোষ্ঠীকে এসে বসতি গড়ে তুলেছিল। গ্রিক ঐতিহাসিক হিরোডটাসের মতে- এটরুসকানরা গ্রিকদের মতো ইন্দোইউরোপীয় ছিল না, বরং ছিল নিকট প্রাচ্যের। তবে কারো কারো মতে এটরুসকানদের সংস্কৃতি ছিল মাইসেনীয় গ্রিকদের মতই। তেমনটা হওয়া বিচিত্র নয়। ইতালির উত্তরে এটরুসকানরারা ১২টি নগর গড়ে তুলেছিল। দক্ষিণে ছিল অসংখ্য গ্রিক ট্রাইব। এটরুসকানদের সমাজে ছিল অভিজাতদের শাসন। ভারি পরিশ্রম করত তারা; ছিল বাস্তববাদী- বিমূর্ত চিন্তার ধার ধারত না গ্রিকদের মতো নয়। যা হোক। তিবর নদীটা মধ্য ইতালিতে। এর উত্তরেই ছিল এটরুইয়া অঞ্চল। এটরুসকানরা ওখানেই রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেছিল। এটরুসকানরা তিবর নদী পেরিয়ে দক্ষিণে গিয়েছিল আরও পরে। ৬০০ খ্রিস্টপূর্বর দিকে। ২ ট্রয়যুদ্ধের কথ আমরা জানি। বীর এনিয়াস ছিলেন ট্রয়ের পক্ষের লোক। ট্রয়যুদ্ধের পর পশ্চিমে ( ইতালির দিকে )চলে এসেছিলেন এনিয়াস। ভর্জিলের “এনেইদ” মহাকাব্যে সেসব কথা লেখা আছে। তিবর নদীর দক্ষিণে এই এনিয়াস-এর বংশধরোই গড়ে তুলেছিল লাতিন গোষ্ঠী। তিবর নদীর দক্ষিণপাড়ে লাতিনরা গ্রাম গড়ে তুলেছিল। তাদের রাজা ছিল নুমিতর। নুমিতরের মেয়ের নাম ছিল রেহা সিলভিয়া। ভেস্টা ছিল লাতিনদের উনুনের দেবী। রেহা সিলভিয়া ছিল ভেস্টান ভার্জিন, মানে দেবী ভেস্টার কুমারী পুরোহিত। সে কালে সত্যমিথ্যা মিলিয়ে ছিল। কাজেই, রেহা সিলভিয়া দেবতা মঙ্গল দ্বারা ধর্ষিত হয়। কাজেই, রেহা সিলভিয়ার যখন রোমুলাস ও রেমুস নামে দুটি ছেলেরা হল তখন তাদের বলা হল অর্ধ-পবিত্র। যাহোক। রাজা নুমিতরের এক ভাই ছিল। সে ছিল লোভী আর নিষ্টুর। সে লোকজন নিয়ে নুমিতরকে জোর করে সিংহাসন থেকে নামিয়ে দেয়। রোমুলাস ও রেমুস বড় হয়ে প্রতিশোধ নিতে পারে-এই ভেবে নতুন রাজা দুই ভাইকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করে। সে কালে সত্যমিথ্যা মিলিয়ে ছিল। কাজেই, নেকড়ে দুধ পান করিয়ে বাঁচিয়ে রাখে রোমুলাস ও রেমুসকে। যাহোক। পরে, রোমুলাস ও রেমুস বড় হয়ে মাতামহকে রাজ্য ফিরিয়ে দেয়। তবে আরও পরে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ লাগে। রেমাসকে খুন করে বসে রোমুলাস! স্মরণ করি, মঙ্গল দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছিল রোমুলাস ও রেমুস-এর মা-রেহা সিলভিয়া। কাজেই, রেহা সিলভিয়ার যখন রোমুলাস ও রেমুস নামে দুটি ছেলেরা হল তাদের বলা হল অর্ধ-পবিত্র। (উপকথায় এক ধরনের যুক্তির কাঠামো থাকে। যেটি আবিস্কার করেছিলে ফরাসী কাঠামোবাদী নৃতাত্ত্বিক ক্লদ লেঢি স্ত্রাউস।) তো, দু ভাইয়ের মধ্যে খুনিখুনির কারণ কি ছিল? ১/ কে রোমের রাজা হবে। ২/ নগরের নামকরণ। যা হোক। রোমুলাস থেকে রোম। রোম থেকে রোমান। ভাষা লাতিন। তিবর নদীর পাশে সাতটি পাহাড়। তার মধ্যে পালাটাইন পাহাড়ই সেরা। সেই পালাটাইন পাহাড় ঘিরে গড়ে উঠল রোম নগর খুনি রোমুলাস-এর নামে। সময়টা? ধরা যাক- ৮০০ খ্রিস্টপূর্ব । রোমের জনগনকের শাসন করা হত ফোরাম রোমানুম থেকে, ওটাই ছিল আদি রোমানদের শাসন ক্ষমতার কেন্দ্র। রোমুলাস এর উত্তরাধিকারী ছিলেন রাজা নুমা পমপিলিয়াস। রোমের লোকে তাঁকে বলত পবিত্র রাজা । রোম নগরের অনেক ভবন নির্মান করেছিলেন রাজা নুমা পমপিলিয়াস। মনোরম রেজিয়া প্রাসাদ থাকতেন রাজা নুমা পমপিলিয়াস। ভেস্টাল কুমারীর মন্দিরও নির্মান করেছিলেন ওই পবিত্র রাজা। সে কালে সত্যমিথ্যা মিলিয়ে ছিল। কাজেই একবার রোমানদের রাজ্যে মেয়ের সংখ্যা গেল কমে। তিবর নদীর দক্ষিণে ছিল অসংখ্য লাতিন ট্রাইব। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল সাবিনি। রোমানরা তখন এক উৎসবের আয়োজন করে। রোমানরা ছল করে সাবিনিদের গোত্র থেকে কুমারীদের চুরি করে। এভাবে সাবিনিদের সঙ্গে রোমানদের সখ্যতা গড়ে ওঠে। তখন বলছিলাম যে এটরুসকানরা তিবর নদী পেরিয়েছিল আরও পরে। যখন এটরুসকান রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ এর দিকে তারা রোম দখল করে নেয়। তারপর রোম শাসন করতে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০৯। রোমের শেষ এটরুসকান রাজা ছিলেন লুসিয়া পারকুইনিয়াস। লুসিয়া পারকুইনিয়াস ছিল স্বৈরাচারী। সাবিনিদের সঙ্গে মিলে রোমানরা লুসিয়া পারকুইনিয়াসকে উৎখাত করে ছিল। তারপর গড়ে তুলে রোম রিপাবলিক। তখন বলেছিলাম যে- খ্রিস্টপূর্ব ৭৫০। দক্ষিণ ইতালির উপদ্বীপে প্রায় ৫০টি মতো নগররাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল গ্রিকরা। ইতালির উত্তর দিকটাকে বলা হয় তুসকানি। ওখানে এটরুসকান নামে এক জনগোষ্ঠীকে এসে বসতি গড়ে তুলেছিল। তিবর নদীর দক্ষিণে ছিল লাতিন ও সাবিনি ট্রাইব। কাজেই রোমান সভ্যতার গোড়ায় ছিল গ্রিক, এটরুসকান, গ্রিকউদ্ভুত লাতিন ও সাবিনি ট্রাইবগুলির আচারবিশ্বাস,ভাষা, ধর্ম ও সভ্যতাসংস্কৃতি। মনে থাকার কথা। ভারি পরিশ্রম করত এটরুসকানরা;ছিল বাস্তববাদী- বিমূর্ত চিন্তার ধার ধারত না। গ্রিকদের মতো নয় তারা। পরে, ওই এটরুসকানরাই রোমানদের প্রভাবিত করেছিল। ক্রমশ তথ্যসূত্র: Robin Lane Fox রচিত The Classical World; An Epic History Of Greece and Rome. ওয়েব- Click This Link Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৫৩ | false |
rn | কুম্ভ রাশির দিনকাল আমরা জানি, রাশিচক্র প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা পায় প্রাচীন গ্রিসে। কিন্তু প্রমাণ মিলেছে তারও প্রায় ১শ বছর আগে মিশরীরা রাশিচক্র বিষয়ে সচেতন ছিল। বিশেষ করে মিশরের রাজারা (ফারাও) রাশিচক্রের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানতে খুবই উৎসাহী ছিল। তারাও মনে করতো নক্ষত্রের অবস্থান ও ক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে একজন মানুষের জীবন। তবে মিশরীয়দের রাশিচক্র গ্রিকদের চেয়ে ব্যতিক্রম। রাশিগুলোর নাম ও রূপের ছিল ভিন্নতা। কিন্তু রাশিরসমূহের নক্ষত্র-মানচিত্র ছিল প্রায় অভিন্ন। মিশরীয় রাশিচক্রেও ১২টি রাশি রয়েছে। তবে মিশরীয়দের কাছে এক একটি রাশি এক একজন দেব-দেবী বলে স্বীকৃত ছিল। ট্রয়ের গনিমেডে এক অতি সুন্দরী যুবতী। দেবরাজ জিউস তার প্রেমে পড়েন। তিনি ঈগলের ছদ্মবেশে অপহরণ করে স্বর্গে নিয়ে যান এই যুবতীকে। গনিমেডেকে দেবতাদের পেয়ালায় মদ তুলে দেয়ার কাজে লাগানো হয়। এজন্যই কুম্ভ রাশি চক্রের তারকামন্ডলীর চিহ্ন হিসাবে আমরা দেখি একজন পাত্র থেকে পানি জাতীয় কিছু ঢালছে। অন্য স্থানে বলা হয়েছে, কুম্ভ হলো জলের ধারক। যিনি পৃথিবীতে বন্যা দেন এবং নদীগুলো ভরাট করেন। শুধু তাই নয় তিনিই গ্রিকপুরাণের সেই মহা-প্লাবনের হেতু।গ্রীষ্ম ও শরৎকালে এই রাশির নক্ষত্রগুলোকে দেখা যায়।আপনি কষ্টসহিষ্ণু ও বাস্তবাদী। কোন ব্যাপারে মানসিক কষ্ট পেলেও কাউকে বুঝতে দেবেন না। কল্পনার কোন স্থান আপনার কাছে জায়গা পায় না। সবসময় বাস্তবটাকেই আপনি মেনে চলেন। সবাইকে নিয়ে থাকতেই আপনি ভালোবাসেন।একাগ্রতা ও বিশ্বাস প্রবল হয়। নিষ্ঠা এত বেশী হয় যে তা চোখেমুখে ফুটে বেরোয়। অত্যন্ত আত্মাভিমানী ও আবদারপ্রিয়। জনপ্রিয় হলেও অন্তরঙ্গ বন্ধু খুব কম থাকে। ভোগ ও ত্যাগ দুই ব্যাপারে বিশেষ পটু। অনেক লোকের মধ্যে থাকলেও নিজেকে নিঃসঙ্গ বলেই মনে হবে। অত্যন্ত আরামপ্রিয় ও ভাবপ্রবণতার জন্য সাফল্যে বাধা আসে। স্পষ্ট কথা বলার জন্য জাতকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। সামান্য কারণে উত্তেজিত হয়ে ওঠায় জাতক অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বিরাগ ভাজন হয়ে পড়ে। জাতকের বন্ধু ভাগ্য এমনিতে ভাল। বন্ধুর দ্বারা উপকার বা অপকার দুই হয়ে থাকে। বন্ধু খুবই সীমিত হয়। মনের অস্থিরতায় ভাল মন্দ বুঝতে জাতক প্রায়ই বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে।কুম্ভ রাশির শুভ সংখ্যা ৮ ও ৪।শুভ রং : নীল, গাঢ় সবুজ ও বেগুনি।কুম্ভ(২১ জানু - ১৮ ফেব্রু) ।কুম্ভ জাতক বা জাতিকা যাই চিন্তা করে সেসবের সাথে ভবিষ্যতের কোন না কোন যোগাযোগ রয়েছে।কোন কিছু ঠিকমতো জানার পর সেটাতে বিশ্বাস বা আস্খা আনা সহজ, কিন্তু কুম্ভদের লক্ষ্য যদিও ভবিষ্যতের কোন অস্খির নীলাকাশের দিকে, তবুও তারা বাস্তববাদী। কুম্ভরা মিথ্যাচার এবং প্রতারণা ঘৃণা করে এবং তারা ধার দেয়া এবং নেয়াও অপছন্দ করে। তারা আপনাকে টাকা উপহার হিসেবে দিতে পারে, কিন্তু তাদের কাছে টাকা ধার চেয়ে লাভ হবে না। আপনি কি আপনার কুম্ভ জাতক বন্ধু শিপলুর কাছে জরুরি ভিত্তিতে ৫০০ টাকা চেয়েছেন? আপনার বন্ধুটি নিশ্চয়ই আপনাকে অবাক করে দিয়ে নোটটা আপনাকে বের করে দেখিয়েছে এবং দিয়েছেও। তার টাকাটা যথাসময়ে ফেরত দিতে হবে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে কিংবা টাকা ফেরত দেয়ায় গড়িমসি করলে আপনাদের বন্ধুত্বে একটা বড় ফাটল ধরতে পারে। কুম্ভরা নিজেদের প্রতিজ্ঞা রাখে, তারা তাদের দেনা পাওনা সময়মতো পরিশোধ করে এবং আপনার কাছ থেকেও তারা একই আচরণ প্রত্যাশা করবে। কিন্তু এহেন সততাবোধ থাকা সত্ত্বেও তাদের আচরণ অনেকসময়ই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। কুম্ভরা তাদের আদর্শবাদীতার কারণে খুবই প্রশংসিত হয়। হয়তো একটু অতিরিক্ত প্রশংসা পায়, কেননা সত্যিকার আদর্শবাদীতায় অন্ধ ভক্তি এবং আশাবাদী মনোভাব থাকতে হয় ।কুম্ভদের দৃষ্টিভঙ্গি এতোই মহৎ যে তাদের মধ্যে সংস্কারদুষ্ট মানসিকতা খুঁজে পাবেন না, যদি না তাদের মধ্যে গ্রহ-নক্ষত্রগুলোর কুপ্রভাব থাকে। এমন কি যদি বা তার মধ্যে সংস্কারদুষ্টতা থাকে তাহলে সেটা তাকে দেখিয়ে দেয়া হলে সে অত্যন্ত বিচলিত হবে। তার মধ্যে ভাতৃত্ববোধ এতটাই তীব্র যে যদি কোন একজন দুর্লভ কুম্ভকে সহ্যহীনতার দোষে দোষী করা হয় তো সে যে শুধু সে ব্যাপারে সতর্ক হয়ে উঠবে তাই নয় বরং নিজের এই দোষকে ঘৃণাও করবে।এ জাতকের জন্য সবচেয়ে ভালো বন্ধু পাওয়া যাবে মকর রাশির জাতক/জাতিকা থেকে। কুম্ভ ও মকরের সমন্বয়ে দাম্পত্য এগিয়ে যায় অনেকদূর। পাড়ি দিতে পারে অনেক বাধা-বিপত্তি। এদের বৃহস্পতি থাকে তুঙ্গে। প্রেম করতে পারে চুটিয়ে। মাঝে মাঝে মিথুন জাতক/জাতিকার জন্য জীবন হতে পারে বিষাদময়। | false |
hm | সেতু সঙ্কট দেশটির নাম মনে পড়ছে না, তবে তাকে চিরে যে নদীটি বয়ে চলছে, তার নাম ঝিনুক। মস্ত সেই নদী। বর্ষায় প্রমত্তা, শীতে স্নিগ্ধা। সে নদীতে জাহাজ চলে, চলে ছোট ছোট ডিঙিও। সেদিনও দেখলাম দু'টি শিশু আদুল গায়ে একটা ডিঙি বাইতে বাইতে চলছে তীর ঘেঁষে, আর হাঁ করে দেখছে দূরে বড় ইস্টিমারের ডেকে লোকজনের কান্ডবান্ড। ইস্টিমারটাও বুঝি তাদের ভয় দেখানোর জন্যে একবার ভোঁ করে হাঁক দেয়। ঝিনুক চিরে রেখে গেছে দেশটার অনেকখানি। তাকে পার হতে না পারলে ব্যবসাবাণিজ্য চলে না, আমদানিরপ্তানি সব মাটিতে গড়াগড়ি খায়। লোকজন একদিন কথা বলাবলি শুরু করলো, ঝিনুক নদীর ওপর দিয়ে সেতু বানাতে হবে। বাজারে, দোকানে, খেলার মাঠে, বর্ষার দিনে ছাতা মাথায় করে ছিপ ফেলে মাছ ধরার নিস্তব্ধ নিষ্ঠুর খেলা ভেঙে সব জায়গায় লোকের মুখে কেবল সেতুর আলাপ। ঝিনুকের ওপর সেতু হবে? তা-ও কি সম্ভব? এ তো সেই নদী, যাতে জাহাজ ডুবলে তার হদিশ মেলে না, মিললেও তাকে টেনে তোলার সাধ্যি নেই কারো! মানুষের কি এমনই আস্পদ্ধা, যে ঝিনুকের ওপর সেতু বানিয়ে পেরিয়ে যাবে? এ কি মাদারটুলির খালের ওপর সাঁকো বানানো? এ কি ছেলেখেলা? তারপরেও লোকে চায়ের কাপ থেকে ঠোঁট তুলে ঝিনুক আর সেতু শব্দদু'টো দুর্বিনীত আগ্রহ নিয়ে একই দমে একই বাক্যে ব'কে যায়। কতবড় আস্পদ্ধা ঐ নাম-ভুলে-যাওয়া দেশের লোকের, অ্যাঁ! এই গুঞ্জন চলতে থাকে আকাশে বাতাসে। মৌমাছি ফুলের ওপর বসে বিরক্ত মুখে সেই গুঞ্জন শুনতে শুনতে মধু খায়, অলস গ্রীষ্মের রাতে একটা ঝিঁঝিঁ আচমকা চুপ করে যায় তার বাড়ির পাশে পঁচার মায়ের কুটিরে পঁচাকে শোনানো পঁচার মা-র ঝিনুকের বুকে সেতুর গল্প শুনে। ঝিনুকের এপারে দাঁড়িয়ে ঢেউ গোণে বেকার যুবকেরা, অন্য পার তো চোখে দেখা যায় না। ঝিনুকের এ পারে ও পারে দুইপারেই যখন সবার মুখে একই গুঞ্জন, ছিপনৌকার মাঝি থেকে ইস্টিমারের সারেং সবাই যখন চিন্তিত সেতুর আকার, আকৃতি ও প্রকৃতি নিয়ে, তখন রাজনীতিকরা তাঁদের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ড্রয়িংরূমে বসে নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করে ঠিক করলেন, এখন একটা কিছু করা দরকার। কিন্তু সেই দেশের যা দস্তুর, টুনিসচিবের কাঁধে দায়িত্ব পড়লো এই ঝিনুক সেতু নির্মাণের উপযোগিতা মাপার দায়। টুনিসচিব যখন হন্তদন্ত হয়ে সেই মাপামাপিতে ব্যস্ত, তখন উল্টোদলের রাজনীতিকরা ময়দানে গলা খাঁকরে বললেন, সেতু হচ্ছে ভালো কথা, কিন্তু এর নাম সোজাদলের নেতা মরহুম মধু ঢালির নামে কিছুতেই রাখা যাবে না। রাখলে ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে। টুনিসচিব সবকিছু মেপে জানালেন, ঠিকাছে। সেতু না বানালে সামনে কঠিন দুর্দিন আছে। বানাতে হবে যত জলদি সম্ভব। লোকজনের গুঞ্জন মিথ্যে নয়। সোজাদলের মন্ত্রী বললেন, মরহুম মধু ঢালি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সোজাদল। দেশ এতে অশেষ উপকৃত হবে। টুনিসচিবের কাজকর্মের দোষগুণ মাপার দায় চাপলো পাতিসচিবের কাঁধে। তিনিও হন্তদন্ত হয়ে কাজে নেমে গেলেন। উল্টোদলের নেতারা বললেন, সেতুর নাম মধু ঢালির নামে রেখে জাতির ঘাড়ে একটা কলঙ্কই চাপানো হচ্ছে। মধু ঢালি ছিলো একটি দুষ্টলোক। সে পাশের বাড়ির জামগাছ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলো। কেন সে জামগাছে চড়েছিলো? পাতিসচিব জানালেন, টুনিসচিবের কাজ ঘ্যাম ভালো হয়েছে। এমন টুনিসচিব গত কুড়িবছরে একটাই ছিলো, যখন তিনি নিজে টুনিসচিব ছিলেন। সোজাদলের নেতারা বললেন, আসছেবার আমরা ক্ষমতায় এলে মরহুম মধু ঢালি সেতু বানিয়ে আমরা ঝিনুককে বশ করবো। পাতিসচিবের কাজের দোষগুণ মাপার দায় চাপলো পুরোসচিবের কাঁধে। তিনিও হন্তদন্ত হয়ে কাজে নামলেন। উল্টোদলের নেতারা বললেন, জাতি মধু ঢালির নামে সেতু মেনে নেবে না। সেতুর নাম রাখতে হবে অত্র অঞ্চলের বিখ্যাত রসগোল্লা নির্মাতা আবুল ময়রার নামে। নাহলে আমরণ হরতাল চলবে। পুরোসচিব জানালেন, পাতিসচিব বেড়ে খেটে কাজ করেছে। লোকটা ভালো। সোজাদলের নেতারা বললেন, প্রিয় জনগণ, মধু ঢালি সেতু আপনাদের জন্যে আমাদের উপহার। এবার পুরোসচিবের পরামর্শ নিয়ে মন্ত্রীসভায় প্রকল্পের প্রস্তাব উঠলো। কেউ বললো দাতাদের পয়সায় সেতু হোক, কেউ বললো জনতার পকেট থেকে ট্যাক্স খসানো হোক, কেউ বললেন দুটোই হোক। সেতুর ইনজিনিয়াররা ক্যালকুলেটর বার করে হিসেব করতে লাগলেন, কোন কনট্র্যাকটরের কাছ থেকে কত খাবেন। উল্টোদলের নেতারা মানববন্ধন করলেন। আবুল ময়রার ছেলে টিভির সামনে কেঁদে বললো, সব লোকে আব্বার রসগোল্লা খাইছে মাগার নাম লইবার চায়না। পত্রিকায় কয়েকজন বুদ্ধিজীবী আবুলচরিত লিখলেন। সোজাদলের কয়েকজন বুদ্ধিজীবী লিখলেন মধু ঢালির খাবনামা। লিস্টির দুই নম্বরেই ঝিনুকের ওপর সেতুর কথা। এক নম্বরে জামগাছের স্বপ্ন। দাতারা এসে নানা কাঠি দিতে লাগলো। কেউ বললো সেতু চারগলির হোক। কেউ বললো ছয় গলির হোক। কেউ বললো সেতুর ওপর রেল চড়াও, কেউ বললো সেতুর পাশে ছাপড়া ঘরে দোকান দাও। তুমুল হট্টগোল বাঁধলো সারা দেশ জুড়ে। কিন্তু সব বুড়োখোকাছেলেমেয়ে, ময়দানের মোমাছি আর রাতের ঝিঁঝিঁদের তাক লাগিয়ে একদিন ঝিনুকের ওপর সেতুর খাম্বা বসে গেলো। পেল্লায় সে খাম্বা। প্রধান এসে দেখে গেলেন। তিনি আবার সেনা সমর্থিত, তাই সেনাপতিও এলেন সাথে। সকলেই খুশি। হঠাৎ ঘটলো বজ্রপাত। সেতুর সেই খাম্বার চারদিকে একদিন উঠলো অনেক ফিসফাস। আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে লোকজন ফিসফিসিয়ে উঠলো, "আবুল লেইছ", "আবুল লেইছ", "আবুল লেইছ" ...। মাদ্রাসার কামিল পাশ ছাত্র আবুল লেইছ এসে চিৎকার করে উঠলো, "এইখানে খাম্বা গাড়ছে কে?" সবাই চুপ। চুপ জনতা, চুপ ফুলের ওপর মৌমাছি, চুপ গর্তের ঝিঁঝিঁ, চুপ উল্টোদল, চুপ সোজাদল, চুপ টুনিসচিব-পাতিসচিব-পুরোসচিব। চুপ প্রধান আর তার সমর্থক সেনা। আবুল লেইছ একটা দড়ি বেঁধে খাম্বা টেনে শুইয়ে ফেললো। তারপর ঝিনুকের পানি তুলে সহিহ কায়দায় কিছুটা খেয়ে বাকিটা কুলকুচি করে ফেললো ঝিনুকের ওপরেই। ঝিনুক সবকিছু আগের মতোই ভাসিয়ে নিয়ে বইতে লাগলো চুপচাপ, কিছু বললো না। . . এ গল্পটি ২০১০ এ প্রকাশিত গল্প সংকলন ম্যাগনাম ওপাস ও কয়েকটি গল্প"-তে অন্তর্ভুক্ত | false |
rn | জাদুকরের প্রতিশোধ – স্টিফেন লিকক । । ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন’, জাদুকর বললেন, ‘এই কাপড়টি ঝেড়ে দেখালাম, এর মধ্যে কিচ্ছু নেই। এবার এর ভেতর থেকে সোনালি মাছভরা একটি পাত্র বের করে দেখাচ্ছি আপনাদের। এই যে!’ হলভর্তি লোক বলাবলি করল, ‘কী অদ্ভুত! কীভাবে যে করে!’ কিন্তু সামনের আসনে বসা সবজান্তা লোকটি উঁচু গলায় ফিসফিস করে আশপাশের লোকদের জানাল, ‘বুঝলেন না, ওটা ওর আস্তিনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল।’ শ্রোতারা হাসিমুখে মাথা নেড়ে বলল, ‘ঠিক ঠিক।’ ক্রমে সারা হলঘরের লোকেরা নিচু স্বরে বলাবলি করল, ‘ওটা ওর আস্তিনে লুকিয়ে রেখেছিল।’ জাদুকর বললেন, ‘এবার আপনাদের সেই বিখ্যাত হিন্দুস্তানি আংটির খেলা দেখাব। এই দেখুন, আংটিগুলো আলাদা আলাদা আছে। আমার একটি ঘায়ে সব জোড়া লেগে যাবে। (ঘটাং ঘটাং) এই দেখুন।’ দর্শকদের মুগ্ধ গুঞ্জনকে ছাপিয়ে সবজান্তা লোকটির ফিসফিসানি শোনা গেল, ‘নিশ্চয়ই আরেক সেট ওর আস্তিনের মধ্যে লুকানো ছিল।’ তখন সবাই মাথা নেড়ে নিচু স্বরে বলাবলি করল, ‘আংটিগুলো ওর আস্তিনের ভেতর ছিল।’ জাদুকরের মুখ কালো হয়ে গেল। ভ্রূ কুঁচকে গেল। তিনি বললেন, ‘এবার একটা মজার খেলা দেখাব। একটা টুপির ভেতর থেকে যতগুলো ইচ্ছা ডিম বের করব। কেউ একটা টুপি দেবেন? এই যে, ধন্যবাদ। হ্যাঁ, এবার দেখুন।’ টুপির ভেতর থেকে একে একে ১৭টা ডিম বের করলেন তিনি। দর্শকেরা মুগ্ধ হয়ে গেল। কিন্তু কেবল ৩৫ সেকেন্ডের জন্য। তার পরই সামনের আসনের ওই সবজান্তা লোকটি ফিসফিস করে বলল, ‘ওর আস্তিনের ভেতর একটা মুরগি রয়েছে।’ তখন সবাই বলাবলি শুরু করল, ‘ওর আস্তিনের ভেতর অনেক মুরগি রয়েছে।’ ডিমের খেলা মাটি হয়ে গেল। এমনি করেই চলল। সবজান্তা লোকটির ফিসফিসানি থেকে জানা গেল, জাদুকরের আস্তিনে আংটি, মুরগি ও মাছ ছাড়াও ছিল কয়েকটি তাস, একটা পাউরুটি, একটা পুতুলের দোলনা, একটা জ্যান্ত গিনিপিগ, একটা ৫০ সেন্টের মুদ্রা ও একটা রকিং চেয়ার। জাদুকরের সুনামের পারা নামতে নামতে শূন্য ডিগ্রিও ছাড়িয়ে গেল। মরিয়া হয়ে তিনি একটা শেষ চেষ্টা করলেন। ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’, তিনি বললেন, ‘আমার শেষ খেলা একটি বিখ্যাত জাপানি ভেল্কি। টিপেরারির লোকেরা এই খেলাটা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছে।’ তিনি সবজান্তা লোকটির দিকে ফিরে বললেন, ‘স্যার, দয়া করে আপনার সোনার ঘড়িটা আমায় দেবেন?’ ঘড়িটা হাতে নিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা হামানদিস্তায় গুঁড়ো করার অনুমতি চাই। পাব কি?’ সবজান্তা লোকটি সবজান্তার হাসি হেসে সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ল। জাদুকর ঘড়িটিকে একটি হামানদিস্তায় ফেলে পেল্লাই একটা হাতুড়ি তুলে নিলেন। দমাদ্দম হাতুড়ি পেটানোর শব্দ হলো। সবজান্তা ফিসফিস করে বলল, ‘ঘড়িটা ও আস্তিনের মধ্যে চালান দিয়ে দিয়েছে।’ ‘এবার স্যার’, জাদুকর তাকে বললেন, ‘আপনার রুমালটি ফুটো করতে আমায় দেবেন কি? ধন্যবাদ। লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান্ট, দেখুন, এতে কোনো ফাঁকি নেই। ফুটোগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।’ সবজান্তা লোকটির পুরো মুখ কৌতুক-উত্তেজনায় ঝলমল করে উঠল। খেলাটার রহস্যটা তাকে আকৃষ্ট করেছে। ‘এবার স্যার, আপনার সিল্কের টুপিটা দয়া করে দেবেন? ওর ওপর আমি নাচব। ধন্যবাদ।’ এতক্ষণে সবজান্তার মুখে একটা বোকা বোকা ভাব ফুটে উঠল। সে ফিসফিস করে বলল, ‘ব্যাপারটা আমাকে গোলমালে ফেলেছে। রহস্যটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।’ দর্শকদের অখণ্ড নীরবতার মধ্যে জাদুকর সটান খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে সবজান্তার ওপর একঝলক অগ্নিবর্ষী দৃষ্টি হেনে শেষ কথা বললেন, ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন! আপনারা দেখলেন যে আমি এই ভদ্রলোকের অনুমতি নিয়ে তাঁর ঘড়ি ভেঙেছি, কলার পুড়িয়েছি, চশমা চুরমার করেছি, তাঁর টুপির ওপর নেচেছি। যদি তিনি তাঁর ওভারকোটটির ওপর সবুজ ডোরা আঁকার অনুমতি আমায় দেন, তো সানন্দে তা করে আপনাদের দেখাই। আর তা যদি না দেন, তো আজকের মতো খেলা এখানেই শেষ।’ সুমধুর অর্কেস্ট্রা সংগীতের সঙ্গে যবনিকা নামল। দর্শকেরাও বাড়িমুখো হলো। তারা বুঝল, জাদুর খেলা যেমনই হোক, এর মধ্যে এমন কিছু খেলাও থাকে, যা জাদুকরের আস্তিনে লুকানো থাকে না। অনুবাদঃ প্রকাশ জয়সূর্য স্টিফেন বাটলার লিককঃ জন্ম-১৮৬৯, মৃত্যু-১৯৪৪। ১৯০৮ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও অর্থনীতিবিজ্ঞানের অধ্যক্ষ। রাজনীতি-অর্থনীতিবিষয়ক রচনা এবং রসরচনা দুটিতেই সিদ্ধহস্ত। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:২৮ | false |
hm | অস্বীকার বানানটা আবারও খুঁটিয়ে দেখেন তিনি। চতুর্থবারের মতো। বিছানার পাশে ছোটো ড্রয়ার চেস্টের ওপর একটা অভিধান পড়ে আছে, সেদিকে হাত বাড়াতে গিয়েও থমকে যান তিনি। কনফিডেন্স কমে যাচ্ছে। বয়সের লক্ষণ। এমনটা আগে হতো না। কী হয় অভিধান না দেখলে? তিনি কি জানেন না, সঠিক বানানটা কী? জানেন তো। তারপরও, বানানের নিয়মকানুন নাকি পাল্টে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমী কয়েক বছর পর পর বার করছে নতুন বানানবিধি। ক্লান্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি, পত্রিকাটা সরিয়ে রাখেন কোলের ওপর থেকে। পঁচিশ বছর আগে এ ধরনের কোনো খবর কাগজে বের হতো না। হলেও বানান নিয়ে সংশয় হতো না তাঁর। সেক্রেটারিকে ডেকে বলতেন না বিছানার পাশে হাতের নাগালে একটা অভিধান রেখে যেতে। তিনি একটা ফোন করতেন কোনো এক কর্নেল আবুল বা কর্নেল কুদ্দুস বা কর্নেল সোলায়মানকে, বাকিটা সে-ই করতো। পঁচিশ বছর মানে এক পুরুষ। বালক হয়ে যায় বালকের পিতা, যুবক হয় শিশুর পিতামহ। তিনি হয়ে গেলেন পুরুষাধম। ফোলা পা দু'টোর দিকে তাকিয়ে থাকেন তিনি। হাঁটতে পারছেন না কয়েকদিন ধরে। হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছেন, কিন্তু সুস্থ হননি পুরোপুরি। বিছানার পাশে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে মুখ ব্যাদান করে রেখেছে হুইলচেয়ারটা। ভালো লাগে না তাঁর, হুইলচেয়ারে চড়ে কোথাও যেতে। "হাঁটবো, হাঁটবো, হাঁটবো ...", বিড়বিড় করেন তিনি। পাশের ঘরে সোফায় মচমচ করে শব্দ হয়। নার্স মেয়েটা উঠে আসছে, স্যাণ্ডেল ঘষটাতে ঘষটাতে। অসহ্য একটা শব্দ। এরা কি মানুষের মতো একটু পা তুলে হাঁটতে শিখবে না কখনো? দরজায় নক পড়ে, "স্যার?" চোখ বুঁজে বড় করে একটা দম নেন তিনি। দুর্বল গলায় কথা বলা যাবে না। প্রয়োজনে নৈঃশব্দ্য দিয়ে কাজ চালাতে হবে। কিন্তু কম্পিত কণ্ঠস্বরে কাউকে ডাকা যাবে না। সেটা দুর্লক্ষণ। বছরের পর বছর ধরে সঞ্চিত ভাবমূর্তি এক দিনে চুরমার হয়ে যায় মিনমিন করে কিছু বললে। অতি কষ্টে চড়া গলায় ডাকেন তিনি, "কাম ইন!" দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে মেয়েটা। পুরোদস্তুর ইউনিফর্ম পরা, শ্যামলা, বড় বড় চোখ, সাতাশ-আটাশ বছর বয়স হবে। তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকান মেয়েটার দিকে। "স্যার, কোনো সমস্যা?" মেয়েটা ভীতু, তার কণ্ঠস্বরে সেটা লুকোনোর কোনো চেষ্টা দেখা যায় না। ভালো লাগে তাঁর। এই দ্বিধা, সঙ্কোচের দূরত্বটুকু তৈরি করতে পারা জরুরি। হাসপাতালে একটা নার্স দুমদাম চাদর সরিয়ে প্যান গুঁজে দিচ্ছিলো, তাঁর মাথায় আগুন ধরে গিয়েছিলো তখন। অনুমতি নিতে কি পয়সা লাগে? বলতে পারতো না, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আমি কি একটা প্যান রেখে যেতে পারি অ্যাট ইওর সার্ভিস? প্রেসিডেন্ট! মলিন একটা হাসি দমিয়ে রাখতে পারেন না তিনি। এখন নেই, কিন্তু ছিলেন তো? আবারও হয়তো হবেন কোনো একদিন, কে জানে? নার্স মেয়েটা দাঁড়িয়ে থাকে জড়োসড়ো হয়ে। রেসিডেন্ট ডক্টর রেখে যেতে চেয়েছিলো মহাসচিব, তিনি নিষেধ করে দিয়েছেন। বলেছেন কোনো সমস্যা হলে নার্স হাসপাতালে ফোন করে অ্যামবুলেন্স আনিয়ে নেবে সাথে সাথে। ঘরে বসে ডাক্তার কী হাতিঘোড়া মারবে? "কিছু না মাই ডিয়ার।" মোলায়েম গলায় বলেন তিনি। "যাও তুমি। আয়্যাম ফাইন।" মেয়েটা দেরি করে না একটুও, মাথা নেড়ে পিছিয়ে যায়, দরজাটা ভিড়িয়ে দেয় আলতো করে। নার্সের বয়স আরেকটু বেশি হলে তার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করতেন হয়তো। তিরিশের নিচে যাদের বয়স, তারা বড় ছটফটে। তাদের এখন আর ভালো লাগে না তাঁর। পঁচিশ বছর আগে হলে একটা কথা ছিলো ...। তিনি বিড়বিড় করেন, "মাঠে মাঠে মরে গেল ইঁদুর পেঁচারা!" হ্যাঁ, ইঁদুর পেঁচারা ঘুরে যায় মাঠে মাঠে, ক্ষুদ খেয়ে ওদের পিপাসা আজও মেটে, পঁচিশ বছর তবু গেছে কবে কেটে! কত ইঁদুর পেঁচা কত ক্ষুদ খেয়ে ক্ষুণ্নিবৃত্তি করে যাচ্ছে, মাঠ গরম করছে, আর তিনি শুয়ে আছে বিছানায়, হাঁটতে পারছেন না, অভিধান দেখে ঠিক করতে চাইছেন, অর্শ না অর্শ্ব। অর্শ্ব বানানটা নিয়ে তিনি অসন্তুষ্ট নন অবশ্য। যে লিখেছে, সে ইচ্ছে করেই ভুল বানানে অর্শ্ব লিখলো কি না, কৌতূহল হচ্ছে কেবল। অর্শ্ব! এই ভুল বানানে লুকিয়ে আছে একটা ঘোড়ার ছবি। সেই ছবিটা তাঁর পছন্দ। একটা টগবগে কেশরওয়ালা ঘোড়া, গলায় একটা স্কার্ফ বাঁধা, প্রান্তরে প্রান্তরে সে ছুটে বেড়াচ্ছে তার প্রকাণ্ড শিশ্ন ঝুলিয়ে। অর্শ্ব, হা হা হা! ঐ সামান্য রেফটা একটা পাতলা পর্দার মতো, ও কি পারে ঘোড়াটাকে লুকিয়ে রাখতে? হ্যাঁ, একটা ঘোড়া! দড়ির মতো পাকানো তার শরীরের এক একটা পেশী! সে ছুটছে আর ছুটছে আর ছুটছে ...! কাগজটা দলেমুচড়ে এক পাশে ছুঁড়ে ফেলেন তিনি। ফোলা পা দু'টো নাড়ানোর চেষ্টা করেন। হাঁটতে হবে একটু। অভিধান দেখবেন না তিনি। তিনি জানেন, ওখানে লেখা আছে অর্শ, যার ইংরেজি পাইলস, হেমরয়েডস। অর্শ্ব শব্দটা ভুল। ওর মধ্যে যে ছবিটা লুকিয়ে আছে, সেটাও ভুল, কিন্তু তৃপ্তিদায়ক। একটা জাতির প্রথম সারির দৈনিকে তিনি এখনও অদৃশ্য ঘোড়ার লাগাম পরিয়ে রেখেছেন, তাঁর কথা বলতে গিয়ে ওরা বলে বেড়াচ্ছে সেই পঁচিশ বছর আগের ঘোড়াটার কথা। ছুটছেন, তিনি এখনও দাবড়ে বেড়াচ্ছেন দেশের লোকের মনের জমিতে। কিন্তু একটা প্রতিবাদলিপি পাঠাতে হবে। প্রেস কনফারেন্স করাতে হবে মহাসচিবকে দিয়ে। মোটেও তাঁর অর্শ হয়নি, হয়েছিলো রক্ত-আমাশা। ভদ্রলোকদের অর্শ হয় না। প্রেসিডেন্টদের অর্শ হয় না, ইউ ব্যাস্টার্ডস! অর্শ হয় তোদের, ছোটলোকদের। প্রেসিডেন্টদের অবস্থা খুব খারাপ হলে বড়জোর ডিসেন্ট্রি হতে পারে। হতেই পারে, দেশটা যেভাবে চলছে, তাতে প্রেসিডেন্টদেরও ডিসেন্ট্রি হতে পারে। স্বীকার করবেন না তিনি অর্শের কথা। প্রতিবাদলিপি পাঠাবেন, তাতে একটা হুমকিও থাকবে। দৈনিকগুলো ভুল স্বীকার না করলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। এই ভুল সংবাদ পরিবেশন করে তাঁর মর্যাদাহানির অপচেষ্টা করা হয়েছে। তিনি গলা চড়িয়ে ডাকেন, "নার্স!" সেই ডাকের বায়ুস্তম্ভ ধরেই যেন একটা সুতীব্র বেদনা তাঁর গোটা শরীর বেয়ে উঠে আসে মস্তিষ্কে। আবারও প্রচণ্ড ব্যথা, পেছনে। যান্ত্রিকভাবেই তাঁর হাত চলে যায় পেছনে। পায়জামাটা ভিজে উঠেছে, হাতটা ফিরে এলে তিনি দেখেন, গাঢ় লাল রক্ত বার্তা হিসেবে উঠে এসেছে আঙুলে। আবারও শুরু হয়েছে রক্তক্ষরণ। তাঁর শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে রক্ত, আপন শক্তিতে, স্রোতস্বিনীর ধীর লয়ে। কাঞ্চনের, জয়নালের, জাফরের, দীপালি সাহার রক্ত নিজের মতো করে পথ খুঁজে বেরিয়ে যাচ্ছে তাঁর শরীর ছেড়ে। নার্স মেয়েটা চিৎকার শুনে দরজা খোলে। দেখে, বৃদ্ধ লোকটি তার দিকে রক্তমাখা হাত বাড়িয়ে আকুল হয়ে চিৎকার করছে, বিকেলের রোদে ঝিকিয়ে উঠছে তার শ্বদন্ত দু'টি, "আমার হাতে রক্ত নাই! আমার হাতে রক্ত নাই! আমার হাতে রক্ত নাই ...!" | false |
rg | সাকিবের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ! চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ইংল্যান্ডকে ২৯৩ রানে অলআউট করার পর বাংলাদেশ ৭৪ ওভার খেলে তুলেছে ২২১ রান। টাইগার্সরা হারিয়েছে ৫টি উইকেট। টাইগার্স ক্যাপ্টেন আর মাত্র তিনটি বল খেলতে পারলে সাকিবের সঙ্গে অপরাজিত থাকতে পারতেন। সেটা আজকে দ্বিতীয় আপসেট। প্রথম আপসেট তামিম ইকবালের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবারো সেঞ্চুরি মিস। তামিম ৭৯ রান করে আউট হন। টাইগার্স শিবিরে সবচেয়ে ভরসার যিনি সেই মোমিনুল হক মাত্র তিন বল মোকাবেলা করে মইন আলী'র দ্বিতীয় শিকার হন। এর আগে ইমরুল কায়েসের উইকেট তুলে নিয়ে মইন আলী ইংলিশ শিবিরের জন্য প্রথম সস্তি নিয়ে আসেন। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ২২১ রান। ক্রিজে আছেন সাকিব আল হাসান নটআউট ৩১ রানে আর ০ রানে অপরাজিত নাউটওয়াচম্যান শফিউল ইসলাম। প্রথম দিনে ইংলিশ শিবিরের আতংক টাইগার্সদের নিউ সেনশান টেস্ট ডেব্যুট মেহেদি হাসান মিরাজ দ্বিতীয় দিন সকালে স্টুয়ার্ড ব্রোডের উইকেটটি নিয়ে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেবার গৌরব অর্জন করেন। মিরাজকে বলা হচ্ছে টাইগার্সদের নয়া সাকিব। অনুর্ধ্ব-১৯ দলে মিরাজ ব্যাটসম্যান হিসেবে দারুণ সাফল্য দেখানোর পর এবার টেস্টের জন্য ডাক পায়। কিন্তু চট্টগ্রামের ডাস্ট উইকেট স্পিন ফেবার হওয়ার কারণে টাইগার্স ক্যাপ্টেন মুশফিক ডেব্যু হওয়া স্পিনার মিরাজের উপর যে ভরসা করেছেন, তার শতভাগ দিয়েছেন মিরাজ। টেস্ট ডেব্যুতে প্রথম ইনিংসে ৩৯.৫ ওভার বল করে ৮০ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে গোটা বিশ্বকেই চমকে দিলেন মিরাজ। আহা কী জাদুময় এক অভিষেক। দ্বিতীয় দিনেই চট্টগ্রাম টেস্টের পেস রহস্যময় আচরণ শুরু করেছে। এমন ডাস্ট উইকেটে রান তোলা ব্যাটসম্যানদের জন্য খুব কঠিন কাজ। যে কোনো সেট ব্যাটসম্যান যে কোনো বলেই একটু অসর্ক হলেই আউট হয়ে যেতে পারেন। যেমনটি দেখা গেছে বাংলাদেশের ইমরুল কায়েস, মোমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকুর রহমানের বেলায়। দিনের খেলা শেষ হবার আর মাত্র দুই ওভার তিন বল বাকি, তখন টাইগার্স ক্যাপ্টেন যেভাবে কনফিডেন্সের অভাবে আউট হলেন, এটা এখন ইংলিশ শিবিরে নতুন আশা জাগাতে পারে। কিন্তু মাঠের দুই আম্পায়ার কোন যুক্তিতে ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে শেষ তিন ওভার খেলা চালালেন, এটার কোনো ব্যাখ্যা টেস্ট ক্রিকেটে নাই! ইংলিশ ক্যাপ্টেন আলস্টার কুক সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে টাইগার্স ক্যাপ্টেনের উইকেটটি তুলতে পেরেছেন!আগামীকাল সকালে সাকিব আর নাইটওয়াচম্যান শফিউল যদি প্রথম সেশনটা পার করতে পারে, তাহলে লাঞ্চের আগে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে লিড নিয়ে নেবে। আবার যদি সকালের কুয়াশাকে কাজে লাগিয়ে স্টুয়ার্ট ব্রোড বা গ্যারেথ বেট্টি টাইগার্স শিবিরে আতংক ধরিয়ে দেয়, সেক্ষেত্রে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড লিডও নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের হাতে এখনো সাকিব আর সাব্বিরের মত দুইজন ব্যাটসম্যান রয়েছে। মেহেদি হাসান মিরাজও একজন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান। সেই হিসাবে প্রথম টেস্টে কালকের সকালের প্রথম সেশনটাই এই টেস্টের রেজাল্টের আগাম পূর্বাভাস দেবে বলে আমি মনে করি। তৃতীয় দিন সকালের সেশনে যারা এগিয়ে থাকবে এই টেস্টের রেজাল্ট তারাই ছিনিয়ে নেবে। টাইগার্সদের হাতে এখনো সেই সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ডাস্ট উইকেটের আচরণ দুপুরের দিকে আবার বদলে যাবে। তখন ব্যাটে রান আসবে। আগামীকাল টাইগার্সরা প্রথম ইনিংস কতোটা লম্বা করতে পারবে, তার উপর এই টেস্টের রেজাল্ট নির্ভর করে। বিশেষ করে কাল সকালের প্রথম সেশানটা। সাকিবের ব্যাটের দিকে এখন তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ। সাকিব, সাব্বির, মিরাজরা প্রথম ইনিংসে যদি মোটামুটি ১০০ রানের একটা লিড এনে দিতে পারে, তাহলে এই টেস্ট টাইগার্সদের পক্ষে যাবে। আর যদি প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ লিড না পায়, তাহলে ইংলিশ ক্যাপ্টেন কুক প্রথম ইনিংসে যেভাবে ব্যর্থ হয়েছেন, তা পুষিয়ে এই টেস্ট নিজেদের করার জন্য প্রয়োজনীয় সব চেষ্টাই করবেন। বাংলাদেশ সফর শেষ করার পর ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের পাঁচ টেস্ট সিরিজের অনুশীলনটা ইংলিশরা বাংলাদেশের উপর দিয়ে নিরীক্ষা করার যে মিশন নিয়েছে, এখন সেটাকে নস্যাৎ করার দায়িত্ব আমাদের ব্যাটসম্যানদের উপর বর্তায়। কারণ, চট্টগ্রাম টেস্টে রেজাল্ট আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কাল যারা ভালো খেলবে, এই টেস্ট তারাই জিতবে। এটাই আমার ধারণা। চট্টগ্রাম টেস্টের সংক্ষিপ্ত স্কোর:প্রথম ইনিংস:ইংল্যান্ড: ২৯৩ (মইন আলী ৬৮, মেহেদি হাসান মিরাজ ৬/৮০)বাংলাদেশ: ২২১/৫ (সাকিব ৩১*, শফিউল ০*, মইন আলী ২/৬৬)ইংল্যান্ডের এখনো ৭২ রানের লিড.................................২১ অক্টোবর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৩ | false |
mk | বিএনপির আন্দোলনের ডাক! দুয়েকটি পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে, বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট ডিসেম্বর মাসে সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঢাকার বাইরে দুয়েকটি জনসভা করেছেন আরো কয়েকটি সভার সূচি নির্ধারিত ছিল, জামাতের ডাকা হরতালের কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। শিগগির তা হতে যাচ্ছে। বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিসহ শীর্ষ পর্ষদের নেতাদের সঙ্গে, একই সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এসব বৈঠকের পরই বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে আভাসইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।ডিসেম্বরজানুয়ারি মাস শীতকাল। এ সময়টা আন্দোলনের অনুক‚ল পরিবেশ হিসেবেও ভাবা হয়, তাই ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ ডাকার কথাও দলটি ভাবছে বলে পত্রপত্রিকায় ধারণা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া গত বছর ডিসেম্বর মাসে ২০ দলীয় জোট ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক কর্মসূচি পালন করেছিল। ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামে ঢাকা চলো কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল। সেই কর্মসূচি চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সরকার বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও শেষ করতে পেরেছিল। নিকট অতীতের সেসব ঘটনা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। এখন মনে হচ্ছে বিএনপি বছর শেষে বা পূর্তি উপলক্ষে আন্দোলন করার কথা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে ২০ দলীয় জোট এই আন্দোলনের সূত্রপাত করতে চায় বলে মনে হচ্ছে।তবে বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের জন্য যেটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তা হচ্ছে, জনগণ সেই ডাকে সাড়া দেবে কিনা তা বোঝা। গত এক বছর ধরে ২০ দলীয় জোট আন্দোলনের ডাক দেয়ার ঘোষণা অনেকবারই দিয়েছিল, কিন্তু কোনোবারই তারা ঘোষিত সময় অনুযায়ী কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি। জনগণের মধ্যেও এসব আন্দোলনের কর্মসূচির প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ লক্ষ করা গেছে তেমনটি বলা যাচ্ছে না। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, বিএনপির সমর্থকদেরও অনেককেই দেখা গেছে রাজনীতি, আন্দোলনসংগ্রাম, হরতাল ইত্যাদি নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য না করতে। এই মুহ‚র্তে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে সাধারণ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো কোনো মনোভাব দেখছেন বলে মনে হয় না। এর কতোগুলো বাস্তব কারণ রয়েছে। প্রথমত মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়, কেন গেলো বছর বিএনপি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলো। যতোই বলা হোক যে, সরকার চায়নি বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। এমন দাবি শিশুসুলভ। সরকার চাইলেই বিএনপির মতো একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এটি মানা যায় না। মানলে বিএনপির নিজস্বতাই যে নেই, তা মানতে হবে, স্বীকার করতে হবে। বিএনপি যখন এমনটি বলে তখন তারা রাজনৈতিকভাবে নিজেদের হেয় করে। বিএনপি এখন হয়তো কর্মীসমর্থকদের সান্ত¡না দেয়ার জন্য এটি বলতে পারে। তবে গেলো বছরের বাস্তবতা গভীরভাবে মনে রেখে দেখলে মানতে হবে যে, বিএনপির এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে অন্য রকম হিসাবনিকাশ ছিল, বিবেচনা ছিল। সেই হিসাবনিকাশ সফল হয়নি, ব্যর্থ হয়েছে। আর সরকার যেনতেনভাবে হলেও একটি নির্বাচন সম্পন্ন করে উতরে যেতে পেরেছে। যদি উতরে যেতে না পারতো তাহলে বিএনপির পরিকল্পনাই সফল হতো। তাহলে সহজেই প্রশ্ন জাগে, বিএনপির পরিকল্পনা বা হিসাবনিকাশ কী ছিল? বিএনপির পরিকল্পনা এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট, তা হচ্ছে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে না দেয়া। নির্বাচন করতে না পারলে আওয়ামী লীগ জনরোষে পড়বেই, জনগণ বের হয়ে আসবেই সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবেই, তাতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাংলাদেশে বড় ধরনের জনরোষে পড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে, এর বিপরীতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বিএনপি বা ২০ দলীয় জোটের উত্থান ঘটবে অনায়াসেই। তখন আওয়ামী লীগকে যা করার তা করা যাবেই। এর বাইরে অন্য কোনো পরিকল্পনা বা হিসাবনিকাশ থাকার মতো কিছু দেখা যায় না। বিষয়টি তখন অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল যে, বিএনপি কেন নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করতে গেলো, যেখানে শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ করাসহ নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা যখন নমনীয় হয়েছিলেন, তখন খালেদা জিয়া কঠোর অবস্থানে গেলেন এবং নিজস্ব পরিকল্পনা মতো এগিয়ে যেতে থাকেন। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছে যেটি খুবই দুঃসহ স্মৃতি হিসেবে ভেসে ওঠে তা হচ্ছে গেলো বছর সরকার উৎখাত, নির্বাচন প্রতিহতসহ বিভিন্ন দাবি দিয়ে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী যে তাণ্ডব শুরু করেছিল তা ছিল অবিশ্বাস্য। জামাতশিবিরের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার জন্য গাছ কাটা, রাস্তা কাটা, ব্যারিকেড দেয়া, গাড়ি পোড়ানো, যাত্রীদের লক্ষ্য করে পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করা, মানুষ পুড়িয়ে মারা হেন কোনো অপরাধ নেই তা করেনি। ট্রেনে আগুন দেয়া, লাইন উপড়িয়ে ফেলা ইত্যাদি চরমপন্থার অবতারণা করা হয়েছে।অতীতে দেশে সরকারের বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু গেলো বছরের আন্দোলন সকল সহিংসতার মাত্রা অতিক্রম করেছিল। তাতে একদিকে যেমন জনমনে প্রচণ্ড ভীতি ও জীবনমরণ অবস্থা তৈরি হয়েছিল, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের আয়উপার্জন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, জনগণের বিরুদ্ধে ২০ দলের অবস্থান বলে প্রতীয়মান হয়েছিল। ফলে মানুষ ২০ দলের দাবিদাওয়া আন্দোলন ও কর্মসূচি প্রতি একাত্ম হওয়ার পরিবর্তে এর থেকে মুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। মানুষ ভোট বা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। এ কারণেই ৫ জানুয়ারির পর সরকার যখন নির্বাচনটি যেভাবেই হোক শেষ করে দিতে সক্ষম হয়, সাধারণ মানুষ ৬/৭ তারিখ থেকে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। নির্বাচন ভালো হয়েছে কি মন্দ হয়েছে তা নিয়ে ভাবতে চায়নি, বিচার করতে যায়নি। বাংলা প্রবাদ ‘ভিক্ষা চাই না, কুত্তা সামলাও’ এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে দাঁড়াতো ‘নির্বাচন চাই না, ‘আন্দোলন’ সামলাও’। এর জন্য জনগণ নয়, বিরোধী দলই দায়ী এটি স্বীকার করতে হবে। কোনো আন্দোলনের কর্মসূচি যদি এতোটা নিষ্ঠুর, নির্দয়, অমানবিক এবং পোড়াপুড়ি নির্ভর হয়ে পড়ে তাহলে জনগণ তো সেই আন্দোলনকে ভয় পাবেই, পালাবেই। ২০১৩ সালের বিরোধী দলের তথাকথিত আন্দোলন মানুষকে কতোটা ভীতসন্ত্রস্ত করেছে তা যদি বিএনপির মতো দল এখনো বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ না করে তাহলে জনগণের সমর্থন লাভের কর্মসূচি দেয়ার বিষয়গুলো তারা কতোটা নিতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।মানুষ এখনো গেলো বছরের দুঃসহ দিনের কথা ভাবতে শিউরে ওঠে। মানুষের রুটিরুজি যদি কোনো দল বন্ধ করে দেয়, তাদের জীবন যদি বিপন্ন করে দিতে কুণ্ঠাবোধ না করে তাহলে সেই আন্দোলনে জনগণের সমর্থন বা অংশগ্রহণ কখনই বৃদ্ধি পাবে না। কেবলমাত্র দলীয় নেতাকর্মীসমর্থকদের দিয়ে আন্দোলন করা যায়, কিন্তু জনসমর্থন বাড়ানো যায় না। বাড়াতে হলে সে ধরনের কর্মসূচি থাকতে হয়, নিজেদের করণীয় কি তা জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হয়। সেটি ২০১৩ সালের কোনো আন্দোলনেই ছিল সরকার পতনের লক্ষ্যাভিমুখী কোনো পরিকল্পনা গোপন থাকে না। ৫ মে হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ৬ তারিখ ঢাকায় ‘তাহরির স্কয়ার’ করার পরিকল্পনা লুকানো যায়নি। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহত করার নামে সাংবিধানিক সংকট এবং সরকার উৎখাতের পরিকল্পনাও গোপন থাকেনি, এসব বিষয় এরই মধ্যে বহুলভাবে আলোচিত হচ্ছে, যতোই মিডিয়ায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কতিপয় আলোচক একভাবে সরকারকে দায়ী করে বক্তব্য দেন, কিন্তু রাজনীতির বিশ্লেষণ যাদের চিন্তাভাবনায় উপস্থিত তারা বিষয়টিকে অতোটা সরলভাবে উত্তর দিতে পারেন বলে মনে হয় না। তারপরও অনেকেই সে রকমই কিছু দিয়ে থাকেন। সেটিই আমাদের শুনতে হয়।তবে এখন বিএনপি যে আন্দোলনের ডাক দেবে বলে বলা হচ্ছে তার প্রতি জনগণের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা ডাক দেয়ার পরই দেখা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত মানুষ এ নিয়ে নির্বিকার এটিই দেখা যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, গেলো বছরের দুঃসহ স্মৃতি, দ্বিতীয় হচ্ছে গেলো বছর বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি, বর্জন করেছে, তা প্রতিহত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। এখন এক বছর যেতে না যেতে এমন কী হয়ে গেছে যে, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়ে গেছে। নির্বাচনের কোনো পরিবেশই তৈরি হয়নি এমনটি সবাই দেখছে। দেশে পরবর্তী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে এখন থেকেই নির্বাচন ব্যবস্থা, কমিশনসহ অনেক কিছুতেই আইনি সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। সেসব দাবিদাওয়া যুক্তিসঙ্গতভাবে সরকারের কাছে তুলে ধরা জরুরি হতে পারে। ভবিষ্যৎ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে সেটিও আলোচনায় আসা উচিত। এ নিয়ে সরকার এবং বিএনপির মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরির দাবি করা যেতে পারে। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে করণীয় বিষয়সমূহ নির্ধারণ না করে এখন আন্দোলনের ডাক দেয়ার অর্থ নির্বাচন নয়, নিজেদের দলীয় কোনো বিবেচনা, জামাতকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা এমন কিছু একটা হতে পারে জনগণ তো তাই মনে করছে। তেমন আন্দোলনে জনগণ কতোটা সাড়া দেবে তা বলা মুশকিল। তবে ২০ দলীয় জোট আন্দোলন করতে চাইলে কিছুদিন হরতাল বা অন্যকিছু দিয়ে মাঠ কিছুটা উত্তপ্ত করতে পারে। শেষ বিচারে সেই আন্দোলনের ফলাফল কী হবে তা দেখা যাবে পরে যেমনটি গেলো বছরের অন্তঃসারশূন্য ফলাফল দেখা গেছে জানুয়ারির ৫ তারিখের পর থেকে। সুতরাং বিএনপি ভেবেচিন্তেই কর্মসূচি দেবে তেমনটিই রাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করতে পারেন। | false |
fe | বিজয়ের রক্তশিখায় স্বপ্নের নামাবলি বিজয়ের রক্তশিখায় স্বপ্নের নামাবলি ফকির ইলিয়াস ------------------------------------------------------------- সাধারণ মানুষের প্রত্যাশায় কোন কৃত্রিমতা ছিল না। তারা রক্ত দিয়েই একটি মানচিত্র পাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল। তাই প্রাণের বলিদান, আত্মাহুতি কোন মুখ্য বিষয় ছিল না। সে সময় রাজনীতিকরাও স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন একটি স্বাধীন ভূমির। একটি বলীয়ান জাতিসত্তার। মানুষ রাজনীতিকদের কথায় আস্খা রেখেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে। সে যুদ্ধে তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এরপরের দায়িত্বটুকু ছিল জনগণ-রাজনীতিকের সমন্বয় সাধনের। যে কাজটি দ্রুত করতে পারেননি স্বাধীনতা পরবর্তী রাষ্ট্রশাসকরা। করতে পারলে তাৎক্ষণিক বহুধা বিভক্তির জন্ম হতো না। মানুষও বিভ্রান্ত হতো না। একটি স্খিতিশীলতার পথ দেখত জাতি। রাষ্ট্রের অবকাঠামো নির্মাণে, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা সবসময়ই জরুরি ভমিকা রাখে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে পরিকল্পনায় ছিলেন ব্যাপক উদার। তার উদারতা তাৎক্ষণিক মহানুভবতার পরিচয় দিলেও পরাজিত পক্ষ সেটা দেখেছিল দুর্বলতা হিসেবে। যার ফলে এখনও তারা বলে কিংবা বলার সাহস দেখায়, শেখ মুজিব ঘাতক-দালালদের সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন! বঙ্গবন্ধু তেমন কোন ‘ক্ষমা’ ঘোষণা করেননি। বরং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্খা নেয়ার তাগিদ দিয়েছিলেন। বিভিন্ন ব্যক্তিগত খাতিরের সুযোগ নিয়ে, সামাজিক মুচলেকা দিয়ে তারা পার পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কেউ কেউ পলায়ন করেছিল পাকিস্তানে। পলাতক মাহমুদ আলী পাকিস্তানে মারা গেলেও, গোলাম আযমরা ফিরে এসেছিল পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে এবং পাখনা মেলেছিল সদলবলে। পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর যারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার নেশায় মত্ত ছিল তাদের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। দেশের মঙ্গল সাধনের চেয়ে, দেশ থেকে মুজিব এবং তার স্বপ্নের নামাবলি মুছে দেয়ার প্রধান ইজারা নিয়েছিল তারা। দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর চেয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ লুটপাটকে বেছে নিয়েছিল তারা টিকে থাকার সিঁড়ি হিসেবে। প্রয়োজনীয় গণউন্নয়ন খাতের বাজেটকে সঙ্কুচিত করে তারা মনগড়া অনুন্নয়নশীল খাতে বরাদ্দ করেছিল বেশি রাষ্ট্রীয় অর্থ। সবচেয়ে বেশি অমনোযোগী ছিল শিক্ষা খাতের প্রতি। ভয় ছিল, মানুষ সুশিক্ষিত হয়ে গেলে লুটপাটের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারে। একটি জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে যে প্রত্যয়টির প্রধানত প্রয়োজন ছিল তা হচ্ছে দেশ গঠনে আন্তরিকতা। সেদিকে না এগিয়ে একটি মহল বন্দুক উঁচিয়ে ক্ষমতা স্খায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে ছিল মরিয়া। শেখ মুজিবকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন নেতা ষ্পষ্ট বলেছিলেন, কাল সাপেরা ছোবল দিতে পারে। হ্যাঁ, সেটাই হয়েছিল। বন্দুকধারীদের সঙ্গে খুব সহজেই যোগ দিয়েছিল পরাজিত রাজাকারচক্র। তাদের মধ্য থেকে শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার মাধ্যমে রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বেশ জোরেশোরে। এসময়ে দুটি চেষ্টা ছিল প্রকট। একটি হচ্ছে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে পলিটিশিয়ানদের জন্য পলিটিক্সকে ডিফিকাল্ট করা। আর অন্যটি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে ক্রমেই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এই দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, অতএব এদেরই নিপাত কর এমন একটি নেপথ্য চিন্তায় ইন্ধন যুগিয়েছিল পরাজিত ঘাতক আলবদর-রাজাকার চক্র। পাক তমদ্দুনকে কাজে লাগানোর চেষ্টা ছিল ব্যাপক। একটি রাষ্ট্রের বশ্যতা স্বীকার করে সে রাষ্ট্রের মানুষের জন্য পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করার বিষয়ে বাংলাদেশে পরাজিত চক্রের শুরুতেই ছিল না। তারা খামোশ হয়ে, পরিস্খিতি পর্যবেক্ষণে ছিল ১৯৭৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত। এরপরই সুযোগের সদ্ব্যহার করেছিল যথার্থই। দুই. বাংলাদেশের উন্নয়ন না হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে, জনগণের প্রতি রাজনীতিকদের আনুগত্য না থাকা। দায়বদ্ধতার অভাব এবং জনগণের সম্পত্তি হরণ করে নেয়ার মানসিকতা। স্বৈরশাসক এরশাদ সে কাজে নতুন মাত্রা যুক্ত করে, মস্তানদের লেলিয়ে দেন প্রতিপক্ষ রাজনীতিকদের ওপর। ফলে দেশের ভেতরে ‘পলিটিক্যাল ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’রা প্রবল শক্তিশালী হয়ে উঠে। এরা মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত পায়। তাদের বাসা থেকে ধৃত হয় গালকাটা কামালের মতো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। রাষ্ট্রপক্ষ, জনগণের ওপর এমন দানব লেলিয়ে দেয়ার ঘটনাগুলো বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিষিয়ে তোলে। এরশাদের পতনের পর তারা নতুন আঙ্গিকে প্রধান দুইদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপর ভর করে। তারা শুরু করে নতুন নতুন অপচেষ্টা। এই যে দুই প্রধান দলের ভেতরের লুটেরা শ্রেণী, তারা যে এরশাদের সৃষ্টি তা খুঁজে দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। এদের দেখাদেখি প্রধান দুই দলে আরও কিছু নেতা এ পথ অনুসরণ করেছে ’৯০-এর গণআন্দোলনের পরে। প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর দেশে ডানপন্থি মোর্চাটি বেপরোয়া হয়ে উঠতে থাকে। এই যে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা’ সেটাও কিন্তু রাজনীতিকদের পারস্পরিক অবিশ্বাসের ফসল। রাজনীতিকদের যে নূন্যতম দায়বদ্ধতা জনগণের প্রতি নেই তার প্রমাণও এই তত্ত্বাবধায়ক প্রথাটি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও এত চমৎকার গণতান্ত্রিক সৌহার্দ্যতা থাকার পরও বাংলাদেশ তা অনুসরণ করতে পারেনি তা চরম বেদনাদায়ক এবং লজ্জাজনকও বটে। বিএনপির ব্যর্থতার কারণে ’৯৬-এর নির্বাচনে জিতে আসে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এ সময়ে আওয়ামী নেতারা আরও দাম্ভিক, অহমিকাপূর্ণ আচরণ শুরু করেন গণমানুষের প্রতি। দুর্নীতিতে তারাও সমান পারদর্শিতা দেখান। মানুষ দাঁড়ানোর পথ খুঁজে না পেয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে আবার বিএনপি জোটের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়। সে সঙ্গে মন্ত্রিত্ব পায় একাত্তরের আলবদর বাহিনীর দুই খুনি ও তাদের প্রেতাত্মা। দেশে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ লালনে স্বীকৃত রাজনীতিকদের কি ভূমিকা ছিল তা আজও অজ্ঞাত। শায়খ রহমান কিংবা বাংলা ভাই কখনই দেশে প্রধান কোন নায়ক ছিল না। প্রধান নায়করা নেপথ্যে ছিল এবং এখনও আছে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের মূল্য যারা এখনও স্বীকার করতে চায় না তারা অন্যভাবে ক্ষমতার মসনদ চায়। আর তা হচ্ছে জঙ্গিবাদ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপ, সমীক্ষার মতে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের উর্বর ভমি হতে চলেছে। সে কথা আমরা গেল প্রায় এক দশক থেকেই শুনে আসছি। যা রাষ্ট্রের জন্য, মানুষের জন্য ভয়ানক শঙ্কার কারণ। শঙ্কার কারণ সুস্খ ধারার রাজনীতির জন্যও। এমন চরম হতাশার মধ্যেই জন্ম নেয় ওয়ান-ইলেভেন নামক পরিবর্তনটি। কিন্তু নানা পর্যবেক্ষণের পর ২০০৮ সালের শেষার্ধে আমরা দেখলাম রাষ্ট্রক্ষমতা সেই পুরনো খেলোয়াড়দের হাতেই দিয়ে দেয়া হচ্ছে। ৩৭ বছরে কি পেয়েছে এই জাতি? কতটা পরণ হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গীকার? কেন হয়নি? কারা হতে দেয়নি? ২০০৮ সালের বিজয় দিবসে প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা দরকার। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এমন বিপর্যয়ের মুখোমুখি, এদেশে ভাস্কর্য পর্যন্ত নিরাপদ নয়। একশ্রেণী ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দেশকে অচল করে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। সেই স্বৈরশক্তি এবং জঙ্গিশক্তি দুটি প্রধান দলকে নিয়ন্ত্রণ করার মতলব আঁটছে। জাতীয় পার্টি আর মহাজোটের সঙ্গে থাকবে না ঘোষণা দিয়ে প্রকারান্তরে নিজেদের শক্তি পরীক্ষা করছে পতিত স্বৈরাচাররা। এমনি একটি শঙ্কা নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিশেষ মহলের কৃপায় স্বতন্ত্র এবং ছোট দলগুলো যদি আগামী সংসদে ফ্যাক্টর হয়ও তবুও কি কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে বাংলাদেশ? নাকি শহীদের রক্তেভেজা মাটিতে অধরাই থেকে যাবে স্বপ্নের নামাবলি! নিউইয়র্ক, ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ --------------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ১২ ডিসেম্বর ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:০৩ | false |
hm | আম যেভাবে জাতীয় বৃক্ষ হলো ১. সচিব মহোদয় ফাইলটি খুললেন শুরুতে। তারপর চোখ খুললেন। নাহ, সব ঠিকই আছে। ছয়টার কথাই বিশদ লেখা আছে। বৈজ্ঞানিক নামধাম, কোথায় জন্মে, কত উঁচু হয়, উপকারিতা কী, ইত্যাদি নানা হাবিজাবি গুছিয়ে লেখা আছে। দুই সপ্তাহ আগে এক অধিদপ্তরের কর্তা এই ফাইল পাঠিয়েছিলো, তাতে হিজল আর তাল ছিলো না। দুটো গাছকে ফাইলে ঢোকাতে মাত্র দুই সপ্তাহ লেগেছে। মনে মনে উপসচিবের প্রশংসা করলেন তিনি। ছেলেপেলে খুব কর্মঠ হয়ে উঠছে। প্রশাসনের কাজে গতি আসতে শুরু করেছে। তিনি যখন উপসচিব ছিলেন, তখন হিজলকে ফাইলে ঢোকাতে কমসে কম মাস তিনেক লাগতো। তালের জন্যে আরো দেড় মাস। তারপর আবার সব খুঁটিয়ে দেখে দুই ধাপ টপকে সচিবের হাতে ফাইল পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরো মাস তিনেক। অধিদপ্তরের কর্তা উপসচিব সেদিনের ছোকরা, রক্ত গরম এখনও, সব কাজ চটজলদি সেরে ফেলতে চায়। আমলাদের হতে হয় কুমীরের মতো, সব শক্তি আর তাপ নিতে হয় চারপাশ থেকে, সময়মতো মওকা বুঝে তড়িৎগতিতে নড়তে কিংবা চড়তে হয়, বাকিটা সময় কাটিয়ে দিতে হয় চুপচাপ রোদ পোহানোতে। লাফঝাঁপ দেয় ব্যাং। তার নিজের পছন্দ হিজল। গ্রামের বাড়িতে বাড়ির মেয়েদের গোসলের পুকুরের পাশে হিজলের সারি চোখে ভাসে এখনও। কী চমৎকার একটা গাছ, হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের চোদনাপনার কারণে। সচিব মহোদয় একটু গম্ভীর হয়ে ওঠেন। মানুষের চোদনাপনার জন্যে নয় ... নচ্ছাড়পনার জন্যে, নিজেকে সংশোধন করেন তিনি মনে মনে। আ ম্যান ইজ অ্যাজ গুড অ্যাজ হিজ থটস। বাকি পাঁচটা গাছও মন্দ নয়। আম। তাল। পলাশ। শিমুল। কদম। ঢাকা শহর থেকে বেরিয়ে খোলা বাংলাদেশের কোথাও তাকালে এদের একটা না একটা চোখে পড়বেই। আরিচা রোডের দুই পাশে একটু পর পর পলাশ আর শিমুল। তাদের সারি চলে গেছে পদ্মা পেরিয়ে সুদূর পটুয়াখালি পর্যন্ত। বসন্তের শুরুতে বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো এই দুই গাছের শাসনে রঙিন হয়ে থাকে। কদমও খারাপ নয়, যদিও কদমগাছে সাপ থাকে। আম আর তালও চলে। কিন্তু সবার সেরা হিজল। সচিব মহোদয় ফাইল নিয়ে উঠে পড়েন। মন্ত্রিসভায় আজ আলোচনা হবে জাতীয় বৃক্ষ নিয়ে। ২. মন্ত্রিসভায় পেঙ্গুইনের মতো সারি বেঁধে বসে আছেন সাদাকালো মন্ত্রীবৃন্দ। সবার সামনে ফাইলের একটি কপি। সচিব মহোদয় বিনীত সুরে প্রস্তাবটি উঠিয়ে চুপ করে বসে থাকেন। বাকিটা মন্ত্রীরা বেছে নেবেন। ছয়টা থেকে একটা। ছক্কার দান। এক মন্ত্রী গলা খাঁকরে বললেন, "জাতীয় ফল কাঁঠাল ছিল, জাতীয় বৃক্ষ আবার অন্য কিছু করার দরকার কী? কাঁঠাল কি বৃক্ষ হিসাবে খারাপ নাকি?" সচিব মহোদয় ফিরে গেলেন শৈশবে। পুকুরের পারে হিজল গাছ। একটা মাছরাঙা বসে আছে তার ডালে। একটা চালতা খসে পড়লো পুকুরে। শব্দ উঠলো, টুলুব! একটা বোকা মাছ ঘাই দিয়ে উঠলো মাঝপুকুরে। অপর মন্ত্রী বললেন, "কদম একটা ফালতু গাছ। লোফার ঈভ টিজাররা এর তলে বইসা বংশী বাজায়। কদম ফুল দেখতে সুন্দর, কিন্তু কদমের কাঠ দিয়া না হয় আসবাব, না হয় লাকড়ি। কদমের থিকা নিম গাছ বেশি উপকারী। এই ফাইলে নিমের কথা লেখা নাই কেন?" প্রথম মন্ত্রী বললেন, "ভাইসাহেব হক কথা বলছেন। নিম বড়ই কাজের বৃক্ষ। মেসওয়াক হয়। নিমের কাষ্ঠ দিয়া ভালো দোতারা হয়। নিমের আসবাবের কথা আর কী বলবো, আমার দাদাজানের নিমের পালঙ্ক আষ্টজন জোয়ান মিল্লা তুইলা এক ঘর থিকা আরেক ঘরে নিতে গিয়া হয়রান হইয়া পড়ছিলেন। নিমগাছের ফল না, পাতাও কাজে লাগে। ছোটোকালে পড়ছিলাম, নিম পাতা জোড়া জোড়া ...।" আরেক মন্ত্রী অবজ্ঞার সুরে বললেন, "নিম পাতা জোড়া জোড়া না, আম পাতা জোড়া জোড়া।" চতুর্থ এক মন্ত্রী গলা খাঁকরে বললেন, "এইসব পলাশ শিমুল হিজল তমাল টাইপ ফুলবাবু নাম সাজেস্ট করার দরকার কী? বৃক্ষ যদি হইতে হয় জবরদস্ত বৃক্ষ হইতে হবে। পলাশ শিমুল হিজল কদম কবি আর বয়াতিদের জন্য ফালাইয়া থোন। বৃক্ষ করেন আম নাহয় কাঁঠাল। যেমন ফল তেমন পাতা তেমন কাঠ।" সচিব মহোদয়ের মানসপটে ভেসে উঠলো গত কুরবানির দৃশ্য। নাতিটা ঘ্যান ঘ্যান করছিলো কাচ্চি বিরিয়ানি খাবে। দু'টো খাসি কুরবানি দিয়েছিলেন। খাসির সঙ্গে এক ব্যাগ কাঁঠালপাতাও এসেছিলো। আরেক মন্ত্রী বললেন, "আমের সঙ্গে আমাদের নাড়ির বন্ধন। সেই সিরাজুদ্দৌলার আমল থেকে আম্রকাননে ঘুরপাক খাচ্ছি আমরা। আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাও আমের বনে। জাতীয় সঙ্গীতও আমের বনের ঘ্রাণে পাগল। গতবছর রাজশাহী গেলাম, সাতদিন ছিলাম। আম খাইতে খাইতে পাগল হয়া গেছিলাম। আমার ছোটো মেয়েটা আমের এত ভক্ত, কী বলবো। সারাক্ষণ দেখি আঁটি নিয়ে চুষতেই আছে চুষতেই আছে। আমি বললাম মামণি তুমি আঁটিটা ফালাইয়া দিয়া আরেকটা আম ন্যাও ...।" এক মন্ত্রী বললেন, "তাহইলে আমই ফাইনাল করেন। বাকি গাছপালা লতাপাতা বাদ।" এক মন্ত্রী মিনমিন করে বললেন, "আমি অবশ্য তালগাছের পক্ষে মত দিতে চাই। তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে ...।" প্রথম মন্ত্রী বললেন, "সারাটা ইস্কুল জীবন তালগাছ হইতে হইছে কানে ধইরা। ডান পাটা এখনও টনটন করে অমাবস্যা পূর্ণিমায়। তালগাছ চলবে না। আর ... তালগাছ জাতীয়করণের তীব্র বিরোধিতা করি।" খুব দ্রুত আমগাছের পক্ষে সিদ্ধান্ত জমতে শুরু করে। হিজল ফিরে যায় সচিব মহোদয়ের আবছা শৈশবের পুকুরপারে। শিমুল আর পলাশ মুখ লুকায় মহাসড়কের পাশে। কদম ছায়া দেয় গ্রামীণ বংশীকুশল ঈভ টিজারদের। আর তালগাছের মালিকানা কী করে পুরো জাতির ওপর ছাড়া যায়? মন্ত্রীরা মন্ত্রী হলে কী হবে, বাঙালি তো? বাঙালি কখনও তালগাছ অন্যের হাতে ছাড়তে পারে? হোক সেই অন্যপক্ষ গোটা জাতি। আম জাতীয় বৃক্ষ এখন। কেহ অন্ন রাঁধি খায়, কেহ পড়ি নিদ্রা যায় এ রাজ চরণে। সরকারী দলের মন্ত্রীদের মতোই। শুন ধনি রাজকাজ দরিদ্র পালন। আমার প্রসাদ ভুঞ্জে পথগামী জন। বিশেষ দ্রষ্টব্য: সব চরিত্র কাল্পনিক। তালগাছটা বাদে। উহা আমার। আমার। | false |
rg | এখন পর্যন্ত বৃষ্টিই বাংলাদেশ-ভারত একমাত্র টেস্টের নিয়ন্ত্রক !!! বাংলাদেশ ভারত একমাত্র টেস্টের প্রথম দিনে শেখর ধাওয়ানের বৃষ্টি ঝঞ্ঝার মধ্যেও ঝড়ো দেড়শো রান ও মুরালি বিজয়ের ৮৯ রানে অপরাজিত ইনিংস মিলিয়ে ভারতের সংগ্রহ ছিল কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৩৯ রান। দ্বিতীয় দিন পুরোটাই ছিল বৃষ্টির দখলে। আজ খেলার তৃতীয় দিনে মুরালি বিজয়ের দেড়শো আর রাহানের অর্ধশতক মিলিয়ে বৃষ্টির ফাঁকে ভারত রান তুলেছে আরো ২২৩। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা আজ আর উইকেট শূন্য ছিল না। শাকিব ঝুলিতে পুড়েছে ৪ উইকেট। জুবায়ের বিরাট কোহলি'র উইকেট সহ নিয়েছে দুই উইকেট। ভারতের প্রথম সারির ছয় ব্যাটসম্যান আউট। ক্রিজে অপরাজিত আছেন হরভজন ৭ ও অশ্বিন ২ রানে। তিন দিনে মোট ১০৩.৩ ওভার খেলার সুযোগ হয়েছে। বাকি সময়টা বৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। তাহলে ম্যাচের ভাগ্য কি এখন নিশ্চিত ড্র'র দিকে গড়াচ্ছে নাকি এখনো এই ম্যাচে প্রাণ আছে? যদি প্রাণ থাকে তাহলে কার দিকে সেই পাল্লা ভারী?আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী দুইদিনেও বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা আছে। তৃতীয় দিন শেষে উইকেটের এখন যে কন্ডিশন, তাতে পিস অনেকটা এখন বোলারদের দখলে। ব্যাটসম্যানদের জন্য ওই পিসে এখন কিছু নাই। তাহলে আগামীকাল সকালে ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি কি করবেন? একটা কঠিন ঝুঁকি নিবেন? ম্যাচ জেতার জন্য বোলারদের উপর সে পরিমাণ আস্থা কি এখন রাখা যায়? আজ শাকিব ও জুবায়ের পিস থেকে যে সুবিধা নিয়েছে, কাল কী তা পরীক্ষা করে দেখবে কোহলি? দীর্ঘদিন পরে টেস্ট দলে জায়গা পাওয়া তুখর ফর্মে থাকা হরভজন সিং বা রবিচন্দন অশ্বিনকে নিয়ে কোহলি কি সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে? নাকি কোহলি কোনো রিক্স না নিয়ে ভারতের যাতে দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাট করা না লাগে, সেই পথে হাঁটবেন? সকালে হরভজন আর অশ্বিন কি টি-টুয়েনটি স্টাইলে ৫/৭ ওভার ঝড়ো ব্যাটিং করবে বা নাকি লাঞ্চ পর্যন্ত ভারত ব্যাট করে ডিকলার করার চিন্তা করবে? নাকি সকালের প্রথম স্পেলে শাকিব-জুবায়েরা মিলে ভারতের বাকি ৪ উইকেট দ্রুত তুলে নিয়ে তামিম-ইমরুলদের ব্যাট করতে পাঠাবে? যদি সকালে বৃষ্টি না হয়, তাহলে সমীকরণ কিছুটা ভারতের অনুকূলে। কিভাবে সেই ব্যাখ্যায় আসছি এবার। শাকিবদের মত হরভজনরা যদি বাংলাদেশ শিবিরে একটা ধ্বস নামাতে পারে, তাহলে বেশ ভালো রান হাতে রেখেই খেলায় লিড নিতে পারবে ভারত। সেক্ষেত্রে ঝুকিটা হল, তামিম-মোমিনুল-মুশফিকদের অলআউট করতে হবে। আর যদি তামিম-ইমরুলরা অনায়াসে ক্রিজে টিকে যায়, তাহলে কালকের ম্যাচ শেষে পঞ্চম দিন কেবল আনুষ্ঠানিক ড্র করার জন্য দুই দলকেই মাঠে নামতে হবে। অথবা বৃষ্ট এসে তাদের গ্যালারিতে বসে টাস খেলার সুযোগ দিয়েও কাজটি করে দিতে পারে। মোটকথা, বাংলাদেশ ভারত একমাত্র টেস্টে এখন পর্যন্ত লিডিং স্কোর বৃষ্টির দখলে। তিন দিনের ৯০ গুন তিন সমান ২৭০ ওভারের মধ্যে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা খেলার সুযোগ পেয়েছে মাত্র ১০৩.৩ ওভার। বাকি ১৬৬.৩ ওভার একা বৃষ্টি ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়েছে। কিছু ব্যক্তিগত পারফর্মমেন্সও আছে। ভারতের দুই ওপেনার শেখর ধাওয়ান ও মুরালি বিজয় দুইজনেই সেঞ্চুরি করেছেন। এছাড়া রাহানে ২ রানের কারণে সেঞ্চুরি বঞ্চিত। আগের দিনের ১৫০ রানে অপরাজিত ব্যাটসম্যান ধাওয়ান আরো ২৩ রান যোগ করে ফিরেছেন সাকিবের এক দুর্দান্ত বলে। তার আগে মুরালি বিজয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ড ২৮৩ রানের জুটি গড়েছেন। তবে তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তি সাকিব আর জুবায়েরের বোলিং। সাকিব ছুঁয়েছেন ঘরের মাঠে ১০০ উইকেট প্রাপ্তির মাইলফলক। জুবায়েরের কৃতিত্বও কম নয়। পেয়েছেন বিরাট কোহলির মূল্যবান উইকেটটি। দ্রুত ফিরিয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহাকেও। তবে বেশ ব্যয়বহুলই ছিলেন লেগ স্পিনার জুবায়ের।কিন্তু প্রশ্ন হল ভারত কি শ্রীলংকা ট্যুর এবং ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলার আগে, তাদের সেরা পাঁচ টেস্ট ব্যাটসম্যান চিন্থিত করতে পেরেছে? দুই টেস্ট খেলা নবাগত ওপেনার লোকেশ রাহুলের ইনজুরির কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে শেখর ধাওয়ানকে দলে নেওয়া হল। ইনজুরিতে পড়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মেডেন টেস্ট সেঞ্চুরি করেছে রাহুল। অপর ওপেনার মুরালি বিজয় হল বিশ্বের সপ্তম ব্যাটসম্যান, যিনি এ বছর টেস্টে এক হাজারের বেশি রান করেছেন। বিরাট কোহলি এ বছর এখন পর্যন্ত করেছেন ভারতের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৪০ রান। ওদিকে চেতেশ্বর পুজারার জায়গায় তিন নাম্বারে জায়গা করে নিয়েছেন রোহিত শর্মা। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে রোহিত প্রথম ইনিংসে ৬ রান করে শাকিবের কাছে বোল্ড হন। তাহলে কি শ্রীলংকা ট্যুরে আবার পুজারা তিন নাম্বারে ফিরছে? আবার পাঁচ নাম্বারে ব্যাট করা অজিংকা রাহানে মাত্র ২ রানের কারণে শকিবের কাছে বোল্ড হয়ে সেঞ্চুরি বঞ্চিত। তাহলে ভারতের শ্রীলংকা ট্যুরে বা ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ধাওয়ান, রাহুল, বিজয়, রোহিত, পূজারা, কোহলি, রাহানের মধ্যে কোন পাঁচজন ভারতীয় ব্যাটসম্যান একাদশে থাকবে? ভারত কিভাবে সেরা ব্যাটসম্যান বাছাই করে তা হয়তো সময় বলে দেবে। কিন্তু বাংলাদেশ বনাম ভারতের মধ্যে একমাত্র টেস্টের অবশিষ্ট দুই দিনে ফতুল্লায় কি ঘটতে যাচ্ছে? বৃষ্টি বাকি দুইদিনেও একক রাজত্ব করবে? নাকি কোহলি'র সামনে ম্যাচ জেতার যে জটিল সমীকরণ এখনো উঁকি দিচ্ছে, সেদিকেই এগোবে ভারত। ভারতের এই ম্যাচ নিয়ে স্ট্র্যাটেজি যাই হোক না কেন, টেস্ট প্লেয়িং দলগুলোতে এই মুহূর্তে তিন নাম্বারে থাকা ভারতীয় শিবিরে এখন ভর করছে অন্য আতংক। ২২ ম্যাচে ৯৯ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে ভারত এখন আছে তিনে। ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ আছে নয় নাম্বারে। যদি ভারত এই টেস্ট জিতে যায়, ভারতের রেটিং পয়েন্ট হবে ১০০। তাতে তারা তিনেই থাকবে। হারলে বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট কমবে না, থাকবে ৩৯-ই। আর জিম্বাবুয়ের পয়েন্ট মাত্র ৫ হওয়ায় বাংলাদেশের নয় নাম্বারের সিরিয়ালেও কোনো বদল হচ্ছে না। কিন্তু ম্যাচ যদি ড্র হয়, তাহলে ভারতের ক্ষতি হবে। দুই রেটিং পয়েন্ট হারিয়ে তারা নেমে যাবে চারে। ভারতের সঙ্গে ৯৯ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে চারে অবস্থান করছে নিউজিল্যান্ড। আর সমান সংখ্যক ৯৭ পয়েন্ট নিয়ে ইংল্যান্ড পাঁচ এবং পাকিস্তান অবস্থান করছে ছয় নাম্বারে। সেক্ষেত্রে চার, পাঁচ ও ছয় নাম্বারের সবার পয়েন্ট হবে ৯৭। ওদিকে ৯৬ পয়েন্ট নিয়ে সাত নাম্বারে ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে শ্রীলংকা। অবশ্য আট নাম্বারে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের পয়েন্ট ৮৪। যা বাংলাদেশের থেকে অনেক বেশি, আবার শ্রীলংকার চেয়ে অনেক কম। কিন্তু অলৌকিক কোনো জাদু মন্ত্রে যদি এই টেস্ট বাংলাদেশ কোনো কারণে জিতে যায়, তাহলে বাংলাদেশের পয়েন্ট হবে ৪৪। কিন্তু সর্বনাশ হবে ভারতের। একলাফে তিন নাম্বার থেকে সোজা জায়গা হবে সাত নাম্বারে। তবে ম্যাচ ড্র হোক আর কোনো অঘটন ঘটুক না কেন, সবকিছু ছাপিয়ে এখন ব্যক্তিগত একটি রেকর্ড নিয়ে শাকিব ভক্তরা স্বপ্ন দেখতেই পারে। দেশের মাটিতে শাকিব আজই ১০০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। দেশের মাটিতে তাঁর উইকেট এখন ১০৩টি। এই টেস্টে আর একটি উইকেট পেলে শাকিব মাত্র ৪০ টেস্টে ১৫বার পাঁচ উইকেট নেবার কৃতিত্ব দেখাবেন। শাকিবের আগে এই রেকর্ড মাত্র পাঁচ জনের। দুইজন স্পিনার ও তিনজন পেসারের। কিন্তু স্পিনার হিসেবে শাকিবের চেয়েও কম টেস্ট খেলে ১৫ বার পাঁচ উইকেট নেওয়া স্পিনার আছেন দুইজন। সিডনি বার্নস মাত্র ২৭ টেস্টে খেলে ২৪ বার নিয়েছিলেন ইনিংসে ৫ উইকেট। আর ক্ল্যারি গ্রিমেট টেস্ট ক্রিকেটে ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়া প্রথম বোলার। যিনি ৩৭ টেস্টে নিয়েছিলেন ২১ বার ইনিংসে ৫ উইকেট। তবে এইে দুই মহান ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার ছিল খুব সংক্ষিপ্ত। তিনজনই বিশ্ব সেরা পেসার। সাকিবের চেয়ে কম টেস্ট খেলে ১৫ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব মাত্র তিনজন পেসারের—ওয়াকার ইউনিস, ডেনিস লিলি আর ইয়ান বোথাম। অবিশ্বাস্যভাবে ক্যারিয়ার শুরু করা ওয়াকার ইউনুস এই কীর্তি গড়েছিলেন ২৫ নম্বর টেস্টেই। ইয়ান বোথাম ও ডেনিস লিলি দুজনই করেছিলেন ৩৮তম টেস্টে। টেস্টে ১৫ বার পাঁচ উইকেট নিতে অন্য বিশ্ব বিখ্যাত স্পিনারদের মধ্যে মুত্তিয়া মুরলিধরনের লেগেছে ৪২ টেস্ট। অনিল কুম্বলের লেগেছে ৫৬ টেস্ট আর শ্যেন ওয়ার্নের লেগেছে ৭২ টেস্ট। আর কিংবদন্তি পেসারদের মধ্যে কেবল রিচার্ড হ্যাডলির লেগেছিল ৪৩ টেস্ট; ইমরান খানের ৪৬, কপিল দেব আর ডোনাল্ডের ৪৭, ম্যাকগ্রার ৪৮, ওয়াসিম আকরামের ৫২ আর মার্শালের লেগেছিল ৫৩ ম্যাচ। অ্যামব্রোস-ওয়ালশ জুটি আরো ঢের পিছিয়ে। অ্যামব্রোসের লেগেছে ৬৪ টেস্ট আর ওয়ালসের লেগেছিল ৯৫ ম্যাচ! শন পোলকের লেগেছিল ৭৩! সুতরাং আগামীকাল টেস্টের চতুর্থ দিনে সকালে যদি কোহলি ইনিংস ডিকলার না করেন, তাহলে শাকিবের প্রয়োজন আর একটি মাত্র উইকেট এই দুই বিখ্যাত স্পিনারের পাশে নাম লেখানোর জন্য। যেখানে তালিকায় ৫০-এর কম টেস্ট খেলে ১৫ কিংবা এর বেশিবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে শাকিবের আগে মাত্র এই দুজনের। সিডনি বার্নস ও ক্ল্যারি গ্রিমেট। শাকিব আর একটি উইকেট পেলেই এদের নামের পাশে জায়গা করে নেবেন।তবে শাকিবের সেই সুযোগটি এখন ঝুলে আছে ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলির আগামীকালের সিদ্ধান্তের উপর। দেখা যাক, বৃষ্টি নাটকে পরিপূর্ণ ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে শেষ পর্যন্ত কি ফলাফল দাঁড়ায়। তবে দর্শক হিসেবে এবং টেস্ট ম্যাচ দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বিরাট কোহলি হয়তো সেই ঝুঁকি নিতে এখন মোটেও প্রস্তুত নন। কিন্তু ঝঁকি না নিয়ে বিকল্প উপায়ও নেই ভারতের সামনে। সকালে ভারত দ্রুত রান তোলার দিকেই মনযোগী হবে নাকি ইনিংস ডিকলার করবে?। আর যদি ইনিংস ডিকলার না হয় তাহলে ভারত চেষ্টা করবে লাঞ্চের আগ পর্যন্ত ব্যাট করে স্কোরবোর্ডটা আরেকটু শক্ত করতে। যাতে আর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা না লাগে। নতুবা সকালেই ইনিংস ডিকলার দেখব আমরা। বাংলাদেশকে ব্যাট করতে ডাকবে কোহলি। আর বৃষ্টি মহাশয় তো আছেন-ই। সেক্ষেত্রে ভারতীয় মিডিয়া হয়তো নতুন একটা মওকা খুঁজে পাবার চেষ্টা করবে। কেন আইসিসি জুন মাসে বাংলাদেশে টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করল? কারণ জুন মাস থেকেই বাংলাদেশে বর্ষাকাল। টেস্ট ম্যাচের সঙ্গে বৃষ্টির যে চিরায়ত দা-কুমড়া সম্পর্ক তা ফতুল্লার মাঠে আবারো প্রমাণ করল বৃষ্টি মশাই। অথচ বিরাট কোহলিরা যখন ঢাকায় নামলেন, তখন প্রচণ্ড তাপদাহের কি বিচ্ছিরি তামাশা। এমন মরার খরায় বরং টস হেরে ফিল্ডিং করার যে ধ্ক্কল যেতো টাইগার্সদের, সেজন্য টাইগার্সরা বরং বৃষ্টিকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারে। আর আগামীকাল যদি বৃষ্টি আরো বাগড়া দিয়ে ম্যাচ একেবারে ভণ্ডুল করে দেয়, তাহলে ভারতীয় শিবিরেও কিছুটা স্বস্তি থাকবে। কারণ তিন নাম্বার থেকে সাত নাম্বারে নামার চেয়ে চার নাম্বার অনেক নিরাপদ! সেজন্য ভারতের উচিত আগামীকাল বেশি বেশি বৃষ্টি কামনা করা। .................................১২ জুন ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১১ | false |
hm | পিচ্চিতোষ গল্প ০৯: দাদিভাইয়ের বাগান বাবুনের দাদিভাইয়ের খুব বাগানের শখ। কিন্তু বাবুনরা থাকে চারতালার ওপরে। ছাদে উঠতে গেলে আরো দু'তলা টপকাতে হবে দাদিভাইকে, আর নিচে তো কোন জায়গাই নেই, গোটাটাই বাড়ি। ঢাকায় একটা শুষ্কংকাষ্ঠং বাড়িভরা গিজগিজে এলাকায় থাকে বাবুনরা। বাবুনের ঘরের জানালা দিয়ে পাশের বাড়ির ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরূম আর আধখানা ডাইনিং রূম দেখা যায়, আর অনেক কষ্ট করে ঘাড় বাঁকা করলে কার্নিশ এড়িয়ে এক চিলতে আকাশ চোখে পড়ে। রান্নাঘর থেকে অনেকখানি আকাশ দেখা যায় বটে, কিন্তু সেখানে অনেকদিন ধরে একটা ছয়তালা বাড়ির কাজ চলছে, বাবুন তাই রান্নাঘরের জানালা দিয়েও কিছু দেখে না। বারান্দায় দাঁড়ালে কিছুটা আকাশ চোখে পড়ে। একটা বড়সড় আম গাছ আছে পাশের বাড়িতে, সেখানে একটা কাকের বাসাও আছে। উল্টোদিকে গুল্টুদের বাসা দেখা যায় বারান্দায় দাঁড়ালে, গুল্টুর বাবা সেখানে মাঝে মাঝে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খান। বাবুন বারান্দায় গেলেই দাদীভাইয়ের বাগানের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। কী নেই সেখানে? মস্তবড় এক টবে ঝাকড়া একটা কাঁচামরিচের গাছ, তাতে মরিচ পেকে টুকটুকে লাল হয়ে ঝুলতে থাকে। পাশের টবেই আছে একটা ধনেপাতার গাছ। তার পাশে একদম জঙ্গুলে একটা সুগন্ধী পাতার গাছ। তারপাশে একটা মেহেদি গাছ। বাবুনের দাদীভাই সবকিছুরই খুব যত্ন করেন। বাবুন একদিন ভোরবেলা বারান্দায় গিয়ে দেখে, মরিচগাছে সাদা জাল বাঁধা। দাদীভাই গাছে পানি দিচ্ছিলেন প্লাস্টিকের মগ দিয়ে, বাবুন জিজ্ঞেস করে জানলো, চড়ুই পাখি মরিচ গাছের বাচ্চা মরিচগুলোকে খুঁটে খুঁটে খেয়ে ফেলে বলেই এই জাল দিয়ে গাছটাকে বাঁচানো হচ্ছে। বাবুন অবশ্য মাঝে মাঝে বারান্দায় চাল ছড়িয়ে রাখে চড়ুইপাখিগুলির জন্য, কিন্তু এ কথা সে আর দাদীভাইকে বলেনি। বাবুনের বন্ধু ঝুমঝুমের মা-ও বারান্দায় বাগান করেন, কিন্তু ঝুমঝুমদের বাড়ির বারান্দা অনেক বড়, আর সেখানে মস্ত সব ফুলের গাছ। ঝুমঝুমদের বাড়িতে গেলে বাবুনের খুব ভালো লাগে, কেমন মস্ত বড় বড় ওদের ঘরগুলো। ঝুমঝুমের মা খুব নরম গলায় কথায় বলেন, মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলেন, "বাবুরা, তোমরা খেলা করো, কিন্তু ফুলের গাছকে ব্যথা দিও না কিন্তু!" বাবুন দেখেছে, কেউ ঝুমঝুমদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ঝুমঝুমের মা খুব উৎসাহ করে নিজের বাগান দেখান। "এই যে, এটা হচ্ছে সেই ফুলের গাছটা, যেটা ঝুমঝুমের বাবা নেপাল থেকে নিয়ে এসেছিলো। আমি অনেক ক্যাটালগ ঘাঁটলাম, কিন্তু এটার ছবিও দেখিনি, নামও খুঁজে পাইনি। ঝুমঝুমের বাবা এর নাম দিয়েছে ঝালবেগুন ফুল। আপনিই বলুন, এরকম মিষ্টি হলুদ ফুলের নাম ঝালবেগুন রাখার কোন মানে আছে? আর বেগুন কখনো ঝাল হয় ...?" বাবুন একদিন মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলো, "আমার দাদীভাইও বারান্দায় বাগান করেছেন!" ঝুমঝুমের মা বললেন, "তাই নাকি? কী কী ফুল আছে সে বাগানে?" বাবুনের মুখটা একটু শুকিয়ে গিয়েছিলো। দাদীভাইয়ের তো ফুলের বাগান নেই, শুধু খাবার জিনিসের বাগান। বাবুন আমতা আমতা করে বলে, "অনেক ফুল, নাম জানি না তো।" ঝুমঝুমের মা বলেন, "তুমি তোমার দাদীভাইকে জিজ্ঞেস কোরো, তিনি তোমাকে ফুলের নাম শিখিয়ে দেবেন। আর চলো, আমার বাগানের ফুলগুলোকে চিনিয়ে দিই। ... এই যে দেখছো, এটার নাম দুর্বারাণী, দেখেছো কী সুন্দর নীল ছোট ছোট ফুল ...?" বাবুন বাড়ি ফিরে গম্ভীর হয়ে থাকে। দাদীভাই জঙ্গুলে সুগন্ধী পাতা কাঁচি দিয়ে কেটে চা বানিয়ে খান, কিন্তু সেটাতে কোন ফুল ধরে না। ধনে পাতার গাছে যে ফুল ধরে তা চড়ুইয়ের চোখে পড়লেও মানুষের চোখে দেখা মুশকিল। মেহেদি গাছে শুধু পাতা হয়। মরিচ গাছের ফুল নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। বাবুনের মনটা খারাপ হয়ে যায়। ঝুমঝুমের মা একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে বাবুনকে বলেন, "চলো বাবুন, তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিচ্ছি। তোমার দাদীভাইয়ের বাগানটাও দেখে আসি।" বাবুন খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। ঝুমঝুমের মা তো গিয়ে কোন ফুল দেখতে পাবেন না, মরিচ দেখতে পাবেন অবশ্য। কিন্তু মরিচ তো ফুল না, পেকে যত লালই হোক না কেন। বাবুন যে মিথ্যা কথা বলেছে, তা তো আজ ঝুমঝুমের মা জেনে যাবেন। ঝুমঝুমদের আইসক্রীমের মতো ঠান্ডা গাড়িটার ভেতরে বসে বাবুনের ছোট্ট হৃৎপিন্ড ধুকধুক করতে থাকে। ঘন্টা বাজাতই বাবুনের দাদীভাই খুব যত্ন করে ঝুমঝুমের মা-কে ডেকে নিয়ে যান। "তুমিই বাবুনের বন্ধু ঝুমঝুমের মা? কী মিষ্টি একটা মেয়ে তুমি! ঝুমঝুমও এসেছে দেখি। বসো বসো। দাঁড়াও তোমাদের হালুয়া খেতে দিই।" ঝুমঝুমের মা বলেন, "খালা, আপনার বাগান দেখতে এসেছি। বাবুন বলছিলো আপনি নাকি বারান্দায় বাগান করেছেন?" বাবুনের দাদীভাই হাসেন এ কথা শুনে। বলেন, "বাবুন বললো এ কথা? হুমম! আচ্ছা দেখাচ্ছি বাগান। বসো।" বাবুন মুখ শুকনো করে নিজের ঘরে গিয়ে , বাবাকে নকল করে পায়চারি করে কিছুক্ষণ। বাবুনের দাদীভাই দুটো চীনামাটির ছোট্ট প্লেটে হালুয়া নিয়ে ঝুমঝুম আর ঝুমঝুমের মা-কে খেতে দেন। তারপর নিজের ঘর থেকে একটা অ্যালবাম এনে দেখাতে থাকেন। "এই যে, আমার বুলু। এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। এই যে, রাজশাহীতে ছিলাম তখন। দ্যাখো বুলু কত দুষ্টু ছিলো, বারান্দার গ্রিল বেয়ে উঠে বাঁদরামো করছে। ... আর এই যে আমার আরেক ছেলে টুনু, এখন তো বাড়িতেই থাকে না, ছেলেবেলায় খুব ভীতু ছিলো, বাড়ির বাইরে বেরোতেই ভয় পেতো, এই যে দ্যাখো খেলার মাঠে গিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে। ওর কাকা কোথায় যেন যাচ্ছিলো ক্যামেরা নিয়ে, দেখতে পেয়ে ছবি তুলে রেখেছে। ... আর এই যে, বাবুনের বাবা, কাঠের তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করছে ওর মামার সাথে ...।" বাবুন ছবিগুলো অনেক বার দেখেছে, দেখে আসছে সেই ছোট্টবেলা থেকে। বুলু কাকার আরো অনেক ছবি আছে আরো অ্যালবামে, টুনু কাকারও। দাদীভাইয়ের আলমারির ড্রয়ারে আরো অনেকগুলি পুরনো অ্যালবাম, সেখানে আরো আরো ছবি। ঝুমঝুমের মা মনোযোগ দিয়ে ছবিগুলো দেখে টুকটুক করে হালুয়া ভেঙে খেতে থাকেন। ঝুমঝুম বাবুনকে ভ্যাংচায়। ছবি দেখা শেষ হলে ঝুমঝুমের মা বলে, "খালা, আপনার বাগানে কী কী ফুল আছে?" বাবুনের দাদীভাই হাসেন। বলেন, "আছে একটা ফুল। আসো, দেখে যাও।" বাবুন অবাক হয়ে যায়। দাদীভাইয়ের বাগানে আবার ফুল কোথায়? বারান্দায় গিয়ে বাবুন অবাক হয়ে যায়। মস্ত একটা সাদা ফুল ফুটে আছে, তার পাশে আরেকটা মাঝারি ফুল। কী ফুল এটা? জানতে চান ঝুমঝুমের মা-ও। "ও মা, কী সুন্দর! এটা কী ফুল? কোথায় পেলেন?" বাবুনের দাদীভাই হাসেন শুধু। ঝুমঝুমের মা কাঁচামরিচ, ধনে পাতা, মেহেদি আর সুগন্ধী পাতার গাছও দেখেন মন দিয়ে। দাদী ভাই কিছু মেহেদি পাতা ছিঁড়ে একটা খামে ভরে দেন ঝুমঝুমের হাতে। ঝুমঝুম আর তার মা চলে যাবার পর বাবুন দাদীভাইয়ের হাত ধরে বলে, "দাদীভাই, এটা কী ফুল?" দাদীভাই হাসতে থাকেন। বলেন, "এটা পেঁয়াজের ফুল! তুই লোকজনকে এই বাগানের কথা বলে বেড়াস? ছি ছি ছি!" দাদীভাই হাসতেই থাকেন। বাবুন হাসে না। সে বুঝতে পারে, যতই যত্ন করুক না কেন, বারান্দার বাগানটার দিকে দাদীভাইয়ের তেমন টান নেই। দাদীভাইয়ের বাগানটা আছে তাঁর আলমারিতে, ঐ পুরনো অ্যালবামগুলোর মধ্যে। | false |
hm | ব্যাটাছেলেদের রেসিপি উপকরণঃ ১ কেজি গরুর মাংস ১ কেজি মুরগির মাংস ১ কেজি খাসির মাংস ১ কেজি আলু ১ কেজি পেঁয়াজ ১ কেজি রসুন ১ কেজি আদা ১ কেজি গুঁড়া হলুদ ১ কেজি গুঁড়া মরিচ ১ কেজি গুঁড়া ধনিয়া ১ কেজি গুঁড়া জিরা ১ কেজি কাঁচামরিচ ১ কেজি নাম-না-জানা-বিখাউজ-মশল্লা ১ কেজি সূর্যমুখীর তেল ১ কেজি পোলাওয়ের চাল ১ কেজি মটরশুঁটি ১ কেজি ডাল ১ কেজি পটেটো চিপস ১ কেজি চাপাতা ১ কেজি চিনি ১ কেজি গুঁড়ো দুধ ১ কেজি লেবু ১ কেজি লবণ অনুর্ধ্ব ৫২ কেজি ওজনের দু'জন স্ত্রী সব ১ কেজি করে কিনতে হবে। এতে করে ফালতু ওজনের ঝামেলা থাকবে না। কোথাও ২০০ গ্রাম, কোথাও আড়াইশো মিলিলিটার, কোথাও আন্দাজমতোর ঝামেলা আপনাকে পোহাতে হবে না। স্ত্রী দু'জনকেই মাঝে মাঝে এক এক করে কোলে নিয়ে মেপে দেখে নেবেন ওজন ঠিকাছে কি না। প্রস্তুতপ্রণালীঃ ঘামতে ঘামতে এসব জিনিস নিয়ে রিকশা থেকে নামুন। তারপর চোখ গরম করে রিকশাঅলাকে ভাড়া মিটিয়ে বিদায় করুন। কটকটা রোদ বাইরে, কাজেই কয়েক টাকা অতিরিক্ত ভাড়ার জন্যে বেচারাকে বেশি ঝাড়ি না দেয়াই ভালো। ইন্টারকমে অথবা খালি গলায় হাঁক ছেড়ে কাজের ছেলেটাকে ডাকুন। সব বোঝা ওর ঘাড়ে চাপাবেন না। বারো কেজি নিজে বহন করুন। এগারো কেজি ওকে দিন। তারপর লিফট অথবা সিঁড়ি বেয়ে নিজের ঘরে চলুন। কপাল ভালো বউ দু'জন ওপরে নিজের ঘরে আছে। ওদের বহন করতে হলে খবরই ছিলো। ঘরে ঢুকেই এলিয়ে পড়ুন। জিভ বার করে এমন ভঙ্গি করুন যে হিট স্ট্রোকে মারা পড়ছেন। আলগোছে বাম বা ডান চোখের পাতা খুলে দেখুন, স্ত্রীদের ওপর আপনার অ্যাক্টিঙের কী আসর পড়ছে। উল্লেখ্য যে, আপনার প্রতি তাদের ভালোবাসার মিটার রিডিং নেয়ার এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। তারা যদি যথোচিত উৎকণ্ঠা না দেখায় তাহলে অ্যাকটিঙের ভলিউম বাড়িয়ে দিন। এক ফাঁকে চিঁ চিঁ করে জানান যে বাজারের ব্যাগে লেবু, চিনি আর লবণ আছে। ফ্রিজে বরফ আছে। অতঃপর ঠান্ডা এক গ্লাস লেবুর শরবৎ ধীরে সুস্থে পান করতে করতে টিভি ছেড়ে চ্যানেল টু-তে টারজানা খানের টানটান খবর পরিবেশনা উপভোগ করতে থাকুন। কী রান্না হবে, এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে বিপদে পড়বেন না। আপনার দুই স্ত্রী, যথাক্রমে বড় বউ ও ছোট বউকে এ নিয়ে বিবাদ করার সুযোগ দিন। এসব ঝগড়া আপনার দাম্পত্য জীবনে কোলেস্টেরোল ঠিক রাখবে। পকেট থেকে এমপিথ্রি প্লেয়ারের বিচি বার করে কানে গুঁজে শুনতে থাকুন শিরীনের "না জেনে বুল বুজ্জো না" কিংবা লোকজ "আমার দিল খাড়িয়া নিলো রে ভাবা বান্ডারি"। এমপিথ্রি প্লেয়ার না থাকলে কানে ছিপি বা তুলা গুঁজে চেহারায় একটি শ্রান্তিক্লিষ্ট, বিপন্ন, মুমূর্ষু অভিব্যক্তি ফুটিয়ে দেখে চলুন টারজানা খানকে। আপনার বড় বউ ভাজাকাঠি হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে উত্তেজিত ভঙ্গিতে আপনাকে একটা কিছু বলছে। তার পরনে আলুথালু অ্যাপ্রন । চোখের পলকে চ্যানেল পাল্টে ডিসকভারি চ্যানেল ধরুন। তারপর মুগ্ধ, ভীতচকিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আপনার মাথা ওপরে নিচে নাড়ুন কিছুক্ষণ। এতে করে তার উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও হতে পারে। সে আবার রান্নাঘরে ঢুকে পড়লে আবার চ্যানেল টু-তে টারজানা খানের খবর দেখতে থাকুন। অচিরেই আপনার ছোটবউ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসবে। কপাল ভালো এখন কমার্শিয়াল চলছে টিভিতে। বড় বউয়ের সাথে আচরণ পুনরাবৃত্ত করুন। প্রয়োজনে গাল টিপে তাকে আদর করে দিন। ড্যাম, কমার্শিয়াল শেষ, জলদি চ্যানেল পাল্টান! আধঘন্টা পর কান থেকে এমপিথ্রি প্লেয়ারের বিচি/ছিপি/তুলা বার করে হাই তুলে একটা টাওয়েল নিয়ে গোসল করতে ঢুকে পড়ুন। গান গাইতে গাইতে সহীহ পদ্ধতিতে পাকসাফ হোন। তারপর বেরিয়ে এসে এক কাপ চায়ের জন্যে মিহি আবদার ধরুন। আবদার জানানোর আগে কানে আবারও এমপিথ্রি প্লেয়ারের বিচি/ছিপি/তুলা ঢোকাতে ভুলবেন না। মিনিট পাঁচেক গালমন্দ শোনার পর গোমড়া মুখে বড় বউ এক কাপ চা নিজের হাতে করে নিয়ে এলে তাকে জড়িয়ে ধরে নষ্টামো করার হালকা উদ্যোগ নিন। তারপর কিল হজম করে বাগস অ্যান্ড ড্যাফি শো দেখতে বসে পড়ুন। লুনি টুনস শেষ হয়ে গেলে ঘরে ঢুকে ব্রাউজার খুলে সচলায়তনে লগ ইন করুন। নতুন কী কী লেখা এসেছে দেখুন এক নজরে। সংসারে এক সন্ন্যাসীর নতুন কোন কামরাঙা ছড়া এলে পড়ে ফেলুন। নিজের মনে কোন খাইষ্টা ছড়ার আভাস এলে ড্রাফট করে রাখুন। নিরীহ কয়েকটি পোস্টে কিছু দুষ্টু মন্তব্য দিয়ে ব্যাপারগুলোকে ভিন্ন, বদ খাতে চালিয়ে দেয়ার একটা অপচেষ্টা করুন। এর মধ্যে আবারও আবছা শোরগোল এমপিথ্রি প্লেয়ারের বিচি/ছিপি/তুলা ছাপিয়ে কানে এলে তাড়াতাড়ি মেইল খুলুন। বিড়বিড় করে অফিসের কাজ নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে থাকুন। ছোট বউ এসে থমথমে মুখে খাবার তৈরির বার্তা জানালে তাকেও জড়িয়ে ধরে নষ্টামোর উদ্যোগ নিন। আবারও কিল হজম করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেবিলে বসে পড়ুন। খাবার যা রান্না হয়েছে গরমাগরম খেয়ে নিন। কোন অনুযোগ, অভিযোগের চিন্তা মাথায় আনবেন না। কান তো বন্ধই আছে, চোখও বন্ধ করে খেয়ে যান। বোবার শত্রু নাই। | false |
ij | মহানুভব এক তুর্কি সুলতানের কথা অটোমান সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ। (১৪৪৭-১৫১২) বিশ্বের ইতিহাসে ইনি একজন মহানুভব এক তুর্কি সুলতান হিসেবে পরিচিত ; পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য জীবনভর সচেষ্ট ছিলেন । এ ছাড়াও নিজস্ব উদ্যেগে যেসব মানবিক পদক্ষেপ নিয়েছেন -সেজন্য ইতিহাস চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন এই মহৎ হৃদয়ের মানুষটি ... মধ্য এশিয়ার তুর্কিরা ছিল বর্তমান তুরস্কের তুর্কিজাতির পূর্বপুরুষ ; তুর্কিরা মধ্যএশিয়া থেকে মঙ্গোলদের তাড়া খেয়ে আনাতোলিয়া এসেছিল। (বর্তমান তুরস্কর আরেক নামই আনাতোলিয়া।) আনাতেলিয়ায় তুর্কিরা গড়ে তুলেছিল অটোমান সাম্রাজ্য, যে সাম্রাজ্য ত্রয়োদশ শতক থেকে প্রায় ৬০০ বছর বিশাল এক ভূখন্ড শাসন করেছিল । আনাতোলিয়ার ওগহুয তুর্কিদের কাঈই গ্রোত্রের গাজী এরতুগরুল (১১৯১/১২৮১খ্রিস্টাবাদ) অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন; যদিও তাঁর ছেলে প্রথম ওসমান থেকে সাম্রাজ্যের নাম অটোমান বা ওসমানিয়। ১২৯৯ খ্রিষ্টাব্দে আনাতোলিয়ার মাটিতে প্রথম ওসমান অটোমান সাম্রাজ্যের ভিতটি প্রতিষ্ঠা করেন। মানচিত্রে অটোমান সাম্রাজ্য। মানচিত্রে থ্রাস। থ্রাস জায়গাটি গ্রিসের উত্তর পুবে। সেখানেই এক প্রাসাদে ১৪৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ-এর জন্ম; মায়ের নাম আমিনা গুলবাহার। গুলবাহার খাতুন নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন। সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ-এর পিতার নাম ২য় মোহম্মদ । সুলতান ২য় মোহম্মদও পূর্ব-পশ্চিমের সংস্কৃতির মেল বন্ধন ঘটাতে জীবনভর সচেষ্ট ছিলেন। সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ-এর স্ত্রী ছিলেন একজন ধর্মান্তরিত গ্রিক; নাম: এইসে হাতুন; ইনি ১ম সেলিম-এর মা। সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ এর মৃত্যুর পর ১ম সেলিম অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান হয়েছিলেন। ইস্তানবুল ইস্তানবুলে তোপকাপি প্রাসাদ । তুর্কিরা ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্ট্যানটিনোপল জয় করে নেয়; এরপর তারা শহরটির নতুন নাম দেয় ইস্তানবুল। ইস্তানবুল ই হয়ে ওঠে অটোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্র। ইস্তানবুলে তোপকাপি প্রাসাদে বাস করতেন অটেমান সুলতানগন । তোপকাপি প্রাসাদ অভ্যন্তরে। অটোমান সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ এর রাজত্বকালে (১৪৮১-১৫১২ খ্রিস্টাব্দ ) অত্যন্ত বিস্ময়কর ও মানবিক একটি ঘটনা ঘটেছিল। ওই ব্যতিক্রমী ঘটনাটি অটোমান সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ কে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে। সেই মানবিক ঘটনাটি উপলব্ধি করতে হলে আমাদের চোখ মধ্যপ্রাচে ইহুদি ইতিহাস ও ইউরোপের ইতিহাসের পূর্বাপর ঘটনাক্রমে ফেরাতে হবে ... আমরা জানি, মুসা নবীর নেতৃত্বে ইহুদিরা মিশর থেকে পালিয়ে এসে জেরুজালেমে বসবাস করছিল। জেরুজালেম কালক্রমে পারস্যের অধীন চলে যায়। ৬৩ খ্রিস্টপূর্বে রোমান নগরটিট সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। ইহুদিরা প্রথম থেকেই রোমান শাসনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত বিরূপ ছিল; তারা রোমান শাসন-শোষনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছিল। ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ইহুদিদের ওপর ক্রদ্ধ হয়ে জেরুজালেম ও এর প্রধান উপাসনালয়টি সম্পূর্নরুপে ধ্বংস করে দেয়। রোমানরা এরপর বেশির ভাগ ইহুদিকে রোমে নির্বাসিত করে। ব্যাবিলনে ইহুদিদের একটি কমিউনিটি থাকায় ইহুদিদের একটি দল ওখানে চলে যায়; বিপুল সংখ্যক ইহুদি দলে দলে উত্তর আফ্রিকা ও স্পেনের উদ্দেশেও পাড়ি জমায়। শিল্পীর তুলিতে ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সৈন্যদের জেরুজালেম ধ্বংসযজ্ঞ। নির্বাসিত ইহুদিরা স্পেনে বসতি স্থাপন করে। স্পেনকে হিব্রু ভাষায় বলা হয়; ‘সেফারাড’; কালক্রমে স্পেনের নির্বাসিত ইহুদিরা সেফারাড নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। স্পেনের নির্বাসিত ইহুদিরা কেমন ছিল? রোমানরা ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ অবধি স্পেন শাসন করেছিল। কাজেই ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ অবধি ইহুদিরা মোটেও স্বস্তিতে ছিল না। এরপর ভিসিগথরা (জার্মানিক ট্রাইব) স্পেন শাসন করে। এদের দুঃশাসনেও ইহুদি-জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। অবশ্য সপ্তম শতকে স্পেনের ইহুদিদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান বদলে যায়। কেন? স্পেন সেসময় আরবদের অধীনে চলে যায়। Bertrand Russell তাঁর সুবিখ্যাত A HISTORY OF WESTERN PHILOSOPHY গ্রন্থে লিখেছেন: The Hegira, with which the Mohammedan era begins, took place in A.D. 622; Mahomet died ten years later. Immediately after his death the Arab conquests began, and they proceeded with extraordinary rapidity. In the East, Syria was invaded in 634, and completely subdued within two years. In 637 Persia was invaded; in 650 its conquest was completed. India was invaded in 664; Constantinople was besieged in 669 (and again in 716-17). The westward movement was not quite so sudden. Egypt was conquered by 642, Carthage not till 697. Spain, except for a small corner in the north-west, was acquired in 711-12. (পৃষ্ঠা,৪২৫) স্পেনের সেফারাড ইহুদি বসতি স্পেনের মুসলিম শাসকদের উদার দৃষ্টিভঙ্গি ইহুদিদের জন্য হয়ে উঠেছিল কল্যাণকর। ওই সময়টাকে অনেকেই বলছেন ইহুদি ইতিহাসের স্বর্ণযুগ। এ প্রসঙ্গে জনৈক ইউরোপীয় ইতিহাসবিদ লিখেছেন, 'In the Iberian Peninsula , (আইবেরিয় উপদ্বীপ; স্পেন যার অর্ন্তগত) , under Muslim rule, Jews were able to make great advances in mathematics, astronomy, philosophy, chemistry and philology. This era is sometimes referred to as the Golden age of Jewish culture in the Iberian Peninsula... Jews enjoyed great privileges, and their communities prospered. There was no legislation or social barriers preventing them from conducting commercial activities. Many Jews migrated to areas newly conquered by Muslims and established communities there. The vizier of Baghdad entrusted his capital with Jewish bankers. The Jews were put in charge of certain parts of maritime and slave trade. Siraf, the principal port of the caliphate in the 10th century CE, had a Jewish governor.' আল আন্দালুস। আব্বাসীয় মুসলিমরা স্পেনকে বলত আল আন্দালুস। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত বিরাজমান ছিল মুসলিম স্পেনে। এসব কারণেই স্পেনের মুসলিম শাসন ইহুদিদের স্বর্ণযুগ বলে বিবেচিত। অ্যাঞ্জেলা জি উড তাঁর হলোকাষ্ট বইতে লিখেছেন: ‘ The Hebrew word for Spain is Sefarad and Sephardic Jews are those who originated in Spain or Portugal. When under Islamic rule, there were good relations between Jews and Muslims, but under Catholic rule, there was great pressure for Jews to convert. In 1492, both Jews and Muslims were expelled from Spain, and Jews fled to Muslim countries and the Netherlands.(পৃষ্ঠা (১২) ইতিহাসের গতি বদলায়। স্পেনের মুসলিম শাসনের অবসানের লক্ষে ইউরোপের খ্রিষ্টান রাজ্যগুলির তৎপরতা অব্যাহত ছিল। একে বলে ‘রিকনকুয়েস্তা’ বা পুর্নবিজয়; ৮০০ বছর ধরে চলেছিল ‘রিকনকুয়েস্তা’ । ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনের রানী ইসাবেলার উদ্যেগে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নতুন বিশ্বে আগমন ঘটেছিল। ঐ একই বছরেই জারীকৃত আলহামরা ডিক্রির মাধ্যমে স্পেনের ইহুদিদের বলা হল হয় ক্যাথলিকবাদে কনর্ভাট হও নতুবা স্পেনিশ ইনকুইজেশনের মুখোমুখি দাঁড়াও। এই একই অজুহাতে স্পেনের আরব মুসলিমদেরও উৎখাত করা হয়েছিল। স্পেনিশ ইনকুইজেশন বড় ভয়ংকর বিষয়। ধর্মের নামে জঘন্য নির্যাতন মানবেতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। স্পেনিশ ইনকুইজেশনের নির্যাতন স্পেনের মর্মান্তিক ইহুদি নির্যাতনের সংবাদ অটোমান সাম্রাজ্যে পৌঁছল। মহানুভব সুলতান সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ ক্রোধে উন্মুক্ত হয়ে উঠলেন। এ কী ধরনের কথা! আমার রাজত্বেও তো কত কত জাতি বাস করে, বলকানে খ্রিস্টানেরা বাস করে-কই, কেউ কখনও শুনেছে তাদের ওপর নীপিড়ণ চলছে! উদারপ্রাণ সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ স্পেনের মর্মান্তিক ইহুদিদের কী করে বাঁচানো যায় তাইই ভাবলেন। সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ আমলের জাহাজ ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দ। সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ অটোমান নৌবাহিনীকে নির্দেশ দিলেন স্পেন অভিমুখে যাত্রা করতে। সেই নৌঅভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন কেমাল রেইস। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বহুসংখ্যক আরব ও ইহুদির প্রাণ রক্ষা পায় । সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ স্বয়ং নৌবন্দরে উপস্থিত থেকে নির্বাসিতদের স্বাগত জানান। শুধু তাই নয়, ওই মহানুভব তুর্কি সুলতান অটোমান সাম্রাজ্যে এই মর্মে নির্দেশ জারী করলেন, ‘উদ্বাস্তুদিগকে স্বাগতম জানাইতে হইবে।’ শুধু তাই নয়,তিনি নির্বাসিতদের অটোমান সাম্রাজ্যে বসবাসের অনুমতি দিলেন, নাগরিকত্বও দিলেন। ইউরোপীয় গর্ভনরদের ফরমান পাঠালেন: ইহুদিদের উৎখাত করা চলবে না ; বরং স্বাগত জানাতে হবে। যারা ইহুদিদের সঙ্গে নিষ্ঠুর ব্যবহার করবে বা ইহুদিদের অটোমান সাম্রাজ্যে প্রবেশ করতে দেবে না তাদের জন্য রয়েছে মৃত্যুদন্ডসহ ভয়াবহ শাস্তি ... এই মানবিক ঘটনা আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। অ্যাঞ্জেলা জি. উড তাঁর হলোকাষ্ট বইতে অটোমান সম্রাট দ্বিতীয় বায়োজিদ ছবি ছাপিয়ে তার পাশে লিখেছেন: '... A warm welcome ... In 1492, news reached the Ottoman (Turkish) Empire that Jews were banished from Spain. Sultan Beyazit II, shown here, granted Jews safe haven in his empire and personally greeted them at the port. Most Jews settled and flourished in the European parts of the empire. Many of the sultans’ doctors were Jewish, and it was Jews who set up the first printing presses.' নির্বাসিত ইহুদিদের আশ্রয় দিয়ে অটোমান সাম্রাজ্যের লাভ হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে জনৈক ইতিহাসবিদ লিখেছেন:‘ নতুন নতুন ধ্যানধারণা, পদ্ধতি ও কারিগরী দক্ষতার কারণে স্পেনের আরব ও ইহুদিরা অটোমান সাম্রাজ্যের বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। ১৪৯৩ সালে সেফারাড ইহুদিরা ইন্তানবুলে প্রথম ছাপাখানাটি স্থাপন করে । এরও আগে ১৪৮৩ সালে ইস্তানবুলে ইহুদিদের ছাপাখানা ছিল। এর তিন বছর আগে জার্মানিতে গুটেনবার্গ যন্ত্রটি আবিস্কার করেন। সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ এর শাসনামলে ইহুদিদের অসামান্য সাংস্কৃতিক অগ্রগতি হয়।’ ইস্তানবুলে সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ-এর নামে মসজিদ সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ অত্যন্ত রসিক ছিলেন। ইহুদিদের নির্বাসিত করার সময়ে স্পেন শাসন করতেন ২য় ফার্দিন্দানন্দ অভ আরাগন এবং ১ম ইসাবেলা। সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ নাকি একবার হাসতে হাসতে দরবারে বলেছিলেন, ‘কী আজব! লোকে নাকি স্পেনের ফার্দিন্দানন্দ আর ইসাবেলাকে জ্ঞানী বলে। এই কথা শুনে হাসব না কাঁদব। তারা নিজেদের দেশকে নিঃস্ব করে আমাকে ধনী বানিয়ে দিল!’ ইস্তানবুলে লাদিনোভাষী ইহুদিরা। আজও ইস্তানবুলে ইহুদিরা বাস করে। এরা যে ভাষায় কথা বলে তার নাম লাদিনো। এরা নিশ্চয়ই নিয়মিত মহানুভব সেই তুর্কি সুলতানের কথা স্মরণ করে। সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০২ | false |
fe | গণিকা-সংস্কৃতি ও বাঙালি সমাজ _ আবুল আহসান চৌধুরী গণিকা-সংস্কৃতি ও বাঙালি সমাজ আবুল আহসান চৌধুরী ------------------------------------------- মূলত পাশ্চাত্য শিক্ষার আনুকূল্যে উনিশ শতক বাঙালি সমাজের সার্বিক উত্থানের কাল হয়ে উঠেছিল। অবশ্য এর পাশাপাশি সমাজ-অভ্যন্তরে অনাচারের একটি চোরা-স্রোতও বহমান ছিল। ভুঁইফোঁড় নব্যধনী এবং সেই সঙ্গে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যেও চারিত্রিক ভ্রষ্টাচার দেখা দেয়। এমনকি সমাজের নেতৃস্থানীয় খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউও এই নৈতিক স্খলন থেকে মুক্ত ছিলেন না। সুরাপান, বেশ্যাসক্তিত ও রক্ষিতা-পোষণ সেকালে এক ধরনের সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করেছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণিকাচর্চা গৌরব ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো। ২. কালীপ্রসন্ন সিংহ হুতোম প্যাঁচার নক্সায় উনিশ শতকের কলকাতার ‘বেশ্যাবাজির সরস বিবরণ দিয়েছেন। ‘আজব শহর কলকেতায় ‘খ্যামটা খানকির খাসা বাড়ি, ভদ্রভাগ্যে গোলপাতা’। ‘হুতোমে’র সৌজন্যে জানা যায়: ‘বেশ্যাবাজিটি আজকাল এ শহরে বাহাদুরির কাজ ও বড় মানুষের এলবাত পোশাকের মধ্যে গণ্য, অনেক বড় মানুষ বহুকাল হলো মরে গ্যাছেন। কিন্তু তাঁদের রাঁড়ের বাড়িগুলো আজও মনিমেন্টের মতো তাঁদের স্মরণার্থে রয়েছে- সেই তেতলা কি দোতলা বাড়িটি ভিন্ন তাঁদের জীবনে আর এমন কিছু কাজ হয়নি, যা দেখে সাধারণে তাঁদের স্মরণ করে।’ এতো গেলো ‘অকৃতি-অধমদের কথা। যাঁরা ছিলেন সমাজপতি-কীর্তিমান, পতিতা-রক্ষিতার প্রতি তাঁরাও যে বিমুখ কিংবা নির্লিপ্ত ছিলেন, তা নয়। ভারত-পথিক রাজা রামমোহন রায় ‘নিকির’ নাচ দেখেই সন্তুষ্ট ছিলেন না, বাঁধা রক্ষিতাও ছিল তাঁর। এই যবনী রক্ষিতার গর্ভে তাঁর পুত্রও জন্মেছিল। দ্বারকানাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ি-বিলাস ও বাইজি-আসক্তি তাঁর সাধ্বী-পত্নী বরদাস্ত করেননি। দ্বারকানাথকে বহির্বাটীতেই রজনী যাপন করতে হতো, অন্দরমহলে প্রবেশ তাঁর জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিল। কলকাতার বউবাজারে দ্বারকানাথের পরিবারের কোনো সদস্যের মালিকানায় ৪৩ কক্ষের এক বিশাল বেশ্যাবাড়িও ছিল। কারো কারো ধারণা, নটী সুকুমারী দত্তের প্রেমে মজেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর- কাদম্বরী দেবীর আত্মহত্যার কারণ নাকি এই অবৈধ সম্পর্ক। ব্যভিচারী রমেশদার আত্মকথায় ঠাকুরপরিবার সম্পর্কে চাঞ্চ্যকর কিছু তথ্যের সন্ধান মেলে। প্রতিবেশী ‘মিয়া’র অর্থাৎ সম্পন্ন মুসলমান সম্প্রদায়ও এই ‘বাবু’দের অনুসরণ করতেন। পদমদীর নবাব মীর মহম্মদ আলী তাঁদেরই একজন। বিষাদ-সিন্ধুর লেখক মীর মশাররফ হোসেনের পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ভদ্রাসনের বা’রবাড়িতেই রূপসী নামের এক রক্ষিতাকে মহাসমাদরে রেখেছিলেন। আর মশাররফ নিজেও কেবল ‘দাসী-বান্দী’তেই তৃপ্ত ছিলেন না,পতিতা-গমন তাঁর নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। সত্যনিষ্ঠ মশাররফ অকপটে তাঁর ডায়েরিতে লিখে গেছেন, গ্রামের বাড়ি লাহিনীপাড়ায় থাকায় সহজে শহরে যাওয়ার প্রয়োজন বা সুযোগ হতো না। কিন্তু যেদিন হাতের কাছের শহর কুষ্টিয়ায় যাওয়া পড়তো সেদিন ছয়মাসের ‘দাদ’ একদিনে তুলে নিতেন, নিজে মজে অবিদ্যাদের মজিয়ে, উৎসবের আনন্দে শহরে অবস্থানের প্রায় পুরোটা সময়ই কাটিয়ে আসতেন বেশ্যাপাড়ায়। দেশীয় গণিকা শুধু নয়, ‘ইঙ্গ-বঙ্গ বারাঙ্গানা’র প্রতিও হাত বাড়িয়েছিলেন এবং তাঁকে সন্তানও উপহার দিয়েছিলেন। মরমি কবি হাছন রাজার কথাও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়। হাছন রাজার জ্যেষ্ঠ পুত্র দেওয়ান গনিউর রাজার বেশ্যাসক্তির বিবরণ তাঁর সফরভিত্তিক আত্মকথায় মেলে। রাম-শ্যাম-যদু-মধু মতো হামেশাই পতিতা-দর্শনে যেতো। অবশ্য অনেক ‘মহাত্মা’ই সম্মান বাঁচিয়ে গোপনে পতিতার বাঁধা খদ্দের ছিলেন, রক্ষিতা-পোষণ করতেন না উচ্চবর্গের ধনী রাজা-জমিদার-জোতদার-বণিক-ব্যবসায়ী-উকিল-মোক্তার-আমলা-ফয়লা কমই ছিলেন। পতিতাচর্চা সেকালের অনেক বিত্তবান শিক্ষিত বাঙালির কালচারে পরিণত হয়েছিল। অবশ্যই একাজে সকলের পদ্ধতি ও রুচি অভিন্ন ছিল না। বাঙালি মুসলমানও যে এ-বিষয়ে পিছিয়ে ছিল না, তার প্রমাণও আমরা কিছু কিছু পাই। ৩. উনিশ শতকের বাঙালি সমাজের পতিতামগ্ন পুরুষের চালচিত্র কেমন ছিল তার বিবরণ সেকালের অনেক খ্যাতকীর্তি মানুষের স্মৃতিচর্চায় পাওয়া যায়। এ থেকে পতিতা-সংস্কৃতির সামাজিক চিত্রের নিপুণ পরিচয় মেলে। মনীষী রাজনারায়ণ বসু তাঁর সে কাল আর এ কাল-এ উল্লেখ করেছেন : ‘এক্ষণকার লোক পানাসক্ত ও পূর্ব্বাপেক্ষা বেশ্যাসক্ত।ঃ যেমন পানদোষ বৃদ্ধি পাইতেছে, তেমনি বেশ্যাগমনও বৃদ্ধি হইতেছে। সে কালে লোকে প্রকাশ্যরূপে বেশ্যা রাখিত। বেশ্যা রাখা বাবুগিরির অঙ্গ বলিয়া পরিগণিত হইত; এক্ষণে তাহা প্রচ্ছন্নভাবে ধারণ করিয়াছে, কিন্তু সেই প্রচ্ছন্নভাবে তাহা বিলক্ষণ বৃদ্ধি পাইতেছে। বেশ্যাগমন বৃদ্ধি পাইতেছে, তাহার প্রমাণ বেশ্যাসংখ্যার বৃদ্ধি। পূর্ব্বে গ্রামের প্রান্তে দুই এক ঘর দৃষ্ট হইত; এক্ষণে পল্লিগ্রামে বেশ্যার সংখ্যা বিলক্ষণ বৃদ্ধি পাইতেছে। এমন কি, স্কুলের বালকদিগের মধ্যেও এই পাপ প্রবলাকার ধারণ করিয়াছে। যেমন পানদোষ বৃদ্ধি পাইতেছে, তেমন বেশ্যাগমনও বৃদ্ধি পাইতেছে। ইহা সভ্যতার চিহ্ন। যতোই সভ্যতা বৃদ্ধি হয় ততোই পানদোষ, লাম্পট্য ও প্রবঞ্চনা তাহার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি হইতে থাকে।’ পতিতালয় ও পতিতাবৃত্তি মহানগর, মফস্বল শহর, গঞ্জ ছাড়িয়ে গ্রামীণ জনপদেও প্রসারিত হয়েছিল। কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সতীমার মেলায় উল্লেখযোগ্য বেশ্যা-সমাগম হতো। সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার (৪ এপ্রিল ১৮৬৪) সূত্রে জানা যায়, সেখানে ‘কুলকামিনী অপেক্ষা বেশ্যাই অধিক’। দীনেন্দ্রকুমার রায় সাক্ষ্য দিয়েছেন, গ্রামীণ মেলা বা আড়ং-এও পতিতার ‘টঙ্’ জাঁকিয়ে বসতো। তাদের শিকার ছিল মোহিনী-মায়ায় মুগ্ধ গ্রামের চাষাভূষো ও সাধারণ মানুষ। ৪. নদীয়ার মহারাজার দেওয়ান কার্ত্তিকেয়চন্দ্র রায় তাঁর আত্ম-জীবনচরিত-এ ‘গণিকালয়ের ইতিহাস’ নামে একটি উপ-অধ্যায়ে এ-বিষয়ে কৌতূহল-জাগানো তথ্য ও কাহিনী পরিবেশন করেছেন। তাঁর সূত্রে জানা যায় : ‘কৃষ্ণনগরের কেবল আমিনবাজারে বেশ্যালয় ছিল। গোয়াড়ীতে কয়েক ঘর গোপ ও মালো গাঁড়ার ও অন্যান্য নীচ জাতির বসতি ছিল। পরে যখন ইংরেজ গভর্নমেন্ট এই স্থান প্রশস্ত ও নদীতীরস্থ দেখিয়া ইহাতে বিচারালয় সকল স্থাপন করিলেন, সেই সময় সাহেবেরা গোয়াড়ীতে পশ্চিম দিকে, ও তাঁহাদের আমলা উকীল ও মোক্তারেরা ইহার পূর্ব্ব দিকে, আপন আপন বাসস্থান নির্মাণ করিতে লাগিলেন। তৎকালে বিদেশে পরিবার সঙ্গে লইয়া যাইবার প্রথামত অপ্রচলিত থাকাতে, প্রায় সকল আমলা, উকীল বা মোক্তারের এক একটি উপপত্নী আবশ্যক হইত। সুতরাং তাঁহাদের বাসস্থানের সন্নিহিত স্থানে স্থানে গণিকালয় সংস্থাপিত হইতে লাগিল। পূর্ব্বে গ্রিস দেশে যেমন পণ্ডিতসকলও বেশ্যালয়ে একত্রিত হইয়া সদালাপ করিতেন সেইরূপ প্রথা এখানেও প্রচলিত হইয়া উঠিল। যাঁহারা ইন্দ্রিয়াসক্ত নহেন, তাঁহারাও আমাদের ও পরস্পর সাক্ষাতের নিমিত্ত এই সকল গণিকালয়ে যাইতেন। সন্ধ্যার পর রাত্রি দেড় প্রহর পর্যন্ত বেশ্যালয় লোকে পরিপূর্ণ থাকিত। বিশেষত পর্ব্বোপলক্ষে তথায় লোকের স্থান হইয়া উঠিত না। লোকে পূজার রাত্রিতে যেমন প্রতিমা দর্শন করিয়া বেড়াইতেন, বিজয়ার রাত্রিতে তেমনই বেশ্যা দেখিয়া বেড়াইতেন।’ ৫. উনিশ শতকের বাংলার সামাজিক চিত্র আঁকতে গিয়ে শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ বইয়ে কার্ত্তিকেয়চন্দ্র রায়ের বিবরণ তুলে দিয়ে ভিন্ন কাহিনীও শুনিয়েছেন : ‘দেওয়ানজী তদানীন্তন কৃষ্ণনগরের যে অবস্থা বর্ণনা করিয়াছেন, তদনুরূপ অবস্থা তখন দেশের অনেক নগরেই বিদ্যমান ছিল। সে সময়ের যশোহর নগরের বিষয়ে এরূপ শুনিয়াছি যে, আদালতের আমলা, মোক্তার প্রভৃতি পদস্থ ব্যক্তিগণ কোনোও নবাগত ভদ্রলোকের নিকটে পরস্পরকে পরিচিত করিয়া দিবার সময়ে- ‘ইনি ইহার রক্ষিতা স্ত্রীলোকের পাকা বাড়ি করিয়া দিয়াছেন, এই বলিয়া পরিচিত করিতেন। রক্ষিতা স্ত্রীলোকের পাকাবাড়ি করিয়া দেওয়া একটা মান-সম্ভ্রমের কারণ ছিল। কেবল কি যশোরেই, দেশের সর্ব্বত্রই এই সম্বন্ধে নীতির অবস্থা অতীব শোচনীয় ছিল।’ কলকাতা বা মফস্বলেও বারাঙ্গনা দুর্লভ ছিল না, কলকাতা তো ছিল বেশ্যা-বাইজির স্বর্গভূমি। ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ‘হরিদাসের গুপ্তকথা’ থেকে ‘কাটছাঁট’ করে রমাকান্ত চক্রবর্তী যা উদ্ধৃত করেছেন এই তথ্য সমর্থনের জন্য তা-ই যথেষ্ট : ‘গরানহাটা থেকে কলুটোলা রাস্তা পর্যন্ত বেড়িয়ে বেড়িয়ে দেখলেম দুধারি বারান্দায় রকমারি মেয়েমানুষঃ অনেক রকম মেয়েমানুষঃ গৃহস্থের বাড়ির কাছে বেশ্যা, ছেলেদের পাঠশালার পাশে বেশ্যা, কোথাও বা ভালমানুষের মাথার উপর বেশ্যা। অধিক কথা কি, ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরের আষ্টেপৃষ্ঠে বেশ্যাঃ।’ এইসব রূপোপজীবীনীর পৃষ্ঠপোষকের অভাব ছিল না সেকালে। কলকাতার পাশাপাশি সেকালে ঢাকার চিত্রটা কেমন ছিল, তা এবারে দেখা যাক। ঢাকা প্রকাশ পত্রিকার সৌজন্যে জানা যায়, ১৮৬৪ সাল নাগাদ ঢাকা শহরে- ‘সদর রাস্তার উভয় পার্শ্বে উত্তম উত্তম যে সকল দালান আছে, তাহার সমুদয় প্রায়ই বেশ্যাপূর্ণ হইয়াছে। বেশ্যাবাস সংশ্রব নাই, রাজপথের উভয় পার্শ্বে এরূপ উৎকৃষ্ট দালানই না বলিলে হয়।’ নগরনটীরা ‘বাবু’দের বশে রাখতেন কোন মন্ত্রে, সেই বিবরণ দিয়েছেন ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নববাবুবিলাস-এ : ‘ছলনা, ছেনালি, ছেলেমি, ছাপান, ছেমো আর ছেঁচরামি, এই ছয় ছ-এর কৃতকামে বাবুদের মোহাবিষ্ট রাখতেন বেশ্যারা।’ ঊনিশ শতকের এইসব ‘সরস্বতীর ইতর সন্তান’ (সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে কথাটা ধার করে বলছি) বিশ শতক কিংবা চলমান একুশ শতকেও লুপ্ত হননি, কেবল পোশাক-আশাক, প্রণালী-পদ্ধতি বদলেছে। সেকালে রাখ-ঢাক ছিল না, একালে কিছুটা ছদ্মবেশ ধারণ করতে হয়, কাল ও যুগের হাওয়া বদলে যাওয়ার ফলে। সোনাগাছি, রামবাগান বা হাড়কাটা গলি তার প্রাচীন ‘আভিজাত্য’ নিয়ে এখনো বহাল আছে। শুধু নেই এ-পারের অনেককালের পুরনো টানবাজার আর বাবুবাজারÑ গোয়ালন্দের আলো জ্বলছে টিমটিম করে। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই সমাজস্বাস্থ্য-রক্ষায় উৎসাহী সমাজকর্মী ও মৌলবাদী শাস্ত্রবাহকেরা এইসব ‘পাপের আলয়’ উচ্ছেদ করে ‘বিশ্বময় [দিয়েছে] তারে ছড়ায়ে’। ৬. নানা কারণে উনিশ শতকের পতিতা-সংস্কৃতির অবক্ষয় নেমে আসে বিশ শতকে। সেই রমরমা না থাকলেও পতিতাদের মান ও চাহিদা বাড়তে থাকে ভিন্ন কারণে। সাধারণত পতিতারা সামাজিকভাবে ঘৃণিত-অবহেলিত হলেও বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে তাঁদের একটি গৌরবময় ভূমিকা ছিলÑ বিশেষ করে সংগীতে ও থিয়েটারে, আরো পরে সিনেমায়। ফলে বারবনিতাদের কেউ কেউ জনপ্রিয়তা, আর্থিক প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক মর্যাদাও পেয়েছিলেন। সুকুমারী দত্ত, নটী বিনোদিনী, গওহরজান, ইন্দুবালা, আঙ্গুরবালা, কমলা ঝরিয়া, কাননবালা-এ ক্ষেত্রে এঁদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। বিনোদিনীর কথা সুবিদিত, গওহরজানের নামও অজানা নয়। প্রতিষ্ঠার শীর্ষে যখন তখনো ইন্দুবালা নিজেকে ‘রামবাগানের কসবি’ বলে গৌরববোধ করেছেন। অন্ধগায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে অবিদ্যাপাড়া থেকে উঠে আসা অভিনেত্রী-গায়িকা তারকাবালা ওরফে মিস্ লাইটকে নিয়ে থাকতেন। মিস্ লাইটকে তিনি একটি পুত্রসন্তানও উপহার দিয়েছিলেন। এ-নিয়ে পরিবারে, বেশ অশান্তিও হয়েছিল। কমলা ঝরিয়ার ‘বাবু’ ছিলেন প্রখ্যাত নট-নাট্যকার-সংগীতকার তুলসী লাহিড়ী। কাননবালার ঘরে নজরুল তো প্রায় নিয়মিতই যেতেন। পরে কাননবালা ‘জাতে’ উঠেছিলেন অধ্যক্ষ হেরম্ব মৈত্রের ছেলে অশোক মৈত্র, এবং আরো পরে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের এ.ডি.সি. হরিদাস ভট্টাচার্যকে বিয়ে করে। আঙ্গুরবালার সঙ্গে সংগীত ও থিয়েটারের অনেক শিল্পীরই ‘বাবা-বিবি’ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এরপরও এঁদের কেউ কেউ ‘সতী’ সাজার চেষ্টা করেছেন- নিজেকে ‘কুলীন কন্যা’ বলেও দাবি করেছেন। কলের গান বেশ্যা-বাইজিদের প্রতিভা প্রকাশের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছিল এর সূচনালগ্ন থেকেই। তবে ভদ্রঘরের মেয়েরা আরো পরে গান-বাজনার, সিনেমা-থিয়েটারে আসতে শুরু করেন দিনবদলের পালার সূত্রে। ৭. ভারতবর্ষীয় সমাজে গণিকাবৃত্তির চল যে বহুকাল থেকেই ছিল নানা সূত্রে তার পরিচয় পাওয়া যায়। শাস্ত্রে-ধর্মে-সমাজে এই প্রথার এক ধরনের স্বীকৃতি জুটেছিল। ঋগে¦দ, অথর্ববেদ, যজুর্বেদে গণিকা-বেশ্যাদের প্রসঙ্গ বহুবার এসেছে। শাস্ত্রের পাশাপাশি ইতিহাসের সাক্ষ্যও দুর্লভ নয়। বাংলার নানা তাম্রশাসন ও লেখমালায় সংগীত-নৃত্যপটিয়সী রাজনটী ওরফে রাজবেশ্যাদের পরিচয় মেলে। ধর্মীয় আচারের আড়ালেও আবার কখনো পতিতার জীবনযাপন করতে হয়েছে- ‘দেবদাসী’ প্রথা তার একটি বড় দৃষ্টান্ত। কালীঘাটের পটচিত্রে বেশ্যাসম্ভোগের দৃশ্য যেমন আছে, তেমনি অনেক মন্দিরের গায়ে উৎকীর্ণ টেরাকোটাতেও এমন দৃশ্য মেলে। মধ্যযুগের সাহিত্যেও বেশ্যা-বারাঙ্গনা অপাঙ্ক্তেয় ছিল না,- চটজলদি যদি চোখ মেলা যায় তাহলে গোপীচন্দ্রের গান, ঘনরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল, দোনা গাজীর সয়ফুলমুলক বদিউজ্জামাল, আবদুল হাকিমের লালমতি সয়ফুল মুল্লুক, শুকুর মাহমুদের গুপীচন্দ্রের সন্ন্যাস- এইসব নানা কাব্যপুথিতে বেশ্যা-সংস্কৃতির সরস বিবরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। এক সময়ে যে শাস্ত্রজ্ঞ ‘আলিম’-এর সঙ্গে ‘রাজবেশ্যা’র সহাবস্থান ছিল তা দোনা গাজীর কাব্য সয়ফুলমুলক বদিউজ্জামান-সূত্রে জানা যায়। রাজকুমারের বিদেশযাত্রায় তাঁর সফরসঙ্গীদের বর্ণনায় পাওয়া যায় : আলিম পণ্ডিত আর জ্যোতিষী গণক নানা যন্ত্র রাজবেশ্যা গাহন নর্তক। নিঃসন্দেহে এই তথ্য কৌতূককর ও সেইসঙ্গে কৌতূহলোদ্দীপক। এরপর আঠারো-উনিশ শতকে কলকাতার নাগরিকজীবন এবং দেখাদেখি ছোট-বড় মফস্বল শহরেও গণিকাচর্চা জীবনযাত্রার অনিবার্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হয়ে উঠলো। নব্যবাবু-সমাজে ‘বেশ্যাবাজি’ ছিল বাবুগিরির প্রধান অঙ্গ। ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টারের বেশ কয়েক খণ্ডে প্রকাশিত ঞযব ঝঃধঃরংঃরপধষ অপপড়ঁহঃ ড়ভ ইবহমধষ (১৮৭৫-৭৭)-এ বিভিন্ন জেলার পতিতাদের পরিসংখ্যান দেওয়া আছে। এই জেলাওয়ারি তথ্য থেকে বেশ্যার যে-সংখ্যা জানা যায় তার আংশিক বিবরণ এইরকম : ২৫ পরগণা : ১৫৩৮০, যশোর : ৯৫৯, নদীয়া : ২১১১, মেদিনীপুর : ১৩৩৯, হুগলি : ৩১২৪, বাঁকুড়া : ২৭০, বর্ধমান : ৫৩১, ঢাকা : ১৭৩৮, বাকরগঞ্জ : ১১৮৯, ফরিদপুর : ৭৬১, ময়মনসিংহ : ২২১৮। এ-তো সরকারের ঘরে বেশ্যার খাতায় নাম লেখানো তালিকা থেকে গৃহীত পরিসংখ্যান। এর বাইরের হিসেব তো হান্টার সাহেব পাননি। তবুও এ থেকে সহজেই অনুমান করা চলে, বাঙালি সমাজে বেশ্যার সমাদর কেমন ছিল। পতিতাবৃত্তির মতো আদিম পেশার সঙ্গে জড়িত হওয়ার পেছনে আর্থ-সামাজিক কারণ তো ছিলই, তার ওপরে প্রতারণা-প্রলোভন-পারিবারিক নির্যাতনের হাতও ছিল। অনেক সম্ভ্রান্ত ঘরের রমণীও অবস্থার শিকার হয়ে বারবনিতার জীবন বেছে নিতে বাধ্য হন। কখনো ধর্মীয় সংস্কার-আচার-প্রথা ও ‘পবিত্র পতিতা’র জন্ম দিয়েছে। লোকজীবনে দেহসাধনার নামে যে অবাধ যৌনাচার চলে আসছে তাতে ভণ্ড পীর, কামুক সাধু কিংবা বৈরাগী-বৈষ্ণবের আখড়াও বাদ যায় না। যা হোক, বারাঙ্গানাদের কেউ মোটামুটি শিক্ষিত। ছিলেন, আবার কেউ বা নিজের চেষ্টায় চলনসই লেখাপড়াও শিখেছিলেন। পতিতাদের মধ্যে কেউ কেউ সন্তানদের প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাশিক্ষার তাগিদও অনুভব করেছেন, কিন্তু ভদ্রসমাজ তাঁদের এই ‘স্পর্ধাকে বরদাশত করেন নি। হীরা বুলবুলের ছেলে কিংবা বিনোদিনীর মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে উনিশ শতকের কলকাতায় তুলকালাম ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। জাত-পতিতা, ভদ্র-পতিতা কিংবা ছদ্ম-পতিতাদের মধ্যে দু-চারজন সাহিত্যচর্চাও করতেন- কেউ আবার নিজের জীবনকথাও লিখেছেন। এসব রচনায় পতিতাদর জীবনের অন্তরঙ্গ কাহিনী- তাঁদের ঘরোয়া জীবনের চালচিত্র প্রতিফলিত। এই ধরনের আত্মকথা সময়ের বিশ্বস্ত সামাজিক দলিল হিসেবে বিবেচনার যোগ্য। অন্ধ গলির নারকীয় ভুবনের এসব কাহিনী নাটকীয় ঘটনায় পূর্ণ, কখনো বা উপন্যাসকেও হার মানায়। এই ধরনের বইয়ের মধ্যে সেকালের বিখ্যাত অভিনয়শিল্পী নটী বিনোদিনীর আমার কথা (১৩১৯), মানদা দেবীর শিক্ষিতা পতিতার আত্ম-চরিত (১৩৩৬), তিনকড়ি দাসীর আমার জীবন (১৯০০)-এর কথা উল্লেখ করা যায়। বিদ্যাদর্শন (৫ম সংখ্যা, ১৮৪২) পত্রিকায় ‘কলিকাতা নিবাসিনী বেশ্যা’র পত্র কিংবা রূপ ও রঙ্গ (১৫ কার্তিক ১৩৩১ ও ২২ কার্তিক ১৩৩১ পত্রিকায় অভিনেত্রী অরুন্ধতী ও সৌদামিনীর ছদ্ম-পরিচয়ের আত্মকথায় অবিদ্যা-জীবনের বেদনার করুণ কাহিনী বিবৃত হয়েছে। কানন দেবীর সবারে আমি নমি-তে (১৩৮০) তাঁর ‘পাড়া’র জীবনের কথা এড়িয়ে গেছেন। অবিদ্যাপাড়ার অভিনত্রেী সুকুমারী দত্তের আত্মজৈবনিক নাটক অপূর্ব্বসতী নাটক (১২৮২)-এর কথাও এখানে বলতে হয়। আবার কেউ কেউ পত্রি-পত্রিকায় অগ্রন্থিত স্মৃতিকথা কিংবা সাক্ষাৎকারেও কিছু কথা বলেছেন। অবশ্য আড়াল মেনে অনেক কথাই বলেন নিÑ বিশেষ করে তাঁদের ‘বাবু’দের কথা পতিতাজীবনের কথা। কেউ কেউ আবার হাস্যকরভাবে ‘সতী’র ছদ্মবেশ ধারণের কোশেশ করেছেন। পাশাপাশি যেসব ‘বাবু’রা পতিতালয়ে নিয়মিত যেতেনযাঁদের বাঁধা ‘মাগ’ ছিলÑ তাদের কেউ কেউ স্মৃতিকথা লিখলেও তাতে তাঁরা এই কলুষিত জীবনের কাহিনীর ধারে-কাছেও যান নি- নিজেদের এক ধরনের ‘মহাপুরুষ’ হিসেবেই প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। অথচ সেকালে ও একালে অনেকেই অবিদ্যার গৃহে পদধূলি দিয়েছেন- নিয়মিত রক্ষিতার হাতে পান-তামাক খেয়েছেন- অঙ্কশায়ী হয়েছেন। মানদা দেবী শিক্ষিতা পতিতার আত্ম-চরিত-এ জানিয়েছেন কোন ধরনের মানুষ আসতেন তাঁদের ঘরে : “ঃ আমার মতো পাপরতা, পতিতা নারীর পদতলে যে সকল পুরুষ তাহাদের মান, মর্যাদা, অর্থসম্পত্তি, দেহমন বিক্রয় করেছেঃ তাদের সমাজ মাথায় তুলে রেখেছে- তারা কবি ও সাহিত্যিক বলিয়া প্রশংসিত, রাজনীতিক ও দেশসেবক বলিয়া বিখ্যাত- ধনী ও প্রতিপত্তিশালী বলিয়া সম্মানিত। এমন কি অনেক ঋষি-মোহন্তও গুরুগিরি ফলাইয়া সমাজের শীর্ষস্থানীয় অধিষ্ঠিত আছেন, তাহা সমাজ জানিয়া শুনিয়াও নীরব।” সত্যের খাতিরে সমালোচনার ভয় উপেক্ষা করে আমরা সেকাল ও একালের কিছু নামী ব্যক্তির উদাহারণ পেশ করি। বাংলা টপ্পাগানের জনক রামনিধি গুপ্ত ওরফে নিধুবাবুর সঙ্গে নাকি বারবধূ শ্রীমতির ‘নিষ্কাম’ ও ‘পবিত্র’ সম্পর্ক ছিল- তাঁর চরিত্রে মহিমা আরোপের জন্য এই ধরনের কাহিনী প্রচারের প্রয়োজন হয়। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনে পতিতা ও রক্ষিতার ভূমিকা কম নয়। প্রমথেশ বড়-য়া ও যমুনা দেবীর সম্পর্কের বৈধতাও প্রশ্নহীন নয়- যেমন একালে উত্তম-সুপ্রিয়ার সম্পর্ক। লাজুক-আত্মমুখীন-অন্তরালের সাহিত্যিক এবং হতদরিদ্র মানুষ মানুষ জগদীশ গুপ্তও কলকাতায় রক্ষিতা পুষতেন। অবিদ্যাপাড়ার গায়িকাদের সঙ্গে নজরুলের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের সাক্ষ্য দুর্লভ নয়। নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের বাঁধা-রক্ষিতা ছিলেন প্রখ্যাত কীর্তন-গায়িকা রাধারানী দেবী। তুলসী লাহিড়ীর পুত্র হাবু লাহিড়ী বলতে দ্বিধা করেননি, তাঁর পিতা ও সংগীতশিল্পী কমলা ঝরিয়া ‘প্রায় স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করিতেন’। প্রয়োজনে এই তালিকা আরো দীর্ঘ করা যায়। আগেই বলেছি, কৃতবিদ্যদের মধ্যে এ বিষয়ে বোধহয় একমাত্র ব্যতিক্রম মীর মশাররফ হোসেন। আরেকজন অখ্যাত রমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এম.এ। রমেশচন্দ্র সমাজজীবনে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত না হলেও-পতিতা-পল্লীর একজন জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন-যিনি তাঁর পাপ্লাত পতিতামগ্ন জীবনের কথা খোলামেলা পাঠকদের শুনিয়েছেন তাঁর স্মৃতিচর্চা-ব্যভিচারী রমেশদা’র আত্মকথায়। দৈনিক ভোরের কাগজ /২ এপ্রিল ২০১০ সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৯:১১ | false |
hm | অণ্ডকোষ ছোট্ট একটা সেল। তাতে গাদাগাদি করে তিনজন। দু'জন আবার উপুড় হয়ে শুয়ে। বোঁ করে একটা মাছি এসে চক্কর খায় শায়িত দু'জনের ওপর, একজন দুর্বল হাত ঝাপটা দিয়ে সেটা তাড়ানোর চেষ্টা করে। এক নম্বর ময়লা দেয়ালে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। মেঝেতে চিটচিটে কম্বলের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা দুই নম্বর গোঙাতে গোঙাতে বলে, "এই সময় উকিলের বাচ্চা গেছে আম্রিকা! এইটা কি আম্রিকা যাওয়ার সময়? এদিকে কেয়ামত হয়ে যাচ্ছে!" তিন নম্বর ডুকরে কেঁদে উঠে বলে, "কায়ামৎ হো চুকা মুজাভাই! কায়ামৎ তো বিলকুল হো চুকা!" এক নম্বর মৃদু কিন্তু শক্ত গলায় বলে, "কী করছে তোমারে, দেলু?" তিন নম্বর মেঝেতে হাত ঠেকিয়ে বহু কষ্টে হাঁটু আর হাতের ওপর ভর দিয়ে বসে। ফিসফিসে ধরা গলায় বলে, "ডিম।" এক নম্বর একটু যেন কেঁপে ওঠে। গণ্ডগোলের পরের তিনটা বছর এরকম অস্থির সময় গিয়েছিলো। শেষদিকে অবশ্য অনেক কিছু গুছিয়ে এনেছিলো তাদের লোকজন। মওলানা সাহেবের পার্টি তখন বল যুগিয়েছে। আর জালেমের পতনের পর তো জেনারেল সাহেব সবকিছু আবার সুন্দর করে গড়ে তুলছিলেন। ওরকম মানুষ আর হয় না। পরের জেনারেলটা যদিও অনেক সুবিধা দিয়েছে তাদের, কিন্তু পয়লা জেনারেলটার মতো জেনারেল আর আসবে না দেশে। হয়তো আসতো। তার আগের এক নম্বরের বড় বেটা অনেকদূর চলে গিয়েছিলো। হয়তো সে-ই হতো পরের সিপাহসালার। কিন্তু জালেমের দল দিলো না। অকালে খারিজ করে দিলো ওরকম একজন আলেম ফৌজদারকে। তা দিক। ফৌজে বড় বেটার আসর কম নয়। নতুন ছানাপোনা থেকে শুরু করে পাকা জঙ্গ-ই-বাহাদুরেরা বড় বেটার গুণপনায় মশগুল। বাইরে থেকেও সে অনেক কলকাঠি নাড়তে পারবে, যখন উপরঅলার ইশারা আসবে। আর ভেতরের সাঙ্গাৎরা তো আছেই। এক নম্বর মাথা ঝাঁকায়, দূর করে দিতে চায় এসব চিন্তা। ওয়াক্ত মাঝে মাঝে খারাপ যায়, জামানা মাঝে মাঝে রুখা হয়। কিন্তু আবার সব ঠিকও হয়ে যায়। আঁধার ফুঁড়ে আসে নওহিলালের রৌশনি। নারায়ে তাকবীর! দুই নম্বর ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। এক নম্বর একটা চাপা ধমক দেয়। "খবরদার মুজা! রো মাৎ। রোনেকে লিয়ে ইতনে দূরতক নাহি পৌঁছা তুনে!" দুই নম্বর ককিয়ে উঠে বলে, "তুমহারে লিয়ে তো অ্যায়সা বোলনা আহসান হায় নিজা ভাই। লেকিন হামারা গাঁড়কে লিয়ে তো নাহি! আরে কুছ করো ইয়ার! কুছ আইসক্রিম তো বুলা করো!" তিন নম্বরও আইসক্রিমের বায়নায় সমর্থন দেয়। এক নম্বর বলে, "আইসক্রিম খাওগে তো টনসিল বিগাড় যায়েগি।" দুই নম্বর বলে, "আরে খানেকে লিয়ে আইসক্রিম চাহতা হায় কওন বেহেনচোদ! গাঁড়মে ডালনেকে লিয়ে বুলানে কো কেহতা হুঁ!" এক নম্বর থতমত খেয়ে চুপ করে যায়। তিন নম্বর কুঁ কুঁ শব্দ করতে থাকে। এক নম্বর গলা খাঁকরে বলে, "কীসের আণ্ডা, দেলু?" তিন নম্বর দুর্বল গলায় বলে, "মনে হয় মুরগা।" দুই নম্বর দাঁতে দাঁত চেপে বলে, "মুরগার আবার আণ্ডা হয় নাকি? বলো মুরগির আণ্ডা!" তিন নম্বর ধরা গলায় বলে, "আগার পুলিশ চাহে তো মুরগা ভি আণ্ডা দেগা।" বাইরে ডেস্কে বসা ইনচার্জ বাঘের গলায় ধমক দেয়, "হুজুরেরা উর্দুতে কথাবার্তা বন্ধ করেন। উর্দু চোদাইবেন ইসলামাবাদে যাইয়া।" এক নম্বরের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। সব কয়টা ঠোলা সাদা পোশাকে আছে, ব্যাজ নাই কারো, কিন্তু চেহারা তো সে ভুলবে না। আর তার সাহাবারা ঠিকই বের করবে আজ ডিউটিতে কারা ছিলো। মিনিস্ট্রিতে অনেক মুরিদ আছে তার। এই দিন দিন না, আরো দিন আছে। ইনচার্জ চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ায়, তারপর খট খট শব্দ তুলে হেঁটে আসে সেলের কাছে। "কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো স্যারেরা?" হাসি-হাসি কণ্ঠে শুধায় সে। এক নম্বর চুপ করে থাকে। তিন নম্বর ফুঁপিয়ে উঠে বলে, "তোমার চৌদ্দগুষ্টি এর খেসারত দিবে! তুমি জানো না তুমি কী করছো!" ইনচার্জ খুশি গলায় বলে, "আমি আসলেই জানি না আমি কী করছি। আপনিই বলে দ্যান হুজুর। কী করছি আমি?" তিন নম্বর চুপ করে যায়। দুই নম্বর চিৎকার করে অভিশাপ দ্যায়, "তোমার বালবাচ্চা সবাই এর খেসারত দিবে অফিসার! ঘুঘু দেখেছো ফাঁদ দেখো নাই ...!" এক নম্বর নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে দুই নম্বরকে, কিন্তু দুই নম্বর চিৎকার করে শাপশাপান্ত করে যায়। ইনচার্জ একটা সিগারেট ধরায়, তারপর উদাস গলায় বলে, "কীসের ডিম গেছিল হুজুর?" তিন নম্বরও গালাগালি শুরু করে আবার। ইনচার্জ কাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে, "ওরে অ্যাসিস্ট্যান্ট, তোমার তো নাম ধইরা ডাকা বারণ, কীসের ডিম দিছিলাম?" একটু দূর থেকে কে যেন খোনা গলায় বলে, "স্যার লালদাড়িরে দিছিলেন মুরগির ডিম, আর সাদাদাড়িরে হাঁসের ডিম।" ইনচার্জ সেলের ভেতর উঁকি দিয়ে দাড়ির রং দেখে, আবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়। সিগারেটে একটা টান দিয়ে বলে, "হ, হাঁসের ডিমের ম্যাজিকই আলাদা।" এক নম্বর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে। এই গাড্ডা থেকে জামিনে বেরিয়ে চট্টগ্রাম আর শরীয়তপুর থেকে কয়েকজন ক্যাডার আনিয়ে ডিউটিতে থাকা সবকয়টা অফিসারের বাড়িতে বোমা ফাটানোর ব্যবস্থা করবে সে। ইনচার্জ ডেস্কে ফিরে গিয়ে টেলিফোন তুলে নেয়, "হ্যালো, আজম সাহেব, হ্যালো!" এক নম্বর কান পাতে। নামগুলো শুনতে হবে, শুনে মনে রাখতে হবে। "বাহ, পাইছেন? ... লোক গেছে? বাহ বাহ ... হ্যাঁ হ্যাঁ ... হ্যাঁ, তদন্তের কাজে দরকার ... না না না, আপনাদের কোনো ব্যাপার না আজম সাহেব ... না না ... হ্যাঁ, সেটাই ... হায়াৎ ফুরাইলে তো মরবেই ... সবই উপরঅলার মর্জি ... বুঝি রে ভাই বুঝি ... ঠিকমতো খাইতে দিয়েন ... হ্যাঁ হ্যাঁ, ওষুধপত্র দিয়েন ঠিকমতো ... আচ্ছা ঠিকাছে, রাখি এখন ... ওয়ালাইকুম সালাম।" ঘটাশ করে ফোন নামিয়ে রাখে ইনচার্জ। এক নম্বরের মাথায় দ্রুত চিন্তা খেলতে থাকে। কে এই আজম? তদন্তের কাজে তার কাছে কেন লোক যাবে? কে মারা গেছে? কাকে ঠিকমতো খেতে দিতে হবে, ঔষধ দিতে হবে? ইনচার্জ ডেস্কে বসে একটা কানখুষ্কি দিয়ে কান চুলকাতে থাকে। তিনটা শকুনকে ধরে আনা হয়েছিলো, এখন সেলের ভেতর বসে আছে তিনটা ডিম। ছাড়া পেলে আবার ডিম ফুটে বেরিয়ে আসবে শকুন। দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে আরেকজন কর্মকর্তা, তার হাতে একটা বড় কাগজের বাক্স। ভেতর থেকে খড় বেরিয়ে আছে। ইনচার্জ উৎফুল্ল গলায় হাঁক ছাড়ে, "অ্যাসিস্ট্যান্ট! মাল পাইলা?" অ্যাসিস্ট্যান্ট হাসে। "হ স্যার। একদম টাটকা। চোখের সামনেই বাইর হইল।" ইনচার্জ সেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। উপুড় হয়ে শুয়ে আছে তিন নম্বর আর দুই নম্বর। এক নম্বর সোজা হয়ে বসে আছে অন্যদিকে তাকিয়ে। ইনচার্জ অ্যাসিস্ট্যান্টকে জানায় তার উপলব্ধির কথা। "আনছিলাম তিনটা শকুন, এখন বইসা আছে তিনটা ডিম।" অ্যাসিস্ট্যান্ট নিরুত্তাপ হাসে। তাদের কাজই শকুনদের ডিম বানানো। ইনচার্জ ডেস্কের ওপর থেকে ব্যাটনটা তুলে নেয়, তারপর সেলের গরাদে বাড়ি মারে জোরে। "বড় হুজুর, বাইরে আসেন। আপনার জন্য স্পেশ্যাল জিনিস।" এক নম্বরের মুখ থেকে রক্ত সরে যায়। দুই আর তিন নম্বর ঘুরে বসে হাত আর হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে। ইনচার্জ কাগজের বাক্সটা দেখায়। "খাঁটি উটপাখির ডিম হুজুর। চিড়িয়াখানা থেকে আনা। একদম গরমাগরম। তবে আমরা আরেকটু গরম করে নিবো। আসেন।" এক নম্বরের মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে। দুই আর তিন নম্বরের দিকে তাকায় সে। সামান্য একটা তুষ্টির হাসি কি তাদের মুখে খেলা করে? চোখে অন্ধকার দেখে এক নম্বর। ইনচার্জ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে, সেলের মধ্যে গাদাগাদি করে বসে আছে কুঁকড়ে যাওয়া তিনটি ঘর্মাক্ত ডিম। তার মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার বায়োলজি ক্লাস। | false |
rn | ভিতরে বাহিরে জেগেছে আমার কী কল্লোল (মানুষ যে পথে যায় ফিরে আসার সময় সে পথের অনেক কিছুই বদলে যায়।) আজ আমার পকেট ভরতি টাকা।শহীদ মিনারের সামনের ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি।এখনো সন্ধ্যা হয়নি।একটু পর পর মাথা ঘুরিয়ে রাস্তার চারপাশ দেখছি,পথে কোনো অঘটন ঘটে কিনা।কলা ভবনের সামনে যখন আসি,তখন মাঝ বিকেল।রেফারেন্স রুম,লাইব্রেরীর বারান্দা,ক্যান্টিন-খুঁজে দেখি কোনো চেনা মুখ নেই,তাহলে বন্ধুরা কি আড্ডা ছেড়ে দিয়েছে?অবশ্য এমনও হতে পারে হয়তো দল বেঁধে সবাই পিকনিকে গিয়েছে,আবার ফিরে আসবে।এখন আমি একা কি করবো? আমার সময় কাটে কি করে?ক্যান্টিনে বসে চা,(বিচ্ছিরি) শেষ করে সিগারেট ধরাই,বসে থাকি।আর প্রতি মুহূর্তে অপেক্ষা করি,এই বুঝি হঠাৎ পিছন থেকে 'হিমি' আমার নাম ধরে ডেকে উঠবে!যার হাতে প্রভুত না হলেও অনেক ক্ষমতা।কিন্তু সেই রকম কিছুই ঘটে না।সন্ধ্যা হয়ে আসে। সন্ধ্যার পর রাস্তার দিকে তাকালে দম বন্ধ হয়ে আসে।ছোট বড় সব রাস্তায় জ্যাম লেগে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা।কেউ কেউ টিকিট কেটে বিশাল আকারের ডিলাক্স বাসে ঊঠে;কিন্তু বাস কোথাও না কোথাও জ্যামে পড়বেই।জ্যামে পড়লেই মনে হয় আমি পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্ভাগা মানুষ।আমার উওরা যেতে সময় লাগবে দুই ঘন্টা।আমি চোখ বন্ধ করে 'দেশ' নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। স্বাধীনতা যুব্ধে কতজন পাকিস্তানি সৈন্য মারা গেছে?কোনো ষ্ট্যাটিসটিক্স কি আছে?পাকিস্তান কি জানে?যেমন-আমেরিকা আর ভিয়েতনাম যুব্ধে,আমেরিকানদের ৫৬ হাজার সৈন্য মারা যায়। বঙ্গ বন্ধু স্বাধীনতার পরে দেশের জন্য অনেক অসম্পূর্ন কাজ সম্পূর্ন করেছেন।কম করে হলেও ৫/৬ শো ব্রিজ,কাল ভার্ট,রেললাইন,সড়ক ব্যাবস্থা,বিমান বন্দর,সমুদ্র বন্দর,রাষ্টের জন্য শাসন তন্ত- সব কিছুর পুনরুজ্জীবন ও পুনরুব্দার করেন।এই পর্যন্ত ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম আর লেনিন কে স্বপ্নে দেখলাম,দেখি তিনি আমাকে বলছেন-"যেসব মেয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত প্রনয় আর রাজনীতির মধ্যে তফাত করতে জানে না,তাদের উপর আমার আস্থা অথবা সংগ্রামের ব্যাপারে তাদের ধ্যৈর্যের পক্ষ নিয়ে আমি কোনো রকম দাবি করতে রাজি নই।আর যেসব যুবক প্রত্যেকটি মেয়ের জামার পেছনে দৌড়াচ্ছে,প্রত্যেকটি মেয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তাদের পক্ষ নিয়ে ও নয়। গরমে ঘুম ভেঙ্গে গেল।আর বার বার মাথার ভিতরে কে যেন গানের মতো সুর করে বলছে- "পাতায় পাতায় হাসি, ও পুলক রাশি রাশি সুর নদীর কূল ডুবেছে।" এখন রাত ২ টা।আমি আমার বিছানা।উদ্দেশ্য 'হিমি'র কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়বো।'হিমি'র শরীরে কেমন যেন এক বুনো সুগন্ধ।অজানা ভুবনের সুগন্ধ ।তার গভীর নিঃশ্বাসের সাথে ও আমি সুগন্ধ। আজ বিকেলের কথা খুব মনে পড়ছে আর লেনিনের কথাই সত্য-"যৌন জীবনের উচ্ছৃংখলতা হলো বুর্জোয়া,ক্ষয়ের লক্ষন।'এক গ্লাস জল' থিওরি ব্যাখ্যায় পরে যাচ্ছি।সামান্য চিন্তাতেই মন দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে।তখন ইচ্ছে করে 'হিমি'র কাছে ছুটে যাই। আমার ঘুম আসে না।আমি বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরাই।আকাশের দিকে তাকিয়ে,ডুব দেই নিজের মনের গভীরে।সেখানে পরম যত্নে লুকিয়ে রাখা 'হিমি' কে অন্ধকার থেকে হাত ধরে টেনে আনি আলোতে।পাশাপাশি বসে 'হিমি'র সাথে কথা বলি।মনের ভেতর লুকিয়া রাখা সব কথা। আমি 'হিমি'কে গান শুনাই- নীল টিপ পড়বে নাকি তুমি চাঁদ এনে তোমায় দেব আমি মেঘের কালো কাজল দেব,- দেব তারার ফুল। তোমার হাসি ভালোবাসি- ভালোবাসি গান তোমায় পেলে নেচে উঠে- আমার মন প্রান। এই রাতে আসবে নাকি তুমি কিছু জোনাক দেব আমি। দূর ঐ আকাশে ভাসে মেঘের দল। তোমার গন্ধে ভেসে বেড়ায় সৃস্তির অতল। বৃষ্টিতে ভিজে আসবে নাকি তুমি কিছু তাজা ফুল দেব আমি। আমি 'হিমি'কে কবিতা শুনাই- আমার জানাতে তোমায় জানিতে কত কি যে সাধ জাগে হয়তো তোমারে দেখিয়াছি, তুমি যাহা নও তাই করে, ক্ষতি কি তোমার,যদি গো আমার তাতেই হৃদয় ভরে। সুন্দর করে গো তোমায় আমার আঁখির জল।" আ্মি 'হিমি'কে কৌতুক শুনাই- একটা অফিসে টেলিফোন এসেছে।অফিসের বস্ কে টেলিফোনে চাইছে।বসের সেক্রেটারি বলল-আপনি কে বলছেন পরিচয় দেন,স্যার যার তার সাথে কথা বলেন না।টেলিফোনের ওপাশ থেকে ভারী গলা শোনা গেল,আমি অনেক উপরের লোক।তোমার বস কে দাও। সেক্রেটারি বলল-আপনি কি কোন মন্তী? না,আমি তারও উপরে আপনি কি প্রধান মন্তী? আরে না,আমি তারও উপরে। বলেন কি? আমারিকার প্রসেডিন্ট বারাক ওবামা না তো? তারও উপরে! বলেন কি?আপনি কি আল্লাহ? আরে না,তারও উপরে।আল্লাহ'র উপরে তো কেউ নাই। আমি সেই কেউ না। -------------------------------------------------------------------------------- সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:২২ | false |
hm | অশ্লীশ রহস্যগল্পঃ হারাধনের দশটি ছেলে ও গোয়েন্দা ঝাকানাকা ১. হারাধনের দশটি ছেলে ঘোরে পাড়াময় একটি কোথা হারিয়ে গেলো রইলো বাকি নয়। হারাধনের নয়টি ছেলে কাটতে গেলো কাঠ একটি কেটে দুখান হলো রইলো বাকি আট। হারাধনের আটটি ছেলে বসলো খেতে ভাত একটির পেট ফেটে গেলো রইলো বাকি সাত। হারাধনের সাতটি ছেলে গেলো জলাশয় একটি জলে ডুবে মলো রইলো বাকি ছয়। হারাধনের ছয়টি ছেলে চড়তে গেলো গাছ, একটি মলো আছাড় খেয়ে রইলো বাকি পাঁচ। হারাধনের পাঁচটি ছেলে গেলো বনের ...[justify] ১. হারাধনের দশটি ছেলে ঘোরে পাড়াময় একটি কোথা হারিয়ে গেলো রইলো বাকি নয়। হারাধনের নয়টি ছেলে কাটতে গেলো কাঠ একটি কেটে দুখান হলো রইলো বাকি আট। হারাধনের আটটি ছেলে বসলো খেতে ভাত একটির পেট ফেটে গেলো রইলো বাকি সাত। হারাধনের সাতটি ছেলে গেলো জলাশয় একটি জলে ডুবে মলো রইলো বাকি ছয়। হারাধনের ছয়টি ছেলে চড়তে গেলো গাছ, একটি মলো আছাড় খেয়ে রইলো বাকি পাঁচ। হারাধনের পাঁচটি ছেলে গেলো বনের ধার, একটি গেলো বাঘের পেটে রইলো বাকি চার। হারাধনের চারটি ছেলে নাচে তা ধিন ধিন একটি গেলো পিছলে পড়ে রইলো বাকি তিন। হারাধনের তিনটি ছেলে ধরতে গেলো রুই একটি মলো আছড়ে পড়ে রইলো বাকি দুই। হারাধনের দুইটি ছেলে ধরতে গেলো ভেক একটি গেলো সাপের বিষে রইলো বাকি এক। হারাধনের একটি ছেলে কাঁদে ভেউ ভেউ মনের দুঃখে বনে গেলো রইলো না আর কেউ। ২. হারাধন গোধুলি আর তার বউ সুখেই ছিলো। দশ দশটা ছেলে তাদের। তারা পাড়াময় ঘুরে বেড়ায়। হই হট্টগোল করে। রাতের বেলা লাইন ধরে পাত পেতে খেতে বসে। হারাধন নিজের ছেলেদের দেখে আর মিটিমিটি হাসে। সুখেই কাটছিলো তাদের জীবন। হঠাৎ একদিন ঘটলো বিনামেঘে বজ্রপাত। নয় ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বাড়িতে রিপোর্ট করলো, "আব্বা গোওওওও! খুমন ভাই তো হারিয়ে গেছে! কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!" হারাধনের মাথায় যেন বাজ পড়লো। ঐ যে ... বিনামেঘে যেটা পড়ার কথা আর কী। তৎক্ষণাৎ পাড়াপড়শি লাঠিসোটা হারিকেন নিয়ে হারাধন বেরিয়ে পড়লো ছেলে খুমনকে খুঁজতে। খুমনের মা উৎকণ্ঠিত চিত্তে বসে রইলো ঘরে। বাহাত্তর ঘণ্টা খুমনকে গরুখোঁজা করে হতাশ হয়ে ফিরে এলো সকলে। কোথাও নেই খুমন। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সে। হারাধন গোধুলি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলো, খুমন, ফিরিয়া আইস। তোমার চিন্তায় তোমার মাতা কেন্দে জারেজার। প্রতিজ্ঞা করিতেছি, প্যাঁদাইয়া তোমার ছাল ছালাইব না। ফিরিয়া আইস বাপধন। পুলিশে ডায়রি হলো। পুলিশের এস আই রজ্জব আলি ডায়রি লিখলো, ডিয়ার ডায়রি, গত ২৬ জানুয়ারি দ্বিপ্রহরে খুমন গোধুলি, পিতা হারাধন গোধুলি, নিবাস গোধুলি কুটির ... হারাইয়া গিয়াছে। কিন্তু খুমনকে আর পাওয়া গেলো না। হারাধন গোধুলি আর তার বউ সজল নয়নে অবশিষ্ট নয়টি পুত্রকে নিয়ে দিন কাটাতে লাগলো। আর আশায় বসে রইলো, নেতাজী সুভাষ বসুর মতো হয়তো খুমন কোনো দূরদেশে গোপন রাষ্ট্রীয় মিশনে, সময় হলেই ফিরবে। খুমনের শোক কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসতেই একদিন বিকেলে হারাধন গোধুলির আট ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়িতে এসে রিপোর্ট ঠুকলো। "আব্বা গোওওওও! গুমন ভাই হাসপাতালে! জলদি আসো!" হারাধন গোধুলির বুক ধক করে উঠলো। পড়িমড়ি করে সস্ত্রীক সে ছুটলো শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু হায়, গুমনকে আস্ত পাওয়া গেলো না। ডাক্তার গম্ভীর গলায় বললেন, আই অ্যাম সরি, হি প্যাসড অ্যাওয়ে। গুমনের মৃতদেহের ওপর আছড়ে পড়ে কান্নাকাটি করতে লাগলো তার মা, মিসেস হারাধন। হারাধন গোধুলি পাথরের মতো শক্ত মুখে দাঁড়িয়ে রইলো। কতগুলি আয়া এসে তাদের ধমকাতে লাগলো, বললো বডি মর্গে নেয়ার ব্যবস্থা করেন জলদি জলদি, এই বেডে নতুন পেশেন্ট উঠবে! এস আই রজ্জব আলি এসে সুরতহাল রিপোর্টে লিখলো, গুমন গোধুলি তার ভাইদের সাথে কাঠ কাটতে যায় জঙ্গলে। সকলেই কুঠার হাতে ধপাধপ কাঠ কাটিতেছিলো। হঠাৎ আর্তচিৎকার শুনিয়া তাহার ভাইয়েরা ছুটিয়া আসিয়া দেখে, গুমন গোধুলি মারাত্মক আহত, তাহার আপন কুঠার তাহার আপন বক্ষে বিদ্ধ। অতঃপর তাহারা ভাইকে আনিয়া হাসপাতালে ভর্তি করে। মৃতের পঞ্জর বিদীর্ণ, আট ইঞ্চি পরিমাণ ক্ষত দেখা যাইতেছে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর হারাধন গোধুলি পুত্রের একটি ছবি বাঁধাই করে দেয়ালে টাঙালো। তারপর সজল নয়নে একটি ফুলের মালা পরিয়ে দিলো। সেদিন রাতে গোধুলি পরিবারের ঘরে আট পুত্রের জন্যে আটটি পাত পড়লো। দিন যায়। গুমনের মৃত্যুর শোকও একটু বুঝি স্তিমিত হয়ে আসে। একদিন হারাধনের সাত পুত্র ছুটতে ছুটতে এসে রিপোর্ট ঠোকে বাসায়। "আব্বা গোওওওও! ঙুমন ভাই হাসপাতালে! ক্যামন জানি করে! জলদি চলো!" এবার হারাধন উদ্বেগে পাগল হয়ে ওঠে। একটি সিয়েনজি ভাড়া করে সে ছুটে যায় হাসপাতালে। ডাক্তার গম্ভীর মুখে জানায়, আই অ্যাম সরি, হি জাস্ট পাসড অ্যাওয়ে। হারাধন বুক চেপে ধরে বসে পড়ে! ময়না তদন্তে জানা যায়, ফুড পয়জনিং। অত্যন্ত শক্তিশালী। স্থানীয় বাবুলের হোটেলে হারাধনের ছেলেরা ভাত খেতে বসেছিলো, ঙুমন ভরপেট ভাত খেয়ে হঠাৎ বাবাগো বলে পেট চেপে গড়াগড়ি করতে থাকে। ঙুমনের শোকে কয়েকদিন ঠিকমতো খেতে পারে না হারাধন পরিবার। গুমনের ছবির পাশে বাঁধাই করা হয় ঙুমনের ছবিও। কিন্তু সব পাখি ঘরে ফেরে, সব নদী। একদিন ঙুমনের শোকও স্তিমিত হয়। সাত ছেলে কলকল করে পাত পেড়ে ভাত খায়। হারাধন স্তব্ধ হয়ে টিভিতে চ্যানেল থ্রিতে টারজানা খানের সংবাদ পাঠ দেখে। একদিন বিকেলে আবার ছুটতে ছুটতে আসে হারাধনের ছেলেরা। সংখ্যায় তারা ছয়জন। ঠোকে রিপোর্ট। "আব্বা গোওওওও! চুমন ভাই ডুবে গেছে! জলদি আসো!" হারাধন একটা টায়ার নিয়ে ছুটে যায় পুকুরে। তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চুমনকে উদ্ধার করার জন্য। ঘোলা পুকুরের তলা থেকে চুমনকে তোলার পর পারে নিয়ে তাকে সিপিআর দেয়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। চুমনের শরীর শক্ত হয়ে যায়। এস আই রজ্জব আলি সুরতহাল রিপোর্ট করে। তারপর কী যেন ভাবে আনমনে। হারাধন বাড়ি ফিরে বউকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। গুমন আর ঙুমনের পাশে ওঠে চুমনের ছবি। পরানো হয় মালা। দিন যায়। মাস যায়। একদিন ছুটতে ছুটতে বাড়ি ফেরে হারাধন গোধুলির ছেলেরা। পাঁচজন। হারাধন রিপোর্ট ঠোকার আগেই পাগলের মতো ছুটে বেরিয়ে আসে, "কে কে কে? কীভাবে কীভাবে কীভাবে?" ছেলেরা হাউমাউ করে বলে, "আব্বা গোওওও! জুমন ভাই গাছ থেকে পড়ে গেছে! জলদি হাসপাতালে চলো!" হাসপাতালে ডাক্তার গম্ভীর হয়ে বলেন, "আই অ্যাম সরি মিস্টার হারাধন! হি পাসড অ্যাওয়ে!" জুমন গাছ থেকে পড়ে মারা গেছে। হারাধন বাড়ি ফিরে যায় কাঁদতে কাঁদতে। জুমনের ছবি বাঁধাই করে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখে। হারাধনের বাড়ির কাছেই জঙ্গল। ছেলেদের সেদিকে যাওয়া নিষেধ। তারপরও একদিন ছেলেরা সেদিক থেকেই ছুটতে ছুটতে ফেরে। "আব্বা গোওওওও! ঝুমন ভাইকে বাঘে ধরেছে! জলদি আসো!" হারাধন তার দাদার আমলের পয়েন্ট থ্রি টু মাউজার রাইফেলে টোটা ভরে ছুটতে ছুটতে যায় জঙ্গলের কাছে। জঙ্গলের কিনারেই পড়ে আছে ঝুমনের শরীর। বাঘ তার একাংশ চিবিয়ে খেয়েছে। হারাধন যেন পাগল হয়ে যায়, রাইফেল হাতে সে ছুটে যেতে চায় জঙ্গলের কিনারায়। কিন্তু বাকি ছেলেরা বাধা দেয় তাকে। ঝুমনের লাশের সুরতহাল করতে আসে এসআই রজ্জব আলি। আড়চোখে হারাধনকে দেখে সে। ভয়ে ভয়ে বলে, আপনার রাইফেলের লাইসেন্স আছে তো? হারাধন কাঁদে, কিছু বলে না। ঝুমনের ছবি ওঠে দেয়ালে, বাঁধাই করা। হারাধন গোধুলির বাড়িতে নেমে আসে নীরবতা। চারটি মাত্র ছেলে চুপচাপ পাত পেড়ে ভাত খায়। হারাধন কাঁদে। কাঁদে হারাধনের বউ। একদিন সন্ধ্যায় ছুটতে ছুটতে আসে হারাধনের তিন ছেলে। "আব্বা গোওওওও! জলদি আসো! টুমন ভাই পিস্লা খেয়ে পড়ে গেছে! হাসপাতালে! জলদি!" হারাধনের বুকটা ধ্বক করে ওঠে। টুমনের কলেজে ব্রেক ড্যান্স পারফর্ম করার কথা, কী এক র্যাপারের সাথে তালে তাল মিলিয়ে। আর সে কি না পিছলা খেয়ে পড়ে যায়? হাসপাতালে ডাক্তার গম্ভীর মুখে বললেন, "আই অ্যাম সরি! হি জাস্ট পাসড অ্যাওয়ে!" হারাধন মাটিতে কিল মেরে কাঁদে। এস আই রজ্জব আলি চুপচাপ সুরতহাল করে যায়। মৃত টুমন গোধুলির করোটিতে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন আছে। বাম হাতের আলনা ভাঙিয়াছে। তিন ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে হারাধন বাড়ি ফিরে যায়। টুমনের একটা ছবি ওঠে দেয়ালে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হারাধন পরিবারের পিছু ছাড়ে না। একদিন ছিপ হাতে চেঁচাতে চেঁচাতে বাড়ি ফেরে হারাধনের দুই পুত্র। "আব্বাগোওওওও! ডুমন ভাইকে মাছে টেনে নিয়ে গেছে!" হারাধনের বুক ধ্বক করে ওঠে। সে গামছা পরে ছুটে যায় পুকুরের দিকে। ঝাঁপিয়ে পড়ে। লাভ হয় না। পুকুর থেকে উঠে আসে মৃত ডুমনের দেহ। এস আই রজ্জব আলি গলা খাঁকরে দুই ছেলেকে বলে, "অ্যাই তোরা ঠিকমতো বল তো হচ্ছিলো কী? এই পুকুরে কি তিমি মাছ আছে নাকি যে ডুমনকে টেনে নিয়ে যাবে?" দুই ভাই কাঁদতে কাঁদতে বলে, তারা তিনজন ছিপ ফেলেছিলো রুই মাছের আশায়। কারো ফাতনাই নড়ছিলো না, কেবল ডুমনেরটা ছাড়া। সে টান দিতে যেয়ে দেখে সুতলি টানটান হয়ে আছে। তারপর হঠাৎ মাছটা উল্টো টান মারতেই ডুমন পানিতে পড়ে গেলো। কিছুক্ষণ দাপাদাপি হলো। কিন্তু আর উঠে এলো না। হারাধনের মর্সিয়ায় বাতাস ভারি হয়ে উঠলো। ডুমনের একটি বাঁধাই করা ছবি উঠলো ঘরের দেয়ালে। একদিন হারাধনের ছোটো ছেলে পুমন এসে কাঁদতে কাঁদতে বললো, "আব্বা গোওওওওও! নুমন ভাইকে সাপে কামড় দিয়েছে!" হারাধন একটা গামছা হাতে ছুটে গেলো। বাড়ির পেছনে ঝোপের কাছে পড়ে আছে নুমন। তার পায়ে সাপের কামড়ের দাগ। হারাধন কষে বাঁধন দিলো গামছা দিয়ে, তারপর ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটলো। একটা সিয়েনজিকে ডাক দিলো, "অ্যাই সিয়েনজি!" এক সিয়েনজিওয়ালা এসে থামলো। "কই যাবেন?" হারাধন বললো, "হাসপাতাল!" সাথে সাথে সিয়েনজিওয়ালা সিয়েনজি টান মেরে চলে গেলো। হারাধন হাঁ করে সেদিকে তাকিয়ে আরেকটা সিয়েনজিকে ডাক দিলো, "অ্যাই সিয়েনজি!" এক সিয়েনজিওয়ালা এসে থামলো। "কই যাবেন?" হারাধন বললো, "হাসপাতাল চলো! মিটারে যা আসবে তার ডাবল দিবো! আমার ছেলেটাকে বাঁচাও! জলদি ...!" সিয়েনজিওয়ালা সিয়েনজি টান মেরে চলে গেলো। যাবার আগে বলে গেলো, হাসপাতালের ওদিকে ফিরতি খ্যাপ পাওয়া যায় না। তাই সে যাবে না। এবার হারাধন ছেলেকে মাটিতে নামিয়ে রেখে ঘর থেকে তার সেই দাদার আমলের পয়েন্ট থ্রি টু মাউজার রাইফেল আর টোটার বাক্স নিয়ে আবার ছুটে এলো হাঁপাতে হাঁপাতে। একটা সিয়েনজিকে ডাক দিলো, "অ্যাই সিয়েনজি!" এক সিয়েনজিওয়ালা এসে থামলো। "কই যাবেন?" হারাধন এবার রাইফেল বাগিয়ে বললো, "(ছাপার অযোগ্য), (ছাপার অযোগ্য)! যেইখানে মন চায় সেইখানে যামু! যাবি?" হাসপাতালে এক হাতে ছেলে আর অন্য হাতে রাইফেল নিয়ে ঢুকলো হারাধন। কিন্তু ডাক্তার নুমনকে মৃত ঘোষণা করলেন। গম্ভীর মুখে বললেন, "আই অ্যাম সরি! হি জাস্ট পাসড অ্যাওয়ে!" একমাত্র জীবিত ছেলে পুমনকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরলো হারাধন। দেয়ালে নুমনের বাঁধাই করা ছবিও উঠে গেলো। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হারাধন আর হারাধনের বউ বাড়িতে পুমনকে খুঁজে পেলো না। সে ঘরে নাই। এক পড়শি জানালো, পুমন ভেউ ভেউ করে কাঁদতে কাঁদতে বনের দিকে চলে গেছে। হারাধন থানায় গিয়ে আবার ডায়রি করলো। এস আই রজ্জব আলি বললো, ২৪ ঘন্টা না গেলে কি কাউকে নিখোঁজ বলা যায়? হারাধন বললো, "অফিসার! আমার একটা ছেলে নিখোঁজ, আটটা ছেলে অপঘাতে মারা গেছে! একমাত্র জীবিত ছেলেটা বনে চলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে! আপনি তারপরও ২৪ ঘন্টার অপেক্ষায় আছেন?" রজ্জব আলি কী ভেবে ফোর্স নিয়ে বনে গেলো। কিন্তু না। পুমনকে পাওয়া গেলো না। খুমনের মতো সেও নিখোঁজ হয়ে গেলো। হারাধন গোধুলির বাড়িতে সেদিন আর কোনো ছেলে পাত পেড়ে ভাত খেলো না। কারণ রইলো না আর কেউ। একদিন বিকেলে হারাধন শূন্য বাড়িতে ফিরে চমকে উঠলো! তার বৈঠকখানায় বসে এক ভীষণদর্শন লোক। তার ইয়া বড় মোচ, হাতে একটি চুরুট, চোখে ক্রুর দৃষ্টি। পাশে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা এক লোক। হারাধন বললো, "আপনারা কারা? কী চান?" পাঠক, এতক্ষণে বুঝে ফেলেছেন চুরুটঅলা লোকটা কে! পাঠিকা, আপনিও নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন পুলিশের ইউনিফর্ম পরা লোকটা কে? ঠিকই বুঝেছেন। এরা আর কেউ নয়, উপমহাদেশের সবচেয়ে হিট রহস্যভেদী গোয়েন্দা ঝাকানাকা আর তাঁর বুদ্ধু অ্যাসিস্ট্যান্ট দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি! গোয়েন্দা ঝাকানাকা বললেন, "তা হারাধন গোধুলি, আপনি কেমন আছেন?" হারাধন বললো, "আপনি কী চান এখানে?" গোয়েন্দা ঝাকানাকা বললেন, "আমি চাই কিছু প্রশ্নের উত্তর!" হারাধন বললো, "কী প্রশ্ন? দেখুন আমি এখন খুব আপসেট, আমার দশটা ছেলের মধ্যে দুজন হারিয়ে গেছে, আর আটজন অপঘাতে মারা গেছে! এখন এসব প্রশ্নোত্তরের সময় আমার নেই!" গোয়েন্দা ঝাকানাকা ক্রুর হেসে বললেন, "বটে?" তারপর সামনে ঝুঁকে পড়ে বললেন, "আপনি কি জানেন, গুমনের বুকে যে কুঠারটা বিঁধে ছিলো, সেটার হাতলে কার হাতের ছাপ পাওয়া গেছে?" হারাধনের শরীর শক্ত হয়ে এলো। সে ফিসফিস করে বললো, "কার?" গোয়েন্দা ঝাকানাকা ক্রুর হাসি মুখে রেখেই বললেন, "দুই সেট হাতের ছাপ পাওয়া গেছে মিস্টার হারাধন গোধুলি। তার মধ্যে এক সেট গুমনের। অন্য সেট কার, সেটা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।" হারাধনের গলা কেঁপে ওঠে, "কী বলছেন আপনি?" ঝাকানাকা বললেন, "বলছি যে গুমনের মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা নয়। কেউ একজন তার বুকে কুঠারের কোপ মারে। তার মৃত্যু হয়। গুমন খুন হয়েছে!" হারাধন একটা চেয়ারে বসে পড়ে। গোয়েন্দা ঝাকানাকা বললেন, "বাবুলের হোটেলে গত পঁচিশ বছরে কেউ ভাত খেয়ে ফুড পয়জনিঙে আক্রান্ত হয়নি। ঙুমন হয়েছে। কারণ, "চুরুটের ধোঁয়া ছাড়েন তিনি, "কেউ একজন শক্তিশালী বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলো ঙুমনের ভাতের থালায়!" হারাধন বুক চেপে ধরে। ঝাকানাকা বলে যান, "চুমন ভালো সাঁতারু ছিলো। আমি তার কলেজের প্রিনসিপালের সাথে কথা বলেছি। চুমন কলেজের রানার আপ সাঁতারু ছিলো। কিন্তু সে মারা গেলো ডুবে। কীভাবে? ... সুরতহাল রিপোর্টে তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। কেউ তাকে মাথায় আঘাত করে পানিতে ফেলে দিয়েছে।" হারাধন পানি খায় ঢকঢক করে। ঝাকানাকা বলেন, "জুমন তো ছেলেবেলা থেকেই গাছে চড়ছে, হঠাৎ সে গাছ থেকে পড়বে কেন? গাছ থেকে পড়ে হাড়গোড় ভেঙে মারা গেলো জুমন, পুলিশ কিন্তু ঠিকই তার মাথার তালুতে আলুর সাইজের একটা আঁব খুঁজে পেলো! জুমনকে কে বা কাহারা মাথায় আঘাত করে গাছ থেকে ফেলে দিয়েছে!" হারাধন চোখের পানি মোছে। ঝাকানাকা বলেন, "ঝুমন কেন বাঘের পেটে গেলো? জঙ্গলে তো তারা যায় না? বনের ধারে কেন গেলো ঝুমন? এমন কি হতে পারে না, কেউ একজন জেনে শুনে তাকে বাঘের মুখে পাঠিয়েছে?" হারাধন মাটিতে গড়াগড়ি খায় আর কাঁদে। ঝাকানাকা বলেন, "টুমনের নাচের রিহার্সাল চলছিলো। পিছলা খেয়ে পড়ে সে মারাত্মক আহত হয়। কিন্তু সে কেন ওভাবে আছাড় খাবে? রিহার্সাল রুমের মেঝেতে তেল পাওয়া গেছে। কে বা কাহারা তেল ঢেলে রেখেছিলো তার রিহার্সালের ফ্লোরে।" হারাধন আবার উঠে বসে চেয়ারে। ঝাকানাকা বলেই চলেন, "ডুমন মরলো রুই মাছের টান খেয়ে? কিন্তু আপনার পুকুরে তো রুই মাছ নেই! কয়েকটা তেলাপিয়া আছে শুধু। আর রুই মাছের টানে ডুমন পানিতে পড়লেও তো উঠে আসতে সমস্যা হবার কথা নয়, কারণ তার কাছেই যে তার ভাই চুমন হেরে গিয়ে রানার আপ হয়েছিলো! চ্যাম্পিয়ান তো সে-ই ছিলো!" হারাধন হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে ছেলের জন্য। ঝাকানাকা ঝুঁকে পড়ে বললেন, "নুমন মরলো সাপের কামড় খেয়ে। এই এলাকায় সাপখোপের উপদ্রব নেই বলেই জানিয়েছে পাড়াপড়শিরা। তবে কি কেউ এনে সাপ ছেড়ে দিয়েছিলো?" হারাধন কাঁদতে কাঁদতে বলে, "আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না! আমাকে সব খুলে বলুন!" ঝাকানাকা চুরুটে টান দিয়ে বলেন, "আপনার বড় ছেলে খুমনের কোনো খোঁজ পেলেন?" হারাধন চোখ মোছে, বলে, "না! কিন্তু ... হঠাৎ তার কথা কেন?" ঝাকানাকা বললেন, "এমন কি হতে পারে, যে এসব মৃত্যুর পেছনে খুমনের হাত আছে?" হারাধন হঠাৎ সটান উঠে দাঁড়িয়ে হুঙ্কার দেয়, "তবে রে খুমন, (ছাপার অযোগ্য)! তোকে যদি বটি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো না করি ...!" ঝাকানাকা এবার বলেন, "বসুন জনাব হারাধন গোধুলি। এত উত্তেজিত হলে কি চলে? তা, এমন কি হতে পারে না, যে খুমন এসে গুমনকে কুড়ালের কোপ মেরে, ঙুমনের ভাতে বিষ মিশিয়ে, চুমনকে মাথায় বাড়ি মেরে পুকুরে ফেলে, জুমনকে গাছ থেকে মাথায় ঘা মেরে ফেলে দিয়ে, ঝুমনকে বাঘের মুখে পাঠিয়ে, টুমনের নাচের ফ্লোরে তেল ঢেলে, ডুমনকে পুকুরের নিচ থেকে সুতলি ধরে টান দিয়ে টেনে নিয়ে চুবিয়ে আর নুমনকে সাপ ছেড়ে দিয়ে খুন করেছে? পুমনকে হিসেবে ধরলাম না, সে ছোটো মানুষ।" হারাধন গোধুলির চোখ টকটকে লাল হয়ে ওঠে। সে ফিসফিস করে বলে, "কোথায় সেই পাপিষ্ঠ গোয়েন্দা সাহেব? আমি তাকে গুলি করে মারবো!" ঝাকানাকা হঠাৎ যেন কষে চাবুক মারেন হারাধনের মুখে। "মেসার্স গুলবাহার এন্টারপ্রাইজে আপনার আনাগোনা কেমন জনাব হারাধন?" হারাধন চমকে ওঠে। "ক্কেন?" ঝাকানাকা বলেন, "আজ থেকে আট মাস আগে, আপনার বড় ছেলে খুমন নিখোঁজ হবার আগের দিন আপনি মেসার্স গুলবাহার এন্টারপ্রাইজ থেকে দশটি বাঁধানো ছবি সংগ্রহ করেছিলেন! করেননি?" হারাধন থতমত খেয়ে বলে, "হ্যাঁ ... মানে ... করেছিলাম তো!" ঝাকানাকা বলেন, "একসাথে দশ ছেলের ছবি বাঁধাই করে এনেছিলেন কেন জনাব হারাধন গোধুলি?" হারাধন রুমাল বার করে কাঁপা হাতে মুখ মোছে। "না ... মানে ... ভাবলাম, একসাথে সবার ছবি টাঙাই ...!" ঝাকানাকা হাসেন। ক্রুর হাসি। "না। এক সাথে নয়, এক এক করে টাঙানোর জন্য! কারণ আপনি প্ল্যান করেছিলেন, আপনার ছেলেদের এক এক করে খুন করবেন আর দেয়ালে ছবি টাঙাবেন!" হারাধন ঢোঁক গেলে। ঝাকানাকা বলেন, "গুমনকে কুড়ালের কোপ আপনিই মেরেছিলেন। আপনার বাসায় আপনার ব্যবহৃত রাইফেল থেকে হাতের ছাপ সংগ্রহ করেছেন দারোগা কিংকু চৌধারি, সেটা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে কুড়ালে পাওয়া হাতের ছাপের সাথে! খুব কাঁচা হাতের কাজ জনাব হারাধন। চুপি চুপি গিয়ে যে ছেলেটাকে একলা পেয়েছেন, হাত থেকে কুড়াল টেনে নিয়ে কোপ বসিয়ে দিয়েছিলেন! ভেবেছিলেন কে সন্দেহ করবে আপনাকে!" হারাধনের হাত কাঁপে। ঝাকানাকা বলেন, "ঙুমনের ভাতের পাতে বিষ মেশাতেও সমস্যা হয়নি আপনার। সেদিন হোটেলে আপনিও গিয়েছিলেন, তবে বাবুর্চিখানার দরজা দিয়ে। নয় প্লেট ভাতের অর্ডার যখন এলো, তখন তার একটি প্লেটে কায়দা করে মিশিয়ে দিলেন দারুণ এক বিষ! সব ক'টা প্লেটে দিলেন না সন্দেহ আর শোরগোলের ভয়ে!" হারাধন পানি খায় জগ থেকে গ্লাসে ঢেলে। ঝাকানাকা বলেন, "চুমনের মাথায় ডান্ডা দিয়ে বাড়ি মেরে তাকে পুকুরে ঠেলে দেন ঝোপের আড়াল থেকে!" হারাধন নড়েচড়ে বসে। ঝাকানাকা বলেন, "আপনার রাইফেলে রাবার বুলেট পুরে গুলি করেন জুমনের মাথায়। সে অজ্ঞান হয়ে গাছ থেকে পড়ে মরে! মেসার্স ছালছাবিল এন্টারপ্রাইজ থেকে কেনা আপনার এক বাক্স রাবার বুলেটের রসিদের কপি দেখতে চান?" একটা কাগজ বার করে দেখান তিনি। তাতে লেখা, মেসার্স ছালছাবিল এনটারপ্রাইয, এখানে সকল ক্যালিবারের রাবারের গুলি বিক্রয় করা হয়। হারাধন কিছু বলে না। ঝাকানাকা বলেন, "ভোরবেলা জঙ্গল থেকে জামরুল পেড়ে আনতে পাঠান ঝুমনকে! সে বাঘের মুখে পড়ে মরে!" হারাধন চুপ। ঝাকানাকা বলে চলেন, "টুমনের নাচের রিহার্সাল রুমে অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে তেল ঢেলে আসেন। তেলের শিশিটা ফেলে আসেন তার কলেজের পাশের ডাস্টবিনে। জ্বি, উদ্ধার করা হয়েছে সেটা, হাতের ছাপও মিলেছে!" হারাধন মাথা নিচু করে সব কথা শোনে। ঝাকানাকা বলেন, "ডুমনকে মোটেও টেনে পুকুরে নেয়নি কেউ। সেই পুরানো কৌশল, রাবার বুলেট। নুমন আর পুমন ভেবেছে মাছের টানে ডুমন গিয়ে পুকুরে পড়েছে, কিন্তু আসলে সে অজ্ঞান হয়ে হাবড়ে পড়েছে পুকুরের জলে। তার মাথার পেছনেও আঁব খুঁজে পেয়েছে পুলিশের ডাক্তার!" হারাধন নিশ্চুপ হয়ে থাকে। ঝাকানাকা বলেন, "নুমনকে সাপে কামড়েছে বটে, কিন্তু সাপটা ফট করে কোত্থেকে এলো, আর কোথায়ই বা চলে গেলো? সাপ নিয়ে আপনার কোনো টেনশন দেখা যায়নি কেন? কারণ আপনি নিজে সাপটা একবেলার জন্যে ভাড়া করে এনেছিলেন মেসার্স নাগিনা এনটারপ্রাইজ থেকে! এই যে তার রিসিট!" একটা কাগজ এগিয়ে দেন তিনি, তাতে লেখা, মেসার্স নাগিনা এন্টারপ্রাইজ, এখানে সুলভ মূল্যে বিষাক্ত সাপ ভাড়া দেয়া হয়, বিফলে মূল্য ফেরত। হারাধন ধরা গলায় বলে, "কিন্তু পুমন? আমার আদরের ছেলে ...?" ঝাকানাকা গর্জে ওঠেন, "খবরদার ন্যাকামো করবেন না! সেদিন পুমন ভোরে উঠে আপনাকে তার বাঁধাই করা ছবি ঝাড়পোঁছ করতে দেখেই বুঝে ফেলে, কী ঘটেছে আর কী ঘটতে যাচ্ছে। তাই সে বনবাসী হয়! পথে এস আই রজ্জব আলি তাকে দেখে বাসায় নিয়ে যায়, লুকিয়ে রাখে!" হারাধন ভেঙে পড়ে। মুখ ঢেকে হু হু করে কাঁদে। ঝাকানাকার মুখটা নরম হয়ে আসে। তিনি বলেন, "কেউ এভাবে নিজের সন্তানদের হত্যা করতে পারে?" হারাধন মাথা নাড়ে। পারে না। কিংকু চৌধারি এবার মুখ খোলেন। "কিন্তু স্যার, আপনিই তো বললেন, যে মিস্টার হারাধন গোধুলিই সব মার্ডার করেছে নিজ হাতে!" ঝাকানাকা মাথা নাড়েন। "হ্যাঁ, সেটাও সত্যি!" কিংকু চৌধারি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে, "তাহলে?" ঝাকানাকা বলেন, "দুটোই সত্যি। কেউ এভাবে নিজের সন্তানদের হত্যা করতে পারে না। আবার হারাধন গোধুলিই এই আটটি খুন করেছেন। তিনি একজন সিরিয়াল কিলার। তাঁকে আশকারা দিলে তিনি একজন প্যারালেল কিলারের পরিণত হতে পারেন। হ্যান্ডকাফ পরান!" কিংকু চৌধারি বলেন, "কিন্তু ...!" ঝাকানাকা বলেন, "কিন্তুর উত্তর হচ্ছে, এরা কেউ জনাব হারাধন গোধুলির সন্তান নয়!" কিংকু চৌধারি চমকে ওঠেন। হারাধন গোধুলির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। ঝাকানাকা বলেন, "এরা জনাব হারাধনের এককালের প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু জনাব খাড়াধন জলদস্যুর সন্তান!" কিংকু চৌধারি আবারও চমকে ওঠেন। হারাধন অস্ফূটে বলেন, "কিন্তু ... আপনি কীভাবে জানলেন?" ঝাকানাকা বললেন, "আপনার ঘরে প্রথম যখন গোপনে ঢুকি, তখন আপনার দেয়ালে টাঙানো এই মাসুম বাচ্চাগুলোর ছবি দেখেই যা বোঝার বুঝে ফেলি আমি। আপনাকে দূর থেকে বাইনোক্যুলার দিয়ে দেখেছি, দিব্যি ফর্সা একটা লোক আপনি। আপনার স্ত্রীও রীতিমতো দুধে আলতা গায়ের রং। আর এই ছোকরাগুলো সব কেলেকিষ্টি! ব্যস, দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ফেললাম। খোঁজ নিলাম আপনি কবে কোথায় কাদের সাথে ছিলেন। এরপর একটু টোকা দিতেই ছবি বেরিয়ে পড়লো। পঞ্চাশ জন লোকের মধ্যে থেকে এই ছেলের বাবাকে খুঁজে পেতে কোনো সমস্যাই হয়নি আমার। ওরকম কেলেমানিক কি আর গণ্ডায় গণ্ডায় থাকে?" একটা ছবি বাড়িয়ে দেন তিনি। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হারাধন গোধুলি আর এক লোক, যমদূতের মতো কালো তার চেহারা। ছবির ওপর সীল মারা, মেসার্স ফ্লিকার ডট কম। ছবির উল্টোপিঠে লেখা, হারাধন গোধুলি ও খাড়াধন জলদস্যু। হারাধন মুখ ঢাকে। কিংকু চৌধারি বলেন, "কিন্তু কেন ... মানে কীভাবে ...?" ঝাকানাকা বললেন, "আপনার স্ত্রীকে আঘাত দিতে চেয়েছিলেন তো? দেয়ালে দশটি মৃত ছেলের ছবি টাঙিয়ে তাকে সর্বক্ষণ যন্ত্রণা দিতে চেয়েছিলেন?" হারাধন মাথা নাড়ে। ঝাকানাকা বললেন, "পারলেন না শেষ পর্যন্ত। এখন কী সাজা হয় কে জানে? মনে হয় ফাঁসি হবে। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ডেঁপোগুলো এসে দিগদারি করলে হয়তো মৃত্যুদণ্ড মকুব হোলেও হোতে পারে। কিংবা অপমানস রায়চৌধুরী আর তার সাঙ্গপাঙ্গকে পয়সা খিলিয়ে দেখুন, একটা হেজিমোনি তৈরি করে আপনাকে জানে বাঁচিয়ে দিতে পারেন কি না তেনারা!" কিংকু চৌধারি বললেন, "কিন্তু স্যার ... খুমনের কী হলো?" ঝাকানাকা বললেন, "শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বদমাশ ছোকরাটা এক সুন্দরী মেয়ের হাত ধরে ভেগেছে। বাপের মতোই লম্পট। টাকাপয়সা শেষ হয়ে এলেই সুড়সুড় করে ঘরে ফিরবে।" হারাধন ব্যাকুল গলায় বললেন, "কিন্তু এই গল্পে বদরু খাঁ নেই কেন? ঝাকানাকার গল্প বদরু খাঁকে ছাড়াই শেষ হবে?" ঝাকানাকা বললেন, "আই অ্যাম সরি। দ্য স্টোরি জাস্ট পাসড অ্যাওয়ে! . . . গোয়েন্দা ঝাকানাকা! | Promote Your Page Too | false |
hm | বই নিয়ে ০১ বইকে ঘাসপাতার সাথে তুলনা করা ঠিক হবে না। কিন্তু বইয়ের পৃথিবীর একটা মডেল যদি আমরা করি, তার সাথে ঘাসপাতার মডেলের অনেক সাদৃশ্য থাকবে। পাঠকদের ঘাসপাতাখোর ডাকার স্পর্ধা আমার নাই। কিন্তু মডেলের দুনিয়ায় বইখোর আর ঘাসপাতাখোরের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। একটু ভেবে দেখি আসুন। পৃথিবীতে পুরোপুরি বা আংশিক তৃণভোজী প্রাণীর সংখ্যা অনেক, এবং জীবজগতের বিচিত্র সব "নিশ" তারা দখল করে রেখেছে। গরু আর জেব্রা ঘাস খায়, টাপির আর জিরাফ পাতা খায়, বাঁদর পাতা আর ফল খায়, জলহস্তী পানির নিচের শ্যাওলা থেকে শুরু করে ঘাসপাতা সব খায়, হাতি ঘাস পাতা ছালবাকল সব খেয়ে ফেলে, শামুক শ্যাওলা খায়, ডুগং সামুদ্রিক ঘাস খায়, মাজরা পোকা ধানপাতা খায়, পাণ্ডা শুধু বাঁশ খায়। তেমনি কিছু পাঠক একটু সহজপাচ্য বই পড়েন, কিছু পাঠক অতি উঁচু দরের বই পড়েন, কিছু পাঠক চটি পড়েন, কিছু পাঠক শুধু স্কুলপাঠ্য বই পড়েন, কিছু পাঠক সবই পড়েন। আবার ধরুন, কোথাও যদি প্রচুর ঘাস থাকে, আর পাতা থাকে নাগালের বাইরে, সেখানে ঘাসখোরের প্রাচুর্য থাকবে, আর পাতাখোরেরা মারা পড়বে। যে শুধু শ্যাওলা খায়, সে ঘাস বা পাতার কদর করবে না। পাণ্ডাকে মেরেধরেও বাঁশ ভিন্ন অপর কিছু খাওয়ানো যায় না। পাতা দিয়ে দুনিয়া সয়লাব করে লাভ নেই যদি দুনিয়া বোঝাই শুধু ঘাসখোর থাকে। পাঠকের বিভিন্ন পাঠরুচির একটা মডেল বোঝাতে গিয়েই এসব বললাম, কেউ নিজেকে ঘাসখোর বা বাঁশখোর ভেবে মনক্ষুণ্ণ হবেন না। ঘাস হোক আর বাঁশ, পুষ্টি না থাকলে তো সেসব কেউ খায় না। সব বইতেই কিছু না কিছু পুষ্টি আছে, মকসুদুল মুমিন থেকে শুরু করে ইউলিসিস। যদি হুট করে ঘাসবনে ঘাসের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়, তাহলে কী হতে পারে, আসুন এবার ভেবে দেখি। ঘাসখোরের সংখ্যা স্থির থাকলে মাথাপিছু দ্বিগুণ ঘাস খাওয়ার একটা উপায় হয়। অথবা যেসব ঘাসখোর আগে ঘাসবনের কাছে ঘেঁষতে পারতো না, তারাও গুটি গুটি পায়ে এসে দুই গাল খেয়ে যেতে পারবে। একইভাবে, বইয়ের দাম যদি কমিয়ে অর্ধেক করা হয়, আগে যে পাঠক একটা বই কিনতে পারতেন, তিনি কিনতে পারবেন দু'টি। আমাদের দেশে বইয়ের দাম অনেক। জাফর ইকবাল স্যারকেই উদাহরণ হিসেবে ধরি। একটু আগে একটা ওয়েবসাইটে দেখলাম, মুহম্মদ জাফর ইকবালের কেপলার টুটুবি বইটির মূল্য ২০০ টাকা। মেলায় হয়তো সেটা ১৫০ বা ১৬০ টাকায় বিক্রি হবে। যতদূর মনে পড়ে, জাফর ইকবাল স্যারের বইতে ইলাসট্রেশন থাকে না (পুরনো বইগুলো ব্যতিক্রম, হাত কাটা রবিন বা টি রেক্সের সন্ধানেতে চমৎকার ইলাসট্রেশন ছিলো)। বাংলাদেশে লোকে যদিও মোবাইলে কথা বলে কিংবা সিয়েনজিতে চড়ে এক দফাতেই এরকম টাকা খরচ করে ফেলে, কিন্তু যারা বই কিনে পড়ে, তারা অনেকেই বইয়ের জন্যে অনেক কষ্টেসৃষ্টে একটা বাজেট করে। তাদের কাছে দেড়শো টাকা অনেক টাকা। জাফর ইকবাল স্যারের বই যদি চাররঙা হতো, বা রঙিন ইলাসট্রেশন থাকতো, তাহলে এমন একটা দামের পেছনে যুক্তি খুঁজে পাওয়া যেতো। কিন্তু বিনা অলঙ্করণে বা সাদাকালো অলঙ্করণে এই বইগুলো এতো দাম দিয়ে কেন বিক্রি হয়? উত্তরটা আমাদের জানা। স্যারের বই ছাপা হয় বেশ উন্নতমানের ঝকঝকে মোটা অফসেট কাগজে। অফসেট কাগজ বেশ দামী জিনিস, বইমেলার সিজন কাছে চলে এলে এর দাম স্বাভাবিকের চেয়ে আরো বাড়ে। অফসেটের বদলে নিউজপ্রিন্টে ছাপালে, হার্ডকাভারের বদলে পেপারব্যাক করলে অনেক কম দাম পড়তো। নিচে প্রেস থেকে গতকাল সংগ্রহ করা কাগজের মূল্য একটা স্তম্ভলেখে দেখালাম, তুলনা করে দেখুন। জার্মানিতে লোকে প্রচুর বই পড়ে। বাসে বা ট্রেনে চড়ে অনেক লোক, তাদের অনেকেই একটা বই খুলে বসে। এখন অবশ্য নেটবুক খুলে সিনেমাও দ্যাখে অনেকে, কিন্তু বই পড়ুয়াদের সংখ্যা কম নয়। জার্মানিতে বইয়ের দাম খুব কম নয়, স্টেশনের স্টল থেকে কিনলে বেস্ট সেলারগুলো আট থেকে পনেরো ইউরোর মধ্যে পড়ে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেনজায় তিন থেকে চার দিন দুপুরের খাবার আর কফির দামের সমান, সে হিসেবে খুব বেশিও নয়। হার্ডকাভার বই লোকে চলার পথে সঙ্গে রাখে না, সেগুলো অবধারিত ভাবেই রেফারেন্স বই। এই বইগুলো সবই পেপারব্যাক, এবং হ্যাঁ, নিউজপ্রিন্টে ছাপা। আমাদের দেশে এক বসায় শেষ করে ফেলার মতো ৮০ থেকে ১২৮ পাতার বইগুলো কেন আমরা এতো প্রকাণ্ড খরুচে অফসেট কাগজ আর হার্ডকাভারে করি? কেন এতো দামী বানিয়ে ফেলি বইগুলোকে? আমি কয়েকজন প্রকাশকের সাথে কথা বলে দেখেছি এ ব্যাপারে। একজন জানিয়েছেন, তাঁর প্রেসটি নিউজপ্রিন্টের মতো বাজে কাগজ নিয়ে ডিল করতে পারে না, জাম হয়ে যায়, ধুলা জমে, ইত্যাদি। আরেকজন বলেছেন, নিউজপ্রিন্টে ছাপা বইকে পাঠক কদর করে না। তাছাড়া পেপারব্যাকের প্রতি নাকি একটা সামগ্রিক তাচ্ছিল্য তৈরি হয়ে গেছে দেশের পাঠক সমাজে। দামী অফসেট কাগজে টাইটেনিয়ামকে লজ্জা দেয়ার মতো হার্ডকাভারে না ছাপলে সেই বই লোকে ছুঁয়েও দেখবে না। দামের প্রসঙ্গ উঠলে প্রকাশকরা বলেছেন, বইমেলাতে যাদের বই সবচেয়ে বেশি চলে, সেই হুমায়ূন আহমেদ জাফর ইকবালদের বইয়ের দাম কোনো সমস্যা না, পাঠক তাদের বই কিনবেই। ভাত বা পানির মতো অনেকটা, দাম যতই হোক, লোকে কিনবেই, দরকার হলে অন্য কিছু না কিনে টাকা বাঁচিয়ে এসব কিনবে। একজন বলেছেন, নিউজপ্রিন্টে বই করবো কেন, ওটা তো টিকবেই না, দুইদিনেই ছিঁড়ে শেষ হয়ে যাবে। শেষ যুক্তিটা দিয়েই শুরু করি। ট্রেনে চড়ে স্লোভাকিয়া যাওয়ার পথে স্টেশন থেকে এগারো ইউরো দিয়ে কেনা ৪৬৪ পাতার টেরি প্র্যাচেটের একটা বই পড়তে পড়তে দীর্ঘ একাকী যাত্রা কাটিয়ে দিয়েছি, বইটা এখনও আমার শেলফে আছে, অক্ষত এবং প্রায় নতুনের মতো কণ্ডিশনে। এ গেলো নিকট অতীতের কথা। দূর অতীতের দিকে যদি তাকাই, দেখতে পাই আমার বইপাগল বড় ভাই মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে ক্যালেণ্ডারের মোটা কাগজ যত্ন করে কেটে সেটার সাদা দিকটা দিয়ে বইতে মলাট লাগাচ্ছেন, আমি তাঁকে জ্বালাতন করছি একটু পর পর গিয়ে। আহামরি কোনো বই ছিলো না সেগুলো, সেবা প্রকাশনীর বই। বড় ভাইয়া প্রাণান্তকর কষ্ট করে বইগুলো কিনতো, আর সন্তানের মতো যত্ন করে আগলে রাখতো। নিরানব্বুই সালে একবার বাসা পাল্টানোর সময় প্রায় নতুনের মতো রয়ে যাওয়া সেবা প্রকাশনীর ঐ বইগুলোর অনেকগুলো শেলফে রাখার জায়গার অভাবে আমি আর ভাইয়া ঘাড়ে করে নীলক্ষেতে নিয়ে পানির দামে বিক্রি করে দিয়ে এসেছিলাম। আমাদের বাসায় এখনও বুকশেলফের কুলীন বইয়ের পেছনের সারিতে সেবা প্রকাশনীর কিছু নিউজপ্রিন্টের বই রয়ে গেছে, তাতে পোকা ধরেনি, বইগুলো ছেঁড়েনি, জলীয় বাষ্পের কারণে ফেঁপেও যায়নি। যত্ন করলে বই নষ্ট হবে কেন? বাংলাদেশে টেক্সটবুক বোর্ড থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি নিউজপ্রিন্ট বই দেয়া হয় গ্রামের বাচ্চাদের, তারা সেগুলো ব্যবহার করে আবার ফিরিয়ে দেয় স্কুলকে, পরের বছর অন্যের ব্যবহারের জন্যে। কত ঝড়বাদলের মধ্যে তারা ঐ বই বুকে চেপে স্কুলে যায়, কয়টা বই নষ্ট হয়? আমার কাছে মনে হয়, হুমায়ূন আহমেদ বা জাফর ইকবালের বই যাঁরা প্রকাশ করেন, তাঁরা ভালোমতোই জানেন, বহু শিশুকিশোর সারা বছর তাদের টিফিনের পয়সা জমিয়ে এই বইগুলো কেনে। আমি সারাজীবনই বড় ভাইয়ার ঘাড় ভেঙে বই পড়েছি, কিন্তু নিজেও কিছু বই বহু কষ্টে টাকা জমিয়ে কিনেছি। প্রত্যেকদিন রিকশাভাড়া হিসেবে দশ টাকা অ্যালাওয়েন্স পেতাম, সাত বা আটটাকা খরচ হতো, ক্লাস এইটে বৃত্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত বাকি দুই টাকা ছিলো আমার একমাত্র আয়। ঐ দুই টাকা আমি আইসক্রিম না খেয়ে, চানাচুর না কিনে, চটপটির গাড়ির সামনে শ্বাস বন্ধ করে হেঁটে গিয়ে জমাতাম। সেবা প্রকাশনীর বইগুলোর দাম ছিলো তেরো থেকে আঠারো টাকার মধ্যে, সারা মাস কৃচ্ছ্রতাসাধনের পর একটা বই কিনতে পারতাম। আমার বন্ধুরাও বই কিনতো বলে মাসে একাধিক নতুন বই পড়ার সুযোগ পেতাম, বছরে একবার বড় ভাইয়া ছুটিতে এক ব্যাগভর্তি বই নিয়ে হাজির হওয়ার আগে ওভাবেই আমাকে নতুন বই পড়তে হয়েছে। ভাইয়ার আনা বইগুলোর পেছনেও একই রকম কষ্টকর সঞ্চয়ের গল্প আছে, আমি জানি। সেই বইগুলো ছিলো দামী কাগজে, শক্ত বাঁধাইয়ের, কাজেই ভাইয়াকে আমার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট করতে হতো। ক্লাস নাইনে উঠে বৃত্তির টাকা হাতে পাওয়ার পর সিলেটে একবার বইমেলা হলো, আমি নিজের টাকা দিয়ে কিনেছিলাম টি-রেক্সের সন্ধানে, অনেক দাম দিয়ে। জাফর ইকবাল স্যারের প্রকাশকেরা যদি আমার মতো ক্রেতাদের সাথে কথা বলতেন, তারা হয়তো বইগুলো খামাখা দামী অফসেট-হার্ডকাভারে না ছাপিয়ে পেপারব্যাকই বের করতেন। জাফর ইকবাল পাথরের ট্যাবলেটে হাতুড়ি বাটালি দিয়ে খোদাই করে লিখলেও তাঁর পাঠক সেই বই কিনবে। তারপরও কেন তাঁর প্রকাশক ওরকম দামী কাগজে ছাপান বইগুলো? একটা কারণ হতে পারে, তাঁরা লাভের সর্বোচ্চীকরণ করতে চান। তিন ভাগের এক ভাগ দামে বই বিক্রি করে সমান লাভ করতে গেলে তিনগুণ বেশি বই বিক্রি করতে হবে, সেটা করতে গেলে বইমেলার বাইরে যে এগারো মাস, সেই এগারো মাস সারা দেশে সক্রিয় থাকতে হয়। সেটা না করে বইমেলায় যতটুকু লাভ করা যায়, তাঁরা করে নিতে চান। প্রকাশকের উদ্দেশ্য যা-ই হোক, হুমায়ূন আহমেদ বা জাফর ইকবালের বইয়ের দাম বেশি রাখা হলে অন্য লেখকরা সরাসরি চাপে পড়েন। যে কিশোর কষ্টেসৃষ্টে কিছু টাকা জমিয়েছে, সে জাফর ইকবাল স্যারের বইয়ের পেছনেই সেটা পুরোটা খরচ করে ফেলে বইমেলায়, তার সব বই কেনার পর ঐ কিশোরের হাতে তেমন আর টাকা থাকার কথা নয় যে সে নতুন লেখকের নতুন বই কিনে চেখে দেখবে। তাই বইমেলায় যতই বইয়ের পসরা সাজানো হোক না কেন, সেই মেলায় একেকজন ক্রেতার বাজেট সীমিত, আর সেই সীমিত বাজেটের পুরোটাই ব্যয় হয় দু'তিনজন লেখকের বইয়ের পেছনে। সঞ্চয়ী পাঠক সেই বইগুলো পেপারব্যাকে প্রকাশিত হলে তিনভাগের এক ভাগ দামে কিনতে পারতো, তার বাজেটের টাকা দিয়ে অন্য কিছু বই কিনতে পারতো হয়তো। সেটা আর ঘটে না। আমি জানি না লেখকরা এই ব্যাপারগুলো নিয়ে মাথা ঘামান কি না। জাফর ইকবাল স্যার বাচ্চাদের সামনে উপস্থিত হন নানা কাজে, তিনি বরাবরই তাদের বই পড়তে উৎসাহিত করেন, কাগজে লেখালেখি করে অভিভাবকদের বলেন বাচ্চাদের বই কিনে দিতে। স্যার কি কখনো আমার মতো এক একজন ক্রেতার কথা ভেবে দেখেন, যারা টিফিন না খেয়ে পয়সা জমিয়ে তাঁর বই কিনেছে বা কেনে? কখনও স্যারকে প্রকাশকদের উদ্দেশ্যে বইয়ের দাম কমানোর বা সর্বনিম্নীকরণের আহ্বান জানিয়ে কিছু লিখতে দেখিনি [কারো কাছে লিঙ্ক থাকলে দিয়ে যেতে পারেন, আমি দেখিনি তার মানে এই নয় যে তিনি লেখেননি]। এই ব্যাপারটা নিয়ে তিনি হয়তো আদৌ চিন্তিত নন, কারণ তাঁর একটা আর্থিক স্বার্থও এর সাথে জড়িত। হুমায়ূন আহমেদ আর জাফর ইকবাল, দু'জনেই এককালে পেপারব্যাকে লিখেছেন। হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন "দেবী" আর "নিশীথিনী", জাফর ইকবাল লিখেছিলেন "প্রেত"। যখন অনেক ছোটো ছিলাম, তখন একটা পাতলা নিউজপ্রিন্টে ছাপা প্রায়চটিবই পেপারব্যাক আমার খুব প্রিয় ছিলো, সেটার নাম কপোট্রনিক সুখদুঃখ, সম্ভবত একটাই এডিশন ছিলো সেটার, জাফর ইকবাল স্যারের প্রথম বই। প্রকাশকদের কাছে অনুরোধ, আপনারা নিউজপ্রিন্টে বই ছাপান। ইয়োরোপের প্রকাশকরা যদি টমাস মান থেকে শুরু করে জে কে রাউলিঙের বই পেপারব্যাকে ছাপতে পারে, আপনারা কেন পারবেন না? নতুন লেখকদের কাছে অনুরোধ, আপনারাও প্রকাশকদের যতটুকু পারা যায় চাপ দিন। আর জাফর ইকবাল স্যারের কাছে অনুরোধ, আপনি সামনে একটা বই পেপারব্যাকে প্রকাশ করুন। অনেক লেখক-প্রকাশক চাইলেও যে ব্যাপারটা ঘটবে না, আপনি ইচ্ছা করলে সেটা ঘটতে পারে, কমদামে অনেকের কাছে বই পৌঁছে যাওয়ার ঘটনাটা আবার ঘটতে শুরু করতে পারে। নানা অজুহাতে লেখক-প্রকাশক যে চক্রে পাঠককে বন্দী করে এনেছেন, সেটা থেকে বেরিয়ে কম দামে আরো বেশি মানুষের কাছে আরো বেশি বই পৌঁছে যেতে পারে তখন। স্কুল ছুটির পর যে ছেলেটা আইসক্রিম-চটপটি-চানাচুরের প্রলোভন এড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে স্কুলগেটের কাছটা ছুটে পার হয়, সে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দেবে। আমি জানি না এর মূল্য আপনার কাছে আছে কি না, কিন্তু বিশ্বাস করতে চাই, আছে। | false |
rg | কিভাবে পালাকার নাট্যদল গঠিত হল_ কিছু সত্য কথন। পর্ব সাত। রেজা ঘটক ২০০৯ সালের জুলাই মাসে আমাকে পান্থপথের বাসা ছেড়ে দিতে হল। আমাদের পরিকল্পনা ছিল কাজী ফয়সাল, ইকতারুল ইসলাম আর আমি আগস্ট মাসে একত্রে নতুন বাসায় উঠবো। সে অনুযায়ী আমরা তিন জন মিলে ব্যাচেলর বাসা খুঁজতে লাগলাম। টোকন ঠাকুরের নাটকে তখন আমাদের সঙ্গে কাজ করতো হাবিব সরকার। হাবিব বললো, রেজা ভাই আমার ফ্লাটের দোতলায় রুম খালি আছে, ব্যাচেলর দেবে আপনি এক রুম নিয়ে নেন। হাতিরপুলের সেই বাসার তিন তলায় হাবিব থাকে। হাবিবের মাধ্যমে রুম দেখে পছন্দ হল। হাবিবকে বললাম, ১৫ তারিখ অ্যাডভান্স ভাড়া দেব। বাড়িওয়ালাকে বলে তুমি আমাদের জন্য রুমটা রাখার ব্যবস্থা করো। হাবিব বললো, ঠিক আছে ওস্তাদ। আপনারে কাছে পাইতাছি, যা কন সব হবে। আপনি উঠবেন কিনা সেইটা নিয়াই আমি টেনশান করতাছি। হাবিবকে বললাম, সত্যি সত্যিই আমি বাসা ছেড়ে দিয়েছি আর তোমার ওখানে উঠবো। তিন চার দিন পর, ফয়সালের পরামর্শে আবার একটু রুমটা দেখার জন্য হাবিবকে ফোন করলাম। ওই সময় রাজীব নূর কিছু বকেয়া টাকা দিয়েছিল, ইচ্ছে সেদিনই অ্যাডভান্স করে দেবো। হাবিব ফোন রিসিপ করে বললো, ওস্তাদ, আপনারে তো একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। ওই রুমে তো পানির কলে লাইন নাই। আপনাকে উপরে আমার বাথরুম ব্যবহার করতে হবে অথবা নিচে দারোয়ানের বাথরুম। তারপরেও আমি আর ফয়সাল আবার রুমটা দেখলাম। পানির কল আছে মাগার বাট লাইনে পানি নাই। বাড়িওয়ালার কোনো একটা ঝামেলা আছে বটে! শেষ পর্যন্ত হাবিব সরকারের ওখানে আর আমাদের ওঠা হল না। পরদিন ইকতার ফোন করে জানালো, দাদা, পালাকারের উপরে এক রুম খালি হবে। ভাড়া একটু বেশি চায়। আমি বললাম, তুই এখনই ওই রুম বুকিং দে। আর সময় নাই রুম খোঁজার। তাছাড়া নিচেই পালাকারের কার্যালয়। মগবাজার গাবতলার পালাকারের ওই কার্যালয়ের উপরে ব্যাচেলররা থাকে। কিন্তু যে রুমটি ভাড়া হবে তার জীর্ণ করুণ দশা। অন্য পাশ দিয়ে দোতলা ওঠার একটা সিড়ি ছিল। সেই সিড়ি ঘরে বিশেষ কায়দায় কাঠের পাটাতন দিয়ে ছোট্ট ওই রুম বানানো হয়েছে। দরজা খুলে আগে সবাই ওই পথে নামতো। এখন সেখানে একটি থাকার রুম। ফ্লোর আবার পূর্ব পশ্চিম অ্যাঙ্গেল করা। পশ্চিম পাশ পূর্ব পাশের চেয়ে ফুট খানেক উঁচু। সহজে সূর্যোদয় দেখার বিশেষ সুবিধা। বাটে পরে সেই রুমেই উঠলাম। ফয়সাল শাহজাহানপুরের আগের মেসেই থেকে গেল। ইকতার তখন পালাকারের কার্যালয়ের রিহার্সাল রুমেই থাকতো। ১ লা সেপ্টেম্বর ২০০৯ আমি তল্পি-তল্পাসহ সেই সিড়ি ঘরেই উঠলাম। আমার সম্বল বলতে বেশ কিছু বই। একটা জাজিম। আর একটা বুক সেলফ। শুধু জাজিমটা সেই সিড়ি ঘরে তুললাম। বইপত্র সব পালাকারে রাখলাম। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বর তিন মাস আমি সম্পূর্ণ বেকার। তিন মাস ওই সিড়ি ঘর আমার আবাস। রাজীব নূরের সঙ্গে অভিমান করে চলে এসেছি। টোকন ঠাকুরের ২৬ পর্বের ধারাবাহিক নাটক 'ফুলগুলি-ভুলগুলি' সুটিং করতে ঝিনাইদহে গিয়েছিলাম এপ্রিল মাসে। তখন থেকেই রাজীব নূরের সঙ্গে সম্পর্কের ফাঁটলের শুরু। ঠাকুরের নাটকটিও টেলিভিশন চ্যানেল থেকে অর্ধেক টাকা দেওয়ার পর আর টাকা দিল না। আমরা তিনটি সিঙ্গেল নাটকও একই সাথে করব। তাই সুটিং সিডিইল সেভাবে পরিকল্পনা করেছিলাম। চ্যানেল থেকে আমরা টাকা পেয়েছিলাম ছয় পর্বের। আমরা কাজের সুবিধার জন্য ধার করে মোট ১১ পর্বের সুটিং শেষ করে ঢাকায় ফিরলাম মে মাসে। রাজীব নূরের সঙ্গে আমার ধীরে ধীরে সম্পর্কে একটা ফাঁটল থেকেই গেলো। আমি যোগসূত্র ছেড়ে দিলাম। পাঠসূত্র ছেড়ে দিলাম। যোগসূত্র-পাঠসূত্রের মালিক রাজীব নূরকেও ছেড়ে দিলাম। কিন্তু রাজীব নূরের সঙ্গে শুধু বন্ধুত্বটা ধরে রাখলাম। জুন মাস থেকে রাজীব নূর আমাকে দিয়ে কন্ট্রাকে কাজ করান। কোনো নতুন প্রজেক্ট প্র্রপোজাল আমাকে দিয়ে লেখাতে হলে নগদ ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। নইলে নাই। আর টেকনিক্যাল রিপোর্টের জন্য ১০,০০০ টাকা। রাজীব নূর দর কষাকষিতে ওস্তাদ। আমার ট্রিটমেন্টও ভালো করেই জানেন। শেষ পর্যন্ত পিপি'র জন্য পাঁচ আর টিআরের জন্য সাড়ে সাত দিবে এমুন নতুন দরদাম ফয়সালা হল। একটু আগের কথা বলে রাখি, আমার বন্ধু রিয়াজ (খালাতো ভাই) জানুয়ারি মাস থেকে তখন বেকার। অটবি ছাড়ার পর প্রত্যেক মাসে রিয়াজ চাকরি অনেকগুলো বদল করলো। কোথাও ধাতু হচ্ছে না। রিয়াজের বউ তখন অন্তঃসত্ত্বা। চট্টগ্রামে শ্বাশুড়ির কাছে থাকে। রামপুরায় বন্ধু জায়েদের (জায়েদউদ্দিন) বাসার সামনে দুই রুমের ছোট্ট ফ্ল্যাটে রিয়াজ থাকতো তখন। বেকারত্বের কষাঘাতে কয়েক মাসের বাড়ি ভাড়া রিয়াজের তখন বকেয়া পরলো। রিয়াজ গা ঢাকা দিতে প্রায়ই তখন পান্থপথে আমার সঙ্গে থাকতো। আমি খাই রাজীব নূরের অফিসে। রিয়াজ আসলে রাজীব নূর আর আমার খাবার তিন জনে ভাগ করে খাই তখন। রিয়াজও সেই সুযোগে রাজীব নূরের হাতের কাজ এটা ওটা লেখার কাজ ফ্রি করে দেয়। আমি রাজীব নূরের অফিসে কাজ করার কারণে আমাদের প্রধান আড্ডার কারখানা তখন রাজীব নূরের পান্থপথের অফিস। সন্ধ্যায় অন্য বন্ধুদের অফিস ছুটির পর একে একে সেখানে আসে বন্ধুরা। তারা হল জাফর আহমদ রাশেদ, সত্যজিৎ পোদ্দার বিপু, মোবাশ্বির আলম মজুমদার, এসআই হুমায়ূন কবির, টোকন ঠাকুর (মাঝে মাঝে), নাসরুল্লাহ মোহাম্মদ নাহিদ, পুলক বিশ্বাস, শাহিনুর রহমান-ডাক্তার কল্লোল চৌধুরী-গোলাম রসুল ত্রিরত্ন (মাঝে মাঝে), আহসান কবির সহ অনেকে। আসে ছোটদের একটা বিশাল গ্রুপ ইফতেখার লেনিন, মোকাররম হোসেন শুভ, তন্ময় ইমরান জনি, ইমন অঞ্জন, ও ওদের বন্ধুরা। যোগসূত্রে অফিস আওয়ার শেষ হলে শুরু হয় আড্ডা আওয়ার অফিস। সেপ্টেম্বর মাসে হুট করে মগবাজার বাসা নিয়ে চলে আসলেও সারাদিন থাকি পান্থপথে রাজীব নূরের অফিসে। কনট্রাক কাজ করি। কাজ না থাকলে আড্ডা মারি। ওই সময় অটবি থেকে রিয়াজ চাকরির সুবাদে কিছু বকেয়া টাকা এককালীন ফেরত পেল। তা দিয়ে রামপুরার বাড়িওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে বাসা ছেড়ে দিল। জিনিসপত্র সব উত্তরায় নিজেদের বাসায় রিয়াজের ছোট ভাই সুজনকে দিয়ে ট্রাক ভাড়া করে পাঠিয়ে দিয়ে কিছু জামাকাপড় নিয়ে রিয়াজ চলে আসল আমার কাছে। আমি ততোদিনে বেকারত্বের কারণে দোতলার সিড়ি রুম ছেড়ে দিয়ে নিচে পালাকারের রিহার্সাল রুমে রাত কাটাই। মুকুলের সঙ্গে কথা বলেই আমি পালাকারে তখন আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমি আর ইকতার রিহার্সাল রুমে ঘুমাই। রিয়াজ এসে আমাদের সঙ্গে জুটলো। এবার আমরা তিন জন। ততোদিনে ইকতার বাড়ির ঝামেলা মিটিয়ে পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছে। ইকতার ওর আপার বাসায় চলে গেল। রিয়াজ আর আমি পালাকারে থাকা শুরু করলাম। মাঝে মধ্যে কাজের সুবিধার জন্যে অজয় আর ফয়সালও আমাদের সঙ্গে রাত কাটায়। মূলত ডিসেম্বর ২০০৯ সাল থেকে আমি পুরোপুরি পালাকারের রিহার্সাল রুমের রাতের বাসিন্দা। আমার সঙ্গে রিয়াজ এক/দুই/তিন দিন আসার পর থাকার পর থেকেই রিয়াজও গ্রুপে নিয়মিত থাকা শুরু করলো। আর রিয়াজের রামপুরার বাসা ছেড়ে দিয়ে তো রীতিমত পাকাপাকিভাবেই পালাকারে থাকা শুরু করলো। ওই সময় পালাকারের নতুন প্রযোজনা 'বাংলার মাটি বাংলার জল'-এর কাজু শুরু হল। রচনা সৈয়দ শামসুল হক আর নির্দেশনা আতাউর রহমান। আমি পালাকারে অবস্থান করায় বাংলার মাটির মিডিয়া ও প্রেসের দায়িত্ব আমার উপর পরলো। আমরা 'বাংলার মাটি বাংলার জল' নিয়ে সবাই খুব ব্যস্ত। ওই সময় ২৭ মার্চ ২০১০ সালে গুলাশানের একটি মিউজিক স্কুলে এক ভায়োলিন সন্ধ্যায় গান শুনতে গেলাম আমি আর মিজান। সেখানে পরিচয় হল মায়া লোহানীর সঙ্গে। সেই পরিচয় থেকেই আমাদের প্রথমে প্রেম পরে একসঙ্গে বসবাস এবং প্রণয়। মায়া'র বাড়ি বসনিয়ায় ও হারজেগোভিনায়। মায়া'র মা বসনিয়ান আর বাবা নেপালি। ওর তখনকার স্বামীও একজন বাংলাদেশী। মায়ার এক মেয়ে ও এক ছেলে। থাকে উত্তরায়। 'বাংলার মাটি বাংলার জলে'র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের প্রেমও আগাতে লাগলো। ২০১০ সালের জুন মাসের ১ তারিখ আমরা (মায়া আর আমি) বনানী নতুন বাসা নিলাম। আমার পালাকারে অবস্থান পর্বের ইতি ঘটলো এভাবে ২০১০ সালের মে মাসের ৩১ তারিখ। ১৪ এপ্রিল ২০১০ সালের ১লা বৈশাখে শিল্পকলা একাডেমীতে পালাকারের নতুন সিইও-র দায়িত্ব পেল শামীম সাগর। তখন 'ডাকঘর', 'মৃত্তিকাকুমারী', 'তিনকন্যা' আর 'বাংলার মাটি বাংলার জল'-এর মিডিয়া ও প্রেসের কাজের পাশাপাশি কয়েকটিতে অজয়কে মিউজিক টিমে রিদমে আমি হালকা পাতলা সাপোর্ট দিতাম। আমি মায়া'র সঙ্গে বনানী চলে যাওয়ায় পরেও পালাকারের সকল কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলাম। শিল্পকলায় শো থাকলে বা গ্রুপে মিটিং থাকলে বা রিহার্সাল থাকলে আমি নিয়মিত উপস্থিত থাকতাম। মায়া'র ছেলেমেয়েরা ভারতে পড়াশুনা করে। বছরে ৩/৪ বার তারা বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশে অবস্থানকালীন তারা বাবা-মার কাছে সমান ভাগ হয়ে থাকে। বাবার কাছে কয়েকদিন, মা'র কাছে কয়েকদিন। আমার কথা জানলেও তারা যখন প্রথম প্রথম আমাদের বনানীর বাসায় আসতো, আমি তখন সেই কয়েকটা দিন বাইরে থাকতাম। কারণ, বাচ্চাদের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর একটা পর্ব তখন। মায়া ধীরে ধীরে বাচ্চাদের ম্যানেজ করতে থাকলো। তাই বাচ্চারা আসলে আমি তখন কখনো পালাকারের গ্রুপে রিয়াজের সঙ্গে, কখনো বা টোকন ঠাকুরের বাসায় ওই কটা দিন থাকি। আমি বনানী চলে আসায় গ্রুপে মূলত জুন ২০১০ সাল থেকে রিয়াজ একাই রাতের বাসিন্দা। রিয়াজ আবার রাতে পালাকারে না ফিরলে পান্থপথে সত্যজিৎ পোদ্দার বিপু'র বাসায় থাকতো। আমরা বনানী চলে আসার পর ছেলেমেয়েরা প্রথম আসলো ২০১০ সালের জুন মাসেই। তখন আমি গ্রুপে এক সপ্তাহ রিয়াজের সঙ্গে আর ঠাকুরের সঙ্গে থাকলাম। দ্বিতীয় বার ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশে আসলো ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে। তখনো প্রায় এক সপ্তাহ গ্রুপে রিয়াজের সঙ্গে আর ঠাকুরের সঙ্গে থাকলাম। তৃতীয়বার ছেলেমেয়েরা আসলো ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে। তখনো আমি গ্রুপে রিয়াজের সঙ্গে থাকার জন্য গেলাম। সেদিন ছিল ১৬ ডিসেম্বর। রিয়াজকে ফোন দিলাম। রিয়াজ বললো, বেইলি রোডে আছি। সঙ্গে মুকুলও আছে। আমি ছবিরহাট থেকে ফোন করেছিলাম। রিয়াজ বললো, তুমি বেইলি রোডে চলে আসো। জবাবে বললাম, রাতে তোমার সঙ্গে গ্রুপে থাকবো। তুমি আর মুকুল বরং ছবিরহাটের দিকে আসো। ওরা জানালো আসতেছি। কিন্তু ওরা কেউ আসলো না। আমি রাত এগারোটার দিকে পালাকারে গেলাম। রিয়াজ জানালো চট্টগ্রাম যাবে এই সপ্তাহে। ট্রেনের টিকেটও সংগ্রহ করতে হবে। রিয়াজের বউ ছেলে তখন চট্টগ্রামে। তখন প্রায় প্রতি সপ্তাহে রিয়াজ চট্টগ্রাম যায়। রাতে আমরা বাইরে খেয়ে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিলাম। পারস্পরিক আপডেটমূলক আড্ডা। রিয়াজ তখন বিজয়নগর নতুন একটা অফিসে জয়েন করেছিল। বলছিল যে এলিট পেইন্টে ইন্টারভিউ দিছে। ওখানে হয়ে গেলে চলতি চাকরিটাও ছেড়ে দেবে। সকালে আমরা ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে প্রথমে ফকিরাপুল তারপর কমলাপুর গেলাম। রিয়াজ ১৮ বা ১৯ বা ২০ বা ২১ তারিখের একটি টিকেট নিল। তারিখটা ঠিক মনে নেই। তারপর আমরা রিয়াজের একটা বইয়ের সন্ধানে নীলক্ষেত গেলাম। সেখানে বই কিনলাম ও লাঞ্চ করলাম। তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত ছবিরহাটে আড্ডা মেরে পান্থপথে গেলাম। সেখান থেকে গ্রুপে ফিরতে রাত এগারোটা সাড়ে এগারোটা বাজলো। পরদিন ১৮ তারিখ রিয়াজ অফিসে গেল। সকালে আমরা একসঙ্গে বের হবার পথে রাস্তায় আলাউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের দেখা হল। রিয়াজ আমার থেকে আলাদা হয়ে আলাউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে কিছু শলাপরামর্শ করলো। বুঝলাম, এই শলাপরামর্শ টাকা পয়সা লেনদেন সংক্রান্ত। কারণ, রিয়াজ মাঝে মাঝে আলাউদ্দিন ভাইয়ের থেকে ধার দেনা করতো। আলাউদ্দিন ভাইও রিয়াজের থেকে ধার দেনা করতো। এটা ফয়সালও জানতো। আলাউদ্দিন ভাই হল পালাকারের একাউন্ট্যান্ট। দু'জনেই একাউন্ট্যান্ট হওয়ায় রিয়াজের সঙ্গে তার খুব গলায় গলায় খাতির। আলাউদ্দিন ভাইয়ের থেকে বিদায় নিতে নিতে রিয়াজ বলছিল, আমি অফিসে গিয়ে আবার আপনাকে ফোন করবো। আমরা নাস্তা খেয়ে ফকিরাপুল গেলাম। সেখান থেকে রিয়াজ বিজয়নগরের অফিসে ঢুকে গেল আর আমি শাহবাগ চলে আসলাম। সারাদিন শাহবাগে বন্ধু সুমন শামস আর নুরউদ্দিন রানার সঙ্গে আড্ডা মেরে ভারী ক্লান্ত। প্রায় সারা দিন তামুক খেলাম। রাত দশটার দিকে আমি রিয়াজকে ফোন করলাম। রিয়াজ বললো তুমি গ্রুপে যাও, আমি আসতেছি। আমি সাড়ে দশটা বা পোনে এগারোটার দিকে গ্রুপে পৌঁছালাম। রিয়াজ আসলো এগারোটা সোয়া এগারোটার দিকে। ওই দিন গ্রুপে কোনো রিহার্সাল ছিল না। মাগরিবের নামাজ পড়ে আলাউদ্দিন ভাই গ্রুপে তালা মেরে চলে গেছেন। আমি গ্রুপে ঢুকে কম্পিউটার অন করে তাস খেলতেছিলাম। রিয়াজ আসলে আমরা ডিনারের জন্য বের হব। রিয়াজ আসার পর আমরা সিগারেট খেয়ে সাড়ে এগারোটা পোনে বারোটার দিকে মগবাজার মোড়ে ডিনারের জন্য গেলাম। ফিরে এসে আমরা দুই কম্পিউটারে অনেকক্ষণ তাস খেললাম। রাত একটা সোয়া একটার দিকে আমি ঘুমানোর জন্য রিহার্সাল রুমে গেলাম। রিয়াজ তখনো তাস খেলতেছিল। সকালে আমি তখনো ঘুমাচ্ছিলাম। রিয়াজ আগেই অফিসে চলে গেছে। আলাউদ্দিন ভাই পালাকারে ঢুকে অফিস রুমে প্রবেশ করেই চিৎকার করে উঠলেন। রিহার্সাল রুমের দরজা খুলে ঘুম থেকে আমাকে জাগালেন। ব্যাপার কি? আলাউদ্দিন ভাই'র টেবিলের ড্রয়ার ভাঙা। ড্রয়ারে নাকি ৫০ হাজার টাকা ছিল, সেটা তখন নেই। রহস্যজনক এক চুরি!!! আমি ফোন করে অজয় আর ফয়সালকে জানালাম। কিছুক্ষণ পরে শামীম সাগর আসলো। মুকুলকে আমি জানালাম, শামীম সাগরও জানালো। ফয়সাল আসার পর আমি আর ফয়সাল নাস্তা খেতে বের হলাম। অজয় আর শিশির আসলো। সেলিম আসলো। গ্রুপে ইতোমধ্যে টাকা চুরির জন্য জরুরী মিটিং কল করা হল সন্ধ্যা ৬ টায়। সারা দিন আমরা গ্রুপে থাকলাম। সন্ধ্যায় কয়েক মিনিটের মিটিং। ঘটনা শুধু আলাউদ্দিন ভাই আর শামীম সাগর বর্ণনা করলো। রিয়াজ মিটিংয়ে আসতে পারবে না জানালো। বললো, গ্রুপে একবার লাগেজ নিতে যাবে। রাতেই রিয়াজ চট্টগ্রাম যাবে। গ্রুপের মিটিং শেষে রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করার কথা। আমরা সবাই যাবো। কিন্তু পরে মুকুল, শামীম সাগর আর আলাউদ্দিন ভাই গেল!!! আর সবার কাছ থেকে চাবি কেড়ে/চেয়ে নেওয়া হল। মিটিংয়ে পুরো ঘটনার কোনো বর্ণনা কেউ শুনলো না। আলাউদ্দিন ভাই গ্রুপ থেকে মাগরিবের পর বের হলে আমিই প্রথম ঢুকেছিলাম, এমনটি সবাই জানালো। এখানে একটি কথা বলে রাখা উচিত, গ্রুপের চাবি তখন পর্যন্ত অনেকের কাছেই ছিল। আমার কাছে একটা, রিয়াজের কাছে একটা, আলাউদ্দিন ভাইয়ের কাছে একটা, অজয়ের কাছে একটা, ফয়সালের কাছে একটা, আর এমার্জেন্সি মোকাবেলার জন্য শুভ বা দলের জুনিয়র কোনো সদস্যের কাছে একটা। যাদের কাছে চাবি ছিল, তাদের যে কেউ ওই সময়ের মধ্যে গ্রুপে অনায়াসে প্রবেশ করতে পারতো। আলাউদ্দিন ভাই যে টাকা গ্রুপের ড্রয়ারেই রেখেছিলেন তার একমাত্র সাক্ষি তিনি নিজে। আর কেউ তা জানেন না। আলাউদ্দিন ভাই ড্রয়ারে তালা মেরেছিলেন কিনা তাও তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না। টাকাটা সত্যি সত্যিই ড্রয়ারে ছিল কিনা তাও আলাউদ্দিন ভাই ছাড়া আর কেউ জানে না। কিন্তু পালাকারের ৫০ হাজার টাকা ওইভাবে চুরি হল। সেদিন থেকই গ্রুপের সবাই আমার দিকে একটু অন্য নজরে তাকানো শুরু করলো। সেই তাকানোর অর্থ বোঝার মত বয়স, বুদ্ধি, মেধা, জ্ঞান সবই আমার আছে। আমি একটি কথা সুস্পষ্ট করেই বলতে চাই, যে গ্রুপে আমার অন্তঃত ১০ বছরে একটু হলেও কনট্রিবিউশান আছে, যে গ্রুপটির স্বপ্ন শুধু মুকুল নয় সেই আদি ১৫ জনের সবাই দেখেছে এবং এখনো দেখে, যে গ্রুপ আমাদের সবার অনেক পরিশ্রমের ফসল, সেই গ্রুপ থেকে অন্তঃত গ্রুপের কেউ টাকা চুরি করতে পারে বলে আমি এখনো বিশ্বাস করি না। নাম্বার দুই, ইকতার আর আমি যখন গ্রুপে থাকতাম তখন গ্রুপের ড্রয়ারে অন্তঃত ৩/৪ লাখ টাকা থাকতো, তখন তো কিছু হল না। আমি যখন টানা প্রায় নয় মাস গ্রুপে এবং উপরে আশ্রয় নিয়েছিলাম তখন তো টাকা চুরি হল না। আমি যখন আমার বাসার টেকনিক্যাল কারণে (ছেলেমেয়েদের জন্য) গ্রুপে কয়েক দিনের জন্য থাকতে গেলাম, তখন টাকাটা চুরি হল। চুরি হল খুবই রহস্যজনকভাবেই। আলাউদ্দিন ভাই একাই ওই টাকা চুরি হবার সাক্ষি। যদি শর্ট লিস্ট কেউ করে আমি, রিয়াজ আর আলাউদ্দিন ভাই সেই তালিকায় থাকার কথা। যদি কেউ আরেকটু লম্বা লিস্ট করে তাহলে যাদের কাছে চাবি ছিল তারাও তালিকায় থাকতে পারে। আর যদি কারো একটু মেধা থাকে, একটু বুদ্ধি আমাদের থাকে তাহলে তালিকা আরো ছোট হয়ে সরাসরি আলাউদ্দিন ভাই সেই তালিকায় পরে। পালাকারের সঙ্গে তারপর ধীরে ধীরে সম্পর্কটা শীতল হয়ে গেল। আমি আগের মতোই পালাকারে যেতাম। শো হলে শিল্পকলায় যেতাম। কিন্তু শিল্পকলায় আমাকে ডিবি পুলিশ শো চলাকালীন ফলো করতে থাকলো। বাংলার মাটি বাংলার জলে'র সেদিনের শোতে গ্রুপের সবাই একটু অন্যরকম আচরণ করলো। আমরা যাওয়ায় শুধু মুকুল খুব খুশি হয়েছিল। মুকুল আমাকে বললো, তুমি একটু ওদের নিয়ে গেট আর গেস্ট সামাল দাও। আগেও এটা আমি করতাম। সবই এ্যাজ ইট ইজ। আমি গেটে সবাইকে সেট করে উপরে গেলাম অজয়ের কাছে সিগারেট খাবো বলে। রিন্টু ভাই তার মেয়েকে মায়া'র সঙ্গে ট্যাগ করে দিলেন। কারণ, রিন্টু ভাই পারফর্মার। মায়া আর রিন্টু ভাইয়ের মেয়েকে উপরে দোতলায় বসিয়ে দিয়ে শিবলুকে সাউন্ডের দায়িত্বে রেখে অজয় আর আমি গেলাম সিগারেট খেতে। দ্রুত সিগারেট টেনে অজয় দোতলায় সাউন্ডের জন্য গেল। আমি নিচে গেলাম সৈয়দ হক আর আনোয়ারা হককে বসিয়ে দিতে। গিয়ে দেখলাম সফিক ভাই ওনাদের নিয়ে ঢুকছেন। গেস্টদের বসিয়ে দিয়ে সফিক ভাইকে বললাম, আর কোনো গেস্ট আসলে আপনি সামাল দিয়েন। আমি উপরে গেলাম। জুয়েলকে মেইন গেটে বলে রাখলাম। কোনো গেস্ট আসলেই যেনো সফিক ভাইয়ের কাছে পাঠায়। আমি দোতলায় চলে গেলাম। গিয়ে দেখি মায়ার পাশে শিবলির ছোট বোন আর রিন্টু ভাইয়ের মেয়ে বসেছে। আমি গেটে একজন জুনিয়ারকে রেখে মায়াদের পেছনের সারিতে বসলাম। শো শুরু হল। কিছুক্ষণ পর চার জন লোক ঢুকলো। তাদের কারো টিকেট নাই। আমি টিকেট দেখতে চাইলাম। তারা বললো, তারা ডিবি পুলিশের লোক। তাদের তিনজন আমার বামপাশের সারিতে বসলো। একজন আমার পেছনে বসলো। জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা টিকেট ছাড়া কিভাবে ঢুকলেন? জবাবে ওনারা বললেন, আমরা সরকারি কাজেই এসেছি। সময় মতো চলে যাব। আমাদের টিকেট লাগে না। আমি একটু পরে উঠে অজয়ের কাছে গেলাম। একেবারে পেছনের শেষ সারি। পরে আবার আগের সিটে এসে বসেছি। আমার পেছনের ডিবি'র লোকটি তখন উঠে আমার পাশে এসে বসে ঝিমোচ্ছিলেন। শো শেষে আমি রিন্টু ভাইয়ের মেয়েকে নিয়ে গ্রিন রুমে গেলাম। মুকুলকে বললাম, এখনই যাবো। মায়া'র সকালে স্কুল আছে। মুকুলের থেকে বিদায় নিয়ে মায়াকে ফোন করলাম। মায়া বললো, ওরা একেবারে সামনের মেইন গেটের সিড়িতে আছে। রিন্টু ভাইকে বললাম আপনি কি গাড়ি আনছেন? রিন্টু ভাই বললো হ্যা আনছি। বললাম আমাদের নামিয়ে দেন। রিন্টু ভাই বললো এখনই আমার সঙ্গে যেতে পারলে চলেন। আমি রিন্টু ভাই'র সঙ্গে ভেতরের সিড়ি দিয়ে নামলাম। মায়াকে ফোন করে গাড়ি স্ট্যান্ডে আসতে বললাম। আমরা রিন্টু ভাইয়ের গাড়িতে বনানী চলে আসলাম। কিন্তু পরে মায়াও আমাকে বললো, সবার আচরণ কেমন একটু সন্দেহজনক ছিল। জানি না কি হল? গ্রুপের সবার সেদিনকার আচরণ সত্যিই একটু রহস্যজনক ছিল। সেদিন থেকে আমি আর গ্রুপে যাই না। এক আলাউদ্দিন ভাই কি আমার হৃদয় থেকে পালাকার মুছতে পারবে? মোটেই না। একটি রহস্যজনক চুরি কি পালাকারকে ভালোবাসতে আমাকে দ্বিধায় ফেলবে? মোটেই না। আমি পালাকারের ফাউন্ডার মেম্বার। দম্ভ নিয়ে এখনো পালাকারকে ভালোবাসি। কারো দয়ায় বা কুনজরে কেউ আমার হৃদয় থেকে পালাকারকে দূরে ঠেলতে পারবে না। কিন্তু রহস্যজনক চুরির বিষয়ে আমাকে দল থেকে আর কোনো আপডেট জানালো হল না। সেটাও রহস্য হয়েই থাকলো। মুকুলের কাছে আমার একটি ছোট্ট প্রশ্ন আছে? রেজা ঘটককে মুকুল যতোটুকু চেনে সেখানে কোনোদিন কোথাও কোনো একটাকা চুরির ঘটনা আছে কি? যদি না থাকে তাহলে মানুষ চিনতে আরো সময় এবং আরো পরীক্ষা আমাদের সবার জীবনেই দিতে হবে। রিয়াজ, মুকুল দু'জনের জন্যই সেই পরীক্ষার একটি প্রশ্ন আমি করতে চাই? বন্ধু এক জীবনে আসে, চলে গেলে আর আসে না। সামান্য ৫০ হাজার টাকার রহস্যময় চুরির ঘটনায় আমরা কেমন নিজেদের একটুও কি আড়াল করে রাখছি না, মুকুল বা রিয়াজ??? আমাদের জীবনে কি ওই রহস্যময় চুরির পর থেকে একটু আড়াল-আবডাল ব্যাপার যোগ হয় নি? কেন, কেন, কেন এসব হচ্ছে, মুকুল, রিয়াজ??? আমাদের বন্ধুত্বে কি এমন একটি ফাঁটল কখনো ছিল? ভবিষ্যতে কি সেই ফাঁটল থাকবে??? জবাব চাই মুকুল আর রিয়াজের কাছে??? সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৫৭ | false |
ij | সামুদ্রিক মাছ হতে পারে এদেশের দরিদ্র জনগনের পুষ্টির উৎস মানচিত্রে বঙ্গোপসাগর ক’দিন আগে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে আটলান্টি সমুদ্রে ভাসমান একটি মাছ ধরার জাহাজের নানা কেরামতি দেখছিলাম। সহসা আমার মাথায় একটা আইডিয়া এল- আর্ন্তজাতিক আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূল থেকে বঙ্গোপসাগরের ২০০ মাইল সীমানা বাংলাদেশের। বলা বাহুল্য, বঙ্গোপসাগরের ২০০ মাইল তেলগ্যাসহ আরও সম্পদে সমৃদ্ধ। সেখানে মৎস্য সম্পদও নিতান্ত কম নয়। যদি আমাদের কর্মসূচী হয়-কমমূল্যে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগনের কাছে পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দেওয়া-তা হলে আমি বলব: সামুদ্রিক মাছ সেই পুষ্ঠির উৎস হতে পারে। কিন্তু, আমরা সামুদ্রিক মাছের কথা শুনে নাক শিটকাই। কে খায় ওমন বিস্বাদ মাছ! আসলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো প্রয়োজন। আমাদের দেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটা অংশ ভুগছে পুষ্টিশূন্যতায়। এই নিদারুন অবস্থাটি বড় বেদনাদায়ক। আমরা কি আমাদের দৃস্টিভঙ্গি বদলাতে পারি না? পুষ্টির জন্য ঝুঁকতে পারি না বঙ্গোপসাগরের অধাগ মৎস সম্পদের উপড়? এখন তো আমরা বিঘায় ২৫ মন ফলে বলে বিস্বাদ হাইব্রিড ধান খেতে বাধ্য হচ্ছি । যা করা যেতে পারে- ইউরোপ থেকে বড় আকারের আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত মাছ ধরার জাহাজ আনতে হবে; ছোট ফিসিং বোট নয়। আপাতত কুড়িটি। পরে আরও বাড়াতে হবে। জাহাজগুলিতে বঙ্গোপসাগরপাড়ের জেলেদের ছেলেমেয়েদের তুলে হাতেকলমে ওদের শেখাতে হবে কী করে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ ধরতে হয়। আজকাল অপরের ভাষা বোঝা সমস্যা না। গ্রাম থেকে এসে শহরে মোবাইল সার্ভিসিং শিখছে না আমাদের ছেলেমেয়েরা? তা ছাড়া জাহাজে দোভাষী থাকবে। আপনাদের মধ্যে কেউ হয় তো বলবেন, মেয়েরা কেন বিদেশি জাহাজে উঠবে? গেলে ছেলেরা যাক। এসব আর বলবেন না। প্লিজ। আমাদের এমনিতেই অনেক অনেক অনেক দেরি হয়ে গেছে। মেয়েদের মাবাবার কি ছাড়বে? আহা। ওদের ভাইরা থাকবে জাহাজে। আচ্ছা, ভাতার ব্যবস্থা করে দেব। তো, মাছ ধরার জাহাজে ছেলেদের সঙ্গে মেয়েরাও যাবে। থাকবে। শিখবে। বাংলাদেশকে বদলাবে। যদি তাই হয় তো অবিলম্বে সমুদ্রবিদ্যায় শিক্ষিত একটি জেনেরেশন গড়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। যারা পূর্বপুরুষের মত ধ্যারধ্যারা নৌকায় মাছ ধরবে না; তারা মাছ ধরবে এমন জাহাজে যেখানে আধুনিক রাডার থাকবে। ওদের আদর্শ হবে বাংলাদেশের গরিব ভাইবোনদের জন্য পুষ্টির যোগান দেওয়া। মাছ কাটা, মাছ বাছা, মাছ প্যাকেটজাত করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রসেস-স্টেশন গড়ে তুলতে হবে সমুদ্রপাড়ে। এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যেগের সুপারিশ করছি। অবশ্য প্রসেস-স্টেশনগুলি ব্যাক্তিখাতেও হতে পারে। তেমনটা হলে কর্মসংস্থান বাড়বে বলেই আশা করি। মাছের প্যাকেটগুলো হবে ১ কেজি ২ কেজির এবং অতি অবশ্যই জীবাণুমুক্ত। যে কোনও অর্থনীতিক উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ন ধাপ হচ্ছে যোগাযোগ। এ ক্ষেত্রে ট্রাক। মাছের প্যাকেটগুলি ট্রাকে করে রাতারাতি চলে যাবে দেশের নানা প্রান্তে। পৌঁছে যাবে সামুদ্রিক পুষ্টি দেশের দরিদ্র মানুষের দুয়ারে। কতটা শস্তায় পাবে? সেটা এক্ষুনি বলতে পারছি না। দাম নির্ভর করছে সামগ্রিক হিসেবনিকেষের ওপর। বুঝলাম। তো লোকে কি সামুদ্রিক মাছ খাবে? ওই যে বললাম আমাদের দৃস্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। আগে নাক শিটকালেও এখন তো আমরা হাইব্রীড ধানই খাচ্ছি। অর্থের উৎস- সামুদ্রিক সম্পদ আহোরণের জন্য অর্থের উৎস দেশিও হলেই ভালো হয়। সরকার কর আদায়ের জন্য দিনদিন সিরিয়াস হয়ে উঠছে। তবে শুনছি তাইওয়ানের বিলিয়ন ডলার নাকি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে এ দেশে। তারই ক্ষাণিক বিনিয়োগ হোক না এই পুষ্টি খাতে। পুনশ্চ: একদিন এমনই হবে দেখবেন। আমি একটু আগে বললাম। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:২৬ | false |
rn | স্বপ্ন থেকে ১/ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ঘটনা। এ সময় একটি স্বপ্ন মিত্রপক্ষের সামরিক গোপনীয়তা রক্ষায় যথেষ্ট সহায়ক হয়েছিল। তখন চীনা বন্দর সোধাতোর বৃটিশ কন্সাল ছিলেন মি. রোনাল্ড হল। তাঁর স্মৃতিকথায় তিনি লিখেছেন : এক রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি স্বপ্নে দেখি, গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা ঘটায় আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমি তখন আর মুক্ত নই। বৃটিশ কন্সাল হিসেবেও আমি কর্মরত নই।এই স্বপ্ন আমাকে বেশ প্রভাবিত করে। আমি গভীর রাতে ঘুমুতে গেলেও খুব ভোরে উঠে পড়ি। অস্বস্তি দূর করার জন্যে নিচের তলায় নেমে যাই ম্যানিলা বেতারের ভোরের খবর শোনার জন্যে।ম্যানিলা বেতার ধরার সাথে সাথেই আমি শুনলাম, আজ সকালে ম্যানিলায় বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। কালবিলম্ব না করে আমি আমার দফতরের পথে রওয়ানা হই। দফতরে পৌঁছেই সকল গুরুত্বপূর্ণ দলীল-দস্তাবেজ ভস্মীভূত করতে শুরু করি। দলীল-দস্তাবেজ ভস্মীভূত করে নিশ্চিহ্ন করতে না করতেই জাপানীরা আমাকে বন্দী করে।আমার আমেরিকান সহকর্মী অবশ্য এতটা ভাগ্যবান ছিলেন না। জাপানীরা তাঁকে বিছানা থেকেই গ্রেফতার করে। ফলে তিনি কোনো কিছু ভস্মীভূত করতে সক্ষম হননি।স্বপ্ন দেখার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আমি জাপানী জেনারেলের কাছ থেকে একটা চিঠি পাই। তাতে লেখা ছিলো, যেহেতু অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তির মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাই বৃটিশ কন্সাল হিসেবে আমার আর কোনো মর্যাদা নেই। ২/ স্বপ্ন-একটি মাত্র স্বপ্ন ইউরোপের ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছিলো ব্যাপকভাবে। রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার তখনও জীবিত। তার একজন প্রভাবশালী সভাসদ সিসিরো এক রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, সিজারের যোগ্য উত্তরাধিকারী মনোনয়নের জন্যে দেবতা জুপিটার সিনেটের তনয়দের প্যারেড পরিদর্শন করছেন। কিন্তু কাউকেই দেবতার মনঃপুত হলো না। এমন সময় প্যারেডের মাঠে দেখা গেলো এক অদ্ভুত তরুণকে। দেবতা জুপিটার তাকেই মনোনীত করলেন সিজারের উত্তরাধিকারী। ঘুম ভাঙার পরও সিসিরোর মনে স্বপ্নে দেখা তরুণের মুখচ্ছবি ভাসতে লাগল।পরদিন সিসিরো দরবারে যাওয়ার পথে একদল তরুণের সাক্ষাৎ পেলেন। তারা শরীরচর্চা শেষে ফিরছিল। তাদের মধ্যেই তিনি দেখতে পেলেন স্বপ্নে দেখা তরুণকে। সিসিরো এর পূর্বে সে তরুণকে কখনো দেখেননি। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারলেন, তরুণের নাম অক্টাভিয়াস। তার বাবা-মার তেমন কোনো পরিচিতি রাজধানীতে নেই।কয়েক বছর পরের কথা। সিজারের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলো। সিসিরো তার স্বপ্নের বলে বলিয়ান হয়ে সর্বশক্তিতে অক্টাভিয়াসের পক্ষ সমর্থন করলেন। অক্টাভিয়াস আরোহণ করলেন রোমের সিংহাসনে। অক্টাভিয়াসই পরে সর্বশ্রেষ্ঠ রোম সম্রাট হিসেবে অগাস্টাস নামে ইতিহাসখ্যাত হন। ৩/ প্রখ্যাত বৃটিশ সেনাপতি জেনারেল গর্ডন তখন ভারতে। এক রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, তিনি একটি খরস্রোতা নদী পার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নদী পার হওয়ার জন্যে একটি ধূসর রঙের নৌকায় কয়েকজন সৈন্যসহ উঠছেন। মাঝপথে যাওয়ার পর তাদের নৌকা ডুবতে শুরু করে। এ সময় তিনি তার পাশে যে সৈনিককে দাঁড়ানো দেখতে পান তাকে তিনি ইতিপূর্বে অবাধ্যতার জন্যে শাস্তি দিয়েছিলেন।পর পর কয়েক রাত তিনি এ স্বপ্ন দেখেন। প্রতিবারেই নৌকা নিমজ্জিত হতে শুরু করার সময় তার পাশে সেই সৈনিককে দাঁড়ানো দেখতেন।এর অল্প কিছুদিন পর জেনারেল গর্ডনকে একটি খরস্রোতা নদী অতিক্রম করতে হয়। তিনি নৌকায় উঠতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ লক্ষ করলেন যে, নৌকাটি স্বপ্নে দেখা নৌকার ন্যায় এবং এর রংও ধূসর। আরো ভাল করে লক্ষ্য করতেই তিনি দেখতে পেলেন যে, তার সঙ্গী সৈনিকদের মধ্যে এমন একজন রয়েছে, যাকে তিনি ইতিপূর্বে অবাধ্যতার জন্যে শাস্তি দিয়েছেন।একজন জেনারেলের পক্ষে স্বপ্নের ওপর গুরুত্ব দান কিছুটা অস্বাভাবিক। কেউ কেউ একে বোকামিও মনে করতে পারেন। কিন্তু জেনারেল গর্ডন নৌকায় উঠলেন না। বরং সৈনিকদের নৌকা টেনে ডাঙ্গায় তোলার নির্দেশ দেন। নৌকা ডাঙ্গায় ওঠানোর পর তা ওল্টাতে বলেন। নৌকা ওল্টানোর পর দেখা যায় যে, নৌকার তলায় অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র। নৌকার ওপর পাটাতনের জন্যে তা দেখা যাচ্ছিল না। নৌকা ওপরে তোলার এই অভাবিত ঘটনা দেখে সৈনিকটি জেনারেল গর্ডনের পায়ে লুটিয়ে পড়ে। সকল অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে। ৪/ ১৮১২ সাল। স্পেন্সার পার্সভেল তখন ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী। ১০ মে তিনি লর্ড হ্যারোবির আতিথ্য গ্রহণ করেন। রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর তিনি যথারীতি ঘুমুতে যান। নরম বিছানার পেলব স্পর্শে ক্লান্ত প্রধানমন্ত্রীর দু'চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসে। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই একটি বিশ্রি স্বপ্ন তার চোখের ঘুম কেড়ে নেয়। সারারাত তিনি আর ঘুমুতে পারেননি। পর দিন সকালে নাস্তার টেবিলে তিনি লর্ড হ্যারোবির নিকট রাতের স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলেন। তিনি বলেন, ‘বালিশে মাথা লাগাতে না লাগাতেই আমি স্বপ্ন দেখলাম, হাউজ অব কমন্সের লবির মধ্যে দিয়ে আমি হেঁটে যাচ্ছি। এমন সময় এক ব্যক্তি হঠাৎ আমার পথরোধ করে দাঁড়াল। তার কোটের বোতামগুলো ছিল পিতলের। কালবিলম্ব না করে সে আমাকে গুলি করল। মুহূর্ত মাত্র। তারপর আমার প্রাণহীন দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।১১ মে বিকেলে পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু করার কথা। লর্ড হ্যারোবি তার বন্ধুকে পার্লামেন্টের অধিবেশনে যোগদান থেকে বিরত রাখার জন্যে চেষ্টা করলেন। কিন্তু স্পেন্সার পার্সভেল শুধুমাত্র একটি স্বপ্ন দ্বারা বিচলিত হতে অস্বীকৃতি জানালেন। লর্ড হ্যারোবির প্রচেষ্টা তাই ফলপ্রসূ হলো না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, স্বপ্ন তিনি যেভাবে তাঁর মৃত্যু দেখেছিলেন, একইভাবে তিনি নিহত হন। প্রধানমন্ত্রীর হত্যাকারী বেলিংহামের পরনেও ছিল সবুজ জ্যাকেট আর তার বোতামগুলোও ছিল পিতলের। ৫/ উনিশ শো বাহাত্তরের শেষ নাগাদ, সম্ভবত ডিসেম্বর মাস। প্রখ্যাত চিত্র শিল্পী রফিকুন্নবী তখন আর্ট কলেজের শিক্ষক। এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন পোস্ট অফিসের পিওন তাঁকে একটা চিঠি দিয়ে গেছে। চিঠিতে লেখা আছে তাঁকে কোনো একটি দেশ স্কলারশীপ দিয়েছে উচ্চতর পড়াশোনার জন্যে। শিগগিরই যেতে হবে ওখানে। চিঠিটা পেয়ে অসম্ভব আনন্দ লাগছিল রফিকুন্নবীর। পরক্ষণেই তার ঘুমটা ভেঙে গেল। জেগে উঠে তাঁর মনে হলো একটা সুন্দর জগৎ মাটি হয়ে গেছে একটু আগেই।পরদিন যথারীতি কর্মস্থল আর্ট কলেজে গেলেন রফিকুন্নবী। সকাল ১১ টায় ক্লাস নিচ্ছিলেন, এমন সময় প্রিন্সিপাল (শফিক হোসেইন) ডেকে পাঠালেন তাঁকে। রফিকুন্নবী ভাবলেন হয়ত ক্লাস সম্পর্কিত কোনো কথাবার্তা আছে। কিন্তু প্রিন্সিপালের কক্ষে গিয়ে যা শুনলেন তাতে অবাক হয়ে গেলেন তিনি। ভেতরে একটা উত্তেজনাও বোধ করছিলেন। প্রিন্সিপাল তাঁকে জানালেন যে, গ্রীক সরকারের একটি বৃত্তি। কলেজ থেকে তাঁর নাম পাঠানো হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে আজই কিছু কাগজপত্র পূরণ করে পাঠিয়ে দিতে হবে।রফিকুন্নবী সে সময় মনে মনে প্যারিস অথবা লণ্ডনে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছিলেন। কিন্তু স্বপ্নটি এত তাড়াতাড়ি ফলে যাচ্ছে দেখে ভাবলেন কপালে গ্রীসই লেখা আছে হয়ত। দ্বিরুক্তি না করে সব কাগজপত্র পূরণ করে পাঠিয়ে দিলেন। মাস খানেক পরই চিঠি পেলেন গ্রীসের স্কলারশীপটা তাঁর হয়ে গেছে। পরের অক্টোবরেই রফিকুন্নবী গ্রীসে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন টানা তিন বছরের জন্যে। ৬/ আনন্দময় স্বপ্ন দেখলে মনে চমৎকার একটা অনুভূতি জাগে। তেমনি খারাপ স্বপ্ন দেখলেও আমার শিহরিত হই, ভয় পাই। একটা অজানা আশঙ্কার ছায়া যেন থেকে যায় কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন। তেমনি একটা স্বপ্ন দেখছিলেন কথা শিল্পী জুবাইদা গুলশান আরা।সে সময় তিনি ডেনমার্কে ছিলেন। একদিন স্বপ্ন দেখলেন আকাশে একটা প্লেনে আগুন ধরে গেছে। এবং শেষ পর্যন্ত পুরে ধ্বংস হয়ে গেছে প্লেনটি। তারপর এই স্বপ্নের মধ্যেই দেখলেন আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিমানের পাইলটকে কাঠের কফিনে করে কবর দেয়া হলো। ঘুম ভাঙার পর ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন জুবাইদা গুলশান আরা। তখন তাঁর এক ঘনিষ্ট আত্মীয় বিমানের সাথে সংশ্লিষ্ট চাকুরি করেন। তিনি তাদের খবরাখবর নিয়ে সতর্ক থাকতে বললেন।এর ঠিক পরের মাসেই জুবাইদা গুলশান আরার সেই আত্মীয় এয়ার কমোডর বাশারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিনি তখন দেশে ফিরে এসেছেন। টেলিভিশনে যখন বাশারের মৃত্যু পরবর্তী ঘটনা দেখছিলেন তখন স্তম্ভিত হয়ে গেলেন জুবাইদা গুলশান আরা। ঠিক এ ঘটানাটাই স্বপ্নে ঘটতে দেখেছিলেন তিনি।(সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত) | false |
mk | বাংলাদেশ আর তলাবিহীন নয় এক সময় বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে বিশ্বে নিন্দিত হতো। যারা বলত তাদের বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশ কখনো উন্নত দেশ হতে পারবে না। সাহায্যের জন্য বিদেশিদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে। তাদের সে ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে, স্বাধীন সার্বভৌম এ দেশটি সামনের দিকে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। এখন আর বাংলাদেশ সাহায্যের জন্য বিদেশিদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে না। শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা আর পরিশ্রমের কারণে বাংলাদেশ একটি স্বনির্ভর দেশে পরিণত হয়েছে। যারা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল, তারাই আজ বলছে, বাংলাদেশ এক মিরাকল। আমার মত শত কোটি মানুষ আজ বলতে বাধ্য_ সঠিক পথে এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শূন্য হাতে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের জন্য দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল, আজ দেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষ, খাদ্যের কোনো অভাব নেই। কৃষিবান্ধব সরকারের নীতি ও বিনিয়োগের কারণে আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, শ্রীলংকায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশের বনেদি তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। শাকসবজি ও ফলমূলের সঙ্গে সাম্প্রতিককালে আলু রপ্তানি বাংলাদেশের কৃষির উল্লেখযোগ্য সাফল্য। নেপালের দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের সরকারগুলোর তুলনামূলক বিচারে দেশের সার্বিক উন্নয়ন প্রশ্নে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং কৃষিসহ খেলাধুলা সব জায়গায় শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বললে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না। বর্তমান সরকার নতুন সড়ক-মহাসড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার নির্মাণ ও রাস্তার লেন বাড়িয়ে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। হাতিরঝিল প্রকল্প, মিরপুর-এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার, যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার প্রভৃতি প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চারলেন প্রকল্প শেষের পথে।জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে ২২ হাজার কোটি টাকার ‘মেট্রোরেল’ প্রকল্প ২০১৯ সাল নাগাদ বাস্তবায়িত হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর আদলে দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশ বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। তিন বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয়ের মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে নিজস্ব অর্থেই। উন্নয়ন হয়েছে রেডিমেট গার্মেন্ট এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে। পিছিয়ে নেই, অভিবাসন ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে বেড়েই চলেছে। দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি নেই বললেই চলে। এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে। আজ একজন রিকশাচালক থেকে শুরু করে একজন খেটেখাওয়া মজুর, এমনকি বাসার কাজের সাহায্যকারী মহিলা থেকে গ্রামের গরিব কৃষক ভোগ করছে তথ্য কিংবা মোবাইল সেবা। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা আর শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের ক্ষেত্রে রীতিমতো ঘটে গেছে বিপ্লব যা বিশ্বের বহু দেশের কাছে অনুকরণীয়। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতভাগ, ছাত্রছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, ঝরে পড়ার হার দ্রুত কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রই রোল-মডেল এখন বাংলাদেশ। শিক্ষা ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের অর্জনের ধারে-কাছেও নেই অতীতের কোনো সরকার। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটা অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, বছরের প্রথম দিন ২২ কোটির বেশি বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে বর্তমান সরকার। ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি এবং ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা আর ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল এখন রুটিন হয়ে গেছে। বেসরকারি সব মেডিকেল কলেজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আনার ফলে মেডিকেল শিক্ষার মান নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারি ভাষ্য নয় বরং বিশ্বব্যাংক, ইউনেস্কো, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামসহ আন্তর্জাতিক দাতা ও গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে অন্যদের জন্য উদাহরণ অভিহিত করে বলছে, শিক্ষায় প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। একদশকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও টেকসই। শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে বাংলাদেশ ছুঁয়েছে নতুন মাইলফলক। বর্তমান সরকারের আমলে একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে, যা অত্যন্ত আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক। এ শিক্ষানীতি অতীতের পশ্চাৎপদতা ও বিভ্রান্তি ঝেরে ফেলে যুগের চাহিদা পূরণে সক্ষম। এটি পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে দেশ শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত আরো সাফল্য অর্জন করবে। এ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। অবশ্যই শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। শেখ হাসিনার সততা ও নিষ্ঠা দেশকে উন্নতির সোপানে নিয়ে গেছে। এটা আমাদের কথা নয়, বরং জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নদৃষ্ট সোনার বাংলা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী স্টেট সেক্রেটারি নিশা দেশাই বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হওয়ায় গর্বিত। হেনরি কিসিঞ্জাররা একদা যেখানে বাংলাদেশের উন্নয়নের কোনো সম্ভাবনাই দেখেননি সেখানে বর্তমানে তাদের উত্তরসূরিরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছেন। মানছি, এসব বাকচাতুর্য এবং কূটনৈতিক কৌশল। কিন্তু তারপরও অস্বীকার করা যাবে না যে, বাংলাদেশের উন্নয়নের বিপরীতে দাঁড়ালে দিন শেষে উন্নয়ন তো ঠেকানো যাবেই না বরং তাদেরই আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দারিদ্র্যের হার হ্রাস, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস এসব কারণে জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশকে মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এম ডি জি) পদকে ভূষিত করা হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশকে উন্নয়ন রোল মডেল হিসেবে অভিহিত করেছেন। যা বাংলাদেশের জন্য বিরল অর্জন। আর বিগত জোট আমলে বাংলাদেশ পর পর ৫ বার দুর্নীতিতে ১ম হয়েছিল। ২০২১ সালের মধ্যে দেশ মধ্য-আয়ের দেশ হবে বলে শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমার মনে হয়, তা ২০১৯ সালের মধ্যেই সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশ করার পথেও আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। ই-ব্যাংকিং আমাদের লেনদেনকে সহজতর করেছে। আমরা এখন অনলাইনে ট্রেন টিকিট কিনতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ফরম নিয়ে দেশের এক মাথা থেকে অন্য মাথায় দৌড়াতে হচ্ছে না। জমির পরচা, আয়কর সনদপত্র, পাসপোর্ট ফরমসহ নানাবিধ সরকারি ফরম অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। সমুদ্রসীমা নিয়ে জোট সরকার ছিল নির্লিপ্ত ও নিষ্ক্রিয়। আর মহাজোট সরকারের দূরদর্শী প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের কাছ থেকে ১১১৬৩১ বর্গ কিমি সমুদ্রসীমা আদায় করেছে। আর ২০১৪ সালে ভারতের কাছ থেকে আরো এক লক্ষের অধিক সমুদ্রসীমা পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে সাম্প্রতিক ছিটমহল বিনিময়ে স্থলসীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময় করেছে বাংলাদেশ ও ভারত, যার মাধ্যমে দশকের পর দশক অবরুদ্ধ জীবন কাটানো অর্ধলক্ষাধিক মানুষের মুক্তির পথ আনুষ্ঠানিকভাবে খুলল। ছিটমহল বিনিময়ে স্থলসীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময় হওয়া হাসিনা সরকারের সাফ্যলের মুকুটে আরো একটি নতুন পালক যুক্ত করল। হাসিনা-মোদির মধ্যে সম্পাদিত এই ঐতিহাসিক দলিল বিনিময় সহজেই মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অবিভক্ত ভারতের অংশ থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়। এই চুক্তির ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের অসংখ্য ছিটমহলবাসীর দীর্ঘ ৬৬ বছরের দুর্ভোগের অবসান হলো। নিজ বাসভূমে থেকেও যারা পরবাসী ছিল, তারা সত্যিকার স্বাধীনতার স্বাদ পেল। পেল ভোটাধিকার। এখন তারা বলতে পারবে আমার একটি দেশ আছে, পতাকা আছে, জাতীয় সংগীত আছে। সারা পৃথিবীকে তারা বলতে পারবে_ আমি বাংলাদেশি। ছিটমহলবাসীদের এই অবস্থানটা যদি বঙ্গবন্ধু দেখে যেতে পারতেন তাহলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। যা হোক, আমরা ১৬ কোটি বাংলাদেশি আজ অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা ছিটমহলবাসীদের স্বাগত জানাই। মিয়ানমারে পর ভারতের সঙ্গে জল, স্থলসীমার সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি হয়েছে। জঙ্গি দমনে সরকারের সাফল্যের প্রশংসা করেছে পশ্চিমা দেশসমূহ, জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। শেখ হাসিনার এখন আর পিছনে ফিরে তাকানোর অবসর নেই। তিনি এখন দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে চলবেন শুধু সামনের দিকে। পরিশেষে বলতে চাই, শেখ হাসিনা শুধু বঙ্গবন্ধু কন্যাই নন, তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের কা-ারি, শেখ হাসিনা মানেই উন্নতি। শেখ হাসিনা মানেই শান্তির সুবাতাস। আমার বিশ্বাস একদিন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবেই। প্রফেসর মো. শাদাত উল্লা:উপাচার্য, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৩৯ | false |
rn | জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি "‘কবর তো ইহকাল-পরকালের মাঝে একটা পর্দা মাত্র অন্তত আশীর্বাদের ফোয়ারা। তোমরা অবতরণ দেখেছ এবার চেয়ে দেখ আমার আরোহণ। চন্দ্র-সূর্যের অসত্মাগমন কি বিপজ্জনক? তোমাদের কাছে যেটা অসত্মাগমন, আসলে সেটাই উদয়ন।"জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি,কিন্তু বিশ্ব তাকে সংক্ষেপে রুমি নামে জানে। তিনি ত্রয়োদশ শতকের একজন ফারসি কবি, ধর্মতাত্ত্বিক এবং সুফি দর্শনের শিক্ষক ছিলেন।রুমি যে যুগে জন্মগ্রহন করেন তখন ভয়াবহ এক আলোড়ন চলছিল ।কাব্য-সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি গদ্যও রচনা করেছেন।রুমির মাহাত্ম্য এখানেই নিহিত যে, তিনি অত্যন্ত সরাসরি দৈনন্দিন জীবনাচরণ থেকে উদাহরণ টেনে মহাসত্যকে জীবন্তভাবে উপস্খাপন করতে পেরেছেন। উন্মোচন করেছেন মানবাত্মার রহস্য।রুমি বিশ্বাস করেন, সৌন্দর্য মানব মনের চিরন্তন কাম্য। কেননা আল্লাহ নিজেই সুন্দর এবং তিনি সব সৌন্দর্যের উৎস। আর মানবাত্মার প্রকৃত চাহিদা হচ্ছে খোদ আল্লাহ পাক। যেদিন আমি মরে যাব, আমার কফিন এগিয়ে যাবে সেদিন ভেবো না আমার অন্তর এই ধরাধামে রয়ে গেছে! তোমরা অযথা অশ্রু বিসর্জন দিও না, হাহুতাশ করো না ‘হায়রে লোকটা চলে গেল’ এই বলে বিলাপ করো না। আমার সমাধিকে অশ্রুজলে কর্দমাক্ত করে দিও না। আমিতো মহামিলনের মহাযাত্রার অভিযাত্রী। আমায় কবরে শোয়ালে ‘বিদায়’ জানাবে না, কবরতো ইহকাল-পরকালের মাঝে একটা পর্দা মাত্র অনন্ত আশীর্বাদের ফোয়ারা। তোমরা অবতরণ দেখেছ এবার চেয়ে দেখ আমার আরোহণ। চন্দ্র-সূর্যের অস্তাগমন কি বিপজ্জনক? তোমাদের কাছে যেটা অস্তাগমন, আসলে সেটাই উদয়ন। ( জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি )জালালউদ্দিন রুমি ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান আফগানিস্তানের বালাখে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বাহা ওয়ালাদ ছিলেন সর্বজনবিদিত পণ্ডিত ও সুফি। বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহর ভালোবাসা কিভাবে হাসিল করা যায় তার ওপর অনেক চিত্তাকর্ষক লেখা তিনি লিখেছেন।রুমি ৩ হাজার গজল (প্রেমের গান) রচনা করেছেন। আর এসব গজলের অনেকগুলোর সাথেই শামসের নাম বিজড়িত।২৫ হাজার শ্লোক নিয়ে রচিত তার সঙ্কলনের নাম মসনবি। মসনবি হচ্ছে শিক্ষামূলক নীতিবাক্যের সমাহার। এবং মানুষকে নীতিবোধে উজ্জীবিত করাই এর একমাত্র লক্ষ্য। আজ বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ম্যাডোনা ও তার মতো আরো অনেকে রুমির কবিতাকে গানে রূপ দিয়ে গেয়ে বিশ্বের দরবারে তাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করার প্রয়াস পাচ্ছেন। "বন্ধু আমাদের ঘনিষ্টতা হচ্ছে যেখানেই তুমি তোমার পা রাখবে পদতলে দৃঢ়তার মাঝে আমাকেই অনুভব করবে।" ( জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি )রুমির জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে ১২৪৪ সালে, অর্থাৎ তার বয়স যখন ৪০ বছর। এ বছর তিনি কনিয়ায় একজন অতি আশ্চর্যজনক ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসেন। তার নাম শামস আল-দীন তাবরিজ বা শামস-ই তাবরিজ। তারা দু’জন নিষ্কাম প্রেমের বìধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। শামস রুমিকে আধ্যাত্মিক প্রেমের ব্যাপারে এমন উৎকৃষ্ট সবক দিলেন যা তিনি ইত:পূর্বে কল্পনাও করতে পারেননি। এ অবস্খায় রুমির কাছে শামস যেন সৌন্দর্য ও মহত্বের মূর্ত প্রতিক হয়ে ওঠেন। পাশাপাশি তিনি উপলব্ধি করতে থাকেন, তিনি যেন আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় পাচ্ছেন। এমতাবস্খায় এক দিন শামস নিরুদ্দেশ হয়ে যান। শামস নিহত হয়েছেন বলে গুজব শোনা গেলেও রুমি নিজে তা বিশ্বাস করতেন বলে মনে হয় না। তবে এ থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার, শামসের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার পরই রুমির কলম দিয়ে ঝরনা ধারার মতো কবিতা বেরোতে থাকে। রুমি অবশ্য তার অনেক লেখার মাধ্যমে এ কথা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। "সমস্ত দিনমান ভেবে ভেবে আকুল আমি এখন রাত্রে বলছি শোনো, কোথা থেকে এসেছি আর কেনই বা আমি তার কিছুই জানি না আমার আত্মা এসেছে অন্য কোথাও থেকে, হ্যাঁ আমি নিশ্চিত এবং আখেরে সেখানেই ফিরতে চাই ।" ( জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি ) তিনি ছিলেন প্রখ্যাত সাধক শামস-ই তাবরিজির শিষ্য। মনে করা হয়, খোরাসানের গোত্রীয় বিরোধ কিংবা মঙ্গোলীয় মহাপ্লাবনের কারণে রুমির বাবা খোরাসান থেকে দক্ষিণে কোনিয়ায় চলে যান। সেখানেই রুমির জীবনের অধিকাংশ সময় কাটে। ফার্সি সাহিত্যের অন্য মরমী কবিদের মতো রুমিও তার রচনায় একত্ববাদ বা 'তাওহীদ'বাদকে তুলে ধরেছেন। তার বিশ্বাস_ সংগীত ও কবিতার মধ্যেও স্রষ্টার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করা সম্ভব।বহু ভাষাতেই তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত হয়েছে। বাবার কবরের পাশে তাকে কোনিয়ায় সমাধিস্থ করা হয়। তার সমাধিটি একটি তীর্থস্থানে পরিণত হয়। আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে পারস্য সাম্রাজ্য তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি ছিল। এর বিস্মৃত ছিল বিশাল ভূখণ্ডজুড়ে। আফগানিসত্মান, ইরাক, তুরস্ক এবং উত্তর ভারতের কিছু অঞ্চল পারস্যের সাথে একীভূত ছিল। ইসলামের দ্রুত প্রসারের ফলে পারস্য ইসলামী জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ইতিহাস পর্যালোচনা দেখা যায়, পৃথিবীর জ্ঞানী গুণীদের একটি বড় অংশের জন্ম হয়েছে এ অঞ্চলে। ইবরাহীম আদহাম, শাকীক বালখী, ফাজেল ইবনে আয়াজ, বায়েজীদ বোসত্মামী, হুসাইন, ইবনে মনসুর হাললাজ, আবু আলী ইবনে সিনা, আবু নাসর শিরাজ তুসী, উসমান হিজভিরী গাজনাভী, ইমাম আবু হামেদ গাজ্জালী , আবদুর কাদের জিলানী, শেখ ফরিদউদ্দীন আত্তার নিশাপুরী, মাওলানা জালালউদ্দীন রম্নমী, খাজা হাফেজ শিরাজী, আবদুর রহমান জামী প্রমুখ অন্যতম। তারা তাদের মহৎ কাজ ও সৃষ্টির মাঝে আজো বেঁচে আছেন। এই মহা মনীষীদেরই একজন ফারসি কবি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী। | false |
fe | মধ্যপন্থিদের স্বরূপ ও বিভ্রান্তির ঘরদরজা মধ্যপন্থিদের স্বরূপ ও বিভ্রান্তির ঘরদরজা ফকির ইলিয়াস======================================মৌলবাদী ডানপন্থিদের সহজে চেনা যায়। কিন্তু মধ্যপন্থিদের খুব সহজে চেনা যায় না। জানা যায় না তাদের প্রকৃত মতলব। এরা নিজেকে খুব রহস্যময় করে রাখতে চায়। লুকিয়ে থাকে। কখনও প্রগতিবাদী, আবার কখনও পতিতদের সঙ্গে উঠাবসা করে। সবই করে নিজেদের হীন স্বার্থের জন্য। এই স্বার্থ মৌলবাদের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এই দীনতা কলুষিত করতে চায় সমাজকে। প্রজন্মের প্রত্যয়ে আঘাত হানার চেষ্টা করে। এরা বিভ্রান্ত করতে চায় গোটা ইতিহাসকে।এই বিভ্রান্তবাদীদের প্রচেষ্টা বাংলাদেশে নতুন নয়। এরা বারবার হীন চেষ্টা করেছে। এখনও করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মহান মুক্তি সংগ্রামকে নিয়ে তাদের যত গা-জ্বালা। কারণ তারা একাত্তরে পরাজিত হয়েছিল। বাংলার মানুষ তাদের হারিয়ে দিয়েছিল। সেই বেদনা তারা এখনও ভোলেনি। তাই ডিসেম্বর মাস এলেই তারা নানা মিথ্যার বেসাতি ছড়ায়। নানাভাবে বলতে চায়, পাকিস্তানের অখন্ডতাই ছিল শান্তির আবাসস্থল। কী সাংঘাতিক কথাবার্তা!এরা ইতিহাস বিকৃত করার জন্য নানা মিথ্যা, উদ্দেশ্যমূলক, বানোয়াট তথ্য ও অনুমান হাজির করে। বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে চায়। শহীদদের পবিত্র রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করার ধৃষ্টতা দেখায়। খুব কৌশলে নানা কথা বলে। এসব রাজাকারদের সৌভাগ্য, তারা এখনও বাংলার মাটিতে অবস্থান করে মিথ্যা অপপ্রচার করতে পারছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে এদের বিচার যদি অনেক আগে সম্পন্ন করা যেত তবে তারা এমন কথাবার্তা চলতে পারত না। সেটা আমরা পারিনি। আর পারিনি বলেই তারা মহান বুদ্ধিজীবী দিবসে, মহান বিজয় দিবসে নানা মিথ্যা কথা লিখছে। নানান ধুয়া তোলে আলোচনার নামে প্রকারান্তরে পাকিস্তানি হায়েনাদের পক্ষে সাফাই গাইছে।ঘাতক রাজাকারদের মুখপত্র বলে পরিচিত 'দৈনিক সংগ্রাম' পত্রিকায় গেল ১৪ ডিসেম্বর ২০০৯ সোমবার একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে। ওই সম্পাদকীয়তে অত্যন্ত নির্লজ্জ মিথ্যাচার করা হয়েছে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের বিষয়ে।লেখাটিতে যা বলা হয়েছে তার স্পষ্ট অর্থ হচ্ছে এই, পাকিস্তানের বশ্যতা স্বীকার করে যেসব বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশে থেকে গিয়েছিলেন, তারাই নাকি হত্যার শিকার হন। যারা ভারতে পালিয়ে যাননি, তাদের নাকি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতীয় 'র' এর এজেন্ট, ভারতীয় কমান্ডো বাহিনী এসে হত্যা করে। কি চরম মিথ্যাচার! কত বড় পাষন্ড হলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে এমন মিথ্যাচার করে সম্পাদকীয় লেখা যায়।আমাদের মহান বিজয়ের ৩৮ বছর পর এসব কিসের আলামত? কারা এই প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার জন্য মাঠে নেমেছে? তাদের এজেন্ডা কি? তারা এমন সাংঘাতিক মিথ্যাচার কেন করছে?সবচেয়ে বেদনার কথা হচ্ছে, এসব রাজাকার হোতাদের মদদ দিচ্ছে এদেশের একটি বিভ্রান্ত মধ্যপন্থি শ্রেণী। যারা মুখে বললেও, মনেপ্রাণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি, একাত্তরের একজন সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানকে আসন দেয়ার জন্য পাঁয়তারা করে। সব সত্য ইতিহাসকে মিথ্যা বানাতে চায়।দুই.বাংলাদেশে মধ্যপন্থিদের প্রধান এবং শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে ডানপন্থি মৌলবাদীরা। কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা 'মানবতা', 'আধ্যাত্মিকতা' এবং 'বিবর্তন' এর লেবাস পরে মূলত ডানপন্থি মৌলবাদীর পক্ষে কাজ করে যান। তারা ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মপালন না করলেও আড়ালে-আবডালে ধর্মের ধ্বজা ধরে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াসী হন। এসব 'আধুনিক চিন্তার' ঝান্ডাধারীরা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে রাজাকার-আল-বদরদের ইচ্ছাকেই বাঁচিয়ে রাখতে নানাভাবে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।আমরা দীর্ঘদিন থেকে শুনছি, একটি মহল বলে আসছে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হননি। এ নিয়ে তারা নানা খোঁড়াযুক্তি দাঁড় করার প্রয়াসও দেখিয়েছে, এখনও দেখাচ্ছে। আর এদের সমর্থন করছেন বুকে লাল-গোলাপধারী স্যুট-টাই পরা এক ধরনের বুদ্ধিজীবী। এরা কারা? যারা একাত্তরের রাজাকারদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এখনও তৎপর তারা তো মূলত মহান বিজয়ের বিপক্ষেরই লোক। বাংলার মানুষ এদের বিশ্বাস করবে কীভাবে? করা কী উচিত?একাত্তারের নরঘাতক গোলাম আযম প্রকাশ্যে বলেছে, ওই সময় রাজাকার বাহিনী তৈরি করা না হলে নাকি পূর্ব পাকিস্তানের পাঁচ কোটি মানুষকেই প্রাণ দিতে হতো। যারা একাত্তর দেখেছেন, তারা কি তার এই তত্ত্বটি মানবেন?প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বলতে পারি, রাজাকাররা পাকিস্তানি বাহিনীর 'খোশ তোয়াজ' করা ছাড়া আর কোন মহৎ (!) কাজই করেনি। পাকিস্তানি বাহিনীর ছত্রছায়ায় তারা লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, ব্যাভিচারের মতো জঘন্য কাজের পাহারা দিয়েছে। তাদের প্রভুদের মনোরঞ্জন করেছে। এখন তারা বলছে, তারাই নাকি ছিল মাতৃভূমির রক্ষক। ভন্ডামি আর কা'কে বলে !বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সর্বাত্মক প্রস্তুতি যখন চলছে তখন সেইসব ঘাতক আল-বদররা বলছে, তারা নাকি তা রাজপথেই মোকাবেলা করবে। লাখো শহীদের রক্তে ভেজা বাংলার রাজপথটি যেন তাদের তালুকের সম্পত্তি। অথচ এই রাজপথে এখনও বাংলার অধিকার- কামী মানুষ সহস্রগুণ সোচ্চার রয়েছেন।স্বাধীনতাবিরোধী এই চক্রটি এখন বলে বেড়াচ্ছে, বিজয়ের মূল লক্ষ্য- অর্থনৈতিক মুক্তি সাধিত হয়নি। যদি এর পেছনে ফিরে তাকানো যায় তবে দেখা যাবে, অর্থনৈতিক মুক্তির প্রধান অন্তরায় হয়েছে বাংলাদেশে সামরিক জান্তাদের শাসন। যা ক্রমশ ঘাতক দালালদের রাজনীতিকে পুনর্বাসিত করেছে। দেশে মৌলবাদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ধর্মের দোহাইয়ের নামে জঙ্গিবাদী তৈরি করেছে। সন্ত্রাসীদের প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছে। এই অপতৎপরতা বাঁচিয়ে রাখতে এখনও তারা কাজ করে যাচ্ছে নিরন্তর। তাদের স্বপ্ন বাংলাদেশেও 'তালেবানি শাসন' কায়েম হবে।মধ্যপন্থিরা, বাংলাদেশে বিভ্রান্তির ঘর দরজা তৈরি করতে চাইছে খুব কৌশলে। এজন্য তারা স্যুট-টাই পরা কিছু এজেন্টও নিয়োগ করেছে মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা দিয়ে। যেসব তাত্ত্বিকরা সময়ে-সুযোগে জাতীয় সঙ্গীত, রাষ্ট্রীয় ভাস্কর্য, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালির জাতিসত্তার চেতনা, বাঙালি সংস্কৃতির শিকড় প্রভৃতির বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। নগ্ন মিথ্যাচার করছে। তারা প্রজন্মকে উপদেশবাণী শোনাচ্ছে- 'নিরপেক্ষ' ব্যক্তিদের কাছ থেকে সঠিক ইতিহাস জানার। এই 'নিরপেক্ষ' ব্যক্তিগুলো কারা? একাত্তরে কোন দেশপ্রেমিক বাঙালিই নিরপেক্ষ ছিলেন না। ছিলেন জন্মমাটির পক্ষে। আর বিপক্ষে ছিল আল-বদর,রাজাকার ও আল-শামসরা। এই নিরপেক্ষতার ধুয়া যারা তুলতে চায় এরাও রাজাকারের উত্তরসূরি, বিষয়টি প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে।নিউইয়র্ক, ১৬ ডিসেম্বর ২০০৯ ------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ। ঢাকা। ১৮ ডিসেম্বর ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- সাফিন ওমর | false |
fe | নয় কেন_ বেগম খালেদা জিয়া আপনিও পারেন জলস্ফীতি বাড়ুক। ভাসিয়ে নিয়ে যাক আমাদের সব ব্যর্থতা। মুছে নিয়ে যাক সবগুলো পুরনো রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। এই পিলখানায় যারা মানুষ খুন করে উল্লাস করেছে , এরা এই দেশের মিত্র নয় । মিত্র নয় শেখ হাসিনার - খালেদা জিয়ার ও । আমার মনে হচ্ছে , দুচারজন তৌহিদ ই ফেঁসে যেতে পারে। বেঁচে যাবে নেপথ্যের নায়কেরা। এখন পর্যন্ত অবস্থা সেভাবেই গড়াচ্ছে। গোয়েন্দাদের ঝুলিতে কি তথ্য জমা হচ্ছে , তা জানলেই দেশবাসী কিছুটা হয়তো জানতে পারবেন - কে ছিল , কেন ছিল এর নেপথ্যে ! বেগম জিয়া এই পর্যন্ত যা বলেছেন , তাতে অনুমান করা খুবই সহজ -তাঁর কাছে অনেক তথ্য আছে । প্রধানমন্ত্রী ও সে আহ্বান জানিয়েছেন । তিনি তাণনর কাছে তথ্যগুলো সরকারকে , তদন্ত কমিটিকে জানাতে পারেন। তা জানালেই দেশবাসী বেশী উপকৃত হবে । Click This Link রিপোর্ট : ভোরের কাগজ / ৮ মার্চ ২০০৯ পিলখানা ট্র্যাজেডির আগের ও পরের বহু তথ্য খালেদার কাছে, নানা প্রশ্ন ----------------------------------------------------------------------- কাগজ প্রতিবেদক : পিলখানায় নারকীয় হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের বহু অজানা তথ্য রয়েছে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে। ওইদিন বাইরের কিলারদের বিডিআরের পোশাক পরিয়ে বিডিআর সদর দপ্তরে ঢোকানো, সেনা কর্মকর্তা হত্যা, লুটপাট, নারী নির্যাতন, পুড়িয়ে মারা, পরে উদ্ধারকৃত এক সেনার স্ত্রীর আত্মহত্যা, চারজন কিলারকে বিমানে দেশত্যাগ করায় সহযোগিতার মতো ঘটনার তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ২৫ ফেব্রুয়ারি স্মরণকালের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের আগের-পরের তার দেয়া নানা তথ্যই এখন গোলটেবিল, টক-শোসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যমে যেসব তথ্য এখনো প্রকাশ হয়নি সেসব অজানা তথ্য এখন খালেদা জিয়ার হাতে। একের পর এক সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ থেকে সেনা হত্যাকাণ্ডের এসব কাহিনীর বর্ণনা শুনেই বিহ্বল, হতবাক ও মুহূর্তেই শিউরে উঠছেন দেশবাসী। আর নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার দেয়া তথ্যেই। প্রশ্ন উঠেছে, পিলখানা ট্র্যাজেডির আগের নানা ধরনের হুঁশিয়ারি এবং পরের ঘটনার মিল রয়েছে অনেকাংশে। তাহলে কি তিনি ঘটনাবলীর বিষয়ে আগে থেকেই অবগত? এ প্রশ্ন আরো জোরালো হয়েছে গত বৃহস্পতিবার বিএনপি আয়োজিত শোক মিছিলের আগে খালেদা জিয়ার বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, বাইরে থেকে কিলার এনে বিডিআরের পোশাক পরিয়ে তাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর অনেক মেধাবী ও দক্ষ অফিসারকে এক জায়গায় এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিলারদের পালিয়ে যেতে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সহযোগিতা করেছে। এদেশের মানুষ এমন বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শুধু দেশের নয়, বিদেশী চক্রান্তকারীরা পিলখানার ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তিনি আরো বলেন, বিডিআর সদর দপ্তরে নারীরা নির্যাতিত হয়েছে। একজন শহীদের স্ত্রী নির্যাতিত হয়ে উদ্ধার পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে তার কাছে তথ্য রয়েছে। এদিকে ২৫ ফেব্র“য়ারি বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহ চলাকালে খালেদা জিয়ার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে তিনি খালেদা জিয়ার কাছেই প্রশ্ন রেখে বলেন, মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতা ওই দুদিন কোথায় ছিলেন? আমরা তা জানি। বলবো? শেখ হাসিনা আরো বলেছিলেন, আমি আজ (২ মার্চ) সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে গিয়েছিলাম। সেখানে যে দাবি উঠেছে, এখানে (সংসদে) বিরোধী দল সেই সুরেই কথা বলছে। ওই সময় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ উত্তর দিতে চাইলে খালেদা জিয়া নিজেই বারণ করেছেন হুইপকে। ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে তিনি ছিলেন না বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। ২৫ ফেব্র“য়ারি গুলশানের কার্যালয়ে নিত্যদিনের মতো সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আসার কথা থাকলেও তিনি এসেছেন বেলা পৌনে ১টায়। সেখানে ডেকে এনেছিলেন সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) হান্নান শাহকে। দলীয় বিবৃতি দিয়েছেন তার প্রেস সহকারী-২ মারুফ কামাল খান সোহেলকে দিয়ে। এদিকে নারকীয় হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে বিএনপি দলীয় সিনিয়র নেতাদের নানামুখী বক্তব্যও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নারকীয় হত্যাকাণ্ডে যখন দেশবাসী কাতর তখন বিরোধীদলীয় নেতার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা বিতর্কিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ‘শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের’ ‘কিছু প্রাণী’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ওইদিন কিছু প্রাণী প্রাণ হারিয়েছে। এই নেতাকে নিয়েই প্রতিবেশী দেশের সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার। শোক মিছিলে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর টিভি টকশোতে অতিথিরা তার বরাত দিয়েই বলেছেন পিলখানার ট্র্যাজেডির কথা। অতিথিরা বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী ও ক্যান্টনমেন্টেই বসবাসকারী এই নেতার কাছে আরো তথ্য রয়েছে। যা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কাজে লাগতে পারে। নানা মহলেই এখন প্রশ্ন যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতো বড় ইস্যু জাতির সামনে এসেছে তখনই তার চেয়ে বড় ইস্যু এসে সামনে হাজির হয়েছে ২৫ ফেব্র“য়ারি। নিত্যদিনের গোলটেবিল ও টক-শোয় আলোচনার ঝড় বইছে। জ্বলন্তকোনো ঘটনাকে আড়াল করতে বা সেদিক থেকে দৃষ্টি অন্যত্র সরাতে আরো বড় ঘটনার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেই যে পিলখানার ঘটনা ঘটানো হয়নি, তা কে বলতে পারে? সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ৮:৩৭ | false |
rg | কিভাবে পালাকার নাট্যদল গঠিত হল_ কিছু সত্য কথন। পর্ব দশ। রেজা ঘটক ২০০২ সাল। আমরা তখন কাঁঠালবাগানের আমিন নিলয়ের বাসিন্দা। আমরা মানে আমিনুর রহমান মুকুল, আলী আহমেদ মুকুল (ছোট মুকুল), সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, অজয় দাস, রিয়াজুল হক শিকদার, রেজাউল কবীর নাছিম, বসনিয়ান হ্যারি, ঐতিহাসিক মনি'দা, শেষের দিকে পুলক বিশ্বাস। তো ছোটো মুকুল আলাদা বাসায় চলে গেল। তখন আজিজ সুপার মার্কেটে দুই মুকুলের 'কীর্তি' নামে একটা প্রতিষ্ঠান ছিল। বিকালে অনেক সময় আমরা র্কীতি'র অফিসে গিয়েও আড্ডা মারতাম। একদিন আমিন নিলয়ে মুকুলের সাথে আসলো সোহাগ। আলিম আল রাজি (সোহাগ) আমার ভাইগ্না। আইসা দেখে নয়ন, হ্যারি, অজয় আর আমি গাঁঞ্জা ভাইয়া টাল। সোহাগ জিগাইলো, মামু, তুমি মুকুলের লগে মিশলা কেমনে? জিগাইল, ক্যান? কোনো সমস্যা? সোহাগ কইলো, মুকুল তো আমার বন্ধু, ও আবার তোমারও বন্ধু। দুনিয়াডা বড় ছোট্টরে মামু। সোহাগরে আড়ালে ডেকে নিয়া জিগাইলাম, আর কোনো সমস্যা? সোহাগ কইলো, আমাগো বন্ধুদের মধ্যে কেবল মুকুলই গাঁঞ্জা খায়। হের লগে তোমার বন্ধুত্ব? ভালোইতো? সোহাগরে আবারো জিগাইলাম, এছাড়া আর কোনো সমস্যা? সোহাগ জবাবে কইলো, না, মুকুল এমনিতে ছেলে ভালো। আর কোনো অসুবিধা নাই। তুমি, মামু এই জিনিস ধরলা কবে? কইলাম, এইডা তো কাদেরের আমলের কথা। সোহাগের বাবার নাম কাদের। আমার দুলাভাই। ভাইগ্নার কাছে কোনো কিছুতে ধরা খাইলেই আমি সব সময় কাদের দুলাভাইরে টাইনা আনি। সোহাগ কইলো, না মামু, কও না তুমি কবে থাইকা খাও? কইলাম, কাদের-ইতো আমারে ইহা খাওয়া শিখাইলো, এখন হের পোলারে কেমনে কই? সোহাগ আর আগায়নি। বাপের ইজ্জ্বত লইয়া টানাটানি আরকি। সোহাগ তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটকের উপর পড়াশুনা শেষ করে এমফিল করছিল। সম্প্রতি সোহাগ পৃত্র সন্তানের জনক হয়েছে। তো, আমরা কিছুক্ষণ আমিন নিলয়ে আড্ডা মেরে আজিজে গেলাম। পালাকারের দাপ্তরিক কাজ কারবার তখন ওই 'কীর্তি'তে হতো। যেমন চিঠি টাইপ করা, বা লোগো বানানো, বা ব্যানার বানানো, বা কোনো কিছু প্রিন্ট দেওয়ার মামলা থাকলে সব মুকুলের সেই অফিসে করতাম আমরা। সেদিন থেকে বন্ধু মুকুল থেকে আমি হয়ে গেলাম মুকুলের মামু। কারণ, আমি সোহাগের যে মামু এটা মুকুল জানতো না। সেই থেকেই আমরা পরস্পর পরস্পরকে 'মামু' ডাকি। সোহাগকেও মুকুল পালাকারে আসার ব্যপারে বলেছিল। কিন্তু সোহাগ একটা এনজিওর চাকরি আর এমফিলের ঝামেলা রেখে আর আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি। তবে পালাকারের সকল খবরাখবর আর মুকুলের সর্বশেষ আপডেট সোহাগ আমার মাধ্যমেই পেতো। সোহাগদের বাড়ি বাগেরজাটের রামপাল। ওদের বাড়ির রান্নাঘরে বসে খেতে খেতে হরিণ দেখা যায়। ওদের বাসার ঠিক লাগোয়া খাল। খালের ওপারেই সুন্দরবন। সোহাগ নাটকের উপর পড়াশুনা করলেও এনজিও'র চাকরি করতে গিয়ে ক্রিয়েটিভিটি সব খুইয়েছে। এখন পোলার বাপ। সেই হিসেবে আমি এখন নানা। বয়স তো কম হল না। তাই এই লেখায় আগের কথা কখনো পরে আসছে, পরের কথা কখনো আগে আসছে। এর লাই আপনেরা আবার মাইন্ড খাইয়েন না, ভাইজানেরা। খোকন কায়সারের একটা বিখ্যাত ডায়লগ মনে পড়ে গেল। খোকন ভাই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার আগেই আমাকে ফোন করতো। বলতো, ভাইজানেরা, আছেন ক্যামুন? মুই তো একটু গঞ্জে আইতাছি। আন্নেরা কি ঢাহায় আছেন? নাকি গেরামে গ্যাছেন গিয়া? খোকন কায়সার পালাকারের ফাউন্ডারদের একজন। আমিন নিলয়ের পরে আমরা কাঁঠালবাগানের বাজারের সাথে ১৯ নাম্বারে যখন উঠলাম, তখন খোকন ভাই ভাবীকে চট্টগ্রাম রেখে আমাদের সঙ্গে পুরাই ব্যাচেলর মাল হিসেবেই ছিলেন। শাহবাগের বাংলাদেশ বেতারে খোকন ভাইয়ের অফিস। সম্প্রতি ডিডি হয়েছেন। কিছুদিন কক্সবাজারের বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্রের প্রধান ছিলেন। এখন বান্দরবনে বাংলাদেশ বেতারের আঞ্চলিক প্রধান। খোকন ভাই পটুয়াখালীর মানুষ। দীর্ঘদিন চট্টগ্রামে থাকার কারণে এখন পুরাই চাঁটগাই। আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় বরিশালী টান যেমন থাকে, তেমনি চাঁটগার মিশ্রণে মিলিয়ে এক অন্য সুরসুরি তৈরি করেন। ভাইজানেরা, গঞ্জে আইলাম। রাজধানী ঢাকায় আসা মানে খোকন ভাইয়ের কাছে গঞ্জে আসার মতো ব্যাপার। হাট শেষে আবার ফিরে যান। এখন খোকন ভাই কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ নিয়ে একটা মজার উপন্যাস লিখছেন। ধারাবাহিক ছাপা হচ্ছে কানাডা থেকে একটি অনলাইন পত্রিকা নতুনদেশে। সোনাদিয়ার টোটাল মজাটা খোকন ভাই'র উপন্যাসে পাওয়া যাচ্ছে। মুকুল জেলেদের জীবন নিয়ে একটা সুন্দর নাটক লিখেছিল। ওটা চট্টগ্রামের সম্ভবত অরিন্দমের প্রযোজনা। জলকন্যা না মৎস্যকন্যা কি যেনো নাম? আহারে বয়স? বয়স বাড়লে মেমোরি একটু আধটু বিট্টে করে। আমার সমস্যা হল, জীবনের কোনো ঘটনাই আমার কাছে ফেলনা মনে হয় না। গাঁজা খাওয়া। আড্ডা মারা। নাটক করা। গান করা। বিচি চুলকানো। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ও প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হাবিবুর রহমান (শেলী) কইতেন, বিচি চুলকাতে নাকি ভারি মজা। কথাটা মিথ্যে না। যখনই সময় পাবেন, কোনো কাজ না থাকলে বিচি চুলকাবেন, ভাইজানেরা।। | false |
mk | মার্চ এবং বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের ‘পথে’ অগ্রসর হয়েছিল, সেই পথে ‘উত্তরণে’ ‘পাথেয়’ ছিল ১৯৭১ সালের ২ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে পরিচালিত ‘অসহযোগ আন্দোলন’। এই ধারণাটির বিন্যাস আমরা এভাবেও করতে পারি- লক্ষ্য স্বাধীন বাংলাদেশ, পথ মুক্তিযুদ্ধ, পাথেয় অসহযোগ আন্দোলন। বস্তুতপক্ষে ধর্মীয় উপনিবেশ পাকিস্তানের গর্ভ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সঙ্গে নির্বাচনের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মুক্তিযুদ্ধে উত্তরণে অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটও গড়ে উঠেছে এই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তথা সেনানায়কদের অক্ষমতার মধ্য থেকে। এই নির্বাচনের ফলাফলের মধ্য দিয়ে ধর্মের নামে অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতন থেকে বাঙালিদের মুক্তির আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হয়েছিল।১৯৭১ সালের মার্চে ধর্মীয় উপনিবেশ পাকিস্তানের সামরিক শাসকের স্বেচ্ছাচারী ঘোষণার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সংঘটিত অসহযোগ আন্দোলন এবং এর পঞ্চাশ বছর আগে ব্রিটিশ উপনিবেশের অঙ্গীভূত ভারতে ১৯২০-২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকলেও অন্যান্য অনেক কিছুর সঙ্গে একটি মিল লক্ষ্য করা যায়। আর তা হলো এই দুটি অসহযোগ আন্দোলনই হয়েছিল বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে। ১৯২০-২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের মূল নেতা ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। আর ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে সংঘটিত অসহযোগ আন্দোলনটি হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে এবং তার নেতৃত্বে। ১৯২০ সালের জুলাই মাসে সিন্ধু প্রদেশে আহ‚ত খিলাফত সম্মেলনে মহাত্মা গান্ধী (তৎকালীন) ভারতের ৭ কোটি মুসলমানদের সাহায্যের জন্য ২৩ কোটি হিন্দু জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং সমবেত সদস্যদের প্রতিশ্রæতি দেন যে, যদি ভারতীয় জনগণ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেন, তা হলে ভারতবাসী এক বছরের মধ্যেই ‘স্বরাজ’ লাভ করবে। এখানে উল্লেখ্য, বাংলার কতিপয় বিশিষ্ট নেতা এবং মুহম্মদ আলী জিন্নার বিরোধিতা সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে গান্ধীর প্রস্তাব গৃহীত হয়। মুসলিম লীগের সভাপতি জিন্নাহ অবশ্য পরে স্বীকার করেছিলেন যে, সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ নীতি গ্রহণ করা ছাড়া সে সময় আর কোনো পথই খোলা ছিল না। যদিও তিনি গান্ধীর পরিকল্পনার প্রতি বিশেষ আস্থাবান ছিলেন না। কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার ২৬ বছর পর ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ছেড়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকেরা চলে গিয়েছিল। ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামের একটি কৃত্রিম রাষ্ট্রে বাঙালিরা তাদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছিল। কিন্তু এর মধ্যেও অর্থাৎ ১৯২১ থেকে ১৯৪৭ এর মধ্যে বাঙালির রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় অনেক ঘটনা এবং দুর্ঘটনা ঘটেছে।উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের পদত্যাগের পর জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের শাসনামলে ‘লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক অর্ডারে’র ভিত্তিতে সমগ্র পাকিস্তানব্যাপী প্রথমবারের মতো সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের এবং ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ৬ দফার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়ী হয়ে ৩১৩ আসনবিশিষ্ট পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় ২টি আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হন। একটি কেন্দ্রে প্রাদেশিক কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান খাজা খায়েরউদ্দিন এক লাখেরও বেশি ভোটে বঙ্গবন্ধুর কাছে পরাজয়বরণ করেন। প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ৩০০ আসনবিশিষ্ট পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের ২৮৮টি আসন লাভ করে আওয়ামী লীগ, অবশিষ্ট ১২টি পায় অন্যান্য দল। পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমানের পাকিস্তানে) জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপলস পার্টি জয়ী হয়। তারা জাতীয় পরিষদের ১৪৪টি আসনের মধ্যে ৮৮টিতে জয়লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ এবং পশ্চিম পাকিস্তানে পিপলস পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও কেউই নিজ অঞ্চল ছাড়া অন্য অঞ্চলে একটি আসনও পায়নি। এ নির্বাচনে বস্তুতপক্ষে পাকিস্তান সৃষ্টির আদর্শিক মতবাদের পরাজয় হয়। বাঙালিরা ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে প্রত্যাখ্যান করে। কৃত্রিমতার যুক্তি ও সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি দ্বারা প্রণীত ‘দ্বি-জাতি তত্ত্বের’ ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রটি মানবতার কাছে পরাভূত হয়। জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে দলের বিরাট সাফল্য ও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর ৯ ডিসেম্বর এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর ১৯ ডিসেম্বর ১৯৭০ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বক্তব্য ও বিবৃতি প্রদান করেন। তিনি এ বিজয়কে ঐতিহাসিক বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করেন।১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে জনসভা আহ্বান করা হয়। বিশাল জনসভায় সব জাতীয় পরিষদ সদস্য ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের শপথ করান বঙ্গবন্ধু। এখানে তিনি কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। এ সময় তিনি কড়া ভাষায় ছয় দফার সঙ্গে বেঈমানি না করার জন্য আওয়ামী লীগের সব নির্বাচিত সদস্যদের হুঁশিয়ার করে দেন। বিশাল জনতা তুমুল হর্ষধ্বনি, স্লোগান ও হাত তুলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে স্বাগত জানান। ষড়যন্ত্র ঘনীভূত হতে থাকে।ঢাকায় জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন আহ্বান করা হয়। তবে সব অপকৌশল অবলম্বন করে ভুট্টো ইয়াহিয়াকে বাধ্য করেন শেষ মুহ‚র্তে অধিবেশনে মূলতবী ঘোষণা করার জন্য। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ বেলা ১টা ৫ মিনিটে ইয়াহিয়া স্বয়ং রেডিও পাকিস্তানে ঘোষণা করেন- জাতীয় পরিষদের ঢাকা অধিবেশন স্থগিত করা হলো। ইয়াহিয়ার বিবৃতির কার্যকর বিষয়টি ছিল এই যে, ‘জাতীয় পরিষদের বৈঠক পরবর্তী কোনো তারিখ পর্যন্ত স্থগিত করার’ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ওই স্থগিত ছিল অনির্দিষ্টকালের জন্য। বিবৃতিতে এর কারণ হিসেবে বলা হয় যে, ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রের মূল বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কোনো সর্বগ্রাহ্য সাধারণ মত গড়ে ওঠেনি। বেতার ঘোষণাটি যারা শুনছিলেন তাদের প্রতিক্রিয়া হলো নিদারুণভাবে অপমানিতের। সংক্ষিপ্ত বিবৃতিটিতে যা বলা হলো তার চেয়ে বড় প্রকাশ্য অবমাননা বাঙালি জনগণের জন্য আর কিছু হতে পারতো না।ইয়াহিয়ার ঘোষণা শোনার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আওয়ামী লীগ দলীয় সব পরিষদ সদস্যকে বেলা ৩টায় হোটেল পূর্বাণীতে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দিলেন। বলা হলো- সেখানে তিনি ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার ওপর পরিষদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। আওয়ামী লীগের গণপ্রতিনিধিরা বেলা ৩টার মধ্যেই হোটেল পূর্বাণীতে সমবেত হলেন। দলীয় নেতৃবৃন্দ পরিবেষ্টিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এলেন ৩টা ২০ মিনিটে। পরিস্থিতি ছিল তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ। বাইরে জড়ো হয়েছিলেন শত শত বিদেশি সাংবাদিক। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন, ‘…কেবল সংখ্যালঘু দলের ভিন্নমতের কারণে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়া হয়েছে এবং জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। …আমরা জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের প্রতিনিধি এবং আমরা এটা বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে দিতে পারি না।’বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন। পরবর্তী ছয় দিনের জন্য আন্দোলনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হলো। এতে ছিল- পরদিন ঢাকায় হরতাল, ৩রা মার্চ সারা দেশে হরতাল এবং ৭ মার্চ ঢাকায় জনসভা।১৯৭১ সালের ৩ মার্চ অধিবেশন বসার কথা ছিল। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অধিবেশন বন্ধ করার প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকা শহরে হরতাল পালিত হয়। ৩ মার্চ বুধবার সারা দেশে হরতাল পালিত হয়। ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ দৈনিক সংবাদে হরতাল পালনের খবর এভাবে দেয়া হয়-‘সর্বাত্মক হরতাল এবং আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিব কর্তৃক সরকারি কর্মচারীদের অফিস-আদালতে যোগদান না করার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে অচল হইয়া পড়িয়াছে। পূর্ব পাকিস্তান সেক্রেটারিয়েট, হাইকোর্ট, স্টেট ব্যাংকসহ প্রদেশের সব কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারি অফিস বন্ধ থাকে। সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকে। যোগাযোগের সব মাধ্যম যানবাহন, বিমান সংস্থা, রেলওয়ে, স্টিমার, লঞ্চ, বাস, ট্যাক্সি সবকিছু অচল থাকে। বেলা ২টার পর হরতালের মেয়াদ উত্তীর্ণ হইলে কেবলমাত্র বেসরকারি যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হইয়াছে। ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, স্টক এক্সচেঞ্জ ও অন্যান্য অর্থকরী সংস্থার কাজ বন্ধ রহিয়াছে।’হাসপাতাল, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ প্রতিষ্ঠান, বেতার, টেলিভিশন ও অন্যান্য জরুরি সার্ভিস চালু থাকে। শান্তিপূর্ণ অহিংস অবস্থায় অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার জন্য জনসাধারণের প্রতি বঙ্গবন্ধু যে আহ্বান জানিয়েছেন তার পর হতেই সাধারণভাবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছিল। স্বাধিকার আন্দোলনকে শান্তি ও শৃঙ্খলার সঙ্গে এগিয়ে নেয়ার স্বার্থে ঢাকা শহরের প্রতিটি মহল্লায়, আবাসিক এলাকা, কলোনি, বস্তি ও বাণিজ্যিক এলাকায় সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়েছে। এসব সংগ্রাম কমিটি, বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী, আনসার বাহিনী, বিভিন্ন সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান, পাঠাগার, ক্লাব প্রভৃতি সম্মিলিতভাবে সর্বক্ষণ বিশেষত সারা রাত্রিব্যাপী নিজ নিজ এলাকায় কড়া প্রহরা চালিয়ে যাচ্ছিল। সচেতন ছাত্র, শ্রমিক, ব্যবসায়ী তথা আপামর জনসাধারণের এই সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণের ফলে সমাজবিরোধী, দুষ্কৃতকারী, গুণ্ডা, বদমায়েশ ও প্রতিক্রিয়ার দালালদের দুষ্কর্মের প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছিল। শহরবাসী জনসাধারণ বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক ঘোষিত প্রতিদিনের কর্মসূচিকে অত্যন্ত শৃঙ্খলার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। প্রতিটি মিছিল, সভা ও সমাবেশ এর ফলে রাজনৈতিকভাবে আরো জঙ্গিরূপ ধারণ করছিল।৬ই মার্চ ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে লে. জেনারেল টিক্কা খানের নাম ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দপ্তর থেকে ৭৪ নম্বর সামরিক আইন বিধি বলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাঁচজন সেনা কমান্ডারকে বিভিন্ন অঞ্চলের সহকারী প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। প্রশাসকরা হলেন- ‘খ’ অঞ্চল- মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা, ‘গ’ অঞ্চল- মেজর জেনারেল এ এ কে নিয়াজী, ‘ঘ’ অঞ্চল- মেজর জেনারেল এম রহিম খান, ‘ঙ’ অঞ্চল- মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ এবং ‘চ’ অঞ্চলে- মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ।৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা। এই ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে শৃঙ্খল মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ঘোষণা করেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। …এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। …রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’তিনি (বঙ্গবন্ধু) শত্রুর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান এবং ইয়াহিয়া খানের সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। প্রকৃত পক্ষে ৭ মার্চ প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা। একদিকে জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশ যেত, অপর দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কস্থ বঙ্গবন্ধুর বাসভবন থেকে তিনি নির্দেশ দিতেন। বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে চলতেন। অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমা, স্কুল-কলেজ, গাড়ি, শিল্প কারখানা সবই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনেছে। ইয়াহিয়ার সব নির্দেশ অমান্য করে অসহযোগ আন্দোলনে বাংলার মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ব্রিটেনের দৈনিক সংবাদপত্র ইভিনিং স্টান্ডার্ড-এ পরিবেশিত সংবাদটি এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য,Sheikh Mujibur Rahaman now appears to be the real boss of East Pakistan, with the complete support of the population…Rahaman’s home in Dhanmondi, already known as Number 10 Downing Street in imitation of the British Prime Minister’s residence-has been besieged by bureaucrats, politicians, bankers, industrialists and people from all walks of life.মূলত ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। ১৬ মার্চ ঢাকায় ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয়। ২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর সন্ধ্যায় ইয়াাহিয়ার ঢাকা ত্যাগ। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা রাইফেল সদর দপ্তর ও রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টার।বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন :This may be my last message; from to-day Bangladesh is independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.অর্থাৎ এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।এই ঘোষণা বাংলাদেশের সর্বত্র ওয়্যারলেস, টেলিফোন ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে প্রেরিত হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাংলায় নিম্নলিখিত একটি বার্তা পাঠান :‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোস নাই। জয় আমাদের হবেই। পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক প্রিয় লোকদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় সারা দেশে পাঠানো হয়। সর্বস্তরের জনগণের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর সেনানিবাসে বাঙালি জওয়ান ও অফিসাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। এর তিনদিন পর তাঁকে বন্দি অবস্থায় পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়।১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান এক ভাষণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করেন। এর বিপরীতে ওই তারিখেই অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন। ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে (মুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়। বাংলাদেশ লাভ করে স্বাধীনতা।প্রফেসর ড. অরুণ কুমার গোস্বামী : চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ও পরিচালক, সাউথ এশিয়ান স্টাডি সার্কেল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১৮ | false |
hm | গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও আহত সুশীল সমাজ রহস্য ঝাকানাকা বিরসবদনে বললেন, "কার্টুন ছবি চলার সময় আপনি কেন আসেন বলেন তো? আরেকটু পরে বা আরেকটু আগে আসেন না কেন?" কিংকু চৌধারি গোমড়া মুখে বললেন, "স্যার আপনি সারাদিনই হয় ছায়াছন্দ নয় থাণ্ডার ক্যাটস আর না হলে খবর দেখতে থাকেন। যখনই আসি তখনই তো ধমক দেন। তাহলে ক্যাম্নেকী?" ঝাকানাকা বললেন, "হুঁহ, বললেই হলো! যাকগে, আবার কী গণ্ডগোল বাঁধিয়েছেন আপনারা?" কিংকু চৌধারি পকেট থেকে নোটবুক খুলে আড়চোখে ঝাকানাকার দিকে তাকিয়ে বললেন, "স্যার আপনারা খানসামা সামা খানকে একটু মুড়িমাখা লাগাতে বলুন না। পেটটা কেমন যেন মনমরা হয়ে আছে ... ।" ঝাকানাকা গলা চড়িয়ে বললেন, "সামা খান, মুড়ি লাগাও। বেশি চানাচুর দিও না। আচারের তেলও বুঝেশুনে খরচ কোরো। আর চা দিও।" কিংকু চৌধারি বিমর্ষ মুখে নোটবুকের পাতা উল্টাতে উল্টাতে বললেন, "স্যার, চানাচুর বেশি না দিলে মুড়িমাখার চরিত্র কি ঠিক থাকে, বলেন? আচারের তেল কম দিলে আবার কীসের মুড়িমাখা?" ঝাকানাকা বললেন, "হুঁহ! কার্টুন ছবি চলার সময় আমার বাড়ি এলে ঐরকমই পাবেন। এইবার বলুন কী সমস্যা।" কিংকু চৌধারি বললেন, "এই যে স্যার ... পেয়েছি। সমস্যা হচ্ছে গিয়ে, ঢাকেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আসিফ নিজামরুলকে নিয়ে। উনি স্যার, আহত।" ঝাকানাকা গোঁফে তা দিয়ে বললেন, "আপনারা শেষমেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরও ঠ্যাঙানো শুরু করেছেন নাকি?" কিংকু চৌধারি দুঃখিত কণ্ঠে বললেন, "না স্যার, এ আমাদের কাজ নয়। এটা কে বা কাহারা করে গেছে। ওনারা তো স্যার সুশীল সমাজের লোক। পথেঘাটে ওনাদের পাওয়া যায় না স্যার। আমরা ধরেন গিয়ে মাঝেমধ্যে মওকামতো পেলে সাংবাদিক পিটাই, কিংবা ধরেন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা স্যার এখানে ওখানে ক্লাস নেন, ডানে বামে কনসালট্যান্সি করেন, টেলিভিশনে টক শো করেন, ওনাদের কি আর মওকা মতো পাওয়া যায়, বলেন?" ঝাকানাকা বললেন, "সে কী? মওকামতো পেলে পিটাতেন নাকি?" কিংকু চৌধারি লাজুক হেসে বললেন, "না, মানে, বললাম আর কি। আমাদের তো স্যার ওনাদের পেটানোর সুযোগ নাই, এটাই বুঝিয়ে বললাম আর কি। আর সুযোগ পেলে তো ধরেন গিয়ে, কে কখন কী করে ফেলে। পুলিশের মন স্যার, সহস্র বর্ষের স্যার, সাধনার ধন। অতি বিচিত্র তার স্বভাব, অতি বিচিত্র তার মতিগতি ...।" ঝাকানাকা বললেন, "আসিফ নিজামরুল কী বললেন? কে পেঁদিয়েছে তাকে? আর কেমন আহত? অল্পস্বল্প নাকি গুরুতর?" কিংকু চৌধারি বললেন, "তেমন প্যাঁদায়নি স্যার। তবে উনি সুশীল সমাজের মানুষ তো, একটু কাবু হয়ে পড়েছেন। পুলসিরাত হাসপাতালে ভর্তি আছেন এখন।" ঝাকানাকা বললেন, "তেমন না প্যাঁদালে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয় নাকি?" কিংকু চৌধারি হতাশ মুখে মাথা নেড়ে বললেন, "কে যে কখন হাসপাতালে ভর্তি হয়, তার কোনো ঠিক নেই স্যার। তাছাড়া সুশীলেরা তো ধরুন গিয়ে, এয়ার কন্ডিশন্ড গাড়ি বা এয়ার কন্ডিশন্ড বাড়ি ছেড়ে তেমন একটা বেরটের হন না। ব্যায়ামট্যায়ামও করেন না ঠিকমতো। অল্পতেই চোট পান আর কি। আসিফ নিজামরুলের চোট মোটেও গুরুতর কিছু নয় স্যার। তবে বড় বিচিত্র।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম, বিচিত্র না হলে কি আর পুলিশ খবর পায়?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার, ঘটনা সেখানেই! উনি কিন্তু পুলিশে খবর দেননি! এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও পুলিশ ডাকেনি! ওনার আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির খবরটা জেনেছি স্যার, গোপন সূত্রে!" ঝাকানাকা বললেন, "কীরকম চোট পেয়েছেন তিনি?" কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, ঐ কে বা কাহারা আসিফ নিজামরুলের দুই গালে ঠাশ ঠাশ করে দুইটা চটকানা মেরে গেছে স্যার!" ঝাকানাকা একটি ভুরু অন্যটির চেয়ে ইঞ্চি দুয়েক ওপরে তুলে বললেন, "বলেন কী? দুই চটকানা খেয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "এ চটকানা স্যার সাধারণ চটকানা নয়। চটকানার স্কেলে একেকটা চটকানার মাপই ধরুন গিয়ে এক হাজার সাধারণ চটকানার সমান। মানে দুই কিলোচটকানা দেয়া হয়েছে বলতে পারেন!" ঝাকানাকা বললেন, "চটকানার স্কেলও আছে নাকি?" কিংকু চৌধারি লাজুক হেসে বললেন, "আছে স্যার। আমাদের লাইনে, বুঝতেই পারছেন, ঘন ঘন চড়চাপড়চটকানা মারতে হয়। সবসময় তো নিজে মারার জো থাকে না, অন্যকে বলতে হয়। তখন স্যার চড়ের ওজনটাও সঙ্গে বলে দিতে হয়। ডেকাচটকানা হচ্ছে স্যার দশটা চড়ের সমান। হেক্টোচটকানা স্যার, একশোটা চড়ের সমান। কিলোচটকানা তেমনি হাজারটা। আবার ধরুন গিয়ে উল্টোদিকেও মাপ আছে স্যার। মাঝেমধ্যে রাঘববোয়ালদের গায়েও স্যার হাত তোলার ভান করতে হয়। গালে কষানোর ঠিক আগে আগে শুধু জোরটা কমিয়ে দিতে হয়। ওরকম চটকানা স্যার ডেসিচটকানা, সেন্টিচটকানা, এমনকি মিলিচটকানাও আছে। বাইরের লোকেরা স্যার এগুলো বোঝে না। আমি হয়তো একটা কনস্টেবলকে ডেকে বললাম, মার শালারে একটা হেক্টো। সে স্যার সেইভাবে ওজন মেপে মারে তখন। সবসময় যে একেবারে কাঁটায় কাঁটায় ঠিক হয়, তেমনটা দাবি করবো না স্যার। হয়তো হেক্টো বললে আটানব্বইটা চড়ের সমান একটা মারলো, কিংবা একশো দশটা। টলারেন্স ধরুন গিয়ে, প্লাস মাইনাস টেন পারসেন্ট?" ঝাকানাকা বললেন, 'হুমমম। বুদ্ধি তো মন্দ নয়। আপনাদের ভিকটিমদের টলারেন্সের সীমার মধ্যে থাকে সেসব?" কিংকু চৌধারি হাসিমুখে বললেন, "হেঁহেঁহেঁ, মাঝেমধ্যে কিছু এদিক ওদিক তো হয়ই স্যার। বুঝতেই পারছেন। পুলিশের চড় স্যার, সহস্র বর্ষের স্যার, সাধনার বর!" ঝাকানাকা বললেন, "তা ঐরকম কিলোচটকানা কে বা কাহারা দিলো, এ ব্যাপারে আসিফ নিজামরুল কিছু বলেননি?" কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, পুরোটা তো বলে শেষ করতে পারিনি। ঐ চটকানা ঠিক শক্তির গুণে কিলোচটকানা নয় স্যার, বরং ফলাফলের গুণে! কে বা কাহারা স্যার, এক বিচিত্র কালি হাতে মাখিয়ে তারপর স্যার আসিফ নিজামরুলের দুই গালে স্যার, একেবারে দিয়েছে পটাং পটাং করে দুইখান বসিয়ে। ওনার দুই গালে স্যার রীতিমতো ছাপ বসে গেছে। একেবারে পার্মানেন্ট। উনি সেই কারণেই স্যার পুলসিরাতের কসমেটিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি আছেন।" ঝাকানাকার ভুরু ভয়ানক কুঁচকে গেলো। তিনি আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে লাগলেন। সামা খান এসে মুড়ির বাটি আর চায়ের কাপসহ ট্রে রেখে গেলো নীরবে। কিংকু চৌধারি গোগ্রাসে মুড়িমাখা খেতে লাগলেন। ঝাকানাকা বললেন, "নিজামরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি আপনি?" কিংকু চৌধারি কোঁৎ করে ঢোঁক গিলে বললেন, "আমি স্বপরিচয়ে যাইনি স্যার। গিয়েছিলাম ছদ্মবেশে। উনি স্যার বেশি সময় দেননি আমাকে। দেখলাম ওনার দুই গালে ব্যাণ্ডেজ। খুব গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। আমাকে দেখে একেবারে তেড়ে এলেন।" ঝাকানাকা বললেন, "কেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "আমি তো স্যার, ফ্যান সেজে গিয়েছিলাম। একটা ফুলের তোড়া নিয়ে। গিয়ে বললাম, স্যার আপনি নাকি ইনজুওর্ড? আমি আপনার টক শো-র খুব ভক্ত স্যার। আপনি না থাকলে দেশটার যে কী হোতো! ... এটুকু বলার পরই আসিফ নিজামরুল একেবারে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে তেড়ে এলেন স্যার!" ঝাকানাকা বললেন, "ফুল নিয়ে গেলেন কী বুদ্ধিতে? একটা তরমুজ নিয়ে গেলেও তো পারতেন?" কিংকু চৌধারি মন খারাপ করে বললেন, "আমি ভাবলাম, উনি সুশীল মানুষ ... দৈনিক কচুবনে কতো জ্ঞানের কথা লেখেন ... গাগাণ্ডু টিভির টকশোতে কত জ্ঞানের কথা বলেন ... জ্ঞানীরা কি স্যার ফুল ভালোবাসে না তরমুজ ভালোবাসে?" ঝাকানাকা বললেন, "গরমের দিনে জ্ঞানীরা তরমুজই ভালোবাসে জনাব কিংকু। বলুন তারপর কী হোলো।" কিংকু চৌধারি বললেন, "উনি স্যার খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। আমাকে বার বার ধমক দিলেন, হাতে খামচিও দিয়েছেন। বললেন, ওনার চিকিৎসার খরচ কালাহারি খাতুনকে দিতে হবে। প্রয়োজনে উনি কালাহারি খাতুনের গলায় গামছা দিয়ে সে পয়সা আদায় করবেন। তারপর স্যার বালিশের নিচ থেকে একটা গামছা বের করে দেখালেন আমাকে।" ঝাকানাকা বললেন, "পুলিশমন্ত্রীকে চিকিৎসার খরচ দিতে বললেন কেন?" কিংকু বললেন, "আমিও সে কথাটাই জিজ্ঞাসা করেছিলাম স্যার। উনি বললেন, কালাহারি খাতুনকে তার আঘাতের দায় নিতে হবে। আমি মিষ্টি করে জানতে চাইলাম, আপনাকে কে মেরেছে স্যার? উনি তখন খুব ক্ষেপে গিয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিলেন।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম। তারপর?" কিংকু বললেন, "আমি তখন স্যার ডিউটিতে যে নার্স ছিলো, তার সাথে ভাব জমিয়ে জানতে চাইলাম, আসিফ নিজামরুলের কী হয়েছে। সে তখন আমাকে সব খুলে বললো।" ঝাকানাকা একটু সন্দিগ্ধ চোখে কিংকুকে দেখে নিয়ে বললেন, "কী জানতে পারলেন?" কিংকু নোটবইয়ের পাতা উল্টে বললেন, "জানতে পারলাম স্যার, আসিফ নিজামরুল একা নন। পুলসিরাত হাসপাতালে গত এক মাসে আরো চারজন সুশীল ঐ কেবিনে ভর্তি হয়েছে স্যার, তাদের প্রত্যেকের গালেই ওরকম পাকা কালিমাখা হাতের চটকানার ছাপ ছিলো!" ঝাকানাকা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, "বটে! তারা কারা?" কিংকু চৌধারি বললেন, "বলছি স্যার। তার আগে আরো ঘটনা আছে, শুনুন। আমি পুলসিরাত হাসপাতালের এক ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম, ঘটনা কী। সে পারলে আমাকে গলাধাক্কা দিয়ে বার করে দেয়। তারপর যখন নিজের পরিচয় দিলাম, তখন ডাক্তার চুপসে গিয়ে আমাকে সব খুলে বললো।" ঝাকানাকা বললেন, "কী বললো?" কিংকু চৌধারি মুড়ির বাটিটা চেটেপুটে নিঃশেষ করে বললেন, "এই কেসে যারা এসেছেন, প্রত্যেককে চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক পাঠাতে হচ্ছে স্যার! বাংলাদেশে ঐ চড়ের দাগের কোনো চিকিৎসাই নেই।" ঝাকানাকা ঘরের মধ্যে চায়ের কাপ হাতে পায়চারি করতে করতে বললেন, "ইন্টারেস্টিং! তারপর?" কিংকু চৌধারি বললেন, "আমি স্যার নার্সের কাছ থেকে জেনে নিলাম, আসিফ নিজামরুল কখন ঘুমিয়ে পড়েন। নার্স আমাকে বললো, উনি নাকি সারাদিনই ভীষণ রাগারাগি করেন। রাতে ওনাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়। আমি তখন সন্ধ্যাবেলা নিচের তেলেভাজার দোকানে মোগলাই পরোটা খেয়ে কাটিয়ে দিলাম স্যার। রাতের বেলা ওনার কেবিনে গিয়ে ডাক্তার আর নার্সকে ডেকে ব্যান্ডেজ খুলিয়ে আমি ওনার দুই গালে চটকানার ছাপের ছবি তুলে এনেছি স্যার।" ঝাকানাকা জ্বলজ্বলে চোখে বললেন, "হাতের ছাপ মিলিয়ে দেখেছেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার। রিপোর্ট পেয়েই আপনার কাছে ছুটে এসেছি।" ঝাকানাকা হাতে কিল মেরে বললেন, "বদরু খাঁ!" কিংকু মাথা ঝাঁকালেন। "জ্বি স্যার! একেবারে খাপে খাপে মিলে গেছে হাতের ছাপ।" ঝাকানাকা বললেন, "কিন্তু বদরু কেন হাতে পাকা কালি মাখিয়ে আসিফ নিজামরুলকে চটকানা মারবে?" কিংকু বললেন, "জানি না স্যার! সেজন্যেই তো আপনার শরণাপন্ন হওয়া। ... স্যার সামা খানকে বলেন না আরেক বাটি মুড়িমাখা দিয়ে যেতে?" ঝাকানাকা কটমটিয়ে কিংকু চৌধারির দিকে তাকিয়ে বললেন, "সামা খান ... আরেকটু মুড়ি দিয়ে যেও! চানাচুর আর তেল বেশি দিও না!" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে বললেন, "আসিফ নিজামরুলকেও মনে হয় ব্যাংকক পাঠাতে হবে স্যার।" ঝাকানাকা বললেন, "কালিটা পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পেলেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "না স্যার। কালি পরীক্ষা করতে গেলে তো আসিফ নিজামরুলের গালশুদ্ধু পরীক্ষা করতে হবে। উনি জেগে গেলে আর সে সুযোগ মিলবে না স্যার। তবে ইনজেকশন ফুঁড়ে ঘুম পাড়িয়ে ওনাকে ল্যাবরেটরি নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। সাদা চোখে দেখে ভোটের কালির মতোই মনে হয় স্যার, কিন্তু আরো কড়া! একেবারে কলঙ্কের মতো পোক্ত মাল!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! তা বাকি ভিকটিম কারা? বলুন দেখি এক এক করে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "গত সপ্তাহে রিলিজ নিয়েছেন ফারুক ফসফরাস।" ঝাকানাকা বললেন, "ঐ যে বাম বিপ্লবী? টক শোতে বিপ্লব করে কিছুদিন পরপর?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার। উনি আর ওনার আরো কয়েকজন সাঙ্গোপাঙ্গো বান্দরবানে সুড়ঙ্গ খোঁড়েন মাঝেমাঝে। বাংলার অসমাপ্ত বিপ্লব সমাপ্ত করবেন ওনারা।" ঝাকানাকা বললেন, "কেন? বিপ্লবের সাথে সুড়ঙ্গের কী সম্পর্ক?" কিংকু চৌধারি বললেন, "আমি তা জানি না স্যার। তবে সুড়ঙ্গ না খুঁড়ে নাকি বিপ্লব করা যায় না। আর একটা বড় মোটর সাইকেলও নাকি লাগে। কী কাজে লাগে জানি না স্যার।" ঝাকানাকা বললেন, "স্ট্রেঞ্জ! আপনি এসব জানলেন কোত্থেকে?" কিংকু চৌধারি বললেন, "বাদশাহবাগে ওনাদের একটা দোকান আছে স্যার, মার্কস অ্যান্ড অ্যাঙ্গেলস নাম। ওখানে সব বিপ্লবী টি-শার্ট পাওয়া যায়। দেশবিদেশের বিপ্লবীদের ছবিঅলা টি-শার্ট, লকেট, মগ, এইসব বিক্রি হয়। অর্ডার দিলে বিপ্লবীদের ছবি আঁকা কেকও ওনারা বানিয়ে দেন। মিস মিলি একবার আমাকে ওখান থেকে একটা টি-শার্ট কিনে দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন, তখন খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি স্যার। সুড়ঙ্গটা খোঁড়া হয়ে গেলে ওখানে একটা গাইডেড বিপ্লবী ট্যুরের ব্যবস্থা করবেন ওনারা। এক দিন দুই রাতের ট্যুর, সুড়ঙ্গের সাথে আশেপাশে ঝর্ণা, পাহাড়, নদীতে নৌকাবিহার, স্পা, এইসবের ব্যবস্থা থাকবে। সঙ্গে ফারুক ফসফরাসের লেখা বই ফ্রি।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! বটে? এ ব্যাপারে বদরুর সাথে কোনো যোগাযোগ ছিলো নাকি ফসফরাসের?" কিংকু চৌধারি বললেন, "আমি যতদূর খোঁজখবর নিলাম, তাতে বদরুর সাথে এই বিপ্লবী সক্রিয়তার কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাইনি স্যার। ফসফরাস সাহেব অবশ্য একবার গাগাণ্ডু টিভিতে বদরুকে সাম্রাজ্যবাদের ফসল বলে বকাবকি করেছিলেন। ইঙ্গ-ইন্দো-ইসরায়েলি বিটকেলপনার সহচর বলে অনেক জ্ঞানের কথা বলেছিলেন, সবটা আমি বুঝিনি।" ঝাকানাকা বললেন, "সে তো সবাই বদরুকে গাল দিয়ে কাগজে লেখালেখি করে। বদরু আলাদা করে ফারুক ফসফরাসকে কেন চটকানা মারতে যাবে? তাও পাকা কালি হাতে লাগিয়ে?" কিংকু চৌধারি মাথা চুলকে বললেন, "জানি না স্যার। ফারুক ফসফরাসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম ব্যাংককে, কিন্তু ওনার ফোনের রিংটোনে শুধু ফয়েজ আহমদ ফয়েজের গজল বাজে। কেউ ধরে না। মনে হয় উনি ব্যাংককে ব্যস্ত।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! তারপর?" কিংকু চৌধারি বললেন, "ফারুক ফসফরাসেরও এক হপ্তা আগে পুলসিরাত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পরে রিলিজ নেন ঔপন্যাসিক সৈয়দ মহানজরুল।" ঝাকানাকা বললেন, "সে কী? উনি তো পণ্ডিত মানুষ। ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন। তাঁকে কেন চড় মেরেছে বদরু হতভাগা?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জানি না স্যার। তবে উনিও এখন ব্যাংককে। ফারুক ফসফরাস যে হাসপাতালে, সেখানেই। ওনার বাসায় ফোন করেছিলাম, তারা বললো উনি কয়েকদিন পর ফিরবেন দেশে।" ঝাকানাকা বললেন, "তাঁর সঙ্গে তো বদরুর কোনো শত্রুতা হওয়ার কথা নয়! আপনি কি পত্রপত্রিকা, রেডিওটিভির সাথে আলাপ করে দেখেছেন?" সামা খান আবার এক বাটি মুড়িমাখা দিয়ে গেছে, কিংকু বাটির ওপর হামলে পড়ে বললেন, "জ্বি স্যার। উনি শুধু রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করেন আর কথাবার্তা বলেন। বদরু বিষয়েও উনি কখনও কিছু বলেননি। কেউ ইতিহাসের ঘটনা নিয়ে গালগল্প লিখলে উনি সেসব নিয়ে আলোচনা করেন শুধু। কারও সাতে-পাঁচে থাকেন না। সবাইকেই ভালো বলেন।" ঝাকানাকা বললেন, "এমন একজন নিরীহ নিপাট ভালোমানুষকে বদরু খাঁ হাতে পাকা কালি মাখিয়ে দুই কিলোচটকানা মেরে গেলো! কেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই স্যার! আমি ফোনে যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু ওনার ফোন বন্ধ।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! তারপর?" কিংকু নোটবইয়ের পাতা উল্টে বললেন, "এর আগের ভিকটিম স্যার, আবুল বোকশিশ সৈয়দী।" ঝাকানাকা বললেন, "ওহ, উনিও তো আন্দোলন সংগ্রাম লাইনের লোক। প্রায়ই দেখি আধাবেলা অনশন করেন এখানে সেখানে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার। তাছাড়া যানজট দেখলেই উনি কিছুক্ষণ অবস্থান ধর্মঘট করেন নানা ঘটনার প্রতিবাদে। আর স্যার, উনিও কিন্তু ইতিহাসের পণ্ডিত। মোগল আমল বৃটিশ আমল পাকিস্তান আমল সব আমল ওনার মুখস্থ স্যার।" ঝাকানাকা বললেন, "উনি কি বদরুর বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "না স্যার। বদরুকে নিয়ে ওনার কোনো মাথাব্যথাই নেই। তাছাড়া উনি অহিংস সংগ্রাম লাইনের লোক। বদরুর মতো সহিংস বদমাশদের নিয়ে উনি কিছুই বলেন না।" ঝাকানাকা বললেন, "তাহলে ওনার গালে কেন বদরুর কালিমাখা হাতের চটকানা?" কিংকু বললেন, "না স্যার, ওনার গালে চড় মারেনি বদরু। আরো খারাপ কেস। ওনার ধুতি তুলে একটা বাজে জায়গার গোস্তে পায়ে কালি মেখে লাথি মেরেছে স্যার!" ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে গেলেন। "বদরুর এতো বড় আস্পর্ধা?" কিংকু বললেন, "উনি ব্যাংককে গিয়ে ঐ বাজে জায়গার কালিমা মোচন করিয়ে এনেছেন স্যার। আমি ফোন করেছিলাম ওনাকে, কিন্তু উনি এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজিই হলেন না। আমি আমার পরিচয় জানিয়ে চাপাচাপি করেছিলাম, উনি এখন স্যার আমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে দুই ঘন্টার অনশন করছেন।" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বললেন, "হুমমমম! আর কে?" কিংকু বললেন, "শেষ সুশীল ভিকটিম হচ্ছেন গিয়ে নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, কবি আনিসুল হাই।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম। আচ্ছা। বেশ বেশ। ভালো। তা কী মেরেছে, চড় না লাথি?" কিংকু চৌধারি বললেন, "চড় লাথি দুটোই স্যার। এক মাস আগে পুলসিরাত হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়েছিলেন উনি। এখনও ব্যাংককে আছেন।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম। আচ্ছা। বেশ। ভালোই তো। চিকিৎসা চলছে এখনও?" কিংকু চৌধারি বললেন, "না স্যার, চিকিৎসা শেষ। উনি থাই ভাষায় ওনার মামা উপন্যাসটা অনুবাদ করিয়েছেন, সেটা নিয়ে ফাংশন করে বেড়াচ্ছেন এখানে ওখানে।" ঝাকানাকা বললেন, "চড় আর লাথি দুটোই মেরেছে বললেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার।" ঝাকানাকা বললেন, "কিলোচটকানা মেরেছে, নাকি?" কিংকু চৌধারি নোটবুক দেখে নিয়ে বললেন, "জ্বি স্যার। আর দুই বাজে গোস্তে দুটো হেক্টোলাথি। পাকা কালিমাখা পায়ে।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম। আচ্ছা। বেশ। ভালো। তা কেন মেরেছে ... আন্দাজ করতে পারেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "না স্যার। উনিও বদরুর ব্যাপারে কখনও কোথাও কিছু বলেননি। তাছাড়া শুনেছি বদরু ওনার মামা উপন্যাসের বেশ ভক্ত। এক বদরুক্যাপ্টেনকে আজই রিমান্ডে নিয়ে জেরা করেছি স্যার, সে বললো, বদরুবাহিনীতে স্যার মামা উপন্যাস পাঠ্য হিসেবে সিলেবাসে ঢোকানো হয়েছে। তারপরও কেন বদরু ওনাকে এভাবে দুই গালে চটাশ চটাশ করে দুটো চড় আর দুই ইসেতে ওরকম ওজনদার দুটো লাথি মারলো, সে এক রহস্য!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম। আচ্ছা। বেশ। ভালো।" কিংকু চৌধারি বললেন, "আরও একজন লোক গালে চড়ের দাগ নিয়ে পুলসিরাত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো স্যার, মাস দেড়েক আগে। তবে সে সুশীল নয়। বদ লোক। আমাদের খাতায় স্যার তার নাম আছে।" ঝাকানাকা বললেন, "বটে? কে সে?" কিংকু চৌধারি বললেন, "হেবো বাজিয়াল।" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, "নাহ, এই নামে কাউকে কখনও প্যাঁদাইনি আমি। কে এই হেবো বাজিয়াল?" কিংকু চৌধারি বললেন, "এই লোক স্যার, জুয়ার আড্ডাধারী। নানারকম জুয়া আর বাজির আয়োজন করে বেড়ায় এখানে সেখানে। বিভিন্ন ক্লাবে, হোটেলে, মেলায়। এমনকি হতভাগাটা বাচ্চাদের স্কুলের সামনেও ছোটোদের জুয়ার আসর বসায়।" ঝাকানাকা বললেন, "সে কী? ছোটোরাও জুয়া খেলে নাকি?" কিংকু চৌধারি বললেন, "হেবো বাজিয়ালের পাল্লায় পড়লে স্যার সবাই জুয়া খেলতে বাধ্য, সে এমনই পাকা জুয়াখোর। এজন্যে স্যার ওকে গ্রেফতার করলে হাজতে রাখা মুশকিল। গোটা থানা জুয়া খেলতে শুরু করে। ওকে কয়েকবার জেলে পাঠানো হয়েছিলো স্যার, মেয়াদ ফুরোনোর আগে জেল কর্তৃপক্ষই অতিষ্ঠ হয়ে ওকে কানে ধরে বার করে দেয়। লৌহজং জেল তো স্যার বন্ধই করে দিতে হলো ওর কারণে।" ঝাকানাকার ভুরু সাংঘাতিক কুঁচকে গেলো। তিনি সোফায় বসে পায়ের ওপর পা তুলে গোঁফে তা দিতে দিতে বললেন, "একটা ব্যাপার দেখুন জনাব কিংকু। হেবো বাজিয়াল বদরুর হাতে কালিমাময় চটকানা খেয়ে নাহয় চুপচাপ হাসপাতালে ভর্তি হলো। কিন্তু বাকিরা কেন এ ব্যাপারটা গোপন রাখতে চাইলো? তারা কেন পুলিশকে খবর দিলো না? কেন তারা গোপনে ব্যাংককে গিয়ে মারের দাগের চিকিৎসা করায়? কেন এতো লুকোছাপা?" কিংকু চৌধারি মুড়ি চিবাতে চিবাতে বললেন, "স্যার, আমার মনে হয় কি জানেন, পুলসিরাত হাসপাতাল আর ব্যাংককের ঐ হাসপাতালটার সাথে বদরুর কোনো রকম বোঝাপড়া হয়েছে। রোগী যোগাড় করে দিয়ে কমিশন কামাচ্ছে বিটকেলটা।" ঝাকানাকা বললেন, "উমমমম? নাহ। সেরকম বোঝাপড়া হলে কতই বা আর কমিশন পাবে সে? ওরকম খুচরো কাজ বদরু করবে না। চার-পাঁচটা রোগী ধরে দালালি কামানোর মতো ছিঁচকে পাজি সে নয়। এর পেছনে আরো গভীর কোনো ষড়যন্ত্র আছে!" কিংকু চৌধারি বললেন, "কীরকম স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "আপনি খেয়াল করে দেখুন, বদরু মোটামুটি বেছে বেছে সুশীল প্যাঁদাচ্ছে। যাদের সে হাসপাতালে পাঠিয়েছে, সকলেই মান্যগণ্য বিশিষ্ট লোক। সমাজের মাথা। জাতির বিবেক। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। কেউ শিক্ষক। কেউ বিপ্লবী। কেউ ইতিহাসবেত্তা। কেউ অনশনযোদ্ধা। কেউ আনিসুল হাই। এদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী, সেটা আগে আমাদের বুঝতে হবে। তারপর দেখতে হবে কেন এরা পুলিশের কাছে গেলেন না।" কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, এদের মধ্যে কোনো সাধারণ বৈশিষ্ট্য তো দেখতে পাচ্ছি না। ওনারা সবাই অসাধারণ।" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন, তারপর টিভির রিমোটের বোতাম টিপে টিভি চালু করলেন। কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার আরেক কাপ চা দিতে বলেন না।" ঝাকানাকা বললেন, "সামা খান ... দুই কাপ চা দিও। চিনি বেশি দিও না।" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে বললেন, "আমার মনে হয় কি, স্যার, বদরু এদের মধ্যে কারো একজনের ছদ্মবেশ ধরে ব্যাংকক গেছে কোনো চোরাচালানের কাজে। হয়তো ইউরেনিয়াম আনবে দশ কেজি। কিংবা কোনো খতরনাক জীবাণুর শিশি।" ঝাকানাকা চিন্তামগ্ন কণ্ঠে বললেন, "সেজন্যে বদরুকে কষ্ট করে হাতেপায়ে কালি মেখে এদের ঠ্যাঙাতে হবে কেন? সে তো যে কোনো একজনকে তুলে নিয়ে কয়েকদিন আটকে রেখে ছদ্মবেশ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে!" কিংকু চৌধারি বললেন, "তাহলে কেন স্যার? হোয়াই?" ঝাকানাকা খবরের কাগজ টেনে নিয়ে একটা পাতা খুলে কিছুক্ষণ মন দিয়ে পড়লেন, তারপর ভুরু কুঁচকে উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে লাগলেন। সামা খান দুই কাপ চা এনে রেখে গেলো টেবিলে। কিংকু চৌধারি ফিসফিস করে বললেন, "আমার কাপে আরেক চামচ চিনি দিও!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমমম। পাঁচ পাঁচজন সুশীলকে এভাবে গালে আর ইসেতে চড়-লাথি মেরে প্রথমে দেশের হাসপাতালে, তারপরে বিদেশের হাসপাতালে পাঠালো বদরু। কেন?" কিংকু চৌধারি চায়ের কাপে এক্সট্রা চিনি চামচ দিয়ে চুপিসাড়ে গুলতে গুলতে বললেন, "তাই তো স্যার, কেন?" ঝাকানাকা বললেন, "যদি চড়ই মারতে হবে, তবে সঙ্গে আবার কালি কেন?" কিংকু বললেন, "তাই তো স্যার, কালি কেন? হোয়াই?" ঝাকানাকা বললেন, "খালি হাতে কালি ব্যবহার করলে চড়ের মালিক হিসেবে বদরুর পরিচয় ফাঁস হতে বাধ্য। এ কথা বদরু নিজেও জানে। তারপরও সে মেরেছে। অর্থাৎ, সে জানতো, চড় খেয়েও কেউ পুলিশের কাছে যাবে না। বরং গোপনে, চুপিচুপি, যাবে হাসপাতালে। আপনি গোপন সূত্রে আসিফ নিজামরুলের ঘটনার খোঁজ না পেলে ব্যাপারটা গোপনই থাকতো।" কিংকু চায়ে এক দীর্ঘ চুমুক দিয়ে বললেন, "আহ! ঠিকই তো স্যার!" ঝাকানাকা পায়চারি করতে করতে বললেন, "ওদিকে হেবো বাজিয়ালকেও পিটিয়েছে বদরু। একই কায়দায়। কেন?" কিংকু বললেন, "কেন স্যার?" ঝাকানাকা আচমকা থমকে দাঁড়িয়ে গোঁফ টানতে টানতে বললেন, "জনাব কিংকু! আপনি এক্ষুণি খোঁজ নিন, প্রতিদিন রাত নয়টা বাজার ঠিক আগে আগে কোনো বিশেষ মোবাইল নাম্বারে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসে প্রচুর পরিমাণ এসেমেস লেনদেন হয় কি না!" কিংকু চৌধারি থতমত খেয়ে নিজের মোবাইল বার করে গোয়েন্দা দপ্তরে ফোন দিয়ে কথা বলতে লাগলেন। ঝাকানাকা আবার সোফায় বসে ভুরু কুঁচকে ভাবতে লাগলেন কী যেন। কিংকু চৌধারি মিনিট কুড়ি এর সাথে ওর সাথে কথাবার্তা বলে ফোন বন্ধ করে ঝাকানাকার দিকে ফিরলেন। "স্যার, আপনার সন্দেহই ঠিক! প্রতিদিন রাত আটটা পঞ্চাশ থেকে রাত ন'টার মধ্যে ৬৬৬ নাম্বার থেকে প্রচুর এসেমেস আসে যায় স্যার!" ঝাকানাকার মুখে সন্তুষ্টির হাসি ফুটলো। "আর সেই সার্ভিসের মালিক কে?" কিংকু চৌধারি বললেন, "হেবো বাজিয়াল স্যার!" ঝাকানাকা অট্টহাসি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, "রহস্যের সমাধান পেয়ে গেছি কিংকু সাহেব!" কিংকু চৌধারি ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া চা-টুকু কোঁৎ করে গিলে খেয়ে বললেন, "কী সমাধান স্যার?" ঝাকানাকা হাসিমুখে বললেন, "স্পট ফিক্সিং!" কিংকু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন, "স্পট ফিক্সিং? কোথায় স্যার?" ঝাকানাকা হাতে কিল মেরে বললেন, "গাগাণ্ডু টিভির টক শো-তে!" কিংকু চৌধারি বিস্মিত হয়ে বললেন, "টক শো-তে স্পট ফিক্সিং? সে আবার ক্যামোন জিনিস?" ঝাকানাকা মুহাহাহাহা হেসে বললেন, "সেখানেই তো আসল গোমর! আপনি যাদের কথা বললেন, এরা সকলেই গাগাণ্ডু টিভির রাত ন'টার টক শো "আজকের কলতলা"-র নিয়মিত কথোয়াড়।" কিংকু চৌধারি বললেন, "কথোয়াড়?" ঝাকানাকা বলেন, "হ্যাঁ। ওনারা কথা বলেন। অনেক কথা। আর আপনি তো জানেনই, আজকের কলতলায় একটা পর্যায়ে অনেক কিছু ঘটে। কথা বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে এক পর্যায়ে কথোয়াড়েরা মারামারি করেন, গালাগালি করেন, একজন আরেকজনের দিকে মগের পানি ছুঁড়ে মারেন, অনুষ্ঠানের সেট ছেড়ে চলে যান, কান্নাকাটি করেন, কেউ কেউ রাগের চোটে বিষ খান। নানা নাটক চলে সেখানে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "হ্যাঁ স্যার, আমি তো এজন্যেই রোজ গাগাণ্ডু টিভি দেখি!" ঝাকানাকা বললেন, "আপনি যেমন দেখেন, তেমনই আরো অনেক ছেলেবুড়ো গিন্নিবান্নি এই টকশো দেখে। আর সেখানেই হতভাগা হেবো বাজিয়াল ফাঁদ পেতে রেখেছে। সে এক গোপন বাজির আড্ডা খুলে বসেছে মোবাইলে। সেখানে বাজি ধরা হয়, আজ কোন কথোয়াড় কখন কী খেল দেখাবেন। কে কার সাথে মারপিট করবেন, কে কাকে জুতাচোর বলে গালি দেবেন, এইসব টুকিটাকি ডিটেলসের ওপর স্পট বাজি ধরা হয়। সবই চলে মোবাইলে, এসেমেসে আর ক্যাশ ট্র্যান্সফারে।" কিংকু চৌধারি চটে গিয়ে বললেন, "সে কী স্যার, এরকম একটা জোশ জিনিস, আমি তো আজ পর্যন্ত এটার খোঁজই পেলাম না! এ কেমন অন্যায়" ঝাকানাকা আড়চোখে কিংকুকে দেখে নিয়ে বললেন, "আজকাল লোকজন কেউ আর পরিশ্রম করতে চায় না। শেয়ার বাজার, এমএলএম, এইসব করে পয়সা কামানোর ঝোঁক সবার। সেটা বদরুও জানে। তাই সে এই টক শোয়ের পেছনে হেবো বাজিয়ালকে দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছিলো। মনে হয় কোনো সমস্যা করেছিলো হেবো, তাই বদরু তাকে মাস দেড়েক আগে প্যাঁদায়।" কিংকু চৌধারি বললেন, "তা নাহয় বুঝলাম স্যার, কিন্তু সুশীলরা কেন মার খেলেন?" ঝাকানাকা বললেন, "এদের সাথেও বদরুর বোঝাপড়া ছিলো। সম্ভবত এনারা স্পট ফিক্সিং ঠিকমতো করতে পারেননি। আর সে কারণে বদরু বাজির খেলায় কিছু লোকসান দিয়েছে নিশ্চয়ই। আর তারই শাস্তি হিসেবে সে ঐ পাকা কালি হাতে মেখে এদের এমনভাবে পিটিয়েছে, যাতে এরা কিছুদিন আর লোকচক্ষুর সামনে আসতে না পারেন। টক শো থেকে সুশীলদের দূরে রাখা খুবই কঠিন, জানেন তো?" কিংকু চৌধারির কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো, "সব মিলে যাচ্ছে স্যার! গালে চটকানার কালো দাগ নিয়ে এরা কেউই তো টিভিতে যেতে পারবেন না!" ঝাকানাকা বললেন, "কেস ক্লোজড। জলদি গিয়ে ৬৬৬ নাম্বারটাকে বন্ধ করুন, হেবো বাজিয়ালকে আটক করুন।" কিংকু চৌধারি এক চৌকস স্যালুট দিয়ে বললেন, "এক্ষুণি যাচ্ছি স্যার! কিন্তু একটা জিনিস তো বুঝতে পারলাম না স্যার!" ঝাকানাকা বললেন, "কী?" কিংকু চিন্তিত হয়ে বললেন, "আবুল বোকশিশ সৈয়দীর ব্যাপারটা স্যার। ওনার গালে তো কোনো দাগ ফেলেনি বদরু। ফেলেছে বাজে জায়গার গোস্তে। উনি তবু কেন ব্যাংকক গেলেন?" ঝাকানাকা উদার হেসে বললেন, "উনি তো নেংটি পরেন, জনাব কিংকু! টেলিভিশনে কখন ফ্যানের বাতাসে কাপড় উড়ে কী বেরিয়ে পড়ে, তার ঠিক আছে?" কিংকু চৌধারির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো আবার। "স্যার, এই সুশীলদেরও কি আটক করবো?" ঝাকানাকা বিষণ্ণ মুখে বললেন, "না জনাব কিংকু। সুশীলদের কিছু বলা বারণ। আপনি বরং আপাতত হেবো বাজিয়ালকেই আরেক পশলা প্যাঁদান।" [সমাপ্ত] গোয়েন্দা ঝাকানাকার একটি ফেসবুক পেইজ রয়েছে। | false |
hm | খসরু চৌধুরী, আমার অভিবাদন নিন খসরু চৌধুরীর সাথে আলাপের কোন সুযোগ আমার কখনও ঘটেনি। চোখেও দেখিনি তাঁকে। তাঁকে প্রত্যহ ভক্তিভরে স্মরণ করবো, পরিস্থিতিও সেরকম কখনও হয়ে ওঠেনি। ব্যাখ্যা করি। খসরু চৌধুরীর নামাঙ্কিত একটি পেপারব্যাক, সেবা প্রকাশনীর "সুন্দরবনের মানুষখেকো"তে পড়েছিলাম শিকারী পচাব্দী গাজীর কথা। আমার বয়স তখন কম, ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়ি, সেবা থেকে প্রকাশিত শিকারের সব বইয়ের ঘাড় মটকে চিবিয়ে খাই বাঘের মতোই। জিম করবেট, কেনেথ অ্যান্ডারসন আর জন হান্টার তখন আমার হিরো। এক একটা শিকারের গল্পে যে আশ্চর্য শিহরণ ছিলো, এখনও রোমাঞ্চিত হই ভাবলে। ঐ গল্পগুলোর কারণেই শুটিঙের প্রতি আমার একটা মোহ কাজ করে দীর্ঘদিন ধরে, কারো বাসায় আগ্নেয়াস্ত্র দেখলে নেড়েচেড়ে শুঁকে দেখি। যদিও রক্তপিপাসা নেই দেখে নিজে শিকারের আগ্রহ কাজ করে না। কথা সেখানে নয়, কথা খসরু চৌধুরীকে নিয়ে। সেই সুন্দরবনের মানুষখেকোর পর খসরু চৌধুরীকে আর বইতে পাইনি। আয়ুর জোরেই তিনি আরো অনেকবার আমার সামনে হাজির হন পত্রিকায়। প্রত্যেকবারই প্রসঙ্গ বাঘ। বাঘপাগল খসরু থামেন না, বাঘ আর সুন্দরবন নিয়ে তাঁর বিরাম নেই। একটা দেশের মূর্খ লোভী মানুষ নিয়ম করে গিয়ে ঢুকছে জঙ্গলে, জঙ্গলটার বারোটা বাজাচ্ছে ক্রমাগত, যারা এর রক্ষক, তারাই গিলে খাচ্ছে জঙ্গলের কইলজাগুর্দাফ্যাপসা, আর বোকা খসরু চৌধুরী বার বার জঙ্গলে গিয়ে ঐ ধর্ষণের পাগপার্ক তুলে এনে আমাদের দেখাচ্ছেন। বলছেন, কীভাবে মরছে বাঘ, আমাদের গৌরবের ধন, যাকে ভালোবেসে ওপরের তলায় আমরা ঠাঁই দিয়েছি মুদ্রায়, প্রতীকে, আর নিচতলায় মারছি টুঁটি চেপে ধরে। জঙ্গলের ভেতরটা পঁচে যাচ্ছে, খসরু চৌধুরী লিখছেন কাগজে, প্রতিকার হচ্ছে কি না জানি না, কিন্তু একজন কেউ তো হাত তুলে দেখাচ্ছেন, কীভাবে মানুষ রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের ঘাড়ে হালুম করে লাফিয়ে পড়ছে, জঙ্গলটার মড়ি চিবিয়ে খাচ্ছে রোজ। বাঘ আর কত বড় বাঘ? বাঘের চেয়ে বড় বাঘ আমরা। অতিশয় বড় মূর্খ ছাড়া সবাই জানে, কীভাবে সুন্দরবনের অভাবে পঞ্চগড় পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে এক একটা বড় সাইক্লোন। বৃহস্পতি গ্রহ যেমন মহাকাশের সমস্ত উল্কাপিণ্ডকে নিজের বুকে শোষণ করে নিয়ে ক্রমাগত রক্ষা করে চলছে পৃথিবীকে, সুন্দরবনও শত শত বছর ধরে পৃথিবীর রুদ্রতম উপসাগরের সুদর্শনচক্রের ঘা বুকে নিয়ে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে। সুন্দরবন না থাকলে দেশের সবচেয়ে বড় মন্ত্রণালয় হতো দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তাই অভিবাদন জানাই খসরু চৌধুরীকে। শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত, আপনাকে থামতে না দেখে এই অভিবাদন। অভিবাদন আপনার স্বপ্ন আর প্রত্যাশার উচ্চতাকে, যে স্বপ্নের গায়ে খড়ি দিয়ে লেখা, একদিন আপনার লেখা পড়ে কেউ একজন "ব্যবস্থা" নেবে, বাঘ বাঁচাবে, সুন্দরবন বাঁচাবে। আপনি মানুষটা কে, কেমন, তা জানার কোন আগ্রহ আমার নেই, আপনার স্বপ্নের উচ্চতাকে নতজানু হয়ে অভিবাদন জানাই। আপনার মতো অক্লান্ত স্বপ্নবানে দেশটা একদিন ভর্তি হয়ে উঠুক, বাঘ আর বাঙালির গর্জনে এক একটা দ্রাঘিমাংশ প্রকম্পিত হোক। | false |
rn | ফোটোগ্রাফী-১৫ আজ নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ফোটোগ্রাফী নিয়ে কিছু কথা বলব। গত তিন মাস ফোটোগ্রাফী নিয়ে কিছুই লিখিনি। প্রথমে একটা কথা বলে রাখি- আমি মনে করি, বই পড়ে-পড়ে ফোটোগ্রাফী শেখা সম্ভব না। যেমন আপনি বই পড়ে সাঁতার শিখতে পারবেন না। সাঁতার শেখার জন্য আপনাকে পানিতে নামতে হবে। আর ফোটোগ্রাফী শেখার জন্য ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে আপনাকে মাঠে ঘাটে নেমে পড়তে হবে। প্রচুর ছবি তুলতে হবে। অন্যের ছবি দেখতে হবে। কথায় বলে- 'গাইতে গাইতে গায়েন' ঠিক ছবি তুলতে তুলতে আপনি ভালো একজন ফোটোগ্রাফার হয়ে যাবেন। আজ একজন পরিচিত ইমামের সাথে আমার দেখা মালিবাগ মোড়ে। এই ইমাম আমাকে ছোটবেলা থেকে চিনেন। অনেক বছর পর আজ দেখা। অনেক কথার পর ইমাম জানতে চাইলেন- আমি এখন কি করি । আমি বললাম- ফোটোগ্রাফী। ইমাম বলল- অটোগ্রাফী আবার কি জিনিস! আমি বললাম অটোগ্রাফী না ফোটোগ্রাফী। ছবি তুলি। ইমাম প্রচন্ড অবাক হয়ে বললেন- ছবি তোলা বন্ধ করো, এই কাজ হারাম। একদম জাহান্নামে যাবে। তারপর সে আরবী'তে কি-কি যেন বলল। আমি বললাম- আপনি যদি হজ্বে যেতে চান, তখন আপনার ছবি তুলতে হবে। পত্রিকাতে ছবি লাগে- আমরা যদি ছবি না তুলি- তাহলে কিভাবে হবে? ইমামের শেষ কথা হলো- অন্য কাজ করো, কিন্তু ছবি তোলা বাদ দিয়ে। ইদানিং আমার কাছে অনেক ছেলে-পেলে আসে। তারা নতুন ক্যামেরা কিনেছে বা কিনবে। তারা অনেক রকম প্রশ্ন করে। আমি খুব বুঝদার মানূষের মত তাদের প্রশ্ন শুনি। তারা ভাবে আমি অনেক বড় ফোটোগ্রাফার। ফোটোগ্রাফী'র সব বিষয় খুব ভালো জানি। সত্যি কথা বলতে- ফোটোগ্রাফী'তে আমি এখনও শিশু। গত তিন বছরেও একটা অসাধারন ছবি তুলতে পারিনি। আমার অভিজ্ঞতা বলতে অল্প কিছুদিন যুগান্তর আর সমকাল পত্রিকাতে কাজ করেছি। এর আগে এক বছর অনলাইন পত্রিকাতে কাজ করেছি। পত্রিকাতে কাজ বাদ দিয়েছি- এখন সব মনোযোগ দিয়েছি ওয়েডিং ফোটোগ্রাফী'তে। যারা নতুন ক্যামেরা কিনে আমার কাছে আসে- সবার প্রথমে আমি তাদেরকে ক্যামেরা কিভাবে ধরতে হয়, সেটা শিখাই।ইদানিং অনেক ছেলে পেলে ফোটোগ্রাফী নিয়ে খুব বেশী লাফা লাফি করছে! হেং করেংগা- তেং করেংগা টাইপ। আসলে এটা ওদের বয়সের দোষ। কিছুদিন এমন লাফালাফি করে একদম চুপ হয়ে যাবে। ক্যামেরার আগে অনেকে গিটার নিয়ে খুব লাফালাফি করত। ছোটবেলা সব বাচ্চা'রাই ক্রিকেট খেলে- কয়জন আর জাতীয় দলে চান্স পায়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবাই চলতে পারে না। তবে যারা ভালো কিছু করতে চায়- তাদের আমি খুব সম্মান করি। একদিন একছেলে এসে আমাকে বলল- ভাইয়া ক্যামেরা কিনব, কোন ক্যামেরাটা ভালো হবে? 'কোন ক্যামেরা কিনব'- খুবই বোকা'র মত একটা প্রশ্ন। একজন দক্ষ ফোটোগ্রাফারের জন্য ক্যামেরা কোনো সমস্যা না, সে মোবাইল দিয়ে দারুন ছবি তুলতে পারেন। দামী ক্যামেরা হলেই- যে আপনি ভালো ছবি তুলতে পারবেন- এই রকম ধারনা মন থেকে মুছে ফেলাই উত্তম । একদিন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি তুলতে গেলাম। 'কনে' আমাকে বলল- ভাইয়া- এমন ভাবে ছবি তুলবেন, যেন আমাকে চিকন লাগে দেখতে। বিয়ের অনুষ্ঠান গুলোতে বেশীর ভাগ মেয়েই ছবি তোলার আগে বলে- ছবি যেন সুন্দর হয়। তখন আমি মনে মনে বলি- মুখে এক গাদা ময়দা মেখে সুন্দর হতে পারিস নাই- তাহলে ক্যামেরায় কি করে সুন্দর করি। একদিন এক বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তুলছি- এমন সময় এক আন্টি এসে ফিস ফিস করে বললেন, আমার ভাইয়ের মেয়ের কয়েকটা ছবি তুলে দাও তো। বিয়ের জন্য। ছবিটা যেন সুন্দর হয় । মজার ব্যাপার হলো- আন্টির ভাইয়ের মেয়ের বেশ কয়েকটা ছবি তুলে দিয়েছিলাম। সেই ছবি বরপক্ষ দেখে খুব পছন্দ করে ফেলে। মেয়েটিকে বিয়ে করে কানাডা নিয়ে যায়। একবার এক শিল্পপতি'র মেয়ের বিয়েতে ছবি তুতলছি- কম করে হলেও তিন হাজার মানুষ এসেছে- বিয়েতে। স্টেজে দুই পরিবারের সবাই উঠেছে। গ্রুপ ছবি তোলা হবে। বুড়ো দাদা, নানীকে কোলে করে স্টেজে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে একজন মন্ত্রী আছেন। সরকারী দলের মন্ত্রী। সবাই রেডী। ঠিক তখন আমার ক্যামেরাটি নষ্ট হয়ে গেল । কিছুতেই কাজ করছে না। স্টেজে সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আরেকবার- এক বিয়ের অনুষ্ঠানে আমার ছবি তোলার কথা। ছবি তুলতে সময় মতই গেলাম । কিন্তু হঠাত করে আমার প্রেশার উঠে গেল । গাড় ব্যাথা করতে লাগল। চোখে সব কিছু ঝাপসা দেখতে লাগলাম- সেই অনুষ্ঠানে- কথা ছিল তিন শো ছবি তুলে তাদের দিতে হবে- আমি তাদের মাত্র পনের টা ছবি তুলে দেই। তারা তো আমার সাথে অনেক রাগারাগি- আমাকে জেলে দিবে, আমি ফোটোগ্রাফী কি করে করি দেখে নিবে, ইত্যাদি ইত্যাদি... । ইদানিং ফোটোগ্রাফী'তে আমার অনেক নাম ডাক হয়েছে। আমার বাসার আশে পাশে সবাই আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। আমার মেয়ের জন্মদিন, আমার ছেলের বিয়ে, অমু্ক অনুষ্ঠান, অমুক উদ্ববোধন ইত্যাদি ইত্যাদি... । অনেক সময় মন না চাইলেও নানান অনুষ্ঠানে যেতে হয়। অনেক বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যায়। বেশ কয়েকবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছি। নানান অনুষ্ঠানে ছবি তুলি, কিন্তু নিজের জন্য ছবি তোলা হয় না। ঠিক করেছি এবার থেকে তিন মাস পর-পর নিজের জন্য ছবি তুলব। ক্যামেরা নিয়ে বের হয়ে যাব- অচেনা কোনো গ্রামে। নিজের ইচ্ছা মত ছবি তুলব। কারো ইচ্ছায় ছবি তোলাতে অনেক যন্ত্রনা। আমি সবার আগে একজন ফোটোগ্রাফার কিভাবে তার ক্যামেরা ধরেন- তা খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করি। সত্যি কথা বলতে- ইদানিংকার অনেক ছেলে পিলে ঠিক ভাবে ক্যামেরাই ধরতে জানে না।যারা ভালো ছবি তুলতে চান- তাদের জন্যন কিছু টিপস দিলাম। ছবি তোলাটা শুধুমাত্র ক্লিক করলাম আর ছবি উঠল এমন কিছু না এটা মনে হয় আর বলার দরকার নাই। মনে তীব্র ইচ্ছা রাখুন- আমি ভালো ছবি, তুলতে চাই। মন থেকে হিংসা বিদ্বেষ বাদ দিন। লোভী হবেন না। হাসি খুশি থাকুন। দিনের বেলায় manual setting বুঝতে সমস্যা হলে বা সময় কম পেলে camera এর P option টা ব্যবহার করুন ।আলো যাতে সবার চেহারায় একইভাবে পরে তার প্রতি লক্ষ রাখতে পারেন। বিশেষ করে গ্রুপ ছবি তোলার সময়- আলোর দিকে বেশী লক্ষ্য রাখবেন। প্রতিদিন প্রচুর ছবি তুলতে থাকুন। ছবি তুলতে তুলতে একদিন ভাল ফটোগ্রাফার হয়ে যাবেন । ফটোগ্রাফাররা বিভিন্ন জায়গায় ছবিতুলতে বেশ কিছু ঝামেলায় পড়ে। অনেকে প্রশ্ন বিদ্ধ করে,ছবি তোলা নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হয়নি এমন ফটোগ্রাফার নেই বললেই চলে। মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার সময় মোবাইলটিকে কোন প্রকার নাড়াচাড়া করবেন না তাহলে ছবি ভালো আসবেনা । | false |
rn | হৃদয়ের কাছাকাছি সেই গত বছর আমি পদ্মা নদী দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি।কী বিশাল পদ্মা আর কী হয়েছে!এর জন্য কী প্রকৃতি দায়ী?নদীর পাড়ের মানুষদের অনেক কষ্ট।অনেকদিন আগে 'হিমি'কে নিয়ে পদ্মার চড়ে এক সুন্দর বিকেলে বসে ছিলাম।রাশি রাশি কালো চুলের উপর ফুলের মতো মুখটা,নিষ্পাপ পবিএ।মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় 'হিমি'র বুকে মাথা রেখে খুব কাঁদি। আমার মনে হয় যত আনন্দেই আমরা প্রত্যকে জীবন যাপন করি না কেন,কখনো কখনো নিঃসঙ্গ হয়ে যাই;কী যেন একটা বাকি রয়ে গেল এখনো!দিনের শেষে ভাবি,তুমি কেমন আছো?আমি কি তোমাকে চিনি?কোনোদিন কি তোমাকে কোথাও দেখেছি?তুমি কাছে থাকলে কি আমার জীবনটা অন্য রকম হয়ে যেতো?জানি না, তবে প্রতিদিন আমি তার অপেক্ষায় থাকি।যতক্ষন আমি বাইরে থাকি তাকে খুঁজে বেড়াই।কিন্তু কখনও পাই না! আমি জানি না ,সত্যি সত্যি 'হিমি' আছে কিনা।কিন্তু আমি অপেক্ষা করে আছি তার জন্য।একদিন তো দেখা হবেই।তীব্র বাসনা নিয়ে অপেক্ষায় আছি।সেই চির চেনা আঙ্গুলে ভালোবাসা বুনে চলি,মুখে নয়।এখনতো সবকিছু ডিজিটাল হয়ে গেছে-প্রেম-ভালোবাসা,বন্ধুত্ব,আর আমাদের পুরাতন মন।রঙ্গীন মুখোশ পরে দিন তারিখ ধরে বেঁধে এখন আমরা বন্ধু দিবসে বলে উঠি-বন্ধু কেমন আছিস?কিংবা ভালোবাসা দিবসে বলি- খুব ভালোবাসি তোমাকে।পরের বছর বলি অন্য কাঊকে।আমরা বদলে গেছি।দিনের পর দিন আমরা অন্ধকার পৃথিবীর দিকে যাচ্ছি।আমি অচল ও সেকেলে মানুষই থেকে গেছি।এখনো একেকটা দিন মানে কষ্টের খাতায় আরেকটা নতুন পাতা।তারপরও আমি স্বপ্ন দেখি।সুন্দর স্বপ্ন দেখাটাও একটা অনেক বড় ব্যাপার। একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টি! হিমি' কলা ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে খুব হাসছে আর গল্প করছে বন্ধুদের সাথে।'হিমি'!বৃষ্টি হলেই আমার মাথা এলোমেলো হয়ে যায়।যা খুশি দেখতে পারি,বলতে পারি,করতে পারি,ভাবতে পারি,এইতো বকুল তলায় ভেজা ঘাসে খালি পায়ে হাঁটছে 'হিমি'।কী সুন্দর একটা নীল শাড়ি পরা!নীলের মধ্যে বড় বড় সাদা ফুল আঁকা।সূতী শাড়ি।আমি 'হিমি'র পিছনে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম ফুলার রোডে!তারপর 'হিমি' মহসিন হলের সামনে পুকুরের দিকে উদাস নয়নে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে।হয়তো আমারই কথা!বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই।এই বৃষ্টির কারনে আমার মাথাটা এলোমেলো হয়ে আছে।আবার 'হিমি'!ঐ তো 'হিমি' আমার ঘরের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।এই যে কখন থেকে বৃষ্টি পড়ছে-এই বৃষ্টি আর 'হিমি' আমার।এই বৃষ্টি রং নীল,গাঢ় নীল।এই বৃষ্টিতে শুধু 'হিমি' আর আমি ভিজছি।বৃষ্টি!'হিমি'!নীল শাড়ি!তাজমহলের বারান্দায় দাঁড়ালে মনে হবে -এই বৃষ্টিতে না ভেজাটা একটা বড় অপরাধ।এই বৃষ্টি পড়ছে-আমার 'হিমি'র কপালে,ঠোঁটে,নীল শাড়িতে ,ঘন কালোচুলে,মুখে আর নরম সবুজ ঘাসে।আহা কী আনন্দ!কিন্তু বাস্তব এই রকম না।বাস্তব খুব কঠিন।বাস্তবে বৃষ্টি মানেই ট্র্যাফিক জ্যাম,কাঁদা,রিকশা ভাড়া বেশী,পানি জমে থাকা,দুগর্ন্ধ,বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা।বৃষ্টি মানেই ঝামেলা-বিরক্তি।এই বৃষ্টি আনন্দময় বৃষ্টি না।এই বৃষ্টিতে মেজাজ গরম হয়ে যায়।দিনের শেষে ঘরে ফেরার পথে অসহ্য ট্র্যাফিক জ্যাম দেখে মনে হয় দূর এই পোড়া দেশেই থাকবো না।তাই বলে 'হিমি' অবাস্তব না।এই পুরোনো প্রাচীন পৃথিবীতেই আছে।ইংরেজীতে একটা শব্দ আছে, 'Neophyte'(নীওফাইট্।নিওফইট নয়।)নীওফাইট্ শব্দটা গতকাল রাতে বারবার মনে পড়লো।কিন্তু এর অর্থ কিছুতেই মনে করতে পারলাম না।ডিকশনারীটাও খুঁজে পেলাম না।দরকারের সময় কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না।খুব রাগ লাগছিল।একসময় আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।তারপর অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখলাম।দেখলাম-আমি আর 'হিমি' সুন্দর ঝলমল দিনে ইরানের যাদু ঘর দেখতে গিয়েছি।আল বাশার মসজিদে যাওয়ার পথেই ইরান যাদু ঘর।দর্শনার্থীদের কোন প্রবেশ ফ্রি নেই।শুধু প্রবেশ মুখে জানতে চাওয়া হয়,কোথা থেকে এসেছেন,কোন দেশের নাগরিক-এই সব আর কি!ভেতরে ঢুকতেই আমাকে আর 'হিমি'কে সাদরে আমন্তন জানানো হলো।কারন সকাল থেকে দুপুর ১২ টার মধ্যে আমরাই প্রথম দর্শনার্থী।পৃ্থিবীর যে কোনো যাদু ঘরে ঢুকলেই ইতিহাস ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়।তেমনি পেলাম ইরান যাদু ঘরেও।আর কি আশ্চর্য প্রবেশ মুখেই পেয়ে গেলাম লেখিকা তসলিমা নাসরিন আর অভিনেএী সুবর্না মোস্তফাকে।তারাও আমাকে আর 'হিমি'কে দেখে খুব খুশি হলেন।কেন এই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম?তার ব্যাখ্যা কিছুক্ষন পর দিব।আমিতো কখনোই ইরান যাইনি।মানুষ ইচ্ছ করলেই অনেক কিছু পারে।কিন্তু সবকিছু পারার আগে তার সুন্দর স্বপ্ন দেখতে হবে।অনেকেই সুন্দর স্বপ্ন দেখতে পারে না।এটা তাদের ব্যথর্তা।সুন্দর স্বপ্ন দেখতে তো আর টাকা পয়সা লাগে না।শুধু ইচ্ছার ব্যাপার।এই সংস্কৃত শ্লোক টা যে বুঝবে ,সেই যাদু ঘরের স্বপ্ন দেখার ব্যাপার টা বুঝতে পারবে।"লুচি কচুরি মতিচুর শোভিতংজিলেপি সন্দেশ গজা বিরাজিতম।যস্যাঃ প্রসাদেন ফলারমাগ্নুমঃ।সরস্বতী মা জয় তান্নিরন্তম।ফ্রয়েডির ব্যাখ্যায় আর গেলাম না। | false |
hm | পাগমার্ক নজমুল আলবাব শুকনো মুখে বেরিয়ে আসে জঙ্গল ছেড়ে। তারপর হাঁটু পর্যন্ত কাদা ঠেলে এসে নৌকায় ওঠে হাঁচড়ে পাঁচড়ে। বলি, "ছবি তুলতে পাল্লেন কিছু?" নজমুল আলবাব বিড়বিড় করে কী যেন বলে। সম্ভবত গালি দেয় আমাকে। বনরক্ষী ফজলু শেখ চুপচাপ বসে ছিলো নৌকার পাটাতনে, আলবাব তাকে বলে, "ভাই পা ধুইতে হবে।" ফজলু শেখ সংক্ষেপে বলে, "ধুয়ে ফেলেন।" আলবাব ক্ষেপে যায়। তার মেজাজের সমস্যা ছোটোকাল থেকেই, হেডমাস্টারদের সাথে, পুলিশ ইনস্পেক্টরের সাথে, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ারের সাথে, যুগ্ম সচিবের সাথে ঝগড়া করে করে অভ্যাস তার। সে খ্যাঁক করে ওঠে সুন্দরবনের কেঁদোর মতো, "কী দিয়ে ধুয়ে ফেলবো?" ফজলু শেখ আবারও সংক্ষেপে বলে, "ঐ যে পানি?" নদীর ঘোলা পানি দিয়ে পায়ের কাদা ধুয়ে ফেলা যায়, এ ব্যাপারটা আবিষ্কার করে আলবাব আরো ক্ষেপে ওঠে। ক্যামেরাটা গলা থেকে নামিয়ে রক্তচক্ষু মেলে আমার দিকে তাকায়, তারপর বলে, "ক্যামেরাটা রাখেন। লেন্সে যাতে স্ক্র্যাচ না পড়ে। খুপ খিয়াল কৈরা!" আমি ক্যামেরাটাকে নবজাতক জ্ঞান করে কোলে তুলে নিই। আলবাব ধুপ করে আবার নদীতে নামে। তারপর পা ধুতে থাকে ধুপধাপ করে। আমি ক্যামেরাটা অন করে কী কী ছবি তোলা হয়েছে, সেগুলো দেখার চেষ্টা করি। বাঘভাল্লুকের ছবি তুলতে না পেরেই কি আলবাব এতো ক্ষিপ্ত? আলবাব নৌকায় উঠে এসে গর্জে ওঠে, "ক্যামেরা টিপরায় কিতার লাগি? ইগু কিতা টিভির রিমোট নি? রাখেন মিয়া!" ভয় পাই। বলি, "দেখছিলাম কী ছবি তুললেন, বাঘটাঘ ...।" আলবাব তেড়ে আসে। "বাঘটাঘ মানে? বাঘটাঘ মানে কী?" কিছু না বলে মাথা চুলকাই। আলবাব গলার গামছা দিয়ে হাত মোছে, তারপর ক্যামেরাটা ছিনিয়ে নেয় আমার কাছ থেকে। আর গজগজ করতে থাকে, "বাঘ! সুন্দরবনে আবার বাঘ!" ফ্লাস্ক থেকে এক কাপ চা ঢেলে এগিয়ে দিই তার দিকে। হজ করে আসার পর লোকটার মেজাজ হালাকু খাঁর মতো হয়ে গেছে। একে মারে, তাকে ধরে। সিলেটের সাংবাদিকরা সবাই তার ইয়ারদোস্তো দেখে এখনও পেপারে নাম আসেনি, নয়তো পাড়ামহল্লায় উপর্যুপরি মস্তানির খবর কবেই রটে যেতো। সাংসদ বদিও এখন ফেল তার কাছে। সিলেটের মেয়রকে নাকি সেদিন জামে আটকা পেয়ে মোটর সাইকেল থেকে নেমে গিয়ে য়্যায়সা কড়া ধমক লাগিয়েছে, বেচারা আর অফিসেই যাওয়ার সাহস পায়নি সেদিন। আলবাব বাঘের থাবা দিয়ে চায়ের কাপ ছিনিয়ে নিয়ে চুমুক দেয়, সুন্দরবনের অন্দরকন্দর থেকে সে চুমুকের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। কয়েকটা বাঁদর কিচকিচ করে ওঠে, দূরে পানি খেতে আসা একটা হরিণ দুড়দাড় পালিয়ে যায়। আমি ভয়ে ভয়ে বলি, "বাকিরা কোথায়?" আমাদের সঙ্গের আরো দুই ফটুগফুর জঙ্গলে ঢুকেছে কামানের মতো বড় বড় ক্যামেরা নিয়ে, সঙ্গে আরেক বনরক্ষী মতি সর্দার। আমি ভীতু সম্প্রদায়ের মানুষ, বনের ভেতর নামবো না বলে ফজলু শেখ আমাকে পাহারা দেয়ার জন্যে রয়ে গেছে। সুন্দরবনে নেমে কাদা মাড়িয়ে সেধে সেধে বাঘের মুখে পড়ার কোনো খায়েশ আমার নাই। আমি দূর থেকে বানর দেখেই খুশি। আলবাব আরেকটা পিলে কাঁপানো চুমুক দিয়ে চায়ের কাপ শেষ করে আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে চোখ রাঙিয়ে বলে, "বাকিরা জঙ্গলে। জঙ্গলৎ নামিয়া তারা কিতা লন্ডন যাইতোনি? তারা ছবি তুলরায়।" আরেক কাপ চা ঢেলে দিই হতভাগাটাকে। নইলে যদি মেরে ধরে বসে? আলবাব দ্বিতীয় কাপে চুমুকটা কয়েক ডেসিবেল আস্তেই দেয়। চোখের অগ্নিদৃষ্টির তাপও সুন্দরবন অঞ্চলে পানির স্ফূটনাঙ্কের নিচে নামে। ভরসা পেয়ে বলি, "ছবি টবি তুলতে পারলেন কিছু?" আলবাব গোঁ গোঁ করে বলে, "তুলছি কিছু।" আমি বলি, "কীসের ছবি তুললেন?" আলবাব অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলে, "গাছপালা। বান্দর। সাপ। কাঁকড়া। আর ...।" থেমে যায় সে, চুকচুক করে চা খায়। আমি কৌতূহলী হয়ে উঠি। বলি, "আর?" আলবাব কেশে গলা সাফ করে। তারপর বলে, "বাঘের পায়ের ছাপ।" ফজলু শেখ এবার কান খাড়া করে। বলে, "টাটকা?" আলবাব মাথা নাড়ে। "হুঁ!" ফজলু শেখ বিড়বিড় করে কী যেন বলে। আমি বলি, "সর্বনাশ! টাটকা পায়ের ছাপ মানে? এইখানে আশপাশ দিয়ে বাঘ গেছে নাকি কিছুক্ষণ আগে?" আলবাব চুপচাপ চা খায়। ফজলু শেখ কেমন যেন চোরা চোখে তাকায় আমাদের দিকে। আলবাব চায়ের কাপ ফিরিয়ে দিয়ে বলে, "আরো একটা জিনিস দেখছি, কিন্তু ...।" আমি বলি, "আরেকটা জিনিস? কী জিনিস?" আলবাব আবারও চা ঢালার ইশারা করে। ফ্লাস্ক উপুড় করে দিই তার কাপে। আলবাব চায়ের কাপ হাতে নিয়ে গালে ঠেকায়, তারপর বেজার মুখে একটা চুমুক দেয়। বলে, "অতি আজব জিনিস। বললে বিশ্বাস যাবেন না।" আমি আলবাবের অর্ধেক কথাই বিশ্বাস করি না। সারাক্ষণ নিজের মস্তানির গল্প করে ব্যাটা। কবে কোন গোলটেবিলে কোন মন্ত্রীকে ধমক দেয়ার পর মন্ত্রী চুপ করে গিয়েছিলো, কক্সবাজারে সৈকতে ছবি তুলতে গিয়ে নেভির এক জাহাজের কারণে সূর্যাস্তের ছবি মনমতো পাচ্ছিলো না বলে সৈকত থেকে ধমক দেয়ার পর নেভির লোকজন যুদ্ধজাহাজের নোঙর তুলে একটু দক্ষিণ দিকে সরে গিয়েছিলো, হরতালে পেট্রল পাম্প বন্ধ থাকায় মোটর সাইকেলের ট্যাঙ্কের ভেতর হিসি করে একবার সেই জ্বালানির জোরে সিলেট থেকে মৌলভিবাজার চলে গিয়েছিলো, রাতের বেলা নৌকায় শুয়ে শুয়ে শুধু এইসব গল্প করে। তবুও ভদ্রতার খাতিরে বলি, "এটা একটা কথা বললেন? বলেন কী আজব জিনিস।" আলবাব চায়ের কাপে আনমনা চুমুক দিয়ে বলে, "দেখছি ওনাকে।" ফজলু শেখ চমকে ওঠে। আমি চমকাই না অবশ্য। বাকিটা শুনতে চাই। বলি, "কোথায়?" আলবাব তারপর বাকিটা খুলে বলে। মতি সর্দার শুরুতেই সতর্ক করে দিয়েছিলো, সবাইকে এক সারিতে পরস্পরের কাছে থেকে চলার জন্যে। জঙ্গলের ডানে বাঁয়ে খেয়াল রাখতে, ঘন ঝোপের দিকে লক্ষ্য রাখতে, বানর পাখি এসবের ডাকাডাকির দিকে কান রাখতে, সর্বোপরি মতির তালে তাল মিলিয়ে এগোতে। আলবাব এসব এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছে। খেয়াল রেখে লাভটা কী, যদি বাঘ সত্যই ধরতে আসে? সুন্দরবনের কেঁদো বাঘ লাফিয়ে কুঁদিয়ে কামড়াতে আসছে, এই দৃশ্য খেয়াল করে দেখে কী প্রতিকার? বাঘের সাথে দৌড় দিয়ে কি পারা যাবে? তারচেয়ে নিজের মতো করে ছবি তুলতে তুলতে এগিয়ে যাওয়াই বিবেচকের কাজ। বাঘের চিন্তায় অস্থির হয়ে সুন্দরবনে ঘোরাঘুরিটা মাটি করে লাভ নাই। মরণ তো শ্যাম সমান। ফলে দলের অন্যেরা বেশ কিছুটা এগিয়ে যায়। আলবাব পিছিয়ে পড়ে। এতে লাভই হয়, জানায় আলবাব। ধারেকাছে থাকলে অন্যরা পাকনামি করে তার ছবি তোলার মুড খারাপ করে দিতো। জঙ্গল ধরে কিছুদূর এগিয়ে সে একটা অপূর্ব ক্যাওড়া গাছের ছবি তোলে। তারপর গাছের ডালে একটা সাপের ছবি। একটা তরুণ বানরের ছবি। সরু খালের ধারে কাঁকড়ার ছবি। তারপর এক পর্যায়ে বাঘের পায়ের ছাপ। একেবারে টাটকা, তাতে তখনও জল চুঁইয়ে ওঠেনি পুরোপুরি। বাঘের পায়ের ছাপ অনুসরণ করে এগোতে থাকে আলবাব। ডরাইলেই ডর। কিছুদূর এগোতেই একটা ঝোপের পাশে ডোরাকাটা একটা লেজ বেরিয়ে পড়ে থাকতে দেখে আলবাব। সে তখন একটা গাছে উঠে পড়ে হাঁচড়ে পাঁচড়ে। সুন্দরবনের গাছের ওপর এই পর্যায়ে সমূহ বিরক্তি প্রকাশ করে আরো এক কাপ চা চেয়ে বসে সে। ফজলু শেখ নতুন করে চায়ের পানি গরম চড়ায় কেরোসিনের চুলায়। সুন্দরবনের গাছগুলোও বেয়াদব কিসিমের। জাম্বুরা গাছের মতো ভদ্র গাছ এই এলাকায় নাই। অঞ্চলটাই বিটকেলদের দখলে, আলবাবের অভিমত। সুন্দরবনের ফাঁকে ফাঁকে সরকারের উচিত কিছু জাম্বুরা গাছ লাগানো। সিলেটে ফিরে গিয়ে সে এ ব্যাপারে লেখালেখি করবে, বলে আলবাব। যা-ই হোক, একটা গাছে সে চড়ে বসে। তারপর বাঘটার কাজকারবার লক্ষ্য করতে থাকে। ঝোপের ভেতর থেকে বেরোলেই আলবাব ছবি তুলে নেবে। বাঘটা ঝোপের ভেতর থেকে বের হয় না। বরং ঝোপের ভেতর থেকে সরু সাদা ধোঁয়ার রেখা বেরিয়ে আসতে থাকে। ফজলু শেখ কেরোসিনের চুলার কাছ থেকে বলে, "ধোঁয়া?" আলবাব বলে, হাঁ, ধোঁয়া। দূর থেকে সে হালকা তামাকপোড়ার গন্ধও পাচ্ছিলো, তবে দুয়ের মধ্যে কোনো সংযোগ আছে কি না, সেটা সে বলতে পারছে না। আমি বলি, "বাঘ তো ধরেন গিয়ে খুব গরম জন্তু। শুকনা ঘাসের উপর বসলে টসলে সেখানে আগুন জ্বলে উঠতে পারে না?" আলবাব বলে, হোলেও হোতে পারে। কিছুক্ষণ সেখানে ধোঁয়া পাক খেয়ে উঠতে থাকে, তারপর ঝোপের আড়াল থেকে একটা গোঙানির শব্দ ভেসে আসে। ফজলু শেখ কেরোসিনের চুলার কাছ থেকে বলে, "গোঙানি?" আলবাব বলে, হাঁ। আহত ফুটবলার যেভাবে গোঙায়, অনেকটা সেরকম গোঙানি। আমি কিছু বলার সাহস পাই না। ফজলু শেখ কেটলির মধ্যেই দুধ চাপাতা চিনি সব গুলতে থাকে সশব্দে। আলবাব বলে, এরপর ঝোপের আড়াল থেকে রুনা লায়লার গাওয়া একটি গানের কলি ভেসে আসে পুরুষ কণ্ঠে। আমার মন বলে তুমি আসবে। আমি সোৎসাহে বলি, "আহা, এ তো অপূর্ব গান। হৃদয়ের বসন্ত বাহারে, প্রেমের অভিসারে আসবে এ এ এ এ এ এ।" আলবাব সন্দিগ্ধ চোখে আমার দিকে তাকায়, তারপর ফজলু শেখের বাড়িয়ে ধরা চায়ের কাপ হাতে নেয়। বাকি চা ফজলু ফ্লাস্কে ঢালতে থাকে। আলবাব বলে, হাঁ, ঐ গানটির প্রথম কলিই ঘুরে ফিরে কিছুক্ষণ গীত হয়। আমার মন বলে তুমি আসবে, আমার মন বলে তুমি আসবে। তারপর আবার গোঙানির শব্দ ভেসে আসে। ফজলু শেখ চোরা চোখে জঙ্গলের দিকে তাকায়। ঝোপের আড়ালে গোঙানির শব্দ একসময় থেমে যায়। খসখস শব্দ হয় কিছুক্ষণ। তারপর কে যেন বলে, আহ! আমি মাথা চুলকাই। বাঘের পায়ের ছাপ, ডোরাকাটা লেজের সাথে বিড়ি সিগারেট, রুনা লায়লার গান আর গোঙানির কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাই না। আলবাব বলে, তারপর লেজটা ঝোপের আড়ালে চলে যায়। আলবাব আরো আধঘন্টা অপেক্ষা করেছে, কিন্তু ওনার আর সাড়াশব্দ পায়নি। কয়েকটা বোলতা এসে কামড়ানোর চেষ্টা করছিলো বলে সে ঐ বেয়াদব গাছ থেকে নেমে আর সামনে না এগিয়ে নৌকায় ফিরে এসেছে। বাকিদের জন্যে চিন্তিত হয়ে পড়ি আমি। বাঘের মুখেই কি গেলো তারা? কোনো বন্দুক, কোনো গর্জন তো শোনা গেলো না এখন পর্যন্ত। স্কোর কত কে জানে? ফজলু শেখ বিড়বিড় করে কী যেন বলে। আলবাব নদীতে পিচিক করে থুতু ফেলে বলে, "দেশটা শেষ হয়ে গেলো। কোনো ইঞ্ছাপ্নাই।" অদূরে জঙ্গলের ভেতর নড়াচড়ার শব্দ পাই আমরা। একটু পর আমাদের বাকি দুই ফটুগফুর আর মতি সর্দার বেরিয়ে আসে। সবাই অক্ষত। আনন্দিতও বটে। উজানগাঁ চৌধুরী আর অনুপম ত্রিবেদীর মুখে রবার্ট ক্লাইভের বাংলাজয়ী হাসি। মতি সর্দারের মুখে মীরজাফরীয় সন্তোষের মৃদু ছাপ। নৌকায় উঠে উজানগাঁ বলে, "দারুণ এক জিনিস পাইছি!" আলবাব বলে, "কী?" অনুপম ত্রিবেদী বলে, "বাঘুর হাগু!" ফজলু শেখ চমকে ওঠে। উজানগাঁ বলে, "য়্যাকদম টাটকা। ধূমায়িত বিষ্ঠা যাকে বলে! অল্পের জন্য আমরা বেঁচে গেছি সবাই! আমরা যে পথে গেলাম, তার পাশেই এক ঝোপে, বাঘের পাগমার্ক, পুরা টাটকা!" অনুপম বলে, "পাগমার্কের সাথে হাগমার্কও! একদম গরমাগরম! কী যে দুর্গন্ধ রে ভা্ই, মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে একেবারে! ম্যাক্রো লেন্স দিয়ে তুলে এনেছি ছবি!" মতি সর্দার আর ফজলু শেখ চোখাচোখি করে, দেখতে পাই আমি। আলবাব চুপচাপ চা খায়। উজানগাঁ আর অনুপমের ক্যামেরায় বাঘের বিষ্ঠার ছবি দেখার আবদার করি। দুইজনই অবজ্ঞার দৃষ্টিতে আমাকে আপাদমস্তক দেখে, যার অর্থ, সুন্দরবনে এসে সারাক্ষণ নৌকায় বসে থাকে যে কাপুরুষ, তার এইসব ছবি দেখার কোনো অধিকার নাই। কিন্তু চায়ের ফ্লাস্ক আমার হাতে বলে নিমরাজি হয় তারা। আমি ক্যামেরার ভিউ প্যানেল থেকে দেখি ছবিগুলো। সব ছবিই বাঘের বিষ্ঠার। নানা এক্সপোজারে। রঙিন, সাদাকালো। বোকেহ করা। এইচডিআর করার জন্যে ধারাবাহিক বিবিধ আলোকসম্পাতে তোলা। বাঘটা একেবারে মন খুলে হেগেছে, ছবি দেখেই বোঝা যায়। পেল্লায় উঁচু একস্তুপ বিষ্ঠা। কিছু ছবিতে বিষ্ঠার ওপর বসা মাছির পুঞ্জাক্ষিও এসেছে। কিন্তু ছবিগুলো দেখতে দেখতে কেমন যেন সন্দিগ্ধ হয়ে পড়ি। বলি, "আচ্ছা, এগুলো কি বাঘের গু?" উজানগাঁর মুখ কালো হয়ে যায়। অনুপম ত্রিবেদী ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে গর্জে ওঠে, "আলবাৎ বাঘের গু! বাঘের গু না তো কীসের? বান্দরের?" উজানগাঁ থমথমে মুখে বলেন, "আমাদের কথা বিশ্বাস না হলে মতি ভাইকে জিজ্ঞাসা করেন!" আমি মতি সর্দারের দিকে তাকাই। মতি ভাইয়েরা যুগে যুগে বিষ্ঠা সার্টিফাই করেন, মতি সর্দার ব্যতিক্রম হলো না, বললো, "য়্যাকদম সোন্দরবনের রাজার গু। জোয়ান মদ্দা বাঘের গু।" অনুপম ত্রিবেদী গর্জে ওঠে, "বিশ্বাস না হলে গু গুগল করে দ্যাখেন!" আমি মিনমিন করে বলি, "জঙ্গলের মধ্যে গুগল পাবো কোথায়?" অনুপম ত্রিবেদী তবুও গজগজ করে। হতভাগাটা। আলবাব বলে, "নাস্তিকরা কিছুই বিশ্বাস করতে চায় না। সবকিছুতে খালি প্রশ্ন, খালি সন্দেহ। আমার চোখের সামনে পায়খানা করলেন উনি, আর উনি আসছেন যুক্তিতর্ক মারাইতে।" উজানগাঁ আগুনঝরা চোখে আমাকে আর হাতের ফ্লাস্কটাকে দেখে শুধু। আমি মাথা নিচু করে উজানগাঁর ক্যামেরায় বাঘের বিষ্ঠার ছবি দেখতে থাকি। একেবারে অলিম্পিক পারফরম্যান্স দিয়েছে ব্যাটা বাঘ। বাঘের খোরাক নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে এই তল্লাটে, কিন্তু ঐ ওপাশের পারফরম্যান্স নিয়ে কবি নীরব। মতি সর্দার আর ফজলু শেখ আমাকে আড়চোখে দ্যাখে কেবল। কিন্তু যতই দেখি, ততই মনটা খুঁতখুঁত করে। কেমন যেন চেনা চেনা লাগে বাঘের বিষ্ঠা। ওরকম শঙ্খপাক, ফাটলসমৃদ্ধ, আকরকর্কশ, মলিনহরিদ্রাভ, সবশেষে একটি তীক্ষ্ণ ফলাযুক্ত বিষ্ঠা আগেও কোথাও দেখেছি বলে মালুম হয়। কিন্তু কোথায় দেখেছি? হেথা নয়, হোথা নয়, অন্যখানে, অন্য কোনোখানে ...। চিন্তার সুতোটা কাটা পড়ে আলবাবের গর্জনে, "বাঘ না হাগলে কে হাগলো ঐখানে? আপনার তালুই?" আহত হই একটু। বলি, "হরিণের গু হতে পারে না?" মতি সর্দার প্রতিবাদ করে। হরিণের বিষ্ঠার পুঙ্খানপুঙ্খ বর্ণনা দেয় সে। ছবির সাথে তার কোনো মিল নেইকো। তবুও আমার নাস্তিক মন ভেতর থেকে চোখ পাকিয়ে বলে, খুপ খিয়াল কৈরা। আমি মিনমিন করে বলি, "শূকর?" ফজলু শেখ ঠাঠা করে হাসে। তারপর শূকরমলের রোমহর্ষক বিবরণ দেয়। ছবির সাথে তারও কোনো সাদৃশ্য নেই। এভাবে একে একে বানর, কাঁকড়া, সাপ, মৌমাছি এগুলোও বাতিল হয়ে যায় এক্সপার্টদের রায়ে। উজানগাঁ আর অনুপম চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আমার আস্পদ্ধা দেখে যায় চুপচাপ। আলবাব গর্জে ওঠে, "বলেন তাইলে এইটা বাঘের গু না, আপনার তালুইয়ের গু!" আমার তালুইয়ের বর্জ্য দেখার দুর্যোগ আমার ঘটেনি, কিন্তু আমি আর আমার তালুই একই প্রজাতির, কতই বা ঊনিশ-বিশ হবে দুজনের? এবার আমার মনের কোণে নিজের টাট্টিযাপনের স্মৃতি টোকা দেয়, বলে, অবনী বাড়ি আছো? অবনী বাড়ির দোর খুলে বেরিয়ে এসে ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস করে পেট চুলকাতে চুলকাতে যা বলে, সেটাই আমি বলি, "এইটা বাঘের গু না রে ভাই! এইটা মাইনষের কাম!" অনুপম ক্ষেপে ওঠে, বলে, "ফাইজলামি করার আর জায়গা পান না মিয়া! জান পাঞ্জায় নিয়া গলা পন্ত কাদা ঠেইল্যা এতডি ছবি তুলছি, আপনি বলতে চান এগুলি রহিম-করিম-সেলিমের গু? য়্যাকদম নৌকা থিকা ফালায় দিমু কিন্তু!" উজানগাঁ গর্জে ওঠে, বলে, "প্রমাণ কী?" আমি আর প্রমাণ খুঁজে পাই না। আমতা আমতা করি। অনুপম বলে, "বাঘের টাটকা পায়ের ছাপের পাশেই পাওয়া গেছে এই জিনিস, আর আপনি কইতেছেন এইটা মাইনষের! মিয়া ফাউল কোথাকার!" মতি সর্দার বলে, "টাটকা পাগমার্ক, টাটকা বিষ্ঠা!" ফজলু শেখ কিছু না দেখেই সমর্থন করে, "মানুষের হইতেই পারে না!" আলবাব ফুঁসে ওঠে, "তখন থেকে বলতেছি আমি এই ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী! আমার চোখের সামনেই উনি এই কাম করছেন! বেটা নাস্তিক কানে পানিই তোলে না!" অবনী আবার বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়। আরো কিছু স্মৃতি তাকে ডাকাডাকি করে। কিন্তু অবনী আর দরজা খোলার সাহস পায় না। ফটুগফুরেরা নিজেদের মধ্যে ছবির গুণাগুণ নিয়ে আলাপ করতে থাকে। আলবাব আমার হাত থেকে চায়ের ফ্লাস্ক বাজেয়াপ্ত করে। বনরক্ষীরা চুলায় রান্না চাপানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাঝি নৌকা ছেড়ে দিয়ে ফিরে যেতে থাকে বনবিভাগের অফিসের দিকে। সংলগ্ন ঘাটেই আমাদের রাত্রিযাপনের কথা। একঘরে হয়ে পড়ে আমি বিষণ্ণ উদাস মনে সঙ্গে আনা জিম করবেটের একখানা বই পড়তে থাকি। তার পদে পদে বাঘ মারার রোমহর্ষক কাহিনী। খিচুড়ি আর ডিমভাজা খেতে খেতে উজানগাঁ, অনুপম আর আলবাব আমাকে চোখের দৃষ্টিতে ভস্ম করে কিছুক্ষণ পর পর। মতি সর্দার আমার পাতে অন্যদের তুলনায় কম ব্যাসের ডিমভাজা তুলে দেয়। আচার আনা হয়েছে সাথে, সেটাও এক দলা কম পড়ে আমার পাতে। বিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় যুগে যুগে বহু লোককে নিপীড়নের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। আমি টের পাই, আমি হালের জিওর্দানো ব্রুনো, আমিই একবিংশ শতাব্দীর গালিলিও গালিলি। কিন্তু ডিমভাজা আর আচারের জন্য এই দুর্গম সুন্দরবনে নিজেকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষার জন্যে আমি ব্রুনোর মতো ঘাড়ত্যাড়ামি না করে গালিলিওর দেখানো পথে উঠে পড়ি। বলি, "সচলে একটা পোস্ট দিয়েন বাঘটার কাণ্ড নিয়ে। কর্ছে কী হালায়! এইভাবে চালায় গেলে তো সুন্দরবনে নতুন চর জেগে উঠবে!" উজানগাঁ আর অনুপমের মুখের আঁধার এক দাগ কমে আসে, আলবাব ক্রুদ্ধ চেহারা নিয়ে কচকচিয়ে খিচুড়ি খায়। মতি সর্দার একটু প্রসন্ন হয় যেন। উৎসাহ পেয়ে বলি, "বাঘের এই ব্যাপারটাও যদি বাঘের মতো ডোরাকাটা হতো, কী চমৎকার হতো চিন্তা করে দ্যাখেন?" উজানগাঁ আর অনুপম খুশির হাসি হাসে। আলবাব গোমড়া মুখে ডিমভাজা মাখে খিচুড়ির সাথে। মতি সর্দারের হাতের চামচ ডিমভাজার তাওয়ার ওপর ভাসতে থাকে। আমি বলি, "অল্পের জন্য আজ বেঁচে গেলাম সবাই।" মতি সর্দার আরেকটা ডিমভাজা তুলে দেয় আমার পাতে। সাথে দুই চামচ আচার। পেট ভরে খাই। খেয়েদেয়ে এক কাপ চা হাতে নিয়ে উজানগাঁ আর অনুপম ল্যাপটপে নামাতে থাকে নিজেদের ছবিগুলো। আলবাব বিছানায় শুয়ে পড়ে। ফজলু শেখ রাইফেলে তেল দেয়। মতি সর্দার মিটিমিটি হাসে। বনবিভাগের অফিসের ঘাটে নৌকা ভেড়ার পর মোবাইলে সিগন্যাল মেলে। উজানগাঁ ইন্টারনেটে ঢোকার চেষ্টা করতে থাকে। অনুপম বলে, "খাড়ান, গুগল করে দেখাই আপনাকে, অন্যান্য দেশে বাঘের গু কীরকম।" আমি ভরাপেটে উদাস গলায় বলি, "আমাদের বাঘের মতো সুন্দর গু পিথিমির আর কোনো বাঘের নাই।" উজানগাঁ টাইগার পুপ লিখে সার্চ দেয় গুগলে। বলে, "হিম্ভাই আপনি এইসব নাস্তিকতা একটু কমান। সব কিছুতে প্রশ্ন করা ঠিক না। আসেন, দেখে যান বাঘের গু কেমন।" আমি উঠে যাই। মনের কোণে একটা ডোরাকাটা লেজ, তামাকের ধোঁয়া আর রুনা লায়লার আমার মন বলে তুমি আসবে দরজায় টোকা দিয়ে বলে, অবনী বাড়ি আছো? গুগলে তিল তিল করে ফুটে ওঠে একখানা ছবি। নিচে লেখা, টাইগার পুপ। উজানগাঁ আর অনুপমের ভুরু কুঁচকে ওঠে। গুগলের ছবির সাথে তাদের ক্যামেরার ছবির অনেক গরমিল। সেই তেজ, সেই ধোঁয়া, সেই রূপ গুগলের গুয়ে নেই। আমি সান্ত্বনা দিয়ে বলি, "হবে কোনো মেছোবাঘের গু।" উজানগাঁ মুখ কালো করে বলে, "না, বলতেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ড্রপিং ইন সুন্দরবন।" আমি সান্ত্বনা দিয়ে বলি, "তাহলে কোনো বুড়া বাঘের কলেরার ফল হবে। বিদেশী ফটুগফুরদের কপালে এরচে ভালো আর কী জুটবে? আমরা তো একেবারে জোয়ান মদ্দা বাঘের জিনিস মিলগেটের রেটে পেয়ে গেছি।" অনুপম মুখ কালো করে বলে, "না, বলতেছে পাগমার্ক ইন্ডিকেইটস প্রেজেন্স অফ আ ফুললি গ্রৌন মেইল।" আমি বললাম, "হয়তো ওদের বাঘটার মন খারাপ ছিলো সেদিন। আল্লার তিরিশ দিন কি একরকম যায় রে ভায়েরা? হাতের পাঁচ আঙুল কি সমান হয়? রবীন্দ্রনাথ বা ই্উনূসের ভাইয়েরা কি কেউ নোবেল বাগাতে পেরেছিলো?" উজানগাঁ আর অনুপম মুখ কালো করে গুগলে আরো বাঘের বিষ্ঠার ছবি দেখে। সবই যেন কেমন কেমন। মতি সর্দার মুখ কালো করে তাকায় আমার দিকে। ফজলু শেখও। ওদিকে আমাদের পরিচিত বনবিভাগের এক সেজোকর্তার নৌকা এনজিন ভটভটিয়ে এসে ভেড়ে অফিসের ঘাটে। সেজোকর্তা হাসিমুখে আমাদের নৌকায় উঠে এসে বলেন, "আজকে আমার নৌকায় খাওয়াদাওয়া হবে। মুরগি আছে, মাছ আছে, চিংড়ি আছে, পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচ আছে এন্তার! একেবারে হুলুস্থুলু ভুনা হয়ে যাক!" ভালো খানা পাকানোর সুখবরে আমার মন ভালো হয়ে ওঠে। আলবাব উঠে বসে কোন পদের মাছ আছে সেই খোঁজ নিতে সেজোকর্তার নৌকায় যায়। উজানগাঁ আর অনুপম মুখ কালো করে ল্যাপটপে গুগল হাঁটকায়। মতি সর্দার সেজোকর্তার কানে ফিসফিস করে কী যেন বলে। সেজোকর্তার ভুরু পলকের জন্যে কুঁচকে ওঠে, দেখতে পাই। তিনি তারপর আবার জোর করে কুঞ্চিত ভুরু সমান করেন। হাসিমুখে বলেন, "কেমন দেখলেন আমাদের সুন্দরবন?" আমি বলি, "জ্বি ভাইয়া, দারুণ! সুন্দরবনের ডিমভাজাটা এতো টেস্টি, আর সুন্দরবনের আচারটাও সাংঘাতিক! সুন্দরবনের খিচুড়ির কোনো তুলনাই হয় না।" সেজোকর্তা খুশির হাসি হাসেন। চোখ টিপে বলেন, "আইনে নিষেধ, নাহলে সুন্দরবনের ঐ ফোঁটা দেয়া খাসির গোস্তের কাবাব খাওয়া যেতো। হেহে, বুঝলেন কি না?" উজানগাঁ আর অনুপম মুখ কালো করেই বসে থাকে। সেজোকর্তা বলেন, "লোচন বক্সী আসেননি আপনাদের সাথে? উনি তো আগে রেগুলার আসতেন। এই তল্লাটের সব ডাকাতের সাথে ওনার ফেসবুকে দোস্তি!" আমি মাথা নাড়ি, বলি, লোচন বক্সী পরে আসবেন, অন্য গল্পে। সেজোকর্তা বলেন, "তা আপনারা মন খারাপ করে বসে আছেন কেন ভাইয়ারা? হরিণটরিণ পান নাই ছবি তোলার জন্য?" অনুপম গোমড়া মুখে বলে, "না!" সেজোকর্তা বলেন, "ভাগ্য ভালো থাকলে মাঝেমধ্যে বন্য শূকরের দেখা মেলে। অথবা ময়াল সাপ। তবে শূকর বড় ভয়ানক জীব। ছুটে এসে গুঁতা দেয়। সেই গুঁতাকে বাঘেও ডরায় রে ভাইয়ারা!" আমি বলি, "বাঘ দেখা যায় না?" সেজোকর্তা উদাস হেসে বলেন, "বাঘ কি যখন তখন দেখা যায় রে ভাইয়া? সে বড় ছলনাময়। আড়ালে আড়ালে থাকে, নীরবে আপনা ঢাকে, নিরমল নয়নের জলে, পাছে লোকে কিছু বলে?" আমি বলি, "না ততোটা নিরমল সে নয় মনে হচ্ছে। আজ আমরা জঙ্গলে নেমে বাঘের বিষ্ঠা, যাকে বলে টাইগার পুপ, দেখেছি। একেবারে পল্টন ময়দানি মাল। এই য়্যাত্তো উঁচু এক ঢিবি!" সেজোকর্তা আড়চোখে একবার মতি সর্দারের দিকে তাকান, তারপর হেসে বলেন, "জীবন যেমন, বিষ্ঠাও তেমন। বাঘের জীবন রাজাগজাদের মতো, হাগার বেলায় অন্যথা হলে চলবে কী করে, বলুন? আমরা বনে রেগুলার ডিউটি দিই, তাই তিনবেলা হরিণটরিণ খেয়েপরে ওনারা আছেন ভালোই। ল্যাটিনে তো বলছেই, মের্দা সানা ইন করপোরে সানো, সুস্থ দেহে সুস্থ মল!" আমি বলি, "খুব ভদ্র বাঘ। মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়।" সেজোকর্তা মিটিমিটি হেসে বলেন, "হ্যাঁ। বাঘ আজকাল মানুষের সামনে আসেটাসে না। তাই শুধু পাগমার্ক দেখেই খুশি থাকতে হয় আর কি।" উজানগাঁ থমথমে মুখে বলে, "এটা বাঘের গু নয়!" অনুপম ডুকরে ওঠে, "হতেই পারে না!" সেজোকর্তা ব্যস্ত হয়ে বলেন, "কই, দেখি দেখি? আমাকে দিন তো দেখি ল্যাপটপটা? উমমম? হুমমমমমমমম! বাহ দারুণ ছবি তুলেছেন তো? দেখি তো! হাঁ, সুন্দরবনের জোয়ান মদ্দা বাঘ। পাঁচ বছরের মতো হবে বয়স। নাকের ডগা থেকে লেজ পর্যন্ত নয় ফুটের কম হবে না। মনে হচ্ছে মায়া হরিণ খেয়েছে গত পরশু। হুঁ, মায়া হরিণই। চিত্রা হরিণ খেলে বিষ্ঠার টেকশ্চারটা অন্যরকম হতো, এতো স্মুদ হতো না, ফাটোফাটো দাগ থাকতো আরো ... কী বলো মতি?" মতি সর্দার মাথা দোলায়। "আলবাৎ!" অনুপম সন্দিগ্ধ গলায় বলে, "গু দেখেই বুঝে ফেললেন এতো কিছু?" সেজোকর্তা উদাস হাসেন। "হাঁ ভাই! বন নিয়েই তো আমাদের কাজ, আমাদের বেঁচে থাকা। বাঘের বিষ্ঠা বনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঘের বিষ্ঠা নিয়ে কতো এনজিওর প্রোজেক্ট আছে জানেন?" উজানগাঁ মাথা নাড়ে। "এটা বাঘের বিষ্ঠা হতেই পারে না! আমরা গুগল করে দেখেছি। বাঘের মাল অন্যরকম। সম্পূর্ণ অন্যরকম।" সেজোকর্তা বলেন, "আরে না রে ভাই, এটা সাক্ষাৎ বড়মামার বড় ছেলে! দেখেই তো বোঝা যায়, কী বলো শেখ?" ফজলু শেখ মাথা দোলায়, "য়্যাকদম!" অনুপম বলে, "উঁহুহুহু, আমরা গুগলে দেখলাম। বড়মামার বড়ছেলের চেহারাসুরত সম্পূর্ণ অন্যরকম! এই বড়ছেলে অন্য লোকের!" সেজোকর্তা একটু উষ্মার সাথে বলেন, "আরে ভাই, চলতে ফিরতে হরদম দেখছি এই জিনিস! সুন্দরবনের বাঘকে এখন চিনতে হয় তার পায়ের ছাপ আর গুয়ের ছোপ দেখে। ও আমাদের মুখস্থ। বড় লাটের রেলগাড়িই এটা!" উজানগাঁ আর অনুপম রাজি হয় না। রেলগাড়ির ব্যাপারে তাদের আপত্তি নেই, বগির পর বগি যেখানে ছবিতেই স্পষ্ট (শুধু বোকেহ ছবিতে আবছা), কিন্তু বড় লাটের এটা হতেই পারে না। কোনো মেজো বা সেজো লাট বড় লাটের গরম করা তাওয়ায় পরোটা ভেজে গেছে, এ-ই তাদের অভিমত। সেজোকর্তা, মতি সর্দার আর ফজলু শেখ খুব তর্ক করতে থাকে। সেজোকর্তা ক্ষেপে গিয়ে বলে, "এটা বড় হুজুরের কোলবালিশ না হলে কার, আপনাদের তালুইয়ের?" আলবাব সেজোকর্তার নৌকা থেকে খাবারদাবারের খোঁজ খবর নিয়ে ফিরে আসে। তর্কের গন্ধ শুঁকেই সে ক্ষেপে ওঠে, আমার দিকে আঙুল তুলে বলে, "এই নাস্তিক বদ্মায়েশটা আবার ত্যানা প্যাঁচায়? আমি বললাম উনি আমার চোখের সামনে ডেলিভারি দিছেন, তারপরও বেটা বেঙ্গলি বিশ্বাস যায় না!" আমি আমতা আমতা করি, সেজোকর্তা গর্জে ওঠেন, "আপনারা দু'পাতা বিজ্ঞান পড়ে নিজেদের সবজান্তা শমশের ভাবেন! থাকেন ঢাকা শহরে, আর বাঘ নিয়ে তর্ক করেন আমাদের সাথে! বাঘের সাথেই আমাদের ওঠবোস, এক পুকুরের পানি খাই আমি আর বাঘ, আর বাঘের বিষ্ঠা চেনাতে এসেছেন আমাকে!" আলবাব আমার দিকে চোখ পাকিয়ে বলে, "আমি নিজের চোখে দেখেছি, ঝোপের বাইরে ডোরাকাটা লেজ, তারপর সাদা ধোঁয়া, তারপর তামাক পোড়ার গন্ধ, তারপর গোঙানির শব্দ, তারপর রুনা লায়লার আমার মন বলে তুমি আসবে! তারপরও বেটা নাস্তিক বাটপার খালি তর্ক করে, খালি যুক্তি খোঁজে। হজ করে আসছে কে, আমি না তুই?" সেজোকর্তা থতমত খেয়ে চুপ করে যান। উজানগাঁ আর অনুপম অবিচল থেকে যায় নিজেদের দাবিতে, এডউইন হাবলের মতো। এটা বড় হুজুরের কোলবালিশ হতেই পারে না। এটা কোনো মেজো বা সেজো হুজুরের তাকিয়া। আমি বলি, "ইয়ে, বড় মামা কি বিড়িটিড়ি খান?" সেজোকর্তা আমতা আমতা করেন। বলেন, "দিনকাল তো ভালো না। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জের মুখে সুন্দরবন। এখন ইন্টারনেটে সব পাওয়া যায়, বনের মধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্ক চলে আসছে। বড় হুজুরও বিড়িতে দুয়েকটা টান দিতেই পারেন।" আমি বলি, "কিন্তু বড় হুজুর কি রুনা লায়লার গান গাইতে পারেন?" সেজোকর্তা আমতা আমতা করেন। মতি সর্দার ভক্তিভরে বলে, "বনবিবির ইশারায় সকলই সম্ভব। রেডিও খুলনা তো অতি জাগ্রত! বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি?" উজানগাঁ আর অনুপমও গোঁ ধরে। আলবাব ফোঁসফোঁস করে কিছুক্ষণ, তারপর চুপ করে যায়। সেজোকর্তা অবশেষে হার মানেন। গামছা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বলেন, "ঠিকাছে। কিন্তু আপনারা ফিরে গিয়ে কিছু বলবেন না। একদম চুপ।" আমরা রাজি হই। সেজোকর্তা বলেন এক আশ্চর্য কাহিনী। সুন্দরবনে আর বাঘ জীবিত নাই। এ কোনো নতুন ঘটনা নয়, প্রায় দশ বছর আগেই সুন্দরবন থেকে বাঘ উধাও হয়ে গেছে। নিয়মিত বাঘ শিকার চলেছে তার আগে। বাঘের চামড়া, গোঁফ, নখ, দাঁত, হাড়, বিচি, সব কিছুরই চাহিদা আছে বাজারে। তাই বাঘ মেরে সাফ করে ফেলা হয়েছে সুন্দরবন থেকে। কিন্তু সাধারণ জনগণ যাতে এসব জানতে না পারে, সেজন্য বনবিভাগের লোকেরাই বাঘের ছাল গায়ে দিয়ে মাঝেমধ্যে পর্যটকদের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে, বাঘের পায়ের আদলের জুতো পরে। ওগুলো দিয়েই বাদার কাদায় পাগমার্ক তৈরি করা হয়, লোকে সেগুলো দ্যাখে, ছবিটবি তোলে, তারপর বাঘের আলামত পেয়ে খুশিমনে বাড়ি ফিরে গিয়ে গল্প করে। আমরা হতবাক হয়ে যাই। সেজোকর্তা ঘাম মুছে বলেন, "এই কাজে কাদের গাজী ছিলো সবচেয়ে পাকা। সে আজ এই তল্লাটে থাকলে এমনটা হতো না।" আমি বলি, "কাদের গাজী কে?" সেজোকর্তা জানান, কাদের গাজী বনবিভাগের বাঘের ভূমিকায় অভিনেতাদের দলনেতা ছিলো। তার মতো করে পাকা বাঘ সাজতে পারে না আর কেউ। বাঘের ছাল, বাঘের ছাপ, বাঘের ডাক, বাঘের বিষ্ঠা, সকলই সে নিখুঁতভাবে অনুকরণ করতে পারতো। এমনকি বিদেশ থেকে বাঘের এক্সপার্টরা এসে কাদের গাজীর পিশুর গন্ধ শুঁকে বিভ্রান্ত হয়েছে, খাঁটি বাঘ ভেবে খাতায় হিজিবিজি নোট করে নিয়ে গেছে। সারা সুন্দরবনে কাদের গাজীর রেখে যাওয়া পাগমার্ক দেখে তারা হিসাব করেছে, সুন্দরবনে ৫০০ বাঘ জীবিত আছে। আলবাব শুধায়, "সে কই এখন?" সেজোকর্তা বিষণ্ণ মুখে জানান, কাদের গাজীর এই সীমাহীন অনুকরণ নৈপুণ্যই কাল হয়ে দাঁড়ায়। ভারতীয় সুন্দরবন থেকে সীমানাভোলা একটা বেখেয়াল মদ্দা বাঘ একবার ঢুকে পড়ে বাংলাদেশে। কাদের গাজীর ছদ্মবেশে একটাই সমস্যা ছিলো, সে ধরেছিলো বাঘিনীর বেশ। হতভাগা ইনডিয়ান মদ্দাটা তফাত করতে পারেনি, এসেই হামলে পড়েছে কাদের গাজীর ওপর। তারপর যা সচরাচর ঘটে আর কি। নারী নির্যাতন করে পালিয়ে যায় বদমাশ বাঘটা। অপমান সহ্য করতে না পেরে বাঘের ছাল খুলে ফেলে কাদের সুন্দরবন ত্যাগ করে। সে এখন চিড়িয়াখানায় মারখোরের ছাল গায়ে দিয়ে লোকজনের মনোরঞ্জন করছে বলে তিনি শুনেছেন। মদ্দা মারখোর অবশ্যই। মারখোরের খাঁচার সামনে নাকি দর্শকের ভিড় বেড়ে গেছে, লোকে বাঘের খাঁচার সামনে তেমন একটা দাঁড়ায় না আর, কাদের গাজীর এমনই কসরৎ। আমি বলি, "আজ তবে ডিউটিতে কে ছিলো?" সেজোকর্তা গনগনে মুখে বলেন, "তার বিস্তারিত পরিচয় জেনে আর কী হবে বলুন? কালই বিটকেলটার চাকরি নট করে দিচ্ছি। সালা বাঘের ছাল গায়ে দিবি, আর মনিষ্যির মতো হাগবি, ওসব সুন্দরবনে চলবে না!" আমরা একে অন্যের দিকে তাকাই। আলবাব বলে, "তবে এই যে শুনি বাওয়ালি মাওয়ালিদের বাঘে ধরে, সেটা কীভাবে হয়?" সেজোকর্তা বলেন, "ঐ বখরা নিয়ে ঝামেলা হলে মাঝেমধ্যে অভিনেতারা বাওয়ালিদের ওপর ঝাঁপায় আর কি। ইদানীং তো বাওয়ালিরা পাল্টা ফাইট করে, কাদের যখন ডিউটিতে ছিলো, তখন এসব ধ্যাষ্টামো চলতো না। কাদের কাউকে ধরলে একদম টেনে নিয়ে আদ্ধেকটা খেয়ে তবেই ছাড়তো!" আমি মিনমিন করে বলি, "ইয়ে, বাঘ না থাকলে সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম টিকবে কী করে?" সেজোকর্তা গরম হয়ে বলেন, "আপনারা খালি বাঘ বাঘ করেন! আরে ভাই, বাঘের কাজ কী বলুন তো? হরিণ খাওয়াই তো? সে তো আমরা রেগুলার খাচ্ছি! হুদাই সালার ইকোসিস্টেমের দোহাই! কী এমন কাজ আছে যেটা বাঘ করতে পারে অথচ আমরা করতে পারি না, বলুন দেখি?" ল্যাপটপে একটা ছবি সেই প্রশ্নের উত্তর হয়ে ফুটে থাকে। অন্য নৌকা থেকে হাঁক আসে, "মুরগির তরকারি তৈয়ার!" [সব চরিত্র কাল্পনিক। আমি আলবাব উজানগাঁ অনুপম ত্রিবেদী লোচন বক্সী, সব। আপনিও।] | false |
fe | হে তরুণ, সত্য প্রতিষ্ঠায় এখন সময় তোমাদের হে তরুণ, সত্য প্রতিষ্ঠায় এখন সময় তোমাদের ফকির ইলিয়াস -----------------------------------------------------------‘যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ এই প্রত্যয় ব্যক্ত করে পালিত হলো ২০০৮-এর বিজয় দিবস। এবারের বিজয় দিবস পালিত হলো এমন এক সময়ে, যখন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র আর ১৩ দিন বাকি। দেশ এখন নির্বাচনমুখী। বড় দুটি দলের দুই শীর্ষ নেত্রী বেরিয়েছেন ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণায়। তারা চষে বেড়াচ্ছেন জেলা থেকে জেলা। নিজ প্রতীক তুলে দিচ্ছেন নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের হাতে। আর দেশের জনগণকে বলছেন, ভোট দিতে হবে তাদের প্রার্থীকেই। দুই নেত্রীর জনসমাবেশেই প্রচুর লোক সমাগম হচ্ছে। জনতার ঢেউ একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত।জনসমাগম দেখে বোঝার কোন উপায় নেই, কারা আগামী সংসদ নির্বাচনে পাস করবে। জানার কোন উপায় নেই রাষ্ট্রের জনগণের মনের ইচ্ছা-অনিচ্ছা। একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার চারপাশ ঘিরে রাখছেন সেই নেতারাই যারা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে জেল-হাজতে ছিলেন। জোট সরকারের শাসনামলে তাদের দু:শাসনে ভীষণ আতঙ্কিত ছিলেন দেশের মানুষ। এ নেতাদের অনেকে এবার প্রার্থী হতে পারেননি। কিন্তু তারা মাঠে নেমেছেন, তাদের পছন্দের ছায়া প্রার্থীকে তারা সমর্থন দিচ্ছেন।এটা খুবই স্পষ্ট দুটি প্রধান দলই চাইছে, দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। কারণ নির্বাচিত সরকার এলে এতে রাজনীতিকদের কর্তৃত্ব থাকবে। তারা তাদের ইচ্ছেমতো যা খুশি করতে পারবেন। যেমনটি তারা আগেও করেছেন। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির অভিযোগে কিছু কিছু প্রধান নেতা যে নিজ নিজ দলেই কোণঠাসা হয়ে আছেন তা তো দেশবাসী দেখছে। দেশের মানুষ দেখেছে দুটি প্রধান দলের সম্পাদকদের বর্তমান হাল-অবস্খা। একজন দল থেকে বিদায় নিয়েছেন। অন্যজনের সব ক্ষমতা ও খর্বিত হয়েছে। এখন সেই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বটি পালন করছেন, একজন ‘মুখপাত্র’, প্রকারান্তরে তিনিই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। এটাও বুঝতে পারছেন দেশবাসী। দুটি প্রধান দলে একটি নেপথ্য লুটপাট সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল, তা দুনেত্রীও জানতেন। তারপরও তারা তা কঠোর হাতে দমন করলেন না কেন? করলে তো আজ এমন দুরবস্খার সৃষ্টি হতো না রাজনীতির ময়দানে।বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। তিনি সিলেট-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার পক্ষে প্রচারণার জন্য বিএনপিপন্থি দু’জন বুদ্ধিজীবী সিলেটে গিয়েছিলেন। এই দু’জন শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমান। এদের পরিচয় দেশবাসীকে নতুন করে জানানোর দরকার নেই। এ দু’জন সাইফুর রহমানের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রয়াস চালিয়েছেন। তাদের এই মিথ্যার বেসাতিগুলোকে আমার কোন ভাঁড়ের গল্প বলেই মনে হয়েছে।সাইফুর রহমান সিলেট এবং মৌলভীবাজারে সন্ত্রাসের কেমন গডফাদার ছিলেন তা সে অঞ্চলের মানুষ ভালই বলতে পারবেন। সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান ছিলেন সে এলাকার স্বঘোষিত রাজকুমার। তার হীন কৃতকর্মের শুধু একটি ঘটনাই আমি বলতে চাই।লন্ডন থেকে ‘সাপ্তাহিক জনমত’ নামে একটি সাপ্তাহিকী প্রকাশিত হয় মহান মুক্তিসংগ্রামের বেশ পর্ব থেকেই। এ সাপ্তাহিকটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসে ব্যাপক ভমিকা রাখে। সেই সাপ্তাহিক পত্রিকার বর্তমান সম্পাদক নবাব উদ্দিন। একজন কৃতী লেখক, সাহসী সাংবাদিক হিসেবে দেশে-বিদেশে তার পরিচিতি আছে। জোট সরকারের সময়ে ‘জনমত’ পত্রিকায় সাইফুর রহমান, নাসের রহমান এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যদের স্বজনপ্রীতি-দুর্নীতির একটি রিপোর্ট ছাপা হয়। এর কিছুদিন পর লন্ডন থেকে দেশে যান নবাব উদ্দিন। তিনিও মৌলভীবাজার এলাকার সন্তান। নবাব উদ্দিন বাড়িতে যাওয়ার পরপরই শুরু হয় ফোনে তাকে ধমক। সাইফুর রহমানের ভাড়াটে মাস্তানরা নবাব উদ্দিনকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। তিনি স্খানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্খার কাছে সাহায্য চাইতে যান। তারাও বলেন, অর্থমন্ত্রীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের কিছুই করার নেই।এই হুমকি চলতেই থাকে। নবাব উদ্দিন ভীষণ অসহায় হয়ে পড়েন। তিনি লন্ডনে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু হুমকিদাতারা তার খোঁজে হন্যে হয়ে বেরিয়ে পড়ে। ফলে তিনি খুব গোপনে চট্টগ্রামে চলে যান। এবং সেখান থেকে হোটেল ‘আগ্রাবাদ’-এর কর্ণধার মিসেস মনোয়ারা হাকিম আলীর সহযোগিতায় ভিন্ন পথে, প্রায় পালিয়ে লন্ডনে আসতে সমর্থ হন। এ নিয়ে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় সে সময় ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে। এই হচ্ছে সাইফুর রহমানের গডফাদারতন্ত্র। যে রাজ্যে তিনি আরিফুল হক চৌধুরীর মতো অনেক ফন্সাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করেছেন সিলেট বিভাগ অঞ্চলে। নিজ নামে, নিজ পত্নীর নামে সাইনবোর্ড দিয়েছেন যত্রতত্র। সেই সাইফুর রহমান কোন মুখে সিলেটে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন? এই সাইফুর রহমানের ব্যক্তিগত হিংসার শিকার মৌলভীবাজার-২ এলাকার সাবেক এমপি এমএম শাহীন। ২০০১-এর নির্বাচনে সাইফুর রহমানের ব্যক্তিগত অনিচ্ছার কারণে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পাননি এমএম শাহীন। পরে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচনে করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুলতান মুহাম্মদ মনসুরকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন।২০০৬ সালের শেষ দিকে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া (মৌলভীবাজার-২) অঞ্চল সফরে গিয়ে এমএম শাহীনকে দলে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু ২০০৮-এর নির্বাচনে এসে দেখা গেল এমএম শাহীনকে সে আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিল না। কেন দিল না? তাও হয়েছে সাইফুর রহমানের ব্যক্তিগত অনিচ্ছার করণেই। অথচ এই সাইফুর রহমান নিজে মান্নান ভঁইয়ার সংস্কারপন্থি বিএনপির ‘চেয়ারপারসন’ হয়েছিলেন। তিনি দখল করেছিলেন খালেদা জিয়ার চেয়ার। আজ সাইফুর রহমান ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে গেলেন? আজ তিনি হয়ে যাবেন সিলেট-১ আসনের অবতার? সাধারণ মানুষ তা মেনে নেবে? সাইফুর রহমানের গডফাদারতন্ত্রের অবসান মনেপ্রাণে চেয়েছে সিলেটের মানুষ। আমি আশা করি ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সিলেটবাসী সব গডফাদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সঠিক রায় দেবেন। পদদলিত করবেন সব পারিবারিক উচ্চাভিলাষ। দেশের একটি বৃহৎ অংশ তরুণ সমাজ। মহাজোটের নেত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দিন বদলের ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘দিন বদলের সনদ’-এর মাধ্যমে তারা ২০২১ সালের মধ্যে একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই প্রজন্ম এই তরুণ সমাজের ভোটাররা সেই দিন বদলের স্বপ্নটিই দেখছে। দেখছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সূর্যমুখ। দেখছে রাজাকারমুক্ত, যুদ্ধাপরাধীমুক্ত সোনার বাংলাদেশের ছবি। দেখছে সুখী বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তির বিজয় ভোর।গেল কয়েকদিনে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। বিশেষ করে এবারের বিজয় দিবস আমি কাটিয়েছি ইন্টারনেটে আড্ডা দিয়ে। যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, এদের মধ্যে আছেন একটি দৈনিকের উপ-সম্পাদক, একটি সাপ্তাহিকের সম্পাদক, একজন এমপি পদপ্রার্থী, একজন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার, দু’জন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক, একজন প্রকাশক এবং তিনজন কবি। সবাই একবাক্যে বলেছেন, আসছে ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষশক্তির বিপুল বিজয় হবে। আর এরা ক্ষমতায় গেলে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশে সংগঠিত হবে? এই প্রশ্নটির উত্তরও তারা দিয়েছেন ইতিবাচক। যে ক্ষণটির জন্য জাতি সাঁইত্রিশ বছর ধরে অপেক্ষা করছে।লক্ষ শহীদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশ এমন কোন মাটি নয়, যা গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজ, রাজাকার হায়েনার হাতে জিম্মি থাকতে পারে। এসব রাজাকার যেসব আসনে দাঁড়িয়েছে, সেসব অঞ্চলের তেজী তরুণ-তরুণীদের গণমোর্চা গড়ে তোলার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাই। এদেশে আর কোন আলবদর-রাজাকার-আলশামস যেন এমপি হতে না পারে। আমি দেখেছি একাত্তরে তরুণ প্রজন্মের বীর মুক্তিযোদ্ধারা কি দুর্দান্ত সাহস নিয়ে যুদ্ধ করেছেন! আজকের তরুণ-তরুণীরাও তা পারবেন। হে তরুণ, এখন সময় সত্যের এখন সময় তোমাদের।নিউইয়র্ক, ১৭ ডিসেম্বর ২০০৮------------------------------------------------------------------------ দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ১৯ ডিসেম্বর ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত | false |
mk | বাজেট ২০১৩-১৪ নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার উচ্চাভিলাষী বাজেট ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার। বর্তমান সরকারের এটি পঞ্চম তথা শেষ বাজেট।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল ইয়াওমুল খামীসি বা বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে জাতীয় সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন করেছেন।আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকার বা ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এটা জিডিপির ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। যেখানে বিদায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এটা ছিল জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ।এবারের বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা।এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর রাজস্বের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা, রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত রাজস্বের পরিমাণ হচ্ছে ৫ হাজার ১২৯ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা।বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন: প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা। এটা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকা টাকা। এটা ছিল জিডিপির ৫ শতাংশ।প্রধানত চারটি উৎস থেকে এ ঘাটতি পূরণ করা হবে। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ বাবদ ১৪ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, বৈদেশিক অনুদান বাবদ ৬ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, ব্যাংকিং খাত থেকে ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ৭ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংক বহির্ভূত খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা নেয়া হবে।যেখানে বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে বৈদেশিক ঋণ বাবদ ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, বৈদেশিক অনুদান বাবদ ৬ হাজার ৪৪ কোটি টাকা, ব্যাংকিং খাত থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ১০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ব্যাংক বহির্ভূত খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ৩ হাজার ৮৪ কোটি টাকা।ব্যয়: প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন খাতে মোট ৭২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা ও এডিপি বহির্ভূত খাতে ৩ হাজার ১৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে উন্নয়ন খাতে ৬০ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার কোটি টাকা ও এডিপি বহির্ভূত খাতে ২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা।অন্যদিকে অনুন্নয়ন (রাজস্ব) খাতে মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।বরাবরের মতো এবারও শীর্ষে রয়েছে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয়। মোট বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি ব্যয় হচ্ছে এ খাতে। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ২৬ হাজার ৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকাসহ অনুন্নয়ন খাতে মোট ব্যয় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।যেখানে বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ২১ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ১ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকাসহ অনুন্নয়ন খাতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৯ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে অন্যান্য খাতের মধ্যে অনুন্নয়ন মূলধন খাতে ২০ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও স্থানান্তর খাতে ১ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ শিক্ষাখাতে, ২৬০৯৩ কোটি টাকা:বরাবরের মতো এবারের বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তিখাতে বরাদ্দ বেশি রাখা হয়েছে। এখাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ২৬ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। পরে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে যোগাযোগ খাতে। এখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা। | false |
rg | বাংলাদেশ বিমান _ রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের সবচেয়ে বড় খাত বাংলাদেশ বিমান সারা বিশ্বের দু'টি মহাদেশের আঠারোটি রুটে আকাশপথে যাতায়াত করে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজার ছাড়াও বিশ্বের আঠারোটি শহরে বাংলাদেশ বিমানের অফিস রয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের এই আঠারোটি বহির্বশ্বের অফিসগুলো রয়েছে লন্ডন, রোম, আবুধাবী, কুয়েত, জেদ্দা, রিয়াদ, বাহরাইন, দোহা, দুবাই, মাসকট, দিল্লী, কলকাতা, করাচি, কাঠমুণ্ডু, হংকং, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরে। কেবল মাত্র লন্ডনের ৩৫ মিলিয়ন ডলার বা ২৮০ কোটি টাকার জমিতে বিমানের অফিস। রোম, আবুধাবী, কুয়েত, জেদ্দা, রিয়াদ, বাহরাইন, দোহা, দুবাই, মাসকট, দিল্লী, কলকাতা, করাচি, কাঠমুণ্ডু, হংকং, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরের অফিসগুলোর খরচ নিশ্চয়ই খুব একটা কম নয়। একেই বলে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। বাংলাদেশ বিমান বড় একটি রাষ্ট্রীয় লোকসানি খাত। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি খরচ করে রাষ্ট্র একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় লালন পালন করছে। আর এই সুযোগে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে বিমানের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অসাধু ও দুর্নীতিগ্রস্থ সংস্থার নাম বাংলাদেশ বিমান। কি আছে বাংলাদেশ বিমানের?দুইটি বি-৭৭৭ এয়ার বাস, দুইটি বি-৭৩৭, চারটি ডিসি-১০, দুইটি এ৩১০-৩০০ আর তিনটি এফ ২৮ এয়ারক্রাফট। সাকুল্যে ১৩টি বিমান। ১৮ টি শহরে অফিস। বহরে ১৮ টি বিমানও নেই। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা কত হবে আন্দাজ করুন? একটি অফিসে গড়ে ১০ জন করে হলেও আন্তর্জাতিক রুটের ১৮টি অফিসে মিনিমাম ১৮০ জন। বাংলাদেশে ঢাকার বাইরের তিন শহরে ধরুন গড়ে ২০ জন করে মোট ৬০ জন। আর ঢাকায় মতিঝিল ও এয়ারপোর্টের লোকবল অন্তঃত ৫০০ জন। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশ বিমানের ১৩ টি বিমান ১৮ টি আন্তর্জাতিক ও ৪টি অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলের জন্য অন্তঃত ৭৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা। বাস্তবে এই সংখ্যা যে কত তা একমাত্র খোদা জানেন। উচ্চ বেতন সম্পন্ন রয়েছেন একজন এমডি। কেভিন স্টিল বৃটিশ নাগরিক। তার বেতন কত? আপনার চিন্তারও বাইরে। সবমিলিয়ে মাসে মাত্র প্রায় ১০ লাখ টাকার মত। ৮ জন রয়েছেন ডিরেক্টর। তাঁদের বেতন সঠিক জানা জায় না। বিদেশি ও দেশী পাইলটদের বেতন কত? জানা জায় না। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কত বেতন পান আর কত চুরি-চামারি করেন কিছুই জানা যায় না। কারণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালের ৪ জুন বাংলাদেশ বিমানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। এই ৪১ বছরে এই প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের যে পরিমাণ অর্থের অপচয় করেছে তা দিয়ে অন্তঃত ২০০ পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা যেতো। কিন্তু আমরা রাষ্ট্রের টাকায় জনগণের করের টাকায় একটা বাংলাদেশ বিমান লালন পালন করছি। এই জাতিকে কে টেনে তুলবে?? কে? তারা কারা? জাতি জানতে চায়!!! | false |
rn | কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত যারা বিয়ে করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য আমার আজকের ব্লগ- কেমন মেয়ে বিয়ে করবেন বা কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত। আর যারা বিয়ে করে ফেলেছেন- আশা করি তারা আমার লেখার সাথে একমত হবেন। আমি আমার চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখি- অনেকেই বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছেন। পাগলের মতো মেয়ে খুঁজছেন। অনেককে দেখেছি- ৫০/১০০ মেয়ে দেখে ফেলেছে। মেয়ে দেখতে গিয়ে নানান রকম মিষ্টি আর ফল-ফলাদি নিয়ে যান। মেয়ে পক্ষ অনেক আয়োজন করেছে- তা দেখে, মেয়ে দেখে ফিরে আসার সময় মেয়ের হাতে এক/দুই হাজার টাকা গুঁজে দেন। একটা ভালো মেয়ে বিয়ে না করেন তাহলে সারা জীবন কাঁদতে হবে। প্রেম ভালোবাসা করে বিয়ে করেন বা বাবা মার পছন্দে বিয়ে করেন। প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রেও অনেক ভুল হয়। দুই বছর বা পাচ বছর প্রেম করার পর যখন বিয়ে করা হয়- দেখা যায় বিয়ের পর মেয়েটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। নিজের কথা একটু বলে নিই- আমি বিয়ে করেছি। আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি, সুখে আছি। আমার বউ খুবই ভালো একটা মেয়ে। আমাকে খুব ভালোবাসে। তার হাতের রান্না অসাধারণ। খুব রোমান্টিক। একটা উদাহরণ দেই- রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে আদুরে গলায় বলবে- আকাশে এত্ত বড় একটা চাঁদ উঠেছে- চলো না ছাদে যাই? আর কি সুন্দর জোছনা!!! আমার ইচ্ছা না থাকলেও- আমি ছাদে যাই। দু'জন মিলে ছাদে যাই। সে গুনগুন করে গান করে। দুইজন মিলে মাসে একবার বড় রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খাই। রিকশায় করে অনেকক্ষন ঘুরে বেড়াই। সে হাত নেড়ে নানান গল্প করে। সারাদিন অফিস করে বাসায় ফিরে মনটা খুশিতে ভরে যায়। আমার ছোট্র বাসাটা ঝকঝকে- তকতকে। কি যে সুন্দর করে সাজিয়েছে। আমার স্ত্রী গাছ খুব ভালোবাসে। নানান রকম ছোট ছোট চারা গাছ দিয়ে আমার বাসা ভরতি। আমার বাসায় যারা আসেন- তারা সবাই মুগ্ধ হয়ে যান। ব্যাপারটা আমি খুব এনজয় করি। আমার সামান্য মাথা ব্যাথা করলে, সে আমার যথেষ্ঠ যত্ন নেয়। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি- আমার নাস্তা রেডি। এক-একদিন একেক রকম নাস্তা। আমার স্ত্রী ঢাকা শহরের মেয়ে। ইডেন থেকে লেখা পড়া শেষ করেছে। সে অপচয় পছন্দ করে না। খুব হিসেবি। ঘন ঘন পার্লারে গিয়ে টাকা নষ্ট করে না। খুব প্রয়োজন ছাড়া শপিং করে না। আমার পরিবারের মা বাবা এবং আমার ভাই বোনদের খুব খোঁজ খবর রাখে। বিশেষ করে আমার মাকে তার পছন্দের খাবার গুলো রান্না করে খাওয়ায়। মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। আমার ছোট ভাইদের বিকেলে মজার মজার খাবার রান্না করে খাওয়ায়। আমার বড় ভাইয়ের মেয়েটাকে এবং ছোট ভাইয়ের ছেলেটাকে গোছল করিয়ে দেয়, খাইয়ে দেয়। ঘুম পাড়িয়ে দেয়। মনের মধ্যে এক ফোটা হিংসা নেই। খুব সহজ সরল মেয়ে। আমার বউ যদি দুই দিনের জন্য বাপের বাড়ি যায়- তাহলে আমার খুব অস্থির লাগে। ঘুমের মধ্যেও সে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে তার একটা হাত আমার গায়ে দিয়ে রাখে। আমাদের বিয়ের পর থেকেই সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে এবং আমি ঘুমাবো তারপর সে ঘুমাবে। আমি যতই বলি আহ তুমি ঘুমাও তো। আমি ঘুমিয়ে যাবো। আমাদের বিয়ে হয়েছে তিন বছর। এই তিন বছরে সে একদিও আমার আগে ঘুমায়নি। এবং সকালে আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই সে উঠে যায়। নামাজ পড়ে। সকালে কোরান শরীফ পড়ে। তার চাহিদা খুবই কম। কোনো দিনও বলে না- আমাকে এইটা কিনে দাও, আমাকে অইটা কিনে দাও। বরং আমি নিজে থেকে কিছু কিনে আনলে রাগারাগি করে। বলে, মা'র জন্য কিনো। তোমার ভাই এর বাচ্চাদের জন্য কিনো। আমার সব আত্মীয় স্বজনরা বলে, রাজীবের বউ টা খুব ভালো। খুব লক্ষী। এমন কি আমাদের প্রতিবেশীরা এসে আমার মাকে বলে- সুরভি'র মতো একটা মেয়ে খুঁজে দাও। ও আচ্ছা বলতে ভুলে গেছি- আমার স্ত্রীর নাম সুরভি। সুরভি'র যে ব্যাপারটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হলো- আমি অফিস থেকে বেশির ভাগ দিনই জ্যামের কারনে হেঁটে বাসায় ফিরি। আমার সারা শরীর ঘামে ভেজা থাকে। ঘরের ঢোকার সাথে সাথে সে আমাকে জড়িয়ে ধরে, তারপর এক গ্লাস লেবুর সরবত বানিয়ে দেয়। এমনকি সকালে অফিসে যাওয়ার সময় আমার জুতোটা তার ওড়না দিয়ে মুছে দেয়। আমি খুব করে মানা করেছি- কিন্তু সে শুনে না। মাঝে মাঝে ভাবি এযুগেও এরকম মেয়ে আছে!!! আপনারা হয়তো আমার উপর বিরক্ত হচ্ছেন- নিজের স্ত্রীর গুনগান করছি দেখে। তবে সব কিছু মিলিয়ে আমি খুব হ্যাপি। নিজের সুখ শান্তির কথা বলতে অনেক আনন্দ হয়। যদি আমার বউটা বদ হতো। ফাজিল হতো- তাহলে কি আমার দুঃখের শেষ থাকতো? কাজেই বিয়ে অনেক বড় একটা ব্যাপার। খুব দেখে শুনে বিয়ে করা উচিত। এখন বলি, যারা বিয়ের কথা ভাবছেন- লোভী মেয়ে বিয়ে করবেন না। বেশি আধুনিক মেয়ে বিয়ে করবেন না। তবে অবশ্যই সুন্দর একটা মেয়ে বিয়ে করবেন। যে মেয়ে হাসলে সুন্দর লাগে আবার মন খারাপ করে থাকলে বা কাঁদলেও দেখতে সুন্দর লাগে। ধরুন, কোনো কারনে আপনার মন খারাপ- যদি আপনার বউ দেখতে সুন্দর হয়- একবার তার দিকে তাকাবেন- দেখবেন আপনার মন খারাপ ভাব দূর হয়ে গেছে। যে মেয়ের কন্ঠ সুন্দর সেই মেয়েকে বিয়ে করবেন। যেন তার কথা শুনলে-শুনতেই ইচ্ছে হবে। মিথ্যাবাদী কোনো মেয়েকে বিয়ে করবেন না। আর একটা কথা যে মেয়েকে বিয়ে করবেন- তার পা যেন সুন্দর হয়। সুন্দর পা-ওয়ালা মেয়েরা ভালো হয়। পরীক্ষিত। আর যে মেয়ে আগে কারো সাথে প্রেম ভালোবাসা করেছে- এমন মেয়েকে বিয়ে করবেন না। আর সবচেয়ে বড় কথা যে মেয়ে বিয়ের আগেই কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে- ভুলেও এমন মেয়েকে বিয়ে করবেন না। নো, নেভার। কুসংস্কার বিশ্বাসী কোনো মেয়েকে ভুলেও বিয়ে করবেন না। অতি চালাক কোনো মেয়েকে বিয়ে করবেন না। অনেক ছেলে বন্ধু আছে এমন মেয়েকে বিয়ে করবেন না। যে মেয়ের উচ্চারণ ভালো না এমন মেয়েকে বিয়ে করবেন না। বিয়ের সময় ইমোশনাল হবেন না। আবেগকে প্রাধান্য দিবেন না- লজিককে অগ্রাধিকার দিবেন। এখন হয়তো আপনারা বলবেন- মেয়ে দেখতে গিয়ে এত অল্প সময়ে বুঝব কি করে মেয়েটা ভালো না খারাপ। তাড়াহুড়া করবেন না। সময় নিন। আমি দেখেছি বিয়ের সময় বেশির ভাগ লোকই খুব বেশি তাড়া-হুড়া করে। যা মোটেও ঠিক না। মেয়েটার সাথে কথা বলুন, তাকে নিয়ে বাইরে কোথাও খেতে যান। বেশ কয়েকবার তার সাথে দেখা সাক্ষাত করলেই আপনি তার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে ফেলবেন, বুঝে ফেলবেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- স্ত্রী যার অবাধ্য জীবন তার দুর্বিসহ। (২য় পর্ব আগামীকাল) সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২১ | false |
ij | None চতুদর্শ ইউরোপের Black Death বা কৃষ্ণমৃত্যু ছিল মানব ইতিহাসের অন্যতম এক প্রানঘাতী মরক। এর ব্যপ্তি ছিল সমগ্র ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে ; এবং মরকের প্রকোপে তৎকালীন ইউরোপের জনসংখ্যার ৬০%ঝরে পড়েছিল। কৃষ্ণমৃত্যুর সময়কাল ছিল ১৩৪৭ থেকে ১৩৫২ খ্রিস্টাব্দ । এই নজীরবিহীন মহামারী ইউরোপের ইতিহাসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল, সৃষ্টি করেছিল সামাজিক অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় অভ্যূত্থানের । কৃষ্ণমৃত্যুর কারণ আজ উদঘাটিত হলেও সেই চতুদর্শ শতকে কৃষ্ণমৃত্যুর কারণে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়েছিল । কুয়ার পানি দূষিত করার অভিযোগে লাঞ্ছিত করা হয় ইহুদিদের; স্পেনে লাঞ্ছিত করা হয় আরবদের (ততদিনে আরবরা স্পেনে ক্ষমতাচ্যূত)। ১৩৪৯ সাল। রাইনল্যান্ড, স্ট্যাসবুর্গ, ফ্র্যাঙ্কফুর্ট, মাইনয এবং কোলন-এ কৃষ্ণমৃত্যুর কারণ হিসেবে ইহুদিদের গনহত্যার সম্মূখীন হতে হয়। Black Death বা কৃষ্ণমৃত্যুর কারণ আসলে প্লেগ বা মরক। তিন ধরনের মরক বা প্লেগ আছড়ে পড়েছিল ইউরোপে। (১) ব্যুবনিক প্লেগ; (২) নিউমোনিক প্লেগ; এবং (৩) সেপ্টিসিমিক প্লেগ। কৃষ্ণমৃত্যুর নাম কারণ সংক্রমনের লক্ষণ। কুঁচকির রক্তের মতন রংহীন পদার্থে সীমারেখায় ফুলে কালো হয়ে ওঠে। এই ফুলে ওঠাকে Buboes ও বলে; এ কারণেই ব্যুবনিক শব্দটির উদ্ভব। রোগীর শরীরে টিউমার দেখা দিত। এই টিউমারগুলির আকার ছিল ডিম থেকে আপেলের সাইজ। মরকটি ছিল ভয়ানক সংক্রমক। বিশেষ করে নিউমোনিক প্লেগটি। সংক্রমিত ব্যাক্তির হাঁচিকাশির দ্বারা নিউমোনিক প্লেগ সংক্রামিত হয় ফুসফুটে। সেপ্টিসিমিক প্লেগটি সবচে বিরল হলেও ছিল সবচে ভয়ঙ্কর; কেননা সেপ্টিসিমিক মরকের অণুজীব সরাসরি রক্তস্রোতে মিশত। সুস্থ মানুষ রাত্রে বিছানায় গেল পরের দিন তাকে মরে পড়ে থাকতে দেখা গেল। রাত্রিভর সহ্য করল মরণযন্ত্রণা। ব্যুবনিক প্লেগ-এর মৃত্যুর হার ছিল ৬০ থেকে ৯০%। নিউমোনিক প্লেগ ও দিন কয়েকের মধ্যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত। কৃষ্ণমৃত্যুর প্রাদুভার্বের পূর্বে ১৩১৫ থেকে ১৩২২ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক এক দুর্ভিক্ষের কারণে চরম খাদ্যাভাব দেখা দেয়; এই সাত বছরে ইউরোপের ১০% মানুষের মৃত্যু ঘটে। এর পর পরই কৃষ্ণমৃত্যু ইউরোপ জুড়ে ১৩৪৭-১৩৫২ খ্রিস্টাব্দে ছড়িয়ে পড়ে । মরকের মূলে Yersinia pestis bacterium নামে অতি ক্ষুদ্র এককোষী জীবাণু। জীবাণুটি পশুর রক্তপায়ী ক্ষুদ্র কীটের ( ফ্লি, এক ধরনের ডানাহীন নীলমাছি) উদরে বংশবিস্তার করে। ফ্লি পশুর রক্তপায়ী বলেই পরে ইঁদুরে সংক্রামিত হয় । মধ্যযুগের ইইরোপের সর্বত্রই ছিল ইঁদুর ... এখন অবশ্য গবেষকরা বলছেন মরকে আক্রান্ত রোগীর এক ধরনের Viral hemorrhagic fever হত। The viral hemorrhagic fevers (VHFs) are a diverse group of animal and human illnesses that are caused by four distinct families of RNA viruses: the Arenaviridae, Filoviridae, Bunyaviridae, and Flaviviridae. All types of VHF are characterized by fever and bleeding disorders and all can progress to high fever, shock and death in extreme cases. Some of the VHF agents cause relatively mild illnesses, such as the Scandinavian nephropathia epidemica, while others, such as the African Ebola virus, can cause severe, life-threatening disease. লিমফ নড । লিমফ হল দেহগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত বর্ণহীন ক্ষারধর্মী রস । আর লিমফ নড হল মানবদেহের ইমিউন (রোগ প্রতিরোধক) সিসস্টেমে ছোট গোলাকার বলের আকৃতির অরগ্যান বা অঙ্গ; যা লিমফাটিক শিরার মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে থাকে। লিমফ নডরা বি, টি এবং অন্যান্য ইমিউন কোষের রক্ষীসেনা। এরা ‘ফরেন পার্টিকেল’ আটকে দেয়। ইমিউন সিসস্টেমের কার্যকারীতার জন্য এদের ভূমিকা অনন্য। ইয়ারসিনিয়া পেসটিস ব্যাকটেরিয়াম সংক্রমনে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু, মরকটি ইউরোপে এল কী করে? গবেষনার ফলে এর জবাব মিলেছে। মধ্য এশিয়ার ইসিক কুল হ্রদেরর অবস্থান। এই হ্রদের আশেপাশে মারমোট নামে এক ধরনের কাঠবেড়ালীর বাস। এদের ফুসফুসেই প্রথম ইয়ারসিনিয়া পেসটিস ব্যাকটেরিয়াম দ্বারা সংক্রমন আরম্ভ হয়। নীলমাছি ফ্লি এদের রক্ত চুষত। নীলমাছি ফ্লি কালো ইঁদুরে (Rattus rattus) জীবাণু সংক্রামিত করে। মারমোট। মধ্য এশিয়ার কাঠবেড়ালী।এদের ফুসফুসে ইয়ারসিনিয়া পেসটিস ব্যাকটেরিয়াম দ্বারা সংক্রমন আরম্ভ হয়। এ প্রসঙ্গে জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছেন: ‘‘...১৩৩০ সালের প্রথম দিকে চিনে প্রাণঘাতী ব্যুবনিক মরকের প্রাদুর্ভাব ঘটে। ব্যুবনিক মরক প্রধানত ইঁদুর কাঠবেড়ালী ইত্যাদির ন্যায় তীক্ষ্মদন্ত প্রাণীদের আক্রান্ত করে। কিন্তু ফ্লি মানবদেহেও জীবাণুর সংক্রমন ঘটাতে সক্ষম। আক্রান্ত মানুষ অন্যকেও অতি দ্রুত সংক্রামিত করে ফেলে। মরকান্ত্র রোগীর জ্বর হয় ও তার ব্যুবস নামক লিমফ গ্ল্যান্ড ফুলে ওঠে। এই কারনেই মরকটির নাম ব্যুবনিক । ত্বকের ওপর দাগ পড়ে, প্রথমে লাল রঙের পরে কালো হয়ে ওঠে।’’ ওরিয়েন্টাল র্যাট ফ্লি। মরকের মূল অপরাধী প্রাচ্যদেশিয় নীলমাছি। এরা রক্ত শোষক পরজীবী। এরা ইয়ারসিনিয়া পেসটিস ব্যাকটেরিয়াম বহনকারী। নীলমাছির অন্ত্রে ইয়ারসিনিয়া পেসটিস ব্যাকটেরিয়াম বংশ বৃদ্ধি করে। এরা মানুষকে দংশন করলে মানুষ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। Kingdom: Animalia Phylum: Arthropoda Class: Insecta Family: Pulicidae Order: Siphonaptera Genus: Xenopsylla Species: cheopis কালো ইঁদুর (Rattus rattus); এরাই ইয়ারসিনিয়া পেসটিস ব্যাকটেরিয়াম বহনকারী। এবার আমরা দেখব চিনের মহামারী কীভাবে ইউরোপে ছড়াল। চতুদর্শ শতকের শুরুতে মধ্য এশিয়া নিয়ন্ত্রণ করত মঙ্গোল সাম্রাজ্য । ওই অঞ্চলেই ছিল রেশম পথ, যে পথের ওপর দিয়ে বণিকের কাফেলা চলত। শান্তির পদক্ষেপ হিসেবে মঙ্গোল কর্তৃপক্ষ চতুদর্শ শতকের প্রথম দিকে সিল্ক রুটের কাফেলা পথে বণিক ও মার্সেনারি সৈন্যদের চলাচলের ওপর বিধি নিষেধ শিথিল করে দিয়েছিল। সে সময় বণিক ও সৈন্যরা কাফেলা-পথে ক্রিমিয়ায় পৌঁছে। তাদেরই অনেকেই চিনের (১৩৩০ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত) মরকের জীবাণু বহন করছিল। এদের দ্বারাই ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে ক্রিমিয়ার বন্দর নগরী কাফায় মরক ছড়িয়ে পড়ে। ক্রিমিয়ার মানচিত্র। সে কালের কাফা ছিল সমৃদ্ধ বন্দর। কাফা বন্দরে ইউরোপের বণিকেরা আসত, বিশেষ করে ইটালির জেনোয়ার বণিকেরা । ওই সময়ে অর্থাৎ ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মঙ্গোল সেনাপতি জানি বেগ কাফা নগরী অবরোধ করেছিলেন। তখন তিনিও মরকের সম্মূখীন হন। তার নির্দেশে মঙ্গোল সৈন্যরা মরকাক্রান্ত মৃতদেহ কাফা নগরী প্রাচীরের ওপর দিয়ে কাফা নগরী তে ছুড়ে ফেলেছিল! সংবাদটি জানাজানি হলে ওখানে অবস্থিত ইটালির জেনোয়া বণিকেরা পালিয়ে সিলিলি চলে আসে। তারাই ইউরোপে মরকের বীজ নিয়ে এসেছিল! পরে ১৩৪৭ সাল নাগাদ সিলিলি থেকে পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকায় মরক ছড়িয়ে পড়ে, এতে প্রায় ৭৬ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে প্রায় ২৫ থেকে ৫০ মিলিয়ন ইউরোপীয়। মরকের ছোবলে ইউরোপের জনসংখ্যার ৩০% থেকে ৬০% হ্রাস পায়। মরকের গতিপথ মনে থাকার কথা। ১৩১৫ থেকে ১৩২২ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক একটি দুর্ভিক্ষের সংঘটিত হয়েছিল। এই কারণে এমনিতেই ইউরোপের মানুষ ভুগছিল অপুষ্টিতে। যার ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা দূর্বল হয়েই ছিল। ১৩৪৭ সাল নাগাদ ইউরোপে মরকের প্রকোপ দেখা দেয়। কৃষ্ণমৃত্যুরুপী মরক ভয়ঙ্কর গতিতে ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগের মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখী হয়। এই মহা দুর্দৈব নিয়ন্ত্রণ করতে চাইল সরকারি প্রশাসন। ব্যর্থ হল । মানুষ তখন নিজস্ব কায়দায় নিরাময়ের দিকে ঝুঁকল। মৃতদেহের উৎকট গন্ধের কারণে অনেকেই ভাবল রোগটি বাতাসে ভেসে আসে। কাজেই বাতাসে সুগন্ধী ছড়াতে লাগল; কেউ-বা আগর কাঠ জ্বালাল। আর জুনিপার, লরেল, পাইন, বিচ, লেবুপাতা, রোজম্যারি, কর্পূর ও সালফার পোড়াল । অনেকেই এখানে-ওখানে যাওয়ার সময় রুমালে সুগন্ধী তেল মেখে মুখ ঢেকে নিত। অনেকে শব্দচিকিৎসার আশ্রয় নিয়েছিল। শহর ও গ্রামের গির্জায় ঘন্টা বাজত। নতুন কামান কেনা হয়েছিল গুরু গম্ভীর শব্দ তোলার জন্য। তারা ভেবেছিল গির্জের গম্ভীর ডিং শব্দে মরক পালাবে। বস্তুত তা হয়নি। আর তাবিজকবজ, মন্ত্রতন্ত্র ও গূঢ়গ্রন্থের তো ছিলই। স্থানীয় জটাবুড়িরা তাবিজকবজ বেচত। এলডার গাছের ফলের তৈরি পানীয় খেলে মরক দূর এমন এক ভুল ধারনা ছড়িয়ে পড়েছিল সেসময়টায়। কেউ-বা গলায় সবুজ জেডস্টোন পরত। ... এর পরও ইউরোপের যে কোনও শহরের অর্ধেকের মতো মানুষ প্রাণ হারায়। শহর ও গ্রামে মলনিস্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না -এতে জনস্বাস্থের আরও অবনতি ঘটে। এরকম রুগ্ন পরিবেশে মরকের লাশ ¯ত’পকৃত হয়ে ওঠে; যারা লাশ বইত তারাও সংক্রামিত হত। অসহায় মানুষ দৈব সাহায্যের আশায় আশ্রয় নিত গির্জেয়। গির্জের সাধু -যাজক -নান কেউই মরকের হাত থেকে রেহাই পায়নি। মৃতের কফিন অতি দ্রুত তৈরি করা যায় না। ফলে গণ কবর দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর রইল না । সেই সময়কার একটি লেখায় মরক-দংশিত পরিবেশের বিভৎস চিত্র ফুটে উঠেছে ...“... একজন নাগরিক অন্যজন নাগরিককে এড়াইয়া চলিত, কদাচিৎ কোনও প্রতিবেশি অন্য প্রতিবেশির কথা ভাবিত, আত্মীয়েরা পারতপক্ষে অন্য আত্মীয়ের বাড়ি যাইত না, মরকের বিভৎসতা মানুষের হৃদয়ে এতই করুণাশূন্যতার সৃষ্টি করিয়াছিল যে ভাই ভাইকে এড়াইয়া চলিত, চাচা এড়াইয়া চলিত তাহার ভ্রাতুস্পুত্রকে, বোন ভাইকে এড়াইয়া চলিত এবং স্ত্রী স্বামীকে এড়াইয়া চলিত । এমনকী মা-বাবাও তাদের ছেলেমেয়েদের দেখভাল করিতে অস্বীকার করিত যেন তাহারা তাহাদের সন্তান নয়। এইভাবে অসংখ্য অসুস্থ মানুষ সেবাযত্ন হীন পড়িয়া রহিল। উদার হৃদয়ের বন্ধুরা অবশ্য সাহায্য করিতে চেস্টা করিত ; তবে কম। বেশি বেতনের লোভে চাকরবাকরকে নিয়োগ দেওয়া হইত। তবে ইহারা প্রায়ই টাকা পয়সা লইয়া পলাইয়া যাইত। নিজেরাও অবশ্য মরিত । আরও এক অভাবনীয় নির্লজ্জ ঘটনার অবতারনা হইয়াছিল। সুন্দরী অভিজাত মহিলারা অসুস্থ হইলে তরুণ কিংবা বৃদ্ধ পুরুষ ভৃত্য গ্রহন করিতে দ্বিধা করিত না। চিকিৎসার প্রয়োজনের সুন্দরী অভিজাত নারীগন শরীর অনাবৃত করিত। এই রূপে সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হইয়াছিল ।” চতুদর্শ ও পঞ্চদশ শতকে মরক অব্যাহত থাকে। ১৩৬১-৬২ মরকের পুনরায় প্রাদূর্ভাব দেখা দেয়। এতে অধিক হারে শিশুর মৃত্যু ঘটে। এই কারণে ১৩৬১-৬২সালের মরক ‘শিশুদের মরক’ নামে পরিচিত। প্রধান কৃষ্ণমৃত্যুর পরে জন্মাবার ফলে এই শিশুদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সহনশীল মাত্রায় ছিল না। নজিরবিহীন কিন্তু সদা উপস্থিত মরক একাধারে কৃষক অভিজাতের জীবন কেড়ে নিত। এই কারণে মৃত্যুভয় পরের প্রজন্মেও বাহিত হয়েছিল। পরিবারে কারও মৃত্যু হলে শিশুরা অল্প বয়েসে যন্ত্রণা ও মৃত্যু ভোগ করত। পরিবারে কেউ মরকাক্রান্ত হলে শিশুদের রাস্তায় ফেলে রেখে আসত। কন্যাশিশু দের ক্ষেত্রে এমন বেশি ঘটত। পুত্র সন্তান হলে দু-একবার ভাবত। জোসেফ পি.বিরনি তার ‘দ্য ব্ল্যাক প্লেগ’ বইতে লিখেছেন,‘কৃষ্ণমৃত্যু চলাকালীন সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের নারীদের নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। মিশরের রাজধানী কায়রোর মুসলিম নারীরা হয়ে ওঠে বলির পাঁঠা। ১৪৩৮ সালে মুফতিগন মিশরের সুলতানকে জানায়- মরক হচ্ছে অবিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিতা নারীর মধ্যে স্বতঃপ্রবৃত্ত যৌনমিলনের কারণে আল্লাহর শাস্তি বিশেষ; কাজেই আইন করতে হবে নারীরা যেন ঘরের বাইরে না গিয়ে পুরুষদের প্রলুব্দ করতে না পারে। তো, সে আইন হয়। পরে উঠেও যায়। কেন? ধনীরা অভিযোগ করল তাদের বাঁদি খাবার কিনতে দোকানে যেতে পারছে না! ইউরোপেও একই ধরনের ধারনা প্রচলিত ছিল। আজ মরকের কারণ জানা গেলেও মধ্যযুগে মরকের কারণ ছিল অজ্ঞাত। অপরিমেয় মৃত্যুর কারণ হিসেবে নানা থিউরি কল্পনা করা হয়েছিল তখন। কেউ বলল, নক্ষত্রপুঞ্জের বিশেষ সমাবেশ; কেউ-বা বলল, গণমৃত্যু আসলে ঘন কুয়াশা ও ভূমিকম্পের মতোই প্রাকৃতিক ঘটনা। তবে অনেকেই মনে করত ছিল অপরিমেয় মৃত্যুর পিছনে রয়েছে ঈশ্বরের ক্রোধ। বাঁচার উপায় পালিয়ে যাওয়া কিংবা একেবারে বিচ্ছিন্ন থাকা। মরকের পটভূমিতে ইতালিও লেখক গিয়োভান্নি বোকাচিও (১৩১৩-১৩৭৩) লিখেছিলেন “ দি ডেকামের্যন” এক দল কমবয়েসী ইতালিও অভিজাত মরকঅধ্যূষিত ফ্লোরেন্সে বাস করত। তারা গ্রামের ভিলায় চলে যায় এবং গল্পের উদ্ভাবন করে সময় কাটাতে লাগল। ইউরোপের ইতিহাসে কৃষ্ণমৃত্যু এক বীভৎস অধ্যায় হলেও এর প্রদুর্ভাব ইউরোপের মধ্যযুগের সমাজে অনুঘটকের কাজ করেছিল। কি ভাবে? ইউরোপ জুড়ে খ্রিস্টীয় আধ্যাত্মিক জাগরণে প্রণোদনা দিয়েছিল কৃষ্ণমৃত্যু। পূর্বের তুলায় অধিক হারে জনগন খ্রিস্টীয় বিশ্বাসে অবনত হয়েছিল; জীবনমৃত্যুর কারণ নিয়ে ভাবিত হয়ে পড়েছিল। জীবনের উদ্দেশ্য নিয়েও গভীরভাবে ভাবিত হয়ে পড়েছিল এবং একই সঙ্গে নৈতিক দায়িত্ব সম্বন্ধেও সচেতন হয়ে উঠেছিল। কৃষ্ণ মরকের দংশনে ইউরোপীয় অর্থনীতির ক্ষতিই ছিল সর্বগ্রাসী। ব্যাপক হারে শ্রমিক ও কারুশিল্পির মৃত্যু ঘটেলি। যে মিস্ত্রিরা বেঁচে গিয়েছি তাদের মজুরি হয়ে উঠল দ্বিগুন -যা মেটাতে ধনীদের হিমসিম খেতে হয়েছিল। এতে অবশ্য ইউরোপের সমাজে গরিব শ্রমিকদের অবস্থান জোরদার হয়। কৃষক ও কারিগর বেশি মজুরি দাবী করে বসে। অন্যদিকে সামন্তবাদী প্রথা থেকে ভূমিদাসরাও মুক্তি চাইল। গরিবরা এত বেশি মৃত্যু দেখেছে যে তারা জীবন উপভোগ করতে চাইল। ভূমিদাসেরা জমি ছেড়ে চলে গেল, তারা আর চাষাবাদ করল না। ফলে গমের আবাদ হল না, শস্যও শুকিয়ে মরে গেল, চাষের বলদও মরল খাদ্যের অভাবে। গৃহপালিত পশুরা অরণ্যে ঘুরেফিরে বেড়াতে লাগল। গেল কৃষক স¤প্রদায় উচ্ছন্নে । ফরমান জারী করে ভূমিদাসদের প্রভূদের কাজে ফিরে যেতে বলা হল। লাভ হয়নি। ওদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জনবলের অভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হল । এক ধরনের ডাকাতের উদ্ভব হল। এদের বলা হত বেকচিনি। এরা লাল রঙের লম্বা জোব্বা আর লাল মুখোশ পড়ে ডাকাতি করে বেড়াত, এদের কেবল চোখ দেখা যেত। বেকচিনি রা ঘরবাড়ি লুঠ করত, সেই সঙ্গে খুন, ধর্ষন রাহাজানিতে মেতে উঠত। এভাবে ইউরোপের অর্থনীতি পর্যুদস্ত হয়ে পড়ল। এর প্রধান কারণ- জমি চাষের লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে ভূস্বামীরা পড়েছিল বিপাকে। এভাবে ইউরোপে সামন্তবাদের ক্ষয় সূচিত হয়। ফ্রান্সে ও ইংল্যান্ডে কৃষক বিদ্রোহ সূচনা করে। কৃষ্ণমৃত্যু ইউরোপীয় সমাজের এতই গভীরে ঘা দিয়েছিল যে এমনকী শিশুতোষ ছড়ায় তার চিহ্ন আজও রয়ে গেছে। বাল্যকালে (না বুঝেই) সুর করে গাইতাম: Ring a-round the rosy Pocket full of posies Ashes, ashes! We all fall down! রিং আ-রাউন্ড দ্য রোজি। ‘রোজি’ হল জপমালা (রৌজারি); যা ঈশ্বরের প্রতি প্রার্থনার প্রতীক। পকেট ফুল অভ পজিস। পকেটে পজি, মানে ফুটন্ত ফুল। ফুল কেন ? মৃতের দূর্গন্ধ ঢাকার জন্য। অ্যাশেজ! অ্যাশেজ! ছাই! ছাই! উই অল ফল ডাউন ... আমরা পড়ে গেছি। ইউরোপ পড়ে গেছে। এদ্দিন ছড়াটির মানে জানি নি। আজ জানলাম। তথ্য: Jay Ruud সম্পাদিত ENCYCLOPEDIA OF MEDIEVAL LITERATURE এবং উইকিপিডিয়াসহ কৃষ্ণমৃত্যু সংক্রান্ত ইন্টারনেট বিভিন্ন সাইট ছবি: ইন্টারনেট সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:০৭ | false |
rn | রহস্যময় বিতর্কিত পুরুষ রাসপুতিন ইতিহাস কি শুধু তাদেরকেই মনে রাখে যারা মহান সব কীর্তির মাধ্যমে নিজেদের অমর করে রেখে গেছেন? নাকি শুধু তারাই মহাকালের পথে নিজেদের চিহ্ন রেখে গেছেন যাদের হৃদয় ছিলো আলো দিয়ে ভরা? আমরা স্বীকার করতে না চাইলেও এটাই সত্যি যে ইতিহাসের আলোকিত দিকের পাশাপাশি রয়েছে একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ছায়াও। নিজেদের “কুকীর্তির” মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে আছেন এমন মানুষের সংখ্যাও পৃথিবীতে কম নয়। এমনকি কেউ আছেন যাদের কুখ্যাতিই তাদের করে রেখেছে কিংবদন্তি। পুতিন দাবি করতেন, তার কাছে রোগ সারানোর ক্ষমতা রয়েছে এবং তিনি ভবিষ্যদ্বাণীও করতে পারেন। রাসপুতিন একজন রুশ সন্ন্যাসী এবং জার ২য় নিকোলাস এর দরবারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। অনেকে তাকে চরিত্রহীন লম্পট এবং সে সময়ের রুশ রাজনীতিতে নানা ধরণের দুষ্কর্মের হোতা বলে মনে করেন। রাসপুটিনের জন্ম হয় তুরা নদীর তীরে সাইবেরিয়ার ছোট্ট একটি গ্রামে । রাসপুতিনের বাবা ঘোড়ার ব্যবসা করতেন। একবার তার কয়েকটা ঘোড়া চুরি হল- বালক রাসপুতিন নাকি ঘোড়া চোরের নাম বলে দিয়েছিল। গ্রামে লোক বলাবলি করল ছেলে তো খ্রিস্টের আর্শীবাদ পেয়েছে। ১৮ বছর বয়সে রাসপুটিনের মধ্যে ধর্মীয় পরিবর্তন আসে। তখন তিনি তিন মাস কাটান ভার্কোটারি মনাস্ট্রিতে। এরপর তিনি যখন নিজ শহরে ফিরে আসেন, তখন তিনি এক পরিবর্তিত মানুষ। ১৮৮৯ সালে রাসপুতিন বিয়ে করে। কনের নাম প্রাসকোভিয়া ফিয়োদরোনভা। তিনটি বাচ্চা হল এদের- দিমিত্রি, মারিয়া ও ভারভারা। কিন্তু সংসারে মন বসল না। ঘুরে ঘুরে বেড়াতে লাগল । অন্য এক নারীর সংসর্গে তার আরও একটি সন্তান ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির প্রতি সহানুভূতিশীল থাকায় রাজদরবারের লোকের হাতে তিনি গুপ্তহত্যার শিকার হন। তার জন্ম ১৮৬৯ সালের ২২ জানুয়ারি। রাসপুতিনের বড় এক ভাই ও ছোট এক বোন ছিল। মৃগী রোগে আক্রান্ত বোনটি নদীতে ডুবে মারা যায়। আরেকবার বড় ভাইও পুকুরে ডুবে যায়। পরে তিনি নিউমোনিয়ায় মারা যান। এ দুটি ঘটনা রাসপুতিনের জীবনে প্রবল প্রভাব বিস্তার করে। ১৯১৬ সালে রাশিয়ার এই প্রভাবশালীসন্যাসীকে বরফের নিচে পানিতে মৃতঅবস্থায় উদ্ধার করা হয় । যদিও পানিতে ডুবে তার মৃত্যুকে একটি নিছক দুর্ঘটনা বলে অপপ্রচার করা হয় কিন্তু তার মৃত্যু যে একটি পরিকল্পিত হত্যা সেটি পরবর্তিতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়। রাসপুতিন এর দেহ নদীতে জমাট বরফ কেটে গর্ত করে পানিতে নামানোর আগে তার শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়, এরপর তাকে পুরুষত্বহীন অর্থাৎ খাসি করানো হয় । তাছাড়া তার মাথায়, ফুসফুস ও কলিজাতেও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। বিংশ শতাব্দীর ডাক্তারদের ধারণা, রাসপুটিন হিপনোটাইজিং জানতো। উছ্বংখল জীবন-যাপন পদ্ধতি, অতিরিক্ত মাত্রায় এলকোহল সেবন, নারীদের প্রতি অশালীন আচরন প্রভৃতি কারণে রাসপুটিনের প্রচুর শত্রু তৈরী হয়। রাসপুটিনকে ১৯১৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর (গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯শে ডিসেম্বর) সেন্ট পিটার্সবার্গে তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানায়। সেখানে প্রথমে রাসপুটিনকে সায়ানাইড মিশ্রিত মদ আর কেক খাওয়ানো হয়, কিন্তু রাসপুটিন মারা যায়নি। এরপর ফেলিক্স রাসপুটিনের বুকে গুলি করেন, এমনকি আরেকজন ষড়যন্ত্রকারী আরো দুইবার গুলি করে, কিন্তু তখনো রাসপুটিন মারা যায়নি। আহত রাসপুটিনকে পরে পেট্রোভস্কি দ্বীপের ব্রিজ থেকে নেভা নদীতে ফেলা দেওয়া হয়। কিছুদিন পর তার লাশ পাওয়া যায়। মৃত্যুর পূর্বে রাসপুটিন জার নিকোলাসের কাছে এক অদ্ভুত ভবিষ্যতবানী করে যানঃ “যদি আমি সাধারণ জনগনের হাতে মারা যাই, তুমি, রাশিয়ার জার, তোমার সন্তানদের জন্য কোনো চিন্তা করো না, তারা আরো শত শত বছর রাশিয়া শাসন করবে।……আর যদি আমার মৃত্যুর কারণ হয় তোমার আত্মীয়দের মধ্যে কেউ, তাহলে শুনে রাখো, তোমার পরিবারের সবাই আগামী দুই বছরের মধ্যে খুন হবে, খুন হবে রাশিয়ার জনগনের হাতে………” রোমানভ পরিবারের সদস্যের হাতে রাসপুটিনের খুন হওয়ার তিন মাস পর ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে নিকোলাস দ্বিতীয় ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হোন, এবং দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে নিকোলাসের পরিবারের সবাই নিহত হোন, রাশিয়ার জনগনের নেতাদের হাতে! সব রাশিয়ান বিশ্বাস করে না যে, রাসপুটিন ও জারিনা প্রেমিক-প্রেমিকা ছিলেন এবং তারা জার্মানদের সাথে আলাদা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। উল্লেখ্য, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়া ও জার্মানি ছিল পরস্পরের শত্রু। সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০২ | false |
fe | রাজনৈতিক মূর্খতা ও মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক ফসল রাজনৈতিক মূর্খতা ও মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক ফসলফকির ইলিয়াস===========================================বাংলাদেশ আরো একটি বিজয় দিবস পালন করল। ১৬ ডিসেম্বর ছিল মঙ্গলবার। ওই দিন পাকিস্তানে একটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এক জঙ্গি হামলায় মঙ্গলবার পেশোয়ারের একটি বিদ্যালয়ে শতাধিক শিশুসহ অন্তত ১৬০ জন নিহত হয়। স্কুলটি থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছে এমন অনেকেই নিজের লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে। এ অমানবিক জঙ্গি হামলায় সামির আলি চোখের পলকেই তার সব বন্ধুকে হারিয়েছে। প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিরকে দেখতে হয়েছে একে একে ১০ বন্ধুর মৃত্যু। সামির যখন নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিল, ভয়ে- শোকে তার চোখ দুটি ছলছল করছিল। ১০ বন্ধু মিলে করিডোরে বসেছিলাম। তখনই গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেলাম। লুকানোর চেষ্টা করতে ক্লাসরুমের ভেতর আমরা দ্রুত ছুটে গেলাম। কিন্তু জঙ্গিরা আমাদের ঠিকই দেখে ফেলল। সালোয়ার-কামিজ পরা জঙ্গিরা আমাদের শুধু একটা হুকুম দিল : ‘কলেমা পড়ে প্রস্তুত হও’। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামির বলল, কেবল সে-ই বেঁচে আছে।কী জঘন্য ঘটনা! এ পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করেই বাংলাদেশ-বাঙালি জাতি স্বাধীন হয়েছিল। এ সেই হায়েনারা, যারা এখনো চরম মৌলবাদী বলে বিশ্বে পরিচিত। পাকিস্তানে যে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ আজ নখর দেখাচ্ছে, একই সমান্তরালে একজন জেনারেল পুত্রও দেখাচ্ছেন তার মূর্খতা। হ্যাঁ, এটাকে আমরা তার রাজনৈতিক মূর্খতা বলতে পারি। তার তারেক রহমান। তিনি এখন ব্রিটেনে থাকেন। গেল ১৫ ডিসেম্বর সোমবার তিনি ব্রিটেনে বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিয়ে অর্বাচীনের মতো কথাবার্তা বলেছেন।তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান যদি ৭ মার্চ সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসারদের নিয়ে যুদ্ধ শুরু করতেন, তাহলে যে ‘সামান্য সংখ্যক’ পাকিস্তানি সৈন্য তখন ছিল, তাদের সহজেই পরাজিত করা যেত; প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি ‘অনেক কমানো’ যেত। তারেক রহমান বলেছেন- ‘এসব কিছু জানার পর এর জন্য আমরা এককভাবে কাকে দায়ী করতে পারি? শেখ মুজিবকে। এবং আমরা তাকে যেভাবে রাজাকার বলেছি, আমরা তথ্যপ্রমাণ সত্য দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে তাকে বলেছি- রাজাকার। আমরা সত্য ঘটনাবলির ভিত্তিতে বলেছি সে ছিল পাকবন্ধু।’ লোকটা বলছে কি? তারেক আরো বলেন, ‘আজকে যদি আমরা বলি- এই যে লাখ লাখ মানুষ একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে মারা গেল, এই যে হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট হল, এর জন্য এককভাবে কী শেখ মুজিবকে দায়ী করা যায়? তাহলে এত মানুষের যে হত্যাকারী তাকে এক বাক্যে কী বলা উচিত? যে মানুষ মারে তাকে কি বলা উচিত?’এ কথার মাধ্যমে মূলত তারেক রহমান মহান মুক্তি সংগ্রামকে পদদলিত করার অপচেষ্টা করেছেন। তিনি অস্বীকার করেছেন লাখো শহীদের রক্তকে। অস্বীকার করেছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে। আমাদের জানা আছে, তার পিতা তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু সরকারের একজন সৈনিক হিসেবে সেদিন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। জিয়া তার ‘একটি জাতির জন্ম’ শিরোনামের লেখায় বলেছিলেন- বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তার জন্য ছিল ‘গ্রিন সিগন্যাল’। আজ কি তাহলে তারেক, নিজ পিতৃবক্তব্যকে অস্বীকার করছেন? পাকিস্তানের জঙ্গিরা যে কাজটি করছে, বাংলাদেশের পাকি তমদ্দুন মার্কা মূর্খরাও একই কাজ করছে। এদের মাঝে আজ কোনো পার্থক্য নেই।শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওই পাকিদের দালাল আর যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেছেন, ‘লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত এ পতাকা নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। এ পতাকা নিয়ে কোনো শকুনিকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। দরকার হলে বুকের রক্ত দিয়ে দেব।’ বাংলাদেশের মানুষ তার মনের আবেগ বুঝেন। এটাও জানেন এ দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থাকলে দেশ আবারো ‘বাংলা ভাই’দের ত্রাসে পরিণত হবে।আমরা জানি মহান মুক্তিযুদ্ধে, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশায় কোনো কৃত্রিমতা ছিল না। তারা রক্ত দিয়েই একটি মানচিত্র পাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। তাই প্রাণের বলিদান, আত্মাহুতি কোনো মুখ্য বিষয় ছিল না। সে সময় রাজনীতিকরাও স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন একটি স্বাধীন ভূমির। একটি বলিয়ান জাতিসত্তার। মানুষ রাজনীতিকদের কথায় আস্থা রেখেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে। সে যুদ্ধে তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এরপরের দায়িত্বটুকু ছিল জনগণ-রাজনীতিকের সমন্বয় সাধনের। যে কাজটি দ্রুত করতে পারেননি স্বাধীনতা-পরবর্তী রাষ্ট্র শাসকরা। করতে পারলে তাৎক্ষণিক বহুধা বিভক্তির জন্ম হতো না। মানুষও বিভ্রান্ত হতো না। একটি স্থিতিশীলতার পথ দেখত জাতি।রাষ্ট্রের অবকাঠামো নির্মাণে, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা সবসময়ই জরুরি ভূমিকা রাখে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে পরিকল্পনায় ছিলেন ব্যাপক উদার। তার উদারতা তাৎক্ষণিক মহানুভবতার পরিচয় দিলেও পরাজিত পক্ষ সেটা দেখেছিল দুর্বলতা হিসেবে। যার ফলে এখনো তারা বলে কিংবা বলার সাহস দেখায়, শেখ মুজিব ঘাতক-দালালদের সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন! বঙ্গবন্ধু তেমন কোনো ‘ক্ষমা’ ঘোষণা করেননি। বরং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছিলেন। বিভিন্ন ব্যক্তিগত খাতিরের সুযোগ নিয়ে, সামাজিক মুচলেকা দিয়ে তারা পার পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কেউ কেউ পলায়ন করেছিল পাকিস্তানে। পলাতক মাহমুদ আলী পাকিস্তানে মারা গেলেও, গোলাম আযমরা ফিরে এসেছিল পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে এবং পাখনা মেলেছিল সদলবলে।পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর যারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার নেশায় মত্ত ছিল তাদের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। দেশের মঙ্গল সাধনের চেয়ে, দেশ থেকে মুজিব এবং তার স্বপ্নের নামাবলি মুছে দেয়ার প্রধান ইজারা নিয়েছিল তারা। দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর চেয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ লুটপাটকে বেছে নিয়েছিল তারা টিকে থাকার সিঁড়ি হিসেবে। প্রয়োজনীয় গণউন্নয়ন খাতের বাজেটকে সংকুচিত করে তারা মনগড়া অনুন্নয়নশীল খাতে বরাদ্দ করেছিল বেশি রাষ্ট্রীয় অর্থ। সবচেয়ে বেশি অমনোযোগী ছিল শিক্ষা খাতের প্রতি। ভয় ছিল, মানুষ সুশিক্ষিত হয়ে গেলে লুটপাটের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারে।একটি জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে যে প্রত্যয়টির প্রধানত প্রয়োজন ছিল তা হচ্ছে দেশ গঠনে আন্তরিকতা। সেদিকে না এগিয়ে একটি মহল বন্দুক উঁচিয়ে ক্ষমতা স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে ছিল মরিয়া। শেখ মুজিবকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন নেতা স্পষ্ট বলেছিলেন, কাল সাপেরা ছোবল দিতে পারে। হ্যাঁ, সেটাই হয়েছিল।বন্দুকধারীদের সঙ্গে খুব সহজেই যোগ দিয়েছিল পরাজিত রাজাকার চক্র। তাদের মধ্য থেকে শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার মাধ্যমে রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বেশ জোরেশোরে। এ সময়ে দুটি চেষ্টা ছিল প্রকট। একটি হচ্ছে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে পলিটিশিয়ানদের জন্য পলিটিক্সকে ডিফিকাল্ট করা। আর অন্যটি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে ক্রমেই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এ দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, অতএব এদেরই নিপাত কর। এমন একটি নেপথ্য চিন্তায় ইন্ধন জুগিয়েছিল পরাজিত ঘাতক আলবদর-রাজাকার চক্র। পাক তমদ্দুনকে কাজে লাগানোর চেষ্টা ছিল ব্যাপক।একটি রাষ্ট্রের বশ্যতা স্বীকার করে সে রাষ্ট্রের মানুষের জন্য পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করার বিষয়ে বাংলাদেশে পরাজিত চক্রের শুরুতেই ছিল না। তারা খামোশ হয়ে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ছিল ১৯৭৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত। এরপরই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিল যথার্থই।বাংলাদেশের উন্নয়ন না হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে, জনগণের প্রতি রাজনীতিকদের আনুগত্য না থাকা। দায়বদ্ধতার অভাব এবং জনগণের সম্পত্তি হরণ করে নেয়ার মানসিকতা। স্বৈরশাসক এরশাদ সে কাজে নতুন মাত্রা যুক্ত করে, মস্তানদের লেলিয়ে দেন প্রতিপক্ষ রাজনীতিকদের ওপর। ফলে দেশের ভেতরে ‘পলিটিক্যাল ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’রা প্রবল শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এরা মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত পায়। তাদের বাসা থেকে ধৃত হয় গালকাটা কামালের মতো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। রাষ্ট্রপক্ষ, জনগণের ওপর এমন দানব লেলিয়ে দেয়ার ঘটনাগুলো বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিষিয়ে তোলে।এরশাদের পতনের পর তারা নতুন আঙ্গিকে প্রধান দুদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপর ভর করে। তারা শুরু করে নতুন নতুন অপচেষ্টা। এই যে দুই প্রধান দলের ভেতরের লুটেরা শ্রেণি, তারা যে এরশাদের সৃষ্টি তা খুঁজে দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। এদের দেখাদেখি প্রধান দুই দলে আরো কিছু নেতা এ পথ অনুসরণ করেছে ’৯০-এর গণআন্দোলনের পরে।প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর দেশে ডানপন্থী মোর্চাটি বেপরোয়া হয়ে উঠতে থাকে। এই যে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা’ সেটাও কিন্তু রাজনীতিকদের পারস্পরিক অবিশ্বাসের ফসল। রাজনীতিকদের যে ন্যূনতম দায়বদ্ধতা জনগণের প্রতি নেই তার প্রমাণও এই তত্ত্বাবধায়ক প্রথাটি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও এত চমৎকার গণতান্ত্রিক সৌহার্দ্যতা থাকার পরও বাংলাদেশ তা অনুসরণ করতে পারেনি তা চরম বেদনাদায়ক এবং লজ্জাজনকও বটে।বিএনপির ব্যর্থতার কারণে ’৯৬-এর নির্বাচনে জিতে আসে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এ সময়ে আওয়ামী নেতারা আরো দাম্ভিক, অহমিকাপূর্ণ আচরণ শুরু করেন গণমানুষের প্রতি। দুর্নীতিতে তারাও সমান পারদর্শিতা দেখান। মানুষ দাঁড়ানোর পথ খুঁজে না পেয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে আবার বিএনপি জোটের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়। সে সঙ্গে মন্ত্রিত্ব পায় একাত্তরের আলবদর বাহিনীর দুই খুনি ও তাদের প্রেতাত্মা।দেশে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ লালনে স্বীকৃত রাজনীতিকদের কি ভূমিকা ছিল তা আজো অজ্ঞাত। শায়খ রহমান কিংবা বাংলাভাই কখনই দেশে প্রধান কোনো নায়ক ছিল না। প্রধান নায়করা নেপথ্যে ছিল এবং এখনো আছে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের মূল্য যারা এখনো স্বীকার করতে চায় না, তারা অন্যভাবে ক্ষমতার মসনদ চায়। আর তা হচ্ছে জঙ্গিবাদ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপ, সমীক্ষার মতে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের উর্বর ভূমি হতে চলেছিল সে সময়। সে কথা আমরা গেল এর প্রায় এক দশক থেকেই শুনে আসছিলাম। যা রাষ্ট্রের জন্য, মানুষের জন্য ভয়ানক শঙ্কার কারণ ছিল।পাকিস্তানের জঙ্গি মানসিকতা আর তারেক রহমানের মূর্খতার রাজনীতি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক ফসল ও চেতনাকে ম্লান করতে পারবে না। কারণ এই শাণিত প্রজন্ম যে রক্তঢেউ বহন করছে- তা মুক্তিপাগল একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধার। মানুষকে ভাবতে হবে। একাত্তরে যে জাতি বিজয়ী হয়েছিল- তারা ২০১৪ তে এসে পরাজিত হতে পারে না- নৈতিকতার কাছে। ক্ষুদ্রস্বার্থ নয়, দেশপ্রেমের আলো চাই আজ বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে। চাই বিবেকের বিজয়।----------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ প্রকাশিত | false |
mk | ইউপি ইলেকশন এবং ___ বাংলাদেশের তিন স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকারের পরমাণু এককের নাম ইউনিয়ন পরিষদ। ১৮৭০ সালের ব্রিটিশ-ভারত সরকারের গ্রাম চৌকিদারি-অ্যাকেটর মাধ্যমে গ্রাম্যপুলিশের (চৌকিদার) ভরণপোষণের জন্য কর আদায় করতে গিয়ে যে ইউনিয়ন পঞ্চায়েত সৃষ্টি করা হয়েছিল তাই স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে (১৯৭৩) ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনের বলে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করে। তবে আজকের ইউনিয়ন পরিষদ ব্রিটিশ আমলের সেই চৌকিদারি সংগঠন নয়, বরং একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-সাংগঠনিক রাষ্ট্র সংগঠন। জনপ্রশাসনকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার হাত থেকে রক্ষা করতে, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমিয়ে সহজ, সুলভ এবং জনবান্ধব প্রশাসন নিশ্চিত করতে ইউপির ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। সেই ক্ষমতায়নের জন্য আবার নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত সৎ ও যোগ্য প্রতিনিধি-নির্বাচনের মধ্য দিয়েই কেবল ইসি তার পূর্ণ কার্যকারিতা বহাল রাখতে পারে। সেই উপলব্ধি থেকেই সম্ভবত আসন্ন নির্বাচনের তৎপরতা চলছে। বর্তমান ইসি কর্তৃক পরিচালিত দশম জাতীয় সংসদ, উপজেলা, সিটি এবং মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের নির্বাচনসমূহের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তাদের নেতৃত্বেই আয়োজিত হচ্ছে ইউপি নির্বাচন। এই নির্বাচনমুখী প্রবণতা-গণতন্ত্রের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পক্ষান্তরে নির্বাচনবিমুখতা_ দেশ ও দলীয় উভয় রাজনীতির জন্য নেতিবাচক। একটি অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশন আয়োজিত ছয় পর্বের আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ১ম পর্বের (২২ মার্চ, ২০১৬) দিন ঘনিয়ে আসছে। ইউপি নির্বাচন এদেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আটবার ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং নবমবারের জন্য প্রস্তুতি চলছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিতান্তই গতানুগতিক হলেও এবারের নির্বাচন নিয়ে আশা-নিরাশার একটা দোলাচল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক বিবেচনায় সম্পূর্ণ দলীয় প্রতীক বরাদ্দের মধ্যদিয়ে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সুসংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্র প্রশস্ততর হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। সে ধারণা যে এতো তাড়াতাড়ি অমূলক প্রমাণিত হয়ে গেল ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। তবে ইতোমধ্যে প্রার্থী মনোনয়ন, প্রার্থিতা শিকার, প্রতিদ্বন্দ্বিতা-মোকাবেলা প্রভৃতির নামে যে ডামাডোল সৃষ্টি হয়েছে তা মামুলি উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে খুন-জখমের পরিবেশ পর্যন্ত সৃষ্টি করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর আগে কোনো ইউপি নির্বাচনে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানা যায়নি। প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হওয়া, পাল্টা হামলায় আহত হওয়া, প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ঘরবাড়ি ভাংচুর প্রভৃতি ঘটনা ঘটছে অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসনের নাকের ডগায়। এভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ বিঘি্নত হলে প্রত্যাশিত ফলাফল নিশ্চিত করা যাবে না_ অর্থাৎ তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় রাজনীতিকে সুসংঘবদ্ধ করে গণমুখী করা যাবে না।কেন এরকম হচ্ছে? এর কোনো সোজাসাপটা উত্তর আছে কি? এই সংঘাত কি কেবল রাজনৈতিক পক্ষ-প্রতিপক্ষের মধ্যকার ক্ষমতার লড়াই? মনে হয় না। লড়াই হচ্ছে বহুমুখী। পক্ষ-প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘাতের যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি খবর পাওয়া যাচ্ছে স্বপক্ষের মধ্যকার লড়াইয়ের অর্থাৎ আত্মকলহের। মনোনীত প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যকার সংঘাত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আত্মঘাত। প্রত্যেকটি দলে যত না মনোনীত প্রার্থী, তারচেয়ে বেশি বিদ্রোহী প্রার্থী। এদিকে স্বতন্ত্রের মুখোশ পরে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছে অনেক ভয়ঙ্কর দলের ভয়ঙ্কর মানুষ। দলীয় মোড়কে যারা আসছে, তাদের সবাই যে ধোয়া তুলসি পাতা তাও হলফ করে বলা মুশকিল। ইতোমধ্যে মনোনীতদের ভেতরে অনেকের নামে রকমারি ফৌজদারি অভিযোগের খবর পাওয়া গেছে। আবার অনেক যোগ্য প্রার্থী যোগ্য লবিস্ট ধরতে না পেরে ছিটকে পড়েছে মনোনীতের তালিকা থেকে। সৎ এবং যোগ্যপ্রার্থী তা যে কোনো দল থেকেই হোক না কেন, চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলে সমাজে সংঘাতের সম্ভাবনা অনেকখানিই হ্রাস পেত। যারা পেশিশক্তি কিংবা ক্ষমতাবলে মনোনয়ন ছিনিয়ে আনতে পারে, তারা নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনতেও ক্ষমতার অপব্যবহার করতে চাইবে। কিছু ইউনিয়নে একেবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী বিশেষের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ার নেপথ্য কাহিনী হতে পারে তার বিশেষ ক্ষমতা কিংবা প্রতিপক্ষের ক্ষমতাহীনতা। অথচ খুব সহজেই এই অবস্থা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যেকোনো মূল্যে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে মনোনীত করা দরকার। সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত কিংবা সন্ত্রাসের অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ কোনো প্রার্থীকে কোনোভাবেই মনোনয়ন দেয়া উচিত নয়। উপযুক্ততম প্রার্থী মনোনয়ন পেলে এমনিতেই বিদ্রোহের সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। আর না পেলে কঠোর কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে তা দমন করতে হবে। সর্বোপরি, প্রাক-নির্বাচন এবং নির্বাচনকালে অবাধ প্রতিদ্বন্দ্বিতা একটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একপেশে নির্বাচন নানান প্রশ্নের জন্ম দেবে।আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ার আরেকটি বড় সমস্যা হলো বিভিন্ন দফাভিত্তিক নির্বাচনে আলাদা আলাদা করে ফলাফল ঘোষণা করা। ভারতের মতো সব দফার নির্বাচন শেষে একসঙ্গে ফলাফল দিতে পারলে সম্ভবত আরো ভালো হতো। প্রথমদফার নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং ফলাফলের কোনো প্রভাব দ্বিতীয় দফায়, কিংবা দ্বিতীয় দফারটা তৃতীয় দফায় এভাবে পূর্ববর্তী দফার প্রভাব পরবর্তী দফায় পড়ার সম্ভাবনা হ্রাস পেত এবং সার্বিক নির্বাচন অধিকতর অর্থবহ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেত। কিন্তু আমাদের ইউপি নির্বাচনে প্রতিদফার ফলাফল আলাদাভাবেই ঘোষিত হবে। সেক্ষেত্রে ফলাফল স্বাভাবিক হলে হয়তো পরবর্তীতে তার কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। আর কোনো কারণে যদি অস্বাভাবিক হয়, তাহলে পরবর্তী দফার নির্বাচনসমূহে তার সাংঘাতিক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সামগ্রিক নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। অতএব প্রথম দফার নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সরকার ও ইসির সর্বাত্মক তৎপরতা নিশ্চিত করতে হবে।নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে অভ্যস্ত। নিশ্চয়ই তাদের সঙ্গত কারণও থাকে। কারণ কমিশন তাদের সীমাবদ্ধতার দিকটি বড় করে দেখিয়ে যতই পাশ কাটাতে চাক না কেন, তার ক্ষমতা একেবারে কমও নয়। যথাযথ কারণ দেখিয়ে যেকোনো প্রার্থীকে নির্বাচন-অযোগ্য ঘোষণা করা থেকে শুরু করে ইউনিয়নবিশেষের নির্বাচন স্থগিত/বাতিল করার পূর্ণ অধিকার কমিশন সংরক্ষণ করে। সে ক্ষমতার কিছু নমুনা যে কমিশন দেখায়নি তাও নয়। তারপরও মনে হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়; কমিশনকে আরো অনেক বেশি সক্রিয়তা প্রদর্শন করা দরকার। তৃণমূলের এক অতি সাধারণ নির্বাচনে একেবারে হেলিকপ্টার নিয়ে এসে সাড়ম্বরে প্রচারাভিযান চালানো কিংবা প্রতিশ্রুতির ঠাঁট দেখিয়ে ভোট শিকারের পাঁয়তারা যতই সরকারি দল সমর্থিত কেউ করেন না কেন, তাকে প্রশ্রয় দেয়া কমিশনের উচিত না। আচরণবিধি লংঘনের দায়ে সাংসদদেরও ইম্পিচ করতে কমিশনের দ্বিধা থাকা উচিত নয়। নির্বাচনের সাফল্য-ব্যর্থতায় পুরো দায়ভার, প্রাথমিক বিবেচনায়, কমিশনকেই নিতে হয়।ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নানা বিবেচনায় একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইউপি নিছকই একটি স্থানীয় সরকার প্রশাসনের টায়ার নয়, এর একটা দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী সামাজিক গুরুত্ব আছে। ইউপির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় তৃণমূল পর্যায়ের অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমা এবং মামলাযোগ্য বিষয় খুব সহজেই নিষ্পত্তির মুখ দেখে এবং অসহায় তৃণমূল মানুষদের আর্থিক ও মানসিক স্বস্তি দেয়। তবে শর্ত থাকে যে, মধ্যস্থতাকারী প্রতিনিধিরা সৎ, যোগ্য ও সাদা মনের মানুষ হবেন। সেই সততা ও যোগ্যতার জায়গা যদি ভালো মানুষদের নাগালের বাইরে গিয়ে সন্ত্রাসী ও লুটেরাদের দখলে চলে যায় তাহলে বিবাদ নিষ্পত্তি তো দূরের কথা নতুন নতুন ঝামেলা-ফ্যাসাদে পড়বে তৃণমূলের শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো। ফলে ইউপির ঐতিহ্যবাহী সামাজিক ভূমিকা মারাত্মকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হবে।আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা জন্মলাভ করছে সেগুলো, নিরসিত না হলে, চূড়ান্ত পরিণতিতে তৃণমূল পর্যায়ের দলীয় রাজনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়নের হরিণ শিকার করতে গিয়ে একই দলের মধ্যে অন্তর্কলহ যে ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছে তাতে সার্বিকভাবে দলের যে ক্ষতি সাধিত হবে, তা নির্বাচনে সাময়িক বিজয়ে লাভের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। তাছাড়া, তৃণমূল পর্যায়ে এমনিতেই দলীয় আনুগত্য, শৃঙ্খলা, সংঘবদ্ধতা প্রভৃতি অনুশীলনের স্কোপ কম। দলের আদর্শ ও সাধারণ ইমেজকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ মানুষগুলোর মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভক্তি দলের জাতীয় রাজনৈতিক সংহতিকে বিঘি্নত করবে। সেক্ষেত্রে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থার সাফল্য নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।র্বিক বিবেচনায়, রাজনৈতিক প্রতীকে এই প্রথমবারের মতো ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার যে চ্যালেঞ্জ সরকার গ্রহণ করেছে, তা সফল করার গুরুদায়িত্ব মূলত সরকারের ওপরই বর্তাবে। বর্তমান সরকার তাদের কর্মপরিচালনার অনেক ক্ষেত্রেই সফল ইনোভেশনের সাক্ষ্য রেখেছে। ঘুণে ধরা সনাতন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় একটা ঝাঁকুনি দিয়ে অধিকতর গতিশীল করার অভিপ্রায়ে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এই মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু এই পরিবর্তন যদি অভিপ্রায় বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন না করে, বিশেষত প্রভাবক মহলের ক্ষুদ্র স্বার্থবুদ্ধির কারণে, তাহলে তা স্থানীয় সরকার প্রশাসনে যেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সরকারের ভাবমূর্তিতেও তেমনি চিড় ধরাবে। তবে এখনি সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। বরং ওঃ রং হবাবৎ ষধঃব ঃড় সবহফ. সংশোধনের উপায় কখনোই নিঃশেষিত হয়ে যায় না। সব ক্ষেত্রেই সদিচ্ছাই বড় কথা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এ মুহূর্তে জাতিকে অনেকখানি ভারমুক্ত করবে।ড. রাশিদ আসকারী: কলামিস্ট, রাজনীতি বিশ্লেষক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৪০ | false |
rn | মনে করি, A হলো একটি সফল জীবন। A=x+y+z, এখানে x=কাজ, y=খেলা, z=মুখ বন্ধ রাখা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর দিবারাত্রির কাব্য অনেকেরই পড়া। তারই বিশেষ একটা লাইন পড়ে মনে হয়েছিল - প্রচণ্ড বৃষ্টির এ রকম তুলনা কি করে কেউ ভাবতে পারে? চিন্তাই করতে পারি না!মালতির খুব সরল মনের মেয়ে আনন্দ! আনন্দ সমুদ্রে প্রবল বৃষ্টি দেখে বলেছিল 'কি বৃষ্টি নেমেছে! সমুদ্রটা পর্যন্ত ভিজে যাবে' । যে সমুদ্র সীমাহীন জলের আধার - সেটা ভিজে যাবে !!! ১/ স্ত্রী ছাড়া কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করা ঠিক না। সব মেয়েই কালনাগিনী, পিশাচিনী। ২/অনেক সময় প্রিয় মানুষটির সাথে মান-অভিমানের কারনেই সৃষ্টি হয় দূরত্ব। আর এই দূরত্বই আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে ঐ মানুষটির ভালবাসা বেঁচে থাকার জন্য কত বেশি প্রয়োজন !তখন ছুটে গিয়ে তার হাতটি ধরে বলে উঠতে ইচ্ছে হয়, ভালোবাসি, ভালোবাসি, অনেক বেশি ভালোবাসি..... ♥♥ ৩/ শেয়ার মার্কেটের চোরদের শাস্তি হয় না ... মন্ত্রীর চুরির শাস্তি হয় না ... পয়সাওয়ালাদের করা খুনের শাস্তি হয় না ... ধর্ষণের শাস্তি হয় না ... ধনীদের কোন অপরাধের শাস্তি হয় না !!এই দেশে খুনের আসামী কে ধরা হয় ... ফাঁসির রায় দেয়া হয় ... রাষ্ট্রপতি তাকে ক্ষমা করে দেন ... তার শাস্তি হয় না !! ৪/ হে মানবসন্তান আমি নানান রুপে তোমাদের সামনে নিজেকে উপস্থিত করেছি। চোখ মেললেই আমাকে দেখবে। কান পাতলেই আমাকে শুনবে। কেন তোমরা চোখ ও কান দুই-ই বন্ধ করে রেখেছ? ৫/ কোন বইতে যেন পড়েছিলাম- অতি সহজেই আমরা মানুষ সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্তে চলে আসি। মানব চরিত্রের এটা একটা বড় দুর্বলতা। একটা মানুষ সম্পর্কে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব তার মৃত্যুর বারো বছর পর। মৃত্যুর পর কোনো মানুষ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। মৃত্যুর কারণে লোকটার প্রতি মমতা চলে আসে। বারো বছর পার হবার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। ৬/ মানুষের জীবনে জ্ঞান বা ভালো পরামর্শ হলো মূল্যবান পাথরের মতো। এ-জিনিস যতো বেশি সম্ভব সংগ্রহ করা উচিত। জ্ঞান যত বেশি হবে, মানুষ ততো আলোকিত হবে, হবে মনের দিক দিয়ে ধনী। অবশ্য জ্ঞানের পিপাসা কখনো মেটে না। আফসোস থেকেই যায়। কিন্তু যতোটা সম্ভব জ্ঞান অর্জন করে যাওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে দিন শেষে আফসোসের মাত্রা কম হবে। ৭/ আকাশে ওড়ার সময় একটি কবুতরের সঙ্গে একটি কাকের দেখা হল। কবুতর কাককে জিজ্ঞেস করল: ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ কাক বলল: ‘আসলে আমি কোথাও যেতে চাই না। কিন্তু কেউ আমার কণ্ঠ পছন্দ করে না। তাই সবার কাছ থেকে দূরে কোথাও চলে যাচ্ছি।’ কবুতর বলল: ‘তোমার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। কারণ, তুমি যেখানেই যাও সেখানেই কেউ না কেউ থাকবে এবং তোমার কণ্ঠস্বরও পরিবর্তিত হবে না।’ ৮/ কাউকে বেশি ভালবাসবেন না, এইটা অমার্জনীয় পাপ । ৯/ "বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে"খুবই সুন্দর এবং বাস্তব একটি কথা।দয়া করে কেউ পাখি কিনে বা অন্যায় ভাবে ধরে খাঁচায় বন্দি করে রাখবেন না।দেখতে হয়তো আপনার ভাল লাগতে পারে , কিন্তু যে খাঁচার ভিতরে ছটফট করছে তার কথা ভাবার কি সময় আছে আপনার?একবার শুধু নিজেকে জেল খানার বন্দি অবস্থায় দেখুন। ঠিক বুঝতে পারবেন যে বন্দি জীবন কতটা কষ্টের। ১০/ আমরা শুধু আপন মানুষ খুঁজি, কিন্তু আপন মানুষদের খুঁজতে হয় না , তারা পাশেই থাকে । ১১/ বাচ্চারা কথা বলতে শিখলেই নানান প্রশ্ন করে। একটি ৪ বছরের শিশু প্রতিদিন গড়ে ৪৩৭টি প্রশ্ন করে। ১২/ জোড়াসাঁকোতে থাকতে রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা যে রকম ছিল শান্তিনিকেতনে যাওয়ার পর তা কিন্তু ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছিল। বিশেষ করে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী ছাত্রদের কাছে বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে তার ধর্মীয় ভাবনায় পরিবর্তন এসেছিল। গৌতম বুদ্ধ, যীশু খ্রিস্ট, গুরু নানক প্রমুখ ধর্মগুরুর সম্মানে তিনি কবিতা ও গান রচনা ও পরিবেশন করেছেন। তাঁদের জীবন ও দর্শন সম্পর্কে আলোচনাও করেছেন।হযরত মোহাম্মদ (সা -এর জন্মদিনে শান্তি নিকেতনের মন্দিরের অনুষ্ঠানে ‘কোন আলোকে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আসো’ গানটি গাওয়া হতো। ১৩/ শুধু অর্থ মানুষকে সুখী করে না। অর্থ যে সুখী করে না এটা প্রমাণিত সত্য। তবুও মানুষ জ্ঞানশূন্য হয়ে অর্থের পেছনে ছুটছে কেন? এটা তো একটা ভুল দৌড় মাত্র। এই ভুল দৌড়ের ব্যাপারেও আমাদের ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআনে অনেক কথা বলা আছে। মানুষ যদি বুঝত তার জীবনটা অতি সংক্ষিপ্ত, এরপর তার জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে, তা হলে তো এই পৃথিবীতে আরো অনেক বেশি শান্তি বিরাজ করত। ১৪/ হাসপাতালে ঢুকে দেখি হাসপাতালটা বেশ জোরেসোরে ঝাড়ামোছা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেয়াল থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে- হাতের দাগ, পানের পিক, নাকের পোঁটা। আজেবাজে পোষ্টার, ওষুধের বিজ্ঞাপন সব ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। লোকজনের মহা উৎসাহ। একজন ক্লিনার শুনি আরেকজনকে বলছে, হাত চালাইয়া কাম করন লাগব মিয়াভাই, বঙ্গবন্ধু দ্যাশে ফিরত্যাছেন, যদি মেডিক্যালে আইয়া দ্যাহেন দেয়ালে নাকের পোঁটা, তাইলে খবর আছে! তার কথা শুনে আরেকজন ক্লিনার অবিশ্বাসের সঙ্গে বলে উঠল, তোমারে কে কইছে যে, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে আইবেন, বঙ্গবন্ধু বাইচ্যা আছে কি না জানো তুমি ?বাইচ্যা নাই, বঙ্গবন্ধু বাইচ্যা নাই? এই হারামির পুত, তরে কে কইল বঙ্গবন্ধু বাইচ্যা নাই ?লোকটা মারমুখী চেহারা দেখে অন্য আরেকটা বয়স্ক ক্লিনার মধ্যস্থতা করার জন্য এগিয়ে এসে বলল, বঙ্গবন্ধু বাইচ্যা আছেন, এরকম মানুষরে পাকিস্তান মারবার সাহস পাইবে না, তাগো কোমর ভাইঙ্গা গ্যাছে গা। তার উপর বিরানব্বই হাজার সৈন্য এখনও আমাগো এহানে বন্দী। তাই চিন্তা কইরো না। তারপর একটু থেমে লোকটা বলল, তোমরা তো বঙ্গবন্ধুর নেচার জানো না, জানি আমি। হঠাত কইরা একদিন স্যান্ডেল পায়ে দিয়া মুজিবকোট গায়ে চাপাইয়া মেডিল্যাল হাসপাতাল পরিদর্শনে আইয়া পড়বেন, তখুন এত অপরিস্কার দেখলে তারে আমরা জবাব দিমু কী ?আনোয়ারা সৈয়দ হোক # উপন্যাস সমগ্র-২ | false |
fe | বহির্বিশ্বে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির বীজ ও বীক্ষণ বহির্বিশ্বে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির বীজ ও বীক্ষণ ফকির ইলিয়াস=========================================নিউইয়র্কে ১৭ ও ১৮ জুলাই ২০১০ দুই দিনব্যাপী এবিসি (আমেরিকা-বাংলাদেশ-কানাডা) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। হাজারও মানুষের মিলনমেলায় মুখরিত ছিল নিউইয়র্কের ম্যারি লুইস একাডেমি প্রাঙ্গণ। সেমিনার, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর নাচে-গানে অভিবাসী বাঙালিরা মেতেছিলেন আনন্দে, শিকড়ের সন্ধানে।এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার ছিল। বিষয় 'তৃতীয় বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিল্পচর্চার যথার্থ মূল্যায়ন হচ্ছে কী?'এই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রবাদপুরুষ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এই সেমিনারের একজন প্যানালিস্ট হিসেবে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল আমারও।বলা দরকার, তৃতীয় বাংলা বলতে ঢাকা ও কলকাতার বাইরে অর্থাৎ বহির্বিশ্বকে বুঝানো হয়েছে। আমি ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করেছি, ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালিরা নিজেদের 'তৃতীয় বাংলা'র অধিবাসী বলে দাবি করতে শুরু করেছেন। এর সর্বশেষ প্রমাণ হিসেবে 'তৃতীয় বাংলার কবি ও কবিতা' নামে একটি কাব্য সংকলন সম্পাদনা করেছেন ব্রিটেন অভিবাসী কবি আবু মকসুদ। ব্রিটেন অভিবাসী কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীরা সেই দাবি অব্যাহত রেখেছেন।একই অবস্থা পরিলক্ষণ করছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। তার কারণ হলো এই, অধিক পরিমাণ অভিবাসী আসার সুযোগে গেল ক'বছরে কয়েক লাখ বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট হয়ে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এখানে সাহিত্য-সংস্কৃতি শিল্পের চর্চায় গড়ে উঠেছে বহুমুখী উদ্যোগ। জন্ম নিয়েছে অনেক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে ফোবানা সম্মেলন, এবিসি সম্মেলন, নজরুল সম্মেলন, কবিতা সম্মেলন, উত্তর আমেরিকা সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্মেলন, রবীন্দ্র সম্মেলন, বইমেলা, গ্রীষ্ম মৌসুমে বড় বড় পথমেলা, সাংস্কৃতিক অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানের মতো সুবৃহৎ আকারের আয়োজন হচ্ছে প্রতিবছর।এই সাহিত্য-সংস্কৃতির বীজ বপন প্রক্রিয়া, এর থেকে ফসল কী ঘরে উঠছে? এই প্রশ্নটিই মুখ্য ছিল এবারের এবিসি সম্মেলনের সেমিনারে। এ বিষয়ে বলতে গিয়ে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জানালেন তার অভিব্যক্তির কথা। তিনি বললেন, 'এই সুদূর পরবাসে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে সেটাই আমার কাছে বড়। বহির্বিশ্ব থেকে এ মুহূর্তেই খুব বড় প্রতিভা হয়তো আমি প্রত্যাশা করি না। তবে আমি আশাবাদী চর্চা অব্যাহত থাকলে আগামীতে বড় মননশীল লেখক-সাহিত্যিক প্রবাস থেকে বেরিয়ে আসবেন- সে প্রত্যাশা আমি করতেই পারি।'শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতি মূলত বেঁচে থাকবে বাংলাদেশকে ঘিরে। যে দেশের মানুষ তাদের মাতৃভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতে পারেন, তারা এই সাহিত্য বাঁচিয়ে রাখবেন না তো কে রাখবে? তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ হিন্দি সংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকার। আমি যখন বাংলাদেশে যাই তখন বাংলাদেশের মানুষের আত্মীয়তা আমাকে বারবার ঋণী এবং সমৃদ্ধ করে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, যদি ভারতবর্ষ আমাকে তাড়িয়ে দেয়, তবে জানি বাংলাদেশ আমাকে বুকে তুলে নেবে।শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যে প্রত্যয় নিয়ে কথা বলেছেন, সেই প্রত্যয় বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন অভিবাসী বাঙালিরা। আমরা জানি, 'অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না।' কেউ স্বীকৃতি দেবে কি দেবে না- সে তোয়াক্কা না করেই বিদেশে অবস্থানরত বাঙালিরা অব্যাহত রেখেছেন তাদের প্রচেষ্টা।ব্রিটেনের 'সাপ্তাহিত সুরমা' কিংবা নিউইয়র্কের 'সাপ্তাহিক ঠিকানা'র মতো সুপ্রতিষ্ঠিত কাগজগুলোর কথা তো বলা যায় বটেই। এ সময়ে অনলাইন বাংলা ওয়েবসাইটগুলো বহির্বিশ্বে রীতিমতো যে সাড়া ফেলে দিয়েছে তা সত্যি বিস্ময়কর। এ প্রসঙ্গে কানাডা থেকে প্রকাশিত দুটি বাংলা সংবাদ সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক ওয়েবসাইট নতুনদেশ ডট কম এবং বেঙ্গলিটাইমস ডট সিএ - এর নাম উল্লেখ না করলেই নয়।বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, আমাদের লেখক বেশি পাঠক কম। বাঙালির পাঠাভ্যাস একটি নির্দিষ্ট বলয়ে আবদ্ধ। এ বলয় যেন কোনমতেই ভাঙা যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না? এ প্রশ্নটি আমি সবিনয়ে বোদ্ধা সমাজের কাছে করতে চাই। ১৫ কোটি নাগরিকের দেশ বাংলাদেশ, রাষ্ট্রের প্রথম সারির কোন কবির কাব্যগ্রন্থ এক হাজার কপিও চলে না। এটা গোটা জাতিসত্তার দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। একই অবস্থা প্রবাসেও। নিউইয়র্কে বসবাস করেন বিরলপ্রজ কবি শহীদ কাদরী। ২০০৯-এর বইমেলায় তার 'আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও'- শিরোনামে চতুর্থ কাব্যগ্রন্থটি বের হয়। এই বইটি কি যুক্তরাষ্ট্রে শত শত কপি চলেছে? না চলেনি। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন যারা নিজেদের কবি দাবি করেন। তাদের পঠন-পাঠনের দ্বীনতা দেখলে খুব বেশি শিউরে উঠতে হয়।দুইবহির্বিশ্ব থেকে বেশ কিছু লিটল ম্যাগাজিন নিয়মিত বের হয়। এর মধ্যে ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত 'শব্দপাঠ' নামের লিটল ম্যাগাজিনটি পাঠক মহলে একটি বিশেষ স্থান করে নিতে সমর্থ হয়েছে। 'শব্দপাঠ'-এর সম্পাদকমন্ডলীতে রয়েছেন-কবি আতাউর রহমান মিলাদ, আবু মকসুদ ও কাজল রশীদ। পরিপুষ্ট এই লিটল ম্যাগাজিনটি নবীন-প্রবীণ লেখকের সমন্বয় ঘটিয়ে যাচ্ছে প্রায় এক দশক ধরে।অভিবাসে থেকে যারা লেখালেখি করেন তাদের অর্জন কী? এ প্রশ্নটি আসতেই পারে। যুক্তরাষ্ট্র বেশ ক'জন লেখক-সাহিত্যিক বাস করেন, যারা 'বাংলা একাডেমী পুরস্কার'প্রাপ্ত। দিলারা হাশেম, শহীদ কাদরী, ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত তারা একাডেমী পুরস্কার পাওয়ার পরই পরবাসী হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে লেখালেখি শুরু করে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছিলেন ঔপন্যাসিক মোজাম্মেলন হোসেন মিন্টু। সদ্য প্রয়াত এই লেখক প্রবাসে বসেই করতেন তার শ্রেষ্ঠ লেখালেখি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অধ্যাপক আলী আনোয়ারও বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন সম্প্রতি।প্রাপ্তির পুষ্পার্ঘ আরও আছে। সিংহভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে থেকে লেখালেখি করে 'অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার' পেয়েছেন পূরবী বসু। ব্রিটেন প্রবাসী লেখিকা সালেহা চৌধুরীও সম্প্রতি পেয়েছেন এই 'অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার'।ঢাকার এক সময়ের প্রভাবশালী দৈনিক আজকের কাগজ প্রবর্তন করেছিলেন 'কাগজ সাহিত্য পুরস্কার'। এই পুরস্কারটি পেয়েছিলেন কানাডা অভিবাসী গল্পকার সালমা বাণী। মূলত যিনি প্রবাসী লেখিকা।বিদেশে অবস্থান করে বাংলাদেশের মূলধারার সাহিত্যের সঙ্গে যারা নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন তাদের লেখনীর মাধ্যমে তাদের সংখ্যা মোটেই কম নয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী কবি তমিজ উদ্দীন লোদী, কবি শামস আল মমীন, কবি ওমর শামস, প্রাবন্ধিক হাসান ফেরদৌস, কানাডা অভিবাসী কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কবি ইকবাল হাসান ,কবি ফেরদৌস নাহার, গল্পকার সাদ কামালী, কবি মাসুদ খান, কবি নাহার মণিকা প্রমুখ নিয়মিত লিখছেন।ব্রিটেন অভিবাসী কবি আহমদ ময়েজ, শাহ শামীম আহমেদ, সৈয়দ রুম্মান. টি এম আহমেদ কায়সার, শামীম শাহান, ফারুক আহমেদ রনি, ফরীদ আহমদ রেজা, ইসহাক কাজল প্রমুখ সক্রিয় রয়েছেন লেখালেখিতে। অস্ট্রেলিয়া অভিবাসী কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ, আবুল হাসনাত মিল্টন ও আকিদুল ইসলাম লিখেছেন নিয়মিত। সিডনি প্রবাসী অজয় দাশগুপ্ত জাতীয় দৈনিকগুলোতে লিখছেন নিয়মিত ।আমি মনেপ্রাণ বিশ্বাস করি অভিবাসন কোন প্রকৃত লেখকের কর্মকা-কে বিপন্ন কিংবা বাধাগ্রস্ত করে না। অভিবাসী সাহিত্যিকদের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান 'নোবেল পুরস্কার' পাওয়ার অনেক ঘটনা আমরা জানি। বরং অভিবাসী লেখকের সুবিধা হচ্ছে এই, তিনি একাধারে জন্মভূমির ফেলে আসা স্মৃতি আর গ্রহণ করা অভিবাসী সমাজের আবহের বাস্তবতা, দুটিই পরখ করতে পারেন পাশাপাশি। ফলে তার লেখার প্রেক্ষাপট শুধু সমৃদ্ধই হয় না বরং খুলে দেয় দেখার চতুর্থ নয়ন যুগল।বাংলাদেশের বিশিষ্ট কিছু চিত্রশিল্পী এখন পরবাসী। ফ্রান্স অভিবাসী মনিরুল ইসলাম, কানাডা অভিবাসী সৈয়দ ইকবাল, যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী তাজুল ইমাম অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য নাম।প্যারিস অভিবাসী বিশিষ্ট মূকাভিনেতা পার্থপ্রতিম মজুমদার, ক্যালিফোর্নিয়া অভিবাসী মূকাভিনেতা মাশহুরুল হুদা, তাদেরও আসন উজ্জ্বল করে রেখেছেন আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।বিশিষ্ট আলোকচিত্রী আবুল ফজল, ওবায়দুল্লাহ মামুন এখন বসবাস করেন নিউইয়র্কে। তারা প্রবাসী প্রজন্মের প্রতি বপন করে যাচ্ছেন খাঁটি বাঙালি মনন ও মনীষা।ফিরে আসি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আড্ডা প্রসঙ্গে। বাংলা সাহিত্যের বর্তমান গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে বেশ উচ্চাশা ব্যক্ত করলেন তিনি। বললেন, আমাদের কথাসাহিত্য সমকালীন বিশ্বপ্রবাহকে স্পর্শ করছে খুব ঘনিষ্ঠভাবেই। আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নকে আমাদের গল্পে-উপন্যাসে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারছি বলেই আমার মনে হয়।তার বিখ্যাত উপন্যাস 'মানবজমিন' নিয়ে একটি ধারাবাহিক প্রচারিত হচ্ছে ঢাকার এই স্যাটেলাইট চ্যানেলে। এ প্রসঙ্গে বললেন, মূল চরিত্র ঠিক রেখে সামান্য যোগ-বিয়োগ করা হয়েছে। তিনি আরও জানালেন, এবার আমেরিকা থেকে ফিরে প্রবাসে বাঙালিয়ানা নিয়ে একটি উপন্যাস লেখার কাজে হাত দেবেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বললেন, সাহিত্য কোন শর্টকাটের বিষয় নয়। সিদ্ধিলাভ করতে হলে সাধনা চালিয়ে যেতেই হবে।একজন মেধাবী লেখককে প্রতিষ্ঠিত করতে বড় বড় মিডিয়া হাউসের বিশেষ ভূমিকা থাকে। এ প্রসঙ্গে 'আনন্দ পাবলিশার্স' এর নাম বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করা যায়। বাংলাদেশে এমনকি বিদেশেও এমন প্রতিষ্ঠানের আরও প্রসার লাভ প্রয়োজন। বিদেশ থেকে যেসব বাংলা কাগজ প্রকাশিত হয়; তারাও প্রবাসের মেধাবী লেখক-লেখিকাদের গ্রন্থ প্রকাশে এগিয়ে আসতে পারেন। হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন বিত্তবান সাহিত্যানুরাগীরাও।বিদেশে নতুন প্রজন্মের অনেক বাঙালি ছেলেমেয়ে আছে যারা ইংরেজিতে নিয়মিত লিখছে। তাদের লেখায়ও উঠে আসছে সেই বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশকে ছেড়ে এসেছেন, তাদের পিতামাতা। এসব মেধাবী তরুণ-তরুণীর লেখা গ্রন্থাবলিরও প্রকাশনার সুযোগ থাকা উচিত। কারণ এদের শাণিত চেতনায় বাংলা ভাষা সংস্কৃতির বীজ পুঁতে দেওয়ার জন্যই তো আমাদের দীর্ঘ এই পরবাস। নিউইয়র্ক , ২ আগস্ট ২০১০ -----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ৬ আগস্ট ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি - ১ . এবিসি সম্মেলনে আসমা আব্বাসী , শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়,ও মোস্তফা জামান আব্বাসী .২ . এবিসি সম্মেলনের বইস্টলে বাংলাদেশের ইংরেজী ভাষার বই কিনছেন একজন বিদেশিনী । | false |