title
stringlengths
10
148
text
stringlengths
14
34.6k
summary
stringlengths
1
7.08k
প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে মানববন্ধন
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপজেলাপর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্পের জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।   রোববার সকাল ৯টার দিকে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেয় অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ে কর্মরত আইজিএ প্রশিক্ষণ প্রকল্পের সব প্রশিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ।  এ সময় তারা বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমের প্রায় চার লাখ নারীকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। যার মধ্যে ৫০ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।  অনেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।  তারা আরও বলেন, এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কর্মচারী নারী। অনেকেই স্বামী পরিত্যক্ত এবং পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী। এ ছাড়া অধিকাংশই দরিদ্র পরিবার হতে আসা। তাই মানবিক বিবেচনায় রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানান তারা।  সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই প্রকল্পটি ৫ বছর মেয়াদি ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল যাত্রা শুরু হয়ে ২০২৩ সালে জুন মাসে শেষ হয়েছে। পরে প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপজেলাপর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্পের জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তাঁতীবাজারে ব্যবসায়ীর ৭০ লাখ টাকা ছিনতাই
রাজধানীর তাঁতীবাজার এলাকায় এক ফল ব্যবসায়ীর ৭০ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম মহিউদ্দিন মহির। শুক্রবার বিকালে ছিনতাইয়ের এ ঘটনা ঘটে।  ছিনতাইকালে মহিউদ্দিনকে মারধরও করা হয়েছে। এ ঘটনায় শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কোতয়ালী থানায় মামলা করেছে ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী। তবে মামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি পুলিশ।   ডিএমপির লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহিনুর ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলা হয়েছে, আসামি গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।  মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শুক্রবার বিকালে ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন মহির ইসলামপুরের বাদামতলী থেকে তাঁতীবাজার এলাকায় তাদের দোকানে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শনিবার মামলা করেছেন।  থানা সূত্র জানায়, মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কোতয়ালী থানার এসআই রাশেদুল হাসানকে।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, আমরা একাধিক টিম আসামি গ্রেফতারে কাজ করছি। আসামি গ্রেফতারের পর বিস্তারিত জানানো হবে।
রাজধানীর তাঁতীবাজার এলাকায় এক ফল ব্যবসায়ীর ৭০ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম মহিউদ্দিন মহির।শুক্রবার বিকালে ছিনতাইয়ের এ ঘটনা ঘটে।
ময়লার গাড়ি এখন নয়া ঘাতক
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িগুলো এখন যেন নয়াঘাতকে পরিণত হয়েছে। গত ৯ বছরে ময়লার গাড়ির চাপায় শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জনের প্রাণ গেছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে মুগদা এলাকায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় প্রাণ হারিয়েছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মাহিন আহমেদ (১৩)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনা অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড। এর সুষ্ঠু বিচার না হলে এমন দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে। জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চালকদের অনেকেরই নেই ভারী যান চালানোর লাইসেন্স। মশককর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ সিটি করপোরেশনের বিভিন্নজনকে দিয়ে চালানো হচ্ছে এসব ভারী যানবাহন। ময়লার গাড়িতে ড্যাশ ক্যাম লাগানো হলেও পরে তা খুলে ফেলছেন চালকরা। আর এ সুযোগে যাকে তাকে দিয়েই বদলি চালানো হচ্ছে ময়লার গাড়িগুলো। সর্বশেষ দক্ষিণ সিটির ময়লার গাড়ির চাপায় মাহিনের মৃত্যুতে বাকশক্তি হারিয়েছেন বাবা মাসুম মিয়া। আর বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই মা ফাতেমার। বড় ভাই মাহফুজ আহমেদও থামাতে পারছেন না কান্না। শনিবার দুপুরে মাহিনের বড় ভাই মাহফুজ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, প্রাণোচ্ছ্বল ভাইটা (মাহিন) আমার কী সুন্দর বাসা থেকে বের হয়ে গেল, আর ফিরল লাশ হয়ে। কি ডাকাত ময়লার গাড়ি! এ ঘটনার পর আমার বাবা শোকে নির্বাক হয়ে গেছেন। আর মাকে দুজনে চেষ্টা করেও বিছানা থেকে তুলে দাঁড় করাতে পারছি না। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বাসা থেকে বের হয় মাহিন। মুগদার মদিনাবাগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় সে গুরুতর আহত হয়। প্রথমে মুগদা হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রাত ১১টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাহফুজ বলেন, ময়লার গাড়িটি চালাচ্ছিল বদলি একজন। নেশাগ্রস্ত চালক খুব বেপরোয়াভাবে গাড়িটি চালাচ্ছিল। মাহফুজ বলেন, মুগ্দা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর মাহিনকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখানে যদি প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু দেওয়া হতো, তবুও মাহিনকে বাঁচানো যেত। ময়লার গাড়ির ধাক্কায় আর কত প্রাণ যাবে? আর কত মানুষ স্বজন হারাবে প্রশ্ন তুলে মাহফুজ এর সুষ্ঠু বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানান। সিটি করপোরেশন থেকে কেউ যোগাযোগ করেছিল কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, শুক্রবার দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বাসায় এসেছিলেন। তিনি সান্ত্বনা দিয়ে গেছেন। বলে গেছেন, পরিবারের যে কোনো সহযোগিতা লাগলে করবেন এবং বিষয়টা তিনি দেখবেন। তিনি আমাদের পরে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন। সেই সঙ্গে তিনি ময়লার গাড়ির চালকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে মুগদা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, গাড়িটি বদলি একজন চালাচ্ছিল। তার নাম রুবেল। আমরা ঘটনার পরপরই গাড়িটি জব্দ করেছি এবং রুবেলকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে শুক্রবার আদালতে পাঠিয়েছি। আদালত পরে শুনানি করে তার রিমান্ড মঞ্জুর করবেন বলে জানিয়েছেন। জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় গত ৯ বছরে অন্তত ২০ জনের প্রাণ গেছে। চালকদের অনেকেরই নেই ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স। মাহিনের মৃত্যুর ঘটনায় মূল ড্রাইভার নয় তাকে চাপা দেওয়া গাড়িটি চালাচ্ছিলেন বদলি একজন। সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রাণ হারানো নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান। তার মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দিনের বেলায় ময়লাবাহী গাড়ি চালানো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের নির্ধারিত গাড়ি চালক নিজে গাড়ি না চালিয়ে আরেকজনকে ভাড়া দিয়ে গাড়ি চালিয়েছে। তা অত্যন্ত অন্যায়। আমরা এর আগেও এমন ঘটনা তদন্তে পেয়েছিলাম এবং জড়িত সবাইকে কঠোর শাস্তি দিয়েছি। অভিযোগ আছে করপোরেশনের ময়লাবাহী ভারী গাড়ি চালাচ্ছেন নিরাপত্তা প্রহরী, অফিস সহায়ক, মশককর্মী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী। নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে পরিবহণ বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারা ভারী যানবাহন চালাচ্ছে। অধিকাংশ চালকের ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স নেই। এমনটা জানেন উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গাড়িতে ড্যাশ ক্যামেরা বসালেও তা নষ্ট করে দেন চালকরা। ড্যাশ ক্যাম লাগানো থাকলে তাদের আমরা আমাদের কমান্ড সেন্টার থেকে দেখতে পারি, কোন ড্রাইভার কোন গাড়ি চালাচ্ছে। আসলে এসব কারণে ড্যাশ ক্যাম বসালেও তারা দুদিন পর সরিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা এখন কঠোর হচ্ছি। পরিবহণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ময়লার গাড়িগুলো চালকরা নিজে না চালিয়ে বহিরাগতদের হাতে ছেড়ে দেন। মশককর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ভারী গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসে পড়ছেন। হালকা-পাতলা গাড়ির স্টিয়ারিং ধরতে পারলেই তারা চালক হয়ে যাচ্ছে। তাদের কারও কাছেই ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অভিযোগগুলো আসলে দীর্ঘদিনের। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিবহণ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা জড়িত কর্মকর্তা আছেন, তারা আসলে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন? সিটি করপোরেশনের পরিবহণ বিভাগকেও দায়বদ্ধ করার পরামর্শ দেন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িগুলো এখন যেন নয়াঘাতকে পরিণত হয়েছে। গত ৯ বছরে ময়লার গাড়ির চাপায় শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জনের প্রাণ গেছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে মুগদা এলাকায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় প্রাণ হারিয়েছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মাহিন আহমেদ (১৩)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনা অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড। এর সুষ্ঠু বিচার না হলে এমন দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে।
রাজধানীতে প্রকাশ্যে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে সর্বস্ব লুট
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন মো. ইকবাল হোসেন (৩৮) নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তাকে দিনদুপুরে প্রকাশ্যে বেদম মারধর করে সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার, নগদ দুই লাখ টাকা ও মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।  শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাতুয়াইলের মৃধাবাড়ি মোল্লাব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাকে আহত অবস্থায় পথচারীরা উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু তার পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় সন্ধ্যায় রাজধানীর শ্যামলীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে। আহত ইকবালের বাসা মৃধাবাড়ি প্রতিবাদী ক্লাব সংলগ্ন এলাকায়। তার বাবার নাম মোস্তাক আহমেদ।  ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে আহত হয়ে এক জুয়েলারি (স্বর্ণ) ব্যবসায়ী ঢামেক হাসপাতালে এসেছেন। তার দুই পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় অবগত করা হয়েছে।  শনিবার সন্ধ্যায় ডিএমপির ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মধুসূদন দাস যুগান্তরকে বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। খোঁজ নিয়ে দেখছেন।  শনিবার বিকালে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, আহত ইকবাল হোসেনের দুই পায়ের হাঁটুর নিচে ও হাতের কনুইয়ের নিচে ব্যান্ডেজ করা। এ ছাড়া চোখে মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি যুগান্তরকে জানান, সবুজবাগের রাজারবাগ বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় সামির গোল্ড হাউস নামে একটি দোকান রয়েছে তার। শনিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার দিকে তিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে দোকানের উদ্দেশে রওনা হন। মাতুয়াইলের মৃধাবাড়ি মোল্লাব্রিজ এলাকায় ছিনতাইকারীরা তার গতিরোধ করে। একই এলাকার বখাটে ও ছিনতাইকারী ইউসুফ, মুলহাজ, পাভেল, দিপুসহ ৬-৭ জন তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাকে রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে কাছে থাকা ব্যাগটি নিয়ে যায়। ব্যাগের ভেতর নগদ দুই লাখ ২০ হাজার টাকা ও সাড়ে পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল বলে জানান তিনি। মোটরসাইকেলসহ সবই নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা।  তিনি আরও জানান, টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নেওয়ার সময় বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে রড দিয়ে তার দুই পায়ে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থায় সড়কে পড়ে থাকলে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে স্বজনদের খবর দেওয়া হলে দুপুর দুইটার দিকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে। শনিবার সন্ধ্যায় ইকবালের ছোট ভাই ইকরাম ফোনে যুগান্তরকে বলেন, পায়ের হাড় একাধিক স্থানে ভেঙে যাওয়ায় ঢাকা মেডিকেল থেকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়েছে। আমরা এখন পঙ্গু হাসপাতালে আছি। ভাইয়ের অবস্থা ভালো না। তার বুকে এবং পিঠেও চরম আঘাত করেছে। ছিনতাইকারীরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী বলে জানান তিনি।  ইকবাল বলেন, ফোনে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে ভাইয়ের। এ বিষয়ে অভিযোগ করা হবে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন মো. ইকবাল হোসেন (৩৮) নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তাকে দিনদুপুরে প্রকাশ্যে বেদম মারধর করে সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার, নগদ দুই লাখ টাকা ও মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
রাজধানীর সীমান্ত স্কয়ারে মোবাইলের দোকানে অগ্নিকাণ্ড
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সীমান্ত স্কয়ারে একটি মোবাইলের দোকানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।  শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ৮ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত। ফায়ার সার্ভিস জানায়, সীমান্ত স্কয়ারের ছয়তলা শপিংমলের তৃতীয় তলার আরকে ইলেকট্রনিক্স নামের একটি মোবাইলের দোকানে আগুন লাগে। আগুনে দোকানটি পুড়ে যায়। তবে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় অন্য কোনো দোকানের ক্ষতি হয়নি। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা রাত ২টা ১৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আর রাত ৩টা ২২ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ হয়। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাকিবুল বলেন, মোহাম্মদপুর ও পলাশী স্টেশনের পাঁচটি ইউনিট সীমান্ত স্কয়ারে আগুন নেভাতে কাজ করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সীমান্ত স্কয়ারে একটি মোবাইলের দোকানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।
রাজধানীর বনানীতে যাত্রীবাহী বাসে আগুন
রাজধানীর বনানীতে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকাল ৪টার দিকে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  তিনি বলেন, বিকাল ৪টা ২ মিনিটে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।  প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এছাড়া হতাহতের কোনো খবরও পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
রাজধানীর বনানীতে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকাল ৪টার দিকে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস।
তীব্র গরম থেকে জনগণকে স্বস্তি দিতে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, দুটি স্প্রে ক্যানন যেগুলো কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করে এগুলো প্রধান সড়কে পানি ছিটাবে। এগুলো বেশ বড় হওয়ায় গলির সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না৷ গলির সড়কে পানি ছিটানোর জন্য দশটি ব্রাউজার কাজ করবে। এগুলোর মাধ্যমে সড়কগুলো ভিজিয়ে ঠান্ডা রাখা হবে।  এছাড়াও ডিএনসিসির পার্কগুলোতে স্প্রে ক্যাননের মতো কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পার্কগুলোতে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।’   এ সময় তিনি বলেন, চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) বুশরা আফরিনের পরামর্শে বর্তমানে চলমান তীব্র দাবদাহে জনগণকে স্বস্তি দিতে সড়কে পানি ছিটানো এবং ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বায়ু দূষণ রোধ ও তীব্র দাবদাহে শহরকে ঠান্ডা রাখতে ডিএনসিসির ওয়াটার স্প্রে (পানি ছিটানো) কার্যক্রম পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১১টায় মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম আগারগাঁওয়ের সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সরণি সড়কে এসে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের জন্য রাখা বিশেষ ভ্যান পরিদর্শন করেন এবং নিজে ট্যাব ছেড়ে পানি পান করেন। পরে স্প্রে ক্যাননের মাধ্যমে কৃত্রিম বৃষ্টির মতো পানি ছিটানো শুরু হলে তিনি নিজে উচ্ছ্বসিত শিশু কিশোরদের সাথে ভিজেন এবং তাদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।  পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩টি বিশেষ ভ্যানগাড়ি (৫০০ লিটার পানির ট্যাংক সম্বলিত) পথচারীদের পানি পান করানোর জন্য নামানো হয়েছে। ভ্যানগুলো বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। এই ভ্যানগুলো ছোট আকারে করা হয়েছে যেন শহরের অলি গলিতে প্রবেশ করতে পারে। পথচারী এবং শ্রমজীবী মানুষ যেন পানি খেতে পারে।’ নগরবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নগরবাসীর প্রতি আমার ৩টি আহবান। এক, আমি ডিএনসিসি এলাকার দোকানদার, ব্যবসায়ী ও মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দদের অনুরোধ করছি আপনারা প্রতিটি দোকান, শপিংমল, মার্কেটের সামনে পানি খাওয়ার জন্য একটি ড্রামের ব্যবস্থা রাখবেন। সবাই যেন পানি খেতে পারে।  দুই, আমরা গত বছর ৮০ হাজার গাছ লাগিয়েছি। এই বছর আরও ১ লাখ ২০ হাজার গাছ লাগাব। এই গাছগুলো লালনপালনের জন্য আমি নগরবাসীকে অনুরোধ করছি। সিটি কর্পোরেশন পরিচর্যা করছে, পাশাপাশি নগরবাসী যার যার বাড়ির সামনে, দোকানের সামনে যে গাছগুলো আছে সেগুলোর যত্ন নিবেন।  তিন, এ বছর ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আগেই আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। এডিস মশার সিজন শুরু হচ্ছে। সবাই যার যার বাড়ি, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আশপাশ পরিষ্কার রাখবেন যেন এডিসের লার্ভা না জন্মায়। চিফ হিট অফিসারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার আমাদের পরামর্শ দিচ্ছে। হিট অফিসার একজন একক ব্যক্তি। সে তো কাজগুলো বাস্তবায়ন করবে না। সে পরামর্শ দিচ্ছে কিন্তু কাজগুলো আসলে আমাদের সকলকে করতে হবে। তার পরামর্শেই জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা এই কাজগুলো করছি। চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনকে নিয়োগ ও বেতন ভাতা প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমি দেখছি কয়েকদিন যাবত চিফ হিট অফিসারকে নিয়ে অনেকে বলছেন সিটি কর্পোরেশন থেকে বেতন পাচ্ছেন, আসলে এটা সঠিক নয়। সিটি কর্পোরেশন থেকে তিনি একটি টাকাও পান না। এমনকি সিটি কর্পোরেশনে তার কোনো বসার ব্যবস্থাও নেই। তার কোনো চেয়ারও কিন্তু নেই।   হিট অফিসার নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান (অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার (আরশট-রক)। সারা বিশ্বে ৭ জন চিফ হিট অফিসার তারা নিয়োগ করেছে এবং ৭ জনই নারী। ওয়াটার স্প্রে পরিদর্শনকালে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান, ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফোরকান হোসেন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর হামিদা আক্তার (মিতা) প্রমুখ।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, দুটি স্প্রে ক্যানন যেগুলো কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করে এগুলো প্রধান সড়কে পানি ছিটাবে। এগুলো বেশ বড় হওয়ায় গলির সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না৷ গলির সড়কে পানি ছিটানোর জন্য দশটি ব্রাউজার কাজ করবে। এগুলোর মাধ্যমে সড়কগুলো ভিজিয়ে ঠান্ডা রাখা হবে।
হিট অফিসারের পরামর্শে যে পদক্ষেপ নিয়েছে সিটি করপোরেশন
তীব্র গরমে জনগণকে সাময়িক স্বস্তি দিতে রাজধানীতে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি ছেটাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পানি ছেটানোর এমন কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে এ কথা জানান ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। মেয়র বলেন, হিট অফিসারের পরামর্শক্রমে ওয়াটার স্প্রে বা কৃত্রিম বৃষ্টির পানি ছেটানো হচ্ছে। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই ধরনের ওয়াটার স্প্রে বা কৃত্রিম বৃষ্টি ছেটানো হবে বলেও জানান তিনি। আতিকুল ইসলাম জানান, পর্যায়ক্রমে রাজধানীর পার্কগুলোতেও এমন বৃষ্টি ছেটানো হবে। এ ছাড়া উত্তর সিটির ওয়ার্ডগুলোতে প্রতিদিন তিনটি করে বিশুদ্ধ পানি পান করার ভ্যান থাকবে। এ সময় প্রত্যেকটি শপিংমলের সামনে বিশুদ্ধ পানির ট্যাংক রাখার অনুরোধ করেন তিনি। অবৈধভাবে জলধারা, লেক, খাল ও খেলার মাঠ যাতে কেউ দখল করতে না পারে সবাইকে সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বানও জানান মেয়র। হিট অফিসার প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে একটি টাকাও বেতন নিচ্ছে না হিট অফিসার। তার জন্য সিটি করপোরেশনের অফিসে কোনো চেয়ারও নেই।  এদিকে ওয়াটার স্প্রে ছেটানোর সময় আনন্দে আত্মহারা অবস্থায় দেখা যায় শিশু-কিশোরসহ সব বয়সিদের।
তীব্র গরমে জনগণকে সাময়িক স্বস্তি দিতে রাজধানীতে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি ছেটাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পানি ছেটানোর এমন কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে এ কথা জানান ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর যেসব এলাকায় ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না আজ
গ্যাস পাইপলাইনের জরুরি কাজের জন্য আজ শনিবার রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।  গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্যাস পাইপলাইনের জরুরি কাজের জন্য শনিবার সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শনিরআখড়া, বড়ইতলা, ছাপড়া মসজিদ, দনিয়া, জুরাইন, ধোলাইরপাড় ও কদমতলী এলাকার সব শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। ওই সময়ে আশপাশের এলাকায় গ্যাসের স্বল্পচাপ বিরাজ করতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
গ্যাস পাইপলাইনের জরুরি কাজের জন্য আজ শনিবার রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
উত্তরায় কিশোর গ্যাংয়ের আরও ১ সদস্য গ্রেফতার
রাজধানীর উত্তরায় স্কুলছাত্র আবু রায়েফ লিখনকে (১৪) রাস্তায় ফেলে মারধর ও হত্যাচেষ্টার মামলায় কিশোর গ্যাংয়ের আরও এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম সানজিদ ইসলাম শেখ (১৫)।  গ্রেফতারের বিষয়টি শুক্রবার সকালে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর তুরাগ থানার ফুলবাড়িয়া টেকপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।  ওসি জানান, সানজিদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্রকে মারধরে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। সে টাঙ্গাইলের নাগপুরের গয়হাটার আগাকুটিয়া গ্রামের মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলে। এলাকার বখাটেদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়ে উত্তরার বিভিন্ন স্থানে মারধর করত। উল্লে­খ্য, ২০ এপ্রিল উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী লিখনের বাবা মনির হোসেন মামলা করেন। এজাহারের সূত্র ধরে তৎক্ষণাৎ আব্দুল্লাহ আহাদ ও তাবরেজুর আহমেদ তাসিন নামের দুই কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। মামলায় অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং গ্রুপটির মূলহোতা যোবায়ের ও জিৎসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা এখনো অধরা। পুলিশ জানায়, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রাজধানীর উত্তরায় স্কুলছাত্র আবু রায়েফ লিখনকে (১৪) রাস্তায় ফেলে মারধর ও হত্যাচেষ্টার মামলায় কিশোর গ্যাংয়ের আরও এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম সানজিদ ইসলাম শেখ (১৫)।
বগুড়া জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি তুহিন সম্পাদক হাবিব
ঢাকায় কর্মরত বগুড়ার সাংবাদিকদের সংগঠন ‘বগুড়া জার্নালিস্ট ফোরাম’ এর দুই বছরের জন্য নতুন কমিটি (২০২৪-২০২৬) গঠন করা হয়েছে।  শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে সংগঠনের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস মামুনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কমিটি গঠন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ফোরামের উপদেষ্টা রানা হাসান (কালবেলা) ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম (বৈশাখী টিভি)। আরও বক্তব্য দেন উপদেষ্টা উত্তম চক্রবর্তী (জনকণ্ঠ)।  অনুষ্ঠানের শুরুতেই সিনিয়র উপদেষ্টা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহমেদ অটলের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর নবগঠিত কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন রানা হাসান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন প্রামাণিক।  নবগঠিত কমিটির সভাপতি হলেন এহসান পারভেজ তুহিন (সংবাদ প্রতিদিন), সহ-সভাপতি প্রতীক এজাজ (দেশ রুপান্তর), সুমন প্রমানিক (দৈনিক নাগরিক সংবাদ) সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান (৭১ টিভি), যুগ্ম সম্পাদক শাওন মাহফুজ (এনটিএন নিউজ), শামীমা আক্তার (দীপ্ত টিভি)।  সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন ফয়সাল তিতুমীর (বিবিসি বাংলা), অর্থ সম্পাদক বেলাল হোসেন (আমার সংবাদ), শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক অপূর্ব রুবেল (কালেরকন্ঠ), প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আহমেদ জুয়েল (বাংলানিউজ), নারী বিষয়ক সম্পাদক বাবলী ইয়াসমিন (এটিএন নিউজ), দপ্তর সম্পাদক মামুনুর রশীদ (জনকন্ঠ), স্পোর্টস সম্পাদক হুমায়ন কবীর রোজ (এখন টিভি), সমাজকল্যাণ সম্পাদক রেজাউল করিম (বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড)। নির্বাহী সদস্যরা হলেন- ফেরদৌস মামুন (গ্লোবাল টিভি), রাশেদ মেহেদী, আসিফ ইকবাল (মানবকন্ঠ), মাহমুদ শাওন (দীপ্ত টিভি), সাদিয়া কানিজ লিজা (আরটিভি), সাকিবুর রহমান (আরটিভি) ও মাজহারুল মিঠু (ইনডিপেন্ডেন্ট টিভি)।
ঢাকায় কর্মরত বগুড়ার সাংবাদিকদের সংগঠন ‘বগুড়া জার্নালিস্ট ফোরাম’ এর দুই বছরের জন্য নতুন কমিটি (২০২৪-২০২৬) গঠন করা হয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশের অবহেলায় বিমানবন্দর সড়কে বেড়েছে যানজট—সংবাদের প্রতিবাদ
দৈনিক যুগান্তর অনলাইনে ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত 'ট্রাফিক পুলিশের অবহেলায় বিমানবন্দর সড়কে বেড়েছে যানজট-বিশৃঙ্খলা' শীর্ষক সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সংবাদে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা নিয়ে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ডিএমপি পাঠানো প্রতিবাদে বলা হয়েছে, সড়কে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকলে ট্রাফিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২/৩ বছর আগের তুলনায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এই অংশে যানজট একদমই কম। ঢাকা মহানগরীর এই অংশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা খুবই সুশৃঙ্খল এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।  প্রতিবাদে বলা হয়েছে, বিএনএস ফ্লাইওভারে কিছু কিছু কারণে মাঝে মাঝে যানজটের সৃষ্টি হয়। যেমন- কোন গাড়ি নষ্ট হলে সেটা অপসারণ জনিত জটিলতা, ঢাকা ও গাজীপুরের যে কোনো প্রান্তে যানবাহনের চাপ হঠাৎ করে বেড়ে গেলে অথবা ভিআইপি মুভমেন্টে থাকলে ও সাময়িক যানজটের সৃষ্টি হয়।  প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে, ট্রাফিক উত্তরা বিভাগে গত কয়েক মাস ধরে ব্যাটারি চালিত রিকশা, ইজি বাইক, ঢাকা ও গাজীপুর জেলার সিএনজি'র বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলামান রয়েছে। গত ২২ এপ্রিল ট্রাফিক উত্তরা বিভাগে প্রায় ৭৩টি গাজীপুর ও ঢাকা জেলার সিএনজির বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জেলার সিএনজি ও অটো রিকশার বিরুদ্ধে আজমপুর ক্রসিংয়ের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত তৎপর থেকে প্রতিদিন ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সেক্টর এলাকায় ইজিবাইক ও রিকশা ঢুকিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবাদে।
দৈনিক যুগান্তর অনলাইনে ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত 'ট্রাফিক পুলিশের অবহেলায় বিমানবন্দর সড়কে বেড়েছে যানজট-বিশৃঙ্খলা' শীর্ষক সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সংবাদে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা নিয়ে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছে পুলিশ।
তীব্র গরমে রাজধানীতে পুলিশ ক্যাম্পে আগুন
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তীব্র গরমের কারণে ওভারহিট হয়ে পুলিশ (এসপিবিএন) ক্যাম্পে বৈদ্যুতিক মিটারে আগুন লেগে যায়। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটের চেষ্টায় আধা ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।  বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় মোহাম্মদপুরের বসিলা এসপিবিএন ব্যারাকে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, বসিলা শাহজালাল হাউজিং এ স্পেশাল প্রটেকশন অ্যান্ড ব্যাটালিয়ন (এসপিবিএন) ব্যারাকের নিচ তলায় থাকা ৮৪টি বৈদ্যুতিক মিটার পুড়ে যায়। এতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের কন্ট্রোলের দায়িত্বরত মোহাম্মদ আফনান বলেন, গরমের কারণে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। আগুনের খবর পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তীব্র গরমের কারণে ওভারহিট হয়ে পুলিশ (এসপিবিএন) ক্যাম্পে বৈদ্যুতিক মিটারে আগুন লেগে যায়। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটের চেষ্টায় আধা ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
দক্ষিণ সিটির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় কিশোর নিহত
রাজধানীর উত্তর মুগদা এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ি ধাক্কায় মাহিন নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লাশ ময়নাতদন্তের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। মুগদা থানার ওসি কামরুল হোসাইন বলেন, কিশোরকে চাপা দেওয়া সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চালককে আটক করা হয়েছে। নিহত কিশোরের লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে।
রাজধানীর উত্তর মুগদা এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ি ধাক্কায় মাহিন নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লাশ ময়নাতদন্তের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
গ্রামের পর এবার ঢাকায়ও বাড়ছে লোডশেডিং
গ্রামের পর এবার রাজধানী ঢাকায়ও বাড়ছে লোডশেডিং। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, একদিকে বাতাসে আগুনের হলকা, অপরদিকে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা- দুই মিলে হাহাকার চলছে দেশজুড়ে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষজন। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও ঘনঘন লোডশেডিংয়ে ঘরেও টিকতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুতের ঘাটতিতে অনেক এলাকায় সেচকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে। এদিকে গ্যাসের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও লোডশেডিংয়ের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি উত্তরণের কোনো সুখবর নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খরতাপের কারণে পাল­া দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। ফলে সামনে লোডশেডিং আরও বাড়বে। গ্রামে কমাতে হলে শহরে লোডশেডিং দিতেই হবে। বিদ্যুতের লোড ব্যবস্থাপনা নিয়ে সোমবার সচিবালয়ে বৈঠক হয়েছে। সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে বলা হয়েছে, লোড ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে। এখন থেকে শহরেও যৌক্তিক লোডশেডিং দেওয়া হবে। পাশাপাশি বড় বিপণিবিতান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিষয়ে সাশ্রয়ী নীতি নেওয়া হবে। রাত ৮টার পর মার্কেট বন্ধের নিয়ম কঠোরভাবে মানা হবে। ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, অফিশিয়ালি এখনো লোডশেডিং শুরু হয়নি। তবে বর্তমানে ঢাকায় ৪০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট ঘাটতি আছে বিদ্যুতের। যে কারণে কিছু এলাকায় লোডশেডিং করা হচ্ছে। তবে এভাবে গরম পড়তে থাকলে শহরেও যৌক্তিক লোডশেডিং করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। বর্তমানে সারা দেশে লোডশেডিং সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। শুধু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডেই (আরইবি) প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। আরইবির সমিতিগুলোর একাধিক জেনারেল ম্যানেজার যুগান্তরকে জানিয়েছেন, চরম আতঙ্ক নিয়ে তারা গ্রামে থাকছেন। রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারেন না। বিদ্যুৎ না পেয়ে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী কখন তাদের ওপর হামলা চালায়, এ ভয়ে তারা দিন কাটাচ্ছেন। তাদের মতে, চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎও তারা পাচ্ছেন না। গ্রাম এলাকায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনের কারণে প্রতিটি গ্রামে এখন স্থানীয় সংসদ-সদস্যরা অবস্থান করছেন। তাদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার চাপ আছে। এছাড়া আরও ভিআইপি আছেন। এসব করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে চরম কষ্ট দিচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো হলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি অর্থ সংকটে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো কম চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় যে কোনো সময় ঢাকাসহ বড় শহরগুলোয়ও লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। বিতরণ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, ঢাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রের (এসি) ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে। ঢাকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র সংযোজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, ১০ থেকে ১৫ দিন তাদের হাতে কোনো শিডিউল নেই। আগে তারা প্রতিদিন ১০-১২টি এসি সংযোজন করলেও এখন প্রতিদিন ২৫-৩০টি এসি সংযোজন করতে হচ্ছে।  বিতরণ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, কয়েকদিন ধরে দিনে-রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার বিদ্যুৎ যাওয়ার তথ্য মিলেছে। এরকম গরম অব্যাহত থাকলে এবং আনুষ্ঠানিক লোডশেডিং শুরু হলে শহরের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে সোমবার রাত ৯টায়। এ সময় ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এর আগে রোববার রাতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল ১৫ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ নোমান সাংবাদিকদের জানান, তার এলাকায় এখন পর্যন্ত লোডশেডিং হয়নি। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎবিভ্রাটের ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি এখনো চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। আগামী দিনের কথা বলা যাচ্ছে না। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। খরচ বেশি হলেও তেলচালিত কেন্দ্রগুলো চালিয়ে চাহিদা মেটানো হবে। তিনি বলেন, গরম বেশি পড়ছে। এসি-ফ্যানের ব্যবহার বেড়েছে। বিদ্যুতের লোড হুট করে বেড়ে গেছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, প্রচণ্ড গরমে অনেক সময় সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে হয়। এতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমান বলেছেন, তাপপ্রবাহ কমলে লোডশেডিং কমে যাবে। তার মতে, ‘চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম থাকার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে তাপপ্রবাহ কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এ মুহূর্তে বোরো আবাদের অঞ্চল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছাড়া সব জায়গায় সমানভাবে লোডশেডিং হচ্ছে। বুধবার দুপুরে জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা নদীতে জেগে ওঠা চরে সৌরবিদ্যুতের প্ল্যান্ট স্থাপনের জায়গা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিদ্যুৎ বিভাগ এপ্রিল-মে মাসে বিদ্যুতের চাহিদা ধরেছে ১৭ হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট। গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোয় গড়ে উৎপাদন হচ্ছে ১৪ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। এরপরও আড়াই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াটের ঘাটতি থাকছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস বেশি সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। এখন গড়ে দিনে ১৩৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। গত মাসে সরবরাহ ছিল ১১০ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট। গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোয় বিদ্যুতের উৎপাদন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বেড়েছে। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিং বেশি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার গরমে গ্যাস থেকে ৬ হাজার, কয়লা থেকে প্রায় ৫ হাজার, ফার্নেস অয়েল থেকে ৫ হাজার এবং ডিজেলের মাধ্যমে ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। রোববার রাতে ১৫ হাজার ৬৬ মেগাওয়াট উৎপাদনের সময় গ্যাস দিয়ে ৭ হাজার ৭১৬, তেল ব্যবহারে ২ হাজার ৯৫৯ এবং কয়লা দিয়ে ৪ হাজার ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।  বিপিডিবির সদস্য (বিতরণ) মো. রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকার বাইরে যেসব অঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে, সেসব এলাকা আমরা চিহ্নিত করছি। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে যেন কৃষকের সেচ কার্যক্রম ব্যাহত না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে কিছুটা লোডশেডিং করেও গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে। দু-তিনদিনের মধ্যেই গ্রামাঞ্চলের লোডশেডিং পরিস্থিতি কিছুটা কমে আসবে।’ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের জোনভিত্তিক বিদ্যুৎ চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যে দেখা যায়, মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে এই বিতরণ কোম্পানিকে ১ হাজার ৭৪৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। তবে এটি সরকারি হিসাব। বাস্তবে এ সংখ্যা ২ হাজারের বেশি।
গ্রামের পর এবার রাজধানী ঢাকায়ও বাড়ছে লোডশেডিং। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, একদিকে বাতাসে আগুনের হলকা, অপরদিকে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা- দুই মিলে হাহাকার চলছে দেশজুড়ে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষজন। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও ঘনঘন লোডশেডিংয়ে ঘরেও টিকতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুতের ঘাটতিতে অনেক এলাকায় সেচকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগ মুখোমুখি
উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চিত্রটা যেন আরও একবার বেরিয়ে এলো। বর্তমানে দলীয় শৃঙ্খলা যে আগের মতো নেই, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। গত জাতীয় নির্বাচনের সময়ও এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। গুরুত্বের দিক থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই উপজেলা নির্বাচনকে ধরা হয়ে থাকে। এ কথা বিবেচনা করে সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা দলের সভাপতির কড়া নির্দেশ উপেক্ষা করেই গণহারে তাদের আত্মীয়স্বজনদের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। বিগত নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে একটা ধারণা চালু হয়েছে, দলের পরিচয়ে নির্বাচন করা মানে নির্বাচনে জয়লাভ করা। গত প্রায় একযুগেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সরকারি প্রশাসনের বিভাগগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা আমরা দেখে এসেছি, সে অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, নেতাকর্মীরা মনে করতেই পারেন, দলীয় প্রার্থী হতে পারলেই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া নিশ্চিত। বছরের পর বছর ক্ষমতায় থাকার পর আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা এখন রাজনীতিতে তাদের উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এতদিনের উপার্জিত অর্থ ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করে স্ত্রী, সন্তান, ভাই এবং পরিবারের সদস্যদের ক্ষমতার স্বাদ উপভোগের পথ করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। ফলে, তিলে তিলে গড়ে ওঠা স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। এবারের উপজেলা নির্বাচনেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আবারও পিছিয়ে পড়বেন। তাতে দলের ভেতরে অসন্তোষ আরও বৃদ্ধি পাবে। দলের জন্য এটি মোটেও ভালো নয়। দেরি করে হলেও আওয়ামী লীগের উঁচু মহল যে এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন, তাই বা মন্দ কীসের! এবারের উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আগের ধারাবাহিকতা অনুসরণ না করে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের দাবির মুখেই এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়নি। উদ্দেশ্য হলো, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি এ নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখা। জাতীয় নির্বাচনের পরপরই সরকার আর বদনাম নিতে রাজি নয়। দলের প্রভাবশালীরা যাতে প্রশাসনকে প্রভাবিত করতে না পারেন, এজন্য সরকার স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে। তাছাড়া জেলা-উপজেলার প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাÍক সহযোগিতা করতে বলেছে। আওয়ামী লীগের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানালেন, বিএনপি এবারের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। অতএব জাতীয় নির্বাচনের মতোই এবারের উপজেলা নির্বাচনও আমাদের-আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। এজন্য কেন্দ্র থেকে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে কিছুটা হিসাবি হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী-এমপিরা সে নির্দেশ মান্য করেননি। তারা সন্তান, ভাই, শ্যালক, পরিবারের সদস্য, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং নিজস্ব লোককে (?) নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন, এভাবে মন্ত্রী-এমপিরা দলীয় নির্দেশ অমান্য করে যদি প্রভাব বিস্তার করেন, তাহলে নিজেদের মধ্যেই সংঘাতের সৃষ্টি হবে। ফলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা আর সম্ভব হবে না; যা দেশ-বিদেশে সমালোচনার জন্ম দেবে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্যদের নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে সবার উদ্দেশে কড়া নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যদি কেউ ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে কেউ ব্যর্থ হলে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। ভবিষ্যতে দলীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে। এ নির্দেশের পর মন্ত্রী ও এমপির কিছু কিছু আত্মীয় ও নিজস্ব ব্যক্তির নাম প্রত্যাহার করা হলেও অনেকেই প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন। তবে নাম প্রত্যাহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মন্ত্রী-এমপির আত্মীয় হলে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না, এ বিষয়টি কতটা যৌক্তিক? এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অবস্থান বেশ স্পষ্ট। কোনো অবস্থাতেই তারা উপজেলা নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছেন না। এমনিতেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রবিমুখ হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করে এমন কিছু দল ছাড়া অধিকাংশ বিরোধীদল এ সরকারের অধীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় না। এ নিয়ে অনেক বদনামও আছে। আওয়ামী লীগ চাচ্ছে এ বদনাম ঘোচাতে। সরকার চাচ্ছে এমন একটি নির্বাচন করতে, যাতে দেশের মানুষের ভোটের প্রতি আস্থা ফিরে আসে। তারা চাচ্ছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থীরা যেন জনগণের রায়ে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়টি আরও পরিষ্কার করেছেন। মন্ত্রী বা এমপির পরিবারের সদস্য হলেই উপজেলা নির্বাচন করা যাবে না, এ সিদ্ধান্তটি কতটুকু যুক্তিযুক্ত, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আপনি যে কোনো যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেন; কিন্তু আপনার যুক্তি জনগণ কী চোখে দেখছে? দেশের ভোটাররা কী চোখে দেখছে? আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্তে মানুষ খুশি হয়েছে। দলের তৃণমূলের কর্মীরা তাদের মতো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। একটা দলে আমি এমপি, আমি মন্ত্রী, আবার আমারই ভাই, সন্তান যদি সব পদ নিয়ে নেয়, তাহলে তৃণমূলের কর্মীরা কী করবে? তাদের উঁচু পদে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই? সে সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই এ সিদ্ধান্ত।’ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের আত্মীয়রা কী করতে পারেন তার খাঁটি উদাহরণ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব। লুৎফুল হাবীব হলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার লোকজন দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধর করেছেন। ১৭ এপ্রিল বিকালে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতর থেকে দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করতে করতে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সন্ধ্যার কিছু আগে মুমূর্ষু অবস্থায় তার গ্রামের বাড়ির সামনে ফেলে রেখে চলে যায় অপহরণকারীরা। এ ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা আগে দেলোয়ার হোসেনের ভাইসহ আওয়ামী লীগের আরও এক নেতাকে একই এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। অপহরণকারী সবাই লুৎফুল হাবীবের লোক এবং অনেকেই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অপহরণকারীদের দলে লুৎফুল হাবীবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ও গাড়ির চালকও ছিলেন। পুলিশ তাদের অনেককে গ্রেফতার করলেও লুৎফুল হাবীব রয়ে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে, আটককৃত ব্যক্তিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে লুৎফুল হাবীবের পক্ষেই এ অপহরণ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার শ্যালকের এ অপকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন ও ক্ষমা চেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত লুৎফুল হাবীব দলের চাপে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতানেত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মী এ ঘটনায় লুৎফুল হাবীবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। অনেকেই মনে করছেন, লুৎফুল হাবীব প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক হওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। এবারের উপজেলা নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য আওয়ামী লীগ চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিল। এগুলো হলো, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করা। দলের পক্ষ থেকে কাউকে মনোনয়ন না দেওয়া। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের দলীয় পরিচয় ব্যবহার না করা এবং পরিবারের সদস্যদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা। কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্ত মানতে কেউ রাজি নন। অনেকেই মনে করছেন, অতীতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো অপরাধ করলেও কঠোর শাস্তি না দেওয়ায় এখন দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার মতো সাহস দেখাচ্ছেন অনেকে। এলাকায় এসব মন্ত্রী-এমপির প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ও স্থানীয় রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র কায়েমের আগ্রাসী মনোভাব, দলের ভালো উদ্দেশ্যকে ভূলুণ্ঠিত করছে। তাতে শুধু দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গই হচ্ছে না, কিছু কিছু ব্যক্তির ঔদ্ধত্যও প্রকাশ পাচ্ছে। এর লাগাম যদি এখনই টেনে না ধরা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে দলীয় শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে। এমন বিশৃঙ্খল অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে এখন থেকেই আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ উপজেলা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি ঘটবে। মাঠ পর্যায়ের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। নির্বাচন কমিশনও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা নির্বাচনের পরিবেশকে নষ্ট করছে। এ পরিবেশ দিন দিন আরও ভয়ংকর রূপ লাভ করবে। এ পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও চাপ বৃদ্ধি করছে। তারা ইতোমধ্যে অনুরোধ করেছেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকালে ওপর মহলের হস্তক্ষেপ বন্ধের যেন ব্যবস্থা করা হয়। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না। একটি কথা ভেবে অবাক হই, বাংলাদেশের রাজনীতির পরিবেশ আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কিছুদিন আগেও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য সরকারের তরফ থেকে বিরোধীদলকেই দায়ী করা হতো। আর এখন, সরকারি দলের নেতারা নিজ দলের মন্ত্রী-এমপি দ্বারা যাতে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট না হয়, সে আশঙ্কাতেই ভুগছেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা যতই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার আশা পোষণ করুন না কেন, এ পরিস্থিতি যদি এখন থেকেই সামাল দিতে না পারেন, তাহলে এদেশের জনগণ হয়তো আরও একটি গতানুগতিক বিশৃঙ্খল স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রত্যক্ষ করবে। একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা
উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চিত্রটা যেন আরও একবার বেরিয়ে এলো। বর্তমানে দলীয় শৃঙ্খলা যে আগের মতো নেই, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। গত জাতীয় নির্বাচনের সময়ও এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। গুরুত্বের দিক থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই উপজেলা নির্বাচনকে ধরা হয়ে থাকে। এ কথা বিবেচনা করে সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা দলের সভাপতির কড়া নির্দেশ উপেক্ষা করেই গণহারে তাদের আত্মীয়স্বজনদের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। বিগত নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে একটা ধারণা চালু হয়েছে, দলের পরিচয়ে নির্বাচন করা মানে নির্বাচনে জয়লাভ করা। গত প্রায় একযুগেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সরকারি প্রশাসনের বিভাগগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা আমরা দেখে এসেছি, সে অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, নেতাকর্মীরা মনে করতেই পারেন, দলীয় প্রার্থী হতে পারলেই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া নিশ্চিত। বছরের পর বছর ক্ষমতায় থাকার পর আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা এখন রাজনীতিতে তাদের উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এতদিনের উপার্জিত অর্থ ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করে স্ত্রী, সন্তান, ভাই এবং পরিবারের সদস্যদের ক্ষমতার স্বাদ উপভোগের পথ করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। ফলে, তিলে তিলে গড়ে ওঠা স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। এবারের উপজেলা নির্বাচনেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আবারও পিছিয়ে পড়বেন। তাতে দলের ভেতরে অসন্তোষ আরও বৃদ্ধি পাবে। দলের জন্য এটি মোটেও ভালো নয়। দেরি করে হলেও আওয়ামী লীগের উঁচু মহল যে এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন, তাই বা মন্দ কীসের!
ধানের বাম্পার ফলন
দেশে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, শেরপুর, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের হাওড়গুলোয় পুরোদমে চলছে ধান কাটা-মাড়াই ও শুকানোর কাজ। অনেক কৃষক ইতোমধ্যে ধান ঘরে তুলেছেন। কিন্তু সোনার ধানে ঘর-আঙিনা ভরে উঠলেও কৃষকের মুখে নেই হাসি। কারণ, সরকার এবার ধানের দাম মনপ্রতি ১ হাজার ২৮০ টাকা নির্ধারণ করলেও কেনা শুরু করবে ৭ মে থেকে। ফলে কৃষক চাষাবাদের খরচের দেনা শোধ, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের খরচ মেটাতে এখনই ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কতিপয় ফড়িয়া ও আড়তদার এ সুযোগ নেওয়ায় কৃষক পাচ্ছেন না ন্যায্যমূল্য। জানা গেছে, ফসল ফলাতে গিয়ে সার, কীটনাশক, ধান কাটার খরচসহ সব খাতে কৃষকের অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে; কিন্তু পরিস্থিতির চাপে এখন তাদের মনপ্রতি মানভেদে ৭২০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ একজন ধান কাটা শ্রমিকের দৈনিক মজুরিই দিতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। এতে উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক। এদিকে আড়তদাররা বলছেন, বাজারে আমদানি বেশি, চাতাল মালিকরা নাকি এ কারণে দাম কমিয়ে দিয়েছেন। আড়তদারদের এ ধরনের বক্তব্য কতটুকু সত্য, তা তদন্তের দাবি রাখে। সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, চলতি বছরের ৭ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে ৫ লাখ টন ধান কিনবে সরকার। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যদি এ ক’দিনে ফড়িয়ারা কৃষকের কাছ থেকে কমমূল্যে ধান সংগ্রহ করে পরে তা সরকারের কাছে বিক্রি করে, তবে স্বভাবতই লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাবে। ভুলে গেলে চলবে না, কৃষিপ্রধান এ দেশের মোট জনশক্তির অধিকাংশই কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থেই কৃষকের কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে কৃষক যেন দুর্দশাগ্রস্ত না হন, এজন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সবার খাদ্যের জোগান দিতে কৃষক যেভাবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন, তা স্মরণে রেখে সরকারকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রতি বছর ধানের দাম নির্ধারণ ও ক্রয়ের উদ্যোগ যেন সময়োপযোগী হয়, সরকারকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ব্যবসায়ীরা যেন নিজেদের স্বার্থে সিন্ডিকেট তৈরি করে চাল নিয়ে চালবাজি করতে না পারে, সেজন্য সরকার পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
দেশে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, শেরপুর, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের হাওড়গুলোয় পুরোদমে চলছে ধান কাটা-মাড়াই ও শুকানোর কাজ। অনেক কৃষক ইতোমধ্যে ধান ঘরে তুলেছেন। কিন্তু সোনার ধানে ঘর-আঙিনা ভরে উঠলেও কৃষকের মুখে নেই হাসি। কারণ, সরকার এবার ধানের দাম মনপ্রতি ১ হাজার ২৮০ টাকা নির্ধারণ করলেও কেনা শুরু করবে ৭ মে থেকে। ফলে কৃষক চাষাবাদের খরচের দেনা শোধ, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের খরচ মেটাতে এখনই ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কতিপয় ফড়িয়া ও আড়তদার এ সুযোগ নেওয়ায় কৃষক পাচ্ছেন না ন্যায্যমূল্য।
আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন: আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা জরুরি
ব্যাংক খাতকে আগামী জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া একটি কঠিন শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ঝুঁকি মোকাবিলার রীতি ব্যাসেল-৩-এর মানদণ্ড অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। জানা গেছে, আইএমএফ থেকে সরকার ৪৭০ কোটি ডলারের যে ঋণ নিয়েছে, তার মধ্যে বেশকিছু শর্ত আছে, যার মধ্যে এটিও রয়েছে। এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ শর্ত মানতে গেলে ব্যাংক খাতের ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। দেশের ভেতরে ইমেজ সংকটের পাশাপাশি বিদেশেও ভাবমূর্তি হবে প্রশ্নবিদ্ধ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ বাড়লে এ খাতের দুর্বলতা আরও বেশি করে প্রকাশ হয়ে যাবে। এতে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে। তখন অনেক ব্যাংক বিশেষ করে বৈদেশিক এলসি খোলার ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষীয় গ্যারান্টি আরোপ করতে পারে। ফলে গ্যারান্টিদাতা ব্যাংককে বাড়তি কমিশন দিতে হলে আমদানির খরচ তো বটেই, ব্যবসার খরচও বেড়ে যাবে। এতে ব্যবসায়ীসহ ভোক্তারাও বিপাকে পড়তে পারেন। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, ব্যাসেল-৩ মানদণ্ডে দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ খুব বেশি বাড়বে না। কারণ খেলাপি ঋণ আদায় বেড়েছে। ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে কমপক্ষে ১০ শতাংশ বা ৫০০ কোটি টাকা-এর মধ্যে যেটি বেশি, তা ন্যূনতম মূলধন হিসাবে রাখতে হবে। এর বাইরে দেশের প্রতিটি ব্যাংককে আপৎকালীন সুরক্ষা দিতে অতিরিক্ত আরও আড়াই শতাংশ হারে মূলধন রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এটি প্রতিপালন হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার স্বার্থেই আইএমএফের শর্ত মেনে তা প্রকাশ করাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি আমরা। এর ফলে এ খাত নিয়ে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে তা যেমন দূর হবে, তেমনি ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থাও জানা সম্ভব হবে। আমরা দেখছি, সুশাসনের অভাবে ঋণ বিতরণে জালিয়াতি ও অনিয়মের ফলে দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে অস্তিত্ব রক্ষার্থে অপেক্ষাকৃত সবলদের সঙ্গে একীভূত করা হচ্ছে। এতে জনমনে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা কাম্য নয়। ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র তুলে ধরলে এ বিভ্রান্তি অনেকটাই দূর হবে। মনে রাখতে হবে, আর্থিক খাতে অনিয়ম ও খেলাপি ঋণ আদায়ে শিথিলতার সুযোগ নেই। এমনিতেই বৈশ্বিক কারণে ডলারের দাম বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভের পরিমাণ কমছে। এমন অবস্থায় ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতার স্বার্থে আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড দ্বারা প্রণীত আন্তর্জাতিক আর্থিক রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) সিস্টেম বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তাহলে ব্যাংকগুলোর হিসাব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা কিছুটা হলেও ফিরে আসবে, একইসঙ্গে তা আন্তর্জাতিক মানেরও হবে। আইএমএফের শর্তের কারণে নয়, স্বচ্ছতার স্বার্থেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজ উদ্যোগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য দ্রুত প্রকাশ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
ব্যাংক খাতকে আগামী জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া একটি কঠিন শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ঝুঁকি মোকাবিলার রীতি ব্যাসেল-৩-এর মানদণ্ড অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। জানা গেছে, আইএমএফ থেকে সরকার ৪৭০ কোটি ডলারের যে ঋণ নিয়েছে, তার মধ্যে বেশকিছু শর্ত আছে, যার মধ্যে এটিও রয়েছে।
জীর্ণ রেল সেতু: নতুন করে নির্মাণ করতে হবে
আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করে বহু দেশ তাদের রেল যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা যায়। জীর্ণ রেল সেতু দিয়ে বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। কোথাও সেতুর দুই পাশের মাটি সরে গেছে। আবার কিছু সেতুর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নড়বড়ে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো কোনো সেতু এলাকায় অতি ধীরগতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় ৯০ শতাংশ রেল সেতুই ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। ঝুঁকি এড়াতে এসব সেতুর স্থলে নতুন সেতু নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশে ৪ হাজারেরও বেশি রেল সেতু রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশই প্রায় শত বছরের পুরোনো। এসব সেতুর বেশির ভাগই শুধু ইট-বালি-চুন দিয়ে তৈরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সেতু ২০-২৫ বছর হলেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী বলেছেন, জীর্ণ এসব সেতুর পিলার টিকিয়ে রাখতে রড-সিমেন্টের সমন্বয়ে জ্যাকেট সিস্টেম আস্তর দেওয়া হচ্ছে। বস্তুত এসব সেতু মেরামত করে সচল রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। কোনো কোনো ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ধসে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এসব সেতু নতুন করে নির্মাণের পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের রেললাইনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ। জরাজীর্ণ রেলপথের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পাথরস্বল্পতাও। ফলে প্রায়ই ঘটছে লাইনচ্যুতির ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের কারণে কমে গেছে রেলের গতি। অভিযোগ রয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ মেরামতসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাবদ বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ অবস্থায় রেললাইনগুলোর মেরামত ও সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। দেশে অবৈধ ও অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। বস্তুত দেশে ট্রেন দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ অবৈধ ও অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং। এ সমস্যার সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে। রেলে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে। গত দেড় দশকে রেলে বিপুল অঙ্কের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে; চলমান রয়েছে আরও বিপুল অঙ্কের প্রকল্প। প্রশ্ন হলো, রেলের জরাজীর্ণ লাইন ও সেতু উন্নয়নে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে না কেন? দেশের প্রচলিত যোগাযোগব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হলো রেল খাত। দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সম্ভাবনা বিনষ্ট করা হয়েছে। রেল নিয়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি। সব ধরনের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করে রেলের প্রকৃত উন্নয়নে দৃষ্টি দিতে হবে।
আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করে বহু দেশ তাদের রেল যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা যায়। জীর্ণ রেল সেতু দিয়ে বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। কোথাও সেতুর দুই পাশের মাটি সরে গেছে। আবার কিছু সেতুর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নড়বড়ে। এ
পানি-বিদ্যুতে দুর্ভোগ: সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি জরুরি
দেশব্যাপী তীব্র দাবদাহের এ সময়ে পানি ও বিদ্যুৎ সংকটে নাকাল হচ্ছে রাজধানীবাসী। জানা যায়, মোহাম্মদপুর, ভাষানটেক ও আগারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানি সংকট চলছে। পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নগরবাসীর অভিযোগ-বিকল্প পানির গাড়ি চেয়েও সহজে পানি পাচ্ছেন না তারা; যদিও ঢাকা ওয়াসার দাবি-পানি সংকটের কথা জানামাত্রই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন তারা। অপরদিকে গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি রাজধানীতেও বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। বলার অপেক্ষা রাখে না, পানি ও বিদ্যুতের এ সংকট জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে শিল্প খাতের উৎপাদন। গ্রামাঞ্চলে বিঘ্নিত হচ্ছে সেচকাজ। এ বছর দেশে গরমের তীব্রতা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এ অবস্থায় সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু ও বেশি বয়স্কদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরেও স্বস্তিতে নেই মানুষ। অন্যদিকে জীবিকার তাগিদে সাধারণ মানুষকে বাইরে বের হতেই হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষের এছাড়া কোনো উপায়ও নেই। তারা রোদে পুড়ে, ঘাম ঝরিয়ে শ্রমের বিনিময়ে যে টাকা রোজগার করে, তাই দিয়েই তাদের পরিবার-পরিজনসহ জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। পানি সংকটের কষ্টটা তাদেরই বেশি। গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। এ সময় পান করার সুপেয় পানির সহজলভ্যতা জরুরি। অবশ্য ঢাকা ওয়াসা বলছে, পথচারীদের সুবিধার জন্য জনসমাগমস্থলে বিনামূল্যে খাবার পানির ব্যবস্থা করেছেন তারা। তবে বলা বাহুল্য, এ ধরনের ব্যবস্থা চাহিদার তুলনায় খুবই সীমিত। বাসাবাড়িতেও পানি সংকটের কষ্ট কম নয়। গ্রীষ্মকালে পানির চাহিদা এমনিতেই বেড়ে যায়। এ সময় মানুষ বেশি পরিমাণে পানি পান করে এবং গোসল করে। তার ওপর এবার তীব্র গরমের প্রভাব পড়েছে পানি উৎপাদনে। এ সময় পানির স্তর নিচে নেমে যায়। বিদ্যুৎ সংকটেরও প্রভাব পড়ে পানি সরবরাহে। এ অবস্থায় পানির সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা কঠিন বৈকি। তবে যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সহনীয় করা সম্ভব। এ জন্য পানির অপচয় ও এ খাতের দুর্নীতি রোধ করতে হবে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে অপচয় বন্ধের পাশাপাশি অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করা প্রয়োজন। বস্তুত দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি নেই। জানা যায়, সোমবার রাতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। এ সময় ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। তবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঞ্চালন ও সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। সমস্যাটা মূলত সরবরাহ ব্যবস্থায়। সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি ছাড়াও বিদ্যুৎ সরবরাহে চরম অব্যবস্থাপনারও অভিযোগ রয়েছে। এসব সমস্যা দূর করা গেলে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হতে পারে। তাই এ দিকটিতে অবিলম্বে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। নয়তো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও এর সুফল পাবে না মানুষ ও শিল্প খাত।
দেশব্যাপী তীব্র দাবদাহের এ সময়ে পানি ও বিদ্যুৎ সংকটে নাকাল হচ্ছে রাজধানীবাসী। জানা যায়, মোহাম্মদপুর, ভাষানটেক ও আগারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানি সংকট চলছে। পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নগরবাসীর অভিযোগ-বিকল্প পানির গাড়ি চেয়েও সহজে পানি পাচ্ছেন না তারা; যদিও ঢাকা ওয়াসার দাবি-পানি সংকটের কথা জানামাত্রই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন তারা। অপরদিকে গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি রাজধানীতেও বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। বলার অপেক্ষা রাখে না, পানি ও বিদ্যুতের এ সংকট জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে শিল্প খাতের উৎপাদন। গ্রামাঞ্চলে বিঘ্নিত হচ্ছে সেচকাজ।
শেয়ারবাজারে আতঙ্ক: সর্বাগ্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে
ফ্লোর প্রাইস তোলার পর থেকে শেয়ারবাজারে নিয়মিতভাবে সূচকের পতন লক্ষ করা যাচ্ছে। নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও এ দরপতন কোনোভাবেই থামছে না। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-শেয়ারবাজারের এমন অস্থির পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। যদিও পতন ঠেকাতে বুধবার মূল্যসীমায় (সার্কিট ব্রেকার) আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম একদিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বৃহস্পতিবার থেকে তা কার্যকরও হয়েছে। কিন্তু তাতেও সুফল মেলেনি। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ সেদিনও সূচক আরও ৬০ পয়েন্ট কমেছে। এমন অবস্থায় লোকসানের আতঙ্কে বাজার ছাড়ছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। অবশ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে, বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কমিশন কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না, তবে কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করলে তদন্ত করে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গেল এক বছর ধরে শেয়ারবাজারে নতুন কোনো বিনিয়োগ আসেনি। বরং শেয়ারবাজার থেকে টাকা বের হয়ে গেছে। ফলে বাজারে শেয়ারের দরপতন অব্যাহত আছে। বাজারের এই নেতিবাচক অবস্থার জন্য একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন অজুহাত দেখানো হয়েছে। কখনো দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির নেতিবাচক অবস্থা, কখনো বিশ্ব অর্থনীতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের শঙ্কা। কিন্তু যুদ্ধের মুখোমুখি হলেও মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই দেশের শেয়ারবাজারে এর কোনো প্রভাবই পড়েনি। বৈশ্বিক পুঁজিবাজারেও নেই কোনো বড় ধরনের সংকট। আমরা মনে করি, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট কাটাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। বাজারে তারল্য বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হতে হবে। তা না হলে দীর্ঘমেয়াদে বাজারকে টেকসই করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারসাজির মাধ্যমে কেউ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করলে আইন অনুসারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কমিশনকে তৎপর থাকতে হবে। শেয়ারবাজারে কোনো সিন্ডিকেট যাতে গজিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারেও কমিশনকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সমন্বয়ের মাধ্যমের কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাজারের এ পরিস্থিতিতে এখন সর্বোচ্চ সতর্কতার সময় এসেছে। এ সতর্কতার ওপরই নির্ভর করছে আগামী দিনের শেয়ারবাজার ও অর্থনীতির অবস্থা। শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
ফ্লোর প্রাইস তোলার পর থেকে শেয়ারবাজারে নিয়মিতভাবে সূচকের পতন লক্ষ করা যাচ্ছে। নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও এ দরপতন কোনোভাবেই থামছে না। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-শেয়ারবাজারের এমন অস্থির পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। যদিও পতন ঠেকাতে বুধবার মূল্যসীমায় (সার্কিট ব্রেকার) আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম একদিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বৃহস্পতিবার থেকে তা কার্যকরও হয়েছে। কিন্তু তাতেও সুফল মেলেনি। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ সেদিনও সূচক আরও ৬০ পয়েন্ট কমেছে। এমন অবস্থায় লোকসানের আতঙ্কে বাজার ছাড়ছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। অবশ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে, বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কমিশন কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না, তবে কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করলে তদন্ত করে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফসলি জমি ধ্বংসের মহোৎসব
একটি স্বয়ংক্রিয় ইট তৈরির কারখানা মানিকগঞ্জের ঘিওর ও শিবালয় উপজেলার হাজারো কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ২ লাখ ইট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কারখানাটিতে মাটির জোগান দিতে ধ্বংস করা হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি। এ মহোৎসবে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীও। জানা যায়, এ পর্যন্ত অন্তত ১০ গ্রামের প্রায় কয়েক শ বিঘা তিন ফসলি জমির মাটি কেটে এ কারখানায় বিক্রি করেছেন তারা। অভিযোগ আছে, জমির মালিকদের প্রলোভন, ভয়ভীতি কিংবা কূটকৌশল খাটিয়ে রাতের অন্ধকারে মাটি কেটে নেন তারা। সম্প্রতি এলাকার কৃষকরা ফসলি জমির মাটি কাটতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে একাট্টা হয়েছেন এবং মামলা করেছেন ‘মাটিখেকো’ চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ইট তৈরির কারখানাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ঘিওর উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশও কেন কার্যকর করা হচ্ছে না, তা রহস্যজনক। জানা যায়, কারখানাটি ২০১৮ সালে ছোট আকারে চালু করা হয়। শুরুর দিকে কারখানার আশপাশের জমি কিনে সেখান থেকে মাটি কেটে ইট তৈরির কাজ চালানো হতো। পরবর্তী সময়ে কারখানার পরিসর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে মাটির চাহিদা। আর তখনই শুরু হয় ফসলি জমি ধ্বংসের মহোৎসব। জানা যায়, ডাম্প ট্রাকে মাটি বহনকালে বিভিন্ন ব্যক্তির জমির ফসলও নষ্ট করা হয়েছে; ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্মাণাধীন একটি সড়ক। সড়কটির বেশ কয়েকটি জায়গায় ফাটলও ধরেছে। অতিরিক্ত ওজনের মাটিবাহী ট্রাক বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচলের কারণে ব্রিজও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি বেড়িবাঁধও। বেড়িবাঁধ রক্ষায় পাউবোর একজন উপসহকারী প্রকৌশলী ঘিওর থানায় মামলা করেছেন। কেবল মানিকগঞ্জেই নয়, দেশেই বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনা ঘটছে। কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাবেই ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে একদিকে কৃষিজমির পরিমাণ কমছে, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে মাটির উর্বরতা শক্তিও। এ অবৈধ কাজ চলতে থাকলে ফসলের উৎপাদনে কী ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি হবে, তা সহজেই অনুমেয়। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন অনুযায়ী আবাসিক, সংরক্ষিত ও বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর ও কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ এ আইন লঙ্ঘন করেই চলছে অবৈধ ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম। এগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করা সত্ত্বেও কেন সুফল মিলছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। যেহেতু অবৈধ ইটভাটার কারণে দেশের বায়ু, মাটিসহ প্রকৃতির বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে; সেহেতু এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। ইটভাটার কারণে যাতে দেশের কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির কোনো ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে যারা আইন অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
একটি স্বয়ংক্রিয় ইট তৈরির কারখানা মানিকগঞ্জের ঘিওর ও শিবালয় উপজেলার হাজারো কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ২ লাখ ইট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কারখানাটিতে মাটির জোগান দিতে ধ্বংস করা হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি। এ মহোৎসবে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীও। জানা যায়, এ পর্যন্ত অন্তত ১০ গ্রামের প্রায় কয়েক শ বিঘা তিন ফসলি জমির মাটি কেটে এ কারখানায় বিক্রি করেছেন তারা। অভিযোগ আছে, জমির মালিকদের প্রলোভন, ভয়ভীতি কিংবা কূটকৌশল খাটিয়ে রাতের অন্ধকারে মাটি কেটে নেন তারা। সম্প্রতি এলাকার কৃষকরা ফসলি জমির মাটি কাটতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে একাট্টা হয়েছেন এবং মামলা করেছেন ‘মাটিখেকো’ চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ইট তৈরির কারখানাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ঘিওর উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশও কেন কার্যকর করা হচ্ছে না, তা রহস্যজনক।
প্রক্সি আত্মসমর্পণ!
মাদক মামলার আসামির বদলে জালিয়াতি করে অন্য ব্যক্তির জেল খাটার অভিনব এক ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে। জানা যায়, ২০২০ সালের আগস্টে উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল, গাঁজাসহ আটক করা হয় আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে। তবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন মাদকচক্রের মূল হোতা উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান। এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বিচারে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় পলাতক ওই ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এরপর ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট নাজমুল হাসান পরিচয় দিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন গাজীপুরের মিরাজুল ইসলাম। এর মধ্যে সাত বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। আপিল শুনানির শেষ পর্যায়ে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ চেয়ে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এরপর আদালতে আবেদন জানালে ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় নিম্ন আদালতের এক আইনজীবী বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনেন। তখন প্রধান বিচারপতি আপিল নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চে পাঠান। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবী ও কারা কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন হাইকোর্ট। বলার অপেক্ষা রাখে না, জালিয়াতি করে প্রকৃত ব্যক্তির বদলে অন্য ব্যক্তির জেল খাটার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর ফলে প্রকৃত আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এ ধরনের ঘটনা আদালতের ভাবমূর্তির জন্যও ক্ষতিকর। প্রশ্ন হলো, সংশ্লিষ্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল? আসামিকে কী প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করা হয়েছে, তার প্রমাণপত্র-হলফনামাসহ বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে হাইকোর্ট যে ব্যাখ্যা চেয়েছেন, সংশ্লিষ্টরা তার কী জবাব দেন, তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম আমরা। যে বা যারাই এ ঘটনার জন্য দায়ী হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে এমন ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি কখনো না হয়। সেই সঙ্গে মাদক মামলার মূল হোতা নাজমুল হাসানকে দ্রুত গ্রেফতারের পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরি। তার পরিচয়ে অন্য এক ব্যক্তি কেন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন, সেটাও উদ্ঘাটিত হওয়া প্রয়োজন।
মাদক মামলার আসামির বদলে জালিয়াতি করে অন্য ব্যক্তির জেল খাটার অভিনব এক ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে। জানা যায়, ২০২০ সালের আগস্টে উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল, গাঁজাসহ আটক করা হয় আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে। তবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন মাদকচক্রের মূল হোতা উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান। এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বিচারে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় পলাতক ওই ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এরপর ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট নাজমুল হাসান পরিচয় দিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন গাজীপুরের মিরাজুল ইসলাম। এর মধ্যে সাত বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। আপিল শুনানির শেষ পর্যায়ে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ চেয়ে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এরপর আদালতে আবেদন জানালে ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় নিম্ন আদালতের এক আইনজীবী বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনেন। তখন প্রধান বিচারপতি আপিল নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চে পাঠান। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবী ও কারা কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন হাইকোর্ট।
উপজেলা নির্বাচনে নিরাপত্তা ঝুঁকি
চার ধাপে অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রতিটি ধাপেই ভোটের দিন পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে-এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বুধবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-একটি গোয়েন্দা সংস্থা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ৭৮টি, দ্বিতীয় ধাপে ৭০টি ও তৃতীয় ধাপে ৪০টি উপজেলায় নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া আরেকটি সংস্থা শুধু প্রথম ধাপে ৪৯টি উপজেলায় নির্বাচনের দিন পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে ইসিকে আভাস দিয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে ইসিকে পরামর্শ দিয়েছে এ দুটি গোয়েন্দা সংস্থা। উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের ‘হস্তক্ষেপ’ রোধে কঠোর বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী না দেওয়া, দলীয় প্রতীক না রাখা এবং দলের মধ্যে কোনো ধরনের মতবিরোধ না রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া এ নির্বাচনে কেউ অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেছেন, নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার কাজে নিয়োজিত প্রশাসন শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। শান্তি বজায় রাখতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এবারই প্রথম পুরোপুরি অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরগুলোতে শোরগোল ছিল না, আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনেরও তেমন খবর মেলেনি। এরপরও স্থানীয় এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখা যাচ্ছে না বলে কোনো কোনো প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে নির্বাচন বর্জন করলেও প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি ও জামায়াতের প্রায় অর্ধশত প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সব মিলে ভোটের দিনগুলোয় পরিস্থিতি কী হবে, তা অনিশ্চিত। ইসি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে; কিন্তু এ প্রস্তুতিই শেষ কথা নয়। আমরা মনে করি, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশঙ্কাকে আমলে নিয়ে ইসি এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যাতে নির্বাচনের প্রতিটি ধাপই শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হয়। মনে রাখা দরকার, ইসির জন্য এ নির্বাচনও চ্যালেঞ্জের। সব বাধা পেরিয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি সফল হবে, এটাই প্রত্যাশা।
চার ধাপে অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রতিটি ধাপেই ভোটের দিন পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে-এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বুধবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-একটি গোয়েন্দা সংস্থা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ৭৮টি, দ্বিতীয় ধাপে ৭০টি ও তৃতীয় ধাপে ৪০টি উপজেলায় নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া আরেকটি সংস্থা শুধু প্রথম ধাপে ৪৯টি উপজেলায় নির্বাচনের দিন পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে ইসিকে আভাস দিয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে ইসিকে পরামর্শ দিয়েছে এ দুটি গোয়েন্দা সংস্থা।
কাতারের আমিরের সফর
মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ কাতারের আমিরের দুদিনের বাংলাদেশ সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ ও কাতার পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি প্রত্যক্ষ করেন। চুক্তিগুলো হলো-দুই দেশের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহার এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ, আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সমুদ্র পরিবহণ, পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং যৌথ ব্যবসায়িক পরিষদ প্রতিষ্ঠা। সমঝোতা স্মারকগুলোর (এমওইউ) মধ্যে রয়েছে-জনশক্তি কর্মসংস্থান (শ্রম), বন্দর (এমডব্লিউএএনআই কাতার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ), দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়াক্ষেত্র এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা। প্রতিবছর বাংলাদেশ কাতার থেকে বিপুল পরিমাণ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে থাকে। কাতার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য ২০১৭ সালে ১৫ বছরের জন্য একটি চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় ৪০ কনটেইনার জ্বালানি আমদানি করছে বাংলাদেশ। এমন দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আলোকে আমরা লাভবান হতে পারি। বাংলাদেশের একটি অন্যতম বড় শ্রমবাজার কাতার। সেখানে বর্তমানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই অদক্ষ শ্রমিক। দক্ষ শ্রমিকদের তুলনায় তারা সেখানে কম বেতন ও অন্যান্য সুবিধাও কম পেয়ে থাকেন। দেশটিতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কাতারে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। শিক্ষা ও গবেষণায় কাতার অনেকদূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। দেশটির সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকলে আমাদের দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী কাতারের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণার সুযোগ পেতে পারেন। বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, বন্ধুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী। কাতারের আমিরের এ সফরের মধ্য দিয়ে দুদেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। অনেক দেশ থেকে কাতার খাদ্যপণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশ থেকেও কাতারে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। দেশটির আমদানি-রপ্তানির বড় অংশই হয় বেসরকারি খাতে। কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাড়লে দুদেশই উপকৃত হবে। দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বের সম্পর্ক এবং আমিরের সফরকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে তার নামে রাজধানীতে একটি পার্ক ও সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। মিরপুরের কালশী এলাকার বালুর মাঠ নামক স্থানে পার্কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মিরপুরের ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে কাতারের আমিরের নামে। এখন থেকে এ সড়ক ও পার্ক শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি অ্যাভিনিউ এবং শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি পার্ক নামে পরিচিত হবে। কাতারের আমিরের সফরকে বিনিয়োগের সম্ভাবনা হিসাবে দেখছেন বহু বিনিয়োগকারী। ব্যবসা ও বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশ যাতে উপকৃত পারে, সে জন্য জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা দরকার।
মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ কাতারের আমিরের দুদিনের বাংলাদেশ সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ ও কাতার পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি প্রত্যক্ষ করেন। চুক্তিগুলো হলো-দুই দেশের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহার এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ, আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সমুদ্র পরিবহণ, পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং যৌথ ব্যবসায়িক পরিষদ প্রতিষ্ঠা। সমঝোতা স্মারকগুলোর (এমওইউ) মধ্যে রয়েছে-জনশক্তি কর্মসংস্থান (শ্রম), বন্দর (এমডব্লিউএএনআই কাতার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ), দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়াক্ষেত্র এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কয়েকটি প্রস্তাব রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব রক্ষায় যুদ্ধে ব্যবহৃত অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান (ন্যাপ) এক্সপো-২০২৪’ এবং ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (বিসিডিপি)’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই। এজন্য প্রয়োজন অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সহিষ্ণুতা শক্তিশালী করা এবং ঝুঁকি হ্রাসে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া। বস্তুত জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রতিটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হলেও পরে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি লক্ষ করা যায় না। এ ধারার পরিবর্তন দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও ক্ষতি মোকাবিলা করা বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। যেহেতু শিল্পোন্নত দেশগুলোর কারণেই এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে, তাই দায় স্বীকারের পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ক্ষতিপূরণ প্রদানেও তাদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। তাদের জীবনমানের পরিবর্তনে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ জনগোষ্ঠীর বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। তাই তাদের জীবনমানের পরিবর্তনে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে নিতে হবে বিশেষ উদ্যোগ। পরিবেশের আরও অবনতি রোধে প্যারিস চুক্তির সব ধারাসহ প্রাসঙ্গিক সব বৈশ্বিক চুক্তি ও প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে বিশ্বাবাসীকে আন্তরিক হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এরই মধ্যে সমগ্র বিশ্বে পড়তে শুরু করেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বে নানামুখী সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের কয়েক কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে লবণাক্ত পানি উপকূলের আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করছে। উপকূলীয় এলাকায় কর্মসংস্থান না হওয়ায় দলে দলে মানুষ রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে চলে যাচ্ছে। শহরমুখী এ জনস্রোতের কারণে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে নানামুখী সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকাতে বিশ্ববাসী একমত হলেও এ সংকট দিনদিন আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। এর ফলে আমাদের দেশ কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা দেশের সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য মূলত শিল্পোন্নত দেশগুলো দায়ী। এ দায় তারা স্বীকারও করছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শিল্পোন্নত দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, সেসব বাস্তবায়নে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এমনকি এক্ষেত্রে এসব দেশের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর উচিত বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশে থাকা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এ সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এ সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপুল অর্থ বরাদ্দ করাই যথেষ্ট নয়। সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কয়েকটি প্রস্তাব রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব রক্ষায় যুদ্ধে ব্যবহৃত অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
ট্রেজারি বিলের সুদে ঊর্ধ্বগতি
দেশে চড়া মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে আইএমএফ-এর পরামর্শে মুদ্রানীতি ব্যবহার করতে গিয়ে সরকারকে ঋণের সুদহার বাড়াতে হয়েছে। ফলে ‘পাগলা ঘোড়ার’ গতিতে বেড়েছে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-গত দুই বছরে এর সুদ বেড়েছে সাড়ে তিনগুণের বেশি। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অন্যান্য ঋণের সুদহারও। একই সঙ্গে অন্যান্য বিল বন্ডের সুদহারও বেড়েছে। ফলে ব্যাংক খাতে এখন সুদ বাড়ার দৌড় চলছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ঋণগ্রহীতারা। ট্রেজারি বিলের সুদ সাড়ে তিনগুণের বেশি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদ ৪ থেকে বেড়ে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও মূল্যস্ফীতির হার কমেনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে দাম বাড়তে থাকে। তখন বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতিও বাড়তে থাকে। বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ শতাংশের ঘরে ওঠে, যা দেড় বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে। পরিতাপের বিষয়, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশ সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। উল্লেখ্য, দেশের বেশির ভাগ উদ্যোক্তা ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন খাতে বাড়তি ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে বহু উদ্যোক্তা এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছেন। তার ওপর ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়লে শিল্প টিকিয়ে রাখাই কঠিন হবে। স্বভাবতই এভাবে সুদের হার বাড়তে থাকলে শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হবে; বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমবে। কারণ, এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে; উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে এবং কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। ফলে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে দেশ। যারা অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে সময়মতো উৎপাদনে যেতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাদের ওপর ঋণের বাড়তি বোঝা চাপলে খেলাপি হওয়ার আশঙ্কাও স্বভাবতই বেড়ে যাবে। এমন অবস্থায় আমরা মনে করি, উচ্চ সুদ দিয়ে কোনোভাবেই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা যাবে না। তাই সুদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। তা না হলে উৎপাদন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান-সর্বত্র এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের শিল্প খাত যাতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সক্ষম হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির কথা বিবেচনায় নিয়েই ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে হবে। উদ্যোক্তা ও ভোক্তার কথা চিন্তা করে সরকার ঋণের সুদহার কমানোর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
দেশে চড়া মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে আইএমএফ-এর পরামর্শে মুদ্রানীতি ব্যবহার করতে গিয়ে সরকারকে ঋণের সুদহার বাড়াতে হয়েছে। ফলে ‘পাগলা ঘোড়ার’ গতিতে বেড়েছে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-গত দুই বছরে এর সুদ বেড়েছে সাড়ে তিনগুণের বেশি। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অন্যান্য ঋণের সুদহারও। একই সঙ্গে অন্যান্য বিল বন্ডের সুদহারও বেড়েছে। ফলে ব্যাংক খাতে এখন সুদ বাড়ার দৌড় চলছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ঋণগ্রহীতারা।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জালিয়াতি: জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যদিও এ ব্যবস্থার উন্নয়নে পাঠ্যবই, সিলেবাস থেকে শুরু করে পরীক্ষা পদ্ধতিতে নানা সংস্কার হয়েছে। এক সময় কারিগরি শিক্ষাকে অনেকে মূল্যায়ন না করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনমনে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই এখন কারিগরি শিক্ষাকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণের মাধ্যম হিসাবে গণ্য করেন। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহও বেড়েছে শিক্ষার্থীদের। তবে প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার, প্রচলিত এ কথাটি যেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে ঘিরে সাম্প্রতিক ঘটনায় যথার্থতা পেয়েছে। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট অরক্ষিত থাকার সুযোগ নিয়েছে জালিয়াতচক্র। সক্রিয় এ চক্রের সদস্যরা অর্থের বিনিময়ে জাল সার্টিফিকেট বাণিজ্য করেছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এ অপকর্মের সঙ্গে বোর্ডেরই কতিপয় কর্মকর্তা জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এমনকি ওয়েবসাইট পরিচালনায় অর্থাৎ সাইটে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন-বিয়োজনে গোপন পাসওয়ার্ড ব্যবহারের কথা থাকলেও খোদ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছেই নাকি ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড নেই। এরই মধ্যে সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও জালিয়াতির অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের খোদ চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া জালিয়াতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চেয়ারম্যানের স্ত্রী এবং বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন-নিবেদনের মূল ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। মূল ব্যক্তি না হলেও অভিযুক্ত সিস্টেম অ্যানালিস্টের কাছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের গোপন পাসওয়ার্ড ছিল। অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর তৈরি, রেজাল্ট পরিবর্তন-পরিবর্ধন, নাম ও জন্মতারিখ সংযোজন করতেন তিনি। ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রি করা সার্টিফিকেট কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোডও করতেন। এর ফলে বাংলাদেশসহ যে কোনো দেশে বসে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে গুগলে সার্চ করলে ওয়েবসাইট থেকে তা সঠিক হিসাবেই দেখা যেত। এ অপকর্মের স্বার্থে বিভিন্ন উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি কারিগরি স্কুল ও কলেজ, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রিন্সিপালদের সঙ্গেও ছিল তার গোপন যোগাযোগ। কোনো সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ, তার ওপর সেটি যদি হয় শিক্ষা বোর্ডের মতো সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের, তাহলে প্রতিক্রিয়ার আর কোনো ভাষা থাকে না। এ সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও জালিয়াতির সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, চূড়ান্ত তদন্ত শেষে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা আরও মনে করি, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তোলার মূল হাতিয়ার শিক্ষা বোর্ডগুলোকে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি সার্টিফিকেটের মতো মূল্যায়নকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডকে আরও বেশি সতর্কতা ও নজরদারির আওতায় আনা দরকার। সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র তৈরিতে বিশেষ কাগজ, কালিসহ সংবেদনশীল যেসব উপাদান ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতেও সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যদিও এ ব্যবস্থার উন্নয়নে পাঠ্যবই, সিলেবাস থেকে শুরু করে পরীক্ষা পদ্ধতিতে নানা সংস্কার হয়েছে। এক সময় কারিগরি শিক্ষাকে অনেকে মূল্যায়ন না করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনমনে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই এখন কারিগরি শিক্ষাকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণের মাধ্যম হিসাবে গণ্য করেন। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহও বেড়েছে শিক্ষার্থীদের। তবে প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার, প্রচলিত এ কথাটি যেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে ঘিরে সাম্প্রতিক ঘটনায় যথার্থতা পেয়েছে। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট অরক্ষিত থাকার সুযোগ নিয়েছে জালিয়াতচক্র। সক্রিয় এ চক্রের সদস্যরা অর্থের বিনিময়ে জাল সার্টিফিকেট বাণিজ্য করেছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এ অপকর্মের সঙ্গে বোর্ডেরই কতিপয় কর্মকর্তা জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এমনকি ওয়েবসাইট পরিচালনায় অর্থাৎ সাইটে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন-বিয়োজনে গোপন পাসওয়ার্ড ব্যবহারের কথা থাকলেও খোদ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছেই নাকি ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড নেই। এরই মধ্যে সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও জালিয়াতির অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের খোদ চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া জালিয়াতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চেয়ারম্যানের স্ত্রী এবং বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ক্রমাবনতিশীল ঢাকার পরিবেশ: একদিন কি মৃত শহরে পরিণত হবে?
রাজধানী ঢাকা একসময় ছিল দেশের অপরাপর অঞ্চলের মানুষের কাছে স্বপ্নের শহর। কেউ এখানে আসত জীবিকার তাগিদে, কেউবা রাজধানীর সৌন্দর্য দেখতে। ঢাকা একসময় আক্ষরিক অর্থেই ছিল ছিমছাম গোছানো, দূষণমুক্ত শহর। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই ঢাকা এখন এক অসহনীয় বিরক্তিকর শহর। পদে পদে বিপদ এখানে। কংক্রিট আর ইট-পাথরের এ শহরে নির্মল বায়ু সেবন এক দুরাশা যেন। নেই সবুজায়ন, আছে বায়ুদূষণ থেকে শুরু করে নানা ধরনের দূষণ, যানজটে স্থবির এখানকার জীবনপ্রবাহ। কখনো তীব্র গরম, কখনো সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা এখানকার সাধারণ অভিজ্ঞতা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে স্থাপনা ও কংক্রিট আচ্ছাদিত স্থান থাকার কথা ৪০ শতাংশ, রয়েছে ৮২ শতাংশ। সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত জায়গা থাকার কথা ৬০ শতাংশ, রয়েছে মাত্র ২৪ শতাংশ। অগ্নিকাণ্ড ঘটছে আকছার। ওদিকে প্রতি একরে বসবাস করার কথা ১০০ থেকে ১২০ জনের, বিপরীতে বাস করছেন ৪০০ থেকে ৫০০ জন। এক কথায় বললে, এখন পর্যন্ত যদিও বা মানুষ কোনোভাবে বাস করছে এখানে, পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় একসময় হয়তো এ শহর থেকে পালাতে চাইবে অনেকে। ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল সেই ব্রিটিশ আমলেই, ১৯১৭ সালে। ঢাকা সমতল ভূমি আর বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা, এ কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছিল সেই পরিকল্পনা। কিন্তু পরিকল্পনা কাগজপত্রেই রয়ে গেছে, বাস্তব রূপ পায়নি। বরং উলটো পথেই পরিচালিত হয়েছে পরিকল্পনাহীন এর সম্প্রসারণ। ১৯১৭ সালের পর আরও একবার ১৯৫৯ সালে মাস্টারপ্ল্যান করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। স্বাধীনতার পর রাজউকের নেতৃত্বে দেশের পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) নামে আরও একটি মাস্টারপ্ল্যান করে। এগুলোর সবই পণ্ডশ্রম হয়েছে বলা যায়। পৃথিবীর সব উন্নত দেশ তো বটেই, এমনকি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রধান শহরগুলো পরিকল্পনামাফিক গড়ে তোলা হয়। ঢাকার ক্ষেত্রে এ সুযোগ ছিলও; কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর উদাসীনতা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চরম স্বেচ্ছাচারিতা ঢাকাকে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আমাদের কথা হলো, এখন থেকেই উলটোরথের যাত্রা শুরু না করলে ঢাকা একদিন মৃত শহরে পরিণত হবে। আমরা কেউই তা চাই না। ঢাকার বসবাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে অবশ্যই। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে এ শহরের যতটা ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি কীভাবে পোষানো যায়, সেই চিন্তা করতে হবে নতুন করে। ঢাকার সৌন্দর্য জলাঞ্জলি নয়, এর স্বাভাবিক বিকাশ চাই আমরা।
রাজধানী ঢাকা একসময় ছিল দেশের অপরাপর অঞ্চলের মানুষের কাছে স্বপ্নের শহর। কেউ এখানে আসত জীবিকার তাগিদে, কেউবা রাজধানীর সৌন্দর্য দেখতে। ঢাকা একসময় আক্ষরিক অর্থেই ছিল ছিমছাম গোছানো, দূষণমুক্ত শহর। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই ঢাকা এখন এক অসহনীয় বিরক্তিকর শহর। পদে পদে বিপদ এখানে। কংক্রিট আর ইট-পাথরের এ শহরে নির্মল বায়ু সেবন এক দুরাশা যেন। নেই সবুজায়ন, আছে বায়ুদূষণ থেকে শুরু করে নানা ধরনের দূষণ, যানজটে স্থবির এখানকার জীবনপ্রবাহ। কখনো তীব্র গরম, কখনো সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা এখানকার সাধারণ অভিজ্ঞতা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে স্থাপনা ও কংক্রিট আচ্ছাদিত স্থান থাকার কথা ৪০ শতাংশ, রয়েছে ৮২ শতাংশ। সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত জায়গা থাকার কথা ৬০ শতাংশ, রয়েছে মাত্র ২৪ শতাংশ। অগ্নিকাণ্ড ঘটছে আকছার। ওদিকে প্রতি একরে বসবাস করার কথা ১০০ থেকে ১২০ জনের, বিপরীতে বাস করছেন ৪০০ থেকে ৫০০ জন। এক কথায় বললে, এখন পর্যন্ত যদিও বা মানুষ কোনোভাবে বাস করছে এখানে, পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় একসময় হয়তো এ শহর থেকে পালাতে চাইবে অনেকে।
নিয়ন্ত্রণহীন কিশোর গ্যাং: সর্বাগ্রে দরকার গডফাদারদের দমন
রাজধানীসহ সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ক্রমেই বাড়ছে। গত বুধবার রাতে নোয়াখালীর সেনবাগে বৈশাখী মেলায় জুয়ার আসর বসানোকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে এক কলেজছাত্র খুন হয়েছে। এদিকে শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ ঢাকার অদূরে সাভারের পাড়া-মহল্লায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মদদে গড়ে উঠেছে শতাধিক কিশোর গ্যাং। জানা গেছে, স্থানীয় নেতাকর্মীরা দুই দশক আগেও নিজেদের শক্তি ও অবস্থান জানান দিতে এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিত; তখন গুলি করে হত্যার প্রবণতা ছিল সর্বোচ্চ। তবে এসব ঘটনায় আইনি জটিলতায় পড়তে হয় বিধায় তারা এখন ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। বিভিন্ন আর্থিক স্বার্থ হাসিলে তারা কিশোর গ্যাং তৈরি করে এদের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। কারণ, কিশোর অপরাধে আইনের দিক থেকে অনেকটাই ছাড় পাওয়া যায়। ফলে নেতাকর্মীরা এখন কিশোরদের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জমি দখল, ডিশ ও নেট ব্যবসা, ছিনতাই, অপহরণ, মারামারি, অস্ত্রবাজিসহ খুনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব গ্যাংয়ে স্কুল পড়ুয়া ও সদ্য কলেজে পা দেওয়া ছাত্রদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সি তরুণরাও এসব গ্যাংয়ে রয়েছে। অভিযোগ আছে, শতাধিক গ্যাংয়ে দুই সহস্রাধিক সদস্য রয়েছে। অবস্থার এতটাই অবনতি ঘটেছে যে, গত এক মাসে সাভারে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে চারজন খুন হয়েছে। শুধু আমরাই নয়, ইতঃপূর্বে নানা মহল এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কিশোর গ্যাং দমনে চালিয়েছে বিশেষ অভিযান। তা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। এর কারণ হলো, কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকরা ক্ষমতাশালী এবং অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের, বিশেষত ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এসব পৃষ্ঠপোষকের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা, এমনকি সাবেক সংসদ-সদস্যও। কাজেই কিশোর গ্যাং দমন করতে হলে কেবল গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতার করলেই চলবে না, তাদের গডফাদারদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে ব্যবস্থা। বস্তুত কিশোর গ্যাংগুলো ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত। তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে অহরহ খুন-খারাবি করছে এই কিশোররা। এ অবস্থায় কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সবার আগে প্রয়োজন এদের পৃষ্ঠপোষকদের দমন করা। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা। এক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্যের সুযোগ নেই। পুলিশ বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের পাশাপাশি তাদের পৃষ্ঠপোষকদের দমনে তারা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ কঠোর অবস্থানের যেন পরিবর্তন না হয় কোনোভাবেই। অন্যদিকে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি আমরা। কিশোর গ্যাংয়ের কারণে দেশে অপরাধই যে শুধু বাড়ছে তাই নয়, এতে সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম জীবনপাঠের গোড়াতেই পরিচিত ও সম্পৃক্ত হচ্ছে অপরাধের সঙ্গে। আমরা আশা করব, সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন। কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন কোনো অদৃশ্য বাধার সম্মুখীন না হয়; বরং তারা সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা পায়, এটাই প্রত্যাশা।
রাজধানীসহ সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ক্রমেই বাড়ছে। গত বুধবার রাতে নোয়াখালীর সেনবাগে বৈশাখী মেলায় জুয়ার আসর বসানোকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে এক কলেজছাত্র খুন হয়েছে। এদিকে শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ ঢাকার অদূরে সাভারের পাড়া-মহল্লায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মদদে গড়ে উঠেছে শতাধিক কিশোর গ্যাং। জানা গেছে, স্থানীয় নেতাকর্মীরা দুই দশক আগেও নিজেদের শক্তি ও অবস্থান জানান দিতে এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিত; তখন গুলি করে হত্যার প্রবণতা ছিল সর্বোচ্চ। তবে এসব ঘটনায় আইনি জটিলতায় পড়তে হয় বিধায় তারা এখন ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। বিভিন্ন আর্থিক স্বার্থ হাসিলে তারা কিশোর গ্যাং তৈরি করে এদের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। কারণ, কিশোর অপরাধে আইনের দিক থেকে অনেকটাই ছাড় পাওয়া যায়। ফলে নেতাকর্মীরা এখন কিশোরদের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জমি দখল, ডিশ ও নেট ব্যবসা, ছিনতাই, অপহরণ, মারামারি, অস্ত্রবাজিসহ খুনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব গ্যাংয়ে স্কুল পড়ুয়া ও সদ্য কলেজে পা দেওয়া ছাত্রদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সি তরুণরাও এসব গ্যাংয়ে রয়েছে। অভিযোগ আছে, শতাধিক গ্যাংয়ে দুই সহস্রাধিক সদস্য রয়েছে। অবস্থার এতটাই অবনতি ঘটেছে যে, গত এক মাসে সাভারে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে চারজন খুন হয়েছে।
তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন: বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
দেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। এর প্রমাণ আমরা পাচ্ছি প্রকৃতিতে। রাজধানীসহ সারা দেশে মৃদু থেকে মাঝারি, কোথাও কোথাও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় পরপর তিনদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল গত বুধবার, ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থায় সারা দেশে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাজধানীর তাপমাত্রা গত বেশ কয়েকদিন ধরে ৩৭ ডিগ্রিতে উঠছে। তীব্র গরমে স্বভাবতই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বিশেষজ্ঞরা মানুষকে, বিশেষ করে অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ঘরের বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু জীবিকার তাগিদে মানুষকে বাইরে বের হতেই হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, চলতি মাসে দুই থেকে চারটি মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং এক থেকে দুটি তীব্র থেকে তীব্রতর তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। কাজেই এ মাসে সবারই উচিত চলাফেরায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা। গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। বেড়ে যায় তাপমাত্রা। এ পরিস্থিতিতে হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে, বিশেষ করে যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ, যাদের হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের। এছাড়া ঊষ্ণ আবহাওয়ার কারণে সর্দিজ্বর এবং ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর চাপ বেড়েছে। জানা গেছে, প্রচণ্ড দাপদাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) বা কলেরা হাসপাতালে ভিড় করছে। শিশু হাসপাতালেও ভিড় বাড়ছে শিশু রোগীদের। যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে শিশু, বেশি বয়স্ক ব্যক্তি এবং দরিদ্র তথা অপুষ্ট জনগোষ্ঠীর। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই তীব্র গরমে শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট সবচেয়ে বেশি। তারা রোদে পুড়ে, ঘাম ঝরিয়ে শ্রমের বিনিময়ে যে টাকা রোজগার করে, তাই দিয়েই তাদের পরিবার-পরিজনের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। আর এ সময় তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই নিজেদের বিষয়ে সতর্ক থাকার পাশাপাশি প্রত্যেক সামর্থ্যবানের উচিত এই তীব্র গরমে শ্রমজীবী মানুষকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা, তাদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
দেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। এর প্রমাণ আমরা পাচ্ছি প্রকৃতিতে। রাজধানীসহ সারা দেশে মৃদু থেকে মাঝারি, কোথাও কোথাও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় পরপর তিনদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল গত বুধবার, ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থায় সারা দেশে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাজধানীর তাপমাত্রা গত বেশ কয়েকদিন ধরে ৩৭ ডিগ্রিতে উঠছে। তীব্র গরমে স্বভাবতই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বিশেষজ্ঞরা মানুষকে, বিশেষ করে অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ঘরের বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু জীবিকার তাগিদে মানুষকে বাইরে বের হতেই হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, চলতি মাসে দুই থেকে চারটি মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং এক থেকে দুটি তীব্র থেকে তীব্রতর তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। কাজেই এ মাসে সবারই উচিত চলাফেরায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা।
ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম
দেশে এপ্রিলে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম প্রলম্বিত হয়। এ-সংক্রান্ত এক জরিপের তথ্য প্রকাশ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, এ সময়ে শ্বাসতন্ত্রের রোগীদের মধ্যে প্রতি চারজনে একজন ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হন। বলা যায় ঘরে ঘরেই ফ্লু। কাজেই এ ব্যাপারে সবার সতর্ক থাকা দরকার। ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে হঠাৎ করেই তীব্র জ্বর হয়, যা তিন থেকে চারদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। রোগীর সারা গায়ে ও মাথায় তীব্র ব্যথা হতে পারে। এ রোগের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, আক্রান্ত ব্যক্তি প্রচণ্ড ক্লান্তিবোধ করেন। কারও দেহে এসব লক্ষণ দেখা দিলে তাকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেকে ইনফ্লুয়েঞ্জাকে তেমন গুরুত্ব দেন না, মনে করেন তিন-চারদিনে এমনিতেই সেরে যাবে। বাস্তবতা হলো, ইনফ্লুয়েঞ্জা কোনো মামুলি রোগ নয়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাঁপানি ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে, ফ্লু হলে তাদের জটিলতা বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্লু সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এ মৃত্যুর হার বেশি। কাজেই কারও ফ্লু হলে হেলাফেলা করা উচিত নয়। ফ্লু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মৌসুম শুরুর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নেওয়া উচিত। কারও জ্বর, সর্দি, কাশি হলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তা ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে এ মৌসুমে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে ফ্লু থেকে দূরে থাকা যায়। যেমন-ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, মাস্ক পরা, কাশি দেওয়ার সময় শিষ্টাচার মেনে চলা। বস্তুত করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকালে এসব স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে জনগণ একরকম অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। সেগুলো আবার মেনে চলা উচিত। এতে শুধু ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা নয়, আরও অনেক সংক্রামক রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
দেশে এপ্রিলে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম প্রলম্বিত হয়। এ-সংক্রান্ত এক জরিপের তথ্য প্রকাশ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, এ সময়ে শ্বাসতন্ত্রের রোগীদের মধ্যে প্রতি চারজনে একজন ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হন। বলা যায় ঘরে ঘরেই ফ্লু। কাজেই এ ব্যাপারে সবার সতর্ক থাকা দরকার। ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ভাইরাসজনিত রোগ।
মহাসড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ
ফরিদপুরের সড়ক দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঝালকাঠিতে আরেকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এক পরিবারের সাতজনসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন। জানা যায়, ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় খুলনা থেকে আসা সিমেন্টবাহী এক ট্রাকের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সেটি কয়েকটি যানবাহনকে ধাক্কা দেয়, এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বুধবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঝালকাঠি-রাজাপুর সড়কটি উপজেলা সংযোগ সড়ক। সরু এ সড়কে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকার নিয়ম ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। অথচ ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে আঘাত হেনেছে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকটি। গত দুদিনে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আরও কয়েকজন নিহত হয়েছেন। বস্তুত সড়ক দুর্ঘটনা পরিণত হয়েছে নিত্যঘটনায়। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত মার্চ মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৬৫ জন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন ১ হাজারের বেশি মানুষ। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক দশকে দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। সড়কে চলছে লাখ লাখ অবৈধ যানবাহন। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ মোটেই দৃশ্যমান নয়। ফলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে সড়ককে নিরাপদ করতে কর্তৃপক্ষ নানা আশ্বাস দিয়েছিল; কিন্তু বাস্তবতা হলো সড়ককে এখনো নিরাপদ করা যায়নি। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ছাড়াও অনেকে পঙ্গু হচ্ছেন। প্রাণ হারানো বা পঙ্গু হওয়া ব্যক্তিটি যদি পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি হন, তাহলে সেই পরিবারটির অবস্থা কী হয়, তা সহজেই অনুমেয়। সড়ক দুর্ঘটনার নানা কারণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো-গাড়ির বেপরোয়া গতি, চালকের অদক্ষতা, চালকের ক্লান্তি, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, সড়কের ত্রুটি, সড়কের পাশে হাটবাজার, ত্রুটিযুক্ত যানবাহন ইত্যাদি। সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে আশা করা যায়, দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে। কম গতির নিষিদ্ধ যানবাহনের কারণেও মহাসড়কে ঝুঁকি বাড়ছে। সড়ক-মহাসড়কের অন্যান্য ঝুঁকি এড়াতেও নিতে হবে পদক্ষেপ। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করা হলেও তা যে অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে, দেশে প্রতিদিন ঘটা দুর্ঘটনাগুলোই এর বড় প্রমাণ। দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাসহ সড়ক ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে লোকবল কম, এ তথ্য আমরা জানি। তবে দুর্নীতি রোধে কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে কম লোকবল নিয়েও বিভিন্ন ধরনের অভিযানে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া সম্ভব। ক্লান্ত-শ্রান্ত চালক গাড়ি চালালে স্বভাবতই তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। কর্তৃপক্ষকে এসব দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। পরিবহণ কর্মীদের জীবনমানের উন্নয়নেও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যত পরিকল্পনাই গ্রহণ করা হোক না কেন, দুর্নীতি রোধ করা না গেলে কাঙ্ক্ষিত ফল মিলবে কিনা সন্দেহ।
ফরিদপুরের সড়ক দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঝালকাঠিতে আরেকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এক পরিবারের সাতজনসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন।
অল্পের জন্য রক্ষা
পাইলটের দক্ষতায় ঈদের দিন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শতাধিক যাত্রী প্রাণে বেঁচে গেছেন। যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-এদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাঠমান্ডুগামী একটি ফ্লাইট (বিজি-৩৭১) উড্ডয়নের সময় চাকা ফেটে যায়। জানা যায়, রানওয়ের মধ্যে থাকা একটি লাইটবক্স ভেঙে বেরিয়ে আসার কারণে বিমানের দ্রুতগামী চাকায় আঘাত লেগে এ ঘটনা ঘটে। তবে টেকঅফের ঠিক আগ মুহূর্তে হওয়ায় বিমানটি পাইলটের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এ কারণে চাকার টায়ার ফেটে যাওয়ার পরও ফ্লাইটটি আকাশে উঠে যায়। পরবর্তী সময়ে পাইলট দক্ষতার সঙ্গে ফের বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করতে সক্ষম হলে প্রাণে বেঁচে যান যাত্রীরা। বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষায় পাইলটদ্বয় সাহসিকতার সঙ্গে যে কৌশলে বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করিয়েছেন, তা সাধুবাদযোগ্য। দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত বছরের গোড়ার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড্ডয়নের মুহূর্তে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৬০২ ফ্লাইটের একটি চাকা ফেটে যায়। রানওয়েতেই এমন দুর্ঘটনায় যাত্রীরা বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পান। আমরা মনে করি, শুধু বিমানের ফিটনেসই নয়, উড্ডয়ন ও অবতরণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতে রানওয়ের দিকেও প্রতিনিয়ত লক্ষ রাখা প্রয়োজন। স্মরণে আছে, গত বছরের মাঝামাঝিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ঝুঁকিমুক্ত রানওয়ে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের একটি পূর্বশর্ত হলেও অভিযোগ উঠেছিল, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির রানওয়ের পরিচ্ছন্নতার কাজ সুইপিং গাড়ির পরিবর্তে ঝাড়ু দিয়ে চালানো হচ্ছিল। এ ঘটনায় আমরা উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলাম। তবে সেই উদ্বেগ ও কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ যে কাজে দেয়নি, সাম্প্রতিক ঘটনাই তার প্রমাণ। পুনরায় বলতে হচ্ছে, নিরাপত্তার স্বার্থেই কর্তৃপক্ষকে উড়োজাহাজের ফিটনেস এবং বিমানবন্দরের রানওয়েসহ আনুষঙ্গিক বিষয় নিরাপদ রয়েছে কিনা তা নিশ্চিতে সদা সজাগ ও তৎপর থাকতে হবে। এর সঙ্গে জানমালের নিরাপত্তা তো বটেই, বিশ্বের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তির প্রশ্নও জড়িত। একইসঙ্গে আমরা আশা করব, যাদের দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার কারণে এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। যাত্রীসেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি বিমান ওঠানামাসহ সব ধরনের কারিগরি দিক দক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হবে এবং নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সব বিষয় খতিয়ে দেখে তবেই ফ্লাইট পরিচালনায় কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট থাকবে, এটাই প্রত্যাশা।
পাইলটের দক্ষতায় ঈদের দিন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শতাধিক যাত্রী প্রাণে বেঁচে গেছেন। যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-এদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাঠমান্ডুগামী একটি ফ্লাইট (বিজি-৩৭১) উড্ডয়নের সময় চাকা ফেটে যায়। জানা যায়, রানওয়ের মধ্যে থাকা একটি লাইটবক্স ভেঙে বেরিয়ে আসার কারণে বিমানের দ্রুতগামী চাকায় আঘাত লেগে এ ঘটনা ঘটে। তবে টেকঅফের ঠিক আগ মুহূর্তে হওয়ায় বিমানটি পাইলটের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এ কারণে চাকার টায়ার ফেটে যাওয়ার পরও ফ্লাইটটি আকাশে উঠে যায়। পরবর্তী সময়ে পাইলট দক্ষতার সঙ্গে ফের বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করতে সক্ষম হলে প্রাণে বেঁচে যান যাত্রীরা। বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষায় পাইলটদ্বয় সাহসিকতার সঙ্গে যে কৌশলে বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করিয়েছেন, তা সাধুবাদযোগ্য।
ঈদুল ফিতর: আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমাপ্রাপ্তির দিন
ঈদ খুশির দিন। শ্রমের পারিশ্রমিক প্রাপ্তির দিন। পুরস্কার লাভের দিন। সন্তুষ্টি ও ক্ষমাপ্রাপ্তির দিন। অফুরন্ত দানের দ্বার উন্মুক্ত করার দিন। বড়ত্ব-মহত্ব প্রকাশের দিন। তাই ঈদের কল্পনা করতেই প্রতিটি ঈমানদার নারী-পুরুষের শরীরে সৃষ্টি হয় শিহরণ। পুলকিত হয় তাদের তনুমন।  কারণ এদিনের পুরস্কার লাভের জন্যই তারা দীর্ঘ এক মাস ক্ষুধা ও অনাহারে থেকেছেন, সিয়াম সাধনা করেছেন, তারাবির নামাজ পড়েছেন, কিয়ামুল লাইল করেছেন ও সাহরি খেয়েছেন। মহান মালিকের দরবারে রোনাজারি ও কাকুতি-মিনতি করেছেন। আর আজ তাদের জন্য মহান মালিক সন্তুষ্টি ও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করবেন।  হজরত আনাস (র) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন ঈদের দিন হয় তখন আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! সেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক কি হবে যে তার কাজ যথাযথ সম্পাদন করেছে?  তারা উত্তরে বললেন, হে আমাদের প্রতিপালক! তার বিনিময় ইহাই যে, তাকে পুরোপুরি পারিশ্রমিক দেওয়া হোক। তখন আল্লাহতায়ালা বলবেন, হে আমার ফেরেশতারা! আমার বান্দারা তাদের প্রতি আমার অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে অতঃপর (ঈদগাহের দিকে) আমার কাছে প্রার্থনা করার জন্য তাকবির ধ্বনি দিয়ে যাচ্ছে। আমার ইজ্জত ও বুজুর্গি, সম্মান ও সুউচ্চ মর্যাদার কসম, আমি অবশ্যই তাদের প্রার্থনা কবুল করব। অতঃপর আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করবেন, তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। তোমাদের পাপগুলোকে পুণ্যে রূপান্তরিত করে দিলাম। ফলে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাবে। (আল মুজামুল কাবির লিত তাবারানি, হাদিস নং – ৬১৭, আত তারগিব ওয়াত তারহিব -৫৪৯) তাই মুমিনের কর্তব্য হলো, পবিত্র ঈদের দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলের বাতানো পথে ঈদ উদযাপন করা। ঈদ আনন্দ উৎসব উদযাপনের নামে বিজাতীয় কৃষ্টি-কালচার অনুসরণে পাপ এবং গর্হিত কাজে লিপ্ত না হওয়া।
ঈদ খুশির দিন। শ্রমের পারিশ্রমিক প্রাপ্তির দিন। পুরস্কার লাভের দিন। সন্তুষ্টি ও ক্ষমাপ্রাপ্তির দিন।
ঈদের নামাজের রাকাত ছুটে গেলে যেভাবে আদায় করবেন
শাওয়ালের চাঁদ মানে ঈদুল ফিতরের চাঁদ।আজ সন্ধ্যায় আকাশে হাসি দেবে শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ। শেষ হবে রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের পবিত্র রমজান ।  বৃহস্পতিবার উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের দিনের প্রধান আমল নামাজ। এই দিনটি শুরু হবে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে। অন্যান্য ফরজ নামাজের মত ঈদের নামাজও এক বা দুই রাকাত ছুটে যেতে পারে। তখন করণীয় কি? ছুটে যাওয়া নামাজ কিভাবে আদায় করবেন? কেউ যদি প্রথম রাকাতে ইমামের কেরাত পড়াকালীন সময়ে নামাজে শরিক হয় তাহলে প্রথমে তিনি তাকবিরে তাহরিমা এবং অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলে ইমামের অনুসরণ করবেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৫৭১৪) কেউ ইমামকে রুকুতে পেলো। এখন যদি দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলেও ইমামকে রুকুতে ধরতে পারবে বলে মনে হয় তাহলে তাই করতে হবে। আর যদি দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবির বলে ইমামকে রুকুতে পাওয়া যাবে না বলে মনে হয় তাহলে শুধু তাকবিরে তাহরীমা বলে রুকুতে চলে যাবে। রুকুতে গিয়ে হাত না উঠিয়ে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলবে। এরপর সময় থাকলে রুকুর তাসবিহ আদায় করবে। (আলবাহরুর রায়েক: ১/১৬১) কেউ যদি ২য় রাকাতে ইমামের সঙ্গে শরীক হয় তাহলে ইমাম সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে প্রথমে সূরা-কেরাত পড়বে এবং রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তাকবির বলবে।  অর্থাৎ ছুটে যাওয়া ১ম রাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতের মতো রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীর বলবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৫৮১৩) কেউ যদি দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর পর বা তাশাহুদের পর জামাতে শরীক হয় তার করণীয় কী?  এমন ব্যক্তি ইমামের সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে সূরা কেরাতের আগেই অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলবে। আর দ্বিতীয় রাকাতের কেরাতের পর অতিরিক্ত তাকবির বলে নামাজ শেষ করবেন। (ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৫)  ঈদের নামাজের রাকাত ছুটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ও যথেষ্ট বিব্রতকর। এতে করে ব্যক্তি নিজে মনে কষ্ট পান। সারা মাসের ইবাদত কবুল হয়েছে কিনা এমন সংশয়েও কেউ ভোগেন ।  যদিও এই নামাজের রাকাত ছুটে যাওয়া সাথে সারা মাসের ইবাদত কবুল না হওয়ার সম্পর্ক নেই। আল্লাহ তাআলা সকল রোজাদারকে রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের সৌরভে সিক্ত করুন।  লেখক: শিক্ষক, শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন চৌধুরীপাড়া মাদরাসা, ঢাকা- ১২১৯
শাওয়ালের চাঁদ মানে ঈদুল ফিতরের চাঁদ।আজ সন্ধ্যায় আকাশে হাসি দেবে শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ। শেষ হবে রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের পবিত্র রমজান ।
ঈদের নামাজের জরুরি কয়েকটি মাসয়ালা
আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের দুটি ঈদ দান করেছেন— ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। মুসলিমদের ঈদ ও উৎসব অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর উৎসব থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।  আল্লাহর জিকির ও তার বড়ত্বের ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয় মুসলিমদের ঈদ। ঈদের দিনে মুসলিমদের প্রথম ও প্রধান আমল হলো ঈদের নামাজ।  ঈদের নামাজ কাদের ওপর ওয়াজিব মাসায়ালা: যাদের ওপর জুমার নামাজ ফরজ, তাদের ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব।  অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, যেসব মুসলিম পুরুষ, জামাতে উপস্থিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের সক্ষমতা রাখে তাদের ঈদের নামাজ পড়তে হবে। (আলমুহিতুল বুরহানি ২/৪৭৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৬৫)  নারীদের ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়। অনুরূপ এমন অসুস্থ পুরুষ, যে ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের সক্ষমতা রাখে না, তার ওপরও ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়।  (কিতাবুল আছল ১/৩২৩; মাবসুত, সারাখসি ২/৪০; আলমুহিতুল বুরহানি ২/৪৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭) মুসাফির তথা যে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিমি দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে— এমন ব্যক্তির ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়। তবে সে যদি ঈদের নামাজ পড়ে তা হলে তা সহিহ হবে এবং এর সওয়াবও পাবে। (আততাজরিদ, কুদুরি ২/৯৮১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭) ঈদের নামাজের ওয়াক্ত ঈদের নামাজের ওয়াক্ত হচ্ছে— সূর্য উদিত হয়ে (নামাজের) নিষিদ্ধ সময় শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু করে জাওয়াল তথা সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার আগ পর্যন্ত।—এই সময়ের মধ্যেই ঈদের নামাজ পড়তে হবে। জাওয়ালের পর আর ঈদের নামাজ সহিহ হবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১১৩৫) আরও পড়ুন: ঈদের রাতে জান্নাত ওয়াজিব হয় যেসব আমলে ঈদুল আজহার নামাজ ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর দেরি না করে একটু তাড়াতাড়ি পড়া মুস্তাহাব। যাতে কুরবানির কাজ দ্রুত শুরু করা যায়। আর ঈদুল ফিতরের নামাজও ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি আদায় করে নেবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক, বর্ণনা ৫৬৫১; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ৬৭;) ঈদের নামাজের স্থান ঈদের নামাজ ঈদগাহে ও খোলা মাঠে পড়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খোলাফায়ে রাশেদিন সবাই ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়তেন।  হজরত আবু সাঈদ খুদরি (র) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন (ঈদের নামাজের জন্য) ঈদগাহে যেতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৯৬৫) হযরত আলী (র) বলেন, দুই ঈদে (ঈদের নামাজের জন্য) খোলা মাঠে যাওয়া সুন্নত। (আলমুজামুল আওসাত, তবারানি, হাদিস ৪০৪০) মাঠে ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকলে বিনা ওজরে মসজিদে ঈদের জামাত করবে না। তবে কোথাও বিনা জরুরতে এমনটি করা হলে ঈদের নামাজ আদায় হয়ে যাবে। প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে শহরে ঈদগাহ কম, বিধায় অধিকাংশ মসজিদে ঈদের জামাত হয়। জায়গা সংকুলান না হওয়া বা বৃষ্টি ইত্যাদির কারণে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়লে সুন্নতের খেলাফ হবে না।  ওজরের সময় মসজিদে পড়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হজরত আবু হুরায়রা (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—কোনো এক ঈদের দিন বৃষ্টি তাদের পেয়ে বসে। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১১৫৩) ঈদের নামাজে তায়াম্মুম নামাজে শরিক হওয়ার আগমুহূর্তে কারও ওজু না থাকলে এবং ওজু করতে গেলে জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে। হজরত আব্দুর রহমান ইবনুল কাসিম (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন— (ঈদের নামাজ) ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ে নেবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ৫৮৬৯)   হজরত ইবরাহিম নাখায়ি (রহ) বলেন— ঈদ ও জানাজার ক্ষেত্রে (ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায়) তায়াম্মুম করা যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা  ৫৮৬৮) -কিতাবুল আছল ১/৩২০;  আলমুহিতুল বুরহানি ২/৫০২ তবে জুমা ও ওয়াক্তিয়া নামাজে জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় তায়াম্মুমের ওই বিধান প্রযোজ্য নয়। আরও পড়ুন: ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ?
আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের দুটি ঈদ দান করেছেন— ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। মুসলিমদের ঈদ ও উৎসব অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর উৎসব থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
ঈদের রাতে জান্নাত ওয়াজিব হয় যেসব আমলে
পবিত্র মাহে রমজান শেষে যে রাত আগমন করে যাকে সহজে বুঝি আমরা চাঁদ রাত হিসেবে। এই রাতটি অত্যন্ত বরকতময় একটি রাত।  ঈদুল ফিতরের রাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার প্রাপ্তির রাত। এজন্য হাদিসে এই রাতকে পুরস্কারের রাত হিসেবে ব্যক্ত করা হয়েছে।  ফুকাহায়ে কেরামও দুই ঈদের রাতে জাগ্রত থাকাকে সুন্নত লিখেছেন। তাই এ রাতের বিশেষ কদর করা উচিত। এ রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম।  প্রথম ফজিলত: খোদার জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় ঈদুল ফিতরের রাতে ইবাদতের মাধ্যমে। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত (ইবাদতের মাধ্যমে) জাগ্রত থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।  এক. যিলহজ মাসের ৮ তারিখের রাত, দুই. যিলহজ মাসের ৯ তারিখের রাত (আরাফার রাত), তিন. ঈদুল আজহার রাত, চার. ইদুল ফিতরের রাত এবং পাঁচ. ১৫ শাবানের রাত। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব লিল মুনজেরি ২/৯৮, হাদিস : ১৬৫৬)।  দ্বিতীয় ফজিলত: ঈদের রাতে কৃত দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমার রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, অর্ধ শাবানের রাত এবং দুই ঈদের রাতসহ এ পাঁচ রাতে কোনো দোয়া করে; সে রাতে তার কোনো আবেদনই ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৯২৭) তৃতীয় ফজিলত: ঈদের রাতে ইবাদতকারীর অন্তর কিয়ামতের দিন মরবে না। হজরত আবু উমামা বাহেলি (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহর কাছে সওয়াব প্রাপ্তির নিয়তে ইবাদত করবে তার হৃদয় সেদিনও জীবিত থাকবে যেদিন সকল হৃদয়ের মৃত্যু ঘটবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৮২)।  অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার রাতকে (ইবাদতের মাধ্যমে) জীবিত রাখবে তার অন্তর ওই দিন মরবে না যেদিন অন্যদের অন্তর মরে যাবে। (আল মুজামুল আওসাত ১/৫৭, হাদিস : ১৫৯)।  ঈদুল ফিতরের রাতে ইবাদতে মশগুল থাকা মুস্তাহাব। যেমন হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) এরশাদ করেন, রমজানের ব্যাপারে আমার উম্মতকে বিশেষভাবে পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে, যা পূর্বর্বী উম্মতগণ পায়নি। তন্মধ্যে একটি হল রমজানের শেষ রাতে রোজাদারদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।  সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ক্ষমার এই রাতটি শবে কদর নয় তো? নবীজি (সা.) বললেন, না, বরং শ্রমিকের কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই শ্রমের মজুরি দিয়ে দেয়া হয়। (মুসনাদে আহমদ) উল্লেখিত হাদিসগুলোতে ঈদের রাতের যে সব ফজিলতের কথা বলা হয়েছে এগুলোর মধ্যে কোনটিতে বিশেষ কোনো ইবাদত করার কথা বলা হয়নি। তাই এই রাতে সাধ্যানুসারে নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আযকার, ইস্তিগফার এবং দোয়া-মুনাজাতে মশগুল থাকা কর্তব্য। বরকতময় এই রাতে অযথা কাজে লিপ্ত হওয়া, বাজারে-মার্কেটে ঘুরাঘুরি করার পরিবর্তে এশা এবং ফজরের নামাজ সময়মত জামাতের সঙ্গে আদায় করা। সঙ্গে অন্যান্য আমলগুলো করা। অন্যান্য আমলগুলো করা সম্ভব না হলেও অন্তত এশা এবং ফজরের নামাজের জামাত ঠিক রাখা।  আল্লাহ আমাদেরকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাতসহ প্রতিটা মুহূর্তকে দ্বীনের কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। আমিন। লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম বাগে জান্নাত, ৪৩ নবাব সলিমুল্লাহ রোড, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ
পবিত্র মাহে রমজান শেষে যে রাত আগমন করে যাকে সহজে বুঝি আমরা চাঁদ রাত হিসেবে। এই রাতটি অত্যন্ত বরকতময় একটি রাত।
অমুসলিমদের ফিতরা দেওয়া যাবে?
রোজার শেষে সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা একটি দান আবশ্যক করেছেন। সেটিকে বলা হয় যাকাতুল ফিতর তথা ফিতরা।  প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির নিজের ও তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করার নিয়ম।  জব, খেজুর, কিশমিশ ও পনির থেকে ফিতরা আদায় করলে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম আর গম বা গমের আটা দিয়ে ফিতরা দিলে এক কেজি ৭০০ গ্রাম বা এর সমমূল্য কোনো গরিবকে দিতে হবে। ফিতরা বিধানের হিকমত বা রহস্য কী? এ নিয়ে বিভিন্ন মতামতের ভেতর প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে এই যে, রমজানের রোজা রাখার ক্ষেত্রে যেসব ত্রু টি বিচ্যুতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে আল্লাহতায়ালা এ বিধান দিয়েছেন।  আরেকটি মত হচ্ছে রোজা শেষের ঈদটা যেন সবাই মিলে একসঙ্গে উদযাপন করতে পারে। ঈদের দিন অভাবী দুস্থ লোকেরা যেন আনন্দে কাটাতে পারে। জানার বিষয় হচ্ছে, কাদেরকে ফিতরা দেওয়া যাবে? নিশ্চয় গরিব দুঃখিদের মাঝে বণ্টন করতে হবে।  কিন্তু কেবল গরিব মুসলিমদেরকেই কি ফিতরা দিতে হবে? অমুসলিমদের মাঝে ফিতরা বণ্টন করা যাবে না?  ইসলাম ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের কল্যাণে কাজ করতে শেখায়। দান সদকার ক্ষেত্রেও ইসলামে এ উদারতা রয়েছে। সব ধর্মাবলম্বী মানুষকে দান করার নির্দেশনা রয়েছে কোরআন সুন্নায়।  কেবল জাকাতের ক্ষেত্রে ভিন্ন বিধান। অর্থাৎ জাকাত কোনো অমুসলিমকে দেয়া যাবে না। যদিও পবিত্র কোরআনে অমুসলিমদেরও জাকাত দেওয়ার কথা এসেছে কিন্তু বিধানটি বিশেষ পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাধারণ অবস্থায় সে বিধান প্রযোজ্য নয়।  কখনও সেরকম পরিস্থিতি হলে ফিকহ বিশারদরা বলেন, আবারও অমুসলিমদেরও জাকাত দেওয়ার সুরত হবে।  জাকাত ছাড়া অন্য সব দান সদকা মুসলিমদের মাঝে যেমন বিলি করা যায়, অমুসলিমদেরও এসব ওয়াজিব ও নফল দানে শরিক করা যায়। যেমন কাফফারা, মানত ও সদাকাতুল ফিতর। এসব সদকা অমুসলিমদের দিলেও আদায় হয় বলে ফতোয়ার কিতাবাদিতে রয়েছে। হানাফি মাজহাবের সব কিতাবেই এ মাসআলা লেখা আছে।  বাদায়েউস সানায়ে, তাবইনুল হাকায়েক ও অধিকাংশ ফতোয়ার কিতাবে এ মাসআলার পক্ষে দলীল দেওয়া হয়েছে সুরা মুমতাহিনার আয়াত দিয়ে।  যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন, যে সব কাফের তোমাদের সাথে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বের করেনি তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়নদেরকে ভালোবাসেন। [সুরা: মুমতাহিনা, আয়াত: ৮] ঈদের দিন আপনি ঈদের আনন্দ করবেন আর আপনার প্রতিবেশি কোনো দরিদ্র হিন্দু বা বৌদ্ধ না খেয়ে থাকবে তাহলে আপনার ঈদ কি করে সুন্দর হয়?  কেবল ঈদ কেন, অন্য সময়েও অমুসলিম প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নেয়ার বিধান খোদ রাসুল সা. হাদিসে দিয়েছেন।  নবীজী বলেন, মুমিন হতে পারবে না ওই ব্যক্তি, যে তৃপ্তিসহকারে আহার করে অথচ তার প্রতিবেশি থাকে অভুক্ত। [তাবারানি]  এখানে মুসলিম প্রতিবেশীর কথা বলেননি রাসুল সা.। যে কোনো প্রতিবেশির ক্ষেত্রেই এ বিধান। সাহাবায়ে কেরাম রাসুল সা.-এর এ বিধান অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দেখিয়েছেন। হযরত ইবন উমর রা.-এর বাড়িতে একবার বকরি জবাই হলো। তিনি বাইরে থেকে এসেই জিজ্ঞেস করলেন, আমার ইহুদি প্রতিবেশির ঘরে মাংস পাঠিয়েছ কি? এখানে ফতোয়ায়ে শামি থেকে নবীজীর একটি ঘটনা উল্লেখ করছি, মক্কার কাফেরদের সঙ্গে যখন চরম দুশমনি চলছে মদীনার। ঠিক সে সময়ে মক্কায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। রাসুল সা ও সাহাবিরা নিজেরাই তখন কষ্টে আছেন তা সত্ত্বেও মদীনা থেকে ৫০০ স্বর্ণমুদ্রা পাঠিয়ে দেন মক্কার কাফের সর্দার আবু সুফিয়ান ও সাফওয়ান ইবন উমাইয়ার নিকট।  মক্কার দরিদ্র মানুষদের মাঝে বণ্টন করে দিতে বলেন। [ফাতাওয়ায়ে শামি ৩/৩০২]  দুর্যোগের সময় অমুসলিমদের ত্রাণ সহায়তার প্রেরণা আমরা এঘটনা থেকেই লাভ করতে পারি। প্রতিটি প্রাণের সেবার প্রতিই উৎসাহিত করে ইসলাম। মানবকল্যাণের সবক শিখিয়েছেন প্রিয় নবীজী সা.। সত্যিকারের মুসলিম হতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই এ নির্মল শিক্ষা ধারণ করতে হবে জীবনে। অন্তত এবারের রোজায় যেন আমরা ফিতরা দেওয়ার সময় আশপাশের দরিদ্র অমুসলিমদেরও খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করি। সদকাতুল ফিতর থেকে একটা অংশ তাদের জন্যও ব্যয় করি।তাহলে বৃদ্ধি পাবে সম্প্রীতির বন্ধন, বাড়বে ইসলামের প্রতি তাদের মুগ্ধতা।
রোজার শেষে সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা একটি দান আবশ্যক করেছেন। সেটিকে বলা হয় যাকাতুল ফিতর তথা ফিতরা।
ঈদের কত দিনের মধ্যে ছয় রোজা করতে হয়?
রমজানের পরই শাওয়াল মাস। শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে, তারা যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করল। শাওয়ালের ছয় রোজা ঈদের পরদিন থেকেই রাখা যায়। আর এই ছয় রোজা রাখতে হবে শাওয়াল মাসের মধ্যেই। কারণ শাওয়াল মাসের ফজিলত পেতে হলে এই মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। তবে এই রোজাগুলো একটানা রাখতে হবে না। বিরতি দিয়েও এই ছয় রোজা রাখা যাবে। ঈদের পর দিন থেকেই রোজা রাখা শুরু করতে পারেন। অর্থাৎ যার যেভাবে সুবিধা সেভাবে শাওয়াল মাসের মধ্যেই ছয় রোজা শেষ করবেন।
রমজানের পরই শাওয়াল মাস। শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে, তারা যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করল।
‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ?
প্রশ্ন: ঈদের দিন আমরা একে অপরকে ‘ঈদ মোবারক’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকি। কেউ কেউ বলেন, এটি বলা যাবে না। এটি শরীয়তসম্মত নয়।  এ বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশনা জানালে উপকৃত হতাম। উত্তর: ‘ঈদ মোবারক’ একটি দোয়া বাক্য। ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করার জন্য তা বলতে অসুবিধা নেই। তবে এটিকে সুন্নত মনে করা যাবে না।  কারণ কোনো বর্ণনায় এভাবে বলার কথা পাওয়া যায় না। উল্লেখ্য, হাদিসের কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন একে অপরকে تَقَبّلَ اللهُ مِنّا وَمِنْك (অর্থ: আল্লাহ আমাদের এবং তোমার নেক আমল কবুল করুন) বলতেন।  (আদ দুআ, তবারানী, হাদিস ৯২৮; ফতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৫১৭) তাই ঈদের দিন একে অপরকে এ দোয়া বাক্যটি বলা এবং এর প্রচলন করাই উত্তম হবে। সূত্র: হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৫১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৮৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৮; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/২৯৪
প্রশ্ন: ঈদের দিন আমরা একে অপরকে ‘ঈদ মোবারক’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকি। কেউ কেউ বলেন, এটি বলা যাবে না। এটি শরীয়তসম্মত নয়।
ঈদ সালামি বা উপহার বলে জাকাত দিলে আদায় হবে?
প্রশ্ন: ঈদ সালামি বা উপহার উপঢৌকন দিয়ে জাকাত দিলে আদায় হবে কি?   উত্তর: হ্যাঁ, এভাবে দিলেও জাকাত আদায় হবে। কেননা জাকাত দেওয়ার সময় এটা বলে দেওয়া জরুরি নয় যে, তোমাকে এটা জাকাত দিলাম বা দিচ্ছি।  জাকাত আদায় হওয়ার জন্য জাকাতদাতার নিয়ত জরুরি, জাকাত গ্রহণকারীর জানা জরুরি নয় যে তাকে জাকাত দেওয়া হচ্ছে। তাই হাদিয়া, ঈদ উপহার ইত্যাদি যে কোনো কিছু বলে জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে জাকাতের সম্পদ পৌঁছে দিলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার: ২/২৬৮) একইভাবে যদি  উপযুক্ত ব্যক্তির অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদেরও ঈদের সালামি হিসেবে জাকাত দেওয়া হয় তবে জাকাত আদায় হয়ে যাবে যদি ওই টাকা ওই ব্যক্তির কাছে পৌঁছবে তা নিশ্চিত থাকে এবং অনর্থক কাজে নষ্ট হওয়ার ভয় না থাকে। শরিয়তের পরিভাষায় ইসলামি বিধান অনুযায়ী যাদের জাকাত দেয়া যায়, তাদের বলা হয় মাসরিফ। জাকাতের মাসরিফ অর্থাৎ কোন কোন খাতে জাকাতের অর্থ ব্যয় করতে হবে আল্লাহতায়ালা স্বয়ং তা নির্ধারণ করে দিয়েছে। নির্ধারিত এ খাত হলো আটটি। এ আটটি খাতেই জাকাত দেওয়া সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য আবশ্যক। আরও পড়ুন: উপযুক্ত হলেও যেসব আত্মীয়কে জাকাত দেওয়া যাবে না
প্রশ্ন: ঈদ সালামি বা উপহার উপঢৌকন দিয়ে জাকাত দিলে আদায় হবে কি?
নতুন টাকা বেচাকেনা কি জায়েজ?
কয়েক দিন পরেই পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এ সময় নতুন পোশাকের পাশাপাশি নতুন টাকাও সংগ্রহ করেন অনেকে।  ঈদ সালামি দেওয়া ছাড়াও নতুন নোটের মাধ্যমে জাকাত এবং ফিতরাও বিতরণ করেন অনেকে। ফলে চাহিদা বাড়ায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে নতুন নোট বেচাকেনার অস্থায়ী দোকান। সময় যত গড়াচ্ছে, নতুন নোটের ব্যবসা তত জমে উঠছে। ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছরই নতুন নোট বাজারে ছাড়ে। তবে নতুন নোট সংগ্রহের জন্য অনেক সময় ব্যাংকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার অনেকের পক্ষে অফিস সময়ের মধ্যে নতুন নোট সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। ফলে তারা সুবিধাজনক সময়ে ঝামেলাহীনভাবে নতুন নোট সংগ্রহ করতে চান।  মূলত এ শ্রেণির গ্রাহকেরাই অস্থায়ী দোকানগুলোর নতুন নোটের ক্রেতা। তবে এসব দোকান থেকে নোটভেদে প্রতি বান্ডিলে (১০০টি নোট) তাদের ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি খরচ দিতে হচ্ছে। ইসলামে এক প্রকারের দুটি জিনিস কমবেশি ক্রয়-বিক্রয় করা নাজায়েজ। কারন এ রকম লেনদেনে অতিরিক্ত অংশ সুদ হয়ে যায়। তাই নতুন টাকার এ রকম কেনাবেচা নাজায়েজ। আরও পড়ুন: উপযুক্ত হলেও যেসব আত্মীয়কে জাকাত দেওয়া যাবে না কাগজের নোট যেহেতু পণ্য নয়, ইসলামে এই ব্যবসার অনুমোদন নেই। এখানে অতিরিক্ত অংশটি বা লভ্যাংশটি সুদ হিসেবে গণ্য হবে। (আদদুররুল মুখতার: ৫/১৭১-১৭২; বুহুসুন ফি কাজায়া ফিকহিয়্যা: ১/১৬৩) একই দেশের মুদ্রা কম-বেশি করে বিক্রি করলে ওই ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ হবে না। (হিদায়া, কিতাবুল বুয়ু, বাবুর রিবা: ০৩/৮৫; মুসতাদরাক আলাস সাহিহাইন: ০২/৬৫-৬৬; শারহু মাআনিল আসার: ৫৫৫৪; সুনান দারু কুতনি: ৩০৬০) তবে, ছেঁড়া-ফাটা টাকা দিয়ে ভালো টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অপারগ অবস্থায় (যেমন ব্যাংক বন্ধ, টাকাও দরকার ইত্যাদি) বদলকারীর পরিশ্রম ও ডাক খরচ বাবদ কিছু টাকা বেশি নেওয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে, ছলনার আশ্রয় ছাড়া স্পষ্টভাবে ‘বাবত’ উল্লেখ থাকতে হবে। একেবারে অপারগতার ক্ষেত্রে নতুন টাকা সংগ্রহ করার পরিশ্রম বাবদ কিছু টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। শর্ত হলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিতে হবে যে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হচ্ছে নতুন টাকা সংগ্রহের পারিশ্রমিক হিসেবে, নতুন টাকার মূল্য হিসেবে নয়। কিন্তু একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এ রকম লেনদেন থেকেও বিরত থাকা উচিত।
কয়েক দিন পরেই পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এ সময় নতুন পোশাকের পাশাপাশি নতুন টাকাও সংগ্রহ করেন অনেকে।
আল্লাহর রঙে রঙিন হওয়ার সময় চলে যায়
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা, কিন্তু মানুষকে ‘মানুষ’ হতে প্রয়োজন কিছু নিয়মাবলির অনুসরণ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পবিত্র কুরআনে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় ইসলাম হলো আল্লাহর একমাত্র মনোনীত জীবনব্যবস্থা।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯)। ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায় সব সময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকত। সে পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের তাদের ইমানের বিদ্বেষ পোষণকারী চক্রান্তকারীদের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইহুদি ও নাসারারা প্রতিনিয়ত এ অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে যে, তোমাদের তাদের মতাদর্শের রঙে রঙিন করে দেবে।  খ্রিষ্টানরা বলত আমাদের এক ধরনের রং আছে যা মুসলমানদের নেই। তাদের স্থিরকৃত রং ছিল হলুদ। তাদের নিয়ম ছিল, যখন কোনো শিশুর জন্য হতো, অথবা কেউ যখন তাদের দ্বীনে দীক্ষিত তখন তাকে সে রঙে ডুব দেওয়ানো হতো।  তারপর তারা বলত এবার সে খাঁটি খ্রিষ্টান হয়ে গেল। আল্লাহ বলে দিলেন, হে মুসলমানগণ! তোমরা বলে দাও, তাদের পানির রং ধুলে তা শেষ হয়ে যায়। ধোয়ার পর এর কোনো প্রভাব বাকি থাকে না। বরং প্রকৃত রং তো হলো আল্লাহর দ্বীন ও মিল্লাতের রং; আমরা আল্লাহর দ্বীনকে গ্রহণ করেছি। এ দ্বীন যে গ্রহণ করে সে সব ধরনের মলিনতা থেকে পবিত্র হয়ে যায়। দ্বীনকে রং বলে এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, রং যেরূপ চোখে অনুভব করা যায়; অনুরূপ মুমিনের ইমানেরও আলামত রয়েছে, যা তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং সব কাজকর্মে ফুটে ওঠা উচিত। আল্লাহতায়ালা কুরআনে বান্দাদের তার রঙে রঙিন হওয়ার আদেশ দিয়েছেন।  তিনি বলেছেন তোমরা বলো, আমরা গ্রহণ করেছি আল্লাহর রং। আল্লাহর রঙের চেয়ে কার রং উত্তম? এবং আমরা তাঁরই ইবাদত করি। (সুরা বাকারা : ১৩৮)।   ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবীতে মানুষের হায়াত খুবই অল্প। এ সময় মানুষের কর্তব্য কী? আল্লাহতায়ালাই ঘোষণা করছেনÑ‘সময়ের শপথ, নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে, কিন্তু (তারা নয়) যারা ইমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে এবং যারা পরস্পরকে সত্যের তাকিদ দিয়েছে ও পরস্পরকে ধৈর্যের সবক দিয়েছে (সুরা আসর)। অর্থাৎ বিশ্বের সব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে যদি তারা আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালিত না হয়। আল্লাহর রঙে রঞ্জিত না হয়। তাছাড়া রোজার সামগ্রিক শিক্ষাও এটি। মানুষের ইমান আমলের সংশোধন, ব্যক্তিজীবনে তার প্রতিফলন, পরোপকার ও হিতকামী মনন ও দুঃখ-কষ্টে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ইমান রাখা এগুলোর প্রশিক্ষণই নিতে হয় রমজানে। রোজায় নিজের দেহ ও মনকে পূর্ণভাবে আল্লাহর রঙে রাঙিয়ে নিতে হবে।  ইমানদাররা আল্লাহর প্রেমিক। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, যারা ইমান এনেছে, আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা অত্যন্ত সুদৃঢ় (সুরা বাকারা, আয়াত-১৬৪)।  আল্লাহর প্রতি মুমিনের ভালোবাসা দিন দিন বৃদ্বি পায়। ফরজ সুন্নাতসহ দৈনন্দিনের যে আমলগুলো রয়েছে, এগুলোর মাধ্যমে মুমিনের অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা বাড়ে। রমজান মাসের রোজা, সেহরি, ইফতারি, তারাবি সব আমল ভালোবাসা বৃদ্বির মাধ্যম।  ইসলামের প্রতিটি আহকামের মাঝে পারস্পরিক যোগসূত্র রয়েছে। একটি হুকুম আরেকটি হুকুমের দিকে বান্দাকে আগ্রহী করে তোলে। রমজানের দুমাস পরই আসে হজের মাস। রমজানে রোজা, তারাবি ও অন্য ইবাদতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভালোবাসার এক উত্তাপ সৃষ্টি হয় মুমিনের হৃদয়ে।  ভালোবাসার আকর্ষণে মুমিন বান্দা ছুটে যায় বাইতুল্লাহ পানে। লাব্বাইক, লাব্বাইক বলে প্রভুকে জানান দেয় নিজ ভালোবাসার। পারস্পরিক এ সম্পর্কের কারণেই রোজার পর হজ আসে। বান্দার সঙ্গে আল্লাহর যে গোপন প্রেম, রমজানে এটি শতগুণে বৃদ্ধি পায়। নবিজি (সা.) বলেন, তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও। আল্লাহর রং বা গুণ কী? তা হলো আল্লাহতায়ালার গুণবাচক ৯৯ নাম। আল্লাহর নামাবলি আÍস্ত করার বা ধারণ করার অর্থ হলো সেগুলোর ভাব ও গুণ অর্জন করা এবং সেসব গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য কাজকর্মে, আচরণে প্রকাশ করা তথা নিজেকে সেসব গুণের অধিকারী হিসাবে গড়ে তোলা। আল্লাহতায়ালা যে রং দ্বারা সমগ্র পৃথিবীকে রাঙিয়ে তুলতে চান, তা হলো- মানবমণ্ডলীর কাছে তিনি যে আসমানি গ্রন্থসহ শেষ রাসূল প্রেরণ করেছেন, তার মাধ্যমে কুরআনের মতাদর্শ দ্বারা পৃথিবীজুড়ে একটি ঐক্যবদ্ধ মানবতাবোধ গড়ে তোলা।  যেখানে থাকবে না কোনো হিংষা-বিদ্বেষ, গোত্রপ্রীতি ও স্বজনপ্রীতি, থাকবে না কোনো বর্ণপ্রীতি; সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায় ও ইনসাফ। সবার মাঝে বিরাজ করবে এক আল্লাহর গুণগান। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে ইসলামের রঙে রঙিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। লেখক গবেষক আলেম ও সেন্টার ফর এডুকেশন রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা, কিন্তু মানুষকে ‘মানুষ’ হতে প্রয়োজন কিছু নিয়মাবলির অনুসরণ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পবিত্র কুরআনে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় ইসলাম হলো আল্লাহর একমাত্র মনোনীত জীবনব্যবস্থা।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯)।
শবেকদরের দোয়া
শবেকদরের রাতে রাসূল (সা.) দোয়া ও ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। হাদিসে একটি বিশেষ দোয়ার বর্ণনাও পাওয়া যায়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলি, কদরের রাতে আমি কী বলব, তিনি বলেন, তুমি পড়বে-উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি। অর্থ : হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। (সুনানে নাসায়ি)। শবেকদরের রাতের আরেকটি দোয়ার বর্ণনা হাদিসে পাওয়া যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিম্নের দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতেন-উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াতা ফিদ-দুনইয়া ওয়াল আখিরা। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আ-ফিয়াতা ফি দিনি ওয়া দুনইয়ায়া ওয়া আহলি ওয়া মালি। (আল আদাবুল মুফরাদ)। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের অনুগ্রহ চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আমার ধর্ম, আমার জাগতিক জীবন, আমার পরিবার ও সম্পদের ব্যাপারে ক্ষমা ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।
শবেকদরের রাতে রাসূল (সা.) দোয়া ও ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। হাদিসে একটি বিশেষ দোয়ার বর্ণনাও পাওয়া যায়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত।
পিএইচপি কুরআনের আলোর বিচারক মাওলানা আবু ইউসুফ আর নেই
কুরআনের আলো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও হাফেজদের নিয়ে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো পিএইচপি কুরআনের আলোর বিচারক হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফ ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।  শনিবার সকালে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন মাওলানা আবু ইউসুফ। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিএইচপি কুরআনের আলোর উপস্থাপক শাহ ইফতেখার তারিক।  হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফের লাশ এখনো দেশে আনা হয়নি। দেশে নিয়ে আসার পর তার জানাজা ও দাফন-কাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কুরআনের আলো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন অকৃত্রিম কুরআন প্রেমিক হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফ। জানা যায়, গতকাল শুক্রবার দিল্লির একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাকে। সেখানে আজ শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জনপ্রিয় এই ইসলামী চিন্তাবিদ।
কুরআনের আলো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও হাফেজদের নিয়ে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো পিএইচপি কুরআনের আলোর বিচারক হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফ ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।
জড়তা দূর করার জন্য যে আমল করতে বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয় নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিশিষ্ট আলেম শায়খ আহমাদুল্লাহ। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার এক দর্শক জানতে চান জড়তা দূর করতে তিনি কী করবেন?  এর জবাবে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, এটা সুরা ত্বহার কথা আপনি বলেছেন। এই সুরার কিছু আয়াতে মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে তার মুখের জড়তা দূর করার জন্য দোয়াগুলো করেছেন।  তিনি আরও বলেন, এইগুলো আমরা, আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি কিংবা জড়তা দূর করার জন্য পড়তে পারি। এইগুলো যে কোনো সময়, যে কোনো মানুষ এই দোয়াগুলো পড়তে পারেন। আপনি এই সুরার প্রথম আয়াতগুলো পড়তে পারেন। বিশেষ করে প্রথম তিনটি আয়াত পড়তে পারেন।
নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয় নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিশিষ্ট আলেম শায়খ আহমাদুল্লাহ।
হাসপাতালে ভর্তি মাওলানা লুৎফর, দেখতে গেলেন জামায়াত আমির
বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরেনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা লুৎফুর রহমান ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।  আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াত জোট ভাঙতে আ.লীগের যে পরিকল্পনার কথা জানালেন রনি বৃহস্পতিবার ভোরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান তাকে দেখতে হাসপাতালে যান। শয্যা পাশে কিছু সময় কাটান ও স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন জামায়াতের আমির।  আরও পড়ুন: জামায়াতকে ক্ষমতায় বসাতে চায় দিল্লি: গোলাম মাওলা রনি এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন এবং তার ছেলে আবু সালমান। অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আল্লামা লুৎফুর রহমানের আশু আরোগ্যের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন এবং দেশবাসীকেও তার জন্য দোয়া করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরেনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা লুৎফুর রহমান ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
চলে গেলেন দেশের প্রবীণ আলেম শাইখুল হাদিস মুফতি আব্দুর রউফ
দেশের অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস ও নায়েবে মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মুফতি আব্দুর রউফ সাহেব (ঢাকার হুজুর) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।  বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টায় ইন্তেকাল করেন তিনি। একইদিন দুপুর ২টা ৩০মিনিটে গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা ময়দানে জানাজার নামাজ আদায় শেষে তাকে মাকবারায় শামছিয়াতে দাফন করা হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের খতিব ও গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা রুহুল আমিন।  শাইখুল হাদিস মুফতি আব্দুর রউফ মৃত্যুকালে স্ত্রী ৪ ছেলে ৪ মেয়েসহ অসংখ্য ছাত্র, ভক্ত, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।  মাওলানা আব্দুর রউফ মুন্সীগঞ্জের (বিক্রমপুর) সিরাজদিখান উপজেলার বাহেরকুচি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৩৬ সালের ৩ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুল আজিজ, মায়ের নাম জোবায়দা খাতুন। তার পিতা আব্দুল আজিজ ছিলেন মোজাহেদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী ছদর ছাহেবর (রহ.) ভক্ত।  হজরত ছদর ছাহেবের (রহ.) পরামর্শে আব্দুর রউফকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময় মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। মাত্র দুই বছরে পবিত্র কুরআন হেফজ সম্পন্ন করেন তিনি। সেখানে কাফিয়া জামাত পর্যন্ত পড়ালেখা করেন এরপর ছদর ছাহেব (রহ.) তাকে ঢাকার জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদ্রাসায় নিজের কাছে ভর্তি করেন। ছদর ছাহেবের (রহ.) নিবিড় পরিচর্যায় তিনি লালবাগ মাদ্রাসা থেকে দাওরায় হাদিস শেষ করেন। লালবাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে আব্দুর রউফ হযরত ছদর ছাহেবের (রহ.) প্রতিষ্ঠিত মোস্তফাগঞ্জ মাদ্রাসায় পড়ানো শুরু করেন।  শুরুর কিছু দিন পর ছদর ছাহেব (রহ.) তাকে উচ্চশিক্ষার জন্য হজরত বিননূরীর (রহ.) কাছে চিঠি লিখে উলূমুল হাদিস পড়ার জন্য পাকিস্তান পাঠিয়ে দেন।  তখন বাংলাদেশের কোথাও উলুমুল হাদিস (উচ্চতর হাদিসশাস্ত্র) বিষয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল না। সদর সাহেব হুজুরের চিঠি হজরত বিননূরীকে (রহ.) দিলে কোনো ধরনের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই মুফতি আব্দুর রউফকে ভর্তি করে নেন।  উলুমুল হাদিস পড়া শেষ হলে হজরত বিননূরী (রহ.) ছদর সাহেবের কাছে চিঠি লিখে তাকে পাঠিয়ে দেন। চিঠির ভাষ্য ছিল অনেকটা এমন, ‘এই ছেলের হাদিস পড়ানোর মতো পরিপূর্ণ যোগ্যতা অর্জন হয়েছে, তাকে আপনি হাদিসের কাজে লাগাতে পারেন।’  বাংলাদেশে আসার পর ছদর সাহেব হুজুর রহ. তাকে গওহরডাঙ্গা মাদসার উস্তাদ হিসেবে নিয়োগ দেন। সেই সময় থেকে ই তিনি গওহরডাঙ্গা মাদরাসায় হাদিসের খেদমতে নিয়জিত ছিলেন। হাফেজ মাওলানা মুফতি আব্দুর রউফ শায়খুল হাদিস হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় খেদমত করেন।  এছাড়ও তিনি  পঞ্চাশটিরও বেশি মাদ্রাসায় বোখারির দরস দিয়েছেন।   এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ঢালকানগর মাদ্রাসা, মিরপুর জামেউল উলুম মাদ্রাসা, ফয়জুল উলুম মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড মাদ্রাসা ও মোস্তফাগঞ্জ মাদ্রাসা, জামিয়াতুস সুন্নাহ, রায়েরমহল মাদ্রাসা, রাজৈর মাদ্রাসা, গোপালগঞ্জ কোর্ট মসজিদ মাদ্রাসা, মেরী গোপিনাথপুর মাদ্রাসাসহ দক্ষিণ অঞ্চলের প্রায় সব বড় মাদ্রাসায় তিনি বোখারি শরিফ পড়িয়েছেন।  তার হাদিসের দরস ছিল খুবই সুন্দর। একজন শিক্ষক হিসেবে কথাবার্তা, চাল-চলন, যুক্তিপূর্ণ বিচার-বিশ্লেষণ ও নৈতিক গুণাবলির দ্বারা একটি আদর্শ স্থাপন করেছিলেন, যা শিক্ষার্থীসহ সবার সামনে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।  তার মৃত্যুতে গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।  তিনি বলেন, মুফতি আব্দুর রউফের ইন্তকালে একজন অভিভাবক সহকর্মী হারালাম। তিনি আমার বাবা হজরত ছদর ছাহেবের (রহ.) খুব কাছের শিষ্য। খুব বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন। সাবলীলভাবে হাদিসের দরস দিতেন। হাদিসের কঠিন কঠিন বিষয়গুলো খুব সহজভাবে উপস্থাপন করতেন, যাতে তালিবুল ইলমরা সহজেই বুঝে নিতেন। তার মৃত্যুতে হাদিসের দরসে গভীর শুণ্যতা সৃষ্টি হলো।  আরো শোক প্রকাশ করেছেন, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মুফতি উসামা আমীন, নাজেমে তা'লীমাত মুফতি নুরুল ইসলাম, গওহরডাঙ্গা বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা শামছুল হক, খাদেমুল ইসলাম বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা ঝিনাত আলী, গওহরডাঙ্গা বিভাগীয় জিম্মাদার মাওলানা আব্দুস সালাম, ঢাকা মহানগর জিম্মাদার, মাওলানা আজিজুর রহমান, ঢাকা বিভাগীয় সহকারী জিম্মাদার মুফতি অহিদুল আলম, তানজিমুল মুদাররিসিন বাংলাদেশের মাওলানা আতাউর রহমান, মুফতি মোহাম্মদ তাসনীম, মুফতি মোস্তফা কাসেম প্রমুখ।
দেশের অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস ও নায়েবে মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মুফতি আব্দুর রউফ সাহেব (ঢাকার হুজুর) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।
তাফসির বিষয়ে বাংলা ভাষায় প্রথম মৌলিক বই লেখেন আল্লামা শামসুল হক দৌলতপুরী
শিক্ষা ও জ্ঞান দ্বার যারা দেশ ও জাতিকে করেছেন আলোকিত, সমাজ ও মুসলিম উম্মাহকে দিয়েছেন হেদায়াতের দিক নির্দেশনা, কুরআন ও হাদিসের আলোকে নিজের জীবন গড়ে যারা সমাজে নিজেকে ইসলামী আদর্শরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাদেরই একজন শায়খুল হাদিস আল্লামা শামসুল হক দৌলতপুরী (রহ.)। বহুগুণের অধিকারী এবং গভীর জ্ঞানের আধার ছিলেন তিনি। একাধারে তিনি ছিলেন প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ, তাফসিরকারক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ও সাহিত্যিক। আল্লামা শামসুল হক দৌলতপুরী (রহ.) বাংলা ভাষায় মহাগ্রন্থ আল কুরআনের তাফসির বিষয়ে প্রথম মৌলিক দুটি গ্রন্থের লেখক। তিনি মহাগ্রন্থ আল কুরআনের আহকাম তথা বিধি-বিধানের ৫০০ (পাঁচশত) আয়াতের বাংলা ভাষায় তাফসির গ্রন্থ ‘তাফসিরে আহকামুল কুরআন’ এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত উসূলে তাফসীর তথা তাফসিরের নীতিমালা বিষয়ে ‘তাফসির শাস্ত্র পরিচিতি’ নামে বাংলা ভাষায় প্রথম কোন মৌলিক গ্রন্থ লেখেন।  এছাড়া উসূলে হাদিস তথা হাদিসের নীতিমালা বিষয়ে ‘হাদিস শাস্ত্র পরিচিতি’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থও তিনি লেখেন। এই বইটিও বাংলা ভাষায় এধরনের মৌলিক প্রথম কোন বই ছিল। ইসলামী বিশ্বকোষেও তিনি লিখেছেন। একসময়ের বহুল পঠিত ও জনপ্রিয় পত্রিকা মাসিক মদীনায় নিয়মিত লিখতেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে ড. লোকমান হাকিম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. আবুল কালাম আজাদ বাংলা ভাষায় কুরআন চর্চা বিষয়ে গবেষণা করতে যেয়ে আল্লামা শামসুল হক দৌলতপুরীর (রহ.) জীবদ্দশায়ই তাদের ডক্টরেটের গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। ফলে তাদের গবেষণাপত্রের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে তার জীবন, গবেষণা ও সাহিত্য কর্ম। দেশের এই বিশিষ্ট ইসলামী শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক হাদিস বিশারদ এবং বাংলা ভাষায় তাফসিরের ইমাম আল্লামা শামসুল হক দৌলতপুরী ২০১০ সালের ১৭ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
শিক্ষা ও জ্ঞান দ্বার যারা দেশ ও জাতিকে করেছেন আলোকিত, সমাজ ও মুসলিম উম্মাহকে দিয়েছেন হেদায়াতের দিক নির্দেশনা, কুরআন ও হাদিসের আলোকে নিজের জীবন গড়ে যারা সমাজে নিজেকে ইসলামী আদর্শরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাদেরই একজন শায়খুল হাদিস আল্লামা শামসুল হক দৌলতপুরী (রহ.)।
মুসলিম জাগরণের পথিকৃৎ আল্লামা শামছুদ্দীন কাসেমী (রহ.)
মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শামছুদ্দীন কাসেমী (রহ.) বাংলাদেশের ইতিহাসে চির ভাস্বর একটি নাম। স্বাধীনতা সংগ্রামী, স্পষ্টভাষী, তেজস্বী, বাগ্মী। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ইসলামি জীবনব্যবস্থাকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি ছিলেন উৎসর্গপ্রাণ। এ দেশে ইসলামি শিক্ষার বিস্তার, নববি আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও সংস্কারমূলক কাজের মাধ্যমে তিনি চির অমর হয়ে আছেন। একজন প্রথিতযশা দূরদর্শী আলেমে দ্বীন হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন এ দেশে ইসলামি রাজনীতির অন্যতম দিকপাল। ভ্রান্ত মতবাদ ও ইসলামবিরোধী সব অপশক্তির বিরুদ্ধে ছিলেন চির আপসহীন বিপ্লবী ব্যক্তিত্ব; সব অন্ধকারের বিপরীতে ছিলেন আপন কর্ম ও কীর্তিতে উজ্জ্বল এক মহান প্রদীপ। মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী ছিলেন রাজপথের মানুষ, ইসলামের সুরক্ষায় সব আন্দোলন-সংগ্রামে সর্বদাই থাকতেন নেতৃত্বে ও ফ্রন্টলাইনে। ১৯৩৫ সনে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে জন্মগ্রহণ করা মাওলানা কাসেমীর রক্তেই মিশে ছিল বাতিলবিরোধী আন্দোলন ও সংগ্রাম। কারণ তৎকালীন জমিদারদের অত্যাচার ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল তার পূর্বপুরুষদের জোরালো ভূমিকা ও অবদান। নেতৃত্বের গুণাবলি তিনি পেয়েছিলেন বংশপরম্পরায়। সন্দ্বীপের হরিষপুর মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস; অতঃপর চট্টগ্রামের জিরি মাদ্রাসা, ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ ও লাহোরের জামিয়া আশরাফিয়া থেকে শিক্ষাগ্রহণ শেষে ১৯৬১ সালে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। এরপর ঢাকার বড়কাটারা মাদ্রাসা, ফরিদাবাদ মাদ্রাসা ও যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় বহু বছর অধ্যাপনা শেষে ১৯৭০-এ থিতু হন ঢাকার তুরাগপাড়ের মিরপুরে। মিরপুরের হরিরামপুর এলাকায় তার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামি বিদ্যাপীঠ জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদ্রাসা। আমৃত্যু তিনি আরজাবাদ মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস ও মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তিনি ছিলেন শিক্ষাবিদ ও সাহিত্য-সংস্কৃতির অনুরাগী পৃষ্ঠপোষক। তারই তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক জমিয়ত ও মাসিক পয়গামে হক। বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমে মাতৃভাষা বাংলা, ইতিহাস, সমাজ-ভূগোল, পৌরনীতি, গণিত ও ইংরেজির পাঠদান যুক্ত করা ছিল মাওলানা কাসেমীর যুগান্তকারী সংস্কারমূলক অবদান। তিনি তার প্রতিষ্ঠিত আরজাবাদ মাদ্রাসায় দশম শ্রেণি পর্যন্ত জেনারেল শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে দেন। অবশ্য এজন্য তাকে অনেক কটুকথাও শুনতে হয়েছে। বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর সম্মিলিত প্লাটফর্ম ও কেন্দ্রীয় শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিস প্রতিষ্ঠায় ছিল তার বলিষ্ঠ ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশের বহু মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেলে এগুলো আবার খোলার পেছনে তার বিশেষ ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আল্লামা কাসেমী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেন। তার প্রচেষ্টায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ২২ মার্চ রেজুলেশন করে স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি প্রকাশ্যে পাকবাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরোধিতা করেন ও পাকিস্তানের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কে পাকিস্তানি আর্মির জুলুমের প্রতিবাদে জনসভা ডেকে বক্তব্য রাখেন। এ কারণে পাক সেনারা তাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্বে তিনি স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। আইয়ুব সরকারের আমলে স্বৈরাচারবিরোধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক থাকেন; সম্মিলিত বিরোধী দলের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, নেজামে ইসলাম পার্টিসহ সব দলের নেতাদের সঙ্গেই তিনি বসেছেন। মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গেও তিনি নানা উপলক্ষ্যে বৈঠক করেছেন। সব সময় তিনি ইসলামি জীবনব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য শাসকদের উৎসাহিত করেছেন; ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে কখনো চেষ্টা চালাননি। ১৯৬৬ সালে ঢাকায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পূর্ব পাকিস্তানের কমিটি গঠিত হলে তিনি এর সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে আবার সেক্রেটারি জেনারেল পদে নির্বাচিত হন এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। পরে জমিয়তের সহ-সভাপতি ও নির্বাহী সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি হযরত হাফেজ্জী হুজুরের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। ৮১-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাফেজ্জী হুজুরের তৃতীয় স্থান অধিকারের পেছনে মাওলানা কাসেমী ও জমিয়তের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। খেলাফত আন্দোলন গঠন, এর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন, খেলাফত আন্দোলন থেকে নীতিগতভাবে সমর্থন প্রত্যাহার ও পরবর্তী সময়ে ইসলামী ঐক্যজোট গঠনে মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমীর ভূমিকা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ দেশে মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমীর নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় বাতিলবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে চষে বেড়িয়েছেন শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবি, শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি ও শাইখুল ইসলাম সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানির বিপ্লবী চিন্তাধারা নিয়ে। বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদ ও ইসলামবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে তিনি ছিলেন একক নাম। বিশেষ করে ইসলামের দুশমন, ভণ্ড নবি গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারী আহমদীয়া মুসলিম জামাত নামধারীদের ধোঁকা ও অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সোচ্চার। প্রতিষ্ঠা করেছেন খতমে নবুওয়ত আন্দোলন পরিষদ বাংলাদেশ, মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত নামে সংগঠন। তিনি ছিলেন স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশে খতমে নবুওয়তের মহান আকিদা সংরক্ষণ আন্দোলনের রূপকার ও বীর সেনানী। যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামপ্রতিষ্ঠা ও আল্লাহর বাণী উচ্চকিত করতে কাজ করে গেছেন। বিন্দুমাত্র বাতিলের সঙ্গে আপস করেননি। নিজ চেতনা ও আদর্শে ছিলেন চির অটল, অবিচল। চিন্তা, স্বতন্ত্র চেতনার ভিন্নতা ও কর্মপদ্ধতির পার্থক্য সত্ত্বেও তিনি সব ঘরানার আলেমদের সঙ্গে উষ্ণ ভালোবাসা ও মর্যাদাকর সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। পদ্ধতিগত মতপার্থক্য কোনোদিন বিভেদের অলঙ্ঘনীয় প্রাচীর নির্মাণ করতে পারেনি। ‘শিয়া কাফের’, ‘কাদিয়ানী ধর্মমত’, ‘ইসলাম বনাম কমিউনিজম’, ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’সহ আরও বেশ কয়েকটি কালজয়ী গ্রন্থের রচয়িতা, বাতিলের সঙ্গে চির-আপসহীন ক্ষণজন্মা এ মহাপুরুষ ১৯৯৬ সালের ১৯ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন। এরই সঙ্গে বিপ্লবী মাদানি কাফেলার শেষ নক্ষত্রটি আমাদের চোখের আড়াল হয়। মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থানে এখন তিনি শুয়ে আছেন। লেখক : প্রিন্সিপাল, জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ, মিরপুর, ঢাকা
মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শামছুদ্দীন কাসেমী (রহ.) বাংলাদেশের ইতিহাসে চির ভাস্বর একটি নাম। স্বাধীনতা সংগ্রামী, স্পষ্টভাষী, তেজস্বী, বাগ্মী। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ইসলামি জীবনব্যবস্থাকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি ছিলেন উৎসর্গপ্রাণ।
মুসলমানদের কাছে ফিলিস্তিন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
বাইতুল মুকাদ্দাস বা মসজিদে আকসা। এটি মুসলমানদের প্রথম কেবলা। ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত এ মসজিদে মেরাজের রাতে রাসূল (সা.) সব নবী-রাসূলের ইমামতি করেন।  হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘কাবা শরিফ তথা মসজিদুল হারামে নামাজে এক লাখ গুণ সওয়াব, মদিনা শরিফে মসজিদে নববীতে নামাজে ৫০ হাজার গুণ সওয়াব, বাইতুল মুকাদ্দাসে নামাজে ২৫ হাজার গুণ সওয়াব’ (ইবনে মাজাহ)।  ফিলিস্তিনের ভূমি অসংখ্য নবী-রাসূলের স্মৃতিবিজড়িত, এর আশপাশে অনেক নবী-রাসূলের সমাধি রয়েছে। এটি দীর্ঘকালের ওহি অবতরণস্থল, ইসলামের কেন্দ্র এবং ইসলামি সংস্কৃতির চারণভূমি। মুসলমানদের পবিত্র এ ভূমি ভাঙা-গড়ার সর্বশেষ পর্বে এখন ইহুদিদের দখলদারির করাল গ্রাসে আক্রান্ত। ৬৪৮ সালে আমিরুল মুমিনিন হজরত উমর (রা.)-এর খেলাফতকালে মুসলমানরা ফিলিস্তিন জয় করেন। ১০৯৬ সালে খ্রিস্টানরা তা পুনর্দখল করে নেয়। ১১৮৭ সালে সিপাহশালার সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী আবার জেরুজালেম শহর জয় করেন।  এরপর থেকে খ্রিষ্টান ও ইহুদি চক্র ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এ অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইহুদিরা তৎকালীন তুরস্কের শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতির অনুমতি চায়; সুলতান অনুমতি দেননি।  ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে এবং ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে; এর অল্প সময়ের মধ্যে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে।  ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা অন্যায়ভাবে মুসলমানদের ফিলিস্তিন ভূমিকে মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। ফলে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে জায়নবাদী অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।  ১৯৬৭ সালে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল ‘মসজিদুল আকসা’ জবরদখল করে। তারপর ক্রমশ মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম-নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে, যা আজও চলছে। এরপর থেকে মুসলিম জনগণ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ ফিলিস্তিনের মুসলিমদের এ প্রতিরোধ আন্দোলন সমর্থন করছেন।  মুসলিমদের সব দল, উপদল, মাজহাব— এ ব্যাপারে একমত যে, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, মসজিদে আকসা এবং সমগ্র ফিলিস্তিনের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য অনেক উচ্চ।  এর সংরক্ষণ, পবিত্রতা রক্ষা করা শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়; বরং সব মুসলিমের ওপর ওয়াজিব। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ফিলিস্তিনের অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। জেরুজালেম হলো ইসরা বা রাসুলুল্লাহর (সা.) রাত্রিকালীন ভ্রমণের সর্বশেষ জমিন। এখানে তিনি সকল নবীর নামাজের ইমামতি করেন। তার পর তিনি এখান থেকে ঊর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করেন।  আল্লাহ বলেন, পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রাত্রে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-১) মসজিদুল আকসা, ফিলিস্তিন হলো মুসলিমদের প্রথম কিবলা। যার দিকে মুখ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিরা ১০ বছর নামাজ আদায় করেছেন।  মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যেখান থেকে বাহির হওনা কেন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাকো না কেন ওর দিকে মুখ ফিরাবে।’( সুরা বাকারা, আয়াত-১৫০) হাদিসের আলোকে প্রমাণিত যে তিনটি শহর সম্মানিত— মক্কা, মদিনা ও ফিলিস্তিন বা বায়তুল মুকাদ্দাস।  সহিহ বুখারিও মুসলিমে হজরত আবু সাইদ খুদুরি (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো (জায়গা ইবাদাতের) উদ্দেশ্যে ভ্রমণে বের হওয়া যাবে না- মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা এবং আমার এই মসজিদ। (হাদিস, ৭০৭) হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) হজরত বারা ইবনে আজিব (রা.) কে সাতটি জিনিসের আদেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে অন্যতম মজলুমকে সহায়তা করা (বোখারি)। তিনি যখন মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) কে গভর্নর হিসাবে ইয়েমেনে পাঠান, তখন তাকে দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না’ (বোখারি)।  ইসরাইল-ফিলিস্তিন সম্পর্ককে বাংলাদেশ জালিম-মজলুমের সম্পর্ক হিসাবেই দেখে। ফলে বাংলাদেশ সব সময় মজলুম ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনিদের মুসলিম ভাই হিসাবে আখ্যা দিয়েছে। সূরা আনআমে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না।’ এ আয়াত পড়ে বিশ্ব মুসলিমও আশায় বুক বাঁধে ইসরাইলের এ জুলুমের একদিন অবসান হবে। আল আকসাকে ঘিরে আবার জেগে উঠবে নিরাপদ প্রাণের স্পন্দন। অসংখ্য নবী-রাসূলের পদধন্য এ ভূমি আবার খলখলিয়ে উঠবে আনন্দে।
বাইতুল মুকাদ্দাস বা মসজিদে আকসা। এটি মুসলমানদের প্রথম কেবলা। ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত এ মসজিদে মেরাজের রাতে রাসূল (সা.) সব নবী-রাসূলের ইমামতি করেন।
হজের প্রস্তুতি নিন এখনই
হজ ইসলামের ৫ম রোকন বা স্তম্ভ। হজ অর্থ সংকল্প করা বা ইচ্ছা করা। হজ মুসলমানদের মধ্যে শুধু ধনীদের ওপর জীবনে একবার ফরজ। অর্থাৎ কেবল যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জন্য এ আদেশ। হজ হলো পবিত্র নগরী মক্কায় অবস্থিত কাবা ঘর তাওয়াফ করা ও আনুষঙ্গিক কার্য সম্পাদন করা। আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা করেন:-এবং মানুষের নিকট ঘোষণা করিয়া দাও, উহারা তোমার নিকট আসিবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটগুলোর পিঠে, ইহারা আসিবে দূরদূরান্ত পথ অতিক্রম করিয়া (সূরা হজ-২৭)। অতঃপর তাহারা যেন তাহাদিগের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাহাদিগের মানত পূর্ণ করে এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের (সূরা হজ-২৯)। এখানে প্রাচীন গৃহ বলতে পবিত্র কাবা ঘরকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আদম (আ.)কে দুনিয়াতে পাঠানোর পর তিনি আল্লাহর নিকট ইবাদতের জন্য একটি স্থান ও গৃহের আবেদন করলে আল্লাহ জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে ওই স্থান নির্ধারণ করে একটি গৃহ নির্মাণের আদেশ দেন। আর ইহাই পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও প্রাচীন গৃহ নামে খ্যাত। প্রমাণ স্বরূপ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন:-নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম যে ঘর মানুষের জন্য স্থাপিত হইয়াছিল, তা তো সেই ঘর যাহা মক্কায় অবস্থিত যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াত। এতে রয়েছে অনেক প্রকাশ্য নিদর্শন। মাকামে ইবরাহিম তার অন্যতম। যে কেউ এ ঘরে প্রবেশ করে সে নিরাপদ হয়ে যায়। আল্লাহর জন্য উক্ত ঘরের হজ করা লোকদের ওপর ফরজ। যার সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে এবং যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে সে জেনে রাখুক নিঃসন্দেহে আল্লাহ দুনিয়ার কাহার মুখাপেক্ষী নহেন (সূরা আলে-এমরান-৯৭,৯৮)। হাদিসে রাসূল (সা.) থেকে জানা যায়-হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হইতে বর্ণিত যে, রাসূল (সা.)কে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ইমান আনা। জিজ্ঞেস করা হলো তারপর কোনটি? তিনি বললেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হলো তারপর কোনটি? তিনি বললেন হজ-ই মাবরুর (মকবুল হজ) করা (বোখারি-১৪২৯)। উম্মুল মোমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) জেহাদকে আমরা সর্বোত্তম মনে করি, কাজেই আমরা কি জিহাদ করব না? রাসূলূল্লাহ (সা.) বললেন না, তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আমল হলো ‘হজে মাবরুর’ (বোখারি-১৪৩০)। আল্লাহ ঘোষণা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার রাসূলের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করিয়াছেন, আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করিবে নিরাপদে। কেহ কেহ মাথা মুণ্ডন করিবে, কেহ কেহ কেশ কর্তন করিবে। তোমাদিগের কোনো ভয় থাকিবে না। আল্লাহ জানেন তোমরা যাহা জান না। ইহা ছাড়া তিনি তোমাদিগকে দিয়েছেন এক সদ্য বিজয় (সূরা-ফাতহ-২৭)। এ আয়াতটি একাধারে মক্কা বিজয় ও হজ সম্পর্কে নাজিল হয়েছে। আল্লাহ আরও বলেন-এসব চতুষ্পদ জন্তুতে তোমাদিগের জন্য নানাবিধ উপকার রহিয়াছে এক নির্দিষ্ট কালের জন্য, অতঃপর উহাদিগের কোরবানির স্থান প্রাচীন গৃহের নিকট (সূরা হজ-৩৩)। হজের প্রকারভেদ হজকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-১) হজে ইফরাদ ২) হজে কিরান ৩) হজে তামাত্তু। হজে ইফরাদ যে হজ ব্যবস্থায় ওমরা ব্যতীত শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধতে হয়, তাহাকে হজে ইফরাদ বলে। বদলি হজও এ হজের আওতাভুক্ত। ইফরাদ হজ পালনকারীর জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব নয়। হজে কিরান একই ইহরামে ওমরা ও হজ একত্রে আদায় করাকে হজে কিরান বলা হয়। এ অবস্থায় মাথা মুণ্ডানো যাবে না। তবে ইহরাম অবস্থায় সম্পূর্ণ হজ সম্পাদন করতে হবে। হজে তামাত্তু তামাত্তু হজে প্রথমে ওমরা পালন করে মাথা মুণ্ডন করিবে। পরে নতুন করে ইহরাম বেঁধে নতুন করে মূল হজ সম্পন্ন করতে হবে। হজ ও ওমরার মিকাত যায়েদ ইবনে যুবায়ের (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর কাছে তার অবস্থান স্থলে যান, তখন তার জন্য তাঁবু ও চাদর টানানো হয়েছিল। যায়েদ (রা.) বলেন আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কোন স্থান থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধা জায়েজ হবে? তিনি বলেন রাসূল (সা.) নজদবাসীর জন্য কারনুল, মদিনাবাসীর জন্য যুল-হুলাইফা ও সিরিয়াবাসীর জন্য যুহফা নির্ধারণ করে দিয়েছেন (বুখারি-১৪৩২)। (বর্তমানে হাজিদের সংখ্যা ও বিভিন্ন দেশ থেকে আগমন অনুযায়ী ভিন্নতা রয়েছে)। বলা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশ থেকে যারা হজে গমন করেন তাদের অনেকেই রওনা হয়েই বাংলাদেশেই ইহরাম বেঁধে ফেলেন। এতে যারা প্রথমে মদিনায় যাবেন তাদের জন্য ঠিক নয়। আর যারা মক্কায় যাবেন তারা অবশ্যই ওমরা না করে ইহরাম খুলতে পারবেন না। তাহলে কাফ্ফারা দিতে হবে। হজের ফরজ ১) ইহরাম বাঁধা ২) ৯ জিলহজ হতে পরদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার মাঠে অবস্থান করা। ৩) কাবা ঘর তাওয়াফ করা। হজের ওয়াজিব ১) সাফা-মারওয়া সায়ী করা। (এটি মা হাজেরা (আ.) পানির জন্য করেছিলেন)। ২) ১০ জিলহজ সূর্যোদয়ে আরাফা থেকে মুজদালিফায় আগমন ও অবস্থান করা (যা উকুফ)। ৩) ১০,১১,১২ তারিখে শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করা (যা হজরত ইসমাইল (আ.) করেছিলেন)। ৪) ১০ থেকে ১২ জিলহজ মিনা ও হারাম এলাকায় কুরবানি করা। ৫) কুরবানির পর মাথা মুণ্ডানো। ৬) কাবা ঘর বিদায়ী তাওয়াফ করা। ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ পুরুষের মাথা ও মহিলার মুখ ঢাকা নিষেধ। সেলাই করা পোশাক পরা, আতর, সেন্ট, সুগন্ধি, খুশবু, তৈল, সাবান ইত্যাদি ব্যবহার করা নিষেধ। চুল, দাড়ি, গোঁপ, নখ কাটা ও চিরুনি ব্যবহার করা নিষেধ। চুল দাড়িতে হেজাব বা কলপ লাগানো নিষেধ। শরীর থেকে ময়লা সরানো, উকুন, পোকামাকড়, মশা-মাছি ইত্যাদি মারা নিষেধ। তবে ক্ষতিকর সাপ, বিচ্ছু মারা যাবে। ঘাস, পাতা ইত্যাদি ছিঁড়া বা নিধন করা নিষেধ। বিবাহ করা বা দেওয়া, স্বামী-স্ত্রীর মিলন নিষিদ্ধ। কাহারও সমালোচনা করা, গিবত করা, হাসি-ঠাট্টা বা বিদ্রুপ করা, চুরি করা, প্রতারণা করা ইত্যাদি সম্পূর্ণ নিষেধ। এমনকি ইহরাম অবস্থায় ক্রয়-বিক্রয় করাও নিষিদ্ধ। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করল এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল সে নবজাতক শিশু যাকে তার মা এইমাত্র প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে (বুখারি-১৪৩১)। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা এখানে একত্রিত হবে, পরিচিতি ও ভাব বিনিময় হবে, ঐক্যবদ্ধ হবে, ইসলামের প্রচার প্রসার হবে। সারা বিশ্বের অমুসলিমরা তা প্রত্যক্ষ করবে। মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি হবে। পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে। এটাও হজের একটা মূল শিক্ষা।
হজ ইসলামের ৫ম রোকন বা স্তম্ভ। হজ অর্থ সংকল্প করা বা ইচ্ছা করা। হজ মুসলমানদের মধ্যে শুধু ধনীদের ওপর জীবনে একবার ফরজ। অর্থাৎ কেবল যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জন্য এ আদেশ। হজ হলো পবিত্র নগরী মক্কায় অবস্থিত কাবা ঘর তাওয়াফ করা ও আনুষঙ্গিক কার্য সম্পাদন করা। আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা করেন:-এবং মানুষের নিকট ঘোষণা করিয়া দাও, উহারা তোমার নিকট আসিবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটগুলোর পিঠে, ইহারা আসিবে দূরদূরান্ত পথ অতিক্রম করিয়া (সূরা হজ-২৭)। অতঃপর তাহারা যেন তাহাদিগের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাহাদিগের মানত পূর্ণ করে এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের (সূরা হজ-২৯)।
ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে জরুরি নির্দেশনা দিল সৌদি আরব
পবিত্র ওমরাহ পালন করতে যাওয়া মুসল্লিদের সঙ্গে বেশি অর্থ ও দামি জিনিসপত্র না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। খবর আল আরাবিয়ার। হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় টুইটারে এক পোস্টে এসব পরামর্শ দিয়েছে। এতে ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব ভ্রমণের সময় স্বর্ণ, দামি পাথর বা মূল্যবান কোনো ধাতু সঙ্গে না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ৬০ হাজার সৌদি রিয়াল বা ১৬ হাজার ডলার নিতে পারবে বলে জানানো হয়েছে।   সৌদি কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, ওমরাহ পালনে গিয়ে আর্থিক লেনদেনের জন্য ব্যাংকের অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। ব্যাংক হিসাবের তথ্য অন্যদের কাছে প্রকাশ না করার পরামর্শ দিয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে অচেনা লোকজনের কাছে অর্থ না পাঠাতে এবং অজানা নম্বর থেকে আসা খুদে বার্তা পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।   এদিকে কোনো মুসল্লি প্রতারণার শিকার হলে বা কাউকে প্রতারক হিসেবে সন্দেহ হলে তারা বিষয়টি মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবে বলে জানিয়েছে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ।   এর আগে পবিত্র রমজান মাসে মুসল্লিদের একবারের বেশি ওমরাহ না করার আহ্বান জানিয়েছিল দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। রমজান মাসে পবিত্র কাবাসহ ধর্মীয় স্থানগুলোতে ভিড় কমাতে এবং মানুষের চলাচল সহজ করতে ওই আহ্বান জানানো হয়েছিল।
পবিত্র ওমরাহ পালন করতে যাওয়া মুসল্লিদের সঙ্গে বেশি অর্থ ও দামি জিনিসপত্র না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। খবর আল আরাবিয়ার।
কাতার বিশ্বকাপে অভ্যর্থনায় শোভা পাচ্ছে রাসুলের বাণী
বিশ্বকাপ ফুটবল আসন্ন। বিশ্বকাপ নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে দল গুছিয়ে পরিকল্পনাগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে অংশগ্রহণকারী ৩২ দেশ। আগামী ২০ নভেম্বর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার ভাসবে বিশ্বকাপের আমেজে। ফিফা বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে সর্বকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত কাতার। তাই বিশ্বকাপের সাজ ও আলোকসজ্জাতেও রাখা হয়েছে মুসলিম সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের ছোঁয়া। কাতারের রাজধানী দোহাসহ বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী (হাদিস) সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন। ইসলামিক ক্যালিওগ্রাফি ও ম্যুরাল শোভা পাচ্ছে স্টেডিয়ামগুলোর আশপাশে। সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে বিভিন্ন স্থানে দেয়ালজুড়ে সাঁটানো বর্ণিল ম্যুরাল, ব্যানার ও ফেস্টুন। যেখানে আরবি ও ইংরেজি ভাষায় রাসুল (সা.)-এর প্রজ্ঞাপূর্ণ অনেক হাদিস লেখা হয়েছে। হাদিসগুলোর মধ্যে অন্যতম- ‘তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না। মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো, তাদের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না।’ দ্বিমুখী মানুষের পরিণতি নিয়ে নবীজীর একটি হাদিস লেখা হয়েছে। যার বাংলা হলো- ‘তুমি কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে খারাপ ব্যক্তি হিসেবে দ্বিমুখী মানুষকে পাবে। সে এক দলের কাছে এক রূপ নিয়ে আসে এবং অন্যদের কাছে অন্য রূপ নিয়ে আসে।’ সালাম দেওয়ার শিষ্টাচার নিয়েও একটি হাদিস জ্বলজ্বল করছে। যার অর্থ- ‘ছোট বড়কে, পথিক বসে থাকা ব্যক্তিকে এবং কমসংখ্যক ব্যক্তি বেশিসংখ্যক ব্যক্তিদের সালাম দেবে।’ দান ও সুন্দর কথার গুরুত্ব নিয়ে বর্ণিত একটি হাদিস শোভা পাচ্ছে ব্যানারে। সেখানে লেখা হয়েছে- ‘তোমরা খেজুরের টুকরো দান করে হলেও আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করো। যদি তা না পারো তাহলে সুন্দর কথা বলে নিজেকে রক্ষা করো।’ গাছ রোপণের গুরুত্ব দিতে মহানবীর সেই বিখ্যাত হাদিসও লেখা হয়েছে একটি ফেস্টুনে- ‘যদি কোনো মুসলিম গাছ রোপণ করে, অতঃপর কোনো মানুষ বা প্রাণী তা থেকে আহার করে, তা সেই ব্যক্তির জন্য দানস্বরূপ।’ এসব ছাড়াও আতিথেয়তা ও সামাজিক শিষ্টাচার নিয়ে নবী করিম (সা.)-এর বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন ও ম্যুরালে। রাস্তায় প্রদর্শিত কিছু হাদিসের মধ্যে রয়েছে- ‘প্রত্যেকটি ভালো কাজই দানস্বরূপ’, ‘যে অন্যের প্রতি দয়াশীল নয়, তার প্রতি দয়া করা হবে না।’ বিশ্বকাপে বিশ্বনবীর হাদিসকে তুলে ধরার বিষয়ে আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে- বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে আগত দর্শকদের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরে অভিনব কায়দায় অভ্যর্থনা জানাতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে কাতার। তথ্যসূত্র: সিয়াসাত, আরব নিউজ, দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন
বিশ্বকাপ ফুটবল আসন্ন। বিশ্বকাপ নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে দল গুছিয়ে পরিকল্পনাগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে অংশগ্রহণকারী ৩২ দেশ।
বিশ্ব কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে কুয়েতে ২ বাংলাদেশি
বিশ্ব কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত গেলেন বাংলাদেশি দুই কিশোর। তারা হলেন - তাওহীদ ওবাইদুল্লাহ ও হাফেজ আবু রাহাত। তারা দুজনেই মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার ছাত্র।  মঙ্গলবার দুপুরে একটি ফ্লাইটে কুয়েত সিটিতে অবতরণের পর সেখানের সালওয়ার নিকটবর্তী আলবিদা রেজিন্সি হোটেলে ওঠেন তারা। সেখানে তাদের সঙ্গে অভিভাবক হয়ে গিয়েছেন মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার শিক্ষক শায়েখ নেছার আহমাদ আন নাছিরী। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজ নিজ গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করে বাংলাদেশের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার এই দুইজন শিক্ষার্থী।
বিশ্ব কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত গেলেন বাংলাদেশি দুই কিশোর। তারা হলেন - তাওহীদ ওবাইদুল্লাহ ও হাফেজ আবু রাহাত। তারা দুজনেই মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার ছাত্র।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) আজ
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) আজ। সমগ্র মানবজাতির শিরোমণি মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের দিন আজ। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল শেষ নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) মা আমিনার কোলে জন্ম নেন। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের এ দিনে ৬৩ বছর বয়সে তিনি ওফাত লাভ করেন। বিশ্বের মুসলমানরা দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি বা সিরাতুন্নবি (সা.) হিসাবে পালন করেন। বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় ছুটি। পবিত্র এ দিনটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। দিনটি উপলক্ষ্যে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। জাতীয় পতাকা ও ‘কালিমা তায়্যিবা’ অঙ্কিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপ ও লাইটপোস্টে টানানো হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় আলোকসজ্জা করা হবে। দেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থাগুলোয় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধনিবাস ও মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে আজ উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোয় যথাযথভাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) পালন করা হবে। দিনটি উদযাপনে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) ১৪৪৪ হিজরি উদযাপন উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানবতার মুক্তিদাতা ও ত্রাণকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। মহানবি (সা.) থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করলে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি হয়ে উঠবে উন্নত, সমৃদ্ধ, শান্তি ও কল্যাণময়। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে আছে তা হতে পারে আরও সুসংহত ও সুদৃঢ়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার। আলোচক ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও দারুল উলুম রামপুরা বনশ্রী মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মো. মুশফিকুর রহমান। এর আগে বাদ আসর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামি বইমেলার উদ্বোধন করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে পবিত্র কোরআনখানি, দোয়া মাহফিল, ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাআত মাহফিল, হামদ-নাত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুলে নৈতিকতা ও চরিত্র গঠনবিষয়ক সেমিনার, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ। অন্যদিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) ১৪৪৪ হিজরি উদযাপন উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫০টি ইসলামিক মিশন ও ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) আজ। সমগ্র মানবজাতির শিরোমণি মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের দিন আজ। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল শেষ নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) মা আমিনার কোলে জন্ম নেন। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের এ দিনে ৬৩ বছর বয়সে তিনি ওফাত লাভ করেন। বিশ্বের মুসলমানরা দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি বা সিরাতুন্নবি (সা.) হিসাবে পালন করেন। বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় ছুটি।
মুঘল সম্রাটরা যেভাবে রোজা ও ইফতার পালন করতেন
৩০০ বছর ধরে ভারত শাসন করা মুঘল সাম্রাজ্যের সময় রোজার চাঁদ উঠলে ১১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে তা ঘোষণা দেয়া হতো।  মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ বাবরের ‘তুজক-ই-বাবরি’ ডায়েরিতে লেখা আছে যে বাবর রোজা রাখতেন এবং নামাজও বাদ দিতেন না।কিন্তু তিনি ছিলেন মদ ও মাজুন (গ্রীক মিশ্রণ) প্রেমী।  সেই ডায়েরির এক জায়গায় বাবর লেখেন, আমি সন্ধ্যায় পাইজাদীতে পৌঁছলাম, কাজীর বাড়িতে ইফতার করলাম এবং পরে মদের আসর আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলাম, কিন্তু কাজী নিষেধ করলেন। কাজীর প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আমি মদের আসর আয়োজনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলাম। এই বইয়ে বাবরের নফল রোজা রাখার ইতিহাস সম্পর্কেও জানা যায়। ফররুখ বেগ ১৫৮৯ সালে 'তুজক-ই-বাবরি'-এর সচিত্র সংস্করণ প্রস্তুত করেছিলেন। তার মধ্যে একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে শাহেনশাহ বাবর ১৫১৯ সালে শেষ রোজা উদযাপনের পর মদ্যপ অবস্থায় ঘোড়ার পিঠে চড়ে ক্যাম্পে ফিরছিলেন। তার পেছনে চাকররা তাকে অনুসরণ করছিলেন। তার মধ্যে একজনের হাতে ছিল হারিকেন, আরেকজনের হাতে ছিল মদের বোতল। তুজক-ই-জাহাঙ্গিরী বা জাহাঙ্গিরনামা প্রকাশিত হয় তার রাজত্বের ত্রয়োদশ বছরে। সেখানে দেখা যায়, জাহাঙ্গির রমজানে রোজা পালন করতেন এবং স্থানীয় ওলামা ও সৈয়দদের সঙ্গে ইফতার পালন করতেন। জাহাঙ্গির ওলামাদের মাধ্যমে গরীবদের মধ্যে দান-খয়রাত করতেন। একবার ব্যক্তিগতভাবে তিনি পঞ্চান্ন হাজার রুপি, এক লাখ নব্বই বিঘা জমি, চৌদ্দটি গ্রাম এবং দরবেশদের মধ্যে চাল বহনকারী এগারো হাজার খচ্চর বিতরণ করেছিলেন’। ‘আমির’ (সম্রাটের প্রতিনিধি)রাও তখন ইফতারের আয়োজন করতেন। সম্রাট জাহাঙ্গিরের আমলে মুঘল সালতানাতের একজন সেনাপতি ছিলেন মুবারজ খান। তার সময়ে রমজান মাসে তার একটি সামরিক অভিযানও পরিচালিত হয়েছিল। রমজানে প্রতিদিন একে অপরের শিবিরে খাবার পাঠাতেন। যেটি মুঘলদের ঐতিহ্য ছিল। রমজানের শেষ দিনে (৩০ রমজান ১০২০ হিজরি বা ৫ ডিসেম্বর ১৬১১) মুবারজের শিবিরে ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। তখন অনেক বড় একটি উৎসব পালিত হয়েছিলো। রোজাদাররা চাঁদ দেখে রোজা শেষ করলো। পরে তোপধ্বনির মাধ্যমে উৎসবের জানান দেওয়া হয়েছিলো। 'বাহারিস্তান-ই-গাবি' বইয়ে মির্জা নাথুন লিখেছেন এই ঘটনাটি ভূমিকম্পের মতো চারদিককে প্রকম্পিত করেছিলো। মোহাম্মদ সালেহ কাম্বোহ লাহোরির বই ‘আমল-ই-সালাহ’ অনুযায়ী ১৬২১ সালে মদ ছেড়ে দেওয়ার পর, যুবরাজ খুররম বাংলা ও বিহারে তার শাসনামলে রমজানের সব রোজা পালন করেছিলেন। মির্জা নাথুন বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, তখন প্রচণ্ড তাপে মানুষ ও পশুপাখির খুব অসুবিধা হচ্ছিলো এবং খুব কম মানুষ রোজা রাখতে পারতো। প্রচণ্ড গরম থাকা সত্ত্বেও প্রিন্স রোজা রেখেছিলেন’। মনিস ডি ফারুকি ‘দ্য প্রিন্সেস অফ দ্য মুঘল এম্পায়ার’ বইয়ে লিখেছেন, শুধু মির্জা নাথুনই যুবরাজ খুররাম দ্বারা প্রভাবিত ছিলেনই না, একই কারণে জাহাঙ্গিরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে বাংলার বিপুল সংখ্যক সুফি ও ওলামা তাকে সমর্থন করেছিলেন। যখন খুররম শাহজাহান হন, তখন মুসলমানদের সকল উৎসব রাজকীয় জাঁকজমকের সাথে পালিত হতে থাকে। শাহজাহানের শাসনামলে মুঘল সালতানাত তুঙ্গে ছিল। সালমা ইউসুফ হোসেনের একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, তখনকার খাবারগুলো ছিল রঙিন ও সুস্বাদু এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের খাবার থেকে অনেকটাই আলাদা। তখন এটি একটি প্রথা ছিল যে খাওয়ার আগে সম্রাট দরিদ্রদের জন্য খাবারের একটি অংশ আলাদা করে রাখতেন। সম্রাট দোয়ার মাধ্যমে খাবার শুরু ও শেষ করতেন। ডক্টর মোবারক আলী লিখেছেন, সম্রাট আকবর থেকে শাহজাহান পর্যন্ত সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ উৎসব ছিল নওরোজ। তবে আওরঙ্গজেবের সময় এটি পাল্টে যায়। তখন, উভয় ঈদই নওরোজের চেয়ে বেশি জাঁকজমপূর্ণভাবে উদযাপন শুরু হয়। পরে আলমগীর (আওরঙ্গজেব) রাজ আসনে বসার পরপরই নওরোজ উৎসব বন্ধ করেন। এর পরিবর্তে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা ও রমজানের দিনগুলোতে ইফতার উদযাপনকে অধিক গুরুত্ব দেন। তিনি ঈদকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন কারণ তিনি সিংহাসনে বসেছিলেন রমজান মাসে। আওরঙ্গজেব তার রাজ্যভিষেক ঈদ পর্যন্ত বাড়িয়ে একসঙ্গে উদযাপন করেছিলেন। নামাজ এবং রোজা পালনের বিধিবিধানগুলো কড়াকড়িভাবে পালন করতেন আওরঙ্গজেব। তিনি সবসময় জামাতে নামাজ পড়তেন, তারাবি নামাজ পড়তেন এবং রমজানের শেষ দশকে ইত্তেকাফে (মসজিদে দিন রাত থাকা) বসতেন। একইভাবে, তিনি সপ্তাহে তিন দিন সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার রোজা রাখতেন। দিনরাত মিলিয়ে তিনি মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমাতেন। পর্যটক বার্নিয়ার লিখেছেন, আওরঙ্গজেব যখন দিল্লিতে পৌঁছান তখন জুন মাস ছিল এবং খুব গরম ছিল। আওরঙ্গজেব এই গ্রীষ্মেও পুরো রমজানজুড়ে রোজা রাখতেন। রোজা পালন অবস্থায় তিনি সব সরকারি কাজ করেছেন। সন্ধ্যায় ইফতারে তিনি জোয়ার এবং ভুট্টার রুটি খেতেন। এরপর তারাবি আদায় করতেন এবং রাতের বেশিরভাগ সময় নামাজে কাটাতেন। আওরঙ্গজেবের পর মুঘল শাসনামলের পতনের শিকার হয়। শেষ মুঘল সম্রাট বৃটিশদের বৃত্তি নিয়ে চলতো কিন্তু তারপরও রমজান পালিত হতো ব্যাপক আড়ম্বরে। মুন্সী ফয়জুদ্দিন দেহলভী তার ‘বাজমে আখির’ গ্রন্থে চাঁদ দেখা যাওয়ার সময়ের কথা বর্ণনা করেন। সেখানে তিনি বলেন, সেই সময় সমস্ত বেগম, হারেমের দাসী সবাই মিলে গান গাইতো। মহিলা, রাজকুমারী এবং রাজকন্যারা তাদের অভিনন্দন জানাতে আসেন। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে সবাই স্বাগত জানাতো। এই অভিনন্দন আর উৎসব রাজার বাড়ি থেকে শুরু করে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়তো। রোজার চাঁদ ওঠার উদযাপনের পরেই তারাবির আয়োজন শুরু হতো। রাতে এশার আজানের পর নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হতো। বাদশাহর সেবক সকর্তবার্তা উচ্চারণ করে জানাতেন বাদশাহ নামাজে আসছে। বাদশাহ নামাজের স্থানে আসতেন। সবাই সারিবদ্ধভাবে নামাজে দাঁড়াতেন।  ইমাম দেড় পাড়া পড়তেন তারাবি নামাজে। বাদশাহ নামাজ শেষ করে ঘরে এসে বসে কথাবার্তা বলতেন, হুক্কা খেতেন ও পরে বিশ্রামে যেতেন। ফয়জুদ্দিন মুঘল দরবারে সেহরির বিবরণও তুলে ধরেছেন তার লেখনিতে। তিনি লিখেছেন, রাতের দেড় ঘণ্টা বাকি থাকা অবস্থায় প্রাসাদের ভেতরে ও বাইরে সেহরির জন্য ডাকা হতো। তখন জামে মসজিদে সেহরির প্রথম ডাকা শুরু হতো। এটাই ছিলো সেহরির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এরপর টেবিলে একটি কাপড় বিছিয়ে দেয়া হতো যেটির নাম দস্তরখান। পরে বাদশাহ টেবিলে রাজা সেহরি স্পেশাল (বাদশাহ'র জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা সেহরি) খেতেন। সেখানে সাধারণ দিন ও বিশেষ দিনে পার্থক্য ছিলো। সেহরির বিশেষ দিনে এমন কিছু খাবার রান্না করা হতো যা অন্য দিনে রান্না করা হতো না। ‘চাপাতিস, ফুলকাস, পরাটা, রুগনি রুটি, বিরি রুটি, বেসানি রুটি, খামিরি রুটি, নান, শিরমাল, গাভ দিদা, গাভ জাবান, কুলচা, বাকর খানি, গাউসি রুটি, বাদাম রুটি, পেস্তা রুটি, চালের রুটি, গাজর নান খাতাই, মিসরি রুটি, নান পাম্বা, নান গুলজার, নান কামাশ, নান টুঙ্কি, বাদাম নান খাতাই, পিস্তা নান খাতাই, খেজুর নান খাতাই’। এগুলো ছিল রুটির বিভিন্ন আইটেম। এছাড়াও পোলাও অন্যান্য ভাতের খাবার ছিলো।  সেগুলো- ‘ইয়াখনি পোলাও, মতি পোলাও, নূর মাহালি পোলাও, নুকতি পোলাও, কিসমিস পোলাও, নার্গিস পোলাও, জামুরদি পোলাও, লাল পোলাও, মুজাফ্ফর পোলাও, ফলসাই পোলাও, আবি পোলাও, সুনেহরি পোলাও, রুপালি পোলাও, মুরগি পোলাও, কোফতা পোলাও, বিরিয়ানি পোলাও, চুলাভ, আস্ত ছাগল পোলাও, বুট পোলাও, শোলা, খিচুরি, কাবুলি, তেহারি, মুতঞ্জন’। এছাড়া জর্দা মুজাফফর, সেবাই, মান ও সালওয়া, ফিরনি, ক্ষীর, বাদাম ক্ষীর, কুমড়ার ক্ষীর, গাজরের ক্ষীর, কাংনি ক্ষীর, ইয়াকুটি, নমিশ, দুধের ডালমা, বাদাম ডালমা, সামোছা, শাক, খাজলে। সালান কোরমা, কালিয়া, দো পেয়াজা, হরিণের কোরমা, মুরগির কোরমা, মাছ, বুরহানি, রাইতা, শসার শরবত, পনিরের চাটনি, সিন্নি, আশ, দই, বেগুন ভর্তা, আলু। ছোলা ভর্তা, ছোলার ডাল ভর্তা, আলুর ডাল, বেগুনের ডাল, করলা ডাল, এসব ডাল বাদশা পছন্দ করতো। কাবাবের মধ্যে রয়েছে শিক কাবাব, শামি কাবাব, গলি কাবাব, ফিজেন্ট কাবাব, কোয়েল কাবাব, নুকতি কাবাব, লাভজাত কাবাব, খাতাই কাবাব, হুসাইনি কাবাব।  হালুয়ার মধ্যে রয়েছে রুটির হালুয়া, গাজরের হালুয়া, কুমড়ার হালুয়া, ক্রিম হালুয়া, বাদাম হালুয়া, পেস্তার হালুয়া, কমলার হালুয়া। ছিলো নানা ধরনের মোরব্বা। মোরব্বার মধ্যে রয়েছে আম মোরব্বা, আপেল মোরব্বা, বি মোরব্বা, করলা মোরব্বা, রাংতারে মোরব্বা, লেবু মোরব্বা, আনারস মোরব্বা, হিবিস্কাস মোরব্বা, বাদাম মোরব্বা, কুকুরন্ডা মোরব্বা, বাঁশ মোরব্বা।  এসব আচার ছাড়াও মাউথ ফ্রেশনার, মিষ্টি, পেস্তার নির্যাস, পোস্ত, পপির নির্যাস, মিষ্টির রং, কাস্টার্ড আপেল, পেয়ারা, জামুন, ডালিমসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল। আর গম দিয়ে তৈরি মিষ্টি হালুয়া, পাপড়ি, আঠা, হাবশি লাড্ডু, মতিচুর, মুগ, বাদাম, পেস্তা। মুগ, দুধ, পেস্তা, বাদাম, জাম, পিঠা, পিস্তা মাগাঝি, ইমারতি, জালেবি, বরফি, ফেনী, কালাকান্দ, মতি পাক, দার-বহিষ্ট, বালুশাহীও ছিলো খাদ্য তালিকায়। সকালের কামান বেজে উঠতো। বাদশাহ কুলি করার আগে শেষ টান দিতেন হুক্কায়। এরপর রোজার নিয়তে সব কিছু খাওয়া বন্ধ থাকতো। নিয়তের মাধ্যমে শুরু হতো রোজা। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায়, দরগায় গিয়ে সালাম, বাইরে ঘোরাফেরা, প্রাসাদে মানুষের কিছু অভিযোগ শুনতেন এরপর বিকেলে বিশ্রাম নিয়েই সারাদিন কেটে যেতো। ইফতারের জন্য প্রস্তুতি শুরু হতো ৩টায়। তিনটা বাজে। প্রাসাদে তন্দুর গরম করা হচ্ছে। রাজার জন্য সিংহের পায়ের আকৃতির একটি চেয়ার, পেছনে সোনার ফুল এবং পাতাসহ একটি নরম মখমলের গদি বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে তন্দুর ভাজা হচ্ছে সেটির সামনে রাখা চেয়ারটি। প্রাসাদের বেগম, হারেমের দাসী ও রাজকন্যারা নিজ হাতে তন্দুরে বসনি, রুগনি, মিষ্টি রুটি, কুলছা সাজিয়ে রাখতো। রাজা বসে বসে তা দেখতেন। বিশটি লোহার গরম চুল্লি, হাঁড়িতে শব্দ করে পছন্দের জিনিস রান্না চলছে। টিপাটি- মেথির পাতা প্রস্তুত। সবুজ মরিচ, মতিয়া ফুলের সবুজ অংশ, বেগুনি ও বিভিন্ন ভর্তার জন্য প্রস্তুতি। কোনটিতে ভাদা, ফুলকি, পুরি, শামি কাবাব ভাজা হচ্ছে। কোথাও শিক কাবাব, হুসেনি কাবাব, টিক্কা কাবাব, নান গাজরের কাঠিসহ নানান জিনিস রান্না চলছে। আসরের নামাজের পর শুরু হতো রোজা ভাঙ্গা বা ইফতারের চূড়ান্ত প্রস্তুতি। ফয়জুদ্দিন লিখেছেন, একদিকে গ্লাস, বাটি, কাপ, চামচ রাখা হতো। চামচগুলো রাখা হতো হাড়ির মধ্যে। আরেকদিকে কলস ও বয়াম (পানীয়ের পাত্র), এবং ছোট কাপ থাকতো। সবার ওপরে পরিস্কার পাত্রে খাবারগুলো রাখা হতো। সব শাকসবজি, শুকনো ফল ইত্যাদি এনে রাখা হতো। সবগুলো ফলের খোসা ছাড়ানো হতো। কোনোটা কোন কিছুর মিশানো ছাড়াই পরিবেশন করা হতো। কোনটিতে কাঁচা মরিচ, কোনটিতে মুগ ডাল, কোনোটা থাকতো কাঁচা, কোনটি আবার সিদ্ধ করা থাকতো। কোনটি শুকনা মরিচ আবার কোনটি কালো মরিচ দিয়ে প্রস্তুত করা হতো। ভাজা মুগ, ছোলার ডাল, বেসন ভার্মিসেলি, নুকটিয়া, ভাজা পেস্তা, বাদাম, পেস্তার সাথে বাদাম, খেজুর, কিসমিস ইত্যাদি প্লেটে প্লেটে সাজানো থাকতো। আঙ্গুর, ডালিম, ফালুদা, শুকনো ফলের শরবত, লেবুর শরবত, থাকতো গ্লাসে সাজানো। ইফতারের সময় হয়ে গেলে, বাদশাহ নির্দেশ দিতেন হেরাল্ডরা পতাকা দোলাতেন, শুরু হতো তোপধ্বনি। এরপর হতো আজান। এটা আনন্দের সময়। চারিদিকে দারুণ এক পরিবেশ। প্রথমে জমজমের পানি, ভুট্টা বা খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙতেন সম্রাট। তারপর শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে চামচ দিয়ে গুলিয়ে শুরু হতো শরবত পান। তৃঞ্চার্ত কেউ গ্লাস মুখে নিয়ে শরবত পান করতো। ডাল, সবজি, ড্রাই ফ্রুটসও খাওয়া চলতো খানিকটা।' তৃপ্তি নিয়ে কিছুটা সময় খাওয়ার পর মাগরিবের নামাজ হতো। নামাজের পরও খানাপিনা চলতো। রমজানের শেষ শুক্রবার জুমাতুল বিদার প্রস্তুতি চলে। ফয়জুদ্দিন লিখেছেন, বাদশাহ হাতিতে চড়লেন। জামে মসজিদের সিঁড়ির কাছে কাহাররা হাওদার (পালকি) হাতির সমান করে রাখা থাকতো। বাদশাহ হাওদারে চড়ে জামে মসজিদে ঢুকতেন। ট্যাঙ্কের কাছে এসে তিনি হাওয়াদার থেকে নামলেন। এরপর বিশেষ সেবক দল তাকে মসজিদের একদম ভেতরে নিয়ে যেতেন। তার পেছনে থাকতো রাজপুত্র এবং প্রাসাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। তারা সাজ-সজ্জা ও সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করতেন। ইমামের পিছনে রয়েছে বাদশাহের জায়নামাজ। বাম পাশে যুবরাজের জায়নামাজ, ডান পাশে রাজপুত্রদের। রাজা, যুবরাজ এবং রাজপুত্ররা এসে নিজ নিজ গায়ে বসলেন। ইমাম সাহেবকে খুতবার নির্দেশ দেওয়া হলো। ইমাম মিম্বরে (বিশেষ স্থানে) দাঁড়ালেন। ইমাম তরবারির ওপর হাত রাখলেন। খুতবা পড়া শুরু করলেন। খুতবায় ইমাম আগের সম্রাট ও বর্তমান সম্রাটের নাম বলতেন। তখন তোশাখানার পরিদর্শক ইমামকে খেলাত (বিশেষ পোশাক) পড়ানোর নির্দেশ দেয়া হতো। তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করা হলো। ইমাম তার নিয়ত করলেন। সবাই ইমামের সাথে তার নিয়ত করলেন। বাদশাহ ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করলেন। পরে বাকি নামাজ আদায়ের পর সম্রাট আসর শরীফে গেলেন। যেখানে মসজিদ যেখানে পবিত্র জিনিসপত্র রাখা হয়। জিয়ারত শেষে তিনি দুর্গে ফিরে এলেন। উনত্রিশ রোজা আসলে সবার দৃষ্টি থাকতো আকাশের দিক। যদি চাঁদ দেখা যায়। যদি চাঁদ দেখা যেতো কিংবা দেখা গেছে বলে কেউ সাক্ষী থাকতো চারিদিকে দারুণ আনন্দ শুরু হতো। এদিন চাঁদ দেখা না গেলে পরের দিন অর্থাৎ ত্রিশতম রোজার সন্ধায় উৎসব শুরু হয়ে যেতো। ঈদের চাঁদ উঠলে রাজ দরবারের দরজার সামনের ২৫ বার তোপধ্বনি দেয়া হতো। চলতো আনন্দ আর গান আয়োজন।
৩০০ বছর ধরে ভারত শাসন করা মুঘল সাম্রাজ্যের সময় রোজার চাঁদ উঠলে ১১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে তা ঘোষণা দেয়া হতো।
মদিনা থেকে কেন মুসলিম বিশ্বের রাজধানী কুফায় স্থানান্তর করেছিলেন হজরত আলী?
রমজানের ১৯তম দিনে ভোরে কুফা মসজিদে ফজরের নামাজের সময় মুসলমানদের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী ইবনে আবি তালিবের মাথায় বিষমাখা তরবারি দিয়ে আঘাত করেন আব্দুল রহমান ইবনে মুলজুম। হজরত আলী ইসলামের নবী মুহাম্মদের (সা.) চাচাতো ভাই ছিলেন। মারাত্মক এই আঘাত পাওয়ার ঠিক দুই দিন পর ২১তম রমজানের দিন হজরত আলী মারা যান। হজরত আলীর খেলাফতকালে (ইসলামী শাসন ব্যবস্থা) নানা ঘটনা ঘটেছে, ইসলামিক বিশ্বে যেগুলোর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। তার খেলাফতকালের একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী মদিনা থেকে ইরাকের কুফা শহরে স্থানান্তর করা। ইরাকের রাজধানী বাগদাদের ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে কুফা শহরটি অবস্থিত। প্রাচীনকাল থেকেই এই শহরের সমৃদ্ধ ইতিহাস থাকলেও যখন এই অঞ্চলে বিজয়ী মুসলমানরা আসতে শুরু করে তখন এর গুরুত্ব বেড়ে যায়। বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদ আল রাজ্জাকের মতে, মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাবের শাসনামলে সামরিক এবং প্রশাসনিক কারণে সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস কুফা প্রতিষ্ঠা করেন। তার পর থেকেই বিপুল সংখ্যক মুসলিম এখানে বসতি স্থাপন করেন। হজরত উমরের শাসনামলে কুফা শহরে বসবাসকারী লোকদের অনুদান দেওয়ার রীতি শুরু হয়। এবং ২৪ হিজরি সালের মধ্যে এ শহরের জনসংখ্যা দেড় লাখে পৌঁছায়। মানুষ এখানে এসে থাকতে শুরু করে। আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামি রাষ্ট্রের প্রথম শহর হিসেবে মদিনা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এখানে অবস্থিত ‘মসজিদে নববী’ বা নবীর মসজিদ সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য এখনও দ্বিতীয় পবিত্র স্থান। নবীর জীবদ্দশায় মদিনা তার সদর দফতর ছিলো। তবে, মদিনার পরিবর্তে যখন কুফাকে রাজধানী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সে সময়ের নানা ঘটনাবলী লক্ষ্য করলে বিভিন্ন কারণ সামনে আসে। যাই হোক, এরপর মদিনা আর খেলাফতের (ইসলামী শাসন ব্যবস্থা) কেন্দ্রে ফিরে আসতে পারেনি। এমন কী, হজরত আলীর শাসনকাল শুরু হওয়ার আগেও ইসলামি বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত ছিলো। ৩৬ হিজরিতে জামালের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধের পরে ইসলামের চতুর্থ খলিফা রাজধানী হেজাজ থেকে ইরাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ইতিহাসবিদদের মতে, মক্কা ও মদিনার পবিত্রতা রক্ষা করতে চাওয়াই ছিল হজরত আলীর এই সিদ্ধান্তের পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এবং যেহেতু কুফায় তার বিপুল সংখ্যক সমর্থক ছিল তাই তিনি এই শহরকে রাজধানী করতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। ইসলামিক স্কলার সৈয়দ ইরতাজা আব্বাস নাকভী কুফার ইতিহাস নিয়ে ‘তারিখ-ই-কুফা’ নামে একটি বই লিখেছেন। এই বইয়ে কেন হজরত আলী মদিনার পরিবর্তে কুফাকে নিজের রাজধানী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, তার কারণ তুলে ধরেছেন তিনি। তিনি লিখেছেন, কুফার জনগণ প্রথম মালিক ইশতারের নির্দেশনায় আমিরুল মুমিনিনের (মুসলিম খলিফাদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি সম্মানসূচক উপাধি, অর্থ বিশ্বাসীদের নেতা) প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছিল। আমিরুল মুমিনিন ৩৬ হিজরিতে মদিনা নিবাসী এক হাজার যোদ্ধা এবং ১২ হাজার কুফা যোদ্ধা নিয়ে কুফার উদ্দেশে রওনা দেন। জামালের যুদ্ধে (উষ্ট্রের যুদ্ধ) বেশির ভাগ কুফাবাসী জনগণ আমিরুল মুমিনিনকে সমর্থন করেছিলো। এবং এরপরই হজরত আলী এই শহরকে নিজের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। সে সময় ইসলামিক বিশ্বের প্রধান কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ছিল সিরিয়ার দামেস্ক, হেজাজের মক্কা ও মদিনা এবং ইরাকের বসরা ও কুফা। এটি এমন একটা সময় ছিল যখন একদিকে মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ান দামেস্কের গভর্নর ছিলেন। তিনি সুহাইল বিন হানিফের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেছিলেন। হজরত আলীর খেলাফত গ্রহণের পর সিরিয়ার জন্য সুহাইলকে গভর্নর করা হয়। অন্য দিকে, মক্কাতে হজরত আলীও বিরোধীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছিলেন। আরও পড়ুন: আবে হায়াত আসলে কী? অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল কাদির এবং মুহাম্মদ সুজা উদ্দিনের ‘ইসলামের ইতিহাস’ বই অনুসারে, এই সিদ্ধান্তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল হজরত আলী মদিনাকে আরও গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। এই বইটি অনুযায়ী, হজরত আলী চেয়েছিলেন মদিনা যেন স্থানীয় রাজনৈতিক সংঘাতের কেন্দ্রে পরিণত না হয়। এবং তিনি ইসলামের নবীর স্মৃতিবিজড়িত এই শহরটিকে ভবিষ্যতের গৃহযুদ্ধ এবং সম্ভাব্য যুদ্ধ থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কুইল কারমাইকেলের বই 'দ্য শেপিং অফ আরবস' অনুসারে, যখন ইসলাম অধিকৃত অঞ্চলের সীমানা বাড়তে থাকে, তখন এই ধর্মটি রোমান ও গ্রীক সভ্যতার পাশাপাশি ইরানী চিন্তাধারার মুখোমুখি হয়। এবং সেই সব নতুন ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ ইসলামী চিন্তাধারায় মিশে যেতে শুরু করে। কিন্তু, হজরত আলী ইসলামের শাসন কেন্দ্র মদিনা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং অন্তত হেজাজ (সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চল) পর্যন্ত ইসলামের জীবন ব্যবস্থাকে রক্ষা করেছিলেন। এবং ইসলাম এসব শহরে দীর্ঘকাল পর্যন্ত টিঁকে ছিলো, যেমনটা ইসলামের নবীর সময়ে ছিল। অর্থনৈতিকভাবে, মদিনা ও হেজাজ অঞ্চলের কিন্তু ইরাক বা সিরিয়ার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো ক্ষমতা ছিল না। কারণ মদিনার অবস্থান ছিল মরু অঞ্চলে যেখানে চাষাবাদ, কৃষি, পরিবহন ও সক্রিয় ব্যবসা-বাণিজ্যের অভাব ছিল। অন্য দিকে ওই অঞ্চলের আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল ইরাক। ইসলামী রাষ্ট্রের সম্প্রসারণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, কুফার অবস্থান ছিল ভৌগোলিকভাবে তৎকালীন ইসলামী বিশ্বের প্রায় কেন্দ্রস্থলে। যেখান থেকে ইরান, হেজাজ, সিরিয়া এবং মিশরকে নজরদারি করা যেত। আর দেশ পরিচালনার জন্যও এটি ভালো অবস্থান ছিল। আরেকটি কারণ হলো, জনবলের দিক দিয়ে মদিনার সিরিয়ার সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধে যাবার মতো সামর্থ্য ছিল না। অন্যদিকে কুফা নিজেই একটি ঘনবসতিপূর্ণ নগরী এবং বিশাল জনসংখ্যার শহরগুলির কাছাকাছি অবস্থিত ছিল। ফলে হজরত আলী বিভিন্ন ধরনের আগ্রাসন মোকাবেলায় সক্ষম ছিলেন। ‘ক্যাপিটাল সিটিজ অব ইসলাম’ বইয়ে বলা হয়েছে, হজরত উমরের শাসনামলে বিজয়ের কারণে মিশর ও পারস্যের মতো উর্বর স্থান থেকে সম্পদ পাওয়া যাচ্ছিল। যার প্রভাব মক্কা ও মদিনায় দেখা যেতে শুরু করেছিল। ‘আবহাওয়া, পানি এবং বাগানের প্রাচুর্যের কারণে সরকারি কর্মকর্তারা ক্রীতদাসদের নিয়ে মদিনায় যেতেন, সঙ্গে থাকত সঙ্গীতশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীরা, মদিনায় এর আগে কখনও এমন পরিবেশ দেখা যায়নি’।  মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে, এ অবস্থায় মদিনার অধিবাসীরা আরাম, আয়েশ ও ভোগবিলাসে ডুবে ছিল। অন্যদিকে কুফা ছিল সেই শহর যেখানে মদিনা থেকে স্থানান্তরিত ও বসতি স্থাপনকারী সাহাবীদের সংখ্যা ইসলামী বিশ্বের অন্য সব শহরের চেয়ে বহুগুণ বেশি ছিল। এবং হজরত আলী মদিনা ও মক্কার চেয়ে এখান থেকেই বেশি সমর্থন পেয়েছিলেন। কুফা পাঁচ বছর ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল। ৪০ হিজরিতে যখন মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান মক্কা ও মদিনা দখল করে ইয়েমেনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন, তখন ইয়েমেনের গভর্নর উবায়দুল্লাহ বিন আব্বাস যুদ্ধ না করে কুফায় ফিরে যান। হযরত আলী যখন এই বিদ্রোহের খবর পেয়েছিলেন তিনিও যুদ্ধের জন্য একটি বাহিনী পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যখন ১৯তম রমজানের দিন তিনি তার পছন্দের রাজধানীর মসজিদে মারাত্মকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হন এবং মারা যান, তখনও এই বাহিনী রওনা দেয়নি। এরপর কুফা ইসলামিক সরকারের রাজধানী হওয়ার গৌরব হারায় এবং সরকারের কেন্দ্র সিরিয়ায় স্থানান্তরিত হয়।
রমজানের ১৯তম দিনে ভোরে কুফা মসজিদে ফজরের নামাজের সময় মুসলমানদের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী ইবনে আবি তালিবের মাথায় বিষমাখা তরবারি দিয়ে আঘাত করেন আব্দুল রহমান ইবনে মুলজুম। হজরত আলী ইসলামের নবী মুহাম্মদের (সা.) চাচাতো ভাই ছিলেন।
আবে হায়াত আসলে কী?
প্রশ্ন: আমার জানার বিষয় হলো— আবে হায়াত কী? লোকমুখে এ সম্পর্কে অনেক কাহিনি শুনে থাকি। যেমন আবে হায়াতের পানি পান করলে নাকি কেয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকবে।  হজরত খিজির (আ) নাকি এই পানি পান করেছেন, তাই তিনি কেয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন। এগুলো কি সত্য? কুরআন ও হাদিসের দলিল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করছি। উত্তর: খিজির (আ) সম্পর্কে সর্বস্তরের মুসলমানদের মধ্যে নানা চটকদার ঘটনা বিস্তার লাভ করেছে। সেসবের মধ্যে অন্যতম হলো— ‘আবে হায়াত তত্ত্ব’। যে পানি পান করলে মৃত্যু হয় না, অমরত্ব লাভ করা যায়, তার নাম আবে হায়াত। সংক্ষেপে আবে হায়াত শব্দের অর্থ জীবনবারি, অমৃতবারি। ‘মাউল হায়াত’ অথবা ‘আবে হায়াত’ বলে যে কথাগুলো প্রচলিত আছে এর কোনো অস্তিত্ব দুনিয়াতে নেই। এমন আবে হায়াত সম্পর্কে মানুষের ধারণা ও আকিদা ইসলামের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।  কুরআনুল কারিম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা দিচ্ছে— (হে নবী!) আমি তোমার আগেও কোনো মানুষের জন্য চিরদিন বেঁচে থাকার ফায়সালা করিনি। সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে? (আল আম্বিয়া- ৩৪) আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, জীবমাত্রকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমি পরীক্ষা করার জন্য তোমাদের মন্দ ও ভালোতে লিপ্ত করি, এবং তোমাদের সবাইকে আমারই কাছে ফিরিয়ে আনা হবে। (আল আম্বিয়া - ৩৫) যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা আবে হায়াত নিয়ে নানা কাহিনি রচনা করেছেন। খিজির (আ) এসব কাহিনির কেন্দ্রবিন্দু। এসব কাহিনিতে দেখানো হয়েছে যে, তিনি আবে হায়াত পান করে অমরত্ব লাভ করেছেন। এর মাধ্যমে দুনিয়ায় জীবিত আছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন! খিজির (আ)-এর পাশাপাশি এ প্রসঙ্গে আরও একজনের নাম উচ্চারিত হয়। তিনি হলেন বাদশাহ জুলকারনাইন। কেউ কেউ বলেন, খিজির (আ) ছিলেন জুলকারনাইনের খালাতো ভাই।  পবিত্র কুরআনে খিজির (আ) ও মুসা (আ)-এর ঘটনার পর পরই জুলকারনাইনের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তবে কথিত এই আবে হায়াতের কথা কুরআন ও হাদিসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। আবে হায়াত সম্পর্কিত ঘটনাটি এমন— বাদশাহ জুলকারনাইনের রাজদরবারে থাকতেন খিজির (আ)। তিনি আবে হায়াত সম্পর্কে জানতেন। একদিন তিনি বাদশাহকে জানালেন যে সাগরের ওপারে একটি অন্ধকার দেশ আছে। সেখানে সারাক্ষণ অন্ধকার থাকে।  ওই জায়গার এক গুহায় আবে হায়াতের ঝরনা আছে। ওই পানি খেলে কেউ মরে না। এটা শুনে জুলকারনাইন চার হাজার যুবক সঙ্গে নিয়ে ওই পানির খোঁজে বের হয়েছেন। কাফেলার অগ্রভাগে ছিলেন খিজির (আ)। গভীর অন্ধকারে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যায়। জুলকারনাইন পথ ভুলে অন্ধকারে চলে যান এবং আবে হায়াত পান করতে ব্যর্থ হন। আর খিজির (আ) সঠিকভাবে আবে হায়াত ঝরনায় পৌঁছে যান এবং তা থেকে পানি পান করেন। তাদের একজন অমরত্ব লাভ করেন, আরেকজন আবে হায়াত থেকে বঞ্চিত হন। এটাই আবে হায়াতের সংক্ষিপ্ত ঘটনা। বিভিন্ন গ্রন্থে এ ঘটনা বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। এটা জানা জরুরি যে খিজির (আ)-এর জীবন, মৃত্যু ও আবে হায়াতের ঘটনার সঙ্গে মুসলমানদের বিশ্বাসগত ও কর্মগত কোনো বিষয় জড়িত নয়। এ জন্য কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কোনো কিছু বলা হয়নি। তাই এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়। তবে বিশুদ্ধতম অভিমত হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
প্রশ্ন: আমার জানার বিষয় হলো— আবে হায়াত কী? লোকমুখে এ সম্পর্কে অনেক কাহিনি শুনে থাকি। যেমন আবে হায়াতের পানি পান করলে নাকি কেয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকবে।
ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ
ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ। আজকের দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে হিজরির দ্বিতীয় সনের ১৭ রমজান মদিনা থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের লড়াই ‘বদরযুদ্ধ’। বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নিয়ে আসা ধর্ম, ইসলামের বিরুদ্ধবাদী বিশাল সৈন্য-সামন্তের মোকাবিলায় ইমানদার বান্দাদের ছোট একটি দলের সশস্ত্র সংগ্রাম ছিল এটি। একদিকে আল্লাহর নবির সঙ্গে মাত্র ৩১৩ জন মুজাহিদ। তারা প্রায় নিরস্ত্র। অপর পক্ষে অবিশ্বাসীদের নেতা আবু জাহেলের নেতৃত্বে এক হাজার প্রশিক্ষিত সৈন্যের সুসজ্জিত বাহিনী। এ যুদ্ধে মানুষের ধারণাপ্রসূত সব ধরনের চিন্তা ও উপলব্ধির বাইরে গিয়ে আল্লাহতায়ালা অস্ত্রশস্ত্রহীন ইমানদারের অতিক্ষুদ্র দলটিকে বিজয় দান করেন। সেদিন বদরের প্রান্তরে ইমান ও কুফর, ন্যায় ও অন্যায়ের এক নতুন ইতিহাস রচিত হয়, যা শত শত বছর ধরে এক আল্লাহতে বিশ্বাসী মুসলমানদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। সম্মান ও অপমান আল্লাহর হাতে। এ বিশ্বাস ও চেতনা লালন করে পৃথিবীর যে প্রান্তে যখনই মুসলমানরা অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, তারা সংখ্যায় বা উপকরণে কম হলেও আল্লাহ তাদের বিজয় দান করেছেন। পক্ষান্তরে আল্লাহর ওপর ভরসাহীন অঢেল সম্পদ ও বিপুল সৈন্য-সামন্তে সজ্জিত মুসলমানদের পরাজয়ের বর্ণনায় ইতিহাসের পাতা ভরপুর হয়ে আছে। বদরের যুদ্ধ শুরুর আগে আল্লাহর নবি দোয়া করেছিলেন-‘হে আল্লাহ! তুমি যদি চাও দুনিয়াতে তোমার ইবাদত করার কেউ না থাকুক, তাহলে এ ক্ষুদ্র দলটিকে নিশ্চিহ্ন হতে দাও।’ আল্লাহতায়ালা রাসূল (সা.)-এর দোয়া কবুল করেন। কুরাইশদের অহমিকা ও দম্ভ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেন। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন বাহ্যিক উপায়-উপকরণের তুচ্ছতা। তাই প্রায় নিরস্ত্র মুষ্টিমেয় মুজাহিদদের কাছে পরাজিত হয় সুসজ্জিত বিশাল বাহিনী। তাদের পক্ষে নিহত হয় সত্তরজন। বন্দি হয় আরও সত্তরজন। আর মুসলমানদের মধ্যে শহিদ হন মাত্র চৌদ্দজন। যুদ্ধের এ ধরনের ফলাফল ছিল সম্পূর্ণ অকল্পনীয়। কিন্তু তা ছিল মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রমাণ। তিনি স্বল্পসংখ্যক মানুষকে বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ী করে দেখিয়ে দিলেন অবিশ্বাসী লোকদের প্রকৃত দুর্বলতা ও অসহায়তা। তাই বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ যুদ্ধ। মহানবি (সা.) মদিনায় হিজরত করে যাওয়ার দ্বিতীয় বছর সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি নিয়ে হজরত জিবরাইল (আ.) কুরআন মজিদের কয়েকটি আয়াত নিয়ে আসেনÑ‘যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো হচ্ছে, তাদেরকে (যুদ্ধের) অনুমতি দেওয়া হলো এজন্য যে, তারা নির্যাতিত হয়েছে। আর আল্লাহ তাদের সাহায্য করতে সক্ষম। তাদের নিজেদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে, তারা বলে আমাদের প্রভু আল্লাহ।’ (সূরা হজ, ৩৭)। এভাবে সশস্ত্র পন্থায় অবিশ্বাসীদের প্রতিরোধ করার অনুমতি লাভের পর আল্লাহর নবি (সা.) বদরযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন। বদরের প্রান্তরে ইসলাম বিজয়ের সূচনা হয়েছিল। তাই প্রতিবছর ১৭ রমজান এলেই বিশ্ব মুসলিম শ্রদ্ধা ও গৌরবের সঙ্গে বদরের বিজয়কে স্মরণ করে। বদরের শহিদদের স্মরণ করে বিশেষ সম্মানে। আসুন! আজকের দিনে ইসলামের শান্তি, সম্প্রীতি, সাম্য ও মৈত্রির আলোকে অশান্ত পৃথিবীকে নতুন করে সাজানোর ইমানদীপ্ত শপথ গ্রহণ করি! লেখক : প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুত তারবিয়াহ বাংলাদেশ, আলমনগর, সাভার, ঢাকা
ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ। আজকের দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে হিজরির দ্বিতীয় সনের ১৭ রমজান মদিনা থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের লড়াই ‘বদরযুদ্ধ’। বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নিয়ে আসা ধর্ম, ইসলামের বিরুদ্ধবাদী বিশাল সৈন্য-সামন্তের মোকাবিলায় ইমানদার বান্দাদের ছোট একটি দলের সশস্ত্র সংগ্রাম ছিল এটি।
এখনো সচল হজরত ওসমানের (র) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
মহানবীর (স) নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৩তম বছর। মুসলমানরা মাত্র মক্কা ছেড়ে মদিনায় এসেছেন। অচেনা পরিবেশে দেখা দেয় সুপেয় পানির তীব্র সংকট। মদিনায় ‘বিরেরুমা’ বা রুমার কূপ নামে ইহুদিদের একটি কূপ ছিল। ইহুদিরা এ সুযোগে কূপের পানি মুসলমানদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতে শুরু করলেন।  সাহাবারা রাসুলকে (স) এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছ যে, এই কূপ মুসলমানদের জন্য ক্রয় করে দেবে। মুসলমানদের এই কূপ যে খরিদ করে দেবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে ঝর্ণা দান করবেন।’ রাসুলের (স) কথায় হজরত ওসমান (র) ইহুদির কাছে এই কূপ ক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ইহুদি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে তিনি বললেন, পুরো কূপ বিক্রি না করলে অর্ধেক বিক্রি করুন। এতে একদিন কূপের মালিক হব আমি আর আরেক দিন হবেন আপনি।  ওসমান (র) অর্ধেক কূপ ক্রয় করে বিনামূল্যে পানি বিতরণ করতে লাগলেন। লোকজন ওসমানের (র) ক্রয় করা নির্ধারিত দিনে পানি সংগ্রহ করত এবং পরের দিনের জন্যও পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত করে রাখত।  ইহুদির দিনে কেউ পানি সংগ্রহ করতে যেত না। ফলে তার পানির ব্যবসা মন্দা হওয়ায় নিজেই পুরো কূপ বিক্রির জন্য ওসমানের (র) কাছে প্রস্তাব পেশ করে।  ওসমান (র) ৩৫ হাজার রৌপ্য মুদ্রায় কূপটি কিনে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে দেন। আরও পড়ুন: ফেরাউন কি নীলনদেই নিমজ্জিত হয়েছিল? এ সময় এক ধনী লোক ওসমানের (র) কাছ থেকে কূপটি দ্বিগুণ দামে খরিদ করতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাহিদা এর চেয়ে আরও অনেক বেশি। লোকটি মূল্য বাড়িয়ে বলতে লাগল। ওসমান (র) জবাবে আমার চাহিদা এর চেয়ে আরও বেশি বলতে লাগলেন। শেষে ধনী লোকটি বললেন, এমন কেউ আছে যে আপনাকে কূপটির মূল্য ১০ গুণ বলেছেন? ওসমান (র) জবাবে বললেন, আমার আল্লাহ আমাকে প্রতি নেকিতে ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন।  হজরত ওসমানের (র) শাসনামলে এই কূপের চারপাশে খেজুর বাগান তৈরি হয়। সময়ের চাকা ঘুরে বহু উত্থান-পতনের পর সৌদি রাজপরিবার সৌদি আরবের রাজসিংহাসনে বসার সময় এই বাগানে খেজুরগাছের সংখ্যা ১৫৫০টিতে পৌঁছায়। সরকার বাগানের চারদিকে দেয়াল তৈরি করে দেয়। এই ভূসম্পত্তি ওসমানের (র) নামে দলিল করে দেয় এবং তার নামে খুলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, সৌদি আরবে এখনো তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমানের (র) নামে দলিল করা প্রপার্টি রয়েছে। রয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও।  আরও মজার বিষয় হলো— মাস ফুরালে এখনো তার নামেই আসে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ওসমানের (র) মালিকানাধীন বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণের কাজ!  সৌদির কৃষি মন্ত্রণালয় এই বাগানের খেজুর বিক্রি করে অর্জিত অর্থ ওসমানের (র) অ্যাকাউন্টে জমা রাখে। সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মদিনায় একটি বড় প্রপার্টি ক্রয় করা হয়েছে।  যেখানে ‘হোটেল ওসমান বিন আফফান’ নামে একটি আবাসিক হোটেল নির্মাণ হয়। এই হোটেল থেকে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন রিয়াল আয় হবে বলে আশা করছে সৌদি সরকার।  যার নেমপ্লেটে লেখা আছে ‘মালিক সাইয়্যিদুনা উসমান (র)। যেহেতু তার ওয়াকফকৃত সম্পত্তি থেকে অর্জিত অর্থে এটি নির্মিত, তাই মালিক হিসেবে তার নামই উল্লেখ করা হয়েছে।  ২০১৪-১৫ সালে হোটেলটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। হোটেলের আয়ও উসমানের (র) অন্য সম্পদের মতো একভাগ এতিম-মিসকিনদের দান করা হয় এবং আরেক ভাগ তার নামে পরিচালিত অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়। এই অর্থের অর্ধেক অসহায়-দুস্থদের মানবতার সেবায় ব্যয় করা হয়, আর অর্ধেক হজরত ওসমানের (র) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়।  ওসমানের (র) এ দান আল্লাহ এমনভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন যে, কেয়ামত পর্যন্ত তা চালু থাকবে। ওসমানের (র) আখেরাতের অ্যাকাউন্টে তো সওয়াব জমা হচ্ছেই দুনিয়ার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সও ফুরাবার নয়।   আরও পড়ুন: স্বামী-স্ত্রীকে কি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে?
মহানবীর (স) নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৩তম বছর। মুসলমানরা মাত্র মক্কা ছেড়ে মদিনায় এসেছেন। অচেনা পরিবেশে দেখা দেয় সুপেয় পানির তীব্র সংকট।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে মদিনার জ্ঞানসভা
বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সাথি সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়িন ও তাবে-তাবেয়িন বিশ্বব্যাপী ইসলামি শিক্ষা বিস্তারে প্রায়ই নানা রকেমের বৈঠক করতেন। তবে বিভিন্ন স্থানে বিশেষ কিছু বৈঠক বা সভা করতেন। এসব সভায় বিভিন্ন শাস্ত্রীয় জ্ঞান, নানা অবস্থা, বিশ্বপরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা হতো। জ্ঞান সভায় আলোচনা হতো কুরআন, সুন্নাহ, ফেকাহ-ফতোয়া, যুদ্ধ, সফর-সিয়ার-মাগাজি এবং আরব ইতিহাসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হতো মাজলিসুল আদব বা সাহিত্য আসর। তাদের এ সভাগুলো সর্বপ্রকার ফেতনা-ফাসাদ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিল। ছিল উন্মুক্ত ও দিলের খোরাক-দাওয়া। প্রতিটি বিষয়ে উন্মুক্ত ও প্রাণবন্ত আলোচনা হতো। নিম্নে ইসলামের প্রাথমিক যুগে মদিনার কতিপয় জ্ঞানসভার পরিচয় তুলে ধরা হলো- মদিনার জ্ঞানসভা সাহাবিদের সভা-বৈঠকগুলো বেশিরভাগ মসজিদে নববিতে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হতো। মদিনার বিভিন্ন গলি ও বস্তিতে হতো। বিশেষ করে ওয়াদিয়ে আকিকের পাড়া-মহল্লায় জ্ঞান ও সাহিত্য সভা একসঙ্গে কোনো কোনো দিন জমে থাকত। অংশ নিতেন সমকালীন জ্ঞানী-গুণী পণ্ডিত, বিতার্কিক, ভাষাবিদ, কবি সাহিত্যিকরা। আগ্রহভরে অংশ নিতেন নানা প্রান্তের জ্ঞানপিপাসু ও সাহিত্যনুরাগীরা। ঐতিহাসিক জুবায়ের বাক্কার লিখিত-‘নাওয়াদিরুল মাদিনিয়িন, কিতাবুল আকিক ও আখাবারিহা’, আবু আলি হারুন ইবনু জাকারিয়া লিখিত-‘কিতাবুল আকিক, কিতাবুন নাওয়াদির ও আত-তালিকাত’ আবুল ফরজ ইসপহানি লিখিত-‘কিতাবুল আগানি’, আবু আলি কারি লিখিত-‘কিতাবুল আমানি’ ইত্যাদি গ্রন্থে মদিনার জ্ঞান সভা ও সাহিত্য আসরের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও জ্ঞান-সাহিত্যের তিক্ষè বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। (কাজি আতহার মোবারকপুরি, খাইরুল করুন কি দরসগাহ : ৩৬৩-৬৫) মজলিসুল কিলাদাহ সাহাবা, তাবেয়িন ও তাবে-তাবেয়িন যুগে অসাধারণ কিছু জ্ঞানসভা ও সাহিত্য আসরের খবর পাওয়া যায় তম্মধ্যে একটি হলো ‘মজলিসুল কিলাদাহ’। এ মজলিসটি মসজিদে নববির ‘উস্তোয়ানায়ে উফুদ’ তথা রাসূল (সা.)-এর শয়নকক্ষের পার্শ্ববর্তী খুঁটিতে প্রতিরাত এশার নামাজ পর জমে উঠত। রাসূল (সা.)-এর দরবারে আরবের বিভিন্ন গোত্রের প্রতিনিধি দল এলে রাসূল (সা.)-এর কামরার পার্শ্ববর্তী খুঁটির পাশে তাদের নিয়ে বসতেন বিধায় এটাকে ‘উস্তোয়ানায়ে উফুদ’ বলা হয়। এ সতুনের নিকটবর্তী দ্বিতীয় আরেকটি খুঁটির কাছে ‘মাজলিসুল কিলাদাহ’ অনুষ্ঠিত হতো। মদিনার সব ঐতিহাসিকরা এ মজলিসের শানমান বর্ণনা করেছেন। প্রাচীন ইতিহাসবিদ মুহাম্মাদ ইবনু জাবালাহ মাখজুমি মাদিনি (মৃত-১৯৯ হি.) তার ‘তারিখুল মদিনা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-মজলিসে কিলাদায় সমকালীন সব নামিদামি জ্ঞানী-গুণী অংশগ্রহণ করতেন। আল্লামা সামুদি লিখিত-‘ওফাউল ওফা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, এটি মজলিসে কিলাদাহ নামে প্রসিদ্ধ। এখানে সাহাবি যুগের উলামা-ফুজালা এবং নানা জ্ঞানী-গুণী অংশগ্রহণ করতেন। (ওফা আল-ওফা, ১ম খণ্ড : ৪৪৯; খাইরুল করুন কি দরসগাহ : ৩৬৫) মজলিসে উলামায়ে মাগাজি তাবেয়ি ও তাবে-তাবেয়ি যুগে মদিনার বিজ্ঞ ওলামা-ফুকাহাদের জ্ঞান সভা ছাড়াও সিয়র-মাগাজি, যুদ্ধকালীন নানা কাহিনিবিষয়ক পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হতো। যে সভায় মাগাজি-সারায়া তথা যুদ্ধ-জিহাদ বিশেষজ্ঞরা ও যুদ্ধের বিবরণ লেখকরা অংশ নিতেন। এ বিষয়ের প্রসিদ্ধ লেখক আবু মাশর নজিহ ইবনু আব্দুর রহমান সিন্দি (মৃত : ১৭০ হিজরি) এসব সভায় নিয়মিত উপস্থিত হয়ে তাবেয়িন ওলামাদের কাছ থেকে যুদ্ধ বর্ণনাগুলো মুখস্থ করে নেন এবং পরে ইমামুল মাগাজি খেতাবপ্রাপ্ত হন। এ সময় মদিনায় ইলমুল মাগাজির গভীর জ্ঞানী এবং যুদ্ধ-জিহাদবিষয়ক লেখকদের বড় একটি দল ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন-উরওয়াহ ইবনু জুবায়ের (মৃত : ৯৪ হিজরি), আবান ইবনু উসমান ইবনু আফ্ফান (মৃত : ১০৫ হিজরি), আসিম ইবনু আমর ইবনু কাতাদাহ (মৃত : ১২০ হিজরি), শুরাহবিল ইবনু সাআদ (মৃত : ১২৩ হিজরি), মুহাম্মাদ ইবনু শিহাব জুহরি (মৃত : ১২৩ হিজরি), আবদুল্লাহ ইবনু আবু বকর ইবনু হাজম (মৃত : ১৩৫ হিজরি), ওলিদ ইবনু কাসির (মৃত : ১৫১ হিজরি), মুসা ইবনু উকবাহ (মৃত : ১৪১ হিজরি), আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (মৃত : ১৭০ হিজরি), মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক (মৃত : ১৫১ হিজরি)। তারা পৃথক পৃথক মজলিসে মাগাজি করে পরস্পর আলোচনা-পর্যালোচনা করতেন এতে উপস্থিত শ্রোতারা উপকৃত হতেন। (তারিখে বাগদাদ, ১৩তম খণ্ড : ৪২৮; কিতাবুল মানাসিক, হরবি : ৩৬৬)। সমকালীন সংলাপ হজরত জায়নুল আবেদিন ইবনু আলি ইবনু হুসাইন, হজরত উরওয়াহ ইবনু জুবায়ের ও হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আলি (রা.)-এর মজলিস এশার নামাজের পর মসজিদে নববিতে অনুষ্ঠিত হতো। সমকালীন নানা বিষয়ে সংলাপ হতো। বিশেষ করে উমাইয়া খলিফা-উমারাদের রাজনীতি এবং শাসনব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হতো। যেমনটা সাহাবি হাসান (রা.) পুত্রের বর্ণনায় উঠে এসেছে। তিনি বলেন-আলি ইবনু হুসাইন ও উরওয়াহ ইবনু জুবায়ের প্রতি রাত এশার নামাজের পর শেষ পর্যায়ে মসজিদে নববিতে বসতেন, আমিও তাদের সঙ্গে বসতাম। অতঃপর সমকালীন প্রেক্ষাপট, রাজনীতি, শাসনকার্য বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতো। (তাবাকাতে ইবনু সাআদ, ৫ম খণ্ড : ১৮১; তারিখে বাগদাদ, ১৩তম খণ্ড : ৪২৮) লেখক : শিক্ষক ও গবেষক
বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সাথি সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়িন ও তাবে-তাবেয়িন বিশ্বব্যাপী ইসলামি শিক্ষা বিস্তারে প্রায়ই নানা রকেমের বৈঠক করতেন। তবে বিভিন্ন স্থানে বিশেষ কিছু বৈঠক বা সভা করতেন। এসব সভায় বিভিন্ন শাস্ত্রীয় জ্ঞান, নানা অবস্থা, বিশ্বপরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা হতো। জ্ঞান সভায় আলোচনা হতো কুরআন, সুন্নাহ, ফেকাহ-ফতোয়া, যুদ্ধ, সফর-সিয়ার-মাগাজি এবং আরব ইতিহাসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হতো মাজলিসুল আদব বা সাহিত্য আসর। তাদের এ সভাগুলো সর্বপ্রকার ফেতনা-ফাসাদ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিল। ছিল উন্মুক্ত ও দিলের খোরাক-দাওয়া। প্রতিটি বিষয়ে উন্মুক্ত ও প্রাণবন্ত আলোচনা হতো। নিম্নে ইসলামের প্রাথমিক যুগে মদিনার কতিপয় জ্ঞানসভার পরিচয় তুলে ধরা হলো-
জাকাত দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধান মাধ্যম
ইসলামের অন্যতম ফরজ ইবাদত জাকাত। সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে জাকাতের বিকল্প নেই। ধনীদের উদ্বৃত্ত সম্পদ থেকে অভাবীদের জন্য একটি অংশ আল্লাহতায়ালাই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তবে অপরিকল্পিতভাবে জাকাত দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে এখনো জাকাতের প্রকৃত সুফল মিলছে না। জাকাতের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছেন দেশবরেণ্য দুই আলেম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নূর আহমাদ মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি এবং পির সাহেব, আউলিয়ানগর জাকাতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলুন ইসলাম ধর্ম যে পাঁচটি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার তৃতীয়টি হলো জাকাত। নামাজের পরই কুরআনে জাকাতের কথা বলেছেন আল্লাহতায়ালা। এ ক্রমবিন্যাসের একটি তাৎপর্য এ রকম হতে পারে-ইমানদার নামাজি ব্যক্তির অলস বসে থাকার সুযোগ নেই। আগামী এক বছরে সে নিজে স্বাবলম্বী হবে এবং সমাজের দুস্থ-অসহায় মানুষকে স্বাবলম্বী করার ব্রত গ্রহণ করবে। সংক্ষেপে এই হলো জাকাতের মর্মকথা। মুজামুল ওয়াসিত প্রণেতার মতে, জাকাত শব্দের অর্থ ক্রমশ বাড়তে থাকা ও পরিমাণে বেশি হওয়া, প্রবৃদ্ধি লাভ করা, পরিচ্ছন্ন হওয়া, পবিত্র ও শুদ্ধ হওয়া। বিখ্যাত আরবি অভিধান লিসানুল আরবের লেখক বলেন, ‘জাকাত অর্থ পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, আধিক্য ও প্রশংসা। এ চারটি অর্থেই কুরআন ও হাদিসে জাকাত শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়।’ জাকাত শব্দের ভেতর দুটি অর্থ পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে, অনবরত বাড়তে থাকা। আরেকটি হচ্ছে শুদ্ধ ও পবিত্র হওয়া। আরবি ভাষা বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে জিনিস ক্রমশ বাড়তে থাকে সে জিনিস অবশ্যই শুদ্ধ ও পবিত্র হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। জাকাতের এত অর্থ থাকা সত্ত্বেও শরিয়তের দৃষ্টিতে শব্দটি ধন-সম্পদে আল্লাহ কর্তৃক নির্দিষ্ট ফরজ অংশ বোঝানোর জন্য ব্যবহার হয়েছে। আর হকদারকে সে সম্পদ দেওয়ার প্রক্রিয়াকে জাকাত বলা হয়। ইমান নববি (রহ.) বলেন, ‘ধন-সম্পদ থেকে আল্লাহর নির্ধারিত সম্পদ বের করে দেওয়াকে জাকাত বলার কারণ হলো-এর বিনিময়ে সম্পদ ক্রমশ বাড়তে থাকে আর জাকাতদাতা অনেক বিপদ আপদ থেকে পবিত্র থাকে।’ জাকাত কীভাবে মানুষকে পরিশুদ্ধ করে জানতে চাই জাকাত মানুষকে দুই ধরনের বিপদ থেকে সুরক্ষা দেয়। প্রথমত আখেরাতের জবাবদিহি থেকে। দ্বিতীয়ত দুনিয়ার বালামুসিবত থেকে। এ কারণেই জাকাতের দ্বিতীয় অর্থ হলো পবিত্রতা বা শুদ্ধতা। অন্য একজন ইসলামিক স্কলার লিখেছেন, ‘জাকাতের মাধ্যমে ব্যক্তি দুই ধরনের পবিত্রতা অর্জন করে। প্রথমত সে তার সম্পদ পবিত্র করে। দ্বিতীয়ত তার মন-মনন কৃপণতা, স্বার্থপরতা, হিংসা বিদ্বেষ মুক্ত হয়ে যায়।’ বিষয়টি ইমাম ইবনে তাইমিয়া আরও চমৎকার করে বলেছেন-‘জাকাত দেওয়ার ফলে দাতার মন-আত্মা নির্মল-পবিত্র হওয়ার কারণে তার ধন-সম্পদে আল্লাহ বরকত দেন এবং তা দিন দিন বাড়তে থাকে।’ কারজাভি বলেন, ‘এই বৃদ্ধি কেবল ধন-সম্পদে নয়, ব্যক্তির মন-মানসিকতা, ধ্যান-ধারণায়ও প্রভাবিত হয়। ফলে জাকাতদাতা দিন দিন উন্নত রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষ হয়ে ওঠেন।’) দারিদ্র্যমুক্ত অর্থনীতি গড়তে জাকাতের ভূমিকা সম্পর্কে বলুন জাকাতের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। ইসলামে সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থায় ধনীরা তাদের সম্পদের কিছু অংশ জাকাত দিলে গরিবদের সম্পদ কিছুটা বেড়ে যায় এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হয়। জাকাতভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা মহানবি (সা.)-এর আদর্শ মদিনা রাষ্ট্র, খোলাফায়ে রাশেদিনের শাসনামলে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য বিমোচন করে মুসলিম উম্মাহকে সমকালীন বিশ্বে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত জাতিতে পরিণত করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) সব সময় আল্লাহর কাছে দারিদ্র্য থেকে মুক্তির প্রার্থনা করতেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করতেন। জাকাতের মাধ্যমে ইসলাম সমাজকে দারিদ্র্য থেকে উদ্ধার করতে চায়। কিন্তু দেশে যেভাবে জাকাত আদায় ও বণ্টন করা হয়, এতে জাকাতগ্রহীতা স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের পেশা বা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে না। দেশের আদায়যোগ্য জাকাতের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকারও বেশি হতে পারে; যা দিয়ে প্রতি বছর পাঁচ লাখ লোকের পুনর্বাসন সম্ভব। পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে এভাবে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। তাই সমবেত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী জাকাত আদায় ও তার যথাযথ বণ্টন করা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণে অনেক স্বাবলম্বী মানুষও পথে বসে যায়। ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগেও জাকাত সংগ্রহ করে এমন মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যয় করা যেতে পারে। এর ফলে অল্প সময়েই তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। একজন মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানো মানে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। তাই ইসলাম বলে, অন্য ভাইকে সহযোগিতা করা আসলে নিজেকেই সহযোগিতা করার সমান। বিষয়টি বোঝার তাওফিক আল্লাহ আমাদের দিন। শাইখ মুহাম্মাদ জামাল উদ্দীন চেয়ারম্যান, জামালী তালিমুল কুরআন ফাউন্ডেশন এবং আবিষ্কারক, ২৪ ঘণ্টায় কুরআন শিক্ষা মেথড ইসলামি শরিয়ত মতে কার কার ওপর জাকাত ফরজ? জাকাতের নেসাব হলো সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ, বন্ড, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, ব্যাংকে জমাকৃত যে কোনো ধরনের টাকা, ফিক্সড ডিপোজিট হলে মূল জমা টাকা অথবা সমমূল্যের ব্যবসার পণ্য থাকলে জাকাত আদায় করতে হবে। স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও বুদ্ধিসম্পন্ন মুসলিম নর-নারী যার কাছে ঋণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও প্রয়োজনীয় খাদ্যবস্ত্রের অতিরিক্ত সোনা, রুপা, নগদ টাকা, প্রাইজবন্ড, সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস, শেয়ার ও ব্যবসায়িক সম্পত্তির কোনো একটি বা সবকটি রয়েছে, যার সমষ্টির মূল্য উল্লিখিত নেসাব পরিমাণ হয়, তিনিই সম্পদশালী। এ পরিমাণ সম্পদ এক বছর স্থায়ী হলে বা বছরের শুরু ও শেষে থাকলে বছর শেষে জাকাত দিতে হবে। কাকে জাকাত দিতে হবে? পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াতে জাকাতের খাত হিসাবে আট শ্রেণির লোকের কথা বলা হয়েছে। যথা : ফকির-যার মালিকানায় জাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই, যদিও সে কর্মক্ষম বা কর্মরত হয়। মিসকিন-যার মালিকানায় কোনো ধরনের সম্পদই নেই। আমিল বা জাকাত উসুলকারী-ইসলামি রাষ্ট্রের বায়তুল মাল কর্তৃক জাকাত সংগ্রহে নিয়োজিত কর্মকর্তা। নওমুসলিমদের পুনর্বাসনের জন্য জাকাত দেওয়া যায়। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যার এ পরিমাণ ঋণ রয়েছে যে, ঋণ আদায় করার পর তার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে না। আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তি। যেসব মুসলমান যুদ্ধে, জ্ঞানার্জনে কিংবা হজের পথে রয়েছেন এবং তাদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ সম্পদ নেই। মুসাফির-কোনো ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও কোথাও সফরে এসে সম্পদশূন্য হয়ে পড়লে, সে বাড়িতে পৌঁছাতে পারে-এমন পরিমাণ জাকাত প্রদান করা যাবে। এ আট খাতের সব খাতে অথবা যে কোনো একটি খাতে জাকাত প্রদান করলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে। কাকে জাকাত দেওয়া যাবে না? নির্ধারিত আটটি খাতের বাইরে অন্য কোনো খাতে জাকাত দেওয়া যাবে না। কেউ যদি দিয়েও ফেলে তবুও জাকাত আদায় হবে না। নিকটাত্মীয়দের জাকাত দেওয়া উত্তম। তবে সন্তান বা তার অধস্তনকে, মা-বাবা বা তাদের ঊর্ধ্বতনকে এবং স্বামী-স্ত্রীকে জাকাত দেওয়া যায় না। মহানবি (সা.)-এর বংশের কাউকে জাকাত দেওয়া যায় না। জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে টাকা বা সম্পদের পূর্ণ মালিকানা জাকাত গ্রহীতাকে দিতে হবে। তাই যেসব ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিমালিকানা হয় না, যেমন-মসজিদ, রাস্তাঘাট, মাদ্রাসার স্থাপনা, কবরস্থান, এতিমখানার বিল্ডিং-এসব তৈরির কাজে জাকাতের টাকা ব্যয় করা যাবে না। আমরা সব সময় বলি, জাকাতের মাধ্যমে ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী করে দিন। যেন কয়েক বছর পর সে আর অভাবী না থাকে। বরং সে নিজে জাকাতদাতা হয়ে যায়। এভাবে জাকাত দিলে জাকাতের সুফল দ্রুত দৃশ্যমান হবে।
ইসলামের অন্যতম ফরজ ইবাদত জাকাত। সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে জাকাতের বিকল্প নেই। ধনীদের উদ্বৃত্ত সম্পদ থেকে অভাবীদের জন্য একটি অংশ আল্লাহতায়ালাই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তবে অপরিকল্পিতভাবে জাকাত দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে এখনো জাকাতের প্রকৃত সুফল মিলছে না। জাকাতের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছেন দেশবরেণ্য দুই আলেম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নূর আহমাদ
ভেজাল ও মজুতদারির বিরুদ্ধে আলেমদের ভূমিকা প্রয়োজন
মুসলমান হতে হয় আচরণে, লেনদেনে, ব্যবসা-বাণিজ্যে। আমাদের একশ্রেণির ব্যবসায়ী এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যে, মানুষের রক্ত চোষাই তাদের একমাত্র টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে দাম বাড়লে একটি কি দুটি পণ্যের দাম বাড়ত। এখন সব পণ্যের দাম হু হু করে বাড়িয়ে দিচ্ছে সিন্ডিকেট। পবিত্র কুরআন থেকে জানা যায়, বাজার অস্থিতিশীল করার কারণে শোয়াইব নবির উম্মতকে আল্লাহতায়ালা চিরতরে ধ্বংস করে দেন। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে আলেমদেরও ভূমিকা রাখা উচিত। এ প্রসঙ্গে তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তি কথা বলেছেন যুগান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নূর আহমাদ ও মো. আবু তালহা তারীফ এএইচএম সফিকুজ্জামান জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মসজিদের ইমাম মানে একটি সমাজের নেতা। তিনি সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। সমাজের ছোট-বড় সবাই একজন ইমামকে সম্মান করে এবং তার কথা মন দিয়ে শোনে। একজন ইমাম যদি মসজিদে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেন, তাহলে সমাজে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে, তারা বুঝতে পারবে কী খারাপ কাজই না তারা করছে। তারা ইমাম সাহেবের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনবে। আমরা অনেক সময়ে ওয়াজ মাহফিলে আলেমদের বক্তব্য শুনে থাকি, সেখানে তারা সুদ-ঘুসের ব্যাপারে আলোচনা করে থাকেন, পাশাপাশি তারা যদি পণ্যে ভেজাল করা, বাজার অস্থির করা, মজুতদারি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ইত্যাদি অপরাধের ভয়াবহতা কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে তুলে ধরেন-তাহলে ভালো ফল আশা করা যায়। আলেম-ওলামারা নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসবেন এবং ভেজাল ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন খতিব, বায়তুলমোকাররম জাতীয় মসজিদ অবৈধভাবে পণ্য মজুত করাকে ইসলামে মহা অপরাধ হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। পণ্যে ভেজাল দেওয়া, মজুতদারি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের প্রতি নবিজি (সা.)-এর রয়েছে ভয়াবহ সতর্কতা। এ বিষয়ে ইমামদের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মানুষকে কথা বলতে হবে। এটা তো বাস্তব কথা, স্বাভাবিক কারণে নিত্যপণ্যের যে দাম বৃদ্ধি হয়ে থাকে, সেটার প্রতিকার করা কঠিন; কিন্তু সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়, প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়-সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসব অপরাধের সমাধান সম্ভব। মসজিদের মিম্বর থেকে ইমাম ও খতিবরা এ বিষয়ে কথা বলে থাকেন-আরও বেশি বলা উচিত। আসলে ওয়াজ-নসিহত তো হচ্ছে, আরও হবে; কিন্তু আমরা কি আমল করি? আমরা কয়জনে আমল করি? মনে করেন, ডাক্তার ওষুধ দিয়েছেন, আমি যদি ওষুধ না খাই তাহলে তো অসুখ ভালো হবে না। আলেম-ওলামা ও ইমাম-খতিবদের কথা শোনার-মানার ও আমল করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। মাওলানা শরফুদ্দিন আল হুসাইনী ইমাম ও খতিব, পুলিশ লাইন জামে মসজিদ, কুমিল্লা মজুতদারির ফলে মানুষকে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস উচ্চমূল্যে কিনতে হয়। মানুষের রক্ত চুষে মজুতদাররা তাদের স্বার্থপরতা, অবৈধ লাভ ও লোভের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। ফলে জনগণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এজন্য ইসলামে মজুতদারি হারাম। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পণ্য মজুত করে রাখবে সে ঘোরতর পাপী’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ১৬০৫)। রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘পণ্য আমদানিকারী রিজিকপ্রাপ্ত হয় আর মজুতদার অভিশপ্ত হয়’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ২১৫৩)। মজুতদারি রুখতে আলেমদের কিছু করণীয় আছে বলে মনে করি। লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কেও কুরআন-হাদিসের হেদায়াতি নির্দেশনাগুলো মানুষের সামনে দরদি ভাষায় তুলে ধরা আলেমদের প্রথম কাজ। দ্বিতীয় কাজ হলো, মাঝে মধ্যে এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে সভা-সেমিনার করে তাদের মনে আখেরাতের চিন্তা জাগ্রত করা। তৃতীয় কাজ, অবৈধ গুদামজাতসহ ব্যবসার হারাম কাজগুলো সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাবলি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশি বেশি প্রচার করা।
মুসলমান হতে হয় আচরণে, লেনদেনে, ব্যবসা-বাণিজ্যে। আমাদের একশ্রেণির ব্যবসায়ী এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যে, মানুষের রক্ত চোষাই তাদের একমাত্র টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে দাম বাড়লে একটি কি দুটি পণ্যের দাম বাড়ত। এখন সব পণ্যের দাম হু হু করে বাড়িয়ে দিচ্ছে সিন্ডিকেট।
‘এ দেশের মাটি ও শেকড়ের সঙ্গে ইসলামপন্থিদের সম্পর্ক’
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব ও দেশের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া কোরআনীয়া লালবাগের সহকারী পরিচালক মুফতি ফয়জুল্লাহ। দেশের ধর্মীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে এক আলোচিত নাম। এদেশের বরেণ্য আলেম ও রাজনীতিক প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমীনির হাত ধরে রাজনীতিতে পথচলা শুরু মুফতি ফয়জুল্লার। মুফতি আমীনির মৃত্যুর পর তার সংগঠন ইসলামী ঐক্যজোটের প্রধান নেতায় পরিণত হন তিনি। ২০১২ সাল থেকে দলটির মহাসচিব হলেও মূলত ইসলামী ঐক্যজোটের শীর্ষ নেতা হিসেবেই পরিচিত গুণী এ রাজনীতিবীদ।   আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের প্রভাবশালীদের একজন ছিলেন সংগঠনটির প্রথম কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। নানা ইস্যুতে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম রাখার পাশাপাশি টিভি টকশোতে নিয়মিত উপস্থিতি দেখা যায় তার। নেতাকর্মীরাও বেশ উজ্জীবিত হয় তার বক্তব্যে।  রাজনীতির পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহ সভাপতি ও কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্য মুফতি ফয়জুল্লাহ।  দেশের ইসলামপন্থি রাজনীতির হালচাল, আসন্ন নির্বাচন, হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদ্রাসা বিষয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- তানজিল আমির।  যুগান্তর: স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলো, এই দীর্ঘ সময়ে ইসলামপন্থিদের রাজনৈতিক বিভিন্ন কার্যক্রম ও সংগ্রাম হয়েছে। দীর্ঘ সময়েও ইসলামপন্থি রাজনীতির উত্থান না হওয়ার পেছনে কী কী কারণ বলে আপনি মনে করেন?  মুফতি ফয়জুল্লাহ: আমি প্রথমত এ কথায় বিশ্বাসী না যে, ইসলামপন্থিদের উত্থান হয়নি। বরং ইসলামপন্থিদের উত্থান আছে এবং তারা অত্যন্ত শক্তিশালী হয়েছে। এ দেশের মাটি ও শেকড়ের সঙ্গে ইসলামপন্থিদের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু তাদের উত্থানের পর বা গণজোয়ারের পর এটাকে ধরে রাখার বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ব্যাপারে তারা ব্যর্থ হয়েছে।  তাই প্রথম কথা হচ্ছে যে, ইসলামপন্থিদের উত্থান আছে, জোয়ার আছে কিন্তু এটিকে সাংগঠনিকভাবে রূপ দিয়ে বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামপন্থিদের যে অবস্থান তৈরি হওয়ার কথা তা তৈরি হয়নি। এটার পেছনে অবশ্য নানাবিধ ও নানামুখী কারণ আছে। আমি মনে করি যদি আমাদের মাঝে একটি ঐক্যের মানসিকতা থাকে, অর্থাৎ বৈচিত্রের মাঝে যে ঐক্য- তা হতে পারে কর্মসূচি কেন্দ্রিক বা আদর্শিক, যেকোনো ভাবে যদি আমরা এক প্লাটফর্মে আসতে পারি এবং সবার মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির একতা ও একমনা থাকত তাহলে হয়ত আমরা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সেই উত্থানের প্রকাশ ঘটাতে পারতাম এবং এর শক্তি প্রদর্শন করতে পারতাম। যুগান্তর: যে সমস্যার কথা বললেন তা কি বাড়ছে নাকি কমছে? সামনে কি ইসলামপন্থিদের সম্ভাবনা না হতাশা কোনটা দেখছেন আপনি?   মুফতি ফয়জুল্লাহ: এর সম্ভাবনা সবসময় দেখা যায় না। সব সম্ভাবনা যে সর্বদা দৃশ্যমান হবে এমনটাও না। আমরা চোখ দিয়ে যা দেখি বাস্তবে তা নাও হতে পারে। আবার যা হচ্ছে তা আমরা নাও দেখতে পারি। তবে আমি মনে করি আমাদের নিজস্ব একটি বলয় আছে এবং এক্ষেত্রে যদি আমরা একতা বজায় রেখে একটি জায়গা তৈরি করতে পারি তাহলে আমাদের অবস্থা ভালো হবে এবং এর একটি সুন্দর সম্ভাবনাও আছে।  যুগান্তর: এ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের আগ থেকেই বামপন্থি রাজনীতির চর্চা চলে আসছে এবং তাদেরও বিভিন্ন সংগঠন ও কার্যক্রম চলমান আছে। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম চলে। তবে আমরা দেখছি যে তাদেরও সে অর্থে উত্থান হয়নি।  আপনি একজন মাঠে ময়দানের রাজনীতিবিদ হিসেবে বামপন্থীদের বিষয়ে সামগ্রিকভাবে কি বলবেন? মুফতি ফয়জুল্লাহ: প্রথমত আমি বামপন্থিদের নিয়ে কোনো মন্তব্য আসলে করতে চাই না। এটি হচ্ছে সেই নীতি বা আদর্শ যাকে আমরা বলি বস্তাপচা জিনিস। এ জন্য এখন দেখা যায় যে আমাদের রাস্তার আশেপাশে কাল মার্কস বা মাও সেতুংয়ের বইগুলো ওজন হিসেবে বিক্রি করা হয়। এদেশে বামপন্থার উত্থান হওয়ার অবস্থা কখনোই ছিল না, আজকের দিনেও নেই এবং ভবিষ্যতেও এদের অবস্থা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকবে। এদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করার কি আছে! আমাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে যে মানুষ আছে তাদের পুরো বাংলাদেশ খুঁজলেও এত মানুষ পাওয়া যাবে না।   তবে হ্যাঁ, তাদের একটি সাহিত্য সংস্কৃতিতে জায়গা আছে তো সে জায়গাগুলেই তাদের জন্য বেটার। তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান তারা স্পষ্ট করবে এজন্য তাদের জায়গাগুলোতে তারা থাকুক। কিন্তু আমি মনে করিনা বাংলাদেশের মত জায়গার তাদের উত্থান হওয়ার কোনো সুযোগ আছে।  যুগান্তর: ইসলামী ঐক্যজোট বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় দল যারা আগেও বিভিন্ন চমক দেখিয়েছেল।  তো ইসলামী ঐক্যজোট আগামী নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে? মুফতি ফয়জুল্লাহ: ইসলামী ঐক্যজোট নামটিই হচ্ছে নিবন্ধিত ইসলামিক দল। আমরা আগামী নির্বাচন নিয়ে এখনো সাংগঠনিক অবস্থা তৈরি করছি এবং সংগঠনকে মজবুত ও শক্তিশালী  করার জন্য দেশব্যাপী কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম শেষে আমাদের কাউন্সিল করার নৈতিক একটি সিদ্ধান্ত আছে। তো এর পরে আগামী জুন-জুলাইয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করব। এখন আমরা মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি আগামী নির্বাচন উপলক্ষ্যে।  যুগান্তর: এক্ষেত্রে কি আপনারা বড় দুই দলের জোটের সঙ্গে যাবেন নাকি নিজেদের মধ্যে আলাদা কোনো জোট করার চিন্তাভাবনা আছে? মুফতি ফয়জুল্লাহ: যাদের বড় দল বলা হচ্ছে প্রথমত আমরা তাদের বড় দল মানি কিনা তা একটি বিষয়। তাছাড়া দুটির মধ্যে কোনো একটি জোটে যাওয়ার কোনোরকম চিন্তাভাবনা আমাদের নেই। তাদের কারও সঙ্গেই জোটে যাওয়ার চিন্তাভাবনা নেই। আমরা ইসলামপন্থিদের মধ্যে একটি সমঝোতা ও সমন্বয় যদি গড়ে তুলতে পারি তাহলে আমরা মনে করি যে এ দেশের মুসলিম এবং ইসলামপন্থীদের কল্যাণে মানুষের সমৃদ্ধির জন্যে ও মদিনা সনদের রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাবার জন্য ভালো হবে।  যুগান্তর: ২০১৬ সালে যখন আপনারা বিএনপি থেকে বের হয়েছিলেন তখন বলেছিলেন যে আপনারা ইসলামপন্থিদের নিয়ে একটি জোট করবেন। এরপর আর কোনো সম্ভাবনা দেখা যায়নি এ ব্যাপারে। এবার এমন কোনো পরিকল্পনা আছে? মুফতি ফয়জুল্লাহ: সব চিন্তাভাবনা বা সব স্বপ্ন সবসময় বাস্তবায়ন হয় না। আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা বা বলয় তৈরি করা। ইসলামপন্থিদের শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। তাদের দেশের মধ্যে এমন একটি পরিসরে নিয়ে যাওয়া যে ইসলামপন্থিদের ছাড়া যেন কেউ ক্ষমতায় যেতেও না পারে  আবার ক্ষমতায় থাকতেও না পারে। এমন পজিশন যদি আমরা তৈরি করতে পারতাম অর্থাৎ তারা কারও মুখাপেক্ষী হবে না বরং সব দল তাদের মুখাপেক্ষী হবে। এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার একটি চিন্তাভাবনা ছিল আমাদের এবং সেভাবে আমরা কাজ করেছি। তবে মাঝখানে স্বাভাবিক অবস্থা থাকেনি এবং রাজনীতিতে স্বাভাবিক অবস্থা থাকেওনা। এর মাঝে আমাদের যতদুর অগ্রসর হওয়ার কথা ছিল ততদুর অগ্রসর হতে পারেনি। কিন্তু ভবিষ্যতে আমরা এই কর্মপরিকল্পনা নিয়েই অগ্রসর হব। যুগান্তর: হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে যদি কারও নাম নেওয়া হয় আপনি তাদের একজন। কিন্তু বর্তমান হেফাজতের সঙ্গে আপনি নেই, বিষয়টিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? মুফতি ফয়জুল্লাহ: শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী (রহ.) প্রতিষ্ঠিত যে হেফাজত সেই হেফাজতের সঙ্গে বর্তমানে যে হেফাজত রয়েছে তার কোনো সম্পর্ক নেই। অতএব আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। এখন যে হেফাজত চলছে বা প্রচলিত আছে এটা কার হেফাজত? এটি তো শাইখুল ইসলামের (রহ.) হেফাজতে ইসলাম না।  যুগান্তর: আপনারা কি তাহলে হেফাজতে ইসলামকে পুনরুদ্ধার করবেন না?  মুফতি ফয়জুল্লাহ: আমরা সময় আসলেই সব বলব এবং সময়ই কথা বলবে। সময়ই আমাদের বলবে যে কী করতে হবে। তখন আমরা করণীয় নির্ধারণ করে সারাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম এবং হেফাজতের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও আল্লামা আহমদ শফীর যেসব প্রতিনিধি হেফাজতের সূচনালগ্ন থেকে ছিলেন তাদের নিয়ে চিন্তাভাবনা আমরা পরবর্তীতে ঠিক করব।  যুগান্তর: ইসলামী ঐক্যজোটেরও শুরু থেকে আপনি আছেন। সেই কর্মী থেকেই। তো আজকে ২০ বছর পরে ইসলামী ঐক্যজোটকে আপনি কোন অবস্থানে দেখছেন?  মুফতি ফয়জুল্লাহ: আমাদের সুনির্দিষ্ট যে পরিকল্পনা আছে তা সবসময় বাস্তবায়িত হয় না। আমি ২০ বছরের চিন্তা করি না বরং আমি দেখি যে পাঁচ বছর পরেই যেন আমরা একটি মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হতে পারি- এ চিন্তাটাই আমরা সবসময় করি। সেদিক দিয়ে যেভাবে ইনশাআল্লাহ উত্থান হচ্ছে এবং সারা দেশের নেতাকর্মীরা যেভাবে উজ্জীবিত হয়ে আবার মাঠে ময়দানে কাজ করছেন, আমি মনে করি ইনশাআল্লাহ ইসলামী ঐক্যজোট আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে।  যুগান্তর: কওমি মাদ্রাসায় সাম্প্রতিক আমরা বিভিন্ন অস্থিরতা দেখেছি। কওমি মাদ্রাসাগুলোর সামগ্রিক পরিস্থিতি কী? মুফতি ফয়জুল্লাহ: কওমি মাদ্রাসা মূলত শান্তিপ্রিয় মানুষ গড়ার কেন্দ্র। আলোকিত মানুষ কওমি মাদ্রাসায় তৈরি করে। কিন্তু মসজিদের মধ্যে যেমন চোর মাঝেমধ্যে ঢুকে যায় তেমনিভাবে কওমি মাদ্রাসার মধ্যেও বিভিন্নপন্থি বা বিভিন্ন লেবাসধারী কিছু মানুষ ঢুকে গেছে। আসলে তারাই মূলত বিভিন্ন ধরনের ফেতনা তৈরি করছে। এসব ফেতনা সম্পর্কে আমি মনে করি এখন কওমি মাদ্রাসার ৯৫ বা ৯৮ ভাগ ছাত্র উস্তাদ সচেতন রয়েছেন। তাই কোনো ফেতনা কওমি মাদ্রাসাকে ধ্বংস করতে পারবে না এবং ভিন্নপথেও নিয়ে যেতে পারবে না। যুগান্তর: অনেকেই বলে বা আপনাদের লোকজনই বলেন যে, আপনারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য রাখেন। এ বিষয়ে কী বলবেন? এ সমালোচনার জবাব কিভাবে দেবেন? মুফতি ফয়জুল্লাহ: আমি সমালোচকদের অভিনন্দন জানাই এবং সমালোচনাকে গ্রহণ করি। আমি মনে করি ইসলামী ঐক্যজোট নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে কাজ করছে। আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি বা অমুক-তমুকের সঙ্গে কোনো সখ্য আমাদের নেই। হ্যাঁ, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে একটা ওঠাবসা বা কথাবার্তা থাকে সে ধরনের যোগাযোগ থাকতে পারে কিন্তু কোনো দলের হয়ে ইসলামী ঐক্যজোট কাজ করে না এবং কোনো দলের জোটের মধ্যে ২০১৬ সালের পর থেকে নেই। সামনেও থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। অনুলিখন করেছেন- কাজী আব্দুল্লাহ
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব ও দেশের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া কোরআনীয়া লালবাগের সহকারী পরিচালক মুফতি ফয়জুল্লাহ। দেশের ধর্মীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে এক আলোচিত নাম।
শিক্ষা আন্দোলনের পথিকৃৎ নবিজি সা.
জ্ঞান অর্জনে ইসলাম কী তাগিদ দিয়েছে? ইসলামের ভিত্তিই গড়ে উঠেছে জ্ঞানকে কেন্দ্র করে। আসলে এ ছাড়া কোনো উপায়ও ছিল না। ধর্ম এসেছে মানুষের ভেতর জগৎ আলোকিত করার জন্য। ভেতর আলোকিত না হলে আপনি নানা ধর্মের নানা বর্ণের মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারবেন না। ধর্মের স্বার্থে মানুষের সঙ্গে মেশা জরুরি। আবার মানুষের সঙ্গে মিশতে হলে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখার জন্য জ্ঞানের বিকল্প নেই। ইসলামের জ্ঞানের মর্যদা বোঝাতে আমি তিনটি উদাহরণ দেব। প্রথমত মানব সৃষ্টির সূচনাতে আল্লাহ আদম (আ.)কে সৃষ্টি করে তার শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হিসাবে জ্ঞানকে হাইলাইট করেছেন। আল্লাহ কিন্তু বলেননি, আদম দেখতে সুন্দর। তার স্মার্ট পোশাক অথবা আরও অনেক বিষয় ছিল যেগুলো হাইলাইট করা যেত। কিন্তু আল্লাহ বললেন, ‘ওয়াআল্লামা আদামাল আসমাআ কুল্লাহা। আল্লাহতায়ালা আদমকে যাবতীয় জ্ঞান শিখিয়েছেন।’ অর্থাৎ, আদমের শ্রেষ্ঠত্ব হলো সে জ্ঞানী। দ্বিতীয়ত নুরনবি (সা.)-এর ওপর প্রথম যে ওহিয়ে এলাহি এসেছে সেটা কিন্তু ইমান, তাওহিদ, নামাজ, রোজা, আখিরাত, কেয়ামত সম্পর্কে নয়, এসেছে জ্ঞান সম্পর্কে। ‘ইকরা’, পড়! আশ্চর্যের কথা হলো, প্রথম ওহির পাঁচ আয়াতের চারটিই পড়া সম্পর্কে। প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, পড় তোমার প্রভুর নামে। তৃতীয় আয়াতে আবার বলা হচ্ছে, পড়! তোমার প্রভু দয়াময়। চতুর্থ আয়াতেও বলা হয়েছে, তিনি তোমাকে কলম দিয়ে শিখিয়েছেন। পঞ্চম আয়াতে আবার জ্ঞানের প্রসঙ্গ টেনে আল্লাহ বলছেন, তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন যা সে জানত না। আরেকটু গভীরে গেলে দেখবেন, এখানে আল্লাহ শুধু জ্ঞান নয় জ্ঞান সংরক্ষণের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়েছেন। পড়ার নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ পড়ানোর বা শেখানোর মাধ্যম কলমের উল্লেখ করেছেন এ জন্যই। আমরা যদি হুজুর (সা.)-এর জীবনী বিশ্লেষণ করি, সেখানেও তিনি এ দুটি বিষয়ে সাহাবিদের খুব বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি সাহাবিদের জ্ঞান শিখিয়েছেন, আবার তা সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করেছেন। শুরুর দিকে হুজুর (সা.) হাদিস লিখতে নিষেধ করেছেন কুরআনের সঙ্গে মিশে যাওয়ার আশঙ্কায়। কিন্তু তিনি সাহাবিদের নির্দেশ দিয়েছেন, আপাতত হাদিস লিখ না, তবে ব্যাপক আকারে প্রচার করতে থাক। জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রসারে রাসূল (সা.) কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন? হুজুর করিম (সা.) শিক্ষার ওপর অনেক জোর দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি কয়েকজন সাহাবিকে স্পেশাল ট্রেনিং দিয়ে তাদের শিক্ষক হিসাবে গড়ে তুলেছেন। এ সাহাবিরা অন্যদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন। বদরের যুদ্ধের দিকে তাকালে বুঝতে পারব শিক্ষার ব্যাপারে হুজুর কত গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা যদি ফতহুল বুলদান দেখি, সেখানে বলা হয়েছে মক্কায় তৎকালীন পনেরো হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র পনেরোজন লিখতে ও পড়তে জানতেন। এটাকে যদি আমরা ত্রিশ হাজার এবং লিখতে পড়তে জানা মানুষের সংখ্যা একশজনও ধরে নিই তবুও শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা উল্লেখ করার মতো হবে না। তো বদরের যুদ্ধে যখন মক্কার কাফের মুশরিকরা যুদ্ধবন্দি হলো, তাদের মধ্যে কিছু শিক্ষিত মানুষও ছিল। তখন নবি (সা.) একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ নিলেন। এ উদ্যোগের নাম আমি দিয়েছি, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম শিক্ষা আন্দোলন।’ নবি বললেন, হে যুদ্ধবন্দিরা! তোমাদের মধ্যে যারা লিখতে পড়তে জান, তারা যদি মদিনার দশজন বালককে লিখতে পড়তে শেখাতে পার তাহলে তোমাদের মুক্ত করে দেওয়া হবে। হুজুর (সা.) শিক্ষাকে এত গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হজরত ফারুকে আজমের শাসনকালে সাক্ষরতার হার শতভাগ হয়ে যায়। ইসলাম কি দ্বীনি ইলম ও দুনিয়াবি ইলম নামে জ্ঞানের বিভাজন করেছে? ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ধর্ম এ দুটির বিভাজন মুছে দিয়েছে। আরবি দ্বীন শব্দকে বাংলায় ধর্ম বলা হয়। আসলে দ্বীন শব্দের সঠিক সমার্থক শব্দ বাংলায় নেই। একইভাবে ইংরেজি রিলিজিয়ন শব্দটিও দ্বীন শব্দের ব্যাপকতা ধারণ করতে পারে না। ধর্ম ও রিলিজিয়নের আরবি হলো মাজহাব, দ্বীন নয়। আপনি যদি অক্সফোর্ড দেখেন সেখানে বলা আছে, রিলিজিয়ন হলো কিছু প্রথা, নিয়ম কানুন ও নৈতিক শিক্ষা। আমাদের দ্বীনের একটা অংশ হলো ওয়ারশিপ বা ইবাদত এবং নৈতিকতা। কিন্তু দ্বীন বলতে আরও বিস্তৃত বিষয়কে বোঝায়। মানব জীবনের যত দিক ও বিভাগ আছে সবকিছু এর অন্তর্ভুক্ত। এবং প্রতিটি দিক ও বিভাগের জন্য একটি সমাধান দ্বীনে রয়েছে। এখন আমার কাছে ধর্ম শব্দ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ না থাকায় দ্বীনের তরজমায় ধর্ম বলতে বাধ্য হয়েছি। আমি যখন বলি ধর্মের আলোকে রাজনীতি করতে হবে, তখন আধুনিক শিক্ষিতরা বলেন, ধর্ম কেন রাজনীতিতে আসবে? এক দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের কথা ঠিক, ধর্ম তো রাজনীতিতে আসার কথা নয়। ধর্ম আসবে ইবাদত, প্রথা, নৈতিকতা প্রসঙ্গে। কিন্তু দ্বীন বললেই আপনি ক্লিয়ার হয়ে যাবেন এটি শুধু ইবাদত বা নৈতিকতার এক বা দুটি দিক নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকার বিষয় নয়। আপনার পুরো জীবন দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত। এবার আপনার প্রশ্নের উত্তরে আসি। ইসলামপূর্ব সময়ে বিজ্ঞান ও ধর্মের মাঝে একটি বিরোধ ছিল। বিজ্ঞান ধর্মকে মেনে নিতে পারত না, আবার ধর্মও বিজ্ঞানকে সহ্য করতে পারত না। কুরআন এসে দীর্ঘদিনের এ দ্বন্দ্ব দূর করে দিয়েছে। একটি উদাহরণ দিন আল্লাহতায়ালা ধর্ম ও বিজ্ঞানকে একটি আয়াতের মাধ্যমে সমান উচ্চতায় তুলে ধরেছেন। আমি এখনো ‘ধর্ম’ শব্দটিই বলে যাচ্ছি কারণ এর অন্য কোনো বাংলা প্রতিশব্দ আমাদের কাছে নেই। সূরা আলে ইমরানের ১৯১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যারা দাঁড়িয়ে বসে ও শুয়ে আল্লাহর জিকির করে’-আয়াতের প্রথম অংশ এটি। এখানে জিকরে ইলাহির কথা বলা হয়েছে। এটা দ্বীন। পরের অংশ দেখুন, ‘এবং তারা পৃথিবী ও মহাশূন্য নিয়ে চিন্তা গবেষণায় মগ্ন।’ এটা বিজ্ঞান। আয়াতের উপসংহারে আল্লাহ বলেছেন, ‘এই দুই শ্রেণিই বলে, হে আল্লাহ! আপনি কোনো কিছুই খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করেননি। আপনি মহাপবিত্র। আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচান।’ খেয়াল করুন, জিকরে এলাহি এবং বিজ্ঞানকে আল্লাহ একটি আয়াতে উল্লেখ করে ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিরোধ মিটিয়ে দিয়েছেন। আমাদের বুঝতে হবে ধর্মের আলোচ্য বিষয় আর বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। কেউ যদি বলে, গাড়ি আর প্লেনের সংঘর্ষ হয়েছে, এ দাবির কোনো ভিত্তি নেই। দুটির চলার পথ দুরকম। এখন আসুন বাংলা ধর্ম বা আরবি মাজহাব কী করে? মাজহাব শুধু জিকরে এলাহির বিষয় আলোচনা করে। কিন্তু দ্বীন ধর্ম ও বিজ্ঞানসহ গোটা জীবন ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর ফলে মানুষ বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের কোনো কিছুই আল্লাহ খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করেননি। গত তেরোশ বছরের ইতিহাসে ইসলামে জ্ঞানের কোনো বিভাজন ছিল না। আমাদের যিনি মুফাসসির ছিলেন, তিনি আবার কেমিস্ট-বায়োলোজিস্টও ছিলেন। পৃথিবীর আর কোনো ধর্মের স্কলাররা এত বহুমুখী বিদ্যায় পারদর্শী ছিল বলে আপনি দেখাতে পারবেন না। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) ফিকহ, ইসলামি আইন, দর্শন, রসায়ন, পদার্থ, জীববিজ্ঞান, তাসাওউফ সব শাখায় বুৎপত্তি লাভ করেন। এ থেকেই বোঝা যায়, ইসলাম জ্ঞানের বিভাজন করেনি।
জ্ঞান অর্জনে ইসলাম কী তাগিদ দিয়েছে?
‘ইসলামি দলগুলোকে জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে থাকতে হবে’
সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানি। সাজ্জাদানশিন ও মোন্তাজেম, দরবারে গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারি, মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম। এ ছাড়া পার্লামেন্ট অব ওয়ার্ল্ড সুফিজ প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি।  শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী মাইজভাণ্ডার দরবারের এ গদিনশিন সামাজিক ও জনবান্ধব কাজে বেশ জনপ্রিয়। পীর-মুরিদির প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে কিছুটা নতুনত্ব লক্ষ্য করা যায় তার কর্মকাণ্ডে। জনসাধারণের অধিকার নিয়ে কথা ও কাজ করছেন দেশজুড়েই। প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা।  মাইজভাণ্ডার দরবারের ইতিহাস ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে যুগান্তরের পক্ষ থেকে তার মুখোমুখি হয়েছেন- তানজিল আমির প্রশ্ন: মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠা, উদ্দেশ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাই। মাইজভাণ্ডার দরবারের যাত্রা শুরু হলো কীভাবে?  সাইফুদ্দীন আহমেদ আল হাসানি: আমি মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের একজন আওলাদ ও বর্তমানে দরবারের প্রতিনিধিত্ব করছি। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানায় একটি আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার নাম মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ।  মূলত মাইজভাণ্ডার একটি প্রাচীন গ্রামের নাম। মাইজভাণ্ডার গ্রামে মগ, চাকমারা নিজেদের ধনভাণ্ডার, খাদ্যশস্য ও রসদের একটি ভাণ্ডার তৈরি করে এবং সেখানে তারা তা জমিয়ে রাখত অনেক প্রাচীনকাল থেকেই। তো সেখান থেকেই মাইজভাণ্ডার নামকরণ। এ এলাকায় কয়েকজন আল্লাহর ওলির আগমন ঘটে। যাদের পূর্বপুরুষ বাগদাদ থেকে এসেছেন।  ১৫৭১ সালে আব্দুল কাদের জিলানির বংশধর সৈয়দ হামিদুদ্দিন আল কাদেরি গৌরী তিনি সে সময় বাগদাদে বিচারক ছিলেন। বাংলাদেশের তখনকার সুলতান তাকে গৌরে নিয়ে আসেন বিচারের কাজ করার জন্য। সে থেকেই তারা এ দেশেই রয়ে গেছেন। এর পর তিনি চট্টগ্রামে চলে যান। আমাদের পূর্বপুরুষরা চট্টগ্রামে ইসলামের অনেক খেদমত করেছেন। এই ধারাবাহিকতায় মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফে আমাদের পূর্বপুরুষরা অবস্থান করেন।  সৈয়দ আহমাদুল্লাহ মাইজভাণ্ডারি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা সমাপন করে সে সময় ওকালতির পড়াশোনা করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও মুহাদ্দিস হিসাবে আত্মনিয়োগ করেন এবং যশোরে তাকে সরকার কর্তৃক বিচারবিভাগীয় কাজে নিযুক্ত করা হয়। অতঃপর তিনি সেখানে পাঁচ বছর সম্মানের সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করে আবারও চট্টগ্রামে ফিরে আসেন ও আধ্যাত্মিকতার এক নতুন ধারার সূচনা করেন। প্রশ্ন: মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের মাধ্যমে ২০০ বছরের মতো এ দেশে ইসলামের কাজ চলছে, তো এই দীর্ঘ সময়ে মাইজভাণ্ডার দরবারের উল্লেখযোগ্য অবদান কী কী?  সাইফুদ্দীন আহমেদ আল হাসানি: সৈয়দ আহমাদুল্লাহ মাইজভাণ্ডারি চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে ইসলামের বাণী পৌঁছাতে শুরু করেন। বাংলার মাটিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আইন প্রয়োগের সুষম বণ্টনে তার অনেক অবদান রয়েছে। তখন থেকেই এই জায়গাটি একটি আধ্যাত্মিক জায়গা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব ধর্মের মানুষ এখানে আসত। নিজেদের আত্মার শান্তি ও তৃপ্ত হৃদয় নিয়েই তারা আসা যাওয়া করত।  আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহর অনুগ্রহশীল বান্দা তাদের কাছেই আল্লাহর রহমত রয়েছে। আউলিয়া কেরামের দরবারই হচ্ছে আল্লাহর কাছে আসার উৎস। এই দরবারে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এসে নিজেদের আত্মার প্রশান্তি পেত। পাশাপাশি তারা ইসলামের আলো ও কালেমার দাওয়াতে আলোকিত হয়েছেন।  মূল কথা হচ্ছে খারাপ মানুষদের ভালো করাই আল্লাহ ওয়ালাদের কাজ। সেই চর্চাই মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফে অব্যাহত রয়েছে। আমার পিতা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ এ দরবারের কার্যক্রমকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চালু করেছেন।  জাতিসংঘ থেকে ইউনেস্কোসহ আন্তর্জাতিকভাবে যেসব সংস্থা আছে সেখানে দেশ ও ইসলামের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি সেখানে ইসলামের পক্ষে ও মদিনার সনদের আলোকে কথা বলেছেন।  ২০০০ সালে ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়াস পিস পোগ্রাম যা জাতিসংঘের সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেখানে তিনি গিয়েছেন। সর্বদা তিনি ইসলামের পক্ষে ও মানবতার পক্ষে কাজ করে গেছেন। আমিও সেই পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।  আমরা চেষ্টা করি মানুষকে আলোকিত করার। কারণ একজনকে আলোকিত করলে তার মাধ্যমে ১০০ মানুষ আলোকিত হবে। এ ১০০ মানুষের সঙ্গে যারা সম্পর্ক রাখবে তারাও আলোকিত হবে। এভাবে হাজার হাজার মানুষ আলোকিত হবে।  সুফিবাদের মাধ্যমে ইসলামকে ছড়িয়ে দেওয়াই মাইজভাণ্ডার শরিফের মূল উদ্দেশ্য। সুফিজমই হচ্ছে আসল ইসলাম যারা মানুষের ক্ষতি করে না। সবসময়ই কল্যাণ চিন্তা করে। কারণ ইসলাম হচ্ছে শান্তি, কল্যাণ ও সম্প্রীতির ধর্ম। সে ধারাতেই মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফে যুগ যুগ ধরে পরিচালিত হচ্ছে।  এ দরবার সবসময়ই মজলুমের পক্ষে ছিল। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এ বাংলার মানুষের পাশেই ছিল মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ। বাংলার মানুষের গ্রহণযোগ্যতাকে গুরুত্ব দিয়ে দরবারের অনুষ্ঠানের যে সূচি আছে তা বাংলা তারিখ প্রাধান্য দিয়ে বানান হয়েছে। এর মাধ্যমেই বাংলাভাষার স্বীকৃতিকে আরও প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রশ্ন: প্রায় ১১টি ইসলামিক দল ও আপনাদের তরিকতের দুটি দল থাকা সত্ত্বেও আপনি সম্প্রতি একটি দল গঠন করেছেন, এই দল নিয়ে আপনার ভাবনা কী?  সাইফুদ্দীন আহমেদ আল হাসানি: আসলে ইসলামকে ব্যবহার করে কোনো দল গঠন বা রাজনীতি করা আমার উদ্দেশ্য নয়। দেশের জন্য কিছু করা ও জনগণের জন্য কিছু করাই মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি ধর্ম ও মানবতার জন্য এটি করা। আমি বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি গঠন করেছি এবং এটি নিয়ে কাজ করেছি। দেশের মানুষের চাওয়া পাওয়া, মানুষের ভালোমন্দ ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকাই হচ্ছে সুপ্রিম পার্টির মূল লক্ষ্য। আমরা ইনশাআল্লাহ এ দল নিয়েই সামনে এগিয়ে যাব।  আমরা চাই নতুন প্রজন্ম, যুবসমাজকে আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে। সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে। সব দলের সঙ্গেই একটি সুন্দর পরিবেশ ও দেশের মধ্যে ঐক্য সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত করাই আমাদের লক্ষ্য।  প্রশ্ন: সম্প্রতি আপনার একটি মন্তব্য বেশ আলোচিত হয়েছে, ইসলামিক দলগুলো জনগণের কাছে যেতে পারেনি, অনেকটা অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। এর ব্যাখ্যা কী?  সাইফুদ্দীন আহমেদ আল হাসানি: অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক মানে অনুসারী ভিত্তিক। জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনি জনগণের কথা যতক্ষণ পর্যন্ত বলতে পারবেন না, সাধারণ জনগণের দুঃখ দুর্দশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবেন না, ততদিন পর্যন্ত আপনি যে রাজনৈতিক দলই করেন কোনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না। আমি সেটিই বুঝিয়েছি যে আমাদেরকে নিজেদের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অনুসারী ভিত্তিক পরিবেশের বাহিরে এসে আমাদের কাজ করতে হবে। যদি রাজনীতি করতে চান তাহলে রাজনীতির মতোই করতে হবে। যাদের জন্য বলবেন তাদের জন্যই এ কাজ করতে হবে। আমরা রাজনীতি জনগণের জন্য করি। তা যেন জনগণের জন্যই হয়। তাই নিজেদের গণ্ডি পেরিয়ে আমাদেরকে সবার সামনে আসতে হবে।  প্রশ্ন: আপনার কথায় জনগণের বিষয়টি বেশি উঠে আসছে। আর আপনি মনে করছেন যে ইসলামি দলগুলো জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেনি। তো তারা কেন পারেনি এবং কী কৌশলে এগুলে এটি সম্ভব হবে বলে মনে করেন?  সাইফুদ্দীন আহমেদ আল হাসানি: মূলত জনগণের দাবিদাওয়া, মূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কিন্তু ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো কথা বলা তো দূরের কথা তারা এগুলা নিয়ে চিন্তাই করে না। পাশাপাশি দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোও এসব বিষয় নিয়ে নিশ্চুপ।  আমরা দেখেছি কিছুদিন আগে তাজিকিস্তানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়াতে সেখানে কি ভয়াবহ বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানের মানুষ এত সচেতন যে সরকারও পালটে ফেলেছে আন্দোলন করে। এজন্য আমাদেরকে মানুষের কথা ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে জনগণের পারিবারিক দুরবস্থা, অর্থনৈতিক সমস্যা হচ্ছে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলা উচিত।  আমি অব দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল বলব অথচ তাদের কোনো কথাই যদি আমি না বলি বা তাদের কষ্ট অনুধাবন না করি তাহলে রাজনীতির নাম ব্যবহার করাটা যুক্তিযুক্ত হবে না। প্রশ্ন : বাংলাদেশে পির-মুরিদিকেন্দ্রিক যেসব রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তাদেরকে মুরিদরা পির হিসাবে যতটা গ্রহণ করে নেতা হিসাবে ততটা নয়, ভোটের ক্ষেত্রেও সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আপনিও কি তাই মনে করেন?  সাইফুদ্দীন আহমেদ আল হাসানি: বিএনপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করার কারণে ভোটের আসল চিত্রটি এখন সেভাবে ফুটে ওঠে না। কিন্তু সব দল যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তখন আসলে ভোটের চিত্র অন্যরকম হবে। সে হিসাবে ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি।  এর কারণ একটিই, জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার অভাব। ওয়াজ নসিহত ভিত্তিক বা পিরমুরিদি ভিত্তিক, মাদ্রাসাকেন্দ্রিক যেসব কার্যক্রম তারা ধরে রেখেছে সে হিসাবে জনগণের সুখ-দুঃখে তাদেরকে খুব একটা বেশি দেখা যায়নি। আমরা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির পক্ষ থেকে সেই পরিবর্তন আনতে চাচ্ছি।  আমরা চাই সবাই যেন এভাবেই নিজেদেরকে পরিবর্তন করে মানুষের জন্য কাজ করতে পারি, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হবে মানুষের সেবা। রাজনীতি করলে যেন মানুষের জন্য করা হয় নিজের জন্য না করা হয়।  প্রশ্ন: সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসন র্যা বের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, বিষয়টি একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসাবে আপনি কিভাবে দেখেন?  সাইফুদ্দীন আহমেদ আল হাসানি: দেখুন, এ দেশে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে র্যা বের অনেক ভূমিকা আছে তা অনস্বীকার্য। দোষ-গুণ সবারই আছে। ভালোমন্দ মিলিয়েই সবকিছু। দেশে এখন যে সার্বিক উন্নতি হচ্ছে অনেকের কাছেই এগুলো চক্ষুশূল। অনেক দেশ তা মানতে পারছে না। অনেক দেশ তাদের প্রবৃদ্ধিও ধরে রাখতে পারছে না করোনার জন্য। অনেকের অর্থনৈতিক ধস পড়েছে। সেখানে বাংলাদেশের এমন উন্নতি বা মানুষের যেই অর্থনৈতিক সচ্ছলতা তা অনেকের কাছে হিংসার কারণ হয়েছে। যেমন শ্রীলঙ্কায় একটি বিরাট অর্থনৈতিক ধস চলছে। সে তুলনায় বাংলাদেশে উপর আল্লাহর রহমত আছে। এ দেশের মাটিতে অনেক আউলিয়া কেরাম শায়িত আছেন।  উলামায়ে কেরাম অনেকেই দুনিয়াতে না থাকলেও তাদের দোয়া কিন্তু আছে আমাদের উপর। পাশাপাশি খুব অল্প সময় আউলিয়া কেরামের দোয়ার ফসলে এ দেশ মাত্র নয় মাসে স্বাধীন হয়েছে। পাকিস্তানের এক লাখ সৈন্য থাকা সত্ত্বেও আমাদের সঙ্গে তারা পারেনি। অথচ সেই সৈন্য দিয়ে দশ বছর যুদ্ধ করা যায়। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানিতে আমরা বিজয় লাভ করেছি। তো এগুলো আমাদের বুঝতে হবে। আধ্যাত্মিক বিষয় আসলে এগুলো। এসব নিষেধাজ্ঞা দিলেও আল্লাহ যদি আমাদের উপর মেহেরবানি করেন তাহলে কোনো নিষেধাজ্ঞাই আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।  তবে আমাদের দেশের বিশ্বাসঘাতক শ্রেণির কিছু মানুষের কারণে ভুল তথ্য যাচ্ছে বিদেশে। যা সামগ্রিকভাবে কিন্তু দেশেরই ক্ষতি। এগুলো করে দেশের কল্যাণ হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের কাজ করছে। কারও বিষয় নিয়েই কারও মাথা ঘামানো উচিত না। আমেরিকা এখন মানবতার কথা বলছে অথচ তাদের বিষয়গুলো যদি আমরা তুলে ধরি যে সিরিয়া ইরাকে তারা কি করেছে? পারমাণবিক বোমার মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুরো ইরাক তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।  লিবিয়াকে কিভাবে তারা ধ্বংস করেছে। এই যে তারা অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে সেখানকার লাখ লাখ মানুষকে তারা শরণার্থী বানিয়ে দিয়েছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে সেখানকার অসহায় মানুষগুলো। তো আমেরিকা এখন কিভাবে মানবিকতার ঢোল পিটায়। আরেকজনকে হেদায়াত দেয়ার আগে দেখতে হবে আমি হেদায়াতের উপর আছি কিনা। এখন তাদের মধ্যেই আমরা কোনো হিউম্যান রাইটসের লেশও দেখি না। অথচ তারা এখন আমাদের দেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন করে। একটা দেশের মধ্যে অনেক কিছুই হয়। আমরা তো তাদের মতো অন্য দেশ ধ্বংস করিনি।  আজ আমেরিকা লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানকে তারা নরক বানিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। তাদের চক্রান্তেই আজ লাখ লাখ মানুষ শরণার্থী জীবন পার করছে। এরা সবাই মুসলমান। মুসলিম দেশগুলোকে এরা ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তো বাংলাদেশ ৩য় মুসলিম প্রধান দেশ, বিশ্বে তো আমাদের ইমান মজবুত আছে।  ইনশাআল্লাহ আগামী ৫/১০ বছরের মধ্যে আমাদের যেই অর্থনৈতিক রোডম্যাপ আছে সে হিসাবে এগিয়ে চললে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। অনুলিখন করেছেন- কাজী আব্দুল্লাহ
সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানি। সাজ্জাদানশিন ও মোন্তাজেম, দরবারে গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারি, মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম। এ ছাড়া পার্লামেন্ট অব ওয়ার্ল্ড সুফিজ প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি।
জাতীয় কল্যাণে অর্ধশতাব্দীর ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নিতে চাই
মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী আল-আযহারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য একজন মানুষ। তার আরো পরিচয় আছে। তিনি গণভবন ও সচিবালয় মসজিদের ভূতপূর্ব ইমাম ও খতিব।  তিনি বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদাররেসিনের সাবেক সভাপতি, তিনি বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সভাপতি এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লেখক, গবেষক ও সম্পাদক। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠনে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।   ব্যতিক্রমী এ গুণী আলেমের বিস্তৃত কর্মযজ্ঞ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন- তানজিল আমির    প্রশ্ন: ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ভাষা আন্দোলনে আপনি সম্পৃক্ত ছিলেন? কীভাবে যুক্ত হন আন্দোলনে? উত্তর: ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি জাতীয় ইতিহাসে মহীয়ান সন্দেহ নেই। কিন্তু ১৯৫২ সালে আমার বয়স মাত্র দশ বছর, আমি তখনো গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র, তাই অবদান রাখার বয়স ছিল না।  অবশ্য ১৯৫৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে যখন সিলেট শহরের বিখ্যাত সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হই, তখন ভাষা আন্দোলনের উদ্যোক্তা সংস্থা ‘পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিসের’ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে ‘তমদ্দুন’ নামে হস্তলিখিত ম্যাগাজিনের একাধিক সংখ্যা প্রকাশ করেছিলাম- যা হয়তো আজও কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে সংরক্ষিত আছে।  ১৯৬২ সালে ঢাকায় সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর তমদ্দুন মজলিসের প্রাণপুরুষ অধ্যাপক আবুল কাসেম, অধ্যাপক শাহেদ আলী ও আব্দুল গফুর ভাই প্রমুখের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করি এবং ওই বছর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অধ্যাপক (তখন তিনি বাংলা কলেজের প্রিন্সিপাল) আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কুরআন তিলাওত করেছিলাম। প্রশ্ন: ১৯৭১ এর আগেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের আসন্ন পতন নিয়ে লেখালেখি করেছিলেন আপনি। কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? উত্তর: হ্যাঁ, ১৯৬৮ সালেই আমার লিখিত এবং আমাদের আঞ্জুমানে এজহারে হক (সত্যপ্রকাশ সমিতি) থেকে প্রকাশিত ইসলামের ডাক পুস্তকে- যা ইদানীং ‘নিমজ্জমান পাকিস্তানের শেষ অধ্যায়’ নামে পুন:প্রকাশিত হয়েছে- তাতে স্পষ্ট লিখেছিলাম, যেহেতু পাকিস্তানে ঘোষিত লক্ষ্য ইসলামী ও সমতা- ভিত্তিক ন্যায্য শাসন প্রতিষ্ঠা হয়ে ওঠেনি, তাই এ রাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধভাবে টিকে থাকার ন্যায্যতা হারিয়েছে। এর পতন আসন্ন।  আমার পুস্তকটিতে প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ ও মওলানা নূর মোহাম্মদ আজমীর মত প্রখ্যাত আলেমের অভিমত সংযুক্ত ছিল। বাংলা একাডেমীর অনুবাদ বিভাগে তখন কর্মরত মওলানা মুজিবুর রহমান (হাকীম আল-মূতির পিতা) বলেছিলেন: এ হক কথার জন্যে মাওলানা আপনার কচি হাত পাষণ্ডরা মুচড়ে দিতে পারে! বলাবাহুল্য, আমি প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই কথাগুলো লিখেছিলাম। প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেন কীভাবে? এর পক্ষে আলেমদের সংগঠিত করতে পেরেছিলেন কতটা? উত্তর: তখন আমার মতে, মওদুদীবাদই ছিল সবচেয়ে বড় ফিতনা। এদের অদূরদর্শী-মারমুখী জঙ্গী তৎপরতার কারণে এদেশে ইসলামী আন্দোলনের পথ চিরতরে রুদ্ধ হওয়ার যে আশঙ্কা আমি প্রকাশ করেছিলাম, তা তো এখন বাস্তব সত্যে পরিণত। আমি তাদের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে ১৯৭০ সালে লালমাটিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলাম।  পক্ষকাল যাবৎ পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবাদ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তার এক সহকর্মী আনোয়ার হোসাইনকে আমার কুশলবার্তা জানার জন্যে প্রেরণ করেছিলেন। জাতীয় নেতাদের অনেকেই- যেমন ন্যাপের অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ, নেজামে ইসলামের নেতা মওলানা আবদুল মজীদ খাঁ প্রমুখ অনেকেই এর প্রতিবাদ করেছিলেন।  তাদের হামলাবাজির প্রতিরোধ আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী সাংবাদিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেন ভাইকে তো এজন্যে প্রাণই দিতে হয়েছিল। জামাতীরা তাকে ও মাওলানা অলিউর রহমানসহ অনেককে ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এ রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে শহীদ করেছিল।  নাগালের মধ্যে পেলে ওরা আমাকে ও আমার অনুজ উবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদীকে অবশ্যই হত্যা করতো।  উবায়দুল্লাহ  ৭ই মার্চেও ঐতিহাসিক ভাষণের পূর্বে কুরআন তিলাওয়াত করেছিল এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দসৈনিক ছিল। ২৫ শে মার্চের কালো রাত্রিতে তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় অফিসেই ছিল এবং তারপর তাকে আমি ভারতের শিলং পর্যন্ত গিয়ে দিয়ে আসি।  সেখানে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার পাটমন্ত্রী কালিয়াকৈরের শামসুল হক এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্যসচিব ডক্টর এম.এ. সামাদ ও আমরা একত্রে শিলং এর পাইনউড হোটেলে ছিলাম। দেশে ফিরে অনেকটা আত্মগোপনে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেশবাসীকে সক্রিয় থাকার প্রেরণা যুগিয়ে গেছি।  স্থানীয় জামাতীরা তখনই সিলেট সদর থানায় খতরনাক মুক্তিযোদ্ধারূপে রিপোর্ট করেছিল- যা হয়তো এখনো খোঁজ করলে থানার রেকর্ডে পাওয়া যাবে। শান্তি কমিটি নেতা সরপঞ্চ কছীরুদ্দীন আমার দেশে ফেরার পর অনেক রকম জিজ্ঞাসাবাদ করে আমাকে ফাঁসাবার চেষ্টা করেছিলেন।  আবার এক জামাত নেতা পাক-বাহিনীর কমান্ডারের কাছে আমার সম্মুখেই আমার ছোট ভাইয়ের বঙ্গবন্ধুকে লিখিত চিঠির চোরাইকৃত ফটোকপি তুলে দিয়ে আমাকে নিশ্চিত হত্যার সম্মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। আল্লাহর রহমতে প্রতুৎ মতিত্বের দ্বারা সে যাত্রা আমি রক্ষা পেয়েছিলাম। প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আপনার সম্পর্কের কিছু দিক যদি বলতেন। উত্তর: বঙ্গবন্ধু পত্রপত্রিকায় আমার ও আমার ছোট ভাইয়ের বিভিন্ন সংবাদ পাঠে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি ছোট ভাইটিকে সিলেট থেকে নিয়ে এসে একেবারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিস ৫১ পুরানা পল্টনে দলের দফতর সম্পাদক পরবর্তীকালে দেশের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদউল্লাহ সাহেবের পাশের কক্ষেই স্থায়ীভাবে বসিয়ে দেন। তখন তার কাজ ছিল দলের ধর্মীয় দিকটি দেখা; বঙ্গবন্ধুর ভাষায় সে ছিল তার লেফটেনেন্ট। ৭ই ডিসেম্বর ১৯৭০ সালে যে দিন তিন জাতীয় নেতার মাজার জিয়ারতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন আজ থেকে এদেশ বাংলাদেশ (আর পূর্ব পাকিস্তান নয়) ওই দিনের মোনাজাতও সেই পরিচালনা করেছিল। তাদের সঙ্গে আবদুর রাজ্জাক ভাইও ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার সিলেটী সহকর্মীদের মুখ থেকে যখন জানতে পারলেন যে, ছোট ভাইর নামে প্রকাশিত লেখালেখির উৎস আমি, তখন তারই মাধ্যমে আমাকেও তিনি সক্রিয়ভাবে মাঠে নামার আহবান জানিয়ে ছিলেন। আমি তাকে বলি যে, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আমার যা করার সবই আমি করবো, কিন্তু দলীয় প্লাটফর্ম থেকে করলে তার গ্রহণযোগ্যতা কম হবে।  বরং আমার নেপথ্য থেকে কাজ করাই অধিকতর কার্যকর হবে। সুতরাং আমার প্রধান কাজ ছিল লেখালেখি। কেননা, অসির চাইতে মসির জোর যে বেশী, তা তো সর্বজন স্বীকৃত। সম্পূর্ণ আলেম সমাজের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় হওয়াটা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের দুই ভাইয়ের সাথে আমরা উস্তাদ মাওলানা অলিউর রহমানকেও অত্যন্ত কৌশলে শামিল করে নিতে সমর্থ হয়েছিলাম।  তিনি জামাতীদের ‘ইত্তেহাদুল উলামা’ থেকে বের হয়ে সরাসরি আওয়ামী উলামা পার্টি গঠন করে স্বতন্ত্র ধর্ম দফতর প্রতিষ্ঠার ম্যান্ডেট নিয়ে এবং তাতে বঙ্গবন্ধুর সমর্থন ও অঙ্গীকার আদায় করে ময়দানে নেমেছিলেন- যার ফলশ্রুতিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে আমরা সমর্থ হয়েছি। বঙ্গবন্ধু আমাদের কর্মের কতটা মূল্যায়ন করতেন তার বড় প্রমাণ হলো, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে তিনিই আমাকে প্রথম ওয়াজ মাওলানা পদে নিযুক্তি দিয়ে জুমার পূর্বে বক্তৃতার দায়িত্ব প্রদান করেন।  তিনি আমার ছোট ভাইকে দিয়ে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পূর্বে কুরআন তিলাওয়াত করান। তাকে মাওলানা তর্কবাগীশের সঙ্গে বায়তুল মুকাররম পরিচালনা কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করেন। ওই পর্যায়ে আমিই সর্বপ্রথম বাংলাদেশ সীরাত মজলিস গঠন করে জাতির পিতাকে দিয়ে সীরাতুন্নবী জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করিয়ে বিশ্বব্যাপী তার ইসলামী ভাবমূর্তি সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানী অপপ্রচারের উচিত জবাব দেবার ব্যবস্থা করি।   আমার অনুরোধেই তিনি বেতার-টিভিতে পুনরায় কুরআন তিলাওয়াত ও ইসলামী অনুষ্ঠানাদি চালু করেন। তিনি আমারই অনুরোধে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন করেন, যাতে আমাকে ও আমার ভাইকে সদস্য মনোনীত করেন। মাদ্রাসা শিক্ষার জন্যে বাজেটের ঘোষণা দেন। তার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে কৌশলে এসব খিদমতের জন্যে তার সমর্থন আদায় না করলে জামায়াতের জঙ্গী কৌশলে তা কোনদিনই সম্ভব হতো না। প্রশ্ন: বাংলা ভাষায় ইসলামী সাহিত্যচর্চায় আপনি অগ্রগণ্য একজন। আপনার সাহিত্যকর্ম নিয়ে কিছু বলবেন? উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ্, এ জন্যে আমি আল্লাহর শোকর আদায় করছি। ১৯৫৮ সালে সিলেটের ঐতিহাসিক মাসিক আল-ইসলাহে ‘শাহজালালের ঝর্ণা’ কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে লেখালেখির সূচনা। ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসার ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করি। তারপর মাসিক আল-ইসলাহ সাপ্তাহিক যুগভেরী (বর্তমানে দৈনিক), ঢাকার দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী, ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, মাসিক মদীনা প্রভৃতি পত্রিকায় শত শত প্রবন্ধ, তারপর ইসলামী বিশ্বকোষ ও সীরাত বিশ্বকোষ প্রচুর রচনা ছাড়া সেগুলোর সম্পাদনা পরিষদে বিজ্ঞ পণ্ডিতমণ্ডলীর সাথে শরীক ছিলাম এবং এখনো আউলিয়া বিশ্বকোষের সম্পাদনায় শরীক রয়েছি। লিখিত, অনূদিত, সম্পাদিত পুস্তকাদির সংখ্যা শতাধিক।  আমার লিখিত রাসূলুল্লাহর পত্রাবলী সন্ধি চুক্তি ও ফরমানসমূহ এবং এর ইংরেজী ভাষ্য Holy Prophet’s Mission to Contemporary Rulers অনূদিত ইমাম বোখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ এর ছয় ছয়টি সংস্করণ হয়েছে।  মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বিখ্যাত ‘ইন্ডিয়া উইন্স ফ্রিডম’ এর আমার অনূদিত ও লিখিত অনুবাদ ও প্রতিভাষ্য এতই জনপ্রিয় হয় যে, উভয়বঙ্গেও নন্দিত কথাশিল্পী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কোলকাতা থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত পূর্ব-পশ্চিম নামে দেড় হাজার পৃষ্ঠার পুস্তকে আমার ওই পুস্তকের বরাত ব্যবহার করেছেন।  ১৯৭৮-২০১৬ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৮ বছর পর্যন্ত মহানবী স্মরণিকার সম্পাদক এবং ১৯৮৯-৯০ দু’বছর মাসিক মদীনার সম্পাদনা করি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ধর্ম মন্ত্রনালয়ে প্রকাশিত হজ, উমরা ও জিয়ারত ১৯৮১ থেকে এ পর্যন্ত প্রতি বছরই সরকারীভাবে ছেপে হজ যাত্রীদের হাতে তুলে দেয়া হয়ে থাকে।  ‘ইসলামী আইন ও আইন বিজ্ঞান’ শীর্ষক ই.ফা. প্রকাশিত সহস্র পৃষ্ঠার আইন পুস্তকটির ৬০ ভাগ আমার একার রচিত।  সদ্য প্রকাশিত মাওলানা আজাদের তাফসীর ২ খন্ড (১০০০ পৃ.), রসূলুল্লাহর হজ ও উমরা (৪৭০ পৃ.) এবং প্রকাশাধীন বাঙালী লেখক কর্তৃক লিখিত সর্বপ্রথম উর্দু তাফসীর ফরিদপুরের মুফতী মুরাদুল্লাহ (১৭৫০-১৮৩০) লিখিত তাফসীরে মুরাদীয়া (৪ শতাধিক পৃষ্ঠা), ও ভারতবর্ষের সর্বপ্রথম হাদিসগ্রন্থ ইমাম সাগানীর মাশারিকুল আনোয়ার (১২৭৩ পৃ.)প্রকাশনাধীন।  এছাড়া সময়ের প্রয়োজনে লিখিত অসংখ্য প্রবন্ধ প্রাচীনতম বাংলা মাসিক নেয়ামত এবং মাসিক আল কাউসারের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে। এখনো আমি বিখ্যাত ফরাসী লেখক গোস্তাভ লি বোঁ রচিত ‘আরব সভ্যতা’ পুস্তকের অনুবাদে সক্রিয় রয়েছি। আল্লাহ্ পাক কবুল করুন। প্রশ্ন: সামগ্রিক বিচারে অর্থেই আপনি এখন দেশের প্রবীণতম আলেম। জাতীয় জীবনে আপনার বৃহত্তর ভূমিকায় আপনাকে দেখবো না নিবৃতচারী জীবন পছন্দ করবেন? উত্তর: ১৯৬২-৬৩ সালে মাদ্রাসা ছাত্রদের বিখ্যাত ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদের আমিই ছিলাম প্রথম উদ্যোক্তা ও আহবায়ক। ওই দু’ বছর ঢাকার সর্বপ্রথম লক্ষাধিক মাদ্রাসা ছাত্রের অভাবিতপূর্ব মিছিল করিয়েছিলাম। যার ফলশ্রুতিতে কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং এ সরকারের আমলে ঢাকায় আমাদের দাবিমতে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।  বাংলাদেশ আমলে জমিয়তুল মুদাররেসিনের সভাপতিরূপে হাল ধরে মাদ্রাসা শিক্ষাকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টায় অনেক বেশী শ্রম দিতে হয়েছে। এ আন্দোলনগুলোর প্রাণপুরুষরূপে মহাব্যস্ত না থাকলে সাহিত্য ক্ষেত্রে আরো বেশী অবদান রাখতে পারতাম। আল্লাহ্ তায়ালা যখন যে খেদমত  নেয়া পসন্দ করেছেন, তাতেই আমি সন্তুষ্ট।  প্রায় নিভৃতচারীরূপেই থাকলেও গণভবন মসজিদ ও বাংলাদেশ সচিবালয় মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে ব্যয়িত (১৯৭৫-২০০৫) দীর্ঘ ত্রিশ বছরের অতি ব্যস্ততায় এখন আর না থাকলেও লেখালেখিতে এখনো আল্লাহর অনুগ্রহে সক্রিয় রয়েছি। তাফসীরে জিলানী ৩য় খণ্ড সমাপ্ত হয়েছে, প্রথম ২ খন্ড ইতিপূর্বেই প্রকাশিত (প্রায় ১০০০ পৃ.) তৃতীয় খণ্ড যন্ত্রস্থ। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৬ সালে উচ্চতর ইমাম ট্রেনিং এর জন্যে সর্বপ্রথম যে টিমটি আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিল, আমি তার অন্যতম সদস্য। দু’জন ছাড়া অন্য সকল সহযাত্রী ও সহট্রেইনীরা ইন্তেকাল করেছেন। এ অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এসব দেখার দায়িত্ব যাদের তারা আগ্রহী না হলে সে সম্ভাবনা কোথায়?  বঙ্গবন্ধুর দ্বারা সমাদৃত, মূল্যায়িত ও প্রশংসিত একজন হিসাবে এ সংকটময় মুহূর্তে অনেক কিছুই করার ছিল। আল্লাহ্ তায়ালা সেভাবে দায়িত্বপালনের সুযোগ দিলে হয়তো আরও বেশ কিছু কাজ করা যেতো। আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছা ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। সর্বাবস্থায় আমি আল্লাহর শোকর আদায় করি।
মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী আল-আযহারী জাতির পিতাবঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য একজন মানুষ। তার আরো পরিচয় আছে। তিনি গণভবন ও সচিবালয় মসজিদের ভূতপূর্ব ইমাম ও খতিব।
সেনেগালে আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশের রায়হান
সেনেগালের রাজধানী ডাকারে অনুষ্ঠিত ১১তম আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতা ২০২৪-এর আসরে ১ম স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশের প্রতিযোগী হাফেজ আবু রায়হান ।  রোববার স্থানীয় সময় রাত ১০টায় এর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়। এতে অংশ নিয়েছিল বিশ্বের ২৮ দেশের প্রতিযোগী।  সোমবার কারি আবু রায়হান তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। আফ্রিকার সেনেগালের ভূমিতে লাল-সবুজের বিশ্বজয়, ৩০ দেশকে পেছনে ফেলে কারি আবু রায়হানের বিশ্বজয়।  এ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে তিনি পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ১০ মিলিয়ন ফ্রান্ক বা ১৬ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৯ লাখ টাকা। ২ এপ্রিল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য সেনেগালের উদ্দেশে রওনা দেন হাফেজ আবু রায়হান। মূল প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে যথাক্রমে মিশর ও সেনেগালের প্রতিযোগী।
সেনেগালের রাজধানী ডাকারে অনুষ্ঠিত ১১তম আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতা ২০২৪-এর আসরে ১ম স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশের প্রতিযোগী হাফেজ আবু রায়হান ।
এবার তানজানিয়া জয় করল বাংলাদেশের হাফেজ হুজাইফা
আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ফের বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করল ১০ বছর বয়সি ক্ষুদে বালক হাফেজ হুজাইফা। তানজানিয়ার দারুস সালামে ‘তানজানিয়া ইন্টারন্যাশনাল হলি কুরআন অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’-এ ৩০ পারা গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেছে এ হাফেজ। রোববার (৩১ মার্চ) এ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে প্রথম গ্রুপে (১২ বছরের নিচে বাচ্চাদের পূর্ণ ৩০ পারা) প্রথম স্থান লাভের গৌরব অর্জন করে হুজাইফা। হাফেজ হুজাইফা রংপুর জেলার মনিরুজ্জামানের ছেলে। সে ক্বারি নাজমুল হাসান পরিচালিত রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত তাহফিজুল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদ্রাসার ছাত্র।  ক্ষুদে বালক হাফেজ হুজাইফার এমন কীর্তিতে গর্বিত তার শিক্ষক হাফেজ ক্বারি নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, আসলে প্রতিযোগিতায় তার তেলাওয়াত শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তেলাওয়াত এতো শ্রুতিমধুর ছিল যে, যেখানে প্রতিযোগিতা হচ্ছিল ওই হলরুমে সবাই তাকবির ধ্বনি দিয়ে মুখরিত করে রেখেছিল পুরো পরিবেশ। আমি দোয়া করি হুজাইফা বিশ্ববরেণ্য আলেম হয়ে ইসলাম এবং দেশের মানুষের খেদমত করুক এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করতে থাকুক। আমি হুজাইফা ও আমাদের মাদ্রাসার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। উল্লেখ্য, তানজানিয়া অনুষ্ঠিত এবারের প্রতিযোগিতায় মোট দুইটি গ্রুপ ছিল। প্রথম গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জনকারী বাংলাদেশের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া ও ইয়েমেন। আর দ্বিতীয় গ্রুপটি আয়োজন করা হয়েছিল প্রাপ্তবয়স্ক হাফেজদের নিয়ে। এ বছর ৩০-এর অধিক দেশ এতে অংশগ্রহণ করে।
আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ফের বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করল ১০ বছর বয়সি ক্ষুদে বালক হাফেজ হুজাইফা। তানজানিয়ার দারুস সালামে ‘তানজানিয়া ইন্টারন্যাশনাল হলি কুরআন অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’-এ ৩০ পারা গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেছে এ হাফেজ।
ইসলাম গ্রহণ করলেন জনপ্রিয় মার্কিন র‌্যাপার বিং বং
জনপ্রিয় মার্কিন র‌্যাপার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বিং বং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের আস-সাফা ইসলামিক সেন্টারের মসজিদে বিশাল জমায়েতের সামনে প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা দেন তিনি।  তাকে কালেমা পাঠ করান ওই মসজিদের খতিব বাংলাদেশের মুফতি লুৎফর রহমান কাসিমী। কালেমা গ্রহণের পর ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষাও দেন তিনি।     বিং বংয়ের ইসলাম গ্রহণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে। ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মসজিদের খতিবের সঙ্গে তিনি কালিমা পাঠ করছেন।  বিং বংয়ের আসল নাম ট্রাভিস ডোয়লে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি গরিলা ন্যামস নামে পরিচিত। বিং বং মার্কিন র‌্যাপার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, উদ্যোক্তা ও ওয়েব সিরিজের প্রযোজক।   ইসলাম গ্রহণের পর তার নাম এখন হামজা। ইনস্টাগ্রাম পোস্টে সব ভিডিও শেয়ার করেছেন তিনি।   আস-সাফা ইসলামিক সেন্টারের খতিব মুফতি লুৎফর রহমান কাসিমী বলেন, জনপ্রিয় র‌্যাপার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বিং বং রমজানের প্রথম সপ্তাহে একদিন ইফতারের আগে আমাদের সেন্টারে এসে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেন।  আমি তাকে কালিমা পড়াই ও ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করি। মুসলিম নামগুলোর মধ্যে তিনি হামজা নামটি পছন্দ করেছেন।   এর আগে চলতি রমজানে যুক্তরাষ্ট্রের লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট শন কিং ও আরেক র‌্যাপার লিল জন ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
জনপ্রিয় মার্কিন র‌্যাপার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বিং বং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের আস-সাফা ইসলামিক সেন্টারের মসজিদে বিশাল জমায়েতের সামনে প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা দেন তিনি।
রমজানে ঢাকায় এতেকাফ করবেন সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী
আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ঢাকায় এতেকাফ করবেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর ও ভারতের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রধান মাওলানা সাইয়েদ মাহমুদ মাদানী। আগামী ১, ২ ও ৩ রমজান ঢাকার আফতাবনগরের আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া ইদারাতুল উলূম মাদ্রাসায় তিন দিন অবস্থান করবেন তিনি। সাইয়েদ মাহমুদ মাদানীর খলিফা, আফতাবনগর মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মুফতি মোহাম্মদ আলী বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করছেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল সাইয়েদ মাহমুদ মাদানী কমপক্ষে একসপ্তাহ আফতাবনগর মাদ্রাসায় রমজানে অবস্থান করবেন। কিন্তু তিনি খুব ব্যস্ত। উম্মতের নানা ফিকিরে বিশ্বব্যাপী তিনি সফর করেন। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি বাংলাদেশে রমজানের প্রথম তিন দিন অবস্থান করবেন। মুফতি মোহাম্মদ আলী জানান, সাইয়েদ মাহমুদ মাদানীর অবস্থান উপলক্ষে যেসব পোগ্রাম হবে সেগুলো শুধু আলেমদের জন্য নয়, সর্বস্তরের মুসলমানের জন্য। সবার যেন আধ্যাত্মিক ও আমলি উন্নতি হয় সে লক্ষ্যেই আমাদের এই আয়োজন।  অল্প এই সময়ে আওলাদে রাসুলের কাছ থেকে আত্মশুদ্ধি ও আমলি জিন্দেগির যে শিক্ষা নেওয়া যায় তা-ই জীবন চলার পাথেয় হবে। মাওলানা মাহমুদ মাদানী একজন ভারতীয় ইসলামি স্কলার, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী। ১৯৬৪ সালে উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৯২ সালে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।  ভারতের প্রাচীনতম সর্ববৃহৎ সংগঠন জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের (জেইউএইচ) একাংশের সভাপতি। সব সময়ই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার আপ্রাণ চেষ্টা তার অনন্য বৈশিষ্ট্য। ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের রাজ্যসভায় রাষ্ট্রীয় লোকদল (আরএলডি) দলের সদস্য হিসাবে ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ভারতে মুসলিম জনসাধারণের জন্য শিক্ষা ও আইনি অধিকার নিশ্চিত করা ও সমাজসেবায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জর্ডানের আম্মানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টারের  ২০২৩ সালের শীর্ষ প্রভাবশালী পাঁচশ মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকায় বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব হিসাবে নির্বাচিত হোন মাহমুদ মাদানি। তালিকায় বিশ্বের ১৫তম ও ভারতের প্রথম প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তি হিসাবে তার নাম উঠে আসে। ২০০১ সালে মাওলানা মাহমুদ মাদানী হিন্দ জমিয়তের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। এর পর থেকে কাউন্সিলে তিনি বারবার জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ পুরোনো প্ল্যাটফরম। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে এ সংগঠনটির জন্ম। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দলটির ব্যাপক অবদান রয়েছে। মাওলানা মাহমুদ মাদানী ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রাণপুরুষ সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানীর পৌত্র ও সাইয়্যেদ আসআদ মাদানীর ছেলে। আরও পড়ুন: ২০২৩ সালের সেরা মুসলিম ব্যক্তিত্ব মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী
আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ঢাকায় এতেকাফ করবেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর ও ভারতের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রধান মাওলানা সাইয়েদ মাহমুদ মাদানী।
মসজিদে নববীতে এক বছরে নামাজ আদায়ের রেকর্ড
২০২৩ সালে এক বছরে মসজিদে নববীতে রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন। সৌদি আরবের সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, গত বছর ২৮ কোটির বেশি মসজিদে নববী মুসল্লি পরিদর্শন করেছেন । মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের তত্ত্বাবধানকারী জেনারেল অথরিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ২৮ কোটির বেশি মুসল্লি পবিত্র মসজিদে নববী পরিদর্শন করেন।  মসজিদে নববীতে আগত মুসল্লি ও দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত নিশ্চিত করতে এর তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ প্রয়োজনীয় সব সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে গত এক সপ্তাহে পবিত্র মসজিদে নববীতে ৫৮ লাখের বেশি মুসল্লি ও দর্শনার্থী উপস্থিত হয়েছেন। এর মধ্যে এক লাখ ৩০ হাজার ৪০১ জন পুরুষ এবং এক লাখ ১৫ হাজার ৫৫১ জন নারী রয়েছেন। গত ২৮ জমাদিউস সানি থেকে ৪ রজব পর্যন্ত তারা পবিত্র এই মসজিদে আসেন এবং পবিত্র রওজা শরিফ জিয়ারত করেন। এ সময় মসজিদের নির্ধারিত স্থানে এক লাখ ২৩ হাজার ২০০ জমজমের পানি প্যাক এবং ৯৯ হাজার ৮৩২টি হালকা খাবার বিতরণ করা হয়। হজ ও ওমরাহ পালনের আগে বা পরে মুসল্লিরা পবিত্র মসজিদে নববীতে যান। ইসলামের দ্বিতীয় এই সম্মানিত স্থানে এসে তারা নামাজ আদায়ের পাশাপাশি প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রওজা শরিফ জিয়ারত করেন এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শন করেন। এদিকে ২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে ১৩ কোটি ৫৫ লাখের বেশি মুসলিম ওমরাহ পালন করেন, যা ছিল সৌদি আরবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে করোনা-পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলিম হজ পালন করেন।
২০২৩ সালে এক বছরে মসজিদে নববীতে রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন। সৌদি আরবের সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, গত বছর ২৮ কোটির বেশি মসজিদে নববী মুসল্লি পরিদর্শন করেছেন ।
মহানবীর (সা.) রওজা জিয়ারতে নতুন নিয়ম
মদিনার মসজিদে নববিতে মহানবীর (সা.) রওজা শরিফ জিয়ারতে নতুন নিয়ম করেছে সৌদি আরব।  দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন থেকে একজন মুসলিম বছরে একবারের বেশি মহানবীর (সা.) রওজা শরিফে যেতে পারবেন না।  গালফ নিউজ ও সিয়াসাত ডেইলির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।  সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোনো মুসলিম শেষবার ভ্রমণের ৩৬৫ দিন পর আবার মহানবীর (সা) রওজা শরিফে যাওয়ার আবেদন করতে পারবেন।  এ জন্য নুসুক বা তাওয়াক্কালনা অ্যাপের মাধ্যমে ভ্রমণপ্রত্যাশীদের এই আবেদন করতে হবে। সে সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে যে ভ্রমণের আবেদনকারী করোনায় আক্রান্ত নন এবং করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসেননি। মদিনার মসজিদে নববীতে হজরত মোহাম্মদের (সা.) সমাধি (রওজা মোবারক)। মক্কায় ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবা শরিফে হজ বা ওমরাহ শেষে মুসলমানরা এ স্থানে যান। তবে মহানবীর (সা.) রওজা জিয়ারত এবং সেখানে প্রার্থনা করতে ইচ্ছুক মুসলিম উপাসকদের সেখানে যাওয়ার আগে সরকারি অনুমতি নিতে হবে। এদিকে সৌদি সরকারের এমন ঘোষণায় সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তারা বলছেন, অনেকেই বছরে কয়েকবার ওমরাহ পালন করতে যান, এ নিয়ম কার্যকর হলে তারা মহানবীর (সা.) রওজা জিয়ারতের সুযোগ পাবেন না।
মদিনার মসজিদে নববিতে মহানবীর (সা.) রওজা শরিফ জিয়ারতে নতুন নিয়ম করেছে সৌদি আরব।
বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভীর শূন্যতার কথা জানালেন মুসল্লিরা
এবারো টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে পারেননি ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভী। তাকে ছাড়াই রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার ৫৭তম আসর।   এবারের ইজতেমায়ও টঙ্গীর ময়দানে দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভী না আসায় তার শূন্যতা অনুভব করেছেন মুসল্লিরা। দোয়ার আগে ইজতেমার মূল মিম্বারেও উঠে আসে এ শূন্যতার কথা।  নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে আসা মুসল্লি রতন মিয়া, তরিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, সফিকুল ইসলাম, শফি আহমেদ যুগান্তরকে জানালেন, বিগত বছরগুলোতে মাওলানা সাদ সাহেবের গুরুগম্ভীর বয়ানে আমরা মুগ্ধ হতাম। তিনি নাই, কেমন যেন একটি শূন্যতা বিরাজ করছে। সাদ সাহেবের তিন ছেলে ময়দানে বয়ান করেছেন ভালোই লেগেছে। তবে মাওলানা সাদ সাহেব থাকলে, তার বয়ান শুনতে পারলে খুশি হতাম। এদিকে ইজতেমা ময়দানে হেদায়েতি বয়ান শেষে আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, আজ যদি মাওলানা সাদ কান্ধলভী সাহেব ইজতেমা ময়দানে আসতে পারতেন, তাহলে আখেরি মোনাজাত তিনিই পরিচালনা করতেন। উনার অনুপস্থিতিতে অন্তরে ব্যথা নিয়েই ইজতেমা শেষ করতে হলো। আমরা বেশি বেশি করে দোয়া করব যাতে মাওলানা সাদ কান্ধলভী খুব দ্রুত বাংলাদশে আসতে পারেন।  এ সময় তিনি ইজতেমা ময়দানে সমবেত মুসল্লিদের দোয়া করার ওয়াদা করান। যারা মাওলানা সাদের বিরোধিতা করেন তারা যেন তাকে বাংলাদেশে আসতে বাধা না দেন সেই আহ্বানও জানান তিনি। পরে তিনি সরকার ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশ্ব ইজতেমায় সহযোগিতার করার জন্য ধন্যবাদ জানান। মোনাজাতে মুসল্লিদের ঢল: রোববার আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা টঙ্গী অভিমুখে ছুটতে থাকেন শনিবার থেকে। বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা ছাড়াও কেবলমাত্র আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা বাস, ট্রাক, মিনিবাস, কার, মাইক্রোবাস, ট্রেনে করে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন।  রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন ভিড় এড়াতে রাতেই টঙ্গীমুখো হন। শনিবার রাত ১২টার পর থেকে টঙ্গীমুখী সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় দীর্ঘ পথ হেঁটে টঙ্গী পৌঁছতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। কয়েক লাখ মানুষ রাতেই ইজতেমার মাঠ ও আশপাশের বাসা-বাড়ি, ভবন, ভবনের ছাদ এবং করিডোরে এমনকি গাছতলায় অবস্থান নিয়েছেন। রোববার ভোররাত থেকে যানবাহন শূন্য সড়ক-মহাসড়ক ও নদীপথে টুপি পাঞ্জাবি পরা মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার শুরু হয়।
এবারো টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে পারেননি ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভী। তাকে ছাড়াই রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার ৫৭তম আসর।
দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে যা বলা হলো
বিশ্বের মুসলমানদের নিরাপত্তা, ঐক্য, সম্প্রীতি, মুক্তি, শান্তি এবং ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনায় রোনাজারি ও আকুতি-মিনতিপূর্ণ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার শেষ হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার ৫৭তম আসর। গভীর ভাবাবেগপূর্ণ পরিবেশে ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে সকালের আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে মহামহিম ও দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে অপার করুণা ও অশেষ রহমত কামনা করেছেন দেশ-বিদেশের অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলমান। লাখো মানুষের কাঙ্ক্ষিত আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন দিল্লির মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। তিনি বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে।   বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে শুরু করে ১১টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬ মিনিট স্থায়ী আবেগঘন আখেরি মোনাজাতে অযুতকন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে রাহমানুর রাহীম আল্লাহর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। মনীব-ভৃত্য, ধনী-গরির, নেতাকর্মী নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ পরওয়ারদেগার আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।  জনসমুদ্র থেকে সকালের আকাশ কাঁপিয়ে ধ্বনি উঠে- আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’। মুঠোফোনে, রেডিও এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাধে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তুলেছেন পরওয়ারদিগারের শাহী দরবারে। গুনাহগার, পাপি-তাপি বান্দা প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন। দেশের ৬৪ জেলার লাখ লাখ মুসল্লি ছাড়াও বিশ্বের ৬৫টি দেশের ৯ হাজার ২৩১ জন তাবলিগ অনুসারী মুসল্লি আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।  সকাল থেকে দিকনির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখো মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে। জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে নি:স্তব্ধতা ও পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তুলেন আল্লাহর দরবারে। ২৬ মিনিটের মোনাজাতে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী প্রথম ১২ মিনিট মূলত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ ১৪ মিনিট তিনি আরবি-উর্দু ভাষার সংমিশ্রণে দোয়া করেন। মোনাজাতে তিনি বলেন, হে আল্লাহ, আমাদের ওপর রহম করেন। হে আল্লাহ, আপনি সকল ক্ষমতার অধিকারী, সর্বশ্রোতা, দয়ালু। আপনি আমাদের গুনাহকে মাফ করে দেন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে দেন। হে আল্লাহ, আমাদের ইমানের হাকিকত ও কামাল নসিব করে দেন। হে আল্লাহ, আমাদেরর ইমানী জিন্দেগী নসিব করে দেন। হে আল্লাহ, ওলামাদের কদর করার তৌফিক দান করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের হয়ে যান, আমাদের আপনার করে নেন। হে আল্লাহ, সারা দুনিয়ায় ইসলামকে জিন্দা করে দেন। হে আল্লাহ সারা বিশ্বের মুসলমানকে হেফাজত করেন, ইসলামের হেফাজত করেন। হে আল্লাহ, ইমানের সঙ্গে মউত নসিব করে দেন।  আরও পড়ুন: মাওলানা সাদ আসলে ২৫ হাজারের বেশি বিদেশি মেহমান আসত হে আল্লাহ, সারাজীবন যেন আপনার হাবিবের সুন্নতের উপর চলতে পারি সেই তৌফিক দান করেন। হে আল্লাহ, নাফরমানি থেকে আমাদের হেফাজত করেন। হে আল্লাহ, একে অপরকে ভালোবাসতে পারি সেই তৌফিক দান করুন। হে আল্লাহ, আমাদের মাঝ থেকে গাফিলতি দূর করে দেন। হে আল্লাহ, সাহাবাদের মতো ঈমানী জিন্দেগি দান করেন। হে আল্লাহ, আমাদের জীবন মুমিন ও কামেল ওলিদের মতো করে দেন।  হে আল্লাহ, আমাদের আখলাককে সুন্দর করে দেন। হে আল্লাহ, অন্তরের সব খারাবি দূর করে দেন।  হে আল্লাহ, সকল মুসলমানের ইমান-আমল, জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুকে হেফাজত করেন। হে আল্লাহ, দাওয়াতের কাজকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেন।  হে আল্লাহ, ইজতেমাকে সারা দুনিয়ার মানুষের হেদাতের জরিয়া হিসেবে কবুল করেন। হে আল্লাহ, রোগে আক্রান্তদের শেফা দান করেন। হে আল্লাহ, যারা দোয়া চেয়েছে তাদের মনের আশা পূরণ করুন। হে আল্লাহ, ইজতেমায় বয়ানকারী, শ্রোতা, অংশগ্রহণকারী ও সহযোগিতাকারী সবাইকে কবুল করেন। হে আল্লাহ, ইজতেমাকে সফল করার জন্য যতরকম কাজ করা হয়েছে সবগুলোকে আপনি কবুল করেন। হে আল্লাহ, বাংলাদেশকে ইজতেমার জন্য কবুল করেন।
বিশ্বের মুসলমানদের নিরাপত্তা, ঐক্য, সম্প্রীতি, মুক্তি, শান্তি এবং ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনায় রোনাজারি ও আকুতি-মিনতিপূর্ণ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার শেষ হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার ৫৭তম আসর।
মাওলানা সাদ আসলে ২৫ হাজারের বেশি বিদেশি মেহমান আসত
আমার বাড়ি মালয়েশিয়ার পেনাং শহরের টিমকালয় এলাকায়। আমার নাম শাহ রিমান। বয়স ৪৪।  আমি পেশায় একজন কৃষক। পাশাপাশি একটি মসজিদের ইমাম। আমি মাওলানা সাদ কান্ধলভির ভক্ত। তিনি আসতে পারছেন না জেনে কষ্ট পেয়েছি।মাওলানা সাদ আসতে পারলে ২৫ হাজারের বেশী বিদেশি মেহমান আসত। তাই আমি চাই আগামীতে যেন সাদ সাহেব বাংলাদেশের ইজতেমায় আসেন। শনিবার বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে একটি ভবনের ছাদে যুগান্তরকে এসব কথা বলেছেন মালয়েশিয়া থেকে আগত মুসল্লি শাহ রিমান। তিনি বলেন, টঙ্গী ইজতেমায় ইসলামের কথা শুনতে এসেছি। আমি মুসলমান তাই ইসলামের দেখানো পথে চলতে চাই। আল্লাহকে পেতে হলে ইবাদত বন্দেগী করতে হবে। ইজতেমা থেকে শিক্ষা নিয়ে বেশি করে আমল করব, অন্যকে আমল করতে বলব। আমি ইসলাম প্রচারে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে চিল্লায় বন্দি হয়ে ইজতেমায় এসেছি।  এদিকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ৬২ দেশ থেকে ৭ হাজার ৮৪৮ জন বিদেশি মেহমান দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা ময়দানে পৌছেছেন। এর মধ্যে ইংলিশ ২৪১৫ জন, পশ্চিমবঙ্গ ২৪২৩ জন, উর্দু ২২৫৫ জন, আরব ৪৮৩ জন, বিদেশী শিক্ষার্থী ১৫০ জন, এক্সপেট্রিয়েট (বিদেশে বসবাসের উদ্দেশ্য নিজ দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করা) ১২২ জন। দেশগুলো হল- ভারত, আলজেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা, চীন, ক্যামেরুন, কঙ্গো, মিশর, ফিজি, ফ্রান্স, ঘানা, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইসরাইল, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, জর্ডান, কেনিয়া, কুয়েত, লেবানন, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, মিয়ানমার, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নাইজেরিয়া, পাকিস্থান, ফিলিপাইন, কাতার, রাশিয়া, সৌদি আরব, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড, সুদান, সুইডেন, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, উগান্ডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম ও ইয়েমেনসহ ৬২ টি দেশ। প্রসঙ্গত, ১১ ফেব্রুয়ারি রোববার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা।
আমার বাড়ি মালয়েশিয়ার পেনাং শহরের টিমকালয় এলাকায়। আমার নাম শাহ রিমান। বয়স ৪৪। আমি পেশায় একজন কৃষক। পাশাপাশি একটি মসজিদের ইমাম। আমি মাওলানা সাদ কান্ধলভির ভক্ত। তিনি আসতে পারছেন না জেনে কষ্ট পেয়েছি।মাওলানা সাদ আসতে পারলে ২৫ হাজারের বেশী বিদেশি মেহমান আসত। তাই আমি চাই আগামীতে যেন সাদ সাহেব বাংলাদেশের ইজতেমায় আসেন।
বয়ান-জিকিরে ইজতেমার দ্বিতীয় দিন
তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিদের তাৎপর্যপূর্ণ বয়ান এবং ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির-আসকারের মধ্যদিয়ে শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে।  আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে মোনাজাত পরিচালনা করবেন দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী।  স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষ্যে মুসল্লিদের সুবিধার্থে শনিবার রাত ১২টার পর থেকে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত টঙ্গী এলাকায় যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। টঙ্গীতে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে।  পুরো ময়দানকে চার স্তরের নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম। তিনি জানান, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ৬ হাজার পুলিশসহ র‌্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।  দ্বিতীয় দিনের বয়ান: শনিবার বাদ ফজর বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা সাঈদ বিন সাদ কান্ধলভী। তিনি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর মেজো ছেলে। তার  বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুফতি ওসামা ইসলাম।  সকাল সাড়ে ১০টায় মোয়াল্লেমদের উদ্দেশে তালিমে হালকায় বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুল আজিম। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ শরিফ। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা মাহমুদুল্লাহ। বাদ আসর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা ওসমান আলী। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা মুফতি আজিম উদ্দিন।  বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি ইয়াকুব। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। মাওলানা সাঈদ বিন সাদ কান্ধলভী ইমান, আমল, আখলাক, জাহান্নাম, জান্নাত ও দাওয়াতে মেহনতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন। তিনি তার বয়ানে বলেন, আমরা নবি করিম (সা.)-এর সুন্নত থেকে অনেক দূরে চলে গেছি।  তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী বর্তমানে যে বালা-মুসিবত আসছে তা হলো মহান আল্লাহতা’য়ালাকে নারাজ করা এবং নবি করিম (সা.)-এর সুন্নতবিরোধী জীববযাপনের ফসল। ১৪টি যৌতুকবিহীন বিয়ে: ইজতেমা ময়দানের মাশোয়ারার কামরায় শনিবার বাদ আসর ১৪টি যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আসর বয়ান মঞ্চের পাশে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর বসে। কিন্তু এবারই বয়ান মঞ্চের পরিবর্তে মাশোয়ারার কামরায় (ময়দানের ১নং বিল্ডিংয়ে) বিয়ের আসর বসে।  কনের সম্মতিতে বর ও কনেপক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে ওই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ে পরিচালনা করেন দিল্লির মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহরে ফাতেমি’র নিয়মানুযায়ী। এতে মোহরানার পরিমাণ দেড়শ তোলা রুপা বা তার সমমূল্য অর্থ। বিয়ের পর নব দম্পতির সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। এ সময় মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খুরমা খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।  আখেরি মোনাজাতে যেসব রাস্তা বন্ধ থাকবে : শনিবার রাত ১২টার পর আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস, আব্দুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া রোড হয়ে টঙ্গী স্টেশন রোড পর্যন্ত সড়ক, আব্দুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল পর্যন্ত এবং টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে পূবাইল মীরের বাজার পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।  এছাড়া ময়মনসিংহ ও গাজীপুরগামী যানবাহনগুলোকে গাবতলী দিয়ে কোনাবাড়ি হয়ে এবং ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে ভোগরা বাইপাস দিয়ে ৩শ ফিট রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এ সময় এসব সড়ক হয়ে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না।  আরও এক মুসল্লির মৃত্যু : ইজতেমা ময়দানে শনিবার সকালে আরও এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তিনি হলেন ঢাকার বংশাল থানার বাবুবাজারের মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে মুনতাজ উদ্দিন (৭৮)। এর আগে ময়দানে ৫ জন এবং ইজতেমায় আসার পথে গাড়ির ধাক্কায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশি-বিদেশি লাখ লাখ মুসল্লি তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন।
তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিদের তাৎপর্যপূর্ণ বয়ান এবং ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির-আসকারের মধ্যদিয়ে শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে।
মাওলানা সাদ কান্ধলভির ইজতেমায় আসার বিষয়ে যা বললেন ধর্মমন্ত্রী
টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুক্রবার আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে অংশ নেবেন তাবলিগের কেন্দ্রীয় মার্কাজ দিল্লির নিজামুদ্দিনের অনুসারী মুসল্লিরা।  এই অংশের আমির মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভির ইজতেমায় আসার বিষয়ে ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেছেন, মাওলানা সাদ সাহেবের পক্ষে তাবলিগ জামাতের যারা কাজ করছেন তারা চেষ্টা করছেন তাকে আনার জন্য। সরকারের সঙ্গে তাদের কথা চলছে, আমরাও আলোচনা করছি। সমঝোতার মাধ্যমে হয়ত তাকে আনা সম্ভব হতে পারে। আমরা সেই চিন্তাটাই করছি। মন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি- তাবলিগ জামাতের সবারই চিন্তা-চেতনা, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য একটাই, তা হলো আল্লাহকে খুশি ও রাজি করা। তাবলিগ জামাতের কেউই বিশৃঙ্খলা করার মতো অসৎ চিন্তা মাথায় নিয়ে ময়দানে আসেন না।  বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান পরিদর্শনে এসে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সমন্বয় কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।  ধর্মমন্ত্রী বলেন, ভারতের দেওবন্দ থেকে আসা মাওলানা আরশাদ মাদানীর সঙ্গে গত পরশু আমার আলোচনা হয়েছে। তার বক্তব্য রেকর্ড করেছি এবং বাংলায় তরজমা করা হচ্ছে। আরশাদ মাদানী সাহেবের বক্তব্য চুলচেরা বিশ্লেষণ করার জন্য চার সদস্যদের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা বসে বিচার বিশ্লেষণ করে আমাদের জানাবেন। সমঝোতা হলে মাওলানা সাদ সাহেব আসবেন।  মন্ত্রী বলেন, দুই পক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। প্রথমপর্ব যেমন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে, ঠিক তেমনি দ্বিতীয়পর্ব সফলভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করি। আমার মনে হয়, মাওলানা সাদ আহমেদ কান্ধলভী ও মাওলানা জোবায়ের সাহেবের মধ্যে এবার আন্তরিকতার সঙ্গে বোঝাপড়া হয়েছে। তাই দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই।  ব্রিফিং শেষে ধর্মমন্ত্রী ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখেন। তিনি বিদেশি খিত্তায় গিয়ে মেহমানদের খোঁজখবর নেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুক্রবার আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে অংশ নেবেন তাবলিগের কেন্দ্রীয় মার্কাজ দিল্লির নিজামুদ্দিনের অনুসারী মুসল্লিরা।
ওমানে ভারী বর্ষণে নিহত ১৮, বৃষ্টি-বন্যায় বিপর্যস্ত আরব আমিরাত
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে ভারী বৃষ্টিতে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে অন্তত ৯ জন স্কুলছাত্রী। এছাড়া ভারী বৃষ্টিপাত ও এর জেরে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রতিবেশী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটিতে ভ্রমণ ও চলাচলও ব্যাপকভাবে ব্যহত হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারী বর্ষণ এবং আকস্মিক বন্যা উপসাগরীয় অঞ্চলের কিছু অংশকে কার্যত ভাসিয়ে দিয়েছে। ওমানে কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন এবং প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) ভ্রমণ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আল জাজিরা বলছে, ওমানে মঙ্গলবার ঘোষিত মৃতের সংখ্যার মধ্যে অন্তত নয়জন স্কুলছাত্রী এবং তাদের ড্রাইভার রয়েছেন। মূলত তাদেরকে বহনকারী গাড়িটি গত রোববার সামাদ আ’শানে বন্যার পানিতে ভেসে যায়। দেশটির ন্যাশনাল কমিটি ফর ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, উদ্ধারকারী দল এখনও নিখোঁজ দুই ব্যক্তিকে খুঁজছে। এদিকে বেশ কয়েকটি প্রদেশের খারাপ আবহাওয়ার কারণে মঙ্গলবার সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রশাসনিক কর্মীদের ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এছাড়া একই কারণে দেশটির অন্যান্য অংশে দূরে থেকেই কাজের সুযোগও এদিন দেওয়া হয়েছিল। এমনকি বাসিন্দাদেরও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছিল যদি তারা মনে করে যে, তারা বিপদে পড়েছে বা কর্তৃপক্ষ তা করতে নির্দেশ দেয়। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বন্যাকবলিত এলাকা থেকে নাগরিকদের বের করে আনার জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আশ শারকিয়াহ উত্তর প্রদেশে পুলিশ ও সৈন্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বন্যা এদিকে মঙ্গলবার প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে করে দেশটির প্রধান মহাসড়কগুলোর কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে এবং দুবাইজুড়ে সড়কপথে বহু যানবাহন পরিত্যক্ত করেছেন ব্যবহারকারীরা। মূলত আগের রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে রাস্তায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়া দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রচণ্ড বাতাসের কারণে বিমান চলাচলও ব্যাহত হয়। ঝড়ের আগে আরব আমিরাতজুড়ে স্কুলগুলো মূলত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং সরকারি কর্মীরা কর্মস্থলে উপস্থিত না হয়ে দূর থেকেই তাদের কাজ করেন। যদিও অনেক কর্মী বাড়িতেই থেকে যান, আবার কেউ কেউ বাইরে বেরিয়েছিলেন, আর এতে করে দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকেই রাস্তায় জমাট বাঁধা পানিতে তাদের যানবাহন নিয়ে আটকে পড়েন। পরে আমিরাত কর্তৃপক্ষ পানি সরানোর জন্য রাস্তায় এবং হাইওয়েতে ট্যাঙ্কার ট্রাক পাঠায়। প্রাথমিক অনুমান অনুসারে, দুবাইতে কেবল মঙ্গলবার সকালেই ৩০ মিমি এরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বাহরাইন, কাতার ও সৌদি আরবেও বৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে ভারী বৃষ্টিতে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে অন্তত ৯ জন স্কুলছাত্রী। এছাড়া ভারী বৃষ্টিপাত ও এর জেরে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রতিবেশী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
পাকিস্তান সফরে ইরানি প্রেসিডেন্ট
কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করার আশায় তিন দিনের সফরে পাকিস্তান পৌঁছেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।আজ সোমবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাজধানী ইসলামাবাদে পৌঁছান তিনি। আগামী বুধবার পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানেই অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চলতি বছর দুই মুসলিম প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নজিরবিহীন পাল্টাপাল্টি হামলা হয়। এতে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টায় এই সফরের আয়োজন করা হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী এবং একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। এই দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আছেন। রাইসি পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোর ও দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী করাচি সফর ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। রাইসির আগমনে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ইসলামাবাদের প্রধান মহাসড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং করাচিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে পাকিস্তান সরকার। ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে রাইসির সফর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে প্রেসিডেন্ট নয়, বরং পরমাণু নীতির মতো রাষ্ট্রীয় বিষয়ে শেষ কথা বলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এ ছাড়া ইরান গত সপ্তাহে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় গত শুক্রবার পাল্টা হামলার শিকার হয় ইরানের মধ্যাঞ্চল। বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক চুক্তি থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরেই সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। এর মধ্যে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে চলছে দেশটি। ২০১০ সালে ইরানের সাউথ ফার্স গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তান ও সিন্ধু পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণের জন্য গ্যাস সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটিই ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যেকার সর্বোচ্চ আলোচিত চুক্তি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় পাকিস্তানে গ্যাসের বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এখনো ইসলামাবাদ অংশের পাইপলাইন নির্মাণ বাকি রয়েছে। তবে এ আশঙ্কা অস্বীকার করে আসছে তেহরান।
কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করার আশায় তিন দিনের সফরে পাকিস্তান পৌঁছেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।আজ সোমবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাজধানী ইসলামাবাদে পৌঁছান তিনি। আগামী বুধবার পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানেই অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ফের শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল তাইওয়ান
তাইওয়ানের রাজধানী স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলে একটি ‘শক্তিশালী’ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। এএফপি কর্মীরা এ খবর দিয়েছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় আবহাওয়া প্রশাসন এটিকে পূর্ব হুয়ালিয়েনে উদ্ভূত একটি ৫.৫ মাত্রার কম্পন হিসেবে চিহ্নিত করেছে বলে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবারের ভূমিকম্প তাইওয়ানে আঘাত হানে স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৮ মিনিটে। এটি রাজধানী তাইপেও অনুভূত হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ ভূমিকম্পটিকে ৫.৩ মাত্রার বলে চিহ্নিত করেছে, যার গভীরতা ৮.৯ কিলোমিটার। এএফপি বলছে, পূর্ব হুয়ালিয়েন অঞ্চলটি ছিল ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল, যেটি ৩ এপ্রিল আঘাত করেছিল। এতে পাহাড়ি অঞ্চলের চারপাশে ভূমিধস হওয়ায় রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। প্রধান হুয়ালিয়েন শহরের ভবনগুলো খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিল কমপক্ষে ১৭ জন। এএফপির একজন কর্মী বলেছেন, ‘এই মাসের শুরুর দিকের বড় ভূমিকম্পের পর এটি সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প বা আফটারশকগুলোর মধ্যে একটি বলে মনে হয়েছে।’ হুয়ালিয়েনের ফায়ার ডিপার্টমেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অফিশিয়াল চ্যানেলে একটি সংক্ষিপ্ত পোস্টে বলেছে, তারা যেকোনো বিপর্যয় পরিদর্শনের জন্য দল পাঠিয়েছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবে এবং সময়মতো জানাবে। গণমাধ্যমটির তথ্য অনুসারে, তাইওয়ানে ঘন ঘন ভূমিকম্প হয়ে থাকে। কারণ এটি দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ৩ এপ্রিলের ভূমিকম্পের পর শত শত আফটারশক হয়, যা হুয়ালিয়েনের চারপাশে পাথরের আঘাতের কারণ হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে ৭.৬ মাত্রার পর এটি ছিল তাইওয়ানে সবচেয়ে গুরুতর ভূমিকম্প। তখন মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুই হাজার ৪০০ জন মারা গিয়েছিল।
তাইওয়ানের রাজধানী স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলে একটি ‘শক্তিশালী’ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। এএফপি কর্মীরা এ খবর দিয়েছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় আবহাওয়া প্রশাসন এটিকে পূর্ব হুয়ালিয়েনে উদ্ভূত একটি ৫.৫ মাত্রার কম্পন হিসেবে চিহ্নিত করেছে বলে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের পদত্যাগ
ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের পদত্যাগ ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে নতুন গোয়েন্দা প্রধান নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করবেন বলে সোমবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলার ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগের গোষণা দিয়েছেন তিনি। সোমবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রধান গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন।’’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, চিফ অব জেনারেল স্টাফের সাথে আলোচনায় মেজর জেনারেল আহারন হালিভা তার পদের মেয়াদ শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রধান হিসেবে ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার ঘটনায় নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে এই আহ্বান জানান তিনি। ‘‘মেজর জেনারেল আহারন হালিভা তার পদের মেয়াদ শেষ করার ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নিয়ম ও পেশাদারিত্বের প্রক্রিয়া অনুযায়ী নতুন করে সামরিক বাহিনীর নতুন গোয়েন্দা প্রধান নিয়োগ করা হবে।’’ এর আগে, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের শত শত যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে কোনও ধরনের বাধা ছাড়াই বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়। ওই হামলায় অন্তত এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫০ জনের বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে রাখে হামাস। হামাসের হামলার দিন থেকেই গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। সপ্তম মাসে পৌঁছানো ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এই যুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নজিরবিহীন মানবিক সংকট তৈরি করেছে। যুদ্ধে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর নির্বিচার হামলায় ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। পদত্যাগ পত্রে জেনারেল আহারন হালিভা লিখেছেন, ‘‘গোয়েন্দা অধিদপ্তর আমার নেতৃত্বাধীন কমান্ডের ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিল তা সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। সেই কালো দিনের ব্যর্থতার দায় আমি নিচ্ছি। আমি চিরদিন এই যুদ্ধের ভয়ংকর যন্ত্রণা বহন করব।’’
ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের পদত্যাগ
সরিয়ে নেওয়া হলো হাজার হাজার মানুষকে
চীনে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে দেখা দেওয়া ব্ন্যায় এখন পর্যন্ত অন্তত তিনজন নিহত ও আরও ১১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া বন্যার কবলে পড়া প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সোমবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের সর্বাধিক জনবহুল প্রদেশ গুয়াংডংয়ে কয়েকদিনের ভারী বষর্ণের কারণে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বন্যা কবলিত এলাকার হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে।দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম সিজিটিএন বলছে, বন্যায় এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত ও ১১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বন্যায় তলিয়ে যাওয়া বিশাল এলাকা থেকে উদ্ধারকারীরা কোমর সমান পানিতে নৌকায় করে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বন্যায় বেশ কয়েকটি বড় নদীর তীর উপচে পানিতে ডুবে গেছে লোকালয়। দেশটির কর্তৃপক্ষ ‌‌পানির উচ্চতা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কর্তৃপক্ষ ‌‌সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, উত্তর গুয়াংডংয়ের একটি নদীর পানির স্তর শত বছরের মধ্যে সোমবার সকালের দিকে সর্বোচ্চে পৌঁছাতে পারে। তবে স্থানীয় সময় দুপুর পর্যন্ত বিপজ্জনক এই সীমায় পানির স্তর পৌঁছায়নি। গুয়াংডংয়ের বেশিরভাগ এলাকা পার্ল নদীর তীরে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ঝড়বৃষ্টির কারণে ওই এলাকা বন্যার প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে। ব-দ্বীপ খ্যাত গুয়াংডং চীনের অন্যতম প্রধান উৎপাদন অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। দেশটির সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটিও এই গুয়াংডং। প্রদেশটিতে ১২ কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করেন। বন্যায় প্রাদেশিক রাজধানী গুয়াংজুর পাশাপাশি সেখানকার তুলনামূলক ছোট শহর শাওগুয়ান এবং হেইউয়ান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে প্রদেশের প্রায় ১১ লাখ ৬০ হাজার পরিবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে ৮০ শতাংশ পরিবারে রোববার রাতের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করা হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে গুয়াংজুর বাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল বাতিল ও বিলম্ব হয়েছে। সেখানকার কমপক্ষে তিনটি শহরের সব স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্যার কারণে গুয়াংডং প্রদেশে কয়েক ডজন বাড়িঘর ধসে পড়েছে অথবা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় এই প্রদেশে প্রায় ১৯ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, প্রবল বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানের প্রাচীর ও সেতু ধসে পড়ছে। এর আগে, গত বছরের জুলাইয়ে রাজধানী বেইজিং ও আশপাশের একাধিক প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা দেখা দেয়। ওই সময় প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট একের পর এক টাইফুন দেশটির স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। সেই সময় কেবল এক সপ্তাহে বেইজিং ১৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের মুখোমুখি হয়।
চীনে ভয়াবহ বন্যা
ফের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্ব উপকূলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া। সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চীফ অব স্টাফ জানিয়েছেন, পূর্ব সাগরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া। তবে ওই ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। খবর এএফপির জাপানের পক্ষ থেকেও উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, উত্তর কোরিয়া থেকে একটি সন্দেহভাজন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জাপানের উপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি ইতোমধ্যেই উৎক্ষেপণ হয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জাপানের প্রচারমাধ্যম এনএইচকে এবং দেশটির অন্যান্য গণমাধ্যম জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের বাইরে পড়েছে। । এর আগে গত মার্চে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে উত্তর কোরিয়া। সে সময় মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জানান, উত্তর কোরিয়া পূর্ব সাগরের দিকে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। জাপানের উপকূলরক্ষী বাহিনীও উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল। এর আগে গত ‍শুক্রবার উত্তর কোরিয়া একটি কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ডিজাইন করা একটি সুপার-লার্জ ওয়ারহেড পরীক্ষা করেছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সিউলের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে এটি একই সময়ে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়টি শনাক্ত করেছে। উত্তর কোরিয়ার ওপর জাতিসংঘের বর্তমান নিষেধাজ্ঞার অধীনে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধ নয়। এর আগে সিউলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, পিয়ংইয়ং প্রায় ৭ হাজার কন্টেইনার অস্ত্র মস্কোকে সরবরাহ করেছে। এসব অস্ত্র ইউক্রেন যুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে রাশিয়া। অপরদিকে চলতি বছর, পিয়ংইয়ং দক্ষিণ কোরিয়াকে তাদের প্রধান শত্রু হিসাবে ঘোষণা করেছে। ফলে কোরীয় দ্বীপে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্ব উপকূলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া। সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চীফ অব স্টাফ জানিয়েছেন, পূর্ব সাগরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া। তবে ওই ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। খবর এএফপির
মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মইজ্জুর দলের বড় জয়
মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পেয়েছে প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)। দেশটির পার্লামেন্ট পিপলস মজলিশের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা নির্ধারণে রোববার সকাল থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা ভোট গ্রহণ চলে। এরমধ্যেই বেশির ভাগ আসনের ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। দেশটির ৯৩ আসনের পার্লামেন্টে পিএনসির প্রার্থীরা দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে জয়ী হয়েছে। মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন পার্লামেন্টের ৯৩ টি আসনের মধ্যে যে ৮৬টি আসনের ফল প্রকাশ করেছে তার মধ্যে পিএনসির প্রার্থীরা পেয়েছেন ৬৬টি আসন। পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য এ অবস্থান যথেষ্ট। ফলাফলের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিতে সপ্তাহখানেক সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর মে মাসের প্রথম দিক থেকে নতুন পার্লামেন্টের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা আছে।
মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পেয়েছে প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করবেন নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর একটি ইউনিটের ওপর নিষোধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এই নিষোধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে বাইডেন প্রশাসন। এতে করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ওই ইউনিটে কমতে পারে মার্কিন সহায়তা। এমন অবস্থায় সেনাবাহিনীর ওপর যেকোনো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এমনকি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াইয়ের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। সোমবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর যেকোনো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি ইউনিটে সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা করছে এমন খবরের পর তিনি এই অবস্থান জানান। রোববার ইসরায়েলের এই কট্টরপন্থি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করব।’ এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাক্সিওস নিউজ সাইট জানায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর নেতজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরেপ করতে পারে। মূলত ‘নেতজাহ ইয়েহুদা’ নামের এই ইউনিটটি ফিলিস্তিনের দখলকৃত পশ্চিম তীরে মোতায়েন রয়েছে। পশ্চিম তীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ রয়েছে নেতজাহ ইয়েহুদার বিরুদ্ধে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ইউনিটগুলোতে মার্কিন সামরিক সহায়তা হ্রাস করা হতে পারে এমন প্রতিবেদন সম্পর্কে গত সপ্তাহে জিজ্ঞাসা করা হলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছিলেন: ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি; আপনারা সামনের দিনগুলোতে সেসব সিদ্ধান্ত দেখতে পাবেন বলে আশা করতে পারি।’ অবশ্য ইসরায়েলের প্রধান মিত্র ওয়াশিংটন এর আগে কখনোই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর বা আইডিএফের কোনও ইউনিটের সহায়তা স্থগিত করেনি। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, নেতজাহ ইয়েহুদা ‘আন্তর্জাতিক আইন মেনেই’ কাজ করছে। তারা বলেছে, ‘ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এই রিপোর্টের পরও আইডিএফ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। আইডিএফ কাজ করছে এবং আইন অনুযায়ী কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা তদন্ত করতে কাজ করে যাবে।’ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট নেতজাহ ইয়েহুদার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও ঘনিষ্ঠভাবে দেখছে। উল্লেখ্য, গত শনিবার অ্যাক্সিওস তিনটি মার্কিন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নেতজাহ ইয়েহুদার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর একটি ইউনিটের ওপর নিষোধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এই নিষোধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে বাইডেন প্রশাসন।
এবার এডিসের লার্ভা পেলেই জেল-জরিমানা: মেয়র আতিক
আগামী ২৭ এপ্রিলের পর থেকে নগরের কোনো বাসাবাড়ি, অফিস আদালতে এডিস মশার লার্ভা পেলে জেল, জরিমানাসহ আইনগত সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। সোমবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর রুপনগরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডিএনসিসির মাসব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানে গিয়ে তিনি একথা বলেন। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আগামী ২৭ তারিখ থেকে যার বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যাবে সঙ্গে সঙ্গেই মামলা, জরিমানা করা হবে। সরকারি অফিস ও সিটি করপোরেশনের অফিসও ছাড় পাবে না। টাকার পরিমাণ আগের চেয়ে আরও বাড়বে। আমাদের কেউ বাধ্য করবেন না। তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় দুই বাড়ির মাঝখানে ময়লা আর ময়লা, সবাই বলে আমি করি নাই, তাহলে কে করেন? কারা করেন? এডিস মশার জন্ম আমার আপনার বাড়িতেও স্বচ্ছ পানিতে হচ্ছে, তাই আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে নিজের ঘরবাড়ি নিজেরাই পরিষ্কার করা৷ এ সময় তিনি উপস্থিত এলাকাবাসীদের সঙ্গে স্লোগান ধরেন-তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন। অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ টেস্টগুলো প্রতিটি ওয়ার্ডে করার পরামর্শ, ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটি করার তাগিদ দেন উপস্থিত কীটতত্ত্ববিদরা। একই দিনে উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে মশা নিধন অভিযান শুরু হবে।
আগামী ২৭ এপ্রিলের পর থেকে নগরের কোনো বাসাবাড়ি, অফিস আদালতে এডিস মশার লার্ভা পেলে জেল, জরিমানাসহ আইনগত সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
রিহ্যাবের মতামত ছাড়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালা চূড়ান্ত না করার দাবি
রিহ্যাবের মতামত ছাড়া ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা চূড়ান্ত না করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের কাছে দাবি জানিয়েছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) । আজ রোববার রিহ্যাব থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবাসন শিল্পের বৃহৎ স্টেকহোল্ডার হচ্ছে রিহ্যাব। অথচ রিহ্যাবের কোনো মতামত ছাড়াই ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০২৪ এর খড়সা তৈরি করা হয়েছে। রিহ্যাব জানায়, ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবন নির্মান করা হয়। যেভাবে নতুন আইন তৈরি করা হচ্ছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সাধারণ নাগরিক, ভূমি মালিক ও ভবন মালিকদের। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আবাসন শিল্প। কারণ নতুন বিধিমালা অনুযায়ী ভবনের উচ্চতা ও আয়তন কমবে, একই সঙ্গে ফ্ল্যাটের সংখ্যা হ্রাস পাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উলম্বভাবে ভবন তৈরির দিকে এগিয়ে গেলেও আমরা হাঁটছি উল্টো পথে। আমাদের জমির সংকট আগামীতে আরও বাড়বে। কৃষি জমির ওপর চাপ বাড়বে। অসংখ্য নাগরিকের নিশ্চিত আবাসন ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। ফ্ল্যাটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বাসা ভাড়া বাড়বে। বাসা ভাড়ার চাপ সামাল দিতে না পেরে অনেক নাগরিক ঢাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। একই সঙ্গে বাড়বে সাবলেট। ফলে নগর জীবন ব্যবস্থায় অসংখ্য জটিলতা তৈরি হবে এবং সংকটে পড়বে আবাসন খাত। বিবৃতিতে বলা হয়, ইতোপূর্বে বিভিন্ন বিধিমালা প্রস্তুতকালে রিহ্যাবকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এবার এই বিধিমালার খসড়া প্রণয়নে রিহ্যাবের লিখিত মতামত ও সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি। মূলত একতরফা ভাবেই এই ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০২৪ এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা অনভিপ্রেত। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, রিহ্যাব সদস্যরা বিভিন্ন ভবন তৈরি করে ঢাকা শহরের আবাসন সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। তারা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাস্তবসম্মত তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক জটিলতার সমাধানের মাধ্যমে প্রকল্প সম্পন্ন করে। বাস্তবায়ন পর্যায়ের অভিজ্ঞতা ও কর্মপরিকল্পনা কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রকল্পের সমস্যা ও অসুবিধাসমূহ রিহ্যাব সদস্যরাই মোকাবিলা করে। এজন্য উক্ত বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে রিহ্যাবের সুপারিশ ও মতামত গ্রহণ করা অতি আবশ্যক।
রিহ্যাবের মতামত ছাড়া ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা চূড়ান্ত না করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের কাছে দাবি জানিয়েছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) ।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেপ্তার
সনদ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী মোছা. সেহেলা পারভীনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র তৈরিতে জড়িত ওই চক্রের সঙ্গে সেহেলা পারভীনের টাকা-পয়সা লেনদেনের ‘প্রমাণ’ পাওয়া গেছে। “এই চক্রটি গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি জাল সার্টিফিকেট মার্কশিট বানিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করেছে।“ সেহেলা পারভীন ছাড়াও এ অভিযোগে আগে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়; তাদের তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান পুলিশ। রোববার (২১ এপ্রিল) রাজধানীতে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশীদ বলেন, ওই চক্রটির সন্ধান পেয়ে পুলিশ ১ এপ্রিল মিরপুরের পীরেরবাগে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন-বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম এনালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান ও একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত কর্মচারি ফয়সাল। “অভিযানে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করা হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্ল্যাঙ্ক কপি, তৈরি করা শতাধিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা, গুরুত্বপূর্ণ দলিল পাওয়া যায়।” হারুন জানান, গ্রেপ্তার হওয়া শামসুজ্জামান ও ফয়সালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৫ এপ্রিল কুষ্টিয়া সদর থানা এলাকা থেকে ‘গড়াই সার্ভে ইন্সটিটিউটের’ পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে প্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনজেনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। কলির দেওয়া জবানবন্দিতে চেয়াম্যান আলী আকবর খানের স্ত্রীর নাম আসে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন। পুলিশ এরপর শামসুজ্জামান, ফয়সাল ও কলির ব্যবহৃত ডিভাইস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গত বৃহস্পতিবার কামরাঙ্গীরচরের হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তাফিজুর রহমানকে এবং শুক্রবার যাত্রাবাড়ী এলাকার ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের (মেডিকেল) পরিচালক মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুন (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনের সঙ্গে শামসুজ্জামান এবং সানজিদা আক্তার কলির ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক রয়েছে। তাদের মধ্যে ‘অর্থ লেনদেন হত’ জানিয়ে হারুন বলেন, “সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে জাল সার্টিফিকেটগুলোকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করত, তাই ধরা পড়ার সম্ভবনা থাকতো না। এছাড়া তারা হোয়াটঅ্যাপের মাধ্যমে টাকা বিনিময়ের তথ্য আদান প্রদান করত।“ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আরো ২৫ থেকে ৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সনদ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী মোছা. সেহেলা পারভীনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য সস্তা, দাম বাড়ানোর দাবি
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবধরনের তামাকপণ্যের দাম কার্যকরভাবে বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও মূল্য সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে সংগঠন দুটি। সংবাদ সম্মেলনে তামাক কর ও মূল্য বিষয়ক বাজেট প্রস্তাব সমর্থন করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, “ নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য ক্রমান্বয়ে সস্তা হয়ে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তামাকের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের অকাল মৃত্যু, অসুস্থতা, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি প্রভৃতি বিবেচনায় এনে আসন্ন বাজেটে সবধরনের তামাপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।” বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, “বর্তমানে পঁচাত্তর শতাংশ সিগারেট ব্যবহারকারী নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা। অথচ এই স্তরে সম্পূরক শুল্কহার মাত্র ৫৮ শতাংশ, এটা বাড়িয়ে কমপক্ষে ৬৩ শতাংশ করা হলে সিগারেটের ব্যবহার কমবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে। এই বর্ধিত রাজস্ব চলমান আর্থিক সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।” সংবাদ সম্মেলনে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ৭টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখানো হয় যে, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙ্গাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ, এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একইসময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যে কর ও মূল্যবৃদ্ধির যেসব দাবি তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে, নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা, উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১৩ টাকা থেকে ১৩০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা। এই তিনটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ বহাল রাখা। ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এছাড়া সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একইসাথে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় পাঁচ লাখ তরুণসহ মোট এগার লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর প্রোগ্রামস ম্যানেজার (বাংলাদেশ) মো. আব্দুস সালাম, আত্মা’র কনভেনর মতুর্জা হায়দার লিটন এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য প্রদান করেন। উল্লেখ্য, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে তামাকখাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবধরনের তামাকপণ্যের দাম কার্যকরভাবে বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা।
রেকি করে ফাঁকা ঢাকায় চুরি করতেন তারা
রাজধানীর ইসলামবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পেশাদার চোর চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— মো. মিরাজ হোসেন (৩৫), মো. মামুন (৩৪), মো. সায়মুন (৩০), অমিত হাসান ইয়াসিন (২১), বরুন (৫০), হাসিনা বেগম (৫২) ও জামিলা খাতুন হ্যাপি (১৮)। গ্রেপ্তার প্রথম চারজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪৭টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে শুধু গ্রেপ্তার মামুনের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি স্বর্ণের ছোট আংটি, তিনটি রুপার পায়েল, একটি রিয়েলমি স্মার্টফোন, একটি স্বর্ণের নাক ফুল, গলানো স্বর্ণ (যার ওজন ৩ ভরি) উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে অবস্থিত ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাহাবুব উজ জামান। মাহাবুব উজ জামান বলেন, গত ৯ এপ্রিল রাজধানীর পূর্ব ইসলামবাগের বাসিন্দা মো. হাফিজুল ইসলাম পরিবার নিয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপন করাত জন্য গ্রামের বাড়ি যান। ঈদ উদযাপন শেষ করে গত ১২ এপ্রিল বাসায় প্রবেশ করতে গেলে দেখেন বাসার মূল গেটের হেজবল্টের লক ভাঙা। পরে হাফিজুল বাড়ির মালিককে নিয়ে বাসার মধ্যে প্রবেশ করে দেখেন সব কক্ষের আসবাবপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পরে তিনি নিজের বেডরুমে প্রবেশ করে দেখেন স্টিলের আলমারি ভেঙে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, প্রায় সাড়ে লাখ টালা স্বর্ণালংকার, ৪০০ ইউএস ডলার, একটি স্মার্ট ফোন চুরি করে নিয়ে গেছে চোররা। পরে হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ডিএমপির চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাসার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চোরদের শনাক্ত করা হয়। পরে শনিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর ইসলামবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চুর চক্রের সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা ইসলামবাগের বাসাটিতে চুরি করার আগেও কেরানীগঞ্জের দুইটি বাসায় চুরি করেছে। চুরি করার পর চক্রটি তাঁতিবাজারে গিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বরুনের কাছে চোরাই স্বর্ণ বিক্রি করে দেয়। পরে বরুন এই চোরাই স্বর্ণ গলিয়ে ফেলে। আমরা তাকেও গ্রেপ্তার করেছি এবং গলিয়ে ফেলা স্বর্ণ উদ্ধার করেছি। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে অনেকেই চলে যান। আর এই ফাঁকা ঢাকায় বাসা-বাড়িতে চুরি করার জন্য চক্রটি তৎপর হয়ে উঠে। প্রথমে তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দলবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি রেকি করে। রেকি করা শেষ হলে তারা তাদের পছন্দ মতো একটি বাসা ঠিক করে সেখানে চুরি করে থাকে। তারা মূলত টার্গেট করে চুরি করে থাকে। তাদের টার্গেটে থাকে স্বর্ণালংকার ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস। তিনি আরও বলেন, এই চক্রটির চুরি করাই তাদের নেশা ও পেশা। গ্রেপ্তার জামিলা খাতুন হ্যাপির বাসাটি হচ্ছে এই চক্রের গোপন আস্তানা। সেখানে বসে চক্রটি চুরি করার পরিকল্পনা করে। তারা প্রথমে বিভিন্ন বাসা রেকি করে। রেকির পর একটা বাসা নির্ধারণ করে সেই বাসায় চুরি করে। চুরি সে চক্রটির সদস্যরা হ্যাপির বাসায় কিছু দিন আত্মগোপনে থাকে। তারা ঈদের এক থেকে দেড় মাস আগে জামিনে বের হয়েছে। জামিনে বের হয়ে ঈদের মধ্যে ফাঁকা ঢাকায় চুরি করার জন্য তারা পরিকল্পনা করে ইসলামবাগের বাসাটিতে চুরি করে।
রাজধানীর ইসলামবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পেশাদার চোর চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগ।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে আইনজীবীদের গাউন পড়নে শিথিলতা
দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপদাহের কারণে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে মামলার শুনানিতে আইনজীবীদের গাউন পরার আবশ্যকতা শিথিল করা হয়েছে। আজ শনিবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে মামলার শুনানিকালে আইনজীবীদের গাউন পরিধানের আবশ্যকতা শিথিল করা হলো। এ নির্দেশনা ২১ এপ্রিল (রবিবার) থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপদাহের কারণে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে মামলার শুনানিতে আইনজীবীদের গাউন পরার আবশ্যকতা শিথিল করা হয়েছে।
হাতিরঝিলে ভাসছিল যুবকের মরদেহ
রাজধানীর হাতিরঝিল লেকে ভাসমান অবস্থায় রবিন (২৯) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে বাড্ডা থানা পুলিশ। শনিবার (২০ এপ্রিল )সকালের দিকে ৯৯৯ এ খবর পেয়ে হাতিরঝিল পুলিশ প্লাজার পেছনের ব্রিজের নিচ থেকে ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন গাজী। তিনি জানান, সকালে ব্রিজের নিচে মরদেহ ভাসতে দেখে ৯৯৯ এ খবর দেয় লোকজন। পরে ঘটনাস্থলে যায় হাতিরঝিল থানা পুলিশ। প্রথমে ওই যুবকের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় তার নাম পরিচয় পাওয়া যায়। নিহত যুবকের নাম রবিন। প্রাথমিকভাবে আমরা তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাইনি। রবিনের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার খুলশী থানা এলাকায়। তার বাবার নাম আব্দুস সাত্তার। মরদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর হাতিরঝিল লেকে ভাসমান অবস্থায় রবিন (২৯) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে বাড্ডা থানা পুলিশ।
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউতে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিটের ৪০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণ শেষে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বলেন, দেশের এত বড় একটি শিশু হাসপাতাল অথচ এখানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছাড়া আর কিছুই নেই। যার ফলে কার্ডিয়াক আইসিইউতে লাগা আগুন নির্বাপণ করতে কিছুটা সময় লেগেছে। কার্ডিয়াক আইসিইউতে থাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বিস্ফোরণে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, তদন্তে পর ঘটনা সম্পর্কে পুরোপুরি জানা যাবে। তিনি বলেন, খবর পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ১টা ৫৫ মিনিটে কাজ শুরু করি। এখানে পানির ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় পাশের মানসিক হাসপাতালের রিজার্ভ থেকে পানি আনা হয়। ছিল না পর্যাপ্ত ফায়ার হাইড্রেন্ট। তিনি বলেন, দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরপর আমাদের ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালায়। তবে আমরা কোনও ভুক্তভোগীকে পাইনি। আগুন লাগার পরপরই আইসিইউতে থাকা সবাইকে সরিয়ে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বজনরা। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা ধারণা করছি– আইসিইউর ভেতরে এসি ছিল, সেটা থেকে হয়তো আগুন লেগেছে। তবে তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, আগুনের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিছু ভালো আছে। পাশাপাশি আইসিইউ রুমে যে অক্সিজেন সংযোগ ছিল সেটি আগুনের কারণে পুড়ে যায়। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সময় লেগেছে। পরবর্তী সময়ে ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় অক্সিজেন লাইনটি বন্ধ করা হয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
শিশু হাসপাতালে আগুন, ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
রাজধানীর আগারগাঁও শিশু হাসপাতালের পঞ্চম তলায় কার্ডিয়াক বিভাগে আগুন লাগার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার বিকালে আগুনের ঘটনায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম। পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগুনের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করে একজন মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ড মাস্টার, একজন সিনিয়র নার্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবেন। শিশু হাসপাতালে পরিচালক আরও বলেন, এখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সেবা চালু করা। আমাদের নিজস্ব টেকনিক্যাল টিম, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার, ডিপিডিসি ও ফায়ার সার্ভিস চেক করে যদি সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে আমরা নিচতলা থেকেই চালু করতে চাই। এভাবে ধীরে ধীরে আমরা সকল কিছু চালু করতে চাই। কাজ চালু হয়ে গেছে। তবে তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছু এখন বলতে পারছি না।
রাজধানীর আগারগাঁও শিশু হাসপাতালের পঞ্চম তলায় কার্ডিয়াক বিভাগে আগুন লাগার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাইদা বাস থার্ড টার্মিনালে, প্রকৌশলী নিহত
রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালে নিরাপত্তা প্রাচীর ভেঙে রাইদা পরিবহনের একটি বাস ঢুকে গেছে। এতে সিভিল অ্যাভিয়েশনের জ্যেষ্ঠ একজন প্রকৌশলী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত মাইদুল ইসলাম সিদ্দিকী সিভিল অ্যাভিয়েশনের জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমন চন্দ্র দাস জানান, সকাল ১০টার দিকে রাইদা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তৃতীয় টার্মিনালের নিরাপত্তা প্রাচীর ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন সিভিল অ্যাভিয়েশনের জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম। তার মোটরসাইকেলটিকে বাসটি চাপা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি। ঘটনায় জড়িত বাসের চালক, হেলপার পলাতক। বাসটি জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালে নিরাপত্তা প্রাচীর ভেঙে রাইদা পরিবহনের একটি বাস ঢুকে গেছে। এতে সিভিল অ্যাভিয়েশনের জ্যেষ্ঠ একজন প্রকৌশলী নিহত হয়েছেন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট
রাজধানীর আগারগাঁও শিশু হাসপাতালের পঞ্চম তলায় কার্ডিয়াক বিভাগে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ধোঁয়া দেখা যাওয়ার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট গিয়ে আগুন নির্বাপণে কাজ করছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে ডিউটি অফিসার লিমা খানম এ তথ্য জানান। তিনি জানান, বেলা ১টা ৪৭ মিনিটের দিকে খবর পাওয়া যায় আগারগাঁও শিশু হাসপাতালে কার্ডিয়াক বিভাগ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। খবর পেয়ে প্রথমে সেখানে চারটি ইউনিট ও পরে আরও তিনটি ইউনিট গিয়ে আগুন নির্বাপণে কাজ করছে।
রাজধানীর আগারগাঁও শিশু হাসপাতালের পঞ্চম তলায় কার্ডিয়াক বিভাগে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ধোঁয়া দেখা যাওয়ার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট গিয়ে আগুন নির্বাপণে কাজ করছে।
ভাষানটেকে বাবা-মা-দাদির পরে চলে গেল লামিয়াও
রাজধানীর ভাষানটেকে ১৩ নম্বর কালভার্ট রোড এলাকায় কয়েল ধরাতে গিয়ে গ‍্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ শিশু লামিয়ার (৭) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল চারজনে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল পৌনে সাতটার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শিশু লামিয়ার মৃত্যু হয়। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তরিকুল ইসলাম জানান, মিরপুরের ভাষানটেক থেকে দগ্ধ অবস্থায় নারী শিশুসহ ছয়জনকে বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে এক শিশু মারা যায়। তার শরীরের ৫৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এর আগে ১৩ এপ্রিল মেহেরুন্নেছা, ১৫ এপ্রিল সূর্য বানু ও ১৬ এপ্রিল লিটন মারা যায়। এ ঘটনার মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল বেড়ে চারজনে। বর্তমানে লিজা ৩০ শতাংশ এবং সুজনের ৪৩ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। উল্লেখ্য, গত ১২ এপ্রিল ভোরের দিকে ভাষানটেকে ১৩ নম্বর কালভার্ট রোড এলাকায় কয়েল ধরাতে গিয়ে গ‍্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ হয়ে তারা দগ্ধ হন। পরে দগ্ধ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়।
রাজধানীর ভাষানটেকে ১৩ নম্বর কালভার্ট রোড এলাকায় কয়েল ধরাতে গিয়ে গ‍্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ শিশু লামিয়ার (৭) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল চারজনে।