content
stringlengths 1
63.8k
⌀ |
---|
২৫ আগস্টের রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকেই আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী মালয়েশিয়া সরব থাকলেও সমস্যা সমাধানে জোটের ভূমিকা সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ। গত মাসে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোটের (আসিয়ান) ফাঁস হওয়া প্রতিবেদন ওই অভিযোগের জোরালো ভিত্তি দিয়েছে। এমন এক আবহে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহর বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে দেশটির অর্থবহ ভূমিকার অনুরোধ জানাবে ঢাকা।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিনের সফরের শুরুতেই ৭ জুলাই কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহ। পরদিন ঢাকায় ফিরে সন্ধ্যায় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এই প্রতিবেদককে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, গত মাসে থাইল্যান্ডে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের পর রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপটে সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহর বাংলাদেশ সফর তাৎপর্যপূর্ণ। কুয়ালালামপুরের কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল মঙ্গলবার এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, শ্রমবাজার ও কর্মীদের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বিরতিতে আলোচনা ও যোগাযোগ চলছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামী সপ্তাহে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকার বৈঠকে এ নিয়ে খুব বিস্তারিত আলোচনা কিংবা নতুন কোনো সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা খুব কম।আসিয়ানের ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনজুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি আসিয়ানের একটি প্রতিবেদন ফাঁস করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা ফিরে যাবে মিয়ানমারে। ‘প্রিলিমিনারি নিডস অ্যাসেসমেন্ট ফর রিপ্যাট্রিয়েশন ইন রাখাইন স্টেট, মিয়ানমার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে রাখাইনে চলমান সংঘাত, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সেনাবাহিনীর নারকীয় তাণ্ডবের প্রসঙ্গ আসেনি। এতে রোহিঙ্গাদের ডাকা হয়নি রোহিঙ্গা নামে, বলা হয়েছে রাখাইনের ‘মুসলিম’ সম্প্রদায়।রোববার বাংলাদেশে আসছেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রোহিঙ্গা সমস্যার পাশাপাশি শ্রমবাজার চালু করা নিয়ে আলোচনা হবে।আসিয়ানের ওই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সময় দিয়ে এক অলীক সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। সনাতনী পদ্ধতিতে কাজের পরিবর্তে যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত পাঠাতে দুই বছরের কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের প্রশংসা করা হয়েছে, আর দেরির জন্য দায় চাপানো হয়েছে বাংলাদেশের ঘাড়ে।আসিয়ানের ওই প্রতিবেদনের চরম সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রবল অসন্তোষের কথা আসিয়ানের দেশগুলোকে জানানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময়ও বাংলাদেশ তার অবস্থানের কথা আবারও তুলে ধরা হবে।কক্সবাজারে আসছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিরারোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা তাদের জানাতে কক্সবাজারে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে মিয়ানমার। জুলাই মাসের শেষ দিকে মিয়ানমারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজার সফর করবে।বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি হাও দো সুয়ান গত সোমবার সাধারণ পরিষদের এক বৈঠকে এ তথ্য জানান।মিয়ানমারের প্রতিনিধি জানান, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পর রাখাইনে তাদের পুনর্বাসনের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বোঝানো হবে।জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ওই অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিশ্চিন বার্গনার বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে নিরাপদ, স্বেচ্ছা আর মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন। রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ ফেরানোর দায়িত্বটা কিন্তু মিয়ানমারের। |
ড. হালিমা খাতুন ছিলেন একাধারে ছড়াকার, ছোটগল্পকার, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক। ছিলেন ভাষাসৈনিকও। তিনি ছিলেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অগ্রপথিক। হালিমা খাতুন ও তাঁর সাথিদের জন্যই আমরা বাংলায় কথা বলতে পারছি।হালিমা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৫ আগস্ট খুলনা জেলার বাগেরহাটে। তাঁর বাবা ছিলেন মৌলভি আবদুর রহমান ও মা দৌলতুন্নেসা। হালিমা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্দান কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন খুলনা করোনেশন স্কুলে। এরপর যোগ দেন পিকে গার্লস কলেজে। তারপর যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। ১৯৯৭ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।কাজ ছাড়া একমুহূর্ত থাকতেন না হালিমা খাতুন। বাসায় গেলে অবশ্য হাসিমুখে বরণ করে শুরু করতেন গল্প। আমি ও আমার স্ত্রী সুফিয়া সুলতানা মুগ্ধ হয়ে তাঁর গল্প শুনতাম। দিন-ক্ষণ-মাস-বছর উল্লেখ করে ঘটনার বর্ণনা করতেন।হালিমা খাতুনকে আমরা খালাম্মা বলে ডাকতাম। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর একমাত্র মেয়ে বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী প্রজ্ঞা লাবণীর মাধ্যমে। ২০০৫ সালে ‘অগ্রজ’ নামে একটি অনুষ্ঠান শুরু হয় এনটিভিতে। আমি ছিলাম সে অনুষ্ঠানের প্রযোজক আর প্রজ্ঞা লাবণী উপস্থাপক। ‘অগ্রজ’-এর কারণেই হালিমা খাতুনের ৭৮/সি ইন্দিরা রোডে নিয়মিত যাওয়া-আসা করতাম। আমরা এক সপ্তাহ না গেলে খালাম্মা অস্থির হয়ে যেতেন। ল্যান্ডফোন থেকে ফোন করে আসতে বলতেন। সঙ্গে সঙ্গে আমরা ছুটে যেতাম।তিনি অল্পতেই খুশি হতেন। প্রায়ই বলতেন, একজন মানুষের থাকার জন্য দরকার একটা কামরা ও একটা ছোট্ট খাট।খালাম্মা তাঁর এক বিবাহবার্ষিকীতে স্বামীর কাছ থেকে উপহার পেয়েছিলেন একটি কাঁসার মগ। আমার স্ত্রী ধুলাবালুতে রং পরিবর্তন হয়ে যাওয়া মগটিকে একটু তেঁতুলপানি দিয়ে পরিষ্কার করে দিল। ঝকঝকে মগটির দিকে তাকিয়ে হালিমা খাতুনের সেকি আনন্দ! ছবির মগ পরিষ্কারের গল্প সবাইকে বলতেন। স্বামীর দেওয়া উপহারটি তিনি সব সময় মাথার কাছে রাখতেন।প্রজ্ঞা আপা ছেলে তেপান্তরকে নিয়ে কানাডায় চলে গেলেন। নাগরিকত্ব পেলেন। তারপর যাওয়া-আসা করতেন। প্রজ্ঞা আপা যখন থাকতেন না তখন একমাত্র ছেলে সামিন শারারকে নিয়ে প্রায়ই খালাম্মার কাছে যেতাম। তিনি সামিনের সঙ্গে মজার মজার গল্প করতেন।হালিমা খাতুন শিশুদের প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। তিনি শিশুবান্ধব নানান কাজ করেছেন। বিনা পারিশ্রমিকে পথশিশুদের ইটের ছোট্ট টুকরো দিয়ে মাটিতে লিখে অ আ ক খ শেখাতেন। অনেক শিশুর কর্মের সংস্থান করে দিয়েছিলেন।হালিমা খাতুনের লেখা বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৫০টি। এসবের মধ্যে রয়েছে আত্মজীবনী, উপন্যাস, কবিতা, কিশোর উপন্যাস, শিশুতোষ রচনা ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি। পাখির ছানা, বাঘ ও গরু, বাচ্চা হাতির কাণ্ড, কাঁঠাল খাবো, হরিণের চশমা, সোনা পুতুলের বিয়ে বেবি ফ্রক গায়, ছবি ও পড়া, শিশুদের নিয়ে ভাবনাসহ অসংখ্য শিশুতোষ রচনা তিনি লিখেছেন। এর মধ্যে পাখির ছানা, কাঁঠাল খাবো, হরিণের চশমা, সোনা পুতুলের বিয়ে ঢাকার মারি কুরি স্কুলে পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হয়। লেখালেখির পাশাপাশি হালিমা খাতুন প্রচুর বই পড়তেন। শোয়ার ঘরের আলমারিগুলো ছিল বইয়ে ঠাসা। সেখান থেকে কিছু বই তিনি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। সেগুলো এখন আমার কাছে পরম সম্পদ।হালিমা খাতুন ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর নানা দেশ ভ্রমণ করেছেন। তাঁর সরল চিন্তাভাবনা, সাধারণ জীবন আমাদের মুগ্ধ করত। প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এই নারী নিজের যা কিছু ছিল, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতেন।প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে হালিমা খাতুন অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৯), অনন্যা সেরা দশ পুরস্কার (২০০৫)। ভাষা আন্দোলনে অনন্য অবদানের জন্য তিনি এ বছর একুশে পদক (মরণোত্তর) লাভ করেন।হালিমা খাতুন গত বছরের ৩ জুলাই ঢাকায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। গুণী মানুষটি আমাদের হৃদয়ে চিরকাল শ্রদ্ধার আসনে থাকবেন।মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন: এনটিভির সাবেক নির্বাহী প্রযোজক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক |
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে (১৬) গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গণধর্ষণের অভিযোগে চার যুবকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মেয়েটির বাবা গতকাল মঙ্গলবার রাতে শরীয়তপুরের পালং মডেল থানায় মামলাটি করেন।মামলায় ইসলাম ফকির (২২), রাকিব মণ্ডল (২২), সবুজ রাড়ি (২২) ও ইকবাল (২১) নামের চার যুবককে আসামি করা হয়েছে। ওই চার যুবক শরীয়তপুরে চলাচলকারী বাসের শ্রমিক। এর মধ্যে রাকিব মণ্ডলকে গতকাল সন্ধ্যায় আটক করে পুলিশ।সদর উপজেলার উত্তর–মধ্যপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে গত রোববার রাতে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এলাকাবাসী ওই ছাত্রীকে শরীয়তপুর বন বিভাগের পুকুরঘাট থেকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন।পালং মডেল থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জাজিরার একটি গ্রামে থাকত মেয়েটি। রোববার বিকেলে তার এক আত্মীয়র বাড়ি যাওয়ার জন্য শরীয়তপুর জেলা শহরের বাস টার্মিনালে আসে সে। সেখানে দেখা হয় পূর্বপরিচিত পরিবহনশ্রমিক ইসলাম ফকির নামের এক যুবকের সঙ্গে। ইসলাম ওই ছাত্রীকে তার আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তাঁর বন্ধু রাকিব মণ্ডল ও সবুজের সঙ্গে অটোরিকশায় তুলে দেন।রাকিব ও সবুজ মেয়েটিকে নিয়ে মনোহর বাজারে যান। সেখানে কিছু খাওয়ার পর মেয়েটিকে রাকিবের বাড়িতে নেওয়া হয়। মেয়েটির মুখ বেঁধে রাকিব ও সবুজ প্রথম দফায় ধর্ষণ করেন। রাতে সেখানে গিয়ে ইসলাম ওই মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। পুনরায় ধর্ষণ করা নিয়ে ইসলামের সঙ্গে রাকিব ও সবুজের কথা-কাটাকাটি হয়। তখন ইসলাম মেয়েটিকে তাঁদের বাড়ির পাশে শরীয়তপুর বন বিভাগের পুকুর ঘাটে নিয়ে যান। পুকুর ঘাটে নিয়েও মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়।পরে স্থানীয় এক অটোরিকশাচালক তাঁদের দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলে ইসলাম মেয়েটিকে বিয়ে করবেন—এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। ওই অটোরিকশাচালক বিষয়টি পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের জানান। এলাকাবাসীর সহায়তায় মেয়েটিকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেন তিনি। পরিবহনশ্রমিকেরা অপরাধীদের বিচার করবেন—এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়েটির পরিবারকে থানায় যেতে বাধা দেয়।গতকাল মঙ্গলবার রাকিব মণ্ডলকে বাস টার্মিনালে দেখতে পেয়ে শরীয়তপুর আন্তজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার আটক করে পুলিশে তুলে দেন।ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।পালং থানাহাজতে আটক রাকিব মণ্ডল বলেন, ‘আমি মেয়েটির সঙ্গে কিছু করিনি। ইসলাম ও সবুজ তাকে ধর্ষণ করেছে। তারাই ওই মেয়েটিকে আমার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। আমি নির্দোষ। ইসলাম ও সবুজ কোথায় আছে, তা আমি জানি না।’পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, তিন পরিবহনশ্রমিক মিলে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছেন ও আরেক শ্রমিক তাঁদের সহায়তা করেছেন। অভিযোগ পেয়ে একজনকে আটক করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। গ্রেপ্তার রাকিবকে আজ আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। |
বর্তমানে বাংলাদেশে মহাসংকটাপন্ন এবং বিলুপ্তপ্রায় মাছ বাচা। আমাদের দেশে স্বাদু পানি বা মিঠাপানির মাছ রয়েছে প্রায় ২৯৬ প্রজাতির। শিং-মাগুর-কই, চেলা-ঢ্যালা-মলা, পুঁটি-খলিশা-টাকিসহ দেশীয় আনুমানিক ২৬০ প্রজাতির মাছ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়গুলোতে এখনো বিচরণ করছে বা এগুলোর চাষাবাদ চলছে। দেশীয় এই প্রজাতিগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি বিপন্ন অবস্থায়, কোনো কোনো প্রজাতি সংকটাপন্ন অবস্থায় আর কিছু প্রজাতি রয়েছে একেবারে মহাবিপন্ন অবস্থায়। বিগত ৩০–৪০ বছরের মধ্যে চন্দনবাউশ, নান্দিল, অ্যালং, বাইটক্যা ইত্যাদি অতি উৎকৃষ্ট স্বাদের মাছগুলো বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গেছে।পরিচিতিবাচা মিঠা পানির মাছ। এ মাছ সিপ্রিনিফরমিস বা সিলুরিফরমিস বর্গের অন্তর্ভুক্ত। একই বর্গের অন্যান্য মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কাজলি, ঘাউরা, বাতাসি, শিলং ইত্যাদি।বাচা মাছের মাথা এবং শরীর চাপা। থুতনির আগা ছুঁচালো। ওপরের চোয়াল সামান্য লম্বা, মুখের চিড় গভীর এবং চোখের নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত। দাঁত তীক্ষ্ণ এবং ধারালো। আঁশযুক্ত দাড়ি মোট ৪ জোড়া। দণ্ডযুক্ত পিঠের পাখনাটি ছোট। পিঠের কাটার পেছন দিকটি রাতের দাঁতের মতো। বুকের পাখনা শ্রেণি পাখনার কাছাকাছি। শ্রেণি পাখনা ছোট। লেজের পাখনা গভীরভাবে বিভক্ত। পিঠ ঈষৎ ধূসর হলেও মাছটির রং রুপালি। বুকের পাখনা ও লেজের পাখনার কিনারা কালো। মাছটি লম্বায় ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে।বাচা মাছের আবাস সাধারণত নদীতে। স্রোতময় নদীর পানিতে এরা ঝাঁক বেঁধে চলাফেরা করে। মাছটি ভ্রমণপ্রিয়। মাছটি নদী থেকে প্লাবনভূমি এবং প্লাবনভূমি থেকে নদীতে বেশি আনাগোনা করতে ভালোবাসে। পানির উপরিতলেই বেশি থাকে। এরা বর্ষাকালে নদীতে প্রজনন করে। রাত্রিকালে সাধারণত খাদ্য গ্রহণ বেশি করে থাকে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে পতঙ্গ, ছোট মাছ, শামুক ও শেওলা। বাংলাদেশের নদ–নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র নদে এই মাছটি বেশি দেখা যায়। কাপ্তাই হ্রদে একসময় প্রচুর পরিমাণে বাচা মাছ ছিল। বর্তমানে সেখানে প্রায় বিলুপ্তির পর্যায়ে।আরেক জাতের বাচা রয়েছে যেটি স্থানীয়ভাবে ‘মুরি বাচা’ নামে পরিচিত। এটি অনেকটা খাটো আকারের হয়ে থাকে।পুষ্টিমানবাচা মাছের পুষ্টিমান উল্লেখ করার মতো। ১০০ গ্রাম বাচা মাছে জলীয় অংশ রয়েছে ৬৮.৮ গ্রাম, আমিষের অংশ রয়েছে ১৮.১ গ্রাম, চর্বি রয়েছে ৫.৬ গ্রাম, শর্করা ৬.১ গ্রাম, খনিজ পদার্থের পরিমাণ ১.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম রয়েছে ৫২০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম, ক্যালরি বা খাদ্যশক্তি ১৪৭ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিনের পরিমাণ ১৩.০ মিলিগ্রাম।মৌসুম ও মোকামঅভিজাত শ্রেণির মাছ বাচা। বর্ষাকাল হচ্ছে বাচা মাছের প্রধান মৌসুম। পুরো শীতকালেও পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও মেঘনা নদ–নদীর কাছের বাজারগুলোতে বাচা মাছের আমদানি হয়ে থাকে। বাচা মাছের বড় মোকামগুলোর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার, সিরাজগঞ্জ বাজার, ভৈরব বাজার, চাঁদপুর বাজার, অষ্টগ্রাম, কুলিয়ারচর, গোয়ালন্দ ঘাট, মাওয়া ঘাট ইত্যাদি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশেষ করে ভৈরব বাজারের বিশাল মাছের আড়ত থেকে বাচা মাছের বড় চালান ঢাকার মাছের বাজারগুলোতে আসে।বাচা গোত্রের অন্যান্য মাছবাচা কিংবা মুরি বাচা মাছের মতো আকৃতির আরেকটি মাছ রয়েছে, যার নাম শিলং। এর স্থানীয় নাম সিলোন্দা, ধাইন, ঢাইং, সিলোং ইত্যাদি। মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম সিলোনিয়া সিলোডিয়া এবং ইংরেজি নাম সিলোনিয়া ভাচা। এ মাছটি আকারে অনেক বড় হয়। কোনো কোনো মাছ লম্বায় ১.৮০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। শিলং মাছের ঠোঁট লাল হয়ে থাকে। গাত্র বর্ণ রুপালি। শিলং মাছের চোয়াল লম্বা।বাচা, মুরি বাচা ও শিলং মাছের মতোই প্রায় দেখতে ঘাউরা মাছ (ক্লাপিজমা গারুয়া)। তবে বাচা, মুরি বাচা এবং শিলং মাছের মুখ লম্বাটে কিন্তু ঘাউরা মাছের মুখ অনেকটা চওড়া ও গোলাকার। অনেক সময় বাচা, শিলং ও ঘাউরা মাছের পার্থক্য করা কষ্টকর হয়ে ওঠে। ঘাউরা মাছের রং এবং আকৃতি বাচা মাছের মতোই। ঘাউরা মাছের পিঠে ডানা রয়েছে মাত্র একটি। বাচা ও শিলং মাছের দ্বিতীয় ডানাটি পুচ্ছ পাখনার প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে দেখা যায়। ঘাউরা মাছের পিঠের একমাত্র ডানাটি মাথার প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে দেখা যায়। ঘাউরার মুখ অনেকটা মোটা। বাচা, মুরি বাচা, শিলং ও ঘাউরা এই মাছগুলো কিন্তু প্রায় একই স্বাদের। চলনবিল অঞ্চলের গাঙ ঘাউরা স্বাদে অতুলনীয়। মাছগুলো কাটাবহুল নয় বলে খেতে বেশ নিরাপদ। তবে ঘাউরা মাছের খাদ্যতালিকায় নোংরা জাতীয় বস্তু থাকায় সাধারণভাবে এর কদর খুব একটা নেই।বাচা মাছের জীবনযাত্রাপ্রখ্যাত মৎস্য বিজ্ঞানী এফ হ্যামিলটন (১৮২২) রচিত ‘অন অ্যাকাউন্ট অব দ্য ফিশেস ফাউন্ড অন দ্য রিভার গ্যাঞ্জেজ অ্যান্ড ইটস ব্র্যান্সেস’ নামক আকর গ্রন্থে বাচা এবং মুরি বাচা মাছ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। বাচা মাছ বাংলাদেশের প্রায় সব নদীগুলোতে দেখা গেলেও মূলত এটি পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও যমুনা নদ–নদীতে বেশি দেখা যায়। যমুনা ও পদ্মা নদীতে বর্ষার শুরুতে নতুন পানিতে মা মাছ ডিম দেয়। আবার অনেক সময় মা মাছ ডিম দেওয়ার জন্য চলনবিলসহ বাংলাদেশের হাওর, বাঁওড় এবং উল্লিখিত নদীগুলোর কাছাকাছি যে বিলগুলো রয়েছে, সেগুলোতে চলে যায়। একটা সময় ছিল যখন বড়াল এবং হুড়াসাগর নদীর নাব্যতা ছিল। সে সময় বাচা মাছসহ শত শত প্রজাতির মিঠা পানির মা মাছ কিংবা রেণু মাছ বড়াল, আত্রাই, নারদ, হুড়াসাগর ইত্যাদি নদীর মাধ্যমে চলনবিলে প্রবেশ করত। চলনবিলে রয়েছে এ জাতীয় মাছের বিশাল খাদ্যের ভান্ডার। সেখানে মাছগুলো বৃদ্ধি পেত। বর্ষার শেষে মাছগুলো মূল নদীতে ফিরে যেত। বর্ষাকালে কিংবা বর্ষার শেষে বিশাল চলনবিল অঞ্চলে অবস্থিত আত্রাই, নলডাঙ্গা, সিংড়া, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, চাটমোহর, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর এবং সাঁথিয়া থানার হাটবাজারে বাচা মাছের আমদানি ছিল দেখার মতো। ইদানীং তেমনটা আর নেই। হুড়াসাগর সেই কোন কালে ভরাট হয়ে গেছে। বড়ালে ভরা বর্ষাতেও পদ্মা থেকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে পানির প্রবাহ দেখা করা যায় না। যমুনা থেকে মে–জুন মাসে পানি বাঘাবাড়ী হয়ে চলনবিলে প্রবেশ করে। প্রায় একই সময়ে আত্রাই নদে দিয়ে পানি চলন বিলে আসতে থাকে। বড়াল হয়ে নন্দকুজার মাধ্যমে পদ্মার পানি চলনবিলে প্রবেশ করতে শুরু করে জুলাই মাস থেকে। এ সময় বাচা মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে পানিতে খেলে বেড়ায়। এরা নদী থেকে প্লাবনভূমি এবং প্লাবনভূমি থেকে নদীতে ভ্রমণ করে। বিশাল চলনবিল এবং এর পাশের জনপদগুলোর বিরাট একটি অংশ হচ্ছে পদ্মা, যমুনা ও আত্রাই নদের প্লাবনভূমি। বিগত দেড় যুগ থেকে নদীতে পানিই নেই, তাই প্লাবনও নেই। নদী ভরাট হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত মাত্রায় ফসলের খেতে কীটনাশক প্রয়োগ ইত্যাদি কারণে মাছের আবাস নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে অনেক দেশীয় মাছের মতো বাচা মাছও বিলুপ্তির পথে।বাচা মাছের মতো বিলুপ্তপ্রায় অতুলনীয় স্বাদের মাছের প্রজাতি রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে হতে হবে সচেতন। শুধু নির্দিষ্ট বিভাগের লোকজনের ওপর এর দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে দেশের সচেতন নাগরিকদের দায়িত্ব শেষ হয়েছে বলে আমরা ভাবতে পারি না। এই দুর্লভ এবং দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির মাছগুলো আমাদের অমূল্য সম্পদ এবং ঐতিহ্য। আমাদের অবহেলার কারণে বেশ কিছু স্বাদু পানির মাছকে আমরা চিরদিনের জন্য হারিয়েছি। আমাদের নতুন প্রজন্মকে শুধু গল্পের মাধ্যমে বিলুপ্ত মাছের কথা জানাচ্ছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা আর বিলুপ্ত মাছের কাহিনি শোনাতে চাই না। |
খিলগাঁওয়ের হাজীপাড়া বালুর মাঠ। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে রিকশার গ্যারেজ, খাবার হোটেল, সবজির দোকান, চা–দোকান, টংঘর। এসব অবৈধ স্থাপনা থেকে প্রতি মাসে আদায় করা হয় ভাড়া। অথচ মাঠের মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তর দখলের বিষয়টি জানেই না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঠটি দখলের নেপথ্যে আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।হাজীপাড়া বালুর মাঠের অবস্থান খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া ইকরা মসজিদের কাছে। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি ঝিলপাড় বালুর মাঠ নামেও পরিচিত। গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের দক্ষিণ–পূর্ব কোণে তাইজ উদ্দিনের রিকশার গ্যারেজ। এরপর সবজির বাজার। ১০টির বেশি সবজির দোকান আছে সেখানে। মাঠের দক্ষিণে নির্মাণ করা হয়েছে আরও তিনটি রিকশার গ্যারেজ। গ্যারেজগুলোর মালিক নুর ইসলাম, সুরুজ মিয়া ও ফেরদৌস। সব মিলিয়ে অন্তত দেড় শ রিকশা আছে গ্যারেজগুলোতে। এ ছাড়া মাঠে আছে চা–দোকান, খাবার হোটেল, ভাঙারির দোকান ও বস্তিঘর।রিকশার কয়েকজন চালক ও মালিক বলেন, তাঁদের বলা হয়েছে মনিরুজ্জামান চৌধুরী সরকারের কাছ থেকে জায়গাটি ইজারা নিয়েছেন। মনিরুজ্জামানের স্ত্রী ও তাঁর লোক হিসেবে পরিচিত জুয়েল গ্যারেজ মালিকসহ দোকানিদের কাছ থেকে মাসিক ভাড়া আদায় করেন। দোকান ও গ্যারেজের ভাড়া মাসে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিকশার গ্যারেজের একজন মালিক বলেন, ‘যুবলীগ নেতা মনির ভাই (মনিরুজ্জামান চৌধুরী) আমাদের এখানে জায়গা দিয়েছেন। ভাড়া তাঁকেই দিতে হয়। কোনো ঝামেলা হলে তাঁর লোকজন সাহায্য করে।’স্থানীয় লোকজন বলেন, আশপাশের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা দিন শেষে ওই খালি জায়গায় ময়লা–আবর্জনা ফেলেন। এতে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে মাঠের এক পাশ। তাঁরা বলেন, সন্ধ্যার পর গাঁজার গন্ধে হাজীপাড়া বালুর মাঠের ওই দিকে যাওয়া যায় না। সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত সেখানে বসে মাদকের আসর। গ্যারেজ, বস্তিঘর ও ঝিলের পাশে বিক্রি হয় বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। এলাকার অনেকে বিভিন্ন নেশার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। চুরি–ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটছে।স্থানীয় বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ধীরে ধীরে দোকানপাট বসিয়ে মাঠের পুরো জায়গা দখলের পাঁয়তারা চলছে।চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা জামাল ভূঁইয়া বলেন, সংস্কার করে জায়গাটিকে ঈদগাহ ও খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে দখলের হাত থেকে মাঠটি রক্ষা পাবে।সব অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, তিনি বা তাঁর পরিবারের সদস্য কিংবা লোকজন ওই জায়গা থেকে কোনো টাকা আদায় করেন না। এটা পুরোপুরি মিথ্যা অভিযোগ।যুবলীগের এই নেতা আরও বলেন, মাটির মসজিদ এলাকায় রাস্তা ও ফুটপাতে কিছু দোকান ছিল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকার মুরব্বিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেসব দোকানের মালিকদের ওই খালি জায়গাটায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। সরকার চাইলে যেকোনো সময় তাঁদের উচ্ছেদ করতে পারে।জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘দখলের বিষয়টি আমি জানি না। আমি ওই জায়গার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখছি। দখলের প্রমাণ পেলে উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ |
প্রায় ১৮ লাখ ভরি ‘কালো’ সোনা ‘সাদা’ হয়েছে। তবে সোনার রং বদলায়নি। রং বদলেছে হিসাবে। সোনা ব্যবসায়ীরা এত দিন এই বিপুল পরিমাণ সোনা কখনোই ঘোষণা দেননি। তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়কর রিটার্নে এই সোনা দেখাননি, আড়াল করে রেখেছিলেন। এবার যা বৈধ তালিকায় এল।জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ২৮ মে কালো সোনা সাদা করার সুযোগ দেয়। এ জন্য ভরিপ্রতি সোনার বার ও গয়নায় ১ হাজার টাকা কর ধার্য করা হয়। এর পাশাপাশি প্রতি ক্যারেট কাট ও পোলিশড ডায়মন্ডের জন্য ৬ হাজার টাকা ও প্রতি ভরি রুপার জন্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সময় বেঁধে দেওয়া হয় ৩০ জুন পর্যন্ত। এই সময়ে সব মিলিয়ে হীরা, সোনা, রুপা সাদা করা বাবদ এনবিআর কর পেয়েছে প্রায় ১৮৩ কোটি টাকা।এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সোনা সাদা করায় প্রায় ১৮০ কোটি টাকা কর পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে প্রায় ১৮ লাখ ভরি সোনা সাদা হয়েছে। আর হীরা ও রুপায় কর মিলেছে ৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। সোনা আড়াল করে রাখা ব্যবসায়ীর সংখ্যাও কম নয়। প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী এই সুযোগে আড়ালে রাখা সোনা প্রদর্শন করেছেন। এই ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ সোনা তাঁদের ব্যবসার মূলধারায় বা মজুতে ঘোষণা দিয়েছেন। বছর শেষে তাঁদের এই সোনার বেচাকেনার হিসাব দিতে হবে। আয় হলে করও দিতে হবে।এত দিন শুধু কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছিল সরকার। এবার নতুন করে অপ্রদর্শিত সোনাও ঘোষণায় আনার সুযোগ দেয় এনবিআর। শুধু তা–ই নয়, কালো সোনা সাদা করতে নজিরবিহীনভাবে অভিনব মেলার আয়োজন করা হয়। রাজধানীর পাঁচ তারকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে গত মাসের ২৩ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত মেলা হয়। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতেও সোনা মেলা হয়। সেখানেই ৭০ শতাংশ সোনা সাদা করেন সোনা ব্যবসায়ীরা।এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, শুধু তিন দিনের সোনা মেলায় ১৩৩ কোটি টাকার কর আদায় হয়েছে। সোনা থেকে এসেছে ১২৫ কোটি টাকার বেশি। সেই হিসাবে ১৮ লাখের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ভরির মতো সোনা সাদা হয়েছে মেলায়। এর মধ্যে ঢাকার ব্যবসায়ীরা ১০ লাখ ভরির বেশি সোনা সাদা করেন।বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘোষণায় আসা সোনা বাজারে কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনই বোঝা যাবে না। এখনো আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে ভরিপ্রতি সোনার দাম কম আছে। আমরা চাই, ভরিপ্রতি সোনার দাম আরও দুই-আড়াই হাজার টাকা বাড়ানো হোক। এতে ব্যবসায়ীদের আয় কিছুটা বাড়বে।’ তাঁর মতে, পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাবে জেলা পর্যায়ের অনেক ব্যবসায়ী তাঁদের সোনা ঘোষণায় আনতে পারেননি। তাই আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই সুযোগের সময় বৃদ্ধির দাবি করেন তিনি।বাংলাদেশে সোনা আমদানির সুযোগ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে সোনা আমদানি করতে হয়। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, একাধিক ব্যবসায়ী সোনা আমদানির আবেদন করলেও কেউ অনুমোদন পাননি। বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিশাল সোনার বাজারে অঘোষিত সোনার পরিমাণই বেশি। নানা উপায়ে এই সোনা দেশের বাজারে আসে। কিন্তু অঘোষিত বিপুল পরিমাণ সোনার লেনদেন হলেও তা কর নথিতে দেখাতে পারতেন না অনেক ব্যবসায়ী। এর ফলে সেই আয়ের ওপর করও আরোপ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এমন প্রেক্ষাপটে এনবিআর নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে অঘোষিত সোনা প্রদর্শনের সুযোগ দেয়।এনবিআরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এখন থেকে এনবিআর সোনা ব্যবসায়ীদের করের নথি কঠোরভাবে নজরদারি করবে। অঘোষিত সোনা পাওয়া গেলে নির্ধারিত করের পাশাপাশি জরিমানা আদায় করা হবে। |
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে যখন সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ লাশ আনা হয়, তখন সকাল সাড়ে আটটা। সাতসকালেই লাশ দেখতে ভিড় করেছিলেন হাজার দেড়েক মানুষ। অনেকে বলছিলেন, এখানেই কি বন্ডদের শেষ? যারা এসব বন্ডকে তৈরি করে, তাদের কিছু না হলে তো কয়দিন পর আবারও এ রকম সন্ত্রাসীর সৃষ্টি হবে।নয়নের পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের কেউ কেউ এখন তাঁর মৃত্যুতে উল্লাস প্রকাশ করছেন বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। লাশ দেখতে আসা বরগুনা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফারুক সিকদার বলেন, নয়নের বিচরণক্ষেত্র ছিল পৌর এলাকার ৯ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড। নয়ন বন্ড তো শেষ। এখন সবার প্রত্যাশা, যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় নয়ন বন্ড তৈরি হয়েছে, সেই লোকগুলোও যেন আইনের আওতায় আসে। নইলে আবারও নয়ন বন্ড তৈরি হবে।৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম বলেন, এই সন্ত্রাসীদের যারা সৃস্টি করেছে, ব্যবহার করেছে, সেই পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনতে হবে।বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন এ ঘটনার (রিফাত হত্যা মামলার) সব আসামিকে গ্রেপ্তারে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। এসব বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’স্থানীয় লোকজন বলছেন, নয়ন বন্ড হিসেবে সাব্বির আহম্মেদের উত্থান খুব বেশি দিনের নয়। বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের সঙ্গে থাকতেন সাব্বির। ২০১৩ সালে এইচএসসি পাসের পর নয়ন মাদক সেবন, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সালের দিকে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে মাদক ব্যবসা, চোরাই পথে মোটরসাইকেলের ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে হেরোইন, ইয়াবাসহ ধরা পড়েন তিনি। প্রায় দুই মাস কারাগারে থেকে বের হওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ফেসবুকে এলাকার কিছু কিশোর তরুণকে যুক্ত করে গড়ে তোলেন ‘007’ নামে ফেসবুক গ্রুপ।রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হওয়ার পর তাঁর পৃষ্ঠপোষকদের বিচার দাবি এলাকাবাসীর।২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল বরগুনা প্রেসক্লাবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান ও সাধারণ সম্পাদক তানবীর হোসাইন সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথের মাদক ব্যবসার সহযোগী নয়ন বন্ড। সুনাম দেবনাথের সঙ্গে নয়নের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জেলার রাজনৈতিক মহলে প্রচার আছে।এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সুনাম বলেন, ‘এটা তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রতিপক্ষরা এসব অপপ্রচার করছে।’ নয়ন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর গতকাল বেলা ১১টার দিকে সুনাম ফেসবুকে লেখেন, ‘আহা কি শান্তি! দিস ইস কল জাস্টিজ’।আরও পড়ুন:নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতজানা যাবে না নয়ন বন্ড কার লোক?নয়ন বন্ড কার লোক?একজন নয়ন বন্ড যেভাবে তৈরি হয়গ্রেপ্তার হলেন দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীএভাবে প্রকাশ্যে কোপাল!এই রামদা কে দিয়েছে? |
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকের পদ রয়েছে আটটি। পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ১১ জন। ধানমন্ডির গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে গণিতে ছয়টি পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন আটজন। অথচ ধানমন্ডি থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে পুরান ঢাকার নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকের আটটি পদের বিপরীতে আছেন পাঁচজন। রাজধানীর এই তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই শিফট (দুই পালা) চালু রয়েছে।শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নিজ জেলা চাঁদপুরের হাইমচর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে গণিত বিষয়ে কোনো শিক্ষকই নেই। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, অতিথি শিক্ষক দিয়ে গণিত ক্লাস চালানো হচ্ছে।মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্য এবং প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শহরের অভিজাত এলাকায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞানসহ কয়েকটি বিষয়ে পদের অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছেন। অন্যদিকে শহরের যে এলাকায় সুযোগ–সুবিধা তুলনামূলক কম এবং জেলা–উপজেলার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে পরীক্ষার ফল ও ভর্তিতে।মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, কখনো কখনো হয়তো সুষম বণ্টনে সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৩৭৮টি পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) বলা হয়েছে। আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে গেলে সংকট আর থাকবে না।মাউশির তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এখন ৬৬২টি। এর মধ্যে পুরোনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৪৮টি। বাকি ৩১৪টি বিদ্যালয় ২০১০ সালের পর জাতীয়করণ হয়। (এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলির সুযোগ নেই)। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ১০ হাজার ৫৬৩টি। কর্মরত আছেন ৮ হাজার ৫৬৪ জন। ১ হাজার ৯৯৯টি পদ শূন্য। এর মধ্যে গণিতে ১২৭টি, ইংরেজিতে ৩২৪টি ও ভৌতবিজ্ঞানে ২৯১টি পদ শূন্য। রাজধানীর বাইরের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের সংকট বেশি। যেমন বান্দরবানের আলীকদম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকই নেই।মাউশির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, একশ্রেণির শিক্ষক আছেন, যাঁরা তদবির বা ‘অন্য উপায়ে’ ঘুরেফিরে সুবিধাজনক বিদ্যালয়ে পদায়ন পান। ২০১৭ সালের নভেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর ২৪টি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ৫২২ জন শিক্ষক ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। তাঁদের অনেকে কোচিং বা প্রাইভেট–বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বছরের পর বছর ঢাকার একই বিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন। সরকারকে দেওয়া ওই প্রতিবেদনে ১০ বছরের বেশি সময় একই বিদ্যালয়ে থাকা শিক্ষকদের বিভাগের বাইরে বদলির সুপারিশ করেছিল দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েকজনকে বদলি করলেও পরে তা আটকে যায়। পরিস্থিতি এখনো কমবেশি আগের মতোই রয়ে গেছে বলে মাউশির কর্মকর্তারা জানান।ইংরেজি ও গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং সবার জন্য বাধ্যতামূলক শিক্ষকের ঘাটতি থাকলেও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ঢাকার কয়েকটি বিদ্যালয়ে পদের অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছেন। ইংরেজি, গণিত ও ভৌতবিজ্ঞানের (একজনও নেই) শিক্ষকের ঘাটতি থাকা ঢাকার নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়েই সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে পদের চেয়ে দ্বিগুণ শিক্ষক আছেন (চারটি পদের বিপরীতে আটজন)। ঢাকার তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের ৪টি পদের বিপরীতে আছেন ১১ জন। ইংরেজি, গণিত ও ভৌতবিজ্ঞানে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় সমস্যা হচ্ছে বলে জানান নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অনেক সময়ই অন্য বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে এসব বিষয়ের ক্লাস চালাতে হয়। এমনকি দুই শাখাকে (সেকশন) একসঙ্গে করেও ক্লাস নিতে হচ্ছে। |
এক বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন, তিনি খবরের কাগজ পড়া ছেড়ে দিয়েছেন। টিভি এখনো দেখেন, তবে শুধু ড্রামা সিরিয়াল আর খেলা। সংবাদ নয়। কারণ, তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ মানেই দুঃসংবাদ। কোথাও কোনো সুসংবাদ নেই। মন খারাপ হয়ে যায়। রোজ সকালে দুঃসংবাদের মুখোমুখি হওয়া তাঁর কাছে ইদানীং অত্যন্ত পীড়াদায়ক মনে হয়।‘বয়স হয়েছে, নার্ভের সেই শক্তি আর নাই, আর পারা যায় না।’ভদ্রলোকের কথাগুলো শুনে মনে প্রশ্ন জেগে উঠল: আমরা যারা সংবাদমাধ্যমে কাজ করি, দুঃসংবাদ নিয়েই যাদের দিনরাত্রির কারবার, তাদের নার্ভের অবস্থা কী? প্লাস্টিক হয়ে গেছে?সাধারণভাবে বললে, আমাদের স্নায়বিক সহ্যশক্তি অনেক বেড়েছে। নইলে প্রাত্যহিক বিভীষিকার সংবাদ সংগ্রহ করা, তারপর তা সাজিয়ে–গুছিয়ে পাঠক–দর্শকের সামনে পরিবেশন করার মতো শক্ত কাজ দিনের পর দিন চালিয়ে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। আমাদের খবরের ভোক্তা–সাধারণেরও নিশ্চয়ই বিভীষিকা হজম করার সামর্থ্য বেড়েছে। কিংবা উল্টো করে বললে, আমরা তাদের বিভীষিকা–দর্শনের নেশা ধরিয়ে দিয়েছি। নইলে কেন তারা সবচেয়ে বীভৎস অপরাধের খবরগুলোই সবচেয়ে বেশি ‘খায়’? অনলাইন সংবাদমাধ্যমে সর্বাধিকসংখ্যক ‘ক্লিক’ কেন সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর খবরগুলোর ভাগ্যেই জোটে?সাংবাদিকতার আদি তত্ত্বে এ প্রশ্নের উত্তর আছে। কুকুর মানুষকে কামড়ালে তা কোনো খবর নয়, খবর হয় তখনই, যখন কোনো মানুষ কুকুরকে কামড়ায়। মানুষের এই কৌতূহলপ্রবণতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বলার কথাটা হলো, খুন–ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধগুলোও এখন আর আমাদের নাড়া দিতে পারছে না। আমরা নাড়া খাই তখন, যখন মানুষকে খুন করা হয়েছে অতিশয় বীভৎস পন্থায়। একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে—এটা এখন একেবারেই আটপৌরে, চাঞ্চল্যহীন খবর। চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে তখন, যখন মেয়েটিকে দলবদ্ধভাবে উপর্যুপরি ধর্ষণ করার পর বীভৎসভাবে হত্যা করা হবে। ছিনতাইয়ের সব খবর আজ আর সংবাদমাধ্যমে জায়গাই পায় না; জায়গা পাবে যখন ছিনতাইকারীরা শুধু কিছু ছিনিয়ে নিয়েই সটকে পড়বে না, তাদের নিরীহ শিকারটির পেটে ছুরি মেরে ফেলে রেখে যাবে এবং সেই বেচারা রাস্তার ধারে পড়ে থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যাবে।যা বলতে চাচ্ছি, তা সংক্ষেপে এই: বাংলাদেশে অপরাধপ্রবণতায় অহেতু অতিরিক্ত হিংস্রতা যুক্ত হয়েছে; কোনো কোনো অপরাধের ঘটনায় অপরাধীদের আচরণে মানসিক বিকৃতির লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অতিশয় হিংস্রতাপূর্ণ ও বীভৎস অপরাধের ঘন ঘন পুনরাবৃত্তির ফলে সামাজিক সংবেদ ক্রমেই কমে যাচ্ছে, সমাজ নির্বিকার হয়ে পড়ছে, ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। ব্যক্তির চেতনা কেন্দ্রীভূত হচ্ছে শুধুই নিজের ও স্বজনের নিরাপত্তার তাগিদকে ঘিরে। এসব কোনোভাবেই সুস্থ–স্বাভাবিক সমাজের লক্ষণ নয়।কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? এটা সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়। তাত্ত্বিকভাবে অনেকেই অনেক কিছু বলতে পারেন। কিন্তু প্রশ্নটার নির্ভরযোগ্য উত্তর পেতে হলে সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ও শাসনব্যবস্থার পটভূমিতে বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন হবে। সে রকম কোনো গবেষণা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমি সাধারণ কৌতূহল থেকে বিভিন্ন সময়ে ওয়াকিবহাল লোকজনের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলি।যেমন গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জয়পুরহাট সদর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল হকের সঙ্গে আলাপের একপর্যায়ে তাঁকে বলেছিলাম, আড়াই বছর বয়সী শিশু থেকে ৫৮ বছর বয়সী বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। আড়াই বছরের শিশু কীভাবে ধর্ষণ করা সম্ভব? আমার প্রশ্নের উত্তরে ওসি সাহেব বললেন, ‘শোনেন, যত রকমের উদ্ভট, অস্বাভাবিক ক্রাইম দেখবেন, সবগুলোর পেছনে আছে মাদক। একটি ছেলে যখন মাদক নেয়, তখন তার আর কোনো হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। আড়াই বছরের একটি বাচ্চাকে যে রেপ করা সম্ভব নয়, এই সাধারণ বোধটাই সে হারিয়ে ফেলে। অন্য সব ক্রাইমের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার।’অনেক থানায় দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আমি একই ধরনের বক্তব্য শুনেছি। অপরাধপ্রবণতায় মাদকদ্রব্যের প্রভাব বুঝিয়ে বলার সময় এক ওসি আমাকে যা বলেছিলেন, তা এই রকম: ধরেন, কেউ মাদকাসক্ত অবস্থায় ঘরে ফিরে বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করল। একপর্যায়ে সে বউকে মারতে শুরু করল, ক্রমেই সে হিতাহিত জ্ঞান হারাতে থাকবে। এই পরিস্থিতিতে বউটার খুন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি থাকে। অর্থাৎ মাদকদ্রব্যের প্রভাবে অপরাধকর্মে অতিরিক্ত হিংস্রতা যুক্ত হতে পারে।বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে যারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তারা মাদকসেবী ও মাদকের ব্যবসায়ী—এমন কথা সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারীরা অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন, ওই তরুণেরা যখন রিফাতকে ওভাবে কোপাচ্ছিল, সেই মুহূর্তে তারা মাদক–প্রভাবিত ছিল কি না। যদি তারা মাদকদ্রব্য সেবনের পর ওই হত্যা অভিযানে নেমে থাকে, তাহলে এ রকম বীভৎস অপরাধপ্রবণতার পেছনে মাদকের প্রভাবের একটি সাক্ষ্য মিলতে পারে। সাতক্ষীরায় ছিনতাইকারীরা ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় সেটির চালক ১২ বছর বয়সী শাহীনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মাথার খুলি ভেঙে দিয়েছে, তাদের এমন হিংস্র আচরণের স্বাভাবিক কোনো যুক্তি–ব্যাখ্যা মেলে না। তারা মাদকাসক্ত ছিল কি না, এটাও একটি অনুসন্ধানের বিষয় হতে পারে।অতিশয় হিংস্র ও বীভৎস অপরাধ সংঘটনের প্রবণতার সম্ভাব্য কারণগুলো সম্পর্কে জিগ্যেস করেছিলাম মনোরোগের চিকিৎসক আহমেদ হেলালকে। টেলিফোনে তিনি আমাকে বলেন, মাদকদ্রব্যের প্রভাব আছে, তবে তা বেশি গুরুত্ব পেলে অপরাধীর শাস্তি লঘু করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কারণ মাদকাসক্তি যতটা ব্যাধি হিসেবে গণ্য হয়, অপরাধ হিসেবে ততটা নয়। সে জন্য মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন বেশি গুরুত্ব পায়, শাস্তি নয়।আহমেদ হেলাল বেশি গুরুত্ব দিতে চান ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা, তার ওপর সামাজিক–সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক পরিবেশ–পরিস্থিতির প্রভাবের ওপর। যারা মানুষ খুন করার মধ্য দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়, তাদের মধ্যে একধরনের ‘হিরোইজম’ কাজ করে। যারা নিজের শক্তি, সাহস, ক্ষমতা, আধিপত্য দেখিয়ে অন্যদের মনে ভয় ছড়াতে চায়, তারা যদি কাউকে খুন করে, তাহলে তা এমনভাবে করে যেন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়া যায়, স্তম্ভিত করা যায়।রিফাতের হত্যাকারীদের মধ্যে সম্ভবত এসব প্রবণতা কাজ করেছে। তারা রিফাতকে জনসমক্ষে পৈশাচিকভাবে খুন করার সাহস দেখাতে পেরেছে আরও একটা কারণে। সেটা হলো স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব। তারা তাদের প্রশ্রয় বা পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে এবং সে কারণে তাদের মনে এই অভয় কাজ করেছে যে রিফাতকে খুন করে তাদের আইন ও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না। এর আগে অনেক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও তারা যেভাবে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে, রিফাতকে খুন করার পরেও সেভাবেই বেরিয়ে আসতে পারবে।ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় লালিত–পালিত অপরাধীদের জন্য বিশেষভাবে সংরক্ষিত (অলিখিতভাবে) ইমপিউনিটি (শাস্তির ভয় ব্যতিরেকে অপরাধ সংঘটনের সুযোগ) থেকে যে বিচারহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে মাদকদ্রব্যের অবাধ ব্যবহার যুক্ত হলে হরর সিনেমার মতো বীভৎস–বিভীষিকাময় অপরাধ সংঘটনের প্রবণতা বেড়ে যাওয়া মোটেই অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। মাঝেমধ্যে ব্যাপক জনপ্রতিক্রিয়ার মুখে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদাধিকারীর নির্দেশও আজ আর নতুন কিছু নয়। আর দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডকে গ্রপ্তার করা সম্ভব হলো না এবং তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হলেন। আমরা এতেও অবাক হওয়ার মতো কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কারণ, সাম্প্রতিক অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের মনে আশঙ্কা জেগেছিল, নয়ন বন্ডের এই পরিণতি হতে পারে। কিন্তু আমরা এটা চাইনি।বাংলাদেশে সব অস্বাভাবিকতাই যেন স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। এ বড় বিপদের কথা। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর যাবতীয় উন্নয়ন নিষ্ফল হবে, যদি সমাজ থেকে স্বাভাবিক শান্তি ও স্বস্তি বিদায় নেয়, নিরাপত্তাবোধ ভেঙে পড়ে। যাঁরা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, তাঁরা যদি এটা উপলব্ধি করতে না পারেন, তাহলে জন্মভূমি বাংলাদেশ হয়তো একদিন আমাদের সন্তানসন্ততির কাছে বসবাসের যোগ্য থাকবে না।মশিউল আলম: প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিকmashiul.alam@gmail.com |
সহপ্রযোজনায় (কো-প্রডাকশন) সিনেমা তৈরিতে আগ্রহ তরুণ নির্মাতাদের। এই প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু সিনেমা তৈরি হয়েছে। নির্মাতারা অংশগ্রহণ করছেন চলচ্চিত্র বাজারগুলোতে, পাচ্ছেন তহবিলও। তাঁদের বক্তব্য, শুধু অর্থ পাওয়াই আগ্রহের কেন্দ্র নয়। সেখানে গেলে সিনেমা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সিনেমা বিতরণেরও সুযোগ পাওয়া যায়।সম্প্রতি বেশ কয়েকটি উদাহরণ পাওয়া যায়। কামার আহমাদ সাইমনের ‘শুনতে কি পাও!’ যুক্তরাজ্যের জার্নিম্যান ফিল্মস পরিবেশনা করছে। রুবাইত হোসেনের মেড ইন বাংলাদেশ ছবিটির পরিবেশক ফ্রান্সের পিরামিড ফিল্মস। চলচ্চিত্রটির অর্থায়ন হয়েছে সহপ্রযোজনার বাজার থেকে। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের লাইভ ফ্রম ঢাকা কিনেছে প্যারিসের বিপণন সংস্থা স্ট্রে ডগ।সহপ্রযোজনার বাজার (কো-প্রডাকশন মার্কেট) কী? বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের ওয়েবসাইটে সহপ্রযোজনার বাজার নিয়ে বলছে, এটি চলচ্চিত্রশিল্পে অভিজ্ঞ নানা দেশের প্রায় ৬০০ প্রযোজক ও টাকা লগ্নিকারীদের একটি নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম। সেখানে সহপ্রযোজক ও পরিচালক উভয়েই চলচ্চিত্র নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ করার সুযোগ পান। পছন্দসই প্রকল্প সামনে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এই প্ল্যাটফর্ম প্রতিবছর ৩৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, আটটি সিরিজ, চলচ্চিত্রের জন্য ১২টি উপন্যাস ও পাঁচটি ব্যতিক্রমী দুর্দান্ত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে উপস্থাপন করে। বার্লিন্যালের মতো আরও নানা চলচ্চিত্র বাজার আছে বিশ্বজুড়ে। যেমন, ইউরোপিয়ান ফিল্ম মার্কেট, প্রডিউসারস নেটওয়ার্ক, মার্শ দু ফিল্ম, এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেট, আইডিএফএ ডক ল্যাব ইত্যাদি। লা ফেব্রিক দ্যু ফিল্মে অংশগ্রহণ করা ‘স্যান্ড সিটি’ প্রকল্পের নির্মাতা মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিদেশি ফান্ড, সহপ্রযোজনা ইদানীং বেশি শোনা গেলেও এটা নতুন কিছু নয়। বিশ্বজুড়ে সহপ্রযোজনায় অনেক সিনেমা হয়েছে, হচ্ছে। সম্প্রতি তুর্কি চলচ্চিত্রকার নুরি বিলগে জিলানের ওয়াইল্ড পিয়ার ট্রি নির্মিত হয়েছে সাতটি দেশের অর্থায়নে। প্রতিষ্ঠিত ও নতুন উভয় নির্মাতারাই হাজির হচ্ছেন এখানে।’কেন তরুণেরা ঝুঁকছেন চলচ্চিত্র বাজারগুলোতেচলচ্চিত্রের বাজারগুলোতে তরুণদের আগ্রহের অন্যতম কারণ বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ তৈরি করা। আর্থিক সহযোগিতা তো আছেই। নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন’ বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেট ও ফিল্ম বাজার ইন্ডিয়ায় অংশগ্রহণ করে। ‘পিঁপড়া বিদ্যা’ও এই মার্কেটে উপস্থাপনের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। ডুব দুবাই ফিল্ম মার্কেট ও ফিল্ম বাজার ইন্ডিয়াতে পুরস্কার জিতে নেয়। নো ল্যান্ড’স ম্যান ফিল্ম বাজার ইন্ডিয়ার সেরা প্রকল্প জেতে ও বুসানের এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে অংশগ্রহণ করেছিল। তিনি বলেন, ‘সহপ্রযোজনার বাজারে নির্বাচিত হওয়ার সবচেয়ে বড় দিক তো সবাই জানে, ওখানে প্রযোজক পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু যদি না-ও পাওয়া যায়, তবু এটার একটা লাভ আছে। সেটা হচ্ছে স্ক্রিপ্ট পিচিং। এই যে নানা সংস্কৃতির মানুষের কাছে গল্পটা পিচ (উপস্থাপন) করা, তাদের প্রতিক্রিয়া অবলোকন করা—এর মধ্য দিয়ে জানা যায়, স্ক্রিপ্টের শক্তি কোথায়, দুর্বলতা কোথায় বা কোন নতুন দিকে পাণ্ডুলিপিটাকে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি সারা দুনিয়ার ছেলেমেয়েদের চিন্তা জানার সুযোগ তো থাকছেই। ফলে এসব এক্সপোজার যত পাওয়া যাবে, ততই ভালো।’কামার আহমাদ সাইমন বিদেশি প্রযোজকদের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করছেন। কামারের শুনতে কি পাও! প্যারিসে গ্রাঁপ্রি জয়ের সুবাদে প্রথম থেকেই একাধিক আন্তর্জাতিক পরিবেশকদের সঙ্গে পায়। প্রকল্পটি ইডফার ইয়ান ফ্রাইম্যান ফান্ড-স্ক্রিপ্ট ও প্রোডাকশন, ভিশন সুদ ইস্ট-পোস্ট প্রডাকশন, মুভিজ দ্যাট ম্যাটার, ডকেজ কলকাতা বেস্ট পিচ অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। এই প্রকল্পের জন্য কামার আমন্ত্রিত হয়েছিলেন জার্মানির বার্লিন্যালে এডিটিং ল্যাব ও নেদারল্যান্ডসের ইডফা একাডেমিতে। তাঁর একটি সুতার জবানবন্দী ও নতুন ছবি নীল মুকুট যৌথ প্রযোজনা করে এশিয়ার চারটি টেলিভিশন চ্যানেল। লোকার্নোর ওপেন ডোরসে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও আর্তে ইন্টারন্যাশনাল প্রিক্স বিজয়ী জলত্রয়ীর দ্বিতীয় ছবি অন্যদিন যৌথ প্রযোজনা করছে ফ্রান্সের ডিডব্লিউ ফিল্মস ও নরওয়ের ব্যারেন্টস ফিল্মস। নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন বলেন, ‘পোস্ট ৭১ প্রজন্মে স্বাধীনধারার সিনেমা এখন পুরোটাই প্রায় পরাধীন। সেই হিসাবে আন্তর্জাতিক যৌথ প্রযোজনা আমাদের একটি নয়, দুটি ক্রিটিক্যাল সুযোগ এনে দিয়েছে। এক. কতিপয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী না থেকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার। দুই. নিম্নমানের পাতি প্রযোজনার বাইরে শিল্পমাধ্যম হিসেবে সিনেমার ল্যাঙ্গুয়েজ বা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ভাষার সঙ্গে নিজেদের অ্যাপ্রোচ এক্সপ্লোর করার।’ এ ছাড়া এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনের সেরা দশ প্রযোজকের তালিকায় থাকা জার্মানির ওয়াইডাম্যান ব্রস যৌথ প্রযোজনা করছে কামারের ছবি শিকলবাহা। প্রযোজক সারা আফরীন বলেন, ‘লোকার্নোর পর অন্যদিন-এর যোগাযোগগুলা হয়েছে কানের লা এতেলিয়ারে বিশেষ আমন্ত্রণের সূত্রে। আর ওয়াইডাম্যান ব্রসের সাথে আমার যোগাযোগ ইউরোপিয়ান প্রডিউসার্স ওয়ার্কশপ থেকে, সেখানে তিনটি দেশে নয় মাসের ডিপ্লোমায় আমার স্ক্রিপ্ট ছিল শিকলবাহা। বার্লিনের ওয়ার্ল্ড সিনেমা ফান্ড জয়ের সুবাদে আমাদের সাথে যৌথ প্রযোজনায় আসে ওয়াইডাম্যান ব্রস।’বৈশ্বিক যোগাযোগও বটেনির্মাতা ও প্রযোজক আরিফুর রহমান গুপি বাঘা প্রোডাকশনের ব্যানারে কাজ করছেন। তাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে সম্প্রতি প্যারাডাইস সিনেমাটি সিয়াটল চলচ্চিত্র উৎসবের ওয়ার্ক ইন প্রগ্রেস বিভাগে নির্বাচিত হয়। বার্লিন্যালেও অংশগ্রহণ করে একটি প্রকল্প। আরিফুর রহমান বলেন, ‘বড় কথা হলো বিশ্বজুড়ে একটা যোগাযোগ তৈরি হয়। এই বাজারগুলোতে গেলে পরবর্তীকালে প্রযোজকেরা ওই নির্মাতার ওপর নজর রাখেন। অর্থায়নের পাশাপাশি তাঁরা নির্মাতাকে ডেভেলপও করেন। কারণ, তারাও ভালো সিনেমার সঙ্গে থাকতে চান।’শুধু তাই নয়, এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে দেশি চলচ্চিত্রের বাইরেও বিদেশি সিনেমা প্রযোজনা করা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে একা ও ওয়েটিং ফর ফ্লাড নামে দুটি ছবি প্রযোজনার কথা চলছে।দেশেই সহপ্রযোজনার প্ল্যাটফর্মখোদ দেশেই আছে ফিল্ম বাজার। ২০১৭ সাল থেকে প্রামাণ্যচিত্রের জন্য ‘ঢাকা ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম নেটওয়ার্ক’ আয়োজন করেছে ‘ঢাকা ডক ল্যাব’। এখানে নির্মাতাদের প্রামাণ্যচিত্র প্রকল্প উপস্থাপিত হয় আন্তর্জাতিক প্রযোজকদের সামনে। এই আয়োজন থেকে দুটি প্রকল্প জাপানের এনএইচকে চ্যানেলে প্রচারিত হওয়ার কথা চূড়ান্ত হয়েছে। ঢাকা ডক ল্যাবের পরিচালক তারেক আহমেদ জানান, আগামী ২৬ থেকে ৩১ আগস্ট বসবে তৃতীয় আসর। |
মাগুরার মহম্মদপুরের পারুয়ারকুল গ্রাম থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে এক যুবকের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নগ্ন লাশের পাশে কেবল একটি স্যান্ডেল পড়ে ছিল। ময়নাতদন্ত শেষে অজ্ঞাতনামা হিসেবে বিকেলে মাথা ছাড়াই মরদেহটি মাগুরা কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই স্যান্ডেলের সূত্র ধরে যুবকের পরিচয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তাঁর পরিবার।নিহত যুবকের নাম মো. ইমন হোসেন (২২)। তিনি সদর উপজেলার চাউলিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের ইসলাম মোল্লার ছেলে।মহম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক এস এম আকতার হোসেন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মরদেহটিকে অজ্ঞাত হিসেবে দাফন করা হয়। সন্ধ্যায় নিহত যুবকের পরিবারের সদস্যরা থানায় আসেন। ছবি ও মরদেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া স্যান্ডেল দেখে নিহত ব্যক্তিকে ইমন বলে শনাক্ত করে পরিবার।যুবকের বাবা ইসলাম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের আগে বিনোদপুর বাজার থেকে নিজ হাতে ছেলেকে স্যান্ডেলটা কিনে দিই।’ তিনি জানান, ইমন মাগুরা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ডিপ্লোমা পড়ছিল। কয়েক মাস আগে পড়ালেখা ছেড়ে ঢাকা থেকে ফিরে আসে সে। সর্বশেষ সোমবার রাত আটটার দিকে ছেলের সঙ্গে দেখা হয় বাবার।ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘রাত আটটার দিকে সিরিজদিয়া বাজারে দেখা হয় ওর সঙ্গে। এক বন্ধুর সঙ্গে বসেছিল। জিজ্ঞেস করলাম, বাড়িতে যাবা না বাবা?’ উত্তরে বলেছিল,‘তুমি যাও, পরে আসব।’ ওই শেষ কথা, ‘রাতে আর বাড়িতে ফেরেনি ছেলে। ভেবেছিলাম, রাতে বন্ধুর বাড়িতে আছে। পরদিন বাড়িতে না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করি।’ তিনি জানান, এখন মরদেহ উত্তোলন ও ফেরত পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। অনুমতির অপেক্ষায় আদালতে বসে আছেন তাঁরা।এ বিষয়ে মাগুরার পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, পরিবারের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর রাতেই অভিযানে নেমেছে পুলিশ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছেন তাঁরা। জড়িত ব্যক্তিদের আটক করা গেলে মরদেহের বাকি অংশ ও মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটন করা যাবে। |
সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম মনে করেন ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রাপ্ত সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। দলের ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার ধরনও দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে তাঁর কাছে।ভারতের বিপক্ষে আরও একবার আমরা খুব কাছে গিয়ে হারলাম। আক্ষেপ নিয়ে শেষ করলাম আরও একটি লড়াই। ভারত কাল এজবাস্টনে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকবার সুযোগ দিয়েছিল, কিন্তু সেগুলো ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি আমাদের দল। আমার মনে হয় ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে মানসিক ব্যাপারটা প্রকট হয়ে ওঠে বাংলাদেশের। ভারত অনেক শক্তিশালী দল, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু মানসিক দুর্বলতার কারণে আমরা আমাদের পরিকল্পনাগুলো ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারি না। আর উল্টো দিকে আমাদের ক্রিকেটারদের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো মাথায় নিয়ে মাঠে নেমে সে অনুযায়ী পরিকল্পনাগুলো চমৎকারভাবে কাজে লাগায় বিরাট কোহলির দল।কাল টসটা জেতা দরকার ছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা জিততে পারিনি। টসের ওপর আমাদের হাত নেই। তাই ওটা নিয়ে বেশি কথা বলেও লাভ নেই। কিন্তু যা কিছু আমাদের হাতে ছিল, সেসব কী আমরা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পেরেছি। রোহিত শর্মার মতো ক্রিকেটারের ক্যাচ যদি পড়ে যায়, তাহলে আপনি ভারতকে আটকাবেন কীভাবে! তামিম খুব ভালো ক্যাচ নেয়। কিন্তু কালকে পারল না। এটিকে কেবল ক্রিকেটীয় ভুল হিসেবে বলা বোধ হয় ঠিক হবে না। ক্যাচটি নেওয়ার সময় তামিম মৌলিক জায়গায় ভুল করেছে। শরীরটাকে বলের নিচে যেভাবে নেওয়া উচিত ছিল সেটি পারেনি। আমরা তার খেসারত দিয়েছি। রোহিত সেঞ্চুরি করে কুড়িয়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। কালকের ম্যাচে ভারতের ওপেনিং জুটিটা ছিল দুর্দান্ত। এই জুটিটাই আমাদের ম্যাচটা কঠিন করে দিয়েছে।লোকেশ রাহুল কালকের ম্যাচের আগে খুব ভালো ফর্মে ছিলেন না। আমাদের তাঁর দুর্বলতাকে কাজে লাগানো উচিত ছিল, সেটি আমরা পারিনি। নতুন বলে সে একটু আড়ষ্ট থাকে, কিন্তু আমরা তো কাল নতুন বলের ব্যবহারই ঠিকমতো করতে পারিনি। সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আর কী বলব! সে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এবারের বিশ্বকাপে দেখছি তাঁর প্রায়োগিক সক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে। এটি এখন বিশ্বমানের। শট নির্বাচনও বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের মতোই। সাকিব বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রায় একাই টানল। তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের সঙ্গে যদি তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের ধারাবাহিকতা যোগ হতো, তাহলে দলের কোনো চিন্তাই থাকত না। কাল ভারতের বিপক্ষে সাকিব এমন একটা সময় ব্যাটিংয়ে নামল, যখন হঠাৎ করেই তামিম ফিরে গেছে। কিন্তু সে যেভাবে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিয়ে গেল, এটা চমৎকার। তাঁর সতীর্থদের অনেক কিছুই শেখার আছে এই খেলোয়াড়টির কাছ থেকে। কাল সাকিব জুটি গড়ার অনেক চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু একটা ভালো জুটি দাঁড়াল না। প্রথমে সৌম্য, পরে মুশফিক, লিটন, কেউই নিজেদের সাকিবের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারল না। আমার কাছে সবচেয়ে খারাপ লেগেছে তামিম, সৌম্য, মুশফিক, লিটনদের আউট হওয়ার ধরন। প্রত্যেকেই সেট হয়ে ফিরেছেন। প্রত্যেকেরই ইনিংসে শুরুটা হয়েছিল। প্রতিটি আউটেই মনে হয়েছে ভারতীয় অধিনায়ক কোহলির পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন আমাদের ব্যাটসম্যানরা।সাইফউদ্দিন এত ভালো করবে ভাবিনি। এই খেলোয়াড়টিকে যত দেখছি অবাক হচ্ছি। সব সময়ই সে দলের জন্য অবদান রাখতে চায়। অসম্ভব সাহসী। কী দারুণ ব্যাটিংটাই না করল সে। ওর ব্যাটিং দেখে আক্ষেপ হলো সাকিবের মতো আর একজন সিনিয়র যদি ৭০/৮০ রানের ইনিংস খেলতে পারত! সে সুযোগ তো তাদের ছিলই। সে সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন তারা। সাব্বিরও লড়েছে। কিন্তু সে সাইফউদ্দিনের মতো মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে পারল না ! তাঁর চেষ্টাটা ঢাকা পড়ে যেতে পারে তাঁর আউটের ধরনের। সাব্বিরকে এসব ব্যাপারে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকতে হবে। তবে বাংলাদেশ যে মাঝের বিপর্যয়ের পরেও শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেল, সেটির কৃতিত্ব সাইফউদ্দিনের সঙ্গে সাব্বিরকে দিতে হবেই।মোস্তাফিজুর রহমানকে কাল অনেক দিন পর আগের চেহারায় দেখলাম। এটা উৎসাহব্যঞ্জক। শেষের দিকে তাঁর সব অস্ত্রগুলোরই সদ্ব্যবহার করেছে সে। ধোনিকে আটকে রাখল উইকেটে। তাঁর অসাধারণ বোলিংই আমাদের বোলিং ঘাটতি কিছুটা পুষিয়েছে। তবে একটা ব্যাপার আমি বুঝি না। মোস্তাফিজই আমাদের একমাত্র বোলার যে মাঝেমধ্যে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করতে পারে। কিন্তু তার পরেও তাঁকে দিয়ে বোলিং ওপেন কেন করানো হচ্ছে না! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সে বোলিং শুরু করেছিল। সেদিনই বোঝা গেছে, কতটা কার্যকর সে! ব্যাটসম্যানকে বাইরে খেলানোর ক্ষমতা তাঁর আছে। সে খুব ভালো অফ কাটার করতে পারে। কিন্তু তাঁকে দিয়ে বোলিং ওপেন করানো হয় না। জানি না, আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট কী ভেবে মোস্তাফিজকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজায়।কালকের ম্যাচে আমাদের দলে মেহেদী হাসান মিরাজ কেন ছিল না? আমি এটা নিয়ে ভেবেছি। ভারতীয় দলের একাদশ দেখে বোঝার চেষ্টা করেছি। ওরাও কুলদীপ যাদবকে বসিয়ে মাঠে নেমেছিল চার ফাস্ট বোলার নিয়ে। আমরাও সেটাই করেছি। কাগজে-কলমে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়তো ঠিক ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের সব পেস বোলাররা তাদের কোটার পূর্ণ ব্যবহার কেন করল না। এই জায়গাটাতে এসেই সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়।যাই হোক, আরও একটি ম্যাচ বাকি আমাদের—পাকিস্তানের সঙ্গে। বিশ্বকাপে সেমির স্বপ্ন শেষ। এখন পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি জিতে মাথা উঁচু করেই বিশ্বকাপটা শেষ করুক বাংলাদেশ দল। আমরা সেমির স্বপ্ন দেখেছিলাম।স্বপ্ন দেখাটা ভুল ছিল না। বিশ্বকাপের অন্যতম অভিজ্ঞ দল হিসেবে সে স্বপ্নটা সবাই দেখতেই পারে। কিন্তু আমাদের দলটা কী সেমির উপযোগী ছিল? এ প্রশ্নটা থেকেই যায়। এ বিশ্বকাপের সবচেয়ে দুর্বল বোলিং আক্রমণ ছিল বাংলাদেশের। আমাদের দলে বোলারের ঘাটতি ছিল। আমি আমার কলামে শুরুর দিকে বলেছিলাম, বাংলাদেশের স্কোয়াডে একজন স্পিনারের অভাব আছে। আমরা একজন অফ স্পিনার কিংবা একজন বাঁ হাতি স্পিনার নিয়ে যেতে পারতাম।বিশ্বকাপ ২০১৯ শেষ আমাদের। অনেক আক্ষেপ আছে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট। বোলিংটা নিয়েই সমস্যা। এই বিভাগের ঘাটতিগুলো না থাকলে আমরা সেমিতেই খেলতাম। দুর্ভাগ্যও ছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটায় পয়েন্ট ভাগাভাগি হলো, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটায় হেরে গেলাম ২ উইকেটে! তারপরেও ক্রিকেটে আমরা কতটা এগিয়েছি, এটা কিন্তু প্রমাণ করা গেছে। |
এক মাস পেরিয়ে গেলেও যে হেঁয়ালি স্পষ্ট নয়, তার নাম কংগ্রেস, বা রাহুল গান্ধী। দলটা যে কী করবে, দলের সভাপতি যে কোন পথে হাঁটবেন, তা এখনো কেউ জানে না। এমন হতবুদ্ধি অবস্থা শতাব্দীপ্রাচীন দলটির আগে কখনো হয়েছে বলে মনে পড়ছে না।ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ফল বেরোয় ২৩ মে। ২৫ মে ফল বিশ্লেষণ করতে ডাকা হয় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। সেখানে সোনিয়া গান্ধী, মনমোহন সিংসহ প্রায় সবাই হাজির। বৈঠক শেষে দলের পক্ষ থেকে জানানো হলো, বিপর্যয়ের পুরো দায় নিজের কাঁধে নিয়ে রাহুল গান্ধী সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন। কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটির প্রত্যেক সদস্য তাঁর সে ইচ্ছা খারিজ করে দিয়েছেন।বিপর্যয়ের পর এভাবে দলের সভাপতির পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ কংগ্রেসের খুব চেনা এক চিত্রনাট্য। বিশেষ করে সভাপতির পদে যখন গান্ধী পরিবারের কেউ আসীন। রাজীব গান্ধীর সময় বারবার এমন ঘটেছে। ঘটেছে সোনিয়া গান্ধীর আমলেও। পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে অনুগতদের সমস্বরে ‘যেতে নাহি দিব’ আর্তি শোনা যেত। সেই আর্তি, যা কিনা ‘তাহলে সবকিছু রসাতলে যাবে’র মতো শোনাত, তা শুনে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের পদাধিকারীরা গণ-ইস্তফা দিতেন, যাতে কংগ্রেস সভাপতি নতুন করে দলে নতুন রক্ত সঞ্চার করতে পারেন। কিছু মুখ রদবদল হতো। তারপর সবকিছু সেই আগের মতোই চলত। এবারেও রাহুল যখন তেমনই করলেন, মনে হয়েছিল, এটাও সেই চেনা চিত্রনাট্যের পুনরাবৃত্তি।কিন্তু দিন যত কাটছে, ততই বোঝা যাচ্ছে, এবারের চিত্রনাট্য চরিত্রগতভাবে একটু আলাদা। কেননা, রাহুলের মতো আর কোনো কংগ্রেস সভাপতির গোঁ অতীতে এত দীর্ঘায়িত হয়নি।এই এক মাসের মধ্যে রাহুল বিদেশে ঘুরে এসেছেন। শুরু হয়েছে সংসদের অধিবেশন। রাহুল লোকসভার নেতা হতেও রাজি হননি। নেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে। গোটা মাস ধরে দলের নেতারা রাহুলের মানভঞ্জনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাহুলের একটাই উত্তর, দলের সভাপতি হিসেবে বিপর্যয়ের সব দায় তাঁর। নতুন কেউ সভাপতি হোন। নতুন উদ্যমে দল পরিচালনা করুন। তিনি দলে থাকবেন সাধারণ কর্মী হিসেবে। সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাবেন দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে। এই সঙ্গে রাহুল একটা শর্তও চাপিয়ে দিয়েছেন। তিনি, তাঁর মা সোনিয়া কিংবা বোন প্রিয়াঙ্কা, পরিবারের কাউকেই কংগ্রেস সভাপতি করা যাবে না। ওয়ার্কিং কমিটি অন্য কাউকে বেছে নিক।অবশ্য ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই রাহুলের সমালোচনায় অনেকের নখ-দাঁত বিচ্ছিরিভাবে বেরিয়ে এসেছে। বাঘা বাঘা যেসব কলাম লেখক রাহুলের নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন, তাঁরাই এখন দেখছি ‘পরিবারতন্ত্রকে’ তুলোধোনা করে লিখছেন (টেলিভিশনেও বলছেন), কংগ্রেসকে দাঁড় করানো রাহুলের কম্ম নয়। তিনি এখনো নাবালক। অথচ গুজরাট বিধানসভার ভোটে বিজেপিকে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর পর এঁরাই রাহুলের মধ্যে প্রথম ‘প্রকৃত নেতার’ সন্ধান পেয়েছিলেন। কর্ণাটক বিধানসভার ভোটের পর জনতা দলের কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপির বাড়া ভাতে ছাই ফেলার পর তাঁরা রাহুলের মধ্যে ‘রাজনৈতিক পরিপক্বতার’ ছাপ খুঁজে পেয়েছিলেন। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর তাঁরা লিখেছিলেন, রাহুলের হাতে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ ‘সুরক্ষিত’। উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব প্রিয়াঙ্কা ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার হাতে তুলে দেওয়াকে তাঁদের ‘মাস্টার স্ট্রোক’ বলে মনে হয়েছিল। রাহুল যখন রাফালকে অস্ত্র করে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান দিতে শুরু করেন, তখন কেউ লেখেননি সেটা বুমেরাং হতে চলেছে। অথবা বলেননি, দরিদ্রদের বছরে ৭২ হাজার রুপি করে দেওয়ার ন্যূনতম আয় প্রকল্প (ন্যায়) চিড়ে ভেজাতে ব্যর্থ হবে। আজ ওই কলাম লেখকদের চোখে রাহুল ‘ভিলেন অব দ্য পিস’। কংগ্রেস কীভাবে জেগে উঠতে পারে, সেই জ্ঞান এখন তাঁরা দান করছেন। সেই সঙ্গে করছেন পরিবারতন্ত্রের বাপবাপান্ত।রাহুল অনড় ও অনমনীয় হলেও দলের কান্ডারি এখনো তিনিই। বিভিন্ন রাজ্যের পদাধিকারীরা সরে যাচ্ছেন, যাতে রাহুল নিজের মতো করে দল ঢেলে সাজাতে পারেন। এখনো কংগ্রেস সভাপতির নামে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এআইসিসি। ওয়ার্কিং কমিটিও নতুন সভাপতি নির্বাচনের তাগাদা অনুভব করছে না। এই দোলাচল আর যা-ই হোক, দলের পক্ষে ভালো হতে পারে না। এই বছরের শেষ ও সামনের বছরের গোড়ায় মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড ও দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন। সভাপতি না থাকার ইচ্ছা প্রকাশ সত্ত্বেও রাহুল এই রাজ্যগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। কোনো কোনো রাজ্যের দলীয় কমিটি ভেঙে দিচ্ছেন। কিন্তু কোনোটাই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে করছেন না। এতেও দলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। মনোবলও ঠেকেছে তলানিতে।কংগ্রেস ও কংগ্রেসিদের কাছে গান্ধী পরিবার বহু দশক ঐক্যবদ্ধতার একমাত্র অনুঘটক। অস্বাভাবিক ও যুক্তিগ্রাহ্য না হলেও এটাই সত্য। গান্ধী পরিবারকেই দেশের আপামর কংগ্রেস কর্মী-নেতা ‘সুপ্রিম’ বলে মেনে এসেছেন। ‘ডাইনেস্টির’ প্রশ্ন তুলে তা থেকে কংগ্রেসকে বিচ্যুত করা চাট্টিখানি কথা নয়। বরং বেশির ভাগ কংগ্রেসিই মনে করেন, এই যুক্তি কার্যকর হলে বিজেপির লাভ আঠারো আনা। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলা দরকার, রাহুল থাকুন না-থাকুন, সিদ্ধান্ত দ্রুত গৃহীত হোক। বিলম্ব শুধু ধোঁয়াশাই নয়, হতাশাও সৃষ্টি করছে।রাহুল বলেছেন, সাধারণ কর্মী হিসেবে তিনি দলকে শক্তিশালী করবেন। সভাপতি পদে থেকে বা না থেকে যেভাবেই তিনি তা করুন, তাঁর সামনে দুটি উদাহরণ রয়েছে। প্রথমটা তাঁর দাদি ইন্দিরা গান্ধীর। ১৯৭৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিন বছরের মাথায় ইন্দিরা কীভাবে ফিরে এসেছিলেন, তা তাঁর জানা। মানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে কীভাবে সাধারণের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করেছিলেন, রাহুল তা নিশ্চয় জানেন। সেই পথে তিনি হাঁটতে পারেন। দ্বিতীয় উদাহরণ অন্ধ্র প্রদেশের ওয়াইএসআর কংগ্রেসের নবীন নেতা জগনমোহন রেড্ডির। জগনমোহনের বাবা ছিলেন কংগ্রেসের নেতা। তাঁর অকালমৃত্যুর পর জগনমোহনের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। একদিকে কংগ্রেস, অন্যদিকে রাজ্যের শাসক চন্দ্র বাবু নাইডুর সঙ্গে টক্কর দিয়ে জগনমোহন আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার আগে যে সংগ্রাম তাঁকে করতে হয়েছে, যেভাবে রাজ্যে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা করেছেন, তা সবার কাছেই উদাহরণ। রাহুল সেই পথেও হাঁটতে পারেন। শুরু করতে পারেন যে চার রাজ্যে বছর শেষে নির্বাচন, সেখান থেকেই।কী করবেন তিনি, জানা নেই। জানা শুধু এইটুকুই, জীবনে শর্টকাট বলে কিছু নেই।সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি |
গাজীপুরের শ্রীপুরের সুতা কারখানা অটো স্পিনিং মিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আজ বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে পৌঁছেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে লাগা আগুন মধ্যরাতে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আজ বুধবার সকালেও পুড়ে যাওয়া জিনিস সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। এ ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। সকালের দিকে মরদেহ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের কাজ চলছিল।গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকার অটো স্পিনিং মিলের তুলার গুদামে আগুন লাগে। শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট কাজ করে। কিছুক্ষণের মধ্যে আরও কয়েকটি ইউনিট যুক্ত হয়। সন্ধ্যার মধ্যে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।আজ বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। একজনগতকাল দুপুরে এক নিরাপত্তা কর্মীর পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত যাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁরা হলেন শ্রীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের মোহাম্মদ জয়নালের ছেলে এসি প্ল্যান বিভাগের আনোয়ার হোসেন (২৮), ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার আলাউদ্দিনের ছেলে নিরাপত্তা কর্মী রাসেল মিয়া (৪৫), গাজীপুর সদর উপজেলার হাসেন আলীর ছেলে কোয়ালিটি বিভাগের শাহজালাল (২৬), গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ভান্নারা গ্রামের শামসুল হকের ছেলে সিনিয়র উৎপাদন কর্মকর্তা সেলিম কবীর (৪২), ময়মনসিংহ জেলার আবু রায়হান ও পাবনা জেলার মোহাম্মদ সুজন। রায়হান ও সুজন কারখানার এসি প্ল্যান্টে কাজ করতেন। তাদের দেহ অঙ্গার হয়ে গেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শাহজালালের পুরো শরীর পুড়ে গেছে। তাঁর মরদেহের পাশে মোটরবাইকের চাবি ও অন্যান্য আলামত দেখে স্বজনেরা তাঁর লাশ শনাক্ত করেন।গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ১১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আজ ভোরের দিকে ঘটনাস্থল থেকে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।অটো স্পিনিং মিলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হারুন অর রশিদ বলেন, কারখানায় আগুন লাগার পর সব শ্রমিককে নিজে বের করেছেন সেলিম কবীর। তিনি ছিলেন রিং বিভাগে উৎপাদন কর্মকর্তা। ভেতরে আর কেউ আছে কি না, তা দেখার জন্য তিনি গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে আর বের হতে পারেননি।হারুন অর রশিদ বলেন, তাঁদের প্রচুর মালামাল, যন্ত্রাংশ পুড়ে গেছে। ব্লু রুম থেকে ফিনিশিং পর্যন্ত যত যন্ত্র আছে, যত তুলা আছে— সব পুড়েছে।গতকাল বিকেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, গাজীপুর-৩ আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন, শ্রীপুর পৌর মেয়র আনিসুর রহমান, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা তুজ জোহরা।এ ঘটনায় গতকাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনুর ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পরিচালক শিল্প পুলিশ গাজীপুরের প্রতিনিধি (উপপরিচালক পদমর্যাদার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেলা পুলিশ, শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার, গাজীপুরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক এবং গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক। তাঁরা সাত দিনের মধ্যে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান, ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিতকরণ, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে প্রতিবেদন দেবেন। |
পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলার রায়ে নয়জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।একই মামলায় ২৫ জনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ ছাড়া ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে।আজ বুধবার দুপুরে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩–এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলী এ আদেশ দেন।আলোচিত এ মামলায় রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া নয়জন আসামির প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ২৫ জনের প্রত্যেককে তিন লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। আর ১৩ জনের প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কে এম আখতারুজ্জামান, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির (স্থগিত কমিটি) সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু (পলাতক), কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মোকলেসুর রহমান ওরফে বাবলু, তাঁর ভাই সাবেক ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম ওরফে শাহিন, অপর ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে পলাশ, বিএনপি নেতা মো. অটল, ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সভাপতি শ্যামল (নূরে মোস্তফা), স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আজিজুর রহমান ওরফে শাহীন ও বিএনপির সাবেক নেতা শামসুল আলম।যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম (পলাতক), আজাদ হোসেন ওরফে খোকন, ইসমাইল হোসেন ওরফে জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামসুর রহমান, আনিসুর রহমান (পলাতক), আক্কেল আলী, মোহাম্মদ রবি, মোহাম্মদ এনাম, আবুল কাশেম, কালা বাবু, মো. মামুন (পলাতক), মামুন-২ (পলাতক), সেলিম হোসেন, মো. কল্লোল, তুহিন, শাহ আলম ওরফে লিটন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, লাইজু (পলাতক), আব্দুল জব্বার, পলাশ, আবদুল হাকিম, আলমগীর হোসেন, এ কে এম ফিরোজুল ইসলাম ওরফে পায়েল ও আবুল কালাম।১০ বছর করে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বিএনপি নেতা ও ঈশ্বরদী উপজেলার শাহাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নেফাউর রহমান রাজু, আজমল হোসেন, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. রনো (পলাতক), মো. বরকত, চাঁদ আলী (পলাতক), এনামুল কবির, মো. মোক্তার, হাফিজুর রহমান মুকুল, হুমায়ন কবির ওরফে দুলাল (পালাতক), জামরুল (পলাতক), তুহিন বিন সিদ্দিক ও ফজলুর রহমান।মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আখতারুজ্জামান রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক আইনের ৩ ধারা মোতাবেক আদালত মামলাটির রায় ঘোষণা করেছেন। মামলার মোট ৫২ জন আসামির মধ্যে গত ২৫ বছরে পাঁচজন আসামি মারা গেছেন। বাকি ৪৭ জন দণ্ডপ্রাপ্ত হলেন। এঁদের মধ্যে রায় ঘোষণার সময় ৩২ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উত্তরাঞ্চলে দলীয় কর্মসূচিতে ট্রেনবহর নিয়ে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ঢোকার সময় ট্রেনবহরকে লক্ষ্য করে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালান। ট্রেনে ব্যাপক গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা করেন। এ সময় পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য এগিয়ে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করেও সেদিন বোমা হামলা চালানো হয়। এই ঘটনায় ঈশ্বরদী জিআরপি (রেলওয়ে পুলিশ) থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (স্থগিত কমিটি) জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলা দায়েরের পরের বছর পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র জমা দেয়। ওই সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু আদালত সে অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে অধিক তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটির পুনঃ তদন্ত হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল পুলিশ ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীসহ ৫২ জনের নামে আদালতে আবার অভিযোগপত্র জমা দেয়। গত রোববার আদালতে আসামিদের সাফাই সাক্ষী উপস্থাপনের নির্ধারিত দিন ছিল। ৩০ জন আসামি কোনো সাক্ষী উপস্থাপন না করে আদালতে জামিন আবেদন ও সময় প্রার্থনা করেন। আদালত তাঁদের প্রার্থনা নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর গত সোমবার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। গতকাল মঙ্গলবার মামলার আরও দুই আসামি আত্মসমর্পণ করেন।সংবাদপত্রের পাতায় সেদিনের ঘটনার বিবরণহামলার ঘটনার পরদিন (২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪, শনিবার) ভোরের কাগজ পত্রিকায় এ নিয়ে ‘শেখ হাসিনার ট্রেনযাত্রায় বাধা গুলি বোমা: আহত অর্ধশত’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা চালানো হয়েছে। ট্রেনযোগে গণসংযোগ কর্মসূচি পালনের একপর্যায়ে খুলনা থেকে ঈশ্বরদী পৌঁছালে এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ঈশ্বরদী স্টেশনে ট্রেনটি প্রবেশের সময় কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষিত হয় একটি বগিকে লক্ষ্য করে। ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে কড়া পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষের উদ্দেশে শেখ হাসিনার বক্তৃতাকালে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, এই হামলার মাধ্যমে সরকার তার পতনের বীজ রোপণ করল, এ মুহূর্ত থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। তিনি বলেন, বিএনপি সরকারকে উৎখাত করে সন্ত্রাসী হামলার জবাব দেওয়া হবে। গতকাল শেখ হাসিনা সকাল ৯টা ১০ মিনিটে খুলনা থেকে রওনা হন। ১১টি স্টেশনে সমাবেশ-জনসভায় বক্তৃতা শেষে ঈশ্বরদী এসে পৌঁছালে তিনি হামলার শিকার হন।ঈশ্বরদী স্টেশনে উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিবেদক। তারা জানায়, সরকারি দলের সমর্থিত মস্তান বাহিনী এ হামলা চালিয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে বিএনপি–সমর্থকেরা ঈশ্বরদী স্টেশনে আওয়ামী লীগকে সমাবেশ করতে বাধা দেয়। দিনব্যাপী ব্যাপক বোমা হামলায় ভীত ঈশ্বরদী স্টেশনের লোকজন অভিযোগ করে, পৌর চেয়ারম্যানের সমর্থনপুষ্ট মস্তানরা এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে। বোমা হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ঈশ্বরদীতে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের একজন হলেন আহাদ কমিশনারের ছেলে রাজু।স্টেশনে উপস্থিত আওয়ামী লীগ কর্মীরা অভিযোগ করেন, একজন প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে এ হামলা চালানো হয়েছে। সন্ধ্যায় রেলস্টেশনে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিল। সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের মঞ্চও পুড়িয়ে দিয়েছে। ৬টা ৪৫ মিনিটে শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষে ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশন ছাড়লে ট্রেনটি লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছাড়া হয়। শেখ হাসিনার নির্ধারিত সভাকে কেন্দ্র করে শহরে এবং সভামঞ্চের কাছাকাছি ব্যাপক বোমা হামলা ও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। জনসভায় গোলযোগের সময় মাথায় বোমার আঘাত লাগে যুবলীগ কর্মী স্বপনের। ২১ সেপ্টেম্বর আবদুলপুর বাজারে প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের জনসভা বানচালের জের ধরে ঈশ্বরদীতে বিএনপি ও ছাত্রদলের এক বিক্ষোভ মিছিল ঈশ্বরদী শহর প্রদক্ষিণ করে আওয়ামী লীগের সভামঞ্চের কাছে দুপুর ১২টার দিকে উপস্থিত হয় এবং মঞ্চ ভাঙচুর করে। মঞ্চে নির্মাণে যুক্ত কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। এ সময় ১৫ জন আহত হয়। মঞ্চের কাছে বিক্ষোভকারীদের বোমাবাজির কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরীফের বাসভবনে সমবেত হন। এ সময় গোটা শহরে বোমাবাজি চলতে থাকে। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের হাজারখানেক কর্মী মিছিল করে ঈশ্বরদী থানা অতিক্রম করার সময় তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় পুলিশ এক রাউন্ড গুলি, এক রাউন্ড রাবার বুলেট এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। আওয়ামী লীগের মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে নেতৃবৃন্দ পুলিশের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মঞ্চের কাছাকাছি উপস্থিত হন। সভা চলাকালে সভার অদূরে বিচ্ছিন্নভাবে বোমা হামলা চালানো হয়। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন, নায়েক ফজলুল হক, ঈশ্বরদী থানার পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন।ঘটনা নিয়ে তৎকালীন সরকারের প্রেসনোট ১৯৯৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ভোরের কাগজে সরকারি একটি প্রেসনোট ছাপা হয়। এতে শেখ হাসিনার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেসনোটে বলা হয়, গতকাল বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বহনকারী ট্রেনটিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ করেছেন, তার প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সরকার জানাতে চায় যে প্রাথমিক রিপোর্টে বিরোধীদলীয় নেত্রীর এ অভিযোগের কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিরোধীদলীয় নেত্রী স্টেশনে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পূর্বে পরস্পরবিরোধী কতিপয় রাজনৈতিক দলের উচ্ছৃঙ্খল সমর্থকেরা উল্লিখিত স্টেশন দুটির আশপাশে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয় এবং পটকা বিস্ফোরণ ঘটায়। |
তুলনামূলকভাবে বেশি দামের কারণে চীনের বাজারে আইফোন বিক্রি কমে গেছে। তাই চীনসহ এশিয়া অঞ্চলের বাজার ধরতে ভিন্ন পথে হাঁটতে যাচ্ছে অ্যাপল। সাশ্রয়ী দামে ডিসপ্লের মধ্যে ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রযুক্তির নতুন আইফোন আনতে পারে মার্কিন প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।অ্যাপলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অবশ্য আসেনি। তবে বাজার বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, এ বছরই তিনটি মডেলের ‘আইফোন ১১’ আনবে অ্যাপল। এর মধ্যে ৫ দশমিক ৮ ইঞ্চি মাপের একটি আইফোন চীনের বাজার উদ্দেশ্য করে তৈরি করবে তারা।গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগে চীনে আইফোনের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও এখন অনেকেই আগ্রহ হারিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাই মরিয়া হয়ে উঠেছে অ্যাপল। তাই আইফোনে বেশি দামের যন্ত্রাংশ ফেস আইডি বাদ দিয়ে ইনডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর যুক্ত করবে তারা। এ ছাড়া অত্যন্ত পাতলা নচ নকশাযুক্ত আইফোন বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।নিক্কেই এশিয়ান রিভিউকে অ্যাপল কর্তৃপক্ষ বলছে, আইফোন উৎপাদন খরচ কমাতে তারা সাপ্লাই চেইন পুনর্গঠন করছে। তাদের ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতা চীনের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।এ বছর তিন ধরনের আইফোন আসবে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো দুটি মডেলের পেছনে তিন ক্যামেরা ফিচার যুক্ত হবে। |
দীর্ঘদিন ধরেই অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের বিকল্প তৈরি নিয়ে কথা হচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েডের সেই বিকল্পের নাম ‘ফিউশা’ অপারেটিং সিস্টেম। এটি অবশ্য অ্যান্ড্রয়েডের নির্মাতা গুগলই তৈরি করছে। তবে এত দিন পরে এ–সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে গুগল।প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যান্ড্রয়েড পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিউশার জন্য অফিশিয়াল ডেভেলপার ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করেছে গুগল। ডেভেলপারদের জন্য তৈরি ওই ওয়েবসাইটে অবশ্য খুব বেশি বিস্তারিত জানানো হয়নি। সেখানে ফিউশাসংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য রাখা হয়েছে, যা ডেভেলপারদের কাজে লাগবে। এ ছাড়া মেইল লিস্ট, আচরণবিধিসহ নানা নির্দেশনা সেখানে রয়েছে।ফিউশা কেমন হবে সে সম্পর্কে ডেভেলপারদের আগ্রহী করতেই মূলত এ সাইট তৈরি করেছে গুগল। তবে কোন ডিভাইসে চলবে বা ভোক্তাদের জন্য এ–সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা এখনো সেখানে নেই। এ অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডের পরিবর্তে ব্যবহার করা যাবে কি না, সে–সংক্রান্ত তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।সম্প্রতি অ্যান্ড্রয়েডের আধিপত্য নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে গুগল। ভারতে প্রতিযোগিতা কমিশন অ্যান্ড্রয়েডের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষকে সামনে এগোতে না দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত করেছে। ইউরোপেও গুগলের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। |
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলার পর প্রায় এক সপ্তাহ অবসর পেয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। এই সময়ে তাঁরা ঘুরে বেড়িয়েছেন নানা জায়গায়। পরিবার নিয়েও ঘুরেছেন কেউ কেউ। পরের ম্যাচের আগে ক্রিকেটারদের এই অবসর সময়ের কিছু ছবি ও গল্প নিয়ে এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন। দুই ম্যাচের মধ্যে আট দিনের বিরতি। ছুটির মূল উদ্দেশ্যই ছিল বিরতিতে ক্লান্তি দূর করে চনমনে হয়ে ওঠা। আর টুকটাক চোটাঘাত থেকে সেরে ওঠা। ভারতের বিপক্ষে চনমনে–সতেজ বাংলাদেশকে দেখা গেল কি না, সেটি সোমবার লেখাটা লেখার সময় বলা কঠিন ছিল।ম্যাচ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ছুটির উপকারিতা নিয়ে বলতে পারেননি স্বয়ং অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও, ‘সত্যি বলতে জানি না। টুর্নামেন্টের সূচিটা এমন ছিল, আট দিনের বিরতি। আর এই মাঠও (এজবাস্টন) ব্যস্ত ছিল, আমাদের আসার পর দুটো ম্যাচ হয়েছে। এখানে অনুশীলন করাও কঠিন ছিল। তবে ছুটিটা কাজে দিতে পারে। তবে ছুটি না, যদি পয়েন্ট আরও বেশি পেতাম, সেটি আমাদের বেশি নির্ভার থাকতে সহায়তা করত। ৭ পয়েন্ট (ভারত ম্যাচের আগে) নিয়ে আপনি নির্ভার থাকতে পারবেন না, সে যতই ছুটি থাক।’ঠিক, ছুটির মধ্যে যদি কঠিন পরীক্ষার চিন্তা থাকে, সে ছুটি কি আর উপভোগ্য হয়! তবু বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা চেষ্টা করেছেন যতটা পারা যায় বিরতি ভালোভাবে কাটাতে। বার্মিংহামে আসার পর মাশরাফিকে একদিন জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এই যে এত দিন ইংল্যান্ডে আছেন, এতগুলো শহর ঘুরলেন, কোন শহরটা বেশি ভালো লাগল?’ বিশ্বকাপ-যাযাবর হয়ে যাঁরা ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের এ শহর থেকে ও শহর চষে বেড়াচ্ছেন, তাঁদের সবাইকেই কখনো না কখনো প্রশ্নটা শুনতে হচ্ছে। যাঁর ব্যস্ততা ভালো লাগে, নীরবতা পছন্দ নয়, তিনি হয়তো বলছেন লন্ডনের কথা। যাঁর কোলাহল পছন্দ নয়, ভিড়ভাট্টা ভালো লাগে না, তিনি বলবেন টন্টন বা কার্ডিফ। মাশরাফির পছন্দ দ্বিতীয়টি, অধিনায়কের পছন্দ গ্রাম। ছবির মতো সাজানো–গোছানো ইংলিশ গ্রাম দেখে তাঁর মনই যেন ভরে না। টন্টনে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো গ্রামে গিয়েছেন।বার্মিংহামে এসে কয়েক দিনের ছুটি পেয়ে স্ত্রী-পরিবার নিয়ে স্নোডন নামের এক ছোট্ট শহরে ঘুরতে গেছেন মাশরাফি, দেখে এসেছেন ইংল্যান্ডের গ্রাম, পাহাড়ি ঝরনা। ইংল্যান্ডের গ্রাম কেমন হয়, সেটি দেখার খুব শখ ছিল মাশরাফি ও তাঁর স্ত্রীর। বাড়ির সামনে নরম রোদে বসে কোনো বুড়ো-বুড়ি দম্পতি চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে গল্প করছেন—এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য নাকি তাঁদের চোখে আর কিছুই হয় না। মাশরাফির সঙ্গে একই গ্রাম দেখতে গিয়েছিলেন মিরাজ–প্রীতি দম্পতিও।সাকিব আল হাসান সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেই চলে গিয়েছিলেন লন্ডন। সেখান থেকে যাওয়ার কথা ছিল প্যারিসে। কিন্তু ভিসা–সংক্রান্ত জটিলতায় পরিকল্পনা বাতিল করে লন্ডনেই কাটিয়ে আসেন ছুটির পাঁচটা দিন। লন্ডনের আভিজাত্য–জাঁকজমকপূর্ণ জীবন যে ভীষণ উপভোগ করেছে সাকিব–পরিবার, সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি–সেলফি দেখেই বোঝা গেল।সাকিব–পরিবারের মতো লন্ডনে ছুটি কাটিয়েছেন তামিম ইকবাল ও মোস্তাফিজুর রহমান। সাইফউদ্দিনও লন্ডনে ছুটি কাটিয়েছেন। তবে তাঁর বেশি সময় কেটেছে কেনাকাটা করেই! ফেসবুকে কেনাকাটার ছবিও পোস্ট করেছেন তরুণ অলরাউন্ডার।সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুনের অবশ্য বার্মিংহামে টিম হোটেলেই সময় কেটেছে। লিটন দাসও ঘুরেছেন তাঁর মতো করে। টিম হোটেলের আশপাশেই ঘুরেছেন, বাজার–সদাই করেছেন মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ। পায়ের মাংসপেশিতে চোট পাওয়া মাহমুদউল্লাহর তাড়া ছিল বিরতি কাজে লাগিয়ে চোট থেকে সেরে ওঠার। তিনি সেটি পেরেছেন কি না, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেই জেনে গেছেন। এ–ও জেনে গেছেন, বাংলাদেশ সেমিফাইনালের আশা টিকিয়ে রাখতে পেরেছে কি না। |
এক. বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বছরের জুনিয়র মেয়েটির প্রেমে পড়ল আকাশ (ছদ্মনাম)। একদিন সাহস করে ভালোবাসার কথা বলে ফেলল মেয়েটিকে। কিন্তু মেয়েটি জানাল তার পক্ষে এই ভালোবাসা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এরপরও আকাশ হাল ছাড়ে না, অনেকভাবে সেই মেয়ের মন পাওয়ার চেষ্টা করে। কিছুতেই কিছু হলো না, বছর না ঘুরতেই মেয়েটি অন্য একটি ছেলের সঙ্গে প্রেম করা শুরু করল। প্রত্যাখ্যাত হয়ে আকাশ পড়ালেখা প্রায় ছেড়ে দিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা কমিয়ে দিল। নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করল। তার এই অবস্থা দেখে বন্ধুরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগল। এতে আকাশের রাগ বাড়তে লাগল, একটুতেই তার মেজাজ খারাপ হওয়া শুরু করল।দুই. উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী স্বপ্না (ছদ্মনাম)। সে পছন্দ করে তার এক বান্ধবীর বড় ভাইকে। একদিন সে দীর্ঘ এক প্রেমের বার্তা পাঠাল তাকে। সেই ভাইটি বেশ রূঢ়তার সঙ্গেই সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। এই প্রত্যাখ্যানে স্বপ্নার রাগ বাড়তে লাগল নিজের ওপর। একদিন একগাদা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলল। হাসপাতালে চার দিন থেকে তারপর সে সুস্থ হলেও বিষণ্নতায় ভুগতে লাগল।প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আকাশ আর স্বপ্নার মতো আচরণ করে থাকে অনেকেই। কেউ ‘ভাবুক’ হয়ে ওঠে, কেউবা শিশুদের মতো আচরণ করতে থাকে। কেউ নিজের ক্ষতি করে, কেউ ঝুঁকে পড়ে মাদকের মতো ক্ষতিকর বস্তুর দিকে। আবার অনেকে রাগের মাথায় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে এমন কিছু করে ফেলে যা সবার জন্যই ক্ষতিকর। কেউবা ‘প্রতিহিংসা’ প্রদর্শন করে! এর কোনোটিই কিন্তু সঠিক পথ নয়।ফ্রয়েডের তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষের আচরণ আর মানসিক প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় ‘ইড’, ‘ইগো’ আর ‘সুপার ইগো’র মাধ্যমে। আমাদের সব কামনাবাসনার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে ইড। এটি কেবলই আমাদের তৃপ্ত করতে চায় যেভাবেই হোক না কেন। আমাদের নৈতিকতার মধ্যে বেঁধে রাখতে চায় সুপার ইগো। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে ইগো। এই ভারসাম্য রক্ষা করাকে বলা যেতে পারে ইগো ডিফেন্স মেকানিজম।মানুষ যখন ইডের মাধ্যমে পরিচালিত হয় তখন সে কেবল চায়, যেনতেন প্রকারে নিজের চাওয়াটাকে পেতে। না পেলে তার মধ্যে পাশবিক প্রবৃত্তি মাথাচাড়া দেয়। প্রতিহিংসা আর নিষ্ঠুরতার পেছনে থাকে ইডের প্রভাব। ফলে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে যদি কেউ আগ্রাসী হয়ে ওঠে, নিজের প্রতি বা অপরের প্রতি—তখন তার সুপার ইগো পরাজিত হয়, এলোমেলো হয় ইগো ডিফেন্স। এতে সে মানবিক গুণাবলি হারাতে থাকে। কে কীভাবে ইগোকে সুরক্ষা (ডিফেন্স) করবে, কীভাবে ইডের প্রভাববলয় থেকে নিজেকে রক্ষা করবে তা নির্ভর করে তার শৈশবের বিকাশ, পারিবারিক পরিবেশ, সামাজিক শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং তার সমাজ ও সংস্কৃতির ভৌত কাঠামোর ওপর। পাশাপাশি আশপাশের মানুষের আচরণও তাকে অনেকটা প্রভাবিত করে।প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কেউ একজন সফল প্রেমিককে অনুকরণ করতে থাকে (আইডেন্টিফিকেশন), কেউ বা নিজের চেয়ে দুর্বলতর কোনো ব্যক্তির ওপর নিজের রাগ–ক্ষোভ ঝাড়তে থাকে (ডিসপ্লেসমেন্ট) আবার কেউ উদাসী ভাবুক হয়ে যায় (সাবলিমিশন)। কেউ বা প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি ভুলে থাকতে চেয়ে সেটাকে অস্বীকার করা শুরু করে (ডিনায়াল)। কেউ নিজের বৈশিষ্ট্যগুলো আরেকজনের মধ্যে খুঁজে নেয় (প্রজেকশন)। কেউবা উল্টোটাই বলা শুরু করে যে কখনোই কাউকে প্রেম নিবেদন করেনি (রিয়্যাকশন ফর্মেশন)। অনেকে বিষয়টিকে যুক্তিবোধ দিয়ে মেনে নেয়, মনের কষ্ট কাটিয়ে উঠতে আবার নতুন কারও সঙ্গে প্রেম করতে সচেষ্ট হয় (র্যাশনালাইজেশন)। এগুলো সবই হচ্ছে নিজের ইগোকে সুরক্ষা করার প্রক্রিয়া বা ইগো ডিফেন্স মেকানিজম। যা মানুষের ‘ইড’ আর ‘সুপার ইগো’র মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। এর কোনো কোনোটি ইতিবাচক আবার কোনোটি নেতিবাচক।প্রেমে ব্যর্থ হলে নেতিবাচকভাবে নিজের ইগোকে সুরক্ষা না করে (যেমন রাগ করা, নিজের ক্ষতি করা, আরেকজনের ওপর আগ্রাসী হয়ে যাওয়া, প্রতিহিংসায় জ্বলতে থাকা) ইতিবাচকভাবে বিষয়টিকে মোকাবিলা (যেমন: যুক্তিবোধ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা, নিজের দৈনন্দিন কাজগুলো করতে পারা) করতে হবে। একই সঙ্গে আশপাশের মানুষজনের আচরণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবকিছুকে বিবেচনায় এনে আচরণকে পরিশীলিত করতে হবে।প্রেম আবেগের একটি বহিঃপ্রকাশ। মার্কিন মনোবিজ্ঞানী এবং কর্নেল ইউনিভার্সিটির হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট জে স্টার্নবার্গ ভালোবাসাকে তিনটি উপাদানের মধ্যে ভাগ করেছেন। সেগুলো হলো, কারও প্রতি বিশেষ আবেগীয় আকর্ষণ, অন্তরঙ্গতা ও একটি দায়বদ্ধতা। আবেগীয় আকর্ষণ থেকে প্রেম নিবেদন করা যেতেই পারে কিন্তু সেটা সফল প্রেম হবে কি না, তা নির্ভর করে পারস্পরিক অন্তরঙ্গতা আর দায়বদ্ধতার ওপর।মার্কিন টিভিব্যক্তিত্ব, লেখক ও মনোবিজ্ঞানী ফিলিপ ম্যাকগ্রো, যিনি ড. ফিল হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত—তিনি বলেছেন, মানুষের অন্যতম প্রধান একটি ভয় হচ্ছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়। মানুষ সব সময় অপরের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে চায়, আর এই চাওয়াটা প্রকট হতে থাকে যখন সে সত্যি সত্যি প্রত্যাখ্যাত হয়। আর প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হলে তা মানুষের মন ও শরীর উভয়ের ওপরই চাপ ফেলে। তীব্র মানসিক চাপে পড়ে যায় আর নেতিবাচক আবেগগুলো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হলে সেটাকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য যা যা করা করা উচিত বলে গবেষকেরা মনে করেন তা হচ্ছে:মনে করুন এটা ভবিষ্যতের জন্য ভালো: সম্পর্কটি অনেক দূর গড়ানোর আগেই সেটা থেকে বেরিয়ে আসার একটি সুযোগ বলে মনে করুন। শুরুতেই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অর্থ আপনার আহ্বানে আরেকজন সাড়া দেয়নি। কিন্তু সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেলে সেটা ভেঙে যাওয়ার যাতনার চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়াটা তুলনামূলকভাবে কম কষ্টের।এই অবস্থা চিরস্থায়ী নয়: প্রত্যাখ্যাত হওয়ার যে কষ্ট তা মোটেই চিরস্থায়ী নয়। ঝড়ের পর সব যেমন শান্ত হয়ে আসে তেমনি একদিন আপনার মনের ঝড়ও শান্ত হয়ে উঠবে। আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আপনার প্রয়োজন ধৈর্য ধরে নিজেকে স্থির রাখা।আবেগের লাগাম টানুন: নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখুন। আরেকজনের আবেগকে বুঝতে শিখুন। আপনার আবেগ-বিশেষত নেতিবাচক আবেগগুলো যেন আপনার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সে বিষয়ে অভ্যাস গড়ে তুলুন।গুটিয়ে থাকবেন না: প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর লুকিয়ে থাকবেন না, নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন না। মনে রাখবেন প্রত্যাখ্যাত হওয়া কোনো অপরাধ নয়। স্বাভাবিক আচরণ করুন। এ সময় বেশি বেশি মুঠোফোন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকবেন না, এতে আরও একাকী হয়ে যাবেন। তার চেয়ে বাইরে খেলাধুলা করুন, নিয়মিত হাঁটুন, ব্যায়াম করুন।বাইরের জগতে মনোযোগ বাড়ান: কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ততা নয়। আশপাশে চোখ মেলে তাকান। জগৎ–সংসারে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গেই চলুন। প্রেমে ব্যর্থ হয়েছেন বলে আপনি একজন মানুষ হিসেবে মোটেই ব্যর্থ হয়ে যাননি।এ সময় নতুন কিছু শেখা শুরু করুন: মনে করুন প্রত্যাখ্যাত পর্যায় চলছে আপনার জীবনে। এটাকে গঠনমূলকভাবে কাজে লাগান। এ সময়টিতে নতুন কোনো ভাষা শিখুন, গান শিখুন। যে দক্ষতা কখনোই আপনার ছিল না সে রকম কিছুতে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন।বেড়াতে চলে যান: ‘সোহায়লি ফর দ্য ব্রোকেন হার্টেড’ বইতে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে লেখক পিটার মুর, কেপটাউন থেকে কায়রো ভ্রমণ করে দারুণ একটি ভ্রমণকাহিনিই লিখে ফেললেন। বেড়ানো আপনার আবেগের ঝড়কে থামাতে সাহায্য করবে।নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে মিশুন: পুরোনো বন্ধুরা হয়তো আপনার প্রতি সহানুভূতি দেখাবে, কেউ কেউ উপহাসও করতে পারে। বিষয়টিকে সহজভাবে নেওয়ার চেষ্টা করুন, আর সে সঙ্গে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে মিশুন। নতুন বন্ধু তৈরি করুন বলা যায় না, পেয়ে যেতে পারেন আপনার মনের মতো জীবনসঙ্গীকে।প্রত্যাখ্যানকে একটি অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখুন: এই প্রত্যাখ্যান আপনার চিন্তাধারাকে পাল্টে দিতে পারে। সব সময় প্রত্যাখ্যানকে নেতিবাচক হিসেবে দেখবেন না। মনে করতে পারেন, একটি প্রত্যাখ্যান আপনাকে আরও বড় কিছুর জন্য প্রস্তুত করছে। সুসান নামে এক তরুণীর প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফ্রেডরিখ হেগেল দারুণ এক দার্শনিক হয়েছিলেন।নিজেকে বিচার করবেন না: নিজেকে দায়ী করবেন না বা অপরাধী মনে করবেন না। আপনার ভেতরকার অফুরান শক্তির অস্তিত্ব অনুভব করতে শিখুন। একটি প্রত্যাখ্যান আপনাকে ছোট করতে পারবে না।দায়িত্ব আছে স্বজন-বন্ধুদের: কেউ প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হলে তাকে উপহাস করবেন না বা তার প্রতি করুণা দেখাবেন না। এতে তার মনোবল কমে যায়। নিজেকে ছোট মনে করে। বন্ধুরা তাকে স্বাভাবিক আচরণ করতে উৎসাহিত করুন।প্রতিহিংসা নয়: মনে রাখবেন, আপনার যেমন প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার অধিকার আছে, তেমনি আরেকজনের সেটি প্রত্যাখ্যান করার অধিকার আছে। অপরের অধিকারবোধ বিষয়ে সচেতন হোন। অপরের প্রতি সম্মান রক্ষা করুন। প্রতিশোধ নেওয়ার মতো ঘৃণ্য আচরণ থেকে বিরত থাকবেন। নেশা নয় কখনোই: দেবদাস উপন্যাসে যাই থাকুক না কেন, প্রেমে ব্যর্থতার প্রতিষেধক হিসেবে কখনোই কোনো নেশাকে বেছে নেবেন না। নিজেকে আঘাত করবেন না, হাত-পা কাটবেন না, ঘুমের ওষুধ খাবেন না, চেষ্টা করা তো দূরের কথা, মরে যাওয়ার কথা ভুলেও ভাববেন না। নেতিবাচক আচরণের বিপরীতে বেশি বেশি ইতিবাচক আচরণ করে জানান দিন আপনি একজন স্মার্ট পুরুষ বা স্মার্ট নারী। মনে রাখবেন, স্মার্ট মানুষ প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হলে কখনোই কোনো নেতিবাচক আচরণ করে না।প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ: যদি কোনোভাবেই নিজের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন। তীব্র বিষাদে ডুবে থাকেন, নেতিবাচক চিন্তা বেশি বেশি মনে আসতে থাকে তবে অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন। আহমেদ হেলালসহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা। |
দেশে তৈরি হয়েছে রেসিং কারটি। বিভিন্ন জায়গা থেকে যন্ত্রাংশ কিনে এবং বিদেশ থেকে ইঞ্জিন আমদানি করে তা বানান একদল শিক্ষার্থী। এই গাড়ি নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন তাঁরা।বিশ্বব্যাপী যন্ত্র প্রকৌশলীদের সংস্থা (আইমেকই) আয়োজিত ‘ফর্মুলা স্টুডেন্ট’ রেসিং কার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গাড়িটি বানিয়েছেন আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। দলটির নাম ‘টিম প্রাইমাস’। আইমেকই ২১তম আসরের প্রতিযোগিতায় নিজেদের উদ্ভাবন নিয়ে অংশ নেবেন তাঁরা।১৭ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের নর্থ হ্যাম্পটনশায়ারের সিলভার স্টোন সার্কিটে এ প্রতিযোগিতা হবে। শিক্ষার্থীরা জানান, এর আগে অনুষ্ঠিত ২০টি আসরে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। প্রথমবারের মতো তাঁরাই এতে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিযোগিতার জন্য তাঁরা ফর্মুলা রেসের আদলে গড়া একটি গাড়ি বানিয়েছেন। গাড়িটির নাম তাঁরা দিয়েছেন-‘এমএইচকে ১৯’।বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী ম্যাক রোজারিও প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আইমেকই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য ভাবছিলেন তাঁরা। এ বছরের মার্চ মাস থেকে গাড়ি বানানোর কাজ শুরু করেন। প্রথমে রাজধানীর সিদ্দিকবাজার ঘুরে ঘুরে গাড়ি তৈরির যন্ত্রাংশ কিনে ফেলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস থেকে শেখা জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তাঁরা গাড়িটি বানিয়ে ফেলেন জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই। এরপর তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য।রোজারিও বলেন, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার শর্ত হচ্ছে গাড়িতে ৬০০ থেকে ৭০০ সিলিন্ডার ক্যাপাসিটির (সিসি) ইঞ্জিন লাগবে। এর জন্য শিক্ষার্থীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে ভারত থেকে ইঞ্জিন দেশে আনেন গত ২৭ জুন। এরপর রেসিং কার তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। এবার বাকি পরীক্ষামূলক চালানো (টেস্ট ড্রাইভ)। তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় গাড়ির নকশা এবং গতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন বিচারকেরা। আমরা এমন একটি রেসিং কার তৈরি করছি, যা কম তেলে বেশি দূরত্ব যেতে পারবে।’বিশ্বের ৯৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেসিং কার প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। অর্থসংকটে যাওয়া অনিশ্চিত বাংলাদেশের দলটির।শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই দুজন এই প্রতিযোগিতায় গাড়ি চালাবেন। গাড়ির গতি এবং চালকদের দক্ষতার ওপর বাংলাদেশের দলের সফলতা নির্ভর করবে। ৩১ জনের এই দলটিতে পরামর্শক হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির যন্ত্রকৌশল বিভাগের দুজন শিক্ষক। বাকি সবাই শিক্ষার্থী। তাঁরা জানিয়েছেন, গাড়িটি তৈরি করতে তাঁরা প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তাঁদের আরও প্রায় ৪০ লাখ টাকা দরকার।দলের সদস্য মেহেদী হাসান বলেন, ‘টাকার অভাবে আমাদের যাওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। রেসিং কারটি জাহাজীকরণ (শিপমেন্ট) করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। অন্তত ২৫ লাখ টাকা পেলেও গাড়িটিকে আমরা প্রতিযোগিতার আসরে প্রদর্শনীর জন্য পাঠাতে পারব।’ টাকার জন্য বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও সাড়া পাচ্ছেন না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।আইমেকইয়ের ওয়েবসাইট ঘুরে জানা গেল, ১৯৯৮ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে অটোমোবাইল খাতকে প্রযুক্তি দিয়ে সমৃদ্ধ করার জন্য আইমেকই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। ক্যারিয়ার গঠন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে তরুণ সৃষ্টিশীল প্রকৌশলীদের উদ্বুদ্ধ করা এই প্রতিযোগিতার একটি উদ্দেশ্য। প্রতিযোগিতার আরেকটি লক্ষ্য—দ্রুতগতির জ্বালানিসাশ্রয়ী গাড়ি তৈরি করা। গত বছর এ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটি। এবারের আসরে ২০টি দেশের ৯৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন।বাংলাদেশের দলের পরামর্শক ও আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. খোরশেদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াটা দেশের জন্য গৌরবের। প্রতিযোগিতার অর্জন দেশের সম্ভাবনাময় অটোমোবাইল শিল্পের ওপর ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি জানান, এ আয়োজনে বিভিন্ন মোটরগাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। মেধাবী যন্ত্র প্রকৌশলীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয় তারা। |
১৭৮৫ সালে ইংল্যান্ডে জেমস ওয়াট স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। ১৮৩০ সালে লিভারপুল থেকে ম্যানচেস্টার পর্যন্ত যাত্রীবাহী রেলগাড়ি চালু হয়। তার পরের ৫০ বছরের মধ্যে এই বাষ্পীয় শকট ভারতবর্ষে আসে। ঔপনিবেশিক শাসকেরা তা চালু করেন তাঁদের অর্থনৈতিক স্বার্থে, কিন্তু উপকৃত হয় উপমহাদেশের মানুষও।সাপ্তাহিক সম্বাদ প্রভাকর-এ পড়েছি, এই শকট চালু হওয়ার সময় প্রবল বাধা এসেছিল প্রাচীনপন্থীদের কাছ থেকে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই গাড়ি চলে বিকট শব্দে, তাতে কানের বারোটা বাজবে। এই গাড়ির ঝাঁকুনিতে পুরুষ হারাবে পুরুষত্ব এবং মাথার ঘিলু যাবে নড়ে। শেষ পর্যন্ত প্রাচীনপন্থীদের পরাজয় হয়েছে।এখন বাংলার মাটিতে প্রতিদিন রেলগাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মানুষ মরছে, প্রথম দিকে বোম্বে (মুম্বাই) থেকে যাত্রা শুরু করে গন্তব্যে পৌঁছার আগেই ভয়ে হার্টফেল করে স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটেছে কারও কারও। এখন রেলগাড়িতে না চড়েই রেললাইনে মরছে, তখন গাড়ির কম্পার্টমেন্টে বসে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করত।সারা পৃথিবীতে এখন রেলগাড়ি অন্যতম প্রধান গণযোগাযোগমাধ্যম। যেসব দেশে রেল যোগাযোগব্যবস্থা অতি উন্নত, সেখানেও রেলে দুর্ঘটনা ঘটে এবং বহু মানুষ হতাহত হয়। তবে ট্রেন চলাচলের ১৮৯ বছরের ইতিহাসে প্রথম ১০০ বছরে উপমহাদেশে রেললাইনে ট্রেনে কাটা পড়ে যত মানুষ মারা গেছে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে তার চেয়ে কম মারা যায়নি। তার দায় পুরোটা রেল বিভাগের নয়। গত চার বছরে মনের সুখে রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময় ট্রেনে কাটা পড়েছে আমার হিসাবে অন্তত ২৬ জন। তাদের অপমৃত্যুর জন্য ট্রেনের চালক এবং গার্ডকে কেউ দায়ী করবে না।গত হপ্তায় কুলাউড়ায় রেলসেতু বিধ্বস্ত হয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় অনেক যাত্রী হতাহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতু ও লাইন বর্ষার আগেই সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন। রেলওয়ের একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী সব সময় থাকেন, এখনো আছেন এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর নয়, তা সত্ত্বেও রেলসেতু মেরামতের নির্দেশ তাঁকেই দিতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় রয়েছে। তার বাইরে তাঁকে সারা দেশের হাজারো সমস্যা নিয়ে ভাবতে হয়, অন্যান্য মন্ত্রণালয়েরও তদারক করতে হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী, সচিব প্রভৃতি থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে হবে কেন? তাঁদের কাজটা কী? কাজ তাঁদের আছে। সেটা দেখা গেছে কুলাউড়া দুর্ঘটনার পর—তার আগে নয়। বাংলাদেশে সবকিছুতেই ‘চমক’। উচ্চাসনে যাঁরা আসীন, তাঁদের কথাবার্তা শুনে কেউ অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন আর কেউ হতাশায় নির্বাক হয়ে যান। কুলাউড়ার দুর্ঘটনার পর টেলিভিশনে যখন শোনা গেল রেলমন্ত্রী ব্যক্তি বলছেন, বেশি যাত্রীর কারণে দুর্ঘটনা, তখন মানুষের আর বলার কিছু রইল না। দোষটা গিয়ে পড়ল সরাসরি যাত্রীদের ঘাড়ে। তবে সেই সঙ্গে মানুষ এ কথাও ভাবল যে ট্রেনে এত যাত্রী, তা তো বিপুল লাভজনক না হয়েই পারে না।রেল যোগাযোগসচিব একজন জনদরদি রাজনৈতিক নেতার মতো বলেছেন, ‘রেলপথ সংস্কার এবং যথাযথ মেরামত রাখা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরা যদি দায়িত্বে কোনো গাফিলতি করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি কারও দায়িত্বে অবহেলার জন্য লাইনচ্যুত কিংবা দুর্ঘটনা ঘটে, তাঁদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লাইনের ত্রুটির জন্য দুর্ঘটনা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা আশা করছি, এমন পরিস্থিতি থাকবে না।’ [যুগান্তর, ২৯ জুন]এই পরিস্থিতি হলো কেন, সে কথা তিনি বলেননি। তাঁর কড়া বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তাঁর দায়িত্ব পালনকালে রেলপথ মেরামতে কারও ‘গাফিলতি’ তিনি দেখতে পাননি। তাই যদি এখন কারও গাফিলতি দেখতে পান, তাঁর রেহাই নেই। আগে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি, এবার তিনি কিছুতেই মেনে নেবেন না দায়িত্ব পালনে অবহেলা। ‘এমন পরিস্থিতি থাকবে না’ বলে তিনি অমোঘ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। অতিশয় হিংসুটে ছাড়া এমন ভবিষ্যদ্বাণীতে কেউ সন্তুষ্ট না হয়েই পারে না।রেলসচিব ওই সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, ‘রেলপথে নাটবল্টু, ক্লিপ-হুক কিংবা ফিশপ্লেট কিছুতেই খোলা থাকতে পারে না। এটা নিশ্চয় সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়।’ যেসব জিনিস ঢিলা বা খোলা থাকতে পারে না, বাস্তবতা হলো তা রীতিমতো নড়বড়ে ও খোলাই আছে। তাঁর উদ্বেগে সন্দেহ পোষণ করার কোনো কারণই নেই, তবে কথায় যদি চিড়া ভিজত, তাহলে বাংলাদেশ রেলওয়ে এত দিনে জাপানকে ছাড়িয়ে যেত।বাংলাদেশ রেলওয়ের দুর্দশার কিছু ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান রেলওয়ে বোর্ডের প্রধান কার্যালয় ছিল করাচি। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো রেলওয়েতেও পশ্চিম পাকিস্তানে উন্নতি হয়েছে বেশি, পূর্ব পাকিস্তানে নয়। রেলওয়ের ওপর দ্বিতীয় আঘাত আসে স্বাধীনতার পর। বাঙালির কেরানিগিরিতে আগ্রহ বেশি, চেয়ার-টেবিলে বসে কলম পেশায় আনন্দ। শারীরিক শ্রমের প্রয়োজন হয় না। পাকিস্তান আমলে রেলওয়ের ওয়ার্কশপ ও কারিগরি বিভাগে ভারত থেকে আসা অবাঙালি মোহাজিররা কাজ নেন। বাঙালি মেকানিক ছিল খুব কম। স্বাধীনতার পর অবাঙালিদের অনুপস্থিতিতে রেলওয়ে সংকটে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর সরকার জরুরি ভিত্তিতে ভারত থেকে চালক, মেকানিক প্রভৃতি টেকনিক্যাল স্টাফ এনে রেলওয়েকে সচল করার ব্যবস্থা করে। ১৯৭২ সালে যোগাযোগমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সঙ্গে আমি সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, ঈশ্বরদী, চট্টগ্রাম প্রভৃতি রেলওয়ে ওয়ার্কশপে গিয়েছি। ভারতীয়দের সহযোগিতায় রেলওয়েকে স্বাভাবিক করতে এক-দেড় বছর সময় লাগে।আশি ও নব্বইয়ের দশকে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে রেলওয়ের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। অনেকগুলো স্থানীয় রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সড়কের ওপর জোর দিতে বলে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থা। বর্তমানে ৩ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের বেশি রেলপথের অবস্থা শোচনীয়। মোট ৩ হাজার ৬টি রেলসেতুর অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ ও নড়বড়ে। রেলসেতুগুলোর প্রায় সবই ব্রিটিশ আমলের। এগুলোর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ নিম্নমানের।আমরা যখন নাগরিকদের পক্ষ থেকে গণযোগাযোগ নিয়ে কথা বলি, তখন শুধু দুর্ঘটনা রোধের জন্য বলি না। আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বার্থেই রেলওয়ে, সড়ক ও নৌপথের উন্নয়ন প্রয়োজন। রেললাইনের নাটবল্টু আপনা-আপনি খুলে যায়নি। দুর্নীতির ক্ল্যাসিক দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ের জমিগুলো পর্যন্ত বেহাত হয়ে যাচ্ছে। রেলমন্ত্রীদের কেউ স্ত্রীর কাছে নামমাত্র দামে রেলওয়ের জমি বেচে দিয়েছেন, কেউ ঘনিষ্ঠজনকে দিয়েছেন ইজারা।বর্তমান সরকার রেলওয়েকে অত্যাধুনিক করতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। অতিদ্রুতগতিসম্পন্ন বুলেট ও বৈদ্যুতিক ট্রেন যোগ হবে। কিন্তু পুরোনো রেলপথকে অবহেলিত রেখে, তাকে মেরামত ও সংস্কার না করে রেলওয়ের আধুনিকায়ন ফলপ্রসূ হবে না। বর্তমানে রেললাইনের অধিকাংশ জায়গায় ফিশপ্লেট, ক্লিপ, হুক, নাটবল্টু খোলা। স্লিপারগুলোর অবস্থা খারাপ। লাইনে প্রয়োজনীয় পাথর নেই। সেতুগুলোর সংস্কার নেই বহুকাল। সেতুর স্লিপারের আয়ু শেষ। রেলপথ পরিদর্শনের যথেষ্ট ওয়েম্যান নেই। নাটবল্টু, হুক, ফিশপ্লেট খসে পড়লেও দেখার কেউ নেই। কর্মকর্তাদের চোখ এখন মেগা প্রকল্পের দিকে।বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ কবির কথাই সত্য: থিঙ্কস ফল অ্যাপার্ট, সেন্টার ক্যান নট হোল্ড। সবকিছু ভেঙে পড়লে রেললাইন ও রেলসেতু ভালো থাকতে পারে না। রেললাইনের নাটবল্টু, ক্লিপ, হুক ঢিলা হয়েছে পরে; তার আগে প্রশাসনের নাটবল্টু ঢিলা হয়েছে। প্রশাসন ও বিভিন্ন দপ্তরের নাটবল্টু টাইট দিলেই রেলপথ ও রেলসেতুর নাটবল্টু আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যাবে।সৈয়দ আবুল মকসুদ: লেখক ও গবেষক |
সাঁতার হলো স্বস্তির ব্যায়াম। শক্তিশালী কাঁধ, কোমর কিংবা শারীরিক গঠনের জন্য সব সময় আলাদা ব্যায়াম করতে হয়, কিন্তু সাঁতারে পাওয়া যায় একসঙ্গে সবকিছু। চমৎকার শারীরিক গঠনের জন্য শুধু নয়, সুস্থ থাকার জন্যও সাঁতার খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলে থাকেন, যাঁরা নিয়মিত সাঁতার কাটেন, তাঁদের হৃৎস্বাস্থ্য ভালো থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে ফুসফুসের অক্সিজেন ধারণক্ষমতা।সাঁতার নিয়ে সাবেক জাতীয় সাঁতারু এবং প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের হেলথ ক্লাবের প্রশিক্ষক রায়হান উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘নিয়মিত সাঁতারে পেশিগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠে, বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। সপ্তাহে অন্তত চার দিন এক ঘণ্টা করে সাঁতরালে এক মাসেই শরীরের পরিবর্তন নিজেই বুঝতে পারবেন।’সাঁতার অনেক প্রকার। এর মধ্যে বাটারফ্লাই, ব্যাকস্ট্রোক, ব্রেস্টস্ট্রোক ও ফ্রিহ্যান্ড উল্লেখযোগ্য। প্রশিক্ষক রায়হান উদ্দীন আহমেদ আরও বলেন, ‘ভিন্ন ধরনের সাঁতার শিখে নিলে শরীরের গঠন যেমন সুন্দর হয়, মেদ ঝরার মাত্রাটাও দ্রুত হয়ে যায়। তবে যাঁরা শুধু ফিটনেস ধরে রাখার জন্য সাঁতার কাটেন, তাঁদের জন্য ফ্রিহ্যান্ডই যথেষ্ট।’সাঁতার শুরু করার আগে প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। হালকা দৌড় কিংবা দাঁড়িয়ে ফ্রিহ্যান্ড ব্যায়াম করে নিলে পানিতে পেশি টান পড়ার আশঙ্কা কমে যায়। পেশির জড়তা না সরিয়ে সাঁতারে নামলে কাঁধে কিংবা পায়ে টান পড়তে পারে। সাঁতার কাটার জন্য হালকা পোশাক পরে নিতে হবে। চোখে পানির ঝাপটা এড়াতে পরতে পারেন সুইমিং গগলস। চুলের সুরক্ষার জন্য সুইমিং ক্যাপ পরে নিন। সাঁতারের সময় যদি কানে পানি যাওয়ার শঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে কানে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করতে পারেন।সুইমিংপুলের পানি জীবাণুমুক্ত রাখতে ক্লোরিন ব্যবহার হয়। তাই সাঁতার শেষে স্বাভাবিক পানি দিয়ে একবার গোসল করে নিন। সাঁতারের সুফল নিয়মিত সাঁতার শরীরের মেটাবলিজম–প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। বাড়তি মেদ ঝরাতে সাঁতার অত্যন্ত কার্যকর ব্যায়াম। শরীরের পেশিগুলো গঠনে সুন্দর ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে সাঁতারে। ফুসফুসের কার্যক্ষতা বাড়ে, অ্যাজমা প্রতিরোধে সাঁতার সহজ সমাধান হতে পারে। কোমরব্যথা, অস্থিসন্ধির ব্যথা দূর হবে সাঁতারে। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও সাঁতার ভালো ব্যায়াম। সাঁতার শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সাঁতারে ঊর্ধ্বাঙ্গ ও নিম্নাঙ্গের সমন্বয় ঘটে বলে অল্প সময়ে পুরো শরীরেরই ব্যায়াম হয়ে যায়। |
ব্রাজিলের কাছে সেমিফাইনালে ২-০ গোলে হেরে কোপা-স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে আর্জেন্টিনার। আরেকবার চেষ্টা করেও জাতীয় দলের হয়ে কিছু জিততে পারলেন না লিওনেল মেসি। তবে ম্যাচ হারলেও, দলের খেলা দেখে গর্ব করার অনেক কিছু পেয়ে গিয়েছেন তিনি।আরও একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট, আরও একবার মেসির শূন্য হাতে ফিরে আসা। এবার হন্তারক ব্রাজিল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে ২-০ গোলে হেরে আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা জেতার স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে আজ সকালে। ব্রাজিলের হয়ে গোল করেছেন দুই স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনো ও গ্যাব্রিয়েল জেসুস। তবে আর্জেন্টিনা হারলেও, ম্যাচ থেকে ইতিবাচক অনেক কিছু খুঁজে পেয়েছেন মেসি।দল এবার হেরে গেলেও আবারও নতুন উদ্যমে চেষ্টা করতে রাজি আছেন মেসি। বর্তমান দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে যথা সম্ভব বেশি ম্যাচ খেলে দলকে সহযোগিতা করাই মূল লক্ষ্য তাঁর, ‘দল যদি আমার সাহায্য চায়, আমি যেকোনো মূল্যে সাহায্য করতে রাজি আছি। এই দলের সঙ্গে খেলে আমার অনেক ভালো লেগেছে। ম্যাচের ফল আমাদের পক্ষে যায়নি, কিন্তু আজ আমরা দেখিয়েছি, আমরা দরকার হলে অনেক ভালো খেলতে পারি।’পুরো ম্যাচে যথেষ্ট পরিকল্পনামাফিক খেলেছে ব্রাজিল। তাদের রক্ষণভাগ ছিল অটুট। তাও এই রক্ষণভাগে আর্জেন্টিনা যা একটু চিড় ধরাতে পেরেছে, তা-সেই মেসির কল্যাণেই। মেসিই একের পর এক সুযোগ করে দিয়েছিলেন আগুয়েরো, দি পল, লওতারো মার্টিনেজদের। তবে ব্রাজিলীয় রক্ষণভাগের দৃঢ়তার পাশাপাশি আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের সুযোগ হারানোর কারণেই গোল করতে পারেননি মেসিরা। ভালো খেলার ব্যাপারটাকেই তাই মুখ্য করে দেখছেন এই বার্সেলোনা তারকা, ‘আমার মনে হয় আমরা অনেক ভালো খেলেছি আজ। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, দেখিয়ে দিয়েছি ব্রাজিল আমাদের চেয়ে শ্রেয়তর কোনো দল নয়।’ম্যাচে রেফারির ভূমিকা নিয়েও সন্তুষ্ট নন মেসি, দুটি পেনাল্টি আর্জেন্টিনাকে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি, ‘ব্রাজিল বেশ আগেভাগে ওদের প্রথম গোল পেয়ে যায়। কিন্তু এরপর আগুয়েরোকে ন্যায্য পেনাল্টি দেওয়া হয়নি। আমার মনে হয়েছে আমরা দুটি পেনাল্টি পেতাম। ওটামেন্ডি আর কুন (আগুয়েরো) এর ক্ষেত্রে। কিন্তু আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ম্যাচ অফিশিয়ালরা বেশ জঘন্যভাবে ম্যাচ পরিচালনা করেছে। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির দরকার হলেও সেটার সাহায্য নেওয়া হয়নি। এগুলো অবিশ্বাস্য। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত গোল হয়নি। গোলপোস্টে দুবার বল লেগেছে আমাদের।’দ্বিতীয় সেমিফাইনালে লড়বে পেরু ও চিলি। জয়ী দলের বিপক্ষে আগামী সাত তারিখে ফাইনাল খেলবে ব্রাজিল। |
ভবিষ্যৎ হুয়াওয়ের স্মার্টফোনগুলোতে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে কি না, এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারের অনুমতি পেতে তাদের ঝুলিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ। তারা ওই বিভাগের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সহযোগী সম্পর্ক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট টিম ড্যাংকস বলেছেন, ‘সপ্তাহান্তে হুয়াওয়ে সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে তাদের বাণিজ্য বিভাগের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি।’গত সপ্তাহে জি–২০ সম্মেলনে হুয়াওয়ে বিষয়ে নিজের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসার ও কিছুটা শিথিল হওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, এর আগে গত শনিবার জি-২০ সম্মেলনের পাশাপাশি এক দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন ট্রাম্প। এ সময় চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করার ইঙ্গিতও দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মার্কিন কোম্পানিগুলো হুয়াওয়ের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারবে বলে জানান ট্রাম্প।ট্রাম্পের কাছ থেকে ঘোষণা এলেও এখনে দেশটির বাণিজ্য বিভাগ হুয়াওয়ের স্মার্টফোনে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়নি।চীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যসংক্রান্ত বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়। পরে তা ‘বাণিজ্যযুদ্ধে’ রূপ নেয়। এই রেষারেষির জের ধরে কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপরই বাণিজ্য নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরম রূপ নেয়। |
কর্মব্যস্ত জীবনে নিজের দিকে তাকানোর সময় কোথায়? এই ভাবতে ভাবতে হয়তো পেরিয়ে যাচ্ছে অনেকটা বেলা। একসময় দেখলেন একরাশ হতাশা আর কাজের ক্লান্তির ছাপ ঘিরে ধরেছে আপনাকে। তখন হয়তো আর পেছন ফিরে দেখার সময় নেই। তাই সময় থাকতে নিজের প্রতি যত্নবান হওয়া, ফিরে তাকানোটা দোষের কিছু নয়। কারণ, আপনি যখন ভালো থাকবেন, তখনই আপনার চারপাশটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারবেন। নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করুনপ্রত্যেক মানুষ যেমন আলাদা, তেমনি তার শখের কাজগুলোও আলাদা। এই যেমন কারও ভালো লাগে বাগান করতে, কারও আবার ভালো লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতে, কারও আবার পছন্দ সাঁতার কাটা। কিন্তু ঘরে-বাইরের কাজ করতে গিয়ে একটা সময় পছন্দের কাজগুলোকে বিসর্জন দিই আমরা। খুব বেশি নয়, প্রতিদিন আধা ঘণ্টা সময় বের করে যদি শখের কাজগুলোর একটু চর্চা করে যাওয়া যায়, তবে নিজেকে মানসিকভাবে অনেকটাই প্রফুল্ল রাখা যায়, এমনটাই বলছিলেন জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার। ইচ্ছাগুলোকে প্রাধান্য দিননিজেকে ভালো রাখতে চাইলে নিজের ইচ্ছাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়াটা খুব জরুরি। নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া মানে স্বার্থপরতা নয়। অনেক সময় দেখা যায়, অন্যের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের ইচ্ছাগুলোকে ভুলে যাই আমরা। এ ক্ষেত্রে নিজের কাছে কোনটার প্রাধান্য বেশি, তা বুঝে নেওয়াটা খুব জরুরি। প্রকৃতির কাছে যাওয়ানিজের দুশ্চিন্তাগুলোকে ঝেড়ে ফেলে নতুনভাবে উজ্জীবিত হওয়ার সবচেয়ে সুন্দর সমাধান হচ্ছে প্রকৃতির কাছে নিজেকে ছেড়ে দেওয়া। একা বা দল বেঁধে কয়েক দিন প্রকৃতির কাছে ঘুরে এসেই দেখুন না কেমন চনমনে হয়ে উঠেছে মন। প্রিয় মানুষদের সংযোগেপছন্দের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ সব সময় বজায় রাখার চেষ্টা করুন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চ্যাট করে নয়, তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখুন। ব্যস্ততার কারণে তা যদি সম্ভব না হয়, তবে কিছুটা সময় বের করে ফোনে কথা বলুন। খাবারে একঘেয়েমি কাটানখাবারের টেবিলের নতুন কোনো পদ রেঁধে শুধু অন্যকেই নয়, মাঝেমধ্যে নিজেও নিজেকে একদিন চমকে দিলেন। নিয়মিত খাবারের মধ্যে একটু অন্য রকম খাওয়ার রুচি বাড়াতে তো সাহায্য করবেই পাশাপাশি মনে আনবে আনন্দ, পরামর্শ পুষ্টিবিদের। স্নানেই প্রশান্তিখুব ক্লান্ত লাগছে? সকাল-বিকেল যে সময়ই হোক না কেন, বাইরে থেকে এসে গোসল করে নিন। গোসল দ্রুত ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। সময়ের কাজ সময়ে করাঅন্য সময় করব, এই ভাবনায় না থেকে সময়ের কাজ সময়মতো করে ফেলা উচিত। এতে একসঙ্গে বেশি কাজের চাপ সামলাতে হবে না। নিয়মিত যোগাসননিয়মিত যোগাসনচর্চায় শুধু মানসিক অবসাদই নয়, দূর হয় শারীরিক ক্লান্তিও। ইয়োগা প্রশিক্ষক শ্যামলী মণ্ডল বলছিলেন, খুব বেশি সময় নয়। দিনে আধা ঘণ্টা সময় ব্যয় করুন যোগব্যায়ামের জন্য। এই অনুশীলন খুব দ্রুতই ক্লান্তি দূর করে সতেজ করে তুলবে আপনাকে। এ ছাড়া প্রাণায়াম শরীরের ভেতরকার টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন খাওয়ার আধঘণ্টা আগে বা তিন ঘণ্টা পরে প্রাণায়ামের চর্চা করতে পারেন। |
মোস্তাফিজুর রহমান বোল্ড হতেই শেষ, সব শেষ। বার্মিংহামে ভারতীয় সমর্থকদের গর্জনে কান পাতা দায়! এজবাস্টনে তেরঙ্গার সমর্থকদের দাপট থাকবে, সেটি অনুমিতই ছিল। তবে বিপুল ভারতীয় সমর্থকদের প্রায় ‘ঠান্ডা’ই করে দিয়েছিলেন এক সাইফউদ্দিন।সাইফউদ্দিন যখন নির্বিকার ভঙ্গিতে চালাচ্ছেন, ভারতীয় সমর্থকদের আত্মায় কাঁপনই ধরে গিয়েছিল—ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতে যাবে নাকি! ১, ২, ৩ করে ৯টা চার মারলেন। বাউন্ডারি মারার ভঙ্গিও কী রাজসিক। দুর্দান্ত সব শটে বাউন্ডারি মেরে ফলো থ্রুতে এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন, যেন ভারতীয় বোলারদের ওপর ছড়ি ঘোরাতেই তিনি এসেছেন! সাব্বির রহমানের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ৬৬ রানের জুটি গড়লেন। দায়িত্ব নিয়ে সিনিয়র সতীর্থ সাব্বিরকে বারবার বোঝালেন মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে। কে শোনে কার কথা! সাব্বির হাঁটু উচ্চতার বল পুল করতে গিয়ে বোল্ড হলেন! পরে পেসার রুবেল হোসেনকে নিয়েও একটা চেষ্টা চালালেন। শেষ উইকেট হিসেবে মোস্তাফিজ বোল্ড হওয়ার পর সাইফউদ্দিনের সব চেষ্টাই বৃথা।ভারতীয় ক্রিকেটাররা জয়ের আনন্দে যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছেন, সাইফউদ্দিন হতবাক, বাক্রুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন উইকেটে। তাঁর পা যেন চলছে না। চোখ ফেটে নেমে আসতে চাইছে জলধারা। এতটা লড়াইয়ের পর যদি সইতে হয় পরাজয়ের যন্ত্রণা, ছিটকে পড়তে হয় টুর্নামেন্ট থেকে—তাহলে লড়াইটা চালিয়ে কী লাভ হলো? সাইফউদ্দিন অনুচ্চারে যেন সতীর্থদের বলতে চাইলেন, ‘তোমরা কেউ একজন শুধু অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকতে, বাকিটা আমি দেখতাম।’হতাশ, বিষণ্ন, পরাজয়ের বেদনায় নীল সাইফউদ্দিন তাই নির্বাক হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলেন হারের পর। ম্যাচের পর দলা পাকিয়ে ওঠা কষ্ট সামলে বললেন, ‘লক্ষ্য ছিল ম্যাচটা জেতাব। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো ব্যাপারটা! স্বাভাবিকভাবেই খারাপ লাগার কথা। টুর্নামেন্ট থেকে আমরা ছিটকে পড়েছি। আজ (কাল) পর্যন্তও আমরা আশায় ছিলাম, জিতলে আমাদের সেমিফাইনালের স্বপ্নটা টিকে থাকবে। আমার জায়গায় অন্য খেলোয়াড় থাকলে তারও একই অনুভূতি হতো।’এজবাস্টনের মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলার সময় সাইফউদ্দিনের গলা কেঁপে উঠল। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসে খারাপ করেননি। বোলিংয়ে নিয়মিত উইকেট পেয়েছেন। কাল তো ‘লাইফ টাইম’ এক ইনিংসই খেলার পথে ছিলেন। দল সেমিফাইনালে যেতে পারছে না, সাইফউদ্দিনের কাছে ব্যক্তিগত এ পারফরম্যান্সের কোনো মূল্যই নেই, ‘নিজের পারফরম্যান্সের চেয়ে দলের সাফল্য আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যদি উইকেট না পেতাম, রান না করতাম তবুও ভালো লাগত যদি দল সেমিফাইনালে যেত। দল সেমিফাইনালে গেলে ভীষণ স্মরণীয় হয়ে থাকত টুর্নামেন্টটা। সেটা না হওয়ায় ভীষণ হতাশা কাজ করেছে।’বড় কোনো সাফল্য না আসা পর্যন্ত এ হতাশা সাইফউদ্দিনকে তাড়িয়ে ফিরবে হয়তো আরও অনেক দিন। |
নতুন-পুরোনো সব সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রেই মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জুলাই সোমবার থেকে এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে।অর্থবিলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ আরোপে প্রস্তাবের পর সংসদের ভেতরে এবং বাইরে এ নিয়ে সমালোচনা হয়। বাজেট পাসের পর দেখা যায়, প্রস্তাবিত হারই বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু গ্রাহকের দিক থেকে বিভ্রান্তি কাটছিল না।সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন যাঁরা ৫ শতাংশ উৎসে কর দিয়ে আসছিলেন, তাঁদের জন্যও নতুন হারে কর আরোপ হবে, নাকি নতুন ও পুরোনো সবার জন্যই ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর চালু হবে? যাঁরা মুনাফার টাকা তোলেননি, তাঁদের ক্ষেত্রেই-বা কী নিয়ম হবে—এসব প্রশ্ন আসছিল। বাজেট পাসের পর আমরা স্পষ্ট করলাম যে সবার জন্যই ১০ শতাংশ উৎসে কর।’এদিকে ১ জুলাই থেকে সারা দেশে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের নির্দেশনা পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সঞ্চয় অধিদপ্তর এর আগে তিন দফা প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, অনলাইন পদ্ধতির বাইরে আর সঞ্চয়পত্রের লেনদেন করা যাবে না। আসল ও মুনাফা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে।বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল আগের দিনের তারিখ দিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সিস্টেমের আওতায় অর্থাৎ অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনার বিষয়ে অর্থ বিভাগ গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর, ডাক অধিদপ্তর এবং সোনালী ব্যাংককে যে চিঠি দিয়েছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক গতকালের প্রজ্ঞাপনে সে কথাগুলোই আবার বলেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ: অগ্রাধিকার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় অর্থ বিভাগ ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালু করেছে। ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে এটি চলমান।নতুন অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ উৎসে কর আরোপ উৎসে করের এই হার ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বিষয়টি স্পষ্ট করেছে জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন, ব্যাংক হিসাব বাধ্যতামূলক নগদে ১ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে, এতে টিআইএন লাগবে নাপ্রজ্ঞাপনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কোনো কথা বলা হয়নি। যদিও অর্থ বিভাগের গত ২৯ মে তারিখের ভিন্ন এক চিঠিতে দেখা যায়, সব জেলাকে মে এবং সব উপজেলাকে জুন মাসের মধ্যে অনলাইন পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।অর্থ বিভাগ এবং সঞ্চয় অধিদপ্তরের সূত্রগুলো জানায়, এখন থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ও মুনাফা নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) এবং একটি ব্যাংক হিসাব থাকা বাধ্যতামূলক। আর নগদে মাত্র এক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে, এতে টিআইএন লাগবে না। গোটা খাতকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে সরকার এই নিয়ম চালু করেছে।নজরুল ইসলাম নামের একজন গ্রাহক বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের বড় অংশ কিনে রেখেছেন ধনীরা। উৎসে কর বাড়ানোয় তাঁদের কিছুই হবে না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে আমার মতো লোকের যে মরণ দশা!’যদিও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, ব্যাংকে টাকা রাখলে যে হারে কর কাটা হয়, সঞ্চয়পত্রে কাটা হতো তার চেয়েও কম হারে। উৎসে কর ১০ শতাংশ করে বরং কিছুটা সামঞ্জস্য আনা হয়েছে, যা ইতিবাচক।আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারও ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ যদি আগামী দুই বছর পরে শেষ হয়, তাহলে ১ জুলাইয়ের আগের তিন বছরের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ এবং ১ জুলাইয়ের পরের সময়ের মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ আরোপই যৌক্তিক হবে। নইলে তা আন্তর্জাতিক কর-রীতির লঙ্ঘন হবে। এ বিষয়েও স্পষ্টীকরণ দরকার।’ |
বৃষ্টির হাত ধরে বর্ষাকাল চলে এলেও গরমের তেজ কমেনি এতটুকুও। তাই মাঝেমধ্যেই মেঘ কালো করে ঝুপ করে ঝরনার মতো বৃষ্টি নেমে জানান দিচ্ছে, আমি এসেছি। ছাতা, বর্ষাতি, পানিরোধক জুতা আর ব্যাগের সঙ্গে সঙ্গে চটজলদি সাজ, সেটাও হওয়া চাই পানিরোধক। কিন্তু এত কিছু করেও স্বস্তি মেলার নামটি নেই। হঠাৎ জ্বর, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, ত্বকের নানান সমস্যা হতে পারে যে কারোর। যাঁরা ডায়েট করেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই চিন্তা করেন কী খেলে সুস্থ থাকা যাবে, পুষ্টির ঘাটতিই–বা কীভাবে পূরণ হবে। কোনটা খাব আর কোনটা খাব না। করলা, কাঁকরোল, পটোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙা ইত্যাদি বর্ষার সবজিতে বাজার সয়লাব এখন। পুষ্টিগুণে ভরপুর এসব সবজি খাবারের তালিকায় রেখে ডায়েট পরিকল্পনা করবেন বলে ভাবছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য বর্ষার সবজির পুষ্টিগুণ জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ জয়তী মুখার্জী। উপকারী বর্ষার সবজিকে মজা করে রান্না করে খেলেই শুধু চলবে না, মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম। রান্নার সব সবজি ২-৩ বার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে, যাতে কোনো রাসায়নিক উপাদান না থাকে। যেভাবেই রান্না করা হোক না কেন, অবশ্যই ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে। কম তেলে রান্না করলে সেটি স্বাস্থ্যকর হবে। রান্নার সেদ্ধ করা পানি ফেলে দেওয়া যাবে না। তাতে ভিটামিন, মিনারেল সব চলে যাবে। করলাতেতো স্বাদের কারণে অনেকের খেতে ভালো না লাগলেও করলায় রয়েছে অনেক উপকারিতা। করলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এটি ভিটামিন সির একটি ভালো উৎস, যা রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া এর রয়েছে অ্যান্টিভাইরাল গুণ, যা ভাইরাল ইনফেকশন প্রতিহত করে। জ্বর বা অন্য কারণে অরুচি হলে রুচিবর্ধক সবজি করলা রাখা যাবে খাদ্যতালিকায়। কাঁকরোলএ সময়ের আরও একটি অনন্য সবজি হলো কাঁকরোল যাতে অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে। খনিজ ও আঁশে ভরপুর, যা হজম ক্ষমতাকে ভালো রাখে ও সংক্রমণকে দূরে রাখে। বিষণ্নতা দূর করার অনন্য উপাদান আছে এতে। মানসিক চাপ কমিয়ে বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীরগতির করতে সাহায্য করে কাঁকরোল। পটোলবিশেষ গুণে গুণান্বিত পটোল বর্ষার সবজিতালিকার একটি বড় উপহার। এ সময় হাঁচি, কাশি, সর্দি, জ্বর, মাথাব্যথা ইত্যাদির প্রকোপ বেশি থাকে। এটি খেলে এসব আপনাকে দূরে রাখবে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ ও সি–তে ভরপুর, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও মজবুত করে। কম ক্যালরি থাকায় অনায়াসেই রাখা যেতে পারে খাবারের তালিকায়। চালকুমড়াবর্ষাকালের একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর সবজি হচ্ছে চালকুমড়া। এর অসংখ্য গুণের ভেতর রয়েছে অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি এজেন্ট, যা পেট ফাঁপা, বদহজম, এসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। এই সবজি আঁশে সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় চালকুমড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ওজন ও মেদ কমাতে সাহায্য করে। |
নতুন অফিস মানেই নতুন সহকর্মী। নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ বলা যায়। একদিকে যেমন কাজে দক্ষতা প্রমাণের প্রচেষ্টা থাকে, আবার নতুন অফিসের পরিবেশ ও নিয়মকানুন-সংস্কৃতি নিয়ে অনেক অজানা প্রশ্ন আমাদের সামনে হাজির হয়। নতুন কর্মক্ষেত্রে নিজেকে সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেই কাজের দিকে পরিপূর্ণ মনোযোগ দেওয়া যায়।মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক সিলভীয়া পারভীন নতুন অফিসে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াকে কাজের অংশ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো বয়সের মানুষের জন্যই নতুন অফিস বা কর্মক্ষেত্র নিয়ে কিছুটা দ্বিধা বা প্রশ্ন দেখা যায়। নিজেকে নতুন করে শেখার সুযোগ দিয়ে নতুন অফিসে যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো সময়েই নিজেকে মানিয়ে নেওয়া যায়।’ নতুন কাজে যেভাবে নিজেকে মানিয়ে চলবেন, তা নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ সিলভীয়া পারভীন। অফিস ও প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি, পরিবেশ, নিয়মকানুন সম্পর্কে মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই নতুন কর্মীদের নিয়মকানুন সম্পর্কে জানানোর রীতি আছে। বিভিন্ন সেশনের মাধ্যমে এসব জানানো হয়। চেষ্টা করুন সব জেনে নিতে। কোনো প্রশ্ন থাকলে মানবসম্পদ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। অফিস ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় জেনে নিন। প্রয়োজনে মানবসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে পরিচিত হওয়ার সুযোগ নিন। অফিস ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অফিসের অবকাঠামো সম্পর্কে ধারণা রাখুন। অফিসের বিভিন্ন বিভাগ কোথায় অবস্থিত, কে দায়িত্বশীল, কাজের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা রাখুন। যেকোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসায় সহকর্মী ও ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের প্রশ্ন করুন। দ্বিধা বা সংশয় মনের মধ্যে রেখে নিজের অস্বস্তি তৈরি করবেন না।অফিসের দৈনন্দিন কাজে স্টেশনারি-প্রিন্টার-কম্পিউটার-ফটোকপি ও মিটিং রুম ব্যবহার, টেলিফোন-মোবাইল ফোন ব্যবহার ও নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে ধীরে ধীরে জেনে নিন। নিজের কাজের কৌশল হুট করেই অফিস বা কাজের প্রয়োজনে বদলে ফেলবেন না। ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিন। নতুন কর্মক্ষেত্রে নতুন করে মানিয়ে নেওয়ার জন্য নিজেকে সময় দিন। কোনো কারণে নতুন পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্টি বা আক্ষেপ তৈরি হলে বিশেষজ্ঞ বা অভিজ্ঞ কারও সঙ্গে আলোচনা করুন। প্রয়োজনে ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমেও নিজের প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতে পারেন। নতুন কর্মক্ষেত্রে যোগদানের পর ব্যাংক ও অন্যান্য প্রয়োজনে পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের দরকার হতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। নতুন অফিসে যোগদানের পর অনেকেই আগের অফিসের সঙ্গে তুলনা করার চেষ্টা করেন। কখনোই তুলনা করবেন না, সবকিছুই ইতিবাচক হিসেবে দেখার চেষ্টা করুন। ভালো-মন্দের তুলনার চেয়ে নিজের আত্মোন্নয়নে মনোযোগ দিন। আপনি যে বিভাগে যোগদান করেছেন, তার কাজের ব্যাপ্তি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। সহকর্মীদের সঙ্গে আন্তরিকতার সঙ্গে পরিচিত হোন। সবাই হয়তো আন্তরিক হবে না, কিন্তু নিজের মধ্যে বিনয় ও আন্তরিকতা রেখে নতুন বিষয় শেখার চেষ্টা করুন। নতুন অফিসে নিজেকে মানিয়ে চলার জন্য মনে মনে ইতিবাচকভাবে নিজেকে উৎসাহ দিন। সবাই আপনাকে পছন্দ করছে, নতুন কর্মক্ষেত্র দারুণ লাগছে, নতুন নতুন বিষয় শিখছেন—বিষয়গুলো উপভোগ করার চেষ্টা করুন। |
১ কোটি ৫ লাখ টাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক তৈরিতেও বড় ধরনের ঘাপলার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ও নন্দলালপুর ইউনিয়নে। গত অক্টোবরে শুরু হওয়া কাজ এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই তা বিলম্বিত হয়। শেষ পর্যন্ত কাজের গুণমানের সঙ্গে আপস করে অর্থবছর শেষ হওয়ার দিকে নজর দিয়ে কাজটা জোড়াতালি দিয়ে শেষ করা হয়। এর তদারকিতে যে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের গাফিলতি ছিল, তা স্পষ্ট। বিস্ময়কর হচ্ছে, গ্রামবাসীর প্রতিবাদের মুখে প্রথম আলো প্রতিনিধি যখন সরেজমিন পরিদর্শন করে নিম্নমানের কাজের ভিডিও দেখালেন, তখনো উপজেলা প্রকৌশলী ‘শতভাগ কাজ শেষ’ এবং ‘কাজের মান সন্তোষজনক’ বলে দাবি করেন। এটা ইতিবাচক যে এই কর্মকর্তাকে দ্রুততার সঙ্গে বদলি করা হয়েছে, কিন্তু এটাই যেন শেষ কথা না হয়।আমরা কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীকে ধন্যবাদ দিই যে তিনি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পরপরই এর প্রতিকারে পদক্ষেপ নিয়েছেন। গতকাল তিনি আমাদের জানিয়েছেন যে এ-বিষয়ক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। খুলনার অতিরিক্ত প্রকৌশলীর নেতৃত্বাধীন কমিটি আগামী সপ্তাহেই আসতে পারে। আমরা আশা করব, গ্রামীণ মানুষের সরাসরি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়বে না। জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার ডেপুটি কমিশনার মঙ্গলবার আমাদের বলেন, সড়ক নির্মাণকাজে কোনো অভিযোগ পেলে তিনি তা বিবেচনায় নেন এবং এলজিইডিও বিষয়গুলোকে সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিবেচনায় নেয়।সারা দেশের সড়ক, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ বা সংস্কারে আমাদের সার্বিক অভিজ্ঞতা বেশ তিক্ত। সাধারণভাবে এটাই বাস্তবতা যে নির্মাণকাজের মান খারাপ, কিন্তু খরচ বেশি। নিম্নমান থাকার প্রমাণ হলো নির্মাণের অল্পকাল পরেই তা ধসে যাচ্ছে। কুমারখালীর গ্রামীণ সড়কটি কাঁচা। এবারই প্রথমবারের মতো দুই ইউনিয়নকে যুক্ত করা পাকা সড়ক ব্যবহারে এলাকাবাসী স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা দেখল যে সীমাহীন অযত্ন-অবহেলায় সড়কটি তৈরি করা হলো। পাথর-বিটুমিন এতটাই পলকা যে খালি হাতেই তা তুলে ফেলা সম্ভব হয়েছে। আর প্রতিবাদের পরে ঠিকাদার নাটকীয়ভাবে তাঁর ভাষায় কিছু জায়গায় সৃষ্ট সমস্যা তিনি দূর করেছেন। পুনরায় মেরামত করেছেন। কিন্তু স্পষ্টতই তাঁর তথাকথিত সংস্কার কর্মসূচি ওই সড়ককে সুরক্ষা দেবে কি না, তা প্রশ্নবিদ্ধ।গ্রামীণ সড়কের দুর্নীতি আসলে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর তদারকিতে ইউনিয়ন পরিষদকে যদি কার্যকরভাবে যুক্ত করা যেত, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব। বাংলাদেশ সংবিধানের নির্দেশনা কিন্তু তেমনই। স্থানীয় সরকারের নিবিড় তদারকিতে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। স্থানীয় ঠিকাদার যদি জানতেন যে নিম্নমান দেখলে ইউপির জনপ্রতিনিধিরাই কাজ থামিয়ে দিতে পারেন, তাহলে তাঁরা অনিয়ম করতে বেপরোয়া হতেন না। |
যেদিন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট কার্যকর হলো, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সেদিনটিই বেছে নিল গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য। এটি কাকতাল না পূর্বপরিকল্পিত? বাজেটের কারণে যখন জনসাধারণের ওপর করের বোঝা চাপল, তখন বিইআরসি আরেক দফা গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সম্ভবত তাদের সহনশক্তি পরীক্ষা করল? গণশুনানি করে তারা যেই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিল, তা যে জনবান্ধব নয়, সে কথা হলফ করে বলা যায়।বিইআরসি এবার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। এর আগে তারা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই ধাপে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও আদালতের নির্দেশে এক ধাপে মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হয়। কেননা, সংস্থার আইনে আছে, ছয় মাসের মধ্যে একবারের বেশি দাম বাড়ানো যাবে না। বিইআরসি নিজের তৈরি আইন নিজেই ভেঙেছিল। সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হবে মোট গ্যাসের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ, শিল্পে ১৬ দশমিক ৮, ক্যাপটিভে ১৬ দশমিক ৪৫, গৃহস্থালিতে ১৪, সার উৎপাদনে ৫ দশমিক ৭ ও সিএনজিতে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ গ্যাস। এর বাইরে চা-বাগান, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে গ্যাসের ব্যবহার রয়েছে।তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয় এবং দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কথা বলে বিইআরসি গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে যুক্তি দেখিয়েছে, তা কতটা গ্রহণযোগ্য, সেই প্রশ্ন না উঠে পারে না। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ইতিমধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে শুধু ভোক্তাসাধারণই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, অর্থনীতিও মারাত্মক চাপে পড়বে। বিশেষ করে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দেশের গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বাজেটে প্রত্যক্ষ কর না বাড়ানো হলেও অপ্রত্যক্ষ কর বা মূল্য সংযোজন কর যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, তাতে কম ও সীমিত আয়ের মানুষই বেশি বিপদে পড়ছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো তাদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। গ্যাস খাতের দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ করতে পারলে দাম বাড়িয়ে সরকার যে রাজস্ব পাবে, তার চেয়ে বেশি সাশ্রয় করা সম্ভব।বাংলাদেশ যখন গ্যাসের দাম বাড়াল, ঠিক তখনই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এর দাম কমিয়েছে। ভারতে ভর্তুকি ছাড়া রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডারপ্রতি ৭৩৭ দশমিক ৫০ টাকা থেকে কমে ৬৩৭ টাকায় দাঁড়িয়েছে। গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলপিজি) ভর্তুকি দেওয়া হয়। আমাদের অনেক শিল্পকেই ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়। সে ক্ষেত্রে বিকল্প কোনো পথ ছিল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার ছিল।বিইআরসি অন্যান্য খাতে গ্যাসের দাম বাড়ালেও ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত রেখেছে। এ জন্য তারা ধন্যবাদ পেতে পারে। সংস্থাটি বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে সবার জন্য প্রি-পেইড ব্যবস্থা চালু করতে পারত। তাতে অপচয় ও ভোক্তার ওপর চাপ দুটোই কমত। অনেকের অভিযোগ, তরল গ্যাস আমদানিকারকদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই গ্যাসের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। এই অভিযোগের সত্যাসত্য খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বিপজ্জনক হলো, আমদানি করা তরল গ্যাসের ওপরই সরকার বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সমুদ্রে যে বিশাল গ্যাসক্ষেত্র আছে, সেগুলো অনুসন্ধানে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না, বরং দাম বাড়িয়ে তারা সমস্যার যে সহজ সমাধান খুঁজেছে, তা হিতে বিপরীত হতে পারে। |
মাগুরা সদর উপজেলায় আল আমিন হোসেন (১৪) নামের এক কিশোরের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকালে ওই গ্রামের সিকাদার বাড়ির পাশে একটি পাটখেত থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকালে মহম্মদপুর উপজেলার পারুয়ারকুল গ্রাম থেকে এক যুবকের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।নিহত আল আমিন হোসেন মৃত হাসানের ছেলে। সে সদর উপজেলার মহিষাডঙ্গা গ্রামে নানা লিয়াকত আলীর বাড়িতে থাকত।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সকালে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে কয়েকটি শিশু মরদেহটি দেখতে পায়। তারপর এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেন। স্থানীয় লোকজনের কাছে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা চাউলিয়া ইউনিয়নের কুকিলা গ্রামে এসে লাশ শনাক্ত করেন।আল আমিনের মামা ইলিয়াস হোসেন প্রথম আলোকে জানান, আল আমিনের বাবার মৃত্যুর পর তার মা আবার বিয়ে করেন। ছোটবেলা থেকেই সে নানা বাড়িতে থাকে। প্রায় এক মাস আগে আল আমিনকে একটি ইজিবাইক কিনে দেওয়া হয়। ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘গতকাল সকালে সে ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। সন্ধ্যার পর তার সঙ্গে শেষবারের মতো মুঠোফোনে কথা হয়। তখন সে জানিয়েছিল, জগদল এলাকায় আছে। মাগুরায় একটি ভাড়া পেয়েছে, ওটা নামিয়ে দিয়েই বাড়িতে ফিরবে। এখন এসে দেখি, পাটখেতে পড়ে আছে ওর নিথর দেহ।’আল আমিনের ইজিবাইকের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যদের ধারণা, ওই ইজিবাইক ছিনতাই করতে গিয়েই আল আমিনকে হত্যা করা হয়েছে।মাগুরা সদর থানার উপপরিদর্শক পারভেজ আহমেদ জানিয়েছেন, ‘আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। তদন্ত শেষে হত্যার কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।’এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিন মাগুরায় গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটল। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সীতা পাগলের আশ্রমসংলগ্ন রাস্তার পাশ থেকে এক যুবকের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের পরিচয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। |
রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সঙ্গে ‘এনকাউন্টারে’ এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে বাড্ডা এলাকার সাতারপুল নামক স্থানে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ পাশে প্রজাপতি হাউজিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।নিহত ব্যক্তির নাম রমজান আলী ওরফে রমজান মিয়া (৩৬)। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে রোজার মাসে বাড্ডায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ হোসেন (৫০) নিহত হন। ফরহাদ হোসেন বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন রমজান। ফরহাদের সঙ্গে ঘুরতেন রমজান। তাঁর কোনো দলীয় পরিচয় নেই।বাড্ডা এলাকায় ২০১৫ সালে গামা হত্যা মামলারও (ত্রিপল মার্ডার) প্রধান আসামি ছিলেন রমজান। এ ছাড়া বাড্ডা এলাকায় সব টেম্পোস্ট্যান্ড, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদাবাজি, কাঁচাবাজারের নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদা আদায়, ওই এলাকায় বাড়ি তৈরির বিভিন্ন কাজের সময় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিলেন রমজান। আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষ বাড্ডায় গরুর হাটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।‘এনকাউন্টারে’ রমজানের নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে ডিবির (উত্তর) উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ফরহাদ হত্যার আরও দুজন পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তাঁরা হলেন তেজগাঁওয়ের এক শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিক ও বৃহত্তর গুলশান এলাকার এক শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদি। তাঁরা তিনজন মিলে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা সাজান। ফরহাদ হত্যার পর রমজান ভারতে পালিয়ে যান। আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষ বাড্ডা এলাকায় যে গরুর হাট বসবে এটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য গত জুন মাসে তিনি দেশে ফেরেন। গরুর হাটকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ফরহাদের বড় ছেলেসহ আরও কয়েকজনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তাঁর ফিরে আসার খবর ও তাঁর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের খবর ডিবি পুলিশ পায়। পরে গতকাল রাতে ডিবির একটি দল সাতারপুল এলাকায় যায়। সাতারপুলের বালুর মাঠ এলাকার ফাঁকা জায়গায় গেলে একদল দুর্বৃত্ত ডিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ডিবিও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলি থেমে গেলে আশপাশে বাসাবাড়ির নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে এলাকা তল্লাশি করে ডিবি। পরে প্রজাপতি হাউজিং এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কাটা জিনসের প্যান্ট ও কালো গেঞ্জি পরা এক লোক পড়ে আছে। তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে তাঁর পরিচয় জানা যায়। মশিউর রহমান জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, একটি গুলি ও কিছু ইয়াবা পাওয়া গেছে। ঘটনার সময় আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী ছিল, তবে তারা পালিয়ে গেছে। |
বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা আবহাওয়ার কারণে ত্বক বা ত্বকের খোসপাঁচড়া, ছত্রাক সংক্রমণ, স্ক্যাবিস-জাতীয় ত্বকের নানা ধরনের অসুখ হয়ে থাকে। ভেজা শরীর ভালোভাবে না মুছলে, ভেজা কাপড় ভালোভাবে না শুকিয়ে গায়ে দিলে, ঘর স্যাঁতসেঁতে ইত্যাদি কারণে ত্বকের সমস্যা হয়।এ সময়ে যেসব চর্মরোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে ঘামাচির পরই ছত্রাকজনিত চর্মরোগ অন্যতম। কারণ, ঘর্মাক্ত এবং ভেজা শরীরই হলো ছত্রাক জন্মানোর উর্বর ক্ষেত্র।এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাসুদা খাতুন বলেন, বর্ষাকালে লাগাতার বৃষ্টির কারণে প্রায়ই রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে থাকে। রাস্তার এসব ময়লা পানি ত্বকে লাগলে মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে। এ সময় ত্বক বৃষ্টি বা ঘামে ভেজা থাকলে সহজেই ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। বৃষ্টির পানি লাগলে দ্রুত তা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে ও শরীর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে। আর যাঁরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ততটা সচেতন নন, তাঁদেরই এই রোগগুলো বেশি হতে দেখা যায়। ছত্রাকের আক্রমণশীতপ্রধান দেশের চেয়ে গ্রীষ্মপ্রধান দেশের বেশি লোক এই ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। রোগটির চিকিৎসা দেওয়া হলে খুব সহজেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু হতাশার দিক হচ্ছে যে কিছুদিন যেতে না-যেতেই পুনরায় দেখা দেয়। আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটু ভালো হওয়া মাত্রই রোগী ওষুধটি বন্ধ করে দেন। আবার যাঁরা ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করেন, তাঁরাও কিন্তু ঠিকমতো ব্যবহার্য কাপড়চোপড় পরিষ্কার করেন না বা রাখেন না, ফলে খুব সহজেই কাপড়চোপড় থেকে পুনরায় ছত্রাক দেহে প্রবেশ করে এবং সে কারণেই রোগটি কিছুদিনের মধ্যে পুনরায় দেখা দিতে পারে। কী কী ধরনের ছত্রাক রোগ এ সময়ে হতে পারে? মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন: ১. দাদ ২. ছুলি ও ৩. ক্যানডিডিয়াসিস। এই তিন ধরনের ছত্রাক-প্রজাতিই মূলত ত্বকের বাইরের অংশকে আক্রমণ করে এবং সেই আক্রমণ স্যাঁতসেঁতে, নোংরা, ঘর্মাক্ত দেহে সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়।দাদ শরীরের যেকোনো স্থানে দেখা দিতে পারে। তবে দেখা গেছে সাধারণত তলপেট, পেট, কোমর, পাছা, পিঠ, মাথা, কুঁচকি ইত্যাদি স্থানে বেশি আক্রান্ত হয়।টিনিয়া ভারছিকলার বা ছুলিও একটি ছত্রাকজনিত রোগ। মানুষ গরমকালে এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়, শীতকালে আবার এমনিতেই যেন মিলিয়ে যায়। আবার গরম এলে ঘাড়ের চামড়া ভেজা থাকে। সেখানেই সাধারণত বেশি হয়ে থাকে, যা দেখতে হালকা বাদামি, সাদা গোলাকৃতির মতো দেখা যায়। বুকে, গলার দুই পাশে ঘাড়ে, পিঠে, বগলের নিচে, এমনকি সারা শরীরে হতে পারে। এতে ত্বক দেখতে সাদা হয়। তাই অনেকেই আবার একে শ্বেতি ভাবতেও শুরু করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শ্বেতির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।ক্যানডিডিয়াসিসও একটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। যাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, যেমন শিশু, বৃদ্ধ কিংবা রোগাক্রান্ত, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেছেন কিংবা যাঁদের ত্বকের ভাঁজ পানিতে অথবা ঘামে সব সময় ভেজা থাকে, তাঁদেরই রোগটি বেশি হয়; যাঁরা সব সময় পানি নড়াচড়া করেন, তাঁদের আঙুলের ফাঁকে, হাতের ভাঁজে, শিশুদের জিহ্বা, নারীদের যোনিপথে এবং গর্ভবতী নারীরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এতে ত্বকের আক্রান্ত স্থান একটু লালচে ধরনের দেখা যায় এবং সঙ্গে প্রচুর চুলকানি হয়ে থাকে। ছত্রাক থেকে দূরে থাকা যায় কীভাবে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছত্রাক সংক্রমণ প্রায় ১০০ ভাগ নিরাময় করা সম্ভব। তবে সেটা আবারও হতে পারে। কারণ ত্বকে ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার পরিবেশ সৃষ্টি হলে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে চেষ্টা করবে। তাই ফাঙ্গাস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সেগুলো হচ্ছে পা, আঙুলের ফাঁক, নখের গোড়া ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। আর ত্বক পরিষ্কার বা ধোয়ার পর শুষ্ক টাওয়েল দিয়ে ভেজা স্থান মুছে শুষ্ক করে ফেলতে হবে। বিশেষ করে আঙুলের ফাঁক, ঊরুসন্ধির ভাঁজ, বগল, ঘাড়, মাথার চুল ইত্যাদি পুরোপুরি শুকনা না করলে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে পারে। হতে পারে ত্বকের ছোঁয়াচে রোগস্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া ত্বকের একটি ছোঁয়াচে রোগ। যে কেউ যেকোনো সময় এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। চুলকানি হলো প্রধান উপসর্গ আর রাতে সেই চুলকানি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এমনকি ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে ঘা হতে পারে। কীভাবে ছড়ায়?অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে বিছানায় শুলে কিংবা ব্যবহৃত কাপড় অন্য কেউ ব্যবহার করলে খুব সহজেই এ রোগ ছড়াতে পারে। কারণ, জীবাণুটি ব্যবহৃত কাপড়ের মধ্য দুই দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। শিশু-কিশোরেরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।অন্যান্য রোগও কমবেশি হয়ে থাকে। তবে কিছু সাধারণ নিয়মকানুন যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিয়মিত গোসল ইত্যাদি মেনে চললে এসব রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এ সময়ের সচেতনতা এ সময় ভারী জামা-কাপড় না পরে হালকা রঙের সুতি পাতলা জামা পরুন। ঘামে ভিজে গেলে দ্রুত পাল্টে নিন। ভেজা কাপড় পরে থাকলে ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি।নিয়মিত প্রয়োজনে দিনে দুবার গোসল করুন। জীবাণুনাশক সাবান ব্যবহার করতে পারেন। ঘামে বা বৃষ্টিতে ভিজলে ত্বক ধুয়ে শুকিয়ে নিন।এ সময় সারা দিন জুতা-মোজা না পরে বরং খোলা স্যান্ডেল পরা ভালো। তবে খালি পায়ে হাঁটবেন না। রাস্তায় এখন যত্রতত্র নোংরা পানি জমে থাকে। পায়ের ত্বককে এই নোংরা পানি থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। কেননা, এই পানিতে রয়েছে হাজার রকমের জীবাণু।ভেজা চুল ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে তবে বাঁধবেন, নইলে মাথার ত্বকে সমস্যা হতে পারে।বাড়িতে কারও ছত্রাক সংক্রমণ হয়ে থাকলে শিশুদের তাঁর কাছ থেকে দূরে রাখুন।লেখক: চিকিৎসক |
একটা টাইম মেশিন থাকলে ভালো হতো। আমি যখন এ লেখাটা লিখছি, তখন ভারত-বাংলাদেশ খেলায় কেবল টস হয়েছে, ভারত টসে জিতেছে। আর আপনারা যখন এ লেখা পড়ছেন, তখন আপনারা খেলার ফল ভালো করেই জানেন। ‘ক্রিকেট নিষ্ঠুর, কিন্তু খোদা নিষ্ঠুর নন।’ক্রিকেটে টস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের ভাগ্য এ রকম, বৃষ্টি হলো শ্রীলঙ্কার দিনে, বৃষ্টি তো ইংল্যান্ডের দিনও হতে পারত! খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে। যাক ফরচুন ফেভারস দ্য ব্রেভ।একটা টাইম মেশিন থাকলে অবশ্য ভালো হতো। ভবিষ্যতে গিয়ে আমি বলে দিতে পারতাম খেলার ফল কী হয়েছে। সপ্তাহ দুই সামনে গিয়ে বলা যেত, এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন কে হয়েছে।ক্রিকেট সম্পর্কে একটা প্রবাদ বলি। ‘ক্রিকেট হলো সেই খেলা যেখানে ২২ জন খেলে, আর খেলা শেষে জয়ী হয় অস্ট্রেলিয়া।’ তবে আমাদের বন্ধু সাংবাদিক পিনাকি রায় একটা নতুন কথা বলেছেন, ‘ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে যেতে পারে, নিউজিল্যান্ড যেতে পারে, পাকিস্তান যেতে পারে, শ্রীলঙ্কা যেতে পারে, বাংলাদেশ যেতে পারে। কিন্তু আর্জেন্টিনা কিছুতেই চ্যাম্পিয়ন হবে না।’ কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা খেলায় কী হলো, তা–ও আপনারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন।তাহলে আমরা কথা বলব কী নিয়ে।ক্রিকেটে যে আমরা সবাই মিলে অংশ নিই, প্রার্থনা করি, দোয়া–দরুদ পড়ি, আগের ম্যাচে যে কাপড় পরে জিতেছিলাম সেই কাপড় পরে থাকি, গ্যালারিতে থাকলে চিৎকার করি, মনে হয় সেই কারণেই টিম জিতেছে। তবে একটা সুবিধাও আছে। দল জিতলে গৌরব আমার, দল হারলে দোষ কোনো একজন খেলোয়াড়ের। কিংবা ক্যাপ্টেনের, তিনি কেন টসে জিতে অমুক করলেন না। কালকের খেলায় অবশ্য মাশরাফি বলতে পারবেন, আমি তো আর টসে জিতি নাই। হায়, বাংলাদেশ কেন টস জেতে না?খেলার ফল কী হয়েছে, আমি জানি না। আমি শুধু জানি, হারি–জিতি বাংলাদেশ। লড়ো বাংলাদেশ, লড়ে যাও। এগিয়ে যাও। আমাদের হারানোর কিছু নেই। জয় করার জন্য আছে সমস্ত পৃথিবী। এবং রয়েছে বিশ্বকাপ। কবে তা জানার জন্য টাইম মেশিন দরকার। আর তা জানেন ক্রিকেটের ভাগ্যবিধাতা, যিনি খেলছেন এ বিশ্ব লয়ে। |
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীকে (২৩) গ্রেপ্তার করেছে বরগুনা থানা-পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে তাঁকে বরগুনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।আজ বুধবার সকাল ৯টায় বরগুনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ এ তথ্য জানায়। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিভাগের উপ মহাপরিদর্শক শফিকুল ইসলাম ও বরগুনা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন। এ সময় আসামি রিফাত ফরাজীকে উপস্থিত করা হয়।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রিফাত ফরাজীকে গ্রেপ্তারে ৭ দিন ধরে অভিযান অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।গতকাল মঙ্গলবার ভোররাত সোয়া চারটার দিকে বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পূর্ব বুড়িরচর গ্রামে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড (২৫)।এর আগে এ মামলায় গ্রেপ্তার হন চন্দন (২১), মো. হাসান (১৯), অলিউল্লাহ (২২) টিকটক হৃদয় (২১)। তাঁরা এজাহারভুক্ত আসামি। সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হন নাজমুল ইসলাম (১৮), সাগর (১৯), তানভীর (২২), কামরুল হাসান ওরফে সাইমুন (২১। অপর একজনের নাম পুলিশ প্রকাশ করেনি।গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফ নামের এক তরুণকে। এ সময় বরগুনা সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা তাঁর স্বামীকে রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালান। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তাঁকে (রিফাত) উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। বেলা তিনটার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। জনবহুল এলাকায় এমন নৃশংস হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের ঝড় ওঠে।আরও পড়ুন:নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতজানা যাবে না নয়ন বন্ড কার লোক?নয়ন বন্ড কার লোক?একজন নয়ন বন্ড যেভাবে তৈরি হয়এভাবে প্রকাশ্যে কোপাল!‘আমি শত চেষ্টা করেও তাঁকে রক্ষা করতে পারিনি’কুপিয়ে হত্যার আসামিরা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন: হাইকোর্টএই রামদা কে দিয়েছে?আয়েশা সিদ্দিকার কান্না ও রাষ্ট্রের নীরবতা |
নটিংহাম থেকে সাউদাম্পটনে রওনা দেওয়ার সময় একটা ফোন এল। ফোনের এ প্রান্তে বোঝা যাচ্ছে অপর প্রান্তে যিনি আছেন তাঁর বুক চিরে বেরিয়ে আসছে একরাশ হতাশা আর কষ্ট—‘খুব খারাপ লেগেছে, খুব। এ কেমন অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে! একজন খেলোয়াড়ের জন্য এ তো শুধু কষ্টের নয়, এ যে অনেক বড় অসম্মানেরও।’সাইফউদ্দিন খানিকক্ষণ আর কথাই বলতে পারেন না। দূর থেকে তাঁর অশ্রুপাত বোঝা গেল না। তবে হৃদয়ের ক্ষত কতটা গভীর, সেটা উপলব্ধি করা গেল। মাঝে খবর বের হলো, সাইফউদ্দিনের নাকি ‘বিগ ম্যাচ ফোবিয়া’ আছে! সে ভয়ে তিনি চোটকে অজুহাত বানিয়ে খেলেননি ট্রেন্ট ব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি। এই অভিযোগ সাইফউদ্দিন কেন পৃথিবীর কোনো খেলোয়াড়ই মানবেন না। ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছেন ইনজেকশন নিয়ে। ২০ দিনের মধ্যে আরেকবার ইনজেকশনের ধকল নিতে চাননি, নিজেকে বড় ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে চাননি। একটি ম্যাচ জোর করে খেলতে গিয়ে বাকি তিনটি ম্যাচ হাতছাড়া করতে চাননি।টিম ম্যানেজমেন্ট নাখোশ হওয়ার পরও সাইফউদ্দিনকে ম্যাচ খেলা থেকে বিরত থাকার কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছিল। আর তাতেই দুই-দুইয়ে চার মিলিয়ে অনেক গল্প ছড়িয়েছিল কদিন। এ ঘটনার পর সাইফউদ্দিন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ‘বিগ ম্যাচ ফোবিয়া’ বলে যে কলঙ্কের কালি ছিটানোর চেষ্টা হয়েছে তাঁর গায়ে, তিনি সেটির জবাব দেবেন কোনো বড় ম্যাচে নায়ক হয়ে। কাল ভারতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে নায়ক হওয়ার পথেই এগোচ্ছিলেন। ৩৮ বলে অপরাজিত ৫১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি। তবে হিরো হয়েছেন ঠিকই, ট্রাজিক হিরো! বিয়োগান্ত গল্পের নায়ক হওয়া সাইফউদ্দিন মাঠে অনেক জবাব দিয়েছেন। কাল এজবাস্টনের মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে মুখেও কিছুটা দিলেন, ‘কিছুদিন আগে আমাকে নিয়ে একটা নেতিবাচক খবর হয়েছিল যে বড় দলের বিপক্ষে ভয়ে খেলি না! চোটের অজুহাত দেখাই। আমার মধ্যে জিদ কাজ করেছে যে বড় দলের সঙ্গে ম্যাচ জিতিয়ে হিরো হব। আজ যখন মাঠে নামলাম লক্ষ্য ছিল প্রথম বল থেকে শেষ বল—আমি লড়ব, ম্যাচ জেতাব। আমার নামে যেসব কথা হয়েছে, সেটা যেন ভুল প্রমাণ করতে পারি।’এমন একটা ম্যাচের জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন অনেক দিন। সুযোগটা এসেও গিয়েছিল। কিন্তু দলীয় খেলায় এককভাবে যে দলকে জিতিয়ে দেওয়া যায় না। এগিয়ে যেতে সঙ্গে একজন সহযোদ্ধাও লাগে। সাইফউদ্দিন কাল সে সহযোদ্ধাই পেলেন না। পেলে হয়তো বাংলাদেশের সেমিফাইনালের আশা মিলিয়ে যেত না এজবাস্টনের সুনীল দিগন্তে। |
আয়ারল্যান্ড ত্রিদেশীয় সিরিজে যে দুর্দান্ত সৌম্য সরকারকে দেখা গিয়েছিল, তাঁর ছায়াকে দেখা গেল এ বিশ্বকাপে। আয়ারল্যান্ডে ফিফটির ‘হ্যাটট্রিক’ করা সৌম্য বিশ্বকাপে একটাও ফিফটি পাননি।সৌম্য লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি। ২০১৯ বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিটাও তাঁর ঠিক জমেনি। দুটি ম্যাচ বাদে কোনোটিতে বাংলাদেশ ভালো শুরু পায়নি। ওপেনিং জুটি যদি দ্রুত ভাঙে, স্বাভাবিকভাবে চাপ পড়ে মিডল অর্ডারে। তিনে নেমে সাকিব আল হাসান নিয়মিত ভালো খেলেছেন। মুশফিকুর রহিমের কাছেও কখনো কখনো মুগ্ধ করা ইনিংস দেখা গেছে। কিন্তু টপ অর্ডারে তৃতীয় আরেকজন ব্যাটসম্যানের কাছে নিয়মিত রান দরকার ছিল, যেটি করতে পারতেন সৌম্য। ৭ ম্যাচে ২০.৫৭ গড়ে ১৪৪ রান করা সৌম্য সেটি পারেননি। সর্বোচ্চ করেছেন ৪২। এ ব্যর্থতা তাঁকে ভীষণ পোড়াচ্ছে, ‘আমার ঘাটতি বলতে ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা তিনটা ফিফটি করেছিলাম। তখন আক্ষেপ ছিল কেন সেঞ্চুরি করতে পারলাম না। আর এখানে আফসোস থেকে গেল ৩০-৪০ রান করলাম অথচ ফিফটি করতে পারলাম না। দুই জায়গায় দুই রকম আক্ষেপ। বিশ্বকাপের আক্ষেপটা অনেক বড়, এত বড় মঞ্চে ভালো কিছু করতে পারলে অনেক ভালো লাগত।’সৌম্যর ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কেউ কেউ তামিম ইকবালের ‘দায়’ দেখছেন। বেশির ভাগ ম্যাচ তামিম এত সতর্ক আর মন্থর গতিতে শুরু করেছেন, দলের রানের চাকা সচল রাখতে সৌম্যকে ঝুঁকি নিয়ে চালাতে হয়েছে। আর তাতে কখনো কখনো উইকেট উপহার দিয়ে আসতে হয়েছে তাঁকে। সৌম্য অবশ্য মনে করেন না তামিমের কারণে তাঁকে ঝুঁকি নিতে হয়েছে, ‘একেকজনের খেলার ধরন একেক রকম। আমি শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করি। নিজের গেম প্ল্যানে থাকতে গিয়ে অনেক সময় ঝুঁকি নিতে হয়। যদি নিজের স্বাভাবিক খেলায় আরও নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং বল নির্বাচন ভালো হয় তবে লম্বা ইনিংস খেলা সম্ভব।’কাল এই লম্বা ইনিংস না খেলাটাই যেন ভুগিয়েছে। তবে সৌম্য বিশ্বাস করেন ভারতের দেওয়া ৩১৫ রানের লক্ষ্যটা অবশ্যই তাড়া করার মতো ছিল। কিন্তু সাকিব আল হাসানের সঙ্গে টপ কিংবা মিডল অর্ডারের কোনো ব্যাটসম্যান পারেননি একটা ঝলমলে ইনিংস খেলতে। বেশির ভাগই আউট হয়েছে থিতু হয়ে।সৌম্যর চোখে ম্যাচের পার্থক্য হয়ে গেছে এখানেই, ‘অবশ্যই রানটা তাড়া করার মতোই ছিল। আমাদের পরিকল্পনাই ছিল জেতার। ভালো একটা শুরু এনে দিতে চেয়েছিলাম আমরা। তামিম ভাই আউট হওয়ার পর আমি আউট হলাম। তখন দুজনের একজন যদি লম্বা ইনিংস খেলতে পারতাম পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য সহজ হতো। সাইফউদ্দিন শেষ দিকে যেভাবে খেলেছে ম্যাচ প্রায় আমাদের হাতেই ছিল। বলের চেয়ে রান কিছু বেশি ছিল। শুরুতে যদি রান করতাম আর হাতে উইকেট থাকত তাহলে হয়তো...।’তাহলে হয়তো গল্পটা অন্য রকম হতো। বার্মিংহামেই সেমিফাইনালের আশা শেষ হতো না। ৫ তারিখের পরই বাংলাদেশ দলকে দেশে ফেরার বিমান ধরতে হতো না। এখন এ ‘ইশ-আহ-ওহ’ নিয়েই বাংলাদেশকে কাটাতে হবে অনেক দিবস, অনেক রজনী! |
দিনাজপুরের বিরামপুরের একটি মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।ধর্ষণের অভিযোগ এনে ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিরামপুর থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় গতকাল রাতে সবুজ ইসলাম (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।ছাত্রীর পরিবারের বরাত দিয়ে বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, গত সোমবার ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। এদিন সকাল ১০টার দিকে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে প্রতিবেশী সবুজ কৌশলে ওই ছাত্রীকে তাঁর বাড়িতে ডেকে নেন। ঘরে নিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। সবুজের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মেয়ের চিৎকার শুনতে পান মা। মা তাঁর দেবরকে সঙ্গে নিয়ে সবুজের বাড়িতে যান। এ সময় সবুজ পালিয়ে যান।ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিষয়টি মীমাংসার কথা বলে ছাত্রীর বাবা-মাকে মামলা করা থেকে বিরত রেখেছিলেন। পরে পুলিশ ঘটনাটি জানতে পারে। এরপর ছাত্রীর বাবা গতকাল বিকেলে সবুজের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন।বিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সোহেল রানা জানান, মামলার পর ওসি মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গতকাল রাত ১০টার দিকে উপজেলার কাটলা ইউনিয়ন থেকে সবুজকে গ্রেপ্তার করে।ওসি মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর সবুজ জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। আজ ওই ছাত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হবে। |
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা–বাগান এলাকায় ডাকাতি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে শমশেরনগর ৬ নম্বর শ্রমিক বস্তিতে এক সিএনজি অটোরিকশাচালকের বাসায় এ ঘটনা ঘটে।সিএনজি অটোরিকশাচালক অন্তর রাজভরের ভাষ্য, গতকাল সবাই ঘুমিয়ে পড়লে রাত দেড়টার দিকে ১৬-১৭ জন মুখোশ পরা সশস্ত্র ডাকাত প্রথমে বাসার কলাপসিবল গেট ভেঙে ফেলে। পরে তারা ঘরের সামনের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তিনি ঘুম থেকে উঠে পড়লে তাঁকে ও তাঁর বাবাকে এক দড়িতে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর তাঁর মাসহ অন্য নারীদেরও বেঁধে ফেলে তারা। একপর্যায়ে এক শিশুর গলায় দা ধরে ঘরের আলমারি ভেঙে তছনছ করে ডাকাত দল।সে সময় ৩০ হাজার টাকা, আড়াই ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার, ৫টি মুঠোফোন,একটি ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি, সিলিন্ডারসহ গ্যাসের চুলা ও একটি ডিভিডি লুটে নেয় ডাকাত দল। ঘরের আইপিএস সংযোগ খুলে নিলেও তা বাসার বাইরে ফেলে যায়। সব মিলিয়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ডাকাতি হয়েছে। অন্তর রাজভর বলেন, ডাকাত দলের দু-একজনের হাতে পিস্তল ও বাকিদের সবার হাতে রামদা ছিল।শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ বলেন, যেভাবে ডাকাতি হয়েছে, এতে বাধা দিলে বাসার লোকজন হতাহত হতে পারতেন। ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী বলেন, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। |
রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টরা তাঁদের স্বাধীনতা দিবসে রাজধানীতে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করে থাকেন। এমনকি গণতান্ত্রিক ফ্রান্সে বাস্তিল দিবসে সামরিক কুচকাওয়াজ হয়। আমেরিকা বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি, সামরিক শক্তিতে সবার ওপরে। ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস। এদিন সে দেশের প্রেসিডেন্টই বা কেন সামরিক কুচকাওয়াজ দেখতে দেখতে স্যালুট করবেন না? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে বিশেষ সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করছেন। এই উৎসবের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্যালুট টু আমেরিকা’।২০১৭ সালে ফ্রান্সে বাস্তিল দিবসে সামরিক কুচকাওয়াজ দেখে এসে ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ৪ জুলাইয়ের উৎসব হোক আরও বড়, আরও চমকসহ সামরিক কুচকাওয়াজে পূর্ণ। বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের কারণে গত দুই বছরে কিছু করা হয়নি। কিন্তু এ বছর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সে ইচ্ছা পূরণ হবে।ট্রাম্প জানান, ৪ জুলাই শুধু সামরিক প্যারেড ও ট্যাংকের প্রদর্শনী নয়, বিমানবাহিনীর সদস্যরাও কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে স্যালুট নেবেন, ভাষণ দেবেন। সামরিক বাহিনীর সব শাখার প্রধানদের তিনি এ সময় তাঁর পাশে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।অনেকে বলেছেন, এটি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন। অন্যান্য শহরের মতো রাজধানী ওয়াশিংটনেও এত দিন এই দিনটি উদ্যাপিত হয়েছে অরাজনৈতিকভাবে। কোনো প্রেসিডেন্ট সেখানে স্যালুট নিতে আসেননি, কোনো সামরিক কুচকাওয়াজ হয়নি। ওয়াশিংটন ডিসির ডেমোক্রেটিক মেয়র ট্রাম্পের পরিকল্পনার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এই দিবসটি আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। ট্রাম্পের উপস্থিতি এই উদ্যাপনে বিঘ্ন ঘটাবে। কংগ্রেসম্যান জেরাল্ড কনোলি বলেছেন, আমাদের জাতীয় উৎসবকে ট্রাম্প তাঁর ব্যক্তিগত উৎসবে পরিণত করতে চান।এমনকি সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও বিষয়টি সদয়ভাবে নেননি। মঙ্গলবার ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, সেনা কর্মকর্তারা তাঁর পরিকল্পনায় দারুণ খুশি। কর্মরত সামরিক সদস্যরা মুখে কিছু বলেননি, কিন্তু একাধিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার তাঁদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন।আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর সাবেক অধিনায়ক অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ডেভিড বারনো বলেছেন, আমেরিকার জাতীয় উৎসবের বদলে এটি এখন রিপাবলিকান পার্টির উৎসবে পরিণত হবে।কোড পিঙ্ক নামে পরিচিত যুদ্ধবিরোধী একটি গ্রুপও ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। তারা বলেছে, ৪ জুলাইয়ের উৎসবে তারা ডায়াপার বা তোয়ালে জড়ানো ‘বেবি ট্রাম্পে’র ২০ ফুট লম্বা এক বেলুন ওয়াশিংটনের আকাশে ওড়াবে। এ জন্য তারা উদ্যান পরিদপ্তরের অনুমতি পেয়েছে। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, ট্রাম্পের ভাষণের সময় পর্যন্ত তাঁরা বেলুনটি আকাশে উড়িয়ে রাখতে সক্ষম হবেন। |
জার্মানির ঘৃণ্য বক্তব্য প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘন করায় ফেসবুককে ২৩ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানা করেছে জার্মান কর্তৃপক্ষ। অবৈধ কনটেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরও তা না সরানোয় এ জরিমানা করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটিকে।জার্মানির ফেডারেল অফিস অব জাস্টিস এক বিবৃতিতে বলেছে, গত বছরের প্রথম ছয় মাসে ফেসবুক যে ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল তাতে অভিযোগ করা কনটেন্টের খুব সামান্য অংশ সরানোর কথা বলা হয়েছিল। এ থেকে মানুষের মনে ব্যাপক অবৈধ কনটেন্ট ফেসবুকে থেকে যাওয়ার ও ফেসবুক তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করে সে বাজে বার্তা গেছে।জার্মান কর্তৃপক্ষ বলছে, ফেসবুক যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তা অসম্পূর্ণ। এতে অবৈধ কনটেন্টের অভিযোগগুলো কীভাবে বিবেচনা করে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু থাকে না। এ ছাড়া অভিযোগের পর তার জবাবে সঠিক তথ্য দেয় না ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।জার্মানির ‘নেটওয়ার্ক ইনফোর্সমেন্ট অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোকে প্রতি ছয় মাস পরপর অবৈধ কনটেন্ট ঠেকাতে তাদের কার্যকলাপের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।জরিমানার বিরুদ্ধে ফেসবুকের আবেদন করা সুযোগ থাকছে। জরিমানা বিষয়ে তারা মুখ খোলেনি।ফেসবুক প্রতিবছর বিজ্ঞাপন থেকে যে আয় করে এ জরিমানা সে তুলনায় সামান্য। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ এ তিন মাসে ফেসবুক বিজ্ঞাপন থেকে ১৫.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। তবে এ জরিমানার বিষয়টি প্রমাণ করে ফেসবুক ঘিরে চলমান প্রাইভেসি, নিরাপত্তা ও তথ্য ফাঁস কেলেঙ্কারির বিষয়ে নিয়ন্ত্রকেরা সজাগ রয়েছে।ফেসবুকের বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিশাল জরিমানা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন। প্রাইভেসি সমস্যা ঠিকভাবে সমাধান করায় কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর এটাই সবচেয়ে বড় জরিমানার রেকর্ড হতে পারে। তথ্যসূত্র: সিনেট। |
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার ভোর পাঁচটায় উপজেলার জুলুরদিঘির পাড় এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।নিহত ব্যক্তিরা হলেন সংঘদাশ বড়ুয়া (৭০) ও উত্তম বড়ুয়া (৪০)। সংঘদাশ বড়ুয়া সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী ও উত্তম বড়ুয়া অটোরিকশাটির চালক ছিলেন। তাঁদের দুজনেরই বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার শীলঘাটা এলাকায়।পটিয়া ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড ডিফেন্সের কর্মকর্তা সোমেন বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামমুখী সিএনজি অটোরিকশাচালিত অটোরিকশাটিকে কক্সবাজারমুখী ‘শ্যামলী’ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি সামনে থেকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় ৫ শ মিটার দূরে নিয়ে যায়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তাঁরা সিএনজির ভেতর থেকে যাত্রী সংঘদাশ বড়ুয়াকে মৃত অবস্থায় ও চালক উত্তম বড়ুয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় অবস্থায় উদ্ধার করেন। উত্তম বড়ুয়াকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখানেই তিনি মারা যান।নিহত দুজনের আত্মীয় পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক সুনীল বড়ুয়া প্রথম আলোকে জানান, চালক উত্তম বড়ুয়া গ্যাস নিতে পটিয়া আসছিলেন এবং সংঘদাশ বড়ুয়া পটিয়ায় তাঁর নিজের বাসায় আসছিলেন। সুনীল বড়ুয়া বলেন, সংঘদাশ বড়ুয়া তাঁর চাচা এবং উত্তম বড়ুয়া তাঁর ভাইপো। |
কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলের হয়ে গোল করেছেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও রবার্তো ফিরমিনো।ম্যাচশেষে গোলপোস্টকে দোষারোপ করতেই পারেন মেসি-আগুয়েরোরা! গোলপোস্ট বাধা না হয়ে দাঁড়ালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কাছে হয়তো আজ হারা লাগত না তাদের! তাতে ব্রাজিলের কি! নিজেদের কাজ তারা ঠিকই করেছে। আক্রমণভাগে রবার্তো ফিরমিনো আর গ্যাব্রিয়েল জেসুসের 'নিখুঁত' খেলার লাভ পুরোটাই বুঝে নিয়েছে হলুদ-নীলরা। ২-০ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠে গেছে তারা।বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার ভোরে বেলো হরিজন্তের এস্তাদিও মিনেইরোতে কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। খেলার প্রথমার্ধে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের গোলে ১-০-তে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে রবার্তো ফিরমিনোর গোলে ২-০-তে জয় পায় স্বাগতিকেরা। ম্যাচটি নিয়ে দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। শেষমেশ ব্রাজিল সমর্থকদের মুখে হাসি। আর আরেকবার হতাশায় ডুবল আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা।কোয়ার্টার ফাইনালের দলগুলোর মধ্যে শুধু আর্জেন্টিনাই ম্যাচের মূল নব্বই মিনিট সময়ে গোল করতে পেরেছিল, অন্য ম্যাচগুলো ০-০ গোলে ড্র হওয়ার কারণে পেনাল্টি শুটআউটে নিষ্পন্ন হয়। এ কারণেই কি না, ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে নামানো একাদশটা আর পরিবর্তন করলেন না আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। ব্রাজিল অবশ্য সে কাজ করেনি। ঊরুর চোটটা বেশ ভোগাচ্ছিল লেফটব্যাক ফিলিপে লুইসকে, ফলে তাঁর জায়গায় জুভেন্টাসের আলেক্স সান্দ্রোকে মাঠে নামান ব্রাজিল কোচ তিতে। ওদিকে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ব্রাজিলের মাঝমাঠে ফিরে আসেন রিয়াল মাদ্রিদের কাসেমিরো, অ্যালানের জায়গায়। এই দুটি পরিবর্তন ছাড়া ব্রাজিলের বাকি দল একই রকম ছিল। প্রথম থেকেই আক্রমণ করা শুরু করে ব্রাজিল। ম্যাচের মাত্র দুই মিনিটে স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনোর ডান পায়ের জোরালো শট আটকে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানি। তবে শটটা অফসাইড পজিশনে থেকে করেছিলেন ফিরমিনো। গোলটা না হলেও ম্যাচের শুরু থেকেই ব্রাজিল তাদের উদ্দেশ্য বেশ ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয় মেসিদের। ব্রাজিলের ছন্দময় ফুটবলে প্রথমে একটু খেই হারিয়ে ফেলে আর্জেন্টিনা, নয় মিনিটে দলের লেফটব্যাক নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর হলুদ কার্ড খাওয়া তারই প্রমাণ। ১২ মিনিটে আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার লিয়ান্দ্রো পারেদেসের দুর্দান্ত এক শট একটুর জন্য পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। ম্যাচের বিশ মিনিটের মধ্যে আর্জেন্টিনার দেখার মতো আক্রমণ ওই একটাই ছিল। ম্যাচের ১৯ মিনিটে দানি আলভেসের নিয়ন্ত্রিত এক পাস খুঁজে পায় ডান প্রান্তে থাকা রবার্তো ফিরমিনোকে। আর্জেন্টিনার ডিফেন্সের হতোদ্যম অবস্থার সুযোগ নিয়ে সেখান থেকে মাটিঘেঁষা এক ক্রস পাঠিয়ে দেন বক্সে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে। সেখান থেকে গোল করতে সমস্যা হয়নি জেসুসের। গোল খাওয়ার পর যেন জেগে ওঠে আর্জেন্টিনা, জেগে ওঠেন মেসি। গোল খাওয়ার আগ পর্যন্ত ম্যাচে মেসিকে খুঁজে না পাওয়া গেলেও আস্তে আস্তে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেন মেসি। রদ্রিগো দি পল, সার্জিও আগুয়েরো আর লওতারো মার্টিনেজের সঙ্গে রসায়নটা বেশ জমে ওঠে তাঁর। কিন্তু ব্রাজিলের সুকঠিন রক্ষণভাগ আর গোলবক্সে গিয়ে সঠিক সময়ে শট না নিতে পারার কারণে ভুগতে হয় আর্জেন্টিনাকে। তার ওপর অ্যালিসন তো ছিলেনই। মেসির একেকটা আক্রমণ দক্ষতার সঙ্গে বারবার ফিরিয়ে দেন লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী এই গোলরক্ষক। এর মধ্যেই মাঠে মেসিকে ফেলে দেন কাসেমিরো। হলুদ কার্ড দেখা থেকে বেঁচে গেলেও ফ্রি-কিক ঠিকই হজম করতে হয় ব্রাজিলকে। মেসির নেওয়া সে ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত এক হেড করেন আগুয়েরো। দুর্ভাগ্য, বলটা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। প্রথমার্ধের শেষ পর্যন্ত বলের দখল তুলনামূলকভাবে আর্জেন্টিনার কাছেই বেশি ছিল। ৪৯ মিনিটে মার্টিনেজের বাঁ পায়ের শট আটকে দেন অ্যালিসন। এর কিছুক্ষণ পরে মেসি-আগুয়েরোর রচনা করা দুর্দান্ত এক আক্রমণ লক্ষ্যভ্রষ্ট শট মেরে নষ্ট করেন দি পল। মেসির একেক প্রচেষ্টায় করা দুর্দান্ত আরেক আক্রমণ পোস্টে লেগে ফিরে আসে আবার। আর্জেন্টিনার দুর্ভাগ্য ও গোলপোস্টের সামনে নিষ্ক্রিয় থাকার সুবিধা আর কিছুক্ষণ পরেই কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নেয় ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধের অধিকাংশ সময়ে মেসি-আগুয়েরো-পারেদেস ও লওতারোর নিয়ন্ত্রণে থাকা ম্যাচে স্রোতের বিপরীতে সুযোগ পেয়ে যায় ব্রাজিল। আর্জেন্টিনার মতো সে সুযোগ হেলায় হারায়নি তারা। ফিরমিনোকে গোলে সহায়তা করে 'ঋণ' শোধ করেন জেসুস।গোটা ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন দানি আলভেস ও গ্যাব্রিয়েল জেসুস। জেসুস যে সাবেক ব্রাজিলীয় তারকা রোনালদোর মতো প্রথাগত নাম্বার 'নাইন' নন, বরং একজন উইং ফরোয়ার্ড, সেটা এই ম্যাচে বেশ ভালো বুঝিয়ে দিয়েছেন। দানি আলভেস হার মানিয়েছেন বয়সকে। ওদিকে টুর্নামেন্টের সেরা ম্যাচ খেলেও গোলপোস্টের 'কল্যাণে' কপালে গোল জোটেনি মেসির। কিন্তু মেসির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সার্জিও আগুয়েরো ও লওতারো মার্টিনেজরা যেভাবে খেলেছেন, আগামী বছরের কোপার জন্য আশাবাদী হতেই পারেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা!কোপা আমেরিকার নকআউট পর্বে এ নিয়ে পাঁচবারের লড়াইয়ে প্রতিবার ব্রাজিলের কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা। ১৯৯১ সালে সবশেষ কোপায় ব্রাজিলকে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। |
যে ছবিতে শ্রদ্ধা কাপুর ভিজবেন, সেই ছবিই ‘হিট’ করবে। অমিতাভ বচ্চনের নায়িকা স্মিতা পাতিল থেকে শুরু করে, কাজল, রানী মুখার্জি, কারিনা কাপুর, সোনম কাপুর, ক্যাটরিনা কাইফ, কৃতি স্যানন থেকে শ্রদ্ধা কাপুর সবার ক্ষেত্রে এই সত্য প্রযোজ্য। মনে করা হয়, বৃষ্টির সঙ্গে ভারতীয় ছবির সাফল্যের যোগ আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক পানির সংকটের কারণে ভারতীয় নায়িকারা হয়তো আর বৃষ্টিতে ভিজবেন না।তামিল ছবির কথাই ধরা যাক। বৃষ্টি সেখানকার ছবির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু তীব্র পানির সংকটের কারণে এখন থেকে তামিল ছবিতে পানির ব্যবহার কমে যাবে। যেটুকু থাকবে, সেটুকুও কম্পিউটারে তৈরি পানি বা বৃষ্টি। সংকটে পড়ে সিনেমায় বন্যা বা সুনামির দৃশ্য দেখাতে ৫০-১০০ ট্যাংক পানি চাইতে পারছেন না ছোট-বড় কোনো পরিচালকই। শিগগিরই শুটিং শুরু হবে বা চলছে, এ রকম ছবিগুলোতেও বৃষ্টির দৃশ্য রাখছেন না কেউই।এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সামনের দেড় বছরের মধ্যে চেন্নাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদসহ ২১টি শহরে পানির তীব্র সংকট তৈরি হবে। ১০ বছরের মধ্যে ভারতের ৪০ শতাংশ মানুষ পান করার মতো পানি পাবে না। ইতিমধ্যে তামিলনাড়ুতে পানির জন্য শুরু হয়ে গেছে হাহাকার। এসব কারণেই সিনেমায় বৃষ্টির দৃশ্য একেবারেই রাখতে চাইছেন না পরিচালকেরা। তামিল পরিচালক জি ধনঞ্জয় জানান, বৃষ্টির দৃশ্য আপাতত বাদ দেওয়া হচ্ছে। পানির অপচয় রোধে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।এই সংকটের কথা মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে ভারতীয় টেলিভিশনেও। ‘বিগ বস থ্রি’-এর সেটের সুইমিংপুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনে পানি ব্যবহার সেখানে করা বা দেখানো হচ্ছে না। ব্লু ওশান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন একাডেমির পরিচালকেরা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তাঁরা বলেন, খুব বেশি দরকার হলে বড়জোর একটা জানালার সামনে বৃষ্টির দৃশ্য তৈরি করা হবে। এ জন্য দুই বালতি পানিই যথেষ্ট। পুরো একটা মাঠ বা বাড়িকে বৃষ্টিতে ভেজানো পানির অপচয় হবে। ভারতীয় এক টেলিভিশন প্রযোজক জানান, এখনকার এ সংকট যতটা ভয়াবহ, ৮০ ও ৯০-এর দশকে এত খারাপ অবস্থা হয়নি। এখন সব ইন্ডাস্ট্রিতে এই সংকটের রেশ দেখা যাবে। আইটি, হোটেল, সিনেমা সব শিল্পে এই পানির সংকটের প্রভাব পড়বে।অভিনেতা অজিতের ‘বিশ্বসম’ এবং রজনীকান্তের ‘কালা’ ছবির বৃষ্টির দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল হায়দরাবাদ ও মুম্বাইতে। ২০১০ সালে করণ জোহর পরিচালিত শাহরুখ খানের ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবিতে নিউইয়র্কে বন্যার দৃশ্য তৈরি করতে ২০০ ট্যাংক পানি ব্যবহার করা হয়। মুখেশ ভাটের ‘তুম মিলে’ ছবিতেও এই পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হয় মুম্বাইয়ের প্লাবনের দৃশ্য দেখাতে।না দেখিয়ে কী বা করার থাকে? ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘এবিসিডি টু’ ছবিতে ‘বেজুবান ফির সে’ গানে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে নেচেছেন শ্রদ্ধা কাপুর। বৃষ্টির মতো পয়সা এসে পড়েছে প্রযোজকের পকেটে। ২০১৩ সালে ‘আশিকি টু’ ছবিতেও তাই। শাড়ি পরে বৃষ্টিতে ভেজা শ্রদ্ধা কাপুরের মাথার ওপর জ্যাকেট মেলে ধরেছিলেন নায়ক আদিত্য রায় কাপুর। ব্যস, ছবি হিট। অনেকেই মনে করেন, নায়িকাদের ভেজালেই লোকে ছবি দেখতে যাবে। তবে পানির সংকটের কারণে বৃষ্টিতে ভেজা নায়িকার রোমান্টিক নাচ তামিল ছবিতে আপাতত বন্ধ। পানির সংকটের এলাকাগুলোর সঙ্গে একাত্মতা জানাতে শিগগিরই অন্য অঞ্চলগুলোতেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। টাইমস অব ইন্ডিয়া |
মেসির আর্জেন্টিনার স্বপ্ন ফের ভঙ্গ হয়েছে। কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে আর্জেন্টিনা। এই জয়ের মধ্য দিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠে গেছে ব্রাজিল।বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার ভোরে বেলো হরিজন্তের এস্তাদিও মিনেইরাওতে কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা।খেলার প্রথমার্ধে জেসুসের গোলে ১-০-তে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে ফিরমিনোর গোলে ২-০-তে জয় পায় স্বাগতিকেরা।ম্যাচটি নিয়ে দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। শেষমেশ ব্রাজিল সমর্থকদের মুখে হাসি। আর আরেকবার হতাশায় ডুবল আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা।এবারের কোপায় সবচেয়ে ফেবারিট ব্রাজিল। তারা দুর্দান্ত গতিতে ছুটেই ফাইনালে উঠল।অন্যদিকে, মেসি ও তাঁর দল আর্জেন্টিনাকে কোপায় সেরা ছন্দে দেখা যায়নি।কোপা আমেরিকার নকআউট পর্বে এ নিয়ে পাঁচবারের লড়াইয়ে প্রতিবার ব্রাজিলের কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা। ১৯৯১ সালে সবশেষ কোপায় ব্রাজিলকে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। |
বিশ্বকাপে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয় পায়নি বাংলাদেশ। এ হারে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। আজ ব্যাটে-বলে একটু ঘাটতির কারণে লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। ২৮৬ রান করেও ২৮ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এ ম্যাচেও ছিল বেশ কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক। এ ম্যাচে দলের ১১ জনের পারফরম্যান্স সমর্থকদের কার কেমন লেগেছে? কে কে পাস নম্বর পেলেন, কারও পারফরম্যান্সে আরও উন্নতি দেখতে চান কি না—সেসব মতামত এখানেই জানিয়ে দিন। |
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের চেহারা একেবারেই আলাদা। ব্যাটিংয়ে যতটা উজ্জ্বল সাকিব-মুশফিকেরা, বোলিংয়ে যেন ততটাই বিবর্ণ মাশরাফি বাহিনী। পরিসংখ্যানও সেই বিষয়টির দিকেই ইঙ্গিত করছে, বিশ্বকাপের অন্যতম বাজে বোলিং আক্রমণ বাংলাদেশের।‘নখদন্তহীন’, এই একটি শব্দ দিয়েই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণকে বিশ্লেষণ করা যায়। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিং দেখে প্রতিপক্ষদের মনে যেমন এক চিলতে ভয়ের উপস্থিতি ঘটেনি, তেমনি সমর্থকেরাও এই বোলিং নিয়ে বিশ্বকাপজুড়েই ভালো কিছুর আশায় বাঁধ দিয়ে রেখেছেন।গতি নেই, বাঁক নেই, ফিটনেস নেই; বাংলাদেশের বোলিংয়ে শুধু ‘নেই, নেই’য়ের গুঞ্জন। সাকিব-মুশফিকদের ব্যাট বিশ্বকাপে চওড়া হয়েছে নিয়মিত, কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হয়নি না। বোলারদের বদান্যতায় রানের পাহাড় নিয়মিত গড়ে তুলেছে প্রতিপক্ষ। পেস বান্ধব ইংলিশ কন্ডিশনে যেখানে গতি আর স্লোয়ারে আতঙ্ক জাগিয়েছেন অন্যান্য দলের বোলাররা, সেখানে সাইফউদ্দিনরা রান দিতেই ব্যস্ত। অবশ্য সঙ্গে মাখন হাতের ফিল্ডিংয়ের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য।গতিময় পেসার তৈরিতে বাংলাদেশ বিখ্যাত নয়, পুরো ক্রিকেট ইতিহাসে হাতে-গোনা কয়েকজন বোলার পেয়েছে বাংলাদেশ যারা ১৪০ কিলোমিটার বা তার বেশি গতিতে বোলিং করতে পারে। বিশ্বকাপে যারা খেলেছেন তাদের মাঝে একমাত্র রুবেল হোসেনেরই ১৪০ এর ওপর বোলিং করতে পারার ক্ষমতা ছিল, সেটাও করে দেখাতে পারেননি এই পেসার। মাশরাফি-সাইফউদ্দিনদের গতি ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে নিখাদ উপহার। ইংল্যান্ডের উইকেটে মিচেল স্টার্ক, জফরা আর্চার, লকি ফার্গুসনরা গতি ও সুইং দিয়ে ব্যাটসম্যানদের ঘাম ছোটাচ্ছেন। মোহাম্মদ আমির বাড়তি বাউন্স ও বৈচিত্র্যে বিভ্রান্ত করছেন। সে তুলনায় বৈচিত্র্যহীন বোলিং নিয়ে বাংলাদেশকে বড্ড অসহায় দেখাচ্ছে।পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বাংলাদেশের বোলিংয়ের কঙ্কালসার চেহারাটা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভারত ম্যাচের আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলাররা ৪২টি উইকেট তুলে নিতে পেরেছে। গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পেছনে শুধু শ্রীলঙ্কাই ছিল। গতকাল মোস্তাফিজ ও সাকিবের সুবাদে আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এ তিনটি দলের ব্যাটসম্যানরা বেশ কিছু ম্যাচেই বোলারদের লড়াই করার পুঁজি দিতে পারেননি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের প্রতি সে অভিযোগের আঙুল তোলার উপায় নেই।বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে দুহাত ভরে রান দেওয়ার দৌড়েও বাংলাদেশ বিশ্বকাপে সবার চেয়ে এগিয়ে। এবারের বিশ্বকাপে ওভার প্রতি গড়ে ৬ এর ওপরে রান দিয়েছে দুটি দল। তাঁর একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর অপরটি বাংলাদেশ। তবে প্রতি ওভারে প্রতিপক্ষের ঝুলিতে ৬.১৮ রান যুক্ত করে বাংলাদেশ ওভার প্রতি সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার দৌড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও (৬.০৫) পেছনে ফেলেছে। বোলিং গড় তথা প্রত্যেকটি উইকেট পেতে কত রান খরচ করতে হয়েছে, সেই পরিসংখ্যানেও বাংলাদেশ সবার তলানিতে ছিল। উইকেট তুলে নিতে কমপক্ষে ৪৩.৩০ রান খরচ করছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। গতকাল ভারতের বিপক্ষে পাওয়া ৮ উইকেটে (বোলারদের পাওয়া) সেটা ৪২.৫৪তে নেমে এসেছে। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে কারা? আফগানিস্তান (৪২.৯৭) ও শ্রীলঙ্কা (৪৩.২৫)।পেস বান্ধব কন্ডিশনে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের পেসাররা বল হাতে বিশ্বকাপ শাসন করবে সেটা জানাই ছিল। কিন্তু উপমহাদেশের ভারত এবং পাকিস্তানের পেসাররাও জ্বলে উঠছেন নিয়মিত। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়া শ্রীলঙ্কার হয়ে ‘বুড়ো’ মালিঙ্গাও কিন্তু ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছেন বিশ্বকাপ ২০১৯ জুড়ে। ভারতের মোহাম্মাদ শামি, যশপ্রীত বুমরাদের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে খাবি খাচ্ছে প্রতিপক্ষরা, তেমনি আমির-ওয়াহাব-শাহিনদের দিয়ে গড়া পেস ত্রয়ীতে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান।বাংলাদেশের পেস আক্রমণ দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গেই পেরে উঠছে না। প্রিয় প্রতিপক্ষ ভারতকে পেয়ে উইকেটে সাকিবকে(১১) টপকে গেছেন মোস্তাফিজ (১৫)। কিন্তু ইকোনমি রেট (৬.৫৭) বলে দিচ্ছে বিশ্বকাপে আগের ম্যাচগুলোয় মোস্তাফিজের পারফরম্যান্স কেমন ছিল। ১০ উইকেট পাওয়া সাইফউদ্দিনের ইকোনমি তো আরও হতাশাজনক, ৬.৯৩। দলের মতো পেস আক্রমণের নেতৃত্বও দেওয়ার কথা ছিল মাশরাফির। কিন্তু ৭ ম্যাচে মাত্র ৪৯ ওভার বল করা কিংবা ৩১৫ গড়ে ১ উইকেট পাওয়া অথবা ৬.৪২ ইকোনমিতে রান দেওয়া বলছে, মাশরাফি তাঁর কাজে ব্যর্থ হয়েছেন।স্পিনারদের মাঝেও এক সাকিব ছাড়া বাকিরা মোটামুটি মানের বোলিং করেছেন। ৫.৩৪ ইকোনমিতে ১১ উইকেট তুলে নিয়ে সাকিবই সবচেয়ে উজ্জ্বল। ৬ ম্যাচে ৫ উইকেট পাওয়া মিরাজের ইকোনমিও ছয়ের নিচে (৫.৪৫)। ৩ উইকেট পাওয়া মোসাদ্দেকেরও তাই (৫.৮৭)। রান আটকে রাখার দিক দিয়ে স্পিনাররা কিছুটা অবদান রাখতে পারলেও মিডল ওভারে উইকেট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলতে পারেননি সাকিব ছাড়া অন্য কেউ।এমন বোলিং নিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার আশা করাটা হয়তো বাড়াবাড়িই! |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন বরেণ্য অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানকে দেখতে গিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার সকালে তিনি সেখানে যান।গত ২৬ এপ্রিল নিজ বাসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এ টি এম শামসুজ্জামান। এরপর তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। বর্তমানে তিনি বিএসএমএমইউর একটি কেবিনে চিকিৎসা–পরবর্তী সেবা নিচ্ছেন।এ টি এম শামসুজ্জামানের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি একজন দেশবরেণ্য অভিনেতা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর চিকিৎসার সব দায়দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর খোঁজখবর নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। হাসপাতালের চিকিৎসক বলেছেন, আগের চেয়ে এ টি এম শামসুজ্জামান সাহেবের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তাঁর অবস্থা এখন উন্নতির দিকে।এ টি এম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনী জামান বলেন, ‘এখন তিনি (এ টি এম শামসুজ্জামান) যথেষ্ট ভালো আছেন। কথা বলছেন, স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছেন। কেবল নার্সিং সেবার জন্য তাঁকে আমরা এখানে এনেছি।’ তিনি জানান, এই অবস্থা থাকলে আর কিছুদিন পর তাঁকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। এর আগে বাসার কিছু অবকাঠামোগত পরিবর্তন করতে হবে। বাসার পরিবেশ ঠিক করতে হবে।এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া, সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ রফিকুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহাবুবুল হক, পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক আবু নাসার রিজভী, কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। |
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই বিশ্ব গড়ে তুলতে এবং ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী অথবা অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতির মূল উদ্বেগ নিরসনের লক্ষ্যে মঙ্গলবার পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মাঝেমধ্যে শুধু কয়েকটি বৃহৎ অর্থনীতির সক্ষমতা অথবা তাদের প্রয়োজনের আঙ্গিকেই সবকিছু দেখি। কিন্তু টেকসই বিশ্বের জন্য আমাদের অবশ্যই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীসমূহের অথবা অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতিগুলোর মূল উদ্বেগ নিরসনের উপায়ও বের করতে হবে।’প্রধানমন্ত্রী ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সভায় অংশ নিতে এখন চীনের দালিয়ান শহরে অবস্থান করছেন। তিনি মঙ্গলবার বিকেলে দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে ডব্লিউইএফের সভায় ‘কো-অপারেশন ইন দ্য প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণকালে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার পাঁচ দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আমাকে বলছে যে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী ও দুর্বল অর্থনীতিকে মাথায় রেখেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে হবে।’ এগুলো হচ্ছে প্রথমত, দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শান্তি-সম্প্রীতি, স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি। দ্বিতীয়ত, টেকসই উন্নয়নের সব দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তৃতীয়ত, দেশগুলোর পারস্পরিক স্বার্থে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থত, সবার জন্য সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে সার্বিক উন্নয়ন করতে হবে। পঞ্চমত, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন করা ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ইস্যু। তিনি বলেন, ‘আমরা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করেছি এবং এখন বাংলাদেশ ও ভারত আন্তসীমান্ত নৌপথ উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করছে।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি নীতিভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। হ্যাঁ, ভূরাজনীতি সব সময়ই জীবনের একটি অংশ। তবে আমাদের সতর্কতার সঙ্গে ইস্যুগুলোকে মূল্যায়ন করে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। আমরা স্বল্পসময়ের অর্জনের জন্য দীর্ঘদিনের স্বার্থকে বিসর্জন দিতে পারি না।’ শেখ হাসিনা বলেন, সব দেশের মধ্যে অভিন্ন সমৃদ্ধি নিশ্চিতে এখনো প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গোপসাগরের আশপাশে বসবাসকারী মানুষের উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটিকে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে দেখার প্রবণতা রয়েছে।এরপর প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন।বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পৃক্ততা এবং বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে চীনের ঋণ প্রদান বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বৈদেশিক ঋণ মোট জিডিপির ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এটা শক্তিশালী অর্থনীতির একটি লক্ষণ। চীন আমাদের অবকাঠামোগত কিছু প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।’শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ নদীর ওপর ৬ দশমিক ৯ কিলোমিটার সেতু নির্মাণে চীনা কোম্পানি নিয়োগ করা হয়েছে। এর সম্পূর্ণ তহবিল জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। অনেক মানুষ “ঋণের ফাঁদ” নিয়ে কথা বলেন। আমার সোজা কথা, যতক্ষণ পর্যন্ত এই মেগা প্রকল্পগুলোয় জনগণের স্বার্থ রয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ এবং সঠিকভাবে এতদসংক্রান্ত আলোচনার অধিকার রয়েছে এবং এ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।’অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের গত ১০ বছরে আমি চেষ্টা করেছি, আমাদের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষাকে বিশ্বময় আমাদের বন্ধুদের কাছে এক ভারসাম্যময় ও লক্ষ্যভিত্তিক উপায়ে বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য। আমি সব সময় এটা পরিষ্কার করে রেখেছি যে বাংলাদেশ সামরিক কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রশ্রয় দেয় না। এটি আমাদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতাবিরোধী।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি দ্রুত বিকাশমান অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিটি বন্ধুরাষ্ট্রকেই প্রয়োজন এবং অবশ্যই কাউকে বাদ দিয়ে নয়। আমাদের প্রতিটি বন্ধুর মধ্যেই দক্ষতা ও আগ্রহ রয়েছে। আমাদের সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে হওয়ায় আমরা যা কিছু অর্জন করব, সবটুকুই জনগণের কল্যাণে আসবে।যেমন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক শুধু কয়েক বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আমাদের প্রাণের সম্পর্ক।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার জন্য আমরা একসঙ্গে রক্ত দিয়েছি।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও ভালো। আমাদের বিভিন্ন মেগা প্রকল্প ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে চীন আমাদের সঙ্গী। শুধু ওডিএ অংশীদার ছাড়াও জাপানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক।রাশিয়াও আমাদের সঙ্গী, যারা আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাশে দাঁড়িয়েছিল, এখন তারা আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা খাতে সহায়তা করছে।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তখন এলডিসি এবং ছোট অর্থনীতির রাষ্ট্র ছিলাম। ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও আমরা উন্মুক্ত করতে সম্মত হয়েছি। আমরা উপলব্ধি করেছি, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বিশ্বের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ রক্ষাটা জরুরি। এখন থেকে ১০ বছর পর বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হবে। এর জন্য আমাদের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা আমরা সংশোধন করতে প্রস্তুত। সুতরাং উন্মুক্ত আঞ্চলিকতার পক্ষে আমরা।’শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে ভারত, জাপান, চীন এবং আরও অনেকের সঙ্গে কাজ করছে। |
দিনেশ কার্তিক ক্যাচটা ধরা পর সাকিব অনেক ক্ষণ অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকলেন। বিশ্বকাপে ৭ ইনিংসে ষষ্ঠবারের মতো ৫০ পেরিয়েছেন। দলের ভীষণ প্রয়োজন ছিল তাঁকে। কিন্তু তৃতীয় সেঞ্চুরির দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারলেন না ইনিংসটা। সাকিবের সামনে সুযোগ ছিল আবারও রানের তালিকায় সবার ওপরে বসার। সেদিকে ভালোমতোই ছুটছিলেন। কিন্তু মাত্র ২ রানের জন্য রোহিত শর্মার পেছনে থাকতে হলো। রোহিত আজ ৯ রানে জীবন পেয়ে সেটিকে সেঞ্চুরিতে নিয়ে গেছেন। সাকিবের সেই সৌভাগ্য হয়নি। এই ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আরও একটা ম্যাচ পাচ্ছে। সাকিব আরও এক ইনিংস পাবেন রানটা বাড়িয়ে নিতে। কিন্তু যাঁদের সঙ্গে সর্বোচ্চ রান নিয়ে সাকিবের মূল লড়াই, তারা সবাই ম্যাচ পাচ্ছেন সাকিবের চেয়ে বেশি। সাকিব বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেও তবু একটা সান্ত্বনা খুঁজে পাবে বাংলাদেশ।ব্যাটসম্যানম্যাচরানসর্বোচ্চগড়১০০/৫০রোহিত শর্মা৭৫৪৪১৪০৯০.৬৬৪/১সাকিব আল হাসান৭৫৪২১২৪*৯০.৩৩২/৪ডেভিড ওয়ার্নার৮৫১৬১৬৬৭৩.৭১২/৩অ্যারন ফিঞ্চ৮৫০৪১৫৩৬৩.০০২/৩জো রুট৮৪৭৬১০৭৬৮.০০২/৩কেন উইলিয়ামসন৭৪৫৪১৪৮১১৩.৫০২/১বিরাট কোহলি৭৪০৮৮২৫৮.২৮০/৫বাবর আজম৭৩৭৮১০১*৬৩.০০১/২বেন স্টোকস৮৩৭০৮৯৬১.৬৬০/৪জনি বেয়ারস্টো৮৩৫৬১১১৪৪.৫০১/২মুশফিকুর রহিম৭৩৫১১০২*৫৮.৫০১/২ |
বিশ্বকাপের বেশ কয়েকটি ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ছেড়েছে বাংলাদেশ। দিন শেষে হাতছাড়া করা সুযোগগুলোই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে।১৬৬ ও ১০ এর ব্যবধান কত? ১০৪ ও ৯ এর মধ্যে তফাৎ-বা কত? পাটিগণিতের ভাষায় হিসাবটা সহজ। কিন্তু ক্রিকেটীয় পরিভাষায়? একটি ম্যাচের কিংবা একটি বিশ্বকাপেরও ভাগ্য বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই তফাতগুলো।‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’, অতি ব্যবহারে কিছুটা ক্লিশেই হয়ে গেছে কথাটা। কিন্তু এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের দিকে তাকালে ব্যবহার না করেও উপায় নেই। বাংলাদেশের সেমিফাইনাল স্বপ্ন যে সুতোর ওপর ঝুলেছে ভারত ম্যাচের আগে। এবং সেটা আজকের হারে শেষ হয়ে গেছে, তার পেছনে অন্যতম বড় কারণ ফিল্ডারদের ‘মাখন লাগানো’ হাতের। সহজ সব ক্যাচ ছেড়ে প্রতিপক্ষ দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানদের জীবন দিয়েছেন, সেটিরই ফায়দা তুলে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন তারা।সবচেয়ে টাটকা উদাহরণটি তো আজকের ম্যাচেই উপস্থিত। ২০১৯ বিশ্বকাপে বিরাট কোহলির চেয়েও ভয়ংকর হয়ে দেখা দিয়েছেন রোহিত শর্মা। ওয়ানডেতে তিনটি দ্বিশতকের মালিক রোহিত আজকের আগেই এ বিশ্বকাপে করে ফেলেছিলেন তিনটি সেঞ্চুরি। রোহিতের উইকেটের মূল্য তাই অজানা থাকার কথা নয় বাংলাদেশি বোলার-ফিল্ডারদের।উইকেটে ভালোভাবে জেঁকে বসার আগেই সুযোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় ওপেনার। কিন্তু বাংলাদেশ সুযোগ নিতে পারলে তো! পঞ্চম ওভারেই মোস্তাফিজুর রহমানের শর্ট বলে পুল করেছিলেন, টাইমিংটা ঠিকমতো হয়নি। ডিপ মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন তামিমকে। অথচ বুকের ওপর থাকা বলটা মিস করলেন বাউন্ডারিতে বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফিল্ডার তামিম। মাত্র ৯ রানে থাকা রোহিত এরপর ইচ্ছেমতো ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। তুলে নিয়েছেন এ বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পর বেশি দূর এগোতে না পারলেও সর্বনাশ যা করার ততক্ষণে করে দিয়ে গেছেন। জীবন পাওয়ার পর যোগ করেছেন আরও ৯৫ রান।রোহিতের চেয়েও বড় ক্ষতিটা করেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। আজকের মতো নটিংহ্যামের সে ম্যাচেও ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ওপেনিং জুটি ভাঙার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন ওয়ার্নার। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সহজ ক্যাচটা হাতে রাখতে পারেননি সাব্বির রহমান। ক্যাচ ছাড়ার সময় মাত্র ১০ রানে থাকা ওয়ার্নার এরপর তাণ্ডব চালিয়েছেন বাংলাদেশি বোলারদের ওপর। প্রথম অস্ট্রেলীয় হিসেবে ওয়ানডেতে দ্বিশতকের দিকে এগোতে থাকা ওয়ার্নার শেষ পর্যন্ত করেছিলেন ১৬৬ রান। এক ক্যাচ ছাড়ার মূল্য হিসেবে অতিরিক্ত ১৫৬ রান গুনতে হয়েছিল বাংলাদেশকে! ম্যাচটাও বাংলাদেশ হেরেছিল ৪৮ রানে।এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হয়ে আছে নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি। বাগে পেয়েও সেদিন হারানো যায়নি কিউইদের। অথচ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচের ফলটা অন্যরকমও হতে পারত সেদিন। কেন উইলিয়ামসন যখন মাত্র ৮ রানে, মুশফিকুর রহিম মিস করলেন সহজতম রান আউটের সুযোগটা। সেই উইলিয়ামসন পরে যোগ করেছেন আরও ৩২ রান। ওই একই ওভারে রস টেলকেও স্ট্যাম্পিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন মুশফিক। একটু কঠিন হলেও বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ বের করে আনতে হলে এসব সুযোগ কাজে লাগাতেই হয়। ৯ রানে থাকা টেলর শেষ পর্যন্ত থেমেছেন ৮২ রানে। সে ম্যাচে একটুর জন্য ২ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। স্লো স্কোরিং ম্যাচে উইলিয়ামসন-টেলরের ব্যাট থেকে আসা অতিরিক্ত ১০৫ রানই গড়ে দিয়েছিল ম্যাচের ভাগ্য।এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জেতা ম্যাচেও দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশি ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাত। ডেভিড মিলার যখন ১৬ রানে, ক্যাচ ছেড়েছিলেন সৌম্য সরকার। মিলার পরে যোগ করেছিলেন আরও ২২ রান। এর আগে কুইন্টন ডি ককের ক্যাচও ছেড়েছিলেন মুশফিক, তবে ওই একই বলে ডি কক রান আউট হয়ে যাওয়ার সেটি নিয়ে অত আলোচনা হয়নি।শুধু ক্যাচিং নয়, বিশ্বকাপে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংটাও একদমই মনমতো হয়নি বাংলাদেশের। ভারত ম্যাচের আগে পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বিশ্বকাপে মিস ফিল্ডিং থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান হজম করেছে বাংলাদেশ। বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে ৬০ রান অতিরিক্ত গুনতে হয়েছে। মিস ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি রান দিয়েছে কেবল আফগানিস্তান। টুর্নামেন্ট শেষে এ পরিসংখ্যানগুলো নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ক্ষতস্থানে আরেকটু জ্বালা ধরাবে।আরও পড়ুনহাত ফসকানোর পরিসংখ্যানটা দেখেছে বাংলাদেশ? |
নরসিংদীতে তিন শ ইয়াবা বড়িসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে নরসিংদী শহরের বানিয়াছল এলাকার বটতলা বাজার থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বানিয়াছল মহল্লার মো. আল আমিন (৩০), কার্তিক পাল (২০) ও শহরের উত্তরকান্দা পাড়ার বাপ্পি সাহা (৩৫)।পুলিশ বলছে, বটতলা বাজারের একটি স্টুডিওর পাশে কয়েক ব্যক্তি মাদক বিক্রি করছেন, এমন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টার সময় তিনজনকে আটক করা হয়। উপস্থিত লোকজনের সামনে তল্লাশি করে তাঁদের পকেট থেকে তিন শ ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে মাদকদ্রব্য বিক্রির সঙ্গে জড়িত। মাদক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। |