label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
fe
গণতান্ত্রিক আবহে একটি জাতির কাঙ্খিত স্বপ্নমালা গণতান্ত্রিক আবহে একটি জাতির কাঙ্খিত স্বপ্নমালাফকির ইলিয়াস============================================ না, দেশে সামরিক ফরমান জারি হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। আপাতত সেটাই মনে হচ্ছে। এখন ২০১৩ সাল। বিশ্ব পরিস্থিতি অনেক ধকল সয়ে উঠছে। আগের মানসিকতা নেই, অনেক ক্ষেত্রেই। এর কারণ আছে। মানুষ শান্তির পথরেখা চায়। মানুষ গণতান্ত্রিক আবহ চায়। গত ১৫ এপ্রিল ২০১৩ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে, সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূইয়া বর্তমান বাস্তবতায় রাষ্ট্রক্ষমতায় সেনাবাহিনীর আসার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হয়তো অতীতের বিভিন্ন ঘটনা থেকে সবার মনে এ ধারণা জন্মেছে যে সেনাবাহিনী হয়তো কোথাও ইন্টারভেন করতে পারে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে অনুরূপ কোনো কিছু সম্ভব নয়।’ বলা দরকার, এ বিষয়ে একটি ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল সাধারণ মানুষের মনে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী বিদেশে শান্তি রক্ষায় কাজ করে। দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তারা বসে থাকবে না। তারা সময়মতো দায়িত্ব পালন করবে।’ এর অর্থ কী, তা দেশের মানুষের না বুঝার কথা নয়। বেগম জিয়া আশা করেছিলেন দেশে এমনি একটি প্রেক্ষাপট তৈরি হবে। ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, হেফাজতের শোডাউন সবই ছিল এর ধারাবাহিকতা। কিন্তু এদেশের মানুষ তা প্রতিহত করেছেন খুব সাহসিকতার সঙ্গেই। তার কারণ হলো তারা গণতান্ত্রিক ধারার প্রবহমানতা চান। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে পরে জানানো হয়েছিল, কোনো ধরনের অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পক্ষে তারা নন এবং খালেদা জিয়া সেই ধরনের কিছু বোঝাতে চাননি। অনুষ্ঠিত বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া বলেন, ‘আমরা সবাই শাসনতন্ত্রের প্রতি অনুগত। সংবিধানকে সমুন্নত রাখাই আমাদের শপথ।’ তিনি বলেন- ‘একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে সবাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে থাকে। যে কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী সবসময় রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে পরিচালিত হয়ে থাকে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশেই কার্যাবলি পরিচালনা করে।’ সেনাপ্রধান আরো বলেন, ‘সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে হবে এবং বর্তমানে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সেটা অবশ্যই তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। সেখানে কোনো রকম ব্যতিক্রমের প্রশ্নই ওঠে না।’ নৌবাহিনী প্রধান ফরিদ হাবিবও সহকর্মীদের মতো বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর সবাই একসঙ্গে কাজ করে থাকে। সংবিধান সমুন্নত রাখার দায়িত্ব সবার।’ বিমান বাহিনী প্রধান ইনামুল বারী বলেন, তার বাহিনী সংবিধান, রাষ্ট্রপতি এবং সরকারের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য সহকারে কাজ করে যাবে। এখানে বিমান বাহিনীর কোনো সদস্য কিংবা বিমান বাহিনীর সংগঠন হিসেবে অন্য কোনো চিন্তা-ভাবনা বা কাজ করার সুযোগ নেই। এদিকে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে এসেই ওয়াক আউট করেছে বিএনপি। আমি এই দৃশ্যটি টিভিতে দেখেছি। সে বিষয়টির অবতারণা করে মওদুদ আহমদ ওয়াক আউট শোর নেতৃত্ব দিলেন তার কোনো দরকার ছিল না। তারা সংসদে থেকেই ঐ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন। টানা ৮৩ কার্যদিবস অনুপস্থিতির পর সংসদে ফিরেই মাত্র দুই ঘণ্টার মাথায় সভা-সমাবেশের ওপর ‘নিষেধাজ্ঞার’ প্রতিবাদ জানিয়ে ‘ওয়াক আউট’ করেছে বিএনপি। এর পরই আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সাংসদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আজ প্রমাণ হয়ে গেছে, বেতনভাতা ও সদস্যপদ রাখতে তারা (বিএনপি) সংসদে এসেছেন। আর আট দিন অনুপস্থিত থাকলে তাদের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যেতো।’ মওদুদকে উদ্দেশ্য করে তোফায়েল প্রশ্ন রাখেন, তার বক্তব্যের সময় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না হলেও বিএনপি ওয়াক আউট করলো কেন? আসলে বিএনপির সমস্যাটা অন্যখানে। তারা যে কোনো ভাবে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করতে চাইছে। এদিকে তারেক রহমান ইস্যুতে আবারো সরগরম হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ। মামলা থেকে জামিন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারেক রহমান লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রাজনীতি থেকেও নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে রেখেছিলেন। সম্প্রতি তিনি আবারো রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। গত এপ্রিল মাসে সপরিবারে তারেক রহমান ওমরাহ পালনে সৌদি আরব যান।। সেখানে তিনি দলের প্রবাসী নেতাকর্মী নিয়ে সভা করেন। সর্বশেষ গত ২০ মে লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপির একটি প্রতিনিধি সভায়ও প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারেক রহমান ৫ মে গভীর রাতে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর যৌথ হামলার তীব্র সমালোচনা করেন। পাশাপাশি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে আরো সক্রিয় হতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। একটি খবর অনেকের নজরে পড়েছে। ডা. বি চৌধুরীর বিকল্প ধারা ও অলি আহমদের এলডিপি শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে আবার একীভূত হতে যাচ্ছে। এটা বিএনপির জন্য প্লাস পয়েন্ট। এই বি চৌধুরীকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল রাষ্ট্রপতির পদ থেকে। আর বীর মুক্তিযোদ্ধা অলি আহমদকেও কোণটাসা করে রাখা হয়েছিল বিএনপিতে। বিএনপি থেকে বেরিয়ে যাওয়া কর্নেল (অব.) অলি আহমদ শেষ পর্যন্ত আবার বিএনপির সঙ্গেই গাঁটছড়া বাঁধছেন। তিনি বিএনপির নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন একসময়। তার ক্ষোভ ছিল আলবদর-রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপি জোট করেছে। তার ক্ষোভ ছিল ‘হাওয়া ভবনের’ বিরুদ্ধে। তার ক্ষোভ ছিল সরাসরি তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর প্রমুখ বিএনপির ‘রাইজিং স্টার’দের বিরুদ্ধে। তিনি বিএনপি থেকে বেরিয়ে গিয়ে যখন এলডিপি গঠন করেন তখন তৎকালীন চারদলীয় জোটবিরোধী কী কী বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা এখনো বিভিন্ন সংবাদপত্রে উজ্জ্বল হয়ে আছে। সেই আলবদর রাজাকার চক্রকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণ কিংবা মুক্ত করার জন্য বর্তমান বিএনপি একটি নীরব প্রচেষ্টা সার্বক্ষণিক করে যাচ্ছে। এই সুবাদে বেগম খালেদা জিয়ার দুই ছেলের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কিংবা রাজনীতিতে পুনর্বাসনের বিষয়টিও যুক্ত। মোটকথা, তারা আগের মতোই মিত্রতা বজায় রেখে রাষ্ট্রক্ষমতা পাওয়ার কিংবা পুনর্বাসিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। আমরা খুব গভীরভাবে লক্ষ করেছি, বিএনপির মৌলবাদী কানেকশন নিয়ে যখন জে. মীর শওকত কিংবা কর্নেল অলি আহমদরা কথা বলেছেন তখনই তাদের বেগম জিয়ার তীব্র বিরাগভাজন হতে হয়েছে। জে. মীর শওকত জীবনের শেষ সময়ে এসে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেই পরলোকগমন করেন। মনে পড়ছে, ২০১১ এর সেপ্টেম্বর মাসে অলি আহমদ নিউইয়র্ক সফরে এসেছিলেন। নিউইয়র্কে এলডিপির কোনো শাখা নেই। গঠন করা বোধ হয় সম্ভবও হয়নি। সেই অলি আহমদকে নিয়ে নিউইয়র্কে একটি ছোটখাটো সভা করেছেন বিএনপির কিছু সমর্থক-কর্মী। এ সভায় অলি আহমদ বলেছিলেন, ‘আগামী ডিসেম্বর ২০১১ এর মধ্যেই বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবে। তবে কিভাবে বিদায় নেবে তা আমি জানি না।’ অলি আহমদের এ বক্তব্যের বিশ্লেষণ করা হয়েছিল দুই ভাবে। একটি হচ্ছে তিনি প্রলাপ বকছেন, আর একটি হচ্ছে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কোনো ষড়যন্ত্রমূলক প্রক্রিয়ায় সরকারকে সরানোর প্রক্রিয়ায় অলি আহমদ সরাসরি জড়িত আছেন। আর আছেন বলেই তিনি জানাচ্ছেন, সরকার ডিসেম্বরের মধ্যেই বিদায় নেবে! এটা খুব পরিষ্কার অলি আহমদ বাংলাদেশে কোনো শুভ রাজনীতির প্রতিভূ নন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। কিন্তু ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা শুধু ভোগের জন্যই ছিল না, তিনি এবং তার সরকার বাংলাদেশে আলবদর-রাজাকারদের রাষ্ট্রক্ষমতার ভাগ দিয়েছিলেন। আগে তিনি মন্ত্রী ছিলেন। ২০০১-২০০৬ সালে চারদলীয় জোটের নেত্রী তাকে মন্ত্রিত্ব দেননি। আর মন্ত্রিত্ব পাননি বলেই বেশ কবছর অপেক্ষা করে, পরে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এটা খুবই নিশ্চিত, নিজামী-মুজাহিদ এদের পাশাপাশি যদি অলি আহমদকে একটি মন্ত্রিত্ব দেয়া হতো তবে তিনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ‘টুঁ’ শব্দটি পর্যন্ত করতেন না। অলি আহমদ বিএনপি থেকে বেরিংে গিয়ে এলডিপি গঠন করেন। কিন্তু তাতে বিএনপির কিছুই আসে যায়নি। বরং অলি আহমদ-জাহানারা বেগম প্রমুখরা প্রায় গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ২০০৮-এর নবম সংসদ নির্বাচনে শুধু অলি আহমদই জিতে আসেন। আর তা সম্ভব হয় তার এলাকাভিত্তিক জনপ্রিয়তা ও আঞ্চলিকতার কারণে। মনে পড়ছে, অলি আহমদ এলডিপি দলটি গঠনের পর, যুক্তরাষ্ট্রে তার দলের শাখা হচ্ছে, এমন গুজব ছড়িয়েছিল, বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা নিউইয়র্কে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘যেখানে অলি-এলডিপি, সেখানেই প্রতিরোধ’। এরপরে খুব অবাক হয়ে যুক্তরাষ্ট্রবাসী বাঙালিরা দেখলেন সেসব বিএনপিপন্থী নেতাকর্মীরাই অলি আহমদকে নিয়ে নিউইয়র্কে সমাবেশ করলেন। তার কারণ হলো এই এলডিপি প্রধান, নিঃশর্তভাবে খালেদা জিয়াকে আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে। অলি আহমদ নিউইয়র্কে আরো বলেছিলেন, ‘জিয়া এবং মঞ্জুর হত্যায় জেনারেল এরশাদ সরাসরি জড়িত ছিলেন।’ যদি তাই হয়, তবে বিএনপি দুই মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার পরও জিয়া হত্যা মামলায় এরশাদের বিচার করলো না কেন? করতে পারলো না কেন? বরং বেগম খালেদা জিয়া, এরশাদকে নিয়ে জোট করতে চেয়েছিলেন। ক্ষমতার ভাগ দিতে চেয়েছিলেন। এরশাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে আওয়ামী লীগ খেলায় জিতেছে সাময়িকভাবে। আর বিএনপির দানবীয় চেহারা স্পষ্ট হয়েছে মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে। অলি আহমদ যুগপৎভাবে বিএনপি-জামায়াতের দোসর হয়ে কার স্বার্থরক্ষা করবেন? একই কথা বলা যায় বি চৌধুরীর বেলায়ও। বাংলাদেশ গণতন্ত্রের মডেল হতে চায়। এই প্রজন্ম কোনো দুঃশাসন, ষড়যন্ত্র চায় না। এই প্রজন্ম অব্যাহত শান্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের স্বপ্নমালার বাস্তবায়ন চায়। কিন্তু যেসব কালো শক্তি এই রাষ্ট্র ও প্রজন্মের কণ্ঠ চেপে ধরতে চাইছে- এদের রুখবে কে? এজন্য মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। দেশে কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এসবের জয়-পরাজয় গণতন্ত্রের ভাগ্য নিয়ামক। তাই মানুষকে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। এই দেশ লাখো শহীদের রক্তের উত্তরাধিকার। কথাটি মনে রাখতে হবে সবাইকেই।----------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ৮ জুন ২০১৩
false
hm
শক্তি নিয়ে প্রাথমিক প্যাঁচাল নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে আগে এক পোস্টে গলা খাঁকারি দেবার পর আগ্রহী সচলরা আমাকে অশেষ উপকৃত করেছেন তাঁদের জিজ্ঞাস্য নানা বিষয় সম্পর্কে মূল্যবান মন্তব্য রেখে। কিছুটা তারই আলোকে নতুন প্যাঁচাল শুরু করছি। নবায়নযোগ্য শক্তি সম্পর্কে কথা শুরুর আগেই যে প্রশ্নটি জাগতে পারে, সেটি হচ্ছে নবায়নের প্রশ্ন এখানে কেন আসছে? নবায়নের অযোগ্য শক্তি আবার কী? পদার্থবিদ্যার একেবারে গোড়ার দিকের কথা, শক্তির অনশ্বরতার তত্ত্ব টেনে এনে এ নিয়ে তর্ক শুরু করা যায়। শক্তি আত্মার মতোই চীজ, আগুন ইহাকে পোড়াইতে পারে না, জল ইহাকে ভিজাইতে পারে না, রোদ ইহাকে শুকাইতে পারে না ... ইত্যাদি ইত্যাদি। শক্তির শুধু রূপান্তর ঘটে, এক চেহারা থেকে সে অন্য চেহারা ধারণ করে এফডিসির নায়িকার মেকআপের আগে ও পরের ঘটনার মতো। নবায়নযোগ্য শক্তির আগে তাই প্রচলিত শক্তি ব্যবস্থাগুলি নিয়ে খানিক কথা বলা প্রয়োজন। তারও আগে বলা প্রয়োজন, মানুষের সমাজব্যবস্থায় শক্তির ভূমিকা নিয়ে। মানুষ তার ইতিহাসের একটা বিরাট সময় পার করেছে আগুন থেকে পাওয়া তাপশক্তি আর পেশীশক্তির ওপর নির্ভর করে। প্রথমে পেশী ছিলো একান্ত তার নিজের, পরবর্তীতে তার সাথে যোগ হয়েছে বশ করা পশুর পেশী। ভারবাহী পশু না থাকলে মানুষের সামাজিক বিকাশের গতি অন্যরকম হতো। ফ্রান্সিসকো পিজারো পারতেন না আতাহুয়ালপাকে পরাজিত করে পেরু জবরদখল করতে, মঙ্গোলরা পারতো না তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে। পশুর পেশীশক্তির ওপর যখন কোন একটি গোষ্ঠীর মানুষ নিয়ন্ত্রণ আনতে পেরেছে, তখনই সে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার তুলনামূলকভাবে দুর্বল প্রতিবেশীদের জন্যে, যাদের নিয়ন্ত্রণে সে পরিমাণ শক্তি ছিলো না। শক্তি সেই প্রাচীন সমাজে যে কাজে লাগতো, এখনও সেই একই কাজে লাগছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা আগে দাহ্য কোন বস্তু পুড়িয়ে রান্না করতেন, শীতের মোকাবেলা করতেন, অস্ত্রশস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করতেন কিংবা শত্রুর বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতেন, আজও আমরা তা-ই করি। ভারবাহী পশুর কাজ করছে বৈদ্যুতিক ও তাপীয় এঞ্জিন। আর এই গোটা রূপান্তরটি আমরা ঘটিয়েছি বিভিন্ন জ্বালানিকে আরো দক্ষতার সাথে ব্যবহার করে। আমাদের প্রচলিত জ্বালানিগুলো, অর্থাৎ তেল, কয়লা, গ্যাস বা কাঠ ... এগুলোতে আসলে কী আছে? দহনের ফলে এগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ তাপশক্তি অবমুক্ত হয় (আরো অবমুক্ত হয় কার্বন, বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড হিসেবে)। কেন আমরা অন্য জিনিস ফেলে তেল, কয়লা, গ্যাস বা কাঠ পোড়াই? কারণ এগুলো প্রকৃতিতে বিপুল পরিমাণে পাওয়া যায় (ফলে এদের দাম কম), এবং অন্যান্য বিকল্প দাহ্যবস্তুর তুলনায় এদের শক্তি ঘনত্ব (অর্থাৎ ওজন বা আয়তন পিছু ধৃত শক্তি) অনেক বেশি। জ্বালানিদহন তাপ (মেগাজুল/কেজি)কিলোওয়াটঘন্টা/কেজি পেট্রল৪৭১৩.০৫ কয়লা১৫-২৭৪.১৭-৭.৫ প্রাকৃতিক গ্যাস৫৪১৫ কাঠ১৫৪.১৭ তাপীয় শক্তির পরিমাপ সাদা চোখ আন্দাজ করা একটু মুশকিল, তাই এভাবে বলা যেতে পারে, আমরা যদি এক কেজি পেট্রলকে পুড়িয়ে পাওয়া তাপকে সম্পূর্ণভাবে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করতে পারতাম, তাহলে তা দিয়ে একটা একশো ওয়াটের বাতিকে ১৩০ ঘন্টা জ্বালানো সম্ভব। এক কেজি কয়লা দিয়ে তা করা যেতে পারে প্রায় ৪২ থেকে ৭১ ঘন্টা (নির্ভর করছে কয়লার কিসিমের ওপর), প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে প্রায় ১৫০ ঘন্টা, আর এক কেজি কাঠ দিয়ে মোটামুটি ৪২ ঘন্টা। আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে, আমরা কখনোই তাপীয় শক্তিকে পুরোপুরি অন্যকোন শক্তিতে রূপান্তর করতে পারবো না। রূপান্তর প্রক্রিয়াটাই এমন যে সেখানে নানা কিসিমের লোকসান হতে বাধ্য। তারপরও আমরা দেখতে পাই, এক কেজি জ্বালানির মধ্যে কী বিপুল শক্তি রয়েছে। বৈদ্যুতিক বাতির ব্যাপারটা যদি বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে এভাবে চিন্তা করে দেখুন, এক কেজি তেল থেকে পাওয়া শক্তি একটা পুলিশের ঘোড়াকে দিয়ে (পুলিশের ঘোড়া বলার কারণ হচ্ছে, ঢাকায় আমরা সাধারণত যেসব ঘোড়াকে গাড়ি টানতে দেখি, সেগুলি নিতান্তই দুবলা, ঘোড়া নামের কলঙ্ক) ১৭ ঘন্টা কাজ করানোর শক্তির সমান। এক কেজি কয়লা থেকে তা ৫.৫ থেকে ১০ ঘন্টার ঘোড়ার কাজের সমান, এক কেজি প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্যে তা ২০ ঘন্টা, এক কেজি কাঠের জন্যে ৫.৫ ঘন্টা। তাপশক্তি থেকে যান্ত্রিক শক্তির রূপান্তরটুকুই মানুষ আয়ত্ব করতে পেরেছে জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় এঞ্জিনের কল্যাণে (ওয়াটকে সম্মান দেখানোর জন্যেই আমরা কাজ করার ক্ষমতার একককে ওয়াট বলে থাকি, প্রতি সেকেন্ডে এক জুল কাজ করার, অর্থাৎ বলা যেতে পারে, এক সেকেন্ডে এক কেজি ওজনের কোন বস্তুকে প্রায় ১০ সেন্টিমিটার ওপরে তোলার ক্ষমতাকে এক ওয়াট বলা হয়)। তার আগ পর্যন্ত মানুষের যান্ত্রিক শক্তির রূপান্তরের পেছনে পর্দার আড়ালে ছিলো পেশীশক্তি, আর হ্যাঁ, নবায়নযোগ্য শক্তি। আমরা যেন ভুলে না যাই পাল তুলে চলা নৌকা, আর দন কিহোতের তীব্র আক্রমণের মুখেও অটল বায়ুকলগুলির কথা। প্রাচীন পারস্য ও মধ্যযুগের পশ্চিম ইয়োরোপে বায়ুশক্তির সাহায্যে শস্য গুঁড়ো করা হতো। সেইসাথে চীনে সুদীর্ঘকাল ধরে পানির স্রোতের শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করা হয়েছে। পশু বা মানুষের পেশীশক্তিও নবায়নযোগ্য শক্তি। সেই শক্তি আসে কার্বোহাইড্রেট পুড়িয়ে পাওয়া শক্তি থেকে, যে রাসায়নিক প্রক্রিয়াটি শরীরে সতত চলমান। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার রসদ আসে একটি চক্র থেকে। শক্তির উৎস, অর্থাৎ জ্বালানি শর্করা এখানে রূপান্তরিত হচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইডে, কিন্তু সেই কার্বন ডাই অক্সাইড আবার উদ্ভিদের কল্যাণে সূর্যের আলো ও পানি যোগে ফিরে আসছে প্রাণীর কাছে। উদ্ভিদ আর প্রাণী এই চক্র অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে সক্ষম। সে কারণেই এ শক্তি "নবায়নযোগ্য"। কিন্তু এই নবায়নযোগ্য শক্তির সমস্যা একটাই। এর ঘনত্ব বড় কম। অর্থাৎ, এক কিলোওয়াট-ঘন্টা শক্তি পেতে গেলে হয় বিপুল আয়তনের, নয় বিরাট ওজন নিয়ে লেনদেন করতে হবে। ঘোড়া ফেলে মানুষের কথাই ধরুন। এক কিলোওয়াটঘন্টা শক্তি ব্যয় করতে গেলে একজন মানুষকে ১০০ কেজি ওজন ৩৬৭৩ মিটার উচ্চতায় তুলতে হবে। মানুষের গড় শক্তিভোগ হচ্ছে সারাদিনে দুই হাজার কিলোক্যালরি, বা আট হাজার তিনশো ষাট কিলোজুলের মতো। যদি সারাদিন ধরে এই শক্তির পুরোটা মানুষ কাজ করে খরচ করে, তাহলে এই শক্তিকে এক দিন, অর্থাৎ ছিয়াশি হাজার চারশো সেকেন্ড দিয়ে ভাগ করলে মানুষের ক্ষমতা বেরিয়ে আসে, সাতানব্বই ওয়াটের কাছাকাছি (তবে স্বাভাবিকভাবেই জাতিভেদে এর কমবেশি হবে)। ধরে নেয়া যায়, আটজন গড় মানুষকে পাওয়া গেলে এক কিলোওয়াট ক্ষমতা পাওয়া যাবে। এক কিলোওয়াটঘন্টা শক্তির জন্যে এই আটজনকে এক ঘন্টা করে খাটতে হবে। এই আটজনের ওজন যদি পাঁচশো কেজি হয়, তাহলে কেজি পিছু দুই ওয়াট করে ক্ষমতা পাওয়া যাবে। মোটর গাড়ির জন্যে কেজি পিছু দুই থেকে তিনশো ওয়াট ক্ষমতা পাওয়া যাবে, বড় ইলেকট্রিক মোটরের জন্যে পাওয়া যাবে কেজি পিছু দেড়শো ওয়াটের মতো, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে কেজি পিছু আঠারোশো ওয়াট। যদিও প্রথম দিকের বাষ্পীয় এঞ্জিনগুলোর দক্ষতা ছিলো ২% এর মতো, তারপরও এ এক সম্পূর্ণ নতুন যুগের সূচনা। দক্ষতা বা এফিশিয়েন্সি জিনিসটা মাপা হয় কী দিনু আর কী পেনু, সেই অনুপাত হিসাব করে। ১০০ একক তাপশক্তি যুগিয়ে যদি ২ একক যান্ত্রিক শক্তি পাওয়া যায়, তাহলে আজ আমাদের কাছে মনে হতে পারে, এতো ফাল পাড়ার কী আছে? আছে এ কারণে, এমন সব কাজ যন্ত্রকে দিয়ে করানো সম্ভব, যা পেশীশক্তি হয় করতে পারবে না, নয়তো পারলেও অনেক জায়গা লাগবে। অল্প একটু জায়গায় বসানো যন্ত্র থেকে অনেকখানি কাজ, এটাই মানুষের দরকার ছিলো অনেক বছর ধরে। মানুষ দীর্ঘদিন ধরে তাপশক্তি থেকে যান্ত্রিক শক্তির রূপান্তর ঘটিয়ে আসছে। তাপশক্তি পাওয়া যাচ্ছে তেল-গ্যাস-কয়লা-কাঠ-পরমাণু থেকে, সেই তাপ দিয়ে হয় বাষ্প তৈরি করে সেই বাষ্প দিয়ে টারবাইন ঘোরানো হচ্ছে, অথবা সেই তাপ গ্যাসটারবাইনে প্রয়োগ করা হচ্ছে, অথবা অন্তর্দহন এঞ্জিনের শ্যাফট ঘোরানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই রূপান্তরে দক্ষতা যন্ত্রের কিসিমের ওপর নির্ভর করে, মোটামুটি ২০% থেকে ৪০% এর মধ্যে। অর্থাৎ, ১০০ একক তাপ যুগিয়ে বড়জোর ৪০ একক যান্ত্রিক শক্তি পাওয়া যাচ্ছে, বাকিটা অর্থমন্ত্রী সাইফুরের ভাষায়, লুসকান। রূপান্তরকিন্তু যান্ত্রিক শক্তি পরিবহনের উপযোগী নয়। পরিবহন বা সঞ্চালন করা যায় কাঁচা জ্বালানি, নয়তো বিদ্যুৎ। তাই যান্ত্রিক শক্তিকে আরেক দফা রূপান্তর ঘটাই আমরা তড়িৎশক্তিতে। এই আরেক দফা রূপান্তরেও আরেক দফা "লুসকান" ঘটে। শেষমেষ ১০০ একক তাপ যুগিয়ে হাতে হয়তো ৩০ একক তড়িৎশক্তি পাওয়া যায়। সেখান থেকেই আমাদের শহরগুলোত আলো আর অন্ধকারের আমলনামা লেখা শুরু করতে হয়। (আরও একটু এগোবে। কিছু খাই এখন।)
false
mk
জামাত ধ্বংস করে দিলো বিএনপিকে! সরকারবিরোধী আন্দোলনে কৌশলগত দুর্বলতায় মার খাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক হরতাল-অবরোধ দিয়েও আন্দোলনের ফল ঘরে তুলতে পারছে না দলটি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কয়েক দফা হরতাল ছাড়াও পাঁচ দফা অবরোধ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার শুরু হয়েছে পঞ্চম দফা অবরোধ। এ কর্মসূচি শেষে অসহযোগ, এমনকি 'গণকারফিউ' ঘোষণা করতে যাচ্ছে দলটি। তার পরও কাঙ্ক্ষিত ফল না আসায় দলের ভেতরেই নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়ার কারণেই বিএনপির এমন অবস্থা। এই গাঁটছড়ার কারণে বিএনপিকে 'যুদ্ধাপরাধীদের দোসর' হিসেবে বদনাম কুড়াতে হচ্ছে। দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের সাম্প্রতিক সহিংসতা ও তাণ্ডবের দায়ও অনেকটা চাপছে বিএনপির ঘাড়ে। এ অবস্থায় অনেকে জামায়াতকে বিএনপির জন্য বিষফোড়া হিসেবেই দেখছেন। এ ছাড়া বন্ধুপ্রতিম অনেক দেশও এখন আর বিএনপি-জামায়াত গাঁটছড়াকে ভালো চোখে দেখছে না।বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে গত শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন বিএনপির প্রধান দাবি। যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথা নেই। কিন্তু জামায়াতের ওই বিচারবিরোধী আন্দোলন বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবির আন্দোলনকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে।' তিনি বলেন, ভোটব্যাংকের বিষয়টি মাথায় রেখে জামায়াতকে তাঁরা ছাড়তেও পারছেন না। সংগত কারণেই রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রতিনিয়তই বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের।বিএনপি কেন জামায়াতকে ছাড়তে পারছে না জানতে চাইলে বিএনপির ওই নেতা বলেন, বিএনপি এ মুহূর্তেই জামায়াতকে ছাড়তে পারছে না রাজনীতির ময়দানে একা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের বাঁচাতে জামায়াত শেষ মুহূর্তে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আপস করার চেষ্টা করতে পারে- এমন আশঙ্কাও রয়েছে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতার মনে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গত শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। এটা এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে বিএনপি নিজেও বিব্রত। তারা বুঝতে পারছে না কিভাবে এই সম্পর্ককে তারা উপস্থাপন করবে। তিনি আরো বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলোর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতি হচ্ছে সহিংসতার। এই সহিংসতার রাজনীতিতে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি দুর্বল। যেহেতু তারা এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না, তাই জামায়াত বিএনপির জন্য পলিটিক্যাল ক্যাপিটাল (রাজনৈতিক পুঁজি) হিসেবে কাজ করছে। একই সঙ্গে জামায়াত বিএনপির জন্য নেসেসরি ইভেন্টও (প্রয়োজনীয় উপকরণ)। আমি বলব, জামায়াত বিএনপির জন্য অনেকটা বিষফোড়ার মতো। তারা জামায়াতকে ছাড়তেও পারছে না, রাখতেও পারছে না।'ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ দেশে নির্বাচন মানেই হলো উৎসব। আর নতুন ও তরুণ ভোটারদের জন্য এ সময়টি আরো আগ্রহের। অথচ এবার এই ভোটারদের একটি বড় অংশ সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত। জামায়াত এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। তাই এসব নতুন ও তরুণ ভোটার ভোট দিতে পারলে মূল্যায়ন করা যেত জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকার কারণে বিএনপির ভোট কমেছে, না বেড়েছে।বিএনপির একাধিক নেতাও বলছেন, জামায়াতকে ১৮ দলীয় জোট থেকে বাদ না দিলে জাতীয় পর্যায়ে বিএনপির দুর্নাম ঘুচবে না এবং আন্দোলনের ফলও আসবে না বলে তাঁদের ধারণা। ওই নেতারা মনে করছেন, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়লে আওয়ামী লীগবিরোধী ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দল ও অন্যান্য শক্তিকে একত্র করে বৃহত্তর শক্তি গড়ে তুলতে পারত বিএনপি। বাড়ত জনসমর্থনও। জামায়াতকে বাদ দিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আরো জোরালো সমর্থন পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তাঁরা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে মিলিয়ে যেসব বক্তব্য দেন, তাও তাঁরা দিতে পারবেন না বলে মনে করেন বিএনপির ওই নেতারা।বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন, বিএনপি ১৮ দলীয় জোটের নেতৃত্বে থাকলেও আন্দোলন-সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় জামায়াতের নেতা-কর্মীদের। আন্দোলনে অনেকটা জামায়াতনির্ভর হয়ে গেছে বিএনপি। আর এ কারণে জনগণের কাছে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন কমছে। অথচ বিপুলসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ও উদারপন্থী নেতা-কর্মী নিয়ে বিএনপির পথচলা। জামায়াতের কারণেই আওয়ামী লীগ নানাভাবে বিএনপিকে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের দোসর বলে অপবাদ দিতে সক্ষম হচ্ছে।বিএনপির ওই নেতারা মনে করেন, জামায়াতকে বাদ দিয়ে যদি অন্যান্য দল যেমন- বিকল্প ধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জেএসডিকে জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হতো, তাহলে জনগণের কাছে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা যেমন বাড়ত, তেমনি আওয়ামী লীগও তাঁদের যুদ্ধাপরাধীদের লালনকারী বলে অপবাদ দিতে পারত না। তা ছাড়া অন্যের ওপর ভরসা না করে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হতো।জামায়াতের কারণেই ওই সব দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে যেতে পারছে না বলে দলগুলোর একাধিক নেতা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলেছেন। চলতি বছরের ১৩ জুন জাতীয় সংসদের এলডি ভবনে রাজনীতিবিদদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে জামায়াতের নেতারা থাকার কারণে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব নিচে বসেই ইফতার সারেন।জামায়াতের বিষয়ে সুস্পষ্ট আপত্তি থাকলেও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কেউ প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অনেক বিষয় আছে, যা চাইলেই প্রকাশ্যে বলা সম্ভব না। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আসতে পারে। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের মোট ভোটের তুলনায় দোদুল্যমান ভোটার ও নতুন ভোটার সংখ্যা অনেক বেশি। এ জন্য শিগগিরই দলের হাইকমান্ডকে ভাবতে হবে এবং কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।'বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনী জোট আদর্শিক নয়। বিষয়টি তারা (আওয়ামী লীগ) গুলিয়ে ফেলে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলে থাকেন যে জামায়াত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, জামায়াত বাংলাদেশের বিপক্ষে ইত্যাদি। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত জোটবদ্ধ আছে- এই বিষয়টি তুলে ধরে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কাজে লাগাতে পারত। আওয়ামী লীগের ভাষায় যেহেতু বিএনপির সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের জোট, সেহেতু মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে না। আর ভোট না দিলে বিএনপিও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন না দিয়ে কেন একতরফা কথিত নির্বাচন করে ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখতে চায়। তারা নির্বাচন দিয়ে দেখুক কারা জয়লাভ করে।' তিনি আরো বলেন, সরকার একতরফা নির্বাচন করে শুধু দেশে নয়, বিশ্বের মধ্যে নজির স্থাপন করেছে।জামায়াতকে বাদ দিলে বিএনপির জনসমর্থন বাড়ত কি না জানতে চাইলে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, 'নির্বাচনী জোট আর আন্দোলন এক নয়। জাতীয় নির্বাচন হলে বোঝা যেত জোটবদ্ধ থাকায় বিএনপির লাভ, না ক্ষতি হয়েছে।' তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের কয়েকজন নেতা ছাড়া এ বক্তব্য কেউ দিচ্ছে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই রক্ষা করতে চাচ্ছে। এ জন্যই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে তারা বিতর্কিত করেছে।'জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এটি লাভ বা ক্ষতির ব্যাপার না, এটি কৌশলগত ঐক্য। এই ঐক্য ছিয়ানব্বই সালে আওয়ামী লীগও করেছিল। জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ায় বিএনপির লাভ, না ক্ষতি হয়েছে, তা বোঝা যেত যদি নির্বাচন হতো। কিন্তু সরকার তো গায়ের জোরে আবার ক্ষমতায় বসতে চায়।'দেশে নির্বাচনে বেশ কিছু আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। এসব স্থানে ভোটের ব্যবধান থাকে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজারের মতো। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অনেকেই মনে করেন, জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার কারণে এসব স্থানে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত হয়। কিন্তু তাঁরা একটি বিষয় হিসাবে রাখছেন না তা হচ্ছে, নতুন ভোটার ও দোদুল্যমান ভোটার।বিএনপি নেতাদের মতে, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াত পায় মোট ভোটের ১২.১ শতাংশ (১৮টি আসন)। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচেন দলটি ৮.৬২ শতাংশ ভোট ও তিনটি আসন পায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে ৪.২৮ শতাংশ (১৭টি আসন) আর সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪ শতাংশেরও কম (দুটি আসন) ভোট পায় দলটি। বিএনপির সঙ্গে জোটে না থাকলে জামায়াত কতটা জনসমর্থনহীন, তা অনুমান করা যায় ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে ৩০০ আসনের সব কটিতে প্রার্থী দিয়ে মাত্র তিনটিতে জেতে তারা, ভোট পায় ৮.৬২ শতাংশ। অথচ ২০০১ সালে ৫০টির কম আসনে প্রার্থী দিয়ে শুধু বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার কারণে ৪.২৮ শতাংশ ভোট পায়, সঙ্গে ১৭টি আসন।অনেকেই মনে করেন, ১৮ দলীয় জোটে জামায়াত থাকার কারণে নতুন ও দোদুল্যমান বেশির ভাগ ভোটারই বিএনপিকে ভোট দেন না। বাংলাদেশে ১০ শতাংশেরও বেশি ভোটার তরুণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ। তরুণ এ ভোটারদের সমর্থন পেতে হলে জামায়াতকে ত্যাগ করাসহ নতুন কৌশল নিয়ে বিএনপিকে এগোতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
false
mk
গুজব ছড়ানোর নেপথ্যে ফরহাদ মজহারের কথিত স্ত্রী ‘অপারেশন শাপলা’য় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে অধিকার নামের একটি এনজিও’র মাধ্যমে বিতর্ক ছড়ানোর নেপথ্যে কাজ করেছেন ফরহাদ মজহারের কথিত স্ত্রী ফরিদা আক্তার। অপারেশন শাপলার হতাহতের সংখ্যা নিয়ে শুধুমাত্র ‘অধিকার’ নামের এই বেসরকারী সংস্থাটিই প্রেসনোট দিয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ফরিদা আক্তার অধিকারের ট্রেজারার।ফরহাদ মজহারের নাগরিক অধিকার রক্ষা জাতীয় কমিটির মতো এই এনজিওটিও নানান সময়ে সরকারী নীতির সমালোচনা করে আসছে। এর আগে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় পরবর্তী সহিংসতাকে গণহত্যা বলে আখ্যা দিয়েছিল ‘অধিকার’।পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অধিকারের কার্যক্রমের সাথে ফরহাদ মজহারের রাজনৈতিক মতাদর্শ হুবহু মিলে যায়। সম্প্রতি এই বেসরকারী সংস্থাটিকে, আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারত বিরোধী অবস্থান নেওয়াসহ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশে অনুমোদন দেওয়ার জন্য সরব থাকতে দেখা গেছে। অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, এই এনজিওটি শুরুর দিকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করলেও ক্রমান্বয়ে তা রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতমূলক হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এনজিওটির ওপর ফরহাদ মজহারের অনুসারী বুদ্ধিজীবিদের প্রভাব বেশি।দেশের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘অধিকার’ তাদের প্রেস রিলিজে ‘ট্রাকে করে লাশ গুম করা হয়েছে’ বলে তথ্য প্রকাশ করেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজনীতি ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রী ফরিদা আক্তার পরস্পরকে সহায়তা করে থাকেন।গুজব প্রতিহত করতে শক্তিশালী ভূমিকা নেয়নি সরকারও। গেল সপ্তাহের সোমবার সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বেনজির আহমেদ হতাহতের তালিকা করার আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু কে, কিভাবে তালিকা তৈরী করবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেননি বেনজির আহমেদ।অপারেশন শাপলার’ দীর্ঘ সময় পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রেস নোট দেওয়া হয়। এই সুযোগে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিভিন্ন তথ্য প্রচার করার সুযোগ পেয়েছেন। ফলে, বেড়ে গেছে গুজব। সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ও ব্লগগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, হতাহতের সংখ্যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকন্ঠা বেড়ে যাচ্ছে। অনলাইন এক্টিভিস্টের নানান প্রচার-প্রচারণায় পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।অপারেশন শাপলায় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকৌশল নিয়েও বিতর্ক তৈরী হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, হেফাজত কর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি করা হয়েছিল। কিন্তু ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ অপারেশন সম্পর্কে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের উচ্ছেদ অভিযানে কোনো প্রাণঘাতি বিস্ফোরক ব্যাবহার করা হয়নি। ফলে এখানে শত শত মানুষ মারা যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। যারা বলেছে তারা মিথ্যাচার করেছে।’ তিনি আরো বলেন, “আমরা এই ওয়াটার ক্যানাল, সাউন্ট গ্রেনেড, স্মোক গ্রেনেড–সব নন-লেথাল অস্ত্র। ওয়ার্ল্ড ক্লাস লজিটিক্স ব্যবহার করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল জিরো ক্যাজুয়াল্টি।”পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, অধিকারের পাশাপাশি গুজব ছড়াতে আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমগুলোর ব্লগ সাইটগুলোতেও হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ব্লগপোস্ট দিচ্ছে হেফাজতের পক্ষ সমর্থনকারী অনলাইন এক্টিভিস্টরা। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাঁশের কেল্লা ছাড়া অন্য পেজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- মিডিয়া ওয়াচ বাংলাদেশ, তরুণ প্রজন্ম, ভিশন ২০২১, সম্মিলিত ইসলামী মঞ্চ, ফরায়েজি আন্দোলন, বখতিয়ারের ঘোড়া, দি ওলামা অব বাংলাদেশ, আমরা মুসলিম তবে রাজাকার নয় ও আমি মানুষ আওয়ামী লীগ নয় ইত্যাদি।
false
hm
পিচ্চিতোষ গল্প ০১২: গুড্ডুর সাইকেল শেখা গুড্ডুর বন্ধু বাবু মস্ত একটা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। গুড্ডুরা স্কুল ছুটির পর অনেকক্ষণ খেলে। স্কুলের মাঠে মর্নিং শিফটের ছেলেরা খুব একটা খেলাধূলার সুযোগ পায় না, হেডমাস্টার তাদের মেরেবকে খেদিয়ে দ্যান। বাসায় গিয়ে আবার খেয়েদেয়ে পড়তে বসতে বলেন। অ্যাসেম্বলি মাঠের সবুজ ঘাসগুলি গুড্ডুদের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচায়। অ্যাসেম্বলি মাঠে না হোক, জিমনেশিয়ামের সামনে ছোট্ট মাঠটুকুতে তো অন্তত খেলতে দেয়া উচিত হেডুর? হেডু মানে হেডস্যার। গুড্ডুরা সেখানেও খুব একটা খেলার সুযোগ পায় না, ইয়া মোটা বেত নিয়ে হেডু তেড়ে আসেন। তখন যে যেদিকে পারে চোঁ-চাঁ দৌড় মারতে হয়। ঝানুরা দেয়াল টপকায়, গুড্ডু একটু ছোটোখাটো বলে তাকে পেছনের গেটের দিকে ছুটতে হয়। সে প্রায় কয়েকশো মিটারের ধাক্কা। গুড্ডু ভালো ছুটতে পারে বলে এখনও পর্যন্ত তাকে হেডুর ধোলাই খেতে হয়নি। বেশ কিছুদিন ধরে গুড্ডুরা তাই সার্কিট হাউসের প্যারেড গ্রাউন্ডে খেলছে। ওখানে কেউ তেমন একটা জ্বালাতন করে না। তারা একটা ছোটো বল দিয়ে ইচ্ছেমতো ফুটবল খেলে, তারপর একসময় যে যার বাসার দিকে চলে যায়। বাবু বাসায় যায় পাহাড়ের মতো উঁচু সাইকেলটায় চড়ে। বাবু খুব একটা লম্বাচওড়া নয়, গুড্ডুর চেয়ে কয়েক ইঞ্চি উঁচুতে তার মাথা, কিন্তু ওরকম বড়সড় একটা সাইকেল সে নিপুণভাবে চালানো রপ্ত করে ফেলেছে। ওটা নাকি তার ভাইয়ের সাইকেল। আবার তার বাবারও সাইকেল। বাবুদের বাড়িতে সক্কলে ওটাতে চড়ে। গুড্ডুর খুব শখ ঐ সাইকেলটা চালানোর, কিন্তু সাইকেল চালানো সে জানে না। বাবু তাকে রোজই সাধে, "চালাবি তুই? এটা নিয়ে একটা চক্কর মেরে আয়। কিন্তু খবরদার রাস্তায় উঠবি না।" গুড্ডু প্রথম দিনই ধড়াশ করে আছাড় খেয়ে কনুইয়ে চোট পেয়ে আর সাহস করেনি। বাসায় ফেরার পর মা চেঁচাচ্ছিল, "এতোখানি জায়গা ছড়ে গেলো কীভাবে রে শয়তান? কোথায় কী শয়তানি করতে গিয়ে চামড়া খুলে রেখে এলি?" বিকেলে বাবু খেলতে আসে পিন্টুদের মাঠে। তার সেই ঐরাবতের মতো সাইকেলে চড়ে। পিন্টুদের মাঠে এন্তার ঘাস, গুড্ডু তাই একদিন সাহস করে বাবুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে সাইকেলটা নিয়ে ঠেলতে ঠেলতে ঘেসো জায়গায় চলে এলো। বাবু স্কুলের গল্প বকবক করে বকতে বকতে গুড্ডুর সাথে আসে। "আমাকে ধরবি একটু?" গুড্ডু বাবুকে বলে। বাবু মাথা নাড়ে। "ধরলে সাইকেল চালানো শেখা যায় না।" গুড্ডু বলে, "আরে, আমি পড়ে যাবো তো!" বাবু হাসে। বলে, "একবার দুইবার তো পড়বিই। তারপর আর পড়বি না।" গুড্ডু আরো অনুরোধ করে বাবুকে, কিন্তু বাবু সাইকেলচালনশিক্ষায় অটল, সে একটা চুইংগাম বের করে চুপচাপ চিবায় আর হাত দিয়ে ইশারা করে। গুড্ডু বহুকষ্টে সেই সাইকেলে চড়ে, কিন্তু সীটে বসতে পারে না, রডের ফাঁক দিয়ে পা ঢুকিয়ে কোনোমতে প্যাডেলে পা রাখে। এরপর চাপ দিয়ে একটু সামনে আগাতেই ... ধড়াশ! মাটি কাঁপিয়ে সে সাইকেল নিয়ে পড়ে, বাবু হো হো করে হাসে। গুড্ডু উঠে পড়ে গোমড়ামুখে। বাবু আবার ইশারা করে। আবার চড়ে এগো। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ওরকম পাহাড়ের মতো একটা সাইকেল কব্জা করতে পারে না গুড্ডু। সে একবার ডানে, তো আরেকবার বামে হেলে পড়ে যায়। বাড়ি ফিরে সে সন্ধ্যেবেলা বাবাকে বলে, "বাবা জানো, আজকে সাইকেল চালানো শিখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পারলাম না। পড়ে যাই শুধু।" গুড্ডুর বাবা একটু গম্ভীর হয়ে কী যেন ভেবে বললেন, "কোথায় শিখতে গিয়েছিলে?" গুড্ডু অনেক উৎসাহ নিয়ে খুলে বলে বাবাকে, কীভাবে বাবু রোজ সাইকেলে চড়ে স্কুলে আসে আর বাড়ি ফেরে, ওরকম বড় একটা সাইকেল চালাতে যে তার কোনো অসুবিধা হয় না, আর কীভাবে বাবু চালাতে গিয়ে কয়েক পা এগোতে না এগোতেই আছাড় খেয়ে পড়ে। গুড্ডুর বাবা গম্ভীর মুখে বললেন, "খবরদার সাইকেল নিয়ে রাস্তায় যাবে না। মনে থাকবে তো? মাঠে চালাচ্ছো চালাও। শিখতে পারলে খারাপ কী!" গুড্ডু আবারও পরদিন খেলার মাঠে বাবুকে পাকড়াও করে। বাবু সহাস্যে রাজি হয়। দুইজনে সাইকেল ঠেলে নিয়ে আসে ঘেসো জমির ওপর। গুড্ডু আজ আছাড় খায়, কাল আছাড় খায়, কিন্তু একদিন সে ঠিকই শিখে ফেলে! বাবুর ঐ বিরাট সাইকেলটা নিয়েই সে গোটা মাঠে চক্কর খায়, ব্রেক কষে, নামে, আবার ওঠে, আবার চক্কর খায়। বাবু এসে পিঠ চাপড়ে দেয়। বলে, "শিখে গেছিস। এখন রাস্তায় চালিয়ে শিখতে হবে।" গুড্ডু একটু ভয় পায়, মাথা নাড়ে। বলে, "না, বাবা নিষেধ করেছে। এখনও পারিনা পুরোপুরি।" বাবু বলে, "একটা সাইকেল কিনে ফ্যাল। কয়েকদিন চালালেই দেখবি রাস্তায় চালাতে পারছিস। কঠিন না।" গুড্ডু বাড়ি ফিরে মা-কে ধরে। "মা একটা সাইকেল কিনে দিতে বলো না বাবাকে। চালিয়ে স্কুলে যাবো আর আসবো। খেলতেও যাবো।" গুড্ডুর মা বলেন, "তুই আবার কী সাইকেল চালাবি?" গুড্ডু ঝুলোঝুলি করতে থাকেন, গুড্ডুর মা বিরক্ত হয়ে ধমক দ্যান। সন্ধ্যের পর বাবা অফিস থেকে ফেরেন, গুড্ডু গিয়ে মায়ের কাছে ঘুরঘুর করতে থাকে। কিন্তু মা কিছু বলেন না। শেষে অধৈর্য হয়ে গুড্ডুই বাবাকে বলে, "বাবা আমাকে একটা সাইকেল কিনে দাও না। স্কুলে যাবো। খেলতেও যাবো চালিয়ে।" গুড্ডুর বাবা গম্ভীর হয়ে কিছুক্ষণ গুড্ডুর দিকে তাকিয়ে রইলেন, তারপর বললেন, "না, সাইকেল চালাতে হবে না তোমাকে। স্কুলে রিকশায় করে যেও। আর খেলতে যেতে সাইকেল লাগে নাকি? হেঁটেই তো যেতে পারো।" গুড্ডু বলে, "না বাবা, আমি সাইকেল চালানো শিখে গেছি! খেলার মাঠে সেদিন অনেকক্ষণ চালিয়েছি। স্কুলেও যেতে পারবো। রাস্তাতেও চালাতে পারবো, বাবু বলেছে।" গুড্ডুর বাবা বলেন, "না!" গুড্ডু বলে, "দাও না বাবা! তুমিও চালাতে পারবে তো মাঝে মাঝে!" গুড্ডুর বাবা এবার কড়া গলায় ধমকে ওঠেন, "তোমাকে না বলেছি, এক কথা বারবার বলবে না? বললাম সাইকেল চালাবে না, বাস, চালাবে না!" গুড্ডুর মা এসে গুড্ডুকে সরিয়ে নিয়ে যান। গুড্ডুর চোখে পানি চলে আসে, সে চোখ ডলতে ডলতে মায়ের সাথে রান্নাঘরে চলে আসে। কান্নাজড়ানো গলায় বলে, "বাবাকে বলো না মা বুঝিয়ে ... আমি তো সাইকেল চালাতে পারি!" গুড্ডুর মা মলিন মুখে বলেন, "বাবাকে সাইকেল সাইকেল করে বিরক্ত কোরো না গুড্ডু। তোমার বাবার কাছে এখন পয়সা নেই।" গুড্ডুর মনটা খারাপ হয়ে যায়। কেন তারা গরীব? কেন বাবা হেঁটে হেঁটে অফিসে যায়? কেন বাবার কাছে একটা সাইকেল কেনার টাকা নেই? বাবাও তো মাঝে মাঝে চালাতে পারতো সেটা। গুড্ডু ঘুমিয়ে পড়ে। মাঝরাতে গুড্ডুর ঘুম ভেঙে যায়। সে শুনতে পায়, পাশের ঘরে তার বাবা হাউমাউ করে কাঁদছেন। সে শুনতে পায়, মা চাপা গলায় সান্ত্বনা দিচ্ছে বাবাকে, দিও, পরে কিনে দিও, একদিন না একদিন একটা সাইকেল তো কিনে দিতে পারবে ছেলেকে? কাঁদে না। কাঁদে না। গুড্ডুর বুকের ভেতরটা ঠাণ্ডা হয়ে আসে, সে গুটিশুটি মেরে কাঁথার নিচে শুয়ে থাকে। বাবা কাঁদছে? বাবা তো কাঁদে না। বাবা তো বড় মানুষ, বাবা কেন কাঁদে? পরদিন খেলার মাঠে খেলা শেষে বাবু ডাকে, গুড্ডু, সাইকেল চালাবি? গুড্ডু মাথা নাড়ে। বলে, চল সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে যাই আমার বাসা পর্যন্ত, তারপর তুই চলে যাস। বাবু আপত্তি করে না, তারা দু'জন সাইকেল নিয়ে হাঁটতে থাকে রাস্তা ধরে। বাবা কাঁদুক, গুড্ডু চায় না। লাগবে না তার সাইকেল।
false
rg
মাননীয় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন! চোখ ছল ছল করে ওগো মা !! চোখ ছল ছল করে ওগো মা, কী ব্যথা অন্তরে ওগো মা, ভাঙনের যে খেলা চারিধার, নেই গান আজ একতার, চোখ ছল ছল করে ওগো মা। বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এখন একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়। একজন হেভিওয়েট সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব জনাব আসাদুজ্জামান নূর এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী। দেশের সংস্কৃতি বিকাশের সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগ বর্তমান মন্ত্রীর নের্তৃত্বেই হবার মত প্রত্যাশা নিয়ে গোটা জাতি যখন আশাবাদী, ঠিক তখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড ও চেহারায় এখনো যেনো রহস্যময় কারণে পুরানো কাসুন্দিই বেজে চলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে খুব কৌতুহল নিয়ে আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট http://moca.portal.gov.bd/ ভিজিট করে আমার সেই আগ্রহে এখন আরো গুড়েবালি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রিপ্রেজেন্ট করার কথা। অথচ এর ওয়েবসাইটে তার কোনো নিদর্শন বা নমুনা কোথাও খুঁজে পেলাম না। এত বড় হেভিওয়েট একজন সংস্কৃত ব্যক্তিত্ব যে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সেই মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রথমেই কোনো ভিজিটর কিছুটা রুচিশীল উপস্থাপনা দাবি করবেন, এটাই স্বাভাবিক। অথচ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট দেখলে যে কারোর বমি উদ্রেগ হবার আংশকা আছে! রুচির এই বাহাদুরী রাখব কোথায়!!!একটি দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের হোম পেইজে প্রথম পরিবেশনা নোটিশ বোর্ড। আহা মরি মরি। কী আছে সেই নোটিশ বোর্ডে? নোটিশ বোর্ড: ১. ইরানের সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত। ২. বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম স্বাক্ষর। ৩. জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম'এর ১১৫ তম জন্মবার্ষিকী ২০১৪ ব্যয় নির্বাহের অর্থ বরাদ্দ। ৪. বাংলাদেশ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে 'সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম' স্বাক্ষর। ৫. বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৩তম জন্মবার্ষিকী ১৪২১/২০১৪ উদযাপনের ব্যয় নির্বাহ। এরপর রয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রধান খবর সরবরাহের একটি ছোট্ট স্ক্রল। তার নিচে তথ্য ও সেবা, নীতিমালা ও প্রকাশনা, ফরম এবং বিবিধ নামে চারটি বিভাগ। মূল পাতার সূচিক্রমগুলো দেখলে এই মন্ত্রণালয়ের রুচিবোধের সর্বোচ্চ সীমানা যে কারোরই নজরে আসবে। আহা দেখার মত রুচি বটে! প্রথম পাতা, মাননীয় মন্ত্রী, সচিব, আমাদের সম্পর্কে, উন্নয়ন কার্যক্রম, সংবাদ ও বিজ্ঞপ্তি, ফরম ডাউনলোড এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্জন এই নামে মোট আটটি আলাদা হেড। এর ভেতরে ঢুকলে রুচির আরো মহা বিস্ফোরণ আপনার চোখ নষ্ট করার জন্য যথেষ্ঠ। ওয়েব সাইটের একেবারে ডানপাশে শোভা পাচ্ছে মাননীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর ও সংস্কৃতি সচিব জনাব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, এনডিসি'র ছবি। তার নিচে সকল নামে তিনটা হেড। একটার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ই-সেবা, একটার মধ্যে কেন্দ্রীয় ই-সেবা এবং আরেকটার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ লিংক। আহা তথাস্তু। আর একেবারে পাতার প্রধান হেডলাইনে পাঁচটি ছবি কিছুক্ষণ পরপর দেশের সংস্কৃতির প্রধান পরিচয় তুলে ধরছে। আহা মরি মরি। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে একজন হেভিওয়েট সংস্কৃত ব্যক্তিত্ব, সেই মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের এমন করুণ দশা থাকবে কোন দুঃখে? দেশে কি রুচির অভাব মহাশয়রা? নাকি আপনাদের সময় হয় না নিজের মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, যা সারা বিশ্বে ভার্সুয়াল জগতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি উপস্থাপন করছে, তাকে একটু রুচিশীল করার? একটু যত্ন নেবার? সংস্কৃতি নিয়ে এতো হৈ চৈ, তার বাস্তব নমুনা কী তাহলে এই? ডিজিটাল বাংলাদেশে অন্তত দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটকে আমরা আরো রুচিশীল উপস্থাপনায় দেখতে চাই, যা দেখাতে এখন পর্যন্ত জনাব আসাদুজ্জামান নূর পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ ওই সাইটে আপনার ছবি শোভা পাচ্ছে। কি লজ্জার কথা!!!সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে মোট ১৭টি দপ্তর বা সংস্থা রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র একটি। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই ১৭টি দপ্তরের কোনো লিংক বা আলাদা কোনো ওয়েবসাইটের কথা কোথাও নাই। আমার আগ্রহের বিষয় ছিল জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। আলাদাভাবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কোনো ওয়েবসাইট না থাকায় বাংলাপিডিয়ার স্মরণাপন্ন হয়ে দেখলাম যে, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের একটি বিশাল পরিচিতি রয়েছে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচয় সম্পর্কে লেখা হয়েছে, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র গ্রন্থের উন্নয়ন, প্রকাশনা ও পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬০ সালের ২৯ জুলাই ‘ন্যাশনাল বুক সেন্টার অব পাকিস্তান’ বা ‘জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে এটি ছিল একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। করাচিতে ছিল এর প্রধান কার্যালয়। এ ছাড়া লাহোর ও ঢাকায় ছিল এর দুটি শাখা অফিস। পাকিস্তান আমলেই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের ঢাকা শাখা থেকে গ্রন্থজগতের নানা খবর নিয়ে বই নামে একটি মাসিক বাংলা পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। গত ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ১৯৬৫ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে ঢাকায় তৎকালীন কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শিশুতোষ গ্রন্থের এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ষাটের দশকে প্রায়শ খ্যাতিমান লেখকদের বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হতো জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কার্যালয়ে। স্বাধীনতার পর ইংরেজি ‘ন্যাশনাল বুক সেন্টার’-এর পাশাপাশি বাংলায় ‘জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র’ নামটি বিশেষ পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার আয়োজন করা হয়। এ বইমেলায় দেশের বিশিষ্ট প্রকাশকদের সাথে ভারতের ‘বুকট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া’ এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বুলগেরিয়াসহ কয়েকটি বিদেশি দূতাবাস অংশ নেয়। দেশে প্রকাশনার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রন্থকেন্দ্র নিয়মিতভাবে গ্রন্থ রূপায়ন ও চিত্রণ, রচনা সম্পাদনা ও অনুবাদ, পুস্তক মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবস্থাপনা, পুস্তক বিক্রয় ও প্রুফ সংশোধনের উপর প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বইমেলায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র নিয়মিত অংশ নিচ্ছে এবং সেখানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ভারতের বুকট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার ভারতীয় বইয়ের প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করেছিল। একইভাবে ভারতের কলকাতা ও দিল্লিতে বাংলাদেশি বইয়ের প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।একসময় ইউনেস্কোর সহায়তায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র একটি ট্রাক ভাড়া করে দেশে ভ্রাম্যমাণ বইমেলা চালু করে। পরে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মিনিবাসের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ বইমেলা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। নানা ধরনের প্রতিকূলতার কারণে ভ্রাম্যমাণ মেলা কিছুকাল বন্ধ ছিল। তবে ২০০৮ সালে তা পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রন্থকেন্দ্রের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন পাঠাগারে অনুদান ও বই দেওয়া হয়।গ্রন্থকেন্দ্রের রয়েছে একটি বিক্রয়কেন্দ্র। দেশের নামকরা প্রকাশকের নানা ধরনের বই এখানে বিক্রি হয়। এখানে ব্যক্তিগতভাবে অথবা কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে বই কেনার সুযোগ রয়েছে। ‘মহানগর পাঠাগার’ নামে গ্রন্থকেন্দ্রের রয়েছে একটি নিজস্ব সমৃদ্ধ পাঠাগার।বই উপহার দেওয়ার বিষয়টিকে একটি সামাজিক রীতিতে পরিণত করার মতো গ্রন্থকেন্দ্রের রয়েছে ‘প্রিয়জনকে বই উপহার দিন’ কর্মসূচি। এ উপলক্ষে স্টিকার ও পোস্টার প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের মধ্যে বই-পাঠকে উৎসাহিত করতে গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে ‘আমার প্রিয় বই’ শিরোনামে বই পড়া ও নানা ধরনের রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।বাংলাদেশে বর্তমানে বইয়ের পাঠক সংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং আগের তুলনায় মানসম্পন্ন প্রকাশনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পেছনে রয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য তৎপরতা ও অবদান। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের এই পরিচয়টুকু লিখেছেন কবি ইকবাল আজিজ। বাংলাপিডিয়া এই কাজটুকু না করলে তাও জানা যেতো না। যেটুকু বুঝলাম, দেশের গ্রন্থের উন্নয়ন, প্রকাশনা ও পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পাশাপাশি এটি দেশে বইমেলা আয়োজনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। বাংলা একাডেমিতে আমাদের অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রধান আয়োজক এই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। এছাড়া এটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি, ঢাকা বইমেলা ও জেলায় জেলায় বইমেলা আয়োজনের সরকারি আয়োজকের দায়িত্ব পালন করে। বলতে গেলে দেশের বই সংক্রান্ত সকল প্রধান কর্তৃত্বই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের দায়িত্বের মধ্যে। সারা দেশের পাঠাগারের জন্য কি বই কেনা হবে, কোন প্রকাশকের কয়টি বই কেনা হবে, কিভাবে কেনা হবে, কত সংখ্যায় কেনা হবে, এসব এই কেন্দ্র নির্ধারন করে। কাজের বহরে দেশের পুস্তক প্রকাশকদের সঙ্গেই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের একটি প্রধান যোগসূত্রতা রয়েছে। সারা দেশের সরকারি পাঠাগারে বা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ধরনের বই যাবে, তা এই প্রতিষ্ঠান ঠিক করে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বটে। এজন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি জাতীয় কমিটিও আছে। সেই কমিটির যারা সদস্য, তাদের কিভাবে নির্বাচন করা হয়, কোন যোগ্যতায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, সেখানে তারা কিভাবে কত ন্যাক্কারজনকভাবে দেশের রাষ্ট্রীয় কাজে কত অবহেলার পরিচয় দিচ্ছে, সেই ফিরিস্থি এই ছোট্ট লেখায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। সংক্ষেপে বলা যায়, যে সকল প্রকাশকদের সঙ্গে এই কেন্দ্রের সম্পর্ক ভালো, তাদের বই কেবল জাতীয়ভাবে ক্রয় করার একটি ওপেন সিক্রেট পদ্ধতি এখানে দীর্ঘদিন চালু আছে। সেই অনিয়মের কথা বলে শেষ করা যাবে না।অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাইরে ঢাকা বইমেলা ও জেলায় জেলায় বইমেলার বিষয়ে জানা যায় যে, প্রতিবছর ঢাকা বইমেলা নামে যে বইমেলাটি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ঢাকায় আয়োজন করে, সেটি এখন পর্যন্ত খোদ ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষন করতেই ব্যর্থ হয়েছে। কেউ কেউ এটাকে প্রকাশকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের চরম বহিপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেন। আর জেলায় জেলায় বইমেলার আয়োজন সম্পর্কে জানা যায়, প্রতি বছর দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ টি বইমেলা কেন্দ্রের আয়োজন করার কথা। কারণ, ৬৪ জেলায় বইমেলা আয়োজন করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে প্রতি বছরই বাজেট আসে। প্রতি জেলার জন্য বাজেট ৬০ হাজার টাকা। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র যতগুলো জেলায় বইমেলা আয়োজন করতে পারে, সেগুলো বাজেট থেকে খরচ হয়। যতগুলো বইমেলা করতে ব্যর্থ হয়, সেগুলোর প্রতিটির জন্য বরাদ্দকৃত ৬০ হাজার টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে বছর শেষে ফেরত যায়। এ বছর জেলায় জেলায় বই মেলার আয়োজনের পরিবর্তে মাত্র চারটি বিভাগীয় সদরে বইমেলার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্কৃত মন্ত্রণালয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দুটি বই মেলা করতে সক্ষম হয়। তাহলে বইমেলা আয়োজনের জন্য সরকারি বরাদ্ধের অর্থ কোথায় খরচ করা হবে? যেহেতু অন্য কোনো খাতে এই অর্থ খরচ করার সুযোগ নাই, তাই চলতি বছরে দুটি বিভাগীয় বইমেলার হিসবাও এই নির্দিষ্ট বাজেটের বাইরেই থাকার কথা। প্রচলিত বিধি ও আইন তাই বলে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর সাহেবের কাছে প্রথম প্রশ্ন, একজন হেভিওয়েট সংস্কৃত ব্যক্তিত্ব হিসেবে আপনার দায়িত্বে যেখানে বইমেলা জেলায় জেলায় এর বদলে উপজেলা এবং ইউনিয়ন বা গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে যাবার কথা, সেখানে আপনি কার স্বার্থে প্রচলিত রীতি ভেঙ্গে কেবল চারটি বিভাগীয় বইমেলা করার ইচ্ছে পোষণ করলেন? চারটি করতে না পেরে দুটি করলেন, সেই দুটি বইমেলা বা কতটুকু স্বার্থক? কিভাবে স্বার্থক? ৬৪ জেলায় ৬৪টি বইমেলা হল না কেন? কার স্বার্থে, কাদের স্বার্থে ৬৪ জেলায় বইমেলা হল না?জনাব নূর, আপনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হবার পর নতুন পাঠক সৃষ্টিতে কি কি অবদান রেখেছেন? এই বিষয়ে আপনার অনাগ্রহের রহস্য কী? জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে এভাবে অব্যর্থ করে রাখায় কার কার স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে? দেশ কী পাচ্ছে এই কাজে? নতুন প্রজন্ম বা কী পাচ্ছে?অথচ জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান আপনার নের্তৃত্বে আরো গতিশীল হবার কথা। সংস্কৃত মন্ত্রণালয়ে কোথায় সেই গতি? জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র সম্পর্কে নানা অনিয়মের খবর পত্রিকায় আসে। সেই অনিয়মগুলো আপনি মন্ত্রী হিসেবে এড়িয়ে যেতে পারেন না। দেশে সংস্কৃতি বিকাশে একজন হেভিওয়েট সংস্কৃত ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের এই যদি হয় নমুনা, তাহলে দেশের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়মের কথা আর কোথায় বলা সম্ভব? আদৌ বলা সম্ভব কিনা?!!দেখে তো মনে হচ্ছে, আপনার নের্তৃত্বে দেশে সংস্কৃতির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। বই পাঠে শিশুদের উৎসাহিত করায় আপনার ভূমিকা কোথায়? তাহলে বিদ্যমান ব্যবস্থায় অন্য মন্ত্রীদের তুলনায় আপনার আলাদা বৈশিষ্ট্যের নমুনা কোথায় কিভাবে পাব? কিভাবে পাব?অমর একুশে গ্রন্থমেলা এখন বাংলা একাডেমি চত্বর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হয়েছে। গত বছর একুশে বইমেলায় ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ঘাটতি ছিল, প্রচুর অব্যবস্থাপনা ছিল। ছুটির দিনে বইমেলায় ঢোকা ও বের হওয়া ছিল রীতিমত কষ্টসাধ্য। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় জায়গা বাড়লেও ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকায়, এটি আরো হযবরল পাকিয়েছিল। একুশে বইমেলার সময় বারোয়ারি জিনিসের মেলা ঠেকাতে মন্ত্রণালয় কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন? মেলায় প্রবেশ ও বাহিরের জন্য কার্যকর গেইট ও শৃঙ্খলা কী এবার আমরা আশা করতে পারি? একুশে বইমেলায় লেখকদের আড্ডার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা কি এবারো অনুপস্থিত থাকবে?দেশের যে কোন ধরনের সরকারিভাবে বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব যেহেতু জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের। তাই প্রতিটি বইমেলাকে আরো কার্যকর করার উদ্যোগ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মধ্যেই পরে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে জনাব নূর সাহেব এই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। আমরা আশা করব, আগামী অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সংস্কৃত মন্ত্রণালয় বিশেষ করে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আরো সচেতন হবে, কার্যকরী ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেবে, এবং একুশের বইমেলাকে বারোয়ারি মেলা থেকে মুক্ত করায় প্রয়াসী হবে। নইলে মাসব্যাপী একুশে বইমেলা ধীরে ধীরে অমর একুশের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব দুটোই হারাবে। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, দেশের সাংস্কৃতিক বিকাশে আপনার দক্ষতা এবং রুচিবোধকে আরো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করে আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে আপনি আরো সফল ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলেই আমরা আশাবাদী। পাশাপাশি সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোতে বিদ্যমান জটিলতা ও অনিয়মগুলো দূর করতে আপনি আরো কার্যকর ভূমিকা গ্রহন করবেন বলেই আমরা এখনো আশাবাদী। বইমেলা শুধু ঢাকায় বা বিভাগীয় শহরে নয়, জেলায়, উপজেলায় এমন কি গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিয়ে নতুন প্রজন্মের শিশুদের বইপাঠে আগ্রহী করতে আপনি আরো যত্নবান হবেন বলেই আমি বিশ্বাস রাখতে চাই। নতুবা আপনি কোন হনু রে!!!................................২১ ডিসেম্বর ২০১৪ঢাকা
false
fe
তথ্য-উপাত্ত নয়, মানুষ ন্যায়বিচার চায় তথ্য-উপাত্ত নয়, মানুষ ন্যায়বিচার চায়ফকির ইলিয়াস=========================================গোপন তথ্য রাষ্ট্র সংরক্ষণ করে। মানুষ তা নিয়ে খুব একটা ভাবে না। ভাবার দরকারও নেই। মানুষ শান্তি চায়। আর সে জন্য রাষ্ট্রের সমর্থন দরকার। সেই কাজটি কি সরকার করতে পারছে? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একটি দরকারি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যখন কথা বলি, মনে রেখে দেবেন; কোনো অমূলক কথা বলি না। একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, আমি হেড অফ দি গভর্নমেন্ট। আমার কাছে নিশ্চয়ই তথ্য আছে।’ এই তথ্যগুলো কি তা মানুষ জানতে চাইছে না। জানার দরকারই বা কি?আমরা জানি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। এর ভেতরে অনেক তথ্য ছিল। অনেক উপাত্ত ছিল। সাধারণ মানুষ তা জানতে চাননি। তারা একটি স্বাধীন দেশ চেয়েছিলেন। তারা যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। তারা বিজয়ী হয়েছিলেন। তারা কমান্ড পালন করেছেন। নীতি নির্ধারণ করেছিলেন নীতি নির্ধারকরা। চট্টগ্রামে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটা গোটা বাংলাদেশের জন্য, বাঙালি জাতির জন্য একটি কলঙ্কজনক ঘটনা। নিজ সন্তানের সামনে মাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের মনে আছে, স্ত্রী বন্যা আহমেদের সামনে হত্যা করা হয়েছিল লেখক অভিজিৎ রায়কে। তার লাশ রাস্তায় পড়েছিল। মিতুর লাশও একই কায়দায় রাস্তায় ফেলে গেছে খুনিরা। অভিজিৎ হত্যা মামলার কিছুই করতে পারেনি বর্তমান সরকার। যদি পারতো তাহলে হয়তো মিতুকে এভাবে প্রাণ দিতে হতো না।আমরা ভুলে গেছি সাগর-রুনীর কথা? আমরা ভুলে গেছি ফায়সাল আরেফীন দীপনের কথা? আরো কত নাম! সবগুলো এই তিন বছরে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড। কি সুরাহা করা গেল ওসব খুনের? কিছুই করা যায়নি। গোটা দেশজুড়ে আজ ক্ষোভের আগুন। সারা দেশে উগ্রপন্থীদের হামলায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় এক প্রতিবাদী সমাবেশ থেকে হত্যাকাণ্ডগুলোকে সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না বলে অভিযোগ করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ধর্মপ্রচারক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও মুক্তমনা ব্লুগারসহ বিভিন্নজনকে একের পর এক হত্যার কয়েকটি ঘটনাকে সরকারের মন্ত্রীরা ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে উদীচী নেতারা বলছেন, ‘হত্যাকাণ্ডগুলো কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন হতে পারে না, সবই পরিকল্পিত।’ একই কথা এখন বলছেন সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ। ‘টার্গেট কিলিং’ বলতে তারা কি বুঝাতে চাইছেন- এতে সরকারের কোনো দায় নেই? ফিরে আসি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথায়। তিনি বলছেন- ‘আমরা যখন একজন আসামি ধরি, তখন সমস্ত ক্লু ধরে, টেলিফোন নম্বর থেকে মিলিয়ে, সব কিছু মিলিয়ে একজনকে ধরি। তার পরিচয়ের সূত্রটা ধরে আমরা যোগসূত্রটা পেতে পারি।’ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখেছেন, ‘যারা মনে করেন, শুধুমাত্র রাজনীতিক হিসেবে বলছি, রাজনৈতিক কারণে বলছি, বাইরে জঙ্গিরা পার পেয়ে যাচ্ছে… সেই পার পেয়ে যাওয়া জঙ্গিরা কারা? তাদের নাম-ঠিকানা, তাদের পরিচয়টা যদি জেনে থাকেন, তাহলে দয়া করে আমাদের জানান। তাহলে দেখবেন, জঙ্গি জঙ্গিই। সে যে দলেরই হোক, আমাদের কাছ থেকে রেহাই পাবে না।’ কথার বিপরীতে কথা সারাদিন চলতেই পারে। কিন্তু তাতে সমাধান নাই। সমাধান হচ্ছে কাজে। সমাধান হচ্ছে অ্যাকশনে। সরকার কেন বিহীত করতে পারছে না? মিতুকে হত্যার মধ্য দিয়ে এদেশের চিহ্নিত খুনিরা তাদের সীমারেখা লঙ্ঘন করেছে। পুলিশের স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের টার্গেট করাটা শুধু কাপুরুষোচিত নয়, গোটা রাষ্ট্রের ভিতে টান দেয়া। খুনিচক্র সেই কাজটি করেছে। রাষ্ট্রকে তা বিবেচনায় রেখেই এগোতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাবুল আক্তারদের দমানো যাবে না। তার পাশে এসে দাঁড়াবেন আরো হাজারো পুলিশ অফিসার। কারণ এই দেশটি তাদের। তারা শপথ করেই রাষ্ট্র ও জনগণের আমানত রক্ষার জন্য এই পেশা বেছে নিয়েছেন।বাংলাদেশের মানুষকে এই দানবশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এক লাখ মুফতির সই করা ফতোয়া পাঠানো হচ্ছে জাতিসংঘে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্র এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংস্থা ওআইসিতেও ফতোয়ার কপি ২০ খণ্ডে প্রকাশ করে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ১৮ জুন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর জাতিসংঘ ছাড়াও দেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে তা পাঠানো হবে। বিভিন্ন মিডিয়াকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামার চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। ফতোয়া কমিটির প্রধান ও শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেছেন, জামায়াত-শিবিরসহ কিছু গোষ্ঠী ফতোয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে। কেউ কেউ জঙ্গি হামলার ভয়ে ফতোয়ায় সই করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ফতোয়ায় সই নিতেও সময় লেগেছে। তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডকে ইসলাম সমর্থন করে না, এটা সবার কাছে পরিষ্কার হওয়া জরুরি। কোনো গোষ্ঠীর উসকানিতে দেশের তরুণরা যেন বিপথগামী না হয়, সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া দেশের সব আলেম-উলামা সম্মিলিতভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিলে ধর্মের সঙ্গে জঙ্গিবাদের যে সম্পর্ক নেই তা বিশ্বের কাছে স্পষ্ট হবে। এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এরকম প্রতিটি কাজে সরকারের সাহায্য দরকার। কারণ ১৬ কোটি মানুষের দেশে জঙ্গিবাদবিরোধী গণসচেতনতা তৈরি করা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দায়িত্ব।এই দেশে কারা ‘যে কোনো মূল্যে’ ক্ষমতা দখল করতে চায়- তা এখন আর মোটেই লুকানো কিছু নয়। মেন্দি সাফাদি ইস্যু স্পষ্ট করে দিয়েছে- প্রয়োজনে ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হলেও ক্ষমতায় যেতে চাইছে একটি পক্ষ। এরা কারা তা কারো অজানা নয়। মেন্দি সাফাদি ও সজীব ওয়াজেদ জয় বৈঠকের খবরটি বিষয়ে ক্ষমা চেয়েছে বিবিসি। জয়কে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে সম্পাদকীয় নীতিমালা অনুসরণ না করার বিষয়টি স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিবিসি। ‘জনাব ওয়াজেদের বক্তব্য পাওয়ার আগেই ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য আমরা দুঃখিত, কেননা এ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত বিবিসির ওই নিয়মই অনুসরণ করার কথা।’ বলে এ ঘটনার আলোকে সম্পাদকীয় নীতিমালা অনুসরণের বিষয়টি জোরদার করা হবে- জানিয়েছেন বিবিসি গ্লোবাল নিউজের করপোরেট কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার পল রাসমুসেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এসব কিসের লক্ষণ? বাংলাদেশে এসব পেইড এজেন্টদের কারা ভাড়া করে নিচ্ছে? যারা এভাবে এজেন্ট খুঁজছে তারাই এসব হত্যাকাণ্ডের পালের গোদা নয় কি? বিষয়টি সরকারের সংস্থাগুলোকে খুঁজে দেখতে হবে।বাংলাদেশকে বিদেশের সঙ্গে তুলনা করা বোকামি ছাড়া কিছু নয়। ইউরোপ আমেরিকায় সন্ত্রাস-খুন হলেই খুব কম সময়ের মাঝে খুনি ধরা পড়ছে। তা আমরা সবসময় দেখি। বাংলাদেশে কেন খুন তামাদি হয়ে যাচ্ছে? কতদিন লাগবে একটি রহস্য খুঁজে পেতে?মিতু হত্যা নতুন করে ভাবার দরজা খুলে দিয়েছে। পুলিশের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের বড় দায়িত্ব। আমার এখনো প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশের সব পুলিশ সদস্য আধুনিক অস্ত্র বহনের সুযোগ পান কি? মনে রাখতে হবে, টেরোরিস্টরা কৌশল পাল্টাচ্ছে। তাই সরকার ও তার বাহিনীকেও কৌশল পাল্টাতে হবে। এছাড়া মোকাবেলা করা কঠিন হতে পারে। আর যেহেতু একটি পক্ষ সরকারকে হেনস্তা করার জন্য মাঠেই আছে তখন তা ভুলে গেলে চলে কি করে? খবর বেরিয়েছে লন্ডনে তারেক রহমান বলেছেন, তিনি ও তার দল ক্ষমতায় গেলে আইন করে ‘আওয়ামী লীগ’ নিষিদ্ধ করবেন। ‘আওয়ামী’ শব্দটি উর্দু বিধায় তিনি এমনটি করবেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, তারেক রহমান তার খেলা খেলেই যাচ্ছেন। এর উত্তর কীভাবে দিতে হবে- তা আওয়ামী লীগকেই ভাবতে হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১১ জুন ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৭:৪৮
false
rn
রাস্তায় পাওয়া ডায়েরী থেকে- ২৫ আমি বড় হয়েছি । অনেক বড় হয়েছি । এখন আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি । দেখে দেখে শিখেছি আরও অনেক বেশী । চুপ করে বসে থেকে চার-পাশ খুব মন দিয়ে দেখি । মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে তার মনের ভেতর টা দেখে ফেলি । কখনও আনন্দিত হই কখনও হই ব্যাথিত । আমি রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে বসে চা খাই- অন্যদের কথা মন দিয়ে শুনি । তাদের মনের কথা, মুখের কথা মুহূর্তেই বুঝে ফেলি । নিজের অজানা এক আবিস্কারের আনন্দে অভিভূত হই । চায়ের কাপ হাতে নিয়েই রাস্তার ওপারে দোতলার ব্যালকনি'তে তাকাই । একটি মেয়ে তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মুছছে। চট করে আমি মেয়েটার মনের কথা বুঝে ফেলি । মেয়েটা বিকেলে তার প্রিয় মানুষের সাথে দেখা করতে যাবে । সে ভাবছে আজ গাঢ সবুজ একটা শাড়ি পড়ে যাবে ।হাত ভরতি থাকবে সবুজ কাঁচের চুড়ি, কপালে একটা বড় সবুজ টিপ । আজ সে হয়তো তার প্রিয় মানুষের সাথে অনেক বড় একটা সাহসের কাজ করবে । এটা নিয়েই মেয়েটি অনেক চিন্তিত । চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে আমি রাস্তায় নামি । দুপুরবেলা সব কিছু কেমন যেন থম থম করে । মাত্র শীত শেষ হলো । গাছের সব পাতা ঝড়ে পড়ছে । গাছ গুলোকে দেখলে এতিম মনে হয়। ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতে আমার অনেক ভালো লাগে । রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কত কিছু ভাবি । আজ আমার হিমির বাসায় দুপুরে খাওয়ার কথা । যাবো কিনা বুঝতে পারছি না । আমি জানি হিমি আমাকে ক্রমাগত মোবাইলে ফোন দিয়ে যাচ্ছে । তাই সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মোবাইলে রিং টোন অফ করে রেখেছি । এটা আমার অনেক পুরাতন একটা অভ্যাস । হিমি আমার এই অভ্যাসের সাথে পরিচিত । ইদানিং নিজের সাথে নিজে অনেক যুদ্ধ করে নিজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এনেছি । কিছু ভালো পরিবর্তন, কিছু খারাপ পরিবর্তন । সময় মতো দু'টাই কাজে লাগে ।হঠাৎ এক রিকশাওয়ালা এসে পায়ের উপর রিকশা উঠিয়ে দিল । অনেক ব্যাথা পেলাম পায়ে। রিকশাওয়ালা চিকৎ্কার করে বলল- রাস্তার মধ্যে দিয়ে হাটছেন কেন ? আমি মনে মনে বললাম- ফুটপাত দিয়ে হাঁটার জায়গা কোথায়? দোকানের জিনিস পত্র ফুটপাতে সাজিয়ে রেখেছে । আমি রাস্তায় হেটেই চলেছি । অনেক ক্ষুধা লেগেছে ।চা বিস্কুটের ক্ষুধা না । ধব ধবে সাদা ভাতের ক্ষুধা । হোটেলের ভাত নয় । বাসায় রান্না করা ভাত, তরকারী ডাল আর ডিম ভর্তা । রাস্তার পাশে এক লোক ভ্যানে করে বড়ই বিক্রি করছে । বড় বড় বড়ই । কোনো কিছু না ভেবেই এক কেজি বড়ই কিনে নিলাম । তারপর হিমির বাসায় গেলাম । হিমি আমাকে দেখেই বলল- তোমাকে তো দাঁড় কাকের মতন লাগছে ।হিমিকে একবার বলেছিলাম- চোখে কাজল দিলে তোমাকে অনেক সুন্দর দেখায়, তারপর থেকে হিমির চোখ কখনও কাজল ছাড়া দেখিনি । আরও আছে কাচের চুড়ি, টিপ । বোকা ! আমি বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসে দাঁড় কাক থেকে কাক হলাম । হিমি টেবিলে খাবার দিল- সাদা ভাত, বাধাকপি বাজি, ডাল আর ডিম ভাজা । ডিম বাজিতে এক গাদা পেয়াজ দিয়েছে । দশ মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষ করলাম । তারপর সুফিয়া বুয়া এসে চা দিয়ে গেল । চায়ে সর ভাসছে । সর ভাসা চা খেলাম । হিমির মুখের দিকে আমি কখনও তাকাই না । আজ তাকালাম- বুঝতে পারলাম হিমি খুব চাচ্ছে- সারাটা বিকাল হিমির সাথে থাকি । সন্ধ্যায় গেলাম শাহবাগ ।আন্দোলনটা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না । প্রতিদিন একটু একটু করে আন্দোলনের চেহারা বদলে যাচ্ছে । শেষ মেষ আন্দোলনের মধ্যে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে । ব্লগার'রা আন্দোন শুরু করেছে, ভালো কথা কিন্তু প্রতিটা ব্লগ কোনো না কোন দলের ।আসমান ব্লগ অমুক দলের, সামসু ব্লগ অমুক দলের ।সুন্দর রাজনীতি এবং সুন্দর মানুষের অভাবে দেশের সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে । আমরা সাধারণ মানুষ জন সব দেখছি- সব বুঝতে পারছি । কিন্তু আমরা চিৎকার করলেও কেউ শুনে না কেউ বুঝে না কেউ দেখে না । মন খারাপ নিয়ে একা একাই শাহবাগ ঘুরে বেড়ালাম । বই মেলায় ঢুকলাম না । পরিচিত মানুষের ধারে কাছেও গেলাম না । ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে ঘুরলাম একটা ছবিও তুললাম না । বারডেম হাসপাতালের সামনে গিয়ে দুই বার চা-সিগারে্ট খেলাম । অনেক কিছুই করতে ইচ্ছা করছে- কিন্তু কিছুই করতে পারছি না । কিছু না করতে পারার অনেক কষ্ট । তীব্র কষ্ট নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরলাম । হিমি বলেছিল- রাতা ৯ টার মধ্যে বাসায় ফিরতে । ১২ টা বেজে গেল । রাত একটা । বাসার সবাই গভীর ঘুমে । আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালাম ।একটা সিগারেট যত দ্রুত শেষ হয় তার চেষে দ্রুত সময় শেষ হয় । দুঃখ কষ্ট হতাশা'র শেষ নেই । দুঃখ কষ্ট হতাশা আমাকে কুড়ে কুড়ে খায় । ভাবি-সব কিছু ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাবো। পর মুহূর্তেই মনে হয় - তাহলে হিমির কি হবে ? আমার শত্রুরা তো হাতে হালি দিয়ে হাসবে । সে সুযোগ তাদের অবশ্যই দিতে পারি না । ঘুরে দাড়াবার মতন সময় এখনও আমার হাতে আছে । নিজেকে বলি-বোকা, ছেলে এত অস্থির হলে চলে, অপেক্ষা করো- সব হবে । পারবে তুমি । এক আকাশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঘরে ঢুকে টিভি অন করলাম । খবর শুনব । খবর শুনে মেজাজ আরও বেশী বিগড়ে যায় । টক শো শুনে গা রি রি করে । চ্যানেল ঘুরে ঘুরে চলে যাই ডিসকোভারি'তে । এটাই ভালো । সাপের অনুষ্ঠান দেখাচ্ছে । বিশাল একটা জঙ্গলে দুইজন লোক সাপের সন্ধ্যানে বের হয়েছে । তারা অনেক খোজাখুজি করে বিশাল একটা সাপ ধরে ফেলল।ইয়া মোটা, কুচকুচে কালো । একজন সাপের গলা টিপে ধরে বিষ বের করে নিল। আরা একজন কয়েকটা ছবি তুলে নিল ।রাত তিনটা । ঘর অন্ধকার করে আমি বিছানায় । সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম । আর কি আশ্চর্য সাথে সাথে একটা স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম । স্বপ্নটা এই রকম- গভীর রাত। আমি গ্রামের রাস্তায় একটা কার্লভাটের উপর বসে আসি ।চারিদিকে ফকফকা জোছনা । আমার হাতে সিগারেট, ম্যাচের জন্য সিগারেটি ধরাতে পারছি না । ঠিক এই সময় একটি মেয়ে দৌড়ে আমার দিকে আসছে- মেয়েটির শাড়ি এলোমেলো, চুল এলোমেলো । মেয়েটির পেছনে আরও তিনটি লোক । বুঝতে পারলাম মেয়েটিকে তিনজন লোক তাড়া করেছে । মেয়েটি আমার কাছে এসে বলল- আমাকে বাঁচান । মেয়েটির কথা শুনে আমার খুব রাগ লাগল- ম্যাচের জন্য আমি সিগারেট ধরাতে পারছি না। এই সময় লোক তিনটি আমার সামনে এসে মেয়েটিকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল । মেয়েটি ব্যাকুল হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে- আমাকে বাঁচান । আমি লোক গুলোর দিকে তাকিয়ে বললাম- ভাই আপনাদের কাছে ম্যাচ হবে ? তারা কেউ আমার কথার জবাব দিল না । আমি লোক গুলোর সামনে গিয়ে বললাম- আপনারা থামুন। কথা আছে ।
false
fe
দেশপ্রেমিক ধনিক শ্রেণী ও দরিদ্রতম মুক্তিযোদ্ধারা দেশপ্রেমিক ধনিক শ্রেণী ও দরিদ্রতম মুক্তিযোদ্ধারা ফকির ইলিয়াস ==================================সংবাদটি খুব বড় নয়। তবে তার গভীরতা বড়। দেশপ্রেমিক জাতীয় ধনিক শ্রেণীর বিকাশের দিকে নজর দিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ। (দৈনিক আমাদের সময়, ২ নভেম্বর ২০০৯)।তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ক্রমবর্ধমান হারে লুটেরা বুর্জোয়া শ্রেণী ভেঙে গণতান্ত্রিক বুর্জোয়া শ্রেণীর উদ্ভব হচ্ছে। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মতে, রাষ্ট্রীয় সহায়তা ব্যক্তি পুঁজির বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় পুঁজি গঠন সম্ভব। তিনি বাংলাদেশে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ এবং জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বাধাগ্রস্ত না করারও অনুরোধ করেছেন।তার এই বক্তব্যটি পড়ে আমার বারবার মনে হয়েছে, কিংবদন্তিতুল্য এই রাজনীতিক ধনিক শ্রেণীর একটি নতুন শ্রেণীবিন্যাস করতে চেয়েছেন। তিনি সেই শ্রেণীকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছেন। তার এই আহ্বান সম্পর্কে আলোচনার আগে ধনিকদের শ্রেণীচরিত্র বিষয়ে কিছু আলোকপাতকরণ আবশ্যক মনে করি।একাত্তর পূর্ববর্তী সময়ে এই ভূখন্ডে কারা ছিল ধনিক শ্রেণী? এবং তাদের মূল কর্মকান্ডের স্বরূপ কেমন ছিল? এ বিষয়টি রাষ্ট্রের মানুষের মোটেই অজানা নয়। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ধনিক শ্রেণীর একটি সখ্য সব সময়ই বিরাজিত ছিল। ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যে, লেনেদেনে, দান খয়রাতে, এমনকি রাষ্ট্রীয় লবিং পর্যায়েও। যারা নিতান্তই শ্রমজীবী মানুষ ছিলেন, তারা এই ধনিক শ্রেণীর নিষ্পেষণের শিকার ছিলেন সবদিক থেকেই। ফ্যাক্টরি, ইন্ডাস্ট্রি, কলকারখানা পরিচালনায় এদের মৌলিক মিল সেটাই প্রমাণ করে।আমরা জানি বাংলাদেশের মহান মুক্তিসংগ্রামেও যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এরা ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব। এর কারণ কি? কারণ পশ্চিমা শোষণের শিকার পূর্বের বুর্জোয়া শ্রেণী কখনই হয়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের 'আদমজী'রা পূর্ব পাকিস্তানে জুট মিল করেছে এই অঞ্চলের ধনীদের সায় নিয়েই। ফলে বৈষম্য ছিল ধনী ও দরিদ্রের। মহান মুক্তিসংগ্রাম সাধিত হয়েছিল সেই লুটেরা শ্রেণীকে তাড়ানোর জন্যই। আর এর নেতৃত্ব এসেছিল তৃণমূল থেকে। একজন শেখ মুজিব, একেকজন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এএইচএম কামরুজ্জামান, এম. মনসুর আলীরা ছিলেন সেই শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর। এই অঞ্চলের মানুষের প্রত্যয়ের প্রতিভূ। মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিতও হয়েছিল সেই আলোকে। আর এই সশস্ত্র যুদ্ধটি করেছিল কারা? হাফপ্যান্ট কিংবা লুঙ্গি পরে, গায়ে ছেঁড়া গেঞ্জি নিয়ে যারা পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এদের প্রকৃত পরিচয় কি? এরাই মুক্তিসেনা। এরাই গেরিলা। তারা আদেশ পালনে এতটাই ব্রতী ছিলেন যে, সে সময়ে একটি স্বাধীন মাতৃভূমি ছাড়া আর কিছুই তাদের আরাধ্য ছিল না।বাঙালির বিজয় এসেছিল সেই চেতনায়। সেই আলোর দীপ্তি ছড়িয়ে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গোটা দেশেই ভেঙে পড়ে অর্থনৈতিক অবকাঠামো। এ সময়ে একটি সুবিধাবাদী চক্র ফায়দা তোলার চেষ্টায় লিপ্ত হয় ধ্বংসস্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে। বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট, সময়টুকু মাত্র সাড়ে তিন বছর। এই সময়ে বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রীয় ভিত কাঁপিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। যারা একাত্তরে পরাজিত হয়েছিল সেই শক্তিটি কলকাঠি নাড়তে থাকে সর্বশক্তি দিয়ে। ঘটে যায় পনেরোই আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞ। লুটেরা ধনিক শ্রেণী যারা কিছুটা ঘাপটি মেরে বসেছিল, তাদের জন্য আসে যথেষ্ট সুযোগ। এরা এক ধরনের পেশিশক্তি, ধর্মান্ধতা, মানুষের মৌলিক ক্ষমতা হরণ- প্রভৃতির আশ্রয় নিয়ে রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নিজস্ব বাহু প্রতিষ্ঠায় লিপ্ত হয়। এমনকি গণতন্ত্রের নামে চলে এক ধরনের লুটেরা মনোবৃত্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা।সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে এ সময়ে গড়ে উঠেছে মূলত একটি ভোগবাদী ধনিক শ্রেণী। এরা সব লজ্জার মাথা খেয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎই শুধু নয়, জনগণের মৌলিক অধিকার অংশেও তাদের দাঁত বসাচ্ছে এবং বসিয়েছে।আজকের বাংলাদেশে 'জাতীয় ধনিক শ্রেণী; কিংবা 'দেশপ্রেমিক ধনিক শ্রেণী' আমরা কাদের বলব? এর সংজ্ঞা কি? গেল পনেরো বছরে বাংলাদেশে আবাসন, ব্যাংক, চিকিৎসা ক্লিনিক, ফোন কোম্পানি, বীমা, মিডিয়া, রফতানিজাত সামগ্রী, গার্মেন্টস প্রভৃতি সেক্টরে বেশ নতুন 'মহাজন' এর মুখ আমরা লক্ষ্য করি। এরা কারা? এদের পরিচয় কি? লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এরা কোন না কোনভাবে প্রধান কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত, সম্পৃক্ত। তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোও সেই সব দলের তাঁবেদারি করে যাচ্ছে।রাষ্ট্রের জনগণকে খুব অবাক হয়ে দেখতে হয়, রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেয়ার জন্য এই 'দেশপ্রেমিক ধনিক শ্রেণী' কিন্তু সব সময়ই একই সুরে কথা বলে। এই প্রসঙ্গে আমি কিছু প্রশ্ন রাখতে চাই। যারা কোটি কোটি টাকা মুনাফার পরও রাষ্ট্রীয় কর ঠিকমতো দেয় না আমরা কি তাদের দেশপ্রেমিক জাতীয় ধনিক শ্রেণী, বলব? যারা অধিক মুনাফা অর্জনের পরও গার্মেন্টস শ্রমিকের মালিক বেতন ভাতা দেয় না বরং শ্রমিকের রক্তে নিজ হাত রঞ্জিত করে আমরা এদের 'দেশপ্রেমিক ধনিক শ্রেণী' বলব?গোটা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কোষাগারে বড় জোগান আসে ট্যাক্সের টাকা থেকে। বাংলাদেশে অনেক বড় বড় নামকরা ডাক্তার আছেন যারা মাসে কোটি টাকা আয় করেন। এরা ট্যাক্স দেন না। এভাবে অনেকগুলো প্রাইভেট সেক্টরই রয়ে গেছে ট্যাক্স আওতার বাইরে। এটা জাতীয় লজ্জা। এটা জাতির লজ্জা। লুম্পেন ধনতন্ত্রের প্রবক্তা হয়ে যারা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে ফায়দা নিতে চায়, প্রকৃত রাজনীতিবিদদের উচিত ছিল এদের বয়কট করা। তারা এদের বয়কট তো করেনই-নি বরং এদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে নিজ নিজ দলের সাংসদ বানিয়েছেন। মন্ত্রিত্ব দিয়েছেন। পুঁজিবাদী কোন সভ্যদেশে এমন লেনদেনের নজির নেই। অথচ ব্যাংলাদেশে তা প্রতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।এখন প্রশ্নটি হচ্ছে এই, একটি উজ্জ্বল স্বপ্ন নিয়ে যে হতদরিদ্র মানুষটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, তার ভাগ্য কেমন আছে কিংবা তার অবস্থার কি পরিবর্তন হয়েছে? না, তার কোন পরিবর্তনই হয়নি। বরং সেই সব মানুষ এখন দরিদ্রতম হিসেবে দিনাতিপাত করছে। কোথাও কাজ করেও এরা ন্যায্য শ্রমের মূল্যটুকু পাচ্ছে না।অথচ এই ধনিক শ্রেণী সামান্য মনোযোগী হলে দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা, মেধাবী ছাত্র, বিধবা নারী কিংবা অনাথ কিশোর-কিশোরীর জন্য অনেক কিছুই করতে পারত। যারা রাষ্ট্রীয় টাকায় আমদানি করার গাড়ি নিতে ঐক্যবদ্ধ হয়, যারা ট্যাক্স না দেয়ার জন্য জোটবদ্ধ হয় এদের কাছ থেকে গরিবের কল্যাণে কি-বা আশা করা যেতে পারে?মুক্তির যে সংগ্রাম বাংলাদেশে চলছে এই সংগ্রাম নিরন্তর। আর এই সময়ে দেশের প্রতিটি মানুষই মুক্তিযোদ্ধা। অবাক করা সত্য হচ্ছে এই আপামর মানুষ কয়েক লাখ 'দেশপ্রেমিক ধনিক শ্রেণী'র হাতে জিম্মি। এরাই নির্ধারণ করে তেল, পেঁয়াজ, নুনের দাম। এরা শুধুই নেয়, নিতে জানে। দেয়ার বেলায় তাদের দু'হাত কাঁপে। অথবা দেয় রাজনীতিকে পুঁজি করে।এখানে আরও কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলা যায়। দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে গঠিত হয়েছিল '' বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট''। এই ট্রাস্টটি দেশের এই ধনিক শ্রেণীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা পেতে পারত। কিন্তু তা না করে এই ট্রাস্টকেও ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে। এখনও করা হচ্ছে।ভোগবাদীরা সব সময়ই চতুর। তারা জানে কখন কোন শিকার ধরে নিজের আখের গুছিয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশের এই ধনিক শ্রেণী তেমনটিই করেছে। তাদের মাঝে সততা ও নিষ্ঠার অভাব দুর্বল করে তুলেছে রাষ্ট্রের অর্থনীতির ভিত।বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি যেসব শহীদের রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জিত হয়েছে তাদের একটি অন্যতম স্বপ্ন ছিল ধনের সুষম বণ্টন। আর সে জন্যই গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ ছিল স্বাধীনতার চার মূলস্তম্ভ। সেই অঙ্গীকার জাতি এখন অস্বীকার করছে। একটি অংশ নানা ধুয়া তুলে চার মূলনীতির উদারতাকে ম্লান করে দেয়ার চেষ্টা করছে। আর জাতি হিসেবে বাঙালি পরাজিত হতে শুরু করেছে সেই থেকেই।বুর্জোয়া কিংবা পেটি বুর্জোয়া পোষ্য ধনিক শ্রেণী নির্মাণ করে কোন দল কিংবা সরকারই একটি জাতির উন্নতি সাধন করতে পারে না। যারা বিত্তবান, যারা ধনশালী তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, অবকাঠামো মেনে চলতে হবে। সততা দিয়ে রাষ্ট্রের মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হতে হবে। গণমানুষের সার্বিক দীনতা দূর করতে না পারলে ধনিক শ্রেণীকে পৃষ্ঠপোষকতা ব্যাপক কোন পরিবর্তন আনবে না, আনতে পারে না।নিউইয়র্ক, ৪ নভেম্বর ২০০৯--------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ। ঢাকা। ৬ নভেম্বর ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি - গ্রেটা ভেন ডোরনাভেল্ট
false
rn
রাস্তায় পাওয়া ডায়েরী থেকে- ২৪ আমি রাজনীতি করি না। বন্ধু নিয়ে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে আড্ডা দেই না। রাস্তায় চলাফেরা করার সময় কোনো মেয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকি না।কাউকে বাজে পরামর্শ দেই না।কারো আনন্দ দেখে হিংসা করি না।একা একা আপন মনে থাকি। বই পড়ি, টিভি দেখি, ব্লগিং করি-, হাতে কাজ থাকলে কাজ করি। নিজেকে আমার বয়সের চেয়ে বড় ভাবতে ভালো লাগে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলি তেত্রিশ বছর আমার। অনেকদিন সেভ না করাতে, এখন নিজেকে মুরুব্বি মুরুব্বি মনে হয়। ছোট ছোট বাচ্চারা আংকেল বলে ডাকে। বয়সের সাথে আমার আচরনের কোনো মিল খুঁজে পাই না। তুলা রাশি আমার, তাই আবেগটা একটু বেশী। আমি খুব দ্রুত রেগে যাই এবং বিরক্ত হই। আমি খুব লক্ষ্য করে দেখেছি- রাস্তায় এলোমেলো ভাবে হাঁটলে- রাগ কমতে থাকে। আমি সাধারনত সিনেমা-নাটক খুব একটা দেখি না। ন্যাশনাল জিওগ্রাফী আমার প্রিয় চ্যানেল। সেদিন হিমি বলল- কলকাতার মুভি "বোঝে না সে বোঝে না" দেখ। তার কথা মত মুভিটা দেখলাম।বোরিং লাগে নি। এই ছবির তামিল ভার্সনটা একদিন কিছুটা দেখে ছিলাম। এই ছবিটা সম্পর্কে বলতে গেলে- বলতে হয়, ইনস্পিরেশন আর ট্রিবিউটের মধ্যে তফাতটা কোথায়? ইনস্পিরেশনে আপনি অন্যের সৃষ্টি থেকে একটা আদল নিয়ে সেটাকে নিজের মতো করে ব্যবহার করেন! আর ট্রিবিউট মানেটা এখন দাঁড়িয়েছে, কোটেশন উইদাউট কোটেশন মার্কস! ঠিক এই রকম করেই রিমেক কথাটারও দু’রকম অর্থ হয়। একটা স্রেফ টুকলিফাই, অন্যটা পুনর্নির্মাণ।দক্ষিণের একটা ছবি স্রেফ বাংলা নামধাম বসিয়ে ছেড়ে দেওয়া নয়। ছবির কাহিনীটা একটু বলি- একটা বাস অ্যাক্সিডেন্ট আর দু’টো প্রেমের গল্প। আর তাদের ঘিরে থাকা আরও অজস্র মুখ। সবাই-ই খুব ভালো অভিনয় করেছেন। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সুরে গানগুলো ভালই লাগে। তবে ছবির দৈর্ঘ্য মিনিট পনেরো কম হলে ভাল হত। আর বাসের বাকি চরিত্রদের মধ্যে এক দম্পতি আর এক প্রেম হব-হব যুগলের ব্যাপারটা একটু বোরিং।বাড়ির ছাদে কাপড় শুকোনো হয়, নায়ক লুঙ্গি পরে দাঁত ব্রাশ করে, আবার প্রেমিকার তাড়া খেয়ে আধুনিক দোকানে জামাকাপড় কিনতেও যায়, ক্যাফেটেরিয়ায় গল্প করতেও বসে। থ্যাঙ্ক ইউ, পরিচালক রাজ চক্রবর্তী! সব কিছু মিলিয়ে ছবিটা ভালো লেগেছে। এটাই বড় কথা।যারা মুভিটি দেখেননি তারা দেখতে পারেন। সামু ব্লগটা আমার অনেক প্রিয়।আমি নিয়মিত সামুতে লিখি। প্রায় ৩/৪ বছর হয়ে গেছে। সেদিন নাগরিক ব্লগে একটা লেখা পোষ্ট করেছিলাম, সেটা নিয়ে নাগরিকের ব্লগার'রা আমাকে বাজে মন্তব্য করেছে। সেই লেখাই আমি সামুতে দিয়েছি কেউ বাজে মন্তব্য করেনি। লেখাটির নাম হচ্ছে- "আধুনিকতার নামে চলছে বেহায়াপনা"। আসলে কয়েকটা বদমাশ ব্লগারের জন্য ব্লগের বদনাম হয়। দুঃখেরম বিষয় হচ্ছে- ব্লগ থেকে তাদের ব্যান করা হয় না। এর আগে " আমার ব্লগ" এ দেখেছি- অকথ্য ভাষায় গালা-গালি চলছে। এখন কি অবস্থা জানি না। তবে সামুকে অনেক হিংসা করা হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়- ব্লগের মধ্যেও দল ঢুকে গেছে। কথায় বলে না- একটা কানী বক সারা বিল নষ্ট করে দেয়। একজন ব্লগার'ও ঠিক এই রকম ।স্বপ্নে দেখলাম, এক মেয়ে আমাকে বলছে- কলিজা খাবে ? জ্যান্ত মানুষের কলিজা? অনেক স্বাদ। কলিজা হচ্ছে জমাট রক্ত। আমি বললাম খাবো না। মেয়েটি রেগে গিয়ে বলল- খাবি না ক্যান, খেতেই হবে। মেয়েটি আমাকে নিয়ে একটি ঘরে গেল। সেই ঘরে অনেক মানুষ । প্রতিটা মানুষকে বেঁধে রাখা হয়েছে। মেয়েটি বলল- বেছে নে, কার কলিজা খাবি। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। মেয়েটি আমার সামনেই একজনের বুকের মধ্যে ছুরি চালিয়ে কলিজা বের করে আনল। কলিজাটা কাঁটা মুরগীর মতন লাফাচ্ছে। মেয়েটি আমার মুখের কাছে কলিজাটা ধরে বলছে- খা। তারপর মেয়েটি পটাপট তিন কামড় দিয়ে অনেকখানি কলিজা খেয়ে নিল। মেয়েটির ঠোঁট গড়িয়ে টপ টপ করে রক্ত পড়ছে। আমি কিছুই লিখতে জানি না। কিন্তু এমন ভাব নেই- যেন আমি অনেক পাকনা লেখক। অনেক সময় মানুষ আমার ভাব দেখে ভড়কে যায়। আমার লেখা মানেই ফালতু এবং সস্তা। কিন্তু হাতে গোনা কিছু মানুষ আমার লেখা অনেক পছন্দ করে। আমি মনে করি যারা আমার লেখা পছন্দ করে- তারা অবশ্যই বোকা। বুদ্ধিমান সস্তা লেখা পড়ে না।আসলে কিছু মানুষ যা দেখে তাতেই মুগ্ধ হয়। আফসোস, এত মুগ্ধতা নিয়ে আমি যদি জন্মাতে পারতাম! যাই হোক, এই মুহুর্তে একটি বড় মাত্রার ভুমিকম্প হলে ঢাকা শহরের অবস্থা কি হবে? সারা ঢাকা শহর পুরোটা এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে। হে আল্লাহ- আমি জানি তুমি এত নিষ্ঠুর কোনো দিনও হবে না। আমাদের দেশটাকে আমরা অনেক দূর নিয়ে যাব।আমাদের আছে- ৩২ কোটি চোখ-৩২ কোটি হাত । "মন মহাজন কোন সে জন চিনলাম না আজো তারে,"।
false
mk
মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ হাজার ৪৬৬ ডলার হবে বলে প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। সেই সঙ্গে এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রথমবারের মতো ৭.০৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আশা করছে।২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির এই হিসাব করেছে।মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই হিসাব তুলে ধরা হয়।পরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩১৬ ডলার।চলতি অর্থবছরে জিডিপির আকার ১৭ লাখ ২৯ হাজার কেটি টাকায় দাঁড়াচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'অনেক দিন ধরে দেশে ও দেশের বাইরে বলাবলি করছিল আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ঘরে ঘোরাঘুরি করছে। এবার তাদের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।'পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন ঠিক থাকলে এক বছরেই মাথাপিছু আয় বাড়ছে দেড়শ ডলার। আর প্রবৃদ্ধি দাঁড়াচ্ছে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে।অর্থবছরের শুরুতে বাজেট ঘোষণার সময় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। তবে নয় মাসে অর্থনীতির গতি প্রকৃতি দেখে এডিবি ও বিশ্বব্যাংক বলেছে, এবার বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি অর্থবছরের এ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এক কথায় অসাধারণ। আগে বিশ্বব্যাংক ও ইউএনডিপি আমাদের অর্থনীতির প্রশংসা করত। এখন ইউরোপও বলছে বিনিয়োগের পরবর্তী ঠিকানা বাংলাদেশ।পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব উদ্ধৃত করে মন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছর দেশে মোট জিডিপির ২৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে। গত অর্থবছর এই হার ছিল ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ।চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন হয়েছে ২ দশমিক ৬০ শতাংশ, শিল্প খাতে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ এবং সেবা খাতে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ।এ ছাড়া মৎস্য খাতে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ, খনিজসম্পদে ১২ দশমিক ০৬ শতাংশ, শিল্প উৎপাদনে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ, বিদ্যুৎ,গ্যাস ও পানি সরবরাহ খাতে ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ, নির্মাণ শিল্পে ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, হোটেল রেস্তোরাঁ খাতে ৭ শতাংশ এবং পরিবহন খাতে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে বিবিএস প্রাক্কলন করেছে।সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অর্জন বর্তমান সরকারের একার নয়। এ অর্জন ১৬ কোটি মানুষের। দেশের কৃষক, ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক, এনজিও, মিডিয়া, ব্যবসায়ীসহ সব নারী-পুরুষের অবদানে এ অর্জন।সংশোধনে এডিপি কমেছে ৭ শতাংশএদিকে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সাত শতাংশ কাটছাঁট করে ৯৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।মঙ্গলবার শেরেবাংলানগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এই সংশোধনীর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।বাজেটে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৯৯৭ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন করেছিল সরকার।সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, চলতি অর্থবছরের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা/করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নসহ মোট ৯০ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকায় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয় এনইসি সভায়।কিন্তু সভায় উপস্থিত প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থার প্রতিনিধিদের চাহিদার ভিত্তিতে বরাদ্দ হিসাব করে ৯৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত করা হয়।এর মধ্যে মূল এডিপির আকার ৯১ হাজার কো?টি টাকা। আর স্বায়ত্তশা?সিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৯৪ কো?টি টাকা।মন্ত্রী বলেন, এডিপির মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে ৬১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। প্রকল্প সহায়তা থেকে আসবে ২৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। বাকি ২ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকার জোগান দেয়া হবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা/করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে।চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২৭৭টি প্রকল্প চলতি অর্থবছরে সমাপ্ত ঘোষণা করা হবে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান।সরকার প্রতিবারই শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে এলেও বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে প্রতিবছরই অর্থবছরের শেষভাগে এসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কাঁচি চালাতে হয়। গত অর্থবছর এডিপির আকার কমেছিল ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ।চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত সময়ে এডিপির মাত্র ৪১ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫৫
false
rn
হে ঈশ্বর আমাদের দেশে কবে শান্তি আসবে_ কেউ যদি হরতালকারীদের গাড়ি- বাড়িতে আগুন দিয়ে দিত-খুব ভালো হতো।সব সময়ই তো আমরাই ক্ষতিক্ষস্ত হই । যে সমস্ত কুকুর গুলো গাড়ি ভাঙ্গে বাসে আগুন দেয়- তাদের বাপ মাদের খুব দেখতে ইচ্ছা করে । দেশ প্রেমের নমুনা হচ্ছে- হরতালের নাম দিয়ে ফাজলামো করা । সরকার রাস্তা থেকে পুলিশ তুলে নিলেই- জনগন হরতালকারীদের পিটিয়ে মেরেই ফেলবে ।ঢাকায় আজ সকালে কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন স্যার এর মা'র বাসায় ৩টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়!কি হচ্ছে দেশে, বোমাবাজি, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এসব আর ভালোলাগে না। খালেদা জিয়া দেশকে যদি ভালোইবাসেন তাহলে দেশের ভালোর জন্য কিছু করুন । জ্বালাও পোড়াও আর কত ? অথবা প্রাইমারী স্কুলে গিয়ে শিক্ষকতা করুন । যদিও অনেক আগেই হুমায়ূন আজাদ বলে গিয়েছিলেন- প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করার যোগ্যতা আপনার নেই । এখন আমাদের দেশে অনেক গুলো টেলিভিশন চ্যানেল। কিন্তু খবর এবং টক শো ছাড়া আর কিছু দেখার খুঁজে পাই না । কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- যারা টকশো করে তারা উম্মাদ বা মধ্যরাতের বাচাল। গতকাল স্বরাষ্টমন্ত্রীকে দেখলাম ।হরতালের খবর রাখতে একটু পর পর চোখ রাখি টিভি ( বিটিভি ছাড়া ) চ্যানেল গুলোতে । সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার পীরপুর শুকুরুননেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হরতাল করে কোনো দাবী আদায় হয় না । হরতাল মানে বাসে আগুন এবং কোকটেল বিস্ফোরন- জনজীবন বিধ্বস্ত করা । অল্প কিছু লোকের সুবিধা আদায়ের জন্য সারা দেশের মানুষের কষ্ট । হরতাল কারীদের কখনও ক্ষমা করা হবে না । যুদ্ধাপরাধীদের মতন তাদেরও বিচার করা হবে । গাড়ী বাসে আগুন- অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে । শাস্তি পেতে হবে । অপেক্ষা করুন । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপনাদেরকে অনেক সালাম এবং ধন্যবাদ । আপনারা দু'জন দেশের জন্য অনেক করেছেন । সারা দেশের মানুষ আপনাদের দু'জনের প্রতিভায় মুগ্ধ । আপনাদের ঋন এ জাতি কোনোদিন শোধ করতে পারবে না । আপনারা চোখ বুঝলে জাতি অন্ধকারে নিম্মজিত হবে । আমরা জনগণ সব বুজতে পারি । এও বুঝি আপনাদের আশে পাশে সব সময় থাকে একদল লোভী কুকুর -তারা অনেক কিছু থেকে আপনাদের দূরে রাখে।এখন আপনারা রাজনীতি ছেড়ে দেন, অবসর গ্রহন করেন। বয়স তো কম হলো না । দু'জন মিলে যোগ্য কাউকে ক্ষমতায় বসান । তাদের বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অব্যহত রাখুন । জয় বাংলা ।বেগম খালেদা জিয়া হরতালে যখন বাসে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়- জন জীবন বিধ্বস্ত হয়, তখন হয়তো আপনি ঘরে বসে টিভিতে দেখেন ।তখন কি আপনার অনেক আনন্দ হয়? টিভি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আপনার দলের লোকেরা বলবে- হরতাল সফল হয়েছে । আপনাদের মাসের পর মাস হরতাল হলে- কোনো অসুবিধা নেই । দুর্নীতি করে আপনারা ব্যাংকে কারি-কারি টাকা জমিয়েছেন । আমরা যারা দিন আনি দিন খাই তাদের কি রকম অবস্থা হয় বুঝেন ? আমি নিজের চোখে দেখেছি-ছোট ছোট বাচ্চাদের দুধের বদলে ভাতের মার খেতে দেওয়া হয়।কিছু কুকুর এক আকাশ আনন্দ নিয়ে গাড়ি বাসে আগুন দিবে । এই কুকুর গুলো ছোটবেলায় মায়ের দুধ খায় নাই । আজ হরতা্লের আগের দিন আটি টি গাড়ি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। যারা হরতাল করে তাদের মধ্যে মানবতা বলতে কিছুই নেই । যে গাড়ি বাস গুলোতে আগুন দেওয়া হয়- সেগুলো কি হরতালকারীদের বাপ দাদার ? যারা হরতাল দেয়- তারা পশু ।কিছু কিছু ডায়লগ মুখস্ত হয়ে গেছে - আওয়ামীলীগঃ জনগণ হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে ! বিএনপিঃ সারা দেশে জনগণ হরতালের সমর্থনে মাঠে নেমে এসেছে ! আসলেই কি জনগন সকল শক্তির উৎস ? রাতে টিভি চ্যানেল গুলোতে আজকের হরতাল নিয়ে ঝড় বয়ে যাবে । আসলে দোষ আমাদের- আমরাই ভোট দিয়ে- তাদের কলিজা বড় করে ফেলেছি । হে ঈশ্বর আমা্দের দেশে কবে শান্তি আসবে? কবে ? কবে ? কবে ? চলুন সকল মুসলিম অমুসলিম ও নওমুসলিম মিলে সুন্দর শান্তির একটি পৃথিবী গড়ি।
false
hm
লেক্স ট্যালিওনিস একটা ছেলের নাম বলুন। খোকন? আচ্ছা, ঠিকাছে। এইবার একটা মেয়ের নাম বলুন। সুমি? ঠিকাছে। ঐ যে দেখুন, রিকশায় চড়ে বেড়াতে বেরিয়েছে এক যুগল। খোকন আর সুমি। ঐ যে বেগুনি গেঞ্জি, ধূসর জিন্সের প্যান্ট পরা, ও খোকন। আর ঐ যে হালকা কমলা শাড়ি আর গাঢ় কমলা ব্লাউজ পরা ...। ও-ই সুমি। বুচ্ছি। বাহ, খুব অবজারভ্যান্ট আপনি। নিশ্চয়ই ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেয়েছিলেন? হ। আপনাকে দেখেই বোঝা যায়। তো, খোকন আর সুমিকে দেখুন ভালোমতো। এদের এই অবস্থা ক্যান? কোন অবস্থার কথা বলছেন? রিকশায় এতো জায়গা থাকার পরও দুইজনই শরীরের অর্ধেকটা বাইরে ঝুলিয়ে বসে আছে কেন? বাহ, খুব অবজারভ্যান্ট আপনি। আমি ক্লাস এইটেও বৃত্তি পেয়েছিলাম। আপনাকে দেখেই বোঝা যায়। কিন্তু ওরা এইভাবে বসে আছে কেন? কত কারণই তো থাকতে পারে। হয়তো খোকনের মানিব্যাগে আজ অনেক টাকা। কিংবা টাকা অল্পই, কিন্তু সব দুই টাকার নোটে। মানিব্যাগের ওজনের কারণে হয়তো বেচারার একখানা নিতম্ব বাতাসে ভেসে আছে। সিম্পল লিভার অ্যাকশন। দুই টাকার নোটের এত ওজন? হতেই পারে। সুমিও কি দুই টাকার নোটের বান্ডিল নিয়ে বের হয়েছে? সুমির ক্ষেত্রে অবশ্য এই ব্যাখ্যাটা খাটে না। কারণ খোকনের সঙ্গে বের হলে সুমি সঙ্গে টাকা নেয় না। হয়তো সুমি রূপার বিছা পরে কোমরে। রূপার বিছার এত ওজন? রূপার স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি ১০৪৯০ কেজি পার কিউবিক মিটার। ও। আমিও ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেয়েছিলাম। আচ্ছা। অবশ্য এ সবই হাইপোথিসিস। আসল কারণটা অন্য রকম হতে পারে। তাই? হ্যাঁ। ঐ দেখুন খোকন আর সুমি ফুচকা খেতে নেমেছে। খোকন আর সুমি এইভাবে হাঁটে কেন? হয়তো দুই টাকার নোটের বাণ্ডিল আর রূপার বিছার কারণে সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি পাল্টে গেছে বেচারাদের। দেখে তো মনে হচ্ছে ...। আপনি এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছিলেন। হ। দেখেই বোঝা যায়। যাই হোক। এখন দেখেন খোকন আর সুমি কী করে। ফুচকার অর্ডার দিলো মনে হচ্ছে। হ্যাঁ। কিন্তু দেখুন, এতোগুলো খালি চেয়ার, কিন্তু ওরা বসছে না। ফুচকা তো দাঁড়িয়েও খাওয়া যায়। তা যায়। কিন্তু আশেপাশে দেখুন আরো যুগলেরা ফুচকা খেতে এসেছে। মনে করুন ঐ যে লাল শার্ট কালো প্যান্ট লোকমান আর নীল কামিজ সাদা সালোয়ার বদরুন্নেসা, ওরা কিন্তু বসেই খাচ্ছে। বদরুন্নেসা তো মেশিনের মতো ফুচকা ওড়াচ্ছে ভাইডি। হুঁ। তারপর দেখুন কালো শার্ট লাল প্যান্ট হরিপদ আর হলুদ শাড়ি হলুদ ব্লাউজ মহানন্দা, ওরাও বসে খাচ্ছে। হরিপদের প্লেট থেকে ফুচকা ওড়াচ্ছে মহানন্দা। আহা ভাই এমন করেন কেন। আসল কথা হচ্ছে ওরা বসে খাচ্ছে। কিন্তু খোকন আর সুমি দাঁড়িয়ে। এই যে দেখুন ফুচকাওয়ালা মামু অর্ডার সার্ভ করলো। কিন্তু ওরা দাঁড়িয়েই খাচ্ছে। এই ভারি কাচের প্লেট হাতে নিয়ে কেন ওরা দাঁড়িয়ে খাচ্ছে? কাচের স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি কত? অনেক। হুমমম। ফুচকার স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি কত? কম নয়। হুমমম। হ, ভারিই হবে। হয়তো কাচের প্লেটে আটটা করে ফুচকা নিয়ে দাঁড়ালে ওদের সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি আবার ঠিক হয়ে যায়? হতেই পারে। কিন্তু না-ও হতে পারে। হইছে কী সেইটা বলেন না কেন? খোকন আর সুমি দুইজন দুইজনকে খুব ভালোবাসে আসলে। ওদের প্রেম অমর। তো? ওরা বাংলাদেশকেও খুব ভালোবাসে। মাঝেমধ্যে ওরা দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গায় বেড়াতে যায়। তো? যেমন ধরেন ময়নামতি, সাভারের স্মৃতিসৌধ। পুরনো মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা। মহাস্থানগড়। পুরনো জমিদারবাড়ি। বৌদ্ধবিহার। এইসব জায়গায়। তো? স্থাপত্যের প্রতি ওদের একটা অপত্য স্নেহ আছে আর কি। তো? যেখানেই যায়, সেখানেই ওরা একটা দাগ রেখে আসতে চায়। এক ফোঁটা শিশির ফেলে আসতে চায়। ধরেন, যারা পরে সেখানে বেড়াতে যাবে, তারা যেন বুঝতে পারে, খোকন সুমিকে ভালোবাসে। তো? সেজন্য খোকন সঙ্গে করে একটা চকের বাক্স নেয়। আর সাইনপেন। আর স্প্রে পেইন্ট। বিভিন্ন রঙের। সাদা, কালো, লাল, নীল। মাঝে মাঝে হলুদ। আচ্ছা। তারপর যেখানেই যায় সেখানেই এক ফাঁকে দেয়ালে বড়বড় করে লেখে, খোকন + সুমি। ইকুয়ালস টু হোয়াট? সমীকরণের ঐ পাশটা ওরা এখনও ফাঁকা রেখেছে। ওরা দুজনই সচেতন। বাঁচতে হলে জানতে হবে। ও। কিন্তু মাঝেমধ্যে একটা হৃদয়চিহ্নও আঁকে খোকন। সেইটার ভিতরে লেখে খোকন। তার নিচে লেখে সুমি। সুমির ওপর খোকন? মাঝেমধ্যে উল্টোটাও লেখে। খোকনের ওপর সুমি। এ নিয়ে খোকনের মধ্যে কোনো গোঁড়ামি নেই। আচ্ছা। তো সেদিন তারা গিয়েছিলো এক পুরনো জমিদার বাড়িতে। বলদিয়ার জমিদার বাড়ি। ইরাদিয়া পরিবারের নাম শুনেছেন? হ্যাঁ। চোর বাটপার দিয়ে ভর্তি। কী করেছে তারা? তারা কিছু করেনি। ইরাদিয়া পরিবারের এস্টেটে সুন্দর দুইটা গোলঘর আছে। সেই বৃটিশ আমলে তৈরি। মার্বেল পাথরের। ছাদটা কাচের। জমিদার বুলন্দ হায়দার ইরাদিয়া ঐ গোলঘরে বসে বৃষ্টি দেখতেন। তারা দেখতেন। দুইটা গোলঘর কেন? একটা বুলন্দ হায়দারের জন্য। আরেকটা তার কনিষ্ঠা ভার্যা গুলবদন ইরাদিয়ার জন্য। উনি ঐ গোলঘরে বসে বুলন্দ হায়দারের উপর নজরদারি করতেন। যাতে বুলন্দ হায়দার তারা দেখার নাম করে রাতের বেলা অতিরিক্ত শরবত পান বা বাঈজি সংসর্গ না করেন। আচ্ছা। তারাও একে অপরকে বড় ভালোবাসতেন। পয়সার অভাবে বুলন্দ হায়দার তাজমহল বানাতে পারেননি। দুইটা গোলঘর বানিয়েই ক্ষান্ত দিয়েছিলেন। আচ্ছা। তো সেই গোলঘরে অনেক পর্যটক যায়। খুব সুন্দর কারুকার্য করা স্থাপত্যকর্ম। ফরাসী নকশাকার এনে বানানো হয়েছিলো। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে। খানিকটা বারোক ছোঁয়া আছে যদিও। আচ্ছা। তো খোকন আর সুমি একদিন বাসে করে সেই গোলঘর দেখতে হাজির। হুমমম। শুনশান দুপুর। আশেপাশে কেউ নেই। বটে? খোকন আর সুমিই শুধু সেই গোলঘরে। কোন গোলঘরে? বুলন্দেরটায় না গুলবদনেরটায়? গুলবদনেরটায়। আচ্ছা। তারপর? তখন বসন্তকাল। মৃদুমন্দ সমীরণ চলছে। অ্যামবিয়েন্ট টেম্পারেচারও প্রেমবান্ধব। দূরে লাল নীল হলুদ ফুল ফুটে আছে। ভ্রমরার গুঞ্জন কানে শোনা যায়। গাছের ডালে একটা পরিযায়ী পাখি ডাকছে, কুকুকু। খুব উসকানিমূলক আবহাওয়া। হ। খোকন তখন সুমিকে একহাতে জড়িয়ে শক্ত করে বুকের কাছে টেনে নিলো। ওহ নো। তারপর? সুমিও খোকনের গায়ে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজলো। আরে বলেন কী? খোকন তখন জিপার খুললো। ছিছিছিছিছি। তারপর? তারপর স্প্রে পেইন্টের কৌটাটা বের করলো ব্যাগ থেকে। ওহ। ঐ জিপার। তারপর? তারপর গুলবদনের গোলঘরের মার্বেল পাথরের ধবধবে সাদা অসূর্যম্পশ্য অনাঘ্রাত দেয়ালে টকটকে লাল স্প্রে পেইন্ট দিয়ে লিখলো "খোকন + সুমি"। তারপর? তারপর সুমিকে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলো বুলন্দ হায়দারের গোলঘরটার দিকে। তারপর? বাতাসে তখনও ভ্রমরা, পাখি, ফুল ইত্যাদির ঘনঘটা। বুচ্ছি। খোকন বুলন্দ হায়দারের গোলঘরের সামনে পৌঁছে সুমিকে আরেকটু কাছে টেনে নিলো। বুচ্ছি। সুমিও খোকনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বুচ্ছি। খোকন স্প্রে পেইন্টের ক্যানটা উঁচিয়ে যেই না গোলঘরের দেয়ালে একটা কিছু লিখতে যাবে, অমনি ঘটে গেলো এক আশ্চর্য ঘটনা। কী? গোলঘরের দেয়াল ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো দুটো মার্বেলের হাত। য়্যাঁ? সেই হাতে ধরা একটা গনগনে লোহার শিক। বলেন কী? সেই হাত খোকন আর সুমিকে এক চটকানা মেরে মাটিতে ফেলে দিলো। তারপর? তারপর দুজনকেই উপুড় করে ঠেসে ধরলো মাটিতে। ইয়া ক্ষুদা! তারপর? তারপর খোকনের প্যান্ট আর সুমির সালোয়ার ইঞ্চি আষ্টেক নিচে নামালো টেনে। ওহ নো! তারপর তারপর? তারপর হাতে ধরা সেই গনগনে শিক দিয়ে খোকনের একখানা নিতম্বে লিখলো "বুলন্দ +", আর সুমির একখানা নিতম্বে লিখলো "গুলবদন"!
false
rn
আবেগ মানুষকে কত কিছুই না ভাবায়! যখন রাতে আমার ঘুম আসে না, তখন আমি একটা সিনেমা বানাই। আমি নিজেই নায়ক, আমিই পরিচালক। আমি বেশী তৈরি করি রোমান্টিক মুভি। মাঝে মাঝে মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত থাকলে- সিনেমার মধ্যে একটু পর পর মারামারি চলে আসে। নায়িকাকে নিয়ে বাগানে গিয়ে গান করি। হাত পা ছড়িয়ে নাচানাচি করি।নায়িকার বাবার সাথে ঝগড়া করি।ইচ্ছা হলেই নায়িকাকে নিয়ে চলে যাই- বান্দরবান, কক্সবাজার।ইদানিং নায়িকাকে নিয়ে দুবাই, আর মালোশিয়া ঘুরে বেড়াই। দিনের পর দিন, এই রকম ভাবতে ভাবতে-আর সেরা মুভি গুলো দেখতে দেখতে ইচ্ছা করে- আমি নিজে সিনেমা তৈরি করি। খুবই হাস্যকর চিন্তা। কিন্তু অসম্ভব না। একটা সিনেমা বানানো অনেক সাহস এবং ধের্য্যের ব্যাপার। আমি মনে মনে ভাবি- গল্প তৈরী হয়ে গেলে সেটাকে ফ্রেমবন্দী করতে গেলে লাগবে ক্যামেরা। ক্যামেরার সামনে গল্পটাকে উপস্থাপন করতে হলে লাগবে অভিনেতা। আর শ্যুট করা উল্টো-পাল্টা গল্পটাকে সাজিয়ে দাড় করানোর জন্য চাই একটি কম্পিউটার।গল্প হলো একটি সিনেমার প্রান।গল্পের আগা-মাথা পুরোটা মাথায় নিয়ে এমন ভাবে সাজাতে হবে যেনো চোখ বন্ধ করলেই আপনি আপনার গল্পটাকে সিনেমাকারে দেখতে পান।শর্ট ফিলিমের জন্য বাংলাদেশে এখনো কোন স্পন্সরশিপ পাওয়া যায়না।একটা চমৎকার লোকেশন আপনার সিনেমার পুরা ডাইমেনশন ঘিয়ে দিতে পারে। সুন্দর লোকেশন মানে কক্সবাজার না। আপনার বন্ধুর ছাদ ও হতে পারে চমৎকার লোকেশন।শুটিং খুব পেইনফুল একটা জিনিস। পরিচালনা, সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং, সাউন্ড এডিটিং, ভিসুয়াল এফেক্ট আর অভিনেতা-অভিনেত্রি সহ সব শিল্পীর একক প্রচেষ্টায় একটি ছবিকে অনবদ্য করা সম্ভব ।১৯৫৬ সালে ঢাকায় প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’র উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছিল পুরান ঢাকার ‘রূপমহল’ সিনেমা হলে।একজন দক্ষ মুভি এক্সপার্ট হতে ইচ্ছা করে। মাঝে মাঝে নিজেকে বলি- দেখা থাকতে হবে প্রচুর মুভি। মুভি জাজ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। মুভি নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা আবশ্যক। সর্বোপরি প্রয়োজন শক্তিশালী মুভি সেন্স।ক্যামেরা কে একটু ডানে বা বায়ে বাকিয়ে এই শট টা নেয়া হয়। হরর মুভি তে এই শট টা বেশী দেখা যায়। অথবা, একশন দৃশ্যে নায়ক বা ভিলেইন এর আগমন। এই শট দর্শকের মনে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরী করে। ক্যামেরা একবার ডাইনে যায় তো একবার বায়ে। উপর থেকে নেয় তো, নীচ থেকে। কাছ থেকে নেয়তো আবার দূর থেকে। এই সব শট এর একেক টা নাম আছে। জহির রায়হান নিঁপুন দক্ষতার সহিত চলচিত্র নির্মাণ শিল্পেও তিনি খুব অল্পসময়ে নিজেকে বিকশিত করেন। তার নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামান্য চিত্রগুলো যুদ্ধকালীন সময়ে বিশ্বমানবতার টনক নাড়িয়ে দেয়।ছবির নিজস্ব কোনো স্টাইল তৈরি করতে পারেন না অনেক পরিচালক।পিটার ট্রেভার্স একজন নামকরা চলচ্চিত্র সমালোচক। লেখেন রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনে। মাস্টার শট মানে হলো প্রথমে দূর থেকে একটা শট নেয়া যেনো দর্শক একটা আইডিয়া পেয়ে যায় আসলে কোথায় কি আছে বা কোথায় ঘটনা ঘটছে। যারা ফোটোগ্রাফী করেন- ভিডিও করা তাদের জন্য কোনো ব্যাপার না। হ্যান্ডি ক্যাম দিয়েই আপনি এক ঘন্টার নাটক বানাতে পারবেন।মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘টেলিভিশন’ আর ‘থার্ড পারসন সিংগুলার নাম্বার’ ছবি দুটি দেখেছি। আমার ভালোই লেগেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, তিনি অনেক মেধাবী একজন নির্মাতা। শুধু তা-ই নয়, একজন প্রাণচঞ্চল মানুষও বটে।বিজ্ঞাপন নির্মাণ মিডিয়ার সৃজনশীল মাধ্যম অন্যতম। সরকারি চ্যানেলের পাশাপাশি বেসরকারি চ্যানেলগুলোর প্রসারে বড় একটি জায়গা পেয়েছেন বিজ্ঞাপন নির্মাতারা।৭ একর জমির ওপর অবস্থিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন বা বিএফডিসি। এর মধ্যে রয়েছে একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি শব্দগ্রহণ ভবন, একটি ডিজিটাল সাউন্ড কমপ্লেক্স, দুটি সম্পাদনা ভবন, একটি ঝর্ণা স্পট, একটি সুইমিং পুল, একটি পার্ক এবং তিনটি খোলা জায়গা। যেখানে সেট নির্মাণ করে শুটিং করা যায়। এছাড়া রয়েছে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রায় ১০টি সংগঠনের স্টাডিরুম ও একটি ক্যান্টিন।স্টিফেন হকিং অনেক অনেক বেশী মেধাবী , এ যুগের সবচেয়ে প্রতিভাবান । তার বইয়ে তিনি বিগ ব্যাং বিষয়ে বলেছেন সকল বস্তুই একটি বিন্দু থেকে উদ্দেশ্যহীনভাবে বিষ্ফোরিত হয়ে দুরে ছিটকে গিয়ে গ্রহ , নক্ষত্র সৃষ্টি করেছে ।আবার অপর বিজ্ঞানী ডারউইন বলেছেন :মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু নিজ থেকেই স্বতস্ফুর্তভাবে আকস্মিক ক্ষমতার কারণে উদ্দেশ্যহীনভাবে সূষ্টি হয়েছে । আমি মনে করি, সব কিছুর সাথে- সব কিছুর সামঞ্জস্য আছে। অদৃশ্য ভাবে হলেও আছে।“Cinema is a matter of what's in the frame and what's out” ― Martin Scorseseহুমায়ূন আহমেদ বলেন- আমি দেখলাম যে আমার কিছু গল্প নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন নাটক তৈরি করেছে। আমি নাটকগুলো দেখতাম আর মনে হতো আমি নিজে যদি একটা তৈরি করতে পারতাম। সেটা কেমন হতো ? ওদের চায়তে ভালো হতো না ওদের চায়তে মন্দ হতো? আমি নুতন কিছু কি করতে পারতাম? ওই আগ্রহ থেকেই আমি নাটক বানানো শুরু করি। আর সিনেমাটা তৈরি করার পিছনে মূল কারণটা হচ্ছে এত বড় একটা মুক্তিযুদ্ধ হয়ে গেল আমাদের দেশে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কোন ভালো ছবি হয় নাই। তাই আমার সব সময় মনে হতো যে একটা ভালো ছবি হওয়া দরকার। আমি আগুনের পরশ মনি ছবিটা বানালাম্ এটা এমন নয় যে একটা বিশাল কিছু করে ফেলেছি। চেষ্টা করেছি বলা যেতে পারে। ডেড পয়েট সোসাইটি: এই ছবিতে রবিন উইলিয়ামসকে দেখে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিলাম। উইটনেসের পরিচালক পিটার উইয়ারের এই ছবিটি ভিন্ন রকমের এক অনুভূতি নিয়ে আসে। এক স্কুলে শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে ছবি। এক কথায় অসাধারণ মুভি।একেই বলে শুটিং বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক এবং সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায় রচিত একটি নন-ফিকশন গ্রন্থ। বইটিতে তিনি ছবির শুটিং করতে গিয়ে যেসব মজার ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন বা মনে রাখার মত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন সেগুলোর কথা তুলে ধরেছেন।
false
rn
ইংরেজি সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (নয়) ৮১। 'দি আদার সাইড অভ মিডনাইট' লেখক- সিডনি শেলডন। এটাকে কী বলবেন? থ্রিলার নাকি আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া গ্ল্যামারাসের আড়ালে চাপা পড়া অন্ধকার এক জগতের বাস্তব প্রতিচিত্র? যেহেতু বইয়ের নাম "দ্যা আদার সাইড অফ মিডনাইট "এবং লেখক সিডনি শেলডন, সে হিসেবে সবাই থ্রিলারই বলবে। কিন্তু আমি এটাকে একচেটিয়া থ্রিলার বলতে রাজি নই। সামাজিক উপন্যাস? বলা যায়। রোমান্টিক উপন্যাস? সন্দেহ নেই! থ্রিলার? তা তো বটেই!৮২। 'দ্য রানএওয়ে জুরি' লেখক- জুন গ্রিশাম। ওরা জুরির সদস্য বারোজন নারীপুরুষ। একটা বহু বিলিয়ন ডলার তামাক ক্ষতিপূরণ মামলার রায় বিবেচনার দায়িত্বে আছে ওরা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দুই পক্ষের উকিল, জুরি, কনসালট্যান্ট, জুরির প্রতিটি সদস্যের উপর নজর রাখছে, চেষ্টা করছে নাক গলানোর। অনুকুল রায়ের জন্য যে কোন কিছু করতে পারে ওরা। কিন্তু অল্প সংখ্যক লোক জানে আসল কথা, এই জুরিতে একজন লোক নেপথ্যে থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে, রায়টা আখেরে সেই ঠিক করবে। দু’নম্বর জুরর হিসেবেই সে পরিচিত, যদিও তার একটা অন্য অতীত পরিচয় আছে এবং বাইরের একটা সুন্দরী মেয়ে তাকে সাহায্য করছে। এবং যখন একটা কর্পোরেট সাম্রাজ্য টালমাটাল অবস্থায় পড়েছে, যখন একটি পরিবারের দুঃখকে পুঁজি করে উকিলেরা আখের গোছাতে ব্যস্ত তখন দু’নম্বর জুরর এর গোপন অতীত উঠে আসছে... লোভ আর দুর্নীতির চরম সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে।৮৩। 'কামিং অফ এজ ইন সামোয়া' লেখক- মার্গারেট মিড। এই বইয়ের লেখক ছিলেন একজন আমেরিকান সাংস্কৃতিক বিশেষজ্ঞ। তিনি 'সামোয়া'-তে গিয়েছিলেন ১৯২০-এ আমেরিকানদের যৌনতার উপর রিপোর্ট করতে। কিছু মেয়ে মার্গারেটকে তাদের বন্য যৌনতার অভিজ্ঞতার কথা বলে। মার্গারেট সেগুলো সত্যি ধরে নেয় যদিও সেগুলো ছিল বানানো কথা। একটি মেয়ে স্বীকার করে নেয় যে, তারা আসলে তার সাথে মজা করে এগুলো বলেছিলো। এর ফলে আমেরিকার নৃ-বিজ্ঞানিদের উপর ব্যাপারটা অনেক প্রভাব ফেলে। ৮৪। 'অ্যান্ড টু থিংক দ্যাট আই স ইট অন মালবেরি স্ট্রিট' লেখক- সস। ২৩ তম প্রকাশকের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর হতাশ মনে বইটির পান্ডুলিপি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সস। এ সময়ই মেডিসিন এভিনউতে পুরোনো কলেজের এক দোস্তের সাথে দেখা। তার এই বন্ধুই আবার ভেনগার্ড প্রেসের ছোটদের বইয়ের সম্পাদক। পান্ডুলিপিটা দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠলেন তিনি। ২০ মিনিট বাদে বই প্রকাশের চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন সস। এখন পর্য্ন্ত বইটির বিশটির বেশি সংস্করণ প্রকাশ পেয়েছে। ৮৫। 'কনটিকি' লেখক- রেনাড ম্যাকনেলি। ১৯৫০ সালের কথা। লেখক মেকনেলি বইটি প্রকাশ করতে সম্মত হওয়ার আগে ২০ জন প্রকাশকের দুয়ারে ধরনা দিয়েছিলেন হেয়ারডেল। কিন্তু কেউই ভেলায় চেপে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার দুর্দান্ত এই কাহিনী ছাপার যোগ্য বলে মনে করেন নি। প্রকাশের পরপর দুই বছর শীর্ষ দশ মননশীল বইয়ের তালিকায় ঠাই পায় এই বইটি। এ পর্য্ন্ত বিভিন্ন ভাষায় এর মুদ্রণ সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ৮৬। 'ভার্টিকাল রান' লেখক- জোসেফ আর গারবার। একবার ভাবুনতো হঠাৎ যদি পরিচিত পৃথিবীটা পাল্টে যায় আপনার, খুব কাছের মানুষগুলো যদি খুন করতে চায় আপনাকে, কেমন লাগবে আপনার? এমনই ঘটেছে বইটির কাহিনীতে। মাত্র একটি দিনের কাহিনী নিয়ে এমন উপন্যাস আর আছে কিনা মনে করতে পারছি না। অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ডেভ এলিয়ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পজিশনে কাজ করে একটি মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে। সকাল হওয়ার সাথে সাথে নিঃতেজ নিউইয়র্ক সিটি জেগে উঠছে ধীরে ধীরে। প্রতিদিনের মত আজও ডেভ এলিয়ট সকাল সকাল তার অফিসে পৌছে গেলো। পঞ্চাশ তলা অফিসের ৪৫ তলায় সে বসে। ৮৭। 'দ্য টোয়াইলাইট' লেখক- স্টেফিন মেয়ার। ভিন্ন ধর্মী দুই চরিত্র -বেলা সোয়ান এবং এ্যাডওয়ার্ড কুলিন। বেলা আকর্ষণীয়া, সুন্দরী তম্বী তরুণী,কিন্তু এ্যাডওয়ার্ড সুদর্শন তরুণ ভ্যাম্পায়ার। এই অসম চরিত্রের দুই তরুণ-তরুণী, একে অপরের ভালোবাসার আবর্তে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে। ফরকস্ নামক ছোট্র শহরে দু’জনের ভালোবাসা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনা এবং এক রহস্য। ৮৮। 'অন দ্যা রোড' লেখক-জন কেরুয়াক। লেখক জন কেরুয়াকের এই বইটি কৈশর এবং রক্ষণশীল ব্যক্তিদের জন্য নয়। অথবা কে জানে বইটি পড়ার পর হয়তো আপনিও এক জায়গায় আর থিতু হয়ে থাকতে চাইবেন না! অথবা দূর পাল্লার রাস্তায় ইশারা করে লিফট চাওয়ার ব্যাপারটাও পেয়ে বসতে পারে! বইটির বৈশিষ্ট্য মূলত কেরুয়াক এবং তার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী লেখক বন্ধুদের নিয়ে আমেরিকায় ছোট ছোট কিছু ভ্রমণ। আত্মজীবনী নির্ভর এই বইটিতে দুইজন বিবরণ দাতার পরিচয় পাওয়া যায়। সমস্ত পথে গান, কবিতা এবং ড্রাগের উপস্থিতি দেখা যায়। এছাড়াও ডিন মরিয়ার্টির জীবন এবং নারীদের প্রতি লালসা গল্পে একটি অসাধারণ গতি তৈরি করে।৮৯। 'ম্যাডাম বোভারি' লেখক- গুস্তাভ ফ্লবার্ট। একজন চিকিৎসক নারীর জীবনের নানা বর্ণিল দিকগুলোর অসাধারণ উপস্থাপন উপন্যাসটিকে হৃদয়ছোঁয়া করেছে পাঠকদের কাছে। উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনের আড়ালে একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের খোঁজে নতুন করে স্বপ্নবোনা এবং সব প্রতিকূলতাকে উপড়ে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার গল্প উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে পাঠকদের প্রতিটি পৃষ্ঠা পড়ে যাওয়ার পেছনের আসল শক্তি। ৯০। 'জোনাথন লিভিংস্টোন সিগাল' লেখক- রিচার্ড বাখ। দ্রুতগতিতে উড়ে চলা একটি গাঙচিলকে নিয়ে লেখা বাখের ১০ হাজার শব্দের এই কাহিনী প্রকাশকের কাছে এতটাই অলাভজনক মনে হয়েছে যে ১৮ জন প্রকাশক এটি ছাপার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তারপরেই ম্যাকমিলান বইটি ছাপতে রাজি হয়। ক্রমেই বাড়তে থাকা বিক্রি ১৯৭২ সালে মাসের সবচেয়ে বিক্রীত বইয়ের সম্মান এনে দেয় তাকে। এভন বইটির পেপারব্যাক সয়স্করণ বিক্রি করে ১০ লাখ। ১৯৭৫ সাল পর্য্ন্ত এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয় ৭০ লাখ কপির বেশি।
false
rn
জীবনে সাফল্য পেতে চান _ একজন ওয়েস্টার্ন লেখকের নাম লুই লামুর। তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত লেখক। জীবনে তিনি উপন্যাস লিখেছিলেন ৩৫০টি। পুরস্কার পেয়েছেন অসংখ্য। তার লেখা অনুকরণ করে বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে ওয়েস্টার্ন সিরিজ। নানা ভাষায় তার লেখা অনূদিত হয়েছে। শুনবেন তার প্রথম জীবনের কাহিনী? তার প্রথম উপন্যাস তিনশো প্রকাশক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা হলে লেখালেখি অনেক আগেই ছেড়ে দিতাম। কিন্তু তিনি তা করেননি। নিজ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। তাই তিনি সফল হয়েছিলেন।লক্ষ্য মানুষের জীবনের গতি নির্ধারক। লক্ষ্য মানুষকে দেয় সফল হওয়ার প্রেরণা।হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। শুধু ধৈর্য ধরতে হবে। ব্যর্থতার গ্লানি একদিন মুছবেই। তারপর আসবে সাফল্যের স্বর্ণসিঁড়ি। আপনি সেই সিঁড়ি ভেঙ্গে শুধু ওপরেই উঠবেন।সাফল্য কেউ আপনাকে দিয়ে যাবে না। আপনাকেই ছিনিয়ে আনতে হবে সফলতার সোনার হরিণকে। কল্পনাশক্তি মানুষকে তার জীবনের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেয়। যখন এই কল্পনাশক্তি অনুসারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তারা অনুপ্রেরণা লাভ করে।ছোটবেলা থেকে কোনো কিছুকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে মনেপ্রাণে ধারণ করলে তা একদিন বাস্তব হবেই। লিউন ইফরিস একজন বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ লেখক। তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের নাম এক্সোডাস। মজার কথা হচ্ছে, এই লেখক হাই স্কুলে পড়াকালীন ইংরেজিতে মোট তিনবার ফেল করেছিলেন। আর যাই হোক, তার তো ইংরেজি ভাষার লেখক হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল লেখক হওয়ার, তাই শত বাধার মুখে তিনি হার মানেননি। কপাল গুণে নয়, চেষ্টার গুণেই তিনি তার সাফল্যের সোনার হরিণ ধরতে পেরেছিলেন। তারপর শুধুই সাফল্য। সফল হলিউড চিত্র পরিচালক ক্লিন্ট ইস্টউড অভিনয়ে সুযোগ পাওয়ার জন্য ১৯৬৯ সালে যান ইউনিভার্সাল পিকচারের স্বত্বাধিকারীর কাছে। প্রতিষ্ঠানের মালিক তাকে জানিয়েছিলেন, ‘তোমার চেহারা ভালো নয়। তা ছাড়া তুমি কথা বল ধীরে ধীরে। তুমি অন্য পেশার চেষ্টা করো। এই ক্লিন্ট ইস্টউড পরবর্তীতে পরিশ্রম আর নিজ লক্ষ্যে স্থির থেকে হয়েছেন হলিউডের অন্যতম সেরা অভিনেতা। এখন তিনি একজন সফল পরিচালক। আবিষ্কারক ছিলেন টমাস আলভা এডিসন। শৈশবে মিশিগানের পোর্ট হিউরনের স্কুলে তাকে ভর্তি করানো হলে শিক্ষকরা এডিসনের মাকে ডেকে এনে জানালেন, আপনার ছেলে খুব অলস। তাছাড়া সে সহজে কিছুই বুঝতে পারে না। এডিসনের মা তাকে স্কুল থেকে বাড়িতে এনে নিজেই পড়াতে লাগলেন। তরুণ এডিসন প্রথমেই বিজ্ঞানের প্রেমে পড়ে যান। তার বয়স যখন দশ, তখন তিনি নিজেই তৈরি করেছিলেন তার গবেষণাগার। সারা জীবনে তিনি তেরোশোটি আবিষ্কার করেছিলেন। তার এই অসাধারণ সাফল্যের কারণ জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন- ‘এক শতাংশ মেধা আর ৯৯ শতাংশ পরিশ্রম।’ দুই হাজার বার চেষ্টা করে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন ইলেকট্রিক বাল্ব। এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, দুই হাজার বার ব্যর্থ হওয়ার অনুভূতি কেমন? এডিসনের ভাষায়, ‘আমি একবারও ব্যর্থ হইনি। বাল্বটা আবিষ্কারের দুই হাজারটা প্রক্রিয়া ছিল। আমি শুধু সেসব অনুসরণ করেছি।’ জন মিল্টনের নাম আমরা অনেকেই জানি। তিনি ৪৪ বছর বয়সে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান। এর ষোল বছর পর তিনি লিখেছিলেন বিশ্বসাহিত্যের অমর সৃষ্টি ‘প্যারাডাইস লস্ট’সহ আরো অনেক ক্ল্যাসিক। কারণ সাফল্যের শেষ নেই। আল্লাহ কেন কাউকে গরীব কাউকে ধনী, কাউকে সাদা কাউকে কালো, কাউকে সুখী কাউকে দু:খী বানালেন? তাদের এ প্রশ্ন একেবারেই অবান্তর। কারণ, আল্লাহ যদি সবাইকে সমশ্রেণীর, সমমানের বানাতেন তাহলে তো কেউ কাউকে মানতোনা পরোওয়াও করতোনা। আর এতে দেশ ও সমাজের শৃঙ্খলা চরমভাবে ব্যহত হতো।মানুষের এক অদ্ভুত আবেগ রয়েছে যার নাম আশা, সে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে আগামীকালের অপেক্ষায়। মানুষ তার ভবিষ্যতের জন্য আশা করে, স্বপ্ন দেখে বলেই নিজের মাঝে সাহস আর শক্তি খুঁজে পায় বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু আবার এই আশার উল্টো পিঠে বাস করে হতাশা যে মুহূর্তের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে অতল অন্ধকারে। হতাশ হওয়া বা নিরাশায় আক্রান্ত হওয়ার পিছনে রয়েছে হাজার কারণ।আমি সব সময়ই আমার সেরা সময় আর দুঃসময়ের কথা চিন্তা করি।আমি সব সময় অন্যদের কথা চিন্তা করে শিহরিত হই।অবশ্যই নীতির সঙ্গে কাজে মনোযোগ দিতে হবে। শক্তিশালী মন তৈরি করতে হবে প্রেরণা গ্রহণের জন্য। এই শক্তিশালী মনই আপনার মাঝে অনেক কিছু নিয়ে আসে, আপনি নিজেই নিজেকে নতুন করে চিনবেন। পৃথিবীতে সবাই জিনিয়াস, কিন্তু আপনি যদি ১টি মাছকে তার গাছ বেয়ে উঠার সামর্থ্যের উপর বিচার করেন তাহলে সে সারা জীবন নিজেকে শুধু অপদার্থই ভেবে যাবে। - আলবার্ট আইনস্টাইন
false
hm
মশলার মাসালা আমরা তা-ই, যা আমরা খাই। সেই মাছ-মাংস-শাকসব্জিই তো। এ-ই তো খেয়ে আসছে মানুষ। তারপরও মানুষে মানুষে এতো ভেদাভেদ কেন? উত্তর মিলবে মশলায়। কিছুদিন আগ পর্যন্তও মশলা নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। মশলার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভেদজ্ঞান এখনও হয়নি। তবে মনে হচ্ছে এই মশলাই আমাকে আমি করে তুলেছে। কারণ আমি তা-ই, যা আমি খাই। তবে মশলামূর্খ কি আমি একাই? আমার মতো দু'চারজন কি নেই এই বিশাল পৃথিবীতে? নিদেনপক্ষে সচলায়তনের পাঠককূলের মধ্যে? আসুন শুরু করি দারচিনি দিয়ে। এই দারচিনির লোভেই ইয়োরোপীয়রা রাস্তা শুঁকতে শুঁকতে হানা দিয়েছিলো ভারতবর্ষে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomum zeylanicum, কারণ তা এককালে কেবল সিলোনে (শ্রীলঙ্কা) মিলতো। আরবরা এককালে দারচিনির একচেটিয়া ব্যবসা করেছে ইয়োরোপ আর চীনে। তাদের গল্পটা ছিলো এমন, দারচিনি পাখি বলে একটা পাখি আছে, যা দূর দেশের অজানা সব জায়গা থেকে দারচিনির কাঠি এনে বাসা বোনে। আরবরা সেই বাসা খুঁজে খুঁজে বার করে দারচিনি জড়ো করে বিক্রি করে। এই গল্প চতুর্দশ শতকের শুরু পর্যন্ত খেয়েছে লোকে। তারপর ধরুন এলাচ, Elettaria cardamomum। আমরা যদিও একে রান্নায় ব্যবহার করি, বা চা-য়ে খাই, আরব আর তুরস্কে লোকে একে হুঁকোতেও ফিট করে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এর ব্যবহারের প্রাধান্য ভেষজ ঔষধে। কিছুদিন আগ পর্যন্তও নেপাল ছিলো এলাচ উৎপাদনে শীর্ষে, এখন এগিয়ে গেছে গুয়াতেমালা। ২০০৭ সালে তারা ১৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এলাচ রপ্তানি করেছে। জ্যাঠা প্লিনি (Pliny the Elder) গজগজ করে বলেছিলেন, "এমন কোন বছর নেই যে ভারতবর্ষ রোমান সাম্রাজ্যের ট্যাঁক থেকে পাঁচ কোটি সেস্টারশিয়াস খালি করে নেয় না।" অভিযোগ ছিলো লবঙ্গের বিরুদ্ধেই। বহু প্রাচীন কাল থেকেই লবঙ্গ, Eugenia aromaticum, ইউরেশিয়া জুড়ে সমাদৃত ছিলো, এমনকি খ্রিষ্টপূর্ব ১৭২১ সালের একটি সিরীয় মাটির জারে লবঙ্গ পাওয়া গেছে। তবে এর উৎপত্তিস্থল ভারতবর্ষে নয়, ছিলো ইন্দোনেশিয়ার অল্প কয়েকটি দ্বীপে (আজকের মালুকু দ্বীপপুঞ্জে), যেগুলো মশলাদ্বীপ নামে পরিচিত ছিলো। সপ্তদশ আর অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ব্রিটেনে লবঙ্গের দাম ছিলো কমপক্ষে সমান ওজনের সোনার দামের সমান। লবঙ্গ শুধু স্বাদেই চমৎকার নয়, এটি নানা পৈটিক গিয়ানজাম সারায় (বিশেষ করে কৃমি)। জিরা (Cuminum cyminum) তো আরো খান্দানি জিনিস। সেই প্রাচীন সুমেরিয় সভ্যতার সময় থেকে জিরা ডানে বামে ছড়িয়ে পড়েছে। লোককথা অনুযায়ী জিরার উৎপত্তিস্থল পারস্যের কেরমুন এর আশেপাশে, ফার্সিতে তেলা মাথায় তেল ঢালার সমার্থ বাক্য হচ্ছে কেরমুনে জিরা নিয়ে যাওয়া। জিরা ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে মেক্সিকো পর্যন্ত বিপুল জনপ্রিয়। জিরা উৎপাদনে এগিয়ে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, পাকিস্তান আর তুরস্ক। ম্যারাথনের যুদ্ধ সম্পর্কে আমরা জানি, কিন্তু সেই যুদ্ধক্ষেত্রের নামের অর্থ কি জানি সবাই? বাংলা করলে দাঁড়াবে, মৌরিগাছিয়া। ম্যারাথন মানে মৌরি, আংরেজিতে যাকে বলে ফেনেল, বৈজ্ঞানিক নাম Foeniculum vulgare। কথিত আছে, প্রমিথিউস মৌরির একটি শুকনো ডাল দিয়েই দেবতাদের কাছ থেকে আগুন চুরি করে এনেছিলেন। মৌরি মূলত ভূমধ্যসাগরের আশপাশের অঞ্চলের মশলা, সেখান থেকেই ডানেবামে ছড়িয়েছে। আমরা মৌরি, অর্থাৎ মৌরিগাছের বীজ খাই মশলায় আর পানে, তবে ইতালিতে এর কন্দও সালাদে ব্যবহৃত হয়, রান্নাও হয় সব্জি হিসেবে। মেথি বা ফেনাগ্রিক (Trigonella foenum-graecum) ও জিরার মতোই প্রাচীন খান্দানি বংশের জিনিস, খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দেও এর দেখা মিলেছে মেসোপটেমিয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননে, তুত আনখ আমেনের সমাধিতে। ধারণা করা হয় এর মূল মধ্যপ্রাচ্যেই। মেথি আবিসিনীয় অঞ্চলে রুটি আর ঘি তৈরিতে বিপুলভাবে ব্যবহৃত হয়। মিশরে মেথির চা বেশ জনপ্রিয়। আরবে মিষ্টি তৈরিতে মেথি ব্যবহৃত হয়, সেখানে এটি হুলবা নামে পরিচিত। কালিজিরার নাম নিয়ে একটা হুলুস্থূলু কিন্তু চলমান। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nigella sativa, সেই গণ হিসেবে একে নাইজেলা সিড ডাকাটাই বোধহয় নিরাপদ, কারণ চলমান বিকল্প নামগুলি প্রায় সবক'টাই অন্য জিনিসকে নির্দেশ করে। কালিজিরার আক্ষরিক অনুবাদ আছে আংরেজিতে, ব্ল্যাক কিউমিন, কিন্তু সেটা মূলত অন্য একটি মশলা (Bunium persicum)কে নির্দেশ করে, যেটিকে হিন্দিতে শাহীজিরা বলা হয় (আমাদের দেশের রান্নায় এটি মোটেও প্রচলিত নয়)। পারসি দোকানে গেলে সিয়াদানা খুঁজতে পারেন, রুশ দোকানে গেলে চেরনুশকা, তুর্কি দোকানে গেলে চোয়রেক ওতু, হিন্দুস্তানি দোকানে গেলে কালঞ্জি। কিন্তু ইংরেজিতে একে মোটামুটি অন্য সব মশলার সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। মৌরিফুল (ফেনেল ফ্লাওয়ার), রোমান ধনিয়া (রোমান কোরিয়ান্ডার), পেঁয়াজবিচি (ব্ল্যাক ওনিয়ন সিড), কালোতিল (ব্ল্যাক সেজামে), কালো পার্সিজিরা (ব্ল্যাক ক্যারাওয়ে)। একটাই স্বস্তিদায়ক নাম আছে, ব্ল্যাকসিড। কালিজিরা সুগন্ধ আর ঔষধি গুণের জন্যে বিখ্যাত। সর্দি লাগলে কালিজিরার ভর্তা খেয়ে দেখতে পারেন, বেশ কাজে দেয়। কালিজিরাও অতি প্রাচীন কাল থেকে মিশর ও আরবে পরিচিত। ধনিয়াপাতা (সিলান্ত্রো বা চাইনিজ পার্সলি) আর ধনিয়াবীজ , দু'টোই আমাদের রান্নায় কমবেশি অবশ্যম্ভাবী। ধনিয়া (Coriandrum sativum) ঠিক কোথায় প্রথম ডোমেস্টিকেটেড হয়েছে তা জানা যায় না, তবে ধারণা করা হয় গ্রীসে। এখন পর্তুগাল বাদে অন্য কোন ইয়োরোপীয় স্থানীয় ডিশে ধনিয়া দেখা যায় না। এবার আসল কথায় আসি। পাঁচফোড়নে কোন পাঁচ মশলা আছে, জানেন? মেথি, কালিজিরা, সরিষা, মৌরি আর জিরা। পাঁচফোড়ন কেন লাগে জানেন? রসুনের আচার বানাতে। আর রসুনের আচার আমার সেইরকম দারুণ লাগে। মশলা নিয়ে এতো গবেষণার রহস্য সেখানেই। বহু মশলা জীবনে চোখেও দেখি নাই। উইকিপিডিয়ার কল্যাণে মশলার হাই রেজোলিউশন ছবি পেয়েছি, বৈজ্ঞানিক নামের সূত্র ধরে জার্মান আর আংরেজি নামও বার করেছি। এখন শুধু দোকানে গিয়ে কেনা বাকি। এখানে আফগান দোকানে অধিকাংশ মশলার গায়েই কোন নামধাম লেখা থাকে না, তুর্কি দোকানে লেখা থাকে তুর্কি নাম। কাজেই ছবিই ভরসা। যাবি কই? রসুনের আচার আমি খামুই খামু। ছবিসৌজন্যঃ উইকিমিডিয়া
false
mk
সড়ক যোগাযোগে উন্নয়ন হচ্ছে দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অধিকতর উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশে ইউনিয়ন, থানা ও জেলা পর্যায়ে বর্তমানে কত সংযোগ সড়ক রয়েছে, আর নতুন করে কত সড়ক প্রয়োজন রয়েছে তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। উন্নয়নের সুফল গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তাই এখন থেকে গ্রামের সড়কগুলোও ভারি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করতে হবে। এজন্য মাস্টারপ্ল্যান থাকা প্রয়োজন। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ সংক্রান্ত ‘লোকাল গবর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। সভায় প্রায় ১২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের মোট আটটি প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হয়।রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সভায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও প্রকল্পগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সড়ক নির্মাণের কাজ করে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ দুটি সংস্থা মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ করবে। মন্ত্রী বলেন, সড়ক নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকল্প সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড টানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এতে প্রকল্পের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করা যাবে এবং প্রকল্প ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে চর এলাকায় ভূমিহীনদের জমি বরাদ্দ, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসতবাড়ি নির্মাণ এবং এর সুবিধাভোগীরা কোথায় চাষাবাদ করবে, এ বিষয়ে পরিকল্পিত পদ্ধতি গ্রহণের নির্দেশনা দেন।মন্ত্রী বলেন, সভায় অনুমোদন পাওয়া আট প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৯ হাজার ১৯২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থা দেবে ৮৭৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাওয়া যাবে ২ হাজার ৪৮৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।মুস্তফা কামাল বলেন, সভায় ৫ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে লোকাল গবর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩ (এলজিএসপি) এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৪ হাজার ৫৫০ ইউনিয়ন পরিষদে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৩ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা সরকার বহন করবে। বাকি ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ মেয়াদকালে এটি বাস্তবায়িত হবে।পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। গত কয়েক বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে অভাবনীয় পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পল্লী এলাকায় অবকাঠামো ডিজাইন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বলে তিনি জানান। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এখন অত্যন্ত চমৎকার বর্ণনা করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি সৌদি পত্রিকায় লেখা হয়েছে- সেখানকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান। তারা কেউ কেউ বাংলাদেশকে সেকেন্ড হোম ভাবছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি সফরের পর সেখানে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প ॥ একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পসমূহ হলোÑ জলবায়ু সহনশীল গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে, ৪১৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। খুলনা বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), মিরপুর সেনানিবাসের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২১ কোটি ৯ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানাধীন অন্যান্য আবাসিক এলাকার উন্নয়ন (২য় পর্যায়), এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।এছাড়া নাটোর রোড (রুয়েট) হতে রাজশাহী বাইপাস পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে- ১৩৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এটি সংশোধিত (১ম) আকারে অনুমোদন পেয়েছে। অনুমোদন পেয়েছে বরিশাল ও সিলেট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এবং রেঞ্জ রিজার্ভ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। পটুয়াখালী-পায়রা ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্প- এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৬ কোটি ১ লাখ টাকা। সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫২
false
rn
রাজীব এবং হিমির গল্প (ল্যুভেন - লা - ন্যুউভ , বেলজিয়াম থেকে আমার অনুরোধে এই লেখাটা লিখেছেন আমার আপা নীলাঞ্জনা নীলা।আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ।তার মনটা আকাশের মতোই বিশাল।আচ্ছা একজন মানুষ এতো ভালো হয় কি করে?)হিমিকে নিয়ে রাজীবের অনেক স্বপ্ন । এতো ভালোবাসা এই ডিজিটাল যুগে খুব কমই দেখা যায় । রূপকথার রাজ্যে নিজেদের নিয়ে এমন করে বাস করা এ শুধু সম্ভব রাজীব আর হিমির দ্বারা । মাঝ রাত্রে একদিন কি মাথায় চাপলো বেড়িয়ে পড়লো হিমিকে দেখার জন্য । কিন্তু এ তো আমার পরিচালকের উপর নির্ভর করা সিনেমা বা নাটকের কাহিনী নয় । গেটের কাছে সিকিউরিটি , বাইরে বোর্ডে টানানো "কুকুর থেকে সাবধান ।" একদিন হিমি বলেছিলো তাদের কুকুরটা খুবই ভয়ঙ্কর । অপরিচিত কাউকে দেখলে কামড়ে ছিঁড়ে ফেলে । রাজ়ীব জানতে চাইলো তবে বেঁধে রাখে না কেন ? হিমির মতে বাবার হুকুম । তবু চাইলো একবার গেইটের উপরে উঠতে , শুধু শব্দ শুনেই কুকুরের তো তারস্বরে চিৎকার । পড়ি কি মরি করে দৌঁড় । ওই রকম অবস্থায় একমাত্র নায়ক ছাড়া সবাই পা পিছিয়ে নেয় । যদিও ব্যক্তি জীবনে সবাই নায়ক কিংবা নায়িকা , কিন্তু সবার তো আর স্ট্যান্টম্যান থাকে না । পরের দিন হিমিকে একথা জানানোর পর হিমি তো হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছিলো । তা এমন পাগলামী না করলেই কি নয় ? প্রতিদিন তো দেখাই হচ্ছে , তারপরও কেন এমন করো বলো তো ? তোমায় নিয়ে আর পারা গেলো না । পুরুষ মানুষ কে এমন প্রতিক্ষা সাজে না রাজ । রাজীব বলেই ফেললো তার মানে তুমি আমার জন্য প্রতিক্ষা করো না ? করবো না কেন , তবে তোমার মতো এমন পাগলামী করি না । কিভাবে যে তোমায় নিয়ে ঘর বাঁধবো , চিন্তা করছি । রাজীব রেগে তো আগুণ । ঠিক আছে আমি চললাম , এতো চিন্তা আর করতে হবে না তোমাকে । আর পেছনের দিকে না ফিরে সামনে হাঁটা শুরু করলো । হিমি পেছন থেকে ডাকছে এই রাজ যেও না , শোনো । রাজীব কি আর তাকায় ? এখন ভাবছে এমনটি আসলেই তার করা উচিৎ হয়নি । তারপর থেকেই তো হিমি কে আর দেখাই যাচ্ছে না । তবুও ভর দুপুর মাথায় করে পুরোটা কলা ভবন চক্কর দেয় । প্রতিটি চত্ত্বরে একটু করে থামে আবার চলা শুরু করে । হিমি কেন যে রাগ করলো আর আসছে না । এমনকি ফোন তাও রেখেছে বন্ধ করে । খুব কষ্ট হচ্ছে , বুকের ভেতর খামছে ধরছে শকুনী ঠোঁট । হিমি কে নিয়ে প্রচুর কবিতা লিখেছে রাজীব । আর সেগুলো এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে অনেক মেয়েরাই নিজেকে হিমির মতো সাজায় । রাজীবের প্রিয় রঙ নীল । অবশ্য সব ছেলেরাই নীল রঙ পছন্দ করে । কিন্তু নিজেরা নীল বলতে গেলে পড়েই না । রাজীব তার কবিতায় হিমি কে নীল শাড়ীতে সাজিয়ে বৃষ্টিতে ভেঁজায় , সবুজ গ্রামের মেঠো পথ ধরিয়ে হলুদ ধানের শীষের ঘ্রাণ নেয় । হিমির হাত এতো নরম , কোমল মনে হয় একটু জোরে ধরলে যেনো গলে যাবে । খুব আলতো করে ধরে রাজীব । একদিন হিমি কে বলেছিলো তোমায় রাত্রির শিশিরে জ্যোৎস্না দেখাবো । সেটা আবার কেমন জানতে চাইলে রাজীব বললো দেখলে বুঝবে । হিমি বলেছিলো আগে তো স্টুডেন্ট লাইফ শেষ হোক , তারপর জব , এরপর না শিশিরের জ্যোৎস্না । তাও যে পাগলামী করছো , আদৌ স্বপ্ন সফল হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত আমি । কেন কেন ? হিমি তুমি কি আমায় ভালোবাসো না ? অনেক ভালোবাসে হিমি এতো ভালোবাসা আর কেউ কোনোদিন পাবে না । সেটা রাজীব ভালো করেই জানে । তা নইলে ওর এতো পাগলামী কিভাবে সহ্য করে ? সবাই বলে কি পেলি রে হিমি রাজীবের মাঝে ? ও তোর যোগ্য না । প্রিয় বান্ধবী অনির সাথে পর্যন্ত মুখ দেখাদেখি বন্ধ । শুধু রাজীব কে পাগল বলেছিল বলে । তবু রাজীব বোঝেনা । এমন কেন করে ? কুয়াশা ভেঁজা জ্যোৎস্নায় নীল আকাশ নুয়ে পড়ে তোমার শাড়ীতেকপালের মাঝের নীল টিপতারাও লজ্জ্বা পায় , লুকিয়ে ফেলে মুখএসো আমি তোমায় শিশিরের গান শোনাই হিমি তোমার হিমে আমায় টেনে নাও আচ্ছন্ন করো চোখের নীলেদুপুরের উত্তাপ শুঁষে নিয়ে এবার চলো গোধুলীর দিকে রক্তিম রোদ্দুর খেলা করবে তোমার নীলেসেই রাতে স্বপ্ন দেখলো হিমি কে নিয়ে রাস্তায় হাঁটছে রাজীব । ব্যস্ত ঢাকা শহরে আজ এই পথ অনেক শান্ত । হিমি বললো কি ব্যপার এতো শান্ত কেন , কোনো গন্ডগোল হলো নাকি রাজ ? আমার ভয় করছে চলো ফিরে যাই । আলতো করে হাত ধরলো রাজীব ভয় নেই হিমি আমি আছি না ? ধানমন্ডি লেকের পার ধরে আজ আর কোনো প্রেমিক জুটি নেই । আহ্ কি শান্তি ! হিমি চলো আজ নাচবো আর গাইবো , কেউ দেখবে না । কেউ আমায় পাগলও বলবে না । হিমি লজ্জ্বায় মুখ নামিয়ে নিলো । এই প্রথম রাজীব হিমি কে লজ্জ্বায় লাল হতে দেখে হেসে ফেললো । এই হিমি কি হলো ? আচ্ছা নাচবো না , কিন্তু তোমায় গাইতেই হবে । আজ অনেক গান শুনবো তোমার । কি হলো গাইবে তো ? হিমি ছোট্ট করে হু বললো । ভালোবাসি ভালোবাসিএই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশীভালোবাসি ভালোবাসিআকাশে কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে দিগন্তে কার কালো আঁখি আঁখির জলে যায় ভাসি ভালোবাসি ভালোবাসিসেই সুরে সাগরকূলে বাঁধন খুলে অতল রোদন উঠে দুলেসেই সুরে বাজে মনে অকারণে ভুলে যাওয়া গানের বাণীভোলা দিনের কাঁদন হাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ।।এই হিমি রবীন্দ্রনাথ কে খুব হিংসে হয় আমার , সব সুন্দর , প্রেম সে নিয়ে গেছে । আমার কবিতায় তোমার সুর লাগেনা তাই । এই আমার কবিতায় সুর দেবে ?হিমি চলে যাও যখন বড়ো একা , নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মতো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদহীন এক যুবকপথে পথে কতো আলো ঝলমল করেঅন্ধকার শুধু অন্ধকার ছেয়ে থাকে আমার ডালপালায়আবার প্রতীক্ষা শুরু হয়ভোরের , দুপুরের , বিকেল , সন্ধ্যার তুমি যে কি এটায় কি সুর দেয়া যায় ! এতো হিংসে করো কেন ? আমি তো তোমায় ভালোবাসি , রবীন্দ্রনাথ কে নয় । চলো উঠি সন্ধ্যা হয়ে গেলো । রাজ কি হলো এই আমি আর থাকতে পারবো না । আবার শুরু করে পথ চলা । হেঁটে হেঁটে আসছে নিশ্চুপ নীরবতায় দুজন । হঠাৎ দেখে রাজীব হিমি নেই পাশে । কষ্টে নুয়ে পড়ে , চোখ জলে ভরে উঠে । ঘুম ভেঙ্গে যায় । শীতের রাত অথচ ঘেমে গেছে পুরোটা শরীর । উঠে বসলো রাজীব । সকালের আলো ফুঁটতেই বেড়িয়ে পড়লো হিমিদের বাসার উদ্দেশ্যে । গিয়ে সটান দাঁড়ালো খোলা গেইটের কাছে , তারপর হিমিদের বিশাল অট্টালিকার সামনে , কুকুর দৌঁড়ে আসছে রাজ়ীবের দিকে , ভ্রূক্ষেপ না করেই কলিং বেল চাপলো । হিমি আছে ? তাকে বলুন রাজ এসেছে । খুব দরকার , এখুনি ডেকে দিন । তারপর সোফায় গিয়ে বসে রাজীব । প্রতিক্ষা করে , অবনত দৃষ্টি নিয়ে হিমি আসে । কি ব্যাপার রাজ ? হঠাৎ এখানে ? আজ তো যেতাম এখন সুস্থ । রাজীব জানতে চাইলো , কি হয়েছিলো তোমার ? জ্বর ছিলো রাজ । তবে ফোন বন্ধ করে রেখেছিলে কেন ?চার্জার পাচ্ছিনা , বাপি - মামনি দেশের বাইরে , আমি একা বাসায় , কে কিনে দেবে ? তাই ।ল্যুভেন - লা - ন্যুউভ , বেলজিয়াম১৬ - ০৩ - ১০ ইং
false
ij
Pentatonic Scale_ বিশ্বজুড়ে অসম্ভব জনপ্রিয় একটি স্কেল গ্রিক শব্দ pente মানে পাঁচ, আর tonic অর্থ স্বরগ্রাম। এ দুটি শব্দ মিলে তৈরি হয়েছে Pentatonic শব্দটি যা দিয়ে পাঁচ নোটের একটি অতি জনপ্রিয় স্কেল বোঝায়। আসলে Pentatonic Scale এমন একটি স্কেল যে স্কেলে রবীন্দ্রনাথ থেকে আলম খান-প্রত্যেকেই নিজের অনবদ্য সংগীত প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। সময়ের দু প্রান্তে বেঁচে থেকে এই দুজনই কালজয়ী গান রচনা করেছেন ... পেন্টাটনিক মেজর স্কেল এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এই স্কেলে সাতটির বদলে পাঁচটি স্বর ব্যবহৃত হয়। সা রে গা পা ধা র্সা তবে এর অন্য ভ্যারিয়েশনও সম্ভব। যেমন: সা রে গা পা নি র্সা। এটি রাগ হংসধ্বনি। কৌশিকী চক্রবর্তীর কন্ঠে রাগ হংসধ্বনি। তবে পেন্টাটনিক মেজর স্কেল এর প্রকৃত রূপ হল সা রে গা পা ধা র্সা সি মেজর স্কেলে পেন্টাটনিক মেজর স্কেল এর স্বরগুলি নিু রুপ: C D E G A C স্কেলটি পাঁচস্বরের বলেই এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে: Any musical scale that has five notes to an octave, especially a major scale in which the fourth and seventh degrees are omitted. বাদ দেওয়া দুটি স্বর হল F ও B. সাত স্বরের স্কেলকে ওয়েষ্টার্ন মিউজিকাল সিস্টেমে বলে ডায়াটোনিক স্কেল। সি মেজর ডায়াটোনিক স্কেলের স্বরগুলি নিম্নরুপ: C D E F G A B C তাহলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে একটি ডায়াটোনিক স্কেল থেকে কীভাবে পেন্টাটনিক মেজর স্কেল তৈরি হয়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে জাতি বলে একটি শব্দ রয়েছে। সাত স্বরের রাগ হল ষাড়ব জাতির অর্ন্তগত। পাঁচ স্বরের পেন্টাটনিক মেজর স্কেল ‘ঔরব’ জাতি নামে পরিচিত। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের অনেক রাগই ‘ঔরব’ জাতির অর্ন্তগত। যেমন, পাহাড়ী, ভূপালী, দূর্গা । তবে পার্থক্যও রয়েছে। পাহাড়ী রাগের বাদী (রাগের সবচে গুরুত্বপূর্ণ স্বর) ‘সা’। আর ভূপালী রাগের বাদী “গা।” পেন্টাটনিক মেজর স্কেলে রবীন্দ্রনাথ এর ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি’ ...এ গানটি আজও সজীব ... আজও এ গানটি ঢাকা-কলকাতা শহরের ইট-কাঠ ফুঁড়ে আধা-গ্রামীণ এক শ্যামল বাংলার পরিবেশ তৈরির ক্ষমতা রাখে। আমার অন্তত তেমনই মনে হয়। পেন্টাটনিক মেজর স্কেলে আলম খান এর সুর করা বিখ্যাত একটি গান ‘ওরে নীল দরিয়া’; যে গানটি প্রথম রিলিজ হওয়ার বহু বছর পরে আবার নতুনপ্রজন্মনন্দিত হয়েছে এর অসাধারণ কথা ও সুরের কারণে। সমগ্র গান জুড়ে দূরত্বের একান্ত বিষন্নতা পাই যেটি রবীন্দ্রনাথের ‘মেঘের কোলেতে’ পাই না ...ওই গানে কেবলি কৈশরিক খুশি ছড়ানো ... সংগীতের অর্ন্তনিহিত রূপ ও শক্তি এখানেই নিহিত। “ফাইভ হানড্রেড মাইলস অ্যাওয়ে ফ্রম হোম” নামে পরিচিত ফোক গানটি ইউরোপ ও আমেরিকায় ষাটের দশকে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল । গীতিকার হেডি ওয়েস্ট। কারও কারও মতে ববি বেয়ার কে সহযোগী গীতিকার । ববি বেয়ার এর গাওয়া “ফাইভ হানড্রেড মাইলস অ্যাওয়ে ফ্রম হোম” ...আমার মতে এই গানটি বিশ্বজুড়ে পাঁচ স্বরের পেন্টাটনিক স্কেলকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গেছে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে রাগ ভূপালী-র স্থান অনন্য। অনেক শিক্ষার্র্থীই শিক্ষা জীবনে অনেক রাগ এড়িয়ে যায়, তবে ভূপালীকে এড়িয়ে যাওয়া সহজ নয় ঔরব জাতির অন্যতম রাগ বলেই। পাঁচ স্বরের পেন্টাটনিক স্কেলের আরেক বিস্ময় রাগ পাহাড়ী, এর স্বর কম্পনে পাহাড়ের নির্জন নৈঃশব্দই যেন ফুটে ওঠে ... এই গান ও কম্পোজিশনগুলি সবই পাঁচ স্বরের পেন্টাটনিক স্কেলের ওপর রচিত। অথচ, স্বর প্রয়োগের কারণে কী অসাধারণ স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টি হয়েছে। সংগীতের অর্ন্তনিহিত রূপ ও শক্তি এখানেই নিহিত। পেন্টাটনিক স্কেলের মাইনর রূপও হয়। সে সম্বন্ধে পরে আলোচনা করার ইচ্ছে রইল। সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১০ সকাল ১০:৫২
false
mk
হেফাজতের আড়ালে জঙ্গিরা তৎপর! বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামের আড়ালে জঙ্গিরা আবার সক্রিয় হচ্ছে – এ কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম৷ তাঁর দাবি, এর নেপথ্যে আছে জামায়াতে ইসলামী, যারা হেফাজতকে সামনে রেখে এ তত্‍পরতা শুরু করেছে৷একটি বিদেশি পত্রিকাও এ রকম খবর দিয়েছে৷ তাদের প্রতিবেদনেও হেফাজতের আড়ালে জঙ্গিদের সক্রিয় হওয়ার তথ্য জানানো হয়েছে৷ সেই প্রতিবেদন ধরেই ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের কাছে পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন যে, তাদের কাছেও এ ধরণের তথ্য রয়েছে৷ শুধু তাই নয়, তাঁর কথায়, এই জঙ্গিদের সংগঠিত করতে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামী৷মনিরুল ইসলাম জানান, তাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে দেখা যায় হেফাজতে ইসলামের অর্থের প্রধান যোগানদাতা জামায়াত৷ আর হেফাজতে ইসলামের মধ্যেই জামায়াতের লোকজন থাকায়, এরই মধ্যে হেফাজত অরাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে রাজনৈতিক চরিত্র পেয়েছে৷ আর ভেতরে ভেতরে সংগঠিত করা হচ্ছে জঙ্গিদের৷ রবিবার (০৫.০৫.১৩) ঢাকা অবরোধের নামে মতিঝিল এলাকায় প্রায় ৮ ঘণ্টা তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা৷ এতে মতিঝিল এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়৷ হেফাজতের কর্মীরা দোকানপাট, মার্কেট, বাণিজ্যিক ভবন, অফিস, গাড়ি সব কিছুতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷তিনি বলেন, এ জন্য হেফাজত ও জামায়াতের ওপর তারা যেমন নজরদারি বাড়িয়েছেন তেমনই জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে৷ তাঁর মতে, জামায়াতে ইসলামী নিজেদের, বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় এখন জঙ্গি সংগঠনগুলোকে কাজে লাগাতে চায়৷ জামায়াতের সুবিধা হলো, অনেক জঙ্গি সংগঠনেই জামায়াত শিবিরের সাবেক নেতা-কর্মীরা রয়েছেন৷এ নিয়ে নিরপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশীদ (অব.) ডয়চে ভেলেকে জানান, হেফাজতে ইসলামের জঙ্গি চরিত্র স্পষ্ট৷ তাদের আচার-আচরণ এবং কর্মসূচি দেখলেও তা বোঝা যায়৷ তবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য আশঙ্কার বিষয় হলো এই হেফাজত ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে সহানুভূতি পাচ্ছে৷ তাই তারা যদি আরো বিস্তৃত হয়, তা বাংলাদেশের জন্য চরম ক্ষতির কারণ হবে৷ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশীদ জানান, জামায়াত এখন তার অস্তিত্বের কারণেই হেফাজতের সহয়াতা নেবে৷ আর হেফাজতও তার শক্তি বাড়াতে তা লুফে নেবে৷কিন্তু তার সঙ্গে জঙ্গিদের কি সম্পর্ক? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠনগুলির গোপন জঙ্গি গ্রুপ আছে৷ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর, জামায়াত-শিবিরের সহিংস প্রতিক্রিয়ায় তা আবারো প্রমাণিত হয়েছে৷ আর হেফাজত ঢাকা অবরোধ এবং শাপলা চত্তরে সমাবেশের নামে যা করেছে, তাও তাদের চরিত্রকে স্পষ্ট করেছে৷ তাই এখন স্বাভাবিক কারণেই জঙ্গিরা সামনে চলে আসার চেষ্টা করবে৷ সেজন্য জামায়াত-হেফাজতের স্বার্থ অভিন্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই৷বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ এর বাইরেও ছোট বড় ১০টির মতো জঙ্গি সংঠনের অস্তিত্বের কথা জানা যায়৷ তবে যাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাদের তত্‍পরতাও থেমে নেই৷ যুগ্ম কমিশনার মরিরুল ইসলাম স্বীকার করেন যে, তাদের ধারাবাহিক অভিযানে অনেক জঙ্গি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হলেও তাদের শক্তি এখনো আছে৷ তাঁর দাবি, তাদের আরো শক্তিশালী করার চেষ্টায় আছে হেফাজতের নেতৃত্বে জামায়াত৷তবে এ ব্যাপারে হেফাজত ও জামায়াতের বক্তব্য জানা যায়নি৷ এর মূল কারণ, জামায়াতের শীর্ষ নেতারা এখন কারাগারে৷ আর যাঁরা বাইরে আছেন তাঁরা অনেকটা আত্মগোপনে৷ তাঁদের পাওয়া যায় না৷ কোনো বক্তব্য থাকলে তাঁরা তাঁদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিবৃতি দেন৷ এছাড়া, হেফাজতের নেতারাও এ মুহূর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন৷ তথ্যসূত্র: ডিডাব্লিউ
false
rg
বই পড়ায় পুলিশের আগ্রহ এবং আমার উদ্দ্যোগ গত ২৮শে ফেব্রিয়ারি ছিল অমর একুশে বইমেলার শেষ দিন। ওই দিন বিকাল ৩:০০টায় বাংলা একাডেমীতে যাবার পর প্রথমে যাই দোতলায় মোরশেদ ভাইয়ের (আনোয়ার মোরশেদ) রুমে। গিয়ে দেখি মোরশেদ ভাইয়ের সামনে দুজন লোক বসে আছেন। একজন বাংলাদেশ পুলিশের স্বনামধন্য অফিসার, যিনি আগের দিন আমাকে প্রথমে এ্যারেস্ট এবং পরে ছেড়ে দিয়েছিলেন। উনি ওইদিন ড্রেসআপ ছিলেন। ওনার পাশে আরেকজন সিভিল ড্রেসে। দেখা হওয়া মাত্র জানতে চাইলেন কবি ভাই ক্যামুন আছেন। আমি বললাম ভালো। আপনি কেমন আছেন? উনি জবাব দিলেন- ভালো আছি। এরপর আমি মোরশেদ ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম- গতকাল ওনারা আমাকে এ্যারেস্ট করেছিলেন আবার ২৬ মিনিট পর ছেড়ে দিয়েছিলেন। ওই বিষয়ে আজ আমি জামান ভাইকে লিখিতভাবে রিপোর্ট করতে চাই। আমার জানার বিষয় অমর একুশে বই মেলায় পুলিশ ঢুকবে নাকি লেখক-প্রকাশক-রা ঢুকবে? বই মেলায় আসলে কারা ঢুকবে? আর বই মেলা কাদের জন্য আয়োজন করা ইত্যাদি। পুলিশ অফিসার আমার কথায় কি কিঞ্চিত কিংকর্তব্যবিমুঢ়! তিনি হেসে আমার কাছে আবার জানতে চাইলেন- রাতে কেমন ঘুম হয়েছে? জবাবে বললাম- খুবই ভালো। পুলিশে ধরলে মনে হয় ভালো ঘুম হয়! গতকালকের ঘটনার জন্য এরপর উনি দুঃখ প্রকাশ করলেন এবং পাশে বসা সিভিল ড্রেসের লোকটার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। উনি একজন ওসি। খুব ভালো। আমি হাত বাড়িয়ে তার সাথে হ্যান্ডসেক করলাম। আর বললাম- গতরাতে আপনাদের উপর ২৬ পাতা লিখে ফেলেছি। আগামী বই মেলায় আপনারা ওটা বই আকারে পাবেন। ওনারা খুব শব্দ করে হাসলেন। আর গতকালকের সিভিল ড্রেসের পুলিশ অফিসার বললেন- আমি আপনার ওই বইটার অবশ্যই একটা কপি কিনবো। আমাদের আড্ডা প্রায় জমে উঠেছে। মোরশেদ ভাই জানতে চাইলেন কী খাবা? বললাম- কফি আর সিখারেট। আর ওনারা মোরশেদ ভাইয়ের টেবিলে লাঞ্চ সারলেন। কথায় কথায় আমি বললাম- গোটা বই মেলায় আপনাদের যে কজন বাংলা একাডেমীতে ডিউটি করেছেন- রোজ সবাই যদি একটা করে বই পড়ার অভ্যাস করতেন, খুবই ভালো হতো। বাট, আপনারা লেখক, কবি, সাহিত্যিক, প্রকাশকদের ঠেঙ্গিয়ে বেড়ালেন। আপনারা বই পড়ার অভ্যাস করলে বই মেলাটা আরো জমতো। নয়া পরিচিত হওয়া ওসি সাহেব বললেন- আমরা তো বই পড়তে চাই। কিন্তু আমাদের কে বই দেবে?বললাম- বই পড়ায় সত্যিই যদি আপনাদের আগ্রহ থাকে তাহলে আজই আপনাদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে। মোরশেদ ভাই যোগ করলেন এটা কিন্তু খুব ভালো আইডিয়া রেজা। ঠিক ওই সময়ে সেখানে প্রবেশ করলেন গণি ভাই। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য প্রকাশক ওসমান গণি। গণি ভাইকে বললাম- চলেন গণি ভাই, পুলিশের জন্য কিছু বই সংগ্রহ করি। ওনাদেরকেও সঙ্গে থাকার অনুরোধ করলাম। গণি ভাই ভীষণ ব্যস্ত মানুষ হলেও আমার আর মোরশেদ ভাইয়ের রিকোয়েস্ট ফেলতে পারলেন না। তারপর আমরা বই মেলা থেকে ওনাদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশের জন্য বই সংগ্রহ অভিযান শুরু করলাম। আমি বেশ পুলকিত যে এই একই পুলিশ গতকাল আমার সঙ্গে কী আচরণই না করেছিল। আর পরদিন তাদের হাতে বই ধরিয়ে দিতে পারলাম। ঘণ্টা দুই ওই কাজে সময় দেবার পর দেখলাম গণি ভাই বেশ এনজয় করছেন। আমি গণি ভাইকে বললাম আমার খুব জরুরী একটা কাজে পল্টন যেতে হবে। আপনি ওনাদের জন্য বই সংগ্রহ করতে থাকুন। পুনরায় সন্ধ্যায় মেলায় ফিরে জানতে পারি- প্রায় ২৫০ বই সংগৃহীত হয়েছে। পুলিশ অফিসার আমাকে ওনার বাড়ি নেত্রকোনায় যাবার নিমন্ত্রন দিলেন। জবাবে বললাম- তাইতো বলি- আপনি কেনো বই পড়ায় এতো আগ্রহী! আমার অনেক বন্ধু আছে নেত্রকোনায়। দুজনকে আপনি চিনবেন। ওনারা সিনিয়র- কবি নির্মলেন্দু গুন আর হুমায়ুন আহমেদ। আমার খুব কাছের বন্ধু কবি মাহবুব কবীর, মাহমুদ সীমান্ত, কমল, আর গ্রেটার ময়মনসিংহ বললে- প্রচুর। মুজিব মেহদী, অতনু তিয়াস, সিদ্ধার্ত টিপুকেও ময়মনসিংহ ধরা যায়। আর সোমেশ্বরী নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ, গাড়ো পাহাড় ওরাও আমার খুব ভালো বন্ধু। শুনে পুলিশ অফিসার হো হো করে হেসে ওঠেন। আগামী বই মেলায় পুলিশকে আরো বই দিতে হবে। আমি লিখছি, বন্ধুদেরকেও লিখতে বলবো। পুলিশকে বই পড়ায় আগ্রহী করতে পারলে আমাদের-ই লাভ হবে বেশি। .......................................... চলবে।।
false
fe
দুর্নীতি দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে দুর্নীতি দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে ফকির ইলিয়াস----------------------------------------------------------বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে যে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন এর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন সব টেন্ডারবাজির নেপথ্য কারিগর। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রায় একডজন মন্ত্রী এসব কথা জানা যাচ্ছে­ বিদেশের বিভিন্ন সূত্র থেকে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দু’শীর্ষ কর্মকর্তা এ বিষয়ে ঢাকা সফরে গেলে দেশজুড়ে হৈ চৈ পড়ে। খবর আসতে থাকে মিডিয়ায়ও। বিএনপি-জামায়াত সরকার দেশে যে একটি চরম ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছিল তা কারও অজানা নয়। শীর্ষ নেতারাই শুধু নয়, বিভিন্ন অঞ্চলে দলীয় নেতা-কর্মীরাও তৈরি করেছিল নিজস্ব মগের মুল্লুক। রিকশাওয়ালা, ঠেলাওলায়া থেকে বারকি শ্রমিক কারও কাছ থেকে চাঁদা নিতে তারা বাকি রাখেনি। তাদের লক্ষ্য ছিল এভাবে স্খায়ী লুটপাটের রাজস্ব কায়েম করা এবং ক্ষমতার স্খায়ী ইজারা নেয়া। হাওয়া ভবনে মস্তান পোষা হচ্ছিল সেসব কারণেই। বলতে হবে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য ভাল বলেই ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে এই সিন্ডিকেটের কোমর ভেঙে দেয়া সম্ভব হয়েছে। উঠতি চাঁদাবাজরা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে। বিএনপি জামায়াত জানতো সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা ভরাডুবির মুখে পড়বে। তাই তারা নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সব ধাপ সম্পন্ন করে রেখেছিল আগে-ভাগেই।২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি গণনির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র কয়েকদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রে মামলা হয়েছে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে কোকো গংয়ের বিরুদ্ধে। বর্তমান আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা দেয়া হবে। অন্যদিকে বিএনপি বলা শুরু করেছে জিয়া পরিবারের ইমেজ ক্ষুন্ন করার জন্য এমন মামলা করা হয়েছে।দেখতে হবে মামলাটি কে করেছে? মামলাটি করেছে বিদেশী সংস্খা। তারপরও বিএনপি নানা ছল-ছুঁতোয় সরকারকে গালমন্দ শুরু করে দিয়েছে। যা অনেকটাই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার শামিল। কারণ তারা জানে, তারা দুর্নীতি করেছে এবং তাদের হাতগুলো কলুষিত। বিদেশে অর্থপাচারে জড়িত সাবেক মন্ত্রীদের নাম দেশবাসী এখনও জানে না। আইনমন্ত্রী বলেছেন, শিগগিরই নামগুলো জানতে পারবে দেশবাসী। প্রথমে বলা হয়েছিল ২০০ মিলিয়ন ডলার। এখন জানা গেছে হাজার হাজার মিলিয়ন ডলার। এটর্নি জেনারেল সালাহউদ্দিন আহমদ তার পদত্যাগপত্র সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন। নতুন সরকার এলে এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আসে সেটাই নিয়ম। পদত্যাগী এটর্নি জেনারেলও বলেছেন, সাবেক জোট সরকারের দুর্নীতির নেটওয়ার্ক ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ছিল। দুই. আইনমন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার দেখলাম চ্যানেল আইতে। এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমি টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী। তাই রাষ্ট্রের জনগণের প্রতি আমার দায় বেশি। তার এই কথাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনি জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য আইনি দিকগুলো দেখার জন্যই মনোনীত হয়েছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে আইনমন্ত্রী দেশে কতটুকু স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পারবেন? অতীতের অভিজ্ঞতা খণ্ডন করে তিনি কি হতে পারবেন দেশের মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার মন্ত্রী প্রতিভ? এ প্রশ্নটি থেকেই যাচ্ছে। বলতে দ্বিধা নেই, ব্রুট মেজরিটি পাওয়া আওয়ামী লীগের সামনে সময়টি মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। জাতি তাদের বেশকিছু গুরুদায়িত্ব দিয়েই সংসদে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে ঘাতক-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবু হত্যা মামলার রায় কার্যকর, কঠোর হস্তে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, কর্মসংস্খান তৈরি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় অন্যতম। কিন্তু কথা, এর প্রতিটি কাজেই বাধা হয়ে দাঁড়াবে একটি মহল। এরা কোন মতেই চাইবে না আওয়ামী লীগ দেশের ম্যানিফেস্টো বাস্তবায়ন করার মতো কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে যাক। দুর্নীতিতে কোকোর সম্পৃক্ত থাকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি প্রথম থেকেই নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে দেশে আন্দোলন-হরতাল শুরু করে দিতে পারে। তাদের শীর্ষ মন্ত্রীদের সম্পৃক্ত থাকার তালিকা প্রকাশ পাওয়ার পরপরই তারা বিভিন্নভাবে মারিয়া হয়ে উঠতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না দেশে জঙ্গিবাদী চক্রের মদদদাতা কিন্তু এই ডানপন্থি চক্রটিই। যারা ‘বাংলাদেশী’ জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে এতদিন থেকেই গণমানুষের ‘আইওয়াশ’ করে আসছে। প্রয়োজনে এরা দেশে এই জঙ্গিবাদী চক্রকে আরও সক্রিয় করে তুলতে পারে সে ভাবনাও উড়িয়ে দেয়ার নয়। আমরা প্রত্যক্ষ করছি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যেই নানা রকম সংঘর্ষ হয়েছে। এটা শুভ লক্ষণ বলা যায় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এটাকে ছাত্রদল কিংবা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলে ইতোমধ্যেই সমালোচিত হয়েছেন। গোলযোগ, ত্রাস যেই করুক না কেন তাকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে সর্বশক্তি দিয়ে। কারও দলীয় কোন্দল বললেই দায়িত্ব শেষ হওয়ার নয়। কোন সরকার ক্ষমতায় এলে ‘সরকারি পার্টি’ হয়ে যাওয়ার ধান্দা নতুন নয়। এসব মধ্যস্বত্বভোগীদের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। সংসদ কার্যকর করার ব্যাপারে বিএনপি সহযোগিতা দেবে এটা বললেও কার্যত তারা কি করবে তা দেখার বিষয়। কারণ তাদের রাঘববোয়ালরা দুর্নীতিবাজ প্রমাণিত হওয়ার আশঙ্কাটি দেশে-বিদেশে প্রকটভাবে প্রমাণিত হলেই তারা গোলযোগের দিকে এগুতে পারে। তারা ইতোমধ্যেই ২৫ জানুয়ারিকে ‘বাকশাল প্রতিষ্ঠা দিবস’ আখ্যায়িত করে প্রথম দিন সংসদে যোগ না দেয়ার পাঁয়তারা করছে। যা তাদের হীনমন্যতারই বহি:প্রকাশ। নতুন এটর্নি জেনারেল এডভোকেট মাহবুবে আলম দায়িত্ব নিয়েছেন। রাষ্ট্রের আইনি স্বার্থরক্ষায় তার এই যাত্রা শুরু হচ্ছে বেশ কঠিন সময়ে। মনে রাখতে হবে দুর্নীতি দমনের প্রথম ধাপটি হচ্ছে সরকারি দলের স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করা। প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়টি দেখতে হবে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেতরের একটি অপশক্তি সব সময়ই তৎপর থাকে। যে শক্তিটি জন্মদিয়েছিল একজন মীরজাফর খন্দকার মোশতাক। এর যে পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তা কেউ বলতে পারবে না। তাই চলার পথটিকে খুব মন্থন ভাবার সুযোগ নেই। দুর্নীতি, লুটপাট দমনে জনগণ সবসময়ই সোচ্চার। তারা সরকারকে অতীতে সাহায্য করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। আমি বিনীত অনুরোধ করব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন দু:খিনী বাংলা মায়ের মুখ-স্মৃতিটি ভুলে না যান কখনোই। নিউইয়র্ক, ১৪ জানুয়ারি ২০০৯------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ১৬ জানুয়ারি ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত
false
rn
'অসম্ভব সুন্দর' বিষাদময় একটি চিঠি ১৫,জুলিয়াটোলা স্ট্রীট কলিকাতা। সন্ধ্যা, ০৮-০৩-১৯২৮ প্রিয় মতিহার, পরশু বিকালে এসেছি কলকাতা। ওপরের ঠিকানায় আছি। ওর আগেই আসবার কথা ছিল , অসুখ বেড়ে উঠায় আসতে পারিনি। ২/৪ দিন এখানেই আছি। মনটা কেবলই পালাই পালাই করছে। কোথায় যাই ঠিক করতে পারছিনে। হঠাৎ কোনদিন এক জায়গায় চলে যাবো, অবশ্য দু – দশ দিনের জন্য। যেখানেই যাই, আর কেউ না পাক, তুমি খবর পাবে। বন্ধু, তুমি আমার চোখের জলের মতিহার, বাদল রাতের বুকের বন্ধু। যেদিন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর আর সবাই আমায় ভুলে যাবে , সেদিন অন্ততঃ তোমার বুক বেঁধে উঠবে। তোমার ঐ ছোট্ট ঘরটিতে শুয়ে , যে ঘরে তুমি আমায় প্রিয়ার মত জড়িয়ে শুয়েছিল, অন্ততঃ এইটুকু স্বান্তনা নিয়ে যেতে পারবো , এই কি কম সৌভাগ্য আমার !!!কেন এই কথা বলছি শুনবে ? বন্ধু আমি পেয়েছি যার সাক্ষাত আমি নিজেই করতে পারবো না । এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু , গানের বন্ধু, ফুলের সওদার খরিদ্দার এরা। এরা অনেকেই আমার আত্মীয় হয়ে উঠেছে , প্রিয় হয়ে উঠেনি কেউ। আমার জীবনের সবচেয়ে করুণ পাতাটির লেখা তোমার কাছে লিখে গেলাম। আকাশের সবচেয়ে দূরের যে তারাটির দিপ্তী চোখের জলকনার মত ঝিলমিল করবে, মনে কর, সেই তারাটি আমি । আমার নামেই তার নামকরণ কর, কেমন ? মৃত্যু এত করে মনে করছি কেন ? জানো, ওকে আজ আমার সবচেয়ে সুন্দর মনে হচ্ছে বলে ! মনে হচ্ছে, জীবনে যে আমায় ফিরিয়ে দিলে, মরলে সে আমায় বরন করে নিবে। সমস্ত বুকটা ব্যাথায় দিন রাত টন টন করছে। মনে হচ্ছে সমস্ত বুকটা যেন ঐখানে এসে জমাট বেঁধে যাচ্ছে। ওর যেন মুক্তি হয়, বেঁচে যাবো। কিন্তু কী হবে কে জানে !! তোমার চিঠি পেয়ে অবধি কেবল ভাবছি আর ভাবছি। কত কথা, কত কী !!! তার কি কূল কিনারা আছে !!! ভাবছি আমার ব্যাথার রক্ত কে রঙীন খেলা বলে উপহাস যে করেন , তিনি হয়তো দেবতা, আমার ব্যাথার অশ্রুর বহু উর্ধ্বে। কিন্তু আমি মাটির নজরুল হলেও সে দেবতার কাছে অশ্রুর অঞ্জলি আর নিয়ে যাবো না। ফুল ধূলায় ঝরে পড়ে , পায়ে পিষ্ট হয়, তাই বলে কি ফুল এত অনাদরের ? ভুল করে সে ফুল যদি কারোর কবরীতেই ঝরে পড়ে এবং তিনি যদি সেটাকে উপদ্রব বলে মনে করেন , তাহলে ফুলের পক্ষে প্রায়শ্চিত হচ্ছে এক্ষুনি কারো পায়ের তলায় পড়ে আত্মহত্যা করা। সুন্দরের অবহেলা আমি সইতে পারিনে বন্ধু, তাই এত জ্বালা। ভিক্ষা যদি কেউ তোমার কাছে চাইতেই আসে , অদৃষ্টের বিড়ম্বনায় তাহলে তাকে ভিক্ষা নাই ই দাও , কুকুর লেলিয়ে দিওনা। আঘাত করার একটা সীমা আছে, সেটাকে অতিক্রম করলে আঘাত অসুন্দর হয়ে আসে আর তক্ষুনি তার নাম হয় অবমাননা। ছেলেবেলা থেকেই পথে পথে মানুষ আমি। যে স্নেহে , যে প্রেমে বুক ভরে উঠে কাঁনায় কাঁনায়, তা কখনো কোথাও পাইনি। এবার চিঠির উত্তর দিতে বড্ড দেরী হয়ে গেল। না জানি কত উদ্বিগ্ন হয়েছ !!! কি করি বন্ধু , শরীর টা এত বেশী বেয়াড়া আর হয়নি কখনো। ওষুধ খেতে প্রবৃত্তি হয়না। আমায় সবচেয়ে অবাক করে নিশুতি রাতের তারা। তুমি হয়তো অবাক হবে, আমি আকাশের প্রায় সব তারাগুলোকেই চিনি। তাদের সত্যিকারের নাম জানিনে কিন্তু তাদের প্রত্যেকের নামকরন করেছি আমার ইচ্ছে মত। সেই কত রকম মিষ্টি মিষ্টি নাম , শুনলে তুমি হাসবে। কোন তারা কোন ঋতুতে কোন দিকে উদয় হয়, সব বলে দিতে পারি। জেলের ভিতর যখন সলিটারি সেলে যখন বন্দি ছিলাম, তখন গরমে ঘুম হত না। সারারাত জেগে কেবল তারার উদয় অস্ত দেখতাম। তাদের গতিপথে আমার চোখের জল বুলিয়ে দিয়ে বলতাম , বন্ধু, ওগো আমার নাম না জানা বন্ধু, আমার এই চোখের জলের পিচ্ছিল পথটি ধরে তুমি চলে যাও অস্ত পাড়ের পানে। আমি শুধু চুপটি করে দেখি। হাতে থাকতো হাতকড়া, দেয়ালের সঙ্গে বাঁধা চোখের জলের রেখা আঁকাই থাকতো মুখে, বুকে। আচ্ছা বন্ধু , ক’ফোঁটা রক্ত দিয়ে এক ফোঁটা চোখের জল হয় ,তোমাদের বিজ্ঞানে বলতে পারে ? এখন শুধু কেবলই জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করে যার উত্তর নেই, মিমাংসা নেই – সেই সব জিজ্ঞাসা। যেদিন আমি ঐ দূরের তারার দেশে চলে যাবো, সেদিন তাকে বলো, এই চিঠি রেখে সে যেন দু’ফোঁটা অশ্রুর দর্পন দেয়, শুধু আমার নামে। হয়তো আমি সেদিন খুশীতে উল্কা ফুল হয়ে তাঁর নোটন খোপায় ঝরে পড়বো। তাঁকে বলো বন্ধু, তাঁর কাছে আমার আর চাওয়ার কিছুই নেই। আমি পেয়েছি, তাঁকে পেয়েছি। আমার বুকের রক্তে, চোঁখের জলে আমি তাঁর উদ্দেশ্যে আমার শান্ত , স্নিগ্ধ অন্তরের পরিপূর্ন চিত্তের একটি সশ্রদ্ধ নমষ্কার রেখে গেলাম। আমি যেন শুনতে পাই, সে আমারে সর্বান্তকরনে ক্ষমা করেছে। ফুলের কাঁটা ভুলে গিয়ে তার উর্ধ্বে ফুলের কথাই যেন সে মনে রাখে। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে আবার লিখছি। কিন্তু আর লিখতে পারছিনে ভাই। চোখের জল , কলমের কালি দুইই শুকিয়ে গেল। তোমরা কেমন আছো , জানিয়ো। তাঁর কিছু খবর দাওনা কেন ? না কী সে এটুকুও মানা করেছে? ঠিক সময় মতো সে ওষুধ খায়তো ? কেবলি কীটস্‌ কে স্বপ্নে দেখছি। তার পাশে দাঁড়িয়ে ফ্যানিব্রাউন পাথরের মত।ভালোবাসা নাও; ইতি তোমার নজরুল। ( ফজিলাতুন্নেসা কে না পাওয়ার ব্যাথায় বেদনা ভেঁজা বহিঃপ্রকাশ কাজী মোতাহার হোসেন এর কাছে লিখা কাজী নজরুল ইসলাম এর একটি চিঠি।) সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১২
false
rg
আমেরিকান গভর্নমেন্ট সাটডাউন!!! ২০১৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে আমেরিকান গভর্নমেন্ট সাটডাউন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর আমেরিকার সরকার আবার সাটডাউনে পড়লো। আপাতত ১৯টি ন্যাশনাল মিউজিয়াম, আর্ট গ্যালারি ও ন্যাশনাল চিড়িয়াখানা বন্ধ করা হয়েছে। স্ট্যাচু অব লিবার্টি পরিদর্শন বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। প্রতিরক্ষা ডিপার্টমেন্ট থেকে ৪ লাখ লোককে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়েছে। কমার্স ডিপার্টমেন্ট থেকে ৪০ হাজার ২০০ লোককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে ১৮ হাজার ৫০০ জন এবং জ্বালানি ডিপার্টমেন্ট থেকে ১২ হাজার ৭০০ জনকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। অর্থ্যাৎ প্রায় ২০ লাখ লোককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। ছুটিতে থাকাকালীন কেউ কোনো বেতন পাবেন না। এছাড়া খরচ বাঁচাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত 'এপেক' শীর্ষ সম্মেলন বাতিল করেছেন। মার্কিন সরকারের একদিনের খরচ ৬০ বিলিয়ন ডলার। ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের আসল খরচ কত? আমরা জানি না। রিপাবলিকানদের সাথে ডেমোক্র্যাটদের কি নিয়ে এখন বিতর্ক? প্রেসিডেন্ট ওবামা'র হেলথ কেয়ার বাজেটে রিপাবলিকানরা অর্থ বরাদ্দ দিতে রাজী নয়। ১ লা অক্টোবর ২০১৩ কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটরা ৪৬-৫৪ ভোটে বাজেট পাসে ব্যর্থ হয়েছে। এখন সাটডাউন দিয়ে যদি মিনিমাম ৩ সপ্তাহ পার করা যায়, তাহলে নাকি মার্কিন জিডিপি'র ০.৯% রিকোভার করা সম্ভব হবে! কিন্তু মজার ব্যপার হল, মার্কিন প্রতিরক্ষায় ১.৪ মিলিয়ন সৈন্য বহাল থাকবে। অচলাবস্থা না কাটলে ভবিষ্যতে ডিফেন্সের যে ৮ লাখ সিভিলিয়ান কাজ করেন, তাদেরও বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হতে পারে। চলমান সাটডাউনে প্রতিদিন রিকোভার হবে অন্তত ৩০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু প্রশ্ন হল, আমেরিকার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা কি সত্যিই সাটডাউন পর্যায়ে ঠেকেছে? নাকি সিরিয়া যুদ্ধে নতুন করে আক্রমণ করার ফন্দি আঁটার জন্য এবং ইরান ও উত্তর কোরিয়াকে সায়েস্থা করার জন্য কোনো গোপন মিশনের বার্তা এটি?প্রশ্ন হল যাদের নিজেদের সরকারি অফিস চালানোর মত যথেষ্ঠ অর্থকড়ি কোষাগারে নেই, তারা তা অন্য দেশ থেকে লুটপাটের জন্য একটা উদ্যোগ নেবার কথা। যে কারণে ডিফেন্সের কাউকে কিন্তু ছুটি দেওয়া হয়নি। ছুটি দেওয়া হয়েছে বেসামরিক লোকজনকে। বিশ্ব তথা আমেরিকার মানুষের চোখ হেলথ কেয়ারের দিকে রেখে মার্কিন প্রশাসন ভয়ংকর কোনো গোপন মিশনের দিকেই ছুটছে বলে অনুমান করা যায়। ওনারা জাতিসংঘে খবরদারি করেন কিন্তু ওনাদের সেখানে চাঁদা বকেয়া। ওনারা আইএফএম-এ খবরদারি করেন কিন্তু সেখানে চাঁদা বকেয়া। ওনারা বিশ্বব্যাংকে খবরদারি করেন কিন্তু সেখানে চাঁদা বকেয়া। ওনারা এসব বিশ্ব সংস্থা থেকে হাজার হাজার ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ নেন কিন্তু পরিশোধ করেন না। বিশ্বের এক নাম্বার শক্তিশালী দেশ হবার নেশায় এরা দুনিয়ায় হেনো কোনো কুকাম নেই যা না করে। গায়ের জোরে গোটা বিশ্বে এরা খবরদারি করছে। কিন্তু এখন দেখার বিষয় আমেরিকার এই লোক দেখানো সাটডাউন তিন সপ্তাহ থাকে নাকি আরো বাড়ে। আর এই সময় কি করতে যাচ্ছে তারা তাও দেখার বিষয়। আজ যেমন হোয়াইট হাউজের বাইরে এক মহিলাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন বলছে, ওই মহিলা জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। সেজন্য তাকে গুলি করে হত্যা করতে হবে? আবার এরাই গরিব দেশের সবকিছুর মধ্যে মানবাধিকার খুঁজে বেড়ায়। ওয়াচডগ বসায়। তামাশা!!!
false
fe
সময় যাচ্ছে, ফসল ঘরে উঠবে কি_ সময় যাচ্ছে, ফসল ঘরে উঠবে কি? ফকির ইলিয়াস -------------------------------------------------------------------------------- বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক বছর পূর্ণ করল। এ উপলক্ষে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার সরকার শিগগিরই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে। গেল এক বছর ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যì গুরুত্বপর্ণ বছর। অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জীবনে নেমে এসেছে ভিন্ন অনুষঙ্গ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এগিয়েছে নিজস্ব এজেন্ডা নিয়ে। ঘটে গেছে তাদের নিজের ভেতরেও বিভিন্ন ভাঙচুর। এ কথাটি খুব স্পষ্ট, ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে এই সরকার যেসব ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এর সুফল পেতে রাষ্ট্রের জনগণকে আরও ক’বছর অপেক্ষা করতে হবে। কারণ তারা যে ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ তৈরি করেছেন­ সে ফিল্ডে খেলে যেসব খেলোয়াড় জয়ী হবে তারাই হবেন আগামীর বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক। আর তাদের কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করবে কেমন হবে আগামীর বাংলাদেশ। এখন প্রশ্ন হলো, এই ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ কতটা ‘লেভেল’ আর কতটা পরিচ্ছন্ন হবে পরবর্তী সরকারের কর্মযজ্ঞে। কিন্তু বর্তমান সরকারের যেসব ব্যর্থতা, তাও দেখা যাচ্ছে এ সময়েই। আর ব্যর্থতার কারণে কিছু লেজেগোবরে অবস্খা জানান দিয়ে যাচ্ছে, এসব ব্যর্থতা অনেক সফলতাকে ম্লান করে দিতে পারে। সন্ত্রাসীদের দাপট, জঙ্গিবাদীদের নতুনরূপে আবির্ভাব, শীর্ষ জঙ্গিদের মদদদাতাদের কাঠগড়ায় না তুলতে পারার ব্যর্থতা, দ্রব্যমল্য বৃদ্ধি, কিছু শীর্ষস্খানীয় ব্যক্তির স্বজনপ্রীতি, প্রত্নসম্পদ চুরির ঘটনা, মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা এবং সবশেষে দু’দফায় পাঁচজন উপদেষ্টার পদত্যাগ প্রমাণ করেছে, সরকারের ভেতরের ভাঙচুরগুলো খুব ইতিবাচক নয়। বরং কোথাও প্রতিহিংসা কিংবা কাউকে কাউকে কোণঠাসা করে রাখার একটি মানসিকতা কাজ করছে অন্দরমহলের কারও কারও মনে। যা একটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ, গণতান্ত্রিক রাজনীতি, সর্বোপরি সাধারণ মানুষের জন্য শুভ সংবাদ বহন করে না। কথা হচ্ছে, যদি সেটাই ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা হয়। তবে তো পরিশুদ্ধভাবে অগ্রসর হওয়ার পথ কন্টকাকীর্ণই হতে পারে তাহলে এত ঢাকঢোল, এত ত্যাগ কি বৃথাই যাবে? দেশে সংঘবদ্ধ একটি বেনিয়াচক্র সব সময় তৎপর ছিল। এখনও আছে। আর এ বেনিয়া গোষ্ঠীটি সবসময় প্রশাসনের কাছাকাছি থাকে। এরা মìী, আমলা, সাংসদ যে কেউ হতে পারে। ঢাকায় চৌদ্দ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার ঘটনায় আটক সাতজন প্রকৌশলী কিংবা সদ্য পদত্যাগকারী উপদেষ্টা গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণ করেছে, শোষকরা ছিল এবং এখনও আছে বহালতবিয়তেই। জনগণের আইওয়াশ করে যতই আলোর ঝলকানি দেখানোর চেষ্টা করা হোক না কেন, ভেতরে এবং শীর্ষপর্যায়ে ঘাপটি মেরে থাকা অপশক্তিরা এখনও তৎপর আছে আগের মতোই। তারা তাদের দলও বড় করছে প্রতিদিন। দুই. বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ, ভোটার আইডি প্রদান, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য সফলতা। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয় কোন সফলতাই পর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি বর্তমান সরকারের হাতে এ পর্যন্ত বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেও সরকার প্রভাবিত মামলাগুলো স্পেশাল ট্রিটমেন্ট পাচ্ছে। সেটাকে স্বাধীনতার কোন স্বর বলা হবে? কিংবা দুর্নীতিবাজ অনেক সাবেক মন্ত্রীরা এখনও রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরা কেউ কেউ ‘সংস্কারবাদী’ সেজে নিজেদের গা-বাঁচাতে চাইছেন। এমন বৈষম্য তো কোনভাবে কাম্য হতে পারে না। সরকারের পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জন্মও হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তাদের ইচ্ছেমতো সংলাপে বসেছেন প্রিয় গ্রুপগুলোর সঙ্গে। কিন্তু এভাবে গণতন্ত্র বাঁচানোর কোন নজির তো বিশ্বের কোথাও নেই। অন্যদিকে ঘাতক, রাজাকার, আলবদর ইস্যুতে সরকার স্খবির ভমিকা অবতীর্ণ থেকেছে। তারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে বলতে চেয়েছে, এ বিচার কাজের দায়দায়িত্ব তারা নেবে না। বরং আগামীতে যে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে, সেটা তাদের জন্যই তারা রেখে যাবে। তাহলে তো সেরা দুর্নীতিবাজদের বিচারকার্যের বিষয়টি ও আগামী সরকারের জন্য তারা রেখে যেতে পারতেন। কারণ দুর্নীতির পুরনো ফাইল ঘেঁটে দেখা, আর যুদ্ধাপরাধের পুরনো ফাইল ঘেঁটে দেখা সমান কথা। খুনের অপরাধ বরং দুর্নীতির চেয়ে একধাপ বেশি। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা তার বর্ষপুর্তি ভাষণে বলেছেন, তারা যথাসময়েই নির্বাচন দিয়ে জনগণের ক্ষমতা তাদের হাতে ফিরিয়ে দেবেন। কারা হবেন সে ক্ষমতার ভাগীদার, সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। এটা অত্যì নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়নীতিবান মানুষদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চান। কিন্তু সাবেক তত্ত্বাবধায়ক উপদেষ্টা বিচারপতি ফজলুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাবেক উপদেষ্টা গীতিআরা সাফিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ কিংবা ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহর্তে ব্যারিস্টার মইনুলের নীতিহীনভাবে বিভিন্ন ফাইলে স্বাক্ষর করার ঘটনা প্রমাণ করে সরকার ভুল মানুষদের এমন গুরুত্বপর্ণ পদে নির্বাচন করে দায়িত্ব দিয়েছিল। এমন পরিস্খিতি গোটা সরকারের ভাবমর্তিই ক্ষুন্ন করে দেয়। ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র দু’দিন আগেও আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের নানা রকম দম্ভোক্তি হতবাক করেছিল গোটা জাতিকে। আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়েও নানা মতপ্রকাশ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। দিনক্ষণও দাবি করছে প্রধান দলগুলো। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এসব শংকা দর করতে সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত। ফিন্স অ্যান্ড ফেয়ার শুনানির মাধ্যমে সব বিচার কার্য অনুষ্ঠানের কথা বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্খাগুলোও জানিয়েছে বর্তমান সরকারকে। এসব বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সরকারের উচিত ভবিষ্যতের জন্য নজির সৃষ্টি করে যাওয়া। যদি সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলে তবে এই এক বছরের মধ্যেই দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রের জনগণের প্রত্যাশা একটাই­ দেশে সুশাসনের ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠিত হোক। দিন যাচ্ছে কেবল প্রতীক্ষায়। ফসল ঘরে উঠবে কি? এ প্রশ্ন আসছে বারবার। নতুন ৫ জন উপদেষ্টা দেশ ও জাতি গঠনে তাদের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জনগণ এর বাস্তব প্রতিফলন দেখতে চায়। ক্ষমতা চিরস্খায়ী নয়­ এ প্রমাণ আমরা বারবারই তো পাচ্ছি। নিউইয়র্ক, ১৫ জানুয়ারি ২০০৮ -------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ / ঢাকা / ১৮ জানুয়ারী ২০০৮ শুক্রবার। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৯:৩৯
false
hm
গুহাচিত্র প্রচুর কাজ জমে থাকার পরও রবিবারকে ছুটির দিন ধরে নিয়ে অসংখ্য ব্যক্তিগত ভ্যাজালকে নতুন সপ্তাহের দিকে ঠেলে দিয়ে বেরিয়েছিলাম ঘর থেকে। দুপুরে মোটামুটি ভুরিভোজের পর সিদ্ধান্ত নিলাম, বহুদিন হলো টেবিল টেনিস খেলি না, আজ তাহলে তা-ই করি। আমার ভোনহাইমে টেবিল টেনিস খেলার কোন সরঞ্জাম নেই, খেলতে গেলে যেতে হবে শহরের আরেক দিকে হের রেহমানের ছাত্রাবাসে, ফোন করে জানলাম খেলা যেতে পারে আজকে। কিন্তু মিনিট পনেরো পিটাপিটি করেও চতুর্থ ব্যক্তির অনুপস্থিতি বেশি পীড়াদায়ক হয়ে ওঠায় টেবিল টেনিসে ইতি টেনে মোনোপোলি খেলার সিদ্ধান্ত হলো। সর্বস্ব জলাঞ্জলি দিয়ে ভুনা মুরগি দিয়ে ঠেসে ভাত খেয়ে যখন আমি আর হের চৌধুরী আবার পথে নামলাম দুইজন যথার্থ মাতালের মতো, তখন তাপমাত্রা সেলসিয়াসে শূন্যের আশেপাশে। কনকনে বাতাসও চালিয়েছে, শেষ বাসটা চলে গেছে আমাদের পথে ফেলে রেখে, ভরসা এখন মিনিট পনেরো হাঁটার পর সামনের কোন হাল্টেষ্টেলেতে ট্রামের অপেক্ষায়। হের চৌধুরীও আমার মতোই একজন লোক খারাপ, তাই কিছু খারাপ কথাবার্তার পর কী এক প্রসঙ্গে প্রুশিয় সম্রাট দ্বিতীয় ভিলহেল্ম নিয়ে কিছু কথাবার্তা হলো। চৌধুরী জানালেন, বিংশ শতাব্দীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান অর্থনীতির বারোটা বাজলেও তখন সাহিত্যের স্বর্ণযুগ, নানা রাজনৈতিক উপাদান আর শৈলী যোগ হচ্ছে তখন জার্মান সাহিত্যে। স্বীকার করি, কথাটাকে বাজে একটা দিকে ঠেলে নিয়ে গেলাম আমিই। প্রশ্নটা ঠেলে উঠলো ভেতরে, খালি পেটে কি মানুষের হাত খোলে ভালো? সঙ্কটের সময়ই কি মানুষের ভেতরে শিল্পবোধ আরো সূক্ষ্ম হয়? চৌধুরীর মত হচ্ছে, শুধু সম্পদের সঙ্কট থাকলেই হবে না, মানুষের মধ্যেও লড়াইয়ের প্রবণতা থাকতে হবে। উদাহরণ দিলেন পাকিস্তানের, পাকিস্তানে সম্পদের বন্টন নিয়ে সঙ্কট আছে, কিন্তু পাকিদের মধ্যে লড়াই নেই, তাই তাদের সমসাময়িক সাহিত্য সমৃদ্ধ হচ্ছে না। লড়াইয়ের ধাত বজায় থাকলে মানুষের বিশ্লেষণপ্রবণতা আরো সুবেদী হয়ে ওঠে, কাসেলের বুলেটজমানো ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে চৌধুরীর এমনই মত। আমার মাথায় জটার ওপরে টুপি ছিলো, চৌধুরীর মাথায় শুধুই জটা, তাই আমার এত উত্তেজিত হবার কোন কারণ ছিলো না। আমি তাই ব্যাপারটিকে আবারও টেনে নিয়ে যাই ঘ্যানানোর দিকে। টেনে আনি সেই পেল্লায় উল্লম্ফন বা গ্রেট লীপ ফরওয়ার্ডের কথা, সেই চল্লিশ হাজার বছর আগে, আজকের ফ্রান্সে এক গুহায় আঁকা সেই বিস্ময়কর সব গুহাচিত্রের কথা। আমি প্রস্তাব করলাম, ঐ সময়ে নিশ্চয়ই বড়সড় কোন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিকারের অভাব প্রবল হয়ে উঠেছিলো, তাই গুহাবাসী "আধুনিক" মানুষ বসে বসে গুহার দেয়ালে এঁকেছে প্রবল মাংসল সব বাইসনের ছবি, যেভাবে রোগা রিকশাওয়ালার জন্যে সিনেমা হলের পোস্টারে চর্বিমাংসে একাকার ঢাকাই নায়িকার স্তনের উত্তরগোলার্ধ আঁকা হয়। যেভাবে আমরা গোলাভরা ধান আর পুকুরভরা মাছের প্রসঙ্গ টানি, জীবনে যদিও চোখে দেখিনি এসব। আমি কঠোর হই এসব বলতে বলতে, বলি, ঐ গুহাবাসী শিল্পীরাও হয়তো নিজের চোখে এসব দ্যাখেনি, সে শুনেছে তার পূর্বসূরীদের কাছে, তারপর সেই স্মৃতি, আবছা পর্যবেক্ষণ আর নিজের কল্পনা মিশিয়ে ইচ্ছামতো এঁকে গ্যাছে ঘ্যাঁচঘ্যাঁচ করে, যাকে বলে অর্ধেক বাইসন তুমি অর্ধেক কল্পনা। নিশ্চয়ই সেই সময় আবহাওয়ার বড় কোন পরিবর্তন ঘটেছিলো, যার ফলে বাইসন আর ম্যামথের আকাল পড়েছিলো রীতিমতো। শিকারের অভাবে হাভাইত্যা গুহাবাসী তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্যেই বসে বসে এ কাজ করেছে। তাছাড়া ছবি আঁকা অ্যাতো সহজ নয়, সুজন চৌধুরীও একটা কার্টুন আঁকার জন্যে ঘন্টা তিনেক সময় নিয়ে থাকেন, আর সেই প্রাচীন শিল্পী যখন দেয়াল জুড়ে একটা বাইসনের ছবি আঁকতো, তখন নিশ্চয়ই আরো বেশি সময় লাগতো। ধারণা করা হয়, প্রাগচাষাবাদ যুগে শ্রমের বন্টন অনেক সুষম ছিলো, আর পেশার ভাগ তখনো শুরু হয়নি, অর্থাৎ প্রত্যেককেই যার যার খোরাক তার নিজেরই জোটাতে হতো, দিনের এতো সময় ধরে ছবি আঁকলে খাবার যোগাড় হতো কখন? এর উত্তর একটাই হতে পারে, এত সময় যখন তার হাতে ছিলো, তার আর অন্য কিছু করার ছিলো না। অর্থাৎ, শিকারের উপায় ছিলো না তার, কিংবা শিকারই ছিলো না। এতে করে আমরা একটা হাইপোথিসিস দাঁড় করাতে পারি, যে চল্লিশ হাজার বছর আগে ঐ অঞ্চলে বাইসন আর ম্যামথ জনপুঞ্জে একটা উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটেছিলো। পিকাসো যেমন শেষ বয়সে এঁকেছে ভয়ঙ্কর যৌবনবতী সব রমণীর ছবি, তেমনি, ক্ষুধার্ত হাভাইত্যা সেই প্রাচীন শিল্পী বসে বসে এঁকেছে প্রচুর মাংসের ছবি, জীবন্ত সেইসব মাংস শিকারের ছবি। আমার অনুসিদ্ধান্ত, সেই সময়ের মানুষ যদি নিরামিষাশী হতো, তাহলে বাইসন আর ম্যামথের ছবির বদলে আমরা প্রকান্ড সব ফুলকপি আর শালগমের ছবি দেখতাম দেয়ালে। এই হাইপোথিসিস প্রমাণ করে, রিসোর্সের অভাব ঘটলে মানুষের পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ আর সৃজনশীলতা সূক্ষ্মতর হয়। এখন যেটা করতে হবে, আশ্রয় নিতে হবে ডেনড্রোমিটিওরোলজির, সেই সময়ের কাঠ যোগাড় করে দেখতে হবে, আবহাওয়ার কী অবস্থা ছিলো। যদি আবহাওয়ার কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না ঘটে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, অতিশিকারের কবলে পড়ে বাইসন আর ম্যামথ হ্রাস পায় সেই অঞ্চলে। অতিশিকার তখনই হয় যখন জনসংখ্যা হঠাৎ বৃদ্ধি পায়। কোন নির্দিষ্ট ভৌগলিক অঞ্চলে শিকারী-সংগ্রাহক সমাজে জনসংখ্যা সহজে বৃদ্ধি পায় না, কারণ তারা সবসময় দৌড়ের ওপরে থাকে, এবং নিজেদের জনসংখ্যা সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখে, যদি না একই সময়ে একাধিক গোষ্ঠী সেই অঞ্চলে সমাপতন না ঘটায়। কিন্তু তার পরিণতিও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ ও লোকক্ষয়, এবং শেষমেশ আবারও নিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা। তাহলে কী ঘটেছিলো সেই গুহার আশপাশে? খোঁজ নিতে হবে, ভালো করে খোঁজ নিতে হবে ... প্রয়োজনে এর ওপর ভিত্তি করে লেখা যেতে পারে একটি বিস্তৃত উপন্যাস। চৌধুরী মন দিয়ে সব শুনে বললেন, কাসেলে আর্জেন্টাইন এক রেস্তোরাঁয় নাকি বাইসনের স্টেক পাওয়া যায়, পনেরো অয়রো দাম। হাইপোথিসিস মিলে যায় কাঁটায় কাঁটায়। তাই বাড়ি ফিরে মন দিই গুহাচিত্র আঁকায়।
false
rg
রাজনীতির ভরা কাটাল মরা কাটাল!!! জোয়ার-ভাটা দিনে দুইবার করে হয়। দুইবার জোয়ার হয়। দুইবার ভাটা হয়। সাধারণত সমুদ্রের কাছাকাছি জায়গাগুলোতে জোয়ার-ভাটা ভালো করে দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। বাংলাদেশের বেশ কিছু এলাকায় আমি বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কাজ ও ভ্রমণের কারণে এই দুর্লভ জোয়ার-ভাটা সচক্ষে দেখার সুযোগ পেয়েছি। জায়গা গুলো হল, সুন্দরবনের গহীন অরন্যের মধ্যে কয়রায় ও হিরণ পয়েন্ট। একেবারে দক্ষিণের থানা দাকোপে। মংলা বন্দরের কাছে বাজুয়া বাজারে। বরগুনা, বামনা, পাথরঘাটায়। কলাপাড়া, খেপুপাড়া, গলাচিপায়। ভোলা, চরফ্যাশনে। সন্দীপ-হাতিয়ায়। পতেঙ্গা, কক্সবাজার, মহেশখালী, সেন্টমার্টিনে। এসব জায়গা গুলোতে জোয়ারের সময় বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি পানির উচ্চ চাপ লক্ষ্য করেছি। আবার ভাটার সময় অনেক বেশি পানির নিম্ন চাপও দেখেছি। জোয়ার-ভাটা দেখার জন্য বাংলাদেশের কোস্টাল এরিয়াগুলো সবচেয়ে বেশি সুন্দর। দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে অমন জোয়ার-ভাটা কারো নজরে আসার কথা নয়।জোয়ার-ভাটা কেন হয়? জোয়ার ভাটার একমাত্র প্রধান কারণ পৃথিবীর উপর চন্দ্রের আকর্ষণ। পৃথিবীর সঙ্গে চন্দ্রের এই আকর্ষণ নির্ভর করে দূরত্বের উপর। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। এটি পৃথিবীকে একটি নির্দিষ্ট উপ-বৃত্তাকার কক্ষপথে প্রতিনিয়ত প্রদক্ষিণ করে। ফলে পৃথিবী-চন্দ্র সমাহারের অবিরত পরিবর্তন হচ্ছে। জোয়ার-ভাটার সাথে এর ভারী কঠিন সম্পর্ক। আবার মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে চাঁদ ও পৃথিবী একে অপরকে আকর্ষণ করে। পৃথিবীর উপর চাঁদের এই আকর্ষণের প্রভাব দূরত্বের উপর নির্ভর করে। পৃথিবীর যে পাশ চাঁদের দিকে থাকে সে পাশে চাঁদ থেকে দূরত্ব কম থাকায় আকর্ষণ বেশি থাকে। আর পৃথিবীর অপর পাশে চাঁদ থেকে দূরত্ব বেশি থাকায় আকর্ষণ কম থাকে। এই আকর্ষণই জোয়ার-ভাটার সাথে সম্পর্কিত।পৃথিবীর যে পাশে চাঁদ থাকে সে পাশে চাঁদের আকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠের সমুদ্রের পানি তার নিচের মাটি অপেক্ষা বেশি জোরে আকৃষ্ট হয়। এ কারণে চাঁদের দিকে অবস্থিত পানি বেশি ফুলে উঠে। একই সময়ে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে, সেদিকের সমুদ্রের নিচের মাটি তার উপরের পানি অপেক্ষা চাঁদ কর্তৃক বেশি জোরে আকৃষ্ট হয়। আবার চাঁদ থেকে পানির দূরত্ব মাটি অপেক্ষা বেশি থাকায় পানির উপর চাঁদের আকর্ষণ কম থাকে। ফলে সেখানকার পানি চারিদিকে ছাপিয়ে উঠে। এক্ষেত্রে ফুলে উঠার কাহিনীটিই ঘটে। ফলে একই সময়ে চাঁদের দিকে এবং চাঁদের বিপরীত দিকে পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির এই ফুলে উঠাকে বলে জোয়ার। আবার পৃথিবী ও চাঁদের ঘুর্ণনের কারণে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে গেলে ফুলে ওঠা পানি নেমে যায়। পানির এই নেমে যাওয়াকে বলে ভাটা। পৃথিবী যে সময়ের মধ্যে নিজ অক্ষের চারদিকে একবার আবর্তন করে (এক দিনে) সে সময়ের মধ্যে পৃথিবীর যেকোন অংশ একবার চাঁদের দিকে থাকে এবং একবার চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে। এ কারণে পৃথিবীর যেকোন স্থানে দুইবার জোয়ার এবং দুইবার ভাটা হয়।এছাড়া জোয়ার-ভাটার জন্য সূর্যের আকর্ষণও অনেকটা দায়ী। তবে সূর্য পৃথিবী থেকে অনেক দূরে থাকায় সূর্যের আকর্ষণ চাঁদের আকর্ষণের চেয়ে সাধারণত কম কার্যকর। তবে সূর্য এবং চাঁদ যখন সমসূত্রে পৃথিবীর একই দিকে বা বিপরীত দিকে অবস্থান করে তখন উভয়ের আকর্ষণে সর্বাপেক্ষা উচু জোয়ার হয়। তখন জোয়ারের পানি সবচেয়ে বেশি ছাপিয়ে পড়ে। এই অবস্থাকে আমরা বলি ভরা কাটাল বা উঁচু জোয়ার। আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য এবং চাঁদের মধ্য কৌণিক দূরত্ব যখন এক সমকোণ পরিমাণ হয় তখন একের আকর্ষণ অন্যের আকর্ষণ দ্বারা প্রশমিত হয়। তখন সবচেয়ে নিচু জোয়ার হয়। যাকে আমরা বলি মরা কাটাল বা নিচু জোয়ার। কিন্তু জোয়ার বলতে আমরা শুধুমাত্র সমুদ্রের পানির স্ফীতিকেই বুঝি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চাঁদ-সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীর স্থলভাগেও অনুরুপ প্রভাবের সৃষ্টি হয়। যেটা খালি চোখে অনুভব করা যায় না। পানির ওঠানামা চোখে পড়ে বলেই চাঁদ, সূর্য আর পৃথিবীর এই খেলা আমরা জোয়ার-ভাটার মাধ্যমেই দেখতে পাই। সারাদিনে এই খেলা মোট চারবার ঘটে। দুইবার জোয়ার আর দুইবার ভাটা।চন্দ্র-সূর্য-পৃথিবী'র এই মহাকর্ষ খেলায় যেমন দিনে চারবার জোয়ার-ভাটা হয়, তেমনি আমাদের রাজনৈতিক মাঠে আমরা জোয়ার-ভাটার খেলা দেখি। যখন যে দল ক্ষমতায় যায়, তাদের তখন জোয়ার। কখনো কখনো তা ভরা জোয়ারেও রূপ নেয়। যেমন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার। আর যারা বিরোধীদলে থাকে তাদের তখন ভাটা। কখনো কখনো তাদের কপালে ঘটে মরা কাটাল বা নিচু জোয়ার। যখন কম আসন নিয়ে বিরোধীদলে থাকতে হয়। ১৯৯০ সালের পর ১৯৯১ সালে যখন বিএনপি সরকার গঠন করেছিল, সেটা ছিল বিএনপি'র স্বাভাবিক জোয়ার। তখন আওয়ামী লীগের ছিল স্বাভাবিক ভাটা। আবার ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল, তখন আওয়ামী লীগের ছিল স্বাভাবিক জোয়ার। তখন বিএনপি'র ছিল স্বাভাবিক ভাটা। কিন্তু ২০০১ সালে যখন বিএনপি সরকার গঠন করলো, তখন বিএনপি'র ছিল ভরা জোয়ার। আর আওয়ামী লীগের ছিল মরা কাটাল। ঠিক ২০০৯ সালে আবার আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করলো, তখন আওয়ামী লীগের ভরা জোয়ার। আর বিএনপি'র তার উল্টো মানে মরা কাটাল।এখন আমরা রাজনীতির ভরা কাটাল আর মরা কাটাল যুগ পার করছি। এই যুগটা স্বাভাবিক যুগের চেয়ে বেশি স্পর্শকাতর। ভরা কাটালে যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের দম্ভ, লুটপাট, চুরি-চামারি, দুর্নীতি থাকে সীমাহীন। বিপরীতভাবে যারা ক্ষমতার বাইরে থাকে তাদের উপর চলে নিপীড়ন, জেল-জুলুম-অত্যাচার, হামলা-মামলা, খুন, গুম, নির্যাতন। তো যে কারণে, বিএনপিকে এখন মরা কাটাল যুগ পারি দিতে হচ্ছে। একই অবস্থা আওয়ামী লীগ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মোকাবেলা করেছে। এটা বাংলাদেশের একেবারে স্বাভাবিক চিত্র। ভরা কাটাল আর মরা কাটাল। রাজনীতির এই ভরা কাটাল আর মরা কাটাল ঠাণ্ডা মাথায় সামাল দিতে না পারলে সেই দলের অবস্থান আরো ভঙ্গুর হবার লক্ষণ দেখা দেয়।২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ খুব দক্ষতার সঙ্গেই মরা কাটাল মোকাবেলা করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সেটাকে ভরা কাটালে পরিনত করতে পেরেছিল। কিন্তু বিএনপি'র এখনকার লক্ষ্য ঠিক তেমনি ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চলতে থাকা মরা কাটালকে ভরা কাটালে রূপ দেওয়া। কিন্তু সেই কাজটি করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন জনগণকে সাথে নিয়ে সুনির্দিষ্ট আন্দোলনের পথে অগ্রসর হওয়া। যেখানে বিএনপি'র লক্ষ্য মোটেও সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নয়। একবার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলন, একবার যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য লংমার্চ, একবার চব্বিশ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, একবার তারেক-কোকোর মামলার জন্য চিৎকার, একবার খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির জন্য হাহাকার, একবার নিজামী-সাঈদী-মুজাহিদ-সাকার মুক্তি চেয়ে ট্রেনে আগুন-জ্বালাও-পোড়াও-খুন। একবার সংলাপে রাজী, পরক্ষণেই সংলাপে রাজী নয়। আজ বলে সরকার ডাকলেই সংলাপে যাবার জন্য প্রস্তুত। পরদিন দেশকে অচল করে দেবার হুমকি। পরদিন আবার সরকারের সঙ্গে গোপনে বৈঠক। তালের কোনো ঠিক নাই।মূলত জামায়াতকে বাঁচানোর জন্য বিএনপি'র এই যে মরিয়া হয়ে ওঠা, এটা থেকে সরে না আসলে বিএনপি'র মরা কাটাল এক সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়ে রাজনৈতিক মরা কাটালে লীন হবার আশংকা আছে! হাল ঠিক না থাকলে দরিয়ায় নৌকা ডুবে যায়। বিএনপি'রও লক্ষ্য যেহেতু ঠিক নাই, তাই রাজনৈতিক ভাবে দলটি'র অপমৃত্যু'র লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ষড়যন্ত্র করে একবার দুবার হয়তো ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব, কিন্তু সেই একই ফর্মূলা বারবার কাজে লাগার কথা নয়। জনগণের সঙ্গে মিশে জনগণের রাজনীতি না করলে, বিএনপি'র রাজনৈতিক মরা কাটাল ঘটার সমূহ সম্ভাবনা সামনে। শুধু ক্ষমতা যদি বিএনপি'র একমাত্র লক্ষ্য হয়, তাহলে দলটি মরা কাটাল থেকে সহসা বের হতে পারবে না। গোপন বৈঠক করার পর তা অস্বীকার করাটা কৌশল হলেও জনগণের কাছে মিথ্যা বলায় বিএনপি যে ওস্তাদ, সেই প্রমাণ বারবার হাজির করার সামিল। আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসবে তবে জল আরো ঘোলা করে। জল ঘোলা না হলে জনগণের সস্তা ভোট তো আর ভেড়ানো যাবে না। তাই জল ঘোলা করার কৌশলে আরো কিছুদিন তালবাহানা করবে।নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হবার পর দেশ অচল করার পরিবর্তে নমিনেশান নিয়ে দৌড়ছাঁপ শুরু হবে। তখন বিএনপি ঘর সামলাতে একটি অযুহাত খাড়া করেই নির্বাচনে আসবে। সেই অযুহাতটা হতে পারে নির্বাচন কমিশন ঢেলে সাজানো। এছাড়া আর কোনো কৌশল তাদের সামনে আপাতত নেই। মাঝখান দিয়ে আমরা আমজনতা দুনিয়ার হ্যাপা আর দুর্ভোগ হজম করছি।আগামী নির্বাচনে বিএনপি চলমান মরা কাটাল দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিতে না পারলে আগামীতে দলটি আরো ভাটার মধ্যে পতিত হবে। কারণ জনগণ আর সহিংস রাজনীতি দেখতে চায় না। এটা দিবালোকের মত সত্য। এটা বিএনপি বিশ্বাস করুক আর না করুক, জনগণের এই সুস্পশ্ট অবস্থান যদি বিএনপি পড়তে না পারে, তাহলে সামনে তাদের আরো কঠিন মরা কাটাল অপেক্ষা করছে!!
false
rg
আমাদের পররাষ্ট্র নীতি ও কিছু খোলামেলা কথা ।। রেজা ঘটক বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূল কথা হল- 'সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথেই শত্রুতা নয়'। খুব ভালো কথা। বইয়ের কথা। বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্ব নেই। সারা বিশ্বের মোট ৪৯ টি দেশে আমাদের অ্যাম্বাসি বা হাইকমিশন ডিপলোমেটিক মিশন রয়েছে। এর মধ্যে আবার ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে তিনটি করে। লন্ডনে হাই কমিশন মিশন আর বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টারে এসিসট্যান্ট হাই কমিশন মিশন। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অ্যাম্বাসি এবং লস এঞ্জেলস ও নিউ ইয়র্কে কনসুলেট জেনারেল। এছাড়া ৫টি স্থায়ী মিশন আছে সেগুলো হল ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্থায়ী মিশন, জেনেভায় জাতিসংঘের ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য স্থায়ী মিশন, নিউ-ইয়র্কে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন, প‌্যারিসে ইউনেস্কোর স্থায়ী মিশন এবং রোমে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার স্থায়ী মিশন। মানে বাংলাদেশের সর্বমোট ৫৮ টি মিশন বা অফিস আছে বিশ্বের নানান দেশে। খুব ভালো কথা। এই ৫৮টি মিশনে কতো লোকবল আছে? একটি মিশনে গড়ে ২৫ জন হিসেব করলে তা প্রায় ১৪৫০ জন। এই ১৪৫০ জন কারা? তাদের কার কি যোগ্যতা? নাকি শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ই তাদের যোগ্যতার মূল ইস্যু? এই ১৪৫০ জনকে বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় বেতন দিতে হয়। চলতি ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এই ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২,৭৯৮ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বা বেতন বাবদ ধরা হয়েছে ৬৯,২৪৮ হাজার কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩,৫৫০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কোথায় কিভাবে ব্যয় হয় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তা কোনো কালেই জানতে পারে না। বিদেশে যে সকল বাংলাদেশের মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য যায়, তারা এই সব বিলাসী মিশন থেকে নামমাত্র সেবাও পায় না। এই মিশনগুলোর প্রধান কাজ হল বাংলাদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা অন্য কোনো মন্ত্রী সেই দেশ সফরে গেলে তাদের আপ‌্যায়ন করা। বাকি সারা বছর এরা সেই দেশে ডিপলোমেসির ড-ও করে না। খায় দায় আর বিদেশী বড় বড় অনুষ্টানে যোগদান করাই তাদের সবচেয়ে বড় কাজ। বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশের জন্য এতো বিশাল সাইজের বিলাসী মিশন লালন পালন করাই একটা বড় ধরনের বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না। ডিপলোমেসি কি?অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের জন্য কি কি সুযোগ সুবিধা আদায় করা যায়, আরো নতুন নতুন আইডিয়া দিয়ে সেই সুবিধা আরো কতো নিজেদের পক্ষে আনা যায়, তা যাছাই বাছাই করে, দেন-দরবার করে, দর কষাকষি করে নিজেদের জন্য আদায় করা। আমাদের মিশন গুলো সেই কাজে কতোটা দক্ষতার সঙ্গে পরিচয় দিয়ে বিগত ৪২ বছর ধরে করে আসছে তা এখন খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। নইলে এই মরা হাতি পুষে বাংলাদেশের মানুষের কি লাভ হচ্ছে?ডিপলোমেসি মানে বিদেশী পক্ষের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ। সারা বছর শুনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী অমুক জায়গায় তমুকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। আরে বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশের কাজ ছাড়া খামাখা কোনো সৌজন্য সাক্ষাতের দরকার টা কি শুনি? অমুক বিশ্বসভায় বাংলাদেশের অতো বড় সাইজের বিশাল বহর রাষ্ট্রীয় খরচে বেড়াতে গেছে। সেখানে তমুক তমুক বক্তৃতা করেছেন এবং তমুক তমুকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এই খরচের পয়সাটা বাংলাদেশকে কে দেয়? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের টাকায় এই সব করেন আমাদের শাসকরা। আর বিদেশে অবস্থিত একজন বাংলাদেশীকে একটা পাসপোর্ট রেন্যু করাতে মিনিমাম ১০ বার কাজ বন্ধ রেখে সেই মিশনের কর্তাদের পেছন পেছন ঘুরতে হয়। এটাই হল বাস্তবতা। বাংলাদেশের মিশনগুলোতে বিগত ৪২ বছরে কর্ম দক্ষতার চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি। যে কারণে নিজেদের কর্ম সম্পর্কে এইসব কর্ম কর্তাদের অনেকের কোনো সুস্পষ্ট ধারণাই নেই। কি করতে তারা সেই মিশনে কাজ করছেন? ফাইলে সিগনেচার করা? দেশে একটু ফোন করা? বন্ধুরা কেউ বেড়াতে গেলে তাদের নিয়ে সরকারি গাড়িতে করে ঘোরাঘুরি করা? এসব খুব হচ্ছে সেখানে। ডিপলোমেসির ছিটেফোটাও কারো নজরে পড়ে না। কয়েক দিন আগে নিউ ইয়র্কে মাত্র ৩৫ লক্ষ মার্কিন ডলার খরচ করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের জন্য একটি বাড়ি কিনেছেন!!! সেই বাড়িতে আমাদের জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের দূত বসবাস করবেন। সেই বাড়িতে হোয়াইট হাউজের সমান সুযোগ সুবিধা বর্তমান। তাতে নাকি ভাড়া বাসার চেয়ে বছরে ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার কম খরচ হবে!!!! তাহলে ভাবুন, বিদেশে আমাদের মিশনগুলোতে ডিপলোমেসির নামে কি পরিমাণ বিলাসিতা করা হচ্ছে। তারপর, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সেই দেশ সফরে গেলে তার বিশাল সফরসঙ্গীরা থাকেন সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিলাসী হোটেলে। প্রধানমন্ত্রীর যারা সফরসঙ্গী থাকেন সেই দলে অন্তঃত ৮০ ভাগ থাকেন খামাখা। যাদের বেড়ানো ছাড়া আর কোনো কাজকাম থাকে না। কিন্তু খরচের টাকা মেটাতে হয় বাংলাদেশের মানুষের ট্যাক্সের পয়সায়। আর আপনারা বুলি ছোড়েন দেশপ্রেমের? আহারে আমার দেশপ্রেম?? দেশপ্রেম এতো সস্তা নয় ভাইডি। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বিশ্বব্যাংক আইএমএফের মতো বড় বড় ধুরন্দরদের মেম্বারশিপের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিলেন। আমরা নিজেদের জমিতে নিজেরা ফসল বানাবো। তাই দিয়ে মাছ ভাত খাবো। কারোর ধার ধারলাম না। কারণ আমরা স্বাধীন দেশ। কারোর দরকার পড়লে সে কানে হেঁটে আমাদের কাছে আসবে। সে কি নিয়ে ব্যবসা করতে চায় তা বলবে। আমাদের পোষালে আমরা সেই ব্যবসায় রাজি হব। না পোষালে নাই। আমাদের এতো বিদেশী সংস্থায় মেম্বারশিপ নিয়ে কি লাভ হয়েছে? সেই হিসাব মেলানোর সময় এসেছে। বছরে আমরা মেম্বারশিপ ফি কতো হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধ করি, তাও সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশ করার সময় এসেছে। নইলে আইটি ডেভলপমেন্টের কল্যানে সেই তথ্যও আমরা ঘরে বসে জেনে যাব। একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী'র কি কি যোগ্যতা লাগে? আর আমাদের মাননীয় দিপু মনি'র কি কি যোগ্যতা আছে? আমরা সেই হিসাব মেলাতে চাই। এমন কি প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও দক্ষ এবং দূরদর্শী সম্পন্ন, প্রাজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক বিয়ষে পটু লোককে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানাতে হয়। নইলে মুচকি হাসি দিয়ে পেট ভরে না। দেন দরবারে বিদেশীরা যা যা লুট করে নেবার চুক্তি করে চোখের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবেই নিয়ে যায়। আমরা কোনো পাটের ছড়াটাও আনতে পারি না তাদের থেকে। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হলে আমাদের সারা জীবনের ঐতিহ্য সুন্দরবন আর বেঁচে থাকবে? নাকি তা ধ্বংস করার জন্য তা ভারতের হাতে চলে যাবে? টিফকা চুক্তি বাস্তবায়ন হলে আমাদের গ্যাস, কয়লা, জ্বালানী, সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রামের পাবর্ত্য এলাকা আর আমাদের থাকবে? নাকি তা আমেরিকার হাতে চলে যাবে? মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতি তাদের দীর্ঘদিনের মিশন। এজন্য হিলারী এবং বারাক ওমাবা আমাদের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ মায়ানমার সফর করেন। ফিলিপাইনসে বা জাপানের সমুদ্র সীমায় মার্কিন নৌবাহিনী রেখেও চীনের সঙ্গে আর ভারতের সঙ্গে তারা টেক্কা দিতে পারছে না। তাই চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর তাদের প্রধান টার্গেট। গরিব দেশগুলোর প্রতি তাবেদারী করাও যাবে। আবার চীন ভারতের মতো উদয়মান পরাশক্তির সঙ্গে টেক্কা মারাও সহজ হবে। যে টিফকা চুক্তি গত ২২ বছর ধরে ঝুলে আছে, তা এই সরকারের বিদায় বেলায় তড়িঘড়ি করে সই করা হবে সবচেয়ে বিপদজনক একটা কাজ। ক্ষমতা আর টাকার গরম মানুষ চেপে রাখতে পারে না। এটা প্রকাশ পাবেই। এটা হাতের মুঠোয় এলে চেহারার জৌলুসও বাড়ে। মানুষকে তখন আর মানুষ মনে হয় না। আমাদের দেশে যারাই ক্ষমতায় যায় তাদেরই কয়েক বছরের মধ্যে জৌলুস বাড়ে। যে আগে লোকাল বাসে ঝুলে ঢাকায় ঘুরতো, দল ক্ষমতায় গেলে সে নতুন মডেলের গাড়ি চালায়। সে কি কোনো আলাদিনের চেরাগ পেল যে মাত্র চার সাড়ে চার বছরে তার ভাগ্যের এমন আমুল পরিবর্তন বনে যায়? কই সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কেন এমন আমুল পরিবর্তন হয় না?বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশের ১০ টির বেশি মিশন থাকা মানেই বিলাসিতা। আপনি যতো বড় রাজনৈতিক পণ্ডিৎ ব্যক্তিই হন, বাংলাদেশের মিশনগুলোর কাজ কর্ম বিশ্লেষণ করলে সেখান থেকে কোনো লাভের বা সুখবর পাওয়া যাবে না। একজন দিপু মনি'র দৌড় ঝাঁপের পেছনে রাষ্ট্রের কতো মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়? আর তার বিনিময়ে বাংলাদেশের ঘরে কয় টাকা আসে? সেই হিসেব মেলানোর সময় এসেছে। আর মাত্র সাত/আট বছর পর আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করব। সিঙ্গাপুর আমাদের চেয়ে পরে স্বাধীন হয়ে কোথায় অবস্থা করছে? আর আমরা কোথায় পড়ে আছি? কারণ রাজনৈতিক নের্তৃত্বের দুর্বলতা। লুটপাট। চুরি-চামারি। দুর্নীতি। বিলাসিতা। অদক্ষতা। এক সময় প্রণব মুখার্জি বাবু ভারতের বিদেশ মন্ত্রী ছিলেন। কেন? কারণ, বিদেশ নীতি তিনি খুব দক্ষতার সঙ্গেই পরিচালনা করতে জানেন। আর একজন দিপু মনি কেবল মুচকি হাসি জানেন। এটাই পার্থক্য। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলো বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের মতো লোকসানি খাত পুষে তো বাংলাদেশের কোনো লাভ হচ্ছে না রে ভাই। ৪২ বছরেও যদি এটা ঠিক করা না যায়, তাহলে কে এটা ঠিক করবে? অন্য গ্রহ থেকে কোনো পয়গম্বর এসে তো আর আমাদের এতো অব্যবস্থাপনা ঠিক করে দেবে না। তাই সময় এসেছে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি ও এর পরিধি নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবার। নতুন করে কিছু করার। নইলে সব মিশন বন্ধ করাই উত্তম। কথার অর্থ না বুঝলে খামাখা কেউ আমার এই দুঃশ্চিন্তা নিয়ে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি করবেন না। এটাই সবার প্রতি অনুরোধ রইলো। সবাই ভালো থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। আনন্দে থাকলে হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কম।। সো, সাধু সাবধান।।
false
rg
মানবপাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত আন্তরিক উদ্যোগই কেবল এই বিশাল শক্তিশালী নেটওয়ার্ককে কাবু করতে পারে!! স্বাধীনতার পর থেকেই আদম ব্যবসা বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, বাংলাদেশের কোনো সরকার আজ পর্যন্ত আদম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কোনো আদম ব্যবসায়ীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেনি। এমন কি বাংলাদেশ থেকে আদম ব্যবসা বন্ধ করার কোনো সরাকারি উদ্যোগের খবর কোথাও বাটি চালান দিয়েও জানা যায় না।বাংলাদেশ থেকে যাতে মানবপাচার বন্ধ হয়, সেজন্য রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি বা রাষ্ট্রীয় রেডিও বাংলাদেশ বেতারেও কোনো জনসচেতনামূলক প্রচার বা প্রোগ্রাম নেই। স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্রীয় এই দুই প্রচারযন্ত্রের প্রধান কাজ হল সরকারের প্রপাগাণ্ডা করা। জনসাধারণের জন্যে এই প্রচার মাধ্যম অনেকটা ঠুটো জগন্নাথ।মানবপাচার বিষয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য এমনকি রাষ্ট্রের আলাদা কোনো মন্ত্রণালয় বা প্রচার সেল নেই। অথচ মজার ব্যাপার হল, আমাদের রাষ্ট্রীয় টেলভিশন ও বেতারে বহির্বিশ্ব কার্যক্রমও আছে। কিন্তু মাগার সাধারণ অশিক্ষিত মানুষকে সচেতন করার কোনো উদ্যোগ নাই।একদল চালাক চতুর লোক যাদের সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক, তারা এসব আদম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদের সারা দেশেই নেটওয়ার্ক আছে। এরা বারো মাস সক্রিয়। গরীব ও অশিক্ষিত লোকজনই এদের প্রধান টার্গেট। এদের সঙ্গে আইন শৃংখলা বাহিনীর লোকজনও নানাভাবে জড়িত থাকে। সব কাজ চলে টাকার বিনিময়ে।সাগর পথে মানবপাচারের প্রধান রুট হল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ, কুয়াকাটা ও কোস্টাল এরিয়াসমূহ। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট হল টেকনাফ। মূলত ১৯৭৮ সালে কক্সবাজারে মায়ানমারের রোহিঙ্গা শরনার্থীরা উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নেবার পর থেকেই কক্সবাজার টেকনাফ রুটটি মানবপাচারের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আর এরসঙ্গে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাঙালিদের মধ্যে একটি ব্যবসায়ী কুচক্র এই মানবপাচার ব্যবসায় সরাসরি জড়িত।বাঙালি যে চক্রটি মানবপাচারে সক্রিয় তাদের রয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে নানান কিসিমের সখ্যতা। আমাদের প্রশাসন মানবপাচারের প্রায় প্রতিটি ঘটনাই আগে থেকে জানে। কিন্তু এই কুচক্রের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে তারা তাদের পাচার করার কাজে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে থাকে।আমাদের কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর অনেক অসৎ কর্মবর্তা-সদস্য এই কাজে নানাভাবে জড়িত। বাংলাদেশের যে কোনো সীমান্ত থেকে কিছু পাচার হবে আর সেই খবর বিজিবি'র কাছে থাকবে না, এটা হতেই পারে না। বরং গোটা চক্রটি এই অসৎ সদস্যদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেই তারপর পাচার কাজটি করে থাকে।আমরা হাজার কোটি টাকায় গোয়েন্দা সংস্থা লালন পালন করি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা সারা বছর কি কাজে ব্যস্ত থাকে, তা কেবল তারাই বলতে পারবেন। সম্প্রতি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া সীমান্তে বন্দীশিবির আর গণকবরের সন্ধান পাবার সাথে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ মানুষের পাচার হবার করুণ চিত্র উঠে এসেছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে কেন মানবপাচারের এসব তথ্য নেই?বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার বেড়ে যাবার কথা যখন বলা হচ্ছে , তখন আমাদের সরকারি মাধ্যম থেকে এটাকে কম দেখানোর একটা প্রবনতা সব সময়ই সক্রিয়। সরকারিভাবে এই যে অস্বীকার করার প্রবণতা, বা কম দেখানোর একটা প্রবনতা, এটা এই অপকর্মের সাথে যারা যুক্ত তাদেরকে আরও উৎসাহিত করে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানবপাচারকারীদের সাথে যাদের সম্পর্ক রয়েছে তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে আদম ব্যাপারিরা এই কাজে আরো নতুন উদ্যমে সক্রিয় থাকে। পুরো খেলাটা আসলে টাকার। ২০১২ সালে বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য সরকার একটি চুক্তি করার পর এতে প্রায় চৌদ্দ লাখ মানুষ নিবন্ধন করে। কিন্তু ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত আসলে যেতে পেরেছেন এগারো হাজারেরও কম লোক। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন বলেছে, এ বছরের প্রথম তিনমাসেই সমুদ্রপথে ২৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাকে পাচারের ঘটনা ঘটেছে। এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর ব্যাপারে প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা সারাদেশ থেকে লোক জড়ো করে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে উখিয়ার উপজেলায় আনে। এরপর ছোট ছোট নৌকায় করে সমুদ্রে জাহাজে তোলার পর মূল প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রক্রিয়া বা রুটটির বিষয় গোপন কিছু নয়। বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধারের পর অনেক মামলাও হয়েছে। কিন্তু দালাল বা মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয় দৃশ্যমান নয়। অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রামরু’র অনুসন্ধান বলছে, মানব পাচারের সাথে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার চক্রের সাথে সমুদ্রের দস্যুরাও যুক্ত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের একক কোন পদক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে যৌথ টাক্সফোর্স গঠন করে পদক্ষেপ নিলে হয়তো কিছুটা কাজ হবে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে যারা আদম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার যারা এই দালালদের সহযোগিতা করে, তাদের রুট উৎপাটন করতে না পারলে, এই যৌথ টাক্সফোর্সও কার্যকর হবে না।সরকারি উদ্যোগে এখন সন্দেহভাজন মানবপাচারকারীদের ক্রোসফায়ারে মেরে ফেলার উদ্যোগ আসলে, এই গোটা কুচক্রের নেটওয়ার্ক ও এর সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় যাতে প্রকাশ না পায়, সেই ঢাল তৈরি করা। বন্দুকযুদ্ধের নামে দু'চারজন মানবপাচারকারীকে সরকারিভাবে ক্রোসফায়ার দেওয়া হলেও এই সুবিশাল চক্রের কার্যক্রমকে কোনোভাবে বন্ধ করতে পারবে না। বরং এই বিশাল চক্রের যারা হোতা, যারা এই ব্যবসার মূল উক্ত্যোক্তা, তাদের এক ধরনের আড়াল করার সামিল।মানবপাচারের যারা মূল উদ্যোক্তা তাদের সমূলে উৎপাটন করতে না পারলে, সারাদেশে এদের নেটওয়ার্ক বন্ধ করতে না পারলে এবং সর্বসাধারণের মধ্যে এই বিষয়ে সক্রিয়ভাবে সচেতনতা আনতে না পারলে, এই ক্রোসফায়ার কোনো কাজে লাগবে না। কারণ মিডিয়া এক সময় নতুন ঘটনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। আর বাংলাদেশ থেকে এই দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা মানবপাচার চলতেই থাকবে।মানবপাচার বন্ধে যতক্ষণ না সরকার আন্তরিকভাবে সদিচ্ছা না দেখাবে এবং যতক্ষণ না মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত সকল যোগাযোগ মাধ্যম, এর সঙ্গে জড়িত কুচক্র ও নেটওয়ার্ককে নিস্ক্রিয় করতে না পারবে, ততক্ষণ এই মানবপাচার আসলে বন্ধ হবে না।শুধুমাত্র লোক দেখানো কিছু ব্যর্থ সরকারি উদ্যোগ কোনোভাবেই বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার রোধ করার জন্য যথেষ্ঠ নয়। মানবপাচারের সঙ্গে প্রশাসনের যারা জড়িত, তাদেরও চিন্থিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। রাজনৈতিকভাবে যারা এই সুযোগ ব্যবহার করে কোটি টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত সকল অনুসঙ্গ যতক্ষণ সক্রিয় থাকবে, ততক্ষণ এই আদিম প্রক্রিয়া বন্ধ হবে না। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা যতক্ষণ না এই বিষয়ে আন্তরিক না হবে, ততক্ষণ এই মানবপাচারের নাড়িনক্ষত্র জানারও কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার বন্ধ করার জন্য সমন্বিত যৌথ উদ্যোগ ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। সরকারকে শুধু আন্তরিক থাকলেই হবে না, পাশাপাশি এই প্রভাবশালী কুচক্রের গোটা সাম্রাজ্যেই হানা দিতে হবে। হানা দিতে হবে সকলপ্রকার দলীয় বা স্বজনপ্রীতিকে এড়িয়ে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণ দেখিয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হলে, এই প্রক্রিয়া বন্ধ করা যাবে না। সরকার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে কতোটা আন্তরিক ভাবে এই মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে, তার উপরই নির্ভর করবে মানবপাচারের এই গোটা চক্রকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া।..............................১১ মে ২০১৫ ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২
false
rn
বাচঁতে হলে জানতে হবে -১৬ ১৯০০সাল(এখানে ১৯০০থেকে১৯২০সাল পর্যন্ত দেয়া হলো।বাকি গুলো পরে যথা সময়ে দেয়া হবে।আগের গুলোর লিংক দিলাম না।)১৯০০সালগিরিশ চন্দ্র কোরান শরীফ পূনাঙ্গ বঙ্গানুবাদ করেন।ষ্টার থিয়েটারে প্রথম ডায়নামোর সাহায্যে বিদুৎতের আলো ব্যবহৃত হয়।নূর-আল ইমান নামে একটি মাসিক পএিকা বের হয়।চীনাগন কর্তৃক রিকশা আমদানি করা হয় কলকাতায়।১৯০১সালমথুরা মোহন চক্রবর্তী উপমহাদেশের সর্বপ্রথম আয়ুবের্দ প্রতিষ্ঠান 'শক্তি ঔষধালয় স্থাপন করেন ঢাকার পাটুয়াটুলিতে।ঢাকায় সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক বাতি প্রচলন শুরু হয়।নোবেল পুরস্কার প্রদান শুরু হয়।রানী ভিক্টোরিয়ার মৃ্ত্যু হয়।১০,ই এপ্রিল কবি অমিয় চক্রবর্তী'র জন্ম হয়।বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডষ্টাইনার রক্তের 'এ' 'বি' এবং এবি শ্রেনী চিহ্নিত করেন।আনন্দ মোহন কলেজ প্রতষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহে।১৯০২ সালযুক্তরাষ্টের নৌ বিদ্যা বিষয়ক লেখক 'আল-ফ্রেড মাহান' মধ্যপ্রাচ্য শব্দটি ভারতে প্রবেশের পশ্চিম ও উওর দ্বার হিসেবে ব্যবহার করেন।১৯০৩সালউইলবার রাইট বিমান আবিস্কার করেন।ব্রিটিশ শাসনামলে ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে ভিক্টোরিয়া স্পোটিং ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়।জনপ্রিয় সাহ্যিতিক শিবরাম চক্রবর্তী জন্মগ্রহন করেন কলকাতায়।১৯০৪সালবলধা'র জমিদার 'নরেন্দ্র নারায়ন' এর এক অনন্য কীর্তি বলধা গার্ডেন।লর্ড কার্জন কার্জন হল এর ভিওি স্থাপন করেনফ্রান্সের প্যারিসে ফিফা (FIFA) জন্ম লাভ করে।উপমহা দেশের প্রথম নির্বাক ছবি 'আলি বাবা ও চল্লিশ চোর'।কোনারক মন্দির ধ্বংস স্তুপ থেকে খুঁজে বের করা হয়।আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯০৫সালজাতীয় সংগীত সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়।রোটারি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠিত হয়।অনুশীলন সমিতি সন্তাসী কার্যকলাপ শুরু করে ছিল।লর্ড কার্জন স্বদেশে ফিরে যান।টাউন হলে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে স্বদেশী আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক যাএা শুরু হয়।ধানের ক্ষতিকর প্রানী হিসেবে পামরি পোকা প্রথম দেখা যায় বরিশালে।বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলন হয়।নবাব সলিমুল্লাহ পরীবাগের পশ্চিম সীমানা দেওয়ালের সঙ্গে একটি জামে মসজিদ নির্মান করেন।১৯০৬সালঢাকায় সর্বভারতীয় মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।সান ফ্রান্সিকোতে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়।ভাড়ায় চলা টেক্সির ব্যবসা শুরু হয় কলকাতায়।১৯০৭সালখাঁজা আজমের তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় পঞ্চায়েতের সংখ্যা ছিল তেএিশটি।স্কাঊট আন্দোলন শুরু হয়।চর্যাপদ আবিস্কৃত হয়।১৯০৮সালসন্তাসী কর্মকান্ডে খুদিরামের ফাঁসি হয়।রবীন্দ্রনাথের আহবানে ক্ষিতিমোহন সেন শান্তিনিকেতনে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।১৯০৯সালভাওয়াল জমিদার নরেন্দ্র চৌধুরী বলধা গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেন।রুশ বিজ্ঞানী ইগর সিকোস্কি প্রথম পাইলট বিহীন হেলিকাপ্টার তৈরী করেন।আমেরিকায় মোটর রেস ড্রাইভিং প্রতিযোগিতা শুরু হয়।শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন কাব্য আবিস্কৃত হয়।মার্কিন নৌ- কমান্ডার রর্বাট ই. পিয়ারি সর্বপ্রথম সুমেরু পৌছাতে সক্ষম হন।১৯১০সালরবীন্দ্রনাথের 'গীতাঞ্চলি' প্রকাশিত হয়।বরেন্দ্র যাদু ঘর প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহীতে,১০ ডিসেম্বর।সাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায় জন্মগ্রহন করেন।মাদাম কুরি আবিস্কার করেন রেডিয়াম নামে একটি পদার্থ।ইংল্যান্ডে গার্ল গাইডস আন্দোলন শুরু হয়।ঢাকায় আর.সি. অ্যান্ড সন্স নামে প্রথম ফটোগ্রাফিক ষ্টুডিও প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯১১সালকলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল।ব্রিটিশ সরকার বঙ্গ ভঙ্গ রদ ঘোষনা করে,১২ ডিসেম্বর।১৯১২সালরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'শিলাইদহ কুঠি বাড়িতে গীতাঞ্জলী' কাব্যের ইংরেজী অনুবাদ শুরু করেন।প্রথম ডিজেল ট্রেন তৈরি হয় সুইজারল্যান্ডে।অ্যালুমিনিয়াম প্লেট তৈরি শুরু হয়।টাইটানিক জাহাজ আটলান্টিক মহাসাগরে নিম্মজিত হয়।সারদা পুলিশ একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়।(লর্ড হাজির্জ এর আমলে)।১৯১৩সালঢাকা জাদু ঘর স্থাপিত হয়,৭ আগষ্ট।বিখ্যাত যাদু শিল্পী পি.সি সরকার জন্মগ্রহন করেন,২৩ ফ্রেরুয়ারী।পানামা খাল খনন করা হয়।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।১৯১৪সালপ্রমথ চৌধুরীর সম্পাদনায় 'সবুজ পএ' প্রকাশিত হয়।(প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শুরুর বছর)বাংলাদেশে প্রথম অনিশ্চিত কূপ খনন করা হয়।জয়নুল আবেদীন ময়মনসিংহে জন্ম গ্রহন করেন।১৯১৫সালসর্বপ্রথম চাকমা যুবক সমিতি গঠিত হয়।রাজ মোহন দেওয়ানের নের্তৃতে হার্ডিজ ব্রীজ নির্মান করা হয়।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরকার কর্তৃক 'নাইট হুড' উপাদি পান।১৯১৬সালকারমাইকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯১৭সালএপ্রিল মাসে আমেরিকা জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে।ইন্দিরা গান্ধী জন্মগ্রহন করেন।মহাত্না গান্ধী ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন।জগদীশ চন্দ্র বসু উদ্ভিদ শরীরতত্ত নিয়ে গবেষনার জন্য কলকাতায় 'বসু বিজ্ঞান মন্দির' প্রতিষ্ঠা করেন।১৯১৮সালবৃটেনের মহিলারা ভোটাধিকার পান।প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হয়।ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী'ই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রুপ নেয়।এতে গোটা পৃথিবীর প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রান হারায়।১৯১৯সালরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেট ভ্রমন কালে প্রথম মনিপুরী নৃ্ত্য দেখেন।৭ই অক্টোবর কিলাফত দিবস পালন করা হয়।লেলিন মস্কোয় আন্তজার্তিক কমিউনিষ্ট কংগ্রেস আহবান করেন।অসহযোগ আন্দোলন হয়।(মহাত্না গান্ধী)১৯২০সালযুক্তরাষ্টের মহিলারা ভোটাধিকার পান।ইংরেজদের কুটিরের আদলে নির্মিত হয় চামেরী ভবন।ভারতের কাশীতে জন্মগ্রহন করেন জনপ্রিয় বাঙ্গালী গায়ক ও সংগীত পরিচালক 'হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।দিল্লীতে তাবলীগ জামা'আতের কার্যক্রম শুরু হয়।(মাওলানা মুহাম্মদ ইলয়াসের ঊদ্দেগে।বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবর এর জন্ম হয়।(গোপাল গঞ্জ,টুঙ্গি পাড়া)
false
rn
বাংলা সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (৩য়) ২১। 'কেরী সাহেবের মুন্সী' লেখক- প্রমথনাথ বিশী। ঐতিহাসিক কাঠামোতে গঠিত অসাধারণ এক উপন্যাস। ১৯৬০ সালে "কেরী সাহেবের মুন্সী" গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র' পুরস্কার পান লেখক। বই থেকে কয়েকটা লাইন তুলে দিলাম- “ এমন সময় একটা হাতী দেখে কেরী ভাবল, যাক হাতীতে আজ রক্ষা করল বাঘের হাত থেকে। কেরী বলল, ঐ দেখ। সকলে দেখতে পেল গজেন্দ্রগমনে প্রকান্ড এক হাতী চলেছে, কাঁধের উপরে তার মাহুত, আর পিছনে জন দুই-তিন বর্শাধারী পাইক। কিন্তু কেরী আজ এত সহজে রক্ষা পাবে না.মিসেস কেরী উদ্বিগ্নভাবে বলল, বাঘ শিকারে চলেছে বুঝি?টমাস ব্যাপারটা অনুমান করতে পেরেছিল, তাই বলল , না না, এদিকে বাঘ কোথায়! আর দু-চারটে থাকলেও তারা মানুষ খায় না। কেন, সবাই বাইবেল পড়েছে বুঝি?—পত্নীর এবম্বিধ অখ্রিস্তানোচিত উক্তিতে মর্মাহত কেরী প্রমাদ গনল। রামরাম বসু মনে মনে বলল —বাঘগুলো এখনও বাইবেল পড়েনি, তাই রক্ষা। ”২২। 'খেলারাম খেলে যা' ও 'নিষিদ্ধ লোবান' লেখক- সৈয়দ শামসুল হক। বাবর আলী। সুন্দর নিপাট গোছানো মানুষ। কথার মায়াজাল বুনায় তার জুড়ি মেলা ভার। জীবন নিয়েও আপাত অর্থে তার কোনো টানাপোড়েন নেই। ব্যাবসার টাকায় বেশ আয়েশে, নিশ্চিন্তিতে দিন কাটে তার। নিজের বাড়ি, গাড়ি, টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করার সুবাদে সমাজের কাছে পরিচিতি— সবই আছে তার। ফলে, বলা যায় নির্ভার আনন্দময় জীবন বাবরের। শিক্ষিত, সুদর্শন, অবিবাহিত, সুকথক, সমাজের অন্য দশজনের থেকে বিত্তবান, মাঝবয়সী এই বাবরের যেন কোনো দুঃখ নেই। পিছু টান নেই। মনে হয়, যেন নিজের শরীরের সুখের জন্যই, শিশ্নের ইচ্ছেকে চরিতার্থ করবার জন্যেই সে কেবল উদগ্রীব। তার লেখা অসংখ্য বইয়ের মধ্যে নিষিদ্ধ লোবান বইটি অন্যতম। ভেতরের আবেগী মনটাকে শক্তকরে নাড়া দেবার মতো উপাদানে সমৃদ্ধ ছোট পরিসরের এ উপন্যাসটির পরিশীলিত ভাষা ও সুলীখন সত্যই আবিষ্ট করে রাখবে পাঠককে।২৩। 'রাইফেল রোটি আওরাত' লেখক- আনোয়ার পাশা। শহীদ বুদ্ধিবীবি আনোয়ার পাশার এই একটি বইই যুক্তিশীল যে কোন মানুষকে ৭১ এর বাংলাদেশের যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যেতে পারে। শ্রদ্ধা জানাই এই বীরকে।২৪। 'প্রথম আলো' 'সেই সময়' এবং 'পূর্ব-পশ্চিম' লেখক- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ওপর আমার একটা দূর্বলতা আছে। তিনখানা টাইম ট্রিলজি নিয়ে আমার বিস্ময়ের শেষ নেই। আমার প্রথম পড়া হয়েছিল পূর্ব পশ্চিম। সেসময় বলতে গেলে সমাজতন্ত্রে দীক্ষা পেয়েছিলাম এখান থেকেই। এই তিনটি উপন্যাস শেষ করে ওঠা মাত্রই একধরণের বিষণ্ণতা জেগে ওঠে। কারন উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র পাঠকের মনের ভেতর একটা জায়গা তৈরি করে নেয় এর মধ্যেই। সুনীল একবার বলেছিলেন ‘প্রথম আলো’ লিখতে তাকে সারা জীবনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় স্টাডি করতে হয়েছিল।২৫। 'নন্দিত নরকে' 'শঙ্খনীল কারাগার' এবং 'জোৎস্না ও জননীর গল্প' লেখক- হুমায়ূন আহমেদ। নন্দিত নরকে বাংলা কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের প্রথম উপন্যাস। নন্দিত নরকে পড়ে চোখ ছলছল করেনি এমন পাঠক কি আছে? বাকৃবিতে শিক্ষকতা করার সময়ে তিনি শঙ্খনীল কারাগার উপন্যাসটি লিখেছিলেন। কোনো কোনো রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে। ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হতো। আবার চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরে উথাল পাথাল চাঁদের আলোর সঙ্গে আমার কোনো যোগ নেই। মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে শব্দ। গ্রেট হুমায়ন, গ্রেট জোছনা ও জননীর গল্প। "জোছনা ও জননীর গল্প" মূলত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে উপন্যাস হলেও এতে প্রেম,ভালোবাসা সবই আছে। হুমায়ুন তার স্বভাবসুলভ গল্প বলার ভঙ্গিতে ৭১'এর সেই ভয়াল ৯ মাসের কথা বলেছেন পাঠকদের।উপন্যাসের শুরু হয়েছে নীলগঞ্জ স্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজুদ্দীন কাশেমপূরীকে দিয়ে যিনি ঢাকায় তার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আসেন।... তারপর শাহেদ আর আসমানীর মমতায় পরিপূর্ণ সংসারজীবনের গভীরে যেতে যেতে পাঠকের পরিচয় ঘটবে নিজের চেনা জগতের সঙ্গে। শাহেদের বড় ভাই ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরির ঢাকায় আসা, রাস্তা হারিয়ে ফেলা, ভুল ঠিকানা, পরিশ্রম আর ক্লান্তিতে বিপর্যস্ত জীবন অস্থির উত্তাল মিছিল স্লোগানমুখর ঢাকায় তার বিপন্ন জীবনবোধ শুরু করিয়ে দেয় এক মহাযাত্রার।২৬। 'নারী' ও 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' লেখক- হুমায়ূন আজাদ। শুরুতে কখনও নারীবাদ নিয়ে কাজ করেননি হূমায়ন আজাদ। কিন্তু যখন শুরু করলেন তখন যেন বাংলা সাহিত্যের নারীবাদী ধারায় গোলাভরে গেল নতুন ফসলে। তবে তার এই প্রচেষ্টাকে তির্যক দৃষ্টিতে দেখতে ছাড়েননি অনেকেই। ‘নারী’ গ্রন্থটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে হুমায়ন আজাদ প্রথাবিরোধী লেখক হিসাবে পরিচিতি পান। পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীকে কি কি রূপে দেখা হয় বইটির প্রতিটি পৃষ্টায় তা ছড়িয়ে আছে।হুমায়ুন আজাদ মানুষকে সচেতন করার প্রয়াসী ছিলেন। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মানুষ তার কবিতায় উঠে এসেছে। মানুষের মনোভঙ্গি, স্মৃতি, দুঃখ-কষ্ট, যাপিত জীবন ঘিরে কবির আগ্রহ। তিনি মানুষের মধ্যে খুঁজে পেতে চেয়েছেন শুভ্রতা। হুমায়ুন আজাদ বাংলাদেশের সবুজ বনভূমি, উদার মানুষ ও নিসর্গের কাছে সমর্পিত। বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামগ্রিক অবস্থা কবিচিত্তে আলোড়ন তোলে।তার কবিতা পাঠককে সমৃদ্ধ করে।২৭। 'মেমসাহেব' লেখক- নিমাই ভট্টাচার্য। নিমাই ভট্টাচার্য এখানে যেন তার নিজের জীবনেরই কাহিনী লিখছেন খানিকটা কল্পনা আর অনেকটা বাস্তবের মিশেলে। মনে দাগ কেটেছে যে কয়েকটা বই, মেমসাহেব এর একটি, সম্ভবত এই বইটা পড়ে চোখে পানি এসে গিয়েছিল। নিমাই ভট্টাচার্যের মূল জীবিকা সাংবাদিকতা। ২৮। 'সূর্য দীঘল বাড়ি' লেখক- আবু ইসহাক। ‘জোঁক’ গল্পের সার্থক গল্পকার আবু ইসহাক উল্লেখযোগ্য কিছু সাহিত্যকর্ম রেখে গেছেন বাংলা সাহিত্যে বলার অপেক্ষা রাখে না। তার প্রথম উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ একটি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি জীবনাখ্য। পূর্ব বাংলার বিস্তীর্ণ নদ-নদী জলাভূমি-কৃষি ক্ষেতের পটভূমিকায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, তার মধ্যে রক্তচক্ষু বের করা কতিপয় মানুষ নামের চারপায়া জানোয়ার, কিভাবে দিনের পর দিন বছর শতাব্দী যাবৎ ধর্মীয় ভণ্ডামিতে আবদ্ধ করে রেখেছে আমাদের, তার প্রতিছবি তার সাহিত্যকর্মে তার মেধা মননে আমরা প্রত্যক্ষ করি। উপন্যাসের গতিপ্রকৃতি দেখে বিশ্বাস হবে, আবু ইসহাক খুব কাছ থেকে সমাজের এই পিছিয়ে পড়া অন্ত্যজ এবং অনগ্রসর নিুবৃত্তকে বড় বেশি মমতা মাখিয়ে তার উপন্যাসে স্থান করে দিয়েছেন।২৯। 'আগুনপাখি' লেখক- হাসান আজিজুল হক। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তাঁর গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। আগুনপাখি কেবল প্রথাগত চরিত্র নির্মাণ ও সংলাপ ধারণার বাইরের কোনো উপন্যাস নয় বলেই বলছি না, এর কাহিনীতে সেই অর্থে কোনো গল্প ফাঁদা নেই, বলবার মতো কোনো প্রণয় নেই, আকৃষ্ট করবার মতো ন্যূনতম কোনো যৌনতা নেই; এমন কি যে ভাষায় কাহিনীটি কথিত হয়েছে, সেই ভাষাটির সাথেও এদেশের অধিকাংশ পাঠকের বিশেষ কোনো যোগাযোগ নেই।৩০। 'পদ্মা নদীর মাঝি' ও 'পুতুল নাচের ইতিকথা' লেখক- মানিক বন্দোপাধ্যায়। 'পদ্মা নদীর মাঝি' উপন্যাসের লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে লিখেছিলেন জীবনের প্রথম গল্প 'অতসী মামী'। তার লেখাটি 'বিচিত্রা' নামক পত্রিকাতে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ছাপা হয়েছিল। উপন্যাসের শেষে জেলে পাড়ায় থাকতে না পেরে কপিলাকে নিয়ে ময়নাদ্বীপেরর অজানা রহস্যময় দ্বীপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় কুবের। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে আবহমান বাংলার সামজিক জীবনের টানপোড়নের ছবি একেছেন, একটা মেসেজ দিয়েছন, বার বার পড়েন, অনেক বার পড়েন, অবশ্যই একদিন মেসেজটা বুঝতে পারবেন! মানুষ যত উপরের দিকে উঠতে থাকে ততই বুঝি সে একা হতে থাকে?! কর্তব্যের চাপে, ব্যস্ততার কোলাহলে বুঝি বা একে একে হারিয়ে যেতে থাএক সব চেনা চেনা মুখ! শ্বাশত এই কথাই যেন "পুতুল নাচের ইতিকথা"য় বলে দিয়েছেন অমর কথাশিল্পী মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায়। এই উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্র পরাণের স্ত্রী তেইশ বছরের বাঁজা মেয়ে কুসুম । প্রকৃ্তপক্ষে কুসুম এক অস্থির, বেপরোয়া,ও দূর্বোধ্য গ্রাম্য রমণী । ( চতুর্থ পর্ব আসছে।)
false
mk
ইসলামী দল নামছে রাজনীতিতে_ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের সঙ্গে ঈদের পর যুগপৎ আন্দোলনে জোটবদ্ধ হচ্ছে ইসলামি দলগুলো। দলের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে ইসলামিক দলগুলো ধীরে ধীরে একতাবদ্ধ হচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা হওয়ার পর চিন্তিত হয়ে পড়ে দলটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সমমনা ইসলামিক দলগুলো। সরকার বিরোধী হিসেবে পরিচিত ইসলামি দলগুলো ঈদের পর ইসলামি ভাবধারার একটি প্লাটফরম তৈরি করতে চায়। ইসলামি ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগসহ ইসলামপন্থি বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।বিভিন্ন দলের নেতারা বলেন, ঈদের পর সরকার বিরোধী আন্দোলন প্রশ্নে ইসলামপন্থি প্রায় সব দলই একই অভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে এ সরকারের আমলে ইসলাম, আলেম উলামা ও ইসলামি দল সম্পর্কিত সংঘটিত অসংখ্য ঘটনা ইসলামি দলগুলোকে পরস্পরের বেশ কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। দলগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ও রমজানে ইফতার পার্টির মতো পরস্পরের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে যোগদানের ঘটনা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা-বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন ও ইসলামি দল ও সংগঠনগুলোকে ঘিরে সরকারের নানা পদক্ষেপ ইসলামি দলগুলোকে কাছাকাছি আসতে উদ্বুদ্ধ করে। এছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে অপরাপর ইসলামি দলগুলোর আদর্শিক মিল থাকায় এই সরকারের আচরণকে ইসলামি দলগুলো বিপদের সঙ্কেত হিসেবে দেখছে।ইসলামি দলগুলোর অনেক নেতাই অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে হলেও বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার পক্ষে মত দিচ্ছেন। তারা সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানোকে অপরিহার্য মনে করছেন। নেতারা বলছেন, ধর্মীয় ইস্যুতে এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের অতীতের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ইসলামি দলগুলোকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তাদের মতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বামপন্থিদের প্রভাবে দেশকে ইসলাম শূন্য করার কার্যক্রমে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সকল ইসলামি শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জরুরি। তবে অন্য ইসলামি দলগুলোর মধ্যে আদর্শিক ও কর্মসূচিগত ঐক্যের পাশাপাশি তাদের পারস্পরিক যোগাযোগও বেড়েছে।জামায়াতে ইসলামি, খেলাফত মজলিস, ইসলামি ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ২০ দলীয় জোটে থাকায় তাদের মধ্যে এমনিতেই যোগাযোগ ও একত্রে বৈঠক হয়। ইসলামি বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনের সুবাদে গড়ে ওঠা সমমনা ইসলামপন্থি ১২ দলের সঙ্গে খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ অন্যান্য ছোট দলগুলোর মধ্যেও ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে একটি যোগাযোাগের ক্ষেত্র তৈরি হয়। রাজনৈতিক দলের বাইরে মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের ব্যানারে ধর্মীয় ইস্যুতে আন্দোলনের সুবাদে অনেকগুলো ইসলামি দলের মধ্যে পাস্পরিক দূরত্ব অনেক কমে যায়।ইসলামি দলের নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ বামপন্থিদের নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিতে পরিবর্তন করে যেভাবে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেÑ তাতে ইসলামি শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ছাড়া কোন পথ নেই। এ ব্যাপারে খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ইতোমধ্যেই গড়ে উঠেছে। আমদের মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে। এ পরিস্থিতি আমাদের বৃহত্তর ঐক্য ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। সম্পাদনা : সাইফ
false
rg
বন্ধুদের আমলনামা-২__ বালুচরের ডুবুরী জীবন কৃষ্ণ ঘরামী।। রেজা ঘটক ছোটবেলায় আমরা যখন স্কুলে যেতাম, তখন প্রায়ই চিত্ত'দা আর জ্যাঠিমা আমার বাবার কাছে জীবনের নামে নালিশ দিতেন। বাবাকে অনুরোধ করতেন হাড় মাংশ গুড়া করে হোলেও জীবনকে যেনো বাবা স্কুলমুখী করেন। জীবন আমাদের অঞ্চলের সেরা মার্বেল খেলোয়ার, সেরা চাপা প্লেয়ার, সেরা হাডুডু খেলোয়ার। আর দুষ্টামীতে গোটা অঞ্চলেরই অর্জুন হল জীবন কৃষ্ণ ঘরামী। তো, সকালে জ্যাঠিমা আর চিত্ত'দা বাবাকে নালিশ দিয়ে চলে যাবার পর আমরা যথারীতি স্কুলে গেছি। বেলা সাড়ে এগারোটা বারোটার দিকে জীবনকে নিয়ে বাবা আমাদের প্রাইমারি স্কুলে আসলেন। হেডস্যার অমৃতলাল রায় বাবু বাবার বন্ধু। হেডস্যারকে বাবা বললেন, এখন থেকে জীবন স্কুলে আসবে। যদি না আসে, শুধু আমাকে একটা খবর পাঠাবেন। আর জীবনকে রাজসাক্ষী বানিয়ে কে কে কোথায় কোথায় মার্বেল, চাপা খেলে, সেই নাম ধাম, এরিয়ার খোঁজ খবর সব শুনে নিলেন বাবা আর হেডস্যার। পরদিনও জীবন স্কুলে আসল না। বাবা জীবনের তথ্য অনুযায়ী সেদিক হানা দিয়ে জীবনদের আস্তানা থেকে জীবন আর বেলালকে ধরে আনলেন স্কুলে। পালিয়ে যেতে সক্ষম হল রমেশ, বিধান, গৌরাঙ্গ, ছালাম, এখলাস আর ঋষিকেশ। বেলাল আর জীবনকে স্কুলে আটকে রেখে বাবা ওদের বাড়িতে আমাদের মত নিয়মিত স্টুডেন্টদের দিয়ে খবর পাঠালেন। খবর পেয়ে বেলালের বাবা আসলেন। জীবনের মা আমাদের জ্যাঠিমাও আসলেন। তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হল, ওরা স্কুলে না আসলে ভাত বন্ধ। আর রমেশ-ঋষিকেশদের বাড়িতেও অনুরূপ খবর পাঠানো হল। আর আমাদের চেয়ে বড় একটি দলকে ওদের খেলার আসর থেকে ধরে আনার জন্য ভলান্টিয়ার বানানো হল। আমরা অনেকেই তখন পালিয়ে স্বেচ্ছায় ভলান্টিয়ার হলাম। আমাদের কাজ তখন দুইটি। প্রথম কাজ ওদের সঙ্গে মিশে কিছুক্ষণ ওদের সঙ্গে মার্বেল বা চাপা খেলা। তারপর ওদের বলা, যে চল তোরা স্কুলে। আজ যবের ছাতু দেবে। ওরা সেই ফাঁদে পা দিয়ে খেল ধরা। ইতোমধ্যে রমেশের বাবা, গৌরাঙ্গের মা, ছালামের বাবা, এখলাসের বড় ভাই আর ঋষিকেশের মা-বাবা স্কুলে হাজির হলেন। তাদের উপস্থিতিতে আমাদের অঞ্চলে বাবা মার্বেল আর চাপা খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। আর কেউ যদি স্কুলে না আসে তাকে ধরে আনা হবে বলে হুমকি দিলেন। সবার মা-বাবা একাজে সহায়তা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই আমাদের স্কুলের চেহারা গেল বদলে। জীবন, রমেশ, বিধান, ছালাম, এখলাস, বেলাল, গৌরাঙ্গ, ঋষিকেশদের দেখাদেখি একে একে স্কুলে আসা শুরু করল শশধর, সঞ্জয়, কেতু, বিরেন, সুখময়, গৌতম, কৃষ্ণ, ভজন, এনায়েত, সুখরঞ্জন, বিবেক, সুবোধ, আর অনিমেশরা। আমাদের স্কুলে যাতে মন টেকে সেজন্য স্কুলের পরিত্যক্ত লম্বা যে ঘরটা, যেটায় ছাদ নেই, সেখানে ঋষিকেশ জীবনরা মিলে দাড়িয়াবাধার কোর্ট কাটল। রোজ আমরা আগে আগে স্কুলে আসা শুরু করলাম। স্কুল শুরু হবার আগে আমরা এক পশলা দু'দলে ভাগ হয়ে দাড়িয়াবাধা খেলতাম। আবার কখনো টিফিনের ফাঁকে বা ছুটির পরেও সেই খেলা চলতো। এভাবে শুরু হল জীবনদের স্কুলে আসার পর্ব। জীবনরা আমাদের চেয়ে বয়সে অনেক বড়। নিয়মিত স্কুলে আসলে ওরা হয়তো ক্লাস ফোর ফাইভে পড়তো। কিন্তু দেরিতে স্কুলে আসা শুরু করায় ওরা সবাই আমাদের ক্লাশফ্রেন্ড হয়ে গেল। ওদের মধ্যে ঋষিকেশ সবচেয়ে ভালো ছাত্র হিসেবে ক্লাশ টুতে ওঠার সময় ভেলকি দেখিয়ে থার্ড হয়ে গেল। কৃষ্ণ হল ফোর্থ। জীবন হল সপ্তম আর বাকীরা কোনোমতে পাশ করে ক্লাশে উঠলো। যারা পাশ করে নাই তাদেরও বয়সের কথা বিবেচনা করে বাবার অনুরোধে উপরের ক্লাশে প্রমোশোন দেওয়া হল। আর বলা হল, এবার পড়াশুনা না করলে হাড় মাংশ গুড়া বানিয়ে দেওয়া হবে। পরে ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত প্রায় সবাই পড়াশুনায় টিকে রইল। এরমধ্যে কৃষ্ণ আর গৌরাঙ্গরা সপরিবারে ভারতে চলে গেল। ক্লাশ ফাইভে আমাদের থানার সকল ছাত্রছাত্রীদের সেন্টার পরীক্ষায় পাশ করেই কেবল হাইস্কুলে ভর্তি হবার নিয়ম ছিল। বিধান, ভজন, শশধর, বিরেন, সুখময়, ছালাম, বেলাল, এখলাস, এনায়েতরা প্রথম দফায় ফেল করে আর হাইস্কুলে পড়ার সুযোগ পেল না। আমরা হাইস্কুলে ভর্তি হবার পর জীবন খুব ভালো করা শুরু করলো। ক্লাশ সিক্স থেকে ক্লাশ সেভেনে ওঠার সময় জীবন চতুর্থ স্থান দখল করলো। জীবন ইংরেজি আর বাংলায় খুব ভালো ছিল। অংকে একটু কাঁচা। এরমধ্যে বিধান স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিল। ঋষিকেশরা ভারতে চলে গেল। ছালাম, বেলাল, এখলাসরা তাদের নিজ নিজ বাবার সঙ্গে ক্ষেতের কাজ শুরু করলো। হঠাৎ করেই সাপের কামড়ে ভজনের বাবা মারা গেল। ভজনের স্কুলে আসাও বন্ধ হয়ে গেল। এভাবে দুলছুট ছাত্রদের মধ্যে কেবল জীবন কৃষ্ণ ঘরামী আমাদের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পেরেছিল। জীবন অবশ্য ক্লাশ এইটে আমাদের সঙ্গে স্কলারশিপ পরীক্ষা দেওয়ার জন্যে দিঘীরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নির্বাচিত হয়েছিল। আমরা একসঙ্গে স্কলারশিপ দিয়েছিলাম আমি, প্রাণেশ হালদার, প্রকাশ চন্দ্র মন্ডল, জীবন কৃষ্ণ ঘরামী, নির্জন হালদার, মীর আহসান হাবিব, শাহনাজ খাতুন আর অনূপ শিকদার। ক্লাশ এইটে আমাদের ক্রমিক নম্বর ছিল আমার বরাবরই এক, কারণ আমি ছিলাম সব সময় ক্লাশের ফার্স্টবয়। প্রাণেশের দুই, শাহনাজের তিন, প্রকাশের চার, জীবনের পাঁচ, অনূপের ছয়, আর আহসানের সাত। নির্জন হল আমাদের ইংরেজি শিক্ষক নরেন স্যারের ছেলে। নির্জন আমাদের এক ক্লাশ উপরে পড়তো। স্কলারশিপ দেওয়ার জন্য নাইনে না উঠে সে আমাদের সঙ্গে ক্লাশ এইটে থেকে গেল। নির্জনের ক্রমিক নং ছিল ক্লাশ এইটে আমাদের সঙ্গে ৭০। আমরা আটজন স্কলারশিপ দিয়ে আমি আর প্রাণেশ স্কলারশিপ পেলাম। ক্লাশ নাইনে ওঠার ফাইনাল পরীক্ষায় আমি আবারো ফার্স্ট হলাম। প্রাণেশকে হারিয়ে নির্জন হয়ে গেল সেকেন্ড। প্রাণেশ হল থার্ড। শাহনাজকে টপকে প্রকাশ হয়ে গেল ফোর্থ। জীবন ফিফথ, অনূপ সিক্সথ, শাহনাজ সেভেনথ, আর আহসান হল অষ্টম। স্কুলে তখন আমাদের মধ্যে তুমুল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। আমি ওদের চেয়ে মোটামুটি সুবিধাজনক ব্যবধানেই ফার্স্ট হতাম। আর নির্জন ও প্রাণেশ গায়ে গায়ে লড়াই করতো। প্রকাশ আর জীবনও গায়ে গায়ে লড়াই করতো। শাহনাজ আর অনূপও গায়ে গায়ে লড়াই ছিল। আর আহসানের সঙ্গে লড়াইয়ে যোগ দিল স্বপন খরাতী। এছাড়া যারা তখন আমাদের ক্লাশে ভালো ছিল তারা হল তাপস মল্লিক, মিনতী মল্লিক, পুতুল রায়, ঝর্না রায়, মানু, জাকির হোসেন, খোকন মজুমদার, ফারুখ খান, শেখ মোহাম্মদ রহিম। এদের সবারই এসএসসিতে প্ফার্স্ট ডিভিশান পাবার কথা ছিল। কিন্তু আমরা মোট বারোজন পেলাম। তার মধ্যে প্রাণেশ আবার আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গোটা থানায় প্রথম হতে পারবে না বলে আমাদের সঙ্গে আর এসএসসি পরীক্ষা দিল না। ১৯৮৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় আমি গোটা থানায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলাম। আর প্রাণেশ পরের বছর ১৯৮৭ সালে গোটা থানায় ফার্স্ট হয়েছিল। আমরা যখন কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে ব্যস্ত জীবন তখন চিত্ত'দার সঙ্গে ঝামেলা পাকিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে একা একা ভারতে চলে গেল। আসরা যখন একাদশ শ্রেণী শেষ করে দ্বাদশ শ্রেণীতে তখন জীবন এসে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হল। একাডেমিকভাবে জীবন এই প্রথম আমাদের থেকে পিছিয়ে গেল। আমরা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসলাম, হঠাৎ একদিন জ্যাঠিমা'র কাছে শুনলাম- জীবন আর কলেজেও যায় না। জুনিয়র পোলাপাইন নাকি জীবনকে ঠিকমতো সম্মান করে না। তাই সে স্বচ্ছায় কলেজ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি যখনই বাড়িতে যেতাম জীবনকে পরীক্ষা দেবার জন্য প্রস্তুতি নিতে উৎসাহ দিতাম। কিন্তু জীবনের একটাই কথা- তোরা সবাই পাশ করে চলে যাবার পর, চারপাশটা বড্ড ফাঁকা হয়ে গেছে। কারো সঙ্গেই ক্লাশের পড়াশুনা নিয়ে একটু আলাপ করব সেই সুযোগ নেই। আমাদের অঞ্চলে যারা তখন এইচএসসি পরীক্ষা দেবার কথা তারা সবাই জীবনের চেয়ে সত্যি সত্যিই অনেক জুনিয়র পোলাপাইন। আমরাও জীবনের অনেক জুনিয়র ছিলাম। কিন্তু জীবন আমাদের সঙ্গে যেভাবে মানিয়ে নিয়েছিল সেভাবে আর নতুনদের সঙ্গে পারেনি। অনেক পিড়াপিড়ির পর দুই বছর শেষে জীবন এইচএসসি পরীক্ষা দিল। পাশ করলো। ডিগ্রিতে ভর্তি হল। কিন্তু আর শেষ করলো না। জীবন হল আমাদের এলাকায় ঘরামী গোষ্ঠীতে প্রথম এসএসসি পাশ করা সূর্য সন্তান। প্রথম এইচএসসি পাশ করা চন্দ্রবাবু। কিন্তু জীবন আর ডিগ্রি পরীক্ষা আর দিল না। দিলে হয়তো ঘরামী গোষ্ঠীর প্রথম ডিগ্রি পাশের খেতাবটাও জীবনের নামের সঙ্গে যুক্ত হতো। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ না করতেই জীবন বিয়ে করলো। জীবনের দুই ছেলে। উত্তম আর রাজীব। উত্তম গত বছর এসএসসি পাশ করেছে এ প্লাস নিয়ে। আর রাজীব আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। জীবন এখন পুরাদস্তুর রাজমিস্ত্রী। কৃষি মৌসুমে জীবন এলাকার একজন আদর্শ কৃষক। বর্ষা মৌসুমে নিজে মাছ ধরে। শীতের মৌসুমে যাত্রায় অভিনয় করে। অবসরে তাস খেলে। জীবন আমাদের এলাকায় সবচেয়ে তুখোর ইন্টারন্যাশনাল ব্রিজ খেলোয়ার। ইন্টারন্যাশনাল ব্রিজ খেলে জীবনকে হারানো খুব কঠিন কাজ। জীবনের মনে মনে হিসাবটা একেবারে কড়ায় গণ্ডায় কেমন যেনো মিলে যায়। বাম পাশের বিপক্ষের খেলোয়ারের হাতে কি কার্ড আছে তা জীবন মুহূর্তে হিসেব করে ছক করে, সে অনুযায়ী রিক্স নিয়ে খেলে। আমার জীবনে জীবনের মতো সেরা ইন্টারন্যাশনাল ব্রিজ খেলোয়ার দেখিনি। জীবন কৃষ্ণ ঘরামী এখন একজন আদর্শ বাবা। একজন প্রেমিক স্বামী। একজন নন-গ্রাজুয়েট রাজমিস্ত্রী। কিন্তু বিল্ডিংয়ের নকশা এবং নির্মাণে জীবন ভারী দক্ষতা অর্জন করেছে। আমাদের অঞ্চলে এখন যতো দালান বাড়ি, তার প্রায় সবগুলোই জীবনের নকশা ও নির্মাণে গড়ে উঠেছে। এছাড়া বর্তমানে জীবন সামাজিকভাবে একজন দক্ষ শালিশম্যান। অনেকেই নানা ধরনের গ্রাম্য বিচার শালিশে জীবনকে বিচারক মানেন। এলাকার যে কোনো নির্বাচনে জীবন একটি বড় ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে কার বাক্সে ভোট যাবে তা নিয়ন্ত্রণ করার মতো জীবন একজন কুশলী রাজনীতিবিদও বটে। আমরা একসঙ্গে পড়াশুনা করলেও জীবনকে সবসময় আমি জীবন'দা ডাকতাম। আর জীবন'দা আমাকে ডাকতো ভাডি। এখনো আমাদের সেই মধুর দাদা-ভাডির সম্পর্ক অটুট আছে। আমরা যখন ক্লাশ থ্রিতে পড়ি, প্রায় প্রতি সপ্তাহে জীবন দা তখন টিফিন পিরিয়ডে বলেশ্বরের হাটুজলে দাঁড়িয়ে ভাঙা ব্লেডে সেইভ করতো। আমাদের গালে তখন দাড়ির রেখাও দেখা যাবার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু জীবন দা নিজের সেইভের পাশাপাশি আমাদেরও সেইভ করে দিতেন। আমরা বলেশ্বরের হাটুজলে গালে কাদামাটি মেখে দাঁড়িয়ে থাকতাম দল বেধে। জীবন দা সবার গালেই নিজের দক্ষ হাতে ভাঙা ব্লেড দিয়ে সেইভ করে দিতো। জীবন'দার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। সেগুলো আবারো কোথাও লেখার ইচ্ছে রইল। জয়তু জীবন দা। জয়তু ব্রিজ মাস্টার। সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:০১
false
rg
আহসান কবিরের শ্বাসরুদ্ধকর উপন্যাস `খুনে গল্পবাজ' প্রকাশ করেছে পাঠসূত্র।। রেজা ঘটক A. A. FOR SALE..... কে সে? আতিফ আরমান। একজন নাম করা ভাড়াটে খুনি। টাকার বিনিময়ে খুন করেন। আর তার খুনের সকল ঘটনার নেপথ্যে থাকে দাদা আর শুভ্র। কখন কাকে কতো টাকার বিনিময়ে খুন করবে, তার সবকিছু ঠিক করে দেন ওই দাদা আর শুভ্র। ওই দুজনের আবার রয়েছে আন্তর্জাতিক চোরাকারবারী ও মাফিয়া চক্রের সঙ্গে দোস্তামি। ঘটনার বাকে বাকে অন্য ঘটনার সাথে জড়িয়ে যায় আতিফ। কিন্তু তার সব ধরনের পদক্ষেপ মাত্র দু'জন লোক আগে ভাগে টের পায়। তারা কারা? আতিফ ব্যাচেলর। থাকেন এক ছাদের চিলেকোঠায়। সঙ্গে থাকে একমাত্র প্রায়াত বোনের নয় দশ বছরের শিশু কন্যা রূপকথা। যার বাবাও খুন হয় এক রহস্যময় নৌকা ডুবিতে। রূপকথা যাকে কিনা তার মামা আতিফ আরমান ওরফে ভাড়াটে খুনি কথা নামে ডাকে, সে ওইটুকু পিচ্চি হলেও সব কিছুতেই বড়দের মতো ভেবেচিন্তে বেশ দাপটের সাথে নাক গলায়। যে কারণে, বাড়িওয়ালার সমবয়সি নাতীকে পর্যন্ত তার পরিবার কথার সাথে খেলতে ছাদে আসতে দেয় না। বাট, তিথী কী করণে যেনো কথার ওই ক্যাপ পড়া মামাটার আজগুবি সব ব্যাপার স্যাপার শুনে সারাক্ষণ ছাদে আসার সুযোগ খোঁজে। ওদিকে, আতিফের একটা বদ অভ্যাস হলো- নয়া যে খুনটা সে করার পরিকল্পনা করে, সাঙ্ঘাতিক মেধাবী ওই পিচ্চি কথাকে সে গল্পের ছলে সব শোনায়। পিচ্চি ও কম কীসে? খুনি কখন কি না করলে ধরা পরতে পারে, তা ঠিকঠাক প্রশ্ন করে মামাকে ফাঁকটা ধরিয়ে দেয়। ওদিকে, শেখ জিয়াউর রহমান নামে এক লোক টাকার জন্যে নিজে খুন হবার জন্য খুঁজে বের করে আতিফ আরমানের বাসা। সে নিজে খুন হতে চায়। তার মোটা অঙ্ঙ্কের টাকার দরকার। নইলে সে তার মেয়ের চিকিৎসা খরচ যোগাতে পরবে না। শেখ জিয়াউর রহমানের ইচ্ছার বিষয়টিও আতিফ গল্পকারে কথাকে শোনায়। কিন্তু কথা স্বপ্ন দ্যাখে, দীন মোহাম্মদকে। দীন মোহাম্মদ তার বউকে খুন করাতে চায়। কারণ তার শালীর সাথে এখন তার কঠিন সম্পর্ক। বউ খুন হলে শ্বশুরের সম্পত্তিও দীন মোহাম্মদের দখলে আসবে। কথা এই অদ্ভুত লোকটার গল্প তার ইস্কুলের দারোয়ানকে শোনায়। ওদিকে লটারিতে জেতা টাকার কল্যানে শেখ জিয়াউর রহমান তার মেয়ের চিকিৎসা খরচ কাকতলীয়ভাবে হাতে পেলে পাল্টে যায় গোটা দৃশ্যপট। ইস্কুল থেকে বিদায়ি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময়ে ছদ্মবেশি ময়লা পরিস্কার করার কাজে নিয়োজিত খুনির হাতে খুন হয় শেখ জিয়াউর রহমান মাস্টার। রহস্য আর অন্তর্রহস্যে ভরপুর অ্যাডভেঞ্চারের এক চরম রুদ্বশ্বাস ঘটনা বহুল উপখ্যানে শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হয়? খুনী? নাকি তার প্রতিপক্ষ? নাকি ঘাপটি মেরে থাকা অন্য কোনো ভাড়াটে মাফিয়া চক্র? টানটান উক্তেজনায় ভরা সম্পূর্ন রহস্যধর্মী উপাখ্যান খুদে গল্পবাজ। প্রকাশ করেছে পাঠসূত্র। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী অতনু তিয়াস। আহসান কবিরের এই উপন্যাসটির দাম ১২০ টাকা। পাওয়া যাবে অমর একুশে বই মেলায় পাঠসূত্র স্টলে। স্টল নং ৩৫৪-৩৫৫। সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:৪৮
false
rn
ফোটোগ্রাফী- ২৫ ভাল ফটোগ্রাফার হতে চাইলে দশটি টিপস মনে রাখা দরকার-১। নিজের দুর্বল দিক খুজে বের করা।২। সৌন্দর্য আবিষ্কার করতে হবে। এবং ছবি তুলার সময় ভিউফাইন্ডার এর ভিতরের লাইট মিটার এর দিকে সব সময় খেয়াল রাখবেন।৩। ধর্য্য ধারন করুন এবং সময় নিয়ে ছবি তুলুন।৪। আপনার সেই দেখার দৃষ্টি থাকতে হবে যেটা একটি সাধারন মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে যাবে। তাহলেই আপনি একজন ফটোগ্রাফার হতে পারবেন।৫। ফটোগ্রাফার আর ক্যামেরা ব্যবহারকারীর মধ্যে অনেক পার্থক্য। কোনটা হতে চান, সেটা আপনার ব্যপার।৬। ক্যামেরা, দৃষ্টিভঙ্গী এবং সময় জ্ঞান। ৭। অবশ্যই ছবি তোলার চোখ থাকতে হবে। যাকে বলে ফটোগ্রাফি আই। এবং ক্রিয়েটিভ আই অর্থাৎ সৃজনশীল চোখও থাকতে হবে। ছবির মাধ্যমে আপনার সৃজনশীলতা প্রকাশ পাবে। ৮। সঠিক সময়ে, সঠিক পরিস্থিতিতে, সঠিক স্থানে থাকতে হবে।৯। লক্ষ্যে স্থির থেকে উপযুক্ত পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। ১০। আগের দিনের শ্রেষ্ঠ ফটোগ্রাফারের পাশাপাশি বর্তমানের ফটোগ্রাফারদের সম্পর্কেও জানুন। তারা কিভাবে গড়ে উঠলেন সেটাও আপনার ফটোগ্রাফিতে কাজে দিবে। ফটোগ্রাফি ভালো করার জন্য বা ভালো ফটোগ্রাফার হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক নয়। একজন সফল ফটোগ্রাফার হতে চাইলে আপনাকে স্থানীয়, জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক যে কোনো প্রদর্শনী বা সেমিনারে অংশ নিতে হবে। সব সময়ই ফটোগ্রাফিকে আনন্দের সঙ্গে নিবেন। বিরক্ত হবেন না, ধৈর্য্য হারাবেন না। দেখুন কত আনন্দ এই সৃজনশীল কাজটির মাঝে। ক্যামেরা দিয়ে যাচ্ছেতাই ভাবে ছবি তোলাটা সৃষ্টিশীল ফটোগ্রাফি নয়। একটু খানি, শুধু একটু খানি আলসেমি করে ঘরে ক্যামেরা রেখে বের হবেন, দেখবেন আপনার মাথার উপরে আকাশটা আজকে কত্তো সুন্দর দেখাচ্ছে। হয়ত এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে, যা আপনার হাতে ক্যামেরা থাকলে তুলে রাখতে পারতেন। কিন্তু আফসোস, আপনিতো আলসেমি করে ক্যামেরা ঘরে রেখে গেছেন। অথবা হয়ত ছিনতাইকারির ভয়েই ক্যামেরা রেখে গেছেন। কি আর করা, মিসতো মিসই। তাই না? তাই ক্যামেরা কখনই ঘরে ফেলে রেখে যাবেন না। সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যামেরার ইকুয়িপমেন্টে জং না পড়লেও ফাঙ্গাস পড়ে, তাই কিনে বসিয়ে রেখে কোন লাভ নেই। অনেকেই আছেন যে মাত্র ১/২টা গ্রুপে ছবি শেয়ার করেই বসে থাকেন। বা শুধুমাত্র ফ্লিকারে ছবি আপলোড করে বসে থাকেন। এমনটা করা উচিত না। উচিত হল যত যায়গায় পারা তত যায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া। যতগুলো ব্লগ, ছবি শেয়ারিং সাইট, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি, সব খানে ছবি আপলোড করুন। এটা খুবই কমন যে একটা ছবি তুলেই চিন্তা করা যে এটা ফটোশপে ঠিক করে নিব। মনে রাখবেন, চিন্তা করার সময় সহজ মনে হলেও বেশীর ভাগ সময়ই ফটোশপে সব ঠিক করা এতটা সহজ না। ছবি তোলার সময় কখনো ভয় পাবেন না। ভুল করাটাই স্বাভাবিক, কারন ভুল না করে আপনি শিখতে পারবেন না। বিশ্বের সব বিখ্যাত ফটোগ্রাফার শুরুতে ভুল করে তা থেকে শিক্ষা নিয়েই আজ এই পর্যায়ে এসেছে। তাহলে এখনই ক্যামেরা হাতে বেড়িয়ে পড়ুন আর শুরু করে দিন ফটোগ্রাফি। ফেসবুকে একজনের চমৎকার স্ট্যাটাস দেখেছিলাম। ফটোশপ দিয়ে কবিতা লেখা গেলে দেশে ফটোগ্রাফার নয়, কবির সংখ্যা বেশি হতো। মানুষের ছবি যদি কোনও কারণে মন্দ লাগে তবে “তোমাকে দিয়ে হবেনা” টাইপ কথা না বলে কেন মন্দ লাগলো সেটা জানান। কারণ ক্রিটিসিজম শুনলেই বুঝা যায় আপনি কোন ক্লাসের চিড়িয়া। কিতাবে লিখা আছে বলে তাই চোখ বুজে ফলো করতে হবে এটা যদি আপনার ধারনা হয়, তাইলে উপরের লেখা সবকিছু আপনার জন্য নয়। গ্রামার অবশ্যই জানতে হবে, যতটা সম্ভব মানতে হবে। তবে তার মধ্যেই আটকে পরে থাকলে জেনে রাখুন -জীবনে অনেক কিছু মিস করে ফেললেন, দাদা। সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৮
false
rg
মিডিয়া সন্ত্রাস___ মিডিয়া বিনা পয়সায় রাজনৈতিক দলগুলো'র প্রপাগাণ্ডা এতো বেশি প্রচার করছে যে, এগুলোকে এখন এক ধরনের ছাগলামী ছাড়া কিছু বলার নেই। সমাবেশ কোথায় হবে শুধু এই নিয়ে মিডিয়া গতকাল যা যা প্রচার করলো, এই অতি উৎসাহী মিডিয়াগুলো'র কি অন্য কোনো কাজকাম নাই? মিডিয়ার উদ্দেশ্য সাম্প্রতিক সময়ে স্পষ্টভাবেই অসৎ। খারাপ খবরের পেছনে তাদের যতোটা আগ্রহ, ভালো খবরের পেছনে তাদের ততোটাই পিছপা। কেন? এই কেন-এর জবাব হল, মিডিয়া নিজেই অসৎভাবে কারো আনুগত্য নিয়েই লাইসেন্স পেয়েছে। সেই অসৎ খাসিলত তো আর এক দিনে বন্ধ হবে না।রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের থরচে নিজেদের নেতাকর্মীদের খবর দিক, কখন কোথায় তাদের কি ধরনের অনুষ্ঠান। মিডিয়াকে কেন আমরা সেই দায়িত্ব পালন করতে দেখি? তারা কি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার শাখার অলিখিত দায়িত্ব নিয়ে নিল? যদি তাই হয়, তাহলে এর পেছনে অর্থের কোনো লেনদেন অবশ্যই রয়েছে। কারণ, মিডিয়া বিনা খরচে আপনার কথা, আপনার দলের কথা প্রচার করবে এটা হতেই পারে না।আপনি একটা নাটক জমা দেন। ওটা দেখাতে গিয়ে তারা বিজ্ঞাপন সন্ত্রাস চালাবে। বলবে খরচ ওঠানোর জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছি। তাহলে, প্রশ্ন হল, রাজনৈতিক দলগুলো'র প্রপাগান্ডা প্রচার করার জন্য খরচ কি তারা আগেই পকেটস্থ করে?বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ মিডিয়া সন্ত্রাসে আক্রান্ত। স্বাধীন সংবাদপত্র এবং স্বাধীন প্রচার মাধ্যমের সুযোগ নিয়ে মিডিয়া আসলেইমিডিয়া বিনা পয়সায় রাজনৈতিক দলগুলো'র প্রপাগাণ্ডা এতো বেশি প্রচার করছে যে, এগুলোকে এখন এক ধরনের ছাগলামী ছাড়া কিছু বলার নেই। সমাবেশ কোথায় হবে শুধু এই নিয়ে মিডিয়া গতকাল যা যা প্রচার করলো, এই অতি উৎসাহী মিডিয়াগুলো'র কি অন্য কোনো কাজকাম নাই? মিডিয়ার উদ্দেশ্য সাম্প্রতিক সময়ে স্পষ্টভাবেই অসৎ। খারাপ খবরের পেছনে তাদের যতোটা আগ্রহ, ভালো খবরের পেছনে তাদের ততোটাই পিছপা। কেন? এই কেন-এর জবাব হল, মিডিয়া নিজেই অসৎভাবে কারো আনুগত্য নিয়েই লাইসেন্স পেয়েছে। সেই অসৎ খাসিলত তো আর এক দিনে বন্ধ হবে না।রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের থরচে নিজেদের নেতাকর্মীদের খবর দিক, কখন কোথায় তাদের কি ধরনের অনুষ্ঠান। মিডিয়াকে কেন আমরা সেই দায়িত্ব পালন করতে দেখি? তারা কি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার শাখার অলিখিত দায়িত্ব নিয়ে নিল? যদি তাই হয়, তাহলে এর পেছনে অর্থের কোনো লেনদেন অবশ্যই রয়েছে। কারণ, মিডিয়া বিনা খরচে আপনার কথা, আপনার দলের কথা প্রচার করবে এটা হতেই পারে না।আপনি একটা নাটক জমা দেন। ওটা দেখাতে গিয়ে তারা বিজ্ঞাপন সন্ত্রাস চালাবে। বলবে খরচ ওঠানোর জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছি। তাহলে, প্রশ্ন হল, রাজনৈতিক দলগুলো'র প্রপাগান্ডা প্রচার করার জন্য খরচ কি তারা আগেই পকেটস্থ করে?বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ মিডিয়া সন্ত্রাসে আক্রান্ত। স্বাধীন সংবাদপত্র এবং স্বাধীন প্রচার মাধ্যমের সুযোগ নিয়ে মিডিয়া আসলেই মিডিয়া সন্ত্রাস করছে। এটা হলুদ সাংবাদিকতার অংশ। এটা হলুদ সাংবাদিকতার অংশ।
false
rn
গল্প থেকে শিক্ষা ।এক।একদিন এক মুসলমান লোক চুল কাটতে গেছে এক নাপিতের দোকানে। কিন্তু নাপিত হল নাস্তিক। তাঁর চুল কাটার সময় তাকে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বুঝাতে চাচ্ছে যে সৃষ্টিকর্তা নেই। নাস্তিক নাপিত বলতে লাগলঃ যদি ঈশ্বর থাকত তাহলে এত লোক অনাহারে মরত না। সে বাইরে একটা বস্ত্রহীন মানুষ দেখিয়ে বললঃ যদি ঈশ্বর থাকত তাহলে ওই লোক অনাহারে কেন? মুসলমান লোকটা কিছু বলল না। চুপচাপ শুনে যেতে লাগল।এরপর যখন তার চুল কাটা শেষ হল সে বাইরে গেল এবং নাপিতকে বাইরে ডেকে বললঃ এই এলাকায় কোন নাপিত নেই। নাপিত তার কথায় অবাক হয়ে গেল এবং বললঃ নাপিত না থাকলে আপনার চুল কাটল কে?তারপর মুসলমান লোকটা কত গুলো লম্বা চুল ওয়ালা মানুষকে দেখিয়ে বললঃ নাপিত থাকলে ওই লোক গুলোর চুল লম্বা কেন?নাপিত বললঃ ওই লোক গুলোকে তো আমার কাছে আসতে হবে। আমার কাছে না আসলে অথবা আমাকে না বললে আমি কি কিছু করতে পারব? মুসলমান লোকটা তখন বললঃ তেমনি, সৃষ্টিকর্তার কাছে না গেলে, সৃষ্টিকর্তাকে না ডাকলে সৃষ্টিকর্তা তোমার জন্য কি করতে পারবে? ।দুই।১৯৮১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনা, তখন আনুমানিক দুপুর ৩:৩০ বাজে। ব্রাজিলের Sobralsantos "নামের নামের একটি স্টিমার ২০০ টন মালামাল ও ৫৩০ জন যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল। স্টিমারটি হঠাৎ O 'bidos para বন্দরের কাছে প্রায়ই_ ২৬০ ফুট গভীর পানিতে উল্টে যায়। বন্দরের খুব কাছেই ছিল আমাজন নদীর একটি অংশ যা পিরানহা মাছে ভরা ছিল। আগেই বলে রাখি পিরানহারা সাধারণত কাউকে আক্রমণ করে না কিন্তু রক্তের গন্ধ পেলে এরা পাগলের মতো হয়ে যায়। পিরানহারা অনেক দূর থেকেই রক্তের ঘ্রান নিতে পারে। স্টিমার উল্টে যাওয়ায় যাত্রীরা অনেক আঘাত পায়। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে যায় ফলে প্রচুর রক্তপাত ঘটে! স্থান আর সময়ের যথার্থ সমন্বয়ে পিরানহারা খুব দ্রুত ডুবন্ত স্টিমার কাছে চলে আসে ও তাদের পেট ভর্তি খাবার পেয়ে যায়। মাত্র ১৮২ জন জীবন্ত ফিরে আস্তে পেরে ছিল তাও তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ কাটা ছেরা ছিল ! বাকি ৩৪৮ জন জীবন্ত খাবার হয়ে গিয়েছিল ! মাত্র ৪ টা লাশ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ! আমাজনের রেকর্ড করা সবচে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ছিল এটি ! ।তিন।এক শিকারি একবার একটা পাখি ধরেছিল। সে পাখি সাধারণ পাখি না। ৭০টা ভাষায় কথা বলতে পারে এবং অসামান্য জ্ঞানী। তাই শিকারির হাতে ধরা পড়ে সে মিনতি করল -- "আমায় ছেড়ে দাও। আমি তোমায় মূল্যবান ৩টে উপদেশ দেব। যা তোমার জীবনে চলার পথ সহজ করে দেবে।" শিকারি একটু ভেবেচিন্তে রাজি হল। ৩টে মূল্যবান উপদেশের বদলে জ্ঞানী পাখির স্বাধীনতা। ১। যে সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে, তার জন্যে শোক কোরো না। ২। অন্যের মুখে শুনে অসম্ভব কিছু বিশ্বাস কোরো না। ৩। যা তোমার নাগালের বাইরে, তা পেতে চেষ্টা কোরো না। পাখির এই ৩টে উপদেশ শুনে শিকারি তাকে মুক্তি দিল। ছাড়া পেয়ে পাখিটি উড়ে গিয়ে বসল একটা উঁচু গাছের ডালে। সেখান থেকে সে চেঁচিয়ে বলল -- "বোকা লোক। তুমি আমার মুখের কথায় ভুলে আমায় ছেড়ে দিলে। কিন্তু আমায় ছেড়ে না দিলে জানতে পারতে আমার শরীরের মধ্যে বহুমূল্য একটা মণি আছে, যা আমার জ্ঞানের উৎস।" পাখির কথা শুনে শিকারি মাথা চাপড়াতে লাগল। বুদ্ধি করে পাখিটা বন্দি করে রাখলে ৩টে উপদেশের বদলে একটা দামী রত্ন পেতে পারত। নিজের বোকামিতে সে পাখিটার ওপর রেগে গিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠল -- "ধূর্ত পাখি! তোকে ধরে ঐ মণি আমি নেবই নেব।" উঁচু গাছটার যে ডালে পাখিটা বসে ছিল শিকারি সেখানে চড়তে গেল। কিন্তু সে গাছের সে ডাল ছিল পলকা। পাখির ভার সহ্য করতে পারে, মানুষের নয়। তাই শিকারি ডাল ভেঙে উঁচু গাছ থেকে পড়ে পা ভাঙল। আর জ্ঞানী পাখি উড়ে গেল নিজের আস্তানার দিকে।গল্পটি এখানেই শেষ-- "যে সুযোগ চলে গেছে তার জন্যে শিকারি রাগে পাগল হয়ে গিয়েছিল। তার থেকেও বড় কথা সে বিশ্বাস করে বসল পাখিটার শরীরে একটা আশ্চর্য মণি আছে। অন্যের মুখে শুনে অসম্ভব জিনিসে বিশ্বাস করল শিকারি। আর শেষে উঁচু গাছের ডাল বসা একটা পাখি তার নাগালের বাইরে জেনেও তাকে খালি হাতে ধরতে গিয়েছিল সে। পাখির ৩টে উপদেশ মন দিয়ে শুনলে শিকারির ঐ হাল হত না।"
false
fe
সহজলভ্য সোশ্যাল মিডিয়া ও সৃজনশীল রুচিবোধ সহজলভ্য সোশ্যাল মিডিয়া ও সৃজনশীল রুচিবোধফকির ইলিয়াস===========================================পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হলো। ঈদের আনন্দে ত্যাগের মহিমাই ছিল প্রধান উপজীব্য। কুরবানি ছিল এই ঈদের অন্যতম উপমা। আমরা দেখলাম সেই কুরবানি নিয়ে অনেকে এমন কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছে- যা রীতিমতো খুব ভয়াবহ কাজ। জবাই করা গরুর ওপর একজন বসে আছে। আরেকজন জবাই করা গরুর মাথা কাঁধে নিয়ে উল্লাস করছে। আরো কয়েকজন জবাই করা গরুর রক্তে পা ভিজাচ্ছে ! কী জঘন্য এমন মানসিকতা! ভাবতে অবাক লাগে, কিছু মানুষ সব নোংরা ছবি প্রতিনিয়ত পোস্ট করছে ফেসবুকে। কেউ তাদের সন্তানদের স্কুলসনদ পোস্ট করছে। কেউ ডাক্তারে গিয়েছিল। ডাক্তার তাকে কি রিপোর্ট দিয়েছে তা ছবি আকারে দিয়ে দিচ্ছে ফেসবুকে। কী এমন হীন রুচিবোধে আক্রান্ত হচ্ছে আজকের সমাজ! সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত জীবনচিত্র প্রদান করা কতটা বুদ্ধিমত্তার কাজ? বিষয়টির গভীরে সবার যাওয়া দরকার। বিখ্যাত নিউজ চ্যানেল সিএনএনের সোশ্যাল রিপোর্টে এসেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভিত্তিহীন খবর সবচেয়ে বেশি প্রচার করা হয় সোশ্যাল সাইটগুলোতে, যা মিডিয়া সম্পর্কে সমাজে বাজে ধারণা সৃষ্টি করছে।আমরা দেখছি, শুধু ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন, মাইস্পেস, হাইফাইভ, বাদু, নিং ইত্যাদিতেই নয়, বাংলাদেশিদের উপস্থিতি রয়েছে এমন ব্লুগগুলোও অনর্থক আর আজেবাজে প্রচুর কমেন্টে ভরা। এসব সাইটের অপব্যবহার হচ্ছে প্রচুর। যেসব ব্লুগের লেখা খুব বেশি সম্পাদনা করা হয় না সেসব ব্লুগে যার যা খুশি তা-ই লিখে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মীয় বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালানো হয়- এ খবর নতুন নয়। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছে তারা। গুজব তৈরির জন্য তারা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন, গুগল প্লাস ইত্যাদির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ায় হামলার নেপথ্যেও ছিল ওই গুজব। সেখানেও সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেছিল ওই চক্রটি। হলি আর্টিজান ইস্যুতেও এমন মিডিয়া ব্যবহার করা হয়েছিল বলে তথ্য বেরিয়ে আসছে। যারা প্রতিদিন ক্রমশ খুব বেশি ফেসবুকনির্ভর হচ্ছেন তাদের জন্য শঙ্কাজনক খবরও আছে। দেশে-বিদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মীদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে অফিস কর্তৃপক্ষ। সেখানে আপত্তিকর কিছু থাকলে কর্মী সম্পর্কে বাজে ধারণার সৃষ্টি হয়; এমন কি কর্মী চাকরিচ্যুতও করা হয়ে থাকে। চাকরিপ্রার্থী বা কর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কোনো নেতিবাচক কার্যকলাপ প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজারদের চোখে পড়ে প্রথমেই। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ ম্যানেজার সোশ্যাল মিডিয়ায় গুরুত্ব দেন। সেখানে বিতর্কিত কোনো পোস্ট বা মন্তব্য থাকলে প্রার্থীকে অন্য দৃষ্টিতে দেখা হয়। আশার কথা, বাংলাদেশে অফিস আদালতে সামাজিক গণমাধ্যমকে আরো কার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে গেল মার্চ মাসে ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা-২০১৬’ নামে এই নির্দেশিকা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে দায়িত্বশীল হতে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ থাকলেও সরকারি চাকরিজীবীকে দায়িত্বশীল নাগরিকসুলভ আচরণ ও অনুশাসন মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোনো আধেয় (কনটেন্ট) প্রকাশ না করাসহ কিছু বিধি-নিষেধও মানতে হবে। এতে বলা হয়, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুক্ত আছেন। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৮০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন। আর আট শতাধিক সরকারি অফিসে দাপ্তরিক কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কর্মচারীদের করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, দাপ্তরিক যোগাযোগ ও মতবিনিময়, সমস্যা পর্যালোচনা ও সমাধান, জনসচেতনতা ও প্রচারণা, নাগরিকসেবা সহজ করা ও উদ্ভাবন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ, জনবান্ধব প্রশাসন ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সেবাগ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সরকারি অফিসগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট পরিচালনার নির্দেশনায় বলা হয়, অ্যাকাউন্টে কোনো ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করা যাবে না। প্রতিষ্ঠানের কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা তিন থেকে পাঁচজনের একটি মডারেটর দল থাকবে।নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয়প্রতিপন্ন করে এবং লিঙ্গবৈষম্য বা এ সংক্রান্ত বিতর্কমূলক কোনো কনটেন্ট প্রকাশ করা যাবে না। জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কনটেন্ট প্রকাশেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে তিন মাসে একবার নিজ দপ্তরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের অগ্রগতি ও কার্যকারিতা পর্যালোচনা করতে হবে। এর সবই ইতিবাচক দিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশে গণসচেতনতা তৈটি হচ্ছে কি? আন্তর্জাতিক সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্টরা বলছেন- সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকে ব্যক্তিগত তিন তথ্য দেয়া কখনোই উচিত নয়। সেগুলো হচ্ছে- আইডি কার্ড বা ভোটার পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত তথ্য বা ছবি এবং নিজের মেডিকেল রেকর্ড। এগুলোতে ব্যক্তিগত অনেক তথ্যই থাকে যা অপরাধীদের হাতে চলে গেলে তারা বেআইনি কাজ করতে পারে। উত্তেজনার বশে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা আগেই ফেসবুকে পোস্ট করে দেন। সেটাও না করা উচিত। এ তথ্য পেয়ে ফেসবুকে থাকা চোররা আপনার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাড়িতে হানা দিতে পারে। এমনকি পথেও আক্রমণ করতে পারে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য কখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ সাইবার অপরাধীরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। এরপর অনায়াসে অ্যাকাউন্ট তছরুপ করতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক চ্যানেলগুলো ও বিশেষ করে ফেসবুক অনেক সমস্যাও সৃষ্টি করেছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ল্যারি রোজেন এক গবেষণায় দেখেছেন, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ফেসবুকের ব্যবহার মানুষের মধ্যে আত্মপূজার মনোভাব সৃষ্টি করে এবং এর ফলে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের মানসিক অপরিপক্বতা। যেমন- অসামাজিক আচরণ, তীব্র টেনশন বা উত্তেজনা সৃষ্টি, কিশোর ও কিশোরীদের সহিংস আচরণ প্রভৃতি। রোজেনের গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু ও বয়স্কসহ ফেসবুকের বহু গ্রাহক মানসিক রোগের শিকার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে আবেগীয়ভাবে জড়িয়ে আছেন ব্যবহারকারীরা। এ ছাড়া এর নিত্য ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তা-ও বের হয়ে এসেছে ওই মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের একটি গবেষণায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যবহারকারীদের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারের ফলে অন্য ব্যবহারকারীর প্রতি ঈর্ষা বা হিংসার জন্ম নিলে তা থেকে বিষণœতা বোধের জন্ম হতে পারে। গবেষণার সঙ্গে জড়িত অধ্যাপক মার্গারেট ডাফি বলেন, যেভাবে ফেসবুক ব্যবহার করেন ব্যবহারকারীরা, তার ফলে এর প্রতি নিজেদের প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, যদি ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এর ভালো দিকগুলো বেছে নিয়ে নিজের পরিবার ও পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন এবং জীবনের মজার ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন, তাহলে ফেসবুক হতে পারে বেশ মজার ও স্বাস্থ্যকর কর্মকাণ্ডের জায়গা। তবে পরিচিত কেউ অর্থনৈতিকভাবে কতটা ভালো আছে, বা পুরনো কোন বন্ধু তার সম্পর্ক নিয়ে কতটা সুখে আছে, তা দেখার জন্য যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে ঈর্ষা বা হিংসার জন্ম নিতে পারে। এর ফলে তাদের মধ্যে ক্রমেই বিষণœতাবোধের সৃষ্টি হতে পারে। খুন, ধর্ষণ করে সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। অনেক অপকর্মের সাক্ষী রাখা হচ্ছে ফেসবুক-টুইটার-ব্লুগকে। এতে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। নতুন প্রজন্মের কেউ কেউ ভাবছে এটাই তাদের আইকন। বিশেষ করে গ্রামে গ্রামান্তরে সোশ্যাল মিডিয়ার, ইন্টারনেটের ছড়াছড়ি মানুষকে দিশেহারা করে তুলছে। অনলাইন সাংবাদিকতার নামে কেউ কেউ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজিও করছে। এর প্রতিকার দরকার। সামাজিক প্রতিরোধ দরকার। মানুষের রুচি হওয়া দরকার মানুষের মতো। তাহলে তো পশু আর মানুষে কোনো পার্থক্য থাকল না। এই সাহস ও শক্তি জোগাতে হবে তরুণ প্রজন্মকেই। তাদের হাত উঁচু করে বলতে হবে, থামাও এমন অপব্যবহার। থামাও এমন দূরাচারি মানসিকতা।-------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা॥ শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৬
false
hm
আরশ জওয়ান মোসলেম খান স্টেনগানটা কাঁধ থেকে নামিয়ে আনে, কিন্তু সামনে দাঁড়ানো কালোপানা লোকটার মুখের ওপর থেকে চোখ সরায় না। লোকটার কালোকিষ্টি চেহারা থেকে সমস্ত রক্ত নেমে যায় পলকের মধ্যে। "হুজুর ... হুজুর ...।" বাকি শব্দগুলি বের হয় না তার কাঁপতে থাকা ঠোঁটের ভেতর দিয়ে, কিন্তু মোসলেম খানের বুঝতে বাকি থাকে না, লোকটা কী বলতে চাইছে। "তুম মুসলিম হো কেয়া?" মোসলেম খান আয়েশ করে স্টেনটাকে অন্যকাঁধে ঝোলায়। লোকটার চোখ সম্মোহিতের মতো স্টেনের নলটাকে অনুসরণ করে শুধু। "হ্যাঁ হুজুর। হাম মুসলিম হায়।" "নাম কেয়া? নাম বোলো।" "ইদরিস, হুজুর।" মোসলেম খান আপনমনে উচ্চারণ করে ইদরিস নামটাকে। বিভিন্নভাবে। ইদ্রিস। ইদরিস। ইদরিশ। ইদরিস কাঁপতেই থাকে। "কেয়া ভাই ইদরিস, অওর কুছ হায় কেয়া তেরে নামকে আগে পিছে?" "হুজুর?" "কেয়া তেরা নাম সিরফ ইদ্রিস হায়? অওর কুছ নাহি তেরে নামকে সাথ?" ইদরিস মনে মনে জিভ কাটে হয়তো, মোসলেম খান স্পষ্ট দেখতে পায়। ইদ্রিসের উচ্চতাটুকু সে মাপে মনে মনে। পাঁচ ফিট এক ইঞ্চি হবে। ওজন কেমন হবে এই শুয়ারের বাচ্চার? চল্লিশ সের? মুরগির মতো সিনা। কুকুরের মতো সিয়া গায়ের রং। এ-ই সম্বল করে বুজদিলরা আজাদী চায়। "মোহাম্মদ ইদরিস আলি হুজুর।" "ওয়াহ ওয়াহ। কেয়া খুবসুরৎ নাম হ্যায় ভাই! মোহাম্মদ ইদরিস আলি! কান রওশন হো গায়া মেরা। কাপড়া উতার।" "হুজুর?" মোসলেম এবার হাত চালায়। চটাশ করে শব্দ হয়। মোসলেম হাতটা নিজের পাৎলুনের পেছনে মুছে নেয় চট করে। বাংগালটার গাল ভর্তি ঘাম। "বাত সমঝ মে নাহি আয়া মাদারচওদ? ম্যায়নে কাহা কাপড়া উতার।" ইদরিস আলি কাঁপা হাতে নিজের গেঞ্জি খুলতে যায়। মোসলেম হেসে ফেলে। "বানিয়ান উতারকে কেয়া দেখলাওগে? তুমহারা হাড্ডি গিননেকা ওয়াক্ত নাহি হ্যায় মেরে পাস। কাপড়া উতারো বেহেনচোদ কাহিকা।" ইদরিস আলি লুঙ্গির গিঁটে হাত দেয় কাঁপা হাতে। তার ঠোঁটের কোণে রক্ত। মোসলেম খান স্টেনের গ্রিপ চেপে ধরে অলস চোখে চারপাশটা দেখে নেয় একবার। ধারেকাছে কোন দর্শকও নেই। মোসলেম বিরক্ত হয়। অন্তত শ'খানেক লোকের দেখা দরকার ছিলো এই দৃশ্য। ইদরিস আলি লুঙ্গি ফেলে দিয়ে দাঁড়ায়। মোসলেম খান আটদিন আগে এই এলাকায় অপারেশনে ছিলো। ইদরিস আলির মতোই রোগাপটকা একেকটা শুয়ারের বাচ্চা সেদিন হল থেকে পাকিস্তানী ফৌজের ওপর গুলি করার হিম্মৎ দেখিয়েছে। মোসলেমের ইউনিট ছাড়েনি তাদের। পরদিন যতগুলোকে পেয়েছে, পেছনে মাঠে নিয়ে কবর খুঁড়িয়ে গুলি করে মেরেছে। এক দলের কবর অন্য দল খুঁড়েছে, লাশ তুলে এনে গোর দিয়েছে আরেকদল, নতুন খোঁড়া গোরের মধ্যে গুলি খেয়ে লাশ হয়ে পড়েছে আরেকদল, সেই গোরে মাটি চাপা দিয়েছে আরেকদল। পালে পালে বাঙালি। রোগা, কালো, বেঈমান। রাস্তার কুত্তাগুলি পর্যন্ত ওদের চেয়ে উঁচু দরের পাকিস্তানী। হাফনাঙ্গা ইদরিস কাঁপতে থাকে এপ্রিলের কটকটে রোদের নিচে দাঁড়িয়ে। মোসলেম খান ইদরিসের শিশ্ন দেখে মনোযোগ দিয়ে। নাম মোহাম্মদ ইদরিস আলি, বললেই ইয়াকিন যাবার পাত্র সে নয়। এই ইদরিস হিন্দুর দালাল, নাকি নিজেই হিন্দু, সেটা পরখ করে দেখতে হবে আগে। আরশ থেকে মোসলেম খানের ঈশ্বর নেমে ইদরিসের রুগ্ন কুঞ্চিত শিশ্নের ডগায় ভর করেন মোসলেমের স্টেনের দাপটে। তেসরা এপ্রিল, ঊনিশশো একাত্তর। . .
false
rn
মহান বীর আলেকজান্ডার গ্রীস তখন অসংখ্য ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত। এমন একটি রাষ্ট্রের অধিপতি ছিলেন ফিলিপ। তিনি ছিলেন বীর ও সাহসী যোদ্ধা। সিংহাসন অধিকার করার অল্প দিনের মধ্যেই গড়ে তুললেন সুদক্ষ সৈন্যবাহিনী। ফিলিপের পুত্রই বীর আলেকজান্ডার।আলেকজান্ডারের জন্ম ৩৫৬ সালে। মা ছিলেন অস্বাভাবিক মানুষ।আলেকজান্ডার বেঁচেছিলেন মাত্র ৩৩ বছর। তিনি চেয়েছিলেন পৃথিবীরব্যাপী রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। তার মনের অতিমানবীয় এই ইচ্ছাকে পূর্ণ করার জন্য স্বল্পকালীন জীবনের অর্ধেকেই প্রায় অতিবাহিত করেছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। তার বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য ঐতিহাসিকরা তাকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নৃপতি আসনে বসিয়েছেন। তাকে ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’ নামে অভিহিত করা হয়।আলেকজান্ডারের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই চন্দ্রগুপ্ত গ্রীক শাসকদের বিতাড়নের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আলেকজান্ডারের প্রথম শিক্ষক ছিলেন লিওনিদোস নামে অলিম্পিয়াসের এক আত্মীয়। আলেকজান্ডার ছিলেন অশান্ত এবং একরোখা। শিশু আলেকজান্ডারকে পড়াশোনায় মনোযোগী করতে হিমশিম খেতে হয়েছে লিওনিদোসকে। তবে তার আন্তরিকতায় একসময় পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন আলেকজান্ডার। অংক, ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি।প্রায় ১২ বছরের সামরিক অভিযানের পর আলেকজান্ডার মৃত্যুবরণ করেন। ধারণা করা হয় হয়ত তিনি ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড অথবা ভাইরাল এনকেফালাইটিস্‌ এর আক্রান্ত হয়ে মারা যান। হেলেনেস্টিক যুগে তার অভিযানের কাহিনী লোকের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। কিশোর বয়স থেকেই তার মধ্যে ফুটে উঠেছিল বীরোচিত সাহস। এই সাহসের সাথে সংমিশ্রণ ঘটেছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধির। একদিন একজন ব্যবসায়ী একটি ঘোড়া বিক্রি করেছিল ফিলিপের কাছে। এমন সুন্দর ঘোড়া সচরাচর দেখা যায় না। ফিলিপের লোকজন ঘোড়াটিকে মাঠে নিয়ে যেতেই হিংস্র হয়ে উঠল। যতবারই লোকেরা তার পিঠের উপর চড়তে যায়, ততবারই সে লাফিয়ে সবাইকে দূরে পাঠিয়ে দেয়। এসময় পুরো ঘটনাটি দেখছিল ফিলিপ এবং আলেকজান্ডার।আলেকজান্ডার খেয়াল করলো ঘোড়াটি তার ছায়া দেখে ভয় পাচ্ছে। তাই ঘোড়ার পাশে গিয়ে আস্তে আস্তে তার মুখটা সূর্যের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। তারপর ঘোড়াটিকে আদর করতে করতে একলাফে পিঠের উপর উঠে বসেন। এসময় ছেলের সাহস ও বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হন ফিলিপ। তিনি ছেলেকে জেড়িয়ে ধরে বললেন, তোমাকে এভাবেই নতুন রাজ্য জয় করতে হবে। গ্রীসের সভ্যতা ছিল মূলতঃ নগর কেন্দ্রিক। এটি নগরসমূহে বিকাশ লাভ করেছিল এবং নগরবাসীদের দ্বারা বিস্তার লাভ করেছিল। প্রাচ্যের নগরগুলি কিছু সংখ্যক দালান-কোঠা নিয়ে গড়ে উঠেছিল। জনগণের মধ্যে কোন সুষ্ঠ পরিকল্পণা ছিল না। একজন স্বৈরাচারী শাসকের দ্বারা সেগুলি শাসিত হত। তাই জনগণের অবস্থা ছিল প্রায় ক্রীতদাস পর্যায়ের। অপরদিকে গ্রীসের নগরগুলি ছিল সুপরিকল্পিত এবং শিল্পমন্ডিতভাবে নির্মিত।সাহিত্য ও শিল্পকলা গ্রীকদের জীবনে একটি বিরাট স্থান দখল করেছিল। বুদ্ধিগত বিকাশ সম্পর্কে সতর্ক ছিল বিধায়, তারা বিভিন্ন শিক্ষালয় স্থাপন করেছিল।প্রাচ্যের অন্যান্য জাতিসমূহ থেকে গ্রীকদের জীবন-যাপনের পদ্ধতি ও রীতিনীতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের। তাদের পোশাক ছিল জমকাল, ঢিলে-ঢালা এবং তারা চওড়া কান বিশিষ্ট টুপি মাথায় দিত। তাদের জীবন দর্শন ছিল এই ধরণের যে, জীবনকে আজই উপভোগ করতে হবে, আগামীকাল আমরা নাও থাকতে পারি। এই কারণে গ্রীকেরা ভোগ-বিলাসকে তাদের অন্যতম প্রধান বিষয় মনে করত। তদের কাছে ধর্ম ছিল ভবিষ্যৎ জীবনের বিষয় তাই তাদের চিন্তা-ভাবনায় এর স্থান ছিল সামান্য মাত্র।দীর্ঘ তিন বছর ধরে অ্যারিস্টটলের কাছে শিক্ষালাভ করেন আলেকজান্ডার। পরবর্তীকালে অনেক ঐতিহাসিকের অভিমত,নিজেকে বিশ্বজয়ী হিসেবে গড়ে তোলার শিক্ষা আলেকজান্ডার পেয়েছিলেন অ্যারিস্টটলের কাছে।আমৃত্য গুরুকে গভীর সম্মান করেছেন আলেকজান্ডার।আলেকজান্ডারের যখন ষোল বছর বয়স, ফিলিপ বাইজানটাইন অভিযানে বের হলেন। পুত্রের উপর রাজ্যের সমস্ত ভার অর্পণ করলেন। ফিলিপের অনুপস্থিতিতে কিছু অধিনন্থ অঞ্চলের নেতারা বিদ্রোহ ঘোষণা করল। কিশোর আলেকজান্ডার চুপ করে বসে রইলেন না।বীরদর্পে সৈন্যবাহিনী নিয়ে হামলা করলেন শত্রুদের দূর্গে। পরাজিত করলেন বিদ্রোহীদের। এমনকি বন্দী করে ম্যাসিডনে নিয়ে আসলেন। যুদ্ধে জয়ী হয়ে আলেকজান্ডার মাতাল হয়ে পড়লেন। তিনি বিজয়ের নেশায় মত্ত হয়ে একের পর এক রাজ্য দখলের খেলায় নামলেন। এ বিষয়টি পিতা ফিলিপের পছন্দ হয়নি। এ নিয়ে শুরু হয় পিতা-পুত্রের দ্বন্দ। আলেকজান্ডারের কুড়ি বছর বয়সে ফিলিপ আততায়ীদের হাতে নিহত হন। ইতিহাসবিদদের মতে অবশ্য, এ হত্যার পেছনে রাণী অলিম্পিয়াসের হাত আছে বলে বলা হয়।ফিলিপের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে রাজমহলের অভ্যন্তরে শুরু হয় কোন্দল। নতুন রাণীর মেয়েকে হত্যা করা হয়। এমনকি নতুন রাণীও আত্মহত্যা করেন। রাষ্ট্রে দেখা যায় অরাজকতা। আশেপাশের রাষ্ট্রগুলো শত্রুতায় রুপান্তরিত হয়।মিসরের পথে আলেকজান্ডার জেরুজালেমে প্রবেশ করলেন এবং বিনা বাঁধায় তা দখল করে নিলেন। জেরুজালেমের বাইরে সেইসময় একদল ধর্মীয়নেতা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এদের মধ্যে এমন একজন ছিলেন, যিনি পূর্বেই তার সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি বিশ্বজয় করবেন। আলেকজান্ডার তাদের দ্বারা প্রভাবিত হলেন এবং পবিত্র নগরী সম্পর্কীত যুক্তিসঙ্গত শর্তাবলী তিনি মঞ্জুর করলেন। সম্রাট আলেকজান্ডার সুদূর গ্রিস থেকে একের পর এক রাজ্য জয় করে ইরান আফগানিস্তান হয়ে ভারতের পাঞ্জাবে পৌছে যায়। সুদর্শন তরুণ সম্রাটের চোখে সারা পৃথিবী জয়ের স্বপ্ন। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিশালী সেনাবাহিনীর অধিকারি তিনি। বিখ্যাত ইরান সম্রাট দারায়ুস থেকে শুরু করে উত্তর পশ্চিম ভারতের পরাক্রমশালী রাজা পুরু পর্যন্ত কেউ তার সামনে দাড়াতে পারে নাই। এখন তার সামনে মাত্র একটা বাধা, বিপাশা নদীর ওপারের গঙ্গারিডই রাজ্য। ভারতের মূল ভুখন্ড। এটুকু করতলগত হলেই সমগ্র ভারত তার দখল হয়ে গেল। আলেকজান্ডারের পিতা দ্বিতীয় ফিলিপ তার শাসনামলে গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলোকে নিজের শাসনাধীনে আনেন। আলজান্ডার নিজেও এই নগররাষ্ট্রগুলিকে একত্রিত করতে অভিযান চালান কারণ ফিলিপের মৃত্যুর পর এগুলো বিদ্রোহ করেছিল। এরপর আলেকজান্ডার একে একে পারস্য, আনাতোলিয়া, সিরিয়া, ফোনিসিয়া, জুডিয়া, গাজা, মিশর, ব্যাক্ট্রিয়া এবং মেসোপটেমিয়া জয় করেন। তার সাম্রাজ্য মেসিডোনিয়া থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পিতার মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার পশ্চিমে অভিযান চালান ইউরোপ জয় করার জন্য।
false
rg
গ্রাফিক-আর্ট ও প্রচ্ছদ শিল্পী মানেবন্দ্র সুর আর নেই ! আজ ২৪ শে ডিসেম্বর ২০০৯ দুপুরে মস্তিকে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে গ্রাফিক-আর্ট ও প্রচ্ছদ শিল্পী মানেবন্দ্র সুর চলে গেলেন। ঐতিয্যবাহী পুরোনো ঢাকার শাঁখারীবাজারের বাসিন্দা সুদর্শণ মানুষ মানেবন্দ্র সুর সদা হাস্য বিনয়ী ও একনিষ্ঠ করিৎকর্মা মানুষ ছিলেন। পল্টনের গ্রাফিক্-স্ক্যান লিমিটেড ও মিউচুয়াল গ্রাফিক্সে তিনি দীর্ঘদিন দক্ষতার সঙ্গে গ্রাফিক-আর্ট সম্প্রসারণে আগ্রণি ভূমিকা রেখেছেন। দেড় দশকব্যাপী শিল্পী ধ্রুব এষের অঙ্কিত প্রচ্ছদরাজী সবই গ্রাফিক্স-প্রসেস হয়েছে মানবেন্দ্র সুরের হাতে। সে কারণেই দেশের প্রকাশনা শিল্পের কেন্দ্রস্থল ঢাকার বাংলাবাজারের সৃজনশীল প্রকাশক পাড়ায় নিঃশব্দে শীতের বাতাস হাহাকার করে বলছে, `অমর একুশে বই মেলা ২০১০' -এর আগ মুহূর্তে মানবেন্দ্র সুর আর নেই? সৃজনশীল গ্রন্থজগতের প্রচ্ছদ শিল্পের নেপথ্যের এই মানুষটির আকস্মিক প্রয়াণ আমাদের প্রকাশনা শিল্পের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। ধ্রুব এষের বাসায় গিয়ে তাঁর চোখে চোখ রাখতেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল মানবেন্দ্র সুরের অনুপস্থিতি। শাঁখারীবাজার বারোয়ারি পুজা মিন্দর থেকে প্রতি বছর শারদীয়া দুর্গোৎবে প্রকাশিত দৃষ্টিনন্দন সাহিত্য সাময়িকী `অকাল বোধন' এর সম্পাদক ছিলেন মানবেন্দ্র সুর। অকাল বোধনে দেশের প্রতিষ্ঠিত সব লেখকই গল্প কবিতা উপন্যাস লিখতেন প্রধানত মানবেন্দ্র সুরের সাথে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণেই। আর মানবেন্দ্র সুরের সম্পাদকীয় রুচি ও প্রকাশনার আভিজাত্যবোধ দেশের প্রধান লেখক কবি সাহিত্যিকদের জানাই ছিল। কারণ তাদের অধিকাংশ বইয়ের প্রচ্ছদ শিল্পী ধ্রুব এষ এবং সেই প্রচ্ছদের গ্রফিক্স-প্রসেস বা ফিল্ম পজিটিভ হয়েছে অকাল প্রায়াত এই সজ্জন মানুষটির মেধায়, পরিশ্রম, পেশাজীবিতায়। মানবেন্দ্র সুরের অনুপস্থিতিতে সর্বোচ্চ ক্ষতি ও শোকগ্রস্থ তাঁর শিশু কন্যা স্ত্রী পরিবার-পরিজন- সবার সঙ্ঙ্গে আমরা এই শোক ভাগ করে নিতে চাই। বিশেষ একটি তথ্য, আমাদের প্রথম ডিজিটাল ছবি `ব্ল্যাকআউট'-এর প্রিমিয়ার প্রদশর্নির সময় প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে ধ্রুব এষের সঙ্গে `ব্ল্যাকআউট প্লেইয়িং কার্ডস' বা `মনে নেই তাসগুলো'-র মুদ্রণ সমন্বয়ক ছিলেন গ্রাফিক ডিজাইনার মানবেন্দ্র সুর। আমাদের প্রিয় মানু-দা। এবং ব্ল্যাকআউট শ্যুটিংয়ের সময় এই ছবিতে অভিনয় করা থেকে রেহাই পাবার জন্য লাজুক ধ্রুব এষ পালিয়ে থাকলেও মানু-দা ছবির পরিচালক টোকন ঠাকুরকে ধ্রুব এষকে ধরতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন। ১৩ সেপ্টম্বর ২০০৬ রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার অডিটরিয়ামে যখন ব্ল্যাকআউট প্রিমিয়ার প্রদশর্নী হয়, মানু-দা তখন স্বপরিবারে উপস্থিত ছিলেন। হয়তো উদ্দেশ্য ছিল ধ্রুব এষ ব্ল্যাকআউট ছবিতে কি অভিনয় করেছেন তা দেখা, কিংম্বা আমাদের মানু-দা থেকে যাবেন আমাদের সেঙ্গই। এই তো.... আজ সবই স্মৃতি। কিছু স্মৃতি মনে থাকবে, কিছু স্মৃতি ভুলে যাবো। কিছু স্মৃতি কোনোদিন ভোলা হবে না। মানু-দা তারই অংশ। মানবেন্দ্র সুর অমর রহে... ব্ল্যাকআউট টিম ২৪ ডিসেম্বর ২০০৯, বিষ্যুদবার, ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:৪৪
false
rg
সিরিয়া যুদ্ধের ভেতরের খবর!! গোটা বিশ্বের আসল কুতুব হল দুই গ্রুপ ব্যবসায়ী। এক গ্রুপ অস্ত্রের ব্যবসা করেন। অন্যগ্রুপ করেন তেল ব্যবসা। এই দুই গ্রুপের ওঠাবসা, খাওয়া-দাওয়া, ভাজন-ভোজন, গর্দন-মর্দন, তর্জন-গর্জন, অর্জন-বর্জন সব সময় একসাথে হয়। তারা একই টেবিলে বসে রাতের আঁধারে মদ ভাগাভাগি করে। বিলাসী বাংলোয় বসে নারী ভাগাভাগি করে। আর সমুদ্রবিলাসে বসে জুয়া খেলে। গোটা বিশ্ব এদের হাতের মুঠোয়। এদের এক গ্রুপ হল মোসাদ। আরেক গ্রুপ হল সৌহাদ। মোসাদ-সৌহাদ ভারী গলায় গলায় খাতির। প্রচন্ড প্রতাপশালী হওয়ায় বিশ্বের তাবদ বড় বড় শক্তিধর রাষ্ট্র এদের তোয়াজ করেই চলেন। সেখানে অবশ্য অর্থের লেনদেন এবং স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি তেলের অস্তিত্ব রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। তাই দুর্ভাগ্যবসত এই দেশগুলোই এদের জুয়ার কারবারে প্রধান লক্ষ্যবস্তু। কোনো অজুহাত দিয়ে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারলেই অস্ত্র যেমন বিক্রি হবে, তেমনি তেলের খনির দখলও নেওয়া যাবে। এই জুয়া খেলা জায়েজ করতেই ইসরাইল নামে একটি বিতর্কিত রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। আয়তনে এটি যতোই ছোট হোক, শক্তি আর হুংকারে এটি অনেক বড় শক্তিধর। বিশ্বের মহা শক্তিধর খোদ আমেরিকাই এই ইসরাইলের পরামর্শ আর বুদ্ধিতে চলে। ইসরাইল যদি বলে এখন রাত। আমেরিকা চোখ বন্ধ করেই বলবে, হ্যা এখন রাত। ইসরাইল যদি বলে এখন বসন্ত। আমেরিকা এক পায়ে দাঁড়িয়ে হাই ছেড়ে বলবে, হ্যা এখন বসন্ত। আমেরিকার যে কোনো প্রেসিডেন্টকে পর্যন্ত ইসরাইলের নির্মিত বিশেষ ধরনের ইহুদি টুপি পড়ে নির্বাচনে জেতার পর শপথ নিতে হয়। নাসার সব বড় বড় বিজ্ঞানী ইসরাইলের ইহুদি। গোটা আমেরিকার ওঠাবসা ইসরাইলের পরামর্শ-নির্দেশ আর দিক নির্দেশনায়। তো শিবের গীত না গেয়ে চলুন আসল আলোচনায় যাওয়া যাক।তেলব্যবসায়ী মহামতি কাতারের ইচ্ছে হল, কাতার থেকে পারস্য উপসাগর দিয়ে তুরস্কে একটি তেল-গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করা। এই তেল-গ্যাস পাইপলাইনের যাতায়ত পথেই সিরিয়ার অবস্থান। সিরিয়াকে রাজী না করিয়ে কাতার সাহেব তুরস্কের সঙ্গে এই তেল-গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করতে পারবে না। আসাদ সাহেব রাজী নয়। তো, কি করা, কি করা? আসাদ সাহেবের ঘাড় মটকে দিয়ে সিরিয়ায় একটি পুতুল সরকার বসাতে পারলেই কাজটা সহজ হয়ে যাবে। কে পারবে সেই দায়িত্ব নিতে? অবশ্যই কাতারের দোস্ত মহান আমেরিকা সেই কাজটি খুব দক্ষতার সঙ্গেই পারার কথা! এর আগে ইরাক থেকে, লিবিয়া থেকে, ইয়েমেন থেকে মিশর থেকে কিভাবে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তেল-গ্যাস দখল করা সম্ভব, তা আমেরিকা প্রমাণ করেছে। সো, আর দেরি কেনো? ধরো এবার সিরিয়াকে। আসাদ সাহেবের ঘাড় মটকে দাও। আসাদ সাহেব আবার রাশিয়ার বন্ধু। মিলিটারি থেকে শুরু করে আসাদ সাহেবের সকল পাওয়ার প্লাট দেখভাল করে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাহেব আবার আসাদ সাহেবের দীর্ঘদিনের দোস্ত। এর আগে আসাদের বাবা হাফিজ আল আসাদও পুতিনের ভালো বন্ধু ছিল। পুতিন তখন রাশিয়ার প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি'র প্রধান। তো, বন্ধু'র বিপদে বন্ধু এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। মাঝখানে অস্ত্র আর তেল ব্যবসার কারবার তো থাকলোই। সৌদি-আরব হল আমেরিকার একটি পাচাটা দালাল। ইসরাইলের ইন্ধনে সৌদি-আরব সবচেয়ে বেশি আগ্রহী আসাদের ঘাড় মটকানোর ব্যাপারে। যে কারণে, সৌদি-আরবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান গোপনে সিরিয়ার বিদ্রোহীগোষ্ঠিকে অস্ত্র-অর্থ-গোলাবারুদ দিয়ে শুরু থেকেই সমর্থণ করে আসছিল। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের কাছে রাসায়নিক অস্ত্রের চালান সরবরাহ করেছে এই সৌদি প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান। অসাবধনতাবসত সেই রাসায়নিক অস্ত্রের গোপন পরীক্ষার সময় সিরিয়ায় অনেক বেসামরিক মানুষ মারা যায়। সঙ্গে সঙ্গে এটাকেই ঢাল হিসেবে আসাদের বিরুদ্ধে অজুহাত হিসেবে প্রমাণে লেগে যায় সৌদি-আরব। দোস্ত আমেরিকাকে পায় পাশে। আমেরিকা আবার ফ্রান্সকে উসকে দেয় ভালো অস্ত্র ব্যবসার একটা লোভ দেখিয়ে। আমেরিকা-ফ্রান্স-সৌদি-আরব-বৃটেন-কাতার-তুরস্ক-ইসরাইল দলবেধে বলতে শুরু করলো- আসাদের সেনাবাহিনী বিদ্রোহী সিরিয়ানদের উপর রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করে নিরীহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। অতএব, আসাদকে শক্তি প্রয়োগ করেই উৎখাত করা হবে। কিন্তু আমেরিকা-ইসরাইলের সেই ইচ্ছায় বাধ সাধলেন পুতিন। পুতিন আসাদের পুরানো বন্ধু। বন্ধু'র বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে শত্রুর শত্রু হল মিত্র থিওরিতে ইরান ও হিযবুল্লাহও আসাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সৌদি প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান স্বয়ং পুতিন সাহেবকে এই বলে হুমকি দিয়েছেন যে, আগামী বছর (২০১৪ সালে) রাশিয়ার সোচিতে যে শীতকালীন বিশ্ব অলিম্পিক হবে সেখানে চেচেন বিদ্রোহীদের দিয়ে হামলা চালোনো হবে, যদি না রাশিয়া সিরিয়ার সাথে বন্ধুত্ব থেকে সরে না দাঁড়ায়। আর একটা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন সৌদি গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান, সেটি হল, যদি রাশিয়া সৌদি-আরবের কথা রাখে, তাহলে শীতকালীন অলিম্পিক নিরাপদে হবে এবং আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ার নৌঘাটি'র নিরাপত্তাও তারা দেখবে।সৌদি-নাবালক প্রিন্স বান্দার বিন সুলতানের কথা শুনে পুতিন সাহেব মুচকি হাসলেন। ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানী'র সঙ্গে আগামীকাল ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে কিরঘিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাংহাই কো-অপারেশান অর্গানাইজেশানের বার্ষিক সম্মলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আলাদা বৈঠক করবেন। উদ্দেশ্য, ২০১০ সালে ইসরাইল ও আমেরিকার চাপে রাশিয়া ইরানের কাছে যে এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল বিক্রি করা বন্ধ রেখেছিল, সেটি এখন বিক্রি করবে। আর তেহরানে নতুন আরেকটি পারমানবিক চুল্লী স্থাপনে রাশিয়া সহযোগিতা করবে। মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়াও সেই সুযোগে মিত্রদের সঙ্গে শক্তি বাড়ানোর খেলায় মেতে উঠেছে। সো, ওবামা-কেরি-বান্দার বিন সুলতানদের হুংকারে আসাদের আপাতত কিছুই না হবার আলামত প্রায় চূড়ান্ত। মাঝখান দিয়ে সিরিয়া যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে নজির হিসেবে পুতিনের ক্যারিশমায় এ বছরের নোবেল শান্তি পদকের হাতছানি এখন এডওয়ার্ড স্নোডেন আর ইউকিলিক্স-খ্যাত জুলিয়ান এসেঙ্গাকে ছাড়িয়ে পুতিনের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। তাই বলে কি অস্ত্র আর তেল ব্যবসা থেমে থাকবে? মোটেই না। মোসাদ আর সৌহাদ সাহেবরা নতুন ফন্দি নিশ্চয়ই বের করবেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পেছনের সবচেয়ে বড় কারণ হল, বাংলাদেশে ব্যাপক গ্যাস, তেল এবং কয়লার অস্থিত্বের সন্ধান পাওয়া। বাংলাদেশের এই তেল-গ্যাস-কয়লার গন্ধে আমেরিকার ঘুম তো হারাম হয়ে গেছে। তাই সে কোনো না কোনো অজুহাতে বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল সরকার কায়েম করাতে তারা বদ্ধপরিকর। আর আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আমেরিকার সেই ফাঁদে পা দিয়ে ক্ষমতার পাল্টাপাল্টি করছে। ক্ষমতার আসল চাবি ওই মোসাদ আর সৌহাদ দুই বিগ জায়ান্টের হাতেই। সো, সাধু সাবধান।।
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! রেজা ঘটক ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, বুধবার। অমর একুশে বইমেলার অষ্টাদশ তম দিন। আজ বইমেলায় যাই সাড়ে চারটায়। প্রথমে যথারীতি সোহারাওয়ার্দী উদ্যানে ঢু মারি। আজ মেলায় এসেছে বন্ধু কবি আলফ্রেড খোকন-এর কবিতার বই 'দুর্লভার দিন'। বইটি প্রকাশ করেছে শুদ্ধস্বর। ত্রয়ী প্রকাশনে উকি দিতেই প্রকাশক মাধব'দা আমার নতুন বইয়ের কভার দেখালেন। 'বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী: মুজিব দ্য গ্রেট'। মাধব'দা জানালেন, ছাপা চলছে। আগামীকাল বা পরসু হয়তো মেলায় আসবে বইটি। (বন্ধুদের জন্য এই সুযোগে জানিয়ে রাখি, রাত সাড়ে এগারোটায় মাধব'দা ফোন করে আবার জানালেন, আগামীকাল বিকালে বইটি মেলায় আসবে। 'মুজিব দ্য গ্রেট' প্রকাশ করেছে ত্রয়ী প্রকাশন। পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ত্রয়ী প্রকাশনের স্টলে)।এরপর বাংলা একাডেমির লিটলম্যাগ চত্বর বহেড়াতলায় গিয়ে নন্দনের স্টল খুলে বসি। আজ মেলায় উপস্থিতি ছিল খুব কম। বইপ্রেমীরা যারা মেলায় এসেছেন, সবাই দলবেধে ঘুরছেন। পছন্দের বই দেখছেন। কিনছেন কেউ কেউ দু'একটা। ফুলের বিক্রি আজও চোখে পড়ার মত। একাডেমির মূল মঞ্চে আশ্চার্যজনকভাবে আজ আলোচকও ছিল সীমিত। আর দর্শক আসন তো বরাবরের মত ফাঁকা গড়ের মাঠ। তবু জ্ঞানগর্ভ আলোচনা চলেছে। সন্ধ্যায় একই মঞ্চে ছিল গানের অনুষ্ঠান। গান চলেছে রাত আটটা পর্যন্ত। আজ মেলায় এসেছে তরুণ কবি ইয়ন-এর কবিতার বই 'ভাবনাংশ'। প্রকাশ করেছে কাদাখোঁচা। বইটির নামাঙ্কনঃ সাইদ র’মান। বইটি পাওয়া যাবে লিটলম্যাগ চত্বরের প্রান্তস্বর -এর স্টলে। চার ফর্মার বইটির দাম একশ ত্রিশ টাকা। বইমেলায় ২৫ শতাংশ ছাড়ে পাওয়া যাবে মাত্র একশ টাকায়। ইযনের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্র ইয়ন বলল, রেজা ভাই, বই একটা বিক্রি হইছে, চলেন চা খাই। মামার হাতে আমার বই। বাংলা একাডেমি ক্যান্টিনের তালিকায় চা থাকলেও সেখানে আসলে চায়ের বদলে পাওয়া যায় কেবল কফি। আমরা কফি খেয়ে ক্ষাণিক আড্ডা দিলাম মেলার একেবারে শুরুতেই। ইয়ন ছবি বানায়। বইটি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ইয়ন বলল, বইটি প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিলো ২০১১’র ফেব্রুয়ারিতে। পাণ্ডূলিপির প্রথম খসড়া দাঁড়িয়েছিল আগের বছর, মানে ২০১০’র জুলাইয়ে। অবশেষে ২০১৫’তে এসে চূড়ান্ত হলো তা। অতএব এবার কাটলো অপেক্ষা। এবারই অমর একুশে বইমেলার আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেল। ইয়নকে অভিনন্দন। ইমেজ জাদু থেকে শব্দ জাদু নিয়ে খেলার জন্য। আজ বইমেলায় যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে, তারা হলেন- শিল্পী চারু পিন্টু, কবি কাজী টিটো, লেখক ঋষি এস্তেবান, আসমা সৈয়দ, কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, কথাসাহিত্যিক রাখাল রাহা, ডক্টর অনু হোসেন, কবি ও গবেষক গোলাম শফিক, কবি ও গবেষক মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, কবি মাসুদুজ্জামান মাসুদ, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, জাগৃতি'র প্রকাশক দীপন ভাই, শ্রাবণের প্রকাশক রবীন আহসান, রম্য লেখক আহসান হাবিব, বিজ্ঞান লেখক ডক্টর ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, লেখক ফারহানা মান্নান, বিজ্ঞান লেখক ইমতিয়াজ আহমেদ, প্রকাশক জাহাঙ্গীর আলম সূজন, লেখক ও সাংবাদিক দীপংকর গৌতম, প্রকাশক মাধব চন্দ্র দাস, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি টোকন ঠাকুর, নির্মাতা অন্তু আজাদ, নির্মাতা সন্দীপ বিশ্বাসও লক্ষী দম্পতি প্রমুখ। আজ ছায়াবীথি প্রকাশন থেকে প্রকাশ পেয়েছে দুইটি বিজ্ঞানের বই। আইজ্যাক অ্যাসিমভের ‘পরমাণুর গহীন নিসর্গে’, অনুবাদ করেছেন তরুণ লেখক ইমতিয়াজ আহমেদ। এবং আব্দুল গাফফার রনি'র 'মহাকর্ষ তরঙ্গ-কণার সন্ধানে: নিউটন বনাম আইনস্টাইন'। দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হল ছায়াবীথি'র স্টলের সামনে। মোড়ক উন্মোচন করেছেন বিজ্ঞান লেখক ডক্টর ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী ও লেখক ফারহানা মান্নান দম্পতি। গতকাল লেখক ও সাংবাদিক তুষার আব্দুল্লাহ'র ইন্টারভিউ পড়ে নতুন করে বই চুরিতে উৎসাহী হয়েছিলাম। সেই উৎসাহে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে ছবি তোলার হৈ হৈ রৈ রৈ'র মধ্যে একটি বই চুরি করার চেষ্টাও করলাম। কিন্তু ফারসীমের কারণে আমার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল। ফারসীম কইল, আম্নেরে আমি বইটা কিন্না দিমুনে। খামাখা পোলাপাইনের বই চুরি কইরা কী শান্তি পাইবেক!! আর বইটির অনুবাদক ইমতিয়াজ আহমেদ তো ব্যাপারটা টের পেয়ে ছো মেরেই বইটা ছিনিয়ে নিল। ভাগ্যিস আমার লগে এক বন্ধু ছিল, হেয় এই ঘটনা দেখে নাই। হেয় ছায়াবীথি'র স্টলে তখন নতুন বই দেখছিল। নইলে আমার ইজ্জ্বত আজ ব্যাবাক পাংচার হইয়া জারগোই। তবে তুষারদা যেদিন মেলায় আসবে, সেদিন তুষার'দার বইটা চুরি করে অটোগ্রাফ নেবার ইচ্ছে রইল!!রাত আটটায় নন্দনের স্টল বন্ধ করে মেলা থেকে বের হবার সময় ফোন করেন বন্ধু টোকন ঠাকুর। ঠাকুর আর আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার মাঠে ঘুরতে ঘুরতে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন সন্দীপ, লক্ষী আর অন্তু আজাদ। বিভাসের সামনে গিয়ে আমরা পাই কবি নির্মলেন্দু গুণ ও কবি কন্যা কবি ও নির্মাতা মৃত্তিকা গুণকে। আজ প্রথম মেলায় গুণ'দার সঙ্গে দেখা হল। তারপর গুণ'দাকে ঘিরে কিছুক্ষণ আড্ডা হল। গুণদা জানালেন, শরীর এখন পুরোপুরি ফিট। গুণদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা মেলা থেকে বাইরে এসে সন্দীপের একটি শর্ট ফিল্ম দেখলাম শিখা চিরন্তন চত্বরে বসে। .......................................১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
hm
ফুটোস্কোপিক ০১৯ ফুটোস্কোপিক হচ্ছে ফুটোস্কোপ দিয়ে দেখা গল্প। সামান্যই দেখা যায়। ... কাঁচাপাকা ভুরুজোড়ার নিচে কটমট দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে বাঘের চোখ। রানার হাতের তালু ঘামতে শুরু করে। "এসব কী ছাঁইপাশ লিখেছো?" রেজিগনেশনের দরখাস্তটা যেন একটা ঘিনঘিনে বস্তু, এমন ভঙ্গিতে হাতে না ছুঁয়ে একটা স্কেল দিয়ে সামনে ঠেলে দেন মেজর জেনারেল [অব:] রাহাত খান। রানা কেশে গলা সাফ করতে চায়। "মানে ... স্যার ... আমি আসলে ...।" কঠোর ভর্ৎসনার দৃষ্টিতে তাকান রাহাত খান। "তুমি আসলে কী চাও রানা? ইউ ওয়ান্ট টু কুইট?" রানা মিনমিন করে বলে, "স্যার, আমার বয়স হয়ে যাচ্ছে। আরো সময় নিলে ঘর সংসার করতে পারবো না স্যার ...।" চিরকুমার রাহাত খান চোখের আগুনে যেন ভস্ম করে ফেলবেন রানাকে। "ঘর সংসার? তুমি? আর ইউ ডিরেইঞ্জড মাই বয়?" ড্রয়ার থেকে একটা বই বের করেন তিনি। তারপর সামনে ঠেলে দেন। বইটিতে জনৈকা স্যাণ্ডো গেঞ্জি পরিহিতা বিশালবক্ষা যুবতীর ছবি। বইয়ের নাম জিপসী। রানা সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায় বিসিআই চীফের দিকে। "পড়ো ওটা! তিন নাম্বার পৃষ্ঠা থেকে পড়ো!" পাইপে আগুন ধরান রাহাত খান। রানা গলা খাঁকরে মিনমিন করে পড়তে থাকে। "মাসুদ রানা। বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের এক দুর্দান্ত, দুঃসাহসী স্পাই। গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে। বিচিত্র তার জীবন, অদ্ভুত রহস্যময় তার গতিবিধি। কোমলে কঠোরে মেশানো নিষ্ঠুর সুন্দর এক অন্তর। একা। টানে সবাইকে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। কোথাও অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার দেখলে রুখে দাঁড়ায়। পদে পদে তার বিপদ-শিহরনণ-ভয় আর মৃত্যুর হাতছানি। আসুন, এই দুর্ধর্ষ, চিরনবীন যুবকটির সঙ্গে পরিচিত হই। সীমিত গন্ডিবদ্ধ জীবনের একঘেয়েমি থেকে একটানে তুলে নিয়ে যাবে ও আমাদের স্বপ্নের এক আশ্চর্য মায়াবী জগতে। আপনি আমন্ত্রিত। ধন্যবাদ।" রাহাত খান এবার কটমট করে তাকান রানার দিকে। "কী বুঝলে?" রানা আবার গলা খাঁকারি দেয়। রাহাত খান বলেন, "একা! টানে সবাইকে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না! খুউব খিয়াল কইরা, মাই বয়! এই লাইনে বিয়েশাদির জন্যে গোঁ ধরলে চলবে?" রানা কাঁচুমাচু হয়ে বলে, "স্যার, আম্মা খুব গিয়ানজাম করছে। বিয়ে করার জন্যে বাসা থেকে খুব চাপ দিচ্ছে স্যার। বলে মরার আগে নাতিনাতনির মুখ দেখতে চায় ...।" রাহাত খানের মুখটা টকটকে লাল হয়ে যায়। তিনি সরোষে বলেন, "ফাজলামো করার আর জায়গা পাও না? আর বিয়ে করে তুমি খাবে কী?" রানার মুখে হাসি ফোটে। "স্যার, আপনি যদি একটু সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে বলে দেন ... আমি বিটিআরসি কিংবা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হিসেবে ঢুকে যাবো স্যার।" রাহাত খান ঘর কাঁপিয়ে বলেন, "অ্যাবসলিউটলি নট! ওসব চলবে না!" রানার মুখটা করুণ হয়ে ওঠে। সে বলে, "কিন্তু স্যার ...!" রাহাত খান ধোঁয়া ছেড়ে হাত নাড়েন। রানার ভেতরটা চিৎকার করে ওঠে। হতচ্ছাড়া বুড়ো, তোর এক কথায় কত দেশে কত হুজ্জতে একটা মাত্র জান হাতে নিয়ে ছুটোছুটি করেছি। পদে পদে আমার বিপদ-শিহরণ-ভয় আর মৃত্যুর হাতছানি। আর আজ তুই আমার জন্য মিনিস্ট্রিতে একটা ফোন করতে পারবি না? আর তুই ভেবেছিসটা কী? তুই বিয়েশাদি করিসনি বলে আমরাও শুধু আজান দিয়েই খাবো? তোর পাল্লায় পড়ে সোহেলটা বিয়ে শাদি না করে দিন রাত একটা মাত্র হাত দিয়ে ... । রাহাত খান গমগমে কণ্ঠে বলে ওঠেন, "বিকল্প কিছু ভেবেছো?" রানা ক্ষুণ্ণমনে বলে, "স্যার, এম এ জলিল জ্বলন্ত নামে এক লোক শুনলাম আমার মিশন নিয়ে লেখা বইগুলো থেকে কাটপেস্ট করে সিনেমা বানিয়ে যাচ্ছে। ভাবছি ওর সাথে যোগাযোগ করে সিনেমায় নেমে যাবো। আমি তো স্যার দেখতে শুনতে খারাপ না ...।" রাহাত খানের মুখ রক্তশূন্য হয়ে যায়। তিনি বলেন, "তুমি ... তুমি সিনেমায় নামবে?" রানা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পাওয়া গেছে বুড়োকে। ফোন করবি না? দাঁড়া, দেখাই মজা। "কী করবো স্যার? আর আপনিই বলুন, সোহেল রানা কিংবা রুবেল কিংবা আব্দুল জলিল জ্বলন্তের চেয়ে কি স্পাই হিসাবে আমাকেই বেশি মানাবে না?" রাহাত খান মনে মনে হয়তো অপু বিশ্বাস কি পূর্ণিমার সাথে গাছের ডাল ধরে ঘুরপাকরত রানাকে কল্পনা করেই বুকে হাত দিয়ে "উহ" বলে ওঠেন। রানা নিঃশব্দে বসে থাকে। কিন্তু কঠোর নীতিবাগীশ বিসিআই চীফ হার মানেন না। খেঁকিয়ে ওঠেন, "আর কিছু?" রানা বলে, "স্যার, ভাবছি আলট্রা-লিবারেল প্রোগ্রেসিভলি ডেমোক্রেটিক পার্টিতে জয়েন করবো। সামনে ইলেকশন। মাগুরা-২ আসন থেকে এমপি হিসাবে দাঁড়াতে পারি। জিতে গেলে আর চিন্তা নেই স্যার, সাংসদদের কি আর টাকার অভাব হয়?" রাহাত খান নিচু স্বরে বললেন, "মেয়েটা কে?" রানা মাথা নিচু করে। লাজুক গলায় বলে, "চিনবেন না স্যার। আমাদের কেউ নয়। ফেসবুকে পরিচয়।" ...
false
mk
খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য নদী-নালা, খাল-বিল বা ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে সরকারের নেয়া সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের সুফল হিসেবে চলতি বছর ১ লাখ ৭১ হাজার টন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ৫৬ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দিয়ে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিকে দেয়া এ তথ্যটি নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া। সেচ কাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যাপক ব্যবহার দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। নিচে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। বাংলাদেশ এমনিতেই নদী-নালার দেশ। বৃষ্টিপাতের পরিমাণও সন্তোষজনক। নদ-নদী-জলাশয়ের ধারণ ক্ষমতা বাড়ালে সারাবছরই সেচ সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া সম্ভব। ভূগর্ভস্থ পানি সেচযন্ত্রের সাহায্যে উঠানোর চেয়ে সেচকাজে জলাশয়ের পানি খরচ করা অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ীও বটে। কৃষি মন্ত্রণালয় ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। তবে বিষয়টি শুধু উপরিভাগের পানি ব্যবহারে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়ের পানি সংরক্ষণেও নজর দিতে হবে। দেশের প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোর পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে পারলে একদিকে সেচের ক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার যেমন কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, অন্যদিকে জলাশয়গুলোয় মাছচাষের মাধ্যমে আমিষ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। বর্ষাকালে দেশের এক বিরাট অংশে বন্যা ছোবল হানে নদ-নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা না থাকার কারণে। নদ-নদী খননের মাধ্যমে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে পারলে এ বিপদ থেকে অনেকাংশে রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ সীমিত। ঘনবসতির এই দেশে প্রতিদিনই চাষযোগ্য জমি কমছে। এ অবস্থায় খাদ্য চাহিদা পূরণে সীমিত জমির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে। দেশের সব কৃষি জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা গেলে খাদ্য উৎপাদন অন্তত ৫০ ভাগ বাড়ানো সম্ভব হবে। এ বিষয়টি মনে রেখে প্রাকৃতিক জলাশয়ের পানির সদ্ব্যবহারকে প্রাধান্য দিতে হবে। পাশাপাশি কৃষক যাতে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় সেদিকেও নজর দেয়া দরকার। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য যার কোনো বিকল্প নেই।আমাদের জন্য খুশির বিষয় হচ্ছে, ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালের উৎপাদনে তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের ২০টি দেশের তালিকা। তাতে ৫ কোটি ৫০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করে বাংলাদেশকে বিশ্বের দশম বৃহত্তম খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন। চীনের খাদ্য উৎপাদনে ৫৫ কোটি ১১ লাখ টন। ৪৩ কোটি ৬৫ লাখ টন খাদ্য উৎপাদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দ্বিতীয়, ২৯ কোটি ৩৯ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন করে ভারত তৃতীয়, ১০ কোটি ১০ লাখ টন খাদ্য উৎপাদনকারী ব্রাজিল চতুর্থ, রাশিয়ার স্থান পঞ্চম ৯ কোটি ৩ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন করে এ দেশটি। ষষ্ঠ স্থানে ৮ কোটি ৯৭ লাখ টন খাদ্য উৎপাদনকারী ইন্দোনেশিয়া, সপ্তম স্থানে ৬ কোটি ৭৫ লাখ টন খাদ্য উৎপাদনকারী ফ্রান্স, অষ্টম স্থানে কানাডা, যে দেশের উৎপাদন ৬ কোটি ৬৩ লাখ টন এবং নবম স্থানে ইউক্রেন ২০১৩ সালে যে দেশটির খাদ্য উৎপাদন ছিল ৬ কোটি ৩১ লাখ। বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত। সামান্য কিছু খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি হলেও একই ভাবে বিদেশে খাদ্যও রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগে দেশের লোকসংখ্যা ছিল ৭ কোটি। গত ৪৪ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে অন্তত তিনগুণ। ফলে যে দেশের মানুষ অন্তত ২০০ বছর ধরে অর্ধাহারে-অনাহারে কাটাত সে দেশে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ স্বাধীনতার পর প্রায় দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জনে সহায়তা করেছে। সরকারের কৃষিবান্ধব নীতিও এ কৃতিত্বের অন্যতম দাবিদার।পরিশেষে বলতে হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের দশম বৃহত্তম খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও এতে আত্মপ্রসাদের অবকাশ নেই। ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ সীমিত। জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে আগামীতে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণেও উদ্যোগী হতে হবে। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১১
false
ij
মরমন কারা_ এই অতিশয় সুদর্শন ভদ্রলোকের নাম জোসেফ স্মিথ । ইনি ছিলেন উনিশ শতকের আমেরিকার একজন প্রেরিত পুরুষ! কথাটা আপনাদের বিশ্বাস না হলেও বলব যে জোসেফ স্মিথ আমেরিকার ধর্মীয় সম্প্রদায় মরমনদের গুরু। এর ধর্মীয় প্রভাব আমেরিকান সমাজে আজও অনুভূত হয়। মরমনরা বহুবিবাহে বিশ্বাস করে।স্মিথ নিজেও প্রায় ৩০ টির মতন বিয়ে করেছিলেন। যদিও জোসেফ স্মিথ অভিযোগটা অস্বীকার করেছিলেন। ২২ সেপ্টেম্বর। ১৮২৩। আমেরিকার নিউ ইয়র্কের কাছে ম্যানচেস্টার। সেখানেই রয়েছে কামোরাহ্ পাহাড়। সেই পাহাড়ের মাটির তলায় একটা বাক্স লুকোন ছিল । দেবদূত মারোনি নাকি বহু বছর ধরে ওই বাক্সটা রক্ষা করে আসছিল । আঠারো বছরের কিশোর জোসেফ স্মিথ; সে কী ভাবে যেন বাক্সটার হদিশ পেয়ে যায়। সে বাক্সটা খুলে দেখতে চায় ভিতরে কী রয়েছে। কিন্তু দেবদূত মারোনি বাক্সটা খোলার আগে স্মিথ কে কিছু শর্ত দিয়েছিল। সে শর্তগুলি নাকি স্মিথ পূরণ করতে পারেনি । চার বছর পরে পারল। সময়টা। ২২ সেপ্টেম্বর। ১৮২৭। স্মিথের বয়স তখন একুশ। সে বাক্সটা খুলে ভিতরে কতগুলি সোনার পাত দেখে বিস্মিত হয়ে গেল। পাতগুলোয় কী যেন লেখা। খোদাই করা। স্মিথের বিস্ময় আর শেষ হয় না। দেবদূত মারোনি তখন বলল, সোনার পাতে যা লেখা রয়েছে সেসব তুমি প্রচার কর। তুমি নির্বাচিত। এই বলে অদৃশ্য হয়ে গেল দেবদূত মারোনি। যা হোক। ততদিনে স্মিথ বিয়ে করেছিল। সে সোনার পাতগুলি নিয়ে সোজা শ্বশুড়বাড়ি চলে গেল। তারপর পাতগুলি পরীক্ষা করতে বসল। অনেক পরীক্ষার পর স্মিথ বুঝল যে পাতগুলোয় এক ধরনের প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় কী যেন । বহু পরিশ্রমের পর ধীরে ধীরে সব জানল স্মিথ। এই সেই প্রেরিত পুরুষ মরমন এর লেখা "বুক অভ মরমন"! ৪র্থ শতকে প্রেরিত পুরুষ মরমন লিখে শেষ করেছেন বুক অভ মরমন ।মরমন ছিলেন যিশুর একান্ত অনুসারী। প্রেরিত পুরুষ মরমন নেফির কথা লিখেছেন। নেফির জনগনের কথা লিখেছেন। এ সবই ঈশ্বরের বানী। আমেরিকার আদিম অধিবাসী দের কথাও রয়েছে বুক অভ মরমনে। তারাই ছিল হারানো ইজরেলি গোত্র - যিশু স্বয়ং আমেরিকায় এসেছিলেন তাদের কাছে। স্মিথ শিউড়ে উঠে। ১৮৩০ সাল। বুক অভ মরমন অনুবাদ করে প্রকাশ করার উদ্যেগ নেয় স্মিথ। তখনই সবাইকে ডেকে স্মিথ সব খুলে বলল। বলল-এক স্বর্গীয় দূত আমার কাছে এসেছিল। তারপর? কৌতূহলী জনতার প্রশ্ন। স্মিথ জনতাকে কামোরাহ্ পাহাড়ের সোনার পাতএর কথা বলল। যেখানে নাকি লেখা আছে যিশু এসেছিলেন আমেরিকার আদিবাসীদের কাছে। জনতা তো বিস্মিত বিমূঢ়। অনেকেই সবটা না শুনেই জোসেফ স্মিথএর শিষ্য বরণ করে আর কী। একটা মহিলাতো গভীর আবেগে কেঁদেই ফেলল। ২ দেবদূত মারোনি তখন বলল, সোনার পাতে যা লেখা রয়েছে সেসব তুমি প্রচার কর। তুমি নির্বাচিত। এই বলে অদৃশ্য হয়ে গেল দেবদূত মারোনি। স্মিথ বুক অভ মরমনের বানী প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিল। নতুন এক চার্চ গঠন করলেন। চার্চের নাম হল: চার্চ অভ ক্রাইস্ট নামে । পুরা নাম - The Church of Jesus Christ of Latter-day Saints (LDS Church), বা, Mormon Church. বুক অভ মরমন এর উপর ভিত্তি করেই বলেই মরমন চার্চ। উনিশ শতকে বাস করে স্মিথ মনে করেছিলেন যে উনিশ শতকই শেষ জামানা। তাই তার দলের নাম দিলেন শেষ জামানার সাধু বা লেটার ডে সেন্ট। বা এল ডি এস। নতুন গির্জার অনুসারীদের নাম হল মরমন। বুক অভ মরমন বাইবেলের সঙ্গে তুলনীয়। কৌতূহলী মানুষ স্মিথের কাছে এসে নানা প্রশ্ন করত। স্মিথ তাদের বলতেন- Mormonism is a restorationist[3] Christian religion.[4] Mormonism teaches that the Gospel of Christ has existed since the days of Adam and Eve, and that throughout history a series of departures from this gospel in its pure form (see apostasy) have occurred, always followed by a restoration; meaning that the doctrine taught by the LDS Church is believed to have been on the Earth throughout history, but at different eras was lost and later restored. LDS Church গঠনের সময়টায় কার্টল্যান্ড ওহাইয়ো তো বাস করতেন স্মিথ। পরে মিজোরিতে চলে যান। সেখানে ১৮৩৮ সালে মরমনবিরোধীদের সঙ্গে বাঁধল সংঘাত। কর্তৃপক্ষ তাঁকে আটক করল। পরে মিজোরি থেকে বহিস্কার করল। সেখান থেকে ইলিনয় চলে গেলেন স্মিথ। তার বিরুদ্ধে ধর্র্মান্ধতা ও বহুগামীতার অভিযোগ আনা হল। স্মিথ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। করলে কী হবে। জোসেফ স্মিথ বিশ্বাস করতেন- বহুবিবাহ হল স্বর্গীয় নির্দেশ। কাজেই প্রায় ৩০টির মতন বিয়ে করেছিলেন। ১৮৪৪। দলে দলে লোক তার কাছে আসছিল। তারাও বুক অভ মরমরকে সত্যি বলেই ভাবে। কেননা,According to Mormonism, one such apostasy, called the Great Apostasy, occurred after the death of Saint Peter and the other original twelve apostles, and the calling of Joseph Smith, Jr. marked a new restoration that has continued to this day.[5] তবে এক দল লোক স্মিথকে বলল প্রতারক। স্মিথকে তারা হত্যার হুমকী দিল। স্মিথ ভাবলেন: সমগ্র আমেরিকায় মরমনবাদ প্রোথিত করতে হলে চাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা। ঠিক করলেন-আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দাঁড়ালেন স্মিথ। তার পক্ষে তুমুল প্রচারণা চলছে। ২৭ জুন। ১৮৪৪। একটা কক্ষে ক'জন মরমনকে নিয়ে স্মিথ বসেছিলেন। ঠিক তখনই একদল মরমনবিরোধী লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘরে ঢুকে তাঁকে হত্যা করে। ৩ জোসেফ স্মিথ-এর জন্ম হয়েছিল ভারমন্ট-এ। ১৮০৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর। স্মিথের জন্মের পর মা-বাবা নিউইয়র্কে চলে গিয়েছিল। ১৭৯০ থেকে ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দ : এই সময়কালকে আমেরিকার ইতিহাসে বলা হয়: “দ্বিতীয় বৃহৎ জাগরণ।” ওই সময়ে খ্রিস্টধর্মের এক নবজাগরণ ঘটেছিল।স্মিথের বেড়ে ওঠা তেমনি এক ধর্মীয় আবহেই। এটা ঘটনাটি অনেক কিছু ব্যাখ্যা করে। তা ছাড়া, স্মিথের ভালো লাগত আমেরিকার আদিবাসী উপকথা; খ্রিস্টধর্মের ইতিহাস। ভালো লাগত রেড ইন্ডিয়ানদের ধর্ম। নিয়মিত বাইবেল পড়ত বালক স্মিথ। ১৪ বছর বয়েসে প্রথম দৈববাণী শুনল বালক। নিউ ইয়র্কের কাছেই ম্যানচেস্টার। সেখানেই কামোরাহ্ পাহাড়। সেই পাহাড়ে মাটির তলায় একটা বাক্সে কতগুলি সোনার পাত ছিল লুকোন । দেবদূত মারোনি নাকি ওই বাক্সটা রক্ষা করে আসছে বহু বছর ধরে। এমনই বিশ্বাস পেয়ে বসেছিল ঐ নিউরেটিক বালককে। তারপর ... ৪ মরমনরা যা বিশ্বাস করে- 1. We believe in God, the Eternal Father, and in His Son, Jesus Christ, and in the Holy Ghost. 2. We believe that men will be punished for their own sins, and not for Adam's transgression. 3. We believe that through the atonement of Christ, all mankind may be saved, by obedience to the laws and ordinances of the Gospel. 4. We believe that the first principles and ordinances of the Gospel are: first, Faith in the Lord Jesus Christ; second, Repentance; third, Baptism by immersion for the remission of sins; fourth, Laying on of hands for the gift of the Holy Ghost. 5. We believe that a man must be called of God, by prophecy, and by the laying on of hands by those who are in authority, to preach the Gospel and administer in the ordinances thereof. 6. We believe in the same organization that existed in the Primitive Church, namely, apostles, prophets, pastors, teachers, evangelists, and so forth. 7. We believe in the gift of tongues, prophecy, revelation, visions, healing, interpretation of tongues, and so forth. 8. We believe the Bible to be the word of God as far as it is translated correctly; we also believe the Book of Mormon to be the word of God. 9. We believe all that God has revealed, all that He does now reveal, and we believe that He will yet reveal many great and important things pertaining to the Kingdom of God. 10. We believe in the literal gathering of Israel and in the restoration of the Ten Tribes; that Zion (the New Jerusalem) will be built upon this, the American continent; that Christ will reign personally upon the earth; and, that the earth will be renewed and receive its paradisiacal glory. 11. We claim the privilege of worshipping Almighty God according to the dictates of our own conscience, and allow all men the same privilege, let them worship how, where, or what they may. 12. We believe in being subject to kings, presidents, rulers, and magistrates, in obeying, honoring, and sustaining the law. 13. We believe in being honest, true, chaste, benevolent, virtuous, and in doing good to all men; indeed, we may say that we follow the admonition of Paul—We believe all things, we hope all things, we have endured many things, and hope to be able to endure all things. If there is anything virtuous, lovely, or of good report or praiseworthy, we seek after these things. আমেরিকার উটাহ অঙ্গরাজ্যটি মরমনদের। ওখানে ব্রিগহ্যাম ইয়ং নামে বিখ্যাত একটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সব বিষয়ই পড়া যায়। তবে "বুক অভ মরমন"টা কমন। ব্রিগহ্যাম ইয়ং ছিলেন জোসেফ স্মিথের পর মরমনদের আরেক মহাজন। তিনিও ৫৫ টি বিবাহ করিয়াছিলেন!!! বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন। http://en.wikipedia.org/wiki/Mormon সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৫৪
false
ij
গ্রিক মিথ_ ফেড্রা গ্রিক মিথগুলি কি কেবলই কল্পনার বল্গা হরিণ? না, এর মধ্যে বাস্তব জীবনের সত্যাসত্য কিছু রয়েছে? প্রায়শ গ্রিক মিথের চরিত্রগুলির মধ্যে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। আসলে গ্রিক মিথগুলিতে উদ্ভট দৃশ্য যাই থাকুক -কোনও কোনও চরিত্রে বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি দেখে অবাক হতেই হয়। যেমন এথেন্সের রানী ফেড্রা। ফেড্রা তার এক সৎপুত্রর প্রেমে পড়েছিল। তবে প্রত্যাখাত হয়ে সেই সৎপুত্রটিকে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল ... এবার ফেড্রা উপাখ্যানটি বয়ান করি। (আমাদের মনে রাখতে হবে ফেড্রা উপাখ্যানটির বেশ কয়েকটি ভার্সান রয়েছে। আমি এর মধ্যে একটি বেছে নিয়েছি। ) মানচিত্রে ক্রিট দ্বীপ। ভূমধ্যসাগরের একটি দ্বীপের নাম ক্রিট । দ্বীপটির অবস্থান গ্রিসের মূলভূমির দক্ষিণে। ব্রোঞ্জ যুগে ক্রিট দ্বীপের রাজা ছিলেন মিনোস। সেই রাজা মিনোস এর কন্যা ছিল ফেড্রা । ফেড্রার মায়ের নাম রানী পাসিফা। ফেড্রার বড় বোনও ছিল; তার নাম আরিয়ানা। (গ্রিকরা বলে আরিয়াদানে) আমার মনে হয়, আরিয়ানা গ্রিক উপকথায় সবচে দুঃখী মেয়ে। যা হোক- ক্রিট দ্বীপে মিনোয়ান সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। মিনোয়ান সভ্যতা ছিল ব্রোঞ্জ যুগের এক অতুলনীয় সভ্যতা । সভ্যতাটির সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ২৭ থেকে ১৫ শতক। ক্রিট দ্বীপের রাজধানী ছিল নসস। মিনোয়ান সভ্যতা মূলত সামুদ্রিক সভ্যতা হওয়ায় এর কেন্দ্রে ছিল একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী । এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। এথেন্স নগরীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা থেসিয়াস । রাজার তরুণ বয়েসে ক্রিট দ্বীপে এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটেছিল। ক্রিটের রাজা মিনোস দুর্জয় নৌবাহিনী নিয়ে এথেন্সের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, এবং জয়ী হন। রাজা মিনোস যাতে এথেন্স পুরোপুরি ধ্বংস করে না দেন সে জন্য রাজা মিনোসের সঙ্গে এথেন্সবাসী রফা করে। কি সেই রফা? নয় বছর পর পর সাতজন এথেনিয় বালক সাতজন এথেনিয় বালিকা। কেন? কেননা, ক্রিট দ্বীপে ছিল বিখ্যাত মিনিয় স্থপতি ডেডেলাউস এর নির্মিত গোলকধাঁধা বা ল্যাবেরিন্থ । একটি অর্ধ-মানব, অর্ধ ষাঁড়াকৃতির পশু সে খানে বাস করে। সেই উদ্ভট পশুর নাম নাম মিনোটর। রাজা মিনোস মিনোটরের খাদ্য হিসেবে ঐ এথেনিয় বালক-বালিকাদের চাইলেন। মিনেটর। আজও হলিউডি মুভিতে এ ধরনের উদ্ভট ক্রিয়েচার দেখা যায় ... যা হোক মিনোতর ছিলো এক অর্থে মিনোসেরই পুত্র। পসাইদোন মিনোসের কাছে উৎসর্গ করার জন্যে একটা শাদা রূপবান ষাঁড় পাঠালে মিনোস ষাঁড়টি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলত পসাইদোন অপমানিত হোন এবং মিনোসের স্ত্রী প‌্যাসিফাইকে ষাঁড়টির প্রতি আসক্ত করে তোলে। এবং দেদালাস প‌্যাসিফাইকে একটি গাভীতে পরিণত করে। তারপর শাদাষাঁড়টি আর প‌্যাসিফাই সঙ্গমে লিপ্ত হয়। যার ফলে মিনোতরের জন্ম হয়। একালের শিল্পীর চোখে রাজা থেসিয়াস । একবার এক এথেনিয় তরুণ ক্রিট দ্বীপে আসে । সেই তরুণের নাম থেসিয়াস । রাজা মিনোসের বড় কন্যা আরিয়ানার কথা আগেই বলেছি। আরিয়ানা প্রথম দর্শনেই তরুণ থেসিয়াস-এর প্রেমে পড়ে যায়। সুন্দরী আরিয়ানা একটি সুতীক্ষ্ম তলোয়ার ও লাল রঙের সুতার বান্ডিল থেসিয়াস কে দেয়। থেসিয়াস গোলকধাঁধায় প্রবেশ করে মিনোটর কে হত্যা করে। এরপর থেসিয়াস আরিয়ানা কে নিয়ে ক্রিট থেকে পালিয়ে যায়। আরিয়ানার ছোট বোন ফেড্রাও তাদের সঙ্গে ছিল। কী কারণে থেসিয়াস আরিয়ানার ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এথেন্স ফেরার পথে আরিয়ানা কে একটি দ্বীপে ফেলে রেখে যায় থেসিয়াস । পরে অবশ্য ফেড্রা কে বিয়ে করে থেসিয়াস । সৃষ্টিছাড়া কল্পনার পাশাপাশি মানবিক আবেগ রয়েছে বলেই গ্রিকউপকথার প্রতি এত আগ্রহ বিশ্বজুড়ে ... রাজা থেসিয়াস ও ফেড্রা এথেন্স ফিরে এলেন। এদিকে রাজা থেসিয়াস এর একবার বিয়ে হয়েছিল। রাজার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ‘এ্যামাজন’ নারী যোদ্ধা রানী হিপ্পোলিটা। সেই ঘরে এক ছেলে ছিল। সেই ছেলের নাম হিপ্পোলাইটাস। যা হোক। প্রথম দেখার সময়ই ফেড্রা সৎপুত্র হিপ্পোলাইটাস এর প্রেমে পড়ে যায়। হিপ্পোলাইটাস - এর সঙ্গে প্রেম করার মতলব আঁটতে থাকে। এবং বিরহে পুড়তে থাকে। এ কালের শিল্পীর তুলিতে ফেড্রার বিরহকাতর অবস্থার দৃশ্য। রাজা থেসিয়াস একবার কী কারণে এথেন্স ছেড়ে বিদেশ গেলেন। ফেড্রা তখন এথেন্স নগরের স্টেডিয়ামের কাছে একটি ভবনে থাকত। হিপ্পোলাইটাস স্টেডিয়ামে নগ্ন হয়ে ব্যয়াম করত। বলিষ্ট গড়নের তরুণকে দেখে ফেড্রার তৃষ্ণা অত্যধিক বেড়ে যায়। নিরূপায় হয়ে ফেড্রা হিপ্পোলাইটাস কে প্রেম নিবেদন করে। হিপ্পোলাইটাস বিরক্ত হয়ে বলে, ছিঃ, আমি অগম্য-গমন (ইনসেস্ট) করব না। ফেড্রা চাপা স্বরে বলল, কেন? দেবতারাও অজাচার করে। করে না? হিপ্পোলাইটাস চুপ করে থাকে। দয়া কর! হিপ্পোলাইটাস ফেড্রা কে প্রত্যাখান করে। প্রত্যাখাত হয়ে ফেড্রা ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠে। এবং রাজা থেসিয়াস এথেন্স ফিরে এলে স্বামীকে বলল লম্পট হিপ্পোলাইটাস আমায় ধর্ষন করেছে। কী! রাজা থেসিয়াস অপরিমেয় ক্রোধে প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠলেন। গ্রিক উপকথায় সমুদ্র দেবতা পোসাইদোন। তিনি রাজা থেসিয়াস কে তিনটি বর দিয়েছিলেন। সে সব কথা মনে পড়ল রাজা থেসিয়াস এর। তিনি হিপ্পোলাইটাস কে অভিশাপ দিলেন। এরপর কি ঘটল? সমুদ্রের পাড় দিয়ে হিপ্পোলাইটাস রথে করে যাচ্ছিল। তখনই সমুদ্র থেকে উঠে এল এক ভয়ালদর্শন সমুদ্রদৈত্য। দেখে এর রথের ঘোড়াগুলি ভয় পেল। ঘোড়াগুলি ভয়ে ভীষণ বেগে ছুটতে থাকে। ফলে রথটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। হিপ্পোলাইটাস মারা যায়। একালের শিল্পীর চোখে হিপ্পোলাইটাস এর মৃত্যু। আসলে গ্রিক মিথ এর সম্যক জ্ঞান বাদে ইউরোপীয় আর্ট বোঝা সম্ভব নয় ... হিপ্পোলাইটাস এর মৃত্যু সংবাদ এথেন্স নগরে আসে। ফেড্রা মুহূর্তেই শোকে স্তব্দ হয়ে যায়। ভীষণই অনুতপ্ত বোধ করে রানী। অনুতপ্ত ফেড্রা গভীর গ্লানিতে ভুগে ভুগে শেষ পর্যন্ত আত্মহননের পথ বেছে নেয় ফেড্রা ... তথ্য ও ছবি: ইন্টারনেট ... সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৫:৩৪
false
rg
গার্মেন্টস মালিকদের রাস্তায় নেমে আন্দোলনের হুমকি!!! ওরে একটু খাঁড়া হাইসা লই!!! আজ ২৪শে অগ্রাহায়ণ ১৪২০। বাংলা ঋতুবর্ষে এখন হেমন্তকাল চলছে। হেমন্তকাল মানেই কৃষকের ঘরে নির্মল হাসি। এই সময়ে সারা বাংলায় কৃষক নতুন ধান কাটায় ভারী ব্যস্ত। ধান কাটা শেষ হলে নতুন ধানে হবে নবান্ন। গোটা পৌঁষ-মাঘ বাংলায় শীতকাল। আসছে শীতে নতুন ধানে হবে নানা ধরনের পিঠা। শীত যতো বেশি পড়বে খেজুর গাছে রস ততো বেশি হবে। তারপর শীতের সকালে পিঠা আর খেজুর রসের পায়েস, আহা কতো মধুর। বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামে এই মধুর দৃশ্য ভেসে উঠবে। বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কৃষক। অর্থ্যাৎ দেশের ষোলকোটি মানুষের দেশে প্রায় তেরো কোটি কৃষক। এই তেরো কোটি কৃষতক সারা বছর নানা ধরনের ফসল উৎপাদন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাদের রাজনীতি করার সময় নেই। কিন্তু নির্বাচন হলে তাদের উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যায়। ভোটের দিন একদিনের জন্য তারা রাজনীতি চর্চা করে। তারপর আবার নিজেদের কাজে ফিরে যায়।আমাদের দেশের এই তেরো কোটি মানুষ রাজনীতি থেকে কোনো সব সময় দূরে থাকার চেষ্টা করেন। রাজনীতি নিয়ে তাদের কারো মাথা ব্যথা নাই। শেখ হাসিনা ক্ষমতা পেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। খালেদা জিয়া ক্ষমতা পেলেও তাদের কিছুই যায় আসে না। এমন কি এরশাদের স্বৈরাচারী ক্ষমতার সময়েও এই কৃষকের কোনো আগ্রহ ছিল না। দেশের মানুষের পেটের খাবারের নিরবিচ্ছিন্ন যোগান দেওয়াই এই কৃষকের কাজ। কিন্তু আমাদের এই কৃষক কখনোই তাদের উৎপাদিত ফষসলের ন্যায্য মূল্য পায়নি। কৃষকের চেয়ে মধ্যস্বত্তভোগী ফরিয়াদের মুনাফা হয় বেশি। কৃষক চালের দাম পায় না। ধানের দাম পায় না। কফির দাম পায় না। শবজির দাম পায় না। কম মূল্যে সার ওষুধ কীটনাশক পায় না। তবু তাদের মনে কোনো দুঃখ নাই। তারা একটা কথাই জানে এই মাটিকে ভালোবেসে সেই মাটিতে নিজের শ্রম দিয়ে সোনা ফলাতে হবে। সেই সোনা ফলানোর জন্য তারা বারো মাস শীত গ্রিস্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত বসন্ত কায়িক পরিম্রম করেই সেই কাজে ব্রত থাকে। দেশের ক্ষমতার চেয়ারে কে বসলো না বসলো তা নিয়ে তাদের কিছুই যায় আসে না।কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আমাদের কৃষকরা ভালো স্বাস্থ্যসেবা পায় না। ভালো ফসলের দাম পায় না। ভালো যাতায়াত সুবিধা পায় না। ভালো সেচ সুবিধা পায় না। তাদের এই হাজারো না পাওয়া নিয়েও তেমন কোনো প্রতিবাদ নেই। উল্লেখ করার মত কোনো আন্দোলন নেই। কিন্তু এই কৃষককূল বাদ দিয়ে যারা শহরে বসবাস করছে তাদের সকল স্বার্থের জন্য যখন তখন যে কোনো ইস্যুতেই আন্দোলন হয়। জ্বালাও পোড়াও হয়। আবার সেই স্বার্থ মিটে গেলে তারা আবার লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে যায়। এ এক আজগুবি দেশে বসবাস করছি আমরা।রাজনৈতিক সহিংসতায় সারা দেশে গাড়ি পুড়ছে, মানুষ পুড়ে মরছে, রেললাইন খুলে ফেলা হচ্ছে, গার্মেন্টসে আগুন লাগছে। গার্মেন্টস কর্মীরা বেতনের দাবীতে আন্দোলন করছে। বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাবার জন্য সহিংস আন্দোলন করছে। তারমধ্যে এবার নাকি গার্মেন্টস মালিকরাও আন্দোলন করতে রাস্তায় নামবে! কিন্তু তারা বলছে যে তারা একারা নামবে না। তাদের সঙ্গে শ্রমিকরাও নামবে। গার্মেন্টস মালিকদের এই কথাটি কতোটা হাস্যকর তা যে কেউ শুনলেই চমকে উঠবে। গার্মেন্টস মালিকরা যারা শ্রমিকদের বেতন দিতে নানা ধরনের তালবাহানা করে তারা শ্রমিকদের নিয়ে একসঙ্গে রাস্তায় নামবে? শ্রমিকরা কি তাদের কথায় তাদের পেছন পেছন রাস্তায় নেমে মিছিল করবে? হ্যা করতে পারে একটা শর্তে- আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সকল দাবী দাওয়া মেনে নিয়ে তাদের বকেয়া বেতন সহ সকল পাওয়না পরিশোধ করে হালনাগাদ করতে হবে। তারপর তাদের কর্মস্থলে সুস্ঠু কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে নেবার জন্য তারা রাস্তায় নামতে পারে। কিন্তু মালিকরা শ্রমিকদের সঙ্গে যে আচরণ করে অভ্যস্থ, তাতে তো মনে হয় না শ্রমিকরা মালিকদের এই ভেলকিতে রাজী হয়ে তাদের সঙ্গে রাস্তার আন্দোলনে যোগ দেবে।আমাদের গার্মেন্টস মালিকরা শুধু নিজেরা আন্দোলন করতে আসলেই আনফিট। আন্দোলন করার মত দুঃসাহস এবং শারিরীক মনোবল তাদের কোনোদিনই ছিল না। ভবিষ্যতেও হবে না। শ্রমিকদের বেতন না দেওয়া যতো সহজ, আন্দোলন করা ততো সহজ না মশাই। আন্দোলন করতে হলে রাস্তায় নেমে মিছিল করতে হয়। গার্মেন্টস মালিকদের কয়জন রাস্তায় প্রখর রৌদ্রের মধ্যে কয়ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে? সানগ্লাস ছাড়া যারা বাইরে বের হতে পারে না, তারা করবে রাস্তার আন্দোলন? একঘন্টা রাস্তায় হাঁটলে যাদের ব্যাংক-সিংগাপুর যেতে হয় চেকআপ করাতে, তারা করবে রাস্তার আন্দোলন? তামাশা করারও একটা শ্রী আছে মশাই? গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিক শোষণের নামে তারাও শাসক গোষ্ঠির মত একক আধিপত্যবাদী মানসিকতায় তৈরি। তাদের এসব লোক হাসানো তামাশা শুনলে গরু-ছাগলও হেসে উঠবে!একটা জিনিস মালিকদের মনে রাখা উচিত, ঘি খেয়ে আন্দোলন করা যায় না। চুরি চামারি লুটপাট দখল কালোবাজারী এসব করার জন্য টাকার গরমই যথেষ্ঠ। কিন্তু রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হলে প্রথমে যে ফিটনেস থাকা জরুরী আপনাদের সেই ফিটনেস নাই। আপনারা মালিকশ্রেণী শুধু শুধু সহিংস আন্দোলনের এই উত্তাপের মধ্যে লোক হাসাবেন না। আগুনে পুড়ে মানুষ কিন্তু হাসতেও ভুলে গেছে। সেই বেদনার দাগ না শুকানোর আগে আপনারা এমন হাস্যকর কৌতুক করা থেকে বিরত থাকুন। হাসতে ভাল্লাগে না মশাই...
false
rn
ফাইটার আমার হাতে খুব বেশি সময় নেই। আর কয়েক ঘন্টা পর পোকা গুলো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমার সমস্ত রক্ত খেয়ে ফেলবে। আমার মৃত্যুর আগে বর্তমান পরিস্থিতিটা লিখে রেখে যেতে চাই। যদি আবার কখনও পৃথিবী মানুষ পরিচালনা করতে পারে। তখন আমাদের বর্তমান অবস্থা জানতে পারবে। যদিও অনেক আগেই বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছিল এই পোকা সম্পর্কে। মানুষ জানতে পেরেছে- মানুষের চোখে রয়েছে যখন একক লেন্স তখন পোকামাকড়ের চোখ অথ্যাৎ যৌগ চোখে রয়েছে অনেক ছোট চাক্ষুষ ইউনিট।৫০১৫ সাল। সারা পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ৭'শ কোটি। এই ৭'শ কোটি মানুষ এখন ছারপোকাদের হাতে বন্দী। ৫০০ সালে পৃথিবী দখল করে নিয়েছে ছারপোকা। এইসব ক্ষুদ্র পোকাদের কাছে মানুষ খুব অসহায়। গত ৫'শ বছর ধরে আরাম করে ঘুমাতে পারছে না মানুষ। এই নিষ্ঠুর পোকাকে মানুষ কখনও গুরুত্ব দেয়নি। মানুষ জানতো, ছারপোকা আসলে সিমিসিডে গোত্রের একটি ছোট্ট পরজীবী পতঙ্গবিশেষ। ইংরেজিতে বলে: Bed bug । এটি রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু এই পোকা যে পৃথিবী দখল করে নিবে মানুষ তা স্বপ্নেও ভাবেনি। আজ থেকে ৩০৮৫ বছর আগে রাজীব নূর খান নামের একজন তার ডায়েরী লিখেছিলেন- ''গত ছয় মাস ধরে বিছানায় আরাম করে ঘুমাতে পারছি না। প্রতিদিন রাত্রে বিছানায় যাওয়ার পর কি যেন কুটকুট করে কামড়ায়। একদিন ঘুম থেকে উঠে বাতি জ্বালিয়ে দেখি ছোট-ছোট অনেক গুলো পোকা। একটা পোকা মেরে দেখি পেট ভরতি রক্ত। এমন পোকা আমি আগে কখনো দেখিনি। সকাল বেলা মাকে বললাম- মা বলল পোকা গুলোর নাম ছারপোকা। এরা রক্ত খায়। দিনেরবেলা আর পোকাদের কথা মনে থাকে না। রাতে বিছানায় যাওয়ার পোকার কামড় খেয়ে- ছারপোকার কথা মনে পড়ে। সামান্য ছোটছোট পোকা গুলোর জন্য ছয় মাস ধরে ঘুমাতে পারছি না। এই পোকা মারার জন্য সব রকমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে- কোনো কাজ হয়নি।একদিন বিরক্ত হয়ে বালিশ তোষক সব সরিয়ে দেখি- একশো দুইশো না, পাঁচ শো-সাত শো ছারপোকা। এই ভারি জাজিম তোষক ছয় তলার ছাদে নিয়ে গিয়ে রোদে দেওয়া সম্ভব নয়। এই ছোট পোকা গুলো আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছে। আরে...রক্ত খাবি খা, কামড়ানোর কি দরকার। কামড়ানোর পর লাল হয়ে ফুলে থাকে। সারাদিন খুব চুলকায়। আমার খালাতো বোন বলেছিলেন- টাকা পয়সা বেশি হলে ঘরে ছারপোকার উপদ্রপ হয়। গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে শতশত ছারপোকা মেরে ওদের প্রতিহত করতে পারছি না। রাতে পোকা গুলো আমার শরীরের উপরে হাঁটা হাটি করে- আমি স্পষ্ট টের পাই। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে হাসপাতাল থেকে এক ব্যাগ রক্ত কিনে এনে বাটিতে করে ওদের খেতে দেই।একদিন খবরের কাগজে দেখি- "বাসের সিটে ছারপোকার উৎপাত ঠেকাতে আগুন দেওয়া হয়েছে।" সেদিন রাগে দুঃখে মধ্যেরাত্রে সুনীলের একটি কবিতা মনে পড়ল- আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ/ এই কী মানুষজন্ম?/ আমি আক্রোশে হেসে উঠি না,/ আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি,/ মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে;/ খাঁটি অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে/ আজকাল আমার নিজের চোখ দুটোও মনে হয় একপলক সত্যি চোখ। /এরকম সত্য পৃথিবীতে খুব বেশী নেই আর।" আমি আর বেশী দিন বাচবো না। এই ছারপোকা আমাকে অতিষ্ট করে দিয়েছে। ঈশ্বরের কি দরকার ছিল- ছারপোকা বানানোর?একদিন এক পাজি ছারপোকা কানের ভেতরে ঢুকে গেল। হঠাত দেখি মোবাইল চার্জ হয়, কারন অনুসন্ধান করে দেখি- মোবাইলের ভেতরে তিন টা ছার পোকা। ছারপোকা শুধু আমার বাসায় না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা হলে হাজার হাজার ছারপোকা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের প্রতিটা ব্র্যাকে হাজার হাজার ছারপোকা। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল রয়েছে ১৭টি। এমন কি অনেক সরকারী হাসপাতাল এবং অফিসেও হাজার হাজার ছারপোকা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছি- এখন সব জাগায় ছারপোকা। দামী এসি বাসে আজকাল অনেক ছারপোকা পাওয়া যায়।'' ৩০০০ সালে এক ভয়াবহ ভুমিকম্পে সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩'শ কোটি লোক মারা যায়। তারপরে মানুষ হয়ে পড়ে খুব অসহায়। এই সুযোগে পোকা গুলো নিরবে ধীরে ধীরে দখল করে নিতে শুরু করে পৃথিবী। পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশ মানুষ শূন্য হয়ে পড়ে। তখন পোকা গুলো সেই দেশ গুলো দখল করে নেয়। তারা হিংস্র হয়ে পরে। ঘরে বাইরে সব জায়গায় তাদের অবস্থান। এই পোকা গুলো আলো সহ্য করতে পারে না। রাতের বেলা শুরু হয় তাদের কর্মকান্ড।এই পোকাদের হাত থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। একজন ঘুমন্ত মানূষের উপর এক লাখ পোকা আক্রমণ করে। চার মিনিট সময় লাগে শরীরের সব রক্ত খেয়ে ফেলতে। তারপর সাথে সাথে মৃত্যু। পোকা গুলো যেভাবে মানুষ হত্যা করতে শুরু করেছে- কয়েক বছরের মধ্যেই পৃথিবীতে কোনো মানুষ থাকবে না। তখন তারা খাবে কি? এইসব পোকাদের প্রধান খাবারই তো রক্ত।
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! ৩ তারিখ বইমেলায় যেতে পারিনি। আমার বইয়ের মেকআপ নিয়ে রাত এগারোটা পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলাম। ৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বুধবার। বইয়ের মেকাআপ শেষ করে প্রিন্টকপি নিয়ে বইমেলায় পৌঁছাতে চারটা বেজে গেল। বইমেলায় ঢোকার মুখে প্রথমেই গেলাম উদ্যানে বইমেলার প্রধান অংশে। মাধবদার সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা মারলাম। সেখানেই দেখা হল কমরেড লেখক রুদ্র সাইফুলের সঙ্গে। মাধবদা আর রুদ্র আমার বইটি কিভাবে কি করলে ভালো প্রিন্ট আসবে, সে বিষয়ে ভারী জ্ঞানগর্ব পরামর্শ দিলেন। তথাস্তু।তারপর গেলাম সোজা বাংলা একাডেমির বহেড়াতলায় লিটল ম্যাগ চত্বরে। নন্দন স্টলে বইপত্র সাজালাম। আজও কোনো বেচাবাট্টা নাই। কিন্তু জাম্পিস আড্ডা হল বটে। দেখা হল লেখক স্বকৃত নোমানের সঙ্গে। নোমানের সঙ্গে আড্ডা মারার সময় সেখানে আসল শিল্পী চারু পিন্টু। এই সময় আড্ডায় যোগ দিলেন চিরনীল দম্পতি। কবি নীলসাধু ও শিমুল ভাবী। শিমুল ভাবী বললেন, আপনাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট সেন্ট করেছি, অ্যাড কইরেন নইলে খবর আছে! ফেসবুকে নীলসাধু আর শিমুল ভাবী লিওনার্দো আর কেট উইন্সলেট নামে পরিচিত। সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললাম, অ্যাড না করে কী উপায় আছে! বইমেলা থেকে বাসা পর্যন্ত যাবার সময়টুকু দেন, দয়া করে। কিছুক্ষণ পর আড্ডায় হাজির হল কবি মামুন খান ও তার বাংলা ভিষণ চ্যানেলের পুরো গ্যাং। আমাদের পুরো আড্ডা ততক্ষণে জমে উঠল। এই সময় দেখা হল বন্ধু কবি কবির হুমায়ুনের সঙ্গে। পিন্টু জানতে চাইল, লিমনের নাটকের বইটা আসছে কিনা? বললাম, হ্যা, স্টলে আছে। পিন্টু ছুটে গেল নন্দন স্টলে। নাট্যনির্মাতা, নাট্যকার ও অভিনেতা ফরহাদ লিমনের নিরীক্ষাধর্মী মুক্তনাট্য সমগ্র-১ আজ মেলায় এসেছে। পাওয়া যাচ্ছে লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে নন্দন স্টলে। বইটিতে মোট পাঁচটি নাটক আছে। নাটকগুলো হল- ভুঁই, পাদুকা বিস্তার, হায় বৃক্ষ, ওলট পুরাণ ও ঢিমেতাল। অভিনন্দন ফরহাদ লিমন। এই সময় আড্ডা থেকে আমাকে ছুটিয়ে নিল বন্ধু মোশতাক। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার ও কবি মোশতাক আহমদ। এবার পাঠসূত্র থেকে প্রকাশ পেয়েছে মোশতাকের কাব্যগ্রন্থ 'ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। পাঠসূত্রের এবারের প্রডাকশন খুব সুন্দর হয়েছে। মোশতাক আমাকে 'ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি'র একটি কপি গিফট করল। আহা সাধু সাধু। নতুন বই গিফট পেলে খুব আনন্দ লাগে। আর তা যদি হয় কবি বন্ধুর কাছে থেকে, তো সোনায় সোহাগা...এবার পিন্টু, মোশতাক আর আমি চা খেতে একাডেমি প্রাঙ্গন থেকে বাইরে গেলাম। সেখানে দেখা হল বদরুল ভাইয়ের সঙ্গে। কবি বদরুল হায়দার। বদরুল ভাই একটা দৈনিক পত্রিকা ধরিয়ে দিলেন। দৈনিক বাংলা ৭১। বদরুল ভাই জানালেন, এখন থেকে নিয়মিত বইমেলা নিয়ে তিনি এই পত্রিকায় লিখবেন। পত্রিকাটি চার পাতার হলেও বদরুল ভাই এটার ব্যাক পেইজে একেবারে বাম কোনায় একটা স্পেশাল বক্সে নিয়মিত বইমেলা নিয়ে লিখবেন, এটাই আমাদের কাছে বেশ খুশির খবর। বদরুল ভাই হলেন এখনো ডিজিটাল যুগে আমাদের এনালগ ঋষি কবি। কারণ বদরুল ভাই ফেসবুক ব্যবহার করেন না। যা লেখেন, হাতে কলমেই লেখেন। চা খেয়ে মোশতাক উদ্যানে গেল, পিন্টু আর আমি আবার লিটল ম্যাগ চত্বরে ফিরলাম। যেতে যেতে পিন্টু বলল, দাদা, আমার একটা কভার আমাজন প্রকাশ করেছে। পিন্টুকে কংগ্রাচুলেট করলাম। বহেড়াতলায় এবার বসার ব্যবস্থা নেই। বর্ধমান হাউজের সিড়িতে তখন আড্ডা দিচ্ছিলেন মানিকজোড় লেখক ঋষি এস্তেবান ও কবি সাফি সমুদ্র এবং তাদের দলবল। আমরা গিয়ে ওদের দলে ভিড়লাম। সেখানে অনেক আড্ডার পর আমি একটু একা একা মেলা প্রাঙ্গনে ঘুরতে বের হলাম। বর্ধমান হাউজের সামনে এবার একটি স্পেশাল স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে সকল বই ব্রেইল মেশিনে ছাপানো স্পাইরাল করা। যারা অন্ধ, তাদের বিশেষভাবে পড়ার জন্য যে ব্রেইল পদ্ধতিতে বই ছাপানো হয়, তাদের জন্য বাংলা একাডেমি এবার একটি স্টল বরাদ্দ করেছে দেখে খুব ভালো লাগলো। স্টলে ছিলেন মিলন ভাই। মিলন ভাই কালো গ্লাস পড়া। চোখে দেখেন না। ব্রেইল পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে পড়াশুনা করছেন। ঢাকার বাংলা কলেজ থেকে মিলন ভাই এবার পলিটিক্যাল সায়েন্সে মাস্টার্স পড়ছেন। মিলন ভাই খুব সুন্দর আবৃত্তি করেন। ব্রেইল করা বই থেকে কিভাবে পড়েন, জানতে চাইলে, মিলন ভাই একটা বই হাতে নিয়ে নিজের হাতের তর্জনি আঙুল ঘষে ঘষে আমাকে বেশ কিছুক্ষণ পড়ে শোনালেন। বইটির নাম, প্রকাশক, মূল্য, এবং প্রথম পাতা থেকে একটা অংশ। তারপর ব্রেইল করা আরেকটা পাতা থেকে আঙুল ঘষে ঘষে আবৃত্তি করলেন কবি নুরুন্নাহার শিরীনের 'রক্ত পদ্য' কবিতাটি। আমি খুব অবাক হলাম। বইগুলোর পৃষ্ঠা সব সাদা। কিন্তু সবগুলো পৃষ্ঠাই ব্রেইল করা। আমি হাত দিয়ে সেগুলো টের পেলাম। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না। আর মিলন ভাই আঙুল টেনে টেনে ভারী অনায়াসে পড়ে যাচ্ছেন। মিলন ভাই বললেন, এখনো বাংলাদেশে অন্ধজনদের জন্য পর্যাপ্ত পড়াশুনা করার মত বই নেই। কারণ, অন্ধজনের পড়ার জন্য বইটি বিশেষ উপায়ে ব্রেইল আকারে প্রকাশ করতে হয়। সেই ব্রেইল করা সাদা পৃষ্ঠায় আঙুল টেনে অন্ধজন অনায়াসে পড়তে পারেন। জানতে চাইলাম, অনার্স মাস্টার্সের সব বই কি ব্রেইল করা? কিভাবে আপনি একাডেমিক কোর্সগুলো সম্পাদন করেন?মিলন ভাই জানালেন, এজন্য তাদের এক বিশাল যজ্ঞ করতে হয়। ক্লাসরুমে রেকর্ডার নিয়ে যান। সেই রেকর্ড শুনে শুনে ক্লাসে স্যারদের ক্লাসগুলো ফলো করেন। এছাড়া বন্ধুদের দিয়ে বইটি পড়িয়ে সেটি রেকর্ড করে নেন। সেই রেকর্ড শুনে শুনে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। বাংলাদেশ সরকারের উচিত প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের সকল পাঠ্যবইয়ের একটা ব্রেইল ভার্সান প্রকাশ করা। তাহলে আমাদের অন্ধজন সেই বই অনায়াসে পড়তে পারবেন। বাংলাদেশে হেলেন কিলার ফাউন্ডেশানের একটি শাখা আছে ঢাকার ধানমন্ডিতে। সেখানে আমি মাঝে মাঝে যেতাম। আমার বন্ধু গল্পকার তুহিন সমদ্দার ওখানে চাকরি করতো। তুহিন চাকরি ছেড়ে ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানাতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় আমার আর হেলেন কিলার ফাউন্ডেশানে যাওয়া হয় না। এই সময় মাইকে বাংলা একাডেমি ঘোষণা করছিল, মেলার স্টল বন্ধ করার শেষ সময় রাত সাড়ে আটটা। রাত নয়টার পর স্টলের লাইট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে। রাত নয়টার পর কেউ মেলা থেকে বই নিতে পারবে না বা স্টলে বই রাখতে পারবে না। নন্দনের স্টলে গিয়ে বইপত্র গোছাতে গোছাতে মোবাইলের টাইম মেশিন বলছে সময় রাত আটটা দশ। আমি নন্দন থেকে উদ্যানে আরেকবার ঢু মারার জন্য দ্রুত বের হলাম। একাডেমি'র সামনে মেইন রাস্তায় এসে পেলাম কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ভাইকে। দুলাল ভাই এক মহা ঝামেলায় পড়েছেন। তার সকল লেখা মেইলে রাখা। দুলাল ভাই জিমেইল ব্যবহার করেন। কিন্তু টরন্টো থেকে ঢাকায় আসার পর আর মেইল চেক করতে পারছেন না। কোনো লেখাও উদ্ধার করতে পারছেন না। অনেকগুলো বইয়ের মূল স্ক্রিপ্ট এখন আটকে আছে মেইলে। আমরা হেঁটে হেঁটে উদ্যানের মেলায় ঢুকছিলাম। দুলাল ভাই বললেন, আসার সময় তিনি টেলিফোন সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে এসেছেন। টেলিফোন সেটটি সঙ্গে আছে। জিমেইলে সাইন ইন করার সময় পাসওয়ার্ড দেবার পর কোড চাচ্ছে। সেই কোড ফোনে আসার কথা। টেলিফোন সংযোগ আপাতত বন্ধ থাকায় কোড পাওয়ার আর কোনো বিকল্প নেই! অন্য কোনো ইমেইল অ্যাকাউন্টেও লেখাগুলো জমা করেননি। তাই দুলাল ভাইয়ের খুব মন খারাপ। এই সময় গাছপালার মধ্যে আবছা আলোতে চাদর মুড়ি দেওয়া একজন ভূতের মত হঠাৎ এসেই দুলাল ভাইকে জাড়িয়ে উপরে তুলে ধরলেন। দুলাল ভাই আর আমি দুজনেই কিছুটা কিংকর্তব্যবিমুঢ়! এ কোন ভূতরে ভাই! দুলাল ভাই অনেকটা চিৎকার দেবার আগেই ভূত মাথা থেকে চাদর সরিয়ে নিজের চেহারা জাহির করলেন। কবি ও গল্পকার আহমেদ মুজতবা মুর্শেদ। মুর্শেদ ভাই আবেগ-আপ্লুত ভাষায় বললেন, অনেকদিন পর দেখা হওয়ায়, দুলাল ভাইকে এভাবেই স্বাগতম জানালাম। হা হা হা...ততক্ষণে আমাদের ভূতের ভয় কেটে গেছে। মুর্শেদ ভাই টিএসএসির দিকে গেলেন আর আমরা উদ্যানের মেলায় ঢুকলাম। উদ্যানে ঢুকে দুলাল ভাই অন্যপ্রকাশের দিকে গেলেন আর আমি গেলাম শ্রাবণের দিকে। রবীন নাই। সেখানে দেখা হল জাকির ভাইয়ের সঙ্গে। জাকির তালুকদারকে হেরিকেন ধরিয়ে খুঁজছে আমাদের রম্যলেখক পলাশ মাহবুব। দুপুরে পলাশ আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিল, রেজা ভাই, জাকির ভাইরে তো খুঁজে পাচ্ছি না। জাকির ভাইয়ের আর কোনো নাম্বার আছে কিনা? বললাম, না, নাই। হতে পারে জাকির ভাই কোনো আন্ডারগ্রাউন্ডে আছেন এখন। কাঁটাবনের কনকর্ড এম্পোরিয়ামে জাকির ভাই প্রায়ই ঢু মারেন। সেখানে থাকতে পারে। পলাশ জিগাইল, পামু কেমনে? কইলাম, তুমি সৈকতকে ফোন কর। পলাশ বলল, সৈকত ভাইয়ের নাম্বার নাই। আমাদের বন্ধু কবি সৈকত হাবিব কনকর্ডে প্রকৃতি নামে একটা প্রকাশনা দিয়েছে। সেখানে জাকির ভাই সময় সুযোগ হলেই আড্ডা মারতে যান। সেই আন্দাজে সৈকতের নাম্বার দিলাম পলাশকে। শুনে জাকির ভাই বললেন, ওই সময় সময় টেলিভিশনে আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছিল। তখন আমার মোবাইল বন্ধ ছিল। একটু আগে পলাশের মামলায় হাজিরা দিয়ে আসলাম। হা হা হা...জাকির ভাই মেলা থেকে বের হলেন। আমি ছায়াবীথিতে ঢু মারলাম। ছায়াবীথিতে পেলাম আমার গল্প সংকলন 'পঞ্চভূতেষু'র প্রকাশক জাহাঙ্গীর আলম সূজনকে। সূজন বলল, চলেন ভাই, বাইরে গিয়ে দুই ভাই দুইটা সিগারেট খাই। আমরা মেলা থেকে বাইরে আসলাম। সূজন বলল, বেচাবাট্টার খুব বাজে অবস্থা। এভাবে চললে তো ভাড়াই উঠবে না। ছায়াবীথি এবার দুই ইউনিটের স্টল পেয়েছে। ভ্যাটসহ বাংলা একাডেমি প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা ভাড়া বাবদ নিয়েছে। সেই দুশ্চিন্তা সূজনের মাথায়। সত্যি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে প্রকাশকদের এবার ভাড়ার টাকা তুলতেই কুরবানী হয়ে যাবার দশা!!!সূজনকে শান্তনা দিতে বললাম, মেলায় ১০ তারিখ পর্যন্ত বইপ্রেমীদের ভিড় একটু কমই থাকবে। তবে আগামী শুক্রবার থেকে মেলা জমে উঠতে পারে। আর তখন বইবিক্রি ঠেকায় কে!!! আমাদের রাজনৈতিক নেতারা তো বইপত্র পড়েন না। দেশের সাধারণ মানুষ বইমেলায় এসে স্বাচ্ছন্দে বই কিনবেন, সেই নিরাপত্তাও পাচ্ছেন না। রাস্তায় চলন্ত বাসে পোট্রোল বোমা ছুড়ে মারা হচ্ছে। বই কিনতে এসে কে চায় লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে? ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থী আর অমর একুশে বইমেলার কথা চিন্তা করে বিএনপি'র উচিত তাদের সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলন পিছিয়ে দেওয়া। বা অহিংস আন্দোনের উপায় বের করা। নইলে ভবিষ্যতে এই ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর পরিবার এবং অমর একুশে বইমেলায় যারা প্রকাশক তারা কোন সাহসে বিএনপিকে ভোট দেবে? বিএনপি করে এমন প্রকাশকদের কথাও নিশ্চয়ই সূজনের মত। যে জনগণের ভোটে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যাবেন, তারা যদি পেট্রোল বোমা ছুড়ে সেই জনগণকে নির্বিচারে হত্যা করে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখেন, সেই স্বপ্নের ভেতরে যে গলদ আছে, একথা হয়তো বিএনপি নেতৃত্ব এখনো বুঝতে পারছে না। তাহলে এই দলটি জনগণের কথা বলে, জনসেবার কথা বলে কিভাবে আবার মানুষের দুয়ারে যাবে, সেটি এখন আঠারো কোটি বাংলাদেশীর প্রশ্ন হতে পারে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কৌশল কি হবে, তার জন্য তো আমরা নিরীহ সাধারণ মানুষেরা রাস্তায় বের হয়ে বলি হতে পারি না। সরকারের উচিত বিএনপিকে সন্ত্রাসি কার্যক্রম থেকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া। সরকার যদি মনে করে, সাধারণ মানুষ পেট্রোল বোমায় যত মরবে, তত বিএনপি'র ভোট কমবে, আওয়ামী লীগের ভোট বাড়বে, সেই কৌশলও কিন্তু ভুল। কারণ, সরকারে থেকে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের কাজ। সরকার সেখানে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তাই বিএনপি ও তার জোট যদি লাগাতার অবরোধ হরতাল দিয়ে ভুল রাজনীতি করে, পাশাপাশি সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটও কিন্তু সেই ভুল রাজনীতিই করছে। রাজনৈতিক বিরোধীতা যদি দেশের সাধারণ মানুষকে অবাধে হত্যা করে আদায় করা বা সেখান থেকে জনপ্রিয়তা পক্ষে টানার কৌশল হয়, সেই কৌশল কোনো ভাবেই রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না। আমাদের দেশের রাজনীতিকদের সেই জ্ঞান কবে হবে আমরা জানি না। বাসায় ফিরে নিউজে দেখলাম, গাজিপুরে একটি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা হয়েছে। অনেকেই অগ্নিদগ্ধ। হায়! আমরা কিসের মধ্যে বাস করছি!! আমাদের মত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো ভাবনা নাই। তাদের সবার একমাত্র ভাবনা ক্ষমতা! ওরে ক্ষমতা, তোর কত শক্তিরে ভাই। বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। আমরা ক্ষমতার কাছে আর কোনো ভিক্ষা চাই না। সত্যি সত্যিই চাই না। সবাই ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন। ....................................৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
mk
ভুল পথে তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান মানুষ, যাঁর বাবা এ দেশের রাষ্ট্রপতি ও মা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির পাওয়া যায় না। জিয়াউর রহমানকে যেভাবেই মূল্যায়ন করা হোক, তাঁর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল এবং তার পরবর্তী সময়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে যতই সমালোচনা থাকুক, তিনি যে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন, সে কথা নিশ্চয়ই সবাই স্বীকার করবেন। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির কারণেই খালেদা জিয়া গৃহিণী থেকে দেশের সরকারপ্রধান হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এখনো তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন। তবে এ দেশের রাজনীতিতে বেগম জিয়ার ত্যাগ ছিল। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জেল-জুলুমের শিকার হয়েও তিনি আপসহীন ভূমিকা পালন করেছিলেন। এসব কারণেই ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সব জরিপের ফলাফল চুরমার করে দিয়ে বিএনপি বিপুল বিজয় লাভ করে। '৯১ সালের নির্বাচনে মায়ের পাশাপাশি তারেক রহমান নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। যদিও তিনি রাজনীতিতে পা রাখেন ১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলা কমিটির একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে। ১৯৯১ সালের বিজয় তাঁকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। এর পর থেকে তিনি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফাকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করার কাজে মনোযোগ দেন। তখন ক্ষমতার মোহে নিজেকে না জড়িয়ে দল গোছানোর কাজে মনোযোগী হওয়ায় অনেকেই তাঁর কর্মকাণ্ডকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয় লাভের পেছনে নিয়ামক ভূমিকা রেখেছিল তারেক রহমানের রাজনৈতিক কৌশল। এতে দলে ও দলের বাইরে তাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে তাঁর বাবার জনপ্রিয়তা পুঁজি হলেও পরবর্তীকালে রাজনৈতিক কৌশলে আওয়ামী লীগের (১৯৯৬-২০০১ ক্ষমতাসীন) মতো শক্তিশালী দলকে পরাজিত করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন তারেক। কিন্তু সরকার গঠনের পর থেকেই তিনি ভুল পথে অগ্রসর হতে শুরু করেন। তারেক রহমানের ভুল রাজনীতি হাওয়া ভবন ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়। নির্বাচনে জয়লাভের পরপরই এই ভবনটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। দিনে দিনে হাওয়া ভবন হয়ে ওঠে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র। আর এটি পরিচালনা করতেন তারেক রহমান। বলা হয়ে থাকে, বেগম জিয়ার মন্ত্রিসভায় তারেক রহমানের পছন্দের ২৬ জন (সিনিয়র-জুনিয়র) এমপি স্থান পেয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, সামরিক কিংবা বেসামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতির ফাইলেও হাওয়া ভবনের 'ক্লিয়ারেন্স' লাগত। বিটিভির অনুষ্ঠান নির্মাণ থেকে শুরু করে যেকোনো ঠিকাদারি কাজের জন্যও হাওয়া ভবনের শরণাপন্ন হতে হতো। এভাবেই হাওয়া ভবন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিকল্প শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিএনপি শাসনামলে বিরোধী দল ছাড়াও নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা হাওয়া ভবন বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু সেই সমালোচনাকে আমলে নেননি তারেক রহমান কিংবা খালেদা জিয়া। অভিযোগ আছে, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্রও হয় হাওয়া ভবনে বসে। তারেকের অন্যতম সহযোগী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সেই ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকারও করেন। বাবরের জবানবন্দির ভিত্তিতে তারেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলাটি এখন বিচারাধীন। এই মামলার মুখোমুখি হওয়া তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপির শরিক জামায়াতকে সরকারের অংশীদার করাও ছিল বড় রাজনৈতিক ভুল। স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ মন্ত্রী হয়ে স্বাধীন দেশের পতাকা নিয়ে সারা দেশ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। এটা দেশের মুক্তিযোদ্ধারা মেনে নিতে পারেননি। জামায়াত এখনো বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক। শোনা যায়, জামায়াতকে সঙ্গে রাখার সিদ্ধান্ত তারেকের। এ ব্যাপারে দলের ভেতরে ও বাইরের চাপ থাকলেও তারেকের কারণেই জামায়াতকে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু ভোটের হিসাব কষতে গিয়ে বিএনপির কাছে জামায়াত বিশেষ সমাদর পাচ্ছে। কিন্তু এর ফলে যে বিপুলসংখ্যক ভোটার হারাচ্ছে, সে হিসাব কষছেন না তারেক। সাম্প্রতিককালে লন্ডনে বসে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নেতিবাচক বক্তব্য দিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা বলা তারেক রহমানের শোভা পায় না। এ দেশের মানুষ এটা পছন্দ করে না। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা নেই- এমন মানুষ এ দেশে খুব কম পাওয়া যাবে। তাহলে কেন কিংবা কার পরামর্শে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটূক্তি করেন। সম্প্রতি তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে উদ্ভট তথ্য দিয়ে রাজনীতিতে বিতর্কের ঝড় তোলেন। তিনি বললেন, দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেনাবাহিনীর একজন মেজর কী করে তখন দেশের রাষ্ট্রপতি হলেন? এই প্রশ্ন কি একবারও তাঁর মনে জাগল না? এর আগে কালের কণ্ঠে আমি লিখেছিলাম, ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করার সময় প্রথমবার ভুলক্রমে তিনি নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। এর পরই তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারেন এবং বক্তব্যের ভুলভ্রান্তি সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণাটি একাধিকবার পাঠ করেন। ঘোষণা ছিল এ রকম, 'আই মেজর জিয়া, ডিক্লেয়ার ইনডিপেনডেন্স অব বাংলাদেশ; অন বিহাফ অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।' মেজর জিয়ার আগে ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান। তাঁর কণ্ঠ খুব বেশি মানুষ শুনতে পায়নি। জিয়ার কণ্ঠই কালুরঘাট বেতারে বেশি শোনা যায়। এর মাধ্যমে মানুষের কাছে এমন মেসেজও পৌঁছে যে যুদ্ধে সেনাবাহিনীও যোগ দিয়েছে। তাতে মানুষের মনোবল অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছিল এবং দেশের আপামর জনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এই সত্য স্বীকার করতে আমরা বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত নই। তবে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিএনপি নেতাদের বাড়াবাড়ির বিষয়টিও মেনে নেওয়া যায় না। একাত্তরে মেজর জিয়ার ভুল শব্দচয়নের কারণে যদি তাঁকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বলা হয়, তাহলে তা হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুল। এ ধরনের ভুল ক্ষমার অযোগ্য। একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে অস্থায়ী সরকারের অধীনে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। তখন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন এম এ জি ওসমানী। এটা ধ্রুবতারার মতো সত্য। মিথ্যা দিয়ে এই সত্য ঢাকা যাবে না। তা ছাড়া মেজর জিয়া যদি প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হয়ে থাকেন, তাহলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর ভূমিকা কী ছিল? তাঁকে কে শপথ পড়িয়েছিলেন? কত দিন তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন? আবার রাষ্ট্রপতি থেকে তিনি কেন সেক্টর কমান্ডার হলেন? এসব প্রশ্নের কী জবাব দেবেন তারেক রহমান! এ ধরনের ধূম্রজাল ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার মানে কী! বরং বিএনপিই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারেক রহমান কি জেনেবুঝে এসব করছেন? নাকি স্বাধীনতার ইতিহাসকে কলুষিত করার জন্য কাজ করে চলেছেন? এসব করে জিয়াউর রহমানের ভূমিকাকেই বিতর্কিত করা হচ্ছে। জিয়াউর রহমান নিজেই তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছিলেন, 'বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের কাছে গ্রিন সিগন্যাল হয়ে যায়। আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি।' জিয়াউর রহমান নিজেই অকপটে সত্যকে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি বঙ্গবন্ধুকে কখনো অসম্মান করেননি। তাঁর সম্পর্কে কোনো ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। কারণ জিয়া জানতেন, সত্য ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার সাধ্য কারো নেই। হাজার বছর পরে হলেও ইতিহাস সত্যটিই গ্রহণ করবে আর মিথ্যাকে ছুড়ে ফেলবে। অথচ জিয়ার উত্তরাধিকার বেগম জিয়া ও তারেক রহমান ভুল তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে নিজেরাই বিতর্কিত হচ্ছেন। এর আগেও বেগম জিয়া নিজের জন্ম তারিখ পাল্টে ১৫ আগস্ট করে বিতর্কিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি জন্ম তারিখ পাল্টান। এর আগে তিনি যখন ফার্স্ট লেডি ছিলেন, তখন লাল পাসপোর্টে তাঁর জন্ম তারিখের স্থলে সেপ্টেম্বর লেখা ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনো তা সংরক্ষিত আছে। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর-উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত এবং স্বাধীনতা-উত্তর দেশের পুনর্গঠনে ভূমিকা পালন করে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন জিয়াউর রহমান। তাঁর জনপ্রিয়তার কারণেই বিএনপি এখনো একটি বৃহত্তম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এই দলে এখনো অনেক মুক্তিযোদ্ধা, প্রগতিশীল চিন্তাধারার মানুষ রয়েছেন। অনেক সমর্থক রয়েছেন, যাঁরা বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সখ্য মানতে পারেন না। এর পরও জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বেগম জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমান বিএনপিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে তিনি এ দেশের আপামর মানুষের নেতা হতে পারবেন না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ এ দেশের মানুষের আবেগের সঙ্গে জড়িত। এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা বিএনপির কর্মী-সমর্থক; অথচ তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করেন, ভালোবাসেন। আবেগে আঘাত করে সাময়িক আত্মতুষ্টি হয়তো পাওয়া যায়; কিন্তু টিকে থাকা যায় না। রাজনীতির দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ পথে চলতে হলে তারেক রহমানকে কৌশলটাও রপ্ত করতে হবে। অন্যথায় ছিটকে পড়তে হবে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কিছু ভুলের খেসারত দিচ্ছে বিএনপি। কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দলটি। একদিকে মামলা আর অন্যদিকে দল চাঙ্গা রাখার মতো পরিস্থিতি সামাল দিতে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে বিএনপি নেতৃত্বকে। আর এ জন্য প্রয়োজন বিএনপির একক নেতৃত্ব। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক খেলায় জিততে হলে কৌশল করেই এগোতে হবে। এ ক্ষেত্রে তারেক অতীতের ভুল স্বীকার করে নতুনধারার রাজনীতি শুরু করতে পারেন। পারেন কি?
false
mk
কিলিং মিশনে জঙ্গি!!! দেশের জঙ্গী সংগঠন ও জঙ্গী তৎপরতার পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতা বিএনপি-জামায়াত জোট। আর বিএনপি-জামায়াত জোটসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না এমন উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী সংগঠন ও সংগঠকদের নেপথ্য থেকে মদদ দিয়ে চলেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও পাকিস্তান। অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোল বোমার নাশকতার আড়ালে ফের জঙ্গীদের সংগঠিত করে ভয়ঙ্কর হত্যাকা-ের ছক কষে তৎপরতা চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে তারাই। কিলিং মিশন নিয়ে মাঠে নেমে এ্যাকশনে চলে গেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর, জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাত-উল জিহাদ (হুজি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ জঙ্গী সংগঠনগুলোর হাজারো জিহাদী সদস্য। লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের পুলিশের নাকের ডগায় নির্মম হত্যাকা-ের ঘটনা সবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল তার জ্বলন্ত প্রমাণ। এখনই জঙ্গী দমনে ও জঙ্গী সংগঠনগুলোর তৎপরতা, মদদদাতা, উস্কানিদাতা, অর্থযোগানদাতাদের বিরুদ্ধে ক্রাশ প্রোগ্রাম নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে।বিএনপি-জামায়াত জোট যে জঙ্গী গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতা সেই সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা উদাহরণ টেনে বলেছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের লিফলেটসহ রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী লেখা সংবলিত রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানের ছেলে রিসাদ কামাল খান। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর আপন ভাই পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া আরেক নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) অন্যতম সংগঠক মাওলানা তাইজউদ্দিন। এই মাওলানা তাইজউদ্দিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা থাকাকালে তাঁকে হত্যার চেষ্টায় ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল সেই মামলারও অন্যতম আসামি। যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ-ের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে সৃষ্ট গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে রাজধানীর পল্লবীর নিজ বাসার সামনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়েই আত্মপ্রকাশ করে প্রকাশ্যে আসা জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালায় এবং এই জঙ্গী সংগঠনটির সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইকে (বাংলা ভাই, ইংরেজী ভাই বলতে কিছু নেই) মিডিয়ার সৃষ্টি আখ্যায়িত করে আলোচিত হয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী। এক কথায় ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গী গোষ্ঠীর শিকড় অনেক গভীরে গজিয়ে যাওয়ার পর দেশব্যাপী ডালপালা ছড়িয়ে ব্যাপক আকারে বিস্তৃত হয়ে প্রকাশ্যে এসে তৎপরতায় যুক্ত হয় গ্রেনেড-বোমা, গুলি, খুন ও নাশকতার ভয়ঙ্কর থাবা। সেই থাবার আরেক নির্মম শিকার হয়েছে লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়।পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার বার বারই জঙ্গীবিরোধী অভিযান জোরদার করে অব্যাহত রাখার মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর কতিপয় কর্মকর্তার অসতা ও অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়ে অনেক জঙ্গী সদস্য গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও নাশকতা চালাচ্ছে, হত্যাকা- ঘটাচ্ছে। জঙ্গী কায়দায় চোরাগোপ্তা হামলা করে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা, একই কায়দায় নির্মমভাবে একের পর এক কুপিয়ে লেখক, শিক্ষক, ব্লগার, বুদ্ধিজীবীসহ প্রগতিশীলদের হত্যা করে গ্রেফতার হয়েও জামিনে মুক্ত হওয়া এবং গ্রেফতার এড়িয়ে আত্মগোপনে গিয়ে বার বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে। রাজনীতির নামে আন্দোলনের মাঠে এনে উগ্র মৌলবাদী দল ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে জঙ্গী সংগঠনগুলোকে যুক্ত করে গোটা দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েও বিদেশী প্রভাবশালী শক্তির জোরে পার পেয়ে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট। বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতালের নাশকতায় জঙ্গীবাদ ছড়ানোর প্রশ্রয় ও সহায়তা করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও পাকিস্তানের বড় ভূমিকা এক কূটনীতিক মোঃ মাজাহার খান পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তদ্বির করে ছাড়িয়ে নেয়ার পর বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ তৎপরতায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে প্রত্যাহার করে নিয়েছে পাকিস্তান। বিগত ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রত্যক্ষ মদদে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে আত্মপ্রকাশ করে হিযবুত তাহরীর। আর ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রীতিমতো এক গোলটেবিল বৈঠক করে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনটি বাংলাদেশে কার্যক্রম চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। ২০০৯ সালে হিযবুত তাহ্রীরের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশ্যে এবং নিষিদ্ধ হওয়ার পর আজ পর্যন্ত তারা মাঝে মধ্যেই প্রকাশ্যে তৎপরতা চালায়। আবার নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই জঙ্গী সংগঠনটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামেও সংগঠিত হতে থাকে। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত। সংগঠনের সদস্যরা ৪ থেকে ৫ জনের একেকটি দলে বিভক্ত হয়ে সিøপার সেল পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালাতে থাকে। যাতে একটি দল ধরা পড়লেও আরেকটি দল সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ না পায়। সর্ববিধান বাতিল করে তারা ইসলামী শাসন কায়েমের পক্ষে। এমন আদর্শের কারণে স্বাধীনতা বিরোধীরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নানাভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। স্বাধীনতা বিরোধীরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবি, হিযবুত তাহরীর ও হুজি জঙ্গীদের দিয়ে দেশে গুপ্তহত্যা চালিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্র তৈরি করতে চায়। নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ব্যাপকহারে তৎপরতা শুরু করেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে। রাজশাহী ও টাঙ্গাইলেও সীমিত পরিসরে তাদের তৎপরতা আছে। সারাদেশ থেকে গ্রেফতারকৃত ৩ শতাধিক হিযবুত তাহরীর সদস্যের মধ্যে ২ শতাধিক জামিনে মুক্ত হয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা গোপন তৎপরতার জন্য সাধারণত বেছে নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠচক্রগুলোর মতো গোপন স্থানগুলোকে। হিযবুত তাহরীর সৃষ্টির পর থেকেই নানাভাবে সহায়তা করে আসছে জামায়াত-শিবির। ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের অর্থায়নে পরিচালিত এনজিও এ্যাকশন এইডের পলিসি এ্যানালিস্ট শেখ তৌফিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ, কাজী মোরশেদুল হক, প্রিন্সিপাল মাওলানা মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক মুস্তফা মিনহাজসহ ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে তৎপরতা শুরু করে। হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষিত করার পর তারা মিশে একাকার হয়ে যায় আনসারুল্লাহ বাংলাটিমে।ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার ডিএমপির মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেছেন, জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বিস্ফোরক ভর্তি চালকবিহীন ড্রোন দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যার মিশন বাস্তবায়নে এখন মরিয়া। তাদের প্রধান টার্গেট শেখ হাসিনা ও গণভবন। ড্রোন দিয়ে গণভবনে হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল। গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন এলাকা থেকে কোয়াড হেলিকপ্টার বা ড্রোনের কাঠের তৈরি একটি রেপ্লিকা, ড্রোন তৈরির সরঞ্জাম, বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও উগ্রমতবাদ সংবলিত বইপত্রসহ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য মোঃ তানজিল হোসেন বাবু ও মোঃ গোলাম মাওলা মোহনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। বিশেষ করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ড্রোন দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ তলা উঁচু ভবনে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে ২৫ থেকে ৩০ কেজি ওজনের বিস্ফোরক বহনে সক্ষম একটি চালকবিহীন ড্রোন তৈরির দ্বারপ্রান্তেও পৌঁছে গিয়েছিল। বিস্ফোরক ভর্তি ড্রোনটি আকাশপথ দিয়ে দূর নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র দ্বারা গণভবনে হামলা চালানোর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনাও ছিল জঙ্গীদের। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ের সিংহভাগ আসার কথা ছিল স্বাধীনতা বিরোধীদের কাছ থেকে। ৫ জানুয়ারি বিএনপি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার যে ঘোষণা দিয়েছে তা মাথায় রেখেই এখন কাজ করে চলেছে জঙ্গীরা। পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জঙ্গী সংগঠনগুলোর মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর সঙ্গে হরকাত-উল জিহাদও (হুজি) একই ভাবে হত্যার চেষ্টার টার্গ্টে করে চলেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। হুজির প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটনানোর জন্য ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রাখা, ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা-সহ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে অন্তত এক ডজন বার হামলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহর-সহ বিভিন্নস্থানে। আওয়ামী লীগের সরকার ও তার নেতা-নেত্রীদের মুরতাদ ঘোষনা, ভারতের দালাল ইত্যাদি আখ্যায়িত করে বিভিন্ন সময়ে যে হামলা ও আক্রমণ করা হয়েছে তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে জঙ্গীরা। আর এসব জঙ্গীদেরকে মদদ দিয়ে চলেছে পাকিস্তান। আশির দশকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করার জন্য তালেবানদের হয়ে আল-কায়েদা জঙ্গী সংগঠনে নাম লেখান হরকাত-উল জিহাদ (হুজি) প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান। আফগান ফেরত জঙ্গীরাই বাংলাদেশে এসে জঙ্গী গোষ্ঠীর ভিত্তি স্থাপন করে তৎপরতা শুরু করে গোপনে, যা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তার শিকড় অনেক গভীরে গজিয়ে ডাল পালা মেলে ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করে। তবে তখনও কেবলমাত্র হুজি ছাড়া অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনগুলোর নাম পরিচয় তৎপরতার পুরোপুরি পরিচয় পায়নি গোয়েন্দারা। হুজি দমন করার পর আত্মপ্রকাশ করে জেএমবি। আবার জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান-সহ ৬ জনকে আদালতের রায়ের পর ফাঁসি দেয়ার পর সামনে আসে হিযবুত তাহরীর। হিযবুত তাহরীর প্রধান-সহ অন্যদেরকে গ্রেফতার করে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় আত্মপ্রকাশ করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-সহ অন্তত অর্ধ শতাধিক জঙ্গী সংগঠন ও গোষ্ঠী। এসব জঙ্গী সংগঠনের দেশীয় মদদদাতা হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট এবং তাদেরকে অর্থ, অস্ত্র, মদদ দিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তান ও তার গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই।র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা ও তেহরিক-ই-তালেবানের অনুসারী। সংগঠনের অন্যতম আধ্যাত্মিক নেতা জসীম উদ্দিন রাহমানী কারাগারে। সংগঠনের অপারেশনাল দায়িত্বে রয়েছেন ইজাজ হোসেন। তিনি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত পাকিস্তানী নাগরিক। বর্তমানে পাকিস্তানে রয়েছেন। ২০০৮ সালে সামরিক প্রশিক্ষণ ও জঙ্গী কার্যক্রমে দীক্ষিত হওয়ার জন্য তিনি পাকিস্তানে যান। পাকিস্তান যাওয়ার আগ পর্যন্ত ইজাজ হোসেন জামায়েতুল মুসলিমিনের বাংলাদেশ শাখার আমির ছিলেন। এ সংগঠনটির আন্তর্র্জাতিক আমির হচ্ছেন জর্ডান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শেখ আবু ইসা আলী আররিফাই আল হাশেমী আল কোরাইশি-ই- আবু ইসা। তিনি ২০০২ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন। বারিধারার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পাশে একটি দোতলা বাড়ি ভাড়া করে জঙ্গী কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। পরে তিনি ব্রিটেনে ফিরে গিয়ে গ্রেফতার হন। জঙ্গী সংগঠনটির মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০০৮ সালে প্রথমে হিযবুত তাহরীর পরে আনসারুল্লা বাংলা টিমে যোগ দেয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তেহজীব, রেজওয়ান শরীফ, মইনউদ্দিন ইয়েমেনে চলে যান। তারা আল কায়েদা নেতা আনোয়ার আল আওলাকির ঘনিষ্ঠ সহযোগী সামির খানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইয়েমেনে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় ২০০৯ সালে রেজোয়ান শরীফ ওরফে রাজিব শরীফ গ্রেফতার হন। রাজীব শরীফ ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ এয়ারলাইন্স উড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টাকালে গ্রেফতার হয়ে ২০ বছরের কারাদ-ে দ-িত হন। আর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক উড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার হয়ে সম্প্রতি আরেক ছাত্র নাফিজ ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আটক আছে যুক্তরাষ্ট্রের কারগারে।জঙ্গীদের গোড়াপত্তন ॥ গোয়েন্দা সংস্থার রেকর্ড থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে জঙ্গীদের গোড়পত্তন হওয়ার ঘটনা ফাঁস হয় ১৯৮৮ সালের দিকে। তখন আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পাকিস্তানে নিহত ওসামা বিন লাদেন, শীর্ষ স্থানীয় নেতা মোল্লা ওমর ও বর্তমান আল কায়েদার প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরির সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে এসেছিল আফগানিস্তানের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের ১০ জঙ্গী নেতা। আফগানিস্তানে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ৪০ জনের এক জঙ্গী গ্রুপ পাকিস্তান হয়ে তখন বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আফগান যুদ্ধ ফেরত জঙ্গীরা বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন জঙ্গী গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ক্ষমতার লোভের টোপে পড়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে বোমাবাজি ও গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। ১৯৮৮ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের একটি জঙ্গী প্রতিনিধি দল পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সফর করে। এই সফরকারী দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাত-উল-জিহাদের (হুজি) নেতা শেখ ফরিদ, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, মাওলানা আবদুস সালাম, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি হুজির একাংশের প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল। আফগানিস্তানে সফরকালে এই প্রতিনিধি দলটির নেতাদের সঙ্গে আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে দেখা হয় এবং বাংলাদেশের আল কায়েদার অনুকরণে জঙ্গী গ্রুপ প্রতিষ্ঠার আলোচনা হয়। মিয়ানমারের আরাকানের হুজি নেতা মাওলানা আবদুল কুদ্দুছ বার্মি, বাংলাদেশের মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা আবদুল হাই আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন ও আফগান মুজাহিদদের সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যাপারে কো-অর্ডিনেটরের ভূমিকা পালন করেন। ২০১১ সালে মাওলানা শেখ ফরিদ গ্রেফতার হওয়ার পর গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যে দেখা যায়, ১৯৮৮ সালে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের উদেশে রওনা হয়। সেই বছরের ২ মার্চ বিকেল সাড়ে তিনটায় আফগানিস্তানে পৌঁছান তারা। আফগানিস্তানে যাওয়া ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন নোয়াখালীর মাওলানা হাবিবুল্লাহ মেজবা, ঢাকার শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, মোহাম্মদপুরের মুফতি নসরুল হক, মাওলানা আজিমউদ্দিন, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, চট্রগ্রামের মাওলানা সুলতান জৌক, মাওলানা মনসুর, কিশোরগঞ্জের মাওলানা আতাউর রহমান খান, ফরিদপুরের মাওলানা আবদুল মান্নান, সিলেটের মাওলানা হাবিবুর রহমান খান। আফগান ফেরত ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের কয়েকজন ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন, কয়েকজন মারা গেছেন ও আত্মগোপনে চলে গেছেন। গোয়েন্দা সংস্থার রেকর্ড থেকে জানা যায় যে, তখন যারা গ্রেফতার হয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যায়, ১৯৮৮ সালের ৫ মার্চ সকাল ৯টার দিকে তারা আফগানিস্তান থেকে ফিরে আসে পাকিস্তানে। সেই বছরের ১২ মার্চ তারা ঢাকায় চলে আসে। আফগানিস্তানের সাত্তাহ নামক এলাকায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাত হয়। আফগানিস্তানে অবস্থানরত আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটিকে জেহাদের বিভিন্ন ধরন, প্রশিক্ষন, অত্যাধুনিক রাইফেল একে-৪৭সহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেন। আফগান যুদ্ধে রাশিয়া পিছু হইলে ক্ষমতার দখল নিয়ে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ হওয়ার সময়ে পাকিস্তান থেকে একাধিকবার আফগানিস্তানে যাতায়াত করেন মাওলানা শেখ ফরিদ। বাংলাদেশ থেকে যারা আফগান যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তখন গিয়েছিল তারা কখনও ৩ মাস, কখনও ৬ মাস, কখনও ১ বছর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্নস্থানে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে আল কায়েদা যখন হামলা চালায় তখন মাওলানা শেখ ফরিদ আফগানিস্তানেই অবস্থান করছিলেন। বহুজাতিক বাহিনী যখন আফগানিস্তানে একযোগে হামলা চালায় তখন শেখ ফরিদসহ অন্যরা আফগান মুজাহিদের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয়। বহুজাতিক বাহিনীর ব্যাপক হামলার মুখে আফগানিস্তানের একের পর এক শহরের পতন ঘটতে থাকলে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন, মোল্লা ওমর ও বর্তমান প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরি নিরাপত্তার জন্য একের পর এক স্থান বদলাতে থাকেন। তারাও আফগান যুদ্ধের পর পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। বাংলাদেশে এসে তারা হরকাত-উল-জিহাদ(হুজি) নামে জঙ্গী সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৯৮ সালে হুজির মধ্যে জিহাদ ও নেতৃত্বের প্রশ্নে মতবিরোধ দেখা দেয়। এর মধ্যে জঙ্গী সংগঠন হুজি তিন ভাগ হয়ে যায়। আফগান যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী মুজাহিদরাও বিভক্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি হুজি প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে হুজির একাংশ। বিএনপি-জামায়াত জোট রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করে আফগান ফেরত মুজাহিদ ও তাদের নেতৃত্বাধীন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীদের। দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা, আউলিয়ার মাঝার, গীর্জা, সিনেমা হল, রমনা বটমূল, সিপিবির সমাবেশ, ব্রিটিশ হাইকমিশনারসহ বিভিন্নস্থানে ও ব্যক্তিদের ওপর গ্রেনেড-বোমা হামলা চালায় তারা। এমনকি আফগান ফেরত যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংঠন হরকাত-উল-জিহাদ (হুজি) প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানের নেতৃত্বে জঙ্গীরা গোপালগঞ্জে বোমা পুতে রাখা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেছে প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও।গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক সৈয়দ বজলুল করিম জানিয়েছেন, বর্তমান আল কায়েদার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির ইউটিউবে ছাড়া কথিত একটি অডিও-বার্তায় বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রতি ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারীদের প্রতিরোধের যে আহ্বান জানানো হয়েছে তার সঙ্গে বাংলাদেশের বিএনপি-জামায়াত জোটের ব্যবহার করা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন ও উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠির সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অস্বাভবিক কিছু নয়। যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচাল ও রায় ঘোষণার প্রতিবাদে জামায়াতÑশিবিরের নেতৃত্বে বিদেশে যে তাদের লবিস্ট নিয়োগ করা আছে তারা যেভাবে পশ্চিমা গনমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত সংবাদ প্রকাশ করে চলেছে তার সঙ্গে আয়মান আল জাওয়াহিরির বার্তায় বাংলাদেশকে ‘বিরাট এক জেলখানা’, ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র’, নানাভাবে আখ্যায়িত করার ঘটনার সঙ্গে সাদৃশ্য দেখা যায়। এখন আবার বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা আর তা লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকা- একই সূত্রে গাঁথা। প্রগতিশীল, বুদ্ধিজীবী ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার যে ছক কষা হয়েছে, তা স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানী ও তাদের প্রেতাত্মা উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠীরই। এখনই, উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠী ও তাদের মদদদাতাদের দমনে ক্রাশ প্রোগ্রাম নেয়া প্রয়োজন। তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ ( ০১ মার্চ ১৫)
false
rn
কপাল দোষে আমার মতো কর্মহীন অবসর প্রিয় মানুষকে নিয়ে পৃথিবীর ঘটনাবলীর তরঙ্গরাশি ছিনিমিনি খেলছে ১। মিলি-তুলি নামে যমজ দুই বোন আমাকে পড়াতেন । আমি প্রতিদিন সন্ধ্যায় কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে তাদের বাসায় যেতাম পড়তে । তারা দুই বোন কুচকুচে কালো । কিন্তু তাদের চোখে মুখে অনেক মায়া ছিলো । সব সময় চোখে কাজল দিয়ে রাখত । মিলি-তুলি আপা'র বড় ভাই ছিলেন মেজর । তাদের একটা ঘর ভর্তি থাকত বই আর বই । আমি এত বই আর কোনো বাসায় কখনো দেখিনি । পড়া শেষে তারা আমাকে নুডুলস রান্না করে খাওয়াত । চা খাওয়াতো । নানান বিষয়ে আমার সাথে গল্প করতেন । আমি ছোটবলে আমাকে একটুও অবহেলা করতেন না । তুলি আপাকে দেখতাম বই পড়তেন আর খুব হাসতেন । অনেক সুন্দর করে হাসতেন । তিন মাস তাদের কাছে পড়েছিলাম । তারা দু'বোনই বাইরে বের হলে বোরকা পড়তেন । এখনও বোরকা পড়েন । ২০০৯ সালে মিলি-তুলি আপার বিয়ে হয় । প্রায়ই তাদের কে আমি রাস্তায় দেখি কিন্তু কথা বলি না । না, দেখার ভান করে এড়িয়ে যাই । কয়েকদিন আগে আমি ধূপখোলা বাজারের সামনে দেখি মিলি আপা লাল একটা গাড়িতে করে যাচ্ছেন । ২। মসজিদে জামাতে ফজর নামাজ পড়ার জন্য এক ব্যাক্তি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ওযূ করে মসজিদে যাচ্ছে। মাঝ পথে সে পা পিছলিয়ে পড়ে গেল। তাঁর কাপড় নষ্ট হয়ে গেল। সে বাসায় ফিরে এসে কাপড় বদলিয়ে আবার ওযূ করে মসজিদের দিকে রওয়ানা দিল। মাঝ পথে আবার সে পা পিছলে পড়ে গেল। তাঁর কাপড় ময়লা হয়ে গেল। তিনি আবার বাসায় গেল কাপড় বদলিয়ে ওযূ করে আবার মসজিদের দিকে রওয়ানা দিল। মাঝ পথে আসতে লন্ঠন হতে এক লোকের সাক্ষাত পেল। লোকটিকে সে জিজ্ঞাস করল, আপনি কে? সে উত্তরে বলল, আমি আপনাকে দু'বার পড়ে যেতে দেখলাম তাই ভাবলাম মসজিদের যাওয়ার জন্য আমি একটি প্রদীপের ব্যবস্থা করে দেই। লোকটি লন্ঠন হাতে তাঁকে মসজিদ পযর্ন্ত এগিয়ে দিল। লোকটি সাহায্যকারীকে বললেন, চলুন নামায পড়ে নেই। লোকটিকে বারবার বললার পরও লোকটি নামাজ পড়ল নাহ্। তখন লোকটিকে প্রশ্ন করল, আচ্ছা আপনি নামাজ পছন্দ করেন না, বলুনতো আপনি কে?লোকটি বলল, আমি শয়তান। আমি আপনাকে প্রথম বার পা পিছলিয়ে ফেল দিয়েছিলাম যাতে মসজিদে নামায না পড়ে আপনি বাড়ী ফিরে যান। কিন্তু আপনি যখন পা পিছলিয়ে পড়ে যাওয়ার পর ও বাড়ী গিয়ে ফিরে আসলেন তখন আল্লাহ্তালা আপনার সব গোনাহ্ মাফ করে দিলেন।দ্বিতীয়বার যখন আপনি পড়ে যাওয়ার পরও বাড়ী গিয়ে কাপড় বদলিয়ে আবার মসজিদে রওয়ানা দিলেন তখন আল্লাহ্তালা আপনার পরিবারের সকলের গোনাহ্ ক্ষমা করে দেন।এর পর যদি আপনি আবার পড়ে গিয়ে আবার বাড়ী থেকে কাপড় বদলিয়ে আবার মসজিদে আসেন, না জানি আল্লাহ্তালা সকল এলাকাবাসীর গোনাহ্ মাফ করে দেন। সে ভয়ে আমি তাড়াতাড়ি লন্ঠন হাতে আপনাকে মসজিদে পৌছে দিয়ে গেলাম। সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪০
false
mk
বহির্বিশ্বে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ জাপান। আর জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের নাগোয়ায় জি-সেভেন আউটরিচ বৈঠকে যোগ দিতে ৪ দিনের জাপান সফরে রয়েছেন। শনিবার তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নকল্পে বেশ কিছু প্রস্তাবও তুলে ধরেন বৈঠকে। শনিবার বিকালে টোকিওতে বাংলাদেশের নিজস্ব দূতাবাস ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক জাপান সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সফরের মধ্যদিয়ে দুই দেশের আস্থার সম্পর্কটি নতুনমাত্রা পাবে এমনটিই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, দীর্ঘদিন ধরে জাপান বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বিভিন্ন খাতে নিঃশর্ত সহযোগিতা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশও জাপানের সমর্থনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে এসে দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরো পোক্ত করেছে। বিষয়টি জাপানের শীর্ষ নেতৃত্ব অত্যন্ত ইতিবাচক ভাবে নিয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। জাপান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে, অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিবিড় করেছে- যা অন্য দেশগুলোর জন্যও অনুসরণীয় হতে পারে- বিশেষজ্ঞরা এভাবেই দুই দেশের সম্পর্ককে মূল্যায়ন করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জাপানের মতো দেশ যদি বাংলাদেশের সঙ্গে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ কেন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে না!স্বাধীনতার চার দশকে জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটেছে। লক্ষ্যণীয়, দুই দেশের পারস্পরিক কোনো ইস্যুতে সম্পর্কের অবনতি তো দূরের কথা, নূ্যনতম মতপার্থক্যও সৃষ্টি হয়নি। জাপান শুধু বাংলাদেশের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারই নয়, আন্তর্জাতিক পরিম-লে দুই দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের ক্ষেত্রেও জাপান ভূমিকা রাখছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর পরই অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জাপানের স্বীকৃতিদানের মধ্যদিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের বছরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফরের মাধ্যমে সম্পর্ককে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করান। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে উভয় দেশের সম্পর্ক বিভিন্ন দিকে সম্প্রসারিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষি, সামাজিক, সংস্কৃতি খাত তথা এমন কোনো খাত নেই যেখানে জাপানের অবদানকে খাটো করে দেখা যায়। উপরন্তু বাংলাদেশে নির্মিতব্য সর্ববৃহৎ অবকাঠামোগত প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণেও জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেক দেশই সহযোগিতা দিয়ে আসছে। কিন্তু উল্লেখ করার বিষয় হলো, জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে যে সহযোগিতা দিয়ে আসছে তা শর্তমুক্ত। এছাড়া কোনো ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে দেশটি নাক গলায় না। জাপানের এই মনোভাব বন্ধুত্বের এক অভূতপূর্ব নিদর্শন বলেই মনে করা যায়। স্বাধীনতার পর থেকেই জাপানের নিঃশর্তভাবে সহযোগিতা প্রদানের মধ্যদিয়েই তা স্পষ্ট। আমরা মনে করি, এই সম্পর্ককে আরো নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলে তা বাংলাদেশের অগ্রগতিকে আরো ত্বরান্বিত করবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক হামলার পর জাপান শুধু সমরশক্তিই নয়, অর্থনৈতিক শক্তিতেও সফল হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ দু-তিনটি দেশের মধ্যে জাপান একটি। ফলে জাপান আমাদের সঙ্গে থাকলে অর্থনৈতিক শক্তির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ঘুড়ে দাঁড়ানো অসম্ভব নয়। ফলে জাপান শুধু উন্নয়ন সহযোগীই নয়, আমাদের জন্য অনুকরণীয়ও হতে পারে। বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা সমীচীন। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ বর্তমানে যে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে তাতে জাপানের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেকেই এখন সহযোগিতা দিতে আগ্রহী। তবে জাপানের মতো নিঃস্বার্থ সহযোগী পাওয়া অত্যন্ত সৌভাগ্যের। জাপান যেহেতু বাংলাদেশের পাশে রয়েছে সুতরাং জাপানের এই সহযোগিতা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সরকার আরো সচেষ্ট হবে- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা। সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:২১
false
hm
গরুটারই চরিত্র ভালো নয় There are more things in heaven and earth, Horatio, Than are dreamt of in your philosophy. - Hamlet (1.5.166-7) সবাই আগেই টের পেয়েছিলো, গরুর শ্লীলতাহানির সালিশে বেদম মজা হবে। তাই বিকেলের দিকে এলাকার লোক সরোয়ার মেম্বারের বাড়ির প্রশস্ত উঠানে এক মহোৎসব বসিয়ে দিলো। সরোয়ার মেম্বার স্থানীয় মুরুব্বিদের নিয়ে বসার সময়ই ফিসফাস চলছিলো রবাহূতদের মাঝে। গ্যালো ইউপি নির্বাচনে সরোয়ার মেম্বারের কানের পাশ দিয়ে গুলি গিয়েছিলো, সতেরো ভোটে হেরেছিলো মাঝাপাড়ার কালাম মেম্বার, সে তার স্যাঙাৎ শফিককে নিয়ে সালিশে মুরুব্বি হিসেবে উপস্থিত। খেলা না জমেই যায় না। সরোয়ার মেম্বার কেবল প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার তালেব মাস্টার আর গ্রামের মসজিদের ইমাম মৌলবি সদরুদ্দিকে শুধিয়ে ফট করে রায় দিয়ে বসলো, ধর্ষিতা গরুটিকে কিনে নিতে হবে কিশোর মশিউরের বাপকে। আর তখনই জমে উঠলো খেল। মুরুব্বি কালাম সরোয়ার মেম্বারের বাড়ির ফিনফিনে সাদা কাপে পরিবেশিত চায়ে গগনবিদারী চুমুক দিয়ে গলা খাঁকরে বললো, কেন? এই একটি প্রশ্নের পর গোটা সালিশ চুপ। শুধু একটু দূরে একটা লিচু গাছে এক বেয়াদপ কাঠঠোকরার সশব্দ অধ্যবসায় প্রথমবারের মতো সকলের মরমে পশলো। সরোয়ার মেম্বার ঘাস খেয়ে মেম্বার হয়নি। সে পায়ের ওপর পা তুলে গম্ভীর গলায় বললো, সেইটাই দস্তুর। কোনো মেয়েছেলের উপর এই বলাৎকার ঘটে থাকলে আমরা বলতাম, দুইজনের বিবাহ দিয়ে দাও। সংসার করুক। এই লাফাঙ্গা মশিউর গিয়ে বলাৎকার করলো জাবেদ আলীর অবোলা গরুটাকে। এখন গরু তাকে কিনে নিতে হবে। এবার সাদা কাপে বাজখাঁই চুমুকের পর শোনা গেলো কালামবন্ধু শফিকের মিহি গলার আওয়াজ, কেন? সরোয়ার মেম্বার এবার তাকায় তালেব মাস্টারের দিকে। তালেব মাস্টার তাকায় মৌলবি সদরুদ্দির দিকে। মৌলবি সদরুদ্দি আড়চোখে হাতের ঘড়ি আর উঠানে গাছের ছায়া দেখেন। মাগরিবের ওয়াক্ত হতে দেরি আছে। সরোয়ার বলে, আবার কেন বলেন কেন শফিক ভাই? মশিউর জাবেদ আলীর গরুর ইজ্জত লুটছে। এখন এই বেইজ্জত গরু নিয়া জাবেদ আলী কই যাবে? জাবেদ আলী ফুঁপিয়ে ওঠে, আমার কাজলী গাইটারে হারামজাদা মশিউর দিনে দুপ্রে খোলা আসমানের নিচে একটা ঘন্টা ধরে ... । আর বলতে পারে না জাবেদ আলী, তার গলা ধরে আসে। জাবেদের প্রতিবেশিনী আসমা চেঁচিয়ে ওঠে, আমরা সবাই দেখেছি, হারামজাদা মশিউর কাজলী গাইটাকে একেবারে সর্বনাশ করে ছেড়ে দিছে। আরো সর্বনাশ করতো, কিন্তু আমরা দূর থেকে চিক্কুর দিয়ে বললাম, ওরে হারামজাদা তুই শুধু ঐখানে দাঁড়া তোর বিচি যদি হাঁসুয়া দিয়ে না ফেলছি ...। সরোয়ার মেম্বার হাত তোলে, বুবু থামেন। আসমা চুপ করে যায়। কাঠঠোকরাটাও থেমে যায় হঠাৎ। উঠানের মানুষ মৃদু গুঞ্জন করে ওঠে, না, সরোয়ার মেম্বার একটা মরদ বটে। কালাম মেম্বার দীর্ঘদিন ধরে মেম্বারির দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত থাকলেও সে লোকটা তো কালাম মেম্বারই, মেম্বারি তার রগে মজ্জায়। সে আরেকটি রসঘন চুমুক দেয় চায়ের কাপে, একটা কাঠবিড়ালি শিউরে উঠে তরতরিয়ে পালিয়ে যায় পেছনের কাঁঠাল গাছের উচ্চতর ডালে। কালাম মেম্বার বলে, এক ঘণ্টা ধরে? জাবেদ আলী ফোঁস করে ওঠে, হাঁ! কত্তবড় শুয়ার হলে একটা অবোলা জীবের ওপর একটা ঘণ্টা ধরে ...। আবারও তার গলা ধরে আসে। শফিক সপ্রশংস দৃষ্টিতে দূরে উঠানের মেঝেতে বসে থাকা মশিউরকে দেখে। কালাম মেম্বার বলে, এ তো পরিষ্কার মিছা কথা মেম্বার সাহেব। এক ঘণ্টা ধরে একা একটা বাচ্চা ছেলে এই কাম কীভাবে করবে? সালিশের দর্শকদের মাঝে জোর গুঞ্জন ওঠে। তাই তো? কালাম মেম্বার মৃদু হেসে বলে, এইখানে এক ঘণ্টা ধরে এই কাজ করার মতো কেউ আছেন? থাকলে হাত তোলেন। মশিউরের পাশে বসে থাকা মশিউরের পিতা আলতাব খপ করে মশিউরের সরণোন্মুখ কব্জি চেপে ধরে। বাকি সবাই উসখুশ করে নড়েচড়ে বসে বা দাঁড়ায়। সরোয়ার মেম্বার নিজের ঘরের কাপের চায়ে ভুরু কুঁচকে চুমুক দেয়। বলে, আপনি কী বলতে চান কালাম ভাই? কালাম মেম্বার কাপের চা শেষ করে কাপ নামিয়ে রেখে গামছা দিয়ে ঠোঁট মোছে। তারপর হাসিমুখে বলে, এক ঘণ্টার কথা বাদই দিলাম। তিরিশ মিনিট কে কে পারবেন? হাত তোলেন। মশিউর গর্বিত চোখে উপস্থিত ভিড়কে যাচাই করে। প্রৌঢ়রা মাথা নাড়ে, জাবেদ আলীর দাবিতে সত্যতার গন্ধটা একটু একটু করে ফিকে হয়ে আসে। তালেব মাস্টার গলা খাঁকরে বলেন, কিন্তু একটা শ্লীলতাহানি হয়েছে, এটা তো সত্য, নাকি? সাক্ষীর তো অভাব নাই। কালাম মেম্বার মধুর হাসে। বলে, জাবেদ আলী জানলো কীভাবে, যে মশিউর তার আদরের কাজলী গাইকে এক ঘণ্টাব্যাপী শ্লীলতাহানি করেছে? জাবেদ আলী গর্জে ওঠে, এই মশিউর হারামজাদারে যখন আমরা দৌড়ানি দিয়ে ধরলাম, তখন তো সে নিজেই স্বীকার করছে সব! আর ... আর ... এই যে আসমাবু দেখছে, সালেহাবু দেখছে, ঐ যে মনসুরের মেয়ে পপি সেও দেখছে নিজের চোখে, যে এই অমানুষ মশিউর কাজলীর উপর কী করে গিয়ে চড়াও হইছে! কালাম মেম্বার হাসে। শফিকও হাসে। সরোয়ার মেম্বার গম্ভীর গলায় বলে, হাসেন কেন কালাম ভাই? এবার কালাম মেম্বার থেমে যায়। উঠানে সম্মিলিত শ্বাসের শব্দ হুট করে মিলিয়ে যায়। কাঠঠোকরাটা অনিশ্চিত কয়েকটা ঠোকর দেয় লিচু গাছের কাণ্ডে। প্রতিটি শব্দ চিবিয়ে চিবিয়ে কালাম মেম্বার বলে, একটা ঘণ্টা ধরে যদি এই নামরদ দুধের কিশোর মশিউর জাবেদ আলীর কাজলী গাইয়ের সঙ্গে কিছু করেই থাকবে, তো কাজলী গাই কেন আপত্তি করলো না? সবাই পার্শ্ববর্তীর মুখ দেখে। তাই তো? কালাম মেম্বার বলে, কেন কাজলী গাই দুইটা হাম্বা হাম্বা বলে আশেপাশের গরুবাছুর বা মানুষকে জানান দিলো না, যে মশিউর তার শ্লীলতাহানি করতেছে? তালেব মাস্টার অস্বস্তিভরে জাবেদ আলীর মুখ দেখেন। মৌলবি সদরুদ্দি আবারও আড়চোখে গাছের ছায়া আর হাতের ঘড়ি দেখে নেন। শফিক বলে, একটা ঘণ্টা ধরে এই ঘটনা কাজলী গাই ঘটতে দিলো কেন? সে তো অন্য সময় হাম্বা হাম্বা ডাকে, এই একটা ঘণ্টা সে কেন চুপচাপ ছিলো? সে কি নিজের ইচ্ছায় অবোলা ছিলো তবে? কালাম মেম্বার চাপা গর্জন করে বলে, জাবেদ আলী তোমার গাইটার চরিত্র ভালো না। এই কথা আর দশজনের সামনে এসে বলতে হবে, আমি কখনও কল্পনা করি নাই। কিন্তু সত্য কথা এইটাই। তুমি তোমার গাইরে সঠিক সহীহ তরিকায় বড় করতে পারো নাই। মশিউর আর আলতাবের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। জাবেদ আলী চেঁচিয়ে ওঠে, তার মানে কী? আমার কাজলীর কী দোষ? সে ছিলো মাঠে বান্ধা, তারে ঘাস খাওয়ানোর জন্য আসমাবু নিয়া গেলো, তারপর আসমাবু বাড়ি ফিরলো দুইটা দানাপানি মুখে দেওয়ার জন্য। তারপর আবার মাঠে ফিরা গিয়া দেখে এই হারামজাদা মশিউর লুঙ্গি তুলে কাজলীরে ...। আবার অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে থেমে যায় জাবেদ আলী। কালাম মেম্বার হিংস্র হাসে, আড়চোখে সরোয়ার মেম্বারকে মাপে সে। বলে, আসমা যে বাড়ি ফিরা গেলো, দানাপানি মুখে দিলো, কাজলীর কাছ থেকে কোনো কমপেলেন কি সে এই সময়ের মধ্যে পাইছে? হ্যাঁ? তোমার কাজলীর চরিত্র যদি ভালোই হবে, সে কেন দুইটা লম্বা হাম্বা ডাক দিয়া আসমারে ডাকলো না? জাবেদ আলী গর্জে ওঠে, আরে গাইয়ের আবার চরিত্র কী? কালাম মেম্বার ঠা ঠা করে হেসে বলে, তাইলে গাইয়ের আবার শ্লীলতা কী? সরোয়ার মেম্বার গলা চড়িয়ে বলে, কালাম ভাই, কথা প্যাঁচায়েন না বড় ভাই। মশিউর জাবেদ আলীর গাইরে কী করছে এইটা এখন অঞ্চলের বেবাক মানুষ জানে। এখন শাস্তির পালা, শাস্তি কী দিতে হবে সেটাই কন। কালাম মেম্বার মৃদু হেসে বলে, আমি তো এইখানে কোনো অপরাধই দেখতে পাচ্ছি না মেম্বার সাহেব। একটা বাচ্চা ছেলে, একটা ডবকা গাইয়ের কাছ থেকে কী ইশারা পাইয়া এমন কাম করে, আপনিই বিচার করেন। এই বয়সে তো কত রকম ভুলই মানুষ করে। তাই বলে কি কাউরে জোর করে দুশ্চরিত্র গাইগরু বেইচা দিবেন নাকি? আমি তো বলি শাস্তি দিতে হইলে কাজলী গাইরেই পঞ্চাশটা দোররা মারার কাম। বেলেল্লা গরু, পর্দাপুশিদার কোনো ঠিক নাই। আলতাব সম্মতিসূচক সজোর কাশি দেয়। মশিউর মৃদু হাসে। জনতা গুঞ্জন তোলে। কালাম মেম্বারের ধার কমে নাই। সতেরো ভোট কম পেয়েছে তো কী হয়েছে? সরোয়ার মেম্বার অসহিষ্ণু গলায় বলে, এটা একটা কথা নাকি? একটা দামড়া ছেলে একটা নিরীহ গরুরে ধর্ষণ করবে আর আপনারা তার ওকালতি করবেন? শফিক সরু গলায় বলে, ধর্ষণ তো হয় যদি ধরেন দুইজনের মধ্যে মতের অমিল থাকলে। কালাম মেম্বার কথাটা টুক করে তুলে নেয়। বলে, জাবেদ আলীর বেলেল্লা কাজলী গাই যে অরাজি ছিলো, এইটা বুঝার উপায় কী গো মেম্বার সাহেব? একটা ঘণ্টা সে ইয়ে পেতে চুপচাপ দাঁড়ায়ে থাকলো, একটা হাম্বারব পর্যন্ত নাই। বেচারা মশিউরের উপর কী কষ্টটাই না গেছে এই একটা ঘণ্টা? কী রে মশিউর, কষ্ট পাস নাই? মশিউর দাঁত বার করে হাসে। আসমা চেঁচিয়ে ওঠে, গরু কবেত্থেকে মানুষের সঙ্গে এই কামে রাজি হওয়া শুরু করলো? কালাম মেম্বার কড়া গলায় বলে, জাবেদ আলী, তোমার বুজিরে বলো চুপ থাকতে। ব্যাটাছেলেদের সালিশে জেনানারা কথা বলে কেন? জাবেদ আলী কিছু বলে না, আগুনঝরা চোখে কেবল তাকায় কালামের দিকে। আসমা তবু চেঁচায়, আরে আমি দেখলাম, সালেহাবু দেখলো, পপি দেখলো, তারপরও আপনেরা কন দোষ গাইটার? কালাম মেম্বার চকিতে তাকায় মৌলবি সদরুদ্দির দিকে। মৃদু হেসে বলে, হুজুর, শুনলেন মেয়েলোকের কথা? আরে এইসব কেসে কমপক্ষে চারজন নারী সাক্ষী লাগে। তোমরা আছো তিনজন। তোমাগো চৌঠা সাক্ষী কই? আনো তারে। ডাকো এই সালিশে। জাবেদ আলী ফ্যালফ্যাল করে তাকায় মৌলবি সদরুদ্দির দিকে। মৌলবি সাহেব গলা খাঁকরে বলে, দ্যাখো কালাম, ব্যাপারটা হইতেছে গিয়ে ...। কালাম মেম্বার গর্জে ওঠে, ব্যাপার পরে হবে মৌলবি সাহেব! আগে হাদিসকোরানের বিধানটা বলেন! জবরদস্তি চোদার কেসে নারী সাক্ষী কয়জন লাগে? চারজনের কমে হয় নাকি হয় না? উঠানে জোর গুঞ্জন ওঠে। অভিজ্ঞরা সপ্রশংস চোখে কালাম মেম্বারকে দেখেন। একটা ফিসফাস ওঠে, আসমাদের বাড়ির মেয়েছেলেদের ভোটের কারণেই সতেরোটা ভোট কালাম মেম্বারের পাতে কম পড়েছে কি না। সদরুদ্দি কেশে গলা সাফ করে নিয়ে বলেন, তা দ্বীনের বিধিতে চারজনই লাগে বটে। জাবেদ আলী বলে, আমার কাজলী গাই নিজেই তো চতুর্থ সাক্ষী! শফিক চিকন গলায় হা হা করে হাসে। কালাম মেম্বার হাসতে হাসতে গামছা দিয়ে চোখের কোণ মুছে বলে, জাবেদ আলী, তুমি কি মশিউরের বাপের কাছে কাজলীরে বেচনের জন্যই এই রকম সালিশের এন্তেজাম করাইলা? হ্যাঁ? আরে গরুর আবার সাক্ষ্য কী? গরু কি কথা কইতে পারে? জাবেদ আলী এবার মোড়া ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, বলে, ক্যান ক্যান, গরুর যদি খারাপ চরিত্র থাকতে পারে, সাক্ষ্য থাকবে না ক্যান? কালাম মেম্বার হাতে কিল মেরে বলে, তাহলে ডাকো তোমার কাজলী গাইরে। জিজ্ঞাসাবাদ হোক। সে কি বাংলা ভাষা পারে? আইনকানুন দেওয়ানী ফৌজদারী হাদিসকোরান ইজমাকেয়াস সে বোঝে কিছু? জাবেদ আলী ধুপ করে আবার মোড়ায় বসে পড়ে, তারপর সানুনয় চোখে তাকায় সরোয়ার মেম্বারের দিকে। সরোয়ার মেম্বার মন্দ্রস্বরে গর্জে ওঠে, বাকোয়াজি বন্ধ করি আমরা। মশিউর গরুটারে বেইজ্জতি করছে এইটা ফাইনাল। এইবার শাস্তি হবে। শাস্তি সব থেকে নরম শাস্তিই বলতেছি। কাজলী গাইরে আলতাবের কাছে বিক্রি করা হবে। মশিউর তার বাপের গাইয়ের সঙ্গে যা খুশি করুক, কেউ আপত্তি করবে না। কিন্তু জাবেদ আলীর গাইয়ের উপর সে হামলা করতে পারে না। জাবেদ আলী ফুঁপিয়ে ওঠে, কাজলী রে ...। কালাম মেম্বার এবার পকেট থেকে কৌটা বার করে এক খিলি পান মুখে ঠেসে বলে, গরুর জায়গা গোয়ালে। গরু গোয়ালে থাকবে, খড়বিচালি খাবে, গোয়াল ঘরের দেখশোন করবে, গরম উঠলে আমাদের মাঝাপাড়ার হাশেমের ষাঁড়টারে দিয়া পেট করাতে হবে, তারপর বাছুর দিবে, দুধ দিবে। এই হচ্ছে গরুর জীবন। আলেমওলামারাও এই কথাই বলেন। তুমি জাবেদ আলী গরুরে ঘরের বাইরে খোলা মাঠে ছাইড়া রাখবা, গরু খালি গায়ে ওলান ঝুলায়ে উদাম ঘুরবে, কাজল দেওয়া চোখে কচি কচি ছেলেদের দিকে আড়ে আড়ে চাইবে, আর তারপর তার ওয়াসওয়াসায় ফাঁসায়ে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের এক ঘণ্টা ধরে খাটাবে, আর সালিশে তার চরিত্র নিয়া দুইটা কথা বললে তোমরা বলবা কালাম মেম্বার সতেরোটা ভোট কম পাইছে। বরকত নাই জাবেদ আলী, বরকত নাই। এইসব কি ভালো? মশিউর আর আলতাব মাথা নাড়ে। মোটেও ভালো নয়। শফিক মিহি গলায় বলে, আদুল গরু হইলো গিয়া পাকা তেঁতুলের মতো। এরপর সালিশের বাতাবরণটাই নষ্ট হয়ে যায়। একেকজন একেক কথা কইতে থাকে, মৌলবি সদরুদ্দিকে উদ্ধারের জন্যে উঠানে গাছের ছায়া ক্রমশ মাগরিবের ওয়াক্তের দিকে ধেয়ে আসে। কাঠঠোকরাটা লিচুকাঠে মাথা ঠুকে মরে।
false
rn
আমার গায়ে তারার গায়ের গন্ধ লেগে আছে (দুনিয়ার কোনো ধর্ম নারী স্বাধীনতা স্বীকার করে না।)প্রকৃতি নিয়ে আমার অনেক ভাবনা আছে।যদিও প্রকৃতি নিয়ে আমার খুব বেশী কবিতা নেই।তবু মাঝ রাতে চাঁদ দেখতে দেখতে,দূরে নানান আলোর ঝলকানি ।বাতাসের শব্দ শুনতে শুনতে অনেক এলোমেলো লাইন চলে আসে মাথায়।কিন্তু কাগজ কলম নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করে না।এখন মনে রেখে দিব,কাল সকালে সময় মতো লিখে নিব।আশে পাশে কোথাও গান বাজছে-'আমার অনবকাশের উজান ঠেলে তোমাকে ঘরে আনতে চাই নে,যেদিন পালের হাওয়ায় তুমি আপনি আসিবে,সেদিন আগমনীর লগ্ন লাগবে...'।আমি আপাতত চাই দুই বাংলা'র ঐতিহ্য আর ঊওরাধিকারের সম্পূর্ন পাঠ,তারপর অন্য কিছু ভাববো।অনেকেই আমার কথা বুঝতে পারে না।কিন্তু আমি জানি,আমাকে দেখতে দেখতে,জানতে জানতে ভালোবাসতে বাসতে উপলব্দি করতে পারবে।'হিমি',প্রায়ই বলে,তুমি কী চাও?তোমার উপলব্দিকে অন্যের মধ্যে জারিত করা?তাহলে লেখ না কেন?তুমি কি সমাজ,রাষ্ট,দেশের দুরবস্তা পালটাতে চাও?তাহলে ঝাপিয়ে পড়ো না কেন?সব মানুষেরই একটা আশ্রয় কেন্দ্র থাকা উচিত।আমার আশ্রয় কেন্দ্র হলো রবীন্দ্রনাথ এবং হিমি।আকাশের উদার আর নিলিপ্ত চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবি,হিমি ও কি এই মুহূর্তে চাঁদের দিকে একবার...।'হিমি' আমার কাছে প্রায়ই একটা কবিতা বার বার শুনতে চায়।কবিতা টি হলো-"যতই আমি দূরে যেতে চাইততই আসি কাছেআমার গায়ে তাহার গায়েরগন্ধ লেগে আছে''।জনবিরল রাস্তায় বিশাল আকাশের নীচে,বিকেলের নরম রোদে 'হিমি'র পাশে দাঁড়িয়ে থেকে আমার মনে হয়,এই নারী আমার নয়,কিন্তু 'হিমি'কে আমি হারাতে চাই না।বড় বেশী অভিমান আমার।অভিমান আমাকে রিক্ত করে দিয়েছে।আমি যখন খুশি 'হিমি'কে অনুভব করতে পারি-আবার কখনো সমুদ্রবেলায় সূর্যাস্তের মুখোমুখি এই নারী'কে হেঁটে যেতে না দেখলেও,সেই দৃশ্য শাশ্বত হয়ে থাকবে মনে।এখন মানুষ কথায় কথায় ইন্টারনেট,মোবাইল,ফ্যাক্স,বিদেশী জিনিস,ল্যাপটপ,রমনীদের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে এতো তীব্র আর অশালীন সব পারফিউম।দিন আনি দিন খাই বাপের মেয়েও এখন নিয়মিত বিঊটি পার্লারে যায়,বড় বড় শপিং মলে ঘোরা ঘুরি করে,ডিসকোতে যায়,আমি যে এরকম লেকচার দিচ্ছি এই আমিই তো শালা পচানব্বই টাকা প্যাকেটের সিগারেট খাই,দিনে এক প্যাকেটের কম নয়,অর্থ্যাৎ মাসে উনএিশ শো টাকা।দু'শো টাকা এ পর্যন্ত কোনো সৎ কাজে ব্যয় করেছি?বিশ্বায়ন কপচাবো,সেয়ানা পাপীর মতো বুঝবো সব কিন্তু করবো না কিছুই।মাথার দুই লক্ষ বিশ হাজার কিলোমিটার ওপরে চাঁদ জ্বলছে।গভীর রাত এখন।সময় হলো 'হিমি'র সাথে কথা বলার।ক্লিওপেট্রা আত্নহত্যা করেছিল কীভাবে জানো 'হিমি'?তার স্তনের বোঁটায় তীব্র সাপের দংশন সে নিজের ইচ্ছায় নিয়েছিল।ভাবা যায়?এন্টনির প্রতি ভালোবাসায়,এন্টনির মৃত্যুতে।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন না-"যেথা তার যতো ঊঠে ধ্বনি,/আমার বাঁশির সুরে সারা তার মিলেছে তখনি।"আমার ক্ষেএে সেটা তুমি,'হিমি'!'হিমি'তুমি কি জানো,এলিজাবেথ টেলরের আটবার বিয়ে হয়েছে,তার মধ্যে রিচার্ড বার্টন কে দু'দুবার।এটা কি ভন্ডামী নয়?সত্য কথা বলতে কি-মানুষকে কোনো নিয়মে ফেলা যায় না।তার মস্তিষ্ক বস্তুটি তাকে নিয়ে খেলা করে।চেঙ্গিস খাঁ বলেছে,আমি হত্যা,হত্যা আর হত্যার দ্বারা পৃথিবীকে কবরের শান্তি নামিয়ে আনতে চাই।আমার তেইশ বছরের জীবনটা প্রতিদিনের নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় বেশ কিছুটা বাঁক নিচ্ছে।'হিমি'র মতো নারীকে আমি এখন পর্যন্ত দেখিনি।নারী তথা নারীর প্রতি ভালোবাসার এক অনন্যতা আছে যা,এযাবৎ আমি জানতাম না।গতকাল বিকেল থেকে বোহেমিয়ান শব্দটা মাথার ভিতর ভন ভন করছে।বোহেমিয়ান শব্দটা একটু পরপর মাথার পিছনে নাঁচা-নাঁচি করছে।ডিকশনারীতে দেখলাম বোহেমিয়ান(Bohemiani) মানে, যাযাবর মানুষ।যারা স্থান থেকে স্থানান্তরে ঘুরে বেড়ায়।ভূপেন হাজারিকার সেই গান মনে পড়ে যায়-"পৃ্থিবী আমারে আপন করেছে,আপন করেছে পর...আমি এক যাযাবর...।"(যা ভাবি,যা বুঝি,যা সত্য এবং যা জানি তা-ই লিখি ডরাই না।"মায়ার জগতে সব মায়া নয়যা কিছু দৃশ্যত,মনে হয়পার্থিব জীবনে একবারপরখ করাও দরকার"।)
false
hm
না বলা কথা আরিফ ঢোকে টলোমলো পায়ে। চোখে বিহ্বল দৃষ্টি, এক কোণে যে ছোটো টেবিলে আমরা বসে আছি, তা-ও যেন তার চোখে পড়ে না। "মাক্ষি!" কামরুল দরাজ গলায় হাঁক ছাড়ে। পাশের টেবিলে বসা আহ্লাদী চেহারার মেয়েটা, আর তার মুশকো বয়ফ্রেন্ড ঘাবড়ে যায় কামরুলের নব্বই ডেসিবেল গর্জন শুনে। আরিফ ঘুমন্ত মানুষের মতো ঘাড় ফেরায়। হাতছানি দিই আমরা। টেবিল পর্যন্ত হেঁটে পৌঁছাতে গিয়ে একবার এক ওয়েটারের সাথে ধাক্কা খায় আরিফ, আর আহ্লাদী মেয়ের মুশকো বয়ফ্রেন্ডের জুতোও মাড়িয়ে দেয় বেখেয়ালে। আমাদের চেহারা আর সংখ্যা ঘাড় ঘুরিয়ে একবার কুটিল চোখে দেখে নিয়ে মুশকো চুপ করে যায়। আমরা না থাকলে সে নিশ্চিতভাবেই আরিফের ওপর কিছু চোটপাট নিতো বান্ধবীর সামনে। রোকন আমার কানে কানে বলে, "মেয়েটা টেবিলের নিচ দিয়ে কী করছে দ্যাখ!" আমি তাকাই। আহ্লাদী মেয়েটা তার স্যান্ডেল খুলে রেখে খালি পা তুলে দিয়েছে মুশকো ছোকরার পায়ের ওপর। রোকনের দিকে তাকিয়ে দেখি সে চকচকে চোখে গভীর মনোযোগে পর্যবেক্ষণ করছে সেই দৃশ্য। বিরক্ত হয়ে আরিফের দিকে তাকাই। তার ধ্বসে যাওয়া চেহারা দেখে মনে হচ্ছে গুরুতর কিছু ঘটেছে। রাশেদ বলে, "বয়। এতো দেরি ক্যান?" আরিফ একটা চেয়ার ঘড়ঘড় করে টেনে নিয়ে বসে। মুশকো ছোকরা ঝট করে ঘাড় ফেরায়। কামরুল বলে, "হইছে কী রে মাক্ষি? মাইর খাইছস নাকি?" আরিফকে আমরা আড়ালে মাক্ষিচুস ডাকলেও সামনে তার আকিকা দিয়ে রাখা নামেই ডাকি, একমাত্র কামরুলই ব্যতিক্রম। অন্যদিনের মতো আরিফ বিরক্ত হয় না মাক্ষি সম্বোধনে, ঘোর লাগা মানুষের মতো বলে, "একটা কোল্ড ড্রিংক দিতে ক।" রোকন চটাশ করে তুড়ি ফোটায়। "ভাইয়া! কোক প্লিজ!" চিমসে এক ওয়েটার মাথা ঝাঁকিয়ে রওনা দেয় কোক আনতে। রাশেদ আরিফকে খুঁটিয়ে দেখছিলো কেবল, সে বলে, "পকেটমার হইছে নাকি?" আরিফ এবার একটা রুমাল বার করে মুখটা একবার মুছে নেয়। তারপর দুই হাত গালে চেপে ধরে বিড়বিড় করে কী যেন বলে। কামরুল বলে, "মাক্ষি কখনো মানিব্যাগ লইয়া বাসা থিকা বাইর হয় না। পকেটে মারার মতো কিছু থাকলে তো!" আমি বলি, "শুনতে পাই না। জোরে ক।" আরিফ কাঁপা গলায় বলে, "জুলেখার সাথে দেখা হইছিল!" ব্যাপারটা যে গুরুতর, এবার আমরা বুঝে ফেলি। জুলেখা আরিফের পুরনো প্রেমিকা, দীর্ঘদিন তারা জমজমাট প্রেম করার পর একদিন জুলেখা হঠাৎ আরিফকে ছেড়েছুড়ে কয়েক মাসের মাথায় কাকে যেন বিয়ে করে ফেলে। আরিফ এ নিয়ে বড় মর্মযাতনায় ছিলো দীর্ঘদিন। রাশেদ বলে, "কই দেখা হইলো?" আরিফ ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে বলে, "কইতাছি খাড়া। কোক কই?" কোক হাতে পেয়ে আরিফ কোঁৎ কোঁৎ করে গিলে শেষ করবে ভেবেছিলাম, কিন্তু সে কয়েকটা মাঝারি চুমুক দিয়ে মুখ বিকৃত করে। "ঠাণ্ডা না!" রোকন ওয়েটারকে টুশকি দিয়ে ডাকে। "ব্যাপার কী ভাই? কোক ঠাণ্ডা না ক্যান?" ওয়েটার আমাদের ভালোমতোই চেনে। কয়েক বছর ধরে আড্ডা দিচ্ছি আমরা এই শরমা কুটিরে, নিয়মিত খদ্দের। সময়ের সাথে সার্ভিস ভালো হবার বদলে উল্টো সে নিজের দুর্ভাগ্যের সাথে আমাদের জড়াতে চায়। "কারেন্ট থাকে না স্যার!" কামরুল বলে, "কই দেখা হইল কইলি না তো।" আরিফ কিছুক্ষণ গুম হয়ে থেকে বলে, "বসুন্ধরায়।" বসুন্ধরা মানে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল। সেখানে আরিফ একা একা কী করছিলো, ভেবে পাই না। বসুন্ধরায় যেতে হলে আরিফ আমার বাসায় চলে আসে, তারপর আমার সাথে যায়। ওর মতো হাড়কঞ্জুষ একা একা বসুন্ধরায় কী করে? আরিফ যেন আমার ভাবনা টের পেয়েই বলে, "মামার লগে গেছিলাম।" রাশেদ বলে, "তারপর?" রোকন আমার কানে কানে বলে, "মাইয়াটা কী করে দ্যাখ।" তাকিয়ে দেখি মেয়েটা দুই পায়ের পাতায় খেলছে তার বন্ধুর পা নিয়ে। বিরক্ত লাগে রোকনের ওপর। বলি, "তুই ঐদিক চাইয়া রইছস ক্যান?" রোকন বলে, "অপেক্ষা করতেছি কখন আরো উপ্রে উঠে!" মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। শুনি, আরিফ বলছে, "মামার বন্ধু আইছে যশোর থিকা। তারে ঘুরাইয়া দেখাইতেছে ঢাকা শহরের মার্কেট। আমারে কইলো, ল তুইও চল। আমি গেলাম। ফুড কোর্টে গিয়া দেখি জুলেখা!" রাশেদ সহানুভূতির সুরে বলে, "তারপর?" আরিফ সজল চোখে বলে, "সেই যে সেইদিন সন্ধ্যাবেলা আমারে কইলো, খুদাপেজ সোনা, উই আর ব্রেকিং আপ, দিস থিং বিটুইন আজ ইজ ওভার, তারপরে আর কখনো কোনো যোগাযোগ হয় নাই! ফোনে না, সামনাসামনি না!" কামরুল বলে, "জুলেখার কথা কি মুখস্ত কইরা রাখছস?" আরিফ করুণ চোখে তাকায় আমার দিকে। আমি কামরুলকে ধমকাই, "ফটর ফটর করিস না!" রোকনটা প্যাঁচ লাগায়, "দোস্ত, গ্রামারে ভুল আছে।" আরিফ এবার ক্ষেপে ওঠে, "কী ভুল?" রোকন বলে, "আবার ক। কী জানি এক্টা ভুল আছে!" আরিফ কোকে চড়াৎ করে এক চুমুক দিয়ে বলে, "ভুল থাকলে তুই ধরতে পারবি? তুই ইংরাজি পারস দুই কালাম? আইছস জুলেখার ইংরাজির ভুল ধরতে!" কামরুল হাসে, "রোকইন্যা চুপ কর। জুলেখা ইংরাজিতে কাশি দিতো, মনে নাই?" আরিফ খুবই ক্ষেপে গিয়ে কী যেন বলতে যায়, রাশেদ কামরুলকে থামিয়ে দেয়। "কামা, চুপ যা। জুলেখা ইংরেজি ভালোই পারে। আর আরিফের ইংরেজি খুব একটা সুবিধার না হইলেও স্মরণশক্তি ভালো। ও দোয়া কুনুত জানে।" আরিফ কোকে চুমুক দেয় আবার। আমি আড়চোখে তাকিয়ে দেখি, আহ্লাদী মেয়েটার পা কোথায়। আরিফ আবার কাঁদোকাঁদো গলায় বলতে থাকে, "দেখি ফুড কোর্টে একটা টেবিলে জুলেখা একা একা বইয়া রইছে!" আমি সমবেদনার সাথে বলি, "গিয়া হাই-হ্যালো কস নাই?" আরিফ নড়েচড়ে বসে চেয়ারে। "চাইছিলাম। দ্যাখ, একটা খুব ইমপরট্যান্ট কথা ওরে আমার বলার ছিলো। আমি গত ছয় বছর ধইরা ওরে কথাটা বলতে চাইতেছি, কিন্তু কোনো যোগাযোগ নাই। ও কই থাকে, কী করে, কিছুই জানি না! ক্যামনে কমু?" রাশেদ বলে, "দোস্ত, যা হওয়ার তা তো হইয়াই গ্যাছে! এখন এই পুরানা কাসুন্দি নাড়িসচাড়িস না। ফরগেট ইট!" আরিফের চোখ ছলছল করে ওঠে। "দোস্ত, পারি না! মেঘলা দিনে মনে হয়, এই তো সেদিন জুলেখার লগে রিকশায় কইরা ভিজতে ভিজতে যাইতেছি। আকাশে রইদ উঠলে মনে হয়, এইরকম দিনে একটা বেগুনী ছাতা মাথায় দিয়া জুলেখা আমার লাইগা খাড়াইয়া থাকতো টিএসসিতে ...!" কামরুল চোখ মোছে। "টেরেজিডি!" আরিফ ওজনে কামরুলের অর্ধেক না হলে হয়তো মারামারিই শুরু করে দিতো। "ওই চুতমারানি! আমার দুঃখ লইয়া মশকরা মারস? তোর মশকরার মায়রে ...!" রাশেদ থামায় আরিফকে। "ঠান্ডা দেইখা কিসু খা। ও ভাই, ঠান্ডা কী আছে?" ওয়েটার বলে, "কোক আছে স্যার! দিবো?" আরিফ মুখ বিকৃত করে। "না! লাসসি খামু।" রোকন টুশকি মারে, "লাসসি হবে?" ওয়েটার বিনীত গলায় বলে, "আনতেছি স্যার!" আমি বলি, "তারপর কী হলো?" আরিফ বলে, "আমি মামার টেবিলে বইসা ভাবতেছিলাম, যাই, উইঠ্যা গিয়া বসি ওর কাছে। কথাটা বলি আজকে! এমন সময় দেখি ...।" ওর গলাটা ধরে আসে। কামরুল বলে, "মিস্টার জুলেখা মাটি ফাইড়া বাইর হইলো?" আরিফ বলে, "হ! টয়লেটে গেছিলো হালার পুতে। বিশ্বাস যাবি না কইলে, হালায় পুরাই খাইষ্টাচোদা একটা। দেখতে সাদা ছাগলের মতো, ভোটকা, গা ভর্তি লোম ...!" রোকন বলে, "পুরাই তর অ্যান্টিথিসিস মালুম হইতেছে দোস!" রাশেদ মোলায়েম বিরক্তিসূচক "আহ" বলে রোকন আর কামরুলকে থামানোর ভান করে। আমি তাকিয়ে দেখি রোকনের সন্দেহ ঠিক, আহ্লাদী মেয়েটা পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে হিজিবিজি ছবি আঁকছে মুশকোর হাঁটুতে। রাশেদ বলে, "তারপর?" আরিফ মুখ কুঁচকে বলে, "তারপর আর কী! আমি আর গ্যালাম না উইঠা। অরা খাইয়াদাইয়া গ্যালো গিয়া।" কামরুল বলে, "এতো নীরস কইরা কইস না! নিশ্চয়ই অরা একজন আরেকজনরে খাওয়াইয়া দিতেছিলো। মুখ মুছাইয়া দিতেছিলো ন্যাপকিন লইয়া ...!" আরিফ বিড়বিড় করে বলে, "চুদি, তোর মশকরার মায়রে আমি ...।" রোকন বলে, "ছয় বছর হইয়া গ্যাছে ব্যাটা! এখনও এতো ত্যাল থাকবো? আরিফ তুই কামার কথায় কান্দিসনা।" আরিফ কান না দিয়ে পারে না। না কেঁদেও পারে না। সে ধরা গলায় বলে, "এই কথাটা যে কতোবার ওরে বলবো ভাবছি! রাত্রে ঘুমানোর আগে মনে পড়ে। স্বপ্নে দেখি ও একটা গাড়িতে চইড়া যাইতাছে আর আমি পিছে পিছে লৌড়াইতেছি, চিৎকার কইরা ডাকতেছি, জুলি, জুলি, কথাটা শুইনা যাও, প্লিজ ... গাড়ি থামে না! আর তরা, আন্টির পো, মশকরা চুদাস এইটা লইয়া? প্রেম করছস জীবনে যে আমার কষ্টটা বুঝবি?" কামরুল কাঁদে, "কান্না ওঠে জগত জুড়ে ... হায় হোছেন রে হায় হোছেন ...।" লাসসি আসে। আরিফ স্ট্র মুখে দিয়ে চোঁ-চাঁ চুমুক দেয়। আহ্লাদী মেয়েটার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখি, ওর পায়ের আচরণ। না, আর উঠছে না। রাশেদ বলে, "তুই জুলেখার কাছে গিয়া ফোন নম্বর লইয়া লইতি। এতদিন পর নিশ্চয়ই আগের মতো গিয়ানজাম করতো না।" আরিফ মাথা নাড়ে। "না। তা হয় না। অর জামাইয়ের সামনে গিয়া অর লগে আলাপ শুরু করা ... না দোস্ত! নিজেরে সামলাইতে পারতাম না!" কামরুল বলে, "কী কইতে চাইছিলি জুলিরে?" আরিফ ফোঁস করে ওঠে, "তরে কমু ক্যা?" রোকন বলে, "হালকা লাগবে। আমাদের বল। আর একবার যখন ওরে দেখছস, বারবারই দেখবি। আজকে কইতারস নাই, কালকে কইয়া দিবি। সমস্যা কী?" আরিফ মাথা নাড়ে। রাশেদ বলে, "এখনও ওরে ভালোবাসস?" আরিফের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। "না!" কামরুল বলে, "তাইলে কী কইতি? আই হেইট ইউ, আমি তুমাকে ঘৃণা করি?" আরিফ রক্তচক্ষু মেলে তাকায় ওর চেয়ে এক হাত লম্বা কামরুলের দিকে। আমি বলি, "তাইলে বল, কী কইতি?" আরিফ লাসসির গ্লাসে একটা কম্পিত চুমুক দিয়ে থম ধরে বসে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর বিমর্ষ, মলিন কণ্ঠে বলে, "ওর কাছে তিন হাজার ট্যাকা পাই!"
false
fe
দাঁড়াতে হবে , এবং দায় নিয়েই মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সংলাপে বেরিয়েছেন। আজ ২০ জুলাই ২০০৮ রোববার তিনি সিলেট সফর করেছেন। বলেছেন , ভোট দিতে হবে ভেদ বিচার করে।জনগণকে দায় নিতে হবে। এদিকে বিবেচিত দুর্নীতিবাজরা একে একে জামিন পাচ্ছে। সরে গেছেন এটর্নী জেনারেল । এসেছে নতুন মুখ। সবই যেনো কুয়াশায় ঢাকা। কি হবে? কি হতে যাচ্ছে ? তাহলে কি ১/১১ এর পূর্বেই ফিরে যাচ্ছে স্বদেশ ? উপদেষ্টারা এ বিষয়ে বলছেন না কিছুই। অন্যদিকে বাংলাদেশে ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হচ্ছে সেই পরাজিত রাজাকার-আলবদর চক্র। তাদের সামনে লক্ষ্য একটিই, একাত্তরে পরাজয়ের বদলা নেয়া। এদের কর্ম ও মানসিকতা দেখলে হতবাক হতে হয়। ভেবে অবাক লাগে, বেশকিছু মুখোশধারী ব্যক্তি এদের ইন জুগিয়ে যাচ্ছেন। এদের পুনর্বাসনে সাহায্য করছেন। দেশে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন জন্ম নিয়েছে। সে সংবাদ অনেকেই জানেন না। জানার কথাও নয়। সম্প্রতি এই সংগঠনের একটি সমাবেশে গিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী আমান। তিনি ঢাকায় রংমিস্ত্রির কাজ করেন। কিন্তু সমাবেশে গিয়ে তিনি যখন দেখতে পান, সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা হচ্ছে, তখনই গর্জে ওঠেন তিনি।বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী যখন একটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনই তার ওপর হামলে পড়ে একাত্তরের হায়েনার উত্তরসূরিরা। তাকে অপদস্ত করা হয় খুব অমানবিকভাবে। সে ছবি দেখেছি আমরা পত্রিকায়। কি জঘন্য মানসিকতা। কত চরম ধৃষ্টতা! যে ব্যক্তি জীবন বাজি রেখে এই দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন, তাকে সেই স্বাধীন দেশে আক্রমণ করছে হায়েনারা।এই ছবিটি দেখে আমি ঘুমাতে পারিনি দু’রাত। ভেবেছি ভীষণভাবে। কোথায় চলেছে স্বদেশ? এই দেশে এভাবে রাজাকার-আলবদররা পেশিশক্তি দেখাবে?‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ’­ কারা করেছে? কি তাদের উদ্দেশ্য? দেশের কোন কোন বিশিষ্ট (?) ব্যক্তি সেই সমাবেশে গিয়েছিলেন? সে সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা দরকার। সাবেক প্রধান বিচারপতি জে আর মোদাচ্ছির হোসেন সেখানে প্রধান অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ‘মিলেমিশে’ দেশ গড়ার বাণীও শুনিয়েছেন জাতিকে। আমাদের জানা হয়ে গেল, সাবেক প্রধান বিচারপতি তার খোলস থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তার প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত হয়েছে জাতির কাছে। দেশবাসী, গোটা বিশ্বে অবস্খানরত বাঙালি সমাজ জানতে পেরেছে এতদিন কাদের স্বার্থরক্ষার কবচ হৃদয়ে পোষণ করে আসছিলেন। সেই সমাবেশে জোট সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান, বিএনপির মার্কামারা সাংবাদিক রেজওয়ান সিদ্দিকী, চারদলীয় জোট সমর্থক সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীসহ জামায়াত সমর্থক বেশকিছু ব্যক্তি উপস্খিত ছিলেন।আমি ভেবে খুবই অবাক হয়েছি, সেখানে উইং কমান্ডার (অব.) হামিদুল্লাহ খানের উপস্খিতি দেখে। তাহলে কি তারও মানসিক স্খলন ঘটল? হামিদুল্লাহ খান; জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খানের সহোদর। আতিকুল্লাহ খান মাসুদ বর্তমানে বিভিন্ন অভিযোগে কারাবন্দি আছেন। হামিদুল্লাহ খান কোন স্বার্থ রক্ষার জন্য জামায়াত-রাজাকার চক্রের সঙ্গে হাত মেলাতে গেলেন তা বড় প্রশ্নবোধক হয়েই থেকে গেছে দেশবাসীর কাছে।এটা বাঙালি জাতি জানে এবং বোঝে­ একজন রাজাকার সবসময়ই রাজাকার। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা সবসময় মুক্তিযোদ্ধা নন। নামি-দামি মুক্তিযোদ্ধাদের কক্ষচ্যুতি অতীতেও লক্ষ্য করেছে এই জাতি। তা নতুন কিছু নয়। কিছু কথা হচ্ছে ওয়ান-ইলেভেনের পটপরিবর্তনের পর যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে, দুর্নীতিবাজ, মুখোশধারী, মিথ্যা প্রচারণাকারী এবং জাতির প্রতি নিমকহারাম একটি চক্র মাঠে নেমেছে কোন স্বার্থে?মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী আমান নিগৃহীত হওয়ার ঘটনাটি দেশে-বিদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এর প্রত্যাশিত জোর প্রতিবাদ করেনি। প্রতিবাদ-সমাবেশ বিক্ষোভ যা করেছে আমাদের কাছে সেটা দায়সারা গোছের বলেই মনে হয়েছে। কেন তারা এত দুর্বল ভূমিকা পালন করল­ তা সত্যিই পীড়াদায়ক। আওয়ামী লীগ এখন ব্যস্ত সিটি ও পৌর নির্বাচন নিয়ে। খুলনা, বরিশাল, সিলেট তিনটি সিটিতে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। যদিও সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছেন। রাজশাহীতে প্রথমে চৌদ্দ দল মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা ফজলে হোসেন বাদশাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। কিন্তু ১৪ দল পেরে ওঠেনি আওয়ামী লীগের স্খানীয় নেতা খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে। তিনি নাগরিক কমিটির ব্যানারে অনড় থাকেন তার প্রার্থিতায়। আওয়ামী লীগ যে তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ওপর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারছে না তা প্রামাণিত হয়েছে বাদশার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে। শেষ পর্যন্ত ‘বিদ্রোহ’-ই জয়ী হয়েছে রাজশাহীতে। প্রশ্ন হচ্ছে­ তাহলে আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলা বা কেন্দ্রীয় ‘চেইন অফ কমান্ড’ কতটা কাজ করছে? কে মানছে তাদের নির্দেশনা?একই অবস্খা সিলেটেও। বর্তমান মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান কারাগারে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে চার্জশিট দেয়ার প্রক্রিয়াও চলছে বলে শোনা যাচ্ছে। তারপরও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কামরানকেই সমর্থন দিয়েছে। সিলেটে কি আওয়ামী লীগের আর কোন নেতা নেই? তাহলে এই বিতর্কে যাওয়ার কি প্রয়োজন ছিল? একজনকে বারবার মেয়র হতেই হবে কেন?আমরা অতীতেও দেখেছি, সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী মনোভাব দেখায় সবসময়ই। এমন কি শরিকদের সঙ্গেও। এই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকই চুক্তিতে সই করেছিলেন কয়েকটি ধর্মীয় মৌলবাদী দলের সঙ্গে। আরও স্পষ্ট করে যদি বলি, আজ এই বাংলাদেশে মোহাম্মদ আলীর মতো মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার দোসরদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার দায় কি এড়াতে পারবে আওয়ামী লীগ?আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে বারবার কথা দিয়েছে জাতিকে। তারা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মঞ্চে বসে ‘ওয়াদা’ করেছিল এই বাংলায় বিচার হবেই। আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক ছায়াসঙ্গী ছিলেন সবসময় শহীদ জননীর। কিন্তু আমরা দেখলাম আবদুর রাজ্জাক মন্ত্রী হওয়ার পর একটিবারও সংসদে দাঁড়িয়ে কথা বললেন না। বদরুল হায়দারকে প্রেসিডেন্ট বানাতে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল জামায়াতের গোলাম আযমের বাসায়। তৎকালীন সিনিয়র নেতা আবদুস সামাদ আজাদ ছিলেন জামায়াতের সঙ্গে অন্যতম লিয়াজোঁ রক্ষাকারী। তারপরও বাংলার মানুষ বারবার দাঁড়াতে চেয়েছে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জনস্বার্থ সংরক্ষণের চেয়ে দলীয় নেতাদের মনোরঞ্জনের দিকেই নজর দিয়েছে বেশি। দলে অগণিত কৃতী নেতা থাকার পরও জরুরি মন্ত্রিত্বের দু’দুটি পদ আঁকড়ে থেকেছেন একই ব্যক্তি। এসব অভ্যন্তরীণ স্বৈরাচারী মনোভাব সাধারণ মানুষকে তিক্ত-বিরক্ত করে তুলেছে বারবার।এখনও দেশের সিংহভাগ মানুষ মনে করেন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। আর এ জন্য রাজনৈতিক ঐক্য দরকার। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল হিসেবে তাই সেই দায়িত্বটিও আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। ক্ষমতার প্রতি মমতা নয়, জাতীয় ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে সাহসের সঙ্গে।মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী থানায় জিডি করেছেন। দেশের বুদ্ধিজীবী-ছাত্র-শিক্ষকসহ অনেকেই এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম এ ঘটনার সুবিচার দাবি করেছে। তা না হলে কঠিন কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে। এসব কর্মসূচিকে সমর্থন দেয়া প্রয়োজন গোটা দেশবাসীর।মাননীয় সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ বারবার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। আমি আশা করব, তিনি মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর প্রতি নির্লজ্জ আক্রমণকারীকে যথাশিগগির সম্ভব বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করবেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের তাদের প্রাপ্য কিছুই দিতে পারিনি। কিন্তু তাই বলে তারা রাজাকার-দোসরদের হাতে নিগৃহীত হবেন­ তা কোন সভ্য মানুষই মেনে নেবে না। ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ’-এর নামে যারা আলবদরদের সমর্থন-সহযোগিতা করেছে, এদের রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে প্রতিহত করতেই হবে। আর সেটাই মহান মুক্তিযুদ্ধের অসম্পূর্ণ অধ্যায়।
false
rn
মজার বিষয় ১/ বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৬ হাজার ৮শ’ টি ভাষায় মানুষ কথা বলে।৩৮ টি জীবন্ত ভাষা রয়েছে আমাদের বাংলাদেশে। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতেই রয়েছে ১২ টি আদিবাসী সমপ্রদায় যাঁদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা ভাষা রয়েছে। এরা হলেন মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, ম্রো, বম, লুসাই, পাংখোয়া, চাক, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমী, খেয়াং, ও উসুই। ২/ ১৩ একটি প্রাইম নাম্বার, যার অবস্থান ৬ষ্ঠ।যেমনঃ ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ।১৩ হচ্ছে একমাত্র প্রাইম নাম্বার যা কিনা দুটি ক্রমিক প্রাইম নাম্বার এর বর্গের যোগফল।যেমনঃ(২^২ + ৩^২) = ১৩ ।১৩ কে ১ থেকে ১৩ পর্যন্ত সকল প্রাইম নাম্বার দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগশেষ গুলি পাওয়া যায় তার যোগফল কত হতে পারে বলুন তো?যদি ১৩ থেকে ১ পর্যন্ত সংখ্যাগুলির কিউব (cube) পরপর পাশাপাশি লিখে যাওয়া হয় তাহলে যে বিশাল সংখ্যাটি পাওয়া যায় তা একটি প্রাইম নাম্বার হবে। ৩/ টুথব্রাশ প্রথম আবিষ্কার হয় চীনে। ১২ শতকের দিকে চিনে এক ধরনের টুথব্রাশ ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়।ঘোড়ার লেজের পশম হাড়র সঙ্গে গেঁথে এই ব্রাশগুলো বানানো হতো! এগুলোকে বলে ব্রিসল টুথব্রাশ। ইংল্যান্ডে উইলিয়াম এডিস নামে এক লোক থাকতো। ১৭৭০ সালের দিকে রায়ট করার অপরাধে তাকে জেলে পাঠানো হলো। ওখানে তো তার কোনো কাজই নেই। বসে থাকতে থাকতে তার মাথায় ব্রিসল টুথব্রাশকে আরো উন্নত করার বুদ্ধি আসলো। সে একটা হাড় জোগাড় করে তাতে অনেকগুলো ফুঁটো করলো। এবার জেলখানার প্রহরীদের কাছ থেকে কয়েকটা ব্রিসল টুথব্রাশ জোগাড় করলো। তারপর সেই ফুঁটোগুলো দিয়ে ব্রিসলগুলো ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে আঠা দিয়ে আটকে দিলো। ব্যস, তৈরি হয়ে গেলো একটা সুন্দর টুথব্রাশ। আর জেল থেকে বের হওয়ার পর, ১৭৮০ সালে সে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে এই টুথব্রাশগুলো বাজারে ছাড়লো। আর মানুষও সেটা এতোই পছন্দ করলো, টুথব্রাশ বিক্রি করেই সে বড়লোক হয়ে গেলো! ৪/ ইংল্যান্ডের ইতিহাসে রানী প্রথম এলিজাবেথের অবদান অপরিসীম। ইংল্যান্ডকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেবার জন্য তিনি স্মরনীয় হয়ে আছেন। তাঁর সময়েই ইংল্যান্ডের কাছে স্পেনের ‘দ্যা ইনভিন্সিবল আর্মাডা’ পরাজিত হয়, ফলে সামরিক ক্ষেত্রেও ইউরোপে ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। অথচ রানী প্রথম এলিজাবেথ ছিলেন অবিবাহিত, ইতিহাসের পাতায় কুমারী রানী হিসেবে সমধিক পরিচিত। কিন্তু কেনো তিনি অবিবাহিত ছিলেন?যে রানী তাঁর রাজত্বের শুরুতে বলেছিলেন, খুব খুশি হবেন যদি তাঁর কবরে লেখা থাকে “ A queen having lived and reigned such and such a time, lived and died a virgin” , শেষ পর্যন্ত তাঁর ইচ্ছাই বাস্তবে পরিণত হলো এবং তিনি ইতিহাসে পরিচিত হয়ে রইলেন The Virgin Queen হিসেবে। ৫/ পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের বেভারেজ ড্রিংক আছে। আমরা কয়টিরই বা নাম জানি। কিন্তু কোকাকোলার নাম শুনেনি এমন লোক হয়ত খুব কমই আছে। সেই ১৮৮৬ সাল থেকে ২০১২ –পৃথিবীর অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু লোগোটি রয়েছে ঠিক আগের মতই। প্রথম দিকে প্রতিদিন ৯ গ্লাস কোকাকোলা বিক্রি হত।২০০ টির বেশি দেশে কোকাকোলার পণ্য এখন বাজারজাত করা হচ্ছে। ( ইন্টারনেট থেকে )
false
rg
বদরনেতা মুজাহিদের ফাঁসি!!! ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় কৃত যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বুধবার দুপুর একটার কিছুক্ষণ আগে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে অপরাধ ট্রাইবুনাল-২ এ রায় দেন। মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতটির মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। দ্বিতীয় ও চতুর্থ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে রাষ্ট্রপক্ষ। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা ও গণহত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন এবং এসব অপরাধে সহযোগিতা, প্ররোচনা, উস্কানি দেওয়াসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৩৪টি ঘটনায় ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি অভিযোগই প্রমাণিত হয়। মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ:মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ: একাত্তরে ইত্তেফাক-এর তত্কালীন কার্যনির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণ ও হত্যা। দ্বিতীয় অভিযোগ: ফরিদপুরের হিন্দু-অধ্যুষিত তিনটি গ্রাম বৈদ্যডাঙ্গি, মাঝিডাঙ্গি ও বালাডাঙ্গিতে হামলা ও অর্ধশতাধিক হিন্দুকে হত্যার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা।তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগ হলো: ফরিদপুরের রথখোলা গ্রামের রণজিত্ নাথ ও গোয়ালচামট খোদাবক্সপুর গ্রামের মো. আবু ইউসুফকে নির্যাতন। পঞ্চম অভিযোগ অনুসারে: একাত্তরের ৩০ আগস্ট মতিউর রহমান নিজামীকে (জামায়াতের বর্তমান আমির) নিয়ে মুজাহিদ ঢাকার নাখালপাড়ার পুরোনো এমপি হোস্টেলে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে যান। সেখানে আটক সুরকার আলতাফ মাহমুদ, বদি, রুমি, জুয়েল, আজাদকে দেখে একজন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে বলেন, রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগে এঁদের মেরে ফেলতে হবে। ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে মুজাহিদ সঙ্গীদের সহযোগিতায় তাঁদের অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করেন। ষষ্ঠ অভিযোগ: মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (বর্তমানে শারীরিক শিক্ষা কলেজ) পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে মুজাহিদ দলীয় নেতাদের নিয়ে বাঙালি নিধনের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করতেন।সপ্তম অভিযোগ:, একাত্তরের ১৩ মে পাকিস্তানি সেনা ও স্থানীয় রাজাকারদের নিয়ে মুজাহিদ ফরিদপুরের হিন্দু-অধ্যুষিত বাকচর গ্রামে হামলা চালান। সেখানে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মুজাহিদের পরিচিতি:মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ গঠনের আদেশে তাঁর পরিচিতিতে বলা হয়, ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার পশ্চিম খাবাসপুর গ্রামে মুজাহিদ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। সেখানেই তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘে (জামায়াতের তত্কালীন ছাত্রসংগঠন) যোগ দেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ওই বছর তিনি ঢাকা জেলা ছাত্রসংঘের সভাপতি এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন। একাত্তরের অক্টোবরে তিনি ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হন। ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জয়লাভ করেননি।
false
rg
চলে গেলেন আফ্রিকান সাহিত্যের কিংবদন্তি চিনুয়া আচেবে।। রেজা ঘটক নেলসন ম্যান্ডেলা জেলখানায় বসে যাঁর উপন্যাস পড়ে সময় পার করতেন, 'গ্র্যান্ডফাদার অব আফ্রিকান ফিকশন' খ্যাত সেই বিখ্যাত নাইজেরিয়ার লেখক চিনুয়া আচেবে আর নেই। ৮২ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের এক হাসপাতালে মারা যান আফ্রিকান সাহিত্যের এই জনক। ১৯৯০ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় শরীরের একপাশ প‌্যারালাইজড হয়ে যাবার পর থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। চিনুয়া আচেবে ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, কবি, সমালোচক এবং আফ্রিকান সাহিত্যের প্রফেসর। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাস 'থিংস ফল অ্যাপার্ট' সারা বিশ্বে তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। সারাবিশ্বে উপন্যাসটি প্রায় ৫০টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং ১ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। আফ্রিকান সাহিত্যে এটি সবচেয়ে বেশি পঠিত কোনো উপন্যাস। নাইজেরিয়ার দক্ষিণপূর্ব ওগিদি শহরের ইগবো নৃগোষ্ঠীতে জন্ম হয় চিনুয়া আচেবে'র।ইয়াম চাষের জন্য ইগবো জনগোষ্ঠী খুব বিখ্যাত। এদের ভাষাও ইগবো। তবে ইগবো জনগোষ্ঠীর শিক্ষিত জনসাধারণ ইংরেজিতে কথা বলে। চিনুয়া আচেবে'র বাবা ইসাইয়াহ ওকাফো আচেবে ও মা জানেট আনাইনেচি ইলোয়েগবুনাম নাইজেরিয়ার প্রটেসট্যান্ট চার্চ মিশন সোসাইটিতে গিয়ে খ্রিষ্টান ধর্মে দিক্ষা নেন। ১৯৩০ সালের ১৬ নভেম্বর ওগিদির ইগবো গ্রামে চিনুয়া আচেবে'র জন্ম। ১৯৩৬ সালে চিনুয়া আচেবে সেন্ট ফিলিপস সেন্টার স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪৪ সালে তিনি ডেনিস মেমোরিয়াল গ্রামার স্কুল থেকে এনট্রান্স পাস করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি কলেজে চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়ার জন্য স্কলারশিপ লাভ করেন। এক বছর চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়ার পর তিনি তা ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে ভর্তি হন ইতিহাস ও প্রযুক্তিবিদ্যায়। ১৯৫৩ সালে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণী লাভ করায় উচ্চতর ডিগ্রি না নিয়ে ওগিদি শহরে ফিরে যান। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের পরামর্শে ওবাতে চিনুয়া আচেবে মারসেন্ট অব লাইট স্কুলে ইংরেজি পড়ানোর শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে এনবিএস (নাইজেরিয়ান ব্রডকাস্টিং সার্ভিস) রেডিও'র চাকরি নিয়ে লাগোস চলে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় তিনি গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম গল্প 'ইন এ ভিলেজ চার্চ'। যা ছিল গ্রামীন নাইজেরিয়ার জীবনপদ্ধতি, খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য আচার নিয়ে একটি সম্পূর্ণ গল্প। ১৯৫৬ সালে তিনি বিবিসি'র সঙ্গে যুক্ত হন। শুরু হয় তাঁর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ। আফ্রিকা এবং পশ্চিমের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করেছিলেন লেখক হিসাবে চিনুয়া আচেবে। আফ্রিকার রাজনীতি ও পশ্চিমাদের চোখে আফ্রিকা যেভাবে চিত্রিত হয় সেসব প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে চিনুয়া আচেবের রচনায়। 'থিংস ফল অ্যাপার্ট' উপন্যাসের জন্য ২০০৭ সালে চিনুয়া আচেবে লাভ করেন বুকার পুরস্কার। 'বায়াফ্রার খ্রিস্টমাস' কবিতার জন্যে তিনি ১৯৮৭ সালে বুকার পরস্কারের জন্য নমিনেশান পেয়েছিলেন। তাঁর বিখ্যাত বইগুলো হল উপন্যাস: 'থিংস ফল অ্যাপার্ট', 'নো লোংগার এট ইজি', 'এরো অব গড', 'এ ম্যান অব দ্য পিপল' ও 'এনথিস অব দ্য সাভান্নাহ'। ছোটগল্প: Marriage Is A Private Affair (1952), Dead Men's Path (1953), The Sacrificial Egg and Other Stories (1953), Civil Peace (1971), Girls at War and Other Stories (including "Vengeful Creditor") (1973), African Short Stories (editor, with C.L. Innes) (1985), Heinemann Book of Contemporary African Short Stories (editor, with C.L. Innes) (1992), The Voter. কবিতা: Beware, Soul-Brother, and Other Poems (1971), Don't let him die: An anthology of memorial poems for Christopher Okigbo (editor, with Dubem Okafor) (1978), Another Africa (1998), Collected Poems Carcanet Press (2005), Refugee Mother And Child, Vultures. সমালোচনা: he Novelist as Teacher (1965) - also in Hopes and Impediments An Image of Africa: Racism in Conrad's "Heart of Darkness" (1975) - also in Hopes and Impediments, Morning Yet on Creation Day (1975), The Trouble With Nigeria (1984), Hopes and Impediments (1988), Home and Exile (2000), Education of a British protected Child (6 October 2009), There Was A Country: A Personal History of Biafra, (11 October 2012 ). শিশুতোষ: Chike and the River (1966), How the Leopard Got His Claws (with John Iroaganachi) (1972), The Flute (1975), The Drum (1978). ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৬১ সালে চিনুয়া আচেবে বিয়ে করেন কৃষ্টি ওকোলিকে। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে এবং ছয় নাতী নাতনী রয়েছে। সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:২৭
false
ij
শ্রীলঙ্কায় তামিল জনগন সম্ভবত একটি গনহত্যার সম্মূখীন হতে যাচ্ছে। রকেট লাঞ্চার কাঁধে লিবারেশন টাইগার্স অভ তামিল ইলম-এর দুজন গেরিলা সদস্য। শ্রীলঙ্কার উত্তারাঞ্চলে মুক্ত ও স্বাধীন তামিলভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তামিলদের জঙ্গি সংগঠনটি। আজ অবধি মুক্ত ও স্বাধীন তামিলভূমি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল না হলেও দীর্ঘদিন ধরে আর্ন্তজাতিক মহলের চোখে স্বন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্ণিত হয়েছে সংগঠনটি এবং সংগঠনটির প্রধান ভেলুপিললাই প্রভাকরণ। লিবারেশন টাইগার্স অভ তামিল ইলম দিনে দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠলেও শ্রীলঙ্কার সরকারি বাহিনীর সাম্প্রতিক অপরেশনে মুখে সংগঠনটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। শ্রীলঙ্কায় তামিলরা ঠিক কোনওভাবেই বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়; তারা প্রতিষ্ঠা চায়-রাষ্ট্র, ভাষা ও সংস্কৃতির। বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে সিংহলীদের সম্পর্ক ভালো। কাজেই এদেশে তামিলমাত্রই জঙ্গি-এমন একটা ভ্রান্ত ধারনা প্রচার পেয়েছে। অবশ্য আমরা অন্য কথা বলব। বলব যে, বিশেষ পরিস্থিতিই মানুষকে জঙ্গি করে তোলে। যেমন, ফিলিস্তিনে হামাস-নেপালে মাওবাদীরা। এবং আমাদের মনে রাখতে হবে যে শ্রীলঙ্কায় তামিল জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বাস করে আসছে-তারা কোনওমতেই দ্বীপটিতে অর্বাচীন কিংবা অনাহূত নয়-ইতিহাসের সাক্ষী তেমনই। বরং, সংখ্যালঘু বলেই তামিলা বরাবরই সংখ্যাগুরু সিংহলীদের চাপ ও আগ্রাসনের মুখে ছিল। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর পরই ১৯৪৮ সালে সিংহলী রাষ্ট্রনায়কেরা তামিলদের ওপর 'সিনহালা' ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার অপচেস্টা করেছিল যেহেতু শ্রীলঙ্কায় প্রায় ৭০ ভাগ লোকই সিনহালা ভাষায় কথা বলে! সংস্কৃতির উপর আক্রমন হলে যা হয়-ফলাফল হয়েছে ভয়াবহ: সত্তরের দশকের মাঝামাঝি ভেলুপিললাই প্রভাকরণ জাতীয়তাবদী তামিল সংগঠন 'লিবারেশন টাইগার্স অভ তামিল ইলম' প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে এই সংগঠনটি ঘিরেই তামিলরা জঙ্গি হয়ে ওঠে এবং সঙ্গত কারণেই শ্রীলঙ্কার তামিল জনগন পৃথক একটি তামিল রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে থাকে। কাজেই তামিলদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা ঠিক নয়। শ্রীলঙ্কায় তামিল টাইগারদের ভূমিকা অনেকটা হামাসের মতন-সিংহলীরা এক্ষেত্রে ইজরেলের নির্মম ভূমিকা নিয়েছে মাত্র। গত কয়েক মাস ধরে দ্বীপটির উত্তরাঞ্চলে তামিল গেরিলাদের ওপর শ্রীলঙ্কার সরকারি বাহিনীর প্রবল আক্রমনের মুখে প্রভাকরণ ও তার সংগঠনটি প্রায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। এরইমধ্যে সেখানে তামিল টাইগারদের বেশ ক'টি ঘাঁটি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। মিডিয়ায় নিয়মিত সেসব সংবাদ এলেও বর্তমানে গাজায় ইজরেলি অমানবিক আক্রমনের ফলে বিশ্ববাসীর চোখ এখন ফিলিস্তিনে। ওদিকে সরকারি বাহিনীর প্রবল আগ্রাসনের পর থেকেই হাজার হাজার তামিল জনগন ঘরবাড়ি ছেড়ে গভীর অরণ্যের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাপক এক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ায় লক্ষ লক্ষ তামিল নারীপুরুষশিশুর জীবন হয়ে পড়েছে সঙ্কটাপন্ন। তামিল গেরিলাদের ওপর সরকারী দলের চূড়ান্ত বিজয়ের পর তামিলঅধ্যুষিত এলাকায় সরকারী সৈন্যরা ব্যাপক গনহত্যা চালায় কিনা- প্রশ্ন এখন এটাই। অবস্থা বিশ্লেষন করে মনে হয়- নতুন ভাবে তামিল টাইগারদের উত্থানের যে কোনওধরনের সম্ভাবনাই সমূলে উপড়ে ফেলার জন্য যা যা করণীয় শ্রীলঙ্কা সরকার তাই করতে যাচ্ছে । দুঃখজনক হলেও সত্যি-সে রকম র্দুভাগ্যজনক সম্ভাবনা মোটেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রথমত: আর্ন্তজাতিক পর্যবেক্ষক মহলের দৃষ্টি এখন ফিলিস্তিনে। দ্বিতীয়ত: আমাদের মনে থাকার কথা-প্রথম মহাযুদ্ধের ডামাডোলের সুযোগেই তরুণ তুর্কিরা আর্মেনিয়দের ওপর ব্যাপক গনহত্যা চালিয়েছিল। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতিও অনেকটা সেরকম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে মনে হয়। শ্রীলঙ্কার তামিলবিদ্বেষী নীতিনির্ধারক মহলটি সম্ভবত এই রকম অভাবনীয় সুযোগটি (!) হাতছাড়া করতে চাইবেন না। গনহত্যার পর শ্রীলঙ্কা সরকার প্রাণহানির বিষয়টি তাদের 'অভ্যন্তরীণ বিষয়' বলে এড়িয়ে যাবে; ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি গনহত্যার সময়ও পশ্চিম পাকিস্থানী শাসকগোষ্ঠী সে রকমই দাবি করে বসেছিল! আসলেই কি শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দ্বীপটির উত্তরাঞ্চল থেকে তামিলদের নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? ইজরেল যেমন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যুর বিনিময়ে হলেও হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাদা ফসফরাস ছিটিয়ে! সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৩৮
false
rg
শাহবাগের প্রজন্ম স্কয়ারে মিডিয়ার আরো দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।। রেজা ঘটক শাহবাগ দিচ্ছে ডাক, যুদ্ধাপরাধী নিপাত যাক। শাহবাগ দিচ্ছে ডাক, জামাত-শিবির নিপাত যাক। একটাই দাবি, সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই। শাহবাগের প্রজন্ম স্কয়ারে নতুন প্রজন্মের আহবানে চলমান আন্দোলনকে বিশেষ বিশেষ মহল বিশেষ বিশেষ কৌশলে অন্যদিকে ঘোরানের আপ্রাণ চেষ্টা করছে। বিগত ৪২ বছর এই চেষ্টা ছিল। রাতারাতি তা বন্ধ হবে না। আগুনবুকের নতুন প্রজন্মের প্রজন্ম চত্বরের দাবানল দেখে তাদের মাথা এখন নষ্ট। তাদের রাতের ঘুম এখন হারাম। তারা নানান ফন্দি ফিকির করছে। শেষ কামড় দেবার চেষ্টা করছে। সাধু সাবধান। শাহবাগের প্রজন্ম স্কয়ারে চলমান আন্দোলন নিয়ে মিডিয়াকে আরেকটু দায়িত্বশীল আচরণ পালন করার জন্যে অনুরোধ করছি। কারো খবরের প্রয়োজন হলে আপনি শাহবাগে ছুটে যান। কিন্তু শাহবাগ থেকে কাউকে মিডিয়ার এসি রুমে টানা হেঁচড়া করবেন না। আপনাদের এই টানা হেঁচরার কারণে মূল আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। একটা বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই। গতকাল এটিএন নিউজ-এর নিউজ আওয়ার এক্সট্রা'র অনুষ্ঠানে দেখলাম মুন্নী সাহা'র সঞ্চালনে রাশেদ খান মেনন আর শাহবাগের অগ্নিকন্যা লাকি আকতার কথা বলছেন। অনুষ্ঠান শেষের দিকে আমার শোনার সুযোগ হয়েছিল। মুন্নী সাহা লাকিকে বলছেন, এখন তো আপনি স্টার, ২০১৩ আপনার জন্যে শুভ ফল বয়ে আনুক ইত্যাদি ইত্যাদি। ঘটনা হল, আন্দোলন স্থল থেকে একজন আন্দোলন কর্মীকে নিউজ রুমে ডেকে আনার পেছনে কোনো কুমতলব নাই তো? লাকি আকতারের এখন টেলিভিশনের টক শোতে কথা বলার সময় নয়। তার শাহবাগে শ্লোগান দেবার সময়। শারীরিকভাবে রেস্ট নেবার জন্যে কিছুটা সময় তিনি বাসায় ঘুমাবেন। এটাই স্বাভাবিক হওয়া উচিত। মুন্নী সাহা ৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে দশটা থেকে শাহবাগে গিয়ে একটা চেষ্টাই করেছেন, সেটি হল আন্দোলনের অগ্রভাগে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের একটু ইন্টারভিউ, তাদের সঙ্গে একটু নয়া খাতির পাতানো, তাদের একটু টক শোতে ডেকে নেওয়া ইত্যাদি। এই উদ্দেশ্যটি সাংবাদিক হিসেবে তিনি করতে পারেন। কিন্তু যখন দেখি সেই উদ্দেশ্যের পেছনে আরো উদ্দেশ্য আছে, ডার্করুমে মূল আন্দোলনকারীদের পুশলিয়ে নেবার প্রবনতা আছে, টকশোতে অ্যা-উ করার খায়েস আছে, তখন একটু সংশয় লাগে। তাছাড়া প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বারবার যেখানে বলছে, এই আন্দোলন সরকারের সাজানো নাটক, এই আন্দোলন সরকার ছিনতাই করার চেষ্টা করছে, এই আন্দোলনের পেছনে বাম রাজনৈতিক দলগুলো একাট্টা, কিন্তু সরাসরি তারা স্বিকার করতে চাইছে না যে, এটা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক গণমানুষের আগুনবুকের দাবানলের জ্বলন্ত উদগিরণ। এই আন্দো্লনে বাইরে থেকে কোনো মহলের কোনো ধরনের শর্ত দেবার সুযোগ নাই। এই আন্দোলন থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের ফসল কুড়ানোরও কোনো সুযোগ নাই। এটা সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবির প্রতিফলন। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে এই সময়ের তারুণ্য। ঠিক সেই মুহূর্তে মুন্নী সাহা নিউজ আওয়ার এক্সট্রার অনুষ্ঠানে লাকি আকতারকে ডেকে নিয়ে রাশেদ খান মেননের সঙ্গে বসানোর পেছনে যদি কোনো কিন্তু না থাকে, তাহলে অনুরোধ করব, এখন থেকে এই ভুলটা যেন মিডিয়ার কেউ করার চেষ্টা না করে। কোনো রাজনৈতিক দলকে পয়েন্ট দেবার সময় এটা নয়। মিডিয়া শাহবাগ থেকে সকল অনুষ্ঠান সরাসরি প্রচার করে একদিকে যেভাবে আন্দোলনকে সহযোগিতা করছে, তাদের সেভাবেই দায়িত্ব পালন করা উচিত। আন্দোলন কর্মীদের বলব, যারা ফাঁক-ফোঁকে টেলিভিশনের টকশোতে চেহারা দেখানোর জন্যে অস্থির, তাদের আন্দোলনে থাকাটা বেশি জরুরি। টকশোতে কথা বলার সময় আপনারা অনেক পাবেন। মানুষের টক শো দেখার সময় নাই। মানুষ এখন শাহবাগে কি হচ্ছে তাই শুনতে চায়। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, মিডিয়ার অনেকেই নানা ধরনের দালালি করেন। তাদের বাড়ি গাড়ি ফ্ল্যাট বিদেশ ভ্রমণের পেছনে কেবল রিপোর্টার পরিচয়ই মুখ্য নয়। একজন সাংবাদিক সারা জীবন শুধু সংবাদপত্রে চাকরি করে বা টেলিভিশনে বাহাদুরী করে যে বেতন পান, তা দিয়ে ঢাকায় বাড়ি গাড়ি হবার কথা নয়। আমাদের অসুস্থ রাজনীতির মত সাংবাদিকদের একটা অংশও সেই অসুস্থ ধারার শর্টকাট পথে জীবনে সফল। দৃর্বৃত্তায়নের এই হুজুগে দেশে দয়া করে কেউ শাহবাগে চলমান প্রজন্ম স্কয়ারের আন্দোলন নিয়ে কারো দালালি করবেন না। দালাল চিনতে এবং দালালের উদ্দেশ্য চিনতে নতুন প্রজন্ম ভুল করে না। ভুল করবে না। মিডিয়াকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। গুছিয়ে কথা বলতে পারে এমন রিপোর্টারকে দিয়ে নিউজ কভার করানো উচিত। অ্যা উ করে, কি বলছে নিজেই জানে না, এমন রিপোর্টারদের শাহবাগে না পাঠানোই উচিত। শাহবাগ এখন গোটা বাংলাদেশ। শাহবাগ এখন সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের হৃদয়ের পূণ্যভূমি। সেই নিউজ কভার করাতে টেলিভিশনের চ্যানেলগুলোর উচিত তাদের তুখোর রিপোর্টারদের পাঠানো। দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর উচিত তাদের অনুসন্ধানী তুখোর রিপোর্টারদের পাঠানো। দেশের সেরা ফটো জার্নালিস্টরাই পারে শাহবাগের সুন্দর কভারেজ ফুটিয়ে তুলতে। রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে শাহবাগের তারুণ্যের দাবানল থেকে একটা শিক্ষা পেয়ে গেছে। অসুস্থ রাজনীতি করে আর আখের গোছানো যে যাবে না সেটা দিবালোকের মত সত্য হতে যাচ্ছে। শাহবাগের আন্দোলনকে অনেকে ইতিহাসের অনেক আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করার চেষ্টা করছেন। প্রথমে বুঝতে হবে এটা একুশ শতক। ঊনবিংশ শতক, বিংশ শতক অনেক আগেই চলে গেছে। একুশ শতকের রাজনীতিতে আধুনিক চিন্তা চেতনা যুক্ত না হলে ইতিহাসের বুলি নিয়ে কেউ ঘরে বসে থাকবে না। সময় বদলায়। চিন্তা চেতনায়ও সেই সুর না বাজলে একটা গ্যাপ থেকে যাবে। সেই গ্যাপ কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে আটকানোর চেষ্টা হবে বুমেরাং। আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। যেখানে কোনো অসুস্থ রাজনীতি থাকবে না। মানুষের অসুস্থ রাজনীতির পেছনে সময় দেবার সময় নাই। রাজনীতি ব্যবসা করে যারা যেভাবে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন তাদের সেই শিক্ষাটা হলে ভালো। নইলে নতুন প্রজন্ম নতুন ইতিহাস লিখবে ফাগুনের আগুনে রাঙা নতুন বসন্তের বাংলাদেশে। মিডিয়া সংবাদের পেছনে ছুটবে, মিডিয়ার পেছনে যেন সংবাদ না ছোটে সেদিকে সবাইকে খুব খেয়াল রাখতে হবে। একাত্তরের মানবতা বিরোধী সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। দাবি একটাই। চলো চলো, শাহবাগ চলো। সবাইকে ফাগুনের আগুন ঝড়ানো দাবানলের শুভেচ্ছা। সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২৩
false
rn
সেরিব্রাল পালসি একটি রোগের নাম শারিরীক প্রতিবন্ধি বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধি এই সমস্যাকেই সেরিব্রাল পালসি বলে। ব্রিটিশ ডাক্তার ড: জন লিটল সর্বপ্রথম এই রোগের আবিস্কার ও নামকরণ করে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত শিশুর শারিরীক এবং বুদ্ধি জনিত দুইটি সমস্যা হতে পারে। যদি আরেকটু সহজ করে বলি- সেরিব্রাল ব্রেন এর আরেক নাম। আর পালসি মানে আংশিক বা পুরো অর্থাৎ সেরিব্রাল পালসি মানে শরীরের অংশ নাড়ানোর ক্ষমতা হারানো ।এই রোগকে সাধারনত ৪ ভাগে ভাগ করা হয়:১. স্পাস্‌টিক ২. অ্যথেটয়েড ৩. অ্যাটাক্‌জিক ৪. মিক্সড্আমাদের মস্তিষ্কের একটি অংশের নাম সেরেব্রাম। যদি শিশু জন্মের আগে, জন্মের সময় বা জন্মের ২ বছরের মধ্যে কোন কারনে মস্তিষ্কের এই অংশটি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে শিশুর শারিরীক বা বুদ্ধি জনিত যে সমস্যা দেখা দেয়, তাকেই সেরেব্রাল পালসি বলে। ফিজিওথেরাপি সেরিব্রাল পালসি রোগীর আন্দোলন এবং মোটর দক্ষতা উন্নতিতে সাহায্যে ব্যবহৃত হয়। সেরিব্রাল পালসি সঠিকভাবে মস্তিষ্কের পেশী আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার এবং আন্দোলন ব্যাধি যেখানে, ফিজিওথেরাপি সেরিব্রাল পালসি রোগীর গতিশীলতা লাভে সাহায্য করে।সেরিব্রাল পালসি এক ধরনের শারীরিক যন্ত্রণা, কোনও রোগ নয়। যাঁরা এর শিকার, তাঁদের অধিকাংশই মানসিক দিক থেকে একেবারে সুস্থ থাকেন, কিন্তু শরীর তাঁদের বশে থাকে না। সেরিব্রাল পালসি কখনও সম্পূর্ণ রূপে ভালো হয় না কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক বেবস্থা নিলে একটি বাচ্চাকে একটি উন্নত জীবনে প্রবেস করানো জায়।আর এর জন্য প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা। যেসব কারণে হতে পারেঃ— গর্ভাবস্থায় মা অপুষ্টিতে ভুগলে, গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্ডিস হলে, গর্ভাবস্থায় মায়ের কিডনিতে বা প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হলে, মা যদি গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করে, জন্মের সময় শিশুটি যদি অক্সিজেনের অভাবে ভোগে, শিশুটির জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে যদি খুব বেশি জন্ডিস হয়, জন্মের সময় শিশুর মাথায় আঘাত পেলে বিশেষ করে ফোরসেপ ডেলিভারির সময়, জন্মের পর শিশুটি যদি মস্তিষ্কের কোনো ইনফেকশনে ভোগে। যেমন—এনকেফালাইটিস, মেনিন্জাইটিস ইত্যাদি। শিশুটি পড়ে গিয়ে বা কিছু দ্বারা মাথায় আঘাত পেলে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে ডেলিভারি করালে।আক্রান্ত শিশুর প্রাথমিক লক্ষণগুলোঃজন্মের পর শিশু কান্না না করলে বা অনেকক্ষণ পর কান্না করলে। জন্মের পর শিশুর খিঁচুনি হলে। শিশুটির শরীরের গঠন বা ভঙ্গিমা অস্বাভাবিক হলে। শিশুটির ব্যবহার অস্বাভাবিক হলে। বিছানায় শোয়াবস্থায় কুঁজো হয়ে থাকলে। হাত-পা শক্ত থাকলে। ঘাড় সোজা করতে না পারলে। শিশুটির বসা বা দাঁড়ানো অবস্থায় ভারসাম্য রাখায় সমস্যা হলে। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হলে। একটি স্বাভাবিক শিশুর মতো যে বয়সে উপুর হওয়া, হামাগুঁড়ি দেয়া, বসতে শেখা, দাঁড়ানো বা হাঁটার কথা; সেটা করতে না পারলে।সঠিক ফিজিওথেরাপির পদ্ধতির মাধ্যমে সেরিব্রাল পালসি রুগী হাটতে শিখছে ও কোন কিছুর সাহায্য ছাড়া দাড়াতে শিখছে এবং শুধু তাই নয় মাংসপেশির দুর্বলতা,ক্ষয় ও গঠন অনেকটা ঠিক হয়ে আসে। কারো কোন সীমাবদ্ধতা থাকলেই তা নিয়ে আলাপ করতেই হবে এটি আরেকটি অদ্ভুত ইচ্ছে, এই ইচ্ছে পরিহার করা উচিত। অথবা অনেকে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিটিকে অযথাই মহিমান্বিত করতে চান, অকারনে আপনি সাহসী, আপনি একজন হার না মানা ব্যাক্তি এসব বলে আর কিছুই নয় শুধু বিড়ম্বনার জন্ম দেন।
false
rn
আমার নীলা আপা নীলা আপা'র সাথে আমার পরিচয় হয় সিলেটের মীরা বাজারে।তখন আমি অনেক ছোট।দশ বছর বয়স।আমার ছোট মামা চা বাগানে কাজ করেন।শীতের শুরুতে মামা'র বাড়ি বেড়াতে যাই।একদিন বিকেলে খেলতে খেলতে পুকুরে পড়ে যাই,আমি সাঁতার জানি না,তখন এই নীলা আপা আমাকে বাঁচান।আপা,কলেজ থেকে বাসায় ফির ছিলেন।তারপর আমি ঢাকায় চলে আসি এবং নীলা আপা'র কথা ভুলে যাই। তার দশ বছর পর আবার আমার নীলা আপা'র সাথে দেখা হয়।মজার ব্যাপার হলো এবারও সিলেটে দেখা হয়।আমি তখন সিলেটের শ্রীমঙ্গলে।আমি একা একটা টিলা ওপর বসে আছি।তখন সন্ধ্যা।হঠাৎ আপা আমার পেছন থেকে ডেকে বললেন এই তুই এইখানে একা বসে আসিছ কেন?জানিস না সন্ধ্যার পর বাগানে সাপ নামে।বিষাক্ত সাপ! আমি আমার নীলা আপা'র জন্য অন্তর থেকে অজানা এক ভুবনের টান অনুভব করি।আপা এখন থাকেন বেলজিয়াম।তার স্বামীর সাথে।ল্যুভেন - লা - ন্যুউভ শহরে।আপা বাচ্চাটার নাম তীর্থ।কিন্তু আমি ডাকি স্পাইডারম্যান।দারুন বুদ্ধিমান একটা বাচ্চা।আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে আপা ঢাকা আসবেন।আপা ঢাকা আসলে অনেক মজা হবে।আমি অপেক্ষায় আছি।আমার আপা'র প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাস।আপা Phd করবেন। "কৃষ্ণা দ্বাদশীর জোছনা যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায়-/ সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়, শ্যামার নরম গান শুনেছিল- একদিন অমরায় গিয়ে ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায় বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।" আমার নীলা আপা দারুন সব কবিতা লিখেন ছোট গল্প লিখেন।এখন জীবনী লিখছেন।স্কুল জীবন থেকে'ই আপা লেখালেখি শুরু করেছেন।একসময় বিভিন্ন পএ পএিকায় আপা'র লেখা চোখে পড়তো।আনন্দ বাজার পএিকাতে ও আপা'র লেখা ছাপা হয়েছে।আর এখন অনেক ওয়েব সাইটে আপা'র লেখা চোখে পড়ে।আপা'র লেখা পড়তে আমার অনেক আনন্দ হয়।লেখা লেখি ছাড়াও আপা গান করেন।বিশেষ করে রবীন্দ্র সংগীত আপা'র গলায় দারুন লাগে।বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আপা গান করেন আবার তরুন কুমার আপা'র লেখা কবিতা আবৃওি করেন।আমাদের তীর্থ (স্পাইডারম্যান)এন্টারপেন সিটিতে বৈশাখী অনুষ্ঠানে গান গায়। আহা...কি আনন্দ !এখন আপা ছোট ছোট বাচ্চাদের গান শিখান নাচ শিখান।আমি খুব বুঝতে পারি যার হৃদয়ে আকাশের সমান ভালোবাসা আছে,শুধু তার দাড়াই এই সব সম্ভব।আমি যখন বলি আমার নীলা আপা,তখন আমার অনেক গর্ব হয়। আপা'র অনেক কথা আমি বুকে ধারন করে বসে আছি।আপা'র কিছু কিছু কথা আমি কোনোদিন ও ভুলতে পারবো না।আমার নীলা আপা সত্য কথা বলতে ভয় পান না।আপা স্পষ্ট বলেন- "কতো মেয়ের ভালোবাসা শুধু সন্দেহ আর অবিশ্বাসের নীচে চাপা পড়ে, ধিক্কার সেই সব প্রেমিক নামের মুখোশধারীদের,ভালোবাসার মানে কি চেহারা দেখে প্রেম করা?" "যাদের ভালোবেসেছি তারা কেউ অনেক ভালোবেসেছে আর কেউ তাচ্ছিল্য দিয়েছে।লাখ টাকার দামী উপহারও ভোলাতে পারে না আমায়, শুধু ভালোবেসে ভালোবাসা দিলে নিজের জীবন কে দান করে দিতেও পিছ পা হই না।ভালোবেসে বিষও যদি দাও,পান করবো অনায়াসে।" "ফেসবুক বন্ধ করে আরো অনেক অপরাধের তৈরী করে ফেললো সরকার।যেসব বখাটে এখানে সময় কাটিয়ে সাইবার অপরাধে সময় কাটাতো,তারা এখন সেই সময়টা কে কাজে লাগেবে টিজিং-এ।আর অনেক প্রতিভাবান লেখক/কবি যাদের কোথাও লেখা হয়ে উঠেনা,তাদের হারাবো আমরা।" "ভালোবাসা চেয়েছিলো নারী,অফুরান আনন্দে গড়িয়ে যেতে চেয়েছিলো নারী,সবুজ ঘাসে ছুটে যেতে চেয়েছিলো, খোলা আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে কালপুরুষ প্রেমে নিমজ্জিত হতে চেয়েছিলো,কিছু পারেনি,কোনো যাদু মন্ত্রেও কিছু হয়নি,ভালোবাসার চেয়ে আর বড়ো কোনো যাদু কি আছে?" "শব্দেরা ক্রমশ খসে পড়ে আকাশের তারার মতো, শুধু আঁচলেই শব্দেরা রইলো না আর... একদিন আমিও আবার কিশোরী হবো,ছুঁয়ে যাবো প্রজাপতি রঙ আহা যদি আবার ফিরে যাওয়া যেতো কুড়ি বছর আগে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক সকল প্রেমিক - প্রেমিকার মনে" "মাইর দিতে ইচ্ছে করে,কারে মারি!যারা যারা মাইর খাইতে চাও, এইখানে লাইন বাইন্ধ্যা খাড়াও,ঘুম থেকে উইঠ্যা দিমু...ঠিক আছে? গেলাম শুইতে..." "এ আমার আনন্দ, আমার প্রেম,আমার স্বর্গ,আমি তিলোত্তমা,আমার এ রূপ পেয়েছি এই স্বর্গীয় কোমল পরীদের থেকে,অনেকদিন পরে জানলাম আমি খারাপ নই,কারণ শিশুরা কখনো ভুল মানুষকে ভালোবাসে না..." নীলা।নীলাঞ্জনা।আমার নীলা আপা।দশ খানা পৃথিবী ভরা মানুষকে দিলে ও আপা'র ভালোবাসা ফুরাবে না।আমি আকাশের দিকে তাকালেই দেখতে পাই আপা দু'হাত বাড়িয়ে আছেন আমাদের দিকে।আপা আমরা তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আপা,তোমার প্রতি যে আমার কতো ভালোবাসা তা তুমি কোনোদিনও জানবে না।আমার আপা'র জন্য এক আকাশ শুভ কামনা।আমার আপা ভালো থাকুক।ভালো থাকুক আমার আপা'র সমস্ত প্রিয় মানুষেরা। ('জিয়ে জিয়ে নিন জিয়ান সেং ঝু নিন সুন লি।'আপা তুমি তো অনেক দিন জাপান ছিলে বলতো কি লিখেছি?হা হা হা...) সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৪
false
fe
ব্লগের কবিতা _ প্রবাহ ঝলকের নির্বাচিত সতেরো _৩য় পর্ব ব্লগের কবিতা : প্রবাহ ঝলকের নির্বাচিত সতেরো / ১ম পর্ব Click This Link ----------------------------------------------------------------------------- ব্লগের কবিতা : প্রবাহ ঝলকের নির্বাচিত সতেরো / ২য় পর্ব Click This Link ------------------------------------------------------------------------------ কবিতার পাঠক কারা ? এ প্রশ্ন টি করেন মার্কিন কবি জেমস টেট।উত্তর ও দেন তিনি। বলেন, যারা মনে কবিতাকে লালন করেন। আর যারা কবি। কবিতাকে ধারণের একটা উৎকৃষ্ট মাঠ হচ্ছে লিটল ম্যাগ। বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় দৈনিকগুলোর সাথে সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশিত হয় না। তাহলে কবিরা কোথায় কবিতা লিখেন ? লিখেন এইসব সাহিত্য ম্যাগে। যাকে আমরা ছোটকাগজ কিংবা লিটল ম্যাগ বলি। দ্যা পোয়েট্রি এর কথা অনেকেই জানেন। বের হয় শিকাগো থেকে। আমেরিকান পোয়েট্রি রিভিউ বের হয় ফিলাডেলফিয়া অংগরাজ্য থেকে। তাছাড়া আটলান্টা রিভিউ , প্যারিস রিভিউ এর মতো পুষ্ট সাহিত্যম্যাগগুলোই ধারণ করছে বিশ্বসাহিত্য। কবিতা । কবিতাকথা। বাংলাদেশে লিটলম্যাগের যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে , তা বিশ্বসাহিত্যের মাঠে উল্লেখ করার মতো বিষয়। হোক না তা বাংলা ভাষায়। সৈয়দ আফসার একজন লিটলম্যাগ সম্পাদক। তার সম্পাদনায় ''অর্কিড'' প্রশংসা কুড়িয়েছে বোদ্ধা মহলে। তার কবিতা আমি প্রথম পড়েছি সেই ছোট কাগজেই। ব্লগেও তিনি লিখছেন নিয়মিত। সৈয়দ আফসার এর কবিতা দাঁড়িয়েছে তার নিজস্বতা নিয়ে। পড়া যাক তার কিছু পংক্তি। ওই পথের রঙ ছুঁব কি ছুঁব না ভাবতে ভাবতে উড়ে গেল পদতল-মাটি আর জলভেজা বালির কথা তবুও বাঁধা পড়তে হলো শুকনো জল আর পিঁপড়ের নিকট এসে অথচ জলপতনের আগে আমাদের ডুবে যাবার কথা ছিলো ঝোপজঙ্গলের পাশে, আর ওই পথ ছুঁব না বলেই তখনও আমরা খুঁজেছি বহুবর্ণ পথের ডাঁটা;তোমার কথা শুনে লতা পাতার মতো বোবা হতে থাকি স্বর্ণলতা গাছের মর্মরে...শুনেছি এখনও অতিযত্ন করে গুনে রাখো নীরবতা যেন পত্রলিপিতে কেঁপে ওঠে স্মৃতিপথটুকু... (পথলিপি / সৈয়দ আফসার ) বহুবর্ণ পথের ডাঁটা খুঁজে হারিয়ে যাবার কথা ছিল কবির! কাঁপানো স্মৃতির মতোই বেঁচে থাকতে চান কবি , প্রিয়সীর হাত ধরে।কিংবা মাটির হাতে রেখে হাত। আমি মুগ্ধ হয়ে পড়ি সেই সৈয়দ আফসার এর কবিতা। যিনি অন্য একজন কবির মাত্র একটা কবিতার বুননচিত্র আঁকতে গিয়ে লিখে ফেলতে পারেন একটা পরিশুদ্ধ প্রবন্ধ। তা লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সুরমা য় ছাপা হয়। আর আমি পড়ি নিউইয়র্কে বসে। হাঁ , তা একজন প্রকৃত কবিই পারেন। তার মনন ধীরে বয়ে যায় , কবিতায়। ৫ উৎসের আলোড়ন খুঁজে কবি বার বার সমর্পিত হন প্রকৃতির কাছে।তার সকল আয়োজন, নীলিমার আত্মজীবনকে মানুষের কাছে নিয়ে আসে। মানুষ মিলিয়ে দেখে কি এক অভিনব চেতনায় বেঁচে আছে কবিতা। আর সগৌরবে তা কিভাবে ধারণ করছেন কবি। কবিতায় সমকালকে চিহ্নায়নের বিষয়টিকে আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। কারণ আজ থেকে শত বছর পর , একজন পাঠক তার পূর্বসূরি কবির জবানিতেই জানবেন ,এই সময়কে। প্রবর রিপন তার কাবিতায় এভাবেই লিখে যান নিজেকে। শহরের সবচেয়ে অনিরাপদ তালাটির মত ঝুলে আছি, খুলে যাবো কি? সমুদ্রের দিকে মুখ করা যে দরজা এখন আটকানো ;সেইদিকে? সিংহের হা করা বিশাল মুখ শিকারের বিতৃষ্ণায় এখন চোয়ালে আটকে আছে কেশরের নিস্পৃহতায় তালার হৃদয়ে মরিচা তালা কড়া নাড়ছে সেই ঘরের দরজায় নাগরিকদের শ্যাওলা ধরা, ঘামে ঘামে মরিচাপড়া হাড়ের গন্ধে যে ঘরে একদিন ঢুকে পড়ে আর বেরতে পারেনি উজ্জ্বল সূর্য, হীরন্ময় চাঁদ আর তারাদের কিশোরবেলা। এই তালা তাদের প্রেমিকাদের নিহত আত্মার সুরে দোলে এই তালা প্রেমিকার অতৃপ্ত রতিতে ধাতব। তালা কি অন্ধকারের ইতিহাস না- পেছনে অজস্র আকাশ ফেলে রেখে। সামনের আকাশে পাখির নিঃসঙ্গতার ভবিষ্যৎ ??? অনিরাপদ তালাটির মত ঝুলে আছি বাতাসে নড়ে উঠি আর গোপন দীর্ঘশ্বাস হাওয়ার প্রশয়ে তালা দরজায় করছে Knock সেই ঘরের দরজায় যে ঘরে এক মৃত তালা বানিয়ের নিথর চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে কর্পূর যার নিঃসাড় চোখের কোটর থেকে বেরিয়ে আসছে এক কান্নার শীতল নদী যে নদীতে ভেসে গেছে আশ্চর্য চাবি যে নদিতে তাদেরও আগে মাছ শিকারে নেমে পড়েছে এক গেয়োঁ,নির্বোধ,অসভ্য,আদিম কিশোর যার করতলে শেষবারের মত দেখা গিয়েছিল পৃথিবীর আকাশ আর এখন যে আকাশের নিচে পৃথিবী সে আকাশ আর আকাশ নয় এক ভয়ঙ্কর চাবিহীন নীল-শুন্য তালা। (কড়া নাড়ছে তালা/ প্রবর রিপন) এই কবিতাটিই বলে দিচ্ছে অনেক প্রশ্নের জবাব। এই নিখুঁত চিত্রনকে কিভাবে অস্বীকার করবে মানবইতিহাস ? ৬ একবার এক কবির কাছে জানতে চেয়েছিলাম , তিনি ব্লগে ছদ্মনামে লিখেন কেন ? তিনি বলেছিলেন, স্বনামে লিখতে সংকোচবোধ করি তো তাই। কেন এই সংকোচ ? আত্মবিশ্বাসের অভাব ? না একজন কবির তো সে অভাব থাকার কথা নয়। অবশ্য এটা ঠিক নিকনামে লিখলে , অনেক অপ্রিয় সত্য লেখা যায়। নিজেকে দূরে দাঁড়িয়ে পরখ করা যায়। কবিতায় নিজেকে পরখ করছেন এমন একজন কবির ছদ্মনাম একলব্যের পুনর্জন্ম । তার কবিতায় একটি অন্তর্লীন মমতা লক্ষ্য করি গভীরতার সাথে।যে বিরহ কবিকে লালন করে , সে ই তো পরমেশ্বের । দেখুন সেরকম কিছু পংক্তিমালার অংশবিশেষ । আঙ্গুল থেকে ঝড় তুলে নিতে নিতে সেদিন - বুঝে উঠতে পারিনি কোন্‌ হাত দুটি আমার , তার আগেই ভীড় থেকে ছিটকে পড়েছি যোজন দূরত্বে ; পথ আমাকে নেয়নি , আমার ঘর-ও ছিলো না । মুহূর্ত থেকে মুহূর্ত - আমার কেবল শূন্যতার জরায়ুতে জন্মের অপেক্ষা আলিঙ্গন কেবল সেই এক জন্মান্ধ ভিখিরিকে যে বারবার হত্যা করতে গিয়ে নিহত হয়ে ফিরে আসে - মৃত্যুও এ হেঁয়ালি ভীষণ কেবল তাদের জন্য- ( পথ যাকে গ্রহন করেনি / একলব্যের পুনর্জন্ম ) আমার মনে হয় শূন্যতার জরায়ুতে জন্মের অপেক্ষা এই বিশ্বালোকই করেছে প্রথম। আমরা , মানুষেরা - তার সন্তান বলেই সেই অপেক্ষাকে আজীবনই উপেক্ষা করতে পারি না। ব্লগে লেখার বিশেষ সুবিধাটি হচ্ছে, তা তাৎক্ষণিক আন্তর্জালের কল্যানে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেয়া যায়। যারা এখানে লিখেন, তাদের অনেকেই হাত পাকিয়েছেন লিটল ম্যাগে লিখে। সেই মাঠের আরেকজন শক্তিশালী কবি নৃপ অনুপ। এই কবির আগুনলতা সিরিজটি যতোই পড়েছি, আমি তন্ময় হয়েছি বারবার। কি এক উদ্যম আর সাহস নিয়ে এগিয়ে গেছেন কবি। আহা! এই কথাগুলো যদি আমি বলতে পারতাম ! যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে কাঁদতে নেই, বরং প্রস্তুত হও। যে আগুন জড়িয়ে ধরেছে তোমার আঁচলের আঙিনায়- সে স্ফুলিঙ্গ- আত্মার গহীনে নিয়ে চাষ করো, দ্রোহের মন্ত্র... দেখো তবে; যুদ্ধময়দানে পড়বে না তোমার চোখ থেকে জল। কেননা তোমার কান্না- আমারো অন্তরে কান্না ঝরায়, তখন আমার হাতে রাইফেল সঙ্গে আছো তুমি, কি করবো আমি? যে ভাবেই হোক ভাঙ্গতে হবে খাঁচা, উড়াতে হবে পাখি... হাত রেখে হাতে- ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে তুলে অগ্নিময় চোখ, একবার বলে ওঠো স্বশব্দে, এই চোখে সত্য বলার আছে সৎসাহস... ডাস্টবিনে আর কতখানি জমে থাকে বলো, ময়লা- আবর্জনা! মানুষের ভেতর এর-চেয়ে ডাস্ট, দেখলাম এসে যুদ্ধময়দানে- প্রহসন কাকে বলে! তৃতীয় হাতের ছোঁয়ায় সারা মানচিত্র কাঁদে... কিন্তু এখন ফেরার কোন উপায় নেই, পিছনে দেয়াল অবরুদ্ধ; তাই সময় এসেছে সময়কে ধরো; প্রস্তুত হও- আরো প্রস্তুত... (আগুনলতা - ৯ম পাঠ / নৃপ অনুপ ) মানুষের একটা গন্তব্য আছে। হতে পারে তা প্রেম - বৈভব কিংবা মৃত্যু। মানুষের এই হাত পাতা, তাই আমার কাছে মনে হয় অমরতার স্পর্শ পাবার প্রত্যয়। যদি নৃপ অনুপ এর ভাষায় বলি - ''স্বপ্নের ভিতরে পেতে রাখি হাত তবু এই পৃথিবীর দিকে '' । .....................( ক্রমশ : ) ছবি - আ্যলন টেইলর জেফরিস সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:০৬
false
fe
চিহ্নিত ঘাতকচক্র ও মর্যাদা রক্ষায় সতর্কতা চিহ্নিত ঘাতকচক্র ও মর্যাদা রক্ষায় সতর্কতা ফকির ইলিয়াস ----------------------------------------------- সংবাদটি ছোট। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানি আরও একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার করছে। তার নাম-জন ডেমজানজুক। ( উপরের ছবির এই ব্যক্তিটি ) বয়স ৮৯ বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই নাৎসীবাদী যুদ্ধাপরাধী পালিয়ে যু্ক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যে একজন অটো মেকানিক হিসেবে কাজ করেন দীর্ঘদিন। তার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক থেকে হঠাৎ ধরা পড়ে যায়, তিনি একজন নাৎসিবাদী। যুক্তরাষ্ট্র তাকে ডিপোর্ট করে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর। ইউক্রেনে জন্মগ্রহণকারী এই জার্মান নাগরিক এখন হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। জার্মান আদালত বলেছেন, তার বিচারের রায় হলে পনেরো বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে। বিশ্বে নাৎসিবাদের বিচার এখনও অব্যাহত রয়েছে। এটা মানবতার জন্য, মানবজাতির জন্য স্বস্তির সংবাদ। অপরাধী যত বয়সী হোক না কেন, যতই পালিয়ে থাকুক না কেন তার শাস্তি হওয়া দরকার। বিশ্ব সভ্যতা সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের জাতির জনক হত্যার ঘাতকদের বিষয়ে নানা সংবাদ ছাপা হচ্ছে পত্রপত্রিকায়। মিডিয়ায় প্রতিদিনই আসছে শিরোনাম। বাংলাদেশ সরকারও এদের ধরতে তৎপর। নূর চৌধুরীর পাসপোর্ট জব্দ করেছে কানাডাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। এই নূর চৌধুরীই বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করেছিল। এই ঘাতককে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ার জন্য বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ কানাডা সফর করে গেছেন। তিনি দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবেই এগিয়ে চলেছে। এদিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, পনেরো আগস্টের আরেকজন ঘাতক রাশেদ চৌধুরী নাকি যুক্তরাষ্ট্রে আত্মগোপন করে আছে। অন্যতম ঘাতক মেজর ডালিম ইংল্যান্ডের কোথাও রয়েছে, তার কাছে ব্রিটিশ পাসপোর্ট আছে, সে কানাডা আমেরিকায় যাতায়াত করছে, এমন অনেক সংবাদ প্রতিদিন বের হচ্ছে মিডিয়ায়। বাংলাদেশ সরকারও বিভিন্ন সতর্কতা অবলম্বন করে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা। এখানে একটি কথা খুবই স্পষ্ট হওয়া দরকার, আর তা হচ্ছে বাংলাদেশ-বাঙালি জাতি সব ঘাতকদের বিষয়েই সোচ্চার। এই প্রজন্ম চাইছে সব অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। এদের বিচার হোক। তারপরও মাঝে মধ্যে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ আমাদের শঙ্কিত করে তোলো। এর একটি উদাহরণ দিতে চাই। কেউ কেউ রটাচ্ছে, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নাকি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচানোর জন্য তৎপর রয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, নাৎসিবাদী যারা ধরা পড়ে, সেসব যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কি দাঁড়ায় এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল? না, তারা দাঁড়ায় না। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিউইয়র্কস্থ এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জেনেছি, তারা কখনই কোন যুদ্ধাপরাধী, দাগি খুনির পক্ষে কোন বিবৃতি দেন না। যারা জাতির জনককে হত্যা করেছে, যারা একাত্তরে নরহত্যা করেছে, এরা তো চিহ্নিত খুনি। তারপরও আমরা অবাক হয়ে দেখছি একটি চিহ্নিত মহল এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমেছে। এদের বিষয়ে সবাইকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এরা সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে অত্যন্তই পারঙ্গম। দুই একটি আহ্বান অনেকেরই নজরে পড়েছে। আহ্বানটি জানিয়েছেন, একাত্তরের আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী। তিনি সবাইকে 'যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস পালন'-এর আহ্বান জানিয়েছেন। এই 'যথাযোগ্য মর্যাদা'টি কি? ঘাতকচক্রের ভাষায় 'যথাযোগ্য মর্যাদা' হচ্ছে পাক তমদ্দুন রক্ষা করে বাঙালি জাতিসত্তাকে ভূলুণ্ঠিত করা। যে কাজটি এই ঘাকতচক্র বাংলাদেশে নানাভাবেই করে এসেছে। এখনও করছে। ভোল পাল্টে এই আলবদর চক্র এখন নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে মারাত্মকভাবে। এরা বুঝাতে চাইছে, তারা সব সময়ই বিজয়ের পক্ষে ছিল। মিথ্যাবাদী আর কাকে বলে! এই কথাটি অনেকেই জানেন, 'রাজাকার সব সময়ই রাজাকার কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সব সময় মুক্তিযোদ্ধা নয়।' একটি উদাহরণ দেয়া যায় এর স্বপক্ষে। বিএনপির এক বর্তমান নেতা, খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠভাজন, সাবেক রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিজের সঙ্গে করে নিয়ে লিবিয়া পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন। সংবাদটি নতুন করে আবার মিডিয়ায় আসছে। শমসের মবিন চৌধুরী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি গণমানুষের মুক্তির স্বপক্ষে থাকতে পারেন নি। হাত মিলিয়েছিলেন ঘাতকদের সঙ্গে। বিএনপি তো সেই কুচক্রী ঘাতকদের হত্যাযজ্ঞেরই ফসল। যারা এই প্রজন্মের কাছেও চিহ্নিত ঘাতক চক্র হয়েই থেকে যাচ্ছে। থেকে যাবে অনেক প্রজন্ম পর্যন্ত। যেমনটি এখনও ঘৃণার পাত্র হয়ে আছে নাৎসিরা। আমাদের বিজয়ের ৩৮ বছর পূর্তি হয়ে যাচ্ছে। এখনও আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে প্রকৃত মর্যাদা রক্ষার জন্য। আমাদের খেয়াল রাখতে হচ্ছে কখন হায়েনারা আঘাত হানতে পারে। এটা পরিতাপের বিষয় এই চিহ্নিত ঘাতকচক্র এখন আমাদের সমাজেরই অংশ। তারা জেঁকে বসেছে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায়। এখনও জাতীয়ভাবে এগিয়ে যেতে এরাই আমাদের রাষ্ট্রে প্রধান এবং অন্যতম বাধা। কারণ যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাসী, মৌলবাদী জঙ্গিদের উসকে দেয়, তারা তো কখনওই কল্যাণের ধারক হতে পারে না। এসব ধূর্তদের কাছ থেকে সরিয়ে রাখতে হবে এই প্রজন্মকে। আর এই প্রচেষ্টা হোক সম্মিলিত। নিউইয়র্ক-২ ডিসেম্বর ২০০৯ ---------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ৪ ডিসেম্বর ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:১০
false
ij
শুভ জন্মদিন_ বন্দে আলী মিয়া। কবি ও সাহিত্যিক বন্দে আলী মিয়া। আজ আমি যাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম তিনি আজ প্রায় বিস্মৃত। অথচ আমরা আমাদের ছেলেবেলায় এঁর নাম প্রচুর শুনেছি। এঁর একটা লেখা আমাদের পাঠ্যও ছিল। আজ আর বন্দে আলী মিয়ার নাম তেমন শুনি না। কেন? অথচ ইনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। ছবিও আঁকতেন বন্দে আলী মিয়া। বন্দে আলী মিয়ার জন্ম পাবনায়। ১৯০৬ সালে। আজকের এই দিনে। আপনারা কি পাবনার রাধানগর গ্রামের নাম শুনেছেন? সেই রাধানগর গ্রামেই বন্দে আলী মিয়ার জন্ম। যেমন হয়- বালক বন্দের ছেলেবেলায় পড়াশোনা শুরু হয়েছিল গ্রামেরই কোন এক স্কুলে। ছবি আঁকত বন্দে। সে রকম প্রতিভাক্ষমতা বালক বন্দের ছিল। অনুমান করি কাঠকয়লা কি চকখড়ি দিয়ে ছবি আঁকত বন্দে। বাড়ির লোকজন, পাড়া প্রতিবেশীরা তো সে ছবি দেখে অবাক। কী সুন্দর। মুরুব্বীরা হয়তো গলা খাখারি দিয়ে বলতেন-এসব কী। মুসলমানের ছেলে! ছবি আঁকাকে জ্বীনের আছর বলত কিনা এই প্রশ্ন। যাক। রুপকথার গল্প শুনতে ভীষন ভালোবাসত বালক বন্দে। যে কারণে বড় হয়ে শিশুদের জন্য রচনা করেছিলেন শিশুসাহিত্য। চোর জামাই (১৯২৭), মেঘকুমারী (১৯৩২) ... ২ সেই সময়কার পাবনার একটি স্কুলের নাম মজুমদার একাডেমী। সেই স্কুল থেকেই ১৯২৩ সালে এন্ট্রান্স পাস করল কিশোর বন্দে। পাস তো করলাম। এখন কী করা? ছবি আঁকা নিয়ে বহুদূর যেতে ইচ্ছে করে আমার। কিন্তু ... রক্ষণশীল পরিবার? আমাকে বলে জ্বীনে ধরিছে। সে রকম কি কোনও সংঘাতের মুখোমুখি হতে হয়েছিল কিশোর বন্দেকে? বলতে পারি না। খালি বলতে পারি এ বিষয়টা উঠে আসতে পারে কেবলমাত্র বন্দে আলী মিয়াকে নিয়ে আমাদের সময়ের কোনও লেখকের লিখিত কোনও উপন্যাসে। জীবনীকারের প্রাবন্ধিক ফর্মালিটি পরিত্যাজ্য হোক। এই একুশ শতকে-যখন আমরা বুঝে নিতে চাই ১৯১৫ সালে পূর্ববাংলার কোনও প্রত্যন্ত গ্রামে ছবি আাঁকার প্রতিভাক্ষমতাকে কি চোখে দেখা হত? ৩ যা হোক। ছবি আঁকার বিদ্যা শেখার অদম্য আগ্রহ নিয়ে কিশোর বন্দে যাত্রা করল কোলকাতা। নগরটি তখনও আর ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী না হলেও কোলকাতা নগরীটি তখনও শিক্ষাসংস্কৃতির অপ্রতিরোধ্য পীঠস্থান। জ্ঞানমন্দির। ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমী সেই জ্ঞানমন্দিরের অন্যতম। (জয়নুল কি এখানেই পড়েছিলেন? পটুয়া কামরুল হাসান?) যাক। ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমীতে ছবি আঁকা শিখতে লাগল কিশোর বন্দে। পাস করে বেরুল যথাসময়ে। এখন কি করা? শিল্পীদের জন্য কি কি জীবিকার ব্যবস্থা জগতে রয়েছে। এই সব ভাবনা তরুণ বন্দেকে কি পেয়ে বসে নাই? ৪ তখন কোলকাতা থেকে "ইসলাম দর্শন" নামে একটি পত্রিকা বেরুত। সে পত্রিকায় সাংবাদিকতার কাজ নিল তরুণ শিল্পীটি। ক'টাকাই বা মায়না? তাতে কি সংসার চলে? মেসের খরচ। রংতুলির দাম বাড়ছে। তার ওপর পাবনা থেকে চিঠি আসছে। অতিসত্ত্বর সামান্য হইলেও অর্থকড়ি পাঠাইও মিয়া। কাজে কাজেই ব্লক কোম্পানির (!) ডিজাইনার হল তরুন বন্দে। সেই সঙ্গে নানাবিধ প্রকাশনী সংস্থার বইয়ের প্রচ্ছদও আঁকা শুরু করল। ভিতরকার ছবিও। (এসব ব্লক-প্রচ্ছদ আজ কোথায়? এসব ব্লক-প্রচ্ছদ কি আমাদের জাতীয় সম্পদ কি নয়? আর্কাইভে থাকলে ভালো। না থাকলে ভবিষ্যৎ জেনারেশন প্রশ্নবিদ্ধ করবে আমাদের।) যাক। কেন যেন "ইসলাম দর্শন" পত্রিকার কাজটা সইল না। ছেড়ে দিল। আসলে বন্দের ছিল কবি মন। যে মনটি গড়েছিল পাবনার রাধানগর গ্রামের নিবিড় নির্জন সৌন্দর্য। পাঠদান ভালো লাগত। ভালো লাগত শিশুদের সংসর্গ। শিক্ষকতার কাজ খুঁজল। পেয়েও গেল। তখনকার দিনে কোলকাতা কর্পোরেশনের স্কুল ছিল। তাতেই যোগ দিল। ওই স্কুলেই ছিলেন ১৯৩০ থেকে ৫০ সাল অব্দি। বলা যায়, লেখালেখি যা করেছেন ঐসময়টাতেই। লিখেছেন কবিতা উপন্যাস নাটক জীবনী শিশুসাহিত্য। কাব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ময়নামতীর চর (১৯৩০),অনুরাগ (১৯৩২) অবশ্য পদ্মানদীর চর১৯৫৩ সালে লেখা। উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: বসন্ত জাগ্রত দ্বারে (১৯৩১); শেষ লগ্ন (১৯৪১) নাটক। মসনদ। রচনাকাল, ১৯৩১। শিশুসাহিত্য। আগেই বলেছি, চোর জামাই ১৯২৭;মেঘকুমারী ১৯৩২। জীবনীও লিখেছেন বন্দে আলী মিয়া। কামাল আতাতুর্ক, শরৎচন্দ্র এবং ছোটদের নজরুল। তাঁর হৃদয়টা যেন আমরা এখন বুঝতে পারছি। ৫ কোলকাতা কর্পোরেশেনের স্কুলে চাকরিরত সময়েই ভারতীয় ইতিহাসের সবচে তাৎপর্যময় ঘটনাটি ঘটল। দেশ বিভাগ। নাঃ, আর কোলকাতায় পড়ে রইলেন না বন্দে আলী মিয়া। চলে এলেন পূর্বপাকিস্থান। এখন কি তাঁর হৃদয়টি আরও খোলসা হল আমাদের কাছে? এবং বন্দে আলী মিয়া ততদিনে হয়ে উঠেছিলেন খ্যাতিমান সাহিত্যিক। পূর্ব পাকিস্থান বেতারকেন্দ্রে কাজ নিলেন। প্রথমে ঢাকায় ও পরে রাজশাহীতে। এই মাত্র বললাম-বন্দে আলী মিয়া ততদিনে হয়ে উঠেছিলেন খ্যাতিমান লেখক। বাঙালি তাঁর মেধার সম্মান করল। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেলেন ১৯৬২। মৃত্যু, ১৯৭৯ সালের ১৭ জুন । রাজশাহীতে। ৬ বন্দে আলী মিয়ার জন্ম, আগেই বলেছি ডিসেম্বর ১৫, ১৯০৬। আজ ডিসেম্বর ১৫। আজ বন্দে আলী মিয়ার জন্ম দিন। শুভ জন্মদিন কবি। এই বিস্মৃতিপ্রবণ ডিজিটাল যুগ থেকে। ছেলেবেলায় ওঁর কী যেন পড়েছিলাম-এখন আর মনে করতে পারছি না। এই বিষন্নতা। ছবি আঁকতেন বন্দে আলী মিয়া। কোলকাতার ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমীতে পড়াশোনা করেছিলেন। তাঁর আঁকা ছবি সম্বন্ধে কারও কাছে কি কোনও তথ্য আছে? ছবি: বাংলাপিডিয়ার সৌজন্যে। তথ্য:মাহবুবুল হক লিখিত বাংলাপিডিয়ার একটি নিবন্ধ। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৫
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৪৭ ১. কাসেল শহরে প্রচুর অগ্নিকান্ড হয়। অন্তত, অগ্নিকান্ডের রিপোর্ট আসে প্রচুর। রোজই তীব্রস্বরে সাইরেন বাজিয়ে ফয়ারভেয়ার বা দমকলবাহিনী ছুটে যায় বিভিন্ন প্রান্তে। কাসেল শহর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের অন্যতম আস্তানা ছিলো, এখন যেখানে আমার বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানেই ছিলো নাৎসি বাহিনীর অস্ত্র তৈরির কারখানা। চিমনিটা এখনো রয়ে গেছে, সেটাকে সযত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছে, তবে চিমনির ওপরে সেলুলার ফোনের বেজ স্টেশন বসানো হয়েছে। মিত্রবাহিনী কাসেল শহরটা মোটামুটি চূর্ণ করে দিয়েছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, তাই এর বেশির ভাগটাই আবার নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। পুরনো শহরাংশ নর্ডষ্টাট (উত্তর শহর)-এ কিছু পুরনো ঢঙের বাড়ি টিকে আছে, যেগুলোতে আগুন লাগার সম্ভাবনা বেশি, সেখান থেকেই রিপোর্ট আসে বেশি। দমকলকেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছেই, তাই প্রায় প্রত্যেকদিনই তাদের সশব্দ অভিযান কানে বাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন, যেটাকে আমরা কাভে-দ্রাই বলি, সেখানে বড় ল্যাবরেটরিগুলো স্বাভাবিকভাবেই হয় নিচতলায় বা মাটির নিচে, সেখান থেকে মাঝে মাঝে ফায়ার অ্যালার্ম চলে যায় দমকলের কাছে, আমাদের তখন রয়েসয়ে ভবন ছেড়ে বাইরে গিয়ে জমা হতে হয়। এদের তড়িৎগতি দেখার মতো, পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভবনের যে অংশ থেকে অ্যালার্ম এসেছে, সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে পজিশন নেয় দমকলযোদ্ধারা। দুয়েকবার সঠিক আগুনের খবর এসেছে, বেশিরভাগ সময়ই অন্য কোন ভুলে অ্যালার্ম বেজে ওঠে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়কে জরিমানা গুণতে হয় সাতশো ইউরো। আমি যে পাড়ায় থাকি, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের না হলেও পুরনো, যাকে বলা হয় আল্টবাউ। সেখানে হিটিং সিস্টেমের ধরনও পুরনো, যার ফলে আগুন লাগার সম্ভাবনা আরেকটু বেশি নতুন বাড়িগুলোর থেকে। আমি ঘরে বসেও তাই সাইরেনের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাই না, হপ্তায় অন্তত তিনদিন শুনতেই হয়। জার্মানিতে শক্তি খরচ পদ্ধতিকে আরো দক্ষ করে তোলার জন্যে এখন বাড়ি নির্মাণের সময় বেশ কিছু নতুন গাইডলাইন ধরিয়ে দেয়া হয়। বর্গমিটার পিছু বছরে শক্তি খরচ কমিয়ে প্রায় তিনভাগের এক ভাগে নিয়ে আসা সম্ভব, যদি বাড়িঘরের ইনসুলেশন নতুন গবেষণালব্ধ নকশা অনুসরণ করে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে। ২. রান্নাবান্না করতে ভালো লাগে না বেশিরভাগ সময়ই। সসেজ-রুটি, ফ্রিকাডেলে-রুটি কিংবা পিৎজার ওপর দিয়ে চালিয়ে দিই, নিতান্ত দেশি খাবার খেতে ইচ্ছা করলে হের চৌধুরীর সাথে কোয়ালিশনে রান্না করি। উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, গরুর মাংস। আমার বাসায় ডিপ ফ্রিজ নেই বলে গরুর মাংস একবারে কিনে হপ্তা ধরে সংরক্ষণ করতে পারি না, তাই চৌধুরীর বাড়িই ভরসা। পুরনো ঢাকার জনৈক মামার সাগরেদি করে হের চৌধুরী গরুর মাংসে বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন, তাই তাঁকে কিছু কাটাকুটি করে এগিয়ে দিলে তিনি দয়াপরবশ হয়ে সেই বেলার খাবারটা তাঁর ওখানেই সেরে যেতে বলেন। তবে যখন চৌধুরী ব্যস্ত থাকেন, কিংবা আমারই ব্যস্ততার কারণে বাড়ি ছেড়ে বেরোনো সমস্যা হয়ে যায়, তখন নিজেকেই রেঁধে খেতে হয়। আমি কোন রান্নার বই সাথে নিয়ে আসিনি, বিপদে পড়ে দেশে ফোন করেও রেসিপি জেনে নিইনা, অনলাইনেও রান্নার কোন বাতেনি কৌশল খুঁজি না। আমি আবিষ্কারের চেষ্টায় থাকি। বেশিরভাগ সময়ই অখাদ্য হয় সেগুলি, তবে ফাঁকতালে কিছু কিছু জিনিস জিভে বেশ ইতিবাচক হিট করে। উদাহরণ দিই, খিচুড়ি হয়ে ওঠার মিনিট দশেক আগে তাতে পালং শাকের কুচি বা বল ছেড়ে দিয়ে একটা ঘুঁটা মারতে পারলে জিনিসটার রং একটু সবজে মেরে আসে, আর দারুণ একটা স্বাদ হয়। এক্ষেত্রে খিচুড়িকে ভুনা হলে চলবে না, কিঞ্চিৎ ল্যাটকা হতে হবে, আর মুগ-মসুর দুই পদের ডাল মিলিয়ে রান্না হতে হবে। তবে কেউ যদি ডিসকভারি চ্যানেলে গরিলার গু কখনো দেখে থাকেন, তাঁর খেতে একটু অভক্তি লাগতে পারে। একদিনের পুরনো মসুরের ডালকে আরেকটু পানি দিয়ে একেবারে গলিয়ে মারুন। তারপর সয়া সস আর কুচো চিংড়ি দিয়ে ভাজুন। তারপর সেটা ন্যুডলসের সাথে আরেকদফা ভাজুন। একেবারেই অন্য কিসিমের স্বাদ হবে, খেয়ে ভালোই লাগার কথা। পরিমাণ আপনাকে আন্দাজ খাটিয়ে দিতে হবে আর কি। আজ রান্না করলাম মুরগি-মটর। আমি নিশ্চিত, এ নতুন করেই চাকা আবিষ্কার। পেঁয়াজ, গাজর, ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচের ফালি হাঁড়িতে চড়ান, তার ওপর মাখন দিন কিছু, তারপর জিরা দিন সামান্য। মাখন গলার পর ঘুঁটা মেরে চলুন। তারপর যোগ করুন রসুন। তেজপাতা এলাচ দারচিনি গোলমরিচ লবঙ্গ দিয়ে দিন। ঘাঁটুন, ভাজুন কিছুক্ষণ। তারপর হলুদ-মরিচ-ধনিয়া ঢালুন। ঘুঁটা মেরেই চলুন। তারপর মুরগির বুকের মাংসের ফিলে [Fillet] কুচি কুচি করে দিন সেখানে, সাথে কিছু আদাকুচি। আবারও ঘুঁটা মারুন। তারপর যোগ করুন মটরশুঁটি, পরিমাণ আন্দাজমতো। তারপর আবারও ঘুঁটৌষধি প্রয়োগ করুন যতক্ষণ জোশ বজায় থাকে। তারপর আন্দাজমতো পরিমাণ লবণ ছড়িয়ে দিয়ে তাদের গলে জল হবার সুযোগ দিন। পেঁয়াজের পরিমাণের ওপর নির্ভর করবে ঝোলের পরিমাণ। সেদ্ধ হয়ে যাবার পর গরম গরম ভাতের সাথে খাবেন নাকি রুটি দিয়ে খাবেন সেটা আপনার ব্যাপার। ৩. নানা গ্যাঞ্জামের পর একটু ঝিমানোর ফুরসত পেয়ে সেদিন দেখলাম ফ্র্যাকচার। দুর্দান্ত লেগেছে। অ্যান্থনি হপকিন্স সেই সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বস এর ছোঁয়াচ কাটিয়ে উঠছেন না কিছুতেই। ঘাগু বদমায়েশ চরিত্রে তাঁর সমকক্ষ অভিনেতা আছেনও কম। বহু আগে দেখেছিলাম রোড টু ওয়েলভিল, রীতিমতো অশ্লীল কমেডি, সেটা খুঁজলাম নেটে, কিন্তু পেলাম না।
false
mk
জামাত শিবির ভয়ঙ্কর, এদের পিতারা রাজাকার!!! জামায়াত-শিবির আবারও ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী সপ্তাহে এক দিন অর্থাত্ সোমবার সচিবালয়ে আসেন। গত পরশু প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে প্রবেশের পাঁচ মিনিট পরই জামায়াত-শিবির হামলা চালিয়েছে। সচিবালয়ের সামনে অর্থমন্ত্রীর প্রটোকলের গাড়িতে হামলা চালানো হয়। এতে মন্ত্রীর এক দেহরক্ষী গুরুতর আহত হন। জামায়াত-শিবির কর্মীরা সচিবালয়ের সামনে তিন সচিবের তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি ও ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভের নামে জামায়াত-শিবির সোমবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস তত্পরতা চালিয়েছে। সকাল ১০টার দিকে প্রায় একযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, জয়পুরহাট, সুনামগঞ্জসহ দেশের অনেক স্থানে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নামে। তারা বেপরোয়া গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জামায়াত ও শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের গুলি বিনিময় হয়েছে। রাজধানীতে ব্যাপক ভাঙচুরের কবলে পড়েছে দুই শতাধিক গাড়ি। আহত হয়েছেন ২১ পুলিশ সদস্য। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিএনপির দুই নেতাসহ জামায়াতের বেশ ক’জন শীর্ষ নেতার বিচার চলছে। বিএনপি এই বিচারের সরাসরি বিরোধিতা না করলেও জামায়াত মাঠে নেমেছে কোমর বেঁধে। ইতোমধ্যে জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়েছে। জামায়াতের অন্য দুই নেতার বিচারের রায় যেকোনো দিন ঘোষিত হতে পারে। অন্যদের বিচারও যথাযথভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। দলীয় নেতাদের বিচার প্রক্রিয়া যত এগোচ্ছে, জামায়াত-শিবির ততই মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত ৬ নভেম্বর থেকে দফায় দফায় সারাদেশে চোরাগোপ্তা হামলা শুরু করে জামায়াত-শিবির। এদের প্রধান টার্গেট পুলিশ সদস্য। ঢাকার কারওয়ান বাজারে আইনমন্ত্রীর গাড়িবহরে আক্রমণ থেকে শুরু করে পুলিশ সদস্যদের বেধড়ক পেটানো, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরসহ নানা তাণ্ডব তারা করেছে। জামায়াত-শিবির এতটাই অমানবিক, বেপরোয়া, পশুবত্ যে, এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার পর তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারতে উদ্যত হয়েছিল। জামায়াত-শিবিরের কী চরিত্র তা দেশের মানুষ দীর্ঘদিন থেকেই দেখে আসছে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের এরাই ছিল মূল হোতা। হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধে এ দলটি সিদ্ধহস্ত। একাত্তরে এরাই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করেছে। সময় পাল্টালেও এই দলটির চরিত্র যে পাল্টায়নি তা সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে আবারও প্রমাণিত হচ্ছে। গত সোমবারের তাণ্ডবের ধরন দেখে বোঝা যায়, পূর্বপরিকল্পিতভাবেই তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে একযোগে আক্রমণ চালিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা ঠেকাতে জামায়াত-শিবির মরিয়া হয়ে উঠেছে। সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় তারা। দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর হলেও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে। এই বিচারটি বহু আগেই হওয়া উচিত ছিল। দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, একাত্তরের অপরাধীদের বিচারটি যত দ্রুত হবে ততই মঙ্গল। চলমান এই বিচার কাজটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। আইনগতভাবেই এর মোকাবেলা করতে হবে। জামায়াত-শিবির আন্দোলনের নামে যা করছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল এবং কঠোর অবস্থান নিতে হবে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা ব্যর্থতার যে অভিযোগ অর্থমন্ত্রী করেছেন তা সত্য হলে দেশবাসীর উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ থাকবে। আমরা চাই, যে-নামেই আবির্ভূত হোক না কেন, সন্ত্রাসীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০৭
false
mk
লংমার্চ প্রত্যাহার করুন ॥ সচেতন হক্কানী আলেম সমাজ রাজধানীর উদ্দেশে হেফাজতে ইসলামের ডাকা ৬ এপ্রিলের লংমার্চ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১০১ জন বিশিষ্ট আলেম।মঙ্গলবার বিকেলে সচেতন হক্কানী আলেম সমাজের আহ্বায়ক আলহাজ মাওলানা জহিরুল ইসলাম মিঞার সই করা বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।এতে বলা হয়, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি যে, একদল স্বার্থান্বেষী লোক পবিত্র ধর্ম ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্রকারী চক্রান্তের যাঁতাকলে দেশ, জাতি ও জনগণ নিষ্পেষিত। বিরোধী দলের কাঁধে ভর করে এসব স্বার্থান্ধ চিহ্নিত অপশক্তি দেশবিরোধী চক্র গণতান্ত্রিক কর্মসূচীর নামে তাদের আসল চেহারা তুলে ধরেছে। এমনকি দেশের বরেণ্য ওলামা মাশায়েখদের ভুল বুঝিয়ে অথবা প্রলোভনের জালে ফেলে ইসলাম হেফাজতের নামে মাঠে নামিয়েছে। ওলামা মাশায়েখদের শান্তিপূর্ণ লংমার্চ কর্মসূচীকে ঘিরে এই অপশক্তি চক্রান্ত করছে যে মওদুদী মতবাদবিরোধী এসব বরেণ্য হক্কানী আলেমদের হত্যাসহ ব্যাপক নাশকতা চালাবে। ইতোমধ্যে হেফাজতে ইসলামের ভেতর জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। যার কারণে দেশের সচেতন হক্কানী আলেম সমাজ উদ্বেগ প্রকাশ করছে।’বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তাই আমরা ওলামা মাশায়েখদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা রেখে এবং ইসলাম রক্ষার গুরুত্ব অন্তরে পোষণ করে আহ্বান করছি, চিহ্নিত এই অপশক্তি যেন তাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করতে না পারে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকার ইতোমধ্যে নাস্তিক ব্লগারদের তালিকা চূড়ান্ত করে গ্রেফতার আরম্ভ করেছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী নাস্তিকদের বিচারের সম্মুখীন করতে আইন সংশোধন করেছে। এজন্য আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাই। আমরা আরও লক্ষ্য করেছি যে, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে অনেক নাস্তিক ব্লগার গা-ঢাকা দিয়েছে।’‘হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের আহ্বান, তাঁরা যেন তাঁদের লংমার্চ কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নেন। আমরা জানি, হেফাজতে ইসলামের সভাপতি শ্রদ্ধাভাজন মুরব্বি বর্ষীয়ান আলেম আল্লামা আহমদ শফী এবং লংমার্চের অন্যতম সঞ্চালক মুফতী ইজহার ও আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরি, ঢাকার আহ্বায়ক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীসহ বরেণ্য আলেমরা ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন এবং সুপরামর্শ দিয়েছেন। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ ও জনগণের কথা বিবেচনা করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু সামাধান করাই যৌক্তিক।’বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন- আলহাজ মাওলানা জহিরুল ইসলাম মিঞা (মুস্তাকিম হুজুর), মুফতি মুহাম্মদ শহীদউল্লাহ, শাইফুল হাদীস মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান, হাফেজ মাওলানা আব্দুস সাত্তার, আলহাজ মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, খতিব আম্বরশাহ শাহী জামে মসজিদ, মুফতি মাসুম বিল্লাহ, মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা আব্দুস সামাদ, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা আবু সুফিয়ান, সৈয়দ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন, মুফতি ওবায়দুর রহমান, মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা আতাউর রহমান, আলহাজ মাওলানা আব্দুল জব্বার, মুফতি রেজাউল হক আব্দুল্লাহ, মাওলানা আব্দুস সুবহান, মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ ওজিউল্লাহ, মাওলানা আব্দুল কবির খান, মাওলানা মশিউর রহমান, মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা জাকারিয়া, মুফতি আবুল হাসান, মাওলানা আব্দুল গফুর দিনাজপুরী, মুফতি ফারুক আহম্মেদ, মুফতি আব্দুল্লাহ, মাওলানা আব্দুল গফুর, মুফতি ওয়াজেদ আলী, মাওলানা আব্দুল খায়ের, মুফতি বেলাল উদ্দিন শরীয়তপুরী, মাওলানা মাসুদ আহম্মেদ, মাওলানা আব্দুস শুকুর আহম্মেদ, মাওলানা তাওহীদ আহম্মেদ, মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, মাওলানা রুহুল আমিন, মাওলানা আলামিন, মাওলানা শাকিল আহম্মেদ, মাওলানা শরীফুল ইসলাম, মাওলানা খসরু মিঞা, মাওলানা মোজাম্মেল হক, মাওলানা আব্দুল আজিজ, মাওলানা আব্দুল বারেক, মাওলানা এনায়েত হোসেন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেনসহ ১০১ জন বিশিষ্ট আলেম।
false
rg
অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি!!! আজ বইমেলায় যেতে একটু দেরী হয়েছে। একটু জ্বর জ্বর ভাব ছিল। ওষুধ খেয়ে বইমেলায় ঢুকেছিলাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকে দেখলাম কবি আসাদ মান্নান বক্তৃতা করছেন! কবি কী নিয়ে কথা বলছেন শুনতে এগিয়ে গেলাম। পরে আসাদ ভাই স্টেজের বক্তৃতা পর্বের কাজ সেরে আমার সঙ্গে যোগ দিলেন। কারো হয়তো বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের ব্যাপার ছিল। কে যেন এসে জোর করে আমাদের মিষ্টি খাওয়ালো। পরে আসাদ ভাই আর আমি এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে বিদ্যাপ্রকাশের স্টলে গেলাম। আসাদ ভাই আমার বসনিয়া যুদ্ধ নিয়ে ঐতিহাসিক উপন্যাস 'বসনা' কিনলেন। পরে আমরা আবারো এলোমেলো ঘুরতে লাগলাম। একসময় আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি জোর করেই আমাদের স্টলের ভেতরে বসালেন। গণি ভাই'র পাল্লায় পড়লে আমার বইমেলা মাটি হবে, তাই আসাদ ভাইকে রেখে আমি ভেগে গেলাম। লিটল ম্যাগ চত্বরে এসে দেখলাম শুনশান নিরবতা। কোথায় গেল আমাদের কবি-লেখকদের গং? কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানকে ফোন দিলাম। নোমান বললেন, উপরে আসেন। উপরে গিয়ে আমি ডক্টর সরকার আমিনের রুমে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। আমিন ভাই আমার 'বসনা' উপন্যাস কেনার জন্য আমাকেই টাকা ধরিয়ে দিলেন। ছোট ভাই বন্ধু হিসেবে মহান দায়িত্ব বলে কথা। পরে নোমানকে নিয়ে নিচে আসলাম। নোমানের তখন বাংলা একাডেমি স্টলে দায়িত্ব ছিল। নোমান স্টলে রয়ে গেলেন। আমি আবার এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গেলাম। আমার প্রকাশকদের কার কোথায় স্টল এখনো জানি না। বইমেলায় এখন পর্যন্ত স্টল চেনার কোনো উপায় বাংলঅ একাডেমি সাইন দিয়ে কোথাও বোর্ডে দেয়নি। অথচ বইমেলার ১২ দিন চলে যাচ্ছে। আমিও এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে দেখা হলো তরুণ কবি রাব্বী আহমেদের সাথে। রাব্বী এবার বাংলাদেশ টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠানে কিছু একটা কারবারি করছে। রাব্বী বলল, রেজা ভাই আজকের অনুষ্ঠানে আপনি কথা বলেন! পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠানের জন্য মেলায় ঘোরাঘুরিটাই কিছু সময়ের জন্য মাটি হয়ে গেল।সন্ধ্যায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে 'বইমেলা লাইভ অনুষ্ঠানে' কথা বলেছি আমার সদ্য প্রকাশিত বই নিয়ে। বসনিয়া যুদ্ধ নিয়ে ঐতিহাসিক উপন্যাস 'বসনা' (প্রকাশ করেছে বিদ্যাপ্রকাশ), মহান কিউবান বিপ্লবী কমরেড ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে নিয়ে 'ফিদেল দ্য গ্রেট কমরেড' (প্রকাশ করেছে শ্রাবণ প্রকাশনী, আমার ষষ্ঠ গল্প সংকলন 'গল্পেশ্বরী' (প্রকাশ করছে সব্যসাচী) ও আমার বেস্ট সেলার বই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবনী 'মুজিব দ্য গ্রেট' (প্রকাশ করেছে ত্রয়ী প্রকাশনী) নিয়েই মূলত আজ কথা বলেছি!যদিও 'মুজিব দ্য গ্রেট' ২০১৫ সালের বই, ২০১৬ সালে এটি পরিবর্তিত সংস্করণ প্রকাশ পায়। কিন্তু বইটি এখন পর্যন্ত বেস্ট সেলার তালিকায় আছে। তাই বইটি নিয়ে এক মিনিট কথা বলেছি। পরে রাব্বী'র খপ্পর থেকে ছুটে আমিন ভাই'র জন্য বিদ্যাপ্রকাশ থেকে আমার উপন্যাস 'বসনা' কিনতে গিয়ে পেলাম মোহিত ভাইকে। মোহিত ভাই (মনোবিজ্ঞানী লেখক মোহিত কামাল) বিদ্যাপ্রকাশের স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাকি আমার 'বসনা'র ব্যাপক মার্কেটিং করেছেন। মোহিত ভাই হয়তো নিজের জরিমানা অনাদায়ের দায় মেটাচ্ছিলেন। কিন্তু মোহিত ভাই'র জরিমানা মাফ হবে কিনা এটা তো আমাদের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে ঠিক হবে! বিদ্যাপ্রকাশে অল্প সময়ের জন্য পেয়েছিলাম কিশোর-সাহিত্যিক ও অনুকাব্যিক দন্ত্যস্য রওশন ভাইকে। বিদ্যাপ্রকাশের প্রকাশক মজিবর রহমান খোকা ভাইকে খুব মিস করলাম! বিদ্যাপ্রকাশ থেকে ছুটে গেলাম শ্রাবণ প্রকাশনীতে। বন্ধু প্রকাশক রবীন আহসান আমাকে মাইর দেওয়ার জন্য সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে ছিল। ভাগ্যিস বিপ্লবী লেখক ইফতেখার আহমেদ বাবুদা, বিপ্লবী আকরামুল হক ভাই, কবি নীল সাধুদা আর সাদিয়া নাসরিন সেখানে ছিলেন। ফলে রবীন কেবল বকাঝকা কইরা চুপ মাইরা গেছে! তারপর 'ফিদেল' ভক্তদের কয়েকটা অটোগ্রাফ দিয়ে সাধুদা'র সঙ্গে আবার পগার পার হয়ে লিটল ম্যাগ কর্নারে আসলাম। আজ ছিল কথাসাহিত্যিক ও মুক্তিযোদ্ধা মহান ঋষি এস্তেবানের একশো আটতম জন্মদিন। কিন্তু শাফি বলল ঋষিদার নাকি একুশতম জন্মদিন। ঋষিদার সঙ্গে বুক মিলিয়ে আমি ফরহাদ নাইয়াকে নিয়ে একাডেমিতে সরকার আমিন ভাইকে বই দিতে গেলাম। আমিন ভাই নিজ হাতে আমাদের কফি বানিয়ে খাওয়ালেন। আহ, সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার জন্য আমিন ভাই'র বানানো কফিতে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। তারপর আবারো স্বকৃত নোমানের পাল্লায় পড়ে নিচে আসলাম। তারপর লিটল ম্যাগ চত্বরে কিছুক্ষণ আড্ডা মারলাম। আজকের আড্ডায় মধ্যমণি ছিলেন মহান ঋষি এস্তেবান, দ্রষ্টব্য ও করাতকল সম্পাদক কামরুল হুদা পথিক, মেঘফুল সম্পাদক ও কবি নীল সাধু, কবি শাফি সমুদ্র, কবি অহো নওরোজ প্রমুখ। বইমেলায় আমাদের আড্ডা যখন জমে উঠল ততক্ষণে ছুটির ঘণ্টা বেজে গেল। মেলা থেকে বের হবার পথে দেখা হল তরুণ কথাসাহিত্যিক খালিদ মারুফের সাথে। এ বছর তরুণ কথাসাহিত্যিক মারুফ রসুলের ৬ষ্ঠ উপন্যাস 'কাঁচা দুধের গন্ধ' ও তরুণ কথাসাহিত্যিক খালিদ মারুফের প্রথম উপন্যাস 'বুনোকুলির রক্তবীজ' বই দুটি'র দিকে আমার বিশেষ নজরদারি রয়েছে। দুই মারুফের অটোগ্রাফসহ বই কিনতে চাই। এছাড়া কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের 'শেষ জাহাজের আদমেরা' আমার বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে। বইমেলা থেকে বের হবার পথে দেখা হলো কবি-সাংবাদিক রওশন ঝুনু আপার সাথে। এরপর তরুণ কবি ও সম্পাদক লাকি অ্যান্ড গং ও কথাসাহিত্যিক সেলিম মোরশেদ ভাই'র সাথে কুশল বিনিময়। তারপর ক্যাম্পাসে হাকিম চত্বরে ঋষিদা অ্যান্ড গংয়ের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা। বাসে যখন বাসায় রওনা দিয়েছে পথে হঠাৎ চাষার পুত কবি ও নির্মাতা মাসুদ পথিকের ফোন। ফোন ধরিয়ে দিলেন গুণদাকে। কবি নির্মলেন্দু গুণ মাসুদের হাতিরপুলের মোকামে বসে আড্ডা মারছেন। আমার যাবার ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও শরীরে জ্বরের উতাল-পাতাল ঢেউ আমাকে বাসায় নিয়ে গেল। গুণদা সকালে যাবেন নেত্রকোণা কাশবন স্কুল ও নির্মলেন্দু গুণ কালাচারাল সেন্টার ভিজিট করতে। আমারও যাবার কথা! দেখা যাক সকাল হোক, তারপর শরীর কী বলে! অমর একুশে বইমেলায় এবার কবি-লেখকদের উপস্থিতির একটা আকাল নজরে পড়লো। একাডেমির লিটল ম্যাগ চত্বরে একটা মাত্র বসার বেঞ্চি আজ বসিয়েছে কর্তৃপক্ষ। লিটল ম্যাগ চত্বরে এখনো আড্ডা জমে ওঠেনি। একাডেমির নজরুল মঞ্চ থেকে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে সৌন্দর্যের ছিটেফোটাও নজরে পড়েনি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লেখকদের বসার কোনো জায়গাও নজরে পড়েনি। এবার বইমেলায় বাংলা একাডেমি'র কী আয়-রোজগার কমে গেল নাকি? দোয়েল চত্বর ও টিএসসি থেকে বইমেলায় যাবার প্রধান দুই প্রবেশ পথে দায়সারা গোছের রুগ্ন সাজসজ্বা আর নজরুল মঞ্চকে পরিত্যক্ত করায় বইমেলার প্রাণ যেন হারিয়ে গেছে। অনেক কবি-সাহিত্যিকদের ফোন করেও বইমেলায় আনা যায়নি। তারা ঘোষণা দিয়ে বইমেলা এড়িয়ে চলছে। আমি প্রথম ১০ দিন বইমেলায় না থাকায় ব্যাপারটা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না। আজকে পর্যন্ত বইমেলায় নতুন বই এসেছে ১৪১৬টি। আর আজকে বইমেলায় নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে ৯৬টি। বন্ধুরা, অমর একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। বাংলা একাডেমি জুজুর ভয়ে এই মেলাকে একেবারে তলানিতে ঠেকিয়েছে। আমরা যদি বইমেলায় না আসি তাহলে সেই জুজুর ভয় আরো সংক্রামিত হয়ে একসময়ে এই মেলাটি বন্ধ হবার উপক্রম হবে। আমরা নিজেরা গোস্যা না করে বইমেলাকে উজ্জীবিত করার প্রয়াস নেব, এই হোক আজকের ব্রত। বই কিনুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। অমর একুশে বইমেলা অমর রহে। জয়তু প্রাণের বইমেলা!.............................১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪২
false
rg
বিগত ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশে এক আশ্চার্য গণতন্ত্র খেলা চলছে!!! তোমাদের কারো মুখেই গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। নব্বই পর্যন্ত যদি বাংলাদেশের গণতন্ত্রে উত্তরণের পূর্বাবস্থা ধরি, তাহলে ১৯৯০ সালে থেকে ২০১৪ পর্যন্ত এই ২৫ বছর বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে যে সন্ত্রাসবাদ, জোরজবরদস্তি, দুর্নীতি, খুন, গুম, লুটপাট, জ্বালাও, পোড়াও, হরতাল, অবরোধ, মিটিং-মিছিল, জনসভা করা হয়েছে, এর সবকিছুই করেছে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হিসেবে অথবা ক্ষমতাকে ধরে রাখার বাসনা হিসেবে। মূলত এই ২৫ বছরে গোটা বাংলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর দুবৃত্তায়নকেই কেবল পাকাপোক্ত করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এই ২৫ বছর যা যা করেছে, যা যা করছে এর কোনোটাকেই গণতন্ত্রের ভাষা বলা যায় না। একে এক কথায় বলা যায় ক্ষমতার মাস্তানি অথবা ক্ষমতায় যাবার মাস্তানি। একপক্ষ ক্ষমতা পাকাপাকি করতে চায়। আরেক পক্ষ ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হয়ে পুনরায় ক্ষমতায় যাবার রাস্তা তৈরি করে। বাংলাদেশের নিরিহ অশিক্ষিত কুশিক্ষিত কুসংস্কারচ্ছন্ন সাধারণ মানুষকে আমাদের দুবৃত্তায়নে ভরপুর রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের নামে এক ভুল ব্যাখ্যা চাপিয়ে দিয়ে মুখে গণতন্ত্রের ফেণা তুলে কেবল নিজেদের আখের গুছিয়েছে। এই ২৫ বছরে দেশে দুর্নীতি স্থায়ী আকার লাভ করেছে। এই ২৫ বছরে দেশে দুবৃত্তায়ন শক্তিশালী হয়েছে। এই ২৫ বছরে দেশে চাঁদাবাজি বেড়েছে, টেন্ডারবাজি বেড়েছে, ছিনতাই বেড়েছে, লুটপাট বেড়েছে, সরকারি অর্থের অপচয় বেড়েছে, সরকারি সম্পত্তির ভোগ দখল বেড়েছে, রাষ্ট্রীয় যন্ত্রগুলোকে ধ্বংসের চূড়ান্ত দোরগোড়ায় নিয়ে গেছে আমাদের মুখে ফেণা তোলা রাজনৈতিক দলগুলো। এসব কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষকেই কেবল জিম্মি করেছে। জনগণ এটা চায়, জনগণ ওটা চায়, এসব বলে বলে জোর করে জনগণের নামে নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়ার একটা প্রচলন পাকাপাকি হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সিন্ডিকেটের শক্তিশালী দুবৃত্তায়ন। পরিবহণ সিন্ডিকেট, বাজার সিন্ডিকেট, ঘাট সিন্ডিকেট, মাঠ সিন্ডিকেট, সংস্কৃতি সিন্ডিকেট, রাজনৈতিক সিন্ডিকেট, ছাত্র সিন্ডিকেট, যুব সিন্ডিকেট, ব্ল্যাকমানি সিন্ডিকেট, চোরাচালান সিন্ডিকেট, সম্পদ পাচার সিন্ডিকেট, সেকেন্ড হোম সিন্ডিকেট, টু-পাইস সিন্ডিকেট, কমিশন সিন্ডিকেট, ৫% সিন্ডিকেট, ১০% সিন্ডিকেট, ভিভিআইপি সিন্ডিকেট, ভিআইপি সিন্ডিকেট, সিআইপি সিন্ডিকেট, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, মার্কেট সিন্ডিকেট, অ্যাসোসিয়েশন সিন্ডিকেট, সমিতি সিন্ডিকেট, হাজার হাজার দুবৃত্ত সিন্ডিকেট মূলত বাংলাদেশকে নিজেদের ইচ্ছেমত খাবি খুবলে খাচ্ছে। আর এই চক্র মুখে ফেণা তুলছে, গণতন্ত্র-গণতন্ত্র-গণতন্ত্র!!! দেশ গণতন্ত্রের জোয়ারে ভাসছে। এই ২৫ বছরে এসব দুবৃত্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিলুপ্ত হয়েছে বিবেকবোধ। মানুষের মানবিক বিচার বিবেচনার যে বোধ, সেই বোধ বা বিবেক সম্পূর্ণরূপে হারিয়েছে বাংলাদেশের এসব সিন্ডিকেট থেকে। জনগণের জন্য তাদের এসব অবৈধ আবদার যতই অত্যাচার-নির্যাতনমূলক হোক না কেন, তাতে এদের কোনো বিকার নেই। উল্টো এরা সবাইকে মিথ্যা বুঝিয়ে এই সত্য প্রচার করতে চাইছে যে, এরা যা করেছে, যা করছে সবই গণতন্ত্রের স্বার্থে! আহা মরি মরি!! গণতন্ত্রের বুঝদারগণ, দয়া করে আপনাদের এসব ভেলকিবাজি ধোকাবাজি বন্ধ করুন। আপনাদের মুখোশটা এখন সারা দেশের মানুষের কাছে দিবালোকের মত সুস্পষ্ট। এই ২৫ বছরে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি আস্থা হারিয়েছে রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের উপর। নির্বাচনের আগে এরা দলীয় নমিনেশান নিয়ে চাঁদাবাজি করে। যে চাঁদা বেশি দেয়, সে-ই এদের দলীয় নমিনেশান পায়। সে যত বড় দুবৃত্ত হোক না কেন, তার দেওয়া চাঁদার অংকই এখানে বিরাট ফ্যাক্টর। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট নিঃসংশতায় হত্যা বা খুনের বিচার হয়নি। মানে রাজনৈতিক দলগুলো এই ২৫ বছরে দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যত হত্যাকাণ্ড করেছে, সেই সকল হত্যাকে তারা বৈধ করে ফেলেছে। যে যত বেশি হত্যা করতে পারছে, সে তত বড় নেতা বা নেত্রী। যে যত বড় কুকর্ম করতে পারছে, সে তত বড় হিরো। রাষ্ট্রীয়ভাবে এখানে এক লুটপাটের অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছে। তাই ক্ষমতা থেকে কেউ একবার ক্ষমতার বাইরে গেলেই পুনরায় ক্ষতায় আসার জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠে। তখন এদের যে কোনো অন্যায্য দাবিকেও এরা রাজনৈতিক অধিকারের নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে। এই ২৫ বছরে এরা দেশের আইন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের ন্যূনতম ভরসাও তৈরি করতে পারেনি। বরং আইনকে দলীয় সুবিধাভোগের একটি মর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে করা হয়েছে ক্ষতাসীন দলের প্রাইভেট থিয়েটার। এই ২৫ বছরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো দেশের পুলিশের মত আচরণ করেছে। আইনকে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করেছে। বিচার মানেনি। আইনকে তোয়াক্কা করেনি। কেবল ক্ষমতাকে পুঁজি করে এরা এক প‌্যারালাল পুলিশি ক্ষমতা ভোগ করেছে। এসব সম্মিলিত ধারাবাহিক দুবৃত্তায়নের হাত ধরেই বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের এক অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয়েছে। এখন বাংলাদেশের এক ইঞ্চি ভূমিতেও সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। এই ২৫ বছরে দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে। পাশাপাশি দুবৃত্তরা তাদের নিজেদের নিরাপত্তাকে এই সময়ে অনেক বেশি শক্তিশালী করেছে। সবাই এখানে একটি গন্তব্যকেই কেবল মুখ্য হিসেবে নিয়েছে। যে করেই হোক পুঁজি বানাও। টাকা বানাও। গণতন্ত্রের নামে বাংলাদেশে চলছে টাকা বানানোর এক আজব ধারাবাহিক নাটক। এই নাটকের প্রধান কলাকুশলী আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। পুঁজিকে এরা সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে ধ্যান করেছে। তাই দুবৃত্তায়নের সকল ক্ষেত্রে এই পুঁজির চলাচলকেই এরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় দুবৃত্তায়নের ফলে রাষ্ট্রের কাছে মানুষের জীবনের স্বাভাবিক যে পাওনাগুলো যেমন ন্যায়বিচার, মানবিক মূল্যবোধ, নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার, শিক্ষা, মানবাধিকার ও শান্তি, এই জিনিসগুলোই কেবল দিন দিন বিলুপ্ত হয়েছে, হচ্ছে। বিপরীতে সকল সেক্টরে এসব দুবৃত্তায়ন আরো হাজারগুণ শক্তিশালী হয়েছে। গণতন্ত্রের নামে এরা এই দুবৃত্তায়নকে জোর করে জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছে, দিচ্ছে। আজ আমরা উন্নয়নের নামে যেসব চিত্র দেখি, তার প্রতিটি সেক্টরেই এই দুবৃত্তায়ন মৌমাছির বাসার মত জট পাকিয়েছে। পাশাপাশি এই সময়ে ধর্মীয় অনুভূতিকে প্রবলভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষের সেন্টিমেন্ট নিয়ে তামাশা করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। এখন আর সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ বা বিএনপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে মনে করে না। মনে করে দেশের সবচেয়ে বড় দুই দুবৃত্ত। যাদের কাছে দেশের মানুষ একপ্রকার জিম্মি। এরা রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে যা ঠিক করবে, সেই ব্যবস্থাকেই দেশের মানুষকে নিয়তি হিসেবে ভোগ করতে হবে। এ যেন এক মহা তামাশার রাজ্যে চলছে তামাশার বলৎকার। রাজা যায় রাজা আসে মাগার তামাশা বন্ধ হয় না। বরং নতুন নতুন তামাশা দেখে দেখে দেশের মানুষ এখন অনেকটা গিনিপিক হয়ে গেছে। উপায় নেই গোলাম হোসেন। তাই বিরক্ত হয়ে মানুষ কয় বছর পরপর এক দলকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাচ্ছে বা বিপক্ষ দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা থেকে নামাচ্ছে। এ যেন এক মহা সিরিয়াল। মাগার আকাম কুকাম আর বন্ধ হয় না। বাংলাদেশে বিগত ২৫ বছর ধরে গণতন্ত্র-গণতন্ত্র খেলা চলছে। এরা নিজেরা না পারলে বিদেশি শক্তির সাহায্য নিচ্ছে। আহা গণতন্ত্র! তোমার চেহারা আমরা ২৫ বছরে চিনে ফেলেছি। এই যদি হয় গণতন্ত্রের নমুনা। তাহলে এমন গণতন্ত্রের গুষ্ঠি কিলাই। আর কোনো দিন ভোট কেন্দ্রে যামু না। যামু না, যামু না। .....................................১৫ জানুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
rn
মৃত্যু নিয়ে হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বইয়ের কিছু লাইন ১)মৃত্যুর সময় পাশে কেউ থাকবে না,এর চেয়ে ভয়াবহ বোধ হয় আর কিছুই নেই।শেষ বিদা্য় নেয়ার সময় অন্তত কোনো একজন মানুষকে বলে যাওয়া দরকার।নিঃসঙ্গ ঘর থেকে একা একা চলে যাওয়া যা্য় না,যাওয়া উচিত নয়। এটা হৃদ্য়হীন ব্যাপার।(দেবী।পৃ:৪৮)২)মৃত্যু টের পাওয়া যায়।তার পদশব্দ ক্ষীন কিন্তু অত্যন্ত তীক্ষ্ণ।(তোমাকে।পৃ:৬৩)৩)বেঁচে থাকার মতো আনন্দের আর কিছু নেই।(আগুনেরন পরশমনি।পৃ:৯৭)৪)অসম্ভব ক্ষমতাবান লোকেরা প্রা্য় সময়ই নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যায়।(আকাশ জোড়া মেঘ। পৃ:২৭)৫)আমরা জানি একদিন আমরা মরে যাব এই জন্যেই পৃথিবীটাকে এত সুন্দর লাগে।যদি জানতাম আমাদের মৃত্যু নেই তাহলে পৃথিবীটা কখনোই এত সুন্দর লাগতো না।(মেঘ বলেছে যাব যাব।পৃ:১৫৮)৬)মৃত মানুষদের জন্য আমরা অপেক্ষা করি না।আমাদের সমস্ত অপেক্ষা জীবিতদের জন্য।(অপেক্ষা।পৃ:১৪৬)৭)যে বাড়িতে মানুষ মারা যায় সে বাড়িতে মৃত্যুর আট থেকে নয় ঘন্টা পর একটা শান্তি শন্তি ভাব চলে আসে। আত্মীয় স্বজনরা কান্নাকাটি করে চোখের পানির স্টক ফুরিয়ে ফেলে।চেষ্টা করেও তখন কান্না আসে না। তবে বাড়ির সবার মধ্যে দুঃখী দুঃখী ভাব থাকে।সবাই সচেতন ভাবেই হোক বা অচেতন ভাবেই হোক দেখানোর চেষ্টা করে মৃত্যুতে সেই সব চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে।মূল দুঃখের চেয়ে অভিনয়ের দুঃখই প্রধান হয়ে দড়ায়।একমাত্র ব্যাতিক্রম সন্তানের মৃত্যুতে মায়ের দুঃখ।(হিমুর রুপালী রাত্রি।পৃ:১৮)৮) বিবাহ এবং মৃত্যু-এই দুই বিশেষ দিনে লতা পাতা আত্মীয়দের দেখা যায়।সামাজিক মেলা মেশা হয়।আন্তরিক আলাপ হ্য়।(একজন হিমু কয়েকটি ঝি ঝি পোকা।পৃ:৮১)৯)আসল রহস্য পদার্থ বিদ্যা বা অংকে না-আসল রহস্য মানুষের মনে।আকাশ যেমন অন্তহীন মানুষের মনও তাই। পৃথিবীর বেশির ভাগ অংকবিদ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালোবাসতেন।আকাশের দিকে তাকালে জাগতিক সব কিছুই তুচ্ছ মনে হয়।We are so insignificant.আমাদের জন্ম মৃত্যু সবই অর্থহীন।(আমিই মিসির আলি।পৃ:৭৯)১০)মৃত্যু হচ্ছে একটা শ্বাশত ব্যাপার।একে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।আমরা যে বে্ঁচে আছি এটাই একটা মিরাকল।(কবি।পৃ:১৯১)১১)মানব জীবন অল্প দিনের।এই অল্প দিনেই যা দেখার দেখে নিতে হবে।মৃত্যুর পর দেখার কিছু নেই।দোযখে যে যাবে-সে আর দেখবে কি-তার জীবন যাবে আগুন দেখতে দেখতে।আর বেহেশতেও দেখার কিছু নাই।বেহেশতের সবই সুন্দর।যার সব সুন্দর তার সৌন্দর্য বোঝা যায় না।সুন্দর দেখতে হ্য় অসুন্দরের সংগে।(কালো যাদুকর।পৃ:৭৮)১২)সব মৃত্যুই কষ্টের,সুখের মৃত্যু তো কিছু নেই।(কোথাও কেউ নেই।পৃ:৪০)১৩)দুঃখ কষ্ট সংসারে থাকেই।দুঃখ কষ্ট নিয়েই বাঁচতে হয়।জন্ম নিলেই মৃত্যু লেখা হয়ে যায়।(কোথাও কেউ নেই।পৃ:৩৬)১৪)শোকে দুঃখে মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যায়।কবর দিয়ে দেয়ার পর নিকট আত্মীয় স্বজনরা সবসময় বলে-"ও মরে নাই"।(ছায়া সঙ্গী।পৃ:১৪)১৫)ঘুম হচ্ছে দ্বিতীয় মৃত্যু।(পারাপার। পৃ:২২)১৬)মানুষ হচ্ছে একমাত্র প্রানী,যে জানে একদিন তাকে মরতে হবে।কেননা অন্য কোন প্রানী মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয় না,মানুষ নেয়।(একা একা।পৃ:১০)১৭)মৃত্যু ভয় বুদ্ধিমত্তার লক্ষন।শুধু মাত্র নির্বোধদেরই মৃত্যু ভয় থাকে না।(নি।পৃ:২৫)১৮)মৃত্যুতে খুব বেশি দুঃখিত হবার কিছু নেই। প্রতিটি জীবিত প্রানীকেই একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মরতে হবে।তবে এ মৃত্যু মানে পুরোপুরি ধ্বংস নয়।মানুষের শরীরে অযুত,কোটি,নিযুত ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেলস যেমন-ইলেকট্রন,প্রোটন,নিউট্রন-এদের কোন বিনাশ নেই।এরা থেকেই যাবে। ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে।কাজেই মানুষের মৃত্যুতে খুব বেশি কষ্ট পাবার কিছু নেই।(নি।পৃ:১০)১৯)অন্য ভুবনের দিকে যাত্রার আগে আগে সবাই প্রিয়জনদের দেখতে চায়।(আমার আপন আধার।পৃ:৭১)২০)যে মানুষ মারা যাচ্ছে তার উপর কোন রাগ কোন ঘেন্না থাকা উচিত নয়।(নবনী।পৃ:১০৯)
false
hm
আউটকাস্ট এই গল্পগুলি সত্যি নয়, তবে জীবন থেকে নেয়া। কোনো চরিত্রের সাথে বাস্তব কোনো ঘটনার মিল নেই। কেউ মিল খুঁজে পেলে তা নিতান্ত কাকতাল। দাওয়া অফিসে বসে বসে সময় কাটতে চাইছিলো না আর মাহিজাবিনের। দাওয়া কার্যক্রম নিয়ে মাসিক প্রতিবেদন তৈরি করার কাজ জমে আছে, কিন্তু মাহিজাবিনের মন বসছে না তাতে। মোবাইলটা হাতব্যাগ থেকে বার করে হাতে নিয়েও থমকে যায় মাহিজাবিন। এতো অস্থির হচ্ছে কেন সে? সবুর, সবুর! বিড়বিড় করে মাহিজাবিন। দেশে এখন বাজে দুপুর একটা। রহমতুল্লাহ কী করছে এখন? মেসেঞ্জারে আসে না কেন? মোবাইলটা ব্যাগে ঢুকিয়ে চোখ বোঁজে মাহিজাবিন। আর মাত্র ক'টা মাস। তারপরই রহমতুল্লাহ চলে আসবে এখানে। তাদের সদ্য তৈরি হওয়া ভাঙা সংসারটা জোড়া লাগবে, দু'জনে নিজ হাতে তৈরি করবে চাষের জমিন, সেখানে রহমতুল্লাহ বীজ বুনবে, মাহিজাবিন ফসল ফলাবে। শান্ত, স্নিগ্ধ, খেজুর পাতার মর্মরে কল্লোলিত একটি মরূদ্যান হবে তাদের জীবন। সেখানে অবোধ দুম্বাশিশুর মতো চরে বেড়াবে তার সন্তানেরা। দু'টি পুত্র আর দু'টি কন্যা থাকবে তাদের, ইখতিয়ারউদ্দিন মওদুদী আর জুলফিকার মোনায়েম, উম্মে নিজামী আর উম্মে হান্নান। সারাদিন দাওয়ার কাজ সেরে রহমতুল্লাহ বাড়ি ফিরবে, ইখতিয়ারউদ্দিন আর জুলফিকার আরবী পাঠ ছেড়ে ছুটে গিয়ে ঘিরে দাঁড়াবে বাবাকে, নিকাবে মুখ ঢেকে উম্মে নিজামী আর উম্মে হান্নান দৌড়ে গিয়ে বাবাকে কুইজ জিজ্ঞেস করবে, নাউ টাইল আজ আব্বাজান, হুইচ ওয়ন অভ আজ ইজ নিজি, অ্যান্ড হুইচ ওয়ন ইজ হান্নি? রহমতুল্লাহও যেন বুঝবে না যে বটলগ্রীন নিকাব পরা ছোট্ট ফেরেশতাটি উম্মে নিজামী, আর অ্যান্টিক হোয়াইট নিকাব পরা অপর ফেরেশতাটি উম্মে হান্নান, সে অনেক ভেবে চিন্তে "আলিফ হামজা সোয়াদ হা, ফারাশা১ তুই উড়ে যা" দু'আ আউড়ে ভুল উত্তরটা দেবে। নিকাব সরিয়ে খিল খিল করে হেসে উঠবে দুই ছোট্ট হুরপরী। মাহিজাবিন ডাইনিং টেবলে খবুজের রুটি আর খাসির মাংসের ভুনা সাজাতে সাজাতে হাসিমুখে দেখবে সে দৃশ্য। মাহিজাবিনের চোখের জল মোছে স্কার্ফের খুঁট দিয়ে। আর কত? এত দেরি করছে কেন এই স্টুপিড অথরিটি? রহমতুল্লাহর মতো একজন কোয়ালিফায়েড আলেমকে ভিসা দিতে এতো দেরি হবে কেন? সবুর, প্রিন্সেস, সবুর। বিড়বিড় করে মাহিজাবিন। রাসূলের শিক্ষা কী? বিপদে বিচলিত না হওয়া। আবুল আলা সাহেবের শিক্ষা কী? আবেগকে প্রশ্রয় না দেয়া। রহমতুল্লাহর সাথে দুদিন ধরে কথা হয় না মাহিজাবিনের, কিন্তু এর চেয়ে কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ জমে আছে দাওয়া অফিসে। তুচ্ছ এ আবেগ, নশ্বর এ মোহ। সবুর করলে রহমতুল্লাহর বোনা বীজে মেওয়া ফলবেই, চাষবাসে কেটে যাবে এক একটা সোনালী দিন। মাহিজাবিন মনকে শান্ত করতে দু'আ ইউনুস আবৃত্তি করতে থাকে ফিসফিস করে। ইউনুস তিমি মাছের পেটে আটকা পড়ে এই দু'আ পড়ে রক্ষা পেয়েছিলেন। মাহিজাবিনের এই একাকিত্ব কি তিমির জঠরের চেয়েও জারক? মাহিজাবিনের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। নাহ। অশান্ত মনটা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। তারচেয়ে নিশ্চিন্দিপুরব্লগে একটা ঢুঁ মেরে দেখে আসা যাক, বেদ্বীনগুলি নতুন কী তামাশায় লিপ্ত। বেশিদূর টাইপ করতে হয় না ফায়ারফক্সে, এন আই এস পর্যন্ত লিখতেই নিশ্চিন্দিপুরের লিঙ্কটা চলে আসে অ্যাড্রেস বারে। মাহিজাবিন দাওয়া অফিসে একা থাকলে মাঝে মাঝেই পড়ে নিশ্চিন্দিপুর। উম্মিগুলি দুই পাতা পড়ে আর এক পাতা লিখে নিজেদের কী ভাবে আল্লাহ পাক জানেন। এদের মূর্খতা পড়েও আমোদ মেলে। দোজখের আগুনে ঝলসে যখন এক একটা রোস্ট হবে, তখন টের পাবে মজা। কাঁধের হাসিব২ তো হিসাব নিয়েই চলছে। প্রত্যেকটি পলকের স্ক্রিনশট সেইভ হয়ে যাচ্ছে স্রষ্টার মাই ডকুমেন্টস ফোল্ডারে। নিশ্চিন্দিপুর লোড হবার পর মাহিজাবিন ঠোঁট বাঁকায়। কবিতা। মালাউন এক কবির লেখা। দ্রুত স্ক্রল করে নিচে নামে সে। এই কবিগুলির কবিতা পড়লে মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে সুহাগ রাতের মতো। পরের পোস্টটার শিরোনাম দেখে আগ্রহী হয় মাহিজাবিন, এক অতিথির লেখা। নিশ্চিন্দিপুরের এই ভোগলামি অসহ্য। কতগুলি লোককে মাসের পর মাস ঝুলিয়ে রেখে মেহমান নাম দিয়ে যে অত্যাচার, এর কোনো অর্থ হয়? মেহমানকে নিয়ে রাসূল (সাঃ) কী বলেছেন? মাহিজাবিন ফিসফিস করে ওঠে, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু, রিপোর্টেড দ্যাট দ্য মেসেঞ্জার অব আল্লাহ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়াসাল্লাম সেইড, লেট হুসোএভার বিলিভস ইন আল্লাহ অ্যান্ড ইন দ্য ল্যাস্ট ডে ঈদার স্পিক গুড অর বি সাইলেন্ট। লেট হুসোএভার বিলিভ ইন আল্লাহ অ্যান্ড ইন দ্য ল্যাস্ট ডে অনার হিজ নেইবার। লেট হুসোএভার বিলিভস ইন আল্লাহ অ্যান্ড ইন দ্য ল্যাস্ট ডে হনার হিজ গেস্ট। বুখারী আর মুসলিম শরীফের হাদিস। আর তোরা কী করিস, ফকিন্নির দল? মেহমানদের অপমান। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য। ছোটোলোক কোথাকার। মাহিজাবিন পোস্ট পড়তে থাকে মনোযোগ দিয়ে, কিন্তু একটু পরই মেজাজটা চড়ে যায় তার। এক নেকু মেয়ের লেখা পোস্ট। তার নাকি কিসু ভাল্লাগেনা। সারাটাদিন মন উথালপাথাল করে। সকালে এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আড্ডা পিটিয়ে এসেছে, দুপুরটা কাটিয়েছে একটা দারুণ রোম্যান্টিক সিনেমা দেখে, কিন্তু সন্ধ্যার অন্ধকার যেন শুধু আকাশের বুকেই নামেনি, নেমেছে তার বুকেও, সেখানে শুধু নিঃসীম খা খা যমুনা চর ... আর এর পর একটা গানের লিঙ্ক দেয়া ইস্নিপ্সে। বিচ। মনে মনে গাল পাড়ে মাহিজাবিন। দেশটা নষ্ট করে দিচ্ছে এরা। খাটো খাটো টাইট জামা পড়ে বেলেল্লাপনার একশেষ। মাহিজাবিন সারাটা জীবন ঢিলেঢালা ঢোলা ফুলহাতা জামা পড়ে এসেছে, আশেপাশের লম্পট পুরুষগুলি লোভী চকচকে চোখ তারপরও চেটে চেটে খেয়েছে তার জামা আর হিজাব। মাহিজাবিনের গা রী রী করে ওঠে। পারেও এই মেয়েগুলি। ধর্মের সাথে বিন্দুমাত্র সংশ্রব নাই, হয়তো শুধু পরীক্ষার আগের রাতে ভুলভাল অযু করে সুরা এখলাস দিয়ে নামাজের কাজ সেরে আল্লাহর চোখে ধোঁকা দিতে চায়। কিরামান কাতেবীনকে পটাতে পারবি? ওরা কি লিখবে না তুই কী আকাম করিস? একদিনের এক ওয়াক্ত নামাজে কাটে এই পাপ? মাহিজাবিন মন্তব্যগুলি পড়তে থাকে। ওহ অলমাইটি আল্লাহ, কী নির্লজ্জ এই নিশ্চিন্দিপুরের ব্লগারগুলি। ছেলেবুড়ো সব ঝাঁপিয়ে পড়েছে এই হদ্দ ন্যাকা পোস্টে। "মন ভালো নেই বুঝি?" আরে পড়লিই তো যে মন ভালো নাই, আবার জিগাস ক্যা? "মন খারাপ করবেন না আপুনি। আমারও এমন হয়েছিলো গতকাল। তারপর ... না থাক, আর বললাম না।" ঐ ব্যাটা ঐ, তিনকাল গিয়া এককালে ঠেকছে তোর, তুই এই মাইয়ারে আপুনি কস ক্যা? "বিশ্বাস করুন দুর্গেশনন্দিনী, আপনার পোস্ট পড়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না। অনেক অনেক ভালো থাকুন আপনি ... অনেক!" আরে নেকু, চোখের জলের কী আছে এই পোস্টে? আর দুর্গেশনন্দিনী? হোয়াট ব্লাডি সর্ট অব নিক ইজ দ্যাট? একটা ভালো মুসলিম নিক নিলে কী ক্ষতি হয় মাইয়াটার? হোরি বিচ! মাহিজাবিন আর পরের কমেন্টগুলি পড়ে না, লুচ্চা লুইস লাফাঙ্গা দিয়ে ভর্তি। পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসতে আসতে মাহিজাবিনের চোখে পড়ে, পোস্ট ভর্তি স্মাইলি। আরে ছেমরি, তুই এইটাও জানিস না, যারা তোর মাহরাম না, তাদের সামনে তোর পর্দা করতে হয়, তাদেরকে কীভাবে দেখাস তুই তোর ভেটকি? আ উওম্যান শ্যুড নট ইউজ দিজ স্মাইলিজ হোয়েন স্পিকিং টু আ ম্যান হু ইজ নট হার মাহরাম, বিকজ দিজ আর ইউজড টু এক্সপ্রেস হাউ শি ইজ ফিলিং, সো ইট ইজ অ্যাজ ইফ শি ইজ স্মাইলিং, লাফিং, অ্যাক্টিং শাই অ্যান্ড সো অন, অ্যান্ড আ উওম্যান শ্যুড নট ডু দ্যাট উইথ আন নন-মাহরাম ম্যান! কী শিখাইসে এদের বাপমাগুলি? রাগে মাহিজাবিনের শরীর কষকষ করতে থাকে। পরের পোস্টটা দেখে মাহিজাবিনের সারা শরীর কঠিন হয়ে ওঠে। হামজাদ জায়ূন আর ব্যাং অন দ্য টার্গেট! মাহিজাবিন দাঁতে দাঁত পেষে। হামজাদ জায়ূন! দ্যাট ঔল্ড ফুল! এই প্রথমবারের মতো সে লক্ষ্য করে, নিশ্চিন্দিপুরের ব্যানারেও হুমদোটার ছবি লটকানো। ওহ, এদের চোখে রওশনি দাও আল্লাহ! আর কতো? নাস্তিক বাস্টার্ডটার এতো ভক্ত কেন এখানে? মাহিজাবিন পোস্টটা খুলে পড়তে থাকে। ধীরে ধীরে তার মুখের কুয়াশা কেটে রোদ উঠতে থাকে। লেখককে আরেকবার ভালো করে দেখে সে। কী স্টুডিয়াস একটা লোক! ব্রিলিয়্যান্ট! পুরোটা পোস্ট শেষ করে মাহিজাবিনের শরীরে যেন ঝিরিঝিরি স্বস্তির বাতাস খেলে যায়। লিঙ্কটা দ্রুত কপি করে একটা মেইল করে সে "বাতেনি ব্যাটল" মেইলগ্রুপে। নিশ্চিন্দিপুরে এমন পোস্ট আগে কখনো পড়েনি সে। ব্যাটাদের হোলোটা কী? মেইল করে মাহিজাবিন উঠে দাঁড়ায়। চুলের বাঁধন আলগা হয়ে গেছে, ঠিক করতে হবে। ওয়াশরুমে আয়নার সামনে নিজেকে দেখে লজ্জা পায় সে, উত্তেজনায় তার শ্যামলা মুখ বেগুনি হয়ে আছে, চুলগুলি দেখাচ্ছে জ্বিনের চুলের মতো। মাহিজাবিন দ্রুত হাতে চুল ঠিক করতে থাকে। তার মনে পড়ে যায়, সুহাগ রাতে রহমতুল্লাহ ঘাগরার ফিতায় আঙুল রেখে অপটু বেসুরো কণ্ঠে গজল ধরেছিলো, আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন, দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি! আহ, সুর না এলেও কী অপূর্ব উর্দু উচ্চারণ রহমতুল্লাহর। দেওবন্দের এক হুজুর নাকি তাকে একবার বলেছিলেন, বেটা, ইতনা আচ্ছে উর্দু তো হামলোগ বোল নেহি সাকতা? কেয়া পিলায়া ইসকো ইস লাল কি মা নে৩? মাহিজাবিনের হাত শ্লথ হয়ে আসে নিজের চুলে, শরীরটা ঝিমঝিম করে ওঠে। আর কতদিন রহমতুল্লাহ? কতদিন পর তুমি আর আমি হাতে হাত ধরে বসে থাকবো অপেরা হাউসের সামনে? ছবি তুলবো সহীহ তরিকায়? মাহিজাবিন আচমকা লজ্জা পেয়ে যায়, দ্রুত সব ঠিকঠাক করে আবার ফিরে আসে ডেস্কে। ওয়েইট ডিয়ার। জাস্ট ইউ ওয়েইট। জাস্ট আ ফিউ ফ্রিকিং মান্থস। নিশ্চিন্দিপুরের লিঙ্কটা এফ ফাইভ চেপে রিফ্রেশ করে মাহিজাবিন। তার মুখটা আবার কালো হয়ে যায়। ফ্যাসিস্টগুলি ঝাঁপিয়ে পড়েছে বেচারার ওপর। কী কুৎসিত সব গালি অবলীলায় দিয়ে চলছে বেচারাকে। একের পর এক মন্তব্যে সেই একই কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলছে লোকে। ৭১ এর দালালদের একঘরে করা উচিত। এরা মানুষ না। এরা চুতমারানি। আরো কতো নোংরা নোংরা কথা। মাহিজাবিনের চোখে জল চলে আসে বড় চাচাজানের কথা ভেবে। চট করে হাতের উল্টোপিঠে চোখ মোছে সে। না, কান্নার সময় এ নয়। এখন লড়ায়ের সময়। আরেকটা ৭১ দরকার সামনে। তবে এবার দরকার বিজয়। পরিপূর্ণ বিজয়। মাহিজাবিন কীবোর্ড টেনে নেয় হাতে। বেচারা পড়ুয়া লোকটা মাঝে মাঝে লেখায় ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে ফেলে, তাই নিয়ে কী নাকি কান্না বাকিদের, কেঁদে গড়িয়ে যাচ্ছে সবাই হিন্দুর ভাষার জন্য। আরে বেটারা, তোরা বাংলা বলিস কই? দেখিস তো খালি ইনডিয়ার ছবি! ঝড়ের বেগে মাহিজাবিন লিখে যায়, এই পিউরিস্ট অসভ্যতা নিশ্চিন্দিপুরে আগেও দেখেছি, আজও তাই দেখে বিস্মিত নই। গোটা পৃথিবী যখন ইন্টারকালচারাল লেনদেনে বিলিভ করছে, ট্রাস্ট করছে, লিন অন করছে, সেখানে বিশুদ্ধ বাংলা নিয়ে আপনাদের ভাঁড়ামি দেখে হাসি পায়। রিসাত, গো অন। লাইক ইয়োর স্টাইল। ইউ হ্যাভ রিচড আ গ্রেট কনক্লুশন হোয়্যার জোকারস লাইক হামজাদ জায়ূন অ্যান্ড হিজ ফ্যাগটি নিশ্চিন্দিপুর মবস হ্যাভ ফেইলড। আজ এই ২০০৯ সালে আপনি একজন আউটকাস্ট হলেও, সামনের জেনারেশনে নিশ্চিন্দিপুরে আপনিই হবেন রোলমডেল। বিভেদের সীমা টেনে ইংরেজি বাংলাকে আলাদা করা চলবে না। অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, বেনেফিট অব ডাউট দিতে হবে ইংরেজিকে, ইটস আওয়ার ঔনলি ফাইটিং চ্যান্স। সালাম, জাযাকুল্লাহ খায়রান৪! মন্তব্যকারীর নামের জায়গায় বরাবরের মতো মুসলিমা বসাতে গিয়ে থমকে যায় মাহিজাবিন, একটা সলজ্জ হাসি ফুটে ওঠে তার ঠোঁটে, একটু থেমে সে লেখে, মিসেস র। ১ আরবিতে ফারাশা অর্থ প্রজাপতি। ২ আরবি হাসিব অর্থ অ্যাকাউন্ট্যান্ট। ৩ বাছা, এতো ভালো উর্দু তো আমরাও বলতে পারি না। এই খোকার মা একে কী পান করিয়েছে? ৪ আল্লাহ আপনার ভালো করুন।
false
rn
রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৯৫ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা বললেই তো ঋষির মতো একটি মানুষের ছবি ভেসে ওঠে।এ মানুষটির এতো এতো গুণ ছিলো যে, তা বলে শেষ করাই যাবে না। তার সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক হুমাযুন আজাদ। তিনি বলেছেন- ‘রবীন্দ্রনাথই আমাদের সব’৷ যখন তার বয়স হয়ে গিয়েছিলো, তিনি তখন অনেকটাই শিশুর মতো হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি কবিতার মধ্যে কি লিখেছেন শোনো-‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে, চুকিয়ে দেব বেচা-কেনা, মিটিয়ে দেব লেনা-দেনা বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে - আমায় তখন নাই বা মনে রাখলে, তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাই বা আমায় ডাকলে।। তখন কে বলে গো, সেই প্রভাতে নেই আমি? সকল খেলায় করবে খেলা এই-আমি।’ আমাদের কবিগুরু বিদেশ ঘুরতে খুবই পছন্দ করতেন। বিদেশ বলতে যে তিনি শুধু ভিনদেশ বুঝিয়েছেন তা কিন্তু নয়। বিদেশ মানে হলো, অনেক দূরে কোথাও। তিনি কলকাতার ছেলে ছিলেন, লেখাপড়া করতে বিলেত পর্যন্ত গেছেন। আবার যখন তার ঘাড়ে শিলাইদহে বসে জমিদারি দেখার ভার চাপলো তখনও তাকে অনেক ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। তিনি বজরায় করে পদ্মা নদীর বুকে ঘুরে বেড়াতেন। আর বিভিন্ন এলাকা দেখতেন। কখনও কখনও পালকিতে চেপেও যেতেন তিনি। পালকি মানে ছয় বেহারার পালকি। আর বজরা মানে বড়ো নৌকা। তিনি আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও আরো অনেক দেশ ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯১২ সালে যখন তিনি ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন, তখন তিনি এক কাণ্ড করে বসলেন। সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন এক তাক বই! তার এসব বইগুলো সবাইকে রীতিমতো আশ্চর্য করে দিলো। তিনি তার বইগুলো বন্ধুত্ব বাড়াতে বিলিয়ে দিলেন। যাদের তিনি বই দিয়েছিলেন তাদের নামগুলো শোনো একবার- চার্লস এফ অ্যাণ্ড্রুজ, অ্যাংলো-আইরিশ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েট্স, এজরা পাউন্ড, রবার্ট ব্রিজেস, আর্নস্ট রাইস। প্রত্যেকেই তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশ্ববিখ্যাত। আইনস্টাইনও রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানের প্রতি এ ভালোবাসাটা বুঝতে পেরেছিলেন। এদিকে, আইনস্টাইনও ছিলেন কবিতার ভক্ত। সুযোগ বুঝে তিনিও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কবিতার বিষয় বুঝে নিতেন। তাদের যখন বন্ধুত্ব হলো তখন দুজনেরই বয়স হয়ে গেছে। যদি বলো ‘বুড়ো’, তাও বলতে পারো। কিন্তু দুজনই তো তখন পৃথিবীর জ্ঞানী দুটো বুড়োই, নাকি! তাদের বন্ধুত্বের সময়টাকে রবীন্দ্রনাথ ঊনসত্তর বছর পেরিয়ে সত্তরে পা দিয়েছেন। আইনস্টাইনের বয়স তখন বাহান্ন। রবীন্দ্রনাথের চেয়ে আইনস্টাইন ১৮ বছরের ছোট ছিলেন। তবুও তাদের বন্ধুত্বে কোনোরকম সমস্যাই হয়নি! রবীন্দ্রনাথ-আইনস্টাইন দুজনই নামকরা ব্যক্তি। তারা যে সে সময় কি আলাপ করেছিলেন কেউ জানতে পারেনি। তবে, এ আলাপের পর থেকে দুজনের বন্ধুত্ব এতোটাই জমেছিলো যে, আইনস্টাইন পরবর্তীতে শান্তিনিকেতনে বেড়াতেও চলে এসেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ আইনস্টাইনের মনে যে শ্রদ্ধার রেখা টেনেছিলেন, ১৯২৬ সালে লেখা আইনস্টাইনের একটি চিঠি থেকে সে প্রমাণ পাওয়া যায়। চিঠির তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯২৬। ছোট্ট একটা চিঠি। সে চিঠিতে বন্ধুকে আইনস্টাইন লিখেছেন, মাননীয় আচার্য, ... আপনাকে স্বচক্ষে দেখে আসতে না পারার জন্য দুঃখিত। শুনেছি আপনার উপর প্রচুর ধকল গেছে। তাই ভিড় বাড়িয়ে আপনার বিশ্রাম এবং শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইনি। জার্মানিতে যদি এমন কিছু থাকে যা আপনি চান এবং যা আমি করতে পারি, দয়া করে, যখন খুশি আমায় আদেশ করবেন।
false
rn
বাংলাদেশের মাদ্রাসা সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।রাত সাড়ে ৩টার দিকে সব শিশুকে উঠিয়ে দেওয়া হয় এবং ৩টা ৪৫ মিনিট থেকে ৫টা পর্যন্ত পড়াশোনা করতে হয়।একটা সাধারণ ঘরে৩০ থেকে ৩৫ জন ছাত্র অবস্থান করে এবং তাদের ঘুমানোর জায়গা হচ্ছে ছোট্ট একটা বিছানা, যেখানে তাদের স্বাভাবিক ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। শুধু ঘুমানোই নয়, সেখানে তাদের পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া, প্রাসঙ্গিক কাজকর্ম ওখানে বসেই করতে হয়।১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে সুবাহদার শায়েস্তা খানের উদ্যোগে ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে একটি মাদ্রাসা ও মসজিদ নির্মিত হয়। ১৯৯৮ পর্যন্ত সারাদেশে ২,০৪৩টি মাদ্রাসা কওমী মাদ্রাসা এই বোর্ডে নিবন্ধিত হয়েছে। বর্তমান সরকার ৯শ’ মাদ্রাসায় আধুনিক একাডেমিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাতগুলোর অন্যতম।মাদ্রাসা মূলত মুসলমানদের অধ্যয়ন-অধ্যাপনা গবেষণা ইত্যাদির স্থান বা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সাধারণ অর্থে মাদ্রাসা হচ্ছে আরবি ভাষা ও ইসলামি বিষয়ে শিক্ষার প্রতিষ্ঠান।মাদ্রাসা শিক্ষায় প্রথম প্রতিষ্ঠান ছিল সাফা পর্বতের পাদদেশে যায়েদ-বিন-আরকামের বাড়িতে, যেখানে স্বয়ং রসুল (স ছিলেন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী ছিলেন তাঁর কয়েকজন অনুসারী। হিজরতের পর মদিনায় মসজিদে নববি-র পূর্বপাশে স্থাপিত হয় মাদ্রাসা আহলে সুফ্‌ফা। অনেক ছাত্র এই মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে যায় ।যে ছাত্ররা বাড়ি পর্যন্ত পালিয়ে যায় সেই ছাত্ররা তাদের বাবা-মার কাছ থেকেও নিস্তার পায় না। তাদের বাবা-মা জোর করে ওই নরকে ফেরত পাঠায়।মাওলানা শফী, মাওলানা নিজামী, মাওলানা সাঈদী , মাওলানা মুজাহিদ, মুফতি আমিনী, চরমোনাই পীরসহ এই জঙ্গী নেতাদের শক্তি প্রধান উৎস এই মাদ্রাসার ছাত্ররা। ইদানিং অনেক মাদ্রাসায় কম্পিউটারও এসেছে। হিসাব-নিকাশ, প্রশ্নপত্র, ফলাফল এসবের কাজে ব্যবহৃত হয় কম্পিউটার। কিছু মাদ্রাসায় ছাত্রদের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা ও ব্যবহারেরও সুযোগ আছে। বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষকরূপী এইসব যৌন অপরাধীদের তৎপরতা মুক্তিযুদ্ধের সময় ও ছিল। হেফাজতে ইসলাম বিপুল সংখ্যক মাদ্রাসা ছাত্রদের বাদ দিলে এদের আর কোন কর্মী খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই মাদ্রাসা ছাত্ররা তাদের ওস্তাদের অন্ধ অনুসরণ করে থাকে। এদের কাছে ওস্তাদই হচ্ছে জীবন্ত কোরআন ও হাদীস। যারা মাদ্রাসায় পড়ছে তারা এদেশেরই নাগরিক, এদেশের সন্তান। তাই সময় এসেছে আমাদের সন্তান, আমাদের ভাইকে অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর জগতে নিয়ে আসার। বাংলাদেশে কাওমী মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী প্রায় ৫০ লক্ষ!বাদশা আকবর দীনে ইলাহিকে অস্ত্র বানাতে চেয়েছিলেন ছিলেন কিন্তু আজকের দীনে ইলাহিপন্থীরা আজকের বাদশা আকবরের হাত ধরে ক্ষমতায় যেয়ে ক্ষমতার জোড়ে তাদের দীনে ইলাহিকে দিয়ে প্রচলিত সুন্নি দেউবন্দি তাব্লিগি মাইজভাণ্ডারী মাজার পন্থা কে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মানুষকে সরিয়ে দিতে চায় তাদের প্রচলিত বিশ্বাস থেকে!ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম মাদ্রাসার ইমারত নির্মিত হয়েছিল মুলতানে। এর নির্মাতা ছিলেন নাসির উদ্দীন কুবজা এবং এর প্রধান ছিলেন মৌলানা কুতুবুদ্দীন কাশানি। শেখ বাহাউদ্দিন যাকারিয়া মুলতানি ৫৭৮ হিজরি সালে এই মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণ করন। বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী ১১৯৭, মতান্তরে ১২০১ খ্রিস্টাব্দে বাংলার রাজধানী গৌড়ে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। সুলতান গিয়াসুদ্দীন একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন ১২১২ খ্রিষ্টাব্দে। পরবর্তীকালে তাঁর বংশধর সুলতান দ্বিতীয় গিয়াসুদ্দীনও একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন।পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা চাবুয়া আলিম মাদ্রাসায় আজ মঙ্গলবার শাহজাহান সুজন নামে ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষক আবু সালেহ। হাফিজিয়া মাদ্রাসার হুজুর কতৃক দশম শ্রেনীর এক ছাত্র বলাত্কারের ঘটনায় জলঢাকা থানা পুলিশ ওই হুজুর কে শনিবার বিকালে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত হুজুর নীলফামারীর জলঢাকার উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের গড়েরডাঙ্গা হাফিজিয়া মাদ্রাসার হাফেজ হুজুর নুরুল ইসলাম(৫০)।রাজবাড়ীর সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জান্নাতুল উলুম আবাসিক হাফিজিয়া মাদ্রাসার সুপারের মারধরে আহত এক ছাত্রকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শস্যের চেয়ে টুপি বেশি; ধর্মের আগাছা বেশি- সৈয়দ ওয়ালি উল্লাহ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সার্বজনিন উক্তি করেছেন বটে। বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষায় বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন সকল মাদ্রাসার সাথেই এতিমখানা শব্দটি শোভা পায়। প্রায় সব মাদ্রাসাতেই ২/৩/৪ রকমের রান্না হয় স্ট্যাটাস অনুযায়ী। এতিমদের ভাগ্যে জোটে নিরামিষ ঝুটা বাসি পরিত্যাক্ত খাবার। এতিমরাও প্রতিশোধ নেয়; সুবিধাফল ভোগ করে তবে শিক্ষা জীবন শেষে অধীনস্ত অন্য এতিমদের হক মেরে। সমস্ত এতিমের নামে প্রাপ্ত ভিক্ষা বিত্ত বেশির ভাগ মাদ্রাসার হুজুরদের পোশাক আশাক ও রঙিন মোবাইলে চিক চিক করে। মানুষের দান বন্ধ হলে দেশের সব মাদ্রাসা অচল হয়ে যাবে অথচ এসব মাদ্রাসার অকৃতজ্ঞ বিশ্বাস ঘাতক কিছু ওলামা নামধারী ইদানিং তাদের রিযিকের উসিলা মানুষের উপর আপত্তিকর চাপ সৃষ্টি করছে। আল্লামা শফি ৯৫ বর্ষীয় একজন বৃদ্ধ আলেম যিনি তার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে উপনীত হয়েছেন ফলে বার্ধক্য জনিত বহু রুগে তিনি আক্রান্ত ।আল্লামা শফি সাহেব ছাড়াও হেফাজতে ইসলামের আরও যেসব কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন এমতাবস্থায় তারাও বার্ধক্য জনিত অসুখ বিসুখ থেকে মুক্ত নন । মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) এর অবমাননা সহ্য করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইসলাম অবমাননার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, ইসলামের সেবা করে।
false
rn
কৃষ্ণকলির প্রেম ভালো মানুষ হইবার সব সম্ভবনা আমার মধ্যে বিরাজমান ছিল, কিন্তু প্রেমের ব্যর্থতার জন্য হইয়া গেলাম অন্ধকারের মানুষ। তাহার পর সমস্ত জীবন ধরিয়া অভিনয় করিয়া চলিতেছি। অনেক পুরুষলোক কষ্ট ভুলিয়া থাকিবার জন্য- মদের প্রতি আসক্ত হইয়া পড়ে। অথবা অর্থের বিনিময়ে কোনো নরম স্ত্রীলোকের বুকে মাথা গুঁজিয়া দেয় একটু শান্তির জন্যে। ।তাহার পর নিরবে স্ত্রীলোকের নরম স্তনে দুই ফোটা জল গড়িয়া পড়ে। স্ত্রীলোকটি জলের স্পর্শ টের পাইয়া তাহার বুকে পুরুষের মাথাখানি আরও জোরে চাপিয়া ধরে মায়াময় হস্তে। যুগের পর যুগ ধরিয়া স্ত্রীলোক পুরুষের দুঃখ-কষ্ট, শোক নিজের বুকের মধ্যে সযন্তে রাখিবার চায়। বোকা পুরুষ তাহা বুঝিতে ব্যর্থ হয়। একদিন শ্রাবনের সন্ধ্যায় ঝুম বৃষ্টিতে- অশ্বথ গাছের তলায় চায়ের দোকানে বসিয়া চা পান করিতে ছিলাম, তখন সেই পরমা রমনীটিকে দেখিতে পাই। আহা কি রুপ তাহার! বুকের মধ্যে পূজার বাদ্য বাজিতে লাগিল। সিদ্ধান্ত লইয়া ফেললাম এই রমনীর সহিত- বাকিটা জীবন কাটাইয়া দিব। আপনাদের অবগতির জন্যে জানাইতেছি- আবেগের বসে এই সিদ্ধান্ত নিই নাই। নানান কাহিনী দেখিয়া শুনিয়া- আমি চিন্তাশীল উপাধিতে ভূষিতে হইয়াছি সূধী সমাজে।যাহাই হোক, যথা সময়ে এই রমনীর কথায় আবার আসিব। প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় বন্ধু নারায়ণ আমার সহিত দেখা করিতে আসিয়া আমার তামাক ঘুট-ঘুট করিয়া টানিয়া শেষ করিয়া দিত। উত্তর পাড়াতে বাড়ি নারায়ানের। খবর পাইয়াছি- আমার বুকে ব্যাথা দানকারী রমনীটি উত্তর পাড়াতেই থাকে। আমি জমিদার বাড়ির সন্তান। বাপ-দাদায় পঞ্চাশ বিঘা জমি রাখিয়া গেছেন। বেশ স্বচ্ছন্দে আছি,বেশ দিন কাটে। দিনের পর দিন যায়- আমার আনন্দের সীমা নাই, সমস্ত দিন সারা গ্রাম ঘুরিয়া বেড়াই। কিন্তুক এখন আর সময় কাটে না। সময়-অসময় ওই রমনীর অভাব বোধ হয়। বিবাহ বন্ধন ছাড়া এই রমনীকে কোনোমতেই চিরস্থায়ী করিয়া রাখা যাবে না। রমনীর কথা ভাবিয়া ভাবিয়া রাত্রি বোধ হয় একটা বাজিয়া গিয়াছে। জোছনা চারিপাশে মিশিয়া গিয়াছে। মানুষের এমনি দুঃসময়ের মাঝে আশা-নিরাশার কূল-কিনারা যখন দেখিতে পায় না, তখন ব্যাথিত মন ভয়ে ভয়ে আশার দিকটাই আকড়াইয়া ধরিতে চায়। কিছু অর্থ ব্যয় করিয়া রমনীর নামটি জানিতে পারিলাম। এই মহান রমনীর নাম নিয়া রবী ঠাকুর একখানা কবিতা লিখিয়াছিলেন- কৃষ্ণকলি । কৃষ্ণকলি'র বাপকে একখানা চিঠি লিখিলাম। আমি মনে করি, ইহাই বুদ্ধিমানের কাজ হইয়াছে। চিঠিখানা তিনবার পড়িলাম। যদি কোনো বানান ভুল চক্ষে পড়ে। হবু শ্বশুর মহাশয় ব্যারিস্টার। সচেতন এবং অভিজ্ঞ লোকদিগের স্বভাব এই যে, তাহারা চক্ষুর নিমিষে কোনো ঘটনার দোষ-গুন সম্বন্ধে নিজের মতামত প্রকাশ করতে চাহেন না। কিন্তু আর একরকমের লোক আছে, যাহার ঠিক ইহার উল্টা। তাদের ধৈর্য একে বারেই কম। কোনো বিষয় ভালো করিয়া জানিবার পরিশ্রমটুকু করে না। আপন মনের ভুল বিশ্বাস দিয়া সব কিছু চালাইয়া লইতে চাহে। সে যাগগে, কৃষ্ণকলি'র কথায় আসি- বিধাতা যেন সব রুপ কৃষ্ণকলিকে দিয়াছেন। কিন্তুক কৃষ্ণকলির রুপের কোনোরুপ অহংকার প্রকাশ পায় না। ইচ্ছা করে এই রুপে কালি লেপন করিয়া দেই- ইহা অবশ্যই ক্রোধের কথা, মনের কথা নহে। কৃষ্ণকলি আসিয়া দেখিবে কত বড় বাড়ি আমার! বড়ই জ্বলা হইল শুধুই কৃষ্ণকলি'র কথা লিখিতে ইচ্ছা করে। কৃষ্ণকলি'র কথা ভাবিয়া ভাবিয়া শ্রাবন মাস পার করিলাম। বাড়ির উঠানে বসিয়া কত রাত্রি কাটাইয়া দিলাম। কৃষ্ণকলির দেখা পাওয়ার আগে- যশোদা নামে এক নারীর সহিত সময় কাটাইতাম। যশোদা অলংকার পছন্দ করিত খুব। তাহার নাচে খুশি হইয়া টাকা উড়াইয়া দিতাম। আহা! দেবীর প্রতিমূর্তি যেন যশোদা। লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান, অবহেলা অত্যাচার- কত কিছু যে সহ্য করিয়াছে। আমার কোলে মাথা রাখিয়া কতদিন কাঁদিয়াছে। কৃষ্ণকলি'র বাপ ব্যারিষ্টার নীলমনি আমার প্রস্তাব এক আকাশ ঘৃণা দিয়া প্রত্যাক্ষান করিল। তারপর সময়ের সাথে সাথে আমার বুকে অপমানের জ্বলা বাড়িতে লাগিল। নিমিষেই জীবনের সব সুখ, শান্তি বাতাসে মিশিয়া গেল। ইচ্ছা করিল কৃষ্ণকলি'র বাড়ি গিয়া তাহাকে ধর্ষণ করিয়া আসে। ইহা রাগের কথা- আমার পক্ষে সম্ভব নহে। কৃষ্ণকলি কে কিভাবে পাইব ইহা ভাবিতে ভাবিতে আমার দাড়ি লম্বা হইতে লাগিল এবং জট পাকিয়া গেল এক বছরে। হঠাত অপ্রত্যাশিত আঘাত পাইলাম- কৃষ্ণকলি'র বিবাহ হইয়া গেছে। ব্যারিষ্টার নীলমনি জোরপূবক কন্যা কৃষ্ণকলি কে শহরে নিয়া বিবাহ দিয়াছে। এই খবর পাইয়া খানিকক্ষন মাটিতে গড়াগড়ি করিয়া কাঁদিলাম। ইচ্ছা করিল ছুটিয়া যশোদার কাছে যাই- কিন্তু যশোদা নিরুদ্দেশ। এখনও আমার আশা আছে- কৃষ্ণকলি আমার কাছে চলিয়া আসিবে। রমনীকূল সত্যিকারের ভালোবাসা বুঝিতে দেরী করে না। কৃষ্ণকলি আমায় ভালোবাসে, তাহা আমি তার চাহনিতে বুঝিতে পারিয়াছে। ব্যারিষ্টারের ভয়ে সে মুখ খুলিতে পারে নাই। আমি কিতাবে পড়িয়াছি- যে যথার্থ ভালোবাসে, সে সহ্য করে থাকে। যশোদাকে ভালোবাসিতাম না- তাই তাহার মুখে ভালোবাসার কথা সহ্য করিতে পারিতাম না। যাহার আশা আছে, সে একরকম করিয়া ভাবে, আর যাহার আশা নাই, সে অন্যরকম ভাবে।আশা থাকলে ভেবে সুখ আছে, আনন্দ আছে, তৃপ্তি আছে, দুঃখও আছে। কিন্তু আশাহীনের সুখ নাই, দুঃখ নাই অথচ শান্তির ঘুম আছে। যাহা হোক, কাঁদিয়া কাঁদিয়া দুই বছর অতিক্রম করিলাম। একদিন শ্রী শরৎ চন্দ্র চট্রোপাধ্যায় আমার সহিত দেখা করিতে আসিলেন। আমাকে দেখিয়া ব্যাকুল কন্ঠে বলেলেন- তোমাকে দেখিয়া দেবদাসের কথা মনে পড়িল। আমি কহিলাম- দেবদাস কে ? শরৎ চন্দ্র তাহার ঝোলা ব্যাগ হইতে একখানা কিতাব বাহির করিয়া আমার হাতে দিলেন। বলিলেন, এটা পড়ো, তাহাতে তোমার মনের উপশম হইবে। কিতাব আমি কোনো কালেও পড়ি না। কিন্তুক কি মনে করিয়া শেষ পাতা হইতে পড়া শুরু করিলাম।..." যদি কখনও দেবদাসের মত এমন হতভাগ্য,অসংযমী পাপিষ্ঠের সহিত পরিচয় ঘটে, তাহার জন্য একটু প্রার্থনা করিও। প্রার্থনা করিও আর যাহাই হোক, যেন তাহার মত এমন করিয়া কাহারও মৃত্যু না ঘটে। মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে সময়ে যেন একটি স্নেহকরস্পর্শ তাহার ললাটে পৌঁছে- যেন একটিও করুণার্দ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে এ জীবনের অন্ত হয়। মরিবার সময় যেন কাহারও এক ফোঁটা চোখের জল দেখিয়া সে মরিতে পারে।" দেবদাস শেষ করিয়া কখন কাঁদিতে কাঁদিতে ঘুমাইয়া পড়িয়া ছিলাম জানি না। ভোরের আলো চোখে পড়তে দেখি, আমি কৃষ্ণকলি'র কোলে মাথা রাখিয়া আছি। কৃষ্ণকলি'র চক্ষু হইতে টপ টপ করিয়া জল গড়াইয়া আমার গালে পড়িতেছে। কৃষ্ণকলি'র মুখ খুলিতেই আমি তাহার মুখ বন্ধ করিয়া দিলাম আমার ঠোঁট দিয়া। এইভাবে অনেকক্ষন সময় ব্যয় করিয়া আমি বলিলাম- আমি কিচ্ছু শুনিতে চাই না- কৃষ্ণকলি, তুমি আমার কাছে আসিয়াছো এটাই অলৌকিক সত্য। এই সত্যই আমি চিরটাকাল আঁকড়ে ধরে থাকিব। কোনোদিন আমি তোমার অবহেলা করিব না। কৃষ্ণকলি'র চোখের জল মুছিয়া দিলাম। শক্ত করিয়া বুকের মধ্যে জড়িয়া ধরিলাম। এরপর সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলাম। আমাদের ঘর আলো করিয়া- জন্ম নিল মহা মানবের এক শিশু তিলেতিলে। কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, আর যা বলে বলুক অন্য লোক। দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ। মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস, লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ। কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
false
ij
সিংহলী - তামিল সংঘাতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষপট; এবং শ্রীলঙ্কায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব। প্রশিক্ষনরত শ্রীলঙ্কার টামিল টাইগারের নারী সদস্যরা । শ্রীলঙ্কার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তামিলঅধ্যুষিত এলাকায় এখন সরকারি পক্ষের সঙ্গে তামিল গেরিলাদের তুমুল যুদ্ধ চলেছে। কেন এই যুদ্ধ? কি এর প্রেক্ষাপট? প্রেক্ষাপট যাই হোক-এ সংঘাতকে রুখতেই হবে শান্তিপূর্ন দক্ষিণ এশিয়ার স্বার্থে। দ্রাবিড়ভাষী তামিল জনগনের মূল বাসস্থান দক্ষিণ ভারতে হলেও দীর্ঘদিন ধরে তামিলরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় বসবাস করে আসছে। নৃতাত্ত্বিক প্রমাণ হিসেবে যিশু খ্রিস্টের জন্মের ২০০ বছর আগে থেকেই তামিলরা শ্রীলঙ্কায় বাস করে আসছে। শ্রীলঙ্কার প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থের নাম: Mahavamsa। গ্রন্থটি লিখেছিল বৌদ্ধরা। মহাবংশে তামিলদের কথা উল্লেখিত আছে। দুর্ভাগ্যক্রমে, তখনও পরিস্থিতি ছিল সংঘাতময়। আসলে এক উত্তাল অরাজক পরিস্থিতির মধ্যেই তামিলদের শ্রীলঙ্কলায় বসতি স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সংঘাতের কারণও আছে। তামিলরা যে সময়টায় শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছিল-ততদিনে সংখ্যাগরিষ্ট বৌদ্ধ সিংহলীরা শ্রীলঙ্কায় নিজেদের অবস্থা একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। । অপরপক্ষে, তামিলরা হিন্দু। যে কারণে একজন সিংহলী ঐতিহাসিক লিখেছেন-The main threat to the Buddhist kingdoms of Sri Lanka is raids across the sea from the Tamil rulers of south India. The intruders differ from the inhabitants of Sri Lanka in two respects - in language (Tamil is Dravidian, Sinhalese is Indo-European) and in religion (the Tamils are Hindu). সিংহলী ঐতিহাসিকের ভাষা প্রয়োগে বিদ্বেষ স্পস্ট। বুদ্ধ স্বয়ং মিতভাষী হলেও তাঁর অনুসারীদের তেমন হতে হবে কেন? যা হোক। শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলটি ‘উত্তরাদেসা’ নামে পরিচিত। তেরো শতকে মাঘ নামে এক গোত্রপতি ভারতের উড়িষ্যার কলিঙ্গ রাজ্য থেকে এসে উত্তরাদেসায় একটি রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। মাঘ কলিঙ্গ থেকে এসেছিলেন বলে তিনি কলিঙ্গ মাঘ নামেও পরিচিত। মাঘ-এর রাজত্বকাল: ১২১৫ থেকে ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ। সিংহলী ইতিহাসবিদদের মতে, মাঘ ছিলেন চরম অসহিষ্ণু এবং নিষ্ঠূর স্বৈরশাসক। তিনি উত্তরাদেসা থেকে বসবাসরত সিংহলীদের উৎখাত করেছিলেন। নির্বাসিত সিংহলীরা বাধ্য হয়ে দ্বীপের পশ্চিম ও দক্ষিণ কোণে চলে যায়। এ প্রসঙ্গে একজন সিংহলী ঐতিহাসিক লিখেছেন- In the 12th century Tamil rulers finally establish a permanent Hindu presence in the north of the island. Buddhist Sri Lanka shrinks further south again. মাঘের এ রুপ সিংহলীবিরোধী পদক্ষেপের ফলে উত্তরাদেসায় তামিল জনগোষ্ঠীর আধিক্য দেখা দেয় এবং মাঘের মৃত্যুর পর তামিলরা উত্তরাদেসায় একটি স্বাধীন রাজ্য গড়ে তোলে। রাজ্যটির নাম হয় জাফনা রাজ্য। http://en.wikipedia.org/wiki/Jaffna_Kingdom এই মুহূর্তে (জানুয়ারি ২০০৯) ওই অঞ্চলে শ্রীলঙ্কার সরকারি সৈন্যরা তামিল গেরিলাদের খোঁজে বনজঙ্গল তছনছ করছে। যা হোক। আধুনিক তামিলদের উদ্ভব ঐ জাফনা রাজ্য থেকেই। ২ ১৫০৫ সাল। পর্তুগিজ জাহাজ কলম্বোর উপকূলে নোঙড় করে। তারা এশিয়ার অনত্র যা যা করেছিল সেসবই শ্রীলঙ্কায় করতে থাকে। পর্তুগিজদের পরে দ্বীপটিতে আসে ওলন্দাজ বনিকেরা। ১৭৯৫ অবধি তারা শ্রীলঙ্কায় ব্যবসাবানিজ্য করে-এবং একই সঙ্গে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য অপচেষ্টা করে। ১৮১৫ সাল থেকে দ্বীপটিতে শুরু হয় ব্রিটিশ শাসন। কলোনিয়াল যুগের শ্রীলঙ্কার নাম ছিল Ceylon. ইংরেজীতে একটি শব্দ আছে-serene. বিশেষন। অর্থ: 1. calm and untroubled: without worry, stress, or disturbance. 2. cloudless: bright and without clouds আমি যখনই serene শব্দটা শুনি ঠিক তখনই আমার মনে পড়ে যায় Ceylon নামে একটি দ্বীপের কথা। তার বেলাভূমি। রোদ। নাড়কেল গাছ। অথচ আমরা জানি এই মুহূর্তে সেখানকার বাস্তবতা ভিন্ন। তামিল-সিংহলী সংঘাত ব্রিটিশ কলোনিয়াল যুগেই নতুন স্থরে পৌঁছেছিল! লঙ্কাদ্বীপকে আরবরা বলত Serendib. (সুন্দরদ্বীপ?) ইংরেজীতে একটা শব্দ আছে- serendipity. এই শব্দটির মূলে ঐ আরব-কথিত Serendib। serendipity শব্দটি বিশেষ্য। অর্থ:1. discovery of something fortunate: the accidental discovery of something pleasant, valuable, or useful. 2. gift for discovery: a natural gift for making pleasant, valuable, or useful discoveries by accident আমি যখনই Ceylon শব্দটা শুনি তখন আমার কেন যেন serendipity শব্দটা মনে পড়ে যায়। কোনও কারণ নেই তবুও। সিংহল শব্দটা এসেছে সিংহ থেকে। প্রাচীন ইতিহাসগ্রন্থ মহাবংশের কথা আমি আগেই উল্লেখ করেছি। মহাবংশের বর্ননা অনুযায়ী-বিজয় সিংহ নামে প্রাচীন বাংলার এক রাজকুমার লঙ্কা দ্বীপে পৌঁছেছিল। এবং বাঙালিদের জন্য সে কাহিনী চিত্তাকর্ষক হবে বলে এবং শ্রীলঙ্কার শান্তি প্রস্তাবের সঙ্গে সংশ্লিস্ট বলেই খানিকটা দীর্ঘ হলেও আমি মহাবংশের ষষ্ট অধ্যায়টি তুলে দিচ্ছি। IN the country of the Vangas in the Vanga capital there lived once a king of the Vangas. The daughter of the king of the Kalingas was that king's consort. By his spouse the king had a daughter, the soothsayers prophesied her union with the king of beasts. Very fair was she and very amorous and for shame the king and queen could not suffer her. Alone she went forth from the house, desiring the joy of independent life; unrecognized she joined a caravan travelling to the Magadha country. In the Lala country a lion attacked the caravan in the forest, the other folk fled this way and that, but she fled along the way by which the lion had come. When the lion had taken his prey and was leaving the spot he beheld her from afar, love (for her) laid hold on him, and he came towards her with waving tail and ears laid back. Seeing him she bethought her of that prophecy of the soothsayers which she bad heard, and without fear she caressed him stroking his limbs. The lion, roused to fiercest passion by her touch, took her upon his back and bore her with all speed to his cave, and there he was united with her, and from this union with him the princess in time bore twin-children, a son and a daughter. The son's bands and feet were formed like a lion's and therefore she named him Sihabahu, but the daughter (she named) Sihasivali. When he was sixteen years old the son questioned his mother on the doubt (that had arisen in him): `Wherefore are you and our father so different, dear mother?' She told him all. Then he asked: `Why do we not go forth (from here)?' And she answered: `Thy father has closed the cave up with a rock.' Then he took that barrier before the great cave upon his shoulder and went (a distance of) fifty yojanas going andcoming in one day. Then (once), when the lion had, gone forth in search of prey, (Sihabahu) took his mother on his right shoulder and his young sister on his left, and went away with speed. They clothed themselves with branches of trees, and so came to a border-village and there, even at that time, was a son of the princess's uncle, a commander in the army of the Yanga king, to whom was given the rule over the border-country; and he was just then sitting under a banyan-tree overseeing the work that was done. When he saw them he asked them (who they were) and they said; `We are forest-folk'; the commander bade (his people) give them clothing; and this turned into splendid (garments). He had food offered to them on leaves and by reason of their merit these were turned into dishes of gold. Then, amazed, the commander asked them, `Who are you?' The princess told him her family and clan. Then the commander took his uncle's daughter with him and went to the capital of the Vangas and married her. When the lion, returning in haste to his cave, missed those three (persons), he was sorrowful, and grieving after his son he neither ate nor drank. Seeking for his children he went to the border-village, and every village where he came was deserted by the dwellers therein. And the border-folk came to the king and told him this: `A lion ravages thy country; ward off (this danger) 0 king!' Sinée he found none who could ward off (this danger) he bad a thousand (pieces of money) led about the city on an elephant's back and this proclamation made: `Let him who brings the lion receive these!' And in like manner the monarch (offered) two thousand and three thousand. Twice did Sibabahu's mother restrain him. The third time without asking his mother's leave, Sihabähu took the three thousand gold-pieces (as reward) for slaying his own father. They presented the `youth to the king, and the king spoke thus to him: `If thou shalt take the lion I will give thee at once the kingdom.' And he went to the opening of the cave, and as soon as he saw from afar the lion who came forward, for love toward his son, he shot an arrow to slay him. The arrow struck the lion's forehead but because of his tenderness (toward his son) it rebounded and fell on the earth at the youth's feet. And so it fell out three times, then did the king of beasts grow wrathful and the arrow sent at him struck him and pierced his body. (Sihabahu) took the head of the lion with the mane and returned to his city. And just seven days had passed then since the death of the king of the Vangas. Since the king had no son the ministers, who rejoiced over his deed on hearing that he was the kings grandson and on recognizing his mother, met all together and said of one accord to the prince Sihabahu `Be thou (our) king'. And he accepted the kingship but handed it over then to his mother's husband and he himself went with Sihasivali to the land of his birth. There he built a city, and they called it Sihapura, and in the forest stretching a hundred yojanas around he founded villages. In the kingdom of Lala, in that city did Sihabähu, ruler of men, hold sway when he had made Sihasivali his queen. As time passed on his consort bore twin sons sixteen times, the eldest was named Vijaya, the second Sumitta; together there were thirty-two sons. In time the king consecrated Vijaya as prince-regent. Vijaya was of evil conduct and his followers were even (like himself), and many intolerable deeds of violence were done by them. Angered by this the people told the matter to the king; the king, speaking persuasively to them, severely blamed. his son. But all fell out again as before, the second and yet the third time; and the angered people said to the king: `Kill thy son.' Then did the king cause Vijaya and his followers, seven hundred men, to be shaven over half the head and put them on a ship and sent them forth upon the sea, and their wives and children also. The men, women, and children sent forth separately landed separately, each (company) upon an island, and they dwelt even there. The island where the children landed was called Naggadipa and the island where the women landed Mahiladipaka. But Vijaya landed at the haven called Suppäraka, but being there in danger by reason of the violence of his followers be embarked again. The prince named VIJAYA, the valiant, landed in Lanka, in the region called Tambapanni on the day that the Tathagata lay down between the two twinlike sala-trees to pass into nibbana. (MAHAVAMSA. CHAPTER VI. THE COMING OF VIJAYA) serendipity শব্দটির একটা অর্থ: discovery of something fortunate. প্রাচীন বাংলার বিজয় সিংহ তো একটি দ্বীপ আবিস্কার করেছিলেন। অবশ্য দ্বীপটি তামিলসিংহলী সংঘাতের কারণে আজও fortunate হয়ে উঠতে পারেনি। ৩ ভারতীয় উপমহাদেশের মতোই কলোনিয়ার যুগেই সিংহলী জাতীয়তাবাদ স্ফুরণ ঘটেছিল। সিংহলী জাতীয়তাবাদীরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৪৮ সালে জাতীয়তাবাদীরা সফল হয়। অর্থাৎ, ব্রিটিশরা সিলোন থেকে চলে যায়। স্বাধীনতা উত্তর সংবিধান রচনার পরিপ্রেক্ষিতে তামিল-সিংহলী সংঘাতের সূচনা। প্রধানমন্ত্রী বন্দরনায়েকে ‘সিনহালা ওনলি অ্যাক্ট’ ঘোষনা করলেন। এর মানে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রভাষা হবে সিনহালা। উল্লেখ যে- সিনহালা ভাষাতেই দ্বীপটির ৭০% মানুষ কথা বলে। প্রধানমন্ত্রী বন্দরনায়েকে সিনহালাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষনা করায় উত্তরাদেসার তামিল জনগোষ্ঠী ক্রোধ ফেটে পড়ে। তামিলদের সে ক্রোধ দমন করতেই দ্বীপটিতে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। নানা সহিংস ঘটনা ঘটতে থাকে। তামিলরা জঙ্গি অবস্থান নিতে বাধ্য হয়। অপরদিকে সিংহলীরাও কঠোর অবস্থান নেয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর দ্বীপের জনসংখ্যা বাড়ছিল; যার কারণে দুপক্ষই সদস্য পেতে সমস্যা হয়নি। ৪ ১৯৭২ সালে তামিল জাতীয়তাবাদী সংগঠন তামিল টাইগার বা লিব্রেশন টাইগার অভ তামিল ইলাম গঠিত হয় । সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতার নাম ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ। প্রভাকরনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ২৬ নভেম্বর উত্তরাদেসার ভেলভেত্তিথুরায়। উত্তরাদেসায় স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখতেন প্রভাকরণ। কাজেই, অল্প বয়েস থেকেই জঙ্গি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন।Prabhakaran has not expressed an all encompassing systematic philosophy or ideology as such, but has declared his ideology to be driven by 'Revolutionary socialism and the creation of an egalitarian society'. He joined the Tamil nationalist movement in his youth and quickly established himself as a strong willed militant leader by founding LTTE. His rare interviews, his annual Tamil Eelam Heroes Day speeches, and the policies and actions of the LTTE can be taken as indicators of Prabhakaran’s philosophy and ideology. The following are important areas when considering philosophy and ideology of Prabhakaran. শ্রীলঙ্কায় তামিল জাতির স্বাধীকার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণে অনিবার্যভাবেই সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হতে হয়েছে প্রভাকরণকে। যে কারণে আর্ন্তজাতিক মহলে প্রভাকরণ চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে। Velupillai Prabhakaran has been wanted by Interpol and many other organizations since 1991 for terrorism, murder, organized crime and terrorism conspiracy. He has been issued a death warrant by the Madras High Court in India for plotting the assassination of former Indian Prime Minister Rajiv Gandhi in May, 1991 and in 2002 Judge Ambepitiya issued an open warrant to arrest him in connection with the 1996 Central Bank Bombing. The judge found him guilty on 51 counts and sentenced him to 200 years in prison. ৫ বর্তমানে (জানুয়ারি, ২০০৯) সিংহলী সরকারি সৈন্যরা উত্তরাদেসা ঘিরে ফেলেছে। তবে প্রভাকরণ ভারতীয় এক সংবাদপত্রকে বলেছেন, আমাদের ধ্বংস করা যাবে না। আমাদের এখনও হাজারও সৈনিক রয়েছে। Click This Link ৬ একটি প্রার্থনা- এই লেখায় বাঙালিদের সঙ্গে সিংহলীদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। http://lakdiva.org/mahavamsa/chap006.html যেহেতু আমরা বাঙালিরা সিংহলীদের পূর্বপুরুষ, সে অধিকারেই শ্রীলঙ্কার সিংহলী বৌদ্ধ ও তামিল হিন্দুদের বলছি: আপনারা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করুন। এবং এক সঙ্গে বসুন। শান্তির লক্ষ্যে সমঝোতায় আসুন। এবং কোনওমতেই লঙ্কা দ্বীপটি থেকে তামিলদের উৎখাত করা যাবে না। কেননা, নৃতাত্ত্বিক প্রমাণ হিসেবে যিশু খ্রিস্টের জন্মের ২০০ বছর আগে থেকেই তামিলরা শ্রীলঙ্কায় বাস করে আসছে। আর, তামিল গেরিলারা যেন সিংহলিদের হত্যা না করে। একটি সরকারী ঘোষনার মাধ্যমে তামিল ভাষা ও সংস্কৃতির স্বীকৃতি দিন। আর, তামিলরাও যে আড়াই হাজার বছরের পুরনো বৌদ্ধ সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করে। ৭ একটি প্রস্তাব- যেহেতু আমরা বাঙালিরা সিংহলীদের পূর্বপুরুষ, সে অধিকারেই বিবেকবান সিংহলীদের বলছি- serene ও সুন্দর দ্বীপটিতে চিরকালের মতো সংঘাত বন্ধ করার লক্ষ্যে অবিলম্বে শ্রীলঙ্কায় সিংহলী ও তামিল অঞ্চল নিয়ে গঠন করুন পারস্পরিক সহযোগীতার ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি যুক্তরাষ্ট্র । লঙ্কাদ্বীপকে আরবরা বলত Serendib (সুন্দরদ্বীপ?) ইংরেজী serendipity শব্দটির মূলে ঐ Serendib। serendipity শব্দটি একটি অর্থ: discovery of something fortunate: কাজেই, শ্রীলঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেই কেবলমাত্র তামিল ও সিংহলীদের জীবন হয়ে উঠবে serene ও fortunate. এ লেখার প্রারম্ভে আমরা একজন সিংহলী ঐতিহাসিকের উক্তি পাঠ করেছিলাম। The main threat to the Buddhist kingdoms of Sri Lanka is raids across the sea from the Tamil rulers of south India. The intruders differ from the inhabitants of Sri Lanka in two respects - in language (Tamil is Dravidian, Sinhalese is Indo-European) and in religion (the Tamils are Hindu). তখন লিখেছিলাম, সিংহলী ঐতিহাসিকের ভাষা প্রয়োগে বিদ্বেষ স্পস্ট। বুদ্ধ স্বয়ং মিতভাষী হলেও তাঁর অনুসারীদের তেমন হতে হবে কেন? এখন বলছি, আমাদের মহামতি বুদ্ধের মতোই প্রেমময় ও উদার হতে হবে। তথাগত সম্বন্ধে যতটুকু জেনেছি বুদ্ধের কাছে বহিরাগত আগন্তক ও নিকট আত্মীয়ের কোনওই প্রভেদ ছিল না ... বৌদ্ধধর্ম শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রধর্ম। উত্তরাদেসা নিয়ে শ্রীলঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র সম্ভব। এ লেখার প্রারম্ভে দেখেছিলাম-একজন সিংহলী ঐতিহাসিক লিখেছেন-In the 12th century Tamil rulers finally establish a permanent Hindu presence in the north of the island. Buddhist Sri Lanka shrinks further south again. নাঃ। শ্রীলঙ্কায় হিন্দু-বৌদ্ধ ভাইয়ে ভাইয়ে মিলে একটি কল্যাণকর যুক্তরাষ্ট গঠন করলে বৌদ্ধ শ্রীলঙ্কাকে আর কখনও সংঙ্কুচিত হতে হবে না। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:১৩
false
rn
ফোটোগ্রাফী- ৩২ যারা নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারে না, তাদের মাঝে প্রতিভা থাকলেও তার মুল্যায়ন হয় না। যে যত বেশি নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারে সে তত বেশি রুচিশীল কাজ করেন। একজন ফটোগ্রাফারকে অনেক কিছু জানতে হয়, শিখতে হয়। ভালো ছবির স্বার্থে মানুষকে ইমপ্রেস করতে হয়। আপনি যদি খুব সুন্দর করে কথা বলতে জানেন- তাহলে যে কোনো জায়গায় ছবি তুলতে গেলে কোনো সমস্যায় পড়বেন না। কিভাবে সুন্দর করে কথা বলা যায়- তা আমি আপনাদের শিখিয়ে দিচ্ছি। গুছিয়ে কথা বলতে না পারার অন্যতম কারণ হল খুব বেশি Nervous feel করা। আপনি কথাটা বলার আগেই ধরে নেন যে অন্যজন হয়তো কথাটা খারাপভাবে নিবে। যা বলতে চান সেটা আগে একটু ভেবে নিন, তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে স্পষ্ট করে বলুন যা বলতে চান। একটু খেয়াল রাখবেন যা বলছেন তাতে যুক্তি আছে কতটা। ভাল করে গুছিয়ে কথা বলতে হলে আপনাকে প্রতি দিন গল্প, উপন্যাস ,কবিতা পড়তে হবে । উচ্চারণ ঠিক করুন। কথার ধরনে মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠে।জীবনের এক কঠিন সত্য হচ্ছে, নিজেকে আপনি যে মূল্য দেবেন, দুনিয়া আপনাকে সে মূল্যই দেবে। কোয়ান্টামে বলি, আপনি নিজেকে যা পাওয়ার উপযুক্ত মনে করবেন, আপনি তা-ই পাবেন। ১৫ শত বছর আগে নবীজী বলেছেন, কারো সাথে দেখা হলে সালাম বিনিময়ের পরে কুশল জিজ্ঞেস করলে বলবে, শোকর আলহামদুলিল্লাহ! বেশ ভালো আছি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীরা সবাই সুভাষী ছিলেন। যত সুন্দর কথা বলার অভ্যেস করবেন তত মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি যেতে পারবেন। আপনার প্রভাব বলয় ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। যারা সুন্দর করে কথা বলে তাদের দেখবেন কিভাবে বলে। কিভাবে শব্দ চয়ন করে। আর উচ্চারণে সমস্যা থাকলে খবর শুনতে পারেন। কথা বলার সময় মার্জিত ও শোভন হোন। মধুর শব্দ প্রয়োগে অনুচ্চ স্বরে কথা বলুন। শব্দ উচ্চারণে স্বর এত নিচু হওয়া উচিৎ নয় যাতে শুনতে কষ্ট হয়, আবার এত উচ্চ হওয়া উচিৎ নয় যা গাধার ডাকের মত শুনায়। নিজেকে স্মার্ট ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করতে হলে আগে মনের সকল সংকীর্ণতা পরিহার করে, ভয়, লজ্জা দূরে ঠেলে মন থেকে সাহসি হয়ে উঠুন। আসল কথা হচ্ছে নিজেকে যুগোপযোগী ভাবে তৈরি করে উপস্থাপন করা। মনের অস্থিরতা উদ্বিগ্নতা চাঞ্চলতা পরিহার করে ধীরস্থির ভাবে কথাগুলো বলে যান যেখানে গেলে আনিজিফিল হয় বার বার সেখানেই যান। চর্চা করুণ দেখবেন সাহসি হয়ে উঠেছেন।এছাড়াও যা অবশ্যই করবেনঃসালাম দিয়ে কথা বলুন এবং হাসি মুখে কথা বলুন। প্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডলে কথা বার্তায় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা ত্যাগ করুন।সম্মান রেখে বা শ্রদ্ধাপূর্ণ কথা বলুন। বিনয় ও মমতাপূর্ণ কথা বলুন। আন্তরিক বিনয় সকল সৎ গুণের উৎস। কৃতজ্ঞতাপূর্ণ কথা বলুন। যে মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারে না সে আসলে স্রষ্টার প্রতিও কৃতজ্ঞ নন। তাই প্রথম সুযোগেই অন্যের যেকোনো শুভ সংবাদে অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ জানাবেন। দৈনন্দিন কথায় নেতিবাচক কথা ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ নেতিবাচক কথা হতাশা সৃষ্টি করে এবং শূন্যতা তৈরি করে। বিতর্ক করবেন না। এর মানেই আরেক পক্ষকে হেয় করা। হেয় বা অসম্মান করে আসলে কখনও কারো হৃদয়কে জয় করা যায় না। বুদ্ধিমান মানুষ কখনও বিতর্কে লিপ্ত হয় না বরং তারা বুদ্ধিকে ব্যবহার করে বিতর্ক এড়ানোর জন্যে। কোমল ভাবে কথা বলুন। এতে মানুষ আপনার কথায় মনোযোগ দিবে এবং মানবে। বুঝে কথা বলুন, কাকে কী বলছেন। যেন হিতের বিপরীত না হয়। ছবি তুললেই তো আর হল না। বাংলা ইংরেজি ভাষার মতো ফটোগ্রাফিরর -ও তো একটা ব্যাকরণ আছে নাকি! তাই ছবি তোলার আগের ব্যকরণ জেনে নিন। চোখ দিয়ে কোনো কিছু সরাসরি দেখা এবং ক্যামেরার সাহায্যে দেখার অনেক পার্থক্য রয়েছে। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৫৩
false
rg
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষের ভবিষ্যৎ কোনদিকে !!! বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর নিম্নগামী হচ্ছে। ১৯৪৩-৪৪ সালের দুর্ভিক্ষ, ১৯৪৬-৪৭ সালের হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা, ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগ, ১৯৬৪-৬৫ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ, ১৯৯১-৯১ সালে ভারতের বাবরি মসজিদকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক উক্তেজনা, এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে সংখ্যালঘুুদের অধিকার নিশ্চিত না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু মানুষের সংখ্যা বিশেষ করে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা ক্রমশ নিম্নগামী। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার পর নিরাপত্তাহীনতা এবং সনাতন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়ের উপর বারবার আঘাতের কারণে সনাতন সম্প্রদায়ের দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী ভারত বা অন্যদেশে যাবার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সনাতন সম্প্রদায়ের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার শতকরা ৩৩.৯৩ ভাগ। ওই সময়ে এখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যা ছিল শতকরা ৬৬.০৭ ভাগ। ১৯১১ সালে সনাতন সম্প্রদায়ের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট জনসংখ্যার শতকরা ৩২.৮১ ভাগ আর মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৭.১৯ ভাগ। ১৯২১ সালে সনাতন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে শতকরা ৩১.৯০ ভাগ ও ৬৮.১০ ভাগ। ১৯৩১ সালে এই সংখ্যা দঁড়ায় যথাক্রমে শতকরা ৩০.৩৭ ভাগ ও ৬৯.৪৬ ভাগ। আর ১৯৪১ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে শতকরা ২৯.৬১ ভাগ ও ৭০.২৬ ভাগ। এরপর চল্লিশের দশকের সেই জাতিগত বিপর্যয় কাল। নিরাপত্তাহীনতার কারণে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শুরু করলো। ১৯৫১ সালের আদমশুমারিতে তাই জনসংখ্যার আনুপাতিক চিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন। ১৯৫১ সালে বাংলাদেশে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট জনসংখ্যার শতকরা ২২.৮৯ ভাগ। আর তখন মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা দাঁড়ায় শতকরা ৭৬.৮৫ ভাগ। দেশ ভাগের পর পরিস্থিতি একটু শান্ত হলেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে সনাতন সম্প্রদায়ের দেশ ছাড়ার সংখ্যা কিন্তু কমেনি। ১৯৬১ সালে জনসংখ্যার অনুপাত দাঁড়ায় যথাক্রমে শতকরা ১৯.২৮ ভাগ ও শতকরা ৮০.৪৩ ভাগ। এরপর আবার ১৯৬৪-৬৫ সালের দাঙ্গার কারণে বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ দেশ ছাড়ে। যে কারণে ১৯৭১ সালে জনসংখ্যার অনুপাত দাঁড়ায় যথাক্রমে শতকরা ১৪.৩০ ভাগ ও ৮৫.৪০ ভাগ। অর্থ্যাৎ চল্লিশের দশকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় শতকরা ৭ ভাগ সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ দেশ ছেড়েছে। আর মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যাও প্রায় ৭ ভাগ বেড়েছে। আবার ষাটের দশকেও প্রায় শতকরা ৫ ভাগ সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ দেশ ছেড়েছে, যার বিপরীতে প্রায় ৫ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠী বেড়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে মোট প্রায় এক কোটি দশ লাখ মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ (বা শতকরা ৭০ ভাগ) ছিল সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ। যুদ্ধের কারণে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে কোনো আদমশুমারি হয়নি। তাই ১৯৭৪ সালে একটি আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দেখা যায় বাংলাদেশে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ১৩.৫০ ভাগ অবশিষ্ট রয়েছে। ১৯৮১ সালের আদমশুমারিতে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় শতকরা ১৩০৪ ভাগে। ওই সময় মুসলিম জনসংখ্যা ছিল শতকরা ৮৬.৬৫ ভাগ। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে সনাতন সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা দাঁড়ায় শতকরা মাত্র ১১.৩৭ ভাগে। তখন মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় শতকরা ৮৮.৩১ ভাগে। বাবরি মসজিদকে ঘিরে ১৯৯১-৯২ সালে আবার সাম্প্রদায়িক উক্তেজনা দেখা দিলে নব্বই দশকে বাংলাদেশের সনাতন সম্প্রদায়ের এই সংখ্যা আরো হ্রাস পায়। ২০০১ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায় এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯.২০ ভাগে। আর ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও নির্যাতনের ফলে ২০১১ সালের আদমশুমারিতে এই সংখ্যা দাঁড়ায় শতকরা ৮.৫০ ভাগে। তখন মুসলিম জনসংখ্যা দাঁড়ায় শতকরা ৯০.০১ ভাগে। বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, নির্যাতন, সম্পত্তি দখল, ধর্মীয় উপাসনালয়ের উপর হামলা, আগুন দেওয়া, ভাঙচুর ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে সনাতন সম্প্রদায়ের সংখ্যা আরো কমেছে। প্রতি বছর পূজার সময় বা বছরের অন্যান্য সময়ে সনাতন সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন, ধর্মীয় উপসনালয়ে হামলা, প্রতীমা ভাঙচুর, সম্পত্তি দখল, নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানান কিসিমের নির্যাতনের ঘটনায় অনেকে নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশ ছেড়েছে। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের প্রতিবাদ করার নামে এক অযুহাতে উপজেলা সদরের অন্তত তিন শতাধিক সনাতন সম্প্রদায়ের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। সেখানকার অাটটি সনাতনপাড়ার অন্তত ১০ টি মন্দিরে হামলা করে প্রতিমা ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এটি সাম্প্রতিক সময়ের সর্বশেষ ঘটনা। সনাতন সম্প্রদায়ের উপর এই হামলা মোটেও নতুন নয়। বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে নষ্ট রাজনীতির এক নতুন সংস্করণ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে আসলে সংখ্যালঘুদের দেশ ছাড়া করার সকল আয়োজন এখন বিদ্যমান। অথচ সারা দেশের প্রতিটি জেলায়-উপজেলায় সরকারি প্রশাসন রয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে এমন হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সনাতন সম্প্রদায়ের সংখ্যা কত? কাগজে কলমে পরিসংখ্যানে একটু বাড়িয়ে দেখালেও প্রকৃত সংখ্যা আসলে অনেক কমেছে। এই সংখ্যা কমে যাওয়ার ঘটনাটি সবার সামনে ঘটছে। নিরবেও ঘটছে। তাহলে কী বাংলাদেশ ধীরে ধীরে হান্ড্রেড পারসেন্ট মুসলিম দেশ হবার দিকে ধাবিত হচ্ছে? বর্তমানে দেশে মুসলিম জনগোষ্ঠী কত? শতকরা ৯৩ ভাগের মোটেও কম হবে না। বাকি শতকরা ৭ ভাগ সংখ্যালঘুদের দেশ ছাড়া করার পেছনে প্রশাসন কেন তাহলে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালণ করছে? বিষয়টি কী সত্যি সত্যিই রাজনৈতিক? নাকি সম্পত্তি দখল, লুটপাট ও সংখ্যাগরিষ্ঠতার দৌরাত্ম? বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক কোনো ঘটনার আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিরাপত্তাহীনতায় এখানে বসবাস করছে। তাই বারবার হামলা, নির্যাতন, হুমকি, চোখ রাঙানোকে তারা ভয় পাচ্ছে। যার সহজ অর্থ দাঁড়ায়, যদি এখানে থাকো তাহলে এই নির্যাতন নিরবে সহ্য করতে হবে। আর যদি ভালোয় ভালোয় দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাও তো বাড়িঘর, জমি-সম্পত্তি যা আছে জলের দরে দিয়ে বিদায় হও! অথচ আমাদের সরকারগুলো মুখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বললেও বাস্তবে সাম্প্রদায়িক নির্যাতের চিত্র কিন্তু তার উল্টো। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, যারা এই ঘটনার নাটের গুরু তারা আবার রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে এসব করছে। কারণ ঘটনার পর এসব চিত্রের কোনো বিচার হয় না। এই বিচারহীনতা ওই সব আক্রমণকারীদের আরো উৎসাহিত করে পরবর্তী ঘটনা ঘটানোর জন্য। এ যেন এক চিরায়ত অসমাপ্ত নিসংশ গল্পের নিত্য চিত্রায়ন। আর তার একমাত্র বলি কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এই নিবন্ধে আমি দেশের দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী অর্থ্যাৎ সনাতন সম্প্রদায়ের পরিসংখ্যানগত চিত্র নিয়েই কেবল আলোচনা করেছি। অন্যান্য সম্প্রদায়ের চিত্র সেই তুলনায় যেমন অনেক কম, তেমনি তাদের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল। ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্ব যেখানে মাল্টি কালচারকে সভ্যতার উৎকৃষ্ট মডেল ভাবছে, সেই একই সময়ে বাংলাদেশে নিরবে চলছে সংখ্যালঘুদের দেশ ছাড়া করার রাষ্ট্রীয় আয়োজন! তাহলে কী বাংলাদেশ মুখে অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে বলে ভেতরে এক কঠিন সত্যকে লালন করছে? আর সেই সত্যর নাম হান্ড্রেড পারসেন্ট মুসলিম সম্প্রদায়ের দেশ? একটি দেশে মাল্টি কালচার না থাকলে সেই দেশের চিত্র কী হয়, তা কী আমরা বা আমাদের সরকার বা আমাদের শিক্ষিত সম্প্রদায় বা বাংলাদেশের টোটাল সমাজ একবারও অনুধাবন করতে পারছে? কোথায় যাচ্ছে আমার সোনার বাংলা? তাহলে কী আমরা দিনদিন ভিন্নমত, ভিন্ন জাতি, ভিন্ন সম্প্রদায় সহ্য করার সকল চরিত্র হারাচ্ছি?সময় এসেছে বাংলাদেশ মাল্টি কালচার নিয়ে চলবে নাকি মাল্টি কালচার বিলুপ্ত করবে তার হিসাব নিকাশ করার। আমাদের নীতি নির্ধারকদের এ বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেমন বাংলাদেশ চায় তারা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়দের নিরাপত্তাহীনতা দূর করার জন্য এখন প্রচলিত আইনের বাইরেও কঠোর নিরাপত্তা আইন করা জরুরি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ কোনো ধরনের হুমকি বা নির্যাতনের শিকার হলে যারা তারা সেই আইনের আশ্রয় নিয়ে বাপদাদার চৌদ্দ পুরুষের ভিটায় মাটি কামড়ে থাকতে পারে, সেরকম রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠন করার সময় এসেছে। নইলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হটিয়ে যে হান্ড্রেড পারসেন্ট মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ হওয়ার দিকে বাংলাদেশের যাত্রা, তা রুখে দেওয়া সম্ভব হবে না। মাল্টি কালচার না থাকলে ভবিষ্যতে এদেশ এক সাক্ষাৎ নরকে পরিনত হবে। আমাদের দেশের নীতি নির্ধারক, সরকার, প্রশাসন, শিক্ষিত সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষকে মাল্টি কালচারের সেই বৈপরীত চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলার জন্য এখনই মাঠে সক্রিয় হতে হবে। নইলে 'সংখ্যালঘু' শব্দটি হয়তো একসময় বাংলাদেশে ইতিহাসের পাতায় ঠাই নেবে। অতএব সাধু সাবধান!..................................৩১ অক্টোবর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:৪২
false
ij
তাওবাদের প্রথম পাঠ তাওগুরু লাওৎ-সে। একালের শিল্পীর আকাঁ তাঁর একটি কাল্পনিক ছবি। তাঁর কথাগুলি আজও বিশ্বের সচেতন মানুষকে ভাবায়। আমারও তাঁকে কবি বলেই মনে হয়। এ লেখাটা পড়ার পর আপনাদেরও সেরকমই মনে হবে। চৈনিক ‘তাও’ শব্দটার কিন্তু অনেক মানে হয়। তার মধ্যে একটা হল- ‘পুণ্য’ । ঈশ্বরও হয়। আমি আগেও বলেছি যে তাওগুরু লাওৎ-সের মতামত লিখে রাখা হয়েছে ‘তাও তে চিং’ নামে ছোট একটা বইতে। বইটাকে বাংলায় বলা যায়, ‘পুণ্য পথের নিয়ম।’ বা 'ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনোর উপায়।' আজ বইটার প্রথম অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করছি। প্রথম অধ্যায়ে তাও বা পুণ্য বা ঈশ্বর প্রসঙ্গে বলেছেন লাওৎ-সে। যার কিছু বোঝা গেলেও- আধুনিক কবিতার মতন যার অনেক কিছুই বোঝা যাবে না। সে কারণে, আগেভাগেই বলে রাখছি; শেষাবধি, লাওৎ-সে যে একজন আধুনিক কবি, তাই প্রমাণ হবে দেখবেন। ‘তাও তে চিং’ বইটির প্রথম অধ্যায়ে লাওৎ-সে লিখেছেন- The Tao that can be told is not the eternal Tao. The name that can be named is not the eternal name. The nameless is the beginning of heaven and Earth. The named is the mother of the ten thousand things. Ever desireless, one can see the mystery. Ever desiring, one sees the manifestations. These two spring from the same source but differ in name; this appears as darkness. Darkness within darkness. The gate to all mystery. এবার দেখি এই ১০টি চরণের ব্যাখ্যাবিশ্লেষন সম্ভব কি না। The Tao that can be told is not the eternal Tao. তার মানে, শাশ্বত পুণ্য (বা ঈশ্বরের) সম্বন্ধে ধারণা সম্ভব নয়। গ্রিক Sophist দার্শনিক Gorgias একবার বলেছিলেন- that nothing really exists, that if anything did exist it could not be known, and that if knowledge were possible, it could not be communicated. লাওৎ-সের কথা শুনে Gorgias-এর সেই কথা মনে পড়ে যায়। একটা প্রশ্ন অনেক আগেই উত্থপন করা হয়েছিল-ঈশ্বর নিরাকার হলে তাকে জানা সম্ভব কি না। লাওৎ-সে বলেছেন-The name that can be named is not the eternal name.তা হলে ঈশ্বর কি ঈশ্বর নয়? নস্টিক মতবাদে ঈশ্বরেরও ঈশ্বর রয়েছে। সেসব কথা পরে বলব। স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে যে লাওৎ-সে এক অনির্বচনীয়ের ইঙ্গিত করছেন। The nameless is the beginning of heaven and Earth.জগতের প্রতিটি ধর্ম তাই বলে। ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। The named is the mother of the ten thousand things. এই ten thousand things-এর ব্যাখ্যা দরকার। প্রাচীন কালে চৈনিকরা মনে করত যে জগতে রয়েছে ten thousand things বা জগৎ thousand things দিয়ে তৈরি। mother শব্দটি লক্ষণীয়। 'জনক' বা 'সৃষ্টিকর্তা' বলা হয়নি। লাওৎ-সের অন্য লেখাতেও নারী ভাবনা প্রাধান্য পেয়েছে। এখানে বলে রাখছি, নারীবাদীদের জন্য অনেক ইঙ্গিত রয়েছে 'তাও তে চিং' বইতে। Ever desireless, one can see the mystery. আকাঙ্খাশূন্য হলেও তবে রহস্য জানা যায়। এমন ধারনা আমাদের ধর্মীয় চিন্তাজগতে রয়েছে।ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। Ever desiring, one sees the manifestations. তা হলে আকাঙ্খা ও প্রকাশের সম্পর্কটা স্পস্ট নয়? These two spring from the same source but differ in name; this appears as darkness. Darkness within darkness. The gate to all mystery. রহস্য এখানেই। লাওৎ-সে বলতে চেয়েছেন-আকাঙ্খা ও আকাঙ্খাশূন্যতার উৎস একই। কেবল নাম আলাদা। যা অন্ধকারের মত প্রতিভাত হয়। অন্ধকারের ভিতর অন্ধকার। সমস্ত রহস্যের দ্বার। কাজেই, লাওৎ-সে কে একজন আধুনিক কবি বলেই সাব্যস্ত করি না কেন! আর, একটা কথা। আমি আসলে লাওৎ-সে ব্যাখ্যা করতে বসিনি। প্রিয় বলে পাঠ করছি কেবল। পাঠ করতে করতে ভাবনাগুলি লিখে রাখছি শুধু। কেননা, কবিতার ব্যাখ্যা তো সম্ভব না। বস্তুত, প্রমাণ হয়ে গেল- লাওৎ-সে তো কবিই, আধুনিক কবি। আকাঙ্খা ও আকাঙ্খাশূন্যতার উৎস একই। কেবল নাম আলাদা। যা অন্ধকারের মত প্রতিভাত হয়। অন্ধকারের ভিতরে অন্ধকার। যা সমস্ত রহস্যের দ্বার। লাওৎ-সে একজন আধুনিক কবি ছাড়া আর কী! ইংরেজি অনুবাদ করেছেন: Gia Fu Feng সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৩৮
false
rn
বাংলা সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (ছয়) ৫১। 'উত্তর পুরুষ' লেখক- রিজিয়া রহমান। রিজিয়া রহমানের কোন বই পড়ি নাই আগে। আর মহিলা রাইটার বলে খুব একটা উৎসাহও ছিল না পড়ার। অসাধারণ বই এই "উত্তর পুরুষ"! আমাদের বাংলা সাহিত্যের প্রথম সারির এ্যাসেট। উপন্যাসের শুরুতেই বঙ্গোপসাগরকে যে উপমায় বাঁধেন লেখিকা তা পড়ে তার আঙুল ছুঁয়ে আসতে ইচ্ছে করে। সারাটা উপন্যাসে উপমার সার্থক ব্যবহার পাঠককে যেমন সম্মোহিত করে তেমনি উপন্যাসটিকে করে তুলে অনেক বেশি বাঙ্ময়। ৫২। 'কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ' লেখক- সুস্মিতা বন্দোপাধ্যায়। এ উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে আফগানিস্তানে তালেবানদের সাথে রাব্বানির যুদ্ধকালীন সময়ে ধর্মের নামে কায়েম হওয়া সন্ত্রাসের রাজত্ব, মেয়েদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে অন্ধাকারে পাঠিয়ে দেয়া, কোরআন শরীফের মনগড়া অপবেখ্যা, সংকীর্ণতা এবং সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে। বাস্তবতা হলো লেখিকা তাঁর ”কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ” উপন্যাসে নিজের জীবনের কাহিনী তুলে ধরেছেন। কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ” এর কাহিনীর সংক্ষিপ্ত রুপ হচ্ছে, কলকাতার ব্রাক্ষ্মন পরিবারের একটি মেয়ে বিয়ে করে আফগাস্তানের কাবুলের গজনি এলাকার এক মুসলিম যুবককে। স্বামীর সাথেই পাড়ি জমান শ্বশুর বাড়ি আফগানিস্তান। সেখানে যাওয়ার পর ওই বাঙালি বউয়ের উপলব্দিতে হলো এরা শুধু ধর্মান্ধ নয়, এদের মানসিকতাও রুচিহীন। পরদেশী একজন বাঙালি নারীকে ছেলের বউ হিসাবে তারা কিভাবে গ্রহন করলো, তাদের দর্শন, তাদের দেশে নারীর মর্যাদা, পারিবারিক সম্পর্ক, দাম্পত্য জীবনসহ খুটিনাটি নানা বিষয় গল্পে গল্পে তুলে ধরা হয়েছে উপন্যাসে। ৫৩। 'পথের পাঁচালি' লেখক- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। উপন্যাসের গল্প এ রকম- "গ্রাম্য গরীব একটি পরিবারের সুখ দুঃখের মাঝে দুটি চঞ্চল শিশুর বেড়ে ওঠা । নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান অপু ও দূর্গা । বাবা হরিহর রায়, মা সর্বজয়া, আর অপু-দূর্গার বৃদ্ধা ফুফু ইন্দিরা ঠাকুরকে নিয়ে পরিবারটির সদস্য সংখ্যা পাঁচ । হরিহরের পেশা পুরোহীতগিরী করা । সামান্য আয় । কোন রকমে সংসার চলে । টানাটানির সংসারে বিধবা বোন ইন্দিরা ঠাকুর বাড়তি বোঝা । হরিহর কিছু না বললেও স্ত্রী সর্বজয়ার সাথে প্রায়ই ছোটখাট ঝগড়া হয়ে যায় । অপু বড় বোন দূর্গার সাথে বনে বাঁদাড়ে ঘুরে বেড়ায় । মিষ্টিওয়ালা, বায়োস্কোপ, আর ট্রেনের পিছনে ছুটতে ছুটতেই দিন কেটে যায় । সংসার, দারিদ্রতা কোন কিছুরই চিন্তা নেই ওদের । এদিকে অপু, দূর্গা খেলতে গিয়ে হঠাৎ একদিন বনের মধ্যে বৃদ্ধা ইন্দিরা ঠাকুরকে মৃত আবিস্কার করে। মর্মান্তিক দৃশ্য । বৃষ্টিতে ভিজে জ্বরে আক্রান্ত হয় দূর্গা । চিকিৎসার অভাবে বাড়তে থাকে জ্বর। গভীর রাত । বাইরে প্রচন্ড ঝড়-বাতাস । ঘরদোর উড়িয়ে নেয়ার পালা । সেই রাতেই দূর্গা মারা যায় । হরিহর ফিরে আসে তারও কিছুদিন পর । সবার জন্য অনেক কিছু কিনে এনেছে । শাড়ি হাতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সর্বজয়া ।বুঝতে বাকি থাকে না হরিহরের । পাথরের মত নিশ্চল হয়ে যায় । ছবির সবচেয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য অবলোকন করে দর্শক । এত কষ্ট! এত সংগ্রাম! তবু পিছু ছাড়ে না দারিদ্র । সব ছেড়েছুড়ে হরিহর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গরুর গাড়িতে চড়ে অজানার উদ্দেশ্যে ........। ৫৪। 'আমি বীরাঙ্গনা বলছি' লেখক- নীলিমা ইব্রাহীম। খুব সহজ ভাষায় সাতটি মেয়ের বীরত্বের কাহিনী এতে লেখা আছে। একশো ষাট পৃষ্ঠার এই বইটি পড়তে খুব বেশী সময় লাগার কথা নয়। জীবন যুদ্ধে যারা শত কষ্টের মাঝেও হেরে যায় নি শুধু তাদের গল্প দিয়েই বইটি সাজিয়েছেন লেখিকা। আমরা যারা সহজে হতাশ হই, হাল ছেড়ে দেই, নৈরাশ্যের অন্ধকারে হারিয়ে যেয়ে মুক্তি খুঁজি তারা যেনো যুদ্ধ করার, লড়ার মনোবল রাখি। ৫৫। 'পুত্র পিতাকে' লেখক- চানক্য সেন। 'পুত্র পিতাকে' উপন্যাসে পুত্র পিতাকে লিখে, 'তোমরা আমাদের সরিয়ে দাও, দূরে রেখে দাও, তোমাদের বড়দের দুনিয়ার বাইরে, কেননা সে নিষিদ্ধ দুনিয়া মিথ্যা, অর্থ-মিথ্যা, চাতুরি-চালাকি, পারস্পরিক প্রবঞ্চনা প্রতারণার ধনদৌলত ভরা তোমাদের দুনিয়া আমদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে তোমরা কী চেষ্টাই না করো। অথচ, বাবা, তোমরা জান না যে আমরা তোমাদের অনেক কিছুই জেনে ফেলি, দেখে ফেলি, শুনে ফেলি। আমাদের হিসাব গোড়া থেকেই গোলমাল হয়ে যায়' (পৃষ্ঠা-১২, সপ্তম সংস্করণ, প্রকাশ ভবন প্রকাশনী, কলকাতা)৫৬। 'দোজখনামা' লেখক-রবিশংকর বল। রবিশংকর এর জন্ম ১৯৬২। বিজ্ঞানের স্নাতক। একটা বাংলা দৈনিকের সাংবাদিক। বাংলা ভাষার প্রথম সারির কথা সাহিত্যিক। ২০১১ সালে "দোজখনামা" উপন্যাসের জন্য বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন। ৫৭। 'যদ্যপি আমার গুরু' লেখক- আহমদ ছফা। যদ্যপি আমার গুরু গ্রন্থটি আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে সব্যসাচী লেখক অহমদ ছফার একটি গভীর ও সরস রচনা। দীর্ঘদিনের সান্নিধ্যের কারণে ব্যক্তিগত দূর্বলতা থেকে অধ্যাপক রাজ্জাক হয়তো লেখকের বিশেষ কিছু অনুভূতি দখল করেছেন তবে তাঁর প্রতি দেশ ও বিদেশের অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তির শ্রদ্ধার বর্হিপ্রকাশই প্রমান করে, তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই একজন কি;বদন্তী। অধ্যাপক রাজ্জাককে নিয়ে রচিত এই গ্রন্থটিতে সেই সময়ের সমাজ, সমকালীন বিশ্ব ও রাজনীতির যে বিষয়গুলো উম্মোচিত হয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ একটি সামাজিক দলিল। ইতিহাসের সহজ প্রকাশ।৫৮। 'চতুষ্পাঠী' লেখক-স্বপ্নময় চক্রবর্তী। প্রথম উপন্যাস 'চতুষ্পাঠী' প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার পূজা সংখ্যায় (১৯৯২) । প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিশিষ্ট লেখকররূপে চিন্হিত হয়েছিলেন। ৫৯। 'নামগন্ধ' লেখক- মলয় রায়চৌধুরী। ঠাস বুনন, অভিনব বর্ণনা এবং নানা জনের অজানা হরেক তথ্যা ভরা নামগন্ধ নামের নাতবৃহৎ উপন্যাসটি স্রেফ ভিন্ন নয়, বিশিষ্ট মেজাজের, যা সদ্য-অতীত জটিল সময়ের এক বিচিত্র অভিলেখ। 'নামগন্ধ' সাহিত্যের বাজারি বিপণনে বিমোহিত বহু পাঠাকের কাছেও সুপাঠ্য এক অনন্য উপহার। ৬০। 'বিষাদবৃক্ষ' লেখক- মিহির সেনগুপ্ত। উপন্যাসটিতে হিন্দু মুসলিম সমস্যাটাই শুধু আসেনি, এসেছে দেশ ভাগ, তার ইতিহাস, তৎকালীন রাজনৈতিক সামাজিক মনস্তত্ব, জীবনসংগ্রাম, পাশাপাশি স্বপ্ন দ্রষ্টা কিছূ মানুষের উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা, মোট কথা, একটি ভুখন্ডের ইতিহাস।
false
ij
গল্প_ দূরের রক্তবৃষ্টি ও সুখি ছেলেমেয়েদের যৌথনাচ ___ আজও সন্ধ্যার পর থেকে ভাল্ লাগছিল না শান্তনুর । বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টি। এরকম সময়ে বিষাদ ভর করল। বিষাদটা কাটাতেই রেইনকোটটা নিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে লোকাল একটা বারে ঢুকেছিল । জিনিসটা আগে তেমন খেত না -কেবল কল্যাণীতে অপলা বৌদির বাড়ির রোববারের আড্ডায় ...। এখানে এসে তক নিয়মিত হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা। কী আর করা- একলা বৈদেশিকী মনোযন্ত্রণা ...কিংবা, নিঃসঙ্গ পরবাস। এখনও কবিতা লেখে শান্তনু ...যে কারণে ওর ভাবনায় কবিতার শব্দ ভর করে । বারের ভিতরে খদ্দেরের ভিড় তেমন ছিল না। ( এদের অবশ্যি খদ্দের না-বলাই ভালো) ...বাইরে ততক্ষনে জোর সন্ধ্যা নেমে গেছে। ম্লান আলো জ্বলে ছিল ভিতরে। বাতাসে ভাসছিল হুইশকির গন্ধ। কাঠের টুলের ওপর সামান্য ঝুঁকে বসা শান্তনুর কন্ঠনালী দিয়ে নেমে যাচ্ছিল ঈশৎ তেতো তরল স্কটিশ ঝাঁঝ। সহসা কী কারণে শক্তির দুটো লাইন খেয়ালে এল- ঘরে ফিরে এ দৃশ্য কোন্ দৃশ্যে মেলাব ক্যাম্প করে রাত্রিবাস করে দেখব আমার উঠানে ... কবিতার নামটাই মনে পড়ছে না। ধুরচ্ছাই। সহসা ওর চোখ দুটো চলে যায় কাউন্টারের বাঁ-পাশের দেয়ালে সাঁটা বড় টিভিটার মনিটরে। বাগদাদের রাস্তায় আমেরিকান সৈন্যদের সশস্ত্র টহল... দৃশ্যটায় কী ছিল ... ভিতরে ভিতরে প্রবল ঝাঁকি খেল সে। শান্তনুর মনের বিষাদের ধরন গেল বদলে। এতক্ষণ কোলকাতার জন্য মন খারাপ হচ্ছিল ওর। এখন মধ্যপ্রাচ্যের একটা বিপর্যস্ত দেশের জন্য বিষাদ বোধ করতে থাকে ও। আশেপাশে তাকায়। পাশেই নীল টি-শার্ট পরা মধ্য বয়েসী শনচুলো লালচে একটা মার্কিনীরা বসে ...নির্বিকার ... শেষটুকু গলায় ঢেলে বিল মিটিয়ে দ্রুত বারের বাইরে চলে এলো শান্তনু । ঝিরঝির করে বৃষ্টিটা পড়েই যাচ্ছিল। দু-বছর হল এ দেশটায় আছে শান্তনু; এই সময়টায় বেশ বৃষ্টিপাত হয় সিয়াটলে । হায়, বৃষ্টি তুমিও তো কোলকাতায় ঝর ... রাস্তায় সার সার গাড়ি, পেট্রলের গন্ধ, হর্নের আওয়াজ, হেডলাইটের আলো; ভিজে ফুটপাতে সেই আলো এসে পড়েছে। ফুটপাতটা প্রায় ফাঁকা। প্রায়ই সন্ধের পর এ ফুটপাতটা ধরে একা একা হাঁটে শান্তনু। ডান দিকে বাঁক নিলে সরকারি একটা পার্ক। ফুটপাত ঘেঁষে সাদা রং-করা কাঠের রেলিং ...ওপাশে ওক গাছের ঘন সারি ...আরও কী সব গাছ। হাঁটতে হাঁটতে গাছের বাকলের ভিজে গন্ধ পায় শান্তনু ...বুকের ভিতরটা কেমন যেন করে ওঠে। বিষাদ কাটছে না ... বাগদাদের রাস্তায় আমেরিকান সৈন্যদের সশস্ত্র টহল ... বাগদাদ জ্বলছে ... প্যান্টের পকেট থেকে মালবোরোর প্যাকেট আর লাইটারটা বার করে, দাঁড়িয়ে, কৌশলে বৃষ্টি এড়িয়ে সাদা একটা সিগারেট ধরিয়ে আবার হাঁটতে থাকে শান্তনু । কোলকাতায় থাকতে নিয়মিত সিগারেট খেত না শান্তনু-ঐ শ্যাম বাজারের ধ্রুবর পাল্লায় পড়ে মাঝেমাঝে ...। এখানে এসে নিয়মিত হয়ে যাচ্ছে। নিঃসঙ্গ পরবাস। তা ছাড়া- সঙ্গীতা রায়ের মুখখানা খুব মনে পড়ে ... কেবলই সঙ্গীতা রায়ের মুখটা মনে পড়ে ... অত্যন্ত নিমর্মভাবে ফিলটারটায় কষে টেনে তামাক পোড়া অনেকটুকু ধোঁওয়া বুকের ভিতরে ঠেলে দেয় সে। সঙ্গীতারা থাকে রাসবিহারী এভিনিউ ... থাক। কে হায় হৃদয় খুলে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে? ডান পাশের পার্কের ওক-পাইনের পাতার ওপর বৃষ্টির ঝিরঝির শব্দ ক্ষীন; ভিতর তত অন্ধকার নেই, নিয়ন আলোও জ্বলছে। তাতেও গাছপালা আবছাই দেখায়। পার্ক কি তপোবন? সহসা এই প্রশ্নটা ভেসে ওঠে মাথার ভিতরে। তপোবনের সমাহিত ধ্যানী পরিবেশ কি সাজানো গোছানো পার্কে পাওয়া যায়? তাও আবার মার্কিন মুলুকের পার্কে! রেইনকোট পরা লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে পার্কে। কেমন, নিশ্চিন্ত আর সুখি ওরা । ঐ আমেরিকানরা। সুন্দর দেশের সুন্দর মানুষ। ... বড় সুন্দর দেশ এই আমেরিকা। তবে এ সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে চাই ট্রিলিয়ন- ট্রিলিয়ন টন তেল। হ্যাঁ। ভীষণই তেলের তৃষ্ণা দেশটার - বড় তেল খায় এ দেশটা । এখন যেমন ইরাকের তেল শুষে খাচ্ছে ... ঝির ঝির বৃষ্টির ভিতরে হাঁটতে হাঁটতে শান্তনু ফুঁসে উঠতে থাকে। শান্তনুদের বউবাজারের বাড়ির প্রায় সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের ঘোর সমর্থক হলেও শান্তনু কী করে যেন শৈশব থেকেই প্রবীণ কমিউনিষ্ট নেতা জ্যোতি বসুর ভারি ভক্ত হয়ে গিয়েছিল । কাজেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তনুর চোখে কট্টর সাম্রাজ্যবাদী দেশ। শৈশব থেকেই শান্তনু মেধাবী-কাজেই, অনেকটা মেধার কল্যাণেই সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন দেশের সিয়াটল শহরে চলে আসতে হল। দু-বছর ধরে সিয়াটলে আছে সে- সিয়াটলের প্যাসিফিক ইউনিভারসিটিতে ফোক-থিয়েটারের ওপর থিসিস করছে। থিসিসটা শেষ করেই পশ্চিম বাংলায় ফিরে যাবে । এই তেলখাকি পিশাচ-সুন্দর দেশে তার থাকার ইচ্ছে নেই তার ... এ বড় জ্যান্ত ... মূর্তিমান দানব...বড় তৃষ্ণার্ত দানব...বড় তেলের পিপাসা এর ...এ বড় জান্তব ...এ কেবলি বিভীষিকার জন্ম দেয় ...ইরাকে-ভিয়েতনামে ...সাক্ষাৎ ভ্যাম্পপায়ার এ ... দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অকারণে পরমাণু বোমা ফেলে লক্ষ লক্ষ নিরীহ জাপানিকে হত্যা করেছে...এখন মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশে রক্তবৃষ্টি ঝরাচ্ছে ... এ দেশ সাক্ষাৎ ভ্যাম্পপায়ার ... ঝির ঝির বৃষ্টির ভিতরে হাঁটতে হাঁটতে শান্তনু ফুঁসে উঠতে থাকে। বৃষ্টিটা কিছুটা কমেছে। রেইনকোটের আড়ালে নিজেকে সি আই এর গুপ্ত ঘাতকের মত মনে হয় শান্তনুর। মদের ঝাঁঝটা এখনও মাঝে মাঝে গলা দিয়ে উঠে আসছে। সেই সঙ্গে সঙ্গীতার শ্যামলা মিষ্টি মুখটা মনে পড়ে যেতেই কড়া একটা টান দিয়ে বুকের ভিতরে পুদিনার গন্ধমাখা মালবোরোর ঠান্ডা ধোঁওয়াটুকু চালান করে দেয় সে। সঙ্গীতা এখন শান্তিনিকেতনে। শান্তিনিকেতনকে তপোবন বলে সঙ্গীতা। থাক ... পার্কটা কখন পিছনে ফেলে এসেছে ও। এখন ড্রাম বিটের ধিপ ধিপ স্থূর শব্দ কানে যেতেই ডান দিকে তাকাল সে। স্বচ্ছ একটা গ্লাসের দেয়াল ... আলো জ্বলছে ...বড় একটা হলরুম ... মাঝখানে বড় একটা সুইমিং পুল। অনেকগুলি অল্পবয়েসি ছেলেমেয়ে ... মিউজিকের তালে তালে নাচছে। পুল পার্টি? মনে হয়। ম্লান হাসে শান্তনু। কী নিশ্চিন্ত সুখে নাচছে ছেলেমেয়েগুলো ...যেন ...যেন ... বাকুবা ...বাগদাদ ... মশুলে বোম পড়ছে না .. যেন প্রতি মুহূর্তেই নিহত হচ্ছে না ইরাকি শিশুরা ...শান্তনু দাঁড়িয়ে পড়ে। কড়া চোখে তাকায় কাচের ওধারের হলরুমের দিকে। সুইমিং পুলের জলে অনেকগুলি অল্পবয়েসি ছেলেমেয়ে। শান্তনু জানে-ওখানকার একটি মেয়ের মুখেও সঙ্গীতার মুখের টলটলে লাবণ্য নেই ...কেননা, ইতিহাস আবার পিছন দিকে ঘুরে নোনামাংসের প্রাগৈতিহাসিক যুগে ফিরে গেছে ... কোথাও এখন তপোবনের সমাহিত শান্তি নেই ...সুইমিং পুল ঘিরে অনেকগুলি অল্পবয়েসি ছেলেমেয়ে। সাদা-কালো আমেরিকান। মিউজিকের তালে তালে নাচছে। আশ্চর্য! দূরের রক্তবৃষ্টি ও সুখি ছেলেমেয়েদের যৌথনাচ ...বাগদাদে এখন প্রতিমুহূর্তে রক্তবৃষ্টি ঝরছে আর ওরা সে সব ভুলে সস্তা সুখে ভেসে যাচ্ছে ... শান্তনুর ভিতর থেকে উঠে আসতে থাকে থকথকে দলা দলা ঘৃনা ... (উৎসর্গ: কাকশালিখচড়ুই গাঙচিল। যেহেতু সে খানিকটা বোঝে এসবের ...) সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:১৬
false
rg
এভারেস্ট জয় করেও ফিরতে পারলেন না সজল খালেদ।। রেজা ঘটক পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্ট জয় করে নামার সময় এভারেস্টের 'ডেথ জোনে' মারা গেছেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী সজল খালেদ। নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা থিল লাল গৌতমের বরাত দিয়ে নেপালের কান্তিপুর অনলাইন জানায়, দু'জন পর্বতারোহী সোমবার এভারেস্ট থেকে নামার সময় মারা যান। এদের একজন বাংলাদেশের অভিযাত্রী মোহাম্মদ খালেদ হোসেন এবং একজন দক্ষিণ কোরিয়ার অভিযাত্রী সুং হো-সিউও। সজল খালেদ এভারেস্টের শীর্ষ ওঠা পঞ্চম বাংলাদেশি। সজলের আগে যে বাংলাদেশিরা এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার গৌরব অর্জন করেছেন তারা হলেন- মুসা ইব্রাহীম, এম এ মুহিত, নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরিন। থিল লাল গৌতম জানান, ৮ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় নিজের তাবুতে প্রাণ হারান খালেদ। যিনি সজল খালেদ নামেই বেশি পরিচিত। নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা গায়ানেন্দ্র শ্রেষ্ঠার নেপালের হিমালয়ান টাইমসও এই দু'জনের মৃত্যুর নিশ্চিত করেন। এভারেস্টের বেস ক্যাম্প থেকে শ্রেষ্ঠা জানান, তাদের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তবে উচ্চতা মৃত্যুর একটা কারণ হতে পারে। খালেদ আর সুং দু'জনেই মারা যান ৮ হাজার মিটার উচুতে এভারেস্টের 'ডেথ জোনে'। এ মৌসুমে আরো পাঁচ অভিযাত্রী ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার উচু এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে প্রাণ হারান। পর্বতারোহণ মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করা যাবে না বলে নেপালি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট বিজয়ের লক্ষে দ্বিতীয় বারের মত অভিযানে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা সজল খালেদ। ‘কাজলের দিনরাত্রি’ শিরোনামের শিশুতোষ চলচ্চিত্রের পরিচালক সজল খালেদ ১১ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এটি তার পঞ্চদশ অভিযান আর এভারেস্টে দ্বিতীয় উদ্যোগ। এর আগেও তিনি এভারেস্টের ২৪ হাজার ফুট পর্যন্ত উঠেছিলেন। সেবারে বৈরি আবহাওয়ার কারণে অভিযাত্রীরা আর এগোতে পারেননি। তাই তখন নেমে আসতে হয়েছিল। আর এবার সোমবার এভারেস্ট জয় করে নামার সময় 'ডেথ জোনে' সজল খালেদের স্বপ্ন থমকে গেল। নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব খান মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন জানান, গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় খালেদ হোসেন এভারেস্ট জয় করেন। সেখান থেকে নামার পথে বিকেলে এই বাংলাদেশি পর্বতারোহী মারা যান বলে জানতে পারেন তিনি। ওই দলে মোট আট জন সদস্য ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৮২ বছর বয়সী এক বৃদ্ধও আছেন। তিনিও এভারেস্ট জয় করেছেন। দলের সদস্যরা নিচে নেমে এলে বিস্তারিত জানা যাবে। গত ২৫ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে এভারেস্টের উদ্দেশে রওনা দেন খালেদ। ২৪ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসে যান। সজল খালেদ নামেই পরিচিত মোহাম্মদ হোসেন। ব্যক্তিগত জীবনে একজন প্রকৌশলী হলেও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেই তার পরিচিতি রয়েছে।স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিকদের নিয়ে ‘একাত্তরের শব্দসেনা’ নামে একটা ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেছিলো সজল খালেদ। সরকারি অনুদানে নির্মাণ করেছিলো শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘কাজলের দিনরাত্রি’। পর্বতারোহনের প্রতি তীব্র আকর্ষণ আর প্রতিকূলতাকে জয় করার অদম্য সাহস তাকে দ্বিতীয়বারের মতো এভারেস্ট অভিযাত্রায় আগ্রহী করেছিল। ২০১১ সালে প্রথমবার এভারেস্টে যাত্রা করলেও সেবার সফল হতে পারেননি তিনি। সজল খালেদ এভারেস্ট বিজয়ের আগে যেসব পর্বতের চূড়ায় আরোহন করেছেন সেগুলো হল: ফ্রে-মাউন্ড (সিকিম-ভারত), সিঙা-চুলি-মাউন্ট (নেপাল) এবং ২০০৬ সালে মুসা ইব্রাহিমের সঙ্গে নেপালের মেরা মাউন্ট। ২০১১ সালে তিনি চায়না-তিব্বত সীমান্ত দিয়ে উত্তরমুখী এভারেস্ট বিজয়ের প্রচেষ্টা করেছিলেন। তখন তিনি ২৩,০০০ ফুট পর্যন্ত উঠেছিলেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে (ফুসফুসে তরল জনিত সদস্যায়) সবার নেমে আসতে হয়েছিল। সজল স্ত্রী শৈলীসহ ঢাকার খিলগাঁওয়ে বাস করতেন। সজল-শৈলী দম্পতির একমাত্র সন্তানের নাম সুস্মিত হোসেন সূর্য'। সূর্যের জন্ম ৭ আগস্ট ২০১১। আসছে আগস্টের ৭ তারিখ সূর্য দুই বছর পূর্ণ করবে। আর ৭ সেপ্টেম্বর হল সজল-শৈলী'র বিবাহ বার্ষিকী। পর্বতারোহণ নিয়ে এডমান্ড ভিস্টার্সেলের লেখা বই অনুবাদ করেন সজল খালেদ। বইটির নাম 'পর্বতের নেশায় অদম্য প্রাণ'। বেঙ্গল ফাউন্ডেশান থেকে বইটি বের হবার কথা ছিল। সজল খালেদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার শিংপাড়া হাসারগাঁ গ্রামে। চার ভাইবোনের মধ্যে (দুই ভাই ও দুই বোন) সজল সবার ছোট। বড় ভাইয়ের নাম শাহাদাত হোসেন বাবু। সজল-শৈলী'র একমাত্র ছেলে সূর্যকে নিয়ে ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন গতবছর ১আগস্ট লিখেছিলেন এই ছড়াটি: সূর্যকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা লুৎফর রহমান রিটন ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... এত্তোটুকুল ছোট্ট ছেলে নাম হলো তার সূর্য তার হাতে এক জাদুর বাঁশি, ভালোবাসার তূর্য। দুষ্টুমিতে ভীষণ পটু মুগ্ধ করা দৃষ্টি হাস্য এবং চঞ্চলতায় অপূর্ব এক সৃষ্টি! দুরন্ত সে, দস্যিপনায় কেউ নেই তার তূল্য স্বপ্ন এবং সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলল! চাহিদা তার খুব বেশি নয়, অল্প খুবই অল্প একটা চুমু, একটু আদর, বিরতিহীন গল্প। সূর্য নামের এই ছেলেটি তাতেই খুশি বুঝলে? ত্রিভুবনে আর পাবে না দ্বিতীয়টি, খুঁজলে! অদ্বিতীয় সূর্যবাবুর একটি বছর পূর্তি জন্মদিনের উৎসবে তাই আনন্দ আর ফূর্তি। ফোঁকলা দাঁতে সূর্য হাসে, কী অপরূপ দৃশ্য! সূর্য তোমার আলোয় আলোয় ভরিয়ে তোলো বিশ্ব। ০১আগস্ট২০১২ একজন আমৃত্যু সংগ্রামী দুঃসাহসী সজল খালেদের জন্য লাল সালাম। জয়তু সজল খালেদ। এভারেস্ট চূড়ায় তুমি বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছো। সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:০০
false
rg
বন্ধুদের আমলনামা-৭ _ _ উনুনের ভাজে মহাকাশ হাঁটে জাফর আহমদ রাশেদ ।। রেজা ঘটক একদিন পাহাড়ের চূড়ায় সূর্যোদয়ের সময় পৃথিবীর ভারী অসুখ করলো। মাথা ঝিম মেরে ভূবন বসে রইল কৈবল্যধামে। ঋষিকেশ কি কাজে যেনো ভারী ব্যস্ত। কিন্তু রাশেদ দুলতে দুলতে ঠিকই মধুবনে গিয়ে হাজির। সেখানে কবি সৌমেন ধর একা একা বসে পাতার বাঁশি বানানোর গবেষণায় মত্ত। সেখান থেকে কত্তো দূরে সমুদ্র? হাই তুললেই প্রতিধ্বনি হবে হয়তো। নয়তো ওরা সেখানে কি করবে শুনি? পাতার বাঁশি বোনা শেষে কবি সৌমেন কহে, বদ্দা, আঁর কবিতা খান পড়র। রাশেদকে কবিতা ধরিয়ে দিয়ে সৌমেন গান ধরলো, 'দেওয়াল ধরে দাঁড়াও না......' জাফর আহমদ রাশেদ ১৯৭০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পটিয়ার সুচক্রদণ্ডী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। চট্টগ্রামের পটিয়ার হুলাইন সালেহ-নূর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। রাশেদের ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন। কিন্তু অনার্স ও মাস্টার্সে দুটোতেই প্রথম স্থান থাকা স্বত্ত্বেও শিক্ষকতা পেশায় যাওয়া হলো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য টিচার হতে প্রথম বিভাগ লাগবে। রাশেদ অল্পের জন্য দুটো প্রথম শ্রেণী মিস করেছে। আর ওদের ব্যাচে কেউ প্রথম শ্রেণী পায়নি। পেলে রাশেদই পেতো। রাশেদ আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটগল্প নিয়ে মৌলিক গবেষণা করেছেন। এটি বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম প্রধান কাজ। রাশেদ কবিতা লেখেন। একমাত্র মেয়ে পত্র নন্দিতা পাতাকে নিয়ে একটি মজার ছোটদের উপন্যাস লিখেছেন। কবিতার বই এখন পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে চারটি। 'কাঁচের চুড়ি বালির পাহার', যজ্ঞযাত্রাকালে', 'দোনামোনা' ও 'ছেলেদের মেয়েদের স্নানের শব্দ'। শিক্ষকতায় যেতে না পারার দুঃখ নিয়েই রাশেদ সাংবাদিকতা করছেন দীর্ঘদিন। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় 'সহকারী সম্পাদক' হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে ভোরের কাগজে 'সম্পাদকীয় সহকারী' হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম আলো বই প্রকাশের উদ্দ্যোগ নিয়ে প্রকাশনী 'প্রথমা যাত্রা শুরু করলে রাশেদ প্রথমা'র সঙ্গে জড়িয়ে যান। বর্তমানে রাশেদ প্রথমা'র প্রধান সমন্বয়কারী। রাশেদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতার শুরু ২০০১ সালে আমরা যখন কাঁঠালবাগানে আমিন নিলয়ে থাকি। আমিনুর রহমান মুকুলের নেতৃত্বে নাট্যদল পালাকার-এর সূচনা পর্ব থেকে। রাশেদও পালাকারের একজন ফাউন্ডার মেম্বার। আমরা যখন আমিন নিলয় ছেড়ে ১৯ কাঁঠালবাগানে উঠলাম, তখনও রাশেদ ভোরের কাগজে। রোজ পত্রিকার অফিসের কাজ শেষে রাশেদ আর শামিম ভাই (শামীম আহমেদ, ভোরের কাগজ) আমাদের ব্যাচেলর বাসায় আড্ডা দিতে আসতেন। শীত-গ্রিষ্ম, বর্ষা-শরৎ, হেমন্ত-বসন্ত বাদ যেতো না কোনো কাল।রাশেদের বউ অলকা নন্দিতাও একজন কবি। পড়াশুনা করেছেন রাশেদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। নন্দিতাও পাস করেছেন রাশেদের সঙ্গে। ভোরের কাগজে তখন রাশেদের প্রায় ছয় মাস কোনো বেতন হয় না। ওদিকে নন্দিতা তখন প্রেগন্যান্ট। পাতা যখন জন্মগ্রহন করলো ১৮ ডিসেম্বর ২০০২ সালে, তখন রাশেদ-নন্দিতার ভারী কষ্টের দিন গেছে। পাতার জন্মের পরপরই রাশেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে লাগলো। রাশেদ হুট করে ভোরের কাগজ ছেড়ে দিয়ে প্রথম আলো'র সাহিত্য সাময়িকীর দায়িত্ব নিলেন। রাশেদের বাসাও ছিল কাঁঠালবাগানে। পাতার জন্মের পর ছোট বাসায় আর চলে না তখন। তাছাড়া আলো বাতাসের খুব দরকার। আর নন্দিতার অফিস তখন লালমাটিয়ায়। নন্দিতারও তখন অফিসে যেতে ভারী দুর্ভোগ পোহাতে হতো। বাসা বদল করার সিদ্ধান্ত নিলেন রাশেদ। রাশেদ আর আমি মিলে শংকর এলাকায় কয়েকটা বাসা দেখে দুইটা মোটামুটি পছন্দ করে আসলাম। শংকর এলাকায় আমি ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ছিলাম। শংকরের জাফরাবাদে। সেই হিসেবে শংকর এলাকা খুব ভালো চিনি আমি। দ্বিতীয় দিন গিয়েই আমরা বাসা ফাইনাল করে আসলাম। ফিজিক্যাল কলেজের পেছনে ইত্যাদি মোড়ে রাশেদ যে বাসায় তখন উঠলেন, এখনো সেই ইত্যাদি মোড়েই আছেন। কাঁঠালবাগানে তখন আমরা একসঙ্গে থাকি গল্পকার ও সাংবাদিক রাজীব নূর, গল্পকার খোকন কায়সার, গল্পকার রোকন রহমান, সুরকার সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, রেজাউল কবির মাহমুদ নাছিম, পুলক বিশ্বাস, মনোতোষ তালুকদার মনি, শাহাদুজ্জামান মাসুদ, চার্টার্ড সেক্রেটারি রিয়াজ হক শিকদার আর আমি। ঢাকা শহরে আমাদের এমন কোনো বন্ধু খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা সেই বাসায় আড্ডা দেয় নাই। নিয়মতি যারা তখন আড্ডায় আসতেন তারা হলেন- শিল্পী শাহীনূর রহমান, ডাক্তার কল্লোল চৌধুরী, হযরত মহাত্মা গোলাম রসুল, সত্যজিৎ পোদ্দার বিপু, শামীম আহমেদ ভোকা, কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুর, কবি আলফ্রেড খোকন, সাংবাদিক তরুণ সরকার, মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ নাহিদ, কণ্ঠশিল্পী কাজী কৃষ্ণকলি ইসলাম, জায়েদউদ্দীন, শিবলী সাদিক, তুহিন, রিজভী আহমেদ জনি, বড় তুহিন (সাইফুল ইসলাম), খোকন মজুমদার, বাবু, তারেক সাইফুল্লাহ, নাট্যকার ও নির্মাতা আমিনুর রহমান মুকুল, নয়ন মনি চৌধুরী, অজয় দাশ, পংকজ ওয়াদ্দেদার, কবি অলক চক্রবর্তী, কবি আরণ্যক টিটো, গল্পকার মিনহাজ রিপন, ছোট জনি, চালচিত্র সম্পাদক কবি জাহাঙ্গীর হোসেন রাজা, বন্ধু মিজানসহ আরো অনেকে। আমরা তখন 'দণ্ড' নামে একটি সাহিত্যের কাগজ করার কথা ভাবছি। রাশেদ চট্টগ্রাম থাকাকালীন 'আড্ডারু' নামে একটি সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করতেন। কবি সৌমেন ধর 'উৎকর্ণ' নামে একটি সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেন। আর কবি হাফিজ রশীদ খান 'পুষ্পকরথ' নামে একটি সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেন। চট্টগ্রামের এই তিন কবিকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি বলেই তাদের সঙ্গে আমার অনেক কিছু'রই বিনিময় হয় নিঃস্বার্থভাবেই। আমরা তখন ১৯ কাঁঠালবাগানে প্রতি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় 'দণ্ড'র আড্ডা দেই। সবাই যার যার লেখা কবিতা ছোটগল্প পড়ি। অন্যরা পড়া শেষে তার উপর বিশদ আলোচনা করেন। তখন মঙ্গলবারের আড্ডার জন্য আমরা পুরো সপ্তাহ অপেক্ষায় থাকতাম। কিন্তু রাশেদ আর শামীম ভাই আমাদের সঙ্গে রোজ আড্ডা মারতেন। সেই আড্ডা এক সময় কাঁঠালবাগানে আর সীমাবদ্ধ থাকেনি। এরপর আমরা ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বারে ধানমন্ডি নদীর পাড়ে সান্ধ্য আড্ডা চালু করলাম। ২০০৩ সাল থেকে সেই আড্ডা ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা প্রায় আট বছর টিকে ছিল। ধানমন্ডি নদীর পারের আড্ডায় যারা নিয়মিত কমরেড ছিলেন তারা হলেন- মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ নাহিদ, রিয়াজ হক শিকদার, সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, পুলক বিশ্বাস, জাফর আহমদ রাশেদ, শামীম আহমেদ, সত্যজিৎ পোদ্দার বিপু, ফিরোজ এহতেশাম, অলক চক্রবর্তী, জায়েদউদ্দিন ও ডিডি মঈনুল বিপ্লব। এছাড়া অনিয়মিত যারা আসতেন তারা হলেন- টোকন ঠাকুর, সুমন শামস, শিল্পী শাহীনূর রহমান, ডাক্তার কল্লোল চৌধুরী, মহাত্মা গোলাম রসুল, নজরুল, বুলবুল, চট্টলা সুমন, রাজীব নূর, রোকন রহমান, খোকন কায়সার, মোবাশ্বির আলম মজুমদার, হুমায়ুন কবির, কমল, অরূপ রাহী, কামরুজ্জামান কামুসহ আরো অনেকে। আমার অফিস তখন ধানমন্ডির সাতাশ নম্বরের মাথায় ছায়ানট ভবনের পাশে। প্রফেসর নজরুল ইসলাম স্যারের নগর গবেষণা কেন্দ্র। সন্ধ্যায় তখন ধানমন্ডি নদীর পারের নিয়মিত আড্ডা তো আছেই, এর বাইরে সকালে আমি এক পশলা অফিসে যাবার পথে বা লাঞ্চ আওয়ারে আড্ডা মারতে ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বারে যাই। সকালে আমার সঙ্গে আড্ডায় থাকেন শিল্পী মাসুক হেলাল, গল্পকার রুদ্রাক্ষ রহমান, কথা সাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম, কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব (শাহীন ভাই), গল্পকার শেখর ইমতিয়াজ, সাংবাদিক দুলালদা, শিল্পী রাজীব রায়, সাংবাদিক জসিম উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের পাগলা রিপন, বেবি মওদুদের ছোট ছেলে পুটু মামা। মাঝে মাঝে সেই আড্ডায় থাকতেন এপি'র ফটোগ্রাফার পাভেল রহমান। অফিসের চেয়ে আড্ডাই আমার বেশি ভালো লাগতো, এখনো আড্ডা মেরেই জীবন চলছে। যেদিন বেশি বৃষ্টি হতো, সেদিন আড্ডার শুরুটা হতো ১৯ কাঁঠালবাগানে। অথবা পরে যখন আমরা ১০০ কাঁঠালবাগানের চিলেকোঠায় চলে যাই, সেখানে। একবার সারা ঢাকায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হলো। কোথাও যাবার সুযোগ নেই। আমাদের চিলেকোঠার বাসায় একে একে সেদিন আসলেন জাফর আহমেদ রাশেদ, শামীম আহমেদ, ফিরোজ এহতেশাম, কামালউদ্দিন কবির, নাসরুল্লাহ মোহাম্মদ নাহিদ, পুলক বিশ্বাস, সুমন শামস, দীপক কুণ্ডু ও চট্টলা সুমন। রিয়াজ হক শিকদার আর আমি তখন হোস্ট। কবির ভাই (কামালউদ্দিন কবির) সেদিন শোনালেন- কীভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলিম আল-দীনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হলো, সেই গল্প। বাংলা নাটকের একজন দিকপালকে নিয়ে সেদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যা যা ঘটেছিল, তার পূঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা করছিলেন কবির ভাই। যা শুনে উপস্থিত আমরা সবাই একেবারে থ' মেরে গিয়েছিলাম। মানুষ ধর্মকে নিয়ে এতো বেশি বাড়াবাড়ি করে যা ডক্টর হুমায়ুন আজাদের বেলায়ও ঘটেছিল। কেন যে মানুষ মৃত্যুর পর লাশ নিয়ে এমন উন্মাদ হয়ে যায়, বুঝি না !!!রাশেদ এমনিতে তুখোর বক্তা। কোনোদিন কোনো জনসভায় অবশ্য আমি রাশেদকে বক্তব্য দিতে দেখিনি। আড্ডায় রাশেদ খুব ভালো আড্ডারু। তবে টোকন ঠাকুর থাকলে রাশেদের চেয়ে টোকনই বেশি ফ্লোর নেয়। টোকন আর রাশেদ চিঠি চালাচালি করে ঝিনাইদহ টু চট্টগ্রাম কবিতার মাধ্যমে পরিচিত হয়েছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় পড়াশুনা করেছিল শাহিনূর রহমান আর মোবাশ্বির আলম মজুমদার। শাহীনদের চট্টগ্রাম অংশের সেসব গল্প আমরা রাশেদের মুখে প্রায় সবই শুনেছি। সৌমেন আর রাশেদ কখন কখন কোথায় কোথায় হারিয়ে যেতো, সেসব গল্প থাকতো খুশির কোনো মুহূর্ত এলে। বৃষ্টির মুহূর্ত এলে পল্লবীর কলা খাওয়া প্রসঙ্গ আসতো। পল্লবী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে পাশ করেছে। পরে শাহীন আর পল্লবী বিয়ে করেছে। রাশেদ তখন চট্টগ্রামে দৈনিক পূর্বকোণ-এ কাজ করে। আর অফিসের ঠিক পাশের বাড়িতে ভাড়া থাকে। পল্লবী যদি কলা খায় তাহলে আর বৃষ্টি হবে না- এমনটি বোধহয় ছিল মিথ! একবার মোবাশ্বির আর শাহীন চট্টগ্রাম রেললাইনে রাত তিনটায় ছবি আঁকা প্রাকটিস করছে। পুলিশ এসে দু'জনকে ধরলো। সরকারি রেললাইনে এতো রাতে নাকি ছবি আঁকা নিষেধ। তো এক দুই কথায় লাইগা গেল প‌্যাচ। মোবাশ্বির তো ঢাকায় এখন অনেক ভদ্র পোলা। তখন খুব ঘাউরা ছিল। সেই ঘাউরামির কারণে পুলিশ আরো নাছোরবান্দা। গাড়িতে উঠতে বললো ওদের। শাহীনরা গাড়িতে উঠবে না। শেষ পর্যন্ত ক্যাচাল চলতে চলতে আযান দিল। শাহীন বললো, এখন তো আর সমস্যা নাই ছবি আঁকতে। কারণ, আযান হয়েছে। যার যে ধর্ম এখন সে সেই ধর্ম কর্ম করবে। রাশেদের মুখে চইয়া'র গল্প যে শোনে নাই, সে পৃথিবীর সেরা গল্পটাই আসলে শোনে নাই। গ্রামের এক মুদি দোকানের সামনে শীতের সকালে সবাই বিবিসি'র খবর শোনার জন্য ভিড় করেছে। সাধারণত সন্ধ্যায় বিবিসি'র খবরের সময় এই দোকানের সামনে ভিড়টা একটু বড় থাকে। তো টহল পুলিশের একদল পুলিশ খবর শোনার জন্য সেই মুদি দোকানের সামনে উঁকি মারলো। একজন জগাই সেখানে শীতের চাদর মুড়ি দিয়ে খবর শুনছিল, বা হতে পারে খামাখা বসে বসে মানুষের জটলা দেখছিল। এক পুলিশ কনস্টেবল হাতের বন্দুক মাটিতে ঢ্যাস দিয়ে একটু আরাম করে দাঁড়াতে গেলেন। কিন্তু বন্দুকের বাটে জগাই'র হাটুতে লাগলো টাক। শীতের মধ্যে যদি কারো হাটুতে অমন টাক লাগে, কেমন লাগতে পারে ভাবুন! অমনি জগাই খিস্তি মেরে উঠলো, চইয়া ইবা সামলাই রাখবার ন পারো? রাশেদের সেই গল্পের পর থেকে আমাদের আড্ডায় বন্দুকের নাম হয়ে গেল 'চইয়া'। রাশেদের গল্প বলার ঢঙটি হলো সবাই হাসলেও রাশেদ শুধু মিটমিট করবে। সবাই যখন হেসে একেবারে গড়াগড়ি যাবে তখন হয়তো রাশেদ একটু শব্দ করে হাসবে। আমাদের আড্ডায় দশ টাকা করে নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে চায়ের দাম পরিশোধ করার থিউরির প্রথম আবিস্কারক ছিল রাশেদ। অবশ্য আমাদের আড্ডায় বেশ কয়েকজন দানবীর হাজী মহসীন ছিলেন তখন। যেমন নাসরুল্লাহ মোহাম্মদ নাহিদ, শিল্পী শাহীনূর রহমান, সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, মহাত্মা গোলাম রসুল বা আমিনুর রহমান মুকুল। এরা সরাসরি বলে দিতো আমি এতো দিলাম। বা বিল দেওয়া শেষ। আর যদি কিছু হিসেবের বাইরে বাকি থাকে সেই বাকিটা তোমরা দাও। হাবিবুর, হাবিবুরের মা আর হাবিবুরের বড় ভাই আনিচারদের সঙ্গে প্রায়ই ধানমন্ডি নদীর পারের আড্ডা শেষে চায়ের হিসেবে ভুল করতাম আমি। রাশেদের প্রধান কাজ ছিল সেই গন্ডগোল মিটিয়ে ঠিকঠাক হাবিবুরকে হিসাব বুঝিয়ে দেওয়া। আহা, কতোদিন যে সবাই মিলে ধানমন্ডি নদীর পারে আড্ডা হয় না। ধানমন্ডির সেই আড্ডাটা খুব মিস করি আমি। ধানমন্ডি নদীর পারের আমাদের আড্ডাটা একসময় বন্ধ হয়ে গেল। কেউ বলতে পারে না আড্ডা বন্ধ হবার আসল কারণ? তবে আমি ধানমন্ডি যাওয়া বন্ধ করার পর নতুন করে আবার যোগসূত্রের পান্থপথের অফিসে আড্ডা শুরু হয়েছিল। আমি যোগসূত্র ছেড়ে দেবার পর সেই আড্ডাও একসময়ে বন্ধ হয়ে গেল। আমাদের থিয়েটার গ্রুপ পালাকার-এর দলীয় সঙ্গীত লিখলেন কবি জাফর আহমেদ রাশেদ। আমাদের প্রিয় বন্ধু রাশেদকে আমি ডাকি জাফর ভাই। রাশেদের লেখা সেই গানটির যতোদূর মনে পড়ছে, এখানে তুলে দিলাম-'আজ, কৃষ্ণচূড়ার পাতায় পায়ে আগুন লেগেছেকাল, ঝড়া পাতার রোদন ছিলপ্রসূতি মা'র বোধন হলআজ, কণ্ঠ থেকে আদিমতার কান্না জেগেছে।...হো হো হো ...হো হো হো...হোহো ....কাল, দিন থাকতে সূর্য গেছে নেমেসাথে অন্ধ পথে চন্দ্র গেছে থেমেআজ মেঘনা পারে ডাকবে পাখি বংশি বেজেছে।...হো হো হো ...হো হো হো...হোহো ....আজ, দিন ফুরাবে অনেক কাজের শেষেসব হাওয়ায় হাওয়ায় সহজে অক্লেশেঠিক খুলে দেবে অভিমন্যুর পথতাই দিক-বিদিকে ছুটছে রঙিন রথআজ, হাতে সবার পাখির পালক, ফড়িং সেজেছে। ...হো হো হো ...হো হো হো...হোহো ....রাশেদের লেখা এই গানটির সুর করেছে বন্ধু সুদত্ত চক্রবর্তী পবন। আর পবন সুর করার সময় তবলার বায়া বাজিয়ে তাল দিয়েছিলাম আমি। গানটি আমিন নিলয়ে বসে সুর করা। সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৬
false
ij
None এই লেখাটা জীবনানন্দ দাশকে দিয়ে শুরু করা যায়। নিচের চারটে লাইন কবির রুপসীবাংলার। চারিদিকে শান্ত বাতি, ভিজে গন্ধ, মৃদু কলরব; খেয়ানৌকোগুলো এসে লেগেছে চরের খুব কাছে; পৃথিবীর এই সব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল;- এশিরিয়া ধুলো আজ, বেবিলন ছাই হয়ে আছে। হ্যাঁ। এশিরিয়া আজ ধুলো হয়ে আছে। তবু আমরা দেখতে চাই সেই ধুলোর ভিতরে আমাদের জন্য জানবার কিছু আছে কিনা। তার আগে একটা কথা। আমরা মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন ইতিহাসসংক্রান্ত ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। কাজেই প্রাচীন এশিরিয়া সভ্যতা প্রাচীন মেসোপটেমিয় সভ্যতার অর্ন্তগত না বলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন ইতিহাসের অর্ন্তগত বলাই সঙ্গত বলে আমি মনে করি। যেমন পাহাড়ে বাস করার সুবাদে একজন মানুষকে পাহাড়ি বলা কি অসঙ্গত নয়? কিংবা বাংলার সভ্যতা ও সংস্কৃতি কি কেবলই ব-দ্বীপের সভ্যতা ও সংস্কৃতি? এশিরিয় সৈন্য প্রাচীন এশিরিয়া সভ্যতাকে আমরা প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা না বললেও মেসোপটেমিয়া শব্দটি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারনা থাকা জরুরি। মেসোপটেমিয়া শব্দটি গ্রিক শব্দ এবং এর অর্থ: নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল। নদী দুটি হচ্ছে ইরাকের দজলা (তাইগ্রিস) ও ফোরাত (ইউফ্রেতিস)। তাইগ্রিস ও ফোরাত ইউফ্রেতিস-এর ঐ মধ্যবর্তী অঞ্চলটিই প্রাচীন সভ্যতার জন্মভূমি ও লীলাভূমি। মধ্যপ্রাচ্য আজ সাম্রাজ্যবাদীদের থাবার গ্রাসে নিয়ত রক্তাক্ত হচ্ছে। এখন সময় হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের উজ্জ্বল অতীত সম্বন্ধে আলোকপাত করা এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন ইতিহাসসংক্রান্ত ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসা। মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন ইতিহাসসংক্রান্ত ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাখান করে বলব প্রাচীন এশিরিয় সভ্যতা মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন সভ্যতা কেবলি প্রাচীন মেসোপটেমিয়া নয়। প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যকে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা বললে মধ্যপ্রাচ্যের নিজস্ব অর্জন প্রকাশ পায় না, মনে হয় ঐ অঞ্চলের পুরো অর্জন গ্রিকদের। যে কারণে সুজলা সুফলা শষ্য শ্যমলা সোনার বাংলা কেবলি ব-দ্বীপ নয়! প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্য; এশিরিয়া অনেক কটা প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল প্রাচীন মধ্য প্রাচ্যে; যার মধ্যে তৃতীয় উল্লেখযোগ্য সভ্যতা ছিল এশিরিয়া সভ্যতা এবং প্রথম দুটি সভ্যতা হল যথাক্রমে সুমেরিয় সভ্যতা ও ব্যাবিলনিয়া সভ্যতা। নৃতত্ত্ব ধর্ম লোকাচারে এবং জীবনধারার দিক থেকে সুমের না-হলেও ব্যাবিলনিয় সভ্যতার সঙ্গে এশিরিয়া ব্যাপক সাদৃশ্য রয়েছে; যে কারণে এ দুটো সভ্যতা বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে পৃথক করাই মুশকিল। তারপরেও প্রাচীন এশিরিয়া সভ্যতা পৃথক ও স্বতন্ত্র একটি সভ্যতা। এশিরিয় জনগনের ঈশ্বর এর নাম ছিল আশহুর। আশহুর থেকেই এশিরিয়া শব্দটির উদ্ভব। এশিরিয়া শব্দটি লাতিন। অনিন্দ্য এশিরিয় শিল্প আজ যে দেশগুলি ইরান ইরাক তুরস্ক ও সিরিয়া, সেই খ্রিস্টপূর্ব যুগের প্রাচীন এশিরিয় সাম্রাজ্যটি এসব রাষ্ট্রেই ছড়িয়ে ছিল। এশিরিয়ার উত্তর ও পুবে ছিল টরাস ও জাগরস পর্বতমালা। পশ্চিমে আর দক্ষিণে বিশাল চুনাপাথরের নিচু উপত্যকা। দুটি প্রধান নদী দজলা (তাইগ্রিস) ও ফোরাত (ইউফ্রেতিস) বয়ে যাচ্ছিল এশিরিয় সাম্রাজ্যের বুক চিরে। জাব নামে আরও একটি নদীও ছিল। এসব নদীর পাড়েই গড়ে উঠেছিল আশহুর নিনেভ আরবেল নিমরুদ ও আররাপখা প্রভৃতি নগরসমূহ । এশিরিয় সাম্রাজ্যের দক্ষিণের কাঁকরবিছানো সমতলে জমা হত দজলা নদীর পলি । আরও দক্ষিণে অনাবৃষ্টি ছিল, ছিল সেচ জলের নিদারুন অভাব; তা সত্ত্বেও সেসব উষর ভূমি চাষযোগ্য করে তুলেছিল পরিশ্রমী এশিরিয় কৃষক। ঐতিহাসিকগন মনে করেন ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে দজলা-ফোরাত অববাহিকায় লোক বসতি শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে আরও অভিবাসী লক্ষ করা যায়। যাদের বেশির ভাগই ছিল সেমিটিক । তো, কারা সেমেটিক? নুহ নবীর তিন ছেলের এক ছেলের নাম ছিল শেম। সেমিটিক বলতে প্রাথমিক ভাবে বোঝানো হয় মধ্যপ্রাচ্যের শেমের বংশধর এবং পরবর্তীকালে মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা পরিবার। যাহোক। ঐতিহাসিকদের ধারনা অনুযায়ী এশিরিয়া সভ্যতার উদ্ভবকাল ২৪০০ খ্রিস্টপূর্ব। ঐ সময়ে এশিরিয় জনগন পশুপালন কৃষি মৃৎশিল্প আগুনের নিয়ন্ত্রণ ও ধাতু গলানোর কাজে হয়ে ওঠে দক্ষ । দজলা-ফোরাত অববাহিকার শষ্যক্ষেত্রগুলি হয়ে উঠেছিল পরিপূর্ন রুপে স্বর্ণালী । আর সে কৃষির উদবৃত্ত থেকেউ গড়ে উঠতে থাকে আশহুর নিনেভ আরবেল নিমরুদ ও আররাপখা প্রভৃতি নগরসমূহ । নগরে কারুশিল্প ও লেখনির বিকাশ হয়। এসব ক্ষেত্রে অবশ্য পূর্বসূরি সুমেরিয়দের অবদান ছিল। এশিরিয়; কবেকার পুরনো ছায়া। আর তার মায়া ... এশিরিয়া সভ্যতার ভিত্তি ছিল কৃষি। কৃষির জন্য অপরিহার্য ছিল পানি । তো এশিরিয় কৃষক পানি পেত কোথায়? এশিরিয়া সাম্রাজ্যে পানির উৎস ছিল মূলত তাইগ্রিস নদী ও উত্তর ও পুবের টরাস ও জাগরস পর্বতমালার শীর্ষের বরফ গলা জল। এশিরিয় জনগনের বেশির ভাগই বাস করত গ্রামে । আর, সেচব্যবস্থা ছিল বেশ উন্নতমানের । সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি পেলে আকরিক খনি ও অরণ্যাণী হয়ে ওঠে সম্পদের উৎস । নগরে ছিল মূলত বানিজ্য ও কারুশিল্পের কেন্দ্র ; বাড়িঘর তৈরি হত কাদার তৈরি ইটে। কখনও কখনও পাথরের। দালানগুলি কখনওই একতালার বেশি হত না। বাড়ির ছাদটি হত সমতল। বাড়িগুলি হত ছোট আকারের। তবে প্রাসাদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের কথা আলাদা। এশিরিয়া সভ্যতা ঠিক দাসতান্ত্রিক না হলেও অর্থনীতিতে দাসদের অবদান ছিল। সংগঠন ও যুদ্ধবিদ্যায় গভীর বুৎপত্তি অর্জন করেছিল। খনি ও অরণ্য সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণই ছিল এর অন্যতম কারণ । আশহুর নগরটি ছিল এশিরিয়া সাম্রাজ্যের প্রথম রাজধানী। আশহুর গেট। মধ্যপ্রাচ্য আজ সাম্রাজ্যবাদীদের থাবার গ্রাসে নিয়ত রক্তাক্ত হচ্ছে। এখন সময় হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের উজ্জ্বল অতীত সম্বন্ধে আলোকপাত করা এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন ইতিহাসসংক্রান্ত ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসা। প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ দিকে প্রথম লোক বসতি গড়ে উঠছিল আশহুর নগরের আশেপাশে। আশহুর-এর অবস্থান তাইগ্রিস নদীর পশ্চিম তীরে এবং পরবর্তী রাজধানী নিনেভ-এর দক্ষিণে। বর্তমানে শারকাত নামে ইরাকের গ্রাম আশহুর বলে শনাক্ত করা হয়েছে। আশহুর নগর;শিল্পীর চোখে রাজধানী ছাড়াও আশহুর ছিল এশিরিয়া সাম্রাজ্যের অন্যতম ধর্মীয় নগর। মনে থাকার কথা: এশিরিয় জনগনের ঈশ্বর এর নাম ছিল আশহুর। আশহুর থেকেই লাতিন এশিরিয়া শব্দের উৎপত্তি। এশিরিয় দেবীর নাম ইশতার বা ইনানা। দেবদেবীর উপাসনার জন্য এশিরিয়ায় তৈরি হয়েছিল পিরামিডসদৃশ বিশালাকার জিগুরাট। জিগুরাট অবশ্য প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম তৈরি করেছিল সুমেরিয়রা। ইশতার বা ইনানা আমরা ৩০/৪০ বছরের ইতিহাস কূলকিনারা করতে পারি আর আমরা এখন শত শত বছরের এশিরিয় সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করছি। অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে কোনও সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব দীর্ঘ হলে রাজধানী স্থানান্তর ঘটে। কাজেই আশহুর থেকে এশিরিয় সাম্রাজ্যের রাজধানী সরে নিনেভে চলে গিয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৭০৫ থেকে ৬১২ অবধি নিনেভ ছিল রাজধানী। নিনেভের অবস্থান ছিল তাইগ্রিস নদীর পূর্বপ্রান্তে ও বর্তমান ইরাকের মশুলে। কাওসার নামে একটি নদী নিনেভের মাঝখান দিয়ে বয়ে দজলা নদীতে মিলেছিল । উদ্যান সড়ক চক বাগান আর ১৫টি দেয়ালসমৃদ্ধ তোরণ-সব মিলিয়ে নিনেভ ছিল সেকালের এক জমজমাট নগর। মানচিত্রে নিনেভ নিনেভ; শিল্পীর চোখে নিনেভ এশিরিয় সভ্যতার শাসনকাঠামোটির ধরন ছিল রাজতান্ত্রিক। সভাসদের কাছে রাজার জবাবদিহি করতে হত। রাজার মৃত্যু হলে ছেলেই রাজা হত। সাম্রাজ্যের প্রদেশগুলি ছিল গুরুত্বপূর্ন। প্রদেশ শাসন করত প্রাদেশিক শাসনকর্তা, তারা কেন্দ্রে কর পৌঁছে দিত, যুদ্ধের জন্য সৈন্য সরবরাহ করত। ২য় সারগন ছিলেন এশিরিয় সভ্যতার বিখ্যাত এক শাসক। তার সময়ে এশিরিয়া ৭০টি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। এই ডানাওয়ালা পশুটি এশিরিয়ার প্রতীক যেন! পন্ডিতগন এশিরিয় সভ্যতাকে দু-ভাগে ভাগ করেছেন । (ক) পুরনো এশিরিয় সাম্রাজ্য। ও (খ) নব্য এশিরিয়া সাম্রাজ্য। একজন অন্যতম এশিরিয় শাসক ছিলেন ৩য় তিঘলাথ পিলেসার । সময়কাল? ৭৪৫-৭২৭ খ্রিস্টপূর্ব । সম্রাট ৩য় তিঘলাথ পিলেসার ছিলেন নব্য এশিরিয় সাম্রাজ্যের স্থপতি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত একজন সামরিক নেতা। তার শাসনামলেই এশিরিয় সাম্রাজ্যের সঙ্গে সিরিয়া ফিলিস্তিন ও ব্যাবিলন সংযুক্ত হয়। ৩য় তিঘলাথ পিলেসার । আরেকজন শ্রেষ্ট এশিরিয় নৃপতি ছিলেন সম্রাট আশহুরবানিপাল (৬৬৯-৬২৭) তিনি নিনেভ নগরে বাস করতেন। প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সাংস্কৃতিকমনা শাসক। সুমের ও আক্কাদিয় লিপি পড়তে জানতেন। মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম ও আদি গ্রন্থাগারের স্থাপনের কৃতিত্ব তারই। মাটির ট্যাবলেট আকারে লক্ষ লক্ষ পুস্তক ছিল সে গ্রন্থাগারে। এমন কী বৈজ্ঞানিক। ধর্মীয় গ্রন্থ গিলগামেশ। লোক উপকথাও ছিল। প্রাচীন সভ্যতায় আসিরিয়দের অবদান সাহিত্য। লেখা হত কাদার ওপর। পরে অবশ্য আরামিক লিপিতে চামড়ার ওপর লেখা হত । লেখার বিষয়বস্তু ছিল আইন, চিকিৎসাবিদ্যা ও ইতিহাস। সম্রাট আশহুরবানিপাল। ছিলেন সুশাসক। তার মৃত্যুর পরেই এশিরিয় সভ্যতা বিলীন হয়ে যায়। এশিরিয়া সভ্যতা: ফটো গ্যালারি মনে রাখতে হবে মেসোপটেমিয়া নয় মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন সভ্যতা ছিল এশিরিয়া সভ্যতা । মেসোপটেমিয়া বললে মধ্যপ্রাচ্যের কৃতিত্ব ঠিক বোঝা যায় না। গ্রিক শব্দটি কেবল বিভ্রম সৃষ্টি করে ... প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্য সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৫
false
rn
রহস্য প্রাচীনকালে এরকম একজন জ্ঞানী শাসক ছিলেন যিনি সাধারণ জ্ঞানের বাইরেও অনেক কিছু জানতেন। এই শাসকের মনের ভেতর অনেক রহস্যই জমা ছিল। রহস্য মানে হলো অজানা জ্ঞান। তবে এমন একটা বিশেষ রহস্য ছিল যে সম্পর্কে অন্য কেউ কিছুই জানতো না। সে জন্যে শাসক চাইতেন ঐ গুরুত্বপূর্ণ রহস্যের কথা এমন কাউকে জানিয়ে দেবেন যিনি সেই রহস্যের বিষয়টি নিজের ভেতরে ধারণ করবেন এবং মনে মনে লালন করে যাবেন, জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন না। কাকে বলা যায়, কাকে বলা যায়... এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে এরকম দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি। শাসক চাচ্ছেন কাউকে না কাউকে বলে তাঁর দুশ্চিন্তা থেকে কিছুটা হালকা হতে। কেননা এই দুশ্চিন্তাটা তাঁর মাথার ভেতরে পাথরের মতো শক্ত, কঠিন এবং ভারী মনে হতো। কিন্তু যখনই তিনি বিশ্বস্ত লোক নিয়ে ভাবতেন, নিজের আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব বা নিকটজনদের কাউকে বলবেন বলে ভাবতেন, তখনই আবার দুশ্চিন্তায় পড়ে যেতেন। মনে মনে ভাবতেন কাউকে রহস্যের কথাটা বললে তো সে জেনে যাবে তাঁর ভেতরের রহস্য, আর জনগণ যদি তাঁর ভেতরের রহস্যের কথা একবার জেনে ফেলে তাহলে তো জনগণের কাছে তাঁর মান সম্মান মর্যাদা বলতে আর কিছুই থাকবে না, সবই ধূলায় লুটিয়ে পড়বে। এমনকি তাঁকে এতোদিন মানুষ যেই দৃষ্টিতে দেখতো, তাঁকে যেভাবে জানতো, সেভাবে আর তাঁকে কেউ দেখবেও না, জানবেও না। তাহলে তো জনগণের মাঝে তাঁর ব্যক্তিত্বের আয়নাটুকু ভেঙ্গে কাঁচের মতো টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। কিন্তু রহস্যের ব্যাপারটা নিজের ভেতরে আর ধরেও রাখা যাচ্ছে না। কী করা যায় .. কী করা যায় ... এরকম ভাবতে ভাবতে একদিন শাসক লোকটি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন যে আজ সবাইকে ডেকে বিষয়টা জানিয়ে দেবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁর কাছের লোকজন যারা ছিল তাদের কয়েকজনকে তাঁর কাছে ডাকলেন। কয়েকজন যখন এলো তিনি তাঁদেরকে সুন্দর করে বললেনঃ “দ্যাখো! তোমরা সবাই আমার নিকটজন! একান্তই আপন! তোমাদের সবাইকেই আমি বিশ্বাস করি, তোমাদের ওপর আমার একান্ত আস্থা আছে। সে জন্যেই আমি চাচ্ছি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তোমাদের সাথে পরামর্শ করবো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে তোমাদের ওপর যে তোমরা কিছুতেই বিষয়টা নিয়ে কারো সাথেই আলাপ আলোচনা করবে না, কাউকে জানাবে না। তোমাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, তোমার তোমাদের একেবারে কাছের মানুষের সাথেও এ বিষয়টা নিয়ে কথা বলো না! তোমাদের নিজেদের পরিবার পরিজনের সাথে তো নয়ই এমনকি আমার নিজের পরিবারের কারো সাথেও না। তোমরা কথা দাও আমি যে বিষয়টা নিয়ে তোমাদের সাথে কথা বলবো, তার রহস্যটা তোমরা সারাটা জীবন নিজেদের মনের ভেতরে লুকিয়ে রাখবে, যতোদিন তোমরা এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে ততোদিন কারো সাথে তা নিয়ে কথা বলবে না, রহস্যটা কারো কাছে ফাঁস করে দেবে না।” শাসকের একান্ত আপনজনদের একজন বললোঃ “হুজুর! আমাদের ওপর আপনি নিশ্চিন্তে আস্থা রাখতে পারেন। আপনি যা বলতে চান একেবারে কোনো চিন্তা ভাবনা না করে বলে ফেলুন! আপনি আমাদের ওপর একশ’ ভাগ বিশ্বাস রাখতে পারেন যে আমরা কারো কাছেই আপনার রহস্যের কথাটা নিয়ে আলাপ আলোচনা করবো না। আমরা আমাদের প্রিয় শাসকের পথে নিজেদের প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করতে রাজি আছি! আর সামান্য একটা রহস্যের কথা তো ছাই।” শাসক বললেনঃ “ব্যাপারটা হলো যে আমার মনের ভেতরে একটা গূঢ় রহস্য আছে। অনেক কষ্টে অনেক যত্ন করে এতোদিন আমি সেটা আমার মনের ভেতরে পুষে রেখেছি। পুষে রাখতে রাখতে এটা এখন বহন করা আমার জন্যে কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে, আমাকে ভীষণভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছে। আমি এখন সেটা তোমাদেরকে জানিয়ে একটু হালকা হতে চাচ্ছি। যদি শুনি তোমাদের কেউ রহস্যটা কারো কাছে ফাঁস করে দিয়েছো, তাকে নির্দয়ভাবে মেরে ফেলবো, কোনোভাবেই ক্ষমা করা হবে না।” পণ্ডিতের স্বজনরা তাঁকে কথা দিলো যে কোনোভাবেই তারা তাদের নিকটজনদের কাছেও ফাঁস করবে না। কথা পেয়ে পণ্ডিতও এক এক করে রহস্যটা তাঁর বিশ্বস্ত স্বজনদের কাছে ফাঁস করলো। তারপর এক করে সবার দিকে তাকিয়ে বললোঃ “যে কথা দিয়েছো! তা রক্ষা করো! যারা কথা দিয়ে কথা রাখবে না, তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে কঠিন মৃত্যু। এই রহস্যটা আমি গত এক বছর ধরে নিজের মনে পুষে রেখেছি, কাউকে বলি নি।” রহস্যের কথা ফাঁস করে দেওয়ার পর ঘটলো আসল ঘটনা। শাসক যে রহস্যটা একটি বছর নিজের ভেতর পুষে রেখেছিলেন, স্বজনদের কাছে ফাঁস করে দেওয়ার পরদিনই তা পুরো এলাকায় চাউর হয়ে গেল। ফলে সবাই সেই রহস্যটা জেনে গেল। শাসক যখন জানতে পারলেন যে স্বজনরা কথা রাখে নি, রহস্যটা ফাঁস করে দিয়েছে তখন মনে মনে বললেনঃ “আমার আপনজনেরা আমাকে কথা দিয়ে কথা রাখলো না। এমনকি যে রহস্যটা এতোদিন আমি পুষে রেখেছিলাম অন্তত একটা দিনও তারা তা পুষে রাখতে পারলো না, অথচ ফাঁস করবেনা বলে তারা আমাকে কথা দিয়েছিলো। সুতরাং তাদের সবাইকে জল্লাদের হাতে সঁপে দেবো।” শাসক রহস্য ফাঁসকারীদের সবার মুণ্ডুপাত করার আদেশ দিলেন। এবার শাসকের নিকটজনেরা কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। অনুনয় বিনয় করতে লাগলো। একজন বললোঃ “হে মহান শাসক! আমরা অন্যায় করে ফেলেছি, আমাদের ক্ষমা করে দিন! যাঁরা মহান তাঁরাই তো ক্ষমা করেন। আমরা জানি আমরা যে অন্যায় করেছি সে জন্যে আমাদের মাথা কেটে ফেলা উচিত। কিন্তু তুমি তো মহান শাসক! তুমি মহত্ব দেখিয়ে আমাদের ক্ষমা করে দাও! আমাদেরকে জল্লাদের হাতে তুলে দিও না। শয়তান আমাদেরকে প্রতারিত করেছে। আমরা কথা দিচ্ছি আর এমন ভুল করবো না।” কিন্তু শাসকের মন গললো না। তিনি বললেনঃ “চুপ করো! আগেও তোমরা কথা দিয়েছিলে! কিন্তু কথা রাখোনি। তোমরা জানতে কথা ভঙ্গ করার শাস্তি মৃত্যু। তারপরও কথা ভঙ্গ করেছো। তোমার ওপর আমার আর কোনো আস্থা কিংবা বিশ্বাস নেই। তোমরা রহস্যের কথা ফাঁস করে দিয়ে জনগণের কাছে আমার মাথা হেঁট করে দিয়েছো, আমাকে অপমান করেছো। আমি বলেছিলাম কথা দিয়ে কথা না রাখলে অবশ্যই হত্যা করা হবে। তোমাদের মৃত্যু হয়তো অন্যদের জন্যে শিক্ষণীয় হবে। এই বলে শাসক জল্লাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ তরবারি হাতে নাও! আর একেক করে এই বিশ্বাসঘাতকদের সবার মাথা কেটে ফেল।” মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের মাঝে এক বয়োবৃদ্ধ লোক ছিলেন। তিনি বললেনঃ “কেন আমাদের হত্যা করছো! তুমি নিজেই তো অন্যায়কারী।” শাসক বিস্ময়ের সাথে বললেনঃ “কী বললে! কথা ভঙ্গ করেছো তোমরা আর অন্যায় করেছি আমি! কিন্তু কীভাবে?” বৃদ্ধ বললেনঃ “হে মহান শাসক! তোমার অন্তর ছিল রহস্যের ধারায় পূর্ণ। তুমি ঐ ঝর্ণাপ্রবাহের মুখে বাঁধ না দিয়ে সেই বাঁধ বরং ভেঙ্গে দিয়ে কয়েকজনের মাঝে তা জারি করে দিয়েছো। ঝর্ণার সেই ধারা নদীতে পরিণত হলো আর নদীর জোয়ারে বন্যা দেখা দিলো। এখন এই বন্যাকে তুমি কী করে ঠেকাবে?” শাসক বললেনঃ “কিন্তু আমি তো তোমাদের বিশ্বাস করেছিলাম। তোমরা আমার আপনজন। আমি কি জানতাম যে তোমরা বিশ্বাসভঙ্গ করবে!” বৃদ্ধ বললেনঃ “গুপ্তধন গোপন গোলাতেই রাখতে হয় আর গোপন রহস্য পুষতে হয় নিজের ভেতরেই। রহস্যের কথা মুখে না আনা পর্যন্তই নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু একবার মুখ খুললেই তা আর নিয়ন্ত্রণ করার সাধ্য থাকে না।” শাসক গভীর মনোযোগ দিয়ে বৃদ্ধের কথাটা শুনে নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। ভাবলেন, সত্যিই তো, যে রহস্য নিজেই পুষে রাখতে পারলাম না, আরেকজন পুষে রাখবে, সেটা ভাবি কী করে! এই ভেবে তাঁর নিকটজনদের উদ্দেশ্যে বললেনঃ “এই অভিজ্ঞ বৃদ্ধ যথার্থই বলেছেন। ভুলটা আসলে আমারই ছিল। তোমাদের কাছে আমাদের মনের ভেতরের গোপন রহস্যটা ফাঁস করা ঠিক হয় নি। তোমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। তবে তোমরা আর আমার স্বজন থাকবে না, কেবল এই বৃদ্ধ ছাড়া। কারণ এই বৃদ্ধ আমাকে পথ দেখিয়েছে।” প্রিয় ব্লগার- কেউ কি বলতে পারেন,-রহস্যটা কী ছিল? হ্যাঁ, যে কথাটা বলা হয় নি এবং যা নিয়ে আপনারা এখন ভাবতে বসেছেন.. তাকেই বলে রহস্য। গল্পটি থেকে আমরা কি শিক্ষা পেলাম ? সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৩ রাত ১:৪০
false
hm
আকাশকুসুম সেদিন স্বপ্নে খুব মনোযোগ দিয়ে মহাত্মা গান্ধীর নামে হত্যা মামলার তদন্ত দেখছিলাম। চাপাবাজি নয় একটুও, একেবারে বর্ণে বর্ণে সত্যি। মহাত্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ খুব শক্ত, তিনি কাকে বা কাদের যেন রীতিমতো ছুরি মেরে খুন করেছেন। ছুরিটাকে তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে এনে সবাইকে দেখানো হচ্ছে। বাপুজি তাঁর সামান্য বস্ত্র পরে এক কোণায় কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছেন। কে যেন খুব হাঁকডাক দিচ্ছে। ঘুম ভেঙে গেলো সময়মতো। বেশিরভাগ স্বপ্নই মানুষ ভুলে যায় ঘুম ভাঙার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, এটা বেশ গেঁথে গেছে মাথার ভেতরে। তবে কিছু আকাশকুসুম জেগে জেগেই দেখি। কিছুদিন আগে জার্মান রেলসংস্থা ডয়েচে বান এর ওয়েবসাইট ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম এক শহর থেকে আরেক শহরে যাবার রেল যোগাযোগের হালত যাচাই করার জন্যে। জার্মান রেলযোগাযোগ বেশ কার্যকরী জিনিস, কিছু জিনিস বাদ দিলে বেশ উপযোগীই বলা চলে, যদিও অনেকেই রেলে চলাচলের বদলে মিটফার (পেইড লিফট বলা চলে) পছন্দ করেন, কিছুটা আর্থিক কারণে, কিছুটা চলার স্বস্তির জন্যে। আমার আকাশকুসুম ফুটে উঠেছিলো এমন, যে একদিন বাংলাদেশেও রেলযোগাযোগ এমনি পল্লবিত হয়ে উঠবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, বা ঢাকা থেকে কুমিল্লা, কিংবা কিশোরগঞ্জ থেকে লাকসামযাত্রাও সহজ হয়ে উঠবে রেলের কল্যাণে। আর, নতুন লাইন বসুক না বসুক, টিকেট কাটার ব্যবস্থাটা সহজ হয়ে উঠবে। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আমরা মুখে প্রচুর ফেনা তুললেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতকে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত করতে পারিনি। ব্যাংকিং তার মধ্যে একটা। নিরাপত্তার খাতিরে অনলাইন লেনদেন দেশে বিকশিত হতে পারেনি। এটিএম বুথ-ব্যবস্থা যদিও তৃতীয় প্রজন্মের দেশী ব্যাংক আর বিদেশী ব্যাংকগুলির কল্যাণে সম্প্রসারিত হয়েছে, নিরাপত্তার কথা ভাবলে সেগুলি থেকেও সাবধান হতে হয়। হের চৌধুরী একবার জানালেন, তাঁর এক পরিচিত ভদ্রলোককে রাত পৌনে বারোটার দিকে ছিনতাইকারী ধরে পাকড়াও করে একটা এটিএম বুথে নিয়ে গেছে। সেখানে দিনে সর্বোচ্চ কুড়ি হাজার টাকা তোলা যায়। এগারোটা পঞ্চান্নতে একবার, আর বারোটা পাঁচে আরেকবার সেই ভদ্রলোককে মোট চল্লিশ হাজার টাকা তুলে সশস্ত্র ছিনতাইকারীর হাতে তুলে দিতে হয়েছিলো। একই ঘটনা ঘটতে পারে অনলাইন ব্যাঙ্কিঙের ক্ষেত্রেও। তবুও বলি, অনলাইন ব্যাংকিঙের সুবিধাগুলো দেশে জরুরি ভিত্তিতে চালু করা উচিত। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যতবার ফি জমা দিতে যেতাম, এই কথাটা মাথায় ঘুরতো। পুরো একটা দিন জলাঞ্জলি দিতে হতো ফি দিতে গিয়ে, হাজার তিনেক ছাত্রছাত্রীর জন্যে তিন বা চারজন অসহায় ব্যাংককর্মী সেখানে মুখে ফেনা তুলে কাজ করতেন, তাদের সামনে ছোট ঘরে ঘিঞ্জি লাইন ধরে আমরাও মুখে ফেনা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতাম। এই একই সফেন দৃশ্য প্রতিদিন প্রত্যেকটা সরকারি ব্যাঙ্কে দেখা যায়, দেখা যায় কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্কেও। অথচ খুব সহজেই এই ঝামেলার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যেতো বলে বিশ্বাস করি। যে কোন ধরনের বিল যদি অনলাইনে মেটানোর সুযোগ দেয়া হতো গ্রাহকদের, তাহলে যে বিপুল পরিমাণ সময় বাঁচতো মানুষের, তা অন্য কাজে লাগতো। কোন বিল দিতে যাওয়া মানেই বিশ-তিরিশ টাকা রিকশাভাড়া খরচ, দেড় থেকে তিন ঘন্টা সময় পন্ড। একে মোট গ্রাহক সংখ্যা দিয়ে গুণ করা হলে ক্ষতির মোট পরিমাণ বেরিয়ে আসে। এ কথা সত্য যে টেলিযোগাযোগব্যবস্থা আগের চেয়ে বহুগুণে সম্প্রসারিত হয়েছে, কিন্তু তা মানুষের জীবনকে যতটুকু সহজ করে তুলতে পারতো, সেই সম্ভাবনার (পোটেনশিয়াল) কত শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে? ঢাকা থেকে রেলে চট্টগ্রাম যেতে হলে আমার বন্ধু দস্তগীরকে মিরপুর থেকে কমলাপুর যেতে হচ্ছে টিকেট কেনার জন্যে। রেলের টিকেটের সাথে যোগ করতে হবে এই সময় আর যাতায়াতের খরচ। যদি রেলের টিকেট কেনার ব্যবস্থা অনলাইন হতো, তাহলে বাড়তি খরচটা দস্তু হারামজাদার বহন করতে হতো না। সে অনলাইনে টিকেট বুক করতো, উত্তরে একটা বড়সড় বারকোড পাঠানো হতো তাকে, সেটা প্রিন্ট করে নিয়ে সে যাত্রার সময় স্টেশনে হাজির হতো, বারকোড রিডার দিয়ে চেক করে টিটি তাকে স্টেশনে ঢুকতে দিতো। দস্তু যদি বাসে করে মিরপুর থেকে কমলাপুর যাওয়া-আসা করে, তাহলে তার খরচ হবে পঁচিশ টাকা আর তিনঘন্টা। দস্তু যদি ট্যাক্সি করে যায়, তাহলে তার খরচ হবে আড়াইশো টাকা আর দুইঘন্টা। ওদিকে একটা প্রিন্ট আউটের জন্যে দস্তুর খরচ পড়তো একটাকা আর এক মিনিটের মতো। আমাদের রেলের টিকেট ব্যবস্থা একটা অব্যক্ত মোটাসোটা অপরচুনিটি কস্টের বোঝা আমাদের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছে, অযথাই, বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করে।
false
mk
এতিমের টাকা আত্মসাৎ ও খালেদা সমাচার এতিমের সোয়া পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের দুর্নীতি মামলায় ধার্য তারিখে হাজির না হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ তিন জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারক আবু আহমেদ জমাদার বুধবার তিন জনের জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। খালেদা ছাড়া বাকি দু’জন হলেন মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দুর্নীতি মামলায় এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। খালেদার আইনজীবীরা পরে পরোয়ানা বাতিলের আবেদন করলে আদালত তাও নাকচ করে দেয়।এ দিন বিএনপি চেয়ারপার্সনের অনুপস্থিতিতেই জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলার বাদী হারুন অর রশীদের অবশিষ্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। আসামিরা উপস্থিত না থাকায় প্রথম সাক্ষীর জেরা বাতিল করে পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দী শোনার জন্য আগামী ৪ মার্চ দিন ধার্য করেন বিচারক। দুদকের আইনজীবীর আবেদনে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও ওই দিন আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেয় আদালত। তারেক চিকিৎসার কথা বলে উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন।এতিমের টাকা আত্মসাতের দুই দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের দায়ের করা এ দুটি মামলার বিচার চলছে ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে। এ পর্যন্ত এ দুটি মামলার বিচারিক কার্যক্রমে মোট ৬৩ দিন আদালত বসেছে, তবে খালেদা জিয়া হাজির ছিলেন মাত্র সাত দিন। নিজের দলের ডাকা হরতাল-অবরোধসহ নানা কারণ দেখিয়ে সময়ের আবেদন জানানোর মাধ্যমে বেশ কয়েকবার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ফলে মামলার প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দী শেষ করতেই সময় লেগেছে ছয় মাসেরও বেশি। তাদের এ ধরনের কর্মকা-কে বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াস বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।বুধবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাতে আইনজীবীদের মাধ্যমে দুটি সময়ের আবেদন জানান। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল সাক্ষ্যগ্রহণ অব্যাহত রাখার আবেদন জানান।বেলা পৌনে এগারোটার দিকে এসব আবেদনের শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে দুই আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁর এবং দীর্ঘদিন আদালতে হাজির না হওয়ায় অন্য দুজনের জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। আদালত আদেশে জানায়, গত ধার্য তারিখে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বুধবার তাঁকে অবশ্যই হাজির করাবেন বলে জানিয়েছিলেন। জামিনদাররা সে কথা রাখেননি। এছাড়া মামলা দুটির ৬৩ ধার্য তারিখে তিনি মাত্র সাত বার আদালতে হাজির হয়েছেন।খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, নিরাপত্তার কারণে আদালতে যাননি বেগম জিয়া। তাঁরা দুই কারণে দুটি সময়ের আবেদন জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তাহীনতায় অনুপস্থিতির কারণে একটি আবেদন জানানো হয়। অন্যদিকে গত ৭ জানুয়ারি বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বিষয়টি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায়। তাই ওই আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রাখার জন্য আরেকটি আবেদন জানানো হয়।গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর দুদকের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানাটি আসামিদের বর্তমান ঠিকানা সংশ্লিষ্ট থানায় যাবে। থানা পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সময়ের আবেদন জানানোর পরও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এখানে বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হচ্ছে।এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পাননি বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার চৌধুরী লুৎফুল কবির। ওয়ারেন্টের কপি হাতে পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। তবে বুধবার বিকেলেই ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের আদালত থেকে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানাগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানার উদ্দেশে রওনা হন আদালতের পেশকার আরিফুল ইসলাম ও পুলিশের ডিসির সহকারী কনস্টেবল তাজুল ইসলাম। তবে রাত দেড়টায় পরোয়ানা প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেননি তিন থানা কর্তৃপক্ষ।ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে শোকের কথা জানিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি আদালতে না এসে আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন পাঠান খালেদা জিয়া। বিচারক সে দিন তা মঞ্জুর করে সাক্ষ্য শোনার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন রাখেন। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারিও আদালতে যাননি খালেদা। ওই দিন আদালতে হাজির না হওয়ার কারণ হিসেবে গুলশান কার্যালয়ে খালেদাকে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার কথা বলেছিলেন আইনজীবীরা। বিচারক তাঁকে সেদিনের হাজিরা থেকে রেহাই দিলেও সময়ের আবেদন নাকচ করে বাদীর সাক্ষ্য চালিয়ে যাওয়ায় আদেশ দেন। এ নিয়ে আদালতে হৈ চৈ হয় এবং খালেদার আইনজীবীরা বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানান। তার আগে ৭ জানুয়ারি বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রীমকোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদলে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসেবে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবু আহমেদ জমাদারকে। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ছিল নতুন বিচারকের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রথম দিন। সেদিন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়াকে কেন্দ্র করে বকশীবাজার এলাকায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে এমপি ছবি বিশ্বাসসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। বিএনপি কর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও আওয়ামী লীগের নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি ছবি বিশ্বাসের মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রথম দিনের বিবেচনায় খালেদার আইনজীবীদের সময়ের আবেদনে ২৪ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে ৭ জানুয়ারি ধার্য করেছিলেন নতুন বিচারক। ৭ জানুয়ারি আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পুনরায় ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হলেও খালেদার আইনজীবীদের আবেদনে ফের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়।গত ৩ জানুয়ারি থেকে নিজের গুলশানের কার্যালয়েই অবস্থান করছেন বিএনপি নেত্রী। পুলিশী ‘অবরোধ’ সরিয়ে নেয়া হলেও তিনি বাসায় ফেরেননি। নিজের দলের ডাকা অবরোধ-হরতালের মধ্যে বুধবারও খালেদা জিয়া আদালতে না এসে সাক্ষ্য পেছাতে আইনজীবীদের মাধ্যমে আবারও আবেদন করেন। উচ্চ আদালতে লিভ টু আপীল এবং হরতাল ও অবরোধের নিরাপত্তার কথা জানিয়ে এই আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক দুই আবেদনই খারিজ করে দেন। টানা কয়েকটি ধার্য দিনে আদালতে হাজির হতে ব্যর্থ হওয়ায় জামিন বাতিল করে তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এবং ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে এ দুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। গতবছর ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিচার শুরু করে। এর মধ্যে অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা ও তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জন এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরও তিনজন আসামি হিসেবে রয়েছেন। এ দুই মামলায় অভিযোগ গঠন ও অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া আপীল বিভাগে গেলেও তা খারিজ হয়ে যায়। খালেদার অনুপস্থিতিতেই গতবছর ২২ সেপ্টেম্বর অরফানেজ দুর্নীতির মামলায় বাদী হারুন অর রশীদের জবানবন্দী শোনা শুরু করে আদালত। কিন্তু আসামিপক্ষ দফায় দফায় সময়ের আবেদন করায় তার সাক্ষ্য এখনও সমাপ্ত করা যায়নি।৬৩ দিনের ৫৬ দিনই অনুপস্থিত খালেদা ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এ পর্যন্ত শুনানি হয়েছে ৬৩ দিন। তবে এর মধ্যে মাত্র ৭ দিন আদালতে হাজির হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ৫৬ দিনই আদালতে হাজির না হয়ে বার বার সময় আবেদন করেছেন তিনি। তাঁর এ ধরনের কর্মকা-কে বিচারকাজে বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াস বলে মনে করেন দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারপার্সন। আদালতে আসতে তাঁর বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে। তিনি আদালতে না আসতেই পারেন। তবে তাঁর পক্ষে তো কাউকে দায়িত্ব নিয়ে মামলা পরিচালনা করতে হবে। কাজল বলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে যেসব আইনজীবীরা শুনানি করেন তাঁরা শুধু সময় আবেদনই করেন। কেউ দায়িত্ব নিয়ে মামলা পরিচালনা করেন না।তারেক রহমানের উদাহরণ দিয়ে কাজল বলেন, তারেক রহমান বিদেশে আছেন। আদালতে আসেন না। তবে তাঁর পক্ষে একজন আইনজীবী দায়িত্ব নিয়ে হাজিরা দেন। তাই আদালত তো তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন নাই। তারেক রহমানকে আদালতে হাজির করতে তাঁর আইনজীবীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।তিনি আরও বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) এখন চাইলে উচ্চতর আদালতে যেতে পারেন। তবে অবশ্যই সেখানে তাঁকে উপস্থিত থেকে আবেদন করতে হবে।দলের হরতালই অজুহাত ॥ নিজের দলের হরতাল ও অবরোধের অজুহাত দেখিয়েই আদালতে হাজিরা দেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সংশ্লিষ্টরা বলেন, যে দিন এই দুই দুর্নীতি মামলার শুনানি থাকে, কোন না কোনভাবে সে দিনই হরতাল আহ্বান করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। আর আদালতে এসে সেই হরতালের অজুহাত দেখিয়ে সময় আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। বুধবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তাসহ দুটি সময় আবেদন করেন।এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, বুধবার নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে যাননি খালেদা জিয়া। তারা দুই কারণে দুটি সময়ের আবেদন জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তাহীনতায় অনুপস্থিতির কারণে একটি আবেদন জানানো হয়। অন্যদিকে গত ৭ জানুয়ারি বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বিষয়টি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায়। তাই ওই আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রাখার জন্য আরেকটি আবেদন জানানো হয়।মামলা বৃত্তান্ত চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ॥ ২০১১ সালের ৮ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন উর রশীদ। তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলার অপর আসামিরা হলেনÑ খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন।অরফানেজ ট্রাস্ট ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে। এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশী ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়। দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন উর রশীদ ২০১০ সালের ৫ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন ছিলেন, তবে বুধবার খালেদাসহ তাদের জামিনও বাতিল করে আদালত। বাকি দুইজন পলাতক।টিএইচ খানের বাসায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বৈঠক ॥ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে বৈঠক করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বিচারপতি টিএইচ খানের মোহাম্মদপুরের বাসায় এ বৈঠক হয়। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে অংশ নেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী প্রমুখ। বৈঠকের পর টিএইচ খানের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে খন্দকার মাহবুব বলেন, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সে বিষয়ে খ্যাতিমান বিচারপতি টিএইচ খানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, আগামী মার্চে সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন। নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো আমি সভাপতি পদে দাঁড়িয়েছি। আমাদের প্যানেলের জন্য দোয়া চাইতে এসেছি বিচারপতি টিএইচ খানের কাছে। এর আগে, বিকেল থেকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের টিএইচ খানের বাসায় জড়ো হওয়ার খবরে বাসার চার পাশে অবস্থান নেয় র‌্যাবের কিছু সদস্য।রাত দেড়টায় পরোয়ানা পাওয়ার কথা অস্বীকার করে ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি আতিকুর রহমান ও রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শিবলী নোমান বলেন, ‘এ ধরনের কাগজ আমরা এখনও পাইনি।’ গুলশান থানার ডিউটি অফিসার এসআই সুজনও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।যে কোন সময় গ্রেফতার হতে পারেন বেগম জিয়া ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সনকে যে কোন সময় গ্রেফতার করা হতে পারে- এ লক্ষ্য সামনে রেখে সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করেছে পুলিশ। এজন্য পাঁচ শতাধিক মহিলা পুলিশকে তৈরি রাখা হয়েছে। তবে একটি সূত্র জানায়, রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আজ বৃহস্পতিবার তিনি যদি আদালতে আত্মসমর্পণ না করেন সেক্ষেত্রে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করার সমুদয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পুলিশ।
false
ij
গল্প_ ক্লীব-পুরুষ তেরো বছর পর দূর থেকে নীলুফারকে দেখে চমকে উঠলেন ফিরোজ আহমেদ।হাতে জ্বলন্ত সিগারেট ছিল। খসে পড়ল । নীলুফারের পাশে ফরিদা। পাশাপাশি হেঁটে দুজন এদিকেই আসছে । নীলুফারের কাঁধে সাদা রঙের শাল জড়ানো। মাথায় ঘোমটা। চশমা নিয়েছে। তা সত্ত্বেও ১৩ বছর পর দেখে চিনতে মোটেও অসুবিধে হয়নি। পীরবাড়ির উলটো দিকে একটা চায়ের স্টল। তার ঠিক পাশেই একটা বিশাল আমলকী গাছ। তারই তলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ফিরোজ আহমেদ। সিগারেট টানছিলেন। এখন বিকেল প্রায় শেষ । সোনালি রোদ ছড়িয়ে আছে চারপাশে। একটা রিকশা চলে যায় টুংটাং শব্দে। স্টেশনটা এখান থেকে কাছেই। শান্টিংয়ের আওয়াজ শোনা যায়। বাতাসে কেমন একটা আষঁটে গন্ধ ভাসছিল । কাছেই একটা সর-পরা পুরনো পুকুর। এদিকে একটা মুদী দোকান । তার পাশে চায়ের স্টল। একটু আগে ওখানেই বসে পরপর দু-কাপ চা খেয়েছেন ফিরোজ আহমেদ।রাস্তার ওপারে পীরজাদা সাঈয়িদ আলী মোত্তাক্কীর সাদা চুনকাম করা তিনতলা বাড়ি। স্থানীয় লোকে বলে পীরবাড়ি । ঘন্টা খানেক আগে ফরিদা পীরবাড়ির অন্দরমহলে ঢুকেছে। একতলার বৈঠকখানায় অপেক্ষা করছিলেন ফিরোজ আহমেদ। সেখানে বেশ ভিড়। আতর আর গোলাপ পানির গন্ধ ভালো লাগছিল না । তা ছাড়া সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছিল। বাইরে চলে এসেছেন। স্টেশন রোডের এ জায়গাটি ভারি নিরিবিলি। ব্যাঙ্কে চাকরি করেন ফিরোজ আহমেদ। সদ্য বদলি হয়ে এই মফঃস্বল শহরে এসেছেন। ভালোই লাগছে। ছিমছাম শহর। পীরজাদা সাঈয়িদ আলী মোত্তাক্কীর জন্য দেশজুড়ে শহরটা পরিচিত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন আসে তদবিরের জন্য । ফরিদাকে নিয়ে আজই প্রথম এলেন ফিরোজ আহমেদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রমৈত্রী করতেন; পীর-ফকির তেমন পছন্দ করেন না ফিরোজ আহমেদ । ফরিদাই নিরুপায় হয়ে পীরের দিকে ঝুঁকেছে। আশেপাশে পরামর্শদাতার তো অভাব নেই!ফরিদার পাশাপাশি নীলুফার হেঁটে আসছে এদিকে। এই মুহূর্তে তেরো বছর পর নীলুফারকে দেখছেন ফিরোজ আহমেদ; ... তেরো বছর পর ... ফিরোজ আহমেদ এর বাবা চাকরি করতেন রেলওয়েতে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কলোনি ... নীলুফাররাও থাকত সেই কলোনিতে । ফুটফুটে ফরসা নীলুফার হলুদ পরীর মতন কিশোর ফিরোজের চোখের সামনে উড়ত। কল্পনায় নীলুফারকে নগ্ন করলেও স্পর্শ করা যেত না। কলেজে উঠে হাবভাব বদলে যায় নীলুফার, আকারে ইঙ্গিতে প্রেম নিবেদন করে। ফিরোজ আহমেদ তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। ফুটফুটে পরীকে নিয়ে কে না ঘরসংসার করতে চায়। গুড়ে বালি। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সংসারে ময়-মুরুব্বীদের ভীষণ দাপট। নওগাঁ থেকে ফিরোজ আহমেদের এক বৃদ্ধ আত্মীয় এসে নীলুফারের এক মামার কুকীর্তির রেফারেন্স দিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে যান: অথচ নওগাঁর সেই বুড়োর নাম শুনলেও জীবনে দু-একবারের বেশি দেখেন নি ফিরোজ আহমেদ! নাঃ, নীলুফার প্রেম সফল হয়নি। এরপর ফিরোজ আহমেদের বাবা অন্যত্র বদলি হয়ে যান । নীলুফার ও অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। যেমন হয়, দুটি পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ ধীরে ধীরে কমে আসে। তারপর একটা সময়ে পাস করে, চাকরি নিয়ে ফরিদাকে বিয়ে করেন ফিরোজ আহমেদ... নীলুফার একখানি চিঠি লিখেছিল। চিঠিখানি এখনও ফিরোজ আহমেদের কাছে আছে। মাঝেমধ্যে বার করে দেখেন, তখন কেমন উদাস উদাস লাগে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কলোনির ওপর মেঘ জমা দুপুর। একটি কিশোর জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে। নিচের কলোনির মাঠে রবীন-তকিউল্লারা ফুটবল খেলছে। মাঠের ওপাশে ছোট দেওয়াল, সার সার নাড়িকেল গাছ, রেললাইন, বিহারী বস্তি। এক দুপুরে সিঁড়িঘরে নীলুফারকে একা পেয়েছিলেন ফিরোজ আহমেদ, সদ্য কলেজে উঠেছে নীলুফার; সে কারণেই কি নিজেকে মেলে ধরেছিল? নীলুফারকে আঁকড়ে ধরে চুমু খাওয়ার সময় ভূমিকম্প হচ্ছে মনে হচ্ছিল। ভীষন টেনশনে ঘেমে উঠেছিল তরুণ ফিরোজ । চুমুর স্বাদ ভালো লাগেনি। বুকের ভিতর অসম্ভব ধুকধুকানি, ভীষণ তোলপাড়, সারা মুখে কেমন একটা তাপ, একটা কেমন ভাপ। ভীষণ কাঁপছিল সে। নীলুফার হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। তারপর পালিয়ে যায়। নীলুফারের স্তনের কাছে অল্প ছুঁয়েছিল তরুণ ফিরোজ, ঐ প্রথম। এমন টেনশন হলো কেন? হাত-পা কাঁপছিল। কিছুক্ষণের জন্য ইরেকশন হয়েছিল। পর মুহূর্তেই আবার শিথিল হয়ে গিয়েছিল। লিঙ্গমুখে অল্প পানিও এসেছিল । এসব কারণে লজ্জ্বায় নীলুফারকে এড়িয়ে ছিলেন কতদিন। এরপরও নিজেকে মেলে ধরার ইঙ্গিত দিয়েছিল নীলুফার, আমাদের তো বিয়ে হবেই, ভাবটা এমন। তখনকার দিনে সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যেত। সিনেমা হলে পাশের সিটে বসত নীলুফার। অন্ধকারে নীলুফারের স্তনে হাত রাখার মুহূর্তেই বুকের ধরফড়ানি শুরু। তখন থেকেই অত্যধিক নার্ভাসনেসের কারণ নিয়ে ফিরোজ আহমেদ বিব্রত। বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই প্রেমিকা কিংবা খালাতো বোন কিংবা মামাতো বোনের সঙ্গে ঘনিষ্ট ভাবে মিশছে। অতিরিক্ত কামপ্রবণ বন্ধুরা যাচ্ছে বেশ্যাপাড়ায় । ফিরে এসে রগরগে বর্ননা দিচ্ছে, যেন সেক্স এক সহজ আর স্বাভাবিক খেলা। অথচ নীলুফারের কাছে গেলেই ফিরোজ আহমেদেরই কেবল হাত-পা কাঁপে? ঐ সময়ই একবার খোঁচা মেরে নীলুফার বলেছিল, সিগারেট খাওয়া আর রাত জেগে বই পড়া ছাড়েন । তাহলেই পারবেন। নীলুফারের মন্তব্যে ফিরোজ আহমেদে বিব্রত বোধ করেন। নীলুফার এত ম্যাচিউরড? মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছে। তবে ওর অনেক বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। পরামর্শটি তাদেরই কারও? অবশ্য নীলুফারের কথাগুলি ঘুরত মাথার ভিতরে। আমি কি তা হলে ...প্রায়শ বিষন্নতায় আক্রান্ত হতেন। ফিরোজ আহমেদের বই পড়তে ভালোবাসেন, ছেলেবেলা থেকেই স্বাস্থ ভালো । রাত জেগে বই পড়েন কৈশর থেকেই। সিগারেট ধরেছেন ক্লাস সেভেনে। জোরতালে ধূমপান চলে। কিন্তু, এসব নার্ভাসনেসের কারণ হবে কেন?নীলুফার দেখতে ছিল ফুটফুটে ফরসা । তন্বী । তুলনায় ফরিদা দেখতে কিছুটা শ্যামলা কিছুটা পৃথুলা। তবে মুখের ছিরিছাঁদ চলনসই। রংপুরের মেয়ে । কথা বলে কম। আবেগ-টাবেগ বাইরে থেকে বড় একটা বোঝা যায় না। নিঃশব্দে সংসারে কাজ করে যায়। প্রেমও করে অনেকটা যান্ত্রিক। কেমন অসার হয়ে পড়ে থাকে। যৌনক্রিয়াকে সম্ভবত পাপই মনে করে ফরিদা, মনে করে যৌনক্রিয়া কেবলি সন্তান উৎপাদনের জন্য। এসব কারণে নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেন ফিরোজ আহমেদ। ভাগ্যিস! ফরিদা অ্যাগ্রেসিভ না। দ্রুত স্খলন সম্ভবত ফরিদা টের পায় না। নিজের পুরুষত্ব নিয়ে সন্দেহ আছে ফিরোজ আহমেদের। মিলনের সময় হলেই বুকের ধুকধুকানি, ভীষণ তোলপাড় অবস্থা, সারা মুখে তাপ ছড়িয়ে পড়ে । যা টের পেয়েছিল নীলুফার এবং ধার-করা বুদ্ধিপরামর্শ দিয়েছিল ... ফিরোজ আহমেদের পুরুষত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েনি ফরিদা। ফরিদা কেবল মা হতে চেয়েছে। ওটাই সম্ভব হয়নি। তীব্র আত্মগ্লানীতে ভুগছিলেন ফিরোজ আহমেদ। আমার অক্ষমতার জন্যই কি ফরিদা মা হতে পারছে না? পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে গোপনে ঢাকায় এসে চর্ম ও যৌনরোগের ডাক্তারের চেম্বারে ভিজিট করেছেন । ডাক্তারকে সব খুলে বলেছেন। ডাক্তার পাত্তা না দিয়ে বলেছেন, সন্তানের পিতা হওয়ার জন্য ওসব কোনও সমস্যাই না। অনেক সময় হাইপার টেনশন থেকে প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন হতে পারে। বাচ্চা না হলে গাইনির বড় ডাক্তার দেখান। সম্ভব হলে স্ত্রীকে নিয়ে ইন্ডিয়া যান। ফরিদাকে নিয়ে বেশ ক’বার ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন ফিরোজ আহমেদ। ঢাকা-কলকাতা-মাদ্রাজ করেছেন। লাভ হয়নি। এ শহরে বদলি হয়ে এসে ব্যাঙ্কের এক কলিগের মুখে শুনলেন পীরজাদা সাঈয়িদ আলী মোত্তাক্কীর গায়েবী ক্ষমতা; নারীর দীর্ঘকালীন বন্ধ্যাত্ব তিনি দূর করতে পারেন। বন্ধ্যা নারীদের পানি পড়া দেন । পীর সাহেব নাকি বন্ধ্যা নারী ছাড়া অন্য কোনও রোগী দেখেন না। উল্লেখ্য, পীর সাহেবের ফি খুবই কম। ২৪৭ টাকা ৮ আনা আর এক প্যাকেট আগরবাতি। কাজ হয় কিনা কে জানে । দেখা যাক। ফরিদার কি আরও দেরি হবে? ফিরোজ আহমেদ সামান্য অস্থির হয়ে ওঠেন। শেষ বিকেলের সোনা রং আলো ছড়িয়ে আছে স্টেশন রোডে। কাছেই একটা ‘স’ মিল। তার যান্ত্রিক শব্দ। আর বাতাসে কাঁচা কাঠের গন্ধ । রেলষ্টেশনের দিক থেকে হুইশেল শোনা যায়। রিকশার টুংটাং। জোরে হর্ণ দিয়ে রড ভরতি একটা ট্রাক চলে যায়। ধীরেসুস্থে রাস্তা পেরুলেন ফিরোজ আহমেদ । পীর সাহেবের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালেন । ফরিদা আর নীলুফার পাশাপাশি হেঁটে আসছে। দুজনে কথা বলছিল। নীলুফারের হাতে একটা বোতল। পানি পড়া সম্ভবত। ও রকম একটি বোতল ফরিদার হাতেও রয়েছে । ১৩ বছর পর নীলুফারকে দেখছেন ফিরোজ আহমেদ। হাতে জলন্ত সিগারেট ছিল। খসে পড়ল। মাটির সঙ্গে মিশে যেতে চাইল নিবীর্য এক ক্লীব-পুরুষ!
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! রেজা ঘটক ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ছিল বৃহস্পতিবার। বইমেলায় ঢোকার পথে যথারীতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢু মারলাম। মাধবদার সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে চলে যাই প্রিয় লিটল ম্যাগ চত্বর বহেড়াতলায়। তখন সময় পৌনে পাঁচটা। মনে পড়ল আমিন ভাইয়ের (কবি সরকার আমিন) 'দশটি ঘোড়া হারিয়ে গেছে' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ঠিক পাঁচটায়। বাংলা একাডেমির নতুন ভবনের উত্তরাধীকার কার্যালয়ে আমিন ভাইয়ের রুমে গিয়ে দেখি, ফেসবুক বন্ধুদের উপচে ভরা ভিড়। আমিন ভাইকে বললাম, এই রুমে তো ধরবে না। এখনো পাঁচটা বাজে নাই, বরং আমরা সবাই ছাদে চলে যাই। তারপর আমরা সবাই ছাদে যাই। 'দশটি ঘোড়া হারিয়ে গেছে' বইটির মোড়ক উন্মোচন হল আমিন ভাইয়ের ফেসবুক বন্ধুদের নিয়ে। অনু ভাই (ডক্টর অনু হোসেন) ছবি তুললেন। যাদের সঙ্গে ট্যাব বা ক্যামেরা ছিল তারাও ছবি তুলল। বাকরখানি আর গজাই খেয়ে ।আমরা খুব হৈ চৈ করলাম। 'দশটি ঘোড়া হারিয়ে গেছে' বইটি বের করেছে প্রকাশনী সংস্থা মূর্ধন্য। লিটল ম্যাগ চত্বরে এসে দেখা হল অনেকের সঙ্গে। দীর্ঘ সময় আড্ডা হল অমিতাভদার সঙ্গে। কবি অমিতাভ পালের সঙ্গে সাম্প্রতিক পেট্রোলময় পোড়া রাজনীতি নিয়ে দীর্ঘ আড্ডা হল। শিল্পী চারু পিন্টু, আমি আর অমিতাভদা মিলে চা খেতে বাইরে আসলাম। সেখানে দেখা হল কবি বদরুল হায়দারের সঙ্গে। বদরুল ভাই বাংলা ৭১ পত্রিকা দিলেন। তার লেখা বইমেলার প্রতিবেদন এখানে নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে। ব্যাক পেইজে কভার বক্সে। অমিতাভ দা চলে যাবার পর আমরা আবার লিটল ম্যাগ চত্বরে ফিরলাম। দেখা হল কমরেড লেখক ঋষি এস্তেবান ও কবি সাফি সমুদ্র মানিকজোড়ের সঙ্গে। তাদের গ্যাং মিলে আড্ডা হচ্ছিল, পিন্টু আর আমি সেখানে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। তারপর দেখা হল, আড্ডা হল কবি শামীমুল হক শামীম, কবি কবির হুমায়ুন, কবি সাখাওয়াত টিপু, কবি মামুন খানদের সঙ্গে। লিটল ম্যাগ থেকে নন্দনের দোকান গুটিয়ে বের হব ঠিক তখন বরিশালের উজিরপুর থেকে জনৈক ভদ্রলোক আরজ আলী মাতুব্বরের বই খুঁজতে এসে কিনে নিলেন আমার গল্পের বই 'পঞ্চভূতেষু'। এবারের বইমেলায় দোকানদারি করতে এসে পঞ্চম দিনে এটাই প্রথম বই বিক্রি করার অভিজ্ঞতা। রাত আটটার দিকে লিটল ম্যাগ থেকে আবার উদ্যানে গেলাম বইমেলার প্রধান অংশে। সেখানে গিয়ে পেলাম প্রজাপতি লেখক দম্পতি বিজ্ঞান লেখক ডক্টর ফারসীম মান্নান মোহাম্মেদী ও লেখিকা ফারহানা মান্নানকে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন প্রকাশক ও কবি আহমেদুর রশীদ টুটুল ও কবি মারুফ রায়হান। আমাদের আড্ডা ফুরানোর আগেই বইমেলার ছুটির ঘণ্টা বেজে গেল। টিএসসি পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে ফিরলাম। ফারসীম পথে বাদাম কিনলেন। আমরা বাদাম খেতে খেতে টিএসসি পর্যন্ত এসে ভাগ হলাম।টিএসসি থেকে চারুকলা পর্যন্ত পাইরেসি, চোরাই ও পুরাতন বইয়ের বিশাল পসরা বসেছে ফুটপথে। এদের ক্রেতা কিন্তু আসল বইমেলার চেয়ে বেশি। কারণ, এরা ঘোষণা দিচ্ছিল- যেটা ধরবেন পঞ্চাশ, যেটা ধরবেন বিশ, ছোটদের বই দশ টাকা। ওদের ওই ঘোষণায় দেখলাম বইমেলা থেকে খালি হাতে ফেরত বইপ্রেমীরা এবার দলে দলে বই কিনছেন। প্রতিবছর অমর একুশে বইমেলা শুরু হলেই পুরাতন, পাইরেসি করা ও চোরাই বই নিয়ে এসব বই বিত্রেতারা টিএসসি থেকে চারুকলা পর্যন্ত ফুটপথ দখল করে। ফুটপথ দখল করার জন্য এরা পুলিশকে টাকা দেয়। বইমেলা যত পুরান হতে থাকে এদের দৌরাত্ম তত বাড়তে থাকে। এক সময় এরা টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ফুটপথেও পুলিশের সহায়তায় দখল নিয়ে নেয়। তখন ভেতরে আসল বইমেলা থাকলেও বাইরে থাকে আরেকটি প‌্যারালাল বইমেলা ও বারোয়ারি মেলা। বাংলা একাডেমি যদি সরকারের সহায়তা নিয়ে অমর একুশে বইমেলার সময় ফুটপথের এই পাইরেসি করা, চোরাই ও পুরাতন বইয়ের দৌরাত্ব বন্ধ করতে না পারে, তাহলে প্রতিবছর এরাই অমর একুশে বইমেলার সৌন্দর্য ধ্বংস করার জন্য প্রধান শক্তি হিসেবে বেড়ে ওঠে। পুলিশ এদের থেকে টাকা খেয়ে প্রতি বছর এই অপকর্মটি করে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবারের মত এবারো অনেকটা কানাচক্ষুর আচরণ করছে। সরকার এসব প্রতিবছরের মত এবারো দেখে না দেখার ভান করছে। অমর একুশে বইমেলা শুরু হলেই পুলিশের সহায়তায় এসব পাইরেসি বইয়ের বিক্রতা, বারোয়ারি মেলার বিক্রেতাদের দৌরাত্ম দিনদিন বৃদ্ধি পায়। প্রতিবছর এসব নিয়ে আমরা কথা বলি। মাগার কর্তৃপক্ষের সেই কথায় কোনো টনক নড়ে না। অমর একুশে বইমেলা যত পুরাতন হতে থাকে, এসব শযতানি ততই যেন চারপাশ থেকে জেকে বসে। ..............................৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
rn
একটি বাচ্চার আত্মকাহিনী আমার নাম যাহরা তাবাসুম রোজা। আমার আর কোনো ভাই বোন নেই। আমিই বাবা-মার প্রথম সন্তান। এখন আমার বয়স দুই বছর। আমি একা একা হাঁটতে পারি। টুকটাক প্রায় সব কথাই বলতে পারি। আমাকে সবাই খুব আদর করে। অপরিচিত মানুষজনরাও আমাকে আদর করে। কোথাও গেলে সবাই আমাকে কোলে নিয়ে আদর করে, চুমু খায়, কেউ কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দেয়। এত এত আদর ভালোবাসায়- আমি অতিষ্ঠ। আমার বাবা চাকরী করেন। মা সারাদিন বাসায়ই থাকে। মা'র ভালোবাসাটা অনেকটা অত্যাচারের পর্যায়ে পড়ে। তবে আমার রাজীব চাচুর ভালোবাসাটা অত্যাচার পর্যায়ে পড়ে না। তিনি সবার থেকে আলাদা। তার প্রতি আমার সব সময়ই এক আকাশ শুভ কামনা আছে, থাকবে। আমি সকাল ১১ টায় ঘুম থেকে উঠি। সকালে দেরী করে উঠার কারণ হলো- আমি অনেক রাতে ঘুমাতে যাই। যাই হোক, আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করি। তারপর মা আমাকে ডিম সিদ্ধ খাওয়ান। দিনের পর দিন ডিম খেতে খেতে- ডিমের প্রতি এখন আমার ঘৃন্না ধরে গেছে। মা আমাকে জোর করে ধরে ডিম খাওয়ান। আমার বমি এসে পড়ে, মাঝে মাঝে বমি করে দেই, তারপরও আমার রেহাই নেই। ডিম খেয়ে আমি নীচে নেমে আমার সবচেয়ে প্রিয় রাজীব চাচুকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি। চাচুই উঠো...চাচুই উঠো, এই রাজীব চাচুই উঠো। রাজীব চাচুই ঘুম থেকে উঠে- আমাকে কোলে তুলে নেয়। চাচুও আমার মতন অনেক রাতে ঘুমায়। সম্প্রতি চাচু বিয়ে করেছে। চাচুর বউকে আমি মেজ মা বলে ডাকি। মেজ মা অনেক ভালো মানুষ। প্রতিদিন দুপুর সাড়ে বারোটায় মা আমাকে গোছল করায়। গোছল করার আগে আমার সারা গায়ে অনেক কিছু মাখে এবং গোছল শেষ করার পর আবার আমার গায়ে নানান ররকম লোশন ক্রীম ট্রীম মাখে। এত ক্রীম- আমার খুবই বিরক্ত লাগে। তারপর মা আমাকে খিচুরী খাওয়ায়। আমি খিচুরী বলতে পারি না। আমি বলি- হপ্পা। নানান রকম সবজি দিয়ে হপ্পা বানানো হয়। হপ্পার মধ্যে মিষ্টি কুমড়া থাকবেই। মিষ্টি কুমড়া বাচ্চাদের জন্য অনেক উপকারী। আপনারাই বলেন- দিনের পর দিন হপ্পা কারো ভালো লাগতে পারে? কিন্তু এই হপ্পা আমাকে প্রতিদিন দুইবেলা খেতে হয়। কি কষ্ট !! কি কষ্ট!! হপ্পা শেষ করে আমার মা আমাকে গান শুনিয়ে শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়। মার গান শুনতে শুনতে- আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই। আহ কি আনন্দময় ঘুম। এই ঘুমের মধ্যে আমি অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখি। কিন্তু দুঃখের কথা হলো- স্বপ্নের কথা গুলো কাউকে বলতে পারি না। আজ থেকে দুই বছর আগে, আমি যখন মার পেটে ছিলাম- তখন থেকেই আমার মা আমার যত্ন নেওয়া শুরু করে। মাকে ডাক্তার আংকেল বলেছেন- ডাবের পানি খেতে, ডাবের পানি খেলে বাচ্চার গায়ের রঙ পরিস্কার হয়। মাশাল্লাহ আমারা গায়ের রঙ সুন্দর হয়েছে। শুধু ডাবের পানি না, মা ডাক্তারের পরামর্শ মত সব সময় পুষ্টিকর খাবার খেত। আমার জন্ম হয় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে। ভোর চার টায়। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। সকালবেলা দিদা, রাজীব চাচুই আমাকে দেখতে আসে। দিদা আমাকে দেখেই খুশিতে কেঁদে ফেলেন। রাজীব চাচুই তার ক্যামেরা দিয়ে পটাপট আমার বেশ কিছু ছবি তুলে নেয়। ফ্লাশ ছাড়া ছবি তুলেছিল- যেন ফ্লাশের আলো আমার চোখে না লাগে। রাজীব চাচুই কাকে কাকে যেন মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়ে আমার জন্মানোর কথা জানালো। মাঝে মাঝে রাজীব চাচুই আমাকে কোলে করে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে নিয়ে যায়। আমাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে রেখে, চাচুই আরাম করে চা খায়। মাঝে মাঝে আমাকেও দুই এক চুমুক খেতে দেয়। একদিন তো গরম চা খেয়ে আমার ঠোট আর জিব পুড়েই গিয়েছিল। হঠাত হঠাত রাজীব চাচুই আমাকে নিয়ে বিকেলবেলা হাঁটতে বের হয়। আমি একা একাই রাস্তার ফুটপাত ধরে হেটে যাই। আমার একটুও ভয় করে না। কারন আমি জানি, আমার পেছনে চাচুই আছে। আমি মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগেই চাচুই আমাকে ধরে ফেলবে। চাচুর সাথে আমি একটা দোকানে প্রায়ই যাই। সে দোকানে অনেক রকম মাছ, পাখি আর খরগোশ আছে। একদিন আমি একটা খরগোশ কোলে নিয়েছিলাম। খরগোশ খুব তুলতুলে হয়। দুনিয়ার সব মায়েরাই শিশুদের ঘুমপাড়ানি গান শুনিয়ে থাকেন। বিশ্বের প্রথম ঘুমপাড়ানি গানটি লেখা হয়েছিল অন্তত চার হাজার বছর আগে। কিছু কিছু গান আমার মুখস্ত হয়ে গেছে। রাতে আমার মা আমাকে গান গেয়ে ঘুম পাড়ায়। ‘ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি মোদের বাড়ি এসো বাটাভরা পান দেব গালভরে খেয়ো।’ আমার বাবা আমাকে মাঝে মাঝে এই গানটা গেয়ে শুনান- "আয়রে আমার কাছে আয় মামনি/ সবার আগে আমি দেখি তোকে/ দেখি কেমন খোপা বেঁধেছিস তুই/ কেমন কাজল দিলি কালো চোখে/ আয় খুকু আয়..আয় খুকু আয়।" বাবার মুখে এই গান টাই আমার খুব প্রিয়। এই গানটা বাবার মোবাইলেও আছে। রাজীব চাচুর গানের গলা খুবই বিচ্ছিরি। "বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই চড়ি শখের বোটে/ মাঝিরে কন, “বলতে পারিস সূর্য কেন ওঠে?/ চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে? আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত্। তারাই আগামীতে বিশ্ব পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এজন্য তাদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। এ কথা অনস্বীকার্য, আজকের শিশু জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মুক্ত চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠলে আগামী দিনের বিশ্বে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশ্ব হয়ে উঠবে সুন্দর ও শান্তিময়। বিশ্বের সব শিশু নিরাপদে, স্নেহ-মমতায় বেড়ে উঠুক। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৭ মার্চ শিশু দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনটিকে শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিন সরকারি ছুটি থাকে। আমার চাচুর কাছ থেকে প্রতিদিন আমি অনেক কিছু শিখি। চাচু বলেছে- শিশুরাই দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আজ যে শিশু, পৃথিবীর আলোয় এসেছে আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই। আজ যে শিশু, মায়ের হাসিতে ভেসেছে আমরা চিরদিন সেই হাসি দেখতে চাই। রেললাইনের পাশে নয়, অন্ধকার সিঁড়িতেও নয় প্রতিটি শিশু মানুষ হোক আলোর ঝরনাধারায়।। শিশুর আনন্দ মেলায় স্বর্গ নেমে আসুক। হাসি আর গানে ভরে যাক, সব শিশুর অন্তর প্রতিটি শিশু ফুলেল হোক সবার ভালোবাসায়।। শিশুর আনন্দ মেলায় স্বর্গ নেমে আসুক। সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৯
false
mk
২০১৭ ভালোভাবে কাটুক জীর্ণ ও পুরনোকে পেছনে ফেলে এসেছে নতুন বছর। ২০১৬ সালকে বিদায় জানিয়ে এসেছে ২০১৭ সাল। নতুন বছরে নতুন বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে স্বপ্নের জাল বুনবে। স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখে আনন্দিত হবে। বাংলাদেশ সমৃদ্ধির সোপান বেয়ে এগিয়ে যাবে। নতুন বছরের প্রথম দিনে ১৬ কোটি মানুষের আজ একটাই প্রত্যাশা।একসময় যাঁরা বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বা ‘বটমলেস বাস্কেট’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, পাশ্চাত্যের সেই সব রাজনীতিক-অর্থনীতিবিদই আজ ভিন্ন কথা বলছেন। প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্ট ২০১২ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশের নানামুখী সম্ভাবনা তুলে ধরে যে নিবন্ধটি ছেপেছিল, তার শিরোনামই ছিল, ‘আউট অব দ্য বাস্কেট’। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশসহ ‘নেক্সট ইলেভেন’ভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতি ইউরোপের ২৭ দেশের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ সংস্থা জেপি মর্গান বাংলাদেশকে ‘ফ্রন্টিয়ার ফাইভ’ বা অগ্রগামী পাঁচ দেশের অন্তর্ভুক্ত করেছে। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কথা বলে যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল, সেই বিশ্বব্যাংকও এখন বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তারা নতুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় শরিক থাকারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশের এগিয়ে চলার প্রশংসা করে আসছেন। প্রশংসা আসছে আরো অনেক দিক থেকেই। বাংলাদেশের এই এগিয়ে চলা কিংবা এত প্রশংসাপ্রাপ্তি—এর মূল দাবিদার অবশ্যই বাংলাদেশের উদ্যমী জনগণ। কৃষক-শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতাও একটি বড় ভূমিকা রেখেছে।অনেক প্রাপ্তির মধ্যেও পুরনো বছরের অনেক কিছুই আমাদের হতাশ করেছে। তার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ছিল সবচেয়ে উদ্বেগজনক। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন শঙ্কার পারদকে অনেক ওপরে নিয়ে গেছে। দেশে উন্নয়ন সহায়ক রাজনীতি এখনো অনেক দূরবর্তী। জঙ্গি কর্মকাণ্ড কিছুটা কমলেও এখনো তা বড় ধরনের হুমকি হয়ে আছে। নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মতো দুষ্টক্ষতগুলো দেশের ভাবমূর্তিকে কলুষিত করছে। দুর্নীতির লাগাম টানার ক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোগে এখনো বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। দেশের ভেতরের ও বাইরের নানা ধরনের ষড়যন্ত্র বারবারই অগ্রযাত্রায় হুমকি হয়ে উঠছে। এ জন্য দেশের রাজনীতিবিদ ও জনগণকে ধৈর্য, সহনশীলতা ও সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। সামগ্রিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশের মাধ্যমে সমাজ থেকে অন্ধকার দূর করতে হবে, আলো জ্বালাতে হবে। তাই নতুন বছরের প্রথম প্রহরে আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে—অন্ধকারের শক্তিকে রুখে দিয়ে এবং সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নেবই। নতুন বছরের শুরুতে তরুণসমাজের কণ্ঠে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হোক সেই দৃঢ় সংকল্পের কথা—কোনো ষড়যন্ত্রই বাংলাদেশের অগ্রগতি রুখতে পারবে না, রুখতে দেব না। আমরা চাই, ২০১৭ সাল হোক বাংলাদেশের সমৃদ্ধির বছর, শান্তির বছর। নতুন বছরে কালের কণ্ঠ’র অগণিত পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:১৮
false
fe
শোকাহত জাতিসত্তার অশ্রু , সংহতির রুদ্র প্রত্যয় শোকাহত জাতিসত্তার অশ্রু , সংহতির রুদ্র প্রত্যয় ফকির ইলিয়াস--------------------------------------------------------------এমন মর্মান্তিক ঘটনা কল্পনাও করা যায় না। কি নৃশংস মানসিকতা, কি জঘন্য পরিকল্পনা। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ বাংলাদেশ ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক দিন। বর্বরতম দিন। এমন খুন, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ একাত্তরে ঘটেছিল এই বাংলার মাটিতে। হায়েনারা ছিল পাকিস্তানি। এবার স্বদেশী দুর্বৃত্তরাই তা করেছে। ঘরে দরজা ব করেও প্রাণে রক্ষা পাওয়া যায়নি। তারা কপাট ভেঙেছে। লুটপাট করেছে স্বর্ণালঙ্কার, অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র।কোন দাবি আদায়ের জন্য এমন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ কি কেউ করতে পারে?­ না পারে না। বিডিআরের অনেক দাবি ছিল। সেকথা চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডিজি মে. জে. শাকিল আহমেদও বলেছিলেন। সে সাক্ষাৎকার আমি দেখেছি। এক্সক্লুসিভ ওই সাক্ষাৎকারে তিনি অনেক কথা বলেছিলেন। তার দাবি ছিল সব সৈনিকের পক্ষে। দাবি পরণের কাজ তো তার ছিল না। তিনি দাবি জানিয়েছিলেন সরকারকে। আর সরকার তা পরণ করার মালিক। সে সময় দেয়া হয়নি। ডিজিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে।না দাবি-দাওয়ার জন্য এমন হত্যাযজ্ঞ, তা আমি বিশ্বাস করি না। কেউ বিশ্বাস করছে না। এর নেপথ্যে অন্য কারণ ছিল। অন্য ষড়যন্ত্র ছিল। যা ছিল সুদরপ্রসারী। ঘাতকরা তারই অংশ বিশেষ বাস্তবায়ন করেছে নৃশংসভাবে। জাতি হারিয়েছে তার বীর সন্তানদের।পিলখানার হত্যাযজ্ঞ কাঁপিয়ে দিয়েছে বাংলার মাটির ভিত। এতো শোক কীভাবে বইবে জাতি? কীভাবে বইবে এই মৃত্তিকা? টিভিতে প্রোগ্রাম দেখেছি তিনদিন। শোকে মুহ্যমান জাতি। টিভির পর্দায় চোখ রাখলেই অশ্রুর বন্যা নামে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছি বার বার মনের অজান্তেই। স্বজনরা কাঁদছে। প্রিয়তমা স্ত্রী কাঁদছেন তার স্বামীর জন্য। সন্তান পিতার জন্য। মা-বাবা পুত্রের জন্য। আর এই বাংলাদেশের মাটি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকেছে তার সন্তানদের বুকে ধারণ করার জন্য। হে পাষণ্ড! হে নির্মম বিবেক! তুমি ধ্বংস হয়। তুমি নির্বাসিত হও চিরতরে। এমন ধ্বংসলীলা মানুষ আর দেখতে চায় না। পিলখানা হত্যাযজ্ঞ নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে তিনটি। সবাই কাজ করছেন। সহসাই এর রিপোর্ট জাতি জানতে পারবে­ আশা করা যাচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, যারা এর নেপথ্যে, সেসব গডফাদাররা ধরা পড়বে তো?পিলখানায় ওইদিন বহিরাগত খুনিরা ঢুকেছিল এটা প্রায় নিশ্চিত। বিডিআরের কিছু বিপথগামী সদস্যদের সঙ্গে যোগসাজশে তারা সেখানে ঢুকেছিল। প্রত্যক্ষদর্শী বিভিন্ন অফিসারের ভাষ্য অনুযায়ী, একটি পিকআপ ঢুকেছিল অস্ত্রসহ। ছিল অস্ত্রের বাক্স। তা সবাই আমরা টিভিতে দেখছি, শুনছি। এসব ভাষ্য বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ঘাতকদের আচরণ সৈনিক সুলভ ছিল না; কিংবা ঘাতকরা প্রায় সবাই ছিল বয়সে কম, খাটো প্রকৃতির’­ এসব বক্তব্য জোর দিয়ে খতিয়ে দেখা দরকার মনে করি। অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, নতুন পোশাক তৈরি কারা করেছিল? কীভাবে? সন্দেহ নেই, একটি চক্র বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেয়ার মতলবে মেতেছি। বিডিআর বনাম সেনাবাহিনী মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে তারা ভাঙতে চেয়েছে আমাদের সশস্ত্র শক্তির মেরুদণ্ড। যেসব মেধাবী কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে এরা ছিলেন এই দেশ গঠনে নিবেদিত প্রাণ। দেশের সব শক্তি বিনষ্ট করার এই পাঁয়তারা তাই ভেবে দেখার মতো। দেখতে হবে এদের উৎস কোথায়?পিলখানা ঘটনার পর ‘বিডিআরের’ নাম বদল করে দেয়ার কথাও উঠেছে আমরা পত্রপত্রিকায় দেখছি। এমন রক্তপাতের পর সরকার নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে বিডিআরের সব সদস্য কিন্তু আপরাধী নয়। যারা এটি করেছে তারা পথভ্রষ্ট, বিপথগামী এবং ষড়যন্ত্রকারী। একই কায়দায় জাতির জনক নিহত হন সপরিবারে কিছু বিপথগামী সৈনিকের হাতে। পনেরোই আগস্টের সেই কালো রাতের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাম পরিবর্তন না করেই ব্যাপক উদ্যম, সাহসে ও শক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। সুনাম কুড়িয়েছে দেশে-বিদেশে।বিডিআরও সেই সুনাম বয়ে চলেছে দীর্ঘদিন থেকে। সরকার চাইলে নাম পরিবর্তন করতেই পারে। তবে তার চেয়ে এই বাহিনী আরও অধিক কর্মউজ্জ্বল, জাতিশীল এবং সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা অধিক জরুরি মনে করি।২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে যা ঘটেছে এর শিকড় উন্মোচিত হওয়া উচিত। এমন ঘটনা গোটা জাতিকে শঙ্কিত এবং অরক্ষিত করে তুলেছে। এমন দীর্ঘ পরিকল্পনার কথা দেশের শীর্ষ গোয়েন্দারা কেন জানতে পারলেন যা­ সে দাবি উঠছে বারবারই। ঘাতকরা কাদের কাছ থেকে মদদ পেয়েছে, কাদের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলেছে, কি কথা হয়েছে­ তা খতিয়ে দেখলে মুখোশ উন্মোচন সহজ হবে বলে মনে করি। মনে রাখতে হবে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্খা এফবিআই, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড, অনুসানের পথ বাতলে দিতে পারবে। তবে স্বদেশী কিংবা বিদেশী শত্রু কে বা কারা তা চিহ্নিত করতে হবে বাংলাদেশকেই। বাংলাদেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্খাগুলোকেই।২৫ ফেব্রুয়ারির মর্মান্তিক ঘটনায় সেনাবাহিনী অপারেশন করা অপরিহার্য ছিল কিনা তা নিয়ে যুক্তিতর্ক হতেই পারে। তবে বুঝতে হবে, রাষ্ট্রের শীর্ষ নির্বাহী এবং তার পরিষদ বিচক্ষণতার সঙ্গেই পরিস্খিতি মোকাবেলা করেছেন। সরকারি কোন গাফিলতি অধিক প্রাণহানির কারণ হয়েছে কিনা তালাশ করে দেখার সময় কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। যৌথভাবে দায় মেনেই এগিয়ে যেতে হবে সবাইকে। উপমহাদেশ এখন মৌলবাদী কালো দানবের থাবার দখলে। এই লেখাটি যখন শেষ করব তখনই দেখলাম, পাকিস্তানে নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটদল। সাতজন পুলিশ নিহত হয়েছেন। খেলোয়াড়রা আহত হয়েছেন। বাংলাদেশে একটি মৌলবাদী চক্র হুঙ্কার দিচ্ছে­ ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেই দেখুক না।’ এই দাবি যখন জনগণের প্রাণের দাবি তখনই পিলখানা হত্যা নতুন অনেক কথার জন্ম দিচ্ছে। জাতি সংহতি চায়। নিরপরাধকেই যেন কোনভাবেই আক্রান্ত না হন সে বিষয়টি খেয়াল রাখা বড় জরুরি এখন। নিউইয়র্ক, ৪ মার্চ ২০০৯-------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ৬ মার্চ ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত
false
ij
গল্প_ আগুনের গলি বাগদাদ শহরের হাইফা স্ট্রিটটি খুবই বিখ্যাত একটি সড়ক। সেই সড়কের পাশেই সরু একটি গলির ভিতরে আলী আল আম্মার-এর তিনতলা বাড়ি । হাইফা স্ট্রিটটি দজলা (তাইগ্রিস) নদীর খুব কাছে, যে কারণে বাড়ির দোতলার বারান্দায় দাঁড়ালে সন্ধ্যেবেলা দজলা নদীর ভিজে আঁষটে গন্ধ আর উথালপাথাল হাওয়া টের পাওয়া যায়। বারান্দার নিচেই পীর বালাদানের গলি। পারস্যের ফাজারুদ্দীন বালাদান নামে এক পীরের নামে গলির নাম। পীরের মাজারটি গলির মধ্যেই। বাগদাদের লোকের বিশ্বাস: পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান ছিলেন অত্যন্ত বুজর্গ ব্যাক্তি, তাঁর নাকি এন্তার রূহানি শক্তি ছিল; কথাটা মনে হয় সত্য। তা না হলে ১৯৭৯ সালের ১৬ জুলাই ক্ষমতা গ্রহন করার পরে সাদদাম হুসেইন আবদ আল মাজিদ আল তিকরিতি গোপনে কেনই-বা এক গভীর রাতে পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান-এক মাজারে যাবেন? ক্ষমতা গ্রহন করার আগেও নাকি সাদদাম হুসেইন আবদ আল মাজিদ আল তিকরিতি খুব শীতের এক ভোরে ছদ্মবেশ ধারণ করে অতি গোপনে পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান-এক মাজারে এসেছিলেন। মাজারে ঢোকার মুখে কালো রঙের ভারী একটি গেট, লোহার; ভিতরে ছাই রঙের কবুতর ভর্তি ছোট্ট একটি পাথরের চাতাল। চাতালের দক্ষিণ পাশে কালো গম্বুজওয়ালা মাজার। আলী আল আম্মার-এর গালিচার দোকানটি পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান-এর মাজারের কাছেই। আলী আল আম্মার-এর পূর্ব পুরুষের বসবাস ছিল পারস্যে, পারস্যের গালিচার পারিবারিক পুরনো ব্যবসা। বৃদ্ধের একটাই ছেলে- ফায়েক; ছত্রিশের মতো বয়স, সেও গালিচার দোকানে বসে। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ। বাগদাদ শহরের ওপর মার্কিন বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর আলী আল আম্মার হার্ট এ্যাটাক করে মারা যান; হার্টের অসুখ ছিল বৃদ্ধের, তার চিকিৎসাও চলছিল। মৃত্যুর সময় দোকানে ছিলেন বৃদ্ধ। মার্কিন বিমান হামলা শুরু হলে বৃদ্ধের বলিরেখাময় মুখের তামাটে রংটি কেমন কালচে নীলবর্ণের হয়ে যেতে থাকে, তারপর তিনি ছটফট করতে করতে ছেলের সামনেই ঢলে পড়েন। হতভম্ব ফায়েক কী করবে বুঝতে পারে না, বোমা বিস্ফোরণের ভয়ঙ্কর শব্দে তারও বুক কাঁপছিল। বৃদ্ধ আলী আল আম্মার ছিলেন অন্ধ । অন্ধ শ্বশুরের দেখাশোনা করত ফায়েক-এর বউ সাফিয়া । ইরাকের বাকুবা শহরের মেয়ে সাফিয়া, বড় চাচার বাড়ি একরকম অনাথ হয়েই মানুষ হয়েছে। বিয়ের পর বৃদ্ধ শ্বশুরের মধ্যে অদেখা বাবাকে খুঁজে পেয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হয়েছে সাফিয়া; বিয়ের ক’বছর পর থেকে বৃদ্ধ শ্বশুরের প্রতি সাফিয়ার সেবা যত্ন আরও বেড়ে গেছে । তার কারণ আছে। তেরো বছর হল সাফিয়ার বিয়ে হয়েছে, বাচ্চা হয়নি; যে কারণে সাফিয়ার স্বামী ফায়েক সাফিয়ার ওপর বিরক্ত, বিরক্ত হলেও বিবাহ বিচ্ছেদের কথা ভাবতে পারছে না ফায়েক, কেননা, প্রথমত, ছেলের বউয়ের প্রতি বৃদ্ধর অসম্ভব গভীর টান; দ্বিতীয়ত, গালিচার দোকানটির মালিকানা এখনও বৃদ্ধ বাবার । বৃদ্ধর যে ছেলের বউয়ের ওপর ভীষণ টান - এও এক রকম কৌশল। ফায়েক আবার বিয়ে করলে সেই নতুন বউ যদি অন্ধ বৃদ্ধকে অবহেলা করে? এ কারণেই বৃদ্ধ ছেলের বিবাহ বিচ্ছেদ চান না। ওদিকে মা হতে না-পেরে মনে মনে গভীর গ্লানিতে ভুগছিল সাফিয়া; এ নিয়ে ওর উদ্বেগের শেষ নেই। বিয়ের পর পরই বুজর্গ পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান-এর নাম শুনেছে। ইচ্ছে ছিল একবার পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান-এর বালাদান পীরের মাজারে গিয়ে মা হওয়ার মানৎ করে । লোকের বিশ্বাস, পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান নাকি কাউকে খালি হাতে ফেরান না, মানৎ করলে সবার মকসেদই পূর্ন। সাফিয়ার শ্বশুর আলী আল আম্মার আবার পীরফকির বরদাস্ত করেন না। আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে বৃদ্ধ অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অবশ্য নরম হন এবং সাফিয়াকে বালাদান পীরের মাজারে যাওয়ার অনুমতি দেন। তা ছাড়া হার্টের অসুখ ছিল বৃদ্ধের, তার চিকিৎসাও চলছিল। তেমন লাভ হচ্ছিল না। যদি পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান-এর উছিলায় অসুখ ভালো হয়ে যায়। আসলে অসুখে ভুগে ভুগে অন্ধ বৃদ্ধের আগেকার শক্ত মনটিই দূর্বল হয়ে পড়েছিল। পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান-এর মাজারের খাদেম আবদেল হালেফ, মাঝবয়েসি লোক, বাড়ি নাজাফ; আবদেল হালেফ নানা রকম বাতেনি কেরামতি জানে, সাফিয়ার শ্বশুরকে বিশেষভাবে প্র¯তুত রুম্মান (ডালিমের শরবত) খেতে দিয়েছে। পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান-এর মাজারে নির্জন কোঠায় মার্বেল পাথরের ঠান্ডা মেঝে। সেই মার্বেল পাথরের মেঝের ওপরে কপাল ঠেকিয়ে সাফিয়া কাঁদে । বুজর্গ পীরকে মনের কথা খুলে বলে। সাফিয়ার স্বামী ফায়েক আজকাল ভীষণ শীতল আচরণ করে । ক’বছর হল সাফিয়ার শরীরের প্রতি উদাসীন হয়ে উঠেছে ফায়েক । বিছানায় রাতের বেলায় সাফিয়ার পাশে কাঠের মতন শুয়ে থাকে, ছোঁয় না। সাফিয়া কি আর করে- কখনও মাহাজ-এর কিশোর শরীরটি, কখনও-বা রাহিলের টগবগে শরীরটি ভেবে ছটফট করে... মনে মনে এসব গোপন কথা বলতে বলতে মাজারে বসে সাফিয়া কাঁদে আর কাঁদে । সাফিয়াকে মাজারে নিয়ে গিয়েছিলেন সাফিয়াদের তিনতলার ভাড়াটে সাঈদূন বিবি । সাঈদূন বিবির বাদামী চুল, ঘন কালো ভুরু, নীলচে চোখ আর থলথলে ফরসা শরীরে কুর্দি রক্ত। মহিলা বিধবা । সাঈদূন বিবির স্বামী হাসান আল বকর বাথ পার্টি করতেন। সাদদাম হুসেইন আবদ আল মাজিদ আল তিকরিতি ১৯৭৯ সালের ১৬ জুলাই ক্ষমতা গ্রহন করার পরের দিনই হাসান আল বকর-এর লাশ দজলা নদীতে ভাসছিল । সেদিনই সাঈদূন বিবির এক ছেলে হয়। রাহিল, ইরাকের সামরিক বাহিনীতে আছে: আন নাসিরিয়ায় পোষ্টিং । মাঝে মাঝে মাকে দেখতে আসে রাহিল। আগে কত ফরসা ছিল, রাহিল এখন তামাটে হয়ে গেছে। সাফিয়ার আপন ভাইবোন নেই, রাহিলের সঙ্গে সে ভাইয়ের সম্পর্ক পাতিয়েছে। রাহিল গতমাসে বাগদাদ এসেছিল, বোনকে কাছে টেনে কানে কানে বলেছিল, আর কত, এবার আমায় একটি সুন্দরী বউ এনে দাও না বইিন। সাফিয়া চোখ রাঙিয়ে বলেছিল, শখ কত! তারপর হেসে বলেছিল, বউ যদি সুন্দরী না হয় তো? রাহিল হতাশার সুরে বলে, বউ সুন্দরী না হলে আমি আল্লার ইচ্ছেকে মেনে নেব, নয়তো এই পোড়া কপালের দোষ দেব। কথাটা শুনে ভাইয়ের কপালে চুমু খেয়ে সাফিয়া বুকের ভিতর থেকে নাফেসার ফটোগ্রাফ ছবি দেখিয়ে বলেছিল: এই নাও তোমার বউ। নাফেসার ছবি দেখে রাহিলের চোখ দুটি আঙুর পাতায় মোড়ানো দোলমার মতন হয়ে গেল । হবে না কেন- ছিপছিপে তরুণী নাফেসা; এ মহল্লাতেই নতুন এসেছে। নাফেসার বাবা হাদী আল হাকিম সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অভ ইরাকের কেরানি । একটাই মেয়ে তার, ভালো পাত্রের হাতে তুলে দেবেন। সাঈদূন বিবিও ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজছেন। নাফেসাকে পছন্দ করেছেন। এ বছরই, ২০০৩, এপ্রিলে বিয়ে। সেদিন সাঈদূন বিবি বলছিলেন, রাহিলের আব্বা বেঁচে থাকলে কত খুশি হতেন। সাফিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এসব সময়ে চুপ করে থাকতে হয়। আমার স্বামী বেঁচে আছে, অথচ আমারও দীর্ঘশ্বাস পড়ে। সাঈদূন বিবির স্বামী নেই তারও দীর্ঘশ্বাস পড়ে। আশ্চর্য! স্বামীর কথা স্মরণ করে সাঈদূন বিবি এখনও কাঁদেন। স্বামীর মৃত্যুর কারণটা সাঈদূন বিবির কাছে এখনও ঠিক বোধগম্য নয়। কে বা কারা তার লাশ দজলায় ফেলল। বাথ পার্টি করতেন। তারাই তে এখন ক্ষমতায়। ইরাকসহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য এখন থমথম করছে, আম্রিকা ইরাক আক্রমন করতে পারে, প্রেসিডেন্ট বুশ সাদদাম হুসেইনকে দিনরাত হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। সাঈদূন বিবি তাতে অখুশি নন। সাঈদূন বিবি সাদদাম হুসেইনকে দুচোখে দেখতে পারে না। সাঈদূন বিবি কুর্দি। রাহিলের বাবা অবশ্য সুন্নি ছিলেন। পৃথিবীতে আজও এমন অসবর্ণ বিবাহ হয় বৈ কী। সেই স্বামী মরে গেল। মৃত স্বামীর কথা স্মরণ করে সাঈদূন বিবি এখনও কাঁদেন। সাঈদূন বিবির এখন মাঝবয়েস। সেই থলথলে ফরসা শরীরে রাতদিন দজলা নদীর জোয়ারভাঁটার খেলা; যে কারণে সাঈদূন বিবির নজর সাফিয়ার শ্বশুরের ওপর । (সাফিয়া বেঁচে থাকতে সাঈদূন বিবি ফায়েক- এর ওপর নজর দেবে সে সাহস ওই বিধবার নেই!)। সাফিয়া যখন রান্নাঘরে রান্না করে পাশের ঘরে তখন সাফিয়ার শ্বশুর সাঈদূন বিবির সঙ্গে বসে গল্প করেন। এক বিধবা ও এক অন্ধ বৃদ্ধের ভারি অদ্ভুত প্রেম খুব কাছ থেকে দেখে সাফিয়া । (ফায়েক অবশ্যি এসব টের পায় না। পুরুষ মানুষ বলেই টের পায় না হয়। ...সংসারে নারীর অনেক আমোদ ...বিনে পয়সায় কত কত নাটক তারা দেখে।) সাফিয়াকে খুশি রাখতে সাঈদূন বিবি সাফিয়াকে কত কিছু যে রান্না করে খাওয়ায়: এই যেমন বাসমতি চালের বিরিয়ানি, কচি ভেড়ার মাংসের কাবাব, ফাসোওলিয়া (এক ধরনের স্যূপ), হারিসা, (এক ধরনের পায়েস) ;জামেড- ভেড়ার দুধের লাবান (দই) ... রুম্মান। সাফিয়ার অন্ধ শ্বশুর আর মধ্যবয়েসী বিধবা সাঈদূন বিবির সঙ্গে ভারী অদ্ভুত ধরনের এক প্রেম চলছে। সাঈদূন বিবির হাতের মজাদার রান্না খেয়ে হোক বা শ্বশুরের বিরাগভাজন হবে না বলেই পুরো বিষয়টা সাফিয়া দেখেও না-দেখার ভান করে। সাফিয়া ভালোই জানে, তার ষাট বছরের অন্ধ শ্বশুরটি নপুংসক, ভোরবেলা বুড়ো খালি পেটে মিছরি আর পেস্তার গুঁড়ো মিশিয়ে মধুর শরবত খান ( শরবতটা সাফিয়াই বানিয়ে দেয়) ...কালিজিরার তেল খান ; তারপরও বুড়োর মাজায় হারানো তাকৎ ফিরে আসে না, সাঈদূন বিবি শরীরে আন্দাজে হাত দিতে সাহস পান না। রান্না করতে করতে সাফিয়া পাশের ঘরে সাঈদূন বিবির দীর্ঘশ্বাস যেন টের পায়। সাঈদূন বিবির এই দীর্ঘশ্বাসের জন্য কি সাদদাম হুসেইন আবদ আল মাজিদ আল তিকরিতি দায়ী? কবে যেন রাহিলের বাবা হাসান আল বকর-এর লাশ দজলা নদীতে ভাসছিল? আজ এক বাটি ভেড়ার দুধের লাবান নিয়ে সাঈদূন বিবি এসেছিলেন। সকালে গাজরের হালুয়া বানিয়েছিল সাফিয়া। লাবানটুকু অন্য একটি বাটিতে ঢেলে খালি বাটিটা ধুয়ে বাটিতে কয়েক চামচ গাজরের হালুয়া রাখল, খালি বাটি ফেরত দিতে নেই। এই সময় কলিং বেলটা বাজল। সাঈদূন বিবি বললেন, মাহাজ এল বোধহয়। আমি যাই। সাফিয়া দরজা খুলল। মাহাজ। সাফিয়ার বুকটা ধক করে উঠল। সাঈদূন বিবি তিন তলায় থাকেন, মাহাজ-এর পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। মাহাজ ঘরের ভিতরে ঢোকে: আঠারো-উনিশ বছরের কিশোর ছেলে; ফরসা, লাল লাল কোঁকড়া চুল, সুরমা দেওয়া ছোট জ্বলজ্বলে চোখ। গালিচার দোকানে দুপুরের খাবার নিয়ে যায় মাহাজ । মাহাজকে সামনে বসিয়ে টিফিন ক্যারিয়ারে ধীরে ধীরে ভাত, শাক, ফুলকপি আর ভেড়ার মাংস দিয়ে রান্না করা ‘মাকলুবা’ ভরে । মাহাজ খুব কাছে বসে দেখতে থাকে সাফিয়ার একত্রিশ বছরের গোলাপি রঙের মোলায়েম শরীরটি। (সাফিয়া ঘরে বোরখা পরে না ...) সাফিয়া সুন্দরী। বাকুবার মেয়ে বলেই সুন্দরী। বাকুবার মেয়েরা সুন্দরী হয়। মাহাজ লোভী চোখে সাফিয়াকে দেখে। সাফিয়া মুচকি হাসে। উঠতি বয়েসের ছেলে-তাকাবেই তো। পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান-এর মাজারে যাওয়ার পর থেকেই সাফিয়া তার মনের ভিতরে অদ্ভূত এক পরিবর্তন টের পায়। মাহাজ-এর প্রতি আরও মনোযোগী হয়ে ওঠে। ফায়েক ক’বছর হল সাফিয়ার শরীরের প্রতি একেবারেই উদাসীন হয়ে উঠেছে। রাতের বেলায় বিছানায় সাফিয়ার পাশে কাঠের মতন শুয়ে থাকে, ছোঁয় না। সাফিয়া কি আর করে? মাহাজ-এর শরীরটি মনে ভাসায়। কখনও রাহিলের ... এক দুপুরে মাহাজ খাবার নিতে এল। শ্বশুর সেদিন ঘরে ছিলেন না, দোকানে গিয়েছিলেন। সাঈদূন বিবিও আসেন নি। রাতে নাফেসার মা-বাবার দাওয়াত, তারই জোগারযন্ত্র করছেন বোধহয়। সারা বাড়ি ফাঁকা। সাফিয়ার বুকটা কাঁপছিল। ও ওর ঘামে ভেজা হাত দিতে মাহাজ-এর খসখসে হাতটি ধরে। মাহাজ হাসে। ঝুঁকে চুমু খায় সাফিয়ার গোলাপ-রঙা গালে। সাফিয়ার ঘন নিঃশ্বাস ঘন হয়ে উঠেছে। তারপর যেন ফায়েককে অপমানিত করার জন্যই মাহাককে শোয়ার ঘরে নিয়ে যায়। মাহাজ অবাক হয়নি। যেন সে জানত। সাফিয়ার গোলাপি রঙের কোমল শরীরটি ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে সাফিয়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। গত বছর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে সাফিয়া ওর ভিতরে নতুন এক জীবনের কাঁপন টের পায়। এ বছরই জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান সাফিার মনের ইচ্ছে পূরণ করেন । হাসপাতালে মেয়ের লালচে শিশু মুখ দেখে সাফিয়া অনেকক্ষণ ধরে কাঁদল । মনে মনে পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান কে হাজারবার সালাম দিল। সাফিয়ার শ্বশুর আলী আল আম্মার নাতনির নাম রাখেন জাঈনাব, আলী আল আম্মার মায়ের নাম ছিল জাঈনাব। সাঈদূন বিবি নবজাতককে একটি সোনার মোহর উপহার দিয়ে জাঈনাব এর নাম রাখলেন, সাজিদা; সাঈদূন বিবির মায়ের নাম ছিল সাজিদা । হবু শাশুড়ির সঙ্গে নাফেসাও এসেছে। নাফেসা সাজিদার নাম রাখল আবিয়া। নাফেসার মায়ের নাম আবিয়া। সদ্য প্রসূত নাতনিকে কোলে নিয়ে অন্ধ আলী আল আম্মার বলেছিলেন, পাঁচ বছর ধরে আল্লা আমার নজর কালো করে দিয়েছেন, তাতে আমার দুঃখ নেই সাফিয়া। কিন্তু এক নজর জাঈনাবকে দেখব না, আমি এই দুঃখ কোথায় রাখি। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ। সাফিয়া মেয়েকে নিয়ে একা ছিল ঘরে। মেয়েকে নিয়ে আজ পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান-এর মাজারে যাওয়ার কথা। ফায়েককে বলেছিল, তার নাকি এখন সময় নেই, দোকানে গিয়ে মাহাজ কে পাঠাবে বলল। সাফিয়ার বুকটা ধক করে ওঠে। মেয়ে হওয়ার পর এই প্রথম মাহাজ কে একা পাবে। মেয়ের হওয়ার পর মাহাজ সাফিয়ার দিকে লাজুক হেসেছিল। মাজারে আজ খাবার নিয়ে যাবে সাফিয়া। দোলমা রাঁধছিল । আঙুর পাতায় মুড়িয়ে নেবে। টমাটো, কাঁচা মরিচ কেটে আলাদা করেছে । মাজারের খাদেম আবদেল হালেফ লাবান মাখিয়ে দোলমা খেতে পছন্দ করেন। মাজারের কথায় সাঈদূন বিবির স্বপ্নের কথা মনে পড়াতে বুকটা কেঁপে উঠল। সে দিন সাঈদূন বিবি বললেন, ভারি অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখলাম সাফিয়া। কি! দজলা নদীর পাড়ে রাহিল উপুড় হয়ে পড়ে আছে। ওর গায়ের উর্দিতে আগুন ধরে গেছে । নাফেসা পানি ঢালছে ; কয়েকজন আম্রিকান সৈন্য নাফেসাকে টানতে টানতে নিয়ে যায়, ওর বোরখা ছিঁড়ে ফেলে, তারপর ... নাফেসার চিৎকারে পীর ফাজারুদ্দীন বালাদান-এর মাজারের ওপর আকাশ থেকে আগুনের ফুলকি ঝরে পড়ছে । সাফিয়া শিউরে ওঠে। তলপেটের কাছে হাত দেয়। ওখানকার চর্বি তিরতির করে কাঁপে। বলে, থাক। এসব কথা থাক। ছোট ছোট করে টমাটো কাটছে সাফিয়া। মেয়েটা শোওয়ার ঘরের বিছানায় ঘুমাচ্ছে। কী মনে হতে একবার রান্না ফেলে শোওয়ার ঘরে গেল সাফিয়া। বিছানার ওপর ছোট্ট একটি পুঁটলি। ঘুমন্ত। কী মাসুম চেহারা! তেরো বছর পরে কোলে এল। সাফিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর রান্নাঘরে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতে যাবে-তখনই গলির দিক থেকে বিস্ফোরনের প্রচন্ড শব্দ শুনতে পেল। সমস্ত বাড়িটা কেঁপে উঠল। মেয়েটার ঘুম ভেঙ্গে ট্যা ট্যা করে কেঁদে উঠল। সাফিয়া দ্রুত জানালার কাছে ছুটে যায়। গলিতে আগুন আর ধোঁওয়ার কুন্ডলী। ওপাশের বাড়ি পুরোপুরি ধ্বসে গেছে। গলিতে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে। গলিতে মাহাজ দৌড়াতে দেখল। এদিকেই আসছে। আগুন আর ধোঁওয়া দ্রুত ওপরের দিকে উঠে আসছে। সাফিয়ার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আগুনের তাপ টের পায়। প্লাস্টিক পোড়া গন্ধ পেল। মেয়েকে নিয়ে নিচে নেমে যাবে কিনা ভাবল। কে যেন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। মাহাজ? দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে সাফিয়া। মাথা ঘুরছে। দরজাটা কী ভাবে যেন খুলে গেল। সাঈদূন বিবি। পাগলের মতন চিৎকার করে কী যেন বলছেন। সাঈদূন বিবির পিছনে মাহাজ .. সেও উঠে এসেছে। সিঁড়িতে ধোঁওয়া। সাফিয়ার হঠাৎ মেয়ের কথ মনে পড়ল। ঘুরে দাঁড়াতেই বাড়িটা দুলে ওঠে ভেঙ্গে পড়তে থাকে ... উৎসর্গ: ২০০৩ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত ৮৫ হাজার নিহত ইরাকির উদ্দেশ্যে। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১২:৫০
false
hm
প্ররক্ষা বনাম প্রতিযোগিতা এক. "ভারতীয়" সিনেমাকে বাংলাদেশের বাজারে উন্মুক্ত করা নিয়ে সম্প্রতি একচোট কথাবার্তা হয়ে গেছে সব জায়গায়। অচ্ছ্যুৎ বলাই একটি পোস্ট দিয়েছিলেন, সেখানে কিছু মত এসেছে, প্রথম আলোতে মশিউল আলম একটি আর্টিকেল লিখেছেন, কালের কণ্ঠে কলম ধরেছেন চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ। তাঁদের বক্তব্যের সার কাছাকাছি, অনেকটা এমন ... এতদিন ধরে উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের ও ভাষার সিনেমাকে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করতে না দিয়ে যে প্রতিযোগিতাহীন নিরাপদ বাজারের সুযোগ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে, তা কোনো কাজে আসেনি। চলচ্চিত্র শিল্পের মান নেমে গেছে। অতএব এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে অন্যান্য দেশের সিনেমাকে বাংলাদেশে বড় পর্দায় দেখার সুযোগ করে দেয়া হোক। পটভূমিটা আমরা স্পষ্টভাবে দেখলে মতবিনিময়ে সুবিধা হবে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষিতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ভারতীয় চলচ্চিত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। স্বাধীনতার পরও এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে সদ্যস্বাধীন দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের স্বার্থে। আমদানি নীতিতে লেখা বাক্যটি মশিউল আলম উদ্ধৃত করেছেন, ‘উপমহাদেশের ভাষায় প্রস্তুতকৃত কোনো ছায়াছবি (সাব-টাইটেলসহ বা সাব-টাইটেল ব্যতীত) আমদানি করা যাইবে না।’ আমরা এ কারণে বাণিজ্যিকভাবে দেশে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা বা মালদ্বীপের কোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শন করতে পারি না। কাণ্ডজ্ঞান যা বলে, এ নিষেধাজ্ঞা না থাকলে আমাদের দেশে পশ্চিমবঙ্গ, মুম্বাই আর পাকিস্তানে নির্মিত বাংলা, হিন্দু আর উর্দু চলচ্চিত্রই চলতো, ভাষার কারণে বাকিগুলো মার খেয়ে যেতো (দক্ষিণ ভারতের কিছু গরম সিনেমা হয়তো ব্যতিক্রম হতো)। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান আমদানি নীতি থেকে এই ধারাটি বিলোপের উদ্যোগ নিয়েছিলো। সিনেমাহল মালিকবৃন্দ তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। কিন্তু চলচ্চিত্র শিল্পের যারা মা-বাপ, তারা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেন। তারপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্যমন্ত্রীকে বিরত করেন, এবং নিষেধাজ্ঞাটি জারি থাকে। দুই. মশিউল আলম ও হুমায়ূন আহমেদের আর্টিকেল দু'টি থেকে আমরা যা পাই, তা হচ্ছেঃ ১. বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে ৩৮ বছর ধরে যথেষ্ঠ প্ররক্ষা দেয়া হয়েছে। ২. কিন্তু এই নিশ্চ্যালেঞ্জ বাজারে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিকশিত হয়নি। ৩. চলচ্চিত্রশিল্পের ক্ষয়ের কারণে এর একটি পক্ষ, অর্থাৎ সিনেমা হল মালিকদের জন্যে বাণিজ্যের সুযোগ ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। ৪. এই সামগ্রিক ক্ষয়ের কারণ এই নিষেধাজ্ঞাজনিত প্ররক্ষা। ৫. দর্শকরা বড় পর্দায় ভালো ছবি দেখতে চায়। ৬. যখন এ নিষেধাজ্ঞা ছিলো না (১৯৬৫ সালের আগে), তখন দেশে যেসব ছবি নির্মিত হতো, সেগুলোর মান অনেক উন্নত ছিলো। ৭. চলচ্চিত্র শিল্পের উত্তরণ ও বিকাশ, সিনেমা হল মালিকদের বাণিজ্যের সুযোগবৃদ্ধি এবং দর্শকদের ভালো সিনেমা দেখার সুযোগ সৃষ্টির জন্যে ঐ নিষেধাজ্ঞাটি তুলে নেয়া উচিত। তিন. পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী দু'টি চলচ্চিত্র শিল্পকেন্দ্র, যথাক্রমে বলিউড ও দক্ষিণ ভারত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বাজারকে বিরাট চ্যালেঞ্জ দিতে পারতো, এ কথা খুবই সত্য। তবে চ্যালেঞ্জ যে তারা একেবারেই দেয়নি, সেটাও বলা যায় না। ভারতীয় চলচ্চিত্র বিকশিত হয়েছে কয়েকটি পর্যায়ে, এবং প্রতিটি পর্যায়ে একটি মন্থর কিন্তু নিশ্চিত ভরবেগ নিয়ে তাদের শিল্প বিস্তৃতি লাভ করেছে। ভারতে সিনেমার দর্শকের সংখ্যা বিপুল, শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও। আমরা এক অর্থে ভারতীয় সিনেমার বাজারে ঢুকে বসেই আছি আশির দশকের শুরু থেকে, যখন ভিডিও ক্যাসেট ভাড়া করে আমাদের মা-খালারা জিতেন্দ্র-শ্রীদেবী-অমিতাভশোভিত নানা সিনেমা দেখতেন। তফাত খুব সামান্য, বিনোদনের বিনিময়ে টাকাটা যাচ্ছে আমাদের ভিসিডি-ডিভিডিঅলাদের কাছে। আমাদের কারো কাছে কি কোনো পরিসংখ্যান আছে, দেশে এই ডিভিডির বাজার কতটা বড়? আমার মনে হয় না। কিন্তু এ সংখ্যাটি খুব একটা ছোট নয়। হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে বেরোনো কোনো তরুণী যখন তার বান্ধবীর সাথে অনর্গল হিন্দিতে কথা চালিয়ে যেতে পারে, তখন আরো একটি জিনিস বোঝা যায়, আমাদের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢোকার আগেই ভারতীয় সিনেমার প্রভাব ও প্রস্তুতি। পণ্য তার ক্রেতাকে সম্পূর্ণই বশে এনে রেখেছে, এখন ক্রেতা কেবল পকেটে হাত ঢুকিয়ে মানিব্যাগ থেকে পয়সা বার করে হাতবদল করাটা বাকি। তাই যখন আমরা বলি, চলচ্চিত্রকে আমরা প্ররক্ষা দিয়ে এসেছি, কথাটা জেনেশুনে মিথ্যা বলা হয়। আমরা চলচ্চিত্রকে যথেষ্ঠ পরিমাণ প্ররক্ষা দিতে পারিনি। আমরা একটি মৌন প্রতিযোগিতার মুখে নিঃশব্দে হারতে ঠেলে পাঠিয়েছি আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পকে, বলা যায় আশির দশক থেকেই। আমাদের দেশে ভারতীয় সিনেমার দর্শকগোষ্ঠী নিরবে, অথচ সবার গোচরেই স্ফীত হয়ে হয়ে বিপুলায়তন হয়েছে, সিনেমাগামী দর্শকের সংখ্যা কমেছে, আমরা কি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছি? কল্পনা করুন, একজন যোদ্ধা সম্মুখ সমরে নেমেছে, তার গায়ে বর্ম, কিন্তু শরীরে যক্ষার জীবাণু, কাশতে কাশতে মুখে গু তুলে মরার দশা তার। আপনি এসে বলছেন, এতোদিন বর্ম পরে থেকেও তুই বিকশিত হতে পারলি না, খানকির পোলা, এখন বর্ম খোল, ন্যাংটা হয়ে যুদ্ধ কর, দেখি প্রতিযোগিতা বাড়লে তুই বিকশিত হতে পারিস কি না। ঠিক একই যুক্তি কি আমরা দিচ্ছি না? চার আমরা মশিউল আলম আর হুমায়ূন আহমেদ সাহেবের আর্টিকেলে যে ফ্যালাসিগুলো এড়িয়ে যাচ্ছি, সেগুলো হচ্ছে কোরিলেশন আর কজালিটির ধাঁধাঁ। এ কথা খুব সত্য, যখন ভারতীয় চলচ্চিত্র পূর্ব পাকিস্তানে প্রদর্শিত হতো, তখন পূর্ব পাকিস্তানেও মোটের ওপর ভালো সিনেমা বানানো হতো। কিন্তু তা কি কেবল প্রতিযোগিতার ফল? ঐ সময়ে চলচ্চিত্র শিল্পে যে নবীন নির্মাতারা প্রবেশ করেছিলেন, তাঁদের সাথে বরং চলচ্চিত্রের মানকে আমরা সরাসরি কোরিলেট করতে পারি। ঐ মানুষগুলো যখন সরে গেছেন বা মরে গেছেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মানকে নিজেদের সাথে কবরে নিয়ে গেছেন বললে কি খুব ভুল বলা হবে? আমরা দ্বিতীয় জহির রায়হান পাইনি সিনেমায়, পাইনি দ্বিতীয় আলমগীর কবিরকে, পাইনি দ্বিতীয় এহতেশামকে, পাইনি দ্বিতীয় খান আতাউর রহমানকে। একটি প্রজন্ম আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পকে নিজের হাতে জন্ম দিয়েছে, তারা হারিয়ে যাবার পর তাদের স্থান নেয়ার মতো কেউ আসেনি। এর সাথে আরো যোগ করুন ভারতীয় টিভি চ্যানেলের প্রভাব। আমি হিন্দি ভাষাটি মুখে আর কানে প্রায় ইংরেজির মতোই দক্ষতা নিয়ে জানি, কেবল টিভি দেখে। আমার মতো বৃদ্ধ দামড়ার কথা বাদ দিলাম, যে শিশুটি এখন দিনে চার থেকে আট ঘন্টা টিভিতে হিন্দি ভাষায় "এক্সপোজড", তার কাছে কিন্তু হিন্দিভাষী সিনেমা অপরিচিত কিছু নয়। বরং চলমান বাংলা সিনেমায় নায়িকার আবেগ বা ভিলেনের আক্রোশ তার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়, হিন্দি সিনেমায় নায়কের কোলে নিশ্চিন্ত নায়িকার সঙ্গীত পরিবেশনকে সে বেশি স্বাভাবিক মনে করে, কারণ সে ক্রমাগত এ দেখেই বড় হচ্ছে। আমরা এর প্রতিফলন দেখি আমাদের প্রতিদিনের জীবন আর উদযাপনে। কোনো বড় দাওয়াতে গেলে দেখা যায় সাম্প্রতিক হিন্দি সিনেমা বা সিরিয়ালে দেখানো কোনো একটি ধাঁচের জামা একাধিক তরুণীর (মাঝে মাঝে তার প্রৌঢ়া খালা) গায়ে, বিয়ের অনুষ্ঠানের আচার ক্রমশ হিন্দি সিরিয়ালে দেখানো বিয়ের অনুষ্ঠানের দুর্বল অনুকরণ, ঘনিষ্ঠ ফোনালাপে হিন্দি সংলাপ। গত পনেরো বছর ধরেই মধ্যবিত্তের বিনোদনে যোগ হয়েছে মূলত ভারতীয় টিভি চ্যানেলে উপস্থাপিত অনুষ্ঠান। আমরা নির্বিচারে গলাধকরণ করেছি যে যার রুচিমতো। কিন্তু তারপরও আমরা চোখ বুঁজে বলে যাচ্ছি, আমরা চলচ্চিত্রশিল্পকে প্ররক্ষা দিয়েছি। এটা ইস্পাতের স্যান্ডো গেঞ্জি পরে সিল্কের লুঙ্গি উল্টিয়ে পাছা বার করে দাঁড়িয়ে থেকে প্ররক্ষা প্ররক্ষা বলে চেঁচানোর সমতুল্য। এবার আসুন, তাকাই আরেকদিকে। চলচ্চিত্রশিল্পে যে ক্ষয় শুরু হয়েছে, তাকে রোধ করতে কর্তৃপক্ষ কী করেছে? কয়টা "অশ্লীল" ছবি দেখানোর জন্যে এর নির্মাতা, কুশলী আর হলমালিককে শাস্তি পেতে হয়েছে গত ৩৮ বছরে? যোগ্যকে শুধু পুরস্কৃত করলেই চলে না, দুষ্কৃতীকে শাস্তি দিতে হয়। আমরা কি সেটা নিশ্চিত করতে পেরেছি? আমার ধারণা উত্তরটা নেতিবাচক। তারপরও আমরা বলছি, চলচ্চিত্রশিল্পকে আমরা প্ররক্ষা দিয়েছি। মশিউল আলমের আর্টিকেল থেকে জানা যায়, ২০০০ সালে সারা দেশে ১৬০০ সিনেমা হল ছিলো, আজ আছে ৬০০। গুগলে গুতা মেরে দেখলাম, ওদিকে এক অন্ধ্র প্রদেশেই ২৭০০ মুভি থিয়েটার আছে। ৭৮ বছর বয়সী তেলুগু সিনেমা যে পরিপক্কতা অর্জন করতে পেরেছে, আমরা ৩৯ বছরে তার ভগ্নাংশও অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু এর কারণ কি কেবল "প্রতিযোগিতা"র অভাব, নাকি যত্নের? ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্পে কী বিপুল অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়, আমরা কি জেনেও না জানার ভান করে বসে আছি? এই যে সিনেমার মান গ্যালো, মান গ্যালো বলে এত চেঁচামেচি চলছে, কেন এত জ্ঞানীগুণী লোকজন থাকতেও ভালো স্ক্রিপ্ট আসছে না সিনেমায়, আসছে না ভালো গান, ভালো নৃত্য পরিচালনা, ভালো শব্দকৌশল, ভালো ল্যাব, ভালো স্টুডিও? আমরাই কি বারবার ভারতে ছুটে যাই না কারিগরি কাজে সাহায্য নিতে? আমাদের এই অমনোযোগই কি আমাদের দেশে চলচ্চিত্রপ্রযুক্তির বিকাশে সবচেয়ে বড় বাধা নয়? তারপরও আমরা পত্রিকায় কানতে কানতে লিখি, আমরা আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পকে প্ররক্ষা দিয়ে আসছি। পাঁচ প্রতিযোগিতা হয় সমানে সমানে। অসমানে অসমানে যা হয়, তাকে বলা যেতে পারে ফিল্টারিং। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর আর্সেনালের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতে পারে, কিন্তু বার্সেলোনা আর রহমতগঞ্জের মধ্যে যে ম্যাচ, সেটা রহমতগঞ্জের টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার একটা আনুষ্ঠানিক সুযোগ মাত্র। বড় গলা করে বলা যায়, হারজিত ব্যাপার না, প্রতিযোগিতাই বড় কথা, কিন্তু আসল কথা আমরা সবাই জানি, খেলতে নামতে হয় জেতার জন্যেই, হারার জন্যে না। যারা বলিউডের সিনেমার সাথে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকারদের প্রতিযোগিতার কথা বলেন, তারা তাদের মতলব চেপে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের কোনো বাপের ব্যাটাই সিনেমা দিয়ে বলিউডের বিরাট, বিপুল সিনেমাযন্ত্রের মুখোমুখি হতে পারবে না। সেই সাধ্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের নাই। কেন নাই, তা নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ এবং সঠিক কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হয়, আসুন নিই, কিন্তু "প্রতিযোগিতা"র মাধ্যমে তার মান বাড়ানোর কথা যদি বলেন, তাহলে একবার তাকান পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রশিল্প আর পাকিস্তানের চলচ্চিত্রশিল্পের দিকে। প্রবল বলিউডের সামনে তারা কুঁকড়ে গেছে। আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের পরিণতি তারচেয়ে ভিন্ন হবে না। বর্তমান পৃথিবীতে চলচ্চিত্রে যেসব যান্ত্রিক কৌশল এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ঔৎকর্ষ্য এসেছে, তার সাথে আমাদের দর্শক কিন্তু সমাক্ষ। আমাদের দর্শক সিনেমার সাম্প্রতিকতম কলাকৌশলের তারিখ করতে শিখে গেছে, যেসব কৌশল বলিউডি সিনেমায় এখন নিতান্ত সাধারণ উপকরণ, কিন্তু আমাদের সাধ্যের বাইরে। এ পরিস্থিতিতে আমরা "প্রতিযোগিতা"র নাম করে তাঁবুর দরজা খুলে দিচ্ছি, ঢুকতে দিচ্ছি সেই প্রবাদের উটকে, যে একসময় আমাদেরই তাঁবুর বাইরে বার করে দিয়ে গোটা তাঁবু দখল করবে। ৬০০ সিনেমা হল মালিকের সাথে ঠিক কয়টি পরিবার সংশ্লিষ্ট? ৬ হাজার? আর চলচ্চিত্রশিল্পে জড়িত কয়টি পরিবার? হ্যাঁ, ভারতীয় তথা হিন্দি চলচ্চিত্র বাংলাদেশে ঢুকলে সিনেমাহলগামী হবে বহু লোকে। তবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিকশিত হবে না। আজ যারা চলচ্চিত্রে কালো টাকা ঢালছে, তারা বরং নতুন সিনেমা হল খুলবে। আজ একজন জেমস হিন্দি সিনেমায় গান গাইতে পেরে নিজেকে কৃতার্থ ভাবছে, কাল হয়তো ওরকম আরো তিনজন জাতে উঠবে বলিউডি সিনেমায় কোনো টুকিটাকি রোল করতে পেরে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটি ধারা শুকিয়ে না খেতে পেয়ে মৃত্যুবরণ করবে, আর অন্যটি হবে আমাদের চিবানোর জন্য হাড্ডির মতো, বছরে বা দু'বছরে শোরগোল করার সবেধন নীলমণি। বাকি দেশ গিলবে হিন্দি গাঁড় মারকে চলা নাহি যানা। ছয় এক লোক সিনেমা বানিয়েছে সম্প্রতি। তার নাম সম্ভবত আবদুল জলিল, সেটাকে ভদ্রোচিত এম এ জলিল বানিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে করে কেউ নিশ্চিত হতে না পারে ঐ এম আর ঐ এ-র আড়ালে কোন সেই গূঢ় নাম লুকিয়ে আছে। মুরুক্ষু বলে মোহাম্মদ আবদুল জলিল ভেবে বসি। জলিল সাহেবের স্ক্রিন নাম কী, নিশ্চিত নই, কিন্তু ফেসবুকে তিনি অনন্ত নামে খ্যাতি পেয়েছেন। তিনি তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী, নেমেছেন সিনেমা করতে। ছবির কাহিনী হাস্যকর, নায়কের ভূমিকায় তার নড়াচড়া আর সংলাপ ডেলিভারি আরো হাস্যকর, কিন্তু তারপরও বলি, ভাই, আপনি চালিয়ে যান। খোঁজ দ্য সার্চের পর আপনি পাইছি দ্য ফাউন্ড বানান। দেশে থাকলে সবান্ধব দেখতে যাবো আপনার সিনেমা। আপনার সিরিয়াস ডায়লগের উপর খ্যাক করে হেসে দেয়ার জন্যেই যাবো। আমি চাই, আপনার মতো আরো পুঁজিপতি সিনেমায় বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসুক। আমি নিশ্চিত, লাভের আশা দেখলে আপনারা নিজে নায়ক না হয়ে নায়কোচিত কোনো যুবককে ছেড়ে দিবেন নায়কের রোলখানা, স্ক্রিপ্ট লেখাবেন কোনো সত্যিকারের লেখককে দিয়ে, কোনো প্রতিভাবান নবীন পরিচালককে দেখা যাবে ক্যামেরার পাশে, কোনো ঝানু ক্যামেরাম্যান থাকবে ক্যামেরার পেছনে। ঢাকাতেই কোনো আধুনিক ল্যাবে প্রসেসড হয়ে বের হবে ঝকঝকে প্রিন্টে কোনো সিনেমা। আর, নিজে না পারলে, এইরকম কিছু লোকের জন্যে খোঁজ দ্য সার্চ চালান। সংযোজন তিনজন চলচ্চিত্র নির্মাতা পত্রিকায় বক্তব্য দিয়েছেন এ ব্যাপারে। হলমালিক সমিতিও বক্তব্য দিয়েছে। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি বক্তব্য দিয়েছে হুমায়ূন আহমেদের বক্তব্যের প্রতিবাদে। সাংবাদিক আনিসুল হক এই উদ্যোগের প্রতিবাদে কিছু কথা বলেছেন। মোহাম্মদ এ আরাফাত একটি সিনারিওসহ লিখেছেন এর বিরুদ্ধে। ক্যাথরিন মাসুদ তাঁর একটি বক্তৃতায় কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।
false
rg
প্রশাসনের নির্বিকার অব্যবস্থাপনায় আবারো পদ্মায় লঞ্চ ডুবি। আবারো পদ্মাপাড়ে লাশের মিছিল!!! বাংলাদেশে প্রতি বছর নৌপথে লঞ্চ ডুবি হবে, হাজার হাজার নিরীহ সাধারণ মানুষ মারা যাবে, এটাই এখন প্রচলিত রেওয়াজে পরিনত হয়েছে। লঞ্চ ডুবি নিয়ে ঘটনার পর কয়েকদিন মিডিয়া একটু উচ্চবাচ্য করবে। তারপর অন্য কোনো বড় ঘটনা বা অঘটন ঘটলে, মিডিয়াও লঞ্চ ডুবির খবরকে পাশ কাটিয়ে নতুন খবরের পেছনে ছুটবে। আর মানুষ এক সময় ভুলে যাবে লঞ্চ ডুবির সেই ভয়াল খবরের আহাজারি। কিন্তু লঞ্চ ডুবির পর বাংলাদেশের শাসকদের যেনোবা একটাই মাত্র কাজ, সেটি হল- এক বা ততোধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা, তাদের কিছু সময় সীমা বেধে দেওয়া। কিন্তু কী কারণে লঞ্চ ডুবি হল, কোথায় গলদটা, সেই অনুসন্ধানে খোদ সরকার বাহাদুরের কখনোই যেনো কোনো আগ্রহ নেই। অন্তত ইতিহাস এখন পর্যন্ত সেই সাক্ষ্যই দেয়। এর প্রধান কারণ কি? কারণ হল, লঞ্চ ডুবলে সাধারণভাবেই ধরে নেওয়া যায়, যে কিছু হাভাতের দল, কিছু না খাওয়া মানুষ, কিছু গরিব মানুষ, কিছু ছাপোষা কেরানির আন্ডাবাচ্চারা হয়তো ডুবেছে। ওরা ডুবে মরলে বা কি, ওরা জীবিত থাকলে বা কি! ওরা তো রাষ্ট্রের কোনো উপকারে আসে না। ওরা তো আর ধনির দুলাল নয়, ওদের দিয়ে তো আর রাষ্ট্রের বড় বড় কাজকাম করানো যেতো না। সুতরাং, উদ্ধারকাজ ঢিলেঢালাভাবে করলেই তো হল। গরিব মানুষ মরছে, তো কিছু শোকবার্তা দিলেই হল। নিয়ম-নীতি যা যা বহাল আছে, ভবিষ্যতেও গরিবদের জন্য ওই একই নীতি বহাল থাকবে। তোরা খালি কয়দিন একটু কান্নাকাটি কর... তারপর দেখবি দুনিয়া আবার ঠিক হয়া গ্যাছে গা।গতকাল মাওয়াঘাট থেকে মাত্র ৬০০ গজ দূর থেকে প্রমত্ত পদ্মায় ডুবে যায় এমএল পিনাক-৬ লঞ্চটি। এই লঞ্চটির ধারণ ক্ষমতা ছিল মাত্র ৮৫ জনের। কিন্তু লঞ্চটি যাত্রী নিয়েছিল তিনশো'রও অধিক। দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাট। ওপার গেলেই তো ফুলসুরাত পারায়া গোলাম গা। লঞ্চটি ডুবল কখন? গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে। আর উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তুম অকুস্থলে পৌঁছাল কখন? রাত সাড়ে আটটায়। কয় ঘণ্টা পর? মাত্র সাড়ে নয় ঘণ্টা পর। উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তুম কোথায় ছিল? বরিশাল। সেখান থেকে মাওয়া আসতে রুস্তুমের একটু সময় তো লাগবেই ভাই। উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তুম দিয়ে কি উত্তাল পদ্মায় উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব হয়েছিল? না। না কেন? কারণ, রুস্তুমের মাওয়া পৌঁছাতেই রাত হয়ে গেছিল। তারপর রুস্তুম পৌঁছে সেখানে কি করল? কি করবে, নোঙ্গর গেড়ে পরদিন সকালের জন্য অপেক্ষা করেছিল। ও আচ্ছা, তাই বলুন। তা রুস্তুমে কি আধুনিক যন্ত্রপাতি কিছু আছে? নারে ভাই, রুস্তুমে আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলে তো রাতেই কিছু কইরালাইতো। জানেন না, আমাদের উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা আর রুস্তুম হইল গিয়া আমাদের সেই প্রাচীন দিনের একমাত্র উদ্ধারকারী জাহাজ। তো এখনো যে রুস্তুম খবর পাইয়া ঘটনা স্থলে রওনা দিবার পারছে, হের জন্য তো রুস্তুমরে একটা ধন্যবাদ দেওন লাগে। ভাই, আপনাগো কি আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে উদ্ধার করার মত কোনো উদ্ধারকারী জাহাজ নাই? কে কইছে নাই, আছে তো। দুই খান জাহাজ আছে, তয় ভাই একখানের নাম মনে নাই। আরেক খানের নাম কইতাছি, হের নাম নির্ভিক। তো ভাই, নির্ভিক মহাশয় কোথায় ছিলেন? উনি নারায়নগঞ্জে আছিলেন। কেন, উনি নারায়নগঞ্জে ছিলেন কেন? আপনে বুঝি জানেন না শীতলক্ষায় আলোচিত যে সাত খুনের লাশ পাওয়া গেল, হেইগুলা তো নির্ভিক মহাশয়ের কারণে দ্রুত আবিস্কার হইছিল। ও আচ্ছা, তো হের পর উনি ওইখানেই বইসা বইসা এতোদিন ডিম পাড়ছে? হে কথা মুই কইতে পারতাম না। হে কথা উপরের লোকজন জানে। হুলনাম, তোমাগো মাওয়া ঘাটে নাকি সব সময় অন্তত একখান আধুনিক উদ্ধারকারী জাহাজ থাকার কথা। তো নির্ভিক কেন মাওয়া ঘাটে থাকলো না। এমনিতে ঈদের সময় পদ্মায় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, হেই কথা কি আমনের স্মার্ট মন্ত্রী খান বাহাদুর জনাব শাহজাহান খান সাহেব জানতেন না? হেই কথা মুই কেমনে কমু ভাই? হেয় তো মন্ত্রী মানুষ। অন্য সবাইগো মত হেয় তো ঈদ করতে ব্যস্ত ছিল। এই সামান্য ব্যাপারডা আমনে বোঝেন না।তো আপনাগো আধুনিক উদ্ধারকারী জাহাজ এমভি দুর্ভিক মহাশয় মাওয়া ঘাটে নারায়নগঞ্জ থেকে কখন পৌঁছালেন? আজ সকালে হেয় পৌঁছাইছে। পৌঁছাই মাত্র পুরাদমে উদ্ধারকাজ শুরু করছে নির্ভিক মহাশয়। হুনলাম আরেকখান উদ্ধার জাহাজ চট্টগ্রাম থাইকা রওনা হইছে, ওনারা মাওয়া আইতে কতক্ষণ লাগবে? আবহাওয়া যদি ভালো থাকে আইজ সূর্য থাকতে আইয়া পড়তে পারে। ও আচ্ছা...তো এমএল পিনাক-৬ লঞ্চটি ডোবার পর কয় জন মানুষ জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হল? জীবিত অন্তত ৭০ থেকে ৮০ জনকে উদ্ধার করা গেছে। তাইলে লঞ্চে যাত্রী যদি ৩০০-এর বেশি হয়, তাইলে ২২০ জনেরও বেশি মানুষের ভাগ্যে কি ঘটল, তা এখনো জানা গেল না, তাইতো? হ, হিসাবে তো হেইরম-ই মনে হয়। ভাই, এমএল পিনাক-৬ এর ধারণক্ষমতা তো মাত্র ৮৫ জন। হেয় ৩০০-এর বেশি যাত্রী কেন নিল? আরে ভাই, ঈদের সময় না, দুই চাইরডা পয়সা কামাই করব না। এইডা বোঝেন না??তো এমএল পিনাক-৬ লঞ্চের কি চলাচলের অনুমোদন ছিল? নারে ভাই, ঈদের সময় কি কোনো অনুমোদন লাগেনি? ঈদের সময় লঞ্চে খালি ঠিকমত স্টার্ট লইলেই হইল। জানেন না, ঈদের সময় সব পুরান অচল লঞ্চ রঙ কইরা চলাচলের উপযোগী করা হয়। কিন্তু ভাই নিয়ম বলে ইংরেজিতে একটা কথা আছে। এই যে ধরেন, নদীতে যদি ২ নাম্বার সতর্ক সংকেত থাকে, তখন কোন কোন লঞ্চ বা কি মানের লঞ্চ চলাচল করতে পারবে, হেইগুলা কি এমএল পিনাক-৬ লঞ্চের বেলায় খাটছে? আরে ভাই আপনি পাগল নি? নদীতে যদি ২ নাম্বার সিগন্যাল থাকে, তাইলে ৬৫ ফুটের কম লম্বা লঞ্চের চলাচল করা নিষেদ। কিন্তু এমএল পিনাক-৬ লঞ্চের দৈর্ঘ কত রে ভাই? ৫২ ফুট। তাইলে ওই হালায় কোন সাহসে পদ্মা পাড়ি দিল? ক্যান, কেওড়াকান্দি ঘাট থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ আর সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পারমিশান দিছে। হেরা চেক কইরা পাস দিলেই তো লঞ্চ ঘাট ছাড়ে। তো ভাই, এই যে ৭০ থেকে ৮০ জনরে জীবিত উদ্ধার করলেন, এইডা কারা করলো? আপনেগো আধুনিক উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিক মহাশয় নাকি রুস্তুম মহাশয়? আরে ধুরো ভাই, হেরা আইতে আইতে তো একদিন আর অর্ধেক দিন লাগাইলো। মাওয়া ঘাটে ২৫/৩০টা স্পিডবোট আছিল, হেরা দৌড় পাইরা গিয়া জাগো জাগো পারছে উদ্ধার করছে। আর স্রোতের বেগ জানেন মিঞা? হগ্গোল ঠেইল্লা লইয়া যায়। টেহোন যায় না। হেরাো ঘাটে না থাকলে তো কেউ আর বাঁচতো না। তাইলে উদ্ধার করছে আসলে ঘাটের কাছাকাছি যারা ছিল হেরাই? হ ভাই, সরকারের উদ্ধারকারী জাহাজ সব সময় আসে লাশ উদ্ধার করতে। হেরা কখনো জীবিত মানুষ উদ্ধার করতে আহে না। বুঝছি, এইবার তোমার কথা বুঝছি। আচ্ছা ভাই, মানুষ মরতে কতক্ষণ লাগে? এই ধরেন গিয়া দুই তিন মিনিট। এক সেকেন্ডের নাই ভরসা। আর আপনে ওই পদ্মার যৌবনের সময় স্রোতের ঠেলা দেখছেন, মিঞা? দেখলেই ধর ধাইকা পরান এমনিতেই পালায়। ভাই, আপনারা নাকি নদীমার্তৃক দেশ? হ, বাংলাদেশ একটি নদীমার্তৃক দেশ এই কথা পৃথিবীর সক্কল মাইনষেই জানে। এইডা আবার নতুন কি জিগান? আপনের মাথা ঠিক আছেনি? না, কইতে চাইছিলাম কি, তাইলে আপনেগো দেশে প্রতি বছরই লঞ্চ ডোবে, প্রতি বছরই হাজার মানুষ লঞ্চ ডুবিতে মারা যায়। এইডা নিয়া আপনারা কেন একটা সমন্বিত ব্যবস্থাপনা মানে ম্যানেজমেন্ট নাইকা? আপনারা তো যুদ্ধজাহাজ কেনেন কোটি কোটি টাকা খরচ কইরা। যা আপনাগো কোনো পূজায় আজ পর্যন্ত লাগে নাই। ভবিষ্যতে লাগবে কিনা জানেন না। কিন্তু উদ্ধারকারী আধুনিক জাহাজ যদি আপনাগো মিনিমাম তিনশো ডা থাকে, কোনো দোষ আছে? আপনাগো তো যুদ্ধ জ্হাজ দরকার নাই, আপনাগো দরকার উদ্ধারকারী আধুনিক জাহাজ। প্রত্যেক ঘাটে ঘাটে মিনিমাম একটা কইরা থাকোন দরকার। যাতে দুর্ঘটনা ঘটলেই তরিৎ অ্যাকশানে যাওয়া যায়। আপনারা তা না কিন্না কেনেন যুদ্ধ জাহাজ, আপনাগো তো মাথাই নষ্টরে ভাই। আপনারা কেনেন আধুনিক জঙ্গি বিমান। আপনাগো দরকার উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার। কিন্তু আনপারা জঙ্গি বিমান কিন্না বইসা আছেন। যা কোনো দিন কোনো পূজায় লাগবে না। কারণ, আপনারা তো স্বাধীন দেশ। পাকিস্তানরে যুদ্ধে হারিয়ে আপনারা স্বাধীন হইছেন। ভাই, আপনার কথাবার্তা কিন্তু বেলাইনে যাইতাছে। আমনে বুঝি জানেন না, সরকার গতকাল জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া অনুমোদন করছে। এইডা আবার কি ভাই? এইডা আইন। আপনারা টিভিতে টকশোতে গিয়া সরকারের বিরুদ্ধে কথা পারেন, পত্রিকায় সরকারের বিরুদ্ধে কথা কন, এইডা যাতে না কইতে পারেন, সেজন্য এই আইন হচ্ছে। ধুরো ভাই, আপনে এইডা আগে কইবেন না। তাইলে কি আর আমি পদ্মায় লঞ্চ ডুবি লইয়া এতো প‌্যাঁচাল পারি। বরং দুই কথায় শোক জানিয়ে শোকার্ত পরিবারের উদ্দেশ্যে দুই কথা কইয়া ক্ষ্যামা দিতাম। ভাই, আইনের কথা বার্তা একটু আগে জানাইবেন। নইলে বোঝেন তো, দিনকাল কেমন খারাপ। বহেন, আপনে বইয়া বইয়া টিভি দেখেন, আমি গেলাম গিয়া....
false
hm
বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার শক্তি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে আজ বাংলাদেশের বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান আর রুশ আণবিক শক্তি কর্পোরশন রোসাটমের মহাপরিচালক সের্গেই কিরিয়েঙ্কো চুক্তি স্বাক্ষর করলেন [১]। চুক্তি মোতাবেক, পাবনার রূপপুরে দু'টি নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্র স্থাপনে কারিগরি সহায়তা করবে রোসাটম। শক্তিকেন্দ্র দু'টির ইনস্টল্ড ক্যাপাসিটি হবে প্রতিটি এক গিগাওয়াট। প্রকল্পটির আকার বোঝানোর জন্যে বলছি, বাংলাদেশে সর্বমোট তিন থেকে চার গিগাওয়াটের মতো ক্যাপাসিটি বর্তমানে কার্যকর থাকে। বাংলাদেশের শক্তি অবকাঠামো আশঙ্কাজনক রকমের গ্যাসনির্ভর। শুধু বিদ্যুতের জন্যেই নয়, আমাদের কলকারখানাও গ্যাসের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। একদিন আমাদের গ্যাস ফুরোবেই, তখন এই গ্যাসভিত্তিক অবকাঠামোর জন্যে আমাদের পরনির্ভরশীল হয়ে পড়তে হবে, যদি না মাঝের সময়টুকুর মধ্যে আমরা আমাদের অবকাঠামোর চরিত্র পাল্টাতে না পারি। বাংলাদেশের জন্যে হাতে সুযোগ থাকে চারটি, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা, নেপাল এবং/অথবা ভূটানে বৃহদাকার জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ করে সেই বিদ্যুৎ আমদানি করা, ভারত এবং/অথবা মায়ানমার থেকে গ্যাস আমদানি করে এনে গ্যাসনির্ভর অবকাঠামোকে খোরাক যুগিয়ে চলা, নিউক্লিয়ার শক্তির দিকে ঝুঁকে পড়া। কয়লা নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে দ্রুত কাজ শুরু করতে পারছেন বলে প্রতীয়মান হয় না। নেপাল-ভূটানে জলবিদ্যুৎপ্রকল্প এবং ভারতের ভূমি ব্যবহার করে সেই প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্যে যে পরিমাণ আঞ্চলিক উদ্যোগ ও সক্রিয় কূটনীতির প্রয়োজন হয় তা এ অঞ্চলে এখনও বিদ্যমান নয়। ভারত-মায়ানমার থেকে গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রেও আমাদের পারস্পরিক কূটনৈতিক সক্রিয়তাই বাধা হয়ে দাঁড়াবে। শক্তি সেক্টরের নীতিনির্ধারকরা যে অবশিষ্ট বিকল্পের দিকেই ঝুঁকে পড়বেন, তা বিচিত্র নয়, কারণ বাংলাদেশ শক্তির বিশাল ঘাটতি নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে। শিল্প ও কৃষি, বাংলাদেশের দুই খাতই শক্তি-ক্ষুধিত, আর সুচিন্তিত ট্যারিফ পলিসির অভাবে আমাদের নগরাঞ্চলও শক্তির বিশাল ভোক্তা। খুব শিগগীরই আমাদের অনেক শক্তি প্রয়োজন। নিউক্লিয়ার শক্তিকে তাই আমরা ক্রমশ নিজেদের জন্যে অপরিহার্য করে তুলেছি। এই পরিস্থিতি এড়ানো যেতো, যদি আমরা আমাদের সীমিত সম্পদের কথা ভেবে আজ থেকে কয়েক দশক আগেই অবকাঠামো নকশায় শক্তিদক্ষতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতাম, যদি আমাদের ট্যারিফ পলিসি শক্তিভোগে মিতব্যয়ী হওয়াকে উৎসাহিত করতো, এবং আমাদের শক্তি বিতরণ ব্যবস্থাকে কঠোরভাবে আর্থিক দক্ষতা অর্জনে উৎসাহিত করা হতো। আমরা এর কিছুই করতে পারিনি। ফলে নিউক্লিয়ার শক্তি আমাদের জন্য আর অপশন নয়, নেসেসিটি। মুখ কালো করে হলেও তাই এই প্রকল্পকে স্বাগত জানাতে হচ্ছে। এমন বড় স্কেলের প্রকল্প নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের অনেক কৌতূহল থাকবে, এবং সরকারের উচিত সংসদের ভেতরে আর বাহিরে এই প্রকল্প সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা। আমরা পরিবর্তে দেখতে পাচ্ছি, সরকার প্রায় মৌনব্রত অবলম্বন করেছে। প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি, ব্যয় প্রাক্কলন আদৌ হয়েছে কি না, জানার উপায় নেই। রাশিয়া থেকে এর আগেও আমরা পুরনো বিমান অনেক চড়া দামে কিনেছি বলে অভিযোগ উঠেছে নানা মহলে, নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও এ ধরনের কিছু ঘটতে যাচ্ছে কি না, বোঝার উপায় নেই। জাপানে সাম্প্রতিক ফুকোশিমা শক্তিকেন্দ্রে বিস্ফোরণ এবং তারপর তেজস্ক্রিয় বস্তু আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা সারা পৃথিবীতেই নিউক্লিয়ার শক্তির ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। জার্মানিতে ক্রমশ তার সব নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার জন্যে প্রবল জনমত ও রাজনৈতিক ইচ্ছা তৈরি হয়েছে, ইয়োরোপের আরো কয়েকটি দেশ তাদের নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্রের সংখ্যা আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই পুরনো বিমানের মতো ফেইজ আউট করা পুরনো শক্তিকেন্দ্র আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হবে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার উপায় আপাতত নেই, এবং সরকারেরই কর্তব্য এই প্রকল্প সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে ক্রমাগত অবহিত করা। এই ধরনের বড় প্রকল্পে নানা ধরনের আর্থিক নয়ছয় হওয়া সম্ভব, কিন্তু দরিদ্র রাষ্ট্রের পয়সা গচ্চা যাওয়ার চেয়ে বড় আশঙ্কা হচ্ছে একটি বুড়াধুড়া নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্রকে দেশে ঠাঁই দেয়া। পুরনো বিমান ক্রয়ে দুই চারটা ধান্ধাবাজ মন্ত্রী আর দশ বারোটা বাটপার এয়ার কমোডরের পকেটে পয়সা ঢুকলে সেটা এককালীন ক্ষতি, কিন্তু একটা পুরনো নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্র একটা দেশকে মোটামুটি কয়েক দশক থেকে কয়েকশো বছরের জন্যে কারবালা বানিয়ে ছাড়তে পারে। তাই সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, এই প্রকল্পটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জন্যে তথ্য সরবরাহ করার। এরসাথে জড়িত বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা যেন পত্রিকা, টেলিভিশন ও রেডিওতে [সম্ভব হলে ব্লগেও] মানুষের জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হন এবং তাদের সঠিক তথ্য যোগান। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শক্তিপ্রকল্প নিয়ে চোরের মতো চুপিচুপি কাজ করার তো কোনো প্রয়োজন নেই, যখন বাংলাদেশের মানুষই সেই প্রকল্পের জন্যে অর্থ যোগাবে। জোট সরকারের আমলে টঙ্গীতে হারবিন পাওয়ারের ৮০ মেগাওয়াটের ধ্বজভঙ্গ পাওয়ার স্টেশনটির কথা আমরা ভুলে যাইনি, যেটি আধঘন্টা চলার পর বিকল হয়ে পড়েছিলো। ফুকুশিমা শক্তিকেন্দ্রের কথা মাথায় রেখেই শক্তিকেন্দ্রের নকশা ঠিক করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কিরিয়েঙ্কো। ফুকুশিমা শক্তিকেন্দ্রের সমস্যাটা কিন্তু ছিলো সেই বয়সেই। ফুকুশিমাতে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিলো, সেটির প্রকৃতি পারমাণবিক নয়, বরং তাপীয়। নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্রগুলো সবই বাস্তবে একেকটা প্রকাণ্ড বয়লার, সেখানে পানি গরম করে বাষ্প তৈরি করা হয়, আর সেই বাষ্প এক বা একাধিক বাষ্পীয় টারবাইনকে ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। পানি থেকে বাষ্প তৈরির তাপ আসে ইউরেনিয়ামের ফিশন থেকে। ইউরেনিয়ামের ক্ষুদে বড় একটা জিরকোনিয়াম রডের মধ্যে থাকে, সেই রডের ভেতরে নিয়ন্ত্রিত চেইন রিয়্যাকশন হয়, ফলে রডটা গরম হয়ে ওঠে। এই রডগুলো পানিতে ডোবানো থাকে, সেই পানি রড থেকে তাপ শুষে নিয়ে বাষ্পে পরিণত হয়। ফুকুশিমাতে ভূমিকম্পের ফলে কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলো। পাম্পগুলো বিকল হয়ে যাওয়ার ফলে ফিশনপ্রক্রিয়া থামিয়ে দেয়া সম্ভব হলেও, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে পানির সাহায্যে ঠাণ্ডা করার আর উপায় আর ছিলো না। জিরকোনিয়াম রডগুলো যখন অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়, তখন তা পানি আর বাষ্প থেকে হাইড্রোজেন আলাদা করে ফেলে। হাইড্রোজেন আর বাতাসের মিশ্রণ একটা খুব সক্রিয় বিষ্ফোরক, ফলে যা হবার, তা-ই হয়েছিলো সেই কেন্দ্রে, অতিরিক্ত হাইড্রোজেন প্রবল চাপে রিয়্যাক্টর ছেড়ে বেরিয়ে গোটা রিয়্যাক্টর বিল্ডিংশুদ্ধ বিষ্ফোরিত হয়। ঐ বিষ্ফোরণে রিয়্যাক্টরে জমা থাকা কিছু তেজস্ক্রিয় বর্জ্য, মূলত তেজস্ক্রিয় সিজিয়া আর আয়োডিন, বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। জাপানের কিছু কিছু গ্রাম তেজস্ক্রিয় সিজিয়াম বর্ষণের কারণে আগামী পঁয়তিরিশ বছর পর্যন্ত আর মানুষ বাসের উপযোগী নয়। আমাদের নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্র স্থাপিত হতে যাচ্ছে পাবনার রূপপুরে। এর দক্ষিণে কিছুদূরে পদ্মা, পূর্বে কিছুদূরে যমুনা। নিউক্লিয়ার মেল্টডাউনের প্রয়োজন নেই, ফুকুশিমার মত কোনো ধরনের তাপীয় দুর্ঘটনাও যদি সেখানে ঘটে, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার একটা বড় অংশ খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেই তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের শিকার হবে। কিন্তু এগুলো সবই জুজুর ভয়, সারা পৃথিবীতে শয়ে শয়ে নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্র চলছে, বাংলাদেশেই বা কেন ঠিকমত চলতে পারবে না? এই প্রশ্নের উত্তরেই সরকারকে সরব দেখতে চাই। তারা যেন আমাদের আশ্বস্ত করেন, একেবারে স্টেইট অব দ্য আর্ট নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্র আমরা পাচ্ছি, অন্যদেশে ফেইজ আউট করা কোনো বাতিল মাল নয়। নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্র নিয়ে আক্ষরিক অর্থেই কোনো চুদুরবুদুর ছৈল্ত ন। আমরা প্রতিমুহূর্তে এ সম্পর্কে আশ্বস্ত থাকতে চাই, সে অধিকার আমাদের রয়েছে। নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্র সারা পৃথিবীতেই বেইজ লোড মোকাবেলার জন্যে ব্যবহার করা হয়, তাই এই শক্তিকেন্দ্র কমিশন করার আগে আমাদের দুর্বল গ্রিড সিস্টেমকেও সবল করতে হবে। বাংলাদেশের পূর্বভাগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা, আকার ও পরিমাণ বেশি, পশ্চিমভাগ সেই তুলনায় বিদ্যুৎদরিদ্র, তাই একটি ট্র্যান্সমিশন লাইন এই দুই ভাগকে সংযোগ করেছে, যেটিকে ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টারকানেক্টর বলা হয়। সবেধন নীলমণি ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টারকানেকটরের সমান্তরালে ইমার্জেন্সি বিকল্প সহ আরো কয়েকটি বিপুল ক্যাপাসিটির ট্র্যান্সমিশন লাইন স্থাপনের কাজ যদি এই শক্তিকেন্দ্রের সাথে সমাপতিত না হয়, নিউক্লিয়ার শক্তির ফসল আমাদের ঘরে উঠতে আরো সময় লাগবে। এ ব্যাপারেও সরকারের কী পরিকল্পনা, তা আমরা বিশদ জানতে চাই। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো প্রকল্পগুলো নিয়ে আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞদের কোনো কণ্ঠস্বর শুনতে পাই না, সংসদেও এ নিয়ে বিশদ কোনো আলোচনা আমরা শুনতে পাই না। সংসদে আমাদের সাংসদরা যতবার "মাননীয় স্পিকার, আমি আপনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই" বলে মুখে ফেনা তুলে সময় নষ্ট করেন, সেই অবকাশে এই সকল প্রকল্প নিয়েই মনোজ্ঞ আলোচনা হওয়া সম্ভব। বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সই হওয়ার আগে তাই সেই চুক্তি সংসদে আলোচিত হতে হবে, জনসাধারণের কাছে সেই চুক্তির অনুলিপি উন্মোচিত করতে হবে। গণতন্ত্র শুধু ভোটে সীমাবদ্ধ রাখার জিনিস নয়, বরং প্রতিনিয়ত ভোটারদের সামনে সরকারের কাজ সম্পর্কে তথ্য যোগানো ও আলোচনার সুযোগ দানই গণতন্ত্রের প্রশস্ত অংশ। আমরা সরকারের আচরণে তাই প্রকৃত গণতন্ত্রের ছাপ দেখতে চাই। সূত্র [১] Dhaka, Moscow ink nuke power deal - দ্য ডেইলি স্টার
false