title
stringlengths
10
148
text
stringlengths
14
34.6k
summary
stringlengths
1
7.08k
মুন্সীগঞ্জে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জে জাতীয় পার্টি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা ও কেক কাটার আয়োজন করে। জেলা জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আব্দুল বাতেন। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান বাবুলের সভাপতিত্বে ও জেলা যুব সংহতির সভাপতি মো. মোনায়েম হোসেন ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এএফএম আরিফুজ্জামান দিদার, জাতীয় মহিলা পার্টির মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সভানেত্রী কাকলী আক্তার কাকন, মিরকাদিম পৌর জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন রাহাত, টঙ্গীবাড়ী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল হাকিম খান, গজারিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টি সভাপতি মো. হান্নান খান, সিরাজদিখান জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম, লৌহজং জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মহসিন হালদার, গজারিয়া জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম ফরাজী প্রমুখ। এর আগে জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে আব্দুল বাতেনের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে কাছারি চত্বর ঘুরে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে কার্যালয়ে এসে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন নেতাকর্মীরা।
জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জে জাতীয় পার্টি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা ও কেক কাটার আয়োজন করে। জেলা জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আব্দুল বাতেন।
রাজবাড়ীতে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
রাজবাড়ীতে জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে জেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে একটি র্যা লি বের করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-  জেলা জাতীয় পাটির সভাপতি খন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক মোকছেদুর রহমান খান মমিন, সহ-সভাপতি খোন্দকার গোলাম কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাছ আলী বাবু, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল মাহমুদ, জেলা যুব সংহতির সভাপতি আসাদুল হক মিলন, সদর উপজেলার সভাপতি বাবু রতন সরকার, সাধারণ সম্পাদক সার্জেন্ট আব্দুল মান্নান, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি মো. সোলায়মান, রাজবাড়ী পৌরসভার সভাপতি আসাদুজ্জামান চাঁদ, মোটর শ্রমিক পাটির সভাপতি হারুনুর রশীদ, গোয়ালন্দ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হামিদুল হক বাবলু, সাধারণ সম্পাদক মো. লিয়াকত আলী, পাংশা উপজেলার সভাপতি ফিরুজুল মুজাহিদ, সহ-সভাপতি মো. লোকমান হোসেন, বালিয়াকন্দি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন প্রমুখ। জেলা জাতীয় পাটির সভাপতি খন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু বলেন, আজকে ব্যাংকে টাকা নেই, জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। এরকম দ্রব্যমূল্য সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় ছিল না। আজকে জনগণ উপলব্ধি করতে পারছে যে, এরশাদের আমলটিই ভালো ছিল। তাই আমি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলতে চাই আপনারা গ্রামে গিয়ে পল্লীবন্ধু এরশাদের আমলের কথা তুলে ধরে দলকে শক্তিশালী করুন।
রাজবাড়ীতে জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে জেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে একটি র্যা লি বের করা হয়।
ইজিবাইক থেকে ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ
মাদারীপুরে ইজিবাইকের গতিরোধ করে ৯ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বখাটেদের বিরুদ্ধে। গুরুতর অবস্থায় ১৩ বছরের মেয়েটিকে ভর্তি করা হয় জেলা সদর হাসপাতালে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এরই মধ্যে অভিযুক্তদের ধরতে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের প্রথম দিন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করার কথা থাকলেও নির্মম পরিহাসে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে ১৩ বছরের মেয়েটি। স্বজনদের অভিযোগ, মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রদান করা হয়। ১৩ বছরের মেয়েটি পরীক্ষায় ওই বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হলে শনিবার বিকালে মিষ্টি নিয়ে ইজিবাইকযোগে নিজবাড়ি থেকে শাখারপাড় নানার বাড়িতে যাচ্ছিল। মাঝপথে অপর একটি ইজিবাইকে এসে রাব্বি ও হাসান নামে দুই বখাটে মেয়েটির ইজিবাইক গতিরোধ করে। পরে জোরপূর্বক ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের কবিরাজপুরের একটি নির্জন স্থানে। এরপর রাব্বি ও হাসান পালাক্রমে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ নির্যাতিতার। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পালিয়ে যায় বখাটেরা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একজন ভ্যানচালকের সহযোগিতায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্বজনরা মেয়েটিকে ভর্তি করেন জেলা সদর হাসপাতালে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এদিকে ঘটনার পর পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত রাব্বি ও হাসান। নির্যাতিতার মা বলেন, আমার স্বামী ঘটনা শোনার পর হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সঙ্গে দুটি ঘটনা মেনে নিতে পারছি না। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। প্রতিবেশীরা বলেন, অভিযুক্তদের এমন বিচার চাই, যাতে ভবিষ্যতে এমন জঘন্য কাজ অন্য কেউ করতে সাহস না পায়। মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. শাওলীন আফরোজা জানান, মেয়েটির অবস্থা গুরুতর। তার শরীরে প্রচুর রক্তপাত হয়। এখনো চিকিৎসা চলছে। মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আলাউল হাসান জানান, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল দুই স্থানেই পুলিশ গিয়েছিল। প্রথমে মেয়েটির চিকিৎসা দরকার। শিক্ষার্থীর পরিবার অভিযোগ দিলে মামলা রেকর্ড করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদারীপুরে ইজিবাইকের গতিরোধ করে ৯ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বখাটেদের বিরুদ্ধে। গুরুতর অবস্থায় ১৩ বছরের মেয়েটিকে ভর্তি করা হয় জেলা সদর হাসপাতালে।
বেতাগী প্রেস ক্লাবের নেতৃত্বে স্বপন-ইরান
বরগুনার বেতাগী প্রেস ক্লাবের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার রাত ৮টায় গ্রামীণ ব্যাংক সড়কের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়।  সভায় সর্বসম্মতিক্রমে কালের কণ্ঠের উপজেলা প্রতিনিধি স্বপন কুমার ঢালীকে সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের বেতাগী উপজেলা প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম ইরানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। প্রেস ক্লাবের বিভিন্ন পদে অন্য সদস্যরা হলেন- দৈনিক নয়া দিগন্ত প্রতিনিধি (সহ-সভাপতি) মো. কামাল হোসেন খান, (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) হিসেবে প্রতিদিনের স্বদেশ প্রতিনিধি নিজাম উদ্দিন স্বাধীন ও যুগান্তর (দক্ষিণ প্রতিনিধি) সৈয়দ নূর-ই আলম শোভন। নাগরিক সংবাদের প্রতিনিধি সাদ্দাম হোসেন (কোষাধ্যক্ষ), দৈনিক মানবজমিন প্রতিনিধি হোসেন আলী সিপাহী (দপ্তর সম্পাদক), নবদিক নিউজের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলামকে (প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক) এবং দৈনিক সাগরকূল প্রতিনিধি লিপিকি মণ্ডল, আমার বরিশালের প্রতিনিধি আব্দুর রহিম ও দৈনিক আমাদের সময়ের প্রতিনিধি মো. সজল মাহমুদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বরগুনার বেতাগী প্রেস ক্লাবের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার রাত ৮টায় গ্রামীণ ব্যাংক সড়কের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়।
লালমোহনে সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলে লাখ টাকা দিলেন এমপি শাওন
ভোলার লালমোহন প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের জন্য সাংবাদিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় কার্যনির্বাহী সদস্য ও ভোলা-৩ আসনের এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের উদ্যোগে এ তহবিল গঠন করা হয়। প্রথম দিনেই সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলে এমপি শাওনের ১ লাখ টাকাসহ মোট ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জমা হয়। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সমস্যা ও দুর্ঘটনায় এ তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়াও কয়েকটি ক্যাটাগরিতে প্রতি বছর লালমোহনের বর্ষসেরা সাংবাদিকদের মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় লালমোহন প্রেস ক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম জনির সঞ্চালনায় প্রেস ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভোলার লালমোহন প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের জন্য সাংবাদিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় কার্যনির্বাহী সদস্য ও ভোলা-৩ আসনের এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের উদ্যোগে এ তহবিল গঠন করা হয়।
বড়দের আদলে ছোটদের জমজমাট নির্বাচন
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অংশগ্রহণে জমজমাট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ছোটদের মধ্যে গণতন্ত্রচর্চা ও নেতৃত্ব বাছাইয়ের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন প্রণীত সব বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়।  এতে চেয়ারম্যান পদে শামীম মণ্ডল এবং সেক্রেটারি পদে বর্ষা আক্তার নির্বাচিত হয়। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে শ্রাবণী আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নিলীমা আক্তার, ক্যাশিয়ার পদে কথামনি, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে সুমি আক্তার সাদিয়া এবং কার্যকরী সদস্য পদে সুস্মিতা আক্তার, পূর্ণিমা আক্তার ও সিনহা নির্বাচিত হয়। দেশের সর্ববৃহৎ দৌলতদিয়া যৌনপল্লী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে গঠিত 'চাইল্ড ক্লাব' তাদের নিজস্ব কার্যালয়ে শনিবার এ নির্বাচনের আয়োজন করে। নির্বাচনে ৩৫৫ জন ছেলে ও ৪২০ মেয়েসহ মোট ৭৫৫ জন শিশু গোপন ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. রহমান মণ্ডল। রিটার্নিং অফিসার ছিলেন দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ সহিদুল ইসলাম। প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য চম্পা আক্তার ও প্রভাষক সালেহা খানম। যৌনপল্লীর নারী ও শিশুদের জন্য কাজ করা সংগঠন মুক্তি মহিলা সমিতি (এমএমএস) এবং মুসলিম চ্যারিটি ইউকে চাইল্ড ক্লাবের কার্যক্রমে সহায়তা করে।  রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার নির্বাচন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, এ উদ্যোগ এখানকার শিশুদের ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক চর্চা, সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অংশগ্রহণে জমজমাট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।ছোটদের মধ্যে গণতন্ত্রচর্চা ও নেতৃত্ব বাছাইয়ের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন প্রণীত সব বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়।
হাতিয়ায় নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ
যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনায় নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় শতাধিক অসহায় শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড আব্দুস শহিদ জামে মসজিদ মাঠে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এ সময় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উদয়ন সংগঠনের সভাপতি হাফেজ ইসমাইল হোসাইন তাফসির। সভাপতি ইসমাইল হোসেন তাফসির বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্বপ্ন দেখতেন। তার পরিশ্রমে যমুনা গ্রুপ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।  এরপর  তিনি যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যানের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাতের মধ্যদিয়ে অসহায় শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ শুরু করেন। এ সময় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুহাদ্দিস মাওলানা আবুল কাসেম। আরও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম, প্রধান শিক্ষক নুরজাহান হেনা ও মাওলানা ইব্রাহিম প্রমুখ।
যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনায় নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় শতাধিক অসহায় শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
ট্রাকে পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীসহ ৩ জনের
যশোর-চৌগাছা সড়কে ট্রাক ও ভ্যানের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে যশোর-চৌগাছা সড়কে চুড়ামনকাঠি রেলক্রসিংয়ের পাশে ইটভাটার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয়েছেন দুজন। নিহতরা হলেন- যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা ইসলাম সুমি ও সদর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের জোহরা বেগম। আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনায় ভ্যানচালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও দুইজন। ঘাতক ট্রাকটি আটক করেছে পুলিশ। বিস্তারিত আসছে...
যশোর-চৌগাছা সড়কে ট্রাক ও ভ্যানের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে যশোর-চৌগাছা সড়কে চুড়ামনকাঠি রেলক্রসিংয়ের পাশে ইটভাটার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয়েছেন দুজন।
মিরসরাইয়ে আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১৫
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আয়োজনকে কেন্দ্র করে রোববার ভোরে উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারে মুক্তিযোদ্ধা হোটেলের সামনে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।  এ সময় গুলিবিদ্ধসহ দুপক্ষের অন্তত ১৫ আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা সবাই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী। সংঘর্ষে আহত নেতাকর্মীরা হলেন—জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শাহেদ বিন কামাল, সাধারণ সম্পাদক সেফায়েত হোসেন, ছাত্রলীগের কর্মী আবদুর রহমান (১৮), সাইফুদ্দিন রিফাত (১৭), আমজাদ হোসেন (২১), রাহুল বড়ুয়া (২৪), মো. তারেক হোসেন (২৬), মিরাজ আকবর (২০), সরোয়ার হোসেন (২২), কাউসার আহমেদ (৩০) ও যুবলীগের কর্মী রিয়াজ উদ্দিন (৩৬)। তারা সবাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২২ ডিসেম্বর থেকে মিরসরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ১০ দিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা শুরু হয়। আজ মেলার শেষ দিন।  মেলার আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন রেজাউল করিম। তিনি জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। মেলা শেষ হওয়ার পর ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে রেজাউল করিমের অনুসারীদের সঙ্গে জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাইনুদ্দিন টিটুর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়।  এ সময় ছররা গুলিতে ৭ জনসহ ১৫ জন আহত হন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ সাতজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রেজাউল করিম বলেন, বিজয় মেলাকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি করতে না পারায় মাইনুদ্দিন টিটুর অনুসারীরা মেলার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন। তাদের গুলিতে দলীয় নেতা-কর্মীরা আহত হন। আহত নেতা-কর্মীদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।  অভিযোগের বিষয়ে মাইনুদ্দিন টিটু বলেন, শনিবার ভোররাতে জোরারগঞ্জ বাজারের মুক্তিযোদ্ধা হোটেলের সামনে চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের অনুসারীরা আমার কিছু ছেলেদের ওপর প্রথমে হামলা করেন। পরে প্রতিরোধ করতে গেলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে চেয়ারম্যানের অনুসারীদের হাতে মারধরে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী পাঁচ ছেলে আহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই যুক্ত নই। মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আদিত ইসমাইল বলেন, জোরারগঞ্জে মেলা এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় ১০-১৫ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে গুলিবিদ্ধ সাতজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আয়োজনকে কেন্দ্র করে রোববার ভোরে উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারে মুক্তিযোদ্ধা হোটেলের সামনে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
নববর্ষের পার্টিতে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত
কুমিল্লায় থার্টিফার্স্ট নাইটের পার্টিতে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে হৃদয় (২০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।  শনিবার রাত দেড়টার দিকে নগরীর দক্ষিণ চর্থা বড়পুকুরপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।  নিহত হৃদয় দক্ষিণ চর্থার চা দোকানদার বাচ্চু মিয়ার ছেলে। রোববার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আহমেদ সনজুর মোরশেদ।  নিহত হৃদয়ের মামা মো. জনি বলেন, ইংরেজি নতুন বছরের আগের রাত থার্টিফার্স্ট নাইটে চর্থা এলাকার কিছু যুবক পিকনিকের আয়োজন করে। রাত দেড়টার দিকে একদল কিশোর গ্যাং হৃদয়কে পার্টি থেকে ধরে নিয়ে যায়।  নির্জন স্থানে নিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ছুরিকাঘাত করে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দিয়ে পালিয়ে যায়। তার চিৎকারে স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  ওসি আহমেদ সনজুর মোরশেদ বলেন, পূর্ব শত্রুতা থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
কুমিল্লায় থার্টিফার্স্ট নাইটের পার্টিতে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে হৃদয় (২০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
বর্জ্য সরিয়ে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ
ব্যস্ত জীবনে আনন্দ খুঁজে পেতে প্রতি বছর হাজারও মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এলাকায় ছুটে যান। বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে হাজার হাজার মানুষের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠে বাংলাদেশের অন্যতম দুটি পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন।  স্বচ্ছ নীল জল আর সাগরের মাঝে থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটকদের আগ্রহের শীর্ষে থাকে সেন্টমার্টিন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতি বছর অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে ও অসচেতনভাবে পর্যটক এবং স্থানীয়দের ফেলে দেওয়া বর্জ্যে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য।  ভ্রমণে এসে ফেলে যাওয়া নানা রকমের ময়লা-আর্বজনাসহ প্লাস্টিক বর্জ্যে হুমকি তৈরি হয়েছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। বিশেষ করে দ্বীপের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ প্রকট আকার ধারণ করেছে। যদিও প্রাকৃতিক নৈসর্গের এ দ্বীপ সংরক্ষণের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান রয়েছে। তবে সবার সচেতনতা ছাড়া এসব উদ্যোগের কোনোটাই ফলপ্রসূ করা সম্ভব নয়।  এ কারণে পর্যটক ও স্থানীয়সহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সামুদ্রিক বর্জ্য পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে কোকাকোলার মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান।  কেওক্রাডং বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সমুদ্রসৈকতে কোস্টাল ক্লিনআপ কর্মসূচির আয়োজন করে চলেছে কোকাকোলা সিস্টেম বাংলাদেশ। সম্প্রতি দ্বীপটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সামুদ্রিক বর্জ্য পরিষ্কারের এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ বছরের এই আয়োজনে ৪৫০ জনের অধিক স্বেচ্ছাসেবক এ ক্লিনআপ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেন।  সেন্টমার্টিনের সমুদ্রসৈকত থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা এ বছর ১৮০০ কেজির অধিক সামুদ্রিক বর্জ্য পরিষ্কার করেন। এ সামুদ্রিক বর্জ্যের বেশিরভাগই ছিল খাদ্যের প্ল্যাস্টিক মোড়ক, প্ল্যাস্টিক বোতল, বোতলের প্ল্যাস্টিক ঢাকনা, প্ল্যাস্টিক ব্যাগ ইত্যাদি।  সংশ্লিষ্টদের মতে, দ্বীপে প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু পর্যটকদের ব্যবহার করা এসব প্লাস্টিকের যথাযথ ডাম্পিং করা হয় না, যা সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রতিবেশকে ব্যাপকভাবে নষ্ট করছে। একইভাবে সাগরকেন্দ্রিক নির্ভরশীলদের জীবন-জীবিকাও হুমকিতে পড়েছে। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ৬৫ প্রজাতির প্রবাল ছিল, ২০১৬ সালে যা ৪১ প্রজাতিতে নেমে এসেছে।  দ্বীপে বিভিন্ন ধরনের শৈবাল, শামুক-ঝিনুক এবং অগণিত প্রজাতির মাছ দেখা যায়। দ্বীপটি সবুজ সাগরের কচ্ছপ, জলপাই রঙের সামুদ্রিক কচ্ছপ এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রবালের জন্যও বিখ্যাত। পর্যটন মৌসুমে অনিয়ন্ত্রিত সংখ্যক পর্যটকের আগমনের কারণে সরকার দ্বীপের সৌন্দর্য ও প্রকৃতি রক্ষায় বিধিনিষেধ আরোপ করে বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর পরও দূষণের মাত্রা কমেনি। প্লাস্টিকসহ সামুদ্রিক বর্জ্যের পরিমাণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে।  সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মো. মজিবর রাহমান বলেন, সেন্টমার্টিন দেশের অন্যতম বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র। এ কারণে দ্বীপে প্রচুর বর্জ্য জমা হয়। এ সমস্যা হ্রাসের জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন, কিন্তু এর পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ। কোকাকোলা ও কেওক্রাডং বাংলাদেশের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। এ কর্মসূচির বিষয়ে কোকাকোলা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তা জি তুং বলেন, প্লাস্টিক দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং আমরাই এ সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী। এ কারণে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের নানা ধরনের উদ্যোগ আছে, তার মধ্যে এই কোস্টাল ক্লিনআপ অন্যতম। সেন্টমার্টিনকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখতে কেওক্রাডং বাংলাদেশ ও স্বেচ্ছাসেবীরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই। সামুদ্রিক দূষণরোধে কাজ করে আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংগঠন ওশান কনজারভেন্সি। সংগঠনটির হয়ে বাংলাদেশে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে কেওক্রাডং বাংলাদেশ। এ কর্মসূচির বিষয়ে ওশান কনজারভেন্সির বাংলাদেশ অঞ্চলের সমন্বয়ক মুনতাসীর মামুন বলেন, এই দ্বীপকে পরিষ্কার রাখা এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের নিজের নিজের জায়গা থেকে কাজ করে যেতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই দ্বীপকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি।
ব্যস্ত জীবনে আনন্দ খুঁজে পেতে প্রতি বছর হাজারও মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এলাকায় ছুটে যান। বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে হাজার হাজার মানুষের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠে বাংলাদেশের অন্যতম দুটি পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন।
মেহেদির রঙ না মুছতেই নববধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
হবিগঞ্জের বাহুবলে হাতের মেহেদির রঙ মোছার আগেই ঘরের তীরের সঙ্গে ওড়না পেঁচানো ইভা খাতুন (১৮) নামে এক নববধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।  শনিবার বিকালে এ ঘটনাটি ঘটে উপজেলার বৈদ্যনাথপুর গ্রামে। নিহত ইভা ওই গ্রামের মজনু মিয়ার মেয়ে।  স্থানীয়রা জানান, এক সপ্তাহ আগে পাশের মানিকা গ্রামের সোনাহর মিয়ার ছেলে শারজান মিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় ইভার। বিয়ের পর ইভা বাবার বাড়িতেই থাকত। শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ইভার ঘরের দরজা বন্ধ পেয়ে স্বজনরা দরজা ভেঙে দেখতে পায় ঘরের তীরের সঙ্গে ইভা ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলে রয়েছে। বাহুবল মডেল থানার ওসি (তদন্ত) প্রজিত কুমার দাস বলেন, খবর পেয়ে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশটি উদ্ধার করে। লাশের ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হবিগঞ্জের বাহুবলে হাতের মেহেদির রঙ মোছার আগেই ঘরের তীরের সঙ্গে ওড়না পেঁচানো ইভা খাতুন (১৮) নামে এক নববধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ট্রাকচাপায় পুলিশের এএসআই নিহত
নওগাঁর পত্মীতলায় ট্রাকচাপায় রুহুল আমিন (৩৩) নামে পুলিশের এক উপপুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় নজিপুর-সাপাহার সড়কের কুন্সিপুকুর এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রুহুল আমিন জয়পুরহাট সদর উপজেলার আটঠোকা গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে। তিনি পত্মীতলা থানায় এএসআই পদে কর্মরত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও থানাসূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় রুহুল আমিন মধুইল বাজার থেকে মোটরসাইকেলে থানায় ফিরছিলেন। নজিপুর-সাপাহার সড়কের চকআবদাল কুন্সিপুকুর এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তার মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান। এ সময় ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। পত্মীতলা থানার ওসি পলাশ চন্দ্র দেব জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নওগাঁর পত্মীতলায় ট্রাকচাপায় রুহুল আমিন (৩৩) নামে পুলিশের এক উপপুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) নিহত হয়েছেন।
'সেবার মানসিকতা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হবে'
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকায় ফুলকলি কিন্ডারগার্টেন নামে একটি স্কুলের উদ্বোধন করা হয়। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফুলকলি কিন্টারগার্ডেনের চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ আলম আকন্দের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোসা. কাকলি আক্তারের পরিচালনায় উদ্বোধক ছিলেন তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা— জামাল মোল্লা, শাহজাহান ভূঁইয়া জুলহাস ও আমিনুল হক প্রধান।   অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. বাসের প্রধান, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার কাজী মাইনুদ্দিন, বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. সানাউল্লাহ বেপারি, রমজান আলী প্রধান ও আবদুল গাফফার রাজন। অনুষ্ঠানে দোয়া মোনাজাত করেন কাসিমুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মাও. মুফতি আব্দুর রাজ্জাক, অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগারের সভাপতি মোহাম্মদ নুর আলম আকন্দ। খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন বলেন, শিক্ষা মানুষকে সমৃদ্ধ করে; কিন্তু শিক্ষার মাধ্যমে আমরা যদি শিক্ষার্থীদের ভেতরের চিন্তাশক্তিকে বের করে আনতে না পারি, তাদের মননশক্তি ও সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সহায়ক না হতে পারি তা হলে সে শিক্ষার কোনো মূল্য নেই। আমরা অনেক সময় শিক্ষাকে কঠিন করে ফেলার কারণে কোমলমতি শিশুরা এটিকে একটি শাস্তিস্বরূপ ধরে নেয়, যা কখনই কাম্য নয়। শিক্ষাকে আনন্দ উপভোগ করার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে। আগামী প্রজন্ম যাতে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে, সঠিক শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে পারে সেই শিক্ষাটা শিশুকাল  থেকেই দিতে হবে। টিকে থাকতে হলে জীবনের প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরতে হবে তা হলে সফল হওয়া সম্ভব। যে কোনো কাজের জন্য শিক্ষা এবং মেধার ও দক্ষতা সমন্বয় নৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা যায়।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকায় ফুলকলি কিন্ডারগার্টেন নামে একটি স্কুলের উদ্বোধন করা হয়।
যে কারণে একটি মোরগ ৫০ হাজার টাকায় কেনার আগ্রহ
একটি মোরগের দাম ৫০ হাজার টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও এমন মোরগের সন্ধান মিলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের গ্রিনল্যান্ড শিশুপার্কে। এর বিশেষত্ব হচ্ছে— মোরগটির ৪টি পা। আশপাশের গ্রামের মানুষ মোরগটি একনজর দেখতে পার্কে ভিড় জমাচ্ছেন। জানা গেছে, নাচোল উপজেলার পৌর এলাকার ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম মেশিনের মাধ্যমে হাঁস-মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর ব্যবসা করতেন। ১০ মাস আগে ওই গ্রামের এক ব্যক্তি শফিকুল ইসলামকে বেশ কিছু দেশি মুরগির ডিম দেন বাচ্চা ফোটানোর জন্য। সব ডিমেই বাচ্চা ফোটে। খেয়াল করে দেখেন, এর মধ্যে একটি বাচ্চার চারটি পা।  বিষয়টি ডিমের মালিক দেখতে পেয়ে সব বাচ্চা নিয়ে গেলেও ওই বাচ্চা রেখে যান। শফিকুলের বাড়িতেই বড় হতে থাকে বাচ্চাটি। একটু বড় হওয়ার পর বোঝা যায়, এটি মুরগি নয়, মোরগ। চার পায়ের এ মোরগের খবর ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গ্রামে। জানতে পেরে তিনশ টাকা দিয়ে মোরগটি কিনে নেন নাচোলের গ্রিনল্যান্ড শিশুপার্কের মালিক মুকুল মাস্টার।  এর পর থেকে সেখানেই রয়েছে মোরগটি। মোরগটির ওজন এখন প্রায় দুই কেজি। পার্কে আসা দর্শনার্থীদের মূল আকর্ষণ এখন এই চার পায়ের মোরগ। দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে আসেন শুধু মোরগটি দেখার জন্য। আবার কেউ কেউ কিনে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।  পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, মোরগটির সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৫০ হাজার টাকা।  গতকাল শনিবার সকালে নাচোলের গ্রিনল্যান্ড পার্কে গিয়ে দেখা যায়, বিনোদনের জন্য বেশ কিছু রাইড ও পশুপাখি থাকলেও অনেকেই চার পায়ের মোরগটি দেখতে ব্যস্ত। কেউ কেউ ছবি ও সেলফি তুলছে। পার্কে ঘুরতে আসা নিয়ামতপুরের বাসিন্দা শামীম ও ফাহিমা বলেন, ‘চার পায়ের মোরগটি দেখে অদ্ভুত লেগেছে। কিন্তু মোরগটির রঙ খুব সুন্দর। দেখে ভালোই লাগল। পার্কের ম্যানেজার মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, পার্কে মোরগটি নিয়ে আসার পর থেকেই দর্শনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ যেন এটি। মোরগটি দেখার জন্যই বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসছেন। শিশুরাও মোরগটি দেখে আনন্দ পাচ্ছে। এক কেজি ওজন হওয়ার পর থেকেই এটি কিনে নেওয়ার জন্য কয়েকজন ব্যক্তি যোগাযোগ করেন। ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দাম উঠেছে মোরগটির। তবে আপাতত বিক্রির কোনো ইচ্ছা নেই। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চার পায়ের মোরগ বেঁচে আছে— এটি বিরল।
একটি মোরগের দাম ৫০ হাজার টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও এমন মোরগের সন্ধান মিলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের গ্রিনল্যান্ড শিশুপার্কে। এর বিশেষত্ব হচ্ছে— মোরগটির ৪টি পা। আশপাশের গ্রামের মানুষ মোরগটি একনজর দেখতে পার্কে ভিড় জমাচ্ছেন।
ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাবিব সম্পাদক অপু
ভোলায় উৎসবমুখর পরিবেশে শনিবার প্রেসক্লাবের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতি পদে এম হাবিবুর রহমান, সম্পাদক পদে যুগান্তর প্রতিনিধি অমিতাভ অপু, সহসভাপতি পদে অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন সুলতান নির্বাচিত হয়েছেন।  এদিন শুধু সম্পাদক ও সহসভাপতি পদে নির্বাচন হয়। একক প্রার্থী হিসেবে সভাপতি এম. হাবিবুর রহমানসহ ৯টি পদে ৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।  নির্বাচনে সম্পাদক পদে অমিতাভ অপু ও ইত্তেফাক প্রতিনিধি আহাদ চৌধুরী তুহীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অপর দিকে সহসভাপতি পদে কামাল উদ্দিন সুলতান ( ইন্ডিপেডেন্ট), মো. সুলাইমান (দৈনিক আলোচিত কন্ঠ) ও সাহাদাত হোসেন শাহীন (এসএ টিভি) প্রতিদন্দ্বিতা করেন।  অন্য বিজয়ীরা হলেন, সহকারী সম্পাদক হোসাইন সাদী (বৈশাখী টিভি), অর্থ সম্পাদক এম. হেলাল উদ্দিন ( গাজি টিভি),  দপ্তর সম্পাদক মো. ছিদ্দিকুল্লাহ ( এটিএন বাংলা), ক্রীড়া সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম (৭১টিভি), সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. জসিম রানা (মোহনা টিভি), গ্রন্থাগার সম্পাদক মো. তৌয়বুর রহমান (বিটিভি), নির্বাহী সদস্য নাসির লিটন (সময়টিভি), নির্বাহী সদস্য জুন্নু রায়হান ( বাংলাদেশ প্রতিদিন )।  অমিতাভ অপু তৃতীয়বারের মত সর্বাধিক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার দোস্তমাহামুদ (চেয়ারম্যান), সংস্থার ডেপুটি কমান্ডার মো. সফিকুল ইসলাম (সদস্য), জজশিপের জিপি অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন নুরন্নবী (সদস্য)।
ভোলায় উৎসবমুখর পরিবেশে শনিবার প্রেসক্লাবের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতি পদে এম হাবিবুর রহমান, সম্পাদক পদে যুগান্তর প্রতিনিধি অমিতাভ অপু, সহসভাপতি পদে অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন সুলতান নির্বাচিত হয়েছেন।
ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় মারধর, অটো চালকের মৃত্যু
মাগুরায় সদর উপজেলার পাকা কাঞ্চনপুর গ্রামে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় জনাব আলি নামে এক অটো চালককে দুই যুবক পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত জনাব আলি (৪৭) একই উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের গোলাম আকবর বিশ্বাসের ছেলে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। নিহত আলির পরিবার এবং এলাকাবাসী জানায়, পাকা কাঞ্চনপুর গ্রামের সরোয়ার হোসেনের ছেলে মিজানুর বেশ কিছুদিন ধরে পাশের গ্রাম কাঞ্চনপুরের একটি মেয়ের বাড়িতে গিয়ে নানাভাবে বিরক্ত করে আসছিলো। বিষয়টি জানাজানি হলে আলিসহ ওই গ্রামের লোকজন ৯ ডিসেম্বর মিজানুরকে আটকে মারধর দেয়।  এ নিয়ে ওইদিন উভয় গ্রামের মাতবরদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়া হয়। কিন্তু শনিবার বিকালে জনাব আলি নিজের অটো রিক্সায় যাত্রী নিয়ে পাকা কাঞ্চনপুর এলাকায় যাওয়ার পথে হামলার শিকার হয়। সে গ্রামের মসজিদের সামনে পৌঁছলে মিজানুর এবং মিঠুন নামে অপর এক যুবক গতিরোধ করে জনাব আলিকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটুনী দেয়।  এতে গুরুতর আহত জনাব আলিকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। উভয় পক্ষের শালিস বৈঠকে উপস্থিত দবির হোসেনসহ নিহতের পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তবে সামাজিক দলাদলিতে বিভক্ত অপর একটি পক্ষ এই হত্যাকাণ্ডটি গ্রামের ফুটবল খেলার বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন।       মাগুরা সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তা গৌতম কুমার ঠাকুর বলেন, হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের আটকের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
মাগুরায় সদর উপজেলার পাকা কাঞ্চনপুর গ্রামে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় জনাব আলি নামে এক অটো চালককে দুই যুবক পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নেতৃত্বে সালাহউদ্দিন-দেবদুলাল
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে দৈনিক ইত্তেফাকের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সালাহউদ্দিন মো. রেজা সভাপতি এবং দৈনিক পূর্বদেশের সহকারি সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।  শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়। গণনা শেষে রাতে নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ফলাফল ঘোষণা করেন। নির্বাচনে ১৫টি পদের বিপরীতে ৩১জন প্রার্থী অংশ নেন। অন্যান্য পদে বিজয়ীরা হলেন, সিনিয়র সহসভাপতি পদে চ্যানেল আই’র ব্যুরো প্রধান ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি পদে এটিএন বাংলার মনজুর কাদের মনজু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দৈনিক যুগান্তরের ব্যুরো প্রধান শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, অর্থসম্পাদক পদে রাশেদ মাহমুদ, সাংস্কুতিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন হায়দার(দৈনিক সমকাল), ক্রীড়া সম্পাদক এম সরওয়ারুল আলম সোহেল (বাংলা নিউজ),গ্রন্থাগার সম্পাদক কুতুব উদ্দিন (সমকাল),সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক আল রাহমান (বাংলা নিউজ),প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খোরশেদুল আলম শামীম।  এছাড়া কার্যকরি সদস্যের ৪ টি পদে নির্বাচিতরা হলেন- জসিম চৌধুরী সবুজ, মোয়াজ্জেমুল হক, মো. আইয়ুব আলী ও মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে দৈনিক ইত্তেফাকের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সালাহউদ্দিন মো. রেজা সভাপতি এবং দৈনিক পূর্বদেশের সহকারি সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজকে প্রকাশ্যে চুমু খেয়ে সমালোচনার মুখে শুভশ্রী
নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে রোম্যান্টিক ছবি পোস্ট করলেন টালিউড অভিনেত্রী শুভশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়।  ছবিতে দেখা যাচ্ছে- রাজ চক্রবর্তীর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুমু খাচ্ছেন শুভশ্রী। এমন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন এ অভিনেত্রী।  সেই ছবির কমেন্টে অনুরাগীরা তাদের ভালোবাসাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ব্যবহার করেছেন ‘নির্লজ্জ’, ‘জঘন্য’ শব্দ ব্যবহার করেছেন।  একজন কমেন্টে লিখেছেন- ‘এটাও কি দিদির অনুপ্রেরণায়? আরেকজন লিখেন- ‘চুমু খাওয়ার ছবি দিয়ে কেন যে এরা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানায় বুঝতে পারি না। ২০১৮ সালে বিয়ে হয় রাজ-শুভশ্রী। এর পর ২০২০ সালে দ্বিতীয় বিবাহবার্ষীকিতে দেন বাবা-মা হতে চলার খবর। সেপ্টেম্বরে তাদের কোল আলো করে আসে ইউভান। মা-বাবার মতোই বিখ্যাত এই খুদেও। চলতি বছরে, ‘ধর্মযুদ্ধ’, ‘বিসমিল্লাহ’ছবিতে দেখা গিয়েছে শুভশ্রীকে।  তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়কের দায়িত্বে রয়েছেন রাজ। শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে তাই কটাক্ষের মুখে পড়তে হয় শুভশ্রীকে।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে রোম্যান্টিক ছবি পোস্ট করলেন টালিউড অভিনেত্রী শুভশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজের বিরুদ্ধে গায়ে হাত তোলার অভিযোগ পরীমনির
বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় ভেঙে যাচ্ছে ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি ও উঠতি অভিনেতা শরীফুল ইসলাম রাজের সংসার।  শুক্রবার মধ্যরাতে ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে পরী জানান, রাজকে তার জীবন থেকে আজীবনের জন্য ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাপি থার্টি ফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে। জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরি আর কিছুই নাই।’ জানা গেছে, এ পোস্ট দেওয়ার আগে তিনি সন্তান নিয়ে রাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তার বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। যদিও এ বাসাটি পরীই ভাড়া নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠরা। সে হিসাবে বলা যায়, নিজের বাসা থেকে নিজেই বেরিয়ে এসেছেন তিনি।  রোববার বিকালে ফেসবুকে পরীমনি একটি পোস্ট দেন।  এ সময় তিনি রাজের বিরুদ্ধে গায়ে হাত তোলারও অভিযোগ করেন।  ফেসবুকে পরীমনি লিখেছেন, ‘একটা সম্পর্কে পুরোপুরি সিরিয়াস বা খুব করে না চাইলে একটা মেয়ে বাচ্চা নেওয়ার মতো এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কখনোই। আমার জীবনের সবটুকু চেষ্টা যখন এই সম্পর্কটাকে ঠিকঠাক টিকিয়ে রাখা, তখনই আমাকে পেয়ে বসা হলো। যেন শতকোটিবার যা ইচ্ছে তাই করলেও সব শেষে ওই যে আমি মানিয়ে নিই, এটা রীতিমতো দারুণ এক সাংসারিক সূত্র হয়ে দাঁড়াল। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের এই সম্পর্ক এত দিন আমার অ্যাফোর্টে টিকে ছিল শুধু। কিন্তু বারবার গায়ে হাত তোলা পর্যায়ে পৌছালে কোনো সম্পর্কই আর সম্পর্ক থাকে না। স্রেফ বিষ্ঠা হয়ে যায়। পরীমনি বললেন, ‘রাজ্যের (পরীমনি ও রাজের সন্তান) দিকে তাকিয়ে বারবার সব ভুলে যাই। সব ঠিক করার জন্য পড়ে থাকি। কিন্তু তাতে কি আসলেই আমার বাচ্চা ভালো থাকবে! না। একটা অসুস্থ সম্পর্ক এত কাছ থেকে দেখে দেখে ও (রাজ্য) বড় হতে পারে না। তাই আমি, রাজ্য এবং রাজের মঙ্গলের জন্যই আলাদা হয়ে গেলাম।’ তিনি আরও বলেন, রাজ এখন শুধু আমার প্রাক্তন’ই না,আমার ছেলের বাবাও। তাই রাজ্যের বাবার সন্মান রাখতে পাবলিকলি আর বাকি কিছু বলছি না আমি। তবে আমার উপর তার আর তার পরিবারের কোন অসুস্থ আচরণ বা হার্মফুল কিছু করার চেষ্টা করলে আমি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।
বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় ভেঙে যাচ্ছে ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি ও উঠতি অভিনেতা শরীফুল ইসলাম রাজের সংসার।
পরীমনির অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন রাজ, তবে..
বিয়ের এক বছর না যেতেই বিচ্ছেদের সুর পরীমনির কণ্ঠে। রাজের সঙ্গে আর সংসার করা হবে না—সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ ঢালিউড নায়িকা।  দুজনের মধ্যে এখনো আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ না হলেও শিগগিরই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন পরীমনি। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ সম্পর্কেও ইঙ্গিত দিয়েছেন নায়িকা। শুক্রবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ফেসবুকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পরীমনি লেখেন— ‘হ্যাপি থার্টিফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে।’ আরেক অংশে এ নায়িকা লিখেছেন— ‘জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরি আর কিছুই নাই।’ পরীমনি এ স্ট্যাটাস মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। লাইক কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়। অনেকেই তাদের সম্ভাব্য বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। স্ট্যাটাসের বিষয়ে পরীর সঙ্গে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে রাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা স্বীকার করেন পরীমনি।  পরীমনি বলেন, ‘এখনো বিচ্ছেদ হয়নি। তবে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজের বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছি। আজ থেকে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। শিগগির বিচ্ছেদের চিঠি পাঠিয়ে দেব।’ রোববার সকালে বিছানায় রক্তের দাগওয়ালা দুটি ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে ভক্তদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। একই সঙ্গে তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান ফেসবুক স্ট্যাটাসে। পরীমনির এসব কথার বিপরীতে চিত্রনায়ক শরিফুল রাজের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরীর বক্তব্যের বিষয়ে রাজের ফোন নম্বরে বারবার কল করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে রোববার দুপুরে একটি গণমাধ্যমে কয়েক সেকেন্ড কথা বলেন রাজ।  এ ইস্যুতে কিছুই বলতে চান না জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আসলে এসব ইস্যুতে কিছুই বলতে চাই না। কী হচ্ছে, এসবের কিছুই আমি জানিও না। জানতেও চাই না। আমি বাসায় আছি। সারা রাত ঘুমাইনি। এখন ঘুমাচ্ছি, ঘুমানোর চেষ্টা করছি। এদিকে রোববার বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ছেলে রাজ্যের সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করেছেন চিত্রনায়ক শরিফুল রাজ। দুজনের গায়েই সাদা পোশাক। রাজ্য তাকিয়ে আছে সোজা ক্যামেরার দিকে। কিন্তু ছবিতে বাপ-বেটার সঙ্গে দেখা যায়নি- রাজ্যর মা চিত্রনায়িকা পরীমনিকে। এমনকি পোস্টের কোথাও পরীকে নিয়ে কোনো কিছু লেখা নেই।
বিয়ের এক বছর না যেতেই বিচ্ছেদের সুর পরীমনির কণ্ঠে। রাজের সঙ্গে আর সংসার করা হবে না—সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ ঢালিউড নায়িকা।
দুবাইয়ে আনুশকা-কোহলির অন্যরকম বর্ষবরণ
নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ২০২৩ আগমনের আগেই দুবাইয়ে পৌঁছেছেন বলিউড তারকা আনুশকা শর্মা এবং ভারতীয় ক্রিকেট তারকা বিরাট কোহলি জুটি। সাদা আর কালো পোশাকের মিশেলে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছেন তারা। নিজের ইনস্টাগ্রামে এই ছবি পোস্ট করেছেন বিরাট কোহলি। এতে দেখা যায়, কোহলির পরনে ছিল সাদা আর আনুশকার পরনে ছিল কালো পোশাক। খবর ইন্টারটেইনমেন্ট টাইমসের।   এর আগে ২০২২ সালের শেষ দিন বিকালে ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেছেন বিরাট। তাতে রক্তিম আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে তাকে। কাঁধ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আনুশকা। বিরাটের বুকে ঘেঁষে থাকা যে ছোট্ট মাথাটি উঁকি দিচ্ছে, দেখে বোঝা যায় কোলে রয়েছে মেয়ে ভামিকা। ২০২২ সালকে বিদায় জানানোর তোড়জোড় চলছে যখন, তাদের এই 'পিকচার পারফেক্ট' মুহূর্ত ফ্রেমে ধরে রাখার মতোই। ছবিটি পোস্ট করে বিরাট লেখেন- '২০২২-এর শেষ সূর্যোদয়'। আনুশকা যদিও আলাদা করে ওই ছবি পোস্ট করেননি, তবে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে সুর্যোদয়ের কিছু মুহূর্ত তুলে ধরেছেন তিনিও। একই সঙ্গে নিভৃত যাপনের বেশ কিছু ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি, যা শুক্রবার রাতের বলে জানিয়েছেন তিনি। তাতে যদিও ভামিকাকে দেখা যায়নি। বরং স্বামী-স্ত্রীর সাজগোজে তারকাসুলভ জৌলুসই চোখে পড়েছে। তাতে আনুশকা লেখেন- 'গতকাল রাতের শহরে আমরা'।
নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ২০২৩ আগমনের আগেই দুবাইয়ে পৌঁছেছেন বলিউড তারকা আনুশকা শর্মা এবং ভারতীয় ক্রিকেট তারকা বিরাট কোহলি জুটি। সাদা আর কালো পোশাকের মিশেলে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছেন তারা।
মিমের সঙ্গে রাজ সিনেমা করুক চান না পরীমনি
বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় ভেঙে যাচ্ছে ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি ও উঠতি অভিনেতা শরীফুল ইসলাম রাজের সংসার।  শুক্রবার মধ্যরাতে ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে পরী জানান, রাজকে তার জীবন থেকে আজীবনের জন্য ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাপি থার্টি ফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে। জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরি আর কিছুই নাই।’ জানা গেছে, এ পোস্ট দেওয়ার আগে তিনি সন্তান নিয়ে রাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তার বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। যদিও এ বাসাটি পরীই ভাড়া নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠরা। সে হিসাবে বলা যায়, নিজের বাসা থেকে নিজেই বেরিয়ে এসেছেন তিনি।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। গত কুরবানির ঈদের পর থেকেই রাজ-পরীর সংসারে অশান্তির আগুন জ্বলছিল। রায়হান রাফি পরিচালিত ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পরান’ নামে একটি সিনেমা নিয়েই এ দ্বন্দ্ব।  এ সিনেমায় বিদ্যা সিনহা মিম ও শরীফুল রাজ অভিনয় করেছেন। তখন থেকেই নাকি এ দুজনের মধ্যে গোপন কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এমনটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছেন পরীমনি। একই পরিচালকের ‘দামাল’ নামে আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম ও শরীফুল রাজ। একই সিনেমায় সঙ্গে রয়েছেন সিয়াম।  এ সিনেমার প্রচারণায় ‘রাজ মিমের হাত ধরে আছেন’ এমন একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। মূলত তখন থেকেই ধারণা পাওয়া গেছে রাজের সঙ্গে মিমকে নিয়ে সন্দেহ করছেন পরী। এর কিছুদিন পর রায়হান রাফিকে উদ্দেশ করে পরীমনি এক পোস্টে লিখেন, ‘সিনেমার সাথে সাথে দালালিটাও ভালো করেন দেখি!’  একই পোস্টে বিদ্যা সিনহা মিমকে ট্যাগ করে পরী লিখেন, ‘নিজের জামাইকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিত ছিল।’ রাজকে উদ্দেশ করে লিখেন, ‘এটা এতদূর গড়াতে দেওয়া উচিত হয়নি তোমার!’ ‘এটা’ বলতে মূলত পরীমনি মিম ও রাজের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে বলেছেন। জানা গেছে, পরী রাজের এ সংসার ভাঙার জন্য মূলত দুজনের প্রতি দুজনার সন্দেহই দায়ী। পরী চান না রায়হান রাফি কিংবা মিমের সঙ্গে রাজ আর কোনো কাজ করুক।  এদিকে রায়হান রাফির ঘনিষ্ঠ বন্ধু চিত্রনায়িকা তমা মির্জার সঙ্গে অঘোষিত বিবাদ ছিল পরীমনির। সেটাও রাফিকে কেন্দ্র করেই। এসব নিয়ে রাজ খুবই বিরক্ত ছিল পরীর ওপর। দিনে দিনে রাজের বিরক্তি ও পরীর সন্দেহপ্রবণতা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, সেটা শেষ পর্যন্ত সংসার ভাঙাতেই রূপ নিয়েছে। এদিকে সংসার ভাঙার বিষয়ে পরীমনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখনো ডিভোর্স দেইনি। তবে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজের বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছি। আজ (গতকাল) থেকে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। শিগগিরই ডিভোর্সের চিঠি পাঠিয়ে দেব।’  ডিভোর্স দেওয়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই সমস্যা হচ্ছিল। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। তার (রাজ) আচার-আচরণ একসঙ্গে থাকার মতো নয়। তাই বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে আলাদা হয়ে গেলাম।’ এদিকে পরীর সঙ্গে আলাদা হয়ে যাওয়ার বিষয়ে শরীফুল রাজ এখনো মুখ খোলেননি। তবে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আর্থিক অবস্থাটা যদি আরও ভালো থাকত, তাহলে স্ত্রী ও সন্তানকে আরও বেশি সময় দিতে পারতাম।’
বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় ভেঙে যাচ্ছে ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি ও উঠতি অভিনেতা শরীফুল ইসলাম রাজের সংসার।
যে কারণে রাজ-পরীমনির দূরত্ব, জানালেন শশুর
বিয়ের এক বছর না যেতেই বিচ্ছেদের সুর পরীমনির কণ্ঠে। রাজের সঙ্গে আর সংসার করা হবে না—সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ ঢালিউড নায়িকা।  দুজনের মধ্যে এখনো আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ না হলেও শিগগিরই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন পরীমনি। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ সম্পর্কেও ইঙ্গিত দিয়েছেন নায়িকা। তাদের মধ্যে এ সমস্যা নিয়ে শরীফুল রাজের বাবা মুসলিম মিয়া বলেন, ‘শুটিং শেষ করে রাজের বাসায় ফিরতে কিছুটা দেরি হয়, যা নিয়ে পরী রাগ করে। এ বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে সামান্য ঝগড়া হয়। যার ফলে পরী এমন স্ট্যাটাস দিয়ে থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘পরী এখনো কিছুটা অভিমান করে থাকলেও তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। রাজ-পরী ও আমরা সবাই একসঙ্গে আছি। আশা করি ওদের দুজনের সম্পর্ক সুন্দর থাকবে।’ এর আগে শুক্রবার রাতে ফেসবুকে এক পোস্টে শরিফুল রাজের সঙ্গে সংসার ভাঙনের ইঙ্গিত দেন নায়িকা পরীমণি। এদিন রাত ১২টা ৪০ মিনিটে পরী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন— ‘হ্যাপি থার্টিফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে।’ ওই পোস্টের পর পরী জানান, তিনি রাজের বাসা থেকে পুত্র রাজ্যকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। রাজকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে দেবেন বলেও জানান নায়িকা।  উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি সন্তানসম্ভবা হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর পরীমনি জানান, রাজকে তিনি গোপনে ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর বিয়ে করেছেন। এর পর চলতি বছর ২১ জানুয়ারি হয় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এবং ২২ জানুয়ারি দুই পরিবারের সদস্যের উপস্থিতিতে ১০১ টাকার দেনমোহরে ঘরোয়া আয়োজনে তাদের আবার বিয়ে হয়। ১০ আগস্ট তাদের সংসারে আসে এক পুত্রসন্তান। সন্তানের নাম রেখেছেন শাহীম মুহাম্মদ রাজ্য। পরীর এটি তৃতীয় বিয়ে।
বিয়ের এক বছর না যেতেই বিচ্ছেদের সুর পরীমনির কণ্ঠে। রাজের সঙ্গে আর সংসার করা হবে না—সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ ঢালিউড নায়িকা।
কারাগারেই মেরে ফেলা হতে পারে তুনিশার প্রেমিক সেজানকে!
অভিনেত্রী তুনিশা শর্মার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় এখনো দোষী সাব্যস্ত হননি সেজান মোহাম্মদ খান। মৃত্যু রহস্যের তদন্তে অভিযুক্ত সেজান খানকে আদালতের নির্দেশে আরও ১৪ দিন পুলিশের হেফাজতে রাখা হবে।  কিন্তু কারাগারে নিজের জীবনের শঙ্কা করছেন সেজান। খবর আনন্দবাজারের। সেজানের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, তার নিজেরই জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। কেউ তাকে বিষ খাইয়ে হত্যা করতে চায় বলে সেজানের ধারণা। সে জন্য হাজতে থাকাকালীন বাড়ির তৈরি খাবার খেতে চান বলে আবেদন জানিয়েছেন সেজান। পাশাপাশি তিনি বিশেষ রক্ষীর বন্দোবস্ত চেয়েছেন।  এদিকে তুনিশা শর্মার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই সেজানের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। রিমান্ডে থাকার সময় সেজান খানের প্রতি অতিরিক্ত কঠোর হওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পায়ে জুতা নেই, মুখ ঢাকা, সেজানের ঘাড় ধরে টানতে টানতে আদালতে নেওয়া হচ্ছে— এ রকম একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।  অভিনেতা সেজান খানের প্রতি প্রশাসনের এ ধরনের আচরণে সমালোচনার ঝড় বইছে। প্রশ্ন উঠেছে— এখনো দোষী সাব্যস্ত হননি, তার আগেই একজন অভিনেতার সঙ্গে এ ধরনের ব্যবহার কেন? রিমান্ডে থাকাকালীন অভিযুক্তের প্রতি এ ধরনের আচরণ ‘অমানবিক’ ও বেআইনি বলেই মনে করছেন অনেকেই।  ভারতের মুম্বাইয়ে একটি সিরিয়ালের শুটিং সেটের মেকআপ রুম থেকে গত শনিবার তুনিশার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।  এ ঘটনায় তুনিশা শর্মার প্রেমিক সেজান মোহাম্মদ খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা হয়েছে।
অভিনেত্রী তুনিশা শর্মার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় এখনো দোষী সাব্যস্ত হননি সেজান মোহাম্মদ খান। মৃত্যু রহস্যের তদন্তে অভিযুক্ত সেজান খানকে আদালতের নির্দেশে আরও ১৪ দিন পুলিশের হেফাজতে রাখা হবে।
পরীর সঙ্গে ‘বিচ্ছেদের’ বিষয়ে যা বললেন রাজের বাবা
বিয়ের এক বছর না যেতেই বিচ্ছেদের সুর পরীমনির কণ্ঠে। রাজের সঙ্গে আর সংসার করা হবে না—সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ ঢালিউড নায়িকা।  দুজনের মধ্যে এখনো আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ না হলেও শিগগিরই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন পরীমনি। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ সম্পর্কেও ইঙ্গিত দিয়েছেন নায়িকা। তাদের মধ্যে এ সমস্যা নিয়ে শরীফুল রাজের বাবা মুসলিম মিয়া বলেন, ‘শুটিং শেষ করে রাজের বাসায় ফিরতে কিছুটা দেরি হয়, যা নিয়ে পরী রাগ করে। এ বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে সামান্য ঝগড়া হয়। যার ফলে পরী এমন স্ট্যাটাস দিয়ে থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘পরী এখনো কিছুটা অভিমান করে থাকলেও তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। রাজ-পরী ও আমরা সবাই একসঙ্গে আছি। আশা করি ওদের দুজনের সম্পর্ক সুন্দর থাকবে।’ এর আগে শুক্রবার রাতে ফেসবুকে এক পোস্টে শরিফুল রাজের সঙ্গে সংসার ভাঙনের ইঙ্গিত দেন নায়িকা পরীমণি। এদিন রাত ১২টা ৪০ মিনিটে পরী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন— ‘হ্যাপি থার্টিফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে।’ ওই পোস্টের পর পরী জানান, তিনি রাজের বাসা থেকে পুত্র রাজ্যকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। রাজকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে দেবেন বলেও জানান নায়িকা।  উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি সন্তানসম্ভবা হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর পরীমনি জানান, রাজকে তিনি গোপনে ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর বিয়ে করেছেন। এর পর চলতি বছর ২১ জানুয়ারি হয় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এবং ২২ জানুয়ারি দুই পরিবারের সদস্যের উপস্থিতিতে ১০১ টাকার দেনমোহরে ঘরোয়া আয়োজনে তাদের আবার বিয়ে হয়। ১০ আগস্ট তাদের সংসারে আসে এক পুত্রসন্তান। সন্তানের নাম রেখেছেন শাহীম মুহাম্মদ রাজ্য। পরীর এটি তৃতীয় বিয়ে।
বিয়ের এক বছর না যেতেই বিচ্ছেদের সুর পরীমনির কণ্ঠে। রাজের সঙ্গে আর সংসার করা হবে না—সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ ঢালিউড নায়িকা।
পরীমনির বিচ্ছেদ নিয়ে যা বলছেন অভিনেত্রীরা
হঠাৎ করেই শুক্রবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ফেসবুকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পরীমনি লেখেন— ‘হ্যাপি থার্টিফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে।’ গভীর রাতে পোস্ট করা হলেও এ ঘটনা মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না ঘটনা কতটা সত্য।  তবে পরে অবশ্য পরীমনি জানান, তিনি সংসার করছেন না। তাদের বিচ্ছেদ হচ্ছে।  তবে এই দুঃসময় তার পাশে দাঁড়িয়ে সমবেদনা এবং সাহস জুগিয়েছেন তরুণ অভিনেত্রীরা।  অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা ফারজানা বীথি লিখেছেন, ‘শান্ত থাকো।’  চিত্রনায়িকা নিশাত সালওয়ার লিখেছেন, ‘মানসিক শান্তির চেয়ে বড় কিছু নেই।’  পরীমনির এমন স্ট্যাটাসের অর্থ কী— সেটি বুঝে উঠতে পারেননি অন্তরাখ্যাত অভিনেত্রী ফারিয়া শাহরিন। তিনি লিখেছেন, ‘এর মানে কী?’  অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা মিশু চৌধুরী লিখেছেন, ‘পরী সুস্থ থাকুন, সুস্থ হয়ে বাঁচুন। জীবন অনেক সুন্দর।’ চিত্রনায়িকা সুবহা হুমায়রা পরীর উদ্দেশে স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেছেন, ‘জীবনটা তোমার, জীবনের সমস্যাগুলোও, তোমার জীবনের অর্জনও তোমার। জীবনের যা সমস্যা হবে, সেটিও তোমার নিজেকেই সমাধান করতে হবে। কে কী বলল, তাতে কোনো কিছু তোমার আসেনি বা আসার কথাও না। তোমার জীবনে তোমার বাচ্চাটা আর তোমার নিজের নানা ছাড়া আপনজন কেউ-ই না, এখন মনে রেখো। মানুষ শুধু দূর থেকে তোমার সমস্যা দেখে মজা নিতে পারবে আর সমালোচনা করতে পারবে। তোমার জীবনের জন্য আর তোমার বাচ্চার ভালোর জন্য যা ভালো মনে হয়, তা–ই করো। দিনশেষে ভালো থাকা খুবই জরুরি।’ অভিনেত্রী এলিনা শাম্মী লিখেছেন, ‘মাথা ঠান্ডা রাখো, বোন। আরেকটু ভেবে দেখার সুযোগ থাকলে একটু ভাবো, তোমার ছেলে রাজ্যর জন্য হলেও।’  চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি প্রকাশ্যে আসে রাজ-পরীর সম্পর্কের খবর। গত ২২ জানুয়ারি দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ১০১ টাকার দেনমোহরে ঘরোয়া আয়োজনে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। গত চার মাস আগে তাদের ঘর আলো করে আসে ছেলেসন্তান রাজ্য।
হঠাৎ করেই শুক্রবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ফেসবুকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পরীমনি লেখেন— ‘হ্যাপি থার্টিফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে।’
পরীমনি-রাজের সংসারে বিচ্ছেদের ঘণ্টা!
শুরুতেই বিজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বানী করে রেখেছিলেন ‘এই সংসার টিকবে না’। অবশেষে সেটাই সত্যি হলো। বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় ভেঙে গেল ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি ও উঠতি অভিনেতা শরীফুল ইসলাম রাজের সংসার। শুক্রবার মধ্যরাতে ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে পরী জানান, রাজকে তার জীবন থেকে আজীবনের জন্য ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাপি থার্টি ফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে। জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরি আর কিছুই নাই।’ জানা গেছে, এ পোস্ট দেওয়ার আগে তিনি সন্তান নিয়ে রাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তার বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। যদিও এ বাসাটি পরীই ভাড়া নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠরা। সে হিসাবে বলা যায়, নিজের বাসা থেকে নিজেই বেরিয়ে এসেছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। গত কুরবানির ঈদের পর থেকেই রাজ-পরীর সংসারে অশান্তির আগুন জ্বলছিল। রায়হান রাফি পরিচালিত ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পরান’ নামে একটি সিনেমা নিয়েই এ দ্বন্দ্ব। এ সিনেমায় বিদ্যা সিনহা মিম ও শরীফুল রাজ অভিনয় করেছেন। তখন থেকেই নাকি এ দুজনের মধ্যে গোপন কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এমনটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছেন পরীমনি।  একই পরিচালকের ‘দামাল’ নামে আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম ও শরীফুল রাজ। একই সিনেমায় সঙ্গে রয়েছেন সিয়াম। এ সিনেমার প্রচারণায় ‘রাজ মিমের হাত ধরে আছেন’ এমন একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। মূলত তখন থেকেই ধারণা পাওয়া গেছে রাজের সঙ্গে মিমকে নিয়ে সন্দেহ করছেন পরী। এর কিছুদিন পর রায়হান রাফিকে উদ্দেশ করে পরীমনি এক পোস্টে লিখেন, ‘সিনেমার সাথে সাথে দালালিটাও ভালো করেন দেখি!’ একই পোস্টে বিদ্যা সিনহা মিমকে ট্যাগ করে পরী লিখেন, ‘নিজের জামাইকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিত ছিল।’ রাজকে উদ্দেশ করে লিখেন, ‘এটা এতদূর গড়াতে দেওয়া উচিত হয়নি তোমার!’ ‘এটা’ বলতে মূলত পরীমনি মিম ও রাজের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে বলেছেন। জানা গেছে, পরী রাজের এ সংসার ভাঙার জন্য মূলত দুজনের প্রতি দুজনার সন্দেহই দায়ী। পরী চান না রায়হান রাফি কিংবা মিমের সঙ্গে রাজ আর কোনো কাজ করুক। এদিকে রায়হান রাফির ঘনিষ্ঠ বন্ধু চিত্রনায়িকা তমা মির্জার সঙ্গে অঘোষিত বিবাদ ছিল পরীমনির। সেটাও রাফিকে কেন্দ্র করেই। এসব নিয়ে রাজ খুবই বিরক্ত ছিল পরীর ওপর। দিনে দিনে রাজের বিরক্তি ও পরীর সন্দেহপ্রবণতা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, সেটা শেষ পর্যন্ত সংসার ভাঙাতেই রূপ নিয়েছে। এদিকে সংসার ভাঙার বিষয়ে পরীমনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখনো ডিভোর্স দেইনি। তবে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজের বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছি। আজ (গতকাল) থেকে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। শিগ্গির ডিভোর্সের চিঠি পাঠিয়ে দেব।’ ডিভোর্স দেওয়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই সমস্যা হচ্ছিল। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। তার (রাজ) আচার-আচরণ একসঙ্গে থাকার মতো নয়। তাই বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে আলাদা হয়ে গেলাম।’ এদিকে পরীর সঙ্গে আলাদা হয়ে যাওয়ার বিষয়ে শরীফুল রাজ এখনো মুখ খোলেননি। তবে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আর্থিক অবস্থাটা যদি আরও ভালো থাকত, তাহলে স্ত্রী ও সন্তানকে আরও বেশি সময় দিতে পারতাম।’ উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি সন্তানসম্ভবা হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর পরীমনি জানান, রাজকে তিনি গোপনে ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর বিয়ে করেছেন। এরপর চলতি বছর ২১ জানুয়ারি হয় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এবং ২২ জানুয়ারি দুই পরিবারের সদস্যের উপস্থিতিতে ১০১ টাকার দেনমোহরে ঘরোয়া আয়োজনে তাদের আবার বিয়ে হয়। ১০ আগস্ট তাদের সংসারে আসে এক পুত্রসন্তান। সন্তানের নাম রেখেছেন শাহীম মুহাম্মদ রাজ্য। পরীর এটা তৃতীয় বিয়ে। এর আগে ২০২১ সালের ৮ জুন রাতে রাজধানীর উত্তরার বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা ও নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে সাভার থানায় ১৪ জুন নাসিরউদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। এরপর ২০২১ সালের ৪ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরীমনির বাসায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যসহ পরীমনিকে গ্রেফতার করে। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে। সেখান থেকে একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন। দুটি মামলাই এখনো বিচারাধীন।
শুরুতেই বিজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বানী করে রেখেছিলেন ‘এই সংসার টিকবে না’। অবশেষে সেটাই সত্যি হলো। বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় ভেঙে গেল ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি ও উঠতি অভিনেতা শরীফুল ইসলাম রাজের সংসার। শুক্রবার মধ্যরাতে ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে পরী জানান, রাজকে তার জীবন থেকে আজীবনের জন্য ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাপি থার্টি ফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে। জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরি আর কিছুই নাই।’
‘মাথা ঠান্ডা রাখো’, পরীমনিকে পরামর্শ অভিনেত্রীর
বিয়ের এক বছর না যেতেই বিচ্ছেদের সুর পরীমনির কণ্ঠে। রাজের সঙ্গে আর সংসার করা হবে না—সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এই ঢালিউড নায়িকা।  দুজনের মধ্যে এখনও আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ না হলেও শিগগিরই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন পরীমনি। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ সম্পর্কেও ইঙ্গিত দিয়েছেন নায়িকা শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ফেসবুকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পরীমনি লেখেন, ‘হ্যাপি থার্টি ফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে।’ আরেক অংশে এই নায়িকা লিখেছেন, ‘জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরি আর কিছুই নাই।’ তার এই দুঃসময় পাশে দাঁড়িয়ে সমবেদনা এবং পারমর্শ দিয়েছেন তরুণ অভিনেত্রী এলিনা শাম্মী। তিনি লিখেছেন, ‘মাথা ঠান্ডা রাখো, বোন। আরেকটু ভেবে দেখার সুযোগ থাকলে একটু ভাবো, তোমার ছেলে রাজ্যর জন্য হলেও।’  চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি প্রকাশ্যে আসে রাজ-পরীর সম্পর্কের খবর। গত ২২ জানুয়ারি দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ১০১ টাকার দেনমোহরে ঘরোয়া আয়োজনে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। গত চার মাস আগে তাদের ঘর আলো করে আসে ছেলেসন্তান রাজ্য।
বিয়ের এক বছর না যেতেই বিচ্ছেদের সুর পরীমনির কণ্ঠে। রাজের সঙ্গে আর সংসার করা হবে না—সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এই ঢালিউড নায়িকা।
বিছানায় রক্তের দাগ, সংবাদ সম্মেলনে আসছেন পরীমনি
বিছানায় রক্তের দাগওয়ালা দুটি ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে ভক্তদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। একই সঙ্গে তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান ফেসবুক স্ট্যাটাসে। রোববার ভোর ৫টা ১৩ মিনিটে ফেসবুকে ওই ছবি পোস্ট করলেও বিস্তারিত লেখেননি পরীমনি। তবে একদিন আগেই দিয়েছিলেন স্বামী শরিফুল রাজের সঙ্গে সংসারে ভাঙনের খবর। শুক্রবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ফেসবুকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পরীমনি লেখেন— ‘হ্যাপি থার্টিফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে।’ আরেক অংশে এ নায়িকা লিখেছেন— ‘জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরি আর কিছুই নাই।’ পরীমনি এ স্ট্যাটাস মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। লাইক কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়। অনেকেই তাদের সম্ভাব্য বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। স্ট্যাটাসের বিষয়ে পরীর সঙ্গে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে রাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা স্বীকার করেন পরীমনি।  পরীমনি বলেন, ‘এখনো বিচ্ছেদ হয়নি। তবে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজের বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছি। আজ থেকে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। শিগগির বিচ্ছেদের চিঠি পাঠিয়ে দেব।’ আলাদা হয়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে পরীমনির ভাষ্য— ‘বেশ কিছু দিন ধরেই সমস্যা হচ্ছিল। সমস্যা কাটিয়ে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারলাম না। তার (রাজ) যে আচার-আচরণ তাতে একসঙ্গে থাকার পরিস্থিতি নেই। তাই বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে আলাদা হয়ে গেলাম। আমার মানসিক অবস্থা এখন ভালো নেই; এর বেশি আর কিছু বলতে পারছি না।’ চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি প্রকাশ্যে আসে রাজ-পরীর সম্পর্কের খবর। গত ২২ জানুয়ারি দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ১০১ টাকার দেনমোহরে ঘরোয়া আয়োজনে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। গত চার মাসে তাদের ঘর আলো করে আসে ছেলেসন্তান রাজ্য। ঢাকাই সিনেমার আলোচিত এক নায়িকাকে ঘিরে সংসারে অশান্তি এমন ইঙ্গিত দিয়ে কিছু দিন আগে একটি পোস্ট করেন পরীমনি। সেটি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
বিছানায় রক্তের দাগওয়ালা দুটি ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে ভক্তদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। একই সঙ্গে তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান ফেসবুক স্ট্যাটাসে।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করেন শ্রাবন্তী
মা-বাবা ছাড়া জীবন অন্ধকার শ্রাবন্তীর। অন্যদিকে বড়পর্দার নায়িকা হওয়ার সুবাদে জীবনে জড়িয়েছে বহু বিতর্ক। মেয়ের এই কাণ্ডের জন্য কী করেছিলেন তার মা-বাবা? টালিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের জীবনটাও যেন অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা সিনেমার মতোই হয়ে গেছে। জীবনে এসেছে বহু চড়াই-উতরাই। অভিনয়ের থেকেও তার ব্যক্তিগত জীবন বারবার উঠে এসেছে শিরোনামে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে পরিচালক রাজীব কুমার বিশ্বাসকে বিয়ে করেন শ্রাবন্তী। কিন্তু সেই সম্পর্ক টিকেনি। বিয়ের ১৩ বছর পর রাজীবের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। তার পর শ্রাবন্তীর জীবনে এসেছেন একাধিক পুরুষ। শ্রাবন্তীর এই বর্ণময় জীবন নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন ছিল তার পরিবারের লোক কিছু বলেন না? মা-বাবার কি প্রতিক্রিয়া? মেয়ের জীবনে এত ঝড় এলে তার মা-বাবা কি বসে থাকবেন? সন্তান ভুল পদক্ষেপ নিলে তারা কি চুপ থাকবেন? কখনো না। শ্রাবন্তীর মা-বাবাও কিন্তু চুপ ছিলেন না। ক্যামেরার সামনে তারা বললেন, কী করেছিলেন মেয়ের সঙ্গে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে করা কোনো মা-বাবার পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। যদিও সেই ঘটনার কথা অবশ্য উল্লেখ করেননি তারা। তবে তাদের কথায় স্পষ্ট যে, এমন সিদ্ধান্তের জন্যই মা-বাবাকে ক্ষুব্ধ করেছিলেন শ্রাবন্তী। তারা বলেন, আমরা মেয়ের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ওটাই ওর জীবনের বড় শাস্তি। রিয়্যালিটি শো ‘হ্যাপি পেরেন্টস ডে’-তে এসে সেই শাস্তি পাওয়ার কথাই ক্যামেরার সামনে বলেন শ্রাবন্তীর মা ও বাবা। মা-বাবা যখন এই কথাগুলো বলছিলেন, তখন মুখে কোনো কথা নয়, চোখ দিয়ে শুধুই পানি গড়িয়ে পড়ছিল শ্রাবন্তীর। সেই পানিই মনে হয় বলে দেয় নায়িকার আক্ষেপের কথা। যদিও এত কিছুর মধ্যে নায়িকার একটাই কথা, তার পৃথিবীতে ভালোবাসার মানুষ চারজন। ছেলে ঝিনুক, দিদি আর মা-বাবা। তাদের ছাড়া শ্রাবন্তীর পৃথিবী অন্ধকার।
মা-বাবা ছাড়া জীবন অন্ধকার শ্রাবন্তীর। অন্যদিকে বড়পর্দার নায়িকা হওয়ার সুবাদে জীবনে জড়িয়েছে বহু বিতর্ক।
নতুন বছরেই কি বিয়ে করছেন মালাইকা-অর্জুন?
বয়সে ১৩ বছরের বড় মালাইকার প্রেমে মজেছিলেন অর্জুন কাপুর এ কথা পুরনো। অনেক জল্পনার শেষে নিজেদের সম্পর্ককে স্বীকৃতিও দিয়েছেন বলিউড আইটেম কুইন মালাইকা অরোরা ও হালের হিরো অর্জুন কাপুর। এতদিন জল্পনা থাকলেও এদিন নিজের বিয়ে ইস্যুতে সিলমোহর দিলেন স্বয়ং অভিনেত্রী। নিজের রিয়েলিটি শোয়ের এক এপিসোডে বোন অমৃতার সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে উঠে আসে বিয়ের কথা। তখনই মালাইকা জানান, শিগগিরই তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করবেন। মালাইকা আরোরা এবং অর্জুন কাপুরের সম্পর্কের বয়স দেখতে দেখতে চার বছর ছুঁয়েছে! আর খুব শিগগিরই এই প্রেম পরিণতি পেতে পারে। এমন ইঙ্গিত এবার দিলেন মালাইকা নিজে।  ‘মুভিং উইথ মালাইকা’তে বোন অমৃতার সঙ্গে মায়ের অলংকার নিয়ে আলোচনা চলছিল। মালাইকা তখনই স্পষ্ট বলেন, দুজনের মধ্যে তার দ্বিতীয়বার বিয়ের সম্ভাবনা প্রবল সুতরাং ওই অলংকারটিও তার প্রাপ্য। সম্পর্কের ক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না সেটা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন মালাইকা আরোরা ও অর্জুন কাপুর। বয়সে অর্জুন মালাইকার থেকে ১৩ বছরের ছোট। নিন্দুকদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেমে মজে রয়েছেন এই জুটি। বর্তমানে লিভ ইন রিলেশনশিপে রয়েছেন তারা। সালমান খানের ভাই আরবাজ খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে ২০১৯ সালে অর্জুনের সঙ্গে প্রেমের কথা ঘোষণা করেন মালাইকা। তারপর থেকেই তাদের অসমবয়সি প্রেম আলোচনায় রয়েছে।  বলিউডের এ অভিনেত্রীর বয়স ৪৮। আর অভিনেতা অর্জুন কাপুর এখন ৩৬ এ পা দিয়েছেন। অর্থাৎ অভিনেত্রীর থেকে বারো বছরের ছোট অভিনেতা অর্জুন কাপুর।  যদিও মালাইকা নিজেকে ফিট রেখেছেন। এই বয়সেও নিজের মোহনীয় দেহয়াবব দিয়ে অনুরাগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলেও তার এ প্রেমের সম্পর্ক ও বয়স নিয়ে আজও কম খোঁটা শুনতে হয় না।
বয়সে ১৩ বছরের বড় মালাইকার প্রেমে মজেছিলেন অর্জুন কাপুর এ কথা পুরনো। অনেক জল্পনার শেষে নিজেদের সম্পর্ককে স্বীকৃতিও দিয়েছেন বলিউড আইটেম কুইন মালাইকা অরোরা ও হালের হিরো অর্জুন কাপুর।
পরীমনির সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে কি ভাবছে রাজের পরিবার
বিয়ের এক বছর না যেতেই বিচ্ছেদের সুর পরীমনির কণ্ঠে। রাজের সঙ্গে আর সংসার করা হবে না—সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এই ঢালিউড নায়িকা।  দুজনের মধ্যে এখনও আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ না হলেও শিগগিরই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন পরীমনি। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ সম্পর্কেও ইঙ্গিত দিয়েছেন নায়িকা শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ফেসবুকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পরীমনি লেখেন, ‘হ্যাপি থার্টি ফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে।’ আরেক অংশে এই নায়িকা লিখেছেন, ‘জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরি আর কিছুই নাই।’ পরীমনি এই স্ট্যাটাস মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। লাইক কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়। অনেকেই তাদের সম্ভাব্য বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। স্ট্যাটাসের বিষয়ে পরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা স্বীকার করেন পরীমনি। তবে এ ব্যাপারে এই মুহূর্তে মিডিয়ায় বেশি কথা বলতে চাননি অভিনেত্রী।  পরীমনি বলেন, ‘এখনো বিচ্ছেদ হয়নি। তবে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজের বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছি। আজ থেকে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। শিগগির বিচ্ছেদের চিঠি পাঠিয়ে দেব।’ আলাদা হয়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে পরীমনির ভাষ্য, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই সমস্যা হচ্ছিল। সমস্যা কাটিয়ে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারলাম না। তার (রাজ) যে আচার-আচরণ তাতে একসঙ্গে থাকার পরিস্থিতি নাই। তাই বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে আলাদা হয়ে গেলাম। আমার মানসিক অবস্থা এখন ভালো নাই, এর বেশি আর কিছু বলতে পারছি না।’ পরীমনির বক্তব্যের বিষয়ে রাজের ফোন নম্বরও বারবার কল করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে পরীমনির ঘনিষ্ঠজনদের সূত্রে জানা গেছে, রাজের পরিবার থেকেও বিয়েবিচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে।  চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি প্রকাশ্যে আসে রাজ-পরীর সম্পর্কের খবর। গত ২২ জানুয়ারি দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ১০১ টাকার দেনমোহরে ঘরোয়া আয়োজনে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। গত চার মাসে তাদের ঘর আলো করে আসে ছেলে সন্তান রাজ্য। ঢাকাই সিনেমার আলোচিত এক নায়িকাকে ঘিরে সংসারে অশান্তি— এমন ইঙ্গিত দিয়ে কিছুদিন আগে একটি পোস্ট করেন পরীমনি। সেটি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরীমনি ও রাজের মধ্যে বেশ কয়েকদিন থেকেই সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল। কিছুদিন আগে এ চিত্রনায়িকাই ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তা সামনে এনেছিলেন। তিনি অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিমের সঙ্গে রাজকে জড়িয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তাদের দুজনের দীর্ঘ ফোনালাপ নিয়ে অনেক কথা বলেন। পরীমনি সেসময় রাজ-মিমের বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এসব বন্ধ করো’।  তখন থেকে রাজ-মিমের প্রেম ও পরীর সংসারে ভাঙনের গুজব ছড়াতে থাকে। পরাণ ও দামাল সিনেমায় রাজের নায়িকা ছিলেন মিম। দামাল সিনেমা মুক্তির সময় রাজ ও মিমকে মেনশন করে পোস্ট দেন পরী। তখন বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়। তবে মিম বরাবরই রাজের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের বাইরে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন।  রাজের সঙ্গে পরীমনির এবারের অভিমান মিমকে ঘিরে কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিয়ের এক বছর না যেতেই বিচ্ছেদের সুর পরীমনির কণ্ঠে। রাজের সঙ্গে আর সংসার করা হবে না—সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এই ঢালিউড নায়িকা।
অধরা-ইভানকে নিয়ে মাজহার বাবুর ‘ঠোকর’
চলচ্চিত্র সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দুই যুগ ধরে যুক্ত আছেন বাংলা সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন অর্ধশতাধিক সিনেমায়। এবার পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন মাজহার বাবু।  প্রথমবারের মতো তিনি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ‘ঠোকর’ নামের এই সিনেমায় অভিনয় করছেন হালের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অধরা খান। তার বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হচ্ছেন মডেল-উপস্থাপক ও ছোটপর্দার অভিনেতা ইভান সাইর। পরিচালক মাজহার বাবু বলেন, ‘ভিন্নধর্মী একটি গল্পকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে যাচ্ছি। গল্প নিয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলতে চাই না। তবে গতানুগতিকতার বাইরের একটি চলচ্চিত্র উপহার পাবে দর্শক। ২৪ বছর ধরে সিনেমা নির্মাণের সাথে যুক্ত আছি। আশা করছি, দর্শককে দারুণ কিছু উপহার দিতে পারব। খুব দ্রুতই সিনেমার শুটিং শুরু হবে।’ অধরা খান বলেন, ‘বাবু ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় দীর্ঘদিনের। এবার তার পরিচালনায় কাজ করব-এটা সত্যিই ভালো লাগার বিষয়। আর আমার চরিত্রটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং। আশা করছি, নিজেকে ভালোভাবে মেলে ধরতে পারব।’ ইভান সাইর বলেন, ‘উপস্থাপনা ও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত আছি দীর্ঘদিন। এবার চলচ্চিত্রে কাজ করতে যাচ্ছি। এই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। ‘ঠোকর’ এ আমার চরিত্রটি দারুণ। এর জন্য নিজের লুক তৈরি করা থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি, ভালো একটি প্রজেক্ট হবে।’ মুভি টাইমের ব্যানারে ‘ঠোকর’ ছবিটি নির্মিত হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছবিটির দৃশ্যধারণ করা হবে।
চলচ্চিত্র সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দুই যুগ ধরে যুক্ত আছেন বাংলা সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন অর্ধশতাধিক সিনেমায়। এবার পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন মাজহার বাবু।
ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে দুই গ্রুপে মারামারি, সাংবাদিক লাঞ্ছিত
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বসা ও স্লোগানকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন।  রোববার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের শেষ পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে সমাবেশ কাভার করতে আসা এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। একটি বেসরকারি টিভির ওই সাংবাদিক নির্ধারিত জায়গায় ট্রাইপড রাখেন। এ সময় ছাত্রদলের এক কর্মী সেটাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। এর কারণ জানতে চাইলে ওই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন তারা। তাকে লাঞ্ছিত করা হয়।  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঞ্চ থেকে নেমে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন ও ছাত্রদলের সভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। এ সময় মারামারির সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কারের ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বসা ও স্লোগানকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন।
নতুন বছর বিএনপির চ্যালেঞ্জ: খন্দকার মোশাররফ
সরকার পতনের ১০ দফা বাস্তবায়নই নতুন বছরে বিএনপির চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি বলেন, ক্ষমতা ছেড়ে দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। রাজপথেই এর ফয়সালা করতে হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিদায় হবে এই সরকার।  রোববার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। খন্দকার মোশাররফ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অন্ধকার কেটে যাবে। আলো আসবে। ছাত্রসমাজ, জনগণ, বিএনপি, গণতান্ত্রিক-দেশপ্রেমিক শক্তি- যারা যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে তারা আলো দেখানোর জন্য ইতিহাস সৃষ্টি করবে। আগামী দিন আমাদের চ্যালেঞ্জ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন। এর মধ্যে রয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসসহ সব রাজবন্দিকে মুক্ত করা।  লাল-সবুজ টুপি, জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নেতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে অংশ নেন। তাদের উপস্থিতিতে একপর্যায়ে নয়াপল্টনের একপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান শিক্ষা, ঐক্য ও প্রগতি- এই তিন মূলনীতিকে ধারণ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গঠন করেন। সরকারের দমনপীড়নের কঠোর সমালোচনা করে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার যতই নির্যাতন করুক, নেতাকর্মীদের কারাবন্দি করুক- কোনো লাভ হবে না। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে, এক হাজারের ওপরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, ৩৭ লাখের বেশি নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছে। কিন্তু আমাদের আন্দোলন থামেনি। তাই সরকারকে বলতে চাই, এতকিছু করেও আন্দোলনকে দমাতে পারেননি। জনগণ নেমে গেছে রাস্তায়। আপনাদের কোনো রেহাই নেই।  ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় সমাবেশে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, নাজিম উদ্দিন আলম, আজিজুল বারী হেলাল, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান, ইকবাল হোসেন শ্যামল, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।  দুই গ্রুপে মারামারি, সাংবাদিক লাঞ্ছিত : সমাবেশের শেষ পর্যায়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। বসা ও স্লোগানকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন।  এর আগে সমাবেশ কাভার করতে আসা এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। একটি বেসরকারি টিভির ওই সাংবাদিক নির্ধারিত জায়গায় ট্রাইপড রাখেন। এ সময় ছাত্রদলের এক কর্মী সেটাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। এর কারণ জানতে চাইলে ওই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন তারা। তাকে লাঞ্ছিত করা হয়।  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঞ্চ থেকে নেমে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন ও ছাত্রদলের সভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। এ সময় মারামারির সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কারের ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি।  জিয়ার সমাধিতে শ্রদ্ধা : এদিন সকালে ছাত্রদলের নেতাদের নিয়ে শেরেবাংলা নগরে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা তবিবুর রহমান সাগর, আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া, খায়রুল আলম সুজন, আসাদুজ্জামান আসাদ, আনোয়ার হোসেন, শাফি ইসলাম, আবু জাফর, আদনান, মো. মোহন, আরিফুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নতুন বছরে বিএনপির সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সরকার পতনসহ ১০ দফা দাবি আদায়। এজন্য যা যা করা প্রয়োজন, তাই করতে প্রস্তুত আছেন নেতাকর্মীরা। ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন দমন করা যাবে না।
সরকার পতনের ১০ দফা বাস্তবায়নই নতুন বছরে বিএনপির চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আনন্দ শোভাযাত্রা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশম বারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওবায়দুল কাদের তৃতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় রাজধানীতে আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।  রোববার সকালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রী কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে আনন্দ শোভাযাত্রাটি রাজধানীর তেজগাঁওস্থ বিভিন্ন সড়ক প্রর্দশন করে। দুপুরে তেজগাঁও পন্থি শাহ মাজার রোডে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  সভায় সভাপতি করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবদুল আহাদ চৌধুরী।  বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী (বীর প্রতীক)।  বক্তব্য রাখেন, যুব মহিলালীগ নেত্রী তানিয়া হক শোভা, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের সেক্রেটারি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নয়ন, তেজগাওঁ থানা কমান্ডার আবুল বাশার, ডেপুটি কমান্ডার তাজুল ইসলাম, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাংগঠনিক সম্পাদক রুবিনা ইয়াসমিন অন্তরা, দক্ষিণ সভাপতি মনিরুজ্জামান সালাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ মমিন, সংগঠন নেতা শাহজাহান মিয়া, সানোয়ার রাসেল, মাসুদ রানা টগর প্রমূখ।   বক্তারা বলেন, সোনার বাংলা গড়তে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু’র সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তিনি দশম বারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। তার নেতৃত্বেই দেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশম বারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওবায়দুল কাদের তৃতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় রাজধানীতে আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আগারগাঁওয়ে ছুরি মেরে যুবক খুন
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ছুরি মেরে এক যুবককে খুন করা হয়েছে। রোববার ভোরে তালতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান। নিহত যুবকের নাম ফিরোজ আহমেদ। বয়স ২৫ বছর। তালতলা এলাকাতেই তার বাসা। স্বজনদের বরাত দিয়ে পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, রক্তাক্ত অবস্থায় ফিরোজকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ছুরি মেরে এক যুবককে খুন করা হয়েছে।
ফানুস অপসারণের পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারের ওপর পড়ে থাকা ফানুস অপসারণের পর আবার মেট্রোরের চলাচল স্বাভাবিক হযেছে।  রোববার সকাল ১০টার পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।  এর আগে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে রোববার নববর্ষের প্রথম প্রহরেই রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় আতশবাজি ও ফানুস ওড়াতে দেখা যায়। এ সময় কয়েকটি ফানুস মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারের ওপর এসে পড়ে। এ কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে রোববার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল দুই ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়। পরে সেসব ফানুস অপসারণের পর চলাচল স্বাভাবিক হয়। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে থার্টি ফার্স্ট নাইট সামনে রেখে শনিবার রাত ৯টা থেকেই রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় ওড়ানো হয় ফানুস। যদিও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।  গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে ওড়ানো ফানুস পড়ে রাজধানীর প্রায় ১০টি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় এজন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ডিএমপি।
মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারের ওপর পড়ে থাকা ফানুস অপসারণের পর আবার মেট্রোরের চলাচল স্বাভাবিক হযেছে। রোববার সকাল ১০টার পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার পর্দা উঠছে আজ
পূর্বাচলে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার পর্দা উঠছে আজ। নতুন বছরের প্রথম দিন রোববার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার (ডিআইটিএফ) ২৭তম আসরের পর্দা উঠছে।  রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহরে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বসবে এ মেলা। সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন করবেন। শনিবার মেলার এক্সিবিশন সেন্টারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সর্বোচ্চ রপ্তানি আদেশ আসবে এবারের বাণিজ্যমেলায় এমন আশার বাণী শোনান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। নতুন বছরের জানুয়ারির পুরো মাসব্যাপী এ মেলা সকাল ১০টা থেকে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত (সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত)। মেলার প্রবেশমূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২০ টাকা। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে প্রথম ১৯৯৫ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা বসে। এর পর প্রায় প্রতিবছর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে হয়ে আসছিল এ মেলা। দ্বিতীয়বারের মতো পূর্বাচলের স্থায়ী কমপ্লেক্সে মেলা বসছে। এবারের মেলায় ৩১১ স্টলের মধ্যে বিদেশি স্টল থাকবে ১৭টি। মাসব্যাপী সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে মেলা। ছুটির দিনে খোলা থাকবে রাত ১০টা পর্যন্ত। আগত দর্শনার্থীদের জন্য কুড়িল থেকে মেলা পর্যন্ত বিআরটিসির শাটল বাস থাকবে এসব তথ্য সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দুটি হলে সব স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। মেলা কমপ্লেক্সের বাইরে (সম্মুখ ও পেছনে) প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও ফুড স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। এবার মেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য প্রদর্শিত হবে।
পূর্বাচলে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার পর্দা উঠছে আজ। নতুন বছরের প্রথম দিন রোববার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার (ডিআইটিএফ) ২৭তম আসরের পর্দা উঠছে।
নিয়ম ভেঙে ঢাকায় উড়ছে ফানুস
নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভ্ন্নি স্থানে ফানুস ওড়ানো হচ্ছে।  রোববার নববর্ষের প্রথম প্রহরেই রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় আতশবাজি ও ফানুস ওড়াতে দেখা গেছে। রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ প্রায় অধিকাংশ ছাদেই ছিল আতশবাজি আর ফানুস ওড়ানোর আয়োজন। অনেকে আবার ছাদে বারবিকিউ পার্টিসহ পারিবারিক নানা আয়োজন করেছে। ডিএমপির নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে থার্টি ফার্স্ট নাইট সামনে রেখে রাত ৯টা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ওড়ানো হয়েছে ফানুস। সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অন্তত ৫০টি ফানুস উড়াতে দেখা যায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহিরাগতরাও অংশ নেন। যদিও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে ওড়ানো ফানুস পড়ে রাজধানীর প্রায় ১০টি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় এজন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ডিএমপি।
নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভ্ন্নি স্থানে ফানুস ওড়ানো হচ্ছে।
মুনিয়ার মৃত্যু: আনভীরকে বাদ দেওয়া প্রতিবেদনে তানিয়ার নারাজি
মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুতে করা হত্যা মামলায় পিবিআইর দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন নিহতের বড় বোন বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া। মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতির সুপারিশ রেখে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পিআইবি। তানিয়া ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এ রোববার এ নারাজি আবেদন জমা দেন।  আবেদনে তানিয়া বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের পক্ষ নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সঠিকভাবে তদন্ত করেননি। তানিয়ার আইনজীবী এম সরোয়ার হোসেন জানান, ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মাফরোজা পারভিন বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন। এর আগে গত বছর ১২ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন।  তদন্ত প্রতিবেদনে আইও বলেছেন, তিনি আনভীর এবং অন্যদের বিরুদ্ধে কলেজ শিক্ষার্থী মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাননি। ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল গুলশানে নিজের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে ২১ বছর বয়সি মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। তার বোন তানিয়া কুমিল্লা থেকে এসে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন।  ওই বছর ১৯ জুলাই সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান ঢাকার হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তাতে তিনি আনভীরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন।  এরপর ১৮ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী থানা পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আনভীরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। এরপর তানিয়া একই বছর ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এ মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেন।
মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুতে করা হত্যা মামলায় পিবিআইর দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন নিহতের বড় বোন বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া। মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতির সুপারিশ রেখে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পিআইবি।
ছেড়ে দেওয়া আসনে লড়বেন আবদুস সাত্তার!
নিজের ছেড়ে দেওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া অংশ নিতে যাচ্ছেন।  রোববার জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে তার পক্ষে সাদ মোহাম্মদ রশিদ নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে আবদুস সাত্তারের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, রোববার আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার পক্ষে তার ফুফা পরিচয়ে সাদ মোহাম্মদ রশিদ মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে আবদুস সাত্তার বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন।  উপনির্বাচনে আবদুস সাত্তারের অংশগ্রহণ করা প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান জিল্লু যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে ঘটনা সত্য হলে আমরা দলীয় ব্যবস্থা নেব। জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে বিএনপির সঙ্গে পথচলা শুরু করেন সরাইলের পাঁচবারের এমপি আব্দুস সাত্তার। জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের পর বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ সব পদ থেকেও তিনি পদত্যাগ করেন।
নিজের ছেড়ে দেওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া অংশ নিতে যাচ্ছেন।
ওভারটাইমেও পোশাক শ্রমিকদের মাসিক খরচ পূরণ হচ্ছে না: সানেম
ওভারটাইম করেও সংসারের খরচ চালাতে পারছেন না পোশাক খাতের শ্রমিকরা। তাদের জীবনধারণের জন্য মাসিক যে টাকা প্রয়োজন, তা তারা বেতন এবং ওভারটাইম মিলেও জোগাতে পারছেন না। ফলে পরিবারের নানা চাহিদা থাকছে অপূর্ণ। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণায় উঠে এসেছে এমন চিত্র। রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বিষয়টি জানিয়েছে।  বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোফিন্যান্স অপরচুনিটিজের (এমএফও) সহায়তায় গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরি নামের একটি প্রকল্পের আওতায় এ গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। এর অংশ হিসাবে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান নির্ণয় করা হচ্ছে। এতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ বাছাই করা পোশাক শ্রমিকের কাছ থেকে নিয়মিত তথ্য নেওয়া হয়ে থাকে।  এতে বলা হয়, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে প্রতি সপ্তাহে এসব শ্রমিকের ওপর জরিপ করা হয়। জরিপ এলাকা দেশের প্রধান পাঁচটি শিল্প এলাকা। এসব এলাকা হলো চট্টগ্রাম, ঢাকা সিটি, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার। জরিপের তিন-চতুর্থাংশ উত্তরদাতা হলেন নারী, যারা মোটামুটিভাবে তৈরি পোশাক খাতে শ্রমশক্তির প্রতিনিধিত্ব করেন।  বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোটামুটি চারজন সদস্যের একটি পরিবার পরিচালনায় (নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয়) ঢাকার জন্য ১৯ হাজার ২০০ থেকে ২২ হাজার ৯০০ টাকা, চট্টগ্রামের জন্য ২১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ২৬ হাজার টাকা এবং গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের জন্য ২২ হাজার ৯০০ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু কর্মীদের রিপোর্ট করা গড় উপার্জন ২০২২ সালের এপ্রিল-জুন পর্যন্ত ছিল অনেক কম। তাদের গড় আয় ছিল প্রায় ৯ হাজার ৯৮৪ টাকা। এর মধ্যে নারীদের আয় ছিল ৯ হাজার ৬৬৯ টাকা এবং পুরুষদের ছিল ১০ হাজার ৯২৮ টাকা। যার ফলে মজুরি ব্যবধান থেকে যায় নারী শ্রমিকদের জন্য ৫১ থেকে ৬০ শতাংশ এবং পুরুষ কর্মীদের জন্য ৪৫ থেকে থেকে ৫৪ শতাংশ।  এতে বলা হয়, এলাকাভেদে বর্তমান মজুরি ও প্রয়োজনের মধ্যে ব্যাপক ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এই ব্যবধান পূরণ করার জন্য কর্মীরা ক্রমবর্ধমান ওভারটাইম এবং অতিরিক্ত ঘণ্টার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু তারপরও সেটি অনেক ক্ষেত্রে পূরণ হচ্ছে না।
ওভারটাইম করেও সংসারের খরচ চালাতে পারছেন না পোশাক খাতের শ্রমিকরা। তাদের জীবনধারণের জন্য মাসিক যে টাকা প্রয়োজন, তা তারা বেতন এবং ওভারটাইম মিলেও জোগাতে পারছেন না। ফলে পরিবারের নানা চাহিদা থাকছে অপূর্ণ। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণায় উঠে এসেছে এমন চিত্র।
বিএনপিকে নিয়ে যা বললেন ইসি আনিছুর
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, বিএনপি তো ডে-ওয়ান থেকেই আমাদের মানছে না। তারা ভোটে অংশ নিয়ে বলুক নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না।  রোববার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, দলগুলো নির্বাচন আসবে এটাই কাম্য। তারা আমাদের অধীনে একটা নির্বাচনেও অংশ নেয়নি। অংশ নিয়ে বলুক যে ভোট সুষ্ঠু হয়নি। তারা (বিএনপি) ডে-ওয়ান থেকেই তো আমাদের মানছে না। আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াই নাকি স্বচ্ছ হয়নি। আইনের আওতায় প্রথম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারপরও বলা হচ্ছে- আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়নি। আমাদের তো কিছু করার নেই। ইসি আনিছুর বলেন, আমরা বলি নাই যে ইসির প্রতি অনাস্থা নেই বা ছিল না; কিন্তু যারা বলছেন তারা তো আমাদের প্রথম থেকেই বলছেন। যদি একটা নির্বাচনেও অংশ নিতো তাহলে তো বলতে পারব আমরা প্রতিশ্রুতি রাখতে পারিনি। তাহলে না আস্থা, অনাস্থার বিষয়টি বলতে পারত। যারা অংশ নিয়েছে তারা তো বলেনি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। সাংবাদিকরা এই কমিশনারের কাছে জানতে চান- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি বিএনপি আবারো বর্জন করে, তাহলে সেটি কতটা গ্রহণযোগ্য হবে? জবাবে আনিছুর বলেন, এখনো ভোটের অনেক সময় আছে। অংশ না নিলে তখন বলা যাবে। এত আগবাড়িয়ে বলার সুযোগ নেই। আমাদের কাজ আর নেই। আমরা ওইভাবে হয়তো আর বসব না। আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই সংলাপের। এ সময় চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে বা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করার কথা জানান এই কমিশনার।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, বিএনপি তো ডে-ওয়ান থেকেই আমাদের মানছে না। তারা ভোটে অংশ নিয়ে বলুক নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না।
বছরের প্রথম দিনেই দাম বাড়ল সয়াবিন তেলের, কমেছে আটা-ময়দার
নতুন বছরের প্রথম দিনেই রাজধানীতে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে বোতলের সয়াবিন তেল, দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ, দেশি হলুদ, জিরা, দারুচিনি, ধনে ও তেজপাতার দাম বেড়েছে। বিপরীতে বছরের প্রথম দিন আটা ও ময়দার দাম কমার পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে ফার্মের ডিম, দেশি আদা, দেশি রসুন, আলু, পাম অয়েল এবং চালের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। টিসিবি জানিয়েছে, রোববার রাজধানীর শাহজাহানপুর, মালিবাগ বাজার, কারওয়ানবাজার, বাদামতলী বাজার, সূত্রাপুর বাজার, শ্যামবাজার, কচুক্ষেত বাজার, মৌলভীবাজার, মহাখালী বাজার, উত্তরা আজমপুর বাজার, রহমতগঞ্জ বাজার, রামপুরা এবং মিরপুর-১ নম্বর বাজারের পণ্যের দাম সংগ্রহ করে এ তথ্য দিয়েছে তারা। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ জানুয়ারি লুজ (খোলা) সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এতে এক লিটার লুজ সয়াবিন তেলের দাম হয়েছে ১৬৭ থেকে ১৮০ টাকা, যা আগে ছিল ১৬৭ থেকে ১৭০ টাকা। অপরদিকে ১ জানুয়ারি খোলা আটার দাম কমেছে ৪ শতাংশ। এতে এক কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, যা আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।  এ ছাড়া খোলা ময়দার দাম ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ কমে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা, যা আগে ছিল ৭০ থেকে ৭২ টাকা। আর প্যাকেট ময়দার দাম কমেছে ১ দশমিক ২১ শতাংশ। এটি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা, যা আগে ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
নতুন বছরের প্রথম দিনেই রাজধানীতে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে বোতলের সয়াবিন তেল, দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ, দেশি হলুদ, জিরা, দারুচিনি, ধনে ও তেজপাতার দাম বেড়েছে। বিপরীতে বছরের প্রথম দিন আটা ও ময়দার দাম কমার পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে ফার্মের ডিম, দেশি আদা, দেশি রসুন, আলু, পাম অয়েল এবং চালের দাম কমেছে।
‘দেখিয়ে দিয়েছি দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব’
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, দলীয় সরকারের সময়ই রংপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু করেছি। দেখিয়ে দিয়েছি দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। বিএনপির বিষয়ে এই কমিশনার বলেন, বিএনপি তো ডে-ওয়ান থেকেই আমাদের মানছে না। তারা ভোটে অংশ নিয়ে বলুক নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না।  রোববার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ইসি আনিছ বলেন, আমরা আগেও বলেছি গত সপ্তাহেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন- কাউকে ভোটে আনার দায়িত্ব আমাদের না। কোনো দল বা কাউকে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব নয়। আমরা আহ্বান জানিয়েছি, আশা করছি তারা আসবে।  তিনি বলেন, নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করব। কাজেই কেউ যদি না আসে তাদের আনার জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। আমরা সেই কাজ করবও না। তাদের কাজ তারা করবেন। আমরা আমাদের কাজ করব। আমরা চেষ্টা করে যাব, বলব যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। আশা করছি, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মুখোমুখিই থাকে। আবার সমঝোতাও হয়। শেষ কথা বলতে কিছু নেই।  সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই সেটা আপনারাই বলতে পারবেন। আমরা তো চেষ্টা করছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, যেখানে অনিয়ম হয়েছে, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। গাইবান্ধায় ভোট বন্ধ করে দিয়েছি, দুদিন পর পুনরায় নির্বাচন হবে। আমাদের প্রচেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, দলীয় সরকারের সময়ই রংপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু করেছি। দেখিয়ে দিয়েছি দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
এক দিনে ১৭ করোনা রোগী শনাক্ত, ১৬ জনই ঢাকার বাসিন্দা
নতুন বছরের প্রথম দিন রোববার দেশে ১৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তবে এই সময়ে মৃত্যু হয়নি কারো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ১৩ জন রোগী শনাক্ত হয়। তাতে দিনে শনাক্তের হার বেড়ে ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ হয়েছে। যা আগের দিন শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ ছিল। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ১৪২ জন হয়েছে। মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতোই ২৯ হাজার ৪৪০ জন রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ জন করোনা রোগীর সেরে ওঠার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৮২১ জন। গত একদিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ১৬ জনই ঢাকার বাসিন্দা। এছাড়া রাজশাহীতে একজন নতুন রোগী মিলেছে। দেশের বাকি ৬২ জেলায় আর কারো শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েনি। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।  ২০২১ সালের ৫ আগস্ট ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারির মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
নতুন বছরের প্রথম দিন রোববার দেশে ১৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তবে এই সময়ে মৃত্যু হয়নি কারো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ১৩ জন রোগী শনাক্ত হয়। তাতে দিনে শনাক্তের হার বেড়ে ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ হয়েছে। যা আগের দিন শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ ছিল।
দেশে করোনার নতুন উপধরণ শনাক্ত
দেশের কোভিড-১৯ এর নতুন উপধরণ শনাক্ত করা হয়েছে। চীন থেকে আসা দেশটির চার নাগরিকের শরীরে অমিক্রনের উপধরন বিএফ.৭ সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে।  রোববার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ওই চারজনের করোনা পরীক্ষার পর এ তথ্য জানা যায়।  আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন জানান, চার চীনা নাগরিকের শরীরে অমিক্রনের নতুন উপধরন বিএফ.৭ পাওয়া গেছে। এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর চীন থেকে আসা দেশটির চার নাগরিকের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ওই দিন ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরীক্ষায় তাদের করোনা ধরা পড়ে। তাদের মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) করোনা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সম্প্রতি চীনে আবার ব্যাপকভাবে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরে আবার চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে চীনা নাগরিকদের জন্য করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। এক ধরণের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে করোনার বিস্তার নিয়ে।
দেশের কোভিড-১৯ এর নতুন উপধরণ শনাক্ত করা হয়েছে। চীন থেকে আসা দেশটির চার নাগরিকের শরীরে অমিক্রনের উপধরন বিএফ.৭ সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে।
রপ্তানি খাতে ঋণের তহবিল ১০ হাজার কোটি টাকা
বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলায় রপ্তানি খাতের সহায়তায় কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণের জোগান দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও একটি তহবিল গঠন করেছে। ক্রেতার কাছ থেকে রপ্তানির কার্যাদেশ পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে এই তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের টাকায় ঋণ দেওয়া হবে। সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হবে। এই ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া চার্জ বা কমিশনের বেশি কোনো ফি বা কমিশন আদায় করা যাবে না।  নতুন গঠন করা ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে রপ্তানিকারকদেরকে কাঁচামাল আমদানির জন্য টাকায় ঋণ দেওয়া হবে। টাকায় ঋণ নিয়ে পরে তারা সেগুলো বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করে এলসি খুলতে পারবেন। ফলে এটি ইডিএফের বিকল্প তহবিল হিসাবে কাজ করবে।  এ বিষয়ে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ তহবিলের কার্যক্রম অবিলম্বে কার্যকর হবে। নতুন তহবিলের নাম দেওয়া হয়েছে রপ্তানি সহায়ক প্রাক অর্থায়ন তহবিল (ইএফপিএ)।  সূত্র জানায়, রপ্তানি খাতকে সহায়তা করতে বর্তমানে আরও দুটি তহবিল চালু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ৭০০ কোটি ডলারের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ), ৫ হাজার কোটি টাকার প্রাক জাহাজীকরণ তহবিল। এছাড়া দেশীয় শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্পের যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল আমদানির জন্য রয়েছে আরও তিনটি তহবিল। এর মধ্যে ২০ কোটি ডলার তহবিল, ২০ কোটি ইউরো ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় রয়েছে আরও একটি তহবিল।  ইডিএফ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণ দেওয়া হয়। এর চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু আইএমএফ এ তহবিলের আকার ছোট করতে বলেছে। এছাড়া বিভিন্ন তহবিলে বরাদ্দ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে বলেছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বাকি তিনটি তহবিলের ব্যবহার কম। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত তিনটি তহবিলের আকার ছোট করে আনছে। প্রাক জাহাজীকরণ তহবিলের ব্যবহার কম হওয়ায় এর বিভিন্ন শর্ত শিথিল করেছে।  সার্কুলারে বলা হয়, এ তহবিল থেকে যেসব ব্যাংক ঋণ নিত আগ্রহী তাদেরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আগামী ২২ জানুয়ারির মধ্যে চুক্তি করতে হবে। এ তহবিল থেকে অর্থ নিলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দেড় শতাংশ সুদ দিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এর বিপরীতে গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাংক ৪ শতাংশ সুদ আদায় করতে পারবে। এটি একটি ঘূর্ণায়মান তহবিল হবে। তহবিলের বিনিয়োগ থেকে সুদ আদায় হয়ে এর আকার বাড়ানো হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ তহবিলের কার্যক্রম চলমান থাকবে। সরাসরি রপ্তানিকারক ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকরা এ তহবিল থেকে ঋণ পাবেন।  এতে বলা হয়- বস্ত্র, পোশাক, নিটওয়্যার শিল্পের উদ্যোক্তারা ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে কাঁচামাল আমদানি করতে যে অর্থের প্রয়োজন হবে তার পুরোটাই ঋণ হিসাবে পাবেন। তবে ২০০ কোটির বেশি ঋণ দেওয়া যাবে না। স্থানীয় ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া যাবে। ঋণের একটি কিস্তি পরিশোধের পর আবার ঋণ নেওয়া যাবে। তবে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কোনো কারণে রপ্তানির মূল্য দেশে না এলে দ্বিতীয় দফায় ঋণ নিতে পারবেন। প্যাকেজিং শিল্পের উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা, প্লাস্টিক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা, সিরামিক খাতের উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ৭ কোটি টাকা এবং অন্য রপ্তানিকারকদেরকে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া যাবে। ঋণের মেয়াদ হবে ছয় মাস। তবে যৌক্তিক কারণে রপ্তানির মূল্য দেশে না এলে এর মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো যাবে।  এতে আরও বলা হয়, কোনো ঋণখেলাপি আলোচ্য তহবিল থেকে ঋণ পাবেন না। ঋণ গ্রহীতাদের সার্বিক ঝুঁকি ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো ব্যাংক বিশ্লেষণ করে গ্রাহক বাছাই করবেন।
বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলায় রপ্তানি খাতের সহায়তায় কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণের জোগান দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও একটি তহবিল গঠন করেছে। ক্রেতার কাছ থেকে রপ্তানির কার্যাদেশ পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে এই তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের টাকায় ঋণ দেওয়া হবে। সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হবে। এই ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া চার্জ বা কমিশনের বেশি কোনো ফি বা কমিশন আদায় করা যাবে না।
রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে
দেশে প্রবাসীদের আয় বা রেমিট্যান্স আসা সামান্য বেড়েছে। সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা (প্র‌তি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে)। এর আগের মাসে (নভেম্বর) ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।  আর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তার আগের বছর ২০২১ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে প্রায় ৭ কোটি ডলার বেশি এসেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৩ কোটি ডলার।  রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।  প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) ৬ মাসে ১ হাজার ৪৯ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলার আয় দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে পাঠিয়েছেন ১ হাজার ২৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৫ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার বেশি এসেছে। হুন্ডি ঠেকাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নতুন কৌশলে নেমেছে। সম্প্রতি হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্সের ২৩০ জন বেনিফিশিয়ারির অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে উত্তোলন স্থগিত করে আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থাটি। বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলে অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দেওয়া হবে।
দেশে প্রবাসীদের আয় বা রেমিট্যান্স আসা সামান্য বেড়েছে। সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা (প্র‌তি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে)। এর আগের মাসে (নভেম্বর) ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
আওয়ামী লীগের কার্যনিবাহী সদস্য হলেন যারা
আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করেছে দলটি। ২৮ সদস্য পদের মধ্যে ২৭টির নাম ঘোষণা করা হয়েছে রোববার রাতে।  এর আগে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়।  সভা শেষে গণভবনের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  সদস্যরা হলেন- আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, বিপুল ঘোষ, দীপংকর তালুকদার, আমিনুল আলম মিলন, আখতার জাহান, ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, মেরিনা জামান, পারভীন জামান কল্পনা, সফুরা বেগম রুমি, অধ্যাপক মো. আলী আরাফাত, তারানা হালিম, সানজিদা খানম, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান, শাহাবুদ্দিন ফরাজি, ইকবাল হোসেন অপু, গোলাম রব্বানি চিনু, মারুফা আক্তার পপি, রেমন্ড আরেং, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, সাঈদ খোকন, আজিজুস সামাদ ডন, সাখাওয়াত হোসেন শফিক, দীলিপ কুমার চ্যাটার্জী ও তারিক সুজাত। ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে টানা দশমবারের মতো নতুন সভাপতি শেখ হাসিনা এবং তৃতীয়বারের মতো ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই দিন ৮১ সদস্যের কমিটির মধ্যে ৪৮টি পদে মনোনীত নেতাদের নাম ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নির্বাচিত করা হয়।  নতুন ঘোষণা দেওয়া ২৭টি সদস্য পদের মধ্যে নতুন মুখ এসেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. আলী আরাফাত এবং দীলিপ কুমার চ্যাটার্জি ও তারিক সুজাত।  এ ছাড়া আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক হয়েছেন গত কমিটির সদস্য সৈয়দ আবদুল আওয়াল শামীম। আর গত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিককে কেন্দ্রীয় সদস্য হিসাবে রাখা হয়েছে। শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদকের পদ এখনো খালি রয়েছে।
আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করেছে দলটি। ২৮ সদস্য পদের মধ্যে ২৭টির নাম ঘোষণা করা হয়েছে রোববার রাতে।
আ.লীগের মনোনয়ন পেলেন না নায়িকা মাহি
বিএনপির ছেড়ে যাওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (ভোলাহাট-গোমস্তাপুর-নাচোল) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি ঢাকাই সিনেমার নায়িকা মাহিয়া মাহি। এই আসনটিতে নৌকার মাঝি মাহি নাকি অন্য কেউ- এ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে ছিল গত কয়েক দিন ধরে। এই আসনসহ বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয় আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দুটি আসন ১৪ দলীয় শরিকদের ছেড়ে দিয়েছে, আর বাকি আসন উন্মুক্ত থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। রোববার রাতে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে এসব জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ১৪ দলীয় জোটের ওয়ার্কার্স পার্টি, বগুড়া-৪ আসনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদকে (ইনু) ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। কাদের বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনেও আমরা কোনো প্রার্থী দিচ্ছি না। এ আসনটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।  যে তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো: বগুড়া- ৬ আসনে রাগেবুল আহসান রিপু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মু. জিয়াউর রহমান এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আব্দুল ওদুদ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন মাহি। কয়েক দিন ধরে বেশ আলোচনা হচ্ছিল মাহি মনোনয়ন পেয়ে যেতে পারেন। তবে শেষমেশ এই আসনে নৌকার টিকিট পেয়েছেন মু. জিয়াউর রহমান। মাহিয়া মাহি গত ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চিত্রনায়িকা মাহি উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, মাহির পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। মাহি নিজেও আওয়ামী লীগ করেন। ফলে তাকে মনোনয়নপত্র কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের জানান, আমাদের দলের মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। এরপর ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেন মাহি। পরে তিনি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় মাহির সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী রকিব সরকার। কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটিতে (একাংশ) পদ পেয়েছেন মাহিয়া মাহি। আগামী ২ বছরের জন্য তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন।
বিএনপির ছেড়ে যাওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (ভোলাহাট-গোমস্তাপুর-নাচোল) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি ঢাকাই সিনেমার নায়িকা মাহিয়া মাহি। এই আসনটিতে নৌকার মাঝিমাহি নাকি অন্য কেউ- এ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে ছিল গত কয়েক দিন ধরে।
কৃত্রিম দাঁত নিয়ে ওজু-গোসল করা যাবে?
প্রশ্ন: কেউ যদি বিনা প্রয়োজনে দাঁতে স্বর্ণের ক্যাপ লাগায় অথবা স্বর্ণের কৃত্রিম দাঁত লাগায় তাহলে তা নিয়ে কি ওজু-গোসল করা যাবে? উত্তর: প্রয়োজন ব্যতীত দাঁতে স্বর্ণের ক্যাপ লাগানো অথবা স্বর্ণের কৃত্রিম দাঁত লাগানো ঠিক নয়। তবে কেউ এমনটি করলে তা নিয়েই ওজু-গোসল করা জায়েজ হবে। কারণ তখন তা শরীরের একটি অংশে পরিণত হয়ে প্রকৃত দাঁতের ন্যায় হয়ে যায়।       সূত্র: ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ৫/৩৩৬, ১/১৩, ফাতাওয়া দারুল উলুম জাকারিয়া-১/৬৬১, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল-২/৫২।   উত্তর দিয়েছেন- মুফতি সাদেকুর রহমান, মুফতি ও মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন (র.) দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া ঢাকা।
প্রশ্ন: কেউ যদি বিনা প্রয়োজনে দাঁতে স্বর্ণের ক্যাপ লাগায় অথবা স্বর্ণের কৃত্রিম দাঁত লাগায় তাহলে তা নিয়ে কি ওজু-গোসল করা যাবে?
৩৬ বলে সেঞ্চুরি
২০১৪ সালের এই দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৩৬ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির তৎকালীন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসন।  তিনি ভেঙেছিলেন পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির ১৭ বছরের পুরোনো রেকর্ড। পরের বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ৩১ বলে সেঞ্চুরি করে অ্যান্ডারসনকে ছাড়িয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স।
২০১৪ সালের এই দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৩৬ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির তৎকালীন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসন।
নির্ঘুম জীবন
মানুষ কেন!প্রাণিকে কোনোকিছু শিখিয়ে দিতে হয় না। বংশগতি সংরক্ষণ ও বাঁচার প্রয়োজনে সে সবকিছু শিখে নেয়। হোক সেটা সংঘর্ষ শান্তি শ্রান্তি বিনোদন দারিদ্র্য বিমোচন। অনলাইনে পড়ালেখা, সিনেমা নাটক প্রেম বিরহ সংসার চাকরি; পাতি নেতা বড় নেতা হওয়ার বাসনা, রান্না কান্না খুড়ি আপু হয়ে ধর্মগুরুর উপদেশ রীল; ইউটিউবার সেলিব্রেটি হতে দেখা উপলব্ধি নিয়ে মানিকনগর গ্রামের বেকার যুবক সাকলাইন নারী পুরুষ স্বাবলম্বী হতে অনলাইন হাতে খড়ি স্কুল খুলে দিলেন। চ্যাট অপশনের শত শত সাংকেতিক ইমোজি স্টিকার হাসি কান্না ঘৃণা ভাষা রপ্ত করেন। মুখ বেঁকিয়ে গাল ফুলিয়ে কোমর  নিতম্ব সাপের মতন দুলিয়ে দুর্দান্ত রীল ব্যবসায়ী হতে রিচলিত স্খলিত শরীরী ভাষা প্রশিক্ষণ দিতে লাগলেন।' হুম ' শব্দের প্রায়োগিক দুর্দশা নিয়ে হাতে কলমে ইশারা তালি তালিম মিশেল ভাবনায় রয়ে সয়ে একাকার জীবন গড়ে নিলেন। মানিকনগর বর্ধিষ্ণু গ্রামের সরল-গরল ঘরাণা মানুষগুলোর চিত্র-বিচিত্র রঙধনু মনের রং  ঢং সঙ জীবন ধীরে ধীরে ক্ষীয়মান হতে হতে হুম সাহিত্যে হাত পাকিয়ে - পাস্তুরায়ন নিরুপদ্রব অন্তর্জাল জীবন সাহিত্যে যে যার মতন একা একা ইমোজি স্টিকার জীবন বেছে নিলেন। মানিকনগর গ্রামে চা দোকানের বাগড়া ঝগড়া বিবাদ মারামারি থেমে গেল। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হাট বাজার হয়ে গেল- রাক্ষস খোক্ষস পুরী। সকলের কানে কানে লাগানো ব্লুটুথ হেডফোন। নেই হাঁক ডাক চিৎকার চেঁচামেচি অট্টহাসি কোলাহল। গাজীপুর পূবাইল সিনেপাড়ার স্যুটিং স্পট ভাড়াটে উপকরণ ঘরবাড়ি জমিজিরাত বউ বাচ্চার মতন পাল্টে গেছে এখানেও রাতারাতি মানুষের জীবনাচার। নতুন করে হাতে খড়ি জীবনাচারের সুফল পেতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে কিছুদিন। তবে এটা ঠিক যে, বর্তমান হয়ে আগামী দিনের ফেসবুকীয় শুদ্ধাচার সবাই মেনে নেন। মানিকনগর গ্রামের মানুষজন এখন পারতপক্ষে কথা বলেন কম। মৌনতা বাড়িয়ে দেয় দীর্ঘজীবন, - রহস্য জেনে  কুশল বিনিময়েও তারা সংহত সংযত। দারিদ্র্যতা একমাত্র নরক অভিশাপ জেনে তারা পারতপক্ষে ফেসবুকীয় মনিটাইজেশন শুদ্ধাচারের বাইরে হাঁটেন কম। এ বারের এমপি প্রার্থী মানিকনগর গ্রামের চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন। ফেসবুকীয় মনিটাইজেশন দয়াপানে তাকিয়ে কোনোমতে সংসার চালান। ফেসবুক আছে যার পৃথিবী তার, মুখে শ্লোগান হাতে বুড়ো আঙুল ঘষে ঘষে পরশুরাম লাঙল চষে বেড়ান - আট ইঞ্চি চার ইঞ্চি টাচ স্ক্রীনে। গর্ব করে চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন বলেন - এ বদ্বীপের আলম আদম রতন স্বপন মুরগি ছাগল চোর কলম চোর প্রজেক্ট চোর ছেঁচড়া প্রতারক বাটপার যেখানে এমপি হয়ে টেবিল চাপড়ে ভিআইপি হতে পারেন; পুলিশ পাহারায় সাইরেন বাজিয়ে পুলিশ পিটিয়ে হাড়গোর ভেঙে দিতে পারেন; সে তুলনায় আমিত ভিআইপি প্রার্থী। কারোর টাকা মেরে খাইনি,দেশের টাকা পাচারের বদনাম নেই,সন্ত্রাস করিনা,দখল বেদখলে রাখিনি ব্যক্তিগত কিংবা সংখ্যাগুরু লঘু কারোর সম্পদ কিংবা সম্পত্তি। কারোর বউ মেয়ে ভাগিয়ে বিয়ে করিনি। নারী নিয়ে লটর পটরের বদনাম নাই। নাচি গাই খাই দাই এটা ওটা দেখাই। বানরের মতন লম্পঝম্প দিয়ে ফরেন টাকা ডলারে আনি। দেশের মান ইজ্জত রুজি বরকত বাড়িয়ে দিয়েছি সোমালিয়া জলদস্যুদের মতন কয়েকগুণ বেশি। সোমালিয়া নৌবাহিনী সদস্যরা যেমন সরকারী চাকরি শেষে রিটায়ার্ড করে জলদস্যু টীমে কাজ করেন;আমিও  আগামী বছর পাঁচেক পরে ফ্রিল্যান্সিং পেশা বেছে নিতে পারব। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন পরীক্ষা জিতে হুম স্টিকার প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে জনমত জরিপে চৌধুরী ময়েজ উদ্দিনের পক্ষে ইউটিউবার অপু ভাই রাঁধুনি শেফালি খালা ভাড়াটিয়া জিহ্বাস্ত্র নিয়ে সেফুদার আকাশচুস্বী স্বপ্ন দেখানো ভোট বিজ্ঞাপন যুদ্ধে ইউটিউবার এমপি প্রার্থী চৌধুরী ময়েজ উদ্দিনই এগিয়ে রইলেন। সবার দেয়া এটা ওটা প্রতিশ্রুতি বিজ্ঞাপন যুদ্ধের ডামাডোলে চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন অনলাইন অফলাইনে বললেন, - প্রিয় মানিকনগর কাঞ্চননগর পাইন্দং বেড়াজালী রাঙ্গামাটীয়া নিবাসী,যদি এমপি পদে নির্বাচিত হতে পারি; ইন্টারনেট সেবা ফ্রি পাবেন। সার কীটনাশক ফ্রি পাশাপাশি মাঠে ঘাটে সিনেমা নাটক দেখবেন,ভিডিও কলে কথা বললেন মন চাইলে প্রেম করবেন। পরিবারের সবাইকে চোখে চোখে রাখবেন। চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন প্রতিশ্রুতি প্রতিজ্ঞা বিজ্ঞাপন দিয়ে বাজিমাত করে সবার মন জিতে এমপি চেয়ার পানে অপেক্ষা করতে থাকেন। মেম্বার হতেও যে রকমের উতলা টেনশন কাজ করে; তার চেয়েও সহজ মনে চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন বিপুল ভোট পেয়ে এমপি হয়ে গেলেন। ছোটখাটো কালভার্ট ব্রিজ অনলাইনে উদ্বোধন করেন। উপজেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিং নিয়ে ওসি উপজেলা চেয়ারম্যান ইউএনও নিয়ে আমিত্ব অহঙ্কার নেই বললেই চলে। নিজেও সরকারি কাজের বাইরে অনলাইনে আয় করেন। পার্থক্য এটুকুন যে,সরকারের টাকা নয় ছয় করেন না। চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন - মার্কিন লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সে বিখ্যাত উক্তি -  সুযোগ ও পার পেয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা থাকলে সবাই খারাপ ব্যবহার করেন; নিয়ে বেশ সতর্ক ও সংযত। সে সুযোগ পারতপক্ষে এমপি সাহেব কাউকে দেন না। যথারীতি এমপি চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন নিজ এলাকায় হুম অনলাইন হাতেখড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্হাপন করলেন। হুম একাডেমি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দিকে দিকে হুম প্রেম হুম বিচ্ছেদ নির্ঘুম জীবন গতিধারা গড়ে হুম সাহিত্যে - রাতারাতি প্রথাবিরোধী এমপি অমরত্ব এনে দেন। চিরকালই মানুষ চেয়েছে সুখ শান্তি। জাগতিক সুখ দুখের বাইরে একমাত্র প্রথাবিরোধী হাতে গোনা ক'জন ছাড়া হেঁটেছেন কম। লক্ষ মানুষেতেও প্রথাবিরোধী মানুষ নেই বললেই  চলে। তাইত মানুষের কাছে সুখের বিপরীতে সম্পর্কের গুরুত্ব কম। শখ সুখ আয়েশী জীবনের বিপরীতে মানুষের নির্ঘুম জীবন। হোক না বাবা মা সন্তান স্বামী স্ত্রী প্রেমিক প্রেমিকা স্বকীয়া পরকীয়া অজাচার নিষিদ্ধ সম্পর্ক বন্ধু সুজন কুজন। যে কোনো প্রকারেই হোক না কেন মানু্ষের সুখ চাই। সে অয়োময় মরীচিকা সুখের খোঁজে মানুষ সময়ের সাথে গা ভাসিয়ে হয়েছেন, যুগে যুগে দেশান্তরী সুখান্তরী। সুখের ধ্রুপদী মহোৎসবে কেউ হয়েছেন মহারাজ সম্রাট; কেউবা পিছিয়ে পড়ে হয়েছেন নিষণ্ন নিষাদী। সংসদ অধিবেশন সপ্তাহখানেক ধরে মূলতবী। এমপি হোষ্টেল ছেড়ে চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন নিজের এলাকা পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন। হুম হুম অধিবেশন  স্পিকার মুখে হুম হুম জয়যুক্ত হয়েছে টেবিল চাপড়িয়ে এরি মাঝে দেশ বিদেশের ভাইরাল মুখ ময়েজউদ্দিন। এমপি হয়েও ফেসবুকীয় শুদ্ধাচার মনিটাইজেশন সাহিত্যের বাইরে পারতপক্ষে যেতে চান কম। ফ্রি ইন্টারনেট পাবার পরে রাতারাতি পাল্টে গেছে মানিকনগর গ্রামের হালচাল।  কেউ কারোর সাথে মেসেঞ্জার হোয়াটসঅ্যাপ টেলিগ্রাম ছাড়া পারতপক্ষে অধরওষ্ঠ এক করে কথা বলেন কম। বিয়ে শাদী কনে দেখা হয়ে প্রেম বাসর দেনদরবার পর্যন্ত ফেসবুক রীল মনিটাইজেশন বাণিজ্যে সবকিছু সেরে নেন। এলাকায় এমপি হয়ে আসার পরেও কদর নেই তেমন। দান দয়া নিতেও কেউ আসেন না তেমন। গ্রামের মুরুব্বী ছাড়া যুবশক্তি কেউ দেখা করতে চাইছেন না দেখে এমপি চৌধুরী ময়েজউদ্দিন সাহেব বেশ চিন্তিত। কেউ কেউ সরবে নীরবে বলাবলি করে বলেন,- নেই আমাদের পারিবারিক সনাতনী বন্ধন। নেই পরিবার সংসার। নেই বউ বাচ্চা। মুরুবীরা ক্রন্দন করে বলেন,বাবা আমাদের বেশি টাকার দরকার নাই। আমরা ইন্টারনেট সংসার চাই না । এনে দাও ঠিক আগের মতন অটুট পারিবারিক বন্ধন। সবকিছু এনে দাও আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম যেমন।  এমপি সাহেবের সরকারী গাড়িতে জাতীয় পতাকা। কানে ব্লুটুথ পরে হেলেদুলে সিংঘম রাজকীয় থোরাই কেয়ার না করে হেঁটে চলেছেন,কিছু কিশোর গ্যাং। সাইট না পেয়ে ফেসবুকীয়  শুদ্ধাচার  মনিটাইজেশন ধনী কিশোর গ্যাং চোখে চোখ রেখে এমপি সাহেবকে বলেনঃ ' আপনি এমপি তাতে আমাদের কী? আপনার কাজ - জনগণের সেবা করা।' এমপি চৌধুরী ময়েজ উদ্দিন প্রটেকশন পুলিশের দিকে তাকালেন। কিশোর গ্যাং এবার- সহজ প্রশিক্ষণ বিশাল মনিটাইজেশন বাণিজ্য যুদ্ধ জেতা গেরিলা কৌশলে মোবাইলে লাইভ চালু রেখে বলেনঃ আপনারা দেশপ্রেম বোঝেন না; দেশপ্রেমিক মনিটাইজেশন রেমিটেন্স যোদ্ধা চিনেন না। আপনাদের কে বেতন দেয়? কোথা হতে আসে বেতন? আপনারা এমপি পুলিশের বেতন এ সহজ সরল ফেসবুক মনিটাইজেশন যোদ্ধাদের নিকট হতে আসে। এ কী! মিনিট কয়েকের মাঝে হাজার লক্ষ আবেগীয় পর্যবেক্ষক এমপি পুলিশ নিয়ে নয় ছয় বলে চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে লাইক শেয়ারে সারি সারি ফোরাত কারবালা বেদনাশ্রু বইয়ে দিচ্ছেন। কিশোর গ্যাং বেধনাস্ত্র হয়ে অনেক টাকা কামাই করে নিলেন। ফেসবুকীয় পৃথিবী দ্বীপের ভরাট বেদনার বদ্বীপের ঘরে ঘরেও চলছে ফেসবুকীয় লাভ বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। সে ট্রায়াঙ্গলে নেই লজ্জা শরম নামের কোনো নৌযান সাগরযান কিংবা ডুবোযান। ঘরে ঘরে চলছে অন্তর্জাল চিৎকার হাহাকার। সংসার নাই, সংসার কই আমার? ক্রন্দন। কোথায় স্ত্রী পুত্র কন্যা পিতা মাতা পরিজন প্রেমিক প্রেমিকা আমার তোমার তার? ঢাকা মোহাম্মদপুর তাজমহল সড়কের সি ব্লক, গোশালা কোচিং সেন্টারে চলছে ফেসবুক মনিটাইজেশন শোকের মাতম। গোশালা মালিক পি সরকার, সংসার কই? আমার সংসার কই? বলে হাপিত্যেশ করে চলেছেন।  খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন,তার ফেসবুকীয় মনিটাইজেশন সংসারে অন্য কেউ সংসার পেতে বসে আছেন। মাঝে মাঝে টেস্টোস্টেরন হরমোন মেডিসিন গিলে আবেগহীন দায়সারা কন্ঠে চিৎকার করে বলেনঃ শিমুল, তুমি কই?  তুমি কই? কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা কেন যেনো তোমায়! দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে তোমার দেহ মন; আমি সুখের সংসার করতে চাই। পৃথিবীদ্বীপ  বদ্বীপের  ঘরে ঘরে চলছে সুখে সংসার করার তীব্র হাহাকার শোকের মাতম। লেখক: রাজীব কুমার দাশ প্রাবন্ধিক ও কবি পুলিশ পরিদর্শক,বাংলাদেশ পুলিশ। মেইলঃ rajibkumarvandari800@gmail.com
মানুষ কেন!প্রাণিকে কোনোকিছু শিখিয়ে দিতে হয় না। বংশগতি সংরক্ষণ ও বাঁচার প্রয়োজনে সে সবকিছু শিখে নেয়। হোক সেটা সংঘর্ষ শান্তি শ্রান্তি বিনোদন দারিদ্র্য বিমোচন।
এই তো সামনে
সজীব। সৃজনশীল প্রাণবন্ত যুবক। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে পত্রিকা বিডি জবস অনলাইন ঘেঁটে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শর্ত মেনে- একটার পর একটা চাকরির আবেদনে সাড়া দিয়ে চলেছেন দিনের পর দিন। মাঝে মধ্যে রিটেন পরীক্ষার ইন্টারভিউ কার্ড আসে। মেসেজও আসে। চাকরি বাজারের চেহলাম কুলখানি সেরে বেকার সজীব যখন বুঝতে পারেন- এই বদ্বীপে চাকরির বাজার মানে মেধার পাশাপাশি সিংহভাগ তদ্বির মেসেজ সংকেত ইয়েসকার্ড পুঁজিরও বেশ দরকার। তবুও বেকার সজীবের দুঃখ নাই। তার অনলাইন কোচিং স্লোগান- 'বিত্ত নয়, চাই চিত্ত হাহাকার' দেখে কম মেধাবীরা যখন চাকরি না পেয়ে পরম আত্মবিশ্বাস মনে সাহারা মরুভূমি ভূমধ্যসাগর না পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে; তখনই ঘটে আসল বিপত্তি। খরগোশ কচ্ছপ জাতীয় চাকরি বাজার প্রতিযোগিতা দৌড়ে সে চরম মেধাবাজ তদ্বিরবাজ ধড়িবাজ চামচাবাজদের দখলে বদ্বীপের আকাশ-বাতাস। তারা একে একে দখলে নিয়েছেন সমাজসেবা, ব্যাংক-বীমা কেপিআই হয়ে সরকারি-বেসরকারি সব স্থাপনা। বিশ্বাসের আকাল বিশ্বাসে তবুও নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছে সজীব। রাতারাতি বিদেশের শিল্পপতি আম্বানি মার্ক জুকারবার্গ না হোক; হতে চেয়েছে দেশপ্রেম সততা বুকে জাতির পিতার একজন উত্তরসূরি- অর্থনৈতিক মুক্তি দর্শনের ছাত্র। শোনতে চেয়েছে পরম বিশ্বাসী স্নেহধন্য- 'তুই, তোকারি, ডাক। আয়- আমার সাথে খাবি পেটভরতি খাবার।  পিতার দেখানো পথে পরম বিশ্বাসে তবুও হেঁটে চলেছেন সজীব। উপলব্ধির বর্ণিল হৃদয়ে সজীব এখন দেখছে কোটি কোটি টাকার বিলাসী প্রজেক্ট গাড়ি, চাকচিক্যময় ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সারি সারি তাপানুকুল অফিস। আরাম চেয়ারে বসে আছেন- খালকেটে আনা পিতার বিশ্বাসখেকো কিছু কুমির। সব গিলে খাই খাই ইয়েসকার্ড পুঁজির অ্যানাকোন্ডা। উদ্যোক্তা হবার বিশ্বাস দৌড়ে নিঃস্ব সজীব। ভাগ্য ফেরাতে শেষ ঠিকানা মতিঝিল শাপলা চত্বর হতে কাকরাইল। রিকশা ভাড়া নেই। ভুল পথে সজীব উদভ্রান্ত জীবনমুখী মানুষের ভিড়ে হেঁটে চলেছেন। সেই ভিড়ে মাঝে মাঝে ক্ষুধাতুর শুষ্ক কৃত্রিম হাসিমাখা মুখে পথিক বন্ধুদের প্রশ্ন করেন। কেউ উত্তর দেন, কেউবা উটকো ঝামেলা মনে করে পাশ কাটিয়ে চলে যান। -ভাই, বিদেশ যাবার অফিসে যাব, কোনদিকে যাব? কতদূর? -এই তো সামনে। বিকাল গড়িয়ে গেছে। সজীব হেঁটে চলেছেন সামনে। পথ ফুরোয় না। 'এই তো সামনে' বদ্বীপের কানে বাজে এমন কমন বাক্য। হোক সেটা নয়টা পাঁচটা সরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমা, বাস-ট্রেন স্টেশন। দায়িক কৃষাণ-কৃষাণি লোন মুখে, সলজ্জ গৃহবধূর এনজিও লোন আর্তনাদ নির্লজ্জ কিস্তি মুখের বিজ্ঞাপন। বেকার বাবার মুখে আইবুড়ো কন্যার মুখে, লাখো বেকার মুখে রাশি-রাশি ক্রন্দন। প্রেমিকা নীলার মুখখানি ভেসে উঠেছে স্মৃতির মানসপটে সযতনে। ভরসা নৌকায় চেপে সেও হাত ধরে বলেছিল- 'এই তো সামনে।' লেখক: রাজীব কুমার দাশ প্রাবন্ধিক ও কবি পুলিশ পরিদর্শক মেইল: rajibkumarvandari800@gmail.com.
সজীব। সৃজনশীল প্রাণবন্ত যুবক। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে পত্রিকা বিডি জবস অনলাইন ঘেঁটে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শর্ত মেনে- একটার পর একটা চাকরির আবেদনে সাড়া দিয়ে চলেছেন দিনের পর দিন।
এতকিছুর পরও তুমি একাই: শাহাবুদ্দিন আহমেদ
বিশ্বখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। যার তুলির ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলন ও বিজয়। তার ছবিতে সংগ্রামী মানুষের দুর্দমনীয় শক্তি ও অপ্রতিরোধ্য গতির অভিব্যক্তি দুনিয়াব্যাপী সুপরিচিত। আধুনিক ঘরানার এ শিল্পীর শিল্পসত্তা ব্যাপকভাবে সমাদৃত ইউরোপে। পেয়েছেন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘নাইট’ উপাধি। মাস্টার পেইন্টার্স অব কনটেম্পোরারি আর্টসের পঞ্চাশজনের একজন হিসাবে ১৯৯২ সালে বার্সেলোনায় অলিম্পিয়াড অব আর্টস পদকেও ভূষিত হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পদক। মুক্তিযোদ্ধা এ শিল্পীর সঙ্গে চিত্রকলা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ে আড্ডা হয়েছে তার ফ্রান্সের প্যারিসের ভিনসেন্টের বাসায়। সেই কথোপকথনের বিশেষ অংশ নিয়ে এ সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক আলমগীর স্বপন ও রফিকুল বাসার। তার অংশবিশেষ পত্রস্থ হলো। প্রবাসে আছেন দীর্ঘদিন? প্রবাস থেকে বাংলাদেশের শিল্প চর্চাকে কীভাবে দেখেন? : চিত্রকলা বা সাহিত্য সৃজনশীলতার এমন মাধ্যম যেখানে সময় দিতে হয়। সংবাদপত্রে যেমন সাংবাদিকরা সংবাদ লেখে প্রতিদিনের ঘটনাকে উপজীব্য করে। যা ঘটছে তা তুলে ধরা হয়। কিন্তু চিত্রকলা বা সাহিত্য সময় নিয়ে করতে হয়। হঠাৎ করে চাইলাম আর হয়ে গেল এমন না। এর ফলে অনেকের ধৈর্য থাকে না। নানা সমস্যা দেখা দেয়। বাঁচার তাগিদে অনেক কিছু করতে হয়। অনেকে বিলীন হয়ে যায়। এখন বাংলাদেশে যে চিত্রকলার চর্চা হচ্ছে, সেটাও সময়ের ব্যাপার। সময় দিতে হবে। বাংলাদেশে এত ঝামেলা, বিশেষ করে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে। নানা কিছুর প্রভাব ও আছর এখানে পড়েছে। এসব ক্ষেত্রে এত কিছু হলেও চিত্রকলায় এর প্রভাব সেভাবে পড়েনি। এটা আশ্বর্যজনক। চিত্রকলায় যে এগ্রেসিভনেস বা রাগের ভাবটা সেটা এসেছে তাদের সৃষ্টিতে। যেটা আগে ছিল না... এই ‘রাগ’ বলতে বোঝাচ্ছি, যেমন ধর, আগে সুন্দর ছবি বলতে, ল্যান্ডস্কেপ, প্রাকৃতিক দৃশ্য, এগুলো আগে বেশি আঁকা হতো। এখন এর সংখ্যাটা কমে যাচ্ছে। মানুষের দৈনন্দিনের সমস্যা ঠাঁই পাচ্ছে চিত্রকলায়। এসব নিয়ে এ প্রজন্মের চিত্রকররা চিন্তা করে। এক্ষেত্রে প্যারাডাইম শিফট বা চিন্তাভাবনার রূপান্তর কীভাবে হয়েছে বলে মনে করেন? : এর অনেক কারণ রয়েছে। আমার মনে হয় ইন্টারনেট, মোবাইল চলে আসায় চিত্রকলায় এ পরিবর্তন এসেছে। তারা বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। প্রযুক্তি গত বিশ ত্রিশ বছরে চিত্রকলায় তরুণ ও যুবকদের দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। তারা এর মাধ্যমে বাইরের ভালো ভালো কাজগুলো থেকে ভালো জিনিসটা যেমন নিচ্ছে, তেমনি নিজেদের যা আছে সেটাও ভুলে যাচ্ছে না। ভেতর ও বাইরের সংমিশ্রণ আছে তাদের চিত্রকলায়। তবে চিত্রকলার মূল চাবিকাঠি হলো ‘নিজস্বতা’। নিজস্বতাই চিত্রকলার শক্তি। এটা আছে আমাদের চিত্রকলায়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, এস এম সুলতান, কামরুল হাসানরা এখনো তারা আছেন তাদের কাজের মাধ্যমে। আপনারা যখন থেকে আঁকা শুরু করেছেন, সে প্রজন্মের অনেকেই তাদের কাজের মাধ্যমে দীপ্যমান। বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন। সেই মানের চিত্রশিল্পী কী এখন আমরা পাচ্ছি? : সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলায়, এক্ষেত্রেও সময় দিতে হবে। যেমন বাংলাদেশের সাহিত্যে, সিনেমা, সংগীত সবক্ষেত্রেই একই কথা। আমি নিজে শিল্পী বলে যে চিত্রকলার কথা বলছি তা নয়। সাধারণত পৃথিবীতে যেখানে ঝঞ্জাট বেশি ওইখানে চিত্রকলা অনেক পিছিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এটা প্রথমেই পেয়ে গেছে। তবে জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, সুলতান তারা কী একদিনে হয়েছে? ওনারা সারাটা জীবন ছবি এঁকেছেন। এখন আমাদের এখানে, এ জন্য প্রজন্মের কথা চলে আসছে। ওরা হয়তো বড়জোর কেউ ২০ বছর কেউ ১০ বছর ধরে ছবি আঁকছে। চিত্রকলায় এ সময়টা কিছুই না। আবার বলি, ধরো, মাইকেল জ্যাকসন, উনি তো অল্প বয়সেই মারা গেছেন, এ জাতীয় লোক কিন্তু আলাদা একটা সত্ত্বা। এভাবে বিচার করা যায় না। জয়নুল আবেদীন, উনি আলাদা। উনি যেই সময় জয়নুল আবেদীন হয়েছেন, নাও তো হতে পারতেন। কিন্তু তার প্রতিভা, একাগ্রতা ছিল। একইভাবে বঙ্গবন্ধু কীভাবে বঙ্গবন্ধু হলেন? সে সময় কত বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ছিলেন। কিন্তু মানুষের রাজনীতি থেকে একজন বঙ্গবন্ধুর সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু ঘটনা এখানে ফ্যাক্টর হয়েছে। আবার যদি বলি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল কী নজরুল হওয়ার কথা ছিল? না। এগুলো আগে থেকেই ইঙ্গিত দেয়, যে প্রকৃতির একটা শক্তি আছে। সোনার বাংলা হুট করে একদিন সোনার বাংলা হয়ে যায়নি। এর ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক ব্যাপার আছে। প্রকৃতির একটা শক্তি আছে। এখানে একদিনে ধান কিংবা পেঁয়াজ হয়ে যায়নি। চিত্রকলাও একই। জয়নুল আবেদীন, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ কিংবা বঙ্গবন্ধুর কথা বলো-এই যে বিশ্বখ্যাত মানুষগুলো এসেছে এর পেছনে তাদের শ্রম, সাধনা, মেধা ছিল এবং তাদের কারণে আমাদের শিল্প-সাহিত্য-রাজনীতি বেঁচে গেছে। বিশ্বে আমাদের পরিচিতি তৈরি হয়েছে। তারা না থাকলে এসব ক্ষেত্রে আমরা হয়তো আরও একশ-দুইশ বছর পিছিয়ে থাকতাম। এ প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে সেই শ্রম-ত্যাগ ও আত্মবিশ্বাস দেখতে পান? আমরা এক্ষেত্রে কতটা এগোতে পারছি? : এগোচ্ছে তো। তবে এগোনোর কথা ছিল না। তোমরা যদি অন্য কোনো দেশের কথা চিন্তা কর সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু আমাদের ছোট্ট একটা দেশ। স্বাধীনতার সাড়ে ৪ বছরের মাথায় একটা দেশে ফাটল দেখা দিল, এমন এক ফাটল হয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। বিরাট একটা পাথর যে ছিল, ওই পাথর খণ্ড খণ্ড করে ফেলছে। এ রকম বিপজ্জনক ঘটনার পর চিত্রকলা বা সাহিত্যের কথা চিন্তা করার কথা না। এরপরও আমরা চিন্তা করেছি। কারণ হলো চিত্রকলা, সাহিত্য ও সংগীত হলো আমাদের মূলে আছে। এটাই আমাদের বাঙালির প্রকৃতি। এটাকে নষ্ট করার জন্য অনেকে পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু পারছে না। এই বাইরের শক্তি কারা? ভেতরের কোনো শক্তিও কি এর পেছনে আছে? : আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি বিশেষ করে সিনেমার ক্ষেত্রে দেখা গেছে বাইরের রাজনৈতিক চালে ঘুরেফিরে অন্যদিকে টার্ন নিয়েছে। আমেরিকার হলিউড বা ভারতের বলিউডের দিকে গেছে। বাংলা ভাষা ও বাঙালিত্বটা এ মিডিয়া থেকে সরে গেছে এভাবে। অথচ বাংলায় অনেক কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। একটা সিনেমা বানানো অনেক কঠিন কাজ। চিত্র পরিচালক চাইলেই হওয়া যায় না। এখানে পরিচালককে তার কাজ বুঝতে হবে, দর্শককে বুঝতে হবে। তার মধ্যে সৃজনশীল চিন্তা ও নতুন কিছু নির্মাণের স্বপ্ন থাকতে হবে। প্রযুক্তি বুঝতে হবে। এসব টাকা দিয়ে হয় না। তাহলে তো সব ধনীরা সিনেমার পরিচালক হয়ে যেত। শিল্পের ক্ষেত্রে টাকাটা মূল চাবিকাঠি নয়। পুঁজিবাদি অর্থব্যবস্থায় বর্তমানে যে ভোগবাদী প্রবণতা, সেখানে অর্থের পাশাপাশি ধর্মীয় মৌলবাদও কী শিল্পের বিকাশে ও চর্চায় বাধা হিসাবে কাজ করছে বলে মনে করেন? : মৌলবাদ আছে বলেই চিত্রকলা এগোবে। এর বিস্তৃতি এখন পৃথিবীজুড়ে। এটা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি। কিন্তু সেই মৌলিক অবস্থান আমরা ধরে রাখতে পারিনি। পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পরবর্তী সামরিক সরকারগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করেছে। তাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যুদ্ধটা কিন্তু এখনো চলছে। হয়তো অন্যভাবে। যারা বাংলাদেশকে বিশ্বাস করে না ওরা একেক সময়ে মন্ত্রী হয়েছিল। এটা অবিশ্বাস্য! বাংলাদেশের পতাকা তাদের গাড়িতে উঠতে দেখেছে তোমার-আমার চোখ। এটারও একটা শাস্তি ভোগ করতে হবে তোমাকে-আমাকে। কারণ তুমি মেনে নিয়েছ। এত কিছুর পরও আমাদের কপাল ভালো প্রজন্ম চত্বরের ওরা, শাহবাগ আন্দোলন করেছিল। এ ধরনের আন্দোলন তো আশা জাগানিয়া। যেমন ধর বৃষ্টি হলো। এরপর রোদ এসে সব শুকিয়ে গেল। কেউ বাইরে থেকে বৃষ্টি দেখে এসে, ভেজা প্রকৃতি দেখে এসে, যে ঘরে আছে তাকে বলল, জান আজ অনেক বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ভেতরে যে ছিল সে বৃষ্টির কথা শুনে বলল, কই চারপাশ তো শুকনা। সে বিশ্বাস করল না। বলল, আরে না তুই মিথ্যা কথা বলছিস। বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু ঘটনাটা কিন্তু সত্য, বৃষ্টি হয়েছিল। এরপর যে বলেছিল বৃষ্টি হয়েছে, সে বলল, আচ্ছা তুমি বিশ্বাস করছ না বৃষ্টি হয়েছে। তাহলে চল বাইরে যাই। বৃষ্টির পর মাটির একটা গন্ধ পাওয়া যায়, সেটা তুমি অনুভব করতে পারব বাইরে গেলে। তারা বাইরে গিয়ে দেখল যে, মাটির একটা গন্ধ ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে। তখন যে বিশ্বাস করছিল না বৃষ্টির বিষয়টি, সে বলল, ‘ও তাই তো, মাটির গন্ধ পাচ্ছি।’ এগুলো হচ্ছে প্রকৃতির সত্য। এত বড় সত্য, একটা ঘটনা। ত্রিশ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছে। অত্যাচার-অনাচারের কথা এগুলো বাদ দিলাম। কিন্তু ত্রিশ লাখ শহিদের বলিদান কি বৃথা যাবে? তাহলে তো পৃথিবী টিকে না। এটা হতে পারে না। আমরা মানুষ তো। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চিত্রকলা এবং সাহিত্যের বড় প্রেরণা? অন্যদিকে শিল্প-সাহিত্যও ছিল আমাদের মুক্তির আন্দোলনের বড় অস্ত্র? এর থেকে কি আমরা পিছু হটছি? : ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজদের অত্যাচার-নির্যাতনের ভেতর থেকেই আমরা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের অনেক সৃষ্টি পেয়েছি। তা না হলে আমরা তাদের যেভাবে চিনি, সেটা নাও হতে পারত। আরও অনেকেই আছে। শিল্পী-সাহিত্যিকরা সংকটের মধ্যে থেকেই নতুন কিছু সৃষ্টি করে। এখানেই তাদের মূল ভূমিকা। এ ভূমিকা থেকে সরে গেলে তোমার আর কিছু করার ক্ষমতা থাকবে না। কারণ পৃথিবীতে সহজে কোনো কিছু সৃষ্টি হয় না। এটার জন্য প্রাণ-ভালোবাসা-ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। যেটা বাংলাদেশে হচ্ছে। এটা স্বাধীনতার একটা বিরাট ফসল। এত কিছু হওয়ার পরও ছবি আঁকে কী করে? এককালে আমাদের ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক ভাই, মানিক মিয়া ছিল। কেন? তার কী ভূমিকা? মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য? তখন প্রতিদিন তিনি লিখতেন, খবর দিতেন। উনি না লিখলেও, খবর না দিলেও চলত। কিন্তু দেশ মাতৃকার মুক্তির লড়াইয়ে তিনি পিছপা হননি। এ কারণেই তিনি মানিক মিয়া হতে পেরে ছিলেন। মুক্তির সংগ্রাম বসে থাকার মতো কোনো জিনিস নয়। কেউ না কেউ হাল ধরে এবং চিন্তা করে। এখন আমাদের বাংলাদেশে যা হচ্ছে, এটাই হলো সময় সৃষ্টির, কাজ করার। বসে থাকলে কিছু করার নেই। সারা বাংলাদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ-হয়েছে। অন্য কোনো সেক্টরে এত কিছু হয়নি। এর মাধ্যমে একটা পরিবর্তন কিন্তু এসেছে। একইভাবে চারুকলায় অনেক বিস্তৃত কাজ হয়েছে, যেটা হওয়ার কথা ছিল না। এ প্রজন্মের শিল্পীদের প্রতি কোনো পরামর্শ আছে আপনার? : আমি বুদ্ধিজীবী না, কিছু না। আমি ছবি আঁকি, সেটা আরেকজন উদ্বোধন করে বা বাংলাদেশে কোনো প্রদর্শনী হলে আমিও উদ্বোধন করি। এটা বড় কিছু বা মূল্যবান কিছু না। মূল্যবান হলো, আমি কী আঁকি? আমি কী চিন্তা করি? এখন আরেকজন যদি এটাকে ভালোবাসে, এটাই যথেষ্ট। অনেক নাম ধাম করলাম-এতে কিছু আসে যায় না। এখন মূল চাবিকাঠিটা ধর রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল এখনো এত প্রাসঙ্গিক কেন, মূল্যবান কেন? কারণ হলো এখনো কিছু লিখতে গেলে তাদের কাছ থেকে কিছু কিছু নিতে হয়। যেটা অন্যরা পারেনি। চিত্রকলা ব্যাপারটাও একই রকম। আমাদের শিল্পকলা একাডেমি হয়েছে এখন, যেটা আগে ছোট ছিল। এর মাঝে ছোট ছোট বাইরের জিনিস আছে, যেটা তোমরা মনে করতে পার এর প্রয়োজন নেই। কিন্তু না। সবকিছুরই প্রয়োজন আছে। না হলে তুমি পার্থক্য করতে পারবে না। বুদ্ধিবৃত্তিক বিনিময় হবে না, এটা না হলে। যেহেতু এখন বিশ্বায়ন হয়ে গেছে। এর বাইরে কেউ থাকতে পারবে না। সব ক্ষেত্রেই এখন প্রযুক্তির রাজ চলছে? মানুষের দৈনন্দিনকে নিয়ন্ত্রণ করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। শিল্প চর্চায় এর প্রভাব কতটা দেখছেন? : প্রযুক্তি তোমার পরিশ্রম কমিয়ে ফেলছে। কিন্তু শিল্প হতে হলে, পরিশ্রম তোমাকে করতেই হবে। যদি আসলে তুমি নতুন কিছু সৃষ্টি করতে চাও। যদি ক্ষণিকের জন্য কিছু চাও, তাহলে অন্য ব্যাপার। সহজ ভাষায় বলি যে, নকল করে একটা কিছু আঁকলাম। কিন্তু এ নকল একটা সময়ের পর ধরা পড়ে যাবে। এখানেই হলো সৃষ্টির তফাত। যখন শব্দটা বলি, ‘সৃষ্টি’। সৃষ্টি কোনো ফাজলামির বিষয় নয়। যে হুট করে হয়ে গেল। তাহলে তো সবাই গ্রেট হয়ে যেত। না। ধরেন একটা রঙের ব্যবহার, অন্যরা কেউ করেনি কোনোদিন। অনেকে ভাবে আর কী করব? সেই রেনেসা থেকে আরম্ভ করে, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি থেকে আরম্ভ করে সবই তো করে ফেলেছে, তাহলে থাকে কী? কী করব? এই যে থাকে কী প্রশ্নে আটকে যাওয়া যাবে না? আসলে থাকে? সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়। অনেক জিনিস আছে যেটা, ওই সময়ে তো মোবাইল ছিল না, তখন ওরা ওদের মতো করে শিল্প করেছে। এখন মোবাইল আছে, নতুন প্রযুক্তি এসেছে। এর ফলে অনেক জিনিসের পরিবর্তন হয়েছে। আমি আরও সহজ করে বলছি, এত কিছু থাকার পরও, এত প্রযুক্তি থাকার পরও, তুমি একজন। তোমার নিজস্ব একটা ব্যাপার আছে। তোমার নিজের একটা স্পেস তৈরি আছে। নিজে একা একা থাকতে পছন্দ কর। এত কিছু থাকার পরও তুমি একাই। তোমার নিজস্ব একটা জগৎ আছে। নিজস্ব জগৎটা কী। সকাল বেলা উঠে তুমি দেখছ পাখি ডাকে বা বিলের পানি দেখছ, এখন তুমি এ বিলটাকে ভুলে গেলা, লন্ডনের টেমস নদীর কথা চিন্তা করলা? এভাবে তুমি হারিয়ে ফেললা। তোমার নিজস্বতা হারিয়ে ফেললা। টেমস নদী তুমি এঁকেছ, সবাই দেখে বলল ওয়াও ‘তুমি টেমস নদী এঁকেছ। কত কিছু জান তুমি’। আসলে কিছুই জান না। তোমার সেই শৈশবের বিলে কত কিছু আছে, মাছ, প্রকৃতি। এগুলো সমন্ধে না জানলে তুমি দুর্বল হয়ে গেলা। তাহলে তুমি কী দিবা? নতুন কিছু সৃষ্টি করবা কী করে?
বিশ্বখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। যার তুলির ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলন ও বিজয়। তার ছবিতে সংগ্রামী মানুষের দুর্দমনীয় শক্তি ও অপ্রতিরোধ্য গতির অভিব্যক্তি দুনিয়াব্যাপী সুপরিচিত। আধুনিক ঘরানার এ শিল্পীর শিল্পসত্তা ব্যাপকভাবে সমাদৃত ইউরোপে। পেয়েছেন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘নাইট’ উপাধি। মাস্টার পেইন্টার্স অব কনটেম্পোরারি আর্টসের পঞ্চাশজনের একজন হিসাবে ১৯৯২ সালে বার্সেলোনায় অলিম্পিয়াড অব আর্টস পদকেও ভূষিত হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পদক। মুক্তিযোদ্ধা এ শিল্পীর সঙ্গে চিত্রকলা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ে আড্ডা হয়েছে তার ফ্রান্সের প্যারিসের ভিনসেন্টের বাসায়। সেই কথোপকথনের বিশেষ অংশ নিয়ে এ সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক আলমগীর স্বপন ও রফিকুল বাসার। তার অংশবিশেষ পত্রস্থ হলো।
ভালোবাসার মরমি দর্শনে সমৃদ্ধ
জীবনানন্দ দাশ কবিতা সম্পর্কে যে বলেছিলেন, ‘সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি; কবি, কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা রয়েছে এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্য-বিকীরণ তাদের সাহায্য করছে। সাহায্য করছে; কিন্তু সকলকে সাহায্য করতে পারে না; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে। তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয় নানা রকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়।’ এ জন্যই কবিতা অনেক রকম, কবিতা অনেক বিষয়ের বাহক। প্রেম ভালোবাসা যেমন কবিতা বহন করে, আবার বিরহ-দ্রোহও কবিতা বয়ে বেড়ায়। এমন বৈচিত্র্যময় শিল্পগুণে সমৃদ্ধ একটি কাব্যগ্রন্থ কবি তানজিয়া সালমা’র ‘তবুও জীবন অগাধ’। এই বইতে শিল্পসমৃদ্ধ অনেক কবিতা রয়েছে। বেশিরভাগ কবিতায় জীবন-মৃত্যু, প্রেম-বিরহ এবং প্রকৃতি স্থান পেয়েছে। ‘অপার্থিব অনুভব’ শিরোনামের একটি কবিতার কিছু অংশ উল্লেখ করছি- চাঁদ ছুঁয়েছে ব্যালকনিতে হাসনাহেনার মন/উদাস-হৃদয় গন্ধরাজের চিত্ত উচাটন, মাতাল হাওয়ায় আলুথালু ঝুমকো জবার কেশ/গা এলিয়ে বাগানবিলাস আছেন সুখে বেশ। মুচকি হেসেন গোলাপ-কলি বাড়ালো যেই হাত/জ্যোৎস্না-ঢলে ভেসে গেল নিকষ কালো রাত। এখানে জীবন-মরণের এক ধরনের সুফিবাদি সুর আছে। আছে প্রকৃতি আর প্রাত্যহিক জীবনের কাব্যিক চিত্রায়ণ। মানব জীবনের একটা পূর্ণাঙ্গ ভাবনা ধারণ করে আছে এই ছোট্ট কবিতাটি। এখানেই কবির সার্থকতা। অল্প কথায় অনেক বেশি দার্শনিকতা ফুটিয়ে তোলা শক্তিমান কবির পক্ষেই সম্ভব। বইয়ের শেষের দিকে অণুকাব্য সিরিজের বেশ কয়েকটি ছোট ছোট কবিতা আছে। ছোট সে আকারে, কিন্তু এর গভীরতা এবং বিষয়বৈচিত্র্য মোটেও ছোট না। ‘অণুকাব্য-২’ শিরোনামের কবিতাটি উল্লেখ করছি- তোমার আকাশ আছে আমার অতল এক নদী অনন্ত বিরহ নিয়ে আমি বয়ে চলি নিরবধি, দিগন্তে তোমার শেষ মোহনাতে আমি যাই মরে ভালোবাসা হয়ে ফের এসো এই মানবী-অধরে। এখনে নদীর বয়ে চলার মধ্যে প্রকৃতির এক অনিন্দ সুন্দর দৃশ্য ফুটে ওঠে। ফুটে ওঠে জীবন মৃত্যুর চিরন্তন সত্যটিও। এ দুটি বিষয়ের সাঁকো হিসাবে আমরা দেখতে পাই ভালোবাসাকেই। ভালোবাসায় বাঁচা-মরার এই আকুতিই পাঠকের কাছে তুলে ধরে মহৎ হৃদয়ের এক কবিকে। এই সিরিজের ছোট ছোট কবিতাগুলো অনেকটা মরমি ধাঁচের। আবার একই সঙ্গে ভালোবাসার দর্শনেও সমৃদ্ধ। এই বইয়ের ‘কবি’ শিরোনামের কবিতাটি অসাধরণ- যে আগুন আত্মাকে দহন করে প্রজ্বলিত হয় সে আগুন থেকেই কবির জন্ম, অন্তর্গত বোধে কবিকে ক্রমাগত পুড়তে হয় বিষাদের বিশুদ্ধ বৈশ্বানরে। যে জল হৃদয়কে বিধৌত করে নিত্য পুণ্যস্নানে সে অশ্রুধারায়ই জন্ম কবিতার, কবিতা তাই নিত্য বহমান এক ব্যথার জলধারা আর কবি মাত্রই আজন্ম এক বেদনার হিমবাহ। এ কবিতাটির কারণেই প্রথমে জীবনানন্দ দাশের কবিতা সম্পর্কিত কথাগুলো উল্লেখ করেছিলাম। কবিতা কি, কবিতাকে কীভাবে কবিতা হয়ে উঠতে হয় এর সম্পর্কে জীবনানন্দ দাশের কবিতার কথা এবং .... এ কবিতাটি আমাদের একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে দিতে পারবে।
জীবনানন্দ দাশ কবিতা সম্পর্কে যে বলেছিলেন, ‘সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি; কবি, কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা রয়েছে এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্য-বিকীরণ তাদের সাহায্য করছে। সাহায্য করছে; কিন্তু সকলকে সাহায্য করতে পারে না; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে। তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয় নানা রকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়।’
ফেরা না ফেরা
ইদানীং আশ্চর্য রকম এক নীরবতা খেলে যাচ্ছে তার চোখে-মুখে। সবকিছুতেই কেমন যেন উদাস ভাব। দিন কয়েক আগেও তো স্বাভাবিক ছিল লোকটা। হাসত, গাইত আর কাজ শেষে বাড়ি ফিরত। বাড়িতে এসে শেফালীর কাজে বেশ সাহায্যও করত। কিন্তু কিছুদিন থেকে তার এ রকম গাঢ় নীরবতা খুব পীড়া দিচ্ছে স্ত্রী শেফালীকে। বিশেষ করে একমাত্র মেয়ে ফোসোর বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই এ রকম মনমরা ভাব দেখা যাচ্ছে। শীতের লোহার মতো দিনে দিনে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে লোকটা। আগের মতো প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে না আর। মন কেমন করে ওঠে শেফালীর। পাহাড় সমান সোহাগ নিয়ে তাকায় ঘুমন্ত স্বামীর দিকে। চড়ুইপাখির মতো শান্ত মুখ তার স্বামী সলিমের। শ্যামলা রঙা চোখ। চোখের নিচে লম্বা কালশিটে দাগ। সেই চোখ জোড়ায় এখন গভীর ঘুম। শেফালীর বুকটা হুহু করে ওঠে। পরম মমতায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দেয় স্বামীর চুলে। কিন্তু চুলে আঙুল ঢোকে না। চুলগুলো শক্ত হয়ে গেছে তারের মতো। ধুলোবালিতে ভর্তি পুরো মাথা। ধুলোবালি ছাড়া কি-ই বা থাকার কথা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বামুনিয়া থেকে হেঁটে আঠিয়াবাড়ি, ওখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে ইসলামপুরের থুকরাবাড়ি হাট; সেখান থেকে মাথায় পঞ্চাশ কেজি ওজনের লবণের বস্তা নিয়ে লাহিড়ী হাটের হোসেন পাইকারের গুদাম। কম রাস্তা! আসা-যাওয়ায় কমপক্ষে ষোলো-সতের কিলোমিটার পথ। ক্লান্ত শরীর অতশত পয়-পরিষ্কার বোঝে না। বাসায় ফিরে তাই কোনো মতো হাতটা ধুয়ে ডাল-ভাত খেয়েই ঘুমে তলিয়ে যায় সলিম। এ চিত্র কম-বেশি প্রতিদিনের। শেফালী লক্ষ করে, শীতের মধ্যে কিছুটা গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে সলিম। সে কাঁথাটা টেনে মুড়িয়ে দেয় গলা পর্যন্ত। ঘুম ভেঙে গেছে একটু আগে। বিছানা ছেড়ে বারান্দায় চুপ করে এসে বসে ও। ঘোকশোল পাড়ার দিক থেকে একটা শিশুর কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। খমির দোকানির মোড় থেকে কয়েকটি কুকুরের করুণ ডাক বন্ধই হলো না এখনো। অনবরত ডেকেই চলছে তারা। বারান্দায় বসে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খায় শেফালী। রান্নাঘরে একবার গিয়ে দেখে আসে মা আখিলনকে। তারপর একটা বিড়ি ধরায়। বিড়ি খাওয়া শিখেছিল মা আখিলনকে দেখেই। তাও বহুদিন হলো। মাঝে মধ্যে স্বামীর সঙ্গেও খেত; ইদানীং খায় না আর। শেফালী আর সলিমের বাড়ির সামনেই ইয়াজত আর খাতুনের ঘর। পশ্চিম পাশে ইয়াকুবের। মাঝখানে বিশাল একটা আঙ্গিনা। শেফালীর ঘরের সঙ্গে লাগোয়া পুব দিকের রান্নাঘরটার এক কোণে থাকেন শেফালীর মা আখিলন বুড়ি। শেফালীকে তিনি আদর করে ‘ঝোকো’ নামে ডাকতেন। আখিলন আর টেপা মোহাম্মদের কোনো সন্তানাদি ছিল না। তাই শরমজানি গ্রাম থেকে পালিত কন্যা হিসাবে নিয়ে এসে নিজের মেয়ের মতোই আদর-যত্নে বড় করেছেন। বুকে আগলে রেখেছেন। অনেক বড় হয়ে সেটা জানতে পেরেছে শেফালী। তা-ও বিয়ের আগে। ১৯৮০ সালে। আজকের মতো সেদিনও অঘ্রাণের রাত ছিল। ঠান্ডা, কুয়াশাঘেরা। হালকা শীতে লাল একটি চাদর গায়ে জড়িয়ে সলিমের সঙ্গে শেফালীর সংসার সেদিন শুরু হয়েছিল এখানেই, এই বামুনিয়া গ্রামে। সলিম তার বাবা লাল মিয়াসহ কাজের সন্ধানে এসেছিল এই গ্রামে। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বাড়ি ছিল তাদের। তিস্তার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে কাজ করতে এসে এ গ্রামেই পরিচয় হয় শেফালীর বাবা টেপা মোহাম্মদের সঙ্গে। পরে এক সময় শেফালীর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে সলিম। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতেই থেকে যায়। রংপুর থেকে এসেছিল বলে বামুনিয়া গ্রামের সবাই তাকে ‘সলিম রংপুরিয়া’ নামেই ডাকা শুরু করে। উচ্চতায় খাটো হলেও কাজেকর্মে সে তার উচ্চতার চেয়েও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিড়িটা শেষ করে ডানপাশে তাকিয়েই চমকে ওঠে শেফালী। সলিম কখন যে এসে তার পাশে বসেছে টেরই পায়নি ও। সলিম অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে- -বিড়ি খায় তো ঠোঁট কালো করে ফেলালো শেফালী। এত মানা করছু, তাঁহু যদি একনা শুনিস। শেফালী নিরুত্তর। মৃদু হেসে স্বামীকে বিড়ি আর দেশলাই এগিয়ে দেয়। বড় বাড়ির আমগাছটার ফাঁক গলে কিছুটা ল্যাম্পের আলো এসে পড়ে সলিমের কপালে। চকচক করে ওঠে পুরো কপালটা। ছেলে ভুট্টোর জন্মের সময় স্বামীর চোখে-মুখে এরকম উজ্জ্বলতা দেখেছিল শেফালী। কিন্তু কিছুদিন পরে তা নিভেও গিয়েছিল। মাত্র পনের দিন পরেই ভুট্রো মারা গিয়েছিল অজানা এক রোগে। সেটা ভাবতেই চোখ ঝাপসা হয়ে আসে শেফালীর। শেরমোহন পাড়া থেকে ঢোল-তবলার শব্দ ভেসে আসছে। সত্যপিরের গান বসেছে কুদ্দুস মাহালিয়ার বাড়ির আঙ্গিনায়। সলিমকে সেখানে যেতে অনেক কষ্টে রাজি করায় শেফালী। হেমন্তের হিম গভীর রাতে অলীক মানুষের মতো নিঃশব্দে দুজনে রওয়ানা দেয় সত্যপিরের গান শুনতে। সলিমের আজ সকালেই ঘুম ভাঙে মাঘু মাতবরের ডাকে। স্পষ্ট করে শাসিয়ে যায় সলিমকে। ‘শালা রংপুরিয়া, সমোন্ধির বেটা-সাত দিনের মধ্যে টাকা না দিলে তোক ভিটামাটি করে ছাড়িম, ফম (খেয়াল) রাখিস কথালা’। একটু পরে বিশু, তারপর নফিল ও পুন্না পাড়ার আইজত মিয়া এসে যা ইচ্ছা তাই বলে যায় সলিমকে। হেলে পড়া গাছের মতো মাথা নিচু করে সব হজম করে সলিম। কাউকে কিছু বলে না। নিজ গ্রামের, পাশের গ্রামের অনেকের কাছেই ধান, গম কাটার ওপর এভাবে অগ্রিম টাকা নিয়ে রেখেছিল সে। চড়া সুদের ওপর টাকাও ধার নিয়েছিল তিন-চারজনের কাছ থেকে। মেয়ে ফোসোর বিয়েতে খরচ করেছিল সব টাকা। জামাই মমিনুল আপন ভাগিনা হওয়া সত্ত্বেও যৌতুক বাবদ পঞ্চান্ন হাজার টাকা ও টু-ব্যান্ড রেডিও বুঝে নিতে একটুও দ্বিধা করেনি। দুপুরে অঘ্রাণের কড়া রোদ ওঠে। সেই রোদ চোখে-মুখে নিয়ে হেঁটে লাহিড়ী হাট আসে সলিম আর শেফালী। একটি ছাগল, পাঁচটা মুরগি ও দুটো হাঁস বিক্রি করে। শেষ সম্বল গলায় থাকা তিন ভরি ওজনের রুপার হারটাও বিক্রি করে দেয় গগন বানিয়ার কাছে। বিকাল বেলা লাহিড়ী হাটে ঠাকুরের চালিতে মাঘু মাতবরের পাঁচশ পঞ্চাশ টাকা শোধ করে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে দুজনে। হাট থেকে ফেরার আগে মা আখিলন বুড়ির জন্য রহমান হোটেলের দুটো রসগোল্লা আর একটি পাউরুটি নিয়ে বাড়ি ফেরে শেফালী। আখিলন মাসখানেক হলো শয্যাশায়ী। বয়স আশি ছুঁইছুঁই। কোন্ দিন কী হবে কে জানে। আজ শেষ বিকালের পর থেকেই মন কিছুটা ভালো সলিম রংপুরিয়ার। আজ নিজ হাতে ও আর শেফালী আলুর ডাল আর ডিম রান্না করেছে। সঙ্গে বেগুন ভাজা। দাওয়াত দিয়ে এনেছে ইয়াজত, রাজ্জাক, ইয়াকুব, খাতুন সবাইকে। বারান্দায় গোল হয়ে বসে খাচ্ছে সবাই। সলিম রংপুরিয়া খেতে খেতে ইয়াজতের উদ্দেশে বলে- ‘ভাই, মানুষের হায়াত-মউতের ঠিক নাই। মোর খুব ইচ্ছা ছিল তুমরালাক নিয়া একদিন ভালো-মন্দ খাম। আইজকার পর আর যদি আর কুনহদিন দেখা না হয়। যদি মরে যাও’ ‘এই রংপুরিয়া থাম, থাম, এইলা কি রকম কাথা কহেছিরে। এইলা ওরকুন দোরকুন (অমঙ্গলজনক) কথালা বন্ধ কর’ এক প্রকার শাসনের সুরেই কথাগুলো সলিমের উদ্দেশ্যে বলে খাতুন। খাওয়া শেষ করে সবাই যে যার মতো চলে যায়। বড্ড ক্লান্ত শরীর নিয়ে শেফালীও ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু হঠাৎ স্বামীর ফিসফিস ডাকে ঘুম ভেঙে যায়। সলিম আস্তে করে বলে-একদম দেরি করা যাবেনি, শেফালী। তাড়াতাড়ি রেডি হয়া নে। এইঠে থেকে হামাক পালাবা হবে। আর উপায় নাই। এত মানুষের টাকা মুই কেংকরিয়া শোধ করিম, কোহেক তুই? মুই সব রেডি করিয়া রাখিছু, তুই কি কি নিবু তাড়াতাড়ি নিয়া চল, ভ্যান রাস্তাত দাঁড়ায়া আছে। এইঠে থিকা সোজা আখানগর স্টেশনত যায়া ট্রেন ধরি রংপুর চলি যামো এলা’। এতক্ষণ যেন ঘোরের মধ্যে ছিল শেফালী। সে জোরে সশব্দে বলে ওঠে-মুই মোর বুড়ি অসুস্থ মা’টাক রাখেহেনে একচুল যামনি। ‘হারামজাদী’ বলে শেফালীর গালে কষে এক চড় মারে সলিম। কাঁদতে চেয়েও পারেনি শেফালী। হাত দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে সলিম। বাধ্য হয়ে চোখের সামনে যা পায় সব ঢুকিয়ে নেয় বস্তার মধ্যে। যাওয়ার আগে মা আখিলনকে শেষবারের মতো দেখতে রান্না ঘরে ঢোকে ও। বড্ড মলিন আর ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে ঘুমিয়ে আছে আখিলন। আস্তে করে চুমু খায় মার কপালে। ভেতরটা ফেটে যায়। দুমড়ে-মুচড়ে ওঠে। দম নিতে কষ্ট হয়। ওই অবস্থায় জোরে, হাত ধরে টেনে শেফালীকে বের করে আনে সলিম। ভ্যান চলতে শুরু করে। পেছনে পড়ে থাকে তার বুড়ি মা আখিলন, গ্রামের সব ঘুমন্ত মানুষ। পেছনে পড়ে থাকে আশৈশব জড়িয়ে থাকা চির আপন, চির চেনা ঘর-দোর, মাটি, গাছপালা, আকাশ-বাতাস সবকিছু। যাদের সঙ্গে আর কোনোদিন দেখা হবে না। কথা হবে না। দলুয়া পাড়া পার হওয়ার আগেই শেফালী শেষবারের মতো দেখে নেয় নিজের গ্রামটাকে। খুব ইচ্ছে করে মাকে আরেকবার দেখে আসতে। মায়ের রোগা, মলিন মুখটা ভেসে ওঠে বারবার। কিন্তু সে সুযোগ আর নেই। নিজের মেয়ে হলে কি শেফালী এভাবে তার মাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যেতে পারত? ঘৃণা, ক্ষোভ আর চরম স্বার্থপরতার জন্য নিজের ওপর একদলা থুতু ফেলে শেফালী। এসব দেখেও না দেখার ভান করে সলিম রংপুরিয়া। নির্বিকার চিত্তে সামনের দিকে তাকায় সে।
ইদানীং আশ্চর্য রকম এক নীরবতা খেলে যাচ্ছে তার চোখে-মুখে। সবকিছুতেই কেমন যেন উদাস ভাব। দিন কয়েক আগেও তো স্বাভাবিক ছিল লোকটা। হাসত, গাইত আর কাজ শেষে বাড়ি ফিরত। বাড়িতে এসে শেফালীর কাজে বেশ সাহায্যও করত। কিন্তু কিছুদিন থেকে তার এ রকম গাঢ় নীরবতা খুব পীড়া দিচ্ছে স্ত্রী শেফালীকে। বিশেষ করে একমাত্র মেয়ে ফোসোর বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই এ রকম মনমরা ভাব দেখা যাচ্ছে। শীতের লোহার মতো দিনে দিনে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে লোকটা। আগের মতো প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে না আর। মন কেমন করে ওঠে শেফালীর। পাহাড় সমান সোহাগ নিয়ে তাকায় ঘুমন্ত স্বামীর দিকে। চড়ুইপাখির মতো শান্ত মুখ তার স্বামী সলিমের। শ্যামলা রঙা চোখ। চোখের নিচে লম্বা কালশিটে দাগ। সেই চোখ জোড়ায় এখন গভীর ঘুম। শেফালীর বুকটা হুহু করে ওঠে। পরম মমতায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দেয় স্বামীর চুলে। কিন্তু চুলে আঙুল ঢোকে না। চুলগুলো শক্ত হয়ে গেছে তারের মতো।
আপনি ভাবেন যে, ‘নগ্ন অবস্থায় নিহত হতে চাই না আমি’: আবু তোহা
ভয়, প্রত্যহ মৃত্যুকে কাঁধে নিয়ে চলার শঙ্কা আর জীবনের যাবতীয় যন্ত্রণা ঘিরে মুসআব আবু তোহা তার কবিতার জগৎকে যাপন করে চলেছেন। কবিতায় তিনি সেই সত্যকেই বর্ণনা করেন, যা বিস্তৃতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে। পৃথিবীর মানুষ যদিও তা খোলা দৃষ্টিতে দেখে, কিন্তু এর উপলব্ধি তাদের নেই। তাই বোধকরি আমাদের বেঁচে থাকার স্বাভাবিক জীবন প্রক্রিয়া গাজায় কেমন হয়, তার বর্ণনা তোহা এভাবে দেন যে, ‘In Gaza, breathing is a task, smiling is performing plastic surgery on ones own face, and rising in the morning, trying to survive another day, is coming back from the dead’। গাজার জীবনকে এমন করুণ চিত্রেই প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনের বিপ্লবী এ কবি। এমন এক জীবন-যা অপ্রত্যাশিত যুদ্ধ এবং দীর্ঘ অবরোধের প্রভাবে পীড়িত। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘থিংস ইউ মে ফাইন্ড হিডেন ইন মাই ইয়ার: পোয়েমস ফ্রম গাজা’ তার পাঠকদের এমন এক যাত্রায় নিয়ে যায়, যেখানে পাঠক ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইসরাইলিদের নির্মম আক্রমণের চিত্র দেখতে পায়। শুনতে পায় পৃথিবীর নিরীহ একটি জাতির রোদন। আর সভ্যতার মুখোশ পরে আমাদের নির্লিপ্ত মনোভাব। এ কাব্যগ্রন্থে গাজার দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে লিখেছেন তিনি। যেমন-অবরোধ, যুদ্ধ, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, ভয় ইত্যাদি। মন্ডোওয়েইস ম্যাগাজিন গাজা শহরে তার বাড়িতে এ গ্রন্থ এবং এর কবিতার পেছনের গল্পগুলো সম্পর্কে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। বাংলাভাষী পাঠকদের জন্য সময়ের গুরুত্বপূর্ণ এ সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন কবি কাউসার মাহমুদ। কখন লেখালেখি শুরু করেছেন? কবিতা লেখা জন্য কী অনুপ্রাণিত করেছিল আপনাকে? : ২০১৪ সালের যুদ্ধের আগে আমি লিখতাম না। তখনো নিজের লেখার ক্ষমতাটি আবিষ্কার করিনি। যুদ্ধের সময় বোমা হামলা এবং নিহত মানুষদের সম্পর্কে লিখতে শুরু করি। তবে তা সংবাদ এবং সাধারণ গল্পকারদের চেয়ে ভিন্নভাবে। একজন সাপোর্টিভ শ্রোতা খুঁজে পাওয়া বিষয়টি ভাবতে বাধ্য করেছিল যে, লেখালেখি আমায় ইতিহাসের নথিভুক্ত করার সুযোগ দিতে পারে। এখন যা চলছে কেবল তা-ই লেখার মাধ্যমে নয়, বরং অন্য জায়গা থেকে, অন্যান্য দৃষ্টিকোণ থেকে জীবন কেমন হতে পারে তা কল্পনা করে। কেননা একজন হিসাবে অন্যের জীবন কল্পনা করা এবং তার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকাই দায়িত্ব হিসাবে গ্রহণ করেছি। তাদের স্থানে একদা আমিও থাকব এ কল্পনা করে তাদের সম্বন্ধে একটি বেদনাদায়ক কবিতা লিখেছিলাম। কবিতাটির নাম ‘Shrapnel Looking For Laughter’। এ কবিতায় বলেছি, শ্রাপনেল কেবল মা এবং বাবাকে হত্যা করেনি, বরং তাদের বাড়ির ভেতরের হাসি, শিশুদের বইয়ের শব্দগুলোকেও হত্যা করেছিল। তাহলে নিজের চারপাশের ভিজুয়াল দৃশ্য দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়েছেন? : হ্যাঁ। যুদ্ধ, অবরোধ, মনস্তাত্ত্বিক যন্ত্রণা, অস্বীকার, বঞ্চনা ইত্যাদি। মানুষ মূলত তার চারপাশের পরিবেশ দ্বারা সৃষ্টি হয়। তাই আমি যদি আমাজন জঙ্গলে জন্মে থাকি তবে আমার লেখাগুলো হবে গাছ, চড়ুই এবং টিকটিকি নিয়ে। দেখুন আমার বয়স সাতাশ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একবারের জন্যও গাজার বাইরে যাইনি। যা প্রকৃতই বঞ্চনা ও বেদনার। এমনকি আজ পর্যন্ত কখনো গাজা বা আমার বাড়ির বায়বীয় দৃশ্যও দেখার সুযোগ পাইনি। কারণ সেখানে কোনো বিমানবন্দর নেই। চারদিক থেকে অবরোধ চলছে। ফলে শেষতক বুঝতে পেরেছি, গাজায় আমাদের চারপাশের জগৎকে কল্পনা করতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। ‘Sobbing without sound’-এর মতো আপনার কিছু কবিতায় গাজার মানুষের জীবনযাপন ও টিকে থাকার দুরাবস্থার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কী? : দেখুন আমাদের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাগুলো খুব সহজ আর সাধারণ। এ যুগে এ সময়ে এখনো এমন একটি জায়গা আছে, যেখানের লোকেরা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা বা সমুদ্রে প্রমোদ ভ্রমণে যাওয়ার চিন্তার পরিবর্তে প্রত্যহ এ আশায় জেগে উঠবে যে পাওয়ার চালু আছে। আকাশে ড্রোনের গুঞ্জন ছাড়াই পাখির শব্দ শুনতে চাই আমরা। আমাদের ইচ্ছাগুলো সব মানুষের জন্য প্রতিদিনের অভ্যাস। তারা এমন কিছু চিন্তা না করেও এটির মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকে যে, এমন কিছু লোক রয়েছে যারা এ জাতীয় জিনিসগুলোকে অস্বীকার করে। আমরা অবরুদ্ধ হয়েছি এবং আমাদের বাড়ির দোরগোড়ায় সর্বদা একটি যুদ্ধ চলছে। কিন্তু বিশ্ব আমাদের কান্না শুনতে পায় না। স্বাভাবিক জীবনের জন্য মরিয়া এবং আশাবাদী আমরা। এটিই জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম যে, কীভাবে যুদ্ধ আপনার লেখাকে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যুদ্ধই আপনাকে লেখক হিসাবে তৈরি করেছে। কীভাবে ঘটল তা? : দেখুন, যখন আপনি মহান কবি-সাহিত্যিকদের সৃষ্টিকর্ম পড়েন, তখন তাদের সময়ে হওয়া যে অন্যায়ের বর্ণনা তারা করেছেন তা পড়ে মর্মাহত হন। কিন্তু এখানে আপনি সেসবের চেয়েও ভয়ানক পরিস্থিতি দেখবেন, ফিলিস্তিনিরা যার সম্মুখীন হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে বসবাস করছি আমরা। অথচ এখনো বাথরুমে যাওয়ার ভয় নিয়ে বেঁচে আছি। কারণ এক সেকেন্ডের মধ্যে হয়তো আপনার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটতে পারে এবং আপনি ভাবেন যে, ‘নগ্ন অবস্থায় নিহত হতে চাই না আমি।’ এসব অপমানজনক অনুভূতিই নিজেকে প্রকাশ করার ইচ্ছা জাগিয়ে তোলে। তদুপরি খুঁজে বের করেছি যে, লেখা আমার মাথার ভেতর ঘটে যাওয়া যুদ্ধ থেকে আমার অনুভূতি প্রকাশ করার একটি উপায়। যুদ্ধগুলো কীভাবে আপনার শৈশবকে প্রভাবিত করেছিল এবং কীভাবে অবরোধ আপনার জীবনকে প্রভাবিত করেছে? : যখন লিখি তখন আমি আমার প্রজন্মের পক্ষ থেকে লিখি। দখলদারিত্ব আমাদের শৈশব কেড়ে নিয়েছে। মনে আছে যখন ছোট ছিলাম, তখন স্কুলে অনেক বিষয়ের পাঠ ছিল। সেসবের একটি ভূগোল। তাতে বিবিধ অ্যাক্টিভিটিজ ছিল যেমন, ফিলিস্তিনের কোনো পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া কিংবা একটি চিড়িয়াখানা আবিষ্কার সম্বন্ধে কথাবার্তা। কিন্তু সে সময়ে এ জিনিসগুলো যেমন আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না, তেমনি এখনো সম্ভব নয়। এখন প্রতিটি যুদ্ধ আমাদের কাছ থেকে, আমাদের আত্মা এবং জীবন থেকে কিছু না কিছু কেড়ে নেয়। এ কারণেই আমরা এত দ্রুত বড় হই। আমার বয়স তখন নয় বছর। যখন আমি একটি হেলিকপ্টারকে একটি ভবনের দিকে গুলি ছুড়ে সেটিকে ছিটকে পড়তে দেখি। যখন নতুন এ পরিস্থিতিতে পড়ি তখন আমরা আমাদের শৈশবকে পেছনে ফেলে যেতে বাধ্য হই। যুদ্ধ আমাদের যন্ত্রণা ও বেদনাকে অধিরোহণ করে বয়স্ক করে তোলে। এখন তিন সন্তানের বাবা হিসাবে, আমার বাচ্চাদের চোখ দিয়ে নিজেকে দেখি। আমি যখন শিশু ছিলাম তার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতিতে এখন বসবাস করছে ওরা। আপনার কি মনে হয় যে, যখন শিশু ছিলেন তখন থেকে আপনার সন্তানরা আরও খারাপ বা ভালো অবস্থায় বাস করবে? : আশা করি তারা খারাপ অবস্থায় যাবে না। এও আশা করি যে, আমার ছেলেদের মতো সব শিশুকেই আরও ভালো জীবন দিতে পারব আমরা। আমার ক্ষেত্রেই ধরুন, যখন ছোট ছিলাম তখন আমার বাবা যেমন ছিলেন, তারচেয়ে সামান্য ভালো অবস্থায় আছি আমি। তাই নিজে যা পাইনি, তা আমি আমার সন্তানদের দিতে পারি। এখনো মজা করে মায়ের কাছে খেলনাভরা একটা ঘরের আবদার করি। কারণ শৈশবে আমার কাছে এসবের একটিও ছিল না। বইজুড়ে আঁধারের বিচিত্র থিম এবং মোটিফ অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ভবিষ্যতে গাজা কেমন হবে সেক্ষেত্রে এটি কি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে? নাকি বর্তমান পরিস্থিতিরই প্রতিফলন? : আমার বেশিরভাগ কবিতাই গাজার অন্ধকার বাস্তবতার কথা বলে। এখানে মৃত্যু এবং যুদ্ধের কথা ভাবে। তারা আগামীকাল বা ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারে না। কারণ আমরা সব সময়ই ভয় করি যে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে। গাজায় মানুষ যুদ্ধ দিয়ে তাদের জীবন ও সময় পরিমাপ করে। যেমন কেউ বলবে, ‘আমার ছেলে যুদ্ধের সময় জন্মগ্রহণ করেছিল’ বা ‘আমার ছেলে যুদ্ধের দুমাস পর জন্মেছিল।’ হ্যাঁ এ সত্য যে, আমার বইয়ে যুদ্ধ এবং ধ্বংসের কথা বলেছি। কিন্তু বিস্তারিতের আড়ালে যা লুকিয়ে আছে তাও তুলে ধরছি। ক্যামেরা যা দেখাতে পারে না তা আমি লিখি। যেমন শ্রাপনেল-যা হাসিকে লক্ষ্য করে এবং হত্যা করার জন্য হাসে। তেমনি যখন ইংরেজিতে লিখি, তখন একজন পশ্চিমা শ্রোতার কথা ভাবি। কারণ, এখানে গাজায় কী চলছে তা জানাতে সরাসরি তাদের সঙ্গে কথা বলি আমি। আমার এক বন্ধু ছিল। যিনি একজন ফুটবল খেলোয়াড় ও জেলে ছিলেন। সমুদ্রে থাকা অবস্থায় ইসরাইলি নৌবাহিনী তাকে খুন করে। তার মৃত্যু ভীষণভাবে আক্রান্ত করে আমায়। তাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখি। তাতে বলেছি, ‘তার দেহ জলের ওপর ভাসবে না, কারণ বিক্ষিপ্ত জাহাজ ভাসে না।’ ফলে আমরা যে অন্যায্য জীবনযাপন করি সে সম্পর্কে বিশ্বকে জানাতেই আমাদের অবস্থার কথা লিখি আমি। আমার মানুষ সম্পর্কে কথা বলা আমার কর্তব্য। আপনার একটি কবিতার শিরোনাম ‘আমার দাদা একজন সন্ত্রাসী।’ কবিতাটির এমন শিরোনামের পেছনে কী বার্তা ছিল? : দখলদার দুর্বৃত্তরা সর্বদাই ভুক্তভোগী ফিলিস্তিনি এবং নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডমূলক ঘটনাগুলোকে ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করে। মানে বিষয়টি এমন যে, কেউ যদি কাউকে ঘৃণা করে, তবে সে যাই করে না কেন তা খারাপ মনে করবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি তাকে তার কমলা গাছের প্রতি যত্নশীল হতে দেখে, তবে সে ভাববে তার বিরুদ্ধে এটি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। তেমনি তার জমিতে যেতে দেখলে সে ভাববে তাকে আক্রমণ করবে। ফলে আমরা যাই করি না কেন দখলদারত্বের আড়ালে থাকা লোকেরা সব সময় আমাদের ভয় পায়। কারণ তারা স্পষ্টরূপেই জানে এ ভূখণ্ড তাদের বাড়ি বা জমি নয়। আমার কাছে, আমার দাদা ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করেন। যদিও দখলদাররা মনে করে, আমার দাদা বা একজন ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী। কিন্তু আমি আপনাকে দেখাচ্ছি তারা আসলে কারা ছিল। লেখালেখি কীভাবে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সহ্য করে যেতে সাহায্য করে? : আমি মনে করি লেখা মাঝে মাঝে থেরাপি হিসাবে আসে। কিন্তু নেহাৎ সেল্ফ-থেরাপি নয়। কখনো কখনো ব্যাখ্যাতীত দুঃস্বপ্নও ব্যক্তির কাছে আসে। তখন সৃজনশীল লেখা আমাদের আত্মায় থাকা ওই দুশ্চিন্তাগুলোকে নামিয়ে রাখতে সাহায্য করে। যখন হঠাৎই ওই ধারণা এবং চিন্তাগুলো কাগজে দেখা যায়। এতে কখনো নিজেকে এ প্রশ্নও করি, কাগজটি কী পাপ করেছে যে, সব মৃত্যু এবং ধ্বংসকে অন্তর্ভুক্ত করছে। কী পাপ করেছে! কাজেই আমার মনে হয়, লেখা একটি চিকিৎসার উপায়। তবে এর দ্বারা আমার উদ্দেশ্য এটি নয় যে, নিজের চিকিৎসা করছি। বরং কখনো কখনো আমরা দুঃস্বপ্নগুলোর ব্যখ্যা করতে পারি না। যুদ্ধের ট্রমা আমাদের আত্মায় থেকে যায়। যদি তা অবিলম্বে প্রদর্শিত না-ও হয়, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরে এর প্রভাব ঠিকই বেরিয়ে আসে। একটি পরিচিত ক্রিয়া এমনকি একটি শব্দ দ্বারাও তা প্ররোচিত হয়। এ সংকলনটি পড়ার পর প্রধানত মানুষ কি পাবে বলে আপনি আশাবাদী? : আশা করি আমার বইটি পাঠকদের অনুভূতি এবং চিন্তাভাবনার একটি পথ খুঁজে পাবে। তা কেবল সহানুভূতিই নয়, বরং এটিকে পরিবর্তনের প্রয়াসে পরিণত করবে। পশ্চিমের লোকেরা আমাদের দখল এবং দুর্ভোগের বিরুদ্ধে কাজ করতে তাদের সোসাইটিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। যুদ্ধ এবং অবরোধের অবসান ঘটাতে, তারা তাদের সরকারকে ফিলিস্তিনি বিষয়ের ন্যায়বিচার অর্জনের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করতে পারে। সেই সঙ্গে পৃথিবীর মানুষকে জানাতে চাই, এ ভূমিতে জন্ম নেওয়া আমরা বেছে নিইনি, ঠিক যেমন তারা তাদের পরিস্থিতিতে জন্ম নেওয়া বেছে নেয়নি। আমি চাই মানুষ আমার জায়গায় নিজেদের কল্পনা করুক। অবরোধের মধ্যে, দখলে ঘেরা। আপনি ভ্রমণ করতে পারবেন না, আপনার জীবন যুদ্ধে ভরা এবং আপনি বেঁচে থাকবেন কিনা তা জানেন না। আপনি যখন বোমা থেকে দৌড়াচ্ছেন তখন আপনার কোনো আশ্রয় নেই। এমনকি পরার জন্য একটি হেলমেটও না। একবার কল্পনা করুন তো, আপনি কি নিজের জন্য এমন জীবন গ্রহণ করবেন?
ভয়, প্রত্যহ মৃত্যুকে কাঁধে নিয়ে চলার শঙ্কা আর জীবনের যাবতীয় যন্ত্রণা ঘিরে মুসআব আবু তোহা তার কবিতার জগৎকে যাপন করে চলেছেন। কবিতায় তিনি সেই সত্যকেই বর্ণনা করেন, যা বিস্তৃতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে। পৃথিবীর মানুষ যদিও তা খোলা দৃষ্টিতে দেখে, কিন্তু এর উপলব্ধি তাদের নেই। তাই বোধকরি আমাদের বেঁচে থাকার স্বাভাবিক জীবন প্রক্রিয়া গাজায় কেমন হয়, তার বর্ণনা তোহা এভাবে দেন যে, ‘In Gaza, breathing is a task, smiling is performing plastic surgery on ones own face, and rising in the morning, trying to survive another day, is coming back from the dead’। গাজার জীবনকে এমন করুণ চিত্রেই প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনের বিপ্লবী এ কবি। এমন এক জীবন-যা অপ্রত্যাশিত যুদ্ধ এবং দীর্ঘ অবরোধের প্রভাবে পীড়িত। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘থিংস ইউ মে ফাইন্ড হিডেন ইন মাই ইয়ার: পোয়েমস ফ্রম গাজা’ তার পাঠকদের এমন এক যাত্রায় নিয়ে যায়, যেখানে পাঠক ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইসরাইলিদের নির্মম আক্রমণের চিত্র দেখতে পায়। শুনতে পায় পৃথিবীর নিরীহ একটি জাতির রোদন। আর সভ্যতার মুখোশ পরে আমাদের নির্লিপ্ত মনোভাব। এ কাব্যগ্রন্থে গাজার দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে লিখেছেন তিনি। যেমন-অবরোধ, যুদ্ধ, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, ভয় ইত্যাদি। মন্ডোওয়েইস ম্যাগাজিন গাজা শহরে তার বাড়িতে এ গ্রন্থ এবং এর কবিতার পেছনের গল্পগুলো সম্পর্কে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। বাংলাভাষী পাঠকদের জন্য সময়ের গুরুত্বপূর্ণ এ সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন কবি কাউসার মাহমুদ।
জীবনের সঙ্গে জীবনের যোগই সাহিত্য: অমর মিত্র
বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ লেখক অমর মিত্র। জন্ম ১৯৫১ সালের ৩০ আগস্ট, বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ। বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন কলকাতা শহরে। ১৯৭৪ সালে ‘মেলার দিকে ঘর’ গল্প নিয়ে বাংলা সাহিত্যে তার আত্মপ্রকাশ। প্রথম উপন্যাস ‘নদীর মানুষ’ ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয়। প্রথম গল্পের বই ‘মাঠ ভাঙে কালপুরুষ’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। ২০০৬ সালে ধ্রুবপুত্র উপন্যাসের জন্য ‘সাহিত্য অকাদেমি’ পুরস্কার পেয়েছেন। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক ‘ও হেনরি’ পুরস্কারে ভূষিত হন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট সাইফুর রহমান লেখালেখিতে প্রবেশ ১৯৭৪ সালে ‘মেলার দিকে ঘর’ গল্পের মাধ্যমে। গল্পে দেখা যায়, লক্ষ্মীর পদচিহ্ন পড়ছে ধুলার ওপরে। লক্ষ্মী গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে ওই রূপকল্পে। কিন্তু সবাই জানে সে তো যাচ্ছে মেলা দেখতে। আপনি বলছেন, মাইনোলজি কিংবদন্তি, লোক উৎসব, লোকশ্রুতি আপনাকে আকর্ষণ করে? : তার আগেও আমি গল্প লিখেছি। ‘মেলার দিকে ঘর’ বলতে পারেন প্রথম সাড়া জাগানো গল্প। মিথোলজি আমি পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করিনি। এ পুরাণ-প্রতিমা স্বাভাবিকভাবে এসেছিল। প্রথম উপন্যাস ‘নদীর মানুষ’। ধুলিহর গ্রামের পার্শ্ববর্তী কপোতাক্ষ নদ, যে নদের কথা আপনার মাও শোনাতেন আপনাকে। আর শোনাতেন নদীতে ভাসমান অলৌকিক সেই জলযানদের কথাও... আপনার স্মৃতিকথায় এসব নদীর বিষয় এসেছে : এ নদী কপোতাক্ষ নয়। সুবর্ণরেখা। কপোতাক্ষ, আমি প্রথম দেখেছি ২০০০ সালে। ১৯৭৭ সালে লিখেছিলাম প্রথম উপন্যাস ‘নদীর মানুষ’। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে অমৃত পত্রিকার বিনোদন সংখ্যায় তা ছাপা হয়েছিল। অমৃত সম্পাদক ছিলেন লেখক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। তার আগে উপন্যাস লেখার কথা ভাবিওনি। সেই উপন্যাস লেখার কথাই বলি। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে আমি মেদিনীপুর জেলার গোপীবল্লভপুর থানার এক দুর্গম এলাকায় বদলি হই। তখন সারা ভারতে জরুরি অবস্থা। উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মচারীদের হাতে অনেক ক্ষমতা। সেই পোস্টিং ছিল অনেকটাই শাস্তিমূলক, আবার আমার কাছে আশীর্বাদস্বরূপও। ইউনিয়ন করার কারণে সেই দূরবর্তী অঞ্চলে পাঠানো। আমি ভূমি রাজস্ব বিভাগের কানুনগো ছিলাম। গ্রামে ছিল অফিস, হল্কা ক্যাম্প। কিন্তু সেই গ্রামে উপযুক্ত বাড়ি ছিল না, দোকানপাট ছিল না, তাই ক্যাম্প হয় বংশীধরপুরে। বংশীধরপুর অনেক দূর। ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে গিয়ে ১৯৭৬-এর ডিসেম্বরে চলে এসে আর যেতে পারিনি সেই গ্রামে। কিন্তু যতদিন ছিলাম বংশীধরপুরে, পনেরদিন অন্তর বা মাসান্তে কলকাতা এসে আবার ফিরে যেতে হতো। ফিরে যেতে কত কষ্ট! কলকাতা থেকে কেওনঝোড়-বারিপদা (ওড়িশা)-র পথে জামশোলা ব্রিজ বাসে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। বাবুঘাট থেকে ছাড়ত সেই বাস। তখন ছ’নম্বর জাতীয় মহাসড়ক ছিল এখনকার চেয়ে দুই তৃতীয়াংশ কম চওড়া। ভাঙাচোরা। জামশোলা ব্রিজ সুবর্ণরেখা নদীর ওপরে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার (এখন ঝাড়খণ্ড) ও ওড়িশা মিলেছে। ব্রিজ থেকে পুবে বংশীধরপুর হেঁটে অনেকটা পথ। কিন্তু পথ বলতে ছিল না। জামশোলা ব্রিজ জায়গাটি ওড়িশার ভেতরে পড়ে। এখান থেকে বাম দিকে অর্থাৎ পুবে বাংলা। উত্তর পশ্চিমে হাইওয়ে ছুটে গেছে ওড়িশার বারিপদার দিকে। পুবে শাল জঙ্গল, সেই জঙ্গলের ধারে সুবর্ণরেখা। তার দুই তীর প্রস্তরাকীর্ণ। জায়গাটির নাম হাতিবাড়ি। হাতিবাড়ি এখন ভ্রমণকারীদের কাছে প্রিয় জায়গা। জামশোলা ব্রিজ থেকে বংশীধরপুর যেতে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট হাঁটতে হতো। ওই দূরে মৌভাণ্ডার গ্রাম টিলা, তারপর আবার জঙ্গল। ডানদিক দিয়ে সুবর্ণরেখা নদী বয়ে যাচ্ছে। নদী জামশোলা হাতবাড়ি থেকে নেমে এসেই ছড়িয়ে গেছে দুদিকে। মস্ত তার বিস্তার। দুই দিকে দু’হাত ছড়িয়ে দিয়েছে যেন। জল অনেকটা দূরে, মস্ত বালুচর পার হয়ে যেতে হয়। বংশীধরপুরে গিয়ে গ্রামের দেবতা বংশীধর ঠাকুরের কথা শুনি আমি। সে এক অলৌকিক গল্প। বংশীধর ঠাকুরের মন্দির ছিল গাঁইয়ে। প্রতি পূর্ণিমায় বংশীধর কৃষ্ণ বাঁশি হাতে গ্রাম পরিক্রমায় বের হন। সেই বাঁশির সুরে কুমারী, বিবাহিতা সব কন্যা ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে। পূর্ণিমায় তাই মেয়েদের সাবধানে রাখতে হয় রাতে। কোনো পূর্ণিমায় আমি শুনিনি অবশ্য বাঁশির সুর। পুরুষ বলে কী? উপন্যাস সেই গ্রাম নিয়ে আর সুবর্ণরেখা নদীর ষাটিদহ নিয়ে। হাতিবাড়ির সুবর্ণরেখা খুব গভীর নদী। ষাট হাত জল সেখানে। পুরাকালে এ অঞ্চলের রাজা যাবতীয় অনাচারে রুষ্ট হয়ে সুবর্ণরেখার ভেতরে নেমে গিয়েছিলেন তার প্রাসাদ নিয়ে। কিন্তু রাজা তো প্রজা বৎসল ছিলেন। তাই নদীতে বান এলে, পশিমের জল নেমে এলে বন্যার হাত থেকে প্রজাদের বাঁচাতে জলের নিচে প্রাসাদে ঘণ্টা বাজিয়ে দিতেন। বন্যার সময় নাকি সেই ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায়। আমার প্রথম উপন্যাস, ‘নদীর মানুষ’ এ বংশীধরপুরের পটভূমিকায় লেখা। সেখানে হাতিবাড়ির ষাটিদহর পুরাণ-কথা ব্যবহার করেছিলাম। জন্ম সাতক্ষীরার ধুলিহর গ্রামে। পরবর্তীকালে আপনারা পশ্চিমবঙ্গ চলে যান। আপনাদের দেশত্যাগ, দেশভাগ নিয়ে কিছু বলুন : আমার বাবা দেশভাগের আগে বাংলা সরকারে চাকরি করতেন। স্বাধীনতা এলে বাবা ভারত সরকারের পক্ষে মতদান করেন। ১৯৪৭-এর কথা তা। ফলে আমাদের পাকিস্তান ত্যাগ করতেই হয়। সাতক্ষীরার লাগোয়া বসিরহাটে আমরা বসত করি। আমার কাকা ওপারে থেকে যান। তিনি ১৯৬২ সালে দেশ ছাড়েন। আমাদের যাওয়া-আসা ছিল। দেশভাগ নিয়ে যা আমার স্মৃতি তা আমার মায়ের স্মৃতি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বিজ্ঞানের ছাত্র। আপনিও। সেজন্যই বলছি। মানিক বন্দোপাধ্যায় তার পূর্বসূরি সাহিত্যিকদের পড়ে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, সাহিত্যে বাস্তবতা আসে না কেন, সাধারণ মানুষ ঠাঁই পায় না কেন সাহিত্যে? মানুষ হয় ভালো, নয় তো মন্দ হয়। ভালো-মন্দ মেশানো হয় না কেন? শরৎচন্দ্রের চরিত্রগুলোও হৃদয়সর্বস্ব কেন, হৃদয়াবেগ কেন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে-বিশেষ করে মধ্যবিত্তের হৃদয়। আমার প্রশ্ন, আপনার সাহিত্যে বাস্তবতা কীভাবে এসেছে? : আমার সাহিত্যে কীভাবে কী এসেছে তা বলবেন পাঠক। সমালোচক। আমি মনে করি, আঁকাড়া বাস্তবতা এক জায়গায় গিয়ে থেমে যায়। কল্পনা এবং বাস্তবতা দুইয়ের ভেতরে আমি চলাফেরা করতে ভালোবাসি। মানুষের অন্তর্গত রহস্য উদ্ধার করতে চেয়েছি যেমন, তেমনি চেয়েছি শিকড়ে পৌঁছতে। মানিক বন্দোপাধ্যায় বলেছেন-‘সাহিত্যিক হতে হলে বাস্তব জীবনের মতো সাহিত্যকেও অবলম্বন করতে হয়। সাহিত্য না ঘেঁটে, নিজের জানা জীবন সাহিত্যে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, নিজে যাচাই করে না জেনে এবং প্রতিফলনের কায়দা-কানুন আয়ত্ত না করে সাহিত্যিক হওয়া যায় না। সাহিত্য-সমালোচক হওয়া যায় কিনা তাতেও আমার সন্দেহ আছে! জীবনকে তো জানতেই হবে, এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু জীবনকে জানাই যথেষ্ট নয়। সাহিত্য কী এবং কেন সে তত্ত্ব শেখাও যথেষ্ট নয়। যে জীবনকে ঘনিষ্ঠভাবে জেনেছি বুঝেছি, সেই জীবনটাই সাহিত্যে কীভাবে কতখানি রূপায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে, সেটাও সাহিত্যিককে স্পষ্টভাবে জানতে ও বুঝতে হবে, নইলে নতুন সৃষ্টির প্রেরণাও জাগবে না, পথও যুক্ত হবে না।’ এ কথাগুলো সঠিক মনে করেন? : মানিক বাবুর কথা সত্য, কিন্তু সাহিত্যে শেষ কথা হয় না। সাহিত্যের সব মত ও পথ মুক্ত থাকাই ভালো। এক একজন লেখক এক এক রকম ভাবেন। আমি অত তত্ত্ব কথা ভেবে তো লিখিনি। কিন্তু জীবন দেখেছি। জীবনকে ভালোবেসেছি। ভালোবেসে অশ্রুপাত করেছি। আবার উদ্দীপ্ত হয়েছি। লেখায় তার ছায়া পড়েছে। আর্ট ফর আর্ট সেক (Art for Art Sake) অর্থাৎ শিল্পের জন্য শিল্প এ মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না মহামতি সাহিত্যিক লিও তলেস্তয়। তার মতে, সাহিত্য হবে জীবনের জন্য তার এ মতবাদের সঙ্গে আপনি কতটা একমত? : নিশ্চয়ই। জীবনের সঙ্গে জীবনের যোগই সাহিত্য। আমি শিল্পের জন্য সাহিত্য, এ মতবাদের বিরোধী। অশ্বচরিত লিখতে আপনার লেগেছিল ১৭ বছর। এ প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ে বিখ্যাত ফরাসি সাহিত্যিক ভিক্টর হুগো তার ‘লা মিজেরেবল’ উপন্যাসটি লিখতে সময় নিয়েছিলেন ১২ বছর। আসলে ১২ বছর বললেও ভুল বলা হবে। ১৮৩০ সালের দিকে হুগো পরিকল্পনা শুরু করেন উপন্যাসটি কীভাবে লিখবেন তিনি। লেখা শুরু করেন ১৮৪৫ সালে এবং শেষ করেন ১৮৬২ সাল নাগাদ। আরেক বিখ্যাত লেখক টলকিন তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘লর্ড অফ দ্য রিং’ লিখতে সময় নেন ১৭ বছর। বাংলাসাহিত্যে তেমন কাউকে দেখা যায় না এত সময় নিয়ে উপন্যাস লিখতে। আপনার ক্ষেত্রে এমনটা কেন হলো যদি বলতেন : ১৯৮০ নাগাদ, তখন তিরিশে পৌঁছইনি, একটি নভেলেট লিখেছিলাম শিলাদিত্য পত্রিকায়। সম্পাদক ছিলেন সুধীর চক্রবর্তী। ‘বিভ্রম’ ছিল সেই নভেলেটের নাম। একটি ঘোড়ার গল্প। দীঘার সমুদ্রতীরের এক হোটেলওয়ালার একটি ঘোড়া ছিল। ঘোড়াটি প্রতি আশ্বিনে পালায়। সুবর্ণরেখা এবং সমুদ্রের মোহনার কাছে বড় একটি চর ছিল। আশ্বিনে সেই চরে চারদিক থেকে ঘোটক ঘোটকীরা পালিয়ে আসে সবুজ ঘাস এবং প্রেমের নেশায়। ঘোড়া এবং ঘুড়িদের ভেতর ভালোবাসা হয় সেই সময়। কিন্তু সেই বছর বৈশাখে সে অদৃশ্য হয়েছিল। নিখোঁজ সেই ঘোড়া খুঁজতে যায় হোটেলওয়ালার আশ্রিত ভানু দাস। মধ্যবয়সি ভানু ছিল হা-ঘরে। দুনিয়ায় কেউ কোথাও ছিল না তার। আমি দীঘায় কর্মসূত্রে গিয়েছিলাম শীতের সময়। ১৯৭৯-র ডিসেম্বর মাসে। একটি হোটেলে মাস-চুক্তিতে আমি ঘর ভাড়া করেছিলাম। সেই হোটেলের মালিকেরই ছিল ঘোড়াটি। দেখতাম আমার ঘরের জানালার ওপারে নিঝুম বেলায়, নিঝুম রাতে ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে। ভানু কোথায় যেত ঘোড়াটির খোঁজে তা জানা যেত না। রাহা খরচ নিত গাঁজাড়ু হোটেলওয়ালার কাছ থেকে। মনে হয় ঘোড়া খোঁজার নাম করে সে নিজের একটা ইনকামের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু ভানু আশ্চর্য সব জায়গার নাম করত হঠাৎ হঠাৎ। মীরগোদার জাহাজ ঘাটার দিকে দেখা গেছে নাকি একটি ঘোড়া। রানিসাই গ্রামের একজন খবর দিয়েছে সেদিকে একটি ঘোড়া দেখা গেছে। যাই হোক, ভানুর সঙ্গে আমিও ঘোড়া খুঁজতে গিয়ে নুনের খালারি দেখে এসেছিলাম। কিন্তু যে কথা বলতে চাইছি, আশ্বিনে যার পলায়নের কথা, সে বৈশাখে কেন পালিয়েছে? গেল কোথায় সেই বুড়ো টাট্টু? ভানু জানে না। লেখক জানবে কী করে? বাস্তবতা ছিল ঘোড়াটি নিখোঁজ হয়েছে। কিন্তু কেন তা কেউ বলতে পারছে না। জীবনের অনেক রহস্য খুঁজে বের করা যায় না সত্য। অনেকেই তা প্রকাশ করেন না। লেখক তো তৃতীয় নয়নের আধিকারী, তিনি সেই রহস্য কি উন্মোচন করতে পারবেন না! আমি ভানুকে কতবার জিজ্ঞেস করেছি তার অশ্ব কেন নিরুদ্দেশে গেল। হোটেলের ঠাকুর বলল, কেউ হয়তো চুরি করে নিয়ে গেছে। সোজা কথা। এতে করে নিরুদ্দেশের রহস্য শেষ হলো। কিন্তু ভানু দাস আমাকে বলেছিল, না দাদা, বুড়ো ঘোড়াকে কে চুরি করবে? তাহলে সে পালাল কেন, এখন তো আশ্বিন নয়? ভানু উত্তর দিতে পারেনি। পরের ডিসেম্বরে আমি চলে আসি দীঘা থেকে। তখনো রাহা খর্চা নিয়ে ভানু সেই পলাতককে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। বদলি হয়ে চলে আসার পর আমার ভেতরে প্রশ্নটি ছিল, সে পালিয়েছিল কেন বৈশাখে? আশ্বিনের বদলে বৈশাখে কেন? উত্তর নেই। আমি উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম নিজের ভেতরে। নভেলেট লিখতে আরম্ভ করেছিলাম সেই ঘোড়াটিকে নিয়ে। সেই সময়েই যেন স্বপ্নোত্থিতের মতো এক ভোরে আমি লিখতে বসে পেয়ে গিয়েছিলাম পলায়ন রহস্য। সে ছিল যেন প্রকৃতি এবং জীবনের রহস্য উদ্ধার। সেদিন ছিল ভয়ানক বৈশাখ। ঘোড়ায় চেপে ঘোড়ার মালিক ফিরেছিলেন গ্রাম থেকে দীঘায়। রোদে ঘোড়াটির জিভ বেরিয়ে এসেছিল। সে দাঁড়িয়েছিল একটি নিমগাছের ছায়ায়। নবীন তরুর ছায়া ছিল না বেশি। ফলে বৈশাখের রোদে পুড়ছিল। গরম বাতাস বইছিল। বালিয়াড়ি তেতে গিয়েছিল ভীষণ। ঘোড়াটি ধুঁকছিল। এরপর দুপুরের শেষে আকাশের ঈশেন কোণে মেঘের সঞ্চার হয়। ধীরে ধীরে ঘন কালো মেঘ ছেয়ে ফেলে সব আকাশ। সমুদ্র দিগন্ত থেকে মেঘ উঠে আসতে থাকে ওপরে। ঘোর অন্ধকার হয়ে আসে। ঝড় এলো। তারপরই বৃষ্টি। প্রবল বর্ষণে ভেসে যায় সব। উত্তাপ অন্তর্হিত হলো। বৃষ্টি থামে ঘণ্টা দেড়ের পর। সন্ধ্যে হয়ে আসে। সবদিক ঠান্ডা হয়ে গেছে। ঘোড়াটি বৃষ্টিতে ভিজেছে কত। ঠান্ডা হয়েছে শরীর। আরাম হয়েছে তার। সেদিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। সন্ধ্যের পর চাঁদ উঠল। আশপাশের বালিয়াড়ির ধারের গর্তে, রাস্তার কোথাও কোথাও জল জমেছিল। রাত হলে চাঁদ আকাশের মাথায় উঠে এলে জোছনা পড়ল জমা জলে। আকাশে দেখা গেল পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভেসে চলেছে নিরুদ্দেশে। ঘোড়াটি অবাক হয়ে আকাশ মাটি দেখল। বাতাসে ঘ্রাণ নিল। তার মনে হলো আশ্বিন-শরৎকাল এসে গেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছিল ভয়ানক গ্রীষ্ম। দুপুরের শেষে এল বর্ষা। তারপর আশ্বিনের পূর্ণিমা। শরৎকাল। একই দিনে দুই ঋতু পার করে আশ্বিনে এসে গেছে সে। সুতরাং, চলো নিরুদ্দেশে। সেই যে সুবর্ণরেখার মোহনায় চর জেগেছে সবুজ ঘাস নিয়ে, সেখানে এসে গেছে ওড়িশার ভোগরাইয়ের ঘুড়ি, আগের বছর তার সঙ্গে প্রেম হয়েছিল তার। মিলন হয়েছিল। সে খুটো উপড়ে পালাল এ বিভ্রমে। সারারাত ছুটেছিল সে জোছনার ভেতর দিয়ে। সকাল থেকে ফিরে এলো বৈশাখ। রোদ তেতে উঠতে লাগল। সে টের পেল আর ফেরার উপায় নেই। ভয়াবহ গ্রীষ্ম ফিরে এসেছে। বিভ্রম হয়েছিল। বিভ্রমে সেসব রাত ধরে মৃত্যুর দিকে ছুটেছে। অশ্বচরিত উপন্যাসের খসড়া ছিল এই। ১৯৮১-র ফেব্রুয়ারিতে শিলাদিত্য পত্রিকায় ছাপা হয় ‘বিভ্রম’ নামের যে নভেলেট, তা ১৭ বছর পরে হয়েছিল অশ্বচরিত। বিভ্রম নভেলেট প্রকাশিত হলে অনেকের ভালো লেগেছিল। অচেনা লেখকের লেখা ছেপেছিলেন সুধীরবাবু পাণ্ডুলিপি পড়ে। আমার তখন একটি-দুটি বই বের হচ্ছে। কিন্তু বিভ্রম নিয়ে আমার ভেতরে দ্বিধা ছিল। মনে হতো আরও কিছু লেখার আছে। আমি লিখতে পারিনি। বছর সাত বাদে ১৯৮৮ নাগাদ আমি আবার লিখতে আরম্ভ করি উপন্যাসটিকে। সামনে সেই নভেলেট। লিখেছিলাম। এক প্রকাশকের হাতে দিয়েছিলাম প্রকাশের জন্য। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্য, তিনি পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলেছিলেন। মনে হয়েছিল বিভ্রম আর বই হয়ে বের হবে না। ‘বিভ্রম’ আমার মাথার ভেতরে একটি কাঁকর ফেলে দিয়েছিল। আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম না নভেলেটটি নিয়ে। পড়েই থাকল আরও দশ বছর। ১৯৯৭-এ রাজস্থানের মরুতে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের পর আমি আবার নভেলেটটিকে সামনে রেখে নতুন উপন্যাস লিখতে শুরু করি। বিস্ফোরণের দিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। আমার ঘোড়াটি পালিয়েছিল সেইদিনই। আমি তা ১৯৮১ সালেই লিখেছিলাম। এ ১৭ বছরের মাথায় সেই বুদ্ধ পূর্ণিমাই হয়ে গেল পথ। রাজপুত্র গৌতমের অশ্ব কন্থক হয়ে গেল সেই বুড়ো টাট্টু। ভানু হয়ে গেল গৌতমের সারথি ছন্দক। তারা তপোবনে দিয়ে এসেছিল রাজপুত্রকে। তিনি ফিরবেন এ হিংসার পৃথিবীতে। ভগবান বুদ্ধ ফিরবেন। সারথি ছন্দক আর অশ্ব কন্থক অপেক্ষা করছে তার জন্য এ সময়ে। সময় ১৯৯৮। রাজপুত্র ফিরে এলে পৃথিবী হিংসা মুক্ত হবে। পলাতক ঘোড়া বিভ্রমে পড়েছিল। বিভ্রম তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। ছুটতে ছুটতে সে হিরোশিমায় গিয়ে পড়ে। সেখানে তখন কালো বৃষ্টি। অশ্বচরিত লিখতে ১৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। লেখক নিজেই বোঝেন লেখা হয়েছে কী হয়নি। তিনি নিজেই নিজের পাঠক। নিজের জন্যই প্রথমে লেখেন। ... মূল কথা হলো বিষয় নির্বাচন-নতুন কিছু না দিলে পাঠক ছুড়ে ফেলে দেবে। পড়তে পড়তে পাঠক যদি হাসে, মজা পায়, তা হলেই কাজ হাসিল। সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের এ কথার সঙ্গে আপনি কতটা একমত? : আমি এ বিষয় নিয়ে ওঁর জীবিতকালেও কিছু বলিনি। অহেতুক উনি আক্রমণ করেছিলেন আমাকে। কে হারিয়ে যাবে, কে যাবে না, তা তো মহাকালের কথা। আমি যেমনই লেখক হই, ওঁর পরামর্শে লিখতে যাব কেন। আমি লিখেছিলাম অশ্বচরিত। সেই উপন্যাস ভালো না মন্দ সে কথা বলবে পাঠক। ২৫ বছর পার হয়ে গেছে, ওই উপন্যাস তো এখনো নতুন প্রজন্ম পড়ছে। আমি রুশ উপন্যাস, দেবেশ, শ্যামল, অমিয়ভূষণ পড়ে উপন্যাস লিখতে শিখেছি। ওঁর উপন্যাস পড়ে নয়। উনি নিন্দা করতে ভালোবাসতেন। সবাই নিজের মতো লিখছেন। কেউ কারও মতো হন না। আর তিনি কী মনে করতেন, এক্সপেরিমেন্ট চলে না ইত্যাদি, তা তার কথা। সাহিত্য নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেই। বিশ্বসাহিত্যের দিকে তাকালেই তা ধরা যায়। কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকতে চায় কে? অনেকেই মনে করেন, বর্তমান প্রজন্ম সাহিত্যবিমুখ; এ ধারনার সঙ্গে আপনি কতটা একমত? আমরা লেখক সমাজ ভালো লেখা উপহার দিতে পারছি না, নাকি সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল সংস্কৃতির জন্য বর্তমানে সাহিত্যের পাঠক কমে যাচ্ছে ? : যদি বিমুখই হয়, এত বই কারা পড়ে। চিরকাল নতুন প্রজন্ম নিয়ে আগের প্রজন্ম-র সমস্যা হয়। এ কথা সেই সমস্যার একটি উদাহরণ। এখন পড়ার ধরন বদলে গেছে। সাহিত্যের পাঠক সাহিত্য পড়ে। আমাদের সময়েও সবাই সাহিত্য পড়ত না। কেউ কেউ পড়ত। এখনো তাই।
বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ লেখক অমর মিত্র। জন্ম ১৯৫১ সালের ৩০ আগস্ট, বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ। বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন কলকাতা শহরে। ১৯৭৪ সালে ‘মেলার দিকে ঘর’ গল্প নিয়ে বাংলা সাহিত্যে তার আত্মপ্রকাশ। প্রথম উপন্যাস ‘নদীর মানুষ’ ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয়। প্রথম গল্পের বই ‘মাঠ ভাঙে কালপুরুষ’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। ২০০৬ সালে ধ্রুবপুত্র উপন্যাসের জন্য ‘সাহিত্য অকাদেমি’ পুরস্কার পেয়েছেন। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক ‘ও হেনরি’ পুরস্কারে ভূষিত হন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট সাইফুর রহমান
বাঙালি মনীষীদের চা প্রীতি-অপ্রীতি
প্রাথমিক পর্যায়ে ভারতবর্ষে চায়ের বিপণন ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। ক্রেতাদের চামুখী করার জন্য কোম্পানিগুলোর নানামুখী তৎপরতা ছিল উল্লেখ করার মতো। তারা এ কাজে বাহারি বিজ্ঞাপন ছাড়াও নানাবিধ বিনিয়োগের মাধ্যমে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের মানুষদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করত। তবে শুরুতে চরম প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাদের। বৈরী এ পরিবেশ তৈরিতে সর্বতো সহযোগিতা ছিল যার, তিনি হলেন প্রখ্যাত রসায়নবিদ ও দার্শনিক প্রফুল্লচন্দ্র রায়। স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায় চা পানের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার প্রয়াস পান। সেকালের চায়ের বিপণন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি লিখেছেন-‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার সময়ে পরীক্ষার্থীদিগকে বিনা মূল্যে চা পান করাইবার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে তাঁবু ফেলা হইতে লাগিল। একজন ‘টি কমিশনার’ এতদর্থে নিযুক্ত হইলেন। ‘টি কমিশনার’ সুলভ মূল্য নহে, একবারে বিনা মূল্যে জনসাধারণকে ‘চা-খোর’ করিতে লাগিলেন। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে ১৩৭টি সহরে চা-খানা স্থাপিত হইয়াছিল। বৎসরের শেষে উহা ৬৮৩টিতে পরিণত হয়।’ মাসিক বসুমতী পত্রিকার ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের ভাদ্র ও কার্তিক সংখ্যায় তিনি ‘চা-পান ও দেশের সর্ব্বনাশ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লিখেন। ইতঃপূর্বে একই পত্রিকায় তিনি লিখেন, ‘চা-পান না বিষ-পান’ শীর্ষক প্রবন্ধ। তার মতে, চা মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন করে এবং ক্ষুধা নষ্ট করে। নিজের ধারণার সপক্ষে তিনি একটি ব্যঙ্গচিত্রও আঁকেন। এ ব্যঙ্গচিত্রে দেখা যায়, একজন ‘পাক্কা চা-খোর’ এর করুণ চিত্র। এ পাক্কা চা-খোরের টেবিলে একটি বড় চায়ের পাত্র আর তার হাতে এক কাপ চা। তার মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, পায়ে ছিন্ন জুতা, ছেঁড়াখোঁড়া পোশাক, আর চারদিকে ছড়ানো অসংখ্য সিগারেটের খোসা। সব মিলিয়ে চায়ের নেশায় অকেজো এক মানুষের প্রতিচ্ছবি। ‘চা-পান ও দেশের সর্ব্বনাশ’ প্রবন্ধের উপসংহারে তিনি লিখেছেন- ‘চা পান করিলে জাতিনাশ হইবে, এমন কথা আমি বলি না। পরিমিত চা পানে দেহের স্বাস্থ্য ভঙ্গ হইবে, এমন কথাও আমি বলিতেছি না। আমার বলিবার কথা এই যে, যদি বাঙালি সংযম ও নিয়মের অনুজ্ঞা মানিয়া প্রচুর সারবান ও পুষ্টিকর খাদ্যের সহিত সামান্য একটু চা দিবাভাগে একবার মাত্র পান করে, তাহা হইলে বিশেষ ক্ষতি হয় না। কিন্তু বাঙালি অপরিমিত চা পান করিতে অভ্যস্ত হইয়া আপনার সর্ব্বনাশ সাধন করিতেছে, ইহাই দেখাইয়া আমি সময় থাকিতে বাঙালীকে সতর্ক হইতে বলিতেছি।’ চা চাষের ফলে বাঙালি অর্থনীতি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেসব কথাও তিনি তার লেখায় তুলে ধরেন। ফলে বাঙালিদের অনেকেই তখন চা-পানের বিরোধিতা করে। ব্রাহ্মসমাজের অনুগামীরা প্রায় সবাই চা পানের আসক্তির ঘোরবিরোধী ছিলেন। চা-পান নিয়ে সেকালের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। চা নিয়ে মৌলানা আবুল কালাম আজাদের রয়েছে এক দীর্ঘ চিঠি; যা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘গুবার-এ-খাতির’-এ। তার লেখা চিঠিগুলোর সংকলন এ পুস্তক। চা-সংক্রান্ত চিঠিটির একটা অংশে তিনি লিখেছেন- ‘চায়ের সুরুচি, উপাদেয়তা এবং মিষ্টত্বের সঙ্গে তামাকের উগ্র কটু স্বাদের সংমিশ্রণে আমি এক রকম জটিল উত্তেজক প্রস্তুত করেছি।...আপনারা বলতে পারেন, এমনিতেই তো চা খাওয়া খুব একটা সু-অভ্যাস নয়, তার সঙ্গে আরও একটি আপত্তিকর বস্তু যোগ করার দরকারটা কী? চা ও সিগারেটের এ জটিল মিশ্রণটি যেন শয়তানের সঙ্গে শয়তানের মিলনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।...’ চিঠির অপর একটা অংশে মৌলানা আজাদ জানান যে, দৃঢ় মনোবলের কারণে সিগারেটের বদভ্যাসটা তিনি শিগ্গির ছাড়তে পেরেছিলেন। কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিকের অবস্থানও ছিল চা পানের বিপরীতে। ১ আশ্বিন, ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে শ্রীগিরিজাকুমার বসু ও শ্রীসুনির্মল বসুর সম্পাদনায় ‘ছোটদের চয়নিকা’ শীর্ষক গ্রন্থে ‘রামসুক তেওয়ারী’ নামক তার লেখা ছড়া প্রকাশ পেয়েছিল। এটি সেসময় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। পালোয়ান রামসুক তেওয়ারি বাংলায় এসেছিলেন ভাগ্য বদলাতে। ভাগ্য বদলাতে না পারলেও শিগ্গির চায়ে আসক্ত হয়ে পড়েন। চায়ের প্রভাবে তিনি বদহজমজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন এবং তার ওজন হ্রাস পেতে শুরু করে। চা পানের কুফল এবং রামসুকের পরিণতি বর্ণনা করতে গিয়ে কুমুদ রঞ্জন লিখেছেন- ‘অবশেষে অসুখের সংবাদ পাইয়া/দেশ থেকে ধেয়ে এলো দেশোয়ালি ভাইয়া/করে’ দিলে প্রথমেই চা খাওয়া-টা বন্ধ/বে-ভাষায় বলল সে কতো কী যে মন্দ।’ গ্রামের সেই আত্মীয়ের পরামর্শ মেনে রামসুক তার হারানো স্বাস্থ্য ফিরে পেয়েছিলেন, যা টের পাওয়া যায় ছড়ার শেষাংশে: ‘চা ছাড়িয়া রামসুক উঠলো মুটিয়ে,/অর্হরের ডাল খায়, জোয়ারের রুটি হে।/চা খেলেই তাড়া করে, করে নাক কেয়ার-ই,/খাসা আছে, সুখে আছে রামসুক তেওয়ারি।’ চাপন্থিদের তুলোধুনো, শত আপত্তি এবং বিতর্ক সত্ত্বেও কিন্তু থেমে যায়নি চা পান। নানাবিধ প্রতিকূলতার পরও পরিস্থিতি একটা সময় চা কোম্পানির অনুকূলে আসে। বিজ্ঞাপনের গুণেই হোক আর অন্য যে কোনো কারণেই হোক, বঙ্গদেশে বছর বছর চা-পায়ীর সংখ্যা বেড়েছে। চা হয়ে ওঠে বাঙালির নিত্যসঙ্গী। বাঙালি মনীষীদের মধ্যে অনেকেই চায়ের ভক্ত হয়ে ওঠেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, দীনেশচন্দ্র সেন, প্রমথ চৌধুরী প্রমুখ। তাদের নানা লেখায় ও অন্যান্য কবি-সাহিত্যিকদের স্মৃতিকথায় প্রকাশ পেয়েছে চায়ের প্রতি তাদের অনুরাগ। সেন্ট্রাল টি বোর্ডের চায়ের বিজ্ঞাপনে কবিগুরুর একাধিক কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে। আর তা প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বভারতীয় পত্রিকার বেশ কটি সংখ্যায়। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষাভেদে কবিগুরুর নতুন নতুন কবিতা প্রকাশ পেয়েছে। তবে সেখানে টি বোর্ডের স্লোগান ছিল একটাই-‘ঋতুচক্রের বিচিত্র উৎসব-মুহূর্তগুলোকে রঙে রসে মধুর করে তোলে।’ চা পানের বিচিত্র পদ্ধতি ছিল রবীন্দ্রনাথের। তিনি খানিকটা গরম জলে কয়েকটা চা পাতা ফেলে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খেয়ে নিতেন। ১৯২৪ সালে চীন ভ্রমণকালে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গী ছিলেন দোভাষী নামক একজন নারী। এ বিদেশি বন্ধুর নামে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সুসীমো চা-চক্র’ মজলিস। ১৯২৮ সালে ‘সুৎসী-মো’র শান্তিনিকেতন দর্শন উপলক্ষ্যে গান রচনা করেন। ‘হায় হায় হায় দিন চলি যায়/চা-স্পৃহ চঞ্চল চাতকদল চলো চলো চলো হে।’ পরবর্তীকালে এ চা চক্রের আমন্ত্রণে আর একটি কবিতায় কবি অতিথিগণকে নিয়ে লেখেন। ‘চা-রস ঘন শ্রাবণ ধারা প্লাবন লোভাতুর/কলাসদনে চাতক ছিল ওরা।’ ঔপন্যাসিক শংকরের লেখা ‘অচেনা অজানা বিবেকানন্দ’ গ্রন্থ হতে স্বামী বিবেকানন্দের চা প্রেমের খবর পাওয়া যায়। স্বামী সারদানন্দ ছিলেন চায়ের প্রবল ভক্ত। বিবেকানন্দ-ভ্রাতা মহেন্দ্রনাথ একবার সারদানন্দকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তুমি এতো চা খেতে শিখলে কোথা থেকে?’ স্বামী সারদানন্দের উত্তর ছিল: ‘তোমার ভাইয়ের পাল্লায় পড়ে। তোমাদের বাড়িতে যে চায়ের রেওয়াজ ছিল সেইটা বরাহনগর মঠে ঢুকিয়ে দিলে, আর আমাদের চা-খোর করে তুললে। তোমরা হচ্ছে একটা নার্কটিকের ফ্যামিলি।’ ঐতিহাসিক গৌতম ভদ্র স্বামী বিবেকানন্দের চা প্রীতির একটি বর্ণনা দিয়েছেন তার লেখায় : ‘ক্ষমতা ও লোকনিন্দার থোড়াই কেয়ার করতেন বিবেকানন্দ, তাই ১৮৮৬ সালেই ঠাকুরকে [শ্রীরামকৃষ্ণ] পোড়ানোর রাতেই দরমা জ্বালিয়ে কেটলি করে চা খেয়েই তিনি ও তার গুরুভাইরা রাত কাবার করেছেন। দারুণ অভাবেও বরাহনগরের মঠে স্বামীজি চা ছাড়েননি, অন্যদেরও ধরিয়েছেন। জেলা কোর্টে দাঁড়িয়ে হলফ করে চা খাওয়ার পক্ষে সওয়ালও করেছিলেন।’ মহেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতি কথাতেও এসেছে এ সংশ্লিষ্ট তথ্য। তিনি লিখেছেন-গুঁড়ো চা গরম জলে দিয়ে একটু কড়া করে নেয়, আর তাই ঢক ঢক করে খায়, দুধ চিনির তো নামই নাই। তাই বলে মাঝে মধ্যে যে চায়ের ভোল বদল হতো না, এমনটাও নয়-যেদিন যেদিন সুরেশবাবু বা মাস্টারমশাই দুধ ও চিনির জোগানদারের ভূমিকা নিতেন, সেদিন সেদিন লালিমা ঘুচিয়ে দুধসহ মিষ্টি চা খাওয়ার সৌভাগ্য হতো বিবেকানন্দসহ গুরুভাইদের। মঠে চা-টা শুরু থেকেই বেশ গুরুত্ব পেয়ে গেল। নেশার তলব থেকে নয়, অর্ধাহারী মঠবাসীদের খিদে মারার মহৌষধ হিসাবে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চা পান সম্পর্কে হেমেন্দ্রকুমার রায় লিখেছেন- ‘কেবল কাঁড়ি কাঁড়ি পান নয়, আঠার-বিশ পেয়ালা চা না পেলে সিক্ত হতো না তার কণ্ঠ দেশ!’ ‘ঠাকুরবাড়ির আঙিনায়’ বইটিতে পল্লীকবি জসীমউদ্দীন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে চা পান করানোর একটি মজার কাহিনি উল্লেখ করেছেন। সেবার ফরিদপুরে বঙ্গীয় রাষ্ট্রীয় সমিতির একটি অধিবেশনে কবি নজরুল এসেছিলেন। কবির সম্মানে জসীমউদ্দীনের উদ্যোগে সেই রাতে গানের জলসা বসানো হয়। সেখানেই এ চা কাহিনির সৃষ্টি। জসীমউদ্দীনের ভাষায়, ‘রাত্রিবেলা এক মুস্কিলে পড়া গেল। চা না পাইয়া কবি অস্থির হইয়া উঠিলেন। এই পাড়াগাঁয়ে চা কোথায় পাইব? নদীর ওপারে গিয়া চা লইয়া আসিব, তাহারও উপায় নাই। রাত্রিকালে কে সাহস করিয়া এত বড় পদ্মা-নদী পাড়ি দিবে? তখন তিন-চার গ্রামে লোক পাঠানো হইল চায়ের অনুসন্ধানে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আলিম মাতব্বরের বাড়ি হইতে কয়েকটা চায়ের পাতা বাহির হইল। চা-পাতা দেখিয়া কবির তখন কী আনন্দ!’ চায়ে মুগ্ধ কবি নজরুল ‘চা-স্তোত্র’ নামে চায়ের স্তবগান রচনা করেছেন। চা নিয়ে বিরূপ মন্তব্যকারীদের প্রতিও কবির স্বভাবসুলভ ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে এখানে-‘চায়ের পিয়াসি পিপাসিত চিত আমরা চাতক-দল/দেবতারা কন সোমরস যারে সে এই গরম জল।/চায়ের প্রসাদে চার্বাক ঋষি বাক-রণে হল পাশ,/চা নাহি পেয়ে চার-পেয়ে জীব চর্বণ করে ঘাস।’ আরেক কবি দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন চায়ের দারুণ ভক্ত। তার কাছে চা ছিল-কষিত কাঞ্চন কায়া, সর্ব নিদ্রা নিবারণী, নিত্যানন্দদায়িনী। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় একবার এক জমিদারকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সে চা খায় কিনা। না বোধক উত্তর আসায় তার মন্তব্য ছিল, ‘কিন্তু তোমাকে তো ভদ্রলোকের মতোই দেখায়’! এরকম কবির দ্বারাই বোধকরি চা পানের স্তুতিগান করে লেখা সম্ভব এভাবে-‘বিভব সম্পদ ধন নাহি চাই/যশ মান চাহি না/(শুধু) বিধি যেন প্রাতে উঠে পাই/ভালো এক পেয়ালা চা-চা-চা-চা।’ অন্যত্র লিখলেন, ‘সে আসে ধেয়ে, এনডি ঘোষের মেয়ে,/ধিনিক ধিনিক ধিনিক, চায়ের গন্ধ পেয়ে।’ দীনেশচন্দ্র সেন অধিক পরিমাণ চিনি মিশিয়ে চা পান করতেন। কেউ প্রশ্ন করলে বলতেন, চিনি খাব বলেই তো চা খাই! চায়ের আর এক গুণগ্রাহী প্রমথ চৌধুরী এ সম্পর্কে তার স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিতে লিখেছেন-‘চা পান করলে নেশা না হোক, চা পানের নেশা হয়।’ একটা দীর্ঘ সময় ধরে চা পান নিয়ে বাঙালি মনীষীদের এই অনুরাগ-বিরাগ চায়ের ইতিহাসকে আরও বৈচিত্র্যময় করেছে নিশ্চয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে ভারতবর্ষে চায়ের বিপণন ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। ক্রেতাদের চামুখী করার জন্য কোম্পানিগুলোর নানামুখী তৎপরতা ছিল উল্লেখ করার মতো। তারা এ কাজে বাহারি বিজ্ঞাপন ছাড়াও নানাবিধ বিনিয়োগের মাধ্যমে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের মানুষদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করত। তবে শুরুতে চরম প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাদের। বৈরী এ পরিবেশ তৈরিতে সর্বতো সহযোগিতা ছিল যার, তিনি হলেন প্রখ্যাত রসায়নবিদ ও দার্শনিক প্রফুল্লচন্দ্র রায়। স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায় চা পানের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার প্রয়াস পান। সেকালের চায়ের বিপণন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি লিখেছেন-‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার সময়ে পরীক্ষার্থীদিগকে বিনা মূল্যে চা পান করাইবার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে তাঁবু ফেলা হইতে লাগিল। একজন ‘টি কমিশনার’ এতদর্থে নিযুক্ত হইলেন। ‘টি কমিশনার’ সুলভ মূল্য নহে, একবারে বিনা মূল্যে জনসাধারণকে ‘চা-খোর’ করিতে লাগিলেন। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে ১৩৭টি সহরে চা-খানা স্থাপিত হইয়াছিল। বৎসরের শেষে উহা ৬৮৩টিতে পরিণত হয়।’ মাসিক বসুমতী পত্রিকার ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের ভাদ্র ও কার্তিক সংখ্যায় তিনি ‘চা-পান ও দেশের সর্ব্বনাশ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লিখেন। ইতঃপূর্বে একই পত্রিকায় তিনি লিখেন, ‘চা-পান না বিষ-পান’ শীর্ষক প্রবন্ধ। তার মতে, চা মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন করে এবং ক্ষুধা নষ্ট করে। নিজের ধারণার সপক্ষে তিনি একটি ব্যঙ্গচিত্রও আঁকেন। এ ব্যঙ্গচিত্রে দেখা যায়, একজন ‘পাক্কা চা-খোর’ এর করুণ চিত্র। এ পাক্কা চা-খোরের টেবিলে একটি বড় চায়ের পাত্র আর তার হাতে এক কাপ চা। তার মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, পায়ে ছিন্ন জুতা, ছেঁড়াখোঁড়া পোশাক, আর চারদিকে ছড়ানো অসংখ্য সিগারেটের খোসা। সব মিলিয়ে চায়ের নেশায় অকেজো এক মানুষের প্রতিচ্ছবি। ‘চা-পান ও দেশের সর্ব্বনাশ’ প্রবন্ধের উপসংহারে তিনি লিখেছেন- ‘চা পান করিলে জাতিনাশ হইবে, এমন কথা আমি বলি না। পরিমিত চা পানে দেহের স্বাস্থ্য ভঙ্গ হইবে, এমন কথাও আমি বলিতেছি না। আমার বলিবার কথা এই যে, যদি বাঙালি সংযম ও নিয়মের অনুজ্ঞা মানিয়া প্রচুর সারবান ও পুষ্টিকর খাদ্যের সহিত সামান্য একটু চা দিবাভাগে একবার মাত্র পান করে, তাহা হইলে বিশেষ ক্ষতি হয় না। কিন্তু বাঙালি অপরিমিত চা পান করিতে অভ্যস্ত হইয়া আপনার সর্ব্বনাশ সাধন করিতেছে, ইহাই দেখাইয়া আমি সময় থাকিতে বাঙালীকে সতর্ক হইতে বলিতেছি।’ চা চাষের ফলে বাঙালি অর্থনীতি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেসব কথাও তিনি তার লেখায় তুলে ধরেন। ফলে বাঙালিদের অনেকেই তখন চা-পানের বিরোধিতা করে। ব্রাহ্মসমাজের অনুগামীরা প্রায় সবাই চা পানের আসক্তির ঘোরবিরোধী ছিলেন।
নতুন কবিতার সন্ধানে
‘কবিতার ভবিষ্যৎ’ শিরোনামের একটি গদ্যে আমি বলেছিলাম, বাংলা কবিতার নতুন সরণি তৈরিতে এখন আর ব্রিটিশ, মার্কিন, জার্মান কিংবা বেলজিয়ামের কবিতা সাহায্য করতে পারবে না। কিছুটা সাহায্য করতে পারে ফ্রান্স অথবা পূর্ব ইউরোপের কবিতা। আর পারে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে রচিত নতুনতা প্রয়াসী কবিতাগুলো। ঢাকায় বসে বাংলাদেশের কবিতা সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু কলকাতায়, এমনকি দিল্লিতে থেকেও গোটা ভারতবর্ষের কবিতা সমন্ধে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া অসম্ভব। আশির দশকে ‘ভারতভবন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে মধ্যপ্রদেশের শহর ভোপালে। তো ‘ভারতভবন’-এর লাইব্রেরিতে বসে জানা সম্ভব ভারতের দূর প্রান্তে কোন কোন লেখক কী কী উল্লেখ্য কাজ করেছেন। এমনকি জামশেদপুর বা কোচবিহার থেকে একটা মানসম্পন্ন বাংলা কাগজ বেরোলে তার খবরও জানা সম্ভব ওই ভবনে। সন্দ্বীপ দত্তের মতো কর্মযোগী মানুষ ছিলেন বলেই কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল। আর আমাদের এখানে পাঠবিমুখতা এবং মানসিক দীনতা এতই প্রকট যে, চোখের সামনে গড়ে ওঠা একটা সৃজনশীল বইয়ের বাজার দুদশক যেতে না যেতেই পরিণত হলো তৈরি পোশাকের মার্কেটে। সম্ভবত কবিতাই হচ্ছে সেই ব্যারোমিটার যার মাধ্যমে আমরা একটা দেশের শিল্প-সংস্কৃতির চেহারা অবলোকন করতে পারি। যে দেশ লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে তার সাহিত্যও পিছিয়ে পড়া। আবার অন্যভাবেও বিষয়টিকে দেখা সম্ভব। ধরুন একজন শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান মানুষ জাপানের সাহিত্য পড়েছেন কিন্তু তাদের ফুটবল খেলা দেখেননি। ইউকিয়ো মিশিমা বা হারুকি মুরাকামির সমকক্ষ না হলেও জাপানে অসংখ্য প্রথম শ্রেণির লেখক আছেন। আছেন ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা-কেনজাবুরো ওয়ের মতো বড় মাপের সাহিত্যিক, যারা নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। এখন ওই ব্যক্তি যদি ভাবেন, যে দেশের একাধিক লেখক নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন, তার ফুটবল নিম্নমানের হতে পারে না; তার ওই ভাবনাকে আমরা অযৌক্তিক বলব না। একটা উন্নত দেশের চিত্র এমন-সেসব ক্ষেত্রেই তার অগ্রসরতা কম-বেশি তুলে ধরতে সক্ষম। অন্যদিকে আমাদের অবস্থাটা দেখুন। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ লেখক অল্প কজন, ঠিক যেমন অল্প কয়েকটি ছেলেমেয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার বা ফুটবলার। মোটাদাগে চিন্তা করলে দুভাবে পরিবর্তন সূচিত হয় কবিতায়। তেভাগা আন্দোলন, নকশালবাড়ি আন্দোলন, উনসত্তরের গণআন্দোলন (বাংলাদেশ) প্রভৃতির প্রভাবে এক ধরনের তীব্র কবিতা লেখা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে বাইরের প্রভাব। আর ভেতর থেকে আসা তাগিদের প্রভাবে নতুন ধরনের কবিতার দিকে এগিয়েছে কবিরা। বরং ভেতরের তাগিদ থেকে যারা নতুনত্ব সন্ধানী হয়েছেন তাদের মধ্যে সার্থক কবির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। হাংরি জেনারেশন, সহজ কবিতা আন্দোলন (আশির দশক, বাংলাদেশ), অ্যান্টি পোয়েট্রিতে বিশ্বাসী কবিদের কর্মকাণ্ড যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে একটা জিনিস পরিষ্কার হয়, পৃথিবীর কিছু কিছু কবি তীব্রভাবে প্রথার বাইরে যেতে চেয়েছেন, এখনো চান। অন্যদিকে অনেক সামর্থ্যবান কবি প্রথানুগ থেকেও তাদের প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়েছেন, বাংলাভাষায় যেমন শক্তি চট্টোপাধ্যায় বা আবুল হাসান। ইংরেজি ভাষার কবিদের মধ্য থেকে বলতে পারি ফিলিপ লারকিন, থম গান প্রমুখের কথা। শিল্প-সাহিত্যের আন্দোলনগুলো এমনই যে, একবার যদি চাউর হয়ে যায় তাহলে প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত তার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এখন না হয় ইন্টারনেটের জয়-জয়কার। কিন্তু পঞ্চাশের/ষাটের দশকে তো এ বাস্তবতা ছিল না। অথচ দেখুন পশ্চিমের অ্যান্ট্রি পোয়েট্রির ঢেউ ভারতবর্ষে এসে লাগার পর হিন্দি ভাষায় তা হয়ে গেল ‘অকবিতা’; বাংলাদেশে তারই নাম ‘বিকল্প কবিতা’। (এ নামেই একটি ক্ষণজীবী কবিতাপত্র বের করেছিলেন আশির প্রজন্মের শক্তিমন্ত কবি ও গল্পকার কাজল শাহনেওয়াজ।) রবীন্দ্রনাথের সময় থেকে পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত বাংলা কবিতা খুঁটিয়ে পড়লে একটা বিষয় পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যায়। একজন জীবনানন্দ, খানিকটা অমিয় চক্রবর্তী, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শামসুর রাহমান, বিনয় মজুমদার, আল মাহমুদ, তারাপদ রায়, অনেকখানি শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুধেন্দু মল্লিক প্রমুখকে সসম্মানে একপাশে রাখলে বাদবাকি কবিদের লেখা ধাঁধাময়, ফাঁপড়পদ, দমবন্ধ করা-এক কথায় অস্বস্তিকর। দূর অতীতের রবার্ট ফ্রস্ট বা উইলিয়াম কার্লোস ইউলিয়ামস এবং নিকট অতীতের ফিলিপ জাকোতে (ফ্রান্স), ভাস্কর চক্রবর্তী (ভারত) প্রভৃতি কবির লেখায় সহজের ভেতর থেকে গভীর জীবনদৃষ্টি ব্যক্ত করার একান্ত ব্যক্তিক ভঙ্গি আমরা লক্ষ করেছি। ষাটের প্রজন্মের দু-চারজন কবির হাত ধরে এবং প্রধানত সত্তরের কবিদের নিরন্তর তৎপরতায় বাংলা কবিতা আজ অনেকখানি সহজ হয়ে এসেছে। সুবোধ সরকার, নির্মল হালদার, আবিদ আজাদ, জাহাঙ্গীর ফিরোজ-এদের পরিণত বয়সের কবিতা বক্তব্যধর্মিতাকে সঙ্গে নিয়েই প্রয়োজনীয় আড়ালকে সঙ্গী করেছে। সাবলীলতা ও সহজতার জেল্লা এসেছে এখনকার কবিতায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এই যে চেহারার স্মার্টদশা, ফুরফুরে ভাব, সহজভাবে সরাসরি কথা বলার প্রবণতা... এতে করে কবিতা কি তার গোপন ঐশ্বর্য হারিয়ে ফেলছে না? আমরা যাকে মানোত্তীর্ণতা বা শিল্পোত্তীর্ণতা বলি, কাব্যের বাচালতার বা অতিযোগাযোগসক্ষমতার সঙ্গে তার বিরোধ কি অনিবার্য নয়? শিল্পের সঙ্গে রহস্যের সম্পর্ক আজও অবিভাজ্য বলেই মানি। সামান্য অলংকার বা একদম অলংকার ছাড়াই যে উৎকৃষ্ট কবিতা সম্ভব তা যেমন তারাপদ রায়, মুস্তফা আনোয়ারের মতো কবিরা করে দেখিয়েছেন; তেমনি রণজিৎ দাশ, নাসিমা সুলতানা, তাহমেদ মুজিবদের লেখায়ও আমরা তা পেয়েছি। ষাটের ও সত্তরের অজস কবিতা নষ্ট হয়ে গেছে অতিকথনের পাল্লায় পড়ে। অস্বচ্ছ ভাবনা, উদ্ভট কবিকল্পনা, লক্ষ-ভেদ করতে-না-পারা বিদ্রুপ বা কৌতুক; সর্বোপরি ব্যঞ্জনা সৃষ্টিতে ব্যর্থ স্থূল কাব্যভাষা এ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। আশির প্রজন্মের নতুন কবিরা, তাই কাব্যের হারানো গৌরব উদ্ধারকল্পে সহজসরল ভাষার সঙ্গে মিশিয়েছেন শ্লেষ, অভিনতুন চিত্রকল্প, হৃদয়গ্রাহী ইশারা, অপ্রচল উপমা। বেশি কথার বেশির ভাগই অপ্রয়োজনীয় কথা। এদের কবিতা, অতএব, কাহিনিপ্রবণ নয়, কিন্তু উপস্থাপনার গুণে কোথাও কোথাও গল্পের স্বাদ থেকে যায়। বিশ্বজুড়ে এখন যে কবিদের বয়স ৫৮ থেকে ৬৭। এরকম ৬০-৭০ জন লেখকের কবিতা পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার। এরা সবাই সরাসরি কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। লক্ষণীয়, সেই সোজাসাপ্টা কথার ভেতর আছে ইঙ্গিত, প্রতীকের আলোছায়া। আর এমন ভাষায়, এমন ভঙ্গিতে তারা কথা বলেন যে, আমরা মনোযোগী না হয়ে পারি না। কেরালার কবি বালচন্দন (১৯৫৬) তেমনই এক দৃষ্টান্ত। ভাবাবেগ ও জীবন বাস্তবতার যৌক্তিকতার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে থাকে তার কবিতা। তা না স্লোগান, না মন্ত্র। একই সঙ্গে স্পষ্ট ও রহস্যময়, সুগম ও সুষমাদীপ্ত এমন কবিতা শুধু ভারতবর্ষে নয়, সারা পৃথিবীতেই বিরল-‘সবচেয়ে তপ্ত হৃদয়? আমার মা।/সবচেয়ে কঠিন ব্যাকরণ? আমার বাবা। সবচেয়ে লবণাক্ত সমুদ্র? আমার স্ত্রী।/সবচেয়ে নিঃশব্দ কান্না? আমার বোন।/সবচেয়ে অনাথ জড়? আমার ভাই।/সবচেয়ে বিকৃত মুখ? তা আমারই।’ (অনুবাদ : দুর্গা দত্ত)। আশির দশকের মাঝামাঝি নাগাদ ইউরোপের কোনো দেশ থেকে এ মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয় যে, কবিতা ফুটবল খেলার মতোই সহজ হয়ে উঠবে। এটা পড়ার পর রীতিমতো হতবাক হয়েছি। কেননা, যেখানে কবিতার নন্দনতত্ত্ব নিয়ে মোটা মোটা বই লেখা হয়েছে ও হচ্ছে; সেখান থেকেই উঠল এ কথা। অবশ্য এটাও ভেবেছি, আধুনিক ফুটবল আর সহজ নেই। নানা ধরনের কায়দা-কৌশল তাকে অনেকটাই কঠিন করে তুলেছে। অবশ্য একটা ব্যাপারে মিল আছে। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য একজন কৃতী ফুটবলারকে অনেকের থেকে আলাদা করে। নিজস্ব স্টাইল খুঁজে পাওয়া একজন প্রতিভাবান কবিও নিজেকে পৃথক করে নিতে পারেন। বহুকাল আগেই কবিতা রাজদরবার থেকে সাধারণ মিলনায়তনে স্থান করে নিয়েছিল। এখন সে ওই হলরুমে থেকে বেরিয়ে পড়েছে রাস্তার মোড়ে কিংবা কারখানার গেটে। মনে পড়ছে, রবার্ট ব্লাই তার উত্থানের দিনগুলোয় আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খোলা জায়গায় নিজের কবিতা পড়তেন ছাত্রদের উদ্দেশে। জীবনানন্দ দাশ এ যুগের মানুষ হলে এটা জেনে চমকে উঠতেন হয়তো। ক্যাম্পাসের খোলা স্থানে, রেলস্টেশনে বা কারখানার গেটে কবিতা পড়ার কারণ তো একটাই। অনেক বেশি শ্রোতার কাছে পৌঁছানো। এখানে একটা জিনিস আমরা ভুলে যাই। রাজদরবারে কিংবা হলরুমে নির্বাচিত এলিট শ্রেতা-দর্শকদের সামনে কবিতা পাঠের যে-রীতি চালু ছিল, সেটা কেন হয়েছে? হয়েছে এজন্য যে, কবিতার শ্রোতা বা পাঠক উন্নত রুচির অধিকারী সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আধুনিক কবিতা বোঝার মতো শিল্পপ্রেমী মানুষদের জন্যই এ সাহিত্য। হ্যাঁ, জনসাধারণের মাঝখানে যাওয়ার সাধ কবিতার হতেই পারে। সেই জনসাধারণ যারা প্রতীকের মূল্য কিংবা চিত্রকল্পের মর্যাদা বোঝে না। এ কালের কবিতা যতই সহজ হতে চাক না কেন তার ওই নিরলংকার সাদামাটা। চেহারার পেছনে লুকিয়ে থাকে যেসব গূঢ় ভাব আর ইশারা-ইঙ্গিত, মামুলি পাঠক কিংবা শ্রোতা সেসবের অর্থ উদ্ধার করলেন কী করে? ধরে নেওয়া যাক, দীক্ষিত-অদীক্ষিত নির্বিশেষে সব ধরনের মানুষই কবিতার পাঠক। কবি যদি তার কাজে সত্যিকার দক্ষতা দেখাতে পারেন, তাহলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি না থাকলেও পাঠক তার কাব্যের রসাস্বাদন করতে পারবেন। একজন কবি যখন দেশবরেণ্য হয়ে ওঠেন তখন বুঝতে হবে, কেবল আঁতেল পাঠকবর্গেরই নয় বরং তার চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি ওই অদীক্ষিত পাঠকদের ভালোবাসা তিনি অর্জন করেছেন। এটা কীভাবে সম্ভব? কবিতার মতো সূক্ষ্ম শিল্প কীভাবে সাধারণ পাঠকদের আনন্দ দিতে সক্ষম? সাদামাটা শব্দবলী দিয়ে গড়ে তোলা এ যুগের নাতিসরল কবিতাগুলোয় এমন এক মেজাজ, এমন আনন্দপ্রদ বাকভঙ্গি থাকে, যদিও সবার বেলায় নয়, যে সেটাই হয়ে ওঠে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বক্তব্য বস্তুর অনন্যতা এখানে বিবেচ্য নয়। বক্তব্য পরিষ্কার বুঝা গেলে কবিতার শিল্প ক্ষুণ্ন হতে পারে। আবার বিষয়বস্তু অস্পষ্ট হলেও কবিতা দরিদ্র হতে পারে যদি-না তাতে থাকে সঠিক কবিকল্পনা ও মনোহর বাকপ্রতিমা। নেরুদার কবিতায় বিষয়বস্তু প্রায়শই খুব স্পষ্ট; অথচ দেখুন তার লেখা কত চমৎকার। এটা সম্ভব হয়েছে তার অনুকরণীয় মজাদার ভাষার গুণেই। সহজ-সাবলীল, মজাপ্রদ কাব্যভাষার আরেকটা উদাহরণ দেব অরুণ কোলাতকারের কবিতা থেকে। হিন্দি, মারাঠি ও ইংরেজির মিশেলে তৈরি এক মিশ্র ভাষা প্রযুক্ত হয় অরুণের কাব্যে। সেখানে ঠেলাগাড়িওয়ালা বা সবজি বিক্রেতার মতো অতিসাধারণ মানুষ যেন কথা বলে ওঠে। -‘আমার বুকটা মেপে দরজি বললো/একত্রিশ ইঞ্চি, মোটে একত্রিশ ইঞ্চি/জুতোয় জোর করে পা ঢুকিয়ে দিয়ে মুচি বললো,/ ব্যবহার করো, আর টাইট লাগবে না।’ (অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়) এখন মানুষের দৈনন্দিন ব্যস্ততা আগের চেয়ে এত বেশি যে, সব ধরনের ‘প্রিন্টেড ম্যাটার’ পড়ার জন্য সে প্রতিদিন গড়ে কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিট সময় পাচ্ছে। তার ওপর আছে টেলিভিশন, আছে ফেসবুকের হাতছানি। এসব থেকে সময় বাঁচিয়ে একজন শিক্ষিত লোক যদি কবিতা পড়তেই চান, তাহলে কোন ধরনের কবিতা তিনি বেছে নেবেন? নিশ্চয় সেই কবিতা তিনি চাইবেন যা একই সঙ্গে অনবদ্য ভাবুকতা ও ভাষাঘটিত বিনোদন জোগাতে পারে। সেই টেক্সট সরাসরি কথা বলছে নাকি আড়ালপ্রিয় সেটা তার প্রধান বিবেচ্য নয়। কিন্তু স্পষ্ট করে কথা বলার গুণ আছে আবার তা খানিকটা আলো-ছায়ায়ও তুলে ধরে এককথায় শিল্পসম্মত সুগমতা যেসব কবিতার মুখ্য চারিত্র, সে ধরনের রচনা খুব সুলভ নয়। তবে সেটাই আজ পৃথিবীর সব ভাষার কবিদের কাম্য বলে মনে হয়।
‘কবিতার ভবিষ্যৎ’ শিরোনামের একটি গদ্যে আমি বলেছিলাম, বাংলা কবিতার নতুন সরণি তৈরিতে এখন আর ব্রিটিশ, মার্কিন, জার্মান কিংবা বেলজিয়ামের কবিতা সাহায্য করতে পারবে না। কিছুটা সাহায্য করতে পারে ফ্রান্স অথবা পূর্ব ইউরোপের কবিতা। আর পারে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে রচিত নতুনতা প্রয়াসী কবিতাগুলো। ঢাকায় বসে বাংলাদেশের কবিতা সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু কলকাতায়, এমনকি দিল্লিতে থেকেও গোটা ভারতবর্ষের কবিতা সমন্ধে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া অসম্ভব। আশির দশকে ‘ভারতভবন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে মধ্যপ্রদেশের শহর ভোপালে। তো ‘ভারতভবন’-এর লাইব্রেরিতে বসে জানা সম্ভব ভারতের দূর প্রান্তে কোন কোন লেখক কী কী উল্লেখ্য কাজ করেছেন। এমনকি জামশেদপুর বা কোচবিহার থেকে একটা মানসম্পন্ন বাংলা কাগজ বেরোলে তার খবরও জানা সম্ভব ওই ভবনে। সন্দ্বীপ দত্তের মতো কর্মযোগী মানুষ ছিলেন বলেই কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল। আর আমাদের এখানে পাঠবিমুখতা এবং মানসিক দীনতা এতই প্রকট যে, চোখের সামনে গড়ে ওঠা একটা সৃজনশীল বইয়ের বাজার দুদশক যেতে না যেতেই পরিণত হলো তৈরি পোশাকের মার্কেটে।
মিজান মালিকের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মায়াতন্ত্র’, মোড়ক উন্মোচন কাল
সৃজনশীল লেখক, কবি ও যুগান্তরের নগর সম্পাদক মিজান মালিকের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ 'মায়াতন্ত্র' আসছে এবারের ব‌ই মেলায়।  বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান ১৪ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) বেলা ১১ টায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।   অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজীর লিটন।  মায়াতন্ত্রে ৭০ টির মতো কবিতা থাকছে; যার বেশিভাগই প্রেমের। শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে ব‌ইটি একুশে বই মেলায় আসছে বলে জানান প্রকাশক রবিন আহসান। মায়াতন্ত্র'র প্রচ্ছদ এঁকেছেন রাজিব রায়।   তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ মায়াতন্ত্র সম্পর্কে কবি ও সাংবাদিক মিজান মালিক বলেন, ‘প্রতিটি মানুষেরই কিছু শখের মানুষ থাকে। তাদের প্রতি অতুল মায়াও থাকে। অনুভূতির উঠোনে একটু যত্ন পেলে তুলতুলে নরম হয়ে ওঠার অজস্র গল্প আছে।‌ অপরদিকে বাস্তবতার সড়কে আক্রান্ত মানুষ, অন্যের প্রতি কোমল ভালোবাসার ভিটায় যখন শ্লেষের চারা লাগায়,তখন সে ভিড় থেকে বেরিয়ে আলাদা হয়ে যায়। বিষণ্ণ মন খুঁজে প্রশান্তি।‌ কখনো বৃষ্টির প্রার্থনায়, সন্ধ্যা তারার মাঝে। মেঘ‌ও হয়ে ওঠে অভিমানের পারদ। যদি বৃষ্টি না ঝরায়। কবিতাগুলোয় মানুষের আকুল মনের নানামুখী তৎপরতা উঠে এসেছে। ‘ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জানায়, মায়াতন্ত্রের কবিতার শরীর শৈলিতে প্রেম, আশা-নিরাশা, কাছে পাওয়া কিংবা দূরত্বের শঙ্কা আবার কখনো দোটানা আশ্রয় নিয়েছে বেশ। বলা চলে এই কাব্যগ্রন্থের বড় একটা জায়গা দখলে রেখেছে প্রেম, ভালোবাসা বিরহব্যথার অমিমাংসিত রহস্য। পাশাপাশি জীবনপাতার ওপর কুয়াশা ঝরে পড়াও পেয়েছে জায়গা। তবে সেটিও মূখ্য হয়ে উঠতে পারেনি, কাব্যগ্রন্থের রোমান্টিক কবিতার দাপটের কাছে। এর প্রতিটি কবিতা যেনো বিদ্যমান সময়ের একেকটা বৃক্ষ। যার ছায়ায় একটু জিরিয়ে নিতে চাইবে সবাই। মিজান মালিক সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখালেখি করেন। ২০২০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'গল্প ছাড়া মলাট' প্রকাশ করেছিল ঐতিহ্য প্রকাশনী। ২০২১ সালে করোনাকালে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'মন খারাপের পোস্টার' প্রকাশ করেছিল ঐতিহ্য প্রকাশনী। দুটি কাব্যগ্রন্থই সাড়া ফেলেছিল কবিতাপ্রেমিদের মনে।
সৃজনশীল লেখক, কবি ও যুগান্তরের নগর সম্পাদক মিজান মালিকের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ 'মায়াতন্ত্র' আসছে এবারের ব‌ই মেলায়।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে স্বাধীনতার কবিতা পাঠ
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা দিবস ২০২৪ উদযাপন ও কবি শামসুর রহমান স্মরণে কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হয়েছে।   রোববার ‘স্বাধীনতার কবিতাপাঠ ও আবৃত্তি মূল্যায়ন’ শিরোনামে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  এতে ঢাকার ১৪টি বেসরকারি গ্রন্থাগারের ২৮ পাঠক কবি শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ ও ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতা দুটি আবৃত্তি করা হয়।  আবৃত্তি মূল্যায়ন শেষে অংশগ্রহণকারীদের হাতে পুরস্কার হিসাবে বই তুলে দেওয়া হয়।  অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি মিনার মনসুর। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান খলিল আহমদ।  বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ, কবি নাসির আহমেদ এবং অভিনেত্রী ও নির্মাতা রোকেয়া প্রাচী। স্বাগত বক্তৃতা করে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উপপরিচালক ফরিদ উদ্দিন সরকার, সঞ্চালনা করেন সহকারী পরিচালক মো. ইনামুল হক। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন গ্রন্থাগার সংগঠক ও গ্রন্থসুহৃদ এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া, শাহনেওয়াজ, কাজী সুলতান আহমেদ টোকন, শফিকুল গণি প্রমুখ।    প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খলিল আহমদ বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট নাগরিক চাই। স্মার্ট নাগরিক গড়তে হলে জ্ঞান আহরণের বিকল্প নেই। জ্ঞান আহরণে সবচেয়ে বড় মাধ্যম বই। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ বলেন, কবিতা আবৃত্তি একটি বড় মাপের শিল্প। আবৃত্তিচর্চার মধ্য দিয়ে শব্দ, বাক্য, উচ্চারণ, উপস্থাপনা ও ভাষা সম্পর্কে পরিশীলিত জ্ঞান লাভ করা যায়।  ভাষা সঠিকভাবে আয়ত্বে আসে। যা প্রতিটি শিক্ষার্থীর রপ্ত করা উচিত। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র চাইলে এব্যাপারে কর্মশালার আয়োজন করতে পারে।     কবি নাসির আহমেদ বলেন, কবি শামসুর রাহমানকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তিনি স্বাধীনতা নিয়ে কবিতাযুগল রচনা করেছিলেন একাত্তরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। আমি জনকন্ঠে কাজ করার সময় তার জীবনী সম্পাদনা করতে গিয়ে তাকে আরো গভীরভাবে জেনেছি। নতুন প্রজন্মের উচিত তার কবিতা ও সাহিত্যকর্ম পাঠ করা। অভিনেত্রী ও নির্মাতা রোকেয়া প্রাচী বলেন, প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমান প্রজন্মের সামনে জ্ঞান আহরণের অনেক দ্বার অবারিত। আমাদের শৈশবে এতো সুযোগ ছিল না। তারপরও আমরা পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি প্রচুর বাড়তি বই পড়েছি। পড়ূয়া হিসেবে বড় হয়েছি।  এখনো প্রতিদিন অধ্যয়নে দীর্ঘ সময় ব্যয় করি। এতে অশেষ উপকার হয়। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে অনবরত নতুন বিষয় জানতে পারি।   অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পরিচালক কবি মিনার মনসুর বলেন, আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানকে আমরা যেন ভুলতে বসেছি। তার ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ ও ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতা দুটি পাঠ করলে আজও যেন রক্তে নাচন ওঠে। অথচ নতুন প্রজন্মেরর বাচ্চাদের অনেকে তার নামই জানে না। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এর চর্চা হয়না। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের স্কুল-মাদরাসার গ্রন্থাগারগুলো বেশিরভাগই তালাবদ্ধ, নিষ্ক্রীয় পড়ে থাকে।  যাহোক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র সারাদেশে বেসরকরি গ্রন্থাগারগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। তবে সরকারের একার পকে এই কাজ করা সম্ভব নয়। এজন্য শিক্ষিত ও সচেতন মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে, সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। আমরা সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় গ্রন্থাগারগুলো চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের লক্ষ্যে কাজ করছি।     রোববার গ্রন্থপাঠ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী গ্রন্থাগারগুলো হচ্ছে বেরাইদ গণপাঠাগার, দনিয়া পাঠাগার, সীমান্ত পাঠাগার, গোলাম আবেদীন মাস্টার ও রেফাতুন্নেছা গ্রন্থাগার, আলোকবর্তিকা গ্রন্থালয়, কামাল স্মৃতি পাঠাগার ঢাকা, অনির্বাণ পাঠাগার, মতি মাস্টার স্মৃতি পাঠাগার, তাহমিনা ইকবাল পাবলিক লাইব্রেরি, মুক্তি গণপাঠাগার, উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আউয়াল পাঠাগার, মুকুল ফৌজ পাঠাগার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি পাঠাগার।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা দিবস ২০২৪ উদযাপন ও কবি শামসুর রহমান স্মরণে কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলায় এসেছে আহমেদ বাসারের কাব্যগ্রন্থ ‘সূর্যফুলের রৌদ্রঘ্রাণ’
বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কবি, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক আহমেদ বাসারের কাব্যগ্রন্থ ‘সূর্যফুলের রৌদ্রঘ্রাণ’ বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। এ গ্রন্থের কবিতাগুলোতে প্রেম, প্রকৃতি ও মানবমনের রহস্যময় অনুভবের রূপায়ণ ঘটেছে। মেধা ও মনন শাসিত আবেগের অভূতপূর্ব উৎসারণ কবিতাগুলোতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। সমকাল এখানে চিরকালীন আবহে মূর্তমান। ব্যতিক্রমী শব্দশৈলী ও বোধের নান্দনিক নৃত্যে কবিতাগুলো প্রাতিস্বিকতায় ভাস্বর হয়ে উঠেছে। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা ‘সৃজন’ । বইমেলায় ঐতিহ্য ও মাত্রা প্রকাশের স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বইমেলায় আগামী প্রকাশনীতে পাওয়া যাচ্ছে আহমেদ বাসারের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বাংলাদেশের সাহিত্য: পরিপ্রেক্ষিত ও সাম্প্রতিক প্রবণতা’ । ‘অন্যপ্রকাশ’-এ পাওয়া যাচ্ছে উপন্যাস ‘অতিমানবী’। উপন্যাস ‘দ্বিখণ্ডিত চাঁদ’ পাওয়া যাচ্ছে তাম্রলিপিতে। ‘অনিন্দ্য প্রকাশ’-এ পাওয়া যাচ্ছে কাব্যগ্রন্থ- ‘মানুষ তোমার দিকে’, ‘ঘুড়িদের পার্থিব আকাশ ’, ‘মর্তের মাছিরা’, গল্পগ্রন্থ- ‘রাতশিকারি’। প্রবন্ধগ্রন্থ ‘শামসুর রাহমানের কবিতা: মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ’ ও কাব্যগ্রন্থ ‘প্রলম্বিত রাতের নর্তকী’ পাওয়া যাচ্ছে  ‘অনন্যা’য়।  অনুবাদগ্রন্থ-‘ ডি এইচ লরেন্সের কবিতা: ঈর্ষা ও একটি প্রেমগীতি ’ পাওয়া যাবে ‘প্রকৃতি’ প্রকাশনীর স্টলে।
বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কবি, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক আহমেদ বাসারের কাব্যগ্রন্থ ‘সূর্যফুলের রৌদ্রঘ্রাণ’ বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে।
এভাবেই দেখা হয়
এভাবেই এক একটি দিন  চলন্ত ট্রেনের মতো ছুটে যায়; ছেড়ে যায় পথপাশের বৃক্ষরাজির গলায় জড়িয়ে থাকা আলোকলতা! অনাগত সময়-অদেখাকে ছুঁতে  এঁকেবেঁকে যায় এগিয়ে সম্মুখে, পুড়তে আধাপোড়া অদ্ভুত  কয়লার মতো আরও কিছু সাধারণ জীবন! সবুজপাতাগুলো হয় দুশ্চিন্তার ধুলোয় ধূসরিত,   মধুময় সম্পর্ক হয়ে যায় কালিমাময় অতীত;  ঝরে পড়া পাতাগুলো পদপৃষ্ট হয়,  মিশে যায় মাটিতে অথবা  তলিয়ে যায় স্মৃতির অতল গহবরে! দেখা হয়ে যায় কোনো না কোনো খানে  যদি নাও হয় দেখা ক্ষণকালের পৃথিবীতে  দেখা হয়ে যায় হয়তো বাতাসের ধূলিকণায়- জলে-উদ্ভিদের কাণ্ডে-শিরা-উপশিরায়!  দেখা হতে প্রকৃতির কিছু দলছুট মেঘ  বাড়িয়ে দেয় সহযোগিতার হাত  ভাসতে ভাসতে দৃষ্টিভ্রমে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে  উড়তে উড়তে ঝরে পড়ে বৃষ্টির ফোটায়  এভাবেই না চাইলেও দেখা হয়ে যায় জলকণায়  একদিন এভাবেই দেখা হয় মাটিতে  হয়তো বাতাসের ধূলিকণায়-জলে-  উদ্ভিদের কাণ্ডে-শিরা-উপশিরায় অথবা  একটি সমুদ্রের শরীরে মিশে ভাসতে ভাসতে!
এভাবেই এক একটি দিন চলন্ত ট্রেনের মতো ছুটে যায়; ছেড়ে যায় পথপাশের বৃক্ষরাজির গলায় জড়িয়ে থাকা আলোকলতা!
এলে আসুক সে
আমার মনে হয়, কুয়াশার বুক খুঁড়ে তুমি চলে আসো কাছে অথবা অন্য কেউ সেই পথ ধরে আসুক; একটু বসুক পাশে; ফুটুক-কোনো দিন না ফোটা একটি গাছে-  মনোমুগ্ধকর স্বচ্ছ শিউলি-শেফালী ফুল! ভাসুক জলে  বিরহের দুর্ভাবনাগুলো  কচুরিপানার মতো! জ্বলুক আগুন বুকে আরও-দাউদাউ করে, যেমন করে বর্ষায় বৃষ্টি পড়ে! নড়ে গাছের কাণ্ড, চৈত্রে বিরহী বাঁশের পাতা ঝরে! উড়ুক অনাহারী চাতক পাখিটি কাঠ ফাটা রৌদ্রে! বিরহী কোকিলের মতো ডাকুক  একটি ডাহুক পাখি নিস্তব্দ রাতে! হাতে হেলান দিয়ে চেয়ে থাকি আমি  প্রকৃতির চরম অরাজকতার অপ্রকৃতিস্থ শীতে! মনে হয় আঁধারের বুক চিড়ে তুমি আসো, অথবা অন্য কেউ এলে আসুক; তোমার দেখানো পথে! এসে আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখুক  একটি বিরহী বুকের খাঁচায়  আটকে পড়া ছটফট পাখির মন  কেমন কষ্টে কাঁদে, থাকে-  কারোর শুভাগমনের প্রতীক্ষায়! এলে আসুক ফিরে নিজ নিজ ঘরে! ফিরে আসুক আমার অথবা কারোর প্রিয়তমা-  একজন অমৃতময়ী, নীলাচল, স্বজনহারা সুলেখা অথবা মালবিকা! প্রকৃতির পালাবদলের ঋতুচক্রে  আবর্তিত হয়ে আসলে আসুক আমার মালবিকা একজন পথিকৃতের দেখানো পরিচ্ছন্ন পথ ধরে!
আমার মনে হয়, কুয়াশার বুক খুঁড়ে তুমি চলে আসো কাছে অথবা অন্য কেউ সেই পথ ধরে আসুক; একটু বসুক পাশে; ফুটুক-কোনো দিন না ফোটা একটি গাছে- মনোমুগ্ধকর স্বচ্ছ শিউলি-শেফালী ফুল!
খেটে খাওয়া মানুষ টাকা মারে না
খাদ্য উৎপাদনে কৃষির বিকল্প নেই। এতে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রান্তিক কৃষক সহজ শর্তে ঋণ পান না। ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। সম্প্রতি কৃষি উন্নয়ন ও অর্থায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। সেখানে অন্যতম সহচর হিসাবে এগিয়ে এসেছে ব্যাংকগুলো। আর ডিজিটাল মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে জামানতবিহীন কৃষি ঋণ দিচ্ছে এবি ব্যাংক। অর্থাৎ স্মার্টকার্ডে সরাসরি ঋণ পাচ্ছে কৃষক। জামানত ছাড়া ঋণ পেয়ে অনেক কৃষক আনন্দে আত্মহারা। এমন ঋণের বিষয়ে যুগান্তরের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আফজাল। তারমতে, ব্যাংক খাতে বড় সমস্যা উচ্চ খেলাপি ঋণ। বিশেষ করে খাতটিকে বিপদে ফেলেছে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দিতে হবে ছোট ছোট ঋণ। যার ভোক্তা হবেন প্রান্তিক মানুষ ও গ্রামীণ কৃষক। এসব খেটে খাওয়া মানুষ কখনও ব্যাংকের টাকা মারেন না। প্রায় ৯৮ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা ঋণের টাকা ফেরত দেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-হামিদ বিশ্বাস। যুগান্তর : কৃষি ঋণ বিতরণে হঠাৎ বাড়তি আগ্রহের কারণ কী? তারিক আফজাল : বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান চালিকা শক্তি কৃষি খাত। দেশের উন্নয়ন করতে হলে কৃষকের উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য দরকার কৃষকের মাঝে প্রয়োজনীয় ঋণ বিতরণ। বিশেষ করে পল্লি অঞ্চলে ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ করা। আর কৃষকের মাঝে ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হলেই কৃষি উৎপাদন বাড়বে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। পাশাপাশি কৃষিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। এতে দেশের বেকারত্ব কমবে। একটা পর্যায়ে দেশের দারিদ্র্যের হার কমে আসবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে কৃষির জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে বিতরণ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকেও কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। যুগান্তর : কৃষি ঋণ বিতরণে এবি ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই? তারিক আফজাল : দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। আর বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর প্রতি সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারি অভিঘাতে জর্জরিত, কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসাবে সহজ শর্তে কৃষি ঋণ বিতরণে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে কৃষকদের ঋণ বিতরণে এগিয়ে রয়েছে এবি ব্যাংক। পাশাপাশি এবি ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকেও কৃষি ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকটি প্রান্তিক এবং ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে জামানতবিহীন এবং সহজ শর্তে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে সরাসরি ঋণ প্রদান করছে। এমনকি এবি স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে কোনো ঝামেলা ছাড়াই কৃষকের মাঝে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। যুগান্তর : স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ বাস্তব অনূভূতিটা কেমন? তারিক আফজাল : এবি ব্যাংক কৃষকদের মাঝে স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ শুরু করে গোপালগঞ্জ জেলায়। শেখ ফজলুল হক মনি আউটার স্টেডিয়ামে এ ঋণ বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। চার শতাধিক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়। এ ঋণ বিতরণে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। শুধু স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিয়ে ঋণ পেয়ে অনেক কৃষক আনন্দে কেঁদে ফেলেছেন। ঋণ পাওয়ার পরে ছবি তুলতে কেউ কেউ সংকোচ বোধ করেছেন। কারণ অনেকের পরনে ছিল লুঙ্গি। এরপর বরিশাল বিভাগেও একই পদ্ধতিতে ১০৩ জন কৃষককে ঋণ দেওয়া হয়। যুগান্তর : জামানতবিহীন ঋণের ঝুঁকি কিভাবে দেখছেন? তারিক আফজাল : স্মার্টকার্ডে ঋণ পেয়ে কৃষকরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছেন। তারা ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করবেন। হাস-মুরগি পালন করবেন। কোনো না কোনো উৎপাদন কাজে ব্যবহার করবেন। কৃষকদের প্রত্যয় উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করেছে। তারা টাকা সময়মতো ফেরত দেবেন। কেউ মনে হয় না খেলাপি হবেন। তাদের ঋণ আদায় নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কারণ কৃষকের উন্নয়ন হলেই দেশের উন্নয়ন হবে। প্রয়োজনে তাদের ঋণের অঙ্ক বাড়ানো হবে। অল্প ঋণের ঝুঁকি নিয়ে ভাবার তো কিছু নেই। বরং বড় ঋণ নিয়ে ঝুঁকি বেশি। যুগান্তর : গোপালগঞ্জের গিমাডাংগায় নাকি ক্রেডিট কার্ড বিতরণ করেছেন? তারিক আফজাল : বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত বিদ্যাপীঠ হিসাবে গিমাডাংগা (জি.টি) মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং গিমাডাংগা (জি.টি) উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকমণ্ডলীর মাঝে সহজ শর্তে ক্রেডিট কার্ড প্রদান করা হয়েছে। এটা এবি ব্যাংকের করপোরেট কাজের অংশ। তবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির স্কুলের শিক্ষকদের ক্রেডিট কার্ড দিতে পেরে একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। যুগান্তর : ব্যাংক খাতের মূল চ্যালেঞ্জ কী? তারিক আফজাল : ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠাই বড় চ্যালেঞ্জ। এটি খুবই প্রয়োজন। এছাড়া খেলাপি ঋণ আদায়ের বিকল্প নেই। এজন্য ঋণ বিতরণ ও আদায়ে মনে রাখতে হবে কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নন। বড় বড় ঋণ নিয়ে এবং অর্থ আত্মসাৎ করে যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তারা জানে টাকা মেরে দিলে কিছুই হয় না। শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে মামলা করেছি। কিন্তু মামলার ভবিষ্যৎ কী? কোর্ট রায় দিচ্ছেন না। কীভাবে টাকা আদায় করব? এটি বিচারাধীন বিষয়। আদালতকে অবশ্যই অর্থ ঋণের এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে, যাতে টাকা পুনরুদ্ধার করা যায়। সবাই ব্যাংক, ব্যাংকারদের ওপর দায়ভার দেন। কিন্তু ব্যাংকের তো কোনো দায় নেই। মামলার রায় না হলে ব্যাংক টাকা আদায় করবে কীভাবে? ট্রায়াল কোর্টের সংখ্যাও কমে গেছে। চট্টগ্রামের ট্রায়াল কোর্ট ছিল তিনটা, এখন আছে একটা। সিলেটে একটাও ট্রায়াল কোর্ট নেই। ট্রায়াল কোর্ট বাড়াতে হবে।
খাদ্য উৎপাদনে কৃষির বিকল্প নেই। এতে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রান্তিক কৃষক সহজ শর্তে ঋণ পান না। ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। সম্প্রতি কৃষি উন্নয়ন ও অর্থায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। সেখানে অন্যতম সহচর হিসাবে এগিয়ে এসেছে ব্যাংকগুলো। আর ডিজিটাল মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে
প্রকৃতিবিমুখতা অসুস্থতারই লক্ষণ: রফিকুর রশীদ
সত্তর দশকের শেষভাগে গল্প লেখার মধ্য দিয়েই কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশীদের (জন্ম-১৯৫৭) আত্মপ্রকাশ। তারপর যোগ হয়েছে উপন্যাস। প্রধানত গ্রামীণ পটভূমিতেই গড়ে উঠেছে তার গল্পের পরিমণ্ডল। তার গল্পে জীবনের তলানি পর্যন্ত দেখা যায় স্ফটিক স্বচ্ছতায়। মুক্তিযুদ্ধ তার সবচেয়ে প্রিয় প্রসঙ্গ। ‘প্রস্তুতিপর্ব’, ‘দাঁড়াবার সময়’ এবং ‘ছায়ার পুতুল’-মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখা এ তিনটি উপন্যাসে একদিকে যেমন তার ইতিহাসলগ্নতার পরিচয় মেলে, অন্যদিকে তার চরিত্রচিত্রণের দক্ষতাও স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। রফিকুর রশীদ এরই মধ্যে কথাসাহিত্য রচনার জন্য নিজস্ব গদ্যরীতিও নির্মাণ করে নিয়েছেন এবং আঞ্চলিক বাকভঙ্গি তার গদ্যের প্রাণসম্পদ হয়ে উঠেছে। আপনাদের শুরুর সময়ের সাহিত্যের পরিবেশ এখনকার পরিবেশে মিলালে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো ভিন্নতা চোখে পড়ে? : আমার সাহিত্যচর্চার সূচনা হয় সত্তর দশকের শেষ প্রান্তে। নিভৃত মফস্বলের গ্রামীণ পরিবেশে আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং সাহিত্যবোধের জাগৃতি। সাহিত্যপাঠই ছিল আমাদের সময়ে সাহিত্যবোধ গঠনের প্রধান উপাদান, আমরা বই পড়েই নিজেদের প্রস্তুত করেছি। এখন হাতের কাছে পর্যাপ্ত বই এবং অনেক মূল্যবান বইয়ের ই-ভার্সন পাওয়া যাচ্ছে; তবু পাঠপ্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। এখনকার পরিবেশের নেতিবাচকতা এইখানে। প্রযুক্তির এ পুঁজিবাদী সময়ে একজন লেখক তার লেখকসত্ত্বাকে কতটা লালন করতে পারে? : প্রযুক্তির এ পুঁজিবাদী সময়ে করপোরেট হাউজগুলো নানাবিধ পদক-পুরস্কারের টোপ দিয়ে প্রতিভা কিনে নিয়ে বশংবদ লেখক-চক্র তৈরিতে তৎপর হচ্ছে বা হবে সেটা ঠিক, তবু প্রকৃত লেখক সেই ফাঁদে পা দেবেন না। লেখক তার লেখকসত্তা লালন করবেন নিজের মতো করেই। লেখক হওয়ার জন্য শহরে/কেন্দ্রে চলে আসার প্রবণতাকে কীভাবে দেখেন? : প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের এই দিনে কেন্দ্রে আর প্রান্তে বিশেষ তফাৎ থাকার কথা নয়। ফলে লেখক হওয়ার জন্য কেন্দ্রে ছুটে যেতেই হবে, এর কোনো মানে নেই। নিজের সাধনা ও একাগ্রতা দিয়ে নিজেকেই ‘কেন্দ্র’ করে তুলতে হবে। তখন তথাকথিত কেন্দ্র ঠিকই নড়েচড়ে উঠবে। বর্তমানে সাহিত্যে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে। কোন বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত? : বর্তমানে সাহিত্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার প্রাধান্য বেশি চোখে পড়ে। ব্যক্তিক হয়েও সাহিত্যকে সামষ্টিক হয়ে উঠতে হবে। বাঙালি সমাজের দীর্ঘকালের লালিত বন্ধনগুলো এ সময়ে অতি দ্রুত আলগা হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের এবং বিচ্ছিন্নতার এ ছবি যথাযথভাবে সাহিত্যে ফুটিয়ে তোলার দায় বর্তমানের সাহিত্য কর্মীর। দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতায় ভালোবাসার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন? : মানুষে-মানুষে আস্থা এবং বিশ্বস্ততার জমিনে এখন ফাটল ধরেছে, ফলে ভালোবাসারও গভীরতা হারিয়েছে বলে আমার ধারণা। আমাদের বর্তমান সাহিত্যে প্রকৃতি মানুষ জীবন কতটা নিজস্ব সৌন্দর্যে বহমান, কতটা বিকৃতির শিকার? : প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যে অবিচ্ছেদ্য, প্রবল যান্ত্রিকতার এ সময়ে সে কথা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। প্রকৃতির দিকে চোখ মেলে তাকাতে শিখিনি, প্রকৃতির কাছে কোনো পাঠ নিতে শিখিনি, খাঁচাবন্দি জীবন যেন প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ। প্রকৃতিবিমুখতা অসুস্থতারই লক্ষণ। এখান থেকেই আসে নানা রকম বৈকল্য ও বিকৃতি। মেহেরপুর জেলার সাহিত্যচর্চার বর্তমান অবস্থা কেমন? কোন কোন দিকে যত্ন নিলে আরও সক্রিয় হতে পারে? : মেহেরপুর জেলার সাহিত্যচর্চার বর্তমান অবস্থা মোটেই আশাপ্রদ নয়, মানতে দ্বিধা নেই-অতীতেও তেমন ছিল না। সাতচল্লিশের দেশভাগের (এবং শিক্ষিত হিন্দু পরিবারের দেশত্যাগের) পর পূর্ব বাংলার এ সীমান্ত অঞ্চলে সত্যিকার অর্থে সাহিত্যচর্চার ধারা গড়ে ওঠেনি বললেই চলে। শিক্ষা ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ এ জেলায় যে দু-একটি সাহিত্য সংগঠন আছে, তা নানাবিধ সংকটে জর্জরিত। এখানকার সাহিত্যকর্মীরাও সাফল্যের জন্য শর্টকাট রাস্তা খোঁজে, নিবিষ্ট সাধনায় ব্রতী হতে আগ্রহী নয়। বর্তমানে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কেমন? কেমন হওয়া উচিত? : বর্তমানে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক বড়ই শিথিল বলে মনে করি। পরিচয়ে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ বলা হলেও এ প্রজাতন্ত্রের কোনো কিছুর সঙ্গেই গণমানুষের নিবিড় সম্পর্ক নেই। বড় কিছু বুঝে অথবা না বুঝে এ দেশের মানুষ ভোটের মৌসুমে যে আনন্দময় অংশগ্রহণ করে আসছে, সাম্প্রতিক অতীতে নির্বাচনি প্রক্রিয়া বিপর্যস্ত হওয়ার পর সেখানেও হতাশা এবং উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রের সব কর্মকাণ্ডে জনমতের প্রতিফলন সুষ্ঠু ঘটলেই রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক সুন্দর ও স্বাভাবিক হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। ধন্যবাদ।
সত্তর দশকের শেষভাগে গল্প লেখার মধ্য দিয়েই কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশীদের (জন্ম-১৯৫৭) আত্মপ্রকাশ। তারপর যোগ হয়েছে উপন্যাস। প্রধানত গ্রামীণ পটভূমিতেই গড়ে উঠেছে তার গল্পের পরিমণ্ডল। তার গল্পে জীবনের তলানি পর্যন্ত দেখা যায় স্ফটিক স্বচ্ছতায়। মুক্তিযুদ্ধ তার সবচেয়ে প্রিয় প্রসঙ্গ। ‘প্রস্তুতিপর্ব’, ‘দাঁড়াবার সময়’ এবং ‘ছায়ার পুতুল’-মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখা এ তিনটি উপন্যাসে একদিকে যেমন তার ইতিহাসলগ্নতার পরিচয় মেলে, অন্যদিকে তার চরিত্রচিত্রণের দক্ষতাও স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।
সত্যিকারের লেখক লেখায়ই নিমগ্ন থাকে: আবদুল হামিদ মাহবুব
আপনাদের শুরুর সময়ের সাহিত্যের পরিবেশ কেমন ছিল? : প্রবীণরা আমাদের লেখক হয়ে ওঠার ব্যাপারে আমাদের সেই কাঁচা লেখাগুলো নিয়ে যে ধরনের আলোচনা-সমালোচনা করা প্রয়োজন সেটা করতেন। আমাদের শহরে অনেক সাহিত্য সংগঠন ছিল। প্রায় নিয়মিতই সাহিত্যসভা হতো। সেসব সভায় অংশ নিতাম। লেখা পড়তাম। কোনো কোনো সময় লেখা নিয়ে এমন আলোচনা হয়েছে যে, রাগে ক্ষোভে টপ টপ করে অশ্রু ঝরিয়েছি। এখন সে রকম সাহিত্য সভাও হয় না। এখন অনেককেই দেখি কম্পিউটারে লেখে, প্রকাশক ঠিক করে, টাকা দেয়, সুন্দর প্রচ্ছদে বই প্রকাশ হয়ে যায়। আমাদের সময়ের মতো পত্রপত্রিকা কিংবা সংকলনগুলোতে লিখে লেখক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে, সেটা মনে করে না। তবে ব্যতিক্রম এক-দুজন তো আছেই। প্রযুক্তির এ পুঁজিবাদী সময়ে একজন লেখক তার লেখকসত্ত্বাকে কতটা লালন করতে পারে? : যে সত্যিকারের লেখক, তিনি লেখায়ই নিমগ্ন থাকেন। আমাদের অনেক খ্যাতিমান লেখক এখনো হাতেই লিখে পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। তবে এটা ঠিক, প্রযুক্তির উৎকর্ষ লেখকের প্রকাশনাকে উজ্জ্বল করেছে। আর অর্থের ঝনঝনানি আমাকে টানে না। এ পুঁজিবাদী সময়েও (অন্যদের কথা জানি না) আমি আমার লেখকসত্ত্বাকে কেবল লালন নয়, পালনও করছি। লেখক হওয়ার জন্য শহরে/কেন্দ্রে চলে আসার প্রবণতাকে কীভাবে দেখেন? : আমি তো সারা জীবন মফস্বলে থেকেই লেখালেখি করলাম। আমার লেখক পরিচিতি না থাকলে আপনি কি সাক্ষাৎকার নিতেন? আমাদের বন্ধু গল্পকার আকমল হোসেন নিপু গ্রামের ছেলে বলেই পরিচয় দেন। লেখক হওয়ার জন্য তার তো কেন্দ্রে যেতে হয়নি। লেখক হওয়ার জন্য লেখার শক্তিই প্রধান। বর্তমানে সাহিত্যে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে। কোন বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত? : ইতিহাস ঐতিহ্যাশ্রিত সাহিত্য সৃষ্টি হচ্ছে কম। পরিশ্রমী লেখা খুব কম হচ্ছে। মানিক, বিভূতি, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শহিদুল জহীর কিংবা আহমদ ছফার মতো লেখক এখন তৈরি হচ্ছে না দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতায় ভালোবাসার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন? : ভালোবাসা আমার কাছে মমত্ব। মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ব আছে বলেই এখনো সভ্যতা টিকে আছে। মানুষ কেবল মানুষকেই ভালোবাসে না; সে প্রকৃতিকেও ভালোবাসে। আমার জেলায় আছে লাউয়াছড়া বন। আমি দেখি একটি সাপ, একটি পাখি, একটি বিলুপ্তপ্রায় ব্যাঙকে বাঁচানোর জন্য মানুষের সে কি চেষ্টা। সব মানুষের ভেতরের মমত্ব জাগ্রত হলে এ পৃথিবী মানুষেরই হবে। যুদ্ধবাজ পুতিন-বাইডেনরা নিপাত যাবে। আমাদের বর্তমান সাহিত্যে প্রকৃতি মানুষ জীবন কতটা নিজস্ব সৌন্দর্যে বহমান, কতটা বিকৃতির শিকার? : মানুষের অবস্থান ছাড়া সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে আমার জানা নেই। মানুষ থাকলে তার জীবনের কথা সেই সঙ্গে প্রকৃতিও থাকতেই হবে। এ সবের মিশেলে সৃষ্ট সাহিত্য সৌন্দর্যে ভরপুর। আমরা স্মরণ করতে পারি ‘পথের পাঁচালী’র কথা। যাদের লেখায় কেবল কোনো এক মানুষ কিংবা একটি দলের স্তুতি লেখা হয়েছে, আমার বিবেচনায় তাদের পুরো সাহিত্য কর্মই বিকৃতির শিকার। প্রযুক্তির ব্যবহার সাহিত্যের জন্য কতটা ভালো কতটা মন্দ? : ভালো মন্দ দুটিই আছে। যারা যেভাবে ব্যবহার করে তা ওপর সেটা নির্ভর করে। আমি কম্পিউটারে লিখলে, আমার জন্য সম্পাদনা সহজ হয়। আর ফেসবুকের কথা বললে আমি বলব; বিরক্ত, বিরক্ত বিরক্ত। মৌলভীবাজার জেলার সাহিত্যচর্চার বর্তমান অবস্থা কেমন? কোন কোন দিকে যত্ন নিলে আরও সক্রিয় হতে পারে? : ভালো, বেশ ভালো। গত নব্বইয়ের দশকে সাপ্তাহিক মনুবার্তা প্রকাশ হওয়ার পর প্রতি সাপ্তাহে ৪ পৃষ্ঠা সাহিত্য পাতা ছাপা হতো। প্রায় দুই দশক মনুবার্তা মৌলভীবাজার জেলার সাহিত্যাঙ্গনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ওই সময় অনেক তরুণ মনুবার্তাতে লেখালেখি করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিল। তাদের অনেকেই এখন সারা দেশের সাহিত্যাঙ্গনে পরিচিত। মনুবার্তার মালিকানা পরিবর্তন হয়ে এখন অনিয়মিতভাবে প্রকাশ হচ্ছে। তবে সাহিত্যপাতা আর প্রকাশ হয় না। সেই মনুবার্তার মতো স্থানীয় কোনো পত্রিকা ভালো একজন সাহিত্য সম্পাদক রেখে নিয়মিত সাহিত্য পাতা করলে মৌলভীবাজারের সাহিত্যাঙ্গন আবারও উজ্জীবিত হবে। বর্তমানে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? : রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের জনগণের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বোঝার জন্য ভেতরের মমত্ব জাগ্রত করতে হবে।
আপনাদের শুরুর সময়ের সাহিত্যের পরিবেশ কেমন ছিল?
বাংলার মাটিতে আশ্রয় নেব, এটাই অন্তিম আকাঙ্ক্ষা: আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
কীর্তিমান বরেণ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি, গীতিকার, কথাশিল্পী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রয়াণে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হলো। দীর্ঘ ৮৮ বছরের জীবনে লিখেছেন নানা বিষয়ের নানা স্বাদের অনেক লেখা। মহান ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবদীপ্ত সক্রিয় সম্পৃক্ততা তাকে আসীন করেছে অনন্য উচ্চতায়। জীবিত অবস্থায় শেষবারের মতো স্বদেশে এসেছিলেন ২০১৯ সালে। আবার এলেন নিথর নিস্পন্দ মরদেহ হয়ে। ২০১৯ সালের ৯ জুন কবি হাসান হাফিজ এবং আমিরুল মোমেনীন মানিক দীর্ঘ একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ এখানে পত্রস্থ হলো। আপনার এমন কোনো স্বপ্ন কি আছে যেটা পূরণ হয়নি? জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে আপনি এসে পড়েছেন... : হ্যাঁ, পূরণ হয়নি। আমি ভাবছিলাম মৃত্যুকালে দেশটাকে একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থাৎ সোশ্যালিস্ট, সেক্যুলারিস্ট হিসাবে দেখে যাব। আবার ব্রিটিশ আমলে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল বাবা, চাচা, দাদা, কাকা যেমন ঈদের সময় তারা আমাদের বাড়িতে আসত, আবার সরস্বতী পূজা বা দুর্গাপূজার সময় আমরা তাদের বাড়িতে যেতাম, ওই অনুরূপ একটা আবহাওয়া, মিশ্র সংস্কৃতি ছিল আমাদের। হিন্দুরা প্রণাম করত, তারপর নমস্তে বলত, আমরা সালাম বলতাম, সালাম-আদাব বলতাম। এখন সে মিশ্র কালচারটা সম্পূর্ণভাবে ভাঙছে। হিন্দুরাও ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে ‘খোদা হাফেজ’ বলে, তাদের যে একটা আলাদা সংস্কৃতি ছিল, সেটাকে ধ্বংস করা হয়েছে। এখন এখানে ওয়ান কালচার চালু হইছে, যেটার মধ্যে বাঙালিত্ব নাই। আপনি বরিশালের মানুষ। বরিশালের কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন-‘আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়।’ আপনি দীর্ঘকাল প্রবাসে লগ্ন হয়ে আছেন। কিন্তু মন প্রাণ আপনার বাংলাদেশে পড়ে আছে। আপনার অন্তিম ইচ্ছাটা কী হবে দেশ নিয়ে? : অন্তিম ইচ্ছাটা পূরণ করে রেখেছি। সেটা হচ্ছে, বাংলার মাটিতে আশ্রয় নেওয়া। সেই কবরটা আমি মিরপুরে তৈরি করে রেখেছি, সেখানে এবারে এসে দেখলাম, ফুল ফুটেছে। বর্তমান বাংলাদেশে তো এখন কার্যকর বিরোধী দল আমরা দেখি না। এটা কি কোনো একটা সংকট? আপনার কী মনে হয়? : স্বাধীনতার পর পার্লামেন্টে একটা কার্যকর বিরোধী দল যদি থাকত, তাহলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা খুব সহজ হতো না। যুদ্ধটা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির ভেতর না, যুদ্ধটা স্বাধীনতার শত্রু এবং স্বাধীনতার মিত্র পক্ষের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যে কোনোভাবেই নির্বাচনে জয়ী হোক, আমি খুশি। কিন্তু পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগেরই উচিত গণতান্ত্রিক, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী একটা বিরোধী দল গড়ে উঠতে সাহায্য করা। তা না করে যে একটা শূন্যাবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে আবার পঁচাত্তরের মতো ঘটনা ঘটানোর জন্য ষড়যন্ত্র হতে পারে। এক সময় তরুণ বয়সে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। আমরা কিন্তু সেই প্রত্যাশিত ভূমিকাটা দেখতে পাইনি কমিউনিস্টদের। কারণটা কী? : কমিউনিস্টদের আন্দোলন কখনোই ভূমিনিষ্ঠ হতে পারেনি। তারা সব সময়ই সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্য, আরেক দল চীনের সাহায্য নিয়ে এখানে নিজেরা শক্তিশালী হয়েছে। যেমন- জামায়াত সৌদি আরবের অর্থে ব্যাংক, বিমা, নানারকম অনুষ্ঠান করে অর্থকরীভাবে শক্তিশালী হয়, রাজনৈতিকভাবেও শক্তিধর থাকে। কমিউনিস্ট পার্টিরও তাই হয়েছিল, তাদের প্রকাশনা, ন্যাশনাল বুক এজেন্সি, তাদের হাসপাতাল, তাদের অমুক-তমুক। কিন্তু তারা জনগণের সঙ্গে মিশে যায়নি। যেই মাত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্য বন্ধ হয়েছে তারা ভেঙে পড়েছে। বিএনপির বরং মাটির সঙ্গে একটা যোগ আছে। কিন্তু সেই মাটিটা নির্ভরযোগ্য মাটি না। কারণ সেখানে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের তারা সহযোগিতা করে। বঙ্গবন্ধুর এবং স্বাধীনতার আদর্শগুলোকে। তাদের উচিত ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কর্মসূচিভিত্তিক যুদ্ধ করা। কারা দেশ শাসনে ভালো কর্মসূচি দেয়, যদি তারা আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালো কর্মসূচি দেয়, তারা যাবে ক্ষমতায়। তা না করে তারা আওয়ামী লীগের বিরোধিতার নামে মুক্তিযুদ্ধের মূল ইস্যুগুলোর বিরোধিতা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের নায়কদের চরিত্র হনন করেছে। আমার মনে হয় না এ দেশে মুসলিম লীগের মতো তাদের পতন হবে। কিন্তু একটা বিরোধী দলের শূন্যতা তো সাধারণ মানুষের মধ্য আছে, প্রত্যাশা আছে একটা ভালো বিরোধী দল হয়ে উঠুক, সেক্ষেত্রে আপনার একটি লেখায় পড়েছি, এরকম পর্যবেক্ষণ-একটি দল যখন দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকে তখন সে অজনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখন বাংলাদেশে এই বর্তমান সরকার ১০ বছরের বেশি সময় টানা ১২ বছর প্রায় ক্ষমতায়। জনমানুষের কাছাকাছি যাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতায় থাকলে প্রতিবন্ধকতা থাকে। সেক্ষেত্রে অজনপ্রিয় হওয়ার কি আশঙ্কা থাকে? বা সাধারণ মানুষের পাল্স না বোঝার? : শেখ হাসিনা খুবই জনপ্রিয়, তার সমতুল্য নেতা বাংলাদেশে নেই। কিন্তু তার দলটি ক্ষমতায় আছে বটে, কিন্তু জনপ্রিয়তা নেই। তার মূল কারণ, দলে এতসব অজনপ্রিয়, অতীতের বিতর্কিত নেতারা ঢুকেছেন, প্রাধান্য বিস্তার করেছেন এবং জিয়াউর রহমানের সৃষ্ট দল এসে প্রাধান্য বিস্তার করেছে। আরেকটি টার্মে যাওয়া, আমি আশা করি আওয়ামী লীগ আরও একটি টার্মে যাবে, যাওয়াটা খুব দুরূহ। আপনি আপনার লেখায় অনেক সতর্ক করছেন। বারবারই কঠিনভাবেই করছেন। সেই বোধোদয় কি হচ্ছে? : মনে হয় না, এখন প্রায় ১৫ বছর যে ক্ষমতায় থাকার একটা দম্ভ এটা অনেককে আচ্ছন্ন করে ফেলে। চক্ষু দৃষ্টি থাকে না। এ জন্য বকাউল্লা বকলেও শুনাউল্লা শোনে না (হাসি)। আচ্ছা, একটা প্রশ্ন-কেউ কেউ বলেন-এ দেশে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে সুবিধার কারণে এদের মধ্যে কিছুসংখ্যক মানুষ আওয়ামী লীগেও গেছেন আবার কেউ কেউ অভিযোগ করেন, যেমন-কাদের সিদ্দিকী অভিযোগ করেন কিছু যুদ্ধাপরাধী এবং কিছু স্বাধীনতাবিরোধী মানুষ আওয়ামী লীগেও আছেন। আওয়ামী লীগের বিরোধীপক্ষরা বলে যে আওয়ামী লীগে যখন কোনো রাজাকার যান, তখন তিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যান। এটা আপনি কীভাবে দেখেন? : (হেসে) একটা কথা প্রচলিত আছে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার হতে পারে। কিন্তু রাজাকাররা কখনো মুক্তিযোদ্ধা হয় না।
কীর্তিমান বরেণ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি, গীতিকার, কথাশিল্পী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রয়াণে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হলো। দীর্ঘ ৮৮ বছরের জীবনে লিখেছেন নানা বিষয়ের নানা স্বাদের অনেক লেখা। মহান ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবদীপ্ত সক্রিয় সম্পৃক্ততা তাকে আসীন করেছে অনন্য উচ্চতায়।
এখন তরুণদের মধ্যে যুক্তিহীন অস্বীকারের প্রবণতা বেশি: মাহমুদ কামাল
আপনাদের শুরুর সময়ের সাহিত্যের পরিবেশ আর এখনকার পরিবেশে মেলালে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো ভিন্নতা চোখে পড়ে কি? : আমাদের শুরুর সময়ে পত্রপত্রিকার সংখ্যা ছিল কম। এখন আনুপাতিক হারে পত্রিকার সংখ্যা যেমন বেশি, কবি ও কবিতার আধিক্যও সেই মাত্রারই। এখন তরুণদের মধ্যে যুক্তিহীন অস্বীকারের প্রবণতা বেশি; না পড়েই অনেকে মন্তব্য করে বসেন। সে তরুণ কবি কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ যে কেউ হোন না কেন। রাজনৈতিক বিবেচনা তো আছেই। গোষ্ঠীতন্ত্র আগেও ছিল, এখনো আছে। ভালোটা হচ্ছে এখন কাব্যচর্চার ক্ষেত্রটা বেড়েছে। প্রযুক্তির এ পুঁজিবাদী সময়ে একজন লেখক তার লেখকসত্তাকে কতটা লালন করতে পারে? : যিনি প্রযুক্তিকে ধারণ করতে পারেন, তিনি সেভাবে লালনও করতে পারেন। সবকিছুরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ওষুধের ক্ষেত্রে যেমন প্রযুক্তি, এমনকি ভালোবাসার ক্ষেত্রেও। প্রযুক্তির পুঁজিবাদী চরিত্রের কারণেই অনেকের লেখকসত্তা পুঁজিতেই আটকে থাকে। তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আর গণমুখী হতে পারেন না। লেখক হওয়ার জন্য শহরে/কেন্দ্রে চলে আসার প্রবণতাকে কীভাবে দেখেন? : আমি যেহেতু চিরকালের বিকেন্দ্রিক, এ কারণে এর জবাব দু’রকমের হবে। প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। ঢাকা না গিয়েও গ্রামে বসে অনেক কাজ করা যায়। এজন্য ঢাকা না গেলেও চলে। সবার ক্ষেত্রে নয়; অধিকাংশই মাত্র দু’দিন আগে ঢাকা গিয়ে তার জেলাকেই ‘মফস্বল’ বানিয়ে ফেলে। কেন্দ্রের চোখগুলোয় তখন ভেসে ওঠে বিভক্তির ছবি। পাশাপাশি গৌণ লেখক কেন্দ্রের সংস্পর্শে এসে সহজেই প্রচারিত লেখক হয়ে ওঠেন। বর্তমানে সাহিত্যে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে? কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পাওয়া উচিত? : আমি নিজে কখনো কোনো ইজম সামনে রেখে কবিতা লিখিনি। এমনকি কবিতাটি কোন ছন্দে হবে, তার কোনো প্রাক চিন্তাও কখনো করি না। লিখতে বসে সেই লেখাটি হয়ে ওঠে তারই মতো অর্থাৎ একটি চেহারায় লেখাটি দাঁড়িয়ে যায় যথাশব্দের সঙ্গে অপরিহার্য ছন্দের সংমশ্রিণে। এখন কেউ কেউ নিজস্ব যন্ত্রণাবোধকে লেখার বিষয়বস্তু করেন। এ প্রবণতা সবসময়ই ছিল; কিন্তু যন্ত্রণাবোধকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যন্ত্রণাদায়ক শব্দচয়ন পাঠবিমুখ করে তোলে সাহিত্যপ্রেমীদের। যুগে যুগে কবিতার বক্তব্য, আঙ্গিক, শব্দচয়ন সবকিছুই পালটে যায়। পালটে যাওয়া সবই কিন্তু চলে আসা সময়ে টিকে থাকে না। এখন বলা হচ্ছে, কবিতায় কোনো বিষয়েরই প্রয়োজন নেই। ছন্দহীনতার পর বিষয়হীনতা এখন অনেকের কবিতায় দৌড়াদৌড়ি করছে। দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতায় ভালোবাসার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন- : প্রযুক্তি যেমন বিশ্বকে কাছে এনেছে, পাশাপাশি মানুষকে দূরেও ঠেলে দিয়েছে। এখন একার মধ্যে পৃথিবী। ভালোবাসা তাই যান্ত্রিক হয়ে গেছে। অধিকাংশ মানুষ জনারণ্যে একাকী জীবনযাপন করতে ভালোবাসে। আমাদের বর্তমান সাহিত্যে প্রকৃতি মানুষ জীবন কতটা নিজস্ব সৌন্দর্যে বহমান আর কতটা বিকৃতির শিকার? : সৌন্দর্যবোধ কিন্তু নির্দিষ্ট নয়। একই বিষয় কিন্তু দেখার পার্থক্য ভিন্ন। স্বাভাবিক প্রকৃতি উধাও হয়ে যাচ্ছে। বন কেটে বসত, নদী ভরাট করে শিল্প-কারখানা কিংবা ঘরবাড়ি-এগুলো পত্রিকার পাতায় আমরা প্রতিনিয়তই দেখি। নাগরিক যন্ত্রণার মধ্যে থেকে কবিতাতেও প্রকৃতি উধাও। আমার একটি কবিতার পঙ্ক্তি ছিল এরকম- ‘ফুল, পাখি, নদী আজ কাব্যে উধাও’। প্রযুক্তির ব্যবহার সাহিত্যের জন্য কতটা ভালো কতটা মন্দ? : দুটি দিকই আছে। পরিমিতিবোধ বলে অভিধানে একটি শব্দ আছে। আমি কতটুকু নেব আর বর্জন করব কতটুকু-এ বোধ থেকে বলতে পারি প্রযুক্তি আমাদের অনেক সময় বাঁচিয়ে দিয়েছে। এ বেঁচে যাওয়া সময়টুকু যদি সেই প্রযুক্তির কারণেই আমরা অপব্যয় করি, তাহলে তো আর পরিমিতিটা থাকল না। টাঙ্গাইল জেলার সাহিত্য চর্চার বর্তমান অবস্থা কেমন? কোন কোন দিকে যত্ন নিলে আরও সক্রিয় হতে পারে? : টাঙ্গাইলকে বলা হয় কবিধাম। বর্তমান সময়ে লিখছেন অনেকেই; কিন্তু অনেকের লেখাই মানসম্পন্ন নয়। স্বর্ণযুগ ছিল ষাট ও সত্তর দশকে। বাংলা কবিতার ভুবনে এ দুই দশকের অনেক কবি জাতীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। ষাটের দশকের কবি রফিক আজাদ, আবু কায়সার, অরুণাভ সরকার, মাহবুব সাদিক, আল মুজাহিদী, সাযযাদ কাদির, বুলবুল খান মাহবুব, শাহনূর খান। সত্তরের মাহবুব হাসান, মাহবুব বারী, জাহাঙ্গীর ফিরোজ, সোহরাব পাশা, আলমগীর রেজা চৌধুরী, আবু মাসুম, শাহানা মাহবুব কবিতার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত নাম। এখান থেকে সাহিত্য পত্রিকা কম বের হলেও নিয়মিত কবিতাচর্চা হচ্ছে কবিতাপাঠ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে। টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদের আয়োজনে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বরচিত কবিতাপাঠ প্রতিযোগিতা। এ পর্যন্ত ৩৪৫টি অনুষ্ঠান হয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ গ্রন্থাগারের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় দেশের বৃহত্তম বাংলাদেশ-ভারত কবিতা উৎসব। এ জেলাতেই অরণির উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে কবিতাপাঠের আয়োজন হয়েছে। কবিধাম টাঙ্গাইলে সেই হিসাবে এখন নতুন কবির আকাল চলছে। যদিও পাক্ষিক অনুষ্ঠানে গড়ে পঞ্চাশজন কবি উপস্থিত থাকেন; কিন্তু সেই অর্থে উন্নতমানের কবিতা লেখা হচ্ছে খুবই কম। এজন্য পঠন-পাঠন খুবই জরুরি। ফেসবুক আসক্তির কারণে অনেকের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ নেই বললেই চলে। বর্তমানে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কেমন? কেমন হওয়া উচিত? : প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র এখনো গড়ে ওঠেনি। পরিবেশ বিষয়ে আন্দোলন করতে গেলেও এখন আটক হতে হয়। রাষ্ট্র এবং জনগণ উভয়ই যার যার ক্ষেত্রে অধিকার সচেতন হলে সম্পর্কতো মধুর হওয়ারই কথা। জন্ম : ২৩ অক্টোবর ১৯৫৭। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ এমএ। অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। সম্পাদক, সাধারণ গ্রন্থাগার টাঙ্গাইল ও সভাপতি, টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ। সম্পাদক : অরণি সাহিত্য পত্রিকা। প্রকাশিত গ্রন্থ : সম্পাদনাসহ ৪৬টি
আপনাদের শুরুর সময়ের সাহিত্যের পরিবেশ আর এখনকার পরিবেশে মেলালে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো ভিন্নতা চোখে পড়ে কি?
‘এটাই আমার অনেক আনন্দের বিষয়’
প্রবাস মানে ব্যস্ততা। কমন এ ব্যাপারটি সবার জানা। এই ব্যস্ততার ফাঁকে জীবনকে এগিয়ে নিতে হয়। কামরুন নাহার তুলি এর বাইরের কেউ নয়। একজন গুণী নারী বলা যায়। বর্তমানে সময়ে নারীরা দেশ-বিদেশে সফলতার দৃষ্টান্ত বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করে যাচ্ছেন নিজ মেধা, শ্রমের মাধ্যমে।  একজন নারী স্বামী-সংসার সামলিয়ে প্রবাসে শিশুদের বাংলা শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ। একই সঙ্গে দেশের জন্য অনন্য গর্ব বলাই যেতে পারে। জলকন্যা খ্যাত ভেনিসের খুব কাছেই ত্রেভিজো সেখানেই স্বামী,দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন তুলি এবং ভালো আছেন।  ২০০৭ সালে একজন গৃহিণী হিসেবে ইতালি পাড়ি জমান কালের পরিবর্তনে সংসারের পাশাপাশি নিজের মেধাকে আরও গতিশীল রাখতে প্রবাসে শিক্ষক পেশা বেছে নেয়। খুব সম্মান আর সফলতার সাথে ত্রেভিজো বাংলা স্কুলে প্রবাসে উঠতি বয়সের ছেলে/মেয়েদের বাংলা শিক্ষা প্রদান করছেন তিনি। ২০১৮ সালে এপ্রিল মাস থেকে স্কুলটি চালু করা হয়। এখনো পর্যন্ত বেশ সুনামের সাথে স্কুলের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যতে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা তার সেজন্য দেশ-বিদেশের সবার দোয়া প্রত্যাশা করেছেন। স্বামী কামরুল হাসান রাসেল স্কুলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সংসারে জীবনে সুখে আছেন তারা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যুগান্তর ইতালি প্রতিনিধি জমির হোসেন— পরবাস যুগান্তর : কেমন আছেন? কামরুন নাহার তুলি : আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।  পরবাস যুগান্তর : শিক্ষকতা পেশায় কিভাবে এলেন? কামরুন নাহার তুলি : ইতালি ত্রেভিজো শহরে আগে কোনো বাংলা স্কুল ছিলোনা। এখানকার বাচ্চারা ইতালিয়ান ভাষায় পড়ালেখা করে। বাংলা লিখতে ও পড়তে পারতোনা। তারা বাবা মায়ের সাথেও বাসায় ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলতো বেশি। কারন বাংলা সেখানোর কোনো স্কুল ছিলোনা। এতে আমাদের মাথায় চিন্তা এলো যে একটা সময় গিয়ে হয়তো এখানকার বাচ্চাগুলো বাংলা লিখতে ও পড়তে পারবেনা। বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাংলা শিক্ষা বাচ্চাদের দেয়ার উদ্দেশ্যে ত্রেভিজো বাংলা স্কুল আমরা কয়েকজন মিলে নিজ উদ্যোগে গঠন করে শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করি। এভাবেই আমার শিক্ষকতায় আসা।  পরবাস যুগান্তর : শিক্ষক হিসেবে প্রথম দিন কেমন কেটেছে? কামরুন নাহার তুলি : শিক্ষক হিসেবে আমার প্রথম দিনটিতে অসম্ভব সুন্দর একটা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। এখানকার বাচ্চারা ইতালিয়ান স্কুলে পড়ে বিধায় তারা কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে বাংলায় ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে পারছিলোনা। বাংলা লিখতে ও পড়তে পারেনা। তখন আসলেই নিজেকে সেই মুহূর্তে গর্বিত মনে হয়েছিলো যে ইতালিতে একটা বাংলা স্কুল গঠন করতে পেরেছি বলেই আজ বাচ্চারা এই স্কুলে এসে আজ বাংলা শিখতে পারছে। তখন তাদের বাংলা শিখাতে পেরেও খুব আনন্দ লাগছিলো। কারণ বাংলা মায়ের ভাষা। এই বাংলা ভাষা বাচ্চাদের শিখাতে পারছি। সত্যিই একটি ভালো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরেছি।  যুগান্তর পরবাস: আপনার ছাত্রজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।  কামরুন নাহার তুলি : আমার ছাত্রীজীবন অনেকটাই আনন্দময় কেটেছে। ছাত্রী হিসেবে মেধাবী ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ। এসএসসি মুসলিম মডার্ন একেডেমী থেকে এইচএসসি আদমজী ক্যান্টনম্যান্ট কলেজ থেকে এবং সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স তিতুমীর কলেজ থেকে। বিয়ের পড় স্বামীর পাঠানো ভিসায় ইতালি চলে আসার কারনে পড়ালেখা কম্পলিট করতে পারিনি। ছাত্রীজীবনে আমার অনেক মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার মধ্যে একটি বলছি,আমি যখন এইচ,এস,সি টেষ্ট পরীক্ষা দেই আদমজী ক্যান্টনম্যান্ট কলেজে আর্স থেকে। রেজাল্ট এর আগে প্রধান শিক্ষিক ও ইসলাম এর ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষক আমার আব্বাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলেন। এটা শুনে আমাতো ভয়ে শেষ। কেনো দেখা করতে বললো? আমিকি তাহলে রেজাল্ট খারাপ করেছি? অনেক ভয়ে ছিলাম না জানি আব্বাকে কি বলবে? পরে দেখা করতে গেলাম বাবা সহো। আমার বাবাকে আমার ইসলাম এর ইতিহাস পরীক্ষার খাতা বেড় করে দেখালেন। বললেন আমার শিক্ষকতা জিবনে এমন ছাত্রী দেখেনি যে কিনা এতো পৃষ্ঠা নিয়েছে এবং এতো ভালো লিখেছে। ও অল্প সময়ে এতো লেখা লিখেছে যা কখনো দেখিনি। আপনার মেয়ে ভবিষ্যৎ এ অনেক ভালো করবেন এমন মেয়ে আপনার ঘরে জন্মেছে। শিক্ষকের কাছ থেকে এমন কথা শুনে আমার বাবা আমাকে নিয়ে অনেক গর্ব করেছে। সেই দিনের কথা আমি কখনো ভুলবো না।  যুগান্তর পরবাস : আপনাদের সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা ও বর্তমান সময়ের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে কী পার্থক্য লক্ষ্য করেন? কামরুন নাহার তুলি : আমাদের সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ও বর্তমান সময়ের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে কিছুটা পার্থক্যতো আছেই। যেমন আমাদের সময়ের অনেক বানান আর এখনকার বানানে মিল নেই। অনেক বানান পরবর্তন হয়েছে। অনেক উচ্চারণ পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের সময়ে এতো সুযোগ সুবিধা আমরা পাইনি কিন্তু এখন ছাত্র ছাত্রীরা চারিদিক থেকে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে।  যুগান্তর পরবাস : আপনি শিক্ষামন্ত্রী হলে বিশেষ যে তিনটি কাজ করতেন? কামরুন নাহার তুলি : আমি শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেলে যে ৩টি কাজ করতাম তা হলো- প্রথমতো আমি প্রবাসে বেড়ে উঠা বাংলাদেশি বাচ্চাদের জন্য একটা বাংলা স্কুল গঠনের ব্যবস্থা করে দিতাম। । দ্বিতীয়ত সেই স্কুলে তাদের বিনা বেতনে পড়ার ব্যবস্থা করে দিতাম এবং তৃতীয়ত সেই স্কুলে প্রতি বছর বই বিতরণ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা, শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের ব্যবস্থা করতাম। যেন বিদেশের মাটিতে বড় হয়েও বাচ্চারা বাংলা পড়তে বলতে ও লিখতে পারে।  যুগান্তর পরবাস: শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? কামরুন নাহার তুলি: শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের কিছুটা সময় খেলার সুযোগ দিলে শারীরিক মানসিক বিকাশ ঘটে। তাদের মন প্রফুল্ল থাকে।  যুগান্তর পরবাস : আপনার বিদ্যানিকেতনটি সম্পর্কে কিছু বলুন।  কামরুন নাহার তুলি : আমার স্কুলে বাচ্চাদের পড়াতে অনেক ভালো লাগে। নিজের কিছু জ্ঞান তাদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে পেরে অনেক আনন্দিত। তাদের কিছু শিখাতে পারছি এর থেকে ভালো কাজ আর কি হতে পারে। স্কুলের বাচ্চারা আমাকে শিক্ষিকা হিসেবে মান্য করে সন্মান করে এটা অনেক বড় পাওয়া।  যুগান্তর পরবাস: আপনার প্রিয় ছাত্র কারা? কেন প্রিয়? কামরুন নাহার তুলি : স্কুলের প্রতিটি ছাত্রছাত্রী আমার প্রিয়। আমার সন্তানের মতোই আমি আদর করি। তারাও আমাকে সন্মান করে স্রদ্ধা করে। যখন ক্লাসে ঢুকে সালাম দেয় খুব ভালো লাগে। আর ছাত্রছাত্রীরা যখন আমি শিক্ষিকা বলে সব কথা মান্য করে এতে করে সবাইকে খুব ভালো লাগে।  যুগান্তর পরবাস : শিক্ষকতা জীবনের একটি আনন্দের ঘটনা বলুন।  কামরুন নাহার তুলি : শিক্ষকতা জীবনের অনেক আনন্দের ঘটনা আছে। সব বলে তো শেষ করা যাবে না। তবে একটি বলতে চাই সেটা হচ্ছে- শিক্ষিকা হিসেবে ইতালির মাটিতে বাচ্চাদের বাংলা শিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং বিনা পারিশ্রমিকে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করার জন্য শিক্ষিক সন্মাননা দুবার পেয়েছি। এটাই আমার অনেক আনন্দের বিষয়। এছাড়া স্কুলে বিশেষ দিনগুলোতে আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান করি। যেমন অংকন প্রতিযোগিতা ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ শে মার্চ। সবাই মিলে পিকনিকে যাই সব শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা কবিতা,গান, গল্প, কৌতুক বলে, আমরা অনেক আনন্দ, মজা করি। খুবই আনন্দে কাটে আমাদের স্কুলের প্রতিটি মুহূর্ত।
প্রবাস মানে ব্যস্ততা। কমন এ ব্যাপারটি সবার জানা। এই ব্যস্ততার ফাঁকে জীবনকে এগিয়ে নিতে হয়। কামরুন নাহার তুলি এর বাইরের কেউ নয়। একজন গুণী নারী বলা যায়। বর্তমানে সময়ে নারীরা দেশ-বিদেশে সফলতার দৃষ্টান্ত বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করে যাচ্ছেন নিজ মেধা, শ্রমের মাধ্যমে।
বইমেলার শেষ দিনে ভিড় বিক্রি দুই-ই কম
বর্ধিত দুদিন পেরিয়ে অবশেষে এবারের অমর একুশে বইমেলা শেষ হলো। শনিবার মেলার অন্যবারের শেষ দিনের তুলনায় ভিড় এবং বই বিক্রি দুটোই কম ছিল।  তবে যারাই এসেছেন তারা কম বেশি বই কিনেছেন। এ বছর মেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি। শেষ দিনের প্রতিবেদনে অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এবারের বইমেলায় (১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত) প্রায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।  আর বাংলা একাডেমি বিক্রি করেছে এক কোটি ৩৬ লাখ টাকার বই। গত বছর বই বিক্রি হয়েছিল ৪৭ কোটি টাকার বেশি। বইমেলার নতুন বইয়ের স্টলে শেষ দিনে নতুন বই জমা পড়েছে ১৪৯টি। এ বছর বই প্রকাশিত হয়েছে তিন হাজার ৭৫১টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৭৩০টি। মেলায় গল্পের বই এসেছে ৫২১টি, উপন্যাস ৫৪০টি, কবিতা ১২৬২টি, মুক্তিযুদ্ধ ৬৯টি, বিজ্ঞান ৪৪টি, ভ্রমণ ৬৪টি, ইতিহাস ৫৫টি, ধর্মীয় ৬২টি, অনুবাদ ৬১টি। মেলার শেষ দিন শনিবার ছুটি থাকায় মেলার দ্বার খোলে বেলা ১১টায়। দ্বার খোলার পর থেকেই আলো নিভে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ছিল বইপ্রেমীদের ভিড়। শেষ মুহূর্তের ভালোলাগা আর আনন্দের নির্যাস নিতে ভোলেননি কেউই। বইপ্রেমীরা কিনে নিয়েছেন বাকির খাতায় জমে থাকা শেষ বইগুলো।  আর দর্শনার্থীরা অন্যান্য দিনের মতোই শেষ দিনেও আড্ডা আর ঘোরাঘুরি করে কাটিয়েছেন সময়। সব মিলিয়েই লেখক-পাঠক-প্রকাশক আর দর্শনার্থীর সরব উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি বলেন, সার্বিক দিক হিসাব করলে এবারের মেলা খুব ভালো হয়েছে। এর পরিবেশ আর নান্দনিক আয়োজন মুগ্ধ করেছে সবাইকে। মেলার বেচাকেনাও ছিল বেশ ভালো। তবে পাইরেট ও ন্যাকেড বইয়ের পরিমাণ বেড়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মেলা ঐতিহ্য হারাবে। সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমদ বলেন, এবার মেলা শুরু থেকেই খুব ভালো হয়েছে। শোনা যাচ্ছে আগামীবার মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে না। তবে এটি সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহিদ মিনারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে মেলা জড়িত। এখানে থাকা উচিত। বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।  সম্মানীয় অতিথি ছিলেন নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ।  সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।  অনুষ্ঠানে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা, মুনীর চৌধুরী, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারের নাম আগেই ঘোষণা করেছিল বাংলা একাডেমি। বইমেলার মূল মঞ্চে এই পুরস্কারগুলো সংশ্লিষ্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।  ২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ-পেয়েছে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার।  ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য মনজুর আহমদ রচিত ‘একুশ শতকে বাংলাদেশ : শিক্ষার রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত ‘যাত্রাতিহাস : বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত’ গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত ‘কিলো ফ্লাইট’ গ্রন্থের জন্য জানিম্যান বুকসকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি- পেয়েছে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’।  এ বছর অমর একুশে বইমেলা নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বেঙ্গল বুকস (এক ইউনিট); নিমফিয়া পাবলিকেশন (দুই-চার); অন্যপ্রকাশ পেয়েছে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’।
বর্ধিত দুদিন পেরিয়ে অবশেষে এবারের অমর একুশে বইমেলা শেষ হলো। শনিবার মেলার অন্যবারের শেষ দিনের তুলনায় ভিড় এবং বই বিক্রি দুটোই কম ছিল।
আজ সাঙ্গ হচ্ছে বইমেলা
অমর একুশে বইমেলা শেষ হচ্ছে আজ। গত বৃহস্পতিবার বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুমোদনক্রমে মেলার সময় আরও দুই দিন বাড়ানো হয়। সেই হিসাবে একুশে বইমেলা শেষ হচ্ছে আজ। বইমেলা সাধারণত ২৮ দিন হয়। কিন্তু প্রতি চার বছর পর লিপ ইয়ারের কারণে হয় ২৯ দিনের। এবার ২৯তম দিনটি বৃহস্পতিবার হওয়ায় প্রকাশকদের দাবি ছিল মেলার সময় বাড়িয়ে শুক্রবার এবং শনিবারেও যেন নেওয়া হয়। তবে সময় বাড়ানো হলেও সে অনুযায়ী খুব কমই বই বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশক এবং বিক্রয়কর্মীরা। তারা মনে করছেন, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড পাঠকদের মনে দাগ কেটেছে। সেজন্য তাই মেলায় ভিড়-বিক্রি কম।  আজ সমাপনী দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ দিবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ এবং সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।  এছাড়া অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।
অমর একুশে বইমেলা শেষ হচ্ছে আজ। গত বৃহস্পতিবার বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুমোদনক্রমে মেলার সময় আরও দুই দিন বাড়ানো হয়। সেই হিসাবে একুশে বইমেলা শেষ হচ্ছে আজ।
২ দিন বাড়ল বইমেলার সময়
অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এর সময় আরও দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। মেলা চলবে আগামী ২ মার্চ (শনিবার) পর্যন্ত। মঙ্গলবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদের বরাতে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মেলা দুই দিন বৃদ্ধির কথা সংস্কৃতি সচিব জানিয়েছেন। কালকে চিঠি পাঠাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বইমেলার সময়সীমা দুদিন বাড়ানোর আবেদনে অনুমোদন দিয়েছেন। তাই বইমেলা চলবে আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ নুরুল হুদা রাত ৯টায় বইমেলায় ঘোষণা কেন্দ্র থেকেও বইমেলার মেয়াদ বাড়ানো ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সদয় সম্মতিক্রমে বই মেলা দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলার সময় দুদিন বাড়ানোর জন্য বাংলা একাডেমিকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতি।
অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এর সময় আরও দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। মেলা চলবে আগামী ২ মার্চ (শনিবার) পর্যন্ত।
নির্বাকের পাশে: গান হারানো মানুষের সুর
অনেক না–পাওয়া নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষেরা আসলে কী পায়?—এই প্রশ্নের উত্তর একেকজনের কাছে একেক রকম। কিন্তু না–পাওয়া নির্বাক মানুষের কাছে এর উত্তর কেমন হবে? সে উত্তর দেওয়া কঠিন। এই কঠিন প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বরং সহজ কথা বলি; বলি মোজাহিদুল ইসলামের প্রথম গল্পের বই ‘নির্বাকের পাশে’ প্রসঙ্গে। বইয়ের শুরুতেই লেখক বলছেন, ‘আমার গল্পগুলো জীবনের জাবেদার ডেবিট-ক্রেডিটে হিসাব মেলাতে না পারা মানুষের। যারা ঝাঁ-চকচকে নগর, বুনো বর্ষায় চুপসে যাওয়া শহরতলি কিংবা শীতল কোনো গ্রামে নির্লিপ্ত জীবনকে যাপন করার সংগ্রামে মত্ত। হয়তো আমরা নিজেরাও এমন। অর্থাৎ কোনো অতি বা কল্পমানবের কথা গল্পে উঠে আসেনি।’  তাহলে কার গল্প এসব! কারা জীবনের হিসাব মেলাতে পারে না? অঙ্কে শূন্য পাওয়া ব্যথা নিয়ে আমিও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিই শূন্যে—আদৌ পারে কি কেউ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ‘নির্বাকের পাশে’ দাঁড়াই। অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে দেখেছি, ব্যাখ্যা নেই, তবু লেখকের হিসাব না মেলানো মানুষের জীবনেও ফুটে থাকে বিচিত্র ফুল। সুন্দর। সেই ফুল ছুঁয়ে দেখি জন ও জীবনের সম্পর্ক। এখানে হিসাব মেলানোর বদলে দেখি, জীবনের বিচিত্র বদল কীভাবে নিজের জীবনেও এসে লাগে। জীবনের এ এক ভিন্ন পিঠ। দুপুরি রোদের আলোয় যা চকচক করে ওঠে। এই রোদে থেমে থাকা যায় অনেকক্ষণ।  এসব গল্পে সুজন সুপান্থ নামের কোনো চরিত্র নেই। তবু পড়তে পড়তে দেখি, চোখ ভরে উঠছে ফেলে আসা জীবনের ছবিতে। বদলে যাচ্ছে কানে আসা শব্দ। ধীরে ধীরে দুপুরি রোদের ভেতর উঁকি দিচ্ছে সন্ধ্যার সুর। আর বুকের ভেতর ঢুকে পড়ছে দ্রুতগামী রেলগাড়ির হাওয়া। সেই হাওয়ায় ফরফর করে উঠছে লুপ্ত–কথা। সন্ধ্যা ডোবার আগে নদীর তীর থেকে প্রেমিকাকে বিদায় জানিয়ে ঘরে ফিরলে বুকের ভেতর এক আশ্চর্য ব্যথা অনুভব হয়। মনে হয়, যেন ভাষা ভুলে যাওয়া কোনো এক গানের সুর মাথার ভেতর, বুকের ভেতর ঢুকে তার ভাষা খুঁজে বেড়াচ্ছে। মোজাহিদুল ইসলামের গল্পের বই ‘নির্বাকের পাশে’ ওই ভাষা ভুলে যাওয়া সুরের মতোই। কেবল তার কথামঞ্জরি পেরিয়ে গেলে বোঝা যাবে, এই সুর কোন স্কেলে ওঠানামা করছে। যা টিউন করা দূরূহ।  ‘নির্বাকের পাশে’র গল্পগুলো পড়তে পড়তে দেখবেন, বইয়ের কোনো এক পৃষ্ঠা থেকে কেউ একজন উঠে এসে পাঠককে চেনা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করছে, কী হে, চলছে কেমন? তোমার পাশের ঘর থেকে এখনো কি সেই পুরোনো কান্নার শব্দ ভেসে আসে? পাঠক এর কী উত্তর দেবেন—জানি না।
অনেক না–পাওয়া নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষেরা আসলে কী পায়?—এই প্রশ্নের উত্তর একেকজনের কাছে একেক রকম। কিন্তু না–পাওয়া নির্বাক মানুষের কাছে এর উত্তর কেমন হবে? সে উত্তর দেওয়া কঠিন। এই কঠিন প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বরং সহজ কথা বলি; বলি মোজাহিদুল ইসলামের প্রথম গল্পের বই ‘নির্বাকের পাশে’ প্রসঙ্গে।
রাজনৈতিক বইয়ের বিশেষ পাঠক
কিছু পাঠক আছেন যারা শুধুই মননশীল বই পড়েন। রাজনৈতিক বই তাদের প্রথম পছন্দ। সমসাময়িক রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, ইতিহাস, বিশ্ব রাজনীতি, কূটনৈতিক বিশ্লেষণসহ রাজনৈতিক নানা বিষয়ের এই বইগুলোর আবেদন তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি। একই সঙ্গে আছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা বই। বইমেলায় রাজনৈতিক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশ হয়েছে। বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, শনিবার পর্যন্ত বইমেলায় নতুন বই এসেছে ২ হাজার ৭৩৯টি। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মাত্র ৫৫টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ২৩টি, রাজনীতি বিষয়ক বইয়ের সংখ্যা মাত্র ২২টি। আগামীর প্রকাশক ওসমান গণি বলেন, রাজনীতি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের চাহিদা সারা বছর ধরেই। হুহু করে বিক্রি হওয়ার মতো নয়। কারণ বোদ্ধা পাঠকরাই এসব বইয়ের ক্রেতা। তবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের চাহিদা বেশি হওয়ার সুযোগ নিয়ে মানহীন কপিপেস্ট বই প্রকাশিত হচ্ছে। এসবের লাগাম টানা দরকার। রাজনীতি বিষয়ক বইয়ের মধ্যে কথাপ্রকাশ থেকে এসেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘সাতচল্লিশের দেশভাগে গান্ধী ও জিন্নাহ’, প্রথমা থেকে বদিউল আলম মজুমদারের ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রাজনীতি’, মহিউদ্দিন আহমদের ‘প্লাবনভূমির মহাকাব্য : পলাশী থেকে পাকিস্তান’, জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর ‘দুই জেনারেল হত্যাকাণ্ড : ১৯৮১-র ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান’, কথাপ্রকাশ থেকে ইমতিয়ার শামীমের সম্পাদনায় ‘গোপন রাজনীতির গল্প’, ঐতিহ্য থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও আবুল হাসনাতের সম্পাদনায় ‘নব্বুই-এর অভ্যুত্থান’, শোভা প্রকাশের ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও রাজনীতি’, পুঁথিনিলয় থেকে বেরিয়েছে ‘বাংলাদেশের নেতৃত্বের পরম্পরা ও উন্নয়ন’, নক্ষত্র প্রকাশনী এনেছে ‘রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন’, আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘স্বদেশ সংলাপ ও বিশ্ববীক্ষণ, সহে না মানবতার অবমাননা এবং সমালোচনা।’ রাজনীতি নিয়ে লেখা বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বই দিয়ে সাজানো হয়েছে ছাত্রলীগের স্টল ‘মাতৃভূমি’। স্টলটির সংগ্রহে রয়েছে রাজনৈতিক অসংখ্য বই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন বই রাখা হয়েছে এখানে। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, আমার দেখা নয়াচীন, কারাগারের রোজনামচা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’, ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকায় লেখা ‘জয় বাংলা : সাক্ষাৎকার ও আলাপচারিতা’। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বই দিয়ে সাজানো হয়েছে ইতি প্রকাশনার স্টল। এই প্রকাশনীতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘আমার স্বপ্ন আমার দেশ’, খালেদা জিয়াকে নিয়ে আব্দুস সালামের ‘ঘর থেকে রাজপথ’, ‘একজন জিয়া, জিয়াকে যেমন দেখেছি’। আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে বেশি বই প্রকাশ করেছে শোভা প্রকাশ। বিশেষ করে তারেক শামসুর রেহমানের বিশ্বরাজনীতির ১০০ বছর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি, ইরান-সংকট ও উপসাগরীয় রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতিকোষ, করোনা-পরবর্তী বিশ্বরাজনীতি, ভারত-চীন দ্বন্দ্ব, চীন বিপ্লবের ৭০ বছর, নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও সমকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে কথাপ্রকাশ থেকে এসেছে মুনতাসীর মামুনের ‘১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শান্তি কমিটি গঠন ও তৎপরতা’ ও সালেক খোকনের ‘১৯৭১ : খেতাবপ্রাপ্ত ত্রিশ বীর’। প্রথমা থেকে ‘১৯৭১ শিলিগুড়ি সম্মেলন : প্রবাসী সরকারের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সভা’, ঐতিহ্য থেকে আফসান চৌধুরী ‘১৯৭১ : আন্তর্জাতিক পরিসন’, আসাদ চৌধুরীর ‘একাত্তরের ৭১ কবিতা’। সুবর্ণ প্রকাশনী থেকে মুনতাসীর মামুনের ‘১৯৭১ : বিশ্ব জনমত তৈরিতে শরণার্থীর ভূমিকা’। জার্নিম্যান বুকস থেকে বীরপ্রতীক আলমগীর সাত্তারের বয়ানে ‘কিলোফাইট’, ফারুক আলমগীরের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতিকথন ‘ঢাকা টিভি স্টেশনের অবিস্মরণীয় দিনগুলো’। আগামী প্রকাশনী থেকে এসেছে ড. এম আলীমের ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ’, সুজন বড়ুয়ার ‘সূর্য উঠার সময়’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর উপন্যাসসমগ্র’, মোনায়েম সররকারের ‘মুক্তিযুদ্ধের কত স্মৃতি কত কথা’, রফিকুর রশীদের ‘দাঁড়াবার সময়’। অনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে সুরমা জাহিদের ‘বীরাঙ্গনাদের ভয়াবহ স্মৃতিকথা’। তাম্রলিপি এনেছে আশফাকুজ্জামানের ‘মুক্তিযুদ্ধের কণ্ঠস্বর : স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র’। অনন্যা থেকে এসেছে মো. আজিজুল আলমের ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের ১০ নম্বর সেক্টর : সাগর সীমানায় অজেয় সেনা বাংলাদেশের নৌ কমান্ডো কাহিনি’। পাঠক সমাবেশ থেকে এসেছে মোস্তফা সেলিমের ‘সাপ্তাহিক মুক্তবাংলা’। বেহুলা বাংলা থেকে সুলতানা কামালের ‘বাংলাদেশের প্রথম হাসপাতাল’। কথাপ্রকাশের ব্যবস্থাপক ইউনুস আলী বলেন, আমাদের প্রকাশনীতে প্রবন্ধ বা ননফিকশন বই বেশি। তাই আমাদের প্রকাশনীতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের বিক্রি ভালো। প্রবীণ ও গবেষকদের পাশাপাশি তরুণরাও বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইগুলো বেশি কিনছেন। নতুন বই : কাকলী প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘স্মৃতি সমগ্র’, বাংলা একাডেমি থেকে জালাল ফিরোজের ‘বাঙালির জাতিগঠন বঙ্গবন্ধুর পত্রাবলি’, কথাপ্রকাশ থেকে মুনতাসীর মামুনের ‘১৯৭১ : মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শান্তি কমিটি গঠন ও তৎপরতা’, তাম্রলিপি থেকে এসেছে মাহবুবুর রহমান তুহিনের ‘চেক বই’। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : মোহাম্মদ রফিক এবং স্মরণ : খালেক বিন জয়েনউদদীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে আলতাফ শাহনেওয়াজ এবং সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শামীম রেজা, শোয়াইব জিবরান এবং আসলাম সানী। সভাপতিত্ব করেন আবুল মোমেন। বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন : এই মঞ্চে শনিবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মুহম্মদ মোজাম্মেল হক রচিত মুক্তিযুদ্ধ ও আলোকচিত্র বই বিষয়ে লেখকের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার, আশিক আকবর, মাহবুব আজীজ, বীরেন মুখার্জী, আরেফিন রব, কাফি শেখ, সালেহ মুজাহিদ এবং তিথি বালা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নূরুল হাসনাত জিলান, লুৎফুন নাহার লতা, নিমাই মণ্ডল, সাহিত্য ভঞ্জ চৌধুরী। এ ছাড়াও ছিল আসাদুজ্জামান মান্নার পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘কুষ্টিয়া আবৃত্তি পরিষদ’, মাসুম হুসাইনের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘পরম্পরা নৃত্যালয়’, মাহবুব রিয়াজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং হাসান আবদুল্লাহ বিপ্লবের পরিচালনায় ‘ঘাসফুল’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, সালাউদ্দিন আহমদ, সুজিত মোস্তফা, নফিসা মাহজাবিন, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, তাপসী ঘোষ, বর্ণালী সরকার, ফারহানা আক্তার এবং ঝর্ণা রায় ভাবনা।
কিছু পাঠক আছেন যারা শুধুই মননশীল বই পড়েন। রাজনৈতিক বই তাদের প্রথম পছন্দ। সমসাময়িক রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, ইতিহাস, বিশ্ব রাজনীতি, কূটনৈতিক বিশ্লেষণসহ রাজনৈতিক নানা বিষয়ের এই বইগুলোর আবেদন তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি।
পাঠকের হাতে হাতে বই
মেলার শেষ শুক্রবার গতকাল পাঠকের হাতে হাতে ছিল বই। হাসি ছিল প্রকাশকদের ঠোঁটে। ছোট-বড় সব প্রকাশনাতেই ছিল ব্যস্ততা। বিক্রয়কর্মীদের অনেকেই বসার সময়ও পাননি। তারা ভীষণ আশাবাদী-বিক্রির এ ধারা বইমেলার শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এদিন মেলার দ্বার খুলে যায় বেলা ১১টায়। সকালে ছিল শিশুপ্রহর। দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুচত্বরে আনন্দে কাটিয়েছে শিশুরা। দুপুরের সময়টা বাদ দিয়ে পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা মেলায় ছিল মানুষের ঢল। বিকালে আজব প্রকাশের স্টলে আসেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ক্রিপটিক ফেইটের গায়ক শাকিব চৌধুরী এবং দেশের আরেক জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল ব্যান্ডের গিটারিস্ট কাজী ফায়সাল আহমেদ। ‘গুরু আজম খান’ এবং ‘বাংলার রক মেটাল’ বই নিয়ে পাঠকদের সঙ্গে মেতে ওঠেন তারা। বৃহস্পতিবার রাত আর শুক্রবার সকালের গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে মেলা মাঠের অধিকাংশ জায়গাই ছিল কর্দমাক্ত। কোথাও কোথাও জমেছিল পানি। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে দর্শনার্থীদের। বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন অনেকেই। একাধিক পাঠক ও প্রকাশক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে এবার বইমেলার আয়োজন সবচেয়ে খারাপ। বৃষ্টি হলে পানি জমবে এটা স্বাভাবিক। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে উঁচুনিচু জায়গা বালু দিয়ে ভরাট কিংবা চলার পথগুলোতে ইট বিছানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাংলা একাডেমি তা করেনি। এখনো অনেক স্টল খালি পড়ে আছে। এগুলো যাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তাদের কি জবাবদিহিতায় আনা হয়েছে? কর্দমাক্ত মাঠ প্রসঙ্গে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কেএম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা পানি অপসারণের চেষ্টা করেছি। তবে এত বড় মাঠে ইট-বালু ফেলা বাংলা একাডেমির পক্ষে সম্ভব নয়। মেলা পরিদর্শনে চীনের রাষ্ট্রদূত : চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অমর একুশে বইমেলা পরিদর্শন করেছেন। শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেন। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। এ সময় কয়েকটি বইও কেনেন এবং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের চায়না বুক হাউজ থেকে শিশুদের কিছু বই উপহার দেন। রাষ্ট্রদূতের আগমন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের চায়না বুক হাউজের সামনে লায়ন ড্যান্স, অপেরা মাস্ক, পেপার কাট, চায়নিজ ক্যালিগ্রাফি ও চায়নিজ চাশিল্প পরিবেশনের আয়োজন করা হয়। নতুন বই : এদিন নতুন বই এসেছে ১৯৭টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে বাংলা একাডেমি এনেছে এম. আবদুল আলীমের গবেষণা ‘পাবনা জেলায় বঙ্গবন্ধু’। কথাপ্রকাশ এনেছে হরিশংকর জলদাসের উপন্যাস ‘উপেক্ষিতা সীতা’ ও ইমতিয়ার শামীমের গল্পগ্রন্থ ‘গোপন রাজনীতির গল্প’। জিনিয়াস পাবলিকেশন্স এনেছে আসাদ মান্নানের কাব্যগ্রন্থ ‘হাতে হরফের হাতিয়ার’। গ্রন্থকুটির এনেছে ড. কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ‘রাজশাহী জেলার প্রত্নপীঠ ও স্থাপত্যিক ঐতিহ্য’। অস্তিত্ব এনেছে ধ্রুব এষের উপন্যাস ‘শঙ্খনীল দাশ স্মরণসংখ্যা’ ও ‘হিজল দাশ কবি’ এবং হায়দার আকবর খান রনোর লেখা জীবনীগ্রন্থ ‘শহীদ আসাদ’। অন্বেষা এনেছে নুসরাত জাহানের ‘বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি : হস্তশিল্পের বিস্তার’। অন্যান্য আয়োজন : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মামুন হুসাইন। আলোচনা করেন ওয়াসি আহমেদ ও জাফর আহমদ রাশেদ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস। তিনি বলেন, নিরন্তর নিরীক্ষার মধ্য দিয়েই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাহিত্য অনন্য উচ্চতা লাভ করেছে। নবীন পাঠকদের তার সাহিত্যপাঠে উৎসাহিত করতে হবে। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক, পর্যটক ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক, কথাসাহিত্যিক নভেরা হোসেন, কবি কুশল ভৌমিক ও শিশুসাহিত্যিক আহমেদ জসিম। এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় শিশুকিশোর চিত্রাংকন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।
মেলার শেষ শুক্রবার গতকাল পাঠকের হাতে হাতে ছিল বই। হাসি ছিল প্রকাশকদের ঠোঁটে। ছোট-বড় সব প্রকাশনাতেই ছিল ব্যস্ততা। বিক্রয়কর্মীদের অনেকেই বসার সময়ও পাননি। তারা ভীষণ আশাবাদী-বিক্রির এ ধারা বইমেলার শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লব
সম্প্রতি সাংবাদিক, গবেষক অজিত কুমার সরকারের লেখা ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লব: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব থেকে শেখ হাসিনা’ বইটি পড়লাম। বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা-নেতৃত্বের এ পরম্পরা উন্নয়নের অভিযাত্রায় বাংলাদেশকে কতটা বদলে দিয়েছে, এ বইটি তার এক নির্ভরযোগ্য দলিল। তথ্যবহুল এ বইটি পড়লেই বোঝা যায়, বাংলাদেশকে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট রাষ্ট্রে পরিণত করতে নেতৃত্বের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের নানান তথ্যও মেলে এ বইটিতে। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনার ব্যাপ্তি ছিল এক কথায় বিশাল। আর এ কারণেই রাষ্ট্রের উন্নতির লক্ষ্যে রাষ্ট্রকাঠামো নিয়ে তিনি নিরন্তর ভাবতেন। বাংলাদেশকে আগামী পঞ্চাশ বা একশ বছর পর কোথায় নিতে হবে এ ভাবনার সন্ধান মেলে তার অনেক বক্তব্যেই। শত প্রতিকূলতার মাঝেও তার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভাবনা সত্যি পাঠককে অবাক করার মতো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে-এ কথা তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে বহুবার উচ্চারণ করেছেন। তিনি জাতিসংঘে তার আশাজাগানিয়া এক ভাষণে বলেছিলেন, যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অসামান্য উন্নতির এ যুগে মানবসভ্যতা বিপুল সাফল্যের সুফল পাবে। এ সাফল্যের অংশীদার সারা বিশ্বের মানুষের। এমন স্পষ্ট করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মানবকল্যাণধর্মী অগ্রগতির কথা ওই সময় ক’জন রাষ্ট্রনায়কই বা বলতে পারতেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন এ বাংলাদেশ এক সময় পৃথিবীর অন্যতম ধনী অঞ্চল ছিল; কিন্তু ঔপনিবেশিক হস্তক্ষেপে সেই সোনার বাংলা নিঃশেষ হয়ে যায়। তাই তো তিনি ঐশ্বর্যমণ্ডিত সেই বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনার সোনালি অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন বারে বারে। আজ তার সেই আশার অধিকারকে আরও বিস্তৃত করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে এখন আমরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলেছি। ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। পুরো বাংলাদেশকে উন্নত অবকাঠামোর জালে বেঁধে ফেলার পাশাপাশি তার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে সত্যি সত্যি বিপ্লব ঘটিয়েছে। তাই তো তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল উদ্যোক্তা হওয়ার এক অভাবনীয় প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে চাই আর্থিক লেনদেন। চাই সার্ভিস ডেলিভারির জন্য উপযুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো। হাইস্পিড ইন্টারনেট। চাই সাবমেরিন কেবল। সাইবার হাইওয়ে। চাই ফাইবার অপটিক কেবল এবং ওয়ারল্যাস নেটওয়ার্ক। চাই ঘূর্ণায়মান স্যাটেলাইট। এসবেরই প্রসার ঘটিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সরকার বিগত দেড় দশক ধরে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জাতীয় পেমেন্ট সুইচ, ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, রিয়াল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট, ইন্টারঅপারেবল ‘বিনিময়’ ব্যবস্থাসহ ক্যাশলেস লেনদেন পদ্ধতি গড়ে তোলা হয়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম, এজেন্ট ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ ডিজিটাল অর্থব্যবস্থা গড়ার কাজ অনেকটাই এগিয়ে। বাংলা ‘কিউআর কোড’ দ্রুতই চালু হয়েছে। একেবারে তৃণমূলের মানুষ এখন এ আধুনিক আর্থিক সেবার সুফল পাচ্ছেন। কোভিড সংকটকালে আমাদের ডিজিটাল অর্থায়ন ব্যবস্থা এতটা মজবুত না থাকলে ব্যাংকিং, ব্যবসা-বাণিজ্যের কী যে হতো তা ভেবেই অবাক হয়ে যাই। লকডাউনের সময়ও তাই এক মিনিটের জন্য থেমে থাকেনি ডিজিটাল অর্থনীতির হালচাল। মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা ছিল নিরন্তর সচল। এমনই এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে আরও স্মার্ট করার ঘোষণা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের এ পরিকল্পনার পাঁচটি স্তম্ভ তিনি উল্লেখ করেছেন-এক. ডিজিটাল শাসনব্যবস্থা; দুই. জনসম্পদ উন্নয়ন; তিন. উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন; চার. সংযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পাঁচ. টেকসই উন্নয়ন। এসব লক্ষ্য পূরণের জন্য সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু নীতি ও আইন প্রণয়ন করে ফেলেছে। বেশকিছু প্রকল্পও হাতে নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ডিজিটাল স্থাপত্য’, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ফেলোশিপ প্রকল্প’, ‘উদ্ভাবন তহবিল’, ‘ডিজিটাল সংযোগ প্রকল্প’ এবং ‘ডিজিটাল ডিভাইস ইনোভেশন ফান্ড’। এসবের ওপর ভর করেই এগিয়ে যাবে স্মার্ট বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশে সরকার যেমন উদ্যোক্তা হবে, একইভাবে বেসরকারি উদ্যোক্তারাও অংশীজন হবেন। একে অপরের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে গতিময় স্মার্ট বাংলাদেশ। ঠিক ক্যারাভ্যানের মতো। এত সব পরিবর্তনের অনেক কিছুই আমজনতার কাছে অজানা এবং অচেনা। আমরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করছি; কিন্তু এর প্রেক্ষাপটের গল্পগুলো জানি না। সেই গল্পগুলো ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লব: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব থেকে শেখ হাসিনা’ বই-এ সাজিয়েছেন সাংবাদিক, লেখক, গবেষক অজিত কুমার সরকার। বইটিতে চমৎকারভাবে বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লবের ধারাবাহিকতাগুলো আলোচনা করা হয়েছে। এ আলোচনা থেকে যে কেউই ডিজিটাল পরিবর্তনের সম্যক ধারণা লাভে সমর্থ হবেন। ধারাবাহিকতা অনুযায়ী দেখা যায়, লেখক প্রথমেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এ ধারণার প্রেক্ষাপটগুলো আলোচনায় নিয়ে এসেছেন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ এর ধারণা যে হঠাৎ করা হয়নি, সেগুলো তিনি তথ্য, তত্ত্ব ও যুক্তি দিয়ে বর্ণনা করেছেন। প্রেক্ষাপট বর্ণনায় লেখক অজিত কুমার সরকার ফিরে গেছেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নয়ন দর্শনের কাছে। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সব রকম লড়াই-এ অপূর্ব এক সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই তিনি মানুষের সৃজনশীলতা, বিজ্ঞান ও কারিগরি অগ্রগতির ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেন। একইসঙ্গে তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও ভিত্তি তৈরিতে বিভিন্ন উদ্যোগের আয়োজন করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম ক্ষমতায় আসে ৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর। শেখ হাসিনার সেই শাসনামলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর নজরদারিত্ব ছিল অনেক বেশি। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। সে সময় অনেকেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কী এ নিয়ে নানান ধরনের প্রশ্ন করলেও এখন প্রতিটি মানুষ ঘরে বসেই বিভিন্ন সেবাপ্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে বুঝতে সক্ষম হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাটা কোথায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেন। এ ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে ‘রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবে রূপায়ণ: বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’ প্রণয়ন করা হয়। একেবারে শহর থেকে গ্রাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা ডিজিটাল রূপান্তর দেখতে পাই। বিগত দিনে প্রত্যেকটি কাজেই গ্রহীতা বা সেবাপ্রার্থীকে কোনো না কোনোভাবে সেবাপ্রদানকারীর কাছে যেতে হতো। কিন্তু এখন আর যেতে হয় না। ঘরে বসেই এখন সবকিছু করা যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এখন সর্বত্র ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্লোগান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা দেখতে পাই লেখক অজিত কুমার সরকার পুরো বইতে চমৎকারভাবে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির রূপান্তরের ধারাবাহিক আলোচনা ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। সূচিপত্র মোতাবেক প্রথম অধ্যায়ে ‘ডিজিটাল বিপ্লবে বঙ্গবন্ধুর প্রযুক্তি ভাবনা ও উদ্যোগ’, দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব’, তৃতীয় অধ্যায়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ’, চতুর্থ অধ্যায়ে ‘সংযুক্তিতে সমৃদ্ধি ও গ্রামের উন্নয়ন’, পঞ্চম অধ্যায়ে ‘ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশ’, ষষ্ঠ অধ্যায়ে ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মানবসম্পদ’ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এরপর সপ্তম অধ্যায়ে ‘ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠার পথযাত্রা’, অষ্টম অধ্যায়ে ‘ডিজিটালাইজেশনে দুর্নীতি হ্রাস’, নবম অধ্যায়ে ‘সাইবার নিরাপত্তা’ দশম অধ্যায়ে ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন’ এবং সর্বশেষ একাদশ অধ্যায়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লববান্ধব’ আইন বিষয়ে আলোচনাও করা হয়েছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নিয়ে শুরুতে জনমনে নানা প্রশ্নের অবতারণা হলেও এখন আর কোনো প্রশ্ন নেই তা সন্দেহাতীতভাবেই বলা যায়। কেননা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর সুবিধা বেশ আগেই শহর থেকে এখন প্রান্তিক জনগণের কাছে পৌঁছে গেছে। এখন ঘরে বসেই অনলাইনে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন, বিল পরিশোধ, কেনাকাটাসহ সবই করা যায়। ঘরে বসেই মোবাইল ডিভাইসে এখন সব ধরনের লেনদেন সম্পন্ন করা সম্ভব। গত কয়েক বছরে এ পরিবর্তন এখন সর্বত্র লক্ষণীয়। গ্রামের তরুণ-তরুণীরাও এখন ঘরে বসেই শুধু ডিভাইস ব্যবহার করে আয় করছেন। এদিকে আবার গত কয়েক বছরে ফ্রিল্যান্সিং আমাদের নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের এক নয়াদিগন্তও উন্মোচন করেছে। এদিকে বর্তমান সরকার যেসব নীতিমালা করেছে, সেখানেও ডিজিটাল বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে আগেভাগেই। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধারায় সবক্ষেত্রেই এখন ডিজিটাইজেশন করা হয়েছে। যেসব জায়গাতে হয়নি, সেখানেও করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। এসব কিছুই এসেছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে। লেখক এ বইটিতে আরও প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় নিয়ে তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। যে আলোচনা একজন পাঠক, গবেষক বা অনুসন্ধিৎসু জন নিঃসন্দেহে নিজের জানা বা জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করতে পারবেন। বইটির সপ্তম অধ্যায়ে ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠার পথযাত্রা নিয়ে তিনি বিস্তর আলোচনা করেছেন। এ অধ্যায়ে ‘ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট: প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা’ পর্বে তিনি প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো যেমন- ই-গভর্নমেন্ট ও আমলাতন্ত্র, ন্যাশনাল ই-সার্ভিস বাস জাতীয় তথ্য বাস্তবায়ন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস), পণ্য আমদানি-রপ্তানি সনদ অনলাইনে ই-রিক্রুটমেন্ট, খাদ্যশস্য ক্রয় পদ্ধতির ডিজিটাইজেশন, অনলাইনে ফরম, ই-পুর্জি, স্মার্ট ভূমি সেবা, ই-নামজারি, ই-জুডিশিয়ারি, ভার্চুয়াল কোর্ট, মোবাইল কোর্ট, ডিজিটাল পার্লামেন্ট, ক্যাশলেস সোসাইটি, পেপারলেস অফিস ইত্যাদি বহুবিধ বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এ রূপান্তরগুলো কিছু দিন আগে মানুষ কল্পনাও করেনি। কিন্তু এখন সুবিধাগুলো মানুষ সরেজমিন দেখতে পাচ্ছে। সেই সুবিধাগুলো তাদের জীবন চলাকে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে দিচ্ছে। আসলে আমরা উল্লিখিত বিষয়ে সুবিধাদি পেলেও এসবের উদ্দেশ্য এবং আগামীতে আরও কী কী ধরনের পরিবর্তন আসছে তা কিন্তু জানি না। লেখক এসব বিষয়ে আগাম আলোচনা করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তির ধারায় দ্রুতই বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিটি খাত। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে এখন স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির স্লোগান সর্বত্র। সেভাবেই শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। সাংবাদিক, লেখক, গবেষক অজিত কুমার সরকারকে আবারও ধন্যবাদ এক মলাটে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপান্তরের ঘটনাবলী তুলে ধরার জন্য। আগ্রহীরা বইটি পড়তে পারেন এক নিশ্বাসে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মনের জানালা আরও খানিকটা খুলে দিতে এ বইটি অনুঘটকের কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস। আশা করি, ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ কতটা রূপান্তরিত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ এ বাংলাদেশের কতটা কার্যকর অংশীদার হতে পারছে, সেই আলাপটিও লেখক এ বইয়ের আগামী সংস্করণে তুলে ধরবেন। আবারও এমন একটি আধুনিক ভাবনায় ভরা বইটি উপহার দেওয়ার জন্য লেখককে অভিনন্দন জানাই।
সম্প্রতি সাংবাদিক, গবেষক অজিত কুমার সরকারের লেখা ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লব: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব থেকে শেখ হাসিনা’ বইটি পড়লাম। বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা-নেতৃত্বের এ পরম্পরা উন্নয়নের অভিযাত্রায় বাংলাদেশকে কতটা বদলে দিয়েছে, এ বইটি তার এক নির্ভরযোগ্য দলিল। তথ্যবহুল এ বইটি পড়লেই বোঝা যায়, বাংলাদেশকে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট রাষ্ট্রে পরিণত করতে নেতৃত্বের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের নানান তথ্যও মেলে এ বইটিতে।
প্রধানমন্ত্রীর বইয়ের ওপর বিশেষ পাঠ কার্যক্রম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বই ও সম্পাদিত লেখার ওপর জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র প্রণীত বিশেষ পাঠ কার্যক্রমের চূড়ান্ত মূল্যায়ন বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।  বইটি হচ্ছে ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ ও সম্পাদিত লেখা ‘বেদনায় ভরা দিন’। এই মূল্যায়নে মাধ্যমিক গ্রুপে ২৯ ও উচ্চ মাধ্যমিক গ্রুপের ২৯ মোট ৫৮ শিক্ষার্থী/পাঠক অংশগ্রহণ করে। তারা দেশের বাছাই করা ২৯টি বেসরকারি গ্রন্থাগারের সদস্য/পাঠক।  অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সভাপতি মিনার মনসুর। বিচারকমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. মাসুদুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল, ঝর্ণা রহমান ও সুভাষ সিংহ রায়। আলোকিত সমাজ গড়তে গ্রন্থাগারের ভূমিকার ওপর আলোকপাত করেন বেরাইদ গণপাঠাগার সভাপতি গ্রন্থসুহৃদ এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া ও দনিয়া পাঠাগার সভাপতি শাহনেওয়াজ।  জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র প্রধানমন্ত্রীর ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে বিশিষ্ট ‘লেখক ও সম্পাদক শেখ হাসিনা’ শিরোনামে এই বিশেষ গ্রন্থপাঠ কার্যক্রম হাতে নেয়। মাঠপর্যায়ে প্রথম রাউন্ডে প্রায় তিন হাজার প্র্রতিযোগী/শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। স্থানীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ২৯০ জনকে বাছাই করা হয়। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের চূড়ান্ত মূল্যায়ন পর্বে অংশ নেয় ৫৮ জন। তাদের মধ্য থেকে সেরা দশ পাঠককে পুরস্কার দেওয়া হবে। সেরা দশ পাঠকের প্রত্যেকে সনদপত্র, নগদ আড়াই হাজার টাকা ও আড়াই হাজার টাকার বই পাবেন। এছাড়া অবশিষ্ট ৫০ পাঠক/শিক্ষার্থীর প্রত্যেকে সনদপত্র ও এক হাজার টাকা করে পাবে। গ্রন্থপাঠ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী গ্রন্থাগারগুলো হচ্ছে- ঢাকা: বেরাইদ গণপাঠাগার, দনিয়া পাঠাগার, সীমান্ত পাঠাগার, গ্রন্থবিতান, বুকল্যান্ড লাইব্রেরি, কামাল স্মৃতি পাঠাগার, উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আওয়াল পাবলিক লাইব্রেরি, অনির্বাণ, মুক্তি গণাপাঠাগার, মুকুল ফৌজ পাঠাগার, তাহমিনা ইকবাল পাবলিক লাইব্রেরি, গোলাম আবেদিন মাস্টার ও রেফাতুন্নেছা গ্রন্থাগার, আলোকবর্তিকা গ্রন্থাগার, গোপালগঞ্জ: বর্ণ গ্রন্থাগার, ময়মনসিংহ: আলোর ভুবন পাঠাগার, জাগ্রত আছিম গ্রন্থাগার, অন্বেষা পাঠাগার, স্বপ্নপূরণ লাইব্রেরি, নারায়ণগঞ্জ: সুলপিনা আদর্শ পাঠাগার, সিরাজগঞ্জ: বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ শ মাহবুবুল হক পাঠাগার, জামালপুর: ভাষা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী মতি মিয়া ফাউন্ডেশন, সিলেট: পদক্ষেপ গণপাঠাগার, লালমনিরহাট: আলোকিত মালিটারি ফুটন্ত অভিযান গ্রন্থাগার, সুনামগঞ্জ: অজিত স্মৃতি পাঠাগার, কুমিল্লা: মজুমদার পাবলিক লাইব্রেরি, নেত্রকোনা: জলসিঁড়ি পাঠকেন্দ্র ও মুন্সীগঞ্জ: রহমান মাস্টার স্মৃতি পাঠাগার। একটি গ্রন্থাগার চূড়ান্ত মূল্যায়ন পর্বে আসেনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বই ও সম্পাদিত লেখার ওপর জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র প্রণীত বিশেষ পাঠ কার্যক্রমের চূড়ান্ত মূল্যায়ন বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রুশ ইতিহাস আবার নিজের লেজে কামড় দেবে
অনেকে যাকে সমকালীন রুশ সাহিত্যে পাস্তারনাক ও সলঝোনেতসিনের উত্তরসূরি হিসাবে মনে করেন, সেই মিখাইল শিশকিন ১৯৯৫ সাল থেকে নির্বাসিত বসবাস করছেন সুইজারল্যান্ডে। একমাত্র লেখক হিসাবে লাভ করেছেন রাশিয়ার প্রথমসারির প্রায় সব সাহিত্য পুরস্কার, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘রুশ বুকার’, ‘বিগ বুগ প্রাইজ’। ৩০টি ভাষায় তার বই অনূদিত হয়েছে। ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক এ লেখকের ‘বই ইন মাই রাশিয়া : ওয়ার অর পিস?’ সাম্প্রতিক সময়ে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। দ্যা গার্ডিয়ানে নিজের বই, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন অ্যান্ড্রু অ্যান্থনির সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন ওয়াহিদ কায়সার রুশ সাহিত্যে জাতীয়তাবাদী এবং উদারপন্থিদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের কথা আপনি অতীতেও বলেছেন। ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে সেটা কী আরও গভীর হয়েছে? : বিশ বছর আগে কিয়েভে এক সাহিত্য উৎসবে আমরা সবাই-লেখক এবং কবিরা যারা ইউক্রেনে রুশ ভাষায় লিখত-একসঙ্গে বসে কথা বলছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল অবশেষে আমরা ভবিষ্যতের রুশ সংস্কৃতি গড়ে তুলছি, যেখানে পারস্পরিক বোঝাপড়াটা গুরুত্বপূর্ণ। তারপর ক্রাইমিয়া সংযুক্তির প্রসঙ্গ সামনে চলে এলো আর দেখলাম যাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে গল্প করছিলাম তারা চিৎকার করছে : ‘ক্রাইমিয়া আমাদের! ক্রাইমিয়া আমাদের!’ এটি ছিল (ইউজিন) আয়োনেস্কোর বিখ্যাত গ্লার নাটকটার মতো, যেখানে মানুষ গণ্ডারে রূপান্তরিত হয়ে যায়। তাদের সঙ্গে আর কথা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। মস্কোয় বাস করা আমার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলাটাও অসম্ভব। আমরা অচেনা হয়ে পড়েছি। রুশ সংস্কৃতিতে সভ্যতার ব্যবধানের মতো কিছু একটা আমাদের ভেতরও আছে। যারা বই পড়ে না তারা কেন এ যুদ্ধকে সমর্থন করে সেটা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু সংস্কৃতিবানরা কেন সমর্থন করে তা ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে অসম্ভব। আপনার বইতে বলেছেন যেসব রুশ লেখক এবং শিল্পীদের লক্ষ্য এটাই দেখানো যে সব রুশ এ যুদ্ধকে সমর্থন করে না। কিন্তু যেমনটা আপনি বলেছেন, অনেক শিল্পী এবং লেখক কিন্তু মনে করে না যে এটা তাদের লক্ষ্য : আমার জন্য এখন এটা একটা লক্ষ্য। সারা জীবন আমি টের পেয়েছি আমার পায়ের নিচের মাটি খুব শক্ত। রুশ সংস্কৃতিই ছিল সেটা। আর এখন এটা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একশ বছর আগে রুশ অভিবাসীরা বার্লিন বা প্যারিসের রাস্তায় রুশ ভাষায় কথা বলতে লজ্জা পেত না। কিন্তু এখন তারা নিজের ভাষায় কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে। রুশ ভাষার মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সবকিছু করাই আমার লক্ষ্য এখন। আর এটা এ যুদ্ধে আমাদের সাধারণ শত্রু, রুশ রেজিমের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বিজয়ের মাধ্যমেই সম্ভব। কারণ রুশ সংস্কৃতির প্রধান শত্রু রুশ রেজিমই। আপনি লিখেছেন যে রুশ ভবিষ্যৎ কেবল তখনই থাকবে যদি এটি সম্পূর্ণ পরাজয়ের মধ্য দিয়ে যায়। একটা পারমাণবিক শক্তিধর দেশের জন্য এটা কি কোনো কার্যকর বিকল্প? : পুতিনের মধ্যে সব স্বৈরশাসকের মনস্তত্ত্ব মজুত আছে; ‘আমি যদি এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই, তাহলে পুরো পৃথিবীকেই আমার সঙ্গে যেতে হবে।’ মানুষের প্রতি এদের কোনো সহানুভূতি নেই। মানুষকে এরা ভালোবাসে না। ঘৃণা করে। আর তাই আমি নিশ্চিত যে, সে লাল বোতামটা টিপে দেবে। কিন্তু পৃথিবী ধ্বংস করার আদেশটা কেউ পালন করবে না। কেউ না। আর সেটা কেন জানেন? কারণ রাশিয়ায় মূল প্রশ্নটা উনিশ শতকের চিরায়ত রুশ সাহিত্যের মতো না; কে দায়ী? কী করা যেতে পারে? না, প্রধান প্রশ্নটা হলো; জার কি আসল নাকি নকল? একটা যুদ্ধ জিতে প্রমাণ করতে পারেন যে আপনি আসল। স্ট্যালিন লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল, তবে সাধারণের কাছে কিন্তু তিনি জনপ্রিয়। গর্বাচেভ পশ্চিমে জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু আফগানিস্তান যুদ্ধ এবং পশ্চিমের বিরুদ্ধে ঠান্ডা যুদ্ধে তিনি পেরে ওঠেননি। (তাই) তিনি ঘৃণিত। পুতিনের জেনারেলরা তাকে আশ্বস্ত করেছিল যে তিন দিনের মধ্যে তারা কিয়েভ দখলে নেবে, আর হিসাব করতে গিয়ে এটাতেই সে ভুল করল। সে ব্যর্থ, আর এখন সে একজন নকল জার হয়ে পড়েছে। নকল জারের আদেশ কেউ পালন করবে না। আপনার বইটি ভাষার দুর্নীতি, মিথ্যার স্বাভাবিকীকরণের বিরুদ্ধে একটি সতর্কতাবাণী। কিন্তু মিথ্যা যদি সত্যের চেয়ে বেশি শক্তি বহন করে, তবে তাকে চ্যালেঞ্জ করে কারাবাস বা মৃত্যুর ঝুঁকি কি কেউ নেবে? শেষবার কবে আপনি রাশিয়ায় গিয়েছিলেন? : শেষবার আমি রাশিয়ায় গিয়েছিলাম ২০১৪ সালের অক্টোবরে। ক্রাসনোয়ারস্ক বইমেলায়। মঞ্চে আমি একাই যুদ্ধের ব্যাপারে কথা বলেছিলাম। এ নীরবতাটা এতটাই অপমানজনক ছিল যে, সেটাই ছিল রাশিয়ায় আমার শেষ সফর। এখন কোনোভাবেই সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছি, কিন্তু করবটা কী? আমার কি চুপ থাকা উচিত? আমার কি কথা বলা বা লেখালেখি বন্ধ করে দেওয়া উচিত? সেটা করলে আমার জীবনের আর কোনো মানে থাকে না। আমি হাল ছাড়ব না। আপনি রাশিয়ার ‘বর্বর ৯০ দশক’ সম্পর্কে লিখেছেন যখন অলিগার্করা প্রাকৃতিক সম্পদ চুরি করেছিল আর ক্ষমতা অপরাধীদের হাতে চলে গিয়েছিল। দারুণ একটা সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। রুশ গণতন্ত্রকে সমর্থন করার জন্য পশ্চিমারা তখন কী করতে পারত? : এটা বলতে আমার খারাপ লাগছে যে রুশ জনগণের কাছে অপরাধীদের এ শাসনকে পরিচয় করিয়ে দিতে পশ্চিমারাই সাহায্য করেছিল। ৯০-এর দশকে মানুষ গণতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত ছিল, কিন্তু তাদের কোনো ধারণা ছিল না যে, এটা কীভাবে কাজ করে। পশ্চিমা গণতন্ত্রগুলো নতুন রুশ গণতন্ত্রকে কী দেখিয়েছিল? সুইজারল্যান্ডে আমি একজন দোভাষী হিসাবে কাজ করেছি এবং দেখেছি কীভাবে বিশাল এ লন্ড্রি মেশিনটা কাজ করে। রাশিয়া থেকে নিয়ে আসা চুরির টাকা মানুষ জুরিখে নিয়ে আসত অ্যাকাউন্ট খুলে রেখে দেওয়ার জন্য। আর আইনজীবী, ব্যাংকের লোকজন, সবাই এ অবৈধ টাকা পেয়ে খুশি হয়েছিল। তারা পুরোপুরি সচেতন ছিল যে এগুলো অবৈধ টাকা। লন্ডনেও একই ঘটনা ঘটেছে, আরও খারাপ আমার মনে হয়। প্রধান দায়িত্ব রুশদেরই ছিল, কিন্তু পশ্চিমা গণতন্ত্রের সমর্থন ছাড়া রাশিয়ায় এ নতুন একনায়কত্ব তৈরি করা অসম্ভব ছিল। রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো ধরনের আশা কি আপনি দেখতে পান? : আমি ইউক্রেন নিয়ে খুব আশাবাদী। আমি নিশ্চিত এ যুদ্ধে তারা বিজয়ী হবে। আর অন্যদিকে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি খুব হতাশায়। আমি মনে করি না এটা একটা গণতান্ত্রিক, চমৎকার, সুন্দর দেশ হবে। পুতিন একদিন এ দেশে থাকবে না, আর তারপর আমরা ক্ষমতা পাওয়ার জন্য বিশাল এক লড়াই দেখতে পাব। রুশ সাম্রাজ্যের পতন অব্যাহত থাকবে; সব জাতীয় প্রজাতন্ত্রগুলো রুশ ফেডারেশন থেকে বের হয়ে যাবে। সাইবেরিয়াও যাবে। আমার মনে হয় নতুন একনায়কেরা আসবে আর পশ্চিমারা তাদের সমর্থন করবে, কারণ তারা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ করার প্রতিশ্রুতি দেবে, আর রুশ ইতিহাস আবার নিজের লেজে কামড় দেবে। আপনি বইতে বলেছেন যে ঘৃণাই রোগ, আর সংস্কৃতিই নিরাময়। সংস্কৃতি কি সে-অন্ধকার ভবিষ্যৎ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে? : এ যুদ্ধ শেষ হলে ইউক্রেনীয় এবং রুশদের মধ্যে বিশাল বড় ঘৃণা তৈরি হবে। সেতু তৈরি করা হয়তো সহজ হবে না। কিন্তু আমাদের সেতু তৈরি করতেই হবে। আর এ সেতুগুলো গড়ে উঠতে পারে শুধু সংস্কৃতি, সভ্যতা, সাহিত্য ও সংগীত দিয়ে। বিশাল লক্ষ্যটা হবে এটাই।
অনেকে যাকে সমকালীন রুশ সাহিত্যে পাস্তারনাক ও সলঝোনেতসিনের উত্তরসূরি হিসাবে মনে করেন, সেই মিখাইল শিশকিন ১৯৯৫ সাল থেকে নির্বাসিত বসবাস করছেন সুইজারল্যান্ডে। একমাত্র লেখক হিসাবে লাভ করেছেন রাশিয়ার প্রথমসারির প্রায় সব সাহিত্য পুরস্কার, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘রুশ বুকার’, ‘বিগ বুগ প্রাইজ’। ৩০টি ভাষায় তার বই অনূদিত হয়েছে। ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক এ লেখকের ‘বই ইন মাই রাশিয়া : ওয়ার অর পিস?’ সাম্প্রতিক সময়ে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। দ্যা গার্ডিয়ানে নিজের বই, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন অ্যান্ড্রু অ্যান্থনির সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন ওয়াহিদ কায়সার
ভিঞ্চির কালোজুতো
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সকালে ঘুম থেকে উঠেই দৈনিক পত্রিকা খুলে বসেন। যাদের পড়ার অভ্যাস আছে তাদের পত্রিকার প্রবন্ধ কিংবা কলাম পাঠে সাহিত্যের আমেজ না পেলে দস্তুরমতো চলে না।  কারণ, প্রত্যেক পাঠকমাত্রই লেখকের নিবন্ধ পড়ে বিমোহিত হওয়ার একটা বাসনা রাখেন। এটা পাঠকের এক ধরনের অধিকারও। আর যখন কোনো লেখার ভাষা হয় চমৎকার, তথ্যে থাকে প্রাসঙ্গিকতা, আমরা রুদ্ধশ্বাসে সে লেখা পড়ে ফেলি। বিশেষ করে দৈনিক পত্রিকার উপসম্পাদকীয় কিংবা সাহিত্য খুব প্রয়োজনীয় একটি পাতা। সেটা ব্যক্তিগত পাওয়া না পাওয়ার জবেদা খাতা নয়। এখানে সমসাময়িক প্রসঙ্গের সঙ্গে পাঠকের একটা যোগসাজশ তৈরি করে দেয়।  ইতিহাসের সঙ্গে শক্ত সম্বন্ধ না থাকলে সে কাজটা করা অসম্ভব। সাইফুর রহমান ইতিহাসের সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তাটা মসৃণ রেখেছেন। এ কারণেই তার লেখা নিবন্ধ পড়ে পাঠককে ঠকতে হয় না। একটা নিজস্ব ভঙ্গিতে তিনি লিখেন। সেটা অনেকটা গল্প বলার মতো।  পাঠক সেই গল্পে বিভোর হন এবং বিভোরতার এক পর্যায়ে বুঝতে পারেন সমসাময়িক ঘটনাটি ইতিহাসের কোন পথ ধরে এগোচ্ছে। এতে পাঠক ঘটনা সম্পর্কে তার একটা নিজের ভাবনা তৈরি করে ফেলতে পারেন। আর সে ভাবনা তৈরির পথই একজন পাঠকের একান্ত প্রাপ্তি। সাইফুর রহমানের লেখা সমকালীন বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহকে চিন্তার জগতে এনে ফেলতে সহায়ক ভূমিকা রাখে বলে আমি মনে করি। প্রবন্ধ কিংবা কলাম লেখাটা কতটুকু শক্তিশালী এ নিয়ে বিতর্ক নেই। শুধু সাংবাদিক হলেই যে জবরদস্ত কিছু লিখতে পারবেন এমন নয়। একটা উদাহরণ দিই। যারা বই পড়তে ভালোবাসেন তাদের কাছে টাইম মেশিন, ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস এই উপন্যাসগুলো প্রিয়।  এ সবের লেখক ছিলেন কালজয়ী ব্রিটিশ সাহিত্যিক এইচ জি ওয়েলস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি লন্ডনের পত্রপত্রিকায় জার্মানির মিলিটারি শক্তির বিপক্ষে কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তিনি মনে করতেন যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানিকে পরাজিত করা ছাড়া মিত্রশক্তির হাতে অন্য পথ খোলা নেই। এ লেখাগুলো সে সময়ের উপযোগী ছিল।  পাঠকপ্রিয়তাও পেয়েছিল। সেগুলো এক সময় বই আকারে প্রকাশিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে রাজনীতিবিদদের দারুণ উদ্বুদ্ধ করেছিল তার সেসব লেখা। ইংরেজিতে ‘ক্যাচফ্রেজ’ বলে একটা কথা আছে। এর অর্থ এমন কিছু চালু শব্দ যেগুলো বারবার ব্যবহার হতে হতে এক সময় ট্রেডমার্কের পর্যায়ে চলে যায়। এইচ জি ওয়েলস সে সময় রাজনীতবিদদের বলেছিলেন জার্মানির শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। তিনি বলেছিলেন এমন একটা যুদ্ধ প্রয়োজন যেটা সব যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাবে, ‘দ্য ওয়ার টু অ্যান্ড দ্য ওয়ার’।  সে সময় এ কথাটা বিলেতে ক্যাচফ্রেজের মতো হয়ে গিয়েছিল। সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদরা পর্যন্ত ব্যবহার করতেন এ ক্যাচফ্রেজ। জার্মানির বিপক্ষে এইচ জি ওয়েলসের শক্ত অবস্থান মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছিল ভীষণভাবে। বলা যায় নিবন্ধ লিখেই তিনি মানুষের ইচ্ছার কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন। কাজেই একটা শক্তিশালী প্রবন্ধের গুরুত্বকে কখনো ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সাইফুর রহমান হয়তো এখনো কোনো ক্যাচফ্রেজ তৈরি করতে পারেননি। তবে তার লেখার গতি ধীরে ধীরে পাঠকের নাড়ি বুঝতে শিখেছে। সম্ভবত এ কারণে আজকাল তার অনেক লেখাই অনলাইন জরিপে শীর্ষে অবস্থান করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তার লেখায় যে একটা হৃদয়গ্রাহী রসোত্তীর্ণ ব্যাপার আছে, সেটা আমাদের সমকালীন বাংলা নিবন্ধে আজকাল বড় একটা চোখে পড়ে না।  প্রতিটি নিবন্ধেই তার ব্যক্তিগত বিপুল পাঠাভ্যাসের প্রতিফলন ঘটে। আর সাহিত্যকে আশ্রয় করে থাকার ফলে তার লেখায় এক ধরনের প্রাণ প্রতিষ্ঠা পায়। বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরী কিংবা বুদ্ধদেব বসু যে রকম একটা সৌরভ ছড়িয়েছিলেন সেটার রেশ সাইফুর রহমানের লেখনীতে পাঠক অবশ্যই খুঁজে পাবেন। আর এখানেই সাহিত্যিক ও নিবন্ধকার হিসাবে সাইফুর রহমানের কৃতিত্ব। প্রবন্ধ সংগ্রহের বই হিসাবে ভিঞ্চির কালো জুতো সাইফুর রহমানের তৃতীয় বই। এর আগে জানা বিষয় অজানা কথা এবং যুক্তিতর্ক ও গল্প নামে তার আরও দুটি প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোর বিপুল পাঠকপ্রিয়তাই তার এই তৃতীয় বই প্রকাশনার পেছনের প্রেরণা। আগের গ্রন্থগুলোর মতো লেখকের এ গ্রন্থটিও পাঠকের ভালোবাসা লাভ করুক এই প্রত্যাশা করি।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সকালে ঘুম থেকে উঠেই দৈনিক পত্রিকা খুলে বসেন। যাদের পড়ার অভ্যাস আছে তাদের পত্রিকার প্রবন্ধ কিংবা কলাম পাঠে সাহিত্যের আমেজ না পেলে দস্তুরমতো চলে না।
পথে নেমে পথ খোঁজা প্রসঙ্গে
যশশ্বী কথাসাহিত্যিক মঞ্জু সরকারের এ বইটি একেবারে ভিন্ন ধরনের। এটি একটি আত্মজৈবনিক রচনা; কিন্তু কথাসাহিত্যিক যে গুণগুলোর জন্য মঞ্জু সরকার বিশিষ্ট সেগুলোর সবই এখানে উপস্থিত। গল্প আছে, যে গল্প কৌতূহল জাগায় এবং পাঠককে সঙ্গে করে সামনে নিয়ে যায়। তবে এ গল্প একেবারেই বাস্তবিক।  গল্পে দেখা পাওয়া যায় অনেক চরিত্রের, তাদের কেউই কল্পিত নন, কেউ কেউ খ্যাতিবান মানুষ; কিন্তু প্রত্যেকেই নতুন ও জীবন্ত হয়ে উঠেছেন। অতিরিক্ত যা প্রাপ্য তা লেখকের চিন্তাভাবনা। মঞ্জু সরকারের অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম, তার লেখক হয়ে ওঠা, সবকিছুই ঘটনাবহুল ও চমকপ্রদ, যেমনটা উপন্যাসে পাওয়া যায়। মূল কথাটা এই যে, তিনি ঠিক করেছিলেন লেখক হবেন। লেখার কাজটা মোটেই সহজ নয়; আর লেখক হওয়া তো খুবই কঠিন।  সেই কঠিন পথেই পা বাড়িয়েছিলেন ঘরবাড়ি ছেড়ে। মাথার ওপর আর কোনো দায়িত্ব ছিল না লেখক হওয়া ছাড়া। পিতার দেখানো পথে চলতে রাজি না হওয়াতে পিতা তাকে কার্যত ত্যাজ্য করে দিয়েছিলেন; তবে কাঁধে যে কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছিলেন তা-ও নয়; সম্পূর্ণ স্বআরোপিত দায়িত্ব ছিল ওই একটিই, সেটি লেখক হওয়ার। এবং সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে কঠিন যেসব অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে সেসবের কথা আছে এ বইতে। ঠিক করেছিলেন যে শুধু লেখক নন, হবেন বিপ্লবী কলমযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন কিশোর বয়সেই। যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে দেখেন যুদ্ধ মোটেই শেষ হয়নি। পরিবেশ ও পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ বৈরী; কিন্তু মঞ্জু সরকার দমে যাননি। আত্মবিশ্বাস ছিল অত্যন্ত দৃঢ় এবং অবশ্যই ছিল মেধা; এ দুই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অবিরাম অধ্যবসায় করেছেন এবং লেখা কখনোই ছাড়েননি; যেন যুদ্ধক্ষেত্রেই ছিলেন, এক বৈপ্লবিক যুদ্ধ-লেখার তো বটেই, নতুন কিছু লেখার, নিজের মতো করে লেখার।  সে যুদ্ধে তিনি সফল হয়েছেন, কিন্তু সন্তুষ্ট হননি, অসন্তোষের কথাটাও আছে তার এ রচনাতে। মঞ্জু সরকার আমার অনেক দিনের চেনা একজন প্রিয় মানুষ। তার লেখার আমি একজন অনুরাগী পাঠক। এ বই পড়ে তাকে আরও ভালো করে জানার ও বোঝার আনন্দ পেলাম। অনেক জানা ঘটনা ও চেনা মানুষও নতুন হয়ে উঠল। বইটি যারা পড়বেন, তারা সবাই আমার মতো আনন্দ পাবেন, দেখবেন লেখক  কীভাবে নিজেই একজন ঔপন্যাসিক চরিত্র হয়ে উঠছেন, চমৎকার আত্মকথনের মধ্য দিয়ে। মঞ্জু সরকারকে অভিনন্দন। পথে নেমে পথ খোঁজা মঞ্জু সরকার প্রকাশক আগামী প্রকাশনী প্রচ্ছদ নির্ঝর নৈঃশব্দ মূল্য ৭০০ টাকা।
যশশ্বী কথাসাহিত্যিক মঞ্জু সরকারের এ বইটি একেবারে ভিন্ন ধরনের। এটি একটি আত্মজৈবনিক রচনা; কিন্তু কথাসাহিত্যিক যে গুণগুলোর জন্য মঞ্জু সরকার বিশিষ্ট সেগুলোর সবই এখানে উপস্থিত। গল্প আছে, যে গল্প কৌতূহল জাগায় এবং পাঠককে সঙ্গে করে সামনে নিয়ে যায়। তবে এ গল্প একেবারেই বাস্তবিক।
কবিতীর্থ রেজাউদ্দিন স্টালিন সংখ্যা ও তার কবিতা
প্রকৃতি, মানুষ, ইতিহাসবোধ এবং সময় তার কবিতাকে এক বৈশ্বিকতা দিয়েছে এটা যারা তার কবিতা পড়েছেন, জানবেন নিশ্চয়ই। তার মানে এই নয় যে স্টালিনের কবিতা আত্মজৈবনিক নয় বরং মিথের জাদুজগৎ, মানুষের অসহায়তা ও সংগ্রাম, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং আফ্রিকা, আমেরিকা, লাতিন-আমেরিকা, ইউরোপ তথা উপমহাদেশের ক্লাসিকস, মহাকাব্য, পুরাণ ও জাদুবাস্তব জগতের রেফারেন্স স্টালিনের আত্মজৈবনিক কবিতাতেই যেভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছে তার তুলনা খুঁজতে গেলে বাংলাভাষার বাইরে তাকাতে হবে!  এই বহুমাত্রিক অনন্তপ্রায় গোলকধাঁধা-এর অন্দরে প্রবেশ করতে সাহস লাগে এবং সেই অভিজ্ঞতাকে আত্মজৈবনিক থেকে সর্বজনীন করে তোলা খুবই কঠিন। স্টালিন এ কাজটি করতে পেরেছেন। স্টালিনের কবিতা তার পাঠনিবিড়তা ও ব্যাপ্তির সব চিহ্নগুলোকে লালন করেও, দার্শনিক বোধের সীমাহীন পরিসরে বিচরণ করেও জনপ্রিয়, খুবই জনপ্রিয়। এবং তার কবিতা সহজ, দুর্বোধ্যতার অভিযোগ স্টালিনের কবিতার প্রসঙ্গে ধোপে টিকবে না!  মানুষের পক্ষে বৈশ্বিক হয়ে ওঠাটা সত্যিই সহজ নয়, আর প্রায়শই যা হয়, তিনি যদি একে উত্তরাধিকার মনে না করে অর্জন মনে করেন তাহলে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যান। স্টালিনকে কাছ থেকে যতটুকু দেখার অবকাশ পেলাম তাতে তিনি তার কবিতার মতোই খোলসবিহীন, সহজ এবং তার প্রজ্ঞা থেকে ঠিকরে বেরোনো এমন কোনো আলো নেই যা মানুষটাকেই আড়াল করে দিচ্ছে। পাঠব্যাপকতা ও দার্শনিক চিন্তার সঙ্গে সহজতার আড়ি দেখেই আমরা অভ্যস্ত, স্টালিনের অবশ্য তেমন কোনো খোলস নেই যা ভাঙার জন্য কসরত দরকার, তিনি এতটাই সহজ। মানুষ ও প্রকৃতির কাছে দায়বদ্ধতা তার বিশ্ববীক্ষায় এবং তার কবিতায় অনুরণিত।  এ কারণেই তার কবিতা সহজ ও জনপ্রিয়। পৃথিবীর নানা ভাষায় তার কবিতা অনূদিত হয়েছে। বাংলা কবিতায় তিনি ইতোমধ্যেই এক মাইলস্টোন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘কবিতীর্থ’ পত্রিকা রেজাউদ্দিন স্টালিন-এর ষাট বছর পূর্তিতে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে অমল কুমার মণ্ডলের সুদক্ষ সম্পাদনায়। আমার এ নিরীক্ষণের সমর্থন পেয়েছি কবিতীর্থর উল্লিখিত সংখ্যাটি থেকে বিশিষ্ট সাহিত্য আলোচকদের লেখায় যেগুলো রেজাউদ্দিন স্টালিনকে এবং তার কবিতাকে সমগ্রের পরিপ্রেক্ষিতে বুঝতে সহায়ক। এ সংখ্যায় স্টালিনের বহুপঠিত এবং অনূদিত অনেক কবিতা সংকলিত হয়েছে শুধু নয়, তার একটি সাক্ষাৎকারও বিধৃত হয়েছে যা অনায়াসে তার কবিতার পূর্বপাঠ বিবেচিত হতে পারে। এছাড়া রয়েছে শিবনারায়ণ রায়, তপোধীর ভট্টাচার্য, সেলিনা হোসেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, আবুল কাসেম, তরুণ মুখোপাধ্যায়, সুবোধ সরকার প্রমুখের মূল্যায়ন যেগুলো স্টালিন-পাঠের দর্পন বলা যেতে পারে।  শিবনারায়ণ রায় যেমন বলেছেন : ‘এ যুগে যন্ত্রের সঙ্গে হৃদয়ের যে সংঘাত, তাকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে স্টালিনের পারঙ্গমতাকে স্বীকৃতি দিতে হয়’। এখানে শনাক্ত কথাটির ওপর জোর দিতে চাই- ‘দেখা’ থেকে ‘শনাক্ত’ পরিসরে উন্নীত হওয়ার মধ্যে কবির যে সংবেদনশীলতা থাকে তা অধুনা, যে কোনো কারণেই হোক, স্বতঃস্ফূর্ত বলে মনে হয় না। স্টালিন সম্পর্কে এ কথা বলা যাবে না। তবে কেবল সংবেদনা নয়, এর জন্য পরিশ্রম লাগে। তপোধীর ভট্টাচার্যের লেখাটি থেকে বলি: “খুবই সুলিখিত এই বয়ান বুঝি দান্তের ইনফের্নোর বদলে পুগেরাটারিওর সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয়। আবার ‘Abandon all hope, ye who enter here’ এক বিকল্প হিসাবে নতুন আশায় সঞ্জীবিত করে...।”  এই আশা তার কবিতা থেকে-এ বড় কম প্রাপ্তি নয়। ‘ডায়োজেনিসের লণ্ঠন’ স্টালিনের সাম্প্র্রতিকতম কাব্যগ্রন্থ, যেখানে কবির এক অমোঘ উচ্চারণ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন হোসেনউদ্দিন হোসেন : আমি গাছের পাতা আর বন্যপশুর দাঁত থেকে বেরিয়ে এসেছি ( জিজ্ঞাসার চিতা) সৃষ্টি, বিবর্তন, প্রকৃতি, বিশ্বাস ও জ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে আত্মজিজ্ঞাসার বেঞ্চমার্ক হতে পারে এই অনুভব। ফলত স্টালিনের কবিতার একজন পাঠক হিসাবে আমি নিজে প্রত্যয়ী হতে পারি।  স্টালিনের ‘বাঘরক্ষা প্রকল্প’ কাব্যগ্রন্থটির একটি দীর্ঘ আলোচনা করেছেন হাংরি আন্দোলনের কবি মলয় রায় চৌধুরী। তিনি স্টালিনের এই পঙ্ক্তি ‘আমি এক সোনামুখী ধানশীষ, পূর্ণপ্রাণ যাবো’-একে আইকনিক বলেছেন এবং এই আইকনিক শব্দটির সামনে দাঁড়িয়ে আমার স্টালিনকে প্রথমতম কবির মতো সৎ মনে হয়। মলয় বলেছেন-‘স্টালিন কবি সাজেননি, কবি হয়েছেন’- কথাটা প্রণিধানযোগ্য বটে।  আবুল কাসেম ফজলুল হকের কথায় : ‘আশির দশকে অন্য সবার কাব্যশৈলী বিবেচনায় রেজাউদ্দিন স্টালিন শিল্প কৌশলে অনেক বেশি দক্ষ ও মর্মভেদী।’ কবির দশক বিচারের তাৎপর্য কতটা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে কেননা আমি স্টালিনের মধ্যে প্রথম কবি হয়ে ওঠার সব লক্ষণ আছে বলে মনে করি। প্রথম কবি হয়ে ওঠার সাধনাই যে কোনো সৎ কবির সারা জীবনের সাধনা- ডেস্টিনি। স্টালিনের মধ্যে সেই অন্বেষণ ও পরিশ্রম আছে বলেই তাকে বাংলা কবিতার অন্যতম মাইলস্টোন মানব আমি।  এহ বাহ্য, এ কথা আমি সমর্থন প্রত্যাশায় বলছি এমন নয়, একজন পাঠকের, সাধারণ পাঠকের অনুভব এটি, যা সোচ্চারে বলা দরকার বলে মনে করি আমি।
প্রকৃতি, মানুষ, ইতিহাসবোধ এবং সময় তার কবিতাকে এক বৈশ্বিকতা দিয়েছে এটা যারা তার কবিতা পড়েছেন, জানবেন নিশ্চয়ই। তার মানে এই নয় যে স্টালিনের কবিতা আত্মজৈবনিক নয় বরং মিথের জাদুজগৎ, মানুষের অসহায়তা ও সংগ্রাম, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং আফ্রিকা, আমেরিকা, লাতিন-আমেরিকা, ইউরোপ তথা উপমহাদেশের ক্লাসিকস, মহাকাব্য, পুরাণ ও জাদুবাস্তব জগতের রেফারেন্স স্টালিনের আত্মজৈবনিক কবিতাতেই যেভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছে তার তুলনা খুঁজতে গেলে বাংলাভাষার বাইরে তাকাতে হবে!
‘কাহ্নপা সাহিত্য’ পদক পেলেন কবি আমিনুল ইসলাম
দেশে প্রথমবারের মতো ‘কাহ্নপা সাহিত্য’ পদক ২০২৪ পেয়েছেন কবি ও নজরুল গবেষক আমিনুল ইসলাম।   এ পদকটি চলতি বছর থেকে প্রবর্তন করেছে নওগাঁ সাহিত্য পরিষদ।  সম্প্রতি দুদিনব্যাপী আয়োজিত লেখক সম্মেলনের মাধ্যমে এ পদক হস্তান্তর করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন নওগাঁ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট একেএম ফজলে রাব্বি।  অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নওগাঁ সাহিত্য পরিষদের উপদেষ্ট গবেষক ও কবি অধ্যাপক ফাল্গুনী রানী চক্রবর্তী।  পদক প্রাপ্তকে চর্যাপদের পদ খচিত ক্রেস্ট, উত্তরীয়, সনদপত্র এবং চেক প্রদান করা হয়।  আমিনুল ইসলাম দেশের একজন সুপরিচিত কবি। কবিতার বই, ছড়ার বই, প্রবন্ধ গ্রন্থ, গবেষণাগ্রন্থ ইত্যাদি মিলিয়ে আমিনুল ইসলামের গ্রন্থসংখ্যা ২৯।  এর আগে বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার, কবিকুঞ্জ পদক, পূর্ব পশ্চিম সাহিত্য পুরস্কার, আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, দাগ সাহিত্য পুরস্কার, মানুষ সাহিত্য পুরস্কার, বিন্দু বিসর্গ সাহিত্য পদক, পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেস কটেজ নজরুল সম্মান, কবি নজরুল স্মৃতি পুরস্কার ইত্যাদি অর্জন করেছেন এই লেখক।
দেশে প্রথমবারের মতো ‘কাহ্নপা সাহিত্য’ পদক ২০২৪ পেয়েছেন কবি ও নজরুল গবেষক আমিনুল ইসলাম।
২ যুগ পূর্তিতে লেখকদের সম্মাননা দিল বিশ্বকল্যাণ পাবলিকেশন্স
দুই যুগ পূর্তিতে লেখকদের সম্মাননা দিয়েছে ইসলামি ধারার সৃজনশীল প্রকাশনী বিশ্বকল্যাণ পাবলিকেশন্স। বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টন কালভার্ট রোডে ডিআর টাওয়ার মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট লেখক ও মুহাদ্দিস মাওলানা লিয়াকত আলী। মাসউদুল কাদির ও শেখ মুহাম্মদ রিয়াজের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মাসিক মুসলিম নারী পত্রিকার সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল। ক্বারী ইলিয়াস লাহোরীর তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে ভাষা শহীদদের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। ফাঁকে ফাঁকে হামদ-নাত ও ইসলামি সংগীতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে অনুষ্ঠান। বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার ড. অ. ফ. ম. খালিদ হোসেন ছাড়াও সংবর্ধিত লেখকরা বক্তব্য দেন। তারা লেখালেখি ও প্রকাশনা শিল্পের সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। জাতির ক্রান্তিকালে লেখকদের একতাবদ্ধ হয়ে লেখালেখি করার আহ্বান জানান বক্তারা। প্রকাশকদের উদার মনে লেখকদের মূল্যায়নের আহ্বান জানান। লেখক-প্রকাশকদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রকাশনা শিল্পকে এগিয়ে নেবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। ইসলামি ও মৌলিক সাহিত্য রচনায় বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন: মাওলানা লিয়াকত আলী, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মুফতি মুহাম্মদ তৈয়্যেব হোসাইন, মুফতি মুবারকুল্লাহ, ড. আহমদ আবদুল কাদের, মাসুদ মজুমদার, নূরুল ইসলাম খলিফা, অধ্যাপক এম. মুজাহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, আবদুল কাদির সালেহ, আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া, ফরীদ আহমদ রেজা, মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, ড. মুহাম্মদ সোলায়মান, মুহাম্মদ এনায়েত আলী, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, ড. সালেহ মতীন, মো. শরীফ হোসেন, ড. মুহাম্মদ নুরউদ্দিন কাওছার, মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দীন, মুহাম্মদ মনজুরে মাওলা, শেখ মো. রিয়াজ উদ্দিন, মো. খায়রুল হাসান, জহির উদ্দিন বাবর, মাওলানা মুনীরুল ইসলাম, আইয়ূব বিন মঈন, মাসউদুল কাদির, মুফতি ফারুক আহমাদ, মুফতি মাহফূযুল হক, মাওলানা আহমাদুল্লাহ, কাজী সিকান্দার, সাইফুল হক। অনুবাদ সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় উৎসাহ প্রদানে সম্মাননা পান মুফতি আবু সাঈদ, মুফতি আবু উসায়মা আখতার, মুফতি আমিনুল ইসলাম আরাফাত, মুফতি শরীফুল ইসলাম, মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ, মুফতি আশরাফ আলী, মুহাম্মদ আনিসুর রহমান। ইসলামি সাহিত্য ও প্রকাশনা শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সম্মাননা দেওয়া হয় মাসিক মদীনার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দীন খান রহ. (মরণোত্তর), এমদাদিয়া লাইব্রেরির আব্দুল হালিম ও ইসলামিয়া কুতুবখানার মাওলানা মোহাম্মদ মোস্তফা। অনুষ্ঠানে বই পাঠ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম পুরস্কার বিজয়ীকে পবিত্র ওমরার ব্যবস্থা, দ্বিতীয় বিজয়ীকে ল্যাপটপ ও তৃতীয় বিজয়ীকে স্মার্টফোন দেওয়া হয়। এছাড়া আরও ৪০ জন বিজয়ী পুরস্কার পান। বিশ্বকল্যাণ পাবলিকেশন্সের লেখক ও পাঠকদের পক্ষ থেকে ইসলামি সাহিত্য ও প্রকাশনা শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রকাশনাটির স্বত্বাধিকারী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা।
দুই যুগ পূর্তিতে লেখকদের সম্মাননা দিয়েছে ইসলামি ধারার সৃজনশীল প্রকাশনী বিশ্বকল্যাণ পাবলিকেশন্স। বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টন কালভার্ট রোডে ডিআর টাওয়ার মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ একুশে পদক পাচ্ছেন ২১ বিশিষ্ট ব্যক্তি
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদক দিচ্ছে সরকার। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আইরীন ফারজানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার বিকালে আসে এ ঘোষণা। এ বছর ভাষা আন্দোলনে একুশে পদক পেয়েছেন আশরাফুদ্দীন আহমেদ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর), জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর)। ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক পেয়েছেন কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (মরণোত্তর); বাংলাদেশ কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ, ছড়াকার লুৎফুর রহমান রিটন ও কবি মিনার মনসুর।   সংগীতে একুশে পদক পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ (সংগীত), বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর), শুভ্র দেব। অভিনয়ে একুশে পদক পাচ্ছেন ডলি জহুর ও এমএ আলমগীর। আবৃত্তিতে খান মোহাম্মদ মোস্তফা ওয়ালিদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী একুশে পদক পেয়েছেন। নৃত্যকলায় একুশে পদক পেয়েছেন শিবলী মোহাম্মদ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ের জন্য কাউসার চৌধুরী ও চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ একুশে পদক পেয়েছেন। শিক্ষায় অবদানের জন্য অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু, সমাজসেবায় অবদানের জন্য মো. জিয়াউল হক ও রফিক আহমদ একুশে পদক পাচ্ছেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদক দিচ্ছে সরকার। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আইরীন ফারজানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার বিকালে আসে এ ঘোষণা।
রফিকুল হক দাদুভাই পুরস্কার পাচ্ছেন রফিকুননবীসহ আটজন
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার প্রয়াত রফিকুল হক দাদুভাইয়ের ৮৮তম জন্মদিন পালন করা হবে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে। সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে রোববার বেলা ৩টায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিশিষ্ট আটজনকে ‘রফিকুল হক দাদুভাই পুরস্কার ২০২৪’ দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন সংসদ-সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। প্রধান অতিথি থাকবেন সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। অনুষ্ঠানের আয়োজক রফিকুল হক দাদুভাই জন্মোাৎসব উদ্যাপন পরিষদ। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- অলংকরণে রফিকুননবী, সাংবাদিকতায় আবদুর রহমান, সংগঠক সাহানা বেগম, ছড়া-কবিতায় আসলাম সানী, শিশুসাহিত্যে আমীরুল ইসলাম, ছড়ায় রিফাত নিগার শাপলা, সংগঠক আহমেদ উল্লাহ ও গীতিকবিতায় আমিরুল মোমেনীন মানিক। তাদের সম্মাননা ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। এছাড়া এদিন আড্ডা, শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, দাদুভাইয়ের ছড়া-কবিতা আবৃত্তি ও গান গাওয়াসহ কেক কাটা হবে। পরিষদের পক্ষ থেকে দাদুভাইয়ের নিকটজনদের শিল্পকলা একাডেমির এ অনুষ্ঠানে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার প্রয়াত রফিকুল হক দাদুভাইয়ের ৮৮তম জন্মদিন পালন করা হবে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে। সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে রোববার বেলা ৩টায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিশিষ্ট আটজনকে ‘রফিকুল হক দাদুভাই পুরস্কার ২০২৪’ দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন সংসদ-সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। প্রধান অতিথি থাকবেন সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। অনুষ্ঠানের আয়োজক রফিকুল হক দাদুভাই জন্মোাৎসব উদ্যাপন পরিষদ।
বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করলেন কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার। রোববার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তিনি এ সংক্রান্ত পোস্ট দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘পাঠিয়ে দিলাম। খুব ভারমুক্ত লাগছে।’ এর সঙ্গে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর পুরস্কার ফেরত দেওয়া বিষয়ক একটি চিঠি ও এক লাখ টাকার চেকের ছবি সংযুক্ত করেছেন।   রোববার তিনি জানান, বাংলা একাডেমি যে স্বেচ্ছাচারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তা একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মেনে নিতে পারি না। একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন।  তিনি বলেন, গণতন্ত্রহীনতা, আমলাতান্ত্রিকতা, প্রতিষ্ঠানের মানের নিম্নগামিতা এবং আড়াই দশক ধরে নির্বাচন না দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো লোক দিয়ে একাডেমি পরিচালনায় নির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠানের মান যখন নিম্নগামী হতে থাকে, তখন এই পুরস্কার অর্থহীন হয়ে যায়। এজন্যই আমি পুরস্কার ফেরত পাঠিয়েছি। ২০১৪ সালে কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের জন্য পাওয়া ক্রেস্ট এবং আর্থিক সম্মানীর চেক ডাকযোগে বাংলা একাডেমিতে ফেরত পাঠিয়েছেন এই লেখক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, আমরা এখনো এ ধরনের কিছু অফিসিয়ালি জানি না। জাকির তালুকদারের বেড়া ওঠা নাটোরে। পেশায় চিকিৎসক। স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিতে। চিকিৎসা ও গবেষণায় কাজ করেছেন বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে কুরসিনামা, মুসলমানমঙ্গল, পিতৃগণ, কবি ও কামিনী।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার। রোববার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তিনি এ সংক্রান্ত পোস্ট দিয়েছেন।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন যারা
২০২৩ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১১টি ক্যাটাগরিতে ১৬ জন এ পুরস্কার পাচ্ছেন। বুধবার বাংলা একাডেমি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।  অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। যারা পুরস্কার পাচ্ছেন- কবিতায় শামীম আজাদ, কথাসাহিত্যে নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী, প্রবন্ধ/গবেষণায় জুলফিকার মতিন, অনুবাদে সালেহা চৌধুরী, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক, শিশুসাহিত্যে তপংকর চক্রবর্তী, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় আফরোজা পারভীন ও আসাদুজ্জামান আসাদ, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গবেষণায় সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ও মো. মজিবুর রহমান, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞানে ইনাম আল হক, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনী/মক্তগদ্যে ইসহাক খান, ফোকলোরে তপন বাগচী ও সুমনকুমার দাশ।
২০২৩ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১১টি ক্যাটাগরিতে ১৬ জন এ পুরস্কার পাচ্ছেন।
ভারতের ‘জীবন কৃতি সম্মান’ পাচ্ছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক
ভারতের ‘জীবন কৃতি সম্মান’ এ ভূষিত হচ্ছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী। ২১ জানুয়ারি কলকাতায় এ সম্মাননায় ভূষিত হবেন তিনি। কলকাতার নাট্য সংগঠন সুখচর পঞ্চম তাদের ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দর্শকের দরবার ২৯ বর্ষ পর্বে এই সম্মাননা দেওয়া হবে। ইতোপূর্বে এই সম্মাননা পেয়েছেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান নাট্যব্যক্তিত্ব রতন থিয়াম ও বাউল সমাজ্ঞী পার্বতী বাউল। ঋদ্ধিমান নাট্যব্যক্তিত্ব লিয়াকত আলী লাকী বাংলা নাটককে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং বাংলাদেশে নাটকের প্রকাশকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছেন। পাশাপাশি শিশু নাটককে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরিসরে ভিন্নমাত্রা প্রদান করার নিরলস প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি স্বরূপ লিয়াকত আলী লাকীকে এ সম্মাননা প্রদান করছে কলকাতার নাট্য সংগঠন সুখচর পঞ্চম।
ভারতের ‘জীবন কৃতি সম্মান’ এ ভূষিত হচ্ছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী।
জলবায়ু পরিবর্তন ও আধুনিক উন্নয়নের প্রভাব নিয়ে শিল্প প্রদর্শনী ‘রাইজিং একোস’
প্রয়াত দেশবরেণ্য নাট্যজন ও অভিনেতা আলী যাকেরের স্মরণে এক চিত্রকর্ম ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ‘স্মৃতিতে স্মরণে আলী যাকের’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রী মৃত্তিকা গাইন ও চিত্রশিল্পী হ্লুবাইশু চৌধুরীর শিল্পকর্মের মাধ্যমে উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। মৃত্তিকা গাইন তার আলোকচিত্রের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদী ভাঙনের ফলে খুলনার দাকোপের কালাবগি মানুষের ভোগান্তি তুলে ধরেছেন। আর হ্লুবাইশু চৌধুরী তার চিত্রকলার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন রাঙামাটিতে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে প্রাকৃতিক দৃশ্যের বিকৃতির প্রতিচ্ছবি। ‘রাইজিং একোস’ শীর্ষক ১০ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন। এ আয়োজনের কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন শিক্ষাবিদ ও ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট শামসুল আলম হেলাল। ছবি মেলা ও ঢাকা আর্ট সামিটের প্রদর্শনীতেও কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এ প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সারা যাকের বলেন, বাংলাদেশি হিসেবে দেশের ভুক্তভোগী মানুষের দুর্দশার কারণ খুঁজে বের করে তাদের এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করা আমাদের দায়িত্ব। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শিবসা নদী ভাঙন ও কাপ্তাই বাঁধ থেকে কাপ্তাই লেকের সৃষ্টি এক্ষেত্রে বড় উদাহরণ। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের প্রদর্শনীর আয়োজন এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করে আমাদের একটি সহানুভূতিশীল ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। খুলনায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা মৃত্তিকা গাইন বর্তমানে আলোকচিত্রের মাধ্যমে সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমা সম্প্রদায়ের হ্লুবাইশু চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক।
প্রয়াত দেশবরেণ্য নাট্যজন ও অভিনেতা আলী যাকেরের স্মরণে এক চিত্রকর্ম ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ‘স্মৃতিতে স্মরণে আলী যাকের’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রী মৃত্তিকা গাইন ও চিত্রশিল্পী হ্লুবাইশু চৌধুরীর শিল্পকর্মের মাধ্যমে উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে।
সম্প্রীতির আড্ডায় সূর্য-রুপন্তী
সাহিত্য অনুরাগীদের কিছু করতে হয় না, তারা যখন তাদের সৌন্দর্য গোলাপের পাপড়ির মতো ফোটাতে থাকেন, তাদের হৃদয়ের আলোতে উজ্জ্বল নক্ষত্র সবার চোখে পড়ে নান্দনিকভাবে, যা ছড়িয়ে পড়ে পুরো পৃথিবীতে।  ১৪ই জুলাই ‘সূর্য’ সাংস্কৃতিক গ্রুপ এর আয়োজনে এমনই অনেক নক্ষত্রের মিলন হয়। যেখানে অনেক কবি, আবৃত্তি শিল্পী, কণ্ঠ শিল্পীদের উপস্থিতিতে জ্বলজ্বল করছিল পুরো আকাশ।  "নন্দনতত্ত্বে জেগে উঠুক প্রাণ" এ স্লোগানকে বুকে নিয়ে গড়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক গ্ৰুপ সূর্য। যেখানে তারা বেশ কিছু সাহিত্য গ্ৰুপের সাহিত্যমনা সদস্যদের নিয়ে এ আয়োজন করে। বৃষ্টি ভেজা বিকালে প্রাণের আড্ডায় সবাই মেতে ওঠেন বাদলা দিনের গানে।  এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কবি ও সংগীত শিল্পী মেজর পলক রহমান এবং লেখক ও সংগীত শিল্পী লিজি আহমেদ।  অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সূর্য গ্ৰপের কর্ণধার লেখক ও সংগীত শিল্পী সাকিনা কাইউম, আবৃত্তি শিল্পী এবং যমুনা গ্ৰুপের হেড অফ ব্রান্ডিং সেলস্  এ. এইচ. রাজু, কবি ও অভিনয়শিল্পী অন্ত মিলন, কণ্ঠশিল্পী ইমরুল বাবু, অভিনয় শিল্পী সুজন রাজা, সংগীতশিল্পী এবং অভিনয় শিল্পী ইমরান হোসেন আকাশ, কবি ও লেখক অরণ্য হিল্লোল।  এছাড়া এ মিলন মেলায় উপস্থিত ছিলেন আবৃত্তি শিল্পী আরিফ মল্লিক, কবি সেলিম বশীর, সংগীতশিল্পী কামরুল হক টিটু, কবি শাহাদাত হোসেন  প্রমূখ। এছাড়াও অনলাইনে যুক্ত হন সূর্য পরিচালক কবি শোয়েব মো. কামাল এবং উপদেষ্টা কবি সোহেল চৌধুরী।  অনুষ্ঠানে লেখক সাকিনা কাইউম বলেন, আমাদের লক্ষ্য সূর্য শুধু একটি ভার্চুয়াল সংগঠনে সীমাবদ্ধ থাকবে না, সূর্য একটি বাস্তবিক সংগঠনে রুপান্তরিত হবে। এই লক্ষ্যে আমরা আজ আপনাদের নিয়ে সূর্য আবৃত্তি সংগঠনের ঘোষণা করছি। এ সংগঠনে উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন ড. মো. আলমগীর আলম, পলক রহমান, সোহেল চৌধুরী এবং লিজি আহমেদ। সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন সাধনা আহমেদ। সাধারণ সম্পাদকের এ. এইচ. রাজু এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন সাকিনা কাইউম।
সাহিত্য অনুরাগীদের কিছু করতে হয় না, তারা যখন তাদের সৌন্দর্য গোলাপের পাপড়ির মতো ফোটাতে থাকেন, তাদের হৃদয়ের আলোতে উজ্জ্বল নক্ষত্র সবার চোখে পড়ে নান্দনিকভাবে, যা ছড়িয়ে পড়ে পুরো পৃথিবীতে।
টাঙ্গাইলে সাহিত্য মেলা
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ টাঙ্গাইলকে ‘কবিধাম’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন। কারণ টাঙ্গাইলে কবিতার চর্চা হয়ে থাকে নিয়মিতভাবে। সেই কবিধাম টাঙ্গাইলে এবার শুরু হয়েছে দুদিনব্যাপী সাহিত্য মেলা।  সাহিত্যিকদের সৃষ্টিকর্ম জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার লক্ষ্যে সোমবার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদিনব্যাপী সাহিত্য মেলার উদ্বোধন করা হয়।  বাংলা একাডেমির সমন্বয়ে ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন এ মেলার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক।  জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলা একাডেমির সচিব (যুগ্ম সচিব) এএইচএম লোকমান।  বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, ষাট দশকের অন্যতম কবি বুলবুল খান মাহবুব, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ প্রমুখ।  স্বাগত বক্তৃতা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ওলিউজ্জামান। আলোচনা সভা শেষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কবি বুলবুল খান মাহবুবকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।  সাহিত্য মেলার দ্বিতীয়পর্বে ‘টাঙ্গাইল জেলার সাহিত্য সংস্কৃতি’ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক খান মাহবুব।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ টাঙ্গাইলকে ‘কবিধাম’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন। কারণ টাঙ্গাইলে কবিতার চর্চা হয়ে থাকে নিয়মিতভাবে। সেই কবিধাম টাঙ্গাইলে এবার শুরু হয়েছে দুদিনব্যাপী সাহিত্য মেলা।
মমতাজউদদীন নাট্যকার পুরস্কার পাচ্ছেন রুমা মোদক
কবি ও নাট্যকার রুমা মোদককে মমতাজউদদীন নাট্যকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আগামী ১৮ জানুয়ারি নাট্যজন মমতাজউদদীন আহমদের ৮৯তম জন্মদিনে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।  সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। মমতাজউদদীন আহমদ সংগ্রহশালার পক্ষে বিশিষ্ট সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবেদ খান ও নাট্যকার অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী এ বছর নাট্যগ্রন্থ হিসেবে রুমা মোদকের ‘নির্বাচিত নাটক’ গ্রন্থটিকে নির্বাচিত করেন।  সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য ভবনের সত্ত্বাধিকারী তোফাজ্জল হোসেনের অর্থায়নে পুরস্কারটি প্রদান করা হবে। পুরস্কার হিসেবে নাট্যকার পাচ্ছেন নগদ ১০ হাজার টাকা এবং বিশ্বসাহিত্য ভবন থেকে প্রকাশিত অধ্যাপক মমতাজ উদদীন আহমদ রচিত প্রায় ৭০টি গ্রন্থ। উল্লেখ্য, অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার নামে ইতোমধ্যে একটি পুরস্কার বাংলা একাডেমি থেকে প্রদান করা হচ্ছে। মমতাজউদদীন আহমদ সংগ্রহশালার সমন্বয়কারী শাহরিয়ার মাহমুদ প্রিন্স জানান, বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন ও মমতাজউদদীন আহমদের জীবনসঙ্গী কামরুননেসা মমতাজ আগামী ১৮ জানুয়ারি রুমা মোদকের হাতে পুরস্কার ও সম্মাননা তুলে দেবেন।
কবি ও নাট্যকার রুমা মোদককে মমতাজউদদীন নাট্যকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আগামী ১৮ জানুয়ারি নাট্যজন মমতাজউদদীন আহমদের ৮৯তম জন্মদিনে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।
বনানীর সেই বাস দুর্ঘটনায় লাশ হলেন ব্যাংক কর্মকর্তা
রাজধানীর বনানীতে বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তির নাম মোস্তফা কামাল (৪৫)। তিনি মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের হাসনাবাদ ব্রাঞ্চের অপারেশনস ম্যানেজার ছিলেন।  শনিবার বিকালে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের মধ্যকার ফুটবল খেলা দেখতে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে বাসের নিচে চাপা পরে গুরুতর আহত হন তিনি। ওই দিন রাতে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান মোস্তফা কামাল।  মোস্তফা কামাল পরিবার নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শের শাহ সুরী রোডের একটি বাসায় থাকতেন। তিনি ঠাকুরগাঁও সদরের পূর্ব পাড়া বেগুন বাড়ির রিয়াদুল ইসলামের ছেলে। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি।  ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ডিএমপির বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহান হক যুগান্তরকে বলেন, নিহত ব্যাংক কর্মকর্তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী করনীয় নির্ধারণ করা হবে।   নিহতের ভাই ফাহিম রুবেল রোববার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে জানান, খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন মোস্তফা কামাল। পথচারীরা উদ্ধার করে তাকে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেন। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার কথা জানান চিকিৎসকেরা। পরে তাকে (ফাহিম রুবেল) এক পথচারী বিষয়টি জানান। সেই পথচারী অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজধানীর বিজয় স্বরণী এলাকায় আহত মোস্তফা কামালকে বুঝিয়ে দেন ভাই ফাহিমের কাছে। তাকে দ্রুত সময়ে ঢামেক হাসপাতালে নিলেও জরুরি আইসিইউ সাপোর্ট না থাকায় সেখান থেকে শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই রাত ১০টার দিকে মৃত্যু হয় মোস্তফা কামালের। পরে গ্রামের বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।  পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকাল চারটার দিকে বনানী থানাধীন নৌবাহিনী সদর দপ্তরের সামনে মোস্তফা মোটরসাইকেল নিয়ে ইউটার্ন করার সময় শেরপুর থেকে ঢাকাগামী জেকে পরিবহণের সামনে ধাক্কা লাগে। এ সময় তিনি ছিটকে সাইডে পড়ে যান এবং মোটরসাইকেলটি বাসের নিচে চলে যাওয়ায় রাস্তায় ঘর্ষণে বাসটিতে (ঢাকা মেট্রো- ব-১৫-১৪৪১) আগুন ধরে যায়। এতে বাসটি ও মোটরসাইকেলটি আগুনে পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিটের চেষ্টায় ৪টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আহত মোটরসাইকেল চালককে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। পরে তার মৃত্যু হয়। বনানী থানা পুলিশ রেকারের সাহায্যে বাস ও মোটরসাইকেলটি বনানী পুলিশ ফাঁড়ির সামনে রাখে।
রাজধানীর বনানীতে বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তির নাম মোস্তফা কামাল (৪৫)। তিনি মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের হাসনাবাদ ব্রাঞ্চের অপারেশনস ম্যানেজার ছিলেন।
রিকশাচালকদের মাঝে ছাতা পানি স্যালাইন বিতরণ করলেন ডিএনসিসি মেয়র
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ডিএনসিসি এলাকার ৩৫ হাজার রিকশা চালকদের বিনামূল্যে ১টি করে ছাতা, ১২ প্যাকেট খাবার স্যালাইন ও একটি হাফ লিটার পানির কন্টেইনার দেওয়া হবে। তীব্র তাপদাহে রিকশাচালক ভাইদের খুব কষ্ট হয়৷ প্রচণ্ড রোদে তারা যদি অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে পুরো পরিবারের জন্য অনেক সমস্যা। রোদের কারণে তারা যদি রিকশা চালাতে না পারেন, তারা যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে তাদের পরিবার কিন্তু চলতে পারবে না। কারণ অনেক রিকশাচালকের দৈনিক ইনকামের উপরে তাদের পরিবার চলে। তাই তীব্র দাবদাহে তাদের কষ্টের বিষয় চিন্তা করে এই উদ্যোগ নিয়েছি।' রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায় গুলশান-২ নগর ভবনের সামনে রিকশা চালকদের মাঝে ছাতা বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।  ছাতা বিতরণ কার্যক্রমটি দেখতে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জুলকার নায়েন, বাংলাদেশে নিযুক্ত পা‌কিস্তা‌নের হাইক‌মিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ, ফিলিস্তিনের উপ রাষ্ট্রদূত। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ছাতাটা আমরা বিশেষভাবে তৈরি করেছি। এটা এডজাস্টেবল। কোন রিকশা চালক লম্বা হলে ছাতার উচ্চতা বাড়িয়ে নিতে পারবে, কেউ উচ্চতায় কম হলে ছাতার উচ্চতা কমিয়ে নিতে পারবে। প্রত্যেককে হাফ লিটার পানির কন্টেইনার দিচ্ছি। এতে একটি স্যালাইন মিশিয়ে খেতে পারবে। এক লিটার কন্টেইনার দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু স্যালাইন মিশিয়ে খাওয়ার বিষয় বিবেচনা করে হাফ লিটার কন্টেইনার দিচ্ছি।  এই বিষয়টি চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনের পরামর্শে করা হয়েছে বলে জানান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।  বলেন, 'স্প্রে ক্যাননের মাধ্যমে পানি ছিটানোর কাজটি চলমান থাকবে। পার্কগুলোতেও পানির স্পে করা হবে। যদিও পার্কে স্প্রে করার কাজটি বেশ বহুল। আমি আহবান করছি কেউ চাইলে সহযোগিতা করতে পারেন। কেউ ছাতা দিতে চাইলে আমাদের সহযোগিতা করতে পারেন। অনেক কোম্পানি অথবা ব্যক্তি এগিয়ে আসতে পারেন। মেয়র আরও বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩টি বিশেষ ভ্যানগাড়ি (৫০০ লিটার পানির ট্যাংক সম্বলিত) পথচারীদের পানি পান করানোর জন্য নামানো হয়েছে। ভ্যানগুলো বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। এই ভ্যানগুলো ছোট আকারে করা হয়েছে যেন শহরের অলি গলিতে প্রবেশ করতে পারে। পথচারী এবং শ্রমজীবী মানুষ যেন পানি খেতে পারে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র আতিক বলেন, আমরা গতবছর ৮০ হাজার গাছ লাগিয়েছি। এই বছর আরো ১ লাখ ২০ হাজার গাছ লাগাব। কিছু কিছু জায়গায় কিছু গাছ মারা গেছে। আসলে আমাদের আগে গাছের পরিচর্যার জন্য মালি ছিল না। ৪৭ জন মালি, ৩ জন সুপারভাইজার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। মালি নিয়োগ হয়ে গেলে পরিচর্যা জোরদার করা হবে। আমি নগরবাসীকেও অনুরোধ করছি গাছগুলো দেখে রাখার জন্য। সিটি কর্পোরেশন পরিচর্যা করছে, পাশাপাশি নগরবাসী যার যার বাড়ির সামনে, দোকানের সামনে যে গাছগুলো আছে সেগুলোর যত্ন নেবেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ডিএনসিসি মেয়র রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে নিয়ে কয়েকজন রিকশা চালকদের মাঝে ছাতা, স্যালাইন ও পানির কন্টেইনার বিতরণ করেন। এসময় ডিএনসিসি মেয়র নিজ হাতে স্যালাইন মিশিয়ে একজন রিকশা চালককে পান করিয়ে কার্যক্রমটি উদ্বোধন করেন। পরে মেয়র রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে নিয়ে গুলশান-২ গোলচত্বরে স্প্রে ক্যাননের পানি ছিটানোর কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস চৌধুরী, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমান, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আমেনা বেগম প্রমুখ।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ডিএনসিসি এলাকার ৩৫ হাজার রিকশা চালকদের বিনামূল্যে ১টি করে ছাতা, ১২ প্যাকেট খাবার স্যালাইন ও একটি হাফ লিটার পানির কন্টেইনার দেওয়া হবে। তীব্র তাপদাহে রিকশাচালক ভাইদের খুব কষ্ট হয়৷ প্রচণ্ড রোদে তারা যদি অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে পুরো পরিবারের জন্য অনেক সমস্যা। রোদের কারণে তারা যদি রিকশা চালাতে না পারেন, তারা যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে তাদের পরিবার কিন্তু চলতে পারবে না। কারণ অনেক রিকশাচালকের দৈনিক ইনকামের উপরে তাদের পরিবার চলে। তাই তীব্র দাবদাহে তাদের কষ্টের বিষয় চিন্তা করে এই উদ্যোগ নিয়েছি।'