content
stringlengths
1
63.8k
নাগরিক ঐক্যের এক আলোচনা সভায় বক্তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশে কোনো আন্দোলন গড়ে না ওঠা এবং কোনো কর্মসূচিও দিতে না পারায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সমালেচনা করেছেন। তাঁরা সংসদে কথার লড়াই না করে রাজপথে আন্দোলন করতে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টে নাগরিক ঐক্যের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘লড়াই যদি করতে হয়, লড়াইয়ের মতো লড়াই করতে হবে। আমি মনে করি আমরা ঠিকমতো লড়াই করছিলাম যে রকম করে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিলাম। এখনো একসঙ্গে চলতে চাই। পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখেই চলতে চাই। কিন্তু মানুষ প্রশ্ন করছে, ৩০ তারিখের পর ৬ মাস পার হয়ে গেছে, একটাও কর্মসূচি দিতে পারলেন না কেন?’ তিনি বলেন, এই ৬ মাস কত মাসে ঠেকবে কে জানে?৩০ ডিসেম্বর ‘ভোট ডাকাতির’ নির্বাচন হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মান্না। সে নির্বাচনের পর হরতালের মতো কোনো কর্মসূচি না হওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কেন ৩০ তারিখ বিকেল বেলা চার/পাঁচ দিনের জন্য হরতাল দিতে পারলেন না?’ মান্না বলেন, হরতাল হলে নির্যাতন, হামলা বেড়ে যাওয়ার কথা বলেন অনেকে কিন্তু এর উল্টোটাও ঘটতে পারত। সারা বিশ্বের মানুষ জানত অন্যায়ের পথে এ দেশের মানুষ পথে নেমেছিল।সংসদে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাঁরা গেছেন তাঁদের কথা বলতে দেওয়া হয় না উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘সংসদে দাঁড়িয়ে কথার লড়াইয়ের আগে রাজপথের লড়াই নিশ্চিত করেন। সংসদের লড়াই কোনো লড়াই নয়। রাজপথে লড়াই করার জন্য নিজেদের ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠিত হতে হবে।’নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ঐক্য গড়তে তাঁর দল শুরু থেকে কাজ করছে। এখনো তাঁরা ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের চিন্তার মধ্যে ভুল ছিল বলব না। কিন্তু আমরা যাদের সঙ্গে সম্পর্ক করে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলাম, তারা মনে মনে আগেই তাদের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। নতুন করে ভাবতে হবে।’২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটকে মান্না গরিব মারার বাজেট বলে সমালোচনা করেন। এ ছাড়া বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনার নিন্দা জানান মান্না। তিনি বলেন, দেশে কোনো বিচার নেই, আইনের শাসন নেই, নির্বাচন নেই। দেশে কেবল ডাকাতি আছে।সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে সবাই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দেশে যে নির্বাচন হয়েছে, তারপর তাঁর ধারণা ছিল ১ জানুয়ারি থেকে মানুষ রাস্তায় নেমে পড়বে। কিন্তু কেউ রাস্তায় নামেনি। ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব কেউই নামেননি। তিনি নিজেও নামেননি বলে জানান।সুজন সভাপতি বলেন, পরিবর্তন চাইলে রাস্তায় নামতে হবে। গণ–আন্দোলন ছাড়া এর পরিবর্তন হবে না। গণ–আন্দোলন করতে হলে যে নেতৃত্ব দরকার, সেটাকে সংগঠিত শক্তিশালী উপযুক্ত নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম বলেন, এবারের সংসদ নির্বাচনের পরে জনগণের কাছে তাঁরা কোনো সঠিক বার্তা দিতে পারেননি। তিনি ছাড়াও নাগরিক ঐক্যের জেলা পর্যায়ের দুজন নেতা তাঁদের বক্তৃতায়ও ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকার সমালোচনা করেন।শীর্ষ ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের তালিকা এবং সাংসদদের সম্পদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ। বিরোধীদের সংসদে কথা বলতে গেলে আক্রমণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভায় আরও অংশ নেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির নেতা আকবর খান, নাগরিক ঐক্যের জাহেদুর রহমান প্রমুখ।
রোববার এজবাস্টনে ভারতের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে আউট করার প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছেন মঈন আলী।বিরাট কোহলির উইকেট নিয়ে মধুর সমস্যায় পড়তে পারে ইংল্যান্ড! বিশ্বকাপ শুরুর আগেই কোহলির উইকেট চাই-ই চাই বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন পেসার জফরা আর্চার। বিশ্ব ক্রিকেটের উঠতি তারকা হয়তো সে স্বপ্ন নিয়েই প্রহর গুনছেন। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এসে স্পিনার মঈন আলী ঘোষণা দিলেন, কোহলিকে আউট করার জন্য তিনিও আছেন। সমস্যাটা মধুর, যেই উইকেট পান না কেন, আখেরি লাভটা তো ইংল্যান্ড দলেরই।শুধু বিশ্বকাপের আগেই নয়, বিশ্বকাপের শুরুতেও ইংল্যান্ডকে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ধরে নিয়েছিল অনেকে। কিন্তু স্বাগতিকদের এখন সেমিফাইনাল খেলা নিয়েই শঙ্কা। শেষ চারে খেলতে পরবর্তী দুই ম্যাচে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেতে হবে। একটিতে জিতলেও চলবে, তবে সে ক্ষেত্রে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য ম্যাচের দিকে। রোববার এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের প্রথম পরীক্ষা ভারতের বিপক্ষে। আর প্রতিপক্ষ যদি হয় ভারত, স্বাভাবিকভাবে বোলারদের জন্য আরাধ্য বিষয় কোহলির উইকেট। সে নিয়মিত বা পার্ট টাইমার বোলার, যিনিই হোন না কেন!সেই অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে কোহলি ও মঈনের চেনা–জানা। এর পরে দুজন একই সঙ্গে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে খেলার সুবাদে বন্ধু হয়ে উঠেছেন। স্বাভাবিকভাবে কোহলির শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা সম্পর্কে ভালোই জানা আছে মঈনের। আর বন্ধুদের বিপক্ষে বরাবরই ভালো খেলেন বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন মঈন। এ প্রসঙ্গে ছোটবেলায় পার্কে খেলার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘বিরাট জানে ভারতের জন্য রান করার জন্য সে আছে। তেমনি আমিও তাঁকে আউট করার জন্য এখানে আছি। এর অর্থ সবাই তাঁর উইকেটটা পেতে চাই এবং বন্ধু হিসেবে আমি সে চেষ্টা করব। পার্কে বন্ধু ও কাজিনদের সঙ্গে খেলে বড় হয়েছি আমি এবং এটি আমার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট ছিল। এখানে সেই সাফল্যের প্রতি সম্মান রাখতে হবে।’ একটি ব্লগে লিখেছেন ইংলিশ এই অলরাউন্ডার।২০১৯ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচে ৫ উইকেট পেয়েছেন মঈন। এর মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৫০ রানের খরচায় পেয়েছিলেন ৩ উইকেট। সুতরাং মঈন আলীর হুংকারটা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ কোহলির আছে বলে মনে হয় না!
আফগানিস্তান ম্যাচের পর গতকালও মন্থর গতিতে এগোচ্ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। শেষ পর্যন্ত তাঁর ৬১ বলে ৫৬ রানের ইনিংসের ওপর ভর করেই ১২৫ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে ভারত। যশপ্রীত বুমরা তাই বলছেন, যেভাবে খেলা দরকার ছিল, সেভাবেই খেলেছেন ধোনি।সমালোচনা যেন মহেন্দ্র সিং ধোনির পিছু ছাড়ছেই না! আফগানিস্তানের বিপক্ষে মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য সমর্থকদের রোষানলে পড়তে হয়েছিল, সমালোচনা করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকারের মতো কিংবদন্তিও। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের ধরনের কারণেও সমর্থকদের কথা শুনতে হচ্ছে ধোনিকে। তবে সাবেক অধিনায়কের পাশেই দাঁড়িয়েছেন যশপ্রীত বুমরা। বলেছেন, যেভাবে উচিত ছিল, সেভাবেই ব্যাটিং করেছেন ধোনি।টুর্নামেন্টজুড়েই ধোনির স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে বেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫২ বলে করেছিলেন মাত্র ২৮ রান। যখন রান বাড়ানোর উপযুক্ত সময় ছিল, তখনই রশিদ খানকে তেড়েফুঁড়ে মারতে এসে আউট হয়েছিলেন। গতকালের ম্যাচেও শুরুর দিকে ধীরেই এগোচ্ছিলেন ধোনি। ৪৫ ওভার শেষেও তাঁর রান ছিল ৪৫ বলে মাত্র ২৬। কিন্তু এবার আর আফগানিস্তান ম্যাচের ভুল করেননি ধোনি, ইনিংসের শেষ পর্যন্ত থেকে ভারতকে এনে দিয়েছেন ম্যাচ জেতার মতো সংগ্রহ। ইনিংস শেষে অপরাজিত ছিলেন ৬১ বলে ৫৬ রানে, ওশান টমাসের করা শেষ ওভারে দুই ছয় ও এক চারে তুলেছেন ১৬ রান।শেষ পর্যন্ত ২৬৮ রানই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর জন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হয়েছে। ম্যাচ শেষে তাই ধোনির সমর্থনে মুখ খুলেছেন ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা বোলার বুমরা। ধোনির ইনিংসটিকে ‘সেরা মানের ইনিংস’ তকমা দিয়ে বিসিসিআই টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ধোনি ভাই যে ইনিংসটি খেলেছে, এ ধরনের ইনিংসগুলোকে সাধারণত সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। কখনো কখনো হয়তো মনে হতে পারে, সে ধীরে ব্যাটিং করছে। কিন্তু মাঝে মাঝে উইকেটে সময় কাটানোটাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শেষ ম্যাচেও এই কাজটিই করেছে সে।’শুধু তাই নয়, তরুণ ক্রিকেটারেরা ধোনির এ ইনিংস থেকে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নিতে পারে, এমনটাও মনে করছেন বুমরা, ‘সে চাপ নিয়ে খেলতে পারে। খেলাটাকে একদম শেষ পর্যন্ত নিয়ে যায়। তাঁর ইনিংসটি একটি সেরা মানের ইনিংস ছিল। তাঁর ওই ইনিংসের কারণেই আমরা ২৬৮ পর্যন্ত যেতে পেরেছি। ওই পিচে এটা জেতার মতো রানই ছিল। সে জানত, পিঞ্চ হিটাররা তখনো ব্যাটিংয়ে নামার অপেক্ষায়, তাই সে সময় নিয়ে খেলছিল। তরুণ ক্রিকেটারেরা তাঁর ইনিংসটি থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে।’বুমরার আগে অধিনায়ক কোহলিও ধোনির ইনিংসের প্রশংসা করেছেন। দলের সবার কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন ধোনি, এমনটাই বলছেন কোহলি, ‘সে (ধোনি) যখন উইকেটে থাকে, কখন কী করতে হবে সেটি সবচেয়ে ভালো সে-ই বোঝে। একদিন খারাপ গেলেই সবাই তাঁর বিপক্ষে কথা বলতে শুরু করে দেয়। কিন্তু দলের সবাই তাঁকে সমর্থন দিচ্ছে। তাঁর মতো কাউকে দলে পাওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, প্রয়োজনের সময় বোলারদের সঙ্গে নিয়েও অতিরিক্ত ১৫-২০ এনে দেয়। শেষ ওভারে ওই দুটি ছয় দলের সবাইকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।’সমালোচনায় কান না দিয়ে নিজের খেলাটাই চালিয়ে যাবেন ধোনি, এমনটাই আশা করছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচসেরা হওয়া কোহলি, ‘আমরা ২৫০ এর মতো রান আশা করছিলাম। ধোনি উইকেটে ছিল বলেই আমরা ২৭০ এর কাছাকাছি যেতে পেরেছি। তাঁর অভিজ্ঞতা ১০ বারের মধ্যে ৮ বারই ম্যাচের ফল আমাদের পক্ষে এনে দিয়েছে। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলা সব সময়ই তাঁর বড় শক্তি। সে খেলাটির একজন কিংবদন্তি। দলের হয়ে দারুণ ভূমিকা রাখছে সে, আশা করছি এটা অব্যাহত থাকবে।’২৮ বছর পর ভারতকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতানো ধোনি ২০১৯ বিশ্বকাপে ৫ ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে রান করেছেন ১৪৬। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ১৯২.৮৫ স্ট্রাইক রেটে ১৪ বলে ২৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও প্রায় ৯২ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন ৩৭ বছর বয়সী ধোনি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। শুক্রবার বিকেলে ওয়াসার সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এই পরামর্শ দেন তাঁরা। পানির দাম অন্তত ঢাকা ওয়াসার মতো করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।তবে চট্টগ্রাম নগরে পানি সংকট রয়েছে উল্লেখ করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। পানির দাম বাড়লে গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নিরাপদ এবং পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করে দাম বাড়ানোর বিষয় চিন্তা করার পক্ষে মত দেন সংশ্লিষ্টরা।চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সেখানে দৈনিক পানির চাহিদা রয়েছে ৪২ কোটি লিটার। উৎপাদন করা হয় ৩৬ কোটি লিটার। ঘাটতি আছে ৬ কোটি লিটার।চট্টগ্রাম ওয়াসা চলতি বছরের শুরুতে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল। আবাসিকে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম ৯ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৯২ পয়সা এবং অনাবাসীকে ২৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা করা হয়। ঢাকায় আবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম ১১ টাকা ২ পয়সা এবং অনাবাসীকে ৩৫ টাকা ২৮ পয়সা। পানির দাম যেন ঢাকার ওয়াসার মতো হয় সে জন্য চেষ্টা করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।চট্টগ্রামে ওয়াসার গ্রাহক রয়েছে ৭১ হাজার ১৩০। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ১৯টি আবাসিক এবং বাকি ৭ হাজার ১১১টি অনাবাসিক গ্রাহক। শুক্রবারের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ওয়াসাকে নিজস্ব আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, দেশের চারটি ওয়াসার কোনোটিই লাভজনক ও স্বনির্ভর নয়। ঋণ, ভর্তুকি ও অন্যর ওপর নির্ভরশীল হয়ে বেশি দিন বাঁচা যায় না। কখনো কখনো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই পানির দাম মাসে যদি ১০০ টাকা বেশি দেন, তাহলে বছর শেষে এক লাখ টাকা লাভ হবে। তাই যাঁরা দায়িত্বশীল আছেন তাঁদের মানুষকে বোঝাতে হবে, পানির পয়সা দেবেন না, ভালো পানি পাবেন না।চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্যদের ইঙ্গিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ যদি কোনোটি না বুঝে, এই না বোঝার স্রোতে আমাদের গা ভাসানোর দায়িত্ব না। আমাদের দায়িত্ব হবে, যেখানে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে তা মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া।’স্থানীয় সরকার মন্ত্রী পানির অপচয় রোধ, বিল কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদও পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড পানির দাম যেন ঢাকা ওয়াসার মতো হয়—তা অনুমোদন দিতে পারে। কিন্তু বোর্ড সদস্যরা দাম বৃদ্ধির বিষয়টি বিরোধিতা করেন বলে শুনেছেন তাঁরা। যদি পানির দাম ঢাকার মতো নেওয়া যায় তাহলে সিস্টেম লস পুষিয়ে নিতে পারবে চট্টগ্রাম ওয়াসা। পানির অপচয় রোধে প্রিপেইড মিটার চালুর প্রস্তাব দেন সচিব।মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মন্ত্রী-সচিবের পরামর্শ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসার পানির গড় বিল, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম নিয়ে তদন্ত কমিটি করেছে বোর্ড। তদন্ত প্রতিবেদনও জমা পড়েনি। আবার চট্টগ্রাম নগরে এখনো পানির সংকট দূর হয়নি। এই অবস্থায় পানির দাম বাড়ানো হলে গ্রাহকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাঁরা এমনিতেই বেশি টাকা দিয়ে কম পানি পাচ্ছেন।এ ছাড়া নিরাপদ পানি সরবরাহের বিষয়টিতেও নজর দেওয়ার দাবি সাধারণ গ্রাহকদের। গত বছর নগরের আগ্রাবাদ, হালিশহর, নয়াবাজার বড়পোলসহ বিভিন্ন এলাকায় জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত তিন ব্যক্তি মারা যান। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় তখন বিষয়টি তদন্ত করে ওয়াসার পানির কারণে জন্ডিস হয় বলে অভিযোগ করেছিল। পাইপ লাইনের ফুটোসহ নানা কারণে এই রোগ হয় বলে জানা গেছে। সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, নিরাপদ পানি স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে পানিবাহিত অনেক রোগ কমে যায়। সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জানান, তিনি সব সময় ওয়াসার পক্ষে। পানি সরবরাহের জন্য ওয়াসার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত না হলে ভয়াবহ আকার ধারণ করত। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ পানি সরবরাহ নিশ্চিত হবে।তবে পানির পাইপ স্থাপনে তদারকি ও নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান মেয়র। তিনি বলেন, অনেক জায়গায় পাইপ বসাতে একাধিকবার রাস্তা কাটা হয়। একটু সতর্ক হলে এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে জনভোগান্তি কম হবে। সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ সংস্থার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। বক্তব্য দেন ওয়াসার চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম নজরুল ইসলাম ও শ্রমিক নেতা তাজুল ইসলাম।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল থেকে প্রথমবারের মতো এএফসি কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের আবাহনী লিমিটেড। এর আগে দুইবারই প্রথম পর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারতের ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসি।ফুটবলে একটা সময় বাংলাদেশ আর ভারত ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। লড়াইটা ছিল মোটামুটি সমতার। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উত্তেজনার পারদকে ওপরে তুলে দিত। কিন্তু সে দিন নেই অনেক দিন। ভারত ফুটবলে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে পেয়েছে প্রথম ১০০ দেশের মধ্যে থাকার স্বাদ। গত দশ বছরে দুইবার এশিয়ান কাপ ফুটবলে চূড়ান্তপর্বে খেলার অর্জনও তাদের হয়েছে। যে সাফ ফুটবলের সবশেষ পাঁচটি আসরে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ, সেখানে তারা বয়সভিত্তিক দলকে জাতীয় দল বানিয়ে পাঠিয়ে দেয়। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে ভারতের সাম্রাজ্য দখল করেছে বাংলাদেশ।এএফসি কাপে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে একক রাজত্ব ছিল ভারতীয় ক্লাব বেঙ্গালুরু এএফসির। ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চলের ক্লাবগুলোকে এএফসি কাপের প্রথম পর্বে নিজেদের মধ্যে খেলার সুযোগ করে দেয় এশিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা। প্রথম দুবারই চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বেঙ্গালুরু। সেই বেঙ্গালুরু তো ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে (আইএসএল) চ্যাম্পিয়ন না হতে পারায় এবার এএফসি কাপে খেলার সুযোগ পায়নি। ভারতীয় সাম্রাজ্য রক্ষার দায় নিয়ে এসেছিল চেন্নাইয়িন এফসি ও মিনার্ভা পাঞ্জাব। কিন্তু তাদের ছিটকে দিয়ে ভারতের রাজত্ব দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব আবাহনী লিমিটেড। সেটি সম্ভব হয়েছে গুয়াহাটিতে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন মিনার্ভা পাঞ্জাবকে হারিয়েই।তবে মিনার্ভা নয়, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে আবাহনীর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত লড়াই হয়েছে ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের (আইএসএল) চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়িন এফসির। আসামে শেষ ম্যাচে আবাহনীর প্রয়োজন ছিল জয়, শেষ মুহূর্তের গোলে জয় নিয়ে পরবর্তী রাউন্ডের টিকিট নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা। চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর পয়েন্ট ১৩ আর আর ১১ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ হয়েছে চেন্নাইয়িন। ভারতের অন্য ক্লাব মিনার্ভা ৫ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় ও তলানিতে থাকা নেপালের মানাং মার্শিয়াংদির পয়েন্ট ২।ভারতীয় দুই ক্লাবের বিপক্ষে আবাহনী ম্যাচ খেলেছে চারটি। সেখানেও দাপট আবাহনীর। ২ জয় ও ১ ড্রয়ের বিপরীতে হার মাত্র ১টি। এপ্রিলে ঢাকায় মিনার্ভার বিপক্ষে ২-২ গোলের সমতায় শুরু হয়েছিল দুই দেশের ক্লাব ফুটবলের দ্বৈরথ। পরের ম্যাচেই আহমেদাবাদে চেন্নাইয়িনের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় আবাহনী। এর পরে পেছনে ফিরে তাকাতে হয় আকাশি-নীলদের। ১৫ দিনের ব্যবধানেই ঢাকায় চেন্নাইকে ৩-২ গোলে হারিয়ে জবাব দেয় তারা। আর শেষ ম্যাচে আসামে মিনার্ভার বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে নিজেদের ইতিহাসের দাঁড় প্রান্তে পৌঁছে যায় আবাহনী।দ্বিতীয় রাউন্ড মানে আন্ত আঞ্চলিক সেমিফাইনাল। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আবাহনী খেলবে আন্ত আঞ্চলিক সেমিফাইনালের দুইটি প্লে অফ। প্রতিপক্ষ কোন ক্লাব, তা এখনো চূড়ান্ত নয়। সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকতে পারে ভিয়েতনাম, তুর্কমেনিস্তান বা উত্তর কোরিয়ার কোন একটি ক্লাব।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশের সব থানা থেকে রাজাকারের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিগগিরই সম্পূর্ণ ও অবিকৃত অবস্থায় সে তালিকা প্রকাশ করা হবে।’ শুক্রবার সকালে পাবনার আটঘরিয়ায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী এ কথা বলেন।আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়ায় আদালতের মাধ্যমে যেসব যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, তারা দেশের প্রচলিত আইনেই অপরাধী প্রমাণিত হয়েছে। আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে যারা যুদ্ধাপরাধীদের নির্দোষ দাবি করে, তারা দেশের সংবিধানকে অস্বীকার করে। তাদের বিষয়ে সরকার সজাগ রয়েছে।’মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। সারা দেশে সব মুক্তিযোদ্ধার কবর একই ডিজাইনে বাঁধাই করে দেওয়া হবে। দেখেই বোঝা যাবে এটি মুক্তিযোদ্ধার কবর।প্রস্তাবিত বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ১২ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করা হলেও তা আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘দুই ঈদ, পয়লা বৈশাখ ছাড়াও স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে বিশেষ বোনাস দেওয়া হবে। এ ছাড়া মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দাফনে সরকার প্রত্যেককে ১৪ হাজার টাকা করে দেবে, যা তাঁদের গার্ড অব অনারের পূর্বেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’পাবনার জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (অ্যাটকো) সভাপতি ও স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল পাবনা জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, আটঘরিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম, আটঘরিয়া পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম ও আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকরাম আলী।উল্লেখ্য, উপজেলায় ১ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৪৮৫ টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট ওই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হয়েছে।
বিশ্বকাপ দিয়েই একদিনের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন, এমন ঘোষণাই দিয়েছিলেন ক্রিস গেইল। তবে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এক সাক্ষাৎকারে গেইল জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের পরে ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজে দু-একটি ওয়ানডে এবং অন্তত একটি টেস্ট খেলে তবেই অবসর নিতে চান। কিন্তু তাঁর এমন ‘আবদারে’ নাখোশ উইন্ডিজ কিংবদন্তি কার্টলি অ্যামব্রোসবিশ্বকাপ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন, এমনটাই ছিল ক্রিস গেইলের ভাষ্য। কিন্তু ভারতের সঙ্গে ম্যাচের আগে হঠাৎ ভোল পাল্টে ঘোষণা দিলেন, বিশ্বকাপের পর ভারতের সঙ্গে হোম সিরিজে অংশ নিয়ে তবেই বিদায় বলবেন।অবসর নিয়ে তাঁর এভাবে উল্টে যাওয়ার ঘটনায় আগেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। এবার কিংবদন্তি উইন্ডিজ গতি তারকা কার্টলি অ্যামব্রোস জানালেন গেইলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্মিত হওয়ার কথা। বিশেষভাবে একটি টেস্ট খেলে ক্রিকেটকে বিদায় বোলার প্রবণতাকে অতি সেকেলে হিসেবে অভিহিত করেছেন অ্যামব্রোস।ভারতের কাছে ১২৫ রানের বিশাল হারে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে উইন্ডিজের। ম্যাচের পর ইংল্যান্ডের একটি রেডিওর ধারা বিবরণীর দায়িত্বে থাকা অ্যামব্রোস দলের তরুণ ক্রিকেটারদের মাঝে ‘খেলায় নিবেদন এবং ভাবনার অপরিপক্কতা’কে দুষেছেন উইন্ডিজের বিদায়ের জন্য।ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে গেইলের অবসর পরিকল্পনা নিয়ে নিজের মত জানাতে গিয়ে আরও কড়া মন্তব্য করেছেন অ্যামব্রোস, ‘সে যদি ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নিতে পারে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তার টেস্ট খেলে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমি কোনোভাবেই সমর্থন করছি না।’ এ ক্ষেত্রে গেইলের দীর্ঘ দিন টেস্ট ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন অ্যামব্রোস, ‘গেইল গত পাঁচ বছরে কোনো টেস্ট খেলেনি। তাকে মাত্র একটি টেস্টের জন্য ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত একটি হঠকারী পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হবে। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে গেইল তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য কী উদাহরণ রেখে যেতে চাচ্ছে?’এদিকে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে সেমিফাইনালের আশা জাগিয়েও ২ ম্যাচ হাতে রেখে বিশ্বকাপ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাদ পড়াকে মেনে নিতে পারছেন না এই কিংবদন্তি। দেশের হয়ে ৯৮ টেস্টে ৪০৩ উইকেট নেওয়া এই পেসার হতাশার সুরে বললেন, ‘তাদের স্কিল নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। বিভিন্ন সময় এই খেলোয়াড়রাই দারুণ পারফর্ম করে আমাদের জয় এনে দিয়েছে। কিন্তু এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে আমার মতে মূলত দুটি কারণে দলের ভরাডুবি হয়েছে, প্রথমত খেলায় নিবেদনের অভাব এবং দ্বিতীয়ত বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা।’
গত বছরের ৮ মে রাজকীয় আয়োজনে অগ্নিসাক্ষী রেখে সাত পাকে বাঁধা পড়েন বলিউড তারকা সোনম কাপুর ও ব্যবসায়ী আনন্দ আহুজা। ইনস্টাগ্রামে এই জুটির রোমান্টিক ছবি নতুন করে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু তাঁদের প্রেমকাহিনির সেই রূপকথা এত দিন ছিল গুপ্তধন হয়ে। সেই গুপ্ত কাহিনি এবার উন্মুক্ত করলেন সোনম কাপুর। বিয়ের এক বছর এক মাস পর ফিল্মফেয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই ডিভা প্রথমবারের মতো বললেন সেই হৃদয় অদল–বদলের গল্প।সোনম কাপুরের নাকি আনন্দ আহুজার সঙ্গে প্রেম হওয়ারই কথা ছিল না। কথা ছিল আনন্দ আহুজার সব থেকে কাছের বন্ধুর সঙ্গে প্রেম হবে সোনম কাপুরের। আর সেই ব্যবস্থাই করছিলেন সোনমের বন্ধুরা। তাজ হোটেলের একটা বারে আনন্দ আহুজা আর তাঁর দুই বন্ধু অপেক্ষা করছিলেন। বন্ধুরা জোর করে সোনম কাপুরকে ডেকে এনেছিল সেখানে। সোনম তখন 'প্রেম রতন ধন পায়ো' (২০১৫) ছবির প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন।সোনম কাপুরের ভাষায়, 'আমার তাদের সঙ্গে দেখা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না। আমার প্রেম করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না তখন। সম্পর্ক, বিয়ে- এই শব্দগুলো অর্থহীন ছিল আমার কাছে। আনন্দর যে বন্ধুর সঙ্গে ওরা আমার প্রেম করাতে চাচ্ছিল, আমি তাকে দেখলাম। সে আমার মতোই লম্বা, আমার মতোই বই পড়তে ভালোবাসে আর আমার মতোই বলিউড সিনেমার অন্ধভক্ত। সে উচ্চশিক্ষিত আর সুদর্শন। সবই ঠিক ছিল, কিন্তু তাঁকে দেখেই কেন যেন আমার ভাই হর্ষবর্ধনের কথা মনে পড়ল।’ওই সাক্ষাৎকারে সোনম এও জানান, মাঝে মাঝে মানুষ ভাবে যে একই রুচির মানুষেরা বোধ হয় একসঙ্গে পথ চলতে পারে। কিন্তু সোনম আনন্দর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কারণ সোনম যা, আনন্দ ছিলো ঠিক তার বিপরীত। আনন্দ আহুজা নাকি জানতেনই না সোনম কে বা তাঁর বাবার নাম কী। সেদিন তাজ হোটেলে সারা সন্ধ্যা সোনম কাপুর কেবল আনন্দ আহুজার সঙ্গে কথা বলে কাটিয়েছিলেন। এই প্রেমকাহিনিতে এর পরের অংশটা মিলে যাবে অনেকের সঙ্গেই।এরপর একদিন দেখলেন, অনন্দ আহুজা তাঁকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। সঙ্গে একটা চিরকুট, মানে মেসেজ। রাত ২টা ৩০ মিনিটে আনন্দ আহুজা সোনম কাপুরকে এক বার্তায় লিখলেন, ‘হেই, তুমি কি এখনো সিঙ্গেল? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে তুমি যদি কখনো লন্ডনে আসো, আমার সঙ্গে দেখা করবে।’ বন্ধুত্বের আবেদনে সাড়া দিয়ে সোনম রেগে জবাবে লিখলেন, ‘প্রথমত, আমাকে এত রাতে মেসেজ করবেন না। আমি খুবই বিরক্ত হই। এসব ব্যপারে আমি একটা স্কুলে শিক্ষিকার মতোই কড়া।’ এভাবেই কিঞ্চিৎ তেতো দিয়েই শুরু হল মধুর কথোপকথন।তারপর তাঁরা অন্য অনেকের মতোই ফোনে কথা বলা শুরু করলেন। সরল গণিতের মতো তারপর তাঁরা দেখা করলেন। এর দুই সপ্তাহ পর সোনম ঘুরিরে পেঁচিয়ে আনন্দ আহুজাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি চাও যে আমি তোমার বন্ধুর সঙ্গে আলাপ শুরু করি?’ কথায় বলে, জ্ঞানীর জন্য ইশারাই যথেষ্ট। সঙ্গে সঙ্গে আনন্দ আহুজা বললেন, ‘না, না, প্লিজ না। আমার সঙ্গে কথা বলো। তুমি আমার। আর আমি নিজেকে শুধু তোমার জন্যই রেখেছি।’ এই ছিল সোনম আর আনন্দর সহজ, সুন্দর প্রেমের গল্প।যা হোক, বিয়ের পর এটা–সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এক বছরে মধ্যে হানিমুনেই যাওয়া হয়নি এই জুটির। সম্প্রতি তাঁরা জাপানে হানিমুন করে এলেন। সেই ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করে সোনম কাপুর লিখেছিলেন, ‘আমি নিজেকে প্রতিদিন জিজ্ঞেস করি, আমি কীভাবে এতটা ভাগ্যবান হলাম। জীবনসঙ্গী হিসেবে আমি আমার সবথেকে কাছের বন্ধুকে পেয়েছি। আনন্দ আর আমি তো হানিমুনই করার সময় পাইনি। এই ভ্রমণটা আমাদের হানিমুন, বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন পালনের যাত্রা—সবই। সবুরে মেওয়া ফলেছে। এখানে আমার জীবনের সেরা সময় কেটেছে। ভালোবাসা, তোমাকে ধন্যবাদ।’এখানেই শেষ নয়। কিছুদিন আগে আনন্দ আহুজার সঙ্গে জাদুঘরে গিয়েছিলেন। সেই ছবি পোস্ট করেও ক্যাপশনে লিখেছেন ভালোবাসার কথা। বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমি জাদুঘর ভালোবাসি। আর্ট ভালোবাসি। কিন্তু সব থেকে বেশি ভালোবাসি তোমাকেই, মি. আহুজা।’
তিন দশক আগে ৯ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ নামিবিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়াতে গিয়েছিলেন তাঁরা। তখন আফ্রিকার ওই দেশটিতে চলছিল গৃহযুদ্ধ। দিন কিংবা রাতে—ঘরের বাইরে কালো চামড়ার মানুষ দেখলেই হামলা, আক্রমণ ও গুলি। এ পরিস্থিতির মধ্যে স্বজন রেখে বাংলাদেশ থেকে যাঁরা ঘর ছেড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৩৭ জন জড়ো হয়েছিলেন ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে।সময়টা ১৯৮৯-৯০ সাল। জাতিসংঘের অধীনে প্রথমবারের মতো শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ৬০ জন সদস্য। ১১ মাসের সফল মিশন শেষে যখন তাঁরা ঘরে ফিরেছিলেন, এরপর কেটে গেছে তিরিশ বছর। মিশনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচের চেনা সেই মুখগুলো মিলিত হয়েছিলেন গতকাল বৃহস্পতিবার। রাজধানীর গুলশানে একটি কনভেনশন সেন্টারে ব্যতিক্রমী এই পুনর্মিলনী আয়োজন করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী, যিনি ছিলেন প্রথম শান্তি মিশনের দলনেতা। বয়সের ভারে অনেকটা ন্যুব্জ ওই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা যেন সজীব, সতেজ হয়ে ওঠেন। ফিরে যান তিন দশক আগের সেই সময়ে। এ আয়োজনে সহযোগিতা করেন তাঁর দুই সহকর্মী সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কামরুল আহসান, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক নায়েম আহমেদ।মিশনের অনেকের সঙ্গেই বছর ৩০ পর দেখা। তাই প্রথম পর্বে চলল করমর্দন, বুকে জড়িয়ে ধরা আর ছবি তোলা। শরীরে কেতাদুরস্ত পোশাক, তাতে পদমর্যাদার ব্যাজ লাগানো। এরপরও কারও কারও সাক্ষাৎ আর বুকে জড়িয়ে নেওয়ার মুহূর্তগুলোতে কানে ভেসে আসে, ‘কেমন আছিস? সেই তিরিশ বছর পর দেখা...।’স্মৃতিচারণায় এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী বলছিলেন, ‘নামিবিয়া তখন অপরিচিত ও দূরের দেশ হওয়ায় দলের সদস্যদের জন্য কঠিন কাজ ছিল দেশটির পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। শ্বেতাঙ্গরা কোনোভাবেই কৃষ্ণাঙ্গদের দেখতে পারত না। আমরা তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। বুঝিয়েছি, কালোরাও মানুষ। তাদেরও স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার আছে।’মিশন শেষে গতকালই প্রথম দেখা হলো সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার ইন্তেজার রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমানের। নামিবিয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনায় ইন্তেজার রহমান বলছিলেন, যুদ্ধ চলায় মিশনের শুরুর দিকে ভয় কাজ করত। রাস্তায় নামলেই এদিক-সেদিক থেকে গুলি ছুটে আসত। একবার রাতে পেট্রল ডিউটি শেষে ক্যাম্পে ফেরার পথের ঘটনা, আমাদের গাড়ি শ্বেতাঙ্গদের একটি এলাকা পার হওয়ার সময় চারপাশ থেকে মুহুর্মুহু ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। মাথায় তখন বেঁচে ফিরতে পারব কি না সেই চিন্তা। শেষমেশ নিজেদের পরিচয় দিয়ে ওই যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিলাম। মিশনের দিনগুলো ছিল এমনই। বিপদে সবাই সবার পাশে থাকতাম।অনুষ্ঠানে যোগ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শকদের মধ্যে ছিলেন এনামুল হক, আজিজুল হক, মোদাব্বের হোসেন চৌধুরী ও এ টি এম আহমেদুল হক চৌধুরী। সাবেক সচিবদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবীর প্রমুখ। আরও ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, অধ্যাপক মনসুর মুসা প্রমুখ। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সেই সময়ের প্রতিবেদক এবং পরবর্তী সময়ে বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হারুন হাবীব অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণা করেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন শম্পা রেজা। এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তাঁর সহধর্মিণী ও শিল্পী রেহানা সিদ্দিকী, ছেলে লুৎফে সিদ্দিকী এবং মেয়ে হুসনা সিদ্দিকী লওসন আমন্ত্রিত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান।নামিবিয়ার শান্তি মিশনে অংশ নিয়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আহমেদ আমিন চৌধুরী লিখেছেন নামিবিয়ার স্বাধীনতায় আমরা এবং দেশটির স্বাধীনতা অর্জনের মুহূর্ত দেখার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক হারুন হাবীব লিখেছেন সূর্যোদয় দেখে এলাম। বই দুটি দেখা যায় কারও কারও হাতে। গৃহযুদ্ধ শেষে ১৯৮৯ সালের ৭ থেকে ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নামিবিয়ার প্রথম সংসদীয় নির্বাচন। সেখানেও দায়িত্ব পালন করেন শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। গতকাল তাই মিশনের সদস্যদের পুনর্মিলনীও শুরু হলো নামিবিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট স্যাম নুয়োমার শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়ে। ভিডিও বার্তায় তিনি বললেন, নামিবিয়ার মুক্তির প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি সদস্যরা অসাধারণ অবদান রেখেছেন। এটি ভোলার মতো নয়।ভিন্ন মহাদেশের ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ। তিরিশ বছর কম সময় নয়। এরপরও নামিবিয়ার মানুষ মনে রেখেছে, তিরিশ বছর আগের সংকটের সময় কয়েকজন বাংলাদেশি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ঢাকায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় বীজ মেলা। এই মেলা চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তন প্রাঙ্গণে শুক্রবার দুপুরে এই মেলার উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। মেলায় বাহারি জাতের ফল, সবজি এবং ফসলের নমুনা ও বীজ নিয়ে প্রদর্শনী করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা।
রোহিত শর্মা যে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তটা মেনে নিতে পারেননি তা গতকাল মাঠেই বোঝা গিয়েছিল। পরে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ব্যাপারটা মোটা দাগে বুঝিয়েও দিলেন। কেমার রোচের বলটি ব্যাট ছুঁয়েছিল কী না এ নিয়েই নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি ছবি পোস্ট করেছেন ভারতীয় এই ওপেনারইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাজে আম্পায়ারিং নিন্দা কুড়োচ্ছে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই। শুরুটা করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অলরাউন্ডার কার্লোস ব্রাফেট। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের কারণ হিসেবে ‘বাজে আম্পায়ারিং’কে দায়ী করেছিলেন এই অলরাউন্ডার। এরপর লর্ডসে পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে তো একটা ওভার হয়েছে ৭ বলে! এবার বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রোহিত শর্মাও। ভারতীয় এই ওপেনারের দাবি, গতকাল ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে আউট না হয়েই নাকি ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁকে।ভারতীয় ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে কেমার রোচের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান রোহিত। মাঠের আম্পায়ারের নট আউটের সিদ্ধান্ত থার্ড আম্পায়ারের কাছে গিয়ে বদলে যায়। মাঠ ছাড়ার সময় রোহিতের চেহারাতেই ফুটে উঠছিল অসন্তোষ। সিদ্ধান্তটি আদৌ কতটা সঠিক ছিল, তা নিয়েই পরবর্তীতে শুরু হয় কাটাছেঁড়া।রোচের বাঁক খেয়ে ভেতরের দিকে আসা বলটি রোহিতকে কিছুটা চমকে দিয়ে উইকেট রক্ষকের হাতে ঠাঁই নেয়। কিন্তু তাতে আলতো ইনসাইড এজ হয়েছে এমন দাবি করে উইন্ডিজ খেলোয়াড়েরা আউটের আবেদন জানান ইংলিশ আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থের কাছে। কিন্তু আবেদনটি সরাসরি নাকচ করে দেন তিনি। উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার, বোলার কেমার রোচ এবং উইকেট রক্ষক শাই হোপ অবশ্য আউটটি নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তাই তারা সময়ক্ষেপণ না করে রিভিউ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। থার্ড আম্পায়ার মাইকেল গফ বল যখন ব্যাট পার হয়, তখন স্নিকো মিটারে ‘স্পাইক’কে অকাট্য প্রমাণ ধরে নিয়ে রোহিতকে আউট ঘোষণা করেন গফ। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি রোহিত । ভারতীয় এই ওপেনার নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে আউট হওয়ার সময় তার বল ব্যাটকে ছুঁয়েছিল কি না এ নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেন। ছবিতে অবশ্য ব্যাট বলের সংযোগ হয়েছিল কি না তা বোঝার কোনো উপায় নেই।রোহিতের আউটটি বিতর্কিত হলেও ক্যারিবীয়দের বিরাট ব্যবধানে হারাতে কোনো অসুবিধা হয়নি ভারতের। তবে ২০১৯ বিশ্বকাপ চলার সময়ই আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে টুইট করে রোহিত কোনো অসুবিধায় পড়েন কিনা—দেখার বিষয় এখন এটিই।
লেক্সিনটন অ্যাভিনিউর ওপর ফিফটি থার্ড স্ট্রিটের কাছে গাড়ি পার্ক করে নিউজপেপার পড়ছিল। বামদিকের মিররে চোখ রাখতেই কিছুটা অবাক হলো। রাস্তায় পেপার সাজিয়ে বসে আছে মধ্যবয়সী এক নারী। বাদামি রঙের শক্ত কাগজে একটা আবেদন। এ রকম প্রায়ই দেখা যায়। আশ্চর্য হয়েছে অন্য কারণে। ভালো করে দেখল কাগজে কী লেখা—‘WIDOW, LOST EVERYTHING,CAN YOU HELP’মধ্যবয়সী এই নারীকে অসুস্থ বলে মনে হলো। বাম পায়ে ব্যান্ডেজ। প্লাস্টার লাগানো। সূক্ষ্মভাবে তাকালে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, ইচ্ছে করলেই প্লাস্টার ও ব্যান্ডেজ পা থেকে আলাদা করা যাবে। তবে নারীটির এই অভিনয় কেন? উইডো তো পাশ্চাত্যে কোনো ব্যাপারই না। এই নারীকে আমেরিকানদের সহানুভূতি জানানোর চিন্তা মাথায় আসতে পারে না। বিধবা মানে স্বামীর কাছ থেকে অনেক কিছু আদায় করে নিয়েছে ইতিমধ্যে। খুঁজলে দেখা যাবে, হয়তো বিয়ে-শাদির ধারেকাছেও ছিল না কোনো দিন। বেশ কিছু সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে রায়হান। ভাবতে ছিল, কেন শ্বেতাঙ্গিনী মেয়েটির এই পরিণতি? এখানে তো কাজ করে নিজের জীবন অনায়াসে চালিয়ে নেওয়া যায়। হয়তো পরিস্থিতির স্বীকার। পুঁজিবাদী সমাজে নিজের একক ভাবনাই প্রাধান্য বেশি।রায়হান পেছনের কিছু স্মৃতি সামনে এনে মেলাতে চেষ্টা করে। আগে সে আমেরিকান, ইতালিয়ান, ফ্রেঞ্চ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কাজ করেছে জীবনের তাগিদে। কিছু অল্পবয়সী স্টুডেন্ট দেখেছে, যারা স্বাবলম্বী হতে অন্য স্টেট থেকে মা-বাবাকে ছেড়ে চলে এসেছে। কতজন এই জীবনে সংগ্রামে জয়ী হতে পেরেছে? রাস্তায় অনেক পেনহ্যান্ডলারদের (panhandlers) দেখা মেলে যাঁরা অনেকেই ইয়াং (Aristocratic looks), জীবনযুদ্ধে হেরে রাস্তায় পড়ে থাকে।মনে পড়ে, স্টিভ তার সঙ্গে কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করত। রায়হানের ছিল লাল রঙের ফোর্ড অ্যারোস্টার মিনি ভ্যান, স্টিভের বাইসাইকেল। সে সময় কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানির জমজমাট ব্যবসা। ডেইলি নিউজ আর ভিলেজ ভয়েজ–এর বিজ্ঞাপন দেখে কুরিয়ার সার্ভিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সপ্তাহে প্রচুর ডলার কামানো যাবে ভেবে মিনিভ্যানটি কিনেছিল। অনেকে একসঙ্গে কাজ করত। সকাল নয়টায় গাড়ি নিয়ে প্রচণ্ড ট্রাফিক ঠেলে ম্যানহাটনের দিকে ছুটতো। গাড়ি পার্ক করে অফিসে ঢুকে ১০-১৫টি ডেলিভারি আইটেম নিয়ে বেরিয়ে আসত। অল্পসময়ের মধ্যেই প্রাপকের কাছে পৌঁছে দিতে তেমন বেগ পেতে হতো না। ডেলিভারিগুলো নিউইয়র্ক নগরের ভেতরে অথবা ট্রাইস্টেটের যেকোনো জায়গায় থাকত। যখন একটুখানি বিরতি তখন কেউ কেউ নিজের সুখ–দুঃখের কথা বলে যেত।একদিন ২৪/২৫ বছরের একটি ছেলে আকস্মিকভাবে এক বান্ডিল ড্রয়িং বের করল তার ঝোলা থেকে। সবাই তার দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে।সে বলল, look, this is my father’s great architectural work who was a famous Architect. I didn’t listen to him, at the end I ruined my career. Now I’m here working as a messenger—বলে খুব আফসোস করল।সবাই চুপ। কেউ কোনো কথা বলেনি। হয়তো এ রকম কাহিনি তাদেরও আছে। মা-বাবা প্রভাবশালী, বিরাট ধনী। অথচ সেখানে দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। এখন কেউ কারও ধার ধারে না, সবাই স্বাধীন।লিন্ডা, অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে। প্রায়ই দেখত, পেছনে ব্যাগ ঝুলিয়ে মনের সুখে দ্রুত গতিতে ম্যানহাটনে বাইসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে আপ টাউন থেকে ডাউন টাউন। প্রথমে মনে হতো শৌখিন সাইকেলিষ্ট। হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করল, লিন্ডা আর রায়হান একই কোম্পানিতে কাজ করছে। কেমন করে সম্ভব হল? রায়হান কিছুদিন পরপর কোম্পানি চেঞ্জ করত ভালো আয়ের জন্য। এভাবে একদিন দেখা হয়ে যায় মেয়েটির সঙ্গে। জানতে পারল, সে আপাতত পড়াশোনা করছে না। কিছু আয়–রোজগারের পর কলেজে যাবে! শেষ পর্যন্ত কি তা সম্ভব হয়? অনেকের ক্ষেত্রেই সেটা হয়ে উঠে না। হয়তো কোনো বয়ফ্রেন্ড পেয়ে যাবে। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ তখন ভিন্ন বাঁকে মোড় নেবে।মিডটাউনে একটি ফরাসি রেস্টুরেন্টে কাজ করার সময় দেখল, ডেইজি তার বাবাকে ফাদারস ডে’তে রেস্টুরেন্টে আমন্ত্রণ করল। রেস্টুরেন্টে যারা কাজ করত তাদের পিতা-মাতার জন্য মালিকের নির্দেশে বিশেষ ডিসকাউন্ট থাকত। ছোট রেস্টুরেন্ট। ডেইজিসহ রায়হানরা চারজন ওয়েটার। কিচেনে শেপসহ আরও চার/পাঁচজন কিচেন স্টাফ। শেপ খুব কড়া মেজাজের। রেস্টুরেন্টটি ছোট কিন্তু এক্সপেনসিভ। স্টিক (steak) ৩৯.৯৯ ডলার ছিল তখনই। জনপ্রতি ডিনারের খরচ এক শ ডলারের কাছাকাছি হয়ে যেত। একদিন দেখল, ডেইজি চাকরি ছেড়ে চলে গেছে। কেন চলে গেল? তাঁরা কেউ জানে না। তবে শেপের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল—একজন তাই বলল। রেস্টুরেন্টে যাদের কাজের অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা জানে, কিছু কিছু শেপ কী ধরনের ভয়ংকর হতে পারে। ডেইজি ফ্রেসম্যান। তাহলে তার টিউশন ফি ও কলেজে যাওয়ার কি হবে?একসময় পিতা-মাতার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় অথচ প্রয়োজনীয় ডিগ্রি অর্জন তখনো হয়নি। ইগোর প্রবলেম প্রচণ্ডভাবে মাথাচাড়া দেয়।এ রকম আরও অনেক কাহিনির প্রত্যক্ষদর্শী রায়হান যেগুলো লিখলে শেষ হবে না।নিঃসঙ্গভাবে ওরা চলছে, সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে। যখন চাকরি চলে যায় কীভাবে টিকে থাকবে। এভাবেই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হতে অনেকেই নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।অনেক সময় পার হল। একজনও মেয়েটিকে সহানুভূতি দেখানোর প্রয়োজন মনে করেনি।ভাবনাটা যেন রায়হানকে পেয়েছে বেশি। একবার মনে করেছিল, একটি ডলার তাকে দেবে। পরক্ষণেই মত পাল্টায়। কেন যেন মনে হলো এই মেয়েটা তার চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং ভালো অবস্থানে আছে। সেতো চুনোপুঁটি।নিউইয়র্কের বিখ্যাত ধনকুবের বার্নি ম্যাডঅফ (Bernie Madoff), লিওনা হ্যামস্লের (Leona Helmsley) চেয়ে মেয়েটির অবস্থান হাজার গুণে ভালো। প্রতারণা করে জেলে পচে মরছে না, সে স্বাধীন।গাড়ি থেকে নেমে তাকে কিছু দেওয়ার সাহস রায়হানের হলো। সে হেঁটে গেলে মাঝেসাজে একটা কোয়াটার ড্রপ করে। ইদানীং এড়িয়ে যায়। তা ছাড়া এখন সে গাড়ির ভেতরে। গাড়ি থেকে নেমে তার দিকে গেলে বরং মেয়েটি কিছু দেওয়ার আগেই করুণার দৃষ্টিতে রায়হানের দিকে তাকাবে।আবার তারও মানসিকতার পরিবর্তন এসেছে। মনে করে, এটা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। সাহায্য দিয়ে সে এদের উৎসাহিত করতে পারে না। এই শহরে হাজার হাজার এ রকম মানুষের বসবাস। নগর কর্তৃপক্ষ প্রচুর চেষ্টা করে, এদের শেল্টার দিতে চায়। কিন্তু রাস্তায় থাকা ওদের পছন্দের। এখানে নিজের স্বাধীনতার প্রাধান্য বেশি।রায়হান উল্টো ভাবে। সে রিটায়ার্ড লাইফে কি নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চায়? সবাইকে নিয়ে সময় পার করবে। এসব চিন্তা এখন খুব বেমানান ঠেকে। তাহলে সেও কি স্বাধীন থাকবে?
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে বলে জানা গেছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন।সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের এক পক্ষ সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ তোলেন।অন্যদিকে ড. সিদ্দিকুর রহমানের পক্ষ এসব অভিযোগ নাকচ করে দেন। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ৫০১ সদস্য বিশিষ্ট উদ্‌যাপন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন সিদ্দিকুর। এরপরই নতুন করে দুই পক্ষের বিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠে।২৬ জুন জ্যাকসন হাইটস পালকি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. আলী সিদ্দিকী লিখিত বক্তব্যে সিদ্দীকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা কায়কোবাদ, মনজুর চৌধুরী, মেসবাহ উদ্দিন, ফরিদুল আলমসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ২০১১ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। কমিটির মেয়াদ ৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। সম্ভাব্য নতুন কমিটি গঠনের প্রাক্কালে ড. সিদ্দিকুর রহমান ২৫ জুন সংবাদ সম্মেলন ডেকে তাঁর একক সিদ্ধান্তে কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি ও পদোন্নতি দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে তিনি সংগঠনের চেইন অব কমান্ডকে চ্যালেঞ্জ করছেন। কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কমিটিতে কোন ধরনের সংযোজন-বিয়োজন করার এখতিয়ার সভাপতি নেই। তিনি সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রবিরোধী করেছেন। এ সময় তারা ড. সিদ্দিকুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।অভিযোগের বিষয়ে ড. সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, ‘আমরা কমিটিতে কোন পদোন্নতি দিইনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী পালন, প্রতিবারের ন্যায় জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে তাঁকে সংবর্ধনা এবং বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে একটা উদ্‌যাপন কমিটি গঠন করা হয়েছে।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন। একই দিনে ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইতিমধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।ড. সিদ্দিকুর রহমান ২৫ জুন নিউইয়র্ক নগরের জ্যাকসন হাইটস পালকি পার্টি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এবং প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক আগমন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচির কথা সাংবাদিকদের জানান। পাশাপাশি সংগঠনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে শূন্যপদ পূরণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যেমন সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব বণ্টন করেন। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ৫০১ সদস্য বিশিষ্ট উদ্‌যাপন কমিটি করবের বলে সাংবাদিকদের জানান।
এইতো কিছুদিনে আগে ঘটে গেল চোখের সামনে একটি মজার ঘটনা। বাসার একদম কাছেই আমার কর্মস্থল। বাসা থেকে পায়ে হেঁটে ১০ মিনিটের পথ মাত্র। একদিন সকালে কাজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে রওনা দিলাম। কিছু দূর এগিয়ে দেখি, রাস্তা ব্লক করে ৩-৪টি অ্যাম্বুলেন্স আর কিছু মানুষের জটলা। জটলার মাঝে আমার দুজন পরিচিত মুখও আছে। তাদের একজন আমাকে দেখে ছুটে এল। এসে হড়বড় করে যে ঘটনা বলল, শুনে আমার আক্কেল গুড়ুম!! ঘটনা এই, আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নীলার চাচিকে প্রথমে পুলিশ ধরেছে, এরপর এমন মার দিয়েছে, উনার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ছুটছে। এখন উনার মরণাপন্ন অবস্থা। অ্যাম্বুলেন্স এসে তাঁকে কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে, অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে, হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। আশপাশের যারা ছিল, তারা শুধু চাচির মরণ চিৎকার, আল্লাহ গো আমারে বাঁচাও... ও মাগো, ও বাবাগো—ধরনের আর্তনাদ শুনতে পেরেছে। আর কিছু জানে না, পুলিশও কিছু বলেনি। পুলিশকে কেউ জিজ্ঞাসা করার সাহসও পায়নি, চাচির অপরাধ কি? আমি ভেবে কূল পাচ্ছি না, আমেরিকার মতো দেশে যেখানে মেয়েদের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হয়, মেয়েদের গায়ে আঁচড়টি দেওয়া দূরের কথা, অসম্মান করে কিছু বললেও শাস্তি পেতে হয়। সেখানে পুলিশ একজন বয়স্ক মহিলাকে মেরে নাক মুখ দিয়ে রক্ত ছুটিয়ে দিয়েছে! আর সেটা আবার নিউইয়র্কের পুলিশ!! যারা কিনা বড় বড় দাগি আসামিকেও খুব সৌজন্যের সঙ্গে স্যার/ম্যাডাম বলে সম্বোধন করে! আমার কাছে সবকিছুই অবিশ্বাস্য লাগছে। আমি তাড়াতাড়ি নীলাকে কল দিলাম। যা শুনেছি বিস্তারিত সব জানিয়ে দিলাম। নীলা আমার কাছে জানতে চাইল, আমি ফ্রি আছি কিনা? আমি জানালাম, অফিস যাচ্ছিলাম, তবে অসুবিধা নাই। আমি এখন বাসায় ফিরে অপেক্ষা করছি, তুমি আসো। তারপর যাওয়া যাবে হাসপাতালে।কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলা এসে হাজির। আমি আর নীলা দুজনে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটলাম। পথেই দুজনে আলোচনা সেরে নিলাম, পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যাব। এত বড় সাহস কীভাবে হল, হোক চাচির যত বড় অপরাধ। তাই বলে তাঁকে মেরে আধমরা? মেনে নেওয়া যায় না এমন অনাচার। যা হোক, হাসপাতালে পৌঁছে প্রথমেই ইমারজেন্সিতে খোঁজ নিলাম। কারণ জানা আছে, প্রথমে এখানেই চাচিকে আনা হবে। চাচিকে খুঁজতে বেশি বেগ পেতে হল না। চাচির চারপাশ ঘিরে ডাক্তার নার্স গিজগিজ করছে। এলাহি কাণ্ড কারখানা চলছে চাচিকে নিয়ে। আমেরিকা এমন একটি দেশ, মানুষের জীবনের মূল্য এখানে সবার ওপরে। একজন রোগী ধনী কি গরিব—তা দেখার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসা খরচের ধার ধারে না, ধার ধারে শুধু রোগীর রোগটিকে। যমে মানুষে টানাটানি চলতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত একপক্ষ হার না মানে। যা হোক, আমি ও নীলা ইমারজেন্সিতে গিয়ে বহু কষ্টে অনুমতি পেলাম চাচির কাছে যাওয়ার। কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার নার্স তারাও কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কারণ চাচি একটি ইংরেজি শব্দও জানে না, ডাক্তাররা যাই জিজ্ঞাসা করছে, উনি কিছুই বলতে পারছে না, সমানে কেঁদে যাচ্ছেন। নীলাকে দেখে চাচি আরও জোরে হাউমাউ করে যা বললেন, আর উপস্থিত পুলিশ ও ডাক্তার থেকে যে ঘটনার বর্ণনা উদ্ধারে সক্ষম হলাম, তা শুনে আমি ও নীলার মনের অবস্থা, হে ধরণি দ্বিধা বিভক্ত হও। আমরা দুজন তার ভেতর লুকিয়ে যাই। ঘটনা হচ্ছে, চাচির সুগার লেবেল অনেক বেশি। ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছে, প্রতিদিন প্রচুর হাঁটাহাঁটি করতে। দেশে থাকতে উনি সকালে পাড়াময় হেঁটে বেড়িয়েছেন। এখানেও তাই করতে বেরিয়েছিলেন। শুধু জানা ছিল না, দেশের আর এখানকার আইনের তফাত।আজ সকালে উনি যখন বেরিয়েছিলেন, ফুরফুরে মনে এদিক-ওদিক হাঁটছিলেন। আর মুখের ভেতর ছিল পানে ঠাসা। আয়েশি ভাবেই চিবোচ্ছিলেন। চিবানোর ফলে মুখ ভরে উঠে ছিল পানের রসে। এমন সময় রাস্তায় দুজন পুলিশের মুখোমুখি হওয়ায়, পুলিশ দুজন চাচিকে সৌজন্য হিসেবে হাই বললেন, চাচিও আধুনিক কায়দায় হাই বলতে গিয়ে লাল টুকটুকে কিছু পানের পিক মুখ বেয়ে পড়ে গিয়েছিল। দুই পুলিশ তা দেখে, কিছুটা বিস্মিত হলো। ওদের বিস্ময় আমেজ কাটার আগেই চাচি পুরো পানের পিক পিচকারির মতো পুলিশের সামনেই ছপাৎ করে মাটিতে ফেললেন। ফেলার সঙ্গে সঙ্গে দুই পুলিশের মাথা খারাপ অবস্থা। তারা ভেবেছে চাচির ভয়ানক অবস্থা। হয়তো তক্ষুনি চাচির ভবের লীলা সাঙ্গ হতে যাচ্ছে। তাই এক মুহূর্ত দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে চাচিকে দুই পাশ থেকে ধরে ফেললেন। চাচি ঘটনার আকস্মিকতায় সম্পূর্ণ বেকুব। কারণ পুলিশ দুজন হাই বলেছে, উনিতো তাই বলেছেন। তাহলে এরা এমন করে তাকে ধরে বসল কেন? উনি যেহেতু ইংরেজি বলতে পারেন না। কিন্তু বাবাগো, মাগো বলে চেঁচাতে তো পারেন। উনি সমানে চেঁচামেচি আর গালি পাড়ছেন। পুলিশ বেচারা ভেবেছিল, এটা উনার যন্ত্রণার প্রকাশ। কাল বিলম্ব না করে পুলিশ অ্যাম্বুলেন্স কল করে চাচিকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে ভোঁ ভোঁ ভোঁ...।আমি ও নীলা কিছুটা ধাতস্থ হয়ে উপস্থিত সবাইকে বোঝালাম চাচির মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়ার আসল রহস্য। ওদের বললাম, চুইংগামের মতো এটিও একটি চিবিনো জাতীয় খাবার, যার নাম পান পাতা। যার সঙ্গে সুপারি, জর্দা নামক টোব্যাকো, খয়ের ও চুন লাগিয়ে চিবানো হয়। এটিও সিগারেটের মতন একজাতীয় টোব্যাকো। সিগারেট টানলে ধোঁয়া ছাড়ে আর এই পান জাতীয় টোব্যাকো চিবালে এক ধরনের লালা জমে। যেটাকে আমরা বলি পানের পিক, যা তোমরা ভাবছ রক্ত। উনি সম্পূর্ণ সুস্থ। তাঁকে দয়া করে ছেড়ে দাও। সব শুনে উপস্থিত প্রায় সবার এমন অবস্থা ধরেছে, মুখ কিছুটা হা আর বিস্ফোরিত নেত্র। এমন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে চাচিকে নিয়ে আমি ও নীলা বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। আর চাচি কান্নাকাটি ভুলে যত বাঙালি বিখ্যাত গালি আছে সব ঝাড়তে ঝাড়তে বীরদর্পে দুই ভাতজিসহ হাসপাতাল ত্যাগ করলেন। বাসায় যাওয়ার পথে আমি চাচিকে বোঝালাম, আমাদের এই দেশে যেখানে–সেখানে থুতু ও ময়লা ফেলা নিষেধ। নয়তো ৫০ ডলার জরিমানা করত। ওরা ভেবেছিল, আপনার মুখ ভরে রক্ত বের হচ্ছে, তাই এই এলাহি কাণ্ড ঘটেছে। শুধু টুকটুকে লাল রঙের পানের পিকের কারণে আজ আপনি জরিমানা থেকে বেঁচে গেলেন। চাচি সবকিছু বুঝে হু হু হা হা অট্টহাসি দিলেন। আমরাও চাচির সঙ্গে হাসতে হাসতে বাসায় ফিরলাম।
বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার পর তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের স্ত্রীসহ তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পুলিশের চার সদস্যকে আয়েশার বাবার বাড়িতে মোতায়েন করা হয়েছে।গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ওই বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।আয়েশা সিদ্দিকার চাচা আবু সালেহ বলেন, রিফাত শরীফ মারা যাওয়ার পর থেকেই আয়েশা সিদ্দিকা ও তার পরিবারের সদস্যরা হুমকির সম্মুখীন হয়। এ কারণে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়।এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।আয়েশা ও তার স্বজনদের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (এসআই) মো.কামাল হোসেন বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত পুলিশের একটি টিম আয়েশার ও তার স্বজনদের নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন ছিলেন। সকাল হওয়ার পর সেই টিমটি চলে যায় এবং আমিসহ তিন অস্ত্রধারী কনস্টেবল আয়েশা ও তার স্বজনদের নিরাপত্তায় এই বাড়িতে আছি।
হাঁটার জুতা পায়ে গলিয়ে চাবি নিয়ে বের হন জিনাত নাহার। সকালে হাঁটতে বেরোতেই হবে—ডাক্তারের নির্দেশ। ওজন না কমালে আর চলছে না। শুধু ডায়েট মেনে, মিষ্টি ছেড়ে সুগার কমানো যাবে না। আর সুগার না কমালে কোনো কিছুই ঠিক হবে না। ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস পর্যন্ত ডায়াবেটিসের জন্য বাড়ে—ছেলের বউ জানিয়েছে এ কথা। বউটাও ডাক্তার, গাইনোকোলজিতে এমডি করছে। খুবই যোগ্য মেয়ে, সুন্দরী, ভদ্র। ছেলে প্রেম না করলে অত বড়ঘরের মেয়ে বিয়ে করানো যেত না কোনোমতেই। বউয়ের বাড়ির সবাই উচ্চশিক্ষিত, বহুদিন ঢাকা শহরে থাকে, বাড়ি-গাড়ি—সবই আছে। কিন্তু ছেলের বাপের মত ছিল না এই বিয়েতে। অত বড়ঘরের মেয়ে বিয়ে করলে ছেলে বিক্রি হয়ে যাবে—এই ছিল তার ভয়। এসব অমূলক ভয়-সন্দেহকে মিথ্যা প্রমাণ করে বউটা খুব সুন্দর মানিয়ে নিয়েছে এই বাড়ির সবার সঙ্গে। কিন্তু ছেলের বাপ যেন তাতেও খুশি না। বউয়ের কোনো না কোনো দোষ ধরতেই হবে। জিনাত নাহার এই মানসিকতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, প্রায় তিরিশ বছর ধরে একজন মানুষের সঙ্গে সংসার করলে তার সম্পর্কে কিছুই অজানা থাকে না।লিফট দিয়ে নিচে নেমে গ্যারেজে রাখা গাড়িটার দিকে একপলক তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নেন জিনাত। ফ্ল্যাট কিনতেই হবে, গাড়ি একটা লাগবেই—ফয়সালের বাবার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ তার ছিল না। সংসারের সব ব্যাপারেই তার নিজের কথাই শেষ কথা, ফয়সালের বিয়ের আগে একটা আস্ত কুরুক্ষেত্র জিতে নিতে হয়েছে মা-ছেলেকে। শান্তি বজায় রাখার জন্য জিনাত সারা জীবন অনেক চুপ করে থেকেছেন, কিন্তু এই স্বৈরাচারের কবলে পড়ে ছেলে নিজের পছন্দের জীবনসঙ্গিনী পাবে না, এটা মানতে পারেননি তিনি।ধানমন্ডি এলাকায় থাকছেন বছর চারেক হলো, আগে মোহাম্মদপুরে থাকতেন। ভাড়া বাসায়। উত্তরায়ও ফ্ল্যাট দেখেছিলেন ফয়সালের বাবা। এটা কেনার পর বড় ননদ আর নন্দাই এসেছিলেন নতুন ফ্ল্যাট দেখতে। রান্নাঘর থেকে শুনেছেন, তাদের সঙ্গে উত্তরায় আর মিরপুরে দেখা ফ্ল্যাটের গল্প করছে ফয়সালের বাবা। তাকে যে জানাননি, তাতে তিনি রাগ বা বিরক্ত হননি, অভিমানের সম্পর্ক কোনো দিন ছিলই না তাদের মধ্যে। এসব অবহেলায় তাই বহুদিন ধরেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।ধীরে ধীরে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেন জিনাত। বউমা কয়েক দিন আগে বলছিল, আম্মা, আপনি একটা এয়ারফোন কিনে নেন, মোবাইলে গান শুনতে শুনতে হাঁটলেন। তিনি যে গান শুনতে পছন্দ করেন, সেটাও এই মেয়ের চোখ এড়ায়নি। এয়ারফোনের প্রস্তাব তিনি হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই শহরের পথঘাটের কোনো বিশ্বাস নেই, কানে এয়ারফোন লাগিয়ে রাস্তায় হাঁটার মানে হলো মরণের ওষুধ কানে বাঁধা। এক্ষুনি মরার কোনো ইচ্ছা তার নেই। নাতি-নাতনি হবে, তাদের লালন–পালন করবেন—চাঁদের হাটের মধ্যে বিছানায় শুয়ে মারা যাবেন তিনি, রাস্তায় পড়ে বেঘোরে মরা কোনো কাজের কথা নয়।হাঁটতে হাঁটতে দু-একজন পরিচিত ভাবির সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। তিনি হাসিমুখে সালাম আদান-প্রদান করেন, থেমে গল্প করেন না। অত সময় নেই, ফিরে গিয়ে নাশতা বানাতে হবে। মলিনার হাতের ভাজিটা তা-ও সহ্য হয়, রুটি তিনি নিজেই খেতে পারেন না। এত চেষ্টা করেও পাতলা রুটি বানানো শেখাতে পারলেন না মেয়েটাকে। সবদিকে পাতলা আর মাঝখানটা মোটা করে রুটি বেলে, সেঁকলে পরে ফুলতেই চায় না। তা ছাড়া ভাবিরা অধিকাংশ সময়েই পারিবারিক তথ্য জানতে চায়, ছেলের বউয়ের বাপের বাড়ি থেকে কী কী দিল—এসব জানতে চাওয়া তার পছন্দ হয় না।জিনাত নাহার নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন এই বউমাকে পেয়ে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানান, এই জমানায় এমন মেয়ে পাওয়াই যায় না যে এককথায় শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে রাজি হয়ে যাবে। ফয়সালের বাবা এই শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন। বউয়ের বাড়ি থেকে গয়না ছাড়া আর কোনো জিনিস নেওয়া যাবে না, আর বউকে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। প্রথম শর্ত নিয়ে জিনাতের দ্বিমত ছিল না, কিন্তু দ্বিতীয় শর্তটা অত পরিষ্কার করে বলার দরকার কী? একটাই ছেলে তাদের, বাপ-মাকে ফেলে যেত নাকি? এই শর্ত দিয়ে দেওয়াতে লাভের লাভ এই হয়েছে যে বউয়ের বাপের বাড়ির লোকেরা তাদের ছোটলোক ভাবার সুযোগ পেয়ে গেল, যদিও তাদের আচরণে কিছুই প্রকাশ করেনি।বউমা এরই মধ্যে পোয়াতি, ফয়সালের বাবা এখনো শোনেননি সে কথা। শুনলে কি-না-কি বলবেন, জিনাত ফয়সালকে বলেছেন এখনই কাউকে জানানোর দরকার নেই। বউমাও যেন না বলে। আজকালের মেয়ে, আবার নিজে গাইনোকোলজিস্ট, এসব ব্যাপারে রাখঢাক না-ই থাকতে পারে। রাস্তায় বসা এক ভিখিরিনিকে দেখে বউমার কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েটা ঢাউস পেট নিয়ে বসে আছে একটা ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে। কোলে আরেকটা বাচ্চা। জিনাত ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে বের হন না, এমনকি মোবাইল ফোনটাও সঙ্গে নেন না। আধঘণ্টা-পঁয়তাল্লিশ মিনিট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে এমন কিছু দুনিয়া উল্টে যাবে না। ইচ্ছা করলেও মেয়েটাকে কয়টা টাকা দেওয়া সম্ভব হলো না। আর কয়জনকেই-বা দেবেন, শহর ভরাই তো ভিক্ষুক।আন্টি, এই ঠিকানাটা কোন দিকে? জিনাত একটু বিরক্ত হয়েই থামেন। প্রশ্নকারী রাস্তা পার হয়ে এই দিকে এসেছে তাকেই উদ্দেশ্য করে। এত সকালে রাস্তায় দু-একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ভিখিরি আর রিকশাচালক ছাড়া তেমন কেউ নেই। তার ওপর আজ শুক্রবার, স্কুলে আর অফিসে যারা যায় রোজ সকালে, তারাও বাসায় ঘুমাচ্ছে এখন। তাই বাধ্য হয়েই তাকে থামিয়েছে মেয়েটা। ভালো করে তাকান তিনি, বছর আঠারো হবে বয়স, কুড়িও হতে পারে, হালকা-পাতলা গড়ন বলে বোঝা যাচ্ছে না। পিঠে ব্যাকপ্যাক, মুখে ঘাম, চুলগুলো পনিটেল করে রাখা, তবু এলোমেলো হয়ে গেছে।নিজের অজান্তেই কাগজটা হাতে নেন, একটা খাকি কাগজে বাজে হাতের লেখায় একটা বাড়ির নম্বর আর নাম লেখা। কোনো রোড নম্বর, ব্লক নম্বর—কিচ্ছু নেই। বিরক্তি চেপে যথাসম্ভব নরম করে বলেন, কীভাবে বলব? এখানে তো কোনো রাস্তার নাম নেই।মেয়েটা প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, এটা কি ধানমন্ডি না?হ্যাঁ, ধানমন্ডিই, কিন্তু ধানমন্ডি এলাকা তো অনেক বড়। রাস্তার নাম না জানলে কীভাবে ঠিকানা পাবা?মেয়েটা এক হাতে মুখ মুছে শ্বাস নেয়। করবেন না করবেন না ভেবেও একটা প্রশ্ন করেই ফেলেন জিনাত, বাসা কই তোমার?টাঙ্গাইল।মানে এই মেয়ে ঢাকায় থাকে না। বোঝা দরকার ছিল, ঢাকায় বড় হওয়া বাচ্চারা আরও চালাক-চতুর হয়, এমন রাস্তার নম্বর ছাড়া ঠিকানা খুঁজে বেড়ানোটা বড় ধরনের বেকুবির লক্ষণ।কার সঙ্গে আসছ ঢাকায়?একাই।কাকে খুঁজতেছ?মেয়েটা কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেলে। জিনাত কাগজের টুকরোটার দিকে তাকান, কারও নাম নেই। বিরক্ত হওয়ার বদলে তার মন দ্রবীভূত হয়। মফস্বলের মেয়ে, নিশ্চয়ই বাসা থেকে না বলে এসেছে, প্রেমিকের খোঁজে হবে। আহা রে! কিন্তু একে সাহায্য করার কোনো উপায় তার নেই।হাঁটা চালিয়ে যাবেন কি না, ভাবতে ভাবতেই একটা দমকা বাতাসের সঙ্গে একগাদা ধুলা এসে গায়ে লাগে। এবার বসন্ত বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে। যেকোনো ঋতুর প্রকটত্ব তাকে কৈশোরের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। অনেক বৃষ্টি হলে ভিজে ভিজে স্কুল থেকে ফেরার কথা মনে পড়ে, স্কুলে থাকতে তার কখনো ছাতা ছিল না। অত ভিজলেও সর্দিটর্দি তেমন লাগত না, শক্ত-সমর্থ ছিলেন। খুব রোদ উঠলে আরও ছোটবেলার দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে, কী গরমের মধ্যে রোজার মাস আসত, বড় ডেকচিতে বরফ দিয়ে রুহ আফজার শরবত বানানো হতো তাদের বাড়ির খোলা উঠানে। রান্নাঘরটা উঠান পেরিয়ে উল্টা দিকে, বিদ্যুৎ চলে গেলে বাড়ির সবাই উঠানেই পাটি আর পিঁড়ি পেতে বসত ইফতার করতে।কী রঙিন সেই সব স্মৃতি...অথচ সেই সময়ের ঢাকার স্মৃতি তার কাছে ধূসর। একটা দোতলা বাড়ির সামনে একটা ভক্সওয়াগন, বাড়িটার আঙিনায় বড় আমগাছ, পাতাগুলোতেও ধুলার আস্তরণ—কোন এলাকা, সেটাও আর এখন মনে নেই। এই ধূসর শহরে এসে সারা জীবন থাকতে হবে, এমন কথা ভাবেননি কোনো দিন। ছোটবেলায় ঢাকায় কেন এসেছিলেন, কার সঙ্গে, তা-ও এখন আর মনে নেই।তবে কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে একবার একা ঢাকায় এসেছিলেন, এই মেয়েটার মতোই প্রায় অচেনা কাউকে খুঁজতে। জীবনের নানা ঘটনার ঘনঘটায় ভুলেই গিয়েছিলেন সেদিনের কথা। কলেজের ইউনিফর্মের ওপর একটা রঙিন ওড়না পরে সেলাই করা ওড়না আর বেল্ট খুলে ব্যাগে ভরে নিয়েছিলেন। তখন এত বোরকা পরার চল ছিল না, বোরকা পরে পরিচয় গোপন করতে চাইলে আরও বেশি চোখে পড়ে যেতেন হয়তো। ক্লাসের নাম করে বেরিয়ে বাসে চাপলেন, সেই বাসও তেমন লক্কড়ঝক্কড় মার্কা, সকালে রওনা করে ঢাকায় পৌঁছাতে দুপুর হলো। গন্তব্য মেডিকেল কলেজ। সেটা বিরাট বড় জায়গা, শুধু নাম দিয়ে একজনকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।তবু সেই মানুষের হদিস পাওয়া গিয়েছিল, মানুষটাকে পাওয়া যায়নি যদিও-বা। তার পরিচিত একজন জিজ্ঞেস করলেন, কিছু জানাতে হবে কি না, কিংবা কিছু পৌঁছানোর থাকলে দিয়ে যেতে, বিকেলের দিকে ক্যানটিনে আসার কথা, চাইলে অপেক্ষাও করতে পারেন জিনাত—এ কথা বলে চা সাধলেন সেই প্রায় অপরিচিতের পরিচিত। কিন্তু অপেক্ষা করার মতো সময় ছিল না, সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরতেই হবে। জিনাত সেদিন খুব বেশি আশাহত হয়েছিলেন কি? না মনে হয়, দেখা হলেও-বা কী হতো? শুধু দেখাটাই হতো বড়জোর, এর বেশি কিছু নয়। প্রায় অপরিচিত সেই সুপুরুষ তার নামটাই জানতেন, তার মনের দশা নয়।সেই দিন সন্ধ্যা নয়, ফিরতে রাত হয়ে গেল। বাড়িতে তখন কান্নাকাটির রোল পড়ে গেছে। আব্বা থানায় গেছেন, বড় ভাইজান হাসপাতালে, আম্মা মাথা ঘুরে পড়েছেন বেশ কয়েকবার, জেঠি জায়নামাজে। ছোট ভাইজান না থাকলে বড় জ্যাঠা হয়তো সেদিন তাকে খুনই করে ফেলতেন।সেদিনের পর থেকে জোরেশোরে বিয়ের চেষ্টা শুরু হলো। পরীক্ষা শেষ হতেই বিয়ের তারিখ পড়ে গেল। জিনাতের আপত্তি ধোপে টিকবে না জেনে ছোট ভাইজান বললেন আবার পালাতে। কই যাব, জিজ্ঞেস করাতে রাগ-ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছোট ভাইজান বললেন, ‘সেই দিন কই গেছিলি? সেইখানে যা।’ তখন কেঁদে ফেললেও জিনাত স্পষ্ট বুঝতে পারছিলেন, তার কাটা ঘায়ে লেবু চিপে দেওয়ার জন্য বলা হয়নি কথাটা, নিষ্ফল অসহায় রাগ থেকেই বলেছিলেন, রাগটা তার ওপর নয় একেবারেই। বাবা-জ্যাঠাদের সঙ্গে তর্ক করা আর নিজের পায়ে কুড়াল মারা একই কথা, ছোট ভাইজান করতে পারেননি সে কাজ।চিন্তায় ছেদ পড়ে সাইরেনের আওয়াজে। কোথাও একটা আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। জিনাতের বুকের ভেতর কী যেন লাফাতে থাকে। আসার সময় গ্যাস অফ করে এসেছিলেন কি? সকালে হাঁটতে বেরোনোর আগে এক কাপ লেবু-চা খান তিনি, চিনি ছাড়া। মলিনা এত রাত পর্যন্ত কাজ করে, সকালে তাকে ডেকে ওঠাতে মায়া লাগে, তাই নিজেই করে নেন চা। এখন পর্যন্ত গ্যাস অফ না করে রান্নাঘর থেকে বেরোনোর রেকর্ড নেই তার, কিন্তু মানুষেরই তো ভুল হয়। মলিনা মাঝেমধ্যে চুলা কমিয়ে রেখে অন্যান্য কাজ করে, বকলে হাসে, বলে, ‘আম্মা, আবার ইট্টু পরেই জ্বালান লাগব, হুদাই ম্যাচ খরচ কইরা কাম কী?’ গ্রামের মেয়ে, লেখাপড়া করেনি, গ্যাস লিকের ঝুঁকির ব্যাখ্যা শুনেও পুরোপুরি বোঝে না।নাকি ইলেকট্রিসিটির শর্টসার্কিট? গ্যারেজে দারোয়ান একটা লাইন থেকে মাল্টিপ্লাগ দিয়ে অনেকগুলো জিনিস চালায়, মোবাইলে চার্জ দেয়, টেবিল ফ্যান চালায়। সেখান থেকে কিছু হলো না তো? জিনাত আর কিছু না ভেবে বাড়ির দিকে রওনা করেন। দ্রুত পায়ে।সাইরেনের শব্দটা কাছে চলে আসছে। হাঁটা আর দৌড়ের মাঝামাঝি গতিতে ছিলেন তিনি। এখন একেবারে দৌড় শুরু করেন। দোয়া ইউনুস পড়তে শুরু করেন মনে মনে। কোথায় আগুন লেগেছে, তা নিশ্চিত না হয়েই। ফয়সাল, ফয়সালের বউ তানিয়া, মলিনা, ফয়সালের বাবা—কিছু হলে ওরা সাততলা থেকে নামতে পারবে তো সময়মতো?পেছন থেকে মেয়েটা আকুল হয়ে ডাকতে ডাকতে দৌড় দেয়, ‘আন্টি, আমার ঠিকানাটা।’ আরও দু-একবার ডেকেছে সে, জিনাত শুনতে পাননি। এবার তিনি থেমে পেছন ফিরে হাত বাড়িয়ে কাগজটা দিতে চান, মেয়েটার হাতে পৌঁছানোর আগেই আরেকটা দমকা বাতাসে উড়ে যায় ঠিকানা লেখা ছোট্ট কাগজটা।
কষ্টের রংজুলি রহমানসারাক্ষণ কানে ঝিঁঝির নূপুর বাজেদাঁড়ালেই পড়ে যাব; অথচ মরণ জানিবহুদূরের পথ যার সান্নিধ্য খুব সহজ নয়;বেদনার রং নীল। আকাশ তা করল ধারণ!কষ্টের রং? যার বর্ণনা মেলে না।কারণ চোখের রেটিনায় তা থাকে না।হৃদয় খুবলে তোলা খুনে খুনেভিজে যায় মন-কেউ তা দেখে না।কষ্ট বড় আপন, লেপ্টে থাকে শরীরেএকান্তই আপনার ধন হয়ে।সুখ বিলাসী! পরাশ্রয়ী! সুযোগ সন্ধানী!তাই মনের কোঠায় সে নয় বন্দী পাখি—দুগ্ধ-কলায় মণিকাঞ্চন যোগে তারে করি লালন!কষ্টের রং আমার রং পীতনীল!শরীরে মিশে একাকার! তাই কামে-সঙ্গমে নিত্য ঘর-সংসার!কষ্ট বিনা বেঁচে থাকাই অসাড়!
শ্রীলঙ্কাকে ২০৩ রানে অলআউট করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তিনটি করে উইকেট পেয়েছেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ও ক্রিস মরিস।প্রথম সাত ম্যাচে জয় মাত্র একটি, বৃষ্টির কল্যাণে পাওয়া এক পয়েন্ট নিয়ে মোট পয়েন্ট মাত্র ৩। ২০১৯ বিশ্বকাপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা বিদায় নিয়েছে আগের ম্যাচেই। বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পরেই বোধ হয় তাদের মনে পড়ল, নিজেদের সেরা রূপটা একটু দেখানো উচিত! ব্যাটসম্যানরা কী করবেন সেটি পরের বিষয়, তবে বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকভাবেই করেছেন। শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করে দিয়েছে মাত্র ২০৩ রানে।শ্রীলঙ্কার পথ হারানোর শুরুটা করে দিয়ে গেছেন স্বয়ং তাদের অধিনায়কই। ইনিংসের প্রথম বলেই আউট দিমুথ করুণারত্নে। ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটা হয়েছে এরপরেই। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৭ রান যোগ করেছেন কুশল পেরেরা ও আভিস্কা ফার্নান্দো। এরপর বলার মতো আর একটি জুটিও দাঁড় করাতে পারেনি তারা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটিটি মাত্র ২৮ রানের!শুরু করেছেন মোটামুটি সব ব্যাটসম্যানই, কিন্তু বলার মতো সংগ্রহ দাঁড় করাতে হলে বড় ইনিংস খেলতে হতো ব্যাটসম্যানদের। সেটিই পারেনি তারা। সর্বোচ্চ ৩০ রান করেছেন কুশল পেরেরা ও আভিস্কা ফার্নান্দো। চার থেকে আটের মধ্যে তিনজন ব্যাটসম্যান ২০ পার হয়েছেন, কিন্তু কাজের কাজ করতে পারেননি কেউই। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন মুক্তহস্তে।দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে আজ সবচেয়ে সফল বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। পুরো ১০ ওভার বল করে মাত্র ২৫ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৩ ব্যাটসম্যানকে। এ বিশ্বকাপে পুরো ১০ ওভার বল করে প্রিটোরিয়াসের চেয়ে কম রান দেননি আর কেউ। ক্রিস মরিসও পেয়েছেন ৩ উইকেট। কাগিসো রাবাদা নিয়েছেন দুই উইকেট।সেমিফাইনালে ওঠার পথে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বলে আজ শ্রীলঙ্কার পরাজয়ই কামনা করছেন বাংলাদেশের সমর্থকেরা। প্রথম ইনিংস শেষে সে কাজটা নিজেরাই অনেকটা সহজ করে দিয়েছেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। বোলারদের লড়াই সফল করার দায়িত্বটা এখন আমলা-ডু প্লেসিদের ওপর।
দেশের হয়ে মেসি ভালো খেলেন না, ভালো খেলাটা বার্সেলোনার জন্য জমিয়ে রাখেন, মেসির দেশপ্রেম নেই— কত অভিযোগ মেসির বিরুদ্ধে! এমনও বলা হয়, আর্জেন্টিনার জাতীয় সংগীত গাইতেও মেসির অনীহা। আসলেই কি তাই?জোরে জোরে জাতীয় সংগীত গাওয়াকে অনেকেই দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন। ইতালির খেলোয়াড়দের দিকে তাকিয়ে দেখুন। ম্যাচের আগে ড্যানিয়েলে ডি রসি, জর্জো কিয়েলিনিরা চিৎকার করে করে জাতীয় সংগীত গাওয়াটা অভ্যাসের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তবে সবাই যে তাদের মতো চিৎকার করে জাতীয় সংগীত গান, তা কিন্তু নয়। তবে অধিকাংশের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অন্তত ঠোঁট নেড়ে জাতীয় সংগীত গাইছেন। কিন্তু লিওনেল মেসি তাও করেন না। জাতীয় সংগীতের সময় বরাবরই চুপচাপ থাকেন মেসি। নিন্দুকেরা তো এ নিয়ে মেসির দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।আসলেই কি মেসি জাতীয় সংগীত গান না? এর একটা ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে এক মাসকটের কাছ থেকে।ম্যাচের আগের জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় খেলোয়াড়দের হাত ধরে যেসব বাচ্চা ছেলে মেয়েরা সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, মাসকট তারাই। কোপা আমেরিকায় কাতারের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার ম্যাচে মেসির সঙ্গে যে মাসকটটা ছিল, সে-ই বলেছে, মেসি যে জাতীয় সংগীত একদমই গান না, ব্যাপারটা ঠিক না, ‘জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় ওর মুখ বন্ধ থাকলেও সে গুনগুন করছিল। ওর গুনগুন আমি শুনেছি। সে হয়তো মুখ নাড়িয়ে গানের কথাগুলো বলে না, কিন্তু গুনগুন ঠিকই করে।’নিজের আইডলকে দেখে যে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল মাসকট টমাস শাভেজ, সেটা প্রকাশ করেছে সে, ‘আমি অভিজ্ঞতাটা কখনোই ভুলতে পারব না। ও আমার মাথায় হাত বোলাল। ওর হাত আমার মাথার চেয়েও বড়, তাই সেটা নিয়ে ও হাসাহাসি করল। আমি ওকে আলিঙ্গন করে অনেক কিছু বললাম, যে আমি ওকে কত ভালোবাসি, ও আমার কত প্রিয়!
এক.কক্সবাজারে হোটেলের বিছানায় অয়নের গায়ে গা, পায়ে পা জড়িয়ে শুয়ে আছে দোলন। আজই তাদের প্রথম দেখা। অয়ন ঘুমিয়ে পড়েছে আগেই। সিলিঙের দিকে তাকিয়ে আনমনা দোলন ভাবছিল নিজের জীবনের কথা। মফস্বলের চৌহদ্দিতে বড় হয়ে ঢাকায় এসে শহরটাকে যখন খুব অপরিচিত ঠেকছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পা রাখা মাত্র আঠারো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেল। ক্লাস করে একদিন বাসায় এসে শুনল, ‘ওঠ ছুঁড়ি, তোর বিয়ে’। কেউ জানতেও চাইল না তার ইচ্ছা, অনিচ্ছার কথা। যেন এটাই স্বাভাবিক। অথচ আর সব মেয়ের মতো দোলনেরও অনেক স্বপ্ন ছিল। কলেজে পড়ার সময় শর্মিলা ম্যাডাম বলেছিলেন, ‘তোমরা কেউ শাড়ি, গয়নার পিছে সময় নষ্ট করবে না, নিজের পায়ে দাঁড়াবে।’ ম্যাডামের কথাগুলো সেদিন দোলনকে খুব নাড়া দিয়েছিল। সেরকমই আত্মনির্ভর হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করেছিল। অকস্মাৎ বিয়ে তার সেই সংকল্পে যেন কুঠারাঘাত করল। তা ছাড়া সম্পূর্ণ একটা অপরিচিত লোকের সঙ্গে বিয়ে, যার সঙ্গে কখনো, কোনো দিন আলাপ-পরিচয় হয়নি—এই ব্যাপারটাও মেনে নেওয়া কষ্টকর ছিল। আর সব মেয়ের মতো তারও স্বপ্ন ছিল, মনের মতো কোনো মানুষের সঙ্গে প্রেম, পরিণয় হবে। কিন্তু নিয়তির কাছে হার মেনে সংসার জীবন শুরু করতে হলো। সমাজের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত মোকাবিলার সাহস সেদিনের আঠারো বছরের দোলনের ছিল না। তবে সেদিন সেই অন্যায়ের কোনো প্রতিবাদ করতে না পারলেও, তার আত্মনির্ভর হওয়ার সংকল্প থেকে সে পিছপা হয়নি। আজ সে স্বাবলম্বী, ব্যস্ত চাকুরে। ঢাকায় সরকারি চাকরির পাশাপাশি নিজের ব্যবসাও আছে। সব মিলিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হয়। ব্যস্ততা যেন জীবনের শুরুতে সেই ভীষণ দুঃখবোধকে চাপা দিয়ে রাখে। অয়নের সঙ্গে দোলনের পরিচয় ফেসবুকে। সে চট্টগ্রামের একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করে। ফেসবুকে এক বন্ধুর দেয়ালে কোনো একটা বিষয় নিয়ে দুজনের প্রথমে তর্ক-বিতর্ক, সেই থেকে আলাপ, বন্ধুত্ব। বয়সে অয়ন দোলনের বেশ ছোট। ব্যক্তিজীবনে সেও বিবাহিত। তরুণ বয়সে প্রেম করে অয়নের বিয়ে হলেও কোথায় যেন একটা সুর কেটে গেছে। চাওয়া-পাওয়ার মাঝে যে ফারাক সেটা ক্রমে সংসার জীবনে দূরত্ব বাড়িয়ে তুলেছে। দায়িত্বের বেড়াজাল ধীরে ধীরে ঘিরে ধরেছে অয়নের চারপাশ। এই সময়ে দোলন এল তার জীবনে খোলা হাওয়া হয়ে। হৃদয়পটে যে মানবীর মূর্তি আঁকা ছিল অয়নের, দোলন যেন ঠিক তাই। বন্ধু হওয়ার কথা অয়নই বলেছিল প্রথমে।– বন্ধু হতে হলে কী করতে হবে? দোলনের সরল প্রশ্ন শুনে অয়ন থমকে গিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্য।–কিছু করতে হবে না, ‘এই লভিনু সঙ্গ তব সুন্দর হে সুন্দর’- শুধু এইটুকুতেই চলবে।দুই.ফেসবুকে দুজন অসম বয়সীর ভালো লাগা, বন্ধুত্ব ভালোবাসায় পরিণত হতে বেশি সময় নেয়নি। ‘বেশি বয়সের প্রেমের মতো’ তাদের প্রেম যেন বড় একলা, অনন্য। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মেসেঞ্জারে খোঁজ নেওয়া, তারপর সকাল গড়িয়ে দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, রাত ক্ষণে ক্ষণে কথা বলা-এ যেন ফিরে যাওয়া সেই না পাওয়া হারানো দিনগুলো ‘বাতাসে তোমার স্পর্শ ছেলেবেলার মতো ডাকছে, যখন দিনগুলো সহজে, কত সহজেই রঙিন হতো।’অবশেষে রূপকথার মতো বাস্তবে তাদের একদিন দেখাও হলো। কক্সবাজারে দোলনের একটা অফিশিয়াল মিটিং ছিল। অয়ন সেখানে গেল চট্টগ্রাম থেকে। বিমানবন্দরে প্রথম দেখা, সেখান থেকে পর্যটনের হোটেলে। দুজনের কেউ কাউকে আগে দেখেনি। অথচ মনে হলো কতদিনের চেনা; শুধু দেখা হওয়াটাই বাকি ছিল! সেই প্রথম দেখা, প্রথম চুম্বন, প্রথম মিলনের রেশ থেকে যায় বহুদিন। তারপর আধো পুনরাবৃত্তি। দোলন একদিন বোঝাল অয়নকে তাদের সম্পর্কটা আসলে ‘শেষের কবিতা’য় উপমা দেওয়া দিঘির জলের মতো অমিত আর লাবণ্যের সম্পর্ক ছিল যেমন- ‘শেষ পর্যন্ত অমিত বাবু স্বীকার করেন, লাবণ্যের সঙ্গে তাঁর প্রেম যেন দিঘির জল, সে জল ঘরে আনবার নয়, সেই জলে মন তার সাঁতার দেবে।’তবে মাঝে মাঝে দিঘির জলে সাঁতারেও দোলনের ক্লান্তি আসে, মেসেঞ্জারে দৈনন্দিন আলাপও মনে হতে থাকে একঘেয়ে। দোলন তখন একটু ছুটি চায়। দোলনের সঙ্গে নতুন জীবনের প্রাত্যহিক আলাপচারিতায় অভ্যস্ত অয়ন তখন বুঝতে পারে না, তার এ সময়ে কী করা উচিত। তার বদ্ধ জীবনে খোলা হাওয়া অকস্মাৎ যেন বন্ধ হয়ে যায়। খাঁচায় বন্দী পাখির পাশে বনে উড়ে বেড়ানো যে মুক্তবিহঙ্গ গান গেয়ে যায়, সে যেন হঠাৎ উড়ে যায় কোনো দূর অজানায়। সম্পর্কের টানাপোড়েনগুলো দুজনকেই খুব কষ্ট দেয়।তিন.দোলন-অয়নের গল্প এভাবেই আরও অনেক দূর এগিয়ে যায়। এই গল্পের শেষ কী আমরা জানি না। হয়তো বহুদিন পর তারা দুজন আবার কক্সবাজারেই ফিরে আসে যেখানে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। নিজ নিজ জীবন থেকে অবসর নিয়ে জীবনের শেষ কয়েকটা দিন তারা এখানেই কাটিয়ে দেয় একসঙ্গে। অথবা কেউ একজন আগে মারা যায়, আর অন্যজন সেই দিঘির জলের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকে পরানের গহিন ভেতর। ‘হয়তো হয়েছে স্তব্ধ সেই দিন, আমার এ নক্ষত্রের রাতহয়তো সরিয়া গেছে-তবু তুমি আসিবে হঠাৎগানের অনেক সুর-গানের অনেক সুর সমুদ্রের জলেঅনেক চলার পথ নক্ষত্রের তলে!’—জীবনানন্দ দাশ
তুরস্কের সমুদ্রসৈকতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার আয়লান কুর্দির ছোট্ট দেহটি নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিল গোটা বিশ্বকে, বিশ্ববিবেককে। সেই ঘটনারই যেন মর্মান্তিক পুনরাবৃত্তি, বরং আরও মর্মস্পর্শী। বাবা-মেয়ের দেহ ভেসে ভেসে ভিড়েছে নদীর তীরে। দুটি দেহই উপুড় হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে, অন্তিম মুহূর্তেও প্রিয় বাবার সঙ্গ ছাড়তে চায়নি মেয়ে শিশুটি, বাবার কাঁধে হাত রেখেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে সে। দুই বছরের শিশু এই মেয়েটির নাম ভ্যালেরিয়া। বাবা অস্কার মার্টিনেজ রামিরেজের সঙ্গে নদীতে শেষ হল ছোট্ট এই জীবন।অবৈধভাবে আমেরিকায় আসার বেপরোয়া কাফেলায় ছিলেন এল সালভাদরের নাগরিক অস্কার (২৫)। দুই বছর বয়সী মেয়ে ভ্যালেরিয়া ও ২১ বছরের স্ত্রীকে নিয়ে ২৩ জুন মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন তিনি। অবৈধ ও বিপজ্জনক অভিযাত্রায় রিও গ্র্যান্ডে নদী পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মৃত্যু হয়েছে অস্কার ও তাঁর মেয়ের। পরদিন ২৪ জুন তীরের কাছাকাছি বাবা-মেয়ের মরদেহ ভেসে ওঠে।দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে আমেরিকায়প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন বাংলাদেশি শিরিল আলম (২৪)। তিনি জানিয়েছেন, তিন মাস আগে দালালের মাধ্যমে তিনি ব্রাজিল থেকে আমেরিকায় আসার অভিযানে নেমেছেন। নানা বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে শিরিল সীমান্তের ওপার থেকে প্রথম আলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। জানিয়েছেন, এমন বহু অস্কারের লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন তিনি। প্রতিদিন বিপজ্জনক এই অভিযাত্রায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশি লোকজনও আছেন এই লাশের মিছিলে। আমেরিকার এই সীমান্ত দিয়ে গত এক বছরে কমপক্ষে দেড় হাজার বাংলাদেশিকে আটক করেছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। ভুয়া পাসপোর্ট আর জন্ম সনদ নিয়ে দেড় শতাধিক অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি আটক আছেন দক্ষিণ সীমান্তের ডিটেনশন সেন্টার বা আটক কেন্দ্রে। এদের অনেকেরই ডেন্টাল টেস্ট করে প্রকৃত বয়স নির্ণয়ের চেষ্টা চলছে।অস্কার মার্টিনেজ রামিরেজ মেয়েকে পিঠে নিয়ে নদী পার হতে চেয়েছিলেন। এ জন্য গায়ের টি-শার্টের ভেতরে ছোট্ট মেয়েটিকে ভালো করে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। আমেরিকায় ঢুকতে মরিয়া অস্কার শিশু সন্তানকে শরীরে জড়িয়ে খরস্রোতা রিও গ্র্যান্ডের পানিতে ঝাঁপ দিলেন। স্রোতের টানে পানিতে ডুবে যান অস্কার। স্ত্রীর চোখের সামনেই ভেসে যায় স্বামী-সন্তান। মেক্সিকোর মাতামোরোসের তামালিপাস রাজ্যের নদীর ধারে মিলেছে অস্কার ও তাঁর ছোট্ট মেয়ের মৃতদেহ।মেক্সিকোর এক আলোকচিত্রী সর্বপ্রথম মর্মস্পর্শী এই ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করেন। ছবিটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। গণমাধ্যমগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে প্রতিবেদন। এই ঘটনায় এল সালভাদর ও মেক্সিকো থেকে খোদ আমেরিকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইমিগ্রেশন নিয়ে দেশগুলোর চলমান নীতি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে চারদিকে।আমেরিকার বর্ডার পেট্রল চিফ কার্লা প্রভোস্ট মার্কিন কংগ্রেসকে জানিয়েছেন, চলতি বছর বিশ্বের ৫২টি দেশ থেকে অভিবাসীরা অবৈধপথে আমেরিকায় প্রবেশের চেষ্টা করেছে। জীবন নিয়ে আমেরিকায় প্রবেশের পর ডিটেনশন সেন্টারে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। শিশু-কিশোরদের মানবেতর পর্যায়ে কেন্দ্রে রাখার অভিযোগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সরগরম হয়ে উঠলে কাস্টম ও বোর্ডার প্রোটেকশন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান জন স্যান্ডার্স ২৫ জুন পদত্যাগ করেন। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর বলেছেন, তাঁর সরকার অভিবাসন প্রত্যাশীদের অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে আমেরিকায় অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে মেক্সিকো তেমন বাধা দেয় না। এ নিয়ে মেক্সিকো ও আমেরিকার সম্পর্কে টানাপোড়েনও আছে।আমেরিকামুখী ইমিগ্রান্টদের ঠেকানোর জন্য গত সপ্তাহে মেক্সিকো সীমান্তে ছয় হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। ২১ জুন মেক্সিকো পুলিশ ২০ জনের একটি আমেরিকা অভিমুখী দলকে গ্রেপ্তার করেছে। দক্ষিণ এশীয় এসব অভিযাত্রীর মধ্যে বাংলাদেশিরাও আছেন বলে মেক্সিকোর সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।সন্তান শরীরে জড়িয়ে মারা যাওয়া হতভাগা বাবা অস্কারের মৃতদেহের ছবি খোদ আমেরিকায় ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস তাঁর তাৎক্ষিনক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বাধ্য হয়ে এসব মানুষ আমেরিকায় আশ্রয়ের জন্য আসছে। কোন কোন ক্ষেত্রে চরম সহিংসতা আর পীড়নের শিকার হয়ে। আমেরিকায় আসার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, তোমরা ফিরে যাও। এটা অমানবিক ও আমাদের নৈতিক চেতনার ওপর বড় আঘাত।
২১ জনের কমিটি। ১১ জন পদত্যাগ করেছেন। বাকি ১০ জনের দুজন বাফেলো শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। আরও দুজন থাকেন নিউইয়র্ক নগরের বাইরে—একজন পেনসিলভানিয়ায়, অন্যজন স্ট্যামফোর্ডে। আরেকজন বহিষ্কৃত। সেই হিসেবে সমিতিতে নির্বাহী কমিটির সক্রিয় সদস্য সংখ্যা পাঁচজনের বেশি নয়। এই হচ্ছে ‘চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা’–এর বর্তমান সাংগঠনিক হাল। ২০১৭ সালের এপ্রিলে আট শ’র বেশি সদস্যের ভোটে নির্বাচিত কমিটির এখন কোনো কর্মকাণ্ড নেই বললেই। আছে শুধু প্রভাব বিস্তারের খেলা।চিটাগাং অ্যাসোশিয়েশনের বিরোধ বেশ পুরোনো। কখনো ভবন দখলের বিরোধ, কখনো পদ দখলের। কিন্তু সব বিরোধকে ছাপিয়ে গত দুই বছরে চট্টগ্রাম সমিতি পরিণতি হয়েছে নামসর্বস্ব একটা সংগঠনে। সমিতির গঠনতন্ত্র বলছে, এপ্রিলে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বর্তমান কমিটির। এরপরও দুই মাস ধরে সমিতির দায়িত্ব নিয়ে নির্ভাবনায় সভাপতি আবদুল হাই জিয়া।ব্রুকলিনের কেনসিংটনে ৫৪৫ ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউয়ে চট্টগ্রাম সমিতির অফিস। দুই বছরের মধ্যেচট্টগ্রাম সমিতি এখন ত্রিধারায় বিভক্ত। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সমিতির বিরোধের নানা তথ্য, নানা মত আর বিশ্লেষণ।চট্টগ্রাম সমিতির সদস্যদের অনেকের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের নিয়ন্ত্রণে এই সংগঠন। প্রায় তিন হাজার সদস্যের বেশির ভাগই এদের ইচ্ছায় কখনো ডানে, কখনো বামে যায়। সমিতির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এভাবে প্রভাববিস্তারী অনেক নেতা এলে গেলেও এখনো টিকে আছেন মোহাম্মদ হানিফ। সমিতির রাজনীতি মূলত আবর্তিত হচ্ছে তাঁকে ঘিরে। বিভিন্ন সময়ে অনেকে তার বিপক্ষে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজমকে (কাজী আজম) কেউ কেউ মোহাম্মদ হানিফের বিরোধী পক্ষ হিসেবে বিবেচনা করেন।চট্টগ্রাম সমিতিতে বড় ধরনের বিবাদ–বিরোধের শুরু বাড়ি কেনা নিয়ে। ১৯৯৭ সালে সমিতির জন্য বাড়ি কেনা নিয়ে জটিলতা থেকে মেরুকরণ হয় নেতৃত্বের। পাঁচ বছর ধরে আদালতে মামলা চালিয়ে জটিলতা কাটলেও এ সময়ের বাড়ি ভাড়া চলে যায় বিবাদী পকেটে। আইনি জটিলতার কারণে সে অর্থ আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সময়ে নানা জটিলতা মোকাবিলা করলেও, ২০১৭ সালের এপ্রিলের নির্বাচনে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করেছে চট্টগ্রাম সমিতি। প্রায় ২ হাজার ৮০০ সদস্য থাকলেও নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় আট শ বা ২৯ শতাংশ। আকবর-তাহেরের নেতৃত্বে নির্বাহী কমিটি সে সময় নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানা বিতর্কের জন্ম দেয়। দুই মেরুর মানুষ মোহাম্মদ হানিফ এবং কাজী আজম এক হয়ে পক্ষ নেন সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের সমর্থিত জিয়া-সেলিম পরিষদের।এদিকে, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে সভাপতি আকবর আলীর আস্থাভাজন প্যানেল জাহাঙ্গীর-বিল্লাহ পরিষদ। ক্ষমতাবলে সভাপতি নির্বাচন কমিশনের প্রধানসহ তিনজনকে বাদ দিয়ে আবার কমিশন গঠন করেন। কমিশনের বাদ দেওয়া সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনের পথে চলতে থাকে সাধারণ সম্পাদকের সমর্থিত প্যানেল জিয়া-সেলিম পরিষদ। আগে থেকে নির্ধারিত নির্বাচনের দিনে যুক্তরাষ্ট্রে পেশাদার ভোট সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠান ‘অনেস্ট ব্যালট’–এর মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। এবং তাদের পুরো প্যানেলকে বিজয়ী ঘোষণা করে সভাপতির বাদ দেওয়া নির্বাচন কমিশনের প্যানেল। ভোটের আগের রাতে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় জাহাঙ্গীর-বিল্লাহ পরিষদ। কিন্তু ভোটের দিন সন্ধ্যায় সভাপতি গ্রুপের দখলে থাকা সমিতির অফিসে কণ্ঠভোটে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে এই পরিষদ। এভাবে চট্টগ্রাম সমিতি কঠিন বিভেদের বেড়াজালে ঢুকে পড়ে বলে মনে করেন সমিতির অনেক সদস্য ও শুভানুধ্যায়ী।২০১৭ সালের নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম সমিতির সদস্যরা একের পর এক মামলায় জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় সমিতির অফিস দখল পাল্টা দখলের খেলা। হামলা পাল্টা হামলা চলে দীর্ঘদিন। একসময়, আদালতের নির্দেশে সমিতির দখল নেয় জিয়া-সেলিম পরিষদ। আদালতে এ নিয়ে আর আপিল না করার সিদ্ধান্ত নেয় জাহাঙ্গীর-বিল্লাহ পরিষদ।২০১৭ সালে প্রায় ৭১ শতাংশ সদস্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে ছিল। দুই পক্ষের স্বতঃস্ফূর্ত ভোট হলে ভোটারের উপস্থিতি আরও অনেক বেশি হতো বলে মনে করা হয়। জিয়া–সেলিম পরিষদ সমিতির অফিস দখলে নেওয়ার পর শুরু হয় নিজেদের মধ্যে বিরোধ। সভাপতি আবদুল হাই জিয়াকে অসাংগঠনিক ও আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি দাবি কমিটির অনেক সদস্যের। তাদের দাবি, বিগত কমিটির কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে হিসাব–নিকাশের বিষয়টি তিনি আমলে আনেননি বলে সমিতি অন্তত আড়াই লাখ ডলারের হিসাব পায়নি। অন্যদিকে, জিয়া সমর্থিতদের অভিযোগ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিমের অনুগতরা শুরু থেকেই সমিতির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করেছেন। সাধারণ সম্পাদক কমিটির কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে সমিতির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সরিয়ে নিয়েছেন।জাহাঙ্গীর-বিল্লাহ পরিষদের সঙ্গে সাংগঠনিক ও আইনি যুদ্ধে জয়ের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে জিয়া-সেলিম পরিষদে বিরোধ দেখা দেয়। সে বছরের নভেম্বরে ইদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন নিয়ে কমিটির বৈঠকে বিতর্ক এবং এরপর চূড়ান্ত বিভক্তি। শুধু এই একটি বিষয় নিয়ে জিয়া-সেলিম পরিষদে বিভক্তি—এটি মানতে নারাজ সমিতির অনেকেই। তারা মনে করেন, এখানেও হানিফ-আজম ফ্যাক্টর। তারা এক হয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সময়ে পরাজিত আবদুল হাই জিয়া আর মোহাম্মদ সেলিম যেভাবে সমিতির ক্ষমতা পেয়েছেন, এখন আবার তাদের বিভক্তিতে জিয়া-সেলিমের যেকোনো একজন ছিটকে যাবেন—এটাই স্বাভাবিক।মোহাম্মদ সেলিম তাঁর ১১ অনুসারীকে নিয়ে সভাপতির আচরণের বিরোধিতা করেছেন। তাদের অভিযোগ যত না সভাপতির বিরুদ্ধে, তার চেয়ে বেশি মোহাম্মদ হানিফের বিরুদ্ধে। একসময় এই ১১ জন পদত্যাগ করেন কমিটি থেকে। সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও এ দলে আছেন একজন সহসভাপতি, দুই যুগ্ম সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সাংগঠনিক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক এবং বাকিরা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য। এদের দাবি, জিয়া ও তার অনুগতদের ওপর প্রভাব বিস্তার করছেন মোহাম্মদ হানিফ। তিনি কমিটিকে ব্যবহার করে সমিতির ট্রাস্টি বোর্ডের দখল নিয়েছেন। এদিকে, জিয়া বিরোধীদের পক্ষ নেন কাজী আজম।২৯ শতাংশের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বে আবার ফাটল। ১১ জন পদত্যাগীকে যদি অর্ধেকও ধরা হয়, তাহলে বাকি ১৪ শতাংশ সদস্য সমর্থিতরা এখন দায়িত্বে আছে চট্টগ্রাম সমিতির। তাও মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায়।চট্টগ্রাম সমিতির দায়িত্বে থেকে হিসাবে নয়ছয় করেছে বিভিন্ন কমিটি। এ নিয়ে অনুসন্ধানে নানামুখী বক্তব্য পাওয়া গেছে। নিরপেক্ষভাবে তথ্য ও সেই সঙ্গে প্রমাণপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা ছিল। সমিতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষিত হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। যখন যে কমিটি দায়িত্ব পেয়েছে, তারা নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমিতির স্বার্থ গৌণ হয়ে গেছে। হিসাব নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত আকবর-তাহেরের কমিটি। নতুন কমিটির কাছে তাদের দুই বছরের আয়–ব্যয়ের কোনো হিসাব তারা দেয়নি।চট্টগ্রাম সমিতির এখন বেহাল দশা। কেউ বলছেন, এর পেছনে কাজ করছে অর্থ। কারওর মতে পদ। ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণই মূল লক্ষ্য। বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে এপ্রিলে। দুই মাস পার হলেও নির্বাচন হচ্ছে কিনা, এ নিয়ে সংশয় কাটছে না সমিতির সাধারণ সদস্যদের। এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কমিটির সভাপতি জিয়ার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি খোকন কে চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাদের সময়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব করে একটি সাধারণ সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি এ সভা আয়োজনের দিনক্ষণ নিশ্চিত করতে না পারলেও বলেছেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সমিতিকে পুরোনো রূপে ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন তাঁরা। তাঁর মতে, সমিতি পরিচালনার জন্য সংগঠক দরকার। স্বচ্ছতা দরকার। যারাই নেতৃত্বে আসুন, গঠনতন্ত্র মেনে চললে চট্টগ্রাম সমিতিতে কোনো সংকট থাকবে না।খোকন কে চৌধুরী স্বীকার করেন, সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরোধের জেরে চট্টগ্রাম সমিতি এই মুহূর্তই সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। এ জন্য তিনি আকবর আলী-আবু তাহেরের কমিটিকে দায়ী করে বলেন, নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে নানা জটিলতা তৈরি করে এই কমিটি চট্টগ্রাম সমিতির দীর্ঘদিনের সব অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের সময়ে সমিতির যত আয়–ব্যয়, তার হিসাব না দিয়েও তারা সমিতির কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের কমিটি থেকে আয়–ব্যয়ের হিসাব কেন নেয়নি জানতে চাইলে খোকন বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে ধকল গেছে, সেটি সামাল দিতে, মামলা মোকদ্দমা মোকাবিলা করতে করতে কয়েক মাস চলে যায়। এরপর যখন আমাদের কমিটি আগের কমিটির কাছ থেকে হিসাব–নিকাশ বুঝে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তখন শুরু হয় নিজেদের মধ্যে বিরোধ। সেটা সামাল দিতে দিতেই নিজেদের মেয়াদ শেষ হয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে, কমিটির সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।কমিটির পদত্যাগী সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিমও দাবি করেন, আকবর আলী-আবু তাহেরের কমিটি চট্টগ্রাম সমিতির বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। তারা দুই বছর ধরে ৩টি মেলা, ৩টি বনভোজন করল। বাড়ি ভাড়া পেল প্রতিবছর ৮০ হাজার ডলারের বেশি। অথচ কোনো হিসাব দেয়নি। এই হিসাব চাওয়ায় নিজেদের মধ্যে বিরোধ। সেলিম মনে করেন, তাঁর কমিটির সভাপতি এবং সব সময় সমিতিতে ক্ষমতাধর থাকতে চান এমন কিছু সদস্য বিগত কমিটির সভাপতির সঙ্গে আঁতাত করার কারণে হিসাব পায়নি সমিতি। তিনি বলেন, ‘আমরা সদস্যদের কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কিন্তু, দায়িত্বে গিয়ে দেখি কিছু মানুষের ষড়যন্ত্রে সেটি মোটেও সম্ভব নয়। তারা আমাদের যেকোনো ভালো উদ্যোগের বিরোধিতা শুরু করায় শেষে আমরা পদত্যাগ করি।’চট্টগ্রাম সমিতির বিগত কমিটি আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেওয়াকে বড় ইস্যু মনে করেন সমিতির সাধারণ সদস্যরা। তবে, আকবর আলীর কমিটির কোষাধ্যক্ষ মোক্তাদির বিল্লাহ (যিনি জিয়া-সেলিম পরিষদের প্রতিপক্ষ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন) বলেন, তিনি দায়িত্বে থাকাকালে সমিতির তহবিল নিয়ে কোনো অনিয়ম হয়নি। নতুন কমিটিকে হিসাব বুঝিয়ে দেওয়া নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘কার কাছে হিসাব দেব? যে কমিটি সমিতি দখল করেছে, তাদের আমরা বৈধ মনে করি না। সমিতির অর্থতো আমরা যার–তার হাতে তুলে দিতে পারি না।’চট্টগ্রাম সমিতি প্রসঙ্গ এলেই ঘুরেফিরে আসে মোহাম্মদ হানিফ ও কাজী আজমের নাম। বলা হয়, এ দুজন নিজেদের প্রভাব টিকিয়ে রাখতে কলকাঠি নাড়েন। সমিতির সবশেষ কমিটিতে বিরোধের মূললেও এই দুজন, মনে করেন সমিতির বেশির ভাগ সদস্য। আর এ বিরোধের মূলে রয়েছে ট্রাস্টিবোর্ড গঠন। মোহাম্মদ হানিফ দীর্ঘদিন থেকে ট্রাস্টিবোর্ড তার নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। সেখানে কাজী আজমের অনুসারীদের অবস্থান সমানুপাতিক করার চেষ্টা থেকে বিরোধের উৎপত্তি—এমন দাবিও কম জোরালো নয়।কাজী আজম অবশ্য এমন দাবি সত্য নয় মন্তব্য করে বলেন, চট্টগ্রাম সমিতিতে এখনকার সংকট কোনো বিবাদ বা বিরোধ নয়। এটি সাংগঠনিক দূর্বলতা। এ কারণে, কমিটির বেশির ভাগ লোক সরে দাঁড়িয়েছে। নতুন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য আমার সঙ্গে মুরব্বিরা যোগাযোগ করছেন। আশা করি, শিগগির আবার চট্টগ্রাম সমিতিতে প্রাণ ফিরে আসবে। মোহাম্মদ হানিফের সঙ্গে এক হয়ে জিয়া-সেলিম পরিষদকে সমর্থন দেওয়ার কয়েক মাসের মাথায় আবার জিয়ার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিমসহ ১১ জন কমিটি থেকে কেন সরে দাঁড়িয়েছিলেন, সে বিষয়ে সবাইকে জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে হামলার ঘটনা ঘটল।’ তিনি চট্টগ্রাম সমিতির বর্তমান পরিস্থিতির জন্য জিয়ার নেতৃত্বকে দায়ী করেন। মোহাম্মদ হানিফের সঙ্গে বিরোধ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান।চট্টগ্রাম সমিতির ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন মোহাম্মদ হানিফ। ট্রাস্ট্রিবোর্ড গঠনের পর থেকে এখানে তার নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট। বললেন, ‘আমি চট্টগ্রাম সমিতির নির্বাহী কমিটি সভাপতি থাকাকালে এই ট্রাস্ট্রিবোর্ড করেছি। চট্টগ্রাম সমিতি ভবনের প্রতিটি বালুকণায় আমার ঘাম। এ সমিতি নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। ২০০৮ সালে আমি দায়িত্বে থাকাবস্থায় নির্বাচন দিলে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। মামলা হয় আমাদের বিরুদ্ধে। একটা পক্ষ সমিতিকে তাদের ক্ষমতা আর আয়ের অবলম্বন বানাতে চায়। সমিতির ভবন থেকে ৭ হাজার ডলার আয় হয়। আমি মনে করি, যত দিন আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি, এ অর্থ লুটপাট হয়নি। খবর নিয়ে দেখুন, আমি যখন ট্রাস্টিবোর্ডে ছিলাম না, সে সময়ের অর্থ কোথায়?’মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘সমস্যা আমি নই। সমস্যা হচ্ছে সিস্টেম। আমি ট্রাস্টিবোর্ডে থেকে এ অর্থ একটি পৃথক অ্যাকাউন্টে রাখার ব্যবস্থা করেছিলাম। তাতে করে ভবনের ইউটিলিটি খরচ বাদ দিয়ে পুরো অর্থের একটা হিসাব থাকে। বিভিন্ন সময়ে এই অ্যাকাউন্ট বাদ দিয়ে ভবনের আয় যোগ হয়েছে সমিতির অ্যাকাউন্টে। এরপর আর সেসবের হিসাব নেই।’সমিতিতে বিরোধ, বিভেদ দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ হানিফ ভবিষ্যতে আর চট্টগ্রাম সমিতির কোনো কর্মকাণ্ডে থাকবেন না জানিয়ে বলেন, শিগগিরই সমিতির সাধারণ সদস্যদের সভা ডাকছে বর্তমান কমিটি। সেখানেই তিনি এই ঘোষণা দেবেন।হানিফ বলেন, ‘আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে, আমরা নির্বাচন উপযোগী সমাজের বাসিন্দা নই। চট্টগ্রাম সমিতির নির্বাচন আমাদের মধ্যে বিভেদ বাড়িয়েছে। হাজার হাজার ডলার খরচ করে নির্বাচন করে আমরা বিভক্তি কিনেছি। মুখ দেখাদেখি বন্ধ আমাদের। মামলার পর মামলায় সব শেষ। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।’
আহারে বেচারা! প্রথম দর্শনে আপনিও হয়তো এমনটাই বলবেন। বলার কারণও আছে। রুপসজ্জাটা যথেষ্ট মানিয়ে গেছে বটে। যেখানে অতিব্যবহারের কারণে গায়ে চেক হাফ শার্টটি মলিন। কাঁধে গামছা। চোখে মুখে যথেষ্ট ক্লান্তির ছাপ। বাসের জানায় পাঁপড় বিক্রি করছেন যুবক। এই যুবকই হলেন হৃতিক রোশন।‘সুপার থার্টি’র শুটিংয়ের দৃশ্য ছিল এটি। আসছে ১২ জুলাই মুক্তি পাবে। তার আগে শুটিংয়ের বিশেষ মুহূর্তের ছবি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছেন হৃতিক রোশন। সংগত কারণে ভাইরালও হয়েছে তাঁর এ ছবিটি।হৃতিকের এ ছবির শুরু থেকেই নানা কারণে আলোচনায় আসছে। বারবার এর মুক্তির তারিখ নির্ধারণ হয়েও পিছিয়ে গেছে। মুক্তির আগে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্যান্টম ফিল্মসের অভ্যন্তরীণ জটিলতা, আবার কখনো বা পরিচালক যৌন হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত হচ্ছেন। গুয়াহাটিতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি) চারজন শিক্ষার্থী সিনেমাটি মুক্তির তারিখ স্থগিত চেয়ে নতুন একটি মামলা করেছেন। এ কারণে কোনোভাবেই স্বস্তি পাচ্ছিলেন না হৃতিক। অভিযোগকারীদের দাবি, সত্যিকার ঘটনার অবলম্বনে বলা হলেও সিনেমাটিতে গল্পের গরমিল রয়েছে।ভারতীয় গণিতজ্ঞ আনন্দ কুমারের জীবনের ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হয়েছে সুপার থার্টি। সেই আনন্দ কুমার, যিনি দুস্থ, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আআইটির প্রবেশিকায় বসার জন্য বিনা পারিশ্রমিকে অঙ্ক শেখান। আনন্দ কুমারের দাবি অনুসারে, তাঁর তত্ত্বাবধায়নে প্রায় ৩০জন শিক্ষার্থীকে আইআইটিতে ভর্তি করিয়েছেন। প্রায় আট মাস আগে এই চার শিক্ষার্থী আনন্দ কুমারের ওই ৩০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৬ শিক্ষার্থীর নাম জানতে চেয়ে গুয়াহাটি উচ্চ আদালতে একটি মামলা করেন। এর উত্তর চেয়ে আদালত আনন্দ কুমারের নামে একটি নোটিশও জারি করেন। যদিও আনন্দ কুমার আদালতে যাননি এবং মামলাটিও বর্তমানে ঝুলে আছে। এখন ওই চার শিক্ষার্থী নতুন করে এই মামলা দায়ের করেছেন। ছবিতে দেখা যায় সমাজের নিচুতলার ছেলেমেয়েদের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য প্রস্তুত করেন আনন্দ। ছবিতে হৃতিক অভিনয় করেছেন বিহারের একজন অঙ্ক শিক্ষকের ভূমিকায়। আর গল্পের প্রয়োজনে গ্ল্যামার মুখাবয়ব ছেড়ে আনন্দের চেহারার ছাঁচে নিজেকে ঢেলেছেন হৃতিক। গলার স্বর বদলেছেন।বেশ কয়েক বছর হৃতিকের কোনো ছবি মুক্তি পায়নি বলিউডে। খানদের দাপট তো আছেই, সঙ্গে যোগ হচ্ছে হাঁটুর বয়েসি নতুন নতুন নায়কের ভিড়বাট্টা। এমন পরিস্থিতিতে ‘সুপার থার্টি’ দিয়ে নিজের করা জায়গাটা উদ্ধার করতে চাইছেন রাকেশ রোশন পুত্র। আর এ জন্য যথেষ্ট চেষ্টাও করছেন। এর মধ্যে পরিচালক বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ ওঠার কারণে হৃতিক নিজেই পরিচালক বিকাশ বহেলের নাম ছবি থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন। কঙ্গনা রানাউতের সঙ্গে ঝগড়া ফ্যাসাদ এড়িয়েছেন হৃতিক, মুখ বুজে সহ্য করে গেছেন। ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘সুপার থার্টি’ মুক্তি দেবেন। কিন্তু কঙ্গনা ওই দিনই ‘মণিকর্ণিকা’র মুক্তি ঘোষণা করেন। সম্মুখ সমর এড়িয়ে হৃতিক ছবি পিছিয়ে দেন। আবার দ্বন্দ্ব তৈরি হয় কঙ্গনার ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’র সঙ্গে। এবারও হৃতিক তাঁর নিজের অবস্থান বদলান। নিজের পুনঃপ্রতিষ্ঠা আর আসন্ন ছবির জন্য কোনো উটকো বিষয়কে পাত্তা দিতে চাইছেন না তিনি। সব মিলে বলা চলে অভিনেতা হৃতিকের কাছেও এ ছবি একটা পরীক্ষা। তিনি ছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করেছেন মৃণাল ঠাকুর, নন্দীশ সিং, অমিত সাধ, পঙ্কজ ত্রিপাঠি, বিজয় বর্মাসহ আরও অনেকে।২০০০ সালে প্রথম ছবি ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’-এর মাধ্যমে তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন হৃতিক। তাঁর অভিনীত ‘ধুম টু’, ‘যোধা আকবর’, ‘মিশন কাশ্মীর’ ইত্যাদি ছবি বক্স অফিসে বাম্পার ব্যবসা করে এবং নন্দিত হয়। হৃতিকের বাবা প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক রাকেশ রোশন। ১৯৭৪ সালের ১০ জানুয়ারি মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন বলিউডের এই জনপ্রিয় অভিনেতা। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস।
আমেরিকার স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে জীবনের ২৭টি বছর চলে গেছে আহমেদ হোসেন বাবুর। ২৬ জুন দেশের মাটিতে পা রাখার পর পুরোনো বন্ধু–স্বজনদের আলিঙ্গনে সিক্ত হয়েছেন তিনি। মার্কিন ইমিগ্রেশন বিভাগ গ্রেপ্তার করে তাঁকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।নিউইয়র্কে বাংলাদেশি জনসমাজের পরিচিত ও প্রিয়মুখ আহমেদ হোসেন বাবুকে ২৪ জুন মার্কিন ইমিগ্রেশন বিভাগ অনেকটা দ্রুততার সঙ্গেই দেশে পাঠিয়ে দেয়। স্ত্রী, দুই সন্তান আর জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ের সমাজ কোলাহল থেকে একজন অভিবাসীকে এভাবে বিচ্ছিন্ন করাকে মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। আমেরিকার বিদ্যমান আইনে পরবর্তী ১০ বছর আসতে পারবেন না তিনি। যদিও ইমিগ্রেশন আইনের কঠোরতায় ব্যত্যয়ঘটাতে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সীমিত সুযোগ আছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।ডিপোর্টেশন কাঁধে নিয়ে ইমিগ্রেশন আদালতে গেলে আইস পুলিশ আহমেদ হোসেনকে আগের সপ্তাহে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের ডিপোর্টেশন অর্ডার বা বহিষ্কারের আদেশ ছিল। ম্যানহাটন থেকে গ্রেপ্তার করে তাঁকে নিউজার্সির ডিটেনশন সেন্টার বা আটক কেন্দ্রে রাখা হয়। শারীরিকভাবে অসুস্থ এই বাংলাদেশির সঙ্গে তাঁর পরিবারকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় তাঁকে ডিটেনশন কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। দুই কিশোর সন্তান নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় পড়েন তাঁর স্ত্রী তুহিন সেলিনা আখতার। কিশোর ছেলে স্বর্গ (১৫)শুরুতে কিছুটা জানলেও মেয়ে শান্তি (৯) পরে বাবার গ্রেপ্তার সম্পর্কে জেনে মন খারাপ হয়েছে। তাঁর মেয়ে ফেসবুকে বাবার মুক্তি দাবি করে পোস্ট দিয়েছে। নিউইয়র্কের জনসমাজ, আহমেদ হোসেনের প্রবাসী বন্ধু স্বজনেরা সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। শান্তি ২৭ জুন বৃহস্পতিবার তার বাবার ফেসবুক দেয়ালে লিখেছে—বাবা মিস ইউ!রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র আহমেদ হোসেনের (৫৮) দেশের বাড়ি নওগাঁয়। তাঁর পরিবার ঢাকার মিরপুরে থাকেন। সরকারি চাকরি ছেড়ে ১৯৯১ সালের দিকে তিনি আমেরিকায় আসেন। এ দেশে নানা ইমিগ্রেশন কর্মসূচির ফাঁদে পড়ে তাঁর গ্রিনকার্ড হয়নি। উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন অর্ডার হয়েছে। মার্কিন নাগরিক সেলিনা আখতারকে বিয়ে করলেও নানা আইনি জটিলতায় তাঁর গ্রিনকার্ডপ্রাপ্তি দুরূহ হয়ে উঠে।আহমেদ হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর দ্রুততার সঙ্গে ইমিগ্রেশন বিভাগ আমেরিকা থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। ডিটেনশন কেন্দ্র থেকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। ২৪ জুন তাঁকে জেএফকে বিমানবন্দরে কোরিয়ান এয়ারলাইনের একটি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেওয়া হয়। কোন এক বিমানযাত্রীর ফোন দিয়ে বাবু তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথা বলতে সক্ষম হোন। স্ত্রী তুহিন সেলিনা দ্রুত তার আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফ্লাইটের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত কোন আইনগত আবেদন ইমিগ্রেশন বিভাগ না পাওয়ায় তাঁর স্বদেশ যাত্রা নিশ্চিত হয়ে উঠে। এ সময় ক্ষুব্ধ সেলিনা অভিযোগ করেন, আইনজীবী সঠিক সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এমনটি ঘটেছে।নিউইয়র্কে আহমেদ হোসেন নানা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁকে নিয়ে এমন অপ্রত্যাশিত সংবাদে নিউইয়র্কে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাতে সংবাদটি ছাপা হওয়ার পর শত শত প্রবাসী প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন। তাঁর পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগও নেন অনেকেই।২৮ জুন সন্ধ্যা ৭টায় সাহিত্য একাডেমির মাসিক আসরে আহমেদ হোসেনের স্ত্রী সেলিনা তাঁর মেয়ে তামান্না আহমেদ শান্তিকে নিয়ে উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। এই আসরে তাঁর আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর প্রতিনিধিকেও উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আহমেদ হোসেন ও তাঁর পরিবারের এমন একটি বিপর্যয়ের সময়ে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি মানুষ আন্তরিকতা নিয়ে পাশে এসে দাঁড়াবেন বলে প্রত্যাশা করেছে সাহিত্য একাডেমি ।আহমেদ হোসেনের আইনজীবী সেত্রি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আইন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি নাসরীন আহমেদ প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে জানান, আহমেদ হোসেনের জটিল ইমিগ্রেশন বাস্তবতায় তাকে শুনানিতে উপস্থিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর উদ্যোগ ইমিগ্রেশন বিভাগ দ্রুত নিয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে তাকে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথাসময়ে ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে তাদের নোটিফাই করেনি। যদিও শুক্রবারেই আহমেদ হোসেনের বিতাড়ন ঠেকানোর জন্য একটি আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বলে নাসরীন জানান।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে বলে জানা গেছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন।সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের এক পক্ষ সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ তোলেন।অন্যদিকে ড. সিদ্দিকুর রহমানের পক্ষ এসব অভিযোগ নাকচ করে দেন। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ৫০১ সদস্য বিশিষ্ট উদ্‌যাপন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন সিদ্দিকুর। এরপরই নতুন করে দুই পক্ষের বিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠে।২৬ জুন জ্যাকসন হাইটস পালকি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. আলী সিদ্দিকী লিখিত বক্তব্যে সিদ্দীকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা কায়কোবাদ, মনজুর চৌধুরী, মেসবাহ উদ্দিন, ফরিদুল আলমসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ২০১১ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। কমিটির মেয়াদ ৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। সম্ভাব্য নতুন কমিটি গঠনের প্রাক্কালে ড. সিদ্দিকুর রহমান ২৫ জুন সংবাদ সম্মেলন ডেকে তাঁর একক সিদ্ধান্তে কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি ও পদোন্নতি দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে তিনি সংগঠনের চেইন অব কমান্ডকে চ্যালেঞ্জ করছেন। কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কমিটিতে কোন ধরনের সংযোজন-বিয়োজন করার এখতিয়ার সভাপতি নেই। তিনি সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রবিরোধী করেছেন। এ সময় তারা ড. সিদ্দিকুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।অভিযোগের বিষয়ে ড. সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, ‘আমরা কমিটিতে কোন পদোন্নতি দিইনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী পালন, প্রতিবারের ন্যায় জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে তাঁকে সংবর্ধনা এবং বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে একটা উদ্‌যাপন কমিটি গঠন করা হয়েছে।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন। একই দিনে ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইতিমধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।ড. সিদ্দিকুর রহমান ২৫ জুন নিউইয়র্ক নগরের জ্যাকসন হাইটস পালকি পার্টি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এবং প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক আগমন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচির কথা সাংবাদিকদের জানান। পাশাপাশি সংগঠনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে শূন্যপদ পূরণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যেমন সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব বণ্টন করেন। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ৫০১ সদস্য বিশিষ্ট উদ্‌যাপন কমিটি করবের বলে সাংবাদিকদের জানান।
আমেরিকার ২০২০ সালের সেন্সাস বা আদশশুমারির সময় নাগরিকত্ব আছে কি না—ট্রাম্প প্রশাসনের এমন প্রশ্ন রাখা যথার্থ নয়। ২৭ জুন সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে বলেছে প্রশাসনের এ নির্দেশনা যথার্থ নয়। আমেরিকার নাগরিক আন্দোলনের জন্য এটাকে বিরাট বিজয় বলে মনে করা হচ্ছে।সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে থেকে বিষয়টি নিয়ে আরও ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কমার্স বিভাগের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস আদালতের নির্দেশনায় লিখেছেন, সেন্সাসে নাগরিকত্ব প্রশ্নে আরোপের যথেষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।নিউইয়র্কে নাগরিক অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন ড্রাম আদালতের এ নির্দেশনাকে অভিনন্দন জানিয়ে উচ্ছ্বাসপপ্রকাশ করেছে।ড্রামের অন্যতম রিচালক কাজী ফৌজিয়া প্রথম আলোকে জানান, আমেরিকায় চলমান নাগরিক আন্দোলনে আদালতের এ নির্দেশনা একটা বিরাট বিজয়।সেন্সাস থেকে সিটিজেনশিপ বা নাগরিকত্ব প্রশ্ন বাতিলের বিষয়টি উচ্চ আদালতে বাধাগ্রস্ত হওয়াকে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য পরাজয় বলে মনে করা হচ্ছে। ড্রাম আদালতের এ নির্দেশনা নিয়ে বিজয় উৎসবের ডাক দিয়েছে। ২৭ জুন ড্রাম জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় বিজয় উৎসব করছে।
নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটির এশিয়ান ও ল্যাটিনো কমিউনিটির একটি প্রতিনিধি দল সিটির কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিশেষ পরামর্শক জিম জনসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। ২৬ জুন আটলান্টিক সিটির সিটি হলে জিম জনসনের সভা কক্ষে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এশিয়ান কমিউনিটির পক্ষে আবদুর রফিক, জহিরুল ইসলাম বাবুল, পঞ্চম ওয়ার্ড থেকে সিটি কাউন্সিলের প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ী আনজুম জিয়া, ষষ্ঠ ওয়ার্ড থেকে সিটি কাউন্সিলের প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ী সোহেল আহমদ ও সাংবাদিক সুব্রত চৌধুরী, জে সোধা, সাই ম্যাক, পাম নাইগন, বারট লোপেজ, ক্রিস্টিয়ান মরেনো উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ আটলান্টিক সিটির বিভিন্ন কমিটিতে যোগ্যতার নিরিখে এশিয়ান ও ল্যাটিনো প্রতিনিধিদের সম্পৃক্তকরণ, আটলান্টিক সিটির বিভিন্ন বিভাগে যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত এশিয়ান ও ল্যাটিনোদের দক্ষতা ও যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়নপূর্বক তাঁদের পদোন্নতিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, সব কমিউনিটির ব্যবহার উপযোগী কমিউনিটি সেন্টার স্থাপনের বিষয় জিম জনসনের কাছে দাবি উপস্থাপন করেন। জিম জনসন কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনেন এবং তাঁদের উত্থাপিত দাবি যথাযথ পর্যালোচনাপূর্বক সংশ্লিষ্টদের জানাবেন বলে জানান। কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ তাঁদের সাক্ষাতের সময় দেওয়া ও বক্তব্য শোনার জন্য জিম জনসনকে ধন্যবাদ জানান।
আটলান্টিক সিটিতে ২০ জুন ছিল দ্বাদশ গ্রেডের বাংলাদেশি-আমেরিকান শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের দিন। ওই দিন সকালে আটলান্টিক সিটি হাইস্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত প্রায় চার শ শিক্ষার্থীর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় হার্ডরক ক্যাসিনোর বিশাল মিলনায়তনে।গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হওয়াদের মধ্যে বাংলাদেশি-আমেরিকান শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। সকাল থেকেই বাংলাদেশি-আমেরিকান শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েশন গাউন পরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে সমবেত হতে থাকেন। পূর্বসূরি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবারও উত্তরসূরি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জয়জয়কার।এই জয়জয়কার অবস্থার মধ্যে আপন আলোয় উদ্ভাসিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই কৃতি শিক্ষার্থী অরিত্র চৌধুরী ও ঋত্বিক মজুমদার। তাঁরা মেধার স্বীকৃতি হিসেবে সেরা দশের তালিকায় যথাক্রমে তৃতীয় ও সপ্তম স্থান করে নিয়েছেন। এই দুই কৃতি শিক্ষার্থীর পাশাপাশি আঁচল সেনগুপ্ত, এরিয়া রহমান, আদনান আকরাম, ফেরদৌসী আখতার, ইসরাত জেবিন প্রমুখের কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলও কমিউনিটিতে বেশ সাড়া ফেলেছে। এই শিক্ষার্থীরা তাঁদের কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ আমেরিকার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ লাভ করেছে।এসব কৃতি শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য সবার দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করেছেন।
নিউইয়র্কে লাখ লাখ মানুষ বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে। কয়েক দশক ধরে বাড়ির মালিক বা ল্যান্ডলর্ডরা ভাড়াটিয়াদের ওপর ইচ্ছা মতো নানাভাবে জোরজুলুম করে যাচ্ছে। ইচ্ছেমতো মাসিক বাড়ি ভাড়া বাড়ানো, অগ্রিম টাকা বা সিকিউরিটি ডিপোজিট নেওয়া এবং যখন খুশি ভাড়াটিয়াদের বাড়ি থেকে তাড়ানোসহ নানা অন্যায় সিদ্ধান্ত ভাড়াটিয়াদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। নতুন আইন বাস্তবায়নের ফলে বাড়িওয়ালাদের সেই দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও অবসান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।ভাড়াটেদের সুরক্ষার জন্য নিউইয়র্ক সিনেট এবং অ্যাসেম্বলিতে ‘হাউজিং স্ট্যাবিলিটি অ্যান্ড টেনেন্ট প্রোটেকশন অ্যাক্ট অব ২০১৯’ ২১ জুন পাস হয়েছে। সিনেটে বিলটি পাশ হয়েছে ৩৬-২৬ ভোটে এবং অ্যাসেম্বলিতে ৯৫-৪২ ভোটে। বিলটি সিনেট এবং অ্যাসেম্বলিতে পাশ হওয়ার পর পর গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর অফিসে পাঠানো হয়। গভর্নর কুমো তাৎক্ষণিক বিলটিতে সাক্ষর করলে এটি আইনে পরিণত হয়েছে।এই বিলটি পাশের মাধ্যমে শুধু রেন্ট-রেগুলেটেড বা ভাড়া নিয়ন্ত্রিত বাসাবাড়িতে বসবাসরত ভাড়াটিয়াদের স্থায়ী সুরক্ষা দেবে না। এই বিলটি সব বাসা বা বাড়ি বসবাসরত ভাড়াটিয়াদের স্থায়ী সুরক্ষা দেবে। ৭৪ পৃষ্ঠার এই বিলটিতে নিউইয়র্কে সব ভাড়াটিয়াদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করা আছে।এবার জানা যাক, এই বিলটি পাশের কারণে আপনার কী কী সুবিধা হবে—আবেদনপত্র ফি: আগে আপনাকে বাড়ি ভাড়ার জন্য আবেদন করতে গেলে ল্যান্ডলর্ড ইচ্ছেমতো ফি নিত।ফি-এর পরিমাণ ছিল ৫০ ডলারথেকে ৩০০ ডলার পর্যন্ত। আবার ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের জন্য অতিরিক্ত অর্থ নিত। হাউজিং স্ট্যাবিলিটি অ্যান্ড টেনেন্ট প্রোটেকশন অ্যাক্ট অব ২০১৯ পাসের কারণে আপনাকে ২০ ডলারের বেশি দিতে হবে না। এই ২০ ডলার শুধু আবেদনপত্র ফি-ই না এবং ব্যাকগ্রাউন্ড চেক ফিও বটে।চুক্তি ভঙ্গ বা লিজ ভায়োলেশন: আগে আইন অনুযায়ী ভাড়াটিয়া লিজের কোন শর্ত ভঙ্গ করলে তা ১০ দিনের মধ্যে সমাধান করতে হতো। নতুন আইনে আপনি যদি আপনার লিজে উল্লেখিত কোন শর্তভঙ্গ করেন, তাহলে বাড়ির মালিক আপনাকে শর্তভঙ্গের সমাধান করতে ৩০ দিন সময় দিতে বাধ্য।সিকিউরিটি ডিপোজিট বা অগ্রিম অর্থ প্রদান: আগে বাড়ির মালিকেরা নতুন ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে সিকিউরিটি ডিপোজিটের জন্য বিভিন্ন অনুপাতে অর্থ নিত। উপরন্তু বাড়ি ছেড়ে দিলে সেই অর্থ ফেরত পাওয়া যেত না। ল্যান্ডলর্ড নানা অজুহাতে সে অর্থ হাতিয়ে নিত। নতুন আইনে ল্যান্ডলর্ড এক মাসের বেশি ভাড়ার অর্থ সিকিউরিটি ডিপোজিটের জন্য নিতে পারবে না। অধিকন্তু বাড়ি ছেড়ে দিলে সেই অর্থ সহজেই ফেরত পাওয়া যাবে।ইভিকশান প্রোটেকশন বা বাড়ি তাড়ানো সুরক্ষা: আগে কোন ভাড়াটিয়া যদি সমান সাইজের বাসা বা বাড়ি আশপাশে না পেত, তাহলে আদালত তাকে ছয় মাসের সময় দিত। যাতে সে পুরোনো বাড়ি ছেড়ে অন্যত্রে চলে যায়। নতুন এ আইনের কারণে আদালত এখন ভাড়াটিয়াদের এক বছর সময় দেবে, যাতে করে ভাড়াটিয়া সমান সাইজের বাসা বা বাড়ি আশপাশে পাওয়ার যথেষ্ট সময় পায়।তা ছাড়া এই বিল আপনার সুরক্ষার জন্য আইনের মোটামুটি সব ফাঁক-ফোকর বন্ধ করে দিয়েছে। যেমন ধরুন, অপ্রয়োজনীয় এমসিআই বা মেজর ক্যাপিটাল ইমপ্রুভমেন্টস বা আইএআই বা ইনডিভিজুয়্যাল অ্যাপার্টমেন্ট ইমপ্রুভমেন্টস এই বিলের মাধ্যমে স্থগিত করা হয়েছে।
জালালাবাদ ‍স্ট্রিটের পর নিউজার্সির প্রবাসীবহুল প্যাটারসন সিটিতে এবার বাংলাদেশের নামে হলো ‘বাংলাদেশ বুলেভার্ড’। ২২ জুন বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ বুলেভার্ড’ নামের সড়কটির। এ উপলক্ষে জমজমাট উৎসবের আয়োজন করেছেন প্যাটারসনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। উৎসবে আশপাশের অঙ্গরাজ্য থেকে প্রবাসীরা যোগ দেন।বাংলাদেশি-আমেরিকান কাউন্সিলম্যান শাহিন খালিকের প্রস্তাবে গত স্বাধীনতা দিবসে প্যাটারসন সিটি কাউন্সিলে বাংলাদেশের নামে সড়ক করার বিলটি পাস হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী সমাবেশে ছিলেন সিটির মেয়র আন্দ্রে শায়েগ। জাতিসংঘেনিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসাও উৎসবে যোগ দেন।শনিবার স্থানীয় ওয়েন অ্যাভিনিউতে (টোটোয়া ও ইউনিয়ন অ্যাভিনিউর মাঝে) আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেলা তিনটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলাদেশ বুলেভার্ড’–এর নামফলক উম্মোচন করা হয়। কাউন্সিলম্যান শাহিন খালিকের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাসুদ বিন মোমেন, সাদিয়া ফয়জুননেসা, নিউজার্সির অ্যাসেম্বলিওম্যান শাভোন্দা সাম্পটার, প্যাসিস কাউন্টির শরিফ রিচার্ড ব্রেডনেক প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এরপর র‌্যালি বের করা হয়। ব্যানার হাতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা র‌্যালিতে অংশ নেন।শাহিন খালিক বলেন, চলতি বছরের ২৬ মার্চ প্যাটারসন সিটি হলে তাঁর প্রস্তাবে স্থানীয় ইউনিয়ন অ্যাভিনিউয়ের একাংশের নামকরণ বাংলাদেশের নামে ‘বাংলাদেশ বুলেভার্ড’ ওয়ে (সড়ক) প্রবর্তনের প্রস্তাবটি বিল আকারে পাশ হয়। পরে ২২ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে এই ওয়ের উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত হয়। ‘বাংলাদেশ বুলেবার্ড’ ওয়ের উদ্বোধনের দিনটিকে ঐতিহাসিক দিন হিসেবে উল্লেখ করে শাহীন খালিক। তিনি নিউজার্সির প্যাটারসনে স্কুলগুলোতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য হালাল খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা ও ইসলামি শিক্ষা ক্লাসের ব্যবস্থা করাসহ স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির কল্যাণে নেওয়া তার নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন।সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরী, প্যাটারসনের বোর্ড অব এডুকেশনের কমিশনার জাবেদ রহিম, মুক্তিযোদ্ধা এম এ করীম, সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী, ইভেন্ট অর্গানাইজার এনাম চৌধুরী, নিউজার্সির বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটি নেতা জুবায়ের আলী, আলাউর রহমান, লোকমান হোসেন, মারুফ আবেদীন প্রমুখ।অনুষ্ঠানে বক্তারা কাউন্সিলম্যান শাহীন খালিকের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে তাকে আবার সিটি কাউন্সিল নির্বাচিত করা আহ্বান জানান। এ সময় বক্তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থার জন্য সিটি প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।সাংস্কৃতিক পর্বে বাংলাদেশের অভিনেতা ‘ওমর সানী ও মৌসুমী’ ছাড়াও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রিজিয়া পারভীন, বাউল শিল্পী কালা মিয়াসহ প্রবাসী শিল্পীরা অংশ নেন।চার দশক থেকে প্যাটারসনে বসবাস করেন সিলেটের মামুন আহমেদ। আনন্দ উচ্ছ্বাসে তিনি জানালেন, ‘আমাদের পূর্বসূরিরা এই নগরে এসে জীবনের নোঙর করেছিলেন। শিল্প কারখানায় একসময়ে অগ্রসর প্যাটারসন নগর ছিল আমাদের অভিবাসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।’ এখানে ৫০ বছর থেকে বসবাসরত তার পরিবারের সদস্যরা একাত্তর সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সভা সমাবেশ করেছেন উল্লেখ করে হেলডন সিটির কাউন্সিলর তাহসিন আহমেদের বাবা আমীন আহমেদ বললেন, ‘আজ আমাদের গর্ব করার দিন। আমাদের পূর্বপুরুষদের পদচিহ্ন আছে যে সড়কে, সেখানে এখন উচ্চারিত হবে বাংলাদেশের নাম প্রতিটি ক্ষেত্রে।’বেশ কয়েক বছর আগেই প্যাটারসন নগরে আরেকটি সড়কের নামকরণ ‘জালালাবাদ ‍স্ট্রিট’ করা হয়। এ নগর ও নগর সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি আছেন বলে ধারনা করা হয়।
এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে আমাদের সফরটা বেশ রোমাঞ্চকর হয়ে উঠছে। ইংল্যান্ডের আবহাওয়া ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে সুন্দর। আমরা উপভোগ করছি।এই তো আমি, আমাদের মেয়ে আলায়না আর আমাদের মারিও ভিল্লাভারায়নের (বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ) স্ত্রী দিন্নি এখানে স্ট্রবেরি খামার ঘুরে এলাম। আলায়না খুবই খুশি। স্ট্রবেরি খেতে পেয়ে যত–না খুশি, তার চেয়ে বেশি খুশি স্ট্রবেরির ছবি তুলতে পেরে। সাকিব এবারের বিশ্বকাপে ভালো করছে, আমিও তা উপভোগ করছি। একটি বাদে সব খেলাই মাঠে গিয়ে দেখেছি। দুই দিন সাকিব সেঞ্চুরিকরেছে। মাঠে গিয়ে খেলা দেখা আমিও খুব উপভোগ করি। তবে আমার চেয়ে বেশি খুশি হয় আলায়না।বাংলাদেশ দলের সব খেলোয়াড়ের মনোভাবই এবার এক রকম—ভালো খেলতে হবে, সেমিফাইনালে যেতে হবে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচের দিন বৃষ্টি হওয়ায় সবারই মন খারাপ ছিল। তবে ওই দিন সাকিবের চোট (ইনজুরি) ছিল। খেলা নিয়ে আমি সাকিবকে বেশি কিছু বলি না। সাকিবও আমাকে তেমন কিছু বলে না। শুধু আমি বলি ফিফটি করলে শতরান করতে হবে। ও যখন ৭০-৮০ রান করে আউট হয়, তখন আমার মন খারাপ হয়। আমি বলি সেঞ্চুরি করতে। আরও বলি ফিফটিকে সেঞ্চুরি বানাতে হবে।সাকিব সত্যিই ভালো করছে। আজ (গত সোমবার) তো আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫টি উইকেট নিল সাকিব। তার আগে করল অর্ধশত। এমন রেকর্ড তো এর আগে করেছেন শুধুই একজন (যুবরাজ সিং, ভারত)। বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে প্রথম ১ হাজার রান করেছে সাকিব। আবার বিশ্বকাপে ১ হাজার রান ও ৫০ উইকেট শুধুই সাকিবের দখলে। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচটি আমি মাঠে বসে দেখতে পারিনি।বিশ্বকাপে সাকিবের এমন খেলায় আমরা সবাই খুশি। শুধু আমরাই নই, আমি জানি বাংলাদেশের প্রত্যেকেই খুশি। সাকিবের সাফল্যে, বাংলাদেশ দলের বিজয়ে। তবে এসব আনন্দ উপভোগ করার সময়ও তেমন একটা নেই। এখনই আবার স্যুটকেস গোছাতে হবে। আবার শহর থেকে আরেক শহর, এক হোটেল থেকে আরেক হোটেল।সব মিলিয়ে এবার আমার বিশ্বকাপ দারুণ লাগছে। সাকিবের ফর্ম এবার বেশ ভালো। তবে সাকিব বলে, ‘আমি চাই দলের জন্য অবদান রাখতে। আমার কারণে যেন দল জেতে।’দলের জয়টাই ওর কাছে বড়। নিজের রেকর্ডের দিকে সাকিবের খেয়াল নেই। ওর একমাত্র নজর বাংলাদেশের বিজয়ের দিকে। আমরাও সেটা চাই—সাকিব ভালো করুকবাংলাদেশ জয়লাভ করুক।অনুলিখিত
আটলান্টিক সিটিতে সুহৃদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি আটলান্টিক সিটির চেলসি হাইটে কমিউনিটি নেতা বিপ্লব দেবের উদ্যোগে এই সুহৃদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে ছিল বারবিকিউ, আড্ডা, আবৃত্তি, সংগীত অনুষ্ঠান ইত্যাদি। আটলান্টিক সিটির বিভিন্ন সংগঠনের কর্তা ব্যক্তিরা ছাড়াও কমিউনিটির সর্বস্তরের লোকজন এই সমাবেশে যোগ দেওয়ায় একপর্যায়ে তা সম্প্রীতি সমাবেশের রূপ নেয়। সুহৃদ সমাবেশে অংশ নেওয়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন—আটলান্টিক সিটির পঞ্চম ওয়ার্ড থেকে সিটি কাউন্সিলের প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ী আনজুম জিয়া, ষষ্ঠ ওয়ার্ড থেকে সিটি কাউন্সিলের প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ী সোহেল আহমদ, পুলিশ কর্মকর্তা ও ফ্রি হোল্ডার প্রার্থী সুমন মজুমদার, সাউথ জার্সি মেট্রো আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম শাহজাহান, আওয়ামী লীগের নেতা সাব্বির হোসেন ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীর হোসেন ভূঁইয়া, আবদুল জামিল, পলাশ চৌধুরী, এনামুল হক এনাম, শেখ শিমুল, বিএনপির নেতা মো. সেলিম, সৈয়দ মো. কাউসার, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব আটলান্টিক কাউন্টির সভাপতি শহীদ খান, সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাঞ্চন বল, রিপাবলিকান দলের নেত্রী রওশনউদদীন, লায়ন্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফারুক তালুকদার, আল হেরা মসজিদের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ওবায়দুল্লাহ চৌধুরী, গীতা সংঘের সভাপতি উত্তম দাশ, লেখক ও সাংবাদিক সুব্রত চৌধুরী, সাংবাদিক মো. শাহীন প্রমুখ।সুহৃদ সমাবেশে সংগীত পরিবেশন করেন শীলা আজিজ, জয়ন্ত সিংহ, কাজী লিটন প্রমুখ। কবিতা আবৃত্তি করেন প্রদীপ দে, পলাশ চৌধুরী।
কৈশোরের সেই দুষ্টুমি ভরা দিনে কোনো এক ব্যাপারে মাকে মিথ্যা বলেছিল মৃত্তিকা। তারপর সেদিন যখন বৃষ্টি এল, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মৃত্তিকার সমস্ত শরীর গোটা গোটা হয়ে ফুলে উঠল। হয়তো সেদিন বৃষ্টির পানিতে অথবা বাতাসে অ্যালার্জির মাত্রাটা একটু বেশি ছিল। কিন্তু ছোট মৃত্তিকার মনে হলো যে, সে মাকে মিথ্যা বলেছে। গোটা দানাগুলো এতটাই বড় হয়েছিল যে সে ভয়ে মাকে বলতে পারেনি। তবে নিজের কাছে আর মিথ্যা না বলার প্রতিজ্ঞা করেছিল। মৃত্তিকা তার জীবনের সঙ্গে প্রকৃতির এক গভীর সম্পর্ক খুঁজে পায়। সে ভীষণ ভাবে অনুভব করে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মতো, প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব এক পরিমণ্ডল আছে। আর সেখানেই প্রতিবিম্বিত হয়ে ফিরে আসে তার নিজস্ব কর্মফল। এখানেই জীবন আর প্রকৃতির মিলিত যোজন। জীবনের কিছু অদৃশ্য সমীকরণ আছে, আর কখনো কখনো সে সমীকরণের সংজ্ঞাটা মৃত্তিকার কাছে দুয়ে দুয়ে চারের মতো মিলেও যায়। যেমন সত্য-মিথ্যা, পাপবোধ, কখনোবা বাস্তব অথবা স্বপ্ন।পৃথিবী যেমন গোল, আর তেমন সবকিছুই ঘটে চক্রাকারে এবং সব ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াও হয় সমানুপাতে। কেউ হয়তো তাৎক্ষণিক পায়, কেউ দেরিতে। মৃত্তিকার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকই ঘটে। মৃত্তিকা এমনই এক প্রকৃতির সন্তান। ভোলা-ভালা মৃত্তিকাকে প্রকৃতিই বাতলে দিয়েছে চলার পথ, শিখিয়েছে ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যার তফাত। শিখিয়েছে নত আর সহানুভূতিশীল হতে। ছোটবেলায় অন্ধকার, ভূতের ভয় অথবা ঘুমালে বোবা ভূতে ধরার পর মনে মনে দোয়া পড়ে মুক্তি লাভ করলেও, যতই বড় হচ্ছে তত জীবনবোধ তার কাছে একটা সরল রেখায় এসে মিলে যাচ্ছে। রেখা বিচ্যুত হলে সঙ্গে সঙ্গেই সে তার শাস্তিও পাচ্ছে। সে তার নিজের মাঝেই টের পায় অতি প্রাকৃত কিছু। আর সবচেয়ে ভয় পায় তার নিজের মুখের কথাকে। এমনই অসংখ্য অভিজ্ঞতার মাঝে কিছু কিছু ঘটনা যা আজও মৃত্তিকাকে নাড়া দিয়ে যায়। এই যেমন এসএসসি পরীক্ষার পর যখন মৃত্তিকা নানা বাড়ি গেল, তখন খালাদের সঙ্গে এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে দেখে সে বাসায় একজনের পক্স হয়েছে। এই প্রথম পক্স কী এবং কেমন সেটা জানল। বাসায় আসার পথে খালাদের একটু গর্ব করেই বলল যে তার কখনো এমন কোনো বড় রোগ হয়নি। কী আশ্চর্য, বাসায় আসার পর আবিষ্কার করল তার পেটে একটা ছোট, গোলাকার হলদে রঙের ফাঁপা ডিবা! নানুকে ডেকে দেখাতেই তিনি বললেন, এটা তো পক্স। এ শুনে খালারা তো অবাক। নিজের অহংবোধের এত দ্রুত পতনে, মৃত্তিকাও বিস্ময়ে একটু ধাক্কা খেল। আরেকবার ছোটখাটো এক ব্যাপারে মৃত্তিকা সমানে চিৎকার করে যাচ্ছে তাদেরই বাসায় আশ্রিত এক আত্মীয়ের সঙ্গে। আর ঠিক সে সময় মৃত্তিকার কানের পাশ দিয়ে সাঁই করে সিলিং থেকে নিচে পরে গেল হেভি লাইট শেডটা। হতভম্ব হয়ে যায় সে! ওটা তো পড়ে যাওয়ার কথা নয়। আর ওটা মাথার ওপর পড়লে সে নির্ঘাত মারা যেত। আধা আঙুলের ব্যবধানে সে আজ বেঁচে যায়, আর তখন তার মনে হয় যে, সে অন্যায় ভাবে কাউকে কষ্ট দিচ্ছে।ঘুমালে আত্মা নিশ্চয় প্রকৃতি থেকে আগাম খবর পায়, কী হতে যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে। মৃত্তিকার সত্য হওয়া স্বপ্নের ব্যাকগ্রাউন্ড সব সময় অসম্ভব রকমের কালো হয়। জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর এক স্বপ্নে সে দেখে, হঠাৎ আকাশটা অনেক নিচে নেমে এসেছে। একটা ট্রাকের ওপর থেকে তার বাবা বলছে, মা আমার জন্য দোয়া করো, আমি চলে যাচ্ছি, আমাকে ওরা ভালো রাখছে। বাবার গা থেকে তীব্র গন্ধ বের হচ্ছিল। সেই শেষ রাতের ভয়ংকর স্বপ্নের সকালে, মৃত্তিকা খবর পায় তার অপ্সরীর মতো সুন্দর আর নিষ্পাপ ছোট খালার গায়ে আগুন লেগে ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার গা থেকে এমন দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল যে মৃত্যুতেই যেন ওর শান্তি। সে এখন সেই অজানা শান্তির দুনিয়াতেই আছে।মিথ্যা না বলার প্রতিজ্ঞা করার পর থেকে, মিথ্যা বলার সঙ্গে সঙ্গেই কে যেন মৃত্তিকার মিথ্যা বলার প্রতিশোধ নেয়। কোনো এক আলসে সকালে মৃত্তিকার অফিসে যেতে ইচ্ছা করছিল না। কিছু না কিছু অজুহাত দেখিয়ে তাকে কল আউট করতে হবে। এ মাসেই দুই দুইবার নিজের অসুস্থতা দেখিয়ে কল আউট করেছে। এবার অন্য কথা বলতে হবে। তাৎক্ষণিক সে তার বসকে বলে দিল যে, তার ছেলে স্কুলে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। তাই এখনই তাকে ছেলের স্কুলে যেতে হবে। কিছুক্ষণ পর সত্যি সত্যি ছেলের স্কুল থেকে নার্স কল করলেন বাসায়, ‘সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে তোমার ছেলে পড়ে গেছে। একটু ব্যথা পেয়েছে, তবে সে ভালো আছে।’কাজে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারলেও যখন ছেলে স্কুল থেকে ফিরল, মৃত্তিকার তো চোখ ছানাবড়া! ছেলেটার চোখের কোণে কালো দাগ, একটুর জন্য চোখটা বেঁচে গেছে। মৃত্তিকা বিশ্বাস করে, মানুষ আসলে প্রকৃতি দিয়েই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই যে আমাদের শ্বাসের সঙ্গে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস, বিনিময়ে বেঁচে থাকার অমূল্য অক্সিজেন; এই যে প্রকৃতির সঙ্গে জীবের লেনদেন, আত্মা বেরিয়ে যাওয়ার পর আবার মাটির সঙ্গে বিলীন। কে আমরা, কোথা থেকে এসেছি, কোথাই বা যাব। এসব ভাবতে ভাবতে মৃত্তিকার মনে হয়, মানুষ প্রকৃতি থেকে সৃষ্ট এক অন্যতম উপাদান। আর তাই তো প্রকৃতি তার অবুঝ সন্তানকে আগলে রাখে পরম মমতায়। কোনো এক শক্তি অবশ্যই আছে যে জীবনকে শেখায়, জীবন বোধকে জাগ্রত করে। সে নিজেই তো এক শক্তি। কে তার শক্তির অন্তরালে? কে তাকে রক্ষা করে আর কে-ই বা তাকে শাস্তি দেয় কোনো অন্যায়ের পরে অথবা আগাম সংকেত দেয় কোনো বড় অঘটনের আগে। ধর্মে আছে সৃষ্টিকর্তার হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। হয়তো ঈশ্বরই তাঁর ঐশ্বরিক শক্তির ইলেকট্রন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে নিজে কেন্দ্র হয়ে করছে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ। আর তাই তো মানুষের মাঝে বাস করে পরমেশ্বর, যা কখনো কখনো অনুভবে আসে।
আমেরিকায় গ্রীষ্মের দাবদাহ। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে প্রবাসীদের বনভোজনের আয়োজন। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ৯ জুলাই জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সির উদ্যোগে নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের ওয়াশিংটন লেক পার্কে প্রবাসী সিলেটবাসীর বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছে। বনভোজনের বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে থাকছে ক্রীড়ানুষ্ঠান, র‌্যাফল ড্রসহ বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় ইভেন্ট। জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সির সভাপতি মুজিবুর রহমান সুয়েব ও সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মুহাম্মদ দোহাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ প্রবাসীদের সপরিবারে বনভোজনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
বিএনপির ক্যালিফোর্নিয়া শাখার নব গঠিত ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে অনুমোদন দিয়েছে বিএনপি। ২২ জুন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অনুমোদন দেন। এ উপলক্ষে ২৩ জুন লস অ্যাঞ্জেলসের স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে অনুমোদিত কমিটির নাম প্রকাশ করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন—সভাপতি বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু, সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান শাহীন, সহসভাপতি মুর্শেদুল ইসলাম, নিয়াজ মোহাইমেন, সাইফুল আনসারী চপল, মাতাব আহমেদ, অপু সাজ্জাদ, আফজাল শিকদার, সালাম দাঁড়িয়া, শওকত হোসেন আনজিন, সাইদ আবেদ নিপু, জুনেল আহমেদ, আহসান হাফিজ রুমি, মিকাইল খান রাসেল, শাহাদাৎ হোসেন শাহীন, জহিরুল কবির হেলাল, মার্শাল হক, নুরুল ইসলাম, এলেন খান ইলিয়াস, বাদল খান, মিজানুর রহমান ও আবদুর রহিম। সাধারণ সম্পাদক এম ওয়াহিদ রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ফারুক হাওলাদার, সৈয়দ নাসির উদ্দিন জেবুল, মোয়াজ্জেম আহমেদ রাসেল, বদরুল আলম মাসুদ, দেলোয়ার জাহান চৌধুরী, লায়েক আহমেদ, রফিকুজ্জামান জুয়েল, ইলিয়াস মিয়া, শাহতাব কবির ভূঁইয়া, শাহীন হক, আলমগীর হোসেন, রনি জামান, নুরুল হক, সজয় আহমেদ মনির, সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ খান ও লোকমান হুসেন, প্রচার সম্পাদক কামাল হোসেন তরুণ, দপ্তর সম্পাদক রেজাউল হায়দার চৌধুরী বাবু, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাঈদ খান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে সবার সহযোগিতা চেয়ে এবং সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সভাপতি বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু, সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী কাঞ্চন, আবদুল বাসিত ও সাধারণ সম্পাদক এম ওয়াহিদ রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আবুল ইব্রাহিম। ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির সভাপতি বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু তাঁর বক্তব্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসভাপতি আবদুস সালাম ও সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের দাবিতে আগামী দিনে সব কর্মসূচিতে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা কামনা করেন বদরুল চৌধুরী।
হতে পারেন তারা সৎভাই। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কটা সৎভাইয়ের মতো একদমই নয়। বলা যায়, নিজের ভাইয়ের থেকেও তাঁদের সম্পর্ক গভীর। এখানে বলিউড তারকা শহীদ কাপুর এবং ঈশান খত্তরের কথা বলা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, এই দুই ভাই এবার একসঙ্গে পর্দায় আসতে চলেছেন।সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে শহীদ কাপুর অভিনীত ‘কবির সিং’ ছবিটি। ছবিটি বক্স অফিসে দারুণ ব্যবসা করেছে। দাদা শহীদের সাফল্যে খুশিতে ভাসছে ঈশানও। নানানভাবে শহীদের সাফল্যের খুশি ব্যক্ত করেছেন ঈশান।কিছুদিন আগে হাতে ছবি নেই বলে আক্ষেপ করেছিলেন শহীদ। শোনা গেছে, ‘নীরজা’ খ্যাত পরিচালক রাম মাধবানীর আগামী ছবিতে দেখা যাবে শহীদকে। তবে সবচেয়ে মজাদার ব্যাপার হলো, ঈশানকেও নাকি এই ছবিতে তাঁর ভাইয়ের চরিত্রে দেখা যাবে। খবর অনুযায়ী, রাম মাধবানী এক প্রজেক্টের ওপর কাজ করতে চলেছেন। আর এই ছবির প্রস্তাব শহীদের কাছে রেখেছিলেন। এই বলিউড তারকার দারুণ পছন্দ হয় রাম মাধবানীর নামহীন এই প্রজেক্ট। আর তিনি ছবিটি করবেন বলে সম্মতিও দিয়েছেন। এদিকে ঈশানেরও চিত্রনাট্য মনে ধরেছে। তিনিও নাকি ছবিটি করবেন বলে হ্যাঁ করেছেন।জানা গেছে, ছবিটির গল্পে একদিকে যেমন কঠিন বাস্তব আছে, অপরদিকে আবেগে ভরপুর। শহীদ নতুন কোনো প্রজেক্টে হাত দেওয়ার আগে ‘কবির সিং’ ছবিকে ঘিরে দর্শকের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এবার তিনি পরবর্তী ছবির প্রস্তুতি নিতে চলেছেন।
৩আমি তখন ইংল্যান্ডে। ব্যুরো অব এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স (ইসিএ) সেমিনারে অংশ নিতে দুই সপ্তাহের ট্যুর। সেমিনার শেষে একদিন একাই বেরিয়ে গেলাম শহর দেখতে। ঘুরে ঘুরে পুরো শহর তছনছ করে ফেললাম। সন্ধ্যার মুখে হাঁপিয়ে উঠলাম। ট্যাক্সিতে করে রওনা হলাম ভালো কোনো হোটেলের খোঁজে।অজানা, অচেনা শহরে কিছুই চিনি না। ট্যাক্সি ড্রাইভারের সহযোগিতায় এক হোটেল পেয়ে গেলাম, রাম হোটেল। নামটার গায়ে বেশ পরিচিত একটা গন্ধ পেলাম। তা ছাড়া শহর ছেড়ে খানিকটা দূরে হওয়ায় হোটেলের আশপাশটা বেশ ভালো লেগে গেল। তৎক্ষণাৎ হোটেলে উঠে পড়লাম।রাতের ডিনার সেরে একটু আগেই সেদিন বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। মাথাটা খুব ঝিমঝিম করছিল। শোয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম, এমন ঘুম যেখানে আমি আর মৃত্যু একই সমান। ঠিক তখনই ঘুমের মাঝে মনে হলো, আমি হঠাৎ ভিন্ন কোনো জগতে ঢুকে পরলাম। মৃত্যুর রূপ বা তারও পরের জগৎটা দেখতে কেমন, তা আমার জানা নেই। তবে আমার হঠাৎ ঢুকে পড়া জগৎটা কেমন যেন মৃত্যুপুরীর মতোই ভয়ংকর মনে হচ্ছিল।চারদিকে ঘুটঘুটে ভয়ানক অন্ধকার। এ অন্ধকারের সঙ্গে পৃথিবীর অন্ধকারের কোনো মিল নেই। চোখ খুলে তাকালেই ভীষণ আঁধার। বাইরে মট মট শব্দে মনে হলো, পরিণত কোনো ঢাল ভেঙে পড়ল। প্রচণ্ড শো শো শব্দ শুনতে পেলাম। এমন সময় হঠাৎ বিকট এক শব্দে ঘরের দরজাটা খুলে গেল। খোলা দরজা দিয়ে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর একটা লাল গোলাকার বৃত্ত ঘরে ঢুকে এগোতে লাগল আমার খাটের দিকে।বৃত্তটি আমার ঠিক চোখের সামনে এসে মিলিয়ে গেল। আমার দৃষ্টি স্থির হয়ে রইল। প্রচণ্ড শীতের মাঝেও গা বেয়ে ঘাম ঝরতে লাগল। মনে হলো আমি বিছানার সঙ্গে লেপ্টে যাচ্ছি!আচমকা এক তীব্র মিষ্টি গন্ধে ঘর ভরে গেল। গা গুলিয়ে উঠল। বমি ভাবটা প্রবল হতেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। আর তখনই মনে হলো, কিছু একটা ঠিক আমার মাথার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার নিশ্বাস অনুভব করছি। কী ভয়ংকর! নাইট গাউনটা ততক্ষণে ভিজে চুপচুপা।ধীরে ধীরে ছায়ামূর্তিটি আমার মুখের কাছটায় ঝুঁকে পড়ছে। ঘরের পর্দাটা শব্দ করে দুলছে। দ্রুত নিশ্বাসে আমার বুক ওঠানামা করতে লাগল। আচমকা একটা বিকট বিস্ফোরণে ঘর কাঁপিয়ে ছায়ামূর্তিটি বলে উঠল, ‘আমি মুক্তি চাই; তুমি আমায় মুক্তি দাও।’এরপর ভয়ানক এক অস্থির অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হতে হতে আমি ঘুমে তলিয়ে যাই।যখন ঘুম ভাঙল, তখন চোখ ধাঁধানো তীব্র আলোয় ঘর আলোকিত।মাথা ঘুরিয়ে পাশ ফিরতেই চমকে উঠলাম। একি! এ যে আমাকে হোটেলে নামিয়ে দেওয়া সেই ট্যাক্সি ড্রাইভার দাঁড়িয়ে! বিমর্ষ ও বিধ্বস্ত শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। শীতল দৃষ্টি যেন অনেকটা মৃত মাছের ন্যায়।ট্যাক্সি ড্রাইভার এবার আমার মুখের কাছটায় ঝুঁকে এল। আমি হতবাক কণ্ঠে বললাম,-কী ব্যাপার! আপনি এখানে?-জি ম্যাডাম।-এখানে কি করছেন? সরে দাঁড়ান বলছি!-আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।অস্থিরতায় বিহ্বল আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভয়ানক শান্ত কণ্ঠে ট্যাক্সি ড্রাইভার বলতে লাগল, ‘৫৬ বছর আগে আমার মৃত্যু হয়েছে। বহুদিন এই ঘরটার নিচে চাপা পড়ে আছি। আমি মুক্তি চাই। আমায় আপনি মুক্তি দিন।’অস্থির অনুভূতি নাকি কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আমারও হল না। এক ঝটকায় সকল আলো ভীষণ আঁধারে রূপান্তরিত হতে হতে আমার চেতনা শূন্য হতে লাগল।পরদিন নিজেকে আবিষ্কার করি হাসপাতালের বেডে। গলা শুকিয়ে কাঠ, তখনো জিহ্বা নাড়িয়ে কথা বলতে পারছি না। পাশে আমার কোচ প্রধান আতঙ্কিত দিশেহারা চোখে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছেন। অজানা এক ভয়ে আমি আবারও চোখ বন্ধ করে ফেলি…।* পরবর্তীতে জানতে পারি, ইংল্যান্ডের এই বহুল আলোচিত রাম হোটেল নাকি একটি কবরের ওপরে প্রতিষ্ঠিত। এই হোটেলটি ভুতুড়ে সব কর্মকাণ্ডের জন্য বেশ সমাদৃত।
কানেকটিকাট স্টেট আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে দলের নতুন কমিটি নির্বাচিত হয়েছে। বিজপোর্টের একটি সুপরিসর হলে ২৩ জুন সন্ধ্যায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জিয়াদুল হক জাহেদ এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন হুমায়ুন আহমেদ চৌধুরী। প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সম্মেলনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিবেশিত হয়। জাতীয় সংগীত ও শহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা পর্ব। অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন জাকি খান। পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা মাইকেল শাহ। দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাইফুল আলম সিদ্দিকি। কানেকটিকাট স্টেট আওয়ামী লীগের বিদায়ী সভাপতি জুনেদ এ খানের সভাপতিত্বে এবং বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আহসান চৌধুরী ও যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ, বিশেষ অতিথি যুগ্ম সম্পাদক আইরিন পারভিন, উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান, কানেকটিকাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাসিব মামুন, প্রচার সম্পাদক এনাম, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, কার্যকরী সদস্য শাহানারা রহমান, খোরশেদ খন্দকার, আতাউল গনি আসাদ, আলী হোসেন গজনবী, আবদুল হামিদ, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শেখ আতিকুল ইসলাম, এ কে এম আলমগীর, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোর্শেদা জামান ও সাইকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ আহমেদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের নেতা কফিল চৌধুরী, কানেকটিকাট স্টেট আওয়ামী লীগের নেতা ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, আহমেদ জিলু, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের আহ্বায়ক তারিকুল হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বাহার খন্দকার সবুজ, শাহ সেলিম আহমদ, শ্যামল কান্তি দাস, শেখ সাজু হাসান, ফয়ছল আহমদ, জাহিদ হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ একটি পরিবার। একটি সুশৃঙ্খল দল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয়। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে কিছু হয় না। তিনি বলেন, আমেরিকায় বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তী যথাযথ মর্যাদায় উদ্‌যাপিত হবে। এ কারণে সব মুজিব সৈনিকের সহযোগিতা কামনা করছি। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।সভাপতির বক্তব্যে জুনেদ এ খান তাঁর কর্মকালীন কানেকটিকাট স্টেট আওয়ামী লীগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। সবার সার্বিক সহযোগিতায় দলকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে সক্ষম হন বলে তিনি মন্তব্য করেন। আলোচনা পর্বের পর অনুষ্ঠিত হয় কানেকটিকাট স্টেট আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদের সঞ্চালনায় কাউন্সিলররা শুধু নতুন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন। অধিবেশনের শুরুতেই সিদ্দিকুর রহমান কানেকটিকাট স্টেট আওয়ামী লীগের পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এর পর কাউন্সিলররা সভাপতি পদে একক প্রার্থী হিসেবে জিয়াদুল হক জাহেদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে হুমায়ুন আহমেদ চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করলে সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়। অধিবেশনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নির্বাচিতদের ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি সাবেক ও নতুন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে নিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। সিদ্দিকুর রহমান সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার জন্য কাউন্সিলরদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। দলের জন্য অবদান রাখায় বিদায়ী সভাপতি এবং ধারণ সম্পাদকসহ বিগত কমিটির প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। নবনির্বাচিত সভাপতি জিয়াদুল হক জাহেদ ও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন আহমেদ চৌধুরী দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সবার সার্বিক সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেন। তাঁরা সাবেক কর্মকর্তাদের অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা জানান। শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সায়রা রেজা।
আশির দশকের অন্যতম প্রধান কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন। ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ‘একবিংশ’ সাহিতপত্রের সম্পাদক-প্রকাশক। বিশ্বসাহিত্যের নিবেদিতপ্রাণ বঙ্গ-অনুবাদক। ‘অনিরুদ্ধ আশি’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৬ জুন ছিল কবির ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। তিন বাংলা, বাংলাদেশ আয়োজন করে স্মৃতিতর্পণ অনুষ্ঠানের।কবি ড. খোন্দকার আশরাফের সতীর্থদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। উদ্বোধক ছিলেন অনিরুদ্ধ আশি-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সালেম সুলেরী। তিনি তিন বাংলা-এর গ্লোবাল সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শত গ্রন্থের লেখক আফরোজা পারভীন। তিন বাংলা, বাংলাদেশ-এর নির্বাহী সভাপতি তিনি। প্রেসিডিয়াম সদস্য কবি রহিমা আখতার কল্পনা ছিলেন প্রধান আলোচক।ব্যক্তিগত সম্পর্কের আলোকে বক্তৃতা করেন অনিরুদ্ধ আশি-এর দুজন। কবি ফেরদৌস সালাম ও কবি ওয়াহিদ রহমান। সালামের মতে, শহরে থাকলেও তিনি গ্রামকে ‘গোড়াজীবন’ বলতেন। ২০১৩ সালে মৃত্যুকালে তিনি গ্রামজীবনেই ছিলেন। ময়মনসিংহের ত্রিশালে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিলেন উপাচার্য। ওয়াহিদ রহমান বলেন, রমনা পার্কের প্রকৃতিতে প্রশান্তি খুঁজতেন। লেখক মান্নান সৈয়দের প্রয়াণে হু হু করে কেঁদেছেন। বলেছেন, ‘কী বিশাল মনীষি, কিন্তু মূল্য পেলেন না। আমরাও হয়তো তেমন কিছু পাব না।’অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন লেখক-প্রকাশক শ্রদ্ধামথিত বক্তব্য দেন। পল্লি কবিপুত্র খুরশিদ আনোয়ার জসীমউদ্দীন, সর্বকবি মিনা মাশরাফী, আহমদ জামালী, জামসেদ ওয়াজেদ। শ্রদ্ধা জানান লেখক-সংস্কৃতিসেবী প্রণব মজুমদার, আলম শামস, কাজল মেহমুদ, লতা নাহার, দেবাশিস কায়সার, মাহাবুর রহমান প্রমুখ।অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন তিন বাংলা-এর সাহিত্য সম্পাদক কবি মনসুর আজিজ। তিনি বলেন, খোন্দকার আশরাফ প্রথমে ছিলেন শিক্ষক। পরে হয়েছেন কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক।উদ্বোধক কবি সালেম সুলেরী বলেন, ‘আমরা ছিলাম সতীর্থ। ‘অনিরুদ্ধ আশি’ প্রতিষ্ঠা হয় আমাদের হাত দিয়েই। তিনি ছিলেন সভাপতি, আমি সম্পাদক। বর্ণাঢ্য কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সাহিত্যচর্চাকে এগিয়ে নিয়েছি। ২০০৫-এ আমি আমেরিকা চলে আসলে তিনি হতাশ হন। বলেন, এ সংসারে বিচ্ছেদ ঘটেছে, অতএব আর নয়। তিনি প্রায়শ বার্তা পাঠাতেন দেশে ফেরার। ২০১৩ সালে ভিসি হয়েও আমাকে ফিরতে বলেছিলেন। আপাদমস্তকই তিনি ছিলেন এক বহুমাত্রিক মানুষ। বাংলা একাডেমির উচিত ‘খোন্দকার আশরাফ রচনাবলী’ প্রকাশ করা।স্মৃতিসিক্ত আলোচনা করেন কবি রহিমা আখতার কল্পনা। প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বলেন, ‘ভুলতে পারি না। তাঁকে বলতাম, বাংলা কবিতার কৃষ্ণকান্তি যুবরাজ। এই শিরোনামে কবিতা লিখে তাঁকে উৎসর্গ করেছি। ‘তিন রমণীর ক্বাসিদা’ ওনার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। সঠিক উচ্চারণে শিরোনামটি বলতে পারায় ধন্যবাদ দিতেন।অনুষ্ঠান সভাপতি আফরোজা পারভীনও নানা বিশ্লেষণ মেলে ধরেন। বলেন, খোন্দকার আশরাফ একজন ভাষাতাত্ত্বিক কবি। ‘জীবনের সমান চুমুক’ কাব্যগ্রন্থটি আমাকে সর্বাধিক টানে। ইংরেজি, জার্মানসহ অনেক ভাষায় তিনি অনূদিত হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ, ইডিপাস নিয়েও কাজ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ তাকে নিয়ে বড় কিছু করছে না। এবারের মৃত্যুবার্ষিকীও পালিত হচ্ছে শুধু তিন বাংলা-এর মাধ্যমে। যদিও তিনি ছিলেন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা, বিরলপ্রজ লেখক।
নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত নর্থ ব্রঙ্কসে ২৩ জুন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী রয়েল বেঙ্গল পথ মেলা। বাংলাদেশি কমিউনিটি অব নর্থ ব্রঙ্কসের উদ্যোগে ও বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের সহায়তায় আয়োজিত পথ মেলায় প্রবাসীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলা মাতিয়ে রাখেন দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা।বেলা আড়াইটায় স্থানীয় কংগ্রেসম্যান এডরিয়ান এসপিনাল, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জামাল বেইলি, অ্যাসেম্বলিওম্যান নেতিশা ফার্নান্ডেজ, কাউন্সিল মেম্বার জিফরী, অ্যাটর্নি এলন ক্যাস, অ্যাটর্নি ব্রুস ফিসার, নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ব্রঙ্কসের ৫২ প্রিসেনক্টের ডেপুটি ইন্সপেক্টর থমাস আলপস, বাংলাদেশি কমিউনিটি অব নর্থ ব্রঙ্কসের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর চৌধুরী জগলুল, ইভেন্ট কমিটির আহ্বায়ক মো. আবদুর রহিম ও সদস্যসচিব বোরহান উদ্দিনসহ সংগঠনের কর্মকর্তা ও অন্যান্য অতিথির সঙ্গে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ এন মজুমদার বলেন, ২০১২ সালে ঐতিহ্যবাহী রয়েল বেঙ্গল পথ মেলার যাত্রা শুরু হয়। প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতি আর দেশীয় পণ্যকে মূলধারায় তুলে ধরার প্রয়াসে এই মেলা বিরাট ভূমিকা রাখছে। নতুন প্রজন্মের সঙ্গেও সেতুবন্ধন তৈরি করছে।উদ্বোধনী পর্বে একটি বর্ণাঢ্য প্যারেড মেলা এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এতে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন। প্যারেডের গ্র্যান্ড মার্শাল ছিলেন অ্যাটর্নি এলন ক্যাস।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সময়ের সঙ্গে মেলায় বাড়তে থাকে প্রবাসীদের ভিড়। একদিকে মেলায় কেনা-কাটা, অন্যদিকে স্টেজ মাতিয়ে রাখেন বরেণ্য শিল্পী রিজিয়া পারভীন, কালা মিয়া, শাহ মাহবুব, তানভীর শাহীন, রোকসানা মির্জাসহ স্থানীয় শিল্পীরা।আয়োজকেরা জানান, আমেরিকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মসহ মূলধারার কাছে বাঙালি সংস্কৃতি ও দেশীয় পণ্যকে তুলে ধরার প্রয়াসে নিউইয়র্কে বাঙালি অধ্যুষিত নর্থ ব্রঙ্কসে ৬ বছর ধরেই আয়োজন করা এই পথ মেলার। এবার ছিল সপ্তম আয়োজন। ২৩ জুন ছুটির দিন হওয়ায় মানুষের পদভারে মুখরিত ছিল পথ মেলা। পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপভোগ করতে আসেন পথ মেলার নানা পরিবেশনা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি মেলায় ভিনদেশিদের উপস্থিতিও ছিল বেশ লক্ষণীয়।দিনব্যাপী মেলায় বাংলাদেশি মালিকানার বিভিন্ন পোশাক-প্রশাধনসহ হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। নিউইয়র্কপ্রবাসীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেন পথ মেলায়। পুরো মেলা প্রাঙ্গণ ছিল বর্ণিল, উৎসবমুখর। পণ্য ও প্রসাধন স্টলে ভিড় ছিল লক্ষণীয়। মেলায় ছিল আকর্ষণীয় র‍্যাফেল ড্রও। মেলা শেষে র‍্যাফেল ড্রয়ে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।মেলা চলাকালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, মামুন’স টিউটোরিয়ালের প্রিন্সিপাল শেখ আল মামুন, বাংলাদেশি-আমেরিকান কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল হাসিম হাসনু, বাংলাদেশি কমিউনিটি অব নর্থ ব্রঙ্কসের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর চৌধুরী জগলুল, সহসভাপতি শেখ দিলদার হোসেন ও আবদুর রহিম বাইস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল হোসেন, ইভেন্ট কমিটির আহ্বায়ক মো. আবদুর রহিম ও সদস্যসচিব বোরহান উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সল আবেদিন সেলিম ও আসাদুজ্জামান, যুগ্ম সদস্যসচিব আনোয়ার হোসেন ও আবদুল আলিম, প্রধান সমন্বয়কারী নজরুল হক ও আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী খসরু, সমন্বয়কারী শাখাওয়াত আলী, মেলার টাইটেল স্পনসর লংজিভিটি হেলথ সার্ভিসের মালিক রুকনহাকিম, সিপিএ আহাদ আলী, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট হাসান আলী, লুত্ফর রহমান হেলাল, সৈয়দ সিদ্দিকুল হাসান, তোজাম্মেল হোসেন, জুয়েল আহমেদ, জুবের আহমদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন সাংবাদিক আশরাফুল হাসান বুলবুল। অনুষ্ঠানে কমিউনিটিকে এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকার জন্য আয়োজক বাংলাদেশি কমিউনিটি অব নর্থ ব্রঙ্কসের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে সম্মাননা জানানো হয়।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসির (বাগডিসির) ঈদ আড্ডা ও নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে ২০১৯-২০ সালের নতুন কমিটিতে করিম সালাহউদ্দিনকে প্রেসিডেন্ট ও আবু বকর সরকারকে জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত করা হয়।৭ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় স্প্রিংফিল্ড ভার্জিনিয়ার হলিডে ইন এক্সপ্রেস হোটেল বলরুমে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।বাগডিসির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলমগীর, সাবেক সেক্রেটারি অ্যান্থনি পিউস গোমেজ ও বাগডিসির ইলেকশন ও সিলেকশন কমিটি প্রধান এ টি এম আলম নতুন কমিটিকে পরিচয় করিয়ে দেন।দুই বছর মেয়াদের এ কমিটিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রোকসানা পারভীন, নুরুল আমিন নুরু, নাসের আহমেদ ও কচি খান। এ ছাড়া অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ রশিদ, ট্রেজারার নুসরাত জাহান, অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেজারার তিলক, কালচারাল সেক্রেটারি হাসনাত সানি, অ্যাসিস্ট্যান্ট কালচারাল সেক্রেটারি শাহজালাল সুমনকে নির্বাচিত করা হয়। মিডিয়া, প্রেস ও পাবলিকেশনস সেক্রেটারি হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে রফিকুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর সেই সঙ্গে এ টি এম আলম, আবু রুমি, পিংকি পাটোয়ারী, শারিকুল ইসলাম, প্রণব বড়ুয়া, জাহিদ হাসান, গাজী শাহজাহান, মো. কাজল, মোহাম্মদ সেলিমকে এক্সিকিউটিভ মেম্বর হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।শতরূপা বড়ুয়া ও ফয়সাল কাদেরের প্রাঞ্জল ঈদ আড্ডার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। শতরূপা বড়ুয়া ও ফয়সাল কাদেরের প্রাঞ্জল উপস্থাপনার পাশাপাশি বাগডিসির বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের ওপর আলোকপাত করেন। তাঁরা বলেন, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাগডিসি দীর্ঘদিন থেকেই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতা করে আসছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ, রোহিঙ্গা সমস্যায় সহযোগিতা, বাংলাদেশের পঙ্গুদের সহযোগিতায় সিআরপি ফান্ড রেইজিংয়ে সহযোগিতা, প্রবাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উদ্‌যাপনে একুশে এলিয়েন্সকে সহযোগিতা, বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিকাশে পান্তা–ইলিশ অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাগডিসির ভূমিকা ছিল বেশ প্রশংসনীয়।সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শুরুতেই গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসির বিশিষ্ট বংশীবাদক মোহাম্মদ মাজিদের বাঁশির সুরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত, ‘রমজানের ঐ রোজা শেষে এলো খুশীর ঈদ’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তে তুমি’ পরিবেশিত হয়।অনুষ্ঠানে নাসরিনা আহমেদ, মায়া, রূপন্তি, মাইশা, মেহেক, কাইনাত, নুসরাত, সিনথিয়া ও শ্রুতি নৃত্য পরিবেশন করেন। অ্যাফেকশন হোম হেলথ কেয়ারের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মোহসিনা রিমি খান নৃত্যশিল্পীদের পুরস্কৃত করেন।অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন মাহিন সুজন, সুপ্রভা বড়ূয়া, শাহনাজ রহমান, তুষার রহমান, ‘চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ’খ্যাত শিল্পী মিরা সিনহা, ডক্টর সীমা খান, মেট্রো ওয়াশিংটন ডিসির জনপ্রিয় ব্যান্ড চোরাবালি। ভয়েস অব আমেরিকার ফকির সেলিম ও সানজানা ফিরোজ ছড়া আবৃতি করে দর্শকদের মন জয় করেন। সাউন্ড সিস্টেমে ও গিটারে সহযোগিতা করেন রবিউল আলম শিশির। ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফিতে ছিলেন কচি খান।অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক হাসনাত আজাদ সানি ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সরকার। উপস্থিত অতিথিদের আপ্যায়নের পরও গভীর রাত পর্যন্ত দর্শক–শ্রোতারা নেচেগেয়ে ঈদ আনন্দে মেতে ছিলেন।
নিউইয়র্কে ২০১২-২০১৩ শিক্ষা বছরে নিয়োগ হওয়া ৪১ শতাংশ শিক্ষক তাঁদের কর্মস্থান ত্যাগ করেছেন।এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই শিক্ষকেরা নিয়োগের পাঁচ বছরের মধ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিউইয়র্ক থেকে চলে গেছেন।ব্রঙ্কসে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষা বছরে নিয়োগ হওয়া ২১ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষক পাঁচ বছর পূর্তি হওয়ার আগেই অন্যত্র চলে গেছেন। নিউইয়র্ক শহরে শিক্ষকতা করা বাস্তবিক ভাবেই অনেক চ্যালেঞ্জের। মেয়র ব্লুমবার্গ তাঁর সময় নিউইয়র্কের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মডেলে সাজিয়েছেন। যাতে প্রকৃতপক্ষে মূল শিক্ষার চেয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।নিউইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিউইয়র্কের সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিংজার বলেন, এই সত্যকে অবজ্ঞা করা যায় না যে নিউইয়র্ক শহরে শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যাওয়াটা একটা সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি মনে করেন, নতুন শিক্ষকদের যথার্থ প্রশিক্ষণের অভাব আছে।ওই গবেষণায় আরও জানা যায়, প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগের পাঁচ বছরের মধ্যে চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এ কারণে নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব এডুকেশনকে প্রতি বছর নিয়োগের জন্য উঠে পড়ে লাগতে হয়। তাড়াহুড়ো করতে হয় বলে সব সময় ভালো শিক্ষক পাওয়া যায় না। অন্যদিকে যেহেতু অধিকাংশ শিক্ষক নিয়োগের পাঁচ বছরের মধ্যে চাকরি ছেড়ে চলে যান এবং বোর্ড অব এডুকেশন প্রতি বছর নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয় তাই নিউইয়র্কে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতি থাকছে অনেক।অন্যদিকে সিটি কম্পট্রোলার স্ট্রিংজার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নতুন এক রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম চালু হবে। এতে যেসব ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা বিষয়ে পড়াশোনা করছে তাদের পড়াশোনার শেষ বছরে ৩০ হাজার ডলার বেতনে নিউইয়র্ক সিটির স্কুলে অভিজ্ঞ শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষকতার সুযোগ মিলবে। তিনি মনে করেন, এর ফলে নতুন শিক্ষকেরা অভিজ্ঞ শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষকতা করে উপকৃত হবেন।
মিশিগানে বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ককাস (বিএডিসি) ট্যাক্সি ক্যাব চালকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে। ২৩ জুন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় হ্যামট্রামিক শহরের একটি রেস্টুরেন্টে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্টেট ও সিটি কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধি, কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ, বিএডিসির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় ক্যাব চালকসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মিশিগানে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে কয়েক বছরে প্রায় চারজন ট্যাক্সিক্যাব চালক দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। সর্বশেষ গত ২২ মে কর্তব্যরত অবস্থায় ক্যাব চালক জয়নুল ইসলাম প্রাণ হারান। বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ককাস (বিএডিসি) বাংলাদেশি ক্যাব চালক জয়নুল ইসলামের স্মরণে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মিশিগান ওয়েইন কাউন্টির শেরিফ বেনি নেপোলিয়ন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেট্রয়েট সিটির ডেপুটি পুলিশ চিফ টড বেটিসন, স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ আইজ্যাক রবিনসন ও হ্যামট্রামিক সিটির সার্জেন্ট রবার্ট জর্জ। মতবিনিময় সভার একপর্যায়ে ডেট্রয়েট সিটি পুলিশ ইনভেস্টিগেটর ব্রায়েন ফন্টেইন ক্যাব চালকদের সেফটি ও সিকিউরিটির ওপর ৪০ মিনিটের একটি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন।মতবিনিময় সভার আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন ডেট্রয়েট সিটি কাউন্সিলম্যান স্কট বেনসন, হ্যমট্রামিক সিটি কাউন্সিলম্যান এনাম মিয়া, সাবেক কাউন্সিলম্যান মোহাম্মদ হাসান, কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিজাম উদ্দিন, মাওলানা আবদুল লতিফ আজম, হাফিজ ফখরুল ইসলাম, মঞ্জুর খান, ট্যাক্সি ক্যাব প্রতিনিধি আবদুল বাসেত, বাংলাদেশি ইউয়ুথদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তাজিম চৌধুরী ও শাহ আলী প্রমুখ। বিএডিসির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হাসান শাহীন সভার উদ্দেশ্য ও পরবর্তী কর্মপন্থার নিয়ে আলোচনা করেন। বিএডিসি সভাপতি জুবারুল চৌধুরী খোকন স্বাগত বক্তব্য দেন। সঞ্চালনায় ছিলেন বিএডিসির জেনারেল সেক্রেটারি রাহাত খান। কমিউনিটির নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেন সহসভাপতি মুহিত মাহমুদ। মতবিনিময় সভায় সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন বিএডিসি সহসভাপতি সুলাইমান বাহার, বিএডিসি ১১ ডিস্ট্রিক্ট কমিটির চেয়ারম্যান সাদেক রহমান, বিএডিসি ১৩ ডিস্ট্রিক্ট কমিটির চেয়ারম্যান আজিজ চৌধুরী, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি কাউসার দেওয়ান, এক্সিকিউটিভ কমিটির সেক্রেটারি আপেল খান ও জিয়াউদ্দিন জিয়া, বিএডিসি ১৪ ডিস্ট্রিক্ট কমিটির কো-চেয়ারম্যান নাঈম চৌধুরী, বিএডিসি নেতা হাফিজ রহমান, মোহাম্মদ সোলায়মান ও সাবুল চৌধুরী। আলোচনা শেষে মতবিনিময় সভার উদ্যোক্তা নাজমুল হাসান শাহীন ঘোষণা করেন—পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বিএডিসি সেফটি ও সিকিউরিটির ব্যাপারে প্রতি তিন মাস পর পর সংলাপের আয়োজন করবে। বিএডিসি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে রাস্তায় পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থাকরণ, মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে সিকিউরিটি বৃদ্ধিকরণ ও ট্যাক্সি ক্যাব গাড়িতে ক্যামেরা প্রতিস্থাপনের জন্য কাজ করবে। বিএডিসি ওয়েইন কাউন্টি শেরিফ বেনি নেপোলিয়ের অফিসের সঙ্গে কমিউনিটি পুলিশিং প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করবে। আলোচনা সভায় বক্তার পুলিশ প্রশাসনের তড়িৎ গতিতে সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসা এবং নিষিদ্ধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা দাবি করেন।সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএডিসি ট্রাস্টি সিরাজুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন, বিএডিসির উপদেষ্টা সৈয়দ ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও ইউসুফ কামাল, বিএডিসির প্রতিষ্ঠাতা নেতা সেলিম আহাম্মদ ও ফয়সল চৌধুরী, কমিউনিটি নেতা মো. মনির, আল্লামা, এনাম আহাম্মেদ, আবদুল হালিম, মো. আলম, খাজা শাহাবুদ্দিন প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় প্রায় ৩০ জন ট্যাক্সি ক্যাব চালক উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আছেন—মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মোহাম্মদ উদ্দিন, খন্দকার শাফি আহাম্মদ, মহিন আলী, মোহাম্মদ আখতার হোসেন, আমজাদ, আইয়ুব খান, আবদুস শহীদ, মুসলিম আলী ও শহীদ মিয়া প্রমুখ।
ওয়েস্টফিল্ড নিউজার্সির দম্পতি মাইকেল গ্যালার্দো ও ম্যারি মার্গারিতন্ডো গত মাসে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দুটি হৃদয়গ্রাহী ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। মাইকেল ও ম্যারির প্রেম ছিল। এক সময় ম্যারি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরেন। এই দম্পতি চাননি তাঁদের প্রথম ছেলে সন্তানের জন্ম সনদে বাবার জায়গায় প্রেমিকের নাম থাকুক। এ কারণে সন্তান জন্মের দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে তাঁরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সন্তান জন্মের নির্ধারিত তারিখের তিন সপ্তাহ আগে ম্যারির ওয়াটার ব্রেক হলে তৎক্ষণাৎ তাঁকে মরিস্টাউন মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করানো হয়। এ অবস্থায় এই দম্পতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেন, যদি কোনো ভাবে সন্তান জন্মের আগে তাঁদের বিয়েটা সম্পন্ন করা যায়। ইতিমধ্যেই তাঁদের হাতে বিয়ের নিবন্ধনের সনদ চলে এসেছিল। মাইকেল বলেন, শুরুতে হাসপাতালের সবাই অবাক হয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরেই নার্সরা বিয়ের বন্দোবস্ত করতে ছুটোছুটি শুরু করেন। কেউ অনলাইনে অর্ডার খুঁজছেন, ছুটছেন ফুল আনতে, কেউ আবার ম্যারি ও বাচ্চাকে মনিটরিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অবশেষে একজন যাজককে ডেকে আনা হলে সন্তান জন্মের মাত্র ৩০ সেকেন্ড আগে এই দম্পতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মাইকেল আরও বলেন, ‘ওই মুহূর্তে আমাদের মায়েরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমরা ফুল বিনিময় করি, অঙ্গীকার বিনিময় করি। সবকিছু খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়।’ মাইকেল তাঁর নববধূকে চুম্বনের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ডাক্তারেরা তাঁকে সি-সেকশনের জন্য অপারেশন রুমে নিয়ে যান। নবজাতক শিশুটির নাম রাখা হয়েছে মাইকেল প্রেস্টন গ্যালার্দো। এই নবজাতকের জন্ম মেমোরিয়াল ডেতে। আরও মজার ব্যাপার হলো বাবা-মায়ের বিয়ে বার্ষিকীতেই মাইকেল প্রেস্টন গ্যালার্দোর জন্ম।ম্যারি মার্গারিতন্ডো বলেন, ‘আমরা এর থেকে আরও বেশি আশীর্বাদপুষ্ট ও কৃতজ্ঞ হতে পারি না। এ এক অন্যরকম ভালো লাগা। আমার এখনো বিশ্বাস হয় না যে, এটা আমাদের গল্প।’
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত নিউইয়র্ক শাখার উদ্যোগে ফাতেহায়ে ইমাম বুখারি মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।২৩ জুন ইমাম বুখারি (র.)-এর ১১৮৪তম পবিত্র ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে সংগঠনের কার্যালয়ে এই মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত নিউইয়র্ক শাখার সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ হেলাল মাহমুদ। তকবির করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত নিউইয়র্ক শাখার সভাপতি হাফেজ মাওলানা শেখ আবদুর রহীম মাহমুদ ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত নিউইয়র্ক শাখার মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ওয়াসিম সিদ্দিকী।মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত নিউইয়র্ক শাখার নেতা মুহাম্মদ মজিবুর রহমান, মুহাম্মদ ইসহাক, নজরুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম মুমিন, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, লাবলু সরকার, মুহাম্মদ শাহীন, মুহাম্মদ মাসুম, সরদার উদ্দীন, সৈয়দ আহসান মিল্লাত, ওমর ফারুক, সানাউল হক, মুতাসিম বিল্লাহ দুলাল, বাবুল মিয়া, সাইফুল ইসলাম, ওয়াহিদুল আলম, মঈনুল ইসলাম, নাজমুল গনী, কামাল হোসাইন, মুহাম্মদ নোমান, মুহাম্মদ মাহফুজ প্রমুখ।মাহফিলে আলেমরা বলেন, ইসলামের প্রকৃত ধারা হলো আহলে সুন্নাত। আর আহলে সুন্নাত হলো কোরআন সুন্নাহ ইজমা কিয়াসের অনুসরণ। কোরআন ও সুন্নাহর সঙ্গে সঙ্গে সাহাবায়ে কেরাম ও আওলিয়া কেরামের আনুগত্য ও অনুসরণ ধর্মের পরিপূর্ণ অনুসরণে বাধ্যতামূলক। তাই হাদিস মজহাব ও তরিকার ইমামদের আনুগত্য ও ওসিলা ব্যতিরেকে ধর্মের প্রকৃত অনুসরণ অসম্ভব। ইদানীং কতিপয় ইন্টারনেট সর্বস্ব ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরাম ও আউলিয়া কেরামের আনুগত্য ও ওসিলার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা মুখে হাদিস শরিফের কথা বললেও কৌশলে হাদিস শরিফের ইমামদের অমান্য করার স্পর্ধা দেখাচ্ছেন।শেষে সালাতু সালাম, কিয়াম, দরুদ, খতমে গাউসিয়া, শাজারায়ে কাদেরিয়া আলিয়া, ফাতেহা ও মোনাজাত পাঠান্তে তবারক বিতরণের মাধ্যমে ফাতেহায়ে ইমাম বুখারি মাহফিল সমাপ্ত হয়।
জাপানের ওসাকা শহরের কৃত্রিম দ্বীপ সাকিশিমার ইনটেক্স সম্মেলন ও প্রদর্শনী কেন্দ্রে আজ শুরু হয়েছে বিশ্বের ২০টি প্রধান অর্থনীতির দেশের দুদিনের শীর্ষ সম্মেলন। আজ উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।ভাষণে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অর্থনীতির বিশ্বায়নের ফলে ঘটতে থাকা দ্রুত পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ ও অসন্তোষ কখনো কখনো সংরক্ষণবাদের প্রলোভনের দিকে ধাবিত হওয়ার ইন্ধন জুগিয়ে গেলেও নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যিক পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি সবার জন্য ক্ষতিকর হয়ে দেখা দেবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী জি-২০ নেতাদের আরও বলেছেন, বাণিজ্য ও ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র হয়ে আসার মুখে তিনি চাইছেন বিশ্বের অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলো যেন প্রবৃদ্ধির বাস্তবায়নে সংঘাতের পথে না গিয়ে নীতিগত সব রকম উপায় কাজে লাগায়।স্বাগতিক দেশের নেতার উদ্বোধনী ভাষণের পর ২৭টি দেশ ও ১০টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের শীর্ষ প্রতিনিধিরা বাণিজ্য ও ডিজিটাল অর্থনীতি নিয়ে আলোচনায় যোগ দেন। স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হওয়া প্রথম অধিবেশন প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে। বিকেলের দ্বিতীয় অধিবেশনে আরও বিস্তারিত আলোচনার পর নেতারা ডিজিটাল অর্থনীতিসংক্রান্ত ওসাকা ঘোষণা গ্রহণ করেন। ঘোষণায় ওসাকা ট্র্যাক বা চলার পথের যে ধারণা জাপানের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে উপাত্তের সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং এ-সংক্রান্ত নিয়মাবলি ঠিক করে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।উভয় অধিবেশনে চলা আলোচনার সারসংক্ষেপ পরে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস সেক্রেটারি তাকেশি ওসুদা। প্রথম অধিবেশনে ১৬টি দেশ বক্তব্য রাখার পর জাপানি প্রধানমন্ত্রী আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে অধিবেশনের সমাপ্তি টানেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, বিশ্ব অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে জি ২০-এর চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করা উচিত। আলোচনার বিষয়বস্তু সেদিকে কেন্দ্রীভূত থাকায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে ওসাকা ঘোষণায় ভারত অংশ নেয়নি এবং আলোচনায় অংশ নিয়েও ইন্দোনেশিয়া, মিসর ও দক্ষিণ আফ্রিকা ঘোষণায় স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকে। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ না করলেও জানিয়েছেন, প্রতিটি দেশ নিজস্ব অবস্থান থেকে এই সিদ্ধান্ত নেয়।আজকের দুই অধিবেশনে কয়েকটি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি উত্থাপন করলেও এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। আগামীকালের অধিবেশনে সমুদ্রের প্লাস্টিক-দূষণ ও পরিবেশ সমস্যার অন্যান্য দিকের ওপর আলোকপাত করা হবে এবং পরে সম্মেলনের সভাপতির (জাপানের প্রধানমন্ত্রী) সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুই দিনের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। শুক্রবার জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত এক বৈঠকে মিলিত হন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। জাপান সফর শুরু করার অল্প আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তা মৈত্রী নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বৈরী মন্তব্যকে পাশ কাটিয়ে গেছেন শিনজো আবে। বৈঠক শেষ হয়ে যাওয়ার পর জাপান সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, দুই দেশের নেতাদের মধ্যে ৩৫ মিনিট ধরে চলা আলোচনায় আবে বিষয়টি উত্থাপন করা থেকে বিরত ছিলেন এবং দুই নেতা সেখানে তাঁদের দুই দেশের মধ্যকার সুদৃঢ় দ্বিপক্ষীয় জোট আরও জোরদার করতে একমত হয়েছেন।
নিউইয়র্কে আমেরিকান-বাংলাদেশি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের ক্রুজ পিকনিক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৩ জুন কুইন্সের ফ্লাশিংয়ের ১ ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনা জেটি থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় স্কাই লাইন প্রিন্সেস ক্রুজটি ছেড়ে যায়। নদী পথে নিউইয়র্কের চারদিক প্রদক্ষিণ শেষে বিকেল পাঁচটায় ক্রুজটি আবার জেটিতে ফিরে আসে।পিকনিকে সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার ছাড়াও অতিথিদের বিনোদনের জন্য ছিল বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ নৌ-ভ্রমণে নিউইয়র্কের কমিউনিটি নেতা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, মিডিয়া-সংস্কৃতি কর্মী, সংগঠনের সদস্যদের পরিবারসহ নানা শ্রেণি-পেশার প্রায় সাড়ে ৪০০ অতিথি অংশ নেন।আমেরিকান-বাংলাদেশি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন ইন্‌ক-এর প্রেসিডেন্ট আবদুস শহীদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জামাল হুসেন, সহসাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল রেজা স্বপন ও সংস্কৃতি কর্মী জুঁই ইসলামের যৌথ পরিচালনায় পিকনিকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন—নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, উপদেষ্টা তোফায়েল চৌধুরী, অয়েল কেয়ার হেলথ প্ল্যানের সিনিয়র ম্যানেজার সালেহ আহমেদ, মিলেনিয়াম টিভির প্রেসিডেন্ট নূর মোহাম্মদ, আমেরিকান-বাংলাদেশি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সহসভাপতি নাসির উদ্দিন ও রফিকুল ইসলাম, এশিয়ান মাল্টি সার্ভিস ইন্‌ক-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও সাইদুর রহমান লিংকন, তিতাস মাল্টি সার্ভিসের কর্ণধার নারী নেত্রী মেহের চৌধুরী, বাংলাদেশি-আমেরিকান কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল হাসিম হাসনু, সাধারণ সম্পাদক আহবাব চৌধুরী, আয়োজক সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম, কর্মকর্তা সফিকুর রহমান, মো. শরীফ হোসেন, আলাউদ্দিন, মো. ইসমত আলীসহ কমিউনিটির নেতারা।নৌ-ভ্রমণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কমিউনিটি সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট ও স্টেট অ্যাসেম্বলির পক্ষ থেকে প্রক্লেমেশন ও সাইটেশন দেওয়া হয়। নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদা প্রক্লেমেশন ও সাইটেশন তুলে দেন। সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন—এশিয়ান মাল্টি সার্ভিসের প্রেসিডেন্ট ও সিইও সাইদুর রহমান লিংকন, অয়েল কেয়ার হেলথ প্ল্যানের সিনিয়র ম্যানেজার সালেহ আহমেদ, কর্ণফুলী ট্যাক্স সার্ভিসেস ও কর্ণফুলী ইনকাম ট্যাক্স স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাসেম, তিতাস মাল্টি সার্ভিসের কর্ণধার মেহের চৌধুরী, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা ও টাইম টিভির সিইও আবু তাহের, উএসএনিউজঅনলাইন ডট কম এবং সাপ্তাহিক জনতার কন্ঠর সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম প্রমুখ।এ ছাড়া আমেরিকান-বাংলাদেশি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদাকেও বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।সিনেটর লুইস সেপুলভেদা তাঁর বক্তব্যে নিজকে বাংলাদেশি কমিউনিটির একজন হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে আয়োজক সংগঠনটির সাফল্য কামনা করেন। সভাপতি আবদুস শহীদ বলেন, মূলধারার সহযোগী সংগঠন হিসেবে নতুন প্রজন্ম ও মূলধারায় বাংলাদেশকে তুলে ধরাসহ বাংলাদেশে আর্তমানবতার সেবায় কাজ করছে এ সংগঠনটি। দেশে ও প্রবাসে একযোগে কাজ করছে মানুষের কল্যাণে। প্রবাসে দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতেও প্রয়াস চালাচ্ছে সংগঠনটি। এ লক্ষে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পথমেলাসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।আবদুস শহীদ আরও বলেন, প্রবাসে কর্মব্যস্ত জীবনের একটি দিন নির্মল আনন্দে কাটবে এই প্রত্যাশায় আমরা ক্রুজ ভ্রমণের আয়োজন করেছি। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে এই আয়োজন সফল হয়েছে। প্রথমবারের মতো ক্রুজ পিকনিকের আয়োজন করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। সাড়ে ৪০০ টিকিট অল্প সময়ের মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। স্থান সংকুলানের অভাবে অনেকে ক্রুজ ঘাট থেকে ফিরে গেছেন। ভবিষ্যতে এক হাজার আসনের ক্রুজ নিয়ে পিকনিকের আয়োজন করা হবে।ক্রুজ পিকনিকে সংগীত পরিবেশন করেন প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী শাহ মাহবুব, কৃষ্ণা তিথী, তানভীর শাহীন, শারমিন তানিয়া প্রমুখ। ক্রুজে থাকা শিশুদের হাতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে খেলনা তুলে দেওয়া হয়। এদিকে ক্রুজ যাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনা জেটি প্রাঙ্গণে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আবদুস শহীদ, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদা, অ্যাসেম্বলিওমেন ক্যারিনেস রেইস, ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীসহ অতিথি ও সংগঠনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় আমেরিকান-বাংলাদেশি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন ইন্‌কের পক্ষ থেকে নিউইয়র্ক অ্যাসেম্বলিওমেন ক্যারিনেস রেইসকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ ক্রুজ ভ্রমণের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সংগঠনের কর্মকর্তারা। ক্রুজ ভ্রমণে সাংস্কৃতিক পর্বের বিশেষ অংশ ইউএসএনিউজঅনলাইন ডট কমের ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন ও সামিনা চৌধুরীর আকর্ষণীয় পরিবেশনায় ইভেন্ট টাইম মিউজিকের আয়োজনে ১৬ জুন সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের কুইন্স প্যালেসে ঈদ ফেস্টিভ্যাল ও কালচারাল ইভেন্ট ২০১৯ অনুষ্ঠিত হয়েছে।অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন শমশের আলী। গেস্ট অব অনার ছিলেন চৌধুরী সারোয়ার হাসান ও বিশেষ অতিথি ছিলেন যথাক্রমে তুষার ভূঁইয়া, অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, দুলাল বেহেদু, রাজেশ জে পাটেল এবং মো. জে হোসেন।অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক সেলিম ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি ভালো একটি অনুষ্ঠান উপহার দিতে। কতটুকু সফল হয়েছি তার বিচারের ভার শ্রোতাদের ওপর রইল।’ফেস্টিভ্যালে সার্বিক সহযোগিতায় থাকা সংগঠনের অন্য কর্মকর্তারা হলেন—কো-কনভেনর ঝর্না ফাত্তা, মেম্বার সেক্রেটারি আবদুল খালেক, জয়েন্ট মেম্বার সেক্রেটারি সাদিয়া আফরিন, প্রধান উপদেষ্টা ইশতিয়াক আহমেদ রুমি, উপদেষ্টা এলিজা আক্তার মুক্তা, রাজি আহমেদ, সাফিউল আজম, রহমান মুস্তাফিজুর রহমান, প্রোগ্রাম প্রোডিউসার নাছির খান।সংগঠনের পক্ষ থেকে উপস্থিত উপস্থিত দর্শক, মিডিয়া, স্পনসর, প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শমশের আলী বলেন, অনেক দিন পর এ রকম একটি ভালো অনুষ্ঠান উপভোগ করছি। একজন বাঙালি হয়ে আরেকজন বাঙালির পাশে দাঁড়ানো বা সহযোগিতা করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। তাই এই প্রবাসে আমরা একে অন্যের সহযোগিতা করব।মধ্যরাত পর্যন্ত গানে গানে দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন বাংলাদেশ স্বনামধন্য দুই কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন ও সামিনা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরও সংগীত পরিবেশন করেন মনিকা দাস, রউশন কাজল, রুবিনা শিল্পী, মারিয়া আক্তার মৌ, নাছির খান, তুষার ভূঁইয়া ও সেলিম ইব্রাহিম। নাচ পরিবেশন করে মাজেদ ডিজায়ার।অনুষ্ঠানে সাউন্ড ও লাইটে ছিলেন সাউন্ড গিয়ারের সায়েম, মিউজিকে ছিলেন এনওয়াইসি বাংলা ব্যান্ড। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন যথাক্রমে ঝর্না ফাত্তা, সামছুন নাহার নিম্মী ও আমরিন হোসেন।
আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পেনসিলভানিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদের নির্বাচনে প্রার্থী ড. নীনা আহমেদ। ১০ জুন ফিলাডেলফিয়ার চেচনাটে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা ও নৈশভোজে অংশ নিয়ে নীনা আহমেদ এই আহ্বান জানান। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা ও ফিলাডেলফিয়ার সাবেক ডেপুটি মেয়র।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ড. ইব্রুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ড. নীনা আহমেদকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান ফারহানা আফরোজ পাপিয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউজার্সি প্রিন্সটনের ডেমোক্র্যাট কমিটির কাউন্সিলম্যান ড. নুরুন নবী, আবু আমীন রহমান, ডেলাওয়ার কাউন্টি ডেমোক্র্যাট কমিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট শেলি রহমান, আপারডারবি ডেমোক্রেটিক কমিটির কাউন্সিলম্যান শেখ সিদ্দীক, মেলবোর্ন ব্যুরোর ডেমোক্রেটিক কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ হাসান, ট্যাক্স কালেক্টর মইন চৌধুরী, কমিটির সদস্য মোহাম্মেদ হারেস এবং লেন্সডেল কমিউনিটির মফিজুল ইসলাম।
সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকায় প্রতিবেশীর জানালার সঙ্গে এক তরুণের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তরুণের পরিবারের দাবি প্রেমের সম্পর্কের জেরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার মামলায় ওই বাড়ির মালিক ও তাঁর এক ছেলে-এক মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।মারা যাওয়া ওই তরুণের নাম মাহমুদ হাসান মান্না (১৯)। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে একডালা ধোপাবাড়ি মহল্লার সানোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার হয়। তবে ওই পরিবারের দাবি তারা ওই তরুণের মৃত্যু সম্পর্কে কিছু জানে না। তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।গ্রেপ্তার তিনজন হলেন, বাড়ির মালিক সানোয়ার হোসেন, তাঁর ছেলে মনোয়ার হোসেন ও মেয়ে শাওন ইসলাম ইভা। ইভা চলতি বছর মাধ্যমিক পাশ করেছেন। মান্না তাঁর সহপাঠী ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন। মান্না একই এলাকার ছবদের আলী ভূট্টোর ছেলে।স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে ইভাদের ঘরের পেছনের জানালার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মান্নার লাশটি দেখতে পায় এলাকাবাসী। পরে পুলিশকে খবর দেয় তারা।নিহতের বড় ভাই মারুফ শেখের অভিযোগ, ‘মান্নার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী সানোয়ার হোসেনের মেয়ে ইভার প্রায় ৩ বছর প্রেমের সম্পর্ক। এ নিয়ে ইভার পরিবার আমার ভাইকে একাধিকবার মারপিট করেছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে মোবাইল ফোনে মান্নাকে ডেকে নেয় ইভা।’ মারুফ শেখের দাবি, ডেকে নেওয়ার পর তাঁর ভাইকে হত্যা করে লাশ জানালার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।নিহতের বাবা ছবদের আলী ভূট্টো বলেন, ‘আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি হত্যাকারীদের সঠিক বিচার চাই।’সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বলেন, এটি হত্যা না আত্মহত্যা নিশ্চিত হতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মারুফ শেখ সাতজনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এর মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংসারের ক্রিজে টিকে থাকাই মুশকিল। সবার বোলিং ঠেকাতে ঠেকাতে। ঘরে ঢোকামাত্র একটা বাউন্সার ধেয়ে এল, কলিজা কাঁপানো স্বর, ‘চা-পাতি এনেছ’, duck করলাম। মোড়ের দোকান থেকে চা পাতা এনে দিয়ে একটা সিঙ্গেল নিলাম। প্রান্ত বদল করে নন-স্ট্রাইকার এন্ডে চলে গেলাম বউমার হাতে চা-পাতি ধরিয়ে দিয়ে। শাশুড়ির বল এখন বউমা-ই সামাল দিক। মেয়ে স্লিপে দাঁড়িয়ে ছিল, স্লেজিং করল, ‘তুমি জানো না ১৫ মিনিট পরপর চা না–খেলে মা অসুস্থ হয়ে পড়ে।’ আশাবাদী ছিলাম ঢাকার ক্রীড়া সাংবাদিকদের মতো, যারা বাংলাদেশের খেলার আগের দিনই বাংলাদেশকে জিতিয়ে দেয়, যে এক কাপ চা পাব। বউমার একটা লেগব্রেক এল, ‘বাবা আমি অন্তুর হোমওয়ার্ক করাতে গেলাম, চা দিতে দেরি হবে’, বলটা ছেড়ে দিলাম, মানে কোন উচ্চবাচ্য করলাম না। বেশি কথা বলা যাবে না, উইকেটে টিকে থাকতে হবে।টিভির সামনে বসি। ম্যাচটা রিড করতে হবে, গেম প্লানিং আর কি! কালকে বাড়িওয়ালা ভাড়া নিতে আসবে। দিতে না পারলে নো বলেই আউট করে দেবে। কোন রিভিউ সিস্টেম নেই। খাবার ডাক পড়ল। আজকের মতো খেলা শেষ।পরের দিন অফিসে বসের রুমে। ওই পিচটা খুব কঠিন। দারুণ স্পিন ধরে। খাজুইরা কথা সব, মানে লুজ বল কয়েকটা। হঠাৎ বললেন, ‘আপনি বেড়াতে পছন্দ করেন?’ সরল মনে হ্যাঁ বললাম। –‘তাহলে তো ভালোই হলো, আপনি আমাদের গোবিন্দপুর কারখানাটা দেখে আসুন, কালই যান।’বসের বলটা গুগলি ছিল, দুসরা, বুঝতে পারিনি। পারলে ব্যাট চালাতাম, ‘না স্যার বেড়াতে আমার একদম ভালো লাগে না।’পার্টি একটা ঝুলিয়ে রেখেছি। ফাইলটা আমার হাতে। শাঁসালো পার্টি। কোন দিক দিয়ে ব্যাট চালালে বাউন্ডারি হবে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। আজকে সপাটে ব্যাট চালালাম। হয় ছয়, নয় আউট। ছয় হয়ে গেল, পার্টি রাজি। অনেক রান যোগ হয়ে গেল, সংসারের স্কোরবোর্ডে। রাইট রং? হে: রান স্কোরবোর্ডে যোগ হলেই হলো, তা ওভার থ্রো থেকে হোক আর ব্যাটের কানায় লেগেই হোক! তেমনই অর্থ, ইদংমিদং, যে পথেই আসুক না কেন! আগের কথা বাদ দিন, আগে বল টেম্পারিং হতো শুনেছেন? আগে তো আম্পায়ার আউট না দিলেও ব্যাটসম্যান নিজে আউট মনে করলেই ব্যাট বগলদাবা করে আসমানের দিকে তাকিয়ে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা দিত। মাঠ ছাড়ার শেষ মুহূর্তে পেছন ফিরে বোলারের দিকে তাকাতো, ‘মেরেছো কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না’ ভঙ্গিতে।এবার বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলায় নিউজিল্যান্ডের উইলিয়ামসন গেল নিজে থেকে? ওই আউট জেনেও গেল না বলেই তো নিউজিল্যান্ড জিতে গেল। তেমনি আগে বেতনের টাকায় লোকে চলতো বলে এখনো চলে? এখন মাটি থেকে বল তুলে নিয়ে ক্যাচের আপিল করে ফিল্ডাররা, দেখেননি? ক্রিকেট জীবনের মতো এবং জীবন ক্রিকেটের মতো বদলে গেছে এখন! ‘কিতনা বদল গ্যায়া ইনসান’!বাসায় ফেরার পথে রিকশাওয়ালা ইনসুইং, আউটসুইং করে রিকশা চালাল। বাসায় অনেক দিন পর ছোট ছেলের সঙ্গে দেখা। ওটাকে দেখলেই ভয় লাগে। কী করে, কখন যে আমাকে রান আউট করে দেবে। ওদিকে দেখি মেয়ে ড্রয়িংরুমে বসে এক ছোকড়ার সঙ্গে গুজগুজ করছে। এটা কি বুকি নাকি? ম্যাচ ফিক্সিং করাতে এসেছে? নাতিটা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে, আহা টুয়েলভ্‌থ ম্যান–খেলার কঠিন সময়ে মাঠে ঠান্ডা পানির বোতল নিয়ে আসার মতো রিফ্রেশিং!জীবনের স্কোরবোর্ডের দিকে তাকাই। অনেক ওভার খেলা হয়ে গেছে। রান কই তেমন? অনেক চেজ বাকি এখনো। মেয়ের বিয়ে, ছেলের চাকরি। আরও অনেকক্ষণ ক্রিজে থাকতে হবে। চিন্তা করে লাভ নেই। যেকোনো বলেই আউট হওয়ার চান্সতো থাকেই! জীবন তো ক্রিকেটের মতো, অথবা ক্রিকেট জীবনের মতো! তাইতো ক্রিকেট এত জনপ্রিয়। দুটিতেই ভালো করতে ৯০ ভাগ লাগে যোগ্যতা, ১০ ভাগ লাগে ভাগ্য।নিজেকে নিংড়ে চালিয়ে যাচ্ছি, এখন দেখা যাক ভাগ্য কতটা সঙ্গ দেয়! আশায় আছি, বড় ছেলেটা ভালো অলরাউন্ডার হবে, মেয়ে বিয়ের পর তার সংসারে ভালো উইকেটকিপিং করবে। আরও আশা করি, ছোট ছেলে নিজেকে সাব্বিরের মতো নষ্ট করবে না।আচ্ছা পরে কথা হবে, স্ত্রী ডাকছে, যাই শোয়েব আখতারের গতির ফার্স্ট বোলিং ফেস করতে হবে এখন। আপনারা দোয়া করবেন। ওনার বল হেলমেটে লাগলেও আমি চিত্তির!ক্রিজে টিকে থাকতে হবে। ‘টিম পরিবারের’ জন্য পুঁজি যোগ করতে হবে স্কোরকার্ডে!ফ্লপ খেলোয়াড়ের জায়গা নেই কোনো দলেই, না জীবনের, না ক্রিকেটের!
নিউইয়র্ক সিটিতে চলাফেরার জন্য জনপ্রিয় বাহন হচ্ছে সাবওয়ে বা মেট্রোরেল। মাকড়সার জালের মতো বিস্তৃত ও ঘড়ির কাঁটা ধরে পরিচালিত এই ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম তুলনামূলক সহজলভ্য এবং সুলভ। নিউইয়র্ক সিটিতে সাবওয়ের ইতিহাস শত বছরের পুরোনো। এখানে সাবওয়ে লাইন প্রথম উদ্বোধন ও রাইড সম্পন্ন হয় ১১৫ বছর আগে, ১৯০৪ সালের ২৭ অক্টোবর ম্যানহাটন বরোর সিটি হল স্টেশনে। এর বছর দু-এক আগে, ১৯০২ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারবরো র‍্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির মাধ্যমে প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড রেললাইন (সাবওয়ে) তৈরি ও পরিচালন কাজ শুরু হয়েছিল এখানে। সর্বশেষ ও নতুন সাবওয়ে স্টেশন হচ্ছে ম্যানহাটনের সেকেন্ড অ্যাভিনিউ লাইন। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি হ্যাপি নিউ ইয়ারে এটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দিনে গড়ে প্রায় ৫ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন যাত্রী সাবওয়ে সুবিধা ভোগ করেন। আমেরিকার সর্বাধিক ব্যস্ততম ও দ্রুততম যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা হচ্ছে নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ে সিস্টেম। এটি বিশ্বের সপ্তম র‍্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেমও বটে।প্রথম দেখায় নিউইয়র্কের সাবওয়ে স্টেশনগুলোর শতাব্দী প্রাচীন দশা আমার মতো যেকোনো নবাগতকে ধাক্কা দেবে, নিঃসন্দেহে। দেশে থাকতে সামরিক ও অর্থনৈতিক পরাশক্তি আমেরিকা সম্পর্কে বিলাসী প্রচারণা থাকায় বিশ্বখ্যাত টাইমস স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশনে ঢুকে আশাহতই হয়েছিলাম।নানা প্রয়োজনে সারা নিউইয়র্কে গত কয়েক মাসে বিস্তর ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতায় এই পাতাল পথের স্টেশনগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা অনুভব করেছি। গুরুত্বের দিক থেকে প্রথম অপূর্ণতা হচ্ছে আবালবৃদ্ধবনিতার আকস্মিক প্রাকৃতিক প্রয়োজনীয়তাকে আমলে নেওয়া হয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ স্টেশনে নেই বাথরুম বা শৌচাগার (রেস্ট রুম) ব্যবস্থা। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, হাডসন ইয়ার্ড, সেকেন্ড অ্যাভিনিউ লাইন, জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা সেন্টার, পার্কচেস্টার, কুইন্স বরো প্লাজা, ব্রডওয়ে জংশন, নসট্রান্ড অ্যাভিনিউ, ইউটিকা অ্যাভিনিউ, গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল, হেরাল্ড স্কয়ার, সিক্সটিওয়ান স্ট্রিট-উডসাইড, টাইম স্কয়ার-ফর্টিসেকেন্ড স্ট্রিট-পোর্ট অথোরিটি টার্মিনাল স্টেশন ইত্যাদির মতো বড় স্টেশন, জংশন ছাড়া তুলনামূলক ছোট স্টেশনে রেস্ট রুম চোখে পড়ে না।সারা নিউইয়র্ক সিটিতে সাবওয়ে স্টেশন অফিশিয়ালি ৪৭২টি। সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সর্বাধিক সাবওয়ে স্টেশন এই সিটিতে। শৌচাগার আছে এমন স্টেশন মাত্র ৮১টি। আর এগুলোতে এমপ্লয়ি ছাড়া সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রেস্ট রুম ১৩৩টি। এগুলোতে আবার ২৪/৭ নীতিও অনুসরণ করা হয় না। রাত ১২টার পর থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত রেস্ট রুমগুলো বন্ধ থাকে। এ সংক্রান্ত কৌতূহলী প্রশ্নে নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়েতে কর্মরত (পেশাগত কারণে নাম প্রকাশে অনাগ্রহী) একাধিক বাংলাদেশি স্টেশন এজেন্টদের (বাংলাদেশের রেলস্টেশনে টিকিট সেলিং/বুকিং ক্লার্কদের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিযুক্ত মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন অথোরিটি/এমটিএর চাকরিজীবী) অভিমত হচ্ছে, ফ্রি মিক্সিং কালচারের কারণে রেস্ট রুমগুলোতে অনৈতিক কার্যকলাপ, গঞ্জিকা সেবন ও ভবঘুরের উপদ্রব হওয়া রেস্ট রুম সংকোচন নীতির জন্য দায়ী। রেস্ট রুম সংক্রান্ত এ যুক্তিগুলো খুব শক্তিশালী না হলেও রেস্ট রুমের অপর্যাপ্ততার অনুকূলে আর কোনো বোধগম্য কারণও খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের ট্রেনের প্রতিটি বগিতে যেমন টয়লেট সুবিধা বিদ্যমান, এখানকার স্টেশনগুলোর মতো সাবওয়ে-ট্রেনের বগিতে তা-ও নেই।আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সাবওয়ে স্টেশনগুলোর প্ল্যাটফর্মে নেই যাত্রী অনুপাতে সন্তোষজনক সংখ্যক ওয়েটিং বেঞ্চ বা চেয়ার। সাবওয়েতে বাংলাদেশের রেলস্টেশনের মতো যাত্রী সাধারণের সাময়িক অপেক্ষাকালীন বসার জন্য আলাদা ওয়েটিং রুম থাকে না। তবে নিউইয়র্কে সরকারি কাজে ইংল্যান্ড, থাইল্যান্ড সফরকালে পাতালপথের সংযোগ ও বিরতি স্টেশনগুলোতে ওয়েটিং চেয়ার বা বেঞ্চের অভাব কখনো অনুভব করিনি। এখানকার স্টেশনগুলো যথেষ্ট আকর্ষণহীন, পর্যাপ্ত আলোহীন এবং অনেকটাই অপরিচ্ছন্ন ধরনের। প্রাচীন যুগের ডিজাইন ও উপকরণে তৈরি প্রায় সবগুলো সাবওয়ে স্টেশন। স্টেশনগুলোর দেয়ালে বসানো টাইলস, কাঠের কাজ, লোহার ফ্রেম, ওয়েটিং বেঞ্চ কিংবা গ্লাসগুলোতেও সেই আমল ও সংস্কৃতির সুস্পষ্ট ছাপ। অধিকাংশ স্টেশনের দেয়ালে সাঁটানো রয়েছে তিন ইঞ্চি বাই তিন ইঞ্চি সাইজের সাদামাটা সেকেলে টাইলস, কোথাও বা সাধারণ মানের গ্লাস কিংবা কাঠের পার্টিশন। নব্বই শতাংশ স্টেশনের ওয়েটিং বেঞ্চগুলো রংচটা কাঠের তৈরি।বিশ্বের ব্যস্ততম এয়ারপোর্ট জেএফকের কাছে সাবওয়ে স্টেশন সাটফিন বুলেভার্ড-জেএফকে, জ্যামাইকা ভ্যান উইক বেশ আধুনিক মানের স্টেশন। জ্যামাইকা সেন্টার থেকে ম্যানহাটনগামী ডাউনটাউন ট্রেনে চড়লে প্রথম স্টপ হচ্ছে সাটফিন। নিউইয়র্ক সিটি দেখতে কিংবা অন্যান্য কাজে আসা বিশ্বের নানা প্রান্তের ভ্রমণকারী ও পর্যটকদের কথা বিবেচনা করেই কুইন্স-জ্যামাইকার এই সাবওয়ে স্টেশন (সাটফিন বুলেভার্ড-জেএফকে) এবং এর পরের স্টেশন জ্যামাইকা-ভ্যান উইককে যথেষ্ট আধুনিক ও আকর্ষণীয় করে তৈরি করা হয়েছে। এ দুটির পরবর্তী স্টেশন দুটো হচ্ছে ভ্যান উইক-ব্রায়ারউড ও ইউনিয়ন টারপাইক-কিউ গার্ডেনস। এগুলো দেখলে অথবা এগুলোর পরবর্তী স্টেশন সেভেন্টি ফিফথ অ্যাভিনিউ, ফরেস্ট হিলস-সেভেনটি ওয়ান অ্যাভিনিউ, এল্মহার্স্ট অ্যাভিনিউ কিংবা বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস-রুজভেল্ট অ্যাভিনিউ দেখলে অনুধাবন করা যায় নান্দনিক গঠন শৈলী ও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে কুইন্স-জ্যামাইকা কিংবা ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন, ম্যানহাটন বরোর সাবওয়ে স্টেশনগুলো সমানভাবে পিছিয়ে।তবে ম্যানহাটন-ব্রুকলিন বরোর কিছু সাবওয়ে যেমন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, হাডসন ইয়ার্ড, সেকেন্ড অ্যাভিনিউ কিউ লাইন, এস্টোরিয়া এন লাইন অত্যন্ত আধুনিক, দৃষ্টি নন্দন এবং বিশ্বমানের। এ ছাড়া রুজভেল্ট আইল্যান্ড, লেক্সিংটন-সিক্সটি থার্ড অ্যাভিনিউ, টুয়েন্টি ফার্স্ট স্ট্রিট-কুইন্স ব্রিজ প্রভৃতি স্টেশনও তুলনামূলক আধুনিক এবং মানসম্মত। অন্যদিকে ব্রুকলিন-ম্যানহাটনেরই থার্টি ফোর স্ট্রিট-পেন স্টেশন, ওয়েস্ট ফোর স্ট্রিট, ফর্টিসেকেন্ড স্ট্রিট-পোর্ট অথোরিটি টার্মিনাল-টাইম স্কয়ার স্টেশন, টুয়েন্টি থার্ড স্ট্রিট, থার্টি সিক্সথ র্ট্রিট, সিক্সটি ফিফথ স্ট্রিট, ফুলটন স্ট্রিট, চেম্বার স্ট্রিট, ব্রড স্ট্রিট, ওয়েস্ট কোর্ট স্ট্রিট, ব্রডওয়ে জংশন, কুইন্স বরো প্লাজা কিংবা ব্রঙ্কস বরোর পার্কচেস্টার প্রভৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ সিংহভাগ স্টেশন/জংশনেরই দশা শ্রীহীন, পুরোনো।আশার কথা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ সাবওয়ে স্টেশনগুলোর রেনোভেশন কাজ পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার কথা শুনিয়েছেন এমটিএতে কর্মরত স্বদেশি কর্মকর্তারা। সূত্রমতে দেড় শতাধিক অনাবাসী-বাংলাদেশি নিউইয়র্ক সিটির মর্যাদাজনক সংস্থা এমটিএতে সুপারিন্টেন্ডেন্ট, সুপারভাইজার, স্টেশন এজেন্ট প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষতার সঙ্গে চাকরি করছেন।নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ে স্টেশনগুলোর মধ্যে ২৭৫টি স্টেশন সম্পূর্ণ আন্ডারগ্রাউন্ড (৫৯ শতাংশ), ১৫৩টি এলিভেটেড স্টেশন (৩২ শতাংশ), অবশিষ্ট ৩৪টি স্টেশনের মধ্যে অন এন এমবাঙ্কমেন্ট ২৯টি (৬ শতাংশ) এবং অপেন কাট স্টেশন ১৫টি (৩ শতাংশ)। সাধারণভাবে এটি পাতাল পথ বা ভূতল পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত হলেও এই সিস্টেমের ৬১ শতাংশ স্টেশন ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে এবং অবশিষ্ট ৩৯ শতাংশ স্টেশন ভূপৃষ্ঠের ওপরে অবস্থিত।২০১৮ সালের ১২ জুলাই প্রকাশিত এক জরিপ থেকে জানা যায়, যাত্রী সাধারণের ব্যবহারের দিক থেকে নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ে স্টেশনগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে আছে টাইমস স্কয়ার/ফরটি সেকেন্ড স্ট্রিট/পোর্ট অথোরিটি টার্মিনাল স্টেশন। নিউইয়র্ক সিটির অধিকাংশ সাবওয়ে স্টেশনে রয়েছে নিউজ পেপার স্ট্যান্ড। যেগুলোতে সংবাদপত্রের চেয়ে টুকিটাকি খাবার এবং জরুরি ব্যবহার্য জিনিসপত্রই সংরক্ষণ ও বিক্রি হয় বেশি। সুখবর হচ্ছে এ খুদে ব্যবসাটি বলতে গেলে আমাদের বাংলাদেশিদের দখলে।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষের জ্ঞান পিপাসা মেটাতে পাশে দাঁড়ানোর জন্য শ্রদ্ধেয় দাতাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে শুরু করছি সারা বাংলাদেশে কিছু সহজ প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বিনা মূল্যে বই পাওয়ার পদ্ধতি।প্রশ্ন: বই কারা পাবেন?উত্তর: বাংলাদেশে বসবাসকারী যেকোনো আর্থিক অসচ্ছল ব্যক্তি।প্রশ্ন: কী ধরনের বই পাবেন?উত্তর: যেকোনো ধরনের বই। উদাহরণস্বরূপ গল্পের বই, মুক্তিযুদ্ধের বই, চাকরির জন্য প্রস্তুতির বই ইত্যাদি।প্রশ্ন: কীভাবে পাবেন?উত্তর: পদ্ধতিটা দুটি খুবই সহজ ধাপে যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা হবে। এতে আপনি যত বেশি সহযোগিতা করবেন, তত তাড়াতাড়ি বই পাবেন।ধাপ এক: আমার (লেখক) ফেসবুক পেজে (https://www.facebook.com/lekhashare) ইনবক্সে মেসেজ দিয়ে দুটো তথ্য দিন। প্রথম তথ্য: আপনি যে বই পড়তে চান সেই বইটির নাম। দ্বিতীয় তথ্য: আপনার আর্থিক অসচ্ছলতার বিষয়টি জানেন—এমন একজন শিক্ষক বা আপনার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা আপনার শহরের সিটি কাউন্সিলরের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর।ধাপ দুই: আমি আপনার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই সাপেক্ষে আপনাকে রকমারি (rokomari.com) থেকে বইটি আপনার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেব।প্রশ্ন: আমি কীভাবে আপনার তথ্যগুলো যাচাই করব?উত্তর: আমি আপনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আপনার শিক্ষক/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা আপনার শহরের সিটি কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করব। এ ক্ষেত্রে আপনার সম্পর্কে তাঁদের মন্তব্য প্রাধান্য পাবে।প্রশ্ন: আপনি কি যেকোনো বই অনুরোধ করতে পারেন?উত্তর: হ্যাঁ, তবে বইটি রকমারিতে থাকতে হবে এবং এটা ৫০০ টাকার মধ্যে হলে প্রাধান্য দেওয়া হবে।প্রশ্ন: রকমারি কেন?উত্তর: পুরো বাংলাদেশে বই পাঠাতে রকমারি একটি নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান।প্রশ্ন: যদি বইটি রকমারিতে না থাকে?উত্তর: আপনি তাঁদের বইটি আনার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। অনুরোধ করতে তাঁদের কাস্টমার কেয়ারে কল করতে পারেন (16297 or 015 1952 1971), ইমেইল করতে পারেন(admin@rokomari.com) বা তাঁদের ওয়েবপেজে লাইভ চ্যাট করতে পারেন।প্রশ্ন: বইটি পেতে আনুমানিক কত দিন লাগবে?উত্তর: রকমারি সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যেই বই পাঠিয়ে দেয়।প্রশ্ন: আপনার আরও কিছু জানার আছে?উত্তর: আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে আমার ফেসবুক পেজ মেনশন বা উইথ করে স্ট্যাটাস দিন। আমি সেখানে গিয়ে উত্তর দেব। অথবা আমাকে ইনবক্সে মেসেজ দিন। তবে ইনবক্সে মেসেজ দিলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। বুঝতেই পারছেন আমার একার পক্ষে এতগুলো মেসেজের উত্তর সময়মতো দেওয়া একটু কঠিন। তাই বিষয়টিতে আমাকে সহযোগিতা করুন।
১.প্রায় সময়ই অনেক সহজ বিষয়ও মাথায় ঢোকে না। হয়তো বিষয়টা নিয়ে তত মাথা ঘামাইনা বলে এমন হয়। জগতের অনেক ব্যাপারই বুঝতে পারি না। আবার সবার জ্ঞানের পরিধিও সমান নয়। আমি আমার নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যা সম্পর্কে আমি ভীষণভাবে অজ্ঞ। সবাই যখন এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে, তখন আমি ক্যাবলার মতো শুনি। আবার ভাবি, কত অল্প জেনেও তো মানুষের জীবন পার হয়ে যায়! যে বিষয়টা সম্বন্ধে জানি না, সেটা নিয়ে কথা বলে লজ্জা পেতে কে চায়! সে জন্য অপেক্ষায় থাকি, কেউ না কেউ না-জানা বিষয় নিয়ে বলবেন।সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর বিখ্যাত ‘অর্ধেক জীবন’ গ্রন্থে এক জায়গায় বলেছেন, ‘আমার চরিত্রের প্রধান দুর্বলতা এই যে, আমি নিজেকে জোর করে উপস্থাপিত করতে পারি না এবং প্রত্যাখ্যান একেবারে সহ্য করতে পারি না। যেখানে প্রত্যাখ্যানের সামান্য সম্ভাবনা থাকে সেখানে কিছু চাই না, সেখানে যাই না। এমনকি নিশ্চিত সম্মতির আভাস না পাওয়া পর্যন্ত আমি কোনো মেয়ের কাছেও চুম্বন প্রার্থনা করিনি। তা হলেও কি জীবনে কখনো আমাকে প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে হয়নি? হয়েছে অবশ্যই, অনেক সময় নিজের অনিচ্ছায় বা অন্যের তাড়নায় মানুষকে অনেক জায়গায় যেতে হয়, কিছু চাইতে হয়। সংস্কৃতে একটা কথা আছে, যাচ্ঞা মোঘা বরমধি গুনে নাধমে লব্ধকামা। অর্থাৎ, অধমদের কাছে কিছু চেয়ে লব্ধকাম হওয়ার বদলে গুনসম্পন্ন কারও কাছে কিছু চেয়ে ব্যর্থ হওয়াও ভালো। কিন্তু এ যুগে অধমদের হাতেই যে বেশি ক্ষমতা! এবং তারা কিছু দেওয়ার আগে ক্ষমতা দেখাতে চায়।’—আমার অবস্থাও অনেকটা ওই রকমই। তাই ক্ষমতাবানদের কাছ থেকে দূরে থাকা শ্রেয় বলে জ্ঞান করি।বিদেশে আসার পর প্রায়ই রিফিউজি বা শরণার্থী কথাটা শুনতে পেতাম। রিফিউজি শব্দটির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ছোটবেলায়। আমাদের বাড়ির কাছেই সিঅ্যান্ডবি রোডের পাশে বেশ কিছু চারতলা বিল্ডিং ছিল। এগুলোকে বলা হতো রিফিউজি কলোনি। কেন যে এই নাম হলো, আজও জানি না। সেখানে আমরা বিকেল হলে মাঝে মাঝে খেলতে যেতাম, কারণ আমার বেশ কয়েকজন স্কুলের বন্ধু বাস করত এই কলোনিতে। আর ছিল সুন্দরী সুন্দরী মেয়েরা। মেয়েদের দেখার জন্যও যেতাম। রিফিউজি যে আলাদা কিছু, তাদের যে আলাদা ধরনের দুঃখ-বেদনা আছে, তখন তো তা মনে হয়নি! আমরা একত্রে খেলতাম, হাসতাম, বেড়াতাম। তারা তো কত সুখী ছিল দেখেছি। এ কথা ঠিক যে তারা কেউ স্থানীয় ছিল না। চাকরি সূত্রে তারা এসেছে। এটা ছিল আসলে সরকারি কলোনি। সরকারি কলোনির নাম কেন রিফিউজি কলোনি হবে? কেউ অন্য জায়গা থেকে এলেই বুঝি তাকে রিফিউজি বলতে হবে!২.দেশ ভাগের পর অনেক লোক ভারতে চলে যায়। তারা সেখানে ভালো জীবন পেলেও তাদের মধ্যে একটা দুঃখবোধ ছিল। ভাবত, তারা কি রিফিউজি? সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এ সম্পর্কে অনেক দিন পর বাংলাদেশে বেড়াতে এসে একবার লিখেছেন, ‘শীতকালে মেঘহীন নক্ষত্র খচিত আকাশ। ছায়াপথের অণু-পরমাণুর মতন আকৃতির সব তারা, যেমন ছোটবেলায় ছাদে শুয়ে দেখেছি। তখন মনে হতো, এই বিশাল মহাকাশে আমাদের এই পৃথিবী নামের গ্রহটি একটা বালু কণার মতোও নয়। তার চেয়েও অতি ক্ষুদ্র। তারই মধ্যে মানুষের সভ্যতা, সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মানুষের কল্পনার জগৎ কত সীমাহীন, কালহীন, দিগন্তহীন? এই পৃথিবীরও অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে কত মানুষ দেশ থেকে দেশান্তরে গেছে, খাদ্য, পানীয় ও নিরাপত্তার সন্ধানে মানুষ জন্মস্থান ছেড়ে অজানার সন্ধানে যেতে দ্বিধা করেনি, পাড়ি দিয়েছে আপাতদৃষ্টিতে অকুল সমুদ্র। তা হলে আমার বাবা-কাকারা যেকোনো কারণেই হোক, ফরিদপুর ছেড়ে চলে গেছেন কলকাতায়, তা নিয়ে এত আদিখ্যেতা করারই বা কী আছে? মানুষ তো বাসস্থান বদলাতেই পারে। মাদারীপুরের সেই গ্রামের বাড়ির তুলনায় কলকাতায় আমরা তো তেমন খারাপ অবস্থায় নেই। প্রকৃতি থেকে বিচ্যুত হলেও যে নাগরিক উপভোগ পেয়েছি, তা কি কম আকর্ষণীয়?দেশ কি একটা ধোঁয়াটে আবেগময় ধারণা মাত্র নয়, আজকের প্রেক্ষাপটে হয়তোবা সবকিছু বদলে গেছে। বস্তুত আমরা সবাইতো সেই অর্থে রিফিউজি! আমরা সবাই নিজের মাটি ছেড়ে কেউ পরবাসী, কেউ অনাবাসী। এর মধ্যে আলাদা কিছু আছে কি! আমরা অনেকে ভিন্ন দেশের পাসপোর্টের অধিকারী হলেও আমার তো মনে হয় কিছু মৌলিক ব্যাপার ছাড়া সবই প্রায় এক! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন তার বাবার কথা, ‘এত দিন পর যেন তাঁর আবার মনে হলো, তিনি পশ্চিম বাংলার নাগরিক নন, এখানে তো বাসা ভাড়া করে থাকা, তাঁর আসল বাড়ি পূর্ববঙ্গে। তিনি কোমায় শুয়ে বলতে লাগলেন, অনেক দিন বাড়ি যাওয়া হয়নি, এবার যেতে হবে, দরজার একটা কবজা বদল করা দরকার ছিল, বাতাবি লেবু গাছটায় এক সময় অনেক ফল হয়, গোয়ালন্দ ঘাটের সেই হোটেলের খাওয়া তোর মনে আছে? স্টিমার হতে নেমে সেই হোটেলে খাব, তারপর নৌকোয় ধুয়াসার গ্রামের পাশ দিয়ে...কত শাপলা ফুল ফুটেছে, চুনিকে রেখে দিলে সে মাদারীপুরে থাকবে, এই মাসেই যাব...।’৩.নিজের দেশ ছেড়ে কত দূরে আমরা বসবাসের জন্য এসেছি। মাঝে মাঝে মনে হয়, কানাডা দেশটা বড় বেশি দূর। আর একটু কী কাছে হতে পারত না! তাহলে একছুটে গিয়ে দেখে আসতে পারতাম মাকে, ভাই–বোনকে। আমার প্রায়ই এ রকম হয় যে, এক্ষুনি মায়ের সঙ্গে কথা বলি, মাকে স্বপ্ন দেখেছি, উল্টোপাল্টা স্বপ্ন। মন খারাপ হয়ে যায় না! তখন কিছুতেই ফোনে পাই না। কলিং কার্ডগুলোকে আপন মনে হয় না। তখন মনে হয়, বরিশাল জায়গাটা বোধ হয় এই গ্রহের নয়। হয়তো মাকে ফোনে পেলাম, আমি তার গলা শুনি কিন্তু তিনি কিছুতেই আমাকে শুনতে পান না। হয়তো মা বার্ধক্যের কারণে ফোন সেটটা ঠিকমতো কানে লাগাতে পারেননি বা যে ফোন কার্ডটি ব্যবহার করছি সেটাই ভালো না। হয়তো বাড়ির ফোন সেটটা ঠিক নেই। একটা ফোন সেট বোধ হয় কেনা দরকার। কত কথা মনে আসে।এই যে বিদেশে যারা রিফিউজি, তারা তো আমাদেরই ভাইবোন, বন্ধু, আত্মীয় পরিজনই। তাদের দুঃখ, বেদনা, অনুভূতিগুলো অনেক গভীর। দেশে আত্মীয়–পরিজনের জন্য তাদের রয়েছে দীর্ঘ দিনের না দেখার হাহাকার!তাদের কেন আলাদা চোখে দেখতে হবে! তাদের দুর্বলতার সুযোগ কেন আমরা নিই? বরং আমাদের উচিত হবে, যে মানুষটি সমস্যার মধ্যে আছে তার পাশে দাঁড়ানো। বিপদে বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তারা বিদেশে এসেছে থাকতে। কে কীভাবে এল, সেটা বড় ব্যাপার নয়। কার কী অবস্থান সেটা বড় করে দেখার চেয়েও তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা দরকার। রিফিউজিদের মতো দুঃখী বিদেশে আর নেই। তাদের কষ্টগুলো হৃদয় দিয়ে অনুভব করা দরকার। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা না থাকলে আমাদের বেঁচে থাকার আর কোনো অবলম্বন থাকে না।যারা রিফিউিজি তাদের এমনিতেই সারাক্ষণ একটা মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বাঁচতে হয়। কখন ডিপোর্টেশনের আদেশ হবে, তা তার জানা নেই। এই যে আমাদের বন্ধু আহমেদ হোসেন নিউইয়র্কে এত বছর থাকার পরও তাঁর বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশনের আদেশ হলো—এটি খুবই অমানবিক। তাঁর সন্তানদের জন্য ক্ষতিকর। এই অবস্থায় তার দরকার মানসিক সাহায্য। কমিউনিটির নেতাদের উচিত তাদের হয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানানো। তাদের অনেকেই একসময় এই অবস্থা অতিক্রম করেছেন। তারা জানেন, এর যন্ত্রণা কতটুকু। এক টুকরো কাগজের যে কত সুদূর প্রসারী আবেদন, তা তারাই মাত্র জানেন যারা ভুক্তভোগী। দিনের পর দিন এই যন্ত্রণা নিয়ে বাঁচতে হয়। মানুষের স্বপ্নগুলো কেন ভেঙে যায়?
অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল রেলস্টেশন এলাকার সেই বড় ছড়া রেলসেতু ঝুঁকির মুখে পড়েছে আশঙ্কা করা হয়েছে। ফলে শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে সিলেট থেকে চট্রগ্রামগামী আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন বরমচাল স্টেশনে পৌঁছালে ট্রেনটিকে আটকে দেয় স্থানীয় লোকজন।পরে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলীরা ওই রেলসেতুতে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানান। ফলে প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বেলা পাঁচটার দিকে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এই ঘটনায় কয়েকটি ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছিল। পরে তা চলতে শুরু করে।ৎএলাকাবাসী জানায়, বেলা একটার দিকে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন বরমচাল স্টেশনে পৌঁছায়। এ সময় তাঁরা স্টেশনে ছুটে গিয়ে ট্রেনটিকে আটকায়। রেলসেতুটি ঝুঁকিতে থাকায় তাঁরা স্টেশন মাস্টার ও ট্রেনের চালকের কাছে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন না চালাতে অনুরোধ করেন। পরে মাস্টার ও চালক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ট্রেনটি স্টেশনেই আটকে রাখেন।বিকেলে বরমচাল রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার সফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এলাকাবাসীর আপত্তিতে ট্রেন আটকে রাখা হয়েছিল। পরে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের লোকজন গিয়ে সেতুটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তাঁরা সেতুটি ঝুঁকিমুক্ত থাকার কথা জানান। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও প্রকৌশলীরা কথা বলেন। পরে বিকেল ৪টা ৫৩ মিনিটে পাহাড়িকা ও ৫টা ৭ মিনিটে পারাবত ট্রেন ওই রেলসেতুটি অতিক্রম করে গন্তব্যে চলে যায়।বরমচাল রেলস্টেশন এলাকার বাসিন্দা ফাজু চৌধুরী, বাকু চৌধুরী ও জামাল হোসেন জানান, বুধবার সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া পাহাড়ি ঢল নামছে। এতে বড় ছড়ায় পানি বেড়ে গেছে, বেড়েছে পানির প্রবাহ। সেতুর নিচে থাকা দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের বগির ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, দুর্ঘটনার পর সেতুর নিচে পড়া বগিটি সরিয়ে ফেললে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। বগিতে পানি বাধা পাচ্ছে। সেতুর গার্ডারে (স্তম্ভ) পানির ধাক্কা লেগে এর নিচের মাটি সরে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।সিলেট রেলস্টেশনের মাস্টার আফসার উদ্দিন বলেন, বড় ছড়া রেলসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেটের মাইজগাঁও এবং চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী জালালাবাদ মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন কুলাউড়া জংশন স্টেশনে আটকা পড়েছিল।গত ২৩ জুন একই স্টেশনের পাশে সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ট্রেনের পাঁচটি বগি রেললাইন থেকে ছিটকে পড়ে। এর মধ্যে একটি বগি বড় ছড়া সেতুর নিচে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চার জন যাত্রী নিহত হন। আহত হন আরও শতাধিক যাত্রী।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ফেসবুক লিব্রা নামের প্রকল্পের অধীনে চালু করতে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব ভার্চুয়াল ফিন্যান্সিয়াল কয়েন মার্কেট ক্রিপ্টোকারেন্সি।ধারণা করা হচ্ছে, তাদের এই পদ্ধতি রিয়েল এস্টেট মার্কেটে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসবে। মাল্টি মিলিয়ন ডলারের আদান–প্রদান ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে সহজেই করা যাবে। ইতিপূর্বে বিট কয়েন ব্যবহার করে বড় বড় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো কিছু আদান–প্রদান করেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি বিট কয়েন থেকেও সহজ মূল্য হবে। কমার্শিয়াল ও রেসিডেন্সিয়াল ভাড়াটেরা তাদের ভাড়া এই কারেন্সির মাধ্যমে সহজে পরিশোধ করতে পারবেন।ইনভেস্টর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা ইতিপূর্বে বিটকয়েন গ্রহণে অসম্মতি প্রকাশ করেছিলেন তাদের ধারণা, ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানের কারণে লিব্রা ব্যবহার নিরাপদ হবে না। কারণ ফেসবুক তাদের ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ফেসবুকের তথ্য অনুযায়ী, লিব্রা ফেসবুকের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে না। ফলে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ থাকবে।বিশ্বব্যাপী প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাই। তাদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার এক নূতন দিগন্তের সূচনা করবে। তা ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকেরা তাদের দেশে সহজ মূল্যে অর্থ পাঠাতে পারবে।রিয়েল এস্টেট খাতের কেউ এখনো সদস্য না হলেও ইতিমধ্যে ১ কোটি মার্কিন ডলার মেম্বারশিপ ফি প্রদান করে ভিসা, মাস্টার কার্ড, উবার, ইবে, স্পটোফাই, পে-পাল এবং এন্ডারসন হরোউইজ লিব্রার সদস্য হয়েছে।
আটলান্টিক সিটিতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সির উদ্যোগে ‘ফুড ব্যাংক’ আয়োজিত হয়েছে। ২০ জুন আটলান্টিক সিটির ২৭০৯, ফেয়ারমাউন্ট অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টারে এ সকাল ১০টা থেকে ফুড ব্যাংককের কার্যক্রম শুরু হয়। ফুড ব্যাংক কার্যক্রমের আওতায় সেবা গ্রহণকারীদের কমিউনিটি ফুড ব্যাংক অব নিউ জার্সি তাজা শাকসবজি, দুধসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে। বিভিন্ন কমিউনিটির বিপুলসংখ্যক লোকজন ফুড ব্যাংককের সেবা গ্রহণ করে।বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সির এই ধরনের মহতী কার্যক্রম কমিউনিটিতে বেশ প্রশংসিত হয়েছে এবং এই ধরনের কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রফিক ও সভাপতি জহিরুল ইসলাম বাবুল ফুড ব্যাংককের কর্মসূচি সফল ও সার্থক করায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
জাতীয় পার্টি যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহ্বায়ক কমিটির নাম সম্প্রতি বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়েছে। তবে এই আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে জাতীয় পার্টি যুক্তরাষ্ট্র শাখার কোনো সম্পর্ক নেই। চেয়ারম্যান কর্তৃক জাতীয় পার্টি যুক্তরাষ্ট্র শাখার অনুমোদিত কমিটি ২০২১ সাল পর্যন্ত বহাল আছে। তাই জাতীয় পার্টির বর্তমান কমিটি আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।২৪ জুন সন্ধ্যায় এস্টোরিয়ার একটি রেস্টুরেন্টের মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির যুক্তরাষ্ট্র শাখার উদ্যোগে এক কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই কর্মী সভায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দুর সঞ্চালনায় কর্মী সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাপার প্রধান উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শওকত আলী ও উপদেষ্টা গিয়াস মজুমদার।কর্মী সভায় বক্তব্য রাখেন জাপার সিনিয়র সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য জসিম উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য হারিস উদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসেফ বারী টুটুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য মো. লুৎফুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক ওসমান চৌধুরী, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মহসিন আলী, মহিলা সম্পাদক জেসমিন আক্তার চৌধুরী, যুগ্ম প্রচার সম্পাদক ওয়াহিদ ফেরদৌস, যুব-বিষয়ক সম্পাদক শফি আলম, দপ্তর সম্পাদক জি এম ইলিয়াস, ছাত্র-বিষয়ক সম্পাদক মীর জাফর, জাতীয় যুব সংহতির সহসভাপতি ইব্রাহিম আলী, জাতীয় মহিলা পার্টির সহসভানেত্রী কানিজ আয়শা, জাতীয় শ্রমিক পার্টির সহসভাপতি আবিদুর রহমান, নিউইয়র্ক স্টেট কমিটির সভাপতি মো. হানিফ ও সাধারণ সম্পাদকফিরোজ হাসান মিলন, সিটি কমিটির সভাপতি শুভংকর গাঙ্গুলি ও সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, সদস্য মঈন খান, মো. বাচ্চু প্রমুখ। সভায় বক্তারা বলেন, জাতীয় পার্টি যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহ্বায়ক কমিটির নাম সম্প্রতি বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এটা দেখে আমরা হতবাক হয়েছি।
আমেরিকার নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে কুলাউড়া অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজার্সির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৩ জুন সন্ধ্যায় প্যাটারসনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজা মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা সঞ্চালনা করেন সদস্যসচিব গোলাম মোদাব্বির চৌধুরী। এতে আলোচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ জুবায়ের আলী, আহমেদুর রহমান নুমান, আতিকুর রহমান, আবদুল লতিফ খান, আতিকুল ইসলাম, সৈয়দ ইমন ইসলাম, খায়রুল ইসলাম, শামিম আহমদ ও তারেক চৌধুরী। সভায় ২০১৯ সালের বনভোজনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। স্থান পরে জানানো হবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১৩ জুলাই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। নতুন কমিটির তত্ত্বাবধানে এবারের বনভোজন-২০১৯ অনুষ্ঠিত হবে। সভায় কমিটি গঠন ও বনভোজন সফল করতে নিউজার্সির কুলাউড়াবাসীর সহযোগিতা কামনা করা হয়।
‘তোমার টানে সারা বেলার গানেভোরের অন্ত্যমিল নিশীথ জানে’এমন টান আর অন্ত্যমিল যেখানে সেখানেই মিলনমেলা। যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি ঘোচাতে দেশীয় সংস্কৃতির কোনো আহ্বান যেন অনেক দিন পরে এক পশলা বৃষ্টির মতো। সে টানই মূলত আমাদের বিনি সুতার মালায় বাঁধতে থাকে। ব্যস্ত জীবনের চাকা থামিয়ে, আমরা বের করে নিই কিছু সময়। নারী মহলে ঝড় ওঠে গয়না জড়োয়া আর বাহারি শাড়িতে সাজার অলংকারে। তেমন করেই আমিও একটু সময় বের করে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা টিমে ভিড়ে গেলাম ডিসি বইমেলার শেষ দিনে। পর পর ছয়টা শাড়ি গায়ে লাগিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়ে, একটা সঙ্গে নিলাম। দীর্ঘ যাত্রাপথে যে শাড়িতে লুকানো নারীর ভালোবাসা, সে শাড়ির ভাঁজ খোলা হয় না আমাদের কত দিন। তাই সুযোগ পেলে এমন মাহেন্দ্রক্ষণ আমরা হেলায় হারাতে রাজি নই মোটেই। কিন্তু আমার মতো দু/চারজন অলস প্রকৃতির নারী যে নেই, তা নয়। তাইতো সঙ্গের শাড়িটা সঙ্গে থাকল, পরা হলো না। পরিবেশ পরিস্থিতি প্রতিকূলতার জন্য অনেক কিছু ছাড় দিতে হয়। স্বাচ্ছন্দ্যে চলার জন্য সত্যি বলতে প্যান্ট শার্টের বিকল্প নেই। নারীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বঙ্গজননীর পুরুষ সন্তানরাও সেজে উঠেছেন রং–বেরঙের পাঞ্জাবি আর ফতুয়ায়।হয়ে গেল ‘আমরা বাঙালি ফাউন্ডেশন’–এর আয়োজনে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাভাষী মানুষের বইমেলা। ২২ জুন দুদিনব্যাপী ডিসি বইমেলার শুরু হয় আর্লিংটনের পেন্টাগন সিটি শেরাটন হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে। বইমেলা মূল উদ্দেশ্য হলেও জমে উঠেছিল প্রাণের মেলা এবং সংস্কৃতির এক অপরূপ সন্ধ্যা। গতানুগতিক সব খবর আপনারা জানেন। আমি শুধু বলছি, আমার দেখা ২৩ জুন বইমেলার কথা। সকাল থেকে শুরু হয় লোক সমাগম। দুপুরের দিকে বলরুম পরিপূর্ণ। অপরূপ এক শীতল পরিবেশ যেন মেলার মাধুর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।যদিও মেলা মানে হচ্ছে আমজনতার, কিন্তু খুব সূক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করলাম এ মেলায় এসেছিলেন ডিসির বুদ্ধিজীবী শ্রেণির মানুষজন। সেই সঙ্গে দর্শক বলেন আর পাঠক বলেন—তারাও ছিলেন ব্যক্তিত্বে আর আভিজাত্যে অটুট। বলা যায়, একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষ। যাদের শিক্ষা-দীক্ষা, কথা বলা, চলা থেকে শুরু করে সাজসজ্জায় ফুটে উঠেছিল তাদের বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা। ব্যবহারে অমায়িকতার ছাপ। অহংকার ছাপিয়ে অনেক নারী স্বেচ্ছায় এসে কথা বলছিলেন একজন আরেকজনের সঙ্গে। কুশল বিনিময়ে জেনে নিচ্ছিলেন স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি। শিল্পী খান নামে এক আপা আমার সঙ্গে কথা বললেন, ‘চেনা চেনা লাগছে’। আমারও সে রকম লাগছিল, যদিও তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। কথা প্রসঙ্গে জানলাম, উনি মেলা সংগঠকদেরই একজন। তাঁর ব্যবহারে ছিল মুগ্ধতা, আন্তরিকতা। অনেকে নিজে থেকে এসেও পরিচিত হলেন। তার মধ্যে একজন ইনারা ইসলাম, উনি একজন আইটি স্পেশালিস্ট সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার (আইআরএস)। তিনি ছিলেন, জিএস বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। তিনি ফোবানার সাবেক ট্রেজারারও ছিলেন।বাংলাদেশ থেকে আসা কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক ও সেলিনা হোসেন ছিলেন বইমেলার মধ্যমণি। এককালে লেখকেরা অটোগ্রাফ দিয়ে ক্লান্ত হতেন, এখন ক্লান্ত মুখে হাসির রেখা টেনে নির্দ্বিধায় মডেল হয়ে উঠেছেন সবার সঙ্গে। একজন নারী ছবি তুলতেই দেখা গেল, দল বেঁধে বিভিন্ন গ্রুপে লেখক আনিসুল হককে ঘিরে ধরলেন অনেকেই। তবে সে ক্ষেত্রে পুরুষরাও পিছিয়ে নেই। ক্যামেরার সামনে তাঁরাও স্মৃতি ধরে রাখতে উন্মুখ। প্রথম আলোর স্টলে এসেছিলেন কথাসাহিত্যিক নূরজাহান বোস। অনেক প্রবীণ গুণীজন মেলার শোভা বাড়িয়েছেন। তাঁদের দেখে আমাদেরও ছোটবেলার স্মৃতি হাতড়াতে হলো। খবর পাঠক ইকবাল বাহার চৌধুরী, সরকার কবির উদ্দিন, রোকেয়া হায়দারসহ উপস্থিত ছিলেন আরও অনেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। যাঁদের হয়তো আমরা নাম শুনেছি। ক্লান্ত দুপুরের ক্লান্তি ঝরিয়ে দিতে বিকেলে শুরু হলো গানের মূর্ছনা। ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল, সাগরের বুক থেকে মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে...’ পুরোনো দিনের এসব গানে হারিয়ে গেছেন আবালবৃদ্ধবনিতা। উপস্থাপনায় ছিল ভিন্নতা। তখন স্টলের সামনে ভিড় কমতে থাকে, সবার উপস্থিতি গান-নাচের অঙ্গনে। লেখক মোস্তফা তানিম দুঃখ করে বলছিলেন, ‘এসব আয়োজন আরও রাতে হলে ভালো ছিল, কারণ সবার দৃষ্টি গানের স্টেজে যা বই বিক্রির অন্তরায়’। তবে বই বিক্রি হোক আর না হোক—জনতার কাছে তথ্যবহুল হয়ে ওঠার জন্য এ আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। পৃথিবীটা চলছে উইন্ডো শপিংয়ের ওপর—এটাও এ রকম অনেকটা। লেখকদের সঙ্গে সবাই ফেসবুকে যোগাযোগ স্থাপন করতে আগ্রহী। অনেকেই অ্যাকাউন্টে বন্ধুত্ব বিনিময় করলেন। উদ্দেশ্য যাই থাকুক, কে বা কারা ভালো লেখেন, সবাই একটা ধারণা ঠিক পেয়ে যাবেন। বৃক্ষের ফলের মতো দু-চারজন ভালো লেখক অবশ্যই ভবিষ্যতে আমরা পাব।আয়োজকেরা চেষ্টা করেছেন আগত অতিথিদের নির্মল আনন্দ দিতে এবং এ ব্যাপারে তাঁরা পুরোপুরি সফল বলা যায়। তাঁদের আয়োজনের একটা বিশেষ অংশ রক্ষা করেছেন আয়োজকদের চার বছর থেকে বিশ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা এবং কাজটা তারা যত্নের সঙ্গে করেছে। তারা ছিল স্টলগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে। কাজটা করেছে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আরেক চমক ছিল চিত্র প্রদর্শনী কর্নার। শত মানুষের আদর ভালোবাসা আশীর্বাদ নিয়ে আগামীর পঞ্চম একক চিত্র প্রদর্শনী শেষ হলো ডিসির বইমেলায়। আগামী নামের এই বাচ্চা অবশ্যই ভবিষ্যতে বাঙালি জাতির মুখ উজ্জ্বল করবে।হোটেলের এক রুমে ঘরোয়া পরিবেশে খাবারের স্টল ছিল। আপাতদৃষ্টিতে রেস্টুরেন্ট হিসেবে যে কেউ ভুল বুঝতে পারেন। সম্পূর্ণ দেশি খাবারের তালিকা যা বুফে আকারে পরিবেশিত হচ্ছে, শুধু ব্যবধান কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করছিলেন। খাবার ছিল স্বাদে-গন্ধে ভরপুর, এমনকি গুণগত মানে। এক কথায় সব মিলিয়ে চমৎকার আয়োজন ছিল। আয়োজক আমরা বাঙালি ফাউন্ডেশনকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।
বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অব আমেরিকা আয়োজিত চলতি বছরের নিউইয়র্ক ফুটবল লীগের দ্বিতীয় সপ্তাহের খেলায় ব্রাদার্স এলায়েন্স, যুবসংঘ ও আইসাব জয় পেয়ে পূর্ণ পয়েন্ট অর্জন করেছে। ২৩ জুন বিকেলে এল্মহার্স্টের নিউটাউন অ্যাথলেটিক মাঠে লীগের এই তিনটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়।দিনের প্রথম খেলায় ব্রাদার্স এলায়েন্স ১-০ গোলে যুবসংঘকে (এ) পরাজিত করে পূর্ণ পয়েন্ট লাভ করে। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত খেলার প্রথমার্ধ গোল শূন্য ছিল। পরবর্তীতে খেলার দ্বিতীয়ার্ধের ৩২ মিনিটের সময় ব্রাদার্সের পক্ষে কাজুয়ার জয়সূচক গোলটি করেন।দিনের দ্বিতীয় খেলায় যুব সংঘ (বি) সহজেই ৩-০ গোলে সন্দ্বীপকে পরাজিত করে পূর্ণ পয়েন্ট লাভ করে। খেলার প্রথমার্ধের ২৫ মিনিটের সময় সোলে প্রথম গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান (১-০)। দ্বিতীয়ার্ধের ৩২ মিনিটে খালেদ ও ৩৮ মিনিটের সময় বাবলু আরও দুটি গোল করে সন্দ্বীপকে জয়ী করেন।দিনের তৃতীয় ও শেষ খেলায় আইসাব ২-১ গোলে জ্যাকসন হাইটসকে পরাজিত করে পূর্ণ পয়েন্ট লাভ করে। খেলার প্রথমার্ধে শুরুর ২ মিনিটের সময় জ্যাকসন হাইটসের পক্ষে রায়ান প্রথম গোল করে দলকে এগিয়ে নেন (১-০)। পরে খেলার ১৫ মিনিটের সময় আইসাবের জায়ান গোল করে খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনেন (১-১)। খেলার ২৩ মিনিটের সময় আইসাবের সানি জয়সূচক গোলটি করেন (২-১)। ফলে আইসাব জয়ী হয়ে পূর্ণ পয়েন্ট লাভ করে।স্পোর্টস কাউন্সিলে সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রশিদ রানার নেতৃত্বে সংগঠনের কর্মকর্তাদের মধ্যে উপদেষ্টা মনজুর আহেমেদ চৌধুরী, সহসভাপতি ওয়াহিদ কাজী এলিন, আবদুল বাসিত খান বুলবুল, জাকির হোসেন, ইয়াকুত রহমান প্রমুখ মাঠে উপস্থিত ছিলেন।নিউইয়র্ক ফুটবল লীগের পরবর্তী খেলা ৩০ জুন বেলা তিনটায় একই মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এদিন প্রথম খেলায় জ্যাকসন হাইটস ও যুব সংঘ (বি), দ্বিতীয় খেলায় ব্রাদার্স এলায়েন্স ও আইসাব এবং তৃতীয় খেলায় যুব সংঘ (বি) ও যুব সংঘ (এ) একে অপরের বিপক্ষে মাঠে নামবে।
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক বলেছেন, আপনাদের মানুষের কথা লিখতে হবে। কারণ মানুষ মানুষের গল্প শুনতে ভালোবাসে।২৬ জুন লেখালেখি বিষয়ক এক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন। কর্মশালাটির আয়োজন করে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা। পত্রিকার প্রতিবেদন কীভাবে লিখবেন, ফিচার লেখার কৌশল এমনকি গল্প ও উপন্যাস লেখালেখির ক্ষেত্রে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীকে কর্মশালায় তুলে ধরেন আনিসুল হক। দেড় ঘণ্টার এই কর্মশালায় সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর কথা শোনেন।আনিসুল হক বলেন, ‘রিপোর্ট লেখার একটা পিরামিড আছে। প্রথমে একটা ভূমিকা থাকতে হবে। তারপর বিস্তারিত। সেখানে কী, কে, কেন, কোথায়, কীভাবে এই প্রশ্নের উত্তর থাকতে হবে। আপনারা যারা রিপোর্ট লিখবেন, তাঁরা বিষয়টি মাথায় রাখবেন। আর লেখা যত ছোট হবে তত মানুষ পড়বে।’আনিসুল হক জানান, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা কিংবা দূর পরবাসের অনেক লেখা সর্বাধিক পঠিত লেখায় ঠাঁই পেয়েছে। কারণ সেখানে মানুষের কথা আছে। সেই গল্প সাফল্যের হতে পারে। দুঃখের হতে পারে। বনানী টাওয়ারে আগুন লাগার পরে যে ছোট্ট ছেলেটি পাইপ চেপে ধরে বসেছিল, তার গল্প আমরা লিখেছি। আহমেদ হোসেন বাবুর গ্রেপ্তারের খবর নিয়ে এখন চারদিকে তোলপাড় চলছে। এই খবরের ফলো আপ থাকতে হবে। প্রবাসীদের মধ্যে সফল ব্যবসায়ী, সর্বোচ্চ ট্যাক্স দাতা, সন্তানের হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দেওয়া ব্যক্তি, সম্ভাব্য নোবেল পুরস্কার বিজয়ী—এমন সব মানুষকে তুলে আনতে হবে।গদ্যের ক্ষেত্রে ছোট ছোট বাক্য দিয়ে লেখাকে সমর্থন করেন আনিসুল হক। তিনি নিজে সেটা অনুসরণ করেন। হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয়তার মূল কারণ ছিল এই রীতিতে লেখা। পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ও এভাবে লিখতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্বৃতি দিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলা ভাষা বড় বাক্য সহ্য করতে পারে না। ফিচারের ক্ষেত্রে শিরোনাম এমন হবে, যাতে পাঠকের মনে পড়ার আগ্রহ জন্মায়। লেখার শুরু হবে আকর্ষণীয়ভাবে। চমক থাকতে হবে। তবে শেষটা হবে করুণ। অনেকটা চার্লি চ্যাপলিনের সিনেমার মতো।’গল্প–উপন্যাসের আলোচনায় এসে আনিসুল হক বলেন, ‘আমার সবচেয়ে প্রিয় ছোট গল্প রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছুটি আর প্রিয় উপন্যাস শরৎচন্দ্রের দেবদাস। দুই জায়গাতে শুরু হয়েছিল আনন্দ দিয়ে। কিন্তু সমাপ্তি ঘটে করুণ বিষাদের মাধ্যমে। এই ধরনের লেখা পাঠককে আকর্ষণ করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘লেখায় পুনরাবৃত্তি যত কম থাকে, তত ভালো। আমার ‘মা’ উপন্যাস প্রথম ইংরেজীতে অনুবাদ হয়েছিল ভারত থেকে। পরে অস্ট্রেলিয়ায় এক সাহিত্য সমালোচককে বইটি দেওয়ার পরে তিনি বলেছিলেন, এখানে অনেক বাড়তি কথা আছে। যেমন এক জায়গায় আছে, আজ ৩১ ডিসেম্বর। গতকাল ছিল ৩০ ডিসেম্বর। তাঁর বক্তব্য, ৩১ ডিসেম্বরের আগের দিন তো ৩০ ডিসেম্বর হবেই, এটা আবার লেখার দরকার কি? তখন ভারতীয় অনুবাদ সংস্থাকে জানালে তারা বলে, আপনার লেখায় এক ধরনের কাব্যময়তা আছে, যে কারণে একই কথা বার বার অনুরণিত হয়েছে।’গল্প বা উপন্যাসের নির্দিষ্ট কোনো আকার থাকবে বলে মনে করেন না আনিসুল হক। লেখালেখির জন্য বিশ্বসেরা সাহিত্য পাঠের কথা বলেন। গল্প বা উপন্যাস রচনা শেষ করার পর চার পাঁচ দিন ফেলে রাখার পরামর্শ দেন। তাতে লেখা সম্পর্কে একটা নির্মোহ মনোভাব সৃষ্টি হবে।এই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী, লেখক আহমাদ মাযহার, লেখক ইশতিয়াক আহমেদ রূপু, লেখক হুমায়ুন কবির ঢালী, আবদুস শহীদ, মনিজা রহমান, রূপা খানম, শিমু আফরোজা, শেলী জামান খান, রওশন হক, স্মৃতি ভদ্র, তাহরিনা পারভীন প্রীতি, শাম্মী আক্তার হ্যাপি, হেলিম আহমেদ, মনজুরুল হক, এমবি তুষার, সানজিদা উর্মী প্রমুখ।
মেগান ডিমেথিউ একজন ফ্রিল্যান্স রাইটার। তার প্যাশন হচ্ছে আমেরিকার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়ানো। এক জায়গায় তিনি ছয় মাস থেকে এক বছরের বেশি থাকেন না। আমরা জানি, আমেরিকায় বিশেষ করে নিউইয়র্কে একটি বাসা বদল করতে হলে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়, তা হলো ব্যাকগ্রাউন্ড চেক ও ক্রেডিট রেকর্ড বা স্কোর। ব্যাকগ্রাউন্ড ক্লিয়ার না হলে এবং ক্রেডিট স্কোর ‘গুড’ ব্যাংকে না থাকলে, এ দেশে একটি বাসা ভাড়া নেওয়া প্রায় অসম্ভব। সেই অসম্ভব কাজটি কীভাবে খুব সহজেই সম্ভব করা যায়, তা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মেগান ডিমেথিউ।মেগান বলেন, আমি বহু বছর ধরে আমেরিকায় ঘুরে বেড়াচ্ছি, খুব করে হলে ছয় মাসের জন্য বাড়ি ভাড়া নিচ্ছি। আর এই ঘন ঘন বাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য ল্যান্ড লর্ডদের বিশ্বাস অর্জন করতে আমাকে চমৎকার একটি ক্রেডিট স্কোর বজায় রাখতে হয়েছে। আমি সব সময় ৭৪০ এর ওপরে আমার ক্রেডিট স্কোর রেখেছি। সে জন্য আমি সময়মতো সব বিল পরিশোধ করেছি, নিয়মিত ক্রেডিট রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ ও ভালো ঋণের আগে খারাপ ঋণগুলো পরিশোধ করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।যখনই আমি একটি নতুন জায়গা দেখতে চেয়েছি, সর্বপ্রথম যে জিনিসটি আমি করেছি, তা হলো একটি কাজ খুঁজে পাওয়া। টুরিজম গিগস্ থেকে শুরু করে অলাভজনক প্রশাসনিক কাজ এবং স্বল্প মেয়াদে অধ্যাপনা করেছি। এভাবে জীবনযাপন করাকে আমি ভালোবাসি; এটি আমাকে আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবিকার সন্ধান দেয় এবং কোনো স্থায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাস্তব অভিজ্ঞতার সুযোগ করে দেয়।এভাবেই আমি আমার দেশ সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি এবং মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে যেখানে আমি বড় হয়েছি, সেখানে ফিরে আসার আগে অকল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া, সিভিল, টেনেসি, মোয়াব, উটাহ ও অ্যাশভিল এবং নর্থ ক্যারোলাইনাতে অনেক বৈচিত্র্যময় মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছি। একজন ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে এটাই আমার স্বপ্ন ছিল।কিন্তু ঘন ঘন শহর বদলি মানে থাকার জন্য ঘন ঘন বাসস্থান খুঁজে বের করা; কখনো কখনো খুব সংক্ষিপ্ত নোটিশে। আর অর্থ ব্যয় তো আছেই। আমি বেশ কয়েকটি শর্তের অধীনে বাড়ি ভাড়া করেছি—কখনো কখনো ছয় মাস লিজে, কখনো কখনো মাসে-মাসে, আবার কখনোবা পুরো বছরের জন্য। প্রায়শই আমি সাবলেট করতাম, কিন্তু যেহেতু আমার জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছিল এবং আমি নিকৃষ্ট জায়গায় বাস করতে চাচ্ছিলাম না, সেহেতু আমাকে পুরো ক্রেডিট ও ব্যাকগ্রাউন্ড চেকটি পাস করতে হয়েছিল।যদিও আম পরিবর্তনশীল আয়ের জীবনযাপন করেছি, কখনো দীর্ঘ মেয়াদি আয়ের ব্যবস্থা রাখিনি এবং ফ্রিল্যান্সিং, স্টুডেন্ট লোন ও ক্রেডিট কার্ডে ব্যালেন্সের মধ্যে থেকেও আমি কখনই ভাড়ার আবেদন থেকে নাকচ হইনি। আমি সব সময় সতর্ক থেকেছি, যেন আমার ক্রেডিট স্কোর ৭৪০-এ অক্ষত থাকে।‘গুড’ ক্রেডিট স্কোর বজায় রাখার জন্য আমি সেরা কিছু টিপস দিতে পারি—১. সময়মতো ক্রেডিট কার্ড বিল পরিশোধ করুন— সময়মতো বিল পরিশোধ করা ‘গুড’ ক্রেডিট স্কোরের জন্য ‌অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি আর্থিক টানাপোড়েনে থাকেন এবং বিল পরিশোধ করতে না পারেন, তবে আপনার ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিকে কল করুন এবং ‘ওয়ান টাইম’ ক্ষমা চেয়ে আগামী মাসে অতিরিক্ত ইন্টারেস্টসহ পরিশোধ করার অনুমতি নিন। মনে রাখবেন, এ রকম কার্টেসি শুধু একবারই পাবেন।২. আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট মনিটর করুন— নিয়মিত আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করতে ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি হতে রক্ষা পেতে প্রতিরোধ হিসেবে বিভিন্ন ক্রেডিট মনিটরিং সার্ভিস রয়েছে, সেগুলোর মেম্বারশিপ নিন এবং পরিষেবাদি গ্রহণ করুন।৩. ক্রেডিট স্টিমিউলেটর টুল ব্যবহার করুন—আপনার ভারসাম্যহীন আর্থিক পরিস্থিতি প্লাগিন করুন এবং দেখুন এসব ঋণ পরিশোধ হয়ে গেলে আপনার জীবন কেমন হতে পারে। আপনার কল্পিত স্কোর আপনাকে ব্যালেন্স পরিশোধ করতে প্রেরণা দেবে এবং আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার ৩০ শতাংশের নিচে রাখবে। একটি ভালো ক্রেডিট স্টিমিউলেটর টুল হচ্ছে ক্রেডিট কারমা।৪। ‘ভালো’ ঋণ এবং ‘খারাপ’ ঋণের মধ্যে পার্থক্য শিখুন—যদিও সব ঋণই ঋণ, তবে কিছু ধরনের ঋণ আছে যা অন্যদের তুলনায় আপনার স্কোরকে বেশি প্রভাবিত করবে। ক্রেডিট কার্ডের ঋণ কখনোই ভালো নয় এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি পরিশোধ করা উচিত। আপনার বাজেট নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনি যদি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন তবে প্রতি মাসে যেন সেটা পরিশোধ করতে পারেন।৫। দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করুন—আপনার ক্রেডিট স্কোর আপনার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। অসামঞ্জস্যপূর্ণ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার আপনার জীবনযাত্রাকে আকর্ষণীয় করে তোলে কিন্তু সেগুলি সময়মতো পরিশোধ না হলে জীবনযাপন অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে। একটি ভালো ক্রেডিট স্কোর বজায় রাখা অসম্ভব কিছু নয় যদি আপনি সংগতি রেখে সেটি ব্যবহার করেন এবং পরিকল্পনা করে পরিশোধ করেন।
অলি আহমেদের ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চে’র উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য ও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যে যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।আজ শুক্রবার বিকেলে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, একটা রাজনৈতিক দলের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহন করার এবং যেকোনো ধরণের উদ্যোগ গ্রহণের।গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক সংবাদ সম্মেলনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক লীগ(এলডিপি) সভাপতি অলি আহমেদ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জাতীয় সংসদের পুনর্নির্বাচন ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দা্বিতে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠনের ঘোষণা দেন।এই মঞ্চে ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি(জাগপা), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিয়ের একটি অংশ ও ইসলামী মুভমেন্ট যুক্ত হয়েছে।বিকেল সাড়ে তিনটায় বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত দলীয় সদস্য জিএম সিরাজকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব শেরে বাংলানগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে যান। তারা জিয়ার কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করেন।এ সময়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, মাহবুবুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ওবায়দুর রহমান চন্দন, শায়রুল কবির খান, বগুড়া-৪ আসনের সাংসদ মোশাররফ হোসেনসহ বগুড়া জেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমানে বরগুনার মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে, প্রতিদিন খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে এই সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ করার কারণে বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণ করার কারনেই এসব ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, ‘যখনই আপনার অপরাধী যদি শাস্তি না পায় এবং দলীয় কারনে তারা যদি মুক্ত হয়ে যায়। স্বাভাবিক কারনে অন্যান্য অপরাধী সেই দলের ছত্রছায়ায় গিয়ে অপরাধ করার প্রবণতা আরো বেড়ে যায়- সেখানেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতি ঘটে সেখানেই।’এরকম ঘটনা কেনো ঘটছে বলে মনে করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব হত্যাকান্ড বেড়েছে যেহেতু দেশে আইনের শাসন নেই, যেহেতু জবাবদিহিতামূলক কোনো সরকার নেই, যেহেতু জনগন এই সরকারকে নির্বাচিত করেনি, পার্লামেন্ট কোনো জনগনের প্রতিনিধি নেই, সেই কারণে এ্সব ঘটনা ঘটছে। এখানে ন্যায় বিচার নেই, বিচারহীন আছে। আমরা খুব পরিস্কারভাবে দেখতে পারছি বিগত একদশক ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুধু নয়, বিচার বিভাগকেও দলীয়করণ করা হয়েছে। সেইক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিকভাবে আইনশৃঙ্খলার অবণতি হবে, হত্যা বাড়বে, ধর্ষন বাড়বে-এটাই কিন্তু সোশ্যাল কন্ডিশনস সেটাই প্রমাণিত হবে, সামাজিকভাবে সেইটাই আসবে।’গত ১০ বছরে যত হত্যা-নির্যাতন-ধর্ষন হয়েছে তা ‘নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।গত বুধবার বরগুনায় রিফাতকে স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে জখম করে একদল যুবক। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন যে, ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের পক্ষে খেলেছেন। এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এসব পলিটিক্যাল রেটোরিক্টস। এগুলো উত্তর পাবেন না আমার কাছে।’
মানবসমাজের দ্রুত বিকাশের পথে পৃথিবীর বিপদের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর বিপদ সংকেত সৃষ্টি হচ্ছে পানি থেকে। সম্প্রতি এর লক্ষণও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একদিকে বিশুদ্ধ পানীয়জলের অভাব। অন্যদিকে সুউচ্চ শৃঙ্গের বরফ গলা। সাম্প্রতিক এক তথ্যে জানা গেল, পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এভারেস্ট শৃঙ্গের বরফ গলতে শুরু হয়েছে। পৃথিবীর উপরিভাগের উষ্ণতা বৃদ্ধি যে গতি নিয়েছে, এতে আগামী ২১০০ সালের মধ্যে উত্তর মেরুর বরফ স্তূপ গলে যাবে। বিশ্বের পরিবেশবিদরা এ কথা অনুভব করছেন। এখন চর্চার বিষয় হচ্ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা।বৈশ্বিক জলবায়ুর তারতম্যের ফলে এখন ‘জলবিশ্ব’–এর আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমান শতাব্দীর শুরুতে এ কথার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদি পৃথিবীর তাপমাত্রা বর্তমানের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়, তাহলে ১০০ বছর পর এ কথা পরিস্ফুট হবে। তখন বিশ্বজুড়ে অভাবনীয় জলস্ফীতি ঘটবে এবং প্রলয়ংকরী বন্যার সৃষ্টি হবে। সবুজ গৃহের কুপ্রভাব পড়া থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো প্রদূষক গ্যাসের কারণে এ বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে।সমীক্ষা মতে, ১৯৯০ সালের মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণতা ০.৩ ডিগ্রি থেকে ০.৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আগামী ১০০ বছরে এ হার ১.১ ডিগ্রি থেকে ৩.৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কার করছেন।গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে জীব প্রজাতির ওপর আক্রমণ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এখন থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে চিন্তা–ভাবনা শুরু হয়েছে। এমনকি সুমেরু চক্রের সবুজ গৃহ গ্যাস বিকিরণ সম্পর্কে চিন্তাচর্চার জন্য কয়েকটি দেশ মিলে আর্কটিক কাউন্সিল গঠন করেছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, রাশিয়া এবং সুইডেন। এ বিষয় অধ্যয়ন ও গবেষণায় বহু বিজ্ঞানী নিয়োজিত রয়েছেন।বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ফিনল্যান্ডের বরফ গলতে শুরু করেছে। আগামী দিনে সমুদ্রের পানি উচ্চতা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বন্যার প্রকোপও বৃদ্ধি পাবে। নিউইয়র্ক, টোকিও, সাংহাইয়ের মতো মহানগরগুলো পানির নিচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেনিয়ার কিলিমানজারো পর্বতের বরফ আগামী ১৫ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলেও কিছু সংখ্যক বিজ্ঞানী তাঁদের মতো প্রকাশ করেছেন।বৈশ্বিক উষ্ণতার হার ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে সুমেরুর বরফ গরে যাচ্ছে যার পরিণতিতে চলতি শতাব্দীতে সমুদ্রের পানিপৃষ্ঠ এক মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। পানিপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সাগর–মহাসাগরের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো প্রবল বন্যার কবলে পড়বে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। গবেষণা মতে, বাংলাদেশ তথা ফ্লোরিডার মতো অঞ্চলগুলো বিপদের সম্মুখীন হবে। এখন দেখা যাচ্ছে, আলাস্কা থেকে নরওয়ে পর্যন্ত সুমেরুর বরফের টুকরো আগের তুলনায় বেশি পরিমাণে গলতে শুরু হয়েছে।জাতিসংঘের দেওয়া বিবৃতি অনুসারে, ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ২০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে, এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ১.৭ কোটি লোক বিপদগ্রস্ত হবে। ফ্লোরিডা পানির এক মিটার নিচে ডুবে যাবে।সম্প্রতি এই আবিষ্কারের জন্য আইসল্যান্ডে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং তার ভয়াবহতার সমাধান নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ হবে বলে জানানো হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল হতে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে। আমাদের আশপাশে নিজ বাড়িতে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, অফিস আদালতে যেখানেই যত বেশি সম্ভব বৃক্ষ চারা রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে বনাঞ্চল সৃষ্টির প্রয়াস চালাতে হবে। অন্যথায় আমাদের যে কি দশা হবে, তা ভেবে বিজ্ঞানীরা দারুণ দুশ্চিন্তায় আছেন।
বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের চিন্তায় ও মননে যে ঐক্য দেখা যায় তা অন্য কোনো জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে খুব একটা পাওয়া যায় না। দেশের সংস্কৃতি ও ভাষা আমাদের এ বন্ধনকে দৃঢ় করেছে। বাংলাদেশের মানুষ আজ বাংলাদেশের বাইরে আরেক বাংলা গড়ে তুলেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইউকেবাংলাঅনলাইন ডট কম-এর সম্পাদক আরিফ রব্বানীর সঙ্গে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন।২৬ জুন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইব্রাহীম চৌধুরী, মনজুরুল হক, মাহবুব রহমান, ইয়র্ক বাংলা সম্পাদক রশীদ আহমদ, হেলিম আহমেদ, সানজিদা ঊর্মি প্রমুখ।মতবিনিময় সভায় যুক্তরাজ্য, আমেরিকায় বাংলা সংবাদমাধ্যম, বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা এবং এসবের অগ্রযাত্রা নিয়ে কথা হয়। সভায় রাজুব ভৌমিকের সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ ‘সংসারের কাব্য’ আরিফ রব্বানীকে উপহার দেওয়া হয়।
নিউইয়র্কে চাঞ্চল্যকর জাকির খান হত্যা মামলার রায়ে তাহার মাহরানকে (৫১) ১৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। ২০ জুন আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। তাহার মাহরানকে ১০ বছর কারাভোগ এবং পাঁচ বছর প্রবেশনে থাকবে হবে।রায় প্রকাশের পর জাকির খানের বড় ভাই নাদির খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম হত্যাকারীর অন্তত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হোক। কিন্তু ১০ বছরের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি।’ তিনি বলেন, আদালতে হত্যাকারীকে মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে প্রমাণ করা হয়েছে।২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ব্রঙ্কসে বাংলাদেশি অধ্যুষিত থ্রগসনেক এলাকার ভাড়া বাসার সামনে বাড়ির মালিক মিসরীয় বংশোদ্ভূত তাহার মাহরানের ছুরির আঘাতে জাকির খান (৪৪) গুরুতর আহত হন। তাহার মাহরান নিজেই চিৎকার করে পুলিশে খবর দিতে বলেন। পরে জাকিরকে স্থানীয় জ্যাকোবি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। নয় মাস বাসা ভাড়া না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ বাড়িওয়ালা মাহরান এই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে জানা যায়। ওই দিনই পুলিশ মাহরানকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগ আনা হয়।জাকির খানের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে পার্কচেস্টার জামে মসজিদের হিম ঘরে রাখা হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর দুইটায় ব্রঙ্কসের ভার্জিনিয়া অ্যাভিনিউর পার্কচেস্টার জামে মসজিদে জাকিরের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি জাকিরের মরদেহ সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে তাঁর গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে মা-বাবার কবরের পাশেই জাকিরের দাফন সম্পন্ন হয়।তাহার মাহরান গ্রেপ্তারের পর থেকেই কারাগারে আটক ছিলেন। এলাকাবাসী জানায়, বাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে বাড়ির মালিক তাহার মাহরানের সঙ্গে জাকির খানের বিরোধ চলছিল। বিষয়টি পুলিশ এবং আদালত পর্যন্ত গড়ায়।সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের সন্তান জাকির খান ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ১৯৯২ সালে আমেরিকায় অভিবাসী হন। নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে বসবাস শুরু করেন। জাকির নিউইয়র্কে পড়াশোনা শেষ করে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ব্রঙ্কসে শীর্ষ স্থানীয় রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী হিসেবে কমিউনিটিতে পরিচিত লাভ করেন। নিউইয়র্কের ডেইলি নিউজ পত্রিকা তাঁকে ‘কিং অব রিয়েল এস্টেট অব ব্রঙ্কস ‘নামে অভিহিত করে। জাকির খান মূলধারার পাশাপাশি কমিউনিটির নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। তাঁর স্ত্রী ন্যান্সী খান একজন সংগীত শিল্পী।
আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগ। ২৩ জুন বিকেলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে কেক কেটে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শিব্বীর আহমেদ, সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন, সহসভাপতি জি আই রাসেল, মুজিবুর রহমান খান ও আকতার হোসাইন, সদস্য ফাহমিদা শম্পা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মুঠোফোনে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে যুক্ত হন দলের মেট্রো ওয়াশিংটন শাখার সভাপতি সাদেক এম খান। পুরোনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরে শুধু আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ দেশে পাকিস্তানি সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে দলটি। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের পথ বেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপসহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালেরনয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
সহপাঠীদের বেশির ভাগের পছন্দ ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল কিংবা প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা। প্রণব ফাহমিদ ইসলাম তখন ব্যস্ত অর্থনীতি নিয়ে। বাবা মায়ের ইচ্ছে ছিল, ছেলে চিকিৎসক হবে। তাদের বড় ছেলে প্রথমে প্রকৌশল বিদ্যা ও পরে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার কারণে প্রণবের ওপর প্রত্যাশার চাপ খানিকটা কমে যায়। আর তখনই তার সুযোগ মেলে নিজের ইচ্ছেকে মেলে ধরার।‘আমি ভেবেছি, পাওয়ারফুল একটা পজিশন পেতে হবে আমাকে। সেটা পেতে হবে আমার অল্প বয়সে। কারণ, আমি আমাদের বাংলাদেশি অরিজিন আমেরিকার জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করতে চাই। তাদের জীবনধারার উন্নয়ন করতে চাই’—নিজের স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে বলল প্রণব।ব্রুকলিনের বাসিন্দা প্রণবের সঙ্গে কথা হয় সোমবার তার মা রোকেয়া বেগম নাজমার গ্লোবাল ট্রাভেলসে বসে। প্রণব ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো থেকে অর্থনীতিতে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেছেন ১৫ জুন। গ্র্যাজুয়েশনের আগে থেকেই তার চাকরি প্রস্তুত জাপানের প্রসিদ্ধ মিজুহু ব্যাংকে। সেখানে যোগ দিতে যাচ্ছে সে, কনসালট্যান্ট হিসেবে।প্রণব জানালেন, তাঁর সমসাময়িক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা ভালো এগোনো প্রয়োজন, কারণ এখনো সবকিছুতে বাংলাদেশি অভিবাসীরা পিছিয়ে আছে। তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি আরও জোরালো করা দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সেরা স্কুলগুলোর একটি স্টাইভ্যাসেন্ট হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা এই তরুণ কেনসিংটনে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে পরিচিত মুখ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও রোকেয়া বেগম নাজমা দম্পতির ছোট ছেলে।প্রণবের লক্ষ্য, একটা ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেওয়া। এরপর প্রয়োজনে আরও পড়াশোনা আর গবেষণা করা। সবকিছুর গন্তব্যই একটা ভালো অবস্থানে পৌঁছা। সেখান থেকেই যেন বাংলাদেশি জনসমাজের সেবা করা যায়। তাঁর ভাষায়, ‘এ জন্য, আমাকে রাজনীতিক হতে হবে না। সেটা অনেক দীর্ঘ পথ। আমি সে পথে যাচ্ছি না।’অল্পসময়ের আলোচনায় ভাঙা বাংলায় প্রণব তার পরিকল্পনা তুলে ধরে। জানায়, বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করার আগ্রহ আছে তার। তবে, সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষের কথা জানায় সে। ‘আমি যে সব তথ্য পেয়েছি, তাতে মনে হয়েছে বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি নাজুক। সেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতা নেই। কয়েকটা নতুন আইন করা হয়েছে, যেগুলো সত্যি নিবর্তনমমূলক’।প্রণব জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতে এক গবেষণার কাজে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়েছে তাঁকে।
বন্ধুদের নিয়ে প্রম পার্টিতে সবাই লিমোজিনে চড়ে। ব্রুকলিনের এক তরুণ এর ব্যতিক্রম। জর্ডান থমাস নামে ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ তার প্রমে যাওয়ার জন্য সাবওয়ে ট্রেনকেই বেছে নিয়েছে। সে তার প্রিয় ট্রেন আর১৪২ নিতে ফ্লাটবুশ টার্মিনালের ২ নম্বর লাইনে এলে একজন সাবওয়ে অপারেটর তাকে জনগণের ‘প্রবেশ নিষেধ’—এ রকম একটি অপারেটর রুমে কয়েকটি ছবি তোলার সুযোগ দেন।থমাস বলেন, সবাই গাড়ি চড়ে প্রমে যায়, আমি আমার প্রতিদিনের বাহন সাবওয়ে ট্রেনকেই প্রমে যাওয়ার জন্য বেছে নিয়েছি। আর১৪২ ট্রেনটি থমাসের জন্মের কিছুদিন আগে ২০০০ সালে চালু হয়। কালো টক্সিডো স্যুট আর চকচকে জুতো পরিহিত থমাস মেরুন জানালেন, নিয়মিত এই ট্রেন তাকে চড়তে হয়েছে। এটি তার শৈশবের ট্রেন। তিনি বলেন, ‘আমার পুরো ট্রেনটি রিজার্ভেশন করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু আমার বয়স মাত্র ১৮। আমার পরিবার তত বিত্তশালী নয়।’সে বরাম হিল স্কুল থেকে এ বছর গ্র্যাজুয়েশন করছে। বরাম হিল স্কুল স্পিরিট অব নিউইয়র্কের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রম উপলক্ষে একটি রিভার ক্রুজে যাচ্ছিল চেলসি পিয়ারের পশ্চিম সাইড থেকে। প্রমে নাচে অংশ নেওয়ার জন্য থমাসের কোন নৃত্য সঙ্গী ছিল না। তবুও তার ছবিগুলো বেশ বন্ধুপ্রিয় হয়ে উঠে। ‘যারা আমাকে জানে, আমার ট্রানজিট নিয়ে, আমার ফ্যাশন নিয়ে অবগত তারা বিষয়টি আমার সঙ্গে ম্যাচ করেছে’—বলেন থমাস।ফ্লাটবুশের বাসিন্দা থমাস জানাস, তিনি গ্র্যাজুয়েশনের পর এমটিএ নিউইয়র্কে কাজ করতে আগ্রহী। তিনি একজন চিত্রগ্রাহকও। তবে তার আগ্রহ এমটিএ-কেন্দ্রিক। সিটির নানান স্পট থেকে ট্রানজিট বিষয়ক ছবি তোলা তার শখ।থমাসের বিপুল আগ্রহ ট্রানজিট নিয়ে। তাঁর নিজের ঘরভর্তি সাবওয়ে ম্যাপ আর ট্রানজিট রুটে। তিনি নিউইয়র্ক সিটি কলেজ অব টেকনোলজিতে ফটোগ্রাফি অথবা ল’ মেজর নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করবেন। ইতিমধ্যে তিনি এমটিএ বাস অপারেটর হিসেবে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে আবেদনপত্র দাখিল করে রেখেছেন এমটিএ এজেন্সিতে। যদিও তার স্বপ্ন অনেক বড়। একদিন তিনি নিজেকে এমটিএর চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান।যেভাবেই হোক, থমাস এমটিএ নিউইয়র্কে যোগ দিয়ে নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান। যদিও তিনি জানেন, এই উচ্চ পদগুলো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও আইনজীবীরা পেয়ে থাকেন। থমাস জানান, এমটিএ এজেন্সির পূর্ব দৃষ্টান্ত রয়েছে।থমাস পেনডারগার্ট যিনি ২০১৩-১৭ পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন, তিনি এমটিএতে তিন যুগ ধরে কাজ করে ছিলেন। আর এই পথ ধরেই এগিয়ে যেতে চান থমাস জর্ডান। স্বপ্নের বাস্তবায়নে তিনি এজেন্সিতে যোগ দিয়ে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে চান।থমাসের প্রথম নাইটের পর এমটিএ কর্মকর্তারা বেশ নড়েচড়ে বসেন। তারা থমাসের উজ্জ্বল জীবন ও সাফল্য কামনা করে বলেন, ‘তিনি সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছেন’। এমটিএ স্পোকসম্যান ম্যাক্স ইয়ং বলেন, ‘একদিন আসবে যেদিন লিমোর জায়গায় ট্রেনে চড়ে প্রম নাইটে যোগ দেবে তরুণেরা।’
‘বিশ্বজুড়ে বাংলা বই’ স্লোগানে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ডিসি বইমেলায় সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা-লেখক-বিজ্ঞানী ও নিউজার্সির প্লেইনসবরো সিটির কাউন্সিলম্যান ড. নূরন্‌ নবী। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন বরেণ্য ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন। গত বছর প্রবর্তিত এই পুরস্কার প্রথমবার পেয়েছেন দিলারা হাশেম। এবার মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে গবেষণামূলক প্রবন্ধের জন্য পুরস্কারটি পেলেন কাদেরিয়া বাহিনীর সাহসী গেরিলা নূরন্নবী। এ সময় সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দারকে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা জানানো হয়।‘আমরা বাঙালি ফাউন্ডেশন’ নামক একটি সংগঠন ছিল বইমেলার আয়োজক। ড. নূরন্‌ নবী ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ বিষয়ে দুটি ইংরেজিসহ মোট ১০টি বই লিখেছেন। ২০১৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ড. নবীকে বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও প্রথম সিনেটের নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি ড. নূরন্‌ নবী আমেরিকায় কোলগেট পালমোটিভ কোম্পানির ‘কোলগেট টোটাল’ ব্র্যান্ড টুথপেস্টের আবিষ্কারক। আমেরিকায় তাঁর ৫০টিরও বেশি পেটেন্ট রয়েছে।ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ৩১ বছরের বেশি সময় ধরে। দুই সন্তানের জনক ড. নূরন্‌ নবীর স্ত্রী জিনাত নবীও মুক্তিযোদ্ধা এবং বিজ্ঞানী হিসেবে নিউজার্সির একটি গবেষণা কোম্পানির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সাহিত্যিক আনিসুল হক, ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক সরকার কবির উদ্দিন ও আনিস আহমেদ, কবি সৈয়দ আল ফারুক, কবি হুমায়ুন কবির ঢালী, আমরা বাঙালি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আরশাদ আলী বিজয়, এবারের ডিসি বইমেলার প্রধান সমন্বয়ক সামিনা আমিন ও সচিব দস্তগির জাহাঙ্গীর।বৃহত্তর ওয়াশিংটন ডিসি দ্বিতীয় বইমেলা শুরু হয় ২২ জুন সকালে। সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক সামিনা আমিনের সূচনা বক্তব্যের পর ‘বিশ্ব মানব হবি যদি শাশ্বত বাঙ্গালী হ’ নামে শোভাযাত্রার মাধ্যমে বইমেলার সূচনা হয়।
সেতার রেস্টুরেন্টের ষোলো নম্বর টেবিলে একটা চেয়ার এখনো খালি পড়ে আছে। প্রতি বৃহস্পতিবার মার্টিন চলে আসেন রাত নয়টার মধ্যেই। তাই ওই টেবিলটা তাঁর জন্য বরাদ্দ থাকে। সতীশ শর্মাকে ভীষণ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে আজ। কারন মার্টিন ছাড়া নৈশ ড্রিংকস কখনো একা পান করেন না তিনি। মার্টিন আসার সঙ্গে সঙ্গেই সতীশ বারটেন্ডারকে ইশারা করেন। বারটেন্ডার রোমেন বুঝে নেন, ড্রাই মার্টিনি উইথ ওলিব হচ্ছে মার্টিনের ড্রিংক। সতীশ কখনো হুইস্কির সঙ্গে রক ঢেলে লেমন টুইস্ট গ্লাসের সঙ্গে ঘষে ঘষে চিয়ার্স বলেন দুজনে। সঙ্গে চানাচুর কিংবা মিক্স প্লেটার। তারপর মধ্য রাত পর্যন্ত চলতো খোশগল্প আর মেকি আড্ডা। রেস্টুরেন্টের স্টাফ সবাই চলে গেলে সতীশ শর্মা নিজেই শাটার টেনে তালা লাগিয়ে যেতেন। আজ মার্টিন না আসায় কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলেন তিনি। সিঁড়িতে রাখা পা আবার ঘুরিয়ে নিলেন ভেতরে। পেছনে দেখা গেল মর্টিনকে। খুবই ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে অতি পুরোনো গোঁফ দাঁড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে কাঁধে ঝোলানো থলের মতো একটি ব্যাগে কয়েকটা বইয়ের মতো কিছু নিয়ে নির্ধারিত টেবিলের দিকে এগোলেন।আলাপচারিতায় বোঝা গেল, রেডিও সিটি মিউজিক হলে ভারতের সংগীত পরিচালক এ আর রহমানের শো দেখে ফিরছেন। ভারতের সংস্কৃতি ও সংগীতের প্রতি তাঁর ভীষণ দুর্বলতা। পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও তাঁর মেয়ে আনুশকা শংকরের একজন ভক্ত। পণ্ডিত রবিশঙ্করের সেতারে অনুপ্রাণিত হয়ে বাদ্যযন্ত্রের প্রতি তাঁর ভীষণ ঝোঁক। প্রথম দিন যখন ম্যানহাটন মিডটাউনের ফুটপাথে ছোট ছোট পা ফেলে একটু ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটছিলেন, সেতার রেস্টুরেন্টের সাইন দেখে ঘোরের মতো একটা অনুভবে দোতলার সিঁড়ি দিয়ে রেস্টুরেন্টে আসেন। রেস্টুরেন্টের ডেকরের সঙ্গে সেতার আর সানাইয়ের জীবন্ত বাস্তবতা তাঁকে মুগ্ধ করে। সেই থেকে সেতার রেস্টুরেন্টের তিনি নিয়মিত সাপ্তাহিক কাস্টমার। বুফে খাবারের রকমারি সবজি আর মোরগটিক্কা মসলা তাঁকে আকৃষ্ট করে। তাঁর খাবারগুলো অতি দ্রুত নিঃশেষিত হতো তাঁর ভোজন-আগ্রহে। সার্ভিসের ফাঁকে তাঁর চলমান গল্প রসে আমরা প্রাণ সঁপে দাঁড়িয়ে থাকতাম।ভিনদেশি এক ভাষাবিদের গল্পে সবাই উল্লসিত হতাম।প্রায় সব গল্পেই চলে আসত তার স্ত্রী অ্যাঞ্জেলিনার কথা। অনেক গর্বের সঙ্গে মার্টিন বলতেন, তাঁদের দীর্ঘ ৪০ বছরের দাম্পত্য জীবনের কথা। গল্পের ফাঁকে আমাদের মধ্যে কেউ জিজ্ঞেস করত, হোয়াট একজাক্টলি দ্য ম্যাটার? মার্টিন বিষণ্ন হতেন। দীর্ঘশ্বাস চেপে জবাব দিতেন। অ্যাঞ্জেলিনা একটু ধৈর্য ধরতে পারত। সে বেঁচে থাকলে এখন নিউইয়র্ক নগরীর চমৎকার সব হলে বসে আমরা কিংবদন্তি শিল্পীদের সানাইয়ের সুর কিংবা পণ্ডিত রবিশঙ্করের জাদুমাখা হাতে বাজানো সেতারের সুর শুনতে পেতাম। আমি তো চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম তাঁর শরীরের চাহিদার সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে। আমাকে আরেকটু সময় দিতে পারত। পঙ্গুত্বের কাছে পরাজিত হয়ে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল।মার্টিন কথাগুলো বলতে গিয়ে খোলাখুলি ফ্রাস্ট্রেটেড হতেন। নস্টালজিয়া তাঁকে পেয়ে বসত।খানিক বিরতি দিয়ে আবার বুফে টেবিলে যেতেন, ঝুটা প্লেট রেখে নতুন প্লেটে খাবার নিতে নিতে বলতেন, আমার মনে হয় এখন আমার তালেবানের জীবনটা বেছে নেওয়া ভালো। কারণ তাদের ভাবনায় বউ, সংসার, প্রেমপ্রীতি—এসব তুচ্ছ। তোমরা চাইলে আমাকে তালেবান নামে ডাকতে পার। পঁচাত্তরোর্ধ্ব মার্টিন (তালেবান) আমাদের অনেক কাছের মানুষ হয়ে গেলেন। প্রাচীন নিউইয়র্ক নগরের অনেক পুরোনো তথ্যবহুল ঘটনা বলতেন। ৬০–৬৫ বছর আগের ম্যানহাটনের দৃশ্যপট কেমন ছিল, তার বর্ণনা শুনে আমাদের কৌতূহল দূর হতো।মার্টিনের গল্পে শুনতাম ভূগর্ভস্থ সাবওয়ের কথা। শুনে মনে হতো, স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে প্ল্যাটফর্মের এদিক-ওদিক হাঁটছি। কাঠের ফ্রেমে আটকানো গ্র্যান্ডফাদার ক্লক, প্লাস্টারে তৈরি পিয়ানোর মূর্তি, টিকিট বুথ—সবকিছু মনে হয় খুঁটিনাটিভাবে আমার চেনা।২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এ উপলক্ষে আমরা রেস্টুরেন্টের কাউন্টারে আমেরিকার পাতাকার সঙ্গে লাল সবুজের পতাকা লাগিয়েছি।দীর্ঘদিন বিরতি দিয়ে মার্টিন এলেন সেতার রেস্তোরাঁয়। পুরোনো নিয়মে চলে গেলেন তাঁর নির্ধারিত টেবিলে। বারটেন্ডার রুমেন যথারীতি ড্রাই মার্টিনি উইথ ওলিব সার্ভ করতে উদ্যত হলো। সতীশ শর্মার কোনো হদিস না পেয়ে একটু বিব্রত হলেন মনে হল।ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করে জানলেন, সতীশ শর্মা রেস্টুরেন্ট বিক্রি করে চলে গেছেন। আমাকে দেখিয়ে বলল, এখন নতুন মালিকানায় তাঁরা আছেন। ইতিমধ্যে আমি মার্টিনের সঙ্গে পরিচিত হলাম। কথা প্রসঙ্গে উনি জানতে চাইলেন, আমিও কি ভারতীয়? আমি লালসবুজের পতাকা দেখিয়ে বললাম, আমি বাংলাদেশি।মার্টিন আমাকে তাঁর সঙ্গে বসে ড্রিঙ্ক করার আহ্বান জানালেন। বিনয়ের সঙ্গে জানালাম, আমি অ্যালকোহল অভ্যস্ত নই। উনি আমার পাঁজরে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘আর ইউ আ কোল্ড ফিস অর হোয়াট?আমি মৃদু হেসে জবাব দিই, ‘কোল্ড ফিস না, স্মার্ট জেন্টেলম্যান বলতে পার। আমি গ্লাসে একটু জিনজারেল সোডা নিয়ে তাঁকে সঙ্গ দিলাম। বিভিন্ন আলাপের এক ফাঁকে হঠাৎ তিনি বলেন, ‘তোমরা সেই ভাগ্যবান জাতি যারা দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে স্বাধীনতা পেয়েছ। আমি বাঙালি জাতিকে স্যালুট জানাই এবং পৃথিবীর সব স্বাধীনতাকামী মানুষকে শ্রদ্ধা জানাই। পরিশেষে যে বিস্ময়কর তথ্য তিনি দিলেন, তা শুনে আমি কুশন চেয়ার ছেড়ে হাত-পায়ের খিল ছোটাতে ক্ষণিকের জন্য ব্যস্ত হলাম। ইতিমধ্যে এয়ার ইন্ডিয়া এয়ারলাইনসের কয়েকজন পাইলট আর ক্রু মিলে খেতে এলেন পাশের হোটেলে। আমরা রেস্টুরেন্টের দৃশ্যপট পরিবর্তন করে সামনের উইন্ড টেবিলে বসলাম।স্যানিটেশনের ময়লাবাহী ট্রাকের শব্দে স্নায়বিক চাপে আহত হলাম দুজনে। ট্রাকের দাপট কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্টিন আবার সক্রিয় হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড ড্রিঙ্কসের আশা পোষণ করেন।১৯৭১ সালের ১ আগস্টে পণ্ডিত রবিশঙ্করের বিশেষ প্রচেষ্টা আর আমেরিকার বিশিষ্ট রক সংগীতশিল্পী জর্জ হ্যারিসনের নেতৃত্বে ম্যানহাটনের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে বাংলাদেশ কনসার্ট নামে যে কালজয়ী অনুষ্ঠানটি হয়েছিল, তার দুজন দর্শক-শ্রোতা ছিলেন মার্টিন ও তাঁর পরলোকগত স্ত্রী অ্যাঞ্জেলিনা।এই কনসার্টের মাধ্যমে জর্জ হ্যারিসনের সেই বিখ্যাত—‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিল, তাতে জর্জ হ্যারিসনের মাধ্যমে লাখ লাখ ডলার ডোনেশন ইউনিসেফের ফান্ডে জমা হয়েছিল। সেদিনের অনুষ্ঠানে একজন ডোনেটর ছিলেন ওই বিশেষ ব্যক্তিত্ব মার্টিন ওরফে তালেবান। প্রায় আঠারো বছর গত হয়েছে মার্টিনের সঙ্গে দেখা নেই। উনি যেখানেই থাকেন, ভালো থাকবেন এই প্রত্যাশা।
প্রকৃতিতে যখন বসন্ত আসে, মানুষের দেহমনেও প্রভাব পড়ে তার। বনে যখন ফুল ফোটে, ফোটে তখন মনেও। বাইরে যখন বৃষ্টি ঝরে, ছাট এসে লাগে গায়ে। মনে জাগে ঐকতান—ধীর, দ্রুত কিংবা মধ্যলয়ে, ধারাপাতের গতি ও ঝংকারের সঙ্গে সংগতি রেখে। দূর অতীত থেকে স্মরণে উঠে আসে পড়শিবাড়ির টিনের চালের ওপর সহসা ঝেঁপে আসা বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ আর তার সঙ্গে মেশানো সে বাড়ির মেয়েটির নামতাপাঠের সুর। বৃষ্টির ধারাবিবরণী আর মেয়েটির ধারাপাতপাঠ—উভয়ের মধ্যে ঘটে নিবিড় সুরসম্প্রীতি। পাশে তখন রেডিওতে হেমন্তের কণ্ঠে বর্ষার গান, ঠাকুরের সেই স্নিগ্ধ–নিবিড় বর্ষাসংগীত, ‘এমনও দিনে তারে বলা যায়...’। তখন ‘জগতে যেন কেহ নাহি আর’। তখন ‘যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে, সে কথা আজি যেন বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়’। তখন বৃষ্টিতে ঝাপসা হতে হতে একসময় একেবারে মুছে যায় সমস্ত জগৎ। তখন শুধু ক্রিয়াপদে, শুধু ক্রিয়াকৌশলে নিষ্পন্ন হতে থাকে একেকটি বাক্য।সেই প্রিয় পড়শিরা হায়, একদিন ওই টিনের চাল, জানালা, উঠান, রক্তজবা, তুলসীতলা—সবকিছু রিক্ত ও শূন্য করে দিয়ে চলে যায় সে কোথায় কোন দূরদেশে! সেই সঙ্গে একটু একটু করে হারিয়ে যায় আমারও শৈশব। পড়শিবাড়ির মেয়েটি অজান্তে নিয়ে চলে গেছে আমার সেই শৈশববৃষ্টির সৌগন্ধ, ব্যঞ্জনা ও অনুপ্রাস।বিকেলে বৃষ্টি ঝরছে একটানা, অঝোর ধারায়। জানালার বাইরে মাঠ। মাঠের প্রান্তে সারি সারি তালগাছ। তাদের মাথার ওপর তালপাতার তৈরি ছাতা। গাছেরা দাঁড়িয়ে আছে প্রতীক্ষায়, কখন ছাতিয়ানতলির বিল থেকে, কচুরিপানার তলা থেকে, ধানখেত পেরিয়ে উঠে আসবে উল্লসিত সব কই মাছ, দু-চারটা মাগুর মাছও, অল্প জল জমা মাঠের উচ্ছল সবুজ ঘাসের মধ্য দিয়ে কানকো টেনে টেনে চলে আসবে গাছেদের দিকে। তারপর তালগাছের গা বেয়ে দু-একটা কই মাছ যেন উঠতে চাইবে আকাশের দিকে, যেখান থেকে ঝরে এমন ব্যাকুল করা মধুরসিক বৃষ্টি। কইবাহিনীর সে এক অপরূপ শোভাযাত্রা, এক অবাধ প্রীতিদৌড়ের প্রতিযোগ। প্রকৃতির এক মনোজ্ঞ প্রীতিব্যবস্থা।এবং টিপটিপ বৃষ্টির সন্ধ্যা। সে এক আধো বাস্তব আধো অবাস্তব সময়কাল। চারপাশ যেন হয়ে ওঠে ঝাপসা আলো-আঁধারশাসিত সান্ধ্য রূপকথার দেশ। নতুন পানিতে ভরে ওঠা ডোবায় মত্ত দাদুর-দাদুরির বিরতিহীন মকমকি, কোটরনিবাসী প্যাঁচার ঘন ঘন ঘুৎকার, বাঁশঝাড়ে আধো ভেজা শেয়ালসম্প্রদায়ের হাঁকডাক, দূরে নৈশ স্টিমারের ভৌতিক ভেঁপু, মধ্যনদীতে পোঁতা বাঁশের আড়কাঠিতে রামতা মাঝির ঝোলানো জলপথ-নির্দেশক লণ্ঠন আর সেই লণ্ঠন-আলেয়ার মিটিমিটি হাতছানি...। এমনই এক টিপটিপ বৃষ্টি–উপদ্রুত অন্ধকার সন্ধ্যায় একা হাট থেকে ফিরছিলেন পিতামহ, জোড়া ইলিশ নিয়ে। পথিমধ্যে টের পান, ব্যাগ থেকে বের হয়ে থাকা লেজ ধরে কে যেন টান দিচ্ছে থেকে থেকে। এক সুরসিক ভূতাত্মা। শুধু টান দিয়েই ক্ষান্ত নয় ভূত। কিছুক্ষণ পরপর আবদারও জানাচ্ছে নাকি সুরে, ‘দিঁয়া যাঁ এঁকটা ইঁলিশ।’ইলিশের প্রতি ভূতের লিপ্সা নিঃশর্ত ও অনিঃশেষ এবং বংশপরম্পরাগত। দাদুও নাছোড়। একপর্যায়ে হঠাৎ এক কালো, ভেজা বেড়ালের রূপ ধরে হাঁটতে থাকে ভূত, দাদুর আগে আগে। অদৃশ্য হয়ে যায় আবার। আবার বেড়াল। আবার অদৃশ্য। ভূতের এ রকম পরাবাস্তব আচরণে বিরক্ত হয়ে পিতামহ খপ করে ধরে ফেলেন ভূতের বিগ্রহটাকে। তারপর ছাতার ভেতর ভূতটাকে ঢুকিয়ে বগলতলায় ফেলে চাপতে চাপতে বাড়ি ফেরেন। ছাতাটা বাহিরবাড়ির বৈঠকখানার বেড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে কলপাড়ে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে ঢোকেন দাদু। বাড়ির ও পড়শিবাড়ির লোকজনের মধ্যে সারা রাত সে কী কৌতূহল আর চাঞ্চল্য! পরদিন ভোরবেলা উঠে সবার সামনে ছাতাটা ঝাড়লেন দাদু। ঝরে পড়ল মরা কালো এক দাঁড়কাক—অদৃশ্য ভূতের এক দৃশ্যমান, মিশিকৃষ্ণ রূপান্তর; এক ভিন্নতর ভূতবিগ্রহ।মাধাইনগর হাইস্কুল। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ পর্ব চলছে। এমন সময় ঝমঝম করে বৃষ্টি। সবাই দৌড়ে গিয়ে উঠেছে লম্বা স্কুলবারান্দায়। ঠিক সে সময়ে এক তরুণ, খালি গা, এলোমেলো রুক্ষ চুল, পরনে জেলেদের মতো লুঙ্গি মালকোচা দেওয়া, হাত পা মুখ মাথায় ঘন কালিঝুলি মাখানো, মাছ ধরা জালে জড়ানো সারা শরীর। বৃষ্টির মধ্যে স্কুলের বারান্দার সামনে দিয়ে বাঁশি বাজাতে বাজাতে চলে যাচ্ছে কৃশকায় হারাবতী নদীর দিকে। বাঁশিতে কেমন অদ্ভুত এক সুর! সেই সুরে আবার এসে মিশছে মধুর বৃষ্টিনিনাদ। আর বৃষ্টিজলে দেহ থেকে কালিঝুলি ধুয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে।রাস্তার ওপারে পাকুড়গাছ। ওই দিক থেকে এসেছে মানুষটা। সে কি এই স্কুলের ছাত্র, যেমন খুশি তেমন সাজোর একজন প্রতিযোগী, নাকি জেলেপাড়ার এক উদাসীন সুরপাগল তরুণ জেলে, গায়ে গাবের রসে ভেজানো জাল মুড়ি দিয়ে বৃষ্টির ভেতর শর্টকাট পথ ধরে চলে যাচ্ছে হারাবতীর দিকে—জানে না তা কেউই, কেউই চিনতে পারেনি তাকে।বৃষ্টি থেমে গেছে সেই কখন। শেষ হয়ে গেছে প্রতিযোগিতার সব পর্ব। দিন শেষে পুরস্কার বিতরণ। যেমন খুশি তেমন সাজোতে ওই জালমোড়ানো বাঁশরিয়াই বিবেচিত হয়েছে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের জন্য। কিন্তু তার তো আর দেখা নেই। কে সে—কোন ক্লাসের ছাত্র, কী নাম, হঠাৎ উদয়ই-বা হয়েছিল কোত্থেকে বৃষ্টির ভেতর—জানে না কেউই। বৃষ্টির এ-ও এক রহস্য উসকানো কৃতি।মানুষ, প্রকৃতি এবং এই যে জড় ও জীবজগৎ—কোন রূপে, কোন বিন্যাসে বিন্যস্ত হয়ে আছে এরা, কীভাবে নিষ্পন্ন হচ্ছে এদের নিরবচ্ছিন্ন আন্তযোগাযোগ, কোন ভাষ্যে লেখা হয়ে চলেছে আকাশ-মাটির মধ্যকার প্রেমের উপাখ্যান, কী উপায়ে ক্রমাগত চরিতার্থ হয়ে চলেছে বিশ্বের বিচিত্র অভিপ্রায়, আর কোন প্রক্রিয়ায়ই-বা মীমাংসিত হয়ে চলেছে জগতের নানা অসংগতি—মাঝেমধ্যে সেসব উন্মোচন করে দেখাতে চায় প্রকৃতি। বর্ষা যেন তারই এক সক্রিয় সজীব মহড়া, এক সজল উদ্‌যাপন।
জুন মাসকে অভিবাসী ঐতিহ্যের মাস হিসেবে পালন করছে ১১টি সংগঠন। এ উপলক্ষে ব্রুকলিনের কেনসিংটনে অ্যাভিনিউ সি প্লাজায় মাসজুড়ে চলছে নানা আয়োজন। কাল ২৯ জুন সমাপনী দিনে থাকছে বিশেষ কনসার্ট। এতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফরমিং আর্টস-বিপা ছাড়াও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর আরও চারটি সংগীত দল অংশ নেবে। বিকেল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এই সংগীতের আসর। আজ শুক্রবার বিকেল চারটা থেকে ৬টা পর্যন্তও থাকছে বিশেষ আয়োজন।আয়োজকেরা বলছেন, মূলত অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময় করাই হচ্ছে এমন আয়োজনের উদ্দেশ্য। এই উদ্যোগে শিশু–কিশোরদের প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে বেশি।অ্যাভিনিউ সি প্লাজায় ভ্রাম্যমাণ স্টুডিও বসিয়ে মাসজুড়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও আরও চার দিন নানা কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন আয়োজকেরা। তাদের আয়োজনে স্থান পেয়েছে বই পড়া, আঁকাআঁকি, মেহেদি দেওয়া শেখানো, ঘুড়ি বানানো, নকশি কাঁথা সেলাই। প্রতিদিন গড়ে ১৫ জন শিশু–কিশোর অংশ নিয়েছে নানা সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে।আয়োজক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—আর্টবিল্ট, আর্টস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি, দি কেনসিংটন স্টুয়ার্ডস, কাসা কুলতুরাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফরমিং আর্টস-বিপা, সিংগিং উইন্ড, এনওসিডি এনওয়াই, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল মেম্বার ব্র্যাড লেন্ডার, এনওয়াইসি কালচারাল অ্যাফেয়ার্স, এনওয়াইসি স্মল বিজনেস সার্ভিসেস, ন্যাশনাল এনডৌমেন্ট ফর দ্য আর্টস।আয়োজকেরা জানিয়েছেন, চার বছর ধরে এই আয়োজন চলছে। যে এলাকায় স্থায়ী কমিউনিটি সেন্টার নেই, সেখানে ভ্রাম্যমাণ স্টুডিওর মাধ্যমে তারা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। অ্যাভিনিউ সি প্লাজায় এবারের আয়োজনে আশপাশের বাসিন্দাদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ সন্তোষজনক বলে জানান তাঁরা।
আমেরিকায় বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্দা উঠল দ্বিতীয় মিশিগান বেঙ্গলস কাপ ক্রিকেটের। মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হার্টল্যান্ড ক্রিকেট মাঠে আয়োজিত হয় মিশিগানের বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রিয় খেলা ক্রিকেটের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ২২ জুন মিশিগানের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টায় ক্রিকেট ম্যাচের উদ্বোধন ঘোষণা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চিকিৎসক দেবাশীষ মৃধা ও চিনু মৃধা। এরপর শিশুদের দিয়ে বেলুন উড়িয়ে শুরু হয় ২০১৯ সালের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের পরপরই শুরু হয় এবারের আসরের প্রথম ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় বি গ্রুপ থেকে বেঙ্গলস স্পার্টানস ও ওকল্যান্ড গোল্ডস। প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে এই আয়োজনে মিশিগানের বিভিন্ন শহরের প্রবাসী বাংলাদেশি আমেরিকান চাকরিজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত আটটি দল অংশ নিয়েছে। টুর্নামেন্ট আয়োজনে স্পনসর করেছেন মিশিগান রাজ্যের বাংলাদেশি-আমেরিকান চিকিৎসক ও কমিউনিটি নেতা দেবাশীষ মৃধা ও চিনু মৃধার ‘মৃধা ফাউন্ডেশন’। আরও স্পনসর করেছেন বেঙ্গলস অটো সেলস ও কমিউনিটি নেতা গিয়াস তালুকদার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে মিশিগান বেঙ্গলস ক্লাবের উপদেষ্টা ও জেনারেল মটরস কোম্পানির ম্যানেজার সাইদ ফয়সাল, জাফরি আল ক্বাদরী, কমিউনিটি নেতা আবু হোসাইন জুয়েল, মারুফ মনোয়ার জয়, কবির, মাহমুদুল খান আপেল, রাহাত খান, প্রকৌশলী নেতা আবিদ রহমান, কাজী তারেকুল ইসলাম, মোহাম্মদ মামুন, রসি মীর, হাসান খান, কৌশিক আহমেদ ও সাইফ সিদ্দিকীসহ বিভিন্ন দলের অধিনায়ক, খেলোয়াড় ও ম্যানেজারেরা উপস্থিত ছিলেন। এ বছর টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া দলগুলো হচ্ছে—মিশিগান বেঙ্গলস হিরোস, মিশিগান বেঙ্গলস ওয়ারিয়রস, মিশিগান কোবরা, ওকল্যান্ড গোল্ডস, মিশিগান টাইটানস, সাগিনাও টাইগার্স, মিশিগান অ্যাভেঞ্জারস ও বেঙ্গল স্পার্টানস। দুই গ্রুপে এ খেলায় প্রতি গ্রুপে চার দল। টুর্নামেন্ট চলবে তিন মাস। প্রতি শনিবার ও রোববার দিনে দুটি থেকে তিনটি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। টুর্নামেন্ট সফল করতে আয়োজকেরা সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন। তাঁদের প্রত্যাশা, ক্রিকেটপাগল প্রবাসী বাংলাদেশিরা মাঠে আসবেন, খেলবেন ও প্রিয় দলকে সমর্থন করবেন।
প্রবাসে বিশেষ করে আমেরিকার মতো দেশে চলার পথ এত সহজ নয়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হয় প্রতিনিয়ত। আমাদের সমসাময়িক যারা প্রবাসে এসেছেন (প্রায় ২০ বছর আগে) তাঁদের চলার পথটা ছিল আরও কঠিন। বিশেষ করে ক্যারিয়ার গড়তে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেকে তো সংসার গড়তে গিয়ে, টিকে থাকার জন্য ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে ছোটখাটো চাকরি করেছে। সেই চাকরি থেকে আর বের হতে পারেনি। জীবিকা নির্বাহ করে কোনো রকম চলেছে। কারণ সামনে দ্বিতীয় কোনো অপশন ছিল না। ছিল না এমন কেউ, যে সাহায্যের হাত বাড়াতে পারে। কারণ আপনজনেরা দেশে। তা ছাড়া অনেকে তো দেশে জমিজমা বিক্রি করে এসেছে। তাঁদের সেই ধার-দেনা শোধ করতে করতে সময় চলে গেছে। যখন অর্থনৈতিকভাবে একটু সচ্ছলতা এসেছে, তখন প্রায় বয়সের সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়িয়েছে। সেই মানুষগুলো পরে স্বপ্ন দেখেছে তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে। ভেবেছে, আমরা যা করতে পারিনি অন্তত আমাদের সন্তানেরা তা করুক। তারা সফল হোক। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, প্রবাসে দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা অনেক ভাগ্যবান। তাঁরা অন্তত তাদের বাবা-মাকে সুখে–দুঃখে পাশে পেয়েছে।আবার অনেকের বাবা-মা কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে খুব ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা তাদের সন্তানদের চেষ্টা করছে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে। বিশেষ করে লেখাপড়ার ব্যাপারে। বিদেশে বিশেষ করে আমেরিকার মতো দেশে মেধার অনেক মূল্য। তারা যে পথে হেঁটেছে, চেয়েছে তাদের ছেলেমেয়েরাও সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হোক।আমেরিকার স্কুলগুলোতে ছেলেমেয়েদের মেধা বিকাশের প্রচুর সুযোগ থাক। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত স্কুলগুলোতে শিক্ষকেরাও স্বাধীনভাবে পড়াতে পারে। এক্সট্রা কারিকুলাম থাকে। সবচেয়ে বড় কথা শিক্ষার্থীরা তাদের মতো করে পড়াশোনা করতে পারে। তাই বাবা-মা একটু গাইড দিলে ছেলেমেয়েরা চমৎকার রেজাল্ট করে। প্রবাসে দ্বিতীয় প্রজন্মের বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই ভালো রেজাল্ট করছে। তারা শুধু লেখাপড়ায় যে ভালো তা নয়, সুন্দর মন-মানসিকতা নিয়েও গড়ে উঠছে। পাশাপাশি অনেকে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গেও তাল মিলিয়ে যাচ্ছে।সামার শুরু হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে প্রায় তিন মাসের জন্য। অনেক বাচ্চা এলিমেন্টারি স্কুল থেকে মিডল স্কুলে যাবে, অনেকে মিডল স্কুল থেকে হাইস্কুলে। হাইস্কুল থেকে কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে। বিভিন্ন স্কুলে চলছে গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম। আবার যারা ভালো রেজাল্ট করেনি, তাদের জন্য সামারে একস্ট্রা ক্লাসের ব্যবস্থা আছে। চাইলে তারা তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে।আমি এমন অনেককে চিনি যাদের সন্তানেরা ভালো রেজাল্ট করেছে, করছে। আবার অন্যান্য নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও তারা জড়িত। অভিনেতা খায়রুল ইসলাম পাখি প্রায় ৩/৪ বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করছেন। থাকেন নিউইয়র্কে। তাঁর ছেলে রনবীর রাজ্য এরই মধ্যে পড়াশোনায় বেশ মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। এবার মিডল স্কুল শেষ, যাবে হাই স্কুলে। সে অঙ্কে বেশ ভালো। একবার তো নিউইয়র্ক সিটিতে ম্যাথ কমপিটিশনে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে রেকর্ড করেছে।নিউজার্সিতে থাকেন ইব্রাহীম চৌধুরী। প্রথম আলোর আবাসিক সম্পাদক। তাঁর মেয়ে ইশরা এবার ভর্তি হল রাটগার্স ইউনিভার্সিটিতে (Rutgers University)। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। শুধু পড়াশোনায় যে ভালো তা নয়, পাশাপাশি সামাজিকতা, বাঙালি কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাতায়াত প্রতিনিয়ত।মনিজা রহমান থাকেন নিউইয়র্কে। তাঁর ছেলে মনন মুস্তাকিম হায়দারের মিডল স্কুল শেষ, যাবে হাই স্কুলে। চুপচাপ, শান্ত মনন শুধু যে পড়াশোনায় ভালো তা নয়, পাশাপাশি ছোট ভাইয়েরও যত্ন নেয়। এই বয়সে একটা বাচ্চার নিজের যত্ন নেওয়া কঠিন, সেখানে সে ছোট ভাইয়ের যত্ন নিচ্ছে। আসলে প্রবাসে বাবা-মায়েরা চেষ্টা করেন তাদের সন্তান শুধু পড়াশোনায় নয়, আচরণে, ভদ্রতায় এবং স্বভাবেও যেন সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে।আমার মেয়ে আফসানা রহমান। সে এলিমেন্টারি থেকে মিডল এবং হাই স্কুল—সব জাগায় সব সময় মেধা তালিকায় ছিল। এবার রাটগার্স ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হল। পড়াশোনার পাশাপাশি ট্রাম্পিট বাজাতে শিখেছে। শুধু পড়াশোনা নয়, মানুষের বিপদেও যেন হাত বাড়িয়ে দেয়, সহযোগিতা করে—পরিবার থেকে সে শিক্ষাও দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।এভাবে কত প্রবাসীর সন্তানের কথা বলব। অনেককেই চিনি, এই প্রবাসে তাঁরা তাঁদের সন্তানের গাইড দিয়ে যাচ্ছেন সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে। তাঁরা চাইছেন, সন্তানেরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করুক। ছড়িয়ে পড়ুক সুনাম চারপাশে। প্রবাসে দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সবাই যে ভালো করছে, তা নয়। তবে এখানে সুযোগ আছে মেধা বিকাশের, শেখার। চেষ্টা করলে তারা স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। অনেকে তো ছেলেমেয়েকে দেশেও নিয়ে যান। দেশ সম্পর্কে তাদের দাদা–দাদির বাড়ি, নানা–নানির বাড়ি দেখাতে। শৈশবের গল্প শোনান। আসলে প্রবাসে দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বর্তমান এখানে আর তাদের শেকড় বাংলাদেশে। বাবা-মায়েরা প্রতিনিয়ত চাইছে প্রবাসে সন্তানেরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করুক। কিন্তু তাদের শেকড় যেন ভুলে না যায়। সব সন্তানেরা ভালো থাকুক এই কামনা করি।
‘ইসলাম: দ্য ব্যালান্সড ওয়ে অব লাইফ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা (মুনা) কনভেনশন-২০১৯। গত বছরের মতো এ বছরও আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া অঙ্গরাজ্যের পেনসিলভানিয়া কনভেনশন সেন্টারে আগামী ৫ থেকে ৭ জুলাই তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে ষষ্ঠ কনভেনশন।মুনা কনভেনশনের উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে থাকবে—সেমিনার, ইয়ুথ কনভেনশন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি। আমেরিকা ছাড়াও বিদেশি ইসলামিক স্কলারেরা এতে বক্তব্য রাখবেন।নতুন প্রজন্মসহ মুসলিম কমিউনিটিকে ইসলামের আলোকে দ্বীনের ওপর চলার মধ্য দিয়ে সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠাই কনভেনশনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আয়োজকদের প্রত্যাশা এবারের সম্মেলনের আমেরিকায় বসবাসকারী ১৫ হাজার মুসলিম নারী ও পুরুষ যোগ দেবেন। মুনা কনভেনশনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টর। গত বছরের মতো এবারও কনভেনশনের কনভেনরের দায়িত্ব পালন করছেন সিপিএ আরমান চৌধুরী। মুনা কনভেনশনের অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন—ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলোয়ার হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরুজ্জামান, মাওলানা এ বি এম ফয়জুল্লাহ ও সাঈদুর রহমান চৌধুরী, কনভেনশনের চেয়ারম্যান আবু আহমেদ নূরুজ্জামান, ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হারুন অর রশীদ, আতাউল ওসমানী, মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল আরীফ, মাহবুবুর রহমান, রশীদ আহমদ প্রমুখ। মুনা কনভেনশনের কর্মকর্তারা জানান, এবারের কনভেনশনে ‘ইন্টারফেইথ’ বিষয়ক অনুষ্ঠানের প্রাধান্য থাকবে। মুনা আমেরিকাভিত্তিক একটি সামাজিক সংগঠন। মুনার কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই। ইসলামের আলোকে জীবন-যাপনের জন্য আমেরিকায় বসবাসকারী মুসলিমদের বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম নিয়ে মুনা কাজ করছে। মুনা গত বছরও একই কনভেনশন সেন্টারে কনভেনশনের আয়োজন করেছে। এই কনভেনশন মুসলিম জীবনে বিশেষ করে বাংলাদেশি-আমেরিকান পরিবারের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে আয়োজকদের প্রত্যাশা। সম্মেলনে মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ক আলোচনা ও সেমিনার ছাড়াও তরুণ ছেলে-মেয়েদের জন্য থাকবে আলাদা ‘ইয়ুথ কনভেনশন’। ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগের ওপর প্যারালাল প্রোগ্রাম। আরও থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ইসলামি ও অন্যান্য সামগ্রীর দোকান নিয়ে বিশাল বাজার। শিশু-কিশোরদের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ‘লার্ন অ্যান্ড ফান’, ‘খেলাধুলা ও রাইড’ এর ব্যবস্থাও রয়েছে। এ ছাড়া ফিলাডেলফিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য থাকবে আমেরিকার নানা দর্শনীয় স্থান পরিভ্রমণ ও পরিদর্শনের সুযোগ।
বইপ্রেমীরা বইমেলার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন। মেলা আসে, মেলা যায়। প্রত্যাশা পূরণ হয় আবার ক্ষোভও থেকে যায়। ভালোমন্দ নিয়ে জীবন। বইমেলা তো ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। সাধুবাদ মুক্তধারা নিউইয়র্ক বইমেলার প্রবর্তক বিশ্বজিত সাহাকে। বছরের পর বছর নিরলস পরিশ্রমে তিনি বইমেলাকে সচল রেখেছেন।আমরা বইমেলার আনন্দ পিপাসুদের বইমেলা নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। ভালো ভালো বইয়ের সমাহার দেখে কেনার জন্য নিশপিশ করি। বইগুলো সংরক্ষণের স্থান সংকুলানের কথা ভেবে হতাশ হই। এত বড় শহরে মেপে দেওয়া জায়গাটুকুতে বইগুলো যদি আদর দিয়ে না রাখতে পারি! এবারের বইমেলায় কবিতা পড়তে আগ্রহীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করা হয়েছে। যারা যোগাযোগ করবেন ভেবেছিলেন, পারেননি—তাদের দোষ দিই না। প্রাত্যহিক ব্যস্ততায় এমন কিছু ঘটে যেতে পারে। কবিতা পড়ার সময়টুকু দুপুর বা পড়ন্ত বিকেলে হয়। কবিতা বলে কথা! কবিদের ভাত জোটে না, কবিতারও তো একই হাল হবে। তাতে অবাক হওয়ার কী আছে।প্রাতরাশ কথোপকথনে রোববার গিয়েছিলাম। এবড়োখেবড়ো ভাবে সবাই বসা। যেন কেউ কারও মুখ দেখতে রাজি নয়। সামনের দুই সারি মুখোমুখি থাকলেও বিরাট খালি মঞ্চে গোলাকারে চেয়ার বসিয়ে একটা জম্পেশ আড্ডার আবহ তৈরি করা দুরূহ কাজ নয়। ছুটির দিনে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে ভারিক্কি আলোচনায় না যেয়ে একটু খুনসুটি করলে বেশ হতো। কেউ কেউ করেছেন ভালো লেগেছে। বইমেলার প্রকাশকদের স্টলগুলো নিয়ে একটু ভাবা যায় না? একটু নান্দনিক সৌন্দর্য দিয়ে স্টলগুলোকে ব্যতিক্রম করা যায় না? বছরের পর বছর এই জড়বস্তুগুলোকে ছা-পোষা টেবিলের ওপর ফেলে না দিয়ে শিল্পীদের সাহায্য নিয়ে স্মরণীয় কিছু করার আহ্বান জানাই।মূলমঞ্চে রাতের অনুষ্ঠানগুলো দর্শক পরিপূর্ণ হলেও যন্ত্র নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনা ও লোকজনের উচ্চ স্বরে বাক্যালাপে মান ব্যাহত হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন এত পরিশ্রম করে প্রস্তুতি নিয়ে আসেন, তাদের জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি করা নিয়ে ভাবা দরকার। প্রতিবছর বইমেলায় আসা লেখকেরা আমাদের নমস্যজন। সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, প্রতিবছর আমরা ভিন্ন ভিন্ন লেখকদের সঙ্গে পরিচিত হতে চাই। এতে আমাদের প্রাপ্তি বেড়ে যাবে। অনেক সেরা লেখকের আমেরিকায় আসার সামর্থ্য নেই। এই সুযোগে তাঁরা এই অভিজ্ঞতাটুকু ভাগ করবেন সবার সঙ্গে।এই লেখাটি বইমেলার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার মানসে লেখা হয়নি। বইমেলার প্রতি ভালোবাসার উচ্ছ্বাস থেকে মন খুলে কিছু বলেছি। যারা এই মেলার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের সবাইকে সাধুবাদ জানাই। আপনারা প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে এই সুন্দর আয়োজন করে আমাদের কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন। প্রত্যাশা রইল, বইমেলার প্রভূত পরিচিতি হওয়ায় একে আরও সমৃদ্ধ আঙ্গিকে মেলে ধরতে সবাই মুক্তধারাকে সহযোগিতা করবেন। বিপুল পরিমাণ অর্থের সংস্থান করে এ ধরনের আয়োজন করতে যে যেভাবে পারেন, পাশে এসে দাঁড়ালে বইমেলার উন্নতি হবে। বইমেলার জয় হোক।
মাটির থালা। গ্রামেগঞ্জে সবার ঘরে ঘরে ছিল নিত্য ব্যবহারের অংশ। যার রং কড়া লাল, না হয় কালচে রঙের। দুবছর আগে দেশে বেড়াতে গিয়ে আড়ং থেকে শখ করে মাটির থালা নিয়ে আসি আমেরিকায়। বছর তিন যাবৎ নিয়মিত মাটির থালাতে আহার করছি প্রতিদিন ও প্রতিবেলা। মাটির থালায় খাবার নিয়ে বসলে পুরোনো দিনের অনেক স্মৃতি এসে ভিড় করে আপনা-আপনি। ভালোই লাগে সেই সময়টুকু। ব্যতিক্রমী পরিবেশনার সঙ্গে ফেলে আসা সোনালি দিনগুলোর উষ্ণ ছোঁয়া। কেউ কেউ বলেন, মাটির থালায় আহার করা স্বাস্থ্য ও শরীর দুটোর জন্য নাকি ভালো ও উপকারী।গেল বছর বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়ে এক স্বজনের বাসায় দাওয়াত খেতে গেলাম। টেবিল ভর্তি সব খাবারদাবার পরিবেশন করা হয়েছে সুদৃশ্য এবং নান্দনিক মাটির তৈরি থালা বাটি আর বড় আকারের মাটির তৈরি থালায়। দেখেই মনটি খুশিতে ভরে গেল। মেহমানদের জন্য মেজবান মাটির তৈরি পুরো ডিনার সেট ব্যবহার করছেন। শুধু থালা নয়, মাটির তৈরি জলপাত্র, তরকারির বাটিসহ সবকিছু টেবিলে সাজিয়েছেন সুন্দর করে। মনে মনে স্বপ্ন ছিল, মাটির তৈরি ডিনার সেটে আয়েশ করে মজাদার ডিনার সারব। সুযোগে তা সেরে নিলাম। পারিবারিক এই অনুষ্ঠানের আয়োজনে ভালো–মন্দ খাবারের মেন্যুতে যা সাধারণত থাকে, তার সবই ছিল। পাশাপাশি কিছু খাবার ছিল পশ্চিমা কাজিনের তালিকাভুক্ত। সেসব খাবারও পরিবেশন করা হলো মাটির তৈরি নানা আকারের বাসনপত্রে। শখ পুরো হলো বলে মনে মনে বেশ খুশিই হলাম। ভাবছি এখন থেকে দেশে গেলে দাওয়াত পেলে আগেই অনুরোধ রাখব, দেশি খাবার যেন মাটির তৈরি থালা বাসনে পরিবেশিত হয়।মাটির থালা খুব কাছ থেকে আগেও দেখেছি। নিজের গ্রামের বাড়িতে। স্থানীয় ভাষায় থালাকে সবাই ডাকতেন ‘হানখ’। ধানের গোলার ভেতরে এক পাশে অসংখ্য মাটির তৈরি থালা বাসন থাক থাক করে মজুত রাখো হতো বাড়ির যেকোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য। বিশেষ করে বার্ষিক শিরনির সময় মাটির থালার প্রয়োজন হতো বেশি। যেকোনো উৎসবের দিনি ধানের গোলা থেকে মাটির ওই থালাগুলো কাজের লোকজন বাইরে উঠানে এনে রাখত। প্রতি বছর প্রয়াত দাদা–দাদিসহ অন্যান্য মুরব্বির স্মরণে ঘটা করে আয়োজন করা হয় বার্ষিক শিরনির। ১০/১২টি বড় বড় গরু জবাই করে আয়োজন করা শিরনীতে আশপাশের গ্রামগুলোর প্রতি পরিবারকে সম্মানের সঙ্গে দাওয়াতের করা হতো। পাশের গ্রামের সবাইকে দাওয়াতের পাশাপাশি অন্য গ্রামের বয়স্ক মুরব্বিদের শিরনিতে দাওয়াত দেওয়ার রেওয়াজ ছিল অনেক পুরোনো। শিরনির সার্বিক আয়োজনে থাকতেন গ্রামের পঞ্চায়েত। আগে থেকে ঠিক করা শিরনির দু/চার দিন আগে গ্রামের পঞ্চায়েতকে বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে এনে সব আয়োজন সমজিয়ে দেওয়া হতো তাঁদের হাতে। শিরনির সব উপকরণ কেনা থেকে বাবুর্চি ঠিক করা। খাবারের আইটেম কী কী হবে—তার সবই নির্ধারণ করতেন পঞ্চায়েতের মুরব্বিরা। আয়োজক পরিবার এবার চলে আসলেন অতিথির কাতারে। পঞ্চায়েত কর্তৃক ঠিক করা মেন্যুতে কমপক্ষে ৪ জাতের সালুন থাকত। বিশেষ আইটেম ছিল গরুর হাড়ের মাংস দিয়ে বড় বড় মিষ্টি লাউ সহকারে সবজি তরকারি। সঙ্গে থাকত বেশি করে ঝাল দিয়ে মাংস ভুনা, ঘন করে মসুরির ডাল, সঙ্গে গরুর চার পাকে টুকরো টুকরো করে কেটে শুধু হাড় দিয়ে টক স্বাদের এক পদ, সিলেটী ভাষায় যার নাম সাতকড়ার খাট্টা।সবজি, মাংস আর ডালসহ খাট্টার পর সব শেষে আসত সবার খুবই পছন্দের বিশেষ পদ যাকে ভাটি অঞ্চলে ডাকা হতো শাষণী। কয়েকটি উপাদেয় উপকরণের মিশ্রণে তৈরি হতো শাষনী। তিসির গুঁড়োর সঙ্গে তেঁতুলের টকের পাতলা মিশ্রণকে ছাঁকনিতে ছেঁকে নেওয়া হতো। আর সেই হালকা বাদামি রঙের মিশ্রণকে খাঁটি সরিষার তেলে বেশি করে রসুন যোগ করে দেওয়া হতো বিশেষ ফোড়ন। ফোড়ন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত টক মিষ্টির এক মনকাড়া সুবাস। খেতে দারুণ লাগত। সাদা সুগন্ধি ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে মসলাদার খাবার খেতে তুলনাহীন স্বাদ পাওয়া যেত। টক মিষ্টি স্বাদের অতুলনীয় শাষণির ছোঁয়া ছিল লা জওয়াব। সব শেষে পানদানভর্তি দেশি ঝাঁজাল পান ও টুকরো করে কাটা পচা সুপারি।শিরনি খাওয়াতে বসার আগেই নিজ মাটির থালা কলতলায় না–হয় হাওরের পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে সারি হয়ে বসে পড়তে হতো উঠানে পেতে রাখা লম্বা লম্বা বাঁশের ওপর। বাইরে থেকে আসা মেহমানদের জন্য বাংলো ঘরের লম্বা লম্বা কালো চৌকিতে দস্থরখাঁ বিছিয়ে খাবারের আয়োজন হতো। সেখানে মেয়ে জামাই কিংবা বেয়াইরা মেহমান হয়ে এলে, তাঁদের খাওয়ানো হতো কাচের প্লেটে। বাদ বাকিরা বসতেন বাইরে উঠানে বিছানো চাটাইর ওপরে সারি করে রাখা বড় বড় বাঁশের ওপর। গ্রামের ধনী–গরিব সবার বসার আয়োজন একদম সমান। কোনো উঁচু–নিচু কিংবা কোনো ভেদাভেদ নেই। ছোট বেলায় আমাদের বাইরে বসতে দেওয়া হতো না। তাই লুকিয়ে বড়দের চোখ এড়িয়ে চাটাইর ওপর বাঁশে বসে শিরনি খেতে চাইতাম। কখনো পারতাম, কখনো না। একবার নয়া বাড়ির বড় চাচার সঙ্গে বসে পড়ি। কেউ কেউ তুলে দিতে চেয়েছিল। বড় চাচার পাশে বসা দেখে সাহস করে কেউই পাশেই আসেনি।খুশিতে দৌড়ে গিয়ে মাটির হানখ (থালা) হাওরের পানিতে ধুয়ে নিয়ে এসে চাচার পাশে বসে গেলাম। হঠাৎ পেছনে ফিরে দেখি সদ্য আমেরিকা ফেরত আমাদের ছোট চাচা ফজলুল বারী। নতুন বাড়ির চাচার বিরাট দেহের আড়ালে নিজেকে লুকাতে চাইছি। ঠিক সেই সময় বড় চাচার চোখে পড়ে গেলেন প্রবাসী চাচা।হাঁক দিয়ে বলছেন, ঘোরাঘুরি করছ কেন? যাও থালা নিয়ে এসে লাইনে বসে পড়। নয়া বাড়ির চাচার ওই হায়দরী আওয়াজের ডাক শুনে প্রবাসী ছোট চাচা নিমেষে হাওয়া। আমাকে আর পায় কে? লাল রঙের মাটির থালায় রাতা ধানের চালের সঙ্গে সব জাতের তরকারি মাখিয়ে মজা করে পেট পুরে শখের শিরনি খাওয়া শেষ করলাম। সব শেষে মাটির থালায় নিলাম বিখ্যাত শাষণী। থালার গলা পর্যন্ত ভর্তি করে নেওয়া তিসি ও চালের গুঁড়ার টক মিষ্টি স্বাদের টলটলে রসের অতুলনীয় স্বাদ আজও খুঁজে ফিরি গ্রামের বাড়ির বড় বাংলোর উঠানে। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার দক্ষিণ অঞ্চলের সেরা ধনী পরিবারের পরিবারের সব প্রবীণ আর নবীনের মাঝে ছিল মাটির প্রতি ভালোবাসা ও সখ্য। যা আমি নিজের মাঝে কখনো কখনো টের পাই। লোক দেখানো কৃত্রিমতার লেবাসে নিজেকে বড় করিনি। মাটির মানুষের সঙ্গে মিশে চলার পরিবেশে বড় হয়েছি বলেই মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হই আজও প্রতি নিয়ত। সহজ জীবনযাপন আজও মোর বিলাসিতা।মানুষকে কতটুকু ভালোবাসতে শিখেছি, তা পরিমাপ না করতে পারলেও মানবতাকে ঘৃণা না করার শিক্ষা পেয়েছি নিজ পূর্বসুরীর কাছ থেকে। আর তাই হোক আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা। তাই বুঝি এই বিদেশ বিভুঁইয়ে জীবনে যখন মাটির থালায় খেতে বসি, তখন নিজেকে আবিষ্কার করি, আমি যেন আমার ছোট্ট গ্রাম লাউগাঙ্গের পাড়ের গ্রামে চলে গেছি। এই অনুভব আমাকে কষ্ট দেয় না, বরং আনন্দ দেয়। স্মরণ করিয়ে দেয় মাটি আর মা আমার মননে, আমার হৃদয়ে কতটুকুন সম্মান আর ভালোবাসা নিয়ে শক্ত অবস্থানে আজও চির জাগরুক। আজকাল নানা সামাজিক দায়বদ্ধতায় আত্মীয়–স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের সময় সুযোগ দুটো ক্রমশ সীমিত হয়ে আসছে। এত সব সীমিত জীবনযাপনের মাঝে এখনো নিজ হাতে পছন্দের দু/চার জাতের মাছ আর শাক সবজির বাজার যেমন সারতে পারছি। তেমনি পছন্দের জোড়া ব্যঞ্জন শখের কেনা মাটির থালায় নিয়ে মহানন্দে সীমাহীন সুখে প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি আপন উদরপূর্তি। এ সুখ আমি কোথায় রাখি?
এই চলচ্চিত্র দেখতে যত মানুষ এসেছিলেন, সেই সংখ্যাটা যে কোন পরিচালকের মুখে হাসি ফোটাতে যথেষ্ট। এটুকু বলা যেতে পারে, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের মিলনায়তনের ওপরে এবং নীচের হল কানায় কানায় ভর্তি ছিলো দর্শকে। অনেকে দাঁড়িয়ে, নীচে বসে ছবি দেখেছেন। পরিচালক নিজেও বসার জায়গা পাননি। ম্যাটের ওপর এক কোণে বসেই প্রথমবারের মতো নিজের দেশে,দেশের মানুষের সঙ্গে উপভোগ করেছেন। প্রবল করতালিতে যখন দর্শক জানিয়ে দিলেন, ছবি শেষ, তখন আলো আঁধারির মাঝেও পরিচালকের চোখে জ্বলজ্বল করছিলো মুক্তোর মতো দু’ফোটা জল।ছবির নাম মীনালাপ। সহজ কথায় মাছেদের কথোপকথন। আরও স্পষ্টভাবে বললে হয়, মটকার ভেতর শৈল মাছদের ফিসফাস আর চিৎকার। এই মীনালাপ একটা সংসারের গল্প। আর সংসারের আরেক অর্থ তো জগৎ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। ছবির মূল চরিত্র জুলেখা আর ইউসুফ। তাঁরা বাঙালি। কিন্তু জীবনযাপনের জন্য এই দম্পতিকে পশ্চিমবঙ্গের ঘর ছেড়ে আসতে হয় বহুদূরে, পুনেতে। তাঁরা একটা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। তাঁদের জীবন, যাপন, প্রথম সন্তান আর এক নারীর মা হওয়ার যে শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন- তা কিছুটা মূর্ত আর অনেকটাই বিমূর্ত অথচ বাস্তব হয়ে ধরা দেয় বড় পর্দায়।কিন্তু তাঁরা যা বানায়, সেগুলো পরে বড়লোকেরা। তাই জুলেখা যখন তাঁদের অনাগত সন্তানকে নিয়ে ইউসুফকে প্রশ্ন করে, ‘আচ্ছা, আমরা যে এসব জামা বানাই, আমাদের বাচ্চারা কি এগুলো পরতে পারবে?’ ইউসুফ উত্তর দেয়, ‘না’। তাতে শ্রমিকের উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে তাঁর যে বিচ্ছিন্নতা, সেটি ফুটে ওঠে। ২৮ মিনিটের এই দীর্ঘ শর্টফিল্ম যে কখন শুরু হয়ে কখন শেষ হয়, তা টের পাওয়া যায় না। যেন পরিচালক কোন এক জাদুবলে বড় পর্দায় ২৮ মিনিটকে মাত্র একটা মুহূর্তে বন্দী করে ফেলেছেন। আর এর মধ্যেই বলেছেন এত কথা, যা নিয়ে আলাপের কেবল শুরু আছে, কোন শেষ নেই।এই যেমন ধরেন, একটা ডায়ালগ এমন, ‘যেটা আছে, সেটাই আসলে নেই।’ এই একটা কথার যে কত ব্যাখ্যা- তার কি যবনিকা টানা এতই সহজ? এই যে দার্শনিক বোধ তা এই চলচ্চিত্রের শব্দ, দৃশ্য, রঙ, পরিবেশের সঙ্গে এমনভাবে মিলে যায় যে একটা থেকে আরেকটা আলাদা করা যায় না। দিন শেষে মীনালাপ একটা ভালোবাসার গল্প হয়ে থেকে যায়। যে ভালোবাসার গল্পের শুরুটা হয়েছিল ১৫ শতকে, সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের দরবারের কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের কল্পনায়, 'ইউসুফ-জুলেখা' মহাকাব্যে।পরিচালক সুবর্ণা সেঁজুতি টুসির ক্যামেরায় সেই ইউসুফ -জুলেখা থাকেন বস্তির একটা ছোট্ট ঘরে। ঘর যতই ছোট হোক, তাঁদের ভালোবাসা সেই ঘর থেকে ছিটকে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। সেই সবখানের ভিতর স্বপ্নও অন্তর্ভুক্ত। তাই তো শেষদৃশ্যে দেখা যায়, সমস্ত বাড়তি কাপড় একাই জোড়া লেগে লম্বা হচ্ছে, যে রকম আশ্চর্যভাবে বাড়ছে জুলেখার গর্ভের শিশু।ছবিটি দেখতে চলচ্চিত্রজগতের অনেক পরিচিত মুখ মিলিত হয়েছিলেন সেই মিলনমেলায়। উপস্থিত ছিলেন নির্মাতার বাবা নূহ উল আলম লেনিন, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নির্মাতা নূরুল আলম আতিক, শামীম আখতার, শিল্পসমালোচক মঈনুদ্দীন খালিদ, জাহিদুর রহিম অঞ্জন, আকরাম খান, ফৌজিয়া খান, হুমাইরা বিলকিস, তাসমিয়াহ্ আফরিন মৌ, প্রযোজক আরিফুর রহমান সহ আরও অনেকে।এই ছবি দেখে নির্মাতা শামীম আখতার বলেছেন, ‘ক্যামেরা দিয়ে যে কিভাবে কবিতা লিখতে হয়, তা পরিচালক এই ছবিতে দেখিয়ে দিলেন। তিনি মহারাষ্ট্রে বসে বাংলাদেশের জলের গল্প বলেছেন। প্রতিটি জায়গায় অনেক সূক্ষ্ম ভাবনার প্রতিফলন ছিলো।’ দর্শকসারি থেকে একজন বলেছেন, ‘আমাদের মস্তিষ্ককে ভিন্নভাবে কাজ করানোর জন্য এই ধরনের ছবির কোন তুলনা নেই।’ চলচ্চিত্রকর্মী সুশীল সূত্রধর অবশ্য বলেছেন এই ছবির শব্দ কিছুটা ‘লাউড’ ছিলো। যদিও নির্মাতা নূরুল আলম আতিক দ্বিমত পোষণ করে বলেন, শব্দই এই ছবিকে আর সব ছবি থেকে আলাদা করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সাধারণ দর্শকসারি থেকে একজন মন্তব্য করেছেন, এই সিনেমা একটা ‘অদ্ভুত ঘটনা’।এই ছবির পরিমিতিবোধ, বিষয়বস্তুর ভিন্নতা ও গভীরতা স্পর্শ করেছে দর্শকদের। দিন শেষে সেটিই বড় প্রাপ্তি হয়ে থাকে। এই ছবি ইউরেশিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল সহ তাজিকিস্তান, ভারতের কলকাতা, শিলিগুড়ি ও মুম্বাই, আর্মেনিয়া, নেপাল, দুবাই, মিশরের ফিল্ম ফেস্টিভাল থেকে পুরস্কার পেয়েছে। আরও বেশ কয়েকটা ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু সব ছাপিয়ে দেশের দর্শকদের চোখেমুখে যে অনুভূতি, সে-টিই বদলে দিয়েছে সুবর্ণা সেঁজুতি টুসিকে। তিনি সাহস আর ভরসা পেয়েছেন, যে দুটো শব্দের ওপর ভর করে তিনি শুরু করবেন আকাশ ছোঁয়ার যাত্রা।
অনেক হিসাব নিকাশ হচ্ছে বিশ্বকাপ নিয়ে। সেমিফাইনালে কে যাবে? স্বাগতিক ইংল্যান্ডের (৮ পয়েন্ট) সম্ভাবনা কত, বাংলাদেশ (৭) কি পারবে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলতে? পাকিস্তান (৭) বা শ্রীলঙ্কার (৬) সমীকরণটাই-বা কেমন?বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কে যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সবাই। নানা রকম সমীকরণের প্যাঁচে মাথা ঘোরার দশাও হচ্ছে কারও কারও। টেলিগ্রাফ পত্রিকাই যেমন জটিল হিসাব নিকাশ কষেছে। শেষ পর্যন্ত ভবিষ্যদ্বাণী জানাতে গিয়ে দেশের প্রতি টান ভুলে জানিয়েছে ইংল্যান্ড নয়, পাকিস্তানই যাচ্ছে সেমিফাইনালে। আসলেই কি তাই? বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড বা শ্রীলঙ্কার কি কোনো সুযোগ নেই?বিশ্বকাপের এখন সবচেয়ে আনন্দে আছে চারটি দল। এরই মাঝে সেমিফাইনালে উঠে গেছে অস্ট্রেলিয়া। আর বাদ পড়ে নিজেদের এসব কঠিন হিসাব নিকাশের ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান। এ ছাড়া সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ আছে বাকি ছয় দলেরই। এর মাঝে নিউজিল্যান্ড ও ভারতের সেমিফাইনালে ওঠা সময়ের ব্যাপার। চতুর্থ স্থানটি নিয়েই যত ঝামেলা। আর এই একটি জায়গার জন্য লড়ছে বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।বলতে দ্বিধা নেই, প্রতিবেদক বাংলাদেশি বলেই বাংলাদেশের নামটি আগে উচ্চারিত হয়েছে। না হলে সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনার কথায় বাংলাদেশ নয়, ইংল্যান্ডের নামই আগে উচ্চারিত হওয়ার কথা। সমীকরণের মারপ্যাঁচে ঢোকার আগে চার দলের বর্তমান পয়েন্টের কথাটা জানিয়ে রাখা যাক। বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান ৭ টি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে, শ্রীলঙ্কাও আজ খেলতে নেমেছে নিজেদের ৭ম ম্যাচ। ৮ পয়েন্ট নিয়ে চার দলের মধ্যে আপাতত এগিয়ে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। সমান ৭ পয়েন্ট বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুই দলেরই, তবে রান রেটে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। আর আজকের ম্যাচের আগে শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট ৬।২০১৯ বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে র‍্যাঙ্কিং সেরা ছিল বলেই নয়, গত তিন বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটকে নতুনভাবে চিনেছে ইংল্যান্ড। দুর্দান্ত ব্যাটিং আর পেস আক্রমণে বিশ্বকাপের ফেবারিট ধরা হচ্ছিল তাদের। এখন উল্টো ১৯৯৯ সালের ভাগ্য বরণ করার দশা তাদের। আবারও ঘরের মাঠে দর্শক বনতে বসেছে ইংল্যান্ড।ইংল্যান্ডের অবশ্য একটি সুবিধা আছে। নিজেদের ভাগ্য নিজেদের হাতেই আছে। শেষ দুই ম্যাচে জিতলেই সরাসরি সেমিফাইনাল খেলবে তারা। কিন্তু তাদের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত, যাদের এ বিশ্বকাপে কেউ হারাতে পারেনি। মাইকেল ভন তো বলেই বসেছেন, ভারতকে যে দল হারাবে তারাই জিতবে বিশ্বকাপ। রবিবারের ম্যাচে ছন্নছাড়া ইংল্যান্ড সে কাজ করতে পারবে, সে আশা কোনো ইংলিশ বিশেষজ্ঞও করছেন না। বাকি রইল নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানের কাছে হেরে একটু ধাক্কা খেয়েছে বটে, কিন্তু ইংল্যান্ড ম্যাচে ইতিহাস নিউজিল্যান্ডের পক্ষেই থাকবে। ১৯৮৩ সালের পর যে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কখনোই হারেনি কিউইরা!এবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আশা যাক। বাংলাদেশের সেমিফাইনাল স্বপ্ন এত বেশি যদি-কিন্তুর ওপর নির্ভর করছে যে কাগজ কলম নিয়ে হিসেব কষতে হয়। বাংলাদেশকে প্রথমেই আশা করতে হবে যেন ইংল্যান্ড তাদের বাকি দুই ম্যাচে একটির বেশি জয় না পায়। সে ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানকে হারালে সেমিফাইনালের পথে ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ। আর যদি ইংল্যান্ড দুই ম্যাচেই হেরে যায়, সে ক্ষেত্রে শুধু একটি জয়ই যথেষ্ট হবে মাশরাফিদের জন্য। বিশেষ করে সে জয়টা যদি আসে পাকিস্তানের বিপক্ষে, তাহলে সরফরাজদের নিয়েও আর চিন্তা করতে হবে না বাংলাদেশকে।কিন্তু এখানেই শেষ হচ্ছে না বাংলাদেশের চিন্তা। সেমিফাইনাল যাত্রায় শ্রীলঙ্কাও যে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ! তাই বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার অমঙ্গলও কামনা করতে হচ্ছে। আজ দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ বাকি থাকবে শ্রীলঙ্কার। বাংলাদেশ যদি নিজেদের দুটি ম্যাচই জেতে, তবে শ্রীলঙ্কা যেন অন্তত এক ম্যাচ হারে সে আশা করতে হবে। আর যদি বাংলাদেশ একটি ম্যাচে জিতে, তাহলে শ্রীলঙ্কাকে হারতে হবে অন্তত দুটি ম্যাচে। অর্থাৎ পাকিস্তানকে হারানোর সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের হার কামনা করাও এখন বাংলাদেশের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।পাকিস্তানের সমীকরণটা তুলনামূলক সহজ। আগে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের ম্যাচে জয় পেতে হবে ৯২ এর চ্যাম্পিয়নদের। এরপর অবশ্য একটু কঠিন দ্বন্দ্বেই পড়তে হবে পাকিস্তানি সমর্থকদের। তিন ম্যাচের জন্য যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সমর্থক বনে যেতে হবে! তবে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টিকে থাকতে এতে খুব একটা আপত্তি থাকার কথা নয় তাদের। কোহলির দল পরের তিন ম্যাচে ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে হারালে শেষ চারে ওঠার কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে যায় সরফরাজদের জন্য। সে ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড যদি নিউজিল্যান্ডকে হারায়ও, তাও ভাগ্য খুলে যাবে পাকিস্তানের।এশিয়ার আরেক দল শ্রীলঙ্কার সমীকরণ এক অর্থে খুব সহজ, আবার খুব কঠিনও। নিজেদের তিন ম্যাচে জিতে গেলেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে নিয়ে আর মাথা ঘামাতে হবে না তাদের। কিন্তু ওদিকে ইংল্যান্ড যদি নিজেদের দুই ম্যাচ জিতে যায়, তাহলে লঙ্কানদের বদলে স্বাগতিকেরাই যাবে শেষ চারে। কারণ, শ্রীলঙ্কার দুটি পয়েন্ট বৃষ্টির সুবাদে এসেছে। বেশি ম্যাচ জয়ের ফলে ইংল্যান্ড যাবে সেমিতে। কিন্তু দুই দলেরই একটি ম্যাচ বাকি ভারতের বিপক্ষে। ওয়েস্ট ইন্ডিজও কবে কী করবে তার কোনো ঠিক নেই। আর দক্ষিণ আফ্রিকা যদি আজ হারিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কাকে, তাহলে তো সমীকরণটা আরও জটিল হয়ে উঠবে।তাহলে, কে যাবে সেমিফাইনালে? বহু চেষ্টা করেও টেলিগ্রাফের মতো সাহস সঞ্চয় করে ভবিষ্যদ্বাণী করা যাচ্ছে না। ২ জুলাই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগেই সমীকরণটা অনেক সহজ হয়ে উঠবে। তত দিন পর্যন্ত না হয় অপেক্ষা করা যাক!
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের রোগমুক্তি কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।২৬ জুন বাদ মাগরিবে জ্যাকসন হাইটসের ইসলামিক সেন্টারে জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটির উদ্যোগে এই মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহ্বায়ক আবদুন নূর বড় ভূঁইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলতাফ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ওসমান চৌধুরী, যুগ্ম সদস্যসচিব এম জাফর মিতা, যুগ্ম সদস্যসচিব আসেফ বারী টুটুল, যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল করিম, জাতীয় পার্টি যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাবেক উপদেষ্টা ইসমাঈল খান আনসারী, সাবেক উপদেষ্টা মাববুবুর রহমান চৌধুরী, জাতীয় পার্টি যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান অনিক, সাবেক উপদেষ্টা ছব্বির লস্কর, সাবেক সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, সদস্য ফয়েজউল্লাহ নাঈম, যুক্তরাষ্ট্র যুব সংহতির সভাপতি আবদুল কাদির লিপু ও শাহাজাহান সাজু প্রমুখ।অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করেন জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টারের খতিব মাওলানা মো. আবদুস সাদিক। দোয়া অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রপতির রোগ মুক্তির জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া কামনা করা হয়।
প্রবাসে বাঙালিদের উৎসব-অনুষ্ঠানে ভরপুর সারা বছর। আজকাল ফেসবুকের পাতা বলে দেয়, ১২ মাসে ১৩ পার্বণে প্রবাসীরা মাতোয়ারা। শুক্রবার থেকে রোববার হয় দাওয়াত, গ্র্যাজুয়েশন পার্টি নয় গানের আসর। যদি কিছুই না থাকে, তাহলে বন্ধুদের বিয়ে আড্ডা-গান-বাজনা। প্রবাস জীবন কি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ? আমার কাছে তা মনে হয় না। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে যে মিশে আছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য, সাহিত্য ও শিল্পকর্ম। শত ব্যস্ততার মাঝেও প্রবাসীরা তাদের সাহিত্য ও শিল্পকর্মকে ধরে রাখতে নিচ্ছে নানা কর্মসূচি, যার অন্যতম হলো নিউইয়র্ক বইমেলা ও ডিসি বইমেলা। এই প্রাণের মেলা প্রবাসীদের কিছুটা হলেও একুশের বইমেলার স্বাদ এনে দেয়। বইমেলায় ছুটে আসেন লেখক ও প্রকাশক। অনেকটা মনের তাগিদে তারা আসেন। লাভ-লোকসানের ধার ধরেন না প্রকাশকেরা।এবার দ্বিতীয়বারের মতো ‘আমরা বাঙালি ফাউন্ডেশন’ ওয়াশিংটনে আয়োজন করে ডিসি বইমেলা ২০১৯। আয়োজকদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমি তৃপ্ত।আয়োজনে কোনো কিছুর কমতি ছিল না। দেশ থেকে বইসহ ছুটে এসেছেন প্রকাশনী সংস্থার কর্মকর্তারা। স্থানীয় কিছু প্রকাশকদের দেখে বই প্রকাশের কিঞ্চিৎ সাহস পেয়েছে অনেক কবি-লেখক। মেলায় উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য সাহিত্যিক সেলিনা রহমান, আনিসুল হক, ড নুরুন নবী, শাহাব আহমেদ, আনিস আহমেদ, সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সংস্করণের আবাসিক সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী প্রমুখ।বইমেলায় ১১টি নতুন বই পরিচিতি ও লেখকদের সঙ্গে কথোপকথনের আয়োজন ছিল। এরা হলেন নুরজাহান বোস, আব্দুন নূর, এস মাহতাব আহমেদ, ওয়াহিদা আফজাল, মাহবুব সালেহ, সৈয়দ আল ফারুক, আশরাফ আহমেদ, হুমায়ুন কবির ঢালী, নূরন্নবী, হাসান মাহমুদ ও আনিসুল হক।যাঁদের রিপোর্ট ও লেখা আমি নিয়মিত পড়ি তাদের মধ্যে দুজনকে একটু বেশি কাছে পেয়েছি। আলাপ হয়েছে বারবার।পপি চৌধুরী। একজন লেখিকা, প্রকাশক ও ব্যবসায়ী। সব কর্মের মধ্যেও নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন লেখালেখি জগতে। সদা হাস্যোজ্জ্বল, সদালাপী এই মানুষটির সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে ডিসি বইমেলায়। তার আগে থেকেই তার লেখা পড়েছি প্রথম আলোতে। প্রীতম প্রকাশনী, প্রথমা ও স্বদেশ শৈলী পাশাপাশি স্টল থাকতে বেশির ভাগ সময় কেটেছে পপি ও শেলীর সঙ্গে। দুই দিনের বইমেলায় নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। পপি তাঁর লেখা একটি বই ‘টান’ আমাকে উপহার দিলেন।বইমেলা কমিটি পপির জন্য যতটুকু সমাদর করতে পেরেছে, তার চেয়ে বেশি তিনি বই মেলার জন্য করেছেন। শেষ দিনে পপি ও তার স্বামীর সঙ্গে এক ফ্রেমে বন্দী হলাম। আত্মার একটি সম্পর্ক থাকবে চিরকাল।শেলী জামান খান। লেখিকা ও সাংবাদিক। প্রথম আলোর পাতার শেলীর লেখালেখির সঙ্গে পরিচয়। তিনি ডিসি বইমেলায় আসার আগে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী আমাকে ফোন করে বললেন, শেলী জামান খান আসবেন। তাঁকেও বলে দিলেন আমার কথা। শেলীর সঙ্গে প্রথম দেখা ভার্জিনিয়ার একটি আবাসিক হোটেলে। অসাধারণ সুন্দর মনের মানুষ। আমাকে দেখেই মিষ্টি একটি হাসি দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। এরপর দুই দিন প্রথম আলোর স্টলে ছিলাম একসঙ্গে। শেলীর কাছে যতবার গেছি মুখে ছিল মিষ্টি একটা হাসি। জানি এই দুই দিনে তাদের খুব কষ্ট হয়েছে, কিন্তু মুখের হাসি দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না। চমৎকার একজন মানুষ। চুপচাপ থাকেন, কিন্তু কাজ করেন নীরবে। আপা তার একটি বই আমাকে উপহার দিলেন। আমার লাইব্রেরিতে যুক্ত হলো প্রিয় লেখকদের একটি বই। ভালো থাকবেন শেলী আপা।পলি শাহিনার মুখটা বেজার দেখে জিজ্ঞেস করলাম বই কোথায়? বেচারি আক্ষেপ করে জানালেন, প্রকাশক তার বই আনতে ভুলে গেছেন। কবি সেলিনা আক্তারের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। মৃদুল রহমানের ভুনা খিচুড়ি খেয়ে আমার ক্যামেরায় সেলিনাকে কিছু ছবি তুলে দিলাম। বুঝলাম, সেলিনার ছবি তোলার আগ্রহটা বেশি। ফারহানা হোসেনকে প্রথম দিন দেখেছি, দ্বিতীয় দিনে উধাও।ইব্রাহীম চৌধুরীকে এক পাইনি, সঙ্গে বোনাস হিসেবে পেয়েছি ভাবিকেও। ভাবির সঙ্গে টুকটাক কথা হলেও ইব্রাহীম চৌধুরী ব্যস্ত ছিলেন অন্যদের সঙ্গে। মেলায় সর্বাধিক বই বিক্রি হয়েছে মৃদুল রহমানের ‘আমরা বাঙালি ও আমাদের বাঙালিত্ব’ বইটি। স্বদেশ শৈলী স্টলে মৃদুল রহমান বই নিয়ে বসেছিলেন।কবি সাহিত্যিকদের সঙ্গে আড্ডার কুশল বিনিময়, সাহিত্য বিষয়ক কথামালায় ভিন্ন জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম।এবারের আয়োজনে অতিথিদের আতিথেয়তায় কিঞ্চিৎ ঘাটতি দেখা গেছে। অনেকে হোটেলে রুম বিড়ম্বনায় ছিলেন। অতিথিদের কেউ খাদ্য কুপন পেয়েছেন, কেউ পাননি। এ বিষয়ে আয়োজক কমিটির দস্তগীর জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা বলতেই তিনি মোস্তাফিজকে দেখিয়ে দিলেন। মোস্তাফিজ অতি সাদরে আমাকে দুটি খাদ্য কুপন ধরিয়ে দিলেন।কবি/ছড়াকার সৈয়দ আল ফারুক ও নাহিদ নাজিয়ার অংশগ্রহণ আমাদের ভবিষ্যতের আয়োজনে উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে।আশা করছি, ভবিষ্যতে আরও বেশি লেখকদের সমাগম ঘটবে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের চেয়ে লেখক-প্রকাশক ও পাঠকেরা বেশি গুরুত্ব পাবে। তাহলে বলা যাবে, সত্যি এটাই বইমেলা।
বঙ্গ সম্মেলন (এনএবিসি) এবার ৫ থেকে ৭ জুলাই বাল্টিমোরে অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নিতে আসছেন পঞ্চকবির কন্যা ও পঞ্চকবির গানের পথিকৃৎ ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়।বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতির চর্চা বাড়াতে আমেরিকায় প্রতি বছর এই সম্মেলনের আয়োজন করে কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (কাব)।বঙ্গ সম্মেলনে ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটি পঞ্চমবারের মতো আগমন। যে গান বাঙালি ভুলতে বসেছিল তাকে পুনর্জীবিত করেছেন তিনি। বিশেষ করে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন ও রজনীকান্ত সেনের গান বহির্বিশ্বে প্রচারের ক্ষেত্রে ঋদ্ধির ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। ঋদ্ধি তাঁর গুরু শ্রীমতি মঞ্জু গুপ্তা, শ্রীমতি কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, শ্রী সুশীল চট্টোপাধ্যায়ের পথ ধরে এই গানকে আবার জনসম্মুখে ফিরিয়ে এনেছেন।এবার বঙ্গ সম্মেলনে কী গান গাইবেন—জানতে চাইলে সুদূর কলকাতা থেকে ফোনে পঞ্চকবির কন্যা জানালেন, ‘দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন ও রজনীকান্ত সেনের গান তো গাইবই, সেই সঙ্গে এবার হিমাংশু দত্তের গান গাওয়ার আশা রাখি। নিশ্চয়ই এটা আমার জন্য অনন্য এক অভিজ্ঞতা হবে।’গবেষণা ঋদ্ধির সংগীত চর্চার অন্যতম দিক। তিনি রবীন্দ্র-নজরুলসহ পঞ্চ কবির গান করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের-প্রত্যেকের গানের কথা-সুর উঠে আসে ঋদ্ধির কণ্ঠে। এক সঙ্গে এই পঞ্চকবিকে নিয়ে ২০১১ সাল থেকে কাজ করছেন তিনি। এ কারণে বাংলাদেশের খ্যাতিমান অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান তাঁর নাম দিয়েছেন ‘পঞ্চকবির কন্যা’।ঋদ্ধির ক্যারিয়ারের শুরু হয়েছিল নাটকের গান দিয়ে। বাবা অধ্যাপক সত্যপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায় আর মা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রমা চট্টোপাধ্যায়ের একমাত্র সন্তান ঋদ্ধি লেখাপড়াতেও ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন। ইতিহাস বিষয়ে নিয়ে ভর্তি হন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন এরপর। ঋদ্ধির বাবা ফরিদপুরের আর মা রংপুরের মানুষ। সেই হিসেবে নিজেকে তিনি বাংলাদেশের মানুষ মনে করেন।
জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ সেক্রেড গেমসের দ্বিতীয় সিজনের শুটিং চলছিল কেনিয়ায়। হঠাৎ করেই খবর এল, ‘সেক্রেড গেমস-২’-এর অভিনেতা নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ‘বোলে চুড়িয়া’ ছবি নিয়ে।মুম্বাইয়ে বড় ভাই শামাস নওয়াব সিদ্দিকী আর তাঁর পরিবারের সঙ্গেই থাকেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। আর 'বোলে চুড়িয়া' ছবিটি দিয়ে শামাস নওয়াব সিদ্দিকী পা রাখবেন বলিউডের আঙ্গিনায়। তবে ছোট ভাইয়ের মতো অভিনয় দিয়ে নয়, এই ছবি দিয়ে পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটবে তাঁর। আর তাই 'বোলে চুড়িয়া' নওয়াজুদ্দিনের জন্য একটা বিশেষ ছবি।কথা ছিল ‘বোলে চুড়িয়া’ ছবিতে প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধে অভিনয় করবেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী আর মৌনি রায়। কিন্তু কোনে কারণ ছাড়াই মৌনি রায় গত ৩০ মে ছবির নির্মাতাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই ছবি করবেন না তিনি। ফলে নির্মাতাদের কাছ থেকে ‘চরম অপেশাদার’ তকমা জুটেছে মৌনি রায়ের কপালে।এবার জানা গেল, মৌনি রায়ের সেই শূন্যস্থান পূরণ করবেন 'বাহুবলী ২' খ্যাত দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়া। রাজেশ ভাটিয়া এবং কিরণ ভাটিয়া প্রযোজিত এই ছবিটির পুরো শুটিং হবে রাজস্থানে। এখানেই প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধে অভিনয় করবেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী ও দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীদের একজন তামান্না ভাটিয়া। আজকে সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে নওয়াজুদ্দিন নিজেই একটি টুইটের মাধ্যমে এই খবর জানান।তামান্না ভাটিয়ার একটি চমৎকার ছবি শেয়ার করে নওয়াজুদ্দিন লিখেছেন, 'অবশেষে আমাদের পার্ফেক্ট হিরোইন খোঁজার যাত্রা তামান্না ভাটিয়ার কাছে এসে শেষ হল। চরম গর্জিয়াস আর দারুণ মেধাবী এই অভিনেত্রীকে 'বোলে চুড়িয়া' পরিবারে আমন্ত্রণ।' তিনি আরও বলেন, 'আমি তামান্নার সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে খুবই আনন্দিত ও সন্তুষ্ট। এই চরিত্রের জন্যই সে-ই সবথেকে সঠিক ব্যক্তি।' অন্যদিকে তামান্না ভাটিয়াও এই ছবির সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আনন্দিত।ডেকান ক্রনিকলের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি বলেছেন, 'আমি এই ছবিতে কাজ শুরু করার জন্য জন্য মুখিয়ে আছি। এর মধ্য দিয়ে বলিউডের সবথেকে বহুমুখী চরিত্রে মানানসই অভিনেতার সঙ্গে পর্দা ভাগ করব। এই ছবির গল্প আমাকে সবথেকে বেশি আকৃষ্ট করেছে। গল্পটা খুব প্রাসঙ্গিক আর প্রভাবশালী।' অন্যদিকে পরিচালক শামাস নওয়াজ সিদ্দিকী বলেন, 'তামান্নার চোখে সেই স্ফুলিঙ্গ আছে, যেটি আমি আমার হিরোইনের জন্য খুঁজছিলাম।' এদিকে প্রযোজক রাজেশ ভাটিয়ার মতে তামান্না আর নওয়াজুদ্দিন এই ছবির জন্য সেরা জুটি। এই প্রযোজকের মতে তামান্না ভাটিয়ার মতো প্রতিশ্রুতিশীল, ইতিবাচক আর মনোযোগী শিল্পী আর হয় না।কতটা পার্ফেক্ট এই জুটি সেই রায় দেবে দর্শক। আর তা জানতে বছরখানিক অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। কেননা, ২০২০ সালে ছবিটি বড় পর্দায় মুক্তির কথা রয়েছে।
কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি পদপ্রার্থী টিফানি কাবান ডিএ হিসেবে তাঁর বিজয় ঘোষণা করেছেন।২৫ জুন রাত নয়টায় ভোট প্রদান শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কার্টজ ও ৩১ বছর বয়সী পাবলিক ডিফেন্ডার টিফানি কাবানের প্রাপ্ত ভোটে অল্প ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়।আপাতবিচারে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রাথমিক প্রতিযোগিতায় মেলিন্ডা কার্টজকে অল্প ব্যবধানে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন প্রগতিশীল প্রার্থী টিফানি কাবান।টিফানি কাবান প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, অল্প ব্যবধানে হলেও তিনি জয়ী হবেন সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত ছিলেন।কাবান রাত ১১টার কিছু পরেই তাঁর বিজয় ঘোষণা করেন। তিনি সমর্থকদের বলেন, ‘প্রতিটি ভোট গণনা করা উচিৎ। ঈশ্বর চাইলে আমি অবশ্যই শীর্ষে আসতে পারব।’কাবান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ ও দুই ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এলিজাবেথ ওয়ারেন এবং বার্নি স্যান্ডার্সের কাছ থেকেও অনুমোদন লাভ করেছেন। কাবান আমেরিকার ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টি ও ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টকে ধন্যবাদ জানান। বিজয় ঘোষণার পর কাবানের সমর্থকেরা কাবানের পক্ষে সমর্থন দিয়ে ‘ব্ল্যাক লাইফ মেটার’, ‘পিপল পাওয়ার্ড জাস্টিস’ এবং ‘নো নিউ জেল’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। বিজয়ের পর অ্যাস্টোরিয়ার ডিটমার্স বুলেভার্ড স্টেশনে যাত্রীদের ধন্যবাদ জানানোর জন্য কাবান ২৬ জুন সকালে বের হন। তিনি হাসিমুখে সবার অভিনন্দনের জবাব দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাবান বলেন, ‘আমি আমার দলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা স্বীকার করি যে ভোটের মার্জিন খুব সংকীর্ণ। তবে আমরা নিশ্চিত যে সিদ্ধান্তটি পরিবর্তন হবে না।’মাত্র ৩১ বছর বয়সী ডেমোক্রেটিক সমাজতান্ত্রিক এই প্রার্থী ৩৯.৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। কার্টজের ৩৮.৩ শতাংশ ভোটের সঙ্গে ৯৯ জনের পরিসংখ্যান রয়েছে। এটি ১.৩ শতাংশ পয়েন্ট বা ১০৯০ ভোটের সামান্য ব্যবধান। যদিও আগামী ৩ জুলাইর আগ পর্যন্ত প্রায় ৩৪০০ অনুপস্থিত ভোটারের ভোটের ব্যালট গণনা না করা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে না।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাবান বলেন, ‘আমরা চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করব। আমাদের এখন অনেক কাজ করার আছে।’রিচমন্ড হিলে জন্মগ্রহণকারী কাবানের অগ্রগতিশীল নীতিগুলি হলো—নগদ জামিন বন্ধ করা, রাইকার্স আইল্যান্ড বন্ধ করা। নির্বাচিত হলে তিনি আইস এজেন্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে চান এবং যৌন কাজকে অপরাধ হিসেবে নেওয়া বাতিল করতে চান। কাবানের প্রচারকেরা বলেছেন, তাঁরা কাবানকে দ্বিধাহীন চিত্তে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারেন। কারণ ৩৪০০ অনুপস্থিত ভোটারের ব্যালটগুলো তালিকাভুক্ত সাতজন প্রার্থীর মধ্যে বিভক্ত হবে।উডসাইডের একটি ক্লাবে কথা বলতে গিয়ে কাবান বলেন, ‘তারা বলল আমি বয়সে খুব ছোট, আমাকে দেখতে একজন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির মতো মনে হয় না। আমরা তৃণমূল পর্যায় থেকে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি এবং তারা বলেছিল আমরা জিততে পারব না।’কাবান বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য ও অগ্রাধিকার হলো জনসাধারণের নিরাপত্তা। কালো, বাদামি ও নিম্ন-আয়ের মানুষদের অপরাধী না করেও আমরা জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারি। যারা আমাদের সমর্থন করে না, আমি তাদের বিশ্বাস অর্জন করার জন্য কাজ করতে চাই।’২৫ জুন এক টুইটার বার্তায় কাবান লিখেছেন, ‘এই সিস্টেম রূপান্তর করা সহজ না এবং তা রাতারাতি ঘটবে না। কিন্তু আমি প্রস্তুত। আমরা প্রস্তুত।’ তবে মেলিন্ডা কার্টজ গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ও সাবেক কুইন্স ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান জো ক্রাউলির সমর্থন পেয়েছিলেন। তিনি ভোট পুনর্গণনা চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
বিপুলসংখ্যক ভক্তের অংশগ্রহণে ১৫ জুন সনাতন সেবাশ্রম ফাউন্ডেশনের বার্ষিক তীর্থযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সনাতন সেবাশ্রম ফাউন্ডেশনের তীর্থযাত্রা উপলক্ষে শ্রী দিপংকর রায়কে আহ্বায়ক, শ্রী রামদাস ঘরামিকে সদস্যসচিব করে গঠিত কমিটি এ তীর্থযাত্রা সম্পন্ন করে।কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—শ্রী উত্তম মণ্ডল, শ্রী উজ্জ্বল রায়, পঙ্কজ রায়, অখিল ওঝা। সদস্যরা হলেন—নিতীশ বিশ্বাস, প্রীতিশ বালা, কুমারেশ সরকার, বিধান চন্দ্র পাল, বিমলেন্দুকর, সুনীল রায়, সদানন্দ ঘোষ, সুব্রত সরকার, নেপাল দাস, গুরুদাস হালদার, প্রশান্ত মল্লিক, প্রদীপ চন্দ্র, দেবব্রত ঘোষ, রাখী বিশ্বাস, বীথি মণ্ডল ও কানন বিশ্বাস।সকাল ১০টায় শ্রী প্রদীপ ভট্টাচার্য, শ্রী বিজয় ভৌমিক, উত্তম মণ্ডল, নেপাল দাস, নেপাল মজুমদার ও স্বামী দেবা প্রিয়ানন্দ মহারাজের সমন্বয়ে গঠিত কীর্তন দলটি ভগবানের নাম কীর্তন করে শঙ্খ ধ্বনি ও উলুধ্বনি দিয়ে যাত্রার শুভ সূচনা করেন। দুপুরে নিউজার্সির ইসকন মন্দিরে পৌঁছালে ভক্তদের খিচুড়ি প্রসাদ দিয়ে আন্তরিকভাবে আপ্যায়ন করানো হয়। ভক্তরা এখানে দুপুরের ভোগ আরতি ও কীর্তনে অংশ নিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।পরে ভক্তরা নিউজার্সিতে অবস্থিত সাই দত্ত পীঠ মন্দিরে পৌঁছান, দুপুরে অন্ধ প্রসাদ গ্রহণ করেন। এই মন্দিরের পরিচালনা পর্ষদ সনাতন সেবাশ্রম ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ভক্তদের সম্মানে সাই দত্ত পীঠ বাবার মূর্তির সামনে বিশেষ পূজা ও সম্মান প্রদর্শনের অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এই মন্দিরে ভারত থেকে আগত খ্যাতনামা ভজন শিল্পীরা ভজন পরিবেশন করেন।মন্দির পরিক্রমার সর্বশেষ স্থান নিউইয়র্ক আপ স্টেটের রঙ্গনাথ মন্দিরে পৌঁছে ভক্তরা পূজা অর্চনা দিয়ে পরিবার পরিজনদের জন্য মঙ্গল কামনা করেন।পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এই মন্দিরে শ্রী বিজয় কৃষ্ণ ভৌমিকের দিক নির্দেশনায় সনাতন সেবাশ্রম ফাউন্ডেশন একটি ধর্ম সভার আয়োজন করে। শ্রী বিজয় কৃষ্ণের উপস্থাপনায় গীতা পাঠ, ভজন কীর্তন, হরিকথা ও প্রার্থনা দিয়ে সভাটি সাজানো হয়। সভায় ধর্মীয় আলোচনা করেন স্বামী দেবাপ্রিয়ানন্দ মহারাজ এবং ভজন পরিবেশনা করেন যথাক্রমে সবিতা দাস, সত্যকী রায়, ইতি মণ্ডল, পার্বতী রুনা, প্রদীপ ভট্টাচার্য, মিলন রায়, নেপাল দেবনাথ, ত্রিনয়নী তালুকদার, ডা. লক্ষণ কর, জয়দেব গাইন, রামদাস ঘরামি, কার্যকরী পরিষদের পক্ষ থেকে নিহার সরকার ও দিপংকর রায়।ডা. সঞ্জিত বিশ্বাস, ডা. কৃষ্ণা রায় ও ডা. লক্ষণ করের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল টিম ভক্তদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে র‌্যাফল ড্রয়ের ব্যবস্থা ছিল। সোনার চারটি দেব দেবীর মূর্তিসহ মোট ২৫টি ধর্মীয় পুরস্কার ছিল এই র‌্যাফল ড্রয়ে। অনুষ্ঠানটি উজ্জ্বল রায়ের উপস্থাপনায় আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। উজ্জ্বল রায়কে সহযোগিতা করেন রামদাস ঘরামি, দিপংকর রায়, উত্তম মণ্ডল, জয়দেব পাইন ও পঙ্কজ রায়।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের শারীরিক অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন তিনি।জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের আজ শুক্রবার চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানান, এরশাদের শারীরিক অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকেরা এই উন্নতির ধারাবাহিকতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁর সংক্রমণ যেন না বাড়ে, সে জন্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে।জি এম কাদের জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের জন্য নেতা-কর্মী এবং দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
‘বহুদিন মনে ছিল আশা/ ধরণীর এক কোণে/ রহিব আপন-মনে;/ ধন নয়, মান নয়, একটুকু বাসা/ করেছিনু আশা।’ আশা কবিতায় এমনই এক সুখী গৃহকোণের কথা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই আশা তো এক দিনে তৈরি হয়নি। গুহাবাসী মানব যখন থেকে গৃহবাসী হওয়া শুরু করেছে, তখন থেকেই তার মধ্যে নিজের ঘরের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়েছে। কিন্তু এ কথা নির্মম সত্য যে কোনো আমলেই সব মানব সন্তানের নিজের ঘর হয়নি। আজকের এই হাই-টেক যুগেও ফুটপাতবাসী বা গৃহহীনের সংখ্যা বিশ্বজুড়ে একেবারে কম নয়। নিউইয়র্ক নগরীও তার সাক্ষী।বাড়িভাড়া পদ্ধতি কবে থেকে চালু হলো, এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। তবে নগরসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে এই পদ্ধতি নাগরিকেরা মেনে নিয়েছেন, আত্মস্থ করেছেন। এতে করে গৃহহীন নাগরিক যেমন তাঁর নগরজীবনে মাথার ওপরে ছাদ পেয়েছেন, তেমনি অন্য নাগরিকের জন্য আয়ের বিকল্প পথ বেরিয়ে এসেছে। ফলে এটা বলা অন্যায় হবে না যে এই পদ্ধতিতে দুপক্ষই লাভবান হয়েছিল বলে দীর্ঘদিন ধরে তা সফল হয়ে আজ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ফলে যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সময় দুপক্ষের কথা মনে রাখাই শ্রেয়। না হলে হয়তো সিস্টেমটাই ভেঙে পড়বে।এত কথা ওঠার কারণ, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইনসভা সম্প্রতি ভাড়াটেদের সুরক্ষা দিয়ে একটি বিল পাস করেছে। নতুন এ বিলে রাজ্যের গভর্নরও দ্রুততার সঙ্গে সই করেছেন। ফলে তা আইনে পরিণত হয়েছে। বলা হচ্ছে, ভাড়াটেদের সুরক্ষার যেসব জায়গায় ফাঁকফোকর ছিল, তা নতুন আইনে বন্ধ করা হয়েছে। বাড়িওয়ালারা আর খেয়ালখুশিমতো বাড়িবাড়া বাড়াতে পারবেন না। হয়তো উচ্ছেদ করতে পারবেন না। গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো নিজেই বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, আজ যে বিল আইনে পরিণত হয়েছে, সেটি নিউইয়র্কের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন আইন এবং এই বিল পাসের ফলে ভাড়াটেরা দারুণভাবে উপকৃত হবে।’ নতুন এই বিলের কারণে বিপুলসংখ্যক ভাড়াটে তথা নিম্ন আয়ের মানুষ উপকৃত হবে, এটা সত্য। থাকা নিয়ে তাদের অনিশ্চয়তা দূর হবে। বড় বড় হাউজিং কোম্পানির লাভের রাশ টেনে ধরা যাবে।পাশাপাশি এ–ও সত্য, অনেক লোক বাড়ি কিনে ভাড়া দেন এবং তার আয় থেকে জীবন নির্বাহ করেন। কেউ আবার বাড়ির একাংশ ভাড়া দেন। এটা তাঁদের চলতে সাহায্য করে। আর বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বাড়ির মালিককেই বহন করতে হয়। ফলে এ বিষয়গুলোও বিবেচনার দাবি রাখে। সে জন্য এমন কিছু করা সমীচীন হবে না, যা ভাড়াটে ও মালিকের মধ্যে বিদ্যমান শৃঙ্খলকে ধ্বংস করে। তাহলে অনেক বাড়ির মালিক হয়তো আর বাড়িভাড়া দিতে আগ্রহী হবেন না। ফলে বাড়িভাড়া পাওয়া ক্রমে কঠিন হয়ে পড়বে গৃহহীন নাগরিকদের জন্য। তাই এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো কিছু একতরফা না হওয়াই ভালো।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পুষ্টি শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে সাংবাদিক, আইনজীবী এবং স্কুলগামী শিশুদের মায়েরা ২৩ জুন এক সমাবেশ করে দাবি করেছেন।এনওয়াইসি হেলথ স্কুল অ্যান্ড ফুড অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, অনেক স্কুল শিক্ষার্থীদের যথাযথ পুষ্টি ও পুষ্টিকর শিক্ষা প্রোগ্রাম সরবরাহ করতে যথেষ্ট পরিমাণে কাজ করছে না। বিশেষত যারা কম আয়ের লোকজন, তাদের জন্য যা অত্যন্ত দরকারি।পুষ্টিকর খাবার নিয়ে সোচ্চার লোকজন বলছেন, ব্যস্ত নগরী নিউইয়র্কের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের এই মুহূর্তে প্রতিদিনের খাবার মেন্যু হলো ব্যাগ থেকে সোজা ওভেনে। তাই তারা শিশুদের জন্য বাস্তব জ্ঞান সম্মত লোকদের দ্বারা তৈরি প্রকৃত পুষ্টিকর খাবার দাবি করছেন। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুসারে, আমেরিকার ১০ শতাংশেরও কম শিশু সুপারিশকৃত দৈনিক পরিমাণের চেয়ে কম সবজি খায়। ৪০ শতাংশেরও কমসংখ্যক আমেরিকান শিশু সুপারিশকৃত ফলের কম পরিমাণ ফল খায়। নিউইয়র্ক স্টেটে কোনো প্রাথমিক সেবা এবং শিক্ষা লাইসেন্সের নিয়ম নেই যা স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে ফল বা সবজি সরবরাহের জাতীয় মান নির্ধারণ করবে।এনওয়াইসি স্বাস্থ্যকর স্কুল খাদ্য জোটের প্রতিনিধিরা এবং অন্যান্য সমর্থকেরা ২৩ জুন সমাবেশের মাধ্যমে স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে স্কুলগুলোর কিন্ডারগার্টেন থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চারটি পরিবর্তন বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। এগুলো হলে—১. আরও নতুন নতুন টাটকা খাবার; ২. রন্ধন সম্পর্কীয় এবং পুষ্টিকর শিক্ষা; ৩. প্রতিটি স্কুলে বাগান করা শেখানো। যাতে বাচ্চারা শিখতে পারে কীভাবে সবজি বা ফলমূল চাষ করা হয়; ৪. দুপুরের খাবারের জন্য সময় বাড়িয়ে দেওয়া, যাতে দীর্ঘ সময় নিয়ে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে তাদের খাবার খেতে পারে। দেখা গেছে, টিফিনের সময় কম থাকায় শিক্ষার্থীরা টিফিন বিরতিতে খাবার না খেয়েই থাকে। এতে স্কুলের বাচ্চাদের পুষ্টি ঘাটতি থেকে যায়। স্কুলেই যেহেতু বাচ্চাদের বেশি সময় থাকতে হয় তাই স্কুলের পুষ্টি সেবা এবং পুষ্টি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এ কারণে সমাবেশে বক্তারা সরকার এবং সিডিসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিরোধ এবং প্রস্তুতির সর্বজনীন স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদের স্মরণে ২১ জুন নিউইয়র্কের জুইশ সেন্টার মিলনায়তনে এক নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা অধ্যাপক সাইয়েদ মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও মিনহাজ আহমেদের সঞ্চালনায় নাগরিক শোকসভায় নিউইয়র্কে বসবাসরত বাঙালি বিভিন্ন পেশাজীবী, রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মী, কমরেড জাফর আহমেদের সময়কার বিভিন্ন সহযোদ্ধারা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তৃতা করেন।কমরেড জাফর গত ২৮ মে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। সর্বশেষ নিউমোনিয়া ও বিরল স্টিভেন্স জনসন সিনড্রোমে আক্রান্ত হন। অসুস্থ অবস্থায় ২০ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। বিশেষ ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনে ২৭ মে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।নাগরিক শোক সভায় বক্তৃতা করেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বিপ্লব চাকী, প্রোগ্রেসিভ ফোরামের সভাপতি খোরশেদুল ইসলাম, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম, উদীচী যুক্তরাষ্ট্র শাখার সহসভাপতি সুব্রত বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ নেতা ড. সিদ্দিকুর রহমান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন চৌধুরী রানা, অ্যাডভোকেট আখতারুল ইসলাম, প্রবীণ সাংবাদিক মোহাম্মদ উল্লাহ, সাংবাদিক মঞ্জুর আহমেদ, সাপ্তাহিক ঠিকানার সম্পাদক ফজলুর রহমান, নারীনেত্রী হুসনে আরা বেগম, নিনি ওয়াহেদ, আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ সিদ্দিকুল হাসান, জাসদ নেতা নুরে আলম জিকু, সাংবাদিক মোজাহিদ আনসারী, সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সিরাজ উদ্দিন সোহাগ, সিপিবি নেতা কমরেড আবদুল্লাহ চৌধুরী, মো. মুকিত চৌধুরী, তোফায়েল চৌধুরী, নাট্যকর্মী সীতেশ ধর, প্রগ্রেসিভ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা আলীম উদ্দিন, সাবেক ছাত্রনেতা জাকির হোসেন বাচ্চু, ওবায়দুল্লাহ মামুন, আবদুস সামাদ আজাদ, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুলেখা পাল, উদীচী যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হারুন, আবৃত্তি শিল্পী গোপন সাহা, আনোয়ারুল হক লাভলু প্রমুখ।বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে কমরেড জাফর আহমেদের মতো সৎ, নিষ্ঠাবান, আত্মত্যাগী রাজনীতিক খুবই বিরল। তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার একজন লড়াকু সৈনিক।অনুষ্ঠানে সুব্রত বিশ্বাস রচিত কমরেড জাফর আহমেদের বৈচিত্র্যময় জীবনী উপস্থাপন করেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মিনহাজ আহমেদ।কমরেড জাফর আহমেদ ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন পেশাজীবী-সামাজিক-সাংস্কৃতিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি মৌলভীবাজার সরকারি কলেজছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক এবং পরে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন মৌলভীবাজার জেলা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর একজন যোদ্ধা হিসেবে সম্মুখ সমরে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।সিলেটে চা শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৯৭২ সালে তিনি প্রথম কারাবরণ করেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার অব্যবহিত পরই আবার ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় ফের তিনি গ্রেপ্তার হন এবং বিনা বিচারে এক বছর কারাবন্দী থাকেন। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সেই উত্তাল আন্দোলন-সংগ্রামে তার সোচ্চার ভূমিকার জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার-নির্যাতনের শিকার হন।সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। খেতমজুর আন্দোলনে তার অগ্রণী ভূমিকার কারণে খেতমজুর সমিতির শুরুর দিকেই তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন।সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ ২০১৬ সালের ২৮-৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) একাদশ কংগ্রেসে দ্বিতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৭ সালের ২৬-২৮ মে অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় তার অনুরোধে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি আমৃত্যু সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত কমরেড জাফর আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং শিল্পী তাজুল ইসলামের আাকা কমরেড জাফর আহমেদের ছবিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হয়।
কালো বুড়িগঙ্গা ধুঁকছে। শিশুটাকে নিয়ে সন্ধ্যার পর পর এই এখানেই এসে দাঁড়ায় ত্রিদিব। তাও মাঝেসাঝে। সুত্রাপূর, ফরাশগঞ্জ পেরিয়ে বি কে দাস রোডের উল্টিনঞ্জ লেনের ঘাট। শর্ষিনা স মিল, ফরাশগঞ্জ কাষ্ঠ বিতান, মদিনা টিম্বার—এমন কত কত দোকান রাস্তার দুই পাশে ফেলে লেবারদের একচিলতে অখণ্ড অবসর। আরামসে গা চুলকানো, হাই তোলা, কসকো সাবানে ওপেন এয়ার বাথ। এরই মধ্যে রিকশার টুংটাং, শ্যামবাজারের হলুদ-মরিচের ঝাঁজ নাকের মধ্যে হাঁচির সুড়সুড়ি দিতেই মসলার মার্কেট থেকে আসে লবঙ্গ-এলাচের বনেদি বাসনা। এরই মাঝে মাইকে সন্ধ্যার আজান সঙ্গে শনিপূজার মন্ত্র-কোরাস। এক প্রস্ত জিউ মন্দিরের করতাল গিয়ে মেশে বন্দর ছেড়ে যাওয়া সুরভী ৮-এর ভেঁপুতে। ত্রিদিবের কোলের শিশুটি ছটফট করে, নেমেই পড়বে বোধ হয় ধুঁকতে থাকা কালা পানিতে। জলের ওপর নূহের কিশতির মতো প্রায় ডুবন্ত বালুর ট্রলার যেন অনন্তগামী। শিশুটির মুখে শব্দ নেই, একটা ছটফটানি আছে। এদিকটা এখন রীতিমতো ব্যস্ত রাস্তা। একটু পর পর লক্কড়ঝক্কড় জিপগাড়িগুলো ধুলো উড়িয়ে পোস্তগোলার দিকে যায়। ত্রিদিবের সঙ্গে থাকা সেলফোনটা বেজে ওঠে। ত্রিদিব পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে দিপার ফোন। দিপা ত্রিদিবের স্ত্রী। নিপাট গৃহিণী। সংসার নিয়েই তার সমস্ত নিমজ্জন। সন্ধ্যায় কিছু ছেলেমেয়ে তার কাছে পড়তে আসে। আর সেই সময়টাতেই ত্রিদিব ছেলে নিমোকে নিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়। ৮০০ স্কয়ার ফিটের দুই রুমের বাসায় এমনিতে জায়গা কম, তার মধ্যে গার্জিয়ানসহ ৬–৭ জন মানুষ। দিপার ফোন মানেই কিছু না কিছু লাগবে তার। কখনো টক দই, কখনো লেবু। ত্রিদিব ফোনটাকে সাইলেন্ট মোডে দিয়ে একটা চায়ের দোকানের টুলের ওপর গিয়ে বসে। এককাপ চিনিবিহীন লাল চায়ের অর্ডার করে সে। এবং সেই সঙ্গে খেয়াল করে টং দোকানের দেয়ালে একটা লেমিনেশন করা এ-ফোর কাগজের গায়ে বড় হরফে লেখা, ‘আজ থেকে বাকি বন্ধ’। লেখাটা পড়ে বেশ অস্বস্তি আর কর্কশ অনুভূতি হয় ত্রিদিবের। এই চাপা অস্বস্তির কোনো কারণ খুঁজে পায় না সে। তার মনে আছে শৈশবে মুদি দোকানে একধরনের বাঁধাই করা ছবি দেখা যেত, যেখানে ছড়ার ঢঙে লেখা থাকত ‘নগদ বিক্রি পেটে ভাত, বাকি দিলে মাথায় হাত। ’ সঙ্গে দুটো ইলাস্ট্রেশন আঁকা থাকত, যার একটি ছিল গণেশের মতো একজন পেটওয়ালা লোক থালাভর্তি ভাত নিয়ে খেতে বসেছেন, আর অন্যটি হচ্ছে শূন্য থালার সামনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়া একজন শীর্ণ মানুষ, যিনি হয়তো বাকি দিতে দিতে একপর্যায়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সেই আঁকা আর লেখাযুক্ত নির্দেশাবলির ভেতরেও ত্রিদিব কোথায় যেন একটা হারানো সুর খুঁজে পায়। সেদিন দয়াগঞ্জ বাজারের আরেকটা দোকানে এমন অদ্ভুত একটা বিজ্ঞাপন সে দেখেছিল, তাতে লেখা, ‘এখানে গরুর ও উটের খাঁটি দুধ পাওয়া যায়। ’‘খাঁটি গরুর দুধ’ আর ‘গরুর খাঁটি দুধ’—এই দুই বাক্যের অর্থ কি দুটো হতে পারে? বাজার করে ফেরার পথে এটা নিয়ে বিস্তর ভেবেছিল ত্রিদিব। তাইতো, গরু খাঁটি হয় নাকি দুধ খাঁটি হয়? কী এর জবাব? দায়িত্ব আর কর্তব্যের তফাতের মতো জটিল ধাঁধা যেন একটা। ‘এই লন চা। ’ টং দোকানি চা এগিয়ে দেয় ত্রিদিবকে। ‘চিনি ছাড়া দিছেন তো? ’ ত্রিদিব বলে। দোকানি পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসে। তার মানে চিনি দিয়েছে। ‘আচ্ছা, ঠিক আছে দেন। ’চায়ে চুমুক দিতে দিতে কাগজের লেখাটার দিকে পুনরায় তাকায় ত্রিদিব। চায়ের কষ কষ স্বাদ তার মগ্নতা ভাঙায়। নিমো দোকানের চিপসের প্যাকেটের দিকে ইঙ্গিত করে কয়েকবার। এড়িয়ে যেতে চাইলেও একটা চিপস তাকে কিনে দেওয়া লাগে। ‘আপনে কি এই মহল্লার নিকি? ’ দোকানি বলে‘উহু। নারিন্দার। ’‘তাইলে হেনে কী কাম? প্রায় সম দেখি খাড়ায়া থাকেন। ’‘এমনি, বাচ্চাকে নিয়া কই আর যাব, একটু নদীর পাড়ে ঘুরতে আসি আরকি। ’‘এই গুয়ের গন্ধে? হা হা হা। ’‘আর কই যাব বলেন? ’ চায়ে চুমুক দিতে দিতে ত্রিদিব বলে। ‘হ, ঠিকই কইচেন, মাঠমুট তো আর নাইক্কা, যাও আছিল ধুপখুলা অইটা ভি ফেলাইওভারের উসিলায় দখল অয়া গেছে, অহন আবার হুনতাছি হোনে একটা পার্ক অইবো। ’ ‘আমিও এ রকম শুনছি। ’নিমো ত্রিদিবের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে লঞ্চের আলো দেখে। টুলের ওপর বসেও স্বস্তি হয় না ত্রিদিবের। গতকাল থেকেই তার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। প্রেশার ফল। ওপরেরটা ১২০ কিন্তু নিচের প্রেশার ১০০ তে উঠে গেছে। দিপা মাথায় নারকেল তেল দিয়ে দিয়েছিল একগাদা, এতে নাকি ভালো ঘুম হবে। কিন্তু সারা রাত ডিমলাইটের দিকে তাকিয়েই তার কেটে গেছে একধরনের ছটফটানির মধ্যে। ‘পোলা নিহি? ’‘হ্যাঁ। ’‘নাম কী? ’‘নিমো। ’‘এইটা আবার কিরম নাম ভাই। জীবনেও হুনি নাই। ’ত্রিদিব হাসে। ‘কয় বচ্ছর? ’‘সাড়ে চার। ’‘কথা-কুথা কয় না? কহন থেইকা থম মাইরা রইছে। ’নিমো দোকানদারের কথায় পাত্তা দেয় না। সে কুটকুট করে চিপস চিবোয়। ‘না বলে না। ওর একটু সমস্যা আছে। ’‘কন কী? বাতাস-উতাস লাগছে নিহি? আপ্নেগো নাইন্দায় পীরসাব আছে না, হ্যার কাছে লয়া যান, ঝাইরা দিলে বালা অইবার পারে। ’‘আচ্ছা, নিয়ে যাব। ’চায়ের বিল দিয়ে ত্রিদিব আরেকটা ফাঁকা জায়গায় এসে একটা গাছের গুঁড়ির ওপর বসে। নিমো পানিতে নামার জন্য ছটফট করছে তখনো। এই বুড়িগঙ্গার বয়স কত? ত্রিদিব ভাবে। সেদিন তার এক বড় ভাইয়ের বন্ধু কথা প্রসঙ্গে বলছিল পৃথিবীর আর কোথাও এমন একটা শহর পাওয়া যাবে না, যার প্রায় চারপাশে চারটে নদী। ত্রিদিব লোকটির অবজারভেশনে বেশ মুগ্ধ হয়েছিল। কারণ ঢাকা শহরের ম্যাপটা তার মাথায় কখনো ছিল না। সে মনে মনে নদীগুলোর নাম মনে করার চেষ্টা করেছে কয়েকবার। তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা. . . আরেকটা যেন কী? না। মনে পড়ছে না। এই নদী চতুষ্টয়ের সঙ্গে ত্রিদিব তার নিজের জীবনের সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করে। তার প্রতিদিনের জীবনে কোনো নদী নেই, কোনো পোস্টম্যান নেই, কোনো খেয়াঘাট নেই। বন্দর ছেড়ে যাওয়া সুন্দরবন ১১-এর ভেঁপু শুনে নিমো হাত–পা ছোড়ে। রাতের বেলা লঞ্চগুলোকে এত রহস্যময় লাগে ত্রিদিব খেয়াল করেনি আগে। ত্রিদিবের শিশুটি আর এক জায়গায় বসে থাকতে চায় না। নিমোর মন রক্ষার্থে একটা নৌকা ভাড়া করার জন্য মূল ঘাটে নেমে আসে ত্রিদিব। ‘কোন পার যাইবেন? কেরানীগঞ্জ ৫ ট্যাকা। ’ মাঝি বলে। ‘রিজার্ভ যাব। এক ঘণ্টার জন্য কত নিবেন? ’‘রিজাভ তো যাই না বাবা, আচ্ছা, উঠেন ২০০ টাকা দিয়েন। ’‘না, ১০০ টাকা দিব। খুব বেশি দূর যাইতে হবে না। ’‘না বাবা, আপ্নে ৫০ টাকা কম দিয়েন। এর কমে হবে না। ’ত্রিদিব নিমোকে নিয়ে নৌকায় ওঠে। গুমোট ভাবটা কমে গিয়ে বেশ ঠান্ডা একটা ভাব চারপাশে। দূরের পোস্তগোলা ব্রিজটা বেশ কাছেই মনে হচ্ছে ত্রিদিবের। তার মনে আছে এই ব্রিজটা যখন নতুন নতুন হয়, তখন দেখতে এসেছিল এক কাজিনের সঙ্গে। ব্রিজের এ–মাথা থেকে ও–মাথা হাঁটা। তখন এরশাদ ক্ষমতায়, দল বেঁধে ব্রিজ দেখতে আসাটাও তখন একটা বিনোদন। শহরে সেই প্রথম সোডিয়াম বাতি জ্বলতে দেখেছে ত্রিদিব। ‘সত্যি কথা কইতে কি, শেষ কবে রিজাভে লোক উঠাইসি আমার মনে নাই। এহন লোকজন কুনোমতে দম আটকায়া খেয়া পার অয়। এহেনে দেহনের আর কী আছে, আর নদীও তো নাই, আছে একটা চিপা খাল। ’ মাঝি বলে। ত্রিদিব বইয়ে চার্লস ডয়েলির আঁকা ধোলাইখালের ছবি দেখেছে। নয়নাভিরাম এক শান্ত প্রাকৃতিক দৃশ্য, যা দেখে জন কন্সটেবলের ল্যান্ডস্কেপ বলে ভ্রম হয়। কিন্ত বাস্তবের ধোলাইখাল হচ্ছে লোহার বাজার। গাড়ির সেকেন্ড হ্যান্ড পার্টসের বৃহৎ পসরা। লোহা লোহা গন্ধের ভেতর যেন মরা নদীর আত্মা। ‘আমরা ছোট সময় যে নদী দেখছি তার তুলনায় এই নদী খালই। শুশু মাছ চিনেন বাবা? ’ মাঝি প্রশ্ন করে। ‘মানে শুশুক? জলজ স্তন্যপায়ী। ইরাবতী, বটল নোজ কত জাতের যে শুশুক আছে। ’ আনিস ভাই বলেছে ত্রিদিবকে। ওই আনিস ভাইয়ের কাছেই ঢাকা শহরের চার নদীর কথা প্রথম শুনেছিল সে। ‘হ, শুশুক। আমরা কইতাম শুশু মাছ। হের কাহিনি জানেন তো? ’‘কী কাহিনি? ’ নিমোর মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে ত্রিদিব বলে। ‘নতুন বউ আইছিল বুড়িগঙ্গার ঘাটে গোসল করতে। সে থইথই পানির মধ্য নাইমা চঞ্চল হয়া উঠল। তার যৌবন যেন ঠিকড়ায় পড়ে। লগের সখীরা সিনান সাইরা কেউ গেছেগা, কেউ খাড়ায়া আছে, কেউ কেউ বিরক্তও হইতাছে। নতুন বউ তো আর পানি থেইকা উঠে না। এমন সময় ওই ঘাটে সিনান করতে আসে সেই বউয়ের ভাসুর। ভাসুর বোঝেন তো? ’ আবারও প্রশ্ন করে মাঝি। ‘জি বুঝি। ’‘তো হইল কি ইন্দুগো মইদ্যে নিয়ম আছে ভাসুররে মুখ দেখানো যাইবো না। নতুন বউ এমন ভিজা শরীর লইয়া কই লুকায় কন? উপায়ান্তর না পায়া বউ পানিতে ডুব দিয়া লুকাইল। এই ডুব আইজও দিল কাইলও দিল। আর উঠল না। হের পর সে হইল শুশু মাছ। ’‘বাহ! এত দারুণ একটা গল্প কখনো শুনিনি তো। আপনি এই গল্প কীভাবে জানেন? ’‘লোকের মুখে শুনছি। তা ছাড়া আমি নিজে নদীর দুই পাড়ে কত শকুন বয়া থাকতে দেখছি। এহন তো দেখি গরুর অভিশাপে শকুন মরার অবস্থা। ’নৌকা অন্ধকার পানি ঠেলে অল্প অল্প বৈঠার ঘায়ে এগিয়ে যেতে থাকে। ত্রিদিব খেয়াল করে তার পরনের শার্টটা ঘামে ভেজা। শার্টের দুটো বোতাম খুলে দেয় ত্রিদিব। না, হাঁসফাঁস ব্যাপারটা যাচ্ছেই না তার। গলা শুকিয়ে বুকের ভেতরটা খালি হয়ে যাচ্ছে, ঠিক গতকাল রাতে যেমন লেগেছিল। নিমো দাঁত দিয়ে চিপস ভাঙছে, সেই কড়কড় শব্দটা মাথার ভেতর অস্বস্তি তৈরি করে। ত্রিদিব যতই শিশুটির হাত আঁকড়ে ধরতে চাইছে ততই তার হাত শিথিল হয়ে যাচ্ছে। ‘বাবা, আপ্নের শরীর খারাপ লাগতাছে? ’ মাঝি বলে। ‘আংকেল, একটু পানি হবে? ’এই বলে ত্রিদিব নৌকার পাটাতনে শুয়ে পড়ে। মাঝি বৈঠা রেখে প্রথমেই শিশুটিকে ধরে। পাটাতনের নিচ থেকে একটা মিনারেল পানির হলুদ হয়ে যাওয়া বোতল বের করে। কিন্তু তাতে পানি নেই। মাঝি বুঝতে পারে না এই পরিস্থিতিতে তার কী করা উচিত। ত্রিদিব চিৎ হয়ে শুয়ে আছে নৌকায়। তার মাথার ওপরে অন্ধকার একটা আকাশ। তারা নেই কোনো, কেবল দূরগামী লঞ্চের সার্চ লাইটগুলো ক্রিস ক্রস খেলছে আকাশে। ত্রিদিবের মুখের ওপর ঝুঁকে আছে মাঝির মুখ। অন্ধকারে এতক্ষণ সে মাঝির মুখ দেখতে পায়নি, শুধু কথা শুনেছে, এখন কাছে আসায় সে ভালো করে দেখছে তাকে। ত্রিদিবের মনে হয় মাঝির মুখটা মিকেলাঞ্জেলোর মতো। এমনকি ঢাকার চতুর্থ যে নদীটির নাম ত্রিদিব মনে করতে পারছিল না, সেই নামটিও তার মনে পড়ে যায়। সে বিড়বিড় করে বলতে থাকে, ‘পশ্চিমে ভাসান দিলাম বালু নদীর গয়না। ’ ত্রিদিব দেখে মিকেলাঞ্জেলো তার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। নিমোর মুখটা ফোকাস থেকে ডিফোকাস হয়ে যাচ্ছে। মাতৃগর্ভের ভেতরে শিশু যেভাবে ভাসে, নৌকায় ঠিক তেমনি দুলুনি অনুভব করে ত্রিদিব। ‘খাওয়ার পানি তো নাই বাবা। নদীর পানি খাইবেন? নাইলে ঘাট পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। আপনার কেমন লাগতেসে আমারে বলেন। ’ত্রিদিব বাচ্চাটার দিকে কিছু একটা ইংগীত করে। মাঝি খেয়াল করে তার নৌকা ঘাট থেকে অনেক দূরে। মাঝি নিমোকে কোলে বসিয়ে কোনো রকমে দ্রুত নৌকার বৈঠা চালায়। ত্রিদিব তখনো চৈতন্য হারায়নি। অন্যমনস্ক হওয়ার দরজাটা সে হাতড়াচ্ছে। আকাশগঙ্গার রেখাটা চেনার চেষ্টা করছে। সেই কবে কালারমার ছড়ার হারাধন দা তাকে আকাশের গায়ে সহস্র তারাদের অক্ষরমালা চিনিয়েছিল। কিছুই স্পষ্ট মনে পড়ছে না তার। কালো বুড়িগঙ্গা তখনো ধুঁকছে। নদীতে জলের ধ্বনি, ট্রলারের একটানা স্বর আর ঘটনাচক্রে ফেঁসে যাওয়া তিনটি মানুষের বেদনা আবহসংগীতের মতো বাজতে থাকে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলস সিটিতে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২২ জুন সন্ধ্যায় লস অ্যাঞ্জেলস কনস্যুলেট মিলনায়তনে এই কর্মশালা পরিচালনা করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) মো. নুর এলাহি মিনা। তিনি ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের নানাবিধ কার্যক্রম, অবদান ও রোহিঙ্গা সমস্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। নুর এলাহি মিনা বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে সসম্মানে নিজ বসতভিটায় ফিরতে উৎসাহিত হন, সে ধরনের পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমার প্রশাসনের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। নিজ নিজ এলাকার সিনেটর, কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে এ নিয়ে দেন-দরবার করতে পারেন প্রবাসীরা। তাহলেই কংগ্রেসে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবরোধসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের বিল পাস হবে।
আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের (এবিপিসি) কার্যকরী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৫ জুন প্রেসক্লাবের সভাপতি লাবলু আনসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম।সভায় সদস্যরা আগামী ২০ জুলাই প্রেসক্লাব আয়োজিত বনভোজন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রত্যেক সদস্য ও অতিথির ৫০ ডলার করে চাঁদার পরিমাণ ধার্য করা হয়। তবে ৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে কোনো চাঁদা লাগবে না। আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে চাঁদা পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।সভায় আমেরিকায় চ্যানেল আইয়ের সিইও এবং প্রেসক্লাবের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, প্রেসক্লাবের সহসভাপতি ভয়েস অব আমেরিকার নিউইয়র্ক প্রতিনিধি আকবর হায়দার কিরন, প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক এটিএন বাংলা ইউএসএর বার্তাসম্পাদক কানু দত্ত, প্রচার সম্পাদক চ্যানেল আই অনলাইনের আমেরিকা প্রতিনিধি শাহ ফারুক রহমান, কার্যকরী সদস্য এখন সময়ের সাংবাদিক ফারহানা চৌধুরী ও খবর ডটকমের সম্পাদক শিব্বির আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খ্যাতনামা আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন।
এমটিএ সেভেন ট্রেনের ট্র্যাকের নতুন সিগন্যাল পারফরম্যান্সকে নিউইয়র্কের সাবওয়ের ভবিষ্যৎ মনে করা হয়। এই ট্র্যাকের সিগনাল সিস্টেম তৈরির জন্য নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাজেট বৃদ্ধির লড়াই করতে হতে পারে এমটিএকে। নিউইয়র্কে সাবওয়ে কেমন হবে, সেভেন ট্রেন দিয়ে তার উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে।ট্রানজিট কর্তৃপক্ষ একটি আধুনিক সিগন্যাল সিস্টেমের লাইন পুরোপুরি ইনস্টলেশন কাজ শেষ পর্যায়ে এনেছে। দিনের ব্যস্ততম সময়ে আরও ট্রেন সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এই নতুন কম্পিউটারাইজড সিগন্যাল সিস্টেমটি ডিসেম্বরের প্রথম দিকে শুরু হওয়ার পর থেকে সেভেনট্রেন কুইন্স ও ম্যানহাটনের মধ্যে চলাচল করবে।হান্টার্স পয়েন্টের ম্যানহাটনের বিপণনের কর্মকর্তা ব্রেইন স্টোন সেভেন ট্রেনের দ্রুততাকে ১০ পয়েন্টের মধ্য ৮ দিতে চান। তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এটি খুব ভালো চলছে। যখন সেভেন ট্রেন ভালো করে, এটি সত্যিই অনেক ভালো। যখন এটি খারাপ, তখন এটা হয় ভয়ানক।২০ জুন ভোর রাতে এক সঙ্গে চারটি সেভেন ট্রেন ছয় মিনিটের মধ্যে কোর্ট স্কয়ারের মতো ব্যস্ত জায়গায় পৌঁছে যায়। জনগণকে আশ্বস্ত করার জন্য বলা যায়, সেভেন ট্রেন লাইনে নতুন সংকেত সিস্টেমের অগ্রগতির জন্য এখনো কিছু কাজ চলছে। এমটিএর বরাতে জানা যায়, এটি চলতি বছরের শেষে নাগাদ সম্পূর্ণ চালু হবে বলে আশা করা যায়। নতুন সংকেত ইনস্টলেশনের কাজের সমন্বয় করে এর সেবা দ্রুততম সময়ে জনগণের কাছে পৌঁছাতে গিয়ে এর ব্যয় বেশি হচ্ছে। বাজেটকে ছাড়িয়ে গেছে, তাই এই সেভেন ট্র্যাকের জন্য আরও সরকারি ফান্ডের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু এমটিএ কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, তারা এই পরিষেবা উন্নত করতে এবং উন্নত আপডেট সিগন্যাল দিয়ে জনগণের সেবা করতে সেভেন ট্র্যাকের কাজ এগিয়ে নেবেন।এমটিএ কর্তৃপক্ষ সেভেন ট্র্যাকটিকে উদাহরণ হিসেবে তৈরির আশা করছে এবং এই সিস্টেম পরিষেবা উন্নতির পাশাপাশি এটিকে বিস্তৃত করার জন্য পুরো সাবওয়েতে একই ধরনের সেবা ও সিগন্যাল আপগ্রেড করতে আরও তহবিল বাড়ানোর পক্ষে সরকারকে পরামর্শ দেবে।এমটিএ ট্রানজিট প্রেসিডেন্ট অ্যান্ডি বাইফোর্ড বলেন, এটি সর্বোত্তম সম্ভাব্য কাজ যা সেভেন লাইনের আধুনিকীকরণের এখন শেষ হওয়ার পথে। গত মাসে এমটিএ স্বয়ংক্রিয়, কম্পিউটার পরিচালিত ট্রেন লাইন চালু করে। অপারেটর একটি বাটন পুশ করবেন এবং ট্রেন নিজেই চলতে শুরু করবে।এটি নগরীর ব্যস্ত সময় ব্যবহার করা হলেও সীমিত সময়ের ভিত্তিতে ব্যবহার করা হয়েছে।
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন মনে করেন, ভারতকে যে দল হারাতে পারবে তারাই বিশ্বকাপ জিতবেবিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই ভারতকে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল মনে করা হচ্ছে। টুর্নামেন্ট গড়ানোর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে এ ভারতকে হারানোই অসম্ভব! ৬ ম্যাচ খেলা বিরাট কোহলির দল এখনো হারের মুখ দেখেনি। পাঁচ জয় আর বাকি ম্যাচে বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে তারা। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও দোর্দণ্ড প্রতাপে জিতেছে কোহলিরা। ব্যাটিং তো তাদের ঐতিহাসিকভাবেই দারুণ, এবার বোলিংটাও ভয়ংকর! বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত ভারতের খেলা স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন। তিনি মনে করেন যে দল ভারতকে হারাতে পারবে, ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ জিতবে তারাই।ম্যানচেস্টারে কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৬৮ রান তুলেও ১২৫ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে ভারত। এরপরই টুইট করেন ভন, ‘জেনে রাখুন ভারতকে যে দল হারাবে তারাই বিশ্বকাপ জিতবে।’ বার্মিংহামে রোববার ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ভারত। ৬ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে রয়েছে কোহলির দল। সেমিফাইনাল তাদের অনেকটাই নিশ্চিত।অন্যদিকে ইংল্যান্ডের সামনে পথটা কঠিন। ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চারে এউইন মরগানের দল। সেমিফাইনালে উঠতে বাকি দুটি ম্যাচ ইংল্যান্ডকে জিততেই হবে। গ্রুপপর্বে শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। অর্থাৎ সেমিতে উঠতে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মতো প্রতিপক্ষকে হারাতে হবে ইংল্যান্ডকে। কিন্তু ইতিহাস স্বাগতিক দলটির বিপক্ষে। ১৯৯২ বিশ্বকাপ থেকে গত ২৭ বছরে মোট সাতটি বিশ্বকাপে এ দুটি দলকে হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড।
১.আমার একটা সমস্যা আছে, সেটা হচ্ছে আমি তেমন সামাজিক মানুষ না। ঘুর কুনো টাইপ। সে জন্য আমার বিরুদ্ধে আপনজনদের বিস্তর অভিযোগ। যখন যেটা করা দরকার, সেটা আমি করি না। যখন যে যোগাযোগ করা দরকার, তা হয় না। নির্বিকার থাকি। সে জন্য আমি জীবনে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই আমি এমন। আমার জগৎটা ছিল খুব ছোট। আমি বেশি মানুষের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম না। মানুষের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতেও লজ্জা লাগত। এখনো আমার সেই স্বভাব বদলায়নি। আমি লাজুক বলে কাউকে পছন্দ করলেও সে কথা সহজে বলতে পারি না। সে আবার কী মনে করে না–করে, এটা ভেবে পিছিয়ে যাই। তাই লেখনী ভালো আশ্রয়।আমি ফোনেও বেশি কথা বলতে পারি না। কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ফোন করলে আমি অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকি। বিশ্বাসই হয় না, আমাকে ফোন করেছে। ফোনে আমি কি কথা বলব! আমার কথার ভান্ডার অনেক কম। এক/দুই কথা বলার পরই আমার কথা ফুরিয়ে যায়। আমার ছেলেমেয়েও হয়েছে আমার মতো। ওদেরও বেশি কথা থাকে না। আমাদের কথা চালাচালি হয় হোয়াটসঅ্যাপে। অবশ্য আমরা কথা কম বললেও জেসমিন আমাদের সবারটা একাই পুষিয়ে দেয়। এমন অনেক দিন যায়, যখন আমি জেসমিনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগই পাই না।২.তাতে আমার সুবিধাই হয়েছে। যত কম কথা, তত শান্তি। আমি যেহেতু গর্তের মানুষ, তাই আমি বই পড়ি। গত কয়েক দিন থেকে হাঁটুর ব্যথার জন্য টেবিল–চেয়ারে বসতে পারছি না। তাই লেখালেখি কার্যত বন্ধ। তা সত্ত্বেও ঈদ উপলক্ষে উত্তর আমেরিকার পত্রিকাগুলোতে তিন/চারটা গল্প লিখেছি। আমি ডেস্কটপে লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমার ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান আমাকে বলে দিয়েছে হাঁটু, গোড়ালি বা পিঠের ব্যথা জাতীয় ক্রনিক ব্যথার কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। আমাকে এসব যন্ত্রণা নিয়েই বাঁচতে হবে। কি আজব কথা! আজকে আমার প্রিয় মানুষ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সৈয়দ রানা মুস্তফির সঙ্গে কথা হয়েছে। ভারতের হরিয়ানায় মেদান্তা হাসপাতালের খোঁজ পেয়েছি তার কাছে। সেখানে যাব কখনো।৩.এবার আসল কথায় আসি। আমি সাধ্যমতো বই কিনি এবং সেই বই বহন করে নিয়ে আসি কানাডায়। প্রতিবছর আমার কাপড়চোপড় ঢাকায় রেখে আসতে হয়। এখন পর্যন্ত পাঁচ ছয় সেট কাপড় জমেছে। ভুলে যাই, কী আছে সেখানে। আমি যে দুইটা লাগেজ পাই, সেগুলোতে থাকে বই। নিজের লেখা বই যেমন থাকে, তেমনি যেগুলো কিনি সেগুলো থাকে। অন্যের বইও বহন করি এবং যেগুলো গিফট পাই তাও আনার চেষ্টা করি। এবার অন্যান্য বইয়ের সঙ্গে এনেছি আনিসুল হকের উপন্যাস আলো-আঁধারের যাত্রী। আগের বছর এনেছিলাম এই পথে আলো জ্বেলে। এই সিরিজের আগের দুটো বই যারা ভোর এনেছিল এবং উষার দুয়ারে আমার পড়া হয়নি। চেষ্টা করছি জোগাড় করার। তবে আখতার হুসেন সম্পাদিত জনকের মুখ গ্রন্থ থেকে আনিসুল হকের যারা ভোর এনেছিল উপন্যাস থেকে ‘আমি মাথা নিচু করি না’ অংশটুকু পড়েছি। একটু দেরিতে হলেও আলো-আঁধারের যাত্রী পড়ে শেষ করলাম। বেশ চমৎকার বই। আমার ব্যথার দিনে এই বই আমাকে ইতিহাসের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। মহান নেতা বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব, শেখ হাসিনা ও অন্যান্য চরিত্রগুলো চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছিল। অবশ্যই এই বই নতুন প্রজন্মের পাঠকদের পড়া উচিত। ধন্যবাদ আনিসুল হক আপনাকে।
গত দুই বছরে ব্যাটিং ও বোলিং—দুই বিভাগেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন ভারতীয় অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। তবে পান্ডিয়াকে এখনো আরও অনেক কিছু নিয়ে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানি সাবেক ক্রিকেটার আব্দুল রাজ্জাক।ইনিংসের শেষভাগে ধোনির ৭০ রানের জুটি গড়েছেন। ওই জুটিটাই ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দিয়েছে অনেকটা। ফিফটি না পেলেও গতকাল হার্দিক পান্ডিয়ার ৪৬ রানই ভারতকে ২৬৮ রানের সংগ্রহ এনে দিতে ভূমিকা রেখেছে। পান্ডিয়ার এমন ব্যাটিংও সন্তুষ্ট করতে পারেনি পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার আব্দুল রাজ্জাককে। তাঁর মতে এখনো অনেক ত্রুটি রয়েছে ভারতীয় অলরাউন্ডারের।গতকাল বিরাট কোহলি আউট হওয়ার পর খানিকটা বিপদেই পরে গিয়েছিল ভারত। ত্রাণকর্তা রূপে ধোনি আর পান্ডিয়া না দাঁড়ালে ভারতের জন্য কাজটা বোধ হয় সহজ হতো না। বিরাট কোহলি আলাদা করে পান্ডিয়াকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন। গতকাল উইন্ডিজদের বিপক্ষে সবচেয়ে দ্রুত রান তোলার কাজটা যে এই ডানহাতি অলরাউন্ডারই করেছেন। ৩৮ বলে পাঁচ চারে ৪৬ রান করেছেন পান্ডিয়া।গতকাল জোরে শট খেলতে গিয়ে বারবার নাকি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছিলেন পান্ডিয়া। কালকের ম্যাচের পর সাবেক পাকিস্তানি অলরাউন্ডার আব্দুল রাজ্জাকের এমনটাই দাবি। তিনি বলেছেন, ‘আজ আমি হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাটিং খুব ভালোভাবে খেয়াল করেছি। ও যখন বলকে জোরে মারছিল তখন ও দেহের ভারসাম্য ধরে রাখতে পারছিল না। আমি ওর ফুট ওয়ার্কও খেয়াল করেছি।’ওয়ানডে অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ে পান্ডিয়ার অবস্থান এখন সেরা দশেও নেই। তবে আব্দুল রাজ্জাকের কাছে কোচিং করলে নাকি এক লাফে এক নম্বরে চলে আসবেন ভারতীয় এই অলরাউন্ডার, ‘বিসিসিআই যদি আমাকে দু সপ্তাহের জন্য ওকে কোচিং করানোর দায়িত্ব দেয়, আমি নিশ্চিতভাবে বলছি ও বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারে পরিণত হবে। আর এ ব্যাপারে আমাকে সব সময় পাওয়া যাবে।’
চার্চ ম্যাকডোনাল্ড বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের (সিএমবিবিএ) বিবদমান সদস্যদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা ভেস্তে গেছে। নির্বাচন আয়োজনে ব্যস্ত নির্বাহী কমিটির সঙ্গে ভিন্নমতাবলম্বীদের বৈঠক কিংবা আলোচনার সম্ভাবনা যে আর নেই, সেটি স্পষ্ট হয়ে গেছে। একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিই সমঝোতার সব সম্ভাবনাকে অনিশ্চিত করে দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছেন বাংলানগর সুপার মার্কেটের মালিক আনোয়ার হোসেন। এতে বলা হয়, সিএমবিবিএর জন্য ৭ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।জানা গেছে, ৮২ চার্চ অ্যাভিনিউতে গেল ১৭ মে ব্যবসায়ীদের ‘জরুরি’ সভায় রহমান ফ্যাশনের মালিক মোছাদ্দেক ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক ও বাংলানগর সুপার মার্কেটের মালিক আনোয়ার হোসেনকে সদস্যসচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়। সে সময় এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। ভেতরে-ভেতরে বিবদমান দুই পক্ষকে একত্রে বসানোর চেষ্টাও চলছিল। এ কারণে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির বিরোধীপক্ষ তাদের অনুসারীদের নিয়ে ঈদ-পরবর্তী জমায়েতের আয়োজন দুদফায় পিছিয়ে দেন।আপাতত সমঝোতা যে হচ্ছে না, দুপক্ষেই এমন আভাস মিলেছে। তবে কেউই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ। নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিশন ১৬ জুন নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করলেও পরে সেটি পরিবর্তন করে ৭ জুলাই নির্ধারণ করা হয়।দুপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমঝোতা চেষ্টার অংশ হিসেবে এই পরিবর্তন করা হলেও শেষ পর্যন্ত সমঝোতা ভেস্তে গেছে। এর ফলে আহ্বায়ক কমিটির নাম প্রকাশ করে নিজেদের অবস্থানের জানান দিয়েছে ব্যবসায়ীদের আরেকটি গ্রুপ। এই আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কেনসিংটনে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্প্রীতির দরকার। ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করতে একটা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সংগঠন চাই আমরা। সে লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। আশা করছি, ব্যবসায়ীদের যারা ক্ষমতার লোভী নন, তারা ঐক্যবদ্ধ থাকার নীতিতে বিশ্বাস করবেন।’নতুন সাত সদস্যের এই আহ্বায়ক কমিটি অন্য সদস্যরা হলেন—এ এইচ খন্দকার জগলু, আহমেদ আবু, এম ফরহাদ, সুশান্ত দত্ত ও জাহাঙ্গীর আলম। সিএমবিবিএর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের দুপক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। এ অবস্থায় এক পক্ষকে দূরে রেখে সিএমবিবিএর নির্বাচন অনুষ্ঠান কতটুকু অর্থবহ হবে? সিএমবিবিএর প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল আমিন (এন আমিন) বললেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন করা। নিজেদের মধ্যে বিভেদ বা দূরত্ব সদস্যরা কীভাবে কমাবেন, সে বিষয়ে নজর দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই।’
টানা তিন মৌসুম উয়েফার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে (এফএফপি) সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘন করায় ২০১৯-২০ মৌসুমে ইউরোপের কোনো ক্লাব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না ১৮ বারের লিগ জয়ী এসি মিলান।একটু একটু করে নিজেদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করার মিশনে নেমেছিল এসি মিলান। গত মৌসুমে লিগে পঞ্চম হয়ে জায়গা করে নিয়েছিল ইউরোপা লিগেও। কিন্তু অগ্রযাত্রায় বড় এক ধাক্কা খেয়েছে এই ইতালিয়ান জায়ান্ট। উয়েফার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে (এফএফপি) সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে আগামী মৌসুমের ইউরোপা লিগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে ক্লাবটিকে।কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট (সিএএস) আজ এ সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেছে। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে আগামী মৌসুমে কোনো ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না ১৮ বারের সিরি আ জয়ী এসি মিলান।সিএএস তাদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘২০১৯-২০ মৌসুমের জন্য উয়েফার সব ধরনের ক্লাব প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কার করা হলো এসি মিলানকে। ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ টানা তিন মৌসুমে ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে লঙ্ঘনের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ফুটবলে ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে এই নীতি চালু করে ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা। আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যহীন ও অতিরিক্ত খরচ করে কোনো দল যেন দলবদলের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতেই ২০১১-১২ মৌসুম থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেয় উয়েফা।এফএফপির নিয়ম অনুযায়ী, ক্লাবগুলোর আয়-ব্যয়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের ইউরোর ঘাটতি বরদাশত করে উয়েফা। আগে প্রতি মৌসুমেই পর্যালোচনা করা হলেও এখন প্রতি তিন মৌসুম পরপর ক্লাবগুলোর আয়-ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে থাকে উয়েফা।গত তিন মৌসুমেই এফএফপির নিয়ম ভঙ্গের দায়ে আগামী মৌসুমে শাস্তি পেতে হচ্ছে ইতালিয়ান ক্লাবটিকে। গত মৌসুমে ইন্টার মিলানের চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট পেছনে থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুযোগ হারায় এসি মিলান। তবে ইউরোপা লিগে খেলা নিশ্চিত করেছিল জেনারো গাত্তুসোর দল। মৌসুম শেষে গাত্তুসোকে সরিয়ে মার্কো জিয়ামপাওলোকে কোচ করে এনেছে দলটি। ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এখন অন্তত এক মৌসুম অপেক্ষা করতে হবে নতুন কোচকে।