content
stringlengths
1
63.8k
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ৩টি বাম রাজনৈতিক দল। তাঁরা বলছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে উৎপাদনশীল খাতে প্রভাব ফেলবে। জনগণের জীবন দুর্বিষহ করতেই সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে, দামবৃদ্ধির দায় চাপাচ্ছে।আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন।বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদক পরিষদের সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, গ্যাস সম্পদকে জিম্মি করে গ্যাস আমদানি করে এর সুবিধা ভোগ করবে দেশি-বিদেশি লুটেরা ব্যবসায়ীরা। তাইতো ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার্থে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণকে জিম্মি করছে সরকার। একদিকে বাজেটে কর বসিয়ে জনগণের পকেট কাটা হয়েছে, আরেকদিকে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে পকেট উজার করা হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে এই অন্যায়, অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ঠেকাতে হবে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সিপিবির পক্ষ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত টানা বিক্ষোভ চলবে বলে জানান তিনি। সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিকনেতা আবদুল কাদের বলেন, এই সরকারের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা হয়েছে। বিক্ষোভ ও পথসভার মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে হবে। সরকার যদি বাধা দেয়, তাহলে এর চেয়ে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।এইক সময় বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, জনগণের ওপর দামবৃদ্ধির দায় চাপিয়ে দিচ্ছে সরকার। গ্যাসের দামিবৃদ্ধির ফলে জনগণের নাভিশ্বাস উঠবে, দেশের শিল্প, কল–কারখানা, কৃষি সামগ্রিকভাবে উৎপাদন ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, প্রতিযোগিতায় মার খাবে। এর পেছনে যুক্তি দিচ্ছে, গ্যাস নাকি নেই, বিপুল দামে ভর্তুকি নাকি দিচ্ছে।জোনায়েদ সাকি বলেন, মানুষের সংকটকে পুঁজি করে ব্যবসার এই ফাঁদ আমরা আগে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে দেখেছি। এখন গ্যাসের ক্ষেত্রে তা চলছে। এইভাবে তারা জনগণের পকেটের টাকা হাতিয়ে নিয়ে লুটপাটের সরবরাহ করছে।বিক্ষোভে গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের অন্যতম নেতা ফিরোজ আহমেদ বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, কৃষকের জীবনের খরচ বাড়বে, পরিবহণ খরচ বাড়বে, শিল্প, কল–কারখানায় পণ্যের দাম বাড়বে। প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বাড়বে। বাংলাদেশকে লুণ্ঠনের লীলাক্ষেত্রতে পরিণত করেছে। সরকার উন্নয়নের নামে মহালুণ্ঠন করছে।সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের অন্যতম নেতা তাসলিমা আখতার, সংগঠক আরিফ দেওয়ান, ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান প্রমুখ।প্রেসক্লাবের সামনে আরেকটি বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দলটির মহানগর কমিটি এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। বিক্ষোভে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগর কমিটির সভাপতি আবুল হোসাইন বলেন, ‘সরকারের গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সিদ্ধান্ত আমরা মানি না, মানব না। এভাবে চাপিয়ে না দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরকারের সরে আসা উচিত।’ বিক্ষোভকারীরা বলেন, কোনো প্রকার আলোচনা ও যুক্তি–তর্ক ছাড়াই সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এতে করে মানুষের মধ্যে শান্তির পরিবেশ আর থাকবে না। সমাবেশে দলটির পলিটব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তফা আলমগীর প্রমুখ বক্তব্য দেন।
গতকাল এজবাস্টনে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ৩১ রানে হেরে যায় ভারত। এই হারে ভারতের সেমিফাইনাল নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়নি ঠিক, কিন্তু বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সেমির স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। পুরো উপমহাদেশের সঙ্গে ভারতের জয়ের জন্য প্রার্থনায় বসেছিলেন সাবেক পাকিস্তানি পেসার শোয়েব আখতার। কিন্তু প্রার্থনা কাজে আসেনি!শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হার দিয়ে বিশ্বকাপ ২০১৯ জমে উঠেছিল। কিন্তু কাল বিশ্বকাপ আবারও একপেশে হয়ে গেছে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বদান্যতায় পুরো উপমহাদেশের প্রার্থনা বিফলে গেছে। ম্যাচটি ইংল্যান্ড হারলেই বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সেমিফাইনালের স্বপ্নে রং লাগত, কিন্তু তার বদলে উল্টো ধূসর হয়ে গেল ভারতের পরাজয়ে।ম্যাচ জুড়ে নিজেদের ছায়া হয়ে থাকা ভারত ইংল্যান্ডের কাছে ৩১ রানে হেরে টুর্নামেন্টে প্রথম হারের মুখ দেখেছে। তবে প্রথমবারের মতো ভারতের সমর্থন করা শোয়েব আখতার ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ‘শম্বুক’ গতির আত্মসমর্পণ মেনে নিতে পারেননি।ইংল্যান্ডের দেওয়া ৩৩৮ রানের লক্ষ্য মোটেই সহজ ছিল না। ভারতকে রান তাড়ার বিশ্ব রেকর্ড করেই জিততে হতো। রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি এবং অধিনায়ক বিরাট কোহলির হাফ সেঞ্চুরিতে জয়ের পথেই ছিল ভারত। কিন্তু এই দুটি উইকেট হারানোর পর ধোনি-যাদবরা যে ভঙ্গিতে ম্যাচের শেষটা সাজালেন, তা দেখে বিরক্ত ক্রিকেট বোদ্ধা থেকে সমর্থক সবাই। এই ম্যাচের আগেই বাসিত আলি এবং সিকান্দার বখতের মতো পাকিস্তানি সাবেক ক্রিকেটাররা ভারত স্বেচ্ছায় হারবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।শোয়েব আখতার অবশ্য ভারতের বিরুদ্ধে ইচ্ছে করে হারার অভিযোগ আনছেন না, ‘দেশভাগের পর এই প্রথম ভারতকে সমর্থন করলাম। আমি নিশ্চিত, ভারত সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, কিন্তু তবুও পাকিস্তানকে সাহায্য করতে পারেনি। তবে এখনো পাকিস্তানের আশা আছে।’ভারতের জয়ের জন্য উপমহাদেশীয় ক্রিকেট সমর্থকদের প্রার্থনা বিফলে গেছে বলেই মনে করেন শোয়েব। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘এবারই বোধ হয় প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি, বাংলাদেশি, শ্রীলঙ্কানসহ উপমহাদেশের সবাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের জয়ের জন্য প্রার্থনা করেছিল। তবে ভারতের জয়ের জন্য সবার প্রার্থনা কাজে আসেনি।’
এবারে এসএসসি পরীক্ষা পাসের বহু আগেই কলেজে পড়ার স্বপ্নটি দেখেছিল দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার কামরুজ্জামান নয়ন। এসএসসি পাসের স্বপ্নটি নিজের করে পাওয়ার দূরত্ব ছিল বাড়ি থেকে কলেজ যাওয়ার পথটুকুই। তবে এই দূরত্বটুকু পাড়ি দিতে পারেনি নয়ন। কলেজে যাওয়ার পথেই স্বপ্নটা সঙ্গে নিয়ে নয়ন পিষ্ট হয়ে গেলে সড়কে। আজ বেলা ১১টার দিকে কলেজে ভর্তি হতে যাওয়ার পথে এক পিকআপের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে নয়নের।নিহত কামরুজ্জামান নয়ন পার্বতীপুর উপজেলার আনন্দ বাজার চাকলা গ্রামের আমিনুল হকের ছেলে। পার্বতীপুর উপজেলার পাটিকাঘাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পাস করেছিল নয়ন।কামরুজ্জামানের পরিবার জানায়, কলেজে ভর্তি হওয়ার উদ্দেশ্যে সোমবার বেলা ১১টার দিকে নয়ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বাড়ি থেকে বের হয়। সে যাচ্ছিল ফুলবাড়ি উপজেলার ফুলবাড়ি শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হতে। এ জন্য বাইসাইকেলে চড়ে কলেজে যাচ্ছিল। তবে দুপুর ১২টার দিকে ফুলবাড়ি পৌর শহরের হাসপাতাল মোড়ে পৌঁছালে একটি পিকআপ তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়।ফুলবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফকরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল মোড় এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি মালবাহী পিকআপ নয়নকে ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তায় ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে দ্রুতবেগে পিকআপ চালিয়ে পালিয়ে যান চালক। এ জন৵ পিকআপটিকে আটক করা সম্ভব হয়নি।নয়নের নিহতের ঘটনায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন উত্তেজিত এলাকাবাসী। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সালাম চৌধুরী ও ফুলবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফকরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।এদিকে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বেলতলী নামক স্থানে বালুভর্তি ট্রাক্টরের ধাক্কায় দুই ছাত্র নিহত হয়েছে।নিহত দুজন হলো বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের ভোগডুমা গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে মো. মারুফ (১৪) এবং অন্যজন একই ইউনিয়নের সনকা গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে মো. রানা (১৭)। তারা উভয়ে উপজেলার সনকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা ১১টার দিকে মোটরসাইকেলে চড়ে শহর থেকে বাড়ি ফিরছিল ওই দুই ছাত্র। বেলতলী নামের স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিকে থেকে আসা বালুভর্তি একটি ট্রাক্টরের সঙ্গে তাদের মোটরসাইকেলটির ধাক্কা লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফারজানা খাতুন তাদের মৃত ঘোষণা করেন।বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাকিলা পারভীন বলেন, ‘স্থানীয় জনগণ ট্রাক্টরটিকে আটক করে পুলিশের হেফাজতে দিয়েছে। তবে ট্রাক্টরের চালক ও হেলপার পলিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।’
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে ৬৩০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ সময় ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৭ নারীকে।মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ছয় মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। আজ সোমবার এ প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়।আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের এ সংখ্যা পুরো চিত্র তুলে ধরে না বলেই মনে করি। পত্রিকার প্রতিবেদন ও নিজস্ব অনুসন্ধানের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। তারপরও যে সংখ্যা পাওয়া গেছে তা ভয়াবহ।আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ছয় মাসে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, অ্যাসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন সাতজন। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে ১০৫ নারীর ওপর।আসক বলছে, গত ছয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২৭ জন নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির কারণে ৮ জন আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ জন নারী ২ জন পুরুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিক্ষার হয়েছেন ১২৪ জন নারী-পুরুষ।শীপা হাফিজা বলেন, ভয়ানক বিষয় হলো, ধর্ষণ বা নিপীড়নের ঘটনার পর সেগুলো আবার ভিডিও করে  ছড়িয়ে দেওয়া ঘটনা ঘটছে। যারা এসব করছে, তারা কোনোভাবেই মনে করছে না যে অন্যায় করছে। অপরাধী বা তাদের আত্মীয়-স্বজন কারও এই বোধ নেই।নারী নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ার ঘটনার পেছনে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা একটি কারণ বলে মনে করেন শীপা হাফিজা। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আসক বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক হেফাজতে/‘ক্রসফায়ারে’ মোট ২০৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে ৫৯ জন, পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ ৯২ জন, ডিবি পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ ১২ জন, বিজিবির ‘ক্রসফায়ারে’ ২৮ জন নিহত হয়েছে।আসক বলেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুদের হত্যা এবং নির্যাতনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক। গত ছয় মাসে ৮৯৫ জন শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১০৪ শিশু হত্যার শিকার হয়েছে, ৪০ শিশু আত্মহত্যা করেছে, নিখোঁজের পর এক শিশু এবং বিভিন্ন সময়ে ১৭ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জন শিশুর।সীমান্ত সংঘাত: গত ছয় মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে ১৮ জন গুলিতে এবং শারীরিক নির্যাতনে ২ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৫ জন ও অপহরণের শিকার হয়েছেন ১৯ জন।ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন: গত ছয় মাসে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৮টি প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৯ জন। এ ছাড়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ১৬টি বসতঘর ও ৪টি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে ৫০ জন। সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি: গত ছয় মাসে ৫৫ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এ ছাড়া একজন সাংবাদিকের রহস্যজনক মৃত্যু ও একজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে।অ্যাসিড নিক্ষেপ: ছয় মাসে অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন মোট ১১ জন নারী।
২৯ জুন হেডিংলিতে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে ও ম্যাচের পরে বেশ কয়েকবার হাতাহাতি করেছিলেন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বেশ কিছু সমর্থক। এবার যুক্তরাজ্য পুলিশের কাছে সে ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্ত দাবি করেছে পাকিস্তান।পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচটি মাঠেই যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। দুই দলের দর্শকদের বোধ হয় অতটুকু উত্তেজনায় মন ভরছিল না। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে ও ম্যাচের শেষে তাই দুই দফা হাতাহাতি করেছে প্রতিবেশী দুই দেশের কিছু সমর্থক। এবার এই মারামারির ঘটনার যথাযথ তদন্ত দাবি করেছে পাকিস্তান।যুক্তরাজ্যের পুলিশের কাছে এ ঘটনার তদন্ত করার আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মারামারি ও পাকিস্তান-বিরোধী ব্যানার প্রদর্শনের ঘটনাকে ‘চিন্তার বিষয়’ উল্লেখ করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘খেলার সঙ্গে জড়িত ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে এ ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনারও দাবি জানানো হচ্ছে।’ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামের বাইরে হাতাহাতি ও গেট ভেঙে স্টেডিয়ামে ঢুকতে চাওয়ায় ঘটনাস্থল থেকেই চারজনকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাজ্য পুলিশ। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিরাপত্তাবলয় ভেঙে মাঠেও নেমে আসেন বেশ কিছু সমর্থক। এ ছাড়া ম্যাচ চলাকালীন সময়ে গ্যালারিতেও হাতাহাতি করতে দেখা গেছে দুই দলের সমর্থকদের।ধারণা করা হচ্ছে, ক্রিকেটীয় কোনো কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক কারণেই মারামারির এ ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ম্যাচ চলার সময় লিডসের হেডিংলি স্টেডিয়ামের ওপর দিয়ে একটি বিমান উড়ে যায়। এতে একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘জাস্টিস ফর বেলুচিস্তান’। এই ঘটনার পরই নাকি দুই দেশের সমর্থকদের মাঝে মারামারির সূত্রপাত।আয়তনের দিক দিয়ে বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ প্রদেশ। প্রদেশটি উত্তর আফগানিস্তানের সীমান্ত ঘেঁষা। ১৯৪৮ সাল থেকেই বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। পাকিস্তান বরাবরই দাবি করে আসছে, বেলুচ বিদ্রোহীদের মদদ জোগাচ্ছে ভারত ও আফগানিস্তান। তাই সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্ক বেশ নড়বড়ে।ম্যাচের আগে পাকিস্তান আর আফগানিস্তান সমর্থকদের মধ্যে দুজনকে মারামারি করার দায়ে মাঠ থেকে বের করেও দিয়েছিল ইয়র্কশায়ার পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই দলের সমর্থকদের নিরস্ত করতে মাঠের নিরাপত্তা কর্মীরা চেষ্টা করছেন।ম্যাচের পর আইসিসির এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিল, মাঠে এবং মাঠের বাইরে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার পেছনে কোনো ধরনের রাজনৈতিক উসকানিমূলক বার্তার ভূমিকা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে পশ্চিম ইয়র্কশায়ার পুলিশ, ‘বিশ্বকাপে রাজনৈতিক কোনো বার্তা প্রদর্শনে আমরা কাউকে উৎসাহিত করি না। এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটল, তা বের করার জন্য আমরা পুলিশের সঙ্গে মিলে কাজ করছি, যাতে ভবিষ্যতে একই রকমের বিশৃঙ্খলা এড়ানো সহজ হয়।’আরও পড়ুন:পাকিস্তান-আফগানদের মারামারির পেছনে বেলুচিস্তান? হেডিংলিতে পাক-আফগান সমর্থকদের যুদ্ধ
ক্রিকেট খেলাটা নেশা, পেশাও বটে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশনে ক্রিকেটের অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় দেখা যায় জাতীয় নারী দলের ক্রিকেটার সাথিরা জাকির জেসিকে। বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে এবার জেসির অভিষেক হতে যাচ্ছে ভারতে। চলমান ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের খেলাধুলাবিষয়ক চ্যানেল স্টার স্পোর্টসে আগামীকাল বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের বাংলা ধারাভাষ্য দেবেন জেসি। কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো নারী ধারাভাষ্য দেবেন।স্টার স্পোর্টসে ধারাভাষ্য দিতে মুম্বাইয়ের উদ্দেশে আজ বিকেলে ঢাকা ছেড়েছেন লালমনিরহাটের মেয়ে। এর আগে স্টার স্পোর্টসে বাংলাদেশের অনেক পুরুষ ক্রিকেটার ধারাভাষ্য দিলেও নারী ক্রিকেটার এবারই প্রথম। ভারতে যাওয়ার আগে রোমাঞ্চিত জেসি বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এটা একটা ইতিহাস। কোনো বাংলাদেশি মেয়ে স্টার স্পোর্টসে ধারাভাষ্য দেবে, আর সেটাও আমি, ভাবতে ভালো লাগছে।’জেসি শুধু বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচই নয়, এরপর ৩ জুলাই ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড এবং ৪ জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ-আফগানিস্তান ম্যাচেও ধারাভাষ্য দেবেন। স্টার স্পোর্টস ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা, তামিলসহ বিভিন্ন ভাষায় ধারাভাষ্য চালু করেছে।বিকেএসপিতে জেসি ও সাকিব আল হাসান একই ব্যাচের ছিলেন। সাকিবের বেড়ে ওঠার দিনগুলোর অনেক তথ্য নিশ্চয়ই দিতে পারবেন। এবারে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত ফর্মে থাকায় সাকিবকে নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বেই দারুণ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
ভারতগামী যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বেনাপোল-ঢাকা বিরতিহীন সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালু হচ্ছে। ৯০০ যাত্রী ধারণক্ষমতার আধুনিক এই ট্রেন চলতি মাসে ঈদের আগেই চালু হতে যাচ্ছে। ট্রেনটিতে থাকবে ১২টি বগি বা কোচ। এসব বগি ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হয়েছে। ঢাকা থেকে মাত্র সাড়ে সাত ঘণ্টায় ট্রেনটি বেনাপোল পৌঁছাবে। আগামী ঈদযাত্রায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এই ট্রেনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোল তল্লাশি চৌকি (চেকপোস্ট) দিয়ে পাসপোর্টের মাধ্যমে প্রতিদিন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাত থেকে আট হাজার মানুষ চলাচল করেন। বেনাপোল থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য সরাসরি কোনো ট্রেন সার্ভিস চালু নেই।আজ সোমবার বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান পরিবহন তত্ত্বাবধায়ক মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনটি ইতিমধ্যে চালানো হয়েছে। আশা করছি, আগামী কোরবানির ঈদের আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ট্রেনটির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।’বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল-ঢাকা ট্রেনে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এই ট্রেনে বিমানের মতো বায়ো-টয়লেট সুবিধা রয়েছে। আসনগুলোও আধুনিক। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেনটি বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। আবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। সকাল আটটার মধ্যে ট্রেনটি বেনাপোল বন্দরে পৌঁছে যাবে। যাতে ভারতগামী যাত্রীরা সকাল নয়টার মধ্যে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে পৌঁছাতে পারেন। বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যশোর রেলওয়ে জংশনে পৌঁছে ১৫ মিনিটের বিরতি নেবে। এ সময়ের মধ্যে যাত্রী ওঠানো ও রেলের ইঞ্জিন ঢাকামুখী ঘোরানো হবে। এরপর ঈশ্বরদী গিয়ে ট্রেনের চালকসহ অপারেশনাল কর্মী বদলের জন্য আরও ১৫ মিনিটের বিরতি থাকবে। পরে ট্রেনটি ঢাকা কমলাপুর স্টেশনে শেষ গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। তবে এর আগে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে কিছুক্ষণের জন্য ট্রেনটি থামানো হবে।বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত এ ট্রেনের টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, শোভন চেয়ার ৫০০ টাকা, এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) চেয়ার এক হাজার ও এসি কেবিন এক হাজার ২০০ টাকা। এর সঙ্গে বিরতিহীন সুবিধার জন্য ১০ শতাংশ চার্জ যোগ করতে হবে।বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. সাঈদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী ২৫ জুলাই এ ট্রেনের উদ্বোধনের সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করে অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ চালানো হচ্ছে। যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য বেনাপোল স্টেশনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বিশ্রামাগার সংস্কারের কাজ চলছে।’ তিনি বলেন, ‘বেনাপোল-ঢাকা রেলের নাম এখনো ঠিক করা হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে তিনটি নামের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেগুলো হলো-বেনাপোল এক্সপ্রেস, বন্দর এক্সপ্রেস ও ইছামতী এক্সপ্রেস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও যেকোনো একটি নাম দিতে পারেন।’ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে যশোর থেকে ঢাকার মধ্যে যে ট্রেন সার্ভিস চালু রয়েছে সেটি ১৪টি স্থানে যাত্রা বিরতি করে। এতে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
২৪ বছরের বেশি সময় পর পাবনার ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে গুলিবর্ষণ ও হামলা মামলার রায় হতে যাচ্ছে। আগামী বুধবার (৩ জুলাই) এই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন পাবনার অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুস্তম আলী।আজ সোমবার দুপুরে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর বিচারক রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। আলোচিত এই মামলার আসামিরা স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মী।মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উত্তরাঞ্চলে দলীয় কর্মসূচিতে ট্রেনে করে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে প্রবেশের সময় শেখ হাসিনার ট্রেনবহরকে লক্ষ্য করে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা অতর্কিত গুলি, বোমাবর্ষণ ও হামলা চালান। এ সময় পুলিশ স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করেও বোমা নিক্ষেপ করেন। বোমার আঘাতে দায়িত্বে নিয়োজিত তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন ও পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় ঈশ্বরদী রেলওয়ে পুলিশ বাদী হয়ে ওই দিন বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মামলা করেন। পরে মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।তদন্ত শেষে এই মামলায় ৫২ জনকে আসামি করে আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। দীর্ঘ ২৪ বছর ৯ মাস ৯ দিন পর আগামী বুধবার এ মামলার রায় হতে যাচ্ছে। গতকাল রোববার দুপুরে এ মামলার ৩০ জন আসামি আদালতে হাজির হলে বিচারক রুস্তম আলী তাঁদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। মামলার মোট আসামির মধ্যে ৫ জন বিভিন্ন সময় মারা গেছেন। বাকি আসামিরা গতকাল আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে আরও ছয় মাসের জন্য রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ সোমবার রাজ্যসভায় এ–সংক্রান্ত বিল পেশ করেন। পাঁচ ঘণ্টা বিতর্কের পর বিলটি পাস হয়। উপদ্রুত জম্মু ও কাশ্মীরে গত বছর বিজেপি-পিডিপি সরকারে পতন ঘটলে প্রথমে ছয় মাসের জন্য রাজ্যপালের শাসন জারি হয়। গত জানুয়ারি মাসে জারি হয় রাষ্ট্রপতির শাসন। কাল ২ জুলাই এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ওই দিন থেকেই জারি হবে দ্বিতীয় দফার রাষ্ট্রপতি শাসন। গত শুক্রবার লোকসভা বিলটি পাস করে।রাষ্ট্রপতির শাসন বৃদ্ধির পাশাপাশি অমিত শাহ অন্য একটি বিলের সংশোধনীও পেশ করেন। দুটিই একসঙ্গে পাস হয়। ওই সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণরেখার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী কাশ্মীরের জনগণ সরকারি চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের যে সুবিধা পেয়ে আসছেন, তা জম্মুর আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর বসবাসকারীরাও এবার থেকে পাবেন। রাজ্যের মোট চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট আসনের ৩ শতাংশ এই মানুষদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।এই সংরক্ষণ বলবৎ হলে উপকৃত হবেন জম্মুর আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী ২০ লাখ মানুষ। এঁদের সিংহভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত।
ফলাফল অনাকাঙ্ক্ষিত। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশের মাঈনুল আহসান নোবেলকে। শুধু তা-ই না, ভারতের জি বাংলার গানবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‌‌‘সা রে গা মা পা’র এবারের আসরে তিনি প্রীতমের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় রানারআপ অর্থাৎ তৃতীয় হয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন অঙ্কিতা। বিচারকদের রায়ে এই ফল হলেও দর্শকের ভোটে সেরা নোবেল। তিনি ‘মোস্ট ভিউয়ার চয়েস’-এ বিজয়ী হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে আয়োজনটির সঙ্গে জড়িত একজন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গত শনিবার কলকাতার বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে এই প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়। পর্বটি জি বাংলায় দর্শক দেখতে পাবেন ২৮ জুলাই রাতে।‌‌‘সা রে গা মা পা’ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ভারতের কলকাতা আর বাংলাদেশে দারুণ পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মাঈনুল আহসান নোবেল। তাঁকে বলা হয় ‘বিস্ময় বালক’। এই বিশেষণটি বেশির ভাগ সময়ই এসেছে প্রতিযোগিতার বিচারকদের কাছ থেকে। তবে তাঁদের উচ্ছ্বাস এবং দর্শকের ভোটে এগিয়ে থাকলেও গানের প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত প্রথম হতে পারেননি এই তারকা। তাঁকে তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।গত শনিবার রাতে ‘সা রে গা মা পা’র গ্র্যান্ড ফিনালেতে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এরপর অনুষ্ঠানের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়। যেখানে দেখা যায়, প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন অঙ্কিতার হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হচ্ছে। পুরস্কার হাতে পাশে দাঁড়িয়েছে আছেন প্রথম রানারআপ গৌরব সরকার ও স্নিগ্ধজিৎ। তাঁদের পেছনে নোবেল ও প্রীতম। এরপর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে, এবার ‘সা রে গা মা পা’য় প্রথম হয়েছেন অঙ্কিতা। যৌথভাবে ১ম রানারআপ গৌরব ও স্নিগ্ধজিৎ, আর ২য় রানারআপ হয়েছেন প্রীতম ও মাঈনুল আহসান নোবেল।আজ দুপুরে নোবেলের সঙ্গে প্রথম আলো থেকে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি পুরস্কার নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। জানালেন, ২৮ জুলাইর আগে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না। বললেন, ‘এই শোর মাধ্যমে আমি দুই বাংলায় পরিচিতি পেয়েছি। সবাই আমার গান পছন্দ করেছেন, আমাকে ভালোবেসেছেন। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। গ্র্যান্ড ফিনালে রেকর্ড হয়েছে, কিন্তু প্রচার হতে এখনো প্রায় এক মাস বাকি। তাই এটা নিয়ে এখনো অফিশিয়ালি কিছু বলতে পারছি না। আমি আগেই বলেছি, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়ে আমি গানটা ঠিকমতো গাওয়ার দিকে বেশি জোর দিয়েছি। ফলাফল যা-ই হোক, আপনারা আগে যেমন আমার সঙ্গে ছিলেন, আশা করছি ভবিষ্যতেও সেভাবেই আপনাদের পাশে পাব।’গত বছর সেপ্টেম্বরে জি বাংলায় শুরু হয় ‘সা রে গা মা পা ২০১৮-১৯’ প্রতিযোগিতা। ভারত থেকে নির্বাচিত ৪৮ জন প্রতিযোগী অংশ নেন। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন অবন্তি সিঁথি, তানজীম শরীফ, রোমানা ইতি, মেজবা বাপ্পী, আতিয়া আনিসা, মন্টি সিনহা ও মাঈনুল আহসান নোবেল। বাকিরা নানা ধাপে ছিটকে গেলেও গোপালগঞ্জের নোবেল জায়গা করে নেন চূড়ান্তপর্বে।পুরো আয়োজনে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন শ্রীকান্ত আচার্য, শান্তনু মৈত্র ও মোনালি ঠাকুর।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা কাল আটকে রাখা দম ফেলে স্বস্তি পেয়েছেন। অনায়াসে বিশ্বকাপ জিতবে ইংল্যান্ড এমন দাবি তোলার পর দলকে সেমিফাইনালের আগেই বাদ পড়ার সম্ভাবনা দেখে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন মাইকেল ভন, কেভিন পিটারসেনরা। ভারতকে হারানোর পর আবারও জোরালো হয়েছে তাদের গলা। ইংল্যান্ড দলের স্তুতিতে ভেসেছেন তারা।দলের প্রশংসা শেষেই নিজেদের স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি ফিরে পেয়েছেন তারা। এরপরই সমর্থকের চোখ দিয়ে নয়, বিশ্লেষকের দৃষ্টি দিয়ে ভারতের রান তাড়ার পরিকল্পনাটা পরখ করেছেন সবাই। এবং স্লগ ওভারে ভারতের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। ৩৩৭ রান তাড়া করতে নেমে হাতে বেশ কিছু উইকেট থাকার পরও শেষ চেষ্টা করেনি ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনি ও কেদার যাদবের ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি তাঁদের মধ্যে জয়ের কোনো চেষ্টা আছে।জয়ের চেষ্টা না করে টুক টুক করে রান তুলেছে ভারত। পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে এনেছে ৩১ রানে। পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনায় ভারতের নেট রান রেট তাই এখনো বেশ ভালো (+০.৮৫৪)। ফলে পরের দুই ম্যাচে ভারত যদি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেও যায়, এবং বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানের পয়েন্ট যদি ভারতের সমান ১১ হয়ও, নেট রানরেটের কারণে ভারতই এগিয়ে থাকবে সেমির পথে। বাংলাদেশ (-০.১৩৩) এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। দুই ম্যাচে ভারতকে রান রেটে টপকানো তাদের পক্ষে বেশ কঠিন। আর মাত্র এক ম্যাচ হাতে থাকা পাকিস্তানের (-০.৭৯২) পক্ষে সেটা অসম্ভব।১১ পয়েন্ট পাওয়া নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে ভারতকে চিন্তা করতে হচ্ছে না। কারণ, তাদের ম্যাচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সে ম্যাচে অন্তত এক দল হারলেই তারা ভারতের চেয়ে পিছিয়ে পড়বে। তাই প্রায় অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে ভারতের বাদ পড়ার সম্ভাবনা নেই। এ কারণেই কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের জন্য অতটা ক্ষুধা দেখা যায়নি ভারতের মাঝে। বরং পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে এনে রান রেট ধরে রাখার চেষ্টাই ছিল তাদের মাঝে।কাল ভারতের পরাজয়ে মূল ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের। ইংল্যান্ড তাদের শেষ ম্যাচ জিতে গেলেই এ দুই দলের শেষ ম্যাচটি হয়ে যাবে নিয়ম রক্ষার। ফলে পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেটারই আকারে-ইঙ্গিতে ভারত ইচ্ছে করে হেরেছে, এমন দাবি তুলছেন। মজার ব্যাপার, এবারই প্রথম ভারত এমন কিছু করেনি। ২০০৪ সালেও এক ম্যাচে বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শেষদিকে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিং করে পাকিস্তানের ক্ষতি করেছিল ভারত। ২০০৪ এশিয়া কাপে ফাইনালে ওঠার লড়াই চলছিল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। সেবার সুপার ফোরের ম্যাচগুলোতে বোনাস পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগ ছিল। প্রথমে ব্যাট করলে প্রতিপক্ষকে ৮০ ভাগ রান করতে না দিলে বোনাস পয়েন্ট পেত জয়ী দল। আর পরে ব্যাট করলে ৪০ ওভারের জয় পেলেই জুটত বোনাস। পরাজিত দলের পক্ষেও পয়েন্ট পাওয়া সম্ভব ছিল! সেটা হলো, যে রান তাড়া করছে তার ৮০ ভাগ টপকে গেলেই মিলত বোনাস পয়েন্ট। প্রথমে ব্যাট করে ৩০০ রান করেছিল পাকিস্তান। তাড়া করতে নেমে মহা বিপদে পড়েছিল ভারত। কিন্তু শুরুতেই শেবাগকে হারানো ভারত কোনোভাবেই পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। ২৫ ওভারে ৪ উইকেটে ১৩৯ রান তুলেছিল ভারত। একটু পরে মোহাম্মদ কাইফও হেঁটেছেন ড্রেসিংরুমের পথে। উইকেটে শচীন টেন্ডুলকার থাকার পরও জয় সম্ভব নয় বলে ধরে নিয়েছিল ভারত। তাই তারা ৩০১ নয় ২৪০কেই নতুন লক্ষ্য বানিয়েছিল ভারত।ভারত সেদিন দেখিয়েছিল বিস্ময়কর এক ক্রিকেট। ২১ ওভারে মাত্র ৯০ রান তুলেছিল ভারত। ১০৩ বলে ৭৮ রান করেছিলেন টেন্ডুলকার। আর তাঁর সঙ্গী ইরফান পাঠান ৭৫ বলে করেছিলেন ৩৮ রান। ১৪ ওভারে মাত্র ৬৩ রান তুলেছিল এ জুটি। ৫০ ওভারে একদম ২৪১ রান তুলে থেমেছিল ভারত। ৬৩ রানে হেরে রান রেটে পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছিল ভারত। কিন্তু বোনাস পয়েন্টে ঠিকই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের টপকে ফাইনাল খেলেছিল ভারত। সেদিন ভারতের এমন ব্যাটিং খেপিয়ে তুলেছিল সাধারণ দর্শকদের। ২০ ওভার বাকি থাকা অবস্থায় হার মেনে নেওয়া সে ব্যাটিং মেনে নিতে পারেননি কেউ। কিন্তু ভারতের কাছে ফাইনাল খেলাটাই মূল ব্যাপার ছিল। তাই আগে ভাগে পাকিস্তানের কাছে হার মেনে নিতেও বাধেনি তাদের। কারণ, সে হারে যে আরও বড় লক্ষ্য অর্জিত হয়েছিল তাদের।গতকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ধোনি ও যাদবের ব্যাটিং হয়তো নিরপেক্ষ দর্শকের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, কিন্তু ভারত তার লক্ষ্য ঠিকই অর্জন করে নিয়েছে।
তৃতীয় বাংলা নামে খ্যাত বিলেতের বাংলাদেশিরা বরাবরই বিশাল আয়োজনে বৈশাখ উদ্‌যাপন করেন। তবে সেটা বৈশাখে নয়, আষাঢ়ে। বৈশাখে তীব্র শীত আর বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্‌যাপন বিলম্বিত হয়। তাই অপেক্ষা থাকে চকচকে রোদেলা দিনের।গতকাল রোববার (৩০ জুন) ছিল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। পূর্ব লন্ডনের উইভার্স ফিল্ডে বসে এবারের বৈশাখী মেলা।মঙ্গল শোভাযাত্রার আদলে সাজানো শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। এবারও বাঙালি সংস্কৃতি ও নানা ঐতিহ্য তুলে ধরা হয় মেলায়।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ সোমবার রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। আজ বেলা পৌনে একটায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছে এসে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রিজভী বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকার জনগণের জীবন-জীবিকায় আঘাত হানার উদ্দেশ্যেই ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। আওয়ামী সরকার জনগণের সমর্থনপ্রত্যাশী নয় বলেই এরা জনগণের ভালো-মন্দ বিচার করে না। জনগণকে শোষণই এদের শাসনের একমাত্র লক্ষ্য।’রিজভী বলেন, সরকারের লোকদের অবৈধ অর্থ উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতেই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বোঝা চাপানো হয়েছে জনগণের কাঁধে। সরকার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি রাজপথে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলবে।রিজভী বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন যন্ত্রকে কবজায় নিয়ে সরকার জুলুমের শাসন বলবৎ করেছে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশের জনগণ যাতে বর্তমান অবৈধ সরকারের এই জুলুমের শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে না পারে সে জন্য তাঁকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী করা হয়েছে।আজকের মিছিলে অংশ নেন বিএনপি’র প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুইয়া, মৎস্যজীবী দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, সদস্যসচিব আবদুর রহিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরেজ জামান, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।বক্তারা খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির তীব্র সমালোচনা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়স্বজনদের লুটপাটের জন্যই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে সরকার। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলে বিদ্যুতের দামও বাড়বে। বাড়বে কল কারখানার উৎপাদন খরচও।আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী। সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।গতকাল রোববার বিকেলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। আবাসিক, বাণিজ্যিকসহ সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বিইআরসি। গড়ে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত আজ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।রান্নাঘরে যাদের গ্যাসের চুলা একটি, তারা এত দিন মাসে বিল দিতেন ৭৫০ টাকা। এখন থেকে গ্যাস বিল বাবদ মাসে তাদের ব্যয় হবে ৯২৫ টাকা। যাদের বাসায় দুই চুলা, তারা এত দিন বিল দিত ৮০০ টাকা। এখন দিতে হবে ৯৭৫ টাকা।আজ রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের ১০ বছরে গ্যাসের মূল্য বাড়িয়েছে ছয়বার। গ্যাসের দাম বাড়ানোতে অবশ্যই জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। যারা সীমিত আয়ের লোক তাদের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়বে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে সব ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। ব্যবসা করার খরচ বেড়ে যাবে। ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ বাড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে।বিএনপি নেতা রিজভীর আশঙ্কা, গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে দেশের গার্মেন্টস খাত মারাত্মক চাপে পড়ে যাবে। গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাবে। ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে।রিজভী বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে স্বল্প আয়ের মানুষকেই বেশি ভুগতে হবে। সাধারণ মানুষের জীবনে আরও দুর্ভোগ নেমে আনবে। এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ গণবিরোধী ও গরিব মারার সিদ্ধান্ত।গ্যাস দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি করেন রিজভী।
ধর্মীয় ফতোয়ার শিকার এক প্রজননদাসীর বেদনার্ত জীবনগাথা-নির্ভর একটি উপন্যাসের নাম ‘দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইল’। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত মার্গারেট অ্যাটউডের দুনিয়া কাঁপানো উপন্যাসটি দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আবার আলোচনার ক্যানভাসে ফিরে আসে ২০১৮ সালে, উত্তর আয়ারল্যান্ডের লেখক অ্যানা বার্নসের ‘মিল্কম্যান’ উপন্যাসটি ম্যান বুকার পুরস্কার অর্জনের পর।ধর্মীয় ইস্যুতে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সন্ত্রাসকবলিত এই রাজ্যে যৌন নির্যাতনের শিকার এক অষ্টাদশীর আর্তনাদ নিনাদিত হয়েছে অতি নীরবে পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কাহিনিতে। কাহিনির কথকের ভূমিকা পালনকারী কিশোরীটি অনামিকা। আত্মমর্যাদা রক্ষা করার জন্য তিনি শুধু মিডল সিস্টার বা মেজ বোন হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন পাঠকের দরবারে।সমালোচকেরা উত্তর আয়ারল্যান্ডের এই কাহিনির উপস্থাপনার কৌশল প্রসঙ্গে টেনে এনেছেন কানাডার উপন্যাস দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইলকে। এই কাহিনিতে নির্যাতিত নারী অফ্রেড নিজেই প্রক্ষেপণ করেছেন নিজের যন্ত্রণারশ্মি পাঠকের চোখে। অফ্রেড নামটি তাঁর প্রকৃত নাম নয়। নিঃসন্তান কমান্ডার ফ্রেডেরিক ওয়াটারফোর্ডের প্রজননদাসী হিসেবে কাজ করেছেন বলেই কমান্ডার ফ্রেড তাঁর নিজের সম্পত্তি মনে করে এই নারীর নাম রেখেছেন অফ্রেড (অফ ফ্রেড)। অনুরূপভাবে ড্যানিয়েল, স্টিভেন, গ্লেন, ওয়ারেন, রবার্ট, স্যামুয়েল প্রভৃতি নামধারী কমান্ডারদের প্রজননসেবা দিয়ে সংশ্লিষ্ট জননীরা নিজেদের নাম হারিয়ে পরিচিত হয়েছেন যথাক্রমে অফড্যানিয়েল, অফিস্টভেন, অফেগ্লন, অফওয়ারেন, অফ্রবার্ট আর অফস্যামুয়েল হিসেবে।উপন্যাসের শেষে একটি কালো রঙের ভ্যান এসে অফ্রেডকে নিয়ে রওনা দেয় রাতের অন্ধকারে, অজানা গন্তব্যে। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর এই কালো ভ্যানগাড়ির রহস্য উন্মোচন করেছেন কাহিনিকার মার্গারেট অ্যাটউড। দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইল-এর আবৃত রহস্যকে অনাবৃত করে সিক্যুয়েল উপন্যাস হিসেবে তিনি রচনা করেছেন ‘দ্য টেস্টামেন্টস’, যেটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর। পেঙ্গুইন র‍্যান্ডম হাউস থেকে প্রকাশিতব্য এই উপন্যাসের শুভ মহরত হবে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ন্যাশনাল থিয়েটার থেকে। অনুষ্ঠানে লেখকের সাক্ষাৎকার নেবেন বিবিসি সাংবাদিক, ব্রিটিশ কলামিস্ট ও গ্রন্থকার সামিরা আহমেদ।অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রদর্শিত হবে বৃহত্তর টরন্টো শহরের সাতটি সিনেপ্লেক্স মুভি থিয়েটারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কয়েক শ সিনেমা হলে। এক বিবৃতিতে অ্যাটউড জানিয়েছেন, ‘আমার অ্যানালগ শরীরটাকে আমি হয়তো সব জায়গায় নিয়ে যেতে পারব না। তবে, ডিজিটাল পর্দায় অনেক পাঠকের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ নিয়ে আমি অপেক্ষায় থাকব।’‘মার্গারেট অ্যাটউড: লাইভ ইন সিনেমাস’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানটির আয়োজক নারী অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইকুয়ালিটি নাউ। সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে সামিরা জানতে চাইবেন অ্যাটউডের বর্ণিল জীবনের নানান বর্ণালির কথা। ৩৩ বছর পর দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইল-এর সিক্যুয়েল টেনে আনার রহস্য তো অবশ্যই অনাবৃত করার চেষ্টা করবেন ৫১ বছর বয়সী এই সাহিত্যরসিক। টিকিট সংগ্রহ করা যাবে <margaretatwoodlive.com> নামের ওয়েবসাইট থেকে।দ্য টেস্টামেন্টস সিক্যুয়েলের কাহিনিতে কথক হিসেবে থাকছেন রহস্যময়ী তিন নারী। নিজে না বলে অন্যকে দিয়ে বলানো—এটি যেন একটি অ্যাটউডীয় মেজাজে পরিণত হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ১৫টি উপন্যাস। অপ্রকাশিত ‘স্ক্রিব্লার মুন’ উপন্যাসটি তিনি ২০১৪ সালে জমা দিয়েছেন নরওয়ের ফিউচার লাইব্রেরি নামে একটি শতবর্ষী প্রকল্পে। এটি প্রকাশিত হবে ২১১৪ সালে। বাকি ১৪টি উপন্যাসের মধ্যে দু-একটি ছাড়া প্রায় সব কটিতেই বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন অ্যাটউড শুধুই রচয়িতা। ‘অরিক্স অ্যান্ড ক্রেক’ উপন্যাসে স্নোম্যান নামের একজন পুরুষ কথক থাকলেও, বাকি উপন্যাসগুলোতে কথা বলেছেন কেবল নারী চরিত্রগুলোই। কোথাও একজন, কোথাও দুই বোন আবার কখনো তিন-চার বান্ধবী।কোনো কোনো সমালোচকের কপালে ইতিমধ্যেই একটু ভাঁজ পড়ে গেছে। তাঁরা ভাবছেন, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর, ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইল’ উপন্যাসের ঘটনার ধারাবাহিকতা ও উপস্থাপনার মেজাজ ২০১৯ সালে প্রকাশিতব্য ‘দ্য টেস্টামেন্টস’ উপন্যাসে অক্ষুণ্ন রাখা ৮০ বছরের মাথায় পা রাখা একজন লেখকের পক্ষে কতখানি সম্ভব হবে।তবে কাজটি যেহেতু অ্যাটউডের কি-বোর্ড দিয়েই হচ্ছে, সেই অজুহাতে আমি ব্যক্তিগতভাবে ‘দ্য টেস্টামেন্টস’ সম্পর্কে আশাবাদী। আমার এই প্রত্যয়ের পেছনের কারণটি আমি পাঠকদের জানাতে চাই। টি এস এলিয়টের বান্ধবী কবি ভার্জিনিয়া ওল্ফের প্রতিষ্ঠিত দ্য হোগার্থ প্রেস নামের প্রখ্যাত প্রকাশনা সংস্থার অনুরোধে মার্গারেট অ্যাটউড ইতিমধ্যে একটি চমকপ্রদ দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। প্রকাশকের অনুরোধে তিনি শেকসপিয়ারের (১৫৬৪-১৬১৬) শেষ জীবনের লেখা ‘দ্য টেম্পেস্ট’ নাটকের সমান্তরাল একটি উপন্যাস রচনা করেছেন ২০১৬ সালে। সর্বকালের সেরা ব্রিটিশ নাট্যকার উইলিয়াম শেকসপিয়ারের ৪০০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দ্য নভেলাইজেশন অব ড্রামার কাজটি তিনি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রায় উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন তাঁর ‘হ্যাগ-সিড’ উপন্যাসে। একজন সমালোচক তো বলেই ফেলেছেন, শেকসপিয়ার বেঁচে থাকলে অ্যাটউডের কাজ দেখে আনন্দে নেচে উঠতেন।আধুনিক কালের পাঠকের কাছে প্রাচীনকালের এই নাট্যকারকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার এই ঝুঁকিপূর্ণ কর্মে তাঁর সার্থকতা হচ্ছে, যে পাঠক মূল ‘দ্য টেম্পেস্ট’ পড়েননি, তিনিও অ্যাটউডের হ্যাগ-সিডকে তাঁর মজ্জায় ঢুকিয়ে নিয়েছেন। তা ছাড়া, ২০০৩ থেকে ২০১৩—এই ১১ বছরে সমাপ্ত তাঁর তিনটি ধারাবাহিক উপন্যাস ‘অরিক্স অ্যান্ড ক্রেক’ (২০০৩), ‘দ্য ইয়ার অব দ্য ফ্লাড’ (২০০৯) ও ‘ম্যাডাড্ডাম’ (২০১৩) নিয়ে তাঁর ম্যাডাড্ডাম ট্রিলজির সার্থকতার ইতিহাস তো আছেই।অ্যাটউডের ‘দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইল’ কথিত মার্কিন মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে একটি সাহসী আক্ষরিক ও রূপক বিস্ফোরণ। বিস্ফোরিত এই বোমার বারুদ তিনি সংগ্রহ করেছেন সরাসরি বাইবেল থেকে। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমেরিকার মৌলবাদীরা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেন। নির্বাচনী প্রচারণাকালে ট্রাম্প ‘অ্যাবরশনের দায়ে মেয়েদের শাস্তি পাওয়া উচিত’ মর্মে মন্তব্য করলে প্রগতিবাদীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ২০ জানুয়ারি (২০১৭) ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেব শপথ নেওয়ার পর অ্যাটউডের ‘ডিস্টোপয়ান’ অর্থাৎ দূরকল্পী উপন্যাস ‘দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইল’-এর চাহিদা হঠাৎ বৃদ্ধি পায়। ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী গ্রন্থটি আমাজনের বেস্টসেলার তালিকায় ‘টপ টেন’ পজিশন নিয়ে টানা কয়েক সপ্তাহ অবস্থান করে।যাঁরা ‘দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইল’ না পড়েও আজকের এই প্রবন্ধটি পড়ে কৌতূহলী হচ্ছেন, তাঁদের জন্য এই কাহিনি সম্পর্কে সামান্য ধারণা এখানে সংযোজিত হলো। বাজারে এ পর্যন্ত গ্রন্থটির ৮০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। অপেরা, চলচ্চিত্র, কানাডা ব্রডকাস্টিং করপোরেশন ছাড়াও মার্কিন টেলিভিশনে গ্রন্থটি প্রচারিত হয়েছে সিরিজ নাটক হিসেবে। শুরুতে লেখক উপন্যাসটির নাম রেখেছিলেন ‘অফরেড’। এই গল্পের কথক একটি কন্যা সন্তানের জননী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী অফ্রেড নামের এই মেয়েটির একদিন স্বামী-সংসার সবই ছিল। তাঁর কপাল পুড়েছে গিলিয়েডের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর। কানাডার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাম আমেরিকা হলেও রূপক হিসেবে এই রাষ্ট্রের নাম রাখা হয়েছে গিলিয়েড। ভয়াবহ এক গৃহযুদ্ধের পর একটি ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী গিলিয়েডের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত ও জাতীয় সংবিধানের গণতান্ত্রিক চরিত্র বাতিল করে।দ্য রিপাবলিক অব গিলিয়েড নামের এই সরকার ক্ষমতা দখল করার পর বাইবেলে বর্ণিত জ্যাকবের পুত্রের নামে প্রতিষ্ঠা করে ক্রিশ্চান ফান্ডামেন্টালিস্ট স্টেট চার্চ। একসময় দেখা গেল, পারমাণবিক বর্জ্য, রাসায়নিক কীটনাশক, জন্মনিরোধক পণ্যের অপব্যবহার, অতিরিক্ত গর্ভপাত এবং এইডস ও সিফিলিসের ব্যাপক প্রকোপসহ বিভিন্ন কারণে গিলিয়েডের নারী-পুরুষ সবাই খুব দ্রুত প্রজনন ক্ষমতা হারাতে থাকে। আবার কারও কারও প্রজননক্ষমতা থাকলেও তাঁদের প্রসবিত সন্তান বিকলাঙ্গ (অ্যাটউডের ভাষায় আনবেবি) হয়ে জন্ম নিচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের যেসব কর্মকর্তার স্ত্রীরা সন্তান ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদের পরিবারে সন্তানের জন্ম নিশ্চিত করার জন্য চার্চের পরামর্শে তাঁরা এক ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেন। কিন্তু যেসব পুরুষ সন্তানদানে ব্যর্থ হয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সেসব পুরুষের চিহ্নিত করা হয়নি। বরং, দেশের আনাচকানাচে যেসব নারী ইতিমধ্যে সন্তান ধারণ কর্মে সফল হয়েছেন, সরকার অত্যন্ত কঠোরতা ও নিষ্ঠুরতার সঙ্গে সে সব নারীদের তাঁদের স্বামী-সন্তানদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দ্য রাসেল অ্যান্ড লিয়াহ সেন্টারে ভর্তি করার ব্যবস্থা করে।বেসরকারিভাবে এটি ‘রেড সেন্টার’ নামে পরিচিত হলেও আসলে কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে বাইবেলে বর্ণিত জ্যাকবের স্ত্রী রাসেল ও লিয়াহর নামে। এই কেন্দ্রে ভর্তি করার পর তাঁদের প্রত্যেককে একেকজন বন্ধ্যা স্ত্রীর হ্যান্ডমেইড বা প্রজননদাসী হিসেবে কাজ করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হয়। বাইবেলের ‘দ্য বুক অব জেনেসিস’-এর ৩০তম অধ্যায় (১-৩) থেকে পাঠ করে তাঁদের শোনানো হয় এবং বিশ্বাস করানো হয় যে একজন স্বামী তাঁর বন্ধ্যা স্ত্রীর অনুমতিক্রমে স্ত্রীর সামনে তাঁর দাসীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর দাসীর গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানই হবে গর্বিত দম্পতির সন্তান। রেড সেন্টারে প্রশিক্ষণ দানকালে দাসীদের বোঝানো হয়, পরপুরুষ ও দাসীর মধ্যে সম্পাদিত কর্মকাণ্ডের জন্য কারও কোনো পাপবোধের অবকাশ নেই।গিলিয়েডে একজন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে একজন দাসীর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর সন্তানদানে সফল দাসীকে বদলি করে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রজননে ব্যর্থ অন্য এক দম্পতির অধীনে। সন্তানদানে ব্যর্থ হলে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় গার্বেজ কলোনিতে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে। গিলিয়েড রাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী, নারী প্রজননদাসী হিসেবে কাজ করার পর তাঁর নিজের পরিবারে ফিরে যাওয়ার সব পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। যেসব নারী সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তান ধারণ করতে অস্বীকৃতি জানান, তাঁদেরকে ‘আনওম্যান’ ঘোষণা দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করা হয় অথবা গার্বেজ কলোনিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় স্থায়ীভাবে।কাহিনির কথক অফ্রেডের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল আমরা জানি না। গিলিয়েড শাসনের পতনের পর নতুন গণতান্ত্রিক দেশের একদল পণ্ডিত ঐতিহাসিক গবেষকদের ধারণকৃত একটি রেকর্ড বাজিয়ে শুনেছেন অফরেডের আত্মকথন। অফ্রেডের শেষ কথা, ‘ভ্যান গাড়িটি এসে থামল। দুই রক্ষী এসে আমাকে কর্ডন করে গাড়িতে উঠিয়ে দিলেন। ভ্যানের দরজা বন্ধ হলো। গাড়ি চলতে লাগল।’ ধারণকৃত রেকর্ডটি ‘দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইল’-এ আর বাজেনি। পাঠক জানেন না, অফ্রেডের পরিণতি কী হয়েছিল। মুক্তি, মৃত্যু না বন্দীদশা? রেকর্ডের বাকি অংশ বাজবে ‘দ্য টেস্টামেন্টস’ সিক্যুয়েলে।
বড় বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন অনেক ক্ষেত্রেই স্বাগতিক দেশের জনজীবন নানাভাবে বিঘ্নিত করে। কারণ এ ধরনের সম্মেলন উপলক্ষে দেশের নাগরিকদের চলাচল সীমিত করে দেওয়া হয়। যানজটও দেখা দেয়। এবারের জাপানের আয়োজিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনও এর প্রভাব দেখা গেছে।আজকাল অবশ্য ভোগান্তি এড়াতে জনবহুল শহরগুলো থেকে দূরে অবস্থিত অবকাশকেন্দ্রগুলোতে সমাবেশ আয়োজনের প্রবণতা দেখা যায়। গত দুই দশকে জাপানের আয়োজিত তিনটি জি-৭ ও জি-৮ সম্মেলনের সবই হয়েছিল রাজধানী টোকিও কিংবা অন্য বড় শহরগুলো থেকে অনেকটা দূরের জায়গাগুলোতে। এতে সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রতিনিধি ও সংবাদ সংগ্রহের জন্য সমবেত সাংবাদিকদের কিছুটা অসুবিধা হয়। তবে নাগরিক জীবন ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।জাপানের ওসাকার জনসংখ্যা ২৭ লাখের বেশি। ওসাকা পশ্চিম জাপানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র। জাতীয় রাজনীতিতেও ওসাকা এবং কানসাই অঞ্চলের বড় প্রভাব আছে। জি-২০ সম্মেলনে তাই ওসাকার নাগরিক জীবন ভোগান্তিতে পড়েছে।জি-২০ উপলক্ষে ওসাকায় ২৭টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের বাইরে আরও ১০টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রধানেরা সমবেত হয়েছিলেন। আর সেই দলে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকায় অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ওসাকার জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর বাইরে অতিথিদের সুবিধার বিষয়টিও খেয়াল রাখা দরকার হয়ে পড়েছিল।জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে ওসাকা ও আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয়। শহরের এক প্রান্তে ওসাকা উপসাগরে সমুদ্র ভরাট করে তৈরি হওয়া সাকিশিমা দ্বীপে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে শহরের আরও কয়েকটি জায়গায় অন্যান্য কিছু কর্মসূচিও হাতে নেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতা ও তাঁদের সফরসঙ্গীরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। অতিথিদের জন্য নির্বিঘ্ন চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে শহরের অনেক পথেই যানবাহন চলাচল সীমিত অথবা বন্ধ রাখা হয়। ওসাকাবাসীদের প্রতি বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে পাতাল রেল কিংবা কমিউটার ট্রেন ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়। এর বাইরে শহরের প্রায় সব জায়গায় পুলিশের উপস্থিতি ছিল। নাগরিকদের যখন-তখন পরিচয়পত্রও দেখাতে বলা হচ্ছিল।সাকিশিমা দ্বীপের প্রায় পুরোটাই সম্মেলন চলাকালে সাধারণের জন্য নিষিদ্ধ স্থান হয়ে উঠেছিল। এমনকি কাছাকাছি জায়গায় থাকা অফিস ও দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর বাইরে ওসাকা শহরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশও সরকারের কাছ থেকে এসেছিল। সবকিছু মিলিয়ে ওসাকাবাসীদের বিশেষ করে সম্মেলনের ভেন্যুর কাছাকাছি জায়গার অধিবাসীদের জন্য জি-২০ হয়ে উঠেছিল এক বিড়ম্বনা।অনেকেই বলছেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাসীন উদার গণতান্ত্রিক দলের স্বার্থ রক্ষা করতে রাজনৈতিক চাল হিসেবে ওসাকায় এই সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও তাঁর কাছের লোকজন হয়তো মনে করেছিলেন, বড় আকারের একটি আন্তর্জাতিক সমাবেশ ওসাকায় নিয়ে আসার চমকের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় ভোটারদের জয় করে নেওয়া যাবে। হারানো জনসমর্থন ফিরে পেতে বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলকে সাহায্য করবে।তবে সম্মেলনের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় ওসাকাবাসীকে। বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদেরও যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে। কখনো কখনো হেঁটে কোনো কোনো জায়গায় যেতে হয়েছে। সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা সংবাদকর্মীরাও কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েন।
বিশ্বকাপের মাস ছয়েক আগেও অস্ট্রেলিয়াকে গোনায় ধরতে রাজি ছিলেন না অনেকে। বিশ্বকাপের আগে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ জিতে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পর্কে আভাস দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। আর বিশ্বকাপে এসে তো আমূল বদলেই গেছে অ্যারন ফিঞ্চের দল। সবার আগে পৌঁছে গেছে সেমিফাইনালে। অথচ মিচেল স্টার্কের দাবি, এখনো না কি নিজেদের সেরা রূপটা দেখায়নি তাঁর দল!নিজেদের তৃতীয় ম্যাচেই হেরে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ভারতের সে হারের পর থেকে প্রতিটি ম্যাচ জিতে সবার আগে সেমিফাইনালের টিকিট কেটে ফেলেছে। দুই ওপেনার আছেন উড়ন্ত ফর্মে। প্রয়োজনের সময় উসমান খাজা, অ্যালেক্স ক্যারিরাও দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন ব্যাট হাতে। সবচেয়ে বড় কথা, অস্ট্রেলিয়ার বোলিং হচ্ছে দুর্দান্ত। স্টার্ক একাই নিয়েছেন ২৪ উইকেট, প্যাট কামিন্স-জেসন বেরেনডর্ফরাও আছেন উইকেটের মধ্যেই। অস্ট্রেলিয়াকে তাই ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের জন্য ফেবারিট মানছেন অনেকেই।তবে স্টার্ক বলছেন, এটিই অস্ট্রেলিয়ার সেরা রূপ নয়। টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত গা গরমই করছে তারা! পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সেরাটা এখনো দেখানো বাকি, এমনটাই বলছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট পাওয়া স্টার্ক, ‘আমরা সব সময়ই টুর্নামেন্টের শেষ দিকে নিজেদের সেরা রূপে দেখা দিই। আমরা কী করতে পারি, সেটার কিছু ঝলক আমরা দেখিয়েছি। তবে আমরা এখনো গা গরমের পর্যায়ে আছি। আমাদের আরও উন্নতির সুযোগ আছে। অন্য যেকোনো দলের মতো আমাদেরও বিশ্বকাপ জেতার সব সম্ভাবনা আছে।’গত বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ২২ উইকেট পেয়েছিলেন, এ বিশ্বকাপেও সেমিফাইনালের আগেই ২৪ উইকেট হয়ে গেছে স্টার্কের। ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বকাপে তিনবার ৫ উইকেট নিয়েছেন। অথচ স্টার্ক বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা এখনো নিখুঁত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি, ‘আমার মনে হয় না, বোলিং ইউনিট হিসেবে আমরা নিখুঁত কোনো ম্যাচ খেলতে পেরেছি। তবে আমরা প্রতিপক্ষকে আটকে রাখার উপায় বের করছি, প্রতি ম্যাচেই উন্নতি করছি আমরা।’এক বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ডটি গ্লেন ম্যাকগ্রার। ২০০৭ আসরে শিরোপা জয়ের পথে ২৬ উইকেট নিয়েছিলেন ম্যাকগ্রা। এই আসরে আর তিন উইকেট পেলে ম্যাকগ্রার সে রেকর্ড ভেঙে দেবেন স্টার্ক। তবে ২৯ বছর বয়সী এ বাঁহাতি পেসার বলছেন, রেকর্ড তখনই তাৎপর্যপূর্ণ হবে, যখন সঙ্গে যুক্ত হবে শিরোপা জয়ের স্বাদ, ‘বিশ্বকাপ জিততে না পারলে এ রেকর্ডের খুব একটা তাৎপর্য নেই আমার কাছে।’
চট্টগ্রামে যুবলীগের কর্মী মো. মহসিনকে (২৬) নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে নগরের আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকার এন ব্লকে এ ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার সকাল থেকে মহসিনকে পেটানোর দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে আজ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।পুলিশ বলছে, হামলাকারীরা সবাই যুবলীগের কর্মী। অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হাতে হামলার শিকার হন মহসিন। ঘটনার আগের দিন গত শনিবার তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর বিরুদ্ধে মারামারির তিনটি মামলা আছে। তিনি নগরের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার মোর্শেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন মো. সাজু, মো. তারেক, বেলাল হোসেন, মো. মিরাজ ও মো. মাসুদ। তাঁরা সবাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল আলম জসীমের অনুসারী বলে জানা গেছে।ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, একটি গলির মুখে যুবলীগের কর্মী মহসিনকে অতর্কিত এসে মারধর শুরু করে ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল। তাদের কাছ থেকে মহসিন পালানোর চেষ্টা করলেও চারপাশ থেকে রড ও লাঠি দিয়ে তাঁকে পেটানো অব্যাহত থাকে। মারধর থেকে বাঁচতে মহসিন একজনের পা ধরে রাখেন। ওই যুবকের নাম চৌধুরী জুয়েল। পা ধরেও পিটুনি থেকে রক্ষা পাননি মহসিন। পরে মৃত ভেবে তাঁকে রেখে চলে যান হামলাকারীরা। ভিডিও ফুটেজ দেখে তুহিন, রাব্বী, পারভেজ, ফারহান ও খোকন নামে আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল আলম জসীম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মহসিনের লোকেরাই তাঁকে মারধর করেছেন।নগরের আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এক যুবককে নির্দয়ভাবে পেটানোর ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিজেদের মধ্যে কোন্দলের জেরে এই মারামারির ঘটনা। গ্রেপ্তার আসামি সাজুর কাছ থেকে ঘটনার সময় হাতে থাকা একটি লম্বা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।এর আগে ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর নগরের সদরঘাট থানার নালাপাড়া এলাকায় নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। ওই দিনই হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে নগরের লালখান বাজার এলাকার এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে এই খুনের ঘটনা বলে গ্রেপ্তার আসামিরা জবানবন্দিতে জানিয়েছেন। বর্তমানে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। এখনো সেই বড়ভাইকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা যায়নি।সুদীপ্তের বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বলেন, ছেলে হারানোর ঘটনায় বিচার না হলে লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
মরিশাসের রাজধানী পোর্ট লুইসে রক্তদান কর্মসূচিতে স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিশ্ব রক্তদান দিবস উপলক্ষে দেশটির বাংলাদেশ হাইকমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এ রক্তদান কর্মসূচি। পোর্ট লুইসের বাগাটেল শপিং মলে সকাল নয়টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত জাতীয় ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস রক্ত সংগ্রহ করে।কর্মসূচির উদ্বোধন করেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হুসনু। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এখনো কৃত্রিম উপায়ে রক্ত তৈরি করা যায় না। সুতরাং মানবজীবনে শ্রেষ্ঠ উপহার হলো অন্যকে রক্তদান। প্রবাসী বাংলাদেশি কর্তৃক আয়োজিত আজকের এ রক্তদান কর্মসূচি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। তিনি আরও বলেন, আর্তমানবতার সেবায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের এ উদ্যোগ সবার জন্য অনুকরণীয়। তিনি বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদ রক্তদান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘মরিশাসে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। আজকে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি, প্রবাসী কর্মীরা শুধু কর্মের মধ্যেই ব্যস্ত থাকেন না। তাঁরা প্রয়োজনে যেকোনো ত্যাগস্বীকার করতেও প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ ধরনের আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে দিতে সদা সর্বদা প্রস্তুত থাকব।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এ আয়োজন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও মরিশাসের জনগণের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে।’কর্মসূচিতে প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মরিশাসের বিভিন্ন পর্যায়ের নাগরিকেরা। উপস্থিত অতিথিরা বলেন, শুধু রক্ত সংগ্রহই এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য নয়। সবাইকে সচেতন করতেই এ আয়োজন। চিকিৎসাক্ষেত্রে রক্ত এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। জরুরি প্রয়োজনে নিরাপদ রক্ত সরবরাহ আমাদের সবার জন্যই এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। তারা বাংলাদেশ হাইকমিশনের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, হাইকমিশনের এ উদ্যোগ কিছুটা হলেও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে।প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ইয়ং স্টার প্রবাসীকল্যাণ সংঘ বাংলাদেশ হাইকমিশনের এ উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালায়।কর্মসূচিতে রেজিনা আহমেদ প্রথম রক্তদান করেন। অনুষ্ঠানে ৬৩ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয়। প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও স্থানীয় জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। বিজ্ঞপ্তি
প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান। শেষ ৩২ বলে ৩৯ রান তুলেছে ভারত। শুরু আর শেষটা দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ম্যাচটা কি ভারত জিততে চেয়েছিল?বাসিত আলীর কণ্ঠে কিছুটা রোষ, কিছুটা হতাশা। ভারত ইচ্ছা করে ম্যাচ ছেড়ে দেবে—এমন তত্ত্ব কিছুদিন ধরে আওড়ে যাচ্ছেন পাকিস্তানের এই সাবেক ক্রিকেটার। কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের খেলা দেখার পর বাসিত আলীর মন্তব্য, মাঠে ভারতীয়দের ক্রিকেট খেলতে তিনি দেখেননি। এর বদলে ভারত নাকি পিকনিক করেছে!ইংল্যান্ডের দেওয়া ৩৩৮-এর লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারত ম্যাচ হেরেছে ৩১ রানে। ভারত আর একটু চেষ্টা করলে হয়তো ম্যাচ জিতে যেত। কিন্তু তাদের শুরুটাই হয়েছিল ধীর। প্রথম ১০ ওভারে ২৮ রান বলে দিচ্ছিল—ভারত ম্যাচটা জেতার কথা ভাবছে না। এমনকি তাদের শেষ জুটিটাও যেমন রান তাড়া করার তাড়ায় ছিল না। শেষ জুটিতে ৩১ বলে ভারত ৩৯ রান তুলেছে, অথচ তখন উইকেটে ছিলেন ধোনি। ধোনি-যাদব জুটি ৫ ওভারে মাত্র চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছে। ৩১ বলে ৪২ রানে অপরাজিত ছিলেন ধোনি। কেদার যাদব ১২ রান করেছেন ১৩ বলে।ভারত ম্যাচটা হারায় পাকিস্তানের সেমিফাইনাল সম্ভাবনা বড় ধাক্কা খেয়েছে। কালকের পরাজয়ের পর বাসিত আলী বলেছেন, ‘৩৩৭ রান তাড়া করার ম্যাচে প্রথম ১০ ওভারে, যখন বৃত্তের বাইরে দুজন ফিল্ডার, ওই অবস্থায় মাত্র ২৮ রান করেন, তাহলে তো বলতেই হবে ভারত ওই ১০ ওভার খুব বাজে খেলেছে। মাঠে তারা যেন পিকনিক করছিল। ব্যাটসম্যানরা জেতার বদলে বেশি করে চাইছিল ভালো ফর্মটা ধরে রাখতে। রোহিত সেঞ্চুরি করেছে নিজের জন্য। বিরাট কোহলিও ৬৬ রান করেছে হেলেদুলে। কেবল পান্ডিয়াই মেরে খেলে ৩৩ বলে ৪৫ রান করেছে।’বাসিত আলী এর আগে দাবি করেছিলেন, ভারত ইচ্ছা করে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে যাবে। ভারত চায় না পাকিস্তান সেমিফাইনাল খেলুক। কাল ভারতের পরাজয়ে পাকিস্তানের সামনে এখন কঠিন সমীকরণ। বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতার পর তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের দিকে। প্রার্থনা করতে হবে, নিউজিল্যান্ড যেন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়।
মাত্র তিন ম্যাচ খেলেই বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল বিজয় শংকরের। পায়ের আঙুলের চোটে পড়ে বিশ্বকাপ ২০১৯ থেকে ছিটকে গেছেন তিনি। তাঁর জায়গায় দলে ডাকা হয়েছে ব্যাটসম্যান ময়ঙ্ক আগরওয়ালকে।তাঁকে মনে করা হচ্ছিল ভারতের চার নম্বরে ব্যাটিং স্পটের সমাধান। তিন ম্যাচ সুযোগ পেয়ে তেমন কিছু করতে পারেননি। গতকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁকে ছাড়াই নেমেছিল ভারত। মূল একাদশে ঢোকার জন্য লড়াই করবেন কি, উল্টো চোটে পড়ে বিশ্বকাপটাই শেষ হয়ে গেল বিজয় শংকরের। তাঁর জায়গায় ভারত থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে কর্নাটকের ব্যাটসম্যান ময়ঙ্ক আগরওয়ালকে। আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে খেলেন তিনি।বিসিসিআইয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নেটে অনুশীলন করার সময়ে জসপ্রীত বুমরার এক ইয়র্কারে পায়ের আঙুলে চোট লাগে তাঁর। পায়ের ওই আঙুলে আফগানিস্তানের বিপক্ষেই চোট লেগেছিল শংকরের। বুমরার ইয়র্কারে সেই পুরোনো চোট আরও বেড়ে যায়। ফলে নিশ্চিত হয়ে যায়, বিশ্বকাপে চোট নিয়ে আর খেলতে পারবেন না শংকর। এর মধ্যে আইসিসির কাছে আবেদন করা হয়েছে শংকরের জায়গায় আগরওয়ালকে নেওয়ার জন্য। আইসিসি বিসিসিআইয়ের অনুরোধ রক্ষা করেছে। এর মধ্যেই ভারতের ফ্লাইট ধরেছেন শংকর, আর লন্ডনে আসছেন আগরওয়াল।২৮ বছর বয়সী ময়ঙ্ক আগরওয়াল গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে অভিষিক্ত হন। ওয়ানডেতে এখনো ভারতের হয়ে খেলা হয়নি তাঁর।
বরিশালে মাদক মামলায় জাহিদ সিকদার নামের এক ব্যবসায়ীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাঁকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শহীদ আহম্মেদ এ রায় ঘোষণা করেন।জাহিদ সিকদার বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদী গ্রামের বাসিন্দা।আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর দপদপিয়া সেতুর টোল ঘর সংলগ্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় মোটরসাইকেল নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে ৭১ বোতল ফেনসিডিলসহ জাহিদকে আটক করে ডিবি পুলিশের সদস্যরা।এ ঘটনায় ওই দিনই ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) শাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। এরপর ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন ডিবির পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলে তা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে গণফোরাম। আজ সোমবার এক বিবৃতিতে গণফোরাম দাবি জানায়।গণফোরাম বলেছে, যে হারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণের ওপর নতুন বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।বিবৃতিতে গণফোরাম জানায়, গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে গণ-পরিবহনের ভাড়া বাড়বে, শিল্পোৎপাদনে খরচ বাড়বে। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সরকার প্রমাণ করল যে তারা জনগণের স্বার্থে দেশ পরিচালনা করছে না। গ্যাসের যে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে তা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে গণফোরাম।গতকাল রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। আবাসিক, বাণিজ্যিকসহ সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বিইআরসি। গড়ে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত আজ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।রান্নাঘরে যাদের গ্যাসের চুলা একটি, তারা এত দিন মাসে বিল দিত ৭৫০ টাকা। এখন থেকে গ্যাস বিল বাবদ মাসে তাদের ব্যয় হবে ৯২৫ টাকা। খরচ বেড়েছে ১৭৫ টাকা। যাদের বাসায় দুই চুলা, তারা বিল দিতে হতো ৮০০ টাকা। এখন তাদের দিতে হবে ৯৭৫ টাকা।বাসাবাড়ির গ্যাসের পাশাপাশি যানবাহনে ব্যবহার করা সিএনজির দামও বেড়েছে। সিএনজির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারে দাম বেড়েছে ৩ টাকা। ৪০ টাকার সিএনজি গ্যাসের দাম বেড়ে হয়েছে ৪৩ টাকা।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় জাল টাকাসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার বিকেলে গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্বরের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের পেছন থেকে ২০ হাজার টাকার জাল নোটসহ তাঁদের আটক করা হয়।আটক ব্যক্তিরা হলেন গাংনী উপজেলার গোপালনগর গ্রামের আবু জাফর (৩৫), চৌগাছা গ্রামের কবির আহমেদ (৩৮) ও তোফাজ্জেল হোসেন (৪৫)।পুলিশ বলছে, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে চৌগাছা গ্রামের কবির আহম্মেদ ভারতীয় নাগরিক বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তিনি পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার কাঁঠালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তবে তাঁর পিতা বাংলাদেশি। বেশ কিছুদিন ধরে চৌগাছায় তিনি তাঁর সৎমায়ের কাছে থাকছেন। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় জাল টাকার কারবার করে আসছিলেন তাঁরা। জাল টাকা হাতবদল হবে, এমন খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল তাঁদের তল্লাশি করে ২০টি ১০০০ টাকার জাল নোট জব্দ করে।গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুর রহমান বলেন, আটক ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জাল টাকা বাজারে ছড়াচ্ছিলেন। তিনজনের নামে জাল টাকার মামলা দিয়ে তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগাম জামিন চেয়ে মিজানুরের করা আবাদনের শুনানি নিয়ে সোমবার বিকেলে ঢাকার রমনা অঞ্চলের পুলিশের সংশ্লিষ্ট এডিসির প্রতি এই নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।আদালত বলেছেন, ডিআইজি মিজানুর রহমানের কার্যক্রম ও বক্তব্য পুলিশের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।এর আগে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় আগাম জামিন চাইতে হাইকোর্টে হাজির হয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। গতকাল রোববার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন আবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছিল।ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এক সংবাদপাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়। নারী নির্যাতনের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। দুদক কর্মকর্তাকে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সামনে এলে তড়িঘড়ি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের একটি প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠায়। মিজানের ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ অধিদপ্তর। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ প্রশাসন; যদিও নারী নির্যাতন, ঘুষ প্রদান, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে দুই বছর ধরে মিজানুরের নাম আলোচনায় এলেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।গত ২৪ জুন ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় মিজানুর রহমান, তাঁর স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে পুলিশের কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মাহমুদুল হাসানকে আসামি করা হয়।
বাণিজ্যবিরোধ ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সংস্কার নিয়ে নেতাদের একমত হতে ব্যর্থতার কারণে বিশ্ব অর্থনীতির নিম্নমুখী যাত্রার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এই ঝুঁকি হ্রাসে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির নেতারা। তবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য এখনো রয়ে গেছে।পশ্চিম জাপানের ওসাকা শহরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনের অধিবেশনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সম্পদের ফারাক কমিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বিশাল সুবিধা নিয়ে এসেছে। শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সম্পদের ফারাক বৃদ্ধি পেতে থাকা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। এ সমস্যা মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধির ফল সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।শেষ দিনের অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রে প্লাস্টিক–দূষণের মতো সমস্যা নিয়ে নেতারা আলোচনা করেন।দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনের সমাপ্তি টেনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেন, বিশ্বের জটিল সব সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন নেতারা। এ বিষয়টিকে ওসাকার চেতনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধান খুঁজে বের করার পথ দেখিয়ে দেবে এই চেতনা।জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি টানার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। তিনি ওসাকা শীর্ষ সম্মেলনকে সফল বলে আখ্যায়িত করেন। বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে, তা মোকাবিলায় প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করে যেতে সম্মত হয়েছে। সম্মেলনের বাইরে নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বৈঠকেও এই চেতনার প্রতিফলন লক্ষ করা গেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যকার শীর্ষ বৈঠকের প্রসঙ্গ টানেন।জাপানের প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, প্রবৃদ্ধির ফলাফল বিশ্বসমাজের সব সদস্যের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া দরকার। জি-২০ নেতারা সেই লক্ষ্যে উন্নয়নশীল বিশ্বে শিক্ষাবিস্তারে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন।পরিবেশ সমস্যার বিষয়ে শিনজো আবে মূলত সমুদ্রের প্লাস্টিক দূষণের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হওয়ার সমস্যা সমাধানে জাপানের পেশ করা ‘নীল সমুদ্র রূপকল্প’ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা সমর্থন করেছে। সমস্যার সমাধানে প্রতিটি দেশের নিজস্ব উদ্যোগকেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করেন।তথ্য ও উপাত্তের অবাধ প্রবাহের গুরুত্ব তুলে ধরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন উদ্ভাবন দ্রুত সব পরিবর্তন নিয়ে আসছে বিশ্বসমাজে। এ বিষয়ে নতুন একগুচ্ছ নিয়মাবলি ঠিক করার এখনই উপযুক্ত সময়। সেদিক থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সংস্কারকেও তিনি অবশ্যম্ভাবী বলে উল্লেখ করেন।সম্মেলনের শেষে প্রচারিত ঘোষণায় বিশ্ব অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আর্থিক ব্যবস্থা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, শ্রম ও চাকরির সুযোগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, পর্যটন, স্বাস্থ্য সমস্যা, পরিবেশদূষণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোটের অবস্থান তুলে ধরা হয়। ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন দেশের অবস্থানগত ভিন্নতার বিষয়টি জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই প্রকাশ পেয়েছিল। ফলে চূড়ান্ত ঘোষণা যে অনেকটা তারল্য-ভরা দলিল হয়ে উঠবে, সে ধারণা অনেকেই করেছিলেন। বাস্তবেও সেটাই ঘটতে দেখা গেছে।
অনেক দিন ধরে ইচ্ছে হচ্ছিল বন্ধুদের সঙ্গে একফাঁকে চলচ্চিত্রের আড্ডা জমিয়ে দিই। দেশের বাইরে থাকায় এটা সম্ভব হচ্ছে না। পেটে কথাগুলো জমে গেলেও তো একটা চাপ। ভাবলাম লিখে ফেলা যায়। আজকে সেই গল্পই হবে। চলচ্চিত্রের ছাত্র হিসেবে এটা আমি স্বচ্ছন্দেই করতে পারি।কদিন আগে আমাদের ইউনিভার্সিটিতে (ইউনান আর্টস ইউনিভার্সিটি) চলচ্চিত্র বিভাগের ১৫তম মাইউয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল শুরু হয়েছে। পনেরো বছর ধরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ছাত্ররা শিক্ষাজীবনের শেষে এসে তাঁদের তৈরি করা সবচেয়ে ভালো কাজটা উৎসবের জন্য জমা দেন। এর মধ্য থেকে বাছাই করা ফিচার ফিল্ম, তথ্যচিত্র ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানগুলো প্রতিদিন দর্শকের জন্য উন্মুক্ত প্রদর্শন করা হয়। আমি প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে দেখি। তাঁদের আলোচনা শুনি। হাততালি দিই। বেশি ভালো লাগলে নতুন নির্মাতাকে গিয়ে একটা ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে আসি। এই হলো আমাদের পরবর্তী চলচ্চিত্রযাত্রীদের পিঠ চাপড়ে দেওয়ার ঢং।চলচ্চিত্রের ছাত্রদের জন্য চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শক বা প্রতিযোগী হিসেবে অংশগ্রহণ করাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। চলচ্চিত্র যেহেতু কবিতা বা চিত্রকর্ম না যে একা একা ভাবনাগুলোকে কলম বা কালি দিয়ে এঁকে মানুষের সামনে তুলে ধরলেই হয়ে গেল, এটা যেহেতু অনেক শিল্পের একটা সম্মিলিত মাধ্যম, সেহেতু এর সঙ্গে একঝাঁক সৃষ্টিশীল মানুষের ঘামঝরানো পরিশ্রম আর মেধার পরিপূর্ণ মিলন না থাকলে ঠিক চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে না। তাই প্রয়োজন কোথায় এই মেধা ছড়ানো হচ্ছে বা কোথায় চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট মানুষেরা বৈঠক পাকাচ্ছে, চলচ্চিত্রের আড্ডা ও আলোচনা হচ্ছে তা অনুসরণ করা। এ ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র উৎসবগুলো সবচেয়ে উপকারী জায়গা।একসময় চায়নার অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্রগুলো বাংলাদেশের দর্শক খুব পছন্দ করত। আমাদের ছোটবেলায় ব্রুস লি, জেকি চ্যান, জেট লি এঁরা খুব পরিচিত নাম। চাইনিজ এই চলচ্চিত্রগুলো বেশির ভাগ সময় চাইনিজ মিথের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। যেমন ড্রাগন ফেস্টিভ্যাল, মাংকি কিং বা বানর রাজা, ঘুমন্ত রূপসীর পর্বত—এসব খুব পরিচিত গল্প। চীনের মানুষ এসব মিথকে বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধার পর্যায়ে নিয়ে গেছে বলে তাদের তৈরি করা গল্পগুলো মানুষ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে চলচ্চিত্রের গল্পে পরিবর্তন এলেও চীনের টেলিভিশন নাটকগুলোতে এখনো প্রচুর মিথলজিক্যাল গল্প ধারণ করা হয় এবং নির্মাণকৌশল উন্নত হওয়ায় এ দেশে এগুলোর দর্শকসংখ্যা প্রচুর।আড্ডা হচ্ছিল মাইউয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল নিয়ে। গত দুটো আয়োজন আমি নিজের চোখে দেখেছি। আয়োজন আড়ম্বরপূর্ণ।আমি চলচ্চিত্র বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোং চিয়ের কাছে গিয়ে বললাম, ‘আমরা কিন্তু চাইলেই আমাদের এই মাইউয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালকে আন্তর্জাতিক উৎসবে রূপ দিতে পারি। প্রথমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে চলচ্চিত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করা যায়।’ তিনি আমার কথায় বেশ আনন্দিত হলেন। আমার ওপর বিশ্বাস রেখে বললেন, ‘এই উৎসব আয়োজন করার দায়িত্ব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তোমার। কারণ, তুমি ভালো করেই জানো চীনে সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা কেমন। আর আমরা এসবে অনভ্যস্থ হয়ে যাওয়াতে এখন সাহসও করতে পারি না আন্তর্জাতিক কোনো আয়োজনের। এ ক্ষেত্রে তোমাদের মতো তরুণদেরকেই সামনে থেকে কাজ করতে হবে।’আমি সেদিন খুব খুশি হয়ে তাঁর অফিস থেকে বের হয়েছিলাম। কোনো কিছুর আয়োজন করা আমার পুরোনো অভ্যাস। দেশে বন্ধুসভা করে এসব অভিজ্ঞতার ঝুলি বড় হয়ে গেছে। আমি অঙ্ক কষে ফেলেছি, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজনে কতটুকু সতর্ক থাকতে হবে এবং কতটুকু গোছানো হতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ এগোচ্ছে। হাতে আছে সময় আরও অন্তত ১০ মাস।অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের তরুণ চলচ্চিত্রনির্মাতারা চীনে তাঁদের কাজ নিয়ে আসবেন। দক্ষতা দেখাবেন। পুরস্কার হাতে নিয়ে তাঁদের গল্প শোনাবেন—এই দৃশ্য দেখার জন্য আমি বেশ মুখিয়ে আছি।অতএব এ বছরে আমাকে বেশ চাপ নিতে হবে বুঝে গিয়েছি।চলচ্চিত্র উৎসবের আড্ডা শেষে আলোচনা এবার একটু ভিন্ন দিকে নেওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের ছাত্ররা যেসব বই পড়ে সিনেমার জ্ঞান আহরণ করছেন, তার বেশির ভাগই দেখা যায় হয় পশ্চিমা স্কলারদের লেখা, নয়তো ভারতীয় লেখকদের বই। চলচ্চিত্র বিষয়টা প্রচণ্ড অবারিত। একেবারেই মুক্ত। অতএব জানতেও হয় অনেক। অনেক মানে, এই অনেকের কোনো সীমা–পরিসীমা নেই। জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব। তাই আমি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ছাত্রদের জন্য চীন থেকে কিছু ধারণা পাঠানো যায় কি না, সেটা ভাবছিলাম। সিনেমাটাকে চীনের নির্মাতারা কীভাবে দেখেন। তাঁদের এত পুরোনো এবং এত বড় চলচ্চিত্রের বাজার টিকিয়ে রাখতে গিয়ে তাঁদের চলচ্চিত্র ভাবনাটা আজকে কোন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে, সেটা জানা দরকার আমাদের। গত তিন মাস আগে থেকেই একটু একটু করে শুরু করে দিয়েছি চীনের একজন বিখ্যাত তথ্যচিত্রনির্মাতার অডিও ভিজ্যুয়াল ভাষার ওপর লেখা বেশ জনপ্রিয় একটা বই বাংলায় অনুবাদের কাজ। এক অধ্যায় অনুবাদ করি আর লেখকের সঙ্গে বসে সেটা নিয়ে আলোচনায় বসি। যাতে যতটুকু সম্ভব মূল ভাবনাটার কাছাকাছি গা ঘেঁষে থাকা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়–জীবনে সবার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো তাদের ক্যাম্পাস। আর এই ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নভাবে সাজিয়ে তুলতে শেখ কামাল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বন্ধুসভার এইবারের উদ্যোগ, তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস পরিষ্কার।গত ৩০ জুন ক্লাস শেষে আহবায়ক রাফিউল ইসলাম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক তানভিরুল ইসলাম চৌধুরীর পরিচালনায় বন্ধুরা ক্যাম্পাসের চারপাশে জন্মানো আগাছা এবং ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা কাগজ, প্যাকেট ইত্যাদি পরিষ্কার করেন।ক্যাম্পাসের উন্নয়ন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের হাতে দেখে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন।আহবায়ক সদস্য, শেখ কামাল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বন্ধুসভা
ঢাকার কেরানীগঞ্জে মো. রনি (২৫) নামের এক অটোরিকশা চালককে কুপিয়ে হত্যা করেছেন দুর্বৃত্তরা। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া চৌরাস্তার শমসেরপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই এলাকা থেকে তিন যুবককে আটক করেছে।রনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চুনকুটিয়া কাঁচা সড়ক এলাকার হারুন হাওলাদারের ছেলে।দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাদিকুজ্জামান বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এলাকাবাসীর কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে শমসেরপুল এলাকায় শামীম মিয়ার ৮ তলা ভবনের সামনে থেকে রনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। রনির সারা শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন আছে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।নিহতের বড় ভাই মো. ফিরোজ বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো অটোরিকশা নিয়ে গতকাল সকাল ৬টার দিকে আমার ভাই বের হন। সন্ধ্যার দিকে লোকমুখে শুনতে পাই, আমার ভাইকে কে বা কারা হত্যা করে চুনকুটিয়া চৌরাস্তার শমসেরপুল এলাকায় লাশ ফেলে রেখেছে। আমার ভাইয়ের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। কারা তাঁকে হত্যা করেছে বুঝতে পারছি না। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন এবং ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হবে।
স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যার প্রবীণ চিকিৎসক অধ্যাপক আনোয়ার-উল আজিমের স্ত্রী শিরিন আজিম মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল রোববার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন তিনি।শিরিন আজিমের বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি এক মেয়ে, এক ছেলে ও নাতি-নাতনি রেখে গেছেন।শিরিন আজিমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ৫ জুলাই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মসজিদ-উত-তাকওয়ায় (ধানমন্ডি ১২) বাদ আসর এ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। বিজ্ঞপ্তি
সূর্যগ্রহণ দেখার আশায় আগামীকাল মঙ্গলবার রাতে আকাশের দিকে অনেকেই হয়তো চোখ রাখবেন। দক্ষিণ মহাসাগরের ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার মুতু্ওয়ারা দ্বীপের বাসিন্দা আর বলিভিয়ার বাসিন্দারা দেখতে পাবেন এই পূর্ণগ্রাস। তবে বাংলাদেশের আকাশে সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে না।আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামীকাল ২ জুলাই রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে। রাত ১২টা ২ মিনিটে কেন্দ্রীয় সূর্যগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হবে রাত ২ টা ৪৩ মিনিটে। এর মাঝে সূর্যের সর্বোচ্চ গ্রহণটি হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ২৩ মিনিটে। তখন গ্রহণটির স্থায়িত্ব হবে ৪ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড। রাত ৩টা ৫০ মিনিটে সম্পূর্ণ গ্রহণ শেষ হবে।যখন পূর্ণগ্রাস ঘটে, তখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝ বরাবর চাঁদ চলে আসে এবং তারা একই সরলরেখায় অবস্থান করে। এতে চাঁদের আড়ালে সূর্য ঢাকা পড়ে যায় এবং চাঁদকে অনেক বড় দেখায়। সূর্যগ্রহণে চাঁদ সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলতে পারে। এতে কোনো কোনো স্থানে তখন পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা দেয়। এ সময় সূর্য পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে।এবারের সূর্যগ্রহণটি দক্ষিণ মহাসাগরের ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার মুতু্ওয়ারা দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে শুরু হয়ে বলিভিয়ার মুরকু শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিক পর্যন্ত দেখা যাবে।
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে গতকাল রোববার শুরু হয়েছে বিশ্বঐতিহ্য কমিটির ৪৩তম অধিবেশন। এবারের সভায় সুন্দরবনসহ ছয়টি বিশ্বঐতিহ্যকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর বিশ্বঐতিহ্য কমিটি। ৫ জুলাই সভায় এ বিষয়ে আলোচনা উঠছে। সুন্দরবনকে যাতে বিশ্বঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ না দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে আলোচনা করতে বাংলাদেশ সরকারের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাকুতে গেছে।প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধিদলে সরকারের চারটি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমদ কায়কাউস প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বঐতিহ্য কেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতির ব্যাপারে বেশ কিছু ভুল যুক্তি ও তথ্য উপস্থাপন করেছে। বিশ্বঐতিহ্যের তালিকা থেকে সুন্দরবনের নাম বাদ দেওয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যুক্তি তুলে ধরবে।বিশ্বঐতিহ্য কমিটি ইতিমধ্যে সুন্দরবনকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মূলত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ বন্ধ করা, সুন্দরবনের চারপাশে শিল্পকারখানার অনুমোদন ও কার্যক্রম বন্ধ করার বিষয়টি তারা উল্লেখ করে বলেছে, বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবন রক্ষায় যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়নি। এর ফলে এই বিশ্বঐতিহ্য অপূরণীয় ক্ষতির মুখে আছে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দরবন রক্ষায় সরকার যে অবহেলা ও অবজ্ঞা দেখিয়েছে, সে কারণেই এর নাম বিশ্বঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখনো সময় আছে সরকার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের পাশের সব শিল্পকারখানা বন্ধ করে দিয়ে সুন্দরবন রক্ষার কার্যকর উদ্যোগ নিক, এটাই আমরা চাই।’
রংপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা ৩০ জুন রোববার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে প্রথম আলো রংপুর অফিসে বিজ্ঞান উৎসবের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন।জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভা শুরু হয়। বিজ্ঞান উৎসবের সব কর্মসূচি সফল করতে বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা হয় সভায়।
বাংলাদেশে ভালো শিক্ষক পাওয়া এখন একটি বড় সমস্যা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, মেধাবীদের শিক্ষকতায় নিয়ে আসতে হবে। জ্ঞানী, একই সঙ্গে সেই জ্ঞানকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে এবং পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে উৎসাহী—তেমন শিক্ষক দরকার।আজ সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এক আলোচনাসভায় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত এই আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘গুণগত শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’।সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মেধাবী শিক্ষক হওয়ার অর্থ কেবল জ্ঞানী হওয়া নয়, শিক্ষকতায় আগ্রহীও হওয়া চাই। অন্য চাকরি পাননি বলে শিক্ষক হয়েছেন—এমন লোকদের দিয়ে কুলাবে না। জ্ঞানী, জ্ঞানকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে এবং পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে উৎসাহীদের শিক্ষাক্ষেত্রে টেনে আনতে হলে বেতন-ভাতা সম্মানজনক হওয়া চাই। শিক্ষকের বেতন-ভাতা অন্য পেশাজীবীদের চেয়ে বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসেন এবং কোচিং সেন্টারে না গিয়ে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানেই নিবিষ্টচিত্ত হন।প্রবীণ এই অধ্যাপক বলেন, ‘আজকাল যে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। যেটুকুই-বা দেওয়া হচ্ছে, তাও শিক্ষার্থী ঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। তার সার্বক্ষণিক ভয় পরীক্ষার। আমাদের বিদ্যায়তনিক শিক্ষা সব সময়ই পরীক্ষামুখী ছিল, এখন সেটা রীতিমতো পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। যা পড়ানো হচ্ছে, তা পরীক্ষায় পাসের জন্য। পরীক্ষা, বিশেষ করে পাবলিক পরীক্ষা, যত কম হয় ততই মঙ্গল। কারণ, পরীক্ষার ব্যাপারে চাপ যত বাড়ে, মূল বই পড়ার প্রয়োজন তত কমে যায়। আর পরীক্ষাগুলোয় যে এমসিকিউ প্রশ্নরীতি চালু রয়েছে, এটা খুবই ক্ষতিকর। এতে শিক্ষার্থীরা এমনকি প্রশ্নটাও ভালো করে বুঝতে চায় না, কেবল এ-বি-সি-ডি-তে দাগ দেওয়ার কায়দা শেখে। আরেক উৎপাদন ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’ ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক কেউই ঠিকমতো বোঝেন না। এই পুরো ব্যবস্থা কোচিং সেন্টার ও গাইড বুক ব্যবসাকে সরগরম করে।’বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার মান অতীতে যে খুব উঁচুতে ছিল এবং এখন যে খুব অধঃপতিত, তা নয়। আসলে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমেছে। তারা আসে, থাকে, চলে যায়। শিক্ষার ব্যাপারে তাঁদের প্রবল আগ্রহ দেখা যায় না। কারণ, এতে তাঁরা কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পায় না, জীবিকার নিশ্চয়তা দেখতে পায় না। বেকারত্বের সমস্যা ক্রমাগত বাড়ছেই। শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর গ্রহণক্ষমতা খুব বড় ব্যাপার। আগ্রহের অভাব ঘটলে গ্রহণক্ষমতা হ্রাস পায়।’সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। গুণগত শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা উত্তরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি। বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরীকে প্রধান করে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র একটি পরামর্শ সেল তৈরি করা হবে। এর নাম হবে ‘কমিটি ফর এক্সিলেন্স ইন এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’। এর সদস্যরা গবেষণা করবেন, মূল্যায়ন করবেন এবং পরামর্শ দেবেন। গুণগত শিক্ষার জন্য, শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য কী কী করণীয়, সেগুলো তাঁরা চিহ্নিত করবেন। এ ছাড়া ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে একটি কাউন্ট ডাউন ঘড়ি নির্মাণ করার কথাও জানান উপাচার্য।আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারক সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে দিনের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য।বঙ্গবন্ধুকে ডি-লিট দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) উপাধি দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২০-২১ সালে সরকারঘোষিত ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে সম্মানসূচক এই উপাধি দেওয়া হবে।আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনের উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এ তথ্য জানান।
ঢালাই ভেঙে ইট-পাথরের সুরকি বেরিয়ে এসেছে। বড় বড় গর্তে জমে আছে বৃষ্টির পানি। গর্তে কাদাপানি মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। দেখে মনে হয় কাদামাটির সড়ক, যাতে যানবাহন চলে হেলেদুলে। বর্ষায় বেহাল সড়কে হেঁটে চলাচল করারও উপায় নেই।সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরের প্রধান সড়ক এটি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও দিরাই পৌরসভার মধ্যে ঠেলাঠেলিতে সাত বছর ধরে সড়কটির কোনো সংস্কার করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গত বছর সড়কের কাজ করতে রাজি হয়। সেই অনুযায়ী প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়। দরপত্র আহ্বানের পর ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পর এখন বিপত্তি বেধেছে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। পৌর কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কের সংস্কারকাজ করতে হলে ১২টি বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে হবে। তিন মাস আগে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিলেও খুঁটিগুলো সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, অর্থের অভাবে খুঁটি সরানো যাচ্ছে না। ফলে সড়ক সংস্কারের কাজ করা যাচ্ছে না।সরেজমিনে দেখা গেছে, দিরাই পৌর শহরের প্রবেশমুখেই বাসস্ট্যান্ড। এরপর বাঁ দিকে কলেজ রোড হয়ে শহরের ভেতরে যেতে হয়। এটাই মূল সড়ক। বাসস্ট্যান্ড থেকে থানা পয়েন্ট পর্যন্ত দূরত্ব মাত্র ৬৮৬ মিটার। এই অংশটুকু সাত বছর ধরে বেহাল। বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকেই সড়কে খানাখন্দ আর ছোট–বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। থানা পয়েন্ট পর্যন্ত যেতে সড়কের দুই পাশে রয়েছে দোকানপাট আর মানুষের ঘরবাড়ি। সড়কের স্থানে গর্ত হয়ে পানি জমে আছে। কোথাও কোথাও কাদা আর পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। দুই পাশে কাদা ও সড়ক ভাঙাচোরা থাকায় পথচারীদের হেঁটে চলতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।কলেজ রোডের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বললেন, মানুষ বারো মাস এখানে ভোগান্তি পোহায়। বর্ষায় কাদাপানি আর শুকনোর সময় ধুলাবালি। কিন্তু কোনো কাজ আর হয় না। ব্যবসায়ী সাইফুর রহমান বলেন, বাইরের কেউ দেখলে ভাববে পুরো শহরটাই মনে হয় এ রকম। একে তো সড়ক বেহাল, তার ওপর সড়কে পানি জমে থাকায় বৃষ্টির দিনে চলা দায় হয়ে পড়ে। সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘সাত বছর ধরে এই সড়ক বেহাল। আমরা শুধু আশ্বাস পাচ্ছি, কাজ আর হচ্ছে না। আমরা চাই দ্রুত কাজ হোক।’দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশারফ মিয়া বলেন, এই সড়ক সংস্কারে প্রায় চার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সড়ক ৩২ ফুট প্রশস্ত হবে, মাঝখানে বিভাজক থাকবে। একই সঙ্গে ড্রেন নির্মাণের কাজও আছে। কিন্তু বিদ্যুতের খুঁটির জন্য সড়কের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা আর কয়েক দিন দেখব, খুঁটি সরানো না হলে যে অবস্থায় আছে, সেভাবে রেখেই কাজ শুরু করে দেব। মানুষকে আর দুর্ভোগে রাখতে চাই না।’বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর বিষয়ে নিয়ম হলো, যে প্রতিষ্ঠানের কাজের জন্য এটি করা হবে, তারাই খরচ দেবে। কিন্তু পৌরসভা বলছে তাদের সেই অর্থ নেই। তাই বিষয়টি আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের খরচেই খুঁটি সরানোর অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলো বন্ধুসভার দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক শাহনাজ পারভিন নিশার মা রেহেনা ইয়াসমিনের (৪৭) স্মরণসভা রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে নারীদের সংগঠন জাগো নারী বহ্নিশিখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন। বন্ধুসভা ও বহ্নিশিখা যৌথভাবে শহরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাধারণ পাঠাগারে বিকেল সাড়ে চারটায় এ সভার আয়োজন করে।বহ্নিশিখার আহ্বায়ক ফারুকা বেগমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন বহ্নিশিখার উপদেষ্টা শফিকুল আলম, আনোয়ার হোসেন, বহ্নিশিখার সদস্য সচিব মনোয়ারা খাতুন, সদস্য নুরুন নাহার, বন্ধুসভার সহসভাপতি মারিয়া হাসান, শাহনাজ পারভিন। আরও বক্তব্য দেন রেহেনা ইয়াসমিনের স্বামী নজরুল ইসলাম, বাবা আশরাফ আলী ও মা আসমা বেগম। সভায় মাকে নিয়ে গান পরিবেশন করেন বন্ধুসভার ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুল মতিন ও সদস্য আব্দুস সালাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার অর্থ সম্পাদক আলী উজ্জামান নূর।অর্থ সম্পাদক, প্রথম আলো বন্ধুসভা চাঁপাইনবাবগঞ্জ
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোট ৭ জুলাই আধা বেলার জন্য সারা দেশে হরতাল ডেকেছে। জোটের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ সোমবার বেলা ১১টায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হয়।বৈঠক শেষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সরকার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অযৌক্তিক। এর প্রতিবাদে ৭ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত হরতাল পালন করা হবে।গতকাল রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। আবাসিক, বাণিজ্যিকসহ সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বিইআরসি। গড়ে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত আজ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।রান্নাঘরে যাঁদের গ্যাসের চুলা একটি, তাঁরা এত দিন মাসে বিল দিতেন ৭৫০ টাকা। এখন থেকে গ্যাস বিল বাবদ মাসে তাঁদের ব্যয় হবে ৯২৫ টাকা। খরচ বাড়ল ১৭৫ টাকা। যাঁদের বাসায় দুই চুলা, তাঁরা এত দিন বিল দিতেন ৮০০ টাকা। এখন তাঁদের দিতে হবে ৯৭৫ টাকা।বাসাবাড়ির গ্যাসের পাশাপাশি যানবাহনে ব্যবহার করা সিএনজির (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) দামও বেড়েছে। সিএনজির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারে দাম বেড়েছে ৩ টাকা। ৪০ টাকার সিএনজি গ্যাসের দাম বেড়ে হয়েছে ৪৩ টাকা।আরও পড়ুন... দুই চুলার গ্যাসে ৯৭৫ টাকা, এক চুলায় ৯২৫
গত ২৯ জুন শনিবার পটিয়া সরকারি কলেজ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো পটিয়া বন্ধুসভার আয়োজনে ও পটিয়া ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় ‘দুর্যোগ মোকাবিলা প্রশিক্ষণ’ শীর্ষক কর্মশালা।এতে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন পটিয়া ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক প্রধান সৌমেন বড়ুয়া।এতে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি জাহেদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত বড়ুয়া চৌধুরী, নারীবিষয়ক সম্পাদক অনন্যা ঘোষ রায়সহ গৌতম চৌধুরী, মনিরুজ্জামান, আবদুল আজিজ তুহিন, আকরাম আলবী, ফাহমিদা সুলতানা, পার্থ দে, ফারুক আহমেদ রাজু, তারেক আজিজ, তারেকুল হাসান, রোকনুজ্জামান, জুয়েল হোসেন, সাজ্জাদুল হক, জাবেদুল ইসলাম, মো. ইমন। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রথম আলো পটিয়া প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক।সাংগঠনিক সম্পাদক, পটিয়া বন্ধুসভা (চট্টগ্রাম)
সংযোগ সড়ক না থাকায় ময়মনসিংহের নান্দাইলের একটি সেতু অনেক বছর ধরে ব্যবহার করতে পারছেন না পথচারীরা। দীর্ঘ সময় অব্যবহৃত পড়ে থাকায় সেতুর বিভিন্ন অংশ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। রেলিংয়ের কিছু অংশও ভেঙে গেছে।স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নান্দাইল পৌরসভার শেষ সীমানা কান্দাপাড়া মহল্লা। সেই মহল্লার সঙ্গে নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের মেরাকোনাসহ কয়েকটি গ্রামকে যুক্ত করার জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেতুর আশপাশে নির্মাণকালীন কোনো ফলক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের স্মৃতির ওপর ভর করে এবং কেউ কেউ নিজের সন্তানের বয়সের সঙ্গে মিলিয়ে সেতুটি ১৯৯৭ সালে চিমনি খালের ওপর নির্মিত হয়েছে বলে জানান।কান্দাপাড়া মহল্লার রাহেলা আক্তার (৪০) বলেন, তিনি বউ হয়ে আসার পর থেকে সেতুটি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছেন। মানুষের কাজে না লাগলে সেতুর কী দরকার।ভাটি কান্দাপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নান (৪৮) বলেন, বিলে পানি থাকায় এখানে টেকসই সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা দরকার।খোঁজ নিয়ে সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার মো. এনামুল কাদিরের সন্ধান পাওয়া যায়। তাঁর ভাষ্য, অনেক আগের কথা। সব তথ্য তাঁর মনে নেই। তবে সেতুটি তিনি নির্মাণ করেছেন। নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ ছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে নান্দাইল পৌরসভার নতুন মসজিদ এলাকা। ওই এলাকা থেকে পিচঢালা একটি সড়ক সরাসরি চলে গেছে কান্দাপাড়া মহল্লায়। ওই সড়ক ধরে এগিয়ে গেলে সেতুটি দেখা যায়। সেতুর দুই প্রান্তে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। সেতুতে ওঠার জন্য মহল্লার লোকজন বাঁশের মই লাগিয়ে রেখেছেন। স্থানীয় লোকজন জমিজমা দেখাশোনা করার জন্য মই বেয়ে ওপরে উঠে সেতু পার হন। সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের মেরাকোনা গ্রামের অংশে রয়েছে এ ধরনের আরেকটি মই। অন্যদিকে নান্দাইল ইউনিয়নের ভাটি বিলপাড় গ্রাম থেকে তাকালে মনে হয় সেতুটি খালের পানিতে ভেসে রয়েছে।কান্দাপাড়া মহল্লার প্রায় ১০ জন ও মেরাকোনা গ্রামের ৮ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মিত হলে বহুমুখী যোগাযোগসুবিধা পাবে কয়েক গ্রামের মানুষ। শেরপুর ইউনিয়নের মেরাকোনাসহ কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থী ও বাসিন্দারা ঘোরাপথে না গিয়ে সরাসরি সমূর্ত্তজাহান মহিলা কলেজ ও পৌরসভায় ঢুকতে পারবে। এখন ওই বাসিন্দাদের নান্দাইল-দেওয়ানগঞ্জ সড়ক ও হেমগঞ্জ বাজার ঘুরে আসতে হচ্ছে।নান্দাইলের সমূর্ত্তজাহান মহিলা কলেজের অফিস সহায়ক তারা মিয়ার বাড়ি মেরাকোনা গ্রামে। তিনি বলেন, সেতুর ওপরে উঠতে গিয়ে অনেক নারীকে নিচে পড়ে আহত হতে দেখেছেন তিনি।শেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, সংযোগ সড়ক থাকলে সেতুর দক্ষিণ পাশের মানুষের সুবিধা হতো। তবে, এ ধরনের সড়ক নির্মাণ করার মতো তহবিল ইউপির হাতে নেই।নান্দাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদের গ্রামের বাড়ি শেরপুর ইউনিয়নের মেরাকোনা গ্রামে। সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন।স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নান্দাইল উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের মিয়া বলেন, সংযোগ সড়ক নির্মাণের একটি প্রস্তাব অনেক আগে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব পাস হয়নি। অন্যদিকে এ ধরনের সড়ক নির্মাণে খরচ বেশি হওয়ায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তবে সড়ক নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরে আবার প্রস্তাব পাঠানো হবে।
৩৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আজ সোমবার পিএসসি বিশেষ সভা শেষে এই ফলাফল প্রকাশ করে। এতে পাস করেছেন ৯ হাজার ৮৬২ জন। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ১৪ হাজার ৫৪৬ জন প্রার্থী। পাস করা ওই প্রার্থীরা এখন মৌখিক পরীক্ষা দেবেন। প্রায় এক বছর পর এই ফলাফল প্রকাশ করল পিএসসি। ফলাফল পিএসসির ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।৩৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে বেশি সময় লাগার কারণ বলতে গিয়ে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, এবারই প্রথমবারের মতো প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষকের পর তৃতীয় পরীক্ষক খাতা দেখেছেন। তাই ফলাফল দিতে সময় বেশি লেগেছে।চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই খাতা দেখার পাশাপাশি আমরা ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে প্রায় পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের সুপারিশ করেছি। এ ছাড়া পিএসসি অন্যান্য নিয়োগের কাজও করেছে।’কবে থেকে ৩৮তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ২৯ জুলাই থেকে মৌখিক পরীক্ষা শুরু করতে চাই। তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’৩৮তম বিসিএসের মাধ্যমে জনপ্রশাসনে ২ হাজার ২৪ জন ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ করার কথা ছিল। তবে এখন এই বিসিএসে ১৩৬ জন বেশি নিয়োগ পাবেন। এতে এই বিসিএসে মোট পদের সংখ্যা হচ্ছে ২ হাজার ১৬০।৩৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় গত বছরের ১৩ আগস্ট। ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা হওয়ার প্রায় দুই মাসের মধ্যে এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন প্রার্থী আবেদন করেন।
সামান্য এক ঘুষিতে তিনি বদলে দিতে পারেন মুখের মানচিত্র। তিনি চারবার ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। আর দুবার জিতেছেন ডাব্লিউডাব্লিউই। সব মিলিয়ে ছয়বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তিনি। ২০০৬ সাল থেকে তাঁকে বড় পর্দায় দেখা যায় হলিউডের সিনেমায়। ‘গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি’ (২০১৪), ‘গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম ২’ (২০১৭) এবং ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার’ (২০১৮) ছবির ড্র্যাক্স চরিত্র দিয়ে তিনি দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন নিয়েছেন। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, তিনি ডেভ বাউতিস্তা।কিন্তু যত সহজে হয়ে গেল বলা, এই সফলতা কিন্তু মোটেও অত সহজে ধরা দেয়নি। ডেভ বাউতিস্তার ছোটবেলা কেটেছে চরম দারিদ্র্যে। মাত্র নয় বছরের ভিতরে তিনি তাঁর বাসার সামনের গলিতে চোখের সামনে তিনজনকে মারামারি করে মরতে দেখেছেন। ১৩ বছর বয়সে গাড়ি চুরির অপরাধে তিনি ধরা পড়েন। ১৭ বছর বয়সে তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। যদিও তিনি বলেন যে তিনি তাঁর পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ, তাঁর পরিবার তাঁকে বাস্তবতা দেখিয়েছে, কঠোর পরিশ্রম করতে শিখিয়েছে।এরপর তাঁকে একটা নাইটক্লাবে দুটি মানুষকে মেরে আহত করার অপরাধে এক বছরের জন্য চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর তিনি বডিবিল্ডিং শেখেন। তারপরই তরতর করে বেয়ে ওঠেন সফলতার শিখরে। অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা পান। শুরু হয় মুদ্রার উল্টো পিঠের তারকাজীবন।যা হোক, সম্প্রতি ডেভ বাউতিস্তার একজন ভক্ত টুইটারে ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরাস ৯’ ছবিতে তাঁকে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন পরিচালক ও প্রযোজককে। ওই ভক্ত লিখেছেন যে ‘ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস’ ফ্রাঞ্চাইজির নতুন ছবিতে ভিন ডিজেলের সঙ্গে ভিলেন হিসেবে ডেভ বাউতিস্তাকে নিলে খুব ভালো হয়। বিশেষ করে জন সিনাকে এই ফ্রাঞ্চাইজিতে যুক্ত করার খবর এলে ওই ভক্ত এ মন্তব্য করেন। তিনি এই ছবির পরবর্তী সদস্য হিসেবে এই ‘রেসলার কাম অভিনেতাকে’ ভিলেনের চরিত্রে দেখতে চান।এদিকে ভক্তের এই পরামর্শকে গুলি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন খোদ ডেভ বাউতিস্তা। তিনি নাকি মোটেই ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ফ্রাঞ্চাইজির ছবির ভক্ত নন। এসব ছবি করার চেয়ে ‘ভালো ছবি’ করাকেই বেশি প্রাধান্য দেবেন। ডেভ বাউতিস্তা ওই ভক্তের টুইট শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘তোমার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। তবে (ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ৯ করার চেয়ে) আমি বরং ভালো ছবি করব।’ অর্থাৎ পরোক্ষভাবে তিনি বলতে চাইছেন, ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ফ্রাঞ্চাইজির ছবিগুলো মোটেও ভালো না।এই বছরের ১ আগস্ট থেকে ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ৯’–এর শুটিং শুরু হবে। ২০২০ সালের ২২ মে ছবিটি মুক্তির কথা রয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, সৌদি সাংবাদিক ও সমালোচক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে কিছু মানুষ ‘টাকার শ্রাদ্ধ’ করছে। তুরস্কের সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।জাপানের ওসাকায় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার এক ফাঁকে এ কথা জানান এরদোয়ান। তবে এ কথার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি।সম্মেলনের শুরুতে এরদোয়ান বলেন, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক খাসোগির হত্যারহস্য উন্মোচন করে খুনিদের নাম সবার সামনে তুলে ধরা উচিত। তিনি বলেন, এই হত্যার পেছনের অনেক গল্পই এখনো ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে।গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার প্রয়োজনে ঢোকার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন সৌদির খ্যাতনামা সাংবাদিক খাসোগি। শুরু থেকে তুরস্ক দাবি করে আসছিল, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতর সৌদি চরেরা হত্যা করেছে। ২০১৭ সালে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতা গ্রহণের পর রোষানলে পড়েন খাসোগি। তিনি দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ওয়াশিংটন পোস্টে যুবরাজ মোহাম্মদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে একের পর এক কলাম লেখেন। অভিযোগ উঠেছে, যুবরাজের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় দুই দিনের স্বর্ণমেলায় ১১ হাজার ৮০৬ ভরি সোনা কর দিয়ে বৈধ বা সাদা করেছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। বৈধ করতে ব্যবসায়ীরা মোট কর দিয়েছেন ২ কোটি ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া ৫ হাজার ১২ ভরি রুপা এবং ১ হাজার ৭১৭ ক্যারেট হীরা বৈধ করেছেন ব্যবসায়ীরা।কর অঞ্চল খুলনায় গত ২৪ ও ২৫ জুন দুই দিন স্বর্ণমেলার আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চুয়াডাঙ্গার স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা মেলায় অংশ নেন। মেলায় নিবন্ধিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের অঘোষিত ও মজুত সোনা, স্বর্ণালংকার, হীরা ও রুপার ঘোষণার বিপরীতে কর পরিশোধ করে তা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী স্থানীয় সমবায় ভবনে অবস্থিত সার্কেল-৯, চুয়াডাঙ্গা, কর অঞ্চল-খুলনার উপকর কমিশনারের কার্যালয়ে কর পরিশোধ করেছেন। তাঁরা ২৪ থেকে ৩০ জুন পে-অর্ডারের মাধ্যমে তাঁদের রিটার্ন দাখিল করেন।উপকর কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা জেলায় নিবন্ধিত জুয়েলার্স সমিতির ১২০ জন সদস্য সোনা, রুপা ও হীরা সাদা করার সুযোগ নিয়েছেন। মেলায় তাঁরা ১১ হাজার ৮০৬ ভরি সোনা, ৫ হাজার ১২ ভরি রুপা এবং ১ হাজার ৭১৭ ক্যারেট হীরার মজুত দেখিয়ে কর পরিশোধ করেছেন। একক হিসাবে একজন ব্যবসায়ী ৫ হাজার ৯০৬ ভরি সোনা ও ১ হাজার ১৩২ ক্যারেট হীরা সাদা করতে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকা কর পরিশোধ বৈধ করেছেন। আবার সর্বনিম্ন ১ ভরি সোনা ও ১০ ভরি রুপার বিপরীতে ১ হাজার ৫০০ টাকা কর দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আয়কর) স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী শর্তপূরণ সাপেক্ষে স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও স্বর্ণালংকার প্রস্তুতকারীদের কাছে অঘোষিত বা অবৈধভাবে থাকা সোনা ও স্বর্ণালংকার, কাট ও পালিশ করা হীরা এবং রুপার ‍উপর প্রদেয় আয়কর হ্রাসের ঘোষণা দেয়। গত ২৮ মে প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী প্রতি ভরি সোনা ও স্বর্ণালংকারের জন্য এক হাজার টাকা, প্রতি ক্যারেট কাট ও পালিশ করা হীরার জন্য ছয় হাজার টাকা এবং প্রতি ভরি রুপার জন্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি সাইফুল হাসান জোয়ার্দার প্রথম আলোকে বলেন, স্বর্ণ নীতিমালা তৈরি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এই নীতিমালার আলোকে অপ্রদর্শিত সোনা ও স্বর্ণালংকার কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ ব্যবসায়ীরা ইতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করেছেন। সহকারী কর কমিশনার তোফায়েল আহমেদ জানান, সরকারের উদ্যোগ সফল করতে গত ১৯ জুন জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করা হয়। এ জেলায় আশানুরূপ সাড়া মিলেছে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা স্বর্ণমেলা উপলক্ষে আয়োজিত সুযোগ নেননি, তাঁদের বিষয়ে এনবিআর থেকে এখনো নির্দেশনা আসেনি। তবে শুনেছি, অবৈধ মজুত অনুসন্ধানে অভিযান শুরু হবে।’
অধিকাংশ বাল্কহেড সেতুর দুই তীরের দুটি স্তম্ভে বেঁধে বালু নামানো হয়। বালুবোঝাই বাল্কহেড ভেড়ানোর সময় সেতুর দুই স্তম্ভে প্রচণ্ড ধাক্কা লাগে।নৌযানের ধাক্কায় নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে ঢাকার সাভারের নয়ারহাট সেতু। বেষ্টনী না থাকায় সরাসরি সেতুর স্তম্ভে নৌযানের ধাক্কা লাগছে।ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বংশী নদীর ওপর ১৯৭ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয় ষাটের দশকে। নদীর এক পারে সাভারের নয়ারহাট ও অপর পারে ধামরাইয়ের ইসলামপুর। নদীর দুই তীরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুই পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) বেশ কয়েক একর জমি রয়েছে। ওই জমিতে ও সেতুর নিচে গদিঘর বসিয়ে চলছে বালুর ব্যবসা। সওজের একাধিক কর্মকর্তা ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুসংলগ্ন মহাসড়কের দুই পাশের সওজের জমি ও সেতুর নিচে অর্ধশতাধিক গদিঘর রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা গদিঘর বসিয়ে বালুর ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এসব গদির জন্য বড় বড় বাল্কহেডে (নৌযান) করে বিভিন্ন এলাকা থেকে বালু আনা হয়। অধিকাংশ বাল্কহেড সেতুর দুই তীরের দুটি স্তম্ভে বেঁধে বালু নামানো হয়। বালুবোঝাই বাল্কহেড ভেড়ানোর সময় সেতুর দুই স্তম্ভে প্রচণ্ড ধাক্কা লাগে। বাল্কহেডের ধাক্কা থেকে সেতুর স্তম্ভ দুটিকে রক্ষার জন্য বেশ কয়েক বছর আগে তাতে নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাল্কহেডের ক্রমাগত ধাক্কায় তা ভেঙে গেছে। এখন ধাক্কা সরাসরি সেতুর স্তম্ভে লাগছে।গত শনিবার সরেজমিনে ইসলামপুর প্রান্তে সেতুর একটি স্তম্ভের সঙ্গে বাল্কহেড বেঁধে বালু নামাতে দেখা যায়। এ সময় নয়ারহাট প্রান্তে স্তম্ভের সঙ্গে একটি খালি বাল্কহেড বাঁধা ছিল। ওই স্তম্ভটিতে (নয়ারহাট প্রান্ত) নৌযানের ধাক্কায় ভেঙে যাওয়া নিরাপত্তাবেষ্টনীর আংশিক দেখা গেলেও অপর প্রান্তের স্তম্ভে কোনো বেষ্টনী চোখে পড়েনি। ঘণ্টা দু-একের মধ্যে ইসলামপুর প্রান্তের বাল্কহেড থেকে বালু নামানো শেষ হলে বালুবোঝাই আরও একটি বাল্কহেড এসে ওই স্তম্ভে ভেড়ে। এ সময় বাল্কহেডের ধাক্কায় পুরো সেতু কেঁপে ওঠে।নয়ারহাট প্রান্তে সেতুসংলগ্ন সওজের জমি ও নদী দখল করে গদিঘর বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বালুর ব্যবসা করে যাচ্ছেন ঢাকা জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুর বাছেদ দেওয়ান। তিনি বলেন, তাঁর গদিসহ ওই প্রান্তে ২৩টি গদিঘর রয়েছে। সব কটির অবস্থান সওজ ও সরকারি খাসজমিতে। তাঁদের মতো তিনিও ব্যবসা করছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি সওজের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গদি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখানে আর বালুর ব্যবসা করা যাবে না। বন্ধ করে দেওয়ার পরও বাল্কহেডে করে এখনো বালু আনার বিষয়ে আবদুর বাছেদ দেওয়ান বলেন, ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার জন্য কিছুদিন সময় নেওয়া হয়েছে। এই সুযোগে কেউ কেউ বালু এনে বিক্রি করছেন। যোগাযোগ করা হলে সওজ মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন বলেন, সেতু ও সেতুর স্তম্ভ নিরাপদ রাখতে মাসখানেক আগে অভিযান চালিয়ে নদীর দুই তীরের সব গদিঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়। গদিতে থাকা বালু নিলামে বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হয় ধামরাই ও আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের। কিন্তু এক সাংসদের অনুরোধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এক মাসের সময় দিয়েছেন। ওই সময়ের মধ্যে বালুর ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু সেতুর নিরাপত্তা নয়, ইতিমধ্যে নদীর দুই তীরে যানজট কমাতে মহাসড়কের দুই পাশে ও নিচ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই বালু ব্যবসায়ীদের আর বসতে দেওয়া হবে না।
দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে হয়ে গেল একক সংগীতানুষ্ঠান ‘তোমায় গান শোনাব’-এর পঞ্চম পর্ব। এবারের পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন সিঙ্গাপুরপ্রবাসী মনজুরুল মান্নান। এর আয়োজন করেন বাংলাদেশ কমিউনিটির দুজন পরিচিত মুখ ড. সামসুজ্জামান ফারুক ও তার সহধর্মিণী খালেদা আলী মিতা। গত শনিবার (২৯ জুন) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এ সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান। অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সেলর আতাউর রহমান, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট হাফিজুর রহমান, জেনারেল সেক্রেটারি আমিরুল ইসলাম সোহেল ও সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহেদুজ্জামান।সংগীতানুষ্ঠানে মনজুরুল মান্নান নয়টি বাংলা গান ও চারটি গজল পরিবেশন করেন। তাঁর পরিবেশনার সময় দুই বাংলার সংগীতপ্রেমীদের করতালিতে মুখরিত হয় সিঙ্গাপুরে ক্লামেন্টির কেন্ট ভেল কমিউনিটি হল। প্রতিটি গান পরিবেশনের সময় যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন শামসুজ্জামান ফারুক। তবলা ও হারমোনিয়ামে সংগত করেন যথাক্রমে শুভেন্দু মুখার্জি ও দেবাশীষ অধিকারী।ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি মনজুরুল মান্নানের ছিল অসীম ভালোবাসা। তিনি বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নিয়েছেন অনেক বছর। সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ সোসাইটির সংগীত বিদ্যালয় সেন্টার ফর আর্টসে শুরু থেকে শিক্ষকতা ও পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। তাঁর নিজের লেখা দুটি বই এই বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণিতে সংগীতশিক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে।মনজুরুল মান্নান উচ্চশিক্ষা ও পেশার কারণে বেশ কয়েক বছর সংগীতচর্চা থেকে দূরে ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে সিঙ্গাপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করার পর আবার সংগীতজগতে ফিরে আসেন। তিনি পেশায় একজন নৌপ্রকৌশলী।
এবার হজযাত্রার বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বিমানের আশা, এবার আর অন্যবারের মতো হজযাত্রীসংকটে ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাবে না।আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিমানের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক (এমডি) ফারহাত হাসান জামিল।বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চলতি মৌসুমের প্রথম হজ ফ্লাইট ৪ জুলাই সকালে জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবে। ওই দিন সকাল সোয়া সাতটায় ৪১৯ জন যাত্রী নিয়ে বিমানের বিজি-৩০০১ ফ্লাইটটি ঢাকা ছাড়বে।ফারহাত হাসান জামিল বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাবে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী। এসব হজযাত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি এয়ারলাইনসে যাবেন। এর মধ্যে বিমানের যাত্রী হচ্ছেন ৬৩ হাজার ৫৯৯ জন। ১ হাজার ১০০ টিকিট বাদে বাকি সব বিক্রি হয়ে গেছে। এতে আশা করা যাচ্ছে, অন্যবার যাত্রীসংকটের কারণে ফ্লাইট বাতিল হয়ে গিয়েছিল, এবার আর সেই ঘটনা ঘটবে না। নির্বিঘ্নে হজ পালনে যেতে পারবেন হজযাত্রীরা।বিমানের ভারপ্রাপ্ত এমডি বলেন, এবার সৌদি আরব নিয়ম করেছে, টিকিট কেনার পরে ভিসা পাবেন হজযাত্রীরা। যদি উড়োজাহাজের কোনো কারিগরি ত্রুটি না হয়, তবে সময়মতো ফ্লাইটগুলো ছেড়ে যাবে।সংবাদ সম্মেলনে বিমানের পরিকল্পনা, বাজারজাতকরণ ও বিক্রয় শাখার পরিচালক মাহবুব জাহান খান বলেন, নতুন হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য দুটো এয়ারবাস ভাড়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ছাড়া বিমানের নিজস্ব বোয়িং ৭৭৭ রয়েছে চারটি। তাই ফ্লাইটে কোনো ধরনের বিপত্তি ঘটবে না বলে আশা করা যাচ্ছে।বিমান জানিয়েছে, হজযাত্রীদের প্রত্যেকে ৪৬ কেজি মালামাল সঙ্গে নিতে পারবেন। প্রত্যেক হাজির জন্য পাঁচ লিটার জমজমের পানি দেশে আসার পর তাঁদের কাছে দিয়ে দেওয়া হবে। কোনো অবস্থাতেই হাজিরা সঙ্গে করে বিমানে পানি বহন করতে পারবেন না। ছুরি, কাঁচি, নেইল কাটার, ধাতব নির্মিত দাঁতখিলন, কান পরিষ্কারক, তাবিজ ও গ্যাসজাতীয় বস্তু যেমন অ্যারোসল এবং ১০০ মিলিলিটারের বেশি তরল পদার্থ হ্যান্ডব্যাগেজে বহন করা যাবে না। এ ছাড়া কোনো ধরনের খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নেওয়া যাবে না। লাগেজ স্যুটকেস অথবা ট্রলিব্যাগ হতে হবে। কোনো অবস্থায় গোলাকৃতি, দড়িবাঁধা ব্যাগ ইত্যাদি বিভিন্ন আকৃতির ব্যাগেজ গ্রহণযোগ্য হবে না।প্রথমবারের মতো এ বছর কিছু ফ্লাইটের জেদ্দা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম ঢাকা থেকেই সম্পন্ন করা হবে। এ জন্য সৌদি আরবের একটি ইমিগ্রেশন টিম ঢাকায় অবস্থান করবে। এ বছর বিমানের হজযাত্রীদের উড়োজাহাজের সামনের অপেক্ষাকৃত বড় ও আরামদায়ক নিশ্চিত আসন নেওয়ার ক্ষেত্রে ওয়ানওয়েতে ১০০ ডলার বা সমপরিমাণ টাকা এবং যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে ২০০ ডলার বা সমপরিমাণ টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া হজযাত্রীদের টিকিট কেনার পর যাত্রার তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যাত্রার ২৪ ঘণ্টা আগে ২০০ মার্কিন ডলার এবং যাত্রার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রা পরিবর্তনের জন্য ৩০০ মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বাড়তি মাশুল আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে। নির্ধারিত ফ্লাইটে না গেলে টিকিটের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে না। বিমান কর্তৃক পরিচালিত ডেডিকেটেড হজ ফ্লাইটগুলোর চেকইন, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা প্রতিবারের মতো এবারও হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসংলগ্ন আশকোনা হজক্যাম্পেই সম্পন্ন করা হবে। এ বছর সৌদি সরকার নির্ধারিত বরাদ্দকৃত স্লটের বাইরে অতিরিক্ত কোনো ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেবে না বলে জানিয়েছে।৪ জুলাই থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত হজপূর্ব মোট ১৮৯টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে (ডেডিকেটেড-১৫৭ এবং শিডিউল ৩২)। হজপরবর্তী ১৪৭টি ফ্লাইট চলবে আগামী ১৭ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (ডেডিকেটেড-১৪৭ এবং শিডিউল ২৯)। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে মদিনা ১৮টি ও মদিনা থেকে বাংলাদেশে ১৫টি সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল রোববার আকস্মিকভাবে এক পাক ঘুরে এলেন উত্তর কোরিয়ায়। দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির ঘোর বিরোধী বলে ট্রাম্প দেশটির চোখের বালি। কিন্তু তাঁর সফরে দেশজুড়ে যে বাহবা পড়ে যায়, এতে কে বলবে ট্রাম্প তাদের শত্রু। ট্রাম্পের এ সফরকে তারা ‘বিস্ময়কর ঘটনা’ বলে অভিহিত করে।আজ সোমবার ওই অভূতপূর্ব বৈঠকের ব্যাপক প্রচার করেছে কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সিসহ (কেসিএনএ) সব মিডিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বলছে, ‘ট্রামের পরামর্শে’ ওই বৈঠক ‘ঐতিহাসিক’ ছিল।রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বলছে, ৬৬ বছর আগে কোরীয় যুদ্ধের অবসানের দিন, ‘আর্মিস্টিস চুক্তির’ দিন এমন অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছিল। উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতারা ওই দিন ঐতিহাসিক বৈঠক করেছিলেন। এবার দুই কোরিয়ার সীমান্তে পানমুনজমে কিম জং–উনের সঙ্গে ট্রাম্পের ‘হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে আরেকটি ঐতিহাসিক দিন এল।দুই কোরিয়ার সীমান্তে পানমুনজমের অসামরিকায়িত অঞ্চলে গতকাল রোববার ট্রাম্প-কিম সাক্ষাৎ হয়। উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশের পর কিমের সঙ্গে হাত মেলান এবং কিছু সময় সেখানেই তাঁর সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। এরপর কিমকে সঙ্গে নিয়ে ফেরেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। পানমুনজমে ট্রাম্প-কিম তৃতীয় বৈঠক হয়। এর আগে কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক উত্তেজনার মধ্যেই গত বছরের জুনে সিঙ্গাপুরে এবং গত ফেব্রুয়ারিতে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে দুই নেতার বৈঠক হয়। তবে ওই দুই বৈঠক ছিল পূর্বনির্ধারিত এবং পরিকল্পিত। সে তুলনায় এবারের বৈঠকটির আয়োজন করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত সময়ে। জি-২০ সম্মেলন শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার সময় টুইটারে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিমের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। কিমও সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে বৈঠকে বসেন ট্রাম্প ও কিম। এর আগে দুই কোরিয়ার সীমান্তে দাঁড়িয়ে কুশলবিনিময়ের সময় কিমের কাছে ট্রাম্প জানতে চান, ‘আমি কি উত্তর কোরিয়ায় যেতে সীমান্ত অতিক্রম করতে পারি?’ উত্তরে কিম বলেন, ‘এটা করলে আমি সম্মানিত হব।’ উত্তর কোরিয়ার মাটিতে পা রেখে ট্রাম্প বলেন, বিশ্বের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। এ সময় ট্রাম্পকে পিয়ংইয়ং সফরের আমন্ত্রণ জানান কিম। এরপর ট্রাম্প-কিম একসঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরে ফ্রিডম হাউসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন। তিন নেতার বৈঠকের পর কিমের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসেন ট্রাম্প। ৪০ মিনিট স্থায়ী হয় ওই বৈঠক। বৈঠকের পর কিম ও মুনকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার মাটিতে পা রাখার আবদারে কিম কী বলবেন, সেই বিষয়ে তিনি আগে থেকে কিছু জানতেন না। সীমান্ত অতিক্রম করতে পেরে তিনি গর্বিত। বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি কিমকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতাকে হোয়াইট হাউস সফরের আমন্ত্রণ জানান। তবে পরে ট্রাম্প স্বীকার করেন, কিমের ওই সফর খুব শিগগির হওয়ার সম্ভাবনা নেই।বৈঠক শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার ওসান বিমানঘাঁটিতে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে তিনি বলেন, পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু হবে।
ম্যাচটা ভারত জিতলে প্রকারান্তরে লাভ হতো বাংলাদেশের, পাকিস্তানের। সেমিতে ওঠার পথ উজ্জ্বল হতো তাদের। কিন্তু ম্যাচ হেরে এই দুই দেশের সেমিতে ওঠার আশা অনেকটাই ফিকে করে দিয়েছে ভারত। প্রশ্ন উঠেছে ভারতের ধীরগতির ব্যাটিং নিয়ে। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ওয়াকার ইউনুস তো ভারতের ব্যাটিংকে অখেলোয়াড়সুলভই বলছেন।গতকাল ভারত জিতলে বড় সুবিধা হতো বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের। ইংল্যান্ড হারলে সেমির লড়াইয়ে এগিয়ে যেত এই দুই দল। কিন্তু ১৭৬ কোটি মানুষের প্রার্থনাকে বিফল করে ক্রিকেট বিশ্বকাপে অপরাজিত ভারত গতকালের ম্যাচেই হেরে গেল! স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়েছেন বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সমর্থকেরা। পুরো ম্যাচে ভারতের ধীর ব্যাটিং দেখে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সে তালিকায় আছেন পাকিস্তানের সাবেক কোচ ও কিংবদন্তি পেসার ওয়াকার ইউনুসও।ভারতের হার দেখে ক্ষুব্ধ ওয়াকার নিজের রাগ ঝাড়ার জন্য বেছে নিয়েছেন টুইটারকে। সরাসরি কোনো দল বা খেলোয়াড়কে উল্লেখ না করলেও ওয়াকারের টুইট দেখে বোঝা গেছে, ক্ষোভটা ভারতের খেলোয়াড়দের নিয়েই। ভারতের খেলোয়াড়দের আচরণকে অখেলোয়াড়সুলভ বলেছেন তিনি, ‘আপনি কী, সেটা আপনার পরিচয় নয়। আপনি জীবনে কী করেন, সেটাতেই আপনার পরিচয়। পাকিস্তান সেমিফাইনালে উঠল নাকি উঠল না, তা নিয়ে আমার বিশেষ মাথাব্যথা নেই। তবে একটা জিনিস নিশ্চিত, কিছু বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়ি মানসিকতার একটা বড় পরীক্ষা ছিল আজকে, আর তাতে তারা জঘন্যভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’ওয়াকারই প্রথম নন; এর আগে পাকিস্তানের সিকান্দার বখত ও বাসিত আলীর মতো তারকারাও প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন এই বলে যে পাকিস্তানকে সেমিতে না তোলার জন্য ইচ্ছে করে ম্যাচ হেরে যাবে ভারত। যেহেতু পয়েন্ট টেবিলে ভারতের অবস্থা বেশ ভালো, একটা ম্যাচ হারলেও তাদের কিছু আসবে–যাবে না। কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিচে থাকা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্ষতি হবে অনেক। সিকান্দার ও বাসিতের সঙ্গে যোগ দিলেন ওয়াকারও।গতকাল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জেতার ফলে ইংল্যান্ডের পয়েন্ট হয়ে গিয়েছে ১০। পয়েন্ট তালিকার চার নম্বরে উঠে এসেছে তারা। ১১ পয়েন্ট নিয়ে ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। ওদিকে যথাক্রমে ৯ ও ৭ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে আছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ।
উম্মি রাঁধেন, চুল বাঁধেন, সে সঙ্গে শেখান রন্ধনপ্রণালি। আর তা ইউটিউবে। ‘কুকিং স্টুডিও বাই উম্মি’ নামের ইউটিউবে নিজের চ্যানেল আছে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী উম্মি সেলিমের। বর্তমানে চ্যানেলটির গ্রাহকসংখ্যা ১২ লাখের বেশি। ২৮ জুন প্রথম আলোকে শুনিয়েছেন তাঁর ইউটিউবার হয়ে ওঠার গল্প। নতুনদের জন্যও দিয়েছেন পরামর্শ।বাঙালিরা নিজে খেতে যেমন ভালোবাসে, তেমনই অন্যকে খাইয়েও আনন্দ পায়। ভোজনরসিকের তকমা তো এমনি এমনি মেলেনি। সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও সে কথা ভোলেননি উম্মি সেলিম। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইউটিউবের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের বাংলাভাষীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন নানা পদের রান্নার কলাকৌশল।উম্মি রাঁধেন, চুল বাঁধেন, সে সঙ্গে শেখান রন্ধনপ্রণালি। মানে রান্নার ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেন ‘কুকিং স্টুডিও বাই উম্মি’ নামের ইউটিউব চ্যানেলের লাখো দর্শকের কাছে। বর্তমানে উম্মির চ্যানেলটির গ্রাহকসংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। সম্প্রতি দেশে এসেছেন তিনি। ২৮ জুন ঢাকায় বসে প্রথম আলোকেশুনিয়েছেন রন্ধনশিল্পী হিসেবে তাঁর ইউটিউবার হয়ে ওঠার গল্প। রাঁধেন ভালোবেসেরান্নার প্রতি উম্মির ভালোবাসার জন্ম অল্প বয়সেই। বললেন, ‘ঈদের সময় ডেজার্টগুলো আমি আর আমার বোন মিলে বানাতাম। আম্মু যখন রান্না করতেন, তখন রান্নাঘরে উঁকিঝুঁকি দিতাম।’ ঈদ ছাড়া অন্যান্য সময়ে অবশ্য রান্না মা-ই করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে পাঁচ-ছয় মাস ঘরেই ছিলেন। তখন প্রতিদিন বিকেলে কিছু না কিছু বানাতেন। সবাই খুব প্রশংসা করত। জানালেন, ‘প্রশংসা শুনে পরদিন ভাবতাম আরও ভালো কিছু বানাই। যেন সবাই আরও বেশি পছন্দ করে।’ প্রবাসে সঙ্গী রান্নাবিয়ের পরে ২০১২ সালে স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যান উম্মি সেলিম। সেখানে রান্না নিজেই করতেন। নিয়মিত রান্না করার সেটাও একটা কারণ। উম্মি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সাহায্য করার কোনো লোক ছিল না। সব কাজ নিজেকেই করতে হতো। তা ছাড়া আমার বর খেতে খুব পছন্দ করেন। আমারও রান্না করতে ভালো লাগত। তাই ওই দেশে রান্নাই ছিল আমার অবসরের সঙ্গী।’ শুরু করেন আলুভাজি দিয়েপ্রতিদিন বিভিন্ন স্বাদের পদ রান্না করতে করতে একরকম আগ্রহ তৈরি হয়। সে থেকে উম্মির স্বামী আসিব আদিদ ইউটিউব চ্যানেল খুলে দেন ২০১৫ সালে। সে সময় বাংলায় রান্নার খুব বেশি চ্যানেল ছিল না বলে উল্লেখ করেন উম্মি।চ্যানেল খোলার পর প্রথম তিন মাস রান্নার কোনো ভিডিও দেননি উম্মি সেলিম। কারণ জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমার খুব লজ্জা লাগত। চ্যানেলে রান্না দেব, সেটা মানুষ কীভাবে গ্রহণ করবে—এই বিষয়টা ভাবিয়ে তুলত।’ মাস তিনেক পর প্রথম আলুভাজির রেসিপি দেন তিনি। এরপর মুরগির রোস্ট। ‘আলুভাজির রান্না খুব বেশি মানুষ দেখেনি। প্রথম দিনে ৫০ কি ৬০ জনের মতো দেখেছিল। তবু তা দেখেই আমার খুব ভালো লেগেছিল। মানুষ যে দেখবে, তা-ই ভাবিনি।’ ওই ভালো লাগা থেকেই নিয়মিত ইউটিউব চ্যানেলে রান্নার ভিডিও দেওয়া শুরু করেন উম্মি। সাবস্ক্রাইবার বা গ্রাহক বাড়ল কি না, সেটা তাঁর চিন্তা ছিল না। ইউটিউব থেকেও আয়!প্রথম এক বছর জানতেনই না যে ইউটিউব থেকে আয় করা যায়। বললেন, একদিন বেশ রাতে গুগল অ্যাডসেন্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারি ওয়েবসাইট থেকে। তখন অ্যাডসেন্সের বিষয়ে খোঁজখবর নিই। আমার চ্যানেলে গুগল অ্যাডসেন্সের কোনো অ্যাকাউন্ট ছিল না। মানে আমার চ্যানেলটা অ্যাডসেন্সের সঙ্গে যোগ করাই ছিল না। এরপর আমি আমার চ্যানেলটা অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত করি। তখন থেকে জানলাম ইউটিউবে রান্নার ভিডিও দেখিয়েও আয় করা যায়।’ মাসিক আয় ওঠানামা করেইউটিউবে আয়ের কারিকুরি ব্যাখ্যা করলেন উম্মি। বললেন, ‘ইউটিউবে ভিডিও থেকে আয় নির্ভর করে বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) কতটুকু ভালো তার ওপর। কনটেন্ট ভালো হলে ভিউ বেশি হয়। আর ভিউ বেশি হলে বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়। আয়টা হয় মূলত বিজ্ঞাপন থেকে। যার চ্যানেলে যত বিজ্ঞাপন, তার আয় তত বেশি।’আয়ের ধরাবাঁধা হিসাব নেই ইউটিউবে। উম্মি মনে করেন, মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা আছে যে যত বেশি মানুষ দেখবে (ভিউ), তত বেশি আয় হবে। তবে বেশি ভিউ হলে বিজ্ঞাপন বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর বিজ্ঞাপন বেশি হলে আয়ও বেশি হয়। কোনো চ্যানেলের মালিক চাইলেই কিন্তু বিজ্ঞাপন আনতে পারবে না। বিজ্ঞাপন ইউটিউব কর্তৃপক্ষই দেয়। উম্মি সেলিম জানান, বর্তমানে আমি মাসে এক হাজার ডলারের মতো আয় করতে পারি। তবে সেটা কোনো কোনো মাসে কমবেশি হয়। ভিডিওর মান ভালো হতে হবেউম্মি সেলিম জানান, প্রথমত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কনটেন্ট। কনটেন্ট যদি ভালো না হয়, তাহলে দর্শক দেখবে না। আর দর্শক না দেখলে আপনার আয়ও হবে না। এরপর আসে উপস্থাপনা। ধরুন একটা পরিষ্কার হাঁড়ির মধ্যে রান্না করা আর ময়লা হাঁড়ির মধ্যে রান্না করার মধ্যে অনেক তফাত আছে। বিষয়টা সুন্দর করে দেখাতেও হবে। আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। তাই কনটেন্ট যদি দেখতে ভালো না হয়, তাহলে মানুষ সেটা দেখবে না। রান্নাঘর বা সেটও গুরুত্বপূর্ণ। ইউটিউবের ক্ষেত্রে কনটেন্টের শব্দও (অডিও) গুরুত্বপূর্ণ। সরাসরি কণ্ঠ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় বাইরের শব্দ চলে আসে। সে ক্ষেত্রে ভিডিও ধারণ করার পর অডিও যোগ করা যেতে পারে।শেখেন সবার কাছেইনিজে ভালো রান্না করেন। তবে তাঁর কার রান্না বেশি পছন্দের? উম্মি সেলিম বলেন, ‘আমি আসলে নির্দিষ্ট কারও রান্না পছন্দ করি না। তবে সবার রান্নাই ভালো লাগে। আমার কাছে রান্নার ব্লগ পড়তে খুব ভালো লাগে। রান্না বিষয়ে আমার জানতে ভালো লাগে। রান্নার যে কত বই আমার কাছে আছে, সেটা বলে শেষ করা যাবে না। আমি প্রতিনিয়ত শিখি। যে নতুন ইউটিউবার, তার কাছেও শিখি আবার যে বড় ইউটিবার, তার কাছেও শিখি।’তবে উম্মির সবচেয়ে পছন্দ মায়ের রান্না। নিজে হালকা নাশতা বানাতে পছন্দ করেন। এর পাশাপাশি আছে বাঙালি খাবার। মানে মাছ-ভাত-ডাল রান্না করতেও ভালো লাগে তাঁর। ইউটিউবের স্বীকৃতিআগেই লেখা হয়েছে, কুকিং স্টুডিও বাই উম্মি চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। এক লাখ সাবস্ক্রাইবার পার করে ইউটিউবের তরফ থেকে পেয়েছেন ‘সিলভার বাটন’। আর ১০ লাখ অতিক্রম করে পেয়েছেন ‘গোল্ড বাটন’। এখন তাঁর লক্ষ্য এক কোটি সাবস্ক্রাইবার অতিক্রম করে ডায়মন্ড বাটন পাওয়া। ভিডিও সম্পাদনা করেন নিজেইরান্না করার জন্য উম্মি সেলিম স্টুডিও তৈরি করেছেন। দুটি ক্যামেরা দিয়ে সাধারণত রান্নার ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওগুলোর দৈর্ঘ্য সাধারণত ৫ থেকে ৬ মিনিট হয়ে থাকে। তবে মূল রান্না করতে উপকরণের ওপর সময় নির্ভর করে। মাংস হলে সময় এক রকমের, ডেজার্ট তৈরিতে আরেক রকমের সময় লাগে। উম্মি সেলিম ভিডিওগুলো নিজেই সম্পাদনা করেন, নিজেই অডিও যোগ করেন বলে জানান। টাকা আয় যেভাবেঅ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ তোলার জন্য কমপক্ষে ১০০ ডলার জমা হতে হবে। এটাকে বলে থ্রেশহোল্ড অ্যামাউন্ট। অতিক্রম করলে অ্যাডসেন্স থেকে আপনাকে একটি ই-মেইল পাঠানো হবে।টাকা উত্তোলনের দুটি নিয়ম আছে। প্রথমত গুগল কর্তৃপক্ষ আপনার ঠিকানা যাচাই করবে। এ জন্য আপনার ঠিকানায় গুগল থেকে একটা চিঠি পাঠানো হবে। ওই চিঠিতে একটি গোপন নম্বর থাকবে। ওই নম্বর হাতে পাওয়ার আগে আপনি আয় করলেও টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না।চিঠি এলে এবং নম্বরটি অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে বসানোর পর আবার একটা ফরম পূরণ করতে হবে অনলাইনে। ওই ফরমে আপনি যে ব্যাংকে টাকা আনবেন সেই ব্যাংকের তথ্য দিতে হবে। চ্যানেলে মালিকের বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয়, তাহলে ব্যাংকের তথ্যটা বাবা বা মায়ের নামে দিতে হবে।অ্যাডসেন্সের ফরমটা যে নাম দিয়ে পূরণ করা, ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটা অবশ্যই সেই নামে হতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের নামটাও একই হতে হবে। যদি নাম এক না হয়, তাহলে আপনি টাকা পাবেন না। সব ঠিকঠাক থাকলে ব্যাংকে টাকা আসা শুরু করবে। নতুনদের জন্য পরামর্শপ্রথমে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে। চ্যানেলের নাম দেওয়ার আগে ঠিক করতে হবে কোন ধরনের ভিডিও দেবেন। সে অনুযায়ী নামটা ঠিক করলে ভালো হয়। মানুষ যেন নাম দেখলেই বুঝে যায় চ্যানেলে এ ধরনের বিষয় পাওয়া যাবে। তারপর কয়েকটি ভিডিও দিয়ে চ্যানেলটা সাজাতে হবে।চ্যানেল থেকে আয় বা মানিটাইজেশনের ক্ষেত্রে ইউটিউবে কিছু নিয়মকানুন আছে। যেমন আবেদনের জন্য বর্তমানে চ্যানেলে চার হাজার ঘণ্টা ওয়াচ টাইম (মোট ভিডিও দেখার সময়) আর এক হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে। আবেদন অনুমোদন করলে এরপর আপনার চ্যানেলে বিজ্ঞাপন আসা শুরু হবে। আর বিজ্ঞাপন আসার জন্য আপনার চ্যানেলটা অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আয়ের টাকা জমা হয় গুগলের এই সেবায়।চ্যানেলের মালিক তাঁর জিমেইল ঠিকানা দিয়ে অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। চ্যানেলটা ভালো কি না বা চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেওয়া যায় কি না, এ সবকিছু পর্যালোচনা করে দেখে গুগল কর্তৃপক্ষ। যখন দেখবে চ্যানেলটি চার হাজার ঘণ্টা ওয়াচ টাইম এবং এক হাজার সাবস্ক্রাইবার অতিক্রম করছে, তখন অ্যাডসেন্স চ্যানেলের মালিককে ই-মেইলে জানানো হবে যে তাঁর অ্যাকাউন্টটি বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য উপযুক্ত এবং আয়ের যোগ্য। এরপর বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করবে।
ডাউনলিংক করে দেখানো বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে আজ সোমবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসকদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।আজ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন।তথ্যমন্ত্রী বলেন, আগেই এ ব্যাপারে জানানো হয়েছিল। এ জন্য ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ও দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় গতকাল রোববার শেষ হয়েছে। তাই এখন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।হাছান মাহমুদ বলেন, যাঁরা আইন মানবেন না, তাঁদের দুই বছরের জেল ও জরিমানা করা হবে।এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে জনগণের মধ্যে জোরালো অভিমত আছে।হাছান মাহমুদ বলেন, শিগগির নবম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশের যেকোনো রাস্তায় যে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি অবশ্যই দেখা যাবে তা হলো টয়োটা। ১৯৩৪ সালে অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান হিসেবে কিচিরো টয়োডার হাত ধরে টয়োটার যাত্রা শুরু হয়। জাপানের গাড়ি বাজারকে মাতিয়ে এশিয়া অঞ্চলেও টয়োটা গাড়ি জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভক্সওয়াগন, জেনারেল মোটরস এবং ফোর্ডকে পেছনে ফেলে এ অঞ্চলে টয়োটা ‘করোনা’ গাড়ি ক্রেতাদের নজর কাড়ে। সেই যে শুরু, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি টয়োটাকে।ব্র্যান্ড নিউ ও রিকন্ডিশনড দুইভাবেই দেশে টয়োটার গাড়ি প্রবেশ করে। দেশের মোটরগাড়ির বাজারে প্রায় ৭৫ শতাংশ রিকন্ডিশনড গাড়ি। নতুন গাড়ির বাজারেও টয়োটার চাহিদা তুঙ্গে। দেশে টয়োটা গাড়ি আমদানি করে নাভানা লিমিটেড। চলতি বছরও নাভানা লিমিটেডের রয়েছে বেশ কয়েকটি চমক। ২০১৯ মডেলের ব্র্যান্ড নিউ টয়োটা গাড়ি নিয়েই আজকের প্রতিবেদন। টয়োটা রাশ১৯৯৭ সালে টয়োটার এই মডেলটি ইন্দোনেশিয়ার গাড়িবাজারে নতুনত্বের ছোঁয়া দেয়। ২০১৯ সালে এসে দেশের বাজারে এটি এমন এক গাড়ি যা বৈশিষ্ট্য বা ফিচারের দিক থেকে এই মূল্যে ব্র্যান্ড নিউ বাজারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ১৫০০ সিসি সেগমেন্টে এই গাড়িটিতে ৭টি আসন রয়েছে। ডুয়েল ভিভিটিআই ইঞ্জিনসমৃদ্ধ এই গাড়ি ফুয়েলসাশ্রয়ীও বটে। ২২০ মিলিমিটার (মিমি) গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সসমৃদ্ধ এই গাড়িটি যেকোনো রাস্তা অনায়াসে পাড়ি দিতে পারবে। স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল (এসইউভি) হিসেবে এই গাড়িটিকে প্রিমিয়াম বলা যেতে পারে। পুশ স্টার্ট, ক্লাইমেট কন্ট্রোল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, পেছনের যাত্রীদের জন্য আলাদা এসি ভেন্ট, প্রতিটি আসনের সারিতে চার্জিং পোর্ট, রুফ টেইলসহ আকর্ষণীয় ফিচারগুলোর জন্য টয়োটা রাশ ক্রেতাদের মন জুগিয়েছে। পেছনে দুই সারি সিট ফোল্ড করে পুরো গাড়িকে লাগেজ স্পেস হিসেবে ব্যবহার করার অপশনও রয়েছে। গাড়িটির টার্নিং রেডিয়াস মাত্র ৫.২ মিটার। নিরাপত্তার জন্য গাড়িটিতে ছয়টি এয়ারব্যাগ রয়েছে। হিল স্টার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট, ভিএসসি, ব্যাকআপ সোনার এবং এলইডি হেডলাইটসমৃদ্ধ এই গাড়িটির মূল্য ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। করোলা আলটিসপৃথিবীতে যত টয়োটা গাড়ি বিক্রি হয়েছে, তার মধ্যে টয়োটা করোলা উল্লেখযোগ্য। নাভানা লিমিটেড দেশের বাজারে নিয়ে এসেছে করোলার প্রিমিয়াম সেডান কার টয়োটা করোলা আলটিস। ১৬০০ সিসির এই গাড়িটিতেও ডুয়েল ভিভিটিআই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। গাড়িটির চার চাকায় ডিস্ক ব্রেক রয়েছে। ডে লাইট ল্যাম্প (ডিএলআর), আরামদায়ক কেবিন, প্রশস্ত লেগ স্পেসে গাড়িটিতে ভ্রমণ অতুলনীয়। গাড়িটির মূল্য ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।  অ্যাভাঞ্জামাল্টিপারপাস ভেহিক্যাল (এমপিভি) ঘরানায় অ্যাভাঞ্জা গাড়িটিতে রয়েছে ১৫০০ সিসির ভিভিটিআই ইঞ্জিন। ৭ আসনবিশিষ্ট এই গাড়িটিতে ১৫ ইঞ্চি অ্যালয় হুইল রয়েছে। ৪ গিয়ার অটোমেটিক গিয়ারের এই গাড়িটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৮০ মিমি। বড় পরিবারের জন্য এই গাড়িটি উত্তম। অ্যাভাঞ্জার টার্নিং রেডিয়াস মাত্র ৪.৭ মিটার। তাই সহজেই যেকোনো জায়গায় গাড়িটিকে ঘোরানো সম্ভব। এ গাড়িটির পেছনের সারিতেও এসি ভেন্ট রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য এই গাড়িটিতেও দুটি এয়ারব্যাগ রয়েছে। রিমোট লক দিয়ে গাড়ি লক এবং আনলকের সুবিধাও মিলবে অ্যাভাঞ্জাতে। তৃতীয় সারি ভাঁজ করে গাড়িটির পরিসর বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। অ্যাভাঞ্জার মূল্য ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।  ইয়ারিসসেডান গাড়ির মধ্যে ১৫০০ সিসি ইঞ্জিনের গাড়ির ব্যবহার বেশি। নাভানা লিমিটেড এই সেগমেন্টে যে নতুন গাড়িটি দেশের বাজারে বিক্রি করে, তার নাম ইয়ারিস। ৪ সিলিন্ডারের ডুয়েল ভিভিটিআই ইঞ্জিনের ইয়ারিসে ইলেকট্রনিক পাওয়ার স্টিয়ারিং রয়েছে। মাল্টিফাংশন ডিসপ্লে, পুশ স্টার্ট, সিভিটি টিপট্রনিক ট্রান্সমিশন, প্রশস্ত বুট স্পেসসহ গাড়ির বডির ধরন বেশ পাকাপোক্ত। গতির সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির দরজা লক হয়ে যাওয়াটাও এই গাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ৩৩ লাখ টাকায় গাড়িটি দেশের বাজারে পাওয়া যাবে।  কেমরি হাইব্রিডবিলাসবহুল সেডান গাড়ির মধ্যে জনপ্রিয় গাড়ির নাম কেমরি। এ গাড়িটি রিকন্ডিশনড এবং ব্র্যান্ড নিউ দুই ক্যাটাগরিতেই দেশে আসে। ২৫০০ সিসির এই গাড়িটি দেখতেও যেমন নজরকাড়া, গতিতেও তেমন দুর্দান্ত। হাইব্রিড গাড়ি হিসেবে জ্বালানিসাশ্রয়ী। প্যানারোমিক রুফ, লেদার সিট, ডুয়েল অটো এসি/হিটার, ক্রুইস কন্ট্রোল, পুশ স্টার্ট, এবিএস, ভিএসসি এবং এইচএসিসমৃদ্ধ এই গাড়িগুলো বেশ আরামদায়ক। মানেও যেমন অতুলনীয়, দামেও গাড়িগুলো বেশ চড়া। ব্র্যান্ড নিউ কেমরি হাইব্রিডের মূল্য ৯০ লাখ টাকা। র‌্যাভ ফোর হাইব্রিডএসইউভি ক্যাটাগরিতে ২৫০০ সিসি সেগমেন্টে আরেকটি ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির দেখা মেলে। গাড়িটির মডেল র‌্যাভ ফোর। প্রি–অর্ডারে এই গাড়িগুলো ডেলিভারি করা হয়। ৫ আসনের এই গাড়িটিতে অত্যাধুনিক সব সুযোগ–সুবিধা রয়েছে। রয়েছে সুপরিসর কেবিন স্পেস। তারবিহীন মোবাইল ফোন চার্জার, জেবিএল সাউন্ড সিস্টেম, অ্যাকসেসরিজ পাওয়ার আউটলেটসমৃদ্ধ এই গাড়িটি যেকোনো রাস্তা নির্বিঘ্নে পাড়ি দিতে পারবে। ব্লাইন্ড স্পট মনিটর থাকায় সহজে অন্য গাড়িকে অতিক্রম করা যায় র‌্যাভ ফোর দিয়ে। এসইউভি ক্যাটাগরিতে বিলাসবহুল এই গাড়িটির মূল্য ৮৫ লাখ টাকা। ফরমায়েশের ভিত্তিতে এই গাড়িগুলো সরবরাহ করা হয়।  হাইএস ১৫/১৬কোনো প্রতিষ্ঠানে অথবা ভাড়া দেওয়ার জন্য দরকার বেশি আসনের গাড়ি। এই গাড়িগুলোতে ১৫ থেকে ১৬ জন যাত্রী অনায়াসে বহন করা যায়। তবে টয়োটার ১৫ আসনের গাড়ির চেয়ে ১৬ সিটের গাড়ির মূল্য কম। ১৬ আসনের গাড়িকে বাণিজ্যিক গাড়ি হিসেবে ধরা হয়। তাই এই গাড়িতে শুল্ক কমে যায়। ১৬ আসনের হাইয়েস গাড়ির মূল্য ৩৯ লাখ টাকা। ১৫ সিটে এই গাড়ির মূল্য ৪২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।টয়োটার নতুন গাড়ি সম্পর্কে নাভানা লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক শাহ খালেদ বলেন, জাপানের রাস্তার সঙ্গে এ দেশের রাস্তার পার্থক্য রয়েছে। জাপানের অভ্যন্তরীণ বাজারে যে গাড়িগুলো বিক্রি হয়, সে গাড়িগুলোর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কম থাকে। অত্যাধুনিক বৈশিষ্ট্য থাকলেও দেশের রাস্তায় অনেক সুবিধা ব্যবহারের উপযোগী নয়। আমরা যে গাড়িগুলো আমদানি করি, তা এই দেশের রাস্তার উপযোগী করে বানানো হয়। এই গাড়িগুলোর বডি কোয়ালিটি জাপানি ডমেস্টিক গাড়িগুলো থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। মানুষের গাড়ির স্বাদ ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। মানুষ এখন রিকন্ডিশনড ছেড়ে ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির প্রতি ঝুঁকছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে এই বাজার আরও বড় হবে।নাভানা লিমিটেড গাড়িগুলোতে ১ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা দিচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রদর্শনী, বিক্রয় ও সার্ভিস সেন্টার রয়েছে।
রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার তিন বছর পূর্তি আজ। নিহত ব্যক্তিদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন।
সন্তানের জন্য অনেকেই এখন উপযুক্ত শিক্ষক খোঁজেন। এখন অনলাইনে খোঁজ করলে যাচাই–বাছাই করা শিক্ষক পেতে পারেন। তরুণ উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সালমান ‘ইয়োডা’ নামে এমন এক ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন। এর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক শিক্ষক ভেরিফায়েড এবং তাঁদের দক্ষতা বুঝে নিয়োগের সুবিধা রয়েছে।সালমান জানান, তিনি অনেক দিন ধরেই তথ্যপ্রযুক্তির নানা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে তিনি অনেক দিন ধরে কাজ করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষকদের যাচাই–বাছাই প্রক্রিয়াতেও অনেক সময় কাটিয়েছেন।ইয়োডা অনলাইনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর বাজার (মার্কেটপ্লেস) হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে শিক্ষক খুঁজে পান অভিভাবকেরা। ইতিমধ্যে ইয়োডা ওয়েবসাইটে সাড়ে তিন হাজার দক্ষ শিক্ষক নিবন্ধন করেছেন বলে জানালেন সালমান।সালমান জানান, নিজে পড়াশোনার সময় দেখেছেন, দক্ষ ও যোগ্য প্রাইভেট শিক্ষক খুঁজে পাওয়া কঠিন। অন্যের কথায় শিক্ষক বেছে নিতে হয়েছে। এ জন্যই তিনি পুরো প্রক্রিয়াটিকে ডিজিটালাইজ করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সহজ যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন। এতে শিক্ষার্থী বা অভিভাবক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচার চালিয়ে সাড়ে তিন হাজার ভেরিফায়েড শিক্ষক যুক্ত করেছেন ইয়োডাতে। কিছুদিনের মধ্যে রেফারেল সিস্টেমে আরও নতুন শিক্ষকেরা যুক্ত হতে পারবেন। শিক্ষার্থী বা অভিভাবক প্রোফাইল দেখে দক্ষ শিক্ষককে আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন। শিক্ষক চাইলে তা গ্রহণ করতে বা ফিরিয়ে দিতে পারবেন। ইয়োডাতে শিক্ষকের সম্ভাব্য পড়ানোর সময় আগে থেকে দেওয়া থাকে। ইয়োডাতে ফিচার হিসেবে বিল্ট ইন মেসেঞ্জার রয়েছে, যাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী চ্যাট করতে পারবে। এ ছাড়া এতে বিশেষ মনিটরিং সিস্টেম আছে, যাতে অভিভাবক হিসেবে শিক্ষার্থীর পড়াশোনার বিষয়গুলো জানা যাবে। সালমান বলেন, ইয়োডায় কোনো মধ্যস্থতাকারী প্রয়োজন পড়ে না বলে প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়টি ঝামেলামুক্ত হবে। ইয়োডার সেবা বিনা মূল্যেই ব্যবহার করা যাবে।রাজধানীর বনানীতে ১০ জনের মতো কর্মী নিয়ে তাঁর এ উদ্যোগ সম্প্রতি চালু হয়েছে। এ উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন তিনি। শিগগিরই মোবাইল প্ল্যাটফর্মসহ আরও কার্যক্রম বাড়ানোর লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ইয়োডার সাইটের ঠিকানা (https://yodabd.com)
প্রিয় মানুষকে উপহার দিতে চান? কিংবা আপনার গ্রাহক, পরিবেশক বা কোনো অনুষ্ঠানের করপোরেট উপহার? ডিজিটাল এ যুগে দোকানে গিয়ে অনেক সময় উপহার কেনার সময় থাকে না। আবার যার জন্য গিফট কিনলেন, তার আপনার দেওয়া উপহার পছন্দ না-ও হতে পারে। এই সমস্যার সমাধান এখন আপনার হাতের মুঠোয়। এখন আপনি চাইলেই আপনার প্রিয়জনকে অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল গিফট ভাউচার পাঠিয়ে দিতে পারেন। ‘এক্সট্রা’ নামে এমনই একটি ডিজিটাল উপহারের প্ল্যাটফর্ম সম্প্রতি দেশে চালু হয়েছে।করপোরেট পুরস্কারসহ নানা কাজে এ অ্যাপ ব্যবহার করে উপহার পাঠানোর সুবিধা রয়েছে। ইতিমধ্যে এক্সট্রার উদ্যোক্তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে (যেমন ফ্যাশন আউটলেট, রেস্তোরাঁ, ইলেকট্রনিকস, ই-কমার্স সাইট ইত্যাদি) তাঁদের অ্যাপে যুক্ত করেছেন। এদের কাছ থেকে গিফট ভাউচারের বিনিময়ে উপহার পছন্দ করে নিতে পারবে গিফট গ্রহণকারী। ইতিমধ্যে এক্সট্রার সঙ্গে অনেকগুলো নামকরা ব্র্যান্ড যুক্ত হয়েছে। আরও নতুন নতুন ব্র্যান্ড যুক্ত করতে কাজ করছেন উদ্যোক্তারা। ইতিমধ্যে এক্সট্রার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তিন শতাধিক শাখা।এক্সট্রার প্রতিষ্ঠাতা মঞ্জুরুল আলম বলেন,অ্যাপের মাধ্যমে উপহার পাঠানো এখন সহজ। অ্যাপের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি আরেকজনকে উপহার দিতে পারবেন, তেমনি এর মাধ্যমে যেকোনো প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহক, পরিবেশক ও কর্মীদের পুরস্কৃত করতে বা আর উপহার দিতে পারবে।উপহার পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে এক্সট্রার উদ্যোক্তা বলেন, আপনি একটি বিয়ের দাওয়াতে আপনার বন্ধুকে অথবা গ্রাহককে কোনো আউটলেট থেকে অ্যাপের মাধ্যমে দুই হাজার টাকার একটা ডিজিটাল গিফট ভাউচার দিলেন, তখন ওই ডিজিটাল ভাউচার নিয়ে আপনার বন্ধু ওই দোকানে গিয়ে নিজের পছন্দমতো উপহার কিনতে পারবেন। একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে ৫০০ জন ক্লায়েন্ট কিংবা ডিস্ট্রিবিউটরকে গিফট দিতে চাইলেও তা সহজেই কয়েক সেকেন্ডে অ্যাপের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে। এতে প্রতিষ্ঠানের উপহার কেনা বা অফারের চিন্তা করে সময় নষ্ট করতে হবে না। সময় সাশ্রয়ের লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে ‘এক্সট্রা’।মঞ্জুরুল আলম বলেন, বর্তমানে সবাই চায় সব কাজ সহজে ও দ্রুত করতে। এক্সট্রার স্লোগান হচ্ছে—যখন খুশি গিফট। অর্থাৎ যখন খুশি, যেখান থেকে খুশি, মুহূর্তেই পাঠিয়ে দেওয়া যাবে উপহার। যাদের গিফট দিতে চান, তাদের ফোন নম্বর এক্সট্রা অ্যাপে নিবন্ধন করার পর উপহারের মূল্য লিখে পাঠিয়ে দিতে পারবেন মুহূর্তের মধ্যে। এ প্রক্রিয়া বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর মতোই। গিফট গ্রহণকারীর ফোনে এক্সট্রা অ্যাপ থাকলেই যেকোনো সময় গিফট গ্রহণ করতে পারবেন। এতে মার্চেন্ট শপ, সার্ভিস পয়েন্ট কাগজের গিফট ভাউচার খুঁজতে হবে না। সময় সাশ্রয়ের কথা বিবেচনা করেই এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বাড়ছে।মঞ্জুরুল আলম মামুন বলেন, ‘এ রকম একটি উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে কাজ করেছে অ্যাপলেকট্রাম সলিউশনস লিমিটেড। এক্সট্রাতে এখন ২০ জনের মতো কর্মী কাজ করছেন। অ্যাপ ব্যবহারকারীদের সেরা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। উদ্যোক্তা হিসেবে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়েও সেবা চালু করা হয়েছে। ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নয়নে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। অ্যাপটি উন্নত করতে কাজ চলছে। এক্সট্রা এখন শুধু ঢাকার মধ্যেই সেবা দিচ্ছে। শিগগিরই জেলা শহরগুলোতে এ সেবা পাওয়া যাবে।’বিস্তারিত জানা যাবে এক্সট্রার ওয়েবসাইট www.xtragift.com থেকে। এ ছাড়া গুগল প্লেস্টোর (http://bit.ly/3211ZJQ) ও অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর (https://apple.co/2Nh9QiU) থেকে এক্সট্রা অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে।
প্রায় ১১ বছর ধরে কাকলি খানের বাসায় বাজারের রাসায়নিক মিশ্রিত ভেজাল খাবারের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ভেজাল খাবারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো সম্ভব হচ্ছে তাঁর উদ্যোগ ‘শুদ্ধ কৃষি’র জন্য। আর এই উদ্যোগের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ ওপেন নেটওয়ার্ক সোর্সের উদ্যোক্তা কার্যক্রম চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব প্ল্যাটফর্ম ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিরশিপ বিভাগের যৌথ আয়োজনে উদ্যোক্তা সম্মাননা ২০১৮ পেয়েছেন।কাকলি খানের ৬ বছর বয়সী মেয়ে জোলেহা খান মায়ের শুদ্ধ কৃষির বিপণনকেন্দ্র ছাড়া অন্য কোনো জায়গার খাবার খায় না।শহুরে এই কৃষক কাকলি খান বললেন, ভেজালমুক্ত আন্দোলনে ভালোবাসা এবং সততা না থাকলে টেকা দায়। পণ্য নিয়ে বললেন,‘আমার জমির পাশে যে জমি, সেই মালিক খেতে রাসায়নিক সার বা অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করছেন। আমি না চাইলেও আমার খেতে তার প্রভাব পড়ছে। তবে অন্যদের তুলনায় শুদ্ধ কৃষির পণ্য অনেক বেশি নিরাপদ, তা দাবি করতে পারি।’রাজধানীর গ্রিন রোডে ধানমন্ডি ক্লিনিকের নিচতলায় শুদ্ধ কৃষির বিপণনকেন্দ্র। এখানে শুক্র ও মঙ্গলবার হাট বসে। এ ছাড়া গুলশান এবং ধানমন্ডি ইউনিমার্টেও আছে আউটলেট। আন্দোলনে যুক্ত হয়ে গ ইউনিমার্ট শুদ্ধ কৃষির আউটলেটের জন্য ভাড়া নিচ্ছে না।গ্রিন রোডের আউটলেটে ক্রেতা শাহানা আক্তার বললেন, ‘এখান থেকে নিয়মিত কলা কিনি। স্বাদটাই অন্য রকম। ’গ্রিন রোডে ধানমন্ডি ক্লিনিকের নিচতলায় শুদ্ধ কৃষির বিপণনকেন্দ্রশুক্র ও মঙ্গলবার হাট বসেগুলশান এবং ধানমন্ডি ইউনিমার্টেও আছে আউটলেটগ্রিন রোডে কিডনি এবং ক্যানসার রোগীর পরিবার ২০ শতাংশ কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ পান শুরুতে বিএ পাস কাকলি খান যেখানেই নিরাপদ খাদ্যের সন্ধান পেয়েছেন, সেখানেই ছুটে গেছেন। মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকেছেন বারবার। তবে বর্তমানে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।কাকলির মতে, ৫০টি পরিবারকেও যদি ভেজালমুক্ত খাবারে অভ্যস্ত করানো যায়, তাও কম না।কাকলির শুদ্ধ কৃষির উদ্যোগ শুরু হয়েছিল হুট করে শাশুড়ির (আপন ফুফু) মৃত্যুর পর। চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন ভেজাল খাবারে ফুফুর শারীরিক নানান জটিলতা দেখা দিয়েছিল। তারপরই সংগ্রাম শুরু। গ্রিন রোডের আউটলেটে কিডনি এবং ক্যানসার রোগীর পরিবার ২০ শতাংশ কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছে।এখন অনেকেই কাকলি খানকে ডাকেন ‘শুদ্ধ আপা’। শুরুতে তাঁর পাগলামিতে পরিবারের সদস্যরা বিরক্ত হলেও আস্তে আস্তে স্বামী, ভাই, বাবা, বন্ধুসহ অন্যরাও যুক্ত হন, সহায়তা করেন।হাসতে হাসতে কাকলি বললেন, ‘বাবার ছিল বিভিন্ন কোম্পানির সারের ডিলারশিপের ব্যবসা। সেই বাবা তাঁর নিজের ব্যবসা বন্ধ করে এখন শুদ্ধ কৃষিতে বসেন।’কাকলি খানের স্বপ্ন হলো, মোড়ে মোড়ে থাকবে নিরাপদ খাবারের দোকান। ভোক্তা বেশি দাম দিয়ে রেস্টুরেন্টে খাচ্ছেন, দামি জামা কিনছেন, কিন্তু খাবার কিনতে গিয়ে দাম একটু বেশি দেখলেই আর কিনছেন না। তাই ভোক্তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসা জরুরি বলে বললেন কাকলি খান।
টেলিভিশনকে অনেকে বোকা বাক্স নামে ডাকেন। টিভির আকার ও প্রযুক্তি পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য সংযোজনের চেষ্টা চলছে, কিন্তু টেলিভিশনের বোকা ভাব দূর হয়েছে কি না সেই বিষয়ে এখনো সন্দেহ রয়েছে।বর্তমানে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এক বা একাধিক টেলিভিশন রয়েছে। টিভি যত দামেরই হয়ে থাক, চ্যানেল পরিবর্তন করা ছাড়া এই যন্ত্রের তেমন আর কোনো ব্যবহার করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মাশরুর হান্নান টেলিভিশনকে বিনোদনের মাধ্যমের পাশাপাশি কম্পিউটার হিসেবে বিকল্প ব্যবহারের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। অনন্য এই উদ্ভাবন প্রথম ধাপে উন্মুক্ত করা হবে মাসখানেকের মধ্যো। আর সবার জন্য ব্যবহােরর উপযোগী নানা মডেল বাজারজাত করা হবে আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে।সিআরটি, এলসিডি বা এলইডি যেমন টিভিই হোক, জাদুর ছোঁয়ায় যেন সেটি একটি পূর্ণ ডেস্কটপ কম্পিউটার হয়ে যাবে। এ চিন্তা থেকেই মাশরুর জাদুপিসির নকশা প্রণয়ন করেছেন। কম্পিউটারে নিয়মিত কাজের জন্য দরকারি সব অ্যাপ্লিশকেশনও ইনস্টল করা যাবে, আর টিভি তো টিভির মতো থাকছেই। আরও বিশেষ ব্যাপার হলো, এখানে স্মার্টফোনের যাবতীয় সুবিধাগুলো উপভোগ করা যাবে। ফলে দৈনন্দিন কাজের অফিস অ্যাপ্লিকেশন যেমন ব্যবহার করা যাবে, শিক্ষা বা বিনোদনের অন্যান্য অ্যাপও তেমন পাওয়া যাবে এখানে। অনেকে হয়তো এটিকে স্মার্টটিভি বা অ্যান্ড্রয়েড বক্সের মতো কিছু ভাবতে পারেন। কিন্তু কাজের দিক থেকে বাজারে প্রচলিত এমন ধরনের সব যন্ত্র থেকে একেবারেই অনন্য এটি।যে যন্ত্রটির কথা বলা হচ্ছে সেটির নাম ‘জাদুপিসি’। যেকোনো ধরনের টিভি, মনিটর, প্রজেক্টর বা পর্দার সঙ্গে এটি যুক্ত করে সেটি কম্পিউটার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সঙ্গে সুবিধা অনুযায়ী তারহীন কি–বোর্ড ও মাউস যুক্ত করে নেওয়ার সুযোগ আছে। কম মূল্যে কম্পিউটার তৈরির এই প্রকল্পের একেবারে শেষভাগের কাজ চলছে ঢাকার বনানীতে। বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারকারীর ধরন বুঝে জাদুপিসির আলাদা সংস্করণ থাকবে এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহারের সুবিধা থাকবে। ন্যূনতম বৈশিষ্ট্যে জাদুপিসির দাম শুরু হবে ৫ হাজার টাকা থেকে।জাদুপিসি কী?তুলনামূলক অনগ্রসর, স্বল্প আয়ের এবং আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত এলাকাগুলোতে প্রথমে এই জাদুপিসির কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে চান, জানালেন এর বিক্রয় ও সরবরাহ পরামর্শক সাকিব নূর বিল্লাহ। তবে জাদুপিসি কোনো একটি শ্রেণির জন্য তৈরি করা হচ্ছে না। বরং কাজের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য সংযোজন করে নতুন নতুন সংস্করণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।জাদুপিসি তৈরি, মান উন্নয়নের কাজগুলোর জন্য নিয়োজিত আছে দেশের প্রযুক্তিবিদের একটি দল। পাশাপাশি বিদেশি পরামর্শকও আছেন, যাঁরা জাদুপিসির নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নিয়মিত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।কিসে চলবে কী থাকবে?জাদুপিসির অপারেটিং সিস্টেম এবং এখানে কী ধরনের অ্যাপলিকেশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজেদের বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষার পরে বেছে নেওয়া হয়েছে অ্যান্ড্রয়েডকে। জাদুপিসির ডেভেলপার টিম লিডার নাফিস খাবির বলেন, জাদুপিসি যেহেতু আমাদের নকশায় তৈরি হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা হবে, তাই অপারেটিং সিস্টেমের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করার ফলে লিনাক্স কার্নেলের নানা ধরনের সুবিধা আমরা কাজে লাগাতে পারছি এবং একই সঙ্গে রয়েছে অ্যান্ড্রয়েডের বিশাল অ্যাপ ভান্ডার।এই কথার সঙ্গে জাদুপিসির প্রতিষ্ঠাতা ও কারিগরি প্রধান মাশরুর হান্নান যোগ করেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। সব কন্টেন্ট বা অ্যাপ্লিকেশন আমরাই তৈরি করব এমন না। বর্তমানে জনপ্রিয় সব অ্যাপ এখানে ব্যবহার করা যাবে এবং এর উপযোগী নতুন নতুন অ্যাপ তৈরির সুযোগ থাকছে। যদিও সব ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করার সুযোগ থাকছে, কিন্তু এই সবকিছুই কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আলাদা ব্যবহারকারীর আলাদা অ্যাকাউন্ট থাকলেও মূল অ্যাকাউন্ট থেকে অন্যান্য অ্যাকাউন্টের কাজের ধরন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে।’ তিনি আরও জানালেন, জাদুপিসির দল তৈরি করতে ওয়াকিল আহমেদের বড় অবদান রয়েছে। তিনি িছলেন রিবুট কনসালট্যান্ট। বাজার লক্ষ্যদেশের যেকোনো স্থানে ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি করা জাদুপিসির একটি অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। যন্ত্রের নকশা করা, অপারেটিং সিস্টেম তৈরি এবং অন্য সব অ্যাপের ক্ষেত্রে এই ধারণাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এখানে সব কিছু বাংলায় ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। আর যেকোনো স্থান বলতে এমন সব স্থান হতে পারে যেখানে বিদ্যুৎ সহজলভ্য নয়। জাদুপিসি ৫ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচে চলতে পারে, ফলে ব্যাটারি, সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমেই এটি ব্যবহার করা সম্ভব।বাড়িতে টিভির বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে এই জাদুপিসির মাধ্যমে। প্রচলিত বিনোদনের কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি শিক্ষামূলক নানা ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা যাবে। ইন্টারনেটের বিশাল জগৎটা কাছে চলে আসবে আর ব্যবহার করা যাবে সব একসঙ্গেই।নিয়মিত যোগাযোগের জন্য যেখানে মোবাইল ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানে ইন্টারনেটযুক্ত জাদুপিসি হয়ে উঠতে পারে অনলাইনে যোগাযোগের মূল মাধ্যম। এটি যেমন ওয়াই–ফাইয়ে যুক্ত হতে পারে, তেমনি মোবাইল সিমকার্ড যুক্ত করা হলে দেশের যেকোনো স্থান থেকেই ইন্টারনেটে যুক্ত থেকে এটি ব্যবহার করা যাবে।ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাডিজিটাল প্রযুক্তির সেবাগুলো মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসার জন্যই এই উদ্ভাবনের চেষ্টা। বাংলাদেশ সরকার যেমন অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে জাদুপিসি মানুষের নিত্যদিনের নিয়মিত অনুষঙ্গ। গত বছরের শেষ দিক থেকে জাদুপিসি দলটি নতুন এই উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এই বছরের মধ্যেই তারা প্রথম সংস্করণটি সবার জন্য উন্মুক্ত করবে। তবে এই গবেষণার কাজটি ব্যয়সাপেক্ষ। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব অর্থায়নে চলছে। তবে সারা দেশে এমনকি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বাংলাদেশি এই উদ্ভাবনটি ছড়িয়ে দেওয়ার যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে সেটার অর্জন বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যদি সঠিক বিনিয়োগ না পাওয়া যায়।জাদুপিসি যে ধারণা নিয়ে কাজ করছে তা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির ৯টির সমাধান দিতে পারবে বলে উদ্যোক্তারা মনে করছেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—মানসম্পন্ন শিক্ষা, বৈষম্য কমানো, লিঙ্গ সমতা, সরাসরি কাজ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন যেমন নতুন নতুন কাজ ও উদ্ভাবনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছিল, দেশের প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি জাদুপিসি তেমনই একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।ওয়েব: www.jadupc.com
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বছরের ব্যবধানে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে তিনবার বৈঠকে বসলেন। সবশেষ গতকাল রোববার তাঁদের বৈঠক হয় দুই কোরিয়ার সীমান্তে পানমুনজমের অসামরিকায়িত অঞ্চলে। তবে এসব বৈঠক লোকদেখানো নাকি শান্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকেরা।পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রশ্নে সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামে দুই দফা বৈঠকে বসেন কিম-ট্রাম্প। এর কোনোটিতেই আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। এ কারণেই পানমুনজমে এবারের বৈঠকের ঘোষণা আসার পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, দুই নেতার মধ্যে হয়তো শুধু কুশল বিনিময়ই হবে। কিন্তু আধা ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠক করেছেন তাঁরা।এবারের ট্রাম্প-কিম বৈঠকের পরও কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার প্রক্রিয়ার অগ্রগতির বিষয় নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। ম্যাসাচুসেট ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক বিপিন নারাং বলেন, পানমুনজমের ‘নাটক’ তখনই সফল হবে, যখন দুই দেশ কার্যকরভাবে আলোচনার দিকে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘এটা না হলে আমরা ১৫ মাস পর আবার একই ধরনের নাটক দেখতে পাব।’উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করতে অটল ট্রাম্প প্রশাসন। তবে পিয়ংইয়ং কখনো জনসমক্ষে বলেনি, তারাও সেটা চায়। পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি। ফলে দেশটি সেই নিষেধাজ্ঞা থেকে বেরোতে চাইছে। এ জন্য ইয়ংবিন নামের একটি পারমাণবিক কেন্দ্র বন্ধের প্রস্তাবও দিয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অস্ত্র বানাতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য আরও অনেক কেন্দ্র রয়েছে পিয়ংইয়ংয়ের।দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক হাং মিন বলেন, পানমুনজম বৈঠক আবার সংলাপ শুরুর একটি ভালো উপায় বাতলে দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা মিনতারো ওবা ট্রাম্প-কিম বৈঠককে ‘সাময়িক সময়ের অগ্রগতি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।সিউলের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়ার অধ্যাপক কো কাব উ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামী বছরে। নির্বাচনী প্রচারণায় উত্তর কোরিয়ার বিষয়টি ‘কার্যকর হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করতেই ট্রাম্প নানা নাটকীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন।তবে ট্রাম্প-কিম বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক বিশ্লেষক সো কিম। তিনি বলেন, রোববারের ঘটনা আলোচনার পথকে প্রশস্ত করবে।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুলিসহ আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দুপুরে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।শাহজালালের এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক) পরিচালক উইং কমান্ডার ওবায়দুর রহমান জানান, আজ সোমবার সকাল সাতটার দিকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য রেদোয়ান আহমেদ বিমানবন্দর আসেন। নিয়মানুযায়ী বিমানে গুলি ও অস্ত্র বহন করতে হলে আগেই বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। রেদোয়ান আহমেদ তা করেননি। বিমানবন্দরে স্ক্যানিংয়ের সময় তাঁর ব্যাগে সাতটি গুলির অস্তিত্ব ধরা পড়ে।ওবায়দুর রহমান বলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে বিমানবন্দরে গুলি নিয়ে ঢোকার জন্য তাঁকে আটকে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভুলক্রমে গুলি নিয়ে এসেছেন বলে স্বীকার করেছেন রেদোয়ান আহমেদ।এভসেক এলডিপি মহাসচিবকে আটক করার পর বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করে। বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শ ম কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, রেদোয়ান আহমেদের কাছে একটি ম্যাগাজিন ও সাতটি গুলি পাওয়া যায়। তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বেঁচে আছেন। এরশাদ মারা গেছেন—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন গুজব ছড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার সাবেক এই রাষ্ট্রপতির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানালেন দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।জাপা মহাসচিব আজ বেলা একটার দিকে রাজধানীর বনানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।রাঙ্গা বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এরশাদকে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। চোখের সমস্যার কারণে তিনি আসতে পারেননি। তিনি বাসাতেও কাউকে আজ সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে পাঠিয়েছিলেন সিএমএইচে।রাঙ্গা বলেন, ওবায়দুল কাদের এরশাদকে দেখতে তাঁর কাছে গেলে এরশাদ চোখ মেলে দেখেছেন। কিন্তু কথা বলতে পারেননি।আজ সংবাদ সম্মেলনে এরশাদের ছোট ভাই ও জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘গতকাল আমরা প্রেস ব্রিফিং করার পর বিভিন্ন মহলে গুজব ছড়ায় যে উনি (এরশাদ) জীবিত নেই। উনি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর ব্যাপারে সারা দেশের মানুষের উৎকণ্ঠা, কৌতূহল ও আবেগ আছে।’কাদের বলেন, ‘আজ সকাল পর্যন্ত—চিকিৎসকদের ভাষায়—এরশাদের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। এর অর্থ শুভ লক্ষণ। সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ওনার ফুসফুসের যে ইনফেকশন আছে, সেটা এখন ভালোর দিকে। দুই ঘণ্টা পরপর তাঁকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে।’কাদের বলেন, এরশাদের কিডনিতে ইনফেকশন হয়েছে। সেটার ফাংশনে একটু সমস্যা হচ্ছে। সব মিলিয়ে তিনি শঙ্কামুক্ত নন।এরশাদের মৃত্যুর খবর দিয়ে দুজন মন্ত্রীর দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়ে সাংবাদিকেরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, ‘আজকাল অনেকের ভুয়া আইডি বের হয়েছে। আবার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অনেকের আইডি অন্যরা পরিচালনা করেন। সেটা যা–ই হোক, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কিছু না হয়, সেটার অনুরোধ করব।’জি এম কাদের বলেন, সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা প্রয়োজনে আইএসপিআরের মাধ্যমে এরশাদের শারীরিক অবস্থাসংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশন করবে।জি এম কাদের সাংবাদিকসহ সব সবার প্রতি অনুরোধ করেছেন, না জেনে কোনো ধরনের সংবাদ যেন কেউ প্রচার না করেন।উন্নত চিকিৎসার জন্য এরশাদকে বাইরে পাঠানোর বিষয়ে প্রশ্ন করলে কাদের বলেন, চিকিৎসকেরা এ বিষয় কোনো পরামর্শ এখনো দেননি। তাঁর যে শারীরিক অবস্থা, সেই অবস্থায় এটা সঠিক হবে বলে মনে হয় না।আজ প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, রংপুর সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান।
একটু গরম বেশি পড়লেই মনে হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি (এয়ারকন্ডিশনার) কেনার কথা। বাজারে এখন ইনভার্টার ও নন–ইভার্টার প্রযুক্তির এসি পাবেন।ইনভার্টার প্রযুক্তিতে এসি প্রথমে পূর্ণ শক্তিতে চালু হয়। পরে ঘরের আরামদায়ক তাপমাত্রা ঠিক রেখে এসিটি শক্তি খরচ কমিয়ে নিয়ে আসে। এভাবে কম শক্তিতে চলার কারণে কম বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় এবং বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে।অন্যদিকে নন-ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে শুধু অন-অফ হওয়ার মাধ্যমে। অর্থাৎ এসি পূর্ণ শক্তিতে চালু হওয়ার পর ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক অবস্থায় এলে এসির কমপ্রেসর বন্ধ হয়ে যায়। যখন ঘরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়, তখন আবার চালু হয়। এভাবে বারবার এসি চালু ও বন্ধ হওয়ার কারণে এসি বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যার কারণে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়।ইনভার্টার এসির বড় সুবিধা হচ্ছে ইনভার্টার এসির কমপ্রেসর মোটরটি প্রয়োজনমতো নিজস্ব চলার গতি পরিবর্তন করতে পারে। ইনভার্টার এসিতে এমন একটি সেন্সর থাকে, যা ঘরের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে কমপ্রেসর পুরোপুরি বন্ধ না করে, মোটরটির চলার গতি কমিয়ে দেয়। এর কারণেই বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে, যা পরিবেশবান্ধব। কিন্তু অন্যদিকে সাধারণ এসির কমপ্রেসর বারবার চালু-বন্ধ হয়, তাই অনেক বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়।গত সপ্তাহে এসি কিনেছেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জাকিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ‘বাজারে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের এসি দেখেছি। বাসার কাছাকাছি দোকান থেকে দেড় টনের এসি কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেড় টন না পেয়ে দুই টনের একটি এসি কিনেছি। আর তা কিস্তি সুবিধায়। বাজারে স্যামসাং, ওয়ার্লপুল, শার্প, সিঙ্গার, প্যানাসনিক, ওয়ালটন, এলজি, জেনারেল, ট্র্যান্সটেক ইত্যাদি ব্র্যান্ডের মধ্যে বাছাই করে পছন্দ অনুযায়ী এসি কিনেছি। বিদ্যুৎ খরচ কমানোর আশায় ইনভার্টার এসি কিনেছি।’খিলগাঁও এলাকার রফিকুল ইসলাম সম্প্রতি একটি ইনভার্টার ও একটি নন–ইনভার্টার এসি কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘শুনেছি ইনভার্টারে বিল কম আসে। তাই দাম বেশি হলেও ইনভার্টার এসি কিনেছি। কিন্তু নন–ইনভার্টারে টেকসই ও ঠান্ডা হয় বেশি। তাই দুই রকমই কিনেছি। একটি দেড় টন ও একটি দুই টনের এসি।স্যামসাং বাংলাদেশের পণ্য ব্যবস্থাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করি আমাদের পণ্যে নতুনত্ব নিয়ে আসার, যেন ক্রেতারা ভিন্নমাত্রার এবং সর্বোৎকৃষ্ট হোম অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। প্রতিবছর বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে গরমের সময় প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে হয় আমাদের। এই গরম থেকে রেহাই পেতেই এসি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে সবাই। আমরা চেষ্টা করি, সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে অত্যাধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার এসি ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে। স্যামসাংয়ের রয়েছে ডিজিটাল ইনভার্টারের ৮ পোল প্রযুক্তি, যার ফলে তা ঘর দ্রুত ঠান্ডা করার পাশাপাশি কম বিদ্যুৎ খরচ করে। এসি কেনার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হচ্ছে বিক্রয়–পরবর্তী সেবা এবং ফ্রি ইন্সটলেশন সুবিধা, যেগুলো পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত করে স্যামসাং। স্যামসাং এসি কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতারা আকর্ষণীয় সব অফার গ্রহণ করার পাশাপাশি সুবিধাজনক পেমেন্ট অপশন ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে থাকেন।’স্যামসাং বাংলাদেশ সূত্রে জানা যায়, ১ থেকে ২ টন পর্যন্ত স্যামসাং ইনভার্টার এসি কেনা যাবে ৬৩ হাজার ৪০০ থেকে ৯৯ হাজার ৯০০ টাকায়। একই ধারার ৫৩ হাজার ৯০০ থেকে ৮১ হাজার ৯০০ টাকায় কেনা যাবে স্যামসাংয়ের নন-ইনভার্টার এসি।যেকোনো ব্র্যান্ডর এসির বিনিময় সুবিধা দিচ্ছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস বাংলাদেশ। এ অফারে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই সুবিধায় নিয়মিত ক্যাশব্যাক সুবিধা প্রযোজ্য নয়।স্যামসাং ছাড়াও দেশে ইনভার্টার এসি রয়েছে ওয়ালটনের। বাজারে রয়েছে ১ টন, দেড় টন ও ২ টনের মোট ১৭ মডেলের ওয়ালটন এসি। দেড় ও ২ টনের ভেনচুরি ও রিভারাইন সিরিজে যুক্ত হয়েছে এনার্জি সেভিং ইনভার্টার, আয়োনাইজার ও আইওটি স্মার্ট প্রযুক্তির নতুন মডেলের এসি।দেশের বাজার রয়েছে ওয়ার্লপুলের ইনভার্টার এসি। এতে আছে অত্যাধুনিক আমেরিকান প্রযুক্তির সিক্সথ সেন্স টেকনোলজি, যা আপনাকে দেবে সহনীয় তাপমাত্রা। এর ফুল এইচডি ফিল্টার নিশ্চিত করে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ বাতাস। বাজারে ট্রান্সটেকেরও রয়েছে এই দুই ধরনের এসি। এ ছাড়া বাজারে থাকা অন্যান্য ব্র্যান্ডের এসিগুলো বাজারে পাবেন।
দিনে দিনে স্মার্টফোনকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন। একটি স্মার্টফোন থাকলে পুরো পৃথিবীটাই যেন হাতের মুঠোয় চলে আসে। আবার স্বাস্থ্য, ফিটনেস নিয়েও মানুষ আগের থেকে বেশিই ভাবছে। মুঠোফোনের মাধ্যমে ঘরে বসে যোগব্যায়ামের অনুশীলনও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু অ্যাপভিত্তিক সেবা।চলতি মাসের শুরুর দিকে ন্যাচার হিউম্যান বিহেভিয়ার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে জানানো হয়েছে, মুঠোফোনে অ্যাপভিত্তিক যোগব্যায়ামের সেবাগুলোয় সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা গেছে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে। বলাই বাহুল্য, এ ধরনের সেবার মাধ্যমে উপকৃতও হচ্ছেন তরুণেরাই সবচেয়ে বেশি।তবে অ্যাপভিত্তিক যোগব্যায়ামের ক্ষেত্রে কোন অ্যাপ বেছে নেওয়া হবে, তা নিয়ে ব্যবহারকারীর মধ্যে অনেক সময় দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হেলথলাইন–এর মতে, মাইন্ডফুলনেস, ইনসাইট টাইমার, ব্রিদসহ বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে, যেগুলো নির্ভরযোগ্য।যাঁরা যোগব্যায়াম সবে শুরু করেছেন, তাঁদের জন্য মাইন্ডফুলনেস অ্যাপ যথেষ্ট ভালো বলে মত দিয়েছেন অনেকে। এই অ্যাপে রয়েছে পাঁচ দিনের অনুশীলন ও সূচনা নির্দেশনা। ব্যস্ত জীবনে ৩ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত যোগব্যায়ামের নির্দেশনাও রয়েছে এতে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে যোগব্যায়ামের সূচি সমন্বয়, প্রতিদিন সময়মতো ব্যায়ামের বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া এবং অগ্রগতির তথ্য সংরক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের কাজও করে এই অ্যাপ। অ্যাপল স্টোর থেকে আইফোনে এবং গুগল স্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েডে এই অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়।তবে যেকোনো অ্যাপের চেয়ে অনুশীলনের সবচেয়ে বেশি সুযোগ রাখা হয়েছে ইনসাইট টাইমারে। ১০টিরও বেশি যোগব্যায়াম অনুশীলনের নির্দেশনা এই অ্যাপে বিনা মূল্যে পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পারস্পরিক যোগাযোগেরও সুযোগ রাখা হয়েছে এতে। ব্যবহারকারী এই অ্যাপের মাধ্যমে সংগীতের সঙ্গে কিংবা শান্ত নীরব পরিবেশে যোগব্যায়াম করতে পারবেন। আইফোন কিংবা অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই অ্যাপটি স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।যাঁদের ঘুমের সমস্যা, তাঁরা বেছে নিতে পারেন ব্রিদ অ্যাপটি। মানসিক চাপ কমাতে কিংবা পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘুমের অনুশীলনের ক্ষেত্রে এই অ্যাপের জুড়ি মেলা ভার। এটিও আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত।এ ছাড়া হেডস্পেস, কাম, অরাসহ আরও কিছু অ্যাপ রয়েছে, যেগুলো বেশ নির্ভরযোগ্য। তবে এসব অ্যাপের একটাই সমস্যা। বিনা মূল্যে হওয়ায় কিছু পরপর বিজ্ঞাপন অনুশীলন বিঘ্নের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে সাবস্ক্রাইব করে, অর্থাৎ অর্থ খরচ করে গ্রাহক হয়ে বিজ্ঞাপনের এই বিরক্তি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
সিরিয়ায় আইএসের চূড়ান্ত পরাজয়ের পর বিদেশি যোদ্ধা (ফরেন টেররিস্ট ফাইটার—এফটিএফ) বা জঙ্গিদের নিয়ে অনেক দেশই উদ্বেগে রয়েছে। একইভাবে আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া বাংলাদেশি জঙ্গিরাও এখানে দুশ্চিন্তার বড় কারণ হয়ে আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসব জঙ্গি প্রচলিত বা অপ্রচলিত যেকোনো পথে দেশে ফেরার চেষ্টা করবে। তারা ফিরতে পারলে দেশে আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকা জঙ্গি তৎপরতাকে বিপজ্জনক মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে।দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সরাসরি বাংলাদেশ থেকে সিরিয়ায় যাওয়া জঙ্গির সংখ্যা ৪০ জনের মতো। এর বাইরে নানা দেশ থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শতাধিক পুরুষ ও নারী সিরিয়া ও ইরাকে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এসব বাংলাদেশির মধ্যে অনেকে আইএসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও ছিলেন। এর মধ্যে সাইফুল ইসলাম সুজন আইএসের শীর্ষস্থানীয় ১০ জনের একজন ছিলেন। আর এই সাইফুলের পরামর্শেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক তামিম চৌধুরী ঢাকায় আসেন। তিনি এ দেশের উগ্রপন্থীদের একটা অংশকে সংগঠিত করে আইএসপন্থী নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলেন। এরপর হোলি আর্টিজানের মতো ভয়ংকর জঙ্গি হামলা ছাড়াও দেশে বেশ কিছু হত্যাযজ্ঞ চালান।জঙ্গি দমনে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, সরাসরি বাংলাদেশ থেকে যাওয়া জঙ্গিদের নাম-পরিচয় ও সংখ্যা মোটামুটি জানা আছে। তবে তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অনেকে আইএসের হয়ে লড়তে গিয়েছিলেন সিরিয়ায়। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিরিয়ায় গেছেন যুক্তরাজ্য থেকে। তাঁদের সম্পর্কে এখানকার গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। তবে তাঁদের নিয়েও ঝুঁকি আছে, তাঁরা এ দেশে প্রবেশ বা যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করতে পারেন। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ার মতো দেশ থেকেও কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ইরাক ও সিরিয়া গেছেন কি না, এ বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই। অন্যান্য দেশ বা প্রবাসী শ্রমিকদের কেউ যদি গিয়ে থাকেন, তাঁরা যদি প্রবাসী শ্রমিক পরিচয়ে ফিরে আসেন, তবে তাঁদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে।এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, ইরাক থেকে এক বাংলাদেশি শ্রমিক আইএসেযোগ দিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ওই শ্রমিক গ্রেপ্তার হয়ে ইরাকের কারাগারে ছিলেন। সেখানে তাঁকে অন্য জঙ্গিরা উদ্বুদ্ধ করে। পরে ওই বাংলাদেশি শ্রমিক মুক্তি পেয়ে আইএসে যোগ দেন। গত মে মাসে ঢাকায় মুতাজ আবদুল মজিদ কফিলুদ্দিন নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। সৌদি আরবে জন্ম নেওয়া এই যুবক সিরিয়ায় আইএসের হয়ে যুদ্ধ করেছেন এবং গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফেরেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মুতাজকে মূলত তুরস্কের পুলিশ আটক করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। তবে মুতাজের বাইরে এমন আর কেউ দেশে ফিরেছেন কি না, সেটা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় আইএস জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে সে দেশের পুলিশ মালয় ও ইন্দোনেশীয়দের সঙ্গে এক বাংলাদেশিকেও গ্রেপ্তার করে। ওই দেশের পুলিশের ভাষ্য, তাঁরা সেখানে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। বাংলাদেশি ওই যুবক জাহাজের টেকনিশিয়ান ছিলেন।গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সন্ত্রাসবাদবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বাংলাদেশে এখনো জঙ্গি হামলার ঝুঁকি রয়ে গেছে। ইন্টারপোলের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করলেও এখনো দেশটি জঙ্গিদের কোনো নজরদারির তালিকা তৈরি করেনি।তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার দাবি, এটা মোটেই ঠিক নয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফরেন ফাইটার যারা বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে, তাদের অলমোস্ট হিসাব-নিকাশ আমাদের কাছে আছে। কিন্তু লন্ডন থেকে যারা গিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া থেকে যারা গিয়েছে, সৌদি আরব থেকে যারা গিয়েছে; এদের অনেকের তালিকা আমাদের কাছে না-ও থাকতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। আমাদের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে নজরদারি আছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যথেষ্ট সজাগ আছে।’কত বাংলাদেশি সিরিয়ায় গেছেনঠিক কতজন বাংলাদেশি সিরিয়া গেছেন, তাঁদের কতজন মারা গেছেন, জীবিতরা কে কোথায় আছেন; তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে পশ্চিমা একটি দেশের কাছে প্রবাসী সন্ত্রাসবাদী যোদ্ধাদের যে তালিকা রয়েছে, তাতে সিরিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা ৪০ জনের মতো। মূলত ২০১৪-১৫ সালে এঁরা দেশ ত্যাগ করেন। এঁদের অনেকে নিহত ও মার্কিন সমর্থিত বাহিনীর হাতে বন্দী আছেন। ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও একই রকম তথ্য রয়েছে বলে জানা গেছে।সরাসরি বাংলাদেশ থেকে সিরিয়ায় গেছেন ৪০ জনের মতো অন্য দেশ থেকে গেছেন শতাধিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকবাংলাদেশির মধ্যে অনেকে আইএসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন এর বাইরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সূত্র থেকে এ পর্যন্ত যতটা তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১০০ জনের বেশি পুরুষ ও নারী সিরিয়া ও ইরাকে গিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা যায়। এঁদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্র ও বিদেশি গণমাধ্যমের খবর থেকে ৭১ জন নারী-পুরুষের নাম সংগ্রহ করা গেছে। এঁদের মধ্যে ৩৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অন্য দেশের নাগরিক। এঁদের অন্তত ১৯ জন নিহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।আইএসে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন অনেকেআইএসের একটি প্রভাবশালী সেলের নেতা ছিলেন বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের সাইফুল হক সুজন। তিনি ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর সিরিয়ার রাকায় মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন। এ বিষয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল স্টিভ ওয়ারেন বলেছিলেন, সাইফুল আইএসের একজন বহির্দেশীয় কার্যক্রমের পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তিনি আইএসের হ্যাকিং কার্যক্রম, নজরদারি এড়ানোর প্রযুক্তি ও অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে একজন মূল ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যে কম্পিউটার সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।হোলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এই সাইফুলের সঙ্গে হোলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরীর যোগাযোগ ছিল। সাইফুলের পরামর্শে তামিম সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে ২০১৩ সালের অক্টোবরে এ দেশে আসেন। তামিম যখন এ দেশে জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলেন, তখনো সাইফুল জীবিত ছিলেন। তামিমের জন্য পরবর্তী সময়ে টাকাও পাঠান তিনি।ঢাকার বনানীর রিফাত হোসেন খানও বাংলাদেশিদের মধ্যে অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে সিরিয়ায় যান। পরের বছরের আগস্টে রিফাতের ছবি আইএস তাদের নিজস্ব অনলাইনে প্রকাশ করে। তাতে তাঁর ছদ্মনাম ‘আবু আবদুল্লাহ আল-আমরিকি’ উল্লেখ করে জানায়, ইরাকের একটি তেল শোধনাগারে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালিয়েছেন তিনি। এই রিফাতই বনানী-গুলশানকেন্দ্রিক উগ্রপন্থী তরুণদের সঙ্গে তামিম চৌধুরীর যোগাযোগ স্থাপন করিয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ তথ্য পায়।সিলেটের কামরুজ্জামান ওরফে রুকন আইএসের মিডিয়া শাখার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি ফিনল্যান্ড হয়ে সিরিয়া যান। গত বছর সেপ্টেম্বরে নিহত হন বলে এখানকার গোয়েন্দা সূত্রগুলো খবর পেয়েছে। তাঁর আরেক বন্ধু ফিনল্যান্ডপ্রবাসী তাজ রহমানও সিরিয়ায় নিহত হন। তাঁর পৈতৃক বাসা ঢাকার মোহাম্মদপুরে।অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্টধারী এ টি এম তাজউদ্দিনও গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধা বলে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তিনি আইএসের শুরুর দিকে সিরিয়া যান। তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর। বগুড়ার এ কে এম তাকিউর রহমানও যোদ্ধা বলে জানা গেছে। বৈমানিক ফারাজ বিন জাফর ও ক্যাপ্টেন (অব.) মো. মহিবুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি ছিলেন। ফারাজ বিন জাফর মারা গেছেন। বাকিদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য জানা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশিদের বড় অংশ সিরিয়ায় যোদ্ধা ছিলেন না। যাঁর যাঁর দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন কাজে যুক্ত ছিলেন।আফগানিস্তানমুখী স্রোত সিরিয়ায় আইএসের পতনের পর এখন আফগানিস্তানে আইএসের প্রসার ঘটছে। সিরিয়ায় থাকা বিদেশি জঙ্গিরা আফগানিস্তানমুখী হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইতিপূর্বে খবর বেরিয়েছে। এই স্রোতে বাংলাদেশি জঙ্গিরাও থাকতে পারে বলে আশঙ্কা আছে।বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশি জঙ্গিরা অপ্রচলিত পথে দেশে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। অতীতে বাংলাদেশি জঙ্গিদের আফগানিস্তানে যাতায়াতের নজির আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও বাংলাদেশ থেকে কেউ কেউ পাকিস্তান বা ইরান হয়ে আফগানিস্তানে গেছে। আবার যাওয়ার প্রস্তুতিকালে গ্রেপ্তারও হয়েছে কয়েকজন।বাংলাদেশ থেকে যাঁরা পাকিস্তান বা অন্য কোনো দেশ হয়ে আফগানিস্তানে গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িয়েছেন। আফগানিস্তানে যাওয়া বাংলাদেশির প্রকৃত সংখ্যা এখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও নেই। বিভিন্ন সূত্র থেকে ১৫ জন পুরুষ ও নারীর নাম পাওয়া গেছে; যাঁদের ৯ জন বিভিন্ন সময়ে নিহত হয়েছেন।বিভিন্ন দেশে ফিরেছেন অনেকেলন্ডনের কিংস কলেজের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব র‍্যাডিক্যালাইজেশনের (আইসিএসআর) গত বছরের জুলাইয়ে প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ায় কেবল আইএসে যোগ দিয়েছেন—এমন বিদেশির সংখ্যা ৪১ হাজার ৪৯০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩২ হাজার ৮০৯ জন, নারী ৪ হাজার ৭৬১ জন এবং শিশু ৪ হাজার ৬৪০। তাঁরা গেছেন ৮০টি দেশ থেকে। এঁদের মধ্যে কমপক্ষে ৭ হাজার ৩৬৬ বিদেশি নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। তাঁদের মধ্যে ২৫৬ জন নারী এবং ১ হাজার ১৮০টি শিশু। ব্রিটেনে ফিরেছেন ৪২৫ জন, যাঁদের দুজন নারী এবং চারটি শিশু।জাতিসংঘের হিসাবে, বিভিন্ন দেশ থেকে ৪০ হাজারের বেশি বিদেশি যোদ্ধা ইরাক ও সিরিয়ায় গেছেন। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি ৮০০ জন গেছেন। এরপর আছে মালয়েশিয়া থেকে ১৫৪ ও ফিলিপাইন থেকে ১০০ জনের মতো। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা থেকে জঙ্গিরা সিরিয়া গেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে সবচেয়ে কম গেছে। কিন্তু গত মার্চে সিরিয়ায় আইএসের চূড়ান্ত পতনের পর শ্রীলঙ্কায় ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ওই দেশের আইএসপন্থী জঙ্গিরা। যা পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় উদ্বেগ তৈরি করেছে।
তাঁরা থাকবেন না, এমনটাই গুঞ্জন। এ কথা শুনে তো চক্ষু চড়কগাছ! সালমান খান ও আমির খান থাকবেন না। বলে কী? গুজব সেখানেই থাকল। নতুন খবর এসেছিল, এই ছবি নাকি সিক্যুয়ালই বানানো যাবে না। এমন ছবির সিক্যুয়াল বানাতে গিয়ে যদি নষ্ট হয়ে যায়? এই আশঙ্কা। তবে সব খবর উড়িয়ে দিয়ে নতুন খবর এসেছে খান-ভক্তদের জন্য। সালমান থাকছেন, আমিরও থাকছেন। ছবির সিক্যুয়ালও হচ্ছে। ঘোষণা, খোদ কাহিনিকারের।খানদের একসঙ্গে রুপালি পর্দায় পাওয়া ভার। তবে মাঝেমধ্যে দেখা গেছে। ‘আন্দাজ আপনা আপনা’ এমন একটি ছবি। ছবিতে আমির খান ও সালমান খানের দ্বৈত অভিনয়ে ঋদ্ধ হয়েছিলেন বলিউডের ভক্তরা। কমেডি ছবির জগতে এক অনন্য নাম ছবিটি। বলিউডের সিক্যুয়াল বানানোর হিড়িকে পড়েছে এই ছবিটিও। সেখানেই দেখা যাবে পুরোনো দুই খানকে। নিশ্চিত করলেন সিক্যুয়ালের কাহিনিকার দিলীপ শুক্লা।ছবির কাহিনিকার দিলীপ জানান, সিনেমাটির সিক্যুয়ালে অভিনয় করতে দেখা যাবে সালমান খান ও আমির দুজনকেই। তিনি বলেন, ‘সিক্যুয়ালটি সালমান ও আমির ছাড়া শেষ করা সম্ভব নয়। আর নতুন তারকাদেরও দেখা যাবে ছবিটিতে।’১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় ‘আন্দাজ আপনা আপনা’ ছবিটি। সম্প্রতি জানা যায়, সিক্যুয়াল বানাতে এই সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের নামেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। রণবীর সিং আর বরুণ ধাওয়ানের নাম আসে পছন্দের তালিকায়। যদিও সালমান আর আমিরের থাকার বিষয়টি অফিশিয়াল ঘোষণা দেওয়া হয়নি, তবে খানেরা যে থাকছেন, এটি নাকি নিশ্চিত।রাজকুমার সান্তোষী পরিচালিত ‘আন্দাজ আপনা আপনা’ ছবিতে দেখা গেছে সালমান খান, আমির খান, রাভিনা টেন্ডন ও কারিশমা কাপুরকে। যদিও সিক্যুয়ালে কোন কোন নায়িকাকে দেখা যাবে, সেই বিষয়ে এখনো কিছুই জানা যায়নি। ডিএনএ
দুর্দান্ত অভিষেক করণ জোহরের ছবি দিয়ে। বলিউড অভিনেতা চাঙ্কি পান্ডের কন্যা অনন্যা পান্ডে এখন বলিউডের নজরকাড়া সুন্দরী। তিনি এখন বলিউডের উঠতি প্রজন্মের নতুন ক্রাশ। তবে অনন্যার ক্রাশ কে? এবার জানা গেল সে খবর। সে কথার ঝাঁপি খুলে বসলেন সম্প্রতি ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার টু’ অভিনেত্রী।অনন্যার প্রথম ক্রাশ আর কেউ নয়, হৃতিক রোশন। এমনটাই জানালেন তিনি। অনন্যা বলেন, ‘আমি মনে করি, হৃতিক রোশনের প্রেমে সবাই একবার না একবার পড়েছেন। তখন আমার দুই বছর বয়স। একটা জন্মদিনের পার্টিতে যাই। সেখানে হৃতিক রোশন ছিলেন। আমি চিৎকার করতে থাকি হৃতিক হৃতিক বলে। আমার মা খুব বিরক্ত হন। সেখান থেকে আমাকে নিয়ে যান। হৃতিক বলতেই আমি পাগল ছিলাম।’কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আরেক তরুণ অভিনেতাকেও পছন্দ অনন্যার। তিনি বরুণ ধাওয়ান। বরুণ ধাওয়ানের সবকিছু মুগ্ধ করে তাঁকে। অনন্যার ভাষ্য, ‘ওহ্! বরুণ। আমি তাঁকে অসম্ভব পছন্দ করি। আমি বরুণের মতোই একজনকে চাই। তাঁর কর্মচাঞ্চল্য অসাধারণ লাগে আমার কাছে। তিনি তো খুবই মজার ও আকর্ষণীয়। তাঁর নাচও সুন্দর। তিনি আসলেই প্রকৃত চিত্রনায়ক।’অনন্যা পান্ডে অভিনেতা টাইগার শ্রফের সঙ্গে স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার টু সিনেমা দিয়ে বলিউডে পা রাখেন। গ্ল্যামার ও সৌন্দর্য দিয়ে ইতিমধ্যে বেশ জায়গা করে নিয়েছেন বলিউডে। এবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। জানা গেল, অনন্যার পছন্দের অভিনেতা নিয়েও। শাহরুখ খান তাঁর প্রিয় অভিনেতা আর অভিনেত্রী কারিনা কাপুর। শাহরুখের মেয়ে সুহানা খানের সঙ্গেও তাঁর সখ্য বেশ।তারকাসন্তান হওয়ার কারণে নানাভাবে ট্রলড হন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব নেতিবাচক মানসিকতা একদমই পছন্দ নয় অনন্যার। এর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে তুলেছেন নতুন উদ্যোগ ‘সো পজিটিভ’ নামে। অভিষেক সিনেমার পর নাম লেখাচ্ছেন নতুন সিনেমায়। পতি পত্নী অউর ও সিনেমায় তাঁর সঙ্গে আছেন কার্তিক আর্য্য ও ভূমি পেড়নেকর। সূত্র ডিএনএ
রিফাতের হত্যাকাণ্ড জাতিকে নাড়া দিয়েছে। এখানে জাতি বলতে আমি যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়, সেই জাতিকে বোঝাচ্ছি। এই সক্রিয় ব্যক্তিরা সমগ্র জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করেন কি না, বলতে পারব না। তবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জাতি এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডে বিচলিত। যাঁরা এই মাধ্যমে সক্রিয় নন, তাঁরাও পত্রপত্রিকায় খবর পড়ে ও চ্যানেলগুলোর সংবাদ দেখে একইভাবে বিচলিত। যেমন এই অধম। কারণ, আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই।সহকর্মীরা মাঝেমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে তোলপাড়গুলো হয়, সেগুলো সম্পর্কে অবহিত করেন। রিফাত হত্যাকাণ্ডে তাঁকে বাঁচাতে কেউ কেন এগিয়ে এল না, সে নিয়ে অগণিত মতামতের আদান-প্রদান হচ্ছে। এখন ‘ফেসবুক জেনারেশন’; সবাই আত্মকেন্দ্রিক আর লাইক-ডিসলাইক নিয়ে মশগুল। সামাজিক বন্ধন ঢিলে হয়ে গেছে। নিজের ব্যক্তিকেন্দ্রিক উন্নতি ছাড়া সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বলে যে ব্যাপারটি ছিল, সেটা এখন বিলীন হয়ে গেছে। প্রত্যেকেই শুধু নিজেকে নিয়েই মশগুল। তারপর আছে নৈতিক অধঃপতনের বয়ান। আমাদের নীতিনৈতিকতা গোল্লায় গেছে। নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে, অর্থাৎ, আমাদের অনেকেই এখন খারাপ হয়ে গেছি। আবার ভালো হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এসব বিশ্লেষণ থেকে অধমের ধারণা জন্মেছে যে দেশে ফেসবুকের ব্যবহার কমলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উৎপাত হ্রাস পেলে, প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁদের স্ব–স্ব প্রবৃদ্ধির লম্ফঝম্ফ কিছুটা কমিয়ে পাড়া–প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের সুখ–দুঃখের ব্যাপারে কিছু মনোযোগী হলে আর আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের নীতিনৈতিকতার প্রসার ঘটাতে পারলে ভবিষ্যতে যদি রিফাতের হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে বোধ হয় লোকজন এগিয়ে আসবে।২.অবশ্য লেখক আনিসুল হক তাঁর ২৮ জুন ২০১৯–এর প্রথম আলোর মতামত পৃষ্ঠায় ‘নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কী বিচার চাইব’ শিরোনামে অধ্যাপক আলী রীয়াজের ‘ভয়ের সংস্কৃতি’র বিশ্লেষণের কথা উল্লেখ করেছেন। অধ্যাপক আলী রীয়াজের ধারণা যে ভয়ের সংস্কৃতি সম্মিলিত উদ্যোগের ধারণা লুপ্ত করে দেয়। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমরা অনেকেই ভয়ে থাকি। ভয়টা এই জন্য না যে অপরাধ করেছি বা অপরাধের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কী বলতে কী বলে ফেলি (বা লিখে ফেলি), সেটাই ভয়ের কারণ। অবশ্য সজোরে সরকারের তৈলমর্দনে ঝাঁপিয়ে পড়লে হয়তো ভয় থেকে মুক্তি মিলত। কিন্তু সেই পথে পিপাভর্তি খাঁটি তেল নিয়ে অনেকেই অনেক দূর এগিয়ে আছেন।৩.কেউ কেন এগিয়ে এল না, তার নিঃসন্দেহে অনেক কারণ থাকতে পারে। জটিল কোনো সামাজিক সমস্যার মূলে একটিমাত্র নির্দিষ্ট কারণ দিয়ে ঘটনাটির ব্যাখ্যা চলে না। তবে অনেক কারণের মধ্যে একটি বা দুইি প্রধান কারণ থাকতে পারে।কেউ এগিয়ে আসেনি তার কারণ হলো, আমরা ২০০২ সালের শেষের দিক থেকে হত্যাকাণ্ডে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। হত্যাকাণ্ড একটা স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে পড়েছে। সরকার ঘোষণা দিয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটায়। বছরখানেকের কিছু বেশি হলো সরকার ঘোষণা দিয়ে মাদক নির্মূলে নেমেছে, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল মানুষ নিহত হওয়া। এমনকি মাদক কারবারিরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে নিজেরা নিজেদের মধ্যে বন্দুক-পিস্তল নিয়ে গোলাগুলি করে একে অপরকে খুন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। টেকনাফের একরামুল্লাহর আর্তচিৎকার আমরা প্রায় সবাই শুনেছি। তাতে হয়েছেটা কী? কেউ কি গ্রেপ্তার হয়েছে? এ ধরনের মৃত্যু এখন স্বাভাবিক।প্রতি সপ্তাহে পত্রপত্রিকায় সম্ভবত দু–তিনবার ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত’ শিরোনামে খবর আমরা পড়ি। গুলি খেয়ে মানুষ মরছে। আমরা মোটেও বিচলিত হই না। বরং এখনো অনেকেই ভাবে যে এই রকম মারাটা ভালো। বড় ধরনের অপরাধের পর আজকাল তো টেলিভিশনের পর্দায় মাঝেমধ্যে স্লোগানও শুনেছি—ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই। অর্থাৎ, মৃত্যু চাই।ফ্রান্সে এখন তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ছাড়িয়েছে। তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে গরম দিন। আমাদের ঢাকা শহরে খুব বেশি হলে তাপমাত্রা উঠে ৩৫-৩৮ ডিগ্রি। ধরুন, সামনের সপ্তাহে তাপমাত্রা উঠে গেল ৪৫ ডিগ্রিতে। আমরা সবাই হাপিত্যেশ করব, হাঁসফাঁস করব, গরমে সবার অবস্থা হবে ত্রাহি ত্রাহি। সরকারের মুণ্ডুপাত অবশ্যই করব, সবাই মিলে। এই অস্বাভাবিক গরমে জান কেমন করে বাঁচাব, কী করা যেতে পারে, সেটা থাকবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের টপ আইটেম। ধরুন, আগামী বছর অর্থাৎ, আগামী বছর একই অবস্থায়, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা আবার ৪৫ ডিগ্রি, এভাবে চলল ২০২১ ও ২০২২ সালেও। ২০২৩ সালেও যদি আবার তাপমাত্রা ৪৫-৪৭ ডিগ্রি হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে এবং নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে যে এই বছরের তুলনায় তাপমাত্রা নিয়ে হুলুস্থুল ২০২৩ সালে হবে অনেক, অনেক কম। কারণ, তত দিনে আমরা এই তাপমাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে যাব। ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা তখন হয়ে পড়বে স্বাভাবিক।৪.উচ্চ তাপমাত্রার মতো এত দিনে মানুষ মারাটাও এখন হয়ে যাচ্ছে প্রায় স্বাভাবিক। নির্বাচন অস্বাভাবিক হলে আগে হুলুস্থুল হতো, প্রতিবাদ হতো। প্রতিকারের খোঁজে হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠত। এখন ২০১৪ থেকে অস্বাভাবিক নির্বাচন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ভোররাতের নির্বাচন, গত কয়েক মাসে প্রতিদ্বন্দ্বী ও ভোটারবিহীন স্থানীয় সরকার নির্বাচনও এখন আমাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। তাই রিফাতকে বাঁচানোর মতো যেমন কেউ এগিয়ে আসেনি, তেমনি নির্বাচনের ব্যাপারেও আমরা সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছি। এই রকম নির্বাচনই এখন বাংলাদেশের জন্য স্বাভাবিক।যখন থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছিল, প্রায় তখন থেকেই বলছি, বারবার বলছি—মানুষ মেরে অপরাধ সমস্যার সমাধান হয় না। বহু দশক ধরে যে আইন আর বিচারব্যবস্থা তিলে তিলে গড়ে উঠেছিল, সেটাকে পাশ কাটিয়ে মানুষ মেরে সমস্যার সমাধান হবে না। বহু সমাজ, বিশেষত গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী বা স্বৈরাচারী বহু সমাজ গত ৫০ বছরে এই পথে হেঁটেছে। মানুষ মেরে কেউ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।যখন সরকার মানুষ মারে, মানুষ মারার প্রশ্রয় দেয়, তখন ধীরে ধীরে সমাজ আর সমাজ থাকে না। বর্বরতা আর নিষ্ঠুরতা সমাজকে ছেয়ে ফেলে। ভয়-ত্রাস তো আছেই। সবাই গা বাঁচিয়ে চলার একটা অদ্ভুত অপসংস্কৃতিতে নিজেকে ঢেকে ফেলে। বিপদে–আপদে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না। এটা ফেসবুকের দোষ না।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিছু ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্র যখন নীতিনৈতিকতা ধ্বংস করে, তখন সমাজের সদস্যদের মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়। রাষ্ট্র আমাদের মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, তাই রিফাতকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। আর যাদের হাতে অস্ত্র আছে, তাদের নিবৃত্ত করা অস্ত্রহীন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। রাষ্ট্র অপরাধ দমনের নামে মানুষ মারা বন্ধ না করলে আর গণতন্ত্রের নামে অস্বাভাবিক নির্বাচনকে স্বাভাবিক বলে চালিয়ে যেতে থাকলে আমাদের সামনে আরও ভয়ংকর দিন আসবে।ড. শাহদীন মালিক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের আইনের শিক্ষক
উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রতিদিনের চুরি করার চ্যালেঞ্জে ধরা না পড়া। প্রতিদিন ছিঁচকে চোরের মতো করে চুরি করাই আসল উদ্দেশ্য। কী ভাবছেন, যে গেম আমাকে চুরি করা শেখাচ্ছে সেটি খেলব কেন? বলছি কেন এটি আপনি খেলবেন।নুডলকেক স্টুডিও ইনকরপোরেটেডের বানানো স্নিক অপস নামের এই গেমে আছে অবসর কাটানোর মজার সব কৌশল। গেমের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে নানান কৌশল আর মারপিট করে পছন্দের জিনিস নিজের করে নিতে হবে। কিন্তু শর্ত একটাই—ধরা পড়া যাবে না।আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত হলে গেমটি সম্পর্কে আরও মজার সব তথ্য জানাচ্ছি। গেমে একজন খেলোয়াড়কে গার্ড বা নিরাপত্তাকর্মীকে খোঁচাতে হবে। যত নিরাপত্তা ক্যামেরা আছে, সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে যেতে হবে। সুড়ঙ্গপথ হামাগুড়ি দিয়ে পার হতে হবে। আর এসবই করতে হবে উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন মিলিটারি বেজের মধ্যে। আর এই চ্যালেঞ্জগুলো দিন দিন বদলে যায়। গেমে প্রতিদিনই নতুন স্থান আর অজানা ফাঁদের লেভেল যোগ করা হয়। যে কেউ নতুন নতুন লেভেল পেয়ে যাবে প্রতিদিন। সেই সঙ্গে প্রতিদিন খেলে ব্যাজ সংগ্রহ করতে হবে। আছে ২০টির বেশি ভিন্ন ভিন্ন আর মজার সব চরিত্র। আপনাকে চরিত্রগুলো আনলক করতে হবে। যে লেভেলগুলো আগে শেষ করতে পারেননি, সেগুলোও চাইলেই পরে এসে সম্পন্ন করতে পারবেন। অর্জন করতে হবে ধরা না পড়ার নানান কৌশল। অধরা হতে আপনি প্রস্তুত তো!                                  নামানোর ঠিকানা:অ্যান্ড্রয়েড: https://bit.ly/2RJFUKKআইওএস: https://apple.co/2XaVhgr
দরিদ্র পরিবারের ৩২ শিশুকে নিয়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে যাত্রা শুরু করেছিল অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন স্কুল। দুই বছরের মাথায় স্কুলটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮০। এরা সবাই বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রয়োজনীয় সবকিছু স্কুল থেকে সরবরাহ করা হয়।রাজধানীর পূর্ব ভাটারায় অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের বিদ্যালয়। শিশুশ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়েশিশুরা এখানে পড়াশোনা করছে। শিক্ষক আছেন ছয়জন। আছে তিন হাজার শিশুতোষ বইয়ের একটি গ্রন্থাগার।ছোটবেলা থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করার স্বপ্ন ছিল অবিন্তা কবিরের। যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন বাঙালি এই তরুণী। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকায় ফেরার তিন দিন পর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন অবিন্তা কবির। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে ২০১৭ সালের ৪ মার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন’। স্কুলটি এই ফাউন্ডেশনের নানা কার্যক্রমের একটি।ঢাকার শাহজাদপুরে ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে বসে গতকাল রোববার কথা হচ্ছিল অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও তাঁর নানি নীলু রওশন মুর্শেদের সঙ্গে। অবিন্তার নানা স্মৃতি মনে করে বারবার চোখ মুছছিলেন তিনি। তবে বারবার একটা কথাই তিনি বলছিলেন, ‘হারানোর বেদনা তারাই বোঝে, যারা হারায়। ওকে না দেখার কষ্টটাই যেন আমাদের শক্তি দেয়। আর সেই শক্তি দিয়েই যেন আমরা চলতে পারি। ফাউন্ডেশনকে কেন্দ্র করে যা হচ্ছে, তার সবই অবিন্তার ইচ্ছা ও স্বপ্নের প্রতিফলন।’অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম কেবল শিশুদের পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ২০১৭ সালের মে মাসে চালু হয়েছে ‘অবিন্তা সাইবার সেন্টার অ্যান্ড আর্কাইভ’। ১৩টি কম্পিউটার,২টি প্রিন্টার আর ১টি ফটোকপি মেশিন রয়েছে এখানে। ফাউন্ডেশন থেকে একজন বেতনভুক্ত কর্মী রয়েছেন সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য।অবিন্তার নামে বৃত্তি চালু করা হয়েছে ইমোরি ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড কলেজেও। এই বৃত্তির আওতায় অক্সফোর্ড কলেজের টিউশন ফি, বাসস্থানসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহন করবে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন। এই বৃত্তিতে বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীরাই অগ্রাধিকার পাবেন। যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে তখন সুযোগ দেওয়া হবে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের শিক্ষার্থীকে। ২০১৭ সালে ভারতের হায়দরাবাদের মেধাবী ছাত্র মোহাম্মদ সায়েদ এই বৃত্তি পেয়েছেন। ২০১৮ সালে পেয়েছেন দিশা শিক্ষালাভ নামের আরেক ভারতীয় তরুণী।অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের কিউরেটর সুলতান এম মাইনুদ্দীন জানান, ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রাজধানীতে একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের কাজও চলছে। এখানে এতিম শিশুদের থাকার ব্যবস্থাও করা হবে। অবহেলিত বৃদ্ধারা যাতে শিশুদের সঙ্গ পান, এমনটাই ইচ্ছা ছিল অবিন্তার। তিনি জানান, অবিন্তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১২ জন গৃহহীন মানুষকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনকে কিনে দেওয়া হয়েছে বিশেষ পোশাক ‘প্রেশার গার্মেন্টস’। পুড়ে গিয়ে শরীরের চামড়া যাতে ফুলে না যায় অথবা ফুলে গেলেও পরবর্তী সময়ে চামড়া যাতে মসৃণ হয়, সে জন্য এই পোশাক ব্যবহার করা হয়।ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ বছর শুরু হয়েছে ‘অবিন্তা ইয়াং চেঞ্জ লিডার’ নামে একটি কর্মসূচি। কর্মসূচির উদ্যোক্তা জাওয়াদ ইউসুফ বলেন, শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের কার্যক্রমে যুক্ত ক্যাসপার ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথভাবে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করছেন। এর আওতায় ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘সোশ্যাল বিজনেস কম্পিটিশনের’ মাধ্যমে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের ‘আইডিয়া’ সংগ্রহ করবেন। সেখানে থেকে তিনটি আইডিয়াকে চূড়ান্তভাবে পুরস্কৃত করা হবে।অবিন্তার নানি নীলু রওশন মুর্শেদ বলছিলেন, ‘এগুলো সবই অবিন্তা চেয়েছিল। এ বছরই পড়াশোনা শেষ করে তার দেশে ফিরে আসার কথা ছিল। তার সঙ্গে যারা পড়ত, তাদের অনেকেই ফিরে এসেছে। কিন্তু অবিন্তা আসবে কীভাবে?’
বাল্যবিবাহের শিকার দুই মাদ্রাসাছাত্রী ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি ফিরেছে। এদের একজন ষষ্ঠ এবং অন্যজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার এই দুই শিক্ষার্থী তাদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ভুলতে পারছে না। তালাক না হলেও দুজনই জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর স্বামীর বাড়ি ফিরবে না।ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর বাড়ি নান্দাইল ইউনিয়নের একটি গ্রামে। তার বিয়ে হয় ১৬ জুন, পাশের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের একটি গ্রামে। সিংরইল ইউনিয়নের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছিল গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর, পাশের বাড়ির এক তরুণের সঙ্গে।নান্দাইল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর বিয়ের খবর পেয়ে ইউএনও মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম নান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিবকে শিক্ষার্থীর বাড়িতে পাঠালে শিক্ষার্থীর বাবা বিয়ের বয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে লিখিত অঙ্গীকারনামাও দিয়েছিলেন। তবে বয়স বেশি দেখানো একটি হলফনামার বদৌলতে মেয়েটিকে গভীর রাতে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেয় পরিবার।এই শিক্ষার্থীর দাদি জানালেন, বিয়ের রাতের (বাসর) ভয়ংকর অভিজ্ঞতায় অসুস্থ হয়ে পড়ে তাঁর নাতনি। এ খবরে পরদিন লোক পাঠিয়ে মেয়েকে বাবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে চিকিৎসার পর সে কিছুটা সুস্থ হয়। পরে সে মাদ্রাসায় যাওয়া শুরু করে। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছে সে।অন্যদিকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সম্প্রতি নিজেই নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সেও স্বামীর সঙ্গে যৌন আচরণে অভ্যস্ত হতে পারেনি। সে স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রথমে মামার বাড়ি, পরে নানির বাড়িতে চলে যায়। বর্তমানে সে সেখান থেকেই মাদ্রাসায় যাচ্ছে।এই শিক্ষার্থী জানাল, তার বাবা একাধিক বিয়ে করেছেন। তার মা একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সে মামার বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করত। হঠাৎ করেই তার বাবা বিয়ে ঠিক করেন। সে কান্নাকাটি করে। মাকেও জানায়। মা-ও চাননি মেয়ের বিয়ে দিতে। কিন্তু বাবা তালাকের হুমকি দিলে মা বিপাকে পড়েন। বাবা চালাকি করে বলেছিলেন, বিয়ে নয়, শুধু বিয়ের আলাপ সেরে রাখা হবে।এই শিক্ষার্থীর নানি জানালেন, নাতনির বাবা গত ৩০ ডিসেম্বর কৌশলে মেয়েকে বাড়িতে আটকে ফেলেন। এলাকার কয়েকজনের সহায়তায় মসজিদের এক ইমামকে ডেকে বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ের পর নাতনিকে কিছু খাওয়ানো হলে সে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন ঘুম ভাঙলে নাতনি নিজেকে স্বামীর বিছানায় দেখতে পায়। কিছুদিন পরই নাতনি পালিয়ে চলে আসে। নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম মুঠোফোনে বলেন, বাল্যবিবাহের খবরে প্রশাসন থেকে কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে বিয়ে বন্ধ করা হচ্ছে। পরে দেখা যায়, অন্য জায়গায় নিয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।নোটারি পাবলিকের হলফনামার মাধ্যমে ইচ্ছামতো বয়স বাড়িয়ে বিয়ে দেওয়াকে অবৈধ বলে উল্লেখ করে ইউএনও মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম জানালেন, নিকাহ নিবন্ধকদের ডেকে এনে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে নিবন্ধন করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে অনেকেই তা মানছেন না।
তুরাগ নদীকে ব্যক্তি-আইনি সত্তা বা জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মধ্যে এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সব নদ-নদী একই মর্যাদা পাবে।তুরাগ নদ রক্ষায় মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়টি আজ সোমবার প্রকাশিত হয়।সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রায়টি ২৮৩ পৃষ্ঠার। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি আশরাফুল কামাল। তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। রায়ে ১৭ দফা নির্দেশনা রয়েছে।রায়ে আদালত বলেছেন, নদীর বাঁচা-মরার ওপর বাংলাদেশের অস্তিত্ব জড়িত। বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ, বাঁচবে প্রিয় বাংলাদেশ।রায়ের নির্দেশনায় বলা হয়, নদী রক্ষা কমিশনকে তুরাগ নদসহ দেশের সব নদ-নদীর দূষণ ও দখলমুক্ত করে সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও উন্নয়নের নিমিত্তে আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করা হলো। নদ-নদীসংশ্লিষ্ট সব সংস্থা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আজ থেকে বাংলাদেশের সব নদ-নদীর দূষণ ও দখলমুক্ত করে স্বাভাবিক নৌচলাচলের উপযোগী করে সুরক্ষা, সংরক্ষণ, উন্নয়ন, শ্রীবৃদ্ধিসহ যাবতীয় উন্নয়নে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বাধ্য থাকবে। নদ-নদীসংশ্লিষ্ট সব সংস্থা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নদী কমিশনকে সঠিক এবং যথাযথ সাহায্য-সহযোগিতা দিতে বাধ্য থাকবে। রায়ে বলা হয়, ‘আগাম প্রতিরোধের নীতি এবং দূষণকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদানের নীতি আমাদের দেশের আইনের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হলো।’রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, রায়ে আদালত ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে বিজেপি দুই কোটি অনুপ্রবেশকারীকে তাড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। গতকাল রোববার তিনি উত্তর ২৪ পরগনার পলতায় শান্তিনগর স্কুল ময়দানে নিখিল ভারত উদ্বাস্তু সমন্বয় সমিতি আয়োজিত এক সভায় যোগ দিয়ে এ হুমকি দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকারের মেয়াদ রয়েছে আরও দুই বছর। বিজয়বর্গীয়ের মতে, এই তৃণমূল সরকার দুই বছরও টিকবে না। মেয়াদের আগেই বিদায় নিতে হবে।বিজয়বর্গীয় বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) চালু করে এই রাজ্যে অবৈধভাবে বাস করা দুই কোটি অনুপ্রবেশকারীকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। মমতা এই রাজ্যে নিজের ভোটব্যাংক বানাতে গিয়ে দেশের নিরাপত্তাকে বিসর্জন দিয়েছেন। এ কারণে দুই কোটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী আশ্রয় নিয়েছে এই রাজ্যে।বিজয়বর্গীয় বলেছেন, এই বাংলা থেকে এখনই তৃণমূলের বিদায় নেওয়া উচিত। কারণ, এই সরকার থাকলে বাংলার উন্নয়ন হবে না। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলেই এই বাংলায় চালু করা হবে এনআরসি। এরপর এই বাংলা থেকে অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করে ফিরিয়ে দেওয়া হবে তাদের নিজেদের দেশে। তাঁর মতে, তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলে এই বাংলার নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকবে না, দ্বিতীয় কাশ্মীর হয়ে যাবে।আরেক বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, এই বাংলায় আশ্রয় দেওয়া হবে শরণার্থীদের। তবে আশ্রয় পাবে না অবৈধভাবে আসা অনুপ্রবেশকারীরা।
৩৩৭ রান তাড়া করতে গিয়ে গতকাল ম্যাচ হেরে গেছে ভারত। ভারতের ম্যাচ হার নিয়ে যতটা না আলোচনা হচ্ছে, তার থেকে বেশি সমালোচনা হচ্ছে হারের ধরন নিয়ে। এমন ধীরগতির ব্যাটিং করা ভারতকে যে কেউ চেনে না! অথচ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভারতের জয়টা বড় দরকার ছিল। ম্যাচ শেষে ভারতের ব্যাটিং নিয়ে তাই সমালোচনা হচ্ছে সর্বত্র।শেষ পাঁচ ওভারে দরকার ছিল ৭১ রান। ক্রিজে তখন মহেন্দ্র সিং ধোনি, ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ‘ফিনিশার’ বলা হয় যাঁকে। ভারতের মারকাটারি ব্যাটিংয়ের অন্যতম বড় অস্ত্র। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন কেদার যাদব। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে তিনিও বেশ কিছু ম্যাচ জিতিয়েছেন দলকে। এই দুজনই শেষ ৫ ওভারে ৩৭ রানের বেশি তুলতে পারলেন না! সবাই বিস্মিত তাঁদের ব্যাটিংয়ের ধরনের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে কড়া সমালোচনা। সাবেক ক্রিকেটাররা তো করছেনই; ভারতের শেষ দিকের ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা করেছেন সাবেক ইংলিশ তারকা ফুটবলার গ্যারি লিনেকারও।ধীরগতির ব্যাটিংয়ের সময় ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইন। ধোনির এমন টুকটুক করে খেলার মর্ম বোঝেননি তিনি, ‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। হচ্ছেটা কী! ওরা যেভাবে ব্যাটিং করছে, ভারতের তো এমন ব্যাটিং দরকার নেই। ভারতের এখন রান দরকার। তারা কী করছে? অনেক ভারতীয় ভক্ত মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই তারা ধোনির মারকাটারি ব্যাটিং দেখতে এসেছিল! এটা বিশ্বকাপের খেলা! বিশ্বকাপের সেরা দুটি দল খেলছে। ও কেন জেতার চেষ্টা করছে না?’ধোনির ঝুঁকি না নেওয়া দেখে কোনো ভারতীয়ই খুশি হবে না, বলেছেন নাসের, ‘ভারতের সমর্থকেরা তাদের দলকে লড়তে দেখতে চায়। তারা যায়, তাদের দল হারলেও যেন লড়াই করে হারে। কিন্তু এভাবে কেন? জেতার জন্য ঝুঁকি কেন নিচ্ছে না তারা?’সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকারও বিরক্ত ধোনি-কেদারদের ব্যাটিং দেখে, ‘ভারতকে হারানোর কোনো দল থেকে থাকলে সেটা ইংল্যান্ড। যদিও শেষ কয়েক ওভারে ধোনির ব্যাটিং আমার মাথায় ঢোকেনি।’১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতা, সাবেক ইংলিশ তারকা গ্যারি লিনেকারও টুইট করেছেন ভারতীয় দলের ব্যাটিং নিয়ে। তিনি ধোনি-কেদারদের ব্যাটিংয়ের অর্থই বুঝতে পারেননি, ‘খেলার শেষটা বেশ অদ্ভুত ঠেকেছে আমার কাছে। শেষ কয়েক ওভারের আগ পর্যন্ত ম্যাচটা ভালোই ছিল।’
‘বিরক্তিকর’ ব্যাটিং করছেন ডেভিড ওয়ার্নার! অন্তত বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের ‘দুই চোখের বিষ’ হয়ে উঠছেন প্রতিনিয়ত। এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রানের মালিক ওয়ার্নার। আমাদের সাকিব আল হাসান সবার ওপরের আসনটি দখল করে বসতে না–বসতেই তাতে তাঁর হানা দেওয়া চাই–ই চাই। কেন রে ভাই, একটা–দুটো ম্যাচে ডাব্বা মারলে সমস্যা কী? তবে বাংলাদেশি সমর্থকদের কথাই–বা কেন শুনতে যাবেন ওয়ার্নার! এমনিতে দুনিয়ার অন্যতম ‘নির্দয়’ ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তার ওপর ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এসেছেন কদিন আগে; মাঠে নামলে এখনো দুয়ো শুনতে হয়।ফলে সব মিলিয়ে রানের দৌড়ে সেরা আসনটি দখলের জন্য যা করা দরকার ওয়ার্নার তা–ই করবেন। যেমনটা করছেন আমাদের সাকিবও। সম্প্রতি এমন খবরও বেরিয়েছে যে ডেভিড ওয়ার্নার নাকি ‘ডিজিটাল ব্যাট’ নিয়ে মাঠে নামছেন! আসলে ঘটনা হলো অস্ট্রেলিয়ার এই ওপেনার ব্যাটে একটি খুদে যন্ত্র লাগিয়ে নিয়েছেন। তবে সেটি যে ম্যাচের সময় ব্যবহার করছেন, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। অনুশীলনে ব্যবহৃত এই যন্ত্রটির নাম ব্যাটসেন্স। কী কাজ এই যন্ত্রের?  ব্যাটসেন্স কী?২৫ গ্রাম ওজনের ছোট্ট এক যন্ত্র। ক্রিকেট ব্যাটের হাতলের ঠিক আগায় লাগিয়ে নেওয়া হয়। কাঠের ক্রিকেট ব্যাটে যেন ‘বোধ–বুদ্ধি’ এনে দেয় এই যন্ত্র! কারণ, ব্যাটিংয়ের পুরোটা সময় সবকিছু টুকে রাখে ব্যাটসেন্স। স্মার্টফোনের সঙ্গে সিংক করে রাখা হয় যন্ত্রটি। স্মার্ট ক্রিকেট অ্যাপে জমা হয় সব তথ্য। এ তথ্যই পরবর্তী সময়ে সাহায্য করে ব্যাটসম্যানকে। ব্যাটসেন্স তৈরি করেছে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘স্মার্ট ক্রিকেট’। ২০১৭ সালে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু। তবে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে তেমন সাড়া মেলেনি তখন। এবারের বিশ্বকাপে আইসিসি ব্যাটসেন্সের অনুমোদন তো দিয়েছেই, অফিশিয়াল পার্টনার হিসেবে সঙ্গেও রেখেছে। স্মার্ট ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠাতা অতুল শ্রীবাস্তব বলেন, ‘আমরা এখন যা করছি, তাতে তথ্য ও তথ্যের ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ খেলোয়াড়েরা নিজেরাই নিজেদের বিশ্লেষণ করতে পারে। তবে সবাই তো আর চাইলেই ক্যামেরা বা পেশাদার ভিডিও অ্যানালিস্ট পায় না। কোনো শিশুও যদি মোবাইল ফোনে তার ব্যাটিংয়ের বিশ্লেষণ দেখতে পায়, সেটি নিঃসন্দেহে বিশেষ কিছু।’ যেভাবে কাজ করেব্যাটসেন্স ব্যবহার করে যে শটগুলো খেলা হয়, সেগুলোর বিশ্লেষণ হয় স্মার্ট ক্রিকেট অ্যাপে। তিন ধাপে হয় কাজটি।ক. স্মার্ট ভিডিও: শট খেলা হলেই স্মার্ট ভিডিও রেকর্ড করে ফেলে। স্ট্রোক শুরুর কয়েক সেকেন্ড আগে থেকে শেষ হওয়ার কয়েক সেকেন্ড পর পর্যন্ত। অর্থাৎ পুরো স্ট্রোকের ভিডিও রেকর্ড হয়ে যায়। স্মার্ট ভিডিওগুলো ভাগ করা হয় স্ট্রোকের ধরন অনুযায়ী। যেমন: কভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ, পুল ইত্যাদি। একই ধরনের দুটি স্ট্রোকের মধ্যে তুলনাও করা হয় এতে। কোন শটটি নিখুঁত, কোনটিতে উন্নতির প্রয়োজন, তা–ও দেখিয়ে দেওয়া হয় এতে। ব্যাটের কোণ, অবস্থান ও সময়ের তুলনা তো আছেই।খ. অ্যাভাটার: এই ফিচারটি প্রতিটি শটের ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করে দেয়। বিশ্বকাপের ম্যাচে হয়তো খেয়াল করেছেন, ব্যাটসম্যানের একটি শটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাটের অবস্থানের একটি অ্যানিমেটেড রেখা দেখানো হয়। ঠিক এই কাজটিই করে অ্যাভাটার ফিচার। ব্যাটের গতি, ব্যাক লিফট অ্যাঙ্গেল (ব্যাট যত ডিগ্রি কোণে ওপরে ওঠে), ইমপ্যাক্ট টাইম, ফলোথ্রু অ্যাঙ্গেল এবং ব্লেড অ্যাঙ্গেলের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া যায় এই ফিচারের মাধ্যমে।গ. শট প্যারামিটার: এক সেশনে খেলা সব শটের আমলনামা হলো এই ফিচার। ১০টি বিষয়কে মানদণ্ড ধরে চলে এই বিশ্লেষণ। ব্যাটিং টেকনিকে উন্নতির জন্য যেগুলো মহাগুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটিং বিশ্লেষণের মানদণ্ডগুলো হলো—১. ম্যাক্সিমাম ব্যাট স্পিড, ২. রোটেশন অব ইমপ্যাক্ট, ৩. ব্যাক লিফট অ্যাঙ্গেল, ৪. ফলোথ্রু অ্যাঙ্গেল, ৫. ইমপ্যাক্ট টাইম, ৬. স্পিড অ্যাট ইমপ্যাক্ট, ৭. এভারেজ স্পিড, ৮. ব্যাট স্টার্ট অ্যাঙ্গেল, ৯. ব্লেড অ্যাঙ্গেল এবং ১০. ইমপ্যাক্ট অ্যাঙ্গেল। আরও কিছু সুবিধাক্যালেন্ডার নামে একটি ফিচার আছে ব্যাটসেন্সে। তারিখ ধরে ধরে ব্যাটিংয়ের বিস্তারিত তথ্য মেলে এতে। সেশন ফিচারে যেমন মেলে ওয়াগন হুইলের সুবিধা। মাঠের কোন দিকে কোন শট খেলা হলো, তা জানা যায় ওয়াগন হুইলের মাধ্যমে। কেবল কোন দিকে শট খেলা হয়েছে তা–ই নয়, শুরুতে কোন দিকে ব্যাট চলেছিল, শেষে কোন দিকে বাঁক নিল, তা–ও জানা যায়। শট কতটা নিখুঁত হলো, ব্যাটের গতি কত ছিল, কতগুলো বল খেলা হয়েছে, ব্যাক লিফটের গড়, ফলোথ্রু অ্যাঙ্গেলের গড়সহ আরও কিছু তথ্যও দেয় সেশন ফিচারটি।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলো গোল সেটিং। ব্যাটসম্যান বা কোচ একটি করে লক্ষ্য নির্ধারণ করে রাখতে পারেন। কতটি বল খেলবেন, ব্যাট স্পিড সর্বোচ্চ কত হবে বা কতটা শক্তি প্রয়োগ করা হবে—সবই ঠিক করে রাখা যায় এতে। লক্ষ্য পূরণ হলো কি হলো না, তার খুঁটিনাটি জানা যায় খেলা শেষে।১২৬ ডলার দামের ব্যাটসেন্স কতটা কাজে আসবে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চের মতো হাতে গোনা দু–তিনজন তারকা ব্যাটসম্যান ব্যবহার করছেন এটি। তবে এর নির্মাতারা আশাবাদী। ভবিষ্যতে কেবল ব্যাটেই নয়, ব্যাটসম্যানদের জুতা, হেলমেট এবং বোলারদের জন্য বলেও সেন্সর জুড়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা।
এ বছরের ১ ও ২ জুলাই বাংলাদেশ তার ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস জঙ্গি হামলার তৃতীয়বার্ষিকী পালন করছে। তিন বছর আগে চাপাতি ও রাইফেল সজ্জিত পাঁচজন জঙ্গি হোলি আর্টিজান বেকারি ক্যাফেতে ঢুকে নৃশংস তাণ্ডব চালিয়েছিল। তারা ২২ জনকে (যাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন বিদেশি) প্রথমে জিম্মি করেছিল এবং ১২ ঘণ্টা পর সবাইকে হত্যা করেছিল।ওই সময় বহু পর্যবেক্ষক মনে করেছেন যে, বাংলাদেশে তখন ধারাবাহিকভাবে বিদেশি নাগরিক, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং মৌলবাদবিরোধী উচ্চকিত ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীরা যে সিরিজ হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল, তারই ধারাবাহিকতায় হোলি আর্টিজানের ঘটনা ঘটেছে। এবং সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়েই এ ঘটনা বিশ্লেষণ করতে হবে। ২০০৩ ও ২০০৬ সালের মধ্যবর্তী সময়টাতে এই ধরনের হামলার তীব্রতা তুঙ্গে পৌঁছেছিল।আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস হোলি আর্টিজান হামলার দায় স্বীকার করেছিল। তবে বাংলাদেশ সরকার বরাবরই এই হামলায় কোনো বিদেশি শক্তির হাত থাকার কথা অস্বীকার করে এসেছে। সরকার বলে এসেছে, এর পেছনে শুধু স্থানীয় জেএমবির হাত রয়েছে। সরকারের এই অবস্থান দেশে ও বিদেশে তখন ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জিহাদি মতবাদ ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিপদ ঠেকাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে যখন ব্যাপকভিত্তিক উন্মুক্ত আলোচনা দরকার ছিল, তখন সরকার সেদিকে না গিয়ে কঠোরভাবে সন্ত্রাস দমন অভিযানে নেমে পড়ল। রাজনৈতিকভাবে অতিমাত্রায় বিভাজিত হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সমাজ তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বিধ্বংসী অভিযান ঠিক কি ঠিক না, তা নিয়েই তর্কে জড়িয়ে পড়ল। জিহাদের নামে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়া শক্তিকে প্রতিহত করার বিষয়ে পক্ষপাতহীন মতবিনিময়কে সমর্থন দেওয়ার বদলে কিছু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই সহিংস পন্থাকে সমর্থন দিল।পরিতাপের বিষয়, হোলি আর্টিজানের এই ঘটনা বাংলাদেশের সন্ত্রাসের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় উন্মুক্ত করেছে। এটি সহজেই অনুমান করা যায়, এই হামলাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। ‘স্থানীয়ভাবে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসীরা’ স্থানিক ভাবনা থেকে এই হামলা চালিয়েছে—ব্যাপারটি মোটেও সে রকম নয়, বরং এটি বিস্তৃত আন্তর্জাতিক জঙ্গি তৎপরতারই অংশ।সরকারের আনুষ্ঠানিক ভাষ্যমতে, বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া ও দেশে বড় হয়ে ওঠা অপরাধীরাই এই অপরাধ করেছে। এই ভাষ্যের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। বাংলাদেশের নামের সঙ্গে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসীদের আখড়া’ তকমা জুড়ে যাওয়া এবং চরমভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই কর্মকর্তারা এই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর যোগসাজশ থাকার কথা নাকচ করে থাকতে পারেন। হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল দেশের ভাবমূর্তি ম্লান করা এবং দেশের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ানো। কিন্তু হামলার বিষয়ে দেওয়া সরকারি ভাষ্য বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।সরকারের ভাষ্য শুনে অনেকের মনে হতে পারে এ হামলায় খুব বড় কোনো সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত ছিল না। মনে হতে পারে, একেবারেই স্থানীয় পর্যায়ের সন্ত্রাসীরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। হোলি আর্টিজানকে ‘স্থানীয়’ তকমায় সীমাবদ্ধ করে রাখার মধ্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের অনলাইনভিত্তিক ক্রমবর্ধমান যোগাযোগের বিষয়টিকে একধরনের আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রবিরোধী চেতনা বিস্তারের জন্য উগ্রপন্থী মতবাদ দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে নিরন্তর প্রচার করা হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে, অসংখ্য দেশে, বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যেসব সন্ত্রাসী তৎপরতার ঢেউ বয়ে যাচ্ছে, হোলি আর্টিজান হামলা তার বাইরের কিছু নয়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এই হামলাটি স্থানীয় জঙ্গিরা চালিয়েছে এবং পুরো ঘটনাটি সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই ঘটেছে। অন্যভাবে বলা যায়, ইতিপূর্বে বাংলাদেশে যতগুলো জঙ্গি হামলা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে এই হামলার বহু মিল আছে এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি গ্রুপগুলো বা ‘গ্লোবাল জিহাদ’ এর মধ্যে সরাসরি ভূমিকা রাখেনি। কিন্তু বাংলাদেশের আগের অন্য সবগুলো জঙ্গি হামলার সঙ্গে এই হামলার তুলনা করলে দেখা যাবে এটি বাংলাদেশের হামলার ধরনে নতুন মোড় এনেছে এবং এর ধরনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হামলার ধরনের মিল আছে।একইভাবে এ বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কায় গির্জায় যে হামলা হলো, সেটি দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসী তৎপরতার ক্ষেত্রে নতুন ‘সন্ধিক্ষণের’ সূচনা করেছে। শ্রীলঙ্কার হামলা প্রমাণ করেছে, দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে আইএসের প্রভাব বাড়ছে। সিরিয়া ও ইরাকে আইএস সামরিকভাবে পরাজিত হওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়ে তাদের আগ্রহ বেড়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, দক্ষিণ এশিয়ার ‘স্থানীয় জঙ্গিরা’ শুধু যে আইএসের মতাদর্শের দিকে ক্ষিপ্র গতিতে ধাবিত হচ্ছে, তা-ই নয়, তারা আইএসের সাংগঠনিক কায়দাকানুন দ্রুত রপ্ত করে ফেলছে।দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাসী হামলার ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। এখানকার সন্ত্রাসীরা ‘বৈশ্বিক জিহাদ’–এর নৃশংসতা ও তাদের জটিলভাবে সমন্বয়সাধন করার কৌশল অনুসরণ করা শুরু করেছে। এসব স্থানীয় সন্ত্রাসী এখন দেশের ভেতর এবং বাইরের জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে।শ্রীলঙ্কার জঙ্গি তৎপরতায় একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর তদন্ত কর্মকর্তাদের ওপরও যাতে হামলা করা যায়, সে জন্য হামলার মূল পরিকল্পকেরা তাদের পরিবারের সব সদস্যকে আত্মঘাতী হামলাকারীতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতায়ও নতুন একটি ধারা যুক্ত হয়েছে, যেখানে সন্ত্রাসীরা তাদের স্বামী বা স্ত্রীকে সরাসরি জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে ফেলছে।ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দক্ষিণ–পূর্ব এশীয় দেশগুলোতেও জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে গেছে। এসব দেশের সরকারগুলোকে শুধু (ধর্মীয় মতবাদভিত্তিক) সহিংস আন্দোলনকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তা নয়, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদকেও তাদের সামাল দিতে হচ্ছে।দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সাধারণ মিল পাওয়া যাচ্ছে। এসব দেশের স্থানীয় জঙ্গিরা স্থানীয় সমস্যা বা বঞ্চনার শিকার। এসব স্থানীয় গ্রুপের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও যোগাযোগ বাড়ছে। সমভাবাপন্ন এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে। এতে উভয় পক্ষই লাভবান হচ্ছে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে প্রশিক্ষণ, অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে এবং আইএস কিংবা আল–কায়েদার মতো বৈশ্বিক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পথ বাতলে দিচ্ছে।আর এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গ্রুপগুলো নিজেদের অ্যাজেন্ডা ও প্রপাগান্ডার স্বার্থে স্থানীয় সংঘাত ও হামলার ‘কৃতিত্ব’ ‘হাইজ্যাক’ করতে সমর্থ হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে তারা তাদের সমর্থক ও ‘রিক্রুটিং ঘাঁটি’র পরিধি বিস্তৃত করতে সক্ষম হচ্ছে। ২০১৭ সালে ফিলিপাইনের স্থানীয় আইএস ‘অ্যাফিলিয়েট’রা দেশটির মারাওয়ি শহরের পুরোটাই কিছু সময়ের জন্য হলেও নিজেদের দখলে নিতে পেরেছিল। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের মদদ পেলে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা কতটা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা ওই সময় স্পষ্ট হয়েছে।শেষ কথাজঙ্গি হামলায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগসাজশ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ অবস্থায় তাদের প্রতিহত করা ভিন্ন ভিন্ন দেশের একক উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। একেকটি অঞ্চলের কয়েকটি দেশের সরকার ও সরকারি সংস্থাগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি আঞ্চলিক পর্যায়ের সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলনীতি অনুসরণ করে এগোনো দরকার। সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে টানা অভিযান চালানোর কারণে বাংলাদেশে গত বছর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার সংখ্যা কমে এলেও এটি আসলে একধরনের কৃত্রিম শান্ত অবস্থা। সন্ত্রাসী হুমকির আন্তর্জাতিক মাত্রাকে খাটো করে দেখা এবং সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতাকে গভীরভাবে রাজনীতিকরণ ভয়ানক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।অবস্থা বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, হোলি আর্টিজানে ভয়ংকর হামলার তিন বছর পরও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী নেতারা বুঝতে চাননি কিংবা বুঝতে পারেননি যে সংকীর্ণ রাজনৈতিক লাভের তুলনায় ‘গ্লোবাল জিহাদের’ পূর্ণমাত্রাকে উপেক্ষা করার দাম অনেক বেশি। এটি বাংলাদেশকে আবার মৌলবাদী ভাবাদর্শের মধ্যে আটকে ফেলতে পারে।সিগফ্রিড ও. উলফ: জার্মানির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের (এসএডিএফ) গবেষণা পরিচালক
বাংলাদেশের ব্যাটিংকে সমীহই করছে ভারত! এজবাস্টনে মঙ্গলবারের ম্যাচে দুজন রিস্ট স্পিনার খেলানোকে ঝুঁকিপূর্ণই মনে করে তারা। মাশরাফি-সাকিবদের বিপক্ষে বাদ পড়তে পারেন কেদার যাদব।ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর ভারতীয় শিবিরে চলছে আত্মসমালোচনা। সেই সঙ্গে বিশ্লেষণ চলছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েও। এজবাস্টনে মঙ্গলবারের ম্যাচে ভারতীয় দলে বদল আসবে কি না, আলোচনা চলছে এ নিয়েও। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কেদার যাদবের ব্যাটিং ভারতীয় একাদশে তাঁর জায়গা প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। ডেকান ক্রনিকল জানিয়েছেন, কাল বাংলাদেশের বিপক্ষে নাও খেলতে পারেন কেদার। সেই সঙ্গে বসিয়ে রাখা হতে পারে লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালকেও।বাংলাদেশের ব্যাটিং ২০১৯ বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে আছে। এখন পর্যন্ত তিন শ রান তাড়া করে জয়টি বাংলাদেশেরই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৩০ রান করে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩২১ রান তাড়া করে জয়ের পাশাপাশি স্টার্ক-কামিন্সদের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে ৩৩৩ রান তুলেছে। ব্যাপারটি নিয়ে ভাবছে ভারতীয় দলও। ডেকান জানিয়েছে, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম কিংবা লিটন দাসদের বিপক্ষে দুজন রিস্ট স্পিনার খেলানোটাকে একটু ঝুঁকিপূর্ণই মনে করছে ভারত। সে কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে চাহালকে বিশ্রামে রাখা হতে পারে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ ওভার বোলিং করে ৮৮ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন চাহাল। যেকোনো ভারতীয় বোলারের জন্য বিশ্বকাপে এটি সবচেয়ে খরুচে বোলিং।কেদার-চাহালকে বিশ্রাম দিলে দলে ঢুকবেন কারা? কেদারের বদলে রবীন্দ্র জাদেজার কথা বলছে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। আর চোটে পড়ে বিশ্বকাপের শুরুতে ছিটকে পড়া ভুবনেশ্বর কুমার আসতে পারেন চাহালের জায়গায়।মঙ্গলবারের ম্যাচে টসটাকে গুরুত্বপূর্ণই মনে করছে ভারতীয় দল। বাংলাদেশের ‘দুর্বল’ বোলিং আক্রমণকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে টসে জিতে ব্যাটিং নিতে চায় তারা। উদ্দেশ্য, বড় সংগ্রহ গড়ে ম্যাচটিকে বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়া।
আইএস–সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠী ‘নব্য জেএমবি’ হামলা চালিয়ে হইচই ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার বছরখানেক আগে থেকে। প্রস্তুতি হিসেবে শুধু ঢাকাতেই তারা ছয়টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলে, এক বছরে ১৪টি হত্যাকাণ্ড চালায়, ভারতে জেএমবির পুরোনো সূত্রগুলোকে কাজে লাগিয়ে অস্ত্র আমদানি করে। কিন্তু হোলি আর্টিজানে হামলার আগ পর্যন্ত জঙ্গিদের গতিবিধিই কেউ শনাক্ত করতে পারেনি। অভিযোগ উঠেছে, পর্যাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য না থাকা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথেষ্ট তৎপরতা না থাকায় এসব হামলা এড়ানো সম্ভব হয়নি।গোয়েন্দা ব্যর্থতার এসব অভিযোগ সত্য কি না, জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, এটাকে ঠিক গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলা যাবে না। ঢাকার কূটনৈতিকপাড়ায় হামলা হতে পারে—এমন ভাসা ভাসা একটা তথ্য ছিল, ওই এলাকায় নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছিল। কিন্তু হামলার ব্যাপকতা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য তখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার আট আসামির ছয়জন ঢাকার মুখ্য মহাগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা জানান, ২০০৭ সালে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অল্প কিছুদিন পরই দিনাজপুরের হিলিতে জেএমবির সদস্যরা এক হয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারাগারের ভেতরে ও বাইরে দুই জায়গাতেই তারা সক্রিয় হয়, তারা কর্মীদের নিয়োগ দেয়, বোমা বানানো শেখায়, অন্তর্দ্বন্দ্ব ও খুনোখুনির পরও সাংগঠনিক কাজ চালাতে থাকে।২০১৪ সালের ২৯ জুন আবু বকর আল বাগদাদি ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার কার্যক্রম শুরু করলে জেএমবির একটি অংশ আইএসের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ ও শহুরে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা এই অংশে যোগ দেন। তাঁরা ‘জিহাদ’–এর উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়ে, ভিন্নধর্মাবলম্বী, শিক্ষক, চিকিৎসক, পীরের খাদেম, পুরোহিতদের হত্যা করেন।হোলি আর্টিজান হত্যা মামলায় দেওয়া আসামিদের জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুরোনো জেএমবির কার্যক্রম কিংবা নব্য জেএমবিতে নিখোঁজ তরুণদের যোগদান, পুরোনো–নতুন জঙ্গিদের হত্যা–হামলার বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো নজর ছিল না।জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি থাকলে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা হতো না। অভিজ্ঞতা যেটা হয়েছে, সেটা হামলার পর। আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা সম্পর্কে ধারণা থাকলে হোলি আর্টিজানে হামলা শুরুর পর পুলিশ কর্মকর্তারা ওভাবে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করতেন না।হোলি আর্টিজানে হামলার পর গ্রেপ্তার হওয়া রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ছয়টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কথা জানান। বগুড়া থেকে ঢাকায় এসে রাকিবুল অন্যদের সঙ্গে প্রথমে মিরপুরে পাঁচতলা ভবনের একটি কক্ষে ওঠেন। এরপর মিরপুর ১ নম্বরে মাজার মসজিদের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট, মণিপুরে কাশেমের দোকানের পাশের ছয়তলা বাসার পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট, পাইকপাড়ার বউবাজার, পাইকপাড়ার নতুন বাজার ও কল্যাণপুরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হয়। পাইকপাড়া বউবাজারের চারতলা বাসায় হোলি আর্টিজান বেকারির পাঁচ হামলাকারীসহ সাতজন প্রশিক্ষণ নেন। ওটি ছিল প্রশিক্ষণার্থীদের দ্বিতীয় ব্যাচ। রাকিবুল প্রশিক্ষণার্থীদের ইস্তেহাদি বা আত্মঘাতী হামলায় উদ্বুদ্ধ করতেন। এ ছাড়া শারীরিক কসরত, অস্ত্র খোলা ও লাগানোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল এই কেন্দ্রগুলোয়। বিভিন্ন সময় এই কেন্দ্রগুলোয় হোলি আর্টিজানে হামলার সমন্বয়ক তামিম আহমেদ চৌধুরী, মারজান, মেজর জাহিদ, বাশারুজ্জামান চকলেট খোঁজখবর করতেন ও টাকা দিয়ে আসতেন।হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ৩ বছরহামলার আগ পর্যন্ত জঙ্গিদের গতিবিধি কেউ শনাক্ত করতে পারেনি অভিযোগ উঠেছে, পর্যাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য ছিল না জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের তৎপরতা কখনো বন্ধ হয়নিকেন্দ্রগুলোয় তরুণদের পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতেন আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে র‍্যাশ। ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছিন আহসান চৌধুরীকে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসলাম হোসেন বলেন, ‘জিহাদ’–এর উদ্দেশ্যে যেসব তরুণ ঘর ছাড়তে চাইতেন, তাঁরা সিক্রেট অ্যাপে তামিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছে দিতেন আসলাম। হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় জড়িত ঢাকার তিন তরুণ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোহান ইমতিয়াজকে ২০১৫ সালের ২৫ বা ২৬ ডিসেম্বর লালমাটিয়ার আড়ংয়ের সামনে থেকে, পরের বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি নিবরাস ইসলামকে ধানমন্ডির শুক্রাবাদের ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির কাছে পদচারী–সেতুর নিচ থেকে ও এর দুই দিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি লেকের ধার থেকে মীর সামেহ মোবাশ্বেরকে তুলে তিনি মিরপুর ১০–এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছে দেন।আসলামের কল্যাণপুরের মেস ও বাসা এবং তানভীর কাদেরির বসুন্ধরার বাসা জঙ্গিদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসলাম, রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যান ও জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী জানান, হোলি আর্টিজানে হামলার কয়েক দিন আগে আসলাম ও রাজীব গান্ধী গুলশান পার্ক ও হোলি আর্টিজান বেকারি রেকি করেন। ২০১৬ সালের মে মাসে তিনি রোহান ইমতিয়াজ ও নিবরাস ইসলামকে গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হাতে–কলমে দেখাতে বুড়িগঙ্গা নদীতে যান এবং গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে আস্তানায় ফেরেন। কোথাও কখনো তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুখোমুখি হতে হয়নি।স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী নিজেকে নব্য জেএমবির উত্তরবঙ্গের সামরিক প্রধান হিসেবে উল্লেখ করেন। হোলি বেকারিতে হামলার আগে তিনি ১৩টি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন।দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচটি জেলায় হোলি বেকারিতে হামলার আগে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির কথা জানান হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি বা মার্চের দিকে তাঁদের সংগঠনের কিছু ছেলে ঝিনাইদহ শহরের হামদ বাসস্ট্যান্ডের পাশে সোনালী মোড় এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য কাওসার আলীর বাসা ভাড়া নিয়ে মেস করে থাকতেন। ওই মেসে বসেই তাঁর সঙ্গে নিবরাস, মোবাশ্বের ও শরীফুল ইসলাম পায়েলের কথা হয়। তাঁরা জানান, ঢাকার কূটনৈতিকপাড়ায় বড় ধরনের হামলা হবে।স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ বলেন, হোলি আর্টিজান বেকারিতে তাঁর সরবরাহ করা অস্ত্র ও গ্রেনেড ব্যবহৃত হয়। ২০১৬ সালে রমজানের প্রথম দিকে মিরপুর ১০ নম্বরে তামিম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হয়। তাঁর নির্দেশে অ্যাপস ও মোবাইলে যোগাযোগ করে রমজানের ২০–২২ তারিখ ভারতে থাকা পুরোনো সদস্যদের মাধ্যমে অস্ত্র–গুলি ও গ্রেনেড সংগ্রহ করে সোহেল মাহফুজ ছোট মিজানকে দেন।আসামিদের জবানবন্দিতে ঢাকার তুরাগ, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুরের বোর্ডবাজার, বগুড়ার একাধিক স্থানে জঙ্গি তৎপরতার কথা আছে। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনযোগে অস্ত্র আনার কথা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ২০১৪ সালে ডা. নজরুল ইসলাম ও দুই বছর পর ফজলে রাব্বী খুনেরও কথা রয়েছে। হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হন, যাঁদের অনেকেই ছিলেন নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তরুণ। যোগাযোগ করা হলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মতে, গোয়েন্দারা ব্যর্থ হয়েছেন। আমি বলব ভবিষ্যতের প্রস্তুতি হিসেবে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করতে হবে, কেউ নিখোঁজ রয়েছে, এমন তথ্য গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। ’
প্রায় ২৮ বছর পর নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। আজ সোমবার অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে দেশে। ২০১২ সালে নতুন আইনটি প্রণয়ন করা হলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে তা সাত বছর পর কার্যকর হচ্ছে। আর ব্যবসায়ীদের চাপে নানামুখী ছাড় দিয়ে মূল আইনে অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে।অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন, নতুন আইনটি বাস্তবায়ন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ও হয়রানিমূলক হবে। এ আইনে ভ্যাট কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ বেশি।নতুন ভ্যাট আইনটি মাঠপর্যায়ে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। প্যাকেজ ভ্যাট প্রথা উঠে যাওয়ার ফলে কিসের ভিত্তিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভ্যাট মওকুফের সীমা নির্ধারণ করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাবপত্র রাখার বিষয়টিও শুধু কাগজ-কলমে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।সার্বিকভাবে নতুন ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। নতুন আইনে সবকিছু অনলাইনে হওয়ার কথা থাকলেও এখনোই তা পুরোপুরি শুরু করা যাচ্ছে না।মূল আইনের একক ১৫ শতাংশ হারের পরিবর্তে আটটি ভ্যাট হার করা হয়েছে। নতুন ভ্যাট হারগুলো হলো ২, ২.৪, ৩, ৪.৫, ৫, ৭.৫, ১০ ও ১৫ শতাংশ।নতুন আইনটি সম্পর্কে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সোজা কথায় বলেন, নতুন বোতলে পুরোনো মদ। সবকিছুই পুরোনো আইনের মতো। তাঁর মতে, নতুন আইনটি বাস্তবায়ন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে। ব্যবসায়ীদের আগের চেয়ে বেশি হয়রানি হতে হবে। যেমন ২০১২ সালের মূল আইনে নিবন্ধন, ভ্যাট পরিশোধসহ অনলাইন ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। অথচ এখন ভ্যাট নিবন্ধনের ক্ষমতা কমিশনারের কাছে দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে গিয়ে নিবন্ধন দেবেন।নানা জটিলতা নতুন আইনে প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম হলে ভ্যাট দিতে হবে না। অথচ কোনো প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম, সেটি নির্ধারণের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। এটি জানতে ভ্যাট কর্মকর্তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদারকি করতে হবে। কিছুদিন পর্যবেক্ষণের পর ভ্যাট কর্মকর্তাদের ঠিক করতে হবে, ওই প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাটের আওতায় কি না। তা না হলে ছোট–বড় সব ব্যবসায়ীর সততার সঙ্গে নিখুঁতভাবে লেনদেনের হিসাব রাখতে হবে।২৮ বছর পর নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে এই আইনে যেমন অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, তেমনি অনেক বিষয় স্পষ্ট নয়পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা প্রথম আলোকে বলেন, ৫০ লাখ টাকার কম লেনদেন নির্ধারণ করবে কে? ভ্যাট কর্মকর্তারা নির্ধারণ করলে তাঁদের ‘মজা’ আরও বাড়বে। এই বিষয়টি পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, লেনদেনের হিসাব রাখতে মেশিন বসালে লোকবল ও টাকা লাগবে। এতে পণ্যের দাম বাড়বে।আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম ব্যবসায় ভ্যাট (এটিভি) উঠিয়ে ৫ শতাংশ ভ্যাটের আগাম কর বসানো হয়েছে, যা সমন্বয় করা যাবে। কিন্তু কোন খাত থেকে এনবিআর রেয়াতের টাকা দেবে, তা স্পষ্ট নয়। বড় আমদানিকারকদের একেকটি চালানে আমদানি পর্যায়ে কয়েক কোটি টাকা আগাম কর দিতে হবে। তাঁরা ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন। ভ্যাট রিটার্ন দিয়ে রেয়াতের টাকা ফেরত পেতেও কয়েক মাস সময় লেগে যাবে। এই সময়ে ব্যাংক সুদের টাকা গুনতে হবে। অনেকে মনে করেন, সরকারি কোষাগার থেকে রেয়াতের টাকা ফেরতের আশার পরিবর্তে ব্যবসায়ীরা ভ্যাটের টাকা ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিলে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে।ইতিহাস১৯৮৬ সালে বিশ্বব্যাংকের কর সংস্কার মিশনের সুপারিশে প্রথম ভ্যাট ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে ভ্যাট আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। ১৯৯১ সালের ১০ জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে ওই আইনের বিচ্যুতি হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে তা দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়।
সৌরভ গাঙ্গুলীকে প্রচণ্ড অবাক করেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের রান তাড়া। তিনি মনে করেন, এর চেয়ে যদি ভারত ৩০০ রানে অলআউট হয়ে যেত, সেটিই ভালো ছিল। হাতে ৫ উইকেট রেখে দেওয়াটা দৃষ্টিকটু ঠেকছে তাঁর কাছে।সৌরভ গাঙ্গুলীর কাছে রীতিমতো দৃষ্টিকটু ঠেকছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের রান তাড়া। তাঁর মতে, হাতে ৫ উইকেট থেকে গেল কিন্তু রান তাড়া হলো না, এটা অবাক করার মতোই।ভারতের সাবেক অধিনায়ক দোষ দিচ্ছেন মহেন্দ্র সিং ধোনিকেই, ‘পান্ডিয়া-ঋষভরা যেখানে আউট হয়ে চলে এল, সেখানে ধোনির একটা বড় ভূমিকা রাখার দরকার ছিল, কিন্তু সেটি সে করতে পারেনি।’ভারতে যেভাবে রান তাড়া করেছে, সেটি নিয়ে হতাশ সৌরভ, ‘এর চেয়ে ভারত যদি ৩০০ রানে অলআউট হয়ে যেত, তাহলে এতটা খারাপ দেখাত না। কিন্তু হাতে ৫ উইকেট রেখে রান তাড়ায় অবাক হয়েছি।’ কাল এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের ৩৩৭ রানের জবাব ভারত শেষ অবধি হাতে ৫ উইকেট রেখে ৩০৬ রানে থামে। তবে সবাই অবাক হয়েছে, ভারতের সমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইনআপ কাল মাত্র একটি ছক্কা মারতে পেরেছে বলে। আরও অবাক করার বিষয় ছিল শেষ ৫ ওভারে মাত্র ৩টি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা। যখন রান তাড়া করতে গিয়ে মারমুখী হতে হবে, সেখানে ধোনি আর কেদার যাদবের জুটিটি দাঁড়িয়েছিল ৩১ বলে ৩৭ রানের।২০১৯ বিশ্বকাপে কালই প্রথম হার দেখেছে ভারত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারটা কোহলিদের বিশ্বকাপযাত্রায় একটা ধাক্কাই মনে করেন সৌরভ, ‘একটি শক্তিশালী দলের বিপক্ষে রান তাড়ার সুযোগটা এই প্রথম এসেছিল ভারতের জন্য। কিন্তু তারা সফল হতে পারল না।’
বিলকিস বেগম (৩৮) নিজের দেড় বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধানের আবাদ করেছেন। বিঘাপ্রতি ২৫ মণ করে ধান পেয়েছেন। ধানমাড়াইয়ের জন্য শ্রমিকের সঙ্গে তিনি নিজেও হাত লাগিয়েছেন। গত ২৮ মে মুঠোফোনে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি কাজও করছিলেন সমানতালে।বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার নাট মরিচাই গ্রামের বিলকিস বললেন, জমিতে আলু ও ধান আবাদের সব কাজ নিজেই তদারকি করেন। স্বামী আবদুল মান্নানের গরুর খামার আছে। কিছুটা খুশির আভার আঁচ পাওয়া গেল মুঠোফোনে। বিলকিস বললেন, বীজ ভালো হওয়ায় বিঘায় ১১৬ মণ আলু পেয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রতি মণ ৩২০ টাকা করে ৭১ মণ বিক্রি করেছেন। নিজেদের খাওয়ার জন্য রেখে বাকি ৩৩ বস্তা হিমাগারে রেখে দিয়েছেন।একই গ্রামের কৃষক খোরশেদা বেগম (৩০) বাড়ির উঠানে এক শতক জায়গায় গড়ে তুলেছেন গরু ও হাঁস-মুরগির খামার। স্বামী মামুনুর রশিদ স্থানীয় ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত।খোরশেদা বললেন, ‘নিজে উপার্জন করতে কার না ভালো লাগে। ছোট পরিসরে খামার করছি। স্থানীয় একটি ডেইরি ফার্মে প্রতিদিন ৩৬ টাকা লিটার করে ৫-৬ লিটার দুধ বিক্রি করি। মুরগির ডিম ও হাঁসের ডিম বিক্রি করি।’গ্রামটির আরেক কৃষক সেলিনা খাতুন (২৩) সংসারে সচ্ছলতা আনতে পড়াশোনার পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন কৃষিকাজে। স্বামী মো. রানা স্থানীয় বাজারে বড় মুদির দোকানের কর্মী। এই দম্পতির ভিটে ছাড়া কোনো জমি নেই। দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়েছেন সেলিনা। শিবগঞ্জ এম এইচ ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সেলিনা জানালেন, এবার বিঘায় ২৫-২৭ মণ ধান পেয়েছেন। জমির মালিককে দেওয়ার পর অর্ধেক পাবেন। এর আগে আলু পেয়েছিলেন প্রতি বিঘায় ১১৫ মণ। সবটাই বিক্রি করেছেন।সেলিনা দৃঢ় গলায় বললেন, ‘পণ্য বিক্রি করে টাকা যা পাই, আমার কাছে থাকে। বাজারে পণ্য বিক্রির জন্য যেতে পারি না। বাড়িতে লোক এসে ধান, আলু নিয়ে যায়।’ নারী কৃষকেরা জানালেন, বড় পরিসরের কৃষিকাজে বাজারজাতকরণে নারীদের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তথ্য বলছে, কৃষিতে সম্পৃক্ত নারী-পুরুষের সংখ্যা ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ১ কোটি ১২ লাখ ১০ হাজার।শ্রমশক্তিতে অংশ নেওয়া নারীদের গুণগত মান বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা সহযোগী মো. ইকবাল হোসেন পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ কমে অকৃষি খাতে বেড়েছে। এরপরও নারীর মোট কর্মসংস্থানের ৬০ ভাগ জুড়ে আছে কৃষি।বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বললেন, নারীরা কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পান না। সরকারি সুবিধাদি, কৃষি কার্ড, ভর্তুকি, ঋণপ্রাপ্তি পুরুষ কৃষকদের মতো পাচ্ছেন না। ফলে পুরুষ নেতৃত্বের মধ্য দিয়েই কৃষি কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া নারীদের কাছে শ্রেয় মনে হয়।তৌফিকুল ইসলাম খানের মতে, উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিপণনে নারীরা বড় প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন। বিপণন ব্যবস্থায় নারীকে সম্পৃক্ত করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। নারীরা তাঁদের পণ্য নিয়ে পুরুষের সঙ্গে দর-কষাকষি করছেন, এটা এখনো সমাজ মেনে নিতে পারে না।নারী কৃষকের পণ্য বিপণনে কেয়ার বাংলাদেশ একটি টোলফ্রি নম্বরের মাধ্যমে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার নারী কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে।কেয়ার বাংলাদেশের কৃষি উৎস প্রকল্পের বিক্রয় প্রতিনিধি হোসনে আরা বললেন, এই নাট মরিচাই গ্রামের এখন ৮০ শতাংশ নারী কৃষিকাজে যুক্ত। তারপরও এ বিক্রয় প্রতিনিধির মুখে কিছুটা হতাশা—বললেন, বাজারজাতকরণে অর্ধেকের কম নারী জড়িত। শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী মনে করেন, বাড়ির বউ পরপুরুষের (ব্যাপারী) সঙ্গে কথা বলবে?চিত্র পাল্টাচ্ছেতৃণমূলের নারী কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর গুলশানের বিক্রয়কেন্দ্র আউড়িতে। একশনএইড বাংলাদেশের উদ্যোগে গত ১১ এপ্রিল এটি যাত্রা শুরু করে। সংস্থাটির ‘প্রোমোটিং অপরচুনিটিজ ফর উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড রাইটস (পাওয়ার) প্রকল্পের আওতায় গাইবান্ধা, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন জেলার ৬ হাজারের বেশি নারী কৃষক তাঁদের জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি আউড়িতে পাঠাচ্ছেন। নারী কৃষক দল ও ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে পণ্য বিক্রির জন্য দালালকে কোনো টাকা না দিয়েই পণ্যের ন্যায্যমূল্য কৃষকেরা পাচ্ছেন বলে জানালেন একশনএইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার নূরে জান্নাত।আউড়িতে পণ্য পাঠানো শুরু করেছেন গাইবান্ধার লাকি বেগম। পাওয়ার প্রজেক্টের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করতে লাকি বেগমের নেতৃত্বে যুক্ত রয়েছেন আড়াই হাজার নারী।লাকি বললেন, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব চন্দ্রিয়া গ্রামের পাঁচটি ইউনিয়নে কাজ করছেন তাঁরা। তিনি বললেন, নারীদের বাজারে প্রবেশাধিকার নেই। সমাজ ভালো চোখে দেখে না। দালাল ধরে পণ্য বাজারে পাঠালে লাভ বলতে কিছু থাকে না। দেখা যায়, ৩০ টাকার লাউ বিক্রি করে দিতে হয় ১০–১৫ টাকায়। ন্যায্যমূল্যও পাওয়া যায় না। তাই আউড়িতে পণ্য পাঠানো হচ্ছে। সব খরচ শেষে লাভও থাকছে।
বাঁ চোখের সমস্যা নিয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে মাওলা বখ্‌শ সরদার দাতব্য চক্ষু হাসপাতালে এসেছেন আয়েশা বেগম (৫৫)। ১০ টাকায় টিকিট কেটে চোখ দেখিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে। এত কম টাকায় চিকিৎসককে চোখ দেখাতে পেরে দারুণ খুশি গৃহকর্মী আয়েশা।আয়েশার মতো সমাজের এমন নিম্ন আয়ের মানুষকে দুই যুগের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের ফরাশগঞ্জের মাওলা বখ্‌শ সরদার দাতব্য চক্ষু হাসপাতাল। ১৯৯১ সালে ‘দাও আলো, দাও জীবন’ স্লোগানে হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করে। ২৫ শয্যার এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে মাওলা বখ্‌শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ট্রাস্ট হিসেবে ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিম বখ্‌শ হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে আছেন।ফরাশগঞ্জের মোহিনী মোহন দাস লেনের একটি দ্বিতল ভবনে হাসপাতালটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ট্রাস্ট সূত্র জানায়, আজিম বখ্‌শের বাবা মাওলা বখ্‌শ ছিলেন ঢাকার ২২ পঞ্চায়েতের অন্যতম সর্দার। তিনি মারা যাওয়ার আগে তাঁর সম্পত্তির একাংশ মানবতার কল্যাণে ব্যয় করার কথা বলে যান। পরে এই ট্রাস্ট গঠন করেন মোহাম্মদ আজিম বখ্‌শ। ট্রাস্টের কর্মীরা বলেন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটিতে অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য খরচ নামমাত্র। তাই হাসপাতালটি দরিদ্র মানুষের ভরসার জায়গা।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগী দেখেন চিকিৎসকেরা। প্রতিদিন রোগী আসে ২০০ জনের মতো। বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত শিশু ও বৃদ্ধ রোগীদের জন্য আছে বিশেষ ব্যবস্থা। অবশ্য তাদের দিতে হয় ২০০ টাকা করে। সম্প্রতি মাওলা বখ্‌শ সরদার দাতব্য চক্ষু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পরিপাটি হাসপাতালে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষায় রোগীরা। চারটি কক্ষে বসে চারজন চিকিৎসক রোগী দেখছেন।হাসপাতালে কথা হয় শ্যামবাজারে মুদি দোকানের কর্মচারী মামুন মিয়ার সঙ্গে। জানালেন, তিনি কয়েক মাস ধরে চোখে ঝাপসা দেখছিলেন। এই সমস্যার কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারছিলেন না। পরে মালিকের কথামতো এই হাসপাতালে এসেছেন। মাত্র ১০ টাকায় চিকিৎসা পেয়ে তিনি খুশি।হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এই হাসপাতালে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ১০ বছর মানুষকে একেবারে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা, ওষুধ, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো। এখন নামমাত্র ফিতে চিকিৎসা ও পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতালে কেবিনের ভাড়া মাত্র ৩০০ টাকা। আর সাধারণ শয্যায় থাকলে কোনো টাকা নেওয়া হয় না।হাসপাতালের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে মাওলা বখ্শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিম বখ্শ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা মাওলা বখ্শ সরদার সব সময় মানবসেবায় ব্যস্ত থাকতেন। ১৯৮৭ সালে তিনি মারা যাওয়ার আগে মানুষের জন্য সেবামূলক কিছু করার কথা বলেছিলেন। পরে বাবার সম্পত্তি দিয়ে তাঁরা ট্রাস্ট গঠন করেন। পরে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে পাঁচটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তার একটি হলো এই হাসপাতাল। তিনি বলেন, প্রথমে দুটি কক্ষ নিয়ে হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয়। পরে ক্রমান্বয়ে এর পরিধি বাড়ানো হয়। এখন তাঁরা হাসপাতালের জন্য ছয়তলা ভবন করার পরিকল্পনা করছেন।দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালটিতে বিকেলে শিশুদের চিকিৎসাসেবা দেন কাজী ফাইয়াদ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা খুবই আন্তরিক। তাঁরা মানুষের সেবার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেন। তাই তাঁদের এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে খুবই উৎসাহ পাই। এখানে বেতন মুখ্য নয়, কাজ করাটাই আসল।’
ঝিনাইদহের পি ডি আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক ছিলেন সুকুমার সাহা। তিনি এই বিদ্যালয়ে ১৫ বছর ধরে শিক্ষকতা শেষে অবসরে যান। কিন্তু এই ১৫ বছরে তিনি এক টাকাও বেতন পাননি।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সুকুমারকে বিনা বেতনে পাঠদান করতে হয়েছে। তাঁর জন্ম ১৯৫৮ সালে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামে। তাঁর বাবা মৃত ফণীন্দ্রনাথ সাহা ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসার প্রয়োজনে ফণীন্দ্রনাথ ১৯৬৭ সালে চলে আসেন ঝিনাইদহে। এই শহরের মদনমোহন পাড়ায় বসবাস শুরু করেন। আজও বাবার রেখে যাওয়া সেই বাড়িতেই সুকুমার বসবাস করছেন।সুকুমার বলেন, বিএসসি কোর্স শেষে বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করতেন তিনি। বাবার তখন মুদিদোকান ছিল। ১৯৮৯ সালে তিনি পৃথক দোকান নেন। কালীগঞ্জ শহরের বিমল কুমার সাহার মেয়ে উৎপলা সাহাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাঁদের সংসার ভালোই চলছিল। তাঁদের ঘরে আসে সজীব কুমার সাহা ও দীপ্ত সাহা নামের দুই সন্তান। বর্তমানে তারা দুজনই পড়ালেখা করছে। সুকুমার আরও জানান, ১৯৭৫ সালে ঝিনাইদহ নিউ একাডেমি থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৭৮ সালে ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এইচএসসি ও ১৯৮১ সালে বিএসসি কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৮২ সালে এমএসসি কোর্স করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সেখানে পড়ালেখা করে পারিবারিক সমস্যার কারণে বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়িতে এসে বাবার ও নিজের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। এরই মধ্যে ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দিঘলগ্রাম গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় পি ডি আর (পীড়াগাতি-দিঘলগ্রাম-রূপদাহ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এখানে পড়ানোর জন্য কোনো গণিতের শিক্ষক পাচ্ছিলেন না। তখন তাঁকে যোগদানের জন্য অনুরোধ করেন। কর্তৃপক্ষ ২০০৪ সালে তাঁকে নিয়োগ দেন। এরপর থেকে তিনি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি অবসরে যান। কিন্তু এই চাকরির সময়ে তিনি কোনো বেতন পাননি। এমনকি বিদ্যালয়টি হতদরিদ্র এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সেখানেও তেমন আয় ছিল না। যে কারণে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও তিনি কিছুই পাননি। আবার প্রতিষ্ঠানে বেশি সময় দেওয়ায় নিজে কোনো প্রাইভেট পড়ানোর সঙ্গেও যুক্ত হননি। এরই মধ্যে আরও ভালো পাঠদানের স্বার্থে ২০০৯ সালে তিনি বিএড কোর্স সম্পন্ন করেন।সুকুমার দুঃখ করে বলেন, কর্মজীবন শেষ করলেন বেতন ছাড়া। যাওয়ার সময়ও কিছুই পেলেন না। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের সামনে মুখ দেখাতে এখন খুব কষ্ট হয়। স্ত্রী উৎপলা একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলে শিক্ষকতা করেন। বাড়িতে কিছু বাচ্চা পড়ান স্ত্রী। স্ত্রীর টাকায় চলে সংসার। তাঁর এই কঠিন জীবন নিয়ে কারও কি কিছুই করার নেই—এ প্রশ্ন সুকুমারের।ওই বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আকরামুল কবির জানান, কিছু শিক্ষানুরাগী ২০০০ সালে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১০০ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে ২৪৫ জন ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করছে। আটজন শিক্ষক আর তিনজন কর্মচারী রয়েছে প্রতিষ্ঠানে। রয়েছে সাতটি শ্রেণিকক্ষ, একটি শিক্ষকদের কক্ষ ও একটি শিক্ষার্থী কমন রুম। পীড়াগাতি, দিঘলগ্রাম, রূপদাহ, মান্দারতলা, করিমপুর ও আশুরহাট গ্রামের ছেলেমেয়েরা এ প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। এ পর্যন্ত তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ১০টি ব্যাচ এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এখান থেকে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের বেশি পাসের হার। এরপরও প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়নি। যে কারণে সুকুমারকে বেতন ছাড়াই চলে যেতে হয়েছে। আরও কয়েকজন আছেন, তাঁদের অবস্থাও একই। প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত এমপিওভুক্ত না হলে ওই শিক্ষকদের অবস্থাও সুকুমারের মতো হবে।এ বিষয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহম্মেদ খান জানান, এসব শিক্ষক নিয়ে তাঁদের কিছুই করা ও বলার নেই। তবে শিক্ষকেরা উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন, কিছু হয় কি না।
বরগুনায় রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার মূল আসামিরা এখনো ধরা পড়েননি। এর মধ্যেই একটি মহল আলোচনা শুরু করেছে রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাকে নিয়ে। আয়শার পরিবার বলছে, নিজের চোখে দেখা ভয়ংকর ঘটনা আর স্বামীর শোক সামলে উঠতে পারেননি আয়শা। তার ওপর লোকজনের কটু কথা তাঁর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।গতকাল রোববার সকালে বরগুনা শহরের মধ্য মাইঠা এলাকায় আয়শার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চার পুলিশ সদস্য অস্থায়ী চৌকি বানিয়ে সেখানে পাহারা রয়েছেন। নীরবে বসে আছেন আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, ‘মাত্র দুই মাস আগে ধুমধাম করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম। কী নির্মম নিয়তি! দুই মাস না যেতেই আমার মেয়েটা...!’ আর কথা বলতে পারেননি মোজাম্মেল। একটু পর বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে মেয়েটা। ঘুমের মধ্যেও আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে। প্রচণ্ড দুর্বলতার কারণে চিকিৎসক স্যালাইন দিতে বলেছেন। এখন আবার অনেকে তাকেই দোষারোপ করছে।’আয়শার সঙ্গে কথা বলতে এই প্রতিবেদককে ঘরে নিয়ে যান মোজাম্মেল। ঘরে যেতেই আয়শার আহাজারি, ‘আমার আর কী বাকি রইল? সবকিছুই তো শেষ!’সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই যে তাঁকে দুষছেন, বিষয়টি জানেন আয়শা। হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডের সঙ্গে তাঁর বিয়ে নিয়েও রয়েছে নানা কথা। এ বিষয়ে আয়শা বলেন, সন্ত্রাসী নয়ন তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করছিলেন। প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আয়শা রাজি ছিলেন না। বছর দেড়েক আগে কলেজে আসার পথে নয়ন ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে অস্ত্রের মুখে একটি বাড়িতে নিয়ে জোর করে সই নেন। এরপর থেকেই নয়ন তাঁকে স্ত্রী দাবি করা শুরু করেন। আয়শা প্রতিবাদ করলে তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছোট বোনসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেন।মূল আসামিরা এখনো ধরা পড়েননি অপেক্ষা করতে বললেন পুলিশ সুপারআয়শার পরিবার বলছে, তাঁকে যেভাবে জোর করে তুলে নিয়ে একটি কাবিননামায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল, সেটাকে বিয়ে বলা যায় না। কাবিননামা অনুযায়ী এই বিয়ের কাজি হলেন আনিসুর রহমান ভূঁইয়া। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কার্যালয়েই আয়শা ও নয়নের বিয়ে নিবন্ধন হয়েছিল। ছেলেপক্ষে ২০-২৫ জন তরুণ উপস্থিত থাকলেও মেয়ের পক্ষে কেউ ছিলেন না।মেয়ের অভিভাবক ছাড়া কী করে বিয়ে নিবন্ধন হলো, জানতে চাইলে কাজি আনিসুর রহমান বলেন, তিনি প্রসঙ্গটি তুললে নয়নের পক্ষের কেউ একজন ফোনে আয়শার মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। তবে কাজি যে আয়শার মায়ের সঙ্গেই কথা বলেছেন, তা তিনি যাচাই করেননি।মূল আসামিদের বিষয়ে পুলিশপুলিশের ব্যাপক তৎপরতার পরও কেন মূল আসামিরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন না, জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি সেকেন্ড-ঘণ্টা মেপে বলার বিষয় নয়। এখানে কৌশলগত অনেক বিষয় রয়েছে। এর মানে এটা নয় যে আমরা আসামি ধরছি না, আমাদের গাফিলতি আছে কিংবা আসামিরা আমাদের নজরদারির বাইরে চলে গেছে। আপনারা অপেক্ষা করেন, আশা করছি ভালো কিছু দিতে পারব।’
আষাঢ় বর্ষার মাস হলেও বৃষ্টি হচ্ছে কম, গরম পড়ছে বেশি। গরমে দেশের অনেক স্থানেই অবস্থা চরম। এখানে ছবিতে এরই কিছু নমুনা।
গানের জীবন্ত কিংবদন্তি সৈয়দ আব্দুল হাদীর জন্মদিন আজ ১ জুলাই। দিনটি ঘিরে শ্রোতাদের সামনে নতুনভাবে হাজির হচ্ছেন এই কণ্ঠশিল্পী। জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর জীবনভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র ‘দ্য লিজেন্ড সৈয়দ আব্দুল হাদী’ ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে বাংলা ঢোল ইউটিউব চ্যানেলে ৩৪ মিনিটের এই প্রামাণ্য চিত্র অবমুক্ত করা হয়েছে। এর আগে বাংলাফ্লিক্স, রবি স্ক্রিন, এয়ারটেল স্ক্রিন ও টেলিফ্লিক্স অ্যাপগুলোয় প্রামাণ্য চিত্রটি অবমুক্ত করা হয়।বাংলা ঢোলের প্রযোজনায় প্রামাণ্য চিত্রটি নির্মাণ করেছেন সাদাত হোসেন। প্রামাণ্য চিত্রটিতে সৈয়দ আব্দুল হাদীর জীবনের কোন কোন দিক উঠে এসেছে? পরিচালক সাদাত হোসেন জানান, কৃতী এই শিল্পীর বেড়ে ওঠা, তাঁর দীর্ঘ গানের জীবনের নানা দিক, গান নিয়ে তাঁর চিন্তা-দর্শন, দেশীয় গানের নানা অনুষঙ্গসহ তাঁর অনেক অজানা তথ্য আছে এই প্রামাণ্য চিত্রে।‘দ্য লিজেন্ড সৈয়দ আব্দুল হাদী’ ইউটিউবে প্রকাশ করা প্রসঙ্গে সাদাত হোসেন বলেন, ‘এর আগে কয়েকটি অ্যাপে উঠেছে প্রামাণ্য চিত্রটি। কিন্তু অ্যাপের সঙ্গে সব দর্শক আর শ্রোতার যোগাযোগ কম। সে ক্ষেত্রে ইউটিউবের সঙ্গে সবার যোগাযোগ তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে, অনেকেই তা ইউটিউবে দেখতে পাবে।’এদিকে সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, ‘নিজের কথা আর কী বলব। প্রথমে কাজটি করতে রাজি ছিলাম না। পরে তাঁদের অনুরোধে কাজটি করতে হয়েছে। দেখলাম, কাজটি ভালো হয়েছে।’
২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য শরীয়তপুর পৌরসভার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে পৌরসভা মিলনায়তনে বাজেট উপস্থাপন করেন পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল। রাজস্ব ও উন্নয়ন খাত মিলে ৮৯ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার ৯১২ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়।বাজেট ঘোষণার সময় পৌর মেয়র জানান, শরীয়তপুর পৌরসভায় মিউনিসিপ্যাল গভর্ন্যান্স সার্ভিসেস প্রকল্পর আওতায় ৩০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলছে। এ ছাড়া নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সাড়ে সাত কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আরও সাত কোটি টাকার দরপত্র প্রক্রিয়াধীন।আওয়ামী লীগ ২০২০ সালকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে শরীয়তপুর পৌরসভা থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ১০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে।পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার জন্য বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ, ডাম্পিং গ্রাউন্ড নির্মাণ, শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্প নির্মাণ, কবরস্থান নির্মাণ, শ্মশান নির্মাণ ও শিশুপার্ক নির্মাণের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।এ সময় জনগণকে পৌরকর, ব্যবসা লাইসেন্স ফি, দোকানভাড়া, পানির বিল ও পৌরসভার যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করার আহ্বান জানান পৌরমেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল।
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে যাত্রীবাহী বাস পাহাড় থেকে খাদে পড়ে কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ২২ জন। স্থানীয় সময় আজ সোমবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কিশতোয়ার জেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে মিনিবাসটি কেশওয়ান থেকে কিশতোয়ারে যাচ্ছিল। পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি পাহাড় থেকে নিচে খাদে পড়ে যায়।কিশতোয়ারের ডেপুটি কমিশনার আনগ্রেজ সিং রানা দুর্ঘটনার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যমতে, বাসটি কিশতোয়ার জেলার সিরগওয়ারি নামক স্থানে উল্টে খাদে পড়ে যায়। জম্মুর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এম কে সিনহা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান চলছে। আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।এ ঘটনায় প্রথম ব্যক্তি হিসেবে শোক প্রকাশ করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। টুইটে তিনি বলেন, কিশতোয়ারে বাস দুর্ঘটনায় অনেক বেশিসংখ্যক মানুষের প্রাণহানির ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্যের প্রার্থনা জানান তিনি।এরপরই শোক প্রকাশ করে টুইট করেন জম্মু ও কাশ্মীরের আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। তিনি বলেন, কিশতোয়ারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি শোকাহত। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি তিনি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছেন।
ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দেখতে আজ সোমবার সকালে সেখানে যান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জাতীয় পার্টির সূত্রে এ কথা জানা গেছে। গত ২৬ জুন থেকে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদ।গতকাল রোববার এরশাদের ছোট ভাই ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের গণমাধ্যমকে জানান, এরশাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। ফুসফুসে পানি চলে এসেছে, ইনফেকশনও দেখা দিয়েছে। পরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে অক্সিজেন দেওয়া হয়।আজ সিএমএচইচে গিয়ে ওবায়দুল কাদের এরশাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জি এম কাদের ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
পুরো উপমহাদেশকে হতাশ করে গতকাল ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গেছে ভারত। জয়ের ফলে সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল হলো ইংল্যান্ডের। ওদিকে ভারত হেরে যাওয়ার কারণে সেমিফাইনালের আশা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেল শ্রীলঙ্কার। সেমিতে ওঠার রাস্তাটা আরও কঠিন হয়ে গেল বাংলাদেশ-পাকিস্তানের। রান তাড়া করতে গিয়ে ভারতের ধীরগতির ব্যাটিংয়ে আশ্চর্য হয়েছেন সবাই। ভারত ম্যাচ হেরেছে সে কারণেই। কিন্তু অধিনায়ক বিরাট কোহলির মতে ম্যাচ হারের কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন।২০১৯ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো হারল ভারত। আর এমন এক সময়ে হারল, যখন বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য ভারতের জয় ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচ হারের জন্য অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন ভারতের ব্যাটিং নিয়ে। ৩৩৭ রান তাড়া করার জন্য যেমন মারকাটারি ব্যাটিং করা লাগে, তার ধারকাছ দিয়েও যাননি মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, কেদার যাদবরা। কিন্তু কোহলির মতে, রান তাড়া না করতে পারার দোষ এজবাস্টনের উইকেটের।যে আইপিএল দিয়ে গোটা বিশ্বের ক্রিকেটকে মারকাটারি ব্যাটিংয়ের মর্ম শিখিয়েছে ভারত, সে ভারতই গতকাল মেরে খেলতে ভুলে গেল যেন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বলতে গেলে ধীরে ব্যাটিং করেছে তারা। ভারতের ইনিংসের একমাত্র ছক্কা এসেছে একদম শেষ ওভারে, যেখানে ইংল্যান্ড ছক্কা মেরেছে ১৩টি। ৪৫ ওভারের পর কেদার যাদব-মহেন্দ্র সিং ধোনি ৩১ বলে তুলেছেন মাত্র ৩৯ রান, বিশবার সিঙ্গেল নিয়েছেন, ডট বল দিয়েছেন এক ওভারেরও বেশি। বাউন্ডারি এসেছে মাত্র চারটি। অধিনায়ক বিরাট কোহলি ম্যাচ শেষে ধোনিকে বাঁচানোরই চেষ্টা করলেন যেন, ‘ম্যাচের শেষ দিকে কীভাবে ব্যাট করতে হবে, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় মূলত যারা ওই মুহূর্তে উইকেটে থাকে, তারা। আমার মনে হয় এম এস (ধোনি) অনেক চেষ্টা করছিল বাউন্ডারি মারার। কিন্তু ওদের বোলাররা প্রত্যেকটা বল ভালো জায়গায় করছিল।’ কোহলির মতে, বাউন্ডারি মাররা জন্য পিচ যেমন গতিশীল থাকা লাগে, সেটা ছিল না, ‘বল ব্যাটে থেমে থেমে আসছিল, শেষ দিকে উইকেট ধীরগতির হয়ে গিয়েছিল। তাই তখন ব্যাট করা বেশ কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল। আমাদের এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে এবং পরবর্তী ম্যাচের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে।’ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচের ফলাফল নিয়ে ভারতীয়দের চেয়ে বেশি চিন্তিত ছিল বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের সমর্থকেরা। আর হবে নাই–বা কেন? দর্শকের ভূমিকায় থাকা বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কা—সবার সেমিফাইনাল-ভাগ্যই যে এ ম্যাচের ওপর নির্ভর করছে! ১৭৬ কোটি মানুষের প্রার্থনা কাজে আসেনি। ইংল্যান্ডের কাছে ৩১ রানে হেরে গেছে ভারত। ১৯৯২ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে ভারত।ইংল্যান্ডের অধিনায়ক এউইন মরগান কিন্তু আবার ভারতের ধীরলয়ের ব্যাটিং দেখে খুশিই হয়েছেন, ‘ভারত কীভাবে ব্যাটিং করেছে—এ নিয়ে আমি একদম চিন্তিত ছিলাম না। ওদের রান তোলার গতি দেখে বেশ খুশিই হয়েছি আমি। ওদের পরিকল্পনা ছিল ধীরে ব্যাটিং করার। কিন্তু এটাও মানতে হবে, আমাদের বোলাররা দুর্দান্ত বল করেছে।’
দীর্ঘ বিরতি পেয়েছে বাংলাদেশ দল। ২৪ জুন আফগানদের সঙ্গে খেলার পর পয়লা জুলাই পর্যন্ত অবসর দিনযাপনের পালা চলছে। ২ জুলাই কঠিন প্রতিপক্ষের সামনে দাঁড়ানোর আগে এই দীর্ঘ বিরতি কি ভালো হলো, নাকি খেলার যে টেম্পোটা ছিল, তা বিঘ্নিত হলো, তা নিয়ে সাধারণ দর্শকদের মধ্যে বেশ তর্কবিতর্ক, চিন্তা–দুশ্চিন্তার ব্যাপার চলছে।পরিচিত ক্রিকেটপাগল এক বন্ধু বললেন, ‘এই রেস্টটাতে প্লেয়ারগো খুব ভালা হইছে! সেই যে আয়ারল্যান্ডে চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা দিয়া শুরু, পোলাপানগুলা রেস্টই তেমন পায় নাই। অহন ভারতের লগে খেলায় বেশ ঝরঝরা থাকতে পারব।’আলাপচারিতায় বসা অন্য বন্ধু তাঁর উল্টো মতামতে গেলেন। ‘আরে, টেম্পোটাই তো থমকাইয়া গেছে। এই কয় দিনে যদি প্লেয়ারগো আইলসামিতে পাইয়া বসে তো খেলার দিন চাঙ্গা হইতে, আড়মোড়া ভাইঙ্গা চালু হইতে খবর আছে। পারব কি না কে জানে!’আমি শুনছিলাম। শেষে তাঁদের কথায় যোগ দিলাম। বললাম, ‘মনে হয় দুজনেই ঠিক। তবে যতই অবসরে থাকুক, খেলোয়াড়দের মাথায় আগামী খেলাগুলোর চিন্তা কাজ করছেই। যতই এদিক–সেদিক ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ উপভোগ করুক না কেন, টেনশনটা কিন্তু ঠিকই কাজ করছে। আমার তো মনে হয়, এই রেস্টটায় কে কেমন খেলবে, ভারতের দলটিরই–বা আমাদের দলটিকে নিয়ে কী ভাবাভাবি চলতে পারে, এসব টেনশন, ভাবনা মাথায় আছেই।’দ্বিতীয় বন্ধুটি আমাকে খণ্ডন করে বললেন, ‘আরে দূর! আমরা যত টেনশন করি, দুশ্চিন্তা করি, অরা তত করে না রে ভাই। নিজেগো অবস্থা নিজেরা ভালোই বোঝে। দলের গেমপ্ল্যান রেডি থাকে। প্লেয়ারগোও নিজস্ব ভাবনা থাকে গেম–টু–গেম। দল–টু–দল, প্লেয়ার–টু–প্লেয়ার স্টাডি করা থাকে। রেস্টে থাকুক বা না–ই থাকুক নিজেদের কী করন লাগব, তা সবতেরই মনে থাকে।’প্রথম বন্ধুটি যোগ করলেন, ‘ঠিকই কইছ। তয় অরা অবস্থা বুইঝা মাঠে কে কী করব, তা–ই নিয়া ভাবে যেমুন, তেমনি খেলার অপেক্ষায় থাকা দ্যাশের দর্শক মানে মানুষগো খুশি করতে পারব কি না, সমালোচনা, গাইল–মন্দ খাইতে হইব কি না, সেই টেনশন তো থাকেই।’বললাম, ‘আসলেও তা–ই! টেনশনটা খেলার দিন আরও জমাট হবে। বাংলাদেশের কাছে ভারত সহজে হারতে চাইবে না। আর তা ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে খেলার ব্যাপারে তাদের খারাপ অভিজ্ঞতা আছে। বাংলাদেশ যে নিজেদের দিনে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, তা তাদের জানা।’বন্ধুটি প্রায় উত্তেজিত হলেন, ‘সেইটা তো কথা! অরা সাবধান হইয়া খেলব।’বললাম, ‘অতি সাবধানী খেলা খেলতে যাওয়া মানেই তাদেরও টেনশন। আর তা করলেই সাকিব, মোস্তাফিজ, মাশরাফিদের কাছে ধরা খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে।’‘তা তো বুঝলাম। কিন্তু ভাই রে, অগো বোলিংয়ের বুমরা তো ভোমরার মতন বিপজ্জনক। লগে আছে শামি। অন্যগুলারে তো বাদই দিলাম। আবার ব্যাটে কোহলি, ধোনি, রাহুল, আর আছে রোহিত শর্মা। রোহিত জইমা গেলে তার রান লওয়ারে “রহিত” করাই কঠিন।’সব শুনে দুজনকেই বললাম, ‘খারাপ দিন সবারই আসে। ওদের আসতে কতক্ষণ! আমরা চাই, তা–ই যেন হয়।’দ্বিতীয় বন্ধুর শেষ উক্তি, ‘একটা কথা কই, বিশ্বকাপে ঘুইরা–ফিইরা একই দলের কাপ জিতনে কোনো মজা নাই। চাই নতুন কেউ আসুক। আর তাতে আমরা না কেন!’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম পুলিশের ‘কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট’-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হোলি আর্টিজান হামলার তৃতীয় বার্ষিকী সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদীদের তৎপরতার বর্তমান দশা, সামনের ঝুঁকি ও মোকাবিলার পথ নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া।প্রথম আলো: হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার তিন বছর হলো, দেশে জঙ্গি তৎপরতা দৃশ্যত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই কৃতিত্ব কীভাবে দেখছেন?মনিরুল ইসলাম: জঙ্গি তৎপরতা এখন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এটা সবাই স্বীকার করেন। কিন্তু এতে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি, তা নয়। এটা বৈশ্বিক সমস্যা এবং এই মতাদর্শের লোকজন আমাদের সমাজে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সক্রিয় আছে। সুযোগ পেলে তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, তা আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। আমাদের দেশে সন্ত্রাসবাদ যে মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে, এর কৃতিত্ব মূলত জনসাধারণের। কারণ, জনগণ এ ধরনের তৎপরতা ঘৃণা করে। এতে জঙ্গিদের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়েছে। আমরা জনগণের সহায়তা পেয়েছি। সর্বোপরি কৃতিত্ব হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। ২০০৯ সালে তিনি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন এবং হোলি আর্টিজানের পর তা পুনর্ব্যক্ত করে আমাদের সে অনুযায়ী কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।প্রথম আলো: জঙ্গি মোকাবিলার দুটি দিকের একটি প্রশাসনিক। আপনারা সেই দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যথাযথ নীতি–সমর্থন না পেলে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি আছে? সরকারের তরফে আরও কিছু করার আছে কি?মনিরুল ইসলাম: জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের প্রতি সরকারের নির্দেশনায় সদিচ্ছার ঘাটতি নেই। আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা করে যাচ্ছে। তবে হোলি আর্টিজানের ঘটনার পর সরকারি-বেসরকারি অংশীজন ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ শুরু হয়েছিল, তাতে ভাটা পড়েছে ও শিথিলতা এসেছে। জঙ্গিবাদ দমন একটি দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল প্রক্রিয়া। সব অংশীজনের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে যেহেতু কিছু শিথিলতা এসেছে, তাই এখানে সক্রিয়তা জরুরি। এটা নিশ্চিত করা গেলে জঙ্গিবাদ মোকাবিলার কাজ আরও সহজ হবে।প্রথম আলো: আপনাদের কাজের ক্ষেত্রে কি কোনো শিথিলতা আসেনি? সম্প্রতি দুটি ছোট হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং আইএস এর দায় স্বীকার করেছে। আমরা শুনলাম, এসবি অফিসের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট। আর এই দুটি ঘটনার কোনো কূলকিনারাও হয়নি।মনিরুল ইসলাম: আসলে আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থায় ঘাটতি আছে বা কাজে শিথিলতা এসেছে, এমনটি বলা যাবে না। আর আপনি যে সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্টের কথা বললেন, সেটা সম্ভবত ফ্লাইওভারের কারণে সরাতে হয়েছিল। আর আমরা তো এখনো সব সড়ক সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে পারিনি। ভেতরের ক্যামেরা ঠিক ছিল। সেখান থেকে কিছু সূত্র পাওয়া গেছে। এই ঘটনা সম্পর্কে জনগণ বাইরে থেকে যা-ই বলুক না কেন, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গেই বিষয়গুলো দেখছি। কোনো শিথিলতা নেই। পুরো ঘটনাটি উদ্‌ঘাটন করতে পারিনি, কিন্তু আমাদের সব চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।প্রথম আলো: জঙ্গি দমনের পাশাপাশি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া রোধ করাও তো জরুরি। অনেক জঙ্গি আটকের পর কারাগারে থাকছেন। তাঁরা সেখানে অন্য কয়েদিদের উদ্বুদ্ধ করছেন। কারাগার যে জঙ্গি উদ্বুদ্ধকরণের উর্বর ক্ষেত্র, তা প্রমাণিত। এ ব্যাপারে কি আপনাদের কিছু করার নেই?মনিরুল ইসলাম: দেখুন, কারা কর্তৃপক্ষ পুলিশ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এমনকি পুলিশ সদস্যদের সাধারণভাবে কারাগারে ঢোকারও সুযোগ নেই। ফলে আইনগতভাবে কারাগারের ব্যাপারে আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই। তবে কারাগারগুলোর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এখন সন্ত্রাস দমন আইনে রুজু করা মামলায় আটকদের সঙ্গে সাধারণ কয়েদিদের মেলামেশার সুযোগ কমেছে।প্রথম আলো: আপনারা কি এই বিপদের বিষয়টি সরকারের নজরে আনার চেষ্টা করেছেন বা কারা কর্তৃপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন?মনিরুল ইসলাম: কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক—সব পর্যায়েই যোগাযোগ রয়েছে। এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা তাদের সচেতন করার চেষ্টা করি। সন্ত্রাস দমন নিয়ে কাজ করে, এমন অন্য সংস্থাগুলোও কারাগারে জঙ্গি উদ্বুদ্ধকরণের বিপদের বিষয়ে সজাগ রয়েছে এবং কারা কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সচেতন করেছে। আমরা এখন এ ধরনের কয়েদিদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা রক্ষীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে তাঁদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও কারাগারকে জঙ্গি উদ্বুদ্ধ করার উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমরা সেই ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।প্রথম আলো: জঙ্গিবাদ বা এ ধরনের কাজে জড়িতদের অনেকেই গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিন পান বা সাজা ভোগের পর বের হয়ে আসেন। তাঁদের প্রতি আপনাদের কোনো নজর থাকে কি?মনিরুল ইসলাম: জামিন পাওয়ার অধিকার সবারই আছে। জামিন দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। তবে ডির‌্যাডিক্যালাইজেশনের কাজটি আমরা এখনো সুসংগঠিতভাবে শুরু করতে পারিনি। একজন সন্দেহভাজন জঙ্গি বা সন্ত্রাসী যখন আটক হন, তখন তাঁকে এই উগ্র পথ থেকে সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া কারাগারেই শুরু হওয়া উচিত। যাতে সেখানেই তিনি সংশোধিত হতে পারেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ধর্মীয় চিন্তাবিদদের সহায়তা নিয়ে তাঁদের সেই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া যায়। এ ধরনের কাজ আমরা শুরু করতে পারিনি। যাঁরা আটক হন, তাঁদের সবার অপরাধের মাত্রা সমান নয়। অভিযোগের মাত্রা গুরুতর, এমন কেউ যখন জামিন পান, তখন আমরা তাঁর ওপর নজরদারি অব্যাহত রাখি। জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত হিসেবে শাস্তি পেয়েছেন এবং সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, এমন কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাঁদের আর্থিক সহায়তা ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। দ্রুতই সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন দেখা যাবে।প্রথম আলো: পাকিস্তানের মতো দেশে ইসলামি জঙ্গিদের জন্য পৃথক ডির‌্যাডিক্যালাইজেশন কেন্দ্র আছে, যার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধদের সেই পথ থেকে ফিরিয়ে আনা ও সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলে। বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ বা আপনাদের কোনো পরামর্শ আছে কি?মনিরুল ইসলাম: এ রকম কিছু কাজের অনুমোদন আমরা পেয়েছি। কিন্তু এর জন্য আইনগত বিধিবিধানের কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে। আমরা যদি জামিন পাওয়ার পর বা সাজা ভোগ কারার পর কাউকে আলাদা করে কোথাও রাখতে চাই, তাহলে এটা লাগবে। কারাগারের ভেতরে প্রয়োজন অনুযায়ী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা ধর্মীয় চিন্তাবিদদের পাঠাতে হলেও কারাবিধির সংশোধনী লাগবে। এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। আশা করছি ভবিষ্যতে আমরা এ ব্যাপারে কার্যকর কিছু করতে পারব।প্রথম আলো: শিক্ষার কারিকুলাম নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে এমন অনেক বিষয় আছে, যা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়তে সহায়তা করে। সমাজে এ ধরনের পরিস্থিতি বজায় রেখে জঙ্গিবাদী ধ্যানধারণার বিস্তার রোধ করা কঠিন। এ ব্যাপারে আপনাদের ভূমিকা বা এ নিয়ে কোনো পরামর্শ আছে কি সরকারের কাছে?মনিরুল ইসলাম: জঙ্গিবাদ মোকাবিলা একটি জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমরা এসব নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করছি। অভিভাবক, শিক্ষক, যুবসমাজ, ইসলামি চিন্তাবিদ, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মীসহ সমাজে যাদের ভূমিকা পালনের সুযোগ আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে ঘাটতি ও সমস্যার জায়গাগুলো চিহ্নিত করার উদ্যোগ চলছে। আমাদের পক্ষে সম্ভব কাজগুলো আমরা করব। আর যা আমাদের আওতায় নেই, সেগুলো করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেব। আমাদের গবেষণা সেল ‘প্রিভেন্টিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম’ নিয়ে কাজ করছে। তারা সবার সঙ্গে আলোচনা, পরামর্শ ও মতামত নিয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করছে। সেই সুপারিশমালা আমরা তুলে ধরব। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে যেন উগ্রবাদী চিন্তাচেতনা তৈরি না হয়, সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা জাগিয়ে তোলা। একই সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির ভিত্তিতে দেশপ্রেম, দায়বদ্ধতা, পরমতসহিষ্ণুতা—এসব বিষয়ে আগামী প্রজন্মকে সচেতন করে তোলা।প্রথম আলো: আপনারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি করেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন অনেক ওয়াজের ভিডিও ফুটেজ দেখা যায়, যা খুবই উসকানিমূলক। সমাজে অসহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষ জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে এসবের ভূমিকা থাকতে পারে। এসবের বিরুদ্ধে আপনাদের কোনো ভূমিকা নেই কেন?মনিরুল ইসলাম: আসলে আইন দিয়ে সবকিছু মোকাবিলা করা যেমন উচিত নয়, তেমনি সম্ভবও নয়। ওয়াজের নামে খুবই বিদ্বেষমূলক ও অশ্লীল বক্তব্য দিয়েছেন, এমন অনেকের বক্তব্য আমরা এরই মধ্যে নামিয়ে ফেলেছি। কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ রয়েছে। অনেককে এ ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে জনমত তৈরির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা এ ধরনের বক্তব্য দেন, তাঁদের কাউকে কাউকে ছয় মাস আগে বুকিং দিয়ে, বুকিং মানি দিয়ে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয়। যাঁরা নারীবিদ্বেষী কথা বলেন, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ান বা অন্য ধর্মের প্রতি কটাক্ষমূলক মন্তব্য করেন, তাঁদের ব্যাপারে জনমত তৈরির কাজটি গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে।প্রথম আলো: আপনারা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতায় জড়িতদের পুরোপুরি হোমগ্রোন হিসেবে বিবেচনা করছেন। জেএমবি সংগঠনটি একসময় সক্রিয় হয়েছিল। এখন আপনারা তাদের বলছেন নব্য জেএমবি। এই নামটি কি তারা নিজেরা ব্যবহার করে, না আপনারা দিয়েছেন? এদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর কোনো সম্পর্ক নেই, এমনটি বলে যাওয়া কি কোনো কৌশলের অংশ?মনিরুল ইসলাম: দেখুন, জঙ্গিবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে আল-কায়েদা, আইএস, হিযবুত তাহ্‌রীর, জেএমবি, নব্য জেএমবি বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর মধ্যে আলাদা করে পার্থক্য করার কোনো সুযোগ নেই। কাজের ক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিকতা বা সদিচ্ছা এবং সক্ষমতা আছে কি না, তা বিবেচনা করা উচিত। এই দুই ক্ষেত্রে আমাদের কোনো ঘাটতি নেই। বিশ্বে ইসলামি উগ্রবাদের নামে এখন যে সংগঠনগুলো সক্রিয়, সেগুলোকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। এর একটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীর। বিশ্বের ৫০টি দেশে ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের শাখা রয়েছে। এদের কৌশল সবখানেই এক। আন্তর্জাতিক হিযবুত তাহ্‌রীরের যে কৌশল, বাংলাদেশে হিযবুত তাহ্‌রীরের কৌশলও তা-ই। আল-কায়েদার আদর্শের ওপর ভিত্তি করে ১৯৯২ সালে হরকাতুল জিহাদ তৈরি হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে যে জেএমবি গড়ে উঠেছিল, সেটিও আল-কায়েদার অনুসরণেই। একটা সুন্নি শ্রেষ্ঠত্ব ও শরিয়াভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য তারা কাজ করেছে। কৌশল ভিন্ন হলেও আদর্শ এক। এরপর গড়ে ওঠা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আরও পরের সংগঠন আনসার আল ইসলামও একই আদর্শের অনুসারী। এই সংগঠন দুটি আল-কায়েদা বা আরও সুনির্দিষ্টভাবে ‘আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টে’ এর আদর্শ ধারণ করলেও তাদের সঙ্গে সরাসরি সাংগঠনিক যোগাযোগের কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। ঠিক তেমনিভাবে যখন আইএস হলো, তখন এর আদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তি ও সংগঠনের অস্তিত্বও বাংলাদেশে মিলেছে। আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করতে যাঁরা সিরিয়ায় গেছেন, তাঁরা কিন্তু বাংলাদেশের কোনো সংগঠনের মাধ্যমে যাননি। তাঁরা সরাসরি যুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে যে হামলাগুলো হয়েছে, তা আইএসের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি।প্রথম আলো: আইএসের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য সিরিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশিদের কেউ কেউ মারা গেছেন। আইএসের পতনের পর অনেকে আটক হয়েছেন। অনেকে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান কী?মনিরুল ইসলাম: বাংলাদেশের প্রচলিত আইন বা সংবিধান যা বলে, তার বাইরে আমাদের কিছু করার নেই। বাংলাদেশি নাগরিকদের কেউ যদি সেখানে গিয়ে থাকেন, তবে এক রকম, আর যদি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিন্তু অন্য দেশের নাগরিক হন, সে ক্ষেত্রে অন্য রকম। ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা বিবেচনা কাজ করবে। আমরা নাগরিকত্বের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখব, তারপর ব্যবস্থা।প্রথম আলো: আমাদের আইন কী বলে? তেমন কেউ বাংলাদেশের নাগরিক হলে আমাদের করণীয় কী?মনিরুল ইসলাম: বাংলাদেশের নাগরিকদের কেউ দেশের বাইরে গিয়ে যদি অপরাধ করেন এবং আমাদের আইনে যদি তা শাস্তিযোগ্য হয়, তবে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। কোনো দেশ যদি কাউকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায়, তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। তবে ফেরত পাঠাতে হলেও ভ্রমণ দলিল লাগবে। তারা যে বাংলাদেশের নাগরিক, তার প্রমাণ লাগবে।প্রথম আলো: প্রধানমন্ত্রী গত বুধবার বলেছেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। রোহিঙ্গারা দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া একটি নির্যাতিত মুসলিম জনগোষ্ঠী। এ ধরনের জনগোষ্ঠীকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা সবচেয়ে সহজ কাজ। রোহিঙ্গাদের ওপর আপনাদের নজরদারি কতটুকু? এ ধরনের বিপদ সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি ও সক্ষমতা আপনাদের রয়েছে কি?মনিরুল ইসলাম: সন্ত্রাসে জড়ানো বা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য যে ক্ল্যাসিক্যাল পরিস্থিতির প্রয়োজন, তার সবই রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে স্বস্তির বিষয়টি হচ্ছে শরণার্থীদের অধিকাংশই নারী, শিশু ও অপেক্ষাকৃত বয়সী লোকজন। এদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কম। তবে আরও কয়েক বছর যদি তারা বাংলাদেশে থাকে, তবে আজ যে শিশুর বয়স ১০ বছর, তার বয়স তখন ১৫ হবে। ঝুঁকির মাত্রা সে সময় বেড়ে যাবে। সন্ত্রাসী বা জঙ্গি সংগঠনগুলোর রিক্রুটারদের জন্য এরা লোভনীয় টার্গেট। তবে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক শক্তি এখন এতটাই দুর্বল যে তাদের পক্ষে রোহিঙ্গা শিবিরে কিছু করা কঠিন। তবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে, যাতে কেউ ভবিষ্যতে এর সুযোগ নিতে না পারে।প্রথম আলো: দেশের রাজনৈতিক বা গণতান্ত্রিক পরিসর এখন সংকুচিত। এমন পরিস্থিতি রাজনীতিতে চরমপন্থা বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করে। গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ করতে না পারলে ভিন্ন পথ ধরে। জামায়াতে ইসলামীর মতো দল নিষিদ্ধ না হলেও কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। এদের কর্মী-সমর্থকদের চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার কোনো বিপদ আছে কি?মনিরুল ইসলাম: সন্ত্রাসবাদ দমন বিষয়ে পুরোনো লেখা পত্রে বলা হতো, রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা পরিসর সংকুচিত হলে চরমপন্থার বিকাশ ঘটে। কিন্তু আইএসের উত্থানের পর বা আইএসের যুগে এটা বলার সুযোগ নেই। আর মতামত প্রকাশ কিন্তু আটকে নেই। সবাই মতামত প্রকাশ করছেন। সেটা হয় প্রচলিত মিডিয়ায় বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আমরা দেখেছি, ১৯৯৮ সালে জামাআতুল মুজাহিদীন যখন তৈরি হয়েছে, তখন জামায়াত থেকে কিছু লোক সেখানে যোগ দিয়েছিল। ফলে নতুন করে জামায়াতে ইসলামীর লোকজনের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কিছু নেই। তারা আগে থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে আছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে জঙ্গিবাদের বিপদ বাড়বে বলে আমি মনে করি না।প্রথম আলো: জঙ্গি বা সন্ত্রাস দমনে শুধু আপনার সংস্থা নয়, আরও অনেক সংস্থা জড়িত। তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও প্রতিযোগিতার একটি অভিযোগ আছে। অনেকে মনে করেন, এ পরিস্থিতি ক্ষতিকর। আপনার অভিমত কী?মনিরুল ইসলাম: জঙ্গি বা সন্ত্রাস নিয়ে যারা কাজ করে, তাদের মধ্যে এনএসআই, ডিজিএফআই, স্পেশাল ব্রাঞ্চ আছে। তারা গোয়েন্দা তথ্য জোগাড় করার কাজ করে, তদন্তের কাজ করে না। সেটা তাদের কাজের মধ্যে পড়ে না। অভিযান ও তদন্তের কাজটি মূলত পুলিশ করে। পুলিশের মধ্যে আমরা আছি, র‌্যাব আছে, সাধারণ পোশাকের পুলিশ আছে। আসলে চাঞ্চল্যকর কোনো মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ চেষ্টা করে, র‌্যাব চেষ্টা করে, ডিবি চেষ্টা করে। গুরুত্ব থাকে বলেই সবাই চেষ্টা করে, একটা প্রতিযোগিতা তো থাকেই।প্রথম আলো: কিন্তু সমন্বয়ের কোনো ব্যাপার থাকবে না?মনিরুল ইসলাম: আসলে ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে অনেক সময় সবাই মিলে চেষ্টা করে। কেউ সফল হলে তারাই বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যায়। সংস্থাগুলো পরস্পরকে সহায়তা করে। যেমন মনে করেন তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে কোনো ঘটনায় বা মামলায় আমরা হয়তো কয়েকজন আসামি ধরেছি, আবার র‍্যাবও কিছু ধরেছে। সে ক্ষেত্রে ধরার পর ব্রিফিং করে তারা আসামিদের আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। এটা নিয়ে বড় ধরনের কোনো সমন্বয়ের অভাব আছে বলে মনে করি না। যা আছে, তাকে সুস্থ প্রতিযোগিতা বলা যায়।প্রথম আলো: আপনাদের একটি গবেষণা সেল আছে। সাধারণত অপরাধী বা সন্ত্রাসীরা যে ধরনের ঘটনা ঘটায়, তার ওপর ভিত্তি করে আপনারা তাদের মোকাবিলার কৌশল বের করেন। কিন্তু এখন সন্ত্রাসী বা জঙ্গিরা হামলার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নতুন ও অভিনব কৌশল গ্রহণ করে। জঙ্গিরা আমাদের প্রচলিত ধারণার বাইরে কোনো কায়দায় হামলা চালাতে পারে, এমন বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের সেল কাজ করে কি?মনিরুল ইসলাম: আমাদের কাজের একটা ইন্টেলিজেন্স, আরেকটি অ্যাসেসমেন্ট। যেসব ঘটনা ঘটে, তার তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলো জড়ো করে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা হচ্ছে ইন্টেলিজেন্স। আর এর ওপর ভিত্তি করে আমরা যা নির্ধারণ করি, তা হচ্ছে অ্যাসেসমেন্ট। এটা যে সব সময় ঠিক হবে, এমন নয়। এর বাইরে গিয়ে অনেক ঘটনা ঘটে। আমাদের ভাষায় যাকে বলে ল্যাক অব ইমাজিনেশন। জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের নতুন কৌশল গ্রহণের বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় থাকে এবং আমরা গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে ভাবার চেষ্টা করি, সেই সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।প্রথম আলো: ধন্যবাদ।মনিরুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।
খোলা মাঠের কনসার্ট এখনো হয়, তবে আগের তুলনায় কম। ভেন্যুসংকট, নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, ক্ষেত্রবিশেষে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেও হয় না খোলা মাঠের কনসার্ট।একটা সময় রাজধানী ঢাকায় কমলাপুর স্টেডিয়াম, আর্মি স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর শেরেবাংলা নগর স্টেডিয়াম, রাওয়া ক্লাব মাঠ, ধানমন্ডি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠ, কলাবাগান মাঠে নিয়মিত ওপেন এয়ার কনসার্ট হতো। এসব মাঠের বেশির ভাগেই এখন আর কনসার্ট হয় না। রাওয়া ক্লাব মাঠের তো অস্তিত্বই নেই। ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা।১২ বছর বয়সী গানের দল শূন্যর ভোকাল ইমরুল করিম এমিল বলেন, ‘আমরা যখন পেশাদার গানের জগতে এলাম, তখন ওপেন এয়ার কনসার্ট কমতে থাকল। এখন ইনডোর অনুষ্ঠান বেশি হয়। ওপেন এয়ার কনসার্টে সবচেয়ে বড় সমস্যা শুনি ভেন্যুর। ভেন্যু পাওয়া গেলেও খরচ অনেক। এ ছাড়া নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে কনসার্ট করা সম্ভব হচ্ছে না।’ এমিল বলেন, ‘আমি মনে করি, আগেকার দিনে সম্পর্ক কিংবা আবেগটাকে গুরুত্ব দেওয়া হতো পৃষ্ঠপোষকতায়। এখন অনেক কিছু ভাবতে হয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক লাভ কত হবে না হবে, এমন বিষয়ও কাজ করে।’এমিলের কথার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় ওয়ারফেজ ব্যান্ডের দলনেতা ও বাংলাদেশ ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম টিপুর। তিনি বলেন, ‘পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান কিংবা আয়োজক ওপেন এয়ার কনসার্ট করতে চায়। অপ্রতুল ভেন্যুর কারণে আয়োজকেরা সব প্রস্তুতি নিয়েও এগোতে পারেন না। নিরাপত্তাজনিত সমস্যার পাশাপাশি এও বলা হয়, সময়টা ওপেন এয়ার কনসার্টের উপযোগী নয়।’আশির দশকের মাঝামাঝি বিশ্ব সংগীতাঙ্গন যখন মেটাল–জ্বরে কাঁপছে, তখন মেটাল হার্ড রকের উন্মাদনা স্পর্শ করে বাংলাদেশকেও। এর মধ্যে যাদের কথা প্রথমেই উচ্চারিত হয়, তাদের মধ্যে ওয়ারফেজ অন্যতম। ৩৫ বছরে পা রাখা এই গানের দলটি দেশের আনাচকানাচে অসংখ্য ওপেন এয়ার কনসার্ট করেছে। ওপেন এয়ার কনসার্ট কমে যাওয়ায় চিন্তিত দলটির দলনেতা টিপু। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, শুধু গানের জন্যই একটা কিংবা দুটি মঞ্চ সব সময়ের জন্য থাকা উচিত। যেখানে শুধু গান-বাজনা হবে। শ্রোতারা টিকিট কেটে গান শুনতে আসবেন। সংস্কৃতিচর্চা হবে। নাটকের জন্য গাইড হাউস, মহিলা সমিতি, শিল্পকলা, মহানগর নাট্যমঞ্চ আছে—আমাদের জন্য কিছুই নেই। আমরা যা করছি, একান্ত ভালো লাগা এবং একক প্রচেষ্টা থেকে।’ব্যান্ডের বেশির ভাগ দলনেতা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, ওপেন এয়ার কনসার্টের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন মাঠের। সারা দেশে এসব মাঠের ভাড়াও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত ভাড়ার কারণে বড় ধরনের ইভেন্ট ওপেন এয়ার কনসার্টে অর্থনৈতিক ঝুঁকি বেশি। মোটা অঙ্কের টাকা প্রয়োজন হওয়ায় ওপেন এয়ার কনসার্টগুলোর আয়োজন এখন কেবল বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোই করতে পারে। এখন কিন্তু আর আগের মতো সাধারণ মানের মঞ্চ বানিয়ে ওপেন এয়ার কনসার্ট হয় না। এখানেও অনেক ব্যয় হয়। খরচ অনেক বেড়ে গেছে।আর্টসেল ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য লিংকন বলেন, ‘আমরা চাই সারা দেশে খোলা মাঠে আগের মতো কনসার্ট করতে। কিন্তু সব সময় শুনি নিরাপত্তা সমস্যা।’ওপেন এয়ার কনসার্টে অর্থনৈতিক তহবিল বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বলে মনে করছেন রেনেসাঁ ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য নকীব খান। তিনি বলেন, ‘হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া এখন আর কেউ খোলা মাঠে কনসার্ট করে না। তাও আবার বিশেষ দিনে। সব ঠিক হলেও নিরাপত্তার কারণে নিরুৎসাহিত করা হয়।’সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গত বছর দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বেশ কয়েকটি ওপেন এয়ার কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। গান বাংলা চ্যানেলের আয়োজনে সেসব কনসার্টে দেশের শিল্পীদের সঙ্গে বিদেশি যন্ত্রশিল্পীরা বাজিয়েছেন।
বরগুনায় রিফাত হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার বরগুনা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে এই মামলায় মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।গ্রেপ্তার দুজন হলেন অলি ও টিকটক হৃদয়। অলি এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর ও টিকটক হৃদয় এজাহারভুক্ত ১২ নম্বর আসামি।এর আগে চন্দন (২১), মো. হাসান (১৯), নাজমুল ৯১৮), সাগর (১৯), তানভীর (২২), কামরুল হাসান ওরফে সাইমুন (২১) নামের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে চন্দন ও হাসান এজাহারভুক্ত আসামি। অন্যদের সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।গত বুধবার সকালে বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করেন সন্ত্রাসীরা। পরদিন সকালে রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় মামলা করেন।
ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাসির ও পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের আজ সোমবার দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের দিন থাকলেও আসছেন না তাঁরা।দুদকের দায়িত্বশীল একটি সূত্র এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আসছেন না মিজানুর রহমান। অন্যদিকে, যোগাযোগ করা হলে খন্দকার এনামুল প্রথম আলোকে জানান, তিনি এখনো এ–সংক্রান্ত কোনো চিঠিই পাননি।আজ সকালে ডিআইজি মিজান ও দুপুরে দুদকের পরিচালক এনামুলের দুদকে হাজির হওয়ার কথা ছিল।সূত্র জানায়, মিজানুর রহমান দুদকের কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগত একটি সমস্যায় আছেন। দুদকে হাজির হতে তাঁর আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এর আগে গত ২৫ জুন মিজানুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তাঁকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় গতকাল রোববার হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন মিজানুর রহমান।অন্যদিকে, মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে খন্দকার এনামুল বাসির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিজেও অসুস্থ। যে কারণে আমি আসতে পারব কি না, নিশ্চিত না। তবে যদি চিঠি আসে, তখন সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।’ডিআইজি মিজানুর রহমান ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তখন তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। মিজানুরের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। গত বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে মিজানুরকে দুদক কার্যালয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মিজানুর রহমান ও তাঁর প্রথম স্ত্রী সোহেলিয়া আনারের আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। মিজানুরের নামে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার অসংগতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা দুদকের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তদন্ত শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় দুদক পরিচালকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার এই অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজান বেকারিতে যে মর্মান্তিক বিয়োগান্ত জঙ্গি হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়, সেটি ছিল আমাদের কাছে হঠাৎ একটি বজ্রপাতের মতো। আমাদের যে সমাজব্যবস্থা, সহাবস্থানের ঐতিহ্য; সেখানে এমন হামলা হতে পারে, এটি আমাদের চিন্তার বাইরে ছিল। ভয়ংকর সেই হামলায় দেশি-বিদেশি ২২ জন জীবন দিয়েছেন। এর মধ্যে আমার দুজন প্রিয় সহকর্মীও আছেন। তাঁরা হলেন বনানী থানার তৎকালীন ওসি সালাহউদ্দিন খান ও মেধাবী তরুণ অফিসার এসি রবিউল করিম। সেদিন আমি নিজে ২০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। সেখানে থাকা আমাদের ঊর্ধ্বতন অফিসার এবং অন্যদের সঙ্গে আলাপ করে ঘটনা জানার চেষ্টা করি।জঙ্গিদের হামলার মিনিট দশেকের মধ্যেই একজন ব্যক্তি, যিনি হোলি আর্টিজানে আটকা পড়েছিলেন, তিনি টেলিফোন করলেন আমাদের ডিসি সাহেবকে। জানালেন, একজন ইতালিয়ান, একজন আর্জেন্টাইনসহ তাঁরা বেশ কিছু লোক হোলি আর্টিজানের একটি অংশে আটকা পড়েছেন। সন্ত্রাসীরা সে সময় ভেতরে ছিল, তাঁরা ওখান থেকে বের হতে পারছিলেন না। তিনি তাঁদের উদ্ধার করার জন্য আমাদের সহযোগিতা কামনা করেন।আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, হোলি আর্টিজানের গেটের ভেতরে ঢুকব কাউন্টার ফায়ার করতে করতে, যাতে আটকা পড়া লোকগুলোকে আমরা উদ্ধার করতে পারি। এরপর আমরা ফায়ার করতে করতে ঢুকে যাই। একজন আর্জেন্টাইন, একজন ইতালিয়ান, সাতজন বাংলাদেশিসহ নয়জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। তাদের উদ্ধার করে আমরা যখন হোলি আর্টিজানের গেট দিয়ে বেরিয়ে পশ্চিম দিকে এগোচ্ছিলাম, গেট থেকে ২০ গজ পার হওয়ার আগেই গ্রেনেডের বিস্ফোরণ হয়। গ্রেনেডটি একেবারে পেছনে বিস্ফোরিত হয়। ফলে আমরা যারা সামনে ছিলাম, নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাই। আমাদের চোখের সামনে দুজন সহকর্মী মারা যান।এরপর আমাদের আরও অফিসার গেল, সোয়াত, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, র‍্যাব গেল। আমরা পুরো এলাকাটি ঘিরে ফেলি। সন্ত্রাসীরা যাতে লেক দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য লেকে বিজিবির একটি দল এবং লেকের ওপারে ভাটারা থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশের আরেকটি দলকে মোতায়েন করা হয়।একপর্যায়ে আমি মুঠোফোনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে আমার অবস্থান কোথায়। তখন আমি বললাম, হোলি আর্টিজানের ঠিক পাশের ভবনের নিচতলায় আমরা কিছু লোক অবস্থান নিয়েছি। আর বাকিদের চারপাশে ভাগ দিয়ে আমরা কাউন্টার ফায়ারের মাধ্যমে তাদের মোকাবিলা করছি।সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তখন আমাদের সর্বোচ্চ দূরত্ব ২০-২৫ গজ। এর মধ্যে তখন সালাহউদ্দিন খান ও রবিউল করিমের মৃত্যুর খবর প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করি। তিনি বললেন, তোমরা আর এক পাও অগ্রসর হইয়ো না। নিজেদের নিরাপত্তা ঠিক রেখে চতুর্দিকে ঘেরাও কর সন্ত্রাসীরা যাতে বেরিয়ে যেতে না পারে। আমি সেনা কমান্ডোদের পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।সেনা কমান্ডোরা ভোররাতের দিকে এলো। আমরা চারপাশ পরিদর্শন করি। ইতিমধ্যে র‍্যাব, বিজিবি, পুলিশ, নেভি কমান্ডো ও স্নাইপারেরা অবস্থান নিয়ে নেয়। সেনা কমান্ডোরা একটি অপারেশনাল ম্যাপ তৈরি করে আমাদের সহায়তায়। এরপর অপারেশনাল প্ল্যান নিয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করি, তখন রাত চারটা। বিস্তারিত আলোচনা শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যৌথ অভিযানের সিদ্ধান্ত দেন। সেনা কমান্ডোরা মূল অভিযান করবে। এর সহযোগী হিসেবে র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি আমরা সঙ্গে থাকব। এ সিদ্ধান্তের আলোকে ভোরবেলায় অভিযান শুরু হয়। অভিযানে পাঁচজন সন্ত্রাসীর সবাই ঘটনাস্থলে নিহত হয়। তাদের সঙ্গে হোলি আর্টিজানের একজন কর্মীও পালাচ্ছিলেন। প্রাথমিকভাবে ও যুক্তিসংগতভাবে মনে হয়েছিল তিনিও জঙ্গি। অভিযানে তিনি নিহত হন। সেখান থেকে আমরা মোট ২১ জনের মতো জিম্মিকে উদ্ধার করি—সেনাবাহিনী এবং আমরা মিলে আগে-পরে।এ ঘটনার পর গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—আমরা সবাই যার যার মতো করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে থাকি। এরপর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৬৩টি ছোট–বড় অভিযান পরিচালনা করেছি। এর অধিকাংশ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) অধীনে পরিচালিত হয়। এলাকায় এসব অভিযানে অনেক চিহ্নিত উগ্রবাদী নিহত হয়। অনেককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।যদিও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু উগ্রবাদী সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছে মাঝেমধ্যে। আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা মনে করি, গোয়েন্দা সংস্থা, সিটিটিসি, পুলিশ সদর দপ্তর, র‍্যাব—সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্কটাকে ভেঙে দিতে পেরেছি। নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। সমূলে উৎপাটন করতে এখনো পারিনি। এখনো বিচ্ছিন্নভাবে তাদের কিছু কিছু কর্মকাণ্ড আমাদের গোচরীভূত হচ্ছে। তবে বড় ধরনের হামলা করার সক্ষমতা জঙ্গিদের আছে; সেটা প্রতীয়মান হচ্ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কিছু করার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। একই সঙ্গে এই উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা, সচেতন করার কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি।মো. আছাদুজ্জামান মিয়া: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার
প্রথম আলোর গোলটেবিল বৈঠকে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) উপকমিশনার আবদুল মান্নান বলেছিলেন, ‘হোলি আর্টিজান হামলায় একমাত্র প্রতিবাদকারী ছিলেন ফারাজ আইয়াজ হোসেন। হামলাকারীরা ফারাজকে বলেছিলেন, তুমি মুসলিম, তুমি চলে যাও। তিনি কিন্তু তাঁর বন্ধুদের মৃত্যুর মুখে রেখে একা চলে যেতে চাননি। ন্যায়-নীতি-মানবিকতার প্রতি তিনি ছিলেন অবিচল। জীবন দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন, শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বই আমাদের আদর্শ। তাঁর এই আত্মদান বৃথা যায়নি। সারা বিশ্বকে তিনি জানিয়ে দিয়ে গেছেন, শান্তি ও সহনশীলতার প্রয়োজনে এ দেশের মানুষ জীবনও দিতে পারেন।’ফারাজের বড় ভাই যারেফ আয়াত হোসেন বলেন, ‘ফারাজের সাহসিকতা ছিল আলোকচ্ছটার মতো। সেই আলো আমাদের বেদনাময় দিনগুলো অতিক্রম করতে সহায়তা করেছে। দেশে-বিদেশে, চেনা-অচেনা অসংখ্য মানুষ ফারাজের প্রতি যে অকৃত্রিম ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেছে, তা আমাদের পরিবারকে শক্তি জুগিয়েছে।’২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজান বেকারির জঙ্গি হামলায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল দেশের মানুষ। বহু বিদেশি ওই হামলার শিকার হওয়ায় তার অভিঘাত ছড়িয়ে যায় সারা বিশ্বে। এর মধ্যেও আলো হয়ে ফুটে উঠেছিল ফারাজ হোসেনের নাম। দিনে দিনে সেই আলো ছড়িয়ে পড়ছে দেশ থেকে দেশান্তরে।সাহসী এই তরুণের নামে ‘ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন’ করেছে তাঁর পরিবার। তারা কাজ করছে আর্তদের সেবায়। তবে সবচেয়ে বড় আয়োজন করেছে পেপসিকো গ্লোবাল। ২০১৬ সালে তারা প্রবর্তন করে ‘ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার’। আগামী ২০ বছর চলবে এ পুরস্কার। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সনদের পাশাপাশি পাচ্ছেন ১০ হাজার মার্কিন ডলার।চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ চত্বরে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট গড়ে তোলা হয়েছে ‘ফারাজ চত্বর’। সেখানে রোপণ করা হয়েছে নাগেশ্বর গাছের চারা।বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ফারাজ আইয়াজ হোসেনের নামে শিক্ষাবৃত্তি চালু করেছে। একজন শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তাতে বিনা বেতনে পড়তে পারছেন। ফারাজ আইয়াজ হোসেন স্মরণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠিত হয় ‘পঞ্চম এনডিএফ বিডি-আরএমসি ডিসি জাতীয় মেডিকেল কলেজ বিতর্ক উৎসব’। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে ‘ফারাজ চ্যালেঞ্জ কাপ’ নামে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করা সাবেক কৃতী ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাব।ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি এসকেএফ টঙ্গীর চেরাগ আলীতে তাদের নতুন কারখানা ভবনের নাম দিয়েছে ‘ফারাজ আইয়াজ হোসেন ভবন’।অনন্য বন্ধুত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ফারাজ হোসেনকে ভূষিত করা হয়েছে মাদার তেরেসা পুরস্কারে। ভারতের মুম্বাইয়ে পুরস্কারটি নিয়েছেন ফারাজের মা সিমিন হোসেন ও ভাই যারেফ আয়াত হোসেন।ফারাজ হোসেনকে ২০১৮ সালের সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গয়জুয়েতা স্কুল অব বিজনেস। মৃত্যুবরণ করার সময় ফারাজের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ার দুই বছর বাকি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তন করেছে ‘ফারাজ হোসেন কোর ভ্যালু অ্যাওয়ার্ড’। ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় ফারাজ হোসেন ও অবিন্তা কবিরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের অক্সফোর্ড কলেজ ক্যাম্পাসে স্থাপন করেছে ‘হোসেন-কবির রুম’। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় মানবিকতার অনন্য নিদর্শন স্থাপনের জন্য ফারাজ হোসেনকে পুরস্কৃত করেছে।সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, মানবতার কল্যাণে অবদান রাখা মানুষের স্মৃতি রক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও স্মৃতিফলক স্থাপন করে থাকে গার্ডেন অব দ্য রাইচাস ওয়ার্ল্ডওয়াইড বা গারিও। এই উদ্যোগে জড়িত ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতালির মিলানভিত্তিক অলাভজনক এ সংগঠন ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই পাঁচজন ন্যায়নিষ্ঠ আরব ও মুসলিম ব্যক্তির স্মৃতির উদ্দেশে তিউনিসিয়ায় ইতালির দূতাবাসে ‘স্মৃতি-উদ্যান’টি স্থাপন করে। সেখানে ফারাজের নামে স্মৃতিফলক স্থাপন ও একটি বৃক্ষ রোপণ করা হয়। সেখানে ফারাজ হোসেনই একমাত্র অ-আরবীয়, যিনি এই বিরল সম্মান পেয়েছেন। ইতালির বেনেভোন্তো প্রদেশের রুমো হাইস্কুলে একটি গাছ লাগানো হয় ফারাজের স্মরণে।দেশের আনাচকানাচে নানা সংগঠন ও পাঠাগার তাঁকে নিয়ে সভা-সেমিনার করেছে, নানাভাবে স্মরণ করেছে। ভারতের শিলিগুড়িতেও ফারাজের নামে ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়েছে। জাগো ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মিলে শিশু শিক্ষা কার্যক্রমসহ নানা ধরনের সহায়তার কাজ করছে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন।সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজডে (সিআরপি) চালু হয়েছে ‘ফারাজ হোসেন সেন্টার’। এই সেন্টার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের থেরাপি এবং বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে ফিজিও, স্পিচ ও অকুপেশনাল থেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক শিশু এই সুবিধা নিয়ে বেড়ে উঠছে। সেন্টারটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস লাইফবিষয়ক ডিন জোসেফ মুন, ধর্মশাস্ত্রের অধ্যাপক ডগলাস এ হিকস এবং উন্নয়ন ও অ্যালামনাই সম্পর্কবিষয়ক সহকারী ডিন কেভিন স্মিরল।ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন কাজ করছে আর্তমানবতার সেবায়। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন। শীতে উত্তরাঞ্চলের মানুষ পেয়ে থাকে শীতবস্ত্র। ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন নিয়মিত চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করছে। এ তালিকায় আছে চক্ষুশিবিরও। এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষকে চক্ষু চিকিৎসা দিয়েছে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক মানুষের চোখে অস্ত্রোপচার করে চশমা দেওয়া হয়েছে। ফারাজের চোখের আলো এখন তাদের চোখে।ফারাজের বড় ভাই যারেফ আয়াত হোসেন বললেন, ‘মা স্বপ্ন দেখতেন, ফারাজ অনেক বড় হবে। তবে ফারাজ যে এত বড় হয়ে এভাবে বিশ্বে বরণীয় হয়ে উঠবে, তা হয়তো তিনি কল্পনাও করেননি।’
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করার আদেশ দেন। এর আগে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের সুপারিশ করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়েছিলেন।সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষক হলেন উপজেলার মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিপুল কুমার প্রামাণিক।অভিযোগ উঠেছে, গত শনিবার বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন বিপুল কুমার। ওই ছাত্রী কাঁদতে কাঁদতে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে যায় এবং পরিবারের সদস্যদের ঘটনাটি খুলে বলে। পরে এলাকার লোকজনও ঘটনাটি জানতে পারেন।কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন। এ সময় তাঁরা অভিযোগ ওঠা শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ মিছিল করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে শিক্ষককে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রেখে তালাবদ্ধ করে দেন সহকর্মীরা।বেলা দেড়টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিউল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিবেশ শান্ত হয়। এ সময় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক ইউএনওর কাছে শিক্ষক বিপুল কুমারের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন।ইউএনও জাকিউল ইসলাম সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান। আদালতে অভিযুক্ত শিক্ষক নিজের অপরাধ স্বীকার করলে তাঁকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি ও পরিচালনা কমিটি বাতিলের আদেশ দেওয়া হয়েছে।গতকাল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়। চিঠিতে শিক্ষক বিপুল কুমার প্রামাণিককে সাময়িক বরখাস্তের সুপারিশও করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।ইউএনও জাকিউল ইসলাম বলেন, শিক্ষক বিপুল কুমার প্রামাণিককে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি গতকাল বিকেলে দপ্তরে পৌঁছেছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুস সালাম তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়েছেন। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৮ অনুসারে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে এই সময়ে তিনি শিক্ষক বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা পাবেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।বাগমারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছিদ্দিকুর রহমানও একই কথা বলেছেন।শিক্ষক বিপুল কুমার প্রামাণিকের ছাত্রীদের যৌন হয়রানির খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
যুবলীগের দুই নেতা হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খান রানার জামিন আরও এক সপ্তাহ স্থগিতই থাকছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ জামিনের মেয়াদ ৮ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলে ৮ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছেন। এ কারণে আমানুরের জামিন স্থগিত থাকছে এবং তিনি কারামুক্তি পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।এর আগে গত ১৯ জুন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ওই মামলায় আমানুরের জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন। এই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করেন, যা পরদিন শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে চেম্বার বিচারপতি আমানুরকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন ১ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন। একই সঙ্গে ১ জুলাই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার শুনানি হয়।আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ। অন্যদিকে, আমানুরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন মুনসুরুল হক চৌধুরী ও এম আতাউল গনি।পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ওই মামলায় আমানুরের জামিন স্থগিতের মেয়াদ আগামী সোমবার পর্যন্ত বাড়িয়েছেন আপিল বিভাগ। এতে আমানুর মুক্তি পাচ্ছেন না। এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলা হয়েছে। আদালত সোমবার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন রেখেছেন।টাঙ্গাইল সদরের বাঘিলের যুবলীগ নেতা শামীম ও মামুন ২০১২ সালের ১৬ জুলাই টাঙ্গাইল শহরে এসে নিখোঁজ হন। মামুনের বাবা এক বছর পর আদালতে হত্যা মামলা করেন। এই মামলার তিন আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়ে বলেন, সাংসদ আমানুরের নির্দেশনায় যুবলীগ নেতা শামীম ও মামুনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ওই দুজনের লাশ পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এ মামলায় গত বছরের ৩ মে আমানুরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি খুন হন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ। ওই হত্যা মামলায় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার হন সাংসদ আমানুর। এই মামলায় আমানুর ছাড়াও তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খানসহ ১৪ জন আসামি রয়েছেন। তাঁর বাকি তিন ভাই পলাতক।
আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন থেকে কী ফল মিলবে, তা নিয়ে অনেকের সংশয় আছে। আগের সম্মেলনগুলোতে উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দুনিয়াকে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিপদ মোকাবিলা বাবদ যে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণ না করায় এই সংশয়ের যৌক্তিকতা সামনে চলে আসে।ওই তহবিলের বাইরে যা-ও বরাদ্দ পাওয়া যায়, তার পেছনে নানা রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করে। যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, সে বেশি বরাদ্দ পাবে—এই সরল নিয়ম মেনে বরাদ্দ মেলে না। এর পেছনে তদবির, ‘ধরাধরি’, রাজনীতি—নানা কিছু কাজ করে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, জলবায়ু নিয়ে দেশীয় পরিসরেও একই অবস্থা চলছে। সংবাদমাধ্যমে এসেছে, দেশে এ মুহূর্তে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে খুলনা বিভাগের অবস্থান সবার ওপরে। সেই হিসাবে এই বিভাগে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়ার কথা। কিন্তু বরাদ্দ ও গৃহীত প্রকল্পের সংখ্যার দিক থেকে এই বিভাগ বেশ পিছিয়ে রয়েছে।খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের কচুবুনিয়া ও দাউনিয়াফাঁদ গ্রামের বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ে ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের দাবির মধ্যে রয়েছে, ভূমিহীনদের জন্য খাসজমির বন্দোবস্ত করা, বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা, নদীভাঙন রোধ করা, বৃক্ষ রোপণ করা, লবণসহিষ্ণু ফসল উৎপাদন, পানীয় জলের জন্য গভীর টিউবওয়েল স্থাপন করা ইত্যাদি। এই দুটি গ্রামের মতো ঝুঁকির মুখে রয়েছে খুলনা বিভাগের বেশ কিছু অঞ্চল। এর মধ্যে সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি এলাকায় এ ঝুঁকির মাত্রা ভয়াবহ।জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস থেকে পর্যাপ্ত অর্থায়ন না পাওয়ায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) গঠন করে সরকার। এই তহবিল থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য বিভাগভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ১৯৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুধু খুলনা বিভাগে ব্যয় হয়েছে ২৩৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা বিভাগভিত্তিক প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয়ের মাত্র ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এই তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত গৃহীত বিভাগভিত্তিক প্রকল্পের সংখ্যা ৬২৪। এর মধ্যে শুধু খুলনা বিভাগে গৃহীত প্রকল্পের সংখ্যা ৬০, যা বিভাগভিত্তিক গৃহীত মোট প্রকল্পের এক-দশমাংশের কম। টিআইবির অভিযোগ, জলবায়ু তহবিল দিয়ে অধিকাংশ প্রকল্পই নেওয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়।জলবায়ুর অর্থায়ন যৌক্তিকভাবেই হওয়া দরকার। যাদের প্রভাব বেশি, সেসব অঞ্চলে বেশি অর্থ যাবে; এটি কাম্য হতে পারে না। প্রয়োজনীয়তা অনুসারেই এসব অঞ্চলে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। অন্যথায় এ অঞ্চলের মানুষজনকে জলবায়ু দারিদ্র্যের ভয়াবহতা থেকে সরিয়ে আনা যাবে না।
রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার তিন বছর আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা কুপিয়ে ও গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করেন ২২ জনকে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল সারা দেশের মানুষ। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। হামলার আড়াই বছরের মাথায় অভিযোগপত্র জমা হয়েছে। শুরু হয়েছে বিচার।সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ২৭ কার্যদিবসে ৬০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। হত্যা ও জিম্মি দশার শুরুতে জঙ্গিদের মোকাবিলা করেছিলেন যে পুলিশ সদস্যরা কিংবা গোটা রাত হোলি আর্টিজান বেকারির যে কর্মীরা শৌচাগারে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন এবং জিম্মি দশায় পড়েছিলেন যে শারমিনা পারভিন কিংবা যাঁদের বাসায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পরিচয়ে ঘাঁটি গেড়েছিলেন জঙ্গিরা, তাঁরা আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম থেকে পাওয়া তথ্যের বাইরেও আদালতের কার্যক্রমে নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।জানা গিয়েছিল, জিম্মি দশার শুরুতে হোলি আর্টিজান বেকারির বাইরে থাকা পুলিশ ও ভেতরে থাকা জঙ্গিদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। নিহত হন পুলিশের দুই সদস্য বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার রবিউল করিম।তবে গত ১৮ জুন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল মো. বাদশা আদালতকে জানান, ভোরের দিকে যখন কমান্ডোরা অভিযান শুরু করেন, তখন শেষবারের মতো জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে গুলি ছোড়ে। ২ জুলাই সকালের অভিযানের আগে জঙ্গিদের কেউ আহত হয়েছেন, এমন কোনো তথ্যও ছিল অজানা। গত ২১ মে ভাটারা থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন আদালতকে বলেন, রাতেই পুলিশের গুলিতে নিবরাস ইসলাম আহত হন। রেস্তোরাঁকর্মী দিদার হোসেন গত ২৭ মে আদালতকে বলেন, শৌচাগারে দমবন্ধ হয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তাঁদের। ভোরের দিকে সন্ত্রাসীরা তাঁদের বের করে এনে দাঁড় করিয়ে দেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লাশের সামনে।হোলি আর্টিজান বেকারির শেফ সাইফুল চৌকিদার ও তাঁর সহযোগী শাওন যে বেকারির কর্মী ছিলেন, জঙ্গি নন, সে কথা সাক্ষ্য গ্রহণের চতুর্থ দিনেই আদালতকে জানান তাঁদের সহকর্মী মুন্না দেওয়ান। হত্যা ও জিম্মি দশার অবসানের পর সেনা সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছিল, একজন সন্দেহভাজনকে জীবিত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্প্লিন্টারবিদ্ধ শাওনই হয়তো সেই ব্যক্তি। আর সাইফুল চৌকিদারের লাশ পড়ে ছিল জঙ্গিদের সঙ্গে। ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে পায়ে চোট পেয়েছিলেন, তবু সহকর্মী শাওনের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়েছিলেন মুন্না দেওয়ান।জব্দ তালিকার অসংগতি প্রসঙ্গএই মামলায় রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে র‍্যাশ ও শরিফুল ইসলাম খালেদের পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। তিনি বারবারই এই উপসংহারে পৌঁছাতে চেয়েছেন যে হোলি আর্টিজান বেকারির ভেতরে যে মৃত্যু, তা বাইরে থেকে পুলিশের ছোড়া গুলির কারণে। এর বাইরে তিনি কমপক্ষে তিনটি বিষয়ে অসংগতির কথা তুলে ধরেন আদালতে।গুলশান থানায় মামলা করেছিলেন থানার উপপরিদর্শক রিপন কুমার দাস। এই মামলার প্রথম সাক্ষীও তিনি। অভিযোগপত্রে জব্দ তালিকায় তাঁর ভুলের কথা জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর। ভুলগুলো হলো, জব্দ তালিকায় পাঁচটি নাইন এমএম পিস্তল জব্দ করার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে দুটি পিস্তল ৭ দশমিক ৬২ ক্যালিবারের, বাকি দুটি ৯ এমএম ক্যালিবারের এবং একটি পিস্তলের হ্যামার নেই। তা ছাড়া ২৮টি গুলির মধ্যে দুটির পেছনে চিহ্ন আছে। একে-২২ বোরের মেশিনগান লেখা হয়েছে, হবে একে-২২ বোরের রাইফেল। একে ২২ বোর মেশিনগানের তাজা গুলির কথা বলা হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীর যুক্তি হলো, জব্দ তালিকা সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই।হোলি আর্টিজানে হামলার ৩ বছরজঙ্গি হামলা: ২০১৬ সালের ১ জুলাই অভিযোগপত্র জমা: ২০১৮ সালের ২৩ জুলাইবিচার শুরু: ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর ২৭ কার্যদিবসে ৬০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণমামলায় মোট সাক্ষী ২১১ জনআদালতের কার্যক্রমে নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছেতা ছাড়া সন্ত্রাসবিরোধী আইনের তদন্ত কর্মকর্তাকে সাক্ষীর কাছ থেকে লিখিতভাবে সাক্ষ্য নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁদের দু-একজন ছাড়া কেউই হাতে লিখে ঘটনার বর্ণনা দেননি। তাঁর চোখে ত্রুটি আছে আরও। যেমন এই আইনে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির কোনো সুযোগ নেই। এটি ২২ ও ২৩ ধারায় নেওয়ার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ জবানবন্দির ওপর লেখা রয়েছে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি।পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হোলি আর্টিজানের তদন্ত ছিল জটিল। তদন্ত অনেকটা মালা গাঁথার মতো। একটি সূত্রর সঙ্গে অপর একটি সূত্র গেঁথে গেঁথে উপসংহারে পৌঁছাতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো একটি ঘটনা ঘটার পর আসামি গ্রেপ্তার হন। সেখান থেকে বড় একটা দিশা পাওয়া যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মূল আসামিদের সবাই নিহত হন। তারপর বেশ কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার হন। তাঁদের দেওয়া সাক্ষ্য, তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া নথিপত্র বিশ্লেষণ করে অভিযোগপত্রটি চূড়ান্ত হয়। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে অভিযোগপত্র নিয়ে আমি পুরো সন্তুষ্ট নই। মূল আসামিদের জীবিত ধরতে পারলে ভালো হতো।’গত বছরের ২৩ জুলাই পুলিশ আদালতে হোলি আর্টিজান হামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়। এ ঘটনায় ২১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, যাঁদের মধ্যে পাঁচজন ওই দিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আটজন পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হন। এ ছাড়া ওই ঘটনায় ৭৫টি আলামত পাওয়া গেছে। এ মামলায় মোট সাক্ষী ২১১ জন। এর মধ্যে ১৪৯ জন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। এর বাইরে বিভিন্ন সংস্থার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, ফরেনসিক টেস্ট যাঁরা করেছেন, তাঁদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। জঙ্গি হামলার এই বিচারিক প্রক্রিয়ার দিকে নজর আছে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের।আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সব বিধিবিধান মেনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হোলি বেকারিতে জঙ্গি হামলার বিচার শুরু হয়েছে। এই মামলা সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ঘোষণা দিয়েছেন। সেদিক থেকে এই মামলা সরকারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই কতিপয় উগ্রপন্থী সশস্ত্র তরুণ–যুবকের রাতব্যাপী নৃশংসতায় দেশি–বিদেশি যে ২২ জন মানুষ নিহত হয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আবারও অনুভব করছি যে আমাদের স্বদেশ ও সারা পৃথিবী থেকে সব ধরনের সন্ত্রাস ও সহিংসতার অবসান ঘটানো প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এমন বিভীষিকার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অতি উগ্র ভাবাদর্শ। বাংলাদেশে সেই ভাবাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে প্রধানত তরুণসমাজকে সহিংস পথে আকৃষ্ট করার সুসংগঠিত তৎপরতার সবচেয়ে ভয়ংকর ফল আমরা দেখতে পেয়েছি সেদিন। যদিও এই অপরাধ প্রচলিত ফৌজদারি অপরাধগুলোর কোনোটার মতোই নয়, তবু এর আইনানুগ বিচার সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি। এ হামলায় ২১ জনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইবু্যনালে এর বিচার চলছে। পাঁচ হামলাকারী ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর অভিযানে নিহত হয়েছেন, পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন ১৩ জন। ৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা কারারুদ্ধ আছেন। এ মামলায় ২১১ ব্যক্তিকে সাক্ষী করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৬০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, অন্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ অব্যাহত আছে। আমরা আশা করব, অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ দ্রুত শেষ হবে এবং আসামিরা আইনানুগভাবে শাস্তি পাবেন।হামলার বিচার সম্পন্ন করার পাশাপাশি দেশে জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপারেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সর্বশেষ পরিস্থিতি কিছুটা দুশ্চিন্তার উদ্রেক করে। দেশি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোগাযোগের বিষয়টি সুবিদিত; সেই আইএস ইরাক–সিরিয়ায় পর্যুদস্ত হওয়ার পর তার সদস্য জঙ্গিরা নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছে, যাচ্ছে, যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং আইএস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সক্রিয় তাদের কর্মীদের নিজ নিজ দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য বিশেষভাবে ইন্টারেনেটের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছে, আইএসের প্রধান নেতা আল–বাগদাদি এক ভিডিও বার্তায় তাঁর অনুসারীদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার খবর জানিয়েছেন—এসব খবর বাংলাদেশের জন্যও কম উদ্বেগের বিষয় নয়। কারণ, আইএসের অনুসারীরা যেসব দেশে বেশি সক্রিয়, সেগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের নামও উচ্চারিত হয়। তা ছাড়া ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আইএসের তৎপরতা বৃদ্ধির আলামত স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। জুনের মাঝামাঝি সময়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, ‘ইসলামিক স্টেট কামস ফর সাউথ এশিয়া’, তারা পাকিস্তান ও ভারতে পৃথক প্রাদেশিক সংগঠন খোলার ঘোষণা দিয়েছে।বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, এ দেশে এখন জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, এখন তাদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। কিন্তু গত ২৯ এপ্রিল ও ২৬ মে ঢাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে দুটি ছোটখাটো বোমা হামলার খবর পুলিশ সূত্রেই জানা গেছে। দুটি হামলারই দায় স্বীকার করেছে আইএস। এ থেকে এ দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর গোপন তৎপরতার কিছু আভাস অবশ্যই মেলে; তবে তা কতটা ব্যাপক ও শক্তিধর সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো প্রয়োজন। আমাদের বিশ্বাস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক আছে।আমরা জঙ্গি তৎপরতার অবসান চাই। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক ইত্যাদি কোনো ভাবাদর্শই যেন এমন উগ্র ও সহিংস রূপে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বিপথগামী করে নিষ্ঠুর দানব ও মানবতার শত্রুতে রূপান্তরিত করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে; সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে সব ধরনের উগ্রকরণ বা র‍্যাডিক্যালাইজেশনের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় গত শনিবার রাতে দ্বাদশ শ্রেণির এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ ব্যাপারীর ছেলে মাসুদ ব্যাপারীকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনাটি ঘটে শনিবার সন্ধ্যায় জাজিরা পৌর এলাকার একটি মহল্লায়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী গতকাল রোববার দুপুরে জাজিরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন।মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ বলেছে, জাজিরার একটি গ্রামের বাসিন্দা ওই কলেজছাত্রী পড়ালেখার পাশাপাশি একটি রোগনির্ণয়কেন্দ্রে কাজ করেন। শনিবার বিকেলে মাসুদ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ওই ছাত্রীকে বাড়িতে আসতে বলেন। ছাত্রীটি রোগনির্ণয়কেন্দ্রে কাজ শেষে সন্ধ্যা সাতটার দিকে মাসুদের বাড়িতে যান। সেখানে মাসুদ ছাড়া অন্য কাউকে না দেখে তিনি ফিরে আসার চেষ্টা করেন। এ সময় মাসুদ তাঁকে ঘরে আটকে দুই দফা ধর্ষণ করেন এবং পরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি পালিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে চিৎকার দেন। তখন স্থানীয় কয়েকজন নারী তাঁকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা এসে রাত ১০টার দিকে তাঁকে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি নিয়ে যান। এরপর মুলনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল আমীন হাওলাদারের সহায়তায় ছাত্রী ও তাঁর পরিবার গতকাল দুপুরে থানায় গিয়ে মামলা করেন।নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী বলেন, ‘ধর্ষণের পর মাসুদ আমার শ্বাসনালি চেপে ধরে হত্যার চেষ্টা করে। আমি অচেতন হয়ে পড়লে সে বাথরুমে যায়। কিছুক্ষণ পর চেতনা ফিরলে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে চিৎকার করি।’ছাত্রীর বাবা বলেন, তাঁরা গরিব মানুষ। মেয়েটা খণ্ডকালীন কাজ করে পড়ালেখার খরচ জোগায়। মাসুদ এভাবে তাঁর সর্বনাশ করবেন তা বুঝতে পারেননি। তাঁরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে থানায় না গিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় থানায় যান।জাজিরা থানাহাজতে থাকা মাসুদ ব্যাপারী বলেন, পারিবারিক সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য শনিবার সন্ধ্যায় ওই ছাত্রী মাকে নিয়ে তাঁর কাছে আসেন। কাজ শেষে তাঁরা সন্ধ্যার পর তাঁর বাসা থেকে চলে যান। ধর্ষণের অভিযোগ সঠিক নয়। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া ও জাজিরা সার্কেল) কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় মাসুদকে শনিবার রাতে আটক করা হয়। কিন্তু নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শনিবার রাতে পুলিশ দুই দফা তাঁদের বাড়ি গিয়ে কাউকে পায়নি। যেকোনো কারণে তাঁরা বাড়ির বাইরে ছিলেন। মামলা করতে ভয় পাচ্ছিলেন তাঁরা। ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় পুলিশ তাঁদের খুঁজে বের করে। এরপর ওই ছাত্রী মাসুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।কামরুল হাসান বলেন, গতকাল শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে।