content
stringlengths
1
63.8k
অনী মণ্ডল স্মৃতি ক্রিকেটে গতকাল বলারদিয়ার ক্রিকেট একাদশ (১৩৩/৭) ৩ উইকেটে অগ্রগামী ক্রিকেট একাদশকে (১২৭/৯) হারিয়েছে।—
মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (নাসাকা) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মধ্যে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠক গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কক্সবাজার সৈকতের বিজিবি রেস্ট হাউসে অনুষ্ঠিত হয়েছে।বেলা তিনটা পর্যন্ত চলা ওই বৈঠকে মিয়ানমার সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে পুঁতে রাখা মাইন অনুসন্ধানে দুই দেশের বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনা, চোরাচালান ও মাদক পাচার রোধ, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ, কারাবন্দীদের হস্তান্তর এবং টেকনাফ স্থলবন্দরের মাধ্যমে দুই দেশের সীমান্ত বাণিজ্য গতিশীল করার ব্যাপারে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।বৈঠকে বাংলাদেশের ১৪ সদস্য প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন নবগঠিত বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল নজরুল ইসলাম। অপর দিকে মিয়ানমারের ১৯ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের নাসাকার মংডু জোনের পরিচালক কর্নেল ইউ অং নাইং।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে বিজিবি কর্মকর্তারা বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে মাইনসহ বিস্ফোরক দ্রব্য পুঁতে রাখা হয়েছে। এসব মাইন বিস্ফোরণের ফলে বাংলাদেশিরা আহত হচ্ছে। তাই এসব মাইন অপসারণের জন্য উপস্থিত নাসাকা কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।জবাবে নাসাকা কর্মকর্তা সীমান্তে মাইন পুঁতে রাখার কথা অস্বীকার করে বলেন, সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে তারা (মিয়ানমার) কোনো মাইন পুঁতেনি।এরপর দুই পক্ষের সমঝোতায় মিয়ানমার সীমান্তে পুঁতে রাখা মাইন অনুসন্ধান এবং অপসারণের জন্য দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে যৌথ সমীক্ষা চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে প্রেসব্রিফিংয়ে কর্নেল নজরুল ইসলাম বলেন, নাসাকার সঙ্গে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত চোরাচালান ও মাদক পাচার রোধ, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধসহ নো ম্যান্স ল্যান্ডে মাইন পুঁতে রাখার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
খ্যাতিমান স্প্যানিশ চিত্রকর এল গ্রেকোর চিত্রকর্ম ‘সেন্ট ডোমিনিক ইন প্রেয়ার’ লন্ডনে এক নিলামে রেকর্ড ৯১ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ পাউন্ডে (এক কোটি ৪০ লাখ ডলার) বিক্রি হয়েছে।নিলাম হাউস সাদাবি’জ-এর ওল্ড মাস্টার পেইন্টিং বিভাগের প্রধান অ্যালেক্স বেল জানান, গ্রেকোর এই চিত্রকর্ম নিলামে বিক্রি হওয়া দুটি চিত্রকর্মের একটি। তিনি বলেন, এটি কিনতে দুটি পক্ষের মধ্যে তুমুল দর-কষাকষি হয়।চার শ বছর আগে আঁকা সেন্ট ডোমিনিক ইন প্রেয়ার চিত্রকর্মটিতে দেখা যায়, অন্ধকার আকাশের নিচে ত্রয়োদশ শতাব্দীর খ্রিষ্টীয় সন্ত ডোমিনিক ক্রুশের পাশে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করছেন।লন্ডনের ওই নিলামে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেকর্ডসংখ্যক ক্রেতা অংশ নেন। আর বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় তিন কোটি ৫০ লাখ ৪৮ হাজার পাউন্ড। এএফপি।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর জাঙ্গালিয়া এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে মো. ছাইফ উল্যাহ (২৬) নামের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। ছাইফ উল্যাহ উপজেলার চর লরেন্স এলাকার মারফত উল্যাহর ছেলে।পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগে ছাইফ উল্যাহ পরিবারের মতামত না নিয়ে নিজের পছন্দ অনুযায়ী চর জাঙ্গালিয়া এলাকার আজাদ উদ্দিনের মেয়ে লাইজু আক্তারকে (১৮) বিয়ে করেন।গত বুধবার শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে ছাইফ উল্যাহর বাড়িতে মৌসুমি ফল (আম-কাঁঠাল) পাঠালে তা ফেরত দেওয়া হয়। এ নিয়ে বুধবার রাতে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ছাইফ উল্যাহর কথা-কাটাকাটি হয়। পরে গতকাল সকালে শ্বশুরের তালাবদ্ধ বসতঘরের বাইরে চালার সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ দেখা যায়। ওই সময় ছাইফ উল্যাহর স্ত্রী এবং শ্বশুর-শাশুড়িকে পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় ছাইফ উল্যাহর লাশটি উদ্ধার করে।
দুই দফা দাবিতে বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র পরিষদের (বাকাছাপ) চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখার শিক্ষার্থীরা গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেন।বাংলাদেশ ডিপ্লোমা প্রকৌশল পেশাজীবী-ছাত্র-শিক্ষক সংগ্রাম পরিষদ-ঘোষিত নয় দিনব্যাপী আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে তাঁরা এসব কর্মসূচি পালন করেন।তাঁদের দাবি দুটি হলো ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বেতনবৈষম্য নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং দুটি আন্তমন্ত্রণালয়ের সুপারিশ বাস্তবায়ন।বাকাছাপের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখার সাধারণ সম্পাদক শারমিন মুনমুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দ্রুত দুই দফার বাস্তবায়ন চাই। ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাদের আন্দোলন করেছি, দাবিদাওয়ার পক্ষে মতামত তুলে ধরেছি। আগামী ২২ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। এর পরও দাবি আদায় না হলে সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশনা মেনে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’গতকাল দুপুরে একই সময়ে নগরের হালিশহর মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও নাসিরাবাদ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস এলাকায় মিছিল করেন। মহিলা ইনস্টিটিউটের সমাবেশে বক্তব্য দেন আইরিন শেখ, ফৌজিয়া সুলতানা, শিক্ষক সমিতির সভাপতি মামুনুর রশীদ এবং রুহুল আমিন, ফারজানা মল্লিক, রুমানা পারভীন প্রমুখ। নাসিরাবাদ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সমাবেশে বক্তব্য দেন মো. এমরান, রায়হানুল কবীর, আমিনুল ইসলাম, মো. হেদায়েত উল্লাহ প্রমুখ।
আমার বই পড়া শুরু হয় কবিতা দিয়ে। কাজী নজরুল ইসলাম আর সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা কী ভীষণ ভালো লাগত! সেই থেকে শুরু। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছি। তারপর তো কত বই-ই পড়েছি। কলেজজীবনে বার্ট্রান্ড রাসেল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই খুব ভালো লাগত। চট্টগ্রাম কলেজের পাঠাগার খুব সমৃদ্ধ ছিল। সেখানে গিয়ে বই পড়তাম। সেই সঙ্গে ইউএসএ ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের পাঠাগারেরও দ্বারস্থ হয়েছি বিশ্বসাহিত্যের বই পড়ার জন্য। বলতে গেলে, আমার দিন কেটেছে বইয়ের পাতায় পাতায়! তারও বেশ কিছুদিন পর—জানি না কেমন করে—আমার আগ্রহ তৈরি হলো উপন্যাসের প্রতি। পড়তে শুরু করেছি বিভিন্ন লেখকের উপন্যাস। তারও অবশ্য একটা কারণ আছে। সে সময় আমি পূর্ব বাংলার উপন্যাস নামে একটি বই লিখি। আর বই লেখার কারণে তখনকার দিনে পূর্ব বাংলায় যাঁরা উপন্যাস লিখেছেন, তাঁদের রচনাগুলো পড়তে শুরু করি। আমরা বাংলাদেশের জাতীয় গ্রন্থনীতি প্রণয়ন করেছিলাম। বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়ার এটিও একটি কারণ। তারপর দিনে দিনে সময়ের আবর্তে কত শত বিষয় এসে জড়ো হয়েছে আমার আগ্রহের তালিকায়। তাই প্রিয় লেখকের তালিকাও হয়েছে বেশ লম্বা। বিশ্বসাহিত্যে আমার প্রিয় লেখকের নাম বলতে গেলে লিও টলস্টয়ের নাম বলতে হবে সবার আগে। তাঁর আনা কারেনিনা ও ওয়ার অ্যান্ড পিস আমার পছন্দের বই। শেক্সপিয়ারের লেখাও বিশেষভাবে মুগ্ধ করে আমাকে।বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনা বেশ ভালো লাগে। এখনো আমার টেবিলে দুটো বই আছে। পড়ছি সেগুলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রক্তকরবী ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুলনাচের ইতিকথা। আগেও এই বই দুটো পড়েছি। কিন্তু সময়ের পার্থক্যে মানুষটা পাল্টে গেছে। আগে ছাত্র হিসেবে পড়েছি। আর এখন ছাত্রদের পড়াতে হয়, তাই শিক্ষক হিসেবে পড়ছি। নতুন করে ভালো লাগছে। বারবারা ওয়ার্ড এর ফাইভ আইডিয়াস দ্যাট চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড বিশেষভাবে ভালো লেগেছে। এটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর একটি লেকচারের বিষয় ছিল। এখানে দেখানো হয়েছে ভাবাদর্শগুলো পৃথিবীকে কীভাবে পরিবর্তন করেছে। এখন যেমন মুক্তবাজার অর্থনীতি পৃথিবীকে পরিবর্তিত করছে, তেমনি একটা সময় সমাজতান্ত্রিক দর্শনও পৃথিবীকে পরিবর্তিত করেছে। বইটিতে আন্তর্জাতিকতাবাদ, সমাজতন্ত্রসহ নানা দর্শন নিয়ে আলোচনা রয়েছে। আরেকটি বই—রবার্ট বি ডাউনসের বুকস দ্যাট চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড। এখানে বিশ্ববিখ্যাত ৫০টি বই এবং সেগুলোর লেখক সম্পর্কে আলোচনা করেছেন লেখক। বিষয়ের দিক থেকে বইটির বৈচিত্র্য রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন করতে এই বইগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, বই মানুষের চিন্তার জগৎকে এবং সঙ্গে সঙ্গে পারিপার্শ্বিক জগৎকে পরিবর্তন করেছে। সেই সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে মানুষের জিজ্ঞাসা, কথা ও প্রকৃতি।ভাষাবিজ্ঞানে পড়তে গিয়ে সার্বিকভাবে মানুষের ভাষার প্রতি আমার আগ্রহ রয়েছে। বাংলা ভাষার প্রতি হূদয়ের গভীরে একধরনের মমতা তো কাজ করেই। এ কারণে আমার ঘরে রাজ্যের ভাষাবিজ্ঞানের বই রয়েছে। ভাষাবিজ্ঞানের ওপর আমার আগ্রহের বিষয় বাক্যতত্ত্বের ওপর। এখন আমার ভাষাবিজ্ঞানের বিভিন্ন বই ভালো লাগে। সেই তালিকায় যে বইটি খুব মুগ্ধ করেছে আমায়, সেটি উইম্যান, ফায়ার অ্যান্ড ডেনজারাস থিংস। লেখক জর্জ লেকঅফ। নামটি শুনলেই ভ্রুকুটি করবেন অনেক পাঠক। আসলে এটি অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ওপর লেখা। সেখানে এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে। কিন্তু মূলত বইটি সিমেনটিক্সের বই। এ ছাড়া নোয়াম চমস্কির ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড মাইন্ডও আমার প্রিয় বইয়ের একটি। আসলে এত এত বই রয়েছে, পড়ে শেষ করা যায় না। তাই যেটুকু সময় পাই, ডুবে থাকি বইয়ের রাজ্যেই।অনুলিখন: সুচিত্রা সরকার
খাদ্য সুরক্ষা অধ্যাদেশ কংগ্রেসকে প্রবল সমালোচনার মুখে ফেলে দিল। সেই সঙ্গে উসকে দিল আগাম নির্বাচনের জল্পনা। সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে খাদ্য সুরক্ষা বিল পেশ অথবা অধ্যাদেশ জারি, এ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় শুরু থেকেই মতানৈক্য ছিল। মতের সেই অমিলকে গুরুত্ব না দিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর থেকেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। বিজেপি তো বটেই, চার বাম দল, সমাজবাদী পার্টিসহ জনতা দল (সংযুক্ত) পর্যন্ত সংসদকে এড়িয়ে অধ্যাদেশ জারির সমালোচনায় মুখর। ধীরে অথচ নিশ্চিতভাবে কংগ্রেস আগাম নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে কি না, অধ্যাদেশ জারির সঙ্গে সঙ্গে সেই জল্পনাও শুরু হয়ে গেছে। কংগ্রেস অবশ্য আগাম নির্বাচনের জল্পনাকে আমল দিতে চায়নি। মন্ত্রিসভার সদস্য মনীশ তিওয়ারি বলেছেন, বিরোধীরা দিনের পর দিন সংসদ অচল রাখায় সরকারকে বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এর সঙ্গে ভোটের কোনো সম্পর্ক নেই। খাদ্য সুরক্ষা বিলের লক্ষ্য দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলের ৬৭ শতাংশ হতদরিদ্র মানুষকে বছরভর নামমাত্র মূল্যে (তিন রুপি কেজি চাল, দুই রুপি কেজি গম ও এক রুপি কেজি বজরা) খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। কার্যকর করা সম্ভব নয়, এ যুক্তি দিয়েএকমাত্র সমাজবাদী পার্টি এই বিলের সরাসরি বিরোধিতা করে আসছে। অন্যরা সরাসরি বিলের বিরোধিতা না করলেও সংসদকে এড়িয়ে অধ্যাদেশ জারিকে সমর্থন করতে পারছে না। বিজেপির সভাপতির প্রশ্ন, ‘এত তাড়াহুড়ো কেন? আর কদিন পরেই তো সংসদের অধিবেশন বসছে। আসলেঅধ্যাদেশ জারি কংগ্রেসের ঘর গোছানোর সার্বিক ছকেরই একটা অঙ্গ। ডিএমকের প্রার্থী কানিমোড়িকে সমর্থন, ঝাড়খন্ডে জেএমএমের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত ইত্যাদির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট, কংগ্রেস নিজেদের ভোটের জন্য তৈরি করছে।
বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি চট্টগ্রামের সদস্যরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দফা দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন।চট্টগ্রাম জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীরা পদবি পরিবর্তন এবং বেতন বৈষম্য দূর করার দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করেন।বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি চট্টগ্রাম জেলা ও বিভাগীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং দাবি বাস্তবায়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ইউনুছ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুই বছর আগে আমাদের পদবি পরিবর্তনের বিষয়টি অনুমোদন দেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
সমুদ্রপথে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারে টেকনাফ ও সদরে পৃথক অভিযান চালিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‌্যাব সদস্যরা ২৩ ব্যক্তিকে আটক করেছে।টেকনাফ ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জাহিদ হাসান বলেন, গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে বিজিবির সদস্যরা উপজেলার শাহপরীর দ্বীপে অভিযান চালিয়ে ১৩ ব্যক্তিকে আটক করেন। দুপুরে তাদের টেকনাফ থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। মালয়েশিয়া যাত্রার জন্য কাঠের ট্রলারে ওঠার সময় তাদের আটক করা হয়। দালালদের ধরার চেষ্টা চলছে।র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর সরওয়ার-ই আলম বলেন, একই সময়ে কক্সবাজার শহরের এস এ গেস্ট হাউসে অভিযান চালিয়ে ১০ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
ভারতের হিমালয় পাদদেশের সিকিম রাজ্য তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। গত বুধবার রাজ্য সচিবালয় মহাকরণে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের এই আপত্তির কথা জানান। সেচমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে সিকিম সরকার তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে অন্তত ১০টি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো তৈরি হলে পশ্চিমবঙ্গ একদিকে যেমন শুকনো মৌসুমে চাষের পানি থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি ছাড়া হলে বন্যার আশঙ্কায় থাকবে।রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, রাজ্য সরকারের এই আপত্তির কথা তিনি কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রককে চিঠি দিয়ে জানাবেন। কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে তিনি কথাও বলবেন।তিস্তা নদীর ওপর ১০টি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করার প্রকল্প রয়েছে সিকিম সরকারের। ইতিমধ্যে তিনটি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এগুলো হলো রাম্ভী, পূর্ব সিকিম ও কালীঝোড়া প্রকল্প। আরও একটির কাজ চলছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এতগুলো প্রকল্প হলে পশ্চিমবঙ্গে তিস্তার পানি পাওয়া যাবে না। সেচমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তার পানি দিয়ে দ্বিচারিতা করছে। একদিকে তিস্তার পানি বণ্টনের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করছে, অন্যদিকে সিকিম সরকারকে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির অনুমতি দিচ্ছে। ফলে, কার্যত তিস্তার পানি থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ।
চট্টগ্রামে অস্ত্র আইনে করা মামলায় দুই আসামিকে ভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১১-এর বিচারক ও পঞ্চম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ এস কে এম তোফায়েল হাসান দুই আসামির উপস্থিতিতে এ রায় দেন।দণ্ডিত দুই আসামি হলেন বোয়ালখালী উপজেলার উত্তর ভূর্ষি গ্রামের বাসিন্দা সুরঞ্জিত দত্ত এবং নগরের ঘাটফরহাদবেগের বাসিন্দা মোহাম্মদ সুমন। সুরঞ্জিতকে ১০ বছর এবং সুমনকে সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বেআইনিভাবে অস্ত্র নিজেদের হেফাজতে রাখার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়।আদালত সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরের টেরিবাজার এলাকা থেকে একটি বিদেশি বন্দুক, একটি ছোরাসহ সুরঞ্জিত ও সুমনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাঁরা টেরিবাজার এলাকায় অপেক্ষা করছিলেন বলে তদন্তে সূত্রে জানা গেছে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার চীন সফরে গেছেন। ২০০৬ সালের পর এই প্রথম ভারতের কোনো প্রতিরক্ষামন্ত্রী সে দেশে গেলেন। অ্যান্টনির এই সফরে দুই দেশের সীমান্তে শান্তি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর প্রতিবেশী চীন ও ভারত পরস্পরের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট হয়েছে।ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এমন একটা সময়ে চীন সফরে গেলেন, যখন ইতিমধ্যে পাঁচ দিনের সফরে সে দেশে রয়েছেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। গত মে মাসের নির্বাচনের পর নওয়াজের এটাই প্রথম বিদেশ সফর। তিন দিনের এ সফরে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল চাং ওয়ানকুয়ানসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন অ্যান্টনি। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সীমান্তে শান্তি এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তাসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দুই দেশের নেতারা আলোচনা করবেন।’ গত মে মাসে হিমালয় অঞ্চলের বিতর্কিত সীমানায় সামরিক তৎপরতা নিয়ে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র দুটির মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দিল্লির অভিযোগ, চীনা সেনারা ভারতের দাবি করা সীমানার প্রায় ২০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ নিয়ে তিন সপ্তাহ ধরে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা ও উভয় পক্ষ থেকে সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে সেই অচলাবস্থার অবসান ঘটে। এএফপি।
একক-দ্বৈত চ্যাম্পিয়নদের নিয়েই মাতামাতি থাকে বেশি, মিশ্র দ্বৈতে চ্যাম্পিয়নদের খবর কজনই বা রাখেন! একটা তথ্য তাই অনেকের জন্য অপার বিস্ময় হয়েই আসবে। জানেন কি, উইম্বলডনের মিশ্র দ্বৈতে একবার শিরোপা জিতেছিলেন এক স্বামী-স্ত্রী জুটি! ১৯২৬ সালের শুরুর দিকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন দুই ব্রিটিশ টেনিস তারকা লেসলি ও ক্যাথলিন গডফ্রি। ওই বছরই দুজন জুটি বেঁধে জিতলেন উইম্বলডনের মিশ্র দ্বৈত! বিয়েটা ক্যাথলিনের জন্য পরম সৌভাগ্য বয়েই এনেছিল। সেবার উইম্বলডনের মহিলা এককও জিতেছিলেন তিনি। মহিলা দ্বৈতের ফাইনালেও উঠেছিলেন, তবে হেরে যাওয়ায় হাতছাড়া হয়ে যায় অনন্য ত্রিমুকুট!
চট্টগ্রাম শহরতলির আকবর শাহ থানাধীন আকবর শাহ মাজারের অদূরে ছুরিকাঘাতে একজন গ্যারেজমালিক খুন হয়েছেন। গত বুধবার দিবাগত গভীর রাতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।নিহত গ্যারেজমালিকের নাম কামাল হোসেন ওরফে বাদশা (৩২)। তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। এ ঘটনায় মোশাররফ হোসেন ওরফে জিকুকে (৩৮) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, বুধবার দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা সেমিপাকা গ্যারেজের টিনের চালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। গ্যারেজের ভেতরেই ঘুমাচ্ছিলেন কামাল হোসেন। এরপর দুর্বৃত্তরা তাঁর শরীরে ছোরার তিনটি ঘা দেন। রক্তক্ষরণেই কামাল মারা যান।
সম্প্রতি ইন্টারনেট নামের আশ্চর্য জাদুর প্রদীপের কল্যাণে ছড়িয়ে পড়েছে আইরিস হ্যামশো নামের এক শিল্পীর আঁকা ছবি। খুব সাধারণ রং-তুলির আঁচড়ে শিল্পীর বিমূর্ত ভাবনার প্রকাশ দেখে জাঁদরেল সমালোচকেরা পর্যন্ত বাহবা দিচ্ছেন। এক ঝলক সেই শিল্পীর আঁকা ছবি দেখেই বিমোহিত হচ্ছেন সাধারণ শিল্পপ্রেমীরাও। সম্প্রতি তার দুটি ছবি বিক্রি হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকায়। নতুন, অচেনা-অখ্যাত কোনো শিল্পীর জন্য অঙ্কটা অবশ্যই অনেক বড়। তার ছবির প্রিন্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকায়।এরপর খোঁজ নিতে গিয়ে চমকে উঠে জানা যাচ্ছে, শিল্পীটির বয়স মাত্র তিন বছর। এর চেয়েও বিস্ময়কর তথ্য হলো, শিশুটি অটিজমে আক্রান্ত, আমাদের চেনা অভিধানে খুব রূঢ় একটি শব্দ আছে এ ধরনের শিশুদের বোঝাতে—বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।আরাবেলা কার্টার-জনসন ও পিটার জন-হ্যামশো যখন জানতে পারলেন তাঁদের মেয়ে অটিজমে আক্রান্ত; আর দশটা মা-বাবার মতো ভেঙে পড়েছিলেন। অন্য শিশুদের সঙ্গে আইরিস মিশতে পারে না। কারণ, এটি তাকে বিচলিত করে, যন্ত্রণাবিদ্ধ করে। অচেনা পৃথিবী পদে পদে তাকে ভয় আর আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে। হ্যামশো দম্পতি ভাগ্যবান। কারণ, তাঁরা দ্রুতই এর সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। রং-তুলি এনে দিলেই আইরিস শান্ত। এটাই যেন তার সবচেয়ে চেনা জগৎ। ডাঙায় ছটফট করতে থাকা মাছকে জলে আবার ছেড়ে দিলে যেমন হয়, আইরিসের জন্য রং-তুলি আর ছবি আঁকার কাগজ ঠিক তেমনটাই।ছবি আঁকার তার এই প্রতিভা আবিষ্কৃত হয়েছে হুট করে। আরাবেলা বলেছেন, ‘একদিন আমি কিছু রেখামানব আঁকলাম। এটা দেখে ও খুব মজা পেল। এই দেখে আমার মা ওর জন্য একটা ইজেল (ছবি আঁকার কাঠের ফ্রেম) এনে দিলেন। আমরা তাতে ছবি আঁকতে শুরু করলাম। আইরিস ব্রাশ দিয়ে একটা টান মারল। কিন্তু রংগুলো গড়িয়ে নিচের দিকে পড়ে গেল। এই না দেখে ও রাগে-কান্নায় ফেটে পড়ল। আমি সমস্যাটা বুঝতে পারলাম। এটা আসলে রঙের সমস্যা নয়, সমস্যা হলো ও তুলি দিয়ে রংটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে ইজেলে কাগজটা খাড়া করে রাখার বদলে আমরা সেটা টেবিলে শুইয়ে রাখলাম, যেন সে পুরোটা রং দিয়ে ভরিয়ে ফেলতে পারে। এবং দেখে মনে হলো, কী করতে হবে সেটা যেন ও সহজাতভাবেই বুঝতে পারছে।’এভাবেই শিল্পী হয়ে ওঠা আইরিসের। এভাবেই ইজেলের বদলে টেবিলে কাগজ রেখেই ছবি আঁকে সে। অনেক সময় ঝানু শিল্পীর মতো ব্রাশের পাশাপাশি ব্যবহার করে স্পঞ্জ, কাঠি এমনকি প্লাস্টিকের কাঁটা চামচও। দিনে পাঁচ ঘণ্টার মতো ছবি আঁকার পেছনে ব্যয় করে সে। তবে শুধু ছবি আঁকার মধ্যে নিজের জগৎটা যেন তার আটকে না যায়, সেদিকেও সচেতন তার মা-বাবা। অন্যান্য বিষয়েও মনোযোগী করে তোলার চেষ্টা করছেন তাঁরা।গত চার মাসে ৩৫টি ছবি এঁকেছে আইরিস। তাঁর আঁকা ছবিগুলো প্রথম দিকে চেনাজানাদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে দেয়। এরপর আরাবেলা যখন বুঝতে পারেন তাঁর মেয়ের মধ্যে সত্যিই বিশেষ এক প্রতিভা আছে, তিনি ইন্টারনেটের সাহায্য নেন। ফেসবুকে পোস্ট করেন মেয়ের আঁকা ছবি। বানান বিশেষ এক ওয়েবসাইটও। এই কয়েক দিনের মধ্যে যে সাইটে ১৩০টি দেশ থেকে এক লাখের মতো মানুষ দেখেছে আইরিসের আঁকা ছবি। আগামী নভেম্বরে তার ছবিগুলো নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর পরিকল্পনা চলছে। নিজের আঁকা ছবি দিয়ে শুধু নিজের চিকিৎসা ব্যয়ের অনেকটাই আইরিস পূরণ করছে না, এমনও পরিকল্পনা আছে, এর থেকে ভালো পরিমাণ টাকা উঠে এলে তা দিয়ে গঠন করা হবে বিশেষ তহবিল। রাজীব হাসান, ডেইল মেইল অবলম্বনে
সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সাগর উপকূলে পানিতে ভেসে আসা অজ্ঞাত (৩৫) যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামিউল আলম বলেন, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের সাগর উপকূলে স্থানীয় জেলেরা যুবকটির লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পরে সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম হালদার লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
ফেনীতে পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত দুটি দোকানে অভিযান চালিয়ে এক বছর আগের বেশ কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ সেমাই ধ্বংস এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে গড়ে ওঠা বেশ কটি অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়।ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মো. মহসিন মৃধা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের ইসলামপুর রোডের দুটি দোকান মেসার্স ভূঁঞা অ্যান্ড সন্স ও উৎসব ট্রেডার্সে অভিযান চালিয়ে এক বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ ১৫ বস্তা সেমাই উদ্ধার করে ধ্বংস করা হয়।
ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যে মাওবাদীরা এবার দলে বালক বা কিশোরদের অন্তর্ভুক্ত করা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বস্তার জেলার স্কুলপড়ুয়া ছাত্রদের দলে ভেড়ানো শুরু করেছে তারা। এসব কিশোর বা বালককে নিয়ে মাওবাদীরা গঠন করেছে ‘বাল অ্যাকশন টিম’। তথ্য সংগ্রহ, বার্তা বহনসহ অভিযানের বিভিন্ন কাজে অংশ নিচ্ছে ওই বালকেরা। মাওবাদীরা তাদের অধীনে থাকা বাল সংঘ ও ছাত্র সংঘের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করেছে বাল অ্যাকশন টিমে। ছত্তিশগড়ের নকশাল দমন শাখার অতিরিক্ত মহাপরিচালক আর কে ভিজ বলেন, জীবনের ঝুঁকি আছে—এমন কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে ওই বালকদের। কলকাতা প্রতিনিধি।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১১৮টি বহুতল ভবন অপসারণের নির্দেশ দেওয়ার পর ভবন রক্ষায় মালিকেরা নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেকেই পুরোনো ভবন সংস্কার ও চুনকাম করে নতুন হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।পৌরসভার নগর পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলেই ভৈরব বাণিজ্যিক নগর ও বন্দর হিসেবে গড়ে ওঠে। সে সময় এখানে অনেক উঁচু ভবন নির্মাণ করা হয়। এর অনেকগুলোই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সাভারে রানা প্লাজা ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার কিছুদিন পর ভৈরব পৌরসভা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করতে তৎপরতা শুরু করে। এ সময় প্রায় ২০০ ভবনের তালিকা তৈরি করা হয়। ওই তালিকা থেকে ১১৮টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে মেয়র মো. শাহিন মালিকদের চিঠি দেন।চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চিঠি প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে ভবন অপসারণ করতে হবে অথবা ভবন পরিদর্শনের পর বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের করা সুপারিশ পৌর কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। অন্যথায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভবন ভেঙে ফেলা হবে। সে ক্ষেত্রে ভবন ভাঙার ব্যয়ভার মালিকদের কাছ থেকে আদায় করা হবে।প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিনের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ করা না হলে সংবাদপত্রে সেগুলোর তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ ভবন কেউ যেন ভাড়া না নেন—সে ব্যাপারে সতর্ক করা হবে এবং সর্বশেষ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অপসারণের কাজটি করা হবে।সম্প্রতি শহর ঘুরে দেখা গেছে, ভৈরব বাজার এলাকায় পুরোনো ভবন সংস্কার ও চুনকাম কর হচ্ছে। চিঠি পাওয়ার পরও চুনকাম করা হয়েছে মেঘনা নদীর পারের রহিমা ভবনে। তবে ভবনমালিক রনি মিয়া চিঠি পাননি বলে দাবি করেছেন। লঞ্চ টার্মিনাল এলাকার জাফর ভবনে ইতিমধ্যে চুনকাম করা হয়েছে। টিন বাজার এলাকার শরিফ ভবনটির সংস্কারকাজ চলছে। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক শরিফ ভবনের সামনের এক দোকানি বলেন, পৌরসভা থেকে ভবন ভেঙে ফেলার চিঠি পাওয়ার পর মালিক সংস্কারকাজ শুরু করেছেন।জাফর ও শরিফ ভবনের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রকৌশল দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মুহামঞ্চদ কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘চিঠি পাওয়ার পর অনেকে ভবন সংস্কার ও রং করে পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি কয়েকটি ভবনে গিয়ে সংস্কারকাজ বন্ধ রেখে অপসারণের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে এসেছি।’পৌর মেয়র মো. শাহিন বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য নানা মহল থেকে চাপ আসছে। শুধু বলব, জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশে রাস্তার পাশে পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে অন্তত চারটি মেয়েশিশু নিহত হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন। নিহত শিশুদের বয়স সাত থেকে ১২ বছরের মধ্যে। তারা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছিল। একপর্যায়ে তারা একটি ঝরনা থেকে পানি আনতে গেলে বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী সম্প্রতি ন্যাটো বাহিনীর কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে দেশটির নিরাপত্তার ভার গ্রহণ করেছে। বর্তমানে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম হচ্ছে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা (আইইডি) নামে পরিচিত দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বোমা, যা সাধারণত রাস্তার পাশে পেতে রাখা হয়। বিবিসি।
অভিজ্ঞতার ভুয়া সনদ, স্বাক্ষর, প্রশ্নপত্র জালিয়াতিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।শিক্ষকেরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ আহ্বায়ক অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বিভিন্ন অনিয়মকে প্রশাসনিক বৈধতা দেওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। আখতারুল ইসলাম বলেন, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায়ের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জহিরুল হকের বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতার ভুয়া সনদ দেখিয়ে পদোন্নতির অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম হচ্ছে। শুরু থেকেই এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এ শিক্ষকেরা। কিন্তু সিন্ডিকেটের ১৭৯তম সভায় হিমাদ্রী শেখর রায়কে সতর্ক করা হয়। জহিরুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।শিক্ষকেরা অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিরা এসব অনিয়মকে বৈধতা দিচ্ছেন।বেলা একটা পর্যন্ত প্রতীকী অবস্থান চলে। অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশ্নপত্র জালিয়াতির মতো গুরুতর ঘটনাকে চরম অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করে বিষয়টিকে প্রশাসনিক বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এটা ভবিষ্যতের শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। জালিয়াতিসহ অনিয়মগুলোকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এসব অপরাধ করতে কেউ সাহস না পায়। বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতি ও অনিয়মমুক্ত হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই ঘটনাগুলোতে তদন্ত কমিটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেনি। তাই আমি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি।’ছাত্রলীগের নেতা, সাংবাদিক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে সঞ্চারকলিপি: এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগে অনিয়ম করে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া, ছাত্রলীগের নেতা ও প্রগতিশীল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে বিভিন্ন অভিযোগ এনে প্রগতিশীল শক্তিকে দুর্বল করার পাঁয়তারা চলছে উল্লেখ করে গতকাল বিকেলে তিন দফা দাবিতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগ। দাবিগুলো হলো, মেধার মানদণ্ডে নিয়োগ প্রদান ও নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্বচ্ছকরণ, ছাত্রলীগের নেতা ও প্রগতিশীল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব ধরনের অবৈধ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলাকারী শিবির ক্যাডারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
রেফ্রিজারেটরের শুরুটা হয়েছিল বরফ তৈরির জন্য। জেমস হ্যারিসন রেফ্রিজারেটরের উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত। ১৮৫০ সালের দিকে প্রথমবারের মতো রেফ্রিজারেটর তৈরি হয়েছিল। ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য প্রথমবারের মতো রেফ্রিজারেটর তৈরি করে ‘ক্যারে অ্যান্ড কোম্পানি’ নামের একটি ফরাসি প্রতিষ্ঠান। জেমস হ্যারিসন বরফ তৈরির যন্ত্র হিসেবে প্রথম রেফ্রিজারেটর তৈরি করার প্রায় ১০ বছর পর করেন ক্যারে অ্যান্ড কোম্পানি। ১৮৬০ সালে ক্যারে অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি রেফ্রিজারেটর বাজারে ছাড়া হয়।ক্যারে অ্যান্ড কোম্পানির রেফ্রিজারেটর ক্রেতাদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণের মূল কারণ ছিল রেফ্রিজারেটরটির সস্তা দাম এবং আকর্ষণীয় রং ও ডিজাইন।দামে সস্তা এবং দেখতে আকর্ষণীয় হলেও ক্যারে অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি রেফ্রিজারেটরটির ব্যবহার কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। সাধারণত অ্যামোনিয়া নিঃসরণের মাধ্যমে রেফ্রিজারেটরটিতে বরফ জমানো হতো। তাতে প্রতি ঘণ্টায় তৈরি হতো মাত্র এক থেকে দুই কেজি বরফ।দ্য পেঙ্গুইন বুক অব ফার্স্ট অবলম্বনে নাইর ইকবাল
নানা সমস্যায় জর্জরিত সিলেট বিভাগের একমাত্র সরকারি বাক-শ্রবণপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি। প্রয়োজনীয় শিক্ষক, কর্মচারীসহ লোকবলের সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় সারাক্ষণ শিক্ষার্থীদের আতঙ্কে বসবাস করতে হচ্ছে।বিদ্যালয়টির প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এক একর ৮০ শতক জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারি বাক-শ্রবণপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত এই বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ৮৭ জন প্রতিবন্ধী ছাত্র সরকারি খরচে পড়াশোনা করছে। এসব ছাত্র সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায়ও শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষর্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়টির দুটি ছাত্রাবাসে ৬৮ জন ছাত্র বসবাস করছে। ছাত্রাবাস দুটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এ ছাড়া ছাত্রাবাসে খাবারঘর, রান্নাঘর ও বিনোদনকক্ষ না থাকায় শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হয়। কোনো নৈশপ্রহরী না থাকায় শিক্ষার্থীদের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিদ্যালয়টির রাজস্ব শাখার অনুমোদিত ১২টি পদের মধ্যে আটটিই শূন্য এবং উন্নয়ন খাতের অনুমোদিত ১১টি পদের ছয়টিই খালি। শূন্য পদগুলোর মধ্যে হাউস প্যারেন্ট দুটি, ক্রাফট টিচার একটি, অফিস সহকারী একটি, মেইন হেলপার একটি, বাবুর্চি একটি, নৈশপ্রহরী একটি, ঝাড়ুদার একটি এবং উন্নয়ন খাতে শিক্ষক দুটি, সহকারী শিক্ষক দুটি, সেবিকার পদ দুটি। এ ছাড়া একজন শরীরচর্চা শিক্ষক থাকলেও তিনি প্রেষণে রাজশাহীর পিএইচটি সেন্টারে কর্মরত।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয় ও কার্যালয়ের কক্ষের অধিকাংশ চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙা থাকায় শিক্ষা কার্যাক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের ভেতরে কোনো নর্দমাব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হয়।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী হায়দার ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক ও কর্মচারীর সংকটে পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে। বিভিন্ন সমস্যার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, উন্নয়ন খাতে নিয়োজিত শিক্ষক-কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে পদায়নের বিষয়টি দ্রুতই সম্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এতে করে লোকবলের সংকট দূর হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
মহাজোট সরকারের শুরুতে আপনাদের সঙ্গে একান্তে বসেছিলাম। সরকারের পাঁচ বছর পূর্তি সামনে। শিক্ষাক্ষেত্রে কী কী করা হলো, কী বাকি থাকল আর সমস্যা কী—সব শোনার জন্যই আবার একান্তে বসা।’সিলেট সার্কিট হাউসে গত বুধবার রাত পৌনে আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে এভাবে খোলামেলা কথা বলেন।সিলেট ব্রিটিশ আমল থেকে বঞ্চিত উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটকে শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা সমতায় নিয়ে এসেছি। উচ্চবিদ্যালয়, কলেজ ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সিলেট বিভাগে উচ্চবিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৭২৪টি। বর্তমান সরকারের আমলে নতুন করে স্থাপিত হয়েছে ১৬৪টি। ওই সময়ে সিলেট বিভাগে কলেজের সংখ্যা ছিল ১৩০। নতুন স্থাপিত হয়েছে ১০৬টি।’ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের গতিশীল নেতৃত্বে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। বেড়েছে জিপিএ-৫-এর সংখ্যাও।শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গুরুত্ব বিবেচনায় একজন যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তি খোঁজা হচ্ছিল। এ তালিকায় শিক্ষাবিদ অনেকেরই নাম ছিল। কিন্তু যোগাযোগ করলে তাঁরা রাজি না হওয়ায় উপাচার্য নিয়োগে বিলম্বিত হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে একজন যোগ্য উপাচার্য নিয়োগ করা হবে।শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আলোর প্রতিনিধি বহিষ্কারসহ সাংবাদিক-শিক্ষার্থীদের হয়রানি প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী-সাংবাদিককে বহিষ্কার করা হয়েছে, এটি নিন্দনীয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব বন্ধ করে সাংবাদিকদের হয়রানির বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ-শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে গত বছরের ৮ জুলাই ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাস পোড়ানোর ঘটনা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ওই ঘটনায় আমি নিজেও ব্যথিত ছিলাম। পরিদর্শনে গিয়ে আবেগ সামলাতে পারিনি। আমি সিলেটবাসীকে কথা দিয়েছিলাম যে পোড়া ছাত্রাবাস আগের আদলে নির্মিত করে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী এমসি কলেজ ছাত্রাবাসসহ অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে ১৩ কোটি টাকার কাজ করা হচ্ছে। সেখানে পরীক্ষার হল নির্মাণের পাশাপাশি আগের আর্টস বিল্ডিংও নতুন করে সংস্কার হচ্ছে। পুড়িয়ে ফেলা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসও আগের আদলে নির্মাণ করা হচ্ছে।’
গোপালগঞ্জের পর গাজীপুরকে আওয়ামী লীগ তাদের ঘাঁটি মনে করে। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে এখানে বরাবরই জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এবার নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অতীতের সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকবে বলে মনে করে ক্ষমতাসীন দলটি। তবে চার সিটি করপোরেশনে জয়ের পর বেশ আত্মবিশ্বাসী বিএনপি এবার আওয়ামী লীগের এই দুর্গে হানা দিতে চায়। বিএনপির নেতারা বলছেন, গাজীপুরে জয়ী হয়ে তাঁরা প্রমাণ করতে চান, এই সরকারের প্রতি মানুষের আর আস্থা নেই।ফলে গাজীপুর সিটি নির্বাচন এখন আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সীমাবদ্ধ নেই। প্রথম নগরপিতা নির্বাচনের এই লড়াই এখন দুই দলের অস্তিত্ব ও মর্যাদার লড়াই। এ লড়াইয়ে কে জয়ী হবে, তা নির্ধারিত হবে কাল শনিবার ৬ জুলাই।গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খান এবং বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নান দুজনেই ছুটেছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। জয়ের ব্যাপারে দুই প্রার্থীই শতভাগ আশাবাদী।দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়ালেও পরিবেশটা বেশ শান্তিপূর্ণ ও অনুকূল। নির্বাচন কমিশন আশাবাদী, তারা আরেকটি শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের সব প্রস্তুতি শেষের দিকে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট দেওয়া হবে। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোট ১১ হাজার সদস্য এই নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতও থাকবেন।’গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভা এবং গাছা, বাসন, পুবাইল, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর ও কাউলতিয়া—এই ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। মোট ভোটার ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৯ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৩৯২টি। গত কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভা এবং গাছা ইউনিয়নে ভোটার পাঁচ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৭ জন, যা মোট ভোটের প্রায় ৬০ শতাংশ। এই তিনটি স্থানে গত দুই দশক ধরে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য।টঙ্গী পৌরসভার মোট ভোটার তিন লাখ ২৬ হাজার ৯৩৮ জন। ১৯৯৫ সালে টঙ্গী মডেল পৌরসভা হওয়ার পর পর তিনটি নির্বাচনেই জয়ী হয়ে ১৮ বছর ধরে মেয়র ছিলেন আজমত উল্লা। এখানেও আওয়ামী লীগের প্রভাব বেশি বলে মনে করছেন নেতারা।গাজীপুর পৌরসভা গঠিত হয়েছে ১৯৮৬ সালে। এখানকার ভোটার এক লাখ ২৯ হাজার ৮৬২ জন। এই পৌরসভা নির্বাচনেও বিএনপি কখনো জেতেনি।আওয়ামী লীগের পৌরসভার সভাপতি ওয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘বরাবরই গাজীপুর পৌরসভায় জয়ী হয়েছি। এবারও আমরা বিপুল ভোট পেয়ে বিজয়ী হব।’ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ছয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট গাছা ইউনিয়নে। এখানকার ভোটার এক লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ জন। ১৯৮৮ সাল থেকে এই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বরাবরই আওয়ামী লীগের প্রার্থীই জয়ী হয়েছেন। গাছা ইউপির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ইউনিয়নে বরাবরই আমরা জয়ী হয়েছি। এবারও আমরা একচেটিয়া ভোট পাব।’পুবাইল ইউনিয়নের জয় নিয়েও আশাবাদী আওয়ামী লীগ। কারণ, এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন আহসান উল্লাহ মাস্টার, যিনি সাংসদ থাকা অবস্থায় গত বিএনপির শাসনামলে গুলিতে নিহত হন। এখানে ভোটার ৫২ হাজার ২১১ জন।শুধু স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই নয়, ’৯১ সালের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ আসনে (সদর ও টঙ্গী) কখনো বিএনপি জয় পায়নি। ’৯৬ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের বাকি চারটি আসনেও জয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে ’৯১ ও ২০০১ সালে তিনটি আসন পেয়েছিল বিএনপি।বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নান ’৯১ সালে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হন। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৪ সালের উপনির্বাচন এবং ২০০৮ সবগুলো নির্বাচনেই তিনি পরাজিত হয়েছেন। তবে সরকারের নানা ব্যর্থতা আর চার সিটিতে বিরোধী দলের জয়ের পর এবার আওয়ামী লীগের এই দুর্গ ভেঙে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার রসুলপুর রেলস্টেশনের অদূরে কনটেইনারবাহী ট্রেনের একটি বগির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হওয়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এতে ট্রেন ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট, নোয়াখালী-ঢাকা রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী কনটেইনারবাহী ট্রেনটির বগি লাইনচ্যুত হয়। পরে আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে দুর্ঘটনায় কবলিত ট্রেনের বগি উদ্ধার করে। এরপর বিকেল সাড়ে চারটায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ সময়ে যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রচণ্ড গরমে শিশুরা কাহিল হয়ে পড়ে।কুমিল্লা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ হোসেন মজুমদার বলেন, কনটেইনারবাহী ট্রেনের একটি বগির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হওয়ায় শশীদল রেলস্টেশনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী, রসুলপুর রেলস্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং কুমিল্লা রেলস্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী চট্টলা ট্রেন আটকা পড়ে।
হবিগঞ্জের তিন বীরাঙ্গনাকে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী সংগঠন ‘চেষ্টা’-এর পক্ষ থেকে তিনটি গাভি উপহার দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন হিরামনি, রেজিয়া বেগম ও সাবিত্রি নায়েক। স্থানীয় এম এ রব পাঠাগার মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে গাভিগুলো তুলে দেওয়া হয়।হবিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাভিত্তিক সংগঠন ‘চেতনা একাত্তর’ তাঁদের জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে চেষ্টার কাছে আবেদন করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রত্যেককে একটি করে গাভি দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চেষ্টার সভাপতি শেলীনা বেগম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুল ওয়াদুদ।সভায় বক্তারা বলেন, অসহায় নারীদের, বিশেষ করে বীরাঙ্গনাদের আর্থিক সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসে না। যে দলই ক্ষমতায় আসে, তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় সাহায্য-সহায়তা দিয়ে থাকে। এ কারণে প্রকৃত অসহায় মানুষ সহায়তা পায় না। সভায় স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও দেশের বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরি না করায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়।সভায় চেষ্টার সাধারণ সম্পাদক লায়লা নাজনীন হারুন, আইনজীবী সৈয়দ আফরোজ বখত, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আফতাব উদ্দিন, চেতনা একাত্তরের সদস্যসচিব কেয়া চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।গাভি পেয়ে হিরামনি বলেন, তিনি বেশ খুশি। গাভির দুধ বিক্রি করে তিনি আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠবেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিনে নাটকীয় ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। কয়েক দিন ধরে মহাজোট ছাড়ার কথা বললেও গতকাল তিনি মহাজোট-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আজমত উল্লা খানকে সমর্থন জানিয়েছেন। এরশাদ গাজীপুরের নেতা-কর্মীদের আজমত উল্লার পক্ষে কাজ করারও নির্দেশ দিয়েছেন। তবে গাজীপুরের জাপা নেতারা তাঁদের চেয়ারম্যানের এই নির্দেশ মানতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান কার্যালয়ে আকস্মিক সংবাদ সম্মেলন ডেকে এরশাদ এই সমর্থনের কথা জানান। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ।এরশাদ বলেন, ‘যেহেতু জাতীয় পার্টি এখনো মহাজোটে আছে। তাই মহাজোট-সমর্থিত প্রার্থীকেই আমাদের সমর্থন দেওয়া উচিত। তাই আমার দলের নেতা-কর্মীদের মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিচ্ছি।’চেয়ারম্যানের এ নির্দেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে গত রাতে জাপার গাজীপুর জেলার সভাপতি কাজী মাহমুদ হাসান মন্তব্য করেন, ‘ইটজ টু লেট।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কি টেলিভিশন থেকে অর্ডার নেব? এখন আমি নেতা-কর্মীদের ক্যামনে ফিরিয়ে আনি? এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে হয় নেতাদের ডাকবেন, না হয় লোক পাঠাবেন; অথবা চিঠি দেবেন। এভাবে তাঁর সমর্থন ঘোষণায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ভোট দেবেন না।’গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকে ‘চুপ’ ছিলেন এরশাদ। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সমর্থন চাইলেও এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলেন এরশাদ। অবশেষে নির্বাচনের ঠিক এক দিন আগে সমর্থন জানালেন।বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে কোনো মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন না দেওয়ার কথা জানিয়েছিল মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যেহেতু এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সমর্থিত কোনো মেয়র পদপ্রার্থী নেই, সে কারণে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা তাঁদের পছন্দমতো যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন।’এর আগে গত ২৭ জুন বনানীর কার্যালয়ে গাইবান্ধার এক ব্যবসায়ীর জাপায় যোগদান অনুষ্ঠানে এরশাদ গাজীপুর নির্বাচনের উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘কাকে ভোট দিতে বলব। আমি বললেও শুনবে না। সরকারের জনপ্রিয়তা এত খারাপ যে, এখানেও তারা হারবে।’ ওই দিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষা ৎ করেন এরশাদ।শেষ মুহূর্তে মহাজোট প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, আজমত উল্লা ও এম এ মান্নান তাঁর সঙ্গে দেখা করে দোয়া চান। তিনি দুই প্রার্থীর জন্য দোয়া করে তাঁদের শুভকামনা করেছেন। কাউকে সমর্থন দেননি। কিন্তু এম এ মান্নান বাইরে এসে বলেছেন, দোয়ার পাশাপাশি তাঁকে সমর্থনও দেওয়া হয়েছে। এতে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।এরশাদের এই সমর্থন ঘোষণার পর গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যান শেষ মুহূর্তে আজমত উল্লা খানকে সমর্থন দিয়ে আমাদের বেইজ্জত না করলেও পারতেন। আমরা আগে থেকে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছিলাম। এখনো আমরা আগের অবস্থানেই আছি।’মহাজোট প্রার্থীকে সমর্থন দিতে এরশাদের ওপর সরকার বা অন্য কোনো পক্ষের চাপ বা টোপ থাকতে পারে বলে নানা মহলে বলাবলি হচ্ছে। দলের ভেতরেও এ কথা উঠেছে।জানতে চাইলে জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ধরনের চাপ বা অন্য কিছুর সম্পর্ক নেই। তিনি (এরশাদ) নিজের অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ থেকে এ সমর্থন দিয়েছেন।গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির নেতারা আগেই বিভক্ত ছিলেন। জেলা জাপার সভাপতি কাজী মাহমুদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, পৌরসভা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমযান আলী, টঙ্গী থানা কমিটির সভাপতি আবদুস সামাদ বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আছেন দলের পৌর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা।অন্যদিকে জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম, গাজীপুর পৌরসভা কমিটির সভাপতি মনোয়ার হোসেন, টঙ্গীর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমানসহ আরেক অংশ আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে।জাপার প্রার্থী কাজী মাহমুদ হাসান প্রার্থিতা তুলে নেন গত ১৭ জুন। ধারণা করা হয়, এতে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী লাভবান হবেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বেশির ভাগই বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এখন এরশাদের সর্বশেষ ঘোষণায় জাপার স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আরও বিভ্রান্তির মধ্যে পড়লেন।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানায় কর্মরত পুলিশের প্রায় অর্ধেক কর্মকর্তার বসার আসন নেই। এ ছাড়া আবাসনসংকটে সব কর্মকর্তাকেই ভাড়া বাসায় ও মেসে থাকতে হয়। এ কারণে অনেক কর্মকর্তাকে বাসায় বা অন্যের আসনে বসে দাপ্তরিক কাজ করতে হচ্ছে।থানার পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে হাজীগঞ্জ থানার দোতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এ ভবনের নিচতলায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পরিদর্শক (তদন্ত), উপপরিদর্শক (এসআই), সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই), কর্তব্যরত কর্মকর্তা, অস্ত্রাগার, পুরুষ ও নারীদের জন্য দুটি হাজতখানাসহ মোট আটটি কক্ষ রয়েছে। দোতলায় পুলিশ কনস্টেবলদের জন্য দুটি ব্যারাক এবং অতিথিদের জন্য দুটি কক্ষসহ মোট চারটি কক্ষ আছে।বর্তমানে হাজীগঞ্জ থানায় ওসিসহ ১৮ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। ভবনের নিচতলার দুটি কক্ষে ওসি ও পরিদর্শক (তদন্ত) বসেন। অন্য দুটি কক্ষে এসআই ও এএসআই বসেন। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ জন কর্মকর্তার বসার চেয়ার-টেবিল রয়েছে। বাকি আটজন কর্মকর্তার বসার স্থান ও চেয়ার-টেবিল নেই।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, আসনসংকটের কারণে উপপরিদর্শকেরা সহকারী উপপরিদর্শকের কক্ষে বা অনেক কর্মকর্তার নির্দিষ্ট আসন না থাকায় অন্যের আসনে বসে দাপ্তরিক কাজ করেন। কেউ কেউ আসন না পেয়ে বাসায় বসে দাপ্তরিক কাজ করেন। এতে কর্মকর্তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটছে।হাজীগঞ্জ থানার ওসি দেওয়ান আবুল হোসেন বলেন, ‘থানায় ভবন নির্মাণের পর্যাপ্ত জায়গা আছে। কিন্তু আমারসহ অন্য কর্মকর্তাদের থাকার জন্য থানায় কোনো আবাসিক ব্যবস্থা নেই। সারা দিন কাজ করে দুই ঘণ্টা ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না।’ তিনি জানান, কর্মকর্তাদের বসার আসনসহ আবাসনব্যবস্থার অসুবিধার কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
সংসদে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আনা সংসদ অবমাননার অভিযোগ আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আমরা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে চাই যে আমাদের মন্তব্য সংসদীয় কার্যপ্রণালি বিধি বা তার ঐতিহ্যগত রীতিনীতি লঙ্ঘন করেছে কি না। তাঁর মন্তব্যের উদ্ধৃতি ৩ জুলাইয়ের দৈনিক জনকণ্ঠ ও প্রথম আলো থেকে নেওয়া।সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, স্পিকার সম্পর্কে ‘যান্ত্রিক সিদ্ধান্ত ও স্পিকারের ভুল করার’ মতো মন্তব্য ‘তির্যক’, আর তির্যক মন্তব্য করার কোনো অধিকার কোনো পত্রপত্রিকার নেই। মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের সামন্ততান্ত্রিক সমাজে ‘দ্য কিং ক্যান ডু নো রং’ প্রচলিত ছিল বলে আমরা জানি, কিন্তু স্পিকার সম্পর্কে কখনো এ ধরনের কিছুর প্রচলন ছিল না।সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘পৃথিবীর এমন কোনো সংসদ নেই, যেখানে স্পিকার গিলোটিন করেন না। তাঁর এই অধিকার সম্পর্কে কেউ কোনো দিন কোথাও, এমনকি সংসদেও প্রশ্ন তুলতে পারবে না। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোর মতো একটি পত্রিকা তাদের সম্পাদকীয়তে (২ জুলাই প্রথম আলো) এ কথা কী করে লেখে?’আমরা গিলোটিন বা তাঁর এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি; শুধু আফসোস করেছি। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করব, আর তার কাছ থেকে সংসদীয় রীতি শিখব না? যা নিয়ে বিতর্ক, তার নাম বাজেটের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাব। এ বিষয়ে ভারতের সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধি প্রায় হুবহু নকল করেছি আমরা। দুটি মঞ্জুরি দাবির ওপরে গিলোটিন চালিয়ে স্পিকার বাংলাদেশ সংবিধানের ৮৯(২) অনুচ্ছেদের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। এই অনুচ্ছেদ বলেছে, ‘কোনো মঞ্জুরি দাবিতে সম্মতিদানের বা তাতে অস্বীকৃতিদানের ক্ষমতা সংসদের থাকবে।’ ভারতের সংবিধানের ১১৩(২) অনুচ্ছেদে ঠিক এ কথাই লেখা। এখন আমরা দেখব, একই ধরনের বিধান ও বিরোধী দলের সৃষ্ট পরিস্থিতি সামনে রেখে দুই প্রতিবেশী স্পিকার কী করলেন। প্রতিষ্ঠিত নিয়ম হলো, স্পিকার গিলোটিনে (প্রস্তাবগুলো নাকচ) গেলে সব প্রস্তাবের মৃত্যু ঘটবে। আলোচনার দুয়ার দড়াম করে বন্ধ হবে। গত ৩০ জুন বাংলাদেশের স্পিকারের সামনে প্রশ্ন ছিল, পদ্মা সেতু ও বিদ্যুৎ নিয়ে বিএনপিকে তিনি আলোচনা করতে দেবেন কি না। তিনি ‘সময়ের অভাব’ দেখিয়ে তা নাকচ করেন। ২০১০ সালের ২৭ এপ্রিলের ঘটনা। ভারতের স্পিকার ‘কয়েক দিনের’ আলোচনা শেষে পূর্বনির্ধারিত সময়ে গিলোটিনে যান। এরপর সিপিআইএর একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য নাটকীয়ভাবে উঠে দাঁড়ান। তিনি সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদের দোহাই দিয়ে বললেন, তাঁকে এখন ছাঁটাই প্রস্তাব তুলতে ও আলোচনা করতে দিতে হবে। ভারতের ইতিহাসে এ ঘটনা কেউ কখনো দেখেনি। স্পিকার মীরা কুমার কী করলেন? তিনি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। বললেন, ‘সাংবিধানিক অধিকার উৎকৃষ্ট অধিকার এবং তা রেওয়াজকে অতিক্রম করে। সংবিধানে দেওয়া ছাঁটাই প্রস্তাব লোকসভার সদস্যদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার, যা ছাঁটাই করা যায় না।’ ছয় মাস পরে জেনেভায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভায় এ ঘটনা ‘স্পিকারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ হিসেবে নন্দিত হয়েছে। প্রথম আলোর সম্পাদকীয়তে কি তাহলে স্পিকারের সিদ্ধান্তকে ‘অনভিপ্রেত’ না বলে ‘অভিপ্রেত’ বলার সুযোগ ছিল? এমনকি এম কে আনোয়ার অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী ঘাড় ঘুরিয়ে স্পিকারকে না করেছেন। এর ভিডিও ফুটেজ তো আছে। আমি জনাব আনোয়ারকে বললাম, আমাদের সম্পাদকীয় নয় বরং আপনাদের অভিযোগই গুরুতর সংসদ অবমাননাকর। এর তদন্ত কাম্য।সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যখন প্রথম আলোর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, স্পিকার তাঁকে বাধা দেননি। তবে দেখা গেছে, মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার প্রমুখ মাইক ছাড়াই সেনগুপ্তর কথার প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু বিএনপি তার যথাদায়িত্ব পালনেও ব্যর্থ ছিল। পদ্মা সেতু ও বিদ্যুৎ নিয়ে মাত্র ৩০ মিনিট কথা বলতে রাজি ছিল তারা। সেটুকু না পেয়ে তারা স্পিকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। অবশ্য প্রায় ৩০ মিনিট এ নিয়ে তর্কও চলেছে।অথচ আইনে ‘কয়েকটা দিন’ ছিল তাদের প্রাপ্য।সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আক্ষেপ করেছেন, ‘সংসদের আধাবিচারিক ক্ষমতা নেই। যদি তা থাকত, তাহলে ওই পত্রিকার সম্পাদক সাহেব অবশ্যই এখানে আসতেন। আশা করি আমার এই বক্তব্য পত্রিকাটির সম্পাদকের কাছে যাবে এবং তিনি যা প্রয়োজন, সেই ব্যবস্থা নেবেন। যাতে করে সংসদে তাঁর (প্রথম আলোর সম্পাদক) ওপর কোনো রকম ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন না হয়।’কে কাকে করুণা করছে। আর প্রকৃতপক্ষে কে বা কারা উপহাসের পাত্র? ১৯৭২ সালের সংবিধানই সংসদকে বিশেষ অধিকার আইন করতে অধিকার দেয়। হুমকি সত্ত্বেও আমরা এই আইনের সমর্থক। কিন্তু কে কাকে কেন আইন করতে দিচ্ছে না? সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘অনভিপ্রেত’, ‘যন্ত্রিক সিদ্ধান্ত’ ও ‘স্পিকারের ভুল’—এগুলো সংসদ অবমাননাকর। কিন্তু এগুলো অসংসদীয় বা অবমাননাকর পরিভাষা বলে বিশ্বের কোথায় কে কবে শুনেছে, তা আমাদের জানা নেই।আগেই বলেছি, যা নিয়ে বিতর্ক, তার নাম মঞ্জুরি দাবি। এবারে এর সংখ্যা ছিল ৫৬টি। এগুলো মন্ত্রণালয়ভিত্তিক। এবারে ৫৬টি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল প্রায় ৮০০ ছাঁটাই প্রস্তাব দেয়। প্রতিটির বিপরীতে গড়ে প্রস্তাব দাঁড়ায় ১৫টি। এর মানে বিএনপির ১৫ জন প্রতিটি প্রস্তাবের ওপর এক মিনিট করে বলবেন। যোগাযোগমন্ত্রীর মঞ্জুরি দাবি, পদ্মা সেতু নির্মাণে সাত হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করা হোক। বিরোধী দল সুযোগ পেলে বলত, এই ‘দাবির পরিমাণ হ্রাস করে এক টাকা করা হোক বা ১০০ টাকায় হ্রাস করা হোক।’ যখন এক টাকা চাইবে, তখন তা ‘নীতি অননুমোদন ছাঁটাই’ বলে গণ্য হবে। ১০০ টাকা কমানোর অর্থ হবে প্রতীক ছাঁটাই। এক টাকার প্রস্তাবে পদ্মা সেতুর ‘নীতি’ ও ১০০ টাকার প্রস্তাবে ‘অভাব-অভিযোগ’ নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকত।দুই চিফ হুইপ এবং স্পিকার প্রতিনিধির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমরা ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে’ সংবিধানবিরুদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে দেখেছি। ‘সময়াভাবে’ ৫৬ দাবির বিপরীতে পদ্মা সেতু, বিদ্যুৎসহ সাতটি মঞ্জুরি দাবির ওপর কার্যত তিন ঘণ্টারও কম সময় আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সাতটির বিপরীতে প্রস্তাব ছিল শতাধিক। পাঁচটি মঞ্জুরি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা বেলা সোয়া ১১টায় শুরু হয়ে বেলা প্রায় তিনটায় শেষ হয়। স্পিকারকে উদ্দেশ করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ২ জুলাই বলেছেন, ‘আপনি লাঞ্চের সময়ও নেননি।...এর চেয়ে ন্যায়বিচার এই সংসদে আর কী হতে পারে?’আমাদের সংবিধান রক্ষা পেল না। সংসদীয় বিধি রক্ষা পেল না। এরই নাম ‘ন্যায়বিচার’?পরিহাস হলো, মঞ্জুরি দাবি নিয়ে বিএনপির আমলেও বাজেট আলোচনার শেষ দিনটিই বেছে নেওয়া হয়েছিল। তবে তাদের দাবি, তারা রাত ১০টা অবধি গলেও এবার বেলা আড়াইটায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।এম কে আনোয়ারকে বললাম, আপনারা কেন মাত্র এক দিন, তা-ও তিন ঘণ্টার একটা আলোচনা মানলেন? তিনি রেওয়াজের দোহাই দিলে তাঁকে বলি, আপনারা এমন কোনো রেওয়াজ করতে পারেন না, যাতে কোনো নির্দিষ্ট বিধি লঙ্ঘিত হয়। সংবিধানের সঙ্গে মশকরা ঘটে। সংসদীয় কার্যপ্রণালি বিধির ১১৭ ধারার ১ উপবিধি বলেছে, ‘মঞ্জুরি দাবি সম্পর্কে আলোচনা এবং ভোট গ্রহণের জন্য সংসদ নেতার সঙ্গে পরামর্শক্রমে স্পিকার “এমনসংখ্যক দিন” বরাদ্দ করবেন, যা জনস্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে।’ স্পিকার ও দুই প্রধান দলের আধা বেলা আলোচনার সিদ্ধান্তকে আমরা জনস্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ মনে করি না। ২ উপবিধি বলেছে, ‘বরাদ্দকৃত দিনসমূহের সর্বশেষ দিনে বৈঠক সমাপ্তির জন্য নির্দিষ্ট সময় বা পূর্বেই স্পিকার কর্তৃক নির্ধারিত সময় উপনীত হওয়ামাত্র মঞ্জুরি দাবি-সম্পর্কিত সমস্ত অবশিষ্ট বিষয় নিষ্পন্নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি প্রশ্ন স্পিকার ভোটে দেবেন।’ এই সময়ও নির্দিষ্ট বা নির্ধারিত ছিল না বলে বিএনপির দাবি। সে ক্ষেত্রেও বিধির বিচ্যুতি ঘটেছে।আমরা সেনগুপ্তর কাছে প্রশ্ন রাখি, জনগণ আর কত দিন বাজেট পাসের যান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবলোকন করবে? এবার তো গালাগালি ও কুৎসা নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে! আমরা কবে সংসদীয় ও সাংবিধানিক স্খলন বা স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের জাঁতাকল থেকে মুক্তি পাব? স্পিকার বা সম্পাদক কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন; এমনকি তাঁরা কেউ সমালোচনা ও জবাবদিহির বাইরে নন। দিল্লির দি ইকোনমিক টাইমস-এর ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট একটি সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল ‘ক্যান দ্য প্রেস ক্রিটিসাইজ দ্য স্পিকার?’ এটি বলেছে, ‘সমালোচনা ও শ্রদ্ধা হলো এক অপরিহার্য মূল্যবোধ এবং গণতন্ত্রকে যদি কার্যকর রাখতে হয়, তাহলে অবশ্যই এর সহাবস্থান থাকতে হবে। কারও অভিমত প্রকাশ, সমালোচনা করা এবং জনসেবক পদধারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংসদীয় রীতি ও বিশেষ অধিকার কোনো ব্যক্তি বা কারও দপ্তরকে জনগণের দৃষ্টি থেকে আড়াল করতে পারে না। ভারতীয় স্পিকারের রুলিং এটাই নিশ্চিত করল যে স্পিকার “দায়িত্বশীল” সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন।’সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যে বিশেষ অধিকারের দাবি করেছেন, তা কয়েক শ বছরের সংগ্রাম শেষে আদালত ও সংসদের মধ্যে রফা হয়েছে। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলামের সঙ্গে আমরা একমত যে আমাদের সংসদ ব্রিটিশ হাউস অব কমন্স নয়, এটা মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে তুলনীয়। তিনি লিখেছেন, ‘সংসদের কর্তব্যে বাধাদান ছাড়া কোনো অবমাননাকর মন্তব্য প্রকাশের জন্য বাংলাদেশের সংসদ তার অবমাননার জন্য শাস্তি দিতে পারে না।’কর্তব্যে বাধাদান তো দূরের কথা, সংসদের কর্তব্যের বিচ্যুতি বরং আমাদের আহত করেছে, সেটাই আমরা বলেছি। আমাদের স্পিকারের গিলোটিনটি সম্পর্কে ভারতীয় স্পিকার ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান মীরা কুমারের ভাষায় বলব, স্পিকার বিএনপির প্রস্তাব ছাঁটাই করায় বাংলাদেশ সংবিধানের বিচ্যুতি ঘটেছে।হাউস অব কমন্স তার অবমাননার জন্য আজ থেকে ৫৬ বছর আগে কোনো সম্পাদককে (সানডে এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক জন জুনর) সর্বশেষ ডেকেছিল। সাংসদ নন এমন কেউ (চার্লস গ্রিসেল) সংসদের বন্দিশালায় সর্বশেষ ১৮৮০ সালে জেল খাটেন। থমাস হোয়াইট সর্বশেষ এক হাজার পাউন্ড জরিমানা দিয়েছিলেন ১৬৬৬ সালে। এসব নির্দেশ করছে যে বাক্স্বাধীনতার বিকাশে বাধাদান বা বাঁধাছাদা করার সামন্তযুগীয় ধ্যানধারণা বহুকাল আগেই পরিত্যক্ত।মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।mrkhanbd@gmail.com
নতুন ১১টি বিমা কোম্পানির লাইসেন্স দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে নয়টি জীবনবিমা কোম্পানি ও দুটি সাধারণ বিমা (নন-লাইফ) কোম্পানি। এসব বিমার বেশির ভাগই দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়, সরকারদলীয় নেতা-সমর্থকদের নামে। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন বিমা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যানদের চিঠি পাঠিয়ে তা জানিয়ে দিয়েছে। নতুন লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের বর্তমান মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, আঞ্চলিক ও বিদেশ শাখার নেতা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের। সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির অন্যতম উদ্যোক্তা রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। গতকাল রাতে সোনারগাঁও হোটেলে রূপালী ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলমন্ত্রী। নতুন লাইসেন্স পাওয়া এই কোম্পানিতে রূপালী ইনস্যুরেন্সেরও মালিকানা রয়েছে। চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আছেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। ইউনিক হোটেলের প্রতিনিধি হিসেবে এই বিমা কোম্পানিতে আরও আছেন ব্যবসায়ী নূর আলী। আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ফরিদুন্নাহার লাইলী পেয়েছেন জেনিথ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইসেন্স। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম. নাসির উদ্দিন নতুন অনুমোদন পাওয়া মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অন্যতম উদ্যোক্তা। গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তারা হচ্ছে ব্র্যাক ফাউন্ডেশন, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন, স্কয়ার গ্রুপ এবং এপেক্স গ্রুপ। পরিচালক হিসেবে রয়েছে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও স্যামুয়েল এইচ চৌধুরীর নাম।বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক। মোশাররফ হোসেন নামক একজন হিসাববিজ্ঞানী এই কোম্পানির পরিচালক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে আইডিআরএ জেনেছে তিনি একজন ঋণখেলাপি।প্রটেকটিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অন্যতম উদ্যোক্তা আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম। পরিচালক রয়েছেন চট্টগ্রামভিত্তিক ক্রিস্টাল গ্রুপের মালিক ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোরশেদ মোরাদ ইব্রাহীমের ভাই রাশেদ মোরাদ ইব্রাহীম এবং ফুটবল ও ক্রিকেটের ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত।জাপানি কোম্পানি তাইও এবং স্থানীয় সামিট গ্রুপকে যৌথভাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তাইও-সামিট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নামে। সামিট গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান এবং এশিয়ান ফার্নিচারের মালিকানা রয়েছে এতে।এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আহাদকে। এতে পরিচালক রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা মোস্তফা আজাদ চৌধুরী ও গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজুল বারী চৌধুরী।নতুন অনুমোদন পাওয়া দুটি সাধারণ বিমা কোম্পানির মধ্যে একটিতে মালিকানা রয়েছে শিকদার গ্রুপের। মমতাজুল হক শিকদার ও জয়নুল হক শিকদারের পাশাপাশি মিরপুরের সাংসদ আসলামুল হক এবং মেজর জেনারেল (অব.) বিজয় কুমার সরকার এই কোম্পানির পরিচালক হিসেবে রয়েছেন।অন্যটি হচ্ছে সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।দেশে বেসরকারি পর্যায়ে বর্তমানে ৪২টি সাধারণ বিমা কোম্পানি রয়েছে। জীবনবিমা কোম্পানি রয়েছে ১৭টি। মেটলাইফ অ্যালিকো নামে রয়েছে একটি বিদেশি জীবনবিমা কোম্পানি। এর বাইরে সরকারি সংস্থা রয়েছে দুটি—সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন। দেশে যে কোম্পানিগুলোকে আগের বারের আওয়ামী লীগ সরকার লাইসেন্স দিয়েছিল, সেগুলোর বেশির ভাগেরই অবস্থা এখন খারাপ। তেমন কোনো ব্যবসা নেই। কোনো সুশাসনও নেই এগুলোতে। দেড় যুগ আগে লাইসেন্স পাওয়া বিমা কোম্পানির বেশির ভাগই নামকাওয়াস্তে টিকে আছে। বেশ কয়েকটি সাধারণ ও জীবনবিমা কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের মতো পরিস্থিতি রয়েছে বলে এর আগে মত দিয়েছিল আইডিআরএ।দেশে আর কোনো বিমা কোম্পানির লাইসেন্স দেওয়ার আদতেই বাস্তবতা রয়েছে কি না, আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের কাছে গত বছর তাঁর একটি বিশ্লেষণমূলক সমীক্ষা চেয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শেফাক আহমেদ বিশ্লেষণ করে অর্থমন্ত্রীকে তখন জানিয়েও দিয়েছিলেন, আর বড়জোর দুই থেকে তিনটি জীবনবিমা কোম্পানির লাইসেন্স দেওয়া যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই সাধারণ বিমা কোম্পানি নয়।বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, আর কোনো বিমা কোম্পানির লাইসেন্স দেওয়া উচিত হবে না। অন্তত সাধারণ বিমা কোম্পানির লাইসেন্স তো নয়ই। তার পরও সরকার দিয়েছে, সরকারের বিবেচনায়।’ আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিমা ব্যবসায়ের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে বলেই নতুন লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
চিত্রকর্মে আঁকা থাকে কত শত জিনিস। শিল্পী ও শিল্পসমালোচকদের মতে, একটি চিত্রকর্মের প্রতিটি উপাদানেরই আছে ভিন্ন ভিন্ন মানে। একেকটি উপাদান একেক বিষয়ের ইঙ্গিত বহন করে। এবার তেমনই দুটি জিনিসের ব্যাখ্যা দেখুন—শকুনমৃত্যু ও ধ্বংসের নিশানা এই পাখি। আকাশে শকুন মানে হলো জমিনে কোনো প্রাণীর মৃত্যুর আশঙ্কা। ডাকিনিবিদ্যার প্রতীক হিসেবেও দেখা যায় অনেক চিত্রকর্মে। শকুন তাড়ানোর দৃশ্য দিয়ে বোঝানো হয় মৃত্যুকে দূরে সরিয়ে রাখা। শকুনের বিপরীতে দাঁড়ানো কোনো প্রাণী হলো ত্রাতার প্রতীক। শকুন দিয়ে শত্রুর প্রতীকও বোঝানো হয়।পানিজীবনের প্রতীক পানি। জন্ম, উর্বরতা ও সজীবতার সঙ্গে তুল্য। মাটির পরিশুদ্ধতা ও বিশ্বাসী হওয়ার ইঙ্গিতও থাকে এতে। পানি কখনো বিধ্বংসীও; বিশেষ করে বন্যার পানির বেলায় এই প্রতীক বহুল ব্যবহূত।কুমারীবৃক্ষ ও ফুলের প্রতীক হলো অবিবাহিত নারী বা কুমারী। ফলের সঙ্গেও তুলনা করা হয়। খ্রিষ্টধর্মে কুমারী হলো আলো বহনকারীর প্রতীক। দৈব ও মানুষের সংযোগ ঘটায় কুমারী। কুমারীর জন্ম মানে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। পবিত্রতা, অপাপবিদ্ধতারও প্রকাশ। ইউনিভার্সিট অব মিশিগান অবলম্বনে মাহফুজ রহমান
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নে গ্যাস সরবরাহের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের টেংরাবাজারে এই মানববন্ধনে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ সময় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।মানববন্ধন চলাকালে এক সমাবেশে বক্তারা বলেন, টেংরাবাজারের ওপর দিয়ে গ্যাস যাবে। আর এলাকাবাসী এ গ্যাস পাবে না, এটা হয় না। গ্যাসের এই গণদাবি পূরণ করতে হবে। তা না হলে এ অঞ্চলের মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায় করবে।সমাবেশে বক্তব্য দেন রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান টিপু খান, এলাকাবাসীর মধ্যে ফজলু খান, নোয়াব খান, ফজলে রব, রাজু আহমদ, ভাস্কর দেব, শাহেদ আহমদ প্রমুখ।ইউপি চেয়ারম্যান টিপু খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘টেংরাবাজার রাজনগর উপজেলার একটি বড় বাজার। এই বাজারকে কেন্দ্র করে অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অনেক বাসাবাড়ি তৈরি হয়েছে। তাই দলমত-নির্বিশেষে সবাই একাত্ম হয়ে টেংরা ইউনিয়নে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সৃষ্টিগড় এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাক ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাইভেট কারের চালক ও দুই আরোহী নিহত হন। তাঁদের একজনের নাম শরীফ চৌধুরী (২৭)। অন্য দুজনের নাম জানা যায়নি। তাঁদের বাড়ি সিলেটে।নরসিংদীর ইটাখোলা সড়ক পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম সন্ধ্যায় জানান, গতকাল বিকেল চারটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সৃষ্টিগড় এলাকায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী একটি মালবাহী ট্রাকের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেট কারের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেট কারের চালকসহ তিনজন নিহত হন।দুর্ঘটনার পর ট্রাক রেখে চালক ও তাঁর সহকারী পালিয়ে যান। ট্রাকটি জব্দ করে ইটাখোলা সড়ক পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। লাশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শিবপুর থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
আমরা বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, চিকিৎসক, শল্যবিদ এবং অন্যান্য পেশাজীবী, যাদের অনেকেরই জন্ম বাংলাদেশে এবং অনেকেআবার বিবেকবান বিদেশি। আমরা বাংলাদেশের রূপপুরে প্রস্তাবিত পরমাণু প্রকল্পের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাগত যাথার্থতা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। আমাদের উদ্বেগের কারণগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো:১.পাকিস্তানের সামরিক জান্তার ৫০ বছর আগে পদ্মা নদীর তীরে রূপপুরে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন শক্তিকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে। এ প্রকল্পে কখনোই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জরুরি অংশ হিসেবে স্থান নির্ধারণ অথবা পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনার আবশ্যকীয় ধাপগুলো সম্পন্ন করা হয়নি। তা হলেও বর্তমান সরকার কেবল একটি নয়, সেই একই জায়গায় দুই দুটি ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের নির্ধারিত স্থানের মাত্র ৪০ কিলোমিটার উজানে পদ্মা নদীর ওপর ভারতের ফারাক্কা বাঁধ অবস্থিত। এই বাঁধের মাধ্যমে গ্রীষ্মকালে নদীর ৭৫ শতাংশ পানিই উজানে সরিয়ে নেওয়ার কারণে পদ্মা নদী পলি জমে জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বাদবাকি পরিমাণের পানি মাত্র একটি ১০০০ মেগাওয়াট পরমাণু কেন্দ্রকে শীতল করার জন্য যেখানে শোচনীয় রকম কম, সেখানে কীভাবে তা দিয়ে দুটি কেন্দ্রকে শীতল করা হবে? এতে জাপানের ফুকুশিমার মতো পরমাণু কেন্দ্রের শীতলীকরণের ব্যর্থতার কারণে সৃষ্ট দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না হলেও বর্তমান সরকার এই কঠিন বাস্তবতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চলেছে!২.দৃশ্যত মনে হচ্ছে, রাশিয়ার দেওয়া ঋণের ভিত্তিতে তাদের দ্বারা পরমাণু কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকারকে অন্ধ করে ফেলেছে। এ ধরনের কেন্দ্র (ভিভিইআর-১০০০) নির্মাণের উপযুক্ততা আছে কি না অথবা তার নিরাপত্তা মানদণ্ড কেমন, সে বিষয়ে সরকার সম্পূর্ণ উদাসীন। ভিভিইআর-১০০০ এখন সেকেলে প্রযুক্তি। এর নিরাপত্তার মান এতই কম যে ২০০৮ সালে খোদ রাশিয়াতেই এ ধরনের একটি কেন্দ্র নির্মাণ বাতিল হয়ে গেছে। সাবেক সোভিয়েত ব্লকভুক্ত দেশগুলোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার শর্ত হলো, ভিভিইআর-১০০০ জাতীয় পরমাণু রিঅ্যাকক্টরগুলো আগে বন্ধ করে দিতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ কী কারণে এ রকম সাবেকি, বাতিল ও বিপজ্জনক মডেলের রিঅ্যাক্টর ঋণ করে কিনছে?৩.এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান দাবি করেছেন যে রাশিয়া প্রতিটি ভিভিইআর-১০০০ রিঅ্যাক্টর দুই বিলিয়ন ডলারে বানিয়ে দেবে। অথচ রাশিয়া এ ধরনের কোনো কথা বলেনি। এই দুই বিলিয়নের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন খরচ হবে প্রদর্শনকেন্দ্র নির্মাণ, সম্ভাব্যতা যাচাই ইত্যাদিতে। বাকি এক হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে এজাতীয় কোনো রিঅ্যাক্টর চিন থেকেও কেনা সম্ভব নয়। এমনকি তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে মানসম্পন্ন যন্ত্রাংশ কিনতেও খরচ হওয়ার কথা চার হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার।৪.এ ধরনের উচ্চ প্রযুক্তির জটিল প্রকল্প চালানোর মতো কারিগরি জ্ঞান বাংলাদেশের নেই। সর্বোপরি, দেশটির কোনো ইন্ডাস্ট্রিয়াল অবকাঠামো নেই এবং যোগাযোগব্যবস্থাও প্রাথমিক পর্যায়ের। পরমাণু কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো, যেমন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্টেইনলেস স্টিল, পাইপ, ভাল্ব, পাম্প ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি অবশ্যই আমদানি করতে হবে এবং এর খরচ হবে অতিশয় বেশি।৫.এ ধরনের জটিল ও বহুমাত্রিক প্রকল্প গ্রহণের মতো উপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ও তদারকি সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। এর ফলে প্রকল্পের নিরাপত্তার মান দারুণভাবে ঘাটতিতে পড়বে। এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী দাবি করেছেন যে রাশিয়া বাংলাদেশকে পরমাণু কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। অথচ রুশ কোম্পানি রোসাটম (রিঅ্যাক্টর বিক্রেতা) সঠিকভাবেই জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব লাইসেন্স যার তার (এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ)। মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ পরমাণু রিঅ্যাক্টরের লাইসেন্সের নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত নয়।৬.দৃশ্যত, তেজস্ক্রিয় উপাদান এবং তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সংরক্ষণ, পরিবহন ও অপসারণের কারিগরি দিকগুলো নিয়ে বাংলাদেশের কোনো মাথাব্যথা নেই। সরকার বলেছে, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সব রাশিয়ায় পাঠানো হবে। কিন্তু রাশিয়া জানিয়েছে, এ ধরনের কোনো চুক্তি তাদের সঙ্গে হয়নি।এসব সীমাবদ্ধতা ও সমাধানহীন বাধার কারণে বাংলাদেশ সরকারের উচিত এখনই এই প্রকল্প বাতিল সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা। একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোয় অব্যবস্থা মানে পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটানোর সমূহ সম্ভাবনা। তা যদি ঘটে, তাহলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। এটা চিন্তা করাও এক ভয়ের ব্যাপার: লাখ লাখ না হলেও হাজার হাজার মানুষ উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়ার শিকার হবে। বিপুল পরিমাণ আবাদযোগ্য জমিতে তেজস্ত্রিয় পদার্থের সংক্রমণ ঘটবে এবং বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণের দায়ভারে দেশটি ভারাক্রান্ত হবে। জার্মানি, ইতালি, সুইজারল্যান্ডের মতো অগ্রসর দেশ যেখানে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ধারণা ত্যাগ করেছে এবং ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর জাপানের সঙ্গে একযোগে পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন কমিয়ে আনছে, সেখানে বাংলাদেশ দায়িত্বহীনভাবে বিপদের দিকে পা বাড়াচ্ছে। সামর্থ্য, বিচক্ষণতা ও জ্ঞান ছাড়া বিরাট আশা অর্থহীন হতে বাধ্য।ভয়েস ফর জাস্টিসের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন:আনিসুর রহমান, হাসনাত এম হুসাইন, হোসেন জিল্লুর রহমান, পিটার কাস্টার্স, এজাজুর রহমান, আতাউর রহমান, সাদিকুর রহমান, জাকিয়া রহমান, হাসান মাহমুদ, দিলরুবা জেড আরা, অধ্যাপক কামরুল হায়দার, বনি আমিন, আনসার করিম খান, অধ্যাপক এম এ কাইয়ুম, সতীশ কাপুর, জগলুল হুসাইন, গুলজার আহমেদ, এনামুল মজিদ চৌধুরী, অলিয়ার হোসাইন, ফুয়াদ মুকাররাম মুনাওয়ার আলি, শহিদা হোসাইন, ইদু মিয়া, আদিব হুসাইন, মহিদুর রহমান, আহমদ আবদুল্লাহ ও রিয়াজ তালুকদার। লেখকেরা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, চিকিৎসক, শল্যবিদ ও পেশাজীবী।
নির্বাচনে কেবল প্রার্থীর বিজয়েই গণতন্ত্রের বিজয় হয় না, ভোটের সার্থকতা আসে না। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেউ জিতবেন, কেউ হারবেন। যিনিই জিতুন, শান্তিপূর্ণ ও অবিতর্কিত নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপিত না হলে দলের জয় গণতন্ত্রের জয় বলে প্রতিষ্ঠিত হবে না।সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলভিত্তিক না হলেও দলীয়ভাবে বিভাজিত পরিবেশে এই নির্বাচনের রাজনৈতিক তাৎপর্য অবশ্যই রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রধান দুই প্রার্থীর গর্হিত-অগর্হিত উপায়ে রাজনৈতিক মিত্র খোঁজার চেষ্টার মধ্যে জাতীয় রাজনীতির ছায়া পড়তে দেখা গেছে। গাজীপুরের নির্বাচনী সমীকরণকে অনেকে আগামী দিনে সংসদ নির্বাচনের সমীকরণ হিসেবেও দেখছেন। কিন্তু একটি বিষয় ভুললে চলবে না যে গাজীপুরের নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতির চাপে এই নির্বাচনের স্থানীয় বৈশিষ্ট্যকে যেন প্রভাবিত করা না হয়। তাই সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে পারা এবং স্বচ্ছভাবে ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে। জয়-পরাজয় যাঁরই হোক, নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে পরাজিত হলে চলবে না।ইতিমধ্যে রেওয়াজ অনুযায়ী বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার বিবিধ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার ধরনের মধ্য দিয়েই এসব অভিযোগের সত্যিকার গুরুত্ব নির্ণিত হবে। কিন্তু তার আগে নির্বাচন কমিশনকেই দেখতে হবে, অভিযোগগুলোর বাস্তব কোনো ভিত্তি রয়েছে কি না। ইতিমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি কমবেশি লঙ্ঘন করেছেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে দুই রাজনৈতিক জোট-সমর্থিত প্রার্থীরাই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। সেগুলো আমলে নিয়ে দরকারমতো ব্যবস্থা নেওয়া চাই। দিনের শেষে যেন প্রমাণিত হয়, ভোটারদের উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সদিচ্ছায় কলঙ্কহীন নির্বাচন হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে যিনিই জিতুন না কেন, সুষ্ঠু নির্বাচনই হবে নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন সরকারের নৈতিক বিজয়।গাজীপুরে কাল শনিবার ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোট গ্রহণের দিন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের যেকোনো ঘটনা প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশনের কঠোরতা প্রত্যাশিত। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট গাজীপুরে সেনা মোতায়েনের দাবি করলেও নির্বাচন কমিশন তার প্রয়োজন দেখছে না। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেভাবে বড় ধরনের উপদ্রব ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে, গাজীপুরেও তেমনটা ঘটাই বাঞ্ছনীয়। কেউ আইন অমান্য করলে দলমত-নির্বিশেষে তাকে আইনের আওতায় নিতে হবে। নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্যও এটা এক পরীক্ষা। নিরপেক্ষতার বাধ্যবাধকতা তাঁদেরও কারও থেকে কোনো অংশে কম নয়। নির্বাচন কমিশনকে ভবিষ্যতের স্বার্থেই এ ব্যাপারে নিষ্ঠাবান হতে হবে।
ঢাকার সাভার পৌরসভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে কার্পেটিং না করেই ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার ১৭১ টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদারেরা। পুরো কাজ না করেই ‘উন্নয়ন’ কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় মাটি, বালু ও খোয়া উঠে সৃষ্টি হয়েছে হাজারো খানাখন্দ। গর্তে ভরা সড়ক দুটিতে এখন হেঁটে চলাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।বেহাল ওই সড়ক দুটি হলো রেডিও কলোনি থেকে নামাবাজার ও রাবেয়া ক্লিনিক থেকে আমতলী। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী সাভার পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন করে সড়ক দুটির ‘উন্নয়ন ব্যয়’ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।উন্নয়নের নামে পুরো টাকাই সরকারের অপচয় হয়েছে বলে মনে করেন সাভার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খোরশেদ আলমসহ একাধিক কাউন্সিলর ও এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় পৌরসভার বরখাস্ত হওয়া মেয়র রেফাত উল্লাহর দুর্নীতির কারণেই এই অপচয় হয়েছে।সাভারের প্রধান পাইকারি বাজার নামাবাজারের ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, বাজারের কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর মালামাল পরিবহনের ভরসা রেডিও কলোনি-নামাবাজর সড়ক। অথচ গত সাড়ে চার বছরেও সড়কটির কোনো উন্নয়ন বা সংস্কার হয়নি। এ কারণে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বড় বড় গর্তে পানি জমে থাকায় প্রায় প্রতিদিনই পণ্যবাহী ট্রাক আটকে বিকল হয়ে পড়ছে।একই অবস্থা রাবেয়া ক্লিনিক থেকে আমতলী সড়কের। দুটি সড়ক সংস্কারে কাজ শুরু করেছিল পৌরসভা। এ ব্যাপারে গত মে মাসে পৌরসভার বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে একাধিকবার তথ্য চাওয়া হয়। কিন্তু রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নির্বাহী প্রকৌশলী গ্রেপ্তার হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে কোনো তথ্য দেননি। পরে তথ্য অধিকার আইনে সড়ক দুটির উন্নয়ন-সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে ২৭ মে পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হলে ৬ জুন তথ্য সরবরাহ করা হয়।এ প্রসঙ্গে পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা ছিল না। আপনার আবেদনের পর এ আইন বিষয়ে অবগত হয়েই তথ্য প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।’পৌরসভার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রেডিও কলোনি-নামাবাজার সড়কের উন্নয়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় গত ৩ এপ্রিল। মাটি, বালু, খোয়ার কাজসহ কার্পেটিং করার জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৭৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৪ টাকা। কাজটি পায় মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজ। চুক্তি অনুযায়ী ৫৫ ভাগ সমাপ্ত করার পর ঠিকাদারকে ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৮১ টাকা বিল দেওয়া হয়। এরপর আর কোনো কাজ হয়নি।রাবেয়া ক্লিনিক থেকে আমতলী পর্যন্ত সড়কের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রায় ২০০ গজ দীর্ঘ সড়কের মাটি, বালু, খোয়া আর কার্পেটিং কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১১ সালের ৭ জুলাই। মেসার্স শিকদার এন্টারপ্রাইজ কাজটি পায়। ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৯ লাখ ৮৫ হাজার ২১৪ টাকা। ৫৬ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ঠিকাদারকে ২২ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯০ টাকা বিল দেওয়া হয়। এরপর আর কাজ হয়নি।পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ জানায়, কাজ শুরুর পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আংশিক কাজের জন্য বিল চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদন পেয়ে কাজ বুঝে নেওয়ার পর ওই পরিমাণ কাজের বিল প্রদানের সুপারিশ করা হলে মেয়র অনুমোদন করেন। এরপরই বিল পান ঠিকাদারেরা।সম্প্রতি সড়ক দুটিতে একাধিকবার গিয়েও উন্নয়নকাজের কোনো নমুনা দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে কাউন্সিলর খোরশেদ আলম বলেন, মাস দুয়েক আগে রেডিও কলোনি-নামাবাজার সড়কের রেডিও কলোনি থেকে খ্রিষ্টান মিশনারিজ পর্যন্ত প্রায় ১৫০ গজ এলাকায় আগের কার্পেটিং তুলে মাটি, বালু ও খোয়ার কাজ করা হয়। রাবেয়া ক্লিনিক থেকে আমতলী পর্যন্ত সড়কেও মাটি, বালু আর খোয়ার কাজ ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি। এসব করতে গিয়ে যে টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, তার পুরোটাই অপচয় হয়েছে। দুটি সড়কে কার্পেটিং না করায় মাটি, বালু ও খোয়ার কাজ বিনষ্ট হয়ে স্থানে স্থানে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কাউন্সিলর অভিযোগ করেন, রেফাত উল্লাহর দুর্নীতির কারণেই সড়ক দুটির এ অবস্থা হয়েছে। সামান্য কাজ হওয়ার পর কাগজে-কলমে সিংহভাগ কাজ শেষ দেখিয়ে এ দুর্নীতি করা হয়েছে।ঠিকাদারের বক্তব্য: হাসান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আলী হাসান বলেন, ‘৫৫ ভাগ কাজ হওয়ার পর সড়কটি অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় নেওয়ার কথা বলে রেফাত উল্লাহ কাজ বন্ধ করে দেন। পরে আমাকে ওই পরিমাণ কাজের বিল দেওয়া হয়।’ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, কার্পেটিং করতে না দেওয়া, বৃষ্টির মধ্যে যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কে খানাখন্দ হয়েছে। এ কারণে কাজের অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে না। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সত্য নয়।মেসার্স শিকদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এ টি এম নূরুল আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।পৌরসভার বক্তব্য: রেফাত উল্লাহ পলাতক থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান কবীর বলেন, কার্পেটিং না করায় খোয়া ও বালু সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক দুটির ৫৫ ও ৫৬ ভাগ কাজ শেষ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন প্রমাণ করা দুষ্কর।’ দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্যই কাজ বন্ধ করা হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বলতে পারবেন রেফাত উল্লাহ।’
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় রাতের নাশতা খেয়ে ৫০০ শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় তাঁদের সহকর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন।এর আগে আশুলিয়ায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় নাশতা খেয়ে ও পানি পান করে পরপর তিন দিন শ্রমিকেরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর আগে গাজীপুরের আরও কয়েকটি ঘটনায় পানি পান করে ও নাশতা খেয়ে কয়েক দফা শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটে। সফিপুর মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আল আমিন জানান, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ জানায়, উপজেলার তেলিরচালা এলাকার সেজাদ সোয়েটার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে টিফিন দেওয়া হয়। টিফিনে ছিল ডিম, রুটি, পেটিস ও কলা। টিফিন খেয়ে শ্রমিকেরা যথারীতি কাজে যোগ দেন। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর রাত সাড়ে আটটার দিকে কয়েকজন শ্রমিকের বমি ও পেটের ব্যথা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে পুরো কারখানার শ্রমিকেরা অসুস্থ হতে থাকেন।পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ দ্রুত যানবাহনের ব্যবস্থা করে তাঁদের সফিপুর জেনারেল হাসপাতাল, সফিপুর মডার্ন হাসাপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করে। বাসি-পচা খাবার দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে এবং খাবার সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা শান্ত হন।সফিপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি শ্রমিক জাকির হোসেন ও আসমা আক্তার জানান, টিফিন খাওয়ার সময় ডিম ও কেক থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। এ কারণে অনেকেই ওই খাবার খাননি। তবে বেশির ভাগ শ্রমিক ওই খাবার খেয়েছেন। কারখানার সহকারী উৎপাদন কর্মকর্তা (এপিএম) বছির উদ্দিন বলেন, টিফিনগুলো যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কারখানায় সরবরাহ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ আজহারুল ইসলাম জানান, শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া কারখানা কর্তৃপক্ষকে খাদ্য সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মিসরের সামরিক বাহিনী দেশটির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে অপসারণ করেছে। অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পথে যাত্রা শুরুর এক বছরের মাথায় দেশটির সামরিক বাহিনী সংবিধান স্থগিত করেছে এবং সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালতের প্রধান আদলি মানসুরকে রাষ্ট্রপ্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। মুরসি সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাপক জনবিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনী এই পদক্ষেপ নিলেও নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার এই পদক্ষেপ সামরিক অভ্যুত্থান ছাড়া কিছু নয়।এ কথা সত্য যে মুরসি ৫২ শতাংশ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের প্রত্যাশা পূরণে তাঁর সরকারের ব্যর্থতা অনেক। ২০১১ সালে স্বৈরশাসক মোবারককে উৎখাতের গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব পক্ষের সঙ্গে মিলিতভাবে দেশ পরিচালনায় উদ্যোগী না হয়ে প্রেসিডেন্ট মুরসি শুধু তাঁর নিজ সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক স্বার্থ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থেকেছেন। মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের তথাকথিত ‘ইসলামি শাসন’ প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রয়াস দেশটির যুব ও নারীসমাজের শিক্ষিত, আধুনিক, উদারপন্থী অংশের সমর্থন পায়নি।রাষ্ট্রের পরিচালক হিসেবে প্রেসিডেন্ট মুরসির অদক্ষতা ও স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা বেশ সমালোচিত হয়েছে। মিসরের দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা মুরসির এক বছরের শাসনকালে আরও দুর্বল হয়েছে। ২০১১ সালে বেকারত্বের হার যেখানে ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১২ সালের শেষ প্রান্তিকে তা বেড়ে হয় ১৩ শতাংশ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মুরসি সরকার থামাতে পারেনি। সামনে রমজান মাস, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে বিদ্যুতের সংকট। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশীদারত্বমূলক মনোভাবের অভাব এবং অর্থনীতিসহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় প্রত্যাশিত উন্নতি সাধনে ব্যর্থতা—এ দুই মিলিয়ে মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে বিপুল জনবিক্ষোভের বিষয়টি বোধগম্য।কিন্তু এসব ব্যর্থতা সত্ত্বেও মুরসি ছিলেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, সামরিক হস্তক্ষেপে তাঁকে ও তাঁর সরকারকে অপসারণের ঘটনা মিসরের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এক বিরাট ছন্দপতন। উদ্বেগের বিষয়, বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে দেশটি গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে। তাই সব রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে আলোচনা-সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। যত তাড়াতাড়ি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, ততই মঙ্গল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত হোক। মিসরে শান্তি ও গণতন্ত্র ফিরে আসুক।
দুর্ঘটনার পর একটি বাসকে থামানোর সংকেত দিয়েছিলেন হাইওয়ে পুলিশের এক সদস্য (কনস্টেবল)। কিন্তু চালক উল্টো ওই পুলিশ সদস্য ও এক রিকশাচালকের ওপর বাস উঠিয়ে দেন। এতে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান দুজন। আহত হয়েছেন আরও তিনজন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে ঢাকার আশুলিয়ার নবীনগরে ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-কালিয়াকৈর মহাসড়কের সংযোগস্থলে এ ঘটনা ঘটে।নিহত ব্যক্তিরা হলেন সাভার হাইওয়ে থানার পুলিশের সদস্য সোহরাব হাসান (৫০) ও রিকশাচালক মিজানুর রহমান (২৩)। সোহরাব টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পাঁচ বেশইল গ্রামের রজব আলীর ছেলে। মিজান নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার নজুমুদ্দিনের ছেলে।ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশ বাসসহ চালক আবদুল করিমকে (৪০) আটক করে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্ঘটনাজনিত হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।আশুলিয়া থানার পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নওগাঁ থেকে ঢাকাগামী একটি বাস গতকাল বেলা একটার দিকে নবীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি ব্যক্তিগত গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য সোহরাব বাসটিকে থামার সংকেত দেন। কিন্তু চালক সংকেত না মেনে সোহরাবকে চাপা দিয়ে বাসটি একটি রিকশার ওপর তুলে দেন। এতে সোহরাব, মিজান ও রিকশার তিন যাত্রী আহত হন।বাসস্ট্যান্ডে কর্তব্যরত পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন সোহরাবকে সাভারে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইস) এবং মিজানকে নবীনগরে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।এর আগে গত বুধবার ঢাকার ধামরাই উপজেলার ইসলামপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ট্রাকের চাপায় একই পরিবারের চার সদস্য ও অটোরিকশার এক চালক নিহত হন। এর আগের দিন মঙ্গলবার সকালে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাসের চাপায় পুলিশ সদস্য হাবিবুর রহমান (৫৫) নিহত হন।
মিসরের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি আদলি মানসুর। গতকাল জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি রূপরেখা ঘোষণা করেছেন দেশটির সেনাপ্রধান সিসি। এর আগে ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে গত বুধবার প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। স্থগিত করা হয় দেশের সংবিধান। অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আদলি মানসুরের শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালতে। শপথে তিনি বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের নিয়মনীতি রক্ষা, সংবিধান ও আইনের প্রতি সম্মান এবং দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করব।’ এদিকে ব্রাদারহুডসহ দেশটির বিভিন্ন ইসলামি দল ও গোষ্ঠীর একটি জোট আজ দেশজুড়ে ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের’ ডাক দিয়েছে।শপথ নেওয়ার পর দেশে একটি কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আদলি মানসুর। তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেওয়ার জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত মুরসির রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ফ্রিডম পার্টিকেও এই সরকারে রাখা দরকার বলে তিনি মত দিয়েছেন।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মুসলিম ব্রাদারহুড এ দেশের জনগণেরই অংশ। জাতি গঠনের নতুন উদ্যোগে তাদেরও অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তারা যদি এই আহ্বানে সাড়া দেয়, তাহলে তাদের স্বাগত জানানো হবে।’ তবে মুসলিম ব্রাদারহুড এই আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেছে।মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আরব বসন্তের সময় মিসরে ব্যাপক গণ-আন্দোলনের মুখে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পতন ঘটে তিন দশকের শাসক হোসনি মোবারকের। এরপর বছর খানেক ক্ষমতায় ছিলেন ত ৎকালীন সেনাপ্রধান মোহাম্মদ হুসেন তানতাওয়ি। গত বছরের জুনে তাঁর অধীনে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হন মুরসি। চলতি সপ্তাহেই তাঁর ক্ষমতার মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হয়েছিল।কিন্তু প্রেসিডেন্ট মুরসি দায়িত্ব নিয়ে তাঁর ক্ষমতা আরও বাড়াতে এমন কিছু পদক্ষেপ নেন, যাতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় মিসরের জনগণ। ক্ষোভ থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ। একপর্যায়ে তাঁর পদত্যাগ চেয়ে আবার রাজপথে নামে জনগণ। শুরু হয় সহিংসতা। সাম্প্রতিক সময়ে বিক্ষোভ-সহিংসতা ব্যাপক আকার ধারণ করায় বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য গত সোমবার মুরসিকে দুই দিন সময় বেঁধে দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। তা করতে ব্যর্থ হলে তাঁকে পদত্যাগের আহ্বান জানান সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।গত বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে ওই ৪৮ ঘণ্টা সময় শেষ হয়। এর আগে রাজপথে অবস্থান নেয় সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষ। দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় উদ্বেগ-উ ৎকণ্ঠা। ৪৮ ঘণ্টা সময় শেষ হওয়ার পরপরই সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন মুরসি। কিন্তু সেনাবাহিনী ততক্ষণে তাদের কর্মপন্থা ঠিক করে ফেলে। রাস্তায় নেমে আসে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান। সন্ধ্যার পর সেনাপ্রধান সিসি মুরসিকে জানিয়ে দেন, তিনি আর দেশের প্রেসিডেন্ট নেই। এই খবরে উল্লাসে ফেটে পড়ে সরকারবিরোধীরা। বিখ্যাত তাহরির স্কয়ারসহ বিভিন্ন জায়গায় রাতভর উল্লাস করে সাধারণ মানুষ।মিসর বিমানবাহিনীর জেট বিমান গতকাল সকালে রাজধানী কায়রোর আকাশে মহড়া (ফ্লাই পাস্ট) দেয়। জনগণের ইচ্ছার বিজয় হওয়ায় তারা এই আয়োজন করে।নতুন সরকারের পরিকল্পনা: মুরসিকে উ ৎখাতের পর গতকাল জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি রূপরেখা ঘোষণা করেন সেনাপ্রধান সিসি। এই রূপরেখা অনুযায়ী, সংবিধান সংশোধনের জন্য সমাজের সব অংশের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে।পরিকল্পনা অনুযায়ী, গতকালই অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট শপথ নিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় প্রয়োজনীয় ডিক্রি জারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সাংবিধানিক আদালতের প্রধানকে। অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।ব্রাদারহুডের নেতাদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা: নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রধান নেতা মোহাম্মদ বাদিয়েকে গতকাল গ্রেপ্তার করেছে দেশটির মিলিটারি পুলিশ। উপপ্রধান খয়রাত আল-শাতেরেসহ ব্রাদারহুডের অন্যান্য প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়না জারি করা হয়েছে। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসির দল জাস্টিস অ্যান্ড ফ্রিডম পার্টির তাত্ত্বিক পরামর্শদাতা সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড।আদালতের একটি সূত্র জানায়, কায়রোর দক্ষিণাংশে মোকাত্তম এলাকায় মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রধান কার্যালয়ের সামনে গত সোমবার বিক্ষোভকারীদের হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে মোহাম্মদ বাদিয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়।একটি বিচার বিভাগীয় সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, বিচার বিভাগকে অবমাননা করার অভিযোগে মুরসিসহ ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতাদের সরকারি অভিযোক্তারা সোমবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করবেন। এর মধ্যে ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির প্রধান মোহাম্মদ সাদ আল-কাতাতনিও রয়েছেন। গত বুধবার সাদ আল-কাতাতনিকে গ্রেপ্তার করা হয়।ব্রাদারহুডের বিক্ষোভ আজ: ব্রাদারহুডসহ দেশটির বিভিন্ন ইসলামি দল ও গোষ্ঠীর একটি জোট আজ শুক্রবার দেশজুড়ে ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের’ ডাক দিয়েছে। অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মুরসিকে সেনাবাহিনীর উ ৎখাতের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। দ্য ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স টু সাপোর্ট লেজিটিমেসি নামের ওই জোটের তরফে বলা হয়, বৈধ সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উ ৎখাতের প্রতিবাদে এবং প্রেসিডেন্ট মুরসির বৈধতার সমর্থনে মিসরের সব প্রদেশে আজ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে।স্যালভেশন ফ্রন্টের প্রতিবাদ: ব্রাদারহুডের নেতাদের গ্রেপ্তার এবং তাঁদের গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশটির উদারপন্থী ও বামপন্থী দলগুলোর প্রধান জোট ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্ট। গতকাল ফ্রন্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সব রাজনৈতিক পক্ষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নিজস্ব দল গঠনের অধিকারে বিশ্বাস করি।’ বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স।
মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার পৌলী গ্রামের বান্দুটিয়া-পৌলী সড়কে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিকআপ ভ্যান উল্টে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। নিহত ছাত্রের নাম সুকুমার সরকার (১৪)। ফুটবল খেলা শেষে তারা ওই ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিল।সুকুমার জেলার সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের দাশপাড়া গ্রামের সুনীল সরকারের ছেলে। সে স্থানীয় ধানকোড়া গিরীশ চন্দ্র ইনস্টিটিউশনের অষ্টম শ্রেণীতে পড়ত। আহতরা সবাই দাশপাড়া গ্রামের ছেলে।এর আগে ২০১১ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় ফুটবল খেলা দেখে ট্রাকে করে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকটি রাস্তার পাশের ডোবায় পড়ে যায়। এতে ৪৩ ছাত্রসহ ৪৪ জনের মৃত্যু হয়।আহত প্রকাশ সরকার জানায়, গতকাল বিকেলে পৌলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে দাশপাড়া ও পৌলী গ্রামের কিশোরদের মধ্যে ফুটবল খেলা ছিল। খেলা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে একটি পিকআপ ভ্যানে উঠে দাশপাড়া গ্রামের ছেলেরা বাড়ি ফিরছিল। গাড়ি ছাড়ার কিছুক্ষণ পর পৌলী মোড় এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে জায়গা দিতে গিয়ে পিকআপ ভ্যানটি উল্টে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এতে পিকআপের নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয় সুকুমার। এ ছাড়া কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। আহতদের মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুকুমারকে মৃত ঘোষণা করেন।সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বদরুল আলম বলেন, আহতদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত পিকআপ ভ্যান জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছেন।
আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন স্থাপন ও আখাউড়া-লাকসাম রেলপথে দ্বিতীয় (ডাবল) রেললাইন নির্মাণ করতে আখাউড়ায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ না করার দাবি জানানো হয়েছে। উপজেলার কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা, দুটি বাজার ও প্রায় ৯০০ বছরের পুরোনো একটি মন্দির পরিচালনা কমিটি যৌথভাবে এই দাবি জানায়।ওই দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রামবাসী আখাউড়া রেলস্টেশন এলাকায় মানববন্ধন ও মিছিল করেন। পরে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও আখাউড়া রেলজংশনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে রেলমন্ত্রীর কাছে সঞ্চারকলিপি দেওয়া হয়।আখাউড়া জংশনের পূর্ত বিভাগ জানায়, আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন স্থাপন ও আখাউড়া-লাকসাম দ্বিতীয় রেলপথ নির্মাণ করতে রেলওয়ে সম্প্রতি রেলপথের দুই পাশের জমি অধিগ্রহণের জন্য মাপজোক ও সীমানা চিহ্নিত করে। রেলওয়ের একটি প্রকল্প থেকে এই কাজটি করা হচ্ছে।আখাউড়ার রাধানগর, চন্দনসার, দেবগ্রাম, বড় বাজার, লাল বাজার, মোগড়া বাজার ও মোগড়া দশভুজা মন্দির পরিচালনা কমিটির লোকজনের স্বাক্ষর করা স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় রেলপথ নির্মাণে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। আখাউড়া জংশন এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মূল লাইনের বাইরে পূর্ব ও পশ্চিম পাশে আরও তিনটি রেলপথ রয়েছে। ওই পথের দুই পাশে রেলওয়ের নিজস্ব ভূমি আছে। এর বাইরেও রেলওয়ে রেলপথের দুই পাশে আরও ২০০ ফুট জায়গা অধিগ্রহণের জন্য লাল কালি দিয়ে দাগ দিয়েছে।স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, রেলওয়ে জমি অধিগ্রহণের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তাতে আখাউড়ার তিনটি খাদ্য গুদাম, ৯০০ বছরের ঐতিহাসিক মন্দির, ব্রিটিশ ঐতিহ্যের বাংলো, মসজিদ ভেঙে ফেলতে হবে এবং গ্রামগুলোর কয়েক শ পরিবার ঘরবাড়ি হারাবে।চন্দনসার গ্রামের বাসিন্দা জহর লাল সাহা প্রথম আলোকে বলেন, রেলওয়ে ভূমি অধিগ্রহণের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা বিলাসিতা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত জায়গা অধিগ্রহণ করা হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া রেলজংশনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘রেলওয়ের ঢাকার একটি প্রকল্প থেকে দ্বিতীয় রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। তবে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো চিঠি আসেনি।’
আদালত থেকে ঢাকার নবাবগঞ্জ থানায় নেওয়ার পথে রিমান্ডের এক আসামি হাতকড়া পরা অবস্থায় পুলিশের গাড়ি থেকে পালিয়েছেন। গত বুধবার রাত আটটার দিকে নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলাবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আসামি রবিন হোসেনকে (২২) গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার উপজেলার দুর্গাপুর এলাকা থেকে মাদক বিক্রি ও বহনের সময় পুলিশ রবিনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার পুলিশ ওই পাঁচজনকে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাইলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ করিম জানান, আসামিদের মাইক্রোবাসে করে আদালত থেকে আনা হচ্ছিল। ওই সময় গাড়িতে পুলিশের তিন সদস্য ছিলেন। আসামি রবিন ছিলেন দরজার পাশে। রাত আটটার দিকে মাইক্রোবাসটি আগলাবাজারে যানজটে আটকা পড়ে। তখন রবিন হঠাৎ গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে পালিয়ে যান। রবিনকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক দল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও তাঁর সন্ধান পায়নি বলে জানান ওসি।
বিএনপি ৬: আওয়ামী লীগ ২। গত তিন বছরে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোর ফলাফল এই। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর একমাত্র নির্ভেজাল বিজয় ছিল ২০১২ সালে রংপুর সিটি কপোরেশন নির্বাচনে। বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন ২০১০ সালে চট্টগ্রাম ও ২০১২ সালে কুমিল্লায়। অন্যদিকে গত বছর নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে জিততে পারেননি বড় দুই দলের সমর্থিত প্রার্থীদের কেউই। সেলিনার বিজয় আওয়ামী লীগেরই বিজয় হিসেবে দেখলে সিটি করপোরেশনগুলোতে তাই আওয়ামী লীগের ফলাফল তেমন হতাশাব্যঞ্জক ছিল না। কিন্তু গত মাসে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট আর বরিশালের সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর অবস্থার বড় পরিবর্তন ঘটেছে। এতে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার ব্যবধান প্রকট হয়ে উঠেছে। আগামীকাল গাজীপুর নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা তেমন উজ্জ্বল নয়। এসব নির্বাচনের ফলাফলকে কীভাবে দেখছে বা দেখবে আওয়ামী লীগ? কী প্রভাব ফেলতে পারে এসব নির্বাচন আগামী দিনের রাজনীতিতে? আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের চিন্তাভাবনার কোনো পরিবর্তন কি হবে এতে?উন্নত গণতন্ত্রে সরকারের মেয়াদের মধ্য বা শেষভাগে নির্বাচনে পরাজয় কিংবা বিভিন্ন জরিপে জনপ্রিয়তা হারানোর স্পষ্ট আলামত দেখে আগাম নির্বাচন দেওয়ার নজির রয়েছে। আমাদের দেশে আপাতত ঘটছে উল্টো ঘটনা। চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভরাডুবির পর বরং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার প্রতিজ্ঞা আবারও জোরেশোরে প্রকাশ করা হচ্ছে। এমনকি আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন না দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে।নির্বাচনের ফলাফল কী বার্তা প্রদান করছে, তা নিয়েও আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্যদের মতভেদ রয়েছে। এসব ফলাফল হেফাজত বা কট্টর ইসলামপন্থীদের উত্থান হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। অন্যদিকে এসব নির্বাচনে বিপর্যয় সরকারের প্রতি ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হিসেবেও দেখা হচ্ছে। যে ব্যাখ্যাই সত্যি হোক, এসব নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের জন্য সুখকর নয়। বরং এটিকে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যাপক পরাজয়ের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা যেতে পারে। যদি তা-ই হয়, তাহলে নিতান্ত বাধ্য না হলে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার ঝুঁকি গ্রহণ করবে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগের এই মনোভাবকে সংসদ নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টা হিসেবে দেখলে বিএনপি তা সর্বাত্মকভাবে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবে বলে ধারণা করা যায়। সার্বিক বিবেচনায় তাই সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনের ফলাফল আগামী দিনের রাজনীতিকে আরও সংঘাতময় করে তুলতে পারে।২.চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় সম্ভবত দলটির জন্য অভাবিত ছিল। ঢাকায় নিশ্চিত পরাজয়ের আশঙ্কা রয়েছে, এমন চিন্তা থেকে ঢাকায় নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে না বলে একটি ধারণা রাজনৈতিক মহলে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে চারটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে পরাজয়ের বড় ঝুঁকি রয়েছে, এমন চিন্তা থাকলে সরকারের পক্ষে নির্ধারিত মেয়াদের আগে এসব জায়গায় নির্বাচন দেওয়ার কথা ছিল না। প্রার্থীদের যোগ্যতা এবং গত নির্বাচনগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে এসব জায়গায় আওয়ামী লীগের পরাজয়ের ঝুঁকিও তেমন ছিল না। কিন্তু তার পরও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা গণহারে হেরেছেন চারটি নির্বাচনে। গাজীপুরে একই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি।গাজীপুরে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে এগিয়ে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান বহু বছর ধরে টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষিত, গণমুখী ও কর্মোদ্যমী মানুষ হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক কোনো অভিযোগও নেই। তুলনায় বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এবং তারও আগে কলেজে শিক্ষকতাকালে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া অঞ্চলগত হিসেবেও গাজীপুর বহু বছর ধরে আওয়ামী লীগের সুশক্ত ঘাঁটি। এসব বিবেচনায় গাজীপুরে আজমত উল্লার বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার পরও তাঁর বিজয় নিয়ে বিরাট সংশয় সৃষ্টি হয়েছে দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগ সরকারের নানা ব্যর্থতার কারণে।সদ্য সমাপ্ত চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা, বিশেষ করে বরিশালের প্রার্থী শওকত হোসেন ব্যক্তিগতভাবে জনপ্রিয় ছিলেন, এলাকার উন্নয়নে তিনি বহু কাজ করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে তাঁদের সরকারের অজনপ্রিয়তার বোঝা বহন করতে হয়েছে, তাঁদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে তাই এটিকে দায়ী করা হচ্ছে। হতে পারে যে সরকারের নির্মম আচরণে ক্ষুব্ধ হেফাজতের কর্মীরা উদ্যোগী হয়ে এসব পরাজয়ে ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু হেফাজতের উত্থানের আগেও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় প্রার্থীরা দুটো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবং আরও বহু স্থানীয় (উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। তখন এসব পরাজয়ের মূল কারণ হিসেবে অ্যান্টি-এনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর অর্থাৎ দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার কারণে সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভকে দায়ী করা হয়েছিল। অ্যান্টি-এনকাম্বেন্সি বাংলাদেশের রাজনীতিতে কতটা প্রকট, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে গত দুটো সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি।অ্যান্টি-এনকাম্বেন্সির ভয়াবহতা হচ্ছে এটি চক্রবৃদ্ধি হারে বিস্তার লাভ করে। সুশাসনের অভাব ও সন্ত্রাস-দুর্নীতির কারণে বর্তমান সরকারের প্রতিও মানুষের ক্ষোভ দিনকে দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক বছরে হল-মার্ক, রেলে ঘুষ কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতুসহ নানা দুর্নীতি, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাস, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগে সরকারের জনপ্রিয়তা আরও হ্রাস পেয়েছে বলে ধারণা করা যায়। গাজীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় ঘটলে তা সরকারের জনবিচ্ছিন্নতার আরেকটি বড় প্রমাণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে গাজীপুরে হেফাজতের একটি অংশ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে, এখানে দলটির প্রার্থী তুলনামূলক যোগ্য এবং জনপ্রিয়, গাজীপুরও ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। আজমত উল্লা পরাজিত হলে এবং তাঁর ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীরের মোট ভোট বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নানের চেয়ে কম হলে নির্বাচনের ফলাফলকে তাই আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আরেকটি রেড কার্ড হিসেবে দেখার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অন্যদিকে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ স্বল্প ব্যবধানে জিতলে আগের চারটি নির্বাচনে পরাজয়ের কারণে তা যতটা না সরকারের, তার চেয়ে বেশি প্রার্থী আজমত উল্লার ব্যক্তিগত বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং এতে গত সংসদ নির্বাচনের মতো বিশাল ব্যবধানে জিতলেই কেবল আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী তার জনপ্রিয়তায় ধস নামছে বলে যে প্রচারণা চলছে, তার জবাব দিতে পারবে। এই সম্ভাবনা আছে বলে মনে হচ্ছে না। গাজীপুরে আওয়ামী লীগের অর্জনের সম্ভাবনার চেয়ে বরং হারানোর আশঙ্কা বেশি।৩.জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সিটি করপোরেশন ভোটের হিসাবে সবচেয়ে বড় নির্বাচন। সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে জনমতের প্রতিফলন হিসেবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে এর প্রভাব।গাজীপুরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলেও নয়টি নির্বাচনে তার সাফল্য হবে বিএনপির অর্ধেক। এই ফলাফল আওয়ামী লীগের জন্য যথেষ্ট স্বস্তিকর হতে পারে না। কেয়ারটেকার বা বিরোধী দলের মনঃপূত সর্বদলীয় সরকার তারা মেনে নিলে সংসদ নির্বাচনের আগে এটি বিএনপির আরেকটি বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং নির্বাচনকালে বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টিতে তা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ এসব দাবি না মেনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার প্রশ্নে আরও অনড় হবে বলে ধারণা করা যায়।আওয়ামী লীগের সামনে রাস্তা থাকবে দুটো। প্রথমটি হচ্ছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জনরায়কে সম্মান করে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে জনমতকে মেনে নিয়ে সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতায় আসা। এটি করলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে পরাজিত হলেও বিজয়ী হবে গণতন্ত্র। আওয়ামী লীগের অন্য অপশন হচ্ছে ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি এড়াতে পছন্দমতো একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা বা এমনকি নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করা। সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর পর নির্বাচন না হলে সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সুযোগ রয়েছে। এটি করলে বা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ আপাতত বিজয়ী হতে পারে, কিন্তু গণতন্ত্র পরাজিত, এমনকি বিপন্ন হবে এতে। আওয়ামী লীগ শুধু নিজেকে নাকি সার্বিকভাবে গণতন্ত্রকে বিজয়ী করতে চায়, তা আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে পরিষ্কার হতে শুরু করবে।আমার আপাতত আশঙ্কা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ হয়তো দ্বিতীয় পথে যাবে। গতবার ক্ষমতার শেষভাগে এসে বিএনপিও একই কাজ করে যেনতেনভাবে নির্বাচনে জেতার চেষ্টা করেছিল। এই দুই দলের তিক্ততা বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনকে রোমহর্ষক একটি খেলায় পরিণত করেছে। এই খেলায় যে জেতে সে পাঁচ বছর শিকারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, আর যে হারে সে নানাভাবে সেই শিকারির শিকারে পরিণত হয়। নির্বাচনের এই অর্থ পরিবর্তনের রাজনীতি দেশে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমার আশঙ্কা সম্ভবত অমূলক নয়।আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
নির্বাচন কমিশনার মো. জাবেদ আলী বলেছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। নির্বাচনে কারচুপির দিন শেষ হয়ে গেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নবগঠিত আড়াইহাজার ও গোপালদী পৌরসভায় ভোট গ্রহণ করা হবে।নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আড়াইহাজার ও গোপালদী পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় জাবেদ আলী এসব কথা বলেন।নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, নির্বাচনে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে, যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়ালের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, আড়াইহাজার পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফৌজিয়া খান, গোপালদী পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামানসহ মেয়র পদপ্রার্থীরা।অনুষ্ঠান শেষে আড়াইহাজার উপজেলা সার্ভার স্টেশনের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন নির্বাচন কমিশনার।নবগঠিত আড়াইহাজার ও গোপালদী পৌরসভা নির্বাচন কাল শনিবার। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানোর শেষদিন গতকাল ব্যস্ত সময় কাটান মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা।সাংসদকে এলাকার বাইরে রাখার দাবি: গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন আড়াইহাজার পৌরসভায় বিএনপি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী পারভীন আক্তার।এ সময় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আইনবিষয়ক সহসম্পাদক ও জেলা সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার দুটি পৌরসভার নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাংসদ নজরুল ইসলাম নির্বাচনের দিন প্রভাব বিস্তার করতে এলাকায় অবস্থান করবেন বলে জানতে পেরেছি। সাংসদ যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, এ জন্য তাঁকে নির্বাচনী এলাকার বাইরে রাখতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাই।’
শিহাব দ্বিধায় পড়ে যায়। তার ঘুম কি ভেঙেছে রিনিঝিনি শব্দে? নাকি অজানা এক শিহরণ ঘুমের গভীর থেকে তুলে তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে অদ্ভুত আঁধারের মুখোমুখি? শিহাব বুঝতে পারে না। ঘটনার বিহ্বলতায় তার ভেতরে ঘোর তৈরি হয়। চারপাশে তখনো ছড়িয়ে আছে অদ্ভুত আঁধার।আবার সেই রিনিঝিনি শব্দ। শিহাব বুঝতে পারে না এ কিসের শব্দ? মৃদু। অথচ প্রবহমান তরঙ্গের মতো। গাঁও-গেরামের শেষ মাথায় বিলের জলে পুবালি বাতাস হঠাৎ এসে ছুঁয়ে দিলে জলের বুকে যে রকম তরঙ্গ তৈরি হয়, অনেকটা সে রকম। খানিক দোল দিয়েই মিলিয়ে যায়। শিহাব মুখ ঘোরায় এদিক-ওদিক। শব্দটা আর শোনা যায় না। শিহাব যখন দিশেহারা হয়ে যায়, তখন আবার শোনা যায় সেই শব্দ। রিনিঝিনি তরঙ্গ ক্রমাগত দোল খায় বাতাসে। শিহাব এবার টের পায় রিনিঝিনি এই শব্দ নূপুরের। খেয়ালি কোনো বালিকা নূপুর পায়ে ছোটাছুটি করছে আশপাশে কোথাও।শিহাব বুঝতে পারে না, সে কি স্বপ্ন দেখছে? নাকি অতিবাস্তব কোনো দৃশ্যের মুখোমুখি হয়েছে সে? শুধু অনুভব করতে পারে, তার চারপাশে অদ্ভুত আঁধার। যে আঁধারে নিজের শরীরটাকেও দেখা যায় না। ভয় ভয় লাগে তার। কোথায় সে? জায়গাটা ঠাওর করার চেষ্টা করে। পারে না। ওপরে তাকায়। মাথার ওপর আকাশ। সে আকাশে চাঁদ নেই। নেই কোনো নক্ষত্র। ঘন কালো মেঘ। হঠাৎ বাতাস এসে এলোমেলো করে দেয় শিহাবের চুল। সেই বাতাসে আবারও ভেসে আসে নূপুরের রিনিঝিনি। এবার আর দূরে নয়। আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে কাছে। মনে হয় সেই বালিকা এখন তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। শিহাব অবাক হয়ে দেখে। তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এক জোড়া পা। পায়ে নূপুর। পা থেকে আস্তে আস্তে ঊর্ধ্বমুখী হয় শিহাবের চোখ। না। বালিকার মুখ দেখা যায় না। ধোঁয়ার মতো একচিলতে আলো এসে পড়েছে শুধু সেই পায়ে। সে কি শুধুই বালিকা? তরুণী অথবা মাঝবয়সীও তো হতে পারে? আজকাল বয়সী নারীও তো শখ করে পায়ে নূপুর জড়ায়। কিন্তু শিহাবের মনে হয়, যার পায়ে এই নূপুর সে শুধুই বালিকা। অমন খেয়ালে তো শুধু বালিকাই ছুটে বেড়ায়। আবারও তার পায়ের দিকে চোখ যায় শিহাবের। পায়ে রুপার চিকন নূপুর। গোছার খানিকটা ওপরে শাড়ির কিছুটা অংশ নজরে আসে। গাঁও-গেরামের মেয়েরা অল্প বয়সেই শাড়ি পরে। মেয়েটা কি গাঁও-গেরাম থেকে উঠে এসেছে? নাকি সে নিজেই চলে এসেছে কোনো গাঁয়ে? কিছুই ঠাওর করতে পারে না শিহাব?হঠাৎ ভাঙা চুড়ির মতো মেয়েটির হাসির শব্দ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। শিহাব কেঁপে ওঠে। অদ্ভুত এক শিহরণ তার মেরুদণ্ডের ওপর থেকে গড়িয়ে নিচে নামে। মেয়েটি কি অশরীরী কেউ?তুমি কি ভয় পাইছ?কথায় গ্রাম্য টান। কিন্তু নূপুরের মতোই রিনিঝিনি মেয়েটির গলা। মিষ্টি। তালপাকা দুপুরে একপশলা হাওয়ার মতোই মিষ্টি।ভয় তো পাবই। শিহাব খসখসে গলায় উত্তর দেয়, মাঝরাতে হঠাৎ করে নূপুরের শব্দ পেলে ভয়ই তো পাওয়ার কথা।ভয় পাও কেন গো! আমি জিন-ভূত কেউ না।তাহলে কে তুমি? তুমি কি পরি?আবারও রিনিঝিনি হাসি!আমি পরি নাগো! মানুষ। তবে শিশুকালে মায়ে কইত, মাইয়া আমার মাশাল্লা! দেখতে পরির লাহান। দুধে আলতায় শইল্লের রং!মেয়েটির কথায় কেন জানি শিহাবের ভয় কেটে যায়। এখনো মেয়েটির পা দেখা যায় শুধু। ফরসা পায়ে চিকন নূপুর। পায়ের চারপাশে গোলাপি আভা। নাকি আলতার রং সেই আভা তৈরি করেছে তার পায়ে। এখনো অস্পষ্ট ধোঁয়াটে আলো শুয়ে আছে পায়ের কাছে। শাড়ির কিছুটা অংশ দেখা যায়। শাড়ির রং বোঝা যায় না? ছাপা? নাকি ডুরে? বোঝা যায় না সেটিও। মেয়েটা কি দুই হাতে শাড়ি খানিকটা টেনে ওপরে তুলে রেখেছে? নাকি শাড়ি পরার ঢংটাই অমন। পায়ের গোছা থেকে খানিকটা উঁচু করে পরা। যাতে পায়ের নূপুর দেখা যায় সহজেই। চোখ তুলতেই ছায়ার মতো মেয়েটির শরীরের কাঠামো এবার নজরে আসে। অনুভব করা যায় ছায়ার মতো মুখ। সেই মুখ নূপুরের মতোই সুন্দর মনে হয়।সত্যি কইরা একখান কথা কও তো?কী কথা?তুমি ভয় পাও নাই?না। পাই নাই।আমি যহন খুব ছোড। বাপজান একদিন আমার জন্য এক জোড়া নূপুর নিয়া এল। রুপার নূপুর। সেই নূপুর দেইখা আমার মায়ের সে কী রাগ!রাগ কেন?অভাবের সংসার ছিল গো! অভাবের সংসারে এসব আহ্লাদ মানায়? মুখ ফুলাইয়া মায়ে কইছিল, পেডে ভাত জোটে না। নূপুর আনছে মাইয়ার লেইগা। রুপার নূপুর! শুইনা আমার বাপজান মিটমিটাইয়া হাসে। হাসে আর কী কয় জানো?কী কয়?গরিব মাইনষের কি শখ-আহ্লাদ নাই? দশটা না পাঁচটা না, আমার একটা মাইয়া! বাপজানের কথা শুইনা আমার কী যে আনন্দ! সেই আনন্দে নূপুর পায়ে দিয়া সারা উঠান দৌড়াই। নূপুরের ঝুমঝুম শব্দ হয়। নিজের কানেই কী যে মিঠা লাগে সেই শব্দ!তোমার পায়ে কি সেই রুপার নূপুর?নাগো! না। এই নূপুর বাপজানের সেই রুপার নূপুর না। অভাবের সংসারে কি রুপা থাকে? উপাস থাকলে চক্ষের সামনে নূপুর হইয়া যায় সাদা ভাত। ফকফইক্যা সাদা ভাত। সেই ভাতের লোকমা পেডে গেলে আত্মা শান্তি! আমি যহন ডাঙর হইলাম ভাতের লেইগা এলাম তুমরার এই শহরে। পেটে যহন দানা পড়ল তহন আবার চোখ গেল সেই নূপুরে। ছোটকালের শখ! এত সহজে কি তারে ভোলা যায়? কাইল সন্ধ্যা রাতে কাম থেইকা ফেরনের সুময় আমরার গলির মুখে চোখ গেল সেই নূপুরে। তুমি আমার কথা শুনছ তো?শুনছি।মাঝেমধ্যে জবাব দিয়ো। না হইলে কেমনে বুঝব যে তুমি আছ? চাইর পাশে কী যে আন্ধার!অন্ধকারে তোমার ভয় লাগে না?লাগে তো! কিন্তু মানুষ যুদি মানুষের সঙ্গে থাকে, আন্ধারেও ডর-ভয় লাগে না।মেয়েটির কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হঠাৎ করে একঝলক হাওয়া যেন কোথা থেকে ছুটে আসে। ছুঁয়ে যায় দুজনকেই। আঁধারে খানিকটা আলোর আভা ছড়িয়ে পড়ে। সেই আভায় মেয়েটির মুখের দিকে তাকায় শিহাব। এখনো অবয়ব টের পাওয়া যায় না। এখনো ছায়ার মতো। শুধু তার খোলা চুলের আভাস পাওয়া যায়। হাওয়ায় সেই চুল হয়তো লুটিয়ে পড়েছিল মুখে। মেয়েটি তার মুখের একপাশ থেকে চুল সরিয়ে ডাকে,শুনছ?শুনছি।আমার শেষ কথা কী আছিল কও তো?গলির মুখে তোমার চোখ গেল সেই নূপুরে।গলির মুখে একটা ফেরিঅলা প্রত্যেক দিন চাইর চাক্কার ভ্যানে দুকান সাজাইয়া বসে। কত কী যে আছে সেইখানে। চুড়ি ফিতা পাউডার। আমার এক সই খুব সাজুনি। হাতে পয়সা জমলেই চুড়ি-ফিতা কিনে। আলতা কিনে পায়ে লাগায়। আমার সাধ থাকলেও আহ্লাদ নাই। ভাতের লেইগা আসছি এই শহরে। আহ্লাদ চাপা দিয়া দুইটা পয়সা জমাইয়া মায়ের কাছে পাডাই। বাপজান নাই। মায়ের অসুখ। আমি পয়সা না পাডাইলে মায়ে যে উপাস থাকব। উপাস কী জিনিস সেইটা তো আমি জানিই! কিন্তু কাইল আমার চোখ গেল নূপুরে। চিকন নূপুরে ছোড ছোড ঘণ্টা। রুমঝুম কইরা বাজে। আমি ফেরিঅলারে জিগাই, নূপুর কি রুপার? শুইনা ফেরিঅলা দাঁত কেলাইয়া সে কী হাসি! ভ্যানগাড়িতে রুপার নূপুর? ইমিটিশন গো! ইমিটিশন! হোক ইমিটিশন। তার পরেও তো রুমঝুম শব্দ হয়। নগদ ৮০ টাকায় কিইনা নিলাম। অনেকগুলান টাকা। বড় কষ্টের টাকা গো! কষ্টের! মিহি সুতায় বড় ধার! সেই ধারে অঙ্গ কাটে। এই মিহি সুতা কি শিমুল তুলার? আমাগো বাড়ির সামনে একটা শিমুলগাছ আছিল। কী যে লাল সেই শিমুল ফুল। রক্তের লাহান। মেয়েটির শেষ কথায় শিহাবের ভেতরটা শিরশির করে ওঠে! হঠাৎ মনে হয় মেয়েটি তার চেনা। তার সঙ্গে দেখা হয়েছে কোথাও। কিন্তু কোথায়, তা মনে করতে পারে না।তুমি কি শুনছ আমার কথা?শুনছি।আইজ সকালেই পায়ে নূপুর পরছি। ডাঙর হওয়ার পর এই পরথম। বাপজানের কথা তহন খুব মনে পড়ছে। সেই শিশুকালে উপাসের সংসারে মাইয়্যার লেইগা আহ্লাদের রুপার নূপুর!বুক কাঁপিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মেয়েটি। আঁধারে সেই নিঃশ্বাসের পতন শিহাবকে নাড়া দেয়। আশপাশে শুকনো পাতার ওড়াউড়ি টের পায়। খানিকটা হাওয়া কি ছুটে এসেছিল? না কি নিঃশ্বাসের পতন উড়িয়ে নিয়ে গেছে শুকনো পাতার সারি? এতই কি প্রবল সেই নিঃশ্বাস?জানো? মেয়েটির গলা এখন করুণ শোনায়। কান্নার মতো। শীতের সকালে দূর্বাঘাসের ডগায় যেমন জমে থাকে শিশির, মেয়েটির গলায় কি তেমন শিশির জমেছে? ভেজা গলায় মেয়েটি বলে, সেই নূপুর আইজ সকালে পায়ে দিছি। খুব শখ আছিল নূপুর পায়ে ইকটুখানি ছোটাছুটি করি। সেই শিশুকালের মতোন। কিন্তু পারি নাই।শিশিরের মতো ভেজা এই উচ্চারণ কি বালিকার অভিমান? নাকি অভিযোগ? নাকি তীব্র ঘৃণা গড়িয়ে নামছে তার ঠোঁটের কোনা বেয়ে? শিহাবের বুকের ভেতরটা আবারও শিরশির করে ওঠে! অদ্ভুত এক কাঁপন জাগে শরীরে। চোখ চলে যায় মেয়েটির পায়ে। এখনো ধোঁয়াটে আলোয় এক জোড়া পা। পায়ে নূপুর। হঠাৎ শিহাব খেয়াল করে মেয়েটির এক পায়ে নূপুর। অন্য পা খালি। এতক্ষণ নজরে আসেনি। আশ্চর্য! এক পায়ে কেউ নূপুর পরে? নাকি অন্য পা থেকে খসে গেছে নূপুর? অথবা ছিনিয়ে নিয়েছে কেউ? পায়ের চারপাশে লালচে আভা। শিহাব অবাক হয়ে দেখে সেই লালচে আভা আলতার নয়। রক্তের! রক্ত জমে আছে পায়ের পাতার চার পাশে। এখন আর চিনতে ভুল হয় না তার।চারপাশে ধ্বংসস্তূপ! মাকড়সার জালের মতো ঝুলে আছে মিহি সুতো। সেই সুতোয় শিমুলের লাল নেই। কিন্তু লাল জমাট হয়ে আছে শত শত স্পন্দনহীন দেহে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে উঁকি দিয়েছিল এই পা। জমাট রক্তের চিকন চিহ্ন। পায়ে নূপুর। বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে শিহাব তখন দিশেহারা। এই স্থিরচিত্র পাথর হয়ে আছে তার চোখে। তার ক্যামেরায়। কাল সকালে কাগজের প্রথম পাতায় এই ছবি প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো ঝুলে থাকবে সবার চোখের সামনে।আবার সেই রিনিঝিনি শব্দ! মেয়েটি সরে যাচ্ছে দূরে। আজ সকালে সেই বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে ইচ্ছা থাকলেও শিহাব চিৎকার করতে পারেনি। দিশেহারা মানুষের মতো শুধু তাকিয়েছিল চারপাশে। কিন্তু এই মধ্যরাতে শিহাবের গলা চিরে চিৎকার বেরিয়ে আসে,যেয়ো না। শোনো!মেয়েটি শোনে না। হারিয়ে যেতে থাকে দূরে। শিহাব আর্তনাদের মতো বলে,আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও। আমরা তোমাদের অবারিত সবুজ প্রান্তর থেকে ছিনিয়ে এনেছি। বিলের বুকে কাঁপন তোলা বাও বাতাস আমরা কেড়ে নিয়েছি। তোমাদের লোকমায় সাদা ফকফকে ভাত আমরা তুলে দিতে পারিনি। বাপজানের আহ্লাদে জড়ানো নূপুর তোমাদের পা থেকে আমরাই কেড়ে নিয়েছি। আমাদের লোভ, আমাদের পাপ তোমাদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে বধ্যভূমির কালো আঁধারে! আমরাই হত্যা করেছি তোমাদের। আমাদের ক্ষমা করে দিয়ো।শিহাবের গলা কান্নার মতো শোনায়। তবু থামে না মেয়েটি। আঁধারে হারিয়ে যায়। শুধু তার একটি পা পদাঘাতের চিহ্ন হয়ে মুখের ওপর ঝুলে থাকে। অদ্ভুত আঁধারে দিশেহারার মতো ছোটাছুটি করতে থাকে শিহাব। কোথায় ছুটছে সে? কালো চাদরে ঢাকা সেই খোলা মাঠে, সেই ধ্বংসস্তূপের ভেতর, নাকি চার দেয়ালের ঘেরাটোপে? বুঝতে পারে না।
মিসরে যা ঘটে গেল, তা সামরিক অভ্যুত্থান, এতে কোনো সন্দেহ নেই। গণতান্ত্রিক পথে যাত্রা শুরু করার এক বছরের মাথায় মিসরের জনগণ এ রকম মারাত্মক হোঁচট খাবে, এটা বোধ হয় তারা নিজেরাও কল্পনা করেনি। তাদের এই পদস্খলনের মাশুল যে খুব চড়া হবে, সেটাও সম্ভবত উপলব্ধি করতে পারছে না তারা। আড়াই বছর আগে যে গণ-অভ্যুত্থানে তারা স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে বিতাড়িত করেছে, তার পেছনের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু আজ তারা তাদেরই নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্টকে অপসারণের জন্য সামরিক বাহিনীকে ডেকে আনল। এটা সেই সামরিক বাহিনী, ছয় দশক ধরে যারা মিসরে সীমাহীন ক্ষমতা, প্রভাব, প্রতিপত্তি ভোগ করে এসেছে। স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে শক্তি-সমর্থন জুগিয়েছে এই সামরিক বাহিনীই। আবার ২০১১ সালের শুরুতে কায়রোর তাহরির স্কয়ার থেকে যে ‘আরব বসন্ত’ সারা মিসরে ছড়িয়ে পড়েছিল মোবারককে উৎখাত করার সংকল্প নিয়ে, সেই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল এই সামরিক বাহিনীই। মোবারকের পতনের সঙ্গে সঙ্গে মিসরে গণতন্ত্র আসেনি, সামরিক বাহিনী তার প্রভাব-প্রতিপত্তি ছাড়েনি। বরং জেনারেলরাই চালিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু তাঁরা দেশ চালাতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন না দিয়ে উপায় ছিল না। মোহাম্মদ মুরসিকে তখন মিসরের ৫২ শতাংশ ভোটার সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছিল।কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই কী ঘটে গেল যে মিসরের জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্টকে বিতাড়িত করার জন্য লাখে লাখে রাস্তায় নেমে পড়ল? আর সেই সুযোগে আবার বেরিয়ে এল সামরিক বাহিনী? মিসরের জনগণ কি আসলে গণতন্ত্র চায় না?এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি কয়েক দিন ধরে। কারণ, মুরসির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পূর্তির কয়েক দিন আগে থেকে কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়াসহ মিসরের বিভিন্ন শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে খবর পাওয়া যাচ্ছিল যে বিক্ষোভকারীরা মুরসি ও মুসলিম ব্রাদারহুডকে (ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি) উৎখাত করতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ চাইছে। এমনকি, যে উদারপন্থী গণতন্ত্রী যুবসমাজ গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের দাবিতে তাহরির স্কয়ারে আরব বসন্তের সূচনা করেছিল, তারাও নাকি ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছিল। মিসরের বেসরকারি গণমাধ্যমেও একই রকমের আহ্বান প্রচারিত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা গেছে।সরকারবিরোধীদের প্রবল বিক্ষোভ ও সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গত বুধবার সামরিক বাহিনী মুরসিকে উৎখাত করার পর নিউইর্য়ক টাইমস পত্রিকার এডিটোরিয়াল বোর্ড এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে মন্তব্য করেছে: ‘২০১১ সালের যে বিপ্লব স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে উৎখাত করেছিল, মিসরের জনগণ যদি এভাবে গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করার মধ্য দিয়ে সেই বিপ্লবের অবসান হতে দেয়, তবে তা হবে দুঃখজনক।’নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার জন্য সামরিক বাহিনীকে ডেকে আনার এই ঘটনা গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করারই শামিল বটে। কিন্তু এভাবে মিসরীয়দের মুরসিবিরোধী বিক্ষোভ, আলোচনার পথে না গিয়ে সরকারকে উৎখাত করতে চরম অবস্থানে চলে যাওয়ার অন্তর্নিহিত সব কারণ বোঝা কঠিন। মিসরে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা আছে, কিন্তু গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চা নেই। বস্তুত মুসলিম ব্রাদারহুড ছাড়া প্রকৃত অর্থে আর কোনো রাজনৈতিক দলই দেশটিতে নেই। মুসলিম ব্রাদারহুডের ইতিহাসেও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির অনুশীলন ছিল না। তাই মুসলিম ব্রাদারহুড বা তাদের আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক দল ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি ক্ষমতায় গিয়ে অন্য সব রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে মিলিতভাবে দেশ পরিচালনার কথা ভাববে—এ রকম একেবারেই ঘটেনি। মোবারকের স্বৈরশাসন-কবলিত মিসরে নিষিদ্ধ মুসলিম ব্রাদারহুড গণতন্ত্র চেয়েছে। আর যখন গণতন্ত্র পেয়েছে, তখন ভেবেছে এককভাবে, নিজেদের ইচ্ছামতো দেশ চালানোর লাইসেন্স তারা পেয়ে গেছে। মিসরকে তারা ‘পূর্ণাঙ্গ ইসলামি রাষ্ট্রে’ পরিণত করতে চায়; দেশটিতে যে আরও ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ আছে, ভিন্ন ধর্মের নাগরিকেরা আছে, তারা সেটা চায় কি না, মুসলিম ব্রাদারহুডের তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তারা নিজেদের ইচ্ছামতো সংবিধান রচনা করবে, তাতে অন্যদের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগই রাখবে না।কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুড ধর্মের ভিত্তিতে যে মিসর গড়ে তুলতে চায়, দেশটির শিক্ষিত সচেতন জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ সেটা চায় না। এই জনগোষ্ঠীই গণতন্ত্র, মুক্তি, বাক্স্বাধীনতা, নাগরিক-মানবিক স্বাধীনতার দাবিতে তাহরির স্কয়ারে আরব বসন্ত শুরু করেছিল। তাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নারী। কয়েক দিন ধরে তাহরির স্কয়ারে যে বিপুল জনসমাবেশের ছবি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, সেখানে নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি দুই বছর আগের তাহরির স্কয়ারের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। আড়াই বছর আগে তাহরির স্কয়ারে যে নারীরা ফুল, রুটি ও পানির বোতল হাতে সামরিক স্বৈরশাসনবিরোধী গণজাগরণে যোগ দিয়েছিলেন, এখন তাঁরাই মুরসি ও ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে সেখানে সমবেত হয়েছেন। মিসরীয় আরব বসন্তের সেই সক্রিয় অংশটি নির্বাচনের পরে দেখতে পেল, মুসলিম ব্রাদারহুডের মুরসি সরকার নারীকে ধর্মের নামে গৃহকোণে বন্দী করার আয়োজনে মেতেছে। ব্রাদারহুডের নেতারা বলতে লাগলেন, মেয়েরা, ঘরে ফিরে যাও। রাজনীতি তোমাদের কাজ নয়। ওটা করবে তোমাদের ভাই, স্বামী ও বাবারা। তোমরা পর্দা করো, গৃহকর্মে মনোযোগী হও। তাহরির স্কয়ারের সেই নারীরা একসময় আফসোসের সঙ্গে বলা শুরু করলেন, এ কেমন দিন আনলাম আমরা? এর চেয়ে মোবারকের আমলেই তো বেশি স্বাধীন ছিলাম।তারপর আছে ফেসবুক-টুইটার প্রজন্ম, অর্থাৎ মিসরীয় শিক্ষিত যুবসমাজ। স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি, গণতন্ত্র, কর্মসংস্থান, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের স্বপ্নে-আকাঙ্ক্ষায় তারাই সূচনা করেছিল আরব বসন্তের। কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুডের সরকার তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তারা বলছে, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি শাসক হিসেবে অদক্ষ ও ব্যর্থ। তাঁর আমলে অর্থনীতির কোনো উন্নয়ন ঘটেনি, যুবসমাজের কর্মসংস্থান বাড়েনি, জনসাধারণের জীবনযাত্রায় একটুও অর্থনৈতিক স্বস্তি আসেনি। উল্টো বিদ্যুৎ-সংকট বেড়েছে, ক্রমাগত বেড়ে চলেছে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে: রাজধানী কায়রোসহ অন্যান্য শহরের রাস্তাঘাটে নিরাপত্তাহীনতা, যানজট ও আবর্জনা বেড়েছে। অথচ মিসরের জনসাধারণের প্রত্যাশা ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলে জনগণের নির্বাচিত সরকারের দ্বারা এই সব ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটবে।স্বৈরশাসনবিরোধী বিপুল গণবিক্ষোভের মধ্যে মিসরের জনমনে যে বিরাট আশা-প্রত্যাশা জেগেছিল, মুরসির নির্বাচিত সরকারের পক্ষে তার সামান্য অংশও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। জনগণের এই বিরাট আশাভঙ্গই মিসরের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটের অন্তর্নিহিত কারণগুলোর মধ্যে প্রধান বলে মনে হয়।দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই রাজনৈতিক সংকটের যে একটা রাজনৈতিক সমাধান হতে পারত, মিসরীয় রাজনীতির কোনো অংশে তেমন দৃষ্টিভঙ্গির দেখা মেলে না। গণবিক্ষোভের চাপে মুরসি সরকার যখন একটা জাতীয় ঐকমত্যের সরকার ও সংবিধান পুনঃপ্রবর্তনের জন্য একটা নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের বিষয়ে আন্দোলনরত বিরোধী পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিলেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কারণ, ইতিমধ্যে সামরিক বাহিনী দৃশ্যপটে ঢুকে পড়ে সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে বসেছে। প্রেসিডেন্ট মুরসি বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আলোচনার কথা আগে ভাবলে সামরিক বাহিনীর হাতে এত তাড়াতাড়ি আলটিমেটাম ঘোষণার সুযোগ আসত না।অন্যদিকে, উদার-গণতন্ত্রী হিসেবে নিজেদের প্রচার করে যেসব রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও দল, তাদের উদারপন্থা ও গণতন্ত্র-মনস্কতার দৈন্য হলো এই যে, নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে সামরিক হস্তক্ষেপ আহ্বান করা যে খাল কেটে কুমির আনা, এটা তারা বুঝতেই পারছে না। মুসলিম ব্রাদারহুড যে ইসলামপন্থা মিসরে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেটার বিপরীতে কোনো ‘সেক্যুলার’ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়া ছাড়া আর কোনো গণতান্ত্রিক পন্থা নেই। সামরিক বাহিনী মিসরে গণতন্ত্র এনে দেবে না। বরং গণতন্ত্র যেন শিকড় গাড়তে না পারে, তা যেন সব সময়ই ভঙ্গুর ও নাজুক অবস্থায় থাকে, তারা সেটাই চাইবে।মশিউল আলম: সাংবাদিক।mashiul.alam@gmail.com
মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর তাঁকে আটকে রেখেছে সেনাবাহিনী। একজন শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তা গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য মুরসিকে “নিবৃত্তিমূলকভাবে” আটকে রাখা হয়েছে। বিরোধীদের করা অভিযোগ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হতে পারে।’ বুধবার রাতে অভ্যুত্থানের কয়েক ঘণ্টা পরই আল-জাজিরা টেলিভিশনে মুরসির আগের ধারণ করা একটি ভাষণ প্রচার করা হয়। ওই ভাষণে সমর্থকদের উদ্দেশে ‘সেনা অভ্যুত্থান’ প্রতিহত করার আহ্বান জানান মুরসি। এর পরই তিনিসহ তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়।ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘মুরসির ওই হুমকির কারণে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি মিসরীয়দের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন।’ মুরসিকে কোথায় আটকে রাখা হয়েছে, সে সম্পর্কে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে ইতিপূর্বে মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, মুরসি ও তাঁর শীর্ষ সহযোগীদের একটি সামরিক স্থাপনায় গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতা ও মুরসির ডান হাত বলে খ্যাত ইসাম এল-হাদ্দাদের ছেলে জিহাদ এল-হাদ্দাদ বলেন, ‘মুরসি ও প্রেসিডেন্ট ভবনের সব কর্মকর্তাকে প্রেসিডেন্সিয়াল রিপাবলিকান গার্ডস ক্লাবে আটকে রাখা হয়েছে। তবে মুরসিকে তাঁর সহযোগী ও উপদেষ্টাদের কাছ থেকে আলাদা করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরদারিতে আছেন।’মুরসিবিরোধী বিক্ষোভে সম্প্রতি মিসরে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়। এরপর গত ৩০ জুন প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে ফুঁসে ওঠেন মুরসিবিরোধীরা। তাঁরা তাহরির স্কয়ারে জড়ো হয়ে মুরসির পদত্যাগের দাবিতে টানা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রেসিডেন্টকে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু মুরসি ওই সময়সীমা প্রত্যাখ্যান করেন। পরে বুধবার রাতে মুরসিকে সরিয়ে দিয়ে সংবিধান স্থগিত এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের নাম ঘোষণা করেন সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।২০১১ সালে সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ চলাকালে কারাগার থেকে অন্য বন্দীদের সঙ্গে মুরসিও পালিয়ে যান। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কায়রোর একটি আদালত মুরসি ও তাঁর সহযোগীদের প্রতি সমন জারি করেছেন। কারাগার থেকে পলায়নের ওই ঘটনায় মুরসির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হতে পারে।মুরসির শীর্ষ সহযোগীরা অভ্যুত্থানের পর থেকে ফোন বন্ধ রেখেছেন। এ কারণে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের অন্য কর্মকর্তারা জানান, তাঁরাও তাঁদের নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এএফপি, এপি ও রয়টার্স।
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অপার মহিমা নিয়ে বছর ঘুরে মাহে রমজান প্রায় সমাগত। অথচ এ পবিত্র মাসের আগমনকে পুঁজি করে একশ্রেণীর কালোবাজারি অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও দ্রব্যসামগ্রীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঘটে। এতে রোজাদার সাধারণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষকে নিদারুণ ভোগান্তি পোহাতে হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশে খাদ্যপণ্য মজুত ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নিয়মিত লাভের পরিবর্তে ক্রেতাসাধারণকে ঠকিয়ে এবং সংকটের আবহ সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা অমানবিক। ইসলাম এ ধরনের জঘন্য কাজকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড থেকে ধর্মপ্রাণ ব্যবসায়ীদের সব সময় বিরত থাকা উচিত। কেননা, পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা বেচাকেনাকে বৈধ ও সুদকে অবৈধ করেছেন।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২৭৫)ইসলামের দৃষ্টিতে দ্রব্যমূল্য বাজারে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চাহিদা ও জোগানের আলোকে নির্ধারিত হবে। তবে বাজার-প্রক্রিয়াকে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন ব্যাহত করতে না পারে, সে জন্য সরকার তদারকির ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারবে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ক্রয়-বিক্রয়ে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মজুতদারি সম্পর্কে ইসলামি দৃষ্টিকোণ রয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি করতে পারে না। যদি এমনটি কেউ করে থাকে তবে ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মসাৎকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। এভাবে মাহে রমজানে যখন অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্যস্ফীতি ঘটাতে চায়, তখন ইসলামি আইনবিদ বা ফকিহদের মতে, সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। সরকার কর্তৃক ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ-প্রক্রিয়াকে আরবিতে ‘তাসয়ির’ বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ভোক্তা ও উৎপাদক কোনো শ্রেণীরই ক্ষতিসাধন করা যাবে না, উভয় শ্রেণীর স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে। ইসলামের এ ব্যবস্থা থেকে ধারণা নিয়ে সরকার পাইকারি ও খুচরা বাজারে দ্রব্যমূল্যের তালিকা ঝোলানো বাধ্যতামূলক করতে পারে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ব্যবসায়ী যদি সীমাতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ করে এ সুযোগে যে ক্রেতা পণ্যের প্রকৃত মূল্য জানে না, তাহলে এই অতিরিক্ত পরিমাণের মূল্য সুদ পর্যায়ে গণ্য হবে।’মাহে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা ক্রমেই বেড়ে যায়। একশ্রেণীর সুযোগসন্ধানী কালোবাজারি, মজুতদার, মুনাফাখোর ও অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যদ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। পণ্য মজুত রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়। এমন পরিস্থিতি দেশের সীমিত আয়ের মানুষের জনজীবনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ব্যবসায়ীদের বিবেকহীন ও অনভিপ্রেত কর্মকাণ্ডের কারণে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পড়ে। মানুষের অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে বাজারপ্রক্রিয়াকে রক্ষার জন্য ইসলাম মজুতদারি, মুনাফাখুরি, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা ও দালালির মতো কার্যক্রমকে অবৈধ ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘মজুতদার খুবই নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। যদি জিনিসপত্রের দাম হ্রাস পায় তবে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। আর যদি দর বেড়ে যায় তবে আনন্দিত হয়।’ (মিশকাত)মজুতদারি পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কখনো কখনো পণ্যদ্রব্যের দাম তাদের ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দেয়। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি মুসলমানদের থেকে নিজেদের খাদ্যশস্য আটকিয়ে রাখে, তবে আল্লাহ তাআলা তার ওপর মহামারি ও দারিদ্র্য চাপিয়ে দেন।’ (ইবনে মাজা ও বায়হাকি)রমজান মাসে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ ব্যবসায় মেতে ওঠেন। নিম্ন আয়ের মানুষের অর্থনৈতিক দৈন্য ও দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে যারা মজুতদারি, কালোবাজারি করে, তারা মানুষ নামের অমানুষ। সেসব ভণ্ড প্রতারক ব্যবসায়ী রোজা এলে লোক দেখানো সিয়াম সাধনায় রত থেকে মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করে এবং পরে অধিক হারে মুনাফা লুটে নেয়, তাদের মূল লক্ষ্য হলো ব্যবসা। অবৈধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তারা সাধারণ মানুষকে অবর্ণনীয় কষ্ট দেয়। অথচ পণ্যসামগ্রী মজুত করে মূল্যবৃদ্ধি বা অধিক মুনাফা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পণ্য আমদানি করে বাজার দামে বিক্রয় করে, তার উপার্জনে আল্লাহর রহমত রয়েছে। আর যে ব্যক্তি আমদানি করে চড়া দামে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে পণ্য মজুত করে রাখে, তার প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’ব্যবসা-বাণিজ্যে মূল্যপ্রবাহকে কেউ যেন ঊর্ধ্বমুখী করে না তোলে, সে ক্ষেত্রে ইসলামে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ঘটালে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আগুনের হাড়ের ওপর তাকে বসিয়ে শাস্তি দেবেন।’ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা, ইসলামসম্মত সেবামূলক ভূমিকা মাহে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য সমাজের প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মানুষকে সৎ মনোভাবাপন্ন, নির্লোভ, মহৎপ্রাণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা উচিত। মজুতদারি, ধোঁকাবাজি, সুদি লেনদেনসহ সব ধরনের ইসলামি আদর্শবিবর্জিত কার্যাবলি রোধ করা প্রয়োজন। সুতরাং আসুন, মাহে রমজানে ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলি। মুনাফাখুরি, মজুতদারি, ফাটকাবাজারি, কালোবাজারি ও সুদসহ অবৈধ পন্থায় লেনদেনে অর্থ উপার্জন থেকে বিরত থাকি।ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ ও দাওয়াহ বিভাগ, ধর্ম বিজ্ঞান অনুষদ, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।dr.munimkhan@yahoo.com
সংবর্ধনাজয়পুরহাটের আক্কেলপুরে চীনের চারজন চিত্রশিল্পীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন হোয়াং উইং হোয়াং, লিং লিয়াং, লিং ডেংজিং ও ওয়াং কুইং। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা কমিউনিটি সেন্টারে উপজেলা নাগরিক কমিটি সংবর্ধনার আয়োজন করে। কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমান কবিরাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন, মাহফুজা সুলতানা। এর আগে সকালে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে পৌর সদরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওই চার চীনা চিত্রশিল্পী প্রতিযোগিতা ঘুরে দেখেন।  আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিশিশু তিরবিদ্ধবগুড়ার ধুনটে পৈতৃক সম্পত্তি দখল নিয়ে দুই ভাইয়ের সংঘর্ষের সময় তিরবিদ্ধ হয়ে জান্নাতি খাতুন (৩) নামের এক পথচারী শিশু আহত হয়েছে। সে উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের রুদ্রবাড়িয়া গ্রামের আবদুর রশিদের মেয়ে। উপজেলার রুদ্রবাড়িয়া গ্রামের শাহজাহান আলীর মৃত্যুর পর তাঁর দুই ছেলে গিয়াস উদ্দিন ও রানা বাবুর মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গত বুধবার বিকেলে নিজেদের বাড়িতে তাঁদের সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে তাঁরা পাল্টাপাল্টিভাবে তির নিক্ষেপ করছিলেন। এ সময় জান্নাতির দুই হাতে তিরবিদ্ধ হয়। তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।  ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধিকিশোরের মৃত্যুবিদ্যুৎ-চালিত মেশিনে ভুট্টার ফ্যানিং কাজ শেষ করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ও বিস্ফোরণে সুজন (১৬) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌর শহরের রঘুনাথপুর মহল্লার বাবুলের হাস্কিং মিলে। সুজন পীরগঞ্জ পৌর শহরের রঘুনাথপুর দিঘিরপাড় মহল্লার উমের আলীর ছেলে।  পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিদেবর-ভাবির মৃত্যুকুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ভাবি ও দেবরের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে বাগডাঙ্গা গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন ওই গ্রামের জসিম উদ্দিন (৩২) ও তাঁর ভাবি মধুমালা (২৮)। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে জসিম উদ্দিন তাঁর ঘরের বৈদ্যুতিক সুইচবোর্ডে হাত দিলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। এ সময় মধুমালা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। জানতে পেরে পরিবারের অন্য সদস্যরা বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাঁদের উদ্ধার করেন।  কুষ্টিয়া অফিসচেক ও সনদ বিতরণবরগুনার আমতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘রুরাল এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড রোড মেইনটেন্যান্স’ প্রকল্পের নারী কর্মীদের মধ্যে সঞ্চিত টাকার চেক ও সনদ বিতরণ করা হয়েছে। সঞ্চিত টাকা পেয়ে কড়ইবাড়িয়া গ্রামের নারী কর্মী রিনা বেগম জানান, এই টাকা তাঁর শ্রম ও ঘাম দিয়ে আয় করা। টাকা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সে চেষ্টাই তিনি করবেন। বেহালা গ্রামের কমলা রানী বলেন, ‘এই টাকা দিয়ে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল কিনে লালন পালন করব।’  আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিইলিশ জব্দভারতে পাচারের সময় বিজিবির সদস্যরা ৭৯০ কেজি ইলিশ ও এক হাজার ৪০৪টি থ্রি-পিস উদ্ধার করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ধোপাডাঙ্গা এলাকা থেকে সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবির সদস্যরা অভিযান চালিয়ে এসব মাল উদ্ধার করেন। এ ছাড়া ভোমরা সীমান্ত থেকে দুই হাজার ৩৫ কেজি সুপারি উদ্ধার করেছেন বিজিবির সদস্যরা। জব্দ মালামাল কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়েছে।  নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরাতিরখেলা বন্ধের দাবিসিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলংসহ আশপাশের এলাকার হাটবাজারে প্রতিদিন প্রকাশ্যে চলছে ভারতীয় তিরখেলা। এ খেলা (জুয়া) বন্ধের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহামঞ্চদ আজিজুল ইসলামের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে স্থানীয় মিতালী সবুজ সংঘ। স্মারকলিপি দেওয়ার সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিতালী সবুজ সংঘের সভাপতি মো. ফরহাদ আলী, সহসভাপতি নুর মিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন।  গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধিকারেন্ট জাল ধ্বংসসুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শনি ও মাটিয়ান হাওর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুটি অবৈধ মশারি জাল ও ১০ কেজি কারেন্ট জাল জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহামঞ্চদ ইয়ামিন খান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। পরে জব্দ করা এসব জাল উপজেলা পরিষদের সামনের মাঠে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন।  তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিশিবির নেতা গ্রেপ্তারময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মনোয়ার হোসেন ও কর্মী রাকিব আকন্দকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার দিবাগত রাতে নান্দাইল পৌর এলাকার ডাকবাংলোর সামনে থেকে বেশ কিছু পোস্টারসহ তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জাহিদুল ইসলাম বলেন, মনোয়ার ও রাকিব সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছিলেন। তাঁদের গতকাল বৃহস্পতিবার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।  নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আমরা শিক্ষার্থীদের দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার বলি। সেই শিক্ষার্থীরাই বঞ্চনার শিকার! ঢাকাতে লোকাল বাস নেই বললেই চলে, দু-একটা যা আছে, তাতে জায়গার অপ্রতুলতার কারণে দাঁড়ানোর পর্যন্ত ঠাঁই হয় না লাখো স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রছাত্রীদের। অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের গেটে ঝুলে ঝুলে বাসে চড়তে বাধ্য হয় শিক্ষার্থীরা। এতে দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে।অন্যদিকে ঢাকাতে সিটিং বলে যেসব বাস চলাচল করে তার বেশির ভাগকে চিটিং (চিট) বলাটা বোধ হয় ভুল হবে না। এসব বাসে সিটিং বলেও দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয় কিন্তু ভাড়া গুনতে হয় অনেক বেশি। তবে এর বেশির ভাগ টাকাই যায় বাসের চালক ও হেলপারদের পকেটে। কেননা, সিটিংয়ের হিসাবটাই মালিক পান। আর দাঁড়ানো যাত্রীগুলোর হিসাব তাঁরা জানতেও পারেন না। পথে চেকার থাকলেও তাঁদের বাসপ্রতি ২০-৩০ টাকা দিলে তাঁরা ইচ্ছামতো যাত্রীসংখ্যা লেখে দেন, যা বরাবরই পরিবহন মালিকদের বিপক্ষে যায়।বৈধ শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেক প্রদান করবে, এমন কোনো আইন বা নিয়ম আছে পরিবহন ক্ষেত্রে, তা হয়তো ভুলে যেতে বসেছে বাস সার্ভিসগুলো। অনেক বাসে শিক্ষার্থী ওঠানো হয় না, গাড়িতেও লেখা থাকে ‘হাফ পাস নাই’ এমন সব কথা। উঠে পড়লেও অর্ধেক ভাড়া দেওয়া নিয়ে সর্বদা বাগিবতণ্ডা লেগেই থাকে। কখনো এটা মারামারিতে রূপ নেয়। এদিকে বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীদের এমন করতে হয়। কারণ, ছাত্র অবস্থায় অধিক মূল্য দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা অন্য পরিবহনে যাওয়া সম্ভবপর নয়।আমাদের দেশে প্রায় দু-তিন কোটি নিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা এখন বিড়ম্বনার শিকার পথে পথে।তাই যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নিবেদন, গণপরিবহনে যদি আসলেই ছাত্রছাত্রীদের অর্ধেক ভাড়া প্রদানে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকে, তাহলে তা যথাযথভাবে কার্যকর করা হোক এবং শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে পত্রিকায় ত প্রকাশ করা হোক।কাজী আসিফ মোস্তফাসরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য মো. আনোয়ারুল আজিমের গত দুই বছরের মেয়াদে প্রায় ২০০ শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে নিয়োগ পেয়েছেন অন্তত ৪০ জন। এ ছাড়া ছেলে, শ্যালিকা ও পূত্রবধূকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করার মতো অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের হলুদ দল বিভক্ত হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে ‘বঙ্গবন্ধু আদর্শ বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে নতুন আরেকটি সংগঠন। একই আদর্শের শিক্ষকদের মধ্যে দুটি ধারা তৈরির জন্য উপাচার্যের ভূমিকাকে দায়ী করা হচ্ছে। অনির্বাচিত ওই উপাচার্যের অনিয়মের ঘটনাগুলো তুলে ধরে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের বিক্ষুব্ধ অংশটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক গাজী সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শিগগিরই চিঠিটি আচার্যের কাছে পাঠাব। কারণ, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী চলছে না।’মূলত উপাচার্যের কর্মকাণ্ড নিয়ে সৃষ্ট এই বিভক্তির পর সরকার-সমর্থক শিক্ষকেরা ডিন ও শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে পৃথক প্যানেল দেন। এই পরিস্থিতিতে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন দেওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন না আনোয়ারুল আজিম।বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে নিয়োগ: ২০১১ সালের নভেম্বরে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে তিন প্রভাষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, নিয়োগ পান পাঁচজন। অতিরিক্ত নিয়োগ পাওয়া দুজন প্রার্থীর শিক্ষাজীবনে দ্বিতীয় শ্রেণী রয়েছে, কিন্তু আবেদন করা সাত প্রার্থীর সব কটিতে প্রথম শ্রেণী থাকলেও তাঁরা নিয়োগ পাননি।বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮৯তম সিন্ডিকেট সভায় ইসলামের ইতিহাস বিভাগে বিজ্ঞাপিত সাতটি পদের বিপরীতে ১০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮২তম সিন্ডিকেট সভায় ২৭টি পদের বিপরীতে ৪৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সমাজতত্ত্ব বিভাগে একবার সাতটি পদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নেওয়া হয় ১০ শিক্ষক। এভাবে সব মিলিয়ে বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে প্রায় ৪০ শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রয়োজনে একটি বিজ্ঞাপনের বিপরীতে জরুরি মনে হলে বিভাগের অনুরোধে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মানের সঙ্গে আপস করে শিক্ষক নিয়োগ হলে তা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।তবে উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সঠিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় বিভিন্ন পর্ষদ দ্বারা, নিয়োগ হয় কমিটির মাধ্যমে। এখানে একজনের পক্ষে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।’উপাচার্য আরও বলেন, এখানে শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন আছে। তাই অনেকটা উদ্দেশ্যমূলক ও বিদ্বেষপ্রসূতভাবে অভিযোগ করা হয়। তিনি আরও বলেন, হয়তো অনেকে উপাচার্য হতে চেয়েছেন, পারেননি, তাঁদের একধরনের অভিযোগ আছে। আবার ২০ জন প্রার্থীর মধ্যে হয়তো যোগ্য দুজনকে নেওয়া হলো, বাকিরা নানা ধরনের অভিযোগ করেন। এর বাইরে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকেরা সরকারবিরোধী অবস্থান থেকে কথা বলেন।নিয়োগ পেয়েছেন উপাচার্যের ছেলে, শ্যালিকা ও পুত্রবধূ: আগে থেকে প্রক্রিয়াধীন থাকলেও উপাচার্যের আমলে ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (আইইআরটি) নামে একটি ইনস্টিটিউট খোলা হয়। প্রথমে উপাচার্যের ছেলে ইফতেখার আরিফকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অস্থায়ী (অ্যাডহক) ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে ওই কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ইনস্টিটিউটের আওতায় আনা হয়। এর মাধ্যমে তাঁর ছেলেসহ কলেজের ১৮ জন শিক্ষক ওই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হন।ছেলে ছাড়াও উপাচার্যের আমলে শাখা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তাঁর শ্যালিকা ইশরাত শামীম। রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেয়েছেন উপাচার্যের পুত্রবধূও।ছেলেসহ অন্য আত্মীয়দের নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, যদি তাঁরা (ছেলেসহ আত্মীয়স্বজন) বাংলাদেশের নাগরিক হন এবং যোগ্যতাসম্পন্ন হন তাহলে তো তাঁরা কোনো অপরাধ করেননি।শর্ত শিথিল করে শিক্ষক নিয়োগ: বর্তমান উপাচার্যের আমলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেকের স্নাতক সম্মান বা স্নাতকোত্তরে দ্বিতীয় শ্রেণী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শ্রেণী বেমানান বলে বিবেচিত। ২০১১ সালের নভেম্বরে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত শিথিল করা হয়। শিক্ষাজীবনের সব পর্যায়ে জিপিএ বা সিজিপিএ নির্ধারণ করা হয় ৩। শর্ত শিথিল না করতে একাডেমিক কমিটি ও ডিনস কমিটির সুপারিশও উপেক্ষা করা হয়।পরবর্তী সময়ে শিক্ষক আন্দোলনের মুখে শর্ত শিথিলের বিষয়টি প্রত্যাহার করা হলেও তত দিনে নিয়োগ পান অন্তত ৪৩ জন শিক্ষক। নৃবিজ্ঞান, বাংলা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, সমাজতত্ত্বসহ কয়েকটি বিভাগে তুলনামূলক কম যোগ্য এসব শিক্ষক নিয়োগ পান। শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করার সুযোগে জিপিএ ৩ দশমিক শূন্য ৮ পেয়েও নৃবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হন মোক্তার আহমেদ চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত বাকি ছয়জনের ফলও তেমন ভালো ছিল না। এর প্রতিবাদে আবেদনকারী প্রার্থীদের তিনজন ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনটি পৃথক রিট আবেদন করেন। প্রার্থীরা হলেন শিক্ষার সব স্তরে প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্ত সামিনা আফরিন। অপর দুজন হলেন মাহফুজা আক্তার ও আরিফউদ্দিন খান।জানতে চাইলে আরিফউদ্দিন বলেন, ‘রিটের শুনানি এখনো হয়নি। আদালতের রায় যা হয়, তা-ই মেনে নেব।’আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রভাষক পদে মতিউল হক ও মোহাম্মদ নিয়াজ মোরশেদের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক আছে। অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা আবেদন না করেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনের আগে তাঁদের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, দুটি বিজ্ঞাপনের মারপ্যাঁচের সুযোগ নিয়ে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়।অধ্যাদেশ লঙ্ঘিত: দুই বছর পার হয়ে গেলেও ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন না দিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন উপাচার্য। সিনেটে ৩৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি থাকার কথা, বর্তমানে ১৮টি পদই শূন্য। সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনেরও উদ্যোগ নেই। রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধির ২৫টি পদ ১৯৮৬ সালের পর থেকে ফাঁকা। সিন্ডিকেটের চারটি শিক্ষক প্রতিনিধি পদ নয় মাস ধরে খালি। এ ছাড়া রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, হিসাব নিয়ামক, গ্রন্থাগারিক পরিচালক ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগের প্রধানের পদে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কর্মরত।জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আ ন ম মুনির আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। অযোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কার পথে গোধূলি ভাসিয়ে তুমি সূর্যাস্ত দেখেছ?সে তো এক জন্মান্ধ আয়না। প্রেম নেই, প্রহেলিকা নেই, অনুভবে আছে শুধু অনঙ্গ-বাসনা।তবু তারই রক্তে গোধূলি ভাসিয়ে, প্রত্যাগমনের কোনো পথ কেন খোলা রাখোনি এ?কবরের তল দিয়ে বয়ে যায় নদী।লোকালয় দিয়ে কত বয়ে গেছে নদী।প্রতিবেশী দেশ থেকে ধাওয়া করে নদী।অর্থহীন পায়ে পায়ে মরুভূমি জাগে, তৃষ্ণার্ত হোসেন হায়!অশ্রুজলে গোধূলি ভাসিয়ে তুমি সূর্যাস্ত দেখেছ!নদীও কূটনীতি জানে,কথা দিয়ে কোনো দিনও জল সে দেয় না,কোনো দিনও সমুদ্রে মেশে না—তৃষ্ণার্ত হোসেন হায়! নদী এক জন্মান্ধ আয়না।
কাফরুল থানার অন্তর্গত ইব্রাহিমপুর এলাকা। এ এলাকায় ঝিলপাড়া জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদ রয়েছে। এখানে হাজার হাজার মুসল্লি প্রতিনিয়ত নামাজ আদায় করে থাকেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এ এলাকার রাস্তাটি এতই খারপ যে এখান দিয়ে কোনো যানবাহনই সুষ্ঠুভাবে চলাচল করতে পারে না। ফলে জনগণকে প্রতিনিয়ত সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।এ ছাড়াও বর্ষা মৌসুমে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এ রাস্তাটি অথই সাগরে তলিয়ে যায়। এবং অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। তাই অবিলম্বে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রাস্তাটি যথাশিগগির সম্ভব সংস্কার করার অনুরোধ করছি। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়ে জনগণকে দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই দেবে।লাবণী রহমানইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে নিউজ-প্রিন্টের মূল্যবৃদ্ধি, আমদানীকৃত নিউজপ্রিন্টের ওপর অতিরিক্ত কর ধার্য, পরিবহন খরচসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনের পত্রিকার দাম দুই টাকা বাড়ল। তাই কাল শনিবার থেকে প্রথম আলোর দাম ৮ টাকার স্থলে ১০ টাকা হবে। শুক্রবারও পত্রিকার দাম একই থাকবে।
এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না! তাঁর এখন ভেসে বেড়ানোর কথা ছিল সুখের সপ্তম স্বর্গে। অথচ বাবা হওয়ার স্বর্গীয় আনন্দ ঠিকমতো উপভোগই করতে পারছেন না খান সাহেব। তৃতীয়বারের মতো বাবা হওয়ার খবরটা নিশ্চিত করতে গিয়ে শাহরুখ জানান, এটি তাঁর জন্য মিশ্র এক অনুভূতি। একই সঙ্গে তিনি খুশি ও ব্যথিতও!শাহরুখের বাবা হওয়া নিয়ে এই কদিনে কম জল ঘোলা হয়নি। বাবা হতে গিয়ে ‘সারোগেসি’-পদ্ধতি (অন্য নারীর গর্ভ ভাড়া নেওয়া) বেছে নেওয়া, সন্তান জন্মের আগেই সেই সন্তানের লিঙ্গ নিশ্চিত করা—এসব নিয়ে তোপের মুখে পড়েছিলেন বলিউড-বাদশা। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপারস্যাপারে অন্যের এভাবে নাক গলানো যে পছন্দ হয়নি, সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন শাহরুখ, ‘এই মুহূর্তে দুঃখ ও আনন্দের কিছুটা মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। আমি অনুরোধ করব, আমার সন্তানের ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে তারা যে পরিমাণ শক্তি ব্যয় করছে, সেই একই পরিমাণ উদ্যম যেন সেসব বিষয়েও তারা দেখায়, যেগুলোতেই আসলে তাদের মনোযোগ থাকা উচিত।’এ বিষয়ে আর একটা শব্দও খরচা করতে রাজি নন জানিয়ে শাহরুখ বলেছেন, বিষয়টি থেকে দুঃখের অংশটা উবে গেলে আবার এ নিয়ে কথা বলবেন তিনি। তাঁর তৃতীয় সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে, এ ব্যাপারেও নিশ্চিত করে কিছু বলেননি। তবে সূত্রগুলো জানিয়েছে, পুত্রসন্তানেরই বাবা হয়েছেন ৪৭ বছর বয়সী এই অভিনেতা। এনডিটিভি।
আর তার বসে থাকা ভূতের মতনঘরে কেউ নাই। বারান্দায়, উঠানে, কলতলায়, পৈঠায়বাগানে, শিমুল পলাশ জোড়ের তলে—নাহ, কেউ নাই বড় তেঁতুইতলায় অন্ধকার,ঝুপসি কদম চালতার সারি, যজ্ঞডুমুরের মাটিনোয়া ডালটারে বাঁয়ে রেখেঅবিরল জোছনায় লুটোপুটি খাওয়া একফালি মাঠ— হাহাকারের মতো বাতাস আর নির্জন ঠুকরে খায়—কাকে! নীরবতার নাটাই থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সুতাকাহিনি যেন বা এ পরিণতিই কি বাসা বেঁধেছিল এতকাল বুকে! আর সে, দেখছে বিভ্রমের বাড়ির পাশে—রেললাইনতার পাশে মাঠ, মায়ার চোখের মতো এফোঁড় ওফোঁড় চিরে ফেলা শবএকবার সে দেখতে চায় নিজের মুখ—মৃতচুমু খেতে চায় কপালে, বুকতিলেআর নিজেই নিজেকে ধরে ঘুমিয়ে পড়বে বলেচরাচরে তখন বাতাস বাতাস ছমছমে চাঁদ, আকাশ আকাশনিদারুণ জড়াজড়ি খেলা, নদীপাড়ে, কলকাসুন্দি আর শটিবনে
শিগগিরই ফিউরি ছবির কাজ শুরু হচ্ছে। এতে অভিনয় করছেন ব্র্যাড পিট ও শিয়া ল্যাবাফ। ছবিটি মূলত যুদ্ধবিগ্রহকেন্দ্রিক। তাই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আরও ঝালাই করে নেওয়ার জন্য এই দুই তারকা ঘুরে এলেন ক্যালিফোর্নিয়ার ফোর্ট আরউইন ন্যাশনাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে। কথা বললেন সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে। দেখলেন তাঁদের কাজকর্ম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের অভিজ্ঞতাও নিলেন রাত জেগে। সেনাসদস্যরা মিশনে থাকার সময় কী করেন না করেন, সেসব বিষয়েও বিশদ কথা বলেছেন পিট ও শিয়া। পিটিআই।
দেশে এখন প্রতিদিন গ্যাস উ ৎপাদন হচ্ছে গড়ে ২২৫ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে প্রায় ৪০ কোটি ঘনফুটই অপচয় হচ্ছে। অথচ চাহিদার তুলনায় গ্যাসের ঘাটতি চলেছে। অপচয়ের মূল জায়গাগুলো হলো বিদ্যু ৎকেন্দ্র, সার কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতেও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। সরকারি সূত্র এবং বেসরকারি পর্যায়ের গবেষকেরা জানান, পুরোনো বিদ্যু ৎকেন্দ্র ও সার কারখানার অদক্ষ যন্ত্রপাতি এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সেকেলে প্রযুক্তির বয়লার এই অপচয়ের কারণ। এ ছাড়া সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন উ ৎপাদিত প্রায় ২২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে যে পরিমাণ বিদ্যু ৎ, সার ও শিল্পপণ্য উ ৎপাদন করা হচ্ছে, যন্ত্রপাতির দক্ষতা বাড়ানো হলে সর্বোচ্চ ১৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করেই তা করা সম্ভব। অর্থা ৎ বর্তমানে চাহিদার তুলনায় দেশে দৈনিক গ্যাসের যে প্রায় ৮০ কোটি ঘনফুট ঘাটতি রয়েছে, অপচয় বন্ধ করে তার অর্ধেক পূরণ করা সম্ভব।কিন্তু অপচয় রোধে সরকার কখনোই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তবে একটি বিদেশি সংস্থার সহায়তায় এ ব্যাপারে কার্যক্রম নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ প্রভৃতি করা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অপচয় রোধের কার্যক্রম ফলপ্রসূ হয়নি।জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জ্বালানি দক্ষতা (এনার্জি ইফিশিয়েনসি) বিষয়ের গবেষক ইজাজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি অপচয়ের বিষয়টি দীর্ঘদিন একেবারে অবহেলিত ছিল। যুগের পর যুগ অদক্ষ যন্ত্রপাতি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের অপচয় করা হয়েছে। এখন জ্বালানির সংকট দেখা দেওয়ায় বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। কিছুু কাজও শুরু হয়েছে। বেসরকারি খাতের অল্পকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছে। সরকারও তাদের উ ৎসাহ দিচ্ছে।তিতাসের জরিপ: দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে, তাদের বিতরণ এলাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পুরোনো প্রযুক্তির বয়লার নতুন প্রযুক্তিতে রূপান্তর করে দৈনিক ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব। এই রূপান্তরে ব্যয়ও বেশি নয়।এ ছাড়া তিতাসের আওতাধীন এলাকার আবাসিক গ্রাহকদের চুলাগুলো উন্নত প্রযুক্তির করা হলে এবং রাস্তা থেকে রান্নাঘরে গ্যাস নেওয়ার লাইনগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে প্রতিদিন গ্যাস সাশ্রয় হবে ১০ কোটি ঘনফুট। এই কাজেও ব্যয় সামান্য।সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে প্রতিদিন দেশে উ ৎপাদিত মোট গ্যাসের ১২ শতাংশ (২৭ কোটি ঘনফুট) ব্যবহূত হচ্ছে আবাসিক খাতে। আর শুধু তিতাসের এলাকায় প্রতিদিন ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। সুতরাং শুধু তিতাসের এলাকার অপচয় বন্ধ করা গেলে সারা দেশে বর্তমানে যতজন আবাসিক গ্রাহক আছেন, আরও প্রায় ততজনকে সংযোগ দেওয়া সম্ভব।তিতাস অবশ্য শিল্পে উন্নত প্রযুক্তির বয়লার ও চুলা ব্যবহার উ ৎসাহিত করে গ্যাস সাশ্রয়ের উদ্যোগ কয়েক বছর আগেই নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো ফল পাওয়া যায়নি।তিতাসের এলাকার বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানে গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও গ্যাস অপচয়ের চিত্র একই রকম।বিদ্যুতে অপচয় বেশি: বিদ্যু ৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, তাদের গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র তাপভিত্তিক (স্টিম থার্মাল)। এসব কেন্দ্রে গ্যাস পুড়িয়ে উ ৎপাদিত তাপ ব্যবহার করে টারবাইন ঘোরানো হয়।এ ধরনের বিদ্যু ৎকেন্দ্রের জ্বালানি দক্ষতা (ফুয়েল ইফিশিয়েনসি) ৩৫ শতাংশের মধ্যে। কিন্তু এখন যে প্রযুক্তির গ্যাসচালিত বিদ্যু ৎকেন্দ্র করা হয় (কম্বাইন্ড সাইকেল) সেগুলোর দক্ষতা ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ। আগের ওই কেন্দ্রগুলো কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর করা হলে প্রায় অর্ধেক জ্বালানি ব্যবহার করে একই পরিমাণ বিদ্যু ৎ পাওয়া সম্ভব।এ ব্যাপারে সরকারি সূত্রগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উ ৎপাদন দীর্ঘদিন ধরে অনেক কম থাকায় এবং অর্থ সংকটের কারণে পুরোনো কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর করার সুযোগ কখনো পাওয়া যায়নি।পিডিবি সূত্র জানায়, আরও প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পুরোনো বিদ্যু ৎকেন্দ্র রয়েছে যেগুলোর জ্বালানি দক্ষতা সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ। এই কেন্দ্রগুলোতে যে পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহূত হচ্ছে সেই একই পরিমাণ জ্বালানি দিয়ে দ্বিগুণ বিদ্যু ৎ উ ৎপাদিত হতে পারে। কিন্তু সে জন্য ওই কেন্দ্রগুলো নবায়নের (বিএমআরই) জন্য বিপুল অর্থের দরকার। তবে সেই অর্থের পরিমাণ অপচয় হওয়া জ্বালানির তুলনায় অনেক কম।বিদ্যুতে আরেকটি বড় অপচয়ের ক্ষেত্র ক্যাপটিভ পাওয়ার (বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিদ্যু ৎ উ ৎপাদন)। এ ক্ষেত্রে কম দামে গ্যাস দেওয়া হয়। কিন্তু বিদ্যু ৎ উ ৎপাদনের দক্ষতা ক্ষেত্রবিশেষে ২০ শতাংশেরও কম।সারেও একই অবস্থা: ইউরিয়া সার কারখানাগুলোতেও জ্বালানির অপচয় বিদ্যুতের মতোই ব্যাপক। কর্ণফুলী সার কারখানা (কাফকো) বিদেশি বিনিয়োগে স্থাপিত একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। এই কারখানায় এক মেট্রিক টন ইউরিয়া উ ৎপাদন করতে গ্যাস ব্যবহূত হয় ২৪ হাজার ঘনফুট। সরকারি কারখানাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ যমুনা সার কারখানায় এক টন ইউরিয়া উ ৎপাদনে গ্যাস ব্যবহূত হচ্ছে ৩২ হাজার ঘনফুট। চিটাগাং সার কারখানায় ব্যবহূত হয় ৪২ হাজার; ঘোড়াশালের জিয়া ও পলাশ সার কারখানায় ব্যবহূত হচ্ছে যথাক্রমে ৪৩ ও ৪৯ হাজার ঘনফুট। আশুগঞ্জের সার কারখানায় ব্যবহূত হচ্ছে ৭৩ হাজার ঘনফুট। আর ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় এক মেট্রিক টন ইউরিয়া ব্যবহার করতে গ্যাস লাগে ৮২ হাজার ঘনফুট।প্রতিদিন হাজার হাজার মেট্রিক টন সার উ ৎপাদনে এভাবে গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। অবশ্য নির্মীয়মাণ শাহজালাল সার কারখানা চালু হলে ফেঞ্চুগঞ্জ বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা সরকার করেছে।অধ্যাপক ইজাজ বলেন, কারখানাগুলোর প্রযুক্তি পরিবর্তন করে এই অপচয় বন্ধ করা যায়। কাফকো দুই বছর আগেও তিন কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যয় করে কারখানার আধুনিকায়ন করেছে। না হলে তো তারা লাভজনক হতে পারবে না। আর তাদের তো আন্তর্জাতিক দামে গ্যাস কিনতে হয়। দেশের কারখানা তো কম দামে গ্যাস পায়। ফলে জ্বালানির অপচয় নিয়ে এদের মাথাব্যথা কম। কিন্তু এতে জ্বালানি খাতের এবং দেশের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে।উদ্যোগ কার্যকর হয়নি: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম. তামিম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শিল্পের বয়লার ও পুরোনো বিদ্যু ৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোর একটি কার্যক্রম নেওয়া হয়েছিল। কিছু কাজও হয়েছিল। তবে সময় স্বল্পতায় তা বেশি দূর এগোয়নি।সরকারি সূত্রগুলো জানায়, প্রযুক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমে জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানো ও জ্বালানির অপচয় বন্ধ করার উদ্যোগ কখনোই কার্যকর হয়নি। সরকারি খাতের বিদ্যু ৎকেন্দ্রগুলো তো সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ-পুনর্বাসনও করা হয়নি। এখনো হচ্ছে না। তবে সম্প্রতি পুরোনো বিদ্যু ৎকেন্দ্রগুলোর তিন বছর মেয়াদি একটি রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।বিদ্যু ৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রের দাবি, ওই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে পুরোনো কেন্দ্রগুলোর উ ৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে।তিতাস গ্যাস কোম্পানিও প্রায় এক বছর আগে তাদের বিতরণ এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানের বয়লার পরিবর্তনের একটি উদ্যোগ শুরু করে। এর অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট শিল্পপতিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করা হয়। বয়লার পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনে ঋণ দেওয়ারও কর্মসূচি তাদের আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই উদ্যোগের কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
জান্নাত-এ-ফেরদৌসী, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, নাসিমা খান, ফারাহ্ দীনা, রেজাউল করিম, শহীদ কবির, মাহমুদুল হাসান ও দিদারুল করিম—আটজন শিল্পী। তাঁদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব পরিচয়। তাঁদের আরেকটি পরিচয়, তাঁরা সবাই জাগরণের গান অ্যালবামের শিল্পী। এরই মধ্যে জাগরণ সাংস্কৃতিক চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র প্রকাশ করেছে ‘জাগরণের গান’ সিরিজের চারটি অ্যালবাম। এবার এই আটজন শিল্পীর গান নিয়ে আটটি অ্যালবাম প্রকাশ করছে জাগরণ সাংস্কৃতিক চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র। অ্যালবামগুলো হলো লোকগান নিয়ে বিমান চন্দ্র বিশ্বাসের গুরু আমায় করো করুণা ও দিদারুল করিমের মানবতরণী, রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে নাসিমা খানের আর রেখো না আঁধারে ও ফারাহ্ দীনার অদেখা বন্ধু, বিভিন্ন ধারার গান নিয়ে মাহমুদুল হাসানের জন্মভূমি ও শহীদ কবিরের নব নব রূপে, রজনীকান্ত-দ্বিজেন্দ্রলাল-অতুলপ্রসাদের গান নিয়ে জান্নাত-এ-ফেরদৌসীর সবারে বাসের ভালো এবং নজরুলের গান নিয়ে রেজাউল করিমের সঘনশ্রাবণ।আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের মিলনায়তনে এই আটটি অ্যালবামের মোড়ক খোলা হবে। থাকবে আমন্ত্রিত শিল্পীদের গানের অনুষ্ঠান।
প্রাণ গুঁড়া মসলা মনোহর ইফতার’ অনুষ্ঠানটি এবার ধারণ করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানে বসবাসরত ৩০ জন প্রবাসী বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করেছেন এই অনুষ্ঠানে। তাঁরা রান্না করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঐতিহ্যবাহী নানা খাবার। রান্নার পাশাপাশি থাকছে দুবাই, আবুধাবি, শারজা, হাততা, অ্যালাইন, আজমান, রাসেল খাইমারের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের দৃশ্য। উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেছেন কেকা ফেরদৌসী। পয়লা রমজান থেকে ৩০ দিন প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা ৪০ মিনিটে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হবে চ্যানেল আইয়ে। এ উপলক্ষে গত বুধবার দুপুরে চ্যানেল আই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এখানে বক্তব্য দেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, রন্ধনবিদ কেকা ফেরদৌসী এবং প্রাণ-এর পরিচালক ইলিয়াস মৃধা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৩৩টি আন্তনগর ট্রেন ১০ জুলাই থেকে নতুন সূচিতে চলাচল করবে। সবগুলো ট্রেনের যাত্রাপথে ভ্রমণ সময় ২৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দুটি প্রকল্পের আওতায় চিনকি আস্তানা থেকে কুমিল্লার লাকসাম এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে গাজীপুরের টঙ্গী পর্যন্ত রেলের ডবল লাইনের কাজ দ্রুত গতিতে চলায় ধীর গতিতে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।পরিবর্তিত সূচিতে বাংলাদেশের একমাত্র বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রা ২০ মিনিট এগিয়ে আনা হয়েছে। ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে সকাল সাতটার পরিবর্তে ভোর ছয়টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। একই সঙ্গে ট্রেনটি আবার ঢাকা থেকে বেলা তিনটা ২০ মিনিটের পরিবর্তে বেলা তিনটায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে যাত্রা করবে। শুক্রবার থাকবে সাপ্তাহিক বিরতি।রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলী বিকেল চারটা ৪০ মিনিটের পরিবর্তে বিকেল তিনটা ২০ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে রওনা হবে। মহানগর প্রভাতী চট্টগ্রাম থেকে সকাল সাতটা ২০ মিনিটের পরিবর্তে সকাল সাতটায় যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাবে। চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী উদয়ন রাত নয়টার পরিবর্তে সাড়ে নয়টায় যাত্রা করবে। একই পথের পাহাড়িকা সকাল আটটার পরিবর্তে সোয়া আটটায় চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে।এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরগামী মেঘনা বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরিবর্তে পাঁচটায় যাত্রা করবে। ঢাকা থেকে তারাকান্দি স্টেশনে অগ্নিবীণা সকাল সাড়ে নয়টার পরিবর্তে সকাল নয়টা ৪০ মিনিট এবং একই সঙ্গে ট্রেনটি তারাকান্দি থেকে ঢাকার উদ্দেশে বিকেল চারটার পরিবর্তে সাড়ে চারটায় যাত্রা করবে। ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস দেওয়ানগঞ্জ থেকে সকাল ছয়টার পরিবর্তে সাড়ে ছয়টায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে। যমুনা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্দেশে বিকেল চারটা ২০ মিনিটের পরিবর্তে চারটা ৪০ মিনিটে যাত্রা করবে। সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে বিকেল তিনটার পরিবর্তে চারটায় ছেড়ে যাবে।রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ডবল লাইনের কাজ চলার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সাতটি স্থানে চলন্ত ট্রেন থামিয়ে ধীরগতিতে চালানোর কারণে পরিচলন সময় ৪২ মিনিট বেড়ে গেছে। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচলন সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী এক বছর নতুন সূচিতে ট্রেনগুলো যাত্রী পরিবহন করবে।
জাতীয় সংসদে বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার দেওয়া ভাষণে ভারত সম্পর্কে আনা নানা অভিযোগের জবাব দিয়েছে দেশটি। ভারতের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি লিখিত জবাব খালেদা জিয়াকে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ সরন সৌজন্য সাক্ষা ৎ করেন। সেখানে তিনি খালেদা জিয়ার কাছে ভারতের জবাবসংবলিত একটি চিঠি দেন। এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান উপস্থিত ছিলেন।গত ২৯ জুন সংসদে দেওয়া ভাষণে খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বাংলাদেশকে না জানিয়ে ভারতের দরপত্র আহ্বান, তিস্তা চুক্তি না হওয়া, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ ও সীমান্তে অব্যাহতভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ তুলে ধরেন।সাক্ষা ৎ শেষে গুলশান কার্যালয় থেকে বেরোনোর পর রিয়াজ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চিঠিতে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির অবসানের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে খালেদা জিয়াকে জানিয়েছেন পঙ্কজ সরন।রিয়াজ রহমান জানান, বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসন ভারতের হাইকমিশনারকে বলেন, ‘আমরা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছিলাম না। ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো কিছু জানানো হচ্ছিল না।’রিয়াজ রহমান আরও বলেন, বৈঠকে চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, এর মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয় এবং এটাই তাঁরা চান। এ সময় পঙ্কজ সরন খালেদা জিয়াকে বলেন, ‘আপনারা তো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিতেছেন।’ এর জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘চার সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের প্রার্থীরা আরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হতো।’বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, দুটি দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। খালেদা জিয়া ভারতের হাইকমিশনারকে বলেছেন, বিএনপি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। এ প্রসঙ্গে হাইকমিশনার বলেন, ভারতও তা-ই চায়। তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। ভারত চায় দুটি দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠুক।বৈঠকে ভারতের হাইকমিশনার তাঁর দেশের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের একটি অভিনন্দনপত্র বিএনপির চেয়ারপারসনকে দেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে খালেদা জিয়ার দেওয়া চিঠির জবাবে মনমোহন এই পত্র দেন।
ফারাহ শারমীন। উপস্থাপনা করেন। এখন তিনি দুটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন—‘পন্ডস মাই সেকেন্ড হানিমুন’ ও ‘হরলিক্স লাইট লাইফ টু দ্য ফুলেস্ট’।পন্ডস মাই সেকেন্ড হানিমুন...বাংলাদেশে এ ধরনের অনুষ্ঠান এটাই প্রথম। উপস্থাপনা করে খুবই মজা পাচ্ছি। এই অনুষ্ঠানের গালা রাউন্ডের শুটিংয়ের জন্য এখন কক্সবাজারে আছি। আমরা সাধারণত তারকাদের কাছ থেকে ভালোবাসার গল্প শুনি। তা-ও সংলাপ ঠিক করা থাকে, অভিনয় থাকে। কিন্তু এটা একেবারেই আমজনতার অনুষ্ঠান। মানুষগুলো এত সহজ, স্বাভাবিকভাবে তাদের কথাগুলো উপস্থাপন করে, দারুণ লাগে!টক শো হরলিক্স লাইট লাইফ টু দ্য ফুলেস্টের অভিজ্ঞতা...এটাও একটা চমৎকার অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান উপস্থাপনার সুবাদে ২৬ জন তারকার গল্প খুব কাছ থেকে জানতে পেরেছি। অনেক ভেতরের গল্প, যেগুলো এমনিতে কখনোই জানা হয় না। দর্শক তো টিভিতে শুধু ২০ মিনিটের আড্ডাটা দেখেন। শুটিংয়ের সুযোগে ক্যামেরার পেছনেও অনেক আড্ডা দেওয়া হয়।টক শো উপস্থাপনার চ্যালেঞ্জ...ক্যামেরা অন হলেই আমার ভেতরে ভীষণ রোমাঞ্চ কাজ করে। মনে হয়, অসংখ্য দর্শক আমাকে দেখছেন। শুধু যে নিজের প্রশ্নের উত্তরগুলো জানলেই হয়, তা নয়। যে দর্শক অনুষ্ঠান দেখছেন, তাঁদের মনের প্রশ্নগুলোর উত্তরও আমাকে খুঁজতে হয়।সাক্ষাৎকার নেওয়া এবং দেওয়া...আমার মনে হয় সাক্ষাৎকার দেওয়া সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেয়ে অনেক কঠিন। আমি অবশ্য এখন শিখে গেছি। চটপট উত্তর দিতে পারি! হা হা হা...এমন কোনো গুণ, যা দর্শক জানেন না...আমার তো কোনো গুণই নেই! ঘষামাজা করে যা একটু কাজ করি! হা হা হা...ছোটবেলায় গান শিখেছি। এখন তো গানের ‘গ’ও করি না। বোধ হয় মানুষের সঙ্গে কথা বলার কাজটাই ভালো পারি। শুধু ক্যামেরার সামনেই না, কর্মজীবনেও আমার কাজ সেটাই। মো. সাইফুল্লাহ
বাংলাদেশ টেলিভিশনসন্ধ্যা৭-০০ শেষ কোথায়।৭-২৫ সিনেবাংলা।৮-৩৫ কিছুক্ষণ।৯-০৫ আমাদের কথা।৯-৪০ বাঙালির বাংলা।১০-২৫ তারানা।১১-০০ প্রাণে মনে অন্তরে।এটিএন বাংলারাত৮-০০ নির্বিকার মানুষ।৮-৪০ কুটে কাহার।৯-১০ সরাসরি আমেরিকা।৯-১৫ ছায়াবৃতা।১১-০০ কমেডি আওয়ার।চ্যানেল আইবিকেল৫-৩০ গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসব।৭-৫০ ক্ষুদে গানরাজ।৯-৩৫ ফিউচার লিডার।১১-৩০ ঘটকের বিয়ে।একুশে টিভিসন্ধ্যা৭-৫০ ফ্যাশন অ্যান্ড টিউন।৮-২০ গানের ওপারে।৯-৩০ কথা কাজে মিল নাই।১০-১০ উড়ো মেঘে ভালোবাসা।১১-৪০ জনতার কথা।১২-০৫ স্টুডিও কনসার্ট (পূজা)।এনটিভিবেলা২-৩৫ নিষেক।৫-৪০ টিফিনের ফাঁকে।৬-১৫ শুভসন্ধ্যা।৬-৪৫ রূপমাধুরী।৮-১৫ মায়ানিগম।৯-০০ নব আলোকের গানে।৯-৪৫ বিহাইন্ড দ্য সিন।১১-৩০ হ্যালো আমেরিকা।১২-০০ মিউজিক ইউফোনি।দেশ টিভিবেলা২-৩০ প্রিয়জনের গান।৬-৩০ লাইফ টু দ্য ফুলেস্ট।৭-৩০ পিজিআর নাইট (সোলস, মমতাজ, আঁখি আলমগীর)। সরাসরি।আরটিভিসন্ধ্যা৭-৩০ গ্ল্যামার ডটকম।৮-১০ ফেসবুক।৯-০৫ অলসপুর।৯-৫০ ইতি... দুলাভাই।১১-২০ আওয়ার ডেমোক্রেসি।১২-০৫ মিউজিক স্টেশন(শাহনাজ বেলী)।বাংলাভিশনসন্ধ্যা৬-২০ সাঁই আমার কখন খেলে কোন খেলা।৮-১৫ দুই টাকার বাহাদুরি।৯-০৫ গানে গানে দেশে দেশে।৯-৪৫ কর্তাকাহিনি।১১-২৫ আমি এখন কী করব?বৈশাখী টিভিসন্ধ্যা৬-২০ বাটি চালান।৮-০০ নিশিযাত্রা।৯-১৫ ছন্দে-আনন্দে।১১-১৫ সময় কাটুক গানে গানে।মাছরাঙা টেলিভিশনবেলা২-৩০ ইচ্ছে গানের দুপুর (গৌরব)।৫-০২ ডক্টরস চেম্বার।৬-৩০ সহজ হোক স্বাদের রান্না।৭-৪০ তৃতীয় স্ত্রীর ভাগ্যলেখা।৯-৩০ উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব।১১-০০ লাইফ টু দ্য ফুলেস্ট।১১-৩০ আনপ্লাগড।১২-০২ পান-সুপারির বউ।চ্যানেল নাইনসন্ধ্যা৬-৪৫ ভিন্ন স্বাদের সন্ধানে।৭-৩০ ফ্রাইডে স্টার।৯-১০ মিউজিক বক্স।১০-১৫ অন্তরলোকে।চ্যানেল টোয়েন্টিফোরসন্ধ্যা৬-২০ প্রসঙ্গ রাজনীতি।৮-১৫ লাভ ইন ঢাকা।১১-০০ রোদ।জি টিভি (গাজী টিভি)সন্ধ্যা৬-৩০ আয়োজনে আমন্ত্রণে।৮-১০ সবুজ বাংলা।৮-৫৫ আজকের অনন্যা।এশিয়ান টিভিসন্ধ্যা৭-৪০ আনন্দবার্তা।৮-২০ বলিউড ঢালিউড।৯-০০ রাতের তারা।১০-২০ স্টার ড্যান্স।১১-০০ গানের ডায়েরি।এসএ টিভিবেলা৩-০০ অনুভবে অনুতাপে ।৭-৩৫ সন্ধ্যার মেঘমালা।৮-০০ রঙের মেলা।৮-৩০ বাংলাদেশি আইডল।৯-৩০ চুপ কথা।১১-০০ এসএ লাইভ(দ্য ট্র্যাপ)।
বিরল ও দুর্লভ পাখির সন্ধানে বছর খানেক ধরে দেশের আনাচকানাচে ঘুরছি। সে কারণেই ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার মুনির আহমেদ ও তাঁর সহধর্মিণী বন্য প্রাণী ও পাখি বিশেষজ্ঞ তানিয়া খানের আমন্ত্রণ ফেলতে পারলাম না। গত ৩১ মে গিয়েছিলাম হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবস্থিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। সন্ধ্যায় পৌঁছে পরদিন ভোরেই দুটি বিরল পাখির সন্ধানে নেমে পড়লাম। বিকেল চারটা নাগাদ একটির সন্ধান মিলল। কিন্তু অন্যটির জন্য অপেক্ষা করতে হলো আরও দুই দিন। তবু নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। কারণ, এভাবে ‘এলাম, দেখলাম আর ক্লিক করলাম’ তো সব সময় হয় না। কোনো কোনো পাখির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।প্রথম পাখিটির কথা অন্য দিনের জন্য তোলা থাকল। আজকে দ্বিতীয়টির কথা বলছি। প্রথম দুই দিন ব্যর্থ হয়ে ৩ জুন ভোরে নাশতার আগেই জঙ্গলে ঢুকলাম। পিছু নিল উদ্যানের তিন কুকুর—লালু, কালু আর লালি। আর কুকুর নিয়ে পাখি দেখতে যাওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের এড়ানো গেল না। তবে কোনো টুঁ-শব্দটিও করল না। ওই দিন উদ্যানের বানরগুলো কেন যেন বেশ খেপে গিয়েছিল। কুকুরগুলো ওদের ভালোভাবেই সামলেছে।পানিবিহীন শুকনা সর্পিল ছড়া ধরে এগিয়ে চলেছি। পাখি-প্রাণী-প্রজাপতি-পতঙ্গ যা চোখে পড়ছে ক্লিক করছি। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য হাসিল হচ্ছিল না। ছড়া ধরে বহুদূর চলে এসেছি। তাই ফিরতি পথ ধরলাম। কিছুক্ষণ পর বানরগুলো পিলে চমকানো চি ৎকার দিচ্ছে। সঙ্গী কুকুর তিনটি মাঝেমধ্যে তেড়ে যাচ্ছিল বানরগুলোর দিকে। অবশ্য তাতে বানরদের চি ৎকার থামছিল না।এমন সময় হঠা ৎই দেখা পেলাম পাখিটির। ঘন পাতা ভরা একটা গাছে পাতার আড়ালে বসে ছিল। দ্রুত ক্যামেরায় ক্লিক করে গেলাম। খানিক পর ঘন পাতার আড়াল থেকে বেরিয়ে পাখিটি একটা ন্যাড়া গাছে গিয়ে বসে সুরেলা কণ্ঠে গান ধরল। এটি এক বিরল পরিযায়ী কোকিল যে গ্রীষ্মে এ দেশে আসে ডিম-বাচ্চা তোলার জন্য। তবে না বানায় বাসা, না দেয় ডিমে তা। ওর নাম ‘পান্না কোকিল’ বা ‘এশীয় সবুজাভ কোকিল’ (Asian Emerald Cuckoo)। ‘শ্যামা পাপিয়া’ নামেও পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম Chrysococcyx maculatus অর্থা ৎ ‘তিলা সোনা পাপিয়া’।কোকিল পরিবারের ছোট সদস্যদের একজন সে। লম্বায় মাত্র ১৮ সেন্টিমিটার। স্ত্রী ও পুরুষের রঙে ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষের পিঠের ওপরটা চকচকে পান্না-সবুজ, তাতে সোনালি-ব্রোঞ্জ আভা। থুতনি, গলা ও বুকেও তাই। বুক-পেটের নিচটা সাদা, তার ওপর ধাতব ব্রোঞ্জ-সবুজ ডোরা। লেজের নিচটা ধাতব সবুজ, তাতে সাদা ডোরা। স্ত্রীর মাথা ও ঘাড়ের পেছনটা সোনালি লাল। পিঠের পালকের রং ব্রোঞ্জ-সবুজ। গলা-বুক-পেটে সাদার ওপর বাদামি-ব্রোঞ্জ ডোরা। লেজে খয়েরি-কালো ডোরা, ডগা সাদা। চোখ ও চোখের পাতা গাঢ় লাল। ঠোঁট কমলা-হলুদ, আগা কালো। পা ও পায়ের পাতা গাঢ় বাদামি-সবুজ।পান্না কোকিল প্রধানত চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। তবে নিচু ভূমি ও পাহাড়ের ১৫০০ মিটার উঁচুতেও দেখা যায়। এরা একাকী বা চার-ছয়টির দলে বিচরণ করে। গাছের মগডালে পাতার আচ্ছাদনে লুকিয়ে থাকে, তাই সহজে চোখে পড়ে না। পিঁপড়া, শুঁয়োপোকা, ছারপোকা ও নরম পোকামাকড় খেতে পছন্দ করে।এ দেশে এরা এপ্রিলের মাঝামাঝি আসে ও জুলাইয়ের শেষে চলে যায়। প্রজননের সময় পুরুষটি দিনভর ‘চিররর্-চিররর্-চিররর্-চিররর্’ স্বরে ডাকে, যা আমি রেকর্ড করেছি। আবার পূর্ণিমা রাতেও ডাকে। স্ত্রী কোকিল চুপিসারে মৌটুসি বা মাকড়সারভুকের বাসায় ডিম পাড়ে। যদিও আকারে কিছুটা বড় হয়, সাদা রঙের ডিমগুলোয় বাদামি বা লালচে ছিট থাকে। কামনা করি প্রকৃতির সৌন্দর্য এই পান্না কোকিল বেঁচে থাকুক অনন্তকাল।
বাংলাদেশ টেলিভিশনবেলা ৩-০৫ অনির্ধারিত।এটিএন বাংলাবেলা ৩-০৫ ক্ষ্যাপা বাসু (রিয়াজ, পপি, সোহেল রানা, চম্পা)।একুশে টিভিবেলা ১১-৩০ আনন্দ অশ্রু।আরটিভিবেলা ২-১৫ ধোঁকা (মান্না, পূর্ণিমা)।চ্যানেল নাইনসকাল ৯-০০ মা-বাবার স্বপ্ন।ডিডি বাংলাবেলা ১১-৩৫ অরুণ বরুণ কিরণমালা (আল্পনা গোস্বামী, দিলীপ রায়, পদ্মা দেবী)।ইটিভি বাংলাবেলা ১-৩০ বাঙালিবাবু (মিঠুন, রঞ্জিত মল্লিক, তাপস পাল, চুমকি)।জলসা মুভিজসকাল ৯-৩০ জানি দেখা হবে (পরমব্রত, অঞ্জন দত্ত, পায়েল)। ১১-৫৫ প্রেম বাই চান্স (আবির, কোয়েল মল্লিক)। ৩-২০ হিরো (জিৎ, তাপস পাল, কোয়েল মল্লিক)। ৬-৩৫ রহমত আলী (মিঠুন, ঋতুপর্ণা, রূপা গাঙ্গুলি, রজতাভ দত্ত)। ৯-৩০ রান (রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, অভিরাজ)।জি সিনেমাসকাল ৮-১৭ ত্রিমূর্তি (শাহরুখ খান, জ্যাকিশ্রফ, অনিল কাপুর)। ১১-৩৯ সৌগন্ধ (রাখী, অক্ষয় কুমার, শান্তিপ্রিয়া, রূপা গাঙ্গুলি)। ৩-১০ চালবাজ (সানি দেওল, শ্রীদেবী, রজনীকান্ত)। ৬-৩৫ ইংলিশ ভিংলিশ (শ্রীদেবী)। ৯-৩০ যমলোক।সেট ম্যাক্সসকাল ৮-২০ যো জিতা ওহি সিকান্দর (আমির খান, আয়শা জুলখা)। ১১-৫৭ কেয়া কুল হ্যায় হাম (রিতেশ, তুষার কাপুর, নেহা শর্মা)। ২-৪৮ কয়লা (শাহরুখ খান, মাধুরী দীক্ষিত)। ৫-৫৩ কিষান কানহাইয়া (অনিল কাপুর, মাধুরী দীক্ষিত)। ৯-৩০ রাওডি রাঠোড় (অক্ষয় কুমার, সোনাক্ষী সিনহা)।ফক্স মুভিজসকাল ৯-০০ হোম অ্যালোন ২ (ম্যাকলি কালকিন)। ১১-০০ এক্স-মেন: ফার্স্ট ক্লাস। ১-১৫ ওয়ানস আপন এ টাইম। ২-০৫ ক্যাট এইট। ৩-৪০ হোয়াট টু এক্সপেক্ট হোয়েন ইউ আর এক্সপেক্টিং (ক্যামেরন ডায়াজ, জেনিফার লোপেজ)। ৫-৩০ স্পাই কিডস। ৭-০০ সেফ (জেসন স্ট্যাটহ্যাম)। ৮-৪০ টোয়েন্টিওয়ান জাম্প স্ট্রিট। ১০-৩০ হোয়াট লাইজ বেনিথ (মিশেল ফাইফার)।এইচবিওসকাল ৮-৪১ দ্য টুর্নামেন্ট। ১০-২৫ নো স্ট্রিংস অ্যাটাচড (অ্যাস্টন কুচার, নাটালি পোর্টম্যান)। ১২-১১ স্পিড রেসার। ২-১২ হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোজ (ড্যানিয়েল র‌্যাডক্লিফ, রুপার্ট গ্রিন্ট, এমা ওয়াটসন)। ৫-০৯ প্রিন্স অব পার্সিয়া (জ্যাক গিলেনহাল, বেন কিংসলে)। ৭-২৫ ট্রান্সপোর্টার ৩ (জেসন স্ট্যাটহ্যাম)। ৯-৩০ দ্য ম্যাট্রিক্স রেভল্যুশনস (কিয়ানু রিভস)।
তথ্য ও বিনোদন০৮.১৫ প্রাণ মি. নুডলস মিউজিক ক্ল্যাসিক৩.৩০ হাওয়া বদল৯.০৫ লাভ আওয়ার১১.১০ গিটার নেভার লাইজ
বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনে নানা মাত্রায়, নানা আঙ্গিকে নতুন ও পুরোনো প্যারাডাইস জারি আছে। আধুনিক কালের বৈশ্বিক নব উৎক্ষেপ এ দেশের শিল্পে যে পরিবর্তন এনেছে, এরও ভালো ও মন্দ দুই চেহারাই আমরা প্রত্যক্ষ করে আসছি দুই দশক ধরে। কিন্তু শিল্প নতুন বা পুরোনো কোনো পরিসরেই থেমে থাকেনি। অর্থাৎ এর বিবর্তন হয়েছে, এখনো হচ্ছে। অথচ ২০তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজনে এতসব পরিবর্তনের ছাপ নেই। কারণ, আয়োজকদের তরফ থেকে নতুন শিল্পভাষা, যা অনেকের হাতে ভাসা-ভাসা হলেও কিছু শিল্পীর হাতে স্পষ্ট হয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে—অমন নব সৃষ্টির স্বীকৃতি প্রদানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যেমন কনসেপচুয়াল কিংবা স্থাপনাশিল্পের কোনো ক্যাটাগরি আজও তৈরি হয়নি, এমনকি মান যাচাইয়ের জ্ঞানগত কাঠামো নির্মাণের চেষ্টাও লক্ষণীয় হয়ে ওঠেনি। অথচ স্থাপনার নামে নির্বিচারে বহু অশিল্প শিল্প নামে জায়গা করে নিচ্ছে জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীগুলোয়। এবারের আয়োজনও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে, যে শঙ্কা সবচেয়ে বেশি মনে জাগে তা হলো, একাডেমিতে প্রচলিত বা বাস্তবানুগ শিল্পচর্চার স্বাক্ষর আছে এমন শিল্পকর্মের জয়জয়কার; অর্থাৎ সৃষ্টিশীলতার মাত্রা অর্জনের শিল্প প্রাধান্য না পেয়ে, অনুশীলন পর্যায়ের শিল্পকর্ম সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা, যা স্পষ্টতই লক্ষ করা যায় এবারের প্রদর্শনীতে। সৃষ্টিশীল মাত্রা বলতে কোনো শিল্পীর নিজস্ব ভাষা তৈরির প্রজেক্ট বোঝায়—যা বাদ দিয়ে শিল্পী হওয়া সম্ভবপর নয়। যা আছে বিধায় রবীন্দ্রনাথের শিল্প সৃষ্টিশীলতায় উত্তীর্ণ বলে আমরা দাবি করে থাকি। মাধ্যমের কারিকুরি প্রদর্শন আর নিজ ভাষার ব্যবহার করে চিত্রকল্প নির্মাণের সর্বজনগৃহীত কোনো ছক না থাকলেও জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীতে ‘এক্সপেরিমেন্টাল’ অভিধা ব্যবহার করে আগে যেভাবে কাজ বাছাই করা হতো, আজকাল তা-ও হচ্ছে না বলেই এমন ব্যত্যয় লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। পুরস্কার প্রদানের ধরন বিশ্লেষণ করে উপর্যুক্ত সিদ্ধান্তের পক্ষে প্রমাণ মেলে। এবারে শিল্পকলা একাডেমীর যে জাতীয় পুরস্কার মাঈনউদ্দীনের ‘মোনাজাত’ নামের অনুশীলনধর্মী কাজের কপালে জুটল, তা সত্যিকার শিল্পভাষায় শিল্পচর্চাকারীদের উদ্যমের অগ্নিতে পানি ঢালার শামিল। এমনকি রাসেল কান্তি দাশের ‘পরিস্থিতি-৮’ ও জাহিদা আখতারের ‘ভবঘুরে-১’ শিরোনামের কাজ দুটিও (প্রথমটি তেলরঙে আঁকা ও পরেরটি নারকেলের ছোবড়াজাতীয় বস্তুতে গড়া ভাস্কর্য) মাস্টার ডিগ্রিতে জমা দেওয়া কাজের সঙ্গে তুলনীয়। আনিসুজ্জামান মামুনের ‘রিয়েলিটি শো-২০১৩-০১’ শিরোনামের ক্যানভাসও তথৈবচ—যাতে ইলাস্ট্রেশনধর্মী কনসেপ্ট নির্মাণের চেষ্টা স্পষ্ট। এই শিল্পী দীপা হক পুরস্কার পেয়েছেন, আর অপর দুজন যথাক্রমে ‘এবি ব্যাংক’ ও ‘বেগম আজিজুন্নেসা চারুকলা’ পুরস্কার লাভ করেছেন। প্রদর্শনীর অন্যান্য কাজেও শিল্পভাষা নির্মাণের প্রচেষ্টার চেয়ে মাধ্যম ফলানোর আয়োজনের প্রতি পক্ষপাত লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে বললে সত্যের অপলাপ করা হয় না। সমীর মজুমদারের কালি-কলমের কাজ, শিরীন আক্তারের ‘বন্ধন’—যা কাঠের কাজ, কিংবা রাহুল ব্যানার্জির ‘দুর্নিবার-২’, মুকুল দত্তের ‘দিস ইজ এ লাভ সং’, বা মোহাম্মদ জাকির হোসেনের ‘বেদে দম্পতি’—সবই শ্রেণীকক্ষের তরিকা জানান দেয়, যেখানে মাধ্যম ও তার ব্যবহারের নীতি শিক্ষক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই শিল্পীদের পাশাপাশি আরও অগণিত শিল্পীর নাম উচ্চারণ করা যায়—যাঁরা জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের রসদ সংগ্রহ করতে সক্ষম হননি, হয়তো আপন আপন শ্রেণীকক্ষে ভালো ‘ফল’ পাচ্ছেন। ব্যক্তিশিল্পী কোনো যাচাই-বাছাইয়ের, এমনকি পর্যালোচনার উপলক্ষ হতে পারে না, শিল্পীর ভাষাই তাঁর পরিচয়। ভাষা পাকাপোক্ত অথচ বর্তমান প্রদর্শনীতে তাঁর মূল্যায়ন হয়নি—এমন শিল্পীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নাসিমা হক, জয়া শাহরীন হক, জিহান করিম ও সঞ্জয় চক্রবর্তী এবং তাঁদের মতো আরও অনেকে। এঁদের ভাষা তৈরি হয়ে আছে অথচ জায়গা দেওয়ার ক্ষেত্রেও অবিচার করা হয়েছে। যেমন নাসিমার দুটি কাজের উপস্থাপনা পাশাপাশি হওয়াটা জরুরি ছিল। নকশাধর্মিতা, বাস্তববাদী ফিগারধর্মিতার পাশে আরেকটি নব্য একাডেমিক প্রপঞ্চ। কাঠের কাজে বুননশিল্পে এমনকি দ্বিমাত্রিক ছবিতে নকশার বুনট মূল ভূমিকা রাখছে আজকাল। সিরামিক ভাস্কর্যও ঠিক শিল্পমুখী হয়ে উঠতে পারেনি—অধিকাংশ কাজই ঘর সাজানোর নিমিত্তে গড়া বলে মনে হয়। এই ছন্দোবদ্ধ নয়েজের বিপরীতে যে সৃষ্টিশীলতার বিস্তার, সেখানে অনেক ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু কৌতূহলোদ্দীপক কাজ হচ্ছে। যেমন রাজীব দত্তের ‘হাইওয়ে সুইটস’, যাতে বাম রাজনীতির অবক্ষয় কৌতুকের ছলে পোস্ট ইডিয়লজিক্যাল সময়ের আইকন পূজার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এমন কালচারবিষয়ক সমালোচনা বাংলাদেশের শিল্পে জরুরি। প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের মধ্যে আতিয়া ইসলাম এ্যানি, কাজী সালাউদ্দিন আহমেদ, আনিসুজ্জামান কিংবা শিল্পকলা একাডেমী সম্মান পুরস্কারপ্রাপ্ত মোহাম্মদ হাসানুর রহমান তাঁদের আপন ভাষার দৃঢ়তা নিয়েই সামনে এনেছেন সাম্প্রতিকতম শিল্পকর্ম। তথাপি অনুতাপের বিষয় হলো, দেশের অনেক নামী শিল্পীর সাম্প্রতিকতম উৎক্ষেপ এই প্রদর্শনীতে অনুপস্থিত। নামসর্বস্ব প্রদর্শনী যেমন অদরকারি, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর অনুপস্থিতিও কাম্য নয়। কারণ এতে চারুকলার জাতীয় মাত্রা রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। জায়গা নিয়ে বিতর্কের কারণে আবদুস সালামের ‘রাজনৈতিক বার্তা’ শিরোনামের স্থাপনা শিল্পী ফিরিয়ে নিয়েছেন, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত অনুপস্থিতি এই মাপের প্রদর্শনীতে কাম্য নয়। সবার শেষে যে ভাবনায় পুনরায় ফিরে যেতে হয়, তা হলো, একাডেমিতে নম্বর পাওয়া হাত মাথায় গরিব-দুঃখী মানব-অবয়বের বিস্তার। দারিদ্র্য বিক্রি করে ফটোগ্রাফাররা একপর্যায়ে বিদেশ থেকে পুরস্কার নিয়ে এসেছেন ভূরি ভূরি, তাঁদেরই অনুকরণে দুঃখ বিক্রির প্রজেক্ট এই সময়ে বেমানান। তবে, মানান-বেমানান—এমন শব্দপ্রপঞ্চ বাদ দিয়ে জ্ঞান ও সৌন্দর্যের বহুবিধ মান ব্যবহার করে শিল্প যাচাই শুরু হওয়ার এখনই সময়—এর ব্যত্যয় বাংলাদেশের বিক্ষিপ্ত শিল্প পরিসরকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেবে। যাঁরা শিল্পকলায় কমিটিতে নিষ্ঠার সঙ্গে শ্রম ও মেধা ব্যয় করেন, এ বিষয়গুলো তাঁদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে বলে আশা করি। ২২ জুন শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে ১২ জুলাই পর্যন্ত।
ইন্দিরা গান্ধী সংস্কৃতি কেন্দ্র, গুলশানআধুনিক গান। শিল্পী শাকিলা জাফর। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়।ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন, ধানমন্ডিবর্ষার গান। আয়োজন করেছে পঞ্চভাস্কর। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়।বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী রেপার্টরির নাটক টার্গেট প্ল্যাটুন। জাতীয় নাট্যশালায়, সন্ধ্যা সাতটায়। আরশীনগরের নাটক সে রাতে পূর্ণিমা ছিল। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে, সন্ধ্যা সাতটায়। পাপেট প্রদর্শনী। নির্দেশনা দিয়েছেন মুস্তাফা মনোয়ার। সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে, সন্ধ্যা সাতটায়। জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী। জাতীয় চিত্রশালায়, চলবে ১২ জুলাই পর্যন্ত। সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্র উৎসব। সকাল সাড়ে ১০টায় চন্দ্রগ্রহণ ও বেলা তিনটায় আয়না।গ্যালারি কায়া, উত্তরাগ্লিম্পসেস। কয়েকজন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীর বাছাই করা চিত্রকর্ম নিয়ে প্রদর্শনী। চলবে ২০ জুলাই পর্যন্ত।ঢাকা আর্ট সেন্টার, ধানমন্ডিবীরেণ সোমের ছাপচিত্র প্রদর্শনী। চলবে ২৪ জুলাই পর্যন্ত।বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডপোড়ামন ও টেলিভিশন। সকাল সাড়ে ১০টা, দুপুর সাড়ে ১২টা, বেলা সাড়ে তিনটা, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা ও রাত নয়টায়।স্টার সিনেপ্লেক্স ম্যান অব স্টিল, সকাল ১০টা ৫০, বেলা একটা ৪০, বিকেল চারটা ৩৫ ও সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। জিআইজো: রিটেলিয়েশন থ্রিডি, বেলা ১১টা, দেড়টা, বিকেল চারটা ও সন্ধ্যা পৌনে সাতটায়। আয়রনম্যান ৩ থ্রিডি, বেলা সাড়ে ১১টা ও বিকেল সাড়ে চারটায়। লাইফ অব পাই, বেলা দুইটা ও সন্ধ্যা সাতটায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামিপক্ষের প্রথম সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষের জেরা গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। সাকা চৌধুরীই আসামিপক্ষের প্রথম সাক্ষী। ‘ফাঁসি দিয়ে দেন’—প্রায়ই ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল মন্তব্য করেন, কোনো অপরাধীর অনুশোচনার মাত্রা যখন বেড়ে যায়, তখন ওই অপরাধী বারবার তাঁকে শাস্তি দিতে বলে। তবে সাকা চৌধুরী এমন অনুশোচনা করেন কি না, তা ট্রাইব্যুনালের জানা নেই।বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে দুই সদস্যের (এক সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন) ট্রাইব্যুনালে গতকাল দ্বিতীয় দিনে জেরার সময় এজলাসে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কয়েক দফা বাদানুবাদ ও বাগিবতণ্ডা হয়। সাকা চৌধুরীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জেয়াদ-আল-মালুম। জেরায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মত (সাজেশন) দেন, ‘চট্টগ্রামের রাউজান থানার গহিরা গ্রামে ১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ বাঙালি মুসলিম পরিবারে আপনার জন্ম।’ সাকা চৌধুরী বলেন, ‘এটা সত্য নয়। আমার জন্ম চট্টগ্রাম শহরের একটি মুসলিম পরিবারে, বাঙালি পরিবারে নয়।’ মালুম বলেন, ‘আপনার মাতৃভাষা বাংলা।’ সাকা চৌধুরী বলেন, ‘এটা সত্য নয়। আমার মাতৃভাষা চাটগাইয়া।’মালুম মত দেন, ‘আপনার ও আপনার বাবার জন্মের বহু আগে থেকে চট্টগ্রাম বাংলার অংশ ছিল, কখনোই চট্টগ্রাম বা চট্টগ্রামবাসী আলাদা জাতিসত্তা হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। এই ঐতিহাসিক বাস্তবতা জানা সত্ত্বেও সত্য গোপন করে আপনি ট্রাইব্যুনালে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন।’ সাকা চৌধুরী বলেন, ‘এটা সত্য নয়। আইনের মাধ্যমে জাতিসত্তার স্বীকৃতি পাওয়া যায়, এ ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।’মালুম বলেন, ‘১৮ জুন দেওয়া জবানবন্দিতে আপনার উদ্ধৃত বক্তব্য সংবিধানের প্রস্তাবনা ও ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৮, ৯, ১০, ১২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এ ধরনের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।’ সাকা চৌধুরী বলেন, ‘জবানবন্দির কোন অংশ সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তা উল্লেখ না থাকলে আমার পক্ষে জবাব দেওয়া সম্ভব নয়।’রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনে রাউজান ও হাটহাজারীতে প্রার্থী ছিলেন কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রধান ফজলুল কাদের চৌধুরী। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যাপক খালেদের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ওই পরাজয়ের গ্লানিতে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে রাউজানের হিন্দুদের ওপর আপনাদের সশস্ত্র গুন্ডারা হামলা চালায়। এ বিষয়ে ১৯৭০ সালের ৯ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদী পত্রিকায় ছাপা হয়।’আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এ বক্তব্যে আপত্তি জানালে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাগিবতণ্ডা শুরু হয়। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর সাকা চৌধুরী বলেন, ‘পত্রিকায় কী লেখা হয়েছে তা পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে ওই পত্রিকা অধ্যাপক খালেদ সম্পাদিত, তিনি আমার বাবার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।’ তিনি আরও কিছু বলতে চাইলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আর ব্যাখ্যার দরকার নেই। এ ছাড়া এ প্রশ্ন আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’সাকা চৌধুরী বলেন, ‘আমার ফাঁসির আদেশে এ কথার প্রতিফলন যেন থাকে।’ এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনি বারবার বলেন ফাঁসি দিয়ে দেন....। আমাদের কাজ শোনার, তাই শুধু শুনি, বাড়তি কথা বলি না। আমি ৩৮ বছর ধরে বিচারকের দায়িত্বে আছি, তার মধ্যে ৩১ বছর ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করেছি। আজ পর্যন্ত আমার সামনে কোনো আসামি তাঁকে ফাঁসি দিতে বলেননি, সবাই বলেছেন “আমি নির্দোষ, নিরপরাধ”। এই কোর্টেও অন্য যাঁরা আসামি আছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। কিন্তু চৌধুরী সাহেব বারবার বলেন, আমাদের কোনো আদেশ মনঃপূত না হলেই বলেন, “ফাঁসি দিয়ে দেন”। আমরা তার কোনো জবাব দিই না। ১০-১২ বছর আগে অপরাধীদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা নিয়ে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম, এখন ওই প্রবন্ধের কথা মনে পড়ছে। ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, কোনো অপরাধীর অনুশোচনার মাত্রা যখন বেড়ে যায়, তখন সে বারবার বলতে থাকে “আমাকে মেরে ফেলেন, আমাকে শাস্তি দেন”। চৌধুরী সাহেবের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা কী, তিনি অনুশোচনা করেন কি না, তা আমরা বলতে পারব না। কিন্তু তাঁর মনোবাসনা পূরণ করার ক্ষমতা আমাদের নেই, যদি না তাঁর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাই।’জবাবে সাকা চৌধুরী বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক মামলা, সে জন্য হতাশ হয়ে বারবার এ কথা বলি। আপনারাও এখানে বিচার করছেন, গাজীপুরেও আরেকটি বিচার হচ্ছে। ৬ তারিখ তাঁর রায় হবে।’মধ্যাহ্ন বিরতির পর জেয়াদ-আল-মালুম প্রশ্ন করেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডনের লিঙ্কন’স ইনে পড়াশোনা-সংক্রান্ত নথিপত্র কি আপনি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছেন?’ জবাবে সাকা চৌধুরী বলেন, ‘দরকার আছে? আমি কোথাও নথিপত্র দিইনি, নির্বাচন কমিশনেও না। নথিপত্র ছাড়াই ৩৩ বছর ধরে আপনার জন্য...,বাংলাদেশের জন্য আইন প্রণয়ন করছি।’এ সময় মালুমের উদ্দেশে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আর আপনি তাই দিয়ে ব্যবসা করছেন...।’ এতে আবার দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বিতণ্ডা হয়। পরে সাকা চৌধুরী বলেন, ‘মাই লর্ড, কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া, চোরকে চোর বললে মনে কষ্ট পায়। কে কোন বিষয়ে স্পর্শকাতর, তা প্রমাণ হয়ে গেছে।’মালুম বলেন, ‘১৯৭৩ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আপনার বাবাকে হত্যা করা হয় বলে জবানবন্দিতে আপনি যে কথা বলেছেন, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অসত্য।’ সাকা চৌধুরী বলেন, ‘এটা সত্য নয়। সাংবাদিক নির্মল সেন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবুল ফজল তাঁদের লেখায় এ অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, ইত্তেফাক পত্রিকায় তা প্রকাশিতও হয়েছে।’এ পর্যায়ে বারবার ব্যাখ্যা যোগ করায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা আপত্তি জানালে আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী আহসানুল হক বলেন, ‘আমরা জেরা করার সময় বলেন, সাক্ষী যা বলে তা যাবে। এখন আপনারা (রাষ্ট্রপক্ষ) আপত্তি করছেন কেন?’ ফজলুল কাদের চৌধুরীকে নিয়ে আবার প্রশ্ন করতে গেলে মালুমকে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আবার এ প্রশ্ন কেন? সাকা চৌধুরী বলেন, ‘আমি তো এখানে আছিই উত্তরাধিকার সূত্রে, ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে হিসেবে। করেন, এ নিয়ে আরও প্রশ্ন করেন।’ মালুম মত দেন, ‘একাত্তরের ২০ সেপ্টেম্বর গেরিলা আক্রমণে আহত হয়ে আপনি চট্টগ্রামে চিকি ৎসা নিয়ে পরে শবেবরাতের রাতে গোপনে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।’ সাকা চৌধুরী বলেন, এটা সত্য নয়। মালুম বলেন, ১৯৭২ সালে দালাল আইনে আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা থাকায় ও জনরোষ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনি আত্মগোপনে ছিলেন। সাকা চৌধুরী বলেন, ‘এটা সত্য নয়। তবে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ও জনরোষ থাকা সত্ত্বেও রাউজান থেকে তিনবার ও চট্টগ্রামের অন্য আসন থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েছি।’ মালুম বলেন, ‘দেশে ফিরে আপনি আত্মগোপনে থাকায় ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন ছোট বোন হাসিনা জাবিল সিনহার বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারেননি।’ জবাবে সাকা চৌধুরী বলেন, ‘সত্য নয়। আমি অভিভাবক হিসেবে তাঁর বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম।’মালুম মত দেন, ‘পরে আপনি গোপন আস্তানা থেকে শাড়ি ও বোরকা পরে ছোট বোন ও তাঁর স্বামীকে আশীর্বাদ করতে যান।’ এ কথায় এজলাসে হাসির রোল পড়ে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। সাকা চৌধুরী বলেন, ‘না, না, এ প্রশ্ন যাক। শাড়ি ও বোরকা পরা ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা একজন মানুষ, এটা তো কৌতুক।’ মালুম বলেন, ‘আপনার জবানবন্দির সব বক্তব্য বানোয়াট, অসত্য ও ভিত্তিহীন।’ সাকা চৌধুরী বলেন, এটা সত্য নয়। পরে ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আর ‘তবে’ বললাম না।’উল্লেখ্য, আইনজীবীর সব মতেই ‘এটা সত্য নয়’ বলার পাশাপাশি ‘তবে’ বলে নিজের ব্যাখ্যা যোগ করেন সাকা চৌধুরী।বিকেলে জেরা শেষে এই মামলায় আসামিপক্ষের পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৮ জুলাই (সোমবার) দিন ধার্য করা হয়।
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার চেঙ্গী ইউনিয়নে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের একজন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) এবং অন্যজন জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) সদস্য। এই দুজনকে হত্যার সঙ্গে জনসংহতি সমিতির (সন্তু) সন্ত্রাসীরা দায়ী বলে দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চেঙ্গী ইউনিয়নের পূজগাঙ এলাকার পার্শ্ববর্তী লোগাঙ বাজারে গতকাল সাপ্তাহিক হাটের দিন ছিল। হাটের দিন উপলক্ষে পূজগাঙ এলাকায় লোকজনের সমাগম ছিল। সকাল পৌনে আটটার দিকে আট সদস্যের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল পূজগাঙে কয়েকটি দোকান ঘিরে ফেলে। তারা চায়ের দোকান থেকে ইউপিডিএফের সদস্য সমীরণ চাকমা (৩২) ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কর্মী শ্যামল চাকমাকে (১৮) ধরে রশি দিয়ে বেঁধে করল্যাছড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে লোগাঙ বাজারের দিক থেকে জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) সদস্য ভদ্র চাকমা ওরফে জার্মান (৪৫) পূজগাঙে আসেন। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দেখে তিনি অটোরিকশা থেকে নেমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এরপর সন্ত্রাসীরা কিছু দূর নিয়ে গিয়ে সমীরণকে গুলি করে হত্যা করে। তারা শ্যামলকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অবশ্য সন্ধ্যায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত ভদ্র চাকমাকে স্থানীয় লোকজন তা ৎক্ষণিক খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকি ৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকি ৎসক রাজর্ষি চাকমা জানান, ভদ্র চাকমাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব তাতিন্দ্র লাল চাকমা অভিযোগ করেন, ভদ্রের বাড়ি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার শিবমন্দির এলাকায়। তিনি আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সন্তু লারমার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাই তাঁকে গুলি করে হত্যা করেছে।ইউপিডিএফের তথ্য ও প্রচার শাখার সদস্য নিরণ চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, সন্তু লারমার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি করে ইউপিডিএফের সদস্য সমীরণকে হত্যা করে। তিনি পূজগাঙ এলাকার যুবনাশ্বপাড়ার শীলধন চাকমার ছেলে। তবে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই দুজনকে হত্যার সঙ্গে তাঁর দলের কোনো নেতা-কর্মীর জড়িত নন।পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, নিহত দুই ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পূজগাঙ এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি।পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের মধ্যে বিরোধ ও সংঘাত দীর্ঘদিনের। ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। শুরু থেকেই এই চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে ইউপিডিএফ। একপর্যায়ে জনসংহতি সমিতির মধ্যেও চুক্তি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি থেকে বেরিয়ে জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) করা হয়। এই জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে আছেন সুধাসিন্ধু খীসা ও রূপায়ণ দেওয়ান।আমাদের দীঘিনালা প্রতিনিধি জানান, পূজগাঙ এলাকায় দুজনকে হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফ। মিছিলটি উপজেলার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে লারমা স্কয়ারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
চিকেন স্ট্রিটের বায়োজিদ বুকস বলে এক বারোয়ারি কেতাব-ফুরুশি বা বইয়ের দোকানের কোর্ট-ইয়ার্ডে বসে আমি এক পেয়ালা চা খাই। আমার চায়ের রং তাজা লেবুর মতোই সবুজে খানিক হলুদ মিশ্রিত। তা থেকে ছড়ায় এলাচির খুশবু। কেতাব ফুরুশির মালিক আবদুল ওয়াসে উসুলি তস্তরিতে করে পরিবেশন করেন নিমকির মতো ত্রিকোনা করে কাটা উজবেকি নান। এ রুটির খামিরাতে তেলের মিশেল দেওয়ার কারণে তাকে কেউ কেউ রোগনি নানও বলে থাকেন। সারা রুটির গায়ে বোধ করি আলপিন ফুটিয়ে করা বিন্দু বিন্দু নকশা। আমি এক চিমটে কিশমিশের সঙ্গে রোগনি রুটি চিবোতে গেলে আমার মাথার ওপর উড়ে আসে এক জোড়া অত্যন্ত ছোট্ট পাখি। তাদের বর্ণাঢ্য উড্ডয়ন ও স্রেফ কিচিরমিচিরে মনে হয় রুটির ওপর তাদের রীতিমতো মৌরুসি হক আছে। আমি রুটির টুকরা ভেঙে খানিক দূরের চাতালে ছুড়ে দিই। ওখানে এক জোড়া গোলাপের পাশে টবে রাখা আফতাব পরস্তি বা সূর্যমুখী ফুল আলো-রিক্ততায় যেন ঝুঁকে আছে রুকু-সেজদায়। নাম না-জানা পাখিজোড়া তার তলায় বসে খুঁটে খায় রোগনি নান।কাবুল শহরে বায়োজিদ বুকস খুঁজে পাওয়া কঠিন কিছু নয়। চিকেন স্ট্রিটের যেখানে নুরিস্তানের শিল্পশোভন নাজুক মালের দোকান, একটু খেয়াল করলেই যেখানে কাফেরি আমলের পৌত্তলিক মূর্তিরাজিকে সিনা চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়; এবং তার নিচে জরিমোড়া পয়জারগুলোর পাশে দলা করে রাখা কুহে-পামির পাহাড়ের নীল বর্ণের বৈদ্যুর্য মণি পাথর; ওখানে পয়লা দাঁড়িয়ে পড়ে ফুটপাতে নিরিখ করে তাকাতে হয়। দেয়ালে ঝুলছে একাধিক তুর্কমেনি কার্পেট, তাই ফুটপাতটি হয়ে আছে হরেক বর্ণে রংবহুল। পায়ে চলার বারিক-মুরিক পথের দুপাশে ডিসপ্লে করা তরতাজা সব চিত্রকর্ম। এখানে ছবিতে সম্রাট কণিষ্কের পাশে আমির আবদুর রহমান ও কালো চশমা পরা সরদার দাউদ খান। গুলিবিদ্ধ রাশান হেলিকপ্টারের পাশে নীল বোরকাপরা আফগান জেনানা, তার মাথায় পিঞ্জিরা—তাতে রাখা অচিন পাখি। মাঝেমধ্যে এক চিত্রকর ফ্লোরে বসে ব্রাশ হাতে ধুন্দুরমুন্দুর করে। এখানে সদ্য রং করা পেইনটিংয়ের সঙ্গে উষ্টাবিষ্টা না খাওয়ার জন্য হাঁটতে হয় হুঁশিয়ারির সঙ্গে।কেতাব-ফুরুশির ভেতরবাগে চান্দোয়ায় ঢাকা কোর্ট-ইয়ার্ড। তার বাঁ-দিকের কামরায় শেলফগুলোতে সিজিল মিছিল করে রাখা লাহোর, ইস্পাহান বা হিরাত থেকে ছাপা বইপুস্তক। বিজুলির কানেকশন প্রায়ই কাটা পড়ে বলে আবদুল ওয়াসে ওসুলি কেতাব খুঁজনেওয়ালাদের শামাদানে মোম জ্বালিয়ে দিয়ে সাহায্য করে থাকেন। এখানে বইয়ের সিলেকশন বিচিত্র, কোনো কোনো কেতাবাদি পাঠের দিক থেকে যতটা না গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় তাদের মুদ্রণ ইতিহাসের জন্য। কিছু কিছু বই বহু পাঠকের বে-এখতেয়ার ব্যবহারে রীতিমতো ফর্দাফাই। ২০০৪ সালে আমি এখান থেকে আল্লামা ইকবাল লাহোরীর আসরারে খুদি কেতাবখানা ক্রয় করি। গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল হিন্দুস্তানের রায়বেরিলি থেকে, তার প্রকাশকের নাম ও সালের জায়গা পোকায় কেটেছে নিখুঁতভাবে। ওই দিন এখানে বইয়ের সওদা করতে আসেন প্রফেসর জন বেইলি। এ সিনিয়র ইংরেজ অধ্যাপক বিলেতে কোথাও ওরিওন্টলজি পড়ান। পেশায় তিনি এথনোমিউজিকোলজিস্ট। তরুণ বয়সে বেইলি অনেক বছর হিরাতে কাটান প্রাচ্যের ফারসি সংগীতের তালাশে। তিনি দামদর করে ক্রয় করেন মিরাট থেকে ১৯১৮ সালে প্রকাশিত আদবিয়াতে ফারসির মশহুর শায়ের বেদিলের কখানা কেতাব। আবদুল ওয়াসে ওসুলি প্রফেসরকে তাঁর সিন্দুক থেকে বের করে দেখান বাদশাহ জহির শাহের সই করা হাসিয়ায় মিনিওতোর চিত্র আঁকা শাহনামা। কেতাবখানা তো আগ্র প্রসাদ লুণ্ঠনের স্পষ্ট নিশানাবিশেষ! এর কিম্মত অনেক, খরিদ করতে পারলে খারাপ হতো না, তবে তাতে বাদবাকি পুরো মাস-শুখা নান ও মুলার চাট জোটানোর জন্য জেবে অবশিষ্ট কিছু থাকত না।পর্দার আবডালে আছে এ কেতাব-ফুরুশির অন্দরমহল। কাবুলে আমার জিগরি দোস্ত ডোয়াইট লয়েড আমাকে এ মহলের তালাশ দেয়। পর্দা গুটিয়ে গুটিগুটি পায়ে চাপলিশে ঢুকে পড়তে হয় আরেকটি বারিক-মুরিক করিডরে। এল শেইপের এ স্পেশে ডাঁই করে রাখা পুরোনো সব কিতাবাদি। এখানে চলাচল করতে পারেন কেবল একজন পড়নেওয়ালা। জেবে করে দেশলাই নিয়ে আসতে পারলে সুবিধা হয়। ফস্ করে কাঠি জ্বালিয়ে ধরানো যায় পিতলের পিলসুজ। কুপিটি দেখতে অনেকটা আলিফ লায়লার আলাদীনের চেরাগের মতো। তার পাশে চান্দির কাজ করা ক্যাশ-বাক্সের ওপর রাখা মরক্কো লেদারে বাঁধাই ঢাউস একখানা কেতাব। জরুরি এ পুস্তক কে লিখেছেন তা জানার কোনো উপায় নেই বটে, তবে তাতে ফিরোজে-হরিৎ ও ছরকে-লালে আঁকা তসবিরগুলো দেখে মনে হয় তা কামাসূত্রার উজবেকি ভার্সন। এ বইয়ের শেষ পাতায় আগ্র প্রাসাদের শাহি কেতাবখানার মোহরের ছাপ আছে। যারা কামে উদ্যম-রহিত হালতে আছেন, অথবা স্রেফ অন্তরঙ্গ কর্মে অপটু—এ কেতাবের তসবির দর্শনে তাদের কামিয়াব হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমার জিগরি দোস্ত ডোয়াইট লয়েড এখানে হামেশা আসে ধ্রুপদি রুশ কেতাবাদির তালাশে। কাবুলে সোভিয়েত অকুপেশনের সময় কিংবা তারও অনেক আগ থেকে এ শহরের বাস করছেন হাজার বিজার রুশ এক্সপার্ট, গোয়েন্দা ও ডিপ্লোমেট। পুশকিন, গোগোল বা লারমানতভের ক্ল্যাসিকগুলো সম্ভবত তাঁদের চাকর-নফররা চাপলিশে সের দরে বিক্রি করে দিয়েছেন। ডোয়াইটের পরামিশ মোতাবেক আমি একবার কেতাব-ফুরুশির অন্দরের তলকুটুরি অবধি গিয়েছিলাম। স্থানটি দস্যু মোহনের গোপন আস্তানার মতো। কাঠের আলমারির দুয়ার খুলে তার ভেতরে ঢুকে তারপর নেমে যেতে হয় ক্যাচমেচানো সিঁড়ি ধরে রীতিমতো পাতালে। পড়নেওয়ালাদের পকেটে করে পেনসিল টর্চ নিয়ে যাওয়ার কোনো জরুরত নেই। আবদুল ওয়াসে ওসুলি নিজে সরবরাহ করেন পাঁচ ব্যাটারির টর্চ; এ ছাড়া কফিনের মতো দেখতে সিন্দুকের ওপর রাখা আছে চার্জার ল্যাম্প। ডোয়াইট লয়েড কাবুলি পেইনটিংয়ের উমেদার। আমি তার অছিলা ধরে তলকুঠুরিতে আসার মওকা পাই একদিন। সে বছর তিনেক আগের কথা। ওসুলি চার্জার জ্বেলে মেলে ধরেন সিন্দুকের ঢালা। তা থেকে বেরোয় সেলোফোনে মোড়া এক রাশ পেইনটিং। অত্যন্ত রিয়ালিস্টিক ভঙ্গিতে আঁকা পেইনটিংয়ে ধ্রুপদি মিনিওতোর চিত্রের দৃশ্যপট ব্লোআপ করা। বিষয়বস্তুতে ঘুরে-ফিরে আসে বাগিচা ও রাজদরবার। এসব ছবিতে চমৎকার করে সৃজিত হয়েছে বৃক্ষ, বর্ণিল পুষ্প,কাফেলার রেখা, রংচঙে ফরাস, স্বর্ণালি কুরছি, পানপাত্র ও সোরাই—যা নেই তা হচ্ছে জনজীবন-চাষাবাদ, গবাধিপশু, সংসার, ঘরকন্না, শিশু, মসজিদ ও এবাদত। সে রকম করে মানুষের ছবিও এখানে অনুপস্থিত; তবে শিল্পী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এঁকেছেন মানবী। নারীরা গোপন সিন্দুকের ছবিতে প্রায় সবাই কিশোরী, এবং কেউ কেউ যুবতী হতে হতে পুষ্পের বিকশিত পাপড়িতে সাজিয়েছেন দেহের পসরা। চিত্রকর কারও চোখে এঁকে দিয়েছেন শরমের অঞ্জন, কেউ কেউ কটাক্ষে ইশারাপ্রবণ। তাদের পরিপূর্ণ ওষ্ঠে শৃঙ্গারের অস্থির প্রয়াস। শিল্পী এদের শরীর আব্রুতে ঢাকার তেমন জরুরত বোধ করেননি। বরং তাদের স্তনযুগলের ডৌল বা নিতম্বের বঙ্কিমতাকে উর্বর বাগিচায় ফলন্ত আশ্চর্য মেওয়ার মতো বৃত্তাকার করে এঁকেছেন। নারীদের কারও কারও দেহে জড়ানো আবেরেশমের গোলাপি-পার্পোল বা ফিরোজা রঙের ট্রান্সপারেন্ট ওড়না, তার আলো-ছায়ায় বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের ঊরুদেশের বর্ণিল মসৃণতা। এবং তাদের দেহ-সম্পদ রঙে ও রেখায় বিবর্তিত হয়েছে শিল্পশোভন দ্রষ্টব্যে। খরিদদার হিসেবে ডোয়াইট বিস্তর সময় নিয়ে তাড়া তাড়া পেইনটিং থেকে বাছাই করে চমকপ্রদ কটি নমুনা। এ সুযোগে ওসুলি আমাকে দেখান ঘোড়ার পিঠে ক্যারি করার কটি স্যাডেল ব্যাগ বলে পরিচিত বস্তা। ছালার মুখ খুলে অতঃপর তিনি বের করে আনেন এ আত্রাফে সরকারি ফরমানে নিষিদ্ধ কখানা কিতাব। আমি তাঁর কাছ থেকে এক তালেবান কারাবন্দীর লেখা একখানা বই খরিদ করি। বন্দী গুয়ানতানামো বে কারাগারের কথা লিখেছেন। এ বইটি কোথাও মুদ্রিত হয়নি, টাইপ করে বিতরণের জন্য ফটোকপি করা হয়েছে। আমি যখন বইটি কেনার জন্য দামদর করছি তখন আমাদের মাথার ওপর টর্চের আলোয় বিরক্ত হয়ে ওড়ে একটি কম বয়সী কছমা বাদুড়।সে বছর তিনেক আগের কথা। আমাকে বায়োজিদ বুকসে পয়লা নিয়ে আসেন নরওয়ের এক ভ্রাম্যমাণ লেখিকা অ্যাসনে সিয়ারস্টেড। মিস অ্যাসনে তখন কাবুলের এক বই বিক্রেতা সুলতান খানের বাড়িতে তাঁর পরিবারের সঙ্গে বাস করছেন। তিনি এর আগে চেচনিয়া ও বলকানে সাংবাদিকতা করেছেন। তার পরও কাবুলে তথ্য সংগ্রহ ও লেখালেখির কাজ করা তাঁর কাছে ঠুলি পরা বলদের ঘানি টানার মতোই ক্লান্তিকর মনে হতো। মাঝেমধ্যে কাবুলি পরিবারের পর্দানশিন বাস্তবতা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তিনি চলে আসতেন বায়োজিদ বুকসে। কোর্ট-ইয়ার্ডে এ মুহূর্তে আমি যেখানে বসে সবুজ চা খাচ্ছি, তার পাশের চেয়ারের হাতায় বোরকা রেখেই বসতে বসতে ফস করে ধরাতেন মার্লবরো সিগারেট। তিনি থার্মসে করে নিয়ে আসতেন কলম্বিয়ার তাজা কফি। চারদিকে ফুটন্ত ক্যাফিনের সৌরভ ছড়িয়ে তাঁর অবজারভেশনের নোটস লিখতেন কাঠপেনসিলে। পরে তিনি বুক সেলার অব কাবুল বইটি লিখলেন, বইখানার তরজমা বেরোলো নানা ভাষায়; তিনিও মশহুর হলেন তামাম দুনিয়ায়। তার পর থেকে তাঁকে কিন্তু আর কখনো কাবুলের বায়োজিদ বুকসে দেখা যায়নি। শোনা যায়, তার একাধিক স্ত্রীর জিন্দেগির নানাবিধ বন্দেগি তাঁর গ্রন্থে চাউর করে দিয়ে মিস অ্যাসনে কেতাব বিক্রেতা সুলতান খানের জানি দুশমন বনেছেন। খান তক্কে তক্কে আছেন মওকা পেলে বদলা নেওয়ার ।হালফিল কাবুল শহর ক্রমাগত খতরনাক হয়ে উঠছে। আজকাল আর বায়োজিদ বুকসে উল্লেখযোগ্য কোনো লেখকের পা পড়ে না। তবে আমরা যারা আবর্জনা বাদাছাদা কিসিমের মানুষ, উইকেন্ডে এর চেয়ে বেহতর কোথাও যাওয়ার মুরদ নেই, আমরা এখনো বায়োজিদ বুকসে আসি, পুরোনো বইপত্রের পাতা ঘাঁটি, নিরলে বসে পান করি পেয়ালা তিনেক সবুজ চা। আজ আমি আমার জিগরি দোস্ত ডোয়াইট লয়েডের ইন্তেজারিতে আছি। এ কোর্ট-ইয়ার্ডের দেয়ালে ঝোলানো জলরং ও তেলের কিছু কাজ। কোনো কোনো চিত্রে সবুজে বেগুনি লোহিত ডোরাকাটা চাপান পরা আফগানরা ঘোড়া ছুটিয়ে ছাগলের মৃতদেহ নিয়ে খেলছে বুঝকাশি। আবার জলরঙের কাজে কুচি গোত্রের নেকাবহীন নারীরা মণিমানিক্য মরকতের মতো বর্ণাঢ্য গারেরা পরে নহর থেকে ভরে নিচ্ছে পানীয় জল। একটি আফগান পরিবার এসে ডাঁই করে রাখা তাড়া তাড়া পেইনটিং ঘাঁটে। তারা যুগপৎ দারি ও জার্মান ভাষায় কথা বলে। মনে হয় মিউনিখে বাসরত এ পরিবার অনেক বছর পর কাবুলে ফিরে এসেছে। তাদের মেয়েটি বয়সে সে নিতান্ত কিশোরী, আলগা হেজাবের নিচে পরে আছে হিপহ্যাগার জিনস ও স্লিভলেস টপ। বায়োজিদ বুকসের বাঁধা চিত্রকর ওবায়েদ উল্লাহ আসকরী ইজেলে আঁকছিল এক সফেদ শ্মশ্রু বুড়া বুজুর্গের তসবির। সে উঠে মেয়েটির পোর্ট্রেট এঁকে দেওয়ার জন্য অ্যাপ্রোচ করে। ওয়ায়েদ উল্লাহ বয়স আন্দাজ করা মুশকিল। তার বাটকুল কিসিমের দেহে অনেক দিন হলো থির হয়ে আছে গ্রোথ। ছবি আঁকিয়ে এ ছেলেটি অত্যন্ত পোলাইট, কিন্তু তার চোখের দিকে তাকানো যায় না। কথাবার্তায় আমি যা জেনেছি তা হলো, গেলবারের মার্কিনি বোমাবাজির সময় ওবায়েদ উল্লাহ ছাদে খেলছিল। ঝোপঝাড়ে যাতে তালেবানরা অ্যামবুশ করতে না পারে, সে জন্য জঙ্গিবিমান থেকে ছড়ানো হয় বৃক্ষ-বিধ্বংসী বিষাক্ত কেমিক্যালস। তিফিল বালক ওবায়েদ খেলতে খেলতে কপালে হাত দিয়ে আসমানে জঙ্গি বিমানের উড্ডয়ন দেখছিল। হালকা কুয়াশার মতো কিছু নেমে এসে ভিজে হলুদ আভায় ঢেকে দেয় তার মুখমণ্ডল। শুরু হয় চোখে জ্বালাপোড়া প্রদাহ। তার জননী পাশের বুনোহাঁস ভাসা পুকুর থেকে জল এনে বারবার চোখ ধুইয়ে দিলেও ফায়দা কিছু হয়নি। সারা রাত ওবায়েদের কান্নাকাটিতে ঘুম হয় না সংসারের কারও। পরদিন তরতাজা মাছ ও হাঁসের মৃতদেহে ভরে ওঠে জলাশয়। তার চোখে ইনফেকশন হয়। মাস তিনেক পর তা সেরে উঠলেও তার চোখের শেইপে আসে পার্মানেন্ট বিকৃতি।ওবায়েদ উল্লাহর আঁকাজোঁকার হাত কিন্তু খারাপ না। তার তাৎক্ষিকভাবে স্কেচে প্রাণের খামতি কিছু নেই। আমি খোঁজখবর নিয়েও ঠিক বুঝতে পারিনি ছেলেটি এতিম কি না? ছবি আঁকার কাজ সে শিখল কোথায়? এ মুহূর্তে ওবায়েদ উল্লাহ ইজেলের সামনে বসিয়ে মিউনিখ থেকে আসা আফগান মেয়েটির পোর্ট্রেট করে দিচ্ছে। টুলে বসা মেয়েটি দাড়ে রাখা টিয়া পাখির চেয়েও অস্থির। সে মুঠোফোন টিপে, কবজিতে চুলের ব্যান্ড জড়িয়ে চুয়িংগামের র‌্যাপার খুঁটে খুব তৎপর হয়ে আছে। তাকে স্কেচ করতে ওবায়েদের বোধ করি অসুবিধা হয়। সে থেকে থেকে আঁকা বন্ধ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটির নড়াচড়ায় ছেদ পড়ার জন্য অপেক্ষা করে পেনসিলের গোড়ালি দিয়ে তার দাঁতে ঠুক ঠুক করে বাড়ি মারে।চা-পান শেষ হলে আমি কেতাব ফুরুশির আরেকটি কামরায় ইরান থেকে আমদানি করা হাফিজ, সাদি, জামি ও খৈয়ামের নতুন সংস্করণের বইগুলো দেখি। বরাত জোরে ফিরে আসে বিজুলি। তার আলোয় দাঁড়িয়ে কালো বোরকাপরা এক আফগান দুহিতা। সিন্দুকের অন্ধকারে জড়োয়ার ছায়াময় দ্যুতির মতো কালো আবরণ ভেদ করে ঠিকরে পড়ে তার রূপের আভা। কপালের নিচে অভাল শেইপের ছিদ্রপথে মহর্ঘ পাথরের মতো ঝিকমিক করে তার অনিমিখ দৃষ্টি। কার কেতাব, কোন কবির অনাবিল সৃষ্টি খরিদ করতে এসেছে সে—জানতে স্রেফ কৌতূহল হয়।
বাংলাদেশের প্রায় ৩০ হাজার সৃজনশীল বইয়ের সম্মিলিত তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। একই সঙ্গে প্রকাশক নির্দেশিকা ও সমিতির ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করা হয়েছে।গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের সৃজনশীল বই ২০১৩’ নামে ওই সম্মিলিত গ্রন্থের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে কোন প্রকাশনী সংস্থা থেকে কোন কোন বই বের হয়েছে এবং সেই সব বইয়ের লেখকদের নাম, বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যা ও মূল্য জানা যাবে।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বউ, পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা—সবার চেয়ে বই হচ্ছে মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু। বউ আজীবন থাকবে কি না, তাঁর গ্যারন্টি নেই। কিন্তু বই আজীবন বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে থাকবে।’বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ৩০ হাজার বইয়ের পরিচিতি-সংবলিত এই তালিকা প্রকাশ করায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিনন্দন জানান। সমিতি আন্তর্জাতিক বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ায় সাধুবাদ জানান এই শিক্ষাবিদ।দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মনে হয় আমাদের দক্ষতার অভাব আছে। যত দিন পর্যন্ত দক্ষতা অর্জন করতে না পারব, তত দিন পর্যন্ত সত্যিকার প্রকাশক হতে পারব না।’অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিসচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, পরিকল্পনাসচিব ভূঁইয়া শফিকুল ইসলাম, সমিতির নির্বাহী পরিচালক মিলনকান্তি নাথ, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল হাসান শায়ক প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সভাপতিত্ব করেন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি।সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বপ্নআইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং বেঙ্গল গ্যালারির যৌথ আয়োজনে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী ‘আমাদের রঙিন স্বপ্নগুলো’।বেঙ্গল গ্যালারিতে গতকাল বেলা তিনটায় তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন হামিদা হোসেন। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পী সাঈদা কামাল। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের শিশু অধিকার ইউনিটের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক গীতা চক্রবর্তী এবং বেঙ্গল গ্যালারির পরিচালক সুবীর চৌধুরী। এই প্রদর্শনীর ছবি বিক্রির অর্থ শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যয় করা হবে।প্রদর্শনীতে চিত্রকর্মের সংখ্যা প্রায় ৯০টি। প্রদর্শনী ৬ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।শিল্পকলায় পাপেট নাটকশিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনের মাল্টিমিডিয়া পাপেট নাটক প্রদর্শনী। একাডেমীর নাট্যকলা ও চলচ্চিত্রবিষয়ক বিভাগ ‘দেশজ সংস্কৃতির বিকাশ ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সাথে মেলবন্ধন’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় এই আয়োজন করেছে।বিশিষ্ট পাপেটশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের নির্দেশনায় প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হবে পাপেট নাটক সাধের লাউ, আগাছা, বহুরূপী, ষাঁড় ও কপি এবং লিচু চোর। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটায় প্রদর্শনী শুরু হবে।অ্যাথেনাতে যৌথ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী‘ফাইন্ডিং আ ভয়েস’ নামে যৌথ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আজ থেকে উত্তর বাড্ডার প্রগতি সরণির অ্যাথেনা গ্যালারিতে। সন্ধ্যা ছটায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্পী জামাল আহমেদ ও নাসরিন বেগম।
সৈনিক নজরুলমুহাম্মদ লুৎফুল হক প্রথমা প্রকাশন প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরীদাম: ২২০ টাকামোট নয়টি অধ্যায়ে বিভক্ত এ বই। প্রথম অধ্যায়ের শিরোনাম ‘সৈনিক-পূর্ব জীবন’। এই অধ্যায়ে একেবারেই সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে নজরুলের বাল্য ও কৈশোরকাল, তাঁর পারিবারিক দারিদ্র্যদশার বিবরণ, তুলে ধরা হয়েছে তাঁর বিদ্যালয়জীবনের কথা, লেটো গানের দলে যোগদানের কথা, ভবঘুরে জীবনের কথা, অবশেষে বলছেন ‘১৯১৭ সালের শেষার্ধে শিয়ারশোল স্কুলে দশম শ্রেণীতে পাঠরত অবস্থায়... লেখাপড়া ছেড়ে’ তাঁর বাঙালি পল্টনে যোগ দেওয়ার কথা। এ বইয়ের একটা কৌতূহল-জাগানিয়া অধ্যায় হচ্ছে ‘কেন সৈনিক জীবন’। এই অধ্যায়ের রচনায় লুৎফল হক একরৈখিক বা একপেশে তথ্য হাজির করার পক্ষপাতী নন। একজন প্রকৃত গবেষকের সেটা রীতি বা প্রবণতাও নয়। বাঙালি পল্টনে যোগ দেওয়ার মোট সাতটি কারণ তিনি নির্দেশ করেছেন। এ ক্ষেত্রে নজরুলকে তিনি নানা দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেছেন। পল্টনে যোগ দেওয়ার আগে এবং যোগ দেওয়ার পরেও যে নজরুল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ছিলেন, পরাধীন ভারতের শৃঙ্খলমুক্তির স্বপ্নে উদ্বেল ছিলেন, তা নানা দৃষ্টান্তসহযোগে যেমন তুলে ধরেছেন, তেমনি নিজের সেই মনোভাব নজরুল গোপন রাখতেও যে কসুর করেননি, দিয়েছেন তারও বর্ণনা। নজরুল-জীবনের এই দিকটির সমর্থনে লুৎফুল হক নজরুলের বাল্য বন্ধু কথাসাহিত্যিক শৈলজানন্দের বয়ানে জানাচ্ছেন যে ‘নজরুল যুদ্ধ বিদ্যা শিখে এসে ভারতবর্ষে এক বিরাট সৈন্যবাহিনী গঠন করবে, তারপর দেশ থেকে ইংরেজ তাড়াবে—তার এই গোপন মতলবের কথা আমাকে সে বলেছিল একদিন।’ ‘কেন সৈনিক জীবন’ অধ্যায়টি সত্যিই এ বইয়ের একটি সংক্রামক জীবন্ত অধ্যায়।সেনাবাহিনীতে নজরুলের যোগ দেওয়ার সময় বা কাল নিয়ে এত দিন যে বিতর্ক চলে আসছিল, ‘নজরুল কখন পল্টনে যোগ দেন’ অধ্যায়ে তা নিরসনের প্রয়াস পেয়েছেন লেখক। তিনি এ অধ্যায়েও নানা সূত্র থেকে তথ্য হাজির করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হন, সেখানে নজরুলের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সময় বা কাল সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে মনে আর কোনো দ্বিধা থাকে না।‘নজরুলের সৈনিক-যোগ্যতা ও পল্টন-যাত্রা’ শীর্ষক অধ্যায়েও নজরুল সম্পর্কে প্রসঙ্গিত বিষয়ে এমন সব তথ্য হাজির করা হয়েছে, পাঠককুলকে যা অপার আনন্দ দেবে। নজরুলের স্বাস্থ্য বা শারীরিক যোগ্যতা সম্পর্কে যেসব মন্তব্য হাজির করা হয়েছে, তা যে তাঁকে সৈন্য বিভাগে ভর্তি হতে সাহায্য করেছিল, তাতে আর কোনো সন্দেহ থাকে না। প্রকৃত যোগ্যতার মাপকাঠিতেই তিনি তাতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এ ছাড়া কীভাবে তাঁর বাঙালি পল্টনে যাত্রা, যাত্রার আগে তাদের সংবর্ধনার বিষয়াদিও এ অধ্যায়ে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে নানাজনের বিবরণধৃত উদ্ধৃতির মাধ্যমে। ফলে পল্টনে তাঁর যাত্রার দিকগুলো চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে।‘পল্টনের দিনগুলো’ এ বইয়ের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে নজরুলের সামরিক প্রশিক্ষণ লাভ, সামরিক দায়দায়িত্ব, তাঁর পদোন্নতি, তাঁর কর্মনিষ্ঠা, সহকর্মীদের প্রতি তাঁর গভীর সহমর্মিতা, সর্বোপরি সাহিত্যচর্চা ও সংগীতচর্চার মতো নানাবিধ বিষয়ের প্রায় নিখুঁত বিবরণ। সৈনিকের কঠোর নিয়মানুবর্তী জীবনের ফাঁকে তাঁর ফারসি ভাষা শিক্ষা ও চর্চা এবং রাজনীতি চর্চার বিবরণও যথাসাধ্য তুলে ধরেছেন লেখক।এ বই সত্যিই নজরুলের সৈনিক জীবনকে জীবন্ত করে তুলেছে। বিশেষ করে ‘সহযোদ্ধাদের চোখে সৈনিক নজরুল’ শীর্ষক অধ্যায়ে যাঁরা তাঁকে বাঙালি পল্টনে দেখেছেন, তাঁদের বর্ণনা পড়লে এ বিষয়ে আর কোনো সংশয় থাকে না।নজরুলের সৈনিক জীবনের বেশ কিছু দিক নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছিল। লেখক নানা যুক্তি ও তথ্য পেশ করে সেসব বিতর্কের অবসান ঘটানোর প্রয়াস পেয়েছেন। যেমন: নজরুল যে করাচি ছেড়ে মেসোপটেমিয়া এবং ফ্রান্সের ভার্দুনের যুদ্ধক্ষেত্রে যাননি, লেখক সেটা পরিষ্কার করেছেন একজন প্রকৃত গবেষকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই। শুধু তা-ই নয়, নজরুল যে বাঙালি পল্টনে যোগ্যতরভাবে কাজ করা সত্ত্বেও, ‘সর্দার বাহাদুর’ খেতাব পাননি, তারও আলোচনা করতে গিয়ে লেখক দেখিয়েছেন, নজরুলের পক্ষে সেটা পাওয়া সম্ভব ছিল না।এ বইয়ের উপসংহারে বাঙালি পল্টনের যে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তার পটভূমি লেখক তুলে ধরেছেন, তার প্রয়োজন ছিল। পাঠক হিসেবে আমরা বুঝতে পারব কোন প্রেক্ষাপটে বাঙালি পল্টন গঠিত হয়েছিল, বাঙালিরা কেন তাতে যোগ দিয়েছিল। নজরুল গবেষণার ক্ষেত্রে সৈনিক নজরুল একটি অমূল্য সংযোজনস্বরূপ গ্রন্থ। গবেষণাসম্পৃক্ত অথচ সহজপাঠ্য।
রণদা প্রসাদ সাহা স্মারকগ্রন্থআনিসুজ্জামান, প্রতিভা মুৎসুদ্দি ও অন্যান্য (সম্পাদিত)সাহিত্য প্রকাশপ্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরীদাম: ১৫০০ টাকাঅবিভক্ত বাংলায় হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মতো বহু দানবীর জন্ম নিয়ে বঙ্গভূমিকে করেছেন ধন্য। যাঁরা বাংলার অবহেলিত, বঞ্চিত মানুষদের শিক্ষা ও চিকিৎসার উন্নয়নে মুক্তহস্তে অর্থ দান করেছেন কিংবা প্রতিষ্ঠা করেছেন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তেমনি একজন হলেন রণদা প্রসাদ সাহা। আর পি সাহা নামের আড়ালে কর্মযজ্ঞময় মানুষটি যতটা মুঠোভরে অর্জন করেছেন, ততটাই আবার মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁর জন্ম, জীবন ও কর্মভিত্তিক ইংরেজি এবং বাংলায় প্রায় ৭০টি প্রবন্ধ, পাঁচটি কবিতাসংবলিত প্রকাশিত হলো রণদা প্রসাদ সাহা স্মারকগ্রন্থ। গ্রন্থটিতে দেশের বহু বরেণ্য সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার, সাংবাদিক, রণদার নিকট আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁকে নিয়ে সুন্দর-সাবলীল ভাষায় স্মৃতিচারণা করেছেন। আজ থেকে প্রায় ১১৭ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে দেবেন্দ্রনাথ পোদ্দার ও কুমুদিনী দেবীর দ্বিতীয় পুত্র রণদা সাভারের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে ওঠেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তৃতীয় শ্রেণী পাস। মাত্র সাত বছর বয়সে মাতৃবিয়োগ হলে বাবার অভাব-অনটনের জন্য জীবন-জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান কলকাতায়। কিশোর রণদা সেখানে ফেরিওয়ালা, রিকশাচালক, দিনমজুর ও কুলিগিরি করে কর্মজীবন শুরু করেন। ইতিমধ্যে প্রথম মহাযুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে রণদা ১৯ বছর বয়সে যোগ দেন মিত্রবাহিনীর ‘বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোর’-এ। সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়ে রণদা ইরাকের মেসোপটেমিয়াতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অগ্নিকাণ্ডকবলিত একটি ফিল্ড হাসপাতালের যুদ্ধাহত সৈনিকদের রক্ষা করেন। ইরাক থেকে কলকাতায় ফেরার পর তাঁর এই বীরত্ব ও মানবসেবার জন্য স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়ে আসেন অভিনন্দনের ডালি। ১৯১৬ সালে রণদা বাঙালি পল্টনে যোগ দেওয়ার পর আকস্মিকভাবে পরিচিত হলেন দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। খুব অল্প সময়েই তাঁরা হয়ে যান ঘনিষ্ঠ। রণদা ভারতবর্ষে আধুনিক সেনাবাহিনীতে বাঙালি জাতির প্রথম প্রজন্মের সদস্য। যুদ্ধ-ফেরত রণদা রেল বিভাগে টিকিট কালেক্টর পদে চাকরি নেন। ১৯৩২ সালে চাকরি থেকে অবসরগ্রহণের পর পেনশনের অর্থ দিয়ে কলকাতায় কয়লা ও লবণের ব্যবসা শুরু করেন। এরপর আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমেই তিনি ব্যবসার পরিধি বিস্তৃত করেন।রণদার বিভিন্ন বয়সের ছবি, পারিবারিক ছবি ও বংশতালিকা গ্রন্থটিকে আরও চিত্তাকর্ষক করে তুলেছে। রণদা হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে মনুষ্যত্বের পূজারি ছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ ও সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি মোহন লাল ছিলেন রণদার আদর্শ পুরুষ। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের অবরোধবাসিনীদের আলোকিত করার জন্য এই যুগোত্তীর্ণ পুরুষ সাধ্যমত প্রচেষ্টায় ব্যাপৃত থেকেছেন। ১৯৩৮ সালে কুমুদিনী হাসপাতাল ও একটি বালিকা বিদ্যালয়ের (যা বর্তমানে ভারতেশ্বরী হোমস) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে তাঁর জনকল্যাণমূলক কাজের সূত্রপাত। পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের (১৯৪৩) সময় তিনি সারা দেশে প্রায় ৩০০টির মতো লঙ্গরখানা খুলে কয়েক মাস নিজ অর্থে বুভুক্ষু মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। এ জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘রায় বাহাদুর’ খেতাব প্রদান করে। রণদা স্কুল, কলেজ, চিকিৎসালয় এবং হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ছাড়াও জনস্বার্থে কমিউনিটি সেন্টার, পাবলিক হল, নাট্যমঞ্চ ইত্যাদি নির্মাণ করেন। তিনি টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজ (১৯৪৩) এবং মানিকগঞ্জে দেবেন্দ্র কলেজ (১৯৪৬) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ সালে সব ব্যবসা, কলকারখানা, সম্পত্তি এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল’ গঠন করেন। কিন্তু দেশভাগের পর ট্রাস্টের কার্যক্রম দুভাগ হয়ে যায়। বাংলাদেশে ট্রাস্টের আওতায় বর্তমানে কুমুদিনী হাসপাতাল, নার্সিং বিদ্যালয়, মহিলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, ভিলেজ আউটরিচ প্রোগ্রাম, ভারতেশ্বরী হোমস, ট্রেড ট্রেনিং বিদ্যালয়, কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফটস, জুট বেলিং ও ওয়্যার হাউস, বেঙ্গল রিভার সার্ভিস, ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ট্রাস্টের প্রধান কার্যালয় নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। রণদা সাংস্কৃতি অনুরাগিও ছিলেন। সৈনিক অবস্থায় করাচিতে তাঁর নাট্যজীবন শুরু। আলমগীর (১৯৬৯) নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁর সম্মানার্থে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। রণদা প্রসাদ সাহা সর্বজনে আর পি সাহা নামেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর কাছে জাতির অশেষ ঋণ। মানবহিতৈষণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। এই দানবীর মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ৭ মে পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহাসহ নিখোঁজ হন। এই বইয়ের একটি লেখায় আরমা দত্ত যথার্থই বলেছেন—‘জয়তু জনহিতব্রতী রণদা প্রসাদ সাহা!/শেষ নাহি যে, শেষ কথা কে বলবে?/আমার প্রণাম রইল তোমাদেরই, চরণে!’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ কাল শনিবার। নবগঠিত এই সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন নিয়ে গাজীপুর উৎসবমুখর। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। নগরে নেমেছে র‌্যাব-বিজিবি। নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার নির্বাচনী এলাকায় বাধ্যতামূলক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ভোট গ্রহণের দিন সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকবে। তবে পূর্বনির্ধারিত পাবলিক পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।রিটার্নিং কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরবাসীর মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখছি। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’নির্বাচন কমিশন থেকে জানা যায়, নির্বাচন উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১১ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার নির্বাচনী কর্মকর্তা।পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গড়া ৫৭টি ভ্রাম্যমাণ দল ও ১৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিটি দলে ১২ জন করে সদস্য থাকবেন। তিনটি ওয়ার্ডের জন্য থাকবে একটি করে ভ্রাম্যমাণ দল। এ ছাড়া থাকবে র‌্যাবের ২৮টি দল। প্রতিটি দলে থাকবেন আট থেকে ১০ জন সদস্য। প্রতিটি দল দুটি ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকবে। এ ছাড়া দেড় শতাধিক বিজিবির সদস্য নির্বাচনী এলাকায় টহল দেবেন। ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন।গাজীপুর জেলা পরিষদের মিলনায়তনে গতকাল বিকেলে র‌্যাব-১ একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কিসমত হায়াৎ সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকায় র‌্যাব-১-এর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে পোশাকধারী এবং গোয়েন্দা মিলিয়ে ৮৪৭ জন র‌্যাব সদস্য সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত থাকবে।এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী সাতজন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ছয়জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খান এবং বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নান। আজমত উল্লার প্রতীক দোয়াত-কলম। আর মান্নানের প্রতীক টেলিভিশন। এ ছাড়া মেয়র পদে লড়ছেন রিনা সুলতানা। তাঁর প্রতীক প্রজাপতি। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও আছেন স্থানীয় বিএনপির নেতা মেজবাহ উদ্দিন। তাঁর প্রতীক হাঁস। তবে বিএনপি তাঁকে সমর্থন দেয়নি। এঁদের বাইরে নাজিম উদ্দিন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ও আমান উল্লাহ তালা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।সম্মিলিত নাগরিক কমিটির ব্যানারের প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আজমত উল্লা খানের সমর্থনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।নির্বাচন ঘিরে প্রার্থী, দলীয় নেতা-কর্মী, স্থানীয় বাসিন্দা ও ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
যৌনকর্মীর জীবনলেখক: বনানী বিশ্বাসপ্রকাশক: বাংলা প্রকাশদাম: ২৮০ টাকাযৌনকর্মীদের নিয়ে এই বই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সব যুগে ও সভ্যতায় যৌনকর্মীদের প্রতি নিন্দা ও অবহেলার থাপড়ই মারা হয়েছে। আবার তাদের প্রতি মুগ্ধতার অভাব নেই সাহিত্যে আর অন্ধ গলিতে। যৌনকর্মীদের দৈনন্দিন জীবন, তাদের কাজের পরিবেশ, পারিবারিক সুখ-দুঃখ জানা যায় সামান্যই। বেশির ভাগ সময় তাদের জীবন থেকে যায় আলো-আঁধারিতেই। এই বইয়ের পটভূমিতে দেখা যায় যৌনকর্মীর চোখের জল, শরীরের খেদ, বঞ্চনা, সুখ-দুঃখ, স্বপ্নবাস্তবতা ও অলিগলির চোরা পথে তাদের অপরিবর্তিত থাকার নিয়ত ঝোঁক। গবেষকের ভঙ্গিতে হলেও অত্যন্ত প্রামাণ্য পরিসরে প্রাচীন শাস্ত্র থেকে আধুনিক সমীক্ষায় সূত্র ও তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে এ বইয়ে। যৌনপল্লির নারী-পুরুষ, হিজড়া যৌনকর্মী, ভাসমান যৌনকর্মী—নানা শ্রেণীর যৌনকর্মীর জীবনযাত্রার বিবরণ এতে মিলবে। যৌনকর্মীর জীবন বয়সে তরুণ হলেও তিনি নির্দ্বিধায় ও সংস্কারহীনভাবে নারীদের জীবনের নগ্ন সত্যকে তুলে ধরেছেন।নাট্যপ্রবন্ধ সমুচ্চয়লেখক: মুস্তাফিজুর রহমানপ্রকাশক: দিব্যপ্রকাশদাম: ৩০০ টাকানাট্যপ্রবন্ধ সমুচ্চয় শীর্ষক গ্রন্থটি নাট্যগবেষক, নাটক-অনুরাগী, অভিনেতা এবং অনুসন্ধিৎসু পাঠককে বিশ্বনাট্যকলা সম্পর্কে বিস্তর ধারণা দেবে। বিশেষ করে যাঁরা নাটক বিষয়ে অধ্যয়ন করেন, তাঁরা বইটি পাঠ করে নানাভাবে উপকৃত হবেন। গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের আদলে তথ্য ও টীকা-টিপ্পনীসহ ১০টি প্রবন্ধ এতে স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া গ্রন্থের শেষে একাধিক পরিশিষ্ট, উৎস নির্দেশ এবং নির্ঘণ্ট সন্নিবেশিত হয়েছে, যাতে বইটি অনুধাবনে সহজ ও সহায়ক হবে। ১০টি প্রবন্ধের মধ্যে আছে: মধ্যযুগের কবি হামিদ প্রণীত ‘সংগ্রামহুসন’—কাব্যে নাটকীয়তা; নজরুল-নাটক সমালোচনা ‘ঝিলিমিলি’; স্যামুয়েল বেবোটের নাট্যচেতনা, নাট্যকলায় শম্ভু মিত্রের অবদান, নাট্যকার সাইদ আহমদ: একটি মূল্যায়ন ইত্যাদি।প্রতি প্রশ্নে কেঁপে ওঠে ভিটেলেখক: শঙ্খ ঘোষপ্রকাশক: সিগনেট প্রেসদাম: ২০০ টাকাচমকপ্রদ নামাঙ্কিত প্রতি পদে কেঁপে ওঠে ভিটে শিরোনামটি একটি কবিতাগ্রন্থের। এটির রচয়িতা শঙ্খ ঘোষ। সুদৃশ্য আকারে আকর্ষণীয় সজ্জায় প্রকাশিত বইটির কবিতাগুলো তিনটি পর্বে বিন্যস্ত। যেমন: ফলক; এতে আছে ১৪টি কবিতা, লহমা পর্বে আছে ১২টি কবিতা এবং স্বপ্নগুচ্ছ পর্বে আছে ৩০টি। বাংলা ভাষার সুপরিচিত কবি শঙ্খ ঘোষের এই কবিতাগ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলো লেখা হয়েছে ২০১২-এর মধ্যবর্তী সময়ে। তাঁর কবিতা নিয়ে আলাদাভাবে বলার কিছু নেই। চমকপদ, সাদামাটা, গল্পময়, চিত্রকল্পের সুনিপুণ আবহে কবিতাগুলো তাকিয়ে আছে পাঠতৃষ্ণায়, কখন পাঠক পড়ে ফেলবেন। একটি কবিতা তুলে দিলে পাঠক অনেকটা আন্দাজ করতে পারবেন কবিতার কিছু মাধুর্য-রস: ঝাঁঝরা হয়ে গেলে যেমন হয়/ কাঠামোর ভিতর থেকে তেমনি একটা আওয়াজ উঠেছে/ ঘন ঘন কাশির গমকে/ আকুলি বিকুলি করছে হাড়গুলি/ অবিরত নৃত্যভঙ্গিমায়/ সবই তো পাথরচাপা—এটুকু যা সুখ (নৃত্যসুখ)।ইনফারনোলেখক: ড্যান ব্রাউনপ্রকাশক: বনটাম প্রেসদাম: ১২০০ টাকামার্কিন লেখক ড্যান ব্রাউন সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। রোমাঞ্চকর উপন্যাস লেখক হিসেবে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। প্রকাশের পর পরই তাঁর বইগুলো নিউইয়র্ক টাইম বেস্ট সেলারের মর্যাদা পেয়ে থাকে। দ্য দা ভিন্সি কোড তাঁর অন্যতম বেস্ট সেলার বই। ইনফারনো একটি থ্রিলারধর্মী বই। এটি রবার্ট ল্যানডন সিরিজের চতুর্থ বই। এই বইয়ের কাহিনি শুরু হয়েছে ইতালির ফ্লোরেন্সের এক হাসপাতালে। সাময়িক এমনেসিয়া আক্রান্ত লানডনের কোনো ধারণা নেই কীভাবে বা কেন সে এখানে এসেছে আর কেনই বা ভয়ংকর এক মহিলা গুপ্তঘাতক তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা থেকে সৃষ্ট সমস্যা দূর করার একমাত্র উপায় হচ্ছে পৃথিবী থেকে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে মুছে ফেলা—এমন উদ্ভট মতবাদও বইটিতে ফুটে উঠেছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন শুরুর পর থেকে প্রধান দুই মেয়র পদপ্রার্থীর প্রচারণায় টঙ্গী বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। দুজনেরই নির্বাচন পরিচালনার প্রধান কার্যালয় টঙ্গীতে। দুই প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারা এই এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন বেশি। এই এলাকায় পাওয়া ভোটের ব্যবধানই নির্বাচনে ফলাফল নির্ধারণ করবে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ভোটার ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৮টি। একক এলাকা হিসাবে টঙ্গীতে সবচেয়ে বেশি তিন লাখ ৩৬ হাজার ৫৩১টি ভোট রয়েছে। সাবেক টঙ্গী পৌর এলাকার ১২টি ওয়ার্ডের নয়টিতে আওয়ামী লীগ এবং তিনটিতে বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর ছিলেন। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ১৪ দলের মেয়র পদপ্রার্থী আজমত উল্লা খান ১৭ বছর টঙ্গীর মেয়র ছিলেন। শহরের জলাবদ্ধতা ও রাস্তাঘাটের বেহালের কারণে ভোটাররা আজমতের ব্যাপারে দ্বিধান্বিত। এ কারণেই মান্নানের সমর্থকেরা আশান্বিত। ১৪ দল-সমর্থিত প্রার্থী নতুন বাজার দলীয় কার্যালয় ও ১৮ দল-সমর্থিত প্রার্থী চেরাগআলী দলীয় কার্যালয় থেকে প্রচারণা নিয়ন্ত্রণ করছেন। কেন্দ্র থেকে আসা নেতারাও টঙ্গীতে প্রচারণায় বেশি সময় ব্যয় করেছেন।১৮ দল-সমর্থিত প্রার্থীর টঙ্গী সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম। তিনি বলেন, তাঁদের প্রার্থী টঙ্গীর ১৫টি ওয়ার্ডে ৩০টি পথসভা ও ঘরোয়া সভা করেছেন। টঙ্গীর ভোটারদের বড় একটি অংশ শ্রমিক। শ্রমিক ভোটারদের কাছে টানতে দুই প্রার্থী নানা কৌশল নিয়েছেন। টঙ্গী থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘আমরা ৪০টি শ্রমিকসংগঠন একত্রিত হয়ে আজমতকে সমর্থন দিয়েছি। শ্রমিকদের ভোট আজমতের পক্ষেই যাবে।’একইভাবে শ্রমিক দলের টঙ্গী থানার সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার বলেন, ‘বর্তমান সরকার শ্রমিকদের নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়নি। আমরা বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। তা ছাড়া আমাদের প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহারে শ্রমিকদের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার রয়েছে।’টঙ্গীর এক পোশাক কারখানার কর্মকর্তা মো. আইয়ুব আলী বলেন, টঙ্গী এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে ভোট দেবেন। তাঁদের ভোট যেদিকে যাবে, সেই প্রার্থীই বিজয়ী হতে পারেন।টঙ্গী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আতিক বলেন, টঙ্গীর বাইরে অন্য সব এলাকার মিলিত ভোটের ব্যবধানের সঙ্গে টঙ্গীর ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে। তাই প্রধান দুই প্রার্থী টঙ্গীর ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৮ দল-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র পাহারার জন্য করা হচ্ছে আলাদা কেন্দ্র কমিটি।গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কারচুপি, জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তাই আগাম সতর্কতা হিসেবে গত মঙ্গলবার থেকে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। এর পাশাপাশি কেন্দ্র কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে বিএনপির সূত্রগুলো জানায়।দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব আবদুর রশীদ সরকার ও সাবেক সচিব আবদুল হালিম পোলিং এজেন্টদের এ প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। মঙ্গলবার গাজীপুর চৌরাস্তায় বিএনপির কার্যালয়ে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ও আ স ম হান্নান শাহও অংশ নেন। তাঁরা নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা থেকে এজেন্টদের বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা দেন।প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, মূলত নির্বাচন চলার সময় ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের অনিয়ম, কারচুপি বা জালজালিয়াতির ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে সুনির্দিষ্ট করে তা কীভাবে লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাতে হবে, তা হাতে-কলমে শেখানো হচ্ছে।এ ছাড়া নির্বাচনের সময় ভোটের বাক্স পরখ করে দেখা, ব্যালট বইয়ের দিকে নজর রাখা, কাউকে অপরিচিত মনে হলে চ্যালেঞ্জ করা এবং ভোট গ্রহণ শেষে সই করা ফলাফল শিট না নিয়ে কেন্দ্র ছেড়ে না আনতে বলা হয়েছে। কয়েক ভাগে চলা এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে।গাজীপুরে ১৮ দল-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল মান্নানের নির্বাচন সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা বিএনপির দুজন নেতা জানান, পোলিং এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতার জন্য দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা রয়েছে। প্রতিপক্ষের হুমকিতে এবং কোনো ধরনের বৈষয়িক প্রলোভনে পড়ে যাতে কেউ অবস্থান পরিবর্তন না করে বসেন, সে জন্য স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং দলের প্রতি একনিষ্ঠ কর্মীকে এজেন্ট নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে।জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দল-সমর্থিত প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি সরকার বুঝে গেছে। এ কারণে তারা দলীয় সমর্থকদের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করাসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করছে। আমরা বিষয়গুলো রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। এর পাশাপাশি পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও কেন্দ্র পাহারার জন্য কমিটি করা হচ্ছে।’নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা এবং দলের পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে এ ধরনের কৌশলগুলো তো থাকেই। তবে আমরা সরকারের কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আশঙ্কায় আছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি, ভোটারদের সচেতন করছি, গণমাধ্যমকে বলছি এবং নির্বাচন কমিশনকে জানাচ্ছি।’
খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে একমাত্র মানুষই একটু খুঁতখুঁতে। অধিকাংশ খাবার তেল, লবণ, মসলা, পানিসহ হাবিজাবি নানান জিনিস দিয়ে রান্না না করলে মানুষ খেতেই পারে না! তবে বন্য জীবজন্তুদের অত ঝামেলা নেই। খাবাররূপী জলজ্যান্ত কোনো প্রাণীকে শিকার করে তার পরই সেই কাঁচা খাবারই গবাস গবাস করে খাওয়া। ব্যস! কাজ শেষ। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, মানুষ ছাড়াও গাছপালারাও রান্না করে খাবার খায়। পৃথিবীতে একমাত্র গাছপালাই নিজের খাবার নিজেই তৈরি করে। এদের খাবার তৈরির সেই বিশেষ পদ্ধতির নাম সালোক সংশ্লেষণ। এ পদ্ধতিতে মাটি থেকে পানি, খনিজ, বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে গাছ। এ দুইয়ের সঙ্গে নিজের পাতার ক্লোরোফিল মিশিয়ে সূর্যের আলোতে রান্না করে গ্লুকোজ তৈরি করে গাছেরা। এভাবেই খাবার তৈরির কারণে বিশ্বের সব প্রাণী বেঁচে আছে। তাই খাবারের জন্য সব প্রাণীই কোনো না-কোনোভাবে গাছেদের কাছে ঋণী।তবে কিছু গাছ আছে, যারা আবার এত সব ঝামেলা একেবারেই পছন্দ করে না। তার চেয়ে একটু আমিষ মানে মাংস খেতেই ভালো লাগে ওদের। এদেরই বলে মাংসখেকো গাছ। হলিউডি চলচ্চিত্রে তোমরা নিশ্চয় মানুষখেকো গাছ দেখেছ। সিনেমার কারণে অনেকের ধারণা মানুষখেকো গাছ আছে। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের গাছ দেখা না গেলেও পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকা কিছু গাছ ছোট খুঁজে পাওয়া গেছে। এরাই মাংসখেকো গাছ (মানুষখেকো নয়)। এর মধ্যে কলসগাছ, ফ্লাইপেপার ট্র্যাপ, স্ন্যাপ ট্র্যাপ, ব্লাডার ট্র্যাপ, লবস্টার-পট ট্র্যাপ, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ আমেরিকায় মাংসখেকো উদ্ভিদ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া এশিয়ার কিছু দেশেও এর দেখা মেলে। বাংলাদেশের সিলেটের পাহাড়ি এলাকাতেও সূর্য শিশির, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ নামের মাংসখেকো গাছ আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত যেখানে মাটিতে পুষ্টি উপাদান কম (বিশেষ করে নাইট্রোজেন) এবং মাটি ভেজা সেখানে মাংসখেকো গাছ বেশি জন্মে। কারণ, মাটি থেকে পুষ্টি না পাওয়ার অভাব এরা পোকামাকড় খেয়ে মেটায়।এই উদ্ভিদগুলো পোকামাকড়কে ধরার জন্য নানা ধরনের ফাঁদ পাতে। বোকা পোকামাকড়ও সেই ফাঁদে সহজেই ধরা পড়ে। কলস উদ্ভিদের কথাই বলা যাক। এ গাছটি দেখতে অনেকটা কলসের মতো বলেই এর নাম কলস উদ্ভিদ। এই কলসের ওপরের দিকে ফুলের মতো দেখতে লালরঙা। এই অংশে মধুর মতো রস নিংসৃত হয়, যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে। মধুলোভী পোকামাকড় এই কলসের ওপর বসে মধু সংগ্রহ করতে গেলেই ঘটে বিপত্তি। কারণ, পিচ্ছিল কলসের ওপর বসার সঙ্গে সঙ্গেই সে পা পিছলে কলসের মধ্যে পড়ে যায়। এরপর কলসের ভেতরের একধরনের রস এসে পোকাটিকে আটকে ফেলে। তারপর কলস উদ্ভিদ আরও কিছু রসের সাহায্যে পোকাটাকে হজম করে ফেলে।যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ও নর্থ ক্যারোলিনার ভেনাস ফ্লাইট্রাপের পোকা ধরার পদ্ধতি আরও মজার। প্রায় এক ফুট লম্বা ভেনাস ফ্লাইট্রাপের পাতা দেখতে অনেকটা মুখের চোয়ালের মতো। এ পাতা তিন থেকে ছয় ইঞ্চির মতো লম্বা হয় এবং এতে ছোট ছোট অনেকগুলো লোম থাকে। পোকামাকড় কখনো এই পাতার ওপর বসলে তা নিমেষেই বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, লজ্জাবতীর লতার মতোই এ পাতাও খুব সংবেদনশীল। তাই পোকামাকড় এদের গায়ে বসলেই আধা সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে সে তার পাতা বন্ধ করে ফেলতে পারে। ঠিক এই সময় আবার পাতার লোমগুলোও পোকাকে বাইরে বের হতে বাধা দেয়। ফলে পাতার মাঝখানে পোকা আটকা পড়ে। এরপর আর কী, পাতা থেকে বিশেষ এক রস বের হয়ে পোকাকে হজম করতে শুরু করে। এভাবে একটা পোকা হজম করতে এদের ১০ দিন সময় লাগে। একটি পোকা হজম শেষ হলে ওই পাতা আবার খুলে যায় নতুন পোকা ধরার আশায়। এভাবে একটি পাতা তিন থেকে চারটি পোকা ধরার পর তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। নতুন পাতা শুরু করে শিকারের কাজ। কিন্তু এই গাছেরা অন্যদের মতো জল-হাওয়া না খেয়ে পোকামাকড় খায় কেন? প্রথমত বলতে হয়, এদের স্বভাবটাই এ রকম তাই। দ্বিতীয়ত কলসগাছ, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপসহ অন্যান্য মাংসখেকো গাছদের বাঁচার জন্য প্রচুর নাইট্রোজেন প্রয়োজন। কিন্তু এদের বসবাস সাধারণত জলাভূমিতে। জলাভূমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ এমনিতেই খুব কম। তাই এ উদ্ভিদকে নাইট্রোজেন জোগাড় করতে হয় পোকামাকড় খেয়ে। কিছু বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকতে গিয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে এসব গাছ মাংসভূক হয়েছে। কিন্তু অনেকের এ নিয়ে দ্বিমতও আছে। সে যাই হোক, অনেকেই হয়তো মাংসভূক এসব গাছের কথা শুনে ভয় পাচ্ছ। কিন্তু এখন তো অনেকেই শখ করে বাড়িতে টবে চাষ করছে মাংসখেকো বা মাংসভূক গাছ। তাই নো টেনশন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিলি হয়েছে নানা ধরনের প্রচারপত্র। এসব প্রচারপত্রে দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা হয়। তবে দুই প্রার্থীই তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে অপপ্রচার হিসেবে বর্ণনা করেছেন।১৮-দলীয় জোট-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে ‘খোলাচিঠি’ নামের প্রচারপত্র বিলির পর ১৪-দলীয় জোট-সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লার বিরুদ্ধেও এলাকায় প্রচারপত্র বিলি হতে দেখা গেছে। আজমত উল্লার প্রতি ২১টি প্রশ্ন-সংবলিত ‘উন্মুক্ত বার্তা’ নামের এই প্রচারপত্রে ১৯৯৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের দৈনিক ইত্তেফাক-এর একটি সংবাদের সূত্রে উল্লেখ করা হয়, আজমত উল্লা খান প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরই টঙ্গী বাজার সিঅ্যান্ডবির জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত বহু বছরের পুরোনো হকার্স মার্কেট দখল করে নেন।১৮ দল-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে একইভাবে ‘খোলা চিঠি’ আকারে প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়। এই প্রচারপত্রে মান্নানের মালিকানাধীন ক্যাপিটাল প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির কর বকেয়ার অভিযোগে ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং প্রায় ২০ বছর আগে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগের বিষয় প্রশ্ন আকারে উল্লেখ করা হয়।এম এ মান্নান তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘হজ ব্যবস্থাপনায় আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা ও বিজয় সুনিশ্চিত দেখে ১৪ দল আমাকে ঘায়েল করতে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে নেমেছে।’১৪ দল-সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খানও তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো সরকারি জমি দখল করিনি। বিএনপি তাদের পরাজয় ঠেকাতে ও তাদের প্রার্থীর দুর্নীতির বিষয় আড়াল করতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
কেবল একটি পরিবেশবান্ধব যানবাহন হিসেবেই নয়, বাইসাইকেল চালানো একধরনের অ্যারোবিক ব্যায়াম যা স্বাস্থ্যরক্ষায় অনেক উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। সাইকেল চালানো শুরু করতে চাইলে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখুন। প্রথমেই অনেক বেশি জোরে ও অনেক সময় ধরে সাইকেল চালাবেন না। অনভ্যস্ততা থাকলে শরীরে ও পেশিতে ব্যথা হতে পারে। ধীরে ধীরে সময় ও গতি দুটোই বাড়ান। চালাবেন অবশ্যই সাবধানে। সাইকেল কেনার সময় নিজের উচ্চতা বুঝে কিনুন। আসুন জেনে নিই সাইকেল চালনার উপকারী দিক। মানসিক স্বাস্থ্য: নিয়মিত সাইকেল চালানো বিষণ্নতা কমায় এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে।ক্যানসার প্রতিরোধ: অন্ত্র ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।হূদেরাগের ঝুঁকি কমে: সপ্তাহে ২০ মাইল সাইকেল চালালে হূদেরাগের ঝুঁকি অন্তত ৫০ শতাংশ কমে যায়। সাইকেল চালানোর সময় হূ ৎস্পন্দন ও পেশিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়, ঘাম হয় এবং এই সবকিছু মিলে হূদ্যন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।পেশির শক্তি বাড়ায়: সাইকেল চালনায় দেহের প্রায় প্রতিটি পেশি ও সন্ধি ব্যবহূত হয়। এটি পেশির শক্তি ও নমনীয়তা বাড়ায়। পা ও ঊরুর পেশি এবং কোমর বা হাঁটুর জন্য সাইকেল চালনা খুব ভালো।ওজন কমে: প্রতি ঘণ্টা সাইকেল চালনায় গড়ে ৩০০ ক্যালোরি শক্তি পোড়ে। দৈনিক আধা ঘণ্টা সাইকেল চালালে এক বছর পর শরীর থেকে প্রায় পাঁচ কেজি মেদ ঝরতে পারে।ডায়াবেটিস: দৈনিক আধা ঘণ্টা সাইকেল চালালে টাইপ  ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যাবে।
রান্নাঘরে বা অন্য কোনো কাজ করতে গেলে ধারালো কিছুতে হঠা ৎ হাত-পা কেটে যেতে পারে। নিত্যদিনের সমস্যা এটি। কেটে যাওয়ার পর মূল করণীয় হলো রক্তপাত বন্ধ করা এবং সংক্রমণ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা। জেনে নিন, হঠা ৎ কেটে গেলে কী করবেন।১. একটা পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে কাটা স্থানটি চেপে ধরে রাখুন। টানা ২০ থেকে ৩০ মিনিট চাপ দিয়ে ধরে রাখলে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তপাত বন্ধ করে দেবে। এক টুকরো বরফ পেঁচিয়েও ধরে রাখতে পারেন। কাটা জায়গাটা উঁচু করে রাখুন। রক্ত বন্ধ হয়েছে কি না তা বারবার খুলে     দেখবেন না।২. রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে জায়গাটা ধুয়ে নিন। সাবান বা আয়োডিন ও আয়োডিনজাত অ্যান্টিসেপটিক অনেক সময় জ্বালা করে। তাই সাধারণ ট্যাপের পানিই ভালো।৩. ধোয়া হয়ে গেলে পাতলা স্তরে অ্যান্টিবায়োটিক মলম দিয়ে ঢেকে দিন। নিওমাইসিন বা এ জাতীয় মলম সব সময় বাড়িতে প্রাথমিক চিকি ৎসাসামগ্রী হিসেবে থাকা উচিত। এবার একটা পাতলা গজ বা ব্যান্ডেজ দিয়ে আটকে দিন।৪. সাধারণ গজ ব্যান্ডেজ বা স্টিকারযুক্ত ব্যান্ডেজ, যা-ই হোক, প্রতিদিন অন্তত একবার তা পরিবর্তন করতে হবে। যদি জায়গাটা ফুলে যায় ও লাল দেখায়, ব্যথা বেড়ে যায় বা ভিজে যেতে থাকে, জ্বর আসে, তবে চিকি ৎসকের পরামর্শ নিন।৫. আধঘণ্টা চেপে রাখার পরও রক্ত বন্ধ না হলে ক্ষত ছয় মিলিমিটার পুরু হলে সেলাই লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে জরুরি বিভাগে চলে যান।৬. ধাতব বস্তু, নোংরা বস্তু ইত্যাদি থেকে ক্ষত তৈরি হলে এক ডোজ টিটেনাস ইনজেকশন নিয়ে নিন। নোংরা বস্তু দিয়ে কাটলে অ্যান্টিবায়োটিকও খেতে হতে পারে। সূত্র: মায়ো ক্লিনিক, ইমার্জেন্সি মেডিসিন।
 ধরন: অ্যাডভেঞ্চার, ফ্যান্টাসি  প্রথম প্রকাশ: ১ মার্চ, ২০১৩  ব্যাপ্তি: ১১৪ মিনিট  ভাষা: ইংরেজিগ্রামের ছেলে জ্যাক। একবার বাবার কাছে শুনেছিল, রাজা এরিককে নিয়ে এক কিংবদন্তির গল্প। একবার নাকি আজব এক শিমের বিচি পাওয়া গিয়েছিল। সেই বীজ মাটিতে পড়তেই হুড়মুড় করে গাছ গজাতে থাকে। সেবার সেই গাছ বেয়ে বিশালদেহী দৈত্যরা নেমে এসেছিল পৃথিবীতে। তারপর মানুষকে ধরে ধরে খেতে শুরু করেছিল তারা। সেই সময় রাজা এরিক বিশেষ এক উপায়ে পরাস্ত করেছিলেন দৈত্যদের। তারপর সেই বিশাল শিমের গাছ কেটে ফেলতেই পৃথিবীতে ফিরে এসেছিল শান্তি। তবে এরিকের এই বীরত্বের কথা গালগল্প বলেই উড়িয়ে দেয় এ যুগের সবাই। কিন্তু জ্যাক গল্পটা ঠিক অবিশ্বাস করতে পারত না। রাজকন্যা ইসাবেলাও বিশ্বাস করত গল্পটা। কারণ, ছোটবেলায় সেও রানির কাছে কিংবদন্তি শুনেছিল।বড় হয়ে একদিন ঘোড়া বিক্রি করতে গ্রাম থেকে রাজধানীতে এল জ্যাক। ঘোড়ার বদলে এক চোর জোর করে একটি ছোট্ট থলে গুঁজে দিল জ্যাকের হাতে। সেই থলেতে ছিল ছোট্ট কয়েকটা শিমের বিচি। সেই বীজ মাটিতে পড়তেই রূপকথার আজব শিমগাছ হয়ে গেল। দেখতে দেখতে সেই গাছ আকাশ ছুঁয়ে পৌঁছে গেল দানবদের দেশে। গাছের সঙ্গে সঙ্গে দানবদের দেশে হারিয়ে গেছে রাজকুমারী ইসাবেলাও। রাজার লোকলস্করের সঙ্গে জ্যাকও চলল রাজকুমারীকে উদ্ধারে। বেশ বুদ্ধি খাটিয়ে ইসাবেলাকে নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে এল জ্যাক। তবে শিমের সেই থলেটা চলে গেল দানবদের হাতে। দানবেরা মানুষ শিকার করতে বিশাল শিমগাছে চড়ে নেমে আসতে লাগল পৃথিবীতে। শুরু হলো বিশালদেহী দৈত্য-দানবদের বিরুদ্ধে খুদে মানুষের এক অসম যুদ্ধ। তারপর? সে উত্তরটা বলে ছবির আসল মজাটা নষ্ট করা বোধ হয় ঠিক হবে না, তাই না?
প্রশ্ন: চশমার পরিবর্তে কনটাক্ট লেন্স ব্যবহার করার কি কোনো ক্ষতিকর দিক আছে?উত্তর: আজকাল অনেকেই চশমার পরিবর্তে কনটাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন। কেবল সৌন্দর্যবর্ধনই নয়, এর আরও কিছু উপকারিতা আছে। যাঁদের দুই চোখের পাওয়ারে অনেক তারতম্য, তাঁদের জন্য লেন্সই ভালো। এতে চশমা ভেঙে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কম বলে খেলোয়াড়দের জন্য ভালো। এ ছাড়া লেন্স ব্যবহারকারীদের সময়ের সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের প্রবণতাও কম। তবে কারও কারও কনটাক্ট লেন্সে অ্যালার্জি হয়, চোখ লাল হয় ও চুলকায়। তাঁদের ব্যবহার না করাই ভালো। লেন্স ব্যবহারের সঠিক নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। রাতে অবশ্যই খুলে ঘুমাতে হবে। লেন্স একটি নির্দিষ্ট দ্রবণে ভিজিয়ে রাখতে হয় ও পরদিন সকালে হাত পরিষ্কার করে লেন্স পরিষ্কার করে চোখে লাগাতে হয়। যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করলে এর তেমন কোনো ক্ষতিকর দিক নেই। l     অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম,      চক্ষু বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল।
বিষ্টি মানে মিষ্টি পুতুলবিষ্টি মানে খেলাআয় বিষ্টি আয়রে আয়ভিজব সারাবেলা।বিষ্টি নামে রঙিন ছাতায়শাদা ফুলে সবুজ পাতায়বিষ্টি নামে ব্যাঙের মাথায় বিষ্টি মানে খেলাআয় বিষ্টি আয়রে আয়নাচব সারাবেলা।বিষ্টি নাচে আমার সাথেফ্ল্যাটের ছোট বারান্দাতে বিষ্টি নামে আমার হাতেবিষ্টি মানে খেলাআয় বিষ্টি আয়রে আয়খেলব সারাবেলা।
স্টেম সেল ব্যবহার করে এই প্রথম মানবদেহে সাময়িক ব্যবহারোপযোগী একটি যকৃ ৎ তৈরি করা হয়েছে। জাপানের একদল বিজ্ঞানী এই কৃতিত্বের দাবিদার। এতে ভবিষ্যতে প্রতিস্থাপনযোগ্য যকৃ ৎসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গবেষণাগারে তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জাপানের ইয়োকোহামা সিটি ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকেরা রক্ত ও ত্বক থেকে নেওয়া আইপিএস সেল ব্যবহার করে এই বিশেষ যকৃ ৎ তৈরি করেছেন। নেচার সাময়িকীতে এই গবেষণা নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, বিশেষ যকৃ ৎটি চিকি ৎসাকাজে ব্যবহার শুরু করতে হয়তো আরও ১০ বছর লাগবে। তবে বিজ্ঞানীদের এই সাফল্যের পরিণাম সুদূরপ্রসারী হতে পারে।বিভিন্ন উ ৎস থেকে স্টেম সেল তৈরির ব্যাপারে সারা বিশ্বের চিকি ৎসাবিজ্ঞানীরা গত এক দশকের বেশি সময় ধরে গবেষণা করছেন। স্টেম সেল থেকে মানবদেহের প্রায় সব কলা, কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয়। যকৃ ৎ, কিডনি, হূ ৎপিণ্ড ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ অকার্যকর হয়ে গেলে বিকল্প হিসেবে গবেষণাগারে তৈরি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে তাঁরা ভাবছেন বহু আগে থেকেই। কারণ, এসব অঙ্গের অভাবে বহু রোগী প্রাণ হারায়।যুক্তরাজ্যের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্টেম সেল বিশেষজ্ঞ ম্যালকম অ্যালিসন বলেন, জাপানি বিজ্ঞানীদের সাফল্যের ফলে ত্বকের কোষ থেকে ছোট (মিনি) যকৃ ৎ তৈরির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এতে যকৃতের অকার্যকারিতায় মানুষের মৃত্যুর হার কমে আসতে পারে। রয়টার্স।
নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে বিজ্ঞানসম্মত নয়। চাচাতো, মামাতো, খালাতো ও ফুফাতো ভাই-বোনদের মধ্যে বিয়ের পরিণামে যে সন্তান হয়, তার মধ্যে জন্মগত ত্রুটি দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি। দ্য ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড শহরে বসবাসকারী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এক গবেষণা চালিয়ে দেখা যায়, নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের জিনগত অস্বাভাবিকতার হার সাধারণ শিশুদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। এসব অস্বাভাবিকতার মধ্যে নবজাতকের অতিরিক্ত আঙুল গজানোর মতো সমস্যা থেকে শুরু করে হূ ৎপিণ্ডে ছিদ্র বা মস্তিষ্কের গঠন-প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দিতে পারে। অবশ্য সার্বিক বিবেচনায় এ ধরনের অস্বাভাবিকতার হার খুবই কম। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এয়ামন শেরিডান। ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী সাড়ে ১৩ হাজার শিশুকে ওই গবেষণার আওতায় আনা হয়। ব্র্যাডফোর্ড শহরে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের বড় একটি অংশ বসবাস করে। সেখানে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৩৭ শতাংশই রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের প্রচলন রয়েছে। সারা বিশ্বে ১০০ কোটির বেশি মানুষ এ রকম সংস্কৃতি ধারণ করে। রয়টার্স ও এএফপি।
‘পথশিশুরা উঠবে হেসে, রঙিন আমের বাংলাদেশে’—এই ব্রত সামনে নিয়ে গত ২৯ জুন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর ও সিলেটে একযোগে পালিত হয়ে গেল ‘পথশিশুদের আম উৎসব’।২০১০ সালে ‘আমরা খাঁটি গরিব...’ নামের ফেসবুকের এই গ্রুপ আম উৎসব করে ঢাকার পথশিশুদের নিয়ে। ফলের রাজা আম খাওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত এসব ছিন্নমূল জামা-কাপড়হীন শিশুর হাতে আম দিয়ে তাদের চোখে যে উচ্ছ্বাস তারা দেখেছিল, তা থেকে প্রেরণা পেয়েছে ২০১১ সালে আবারও আম উৎসব করার। সেবার আম উৎসবের পরিধি বেড়েছিল, পাকা আমের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছিল ঢাকার বাতাস রাঙিয়ে চট্টগ্রামের বাতাসেও। ঢাকায় ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ নামের একটি পথশিশু সংগঠনের প্রায় ৬০০ শিশুকে আম খাওয়ানোর পাশাপাশি চট্টগ্রামের পথশিশুদের একটি স্কুলের ছয়টি শাখায়ও তারা আম বিতরণ করে আসে। একেকটি আম যেন বাচ্চাগুলোর কাছে হঠাৎ পাওয়া ঈদের চাঁদের মতো। ১০ মাস থেকে ১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের কেউই বাদ পড়েনি আম খাওয়ার আনন্দ থেকে।২০১২ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে উৎসবের মিছিলে যোগ দেয় চিরসুন্দরী খুলনা। খুলনার মাসুস নামের একটি সংগঠন ছয়টি স্কুলের প্রায় এক হাজার ১০০ পথশিশুকে আম দিয়ে যখন ফিরছে, তখন রূপসা ব্রিজের নিচে রাস্তায় দাঁড়ানো চার বছর বয়সী এক পথশিশু নিজের হাতের একটি আম তাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘নেন, আপনারাও একটা আম খান।’ তার সে চাহনি দেখে শিশুটিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছেন খুলনার সদস্যরা। সেই ভালোবাসার আবেগের কাছে চিরতরে বন্দী হয়ে গেলেন তাঁরা। তখনই তাকে কথা দিয়েছেন আবার আসবে তাঁরা, একসঙ্গে হাজার খুশির বিস্ফোরণে উজাড় করে দেবেন নিজেদের।এবার আমের রসে রাঙা হয়েছে দেশের পাঁচটি বিভাগের বাচ্চাদের হাসিমুখ। উৎসবের মিছিল যেন এদিন আছড়ে পড়েছিল দেশের এ মাথা থেকে সে মাথায়, সিলেট থেকে খুলনায়, চট্টগ্রাম থেকে রংপুরে। বাচ্চাদের খুশির আওয়াজে থমকে গিয়েছিল পুরো রাস্তা, তাদের হাসি সংক্রামিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল আশপাশের আর সব মানুষের মধ্যে।সবার মনে একটাই প্রশ্ন, ফেসবুকের মাধ্যমে তারা আম দিল কীভাবে! উত্তর খুবই সোজা, ‘আমরা খাঁটি গরিব...’ গ্রুপের বর্তমান সদস্যসংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। যখন ঘোষণা দেওয়া হলো পথশিশুদের আম খাওয়ানো হবে, তখনই এগিয়ে এলেন অনেকে; কেউ নিজেদের রিকশাভাড়া, কেউ এক দিনের মুঠোফোনের বিলের টাকা আবার কেউ বা তাঁর বিকেলের ডালপুরি খাওয়ার টাকা বাঁচিয়ে জমা করে দেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। তাঁদের সাহায্যের আবেদন পৌঁছে যায় সবার কাছে। তিল তিল করে দেশের সব জায়গা থেকে অর্থ সাহায্য আসতে থাকে। আমরা খাঁটি গরিব... গ্রুপ এবারে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর ও সিলেট মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার ৫০০ পথশিশুকে আম খাইয়েছে। এতে মোট লেগেছে তিন হাজার ৮৯৭ কেজি আম। উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকায় দুটি করে আম পেয়েছে প্রায় দুই হাজার ২৬০টি শিশু। চট্টগ্রামে শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার ১৫০টির মতো, খুলনায় এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭০০। এ ছাড়া রংপুরের ৭৫০ ও সিলেটের ৫৫০টি পথশিশু এবার হেসেছে আমের রঙে। প্রতিবছরের জুন মাসের শেষ শনিবারে আয়োজন করা হচ্ছে এই আম উৎসবের। আমাদের আশা, একদিন গোটা দেশে একযোগে হবে এই উৎসব, সেদিনটা হবে ‘আম দিবস’।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ১৪ দল-সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খান ও ১৮ দল-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নান।আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল-সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খান গতকাল প্রচারণা চালিয়েছেন টঙ্গী এলাকায়। সকালে আজমত উল্লা খান টঙ্গী এলাকার একটি পোশাক কারখানা ও সেনাকল্যাণ ভবনে প্রচারণা চালান। সন্ধ্যায় টঙ্গী বাজার এলাকায় প্রচারণা চালান তিনি। এ সময় আজমত উল্লা বলেন, ‘আমি ১৮ বছর টঙ্গীর মেয়র ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গাজীপুরকে গড়ে তুলতে চাই।’ নির্বাচনের ফল মেনে নেবেন কি না—এই প্রশ্নের জবাবে আজমত উল্লা বলেন, ‘জনগণের রায় আমি সব সময়ই মেনে নিয়েছি। এবারও মেনে নেব।’১৮ দল-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নান গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গাজীপুর সদর উপজেলার সালনা এলাকা থেকে প্রচারণা শুরু করেন। সেখানে তিনি কয়েকটি শিল্প কারখানার শ্রমিকদের কাছে ভোট চান। এরপর এম এ মান্নান গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ, জয়দেবপুর বাজার, চান্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী, আমবাগ ও পূবাইল এলাকায় প্রচারণা চালান। বিকেলে তিনি সালনা এলাকায় একটি পথসভায় যোগ দেন।নির্বাচনী প্রচারণার সময় এম এ মান্নান বলেন, ‘এই সরকারের পক্ষে মানুষ নেই। আমি বিশ্বাস করি, ৭৫ শতাংশ ভোটই আমার দিকে পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত হলে আমি অবশ্যই ফল মেনে নেব।’
ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) প্রিন্টারে তৈরি কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছে একটি হাঁস। যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি এই বিশেষ পা সংযোজন করা হয়। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যার্লিংটনে অবস্থিত ‘ফিদারড অ্যাঞ্জেলস স্যাংকচুয়ারি’ অভয়ারণ্যে গত নভেম্বরে জন্মের সময় হাঁসটির পা ছিল উল্টো দিকে ঘোরানো। ওই অভয়ারণ্যের স্বত্বাধিকারী মাইক গ্যারির উদ্যোগে তৈরি কৃত্রিম পা সংযোজনের পর হাঁসটি প্রথমে ইতস্তত করলেও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা শুরু করে এবং শেষমেশ পানিতে নেমে সাঁতার কাটে। কম্পিউটারের সাহায্যে হাঁসটির কৃত্রিম পায়ের ছাঁচ ও পরে ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করা হয়। সিবিএস নিউজ।
হাত বেশিক্ষণ পানিতে রাখলে কুঁচকে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এর পেছনে রয়েছে এক ধরনের জিনের ভূমিকা। বিজ্ঞানীরা সেই বিরল জিনকেই শনাক্ত করেছেন। এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি দ্য আমেরিকান জার্নাল অব হিউম্যান জেনেটিকস  সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের গবেষকেরা জানান, দেহের পানিশূন্যতা নিয়ন্ত্রণ করে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিকের জিনগত পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের রোগ হয়। প্রতি ৪০ হাজার মানুষের মধ্যে একজনের এই রোগ রয়েছে। এ রোগের কারণে হাতের তালু ও পায়ের তলার ত্বক পুরু হয়ে যায়। ত্বক কীভাবে নিজেকে আর্দ্র রাখে—এ বিষষটি বুঝতে সাহায্য করবে এই গবেষণা। বিবিসি।
সারা বিশ্বেই এখন হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোনের জয়জয়কার। স্মার্টফোনে ব্যবহারের জন্য বিশ্বসেরা সব প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান নিজেদের অ্যাপস স্টোর বানিয়েছে। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে লাখো অ্যাপস। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও বাড়ছে স্মার্টফোনের ব্যবহার। বাংলাদেশিদের উপযোগী নানা ধরনের অ্যাপসও বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এবার বাংলাদেশেই বড় আকারে স্মার্টফোনের জন্য অ্যাপস বানানোর সুযোগ চালু হলো। আর এমন আয়োজন এথিকস অ্যাডভান্সড টেকনোলজি লিমিটেড (ইএটিএল) ও প্রথম আলো আয়োজিত অ্যাপস প্রতিযোগিতা, যাতে যুক্ত হতে পারেন যে কেউ। ‘নতুন সৃষ্টির সন্ধানে’ স্লোগান নিয়ে ‘ইএটিএল-প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতা ২০১৪’ শীর্ষক এ আয়োজনের উদ্বোধন হয় গত ২৯ জুন। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় এবার বেড়েছে নানা কলেবর। পুরস্কারের অর্থের পরিমাণও বেড়েছে। এবারে শীর্ষ তিনটি পুরস্কারের পরিমাণ মোট ১৭ লাখ টাকা।প্রথম পুরস্কার ১০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার পাঁচ লাখ আর তৃতীয় পুরস্কার দুই লাখ টাকা। এ আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, মিডিয়া সহযোগী চ্যানেল আই এবং রেডিও সহযোগী এবিসি রেডিও।কেন এ আয়োজনএকটা সময় গেমস ও বিনোদনের জন্য বেশি অ্যাপস ব্যবহূত হলেও বর্তমানে মুঠোফোনে নানা ধরনের অ্যাপস পাওয়া যাচ্ছে। তবে আমাদের দেশের জন্য বিদেশিদের তৈরি অ্যাপস দিয়ে সার্বিক পরিবর্তন সম্ভব হবে না।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমনটাই বলেছিলেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য জামিলুর রেজা চৌধুরী। বাংলাদেশের জন্য বিশেষ করে বাংলায় নানা ধরনের অ্যাপস ব্যবহারের আগ্রহ বাড়ছে আমাদের দেশে। কীভাবে মুঠোফোনে বাংলা লেখা যায়, কীভাবে বাংলায় মুঠোফোন থেকেই ফেসবুক ও টুইটারে হালনাগাদ জানানো যায়—এসব নিয়ে রয়েছে বিস্তর আগ্রহ। এ ছাড়া বাংলাদেশিদের তৈরি এমন একটি অ্যাপস স্টোর হবে, যেখানে অনেকেই নিজের পছন্দসই অ্যাপস পাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশিদের তৈরি অ্যাপস ব্যবহূত হবে, এমন চিন্তা থেকেই এ উদ্যোগের শুরু, বললেন ইএটিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান। এ ছাড়া মোবাইল অ্যাপসের উন্নয়ন ও তা এগিয়ে নিতে সেরা প্রতিভার অন্বেষণ এবং তাঁদের স্বীকৃতি প্রদানও এ আয়োজনের একটি অংশ বলেও জানান তিনি। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি একটি অ্যাপস স্টোরও চালু করেছে।অংশগ্রহণ ও পুরস্কারবাংলাদেশের যে কেউ এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। একক বা দলগতভাবে অংশ নেওয়া যাবে। প্রথম তিনটি শীর্ষস্থান ছাড়া সেরা দশে উত্তীর্ণ প্রতিযোগীরা পাবেন স্মার্টফোন ইএটিএলে চাকরির সুযোগ।অংশ নিন আজইস্মার্টফোনের জন্য নিজের পছন্দের সেরা অ্যাপসটি তৈরির জন্য এটি একটি দারুণ আয়োজন। নিবন্ধন করে আজই যোগ দিতে পারেন এ আয়োজনে। যুক্ত হতে পারেন অ্যাপস তৈরি প্রতিযোগিতার এ মহাযজ্ঞে। যেভাবে যোগ দেওয়া যাবেনয় মাস ধরে চলবে অ্যাপস প্রতিযোগিতা শীর্ষক এ আয়োজন। বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে ১০টি অ্যাপ যাবে চূড়ান্ত পর্বে। ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতায় আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন কার্যক্রম। চলবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ আয়োজনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শারমিন মাহজাবীন জানান, নিবন্ধন ও বিস্তারিত জানা যাবে www.eatlapps.com ঠিকানার ওয়েবসাইটে। নিবন্ধনের সব তথ্য ইংরেজিতে পাঠাতে হবে। আবেদনে প্রকল্পের নাম, দলের নাম, নির্দিষ্ট একজনের যোগাযোগের নম্বর, চিঠি পাঠানোর ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা ও দেশের নাম যোগ করে দিতে হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের বিস্তারিত, ধারণাপত্র, কীভাবে এটি সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে পারে, সে বিষয়ে এক হাজার শব্দের মধ্যে একটি লেখাও জমা দিতে হবে। সফলভাবে নিবন্ধন কার্যক্রমে এসব জমা দেওয়ার পর ইএটিএলের পক্ষ থেকে প্রাপ্তিস্বীকার-সংক্রান্ত ই-মেইল পাঠানো হবে। চলতি আয়োজনের সরাসরি সব খবর পাওয়া যাবে www.eatlapps.com/ talent_search ঠিকানায়। পুরো আয়োজন সম্পর্কে শারমিন জানান, নিবন্ধন শেষে অ্যাপ উন্নয়নের অংশ হিসেবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে অংশগ্রহণকারীদের ধারণাপত্র পরীক্ষা কার্যক্রম। ধারণাপত্র নিয়ে আলোচনার জন্য দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ আয়োজনও করা হবে। এসব পর্বে অ্যাপস উন্নয়নে সহায়তা করবেন বিশেষজ্ঞরা। আইকন-সেরা ১০০ জনের উপস্থাপনা চলবে আগামী ৪ ও ৫ অক্টোবর। এর মধ্যে আগামী ৬ ডিসেম্বর সেরা ৩০ জনের পরীক্ষামূলক পর্ব হবে। শেষে নির্বাচিত সেরা ১৫ জনের পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ১৭ জানুয়ারি। এ দুটি পর্বে হবে তিনটি স্টেজ গ্রুমিং পর্ব। পরবর্তী সময়ে সেরা ১০ পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ৮ মার্চ। ২৯ মার্চ হবে চূড়ান্ত পর্ব। এ আয়োজনের নানা খবর ফেসবুকেও (www.facebook.com/EatlApps) পাওয়া যাবে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। শেয়ারবাজার ধসে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফের জন্য পুনঃ অর্থায়নে ৯০০ কোটি টাকা তহবিলের অর্থ ছাড় হতে যাচ্ছে, এমন খবরে ইতিবাচক প্রভাব ছিল বাজারে।দিন শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২৭০ পয়েন্টে। সাধারণ সূচক ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৪২ পয়েন্টে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ১২০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২৩৭ পয়েন্টে। সূচকের পাশাপাশি দুই স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনও বেড়েছে।এদিকে পুনঃ অর্থায়নের অর্থের প্রথম কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) অনুকূলে তহবিলের প্রথম কিস্তির ৩০০ কোটি টাকা ছাড় করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি আদান-প্রদান হয়েছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আমি এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখন তহবিলের অর্থ বুঝে নেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফের জন্য এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে, তাই অর্থ বুঝে নেওয়ার আগে আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করতে চাই। আগামী সপ্তাহে এই নীতিমালা তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নীতিমালা তৈরির পরই ওই অর্থ আমরা বুঝে নেব।’ফায়েকুজ্জামান আরও বলেন, এই প্রথম শেয়ারবাজারের জন্য সরকার তার নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ জোগান দিচ্ছে। যেহেতু জনগণের অর্থ থেকে তহবিলটি সংস্থান করা হচ্ছে, তাই এটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এরই মধ্যে তহবিলের বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করেছে। এখন এটি বুঝে নেওয়া আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড়ের খবরে লেনদেনের শুরু থেকেই সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। প্রথম ৩০ মিনিটে সূচক প্রায় ৪০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর সূচক বৃদ্ধির গতি কিছুটা শ্লথ হলেও দিন শেষে তা ঊর্ধ্বমুখী ছিল।ডিএসইতে এদিন ২৯২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ২১৭টিরই দাম বেড়েছে, কমেছে ৬২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৩টির দাম। দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৯১৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১০৮ কোটি টাকা বেশি। গত ১৯ জুনের পর এটিই ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন।চট্টগ্রামের বাজারে এদিন ২১৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৫০টিরই দাম বেড়েছে, কমেছে ৫২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৬টির দাম। দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১০ কোটি টাকা বেশি।
প্রথম দিকে আকার ছিল প্রমাণ সাইজের থান ইটের কাছাকাছি। ছোট হতে হতে বুড়ো আঙুলের সমান। ফ্যাশন যে চক্রাকারে ঘোরে, সেটা প্রমাণ করতেই যেন মুঠোফোনের আকার আবার বড় হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে অবশ্য একটা চক্র পূরণ করে ফেলেছে মুঠোফোন। চার দশক পূর্ণ হয়েছে এই প্রযুক্তির। আসুন, এই ফাঁকে দেখে নিই মুঠোফোনের বিবর্তন। সূত্র:গার্ডিয়ান ১৯৭৩ আজকের মুঠোফোনের আদিপিতার নাম ডায়নাট্যাক। ‘ডায়নামিক অ্যাডাপটিভ টোটাল এরিয়া কভারেজ’ সংক্ষেপ করে এই নাম। ১৯৭৩ সালে ফোনটি বানিয়েছিল মটোরোলা। দেখতে জুতার মতো ছিল বলে অনেকে এটিকে ‘শু ফোন’ বলত। মটোরোলার তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন কুপার এই সেট ব্যবহার করে প্রথম ফোনকলটি করেন।১৯৮৩ ১০ বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বাজারে আসে প্রথম বাণিজ্যিক মুঠোফোন মটোরোলা ডায়নাট্যাক ৮০০০এক্স। প্রায় ৮০০ গ্রাম ওজনের ফোনটি দিয়ে কথা বলা যেত ৩০ মিনিট। স্ট্যান্ডবাই সময় আট ঘণ্টা। ৩০টি নম্বর মনে রাখতে পারত ফোনটি। এখনকার অর্থমূল্য অনুযায়ী ফোনটির দাম নয় হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার।১৯৯৩ স্মার্টফোন শব্দটা তখনো ভবিষ্যতের গর্ভে, এই সময় আইবিএম সাইমন নামের এমন একটা ফোন বাজারে ছাড়া হয়েছিল, যেটি একাধারে ফোন, পেজার, ফ্যাক্স ও পিডিএর কাজ করত। সম্ভবত বিশ্বের প্রথম এই স্মার্টফোনে একটি বর্ষপঞ্জি, অ্যাড্রেস বুক, ক্যালকুলেটরও ছিল। তখনকার বাজারমূল্য ৮৯৯ ডলারে বিক্রি হয়েছিল ফোনটি।১৯৯৬ প্রথম ফ্লিপ বা ঢাকনাওয়ালা ফোন বাজারে ছাড়ে মটোরোলা। স্টারট্যাক নামের ফোনটি ছিল সে সময়য়ের সবচেয়ে ছোট ফোন। ছয় কোটি স্টারট্যাক বিক্রি হয়েছিল সে সময়। ৮৮ গ্রাম ওজনের এই ফোনটি মুঠোবার্তাও আদান-প্রদান করতে পারত। তখনকার বাজারমূল্য ছিল এক হাজার ডলার।১৯৯৯নকিয়ার রাজত্ব জেঁকে বসতে শুরু করল এই সময়টায়। বাজারে এল নকিয়া ৭১১০, যেটি সেই সময়ের প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ। এই ফোনে প্রথম যুক্ত হলো ওয়্যারলেস অ্যাপ্লিকেশন প্রটোকল বা ওয়াপ। এর কারণে ফোনের মাধ্যমে ওয়েবসাইট দেখতে পারল ব্যবহারকারীরা। একই সময়ে স্যামসাং নিয়ে এল এসপিএইচ এম১০০। টাইমের সর্বকালের সেরা ১০০ গেজেটের তালিকায় ঠাঁই করে নেওয়া এই ফোনে প্রথম যুক্ত হলো এমপিথ্রি-সুবিধা।২০০২ নকিয়া ৭৬৫০ প্রথম নকিয়া স্মার্টফোন, যাতে যুক্ত হলো ক্যামেরা। এই ফোনেই প্রতিষ্ঠানটি প্রথম সিমবিয়ান অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করল। ফোনটির পর্দাও ছিল রঙিন। ছিল জয়স্টিক। কাছাকাছি সময়ে সনি এরিকসন বাজারে ছাড়ে পি৮০০। টাচস্ক্রিন-সুবিধা ছিল এতে। ছিল ব্লুটুথ ও ভিজিএ ক্যামেরাও।২০০৩ এ বছর জুনে রিসার্চ ইন মোশন বাজারে ছাড়ে ব্ল্যাকবেরি কোয়ার্ক ৬২১০, সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় একটি স্মার্টফোন। এটাই ব্ল্যাকবেরির প্রথম পরিপূর্ণ মুঠোফোন। এর আগের ব্ল্যাকবেরি ৫৮১০-এর ফোনের সুবিধা থাকলেও তাতে হেডসেট ব্যবহার করতে হতো।২০০৭ কয়েক মাসের তুমুল আগ্রহ আর উন্মাদনা শেষে বাজারে এল আইফোন। এসেই ঘটিয়ে দিল বিপ্লব। ২৯ জুন বাজারে এসেছিল প্রথম আইফোনটি, এরপর বাকিটুকু সত্যিই ইতিহাস। প্রথম আইফোনটি কেনার জন্য অ্যাপল স্টোরের সামনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছিল মানুষের মিছিল। পুরোপুরি টাচস্ক্রিন-সুবিধা ও নানা অ্যাপের জন্য ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা আইফোনের ৪ গিগাবাইট মডেলের দাম ছিল ৪৯৯ ডলার। পরে আইফোন তাদের নতুন মডেলে রাজত্ব কেবলই বাড়িয়েছে।২০১০ অ্যাপলের বাজারে হুমকি হিসেবে আবির্ভাব স্যামসাংয়ের। এ বছর মার্চে বাজারে আসা গ্যালাক্সি এস সিরিজের ফোন হু হু করে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে।গুগলের অ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চালিত এই সেটে ছিল বড় টাচস্ক্রিন পর্দা, ওয়াইফাই, ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা এবং বাজারের অন্য যেকোনো স্মার্টফোনের চেয়ে দ্রুতগতির গ্রাফিকস প্রসেসর। ২০১১ সালের জানুয়ারির মধ্যে বিশ্বজুড়ে এক কোটি গ্যালাক্সি এস বিক্রি হয়।২০১৩ মার্চে নিউইয়র্কে স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের নতুন ফোন এস৪ অবমুক্ত করে। এপ্রিলে একই সঙ্গে ১৫৫টি দেশে বিক্রি শুরু হয়। দুই মাসের মধ্যেই এক কোটি গ্যালাক্সি এস৪ বিক্রি করেছে স্যামসাং। যেটি তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হারের রেকর্ড। এ বছর মার্চে নতুন ফোন দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ব্ল্যাকবেরি। ব্ল্যাকবেরি ১০ ফোনটি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ভীষণ আশাবাদীও।
বাংলাদেশে সরাসরি পোশাক বিক্রি শুরু করতে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তৈরি পোশাক বাজার-জাতকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিক্লো। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে ঢাকায় দুটি বিক্রয়কেন্দ্র (আউটলেট) চালু করছে। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড ও রামপুরা বনশ্রীতে আজ শুক্রবার সকালে এই দুটি বিক্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে।নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস প্রবর্তিত ‘সামাজিক ব্যবসা’ ধারণা গ্রহণ করে এর আওতায় বাংলাদেশে এভাবে সরাসরি পোশাক বাজারজাত শুরু করছে জাপানি প্রতিষ্ঠান ইউনিক্লো। ‘গ্রামীণ ইউনিক্লো লিমিটেড’ নামে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এর ৯৯ শতাংশ মালিকানা রয়েছে ইউনিক্লোর হাতে। আর গ্রামীণ হেলথ ট্রাস্টের হাতে রয়েছে এক শতাংশ শেয়ার।গতকাল বৃহস্পতিবার ২৩৪/২ নিউ এলিফ্যান্ট রোডে ইউনিক্লোর নতুন বিক্রয়কেন্দ্রে বসে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ইউকিহিরো নিত্তা প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৪ সাল থেকে ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ইউনিক্লো। এত দিন ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রামের দরিদ্র নারী সদস্যদের মাধ্যমে সুলভমূল্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে পণ্য বাজারজাত করা হতো। এখন সেটির পরিসর বড় করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে প্রতিটি শহরে বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।ইউকিহিরো নিত্তা জানান, সামাজিক ব্যবসার আওতায় প্রাথমিকভাবে ইউনিক্লো বাংলাদেশে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা বা ৪.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। পর্যায়ক্রমে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে বছর শেষে যা মুনাফা হবে তা ‘সামাজিক ব্যবসার’ মূল ধারণা অনুযায়ী পুনর্বিনিয়োগ করা হবে। এতে ক্রমেই কর্মসংস্থান বাড়বে।ইউনূস প্রবর্তিত সামাজিক ব্যবসার মূল ধারণাই হলো—এই ধরনের ব্যবসা থেকে উদ্যোক্তারা কখনো মুনাফা গ্রহণ করতে পারবেন না। মুনাফার অর্থ পুনর্বিনিয়োগ করতে হবে।এদিকে নতুন বিক্রয়কেন্দ্র চালু উপলক্ষে প্রথম ১০০ জন ক্রেতাকে দেওয়া হবে একটি করে টি-শার্ট। ইউনিক্লোর কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে পুরুষ ও মেয়েদের মোট ৪২ ধরনের পোশাক বিক্রি হবে। এসব পণ্যের মধ্যে টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট, মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের পরিধেয় পোশাক। এসব পণ্যের দাম সর্বনিম্ন আড়াই ডলার বা ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকার মধ্যে।ইউকিহিরো নিত্তা জানান, বিশ্বব্যাপী ইউনিক্লোর পণ্যের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উন্নত মান, বৈচিত্রপূর্ণ নকশা আর সুলভ মূল্য। বিশ্বের ১৪টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১২০০টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।প্রসঙ্গত, ইউনিক্লো বিশ্বের অন্যতম পোশাক বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট রিটেইলিংয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক রাজস্বের পরিমাণ প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা। ১৯৮৪ সালে জাপানের হিরোশিমা অঞ্চলের একটি গ্রামে একটি ছোট্ট দোকান থেকে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। এখন সেটি বিশ্বের সেরা ১০ পোশাক বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের একটি।
মিরপুর ও খাদিম সিরামিকসের ঢাকার মিরপুরের করপোরেট ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি ফ্ল্যাগশিপ শোরুম উদ্বোধন করা হয়েছে।শোরুমের উদ্বোধন করেন মিরপুর সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আরিফ তাবানী ও খাদিম সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ আরিফ তাবানী। এ সময় কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক ইসমাইল ফারুক চৌধুরী, বিক্রয় ও বিপণন ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি।
অধ্যায়-৭প্রিয় শিক্ষার্থীরা, তোমাদের জন্য প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যায়-৭ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ধারাবাহিকভাবে দেওয়া হলো। সঠিক উত্তরটি খাতায় লেখো।১। হাম, বসন্ত ইত্যাদি রোগ কিসের মাধ্যমে ছড়ায়?ক. পানি খ. বায়ু গ. মশা ঘ. খাদ্যউত্তর: খ. বায়ু ২। নিচের কোনটি সোয়াইন ফ্লুর লক্ষণ? ক. নাক দিয়ে পানি পড়বে খ. ক্ষুধা বৃদ্ধি পাবেগ. শরীরে ঘাম হবে ঘ. চুলকানি হবে উত্তর: ক. নাক দিয়ে পানি পড়বে। ৩। বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনের সময় ছেলেমেয়েদের মধ্যে নিচের কোনটি ঘটে? ক. সবার সঙ্গে বন্ধুভাবাপন্ন হয় খ. লেখাপড়ায় অধিক মনোযোগী হয়গ. প্রতিদিন স্কুলে যেতে পছন্দ করে ঘ. শারীরিক, মানসিক ও আচরণের পরিবর্তন হয় উত্তর: ঘ. শারীরিক, মানসিক ও আচরণের পরিবর্তন হয়।৪। নিচের কোনটির মাধ্যমে রোগ ছড়ায়?ক. গ্যাস খ. কীটপতঙ্গ গ. আলো ঘ. মাটি। উত্তর: খ. কীটপতঙ্গ৫। কোনটি রোগীর কফ, থুতু ও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়?ক. যক্ষ্মা খ. ডেঙ্গু গ. জন্ডিস ঘ. বসন্তউত্তর: ক. যক্ষ্মা ৬। কোন রোগ প্রতিরোধে বিসিজি টিকা দেওয়া হয়?ক. বসন্ত খ. জন্ডিস গ. ডেঙ্গু ঘ. যক্ষ্মাউত্তর: ঘ. যক্ষ্মা৭। সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা পেতে কোনটি করতে হবে? ক. নতুন জামাকাপড় পরতে হবে খ. উঁচু বিছানায় ঘুমাতে হবেগ. আক্রান্ত রোগীর কাছে থাকতে হবে ঘ. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে উত্তর: ঘ. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ৮। নিচের কোনটির জন্য সোয়াইন ফ্লু হয়?ক. ব্যাকটেরিয়া খ. ছত্রাক গ. ভাইরাস ঘ. কিউলেক্স মশাউত্তর: গ. ভাইরাস৯। নিচের কোনটি ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ?ক. শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফুলে ওঠা খ. ডায়রিয়া হওয়াগ. গলা খুসখুস করা ঘ. নাক দিয়ে পানি পড়া উত্তর: ক. শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফুলে ওঠা। ১০। নিচের কোনটি পানিবাহিত রোগ?ক. ইনফ্লুয়েঞ্জা খ. যক্ষ্মা গ. কলেরা ঘ. বসন্তউত্তর: গ. কলেরা ১১। নিচের কোনটি ছোঁয়াচে রোগ? ক. বাতজ্বর খ. পাঁচড়া গ. হাঁপানি ঘ. রাতকানা উত্তর: খ. পাঁচড়া ১২। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে স্যালাইন খেতে দেওয়া হয় কেন? ক. দেহের বৃদ্ধির জন্য খ. বমি বন্ধ হওয়ার জন্যগ. পায়খানা বন্ধ হওয়ার জন্য ঘ. দেহে পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণের জন্যউত্তর: ঘ. দেহে পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণের জন্য ১৩। কোনটি যক্ষ্মা রোগের জন্য দায়ী?ক. ভাইরাস খ. ব্যাকটেরিয়া গ. ছত্রাক ঘ. কীটপতঙ্গ উত্তর: খ. ব্যাকটেরিয়া ১৪। কোন জীবাণুর আক্রমণে মানুষের বাতজ্বর হয়? ক. এইচআইভি খ. ই কোলাই গ. প্লাজ সোডিয়াম ঘ. স্ট্রেপটোকক্কাস উত্তর: ঘ. স্ট্রেপটোকক্কাস১৫। ত্বক অপরিষ্কার রাখলে কী রোগ হতে পারে? ক. খোসপাঁচড়া খ. কুষ্ঠ গ. কাশি ঘ. ডায়রিয়াউত্তর: ক. খোসপাঁচড়া ১৬। কিউলেক্স মশার কামড়ে কোন রোগ হয়? ক. ম্যালেরিয়া খ. যক্ষ্মা গ. গোঁদ। ঘ. সোয়াইন ফ্লু উত্তর: গ. গোঁদ১৭। সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর কত ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে থাকে? ক. ১০১° খ. ১০২° গ. ১০৩° ঘ. ১০৪°উত্তর: ঘ. ১০৪°।১৮। এডিস মশা সাধারণত কখন কামড়ায়?ক. সকাল ও সন্ধ্যার আগে খ. সকাল ও সন্ধ্যার পর গ. দুপুর ও বিকেলে ঘ. গভীর রাত ও দুপুরে। উত্তর: ক. সকাল ও সন্ধ্যার আগে। # পরবর্তী অংশ ছাপা হবে আগামীকালপ্রধান শিক্ষক, ফকিরেরপুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকা