content
stringlengths
1
63.8k
ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ায় গর্ত–আতঙ্কে শিক্ষার্থীশূন্য মধ্য ঘনিমহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।২০০২ সালে স্থাপিত হয় মধ্য ঘনিমহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। এরপর সরকারের সিদ্ধান্তে জাতীয়করণ হয়। শুরু থেকে একটি জরাজীর্ণ বাঁশের বেড়ার টিন শেড ঘরে নিয়মিত ক্লাস ও অফিসে যাবতীয় কার্যাদি পরিচালিত হয়ে এলেও চলতি অর্থবছরের মার্চে একটি ভবন নির্মাণ বাবদ ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ৭৭৮ টাকা সরকারি বরাদ্দ পায় স্কুলটি। ভবন নির্মাণের কাজটি পান ঠাকুরগাঁওয়ের ঠিকাদার আবদুল্লাহ। ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন ঠিকাদারের লোকজন। নির্মাণাধীন ভবনের ভিটে ভরাটের উদ্দেশ্যে স্কুলের অবশিষ্ট জমিতে একটি বড় গর্ত তৈরি করে মাটি উত্তোলন করা হয়। গর্তটি বর্তমানে স্কুলের কোমলমতি শিশুদের মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে বলে অভিভাবকসহ স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করছেনন।গত ২২ জুন স্কুলে এক অভিভাবক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অভিভাবকেরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে সাফ জানিয়ে দেন গর্তটি ভরাট না করা পর্যন্ত তাঁদের শিশুদের আর স্কুলে পাঠাবেন না। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিশু শিক্ষার্থীরা সেদিন থেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়। ফলে স্কুলটি শিক্ষার্থী শূন্যতায় পরিণত হয়।কথা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাবেকুন নাহারের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘আমাকে না জানিয়ে ঠিকাদারের লোকজন গত রমজান মাসের ছুটিতে স্কুলের জমিতে একটি গর্ত করে ভবনের ভিটে ভরাট করেন। আমি বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ এ ব্যাপারে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রকৌশলী নুরুজ্জামান সরদার মোবাইলে বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দিলে ঠিকাদার ওই কাজটি করার সুযোগ পেতেন না। স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের জমিতে গর্ত করার অনুমতি কেন দিলেন—এ প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি।ঠিকাদার আবদুল্লাহ মোবাইলে বলেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই আমরা কাজটি করেছি।’স্কুল কমিটির সভাপতি হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি স্কুলের জমিতে অল্প মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু এত বড় গর্ত হবে এটা ভাবিনি। বর্তমানে আমি কমিটিসহ স্থানীয় অভিভাবকদের চাপে রয়েছি।’এ ব্যাপারে মোবাইলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, ‘স্কুলের বিষয়টি আমি এখনই দেখছি। সমাধান হয়ে যাবে।’*মো. জাহাঙ্গীর আলম, রুহিয়া, ঠাকুরগাঁও
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।আজ সোমবার ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার মেহড়াবাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।নিহত তিন ব্যক্তির মধ্যে একজনের নাম জানা গেছে। তাঁর নাম তাহের (৪৫)। বাবার নাম কাদের ভূঁইয়া। বাড়ি মোহনগঞ্জ থানার প্রসন্নপুর গ্রামে।ভালুকা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে মেহড়াবাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঢাকাগামী একটি ট্রাকের পেছনে মাছবোঝাই একটি মিনিট্রাক ধাক্কা খায়। এতে মিনিট্রাকের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়।রাকিবুল হাসান জানান, মিনিট্রাকের সামনের আসনে চালক ও অপর দুই ব্যক্তি ছিলেন। দুর্ঘটনার পর মিনিট্রাকের সামনের দুমড়েমুচড়ে যাওয়া অংশে তাঁরা নিথর হয়ে পড়ে ছিলেন। পরে রেকার দিয়ে বড় ট্রাকটি সরিয়ে নেওয়া হয়। আর মিনিট্রাক থেকে মৃত অবস্থায় তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
একেবারেই মুখোমুখি অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার অনুমোদন দেওয়ার পরও হামলা চালানোর মাত্র ১০ মিনিট আগে তা স্থগিত করেন। এর আগে আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করে ইরান। যদিও ওয়াশিংটন বলছে, তার ড্রোন আন্তর্জাতিক আকাশসীমার মধ্যেই ছিল।এরপর থেকেই চলছে দুই পক্ষের বাগ্‌যুদ্ধ। ট্রাম্প বলছেন, ‘ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান বড় ভুল করেছে।’ পাল্টা ইরানের জেনারেল বলছেন, ‘ইরানে গোলা পড়লে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্থাপনায় আগুন জ্বলবে।’ এই বাদানুবাদের মধ্যে ইরানের সমরাস্ত্র-ব্যবস্থায় সাইবার হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর কী হবে—সময় হলেই তা জানা যাবে। তবে এই দুই দেশের সম্পর্কের অতীতটা কেমন? চলুন দেখে নেওয়া যাক—দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইরানের বিশাল তেলসম্পদের ওপর নজর পরে তৎকালীন পরাশক্তিগুলোর। সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন ব্লক ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ব্লক মরিয়া হয়ে ওঠে সেই তেলের জন্য। দুই ব্লকের গোয়েন্দারা তৎপর হয়। এরই মধ্যে ক্ষমতায় আসেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ইরানের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক। ধর্মনিরপেক্ষ বলে পরিচিত মোসাদ্দেক দেশটির তেলশিল্প জাতীয়করণ করার পক্ষে ছিলেন। এটা পছন্দ হয়নি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের। পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে ১৯৫৩ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সফল হয় সিআইএ-এমআই৬। এর মাধ্যমে ইরানে ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয় মার্কিনপন্থী বলে পরিচিত মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভীর। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো ইরানের তেলশিল্পে ঢোকার অবাধ সুযোগ পায়। প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করার অভ্যুত্থানে কলকাঠি নাড়ার কথা ২০০০ সালে স্বীকার করেন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডেলিন অলব্রাইট।ইঙ্গ-মার্কিন বন্ধু পাহলভিপাহলভির সঙ্গে সম্পর্কটা ভালোই যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এর ধারাবাহিকতায় ১৯৫৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি সই করে। ১৯৬৮ সালে ইরান পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতেও (এনপিটি) স্বাক্ষর করে। এর দুই বছর পর থেকে দেশটি বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি চালানোর অনুমতি পায়। পাহলভি ইরানে ‘সাদা বিপ্লবের’ সূচনা করেছিলেন। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কার এবং দেশকে পাশ্চাত্য ধারার আধুনিকায়নের পথে এগিয়ে নিতে থাকেন। এ কারণে দেশটির প্রভাবশালী শিয়া নেতাদের সমর্থন হারান তিনি। দেশটির কর্মজীবীশ্রেণিও তাঁর প্রতি নাখোশ হয়। এ সময়টায় রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের কঠোর হাতে দমন করেন পাহলভি। ইরানের সরকারি হিসাবে দেখা যায়, ১৯৭৮ সালে দেশটির কারাগারগুলোয় ২২০০ রাজনৈতিক বন্দী ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মদদে ইসলামপন্থী ও সেক্যুলার—দুই পক্ষের ওর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছিলেন পাহলভি। একপর্যায়ে পাহলভির বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। ইসলামপন্থী ও সেক্যুলার পক্ষের কয়েক মাসের টানা আন্দোলনে ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে পতন ঘটে পাহলভির। শুধু পতনই নয়, ১৬ জানুয়ারি ইরান ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন তিনি।পাহলভির ইরান ছেড়ে পালানোর দুই সপ্তাহ পর নির্বাসন থেকে দেশে ইরানে ফেরেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি। এরপর এক গণভোটে ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতার পদে আসীন হন আয়াতুল্লাহ খোমেনি। ওই বছরের ৪ নভেম্বর তেহরানে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে ঢুকে কর্মীদের জিম্মি করা হয়। জিম্মিকারীরা পাহলভিকে ইরানের হাতে তুলে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দাবি জানাতে থাকে।তিক্ততার ইতিহাসএরপর ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মূলত তিক্ততার ইতিহাস। মার্কিন দূতাবাসে এই জিম্মিদশা চলে ৪৪৪ দিন। এই পরিস্থিতিতে ১৯৮০ সালে ইরানের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে থাকা ইরানের সব সম্পদ জব্দ করে ও সব ধরনের বাণিজ্য নিষিদ্ধ করে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের নির্দেশেও জিম্মি উদ্ধার অভিযান ব্যর্থ হয়। মার্কিন হেলিকপ্টার ধূলিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে আটজন মার্কিন নিহত হন। ১৯৮১ সালের ২০ জানুয়ারি জিমি কার্টার পদত্যাগ করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দূতাবাস থেকে ৫২ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয় ইরান।১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রের তালিকায় যুক্ত করে। এর মধ্যেই ইরানের সঙ্গে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের গোপন যোগসাজশের খবর প্রকাশ হয়। ইরানের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে কংগ্রেসের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে রিগ্যান প্রশাসন গোপনে অস্ত্র বিক্রি করে। সেই অস্ত্র বিক্রির অর্থ নিকারাগুয়ায় কমিউনিস্টবিরোধী কন্ট্রাবিদ্রোহীদের কাছে পাঠানো হয়। রিগ্যান প্রশাসন বলে, লেবাননে কট্টরপন্থী সংগঠন হিজবুল্লাহর হাতে জিম্মি সাত আমেরিকানকে মুক্ত করতে তেহরানের সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা হয়। এই খবর প্রকাশে ওই সময় বিপাকে পড়েন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান।যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৮ সালে ভয়ংকর ঘটনা ঘটায়। ইরানের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তারা। এতে উড়োজাহাজের ২৯০ আরোহীর সবাই নিহত হন। পরে ওয়াশিংটন দাবি করে, ভুল করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এয়ারবাস এ-৩০০ মডেলের উড়োজাহাজটিকে যুদ্ধবিমান ভেবে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে মার্কিনবাহিনী। ওই উড়োজাহাজটি ইরান থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাচ্ছিল।আমেরিকা ২০০০ সালের দিকে অভিযোগ তোলে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ২০০২ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জজ ডাব্লিউ বুশ ইরান, ইরাক ও উত্তর কোরিয়াকে ‘শয়তানের অক্ষ’ বলে আখ্যা দেন। ওই বছরই বুশ প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ তোলে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ইরানের সরকারবিরোধী নির্বাসিত একটি পক্ষ দাবি করে, ইরান দুটি পারমাণবিক স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এর একটি নাতাৎজ এলাকায়—যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্ল্যান্ট রয়েছে। অন্য স্থাপনাটি আর্ক এলাকায়; এখানে ভারী পানি উৎপাদনে পারমাণবিক চুল্লি বসানো হয়েছে।বরফ গলার শুরুযুক্তরাষ্ট্র-ইরানের সাপে-নেউলে সম্পর্কে নতুন দিগন্ত দেখা দেয় ২০০৬ সালে। যাকে বলা যায় কাছে আসার গল্প! ওই বছর ওয়াশিংটন ঘোষণা দেয়, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থেকে সরে এলে তেহরানের সঙ্গে বহুজাতিক আলোচনায় অংশ নিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ২০০৭ সালে মে মাসে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইস ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানুচের মোত্তাকি মিসরে এক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি পরস্পরের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। ওই বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়, ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কার্যক্রম এগিয়ে নিয়েছে। পরে তা স্থগিত করেছে। ২০০৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ প্রথমবারের মতো সরাসরি আলোচনায় বসতে ইরানের প্রতি আনুষ্ঠানিক বার্তা পাঠান।সেই ধারাবাহিকতায় পরের বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনার হাত বাড়ানো থাকবে, যদি তেহরান পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করে। ওবামা প্রশাসন তেহরানকে এই কর্মসূচি থেকে সরে আসতে প্রভাবিত করতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান। ২০১২ সালে ইরানের সঙ্গে গোপনে আলোচনা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৩ সালে সেই আলোচনা আরও জোরালো হয়। দুই পক্ষের আলোচনার কেন্দ্রে থাকে ইরানের পারমাণবিক ইস্যু। ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন বারাক ওবামা। বিগত তিন দশকের মধ্যে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এটা সরাসরি কথা বলার ঘটনা এটাই প্রথম। ২৩ নভেম্বর ইরানের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তিতে পৌঁছায় ছয় বিশ্বশক্তি (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও জাতিসংঘ)। চুক্তি অনুযায়ী ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসবে। বিনিময়ে ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালে ইরান ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে পৌঁছায়। ২০১৬ সালে তেহরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে ওয়াশিংটন।সব ভেস্তে দিলেন ট্রাম্পমার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় এসে সব ওলট-পালট করে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি নির্বাচনী প্রচারণাতে বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে ইরানের সঙ্গে করা চুক্তি থেকে সরে আসবেন। তাই করলেন। গত বছরের মে মাসে ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন। ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন—৪ নভেম্বর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইরানের কাছ থেকে তেল আমদানি করা দেশগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। এদিকে এর প্রতিক্রিয়া ইরানও নতুন করে নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করার ঘোষণা দেয়। তবে সঙ্গে এ ঘোষণাও দেয়, পশ্চিমা দেশগুলো ওয়াশিংটনকে তেহরানের ওপর অবরোধ আরোপ থেকে বিরত রাখলে, তেহরান বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে।ফের মুখোমুখিট্রাম্প ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর উপসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। রণতরি পাঠানোর পাশাপাশি যুদ্ধবিমানও মোতায়েন করে ওয়াশিংটন। এর মধ্যে গত মে ও জুন মাসে উপসাগরীয় অঞ্চলে ছয়টি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তেহরান সব সময় এই অভিযোগ নাকচ করে আসছে। এ বিষয় নিয়ে কথার লড়াই চলতে থাকে দুই পক্ষের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে ২০ জুন ইরান জানায়, আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় তারা গুলি করে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছে। পরে বিষয়টি স্বীকারও করে যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গে অভিযোগ করে, এর আগের সপ্তাহেও ইরান মার্কিন একটি ড্রোনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল।মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার পর ক্ষুব্ধ ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা সামরিক হামলার অনুমোদন দিয়েছিলেন। হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে যা ২১ জুন প্রকাশ করে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। হামলার যখন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, ১০ মিনিট পরেই হামলা চালানো হবে—এমন সময় সেই হামলা থামানোর নির্দেশ দেন ট্রাম্প। ওই খবর প্রকাশের পর ট্রাম্প নিজেই টুইট করে বলেন, ‘প্রতিশোধ নেওয়ার দিকেই আমরা ঝুঁকেছিলাম। হামলার ১০ মিনিট আগে আমি তা থামাই। ড্রোন ভূপাতিত করার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। হামলার জন্য আমার তাড়া নেই।’
মধ্যপ্রাচ্য বা আরব বিশ্বে অনেক আগেই যাত্রা শুরু করেছে অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্স। তবে এত দিন তাতে ছিল শুধুই বিদেশি ছবি ও সিরিজের জয়গান। এবার আরব বিশ্বের জনগণকে আকৃষ্ট করতে স্থানীয়ভাবে তৈরি কনটেন্টের প্রচার শুরু করেছে নেটফ্লিক্স। লক্ষ্য একটাই, আরব অঞ্চলের বাজার দখল করা।চলতি মাসের ১৩ তারিখ আরবি ভাষায় ‘জিন’ নামের একটি অতিপ্রাকৃত ঘটনাধর্মী সিরিজের প্রচার শুরু করেছে নেটফ্লিক্স। ভিডিও স্ট্রিমিং ওয়েবসাইটটি এত দিন ইংরেজি বা অন্যান্য বিদেশি ভাষার ছবি ও সিরিজ দিয়ে আরব অঞ্চলে গ্রাহক টানার চেষ্টা করেছিল। এবার স্থানীয় গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে দেশি কনটেন্ট। অর্থাৎ আরব অঞ্চলের পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে ছবি তৈরি করা হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য, স্থানীয় গ্রাহকদের আকর্ষণ করা। আরব অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান বাজার দখল করতে চাইছে নেটফ্লিক্স।আইএইচএস মারকিট নামের একটি গবেষণা সংস্থা জানাচ্ছে, আরব বিশ্বে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং ব্যবসা। বর্তমানে আরব অঞ্চলে অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং ওয়েবসাইটগুলোর গ্রাহক প্রায় ১৮ লাখ। তবে গত বছর গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রস্ট অ্যান্ড সুলিভান বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের মোট জনসংখ্যার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ টেলিভিশনেই বিনোদন খোঁজেন। আর ভিডিও স্ট্রিমিং ওয়েবসাইটের গ্রাহক ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। ২০১৬ সাল থেকে নেটফ্লিক্স চালু আছে এই অঞ্চলে। এবার প্রতিষ্ঠানটি এই বাজার দখল করতে স্থানীয় ছবি ও সিরিজ তৈরিতে বিনিয়োগ করছে। নিজেদের প্রকৃত গ্রাহকসংখ্যা না জানালেও এর মাধ্যমে নিজেদের বাজার অংশীদারত্ব উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে পারবে বলে মনে করে নেটফ্লিক্স।তবে নেটফ্লিক্সের খালি মাঠে গোল দেওয়ার উপায় নেই। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, নেটফ্লিক্সের মূল প্রতিযোগী হিসেবে আছে স্টারজ প্লে ও ওয়্যাভো নামের দুটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে স্টারজ প্লে আছে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে। এর আংশিক মালিকানা মার্কিন প্রতিষ্ঠান লায়নসগেটের। এই অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং ওয়েবসাইটের আছে প্রায় ১০ লাখ গ্রাহক। বর্তমানে হলিউডের ছবি ও সিরিজ দিয়েই দর্শক টানছে স্টারজ প্লে। তবে শিগগিরই আরবি ভাষায় তৈরি ছবি ও বলিউডের কনটেন্ট আনতে চলেছে এটি। স্টারজ প্লের মূল লক্ষ্য সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজার দখলে নেওয়া। ওদিকে সৌদি মালিকানাধীন এমবিসি গ্রুপ নিজেদের ‘শহিদ’ ও ‘শহিদ প্লাস’ নামের ভিডিও স্ট্রিমিং ওয়েবসাইটের কার্যক্রম জোরদারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে নেটফ্লিক্সকে।ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, নেটফ্লিক্স এখন নিত্যনতুন স্থানীয় কনটেন্ট তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। মিসরে মোবাইল ফোনে ব্যবহার উপযোগী সাশ্রয়ী প্যাকেজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তবে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে নেটফ্লিক্সের অবস্থা ততটা সুবিধার নয়। সেখানে স্টারজ প্লে রমরমা। এখন এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে নেটফ্লিক্স।অবশ্য এরই মধ্যে ‘জিন’ নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে নেটফ্লিক্স। জর্ডানে এই সিরিজটি নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, এটি নাকি জর্ডানের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধবিরোধী। দেশটির গ্র্যান্ড মুফতি একে ‘নৈতিক অবক্ষয়’-এর বিষয় বলে অভিহিত করেছেন। জর্ডানের বিভিন্ন মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতাও এই সিরিজের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। এমনকি নেটফ্লিক্স থেকে এই সিরিজ তুলে নেওয়ার দাবিও উঠে গেছে।সংবাদমাধ্যম ফরচুন বলছে, সিরিজটিতে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতিফলন দেখা গেছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। বিশেষ করে মদ্যপান ও কিশোর-কিশোরীদের চুমু খাওয়ার দৃশ্য নিয়েই আপত্তি উঠেছে। যদিও নেটফ্লিক্স আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে, জর্ডানের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিবিরোধী কিছু দেখানোর উদ্দেশ্য তাদের নেই এবং এই সিরিজের মধ্য দিয়ে আরব অঞ্চলের তরুণ সম্প্রদায়ের জীবনের একটি রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে এতে প্রতিবাদের আগুন নিভছে না। জর্ডানের গণমাধ্যম বিশ্লেষক সাদ হাতার বলছেন, আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আধুনিক চিন্তাভাবনায় নিজেদের কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখে জর্ডান। তবে আদতে পরিস্থিতি তেমন নয়। দেশটিতে প্রচারিত হলিউডের অনেক ছবিতেই এসব বিষয় দেখানো হয়ে থাকে। কিন্তু যখন তা স্থানীয়ভাবে তৈরি সিরিজে দেখানো হচ্ছে, তখনই প্রতিবাদের ঝড় উঠছে।অবশ্য প্রতিবাদের তোড়ে পিছু হঠতে চাইছে না নেটফ্লিক্স। খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেটফ্লিক্স এরই মধ্যে আরবি ভাষায় আরও দুটি ছবি বা সিরিজ তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে ‘আল-রাওয়াবি স্কুল ফর গার্লস’ তৈরি হচ্ছে আরব অঞ্চলের নারীদের জীবনকে উপজীব্য করে। এ ছাড়া ‘প্যারানরমাল’ নামের আরেকটি আধিভৌতিক সিরিজ তৈরিও চূড়ান্ত হয়ে গেছে।রক্ষণশীল আরব সমাজের বিক্ষোভ ঠেলে নেটফ্লিক্স কতটুকু এগোতে পারবে, তা বলা মুশকিল। এটি ঠিক যে আরব বিশ্বের বাজার পুরোপুরি দখল করতে পারলে আখেরে নেটফ্লিক্সেরই লাভ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে আপসও করতে হতে পারে। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলায় এরই মধ্যে নেটফ্লিক্সকে ‘প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট উইথ হাসান মিনহাজ’ নামের জনপ্রিয় কমেডি শোয়ের একটি পর্ব সরিয়ে ফেলতে হয়েছে। সৌদি আরব রাষ্ট্রীয়ভাবে এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। তাতেই আত্মসমর্পণ করে নেটফ্লিক্স।সামনের দিনগুলোয় এমন আপত্তি যে আরও বাড়বে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? কারণ, এসব সমস্যা এক দিনে সমাধান হওয়ার নয়।
তীব্র দাবদাহে মধ্য ইউরোপ থেকে দক্ষিণ ইউরোপের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গরমের প্রকোপে ইতিমধ্যে কয়েকজন মারা গেছেন। গত এক সপ্তাহ থেকে অব্যাহত এই গরমের প্রকোপ আগামী সপ্তাহ থেকে কিছুটা কমবে বলে আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন। আবহাওয়াবিদেরা আরও বলছেন, উত্তর আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির উত্তপ্ত বায়ুপ্রবাহের প্রভাবেই ইউরোপের তাপমাত্রা বেড়েছে।মধ্য ইউরোপের জার্মানি, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রে এবং দক্ষিণ ইউরোপের স্পেন, পর্তুগাল, ইতালিতে তাপমাত্রা সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া পঞ্জিকায় ২১ জুন ইউরোপে গ্রীষ্মকাল শুরুর পর থেকেই তাপমাত্রার পারদ ক্রমশই বাড়ছে। সাধারণত এই সময় ইউরোপে গরম পড়লেও এ বছরে তাপমাত্রা পুরোনো সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। জার্মানিতে ১৪০ বছরের পরিসংখ্যানে এবার জুন মাস ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম মাস।গতকাল শনিবার ফ্রান্সের মন্টপিলিয়ারের কাছে গ্যালার্গেস-লে-মন্ট্যুক্সে ৪৫.৯ ডিগ্রি এবং দেশটির দক্ষিণে ভিল্লিভিলেতে ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ফ্রান্সের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। জার্মানির বিভিন্ন শহরেও শনিবার তাপমাত্রার পরিমাণ ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার হল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডে তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর্তুগাল, স্পেনের কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও ফ্রান্সের কিছু শহরে শনিবার বাজার এলাকাগুলো জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে। একই ঘটনা ইউরোপের অনেক শহরে ঘটেছে। ফ্রান্সে ইতিমধ্যে প্রচণ্ড গরমের কারণে দুজন এবং জার্মানিতে তিনজন ও স্পেনে দুজনের মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য ২০০৩ সালে প্রচণ্ড গরমের কারণে ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল।প্রচণ্ড গরমে ফ্রান্সে ৪ হাজার স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এভাবে এত স্কুল বন্ধ ঘোষণার জন্য অনেকে ফ্রান্স সরকারের সমালোচনা করেছে। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড ফিলিপ বলেছেন, ‘২০০৩ সালে প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল, আমরা তাই কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাই না।’শনিবার স্পেনের কাতালানিয়া প্রদেশের টারাগোনায় শত শত অগ্নিনির্বাপক কর্মী ৬৫ হাজার হেক্টর পরিমাণ জমির একটি বনাঞ্চলে আগুন নির্বাপণের জন্য চেষ্টা করেছে। নিরাপত্তার কারণে আগুন লাগা বনাঞ্চলের কাছেই অবস্থানরত ব্রিটিশ ও জার্মান পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইতালির রোম ও ফ্লোরেন্সসহ ছয়টি শহরে প্রচণ্ড গরমের কারণে স্বেচ্ছাসেবকেরা দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটকদের পানি সরবরাহ করেছে।জার্মানির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী সোমবার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমবে।
মানিকগঞ্জে পৃথক মামলায় দুই মাদক ব্যবসায়ীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড  দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি আর্থিক জরিমানাও করেছেন আদালত। রোববার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শাহানা হক সিদ্দিকী এই রায় দেন।সাজা পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন জেলা সদরের ভাটবাউর গ্রামের মো. আরজু মিয়া (৩৮) ও পাবনার বেড়া উপজেলার বাগজান গ্রামের মো. নূরুজ্জামান (৩৫)। আরজুকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিন এবং নূরুজ্জামানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩০ দিনের সাজা হবে বলে রায় দেন আদালত।রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মথুরনাথ সরকার ও আসামিপক্ষে আইনজীবী রেজাউল করিম রেজা মামলা দুটি পরিচালনা করেন।আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশ থেকে ৪০ বোতল ফেনসিডিল, ৯০ পিচ নেশাজাতীয় ইনজেকশনসহ আরজুকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব-৪) সদস্যরা। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করে র‍্যাব। একই বছরের ২৪ জানুয়ারি পুলিশ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। করে। এ দিকে ২০১১ সালে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা এলাকা থেকে ৭৫ বোতল ফেনসিডিলসহ নূরুজ্জামানকে আটক করেন র‍্যাব-২–এর সদস্যরা। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে শিবালয় থানায় মামলা হয়।
ঠিক তিন বছর আগে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে নিরীহ লোকজনকে গুলি করে মেরে ফেলার পরও লাশগুলো কুপিয়েছিল জঙ্গিরা। চোখের সামনে জঙ্গিদের এমন নৃশংস আচরণ দেখেন ওই সময় হোলি আর্টিজানে জিম্মি হয়ে পড়া ফাইরুজ মালিহা ও তাহানা তাসমিয়া। দুজনই আদালতে দেওয়া তাঁদের জবানবন্দিতে ভয়াবহ সেই ঘটনার বর্ণনা দেন। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট আদালত তাঁদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হোলি আর্টিজানে জঙ্গিরা হামলা চালায়। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। ওই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। পরে পুলিশ ১৮ বিদেশিসহ ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একজন রেস্তোরাঁকর্মী।ফাইরুজ মালিহার জবানবন্দিদুই বন্ধু ফাইরুজ মালিহা ও তাহানা তাসমিয়া ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে যান। সেখানে ছিলেন ফাইরুজের বন্ধু তাহমিদ। ফাইরুজ মালিহা জবানবন্দিতে বলেন, ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রথমে একটা গুলির আওয়াজ পান। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন, এটা বোধ হয় পটকার শব্দ। এর কিছুক্ষণ পর তিন থেকে চারজন যুবক হোলি আর্টিজানে ঢোকার প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকছেন। সবার কাঁধে একটা করে ব্যাগ। এর মধ্যে একজন দ্রুত এগিয়ে সামনে যান। যে টেবিলে চার-পাঁচজন বিদেশি বসেছিলেন সেখানে তাঁরা গুলি করেন। তারপর তাঁদের দিকে বন্দুক তাক করে চলে আসেন। তখন তিনি ও তাহমিদ বাংলায় তাঁদের কাছে প্রাণভিক্ষা চান। ছেলেটি ইংরেজিতে তাঁদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাঁরা মুসলিম কি না।হামলা চলাকালে জঙ্গি নিবরাস এসে তাঁদের ভেতরে যেতে বলেন। তখন তাঁরা না যেতে চাইলে নিবরাস জানান, তাঁদের কোনো ভয় নেই। ভেতরে আরও একটি পরিবার আছে। তখন তাঁরা ওই ঘরে যান। তাহমিদ তাঁদের টেবিলের নিচে লুকাতে বলেন। পরে তাঁরা টেবিলের নিচে চলে যান। সেখান থেকে তাঁরা দেখেন, জঙ্গিরা একজন বিদেশি নারীকে শৌচাগার থেকে টেনে বের করে এনে গুলি করছে। তারপর ওই নারীকে কোপাতে থাকে। প্রায় ৩০ মিনিটের মতো তাঁরা সেখানে লুকিয়ে থাকেন। তারপর নিবরাস এসে তাঁদের মাথা নিচু করে চেয়ারে বসতে বলেন। সেই সময় জঙ্গিরা রান্নাঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে, কিন্তু পারছিল না।জঙ্গিরা ফাইরুজ মালিহাকে বলে, তিনি যেন পুলিশকে ফোন দিয়ে বলেন, এখানে যেন পুলিশ আক্রমণ না করে। আক্রমণ করলে সবাইকে তারা মেরে ফেলবে। এ ঘটনা তিনি মুঠোফোনে মাকে জানান। হাসনাত করিম তাঁর চাচাকে ফোন দেন। এরপর রেস্টুরেন্টের লাইট বন্ধ করে দেয়।জবানবন্দিতে ফাইরুজ মালিহা আরও বলেন, একজন জঙ্গি বেকারি থেকে কেক এনে দিয়ে সেগুলো খেতে বলে। তখন দুই জঙ্গি আবারও বলে, তারা আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না। তবে ঝামেলা করলে আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে না। ওপর থেকে একজন জঙ্গি নেমে আসে। রান্নাঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু না পেরে টেবিল ভাঙার চেষ্টা করে। লাশগুলো কোপাতে থাকে। এ সময় নিবরাসও ওপরে চলে যায়। অন্য একজন নেমে আসে।রাত দেড়টার দিকে জঙ্গিরা একজন বাঙালি ও একজন জাপানি নাগরিককে নিয়ে আসে। কর্মচারীদের বসার টেবিলে তাঁদের বসায়। তখন জঙ্গি রোহান জাপানি নাগরিককে পরপর দুটি গুলি করেন।রাত দুইটার দিকে রোহান তাঁদের ফোন দিয়ে অনেক ছবি তোলেন। রোহান আবার ওপরে চলে যান। তারপর তিন জঙ্গি আবার নিচে নেমে আসে।সবাই মিলে তখন রান্নাঘরের দরজা খুলে ফেলে। রাত তিনটার দিকে ওয়েটার এসে টেবিল পরিষ্কার করে দেন। তারপর টেবিলে মাছভাজা দিয়ে তাঁদের সাহ্‌রি করে রোজা রাখতে বলে। সবাই তখন বাধ্য হয়ে খান। তারপর টেবিল পরিষ্কার করা হয়। ফজরের আজান হয়।সকাল সাতটার দিকে একজন জঙ্গি ওপর থেকে নিচে নেমে আসে। জঙ্গি রোহান সবাইকে দাঁড়াতে বলেন। রোহান হাসনাত করিমের হাতে চাবি দিয়ে দরজা খুলতে বলেন। নিবরাস সবার ফোন ফেরত দেন। হাসনাত দরজা খুলে চলে আসেন। রোহান সবাইকে একেক করে বেরিয়ে যেতে বলেন।সবার আগে হাসনাত করিম তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেরিয়ে অসেন। এরপর তাঁরা একে একে বেরিয়ে আসেন।তাহানা তাসমিয়ার জবানবন্দিতাহানা জবানবন্দিতে বলেন, জঙ্গিদের কথামতো সেদিন তাঁরা মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে জঙ্গিরা লাইট বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে মানুষকে কোপানোর শব্দ পাচ্ছিলাম।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এক বাড়িতে ৪৩টি গোখরা সাপ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও সড়কি দিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়েছে। শনিবার বিকেলে নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের শামুকখোলার মধ্যপাড়ায় সৈয়দ মিজান আলীর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।সৈয়দ মিজান আলী বলেন, শনিবার বিকেলে তাঁর বাড়ির উঠানে গোখরা সাপের একটি বাচ্চা মেরে ফেলে রাখে এক বিড়াল। এই ঘটনায় আশেপাশে আরও সাপ থাকার আশঙ্কা করা হয়। পরে ঘরের সঙ্গে লাগোয়া একটি মাটির ঢিবি খুঁড়লে তিন-চারটি গোখরা সাপের বাচ্চা বের হয়ে আসে। এরপর প্রতিবেশীরা এসে মাটির ডিবিতে আরও খুঁড়তে থাকলে একটি বড় গোখরাসহ মোট ৪৩টি গোখরা বেরিয়ে আসে। পরে সব কটি সাপ লাটি দিয়ে পিটিয়ে ও সড়কি দিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়।নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, ওই দিন বিকেলে মাটির ঢিবি থেকে বেরিয়ে আসা গোখরা সাপগুলো মারা হয়। এতে এলাকায় সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকারম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এতগুলো সাপ পিটিয়ে মারার খবর তাঁদের কেউ দেয়নি।
চট্টগ্রামে ঘরের ভেতর থেকে মা–মেয়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানার পূর্ব নাসিরাবাদ লিচুবাগান এলাকার টিনশেডের এক কক্ষ থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়।লাশ উদ্ধার হওয়া ওই মায়ের নাম লক্ষ্মী রানী সরকার (২২) ও মেয়ে অনন্যা রানী সরকার (২)। নিহত লক্ষ্মীর স্বামী নন্দন সরকার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা।নন্দন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, রোববার দুপুরে ভাত খেয়ে বাসা থেকে তিনি বের হন। বিকেল চারটার দিকে বাসায় ফিরে দেখেন ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পর দরজা না খুললে ধাক্কা দেওয়া হয়। পরে লোকজনের উপস্থিতিতে দরজা খুলে দেখা যায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। তারা আত্মহত্যা করেছে নাকি কেউ ঝুলিয়ে দিয়েছে, বুঝতে পারছেন না। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ দুটি উদ্ধার করে।বাসাটির মালিক আরজু বেগম বলেন, বিকেলে ভাড়াটে নন্দন সরকার এসে বলেন ভেতর থেকে তাঁর স্ত্রী দরজা খুলছেন না। পরে মা–মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়। কীভাবে কী হয়েছে তিনি তা জানেন না। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমাম হোসেন বলেন, মা–মেয়ের লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কেউ কিছু জানেন না। এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা, তা তদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট হবে। নিহত লক্ষ্মী রানীর বাড়ি সিলেটে। রোববার রাত ১০টা পর্যন্ত তাঁর কোনো স্বজনকে পাওয়া যায়নি। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেম ভূঁইয়া বলেন, নিহত লক্ষ্মী রানীর সঙ্গে স্বামীর কোনো ঝগড়া হয়নি বলে আশপাশের লোকজন জানান। কিন্তু কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন, নাকি অন্য কোনো ঘটনা আছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে।
ভারতের বিপক্ষে ২ ওভার আগে অলআউট হয়ে ২৮ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এ হারে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। ৫ জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশএমন না যে ভারতকে হারালেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে চলে যেত বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে জয় পেলেও তাকিয়ে থাকতে হতো ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের দিকে। এর পর পাকিস্তানকেও হারাতে হতো নিজেদের শেষ ম্যাচে। সে সবই অনেক জটিল হিসাব নিকাশের ব্যাপার। বাংলাদেশ অত জটিল হিসাবের মধ্যেই যায়নি। ভারতের কাছে আজ ২৮ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এ হার দিয়েই ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল মাশরাফিদের।পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতার।আর এই জয় দিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলল ভারত। এর আগে কেবল অস্ট্রেলিয়া শেষ চার নিশ্চিত করেছে।৩১৫ রানের লক্ষ্য। বিশ্বকাপে তিন শর বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড বাংলাদেশের আছে, সেটাও দুবার। এ বিশ্বকাপেই তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩২১ তাড়া করেছে বাংলাদেশ, সেটাও ৫১ বল হাতে রেখে। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের আগেই তাই আশাহত হওয়ার উপায় ছিল না। শেষ দিকে অন্য প্রান্তে কোনো সহযোগিতা ছাড়াই সাইফউদ্দিন যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাতে প্রায় অসম্ভব এক জয়ের স্বপ্নও জেগেছিল। কিন্তু এই এজবাস্টনেই ভারত ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল যে কারণেই, অনেকটা সে কারণেই হেরেছে বাংলাদেশ।ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান তুলেছিল ভারত। শেষ দিকে এই ধীরে শুরু করার দায় মিটিয়ে হেরেছে ভারত। আজ ৩১৪ তাড়া করতে নেমে প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ৪০, সেটাও তামিমের উইকেট হারিয়ে। বিশ্বকাপজুড়ে ধীরে শুরু করার নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েও পরে খোলসে ঢুকে গেছেন তামিম। ফিরে যাওয়ার আগে ২২ রান করেছেন ৩১ বলে।এরপরও বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন ছিল। মাঝে ওভারগুলোতে রান তোলার বিশেষজ্ঞ বনে যাওয়া সাকিব আল হাসান আছেন, বিশ্বকাপে কোনো ফিফটি না পাওয়া সৌম্যও আজই ফর্মে ফিরবেন না তার আশা করতেও দোষ কি? কিন্তু ভারতের ইনিংসের শেষ ভাগে উইকেট ধীর হয়ে যাওয়ার যে ইঙ্গিত মিলেছিল সেটাই বড় হয়ে উঠল বাংলাদেশের ইনিংসে। উইকেটে বল দ্বিমুখী আচরণ করছিল। কোনো বল স্বাভাবিক গতি ধরে রাখছিল। কোনো বল আবার একটু ধীর হয়ে যাচ্ছিল। এর দোলাচলে পড়ে সৌম্য আউট হয়ে গেলেন পান্ডিয়ার প্রথম বলেই। সে বলটা মাঠের যেকোনো প্রান্তে আছড়ে ফেলতে পারতেন সৌম্য, কিন্তু বলের বাড়তি বাউন্স বুঝতে না পেরে কোহলির কাছে ক্যাচ দিয়েছেন সৌম্য(৩৩)।উইকেটের এমন আচরণের মাঝেও দারুণ খেলছিলেন সাকিব। বল ও রানের সামঞ্জস্য ধরে রেখে এ বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ ফিফটি বুঝে নিয়েছেন। সাকিবের কারণেই মাঝের ৩০ ওভারে ১৮৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সাকিবের সঙ্গে উইকেটে সময় কাটানোয় আরও আগ্রহ দেখা যায়নি। পান্ডিয়ার স্লোয়ারে ৬৬ রান করে সাকিব ফেরার পরই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। মাঝে যে মুশফিক, লিটন ও মোসাদ্দেকও ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন।৩৪তম ওভারে সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশের জয়ের আশা প্রায় শেষই হয়ে গিয়েছিল। ১৬ ওভারে ১৩৬ রানের লক্ষ্যটা ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিলেন সাব্বির ও সাইফউদ্দিন। কিন্তু ৪৪ ওভারে জয় থেকে ৭০ রান দূরে সাব্বিরও (৩৬) বিদায় নেওয়ার পর শুধু পরাজয়ের অপেক্ষাই বেড়েছে। সঙ্গীহারা হওয়ার আগেই বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নিয়েছেন সাইফউদ্দিন (৩৮ বলে ৫১)। বুমরার টানা দুই ইয়র্কারে শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের সব লড়াই।২ ওভার আগে অলআউট হওয়া ও জয় থেকে ২৯ রানের দূরত্বটা আক্ষেপ বাড়াচ্ছেই। যদি টপ অর্ডার বা মিডল অর্ডারের একজন থাকতেন শেষ পর্যন্ত! তাহলে অন্তত ৫ জুন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্নটাও বেঁচে থাকত।
বুধবার ভোর সাড়ে ছয়টায় এস্তাদিও মিনেইরাওতে কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশের কোনো চ্যানেলে এ খেলা সরাসরি দেখানো হবে না। বিভিন্ন স্ট্রিমিং সাইটই ভরসা ভক্তদের জন্য।কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল আবারও মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে দু দলকে। ২০০৭ সালের পর কোনো প্রতিযোগিতার নকআউট পর্বে প্রথমবার মুখোমুখি হচ্ছে দু দল। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচটি নিয়ে উত্তেজনার কমতি নেই দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে। তবে শুধু সমর্থক নয়, উত্তেজনা ভর করেছে ব্রাজিল কোচ তিতের মধ্যেও। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মহারণের আগে তিনি না কি ঘুমাতেই পারছেন না!এমন না যে এই প্রথমবার আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হচ্ছেন তিতে। এর আগেও তিনবার আলবিসেলেস্তেদের মোকাবিলা করেছেন, জিতে ফিরেছেন দুটি ম্যাচেই। তবুও এ ম্যাচ নিয়ে তাঁর উত্তেজনায় কোনো কমতি নেই। ম্যাচের আগে মিডিয়া কনফারেন্সে তিতে নিজেই জানালেন সে কথা, ‘ম্যাচ নিয়ে আমি অনেক কিছু ভাবছি। গতকাল ঘুমাতে পারিনি, আজও (ম্যাচের আগের রাতে) ঘুমাতে পারব না। রাত ৩.১৫তে ঘুম ভেঙে গেছে, এরপর থেকেই ম্যাচ নিয়ে চিন্তা শুরু করে দিয়েছি। আমার নোট নেওয়ার অভ্যাস আছে, সে রাতেও তাই করেছি।’‘সুপার ক্লাসিকো’র উত্তেজনা যে বাকিদের মতো তাঁকেও ছুঁয়ে যাচ্ছে, সেটিও বোঝাতে চাইলেন ৫৮ বছর বয়সী তিতে, ‘গোপন করব না, আমি কাগজে কলমে এক পরিকল্পনা করছি, আর খেলোয়াড়দের গিয়ে আরেকটা বোঝাচ্ছি। আমিও তো মানুষ না কি!’দায়িত্ব নেওয়ার পর তিতে প্রথমবার আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়েছিলেন ২০১৬ সালের নভেম্বরে। রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের সে ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতেছিল ব্রাজিল। তবে তিতের দাবি, আড়াই বছর আগের সে ম্যাচ আগামীকালের ম্যাচে কোনো প্রভাব ফেলবে না, ‘ওই জয় এখন আমাদের কোনো সুবিধা দেবে না। গুরুত্বপূর্ণ হলো এখনকার সময়।’তিতের এই নির্ঘুম রাত কাটানো নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনিকেও। উত্তরে বেশ এক চোট রসিকতাই করেছেন স্কালোনি, ‘তাঁর নিজের দেশ, নিজের মানুষ, তাও ঘুমাতে পারছে না! আশা করছি তাঁর এই নির্ঘুম রাত কাটানো আমাদের ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে।’এরপরই মজা ছেড়ে ‘সিরিয়াস’ হয়েছেন স্কালোনি। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচ বলে অতিরিক্ত কোনো চাপ অনুভব করছে না তাঁর দল, এমনটাই দাবি ৪১ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন কোচের, ‘ব্রাজিল না হয়ে অন্য কোনো দলের বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলতে হলেও আমাদের পরিস্থিতিটা একই রকম থাকত। আমার মনে হয় না ব্রাজিলকে হারালে আমরা আলাদা কোনো পুরস্কার পাব।’এবারের কোপার সবচেয়ে বড় ফেবারিট ব্রাজিল, সেটি সবাই মেনে নিচ্ছেন। তবে ম্যাচের আগেই আর্জেন্টাইন সমর্থকদের নিরাশ হতে মানা করছেন স্কালোনি, ‘আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা শান্ত থাকতে পারেন। দেশের মানুষকে গর্বিত করার জন্যই আমরা এই ম্যাচে মাঠে নামব।’
বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনে চীনের সঙ্গে আলোচনা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল সোমবার তিনি এমনটাই জানিয়েছেন।সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, এর আগে গত শনিবার জি-২০ সম্মেলনের পাশাপাশি এক দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন ট্রাম্প। এ সময় চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করার ইঙ্গিতও দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মার্কিন কোম্পানিগুলো হুয়াওয়ের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারবে বলে জানান ট্রাম্প।চীনের সঙ্গে বাণিজ্যসংকট সমাধানে আলোচনা করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, এটি এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। তাঁরা ফোনেই বেশি কথা বলছেন, তবে তাঁরা সভাও করছেন।এ সময় ট্রাম্প আরও বলেন, কোনো চুক্তি হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূলে থাকা উচিত। তিনি বলেন, চীনের থেকে বরং এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই ভালো হবে। কারণ, বহু বছর ধরে চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বেশি সুবিধা পেয়ে আসছে। চীনের এই লাভ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘ক্ষতি’ বলে বিবেচনা করেন ট্রাম্প।মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি এখন নিশ্চিত যে আমরা এমন কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারব না, যাতে উভয় পক্ষই সমান লাভবান হবে। এই সমঝোতা এমনভাবে হওয়া উচিত, যাতে আমরাই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারি।’তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, আলোচনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র যেসব চাহিদার কথা বলছে, সেগুলো মেনে নেওয়ার ইচ্ছা চীনের মধ্যে খুব একটা প্রবল নয়।চীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যসংক্রান্ত বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়। পরে তা ‘বাণিজ্যযুদ্ধে’ রূপ নেয়। এই রেষারেষির জের ধরে কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপরই বাণিজ্য নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরম রূপ নেয়।
শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডেতে সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে দেশটির পুলিশপ্রধান ও প্রতিরক্ষা বিভাগের সাবেক সচিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দেশটির গোয়েন্দা বিভাগ পৃথক দুটি হাসপাতাল থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শ্রীলঙ্কার পুলিশপ্রধান পূজিত জয়াসুন্দরা ও প্রতিরক্ষা বিভাগের সাবেক সচিব হেমাসিরি ফার্নান্দো। লঙ্কান পুলিশের মুখপাত্র রাওয়ান গুনাসেকেরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।গত ২১ এপ্রিল দেশটিতে ইস্টার সানডে উদ্‌যাপনের সময় কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় অন্তত ২৫৮ জন নিহত হয়। পূজিত ও হেমাসিরির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই হামলার ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য থাকা সত্ত্বেও তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।গ্রেপ্তার দুজনকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হতে পারে বলে শ্রীলঙ্কার অ্যাটর্নি জেনারেল ডাপ্পুলা ডি লিভেরা ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর আগে গত সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, ইস্টার সানডে হামলায় পূর্বসতর্কতা থাকা সত্ত্বেও এই দুই কর্মকর্তা তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। ওই হামলায় স্থানীয় উগ্রপন্থী ইসলামি গোষ্ঠী ন্যাশনাল তৌহিদ জামায়াতকে (এনটিজে) অভিযুক্ত করা হয়েছে। ডি লিভেরা আরও বলেন, তাঁদের এই অবহেলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় পড়ে, কারণ তাঁদের অবস্থান ছিল মানবতাবিরোধী।অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, নিরাপত্তা ত্রুটিজনিত কারণে পুলিশের আরও ৯ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে পুলিশপ্রধান ও সাবেক প্রতিরক্ষা সচিবকে দেশটির পার্লামেন্টারি তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
১৬ উইকেট নিয়ে জফরা আর্চার এ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। অথচ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সেই আর্চারকেই একাদশের বাইরে রাখার পক্ষপাতী গ্রায়েম সোয়ান!বিশ্বকাপের আগে জফরা আর্চারকে দলে নেওয়ার জন্য কম আহ্বান জানাননি সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটাররা। দাবি মেনে আর্চারকে বিশ্বকাপেও এনেছেন ইংলিশ নির্বাচকেরা। সুযোগ দিয়ে যে ভুল করেনি ইংল্যান্ড, সেটির প্রমাণ দিয়েছেন আর্চার নিজেও। নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই ১৬ উইকেট পেয়েছেন, ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও এই ফাস্ট বোলার। অথচ এই আর্চারকেই বাদ দেওয়ার দাবি করেছেন গ্রায়েম সোয়ান, সেটিও আবার নিজেদের ‘বাঁচা-মরার’ ম্যাচে!ভারতের বিপক্ষে জিতে নিজেদের সেমিফাইনাল স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে ইংল্যান্ড। তবে বিপদ এখনো কাটেনি। ভাগ্য নিজেদের হাতে রাখতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে জিততেই হবে এউইন মরগানের দলকে। এমন ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের সেরা খেলোয়াড়দের নামাতে চাইবে ইংল্যান্ড। তবে সোয়ান ভাবছেন একটু ভিন্নভাবে। যে ম্যাচে হারলে বিশ্বকাপ ২০১৯ স্বপ্নই শেষ হয়ে যেতে পারে, সে ম্যাচেই কি না দলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি চাইছেন না তিনি!কেন চাইছেন না, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সাবেক এ ইংলিশ অফ স্পিনার। আগামীকাল ডারহামের চেস্টার-লি-স্ট্রিটে কেন উইলিয়ামসনদের মোকাবিলা করবে ইংল্যান্ড। নিজে স্পিনার ছিলেন বলেই কি না, ডারহামের উইকেটকে একটু আগেভাগেই পড়ে ফেলেছেন সোয়ান। তাঁর ধারণা, পেসারদের চেয়ে বরং স্পিনারদের দিকেই সহায়তার হাত বেশি বাড়াবে উইকেট। সে কারণেই আর্চারের বদলে টুর্নামেন্টে ৫ ম্যাচ খেলে ৫ উইকেট পাওয়া মঈন আলীকে চাইছেন সোয়ান।ইংল্যান্ডের জার্সিতে ১০৪টি ওয়ানডে উইকেট পাওয়া সোয়ান বলেছেন, ‘এ সপ্তাহে আমি রিভারসাইড গ্রাউন্ডে বেশ কিছু সময় কাটিয়েছি। উইকেট দেখে আমার মনে হয়েছে, মঈন আলীকে একাদশে ফেরানো উচিত। পিচ বেশ স্লো, কিছুটা টার্নও থাকবে। এ পিচ পেসারদের জন্য নয়। সে কারণে আমি একজন পেসারকে বাইরে রাখতে চাইব।’কাকে বাইরে রাখতে চান, এ প্রশ্নের জবাবেই চমক দিয়েছেন সোয়ান। ক্রিস ওকস, মার্ক উড কিংবা লিয়াম প্লাংকেট নয়, টুর্নামেন্টে দলের সবচেয়ে সফল বোলার আর্চারকেই বসিয়ে রাখতে চান! নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যাও আছে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলা সোয়ানের কাছে, ‘মার্ক উড নিজের ছন্দ ফিরে পেয়েছে, সে কারণে তাঁকে বাইরে রাখব না আমি। কিছুটা পাগলাটে শোনাতে পারে, তবে এ ম্যাচে মঈন আলীকে খেলাতে আর্চারকেই বাইরে রাখব আমি।’নিজ দলের পাশাপাশি প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডকে নিয়েও কথা বলেছেন সোয়ান। এখনো পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংকে বলতে গেলে একাই টেনে চলেছেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। দলের মোট রানের ৪০ শতাংশেরও বেশি এসেছে একা উইলিয়ামসনের ব্যাট থেকেই। ইংল্যান্ডের বোলিংয়ের জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নামও তাই উইলিয়ামসনই হওয়ার কথা। এখানেও ভিন্নমত সোয়ানের। উইলিয়ামসন কিংবা টেলর নন, সোয়ান হুমকি মনে করছেন টুর্নামেন্টে জ্বলে উঠতে না পারা মার্টিন গাপটিলকে!সোয়ান বলেছেন, ‘রস টেলর ডারহামে খেলে অভ্যস্ত। সে কিছুটা ভোগাতে পারে। তবে আমি সবচেয়ে বেশি চিন্তিত মার্টিন গাপটিলকে নিয়ে। এ বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত কিছুই করে দেখাতে পারেনি সে। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওর রেকর্ড অসাধারণ। গাপটিলকে তাড়াতাড়ি ফেরাতে পারলে নিউজিল্যান্ডকে কম রানে আটকে দেওয়া সম্ভব।’পরিসংখ্যান বলছে, সোয়ানের আশঙ্কা একেবারে অমূলক নয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ ওয়ানডেতে ৫১.৬৬ গড়ে ৭৭৫ রান গাপটিলের। পাঁচ ফিফটির পাশে সেঞ্চুরি আছে দুটি।
কোপা আমেরিকার এবারের আসরে অনেকেই কলম্বিয়াকে ফেবারিট হিসেবে গণ্য করছিলেন। রাদামেল ফ্যালকাও, হামেস রদ্রিগেজরা গ্রুপ পর্বে কোনো গোল হজম না করে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়ে আর্জেন্টিনাকে পেছনে ফেলে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখেন। কিন্তু কোয়ার্টারে গত দুবারের চ্যাম্পিয়ন চিলির বিপক্ষে মোটেও ছন্দে ছিলেন না কার্লোস কুইরোজের শিষ্যরা।শেষে টাইব্রেকারে অল্পের জন্য চিলির কাছে হেরে টুর্নামেন্ট শেষ হয় কলম্বিয়ার। ৫-৪ ব্যবধানে হারা টাইব্রেকার পর্বে পেনাল্টি মিস করেছিলেন ডিফেন্ডার উইলিয়াম টেসিলো। সমর্থকেরা মোটেও সহজভাবে নিতে পারেননি তাঁর এই মিস, ম্যাচ শেষ হওয়ার পরই শুরু হয় সমালোচনা। তবে এর মাঝে কয়েকজন উদ্ধত সমর্থক তো তাঁকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যার হুমকি দিয়েছে।ম্যাচের পর ব্রাজিলের সাও পাওলো থেকে দেশে ফিরে যাওয়ার পর কলম্বিয়ান সংবাদমাধ্যম এল পেইসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি জানান টেসিলো, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার স্ত্রীকে হুমকি দিয়েছে কিছু লোক, আমাকেও হুমকি দিয়েছে তাঁরা। তবে আমরা তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছি না। আমরা স্রষ্টার ওপর বিশ্বাস রাখছি।’কলম্বিয়ান ফুটবল সমর্থকেরা বরাবরই প্রতিক্রিয়াশীল। খেলায় আশানুরূপ ফল না পেলে খেলোয়াড়দের হত্যার হুমকি দেওয়ার রীতিটাও সেখানে বেশ পুরোনো। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পরে কলম্বিয়া। ম্যাচে আত্মঘাতী গোল করা ডিফেন্ডার আন্দ্রেস এস্কোবারকে দেশে ফেরার পর গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সে ঘটনার ২৫ বছরপূর্তি হয়েছে আজ।২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে জাপানের বিপক্ষে ম্যাচের মাত্র তিন মিনিটের সময় লাল কার্ড দেখেন ডিফেন্ডার কার্লোস সানচেজ। তাঁকেও ম্যাচের পর বিভিন্ন মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেয় কিছু অতি উৎসাহী সমর্থক।
‘স্বামী আর শাশুড়ি ছাদে আছাড় মারেন। কিছুক্ষণের জন্য অজ্ঞান হয়ে যাই। আস্তে আস্তে কানে আসে ‘মনে হয় বাঁচব না, কী করবি? বাঁচায় রাখলে কিন্তু বিপদ হইব। চল, ছাদ থেইক্যা ফালায় দেই।’ ‘মা-ছেলের এসব কথা আমি শুনছি, কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। ওপরে তুইল্লা ধাক্কা মেরে যখন ফেলে দিল, আমি তো আর নাই।’ হুইলচেয়ারে বসে এভাবেই কথাগুলো বললেন রত্না আক্তার ওরফে নদী।২০১৫ সালের মার্চ মাসের ঘটনা এটি। হুইলচেয়ারে বসে কথা বলতে বলতেই রত্নার মুখে হাসির রেখা। কেননা রত্নার জীবনের গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছে পাপেট থিয়েটার ‘মুক্তি আলোয় আলোয়’। এই পাপেট থিয়েটারে অংশ নিয়েছেন হুইলচেয়ার নিয়ে জীবন চালানো একদল নারী-পুরুষ।রত্নার মুখে এবার দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ের ছাপ। জানালেন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) সহায়তায় সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) হুইলচেয়ার নারী বাস্কেটবল দলের তিনি একজন সদস্য। এই খেলার সুবাদে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে যান নেপাল। ইন্দোনেশিয়ায় আরেকটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার নারী হুইলচেয়ার বাস্কেট বল দলকে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে হারিয়ে শিরোপা জিতে আসে দলটি।সম্প্রতি সিআরপিতে হুইলচেয়ার বাস্কেট বল দলের এক প্রশিক্ষণ শেষে রত্না কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তিনি জানালেন, ছোট বেলায় নানির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় এক বখাটের অত্যাচার এবং সমাজের চাপে তাঁর সঙ্গেই বিয়ে হয়ে যায়। বিয়েতে রত্নার কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। বিয়ের প্রথম দিন থেকেই রত্নাকে শাশুড়ি পছন্দ করেননি।শ্বশুরবাড়িতে রত্নার জন্য বরাদ্দ ছিল চাল থেকে বের হওয়া খুদের ভাত। চুরি করে ভাত খেয়ে ফেলাসহ নানা ছুতোয় শাশুড়ি তাঁর ছেলেকে দিয়ে মার খাওয়াতেন। মাঝেমধ্যে মা ও ছেলে মিলে মারতেন। এমনকি সন্তান পেটে থাকা অবস্থাতেও সন্তান নষ্ট করে ফেলার জন্য মারতেন। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে রত্না ও তাঁর স্বামীকে বের করে দেওয়া হয়। অনেক দিন পর আবার বাড়ি ডেকে নেন শাশুড়ি। তবে নির্যাতন থামেনি।স্বামী বিদেশ যাবেন এই অজুহাতে রত্নাকে বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এরপর এই টাকার জন্যই রত্নাকে এমন মারধর করা হয় যে তাঁর জীবনটাই হুইলচেয়ারে বন্দী হয়ে যায়। সাতক্ষীরায় দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর রত্না সিআরপিতে ভর্তি হন। এখানে ভর্তি থাকা অবস্থাতেই বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সুযোগ পান।বাস্কেট বল খেলে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এখন সন্তান নিয়েই রত্নার সংসার। স্বামী আরেক বিয়ে করেছেন। স্বামী ও শাশুড়ির নামে মামলা করলেও তা শেষ পর্যন্ত থেমে যায়। রত্নার এই সংগ্রামী জীবনকে নিয়েই নির্মিত হচ্ছে ৫২ মিনিটের পাপেট থিয়েটার ‘মুক্তি আলোয় আলোয়’। এটি রচনা করেছেন এজাজ ফারাহ, আর পরিচালনা করেছেন কাজী নওশাবা আহমেদ।নওশাবা আহমেদ বলেন, তাঁর টুগেদার ইউ ক্যান দল প্রতিষ্ঠা এবং রত্নার জীবনের গল্প নিয়ে পাপেট শো করার গল্প। ৬ জুলাই সন্ধ্যা সাতটায় ছায়ানট মিলনায়তনে দ্বিতীয়বারের মতো মঞ্চায়ন হতে যাচ্ছে পাপেট শোটি। এতে সার্বিক সহযোগিতা করছে  ব্রিটিশ কাউন্সিল ও সিআরপি।নিজের জীবনে দুবার দীর্ঘ সময় হুইলচেয়ারে জীবন কাটানো এবং মানসিক শক্তি জয়ের গল্প শোনালেন নওশাবা। চারুকলা থেকে পড়াশোনা করা নওশাবা মূলত অভিনয়শিল্পী হিসেবে পরিচিতি। তবে তিনি দীর্ঘ সাত বছর সিসিমপুরের ইকরির চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্থাৎ তাঁর হাতেখড়ি পাপেট দিয়ে। এক দুর্ঘটনায় এই পাপেট থেকে দূরে থাকতে হচ্ছিল তাঁকে, তবে তিনি ভুলতে পারতেন না।কাজী নওশাবা আহমেদ বললেন, ‘বছরের শুরুতে মানসিকভাবে প্রচণ্ড অসুস্থ হলে একটু প্রশান্তি পেতে ছুটে যাই সিআরপির ভ্যালরি এ টেলরের কাছে। হুট করেই তিনি জানতে চান আমি তাঁদের জন্য কী করতে পারি? আমার মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে আমি জীবনে আর কিছু করতে পারব, সেটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ভেলরি একটু সময় দিলেন। তাঁদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন, দেখলাম। হুইলচেয়ারে বসা নারী ও পুরুষের বাস্কেটবল খেলা দেখে বুঝতে পেলাম, তাঁদের মানসিক শক্তি অনেক বেশি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো আমি পাপেট নিয়ে কিছু করতে পারব।’নওশাবা জানালেন, ঘটনাচক্রে ব্রিটিশ কাউন্সিল নারী ও কিশোরীদের ক্ষমতায়নের অগ্রগতিতে বৈশ্বিক আন্দোলন সৃষ্টিতে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ওয়াও ফাউন্ডেশনের অংশীদারত্বে ঢাকায় প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ‘উইমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড—ওয়াও’ ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করে। সেখানে কিছু একটা করার জন্য আমন্ত্রণ জানায় তারা। এরপরই টুগেদার ইউ ক্যান দলের যাত্রা শুরু হয়। শুরু হলো রত্নার জীবনী জানা। ওয়াও’ ফেস্টিভ্যালে প্রথম মঞ্চায়ন হয় রত্নার জীবনী। জীবনের সত্য ঘটনা নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই পাপেট শো। শোর একদম শেষে রত্না উপস্থিত হন দর্শকের সামনে। রত্নার কিশোরী থেকে নারী হয়ে ওঠা অর্থাৎ পুরো জীবন দেখানো হয় ৫২ মিনিটের শোতে।‘আমার জীবনে শক্তির প্রয়োজন ছিল। আমি রত্নাদের কাছ থেকে সেই শক্তি পেয়েছি। পাপেট শোটির দ্বিতীয় মঞ্চায়ন হতে যাচ্ছে জনগণের আর্থিক সহায়তায়। অনেকেই এগিয়ে আসছেন, তবে একটি শো করার জন্য যে পরিমাণ আর্থিক সংস্থান দরকার, তা এখনো আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। তবে আমরা আশাবাদী, নিশ্চয়ই মানুষ এগিয়ে আসবে’- বললেন নওশাবা।পাপেট শো নিয়ে রত্না বলেন, ‘আমি এখন ক্রাচ দিয়ে একটু হাঁটতে পারি। আমার মতো রত্নার জীবনী নিয়ে নওশাবা আপা কাজ করছেন, তা ভালো লাগে। আমার গল্প সবাই দেখছেন, জানছেন। আমি বলতে চাই, ঘরে-বাইরে আমার মতো আর কোনো রত্নার যেন জন্ম না হয়। তবে এটাও বলতে চাই, আমরা নারী, আমরাও ঘুরে দাঁড়াতে পারি।’
সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জেতার পর দলের আর সবার মতো মোস্তাফিজুর রহমানের মুখেও হাসি ছিল। কিন্তু সেই হাসির মধ্যে একটা অপূর্ণতার ছবি দেখা।না লুকিয়ে সেদিন খোলাখুলিই বললেন, ‘দল ভালো খেলছে। কিন্তু নিজের বোলিংটা নিয়ে আমি খুশি হতে পারছি না। ২০১৯ বিশ্বকাপে একটা লক্ষ্য নিয়ে এসেছিলাম। আমার কাছে সবাই এত প্রত্যাশা করে…। এত কষ্ট করছি, মন থেকে এত চাইছি, কোথায় যেন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সমস্যা নেই, সামনে ভারত-ম্যাচ। অনেক বড় ম্যাচ। ভারতের বিপক্ষে ভালো কিছু করলে দেখবেন পারফরম্যান্সটা মানুষ মনে রাখবে।’মোস্তাফিজ আজ এজবাস্টনে যে বোলিংটা করলেন সেটি মনে রাখতেই হবে—বাংলাদেশের কোনো পেসার প্রথম বিশ্বকাপে পেলেন ৫ উইকেট। ৫৯ রানে ৫ উইকেট, বিশ্বকাপে যেটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা বোলিং। ৭ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে এই বিশ্বকাপে তিনিই বাংলাদেশের সেরা বোলার। ওয়ানডেতে যে চারবার ৫ উইকেট পেয়েছেন, তিনটিই আবার ভারতের বিপক্ষে।কাল মোস্তাফিজকে বলা হলো, এজবাস্টনের সীমানা একদিকে ছোট। ছোট সীমানায় শট খেলতে পারে এমন বোলিং থেকে বিরত না থাকলে তো বিপদ! বাঁহাতি পেসার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন, ‘জানি এক দিকে সীমানা ৫৯ মিটার। আমি ওদিকে লক্ষ্য করেই বোলিং করব। ওরা মারলে মারবে। চাইলে এটা লিখে দিতে পারেন!’মোস্তাফিজ যে হালকা চালে কথাটা বলেননি, আজ সেটি বোঝা গেল। বাঁহাতি পেসার বেশির ভাগ সময়েই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ছোট সীমানার দিকে খেলানোর চেষ্টা করেছেন। কঠিনেরে ভালোবেসে তিনি তো ফলও পাচ্ছিলেন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে রোহিতকে চতুর্থ স্টাম্পে শর্ট বল খেলতে আহ্বান জানালেন। ভারতীয় ওপেনার ছোট সীমানা দিয়ে উড়িয়ে মারার লোভ সামলাতে পারেননি। কিন্তু বল যে গতিতে ব্যাটে আসার কথা ছিল, সেটা আসেনি। টাইমিংয়ে হেরফের, ডিপে তুলে দিলেন ক্যাচ। তামিম ১৫ গজ দৌড়ে এলেন কিন্তু ক্যাচটা লুফে নিতে পারলেন না।এমন সুযোগ পেয়ে রোহিতের মতো ব্যাটসম্যান যা করার সেটাই করল। ২০১৫ বিশ্বকাপে এমসিজিতে ‘নো-বল’-এ বেঁচে গিয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন, যে নো বলের সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। টানা দুই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন অঙ্কে ছুঁলেন। রোহিতের সঙ্গে লোকেশ রাহুলও এগোচ্ছিলেন তিন অঙ্কের দিকেই। দুজনের ওপেনিং জুটি ১৮০ রান যোগ করায় অনুমান করা হচ্ছিল আরেকটি রান পাহাড়ে চাপা পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু তামিম নন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ ফিল্ডারই এ ম্যাচেও বাজে ফিল্ডিংয়ের ধারাটা ধরে রেখেছে। একবার চিন্তা করুন ফিল্ডিংটা যদি আজ দুর্দান্ত হতো, ভারত কি আর ৯ উইকেটে ৩১৪ রানের স্কোর গড়তে পারত?তবুও ভারতের স্কোরটা ৩১০-এর আশপাশে আটকানো গেছে তাতে বড় কৃতিত্ব অবশ্যই মোস্তাফিজের। বিশেষ করে ৩৯তম ওভারে তিন বলের মধ্যে বিরাট কোহলি আর হার্দিক পান্ডিয়াকে ফিরিয়ে দুরন্ত গতিতে ধাবমান ভারতকে আটকে রাখা গেছে। কোহলিকেও কিন্তু সেই একই ফাঁদে ফেলে ফিরিয়েছেন মোস্তাফিজ। যতই ডিপ মিডউইকেটের সীমানা ছোট থাকুক, মন্থর উইকেটে ডিপে উড়িয়ে মারা কঠিনই। মোস্তাফিজের কাটারটা তাই উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানায় রুবেলের হাতে তুলে দিলেন কোহলি।কাল মাশরাফি বিন মুর্তজা বলছিলেন, ‘এ ধরনের উইকেটে মোস্তাফিজ উপকৃত হতে পারে।’ ফিজ তা হলেনও। মন্থর উইকেটে বল যত পুরোনো হবে, মোস্তাফিজের কাটারের ধার তত বাড়বে। ৩৯ ওভারে দুটি পাওয়ার পর বাকি ৩টি পেলেন শেষ দিকে এসে। মাঝে একটা রানআউটও করেছেন। ভারতের যে ৯ উইকেট পড়েছে, ৬টিতেই মোস্তাফিজের প্রত্যক্ষ অবদান—নাহ, মোস্তাফিজ এবার প্রাণ খুলে হাসতে পারেন। বলে-কয়ে শুধু চ্যালেঞ্জই জিতলেন না, ‘সেই ধার আর নেই বলে’ তাঁকে নিয়ে মাঝেমধ্যে যে রব ওঠে, বড় ম্যাচে ‘বড়’ পারফরম্যান্সে সেটিরও জবাব দিলেন।
প্রবাসী আয়ে রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবাসীরা যে পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে এত পরিমাণ প্রবাসী আয় আগে কখনো আসেনি। গত জুন মাসে প্রবাসীরা ১৩৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাঠায়। ফলে গত অর্থবছরে প্রবাসী আয় বেড়ে হয় ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি আয় আসে মে মাসে। ওই মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিল ১৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। এদিকে বিপুল পরিমাণ প্রবাসী আয় আসার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ডলার।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এর পরের অবস্থানে আছে যথাক্রমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক।তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে। এরপর তিন অর্থবছরে এত পরিমাণ আয় আসেনি।রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় আসার পরও আমদানি চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে। এর ফলে ডলারের সংকট কি কাটবে, তা জানতে চাওয়া হয় বড় কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঋণপত্র খোলা বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের কাছে। এ নিয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংক খাতের তারল্য অবস্থা ভালো করতে প্রবাসী আয় ও ভালো রপ্তানির বিকল্প নেই। গত অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে যেমন রেকর্ড হয়েছে, তেমনি আমদানিতেও। সরকার যে ২ শতাংশ পুরস্কার দেবে, তাতে প্রবাসী আয় নতুন মাত্রা পাবে।’
আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সংবাদপত্র খুললেই আমরা মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। এটা আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করছে। এ প্রবন্ধে আমি যানবাহনগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় এমন কিছু স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রস্তাব করছি, যা নিশ্চিতভাবে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা হ্রাস করতে কিছুটা হলেও সহায়তা করবে।যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার বেশির ভাগ গাড়ি উৎপাদন কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যানবাহন তৈরিতে কাজ করছে, যা চালককে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়। এসব প্রযুক্তি বর্তমান বাজারে বিদ্যমান। বেশির ভাগ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্নিং সিস্টেম সাধারণত রাডার, ক্যামেরা, লিডার ও ম্যাপ সেন্সর ব্যবহার করে থাকে। এসব সেন্সর একটা সেন্ট্রাল ব্রেইনকে গাড়ির পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা দেয়। সেন্ট্রাল ব্রেইন চালককে আগেভাগেই সতর্ক করে কোনো ধরনের সংঘর্ষের সম্ভাবনা থাকলে। নিশ্চিত দুর্ঘটনা ঘটবে এমন বুঝলে গাড়ির নিয়ন্ত্রণও নিতে পারে।পথচারী সতর্কতা গাড়ির কাছে কোনো পথচারী অথবা অবকাঠামো থাকলে সিস্টেম বিপ (একধরনের শব্দ) শুরু করবে। বিপের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়তে থাকবে যত দূরত্ব কমে আসতে থাকবে। বাস অথবা ট্রাকে এই সিস্টেম ভালো সহযোগিতা করে থাকে। কারণ চালকের পক্ষে গাড়ির চারপাশের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম সাধারণত ক্যামেরা, রাডার ও আলট্রাসনিক সেন্সর ব্যবহার করে যেকোনো বিপদ সম্পর্কে জানান দিয়ে থাকে।লেন পরিবর্তন সতর্কতা  সাধারণত এই ফিচার গাড়িকে লেনে ধরে রাখতে সাহায্য করে থাকে। ক্যামেরার সাহায্যে লেন লাইন ডিটেক্ট করা হয়। চালক অনিচ্ছাকৃত দাগ পার হলে স্টিয়ারিং টর্ক প্রয়োগ করে গাড়িকে লেনে ধরে রাখে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম সাইড রাডারের সাহায্যে কোনো গাড়ির উপস্থিতি জানান দিয়ে থাকে। গাড়ির চিহ্ন সম্পন্ন আইকন সাইড গ্লাসে দৃশ্যমান হয়, যদি কোনো গাড়ি পার্শ্ববর্তী লেনে বিদ্যমান থাকে। এ ক্ষেত্রে চালক লেন পরিবর্তনে অগ্রিম সতর্ক থাকবেন।অসতর্ক চালকের জন্য সতর্কতা  অনেক চালক আছেন যাঁরা গাড়ি চালাতে চালাতে ফোনে কথা বলেন। টেক্সট মেসেজ করেন বা পাশের কারও সঙ্গে গল্পে মেতে ওঠেন। আইন করেও এ অভ্যাস বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর ফলে চালকের ঘুম চলে আসতে পারে। চালকের মনোযোগ পর্যবেক্ষণ করার জন্য স্টিয়ারিং হুইলের মাঝে ক্যামেরা বসানো থাকে, যা চালকের চোখের নড়াচড়া থেকে বুঝতে পারে চালক অমনোযোগ কি না এবং চালককে সতর্কতা দিয়ে থাকে।সামনের সংঘর্ষের অগ্রিম সতর্কতা  সামনে গাড়ি, মানুষ বা পশু থাকলে এ ধরনের ব্যবস্থা অগ্রিম চালককে সতর্কতা দিয়ে থাকে। যদি সংঘর্ষ হওয়ার মতো দূরত্বে চালক চলে আসেন কিংবা অনেক সময় সংঘর্ষ নিশ্চিত হলে এ সিস্টেম নিজেই ব্রেক করে থাকে। সাধারণত রাডার ও ক্যামেরা দিয়ে থ্রেট অবজেক্ট শনাক্ত করা হয়। চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ি চালাতে পারবে, যা দুর্ঘটনার মাত্রা কমানোর সামর্থ্য রাখে। এ ব্যবস্থা দিন বা রাতে সমানভাবে কার্যকর।এ রকম আরও অনেক ফিচার বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালের মধ্যে সব গাড়িতে স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে। আমাদের সময় হয়েছে প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো। হয়তো কিছুটা ব্যয়বহুল। কিন্তু মানুষের জীবনের থেকে বেশি নয়।...নাফিস কোরাইশী: চালকবিহীন (অটোনমাস) গাড়ি টেকনোলজি বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মোটরসে (GM) কর্মরত।
‘এই যে পুরুষ, টেবিলটা সরিয়ে দিন।’ ‘তুমি নারী, চা নিয়ে এসো।’ এই কথাগুলো আমাকে সেদিন ভাবিয়েছিল। কেন? এটা ঠিক যে আমি নারী। কিন্তু কেন আমাকে চা নিয়ে আসতে হবে? টেবিলটা তো আমিও সরাতে পারি, তাই না? বরং বৃদ্ধ যেসব পুরুষ এখানে আছেন তাঁদের চেয়ে ভালো করে সেই কাজ আমি করতে পারি।এটা আমার দাদির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময়ের কথা। আমার বয়স তখন ১৮ বছর। জাপানে আত্মীয়রা মিলিত হওয়ার সময় নারীকে সব সময় সবার জন্য চা পরিবেশন করতে হয়। আর ভারী জিনিস সরানো হচ্ছে পুরুষের কাজ। তবে আমি এটা সেদিন বুঝতে পারিনি। নারী আর পুরুষকে কেন আলাদা কাজ করতে হয়? সেই ঘটনা থেকে লিঙ্গ সমস্যা নিয়ে শেখার আগ্রহ আমি পেয়েছি।আমি ছোটবেলা থেকে ভেবেছিলাম কেন শুধু মা রান্না করেন। আমার বাবা ও মা দুজনই চাকরি করেন। আমার মা রোজ কাজ থেকে বাড়িতে ফিরে এসে রাতের খাবার তৈরি করেন। আমার বাবা তা করেন না। সকালেও একই রকম। মা ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে নাশতা তৈরি করেন। আর এটা শুধু রান্না নিয়ে নয়। বাড়ির অনেক কাজ—যেমন কাপড় ধোয়া আর ঘর পরিষ্কারের কাজ, এর সবটাই মা করেন। টিভি নাটক বা সিনেমাতেও ঠিক এভাবেই নারী বাড়ির কাজ করেন। তবে কেন?জাপানে অল্প কিছুদিন আগে পর্যন্ত প্রায় সব বাড়িতে বাবা বাইরে চাকরি করতেন আর মা করতেন বাড়ির কাজ। তবে মাও চাকরি করছেন তেমন বাড়িও জাপানে আজকাল অনেক আছে। আমার নিজের বাড়িও তাই। তাহলে বাবারও তো মায়ের মতোই বাড়ির কাজ করা দরকার। কিন্তু সেই যে আগে যখন শুধু বাবা বাইরে চাকরি করতেন, সেই সময়ের অভ্যাস মনে হয় এখনো থেকে গেছে।শুধু বাড়ির কাজ নিয়েই অনেক আগে থেকে আমি ভাবিনি। আরও যে একটি প্রশ্ন আমার মনে দেখা দিয়েছিল তা হলো, কেন শুধু নারীকে মেকআপ নিতে হয়? আমি এটাও জানি, অনেক নারীর মেকআপ পছন্দ। তবে কেন ‘সব’ নারীকেই সেটা পরতে হয়? মেকআপ পছন্দ করে না সে রকম নারীও নিশ্চয় আছে। আমি যখন পার্টটাইম কাজ করতে শুরু করেছিলাম, তখন আমাকে সব সময় বলা হতো যে, ‘মেকআপ করে আসুন’ ‘মেকআপ না করে আসবেন না’।জাপানে নারীর মেকআপ পরা হচ্ছে ভদ্রতার প্রতিফলন। সেটা হচ্ছে এমন কিছু নারীকে যা অবশ্যই করতে হয়। যে নারী মেকআপ করে না, সে কি নারী নয়? কেন শুধু নারীকেই মেকআপ নিতে হয়? আর যদি পুরুষ মেকআপ করে তাহলে মানুষ মনে করবে সেটা হচ্ছে অদ্ভুত। মেকআপ করা পুরুষের জন্য ভদ্রতা নয়। যে পুরুষ মেকআপ নিচ্ছে সে কি পুরুষ নয়? আজকাল জাপানে মেকআপ নেওয়া পুরুষও অনেক আছে। তবে এদের দেখা হয় লিঙ্গ নিরপেক্ষ মানুষ হিসেবে। এটা থেকেও আমরা দেখতে পাই, মেকআপ হচ্ছে শুধু নারীদের জিনিস, পুরুষদের নয়। তাই যে পুরুষ মেকআপ করছে সেই পুরুষ হচ্ছে ‘নারীর মতো’ পুরুষ।আমার মনে আরও যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল তা হলো, রঙেও কেন লিঙ্গ আছে। নারীর মতো রং ও পুরুষের মতো রং কেন আছে? আমি ছোটবেলায় আকাশি রং পছন্দ করতাম। কিন্তু আমার বন্ধুরা এ রকম বলেছিল যে, মেয়েরা গোলাপি বা কমলা রং পছন্দ করে আর ছেলেদের পছন্দ নীল বা সবুজ রং। আমার তাই মনে হয়েছিল, আমি হয়তো নারীর মতো নই।স্টেশনারি থেকে পোশাক পর্যন্ত ছেলেদের জিনিস ও মেয়েদের জিনিস বেশির ভাগ সময় আলাদা রঙের হয়ে থাকে। ছেলের জিনিসগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নীল রঙের আর মেয়ের জিনিসে গোলাপি রং বেশি। আর জাপানের স্কুলব্যাগও ছেলেদের ও মেয়েদের আলাদা রঙের হয়। যখন আমি প্রাথমিক স্কুলে যেতাম তখন প্রায় সব ছেলের ব্যাগ ছিল কালো বা নীল রঙের আর মেয়েদের ব্যাগের রং ছিল লাল বা গোলাপি। আজকাল এটা একটু বদলে যাওয়ায় বাদামি বা বেগুনি রংও দেখা যায়। এ রকম করে ছোটবেলা থেকে ছেলের মতো বা নারীর মতো রং ঠিক করে দেওয়া আছে। বাচ্চাদের জন্য এর প্রভাব ভালো নয় বলে আমার মনে হয়। কারণ, বাচ্চারা মনে করে নেবে যে ছেলে বা মেয়ের মতো করে তাদের থাকতে হবে।এবার আমার নিজের অভিজ্ঞতার বাইরের একটি উপাত্ত থেকে জাপানের লিঙ্গ সমস্যা নিয়ে আমি বলব। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২০১৮ সালের লিঙ্গবৈষম্য সূচকে জাপানের অবস্থান হচ্ছে ১৪৯ দেশের মধ্যে ১১০। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য আর রাজনীতির ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে কতটা বৈষম্য বিরাজমান, সেই উপাত্ত থেকে এই সূচক ঠিক করে নেওয়া হয়। এই চারটি ক্ষেত্রের মধ্যে রাজনীতিতে জাপানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এর কারণ হলো জাপানে কখনো কোনো নারী প্রধানমন্ত্রী হয়নি এবং জাতীয় সংসদে নারী সদস্যের সংখ্যা খুব কম। আর অর্থনীতির ক্ষেত্রেও জাপান খুব খারাপ অবস্থায় আছে। জাপানে এখনো নারী-পুরুষের মধ্যে আয়ের ব্যবধান বেশ বড় আর ব্যবস্থাপনার কাজ, অন্য কাজের চেয়ে বেতন যেখানে বেশি, সেই কাজে নারীর আনুপাতিক হার যথেষ্ট কম।জাপানের বিপরীতে লিঙ্গবৈষম্য সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম। এটা হচ্ছে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থান। এই ফলাফল অর্জনে রাজনীতির ক্ষেত্রে ভালো উপাত্ত বড় প্রভাব রেখেছে। বাংলাদেশ রাজনীতির ক্ষেত্রে সব দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে। এর কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী। আর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩৫০টি আসনের মধ্যে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। এসব কারণে রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক উঁচুতে। রাজনীতির সূচকে জাপানের অবস্থান সবচেয়ে খারাপ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অবস্থা তাই জাপানের জন্য মডেল হবে বলে মনে হয়।এ পর্যন্ত যা আমি বললাম তা হলো, আমার দেখা জাপানে লিঙ্গের অবস্থা। আমি রোজ লিঙ্গ নিয়ে অনেক কিছু ভাবি। এই সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যাচ্ছি। উদ্দেশ্য হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার লিঙ্গ সমস্যা নিয়ে লেখাপড়া করা। আমি বলেছি, বাংলাদেশে লিঙ্গ সমতা জাপানের জন্য মডেল হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে আমি এখন জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। দিল্লি গিয়ে আরও বেশি লেখাপড়া করলে জাপানের লিঙ্গ সমস্যা নিয়েও নতুন কিছু হয়তো আমি দেখতে পারব। এরপর জাপানের লিঙ্গ পরিস্থিতির মধ্যে যেগুলো আমি এখনো বুঝতে পারি না, সেগুলো যেন ধীরে দূর হয়ে যায়, সেই আশা আমি করছি।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির জন্য নতুন নীতিমালা হচ্ছে। এ জন্য একটি সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে উপকমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই উপকমিটি গঠন করা হয়।সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংসদীয় কমিটির সদস্য মো. আবদুল কুদ্দুসকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ফজলে হোসেন বাদশা, আবদুস সোবহান মিয়া ও এম এ মতিন।বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে পরিচালনা কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়ার পক্ষে মত দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা মাধ্যমিক (এসএসসি) পাস নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করে শিক্ষা বোর্ড। তারা লিখিতভাবে সংসদীয় কমিটিকে এই মত জানিয়েছে।এর আগে গত ২ মে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক হয়। তবে ওই বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলে প্রকৃত শিক্ষানুরাগীদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে। সাংসদ থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয় নেই, তাই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির ক্ষেত্রে এটা করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে ভেবে দেখা দরকার। তবে পরিচালনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে এখন যে অশুভ প্রতিযোগিতা চলছে তা বন্ধ হওয়া দরকার।সর্বশেষ ২০০৯ সালের জুনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা তৈরি হয়। ওই প্রবিধান অনুযায়ী, একজন সাংসদ সর্বোচ্চ চারটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারতেন। এই নীতিমালা নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট হয়েছিল। ২০১৬ সালে ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশ অনুযায়ী, একজন সাংসদ এখন চারটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারেন, তবে তাঁকে নির্বাচিত হতে হবে। সে ক্ষেত্রে পরিচালনা কমিটির অন্যান্য সদস্যের ভোটে তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত হতে হবে।সংসদ সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজকের (মঙ্গলবার) বৈঠকে যেকোনো ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার স্থাপনের আগে সরকারের অনুমোদন নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।কমিটির সভাপতি আফছারুল আমীনের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আবদুল কুদ্দুস, এ কে এম শাহাজান কামাল, ফজলে হোসেন বাদশা, আবদুস সোবহান মিয়া, এম এ মতিন ও গোলাম কিবরিয়া বৈঠকে অংশ নেন।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মারমা সম্প্রদায়ের মা ও মেয়ে নিহত হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।নিহতরা হলেন, ম্রা সাং মারমা (৬০) ও তাঁর মেয়ে মিসানু মারমা (২৯)। খবর পেয়ে আজ মঙ্গলাবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে।চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফ উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। ওসি বলেন, সোমবার মধ্যরাতে ঘটনাটি ঘটে উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের গবাছড়ি গ্রামে। মা-মেয়ে তাদের ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। এ সময় একদল অস্ত্রধারী দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। কিছু বুঝে উঠার আগে মা-মেয়েকে এলোপাতাড়ি গুলি করে চলে যায়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীদের সহযোগিতায় তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটি হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।ওসি আশরাফ বলেন, কে-বা কারা মা-মেয়ের এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা পুলিশ এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। ঘটনার তদন্ত চলছে বলে তিনি জানান।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের স্কুলশিক্ষক আরিফুল ইসলাম ছাত্রীদের ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আহমেদ হুমায়ুন কবিরের আদালতে তিনি এ জবানবন্দি দেন।আদালতে হাজির করার আগে দুটি মামলায় তিন দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ড হয় আরিফুলের। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তাঁর অপরাধ প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়েছেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছু পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, জবানবন্দিতে আরিফুল ছাত্রীদের সঙ্গে কীভাবে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, কীভাবে মুঠোফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে সেগুলো দিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেল করতেন—সে সবের বর্ণনা দিয়েছেন।নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে আরিফুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আরিফুলকে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি মামলায় ৩ দিন করে ৬ট দিনের রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে হাজির করা হয়। জবানবন্দি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠান আদালত।আরিফুল ইসলাম সরকার ওরফে আশরাফুল (৩০) সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকার অক্সফোর্ড হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক। তাঁর বাড়ি মাদারীপুর জেলা সদরের শিলখাড়া এলাকায়। তাঁর এসব অপকর্মে মদদ দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয় স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক জুলফিকার ওরফে রফিকুল ইসলামকে (৫৫)।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার এক ছাত্রীকে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন আরিফুল। এরপর গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট ছাত্রীর পরিবার ও এলাকার লোকজন আরিফুলকে পিটুনি দিয়ে বিষয়টি র‌্যাবকে জানায়। এরপর র‌্যাব আরিফুল ইসলাম ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলফিকারকে গ্রেপ্তার করে। আরিফুলের মুঠোফোন, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ডিভাইসে বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে ধর্ষণের ভিডিও পাওয়া যায়। সেময় জিজ্ঞাসাবাদে আরিফুল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানিয়েছেন, তিনি পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া এবং ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে গত ৫ বছরে স্কুলের ও স্কুলের বাইরে ২০ ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন। ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের ওই ভিডিও ধারণের পর তা দিয়ে ব্ল্যাকমেল করে কয়েক ছাত্রীর মাকেও ধর্ষণ করেন।আরিফুলের এমন ঘটনায় যৌন নির্যাতনের শিকার এক ছাত্রীর বাবা ও র‌্যাব বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে। গত শনিবার আরিফুলের ৬ দিন ও জুলফিকারকে এক দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী তাঁদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
শেষ হয়েছে ভারতের জি বাংলার ‘সা রে গা মা পা’র এবারের সিজন। গান, প্রশিক্ষণ, গান নিয়ে আলাপ, খুনসুটি, ভোট—সব মিলে দারুণ একটা সময় কেটেছে বাংলাদেশের ছেলে মাঈনুল আহসান নোবেলের। আজ মঙ্গলবার রাতে ভারতের কলকাতা থেকে ফিরছেন তিনি। আপাতত তিন সপ্তাহ দেশে থাকবেন। এরপর আবার উড়াল দেবেন মুম্বাইয়ের উদ্দেশে। আজ দুপুরে কলকাতা থেকে জানালেন তিনি। জি বাংলার গানবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুই বাংলায় নোবেল এখন দারুণ জনপ্রিয়।গত শনিবার কলকাতার বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে এই প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্বটি জি বাংলায় দর্শক দেখতে পাবেন ২৮ জুলাই রাতে। তবে তার আগেই বিভিন্ন সূত্রে প্রতিযোগিতার ফলাফল জানাজানি হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে নোবেলকে। ‘সা রে গা মা পা’র এবারের আসরে তিনি প্রিতমের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় রানারআপ অর্থাৎ তৃতীয় হয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন অঙ্কিতা। বিচারকদের রায়ে এই ফল হলেও দর্শকের ভোটে সেরা নোবেল। তিনি ‘মোস্ট ভিউয়ার চয়েস’-এ বিজয়ী হয়েছেন। আয়োজনটির সঙ্গে জড়িত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোর কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।বাংলাদেশের দর্শকের কাছে এই ফলাফল একেবারই অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি নোবেল। ফলাফল নিয়ে মোটেও ভাবছেন না। আজ দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘আপাতত আমার ব্যান্ড “নোবেলম্যান”-এর গান নিয়েই ভাবছি। প্রতিযোগিতা নিয়ে আর মাথা ঘামাচ্ছি না।’ আরও বললেন, ‘এই শোর মাধ্যমে আমি দুই বাংলায় পরিচিতি পেয়েছি। সবাই আমার গান পছন্দ করেছেন, আমাকে ভালোবেসেছেন। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। গ্র্যান্ড ফিনালে রেকর্ড হয়েছে, কিন্তু প্রচার হতে এখনো প্রায় এক মাস বাকি। তাই এটা নিয়ে এখনো অফিশিয়ালি কিছু বলতে পারছি না। আমি আগেই বলেছি, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়ে আমি গানটা ঠিকমতো গাওয়ার দিকে বেশি জোর দিয়েছি। ফলাফল যা-ই হোক, আপনারা আগে যেমন আমার সঙ্গে ছিলেন, আশা করছি ভবিষ্যতেও সেভাবেই আপনাদের পাশে পাব।’গতকাল সোমবার ‘সা রে গা মা পা’র চূড়ান্ত পর্বের ফলাফল জানাজানি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকের মতে, নোবেলের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আবার অনেকেই বলেছেন অঙ্কিতা ভট্টাচার্য ছিলেন যথার্থ।তবে ফলাফল যা-ই হোক, এরই মধ্যে নোবেল দুই বাংলার মানুষের মন জয় করেছেন। এই তরুণের গান, গায়কি, গান উপস্থাপনে মুগ্ধ বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দর্শকেরা।জানা গেছে, আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ‘সা রে গা মা পা’র শেষ পর্ব প্রচারের আগে এই প্রতিযোগিতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না নোবেল। তাই জানালেন নিজের আগামী পরিকল্পনা ও স্বপ্নের কথা। যে স্বপ্নের পুরোটাজুড়ে আছে তাঁর ব্যান্ড ‘নোবেলম্যান’। তাঁর ইচ্ছা, নোবেলম্যান ছড়িয়ে যাবে দেশ-বিদেশে। নতুন নতুন গান নিয়ে আসবে নোবেলম্যান। আজম খান, লাকী আখান্দ্‌, হ্যাপি আখন্দ, আইয়ুব বাচ্চুদের তৈরি করা বাংলা ব্যান্ডের ঐতিহ্য ধরে রাখবেন।আজ দুপুরে যখন ঢাকা থেকে মুঠোফোনে নোবেলের সঙ্গে কথা হয়, তখন তিনি ব্যস্ত নিজের ব্যান্ড নিয়ে। এখন তাঁর সব ভাবনা ব্যান্ড আর মৌলিক গান তৈরি নিয়ে। জানালেন, আপাতত নতুন গান আর গানের ভিডিও তৈরির কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।আজ রাতে ঢাকায় ফিরে কয়েক দিন পুরোপুরি বিশ্রাম নেবেন। তারপর আবার যাবেন মুম্বাইয়ে। তিনি যে ধারায় গান করেন, তা ঢাকা কিংবা কলকাতায় রেকর্ডিং করা সম্ভব নয়। তাই যেতে হবে মুম্বাইয়ে।আগেই জানানো হয়েছে, নোবেলের বাড়ি গোপালগঞ্জে। সেখানেই তাঁর জন্ম। কিন্তু বড় হয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়। বাবা মোজাফফর এইচ নান্নু ব্যবসা সূত্রে কখনো থেকেছেন খুলনা আবার কখনো ঢাকায়। সেখানেই কেটেছে নোবেলের ছোটবেলা। নোবেলে জানান, ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত গোপালগঞ্জের এস এম মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়েছেন তিনি। এরপর ঢাকা ও খুলনায় কয়েকবার স্কুল বদলাতে হয়েছে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভর্তি হন গোপালগঞ্জের একটি স্কুলে। সেখানে মারামারির ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে তাঁকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। বাবা তাঁকে পাঠিয়ে দেন ভারতের দার্জিলিং। সেখানকার কাশিয়াং এলাকার হিমালি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে চলে যান কলকাতার হাজরার একটি স্কুলে।মাথায় গানের পোকা ঢোকে কলকাতায় থাকতেই। মাত্র ৬০০ টাকায় পুরোনো সিগনেচার ব্যান্ডের গিটার কিনে তা দিয়েই শুরু করে দেন সংগীতচর্চা। দিন–রাত গিটার দিয়ে গানের চর্চা। মেনে নেননি প্রতিবেশীরা। যার ফলে চারবার বাসা পাল্টাতে হয়। কলকাতার বন্ধুদের কাছ থেকে গিটারের কর্ড শেখেন নোবেল। এভাবেই গান শেখা। ওই সময়ের স্মৃতিচারণা করে নোবেল জানান, যে বাসায় থাকতেন, তার আশপাশের কয়েকজন শ্রোতা নিয়মিত আসতেন। বয়সে বড়। হেমন্ত, হ্যাপি, আদিবসহ কয়েকজন। তাঁরাই নোবেলের প্রথম অনুপ্রেরণা। উৎসাহদাতা। তাঁরা না থাকলে হয়তো এত দ্রুত গানে আসা কঠিন হয়ে যেত। ওই সময়ের চর্চা বেশি কাজে লেগেছে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা নির্দিষ্ট গুরুর কাছে না শিখে বন্ধুদের সঙ্গে চর্চা আর নিয়মিত অনুশীলন নোবেলকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।কলকাতায় মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করে ২০১৪ সালে ঢাকায় ফেরেন নোবেল। দেশে ফিরে বাবাকে জানান, গান ছাড়তে পারবেন না। নোবেলের যুক্তি, ‘জিম মরিসন মাত্র সেভেন পর্যন্ত পড়েছিলেন, জেমস পড়াশোনা শেষ না করে বাসা ছেড়েছিলেন। নোবেল হবেন তাঁদের মতো।’ বাবা নাছোড়বান্দা। বলতেন, ‘জেমস একজনই হয়।’ নোবেল জবাব দেন, ‘আমি জেমস না হতে পারি, নোবেল হব। আমিও একজনই।’এভাবে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা করতে করতে নোবেলের সঙ্গে গানের প্রেম পোক্ত হয়ে যায়। এখন তিনি নোবেলই হয়েছেন। প্রতিযোগিতার ফলাফল নিয়ে ভাবছেন না। কবে নাগাদ নতুন গান শুনতে পারবেন শ্রোতারা? নোবেল বলেন, ‘দিন–রাত কাজ করেছি। জুলাইয়ে ইউটিউবে নোবেলম্যান চ্যানেলে গানগুলো প্রকাশ করা হবে।’১৯ জুলাই রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটির নবরাত্রি হলে গান শোনাবেন নোবেল। একই মঞ্চে গাইবেন ‘আশিকি টু’ সিনেমার ‘শুন রাহা হ্যায়’ গানের শিল্পী অঙ্কিত তিওয়ারি।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় আজ মঙ্গলবার একটি কারখানার তুলার গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ আছেন চারজন শ্রমিক।আজ দুপুর দুইটার দিকে অটো স্পিনিং মিল নামের ওই কারখানার গুদামে আগুন লাগে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে পাওয়া সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, পানির সংকটে পড়েছে ফায়ার সার্ভিস। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।নিহত শ্রমিকের নাম রাসেল মিয়া (৪৫)। তিনি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আলাল উদ্দিনের ছেলে। ৭ বছর ধরে এই কারখানায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মইনুল হক খান বলেন, রাসেলকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আগুনে তাঁর শ্বাসনালি পুড়ে যায়। এর ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন এসি প্ল্যান্ট বিভাগের আনোয়ার হোসেন, সুজন মিয়া, রায়হান মিয়া ও মোহাম্মদ শাহজালাল। তাদের খোঁজে ঘটনাস্থলে এসেছেন স্বজনেরা।সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অটো স্পিনিং মিলের টিনশেড গুদামে তখনো আগুন জ্বলছে। কালো ধোঁয়ায় চারপাশ প্রায় অন্ধকার হয়ে আছে। ফটকের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে থাকা তুলার বান্ডিলে আগুন জ্বলছে। সড়কের দুই পাশে ও কারখানার সামনে হাজার হাজার উৎসুক মানুষের ভিড়। ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিটের সদস্যদের পাশাপাশি কারখানার ফায়ার ফাইটার দলের সদস্যরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। মানুষের ভিড়ের কারণে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সমস্যায় পড়তে হয়। পুলিশ কারখানার সামনের উৎসুক জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।সাড়ে ৬টার দিকে পানির উৎস নিয়েও সমস্যায় পড়তে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসকে। শুরুতে কারখানার সামনের ড্রেনের পানি ব্যবহার করা হয়। পরে পানির সংকট দেখা দেয়। কারখানার আশপাশে পানির কোনো উৎস না থাকায় দূর থেকে পানি এনে কাজ করতে হয় তাদের।কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, অগ্নিকাণ্ডের উৎস সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। আগুনে গুদামের প্রচুর তুলা পুড়ে গেছে। তাৎক্ষণিক ক্ষতির পরিমাণও জানা যায়নি। এ ঘটনায় একজন নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা রাম প্রসাদ বলেন, আগুন নেভাতে মোট ১৪টি ইউনিট কাজ করছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হয়েছে ২৩ তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী। এবার প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার জন্য ৮৫০ জন শিল্পী আবেদন করেছিলেন। বাছাইয়ের পর ৩১০ জন শিল্পীর মোট ৩২২টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পায়। এর মধ্যে ১৫৯টি চিত্রকলা, ৪৫টি ভাস্কর্য, ৫০ টি ছাপচিত্র, ১৭টি কারুশিল্প, ৮টি মৃৎশিল্প, ৩৭টি স্থাপনা ও ভিডিও আর্ট, ৭টি কৃৎকলা (পারফরম্যান্স আর্ট)। গতকাল সোমবার শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে ২১ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত। ছবিগুলো মঙ্গলবারের।
এমন না যে ভারতকে হারালেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে চলে যেত বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে জয় পেলেও তাকিয়ে থাকতে হতো ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের দিকে। এর পর পাকিস্তানকেও হারাতে হতো নিজেদের শেষ ম্যাচে। সে সবই অনেক জটিল হিসাব নিকাশের ব্যাপার। বাংলাদেশ অত জটিল হিসাবের মধ্যেই যায়নি। ভারতের কাছে আজ ২৮ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এ হার দিয়েই ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল মাশরাফিদের। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতার।আর এই জয় দিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলল ভারত। এর আগে কেবল অস্ট্রেলিয়া শেষ চার নিশ্চিত করেছে।
পাবনার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে রোববার রাতে জোড়া লাগানো যমজ দুই ছেলে নবজাতকের জন্ম হয়েছে। তাদের শরীর আলাদা হলেও পেটের দিকে জোড়া লাগানো আছে। নবজাতক দুইটির নাম রাখা হয়েছে রাজা ও বাদশা। বর্তমানে দুই নবজাতক পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছে।চিকিৎসকেরা বলেছেন, দুই নবজাতকের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়া প্রয়োজন। তবে অর্থ সংকটের জন্য আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত সেটা সম্ভব হয়নি।ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও নবজাতকের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এই জোড়া লাগানো যমজের বাবা-মা জেলার সুজানগর উপজেলার কাদুয়া গ্রামের ফিরোজ শেখ (২৭) ও সনিয়া খাতুন (২১)। বাবা ফিরোজ শেখ দিনমজুর। সনিয়া খাতুন গৃহিণী। রোববার সন্ধ্যায় স্ত্রীর প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাকে জেলা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করেন ফিরোজ। রাতে সেখানেই এই জোড়া লাগানো যমজ নবজাতকের জন্ম হয়। তবে জন্মের পর থেকেই নবজাতক দুইটির শারীরিক ত্রুটি থাকায় চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। তবে দরিদ্র বাবার পক্ষে সেটা সম্ভব হয়নি। কোনো উপায় না পেয়ে ফিরোজ নবজাতক দুটিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। নবজাতক দুটির মা ক্লিনিকেই আছেন।পাবনা জেনারেল হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নীতিশ কুমার প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে দেখে নবজাতক দুটিকে সুস্থ মনে হয়েছে। তবে তাদের দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে দেখতে হবে, শিশুদের হার্ট বা শরীরের অন্য অঙ্গগুলো পৃথক আছে কিনা। যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করা যাবে।বাবা ফিরোজ শেখ প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকেরা দুই দিন আগেই শিশুদের ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেছেন। তবে টাকার অভাবে তিনি ঢাকায় যেতে পারছেন না। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের খরচ চালিয়েছেন। এখন কী করবেন কিছু বুঝতে পারছেন না।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজের টয়লেটে ভেতর থেকে পৌনে ১৩ কেজি সোনার বার পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সোনার এসব বার উদ্ধার করে ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রিভেনটিভ দল। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিমানের এয়ারক্রাফট মেকানিক মোহাম্মাদ আফজাল হোসেন হাওলাদারকে আটক করা হয়েছে।ঢাকা কাস্টম হাউসের উপপরিচালক অথেলো চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গোপন সূত্রে তথ্য পেয়ে বিমানের উড়োজাহাজ ‘অরুণ আলো’র টয়লেটে তল্লাশি করা হয়। বিমানটি আজ দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে ওমানের মাসকট থেকে চট্টগ্রাম হয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানটির ২১এ নম্বর আসনের পেছনে টয়লেটে তল্লাশি করা হয়। এ সময় টয়লেটের ভেতর ব্যবহৃত টিস্যু ফেলার টিস্যু বক্সের নিচের একটি গোপন স্থান থেকে কালো স্কচটেপে মোড়ানো ৬ টি বান্ডিল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া বান্ডিলগুলো পরে কাস্টমস ব্যাগেজ কাউন্টারে নিয়ে আসা হয়। সেখানে বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে বান্ডিলগুলো খুলে সোনার এক শ ১০ টি বার উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি বারের ওজন ১০ তোলা। সব মিলিয়ে উদ্ধার হওয়া সোনার বারের ওজন ১২ কেজি ৭৬০ গ্রাম, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।অথেলো চৌধুরী বলেন, এসব সোনা চোরাচালানের অভিযোগে বিমানের এয়ারক্রাফট মেকানিক মোহাম্মাদ আফজাল হোসেন হাওলাদারকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সোনার চোরাচালানের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা করা হবে।
পরপর তিনবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি পেয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন রাজশাহীর বাগমারার এক মাদকাসক্ত ব্যক্তি। দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তির নাম মামুন হোসেন (৩২)। তিনি উপজেলার তাহেরপুর মহল্লার বাসিন্দা।মা ও স্ত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামুনকে মাদকদ্রব্যসহ আটক করে পুলিশ। পরে আজ মঙ্গলবার তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দণ্ডপ্রাপ্ত মামুনের মা ও স্ত্রী।দণ্ডপ্রাপ্ত মামুন হোসেনের মা মর্জিনা বেগম বলেন, তাঁর ছেলে কয়েক বছর আগে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। পারিবারিকভাবে ছেলেকে মাদকের ছোবল থেকে ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁকে ফেরানো যায়নি। এর আগে দুই দফায় মাদক সেবন করা অবস্থায় পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাভোগের পর সম্প্রতি বাড়িতে ফিরে এসে আবারও মাদক সেবন শুরু করেন মামুন। মাদক সেবন থেকে বিরত রাখতে পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। উল্টো মাদকের টাকার জন্য তিনি স্ত্রী, অষ্টম শ্রেণিতে পড়া এক মেয়ে ও মাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন। নিরুপায় হয়ে স্ত্রী ও মা বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাগমারা থানার পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে মঙ্গলবার সকালে তাহেরপুর ক্যাম্পের পুলিশ স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ থেকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মামুনকে আটক করে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়। দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে হাজির করা হয়। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে মা ও স্ত্রী সাক্ষ্য দেন। অভিযুক্ত মামুন হোসেনও আদালতের কাছে অকপটে মাদক সেবনের কথা স্বীকার করেন। পরে আদালতের বিচারক নির্বাহী হাকিম জাকিউল ইসলাম ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। রায়ের পর তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।মামুনের স্ত্রী ও মা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভালো সাজা হয়েছে, কারাগারে থেকে এবার ভালোও হতে পারে।’রায় ঘোষণার পর মামুন হোসেন বলেন, একই অপরাধে এ নিয়ে তিনবার ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দিলেন। মাদকসেবীদের ধরার জন্য পুলিশকে সহযোগিতা করতে গিয়েই তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তবে তাঁর এই অভিযোগ অস্বীকার করে তাহেরপুর ক্যাম্পের কর্তব্যরত পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রফিকুল ইসলাম বলেন, মামুন হোসেন দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত।
ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশাসহ মশক নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং মাঠপর্যায়ে পদক্ষেপের বাস্তবায়ন বিষয়ে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। আগামী ১৭ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রাখা হয়েছে। পানি ছিটানোসহ রাজধানীর বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কার্যক্রমের অগ্রগতি বিষয়ক শুনানিতে এ আদেশ দেওয়া হয়।শুনানিকালে সিটি করপোরেশনের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, ডেঙ্গুর ব্যাপকতা তো বেড়ে গেছে। কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? মন্ত্রী, সাংসদ, বিচার বিভাগের অনেকে ও জনসাধারণ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ফগিং কার্যক্রমও দেখা যায় না। আপনারা ওষুধ দিচ্ছেন, এতে কাজ হচ্ছে কি না খবর রাখেন? মশা নিয়ন্ত্রণে কি ওষুধ ব্যবহার করেন? কাজ হয় না? পদক্ষেপের কথা বলছেন, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করবে কে? যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা যেন কার্যকর হয়-এটি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করবেন।‘ঢাকার বাতাসে নতুন বিপদ’ শিরোনামে গত ২১ জানুয়ারি প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটি যুক্ত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২৭ জানুয়ারি রিট করা হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর রাস্তাসহ নির্মাণাধীন জায়গা ঘিরে দেওয়া, ধুলামাখা স্থানে দুবেলা পানি ছিটানো ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আজ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।অগ্রগতি বিষয়ক প্রতিবেদনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু মশার প্রকোপ রোধে দশ দফা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে, যা আজ শুনানিতে ওঠে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।সিটি করপোরেশনের প্রতিবেদন তুলে ধরেন আইনজীবী নুরুন্নাহার আক্তার। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিবেদনে আসা দশ দফার মধ্যে ওয়ার্ড ভিত্তিক সকাল ড্রেন পরিষ্কার করা ও ড্রেন প্রবাহমান রাখা এবং এডিস মশার উৎসসমূহ অপসারণের বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও অঞ্চলের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সকল পরিচ্ছন্ন পরিদর্শকদের ওয়ার্ড ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়ার কথাও রয়েছে।পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে দুই সিটি করপোরেশন পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিবেদনে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা রোধে ২৪ জুন নেওয়া দশ দফা পদক্ষেপের কথা বলা হয়। হাইকোর্ট দুই সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশাসহ মশক নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং মাঠপর্যায়ে পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।
১ জুলাই যাত্রা শুরু করেছে অনলাইনভিত্তিক বুকশপ বইমেলা ডট কম (Boimelaa.com)। সবচেয়ে কম খরচে সর্বোচ্চ গ্রাহক সেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে পথচলা শুরু করেছে বইভিত্তিক এই ই-কমার্স সাইটটি।প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই অনলাইন বুকশপে দেশের সব প্রকাশনী ও লেখকের বই পাঠকেরা ঘরে বসেই অর্ডার করতে পারবেন ২৫ শতাংশ ছাড়ে। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বইও পাওয়া যাবে ‘সর্বনিম্ন’ কনভারশন রেটে। অর্ডার করার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই গ্রাহকের দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বইমেলা ডট কম। বইমেলা সারা বছর—গ্রাহকদের প্রতি এটিই বইমেলা ডট কমের প্রতিশ্রুতি। শুরুতে পুরো বাংলাদেশ ও পরীক্ষামূলকভাবে পশ্চিমবঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলবে।প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম উদ্যোক্তা ও নির্বাহী কানিজ ফাতিমা বলছেন, বাংলাদেশে বইয়ের খুচরা বাজার বেশ ছোট, কিন্তু বড় করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অনলাইনভিত্তিক বুকশপ সময়ের দাবি। এখনকার এই ডিজিটাল যুগে বইও থাকবে পাঠকের হাতের নাগালেই।সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত এক বছর ধরে এই ই-কমার্স সাইটটি নিয়ে কাজ চলেছে। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হবে, সারা দেশের পাশাপাশি দেশীয় বইকে পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত ও সহজলভ্য করে তোলা।
প্রথমেই পাঁচতলার অফিস কক্ষে গিয়ে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তিনি অফিস থেকে বের হয়ে নিচে নামার জন্য লিফটে উঠলে ওই শিক্ষার্থীদের কয়েকজনও সেখানে ঢুকে পড়েন। এরপর লিফট থেকে নেমে ওই শিক্ষক সামনে এগোতে থাকলে ‘ধর ধর, ধাক্কা দে, ধাক্কা দে’ বলে সাত-আটজন শিক্ষার্থী তাঁর পিছু নেন। এর মধ্যে দুজন তাঁকে ধাক্কাও দিয়ে বসেন। পরে একজন তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেন।বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা মাসুদ মাহমুদকে এভাবেই লাঞ্ছিত করা হয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে উঠে এসেছে এই তথ্য। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।মাহমুদুল হাসান নামের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক শিক্ষার্থীই প্রবীণ এই অধ্যাপকের গায়ে কেরোসিন দেন বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ক্যাম্পাস থেকে তাঁকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব কুমার চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাহমুদুল হাসানই শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের কাছে বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। উত্তেজনা থেকেই কেরোসিন দিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।’এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার বড়ুয়া মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান ওসি প্রণব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ওই ছেলের (মাহমুদুল হাসান) উদ্দেশ্য খারাপ ছিল। কেরোসিন দেওয়ার পর হয়তো আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারত।’শিক্ষককে নিগৃহীত করার পর ওই শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনের জাকির হোসেন সড়কে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সড়কের দুই পাশে যানজট লেগে যায়। পরে পুলিশ গেলে তাঁরা সটকে পড়েন। শিক্ষককে নিগৃহীত করার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষকের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার বড়ুয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অফিস থেকে নিয়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা করেই তারা আক্রমণ করেছে।একই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, যে ছেলেটি ঘটনা ঘটিয়েছে সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে।উপাচার্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।প্রায় ৪০ বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার পর তিন বছর আগে ইউএসটিসির ইংরেজি বিভাগে যোগ দেন অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। সম্প্রতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে ‘অপ্রাসঙ্গিকভাবে’ যৌনতা বিষয়ে তুলে ধরে পক্ষান্তরে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেছেন তিনি। গত ২৫ এপ্রিল এ বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে একটি স্মারকলিপিও দেন তাঁরা। সেখানে ইংরেজি বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়ন করা ২৬৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২২ জনের সই ছিল।তবে শুরু থেকেই যৌন নিপীড়নের অভিযোগটি উদ্ভট ও সত্য নয় বলে দাবি করে আসছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। মাসুদ মাহমুদের পক্ষে মাঠে নামেন চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনেরা। পাশাপাশি এই অধ্যাপকের চরিত্রহননের অপচেষ্টা চলছে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের ৫০৭ বিশিষ্টজন।বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পর মাসুদ মাহমুদ ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার মান উন্নত করার লক্ষ্যে কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করেন এবং নতুন কয়েকজনকে নিয়োগ দেন। পাশাপাশি ইংরেজি বিভাগের বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ক্লাস উপস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারান। চাকরিচ্যুত ওই শিক্ষকদের ইন্ধনে এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ হারানো শিক্ষার্থীরাই মিলে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন বলে জানান তাঁরা।দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, দুই জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। প্রবীণ একজন অধ্যাপককে এভাবে লাঞ্ছিত করা নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন দেওয়ার ঘটনাকে ন্যক্কারজনক বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ থেকেই প্রমাণিত হয় ওই শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগ সঠিক নয়। তাঁরা তাদের অভিযোগ প্রমাণ করতে না পেরে সম্পূর্ণ বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর পেছনে যে বড় একটা চক্র কাজ করছে, তাদের শাস্তি না হলে এ রকম ঘটনা আরও ঘটবে।
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার নারী নরসুন্দর শেফালী রানীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমি ও ঘর উপহার দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শেফালীর হাতে জমি ও ঘরের কাগজপত্র তুলে দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।উপজেলার বলতলা দোগনা বাজারে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শেফালীর হাতে ৫ শতাংশ জমি ও সরকারি ঘরের অনুদানের কাগজ তুলে দেন প্রতিমন্ত্রী। শেফালী ১৫ বছর ধরে দোগনা বাজারে পুরুষের চুল-দাড়ি কেটে সংসার চালাচ্ছেন। শেফালীকে ঘর ও জমির কাগজ দেওয়ার অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এনামুর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন, বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। সেই লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় একমাত্র নারী নরসুন্দর শেফালী রানীকে জমি ও ঘর বরাদ্দের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ঘর ও জমির কাগজপত্র নিয়ে তাঁর বাড়িতে এসেছি। দুই মাসের মধ্যেই তাঁর ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হবে।’স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় শেফালী রানীর বিয়ে হয়। স্বামী বিশ্বনাথ শীলের দোগনা বাজারে সেলুন ছিল। অন্যের চুল-দাড়ি কেটে স্বামী যা আয় করতেন, তা দিয়ে কোনো রকম চলে যেত তাঁদের সংসার। তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় চার মেয়ে ও এক ছেলে। ১৫ বছর আগে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিশ্বনাথ। বন্ধ হয়ে যায় শেফালীর সংসারের চাকা। নিজের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ বহন করতে না পেরে নিরুদ্দেশ হয়ে যান বিশ্বনাথ। শেফালী কখনো ভাবেননি পুরুষের চুল-দাড়ি কেটে তাঁকে সংসার চালাতে হবে। তবে জীবনের তাগিদে অন্যের চুল-দাড়ি কেটে বর্তমানে সংসার ও পাঁচ ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন শেফালী। এর মধ্যে মেজ মেয়ে বিএ তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। অন্য ছেলেমেয়েরাও পড়ালেখা করছে। প্রতিদিন সকালে যন্ত্রপাতি নিয়ে হাজির হন দোগনা বাজারে। সেখানে এক প্রবাসীর বসতঘরের বারান্দায় সারা দিন কাজ করেন নরসুন্দর শেফালী।স্থানীয়রা জানান, শেফালীর শুরুটা ছিল খুব কঠিন ও বিব্রতকর। স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পরে ছেলেমেয়ে নিয়ে অথই সাগরে পড়েন তিনি। নিরুপায় হয়ে সিদ্ধান্ত নেন স্বামীর পেশাই গ্রহণ করবেন। বাজারে পুরুষের চুল-দাড়ি কাটার কাজ শুরু করলে প্রথমে বাধাবিপত্তি আসে। তবে এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে বাধা দূর হয়। এখন অনেকেই তাঁর প্রশংসা করছেন। নারী হয়ে পুরুষের সৌন্দর্য বর্ধনের সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ায় জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ২০১৮ সালে শেফালীকে জয়িতা সম্মাননা দিয়েছে।শেফালী রানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারী হয়ে পুরুষের চুল কাটি—এটা নিয়ে প্রথমে মানুষ হাসাহাসি করতেন। মনে মনে ভয় পেতাম, যাদের চুল কাটি তাদের কেমন দেখাবে। তবে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘গ্রামের বাজারে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। হাটের দিন একটু কাজ বেশি হয়। আবার দুই-এক দিন গ্রাহক থাকে না। তখন বাজারের বিভিন্ন দোকানে পানি আনার কাজ করি। এতে একটু বাড়তি আয় হয়।’শেফালী রানী আরও বলেন, ‘আমার নিজের কোনো জায়গা নেই। অন্যের বাড়ির বারান্দায় সেলুন দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে ৫ শতাংশ জমি ও ঘর দেওয়ায় তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
আগামীকাল কোপা আমেরিকার সেমিতে ব্রাজিলের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের আগে দুই দলের ফর্ম বিবেচনা করে অনেকেই ব্রাজিলকে এগিয়ে রাখছেন। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে যেকোনো টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে অধিনায়ক লিওনেল মেসির রেকর্ড দেখলে আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা আশাবাদী হতেই পারেন!এখনো জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা জেতা হয়ে ওঠেনি লিওনেল মেসির। এ কথা আজকের নতুন নয়। এ পর্যন্ত আকাশি-সাদা জার্সি গায়ে চারটি ফাইনাল হেরেছেন। কিন্তু সেমিতে লিওনেল মেসিকে আটকানোর মত কোনো দল এখনো আসেনি। অন্তত পরিসংখ্যান সে কথাই বলে। আগামীকাল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে এই সেমিফাইনাল খেলতে নামছে মেসির আর্জেন্টিনা। পুরো টুর্নামেন্টে নিষ্প্রভ খেলা মেসি কি অন্যান্য বারের মতো এবারও সেমিতে জ্বলে উঠবেন?এর আগে মেসি জাতীয় দলের হয়ে সেমি খেলেছেন চারবার। তিনবার কোপা আমেরিকায়, একবার বিশ্বকাপে। প্রত্যেক বার দলকে জিতিয়ে ফাইনালে তুলেছেন। এই চার ম্যাচে গোল করেছেন দুটি, সহায়তা করেছেন পাঁচটি গোলে।প্রথমবার আর্জেন্টিনার হয়ে সেমি খেলেছিলেন সেই ২০০৭ সালের কোপা আমেরিকায়। সেবার প্রতিপক্ষ ছিল মেক্সিকো। অনেকের মতে গত বিশ বছরে আর্জেন্টিনার সেরা দল সেবারই ছিল। হুয়ান রোমান রিকেলমের তত্ত্বাবধানে তখন সদ্যই বিশ্বতারকা হওয়ার পথে চলা শুরু করেছেন মেসি। মেক্সিকোর বিপক্ষে সেই সেমিতে আর্জেন্টিনা জিতেছিল অনায়াসে, ৩-০ গোলে। ম্যাচে মেসি গোল করেছিলেন একটি। অনেকের দৃষ্টিতে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে সেটা মেসির অন্যতম সেরা গোল। তৎকালীন কোচ আলফিও বাসিলে বলেছিলেন, ‘শুধু জিনিয়াসের পক্ষেই এমন গোল করা সম্ভব।’ মেসি ছাড়াও সে ম্যাচে গোল করেন রিকেলমে ও গ্যাব্রিয়েল হেইঞ্জ।২০১৪ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। গোলশূন্য ম্যাচের সমাধা হয় পেনাল্টি শুটআউটে। সেবার আর্জেন্টিনা জিতে ফাইনালে ওঠে।২০১৫ সালের কোপা আমেরিকার সেমিতে প্যারাগুয়েকে বিধ্বস্ত করে আর্জেন্টিনা, ৬-১ গোলে। কোনো গোল না করলেও তিনটি গোলে সরাসরি সহায়তা করেন মেসি। মেসির সহায়তায় গোলগুলো করেন মার্কোস রোহো, হাভিয়ের পাস্তোরে ও অ্যানহেল ডি মারিয়া। সার্জিও আগুয়েরো ও গঞ্জালো হিগুয়েইনের সঙ্গে আরেকটি গোল করেন ডি মারিয়া।২০১৬ সালের শতবর্ষী কোপা আমেরিকার সেমিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ৪-০ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে এক গোল করেন মেসি। পরে এজেকিয়েল লাভেজ্জি ও গঞ্জালো হিগুয়েইনের গোল দুটিতে সহায়তা করেন।আগামীকাল ব্রাজিলের বিপক্ষে আরেকটি সেমিফাইনালে এমন উজ্জ্বল মেসিকেই তো চাইবে আর্জেন্টিনা!
সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিকের কাছে নিজ পরিচয়পত্র পেশ করেছেন ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার। তিনি সার্বিয়া ও আলবেনিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ রাষ্ট্রীয় আচার অনুসরণ করে তিনি তাঁর পরিচয়পত্র পেশ করেন।দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আবদুস সোবহান সিকদার দুই দেশের দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়ে তুলে ধরেন এবং এ সম্পর্ক ‍উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিহিত করেন। রাষ্ট্রদূত জানান, দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। শিগগিরই সার্বিয়াতে একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল পাঠানো হবে বলে তিনি সার্বিয়ার রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সার্বিয়া বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, সিরামিক, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস আমদানি করতে পারে।রাষ্ট্রদূত প্রেসিডেন্টকে সার্বিয়ার প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষ ও অদক্ষ মানবসম্পদ সরবরাহে বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়টিও অবহিত করেন।সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ এবং আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বিজ্ঞপ্তি
বাদ্য বাজিয়ে ইতিমধ্যে তিনটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী পণ্ডিত সুদর্শন দাশ। এবার চতুর্থ রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ সময় ড্রামসেট বাজানোর রেকর্ডটি (লংগেস্ট ম্যারাথন ড্রামিং বাই অ্যান ইনডিভিজুয়্যাল) এবার নিজের করে নিতে চান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সন্তান সুদর্শন।আগামী সোমবার (৮ জুলাই) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় পূর্ব লন্ডনের লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজানো শুরু করবেন তিনি। টানা কমপক্ষে ১৩৪ ঘণ্টা ৫ মিনিটের বেশি বাজাতে পারলেই গিনেস বুকে নাম উঠবে।দীর্ঘ সময় ড্রামসেট বাজানোর রেকর্ডটি বর্তমানে ১৩৪ ঘণ্টা ৫ মিনিটের। স্টিভ গউল নামের একটি ব্যক্তি ২০১৫ সালে ১৪ থেকে ১৯ আগস্ট বাজিয়ে সেই রেকর্ড গড়েন। এই রেকর্ডটিই ছিনিয়ে নিতে চান বাঙালি সন্তান সুদর্শন।এর আগে সুদর্শন দাশ তিনটি গিনেস রেকর্ড গড়েছেন। এর মধ্যে তাঁর প্রথম রেকর্ড ‘লংগেস্ট তবলা ম্যারাথন’–এর জন্য বাজিয়েছেন টানা ৫৫৭ ঘণ্টা ১১ মিনিট। দ্বিতীয় রেকর্ড ‘লংগেস্ট ঢোল ম্যারাথন’–এর জন্য বাজান টানা ২৭ ঘণ্টা। আর তৃতীয় রেকর্ড ‘লংগেস্ট ইনডিভিজুয়্যাল ড্রামরোল’–এর জন্য বাজান টানা ১৪ ঘণ্টা।সুদর্শন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর লক্ষ্য ছিল তিনটি রেকর্ড গড়া। কিন্তু চাইলেই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ চ্যালেঞ্জ নেওয়ার অনুমোদন দেয় না। তাই তিনি চারটি বিভাগে আবেদন করে রেখেছিলেন। ওই সব আবেদনের তিনটি আগেই গৃহীত হয়। যেগুলো তিনি সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। সম্প্রতি তাঁর চতুর্থ আবেদনটিও গিনেস কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে। তাই আরও একটি রেকর্ড গড়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না তিনি।এবার টানা ১৪০ ঘণ্টা বাজিয়ে তারপর থামতে চান সুদর্শন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট করে বিরতি নেওয়ার সুযোগ আছে। চাইলে বেশ কয়েক ঘণ্টা টানা বাজিয়ে বিরতিগুলো জমিয়ে একসঙ্গে নেওয়া যায়।সোমবার বাজানো শুরুর আগে হবে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এতে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার ভিক্টোরিয়া ওভেজসহ বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।অনুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বাজানোকালে যে কেউ চাইলে ভেনুতে গিয়ে সেটি উপভোগ করতে পারবেন।পণ্ডিত সুদর্শন এবারের চ্যালেঞ্জটি উৎসর্গ করেছেন শরণার্থী শিশুদের। তিনি অনাথ শিশুদের জন্য ৩ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৩ লাখ টাকা) সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। সংগৃহীত অর্থ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউনিসেফকে দেওয়া হবে।যে কেউ চাইলে অনলাইনে <justgiving.com/crowdfunding/panditorphans? utm_source> ঠিকানায় অনুদান দিতে পারবেন।লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমির ঠিকানা: London Enterprise Academy, Aneuin Bevan House, 81-91 Commercial Road, London E1 1 RD.
পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় আরও দুই আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁরা পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মো. রুস্তম আলী আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।এ নিয়ে ৩২ জন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হলো। আগামীকাল বুধবার মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য আছে।আত্মসমর্পণ করা দুই আসামি হলেন ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মকলেছুর রহমান এবং বিএনপি নেতা আবদুল হাকিম। তাদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল।মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আখতারুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উত্তরাঞ্চলে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে ট্রেনে করে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে প্রবেশের সময় ওই ট্রেন লক্ষ্য করে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। ট্রেনে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা করা হয়। এ সময় পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য এগিয়ে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়। ঘটনায় ৫২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। গত ২৫ বছরে আসামিদের সাতজন মারা গেছেন। বাকিদের মধ্যে ৩০ জন গত রোববার আদালতে উপস্থিত হলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। গতকাল সোমবার আদালত মামলার রায় ঘোষণার দিন হিসেবে আগামীকাল বুধবার ধার্য করেন।
দুদিন আগে লিখেছিলাম, নয়ন বন্ড কার লোক? অর্থাৎ কাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে একজন নয়ন বন্ড তৈরি হয়েছিল?বরগুনা আওয়ামী লীগের দুই বিবদমান গ্রুপের নেতারা বলেছিলেন, ‘ও আমাদের নয়, ওদের লোক।’ নয়ন বন্ড বেঁচে থাকলে বলতে পারতেন, সত্যি সত্যি তিনি কার লোক ছিলেন।শুধু বরগুনা নয়, আরও অনেক ঘটনায় দেখা গেছে, কোনো অপরাধী বা সন্ত্রাসী হাতেনাতে ধরা পড়লে নেতারা অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। এটা কারও অজানা নয় যে রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে থাকেন। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে তাঁরা খুবই পারঙ্গম। বগুড়ার তুফান সরকারের বেলায়ও সেটা দেখেছিলাম।অভিযোগ আছে, নয়ন বন্ড আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁকে যুবলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। মজার বিষয় হলো বরগুনা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ একে অপরকে অভিযুক্ত করলেও কেউ বলছে না যে নয়ন বন্ড বিএনপি বা জামায়াতের লোক ছিলেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেছেন, নয়ন ছিলেন সাংসদ পুত্র সুনাম দেবনাথের ঘনিষ্ঠ। আর সাংসদ পুত্রের অভিযোগ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানই তাঁদের আশ্রয়দাতা।নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে এই প্রথম অভিযোগ ওঠেনি। মাদক, ছিনতাই, প্রতিপক্ষকে মারধরসহ তাঁর বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা ছিল। তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার সদর্পে জেল থেকে বেরিয়েও এসেছেন। কিন্তু কীভাবে বেরিয়ে এলেন, কারা বেরিয়ে আসতে সহায়তা করেছেন, সেটি খুঁজে বের করা প্রয়োজন।সারা দেশে যখন নয়ন বন্ডকে নিয়ে সরগরম আলোচনা চলছিল, তখনই খবর এল রিফাত শরিফকে কুপিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ ওরেফ 'নয়ন বন্ড' পুলিশের সঙ্গে কথিত 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোর সোয়া চারটার দিকে বরগুনার পুরাকাঠা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনা হয় বলে জানানো হয়। এ সময় নয়ন বন্ড নিহত হন। এ ঘটনায় এএসপিসহ ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।পুলিশের ভাষ্য, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিফাত শরিফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডকে গ্রেপ্তার করতে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়ির চর ইউনিয়নের পুরাকাটা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের ওপর গুলি চালান নয়ন বন্ড ও তাঁর সহযোগীরা। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির একপর্যায়ে নয়ন বন্ড বাহিনী পিছু হটলে ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, দুটি শটগানের গুলির খোসা এবং তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।এ রকম একজন দুর্ধর্ষ অপরাধীকে জীবিত ধরে বিচার করা জরুরি ছিল। কিন্তু পুলিশ তাঁকে মৃত উদ্ধার করেছে। একটি ছবিতে দেখলাম কলাপাতার ওপর তাঁর লাশ পড়ে আছে। একটি হাফ প্যান্ট পরা। অথচ তিন দিন আগেও তাঁর ভয়ে বরগুনা প্রকম্পিত ছিল।নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় অনেক কিছুই জানা যাবে না। কীভাবে তিনি অপরাধের জগতে এলেন? কারা তাঁকে মাঠের সৈনিক হিসেবে ব্যবহার করেছেন, আর তিনি কাদের ব্যবহার করেছেন সিঁড়ি হিসেবে?একটি সংবাদমাধ্যমে নয়ন বন্ডের মা সাহিদা বেগমের কিছু বক্তব্য ছাপা হয়েছে। রিফাত শরিফ হত্যার দিন বেলা ১১টায় নয়ন মাকে ফোন করেন। ফোন ধরেই তিনি বলেন, ‘এ নয়ন, তুই নাকি কারে কোপাইছ। আহারে কার মায়ের কোল খালি করছ।’ওই সময় নয়ন বলেন, ‘কোপাইছি ঠিক করছি, তুমি আমার জামাকাপড় দাও আর টাকা জোগাড় করো।’ এ কথা বলেই বাসার কাছাকাছি একটি দোকানের পেছনে আসে। সেখান থেকে একটি ছেলেকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। নয়নের মা ওই ছেলের কাছে একটি টি-শার্ট ও প্যান্ট পাঠিয়ে দেন। পরে আবারও নয়ন তাঁকে টাকা পাঠাতে বলে। এবার নয়নের মা নিজে গিয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আসেন। এরপর নয়ন ও রিফাত টাকা নিয়ে কেজি স্কুল সড়কের এক বন্ধুর বাড়িতে যান। সেখানে তাঁরা তিনজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় নয়ন মোবাইল ভেঙে ফেলতে চাইলে একজন ফোনটি রেখে টাকা দিয়ে দেন।এতেই বোঝা যায়, নয়ন বন্ড কতটা ভয়ংকর ছিলেন। রিফাত হত্যা মামলার ৯ আসামি গ্রেপ্তার হলেও নয়ন বন্ডের দুই প্রধান সহযোগী রিফাত ফরাজি ও রিশান ফরাজি এখনো পলাতক।সোমবার পর্যন্ত ৯ জন গ্রেপ্তার হন। তাঁরা হলেন চন্দন (২১), মো. হাসান (১৯), অলিউল্লাহ (২২), টিকটক হৃদয় (২১) এজাহারভুক্ত আসামি। ঘটনার পরের দিন সকালে চন্দনকে, সন্ধ্যায় মো. হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার বরগুনা থেকে অলিউল্লাকে (২২) এবং ঢাকা থেকে টিকটক হৃদয়কে (২১) গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য পাঁচজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন নাজমুল ইসলাম (১৮), সাগর (১৯), তানভীর (২২), কামরুল হাসান ওরফে সাইমুন (২১)। অপর একজনের নাম পুলিশ প্রকাশ করেনি।সোমবার বিকেলে এই মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি অলিউল্লাহ ওরফে অলি ও তানভীর হোসেন ১৬৪ ধারায় বরগুনার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বিকেলে বরগুনার বিচারিক হাকিম সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে ওই দুই আসামিকে উপস্থিত করে তাঁদের দুজনের এই জবানবন্দি নেওয়া হয়। অলিউল্লাহ রিফাত হত্যা মামলার ১১ নম্বর আসামি, তাঁকে রোববার গ্রেপ্তার হয়। অপর আসামি তানভীর সন্দেহভাজন আসামি। তিনি মূল আসামি নয়ন বন্ডের সন্ত্রাসী দল ০০৭-এর সক্রিয় সদস্য।নয়ন বন্ড কার লোক এ বিষয়ে তিনি নিজেই বড় সাক্ষী হতে পারতেন। কিন্তু বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর সেই সুযোগ আর নেই। যেহেতু বরগুনা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষই একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে, সেহেতু আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সত্য উদ্‌ঘাটনে একটি কমিটি করতে দিতে পারে। তারা বের করবে নয়ন বন্ড কার পক্ষে কাজ করেছেন কিংবা কে বা কারা তাঁকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।পুলিশ প্রশাসনও তদন্ত করে দেখতে পারে, কারা নয়ন বন্ডের সহযোগী ছিলেন। কারা তাঁকে তৈরি করেছেন? বরগুনায় নয়ন বন্ডই একমাত্র অপরাধী নন। আরও অনেক অপরাধী আছেন। তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।সোহরাব হাসান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবিsohrabhassan55@gmail.com
কখনো বিচ্ছেদ, কখনো প্রেম। আবার দেহতত্ত্বের ভেতর-বাহির। এভাবে গীতিকবি রাধারমণ দত্তের সুরের আবেশ ছড়িয়ে যায় কানাডার টরন্টোতে। ভিন দেশের বুকে রাধারমণের সুরে শ্রোতাদের মন ভিজিয়েছেন বাংলাদেশি ও কানাডাপ্রবাসী শিল্পীরা।গত ২১ জুন শুক্রবার টরন্টো শহরে আয়োজন করা হয় রাধারমণ ফোক ফেস্টিভ্যাল ২০১৯। নান্দনিক আগা খান মিউজিয়াম মিলনায়তনে বসা এই আসরের আয়োজক ডেনফোর্থ এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নানা পরিবেশনায় দর্শকেরা উপভোগ করেছেন এই অনন্য আয়োজন।রাধারমণ লোক উৎসবের অতিথি শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন চন্দনা মজুমদার, আশিক ও পিন্টু ঘোষ। আর টরন্টো থেকে যোগ দেন শিল্পী তমা পাল, তমা রায় ও সাবু শাহ।সুকন্যা নৃত্যাঙ্গনের শিল্পীদের পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্ব। ছিল রাধারমণের সৃষ্টি ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য। মেরী রাশেদীন ও উজ্জ্বল দাশের উপস্থাপনায় প্রথম পর্বে গান করেন কানাডাপ্রবাসী শিল্পী সাবু শাহ, তমা রায় ও তমা পাল। সবশেষে ঢাকা থেকে আাগত অতিথি শিল্পী চন্দনা মজুমদার, আশিক ও পিন্টু ঘোষ গানে গানে মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন।সাংস্কৃতিক পর্বের আগে উৎসব উদ্‌যাপনের আহ্বায়ক সুদীপ সোম রিংকু অতিথি ও দর্শক শ্রোতাদের স্বাগত জানান। তিনি বলেন, কানাডার বহু সংস্কৃতির বৃহত্তর পরিসরে বাংলাদেশের একেবারে লোকজ সংস্কৃতির প্রবেশ ঘটুক, এমন চাওয়া থেকেই এই রাধারমণ লোক উৎসবের আয়োজন। প্রবাসে বাস করেও বাংলাদেশি সংস্কৃতির প্রতি কানাডাপ্রবাসীদের আগ্রহকে তিনি অভিনন্দন জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন টরন্টোয় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল নাঈম উদ্দিন আহমদ, কবি আসাদ চৌধুরী, সিটি কাউন্সিলর গ্যারি ক্রফোর্ড, ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত, ড. সুশীতল চৌধুরী, শিল্পী মুন্নী সোবহানী ও দেবব্রত দে তমাল প্রমুখ। আলোচনা পর্বের শুরুতে জ্যোতি দত্ত পুরকায়স্থ ও আবদুল কাইয়ুম মুকুল রাধারমণের জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন।আলোচনাপর্বে দেওয়া বক্তব্যে নাঈম উদ্দিন আহমদ বলেন, সাধক কবি রাধারমণ দত্তকে নিয়ে বিশাল পরিসরে আয়োজন এই লোক উৎসব। আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই রাধারমণ দত্তের গান ও জীবন দর্শনকে তুলে ধরার এই অনন্য প্রয়াসের জন্য।কানাডায় প্রথমবারের মতো রাধারমণ লোক উৎসবের আয়োজনে সহযোগী ছিল ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড বাংলাদেশ, জেএনআর লিগ্যাল সার্ভিসেস, রিয়েলেটর দেবব্রত দে, দেশে-বিদেশ টিভি, ঝংকার টিভি ও সংস্কৃতিবিষয়ক অনলাইন পত্রিকা গানপার।
এজবাস্টনে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত। প্রথম আলোর বিশেষ আলোকচিত্রী শামসুল হকের চোখে দেখুন এ ম্যাচের বিশেষ মুহূর্তগুলো
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কানাডা শাখার উদ্যোগে হয়ে গেল বার্ষিক বনভোজন। ওন্টারিওর স্কারবরোর নিকটবর্তী অশোয়ার লেকভিউ পার্কে গত ২২ জুন শনিবার এ বনভোজন আয়োজন করা হয়। বনভোজন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায়।বনভোজনে শিশু-কিশোর ও অন্য অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিনোদন, খেলাধুলা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল। উদীচীর উপস্থিত সদস্যরা সেখানে গান পরিবেশনে অংশ নেন।আয়োজনে সহযোগিতার জন্য শুভানুধ্যায়ী সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সংগঠনের সভাপতি সুভাষ দাশ ও সাধারণ সম্পাদক মিনারা বেগম কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস বাংলায় ভ্রমণে মূল ভাড়ার ওপর ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন গ্রামীণফোনের স্টার গ্রাহকেরা। নিজেদের যৌথ প্রচারণার অংশ হিসেবে সম্প্রতি ইউএস-বাংলা ও গ্রামীণফোন এ চুক্তি করেছে। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন গ্রামীণফোনের স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড প্রাইসিংয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর তালাল রেজা চৌধুরী ও ইউএস-বাংলার মার্কেটিং ও সেলস বিভাগের প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম। এই চুক্তির আওতায় গ্রামীণফোনের স্টার গ্রাহকেরা বিজনেস ও ইকোনমি ক্লাসে ওয়ানওয়ে অথবা রিটার্ন দুই ক্ষেত্রেই মূল ভাড়ার ছাড় পাবেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ছাড় উপভোগ করা যাবে। এই সুবিধাটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানপথ (ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল) এবং ছয়টি আন্তর্জাতিক বিমানপথের (দোহা, গুয়াংজু, মাসকট, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর এবং ব্যাংকক) জন্য প্রযোজ্য হবে। স্টার গ্রাহকেরা ইউএস বাংলা এয়ারলাইনের ২০টি সিটি সেলস অফিস থেকে এ অফার উপভোগ করতে পারবেন। গ্রাহকেরা বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন ১৩৬০৫ অথবা ০১৭৭৭৭৭৭৮০০-৮০৬ নম্বরে কল করে।
কুষ্টিয়ায় এক মাদক ব্যবসায়ীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক অরুপ কুমার গোস্বামী আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ রায় দেন।সাজা পাওয়া ব্যক্তির নাম রাজীব হোসেন (৩৫)। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া মণ্ডলপাড়া এলাকার বাসিন্দা।কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি অনুপ কুমার নন্দী প্রথম আলোকে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রায় ঘোষণার সময় রাজীব আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।মামলার এজাহার সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১২) কুষ্টিয়া ক্যাম্পের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ছেঁউড়িয়া থেকে রাজীবকে আটক করেন। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ৫০ পিস ইয়াবা ও ৬২ গ্রাম হেরোইন জব্দ করে র‌্যাব। এ ঘটনায় র‌্যাবের তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মোয়াজ্জেম হোসেন বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় মামলা করেছিলেন। কুমারখালী থানা-পুলিশ ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেয়।
বগুড়া ফটোগ্রাফি ক্লাবের উদ্যোগে বগুড়া সেন্ট্রাল হাইস্কুল ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল মাঠে আজ মঙ্গলবার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে মোট ৩০০টি দেশীয় ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হয় এবং শিশু-কিশোরদের মাঝেও কিছু গাছ বিতরণ করা হয়।ওই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়া। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান। অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বগুড়া ফটোগ্রাফি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদ পারভেজসহ ক্লাবের অন্যান্য সদস্যরা।
ঈদে মুক্তির পর টানা চতুর্থ সপ্তাহ প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে শাকিব খানের ছবি ‘পাসওয়ার্ড’। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্ম থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ঈদুল আজহা পর্যন্ত একাধিক প্রেক্ষাগৃহে চলবে ছবিটি। এদিকে ছবির দারুণ সাফল্যে খুশি শাকিব খান। এবার তিনি আরও চারটি ছবি তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন। শিগগিরই পর্যায়ক্রমে ছবিগুলোর শুটিং শুরু হবে। কথা হলো চলচ্চিত্রের এই জনপ্রিয় নায়কের সঙ্গে।‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি ঈদের দিন মুক্তি পেয়েছে। দর্শক ছবিটি এখনো দেখছেন। আপনি ছবির প্রযোজক ও নায়ক। কেমন লাগছে?ঢাকার চলচ্চিত্রের জন্য এটি একটি ইতিবাচক ব্যাপার। চলচ্চিত্রের এই খারাপ সময়ে আমি বলব ‘পাসওয়ার্ড’ একটি মাইলফলক। ঈদে মুক্তির পর সফলভাবে ‘পাসওয়ার্ড’ চলছে। শুধু তা-ই নয়, মুক্তির এক সপ্তাহ পর থেকে হলের সংখ্যা বেড়েছে। একটি ব্যবসা সফল ছবি সব সময়ই অনেক দিন ধরে প্রেক্ষাগৃহে চলে। যেমনটি ‘পাসওয়ার্ড’ চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ থেকে জানতে পেরেছি, ঈদুল আজহা পর্যন্ত ছবিটি হলে থাকবে। অনেক হলমালিক ঈদুল আজহার সময়ও ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি প্রদর্শনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।ছবির এই সাফল্যের মূল কারণ কী?‘পাসওয়ার্ড’ ভালো ছবি। গল্প, মেকিং থেকে শুরু করে, ছবির গান, গানের লোকেশন—সবকিছুতেই ছিল ভিন্নতা। বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শক এই ছবিতে নতুন কিছু পেয়েছেন। যাঁরা ছবিটি দেখছেন, তাঁরা বলেছেন ‘পাসওয়ার্ড’ একটি পরিচ্ছন্ন ও টোটাল সিনেমা, আধুনিক মানের ছবি এবং চেয়ারম্যান সাহেব, চৌধুরী সাহেব থেকে বেরিয়ে সম্পূর্ণ নতুন গল্প আর নতুন আঙ্গিকের ছবি।এক ঈদে মুক্তি পেয়ে আরেক ঈদ পর্যন্ত প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি দেখানো হবে। এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো নয়। দর্শক কিন্তু মানসম্পন্ন সিনেমা দেখতে চান আর দেশে সিনেমার দর্শক আছেন। ভালো গল্প, ভালো মান ও ভালো নির্মাণের ছবি হলে দর্শক অবশ্যই দেখবেন। ‘পাসওয়ার্ড’ তা প্রমাণ করেছে। ‘পাসওয়ার্ড’ তা বুঝিয়ে দিয়েছে। এখন বিশ্বকাপ ক্রিকেট হচ্ছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট কিন্তু মোটেও ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। আমি তো বলব, ‘পাসওয়ার্ড’ ঢাকার চলচ্চিত্রে নতুন শক্তি।এরপর ‘পাসওয়ার্ড ২’? অবশ্যই। তবে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবির সাফল্যের কারণে শুধু ‘পাসওয়ার্ড ২’ নয়, আরও অনেক প্রযোজক নড়েচড়ে বসেছেন। পুরোনো অনেক প্রযোজক এখন ছবি তৈরির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হার্টবিট প্রোডাকশনস এক বছর ছবি নির্মাণ বন্ধ রেখেছিল। ‘পাসওয়ার্ড’ সুপারহিট হওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে ছবি তৈরির পরিকল্পনা করছে।আপনার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মস থেকে চারটি ছবি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। কবে থেকে কাজ শুরু হবে? ঈদের আগেই কাজ শুরু হবে। শুরুতেই কাজী হায়াতের পরিচালনায় ‘বীর’ ছবির কাজ করব। এটি তাঁর ৫০তম ছবি হবে। দেশপ্রেমের গল্প। ছবির গল্প বিবেচনা করে সেভাবেই নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি। আমার বিশ্বাস, পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মাণ করা সম্ভব হলে ‘পাসওয়ার্ড’-এর মতো সাড়া ফেলবে ছবিটি। এ বছরই ছবিটি মুক্তি দিতে চাই। অন্য ছবিগুলোর কাজ নিয়ে কী ভাবছেন? অন্যগুলোর গল্প প্রস্তুত হচ্ছে। ‘পাসওয়ার্ড ২’ ছবির পর মালেক আফসারি আরেকটি ছবির কাজ করবেন। ‘বীর’ ছবির শুটিংয়ের পর হিমেল আশরাফের ‘প্রিয়তমা’ আর বদিউল আলম খোকনের ‘ফাইটার’ ছবির কাজ শুরু হবে।সব ছবির নায়ক আপনি, নায়িকা হচ্ছেন কে কে?নতুন নায়িকা খুঁজছি। হয়তো বুবলী একটা ছবিতে নায়িকা থাকতে পারে। বাকিগুলোর জন্য নতুন নায়িকা খোঁজা হচ্ছে।অনেক দিন ঢাকার চলচ্চিত্রে নতুন নায়িকা আসেনি। আপনি বুবলীর সঙ্গে জুটি হয়ে তিন বছর কাজ করছেন। এই সময় নতুন নায়িকা তৈরির সুযোগ ছিল? আমি তো চাই। কিন্তু যখন কোনো নতুন কাজ করতে যাই, নতুন নায়িকা পাওয়া যায় না। অনেক দিন ধরেই খুঁজছি, কিন্তু পাচ্ছি না। উপযুক্ত কাউকে পাওয়া যায় না। কারণ নায়িকা, নায়িকার মতো হতে হবে। অভিনয় ও নাচে পারদর্শী হবে, সিনেমার প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। নতুনদের মধ্যে তার অভাব আছে।জুন মাসে এ দেশে ওম অভিনীত ভারতের বাংলা ছবি ‘ভোকাট্টা’ মুক্তি পেয়েছে। জুলাই মাসে দেব অভিনীত ‘কিডন্যাপ’ আর জিৎ অভিনীত ‘শেষ থেকে শুরু’ মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাতে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে?গত সপ্তাহে ভারতে একটি বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে। তা কিন্তু আমার ছবিতে কোনো প্রভাব ফেলেনি। ‘পাসওয়ার্ড’ নিজ গতিতেই চলছে। শুনেছি, এক দিন পরই বিভিন্ন হল থেকে ভারতের ছবিটি নেমে গেছে। সুতরাং আমদানি করা ছবি নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, টকশোওয়ালারা গভীর রাতে টেলিভিশনে বলে থাকেন দেশে আইনের শাসন নেই। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট, জেলহত্যা, ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা ইত্যাদি ঘটনার বিচার বন্ধ করাকে টকশোওয়ালারা আইনের শাসন বলতে ভালোবাসেন। খুনিদের দূতাবাসের চাকরি দেওয়ার নিন্দা করতে দেখিনি টকশোওয়ালাদের।ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় এক জনসভায় আজ মঙ্গলবার এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী। নান্দাইল উপজেলা নিবন্ধন কার্যালয়ের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন শেষে এ জনসভা হয়।নিবন্ধন কার্যালয়টি নান্দাইল পৌরশহরের পুরান বাজার এলাকায়। ওই কার্যালয়ের এক একর ২৬ শতক নিজস্ব ভূমি আছে। ওই জমির ওপর তিন কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে সুদৃশ্য ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে।আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি উল্লেখ করে ‘সরি’ বলেছেন হেনরি কিসিঞ্জার। বিশ্বব্যাংক নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছে। বিশ্বের মানুষের কাছে আমাদের এই দেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্বের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে।নান্দাইল আসনের সাংসদ মো. আনোয়ারুল আবেদীন খানকে করিতকর্মা নেতা বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তাঁর (সাংসদ) প্রচেষ্টার ফলে সারা দেশের মধ্যে প্রথম নান্দাইলের নিবন্ধন কার্যালয়ের ভবনটি নির্মিত হয়েছে। ভবনটি উদ্বোধন করে তিনি এর ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলেন।আইনমন্ত্রী বলেন, আগে টেলিফোন করে আদালতের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হতো। বর্তমান সরকারের আমলে আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সরকার তাতে হস্তক্ষেপ করে না।আজকের সমাবেশে বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, এতিমের টাকা চুরি করার অভিযোগে ২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি ২০ বার উচ্চ আদালতে গেছেন। বছরের পর বছর ধরে মামলা চলেছে। আইনের সব পর্যায়ে লড়ে ওই মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন।আইনমন্ত্রী আরও বলেন, আদালতে ৩৫ লাখ মামলার জট একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বর্তমান সরকার সেই জট ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আইনের শাসন দিতে পারেন একমাত্র শেখ হাসিনা। তাঁর জন্য তিনি নান্দাইল বাসীর দোয়া চান।অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী একে এম খালিদ। তিনি সাংসদ আনোয়ারুল আবেদীন খানের প্রস্তাব মতো নান্দাইলের জন্য একটি মিলনায়তন ও পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণ করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ ৯ (নান্দাইল) আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আবেদীন খান, ময়মনসিংহ ১১ (ভালুকা) আসনের সাংসদ মো. কাজীম উদ্দিন, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহা-পরিদর্শক খান মো. আবদুল মান্নান, ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান, নান্দাইল উপজেলার চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ, পৌরসভার মেয়র রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া প্রমুখ।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা তিস্তার জল দিতে পারিনি, তাই ওরা আমাদের ইলিশ দেওয়া বন্ধ করেছে।’ আজ মঙ্গলবার বিধানসভার অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিধায়ক রহিমা বিবির প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মমতা এ কথা বলেন।ওই বিধায়কের প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘বাঙালি মাছে-ভাতে থাকতে ভালোবাসে। কিন্তু বাংলাদেশকে আমরা তিস্তার জল দিতে পারিনি। তাই ওরা আমাদের ইলিশ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুদেশ। কিন্তু জল নেই, তাই কোথা থেকে জল দেব?’মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা ইলিশ মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যে রিসার্চ সেন্টার করেছি। আমাদের এই বাংলায় এখন ইলিশ মাছের অভাব নেই। আগামী দিনে আমাদের এই ইলিশ নিয়ে গবেষণা শেষে আমরা প্রচুর ইলিশ উৎপাদনে সমর্থ হব। তখন গোটা দেশে ইলিশ সরবরাহ করতে পারব। দু-এক বছরের মধ্যে আর আমাদের বাইর থেকে ইলিশ আনতে হবে না।’২০১২ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে পশ্চিমবঙ্গের ইলিশ ব্যবসায়ীরা এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে বাংলাদেশ সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় এখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি।এদিকে তিস্তার পানির দাবিতে অনড় রয়েছে বাংলাদেশ । কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সাবেক ইউপিএ সরকারের আমল থেকে এই পানি বণ্টনের জন্য বাংলাদেশ দাবি জানিয়ে আসছে। তবে ভারত সরকার এখনো তাতে সবুজ সংকেত দেয়নি। মমতা তিস্তার পানি না থাকার কারণ দেখিয়ে এই পানি বণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করছেন।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় স্কুলছাত্রী অপহরণ মামলায় এক যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন এ রায় দেন।সাজা পাওয়া যুবকের নাম মারুফ সরকার। মারুফ বর্তমানে পালাতক আছেন।সিরাজগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২–এর পিপি অ্যাডভোকেট কায়ছার আহম্মেদ লিটন আজ মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে বখাটে মারুফ সরকার উত্ত্যক্ত করতেন। মারুফ ওই ছাত্রীকে একাধিকবার বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। বিয়ের প্রস্তাবে ছাত্রীর পরিবার রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন মারুফ। এর জেরে ২০০৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মারুফ ওই স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করেন। এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলার আট মাস পর বগুড়া জেলায় অভিযান চালিয়ে মারুফের কাছ থেকে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
বাম গণতান্ত্রিক জোট আগামী ৩ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, সিলিন্ডারের দাম কমানো, জনদুর্ভোগের বাজেটের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি করবে তাঁরা।আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন।বাম জোটের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ৩ জুলাই বিভিন্ন থানায় প্রচার মিছিল, ৪ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে গাবতলী অভিমুখে পদযাত্রা ও বিভিন্ন থানায় গণসংযোগ, ৫ জুলাই গণসংযোগ, ৬ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে যাত্রাবাড়ী অভিমুখে পদযাত্রা, থানায় থানায় মিছিল ও জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে মশাল মিছিল এবং ৭ জুলাই সারা দেশে সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল।লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গ্যাসের দাম বাড়ানোয় বিদ্যুৎ, বাসাবাড়ি, পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানিসহ জনজীবনের ব্যয় ও কৃষিসহ শিল্প উৎপাদন খরচ বাড়বে। নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। বাম জোট অভিযোগ করে জানায়, সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতির পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতকে লুটপাটের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে পরিণত করেছে।বাম জোট বলে, দেশে সিলিন্ডার গ্যাসের বিপুল চাহিদা রয়েছে। সিলিন্ডার ব্যবসাও ব্যবসায়ীদের অনিয়ন্ত্রিত মুনাফার ক্ষেত্র বানানো হয়েছে। বাজেটের সমালোচনা করে তারা জানায়, বাজেটে কৃষি খাত, শিল্প খাত, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নিম্ন আয়ের মানুষের স্বার্থকে অবহেলা করা হয়েছে। কর্মসংস্থানের কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এই বাজেট লুটপাট ও দুর্ভোগের বাজেট।সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদের নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা বাচ্চু ভূঁইয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা মমিনুল ইসলাম প্রমুখ। ।
মোট ঋণের দুই শতাংশ এককালীন জমা দিয়ে একজন ঋণখেলাপি ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নীতিমালার কার্যক্রমের ওপর হাইকোর্ট স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের এই আদেশ ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত দুটি আদেশের বিরুদ্ধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের পক্ষে করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ওই স্থগিতাদেশ দেন। একই সঙ্গে অর্থ বিভাগের করা আবেদনটি ৮ জুলাই আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ ওই বিশেষ নীতিমালা সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে। এক রিট আবেদনের ধারাবাহিকতায় করা সম্পূরক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২১ মে হাইকোর্ট এক আদেশে ওই নীতিমালার কার্যক্রমের ওপর ২৪ জুন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। গত ২৪ জুন অপর আদেশে হাইকোর্ট স্থিতাবস্থার মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়ান। এই দুটি আদেশ স্থগিত চেয়ে অর্থ বিভাগের পক্ষে গতকাল সোমবার আপিল বিভাগে আবেদন (লিভ টু আপিল) করা হয়। আবেদনের ওপর আজ শুনানি হয়।আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন, আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।পরে বিশ্বজিৎ দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের দুটি আদেশের বিরুদ্ধে অর্থ বিভাগের করা আবেদনটি ৮ জুলাই আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন চেম্বার বিচারপতি। এই সময় পর্যন্ত হাইকোর্টের দেওয়া স্থিতাবস্থার আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনের অনিয়ম, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ব্যাংক ঋণের ওপর সুদ মওকুফ সংক্রান্ত বিষয় তদন্ত ও তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নে কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) গত ফেব্রুয়ারি মাসে রিট করে। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকার ওপরে নেওয়া ঋণখেলাপিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে সেসব তথ্য আদালতে দাখিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকার ওপরে নেওয়া ঋণখেলাপিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে সেসব তথ্যাদি সিলগালা অবস্থায় ২৪ জুন আদালতে দাখিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ভোর থেকে তেমন কিছু খাচ্ছিল না ৯ মাসের শিশু মেহমেদ। তাই সকালে অফিসে যাওয়ার আগে মেহমেদের বাবাকে দুধ কিনে আনতে বলেন মা। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেহমেদের মা স্বামীকে ফোন করে বলেন, ‘তোর ছেলেকে বটি দিয়ে খুন করেছি।’এমন ঘটনা ঘটেছে খুলনা নগরের হরিণটানা থানার রায়েরমহল এলাকায়। আজ সকালে ঘর থেকে মেহমেদের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মেহমেদের বাবার নাম জামাল সরদার আর মা শ্রাবণী আক্তার। মেহমেদ তাদের একমাত্র সন্তান। ওই ঘটনার পর শ্রাবণী আক্তারকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।জামাল সরদারের বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামাল বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর মা ও ছেলে ঘরেই ছিল। ১০টার দিকে মেজ ভাইয়ের বউয়ের কাছে তরকারি কাটার কথা বলে বটি চান শ্রাবণী। মাঝে মাঝেই এমন করে বটি নিতেন। পরে সেই বটি পাশের পুকুর থেকে ধুয়ে আবারও ফেরত দেন। কাঁথা দিয়ে রক্ত মুছে সেই কাঁথা পুকুরে ধুয়ে রোদে শুকাতে দেন তিনি। এরপর শাশুড়ির ঘরে গিয়ে চুপ করে বসে থাকেন শ্রাবণী।জামালের মেজ ভাই সুমন সরদার বলেন, জামাল ফোন করে ঘরে গিয়ে কিছু হয়েছে কিনা তা দেখতে বলেন। এ সময় তাঁরা ঘরে গিয়ে দেখেন বিছানায় মেহমেদের গলাকাটা লাশ পড়ে আছে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় শ্রাবণীকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। শ্রাবণী মানসিক ভারসাম্যহীন কিনা, তা তাঁরা জানেন না।হরিণটানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল আলম বলেন, জামাল ও শ্রাবণীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জানা গেছে, সকালে সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রাবণী ফোন করে জানান যে ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করেছেন তিনি। স্বামীর দাবি, শ্রাবণী মানসিক ভারসাম্যহীন। মাঝে মাঝে তাঁর ওই রোগ দেখা দেয়। তবে বেশির ভাগ সময় ভালো থাকে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর না করার জন্য দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, সরকার জনগণকে কষ্টে ফেলতেই ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করেছে।আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রিজভীর নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এসে শেষ হয়।গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই মিছিল হয়। একপর্যায়ে বিজয়নগরে বক্তব্য দেন রিজভী। বর্তমান সরকারকে অবৈধ সরকার উল্লেখ করে রিজভী বলেন, একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জনগণের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে সরকারের লোকদের পকেট ভারী করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন করে জনগণের কাঁধে চাপানো হলো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ভারী বোঝা।ভোক্তা পর্যায়ে দ্রুত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর না করার দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, সরকার এ সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলবে। এ ছাড়া খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে এই বিএনপি নেতা তাঁর মুক্তি দাবি করেন।মিছিলে অংশ নেন বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহসভাপতি ইউনুস মৃধা, নবী উল্লাহ নবী প্রমুখ।
চিকিৎসা শেষে সুস্থ হলেও যশোরের কিশোর ভ্যানচালক শাহীন মোড়লের (১৬) শরীরের ডান পাশের অঙ্গগুলো তাকে ভোগাবে। অনুভূতিহীন থাকবে দীর্ঘদিন। তবে ঠিকমতো পরিচর্যা পেলে এ অবস্থা সে ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।শাহীনের চিকিৎসায় আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই বোর্ড ও নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অসিত চন্দ্র সরকার আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহীনের মাথার বাম পাশে সবচেয়ে বেশি আঘাত করা হয়েছে। খুলির এ অংশের হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে গিয়ে মস্তিষ্কের বাম পাশে আঘাত করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা যেটিকে বলছি ডিপ্রেসড ফ্র্যাকচার। এ জন্য শাহীন যদি পুরোপুরি সুস্থও হয় তারপরও দীর্ঘদিন ধরে শরীরের ডান পাশের অঙ্গগুলো দুর্বল ও অনুভূতিহীন থাকবে।’শাহীনের বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে এই চিকিৎসক বলেন, গতকাল সোমবার পর্যন্ত শাহীন বেশ ভালো ছিল। তবে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে জ্বর এসেছে। এটিই ভয়ের বিষয়। কারণ, এই অবস্থায় জ্বর হওয়া মানেই শরীরের কোথাও না কোথাও ইনফেকশন হওয়া।গত শুক্রবার সাতক্ষীরায় দুর্বৃত্তরা শাহীনের ভ্যান ছিনতাইয়ের সময় তার মাথায় আঘাত করে ফেলে রেখে চলে যায়। শাহীনের বাড়ি যশোরের কেশবপুরের। গোলাঘাটা দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে নিজের ও ছোট দুই বোনের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে ভ্যান চালাত সে।এদিকে গতকাল সোমবার শাহীনের ওপর হামলা চালিয়েছে এমন সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সাতক্ষীরা পুলিশ। তাঁরা হলেন যশোরের কেশবপুর উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের নাইমুল ইসলাম (২৪), সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার আলাইপুর গ্রামের আরশাদ পাড় (৬৫) ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোবিন্দকাটি গ্রামের বাকের আলী (৪৫)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, এই তিনজন শাহীনের ভ্যান ছিনতাইয়ের জন্য পরিকল্পিতভাবে তাকে বাড়ি থেকে মুঠোফোনে ডেকে নেন। ছিনতাইয়ের সময় শাহীন বাধা দিলে তাকে আঘাত করে ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যান গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা।গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে শাহীনের পরিবার। আজ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহীনের মা খাদিজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো দোষ ছিল না। যারা মেরেছে তাদের একজন আমাদের গ্রামের। সে আমাদের অভাব আর শাহীনের কষ্ট করে টাকা আয়ের কথা জানত। তারপরও নিষ্ঠুরের মতো ছেলেটাকে মেরে এই অবস্থা করেছে। আমি তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত। তবে আজ মঙ্গলবার সকালে আদালতে এসে আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে ডিআইজি মিজান বলেন, ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট ভালো আছি। যা সত্য তাই বলেছি।’বেলা পৌনে ১১টার দিকে পুলিশের জিপে ডিআইজি মিজানকে আদালতে আনা হয়। গাড়ি থেকে বের করে মিজানকে সরাসরি ঢাকার মহানগর দায়রা আদালতের এজলাসে নেওয়া হয়। জনাকীর্ণ আদালতের পেছনের বেঞ্চে মিজান বসেন। পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পদস্থ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। তখন আদালতে অন্য মামলার শুনানি চলছিল। সাড়ে ১১ টার দিকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আদালত কক্ষে আসেন। ওই আইনজীবী মিজানুর রহমানকে বলেন, ‘কেমন আছেন মিজান সাহেব?’ জবাবে মিজান হাসিমুখে বলেন, ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট ভালো আছি। যা সত্য তাই বলেছি।' এর কিছুক্ষণ পর মিজানুরের মামলার শুনানি হয়।ডিআইজি মিজানের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী আদালতকে জানান, দুদকের মামলায় মিজান গতকাল সোমবার আগাম জামিন নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে যান। আদালত তাঁর জামিন নাকচ করেন। মিজানকে গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, মিজানকে আদালতে আনে পুলিশ। ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার অনুমতি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেন এহসানুল হক। আদালত অনুমতি দিলে বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে ওকালতনামা দেওয়া হয় মিজানের কাছে। ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন মিজান। এরপর মিজানের জামিনের স্বপক্ষে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন তাঁর আইনজীবী এহসানুল হক।আদালতকে তিনি বলেন, আদালতের সামনে এখন দুটি কাগজ আছে। এক. মিজানুরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারের কপি। আর দুদকের দেওয়া মামলার ফরোয়ার্ডিং (প্রতিবেদন)। আসামি মিজানুরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা বিশ্বাস করার মতো কোনো কাগজ আদালতের সামনে নেই। তদন্ত চলমান। এহসানুল হক সমাজী আদালতকে আরও বলেন, যে আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে তাতে জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ কোনো বাধা নেই।তবে ডিআইজি মিজানের জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। আদালতকে তিনি বলেন, ডিআইজি মিজানের মামলাটি বিশেষ আইনের মামলা। এই অপরাধ অজামিনযোগ্য। তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, তথ্য গোপন এবং সম্পদ হস্তান্তরের অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের অপরাধ গ্রহণযোগ্য নয়।ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েস উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডিআইজি মিজানুর রহমানকে আদালত কক্ষ থেকে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে মিজানকে পুলিশের জিপে করে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।গত ২৪ জুন ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় মিজানুর রহমান, তাঁর স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে মাহমুদুল হাসানকে আসামি করা হয়।মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ে গোপন করতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়। নারী নির্যাতনের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। গত ২৫ জুন তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।আরও পড়ুনডিআইজি মিজানকে আদালতে নেওয়া হয়েছে
লেখক হওয়া সাধনা ও নিষ্ঠার ব্যাপার। এর জন্য থাকতে হয় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। কিছু নিয়মপদ্ধতি অনুসরণ করে অবিরাম লেখনীর চর্চা করে যেতে হয়। বিখ্যাত লেখক স্টিফেন কিং লেখালেখি বিষয়ে দিয়েছেন ২১টি উপদেশ। তোমরা যারা তরুণ, যারা লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখো, এই ২১টি উপদেশ মেনে চলো, দেখবে একদিন লেখক হয়ে উঠেছ, হয়তো বড় লেখক। ১. টিভি বন্ধ করে বই নিয়ে বসো। সৃজনশীলতার জন্য টিভি হলো বিষস্বরূপ। টিভি দেখা সময়ের অপচয়। বই পড়ায় ব্যয় করতে হবে বেশি সময়। ব্যাপকভাবে বিস্তৃত বিষয়ে পড়তে হবে, সময় পেলেই পড়তে হবে। বই হবে সর্ব সময়ের সঙ্গী। ২. সমালোচনা ও ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত থাকো। লিখলে লোকজন তা পাঠ করবে এবং কেউ কেউ সমালোচনা করবে। আবার কখনো কখনো লেখা ছাপা হবে না বা কেউ পড়বে না। কিন্তু এসবের জন্য দমে গেলে চলবে না।৩. অন্যকে সন্তুষ্ট করার জন্য নয়, বরং নিজের দায়িত্ববোধ থেকে লেখো। সত্য বলতে হবে, তা যত তিক্তই হোক। নিজের বিবেক ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগাও। ৪. প্রাথমিকভাবে নিজের জন্য লেখো। লেখাটাকে আনন্দের বিষয় করে নিতে হবে। যা ভালো লাগে, তা নিয়ে লেখো। নিজের ওপর কোনো জিনিস জোর করে চাপিয়ে দেবে না যা থেকে বিরক্তি উৎপন্ন হয়। ৫. কঠিন সমস্যা নিয়ে চিন্তা করো, আড়ালে থাকা বিষয়কে তুলে আনো। জীবন ও সমাজের কোনো জটিল সমস্যার ওপর আলোকপাত করো, যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। ৬. লেখার সময় সমস্ত জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করো। যখন লিখতে বসবে, তখন লেখা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেবে না। জাগতিক ঝুটঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে লিখতে হবে। ৭. পাণ্ডিত্যের ভান করবে না। অযথা গুরুগম্ভীর শব্দ ও জটিল বাক্য ব্যবহার করে অন্যকে চমকিত করার চেষ্টা কোনো কাজের বিষয় নয়। অকারণে ঘুরিয়ে–পেঁচিয়ে বলার অভ্যাস পরিহার করো।৮. ক্রিয়াবিশেষণ (যেমন, ‘অত্যন্ত’ ‘অসাধারণভাবে’) কম ব্যবহার করবে এবং অনুচ্ছেদ ছোট রাখবে। অধিক ক্রিয়াবিশেষণ ভ্রান্তিকর এবং লম্বা অনুচ্ছেদ চোখের জন্য ক্লান্তিকর। ৯. গল্প লেখার সময় কাহিনির দিকে নজর দেবে, ব্যাকরণের দিকে নয়। কাহিনিকে মনোগ্রাহী ও রসমিত করার জন্য যেরকম শব্দ যেভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন, ঠিক তাই করতে হবে। ১০. শৈল্পিক বর্ণনার কৌশল রপ্ত করো। সঠিক শব্দ ও বাক্যে স্পষ্ট ও উজ্জ্বলভাবে বিষয় ও ঘটনার বিবরণ দিতে হবে যাতে তা পাঠকের মনে রেখাপাত করে। প্রয়োজনে ভাষিক অলংকারের আশ্রয় নাও। ১১. গল্পকে বেশি তথ্যবহুল করবে না। গল্পকে তথ্যে ভারী করে ফেললে তা গল্পের মজাকে হরণ করে, পাঠকের মনোরঞ্জনে ব্যর্থ হয়। চরিত্রায়ণ ও ঘটনাবিন্যাস বেশি প্রাধান্য পাবে। ১২. মানুষজন বাস্তবে কী করে তা নিয়েই গল্প ফাঁদো। বাস্তব থেকে গল্পের উপাদান গ্রহণ করো, তাতে কল্পনার রং লাগাও, আখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলো। ১৩. নতুন বিষয় নিয়ে লেখো। পুরোনো বিষয় নিয়ে চর্বিত চর্বনের কোনো অর্থ হয় না। যা মানুষ কখনো ভাবেনি তা নিয়ে লেখো। ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখো ও লেখো। ঝুঁকি নিতে পিছ পা হবে না। ১৪. লেখক হওয়ার জন্য মাদকের আশ্রয় নেবে না। মাদকে মাথা খোলে—এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং মাদক গ্রহণে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়, চিন্তায় পঙ্গুত্ব আসে।১৫. অন্য কোনো লেখককে হুবহু অনুকরণ করে লিখবে না। নিজের স্টাইল তৈরি করো। নিজের ধ্যানধারণা থেকে নিজের মতো করে লেখো, স্বকীয়তা নিয়ে। ১৬. শব্দ ও বাক্যের মাধ্যমে তোমার ধারণাগুলো পাঠকের মনে সঞ্চারিত করো। লেখার সময় কোন ধরনের পাঠকের জন্য লিখছ তা মাথায় রাখো, আর তোমার ধারণাগুলো তাদের উপযোগী করে প্রকাশ করো। ১৭. লেখালেখিকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করো। লেখাকে করতে হবে ধ্যানজ্ঞান। একমাত্র সাধনা। দায়সারা কাজ অকাম্য। লেখালেখির বিষয়ে যে যত সিরিয়াস, সে তত সফল।১৮. প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখো। বই পড়াকে যেমন, তেমনি লেখালেখিকেও নিত্যকার অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। লিখতে লিখতে লেখায় হাত আসে। ১৯. কোনোকিছু লেখার পর সেটি পুনরায় দেখো। নিজের লেখার প্রথম পাঠক হবে নিজেই। সমালোচকের দৃষ্টি দিয়ে নিজের লেখা ব্যবচ্ছেদ করো। আর এটা করতে হবে নির্দয়ভাবে। ২০. নিজের শরীর ও মনের যত্ন নাও। শরীর সুস্থ থাকলে এবং মনে সুখ থাকলে লেখালেখি সহজ হয়। পারিবারিক জীবনে শান্তি—এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক। ২১. চেষ্টা করো তিন মাসে একটি বইয়ের খসড়া সম্পন্ন করতে। প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা করে লিখলে, তিন মাসে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার শব্দ হয়ে যায়। তারপর সেটিকে পরিমার্জন করে প্রকাশের উপযোগী করতে আরও কয়েক মাস লেগে যাবে। বুঝতেই পারছ, লেখক হওয়ার জন্য নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় কতটা জরুরি!২.৭. ২০১৯   লেখক হওয়ার প্রস্তুতিস্টিফেন কিংয়ের একুশ উপদেশড. বিনয় বর্মন লেখক হওয়া সাধনা ও নিষ্ঠার ব্যাপার। এর জন্য থাকতে হয় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। কিছু নিয়মপদ্ধতি অনুসরণ করে অবিরাম লেখনীর চর্চা করে যেতে হয়। বিখ্যাত লেখক স্টিফেন কিং লেখালেখি বিষয়ে দিয়েছেন ২১টি উপদেশ। তোমরা যারা তরুণ, যারা লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখো, এই ২১টি উপদেশ মেনে চলো, দেখবে একদিন লেখক হয়ে উঠেছ, হয়তো বড় লেখক। ১. টিভি বন্ধ করে বই নিয়ে বসো। সৃজনশীলতার জন্য টিভি হলো বিষস্বরূপ। টিভি দেখা সময়ের অপচয়। বই পড়ায় ব্যয় করতে হবে বেশি সময়। ব্যাপকভাবে বিস্তৃত বিষয়ে পড়তে হবে, সময় পেলেই পড়তে হবে। বই হবে সর্ব সময়ের সঙ্গী।  ২. সমালোচনা ও ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত থাকো। লিখলে লোকজন তা পাঠ করবে এবং কেউ কেউ সমালোচনা করবে। আবার কখনো কখনো লেখা ছাপা হবে না বা কেউ পড়বে না। কিন্তু এসবের জন্য দমে গেলে চলবে না।    ৩. অন্যকে সন্তুষ্ট করার জন্য নয়, বরং নিজের দায়িত্ববোধ থেকে লেখো। সত্য বলতে হবে, তা যত তিক্তই হোক। নিজের বিবেক ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগাও।  ৪. প্রাথমিকভাবে নিজের জন্য লেখো। লেখাটাকে আনন্দের বিষয় করে নিতে হবে। যা ভালো লাগে, তা নিয়ে লেখো। নিজের ওপর কোনো জিনিস জোর করে চাপিয়ে দেবে না যা থেকে বিরক্তি উৎপন্ন হয়।  ৫. কঠিন সমস্যা নিয়ে চিন্তা করো, আড়ালে থাকা বিষয়কে তুলে আনো। জীবন ও সমাজের কোনো জটিল সমস্যার ওপর আলোকপাত করো, যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।  ৬. লেখার সময় সমস্ত জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করো। যখন লিখতে বসবে, তখন লেখা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেবে না। জাগতিক ঝুটঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে লিখতে হবে।  ৭. পাণ্ডিত্যের ভান করবে না। অযথা গুরুগম্ভীর শব্দ ও জটিল বাক্য ব্যবহার করে অন্যকে চমকিত করার চেষ্টা কোনো কাজের বিষয় নয়। অকারণে ঘুরিয়ে–পেঁচিয়ে বলার অভ্যাস পরিহার করো। ৮. ক্রিয়াবিশেষণ (যেমন, ‘অত্যন্ত’ ‘অসাধারণভাবে’) কম ব্যবহার করবে এবং অনুচ্ছেদ ছোট রাখবে। অধিক ক্রিয়াবিশেষণ ভ্রান্তিকর এবং লম্বা অনুচ্ছেদ চোখের জন্য ক্লান্তিকর।  ৯. গল্প লেখার সময় কাহিনির দিকে নজর দেবে, ব্যাকরণের দিকে নয়। কাহিনিকে মনোগ্রাহী ও রসমিত করার জন্য যেরকম শব্দ যেভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন, ঠিক তাই করতে হবে।  ১০. শৈল্পিক বর্ণনার কৌশল রপ্ত করো। সঠিক শব্দ ও বাক্যে স্পষ্ট ও উজ্জ্বলভাবে বিষয় ও ঘটনার বিবরণ দিতে হবে যাতে তা পাঠকের মনে রেখাপাত করে। প্রয়োজনে ভাষিক অলংকারের আশ্রয় নাও।  ১১. গল্পকে বেশি তথ্যবহুল করবে না। গল্পকে তথ্যে ভারী করে ফেললে তা গল্পের মজাকে হরণ করে, পাঠকের মনোরঞ্জনে ব্যর্থ হয়। চরিত্রায়ণ ও ঘটনাবিন্যাস বেশি প্রাধান্য পাবে।  ১২. মানুষজন বাস্তবে কী করে তা নিয়েই গল্প ফাঁদো। বাস্তব থেকে গল্পের উপাদান গ্রহণ করো, তাতে কল্পনার রং লাগাও, আখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলো।  ১৩. নতুন বিষয় নিয়ে লেখো। পুরোনো বিষয় নিয়ে চর্বিত চর্বনের কোনো অর্থ হয় না। যা মানুষ কখনো ভাবেনি তা নিয়ে লেখো। ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখো ও লেখো। ঝুঁকি নিতে পিছ পা হবে না।  ১৪. লেখক হওয়ার জন্য মাদকের আশ্রয় নেবে না। মাদকে মাথা খোলে—এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং মাদক গ্রহণে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়, চিন্তায় পঙ্গুত্ব আসে। ১৫. অন্য কোনো লেখককে হুবহু অনুকরণ করে লিখবে না। নিজের স্টাইল তৈরি করো। নিজের ধ্যানধারণা থেকে নিজের মতো করে লেখো, স্বকীয়তা নিয়ে।  ১৬. শব্দ ও বাক্যের মাধ্যমে তোমার ধারণাগুলো পাঠকের মনে সঞ্চারিত করো। লেখার সময় কোন ধরনের পাঠকের জন্য লিখছ তা মাথায় রাখো, আর তোমার ধারণাগুলো তাদের উপযোগী করে প্রকাশ করো।  ১৭. লেখালেখিকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করো। লেখাকে করতে হবে ধ্যানজ্ঞান। একমাত্র সাধনা। দায়সারা কাজ অকাম্য। লেখালেখির বিষয়ে যে যত সিরিয়াস, সে তত সফল। ১৮. প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখো। বই পড়াকে যেমন, তেমনি লেখালেখিকেও নিত্যকার অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। লিখতে লিখতে লেখায় হাত আসে।  ১৯. কোনোকিছু লেখার পর সেটি পুনরায় দেখো। নিজের লেখার প্রথম পাঠক হবে নিজেই। সমালোচকের দৃষ্টি দিয়ে নিজের লেখা ব্যবচ্ছেদ করো। আর এটা করতে হবে নির্দয়ভাবে।  ২০. নিজের শরীর ও মনের যত্ন নাও। শরীর সুস্থ থাকলে এবং মনে সুখ থাকলে লেখালেখি সহজ হয়। পারিবারিক জীবনে শান্তি—এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক।  ২১. চেষ্টা করো তিন মাসে একটি বইয়ের খসড়া সম্পন্ন করতে। প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা করে লিখলে, তিন মাসে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার শব্দ হয়ে যায়। তারপর সেটিকে পরিমার্জন করে প্রকাশের উপযোগী করতে আরও কয়েক মাস লেগে যাবে। বুঝতেই পারছ, লেখক হওয়ার জন্য নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় কতটা জরুরি!২.৭. ২০১৯
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দুই স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে মির্জাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে কেন স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না, ১৫ দিনের মধ্যে সেই কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।আজ মঙ্গলবার কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. জাকির হোসেন এ তথ্য জানান।জানা গেছে, গত ২০ ডিসেম্বর কলেজের মাঠে দুই স্কুলছাত্রী খেলছিল। ছাত্রীদের একজন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও অপরজন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। অধ্যক্ষ হারুন তাদের ডেকে কলেজের একটি কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। ঘটনা জানাজানির পর তাদের মায়েরা মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে এ ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউর রহমান ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মিনু পারভীন। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ২৪ জুন অধ্যক্ষ হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।ইউএনও মো. আবদুল মালেক বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অধ্যক্ষ হারুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছিল।কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, কমিটির সুপারিশের পর শিক্ষক পরিষদ ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর অধ্যক্ষ হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি ১৫ দিনের মধ্যে ‍উপযুক্ত কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হলে তাঁকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে।
বিনা উইকেটে ১৮০ রান, ভারত ভয় দেখাচ্ছিল অনেক বড় স্কোরের। সেখান থেকে শেষের লড়াইয়ে বেশ ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। ৫০ ওভার শেষে ভারত ৯ উইকেটে ৩১৪। মোস্তাফিজের ৫ উইকেটম্যাচের তখন পঞ্চম ওভার। চতুর্থ বলটি একটু খাটো লেংথে করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আয়েশ করে পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন রোহিত শর্মা। মিডউইকেট ফিল্ডিং করছিলেন তামিম ইকবাল। বল বাতাসে ভেসে সেদিকে যাওয়ায় দিব্য দৃষ্টিতে অনেকেই রোহিতের ড্রেসিং রুমে ফেরা দেখতে পেয়েছিলেন। ভুল। রোহিতের সহজ ক্যাচটি তামিম দু হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করেও ফেলে দিলেন! ‘জীবন’ উপহার পাওয়ার পরের ওভারেই ছক্কা মেরে রোহিত বুঝিয়ে দিয়েছেন, ক্যাচ ছাড়ার অনেক বড় খেসারতই সম্ভবত দিতে হবে। রোহিত তখন ৯ রানে ব্যাট করছিলেন।শেষ পর্যন্ত রোহিত আউট হয়েছেন সৌম্য সরকারের বলে ক্যাচ দিয়ে। ততক্ষণে ভারত উদ্বোধনী জুটিতে ১৮০ রান তুলে ফেলেছে। রোহিত এই বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। রানেও রোহিত এই আসরে সবার ওপরে। স্কোরবোর্ডে আর ১৫ রান যোগ হতেই ফিরেছেন অন্য ওপেনার রাহুলও। ৭৭ রানে তাঁকে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়েছেন রুবেল হোসেন। জোড়া এই আঘাতে ম্যাচে ফেরার প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। তাতে সুবিধা হয়নি। দ্রুতই ৪২ রানের জুটি গড়ে জোড়া ধাক্কা সামলে নিয়েছে পন্ত-কোহলি জুটি। শেষের ১০ ওভারের ঝড় তোলার মঞ্চটা তৈরি করছিল ভারত। তবে ৩৯তম ওভারে মোস্তাফিজের জোড়া আঘাত। প্রথমে কোহলিকে ডিপে ক্যাচ বানান। এক বল বিরতিতে পান্ডিয়া স্লিপে সৌম্য সরকারের অসাধারণ এক ক্যাচের শিকার হন। সাকিব একমাত্র শিকারে পন্তকে ফেরানোর পর মোস্তাফিজ তৃতীয় শিকার হিসেবে তুলে নেন কার্তিককেও।মোস্তাফিজের আবার জোড়া শিকার তাঁর ও ইনিংসের শেষ ওভারে। ওই ওভারেই পড়েছে তিন উইকেট। নিজে দুটি শিকার করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেছেন, আরেকটি রান আউট। মোস্তাফিজের ৫ উইকেটে শেষে উজ্জীবিত বাংলাদেশ ভারতকে পেল নাগালের মধ্যে।[তাৎক্ষণিক আপডেটের জন্য শিরোনাম ও প্রতিবেদনের মধ্যে অমিল থাকতে পারে]
গতকাল কারওয়ান বাজার বন্ধুসভা কক্ষে ফারাজ আইয়াজ হোসেন স্মরণসভার আয়োজন করে প্রথম আলো বন্ধুসভা। প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন বলেন, ‘ফারাজের আদর্শ ও সাহসিকতার বীজ প্রতিটি তরুণের বুকে ছড়িয়ে দিতে পারলে আমাদের সমাজ বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। ফারাজ আমাদের যুগ যুগ ধরে অণুপ্রাণিত করবে।’সহসভাপতি উত্তম রায় বলেন, ‘ফারাজ আমাদের সাহসী করে।’এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরসভার মোহতারিমা রহমান, ফিরোজ আলম, শাকিব হাসান, ইসরাত জাহান, মারুফ জাহান, বৈশাখী ঘোষ ও তওহীদ ইমাম।
১ জুলাই ১৯ বছরে এসে পৌঁছেছে আমাদের প্রাণের প্রিয় টাঙ্গাইল বন্ধুসভা। মাথা তোলার সাহস যেখান থেকে পাই আমরা, যেখান থেকে বাণী আসে আছি মোরা ‘ভালোর সাথে আলোর পথে’, আজ সেই ভালোবাসার বন্ধুসভার জন্মদিন—‘শুভ জন্মদিন প্রথম আলো বন্ধুসভা, টাঙ্গাইল।’এই মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে টাঙ্গাইল প্রথম আলো বন্ধুসভা আয়োজন করে এক বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল বন্ধুসভার অ্যাডভোকেট জিনিয়া বখশ এবং টেরিটরি ম্যানেজার মো. আলী লিটন। অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছাবাণী দেন অ্যাডভোকেট তানিয়া বখশ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন টাঙ্গাইল বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক শুভ্র দে সরকার। কবিতা আবৃত্তি, অভিবাদনপত্র পাঠ ও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বন্ধুসভার বন্ধুরা। ঠিক এরপরই বক্তব্য দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার জিনিয়া বখশ এবং টেরিটরি ম্যানেজার মো. আলী লিটন। পরিশেষে টাঙ্গাইল বন্ধুসভার সভাপতি শুভ শংকর মিত্রর সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের ইতি টানা হয়।সাধারণ সম্পাদক, টাঙ্গাইল বন্ধুসভা
আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গি সংগঠন জেমাহ ইসলামিয়ার (জেআই) শীর্ষ নেতা পারা বিজয়ান্তকে গ্রেপ্তার করেছে ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ। নতুন সদস্য ভিড়িয়ে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে প্রশিক্ষণে তাদের সিরিয়ায় পাঠানোর বিষয়ে তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছিল। গত শনিবার রাজধানী জাকার্তার সীমান্ত অঞ্চল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলেও তৎক্ষণাৎ তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আটক জঙ্গিকে বিজয়ান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে পুলিশ।বিজয়ান্তের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ। ২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ বালিতে বোমা হামলায় অন্তত ২০০ জন নিহত হয়। এ হামলার হোতা হিসেবে পারা বিজয়ান্তকে শনাক্ত করা হয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিজয়ান্ত আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্ক জেআইয়ের কারাবন্দী নেতা আবু বকর বশিরের শিষ্য।২০০৩ সাল থেকে জেআইয়ের দায়িত্বে রয়েছেন বিজয়ান্ত। দক্ষিণ ফিলিপাইনের জঙ্গিদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেন তিনি।জাতীয় পুলিশের মুখপাত্র দেদি প্রাসেতয়ো বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা ও তাদের ‘খিলাফত’ রাষ্ট্রের স্বঘোষিত ‘খলিফা’ আবু বকর আল-বাগদাদির সমর্থক জেমাহ ইসলামিয়া ইন্দোনেশিয়ার জন্য হুমকি। তাদের প্রধান লক্ষ্য দেশটিতে আইএসের খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা।২০০২ সালে বোমা হামলা ঘটনার পর ইন্দোনেশিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ বাহিনী ডেনসাস ৮৮ গঠন করা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম-অধ্যুষিত দেশটি থেকে জেআই এবং তাদের মতো অন্যান্য সংগঠনকে পরাস্ত করাই ডেনসাস ৮৮–এর মূল কাজ। বশিরের মতো শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে কারাদণ্ড দেওয়াসহ জঙ্গি সংগঠনগুলোকে ছত্রভঙ্গ করে তারা। তবে সে সময় অনেক চিহ্নিত অপরাধী গা ঢাকা দেয়।জাকার্তাভিত্তিক সন্ত্রাসবাদ বিশ্লেষক স্ট্যানিসলাউস রিয়ান্তা বলেন, এখনো অনেক জেআই সদস্য সক্রিয়। ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর তারা গোপন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। আইএসের পতনের পর নতুন করে জেআইয়ের উত্থানে সময় লাগছে।গত বছর সুরাবায়ার পূর্ব জাভা শহরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়। এ ঘটনার পর সন্ত্রাসবিরোধী আইন আরও কঠোর করতে বাধ্য হয়েছে ইন্দোনেশিয়া। ২০১৯ সালের শুরু থেকে শতাধিক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া আইএসকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিলেও সংগঠনটিকে সমর্থনের জন্য কারও বিচার করার আইনি ভিত্তি তৈরি করা হয়নি।
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী শাহনাজ বেগমকে হত্যার দায়ে স্বামীসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুজনকেই ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. জুলফিকার আলী খান এই রায় দেন।মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মো. মঞ্জিল মিজি ও তাঁর বন্ধু মো. মিজানুর রহমান। মঞ্জিল মিজি শাহনাজ বেগমের স্বামী ছিলেন। তাঁরা উপজেলার সফিবাদ গ্রামে থাকতেন।মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শাহনাজ বেগমকে তাঁর স্বামী মঞ্জিল ও বন্ধু মিজান শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এ ঘটনায় শাহনাজের বাবা মো. শাহ আলম বাদী হয়ে কচুয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কচুয়া থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নিজাম উদ্দিন ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২/৩৪ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দেন।সরকারপক্ষের আইনজীবী মো. আমান উল্যাহ জানান, আট বছর ধরে মামলা চলাকালে আদালত ১৫ জনের মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ওই সাক্ষ্য–প্রমাণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে এই দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
বুদ্ধদেব বসু যেন ভর করেছেন ঢাকার মঞ্চে। তাঁর গল্পে পরপর কয়েকটি নাটক হলো। থিয়েটার আর্ট ইউনিট এনেছে বুদ্ধদেব বসুর ‘অনুদ্ধারণীয়’ অবলম্বনে নাটক। লোক নাট্যদল (সিদ্ধেশ্বরী) এনেছে ‘আমরা তিনজন’ গল্প অবলম্বনে নাটক। এবার নতুন দল আপস্টেজ নিয়ে আসছে নতুন নাটক ‘রাত ভরে বৃষ্টি’। নানা কারণে আগের নাটকগুলোর তুলনায় এটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম, নির্দেশক বলছেন, প্রাপ্তমনস্কদের জন্য এই নাটক। ‘রাত ভরে বৃষ্টি’র উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে ১৯ জুলাই। রাজধানীর বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তন সন্ধ্যা সাতটায় নাটকটির উদ্বোধন হবে। বুদ্ধদেব বসুর ‘রাত ভরে বৃষ্টি’ উপন্যাস অবলম্বনে নাটকটি লিখেছেন ও নির্দেশনা দিয়েছেন সাইফ সুমন। ‘রাত ভরে বৃষ্টি’ বিয়ে ও সংসার নামের যৌথ প্রতিষ্ঠানের জটিল পাকচক্রে আবদ্ধ তিন নর-নারীর মনোদৈহিক টানাপোড়েনের গল্প। মধ্যবিত্ত সমাজজীবনে স্বামী-স্ত্রী বা বিবাহিত নারী-পুরুষের দাম্পত্য সম্পর্কের নানা জটিলতা আর রয়েছে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সংশয়। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত বুদ্ধদেব বসুর লেখা ‘রাত ভরে বৃষ্টি’ উপন্যাস ঘিরে মামলা করেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাসিন্দা ল কলেজের জনৈক ছাত্র নীলাদ্রি গুহ। নিম্ন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট অশ্লীলতার অভিযোগে তখন নিষিদ্ধ করে উপন্যাসটি, পাণ্ডুলিপি পর্যন্ত ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন। মামলা এমন একপর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, বুদ্ধদেব বসু তাঁর ছোট মেয়ে দময়ন্তীকে চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘বইটা আপাতত “নিহত” হবে বলেই ধরে নে।’ ১৯৬৯ সালে শুরু হওয়া মামলা শেষ হয় ১৯৭৩ সালে। শেষ পর্যন্ত উপন্যাসটি সম্পর্কে অশ্লীলতার অভিযোগ খারিজ হয়।এ বছর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নাটকটির মহড়া শুরু হয়। নিয়মিত মহড়া করছে আপস্টেজের সদস্যরা। কেন এমন বিতর্কিত গল্প নিয়ে নাটক করছেন? নির্দেশক সাইফ সুমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত, উপন্যাসের “ভালোবাসা জরুরি, স্বামী-স্ত্রী জরুরি, বেঁচে থাকাটা জরুরি”—এই কথাগুলো আমাকে ভীষণ আলোড়িত করেছে। দ্বিতীয়ত, এই উপন্যাসে শরীর–মনের ব্যাখ্যা আমি সমর্থন করি। এসব কারণে মঞ্চে আনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করি।’নাটকে মণিমালা চরিত্রে কাজী রুকসানা রুমা, অংশু চরিত্রে প্রশান্ত হালদার আর জয় চরিত্রে সাথী রঞ্জন দে অভিনয় করছেন। এ নাটক দিয়েই ঢাকার মঞ্চে যাত্রা করবে নতুন দল আপস্টেজ। দলের প্রধান সম্পাদক প্রশান্ত হালদার বলেন, ‘আমাদের দেশের নাট্যচর্চায় গ্রুপ থিয়েটার প্রবণতাই মূল স্রোত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কিন্তু নাট্যচিন্তা আর চর্চার আরও গুণগত বহুমাত্রিক প্রকাশে গড়ে ওঠেনি তেমন কোনো বিকল্প প্রয়াস। তাই নাট্যাঙ্গনে বিভিন্ন দলের উদ্যমী, নিবেদিত অভিনেতা ও কলাকুশলীদের একত্রে কাজ করার তুমুল আকাঙ্ক্ষা ক্রমেই দৃশ্যমান। সেই স্পৃহাকে পূর্ণতা দিতে নাট্যচর্চার একটা বিকল্প প্রয়াস। এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে আপস্টেজ।’দলের মুখ্য সম্পাদক সাইফ সুমনের ভাষায়, এটি রেপার্টরি থিয়েটার নয়, নতুন দল। নাটক চর্চার নতুন প্ল্যাটফর্ম। এখানে নাটকের প্রয়োজনে বা চরিত্রের প্রয়োজনে অন্য দলের কর্মীরাও কাজ করবেন।
কিশোরগঞ্জে একটি হত্যা মামলায় স্বামী-স্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মুহাম্মদ আবদুর রহিম আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন।যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কটিয়াদী উপজেলার পাঁচগাঁথিয়া গ্রামের আলিমুদ্দীন ও তাঁর স্ত্রী নূরজাহান। আসামিদের ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, আসামি আলিমুদ্দীন ও তাঁর চাচাতো ভাই নূরুজ্জামানের পরিবারের মধ্যে বাড়ির সীমানা ও জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এসব নিয়ে আলিমুদ্দীন আদালতে মামলাও করেছিলেন। ২০০৪ সালের ৮ আগস্ট দুপুরে নূরুজ্জামানের ছেলে আবদুল মান্নান (২৫) তাঁদের বাড়ির সীমানায় একটি চাউগাছ কাটতে গেলে আলিমুদ্দীন ও তাঁর স্ত্রী নূরজাহান দা আর বল্লম নিয়ে হামলা চালান। এসব ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মান্নান। ওই দিন নিহত ব্যক্তির মা ফাতেমা খাতুন বাদী হয়ে তাঁর দেবর আলিমুদ্দীন ও আলিমুদ্দীনের স্ত্রী নূরজাহানকে আসামি করে কটিয়াদী থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে ওই বছরের ৮ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। দীর্ঘ ১৫ বছর পর আজ এ মামলার রায় ঘোষিত হলো।রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) যজ্ঞেশ্বর রায় চৌধুরী। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী অশোক সরকার।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটের পাশে একটি বাড়িতে স্ত্রীকে স্বামী কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার ভোরে এই ঘটনা ঘটে।নিহত ওই নারীর নাম শারমিন আক্তার। তাঁর বাড়ি ভোলায়। তিনি স্বামীর সঙ্গে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের পাশে সাদেক খান রোডে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। ঘটনার পর তাঁর স্বামী আমির হোসেন (২৮) পালিয়ে গেছেন।মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল বাশার বলেন, শারমিন তাঁর স্বামীর সঙ্গে কৃষি মার্কেটের পাশে সাদেক খান রোডে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। প্রতিবেশীরা জানান, আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁদের চিৎকার–চেঁচামেচি শোনেন তাঁরা। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে আমির শারমিনকে বঁটি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলেই শারমিন মারা যান। খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ শারমিনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গণেশ গোপাল বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
আগামীকাল বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ছয়টায় বেলো হরিজন্তেতে আগুন ম্যাচ। মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। এ ম্যাচে দুই দলের একাদশ কেমন হবে?কোপা আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তেজনাময় ম্যাচটা এবার সেমিফাইনালেই হয়ে যাচ্ছে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগামীকাল সকালে মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। ম্যাচকে ঘিরে এর মধ্যেই দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা কাজ করা শুরু করেছে। দুই দলের হয়ে কে খেলবেন, আর কে খেলবেন না, এই নিয়ে দুই কোচ এর মধ্যেই পরিকল্পনা করা শুরু করে দিয়েছেন। কেমন হবে আগামীকাল দুই দলের একাদশ? আসুন দেখে নেওয়া যাক।ম্যাচ শুরুর আগে এর মধ্যেই কিছু সুখবর পেয়ে গেছে ব্রাজিল। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এই ম্যাচেই ফিরছেন রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কাসেমিরো। গ্রুপ পর্বে দুটি হলুদ কার্ড দেখার মাশুল হিসেবে কোয়ার্টারে প্যারাগুয়ের সঙ্গে খেলতে পারেননি কাসেমিরো। তাঁর জায়গায় খেলেছিলেন নাপোলির অ্যালান। ওদিকে মাম্পসের কারণে কোয়ার্টারে না খেলা উইঙ্গার রিচার্লিসনও সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মূল একাদশে না থাকলেও বিকল্প খেলোয়াড়ের তালিকায় অবশ্যই রাখা হবে তাঁকে। তবে ডান হাঁটুর ব্যথাটা এখনো ভোগাচ্ছে লেফটব্যাক ফিলিপে লুইসকে। ব্রাজিল কোচ তিতে শেষ মুহূর্ত অপেক্ষা করবেন লুইসের ফিট হওয়ার জন্য, লুইস পুরোপুরি সুস্থ না হলে অ্যালেক্স সান্দ্রোকে নামানো হবে লেফটব্যাক হিসেবে। গোলবারে যথারীতি থাকবেন লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী গোলরক্ষক অ্যালিসন। রাইটব্যাকে অধিনায়ক দানি আলভেসের জায়গা পাকা। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে জুটি বাঁধবেন পিএসজির জোড়া ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা ও মার্কিনহোস। ৪-২-৩-১ ছকে মিডফিল্ডে কাসেমিরোর সঙ্গী হবেন বার্সেলোনার আর্থার মেলো। এই দুজনের সামনে দুই উইঙ্গার ও একজন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলবেন যথাক্রমে গ্রেমিওতে খেলা উইঙ্গার এভারটন, ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও বার্সেলোনার ফিলিপ কুতিনহো। সবার সামনে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবেন লিভারপুলের রবার্তো ফিরমিনো।ওদিকে প্রতি ম্যাচের এক দিন আগেই নিজের মূল একাদশ বলে দেওয়া আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি কোয়ার্টারের মতো সেমিতেও মূল একাদশ ফাঁস করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আগেভাগে মূল একাদশ বলে দেওয়ার কারণে প্রতিপক্ষ কোচ নিজের পরিকল্পনা সাজানোর এন্তার সময়-সুযোগ পান। যে কারণে কলম্বিয়া, প্যারাগুয়ে ও কাতারের বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে ভুগেছেন মেসিরা। তবে এটা নিশ্চিত করেছেন, মূল একাদশে মেসি-আগুয়েরো অবশ্যই থাকছেন। আর্জেন্টিনার পত্রপত্রিকার খবর মানলে, গোলবারের নিচে যথারীতি থাকছেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানি। আরমানির সামনে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে জুটি বাঁধবেন ম্যানচেস্টার সিটির নিকোলাস ওটামেন্ডি ও ফিওরেন্টিনার জার্মান পেজ্জেলা। রাইটব্যাকে খেলবেন টটেনহামের হুয়ান ফয়থ ও লেফটব্যাকে যথারীতি আয়াক্সের নিকোলাস তাগলিয়াফিকো। মিডফিল্ডে কোন চারজন খেলবেন, সে নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। গত ম্যাচে পিএসজির লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে পেছনে রেখে সামনে খেলেছিলেন স্পোর্টিং লিসবনের মার্কাস আকুনিয়া ও উদিনেসের রদ্রিগো ডি পল। দুজনই মূলত উইঙ্গার, তাও সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে বেশ ভালো খেলেছেন। এখন তাদের ওপরেই কি স্কালোনি ভরসা রাখবেন? নাকি ভেনেজুয়েলার চেয়ে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ব্রাজিলের বিপক্ষে গিদো রদ্রিগেজ আর জিওভান্নি ল সেলসোর মতো মিডফিল্ডারকে খেলাবেন, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ওপরে আক্রমণভাগে মেসি-আগুয়েরোর সঙ্গী হবেন গত ম্যাচে গোল করা লওতারো মার্টিনেজ, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার জন্য ঘুমজড়ানো চোখে আগামীকাল সকাল সাড়ে ছয়টায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দেখতেই হচ্ছে!
চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী দালিয়ানে আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। ডব্লিউইএফের সামার দাভোস নামে পরিচিত এই সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সকালে যোগ দিয়েছেন সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেলে তাঁর প্যানেল আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা।দালিয়ান আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ সকালে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াং। ডব্লিউইএফের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস সোয়াব এবং লিআনিং প্রদেশের গভর্নর ত্যাং ইউজুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, ব্যবসায়ী, সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, শিল্পীসহ ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য ‘লিডারশিপ ৪.০-সাকসিডিং ইন আ নিউ এরা অব গ্লোবালাইজেশন’। সম্মেলন থেকে বৈশ্বিক পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক অসমতা ও প্রযুক্তিগত সংকটের বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হবে।ডব্লিউইএফ সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক একটি সংগঠন। ১৯৭১ সালে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই সংগঠনের জন্ম। সংগঠনটি ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি পায়। ডব্লিউইএফের লক্ষ্যে বলা হয়েছে, এটি বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সমাজের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও শিল্প খাতকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে গঠিত।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ দিনের সফরে গতকাল সোমবার রাত সোয়া ১২টার দিকে চীনের দালিয়ানে পৌঁছান। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াংয়ের আমন্ত্রণে এই দ্বিপক্ষীয় সরকারি সফর হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুটি প্রাধান্য পাবে। বেইজিং রোহিঙ্গা সংকটটি নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ সময়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে আটটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
এএফসি কাপের আন্ত আঞ্চলিক সেমিফাইনালে বাংলাদেশের আবাহনী লিমিটেডের প্রতিপক্ষ উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ ক্লাব। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে ম্যাচ দুটি অনুষ্ঠিত হবে আগস্টে।প্রথমবারের মতো এএফসি কাপের দ্বিতীয় পর্ব বা আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে আবাহনী লিমিটেড। সেখানে আবাহনীর প্রতিপক্ষ কারা হচ্ছে— জানার অপেক্ষাতেই ছিলেন ফুটবল প্রেমীরা। আজ মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ড্রয়ে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছে উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ ক্লাব। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে আগস্টে অনুষ্ঠিত হবে আন্ত আঞ্চলিক সেমিফাইনালের দুইটি ম্যাচ। ২১ আগস্ট ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে প্রথম ম্যাচটি। ফিরতি পর্ব ২৮ আগস্ট কোরিয়ায়।এত দিন এএফসি কাপে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে একক রাজত্ব ছিল ভারতীয় ক্লাব বেঙ্গালুরু এএফসির। ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চলের ক্লাবগুলোকে এএফসি কাপের প্রথম পর্বে নিজেদের মধ্যে খেলার সুযোগ করে দেয় এশিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা। প্রথম দুবারই চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল বেঙ্গালুরু। এবারই ভারতের দুই ক্লাবকে পেছনে ফেলে তাদের রাজত্ব দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশের আবাহনী। ৬ ম্যাচে ৪ জয় ও ১ ড্রয়ের বিপরীতে একটি মাত্র ম্যাচ হেরে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা।আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে আবাহনীর প্রতিপক্ষ এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ ক্লাবের পারফরমেন্স ছিল আরও দুর্দান্ত। ৬ ম্যাচে ৫ জয়ের বিপরীতে তারা ম্যাচ হেরেছে মাত্র একটি। ঘরোয়া লিগে এগারোর চ্যাম্পিয়ন হওয়া কোরিয়ান ক্লাবটিতে নেই কোনো বিদেশি খেলোয়াড়। প্রথম পর্বে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬ গোল করেছেন স্ট্রাইকার কিম ইউ সং।এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ বাংলাদেশের ফুটবলে খুব অপরিচিত প্রতিপক্ষ নয়। এই দলটির বিপক্ষে অতীতে জয়ের রেকর্ড আছে। ১৯৮৮ সালে সে সময়ের এশিয়ান ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল পর্বে এই এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। মালয়েশিয়ার পাহাংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ম্যাচটি। মোহামেডানই ১৯৯০ এশিয়ান ক্লাব কাপের চূড়ান্তপর্বে গোলশূন্য ড্র করেছিল উত্তর কোরীয় ক্লাবটির সঙ্গে। ১৯৯১ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চূড়ান্তপর্বে এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ তৃতীয় হয়েছিল।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় পূর্ব তেকানী গ্রাম। পাশেই যমুনা নদী। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নদী ভরপুর। নিদাঘ দুপুরে মহিষের পাল নিয়ে নদীতে নাইতে যায় রাখালেরা। গরমে ঠান্ডা পানি পেয়ে মহিষদের আর পায় কে? গা ডুবিয়ে বসে যায় ওরা।
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। স্বজন ও চিকিৎসকদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন তিনি।আজ মঙ্গলবার সকালে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে অনির্ধারিত ব্রিফিংয়ে এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের এ কথা বলেন।কাদের বলেন, এইচ এম এরশাদ আধো ঘুম-আধো জাগরণে সাড়া দিচ্ছেন এবং চোখ মেলছেন। তিনি বলেন, আজও গতকালের মতোই শারীরিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন, সিএমএইচের চিকিৎসকেরা এটাকে ইতিবাচক মনে করছেন।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়নি। ফুসফুসে ইনফেকশনের কারণে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তাই চিকিৎসকেরা এরশাদকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়েছেন। চিকিৎসকেরা এখনো অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।এরশাদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে জাতীয় পার্টির ব্রিফিং এবং প্রয়োজন হলে আইএসপিআরের তথ্য ছাড়া অন্য কোনো তথ্যে বিভ্রান্ত না হতে গণমাধ্যম ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের।জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা দলীয় নেতা-কর্মীদের ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও মনগড়া পোস্ট দিতে নিষেধ করেছেন।জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সুনীল শুভ রায়, আলমগীর সিকদার লোটন, উপদেষ্টা সেলিম উদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব এম এম ইয়াসির, আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসাহাক ভূঁইয়া, আলহাজ আবদুর রাজ্জাক ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট নারীনেত্রী, লেখক ও শিক্ষাবিদ, প্রফেসর ড. মালেকা বেগম গত ২৭ জুন ফেনী সফরে আসেন। তিনি ওই দিন বিকেলে শহরের এলজিইডি কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে ফেনী বন্ধুসভার সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।ফেনী বন্ধুসভার সভাপতি মো. জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আশিকুন্নবী সজীবের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আফরিন ইসলাম, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবু তাহের, অধ্যক্ষ মো. আবদুল হালিম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ফেনী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সমর দেবনাথ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়ের সভাপতি মঞ্জিলা আক্তার মিমি।ফেনী বন্ধুসভার সদস্যরা ড. মালেকা বেগমের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক ও উপহার তুলে দেন। ড. মালেকা বেগম তাঁর বক্তব্যে বন্ধুসভার বিভিন্ন ভালো কাজের প্রশংসা করেন।সাধারণ সম্পাদক, ফেনী বন্ধুসভা
গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।গতকাল সোমবার আসরের নামাজের পর ফারাজের নানা লতিফুর রহমানের বাসভবনে এই দোয়া মাহফিল হয়। ফারাজের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এবং ট্রান্সকম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।দোয়া পরিচালনা করেন নারিন্দার পীর সাহেব শাহ সৈয়দ মুরাদুল্লাহ আহমেদ। তিনি বলেন, হোলি আর্টিজানে বন্ধুদের সঙ্গে খেতে গিয়েছিলেন ফারাজ হোসেন। সেখানে জঙ্গিরা হামলা চালায়। ওই সময় জঙ্গিরা ফারাজকে বলেছিল তুমি মুসলমান, তুমি চলে যাও। কিন্তু ফারাজ বন্ধুদের ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেন। এ কারণে জঙ্গিরা তাঁকে মেরে ফেলে। বন্ধুদের জন্য কারও এ ধরনের আত্মত্যাগ শহীদের মর্যাদার সমান। তিনি শহীদের মর্যাদা পেয়েছেন।দোয়া মাহফিলে ফারাজের বড় ভাই যারেফ আয়াত হোসেন বলেন, ‘দেশে ও দেশের বাইরে ফারাজকে আজকে স্মরণ করা হচ্ছে। যে সম্মান দিয়ে তাঁকে স্মরণ করা হচ্ছে, তাতে আমরা গর্বিত।’এদিকে ফারাজ স্মরণে ঢাকা ছাড়াও বগুড়া, রাজশাহী, ফেনী, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিলাদ মাহফিলে ফারাজের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।বগুড়ার ফুলদীঘিতে ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ট্রান্সক্রাফটের ছাপাখানায় বাদ আসর মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় চককাতুলী বাইতুল আমান জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মান্নান দোয়া পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, ফারাজ হোসেন মানবতার জন্য আত্মদান করেছেন। মিলাদ মাহফিলে বগুড়ার পেপসি জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ঠান্ডা মাথায় ফারাজের মতো এতগুলো নিরপরাধ মানুষকে যারা হত্যা করতে পারে, তারা ইসলামের শত্রু।নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গুড়িহারী গ্রামে অবস্থিত ফারাজ স্মৃতি পাঠাগারে ফারাজ হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা হয়েছে। কক্সবাজারে স্মরণসভা ও মিলাদ মাহফিল হয় শহরের আলীরজাহানস্থ ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কার্যালয়ে।স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, ‘হামলাকারী জঙ্গিরা সেদিন ফারাজকে চলে যেতে বলেছিল। কিন্তু তিনি বন্ধুদের মৃত্যুর মুখে রেখে একা চলে যেতে রাজি হননি। জীবন দিয়ে তিনি প্রমাণ করে গেছেন, শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বই আমাদের আদর্শ। তাঁর এই আত্মদান বৃথা যায়নি।’ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন আলীরজাহাল জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আজিজুল হক।ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন, ফেনী শাখার আয়োজনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে বলা হয়, শহীদ ফারাজের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। তিনি শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্ববোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করে গেছেন। ফরিদপুরে দোয়া ও মিলাদ পরিচালনা করেন শহরের চৌরঙ্গী জামে মসজিদের ইমাম মো. মোশারফ হোসেন।পটুয়াখালী শহরের কালিকাপুর যুব সংসদ সড়কে ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া পরিচালনা করেন কলাবাগান বাবরি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মো. হাবিবুর রহমান।এ ছাড়া চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আয়োজনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্বকাপে আজ বার্মিংহামের এজবাস্টনে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডেতে ২০০তম ম্যাচ খেলার মাইলফলক ছোঁবেন তামিম ইকবাল। দলের প্রয়োজনে আজ নিজের এ মাইলফলক কি রাঙাতে পারবেন তামিম?তাঁর প্রথম, ৫০তম, ১০০তম ও ১৫০তম ম্যাচের স্কোরকার্ড দেখলে আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। হবে না। দ্বিশতক রাঙাতে পারবেন না। কিন্তু খেলোয়াড়টি তামিম ইকবাল। আর প্রতিপক্ষ দলটি ভারত। ফর্ম যা–ই হোক, তামিমের ব্যাট চওড়া হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও কিন্তু কম নয়।ওয়ানডেতে তামিমের অভিষেক ২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সে ম্যাচে যাত্রা শুরু করেছিলেন ৫ রানে আউট হয়ে। দুই বছর পর তামিমের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫০তম ম্যাচটি ছিল ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের প্রথম ফাইনাল। রাঙিয়ে দিতে পারেননি। আউট হয়েছিলেন মাত্র ১৮ রানে। আবারও দুই বছরের ব্যবধানে দেখা পেয়ে যান শততম ম্যাচের। ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ রানে আউট হয়েছিলেন তামিম। পরের ৫০টি ম্যাচ খেলতে সময়টা একটু বেশি লেগে যায়। প্রায় চার বছর। চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ৬১ করে আউট হয়েছিলেন তামিম। তাঁর মাইলফলকের ম্যাচগুলোয় এ ইনিংসটাই যতটুকু সবেধন নীলমণি সাফল্য।পরের ৫০টি ম্যাচ খেলতেও প্রায় চার বছর সময় লাগল তামিমের। কথাটা একটু আগেভাগেই বলা হয়ে গেল। ভারতের বিপক্ষে আজ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু না ঘটলে তামিম খেলছেন তা নিশ্চিত। আর এ ম্যাচটা হবে ওয়ানডেতে তামিমের ২০০তম ম্যাচ। আর বাংলাদেশের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। হারলেই ধূলিসাৎ হবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার আশা। এমন ম্যাচে ওয়ানডেতে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান, সেঞ্চুরি ও ফিফটির মালিকের কাছ থেকে বড় ইনিংস আশা করতেই পারে বাংলাদেশ।আশা কী, বিষয়টি এখন সময়ের দাবি। বিশ্বকাপের এ পথ পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সিনিয়রদের মোটামুটি সবাই পারফর্ম করেছেন। শুধু তামিমের ব্যাট দপ করে জ্বলতে গিয়ে বারবার নিভে যাচ্ছে। এ নিয়ে সমর্থক, সতীর্থের চেয়ে তামিমের হতাশাই সবচেয়ে বেশি। চলতি বিশ্বকাপে থাকতেই তা জানিয়েছেন। আর কে না জানে, তামিমের ভালো করার খিদে অন্য রকম। প্রতিটি ম্যাচ ধরে ধরে প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। কিন্তু বিশ্বকাপ এলেই তামিমের যেন কী হয়। এবারও যেমন ব্যাটে-বলে তেমন একটা হচ্ছে না।সহজ কথায়, ২০১৯ বিশ্বকাপ শুরুর আগের তামিম আর বিশ্বকাপের তামিম এক না। শুধু বাংলাদেশ দলের বাকি ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে তুলনা করলেই পার্থক্যটা টের পাওয়া যায়। ৬ ম্যাচে তামিমের স্ট্রাইকরেট ৭৪.২৭। মাশরাফি বিন মুর্তজা বাদে দলের বাকি সব ব্যাটসম্যান-অলরাউন্ডারদের স্ট্রাইকরেটও তামিমের ওপরে। ব্যাটিং গড় ৩৪.১৬, ফিফটি মাত্র ১টি। এ ৬ ম্যাচের প্রায় প্রতিটিতেই তামিম ভালো শুরু পেয়েছেন। কিন্তু সেট হওয়ার পর বড় ইনিংস খেলে আসতে পারেননি। তাতে বল ও রানের ব্যবধানটাও চোখে বিঁধে থাকার মতো।বিঁধে থাকা এ কাঁটা আজ কি উপড়ে ফেলতে পারবেন তামিম? নতুন ম্যাচ মানেই নতুন করে প্রস্তুতি, মানসিক ব্যাপারটাও থাকে আলাদা। আর ভারতের বিপক্ষে তামিমের ব্যাট বরাবরই বেশ চওড়া। যে দুজন ব্যাটসম্যান ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৭টি ফিফটি পেয়েছেন, তামিমের তাঁদের একজন—সাকিব আরেকজন। এ ছাড়া নিরপেক্ষ মাঠে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র জয়ে তামিমের অবদানও স্মরণীয়। এক কথায়, ওই ম্যাচে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা শটগুলোর একটি খেলেছেন তামিম।ঠিক ধরেছেন। ২০০৭ বিশ্বকাপ, পোর্ট অব স্পেন, ডাউন দ্য উইকেট এসে মিড উইকেট দিয়ে জহির খানকে বাতাসে ভাসানো সেই ছক্কা, যা গিয়ে পড়েছিল গ্যালারির দ্বিতীয় তলায়। সেই তামিম আর এই তামিমে কত পার্থক্য! সেটি ছিল তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচ। টগবগে তরুণ স্ট্রোকমেকার আরকি! সময় গড়িয়ে সেই তামিম এখন অনেক পরিণত। আজ ভারতের বিপক্ষে কিন্তু পরিণত তামিমকেই দরকার—যিনি ইনিংস গড়ে অন্তত ৩৫-৪০ ওভার পর্যন্ত টেনে দিতে পারবেন।আর আজ ভেন্যু যেহেতু বার্মিংহামের এজবাস্টন, এ মাঠেও ভারতের বিপক্ষে ভালো একটি ইনিংস রয়েছে তামিমের। সেই যে দুই বছর আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল। ভারতের বিপক্ষে সে ম্যাচে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। বাংলাদেশ হেরেছিল, কিন্তু তামিম ৮২ বলে ৭০ রানের সেই ইনিংসে ত্রাসের সঙ্গে সৌন্দর্যের সঞ্চার করেছিলেন।সেই একই মাঠ, একই প্রতিপক্ষ, আর সেই ভয়াল-সুন্দর তামিমকে ভীষণ প্রয়োজন তাঁর দলেরও। তামিম শুনতে পাচ্ছেন, ২০০-র মঞ্চ কিন্তু ডাকছে!
অনুশীলন মাঠের নেট থেকে উঠে সাকিব আল হাসান চললেন মূল স্টেডিয়ামের দিকে। আরও কিছুক্ষণ নক করবেন সেখানে। সাকিবকে যেতে দেখেই দৌড়ে তাঁর পিছু নিল ভারতীয় টিভি মিডিয়ার একাংশ। সাকিবের ফুটেজ যদি আরও কাছ থেকে পাওয়া যায়।আইপিএলের সুবাদে বাংলাদেশ দলের সাকিব ‘হট কেক’ ভারতীয় মিডিয়ার কাছে। তাঁর সাক্ষাৎকারের জন্য মিডিয়া ম্যানেজারের মুঠোফোনে অনুরোধের স্তূপ। হবে না-ইবা কেন! বিশ্বকাপটা সাকিব খেলছেনও তো দুর্দান্ত! দুই অস্ট্রেলিয়ান ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ হয়তো রানে এখন এগিয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁরা খেলেছেন আটটি করে ম্যাচ। সাকিব ছয় ম্যাচেই ৪৭৬ রান করে আছেন তৃতীয় স্থানে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়ে গত ম্যাচে জ্বলে উঠেছেন বোলিংয়েও।এজবাস্টনের অনুশীলন মাঠে এসে সঞ্জয় মাঞ্জরেকার কাল অন্তত চারটি জটলার মুখোমুখি হলেন। একেক জটলায় কথাবার্তার বিষয়বস্তু একেক রকম। বাংলাদেশি সাংবাদিকদের জটলায় বিষয়বস্তু সেই সাকিব। ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যানের কথার সারমর্ম, সাকিবের মতো অলরাউন্ড পারফরমার নিকট অতীতে দেখেনি বিশ্ব ক্রিকেট। আইপিএলে যে সাকিব প্রায়ই আপন আলোয় ফুটে উঠতে পারেন না, সেটিরও যুক্তিসংগত কারণ দেখছেন ধারাভাষ্যকার মাঞ্জরেকার। আইপিএলে একজন বোলার বল করেন মাত্র ৪ ওভার। সাকিব সেখানে কিছু দেখাতে না পারলেও সেটিকে তাঁর ব্যর্থতা হিসেবে দেখা যাবে না। মাঞ্জরেকার দেখতে বললেন টেস্টের সাকিবকে, যেখানে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট পাওয়ার সাফল্য আছে তাঁর ১৮ বার। টেস্টের এই পারফরম্যান্স বিবেচনায় মাঞ্জরেকারের বিশ্লেষণ, টি-টোয়েন্টির তুলনায় সাকিবের বোলিংটা ওয়ানডের জন্যই বেশি কার্যকর।কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে যে কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না আসল সাকিবকে! প্রতিপক্ষ ভারত হলে সবার আগে মনে আসে মাশরাফি বিন মুর্তজার নাম। ২০০৪ সালে ঢাকায়, এরপর পোর্ট অব স্পেনে ২০০৭ বিশ্বকাপেও ভারতকে হারানো ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ তিনি। আসে মোস্তাফিজুর রহমানের নামও। ২০১৫ সালে অভিষেক ওয়ানডেতেই ভারতের বিপক্ষে নিয়েছেন ৫ উইকেট, পরের ম্যাচে ৬ উইকেট। ভারতকে হারানো এই দুই ম্যাচেরই ম্যাচসেরা ছিলেন বাঁহাতি পেসার। তামিম ইকবালের কথাই-বা বাদ থাকবে কেন! ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হলেই এখনো স্মৃতিতে ভেসে ওঠে ২০০৭ বিশ্বকাপে তাঁর সেই তেড়েফুঁড়ে করা ব্যাটিংয়ের কথা।এমন নয় যে ভারতের বিপক্ষে সাকিব বলার মতো কিছুই করেননি। সর্বশেষ জয়েই আছে অপরাজিত ফিফটি। মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমানের সঙ্গে ম্যাচ জেতানো দুটি জুটি। ২০১৫ সালের হোম সিরিজে তার আগের ম্যাচেও করেছিলেন ৫২ রান। কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিব যেমন আপন আলোয় উদ্ভাসিত, বাংলাদেশের অনেক জয়েই যেমন তাঁর একক অবদান; সে রকম কিছু নেই ভারতের বিপক্ষে। নেই সেঞ্চুরি, নেই ৫ উইকেট। সর্বোচ্চ ইনিংস ৮৫ রানের, সেরা বোলিং ২৭ রানে ৩ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে ১৭ ম্যাচে সাকিবের সাত ফিফটি ও ১৮টি উইকেটও তাই তেমনভাবে চোখে পড়ে না।এবার কি ভারত অন্য সাকিবকে দেখবে? আশাটা করাই যায়, কারণ বিশ্বকাপের শুরু থেকেই বাংলাদেশ দল পরিণত তাঁর ‘ওয়ান ম্যান শো’তে। টুর্নামেন্টে নিজেদের সাতটি ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পরও যে বাংলাদেশ এখনো সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখছে, সেটি তো সাকিবের হাত ধরেই! আর ভারতের বিপক্ষে সাকিবেরও বড় কিছু করে দেখানোর দায় আছে। মাঞ্জরেকার যতই তাঁর আইপিএলের বোলিংয়ের পক্ষে যুক্তি দিন, সেটি সাকিবের দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদই মানে কি না সন্দেহ। নইলে সর্বশেষ আইপিএলে ম্যাচের পর ম্যাচ তাঁকে এভাবে বসিয়ে রাখে! পেশাদার ক্রিকেটে ‘প্রতিশোধ’ শব্দটার হয়তো জায়গা নেই। কিন্তু খেলোয়াড়দের ভেতরের জেদটা সব সময় পেশার নিয়ম মেনে হয় না। সেখানে ব্যক্তিগত হিসাব-নিকাশও থাকে। সাকিব পারেন আজ সেটিও মিটিয়ে নিতে।
ময়মনসিংহ অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে চার পদে ৫৯ কর্মকর্তা নিয়োগ হবে। এ–সংক্রান্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উপসহকারী প্রকৌশলী ও ভান্ডার কর্মকর্তা পদে নিয়োগ হবে। আগ্রহী ব্যক্তিরা আবেদন করতে পারেন।যেসব পদে আবেদন১. পদের নাম: ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাপদসংখ্যা: ১০বেতন স্কেল: ৩৫,৫০০-৬৭,০১০ টাকাবয়স: অনুর্ধ্ব ৩৫ বছর।২. পদের নাম: বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাপদসংখ্যা: ৪২বেতন স্কেল: ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকাবয়স: অনুর্ধ্ব ৩০ বছর।৩. পদের নাম: উপসহকারী প্রকৌশলীপদসংখ্যা: ৩বেতন স্কেল: ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকাবয়স: অনুর্ধ্ব ৩০ বছর।৪. পদের নাম: ভান্ডার কর্মকর্তাপদসংখ্যা: ৪বেতন স্কেল: ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকাবয়স: অনুর্ধ্ব ৩০ বছর।আবেদনের নিয়ম: আগ্রহী প্রার্থীদের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফরম ইনস্টিটিউটের সদর দপ্তর বা www.fri.gov.bd ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।আবেদনের শেষ তারিখ: ২৮ জুলাই অফিস সময় পর্যন্ত।আবেদনের ঠিকানা: মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ-২২০১।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের তৃতীয় বৈঠকটি পূর্বনির্ধারিত ছিল না। হঠাৎ আয়োজিত হলেও সেটি ছিল নাটকীয়তা আর উত্তেজনায় ভরা। তবে এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক ফলাফল বা ঘোষণা আসেনি। উভয় পক্ষের বক্তব্য ও বিবৃতি যা এসেছে, তা দুই পক্ষের ব্যক্তিগত ঘোষণা হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন পর্যবেক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন, কিম-ট্রাম্প শেষ বৈঠকের মাধ্যমে পাঁচটি বিষয় সামনে এসেছে।সামনে কী ঘটবে?কিমের সঙ্গে আধা ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা আবার শুরুর বিষয়ে একমত হয়েছেন তাঁরা। এই আলোচনা গত ফেব্রুয়ারিতে ভিয়েতনামের হ্যানয় সম্মেলনে ভেস্তে যায়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত বছরের জুনে সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প-কিম প্রথম বৈঠকে পরবর্তী আলোচনার সময়সূচি, একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা—সবই ছিল। কিন্তু এবারের বৈঠকে এসবের কিছুই নেই।পরবর্তী আলোচনায় কারা থাকবেন?কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করতে ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে আলোচনা প্রক্রিয়া থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এরপরও ট্রাম্প বলেছেন, আলোচনায় মার্কিন দলের নেতৃত্ব দেবেন পম্পেও। উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে কারা নেতৃত্বে থাকবেন, সেটা অবশ্য স্পষ্ট নয়। সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে, ট্রাম্প-কিম দ্বিতীয় বৈঠকের ‘ব্যর্থতার দায়ে’ আলোচনার মধ্যস্থতাকারীদের ছেঁটে ফেলা হয়েছে।পরবর্তী সময়ে সম্মেলন হবে?ট্রাম্প সাক্ষাৎ করার আগ্রহ প্রকাশের পর তাতে সাড়া দেন কিম। ওয়াশিংটন এটিকে ‘আকস্মিক সম্মেলন’ আর ওয়াশিংটন ‘ব্যক্তিগত আলোচনা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এই বৈঠক আয়োজনকে ‘অস্বাভাবিক’ মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক এক কূটনীতিক। তিনি বলেন, একটি ‘অনমনীয়’ বিষয়কে অপ্রচলিত উপায়ের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাজেই সামনে আরও বৈঠক হতে পারে।ওয়াশিংটনে যাবেন কিম?কিমকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম যদি এই সফরে যান, তাহলে সেটা হবে সবচেয়ে বড় চমক এবং অপ্রত্যাশিত কূটনৈতিক তৎপরতা।ট্রাম্পের বন্ধু কারা?কিমকে প্রায়ই বন্ধু বলে থাকেন ট্রাম্প। দুই কোরিয়ার অসামরিকায়িত অঞ্চলে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় কিমের মুখেও ছিল একই কথা। আবার ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনকেও বন্ধু বলেছেন।
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে সীতা পাগলের আশ্রমসংলগ্ন রাস্তার পাশ থেকে মাথাবিহীন মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলার পারুয়ারকুল গ্রাম আশ্রম থেকে একটু দূরে রাস্তার উত্তর পাশে কলাবাগানের মধ্যে গলাকাটা মাথাবিহীন লাশটি কে বা কারা ফেলে রেখে যায়। লাশটি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন এলাকাবাসী।মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল ইসলাম জানান, সকাল সাতটার দিকে তাঁদের কাছে লাশ পড়ে থাকার খবর আসে। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহত যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মাথা বিচ্ছিন্ন থাকায় বয়সের ব্যাপারেও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে নিহতের বয়স ২৫ থেকে ৩২ বছর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।রবিউল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হচ্ছে। নিহত যুবকের পরিচয় জানতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়ন থেকে মো. সোহাগ (১৫) নামের এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ইউনিয়নের চম্পাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন রাস্তার পাশের কৃষিজমি থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।নিহত সোহাগ একই ইউনিয়নের দুর্গাবাড়ি পূর্বপাড়া এলাকার মো. পিয়ার হোসেনের ছেলে। সোহাগ পেশায় অটোরিকশাচালক।প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সকালে রাস্তার পাশের জমিতে সোহাগের লাশ পড়ে ছিল। সোহাগের গলায় দড়ি প্যাঁচানো ছিল। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।মুন্সিগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, সোহাগের লাশ নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু গলায় রশি প্যাঁচানো ছিল, তাই এটি হত্যাকাণ্ড হতে পারে। তবে প্রকৃত ঘটনা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে। পুলিশের এই কর্মকর্তা সোহাগের বাবার বরাত দিয়ে বলেন, সোহাগ গতকাল সোমবার রাতে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল সে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, আসামের মতো ভারতের অন্য রাজ্যেও অনুপ্রবেশ রুখতে এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) কার্যকর হবে। গতকাল সোমবার অমিত শাহ রাজ্যসভায় জম্মু ও কাশ্মীরের সংশোধনী বিলের ওপর আলোচনায় এ কথা বলেছেন।বিলটির বিতর্কের জবাব দিতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, ভারতে নাগরিকত্ব আইন পাস করিয়ে আসামের সমস্ত হিন্দু অনুপ্রবেশকারীকে শরণার্থী তকমা দিয়ে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এরপর নতুন রাজ্যে এনআরসি চালু করতে নামবে কেন্দ্রীয় সরকার।এর আগে এই বিলের বিতর্কে যোগ দিয়ে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের সংশোধনী বিল পাস হলে জম্মুর তিন লাখ হিন্দু উপকৃত হবেন। তৃণমূল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে। তবে আসামে এনআরসির ফলে যে ১৭ লাখ বাঙালি হিন্দু নাগরিককে অনুপ্রবেশকারী বানানো হয়েছে, তাদের কথা কেন ভাবছে না সরকার? এরপরেই ওই মন্তব্য করেন অমিত শাহ।এ সময় ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডার বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেও অমিত শাহর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, তৃণমূলের শাসনে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। ফলে, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খন্ডের বহু জেলায় জনবিন্যাস পাল্টে গেছে। এই লক্ষ্যে তিনি এই দুই রাজ্যে এনআরসি কার্যকর করার দাবি করেন।
সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমিতে স্তালিন নামে একটি নাটক হয়ে গেল। সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার এটির প্রযোজনা করেছে। অনুবাদ করেছেন রায়হান আখতার। নির্দেশনা দিয়েছেন কামালউদ্দীন নীলু। নাটকটি মঞ্চায়নের পর ঐতিহাসিক সত্যের কিছু অপব্যাখ্যা থাকায় দর্শকেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নাটকটির ভূমিকায় লেখা হয়েছে, ‘স্তালিন মনে করতেন মৃত্যুই সব সমস্যার সমাধান, মানুষ যদি না থাকে তাহলে কোনো সমস্যাই থাকবে না।’নাটকের প্রথমেই আমরা দেখি আইজেনস্টাইনের সিনেমা দেখে স্তালিন ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। আইজেনস্টাইনের ব্যাটলশিপ পটেমকিন বা অক্টোবর: টেন ডেইজ দ্যাট শক দ্য ওয়ার্ল্ড-এর মতো সিনেমা বিশ্বের তাবৎ বিপ্লবী এবং দর্শকদের কাছে বড় অনুপ্রেরণা। গণজাগরণে সিনেমার যে শক্তি, তা তিনি যেমন প্রমাণ করেছেন, তেমনি সোভিয়েত ইউনিয়ন এই শক্তি ব্যবহারও করেছে। স্তালিন যে তাঁর ছবি দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তার প্রমাণ নির্দেশক কোথা থেকে পেলেন? দেখা যাচ্ছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত স্তালিন শুধু মদ খাচ্ছেন, টেবিলের ওপর হাঁটছেন এবং হত্যার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। সময়টা পেলেন কোথায়?লেনিন মারা গেছেন ১৯২৪ সালে। তারপর স্তালিন হাল ধরেছেন বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়নের। সর্বক্ষণ ব্যস্ত থেকেছেন দেশি এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র ঠেকানোর কাজে। এর মধ্যে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর দেশে দেশে কমিউনিস্ট পার্টি। স্তালিন তখন লেনিনের নিউ ইকোনমিক পলিসির কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। গড়ে তুলছেন কল-কারখানা, রাস্তাঘাট, বিদ্যালয়, নাট্যশালা, চলচ্চিত্রশিল্প ও চলচ্চিত্র শেখার স্কুল, দেশকে বৈদেশিক আক্রমণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী। ১৯৩০-এর দশকে ভয়াবহ মন্দা, দুর্ভিক্ষ চলছে। রবীন্দ্রনাথ এ সময় রাশিয়া ভ্রমণ করেন। তিনি কৃষক-শ্রমিকের উন্নতি ও শিক্ষাব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন, অবশ্য লৌহ যবনিকার কথাও বলেছেন। সারা বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র সোভিয়েত ইউনিয়ন।নাটকে মার্শাল ঝুকভের ব্যাপারেও অসত্য তথ্য রয়েছে। ঝুকভ ১৩ বছর বয়সে জারের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বিপ্লবের পরে তিনি ১৯২০ সালে যোগ দেন সোভিয়েত সেনাবাহিনীতে। একজন অত্যন্ত কৃতী সামরিক অফিসার হিসেবে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের মার্শাল পদে উন্নীত হন ১৯৪১ সালে। ঝুকভ স্তালিনের কাছাকাছি আসেন ওই সময়েই। এর আগে তিনি স্তালিনের সঙ্গে বসে ষড়যন্ত্র করার সময় পেলেন কোথায়? অসম সাহসিকতার সঙ্গে এই দেশপ্রেমিক সৈনিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানদের মোকাবিলায় অনেক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। স্তালিনের মৃত্যুর পরও তিনি সম্মানজনক সব পদে কাজ করেছেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ পর্যন্ত তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। একজন সত্যবাদী সৈনিকের মতোই তাঁর লেখা আত্মজীবনীতে স্তালিন ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে লিখে গেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, স্তালিন শুধু বিশ্বযুদ্ধ নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন না, তাঁকে দেশের সর্বত্র খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অস্ত্রের জোগান—সব বিষয়েই ভাবতে হচ্ছে। এই সময়গুলোতে তিনি দেশপ্রেমিক জনগণ ও কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেভাবে কাজ করেছেন, তা অতুলনীয়। স্তালিন নাটকে তার কিছুই দেখা যায়নি।স্তালিন মৃত্যুকেই যদি একমাত্র সমাধান ভাবতেন, তাহলে সারা বিশ্বকে নাৎসিদের হাতে ছেড়ে দিলেই পারতেন, এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নকেও। নাটকে মায়াহোল্ডের বিষয়টি এসেছে। বিষয়টিতে প্রশ্ন দেখা দেয় এই কারণে যে, সারা বিশ্বে যাঁরা রাজনৈতিক থিয়েটার করেন, তাঁদের কাছে তিনি শিক্ষক। বের্টোল্ট ব্রেখট থেকে শুরু করে অনেকেই তাঁর অনুসারী। জনগণের থিয়েটার যিনি করেন তাঁকে কেন এভাবে হত্যা করতে হবে? এখানে অন্য কোনো বিষয় আছে কি না, তা–ও ভাবতে হবে। কারণ, স্তালিনের অজান্তে বা ভুল তথ্যের কারণেও অনেক কিছু ঘটা অসম্ভব নয়।নাটকের এক জায়গায় বলা হয়েছে মাও সে–তুংকে স্তালিন হত্যা করতে চেয়েছেন। কিন্তু মাও সে–তুং কী বলেছেন? তিনি বলেছেন: ‘তত্ত্ব ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি (স্তালিন) যে অবদান রেখে গিয়েছেন, তা তুলনাহীন। তিনি ছিলেন আমাদের এই সম্পূর্ণ নতুন কালের প্রতিনিধি। তাঁর সঠিক নেতৃত্বের ফলেই সোভিয়েত জনতা এবং সারা দুনিয়ার শ্রমজীবী মানুষ সমগ্র বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন।’স্তালিনের মৃত্যুর পর কলকাতার লেখক পূর্ণেন্দু পত্রী ‘স্টালিনের রাত’ নামে একটি ছোটগল্প লিখেছেন। সেই গল্পে যেদিন স্তালিন মারা যান, সেই রাতে কলকাতার এক গৃহবধূ নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এ তো গল্পের কথা। সত্য ঘটনাও কিন্তু আসছে অনেক জায়গা থেকে। চিলি, এল সালভাদর, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, আফ্রিকার কোনো এক শ্রমিক বা কৃষক কাজ করতে করতে থমকে দাঁড়িয়েছেন, নির্বাক হয়ে গেছেন এই মহান মানুষের মৃত্যুতে।যাই হোক, স্তালিন দেবতা নন, মানুষ। রাষ্ট্র পরিচালনায় অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি, নতুন রাষ্ট্র গড়ার ক্ষেত্রে অনেক ভ্রান্তি থাকতে পারে। সেগুলো নিয়ে যে নাটক রচনা করা যাবে না, তা–ও ঠিক নয়।বিপুল অর্থ ব্যয়ে এই প্রযোজনা হয়েছে। বিশাল টিম। মঞ্চ নির্মাণের পরিকল্পনা একেবারে লাউঞ্জ থেকে। সব জায়গায় লাল কাপড় ও টুপি। দর্শকেরা টুপি পরছেন, ছবি তুলছেন আবার বিরতির সময় ফেরতও দিয়ে দিচ্ছেন। নাটকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্তালিন একটা ভাঁড়, মদ্যপ এবং সভাসদ নিয়ে নানা মশকরায় মত্ত। শেষে আবার বলেছেন মায়ের অভিলাষে তাঁর যাজক হওয়াই ভালো ছিল। বারবার তাঁর কন্যা সাভেত্লানার কথা বলা হচ্ছে। স্তালিনের কন্যা তো কমিউনিস্ট আদর্শের ছিলেন না। দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে পিতার সমালোচনা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। স্তালিনের পুত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক; জার্মানদের কাছে ধরা পড়ার পর তাঁর বদলে একজন জার্মান জেনারেলকে ছেড়ে দিতে হবে, এই আবদার স্তালিন মানেননি। সৈনিকপুত্রের বদলে একজন সৈনিককেই ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন। এটাও স্তালিনের ভুল? নাটকে সেটাই প্রমাণ করার ইচ্ছা। নাটকটি দেখে অনেক দর্শকের কাছেই মনে হবে এ এক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার। প্রপাগান্ডা কখনো আর্ট হয় না। তাহলে বিজ্ঞাপনচিত্র ও সরকারি প্রচারণা কার্যক্রম মহৎ শিল্প হয়ে উঠত। স্তালিন যুগ মানুষ ভুলে যায়নি, ফলে নাটকের অসত্য দিকগুলো ধরা পড়েছে। মানুষ এ–ও ভুলে যায়নি যে কী পরিমাণ অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান হয়েছে। তারা প্রমাণ করেছে, সমাজতন্ত্র একটি নতুন অর্থনীতির জন্ম দিতে পারে। মামুনুর রশীদ নাট্যব্যক্তিত্ব
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত।আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ইমরুল কায়েস এই নির্দেশ দেন।আজ বেলা ১১টার দিকে আদালতে হাজির করা হয় মিজানকে। তাঁর আইনজীবী আদালতে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।দুদকের মামলায় মিজানুরের আগাম জামিনের আবেদন গতকাল সোমবার সরাসরি খারিজ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে হাজির করতে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনারকে নির্দেশ দেন আদালত। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে আজ মিজানুরকে নিম্ন আদালতে হাজির করা হয়।জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের মামলায় গত রোববার হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন মিজান। ওই সম্পদের তদন্তকালে দুদক কর্মকর্তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার কথা নিজে গণমাধ্যমে প্রকাশ করে সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় আসেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। ওই মামলার অপর আসামি মিজানুরের ভাগনে পুলিশের কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মাহমুদুল হাসানও আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক আবেদন করেন। আবেদন দুটি গতকাল শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মিজানুরের ক্ষেত্রে ওই আদেশ দেন। আর মাহমুদুল হাসানকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।গত ২৪ জুন ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় মিজানুর রহমান, তাঁর স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে মাহমুদুল হাসানকে আসামি করা হয়।মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ে গোপন করতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এক সংবাদপাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়। নারী নির্যাতনের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। গত ২৫ জুন তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।আরও পড়ুন:ডিআইজি মিজানকে আদালতে নেওয়া হয়েছে
বিক্ষুব্ধ জনতার চরম সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন হংকংয়ের নেতা ক্যারি ল্যাম। গতকাল সোমবার রাতে ওই অঞ্চলের সংসদ ঘিরে প্রতিবাদের ঝড় তুলে ভাঙচুর চালায় আন্দোলনকারীরা।মূল প্রতিবাদ থেকে সরে এসে কয়েকজন আন্দোলনকারী গতকাল রাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা আইনসভা কাউন্সিল (লেগকো) দখল করে রাখে। তাদের সমর্থন দেয় উপস্থিত হাজারো জনতা। অনুপ্রবেশকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। ভোর হওয়ার আগে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানান হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম।ক্যারি ল্যাম বলেন, এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এতে অনেকেরই আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পুলিশ কমিশনার লো ওয়াই-চাংয়ের পাশে বসে তিনি বলেন, ‘যারা লেগকোতে অনুপ্রবেশ করেছে, আমরা তাদের এ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। হংকংয়ে আইনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই।’গতকাল ছিল হংকংকে ব্রিটেনের কাছ থেকে চীনা শাসনের কাছে হস্তান্তরের ২২ বছর পূর্তি। এ উপলক্ষে গতকাল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়। সাধারণত প্রতিবছর বার্ষিক গণতন্ত্রকামী মিছিলের আয়োজন করে দিনটি উদ্‌যাপন করা হয়। তবে বিতর্কিত অপরাধী প্রত্যর্পণ আইনকে কেন্দ্র করে এ বছর অস্থিরতা বিরাজ করছে হংকংয়ে। নতুন এ আইন অনুযায়ী চীন চাইলে সন্দেহভাজন অপরাধীদের নিজ ভূখণ্ডে নিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারবে।দুপুরের দিকে মূল বিক্ষোভ থেকে সরে আসে অনেক আন্দোলনকারী। সোজা লেগকোর দিকে পা বাড়ায় তারা। বাড়িটি ঘেরাও করে ফেলে। একটু দূর থেকে তাদের কার্যকলাপ দেখছিল শতাধিক জনতা। একপর্যায়ে ভবনের কাচের সদর দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে আন্দোলনকারীরা। ভেতরে ঢুকে তারা হংকংয়ের কেন্দ্রীয় চেম্বারে থাকা প্রতীকের অবমাননা করে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক পতাকা উত্তোলন করে, দেয়ালজুড়ে রং ছিটিয়ে নিজেদের বার্তা লেখে, আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।মধ্যরাতে প্রতিবাদকারীরা ভবনের বাইরে প্লাস্টিকের হেলমেট পরে, ছাতা নাড়িয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় দাঙ্গা পুলিশ এসে তাদের লাঠিপেটা করে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে গণমাধ্যম এবং পুলিশ ছাড়া বাকি সবাই রাস্তা খালি করতে বাধ্য হয়।এ ঘটনার পর ক্যারি ল্যামের সংবাদ সম্মেলনে উচ্চ স্বরে প্রশ্ন ছুড়তে থাকেন সাংবাদিকেরা। তাঁরা বলেন, জনগণের এই প্রতিক্রিয়ার জন্য ল্যামই দায়ী।ল্যাম তা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজকে যা ঘটেছে, এর নিন্দা জানাতে গোটা সম্প্রদায় আমাদের সমর্থন জানাবে আশা করছি। খুব দ্রুত সমাজকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’যে আইন নিয়ে এ আন্দোলন, সেখানে বলা হয়েছে, বেইজিং, ম্যাকাও ও তাইওয়ান থেকে পালিয়ে আসা কোনো অপরাধীকে ফেরত চাইলে তাকে ফেরত দিতে হবে; বিশেষত যেসব অপরাধীর বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণের মতো অভিযোগ রয়েছে। তবে হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ বলছে, এ আইন নিয়ে এত দুর্ভাবনার কিছু নেই। কারণ, এ অপরাধী প্রত্যর্পণ অনুরোধে সাড়া দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি হংকংয়ের বিচার বিভাগই নেবে। এ আইনের ফলে চীনা বিচারব্যবস্থার অধীনে অন্যায্যভাবে আটক ও বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে গরুর প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা দরে। আর গরুর খাবার ভুসি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়। এতে বেশি দাম দিয়ে গবাদিপশুর জন্য খাদ্য কিনতে গিয়ে গরু পালনকারী ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উপজেলার ধানগড়া, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জসহ পাঁচটি বাজারে গত বৃহস্পতিবার খোঁজ নিয়ে এবং দুধের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের আবুদিয়া গ্রামের আবু সাঈদ বলেন, গৃহস্থরা যা–ই উৎপাদন করুক, তার যথাযথ দাম পান না। এখানে ১ কেজি ভুসির দাম ৪২ টাকা। অথচ ১ লিটার দুধের দাম ৩৫ টাকা। শুধু ভুসি না, এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু গরুকে খাওয়াতে হয়। গরুর এসব খাবারের খরচ যোগ করলে তা অনেক বেশি হয়। অথচ সে অনুযায়ী দুধের দাম খুব কম বলে জানান তিনি।কুড়িগাঁতী গ্রামের দুলাল হোসেন বলেন, কয়েক দিন আগেও দুধের দাম ভালোই ছিল, কিন্তু এখন খুবই কম। এতে গরুর দুধ বিক্রি করে তাঁদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। স্থানীয় আরও পাঁচজন একই কথা বলেন।চান্দাইকোনা এলাকার আবদুল হান্নান শেখ বলেন, ঈদের পর থেকে দুধের দাম কমেছে। অবশ্য এতে তাঁদের সুবিধা হয়েছে। কারণ এখন কম দামে বেশি পরিমাণে দুধ খেতে পারছেন তাঁরা।রণতিথা এলাকার শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, বর্তমান বাজারে দই-মিষ্টির চাহিদা কম। তাই গরুর দুধের দামও কম। অবশ্য আম-কাঁঠালের ভরা মৌসুমে দুধের দাম কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ একটু শান্তিতে খেতে পারছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।ধানগড়া বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ সরকার বলেন, গরুর খাবার হিসেবে ভুসির ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এখন অনেকেই গরুকে ভুসি খাওয়ায়। ভালো মানের এক কেজি ভুসি ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ারও আক্ষেপ করে বলেন, গৃহস্থরা তো কিছু করতে গেলেই সেটার দাম কমে। আর কিছু কিনতে গেলে সেটার দাম বাড়ে।
১০ বছরে সপ্তমবারের মতো গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ঠিক যখন বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমেছে শতকরা ৫০ ভাগ, যখন ভারত তাদের ভোক্তাদের জন্য গ্যাসের দাম কমিয়েছে ১০১ রুপি, তখন আমরা অবিশ্বাস্য হারে (গড়ে ৪৬.৭৫ শতাংশ) দাম বাড়াচ্ছি। গ্যাসের বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুৎ, সার, শিল্প, চা–বাগান, ক্যাপটিভ পাওয়ারসহ সব শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতের গ্যাস ব্যবহার, সিএনজি এবং গৃহস্থালি পর্যায় মিলে সব ধরনের গ্যাস ব্যবহারকে অতি উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির আওতায় এনেছে। গড় হিসাবে প্রাথমিক ও মৌলিক জ্বালানি গ্যাসের দাম গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ছে। এক অর্থবছরেই প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা বিদ্যুৎ খাতের গ্যাসের দাম বাড়বে ৪১ শতাংশ, আর ক্যাপটিভ পাওয়ারের গ্যাসে দাম বাড়বে ৪৪ শতাংশ। দেশের কৃষক যেখানে উচ্চ উৎপাদন খরচের বিপরীতে অসহনীয় মূল্য বিপর্যয়ে পড়ছেন, সেখানে সার উৎপাদনের ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে সর্বোচ্চ ৬৪ শতাংশ। এ কারণেই ভারতের কৃষক ধান চাষ করে লাভবান হন, আর আমাদের কৃষক হন ক্ষতিগ্রস্ত। পাশাপাশি শিল্প খাতের গ্যাসে দাম বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। বিদ্যুৎ, কৃষি ও শিল্প—এই তিন খাতের ব্যবহৃত গ্যাসের দাম গড়ে ৪৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। প্রাথমিক ও মৌলিক জ্বালানি বলে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাক, শিল্প উৎপাদন, বিদ্যুৎ মূল্য থেকে শুরু করে জনজীবনের প্রায় সর্বত্র।বিশ্বে কিন্তু গ্যাসের দরপতন হচ্ছে। ভারতও তাদের ভোক্তাদের জন্য গ্যাসের দাম ব্যাপক হারে কমিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়ার নতুন নতুন উৎপাদন এবং ব্যাপকভিত্তিক এলএনজি রপ্তানির প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় ধরনের দরপতন চলছে। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরের তুলনায় বর্তমানে এশিয়ার বাজারসহ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য শতকরা হারে ৫০ ভাগেরও কম। এশিয়ার এলএনজি বেঞ্চমার্ক জাপান-কোরিয়া বাজারের মূল্যসূচক অর্ধেকের বেশি নিচে নেমেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে ভর্তুকিযুক্ত এবং ভর্তুকিমুক্ত উভয় ধরনের গ্যাসের দাম কমানো হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক দরপতনের ঠিক বিপরীতে চলছে বাংলাদেশ। নতুন অর্থবছরের শুরুতেই দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান জ্বালানি গ্যাসের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। এর মাধ্যমে সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়বে, তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন খরচ বাড়বে, পরিবহন ব্যয় বাড়বে, গৃহস্থালির রান্নাও খরুচে হবে। আর আন্তর্জাতিক বাজারের দরপতনের সুবিধা হরণ করে ভোক্তা অধিকারকেও এতে খর্ব করা হলো।যখন বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমেছে শতকরা ৫০ ভাগ, যখন ভারত তাদের ভোক্তাদের জন্য গ্যাসের দাম কমিয়েছে ১০১ রুপি, তখন আমরা অবিশ্বাস্য হারে (গড়ে ৪৬.৭৫ শতাংশ) দাম বাড়াচ্ছি।দাম বাড়ানোর যুক্তি হলো, উচ্চ দামে যে এলপিজি বা তরল গ্যাস আমদানি করা হয়, তাতে ভর্তুকির ভার লাঘব করা হবে। এটা অযৌক্তিক এ কারণে যে বিশ্ববাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বিগত ছয় মাসে বাড়েনি, বরং অর্ধেকে নেমে এসেছে। সুতরাং যৌক্তিক হলো আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেও গ্যাসের দামও কমাতে হবে। অন্তত এলএনজিভিত্তিক সরবরাহের যে খাতগুলো আছে, সেখানে দাম কমানো হবে। বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে যেখানে এলএনজি ব্যবহৃত হয়, সেখানে তো গ্যাসের দাম কমার কথা। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে সার উৎপাদনের গ্যাসেই সর্বোচ্চ ৬৪ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে।এটা অগ্রহণযোগ্য এ জন্য যে গ্যাস খাতের দুর্নীতিযুক্ত ব্যবস্থাপনা ঠিক না করে, নতুন উৎপাদনে না গিয়ে, সরবরাহ ও বিতরণব্যবস্থা (পাইপ লাইন) ঠিক না করে, গ্যাস চুরির সমস্যা সমাধান না করে শুধু দাম বাড়িয়ে এই খাত টেকসই করা যাবে না। ২০১৫ ও ২০১৭ সালেও বিভিন্ন স্তরে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল, তারপরও আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানিমূল্য কমার পরেও চুরি, সিস্টেম লস, ভর্তুকি কমছে না। মূলত, দুর্নীতিপরায়ণতা, ব্যবস্থাপনায় অদূরদর্শিতা, বিতরণে নৈরাজ্য, গ্যাস চুরি ও অবৈধ সংযোগ, সরবরাহ লাইন থেকেই অবৈধ বিতরণ, ১২ শতাংশ সিস্টেম লস, অন্যায্য মিটারিং, এলএনজি আমদানির খরচ বাড়িয়ে দেখানো, এলএনজি ও গ্যাস পাইপ লাইনের প্রকল্পে ধীরতা। এসবের দায় কেন জনগণ নেবে? এমনকি মীমাংসিত সামুদ্রিক ব্লক ও স্থলভাগে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও নতুন উত্তোলন চুক্তিতে ব্যর্থতার কারণেই গ্যাস খাতে ভর্তুকি টানতে হচ্ছে।গ্যাস উন্নয়ন ও গ্যাস নিরাপত্তা তহবিলে পাঁচ হাজার কোটি টাকা করে জমিয়ে ভর্তুকির চাহিদা জারি রেখেছে, কিন্তু এই তহবিল বহারে স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নেই। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) দুর্নীতির কারণে গ্যাস উন্নয়ন ও গ্যাস নিরাপত্তা তহবিল বিলুপ্ত করার প্রস্তাব দিয়ে ব্যবস্থাপনা নৈরাজ্য দূর করার সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছে। যেখানে বিতরণ লাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে নিয়মিত, সেখানে রান্নার গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এলপিজির প্রাপ্তি ও মূল্যকে যৌক্তিক করা হয়নি এখনো। যেখানে কৃষি উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের সরবরাহ বৃদ্ধি করা জরুরি, যেখানে বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম দিনে দিনে কমছে, সেখানে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান না করে বাজারের সঙ্গে সম্পর্কহীন এমন অতি উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।অর্থবছরের শুরুতেই গ্যাসের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি কি তাহলে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ঘাটতি বাজেটের ঘাটতি কমানোর চেষ্টা?এমনিতেই বাজেট ঘোষণার পর ভ্যাটের একটা চাপ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, মৌলিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের দাম গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়লেও প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে কীভাবে? এক অর্থবছরেই বিদ্যুৎ, কৃষি ও শিল্পের ব্যবহৃত গ্যাসের দাম গড়ে ৪৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে কীভাবে প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশে আটকে রাখার চ্যালেঞ্জ উতরানো যাবে? জ্বালানির এই যে বিশাল ধাপের মূল্যবৃদ্ধি, তা কি দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? এক অর্থবছরেই জ্বালানি কৃষি ও শিল্পের ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির হার যদি বাজেটের প্রাক্কলিত অন্য সংখ্যাগুলোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ থেকে যায় অথবা উৎপাদন অর্থনীতির গাণিতিক হিসাবে অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ে থেকে যায়, আমরা কি ধরে নিতে পারি না যে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ের হিসাবে বড়সড় গরমিল আছে! প্রাথমিক ও মৌলিক জ্বালানি গ্যাসের দাম গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়িয়ে কীভাবে জনজীবন ও মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল রাখা হবে?বিশ্বের দুর্নীতিমুক্ত দেশগুলোর আদলে যেকোনো প্রাথমিক জ্বালানির দাম নির্ধারণের স্থায়ী গাণিতিক মডেল দাঁড়া করাতে হবে। তবেই তা টেকসই ও বোধগম্য হবে। এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে দেশীয় চাহিদা, আন্তর্জাতিক দর, বার্ষিক রাজস্ব প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন, মূল্যস্ফীতি, বিকল্প সবুজ জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহদান কিংবা সহযোগী অন্য জ্বালানির দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার ব্যবস্থা। যেখানে দেশে পরবর্তী অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ এবং রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ, সেখানে বিদ্যুৎ, কৃষি ও শিল্পের প্রাথমিক জ্বালানি গ্যাসের দাম গড়ে ৪৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে কোন যুক্তিতে, কোন সমীকরণে? এই সমীকরণ না মিললে এটাই প্রতীয়মান হয় যে সরকার তহবিল–ঘাটতি মেটাতে ব্যবসা, উৎপাদন থেকে শুরু করে জনগণের পকেটেও হাত দিতে চাইছে। অর্থবছরের শুরুতেই গ্যাসের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি কি তাহলে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ঘাটতি বাজেটের ঘাটতি কমানোর চেষ্টা? ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব: ইনফ্রাস্ট্রাকচার রাইটার ও সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাকটিভিস্ট। প্রকৌশলী, ইইই, বুয়েট। সিনিয়র সফটওয়্যার সলিউশন আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন নেদারল্যান্ডস। faiz.taiyeb@gmail.com
বার্মিংহামে আজ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচে লড়াইয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রেরণা বীর মুক্তিযোদ্ধারাদেশের অনেক ক্রিকেট সমর্থকের চোখেই তিনি যোদ্ধা। ক্রিকেটযোদ্ধা। পায়ে সাত-সাতটা অস্ত্রোপচারের পরও দিব্যি খেলে যাচ্ছেন দেশের জন্য। যোদ্ধা নয়তো আর কী! আজ মাশরাফি বিন মুর্তজার সামনে ক্রিকেট মাঠের আরেকটি ‘যুদ্ধ’। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ জয়ের যুদ্ধ। হারলে সমাধি ঘটবে সেমিফাইনাল-স্বপ্নের। এমন ম্যাচে লড়াইয়ের প্রেরণা নিচ্ছেন মাশরাফি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে।ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফকে এমন কথাই বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এজবাস্টনে কাল এ সংবাদমাধ্যমকে মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা সব সময়ই প্রেরণাদায়ী। সব সময় তাই থাকবে...তাঁদের জায়গাটা সব সময়ই বিশেষ কিছু। দল হিসেবে পাওয়া সমর্থন থেকেও প্রেরণা পাই।’সংবাদমাধ্যমটির সঙ্গে আলাপচারিতায় ভারতের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়ক কপিল দেবকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন মাশরাফি। সংবাদমাধ্যমটিতে গত মাসে লেখা এক কলামে মাশরাফিকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন কপিল। কিংবদন্তি এ অলরাউন্ডার লিখেছিলেন, ‘মাশরাফি যেভাবে খেলে, তাতে সবার গর্ব অনুভব হওয়া উচিত। তার হাঁটুতে অনেক সমস্যা...কিন্তু তারপরও খেলা ধরে রেখে ওয়ানডে দলকে একসূত্রে গেঁথেছে। আমি মাশরাফিকে শুধু সম্মানই দেখাতে পারি।’সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় কপিলের সেই কলাম প্রসঙ্গে ভারতের সাবেক ক্রিকেটারটিকে ধন্যবাদ জানান মাশরাফি, ‘নাম মনে রাখাই বড় কথা। আমি অবশ্যই অনেক খুশি।’ ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সাতে রয়েছে বাংলাদেশ। হাতে রয়েছে আর দুটি ম্যাচ। সেমিফাইনালে ওঠার আশা এখনো জিইয়ে রেখেছে বাংলাদেশ।গ্রুপ পর্বের এ পথ পর্যন্ত এসে পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশ দলের অবস্থানে মাশরাফি কি বিস্মিত? এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘মোটেই না। আমরা সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে টিকে আছি। ক্রিকেট বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে অন্য দলগুলো কোন অবস্থানে আছে, তার দিকে তাকিয়ে থাকার কোনো অর্থ নেই। নিজেদের খেলায় মনোযোগী হওয়া উচিত। এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
সড়কপথে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ২৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার তেমন কোনো ঝামেলা ছাড়াই পার হওয়া যায়। এরপরই শুরু হয় ‘যন্ত্রণার যাত্রা’। পঞ্চবটী থেকে মুন্সিগঞ্জের চর সৈয়দপুর (মুক্তারপুর সেতু) পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার অংশ যেতে দুর্ভোগ চরমে ওঠে। সরু এই সড়কের কোথাও ভাঙা, কোথাও গর্ত, কোথাও ইট বিছানো। এই পথটুকু পেরোতে কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেতুর পর বাকি সাড়ে তিন কিলোমিটার পথটুকু অবশ্য মসৃণ। মুন্সিগঞ্জ জেলা সদর এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাসিন্দাদের সড়কপথে ঢাকায় আসার প্রধান পথ এটি। জেলার অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্যিক স্থাপনা সদরে। পদ্মা সেতু চালুর পর এই সড়কটি বিকল্প সড়ক হিসেবেও ব্যবহারের পরিকল্পনা আছে। মুন্সিগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) এক কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তান আমলে এই সড়কটির জন্য ৮০ থেকে ১২০ ফুট পর্যন্ত জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। দখল হতে হতে সড়কটির প্রশস্ততা কমে ২০ ফুটে এসে ঠেকেছে। জায়গা দখল করে একের পর এক গড়ে উঠেছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তৈরি পোশাক কারখানা, বিপণিবিতান, বাজার বানিয়ে ধীরে ধীরে সড়কের জায়গা দখল করা হয়েছে। সম্প্রতি এই সড়কে সরেজমিনে দেখা গেছে, সাড়ে সাত কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিটার সড়কে ইট বিছানো। সেখানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জায়গায় জায়গায় পানি জমে যাচ্ছে। সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মালবাহী বড় ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। কোনো পরিবহন বিকল হলে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় আস্তে আস্তে সড়কের পাশে অসংখ্য দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এসব দোকান ভেঙে সড়ক চওড়া করা ছাড়া উপায় নেই। ভোগান্তির শুরু চর সৈয়দপুর মোড় থেকে। গোগনগর, কাশিমপুর হাটখোলা, মধ্যপাড়া, উত্তর কাশিমপুর দেওয়ানবাড়ি, ভোলাইল, এনায়েতনগর এবং পঞ্চবটীর বিসিক এলাকায় তীব্র যানজটে পড়তে হচ্ছে। এসব এলাকায় মূল সড়ক ঘেঁষেই নির্মিত হয়েছে অসংখ্য দোকানপাট। গাড়ির চাপ বাড়লে হাঁটারও উপায় থাকে না। চর সৈয়দপুর ও বিসিক এলাকায় ইট বিছানো সড়কে ভোগান্তির মাত্রা কয়েক গুণ বেশি। ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জ রুটে এখন দিঘীরপাড় নামে একটি কোম্পানির বাস চলাচল করে। এর ব্যবস্থাপক শামসুদ্দীন হালদার প্রথম আলোকে বলেন, চার বছর আগেও এ পথে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনসহ (বিআরটিসি) চারটি কোম্পানির বাস চলাচল করত। সে সময় তাঁদের কোম্পানির ৫৫টি বাস ছিল। সড়কের খারাপ অবস্থার কারণে যাত্রীরা বাসে চলাচল প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানের বাস বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের কোম্পানির বাস ২৮টিতে নেমে এসেছে। একটি বাসের চালক আবদুর রহমান বলেন, এই সরু সড়কে বাস চালানো কঠিন। বিপরীত দিক থেকে একটি ছোট যানবাহন এলেই গতি কমাতে হয়। দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে না। বিকেলে পোশাক কারখানা বা অন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ছুটি হলে সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। স্থানীয় সাংসদ (মুন্সিগঞ্জ-৩) মৃণাল কান্তি দাস প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চবটী থেকে চর সৈয়দপুর পর্যন্ত উড়ালসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। উড়ালসড়কের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কবে নাগাদ এই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখবে, এ বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক দশক ধরেই তাঁরা জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে এই সড়ক সংস্কারে অনেকবার আশ্বাস পেয়েছেন। তবে বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি। মুক্তারপুর সেতুর ব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ বলেন, প্রতিদিন আট থেকে সাড়ে আট হাজার যানবাহন সেতু পার হয়ে ঢাকাসহ অন্য অঞ্চলগুলোকে যাতায়াত করে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন এই সংখ্যা দশ থেকে সাড়ে দশ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সড়ক সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে (সদ্য বদলি হওয়া) জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তিনি এই সড়কের বিড়ম্বনার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। গত মাসে সেতু বিভাগ থেকে এই সড়ক সংস্কারের একটি ইতিবাচক খবর পেয়েছেন। তবে সড়কটি যত দিন না চওড়া করা হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জবাসীর এই দুঃখ থাকবে।’ পরে সেতু বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তারপুর সেতুর দক্ষিণ অংশ দিয়ে সদরের সিপাহিপাড়া, টঙ্গিবাড়ী ও লৌহজং উপজেলা হয়ে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক রয়েছে। তাই মুক্তারপুর সেতুর উত্তর দিকে এই সাড়ে সাত কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এই সড়কটির দুই পাশের জায়গা সংকুলান করা সম্ভব হলে চার লেনে উন্নীত করা হবে। আর না হলে সড়কের ওপর দিয়ে দুই লেনের উড়ালসড়ক করা হবে।
বন্ধ হয়ে গেছে ১৩০ বছরের পুরোনো খুলনার ঐতিহ্যবাহী ইন্দ্রমোহন সুইটস। প্রতিষ্ঠানটির পুরোনো ভবনটি ভেঙে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করবে মালিকপক্ষ। এ জন্য গত রোববার পুরোনো ঠিকানা গুটিয়ে নিয়েছেন ইন্দ্রমোহনের বংশধররা।এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই মিষ্টির দোকানের যখন গোড়াপত্তন হয়েছিল, দেশ তখন ব্রিটিশদের অধীনে। ১৮৯০ সালের কিছু আগে বা পরে ইন্দ্রমোহন দে ব্যবসাটি শুরু করেন। হেলাতলা রোডের ওই বাড়ির একটি অংশ ভাড়া নিয়েই শুরু করেন ব্যবসা। ইন্দ্রমোহনে মিলত পাঁচ পদের সুস্বাদু মিষ্টি। রসগোল্লা, পানতুয়া, সন্দেশ, চমচম ও দানাদার। এই দোকানে শুরু থেকে কিছু প্রথা চালু ছিল। সেখানে গরম, সুস্বাদু ও নির্ভেজাল মিষ্টি পাওয়া গেলেও খেতে হতো হাত দিয়েই। চাইলেও মিলত না চামচ। পরিবেশনেও ছিল ভিন্নতা। স্টিলের প্লেটের ওপর কলাপাতা বিছিয়ে দেওয়া হতো মিষ্টি। আর সন্দেশ শুধু কলাপাতায়। কেজিতে নয়, মিষ্টি বিক্রি হতো সংখ্যা হিসেবে। প্রতিদিন যে মিষ্টি তৈরি হতো, ওই দিনই তা শেষ হয়ে যেত। বাসি মিষ্টির কোনো কারবার সেখানে ছিল না।ব্রিটিশ আমল থেকে উপমহাদেশের অনেক নামী ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিবিদ এই দোকানের মিষ্টির স্বাদ নিয়েছেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার খুলনা সফরে এসেও ইন্দ্রমোহন সুইটসে যান।গতকাল সোমবার বিকেলে হেলাতলা রোডের ১০ নম্বর বাড়ির নিচতলায় থাকা ওই দোকানে গিয়ে দেখা গেল, পুরোনোর বাড়িটার সরু সদর দরজার ওপর ছোট চারকোনা নীল রঙের টিনের পাতের ওপর সাদা কালিতে ইন্দ্রমোহন সুইটস লেখাটা এখনো আছে। তবে ছোট্ট দরজার কপাট আর নেই। জানালাগুলোতে নেই কোনো কপাট। দেয়ালে এখনো সাঁটানো কিছু দিনপঞ্জি আর ছবি। দোকানের মধ্যে রাখা আছে কয়েকটা সাইকেল। আশপাশের দুজন পান বিক্রেতা সেখানে মেঝেতে পাটি পেতে দুপুরের খাবার সারছেন। আশপাশের দোকানিদের কাছে ইন্দ্রমোহন কবে বন্ধ হলো, আশপাশে আবার দোকানটা গেছে কি না, এসব প্রশ্ন করছেন নানাজন।দোকানের পাশে একটি খুঁটিতে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি লেখা একটা প্যানা ঝোলানো। ওই বিজ্ঞপ্তির ভাষ্য হচ্ছে, দোকানঘরের জায়গার ওপর বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে পুরোনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করবেন মালিক সেলিনা হক। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশমতে ভবন নির্মাণের পর তাঁদের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নিচতলায় দোকানঘর বরাদ্দ প্রদানের আদেশ আছে। সে জন্য ৩০ জুন খালি অবস্থায় মালিককে দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।গতকাল বিকেলেও মিষ্টির স্বাদ নিতে সেখানে অনেককে আসতে দেখা যায়, যাঁরা জানতেন না ইন্দ্রমোহন বন্ধ হয়ে গেছে। সে রকমই একজন খুলনা বিটিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও রাজস্ব) সৈয়দ আবুল কালাম। নগরের টুটপাড়া এলাকার ওই বাসিন্দা বলেন, ‘যখনই বাজারে আসি, তখনই এখানে একবার ঢুঁ দিতে যাই। এখানকার মিষ্টি একবার যিনি খেয়েছেন, তাঁর পক্ষে স্বাদ ভোলা কঠিন। বিশেষভাবে তৈরি পানতুয়া অনেক নরম। সুস্বাদু এ পানতুয়া মুখে দিলেই গলে যাবে। অভ্যাসবশত আজও এলাম কিন্তু দেখছি দোকান তো বন্ধ হয়ে গেছে। আধুনিকতার কাছে ঐতিহ্য আসলে টিকছে না।’খুলনার দৌলতপুরের বাসিন্দা সমৃদ্ধি স্বস্তি বলছিলেন, ‘এই মিষ্টির সঙ্গে এই শহর ও অঞ্চলের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের সম্পর্ক রয়েছে। উন্নয়নের নামে আমাদের অনেক কিছুই আর আমাদের থাকবে না। অনেক কিছুই হারিয়ে যাবে উন্নয়নের ইট-পাথরের নিচে।’ইন্দ্রমোহনের ছেলে-নাতি প্রতিষ্ঠার সময়কার ঐতিহ্য ধরে ব্যবসা করছিলেন। ইন্দ্রমোহনের ছেলে বেনীমাধব দে জানান, প্রথমে গোলের ঘর, এরপর টিনের ঘর এবং সব শেষে দোতলা দালানে তাঁরা ১৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন। এরপর ছয় মালিক বদল হয়েছে। বর্তমান বাড়িওয়ালা তাঁদের এখান থেকে উচ্ছেদ করতে মামলা করেছিলেন। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যেতে চাননি তাঁরা। তাই মামলা লড়েছেন। ১৮ বছর মামলা লড়ে অবশেষে হেরে যেতে হলো। আদালতের আদেশেই গত রোববার তাঁরা ভবন খালি করে দিয়েছেন।ইন্দ্রমোহন সুইটসের কর্মচারী কমল চন্দ্র সরকার জানান, তিনি ৪০ বছর ধরে এখানে কাজ করছেন। এখানকার বেশির ভাগ কর্মচারীই ৪০-৫০ বছর ধরে এখানে আছেন। সবাই প্রতিষ্ঠানকে নিজের মনে করেন। বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা অনেকটা দিশেহারা। তাঁরা চেষ্টা করছেন আশপাশে কোথাও একটা দোকান নিতে। আর মালিকপক্ষ নতুন ভবন নির্মাণ করে তাঁদের একটি দোকান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কবে কাজ শেষ হবে আর দোকান পাওয়া যাবে, সবকিছু অনিশ্চিত।
২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছিল ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বাংলাদেশ সরকার সেই দাবি নাকচ করে দিয়েছিল। সেই সময় আইএস এক বিশাল জায়গাজুড়ে একটি কথিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে সারা বিশ্বে চালিয়েছিল সন্ত্রাসী তৎপরতা। সেই রাষ্ট্রের পতন হয়েছে, কিন্তু আইএসের ভবিষ্যৎ কী, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কতটা হুমকি আইএস—এ নিয়ে লিখেছেন আলী রীয়াজইসলামিক স্টেটের (আইএস) শেষ অবস্থান সিরিয়া ও ইরাকের সীমান্তবর্তী ছোট্ট গ্রাম বাগুজের পতনের তিন মাস পার হয়ে গেলেও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও নীতিনির্ধারকদের কাছে এই প্রশ্নের কোনো সহজ ও সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই যে আইএসের নেতৃত্ব ও অনুসারীরা ভবিষ্যতে কী করবে। এই প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে অংশত জড়িত আছে আগামী দিনে বৈশ্বিকভাবে সন্ত্রাসী তৎপরতার রূপ কী দাঁড়াবে এবং তা মোকাবিলার উপায় কী। বৈশ্বিক তৎপরতার অংশ হিসেবে আইএসের কৌশলের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া কতটা গুরুত্ব পাবে, সেটা এই অঞ্চলের নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকদের মনোযোগ দাবি করে।এ কথা ঠিক যে আবু বকর আল-বাগদাদির নেতৃত্বাধীন আইএস বলে পরিচিত সংগঠনটিই একমাত্র বৈশ্বিক সন্ত্রাসী সংগঠন নয়, কিন্তু একসময় প্রায় ব্রিটেনের আকারের সমান এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত যে ভয়াবহ শক্তি, হত্যা ও বর্বরতায় যারা আর সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল, কার্যত একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল এবং যাদের সামরিকভাবে পরাজিত করতেই চার বছরের বেশি সময় লেগেছে, সেই সংগঠনের নেতৃত্ব ও অনুসারীদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম যেকোনো বিবেচনাতেই গুরুত্বপূর্ণ। লোকবলের দিক থেকে এত বড় সন্ত্রাসী সংগঠন আগে কখনোই গড়ে ওঠেনি; অনুমান করা হয় যে ২০১৪ সালেই আইএসের যোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার, পরের বছরগুলোতে তা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; ২০১৮ সালে তাদের কথিত রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে গোয়েন্দা তৎপরতা, অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা, কর আদায় ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে জড়িত ছিল দুই লাখ মানুষ। এর বাইরেও ছিল এর প্রচার-প্রোপাগান্ডার সঙ্গে জড়িত কয়েক শ মানুষ, যারা ওই অঞ্চলের বাইরে থেকেই কাজ করেছে।সারা পৃথিবী থেকে যোদ্ধা হিসেবে আইএস কতজনকে আকর্ষণ করেছিল, তার আনুমানিক হিসাব পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তা গবেষক ও গণমাধ্যমগুলোর কাছে; কমপক্ষে ৮৫টি দেশের নাগরিকদের উপস্থিতি চিহ্নিত করা গেছে। আইএসের বিভিন্ন ঘাঁটি দখলের পরে সংগঠনটির যেসব দলিলপত্র উদ্ধার হয়েছে, তাতেও এই তথ্যের পক্ষে প্রমাণ আছে। এই হিসাবে মোট বিদেশি যোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব র‍্যাডিক্যালিজমের হিসাব অনুযায়ী, এই বিদেশি যোদ্ধাদের ১৩ শতাংশ ছিল নারী। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজমের করা ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে আইএসের অন্তত তিনটি নারী ব্যাটালিয়ন ছিল; এর একটি ছিল বিদেশি, প্রধানত ইউরোপ থেকে আসা নারীদের নিয়ে আল খানসা ব্যাটালিয়ন। লন্ডনের কিংস কলেজের এক গবেষণায় বলা হয়েছিল যে যোদ্ধা হিসেবে আইএসের হয়ে লড়াই করতে যোগ দিয়েছিল যারা, তাদের ১২ শতাংশকে কিশোর বা মাইনর বলে চিহ্নিত করা যায়। কেন এসব মানুষ বিভিন্ন দেশ থেকে এত ব্যাপক সংখ্যায় আইএসের কথিত ‘ইসলামি রাষ্ট্রে’ গিয়ে হাজির হয়েছিল? তাদের প্রণোদনা কী ছিল? সাবেক যোদ্ধা এবং যারা যুদ্ধে যোগ না দিয়েও ইসলামিক স্টেটের আকর্ষণে গিয়ে সেখানে বাস করেছে, তাদের সাক্ষাৎকারে দেখা যায় যে এদের এক অংশের প্রণোদনা হচ্ছে ধর্মীয়—তারা মনে করে তারা ‘হিজরত’ করেছে। ইসলামিক স্টেটের সূচনায় আবু বকর আল-বাগদাদি সারা বিশ্বের মুসলিমদের প্রতি যে আহ্বান করেছিলেন, তাতে সাড়া দিয়েই অনেকে সেখানে যায়। কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ নয়।হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক ভেরা মিরোনোভা দেখান যে প্রধানত তিনটি কারণে মানুষ আইএসে যোগ দিয়েছিল। সেগুলো হচ্ছে অর্থ, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ, যার মধ্যে ছিল কুর্দিবিরোধিতা ও ইরাকে সুন্নিদের প্রতি সরকারের বিরূপ আচরণ এবং নিজ নিজ দেশের সরকারের ব্যাপারে ক্ষোভ। মিরোনোভা লিখেছেন যে বিদেশি যোদ্ধাদের নিজ নিজ দেশের ব্যাপারে ক্ষোভের দুটি দিক ছিল—আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি এবং এসব নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদের পথ না থাকা (হু আর দ্য আইএস পিপল? পারস্পেকটিভ অন টেররিজম, ফেব্রুয়ারি ২০১৯)। অর্থের জন্য যারা যোগ দিয়েছিল, তাদের বড় অংশই এসেছিল সিরিয়া ও ইরাক থেকে। এফ্রেইম বেনমেলেচ ও এস্তেবান ক্লোর এক গবেষণা নিবন্ধে বলেছেন, বিদেশিদের ক্ষেত্রে দারিদ্র্যের কারণে আইএসে যোগ দেওয়ার কোনো প্রমাণ তাঁরা পাননি (হোয়াট এক্সপ্লেইন্স দ্য ফ্লো অব ফরেন ফাইটার্স টু আইএস? টেররিজম অ্যান্ড পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স, অক্টোবর ২০১৮)। ফলে যারা কেবল অর্থের জন্য যোগ দিয়েছে, তাদের বাদ দিলে হিজরতের যুক্তিতে বা যোদ্ধা হিসেবে যারা গেছে, তারা আদর্শিকভাবেই আইএসের অনুসারী।২০১৮ সালের মাঝামাঝি থেকে ইসলামিক রাষ্ট্র বলে কথিত ব্যবস্থার পতন অত্যাসন্ন হয়ে পড়লে বিদেশি যোদ্ধাদের অনেকেই স্বদেশে বা অন্যত্র চলে যায়। স্থানীয় যোদ্ধাদের অনেকে ফেব্রুয়ারি থেকে আত্মসমর্পণ করতে থাকে। আইএস অধিকৃত এলাকাগুলো মুক্ত করার পরে অনেক যোদ্ধাই স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মিশে যায়—২৬ মার্চ ২০১৯, ইউএসএ টুডে সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে এই সংখ্যা ৩০ হাজার বলে দাবি করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে স্থানীয় উপজাতিগুলোর সঙ্গে এসডিএফ এ ব্যবস্থা করে যে ওই সব যোদ্ধার পুনর্বাসনের দায়িত্ব উপজাতিদের। সাংবাদিক রবিন রাইট তাঁর এক প্রতিবেদনে রাকার কাছে আল-কারামহতে এ ধরনের একটি পুনর্বাসন ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন (দ্য নিউইয়র্কার, ১৬ এপ্রিল ২০১৯)। এ প্রচেষ্টার সবটাই ইতিবাচক, এমন বলা যাবে না। এদের ভেতরে অনেকেই আছে যারা এখনো মানসিকভাবে ইসলামিক স্টেটের আদর্শের সমর্থক।বিদেশি যোদ্ধাদের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকেরাও ছিল। এই সংখ্যা ২০১৪-১৫ সালে ছিল কমপক্ষে ৪০ জন, পরে আরও অনেকে যোগ দিয়েছে। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় নিহত হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে বাগুজের পতনের পরে অন্তত ৯ জন বাংলাদেশি সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বা আটক হয়েছে, এর মধ্যে আছেন সাইফুল্লাহ ওজাকি, জুনায়েদ হাসান ও তাহমিদ শফি। ওজাকি বাংলাদেশে আইএসের প্রধান সদস্য সংগ্রহকারী ছিলেন।আইএসের কট্টর সমর্থক ও যোদ্ধা—যাদের মধ্যে বিদেশিরাও আছে—তারাই শেষ পর্যন্ত বাগুজে লড়াই চালিয়েছে। এসডিএফ ইতিমধ্যে কমপক্ষে এক হাজার বিদেশি যোদ্ধাকে চিহ্নিত করে কারাগারে রেখেছে। বাগুজে শেষ পর্যন্ত ছিল এমন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ এখন আছে এসডিএফ ও মার্কিনিদের তৈরি ক্যাম্পে। রোজাভায় অবস্থিত এ ক্যাম্পের নাম আল-হল ক্যাম্প। এগুলোকে ক্যাম্প না বলে বন্দিশিবির বলাই বোধ হয় যথাযথ। শিবিরে থাকা এই আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ১১-১২ হাজার নারী ও কমপক্ষে ৩ হাজার শিশু। এদের অধিকাংশের পরিবারের পুরুষ সদস্য যুদ্ধে নিহত হয়েছে। নারীদের অনেকে গেছে বিভিন্ন দেশ থেকে। এদের অনেকে সক্রিয় যোদ্ধা ছিল বলেও অনুমান করা হয়।এদের ভবিষ্যৎ কী, কেউ জানে না। কেননা, কোনো দেশই তাদের নাগরিকদের, বিশেষ করে যারা যোদ্ধা হিসেবে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হচ্ছে না। আটক এসব ব্যক্তির অনেককে ইরাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে, কিন্তু ওই সব বিচার কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যেই সংক্ষিপ্ত বিচারে অন্তত এক শ জনকে মৃত্যুদণ্ড বা দীর্ঘ কারাবাস দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ১৫ জন ফরাসি নাগরিককে ইরাকের আদালত মৃত্যুদণ্ড দিলেও ফ্রান্স এ বিষয়ে ইরাকি আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা মিশেল ব্যাশেলেট সম্প্রতি বলেছেন যে ক্যাম্পে থাকা ও আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে বিচারের মুখোমুখি করা দরকার অথবা তাদের ছেড়ে দেওয়া দরকার। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে এসব আটক ব্যক্তিকে কারাগারে যে ধরনের ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে, তাতে তাদের মধ্যে আরও বেশি করে ক্ষোভ ও সহিংস হওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে কি না। স্মর্তব্য যে আইএসের উত্থানের পেছনে কারাগারের ভেতরে র‍্যাডিক্যালাইজেশনের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৪ সালে আবু বকর আল–বাগদাদি ইরাকের আল-বুকা কারাগারে ৯ মাস আটক থাকার সময়েই আইএসের ভিত্তি গড়ে ওঠে। ইতিমধ্যে এসব ক্যাম্পে আইএস নতুন করে পুনর্গঠিত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে এবং এই চেষ্টায় নারীরাই অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে।আইএসের যেসব যোদ্ধা ও সমর্থক ইতিমধ্যেই নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছে, যারা এখন কারাগারে বা ক্যাম্পে আছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে কোনো ধরনের উদ্যোগের অভাবে যেসব ব্যক্তি সুবিচার পাচ্ছে না, যারা ভবিষ্যতে নিজ দেশ ফিরতে না পেরে অন্যত্র আশ্রয় নেবে বলে আশঙ্কা, তারা ভবিষ্যতে কী ধরনের ভূমিকা নেবে, সেটি আইএস এবং বৈশ্বিক সন্ত্রাসী তৎপরতার পথরেখা নির্ধারণ করে দেবে। কিন্তু কেবল ব্যক্তির ভূমিকা নয়, সাংগঠনিকভাবে আইএসের পদক্ষেপও আগামী দিনের ইঙ্গিত দেয়। বাগুজের পতন সত্ত্বেও আবু বকর আল–বাগদাদি সরে গেছেন অনুমান করা হচ্ছে, তিনি ইরাকের কোথাও আছেন। এপ্রিলের ২৯ তারিখে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে বাগদাদি কেবল তাঁর অস্তিত্বের, তাঁর নেতৃত্বের জানান দেননি, আইএসের সদস্য ও সমর্থকদের মনোবলও জোরদার করেছেন। এই বছরের ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক ড্যানিয়েল কোটস গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যে সমন্বিত রিপোর্ট পেশ করেন, তাতে বলা হয়েছে যে আইএস ইতিমধ্যে ৮টি শাখা এবং কমপক্ষে ১২টি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের সমর্থকেরা সংগঠিত হয়ে নতুন করে গেরিলা যুদ্ধের চেষ্টা শুরু করেছে।দক্ষিণ এশিয়ায় আইএসের মনোযোগ দেওয়ার ঘটনা ইতিমধ্যে লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বাগদাদির ২৯ এপ্রিলের ভিডিও বার্তায় শ্রীলঙ্কায় ২১ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলার উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও অনেকেই এ হামলা আইএসের চালানো কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া একসময় গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে খোরাশান প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত বলেই বলা হতো, কিন্তু ১০ ও ১৫ মে আইএস ভারত ও পাকিস্তানকে আলাদা দুটি প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং ইতিমধ্যেই পাকিস্তানে ও ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বেশ কিছু ছোট আকারের হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। তবে এই অঞ্চলে আইএসের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে আফগানিস্তানে। সিরিয়া ও ইরাক থেকে সরে আসা অনেক যোদ্ধাই এখন আফগানিস্তানে উপস্থিত হয়েছে এবং তারা ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। তদুপরি নানগার, নুরিস্তান ও কুনার প্রদেশে আইএসের উপস্থিতির কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।এসব ঘটনাপ্রবাহ এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আইএসের প্রতিষ্ঠিত কথিত ভৌগোলিকভাবে খিলাফতের পতন হয়েছে, কিন্তু আদর্শ হিসেবে আইএসের আদর্শের পরাজয় হতে এখনো অনেক সময় বাকি আছে।আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর
ধোপাদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি নড়াইলের লোহাগড়া পৌর এলাকার চোরখালী গ্রামে অবস্থিত। এ বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। এটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর গত এপ্রিলের শুরু থেকে গাছতলায় চলছে পাঠদান। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩২ সালে ২৬ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন এলাকাবাসী। ১৯৯৬ সালে সরকারি বরাদ্দে বিদ্যালয়ে চার কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন তৈরি হয়। এ ভবনেই চলত পাঠদান ও অফিসের কার্যক্রম। বর্তমানে চোরখালী ও গোফাডাঙ্গা গ্রামের ছেলেমেয়েরা এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বর্তমানে শিক্ষার্থীসংখ্যা ১৪১। এর মধ্যে ছাত্র ৭৪ ও ছাত্রী ৬৭ জন। কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে ছিল উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে মাসিক সমন্বয় সভা। ওই সভায় এ বিদ্যালয় ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে ওই ভবনে ক্লাস নিতে নিষেধ করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। সেই থেকে ভবন ছেড়ে দিয়ে গাছতলায় চলছে পাঠদান। তিন বছর আগে গ্রামবাসীর উদ্যোগে করা হয়েছিল একটি টিনশেড ছোট ঘর। সেখানে হয় পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটি কক্ষ একটু ভালো মনে হয়। সেখানে নেওয়া হয় প্রাক্‌-প্রাথমিক (শিশু) শ্রেণির ক্লাস। অন্য প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয় গাছতলায়। ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই এখানো চলে অফিসের কার্যক্রম। গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয় চত্বরে বড় একটি রেইনট্রিগাছ। সে গাছের নিচে হচ্ছে ক্লাস। একই জায়াগায় গাদাগাদি করে চারটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বেঞ্চে বসেছে। নিচে নরম মাটি। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। খোলা জায়গায়, তাই বেঞ্চ ধুলাবালুতে ঠাসা। মাঝেমধ্যে গাছের পাতা ও ছোট ডাল পড়ছে শিক্ষার্থীদের গায়ে। শিক্ষার্থীদের গায়ে লাগছে রোদ। বিদ্যালয়ে খাওয়ার পানির ব্যবস্থা নেই। শৌচাগার দুটি ব্যবহার অনুপযোগী। আর ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাদে ও বিমে ফাটল ধরেছে। খসে পড়েছে পলেস্তারা। বারান্দার খুঁটিগুলোর ইট-খোয়া খসে পড়েছে। যেকোনো সময়ে ভেঙে পড়তে পারে। এ বিষয়ে কথা হয়, বিদ্যালয়ের শিক্ষক নার্গিস পারভীন ও তন্দ্রা দেবী রায়ের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, বৃষ্টি হলে শিক্ষার্থীরা দৌড়ে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বারান্দায় গাদাগাদি করে আশ্রয় নেয়। কালো মেঘ দেখলেই ঝড়ের ভয়ে ছুটি দেওয়া হয়। সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসে না। এ অবস্থায় খোলা জায়গায় এ পরিবেশে উপকরণ ব্যবহার করা যায় না। খোলা জায়গায় বসে টিফিন খেতে হয়। পরীক্ষার সময় হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি হলে পরীক্ষাও নিতে সমস্যা হয়। বাইরে গরম, এতে মাঝেমধ্যে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। মনোযোগও নষ্ট হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক ধারণাও জন্ম নিচ্ছে। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতি, তানজিলা, নুসরাত, লায়লা, ফারজানা ও রহিমা এবং তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আমেনা, হাসি নন্দী, খুশি নন্দী, প্রিয়ম আচার্য, অর্ঘ দত্ত ও নয়ন কীর্তনীয়ার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা বলে, ‘সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি কখন ডাল ভেঙে মাথায় পড়ে আর ঝড় ও বজ্রপাত হয়, এ নিয়ে।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক নাছরীন আক্তার বলেন, ‘বিভিন্নভাবে চেষ্টা তদবির করছি ভবনের জন্য। কিন্তু আশার নাগাল এখানো পাইনি।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকবর হোসেন বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
বিয়ের টাকা জোগাড় করার জন্য চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন তিন বন্ধু। ফেনীর সোনাগাজীতে অটোরিকশাচালক নুর আলম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার প্রধান আসামি মেহেদী হাসান ওরফে জনি (২০) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য দেন। গতকাল সোমবার বিকেলে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে তাঁর জবানবন্দি নেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে গত শনিবার রাতে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুয়া বাজার এলাকা থেকে অটোরিকশাচালক হত্যা মামলার প্রধান আসামি মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। জবানবন্দিতে মেহেদী হাসান আদালতকে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বলেন, তিনি সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের ওসমানীয়া আলিম মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণিতে পড়েন। গত সাত-আট মাস আগে ফেসবুকের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে কথাবার্তা হতে থাকে। গত কিছুদিন আগ থেকে মেয়েটি তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। ঘটনার সপ্তাহ খানেক আগে মেয়েটি ফেনী চলে আসেন। এরপর বিয়ের টাকা সংগ্রহের জন্য বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তখন বন্ধু মিনহাজ পরামর্শ দেন তাঁর সঙ্গে কুঠিরহাট এলাকার নুর আলম নামে এক অটোরিকশাচালকের দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাঁর অটোরিকশাটি চুরি বা ছিনতাই করে বিক্রি করে টাকা পাওয়া যাবে। পরে ঘটনার দিন রাতে মেহেদী হাসানসহ দুই বন্ধু নুর আলমের অটোরিকশাটি ভাড়া করে মিয়াজিঘাট এলাকায় যান। পথিমধ্যে মিনহাজও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। অটোরিকশাটি মিয়াজিঘাট এলাকায় গেলে পেছন দিক থেকে মেহেদী হাসান ধারালো অস্ত্র দিয়ে চালক নুর আলমের গলা কেটে দেন। রক্তাক্ত অবস্থায় বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করেন নুর আলম। এ সময় ভয়ে তাঁরা তিনজন পালিয়ে যান। ধরা পড়ার ভয়ে মেহেদী হাসান নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুয়া বাজার এলাকায় তাঁর ভাইয়ের বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হুসেন প্রথম আলোকে বলেন, মেহেদী হাসানকে ফেনীর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ২২ জুন বিকেলে উপজেলার চর বদরপুর এলাকা থেকে একই ঘটনায় জড়িত অপর আসামি মো. মিনহাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুন বুধবার রাতে উপজেলার চর মজলিশপুর ইউনিয়নের মিয়াজিঘাট এলাকায় নুর আলম (৩০) নামে এক অটোরিকশাচালককে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২০ জুন রাতে নুর আলমের বাবা নুর নবী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়ের দুর্বৃত্তদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল সোমবার থেকে রাইড শেয়ারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। শর্তপূরণ সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধন পাবে। ঢাকার বাইরে নিবন্ধিত কোনো মোটরসাইকেল ও গাড়ি রাজধানীতে রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত হতে পারবে না। বিআরটিএর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী প্রথম আলোকে জানান, নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম দিনে ‘পিকমি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। গতকাল এই প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধন পেয়েছে।নিবন্ধন পাওয়া ‘পিকমি’ ছাড়াও রাজধানীতে উবার, পাঠাও, সহজ, ওভাইসহ অন্তত ২৫টি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান এবং কয়েক হাজার যানবাহন এই খাতের সঙ্গে যুক্ত। তবে এত দিন খাতটি কোনো আইনি কাঠামোর মধ্যে ছিল না। খাতটিকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে ২০১৭ সালে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয় বিআরটিএ। এ–সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা গত বছরের ১৫ জানুয়ারি অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নীতিমালাটি গত বছরের ৮ মার্চ থেকে কার্যকরের ঘোষণা দেওয়া হয়।নীতিমালা অনুযায়ী, এই খাতের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু বিআরটিএর কারিগরি প্রস্তুতি না থাকায় নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি শুরুতেই বাধাগ্রস্ত হয়। পরে বিভিন্ন সময় নিবন্ধনের জন্য বিআরটিএর কাছে মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানই নীতিমালার সব শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানকেই নিবন্ধন দেয়নি সংস্থাটি। এখন নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রেও নীতিমালার ‘খ’ অনুচ্ছেদের ১ নম্বর শর্তটি শিথিল করা হয়েছে। শর্তটি হচ্ছে, রাইড শেয়ারিং অ্যাপে এমন একটি বোতাম বা অপশন রাখতে হবে, যা স্পর্শ করলেই মোটরযান চালক ও যাত্রীর জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) অবস্থান সরাসরি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) চলে যাবে।বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সম্প্রতি পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিআরটিএ। কিন্তু একেক প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ একেক রকম হওয়ায় এবং এটি নিশ্চিত করার জন্য কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হওয়ায় এটি এখনই চালু করা সম্ভব নয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কাজটি দ্রুত শেষ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। পরে বিআরটিএ আপাতত ৯৯৯–এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার শর্তটি শিথিল রেখেই নিবন্ধনকাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ঢাকা শহরে চলা রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন দেওয়া শুরু করেছে বিআরটিএরাজধানীতে উবার, পাঠাও, সহজ, ওভাইসহ অন্তত ২৫টি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান এবং কয়েক হাজার যানবাহন এই খাতের সঙ্গে যুক্তপুরো প্রক্রিয়াটিই হবে অনলাইনেনাম না প্রকাশের শর্তে বিআরটিএর এক কর্মকর্তা বলেন, আগে ১৬টি প্রতিষ্ঠান কাগজে-কলমে বিআরটিএর কাছে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। গত ২৬ জুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডাকা হয়েছিল। তাদের অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে এবং আবেদনের প্রক্রিয়াটিও দেখা হয়েছে। এরপর গতকাল একটি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করেছিল। তিনি বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে হবে, নিবন্ধন সনদও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা যাবে। বিআরটিএতে সশরীরে কাউকে আসতে হবে না।নীতিমালা অনুযায়ী, রাইড শেয়ারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে হলে (প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে) ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) অনুমোদিত এলাকায় কমপক্ষে ১০০টি, চট্টগ্রাম মহানগরে ৫০টি এবং দেশের অন্যান্য শহরে ২০টি যানবাহনের সঙ্গে বিআরটিএর মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হবে। প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ এক লাখ টাকা ফি দিতে হবে। নিবন্ধন নবায়ন করতে প্রতিবছর আরও ১০ হাজার টাকা করে দিতে হবে বিআরটিএর কোষাগারে। অন্যদিকে, যানবাহনের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের জন্য পাঁচ শ টাকা এবং অন্যান্য গাড়ির জন্য এক হাজার টাকা করে ফি দিতে হবে।বিআরটিএর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, যানবাহনের নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও অনলাইনে আবেদন করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাহনটি যুক্ত, সেই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। আর নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি এমন হবে, যেখানে ঢাকা মেট্রোর বাইরে নিবন্ধিত কোনো বাহন রাজধানীতে রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য নিবন্ধন পাবে না। তবে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ বা অন্যান্য এলাকায় নিবন্ধিত বাহন নিজ নিজ এলাকায় রাইড শেয়ারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে নিবন্ধন যানবাহনগুলো রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত না হয়ে ঢাকায় চলাচল করতে পারবে। বিআরটিএর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ঢাকার বাইরের বাহন রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে চলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মহলের বিশেষ করে পুলিশের আপত্তি ছিল। কারণ এতে যানজট বাড়ে। তাই ঢাকার বাইরে যানবাহনগুলোকে ঢাকা শহরে চলাচলের জন্য নিবন্ধন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হাওরের কিছু জমি বন্দোবস্ত নিতে চেয়েছিলেন উজ্জ্বল মিয়া (৬৩)। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন ভাতিজির ‘চালাক-চতুর’ স্বামী অপু চৌধুরীকে। অপু কাজের কথা বলে টাকা নিতে শুরু করেন। এরপর দুই বছরে উজ্জ্বল ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসনের বড় বড় কর্মকর্তাদের এ–সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছেন। উজ্জ্বল মিয়া ভাবেন, কাজ তো ভালোই হচ্ছে। এ জন্য দুই বছরে অপু চৌধুরীকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার মূল রসিদও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সর্বশেষ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’র নামে স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ওই জমি বন্দোবস্তের প্রয়োজনীয় কাগজ বুঝে নেওয়ার জন্য উজ্জ্বলকে আসতে বলা হয়। তারিখ অনুযায়ী গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করার পর তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। জানতে পারেন সবই ভুয়া। তিনি প্রতারিত হয়ে এই টাকা খুইয়েছেন।উজ্জ্বল মিয়ার বাড়ি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের উত্তরপাড়া বড়কাশিয়া গ্রামে। তাঁর শ্বশুরবাড়ি সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার মামুদনগর গ্রামে। ওই গ্রামের পাশের ধানকুনিয়া হাওরে উজ্জ্বল মিয়ার কিছু জমি আছে। বোরো মৌসুমে তিনি শ্বশুরবাড়ি এসে এসব জমি আবাদ করেন। তাঁর জমির পাশেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) তিন একর ৩০ শতাংশের একটি ডোবা আছে। গতকাল বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে কথা হয় উজ্জ্বল মিয়া ও তাঁর ছেলে হীরা মিয়ার সঙ্গে। প্রতারণার কথা জানতে পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন উজ্জ্বল। ‘আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে, আমার সব গেছে’ বারবার এ কথা বলে বিলাপ করছিলেন।আলাপকালে উজ্জ্বল জানান, হাওরের ওই ডোবা কীভাবে বন্দোবস্ত পাওয়া যায়, এ নিয়ে অপু চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। অপু জানান, তিনি সব করে দেবেন। অপু চৌধুরীর মূল বাড়ি সিলেট শহরে হলেও দীর্ঘদিন থেকেই মোহনগঞ্জে বসবাস করছেন। তিনি এই ডোবা ১০ বছরের জন্য বন্দোবস্ত এনে দেওয়ার সব কাজ করে দেবেন বলে উজ্জ্বল মিয়াকে জানান। এরপর থেকে অপু চৌধুরী ভূমি মন্ত্রণালয়, পাউবোর প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ এবং এসব বিষয়ে খরচের কথা বলে টাকা নিতে শুরু করেন। বিভিন্ন সময় কাজের অগ্রগতির চিঠিও পান উজ্জ্বল মিয়া। মন্ত্রণালয়, পাউবো, আয়কর বিভাগের প্যাডে বড় বড় কর্মকর্তার নাম ও স্বাক্ষর করা এসব চিঠি পেয়ে কাজ হচ্ছে বলে উজ্জ্বল মিয়ার ধারণা হয়। তাই তিনি টাকা দিতে থাকেন। অপু চৌধুরী টাকা জমা দেওয়ার প্রমাণ হিসেবে সোনালী ব্যাংক সিলেটের আম্বরখানা শাখার সিল দেওয়া চালান তাঁকে দেন। এ রকম টাকা জমা দেওয়ার ৮০টি চালানের কপি দেখান উজ্জ্বল মিয়া। এ ছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়, পাউবো, আয়কর বিভাগের বেশ কিছু চিঠি রয়েছে তাঁর কাছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলীসহ বড় বড় কর্মকর্তার নাম, সিল ও স্বাক্ষর আছে তাতে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’ আফতাব আহমেদের নামে স্বাক্ষরিত একটি চিঠি উজ্জ্বলের কাছে পাঠান অপু চৌধুরী। এতে উজ্জ্বল মিয়াকে স্থায়ীভাবে ডোবা বন্দোবস্তের কাগজপত্র গ্রহণের জন্য ৩০ জুন রোববার আসতে বলা হয়। সে অনুযায়ী রোববার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সুনামগঞ্জ আসেন তিনি। কিন্তু রোববার সারা দিন অপুকে ফোনে আসতে বলার পরও তিনি আর আসেননি। পরে গতকাল বাবা ও ছেলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদের সঙ্গে দেখা করেন। কাগজপত্র দেখে জেলা প্রশাসক জানিয়ে দেন সবই ভুয়া। উজ্জ্বল প্রতারিত হয়েছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’ বলে কোনো পদ বা আফতাব আহমেদ নামের কোনো কর্মকর্তা নেই। উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে সিঙ্গাপুর ছিল। সে টাকা দিত। আমার একটা ছোট মুদিদোকান আছে। আমার কামাই, ছেলের কামাই সব দিয়া দিছি। আমি তো শেষ হয়ে গেছি। আমি এর বিচার চাই।’ উজ্জ্বল মিয়ার ছেলে হীরা মিয়া বলেন, ‘আমি মাসখানেক হয় সিঙ্গাপুর থেকে দেশে এসেছি। কাগজপত্র দেখে বোঝার উপায় নেই এগুলো ভুয়া। কালার প্যাড, বড় বড় কর্মকর্তার নাম, সিল, স্বাক্ষর সবই আছে। কিন্তু আজ এখানে এসে বুঝলাম আমাদের কত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।’অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে অপু চৌধুরীর মুঠোফোন নম্বরে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, ‘উজ্জ্বল মিয়াকে দেখে সহজ-সরল মনে হয়েছে। তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তিনি যেসব কাগজপত্র দেখিয়েছেন, সবই ভুয়া। আমরা তাঁর বক্তব্য নিয়েছি। আমরাও বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।’
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন পেতে ২৪ জন নেতা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে জনমত জরিপে এগিয়ে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি মধ্যপন্থী। জরিপ বলছে, ট্রাম্পকে পরাজিত করতে তিনি সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী। তবে গত সপ্তাহে ডেমোক্রেটিক পার্টির ২০ জন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মধ্যে দুটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর অনেকে নতুন করে অঙ্ক কষতে শুরু করেছেন।সবাই বলছেন, বিতর্কে জয়ী হয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত সিনেটর কমলা হ্যারিস। ভারতীয় মা ও কৃষ্ণকায় বাবার সন্তান কমলা নিজেকে একজন আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে পরিচয় দেন। গত বৃহস্পতিবার এনবিসি টিভি প্রযোজিত বিতর্কে তিনি বর্ণবাদ প্রশ্নে জো বাইডেনের অতীত অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই ইস্যুতে তিনি একদিকে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টকে নাকাল করেছেন, অন্যদিকে নিজেকে আলোচনার মধ্যমঞ্চে নিয়ে এসেছেন।সিনেটর কমলা হ্যারিসের অভিযোগ, সত্তরের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলব্যবস্থায় বর্ণবিভাজন ঘোচাতে কৃষ্ণকায় ছেলেমেয়েদের বাসে করে আনা-নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাইডেন এর বিরোধিতা করেছিলেন। বাইডেন সে সময় বলেন,‘আপনি বর্ণবাদী, আমি সে কথা বিশ্বাস করি না। কিন্তু আপনি ভুল করেছিলেন, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই।’ বাইডেনকে লক্ষ্য করে কমলা হ্যারিসের এই আক্রমণ এখন সবার মুখে মুখে। বর্ণবাদী হিসেবে পরিচিত দুজন রিপাবলিকান সিনেটের প্রতি তিনি বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন, বাইডেনের সে বক্তব্যও সমালোচনার মুখে পড়েছে।বিতর্কের সময় কমলা হ্যারিসের তির্যক মন্তব্যের জবাব দিতে পারেননি বাইডেন। পরে তথ্যবিবরণী দিয়ে বাইডেনকে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে হয়েছে। তবে দলের বেশির ভাগ সমর্থক সেই ব্যাখ্যা যথাযথ মনে করেননি। বিতর্কের পর জাতীয় জরিপে বাইডেন ৩১ পয়েন্ট পেয়ে এখনো প্রথম স্থানে, দ্বিতীয় স্থানে ১৯ পয়েন্ট পেয়ে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। ১২ পয়েন্ট পেয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছেন কমলা হ্যারিস। বিতর্কের আগে বাইডেনের পয়েন্ট ছিল ৩৮, আর কমলার ৬। অর্থাৎ, এই বিতর্কের পর বাইডেন হারিয়েছেন ৫ পয়েন্ট, কমলা হ্যারিসের সংগ্রহ অতিরিক্ত ৬ পয়েন্ট।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেন দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে এত দিন যে নিশ্চিত ধারণা ছিল, তা এখন আর মোটেই নিশ্চিত নয়। এ কথা ঠিক, ‘ভোটার গ্রুপ’ হিসেবে আফ্রিকান-আমেরিকানরা এখনো তাঁকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। কিন্তু দলের প্রগতিশীল অংশ বাইডেনের ব্যাপারে দ্রুত উৎসাহ হারাচ্ছে। বার্নি স্যান্ডার্সের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার ফয়েজ শাকির এই নতুন মূল্যায়নের সারসংক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেন, জো বাইডেন যেখানে কমলা হ্যারিসের সমালোচনার জবাব দিতে পারেননি, সেখানে ট্রাম্পের আক্রমণ কীভাবে ঠেকাবেন, সেটা চিন্তার বিষয়।বাইডেনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত মধ্যপন্থী থিংক ট্যাংক থার্ডওয়ের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাট বেনেট আরও সরাসরি কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘নাহ, মোটেই ভালো ফল দেখাতে পারেননি বাইডেন।’ তিনি আশা করেছেন, বাইডেন সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন। তবে তাঁকে সে জন্য যথেষ্ট খাটতে হবে।মনোনয়নপ্রার্থী অনেকেই এখন বাইডেনের সমালোচনায় মুখর। ৭৬ বছর বয়সী বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অতি বৃদ্ধ ইঙ্গিত করে কংগ্রেসম্যান এরিক সোয়ালওয়াল বলেছেন, ‘জো বাইডেন গতকালের মানুষ। এখন সময় এসেছে তাঁর হাতে ধরা মশালটি অন্য কারও হাতে হস্তান্তরের।’বাইডেনকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন কমলা হ্যারিস। তবে কমলা হ্যারিসও দলের অনেক নেতা-কর্মীর, বিশেষত আফ্রিকান-আমেরিকানদের কাছে সমালোচিত হয়েছেন। বাইডেন ওবামার অনুগত সহকারী ছিলেন। অনেক আফ্রিকান আমেরিকান মনে করেন, বাইডেনকে আক্রমণ করা মানে ওবামাকে আক্রমণ করা।সাবেক আফ্রিকান-আমেরিকান সিনেটর ক্যারল মোসলি ব্রাউন বলেন, বাইডেন সম্বন্ধে কমলা হ্যারিস যা বলেছেন, তা ভুল। তিনি অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষী। আর তাতেই ভুলটা হয়েছে।অনেকেই কমলা হ্যারিসকে একসময় জো বাইডেনের রানিং মেট হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন। এই বিতর্ক ও যুদ্ধের পর সেই সম্ভাবনা আর নেই। সান ফ্রান্সিসকোর সাবেক মেয়র উইলি ব্রাউন অবশ্য এখনো তেমন সম্ভাবনা বাতিল করেননি। তাঁর কথায়, জো বাইডেনের টিকে থাকার একমাত্র পথ হলো কমলা হ্যারিস যদি তাঁর রানিং মেট হতে রাজি হন। অন্যথায় বাইডেন এখনই তাঁর নির্বাচনী আশাকে বিদায় জানাতে পারেন।
‘সেই কবে মিমি আপার (আফসানা মিমি) সঙ্গে কাজ করেছি, মনে নেই। হিসেবে করে দেখলাম, দশ বছর পার। আবারও তাঁর পরিচালনায় কাজ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত।’ সমান্তরাল নাটকে আফসানা মিমির পরিচালনায় অভিনয় করতে পেরে এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেন সজল।সমান্তরাল নাটকের শুটিং শেষ হতে এখনো একদিন বাকি। পুরোনো ঢাকায় সম্প্রতি এই নাটকের শুটিং শুরু হয়। শুটিং সময়কার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে এই অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘প্রথম দিনের শুটিংয়ে প্রচণ্ড গরমে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিতে গিয়ে চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়ি। অনেকক্ষণ পর ঘুম ভাঙে। দৃশ্যধারণের সময় চলে গেলেও আপা আমাকে ডাকেননি। তাঁর এই কেয়ারিং আমাকে মুগ্ধ করেছে।’আফসানা মিমির পরিচালনায় সজল সর্বশেষ অভিনয় করেছিলেন ডলস হাউজ ধারাবাহিকে। টেলিভিশন নাটকের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আফসানা মিমি এখন অভিনয়ে অনেকটাই অনিয়মিত। অভিনয় শেখার একটি স্কুল পরিচালনা করেন তিনি। এরই ফাঁকে করেন নাটক পরিচালনাও করেন। এই নাটকে সজলের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তাহমিনা অথৈ।নাটকের গল্প প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সজল বলেন, গল্প বলা বারণ। দশ বছর পর আবার তাঁর পরিচালনায় কাজ করলাম। দারুণ একটি কাজ হচ্ছে। দারুণ সময় কাটছে মিমি আপার সঙ্গে।’সমান্তরাল নাটকের গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে দেখা যাবে সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসানকে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, ইরান আগুন নিয়ে খেলছে।ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধি করার সীমা অতিক্রম করার বিষয়ে গতকাল সোমবার ইরানের কাছ থেকে ঘোষণা আসার পর তেহরানকে সতর্ক করেন ট্রাম্প। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার জেরে পরমাণু চুক্তির শর্ত ভেঙে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানোর হুমকি আগেই দিয়েছিল ইরান।দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ গতকাল বলেন, তারা মে মাসে ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০০ কেজি ইউরেনিয়াম মজুতের সীমা অতিক্রম করে গেছে। এই কাজ করার মধ্য দিয়ে ইরান ভুল কিছু করেনি।আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাও (আইএইএ) গতকাল জানায়, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী যে পরিমাণ ইউরেনিয়ামের মজুত থকার কথা ইরানের, তা ইতিমধ্যে অতিক্রম করে গেছে দেশটি।হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (ইরান) জানে, তারা কী করছে। তারা জানে, তা কী নিয়ে খেলছে। আমি মনে করি, তারা আগুন নিয়ে খেলছে।’তেহরানের কাছ থেকে ইউরেনিয়াম মজুতের সীমা অতিক্রমের ঘোষণা আসার পর জাতিসংঘ বলেছে, পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী ইরানকে তার অঙ্গীকারের ব্যাপারে অটল থাকা উচিত।সবশেষ এই ঘটনার পর ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েল।ইরানের ইউরেনিয়াম মজুতের সীমা অতিক্রমের ঘটনায় রাশিয়া আক্ষেপ প্রকাশ করেছে। তবে তারা এও বলেছে, ইরানের ওপর মার্কিন চাপের কারণেই এমনটা হয়েছে।গত ৮ মে ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে আংশিক বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। তার ঠিক এক বছর আগে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত অধ্যাপক রোহান গুনারত্নে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। গত বছরের ২ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে তাঁর মাউন্ট সিনাই লেনের বাসভবনে এবং গত সপ্তাহান্তে অনলাইনে আইএস, সন্ত্রাসবাদসহ নানা বিষয়ে প্রথম আলোকে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান। প্রথম আলো: হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার আগে ও পরে আপনি নির্দিষ্টভাবে বলেছেন যে বাংলাদেশে আইএস তার নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। ওই হামলার তিন বছর পর আপনার মূল্যায়ন কী?রোহান গুনারত্নে: আইএস দ্রুত এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে। এখানে বিশ্বের ৬৩ শতাংশ মুসলিমের বাস। এশীয় মুসলিমরা উদারনৈতিক এবং তারা সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামি ভাবধারা এশীয় মুসলিম ঐতিহ্যকে প্রতিস্থাপন করছে। যেহেতু সমগ্র অঞ্চল আইএসের হুমকির আওতায় এসেছে, তাই এশীয় সরকারগুলো এবং তাদের অংশীদারদের উচিত হবে অতীতের চেয়ে বেশি জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আইএসের আদর্শ অবকাঠামোগতভাবে এবং অনলাইনে বিস্তৃত হচ্ছে। আইএসের হুমকি নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কঠোর পরিশ্রম করছে। তাদের সম্পূর্ণ সমর্থন দিতে হবে।প্রথম আলো: বাংলাদেশে আইএসের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে যে দাবি আপনি করেছেন, সেটা আপনার গবেষণার ফল এবং আইএস সদস্যদের সাক্ষাৎকারও আপনি নিয়েছেন। কিন্তু সেগুলো কি আপনি কখনো বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন? আপনি কি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জঙ্গিবাদ বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা করেন?রহান গুনারত্নে: ২০১৫ সালের ২১ জুলাই বাংলাদেশে আইএসের কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক তামিম চৌধুরী সারোয়ার জাহানের নেতৃত্বাধীন জেএমবির সঙ্গে হাত মেলান। তাঁরা উভয়ে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের খলিফা আবু বকর আল-বাগদাদির অনুগত। তামিম চৌধুরীর সঙ্গে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তিনিই বাংলাদেশে শিয়া, বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিষ্টান এবং বিদেশিদের হত্যার মতাদর্শের সূচনা করেন। তাঁরা নিজেদের গ্রুপ বিলুপ্তির ঘোষণা দেন এবং যৌথভাবে কাজ করার দলিলে সই করেন। সারোয়ার ও তামিম চৌধুরী এ জন্য মজলিশে শুরা বা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন এবং তাঁদের মনোনীত শুরা সদস্যরাই হোলি আর্টিজানে হামলার অনুমোদন দেন।প্রথম আলো: বাংলাদেশে আইএস নেই—এই অবস্থান আজও বাংলাদেশ রক্ষা করে চলছে। আপনি কীভাবে দেখেন?রোহান গুনারত্নে: এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার স্বীকার করেনি যে বাংলাদেশে আইএস কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু গোয়েন্দা অনুসন্ধান এবং উদ্‌ঘাটিত সাক্ষ্যপ্রমাণ দ্বারা সন্ত্রাস দমনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কাছে স্পষ্ট যে আইএস সক্রিয় রয়েছে। তবে রাজনৈতিক নেতারা এই ভেবে উদ্বিগ্ন যে যদি বাংলাদেশের মাটিতে আইএস রয়েছে বলে স্বীকার করা হয়, তাহলে তা আতঙ্ক সৃষ্টি করবে। বিনিয়োগ ও পর্যটনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তঁাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে এবং বাংলাদেশ একটি ভূরাজনৈতিক রণক্ষেত্রে পরিণত হবে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার যদি এটা জনগণের সামনে স্পষ্ট করত, তাহলে আইএসের নৃশংসতা বিবেচনায় আইএসকে বাংলাদেশের মাটি থেকে নির্মূলে আরও ব্যাপক মাত্রায় চাপ তৈরি হতো। জনগণও এ বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ হতো। বাংলাদেশ যেহেতু এখনো আইএসের অস্তিত্ব অস্বীকার করে যাচ্ছে, তাই জনগণের মধ্যে সতর্ক থাকার বোধ তৈরি হয়নি। অথচ আইএস প্রতিরোধের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ।প্রথম আলো: বাংলাদেশে যে আইএসের নেটওয়ার্ক রয়েছে, তা আপনি নিজে কতটা যাচাই করে দেখেছেন?রোহান গুনারত্নে: আইএসের পদচিহ্নসহ বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের হুমকির বিষয়ে আমি সচেতন। গত ১৫ বছরে আইএস সদস্যসহ বাংলাদেশের বহু সন্ত্রাসীর সাক্ষাৎকার আমি নিয়েছি। বাংলাদেশ এবং বিদেশি সরকারগুলোর তৈরি করা শত শত প্রতিবেদন আমি পর্যালোচনা করেছি। এর মধ্যে পশ্চিমা একটি সরকারের করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে তামিমকে আইএস নেতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। বেকারিতে হামলার আগে এই প্রতিবেদন আমি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছিলাম। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ও ৩ অক্টোবর দুটি ঘটনায় ইতালীয় নাগরিক সিজার তাবেলা ঢাকায় এবং জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি রংপুরে নিহত হওয়ার পর এই দুজনকে হত্যার দায় আইএস স্বীকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ তা নাকচ করে দেয়। হোলি আর্টিজানের আগে আইএস বাংলাদেশে ছয়টি হামলা পরিচালনা করেছিল। কিন্তু এরপরও কর্তৃপক্ষ তার নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক করেনি যে আইএস বাংলাদেশের মাটিতে সক্রিয়ভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ভিন্নভাবে মোকাবিলা করলেই বেকারির হামলা প্রতিহত বা আগেই একটা পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হতো।প্রথম আলো: শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলা এবং হোলি আর্টিজানের স্টাইলে কী মিল-অমিল দেখেন?রোহান গুনারত্নে: শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ আইএসের হামলায় আক্রান্ত। উভয় ক্ষেত্রে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আইএসের উপস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেছিল। উভয় সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী সামর্থ্য উল্লেখযোগ্যভাবে থাকলেও তারা সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করতে পারেনি কিংবা সন্ত্রাসীদের মূল নায়ককে নির্মূল বা গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় আইএস স্থানীয় ন্যাশনাল তৌহিদ জামায়াত এবং জমিয়াতুল মিল্লাতে ইব্রাহিম ফি সেলানি এবং বাংলাদেশে জেএমবির ওপর ভর করেছিল। হোলি আর্টিজান হামলা ছিল এশিয়ায় আইএসের তৎপরতার প্রাথমিক ইঙ্গিত। এশীয় নাজুক লক্ষ্যবস্তুর প্রতি আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে বিদেশি ও অমুসলিমদের হত্যায় তাদের প্রস্তুতির জানান দিয়েছিল তারা। দুর্ভাগ্যবশত শ্রীলঙ্কাসহ অনেক এশীয় দেশ হোলি আর্টিজানের হামলা থেকে পর্যাপ্ত শিক্ষা নেয়নি। অন্তত তিনটি পাঠ নেওয়া জরুরি। প্রথমত, হোটেল ও ক্যাফের মতো উন্মুক্ত স্থাপনার হুমকি; দ্বিতীয়ত, ট্যাকটিক্যাল টিম মোতায়েন করে হামলার আগেই দ্রুত সন্ত্রাসীদের স্তব্ধ করা। তৃতীয়ত, আইএসের কৌশল সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা, যার সারকথা হচ্ছে তারা কোনো সমঝোতা করবে না। তারা মারবে ও মরবে।প্রথম আলো:সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এ এক প্রবন্ধে আপনি লিখেছেন, কলম্বোর এখন উচিত হবে সন্ত্রাসীদের সামর্থ্য এবং অপারেশন পরিচালনার কাঠামো ভেঙে দিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করা। এটা দক্ষিণ এশীয় অন্য সরকারগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কতটা? সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের বর্তমান সামর্থ্যকে কীভাবে দেখেন?রোহান গুনারত্নে: আইএসকেন্দ্রিক হুমকিতে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সামরিক বাহিনী ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে কার্যকর সামর্থ্য অর্জন করেছে। তবে তিনটি দুর্বলতা রয়েছে, যেদিকে নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করি। প্রথমত, নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থীদের ডির‌্যাডিক্যালাইজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামর্থ্যের ঘাটতি রয়েছে। দ্বিতীয়ত, জঙ্গি হামলা প্রতিহত এবং জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণ ঠেকানোর কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ভালো ব্যবস্থাপনার অভাব। তৃতীয়ত, অনলাইনে উগ্রপন্থার বিস্তার প্রতিহত করতে যে মাত্রায় সামর্থ্য বাড়ানো প্রয়োজন, সেখানে ঘাটতি। এই দিকগুলোতে নজর দিতে হবে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের উচিত হবে উগ্রপন্থী যেকোনো বক্তব্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী স্থানীয় ও বিদেশি প্রচারকদের নিয়ন্ত্রণ করা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের সেই মতাদর্শ, যা বাঙালি মুসলিমদের মহান ঐতিহ্যের অনিষ্ট করছে, তাকে ছড়াতে না দেওয়া।প্রথম আলো: গত সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার সঙ্গে আলাপের সময় তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধ–পরবর্তী শ্রীলঙ্কায় তামিলদের সঙ্গে রিকনসিলিয়েশন প্রক্রিয়া সন্তোষজনক। কলম্বো হামলার পর অনেকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারের আত্মতুষ্টিকে নিরাপত্তাঝুঁকি হিসেবে দেখছেন।রোহান গুনারত্নে: সিংহলি, তামিল ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা বড় ভূমিকা রেখেছেন। তবে সম্প্রীতিকে কোনো সরকারেরই গ্যারান্টেড হিসেবে নেওয়া উচিত নয়। সব সম্প্রদায়, বিশেষ করে মুসলমানদের সুরক্ষা দেওয়া এখন শ্রীলঙ্কার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা একটি আদর্শ সম্প্রদায়। আইএস দ্বারা প্রভাবিত কতিপয় মুসলিম দ্বারা ইস্টার সানডের আক্রমণ সংঘটিত হলেও তা শ্রীলঙ্কার মুসলিমদের বিশাল অর্জনকে খাটো করতে পারে না। মুসলমানরা আমাদের ভাই-বোন।প্রথম আলো: আপনি বলছেন, আইএস প্রতিশোধস্পৃহা থেকে বিশ্বব্যাপী হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা কি খিলাফতের স্বপ্ন পরিত্যাগ করছে? তারা এখন জিহাদ রপ্তানি করবে?রোহান গুনারত্নে: তাদের খিলাফতের স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। ইরাক ও সিরিয়ায় তার ভূখণ্ডগত নিয়ন্ত্রণ নেই। ১০ হাজারের বেশি যোদ্ধা নিয়ে তারা এখনো শক্তিশালী গ্রুপ। তাদের বৈশ্বিক অবকাঠামো আছে। উপরন্তু অনলাইনে বিরাট দক্ষতা অর্জন করেছে। সে কারণে আইএস ও আল-কায়েদা আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, জাতীয় এবং স্থানীয়ভাবে সরকার ও সমাজগুলোর প্রতি হুমকি বজায় রাখতে পারছে।প্রথম আলো: কিন্তু সিরিয়ায় তারা ধসে পড়ছে, এখন তো তাদের সাংগঠনিক শক্তি নিস্তেজ।রোহান গুনারত্নে: আইএস বিশ্বব্যাপী একটি সমর্থন ও অপারেশন অবকাঠামো সৃষ্টি করতে পেরেছে। ইরাক ও সিরিয়ায় শক্তি কমলেও তার নেতৃত্ব ও নেটওয়ার্ক মজবুত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী হামলা চালাতে তারা সক্ষম। তাই তাদের পরাস্ত করতে সরকারগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে দরকার উত্তম বিকল্প মতাদর্শ উপস্থাপন করা, যার ভিত্তি হবে উদারনৈতিকতা, সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থান।প্রথম আলো: আইএসের জঙ্গিরা কি তাদের নিজ দেশে ফিরে তৎপর হবে? বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে এই আশঙ্কা কতটা প্রাসঙ্গিক?রোহান গুনারত্নে: আইএসের জন্য দক্ষিণ এশিয়া একটি অভয়াশ্রম। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যা। যদি এই জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ১ ভাগও যদি আইএস ভাবধারার ইসলামে উদ্বুদ্ধ হয়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়া ইরাক ও সিরিয়ায় পরিণত হবে। মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটান ছাড়া গোটা দক্ষিণ এশিয়া ইতিমধ্যে আইএসে আক্রান্ত হয়েছে। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার যে দক্ষিণ এশিয়ায় তারা আরও অধিকতর বিস্তৃতি ও গভীরতায় ছড়িয়ে পড়বে। তাই একে ঠেকাতে সরকারগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে।প্রথম আলো: হোলি আর্টিজানে হামলার প্রেক্ষাপটে ঢাকায় আপনার শেষ বক্তৃতার পর আপনি নির্দিষ্টভাবে কোনো পুনর্মূল্যায়ন করেছেন কি?রোহান গুনারত্নে: বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে তার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সামরিক বাহিনী ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে শুধু সহযোগিতামূলক সম্পর্ক নয়, বরং একসঙ্গে কাজ করার পরিস্থিতি তৈরি করা। প্রথমত, সরকারকে একটি অভিন্ন ডেটাবেইস প্রতিষ্ঠা করা উচিত। বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তারা ওই ডেটাবেইস ব্যবহার করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, সন্ত্রাস দমনে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে লোকবল বিনিময়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এর মাধ্যমে সেরা কৌশল ও শিক্ষণীয় বিষয়ের বিনিময় ঘটবে। তৃতীয়ত, সংস্থাগুলো যৌথভাবে প্রশিক্ষণ নেবে, আবার অপারেশনেও যাবে। চতুর্থত, তারা নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে প্রযুক্তিগত জ্ঞান বিনিময় করবে।প্রথম আলো: একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে বলুন বাংলাদেশ কীভাবে তার প্রধান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে?রোহান গুনারত্নে: বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে একটি জয়েন্ট থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট সেন্টার ও একটি জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স কমিটি প্রতিষ্ঠা করা। প্রতি সপ্তাহে ইন্টেলিজেন্স কমিটি তথ্য বিনিময়ে সভা করবে। আবার নিজেদের মধ্যে যথেষ্ট বিনিময় না করেই অভিন্ন টার্গেট সম্পর্কে তথ্য নেবে। আর জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নেতাদের সহায়তা দিতে সেন্টার সমন্বিত মূল্যায়ন রিপোর্ট দেবে।প্রথম আলো: অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র অনেক সময় ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিছু মহল বাংলাদেশকে অযথা ভয়ংকর জায়গা হিসেবে দেখাতে চায়। অথচ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস সূচক অনুযায়ী ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বিপজ্জনক।রোহান গুনারত্নে: উল্লিখিত দেশগুলোর যে কারও জারি করা নিরাপত্তা সতর্কতাকে গুরুত্বের সঙ্গেই নিতে হবে। অবশ্য এর অপব্যবহারের উদাহরণও আছে। আমি ইমতিয়াজের সঙ্গে একমত। গত তিন দশক বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, দেশটি ভয়ংকর স্থান নয়। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও পর্যটন পূর্ণভাবে সমর্থিত হওয়া উচিত।প্রথম আলো: জার্মান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড. সিগফ্রিড উলফের মত হলো, হোলি আর্টিজানের তিন বছর পরও বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও বিরোধী দল অনাগ্রহী কিংবা বুঝতে অক্ষম যে সংকীর্ণ রাজনৈতিক লাভের চেয়ে বৈশ্বিক জিহাদের পূর্ণমাত্রাকে উপেক্ষা করার মূল্য অনেক বেশি চড়া। এটা বাংলাদেশে মৌলবাদী চেতনার বিকাশকে আরও গভীরে নিতে পারে। মন্তব্য করুন।রোহান গুনারত্নে: বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নেয়নি। প্রচলিত জঙ্গি দমন কর্মসূচির বাইরে উগ্রপন্থা নিরোধ এবং উদারীকরণ, সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের নীতি উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিতে হবে। সমকালীন সহিংসতা দমনে বাঙালির বৈচিত্র্যপূর্ণ ও ঋদ্ধ সাহিত্য-সংস্কৃতিই শ্রেষ্ঠ প্রতিষেধক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আপনি যদি একজন প্রকৃত বাংলাদেশি হন, তাহলে আপনি একজন সন্ত্রাসবাদী, উগ্রপন্থী হতে পারেন না। কিংবা এমনকি আপনি পারেন না কাউকে দূরে ঠেলে দিতেও।প্রথম আলো: সেই ঘোর অমানিশার মধ্যেও একজন তরুণ আলো জ্বেলেছিলেন।রোহান গুনারত্নে: ফারাজ হোসেনের ঘটনায় সবার মিলেমিশে একসঙ্গে থাকার প্রকৃত বাঙালি চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। জীবনে ও মরণে তিনি উগ্রপন্থা ও কাউকে বাদ দেওয়ার যে সন্ত্রাসী মতাদর্শ, তাকে নাকচ করেছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তাই ফারাজ তার বন্ধুদের পরিত্যাগ করেননি। ফারাজের উৎসর্গীকৃত জীবনের বার্তা হলো: সন্ত্রাসীরা কাপুরুষ, ফারাজ আমাদের নায়ক।প্রথম আলো: গত ৩০ এপ্রিল ঢাকায় পুলিশের ওপর বোমা হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের মাধ্যমে ফের জানা গেল, এটা আইএস করেছে। মার্কিন এই ওয়েবসাইট নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে।রোহান গুনারত্নে: এই গ্রুপ আইএসের বৈশ্বিক আধিপত্য বিষয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও সংস্থা। বিশ্বে সরকারগুলোকে যথাসময়ে অনলাইনে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বসেরা পাঁচটি গবেষণা সংস্থার অন্যতম হলো সাইট ইন্টেলিজেন্স। তারা যখন বাংলাদেশে আইএস উপস্থিতি বিষয়ে বলল, বাংলাদেশি কর্মকর্তারা অবিশ্বাস করলেন। কারণ, তাতে তাঁদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটেনি। বরং সাইটকে ঠাট্টা করতে বাংলাদেশিদের অনেকে তাকে বললেন ইহুদি সংস্থা। ষড়যন্ত্রতত্ত্ব, আরব বিশ্ব যাতে সয়লাব, তা পরিহার করে বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের উচিত হবে সত্যে অবিচল থাকা। নিরাপত্তা হুমকি আগাম প্রতিরোধে বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজম কমিউনিটির উচিত হবে জানাশোনা, পড়া ও গবেষণার পরিধি বাড়ানো, বিশ্বসেরা বিদ্যাপীঠে প্রশিক্ষণ নিয়ে সন্ত্রাস দমনে নিজেদের অভিজ্ঞ ঋদ্ধ করা।প্রথম আলো: আপনি কি মনে করেন রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা, তাদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করার পরিণতিতে এই অঞ্চল এবং এর বাইরেও অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়তে পারে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্প্রতি নিরাপত্তা হুমকির আশঙ্কা করেছেন।রোহান গুনারত্নে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বেগ যথার্থ। সহাবস্থানের ব্যাপারে একটি বৈশ্বিক, আঞ্চলিক, জাতীয় অঙ্গীকার ছাড়া বিদ্যমান সংঘাতগুলো গভীরতর হবে এবং আরও নতুন নতুন সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হবে। ফিলিস্তিনি, কাশ্মীরি ও মরোদের মতো রোহিঙ্গা সংঘাত দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। অথচ এর একটি স্থায়ী সমাধানে কোনো আন্তর্জাতিক সদিচ্ছা নেই। মিয়ানমার ও বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা মুসলিমদের আরও বেশি কোণঠাসা হওয়া ঠেকাতে উভয় সরকারকে একত্রে কাজ করতে হবে। রোহিঙ্গারা দীর্ঘ সময় ধরে উদ্বাস্তু শিবিরে আছে। শিবির পরিদর্শন করে আমার মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় সমর্থন দেওয়া। উদ্বাস্তু অবস্থায় কয়েক দশক ধরে জীবন যাপন করার কারণে তাদের মধ্যে ঘৃণা ও সহিংসতার জন্ম দিতে পারে। আইএস যেভাবে বৈশ্বিক সম্প্রসারণ নীতি বাস্তবায়ন করছে, তাতে রোহিঙ্গাদের উগ্রপন্থায় সহজে আকৃষ্ট করা যাবে। আন্তসীমান্ত হুমকি প্রশমনে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের উচিত পরস্পরকে সহযোগিতা করা।প্রথম আলো: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইএস ঢুকতে পারে, এমন কোনো আশঙ্কা জাতিসংঘ, দাতাগোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় করছে বলে মনে করেন কি?রোহান গুনারত্নে: মিয়ানমার ও বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই প্রতিশোধ বা পাল্টাপাল্টি হামলার নীতিতে বিশ্বাসী নয়। তারা অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্প্রীতিতে বসবাস করতে আগ্রহী। তবে আল-কায়েদা ও আইএসকেন্দ্রিক গ্রুপগুলো ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গাদের উগ্রপন্থায় ভেড়ানোর চেষ্টা করেছে এবং রোহিঙ্গা নিয়োগে সীমিত সাফল্য পেয়েছে। অতীতে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, হারাকাতুক জিহাদি ইসলামি-আরাকান এবং সাম্প্রতিক কালে আরাকানে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির উত্থান দেখা গেছে। যদিও এসব সংগঠনের প্রতি রোহিঙ্গাদের তেমন কোনো মাত্রায় সমর্থন নেই। তবে রোহিঙ্গাদের নিয়োগের বিষয়টিকে একটি ক্রমবর্ধমান ও সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে দেখা চলে। সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেহেতু সম্প্রীতির সঙ্গেই বসবাস করতে চায়, তাই কোনো বিলম্ব ছাড়াই তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। রোহিঙ্গাদের উগ্রপন্থায় ঝুঁকে পড়া বা তাদের নিয়োগ কারও স্বার্থের অনুকূল হবে না। কারণ, সেই হুমকিটা সব দেশে ছড়িয়ে পড়বে।প্রথম আলো: রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন ও ভারতের শিথিল মনোভাবকে কীভাবে দেখেন, যদিও তাদের জানা যে ওই অঞ্চলে সম্ভাব্য ইসলামি জঙ্গিত্বের কোনো উত্থান দীর্ঘ মেয়াদে তাদের নিরাপত্তা স্বার্থকেই ব্যাহত করবে।রোহান গুনারত্নে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত ও চীন—সব বড় শক্তিই মুসলিম হুমকি-গোষ্ঠী দ্বারা ভুগছে। চীন ও ভারত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর তরফে কোনো হুমকি আশা করে না, আবার একই সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের বাইরে গিয়ে মিয়ানমারকে তারা চটাতে চায় না। কারণ, বিষয়টি জটিল। আবার মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তার করা নিয়ে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা রয়েছে। চীন বা ভারত—কেউ মিয়ানমারের ওপর তাদের খবরদারি হারাতে চায় না। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাটাই এ রকম যে সেখানে অপ্রথাগত নিরাপত্তা হুমকি ভূরাজনৈতিক স্বার্থের ওপর ঠাঁই পায় না।প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।রোহান গুনারত্নে: ধন্যবাদ।সাক্ষাৎ​কারের পূর্ণাঙ্গ ইংরেজি ভাষ্য পড়ুন: en.prothomalo.com
বর্ষাকাল। তবে রোদের তেজ কম নয়। এ সময় আরামের কথাই ভাবতে হয় সবার আগে। ছেলেরা শার্ট, টি–শার্ট যা–ই পরেন, সেটা হাল ফ্যাশনের আর ফুরফুরে হওয়াই ভালো। রংটাও এমন বেছে নিতে হবে, যাতে চোখে আরাম লাগে।আঁটসাঁট পোশাক পরে ১০টা–৫টা অফিস। এর বাইরেও তো জীবন আছে। সন্ধ্যায় ঘোরাঘুরি বা ছুটির দিনের আড্ডা তো ক্যাজুয়াল পোশাকেই জমবে। পঞ্জিকার হিসাবে বর্ষাকাল চলছে। তবে রোজ বৃষ্টির দেখা নেই। বরং গুমোট গরম। বাইরে গেলেই হাঁসফাঁস লাগে। ছেলেদের পোশাক নির্বাচনে তাই দরকার খানিকটা চিন্তাভাবনা। এ সময় ফুরফুরে পোশাকেই লাগবে আরাম। টি-শার্ট, পোলো বা পাতলা শার্ট—যেটাই পরেন, সেখানে রং হওয়া চাই এমন যেটি চোখে আরাম দেবে। ডিজাইনারদের ভাষায় ‘লাইট কালার’। এতে প্রশান্তি মিলবে আবার সময়ের সঙ্গেও থাকতে পারবেন। ফ্যাশন হাউস ইজির পরিচালক তৌহিদ চৌধুরীর পরামর্শ, ‘অধিকাংশ তরুণই এখন পোলো বা টি-শার্ট পরতে ভালোবাসেন। তাই ভাবনা ছাড়াই এ সময়ে বেশি বেশি টি-শার্ট পরতে পারেন। গরমের দিনে গাঢ় বা কালচে রং এড়িয়ে চোখে আরাম লাগে এমন রং বেছে নিতে হবে।’চলচ্চিত্র অভিনেতা রোশানও ভালোবাসেন টি-শার্ট পরতে। বললেন, ‘ক্যাজুয়াল থাকতেই বেশি পছন্দ করি। তাই ডেনিম প্যান্টের সঙ্গে টি-শার্ট থাকে আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে। একরঙা টি-শার্ট পরি বেশি। শার্ট পরলেও গরমের কথা মাথায় রেখে সুতির পাতলা কাপড় বেছে নিতে চেষ্টা করি।’ বাজারে যা আছেবিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ঘুরেও দেখা গেল, ছেলেদের অধিকাংশ শার্ট এখন সুতি কাপড়ের। শার্টের ক্ষেত্রে একরঙার চেয়ে ছাপা নকশা বেশি চলছে। জমিনজুড়ে ছাপা যেমন আছে, কিছু কিছু ছাপা আছে শুধু পকেট বা হাতার ব্যান্ডে। শার্টের বাটনপ্লেটেও চিকন লম্বাটে করে ছাপ চোখে পড়ে। জেন্টল পার্কের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘শার্টে তো ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) প্রিন্টও করা হচ্ছে এখন। আর গরমের কারণে যতটা সম্ভব নরম কাপড় দিয়ে শার্ট তৈরি করা হচ্ছে। টি-শার্টে হচ্ছে নানা রকম ওয়াশ।’একটা কাপড় যখন কোনো ধরনের প্রক্রিয়াকরণ ছাড়াই শার্ট বা টি-শার্টে ব্যবহার করা হয়, তখন সেটা অনেক সময় অমসৃণ ও মোটা থাকে। তাই কাপড় ওয়াশ করে সেটাকে নরম করা হয়। টি-শার্টের কাপড় আরামদায়ক করতে আজকাল একাধিক ওয়াশ করা হচ্ছে। কুল ডাই করা টি-শার্ট বেশ কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয়। কিছু ফ্যাশন হাউসে এখনো দেখা মিলছে কুল ডাই করা টি-শার্ট। গোল গলার টি-শার্টের সামনের দিকে নানা রকম লেখা ও ছবি আছে। বিশেষ করে তরুণেরা এ ধরনের টি-শার্ট বেশি পরছেন বলে জানালেন দোকানিরা। তবে টি-শার্টের সামনের দিকে বড় কোনো ছবির ছাপ থাকলে সেটার কারণে পর্যাপ্ত বাতাস শরীরে লাগবে না। ফলে ঘেমে যেতে পারেন। তাই টি-শার্ট কেনার ক্ষেত্রে কম জায়গাজুড়ে নকশা দেখে নিতে পারেন। রঙের ক্ষেত্রে লেবুরঙা, আকাশি, হালকা গোলাপি, লালচে, সাদা, চাঁপা সাদা, হলুদ, শেওলা ইত্যাদি বেশি ভালো এ সময়। যেখানে যেমন দামনিউমার্কেট, বঙ্গবাজার, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের মতো দোকানে শার্ট কিনতে গেলে দাম পড়বে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার মতো। আর টি-শার্ট পাবেন ২০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। পোলো শার্টের দাম এখানে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তবে ফ্যাশন হাউসে শার্টের দাম পড়বে ১ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। সেখানে পোলো বা টি-শার্ট কিনতে পারবেন ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। পুমা বা অ্যাডিডাসের মতো আন্তর্জাতিক নানা ব্র্যান্ডের টি-শার্ট পাওয়া যায় ঢাকায়। সেসব টি-শার্ট কিনতে চাইলে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা লাগবে।
নতুন অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বেশ বড় একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এমনিতে বাজেট বক্তৃতায় স্বপ্ন আর প্রতিশ্রুতির অভাব থাকে না। শেষ পর্যন্ত অনেক স্বপ্নই পূরণ হয় না, প্রতিশ্রুতিরও বাস্তবায়ন হয় না। সাধারণ মানুষ ভুলেও যায়। তবে এবার স্বপ্ন ও প্রতিশ্রুতির কথা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্ভবত বিশেষভাবে বলতে চেয়েছেন। পুরো বাজেট বক্তৃতায় বিশেষ বিশেষ অংশ তিনি ‘বোল্ড’ করে রেখেছেন, যাতে সহজে নজরে আসে। যেমন ১২ পৃষ্ঠায় ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘এখানে দেশবাসীকে অবহিত করাটা প্রয়োজন মনে করছি যে, আমরা ২০১৯-২০-এর বাজেটটিতে দেশের জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে, তেমন কোনো উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করিনি।’অর্থমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতিপূর্ণ নতুন বাজেট ১ জুলাই (গত সোমবার) বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। এই দিন আবার নতুন অর্থবছরেরও প্রথম দিন। আর নতুন অর্থবছর শুরুই হলো নিজের পকেট থেকে ১৭৫ টাকা বাড়তি খরচের বোঝা নিয়ে। এটা কেবল রান্নাঘরের গ্যাসের চুলায় প্রতি মাসে বাড়তি খরচ। এতেই পার পাওয়া যাবে না। কারণ, বেড়েছে সব ধরনের গ্যাসের দাম, গড়ে ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ। সুতরাং এর প্রভাব পড়বে জীবনযাপনের সব ক্ষেত্রে। গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানায় বাড়বে উৎপাদন খরচ, বাড়বে পণ্যমূল্য। প্রভাব পড়বে পরিবহনেও। চাপে পড়বেন সীমিত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষেরা।একটি সরকারের জাতীয় বাজেট ও একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বাজেটের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। সরকার আগে ব্যয়ের খাত ঠিক করে, এরপর আয়ের উৎস দেখে। ঘাটতি পূরণে সরকার ধার নিতে পারে এবং সেই ধার পরের অর্থবছরগুলোতে চালিয়ে নিতে পারে। কিন্তু একজন ব্যক্তির বাজেট ঠিক উল্টো। আগে আয়, সেই অনুযায়ী ব্যয়ের চিন্তা। সামর্থ্যের বাইরে ধার করার সুযোগ ব্যক্তির নেই। সুতরাং যেকোনো ধরনের বাড়তি ব্যয় সাধারণ নাগরিকদের ব্যক্তিগত বাজেটকেই এলোমেলো করে দেয়। নতুন অর্থবছর আরও অনেক ক্ষেত্রেই বাজেট এলোমেলো করে দেবে।এখন অর্থমন্ত্রী বলতে পারেন, গ্যাসের দাম তো বাজেটে বাড়ানো হয়নি, তাই এটি তাঁর এখতিয়ারের বাইরে। আসলে এবারের বাজেটের অনেক প্রস্তাবই চাপে ফেলবে অসংখ্য মানুষকে। এর অনেক চাপ আর্থিক, বেশ কিছু চাপ অবশ্যই মানসিক। সৎ ও নিয়মিত করদাতাদের কোনো রকম ছাড় না দিয়ে কালোটাকার মালিকদের বিশেষ সুযোগ দেওয়াটা এ রকমই এক চাপ।ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ বছর ধরে বাড়েনি, বাংলাদেশে সম্ভবত এটি একটা নতুন রেকর্ড। যদিও এ সময়ে প্রায় ৩১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এর মানে হলো, আগের চেয়ে কম প্রকৃত আয় করেও মানুষ করের আওতায় চলে আসছেন। আবার চাকরিজীবীরা কর এড়িয়ে যাবেন, সে সুযোগ নেই। কেননা, কর বিবরণী বা রিটার্ন না দিলে প্রতিষ্ঠান বেতন দিতে পারবে না। সুতরাং এখানে স্বস্তি নেই। আবার ব্যক্তি করদাতারা কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ কিনে বিনিয়োগ দেখিয়ে কিছুটা কর ছাড় পেতেন। সেটা তুলে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।কিন্তু ধনীদের সম্পদে সারচার্জে ঠিকই ছাড় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ বছর থেকে তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে তবে সারচার্জ দিতে হবে, যা আগে ছিল দুই কোটি টাকা। সাদাচোখে অবশ্য অতিধনীদের কাছ থেকে কিছু টাকা আদায়ের চেষ্টা হয়েছে। যেমন ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে তার সম্পদ মূল্যের দশমিক ১ শতাংশ অথবা আয়ের ৩০ শতাংশ, যেটা বেশি সেটা সারচার্জ হিসেবে দিতে হবে। আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশে সম্পদ বাজারমূল্যে না দেখিয়ে ক্রয়মূল্যে দেখানো হয়। এ ছাড়া ধনীদের গাড়িসহ অন্যান্য সম্পদ কোম্পানির নামে দেখানোর প্রবণতা রয়েছে। ফলে এই খাতে কর আদায় হয় সামান্যই।বাজেট বাস্তবায়ন প্রতি অর্থবছরের চ্যালেঞ্জব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ বছর ধরে বাড়েনি, দেশে এটি নতুন রেকর্ড ধনীদের সম্পদে সারচার্জে ঠিকই ছাড় দেওয়া হয়েছে বাজেটে পরোক্ষ কর সব শ্রেণির মানুষের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেবাজেটে এবার প্রত্যক্ষ করে সাধারণ করদাতাদের কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি, কিন্তু চাপানো হয়েছে পরোক্ষ করের বোঝা। এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট। এটি সবচেয়ে বড় পরোক্ষ কর, যা সরাসরি দেবেন ব্যবসায়ীরা, কিন্তু টাকাটা যাবে মূলত সাধারণ ভোক্তাদের পকেট থেকেই। সারা পৃথিবীতে যেখানে প্রত্যক্ষ কর আদায়ে জোর দেওয়া হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে পরোক্ষ করের মাধ্যমে সব শ্রেণির মানুষের ওপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে। এমনিতে কর-জিডিপি অনুপাতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান প্রায় সর্বনিম্নে। যাঁরা এই অনুপাত বাড়িয়েছেন, তাঁরা মূলত ভর করেছেন প্রত্যক্ষ করের ওপর। অথচ আমরা বাড়িয়ে চলেছি পরোক্ষ কর।যদিও অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় মোটা হরফে বলেছেন, ‘আমাদের সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হলো, আমরা কোনোভাবেই কোনো করদাতার ওপর বোঝা হিসেবে কর চাপিয়ে দেওয়ার বিপক্ষে।’ এরপর অর্থমন্ত্রী ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের অর্থমন্ত্রীর একটি উক্তির কথা বলেছেন। তাঁর মতে, কর আদায়ে এটাই অনেকটা তাঁর সরকারের নীতি। আর উক্তিটি হলো, ‘রাজহাঁস থেকে পালক ওঠাও যতটা সম্ভব ততটা, তবে সাবধান, রাজহাঁসটি যেন কোনোভাবেই ব্যথা না পায়।’আমরা সবাই জানি, পরোক্ষ কর আদায়ে ব্যথা পাওয়া যাবেই। আর প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো সেই সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁসটির মতো। বারবার ডিম দেয় বলেই তার ওপরই যত ভরসা, যত নির্যাতন। দেখা যায় বাংলাদেশে যাঁরা নিয়মিত আয়কর দেন, চেষ্টা থাকে তাঁদের কাছ থেকেই যত বেশি আদায় করা যায়। আর যাঁরা দেন না বা ফাঁকি দেন, তাঁরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সুখের কথা, অর্থমন্ত্রী নিজেও তা স্বীকার করেছেন। বক্তৃতায় বলেছেন, ‘আমাদের দেশে একবার যাঁরা কর প্রদান করেন, তাঁরাই প্রতিবছর সরকারকে কর প্রদান করে থাকেন। অন্যরা কর প্রদানে শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও তাঁরা কর প্রদান করেন না। এই অপসংস্কৃতি থেকেও আমরা বেরিয়ে আসতে চাই।’ অর্থমন্ত্রী এই প্রতিশ্রুতি রাখবেন আশা করি।একটা সাধারণ কিন্তু বহু চর্চিত কথা হচ্ছে বাজেট বাস্তবায়নই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। আসলে এ নিয়ে কথা কম বলাই ভালো। কেননা, এই চ্যালেঞ্জ সরকার নেবে বলে মনে হয় না। বরং গতানুগতিক পথেই হবে বাজেট বাস্তবায়ন। যেমন অর্থবছরের শুরুতে বড় বাজেট পেশ, কিন্তু অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আয় হবে না, কমাতে হবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার। ফলে বাস্তবায়িত হবে না মূল বাজেট, করতে হবে সংশোধন। বছরের পর বছর এটি চলে আসছে। একই কাঠামোতে এবারের বাজেটটিও দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এই বাজেটের ভাগ্যও হবে একই রকম। নাকি নতুন অর্থমন্ত্রী সত্যিকার অর্থে বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জটি নেবেন, সেটাই এখন প্রশ্ন।
মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে নিত্য উপহারের অন্দরমহলে তখন টুকটাক বিকিকিনি চলছে। ফ্যাশন হাউসটির স্বত্বাধিকারী বাহার রহমান কাজের ফাঁকে ফাঁকে ইউটিউবে সিএনএন চ্যানেলের খবর দেখছেন। টেবিলে ২৯ জুনের প্রথম আলো। তাঁর বসার পরিবেশ অনাড়ম্বর; কিন্তু কোথায় যেন সৃজনশীলতার ‘জলছাপ’—সহজে দেখা যায় না, খেয়াল করলে ধরা পড়ে। বাহার রহমানের চেয়ারের পাশেই বইয়ের তাক। সেখানে সাজানো কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ, শিশুসাহিত্য আর চিত্রকলার বই। বইগুলোতে ধুলা জমেনি। ধুলা জমেছে ছাদের তাকে বান্ডিল করে রাখা কাগজপত্রে। নিত্য উপহারের হিসাবের কাগজপত্রই হবে হয়তো। উনিশে পা দিল নিত্য উপহার; প্রতিষ্ঠানটি ১৮ বছরে তরুণদের জন্য এনেছে ১ হাজার ২১৯টি ডিজাইনের টি–শার্ট। দীর্ঘদিনের হিসাবের কাগজে ধুলা তো জমবেই।টি–শার্টের মাধ্যমে দেশের ঐতিহ্য বুকে বুকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিত্য উপহার নিত্যই প্রশংসা কুড়াচ্ছে। ১৮ বছর পেরোনোর পর কী মনে হচ্ছে বাহার রহমানের? উত্তরে বললেন, ‘আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প এক মিনিটে যে পরিমাণ পোশাক উৎপাদন করে, নিত্য উপহার হয়তো সেটা করেছে ১৮ বছরে। কিন্তু আমরা শুরু থেকেই পোশাকের মাধ্যমে স্বদেশি চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি। দেশের অনেক গুণী শিল্পী আমাদের টি–শার্ট বা শাড়ির নকশা করেছেন। সহজ জনপ্রিয়তার রাস্তায় না হেঁটে তাঁরা আমাদের নিজস্ব নকশা ও গৌরবের বিষয়গুলোই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ফলে তরুণদের কাছে নিত্য উপহারের পোশাক মানে অনুপ্রেরণাও।’এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আগামী প্রকাশনী থেকে ৬৪ জেলায় কী দেখেছি: সাইকেল ভ্রমণের রোজনামচা নামে একটি বই বেরিয়েছে। তাতে লেখক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম ‘শুরুর আগে’ অংশে লিখেছেন, ‘শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের “নিত্য উপহার” থেকে একটা টি–শার্ট কিনেছিলাম। টি–শার্টে লেখা ছিল, “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া”। তখনই মাথায় ঢুকে গিয়েছিল, দেশ দেখতে হবে। বলা যায় এই তাড়নাতেই ২০০৮ সালে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ সাইকেলে ভ্রমণ করেছিলাম।’ বাহার রহমান নিত্য উপহারের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠার যে কথা বলছিলেন, তার মোক্ষম উদাহরণ। তবে নিত্য উপহার গড়ে তোলায় অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন কোথা থেকে? ২০১৮ সালে প্রথম আলোতে প্রকাশিত বাহার রহমান নিজের এক লেখায় উল্লেখ করেছিলেন, ‘আমাদের স্বকীয়তা, নিজস্ব ভাবনা ও আত্মপরিচয়’। নিত্য উপহার প্রথম টি–শার্ট আনে ২০০১ সালে, অচেনা এক বাংলাদেশের বৈরী সকালে। পয়লা বৈশাখের ওই সকালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় পরিবেশ থমথমে। কিন্তু ততক্ষণে শিল্পী ধ্রুব এষ ও সব্যসাচী হাজরার নকশায় সাতটি টি–শার্টের মোড়ক উন্মোচনের জন্য প্রস্তুত। নিত্য উপহারের বন্ধু–স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে মোড়ক উন্মোচন ও প্রদশর্নীর উদ্বোধন করলেন শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্য। শুরু থেকেই নিত্য উপহারের টি–শার্ট তরুণদের প্রিয় পোশাক হয়ে উঠল। এখন এ দেশের শিক্ষিত তরুণেরা ভিনদেশে পাড়ি জমানোর আগে আজিজ কো–অপারেটিভ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার নিত্য উপহার থেকে অন্তত একটি হলেও টি–শার্ট কিনে নিয়ে যান। বিশেষ করে ‘পতাকা টি–শার্ট’টি।কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, আবুল বারক আলভি, শেখ আফজাল ও চন্দ্রশেখর সাহার মতো চিত্রশিল্পী ও ডিজাইনাররা নিত্য উপহারের জন্য নকশা করেছেন। ধ্রুব এষ, সব্যসাচী হাজরার হাতের ছোঁয়া তো ছিল শুরু থেকেই। এ ছাড়া আনিসুজ্জামান সোহেল, নাজিব তারেক, কনক আদিত্যসহ আরও অনেক গুণী শিল্পীর নামও জড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে। উদ্যোগ, ভাবনা ও পরিকল্পনায় শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন অনুপম চক্রবর্তী, তনুজা ভট্টাচার্য, আমীরুল রাজিব, মুনেম ওয়াসিফ, সৈয়দ নিজার, নিলিম, টুটুলসহ আরও কজনের নাম। এখন পর্যন্ত ৫৫ জন শিল্পী, ৪৫ জন শিশুশিল্পী ও বেশ কজন আলোকচিত্রীর তোলা ছবি দিয়ে টি–শার্ট বানিয়েছে নিত্য উপহার। তবে ওই যে পতাকা টি–শার্টটিই জনপ্রিয়তার শীর্ষে। খুব সহজ নকশা—সবুজের বুকে লাল বৃত্ত। তবে বাহার রহমান যা বলতে চাইলেন তাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণীর ছায়া, ‘সহজ নকশা যায় না করা সহজে’! ২০০৪ সালে স্লোভাকিয়ার এক তরুণ টম বরিস স্নাতক শেষে বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। নীলক্ষেতের পুরোনো বইয়ের দোকানে টি-শার্ট পরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে দেখে জানতে চান, ‘এই টি–শার্ট কোথায় পাব?’ জবাব এল, ‘আজিজ মার্কেটে পাবেন।’ বাহার রহমান বলেন, ‘টম বরিস আমার এখানে আসেন। নানা কথাবার্তার পর বলেন, “তোমাদের পতাকা ফুটে ওঠে, এ রকম কোনো স্যুভেনির, টি-শার্ট নেই?” আমি বললাম, “তুমি কদিন থাকবে? দেখি পারি কি না!” কিন্তু হলো না। দুটি টি-শার্ট নিয়ে গেলেন বরিস। আরও একটির দাম অগ্রিম দিয়ে গেলেন, “যদি করতে পারো, পাঠিয়ে দিয়ো আমার ঠিকানায়।” মে অথবা জুনে পাঠানো গেল শেষমেশ। টম বরিস মেইল করলেন, “তুমি ঠিক আছ তো! তোমার দেশে বন্যা হয়েছে, টেলিভিশনে দেখলাম। তোমার এই পতাকার প্রতীক টি-শার্টটি একদিন খুব জনপ্রিয় হবে, দেখে নিয়ো। গুড লাক। বরিসের কথাটি ফলে গেল। পতাকা টি–শার্ট দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠল।’এভারেস্ট বিজয়ী বাংলাদেশি পর্বতারোহীরা তাঁদের অভিযানের সময়ও পরেছেন এই পতাকা টি–শার্ট। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দল তো এই টি–শার্টটিকে জার্সি হিসেবে গায়ে চাপিয়েছে। জিতেছে স্বর্ণপদক। বাহার রহমান বলেন, ‘টি–শার্ট কখনো শিল্পীর ক্যানভাস, কখনো হয়ে ওঠে স্মারক, স্যুভেনির বা মোমেনটাম; আবার কখনো গর্বের ও প্রেরণার প্রতীক। স্মারক এমন এক ধারণা, যা আমদানি বা রপ্তানি করার মতো নয়, কিন্তু বিনিময় ও সংগ্রহ করা যায়। নিত্য উপহার সেটাই করতে চেয়েছে। মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।’১৮ বছর পূর্তি গত ২২ জুন ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী মিলনায়তনে ‘স্বদেশী চর্চার ১৮ বছর পূর্তি উদ্​যাপন, প্রদর্শনী’র আয়োজন করেছিল নিত্য উপহার। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিল্পী হাশেম খান বলেন, ‘নিত্য উপহার স্বদেশি চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের পোশাকের ক্ষেত্রে বাহার রহমান ও নিত্য উপহার একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে।’
গত ১৯ মে ২০১৯, প্রথম আলোর আয়োজনে ও কিশোর আলো এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‘সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে সামাজিক সম্প্রীতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশ হলো।আলোচনায় সুপারিশসম্প্রীতিকে জীবনের একটি দর্শন হিসেবে নিতে হবেঅনে্যর মতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে এবং সবার বিশ্বাস ও মত মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন তরুণদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেন তারা উগ্রবাদের দিকে না যায়আমাদের মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়া জরুরিপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে সমাজে শান্তি আসবেএকটি নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের কথা না ভেবে সব বয়সের মানুষের কথা ভাবতে হবেসহিংস উগ্রবাদ রোধ করতে পরিবার থেকেই উদ্যোগ শুরু করা দরকারসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজনআলোচনা আব্দুল কাইয়ুমআমাদের সমাজে দিন দিন অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাচ্ছে। খুব ছোটখাটো ব্যাপারে মাঝেমধ্যে বড় রকমের সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। তরুণদের মধ্যে কিছুটা হতাশা ও বেকারত্ব কাজ করে। এ ছাড়া ছোটখাটো স্বার্থের দ্বন্দ্বও আছে। আমাদের সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সব সময় সম্প্রীতি ছিল। এটা স্বাধীনতার একটি মূল কথা। আজকে আমরা আলোচনা করব সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে সামাজিক সম্প্রীতি কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। এই বিষয়ে এখন আলোচনা করবেন শাহীন আনাম। শাহীন আনাম‘ভিন্নতা ও ভিন্নমত গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগাতে হবে।’মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন মানবাধিকার ও সুশাসন নিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কাজ করছে। সমগ্র বাংলাদেশে আমাদের প্রায় ১৩০টি সহযোগী সংগঠন রয়েছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের দুটি প্রকল্প সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে কাজ করছে।আমাদের তরুণসমাজ অনেক সম্ভাবনাময়। তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিতে হবে। তরুণদের ইচ্ছে, স্বপ্ন, চিন্তা ও মতামত আমাদের জানতে হবে। তাদের ইচ্ছে ও চাহিদার কথা শুনলে সহিংস উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে। আগে ধারণা করা হতো ধর্মীয় উগ্রবাদই সহিংস উগ্রবাদের কারণ। কিন্তু এ ধারণাটি আসলে সঠিক না।হোলি আর্টিজান বেকারির ঘটনার পর থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলো সহিংস উগ্রবাদকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে এবং তা প্রতিরোধে একযোগে কাজ করছে।আমাদের দেশে বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও পেশার মানুষের বসবাস। সব মানুষের এই বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করে সম্প্রীতি বজায় রেখে একসঙ্গে বসবাস করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে। প্যারেন্টিংয়ের ধরনে আসছে পরিবর্তন। ছোটবেলা থেকে আমাদের সম্প্রীতি শেখানো হচ্ছে না। তাই আমাদের পরিবারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বোপরি চিন্তাচেতনার মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতির ধারণা তৈরি করতে হবে।সহিংস উগ্রবাদ বিস্তারে তরুণসমাজকে টার্গেট করা হচ্ছে। আর সে জন্যই মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন বর্তমানে তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে বেশি কাজ করছে এবং এ ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছে।ধর্ম আমাদের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধর্মীয় শিক্ষা হতে হবে অন্তর্ভুক্তমূলক (ইনক্লুসিভ) যেখানে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি, সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে ধর্ম এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে যে আমরা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিলে বিধর্মী বলে চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছি। ধর্ম ও সংস্কৃতির এই দ্বন্দ্ব এখনো বিদ্যমান। পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো ব্যবহার করে আমাদের এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ ছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহার জীবনে নিয়ে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। তাই একে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে হবে।ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে কতটা বড় ভূমিকা পালন করে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা সবাই একমত যে সহিংস উগ্রবাদের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। এর পেছনে অনেক কারণ জড়িত। এ জন্য আমাদের পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে সমস্যা সমাধান করতে হবে। ইসফাক ইলাহী চৌধুরী সহিংস উগ্রবাদ রোধে বাংলাদেশ সরকার হার্ড অপশনের পেছনে যত টাকা খরচ করেছে, সফট অপশনের ক্ষেত্রে তার সামান্য অংশও খরচ করেনি। আমরা অনেক ক্ষেত্রে অপচয় করি। টাকা নষ্ট না করে বই কিনতে পারতাম। ল্যাবরেটরির জন্য রাসায়নিক দ্রব্য কিনতে পারতাম। আমাদের সামাজিক ব্যয়টা ঠিকভাবে হচ্ছে না। সামাজিক সম্প্রীতি এখন খুব চ্যালেঞ্জের মুখে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার হচ্ছে। অনেক সময় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। ধর্মের একটা বিশাল ঐতিহ্য আছে। বিশাল জ্ঞান–বিজ্ঞানের ইতিহাস আছে। এটা কাজে লাগাতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ধর্ম থেকে সহিংস উগ্রবাদের সৃষ্টি হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডে যখন হামলা হলো, তখন আমরা সবাই হতাশ হয়ে পড়লাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব হইচই হয়েছে। কিন্তু যখন শ্রীলঙ্কায় হামলা হলো তখন কেন দাঁড়িয়ে বললাম না, আমরা বাংলাদেশে চার্চকে পাহারা দেব! আমরা বাংলাদেশে এটা হতে দেব না। দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। তাহলেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।  আনিসুল হকপরিবার আমাদের সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। পরিবার থেকেই সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধ শুরু করতে হবে। আমরা পঞ্চম শ্রেণি থেকে যে জিপিএ-৫ শুরু করি, এই ফলাফলটা অভিভাবকের দরকার। আমাদের শিশুদের এটা দরকার হয় না। বাস্তবজীবনের সাফল্যের সঙ্গে স্কুলজীবনের ফলাফলের ভূমিকা খুব কম। জিপিএ-৫ না পেলে মা বড়মুখ করে বলতে পারেন না, আমার সন্তান গোল্ডেন ফাইভ পেয়েছে। ভালোবাসার বন্ধনে শিশুদের আবদ্ধ করতে হবে। সে জন্য শিশুদের দৃষ্টিতে জগৎটাকে দেখা দরকার। বর্তমানের শিক্ষা অনেকটা ব্যবসা ও ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক। মানুষের সাফল্যের অর্থ দাঁড়িয়েছে সফল ক্যারিয়ার ও টাকাপয়সা। বিসিএস খুব ভীষণ একটা চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৪ লাখ ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দেয়। আসন থাকে মাত্র ২ হাজার। আপনি যেভাবেই পড়ুন না কেন, ৩ লাখ ৯৮ হাজার জন এই পরীক্ষায় পাস করবে না। সেই জন্য লেখাপড়ার মধ্যে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি থাকা দরকার।শিশুদের বেশি খেলাধুলা করা দরকার। কারণ, খেলাধুলা শুধু জয়লাভ করা শেখায় না, পরাজয়টা মেনে নিতে শেখায়। এত সাফল্য এত বিজয় দরকার নেই। সুন্দরভাবে পরাজিত হতে শেখো, পরাজয় মেনে নিতে শেখো। এ জন্য ডিবেট করো। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করো। শুধু জয়লাভের জন্য না। সবকিছুকে সহজ–সুন্দরভাবে মেনে নেওয়া দরকার। আকাশে এত সুন্দর মেঘ, এত সুন্দর চাঁদের আলো, পাখির গান, ভাই–বোনের সম্পর্ক, মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক, দেশকে ভালোবাসা, পৃথিবীকে ভালোবাসা। এগুলো আমাদের শিশু–কিশোর–তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। সংগীত, নৃত্য, শিল্পকলা, সাহিত্য, বই পড়া, বেড়াতে যাওয়া, বনভোজন, বিজ্ঞান ক্লাব এগুলো কিশোরদের মধ্যে বিপুলভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমি শিশুদের বলি, অন্যের উপকার করে নিজেকে ধন্য করো। একজন মানুষের মুখেও যদি হাসি ফোটাতে পারো, সেটা অমূল্য ব্যাপার। কবিতায় আছে, গোপনে প্রেম রয় না ঘরে, আলোতে প্রেম ছড়িয়ে পড়ে। আমরা চাই বাংলাদেশের সব কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক। মো. তৌহিদুল ইসলামকোনো কোনো তরুণ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। এর নির্দিষ্ট একটি কারণ নির্ধারণ করা যাবে না। সহিংস উগ্রবাদকে সাধারণভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টা আসলে খুবই জটিল। বাংলাদেশ একটি সামাজিক সম্প্রীতির দেশ। এখানে মানুষ সামাজিক সম্প্রীতির সঙ্গেই বসবাস করে। জঙ্গিবাদের কারণগুলো দেখতে হলে অনেক গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। শুধু যে সামাজিক সম্প্রীতির অভাবেই সহিংস উগ্রবাদের সৃষ্টি হয়, তা নয়। সমাজের বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রীতি ফোরাম থাকতে পারে। যেখানে বিভিন্ন ধর্ম, গোষ্ঠী ও মতামতের মানুষ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। দেশের প্রতিটা জায়গায় এই ছোট ছোট ফোরাম হওয়া দরকার। এটা হতে পারে মসজিদভিত্তিক বা স্কুলকেন্দ্রিক অথবা অন্য উপাসনালয়কেন্দ্রিক। তাঁরা যেন রাষ্টীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে পারেন, সেই সুযোগ তৈরি করা উচিত।  কাজী মারুফুল ইসলামসামাজিক সম্প্রীতি বাড়াতে পরিবার অবশ্যই বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পরিবারের একার পক্ষে এই ভূমিকা পালন করা সম্ভব নয়। এটা একটি বহুমাত্রিক সমস্যা। দেশে সংকট কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা ভেবে দেখা দরকার। আমরা শুধু তরুণদের নিয়েই ভাবছি। তারা নাটের গুরু না। তরুণদের ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু যারা এই তরুণদের চালাচ্ছে, তারা কেউ তরুণ নয়। কিন্তু আমরা তাদের বাদ দিয়ে শুধু তরুণদের নিয়েই ভেবে যাচ্ছি। এই সমস্যাটা একটি ভাইরাসের মতো। এটা তরুণ আর বয়স্ক বাছবিচার করে না। রাষ্ট্রের কাজ হবে মানুষের মতপ্রকাশের জায়গাটা স্পষ্ট করা। উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করা এবং তরুণেরা যেন তাদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক শক্তি পায়, সেগুলো নিশ্চিত করা। এ ছাড়া আমরা অনলাইনের কথা বলি। আমরা যদি ছেলেমেয়েদের চাহিদা পূরণ করতে না পারি, তাহলে তারা অনলাইনের সুবিধা নেবেই। হয়তো একটা ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গেল, তাকে ফেলে তো দেওয়া যাবে না। তাকে সহানুভূতি দিয়ে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা এই পথে চলে গেছে, তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, সেই ব্যবস্থাই আমাদের করতে হবে। এই দায়িত্বটা পরিবার, বিদ্যালয় এবং রাষ্ট্র—সবার। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ বন্ধ করার জন্য টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।  হামিদুল হকআমি গত ছয় মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের সঙ্গে কাজ করেছি। তরুণেরা মূল হোতা নয়। তারা শিকারে পরিণত হয়েছে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলে কোথাও তরুণদের তেমন সুযোগ নেই। এমনকি ক্লাবে, খেলার মাঠেও তাদের সুযোগ নেই। বাংলাদেশে এখন অধিকাংশ তরুণেরা এভাবে সুযোগবঞ্চিত। এই ছেলেমেয়েরা কী বলতে চায়? তাদের মধ্যে কেউ সম্প্রীতির সমালোচনা করেছে? কেউ বলেছে সম্প্রীতি হতে পারে জীবনের দর্শন? কীভাবে তরুণেরা সহনশীল হবে? সহনশীলতায় বিশ্বাসী হবে। এটাই হতে পারে তার জীবনের দর্শন। এটাকে আমি একটি সফলতা মনে করি। দেশে জঙ্গি হিসেবে যাকে চিহ্নিত করা হয়, তার পরিণতি হয় ভয়াবহ। কিন্তু যিনি তাঁকে জঙ্গিবাদে আসক্ত করছেন, তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন। উগ্রবাদে আসক্ত করার জন্য এই হোতারা সাধারণ মানুষের মাথায় একটা মতবাদ ঢুকিয়ে দেয়। সেটা হলো তার মতের বিপরীতে যদি কেউ কথা বলে, তাহলেই সে তার শত্রু। যদি এমন কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া যায়, যে এ ধরনের অবস্থার শিকার, তাহলে তাকে প্রথমে ভালো পথে আনার চেষ্টা করা হবে। তাতে যদি সে ভালো না হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্প্রীতি যদি একটি দর্শন হিসেবে ধারণ করি, তাহলে সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে তরুণ ও বৃদ্ধদের একটি জায়গায় সচেতন হতে হবে যে আমি সহনশীল থাকব। আমি সহিংসতায় যোগ দেব না।  ফয়সাল বিন মজিদ ইউএনডিপিতে উগ্রবাদ সহিংসতা নিয়ে আমাদের কাজ। যেসব তরুণ জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে, তাদের সেদিকে আসক্ত হওয়ার কারণ কী, তা খোঁজার চেষ্টা করছি। এই তরুণদের জঙ্গিবাদের দিকে আসক্ত হওয়ার নির্দিষ্ট একটি বা দুটি কারণের মধ্যে আবদ্ধ নেই। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, বাবা-মা থেকে দূরত্ব, অস্তিত্বের সংকট, মানুষের অবহেলা। জঙ্গিবাদে আসক্ত হওয়ার এমন সব কারণও রয়েছে। জঙ্গিরা যেভাবে বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এর প্রভাব কম। আমরা যেভাবে বলি যে পরিবারগুলো প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ভেঙে যাচ্ছে, আসলে বিষয়টা তেমন নয়। পরিবারে সন্তানদের সঙ্গে মা-বাবার দূরত্ব অনেক বেশি। অন্যান্য দেশে এই সমস্যা অনেক আগে থেকে আছে কিন্তু আমাদের দেশে নতুন করে আসছে। তারপরও সম্প্রীতির জায়গাটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।আমরা কোনো নির্দিষ্ট একটা বিষয়কে জঙ্গিবাদের কারণ হিসেবে দেখাতে পারছি না। যেসব তরুণ উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকছে, তাদের আমরা একটা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতেও ফেলতে পারছি না। উগ্রবাদে শুধু একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের মানুষ জড়িয়ে নেই। এখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা স্কুল–কলেজ নিয়ে কাজ না করে, সব জনগণকে নিয়ে একত্রে কাজ করতে পছন্দ করি। কোনো রোগ যেমন স্কুল–কলেজ বা নির্দিষ্ট কোনো এলাকা মেনে হয় না, তেমনি একজন সহিংস উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়লে ওই এলাকার আরও অনেকেই উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে যারা উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ছে, তারা যে স্থান থেকেই আসুক না কেন, তাদের অন্তত একটি জায়গায় মিল রয়েছে। তা হলো তাদের সহনশীলতার অভাব আছে। সহনশীলতা যদি বাড়াতে পারি, তাহলে তা একটি ভালো কাজ হবে। সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে, তারা কখন অসহনশীল হয়ে পড়ছে। সেটা কি কিশোর বয়সে নাকি স্কুল–কলেজ লেভেলে! বাংলাদেশ দেশ হিসেবে অনেক সহনশীল দেশ। যদি সহনশীলতার দিকে আরও বেশি দৃষ্টিপাত করা যায়, তাহলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।  শাফকাত মুনিরআমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না যে শুধু প্রাইভেট বা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া ছেলেমেয়ে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত। অথবা একসময় আমরা শুনেছি, মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলেমেয়েরাই শুধু জঙ্গিবাদের দিকে আসক্ত হচ্ছে। সমাজে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের সমাজে সম্প্রীতির অনেক উদাহরণ আছে। এসব সুসংহত করার মাধ্যমে আমরা সমাজে একধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি। প্রযুক্তিনির্ভরতাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই না। কারণ, প্রযুক্তির উন্মেষ আর্থসামাজিক উন্নয়নে এক বিশাল ভূমিকা রাখছে। প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কীভাবে আমরা সম্প্রীতি বৃদ্ধি করতে পারি এবং উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি, সে বিষয়ে আমাদের গভীরভাবে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। যদি তরুণসমাজ সামাজিক মাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করে, তাহলে সেই মাধ্যমটাকে ব্যবহার করে কীভাবে তাদের কাছে আমরা সঠিক বার্তা পৌঁছাতে পারি, সেই বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। তরুণদের নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। সহিংস উগ্রবাদকে শুধু একটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান হিসেবে চিন্তা করলে হবে না। অবশ্যই জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করার জন্য নিরাপত্তা সংস্থার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। তরুণদের মধ্যে যেন আশাহীনতা বা হতাশা কাজ না করে সে বিষয়ে আমাদের দেখতে হবে। আমাদের সমাজে সে সম্প্রীতি, সংহতির উপাদান রয়েছে, সেগুলোকে সুসংহত করে আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি সে বিষয়ে দেখতে হবে।  এ কে এম নজরুল হায়দারশুধু নির্দিষ্ট একটা বয়স নিয়ে না ভেবে সব বয়সের মানুষের নিয়ে চিন্তা করি। তাহলে সমস্যাটা আরও দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। আমরা মানুষের বাইরের দিকটা দেখতে পারলেও মনের দিকটি দেখতে পাই না। অনলাইনে তরুণ থেকে শুরু করে সব মানুষের মনের দিকটা বিচরণ করে। বিশ্বের ২২০টি দেশ যখন অনলাইনে সেবা ব্যবহার করছে, তখন একটাই দেশ হয়ে যায়। সেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ থাকে। সেখানে নানা দেশের নানা মানুষ। তাদের নির্দেশনা দেওয়ার মতো কেউ নেই। অনলাইনের কোনো গাইডলাইন এখনো হয়নি। পরিবারের মাধ্যমেই সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তোলা যায়। অনলাইনের কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এখন যোগাযোগ খুবই কম হয় । সবাই নিজের মতো অনলাইনে ব্যস্ত থাকে। একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে ঠিকই কিন্তু তাদের প্রত্যেকের মনোযোগ অনলাইনে। পরিবারের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক না থাকায় সন্তানেরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়লে সেই খবর পিতামাতার কাছে থাকে না। যে ছেলেটা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত সে এক দিনে এমন হয়নি। ছোট থেকে কয়েক বছরে আস্তে আস্তে পরিণত হয়েছে। এই সময়টা কেউ খেয়াল করেনি। এক বিছানায় ঘুমানো আপনজনও জানছে না সে কোন পথে চলছে। ফলে একটা অজানা জগৎ তৈরি হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে।এ জন্য প্যারেন্টিংয়ের খুব দরকার। সন্তানদের কীভাবে ছোট থেকে গাইড করতে হবে, তা ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অভিভাবকদের শেখানো হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের ছেলেমেয়েরা কিছু ভিডিও গেম খেলে থাকে। এই গেমের প্রভাবে তারা ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ছে, নিজেদের জীবন দিয়ে দিচ্ছে। দিন দিন এ ধরনের তরুণদের হতাশা গ্রাস করছে। এখনকার তরুণদের খেলা প্রায় সব ভিডিও গেম সন্ত্রাসী ধরনের হয়ে থাকে। কীভাবে একজনকে মেরে একটি শহর দখল করা যায়, কীভাবে একটি জাতিকে শেষ করে দেওয়া যায়, তা তরুণেরা ভিডিও গেমস থেকে শিখছে। এর থেকে পার পেতে হলে পরিবার ও রাষ্ট্রের বড় ভূমিকা রয়েছে।  দিলশাদ নাহার কনাসহিংস উগ্রবাদ রোধ করতে পরিবার থেকেই সতর্ক হওয়া দরকার। এটা সম্পূর্ণই মানসিকতার ব্যাপার। ছোটবেলা থেকেই মানসিকতা জন্মাতে শুরু করে। খাবার টেবিলে বাবা-মা যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলেন, ওই বিষয়টা আমাদের মাথায় থেকে যায়। কোনো ব্যক্তি খারাপ হওয়া সত্ত্বেও বাবা-মা তাকে ভালো বললে আমরা তাকে ভালো হিসেবেই দেখি। মা-বাবার মুখের কথাই অনেক গুরুত্ব বহন করে। সহিংসতা ও উগ্রবাদের ভয়াবহতা নিয়ে সন্তানদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। সন্তানের সামনে কী ব্যাপারে কথা বলবেন, তা হিসাব করে বলা উচিত। শিশু-কিশোরদের সব থেকে বড় বন্ধু মা-বাবাই হয়ে থাকেন। আর খেলাধুলা করাটা খুব দরকার। স্মার্টফোনের যেমন ভালো দিক আছে আবার খারাপ দিকও আছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা অল্পতেই হতাশ হয়ে যায়। আমাদের সময় গান লিখে আমরা স্টেজে গান করতাম। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সহজেই গানটা অনলাইনে পাওয়া যায়। তাতে গানটা লিখতে হয় না। এখানে দেখা যায়, নেট স্পিড কম হলেই তারা হতাশ হয়ে পড়ছে। শিশুরা সারা দিন এসির মধ্যে থাকে, এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলেই তারা হতাশ হয়ে পড়ছে।তাদের অস্থিরতা বেশি। তো অস্থিরতা কমানোর জন্য কাজ করা উচিত বলে আমার মনে হয়। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে পরিবারকেই।  শাহাজাদী বেগমমানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সম্প্রীতি প্রকল্পে আমরা মূলত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছি। আমাদের কাজের মূল জায়গাটি হচ্ছে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধ। এতে তরুণদের মধ্যে মূল্যবোধ তৈরি হবে। ফলে তাদের মধ্যে সহিংস উগ্রবাদ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাা কম থাকে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সম্প্রীতি প্রকল্পে আমরা সমস্যা তৈরি হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করতে চাই। সম্প্রীতি প্রকল্পে আমরা বৃহত্তর ঢাকার ছয়টি জেলায় কাজ করছি। এই ছয় জেলায় আমাদের ৩৮টি সহযোগী সংগঠন রয়েছে। তাদের মাধ্যমে আমরা ২২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও ৩টি সরকারি দপ্তরে কাজ করতে পেরেছি। এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ডিগ্রি কলেজ, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রকল্পটিতে টিভি, মঞ্চ ও পথনাটক, বিতর্ক, খেলাধুলা, চলচ্চিত্র, কুইজ, ক্যাম্পিং, ট্রেনিং, আর্ট, লোকসংগীত ও কনসার্ট, যুব সম্মেলন, টক শো, আন্তধর্মীয় সংলাপ, অ্যাপস তৈরিসহ ৪২ ধরনের সৃজনশীল কাজে তরুণদের সম্পৃক্ত করে কাজ করছি। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, যুব সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়, টেলিভিশন চ্যানেল, পত্রিকা, বেসরকারি লিমিটেড কোম্পানি এবং অল্পসংখ্যক এনজিওর সঙ্গে পার্টনারশিপে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতগুলো জায়গায় এত ধরনের কাজ করার পেছনে আমাদের মূল লক্ষ্য তরুণদের কতভাবে সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত করা যায় এবং সেখান থেকে আমরা কী ফলাফল নিতে পারছি, সেটা দেখা। আমাদের সন্তানেরা পরিবারে কতটুকু সময় পাচ্ছে, তারা কতটুকু পারিবারিক আবহে বড় হচ্ছে তা আমাদের দেখতে হবে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকার জায়গাটিও দেখতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মাধ্যমে নোংরা রাজনীতি ছড়িয়ে পড়ছে বা ছাত্রীরা যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, সে বিষয়টি দেখাও জরুরি। ভিন্নতার দিকটিও আমাদের ভাবতে হবে। ভিন্নতাও একধরনের সৌন্দর্য। আমাদের স্বাভাবিকতা ধরে রাখার জন্যও ভিন্নতা দরকার। শুধু তরুণেরা ইতিবাচক হলেই চলবে না, সেই সঙ্গে আমরা যারা তাদের পরিচালনা করছি, তাদেরও ইতিবাচক হতে হবে।  আশরাফুন নেসা মৌরিআমি একজন তরুণ হিসেবে মনে করি, আজ সহিংস উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদ যা–ই হোক না কেন, এর পেছনে রয়েছে আত্মকেন্দ্রিকতা। এখন চার্চে, মন্দিরে, মসজিদে হামলা হচ্ছে। কেন এই হামলা! কারণ, আমরা আমাদের নিজেদের ধর্মটাকে সব ধর্মের ওপরে মনে করি। একটা পরিবারে যখন একটি শিশু বেড়ে ওঠে, সেখানে তাকে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়। সেই সময় আমাদের সন্তানদের নিজ ধর্মের ভালো দিকগুলোর সঙ্গে যদি অন্যের ধর্মেরও ভালো দিকগুলো তুলে ধরি, তাহলে আর অন্যের ধর্মকে অবহেলা করবে না। এতে মানুষ হিসেবে মানুষকে ভালোবাসতে শিখবে। একজন শিশু শৈশব থেকে কী চায় তা দেখতে হবে। সে যদি আঁকতে চায়, তাকে আঁকতে দিতে হবে। কারণ, একজন মানুষের মধ্যে সংস্কৃতি ও সাহিত্য ভাব থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা মানুষকে উদার হতে শেখায়। আমাদের ভালোটা দেখার শক্তি অর্জন করতে হবে। যদি ভালোটাকে বুঝতে না পারি, তাহলে মন্দকে আমরা দূর করতে পারব না।  আরেফিন রহমান হিমেলসম্প্রতি আমরা ৭২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০০ ছেলেমেয়েকে নিয়ে জরিপ করেছি। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কতটা আসক্ত, তা নিয়েই এই জরিপ। জরিপ দেখে আমরা হতাশ। জরিপে ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী দৈনিক তিন ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহার করছে। দৈনিক পাঁচ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। কোনো তরুণ যদি দিনের পাঁচ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে, তাহলে তার পরিবারের খবর নেওয়ার সময় কোথায়? আর আমাদের বোন বা সহপাঠীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। অনেক ছেলেমেয়ে যেকোনোভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জঙ্গিবাদে জড়িত এমন ব্যক্তির মধ্যে ৮০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সহিংস উগ্রবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। দেশের বাইরে যোগাযোগের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের পিতামাতা, শিক্ষক বা আমরা যারা বয়সে বড়, তাদের উচিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি ভালো কাজে ব্যবহার করা। বেশির ভাগ তথ্যই আমরা অনলাইনে সহজে পাচ্ছি। আবার অনেক সময় ভুল তথ্যের কারণে তরুণসমাজ ভুল পথে চলে যাচ্ছে। সুতরাং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটাকে আমাদের ভালো দিকে ব্যবহার করতে হবে।  আব্দুল কাইয়ুমআমাদের সহনশীল হতে হবে। অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আমাদের ছোটবেলার শিক্ষাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে। উদার মনের মানুষ হতে হবে। সম্প্রীতির মাধ্যমে সহিংসতা রোধে আমরা সফল হব। আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। যাঁরা অংশ নিলেন শাহীন আনাম: নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনইসফাক ইলাহী চৌধুরী: নিরাপত্তা বিশ্লেষক, ট্রেজারার, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকআনিসুল হক: সম্পাদক, কিশোর আলো, কথাসাহিত্যিককাজী মারুফুল ইসলাম: অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মো. তৌহিদুল ইসলাম: সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়হামিদুল হক: অধ্যাপক, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিফয়সাল বিন মজিদ: পার্টনারশিপ ফর টলারেন্ট, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ, ইউএনডিপিশাফকাত মুনির: রিসার্চ ফেলো ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজএ কে এম নজরুল হায়দার: আইসিটি বিশেষজ্ঞ, ফ্যাকাল্টি মেম্বার, বিইউপিদিলশাদ নাহার কনা: সংগীতশিল্পীশাহাজাদী বেগম: ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, সম্প্রীতি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনআশরাফুন নেসা মৌরি: শিক্ষার্থী, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, সদস্য, বন্ধুসভাআরেফিন রহমান হিমেল: সভাপতি, ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশ সঞ্চালকআব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো