content
stringlengths 1
63.8k
⌀ |
---|
ময়মনসিংহের নান্দাইলে বর ও কনে পক্ষের মধ্যে ঝগড়ার জেরে বিয়ের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের উত্তর পালাহার গ্রামে গতকাল শুক্রবার রাতে ওই ঘটনা ঘটে।বরের নাম সোহেল মিয়া। তিনি একই ইউনিয়নের (মোয়াজ্জেমপুর) মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের বাসিন্দা।কনের এক ভাবি বলেন, ‘খানাপিনার পর কাজী সাহেব এক লাখ ২০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়েটি নিবন্ধন করেন। বিয়ের পর বাড়ির একটি কক্ষে তিনি বর ও কনেকে বিদায় দেওয়ার প্রস্তুতি হিসাবে দুধভাত খাইয়ে দিচ্ছিলেন। এ সময় একপর্যায়ে বরপক্ষের এক তরুণ তাঁকে (কনের ভাবি) জড়িয়ে ধরেন। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক বাধে। পরে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।’দুই পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মারামারি ঘটনার পর কনে বরের বাড়ি যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে গ্রামের মুরুব্বিরা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু বক্কর সিদ্দিক তাঁর (কনে) মতামত জানতে চান। কনে তাঁর অবস্থানে অটল থাকেন। বিয়ের ঘণ্টা খানেকের মাথায় তাঁদের বিয়ে বিচ্ছেদ নিবন্ধন করানো হয়। পরে বরপক্ষের লোকজন পুলিশ প্রহরায় কনের বাড়ি ত্যাগ করে। বরের বাবা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমি ছেলের জন্য বউ আনতে গিয়েছি। মারামারি করতে নয়। বিয়ের আসরে অনেক কিছু নিয়ে তর্ক হতে পারে। সে জন্য কি বিয়ে ভেঙে দিতে হবে? আমি নিজে কনের বাড়িসহ গ্রামের বাড়ির লোকজনের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। কনের নামে জমি লিখে দিতে চেয়েছি। কিন্তু কনের বাড়ি ও গ্রামের লোকজন উল্টো আমাদের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে। আমাদের লোকজনকে ঘরে আটকে মারধর করেছে। পুলিশ গিয়ে আমাদের মুক্ত করেছে।’ |
আট বছর ধরে বিসিএসসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কোটিপতি হয়েছে আট সদস্যের সংঘবদ্ধ প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্র। চক্রের এসব সদস্য রাতারাতি বড়লোক বনে গেছেন। কিনেছেন দামি গাড়ি ও জমি, বানিয়েছেন বাড়ি। এই ৮ আসামির ব্যাংক হিসাবগুলোয় প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।সম্প্রতি সিআইডি প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের এই ৮ জনসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে।সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) মোল্লা নজরুল ইসলাম শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের এই সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কয়েক বছর ধরে ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের অন্যতম ৮ সদস্যের ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনায় তার প্রমাণ মিলেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে মামলাও হয়েছে।অর্থ পাচার মামলার আট আসামি হলেন জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাফিজুর রহমান, বিসিএস নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত গোপালগঞ্জের ইব্রাহীম, বিকেএসপির সহকারী পরিচালক রাজবাড়ীর অলিপ কুমার বিশ্বাস, বিএডিসির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জের মোস্তফা কামাল, নাটোর জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা পাবনার রাকিবুল হাসান, ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম এবং সাতক্ষীরার রিমন হোসেন।২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা মহিউদ্দিন রানা এবং অমর একুশে হল থেকে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে ইশরাক হোসেন নামের এক পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এরপর প্রায় দুই বছর তদন্ত করে সিআইডি প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে ৪৬ জনই ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।কার ব্যাংকে কত টাকা ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ আয় করার অভিযোগে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের ৮ জনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে গত ৭ জানুয়ারি মামলা করে সিআইডি। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত সাত থেকে আট বছর ধরে সংঘবদ্ধভাবে এসব আসামি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ ব্যাংক, বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি চাকরি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতি করে বাড়ি, গাড়ি, জমিসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।আসামিদের স্বীকারোক্তি এবং মামলার এজাহারের তথ্য বলছে, জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের উত্তরার প্রাইম ব্যাংকের হিসাবে (২০১০ সাল থেকে ২০১৭) ২ কোটি ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা জমা হয়েছে। অপর দিকে হাফিজুরের উত্তরার সিটি ব্যাংকের হিসাবে ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬৯৩ টাকার লেনদেন হয়েছে (২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত)। জনতা ব্যাংকে হাফিজুরের ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি ৭১ লাখ ৪১ হাজার ৭৫১ টাকা জমা হয়েছে।আসামি ইব্রাহীমের সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ধানমন্ডি শাখায় ২৮ লাখ ৩৮ হাজার ৫১৫ টাকা, ডাচ্–বাংলা ব্যাংক, যশোর শাখায় ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ১৪৫ টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এলিফ্যান্ট রোড শাখায় ১ কোটি ৫১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৯৩ টাকা জমা রাখা হয়। এ ছাড়া ইব্রাহীমের স্ত্রীর উত্তরা ব্যাংক, নড়াইল শাখায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ৫২৬ টাকা জমা রাখা হয়। অর্থাৎ ইব্রাহীমের ব্যাংক হিসাবে মোট ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ১৭৯ টাকার লেনদেন হয়েছে। ইব্রাহীম আদালতের কাছে স্বীকার করেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে আয় করা টাকা দিয়ে হোন্ডা ভেজেল গাড়ি কেনেন।বিকেএসপির কর্মকর্তা অলিপ বিশ্বাসের মার্কেন্টাইল ব্যাংকের, এলিফ্যান্ট রোড শাখার হিসাবে ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৩৮৫ টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আরেকটি হিসাবে ১ কোটি ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯৮৯ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকে ২১ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংকে ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ৫১৪ টাকা, উত্তরা ব্যাংকে ৪০ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৫ টাকা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শাখায় ৩৫ লাখ এবং রূপালী ব্যাংকে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা করেছেন। এ ছাড়া অলিপ বিশ্বাস ব্র্যাক ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখায় মায়ের নামে ৭০ লাখ এফডিআর করেছেন। মোট অলিপ এবং তাঁর মায়ের হিসাবে ৩ কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার ২৬২ টাকার লেনদেন হয়েছে। বিএডিসির কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের ব্যাংক হিসাবের তথ্য বলছে, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সাতমসজিদ রোড শাখায় ১৫ লাখ ৭ হাজার ৪১৬ টাকা, ইসলামী ব্যাংকের, মিরপুর শাখায় ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩ টাকার লেনদেন হয়েছে।এ ছাড়া নাটোরের ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসানের হিসাবে ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৭ টাকা, ৩৮তম বিসিএসে উত্তীর্ণ আয়ুব আলীর ব্যাংক হিসাবে ৬০ লাখ টাকা জমা হয়েছে। চক্রের প্রধানদের স্বীকারোক্তি হাফিজুর একসময় চাকরি করতেন বিমানবাহিনীতে। ২০১৩ সালে বিমানবাহিনীর চাকরি ছেড়ে জনতা ব্যাংকে চাকরি নেন। ২০১৪ সালে বিএডিসির কর্মকর্তা মোস্তফার সঙ্গে পরিচয় হয়। আসামি মোস্তফার কথামতো গুদামরক্ষক পদে শাহীনের কাছ থেকে ৫ লাখ, আরাফাতের কাছ থেকে ৪ লাখ, কামালের কাছ থেকে ৩ লাখ এবং নাহিদের কাছ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা নেন। উত্তরা ব্যাংকের ক্যাশিয়ার পদে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ইমন, জাহাঙ্গীর, শাহীন এবং আরাফাতের কাছ থেকে মোট সাড়ে ১১ লাখ টাকা নেন। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে মোস্তফার মাধ্যমে অলিপ বিশ্বাস, ইব্রাহীম, আইয়ুব আলী, তাজুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয়। এঁরা নিয়োগ পরীক্ষার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ডিভাইসের মাধ্যমে ফাঁস করতেন। ২০১৭ সালের বিজেএমসির টাইম কিপার পদে নিয়োগের জন্য কবিরের কাছ থেকে ৫ লাখ, সেরাজুলের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নেন। ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরো চাকরির জন্য সেফাউলের কাছ থেকে ৫ লাখ, রুবেলের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নেন। ২০১৭ সালে মেডিকেল নার্স নিয়োগ পরীক্ষায় শিউলি, পারভীন, ইশতিয়াক ও ইয়াসিনের কাছ থেকে মোট ১৫ লাখ টাকা নেন।ইব্রাহীম ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, মোস্তফা কামালের সাইফুরসে ক্লাস নেওয়ার সময় তাঁর পরিচয়। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংকের অফিসার পদে এবং পরিসংখ্যান ব্যুরোর অপারেটর, এলএমএসএস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এলএমএসএস, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ব্লক সুপারভাইজার পদে, কৃষি উন্নয়ন বোর্ডের তৃতীয় শ্রেণির নিয়োগের প্রশ্নপত্র ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বহু লোকের চাকরি দেন। মোস্তফা ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের পিয়ন হাসমতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। হাসমত পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে প্রশ্নফাঁস করতেন। অগ্রণী স্কুলের পিয়ন আনোয়ারও একই কাজ করতেন। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষায় নিয়োগ ও ভর্তি জালিয়াতির মাধ্যমে ৬০ জনের বেশি লোককে নিয়োগ দিয়ে ১ কোটি টাকা আয় করেন। জালিয়াতির মাধ্যমে আয় করা টাকা নিজের এবং স্ত্রীর হিসাবে লেনদেন করেন। এই টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে ৫ বিঘা জমি, ১০ কাঠা জমির ওপর একটা দোতলা বাড়ি, খুলনার মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় সাড়ে ৬ শতাংশ জমির ওপর চার তলা বাড়ি এবং একটি হোন্ডা ভেজেল গাড়ি কেনেন।বিকেএসপির কর্মকর্তা অলিপ বিশ্বাস জবানবন্দিতে বলেন, ২০১৬ সালে ইব্রাহীম ইডেন কলেজের নেত্রী অনুর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র পাওয়ার বিষয়ে কথা বলেন। পরীক্ষার দিন ইব্রাহীমের কথামতো তিনি (অলিপ) এবং বাধন ইডেনে প্রশ্নপত্র আনতে যান। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাধন প্রশ্ন নিয়ে আসেন। ওই প্রশ্ন নিয়ে এফ রহমান হলের সোহানের রুমে যান। সেখানে বসে প্রশ্নের সমাধান করা হয়। প্রশ্নপত্রের সমাধানের ছবি মোবাইলে ধারণ করেন। ওই ছবি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খালিদ, শাকিল, রুবেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের মহিউদ্দিন রানা, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রণয় পাণ্ডে, ঢাকা কলেজের জাহাঙ্গীর আলমের কাছে পাঠান। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক, ঘ ইউনিটের প্রশ্নপত্র হাফিজ অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের পিয়ন আনোয়ারের কাছ থেকে নিয়ে আসেন। তা সমাধান করা হয়। অনেক পরীক্ষার্থী চান্স পান।অলিপ জবানবন্দিতে আরও বলেন, ২০১৪ সালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। ২০১৪ সালে ঢাকা কলেজের মনিরের কাছ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের পরীক্ষার উত্তরপত্র এসএমএসের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। ২০১৮ সালের জনতা ও কৃষি ব্যাংকের প্রিলিমিনারি অংশের উত্তর তাজুলের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তা প্রণয় পাণ্ডে এবং জাহাঙ্গীর আলমকে দেন। রাজবাড়ী জেলার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নপত্রের উত্তর এসএমএসের মাধ্যমে রুবেলের কাছ থেকে নেন। কয়েকজনকে তা সরবরাহ করেন।আসামি আয়ুব আলী ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে বলেন, ২০১৭ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষার সময় ধানমন্ডি স্কুলের পিয়ন হাসমতের কাছে যান। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা ইব্রাহীম এবং মানস পান্ডের কাছে পাঠান। ২০১৭ সালের ঘ ইউনিটের পরীক্ষার দিন প্রশ্নপত্র অগ্রণী স্কুলের আনোয়ারের কাছ থেকে নিয়ে আসেন। ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় তিনি নিজে অংশ নেন। ইব্রাহীমের আইডি থেকে উত্তরপত্র আসে। সেই উত্তর পেয়ে তিনি এবং রাসেল উত্তীর্ণ হন।সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র এবং নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের অন্যতম ৮ জনের বিরুদ্ধে হওয়া অর্থ পাচার মামলার তদন্ত চলমান। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অবৈধভাবে আয় করা চক্রের সব সদস্যকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। |
ভারতের ‘গেরুয়া’ রঙের জার্সি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কোনো অন্ত নেই। কেউ বলছেন জার্সিটি দেখতে দারুণ, তো কেউ আবার জার্সির রঙের পেছনে রাজনীতি খুঁজে পাচ্ছেন। ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি আজ সংবাদ সম্মেলনে এসে জানালেন, জার্সিটি দেখতে সুন্দর, আরামদায়কও বটে; কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেই প্রথম এবং শেষবারের মতো ‘গেরুয়া’ রঙের জার্সি গায়ে চাপাবেন তাঁরা।বিশ্বকাপের আগেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। নীল রঙা জার্সির সঙ্গে দ্বিতীয় আরেকটি জার্সি সঙ্গে নিয়ে যাবেন ধোনি-কোহলিরা। বিশ্বকাপে এবার দশ দলের মাঝে আট দলই ফুটবলের হোম-অ্যাওয়ে কিট তত্ত্ব অনুযায়ী দুটি জার্সি নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছে। তাই ভারতের মূল জার্সি বাদেও দ্বিতীয় আরেকটি জার্সি নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনার খোরাক হওয়ার কথা নয়।তবে সেই জার্সিটি নিয়ে এত উচ্চবাচ্য কেন? কারণ মূলত জার্সিটির রং। ‘গেরুয়া’ রঙের দ্বিতীয় জার্সিটিকে ভারতের অনেক সমর্থকই মেনে নিতে পারছেন না। হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি করা ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একটি অন্যতম প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয় ‘গেরুয়া’ রং। তাই বিসিসিআই ক্ষমতাসীন দলের তোষামোদি করতেই ‘গেরুয়া’ রঙের জার্সি প্রবর্তন করেছে বলে বিতর্ক শুরু হয়।শুরুতে আফগানিস্তান এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দুটিতে ‘গেরুয়া’ রঙের জার্সি পরে খেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বিতর্কের কারণেই কি না কে জানে, আলোচিত জার্সি পরে শুধু একটি ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। আগামীকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই কোহলিরা ‘গেরুয়া’ রঙের জার্সি গায়ে চড়িয়ে মাঠে নামবেন। আজ বার্মিংহামে ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে জার্সিটি উন্মোচন করেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তাঁর কাছে অবশ্য জার্সিটি বেশ ভালো লেগেছে, ‘জার্সিটি আমার পছন্দ হয়েছে। আমি এটিকে দশে আট দেব। অবশ্যই শুধু বলার জন্য বলছি না। জার্সিটির কন্ট্রাস্ট ভালো, ফিটিংও দারুণ।‘তবে সঙ্গে এও বলে রাখলেন, ‘এক ম্যাচের জন্য এই জার্সিটি পরাই যায়, তবে আমার মনে হয় না এটা স্থায়ী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে। কারণ নীল রঙা জার্সি দিয়েই আমাদের পরিচিতি, সেই জার্সি পরে খেলতেই আমরা গর্ববোধ করি।’২০১৯ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দল ভারত। ৬ ম্যাচ থেকে ১১ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তারা। বাকি তিন ম্যাচ থেকে আর মাত্র ১ টি পয়েন্ট পেলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাবে কোহলিদের।আগামীকাল বার্মিংহামের এজবাস্টনে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ভারত। |
এজবাস্টনে কাল ভারত–ইংল্যান্ড ম্যাচ। দুদিন পর একই মাঠে বাংলাদেশ–ভারত লড়াই। বাংলাদেশ একটি ম্যাচ দেখবে দর্শক হিসেবে, আরেকটি লড়বে। সেমিফাইনাল যাওয়ার সমীকরণে বাংলাদেশ কখনো চাইবে ভারতের জয়, কখনো পরাজয়—কী অদ্ভুত পরিস্থিতি বার্মিংহামে!বাংলাদেশ–ভারত—দুই দলই যে উঠেছে একই হোটেলে। হোটেল হায়াট রিজেন্সি এখন তাই বাংলাদেশ–ভারতের সমর্থকেদের কাছে আকর্ষণীয় ‘স্পটে’ পরিণত হয়েছে। সকাল–বিকেল ভিড় লেগেই আছে। সমর্থকদের এই ভিড় দেখ গত কদিনে অনেক ব্রিটিশ অবাক চোখে জানতে চাইলেন, আচ্ছা এখানে কী কোনো বড় তারকা এসেছেন?প্রিয় তারকাকে পেতেই হবে এমন কথা নয়। যদি প্রতিপক্ষ দলের কাউকে পাওয়া যায় সেটাও মন্দ নয়—সেলফি–ছবি তুলে ফেসবুকে ছাড়লেই ‘লাইক–কমেন্টে’র বন্যা বয়ে যাবে! সমর্থকদের তাই চেষ্টার কমতি নেই, হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে থাকছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আজ সকালে যেমন মাশরাফি বিন মুর্তজাকে পেয়ে ছুটে এলেন ভারতীয় কজন সমর্থক। বাংলাদেশ অধিনায়ক ফোনে কোথাও কথা বলছিলেন। হাতের ইশারায় ভারতীয় সমর্থকদের থামিয়ে দেওয়ায় তারা আবার ‘মাইন্ড’ করলেন কি না ভেবে মাশরাফি ফোন রেখে ভালোভাবে ছবি তুললেন। এর মধ্যে এক বাংলাদেশি সমর্থক নিজেকে পরিচয় দিলেন যুক্তরাজ্য শাখার ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে!ভক্ত–সমর্থকদের ভিড় চাইলেই ক্রিকেটাররা এড়াতে পারেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের সঙ্গে তো মাঠে দেখা হওয়ার আগে হোটেলেই হয়ে যাচ্ছে। কাল ধোনি–পান্ডিয়ার সঙ্গে মাশরাফির একটা আড্ডাই হয়ে গেল। দলের তরুণ অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে অবশ্য একই হোটেলে থাকার ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, ‘কোনো কাজ ছাড়া বাইরে যাই না, এ কারণে একই হোটেলে থাকার ব্যাপারটা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না। রুমে থাকার চেষ্টা করি। বাইরের বিষয় নিয়ে অত ভাবি না।’একই হোটেলে থাকার ব্যাপার মনে না হোক, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ তো অনেক বড় মনে হওয়ার কথা। ভারত ভীষণ শক্তিশালী দল, এ টুর্নামেন্টে তাদের এখনো কেউ হারাতে পারেনি। ২ জুলাই এজবাস্টনে কোহলিদের না হারাতে পারলে বার্মিংহামেই সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন শেষ! ভারত যে অনেক শক্তিশালী দল, এটা মাথায় নিতে চান না মোসাদ্দেক, ‘টুর্নামেন্টের এমন একটা জায়গায় আছি আমরা, মনে করি না ভারত বা অন্য কোনো দলকে নিয়ে ভাবার সময় আছে! অবশ্যই ভারত শক্ত প্রতিপক্ষ। আমরা যেভাবে খেলছি সেটা করতে পারলে আশা করি ভালো কিছু হবে।’মোসাদ্দেক হয়তো বলতে চাইছেন, প্রতিপক্ষ যেই হোক, সমীকরণ এমনই, জিততেই হবে। জয় যেখানে শেষ কথা, প্রতিপক্ষ কে, সেটি নিয়ে কি আর ভাবলে চলে! ভারতকে নিয়ে না ভাবলেন। কাল ভারত–ইংল্যান্ডে ম্যাচে কাকে সমর্থন দেবেন? এই ম্যাচে ভারতের জয়–পরাজয় যে বাংলাদেশের সমীকরণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। দন্তবিকশিত হাসিতে গুগলিটা দারুণভাবে সামলালেন মোসাদ্দেক, ‘ব্যাপারটা স্বার্থপরের মতো হয়। যে দলের জয়ে আমাদের লাভ হয় তাকেই সমর্থন করব।’মোসাদ্দেক তথা পুরো বাংলাদেশ কাল কার জয় চাইবে, তা আর বলতে! |
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বে উন্নয়ন ও অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বে বাঙালির পরিচয় বদলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে দল চারবার ক্ষমতায় এসেছে। উন্নয়ন ও অর্জনের মাধ্যমে তিনি দেশকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।তথ্যমন্ত্রী আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির উদ্যোগে ‘গৌরবের অভিযাত্রায় ৭০ বছর: তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন।হাছান মাহমুদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাছে কেস স্টাডি। কারণ, খাদ্য ঘাটতির দেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। দেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, অবিস্মরণীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশ। তিনি বলেন, একসময় বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য বিশ্ব গণমাধ্যমে স্থান পেত। সে সময় বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ বলেও উল্লেখ করা হতো। এখন বাংলাদেশকে আর দরিদ্র দেশ বলার সুযোগ নেই। কারণ, এখন বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, অল্প কিছু দিনের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে আমরা যে পর্যায়ে নিয়ে এসেছি, সেই দেশকে তরুণ প্রজন্ম কোথায় নিয়ে যাবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিশন-২০২১, ২০৪১ এবং ২১০০, ডেল্টা প্ল্যান ঘোষণা করেছেন। তা বাস্তবায়নে তরুণ প্রজন্মকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব বন্ধে করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, গুজব ছড়ানো অনেকাংশে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু অনলাইন ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এই অনলাইন ওয়েব পোর্টালগুলো নিবন্ধিত হওয়ার পর তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে না পারাটা নিজের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে মনে করি।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনির বিচারের রায় এখনো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। তার মধ্যে একজন বিদেশে মারা গেছেন বলে জানা গেছে, তিনজন কোন দেশে পালিয়ে রয়েছেন তা এখনো জানা যায়নি। তবে দুজনের অবস্থান সম্পর্কে জানা রয়েছে।দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা ছাত্রছাত্রী এবং তরুণ পেশাজীবীরা ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে কীভাবে দেখতে চান, সে বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেন। মঞ্চ থেকে প্যানেল বক্তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে নানা বিষয়ের প্রশ্নের জবাব দেন। |
পোলট্রি (হাঁস-মুরগি) ও মাছের বিষাক্ত খাবার তৈরির দায়ে শনিবার রাজধানীর ডেমরার মাতুয়াইল মৃধাবাড়ি এলাকায় অভিযান চালান র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। চামড়াশিল্পের (ট্যানারি) বর্জ্যের সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ও টেক্সটাইলে ব্যবহৃত রং দিয়ে খাবার তৈরি করায় ১৬ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই অপরাধে তিনটি কারখানা সিলগালা করে তাদের মোট ৩২ লাখ টাকা জরিমানা এবং ৬ হাজার টন বিষাক্ত পোলট্রি ও ফিশ ফিড জব্দ করা হয়। এসব পোলট্রি, ফিশ ও ডেইরি ফিড তৈরি কারখানা থেকে উৎপাদিত বিষাক্ত ফিড সরবরাহ করা হতো দেশের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে। র্যাব-১০, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। |
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লঙ্কান দলপতি দিমুথ করুনারত্নে ম্যাচের প্রথম বলে আউট হয়ে ফিরে যান। বিশ্বকাপ ইতিহাসে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে লজ্জার এই কীর্তির অংশীদার হলেন। সেই ম্যাচ হেরে শ্রীলঙ্কার সেমিফাইনালের স্বপ্নও কিছুটা ফিকে হয়ে গেছে। এই দুঃসময়ে তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এসেছেন প্রথম কীর্তি গড়া সাবেক বাংলাদেশি ওপেনার হান্নান সরকার।এমন কীর্তি খুব কম ক্রিকেটারেরই আছে। ক্রিকেট বিশ্বকাপে মাত্র ২৮ বার কোনো ওপেনার গোল্ডেন ডাক পেয়েছেন। তিনজন দুবার করে করায় কীর্তিটা মোট ২৫ জনের। এর মাঝেও অনন্য চারজন। যারা ম্যাচের প্রথম বলেই শূন্য হাতে ফিরেছেন। এমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তালিকার অংশ হতে পারা কম কথা নয়! গতকাল দিমুথ করুনারত্নে সে তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পেলে সেমিফাইনালের পথে এক পা এগিয়ে যেত শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে ‘পচা শামুক’ প্রোটিয়াদের কাছেই কাটা পরেছে তারা। লজ্জার রেকর্ডের সঙ্গে দলের শোচনীয় হার, সব মিলিয়ে করুনারত্নের কিছুটা বিষণ্ন হওয়াই স্বাভাবিক। তবে এই দুর্দিনে তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলেন হান্নান সরকার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান ক্রনিকলের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে করুনারত্নের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘দিমুথের প্রতি আমার বার্তা হচ্ছে, হতাশ হও না। এমনটা যেকোনো ব্যাটসম্যানের সঙ্গে হতে পারে। সুনীল গাভাস্কারের মতো কিংবদন্তিও টেস্ট ম্যাচে প্রথম বলে আউট হয়েছিলেন।’২০০৩ বিশ্বকাপটি বাংলাদেশের জন্য ব্যর্থতার স্মৃতিতে ভরা। এর মাঝেও হান্নান সরকার একটি ব্যক্তিগত লজ্জার রেকর্ডের খোঁজ পাবেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনিংস ওপেন করতে নেমে লঙ্কান পেসার চামিন্দা ভাসের হ্যাটট্রিকের প্রথম শিকার যে তিনিই ছিলেন। ম্যাচের প্রথম বলেই হান্নান সরকারের ষ্টাম্পের ওপর দিয়ে স্টিম রোলার চালিয়ে দেন ভাস। ম্যাচের প্রথম তিন বলে তিন উইকেট তুলে নিয়ে দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ শুরুটাই উপহার দিয়েছিলেন চামিন্দা ভাস। তবে সেই যে ম্যাচের প্রথম বলে আউট হলেন হান্নান সরকার, তার মধ্য দিয়েই ক্রিকেটের রেকর্ড বুকে একটি নতুন পৃষ্ঠার পত্তন হলো। বিশ্বকাপে ম্যাচের প্রথম বলটি খেলেই তার আগে যে আর কেউ সাজঘরের দিকে হাঁটা ধরেননি!কাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে ইতিহাসে চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে এই কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন। অবশ্য হান্নান সরকার এবং করনারত্নের মাঝে জিম্বাবুয়ের উইকেট রক্ষক-ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেলর এবং কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিলরাও নিজেদের নামগুলো এই তালিকায় যুক্ত করেছেন।ম্যাচের প্রথম বলে ‘গোল্ডেন ডাক’ মেরে আউট হওয়াটা ব্যাটসম্যানদের জন্য অবশ্যই লজ্জাজনক, আর দলের অধিনায়ক হিসেবে দিমুথের এমন কীর্তির ব্যথাটা যে আরও বেশি সেটিও উঠে আসল হান্নান সরকারের কথায়, ‘হ্যাঁ, প্রথম বলে আউট হলে খারাপ লাগাটাই তো স্বাভাবিক। সেটি বিশ্বকাপের ম্যাচ হোক বা অন্য কোনো ম্যাচ, খারাপ লাগার মাত্রা একই থাকে। আর দিমুথ যেহেতু তার দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাই তার হতাশাটা হয়তো একটু বেশিই, কিন্তু আমি মনে করি, তার মন খারাপ করলে চলবে না। নেতিবাচক বিষয়গুলোকে পেছনে ঠেলে সামনে এগিয়ে যাওয়াটাই হবে তার মূল কাজ।’আগামী ১ জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লঙ্কানরা নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েই মাঠে নামবে। অধিনায়ক করুনারত্নেও নিশ্চয়ই হান্নান সরকারের আশা এবং সান্ত্বনা মিশ্রিত বাণীতে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন উদ্যমে মাঠে দলকে নেতৃত্ব দেবেন! |
আলো–আঁধারি পরিবেশ। গানের সুরে সত্য ও সুন্দরের উপস্থিতি ঘোষণা করছেন একদল তরুণী। মহাকাশে উদ্ভাসিত যে সত্তা, বিশ্বজগৎ তারই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নারীরা নৈবেদ্য ঢেলে দিচ্ছেন। মহিমা প্রচার করছেন সৃষ্টিকর্তার।একটুখানি সময় পর জ্বলে ওঠে পরিবেশ। পদধ্বনি মঞ্চে। সেই সঙ্গে যৌথ কণ্ঠের উচ্চারণ। ‘এই শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল। এই শিকল পরেই শিকল তোদের করবরে বিকল।’ একদল শিক্ষার্থী নৃত্য কাঁপিয়ে দিল মঞ্চ।গল্প শোনাচ্ছি না। সত্য ঘটনা। অডিটরিয়াম সে সময় দাঁড়িয়েছিল। ঝোড়ো হাওয়া বুঝি একপর্যায়ে সবকিছু ভেঙে খান খান করে দিতে চেয়েছিল। স্থান: বাংলাদেশ স্কুল। আয়োজন: রবীন্দ্র–নজরুল জন্মজয়ন্তী। তারিখ: ২০ জুন বৃহস্পতিবার। সময়: সন্ধ্যা সাতটা। উদ্যোগ: বাংলাদেশ দূতাবাস।বাঙালির যাপিত জীবনে সর্বক্ষণই বিরাজমান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চেতনে বা অবচেতনে। রবীন্দ্রনাথের রচনা সম্ভার বিপুল, বৈচিত্র্যময়। সাহিত্যের প্রায় সব শাখায়ই তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। বিস্ময়কর সৃজনী প্রতিভা দিয়ে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে। তাঁর কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, সংগীত, শিশুতোষ রচনা বাংলা সাহিত্যে অমর সংযোজন।সাহিত্যে বিংশ শতাব্দীর আরেক মাইলফলক কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা আর বাঙালির ভুবনে সম্মানের আসন তাঁর। কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিক ও সৈনিক হিসেবে তিনি তাঁর ভূমিকা রেখেছেন। অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে বরাবরই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনি জীবনও। সময়ের সাহসী সন্তান নজরুল।দুজনই একাত্তরে ছিলেন বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণা। এই দুই পুরুষই বাঙালির সঙ্গে থেকেছেন প্রতিটি সংকট ও সংগ্রামে। সহচর হয়েছেন আনন্দ ও ভালোবাসায়। সেই কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আজ রবীন্দ্র–নজরুলজয়ন্তী।বক্তব্যের অণু পর্বে কথা বললেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের দুই দিকপাল। দুজনের মধ্যে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত পাবনা কুঠিবাড়ি। সে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ময়মনসিংহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। ত্রিশালের বটতলা। কবির স্মৃতিচিহ্ন। বাঙালির নিখুঁত পরিচয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুই দিকপালকে সম্মান দিতে ভুল করেননি। কবিগুরুর জাতীয় সংগীত আর জাতীয় কবির গণসংগীত নিয়ে আজ আমাদের ছন্দময় চলা।স্বাগত বক্তব্য দেন অধ্যক্ষ মীর আনিসুল হাসান। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য নিয়ে শুরু তাঁর। কবিগুরু অসাধারণ ঈশ্বর প্রেম আর উচ্চমার্গীয় ভাবনার আশ্রয় নিয়েছেন অনায়াসে। নিজের ভাবকে অন্যের অন্তরে ঠাঁই দিয়ে সত্যকে স্থাপন করেছেন। বলেছেন, ভাবকে নিজের করিয়া সকলের করা, ইহাই সাহিত্য, ইহাই শিল্পকলা। অমর সৃষ্টি, অনন্য এক ঝাঁপি! ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে, কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতা খানি, কৌতূহলভরে আজি হতে শতবর্ষ পরে।’ দুচোখ তাঁর সুদূরপ্রসারী।অন্যদিকে বিদ্রোহী কবি ক্ষোভে-দুঃখে-অপমানে গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে বলেন তরুণকে। ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির! শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!’ কিংবা মানুষের ভেতরকার আসল সত্তার মর্যাদা দিয়ে উচ্চারণ করেন, ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।’শান্তির বারিবর্ষণের জন্য আকুতি মঞ্চের। শুষ্ক হৃদয় নিয়ে তাঁরা দাঁড়িয়ে। অন্ধকার, মোহ পাপ, শোক পরিতাপ না থাকার প্রার্থনা স্রষ্টার কাছে। বিঘ্ন বাধা অপসারণ করে হৃদয় পরিচ্ছন্ন ও প্রাণকে সবল করার আকাঙ্ক্ষা তাঁদের। হিংসা, দ্বেষ থেকে পরিত্রাণ চান। পাষাণ হৃদয়ে প্রেম বিতরণের আর্তি ব্যক্ত সে গানে।জনতা ব্যাংকের স্থানীয় শাখার প্রধান নির্বাহী আমিরুল হাসান। তিনি বক্তব্য রেখেছেন। এখন উপভোগ করছেন মঞ্চের নিবেদন। বলেন, রবীন্দ্রনাথকে জানার মধ্য দিয়ে তাঁর গানের সঠিক চর্চা সম্ভব। রুচি গঠনে ও দেশপ্রেমের ভাবাদর্শে গড়ে উঠতে বিষয়টির গুরুত্ব বহুল। মুগ্ধতার চিহ্ন মুখে। স্কুলের একদল কিশোরীর দরাজ ভরাট কণ্ঠ তাক লাগিয়ে দেয়। দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার হে! লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।। দেখি, ‘মরোদেরা’ তৈরি হয়ে নেয়। বুক বেঁধে দাঁড়ায়।নজরুল তারুণ্যের প্রতীক। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি ও বিদ্রোহ। লেখেন ভাঙার গানের মতো কবিতা। ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। উপহার দেন বিদ্রোহী কবিতা। প্রকাশ করেন ধূমকেতু। এক নতুন ধারার জন্ম দেন। গজলের পাশাপাশি উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত রচনা করেছেন। জেলে বন্দী অবস্থায় লেখেন রাজবন্দীর জবানবন্দি।ত্রিরত্ন বসা পাশাপাশি। মহিলা সমিতির নেতৃত্ব।সংগঠনের সভাপতি জাকিয়া হাসনাত ইমরান। হাসিমুখ তাঁর। বলেন, এমন আয়োজন না হলে প্রবাসে সাহিত্য বা সংগীতচর্চার অনেকটাই অসম্পূর্ণ থেকে যেত। সাধারণ সম্পাদক পপি রহমান বলেন, রবীন্দ্র-নজরুলের বসবাস আমাদের মনের গভীরে। আমরা চলি তাঁদের নিয়ে। সংগঠনের আরেক সম্পাদক জাকিয়া হাসান এলি যোগ করেন, তাঁরা দুই রাজপুরুষ। আলোকময় চরিত্র। প্রজন্ম আলোকিত হোক তাঁদের দীপ্তিতে, প্রার্থনা তাঁর।প্রেম ছড়ানো কবি রবীন্দ্রনাথ। প্রকৃতির রূপ, রস, গন্ধ আনেন লেখায়। সেদিন মহালগনে বনে দেখা হয় দুই কপোত-কপোতীর। জোছনা ধোয়া রজনী। একজনের মনে প্রলেপ জড়ানো আর অন্যের মুখে ছিল হাসির রেশ। সেই মাহেন্দ্রক্ষণকে না ভোলার আকুতি সে গানে।নজরুল তো আরেক কাঠি সরেস। বিরহ চেপে বসে।দুটি ডাগর চোখকে এখনো মাপে প্রেমিকা। চাপা ফুলে ফেলে ছুটে যাওয়া লাজ। মনে পড়ে। আহা মরি মরি! সেই দিনের বাঁশরি বাজে বুকের মাঝে। গোমতির তীর ভেসে ওঠে মনে। সাঁঝের বেলায় পাতার কুটিরে আজও চেয়ে থাকে যেন! মানুষ মুগ্ধতা নিয়ে শোনে।বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার ও দূতালয় প্রধান শহীদুজ্জামান ফারুকী বসা। পাশে প্রথম সচিব রিয়াজুল হক। দুজনের সহধর্মিণী গানের সঙ্গে আছেন মঞ্চে। এ সময়ে সন্তানদেরও থাকতে হয়। তারা দেখবে, উপভোগ করবে। গৌরববোধ করবে এই বলে, এ আমার মা! স্বর্গের শিশুদের কেউ একজন এই মুহূর্তে নেই। দুজনের বন্ধু কথনের মাঝে আমাকে স্বাগত জানানো হয়। সে জন্যই এমন কথার অবতারণা। কথা সই। ফোনে ডাক পড়ে নতুন প্রজন্মের। আলোচনা পর্বের সঞ্চালনা করেন শ্রমবিষয়ক কাউন্সেলর আবদুল আলিম মিয়া আর সাংস্কৃতিক ভাগে ছিলেন প্রথম সচিব জোবায়েদ হোসেন।দুই সহকর্মী। তাঁরা গল্প করছিলেন। উপাধ্যক্ষ কাজী আবদুর রহিম ও অধ্যাপক আবু তাহের। হাত মেলাই। শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। মুগ্ধতা ঢেলে দিই তাঁদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে।মঞ্চে বিরহের নিবেদন। ‘দেওয়া’ নামা চরাচর। কদম কেয়া মন। শাপলা, পদ্ম বেষ্টনে জীবন। বিদ্যুৎ চমকায়। বৃষ্টি নামে নামে। পারাপার বন্ধ। কিছুক্ষণ পর, বারিধারা চারিধার। ঘরে সবাই। কিন্তু আলেয়ার মন আনচান। সে মন তেপান্তরে নাচে। চখাচখি কেকা কাঁদে। কাঁদে বিরহী। তার মন পড়ে সেই দিন। মন দেওয়া–নেওয়ার শুভক্ষণ। কী মুশকিল। শ্রোতারা উপায় খোঁজে।গীতাঞ্জলি রচনা করে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আসেন নোবেল পুরস্কার। চিত্রকলাকে আধুনিকতার ধারণা দেন। শাহজাদপুরে দরিদ্র কৃষকদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন কৃষি ব্যাংক। গড়ে তোলেন শান্তিনিকেতন। পাঞ্জাবের জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেন। ব্রিটিশ সরকারের নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করেন। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসেন। বাংলার প্রতি ভালোবাসা থেকে 'আমার সোনার বাংলা' গান। যে গান আজ বাংলার জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীত ‘জনগণ মন অধিনায়ক জয় হো’ও তাঁর রচনা।নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে এ সত্য। দেশের প্রতি ভালোবাসা জাগায় এমন তথ্য। বঙ্গবন্ধু পরিষদ আবুধাবির সহসভাপতি ইমরাদ হোসেন ইমু। বলেন, নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে এমন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন।শুভেচ্ছা জানান ফারজানা করিম। বলেন, আলাদা রকমের একটি সময়। ভালো লাগে এমন মঞ্চে গান গেয়ে। নূপুর সরকার তাঁরই পাশে। রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যার আরেক গায়ক। অভিনন্দন জানাই।নজরুল আসেন শিশু প্রসঙ্গে। অনিবার্য তাঁর উপস্থিতি। ছোটদের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত তাঁর কবিতায়। স্বাগত বক্তব্যে অধ্যক্ষ হাসান বড় জোর দিয়েই বলেছেন সে কথা। আমি হব সকাল বেলার পাখি। শিশুদের পক্ষে তাঁর ক্ষোভ। প্রকৃতির দুর্দশা আজ। নেই সেই আনন্দ। পাখিদের কিচিরমিচির, প্রজাপতির নরম পাখা কোথায়? কচিদের হাতে বইয়ের বদলে স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রনিক ডিভাইস। খেলার মাঠ নেই। নেই যেন তার নিজস্ব আকাশ।রাষ্ট্রদূত বরাবরই ছোটদের পক্ষে বলেন। এবারও তার ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়নি। শিশুদের হাতে তুলে দিতে হবে বই। একজন নিসর্গ প্রেমিক হয়ে গড়ে উঠতে হলে চাই সঠিক নির্দেশনা। বই সে জন্যই প্রয়োজন। সুন্দরকে কবিতা-শিল্প সাহিত্যকে ধরে রাখতে বই। তবে প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে নয়। বই-পরিবেশ থাকলে পৃথিবী টিকে থাকবে।হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল, এই ব্যাকুলতা ভিন্নধর্মী। এর সঙ্গে যুক্ত জীবজগতের প্রতি অসাধারণ ভালোবাসা। দেহ-মন শুদ্ধির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু। শেষও হয় একই অনুভূতিতে। স্রষ্টার প্রতি সমর্পিত সবাই। ‘জগতে তব কী মহোৎসব, বন্ধন করে বিশ্ব...।’ |
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়েছি। আত্মমর্যাদাশীল হয়েছি। উন্নয়নটা আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারছি। দেশের প্রত্যেক জনগণ এই বাজেট থেকে উপকৃত হবে।জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আজ শনিবার আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। শনিবার বাজেট আলোচনা শেষে অর্থবিল ২০১৯ পাস হয়। এবার মোট ২৭০ জন সাংসদ আলোচনায় অংশ নেন।বাজেটকে জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী ও সুষম বাজেট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়া আর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার পূরণের কার্যকর মাধ্যম এই বাজেট।প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় আমরা কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ডে উৎসাহিত করার জন্য স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করেছিলাম। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমাজের কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলো নগদ লভ্যাংশ দিতে পারে না। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের এমন মন্তব্যের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ আমাদের ভাবতে হবে। কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীও নগদ লভ্যাংশ প্রত্যাশা করে।শেখ হাসিনা বলেন, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমি প্রস্তাব করছি যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করবে, কমপক্ষে তার সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করতে হবে। যদি কোম্পানির ঘোষিত স্টক লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে স্টক লভ্যাংশে ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রস্তাব করতে হবে।শেখ হাসিনা বলেন, নগদ লভ্যাংশ উৎসাহিত করায় আমরা আরও প্রস্তাব করেছিলাম যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি রিটেইন আর্নিং, রিজার্ভ থাকলে অতিরিক্ত রিটেইন আর্নিং, রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। এ বিষয়েও ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা কেউ কেউ আপত্তি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই প্রেক্ষাপটে এই ধারাটির আংশিক সংশোধনপূর্বক আমি প্রস্তাব করছি যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি কোনো অর্থবছরে কর পরবর্তী নিট লাভের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি এটা করতে ব্যর্থ হন তাহলে প্রতিবছরে রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভের মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। এ বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত আয়কর আইনের প্রস্তাবিত ধারাগুলো আমরা বিবেচনা করব।মূসকের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক মূসক হার প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৫ শতাংশের নিম্নহারের উপকরণ কর রেয়াত দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা হ্রাসকৃত হারের পরিবর্তে উপকরণ কর গ্রহণ করে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য দাবি করেছে। হ্রাসকৃত হারের পাশাপাশি কেউ চাইলে যেন ১৫ শতাংশ কর দিয়ে রেয়াত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে। আইনে সেই বিধান আনার প্রস্তাব করছি।’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ, প্রণোদনা প্রদানে প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে শুল্কহার হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে এর ফলে দেশীয় কাগজ ও গ্যাস উৎপাদনকারী শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেশীয় মুদ্রণ শিল্পে প্রণোদনা প্রদান ও বন্ড ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধ কল্পে দেশে উৎপন্ন হয় না, এমন পেপারগুলোর শুল্কহার যৌক্তিক করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে কতিপয় শুল্কহার পুনঃ নির্ধারণ করা হবে। দরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে তাঁতশিল্পে ব্যবহৃত সুতাশিল্পের ওপর ৫ শতাংশ মূসকের পরিবর্তে প্রতিকেজি সুতায় ৪ টাকা হারে সুনির্দিষ্ট করের প্রস্তাব করেন সংসদ নেতা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আর্থিক খাতে সার্বিক শৃঙ্খলা আনতে বাজেটে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের কথা বলা হয়েছে। খেলাপি ঋণ কমাতে অর্থমন্ত্রী যে উদ্যোগী ঘোষণা দিয়েছেন, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করেন, যেন ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার এক অঙ্কে রাখতে যথার্থ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তিনি বলেন, এটি করা হলে দেশের শিল্প ও ব্যবসা খাতকে সক্ষম করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। উচ্চ হারে সুদ থাকলে শিল্প বিকশিত হবে না। এ জন্য এই ব্যবস্থা নিতে হবে।শেখ হাসিনা বলেন, যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ অত্যন্ত সময়োপযোগী। প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থ প্রেরণে দুই শতাংশ প্রণোদনার প্রস্তাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর বর্ধিত ব্যয় লাঘব হবে। প্রবাসী কর্মীরা বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হবেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিমা সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনাও সরকারের আছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক দ্রুত বিকাশমান ও সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত। তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে অর্থ বছরে এক শতাংশ প্রণোদনার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে তৈরি পোশাক খাত আরও বিকশিত হবে। কর্মসংস্থানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ১০ বছরে যে অভূতপূর্ব উন্নতি করছে তা দেশে বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সরকারের একটি বড় সাফল্য। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে বলেই বাজেটে বৈদেশিক অনুদান মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ।দুর্নীতিকে দেশের জন্য একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় আসে তারা নিজেরাও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। সমাজে দুর্নীতিটাকে তারা ব্যাধির মতো ছড়িয়ে দেয়। এটা মানুষের একটি মানসিক রোগে পরিণত হয়ে যায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর নীতি জিরো টলারেন্স। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এ লক্ষ্যে এক গুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব বাজেটে উপস্থাপন করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ সহজ করা হয়েছে। এক শ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর বিনিয়োগের প্রস্তাব আসছে। এগুলো কর্মসংস্থানে ব্যাপক অবদান রাখবে। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতকে অগ্রাধিকার ও বৈষম্য হ্রাসকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে দূরদর্শী সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে সামগ্রিক অর্থনীতি স্থিতিশীল। বাজেটে যে ঘাটতি তা সহনশীল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পর্যাপ্ত, মুদ্রা বিনিময় হার বাণিজ্য সহায়ক। বাজেট ঘাতটি সব সময় ৫ শতাংশ ধরে রাখা হয়েছে, কখনো কখনো এর চেয়ে কমও হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল শিক্ষা মন্ত্রণালয় নয়, ২৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বাজেটে ৮৭ হাজার ৬২০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা মোট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসার কারিকুলাম ঠিক করে মূল ধারায় আনা হয়েছে। এতে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দেশে বিদেশে চাকরি পাবে।শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ২০২৩-২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করা, মাথা পিছু আয় ২ হাজার ৭৫০ ডলার, রপ্তানি ৭২ বিলিয়ন ডলার, বিদ্যুৎ সরবরাহ ২৮ হাজার মেগাওয়াট ও অতি দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এবারের বাজেট এসব লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা আরও সুদৃঢ় হয়েছে। তার প্রমাণ গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন। মানুষ আস্থা রেখেছে বলেই আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। |
যাত্রীবাহী বাসটি রাজশাহীর পুঠিয়ায় এসে বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকে। কলেজছাত্র ফিরোজ সরদার এই বাসের পেছনের আসনে বসে সামনের একটি আসন ধরেছিলেন। বাসটি কাটাখালী এলাকায় পৌঁছলে আরেকটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ধাক্কা লাগার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জানালা দিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়।এভাবেই নিজের হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার বর্ণনা দিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন ফিরোজ। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ক্ষতস্থানে সংক্রমণ না হলে শঙ্কামুক্ত ফিরোজ। এদিকে এ ঘটনায় ফিরোজের বাবা মামলা করেছেন।ফিরোজ যে গাড়িতে আসছিলেন, সেটির ইংরেজিতে নামের প্রথম দুই অক্ষর ‘এম, ও’ বলে জানান। এ ছাড়া গাড়িতে ওঠার সময় খেয়াল করেছিলেন গাড়ির সামনের কাচ ছিল ফাটা। আর গাড়ির দরজার সঙ্গে যে জানালা থাকে তার একটিতে কোনো কাচ ছিল না। ফিরোজ জানান, নন্দীগ্রামে বাসে ওঠার সময় চেইন মাস্টার তাঁকে জানিয়েছিলেন, গাড়িটি বগুড়া থেকে আসছিল। আজ শনিবার সকাল থেকেই রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়ে ‘মোহাম্মদ’ নামের বাসে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আজ দুপুরে মোহাম্মদ বাসটিকে রাজশাহী নগরের শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বাস টার্মিনালের পশ্চিম পাশে দেখা গেছে। গাড়ির কোনো লোক পাওয়া যায়নি। টার্মিনালের লোকজন জানিয়েছেন, বগুড়া-রাজশাহীর মধ্যে চলাচলকারী বাসের এই টার্মিনালে রাখার কথা নয়। এই গাড়ি ট্রিপ শেষে নগরের নওদাপাড়া টার্মিনালে এনে রাখা হয়। স্থানীয় লোকজনের ধারণা ঝামেলা এড়াতে বাসটিকে এই টার্মিনালে রাখা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বাসের মালিক সেরেকুল হাজি। কথা বলার জন্য সেরেকুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এই গাড়ির ছবি তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফিরোজকে দেখালে তিনি গাড়িটি শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, এই গাড়িতেই তিনি গত শুক্রবার নন্দীগ্রাম থেকে উঠেছিলেন। ফিরোজ বলেন, আসার পথে নাটোর পর্যন্ত বাসটি অনেক জায়গায় থেমেছে আর দেরি করেছে। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা সদর পার হওয়ার পর বাসের গতি বাড়তে থাকে। পুঠিয়ার বেলপুকুর থেকে খুবই বেপরোয়া গতিতে চলছিল। দুটি গাড়ির চালকের দোষে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই দুই চালকের শাস্তি চান তিনি।ফিরোজ জানান, তিনি বাসের একেবারে শেষের সিটে বসে ছিলেন। ডান হাত দিয়ে তিনি জানালার ভেতর দিয়েই সামনের সিট ধরে ছিলেন। হঠাৎ একটা ঝাঁকুনিতে তার হাত সিট থেকে আলাদা হয়ে জানালার বাইরে চলে যায়। তখনই বিকট শব্দে পাশের গাড়ির সঙ্গে বাসটি ধাক্কা খায়। এতে চাপা পড়ে তার হাত কেটে পড়ে যায়। হাত কেটে যাওয়ার পরও হাসপাতাল আসা পর্যন্ত তাঁর চেতনা ছিল। কিন্তু যে গাড়ির সঙ্গে চাপা লেগে তার হাত বিচ্ছিন্ন হয়েছে সেটি তিনি চিনতে পারেননি।মানববন্ধন:দুপুর ১২টায় রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ফিরোজের হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনার জন্য দোষীদের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন করেছেন। এই সময় কলেজের অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান বলেছেন, পুলিশ এখনো পর্যন্ত গাড়ি শনাক্ত করতে পারেনি। এটা পুলিশের পাঁচ মিনিটের কাজ। শিক্ষার্থীরা বলেন, বাস মালিককের এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তা ছাড়া কলেজ চত্বরের এই মানববন্ধন নগরের রাস্তায় চলে যাবে। মানববন্ধনে ফিরোজ সরদারের বড় ভাই আরিফুল ইসলাম ছিলেন। তিনি সরকারের কাছে তাঁর ভাইয়ের কর্মসংস্থান দাবি করেন।মামলা: ফিরোজের বাবা মাহফুজ আর রহমান শনিবার বিকেলে বাদী হয়ে রাজশাহী নগরের কাটাখালী থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। পুলিশ তখন পর্যন্ত গাড়ি শনাক্ত করতে পারেনি।কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তারা বাস শনাক্ত করতে মাঠে নামবেন। মোহাম্মদ পরিবহনের বর্ণনা শুনে তিনি বলেন, তারা ওই গাড়িটাকেই সন্দেহ করছেন।ফিরোজরা তিন ভাই-বোন। তাদের বাবা কৃষক। তার কয়েক বিঘা জমি আছে। ফিরোজের বড় ভাইয়ের প্রসাধনসামগ্রীর দোকান আছে নন্দীগ্রাম উপজেলা সদরে। ফিরোজ ২০১০ সালে নন্দীগ্রাম পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক, ২০১২ সালে নাটোরের সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বগুড়ার সৈয়দ আহমেদ কলেজ থেকে ২০১৭ সালে সমাজকর্ম বিভাগ থেকে ¯স্নাতক পাস করেছেন। এরপর স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। ২২ জুন তাঁর স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তিনি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন।তার বড় ভাই আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সবার ছোট ফিরোজকে নিয়ে তাদের পরিবারের বড় স্বপ্ন ছিল। সে স্বপ্ন এখন ফিকে। চিকিৎসক তাদের জানিয়েছেন, শরীরের হাত ছাড়া কোথাও কোনো সমস্যা নেই। হাতের কাটা অংশ যদি এখন শুকিয়ে যায় তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু এতে যদি এখন ইনফেকশন দেখা দেয় তাহলে বিপদ। এ জন্য উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা চাই সরকার ফিরোজের চিকিৎসার ব্যবস্থা করুক। আর সুস্থতার পর যেন তার একটা চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। এর পাশাপাশি দোষী চালকদেরও যেন শাস্তি নিশ্চিত হয়। |
গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। এর মধ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ছিল নাট্যানুরাগী দর্শকের দারুণ উপস্থিতি। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তাঁরা এসেছেন, কেননা গতকাল দুই মঞ্চে দুটি নতুন নাটকের উদ্বোধন হয়েছে। রাজধানীর বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘হ্যাপি ডেজ’ নাটকের দুটি প্রদর্শনী। এক দিনে দুটি নতুন নাটক আর নাটক দেখতে আসা দর্শকের আগ্রহ দেখে মনে হলো, নাট্যাঙ্গনে বসন্ত উঁকি দিচ্ছে যেন। সাধারণত শীত শেষে বসন্তেই নাটকপাড়া জমে বেশি।নতুন নাটক ‘রেনুলতা’র উদ্বোধনতারুণ্যদীপ্ত ও প্রশংসিত নাট্যসংগঠন ইউনিভার্সেল থিয়েটার। ইতিমধ্যে তাদের কিছু প্রযোজনা বিপুল প্রশংসা পেয়েছে নাট্যমোদীদের। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঋদ্ধ এ দলটি মঞ্চে এনেছে জঙ্গিবাদবিরোধী নতুন নাটক ‘রেনুলতা’। জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশে নয়, ভয়াল থাবা বিস্তার করেছে অনেক দেশেই। জঙ্গিদের হাতে বারবার প্রকম্পিত হয়েছে, সাধারণ মানুষের কান্নার নোনা স্রোতে ভেসেছে বাংলাদেশ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় ও জাতিগত সহিংসতা, উগ্রবাদ ও তার নৃশংসতার বিরুদ্ধে এ নাটকে উঠেছে মানবতার জয়গান। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হয় নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী। নাটকটি লিখেছেন ও নির্দেশনা দিয়েছেন আবুল হোসেন খোকন। ‘রেনুলতা’ নাটকের প্রথম প্রদর্শনী দেখতে গতকাল ভিড় করেছিলেন অনেক নাট্যমোদী। ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হয় নাটক। সময়োপযোগী এ নাটকে যেমন ছিল প্রেম ও দাম্পত্য জীবনের কথা, তেমনই ছিল নীরবে জঙ্গিবাদ বিস্তারের ভয়াবহ চিত্র। দর্শক–শ্রোতাদের নাটকটি দেখতে দেখতে মনে পড়বে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত নানা জঙ্গি হামলার কথা। বলা হয় ‘পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়’। যুগ যুগ ধরে চলে আসা অমোঘ এই বিধানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নাটকে মানুষ ও ধর্মের এক নির্মোহ বিশ্লেষণ উঠে এসেছে। নাটকটির প্রধান চরিত্র রেনুলতা একজন অভিনেত্রী। নাটকের শুরুতেই দেখা যায় এ অভিনেত্রীকে জেরা করছে গোয়েন্দা পুলিশ। জানতে চাচ্ছে ঘটনার গোপন সূত্র। তখনই স্মৃতিচারণে উঠে আসে তাঁর জীবন আর সংসারের মর্মান্তিক ঘটনা। উঠে আসে জঙ্গিবাদের ভয়াল রূপ। বীভৎস এক অভিজ্ঞতা নিয়ে বেঁচে ফেরেন রেনুলতা। একদিন নাটক চলাকালে মঞ্চে আক্রমণ করে এক জঙ্গি দল। সেখানে তিনি দেখতে পান তাঁর হারিয়ে যাওয়া স্বামীকে। জঙ্গি দলে যোগ দিয়ে তাঁর স্বামী জাহিদ হয়ে যান জিহাদ জাঈদী। তীব্র ঘৃণায় উন্মাদ হয়ে যান রেনুলতা। তাঁকেই জিম্মি করেন জাহিদ। সঙ্গে নিয়ে নেন নাটকের নির্দেশক হিমেশ চন্দ্রকে। এরপর সরকারের সঙ্গে চলতে থাকে দর-কষাকষি। একপর্যায়ে বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় সব জঙ্গি। সন্দেহভাজন হিসেবে ইন্সপেক্টর আরমানের জেরার মুখে পড়েন রেনুলতা। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনি। ইউনিভার্সেল থিয়েটারের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক আজিজুল পারভেজ বলেন, পবিত্র ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জিহাদিরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। সারা বিশ্বে নিরীহ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, পুরো দুনিয়া আজ এই মরণব্যাধির ভয়ে আতঙ্কিত। অথচ যারা এর মদদদাতা, যারা পেছনে বসে এসবের কলকাঠি নাড়ছে, তারা যুগের পর যুগ থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ধর্মের নামে নিরীহ মানুষ হত্যা করে কাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে তারা? নাটকের মধ্য দিয়ে সেই প্রশ্নের গভীরে ঢোকার ও সন্ত্রাসবাদের শিকড় উপড়ে ফেলার প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে। নাটকে রেনুলতা চরিত্রে সুমী ইসলাম, জাহিদ ওরফে জিহাদ জাঈদী চরিত্রে শওকত আলী মনসুর, ইন্সপেক্টর আরমান চরিত্রে আবুল হোসেন খোকন ও হিমেশ চন্দ্র চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাজহারুল হক। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন অধরা, কানিজ সুলতানা, মিরাজ আহমেদ, শাহরিয়ার খান সাদ, রুবেল চৌধুরী ও মোহাম্মদ রাসেল।স্টুডিও থিয়েটারে ‘রং লেগেছে’বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটারে গতকাল দর্শক দেখেছেন নাট্যদল পালাকারের নতুন নাটক রোমান্টিক কমেডি প্রযোজনা ‘রং লেগেছে’। ১৮৯০ সালের ২৪ ডিসেম্বর কলকাতার মঞ্চে ‘পৌরাণিক পঞ্চরং’ শিরোনামে নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ করে নাট্যদল দি রয়েল বেঙ্গল থিয়েটার। সেই মঞ্চায়নের ১৩০ বছর পর নতুন রূপে নাটকটি মঞ্চে এনেছে পালাকার। নাটকটির নাট্য নবায়নের পাশাপাশি পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন আমিনুর রহমান। গতকাল বিকেল পাঁচটায় এবং সন্ধ্যা সাতটায় পরপর দুটি প্রদর্শনী হয় ‘রং লেগেছে’ নাটকের। আজ শনিবার একই সূচিতে নাটকের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রদর্শনী হবে নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে।‘হ্যাপি ডেজ’ নাটকের জোড়া প্রদর্শনীজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সাবেক ছাত্র সুমন এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা সংকটজনক। তাঁর চিকিৎসা সহায়তায় গতকাল বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘হ্যাপি ডেজ’। ফরাসি দূতাবাস প্রযোজিত মণিপুরি থিয়েটার ও হৃৎ মঞ্চ পরিবেশিত স্যামুয়েল বেকেটের লেখা ‘হ্যাপি ডেজ’ নাটকে অভিনয় করেছেন জ্যোতি সিনহা। নির্দেশনা দিয়েছেন শুভাশিস সিনহা। |
ভারতে এক সমীক্ষায় তারা বলেছেন ৬০ বছরের উর্দ্ধে তাদের জনসংখ্যা শতকরা ১৯ ভাগ। যেহেতু ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ূ কিছু বেশি সেহেতু বাংলাদেশের ষাটোর্দ্ধ জনসংখ্যা ২০ ভাগ হওয়া স্বাভাবিক। অর্থ্যাৎ আমাদের দেশের ৫ ভাগের ১ ভাগ মানুষ জ্যেষ্ঠ নাগরিক। সমাজ এবং সরকারকে এদের জন্য ভাবতেই হবে।প্রবীণদের অবদান সমাজ ও রাষ্ট্রে কতটা তা আমাদের ভাবতে হবে। আসলে না রাষ্ট্র, না সমাজ এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে। পেছন ফিরে তাকালে দেখবেন এরা একটি পরিবার গড়েছেন অন্তত: ২০ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত, যখন তাদের বয়স ছিল, ভালো স্বাস্থ্য ছিল, তাদের চোখে স্বপ্ন ছিল, সন্তান-সন্ততি গড়ে তুলেছেন, প্রাণপণ পরিশ্রম করেছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন।প্রবীণদের সমস্যা:মানুষ যেকোনো সময় রোগাক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু ৬০ পার হলেই তাদের কতগুলো মারাত্বক ব্যাধি আক্রমণ করতে পারে। যেমন: ডায়াবেটিসের বিভিন্ন জটিলতা, হৃদরোগ, মস্তিষ্ক, কিডনী ও লিভারের জটিলতা, নার্ভের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, অর্ধাঙ্গ রোগ। এগুলো বয়স্কদের মধ্যে কম বয়সের তুলনায় ১৫/২০ গুণ বেশি। অথচ তাদের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য। একদিকে ওষুধের দাম অন্যদিকে পথ্যের দুর্মূল্য এবং মাঝে মাঝে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং বার বার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়ার খরচ, সবমিলে বৃদ্ধদের চরম দুরাবস্থা।বৃদ্ধদের প্রায়ই একাকীত্বের অভিশাপে ভূগতে হয়। প্রায়ই জীবনসঙ্গী একজন আগেই চলে যান এবং ছেলে-মেয়ে তাদের ভবিষ্যতের অনুসন্ধানে দেশে বা বিদেশে কাজ করতে বাধ্য হয়। একাকীত্বের সঙ্গে যুক্ত হয় বিষণœতা, যার জন্য চিকিৎসা দরকার। এই সমস্যাগুলোর সমাধান মোটেই সহজ নয়। কিন্তু উন্নতদেশগুলোতে সমাজ ও রাষ্ট্র এই দায়িত্ব নেয়। আমরা তো উন্নত দেশের দিকে দ্রত এগিয়ে যাচ্ছি, তা হলে আমরা এ দায়িত্ব নেব না কেনো?ভারতে ব্যক্তিগত আয়করের ব্যাপারে ৩টি শ্রেণী বিভাগ করা হয়েছে:এক) উপার্জনশীল তরুণ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত। তাদের এক ধরণের কর দিতে হয়, যেটা রাষ্ট্র নির্ধারণ করে। এরা প্রায়ই রোগমুক্ত, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং তাদের কর্মক্ষমতা এবং উপার্জন সবচাইতে বেশি। সুতরাং তাদের কর বেশি দিতে হবে।দুই) যাদের বয়স ৬০ থেকে ৮০, এদের বলা হয় সিনিয়র সিটিজেন বা জ্যেষ্ঠ নাগরিক। তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। প্রায়ই একাকী, নিসঙ্গ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, দুর্বল অথচ তারাই সমাজে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছেন কিছুদিন আগে পর্যন্ত। তখন তাদের বাড়তি খরচ, ওষুধ, পথ্য, ডাক্তারের ভিজিট এবং হাসপাতালে ভর্তি হলে তার জন্য বিরাট খরচ। এ সব বাস্তবতা বিবেচনা করে ভারত সরকার তাদের অনেক কর মওকুফ করেছেন।তিন) ৮০ বছর বয়সের উর্দ্ধে: তাদেরকে তৃতীয় গ্রæপে ধরা হয়েছে। যাদের বলা হয় সুপার সিনিয়র সিটিজেন বা অতি জ্যেষ্ঠ নাগরিক। এদের সমস্যা আরো বেশি, এরা আরো রুগ্ণ, আরো বিষণœ। অথচ তাদের অনেককেই জীবন সংগ্রামের জন্য কাজ করতে হয়। এই বিবেচনায় ভারত সরকার তাদের সবচাইতে বেশি কর অবকাশ দিয়েছেন।আমরা কি করতে পারি?অন্য দেশের যা কিছু ভালো তা অনুসরণ করতে কোনো লজ্জা নেই। ভালো জিনিসকেই তো অনুসরণ করতে হয়। জ্যেষ্ঠ নাগরিক এবং অতি জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের করারোপের ব্যাপারে সামাজিক সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে ভারত সরকার যে সহানুভূতিশীল এবং দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিয়েছে, আমাদের বাজেটে যদি তার প্রতিফলন ঘটানো যায়, তা হলে সেটা হবে সত্যিকারের সমাজবান্ধব ও দায়িত্বশীলতার পরিচয়। বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ ও অতি জ্যেষ্ঠ পেশাদার নাগরিকদের কথা আমাদের স্মরণ রাখা উচিত। এই ক্যাটাগরির শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজ্ঞ, শিল্পী, প্রকৌশলীসহ পেশাজীবীদের কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে। যৌবনে এবং পরবর্ত্তী পর্যায়ে দিনের পর দিন সমাজ ও রাষ্ট্রকে তাঁরা যা দিয়েছেন জীবন হেমন্তে তার প্রতিদান কি তারা আশা করতে পারেন না? জীবনের পড়ন্ত বেলায় সরকার তাঁদের বাকি জীবনটাকে সহজ ও সুন্দর করার জন্য জাতীয় বাজেটে শতকরা ২০ জন মানুষের স্বপক্ষে একটা নতুন ধরণের অবস্থান নিতে পারেন না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী?লেখক: অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি |
বার্মিংহামে কাল ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ভারত। সেমিফাইনালে ওঠার সমীকরণ মাথায় রেখে এ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সমর্থন দেবেন পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীঅস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে আগেই। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের ওঠাও এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। কাড়াকাড়ি চলছে টেবিলের চতুর্থ স্থানটি নিয়ে। চতুর্থ দল হিসেবে সেমিতে ওঠার দৌড়ে তিন দল—বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কারও সুযোগ আছে তবে কাল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে কঠিন সমীকরণ আরও কঠিন করে ফেলেছে দলটি। চাপে পড়লে বাঘ ধান নাও খেতে পারে। তবে কোণঠাসা অবস্থার কারণে পাকিস্তান সমর্থকেরা এখন ভারত সমর্থকদের চেয়েও বেশি করে দলটার জয় প্রার্থনা করবে!সেটি পাকিস্তানের দৃষ্টিকোণ থেকে আর এ সুযোগটা করে দিয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিল। বার্মিংহামের এজবাস্টনে কাল ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। এ ম্যাচে ভারত জিতলে পাকিস্তানের সেমিফাইনালে ওঠার আশা আরও উজ্জ্বল হবে (আফগানিস্তানের বিপক্ষে দলটি আজ জিতবে তা ধরে নিয়ে)। ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত টেবিলের চারে ইংল্যান্ড। তাদের সমান ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে পাকিস্তান। এ দুটি দলের মাঝে বাংলাদেশ (৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট)। রানরেটে পাকিস্তানের (-০.৯৭৬) চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ (-০.১৩৩)।অর্থাৎ সেমিতে ওঠার দৌড়ে ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ হেরে যত পিছিয়ে পড়বে পাকিস্তানের ততই লাভ। আর তাই বার্মিংহামে কাল বিরাট কোহলির দলের হয়ে গলা ফাটাতে দেখা যাবে পাকিস্তানের অনেক সমর্থক। ভারতের জাতীয় পতাকাও হয়তো দেখা যাবে অনেকের হাতে। দেশের স্বার্থে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের অধ্যায়টা তাদের আপাতত কদিন ভুলে থাকতে হবে। সেটি শুধু ইংল্যান্ড-ভারত ম্যাচে নয় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ম্যাচেও দেখা যাবে।পরিস্থিতি এমন হতে পারে তা ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচেই আন্দাজ করে নিয়েছিলেন পাকিস্তানের অনেক সমর্থক। দেশটির স্বনামধন্য ক্রিকেটপ্রেমী চৌধুরী আবদুল জলিল, যিনি পাকিস্তানের ক্রিকেটে ‘জলিল চাচা’ নামে পরিচিত—ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি কোহলিদের সমর্থন দেওয়ার কথাই বললেন। বৃহস্পতিবার ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে সংবাদমাধ্যমকে চৌধুরী জলিল বলেন, ‘আমি চাই ভারত ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিক, তাতে সেমিতে উঠতে সুবিধা হবে পাকিস্তানের।’লাহোর থেকে ৩০ বছর আগে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমানো পাকিস্তানি সমর্থক গুলাম খানও কাল ভারতকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘ভারতকে হারানো উচিত ইংল্যান্ডের। আশা করি এটাই ঘটবে।’ |
কিছুদিন আগে সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার বাসিত আলী বলেছিলেন, পাকিস্তানকে বিশ্বকাপের সেমিতে উঠতে না দেওয়ার জন্য ভারত ইচ্ছে করে বাংলাদেশের কাছে হেরে যাবে। এবার পাকিস্তানের আরেক সাবেক ক্রিকেটার বাসিতের সঙ্গে সুর মেলালেন!এমন আশঙ্কা করেছিলেন সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেট তারকা বাসিত আলী। এবার তাঁর সঙ্গে একমত হয়েছেন আরেক সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার সিকান্দার বখত। পাকিস্তান যাতে কোনোভাবেই সেমিতে উঠতে না পারে, সে জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাবে ভারত। দরকার হলে নাকি ইচ্ছে করে শেষ ম্যাচগুলোও হেরে যাবে! এমনটাই মনে করছেন সিকান্দার।পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেলকে সিকান্দার বলেছেন, ‘ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সব সময়ই শত্রুতা করে। আমাদের ২০১৯ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে ফেলতে ভারত যেকোনো কিছু করতেও পারে। ওদের একটা ম্যাচ জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত। এরপর ওদের নজর থাকবে শেষ দুই ম্যাচের ওপর, যেখানে ওরা খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ওরা যদি দেখে কাউকে জেতানোর মাধ্যমে যদি পাকিস্তান বাদ পড়ে, তাহলে ওরা এই শয়তানিটা করতে পারে। এ ধরনের কাজ ভারত করে থাকে।’আরেক টিভি চ্যানেলকে বাসিত আলী বলেছিলেন, ‘আশা তো করতেই চাই, মানুষ আশাতেই বাঁচে। কিন্তু আমার একটা ভয় হচ্ছে, যেটা যেন সত্যি না হয়। ভয়টা হলো, পাকিস্তান সেমিফাইনালে যাক এটা ভারত কখনোই চাইবে না। ভারত পাঁচটা ম্যাচ খেলেছে। ওদের শেষ দুটি ম্যাচ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ওদের কাছেই থাকবে নিয়ন্ত্রণ। কেউ তো আর বলবে না যে জেনেবুঝে ইচ্ছা করে হেরেছে। ওরা এমনভাবে খেলবে, কেউ বুঝতেই পারবে না কী হয়েছে।’বিশ্বকাপে ভারত এখনো অপরাজিত, দুর্দান্ত ফর্মে আছে কোহলির দল। হাতে তিন ম্যাচ রেখেই সেমিফাইনালে যাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে। ছয় ম্যাচ খেলে পাঁচটিতে জিতেছে, একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত। বাকি তিন ম্যাচের একটি জিতলে সেমিফাইনালে ওঠা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে। আগামীকাল ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ভারত। এই ম্যাচ জিতলেই তাদের শেষ চার নিশ্চিত। বাসিত-সিকান্দারদের আশঙ্কা, ভারত তখনই সুযোগটা নেবে।ভারত শুধু বৈরী মনোভাব থেকে নয়; কৌশলগত কারণেও ভারত এমনটা করতে পারে বলে মনে করেন বাসিত আলী। তার উদাহরণ দিতে গিয়ে ১৯৯২ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড পাকিস্তানের বিপক্ষে ইচ্ছে করে ম্যাচ হেরেছিল বলে মন্তব্যও করেছেন বাসিত, ‘ক্রিকেট অননুমেয় খেলা কিংবা এখানে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে—এসব ফালতু কথা। ১৯৯২ সালে কী হয়েছিল? নিউজিল্যান্ড জেনেবুঝে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল, যেন ওরা সেমিফাইনালটা নিজেদের ভেন্যুতে খেলতে পারে। ইমরান খানকে জিজ্ঞেস করলেও সত্যিটা জানতে পারবেন।’ |
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির দায়ে এক শিক্ষকের তিন মাসের কারাদণ্ড হয়েছে। আজ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে এ কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষকের নাম বিপুল কুমার প্রামাণিক। তিনি ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বিপুল কুমারের সাজার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের বদলি ও ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক বিপুল প্রায়ই ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করতেন। এ ছাড়া ছাত্রীদের সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কথাবার্তা বলতেন। এ নিয়ে এর আগে অভিভাবকদের কয়েকজন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেন। এতে বিপুলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তবে সে সময় বিপুলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ শনিবার সকালে বিদ্যালয়ে ক্লাস চলার সময় বিপুল পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন। ওই ছাত্রী কাঁদতে কাঁদতে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। এরপর বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে বিপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা। অবস্থা বেগতিক দেখে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে দেন সহকর্মীরা। বিক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের ঘিরে রেখে স্লোগান দেন। এ সময় অন্য শিক্ষকেরাও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্ত শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় নেওয়ার চেষ্টা চালায়। তবে ক্ষুব্ধ লোকজনের বাধায় পুলিশ ব্যর্থ হয়। লোকজন ঘটনাস্থলেই অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে অনড় থাকেন।ভ্রাম্যমাণ আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেলা দেড়টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিবেশ শান্ত হয়। তবে লোকজন বিপুলের শাস্তির দাবিতে অনড় থাকেন। এ সময় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির প্রায় অর্ধডজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা ইউএনওর কাছে শিক্ষক বিপুলের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ দেন। পরে ইউএনও জাকিউল ইসলাম সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান। আদালতে অভিযুক্ত শিক্ষক নিজের অপরাধ স্বীকার করলে তাঁকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি ও পরিচালনা কমিটি বাতিলের আদেশ দেন। এই আদেশের পর ক্ষুব্ধ লোকজন অবরোধ প্রত্যাহার করেন। পরে পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও বাগমারার ইউএনও জাকিউল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, খাতা দেখানোর নামে ছাত্রীদের কক্ষে ডেকে নিয়ে শিক্ষক বিপুল দীর্ঘদিন ধরে শ্লীলতাহানি করে আসছিলেন। ছাত্রীরা তাদের মাকে বিষয়টি জানিয়েছিল। আদালতের কাছে নির্যাতিত শিশু ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকেরা এসব অভিযোগ দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে সাজা দেওয়া হয়েছে।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা বলেন, তিনি সম্প্রতি বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। এমন অভিযোগের পর মাসখানেক আগে বিপুলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল।বাগমারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ যথাসময়ে ঘটনাস্থলে না পৌঁছালে অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাবনা ছিল। পুলিশ অভিযুক্ত সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। |
আগামীকালের ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে ভারতকে দারুণ এক খোঁচাই মেরেছেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক কেভিন পিটারসেন।পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই আলোচনায় আছেন কেভিন পিটারসেন। নিত্যনতুন টুইট করে নিজের মতামত জানাতে কখনো দ্বিধা করেন না। এবার ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে আরেকটি মজার টুইট করেছেন সাবেক এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। খালি চোখে সেটিকে নিতান্তই সাধারণ একটি টুইট মনে হতে পারে, কিন্তু আদতে টুইটের মাধ্যমে ভারতকে খোঁচাই দিয়েছেন পিটারসেন।২০১৯ বিশ্বকাপের আগে তরুণ সেনসেশন ঋষভ পন্তকে দলে চেয়ে নিজেদের মত জানিয়েছিলেন অনেক বিশেষজ্ঞই। সে দলে ছিলেন পিটারসেনও। কিন্তু ভারতের নির্বাচকেরা সে পথে হাঁটেননি, বেছে নিয়েছিলেন বিজয় শংকরকে। কিন্তু বিশ্বকাপের মাঝপথে ওপেনার শিখর ধাওয়ান চোটে পড়লে বিশ্বকাপের দলে অন্তর্ভুক্ত হন ঋষভ।ধাওয়ান ছিটকে যাওয়ার পরপরই গত ১১ জুন টুইট করে ঋষভকে দলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন পিটারসেন। টুইটে বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছে শিখর। পন্তকে যত দ্রুত সম্ভব ইংল্যান্ডের উড়োজাহাজে তোলার ব্যবস্থা করা হোক। কেএল রাহুল ওপেনিংয়ে নামবে, আর পন্ত খেলবে চারে।’কিন্তু আগামীকালের ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে সুর একদমই পাল্টে ফেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ খেলা পিটারসেন। ঋষভ নয়, বরং চার নম্বরে বিজয় শংকরকেই চাইছেন তিনি! ভারতের কোচ ও অধিনায়ককে উদ্দেশ্য করে আজ এক টুইটে তিনি বলেছেন, ‘প্রিয় বিরাট (কোহলি) ও রবি (শাস্ত্রী), দয়া করে বিজয় শংকরকে দল থেকে বাদ দিয়ো না। আমার মনে হচ্ছে, সে ধীরে ধীরে নিজের সেরাটা দেখাতে শুরু করেছে। আগামীকালের ম্যাচটাও সেই তোমাদের জেতাবে। পন্তের চিন্তা মাথাতেই এনো না। বিশ্বকাপ দল ঢোকার আগে পন্তের আরও অন্তত তিন সপ্তাহের প্রস্তুতি দরকার।’আগামীকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের ম্যাচ। সে ম্যাচে ভারত যত দুর্বল দল নামায় ইংল্যান্ডের জন্য তত ভালো। এ কারণেই পিটারসেন হঠাৎ করেই ভারতে দলে শংকরকে চাচ্ছেন, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং ভারতকে দারুণ এক খোঁচাই দিয়েছেন এই টুইটের মাধ্যমে। দল নির্বাচনের সময় ভারতের প্রধান নির্বাচক বিজয় শংকরকে দলে নেওয়ার যৌক্তিকতা বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ত্রিমাত্রিক’ খেলোয়াড় হওয়ার কারণেই শংকরকে দলে নেওয়া। কিন্তু বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত নিজের প্রতিভার প্রমাণ এখনো দিতে পারেননি শংকর। বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত তিনটি ম্যাচ খেলেছেন শংকর। কোনো ম্যাচেই ব্যাটে বলে কিছু করে দেখাতে পারেননি। তিন ম্যাচ মিলিয়ে রান করেছেন মাত্র ৫৮। এমন না যে শেষ দিকে নামছেন বলে রান করার সুযোগ পাচ্ছেন না। পাকিস্তান ম্যাচ বাদে বাকি দুই ম্যাচেই চারে নেমেছেন, কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারেননি একটিতেও।বল হাতেও নিজের কার্যকারিতা বোঝাতে পারেননি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ উইকেট পেয়েছিলেন, বাকি দুই ম্যাচে তাঁর হাতে বলই দেননি অধিনায়ক কোহলি! যে আশা নিয়ে শংকরকে দলে নিয়েছিল ভারত, সেটি যে এখনো পর্যন্ত পূরণ হয়নি, সেটি তাঁর পারফরম্যান্সেই পরিষ্কার। অন্যদিকে ঋষভকে ভাবা হচ্ছে ভবিষ্যতের তারকা। টানা দুই মৌসুম আইপিএল মাতিয়েছেন, ইংল্যান্ডে এসে অভিষেক টেস্ট সিরিজে করেছিলেন দারুণ একটি সেঞ্চুরিও। চারে সুযোগ পেলে ঋষভ যে বড় ইনিংস খেলতে সক্ষম, সেটি তাই ভালোই জানা আছে পিটারসেনের। আর সে কারণেই ভারতের দুর্বল জায়গা নিয়ে এমনভাবে খোঁচা দিলেন পিটারসেন! |
স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় আমরা কতটা নিরাপদ? প্রশ্ন অনেকটা সোজাসাপ্টা হলেও উত্তরটা বেশ জটিল। উন্নত জীবন ও নিরাপদ কর্মসংস্থানের আশায় পরিবার–পরিজন ছেড়ে প্রবাসীদের দূরদেশে বসবাস। কিন্তু এই প্রবাস জীবনেও ইদানীং দেখা যাচ্ছে নানা সমস্যা। যেমন কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রায়ই আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। হাইজ্যাক, ডাকাতি ও হেট ক্রাইমসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হয়ে জীবন হারানো বাংলাদেশির সংখ্যাও কম নয়।মিশিগান অঙ্গরাজ্যেও দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন চারজন বাংলাদেশি ট্যাক্সিক্যাবের চালক। সর্বশেষ গত ২২ মে কর্মরত থাকা অবস্থায় ক্যাবচালক জয়নুল ইসলাম প্রাণ হারান। তখন ছিল রমজান মাস। তিনি ইফতার করে ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে কাজে বেরিয়ে কর্মরত অবস্থায় হামলার শিকার হন। সাত সন্তানের বাবা জয়নুল বড় এক পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি এবং কমিউনিটিতে বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। ডেট্রয়েট নগরীর স্থানীয় গণমাধ্যম ফলাও করে এ সংবাদ প্রচার করে।এ ঘটনার পর বাংলাদেশ কমিউনিটির বেশ কয়েকটি সংগঠন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ককাস (বিএডিসি) রোববার (২৩ জুন) বিকেলে মিশিগানের বাংলা টাউনখ্যাত হ্যামট্রামিক শহরের আলাউদ্দিন রেস্টুরেন্টে এক সভার আয়োজন করে।সভায় ক্যাবচালক জয়নুল ইসলাম স্মরণে আলোচনা ও ট্যাক্সিক্যাবের চালকদের সেফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময়ে হ্যামট্রামিক শহরের পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজ্য সরকার ও সিটি কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধি, বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা ও স্থানীয় ক্যাবচালকেরা অংশগ্রহণ করেন।প্রধান অতিথি ছিলেন মিশিগান ওয়েইন কাউন্টির শেরিফ বেনি নেপোলিয়ন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেট্রয়েট সিটির ডেপুটি পুলিশ চিফ টড বেটিসন, স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ আইজ্যাক রবিনসন, হ্যামট্রামিক সিটির সার্জেন্ট রবার্ট জর্জ।বক্তব্য দেন ডেট্রয়েট সিটি কাউন্সিলম্যান স্কট বেনসন, হ্যামট্রামিক সিটি কাউন্সিলম্যান এনাম মিয়া, সাবেক কাউন্সিলম্যান মোহাম্মদ হাসান। কমিউনিটির নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন হাজি নিজাম উদ্দিন, মাওলানা আবদুল লতিফ আজম, হাফিজ ফখরুল ইসলাম, মঞ্জুর খান, ট্যাক্সিক্যাবের চালকদের প্রতিনিধি আবদুল বাসেত, বাংলাদেশি ইয়ুথের পক্ষে তাজিম চৌধুরী ও শাহ আলী প্রমুখ।বক্তারা পুলিশ প্রশাসনের তড়িৎগতিতে সাহায্য–সহযোগিতায় এগিয়ে আসা এবং অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা দাবি করেন।মতবিনিময় চলার একপর্যায়ে ডেট্রয়েট সিটি পুলিশ ইনভেস্টিগেটিভ কর্মকর্তা ব্রায়েন ফন্টেইন ক্যাবচালকদের সেফটি ও সিকিউরিটির ওপর ৪০ মিনিটের এক বিশদ ট্রেনিং পরিচালনা করেন।এ ছাড়া আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাজমুল হাসান শাহীন সভার উদ্দেশ্য ও পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বর্তমান সভাপতি জুবারুল চৌধুরী খোকন। পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রাহাত খান। কমিউনিটির নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেন সহসভাপতি মুহিত মাহমুদ।আয়োজনের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন আয়োজক সংগঠনের সহসভাপতি সোলাইমান বাহার, ১১ ডিস্ট্রিক্ট কমিটির চেয়ারম্যান সাদেক রহমান, ১৩ ডিস্ট্রিক্ট কমিটির চেয়ারম্যান আজিজ চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক কাউসার দেওয়ান, নির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি আপেল খান ও জিয়া উদ্দিন, ১৪ ডিস্ট্রিক্ট কমিটির কো-চেয়ারম্যান নাঈম চৌধুরীসহ হাফিজ রহমান, মোহাম্মদ সোলায়মান ও সাবুল চৌধুরী।আলোচনা শেষে নাজমুল হাসান শাহীন ঘোষণা করেন বিএডিসি প্রবাসীদের সেফটি ও সিকিউরিটির ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে তিন মাস পরপর সংলাপের আয়োজন করবে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে রাস্তায় পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থাকরণ, মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধিকরণ ও ট্যাক্সিক্যাব গাড়িতে ক্যামেরা প্রতিস্থাপনের জন্য কাজ করবে। এ ছাড়া ওয়েইন কাউন্টি শেরিফ বেনি নেপোলিয়ের অফিসের সঙ্গে কমিউনিটি পুলিশিং প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করবে।সভায় বিএডিসির ট্রাস্ট্রি সিরাজুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন, উপদেষ্টা সৈয়দ ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও ইউসুফ কামাল, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আহাম্মদ ও ফয়সল চৌধুরীসহ মো. মনির, এনাম আহামেদ, আবদুল হালিম, মো. আলম, খাজা শাহাবুদ্দিন প্রমুখ। এ ছাড়া মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মোহাম্মদ উদ্দিন, খন্দকার শাফি আহাম্মদ, মহিন আলী, মোহাম্মদ আখতার হোসেন, আমজাদ, আইয়ুব খান, আবদুস শহীদ, মুসলিম আলী ও শহীদ মিয়াসহ ৫০ জন ট্যাক্সিক্যাবের চালক উপস্থিত ছিলেন। |
আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন না, তিনি স্বাধীনতার ঘোষণার পাঠক ছিলেন।আজ শনিবার কুষ্টিয়ায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন্তব্য করেন।হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণার তৃতীয় নম্বর পাঠক। এর বাইরে কিছু নেই। আর জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়ই বিশ্বাসী ছিলেন না।আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেইটাই ২৬ মার্চ সকাল থেকেই সারাদেশে আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতারা মাইকে প্রচার করেছিলেন। চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান প্রথম বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন। এরপর আবুল কাশেম সন্দীপ পাঠ করেছিলেন। ২৭ মার্চ আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় জনগণ জিয়াউর রহমানকে অনেকটা জোর করে ধরে নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করাতে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে নিয়ে যায়। লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানে যেসব বাঙ্গালী সৈন্য আছে তারা যেন পাকিস্থান ত্যাগ করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। জিয়াউর রহমান সেখানে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন।আইনশৃঙ্খলা অবনতি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের বিষয়ে আওযামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি আমলে সারা দেশে একযোগে বোমা হামলা হয়েছিল। সারা দেশে খুন-ধর্ষণ-রাহাজানি কি পর্যায়ে গিয়েছিল সেটা দেশের মানুষ দেখেছে। ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছিল। কারো কোন নিরাপত্তা ছিল না। তাই বর্তমানে দেশের মানুষ অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে ভাল আছে। বিএনপি নেতাদের মুখে আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা মানায় না।তিনি আরও বলেন, বিএনপি কখনই সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিল না। কারণ এই দলটির জন্মই হয়েছিল অবৈধভাবে, সামরিক ছাউনিতে। এবারও বিএনপি সংসদে এসে সংসদকে বিতর্কিত করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তারা সংসদে এসে অপ্রাসঙ্গিকভাবে মিথ্যাচার করে সংসদকে উত্তপ্ত ও অকার্যকর করার চেষ্টা করছে। |
তুরস্কের পর এবার ইরানের কাছে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এস-৪০০’ হস্তান্তর করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। ইতিমধ্যেই ইরান রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৩০০ গ্রহণ করেছে।রাশিয়ার সমরাস্ত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘রাশান ফেডারেল সার্ভিস অব মিলিটারি-টেকনিক্যাল কো-অপারেশন’র গণমাধ্যম বিভাগের একজন কর্মকর্তা দেশটির বার্তা সংস্থা স্পুটনিককে গতকাল শুক্রবার এ কথা বলেন। তবে মস্কো জানায়, ইরানের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়নি।রাশিয়ার ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা ইরানসহ অন্য দেশের কাছে এস-৪০০ সরবরাহ করার লক্ষ্যে আলোচনা করতে প্রস্তুত। বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ২০১৫ সালের ২০ জুন অনুমোদিত প্রস্তাবে ইরানের কাছে এস-৪০০ বিক্রির ব্যাপারে কোনও বিধিনিষেধ না থাকায় মস্কো এ বিষয়ে উদার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে।ইরান এরই মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আগের সংস্করণ এস-৩০০ গ্রহণ করেছে। রাশিয়ার এ কর্মকর্তা তার এ বক্তব্যে চার বছর আগে ইরানের পরমাণু সমঝোতা অনুমোদন করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া ২ হাজার ২৩১ নম্বর প্রস্তাবের প্রতি ইঙ্গিত করেন। ওই প্রস্তাবে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলা হলেও তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।এর আগে গত ৩০ মে সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ দাবি করেছিল, ইরান রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কেনার অনুরোধ জানালেও মস্কো তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু জুন মাসে রাশিয়ার একজন উপপ্রধানমন্ত্রী ব্লুমবার্গের ওই খবর নাকচ করে দেন।সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের কাছে রাশিয়ার এস-৪০০ ব্যবস্থা বিক্রি নিয়ে আঙ্কারার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে তীব্র টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন সরকার বিষয়টি নিয়ে তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিলেও আঙ্কারা সে হুমকি প্রত্যাখ্যান করেছে। |
কয়েক দিন আগে বলিউড তারকা আনুশকা শর্মা উড়াল দেন ইংল্যান্ডে, সেখানে তাঁর স্বামী বিরাট কোহলির নেতৃত্বে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলছে ভারত দল। দুজনই ইংল্যান্ডে আছেন, কিন্তু তাতে কী, তাঁদের একসঙ্গে থাকতে যে মানা। বিসিসিআইয়ের (বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন্ডিয়া) নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালীন কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১৫ দিন থাকতে পারবেন তাঁর স্ত্রী। আর তাই বিরাট ক্রিকেট খেলছেন, আর আনুশকা ব্র্যান্ডের ফটোশুট করছেন।লন্ডনে আনুশকার ফটোশুটের দিনগুলোতে বিরাট তাই ছুটে এসেছিলেন আনুশকার কাছে। তারপর ঘড়ি ধরে সময় কাটিয়ে দুজন আবার নিজেদের কাজে মন দিয়েছেন। আনুশকা শর্মা এখন বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে ব্যস্ত আছেন, আর কাজের ফাঁকে তিনি শহর ঘুরে দেখছেন। নিজের শহর মুম্বাইয়ে যে জীবন মেলে না, অচেনা–অজানা দূর পরবাসে এসে সেই জীবনের স্বাদ নিচ্ছেন।একজন সাধারণ পর্যটকের মতোই ট্রেনে চেপে ব্রাসেলস ঘুরছেন আনুশকা শর্মা। তারকা হওয়ার পর ক্ষণিকের জন্য সাধারণ মানুষের এই জীবনে নিশ্চয়ই খুব ভালো আছেন তিনি। আলো ঝলমলে রঙিন উজ্জ্বল জীবনের মাঝে সাদা–কালো এই জীবনটুকুও যেন অমূল্য। আর তাই নিজের একটা হাসিমুখের সাদা–কালো ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, হলিউডের প্রখ্যাত অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের উক্তি, ‘সুখী নারীরাই সবচেয়ে সুন্দর।’আনুশকার কাছে যখন সুন্দরী হওয়ার প্রথম শর্ত সুখী হওয়া, তখন বিরাট কোহলির কাছে আবার সৌন্দর্যের সংজ্ঞা ভিন্ন। যে যাকে ভালোবাসে, সে তাঁর কাছে সবচেয়ে সুন্দর, সবার চেয়ে সুন্দর। বিরাট কোহলি আনুশকা শর্মাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। তাই বিরাটের কাছে আনুশকাই সবচেয়ে সুন্দরী। আর এ জন্যই আনুশকা শর্মাকে নিয়ে ইনস্টাগ্রামে বিরাট কোহলি লিখেছেন, ‘তুমি সব সময় সবচেয়ে সুন্দর।’এর মানে হলো, সুন্দরী হওয়ার জন্য আনুশকার সুখী হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। আনুশকা যদি মন খারাপ করে বসে থাকেন, তবুও তিনি বিরাটের চোখে সবচেয়ে সুন্দরী।অন্যদিকে লন্ডনে গিয়ে আনুশকা শর্মা যোগ দিয়েছেন মৃৎশিল্প তৈরির ক্লাসে। নিয়মিত ক্লাসও করেছেন। তারপর আবার দৌড়েছেন ব্রাসেলসে, শুটিংয়ে। এর আগে ‘সুঁই ধাগা’ ছবির জন্য তিনি সেলাই মেশিন চালানো শিখেছিলেন। তবে এটা নাকি স্রেফ শখের বশেই শিখেছেন তিনি। সিনেমার চরিত্রের জন্য না। যদিও ‘জিরো’র পর নতুন কোনো ছবিতে তাঁর যুক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে শোনা যাচ্ছে, এরপর নাকি আনুশকাকে বড় পর্দায় দেখা যাবে একজন পুলিশের চরিত্রে। যাহোক, ব্রাসেলসের দিনগুলোতে শুটিং শেষে আনুশকা যাবেন বিরাটের কাছে। বিশ্বকাপের শেষ দিনগুলোতে বিরাট কোহলিকে সঙ্গ দেবেন আনুশকা শর্মা। আনুশকার খুব ইচ্ছা, এ বছর তিনি তাঁর স্বামীর হাতে দেখবেন বিশ্বকাপ। সবকিছু ঠিক থাকলে ইংল্যান্ডের মাঠে নতুন করে লেখা হতে পারে ভারতের ক্রিকেট আর বলিউডের প্রেমকাব্য। আবারও ইংল্যান্ডের বাতাস আনুশকার কাছে বয়ে নিয়ে যেতে পারে মাঠ থেকে ছুড়ে দেওয়া কোহলির উড়ন্ত চুমু। |
৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৭ রান করেছে আফগানিস্তানইয়ান বিশপ বলেছেন ছবির মতো সুন্দর মাঠ। উইকেটকেও সুন্দর বলেছেন। আরও বলেছেন, দিন যত এগোবে, ব্যাট করা তত সহজ হবে। সোজা বাংলায় টসে জিতে বোলিং নেওয়াটাই ভালো। কিন্তু আফগান অধিনায়ক গুলবদিন নাইব ওসবে কান দিলেন না। মুদ্রা নিক্ষেপের পর ব্যাটিংই বেছে নিলেন।ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিজেই সঠিক প্রমাণ করতে পারেননি গুলবদিন নাইব। তাঁর পরে নামা বাকিরাও খুব একটা ব্যতিক্রম কিছু করেননি। একমাত্র আসগর আফগানই যা একটু লড়াইয়ের চেষ্টা দেখিয়েছেন। আফগানের বিদায়ের পর আফগানিস্তান ব্যাটিংয়েও ধস নেমেছে। নজিবুল্লাহ জাদরানের সুবাদে দুই শ পেরোনো দলটি ৫০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে ২২৭ রান তুলেছে।বাংলাদেশের বিপক্ষে টসে জিতেও ফিল্ডিং নিয়েছিল আফগানিস্তান। সে ম্যাচে আগে ব্যাটিং নেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত ছিল। আজ সেটার খেসারত দিতেই কি না ব্যাটিং নিয়েছেন নাইব। দ্রুত রান তুলে নিজেকে সঠিক প্রমাণ চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু পঞ্চম ওভারেই বিদায় নিয়েছেন নাইব (১২ বলে ১৫)। শাহিন আফ্রিদির পরের বলেই বিদায় নিলেন হাশমতউল্লাহ শহীদি (০)। ২৭ রানে ২ উইকেট হারানো আফগানরা তৃতীয় উইকেট হারাল ৫৭ রানে। দলের রান তোলার পুরো দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া রহমত (৪৩ বলে ৩৫ রান) ফিরেছেন ইমাদ ওয়াসিমের স্পিন বুঝতে না পেরে।অন্যপ্রান্তে টেস্ট মেজাজে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইকরাম আলীখিল। তাঁকে ওভাবেই থাকতে দিয়ে দ্রুত রান তুলতে লাগলেন আসগর আফগান। ৬৪ রানের জুটিতে ৪২ রানই ছিল তাঁর। সেটাও এসেছে মাত্র ৩৫ বলে। শাদাব খানকে এগিয়ে এসে ছক্কা মারতে গিয়ে বোল্ড হন আফগান (১২১/৪)। স্কোরে আর ৪ রান যোগ হতেই বিদায় আলীখিল। তার আগেই একটা কীর্তি হয়েছে এই উইকেটরক্ষকের। ২০১৯ বিশ্বকাপে পঞ্চাশোর্ধ্ব বল খেলে তাঁর চেয়ে কম স্ট্রাইক রেট (৩৬.৩৬) নেই আর কারও! ৬৬ বলে ২৪ রান করেছেন আলীখিল।প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে আবার ইনিংস মেরামতে বনামতে হয়েছে আফগানিস্তানকে। কিন্তু মোহাম্মদ নবীর ধীর গতির ইনিংসটি দলের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে উল্টো। ৩৩ বলে ১৬ রান করে নবী আউট হয়েছেন ৩৭তম ওভারে। নজিবউল্লাহ জাদরান একাই চেষ্টা করেছেন, কিন্তু আফগান ইনিংস কখনোই গতি পায়নি। আটে নামা সামিউল্লাহ শিনোওয়ারিও যে নবীর পথেই হেঁটেছেন। ৪৫তম ওভারে গিয়ে দুই শ পেরিয়েছে আফগানিস্তান। পরের বলেই আউট হয়ে গেছেন নজিবুল্লাহ। ৫৪ বলে ৪২ রান করে শাহিনের তৃতীয় শিকার হয়েছেন নজিব। পরের ওভারেই শাহিনকে চতুর্থবারের মতো উদ্যাপন করার সুযোগ করে দিয়েছেন রশিদ খান।শেষ দিকে দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করেননি শিনোয়ারি। দশ ও এগারোতে নামা ব্যাটসম্যানদেরই শেষ দুই ওভার খেলার দায়িত্ব দিয়েছেন ৩২ বলে ১৯ করা এই ব্যাটসম্যান। শেষ ১০ ওভারে ৩ উইকেটে মাত্র ৪৩ রান তুলেছে আফগানিস্তান |
দশম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ের সব আয়োজন শেষ। বিয়ে পড়ানোর জন্য চলে এসেছেন বটতলা বায়তুর নূর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা রফিকুল ইসলাম। এমন সময় মুঠোফোনে খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে এসে বাল্যবিয়ে ভেঙে দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার।গতকাল শুক্রবার রাতে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় বাল্যবিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান পাশা। এ ঘটনায় বরের এক মাসের কারাদণ্ড হয়েছে।ওসি শাহজাহান পাশা বলেন, উপজেলার রাব্বী ইসলাম সোহাগের (২২) সঙ্গে বিয়ের আয়োজন চলছিল দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর। মুঠোফোনের মাধ্যমে এই বাল্যবিয়ের খবর পান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিয়ে ভেঙে দেন। বর, কনে ও উভয় পরিবারকে উপজেলা পরিষদে তাঁর কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। রাত ৯টায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বরের এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। |
এক মাসের অনুশীলনের জন্য বাংলাদেশের চার কিশোর ফুটবলার এখন ব্রাজিলে। সেখানে সোসিয়াদে স্পোরটিভা ডো গামা ক্লাবের অনূর্ধ্ব-২০ দলের সঙ্গে অনুশীলন করছে তারা। বাংলাদেশের এক ফুটবলারের বলের ওপর দক্ষতা দেখে পছন্দ করেছেন ক্লাবটির কোচ।ব্রাজিলিয়ান ফুটবল, জোগো বোনিতো। বলের ওপর নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ, দৃষ্টিনন্দন ড্রিবলিং করে সাপের মতো এঁকে বেকে প্রতিপক্ষের নিরাপত্তা ব্যূহ গলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া, চোখ ধাঁধানো পাস আর দৃষ্টিনন্দন সব গোল। এই সৌরভে বুঁদ হয়ে থাকে পুরো বিশ্ব।ব্রাজিলিয়ান ফুটবল সমর্থকদের বেশ বড় একটা অংশ আছে বাংলাদেশেও। ব্রাজিলের সঙ্গে দেশের ফুটবলের সম্পর্কটা এই ‘বড় সমর্থক’ হওয়া পর্যন্তই! কেননা দুই দেশের মাঠের ফুটবলের পার্থক্যটা আকাশ-পাতাল। তবে আশার কথা হলো ব্রাজিলের এক কোচের পছন্দের তালিকায় আছে বাংলাদেশের এক কিশোর ফুটবলারের নাম।ব্রাজিল সরকারের সহায়তায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে এক মাসের অনুশীলনের জন্য বাংলাদেশের চার কিশোর ফুটবলার এখন ব্রাজিলে। সেই চার ভাগ্যবান মেধাবী কিশোর ফুটবলার জগেন লাকরা, লতিফুর রহমান নাহিদ, ওমর ফারুক মিঠু ও নাজমুল আকন্দ। প্রথম দুজন অনূর্ধ্ব-১৫ এবং বাকি দুজন অনূর্ধ্ব-১৭ বিভাগের। তবে তারা অনুশীলন করছে সোসিয়াদে স্পোরটিভা ডো গামা ক্লাবের অনূর্ধ্ব-২০ দলের সঙ্গে। ইতিমধ্যে দুই সেশন অনুশীলনে ঘামও ঝরিয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের অনুশীলনে গামা ক্লাব কোচের মন জয় করে নিয়েছে জগেন লাকরা।১৫ বছর বয়সী এই কিশোরের বলের ওপর দক্ষতা দেখে স্থানীয় কোচ সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন দলের সঙ্গে যাওয়া কোচ আব্দুর রাজ্জাক। ব্রাজিল থেকে প্রথম আলোকে রাজ্জাক শুনিয়েছেন ব্রাজিল কোচের সন্তুষ্টির কথা, ‘প্রথম দিনের অনুশীলনে পরিচয় পর্বের পর ওয়ার্ম আপের সঙ্গে শুধু ছোট গেম খেলানো হয়েছে। সেখানে আমাদের জগেনের স্কিল দেখে পছন্দ করেছেন গামা ক্লাবের কোচ। তবে আমাদের খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে তাঁর।’ স্থানীয় কোচের নাম নিশ্চিত না করতে পারলেও রাজ্জাকের ভাষ্য মতে ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-২১ দলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সে কোচের।কে এই জগেন লাকরা ? গত বছর অনুষ্ঠিত ‘ক্লিয়ার মেন স্কুল ফুটবল’-এ রাজশাহীর সোনাদিঘি স্কুলকে চ্যাম্পিয়ন করেছে জগেন। ৯ গোল করে হয়েছিল টুর্নামেন্টের সেরা গোলদাতা। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের হয়েও আলো ছড়িয়েছে ডেভেলপমেন্ট কাপ ফুটবলে। সেখানে তার দল রাজশাহী চ্যাম্পিয়ন না হলেও জগেন পায়ের ঝলক ঠিকই আলাদা করে নজর কেড়ে নিয়েছিল।গামা ক্লাবটি রাজধানী ব্রাসিলিয়ার পার্শ্ববর্তী জেলা ফেডারেল ডিস্ট্রিক্টে অবস্থিত। সেখানকার স্থানীয় লিগ খেলে থাকে তারা। ক্লাবটির নিজস্ব আবাসিক ব্যবস্থায় নয়, বাংলাদেশের ফুটবলারদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোটেল থেকে মাঠে যেতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় ব্যয় করতে হয় বলে জানিয়েছেন কোচ রাজ্জাক। |
গোপালগঞ্জ শহর ও মুকসুদপুরে আজ শনিবার পৃথক দুই সড়ক দুর্ঘটনায় মা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুজন।প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মুকসুদপুর উপজেলার ঢাকপাড় গ্রামের সালিনা বক্স উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এরশাদ খানের স্ত্রী শাওন বেগম (৩৫) ও তাঁর ছেলে সাকিব খান (৮) মুকসুদপুরের গেঁড়া খোলা এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক পার হচ্ছিলেন। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সেন্ট মার্টিন নামের একটি বাস তাদের ঘটনাস্থলে চাপা দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে প্রশাসনের অনুরোধে অবরোধ তুলে নেয় জনতা।ফরিদপুরের ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ঘাতক বাস ও বাসের ড্রাইভারকে আটক করেছে পুলিশ। আজ সকাল ১০টার দিকে প্রশাসনের অনুরোধে জনতা অবরোধ তুলে নেওয়ার পর সড়কে যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। মা ও ছেলের লাশ তাদের আত্মীয়স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।অন্যদিকে গোপালগঞ্জ শহরে ট্রলি চাপায় নার্গিস বেগম (২০) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তাঁর দেড় মাস বয়সী শিশুপুত্র মুস্তামিনসহ ২ জন আহত হয়েছে। আজ দুপুর ১২টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের গেটের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।নিহত নার্গিস বেগম বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার চরকুলিয়া গ্রামের সেলিম খানের স্ত্রী।গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ওই নারী তাঁর ছেলেকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় মাটিটানা ট্রলি তাদের বহনকারী অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে নার্গিস বেগম নিহত হন এবং তাঁর ছেলে ও ভ্যানচালক গুরুতর আহত হন। আহতদের গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। |
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বামপন্থী নেতা জ্যোতি বসুর নামে সিপিএমের হাতে গড়া জ্যোতি বসু ট্রাস্টের ৫ একর জমির দখল এবার ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ ২৩ বছর একটানা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু।গতকাল শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যর পৌরমন্ত্রী কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ওই জমি জ্যোতি বসু ট্রাস্টের নামে বুঝিয়ে দিতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। আর আগামী ৮ জুলাই জ্যোতি বসুর জন্মদিনের আগে ট্রাস্টের হাতে জমির দখল বুঝে দিতে নির্দেশ দেন মমতা।২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পর সিপিএম জ্যোতি বসুর নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করে। এ ট্রাস্টের জন্য তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার কলকাতার উপশহর রাজারহাটের নিউ টাউনে ৫ একর জমি বরাদ্দ করে। এই জমির ওপরই সিপিএম ‘জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ আ্যন্ড রিসার্চ’ নামে একটি ভবন তৈরির উদ্যোগ নেয়। বাম আমলের শেষের দিকে এই জমির মালিক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হিডকোকে (দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউজিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন) দুই দফায় ৪ কোটি ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫০ রুপি প্রদানও করে সিপিএম। ওই জমির রেজিস্ট্রিও হয়।কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যপাটে পালাবদল ঘটে। বামফ্রন্টকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার ক্ষমতায় আসার পর আটকে যায় ওই জমির সিপিএমকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া। ৮ বছর ধরে এই জমি হিডকোর কাছেই আছে।এবারের লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক পরাজয় ঘটে মমতার। আর উত্থান ঘটে বিজেপির। এই ফলাফলের পর মমতা বুঝতে পারেন তাঁর পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। আর শক্তিশালী হচ্ছে বিজেপির পায়ের তলার মাটি। মমতা আরও বুঝতে পারেন, বিজেপিকে রুখতে হলে বামদল এবং কংগ্রেসের প্রয়োজন এই রাজ্যের রাজনীতিতে। তাই মমতা গত বুধবার বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দিয়ে রাজ্যপালের ভাষণের ওপর তাঁর ধন্যবাদসূচক বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেন, বিজেপি রুখতে কংগ্রেস ও বামদলের সঙ্গে একসঙ্গে আন্দোলন করা উচিত।এ ঘটনার পর বামফ্রন্টও মনে করছে মমতার বোধদয় হয়েছে। এবারের লোকসভা নির্বাচন মমতাকে সেই পথই দেখিয়েছে। এরপর গতকাল শুক্রবার সিপিএমের তিন নেতা সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেব এবং অশোক ভট্টাচার্য জমি নিয়ে মমতার কাছে দরবার করতে যান। তাঁরা অভিযোগ তোলেন, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে রাজ্য সরকার তাঁদের জমির দখল ট্রাস্টকে বুঝে দিচ্ছে না। এরপরই মমতা পশ্চিমবঙ্গের পৌরমন্ত্রী কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে সিপিএমের প্রতিনিধিদের সামনেই নির্দেশ দেন, ৮ জুলাই জ্যোতি বসুর জন্মদিনের আগে এই জমি যাতে জ্যোতি বসু ট্রাস্টের নামে দখল দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা নিতে। এমনকি পৌরমন্ত্রীকে জ্যোতি বসু ট্রাস্টের জন্য বরাদ্দকৃত জমি যৌথভাবে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তবে হিডকো বলেছে, এই জমির ছোট্ট একটি অংশ নিয়ে মামলা চলছে। এ প্রসঙ্গে সিপিএম আগেই জানিয়েছিল, প্রয়োজনে ওই অংশটি আপাতত বাদ দিয়ে বাকি জমির দখল দিক রাজ্য সরকার তাদের। |
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ। আজ শনিবার ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি ওই প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য দেন।রওশন এরশাদ বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যেক দেশেই আছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলে বিত্তশালীরা বিনিয়োগ করবেন। না হলে টাকা পাচার হয়ে যাবে। এসব টাকা বিনিয়োগ হলে এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে কর্মসংস্থান বাড়বে।বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থ নেই। বেসরকারি খাত ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছে না। অথচ বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় চ্যালেঞ্জ হলো বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে, না হলে বৈষম্য কমবে না। এ জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে।অর্থবছর জুলাই থেকে না করে জানুয়ারি থেকে করার পরামর্শ দেন রওশন। তিনি বলেন, যখন অর্থবছর শুরু হয় তখন ভরা বর্ষা থাকে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত। তিনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া, অনলাইনে কেনাকাটায় কর প্রত্যাহার, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সাংসদদের মতামত নেওয়ার আহ্বান জানান।কৃষকদের জন্য প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, ধান বেশি হলো, কিন্তু কৃষকেরা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যেও কৃষকদের শতভাগ ভর্তুকি দেওয়া হয়। কৃষককে কেন ধান খেতে আগুন দিতে হলো, তিনি খাদ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর কাছে এর জবাব চান।বাজেটের ইতিবাচক দিকের প্রশংসা করে রওশন এরশাদ বলেন,এর আগে কখনো সংসদ সদস্যরা এত আগ্রহ ও উৎসাহ নিয়ে বক্তব্য দেননি। রাজস্ব খাতে ব্যাপক সংস্কার আনার পরামর্শ দিয়ে রওশন বলেন, ভ্যাট কাঠামো কার্যকর করার আগে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন।বিরোধীদলীয় নেতা এইচ এম এরশাদ অসুস্থ থাকায় তিনি বাজেট অধিবেশনে ছিলেন না। নিজের বক্তব্যে এরশাদের জন্য সবার কাছে দোয়া তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদ। |
পদ্মা সেতুতে ১৪ তম স্প্যান বসানো হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে স্প্যানটি বসানো হয়। ১৪ তম স্প্যান বসানোর পরই পদ্মা সেতু এখন ২ হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান হলো।নদীর মাওয়া প্রান্তে ১৫ ও ১৬ নম্বর খুঁটিতে ১৪ তম স্প্যানটি বিকেলে ৪টার দিকে বসানো হয়। এখন পর্যন্ত সেতুর জাজিরা প্রান্তে নয়টি, মাওয়া প্রান্তে একটি অস্থায়ী, তিনটি স্থায়ী ও নদীর মাঝে একটি স্প্যান বসানো হয়েছে।সেতু বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে জানান, ১৪ তম স্প্যানটি বসানোর নির্ধারিত দিন ছিল গত বৃহস্পতিবার। এ জন্য ওই দিন সকালে মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন দিয়ে ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারের কাছে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেদিন বসানো যায়নি। পরদিন খুঁটির কাছে ডুবো চরে আটকে যায় ক্রেনটি। এর পর নদী খননের কাজ শুরু হয়। শনিবার সকাল থেকে স্প্যানটি ওঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়।মো. হুমায়ূন কবির আরও বলেন, আজ (শনিবার) যে কোনো মূল্যে স্প্যানটি বসানোর জন্য বদ্ধপরিকর ছিলাম। এ নিয়ে চলতি বছরের ছয় মাসে আটটি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হলো।সবশেষ গত ২৫ মে ১৩ তম স্প্যানটি বসানো হয়েছিল। এদিন মাওয়া প্রান্তে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিয়ারের ওপর বসানো হয় এই স্প্যান। তখন সেতুর ১ হাজার ৯৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়।২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত বছরের ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। ২৯ জুন সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়। এ বছরের জানুয়ারি মাসে জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ শেষ স্প্যান বসে। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হয়। আর গত বছরের শেষ দিকে মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর একমাত্র স্প্যানটি বসানো হয়। এটি সপ্তম স্প্যান। এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিলারের ওপর অষ্টম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর গত ২২ মার্চ বসে নবম স্প্যানটি। ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের ওপর দশম স্প্যান, ২৩ এপ্রিল শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর ১১তম স্প্যান বসে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারের ওপর ১২ তম স্প্যান বসানো হয়েছিল। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার।মূল সেতুর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। দ্রুত কাজ এগিয়ে যাওয়ার কারণে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা আশা করছে, ২০২০ সালের মধ্যে পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে।পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুতে মোট ২৯৪টি পাইল রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ২৮৮টি পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৬টি পাইল বসানোর কাজ এ মাসেই শেষ হতে পারে। ২৯৪টি পাইলে থাকবে মোট ৪২টি খুঁটি। এতে ৪১ টি স্প্যান বসবে।দ্বিতল পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন।বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। |
বলিউড তারকা আমিশা প্যাটেল এক ভয়ংকর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। পুনে হাইওয়েতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই খবরের সঙ্গে আমিশা প্যাটেলের দুমড়ানো–মোচড়ানো গাড়ির একাধিক ছবিও ছিল। পরে জানা গেছে, খবরটি ভুয়া। আজ শনিবার তাঁকে নিয়ে আরেকটি খবর সামনে এসেছে। শোনা যাচ্ছে, আমিশা প্যাটেলকে নাকি শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা অজয় সিং। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই দুটি খবর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, আসলে কোনটা সত্যি?সম্প্রতি জানা গেছে, আমিশা প্যাটেলের বিরুদ্ধে আড়াই কোটি রুপি আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন অজয় সিং। তিনি অভিযোগে বলেছেন, ২০১৬ সালের নভেম্বরে রাচিতে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে আমিশার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এই বলিউড সুন্দরী অজয় সিংয়ের প্রতিষ্ঠান থেকে আড়াই কোটি রুপি নিয়েছেন। আমিশা প্যাটেল তা নিজের ছবি নির্মাণের কাজে ব্যয় করেন।অজয় সিং বলেন, ‘আমিশার সঙ্গে আমার একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের জুন মাসে তিনি আমাকে সুদসহ পুরো অর্থ ফেরত দেবেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে আমিশা তা ফেরত দেননি। একাধিকবার চাওয়ার পর আমাকে আড়াই কোটি রুপির একটা চেক দিয়েছেন। কিন্তু সেই চেক ছিল ভুয়া। এরপর আমিশা এবং তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার কমল গুমরের কাছে সেই অর্থ ফেরত চাই। তখন তাঁরা আমাকে হত্যার হুমকি দেন, ভয় দেখান।’অজয় সিং আরও বলেন, ‘আমিশা আমাকে হুমকি দিয়েছেন। ওই সময় তিনি বলেছেন, আমার কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত দেবেন না। আমি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে আমিশাকে আইনি নোটিশ পাঠাই। আদালত তাঁকে ২০১৯ সালের ১৭ জুন আদালতে হাজির থাকার জন্য সমন পাঠান। কিন্তু আমিশা তা গ্রহণ করেননি। ১৭ জুন মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এবার আমিশাকে ৮ জুলাই আদালতে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে। মুম্বাই পুলিশের সাহায্যে রাচি পুলিশ আমিশার কাছে সমন পাঠিয়েছে। এবার আমিশাকে অবশ্যই ৮ জুলাই আদালতে উপস্থিত হতে হবে।’আমিশা প্যাটেল আর তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার কমল গুমরের বিরুদ্ধে ধোঁকাবাজি, বিশ্বাসঘাতকতা ও হত্যার হুমকির মামলা করেছেন অজয় সিং। তিনি বলেন, ‘বড় বড় রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তোলা ছবি আমিশা আমাকে পাঠিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে নাকি এই নায়িকার ঘনিষ্ঠ ওঠাবসা আছে। তাই তিনি কাউকে ভয় পান না। আমিশা যদি নির্ধারিত দিনে আদালতে উপস্থিত না হন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারির পরোয়ানা জারি হতে পারে।’অজয় সিংয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমিশা প্যাটেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।সম্প্রতি অভিনেতা রজপাল যাদব আর চিত্রনির্মাতা প্রেরণা অরোরার বিরুদ্ধে ধোঁকাবাজির মামলা হয়েছে। তাঁরা দুজন চেক জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। পরে তাঁদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।অজয় সিং এখন ব্যস্ত তাঁর আগামী ছবি ‘ফ্যামিলি অব ঠাকুরগঞ্জ’-এর প্রচারণা নিয়ে। ছবিটি ১৯ জুলাই মুক্তি পাবে। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন জিমি শেরগিল, মাহি গিল, সৌরভ শুক্লা, পবন মালহোত্রা প্রমুখ। |
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, দেশে আইনের শাসন এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর ফলে প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং নুসরাতকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তিনি বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি রিফাত হত্যার মূল কারণ।আজ শনিবার সকালে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিয়াজুল হক এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিচারে সময় লাগছে অনেক বেশি। যে কারণে অপরাধীরা কোনো না কোনোভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে। এটি অপরাধীদের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহস জোগাচ্ছে ।রিফাত হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নয়ন বন্ডকে গ্রেপ্তারে বিলম্বের ব্যাপারে তিনি বলেন, তাঁকে (নয়ন) গ্রেপ্তার করা কঠিন কিছু না। এটি খুবই সহজ যেহেতু বরগুনা একটি ছোট শহর এবং তাঁকে সবাই মোটামুটি চেনে। পুলিশ চাইলে ১৫ দিনের মধ্যে সবাইকে গ্রেপ্তার করতে পারে। এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে দিতে পারে, যেহেতু সব আলামত সামনেই আছে। আশা করি তাই করা হবে। তিনি আরও বলেন, এক মাসের মধ্যে চার্জশিট দিয়ে দেওয়া যায় এবং দুই-তিন মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলা যায়। সেটি করতে পারলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে।রিফাত হত্যাকারীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, অপরাধী যে দলের, মতের বা যতই বিত্তবান হোক না কেন তাঁকে আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে। |
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) প্রকৌশলী নিয়োগ দেবে। ১৮১ জন প্রকৌশলী নেবে পিজিসিবি। আগ্রহীরা এই পদে আবেদন করতে পারেন।যেসব পদে নিয়োগ:পদের নাম: অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারপদ সংখ্যা: ৬০টি (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস -৫০টি, সিভিল –৫টি, মেকানিক্যাল -৫টি)মূল বেতন: ৫০,০০০ টাকা (বেতন গ্রেড-৭)যোগ্যতা: ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বা সিভিল বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি।পদের নাম: সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারপদসংখ্যা: ১২১টি (ইলেকট্রিক্যাল -৯৩টি, ইলেকট্রনিকস -৮টি, সিভিল -১০টি, মেকানিক্যাল -৭টি, কম্পিউটার -৩টি)মূল বেতন: ৩৫,০০০ টাকা (বেতন গ্রেড-৮)যোগ্যতা: ইলেকট্রিক্যাল/ ইলেকট্রনিকস/ সিভিল/ মেকানিক্যাল বা কম্পিউটার টেকনোলজিতে কমপক্ষে ডিপ্লোমা ডিগ্রি।প্রার্থীরা অনলাইনে www.pgcb.teletalk.com.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।আবেদনের শেষ তারিখ: ৩০ জুন, ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত। |
যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থী মধ্য আমেরিকার অনেক শরণার্থীকে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিতর্কিত মার্কিন অভিবাসন নীতিবিরোধী নেতাদের সমর্থনে এত দিন মেক্সিকোর অন্যতম সহিংসতাপ্রবণ এক শহরে অপেক্ষা করতে বাধ্য হন তাঁরা। অবশেষে অভিবাসীরা গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন বলে রয়টার্সের খবরে জানানো হয়।তীরের কাছাকাছি উপুড় হয়ে পড়ে থাকা এল সালভাদরের নাগরিক অস্কার (২৫) ও তাঁর দুই বছর বয়সী মেয়ে ভ্যালেরিয়ার মরদেহের ছবি সম্প্রতি সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। এ ঘটনার সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ অভিবাসন সমস্যা সমাধানে ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দেয়। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে উপচে পড়া শরণার্থীদের সাহায্য করতে এই অর্থ ব্যয় করা হবে।অভিবাসন নীতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্যরা। এই নীতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের কাছ থেকে আবেদনের ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষারত শরণার্থীদের মেক্সিকো সীমান্তে পাঠানো হয়। একে রিমেইন ইন মেক্সিকো বা মাইগ্রেন্ট প্রোটেকশন প্রটোকলস (এমপিপি) বলা হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে জানুয়ারি মাস থেকে অভিবাসন সুরক্ষামূলক এ কর্মসূচি চালু করা হয়। তবে মার্কিন ট্রাম্পবিরোধী নেতা, অধিকার রক্ষা দল এবং অন্যরা কর্মসূচিটির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এমপিপির কারণে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার শরণার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই এল সালভাদর, গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাসের নাগরিক।মেক্সিকোর সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে ‘সীমান্তে শরণার্থীর স্রোত আটকানোর ব্যবস্থা’ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মাসে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, সীমান্তে অবৈধ শরণার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে মেক্সিকো ব্যবস্থা না নিলে মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যে প্রতি মাসে ৫ শতাংশ হারে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। পরে মেক্সিকো চুক্তি করে দেশজুড়ে, বিশেষত মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করতে রাজি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী মর্যাদাপ্রত্যাশীদের মেক্সিকোতে পাঠানো এবং এ-সংক্রান্ত আইনি লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের সেখানেই অপেক্ষমাণ রাখার কর্মসূচিও বিস্তৃত করবে ওয়াশিংটন। এর জের ধরে এমপিপি চুক্তি ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন শহরে। শরণার্থীরা কিউবাসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করছেন।হন্ডুরাসের সহিংসতা থেকে বাঁচতে ছোট তিনটি শিশুসহ সালভাদরের এক যুবককে নিয়ে পালিয়েছিলেন এক তরুণ দম্পতি। সিউদাদ জুয়ারেজ হয়ে বহু কষ্টে এল পাসোতে পৌঁছান তাঁরা। তাঁদের হয়ে সীমান্তে অবস্থানরত কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানান টেক্সাসের এল পাসোর বিশপ মার্ক সেইজ। প্রাথমিকভাবে কর্মকর্তারা বিশপের কথা রাখলেও পরে জানিয়ে দেন, অভিবাসন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেই অবস্থান করতে হবে পরিবারটির।বিশপ মার্ক সেইজ অভিবাসন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, হন্ডুরাসের পরিবারটি প্রায় তিন মাস ধরে সীমান্তে অপেক্ষা করছে। ৩, ৫ এবং ৯ বছর বয়সী তিনটি শিশুকে নিয়ে পরিবারটিকে সীমান্তে এভাবে ফেলে রাখার বিষয়টি ভীষণ অমানবিক।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে খোলা চিঠি লেখে গির্জার ধর্মপ্রচারক জোট। তারা বলেছে, অভিবাসন নীতির খপ্পরে পড়ে নির্মম সহিংসতা আর পাচারের সাক্ষী হচ্ছে শিশুরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অভিবাসন সুবিধাজনিত প্রতিবেদনে পুরো প্রক্রিয়াটিকে ‘নির্দয়’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ধর্মপ্রচারক জোট।আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অধিকার রক্ষা করতেই হবে। তবে অভিযোগ রয়েছে, উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে মেক্সিকো তেমন বাধা দেয় না। এ নিয়ে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপোড়েনও আছে। |
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে স্কুলছাত্রীর গোপন ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকির অভিযোগে করা মামলায় মজিবর রহমান নামের (৩৯) এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের ১০নং ব্রিজ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।মজিবরের বিরুদ্ধে তাড়াশ থানায় গতকাল শুক্রবার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয়েছে।তাড়াশ থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী মজিবর দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সম্প্রতি বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে গোপনে মেয়েটির ভিডিও ধারণ করেন। পরে ওই ভিডিওর কথা বলে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন তিনি। মেয়েটি রাজি না হওয়ায় ভিডিওটি তিনি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। স্কুলছাত্রী বিষয়টি তার অভিভাবকদের জানায়। পরে এ ব্যাপারে তাড়াশ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।সিরাজগঞ্জের জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার (সার্কেল) গোলাম রহমান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মজিবরকে আজ সকালে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। |
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে কলি বেগম (২৪) নামের এক গৃহবধূকে হাতে-পায়ে শিকল বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে আজ শনিবার ভোরে ওই গৃহবধূর স্বামী মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ (২৮) পাঁচজনকে আটক করেছে।গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মধ্যে মো. জাহাঙ্গীর আলম ছাড়া অন্যরা হলেন জাহাঙ্গীরের বাবা আবদুল হামিদ, মা ফাতেমা বেগম, বড় ভাই আলমগীর হোসেন ও ভাইয়ের স্ত্রী রুমা আক্তার। তাঁদের বাড়ি কলমাকান্দার বেলতলী চরপাড়া গ্রামে।স্থানীয় বাসিন্দা ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের শেষ দিকে বেলতলী চরপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা থানা তেলিপাড়া এলাকার খায়রুল আলমের মেয়ে কলি বেগমের মুঠোফোনে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিয়ে হয়। বর্তমানে তাঁদের দেড় বছরের একটি সন্তান রয়েছে।বিয়ের পর থেকে জাহাঙ্গীর ও তাঁর পরিবারের লোকজন কলি আক্তারকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন। কলি বিভিন্ন সময় তাঁর বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতেন। সম্প্রতি জাহাঙ্গীর ও তাঁর পরিবারের লোকজন আবার ৫০ হাজার টাকা যৌতুক এনে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এতে কলি অস্বীকৃতি জানালে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান।গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই টাকার জন্য কলির স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাশুর ও তাঁর স্ত্রী মিলে কলিকে মারধর করেন। একপর্যায়ে কলির হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে ঘরে আটকে নির্যাতন শুরু করেন। গতকাল সকালে কলি কৌশলে এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে তাঁর মায়ের মুঠোফোনে খবর পাঠান। ওই দিন সন্ধ্যায় কলির বাবার বাড়ির লোকজন সিধলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হাজির হয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান।পরে তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ কলিকে ওই ঘর থেকে শিকল বাঁধা ও অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে। তাঁকে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। আজ ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ওই গ্রামের অন্য একটি বাড়ি থেকে স্বামী মো. জাহাঙ্গীর আলম, শ্বশুর আবদুল হামিদ, শাশুড়ি ফাতেমা বেগম, ভাশুর আলমগীর হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুমা আক্তারকে পুলিশ আটক করে।এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ আজ দুপুরে কলমাকান্দা থানায় যৌতুকসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ আটক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখায়।কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া ওই পাঁচজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল আল মামুন বলেন, ওই গৃহবধূর শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। তবে তাঁর স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে। |
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। উপজেলা সদর থেকে সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কের ওপর দিয়ে বইছে উজানের পানি। নদ-নদী ও হাওরের পানি উপচে পড়ছে এলাকায়। পানির স্রোত ঠেলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ ও যানবাহন। |
ব্রুসেলোসিস ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ। এটি এমন একটি ছোঁয়াচে জুনোটিক রোগ, যা পশু থেকে মানুষে এবং মানুষ থেকে পশুতে ছড়ায়। গবাদিপশুর ভ্রূণ নষ্ট, অকালে গর্ভপাত, বন্ধ্যত্ব এবং মানুষ ও পশু-পাখির মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই রোগ। দেহে রোগের অ্যান্টিবডির উপস্থিতির মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা গেলেও বাংলাদেশে এ রোগের জন্য ঠিক কোন জীবাণু দায়ী, তা এর আগে শনাক্ত হয়নি।দেশে প্রথমবারের মতো গরুতে ব্রুসেলোসিস রোগের জীবাণু শনাক্ত ও এই ব্যাকটেরিয়ার জীবনরহস্য (জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচনের দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম। আজ শনিবার নিজ বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের অর্থায়নে গত তিন বছর তিনি এ গবেষণা করেন।আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রাণী ও মানবদেহে ব্যাকটেরিয়াজনিত ছোঁয়াচে রোগগুলোর মধ্যে সংক্রমণের দিক থেকে যক্ষ্মা ও অ্যানথ্রাক্সের পরেই ব্রুসেলোসিসের অবস্থান। গর্ভপাত ও মৃত্যুর ঝুঁকি থাকায় খামারিরা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। আক্রান্ত পশুর শরীরে রোগের অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নির্ণয়ের মাধ্যমে বর্তমানে দেশে ব্রুসেলোসিস রোগ শনাক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু ওই অ্যান্টিবডির উপস্থিতি শুধু ব্রুসেলোসিস নয়, সালমোনেলা, কোলিবেসিলোসিস কিংবা ইয়ারসিনিয়া রোগের জীবাণুও নির্দেশ করে। এ কারণে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এ রোগ নির্ণয় সম্ভব হয় না।গবেষক বলেন, আক্রান্ত গাভির রক্তের সিরাম, মূত্র ও দুধ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা করা হয়। গরুতে ব্রুসেলোসিস রোগ সৃষ্টিকারী প্রধান জীবাণু ব্রুসেলা অ্যাবরটাস (Brucella abortus) ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়ার নয়টি অ্যান্টিজেনিক ভ্যারিয়েশন আছে, যাকে বলে বায়োভার (biovar)। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত নমুনার সব কটিতেই বায়োভার-৩ পেয়েছি। সুতরাং, এখন পর্যন্ত এটিই বাংলাদেশে গরুতে ব্রুসেলোসিস রোগের জন্য দায়ী।’প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, মানুষ যেসব রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, এর ৭৫ শতাংশই আসে গবাদিপশু থেকে। এদের মধ্যে অন্যতম যক্ষ্মা, জলাতঙ্ক, ব্রুসেলোসিস, অ্যানথ্রাক্স, নিপা ও অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা। এসব রোগবালাইয়ের কারণে বছরে ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, সম্প্রতি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিরাময় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ছয়টি সংক্রামক রোগের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিতে বলেছে, যার মধ্যে একটি হলো ব্রুসেলোসিস।জীবাণু শনাক্তের পাশাপাশি এই ব্যাকটেরিয়ার জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করেছেন গবেষক, যাতে ভবিষ্যতে অধিকতর গবেষণা করে বাংলাদেশে এ রোগ নিরাময়ে ভ্যাকসিন (টিকা) তৈরি করা যায়। জিনোম হচ্ছে কোনো প্রজাতি বা জীবের মোট নিউক্লিওটাইড সমষ্টি। অর্থাৎ কোনো জীবের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। এ জীবাণুর জিনের তথ্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের (এনসিবিআই) তথ্যভান্ডার থেকে ইতিমধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাইক্রোবায়োলজি রিসোর্স অ্যানাউন্সমেন্ট’ সাময়িকীতে গবেষণাটি প্রকাশিতও হয়েছে।আরিফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে ছাড়াও মালয়েশিয়া ও ইতালির কিছু ল্যাবে জীবাণু শনাক্তকরণ ও জিন সিকোয়েন্সের কাজ করা হয়েছে। এই গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি ও উন্নত বায়োমেডিক্যাল গবেষণা সম্ভব হবে। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে খামারি ও উদ্যোক্তাদের ক্ষতির হার ও মানুষের আক্রান্ত ও মৃত্যুহার অনেকাংশে কমে যাবে।বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) মহাপরিচালক নাথু রাম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু ব্রুসেলোসিস মানুষ ও পশু-পাখি উভয়েই ছড়ায়, তাই এর আলাদা গুরুত্ব তো রয়েছেই। এখন ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারলে নিঃসন্দেহে দেশের প্রাণিসম্পদের জন্য ভালো হবে। |
চীনের মডেল ফ্যান বিংবিং ও দক্ষিণ কোরিয়ার তারকা লি চেনের সম্পর্ক ভেঙেছে। গত বৃহস্পতিবার দুই দেশের দুই তারকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবোতে এ কথা জানান।সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়, ৩৭ বছর বয়সী ফ্যান বিংবিং চীনের সর্বোচ্চ আয় করা তারকা। তিনি ওয়েইবোতে এক পোস্টে জানান, ৪০ বছরের তারকা লি চেনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেছে।এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ান অভিনেতা গান হাই-কিও এবং কোরিয়ান নাটকের জনপ্রিয় তারকা সং জোং কি’র দুই বছরের দাম্পত্য জীবনের সম্পর্কের ইতি টানার খবর গণমাধ্যমে বের হয়। এরপরই ফ্যান বিংবিং ও লি চেনের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেল।ফ্যান বিংবিং এবং লি চেনের এই বিচ্ছেদের খবরে ওয়েইবুতে ‘হট সার্চের’ তালিকায় চলে এসেছে। এই গোল্ডেন কাপলের প্রেম ভেঙে যাওয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে। কারণ চার বছরের সম্পর্কের ইতি ঘটায় অনেক ভক্ত-সমর্থক মেনে নিতে পারছেন না। একজনের মন্তব্য, অবিশ্বাস্য, আমার ভয় হয় এটা না আবার চীনের বিনোদন শিল্পে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অপর একজন বলছেন, চার বছরের সম্পর্ক রাতারাতি শেষ গেল। এটা কি সত্যি, না কি বাস্তবতা বা লুকানো কোনো গল্প আছে, আমার সন্দেহ হচ্ছে। ফ্যানের ভক্তদের বড় একটি অংশের মন্তব্য, বোন, সুখী হও, তুমি সব সময় আমাদের কাছেই থাকবে।সম্পর্কের ইতি টানার ঘোষণা দিয়ে ফ্যান বিংবিং বলেন, ‘আমাদের জীবনে বিভিন্ন বিচিত্র বিদায়ের অভিজ্ঞতা হয়। আমাদের (লি চেন) প্রেম শাশ্বত শক্তি হয়ে গেছে। অতীতে তোমার সমস্ত আত্মত্যাগ, সমর্থন এবং ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আর এখন আমাদের নই। কিন্তু আমরা সব সময় আমরাই থাকব।’এর ঘণ্টা দুয়েক পরই লি বলেন, ‘হয়তো আমাদের ভালোবাসার ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমাদের মধ্যেকার অনুভূতির কোনো পরিবর্তন হবে না। আমরা আর এখন আমাদের নই। কিন্তু আমরা সব সময় আমরাই থাকব।’২০১৫ সালে সম্পর্কের শুরুতে ফ্যান ও লি চেন নিজেদের সম্পর্কের পরিচয় দিতে গিয়ে আমরা ও আমাদের শব্দগুলো ব্যবহার করতেন।ফ্যান বিংবিং বলেন, ‘একজীবনে অনেক সময় বিদায় বলতে হয়। তুমি (লি চেন) আমাকে যা দিয়েছ সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ। ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।’মডেল, অভিনেত্রী ও গায়িকা হিসেবে ফ্যান শোবিজ জগতে অনেক পরিচিত নাম। ‘আয়রন ম্যান’ ও ‘এক্স ম্যান’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তারকাকে ২০১৫ সালে টাইম ম্যাগাজিন ‘জনপ্রিয় অভিনেত্রী’র তকমা দেন। টুইটার ও চীনা সামাজিক মাধ্যম ওয়েইবোতে তার ফলোয়ার ৬ কোটি ৫০ লাখের বেশি। লালগালিচা, মুভি প্রিমিয়ার ও ফ্যাশন শোতে সরব উপস্থিতির জন্য তাকে ‘ফ্যাশন আইকন’ ও ‘মহারানি’ বলা হয়ে থাকে।২০১৬ সালে বিশ্বের সেরা পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রীর তালিকায় পেছনে ফেলেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে। ওই তালিকায় তাঁর স্থান ছিল পঞ্চম। ২০১৩ সাল থেকে ফোর্বসের সেরা ১০০ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত চীনা শিল্পীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ২০০৬ সাল থেকেই এই তালিকার সেরা ১০-এ আছে ফ্যানের নাম।গত বছর খবর ছড়িয়ে পড়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন জনপ্রিয় চীনা অভিনেত্রী ফ্যান বিংবিং। কোথাও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তাঁর। কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। পরে চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে ফ্যান বিংবিং একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেখানে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। তবে চীনা সরকার এতে তুষ্ট হয়নি। কর ফাঁকির অপরাধে ৮৮ কোটি ৩০ লাখ ইউয়ান জরিমানা করা হয়েছে তাঁকে।চীনে কর ফাঁকি দেওয়ার একটি অবৈধ প্রক্রিয়া রয়েছে, যাকে বলে ‘ইন-ইয়াং কনট্রাক্ট’। এই প্রক্রিয়ায় একজন ব্যক্তি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোনো কাজ শুরু করার আগে দুটি চুক্তিপত্রে সই করেন। একটি চুক্তিপত্রে থাকে আসল পারিশ্রমিকের পরিমাণ, অন্যটিতে কম পারিশ্রমিক দেখানো হয়। কম পারিশ্রমিকসংবলিত চুক্তিপত্র জমা দেওয়া হয় চীনের কর বিভাগে। কয়েক মাস আগে চীনের গণমাধ্যমে ফ্যান বিংবিং স্বাক্ষরিত এমনই একটি ইন-ইয়াং কনট্রাক্ট ফাঁস হয়। এতে একই কাজের জন্য ফ্যানের সই করা দুটি চুক্তিপত্রের ছবি দেখা যায়। এরপর থেকেই ফ্যান বিংবিংয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে চীনের আয়কর বিভাগ। এ কারণে ফ্যান বিংবিং গত জুন মাস থেকে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। এমনকি কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাঁকে গত কয়েক মাস পাওয়া যায়নি।৩৭ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী শুধু চীনেই নন, হলিউডেও বেশ জনপ্রিয়। অভিনয় করেছেন এক্স-মেন ও আয়রনম্যান-এর মতো ছবিতে। ফোর্বস সাময়িকীর হিসাবে এই অভিনেত্রী বেশ কয়েক বছর বিশ্বের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী অভিনেত্রীর তালিকায়ও উঠে এসেছিলেন। গত বুধবার এই অভিনেত্রী গত কয়েক মাসের নীরবতা কাটিয়ে চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘ইদানীং আমি প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি যা করেছি তাতে ভীষণ লজ্জিত। আমি আজ এখানে সবার কাছে ক্ষমা চাইছি।’ |
বলিউডে কাজ শুরু করেছেন মোটে সাত বছর। এর মধ্যেই নিজেকে বলিউডের সেরা একজন অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন আলিয়া ভাট। তারকা সন্তানের তকমা গায়ে লাগলেও নিজের পরিশ্রমেই এসেছেন এতটা দূর। আর তাঁর প্রমাণ মেলে আলিয়ার প্রতিটি ছবিতেই। অভিনয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যান, একটি ছবি থেকে আরেকটিতে। কিন্তু এই সফলতায় কিছুই যায়–আসে না তাঁর। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন।বোম্বে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আলিয়া ভাটকে প্রশ্ন করা হয়, ছবির সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে তাঁর মতামত কী? আলিয়ার সোজা উত্তর, এ নিয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যথাই নেই। ছবির সফলতা কিংবা ব্যর্থতা তাঁর ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। আলিয়া বলেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কাজের ধারা। সেটে যাও, চরিত্র নিয়ে পড়ালেখা করো, চরিত্রটি ঠিকঠাকভাবে করো, পরিচালকের স্বপ্নটাকে বোঝো...। ছবি মুক্তির পরে কী হবে—এ নিয়ে কখনো মনোযোগী হওয়া ঠিক না। ছবি সফল হোক কিংবা ব্যর্থ, আমার মনে হয়, ছবিতে আমার কাজ সত্যিকারভাবে ঠিকঠাক করতে পারলাম কি না, এটা হলো বড় বিষয়।’আলিয়া ভাটের কাছে বক্স অফিসে প্রথম দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় হওয়ায় কিছু যায়–আসে না। এটা তাঁর কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে না। তিনি বলেন, ‘আমি ভালো অভিনয় করতে চাই। এর মধ্য দিয়ে দর্শকদের ভালোবাসা পেতে চাই। টুইটারে কেউ “আই লাভ ইউ” বলল, এমন ভালোবাসায় আমি বিশ্বাসী নই।’আলিয়াকে দেখা যাবে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছবিতে। সেখানে তিনি অভিনয় করেছেন প্রেমিক রণবীর কাপুরের সঙ্গে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন অয়ন মুখার্জি। মুক্তি পেতে পারে ২০২০ সালে। এ ছাড়া বাবা মহেশ ভাটের পরিচালনায় বোন পূজা ভাটের সঙ্গে ‘সড়ক টু’ ছবিতেও কাজ করবেন। দেখা যাবে ‘ট্রিপল আর’ ছবিতেও। ডিএনএ |
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল রেলস্টেশন এলাকায় অবস্থিত বড় ছড়া রেলসেতুর নিচে পড়ে থাকা দুর্ঘটনাকবলিত একটি বগি আজ শনিবার উদ্ধার করা হয়েছে। এতে সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে প্রায় আট ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এর ফলে বিভিন্ন স্টেশনে কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন।২৩ জুন ওই স্থানে সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ট্রেনের পাঁচটি বগি রেললাইন থেকে ছিটকে পড়ে। এর মধ্যে একটি বগি সেতুর নিচে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চার যাত্রী নিহত হন। আহত হন শতাধিক।রেলওয়ে ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ছয়টার দিকে ঢাকা থেকে দুটি উদ্ধারকারী ট্রেন বরমচাল স্টেশনে পৌঁছায়। এরপর সেতুর নিচে পড়ে থাকা বগিটি উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। এ কারণে ওই সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন শ্রীমঙ্গলে, চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস শমশেরনগরে এবং সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর কালনি এক্সপ্রেস ট্রেন মাইজগাঁও স্টেশনে আটকা পড়ে। বেলা দেড়টার দিকে উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয়।এর আগে ২৭ থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলের কারণে সেতুর নিচের ছড়ায় পানি বেড়ে গিয়েছিল। সেতুর নিচে বগি পড়ে থাকায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজন সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে আশঙ্কা করে। এ অবস্থায় গতকাল দুপুরে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন বরমচাল স্টেশনে পৌঁছালে এলাকাবাসী এটি আটকে রাখে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্টেশনে আরও কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ে। পরে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলীরা গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেতুটি ঝুঁকিমুক্ত বলে জানান। এতে প্রায় তিন ঘণ্টা ওই সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কুলাউড়া রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক যাত্রী বিভিন্ন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। সোহানুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, কালনি এক্সপ্রেসে তাঁর ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাওয়ার কথা। সৌদি আরব থেকে আসা এক আত্মীয়কে আনতে যাচ্ছিলেন। সকাল আটটার দিকে স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন বিলম্বের কথা জানতে পারেন। সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে স্টেশনে বসা। কখন ট্রেন পৌঁছাবে কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার তা নিশ্চিত করে তাদের বলতে পারেননি। সোহানুরের মতো অন্য যাত্রীদেরও একইভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।রেলওয়ের কুলাউড়া সেকশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) জুয়েল আহমদ বেলা দুইটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, বড় ছড়া সেতুর নিচে পড়ে থাকা বগিটি ক্রেন দিয়ে ওপরে তুলে রেললাইনের এক পাশে রাখা হয়েছে। এখন নিচের ছড়া দিয়ে পানির প্রবাহ আর বাধাগ্রস্ত হবে না।বরমচাল রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার সফিকুল ইসলাম বলেন, উদ্ধারকাজ শেষের পর বেলা ২টা ২ মিনিটে কালনি এক্সপ্রেস ও ২টা ৪৮ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন বড় ছড়া সেতু অতিক্রম করেছে। |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি (বিডিইউ) বাংলাদেশ দুটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। চাইলে আপনিও আবেদন করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। যেসব বিষয়ে নিয়োগ:তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ১) পদের নাম: অধ্যাপকপদসংখ্যা: ১টিবেতন স্কেল: ৫৬,৫০০/-৭৪,৪০০/–২) পদের নাম: সহকারী অধ্যাপকপদসংখ্যা: ১টিবেতন স্কেল: ৩৫,৫০০/-৩৭,০১০/–৩) পদের নাম: প্রভাষকপদসংখ্যা: ৩টিবেতন স্কেল: ২২,০০০/-৫৩,০৬০/–শিক্ষা বিভাগ১) পদের নাম: অধ্যাপকপদসংখ্যা: ১টিবেতন স্কেল: ৫৬,৫০০/-৭৪,৪০০/–২) পদের নাম: সহকারী অধ্যাপকপদসংখ্যা: ১টিবেতন স্কেল: ৩৫,৫০০/-৩৭,০১০/–৩) পদের নাম: প্রভাষকপদসংখ্যা: ৩টিবেতন স্কেল: ২২,০০০/-৫৩,০৬০/–আবেদনের শেষ তারিখ: আগ্রহী প্রার্থীরা ১৭ জুলাই, ২০১৯ তারিখ বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট (www.bdu.ac.bd) -এর মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।বিস্তারিত: (https://bdu.ac.bd/notice) |
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ এলাকা হাঁড়িভাঙা আমের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এ আমের চাষ। এ আম সুস্বাদু। এর মধ্যে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে হাঁড়িভাঙা আমের সুখ্যাতি। |
গুয়াহাটি-ঢাকা প্রথম বিমানে শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশ যাচ্ছেন আসামের ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। বেসরকারি একটি সামাজিক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে আসামের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলাই এই সফরের উদ্দেশ্য।আগামী সোমবার থেকে চালু হচ্ছে গুয়াহাটি-ঢাকা দৈনিক বিমান চলাচল। বেসরকারি সামাজিক সংস্থা ব্যতিক্রম এই সফরের আয়োজন করেছে। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ।সামাজিক সংস্থা ব্যতিক্রমের সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিক জগতের পাশাপাশি শুভেচ্ছা সফরের প্রতিনিধিদলে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক জগতের ব্যক্তিত্বরাও থাকছেন। থাকছেন সাংবাদিকেরাও।ব্যতিক্রমের সাধারণ সম্পাদক পিন্টু গুপ্ত মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গুয়াহাটি-ঢাকা বিমান চলাচল দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এর ফলে আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে সব বিষয়ে সম্পর্কের দারুণ উন্নতি হবে।ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের আসাম চ্যাপ্টারের সম্পাদক সৌমেন ভারতীয়ার মতে, ‘আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়লেই বাড়বে বন্ধুত্ব। কেটে যাবে যাবতীয় ভুল–বোঝাবুঝি।’ গুয়াহাটি থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি আরও বলেন, আসাম উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার। আসামের সঙ্গে বিমান সংযোগ চালু হলে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের আট রাজ্যই উপকৃত হবে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারাও এই বিমানসেবার সুযোগ নিতে পারবেন।প্রতিদিন গুয়াহাটির গোপীনাথ বড়দলৈ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ভারতীয় সময় বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ছাড়বে বিমানটি। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ১টা ৪০ মিনিটে।প্রাথমিকভাবে গুয়াহাটি থেকে ঢাকা সমস্ত করসমেত ভাড়া ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৫৫ রুপি। ঢাকা থেকে গুয়াহাটি বাংলাদেশি টাকায় মাথাপিছু ভাড়া ৫ হাজার ৩৫৭ টাকা। |
এবার কোপার সেমিফাইনালেই মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের দুই পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। দ্বৈরথের আগে কী ভাবছেন মেসি-আগুয়েরোরা?কোয়ার্টার ফাইনালে ভেনেজুয়েলাকে ২-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিতে জায়গা নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। সেমিফাইনালে অপেক্ষা করছে ব্রাজিল। বিশ্বের অন্যতম আরাধ্য ম্যাচটা তাই এবার ফাইনালের আগেই হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে হোঁচট খেয়ে শুরু করলেও পরের ম্যাচগুলোয় ধীরে ধীরে ফর্ম ফিরে পেয়েছে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিল বেশ ছন্দে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও গত ম্যাচেই বোঝা গেছে, তাদেরও উন্নতির জায়গা আছে। সবকিছু বিবেচনা করেই মেসির কাছে মনে হয়েছে, এবার আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সেমিফাইনাল ম্যাচে কোনো দলই ফেবারিট নয়।প্রথম ম্যাচে কলম্বিয়ার কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। পরে ড্র করেছে প্যারাগুয়ের সঙ্গে। ওদিকে ব্রাজিলকেও গ্রুপ পর্বে রুখে দিয়েছে ভেনেজুয়েলা, কোয়ার্টারে আরেকটু হলেই বাদই পড়ে যাচ্ছিল প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে মেসির কাছে মনে হয়েছে, এবার কোপা আমেরিকায় সব দলই মোটামুটি কাছাকাছি শক্তির, নিজেদের দিনে যেকোনো দলই হারিয়ে দিতে পারে তথাকথিত ফেবারিটদের। তাই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচে কাউকে নিশ্চিতভাবে ফেবারিট বলেননি মেসি, ‘আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচে কে ফেবারিট, সেটা বলা কঠিন। বিশেষ করে এবারের কোপা আমেরিকার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরও সত্য, এখানে সবাই সবাইকে হারানোর সামর্থ্য রাখে।’তবে ফর্মে থাকা ব্রাজিল যে কত ভয়ংকর, সেটা এই দলে মেসির চেয়ে ভালো মনে হয় কেউ জানে না। কোপা আমেরিকার নকআউট রাউন্ডে সর্বশেষ চারবারের দেখায় প্রত্যেকবার ব্রাজিলের কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা, সর্বশেষ হেরেছে ২০০৭ টুর্নামেন্টের ফাইনালে। সেবার মেসিও ছিলেন। দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে উঠেও রবিনহো-আলভেসদের সঙ্গে পেরে ওঠেননি মেসি-রিকুয়েলমেরা। ব্রাজিলের শক্তি নিয়ে তাই মেসি নিঃসন্দেহ, ‘আমরা ব্রাজিলকে সম্মান করি। আমরা জানি, ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা কী করতে পারে। ব্রাজিল ম্যাচের আগে আমরা বেশ ভালো ফর্মে আছি। কিন্তু আমাদের অনেক মনোযোগী থাকতে হবে।’আকাশি-সাদা জার্সির সম্মান রাখার প্রত্যয় ঝরেছে সতীর্থ সার্জিও আগুয়েরোর কণ্ঠেও। এ ম্যাচ নিয়ে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা কেমন, সেটা বেশ ভালোই বোঝেন আগুয়েরো, ‘জার্সির সম্মান রক্ষা করতে আমরা আমাদের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করব, যেমনটা আজ করেছি। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচ প্রতিদিন হয় না। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে তো আরও হয় না। এ ম্যাচ নিয়ে সবার প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী। শুধু আমাদের দেশেই নয়, গোটা বিশ্বে।’আগুয়েরোও জানেন, ব্রাজিল হেলাফেলা করার মতো কোনো প্রতিপক্ষ নয়। তবে নিজেদের সামর্থ্যের ওপর আস্থা রাখছেন ম্যানচেস্টার সিটির এই স্ট্রাইকার, ‘আমরা জানি ম্যাচটা আমাদের জন্য সহজ হবে না। কিন্তু সেমিফাইনালে উঠতে পেরে আমরা অনেক খুশি। ধীরে ধীরে আমরা ছন্দ খুঁজে পাচ্ছি।’বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ছয়টায় কোপার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। সেমিতে শেষ হাসি হাসতে পারবেন তো মেসিরা? |
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কসবায় দুই সন্ত্রাসী দলের গোলাগুলিতে মনিরুল ইসলাম (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুর রহমান।নিহত মনিরুল ইসলাম একই গ্রামের মৃত ওসমান মল্লিকের ছেলে।পুলিশ জানায়, গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার কসবা ও কচিখালী গ্রামের মাঝামাঝি মাঠে গোলাগুলি শব্দ শুনতে পান স্থানীয় লোকজন। সন্ত্রাসীদের দুটি দলের মধ্যে গোলাগুলি চলছিল বলে জানান তাঁরা। খবর পেয়ে কসবা ফাঁড়ির পুলিশ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ব্যক্তির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। পরে স্থানীয় লোকজন মনিরুল ইসলামকে শনাক্ত করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও কয়েকটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।ওসি ওবাইদুর রহমান বলেন, নিহত মনিরুল ইসলাম পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নয়টি মামলা আছে। আজ শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। |
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব, উন্নয়নসহ মোট ৪৮৮ কোটি ১৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম সিনেট অধিবেশনে এই বাজেট ঘোষণা করা হয়।আজ শনিবার সকাল ১০টায় গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিনেট অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিনেটের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।অধিবেশনে কোষাধ্যক্ষ নোমান উর রশীদ বাজেট পেশ করেন, যা সিনেট কর্তৃক গৃহীত হয়। ৪৮৮ কোটি ১৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার বাজেটের মধ্যে পৌনঃপুনিক (রাজস্ব) ২৮৫ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য ২০২ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।সিনেট অধিবেশনে ব্যাপক আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এসব কর্মসূচির মধ্যে আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, বিতর্ক অনুষ্ঠান, রচনা প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মারক গ্রন্থ রচনা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। |
প্রখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ইয়ান ফ্লেমিংয়ের উপন্যাসের কাল্পনিক চরিত্র জেমস বন্ড। তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য চলচ্চিত্র ও কমিকস। বাংলাদেশে জেমস বন্ড না থাকলেও একজন নয়ন বন্ড আছেন। তিনি নিজেই এই উপাধি নিয়েছেন। তাঁর শক্তির উৎস মাদক ও ক্ষমতার রাজনীতি।গত বৃহস্পতিবার যখন প্রথম আলোর বরগুনা প্রতিনিধি মোহাম্মদ রফিককে টেলিফোন করি, তখন সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডের আংশিক পরিচয় পাই। তিনি এলাকায় মাস্তান হিসেবে পরিচিত ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নিজেও মাদক সেবন করেন। কিন্তু গতকাল বরগুনার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এবং পুরোনো পত্রিকা ঘেঁটে আমরা তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়টিও পেয়ে যাই। নয়ন বন্ড কোনো পদে না থাকলেও আত্মীয়তা ও ‘বড় ভাই’ সূত্রে ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১১ সালে এসএসসি পাস করে নয়ন আর পড়াশোনা করেননি। তাঁর বন্ধু রিফাত ফরাজী ও তাঁর ছোট ভাই রিশান ফরাজী সাবেক সাংসদ ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে।বরগুনার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন সাংসদ ও সাবেক উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। গত সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের এই দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দখলবাজি, মাস্তানি, মাদক ব্যবসা, বিএনপি-জামায়াত তোষণের অভিযোগ আনেন। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ী নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলেননি। বরং উভয় পক্ষ তাঁদের হাতে রাখার চেষ্টা করেছেন। এটি তাঁদের ও সহযোগীদের বক্তৃতা-বিবৃতি ও ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে স্পষ্ট।২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল বরগুনা প্রেসক্লাবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান ও সাধারণ সম্পাদক তানবীর হোসাইন সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, ‘আমরা আগে শুনেছি কাজের বিনিময়ে খাদ্য, মানে কাবিখা। কাজের বিনিময়ে টাকা, মানে কাবিটা। অপ্রিয় হলেও সত্য, এখন সেখানে শুনতে হচ্ছে ‘মাবিরা’ (মাদকের বিনিময়ে রাজনীতি)।’ তাঁদের অভিযোগ, সুনাম দেবনাথ (সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে) বরগুনার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।...সুনামের আরেক সহযোগীর নাম নয়ন বন্ড। প্রায় ১২ লাখ টাকার হেরোইন, ফেনসিডিল, দেশি অস্ত্রসহ ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। এ ছাড়া ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাল পে-অর্ডার করে আলোচনায় আসেন বরগুনার তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইস্রাফিল। তিনি ছিলেন সুনামের ফেনসিডিল ব্যবসার অংশীদার। (কালের কণ্ঠ, ২৯ এপ্রিল ২০১৮)অথচ রিফাত শরীফ হত্যার পর ফেসবুকে সুনাম দেবনাথ লিখেছেন, ‘হত্যাকারীদের মধ্যে প্রধান হচ্ছে নয়ন এবং তার সহযোগীরা হচ্ছে রিফাত ফরাজী, পিতা দুলাল ফরাজী, সাং বরগুনা ধানসিঁড়ি রোড। এবং রিফাতের ছোট ভাই রিশান ফরাজী, পিতা: ও সাং ঐ।’সুনামের অভিযোগ, রিফাত ও নয়নদের আরও একটি পরিচয় আছে, তাঁরা অত্র এলাকায় এমন কোনো ছাত্রাবাস নেই, যেখান থেকে ছাত্রদের ল্যাপটপ, মুঠোফোন, টাকা ইত্যাদি ছিনতাই এবং চুরি করে নিয়ে আসেননি। এ নিয়ে বহুবার মামলা হয়েছে, বহুবার জেল খেটেছেন, কিছুদিন পর আবার ছাড়াও পেয়েছেন। তাঁদের নামে কতগুলো মামলা রয়েছে, তা থানা কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে।নিহত রিফাতের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সুনাম আরও লিখেছেন, ‘রিফাত শরীফ আমাদের খুব কাছের ছোট ভাই ও কর্মী ছিল, এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের সঙ্গে থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা করেছে। নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে রিফাতের মৃত্যুসংবাদে। তবে এ খুনের পেছনে আরও অনেক রহস্য আছে।’২০১৭ সালের ৫ মার্চ রাত ১১টার দিকে নয়ন বন্ডের বাসায় অভিযান চালায় বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় ৩০০ ইয়াবা, ১২ বোতল ফেনসিডিল, ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ আটক হন নয়ন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করে নয়ন বন্ড ও তাঁর সহযোগী ইমামের বিরুদ্ধে। সে সময় আওয়ামী লীগের কোনো পক্ষ নয়ন সম্পর্কে মুখ খোলেনি। এমনকি ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল জেলা ছাত্রলীগের নেতারা যখন মাদক ব্যবসায়ী নয়ন বন্ডকে সাংসদ পুত্রের সহযোগী হিসেবে শনাক্ত করেন, তখন তিনি একে প্রতিপক্ষের অপপ্রচার বলে চালিয়েছিলেন। এখন বলছেন নয়ন মাদকসন্ত্রাসী ছিলেন।বরগুনায় রিফাত হত্যার ঘটনা গোটা বাংলাদেশের এক খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছে মাত্র। প্রায় সব অপরাধের পেছনে কাজ করে মাদক ও ক্ষমতা। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা প্রায়ই বলেন, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অথচ তারা যে পদে পদে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। পুলিশ চুনোপুঁটিদের পাকড়াও করলেও রাঘববোয়ালেরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাদকসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, বিচার হয় না। পুলিশের দাবি, ‘আমরা তো ধরছি, কিন্তু আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে এলে কী করার আছে।’ আদালত বলছেন, মামলার দুর্বলতার কারণেই আসামিরা জামিন পেয়ে যাচ্ছে। মানুষ কার কথা বিশ্বাস করবে?এই যে সারা দেশে খুনখারাবি বাড়ছে, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, তার পেছনে রয়েছে মাদক ও ক্ষমতার রাজনীতি। অনেক ক্ষেত্রে তারা হাত ধরাধরি করে চলছে।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিফাত হত্যার ছবি ছড়িয়ে পড়ায় দেশবাসী দ্রুত এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। অনেকে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছেন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধন্যবাদ পেতে পারেন। কিন্তু যে নারী তাঁর স্বামীকে বাঁচাতে দুর্বৃত্তদের সঙ্গে একা লড়াই করলেন, তাঁকে নিয়ে মহল বিশেষের কুৎসা রটনার কারণ ঘাতকদের রক্ষা করা। এই অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের আরও সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। ঘাতক-দুর্বৃত্তদের চাপাতি-রামদার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে হবে, ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ।’সোহরাব হাসান: প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবিsohrabhassan 55 @gmail. com |
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কৃষক আখতারুজ্জামান শাহিন ও গৃহিণী রোজিনা দম্পতির একমাত্র ছেলে আশিক (২)। রাতে ছেলেকে দুজনের মাঝে নিয়ে ঘুমাতেন তাঁরা। ব্যতিক্রম হয়নি গতকাল শুক্রবার রাতেও। গরমের কারণে ঘরের দরজা খোলা ছিল। আজ শনিবার ভোরে ঘুম ভেঙে শাহিন দেখেন, তাঁদের সন্তান তাঁদের মাঝে নেই। পরে সন্তানের লাশ পান তাঁরা।এই দম্পতি ও প্রতিবেশীরা জানান, শাহিনের মোবাইল ফোনটিও পাওয়া যায়নি। সন্তানকে খুঁজতে থাকেন তাঁরা। এক প্রতিবেশীর ফোনে শাহিনের চুরি যাওয়া মোবাইল নম্বর থেকে কল আসে। আশিককে ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন দুর্বৃত্তরা। সকাল নয়টা পর্যন্ত দুর্বৃত্তরা চারবার ফোন দিয়ে টাকা দাবি করে। এ সময়ের মধ্যে তাদের টাকা দেওয়া হয়নি। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দুর্বৃত্তরা ফোন দিয়ে জানায়, আশিকের লাশ হামলাকুড়ি গ্রামে বাড়ির পাশের পাটখেতে আছে। বিষয়টি জানতে পেরে পরিবার ও প্রতিবেশীরা শাহিনের বাড়ির পাশের একটি পাটখেত থেকে আশিকের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে।পরিবার ও প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে বিনাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম প্রথম অলোকে বলেন, ঘটনাটি পরিকল্পিত। এর সঙ্গে স্থানীয়রাও জড়িত আছেন বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি বর্বর ঘটনা। দুই বছরের অবুঝ শিশুকে এভাবে যারা হত্যা করেছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তদের আইনে আওতায় আনা হবে। পুলিশ দোষী ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। |
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। তিনি বলেছেন, এখন যেকোনো ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা অর্জন করেছে দেশ।ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জব্বার এ কথা বলেন। আজ শনিবার দুপুরে শিল্পকলা একাডেমিতে এই অনুষ্ঠান হয়।মোস্তফা জব্বার বলেন, রাষ্ট্রের এখন সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হচ্ছে রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে যেকোনো ওয়েবসাইটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি বড় অর্জন। তবে সামাজিক মাধ্যমে যখন স্ট্যাটাস দেওয়া হয় বা ভিডিও প্রচার করা হয়, সেগুলোর ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, শিগগিরই এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে সক্ষমতা অর্জন হবে। আগামী সেপ্টেম্বরের পর এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা যাবে। তখন ইচ্ছেমতো ফেসবুক বা ইউটিউবে কিছু প্রচার করা যাবে না।’ |
আজ বাবা শাহরুখ খানের জন্য খুশির দিন। তাঁর একমাত্র মেয়ে সুহানা খান লন্ডনের আর্ডিংলি কলেজ থেকে স্নাতক করেছেন। ড্রামায় অনন্য অবদানের জন্য সুহানাকে ‘রাসেল কাপ পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছে। সুহানা যখন এই সম্মাননা নিচ্ছেন, তখন দর্শকসারিতে বসে হাততালি দিয়েছেন তাঁর বাবা শাহরুখ খান আর মা গৌরী খান। অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, ওই সময় কিং খানের চোখের কোণে জ্বল জ্বল করছিল মুক্তার মতো দুফোঁটা জল?তা জানা যায়নি। তবে মেয়ে দারুণভাবে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন, শাহরুখ খান যে যারপরনাই আপ্লুত, তা জানা গেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর পোস্ট থেকে। ‘গ্র্যাজুয়েশন লাঞ্চ’ শেষে শাহরুখ খান স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রামে। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘চারটা বছর কীভাবে যেন উড়ে চলে গেল। আর্ডিংলি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের দিনটাও চলে এল। এখানে শেষবার পিৎজা খাওয়া, শেষবার ট্রেনে চড়া...এগুলো শেষ। এবার সত্যিকারের জগতে পা রাখার পালা। স্কুল শেষ হয়েছে, কিন্তু শেখার কোনো শেষ নেই।’শাহরুখের এই পোস্টের নিচে করণ জোহর, শ্বেতা বচ্চন, মনীশ মালহোত্রা, সঞ্জয় কাপুর, মাহীপ কাপুর, মাহিরা খান, অনন্যা পান্ডের মা ভাবনা পান্ডে এবং অন্য আরও অনেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সুহানা খানকে। আরেকটা পোস্টে শাহরুখ খান তাঁর আর সুহানা খানের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আজ স্কুলের শেষ দিন। সামনের দিনগুলোয় নতুন অনেক অভিজ্ঞতার রং যোগ হবে তোমার জীবনের পালকে।’ড্রামাতে সুহানার অবদান কী, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে বছর দুয়েক আগেই সবাই জেনে গেছে। তখন স্কুলের এক অনুষ্ঠানে অভিনয় করেন সুহানা। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ইন্টারনেটে। অনেকেই তখন সুহানার অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এরপর শাহরুখ খান এক সাক্ষাৎকারে জানান অভিনয়ের প্রতি সুহানার আগ্রহের কথা।আরেকটি সাক্ষাৎকারে সুহানার অভিনয় প্রসঙ্গে শাহরুখ খান বলেন, ‘সুহানা অভিনয় করতে চায়। আর সে আমার কাছ থেকে অভিনয়ের কোনো পাঠ নিতে চায় না। আমার মনে হয়, এই ভাবনাটা খুব ভালো। কারণ, সে আমার মতো একই কাজ করতে চায়, কিন্তু নিজের মতো করে, একেবারেই স্বতন্ত্র।’বাবা শাহরুখ যখন এত ছবি পোস্ট করে, লিখে মেয়ের গ্র্যাজুয়েশন উদ্যাপন করছেন, তখন মা গৌরী খান কেন হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন! তিনি ইনস্টাগ্রামে গ্র্যাজুয়েশন লাঞ্চের ভিডিও শেয়ার করেছেন। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘আর্ডিংলিতে গ্র্যাজুয়েশন লাঞ্চ।’ গৌরী খানের পোস্ট করা ছবিতে সাদা শার্ট, অল্প মেকআপ আর খোলা চুলের ‘ফ্রেশ সুহানা’কে দেখা গেছে।এখন সুহানা উচ্চতর পড়াশোনার জন্য পা বাড়াবেন, নাকি বই–খাতা সব তুলে বলিউডে অভিনয়ে যোগ দেবেন, তা সময়ই বলে দেবে। |
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরসহ জাতীয় সংসদ ভবনের ‘মূল নকশার বাইরে’ যেসব স্থাপনা রয়েছে, তা সরানোর অনুরোধ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।আজ শনিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মোজাম্মেল হক এ অনুরোধ জানান।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদ চত্বরে মূল নকশার বাইরে জিয়াউর রহমানের কবরসহ আরও কিছু কবর রয়েছে। তিনি এগুলো অপসারণের অনুরোধ করেন।প্রসঙ্গত, গত নবম ও দশম জাতীয় সংসদের একাধিক বৈঠকে জাতীয় সংসদ চত্বর থেকে জিয়াউর রহমানের কবরসহ লুই আইকানের করা নকশার বাইরে যেসব স্থাপনা রয়েছে, তা সরানোর বিষয়ে কথা ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয় উদ্যোগী হয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লুই কানের মূল নকশা সংগ্রহ করে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নকশা পৌঁছায় সংসদ সচিবালয়ে। অবশ্য এখন পর্যন্ত নকশাবহির্ভূত কোনো স্থাপনা সরানোর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। |
আমেরিকার স্থলসীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে এসব অভিযাত্রী অনেকেরই স্বপ্নের দেশে আশার পথে স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটছে। অনেকের পানিতে ডুবে মৃত্যু ঘটছে, অনেকেই দালালদের খপ্পরে পড়ে নিগৃহীত হচ্ছেন, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেকে আবার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় এলেও আটকা পড়ছেন নির্জন ডিটেনশন কেন্দ্রে।এঁদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি মানুষও আছে। বয়স ১৮ বছরের নিচে—এমন শতাধিক অপ্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি আমেরিকা অভিযাত্রীর বয়স নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে খোদ আমেরিকায়।সাধারণত যাদের বয়স ১৮ বছরের কম, তাদের ফেডারেল সরকার অফিস অব রিফিউজি সেটেলমেন্টের (ওআরএস) হেফাজতে রাখে। ওআরএসের কাজ হচ্ছে অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীদের দেখাশোনা করা। পরবর্তী সময়ে যেন তারা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পারে, তা নিশ্চিত করা। আর যেসব অভিবাসীর বয়স ১৮ বছরের বেশি, তাঁদের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইস) কারাগারে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে কারাবন্দী রাখা হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর অভিবাসী কমাতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমেরিকার ফেডারেল সরকার দাঁত পরীক্ষা এবং হাড়ের এক্স-রে করে ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে বয়স নির্ধারণ করার চেষ্টা করছে। ফলে, বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীর আইসের কারাগারে হস্তান্তর করা হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে। ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের তথ্যমতে, গত বছর আমেরিকার বর্ডার পুলিশ সর্বমোট ১ হাজার ২০৩ জন বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করে। এঁদের মধ্যে ১৫০ জন নিজেদের অপ্রাপ্তবয়স্ক দাবি করেছে। কিন্তু ফেডারেল সরকার সে দাবির তোয়াক্কা না করে দাঁতের পরীক্ষা ও হাড়ের এক্স-রে করে বয়স নির্ধারণ করে আইসের কারাগারে সমর্পণ করেছে। এ কারণে অনেকেই কারাগারে মাসের পর মাস মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমেরিকার ফেডারেল আইনে শুধু দন্ত পরীক্ষা ও হাড়ের এক্স-রে করে বয়স নির্ধারণ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু সে আইন এসব বাংলাদেশি অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীর ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। ফরেনসিক পরীক্ষা করে বয়স নির্ধারণ করা সন্দেহাতীত নয়। মার্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে, দাঁতের পরীক্ষা এবং হাড়ের এক্স-রে করে নির্ভুলভাবে বয়স নির্ধারণ করা যায় না।ইউটি হেলথ স্যান অ্যান্টোনিয়োর ডিরেক্টর অব দ্য সেন্টার ফর এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ড. ডেভিড সিন বলেছেন, ‘ফরেনসিক পরীক্ষা করে সঠিক বয়স নির্ধারণ করা অসম্ভব। আমরা শুধু আগের পরিসংখ্যান বিচার করে একটি ধারণার কথা বলি।’ অপ্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশিদের কারাবাস, সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশিদের মরণপণ অভিযাত্রা এসব নিয়ে এলএ টাইমস সম্প্রতি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বাংলাদেশিদের জন্মসনদ থেকে শুরু করে আদম পাচারকারী, ভুয়া পাসপোর্ট—এসবের কথাও বলা হয়েছে। আমেরিকায় বসবাসরত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আলী রীয়াজ এলএ টাইমসকে বলেন, বাংলাদেশিরা নানা কারণে দেশ ছাড়ছে। এর মধ্যে জনসংখ্যার আধিক্য, যুব কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক বেকারত্ব, রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি এবং উন্নত জীবনের প্রত্যাশাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আলী রীয়াজ। দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে আমেরিকায় ঢোকার অপেক্ষায় আছেন বাংলাদেশি শিরিল আলম (২৪)। তিন মাস আগে দালালের মাধ্যমে তিনি ব্রাজিল থেকে আমেরিকায় আসার অভিযানে নেমেছেন। নানা বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে শিরিল পানামা থেকে প্রথম আলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। জানিয়েছেন, ভয়ংকর যাত্রাপথে অনেককেই মারা যেতে দেখেছেন। বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে এসেছেন। এসব দালাল দেশের পর দেশে হাতবদল করছে। সর্বত্র মৃত্যুর ভয়, গ্রেপ্তারের ভয়। দক্ষিণ আমেরিকার নানা দেশের কারাগারে বহু আমেরিকা অভিযাত্রী আছেন বলে শিরিল জানালেন। দালাল বলেছেন, আমেরিকা সীমান্তে আসার পরই তিনি গ্রেপ্তার হবেন এবং সেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে পারবেন।দেশে যেমন আমেরিকা অভিযাত্রী লোকজনকে ঠেকানোর কোনো উদ্যোগ নেই, তেমনি বন্ধুর যাত্রাপথে জীবন–মরণ সংকটে পড়া ব্যক্তিদেরও খোঁজ করার কেউ নেই। ভাগ্যবিড়ম্বিত এসব অভিযাত্রী মারা পড়ছেন নদীতে ডুবে, পুলিশ-সীমান্তরক্ষীর তাড়া খেয়ে। আমেরিকার ডিটেনশন কেন্দ্রে থাকা অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও আইনগত সহযোগিতা দেওয়ার কেউ নেই।এ নিয়ে নিউইয়র্কে নাগরিক সংগঠন ড্রামের অন্যতম পরিচালক কাজী ফৌজিয়া বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, দেশের যেসব এলাকা থেকে দালালেরা এসব লোককে স্বপ্নের দেশে নিয়ে আসার প্রলোভন দেখাচ্ছেন, তাঁদের দমন করতে হবে। আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’ এসব নিয়ে কোনো তথ্য জানা আছে কি না, খোঁজ নিতে গিয়ে প্রথম আলো ২৮ জুন একাধিকবার লস অ্যাঞ্জেলেসের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে ফোন করলেও কেউ ফোন ধরেননি। ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। কিন্তু তিনি এ বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাননি। এ বিষয়ে কথা বলতে তিনি শামীম আলম চৌধুরী নামের একজনের নম্বর দেন। কিন্তু ওই নম্বরে ফোন করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। |
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ২০০০ এবং উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ২০০২ ব্যাচের ফেসবুক গ্রুপ তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট চালু করেছে।গতকাল শুক্রবার রাজধানীর আজিমপুর কমিউনিটি সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে অফিশিয়াল ওয়েবসাইট চালু করা হয়।এসএসসি ২০০০ এবং এইচএসসি ২০০২ একটি অনলাইন ফেসবুক গ্রুপ, সারা বাংলাদেশের ২০০০ এবং ২০০২ সালের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি প্ল্যাটফর্ম আমরাই কিংবদন্তি গ্রুপ নামে ফেসবুকে পরিচিত।এই গ্রুপ নিজেদের কার্যক্রমের পাশাপাশি নানা সেবা মূলক কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার আজিমপুর কমিউনিটি সেন্টারে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট চালু করে। এই আয়জনে মিলিত হয় প্রায় সাড়ে চার শতাধিক সদস্য। এদের অনেকে ঢাকার, ঢাকার বাইরের, এবং প্রবাসী, সাবেক শিক্ষার্থী। এ আয়োজনের পুরো দায়িত্বে ছিল পুরান ঢাকার কিংবদন্তি বন্ধুরা।গ্রুপের সদস্যরা জানান, দিন দিন গ্রুপের কাজের পরিধি বাড়ছে, প্রয়োজন হচ্ছে যথাযথ তথ্য সংরক্ষণের। সেই প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় রেখেই গ্রুপটি তাঁদের ওয়েবসাইট চালু করে। ঠিকানা: www.amraikingbadanti.com ।২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর এই ফেসবুক গ্রুপটির যাত্রা শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা এখন প্রায় ২৩ হাজার সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রুপে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত বন্ধুরা এই গ্রুপেযোগ দিচ্ছেন। বন্ধুরা শুধু অনলাইনেই সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের, সমাজের বিভিন্ন কাজে এগিয়ে এসেছে, তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য সামাজিক কাজগুলো হলো বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম ও ওষুধ প্রদান, অসহায় মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণ, অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ, এতিম বাচ্চাদের মাঝে নতুন পোশাক বিতরণ, রক্তদান কর্মসূচি, এতিম বাচ্চাদের জন্য শিক্ষা উপকরণ ও কম্পিউটার প্রদান।ধারাবাহিক ভাবে গ্রুপের পিছিয়ে পড়া সদস্যসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলের অসহায় মানুষদের পাশে চিকিৎসা সেবা সহ সকল মৌলিক সেবা পৌঁছে দিতে পরিকল্পনা করছে এই গ্রুপের সদস্যরা ।আরও পড়ুন:শূন্য দশকের কিংবদন্তিরা |
ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের মামলায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কারাবন্দী সেই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আলালউজ্জামান ওরফে আলাল নামের ওই শিক্ষক উপজেলার কাশিড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তাঁকে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার তথ্য আজ শনিবার প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিপ্লব সাখিদার।উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাঁর কলেজপড়ুয়া ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে ২২ জুন রাতে শিক্ষক আলালউজ্জামানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। পুলিশ ওই দিন রাতেই আলালউজ্জামানকে উপজেলার চিয়ারী গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি এখন কারাগারে। এ ঘটনায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জরুরি সভা ডেকে ২৫ জুন আলালউজ্জামানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল মামলাটি আপস–রফার জন্য মেয়েটির অভিভাবকদের চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী মেয়েটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে আসামিপক্ষের লোকজন আপস-মীমাংসার জন্য বলছে। কিন্তু তাতে রাজি হইনি।’মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মেয়েটি কাশিড়া উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় শিক্ষক আলালউজ্জামান তাকে প্রেম নিবেদন করে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতেন। মেয়েটি তার বাবাকে ঘটনাটি জানায়। পরে মেয়েটির বাবা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে ওই ঘটনা জানান। এ নিয়ে দেনদরবারে বিবাদী (আলালউজ্জামান) জানান, তিনি ‘অনুতপ্ত’, এ ধরনের ঘটনা আর ঘটাবেন না বলে ক্ষমা চান। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাবা বিষয়টি মীমাংসায় রাজি হন।মেয়েটি ২০১৮ সালে কাশিড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে রাজশাহীর একটি কলেজে ভর্তি হয়। শিক্ষক আলালউজ্জামান কিছুদিন আগে মেয়েটির মুঠোফোনে কল করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে প্রেম নিবেদন করেন। কুপ্রস্তাব দেন। মেয়েটি রাজি না হওয়ায় আলালউজ্জামান অশ্লীল বার্তাসহ মেয়েটির ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। মেয়েটি তার বাবাকে এসব ঘটনা জানায়। এ ব্যাপারে মেয়েটির বাবা কাশিড়া উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে আলালউজ্জামান ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েটির বিরুদ্ধে বদনাম রটান। ঘটনার সময় ২২ মে কলেজ বন্ধ থাকায় মেয়েটি গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিল। ওই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ির পূর্ব দিকে গভীর নলকূপসংলগ্ন পাকা রাস্তার সেতুর ওপর মেয়েটিকে একা পেয়ে আলালউজ্জামান তাকে যৌন হেনস্তা করেন। মেয়েটির চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে শিক্ষক দৌড়ে পালান। এ ঘটনায় ১৮ জুন বিবাদী (শিক্ষক) নিজে অথবা অন্য কারও সহযোগিতায় ‘পাশা ভাই’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মেয়েটির নামে অশ্লীল বার্তা লিখে পোস্ট করেন।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আক্কেলপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জোবায়ের হোসেন বলেন, যৌন নিপীড়ন মামলার আসামি আলালউজ্জামান কারাগারে। শিগগিরই মামলাটির তদন্ত শুরু হবে। |
ওয়াশিংটন ডিসির ভার্জিনিয়ায় ‘জ্ঞানবাহন’ শীর্ষক প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা নামে একটি মতবিনিময় সভা হয়েছে। ২৪ জুন সন্ধ্যায় ভার্জিনিয়ায় জ্ঞানবাহনের প্রতিষ্ঠাতা ড. বদরুল হুদা খানের নিজ বাসভবন খান বাগানে এই মতবিনিময় সভা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসসহ কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা অনুষ্ঠানে ই-লার্নিং বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদ ড. বদরুল হুদা খান ও জ্ঞানবাহনের এডুকেশনাল কো-অর্ডিনেটর আমেনা শাহিন উপস্থিত দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্ন-উত্তর শেষে সবাইকে নৈশভোজে আপ্যায়ন করা হয়। জ্ঞানবাহন হচ্ছে সাধারণ বাহনের মতোই, তবে এই বাহনে যাতায়াত করতে করতে শেখাও যায়। এসব গাড়িতে যুক্ত আছে আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ। রয়েছে কম্পিউটার, প্রজেক্টর, ওয়েবক্যাম, সাউন্ড সিস্টেম। বাহনটির ভেতরে ঘরের কাঠামো দেওয়া হয়েছে। শেখানো হয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, হাতের কাজ, সাধারণ আইনসহ জীবনঘনিষ্ঠ বিভিন্ন বিষয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে ন্যূনতম শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন ড. বদরুল হুদা খান। জ্ঞানবাহন নিয়ে মানুষের প্রশ্নের কৌতূহল মেটাতে আয়োজিত সভায় প্রশ্নের জবাব দেন জ্ঞানবাহনের প্রতিষ্ঠাতা বদরুল হুদা। তিনি জ্ঞানবাহন সম্পর্কে বলেন, জ্ঞানবাহনের একজন ড্রাইভার থাকবেন একজন শিক্ষিত ব্যক্তি। তিনি যেখানে যাবেন, মানুষের মধ্যে জ্ঞান বিতরণ করবেন। বদরুল হুদা বলেন, জ্ঞানবাহনের ড্রাইভারকে নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তাঁদের অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হবে। তবে শিক্ষার পাশাপাশি চা-আড্ডার ব্যবস্থাও থাকবে জ্ঞানবাহনে। বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ বলেন, জ্ঞানবাহনে গ্রামের মতো একটা পরিবেশ বিরাজ করবে। তবে তার ভেতরেই মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হবে। জ্ঞানবাহনে সব ধরনের তথ্য থাকবে, সেখান থেকে শিখতে পারবে মানুষ। তিনি বলেন, ‘একটি টিভি চ্যানেলে সারা বিশ্বে প্রতিনিধি দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু আমি আশাবাদী, বিশ্বের প্রতিটি কোনায় এই জ্ঞানবাহনের বাহক পৌঁছে যাবে।’ অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ অনেক আন্তরিক। দেশটি আগের থেকে শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে খুব দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। আমি বাংলাদেশকে কখনো ভুলতে পারব না।’ এ সময় তিনি ড. বদরুল হুদার জ্ঞানবাহনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। জ্ঞানবাহনের প্রশংসা করে সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, ‘জ্ঞানবাহন আমার কাছে মনে হয় সচেতনতার এক মেসেজ। এটা সামাজিক আন্দোলনও বটে। যেসব গ্রামে জ্ঞানবাহন যাচ্ছে, সেখানে পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে মানুষকে শেখাতে হবে। জ্ঞানবাহন এগিয়ে যাক, সেই প্রত্যাশাই রইল।’ অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক প্রধান প্রযোজক এ কে এম আসাদুজ্জামান, এনটিভির সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার মুমতাহিনা রিতু ও ভয়েস অব আমেরিকায় কর্মরত সাবরিনা চৌধুরী ডোনা। প্রশ্ন–উত্তর পর্বের ফাঁকে ফাঁকে গান গেয়ে অনুষ্ঠানকে বিনোদনময় করে রাখেন বদরুল হুদার স্ত্রী ড. সীমা খান। |
অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে রাজধানীর থানায় থানায় ‘ওপেন হাউস ডে’ বা ‘উন্মুক্ত দিবসে’ আলোচনা সভা চালু করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। অরাজনৈতিক এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিদের এ সভায় ডাকা হতো। কিন্তু এখন এসব সভায় উপস্থিত থাকছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদকের ব্যবহার ও বখাটেদের উৎপাত নিয়ে ভুক্তভোগীরা প্রকাশ্যে আলোচনা করতে পারতেন এসব সভায়। এখন এলাকায় যাঁরা এসব অপরাধ করে বেড়ান, তাঁরাই ওপেন হাউস ডেতে আসেন আলোচক হয়ে। কমিউনিটি পুলিশের কমিটিও রাজনৈতিক নেতাদের দখলে চলে গেছে। তা ছাড়া অনেক থানায় নিয়মিত আলোচনাও হয় না।ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বর্তমান পরিস্থিতি স্বীকার করে নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ওপেন হাউস ডে যেভাবে শুরু হয়েছিল, সেই অবস্থা এখন আর নেই। এর মধ্যে যদি চামচা শ্রেণির লোক ঢুকে পড়ে, তাহলে এটি হবে অসাধুতা ও নিয়মের লঙ্ঘন। তিনি মনে করেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী এবং পরিচ্ছন্ন মানুষদেরই ওপেন হাউস ডের আলোচনায় ডাকা উচিত। তবে একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) প্রথম আলোকে বলেন, ওপেন হাউস ডের কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য লোক পাওয়া যায় না। সে কারণে যাঁরা থানায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন, তাঁদের কমিটিতে যুক্ত করা হয়।২০০৭ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উদ্যোগে ওপেন হাউস ডে চালু হয়েছিল। তখন ঢাকার পুলিশ কমিশনার ছিলেন নাইম আহমেদ। এর লক্ষ্য ছিল, বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এলাকার মানুষের সঙ্গে পুলিশের এক হয়ে কাজ করা। এ জন্য মাসের নির্ধারিত দিনে থানায় থানায় এলাকার অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা সভা হতো। সেখানে এলাকার লোকজন তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরতেন। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেন।চাঁদাবাজি, বখাটেদের উৎপাত নিয়ে ভুক্তভোগীরা প্রকাশ্যে আলোচনা করতে পারতেন যাঁরা অপরাধ করে বেড়ান, তাঁরাই ওপেন হাউস ডেতে আলোচকরাজধানীর কয়েকটি থানায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আগের তালিকা বাতিল করে বর্তমানে প্রায় সব থানাতেই ওপেন হাউস ডের জন্য নতুন তালিকা করা হয়েছে। কিন্তু এতে সাধারণ মানুষের কোনো ঠাঁই নেই। যাঁদের সদস্য করা হয়েছে, তাঁরা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থক।গত ১২ মে মিরপুর থানায় ওপেন হাউস ডেতে অংশ নেন ওয়াহিদুজ্জামান নামের মিরপুরের এক বাসিন্দা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ওই দিন মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনারের সভাপতিত্বে ২২ জন আলোচনা করেন। তাঁদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সদস্য। মিরপুর থানার ওসি দাদন ফকির প্রথম আলোকে বলেন, এই সভার কার্যক্রম অনেকটা কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে। সভা আর আগের মতো হয় না। পল্লবী থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরখানেক ধরে সেখানে সভা হয় না। এর বদলে পুলিশ উঠান বৈঠক নিয়ে বেশি ব্যস্ত।রাজধানীর শ্যামপুর থানায় সর্বশেষ ওপেন হাউস ডের আলোচনা হয় মে মাসে। এতে অংশ নেওয়া ২০ জনের মধ্যে ১৬ জনই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, ৯০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত আলী, ৯০ নম্বর ওয়ার্ড বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি সিরাজুল হক তালুকদার প্রমুখ।তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগে মাদকের ব্যবহারসহ স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলে প্রতিকার পাওয়া যেত। এখন আলোচনা হয়, কিন্তু প্রতিকার মেলে কম।ওপেন হাউস ডের প্রবক্তা ঢাকার সাবেক পুলিশ কমিশনার নাইম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ওপেন হাউস ডে চালুর উদ্দেশ্যই ছিল থানাকে উন্মুক্ত করে দেওয়া। যখন এটা চালু হয়েছিল, তখন এর দারুণ সফলতাও পাওয়া গিয়েছিল। |
২০১৫ বিশ্বকাপের পর ভারতের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ছয়টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। এ ছয় ম্যাচে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু ক্রিকেটার পারফর্ম করেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতকে হারাতে হলে বাংলাদেশকে দল হিসেবে খেলতে হবে, পারফর্ম করতে হবে বাকিদেরও।মাঝে পেরিয়ে গেছে চার বছরেরও বেশি সময়। অথচ সেই হারের স্মৃতি এখনো যেন দগদগে ঘা। সত্যিই সময় রকেটের বেগে ধায়। এই সময়ই এত দিন পর ফিরিয়ে এনেছে সে ম্যাচের স্মৃতি। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল; ভারতের কাছে ১০৯ রানের হার। নো বল বিতর্ক, মাহমুদউল্লাহর আউট...সব মিলিয়ে দুর্ভাগ্য যেন ঘিরে ধরেছিল বাংলাদেশকে। গত বিশ্বকাপে সেটাই ছিল বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপে ঠিক শেষ ম্যাচ নয়, তবে সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে নানা সমীকরণ মেলানো শুরুর ম্যাচটা বাংলাদেশকে খেলতে হচ্ছে সেই ভারতের বিপক্ষেই। মাশরাফি বিন মুর্তজার দল হারলে এমনিতেই জটিল সমীকরণ আরও জটিল হয়ে পড়বে।সমীকরণ আপাতত তুলে রেখে ম্যাচ জয়ের অঙ্ক কষাই ভালো। বাংলাদেশ দলও নিশ্চয়ই সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে ‘হোমওয়ার্ক’ সেরে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সবশেষ বিশ্বকাপ থেকে মাঝের এ চার বছর হিসাব করলে ভারতের বিপক্ষে মাত্র ছয় ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জিতেছে দুই ম্যাচ, বাকি চারটিতে হার। এই চার হারের মধ্যে শুধু একটি ম্যাচই বার্মিংহামের এজবাস্টনে খেলেছে বাংলাদেশ।ঠিকই ধরেছেন, ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল; যে ম্যাচে বাংলাদেশের ২৬৪ রান তাড়া করতে নেমে ভারত জিতেছিল হেসেখেলে (৯ উইকেটে, ৫৯ বল হাতে রেখে)। এই বার্মিংহামেই মঙ্গলবার ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত দুটি ম্যাচ গড়িয়েছে এ মাঠে। দুটি ম্যাচেই রান উঠেছে আড়াই শর নিচে। আর পরে ব্যাট করা দলই জিতেছে। ঠিক দুই বছর আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিতে ভারতও জিতেছে পরে ব্যাট করে। তাহলে এবার ভারতের বিপক্ষে টস জিতলে বাংলাদেশের তো পরে ব্যাট করাই উচিত? নিশ্চিত করে কিছু বলা কঠিন।একে তো প্রতিপক্ষ ভারত—তাদের ব্যাটিং-বোলিং লাইনআপ এ মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা। বোলিং বিভাগ তেমন আশাপ্রদ না হলে এমন দলের বিপক্ষে পরে ব্যাট করার চাপ দুই ধরনের—পাহাড়সমান রান তাড়া করতে হতে পারে, আর সেই পাহাড়ে উঠতে গিয়ে গতির আগুনে পোড়া কিংবা স্পিনজালে ফাঁসার ঝুঁকি থাকে। এর চেয়ে কোনো চাপ না নিয়ে আগে ব্যাট করলেই তো ঝুঁকি কম? এসবই সাধারণ হিসাব-নিকাশ। টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই আরও গভীরে ভাবছে।তবে এ চার বছরে ছয়টি ম্যাচের স্কোরকার্ড দেখলে সাদা চোখেই বেশ কিছু বিষয় ধরা পড়ে। যেমন ধরুন, যে দুটি ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছে তা গত বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে। সিরিজ জয়ের সে দুটি ম্যাচে ওপেনিংয়ে মোটামুটি ভালো জুটি পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর হারের চার ম্যাচে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে রান এসেছে ৮, ১, ১৫ ও ১২০। শেষ ম্যাচটা (এশিয়া কাপ ফাইনাল) না ধরাই ভালো। কারণ, ওপেন করেছিলেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। আর যা–ই হোক, বিশ্বকাপে ওপেনিং জুটিতে অন্তত মিরাজকে তো দেখা যাবে না?অর্থাৎ ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই দায়িত্বটা তামিম ইকবালের ওপরই বেশি বর্তায়। এবার ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভালো শুরু করেও উইকেটে কেন যেন থাকতে পারছেন না তামিম। স্ট্রাইক রেটও শঙ্কা করার মতো জায়গায় নেমে গেছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলটা ভারত হওয়ায় তামিমের আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার কথা।এই চার বছরে ভারতের বিপক্ষে চার ম্যাচ খেলে দুটি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন তামিম। এর মধ্যে ৭০ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন এই বার্মিংহামেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। আর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস সাকিবের সঙ্গে যুগ্মভাবে তামিমেরই বেশি (৭)। আত্মবিশ্বাসী না হওয়ার তাই কোনো কারণ নেই।দুই বছর আগে বার্মিংহামের সেই ম্যাচটা আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে আরেকজনকে—মাশরাফি বিন মুর্তজা। সে ম্যাচে বাংলাদেশ আট বোলার ব্যবহার করেও ভারতের কিছু করতে পারেনি। সবার ইকোনমি রেট ছিল ছয়ের ওপরে, শুধু মাশরাফি ছাড়া (৩.৬২)। বিশ্বকাপে বার্মিংহামের (এজবাস্টন) উইকেট কিন্তু এক ধরনের ধাঁধা ছুঁড়ে দিয়েছে। যে দুটি ম্যাচ হয়েছে, সব কটিতেই স্পিনারদের বল বেশ ভালো বাঁক নিয়েছে, পেসারদের কাটারও ধরেছে। এমনকি সিম মুভমেন্টও পেয়েছেন আমির-আফ্রিদি, ফার্গুসনরা। মাশরাফির গতি কমলেও কাটার-স্লোয়ারের বিষ তো কমেনি। ওখানকার উইকেট তাঁর মতো বোলারের জন্য আশীর্বাদ হয়ে ওঠার কথা। আর আর্শীবাদটুকু কাজে লাগিয়ে ফর্মেও ফিরতে পারবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।তামিম-সাকিব-মুশফিক ছাড়া এ চার বছরে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান ন্যূনতম ৫০ রানের ইনিংসও খেলতে পারেননি। এশিয়া কাপ ফাইনালে লিটনের সেঞ্চুরি নিয়ে আলাদা করে বলতেই হয়। মঙ্গলবার অমন একটা ইনিংস খেলতে পারলে বিশ্বকাপে সাকিব-মুশফিকের ওপর থেকে টানা রান করার চাপ অন্তত কিছুটা হলেও কমবে। আসলে ভারতের বিপক্ষে দু-একজনের খেলা নয়, দল হয়ে খেলতে না পারলে যে বিপদ বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি।বিপদের কথা উঠলে বোলিং বিভাগ নিয়েই বাংলাদেশের ভাবনা বেশি। মোস্তাফিজুর রহমান এ ভাবনা অনেকটাই দূর করে দিতে পারেন; অন্তত ভারতের বিপক্ষে। এ চার বছরে মোস্তাফিজকে খেলতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা ভুগেছেন সবচেয়ে বেশি। এ ৬ ম্যাচে সব মিলিয়ে তাঁর শিকার ১৫ উইকেট। বার্মিংহামে নতুন উইকেটে না খেলালে কাটার-স্লোয়ার ধরার সম্ভাবনাই বেশি। তাতে মোস্তাফিজের চোখ চকচক করে ওঠার কথা। বাকিটা পারফরম্যান্স, যা দেখাতে হবে আসলে গোটা দলকেই। |
মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১০৭ জন ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া গত ১০ বছরে বাদ পড়া ৪ হাজার ১৮৮ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেটভুক্তির জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।আজ শনিবার জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ তথ্য জানান। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজারমূল্য কম হওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি সব ক্ষেত্রে সঠিক নয়। মাড়াইকালে একসঙ্গে বেশি পণ্য বাজারজাতকরণে পণ্যের মূল্য কিছুটা কম থাকে। পণ্যের মান কিছুটা কম থাকায়ও এমনটি হয়। তবে সংগ্রহের পর পরিচর্যা ও সংরক্ষণ শেষে মূল্যবৃদ্ধির পর বিক্রি করে অনেক কৃষক লাভবান হন। চলতি বছর আলু, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদির ক্ষেত্রে কৃষকেরা ভালো মূল্য পাচ্ছেন। মন্ত্রী জানান, গত ১০ বছরে ৬৯ হাজার ৬২৪ জন কৃষকের ৭৫ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন শস্য সংরক্ষণের বিপরীতে ১২২ কোটি ২২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।সরকারি দলের মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ এবং বন ও জলবায়ুমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন জানান, সুন্দরবনে সুন্দরীগাছের পরিমাণ কিছুটা কমতি থাকলেও গেওয়াগাছ তুলনামূলকভাবে বাড়ছে। এ ছাড়া ২০১৫ সালের শুমারিতে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থাকলেও ২০১৮ সালে ক্যামেরা ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত জরিপে পাওয়া বাঘের সংখ্যা ১১৪। সুন্দরবন রক্ষায় ৪৫৯ কোটি ৯২ লাখ ৫৬ হাজার ৯০০ টাকার ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আগামী ১ জুলাই এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।সরকারি দলের সাংসদ এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বনমন্ত্রী বলেন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য সরকার ৪৮টি রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য এলাকা ২০টি, জাতীয় উদ্যান ১৯টি, ইকোপার্ক ৩টি, বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা ২টি, সাফারি পার্ক ২টি, এভিয়ারি ইকোপার্ক একটি ও মেরিন পার্ক একটি। |
পিএসজিতে আর মন বসছে না নেইমারের। আবার বার্সেলোনায় আসার জন্য উতলা হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজি যাওয়ার সময় সাবেক ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক যেমন তিক্ত করে গিয়েছিলেন, বার্সেলোনা সবকিছু ভুলে তাঁকে ফেরত নেবে তো? সাবেক ব্রাজিল কিংবদন্তি রিভালদো বলেছেন, ফিরতে হলে বার্সেলোনার কাছে নেইমারকে ক্ষমা চাইতে হবে।ভালোবাসার শহর বলে খ্যাত প্যারিস। আইফেল টাওয়ার থেকে শুরু করে গোটা শহরে রোমান্টিকতার নানান উপাদান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে যেন। বলা হয়, ভালোবাসাহীন নীরস কোনো মানুষও প্যারিসে গেলে প্রেমে পড়তে বাধ্য। সেই প্যারিসেই কিনা নেইমার ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছেন না!পিএসজিতে একদমই থাকতে চাইছেন না নেইমার; অদ্ভুত এক ভালোবাসাহীনতায় ভুগছেন বলে। ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ছে মেসি-সুয়ারেজদের সঙ্গে থাকার মধুর সেই দিনগুলোর কথা। পুরোনো প্রেম বার্সেলোনায় ফিরে যেতে চাইছেন তিনি। এক বছর ধরেই দলবদলের বাজারকে স্বস্তি দিচ্ছেন না নেইমার। আজ রিয়াল মাদ্রিদ তো পরদিন বার্সেলোনায় যাচ্ছেন ব্রাজিল ফরোয়ার্ড। এ দলবদলের বাজারে সে তুলনায় একটু পানসে সময় কাটাচ্ছেন। যত গুঞ্জন, সবই বার্সেলোনা ঘিরে। স্প্যানিশ-ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলো সরগরম এ নিয়ে। কিন্তু চাইলেই কি আর হয়? যেভাবে সম্পর্ক তিক্ত করে বার্সেলোনা ছেড়েছিলেন, এত কিছুর পর বার্সেলোনা তাঁকে নেবেই-বা কেন? এ জন্য বার্সেলোনার সাবেক ব্রাজিল ফরোয়ার্ড রিভালদো জানিয়েছেন, ইচ্ছে পূরণ করতে চাইলে বার্সেলোনার কাছে নেইমারকে ক্ষমা চাইতে হবে।বার্সেলোনার সমর্থকদের মন পাওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার বিকল্প নেই, মনে করছেন রিভালদো, ‘ওকে আনুষ্ঠানিকভাবে বার্সেলোনার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ওকে বলতে হবে, ও যা করেছে ভুল করেছে। ওকে বলতে হবে, বার্সাই ওর একমাত্র ভালোবাসা, ওর ঘর। আশা করি, সব ভক্ত না হলেও অনেক ভক্তই ওর মনের অবস্থা বুঝতে পারবে তখন। এরপর লিগে ও চ্যাম্পিয়নস লিগে সমর্থকেরা যখন বার্সার জার্সি গায়ে নেইমারকে মাঠ মাতাতে দেখবে, তখন আস্তে আস্তে সবাই ওকে এমনিতেই মাফ করে দেবে।’নেইমারের প্রতি এখন বার্সা-সমর্থকদের ক্ষোভ থাকলেও বার্সার জার্সি গায়ে নিয়মিত নেইমারের ঝলক দেখলে সেই ক্ষোভ দ্রুতই ভালোবাসায় রূপ নেবে—এমনটাই আশা করছেন রিভালদো, ‘যেভাবে নেইমার বার্সা ছেড়েছিল, সে কথা মনে করে অনেক ভক্তই ওর ওপর বিরক্ত। কিন্তু ফুটবল এমনই। ও যদি এসে যায়, স্বাভাবিকভাবেই অনেক ভক্ত ওর সমালোচনা করবে। কিন্তু মাঠে বা অনুশীলনে আমরা সেই একই খেলোয়াড় নেইমারকে দেখতে পারব প্রতিদিন!’ |
আলোচিত হত্যা মামলাগুলো নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের দীর্ঘসূত্রতায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন সরকারি দলের সাংসদ কামরুল ইসলাম।আজ শনিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, নিম্ন আদালতে দ্রুত বিচার হচ্ছে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচার করে দণ্ড কার্যকর করা যাচ্ছে না। তিনি এ জন্য উচ্চ আদালতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। বরগুনায় আলোচিত রিফাত হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে, কিন্তু সামাজিক অবক্ষয় হয়েছে। মানুষের মধ্যে পশুবৃত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দিন আগে রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যারা ভাইরাল করছে, কেউই আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে যাচ্ছে না। এ রকম ঘটনা দ্রুততম সময়ে বিচার করা উচিত। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিচারের কথা বলছেন। এ ধরনের ঘটনার বিচার হচ্ছে। বিশ্বজিৎ হত্যা, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন, সিলেটে পায়ুপথে বাতাস দিতে হত্যার ঘটনায় নিম্ন আদালতে বিচার হয়েছে। নুসরাত হত্যার বিচার চলছে। মানুষ দ্রুত রায় কার্যকর দেখতে দেখতে চায়। নিম্ন আদালতে সফলভাবে রায় হচ্ছে, কিন্তু উচ্চ আদালতে হাইকোর্ট-আপিল বিভাগে আটকে থাকছে। নিম্ন আদালতের রায় পেয়েই বলা যাবে না ঘটনার বিচার হয়েছে।উচ্চ আদালতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, দ্রুত বিচারকাজ শেষ করার জন্য আইন সংশোধনের দরকার নেই। মামলা উচ্চ আদালতে গেলে অ্যাটর্নি জেনারেলকে পেপার বুক দ্রুত করে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল দেন, কিন্তু মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। |
আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্ট ফুড, মিষ্টান্ন ভান্ডার, বিউটি পারলার, তৈরি পোশাকের দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ ২৪ ধরনের ব্যবসায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব ব্যবসায় কাগজে-কলমে হিসাব রাখার দিন শেষ। দিনে ১৩ হাজার ৭০০ টাকার বেশি বেচাকেনা হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব রাখতে হবে। সে জন্য এখন থেকে ২৪ ধরনের ব্যবসায় ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর), ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি), সেল ডেটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) কিংবা পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।১৩ জুন থেকে ২৪ ধরনের ব্যবসায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখা বাধ্যতামূলক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ইতিমধ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখতে হবে। অর্থাৎ নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী বার্ষিক লেনদেন ভ্যাটমুক্ত সীমার ওপরে উঠলেই ইসিআর মেশিন, ইএফডি, এসডিসি, পিওএস ব্যবস্থা থাকতে হবে। নতুন ভ্যাট আইনটি আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন করা হবে।যেসব দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইসিআর মেশিন লাগাতে হবে, সেগুলো হলো আবাসিক হোটেল; রেস্তোরাঁ ও ফাস্ট ফুডের দোকান; ডেকোরেটর্স ও ক্যাটারার্স; মোটরগাড়ির গ্যারেজ, ওয়ার্কশপ ও ডকইয়ার্ড; বিজ্ঞাপনী সংস্থা; ছাপাখানা ও বাঁধাই সংস্থা; কমিউনিটি সেন্টার; মিষ্টান্ন ভান্ডার; স্বর্ণকার ও রৌপ্যকার এবং সোনা-রুপার দোকানদার এবং স্বর্ণ পাকাকারী; আসবাব বিক্রয়কেন্দ্র; কুরিয়ার ও এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস; বিউটি পারলার; হেলথ ক্লাব ও ফিটনেস সেন্টার; কোচিং সেন্টার; সামাজিক ও খেলাধুলাবিষয়ক ক্লাব; তৈরি পোশাকের দোকান; ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালিসামগ্রীর বিক্রয়কেন্দ্র; শপিং সেন্টার ও শপিং মলের সব সেবা প্রদানকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান; ডিপার্টমেন্টাল স্টোর; জেনারেল স্টোর ও সুপারশপ; বড় ও মাঝারি ব্যবসা (পাইকারি ও খুচরা) প্রতিষ্ঠান; যান্ত্রিক লন্ড্রি, সিনেমা হল এবং সিকিউরিটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় হিসাব রাখার উদ্যোগটি অবশ্যই ভালো। তবে বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় আছে। এর আগে একবার ইসিআর মেশিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন করা যায়নি। এখন ইসিআর, ইএফডি কিংবা পিওস—এসব ব্যবস্থা যাতে সঠিকভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লাগানো হয়, তা নজরদারিতে রাখতে হবে।এদিকে স্বয়ংক্রিয় হিসাব পদ্ধতির জন্য ব্যবহৃত মেশিনের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে, তারও একটি নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। সেখানে বলা হয়েছে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখার মেশিনে ভ্যাটের বিদ্যমান হারগুলো গণনার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিক্রেতাকে পাঁচ বছর পর্যন্ত হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। মেশিন হতে হবে ব্যাটারিতে চার্জযোগ্য কিংবা বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা থাকতে হবে। ক্রেতাকে যে রসিদটি দেওয়া হবে, তাতে ব্যবসার নাম; ঠিকানা; ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) ; পণ্য বা সেবার নাম, মূল্য, ভ্যাট হার; টাকা পরিশোধের মাধ্যম (নগদ, কার্ড, চেক, ক্রেডিট) ; সময় ও তারিখ থাকতে হবে। এ ছাড়া রসিদে বারকোড বা কিউআর কোডও থাকতে হবে।যেসব ব্যবসায় বাধ্যতামূলক আবাসিক হোটেল; রেস্তোরাঁ ও ফাস্ট ফুডের দোকান ডেকোরেটর্স ও ক্যাটারার্স; মোটরগাড়ির গ্যারেজ ওয়ার্কশপ ও ডকইয়ার্ড; বিজ্ঞাপনী সংস্থা ছাপাখানা ও বাঁধাই সংস্থা; কমিউনিটি সেন্টার; মিষ্টান্ন ভান্ডারজানতে চাইলে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, সব রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীর পক্ষে এই মুহূর্তে ইসিআর মেশিন বা ফিসক্যাল ডিভাইস লাগানো সম্ভব নয়। সেই ধরনের প্রস্তুতিও নেই। আগে অনেকেই প্যাকেজ ভ্যাট দিতেন। কিন্তু এখনকার ৫০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন সেটা নির্ধারণ করতে ঝামেলা হবে। আগামীকাল শনিবার এ বিষয়ে সমিতির সদস্যদের সঙ্গে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।এর আগেও ২০০৭ সালে কিছু ব্যবসায় ইসিআর মেশিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। তখন ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, নতুন ইসিআর মেশিন লাগালে ব্যবসার খরচ বাড়বে, যা পণ্য বা সেবার মূল্য বাড়িয়ে দেবে।এমন প্রেক্ষাপটে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের জন্য দুই বছর আগে এনবিআরের পক্ষ থেকে কেনা দামে ব্যবসায়ীদের ইসিআর মেশিন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ইসিআর মেশিন এখনো আসেনি। ব্যবসায়ীরাও ইসিআর মেশিন পাননি। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ৫০ হাজার ইসিআর মেশিন আমদানি করার জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এসব ইসিআর দেশে আসবে।এই বিষয়ে মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, এনবিআরকে কেন এসব মেশিন আমদানি করে সরবরাহ করতে হবে। এতে যাঁরা মেশিন পাবেন না, তাঁরা অজুহাত পাবেন। আসলে এই ধরনের মেশিন লাগানোর দায়দায়িত্ব ব্যবসায়ীরা নিতে চাচ্ছেন না। তাই শেষ পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখার উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।বড় ব্যবসায়ীদের হিসাব রাখার জন্য এনবিআর সফটওয়্যার নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ১১টি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে এনবিআর। কিন্তু এখনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ওই সব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সফটওয়্যার নেননি।বার্ষিক পাঁচ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়, এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য এনবিআরের নির্ধারিত সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা চাইলে সেই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবে। |
চীনের সঙ্গে ‘ঐতিহাসিক’ চুক্তি করার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ শনিবার ট্রাম্প বলেছেন, ন্যায্য চুক্তির জন্য খোলামনে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। চীনের প্রেসিডেন্ট সি পিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক আজ হতে যাচ্ছে। দুই শীর্ষ নেতা জি–২০ সম্মেলনের জন্য এখন জাপানের ওসাকায় অবস্থান করছেন। দীর্ঘ সময় ধরে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িত দেশ দুটির বৈঠকটি শেষ পর্যন্ত চুক্তির দিকে গড়ায় কি না, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে বিশ্ব।আজ বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক ফোরাম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন গতকাল শুক্রবার ওসাকায় শুরু হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এবারের বৈঠকটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যলড়াই ও সংকট সমাধানের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এবারের সম্মেলনটি শুরু হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এ দুটি দেশের বাণিজ্যিক প্রভাব রয়েছে। তাই আজ দুই দেশের বৈঠককে ঘিরে আগ্রহ রয়েছে বিশ্বব্যাপী।ট্রাম্পের কথায় বৈঠকটিকে ঘিরে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘বৈঠকটি ঐতিহাসিক হতে পারে, যদি আমরা ন্যায্য কোনো বাণিজ্য চুক্তি করতে পারি...আমরা এর জন্য খোলাখুলি প্রস্তুত।’দুই দেশ একে অন্যের পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের পর এই বৈঠক নিয়ে ইতিবাচক সুরে কথা বলেছেন সি চিন পিংও। তিনি বলেছেন, মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে ‘সংলাপ’ ভালো।ট্রাম্প বলেছেন, তিনি একটি ‘কার্যকর’ বৈঠকের আশা করছেন। সেই সঙ্গে এটা বলেও সতর্ক করেন যে বৈঠক থেকে চুক্তি হওয়ার কোনো সুখবর না পেলে তিনি চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া সব পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়াবেন।ট্রাম্প আগেই নিশ্চিত করেছিলেন যে তাঁদের মধ্যে চীনের টেলিকম প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে নিয়ে আলোচনা হবে। নিরাপত্তা ইস্যুতে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশে নিষিদ্ধ করেছে। বাণিজ্যযুদ্ধের সাময়িক বিরতির অংশ হিসেবে হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে চীন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্যযুদ্ধের সাময়িক বিরতি ও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিতে দুই দেশের একমত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ায় প্রকাশিত মন্তব্য প্রতিবেদনে হয়েছে, দুই পক্ষের বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে এবং সংকটের বিষয়গুলোকে সঠিক পথে আনার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিত্তি খুঁজে পেতে বৈঠকটি একটি অনন্য সুযোগ হতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলা হয়, চীনের সঙ্গে সমান পদক্ষেপে তাল মিলিয়ে চলতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে এবং চীনের বৈধ উদ্বেগের বিষয়গুলো মেনে নিতে হবে। |
রেলসেতুটির ওপর পাঁচ দিন আগে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল উপবন এক্সপ্রেস। লাইনচ্যুত ট্রেনটির একটি বগি এখনো পড়ে আছে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর নিচে। তখন সেখানে তেমন পানি ছিল না। কিন্তু দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে এখন ডুবুডুবু অবস্থা, কুলকুল করে বইছে স্রোত। পরিস্থিতি দেখে ভালো ঠেকেনি এলাকাবাসীর। এই অবস্থায় সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন গেলে আবার ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। সেই আশঙ্কায় গতকাল শুক্রবার দুপুরে একটি ট্রেন আটকে দেয় মানুষ।তবে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল এলাকার মানুষের সেই আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত সত্য হয়নি। রেলওয়ের প্রকৌশলীরা সেতুটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ট্রেন চলতে পারে। প্রকৌশলীদের এই সিদ্ধান্তে প্রায় তিন ঘণ্টা পর এই পথে আবারও ট্রেন চলাচল শুরু হয়।সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেস গত ২৩ জুন বরমচাল রেলস্টেশন এলাকার বড়ছড়া রেলসেতুর ওপর দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ট্রেনের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মধ্যে একটি বগি বড়ছড়া সেতুর নিচে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় ট্রেনের চার যাত্রী নিহত হন। আহত শতাধিক।রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, দুর্ঘটনায় সেতুর নিচে পড়ে যাওয়া বগিটি গতকাল পর্যন্ত অপসারণ করা হয়নি। এদিকে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বড়ছড়ায় পানি বেড়ে ওই বগির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে স্থানীয়দের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়, ওই বগির কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেতুর গার্ডারে পানির ধাক্কা লেগে এর নিচের মাটি সরে যেতে পারে। এতে সেতুটি ঝুঁকিতে থাকতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই তাঁরা গতকাল দুপুরে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বরমচাল স্টেশনে আটকে দেন। তাঁরা বড়ছড়া সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন না চালানোর অনুরোধ করেন। পরে স্টেশনমাস্টার ও চালক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ট্রেনটি স্টেশনেই আটকে রাখে। রেলওয়ে সূত্র বলেছে, বড়ছড়া রেলসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেটের মাইজগাঁও এবং চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী জালালাবাদ মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন কুলাউড়া জংশন স্টেশনে আটকা পড়ে।বরমচাল রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার সফিকুল ইসলাম সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এলাকাবাসীর আপত্তিতে ট্রেন আটকে রাখা হয়েছিল। পরে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের লোকজন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেতুটি ঝুঁকিমুক্ত বলে জানান। বিকেল ৪টা ৫৩ মিনিটে পাহাড়িকা ও ৫টা ৭ মিনিটে পারাবত ট্রেন সেতুটি অতিক্রম করে গন্তব্যে চলে যায়।বড়ছড়া রেলসেতু এলাকা দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের কুলাউড়া সেকশনের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) জুয়েল আহমদ বলেন, সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার কারণে বড়ছড়া সেতু নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মনে আশঙ্কা ছিল। তার ওপর সেতুর নিচে পানি বেড়ে গেছে। এ কারণে তাঁরা গতকাল ট্রেন আটকে দেন। তবে সেতুটি ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। |
মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম কেনায় সৌদি আরবের প্রশংসা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘আমার বন্ধু’ সম্বোধন করে আজ শনিবার ট্রাম্প তাঁর এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন। সৌদির অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারে যুবরাজের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি।পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ট্রাম্পের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির পরিকল্পনাকে সমর্থন দেয়নি কংগ্রেস। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানের কয়েকজন সদস্যও মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কায় এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করেন। গত বছর সৌদি সাংবাদিক ও সমালোচক জামাল খাসোগি ইস্তাম্বুলের সৌদি মিশনের ভেতর খুন হওয়ার বিষয়টিকে তাঁরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।যুবরাজের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার বন্ধু ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেখা করা একটি সম্মানের বিষয়। পাঁচ বছর ধরে সৌদি আরবকে তিনি ঢেলে সাজাচ্ছেন। বিশেষ করে নারীদের জন্য তাঁর অবদানকে রীতিমতো ইতিবাচক বিপ্লব বলে মনে করি আমি।’ জি-২০ সম্মেলনের এক ফাঁকে এ কথা জানান তিনি।যুবরাজ বলেন, ‘আমরা দেশের ভালোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সৌদি আরবের উন্নয়ন প্রকল্প হবে একটি দীর্ঘ যাত্রা।’এ মাসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য দেশে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির বিরুদ্ধে ভোট দেয় সিনেট। ইরান ইস্যুকে জরুরি ঘোষণা করে কংগ্রেসের এ ধরনের চুক্তির পর্যালোচনা হ্রাস করার ট্রামের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন তাঁরা।ট্রাম্প অবশ্য সিনেটের কার্যক্রমে ভেটো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আজ শনিবার সম্মেলনে যুবরাজের সমালোচক খাসোগির মৃত্যুর ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি।সিআইএর তদন্তে জানা গেছে, খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার পেছনে যুবরাজের হাত আছে। জাতিসংঘের অধিকার রক্ষা তদন্ত কর্মকর্তারাও বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবরাজের সংশ্লিষ্টতা তদন্ত করা প্রয়োজন। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সে ব্যাপারে যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে বলে জানান তাঁরা। সৌদি কর্মকর্তারা খাসোগি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন।সমালোচকেরা বলেন, ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার কথা মাথায় রেখে সৌদিকে চটাতে চাইছে না যুক্তরাষ্ট্র। পারস্য অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে সৌদিকে হাতে রাখছেন ট্রাম্প।উপসাগরীয় এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা ও ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প বলেন, সামরিক সরঞ্জাম কেনার টাকা দিয়ে অন্তত এক মিলিয়ন মার্কিন নাগরিকের চাকরির ব্যবস্থা করা সম্ভব।যুবরাজের পাশে বসে ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি আরব এবং অন্যান্য দেশ সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে কি না, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছিল। তবে সৌদি আরব এ অবস্থান থেকে একেবারেই সরে এসেছে। এ কারণে আমি এবং সারা বিশ্ব সৌদির প্রশংসা করছে।’ |
১৩ জুন বর্তমান মেয়াদের সরকার তাদের প্রথম বাজেট পেশ করেছে। আজ-কালের মধ্যে সেটি পাস হবে। বাজেটের তারুণ্য অংশে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উল্লেখ আমাকে আনন্দিত করেছে। অর্থমন্ত্রী একটি সম্পূর্ণ অনুচ্ছেদ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য এবং একটি অনুচ্ছেদ উদ্ভাবনের জন্য আলাদা করে লিখেছেন। আমাদের স্নাতকোত্তীর্ণ উদ্দাম তরুণদের প্রায় ৪৭ শতাংশই কোনো চাকরি জোগাড় করতে পারে না। কাজেই অর্থমন্ত্রী যখন বলেন, আগামী ১১ বছরে ৩ কোটি কর্মসংস্থান হবে, তখন আশায় বুক বাঁধি। কিন্তু সেদিন বাজেটে তারুণ্যের চাওয়া-পাওয়াসংক্রান্ত এক বৈঠকে এক বিপণন বিশেষজ্ঞ বন্ধু বললেন, এ লক্ষ্য পূরণ করতে হলে প্রতিদিন গড়ে ১১ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।বোঝাই যাচ্ছে, প্রচলিত পদ্ধতিতে এই সমীকরণ মেলানো কঠিন। কারণ, একা সরকারের পক্ষে এত কর্মের সংস্থান করা সম্ভব নয়। এখনো তা হয় না। কারণ, কর্মবাজারের ৯০ শতাংশই বেসরকারি খাতের। বেসরকারি খাত কেমন করে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে? যদি সেখানে নতুন বিনিয়োগের পরিবেশ থাকে, ব্যবসা করাটা সহজ হয়। কেন জানি বাজেটে এর পক্ষে তেমন জোরালো আশাবাদ নেই।গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে তরুণদের কর্মসংস্থানের দুটি বড় খাত হয়েছে ই-কমার্স ও রাইড শেয়ারিং। এ দেশে ই-কমার্সের ব্যাপ্তি ও বিকাশ খুব বেশি হবে, এটা ভাবা ঠিক হবে না। কিন্তু এরই মধ্যে গুটি গুটি পায়ে এই খাতে প্রায় দুই লাখ লোক সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। ই-কমার্সকে কেন্দ্র করে টাকা লেনদেন, মালামাল পৌঁছে দেওয়ার কুরিয়ার সার্ভিস, ওয়েবসাইট সচল রাখার সেবা কিংবা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রতিষ্ঠান—সব মিলিয়ে এই কর্মযজ্ঞ। এই যুক্ত তরুণদের বড় অংশই স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। তাঁদের অনেকেই নারী, যাঁরা আগে বাসায় অলস সময় কাটাতেন। ভ্যাটমুক্ত ই-কমার্স খাতে এবার কেন ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, তা বোধগম্য নয়। এটি বিকাশমান এই খাতের সহায়ক হবে না। শুধু তা-ই নয়, এই খাতের অনেক উদ্যোক্তাই এত ক্ষুদ্র যে তাঁদের আয় করযোগ্য আয়ের সীমার নিচেই থাকে। ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় উৎসে কর কর্তনের হার ৬ গুণ বাড়িয়ে আগের ৫০০ টাকার জায়গায় ৩ হাজার টাকা করা হয়েছ। একেবারে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, যাঁদের অনেকে নারী এবং যাঁদের আয় করযোগ্য নয়, তাঁদের জন্য এটি নেহাত একটি নতুন চাপ তৈরি করবে।কিংবা রাইড শেয়ারিং উদ্যোগের কথা ধরা যাক। দেশীয় ‘সহজ’, ‘পাঠাও’ বা বিদেশি ‘উবার’–এর মতো অ্যাপগুলোর কল্যাণে লক্ষাধিক তরুণ-তরুণী নিজেদের কাজের একটা ক্ষেত্র তৈরি করে নিয়েছেন। হাজার তরুণের কথা জানি, যাঁরা মোটরসাইকেল বা গাড়ির বন্দোবস্ত করে এখন সহজ বা পাঠাওতে এই সেবা দিচ্ছেন। বাজেটে রাইড শেয়ারিংয়ের ভাড়ার ওপর ভ্যাট প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে এটি শুধু কোম্পানির কমিশনের (ভাড়ার ২০-২৫ শতাংশ) ওপর ছিল। দ্বিতীয়ত, রাইডারদের আয়ের ওপর কর। বেশির ভাগ বাইকার মাসে যে আয় করেন, তা শেষ পর্যন্ত করযোগ্য হয় না।বাজেটে নবীন উদ্যোক্তাদের (স্টার্টআপ) জন্য আলাদা করে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা বেজায় খুশির খবর। কিন্তু এই ১০০ কোটি টাকা যদি আগের ইক্যুইটি ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ফান্ডের কায়দায় সরকারিভাবে বিতরণ করা হয়, তাহলে আগের মতোই এটি ব্যর্থ হবে। এটি বরং বেসরকারি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করার কথা ভাবা যেতে পারে, যেমনটি ভারতে করা হয়েছে। তাঁদের জন্য ম্যাচিং ফান্ডের সুযোগ রাখলে বাজেট বরাদ্দের কমপক্ষে দ্বিগুণ ফান্ড আমাদের উদ্যোক্তারা পেতে পারেন।আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা, যাঁরা দেশে প্রযুক্তিভিত্তিক স্টার্টআপের সংস্কৃতি শুরু করেছেন, সেখানে কেবল আর্থিক বিনিয়োগই যথেষ্ট নয়। এর প্রমাণ পেয়েছি অতিসম্প্রতি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাওয়ের একসঙ্গে ৩০০ কর্মীর চাকরিচ্যুতি দেখে। এ দেশে একসঙ্গে এত সংখ্যক কর্মীর চাকরি চলে যাওয়া এত দিন শুধু তৈরি পোশাকশিল্পে দেখেছি। দেখেছি বলে লে-অফকে আমরা শুধু কায়িক শ্রমের বেলায় প্রযোজ্য বলে ধরে নিয়েছি। কিন্তু বিনিয়োগনির্ভর, হাই বার্ন আউট (বিনিয়োগের টাকা খরচ করে কোম্পানির আকার বড় করা) প্রতিষ্ঠানের বেলায় এ রকম হওয়া অস্বাভাবিক নয়। প্রযুক্তিনির্ভর বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এটি নিয়মিত হয়ে থাকে।বিনিয়োগের প্রবাহ কমে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরা যদি পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট না হয় কিংবা ডালপালা বাড়ানোর কাজটা যদি যথাযথ না হয়, পাঠাওয়ের বেলায় হয়তো এই তিন কারণই ঘটেছে, যার একটি ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি। ৩০ বছরের কম বয়সী কয়েকজন তরুণ মিলে গত কয়েক বছরে ৮০০ কোটি টাকার এই কোম্পানি গড়ে তুলেছেন এবং প্রায় ৭০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছেন। কিন্তু আমরা কেউ তাঁদের দুর্বলতাগুলো দূর করার চেষ্টা করিনি। আজ যদি দেশীয় বিনিয়োগকারীরা তাঁদের পাশে থাকতেন, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনার জোরটাও তাঁদের বেশি হতো। শুধু তা-ই নয়, এই তরুণদের পাশে দাঁড়ানোর মতো অভিজ্ঞ ফিন্যান্সিয়াল ব্যবস্থাপক বা উপদেষ্টা জোগাড় করে দেওয়াও আমাদের উচিত ছিল। আমরা সেসবের কিছু না করে এখন তাঁদের চাপে ফেলার ব্যবস্থা করছি। কেউ কেউ আগবাড়িয়ে এমন সব নতুন তত্ত্ব হাজির করছি, যা শেষমেশ প্রযুক্তি খাতের বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আমাদের ওপর আস্থা নষ্ট করে ফেলতে পারে।৪০ বছর ধরে গড়ে ওঠা তৈরি পোশাকশিল্পের পাশে যদি সরকার এখনো বাড়তি তিন হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা নিয়ে দাঁড়াতে পারে, তাহলে আমাদের নতুন তরুণেরা, যাঁরা এশিয়ার সেরা উদ্যোগগুলোর মধ্যে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারেন, তাঁদের পাশে কেন আমরা দাঁড়াই না।না দাঁড়ালে ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি কর্মসংস্থানের সমীকরণ মেলানো আমাদের জন্য সত্যিই খুব কঠিন হয়ে যাবে।মুনির হাসান: প্রথম আলোর যুব কার্যক্রমের প্রধান |
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সনাতন ও যন্ত্রে তৈরি ইট বিক্রিতে নির্দিষ্ট হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ ভালো নাকি খারাপ হলো, সে বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ অটো ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব বি এন দুলাল।প্রথম আলো: প্রস্তাবিত বাজেটে যন্ত্রে তৈরি সাধারণ ইট বিক্রিতে ভ্যাটের হার প্রতি হাজারে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। ছিদ্রবিশিষ্ট বিশেষ ইটে ভ্যাটের হার হাজারে ৭০০ টাকা। এতে করে কি প্রভাব পড়বে?বি এন দুলাল: আধুনিক পদ্ধতিতে যন্ত্রে তৈরি ইট বা অটো ব্রিক পরিবেশবান্ধব। কারণ, সনাতন পদ্ধতির চেয়ে যন্ত্রে তৈরি ইটে ৩০ শতাংশ কম মাটি লাগে। ইট পোড়াতে জ্বালানিও তুলনামূলক কম লাগে। তবে সনাতন ও অটো ব্রিকের ভ্যাটের হারের মধ্যে বৈষম্য ছিল। পরিবেশবান্ধব ইটের ব্যবহার বাড়াতে আমরা সেই বৈষম্য দূর করে ভ্যাটের হার শূন্য করার দাবি করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত সেটি না হলেও পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এত দিন প্রতিটি সাধারণ ইটে ৪৮ পয়সা ভ্যাট দিতে হতো। সেখানে ২ পয়সা বেড়ে হচ্ছে ৫০ পয়সা। অন্যদিকে ছিদ্রবিশিষ্ট প্রতি ইটে ভ্যাটের হার ছিল ১ টাকা ২০ পয়সা। জুলাই থেকে সেটি কমে ৭০ পয়সা হবে। আমরা মনে করি, পরিবেশবান্ধব ইট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের সেই ইট ব্যবহারে উৎসাহ দিতে ভ্যাটের হার আরও কমানো দরকার।প্রথম আলো: দেশে কতগুলো অটো ব্রিক কারখানা আছে? তারা ইটের চাহিদার কত শতাংশ পূরণ করছে?বি এন দুলাল: সারা দেশে ১২০টি অটো ব্রিক কারখানা আছে। সবচেয়ে বেশি কারখানা ময়মনসিংহে। অবশ্য বর্তমানে ১০৭টি কারখানা চালু আছে। প্রতিটি কারখানায় গড়ে ২০০ শ্রমিক কাজ করেন। একেকটি কারখানায় বছরে ২ কোটি থেকে ৩ কোটি ইট তৈরি হয়। তারপরও দেশের মোট চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ ইট সরবরাহ করতে পারে অটো ব্রিক কারখানা। প্রচুর সম্ভাবনা থাকায় আবদুল মোনেম, আরএকেসহ আরও অনেক বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এই খাতে বিনিয়োগে এসেছে।প্রথম আলো: বাজেটে আপনারা আর কী সুবিধা চেয়েছিলেন?বি এন দুলাল: অটো ব্রিক কারখানা হোপম্যান ও টানেল-এই দুই পদ্ধতিতে করা যায়। হোপম্যান পদ্ধতিতে কারখানা করলে ১৩ থেকে ১৫ কোটি টাকা লাগে। আর টানেল পদ্ধতিতে লাগে কমপক্ষে ৪০ কোটি টাকা। অটো ব্রিকে বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে আমরা সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ দেওয়ার দাবি করেছিলাম। সারা দেশে নিবন্ধিত ৭ হাজার সনাতন ইটভাটা থাকলেও বাস্তবে আছে সাড়ে ৯ হাজার। অটো ব্রিকশিল্প বড় হলে পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা সনাতন পদ্ধতির ইট ভাটা ধীরে ধীরে কমে আসবে।সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: শুভংকর কর্মকার |
জুলাইয়ে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে। তখন অনলাইনে বেচাকেনায় সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এতে ছোট ছোট উদ্যোক্তার ওপর কী প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে কথা বলেছেন অনলাইনভিত্তিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম শপ আপের সহপ্রতিষ্ঠাতা সিফাত সারোয়ার।প্রথম আলো: অনলাইন কেনাকাটায় সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?সিফাত সারোয়ার: অনলাইনে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের অধিকাংশই ছোট ছোট উদ্যোক্তা। ভ্যাট আরোপ করায় তাঁদের ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাটি শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেল। অনলাইনে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের মুনাফা খুবই সীমিত। ভ্যাটের কারণে সেটি আরও সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে বর্তমানে খুব বেশি রাজস্ব আদায় হবে না। তবে খাতটিকে বড় হওয়ার সুযোগ দিলে ভবিষ্যতে অনেক রাজস্ব আদায়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সে জন্য ই-কমার্স খাতকে বিকশিত করার সুযোগ দিতে সরকারকে আরও চার-পাঁচ বছর ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দিতে হবে।প্রথম আলো: অনেক নামীদামি ব্র্যান্ড তো অনলাইনে বেচাকেনা করে। তাদের ক্ষেত্রেও কি ভ্যাট অব্যাহতির প্রয়োজন আছে?সিফাত সারোয়ার: না। তাদের জন্য ভ্যাট অব্যাহতির দরকার নেই। আমরা বলতে চাইছি, যেসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্র আছে, তাদের অনলাইন বেচাবিক্রিতে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট থাকুক। কিন্তু যাদের কোনো বিক্রয়কেন্দ্র নেই, কেবল অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে, তাদের ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হোক।প্রথম আলো: অনলাইনে পণ্য কিনে ভোক্তারা প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। এটি বন্ধে সরকারের তরফ থেকে কি কোনো ধরনের তদারকি ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে মনে করেন?সিফাত সারোয়ার: যাঁরা ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেন, তাঁরা কখনোই ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন না। কারণ একবার কিংবা দুবার পণ্য বিক্রি করেই ব্যবসায় উন্নতি করা যায় না। একজন ক্রেতা যদি একবার একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনে প্রতারিত হন, তাহলে তিনি আর কখনো সেই প্রতিষ্ঠানের ধারেকাছে যাবেন না। তা ছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর শক্ত ভূমিকা রাখছে। প্রতারিত হলেই সেখানে অভিযোগ করছেন ভোক্তারা। অধিদপ্তর থেকে জরিমানার মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।প্রথম আলো: বাজেটে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকার একটি তহবিল করা হয়েছে। এটিকে কীভাবে দেখছেন?সিফাত সারোয়ার: মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানদের উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে প্রধান বাধা হচ্ছে অর্থায়ন। সে জন্য নতুন উদ্যোক্তা গড়তে ১০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করার বিষয়টি খুবই ভালো উদ্যোগ। আশা করছি, তহবিল থেকে প্রকৃত উদ্যোক্তারা অর্থ পাবেন। এ অর্থ প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি সহজ ও কম সময়ে হবে বলে আশা করছি।সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: শুভংকর কর্মকার |
মেটা: প্রায় এক বছর হতে চলল। পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ হলো না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় গত বছরের ২৬ জুলাই সর্বসম্মতিক্রমে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল করে ‘বাংলা’ রাখার প্রস্তাব পাস হয়। তারপর সেই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। আজ অবধি সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে, বাংলা নামের সেই ঐতিহাসিক প্রস্তাব এখন দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের হিমঘরে পড়ে আছে। অনুমোদন মিলছে না।প্রায় এক বছর হতে চলল। পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ হলো না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় গত বছরের ২৬ জুলাই সর্বসম্মতিক্রমে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল করে ‘বাংলা’ রাখার প্রস্তাব পাস হয়। তারপর সেই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। আজ অবধি সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে, বাংলা নামের সেই ঐতিহাসিক প্রস্তাব এখন দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের হিমঘরে পড়ে আছে। অনুমোদন মিলছে না।এতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তৃণমূলের মধ্যে। আর সেই ক্ষোভের ছবি ফুটে উঠেছে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের কণ্ঠে। গত বুধবার তিনি রাজ্যসভায় অধিবেশনে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের নাম “বাংলা” করার পক্ষে অনুমোদন দিন।’অনুমোদন না মিললেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গের বদলে ‘বাংলা’ নাম ব্যবহার। নতুন করে ধ্বনি দেওয়াও শুরু করেছে ‘জয় বাংলা’। রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভা–সমাবেশে জয় বাংলা ধ্বনি দিতে শুরু করেছেন।পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় ২০১৬ সালের ২ আগস্ট দুটি নামের প্রস্তাব গৃহীত হয়। বাংলা ও বঙ্গ। তবে অধিকাংশের মত ছিল ‘বাংলা’ নামের পক্ষে। সেই নামকেই অনুমোদন করেন মমতা। তারপর তা পেশ করেন বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে। যদিও তখনই ‘বাংলা’ নাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল রাজনৈতিক মহলে। কেউ কেউ বলেছেন, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। রাজ্যের নাম বাংলা হলে সমস্যা হতে পারে। তাই এই প্রসঙ্গে মমতা আগেই জানিয়ে দেন, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল ঠিকই আছে। পাশে বাংলাদেশ তো একটা দেশ। আর রাজ্যের নাম বাংলা হলে অসুবিধা কোথায়? পাকিস্তানেও পাঞ্জাব আছে, আমাদের দেশেও পাঞ্জাব আছে।’২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট রাজ্য বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব পাস হলেও সেখানে বলা হয়েছিল, ইংরেজিতে এই নাম হবে ‘বেঙ্গল’ আর হিন্দিতে হবে ‘বাঙ্গাল’। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় নাম পরিবর্তনের এই প্রস্তাব বিপুল ভোটের ব্যবধানে পাস হয়ে যায়। প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ১৮৯ ভোট আর বিপক্ষে পড়ে ৩১ ভোট। কিন্তু গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার এক চিঠিতে জানায়, যে নামই হোক না কেন তা একটিই হতে হবে। বিভিন্ন ভাষাতেও একই নাম রাখতে হবে। ফলে, রাজ্য সরকার তিন ভাষাতেই ‘বাংলা’ করার সিদ্ধান্ত নেয়।এরপর গত বছরের ২৬ জুলাই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশনে এই নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পেশ করা হয়। প্রস্তাব পাসের পর সেদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আজ আমাদের কাছে এক ঐতিহাসিক দিন। বাংলা নামের প্রতি আমাদের আবেগ জড়িত। তাই এই রাজ্যের নাম বাংলা হওয়ায় আমরা গর্বিত। আশা করি, রাজ্যবাসীও খুশি। তাই রাজ্যবাসীকে জানাই অভিনন্দন। বাংলা নামে আমরা আজও স্বচ্ছন্দ বোধ করি। তাই আজ এই রাজ্যবাসীর জন্য এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হলো’। মমতা বলেছিলেন, ‘যুগের প্রয়োজনে কখনো সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়। আমরা সেই পথে এগিয়ে আমাদের রাজ্যের নাম বাংলা করেছি। কবিগুরুর নানা লেখায় ফুটে উঠেছে এই বাংলা নামের কথা’।এরপর এই নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পাঠানো হয় দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য। রাজ্য সরকার আশা করেছিল, কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত এই নাম পরিবর্তনের অনুমোদন দেবে। তবে গত এক বছরেও সেই অনুমোদন দেয়নি।এর আগেও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নাম পরিবর্তন হয়েছে। সংযুক্ত প্রদেশের নাম পরিবর্তন হয়ে হয়েছে উত্তর প্রদেশ, হায়দরাবাদের পরিবর্তে হয়েছে অন্ধ্র প্রদেশ, মধ্য ভারতের নাম হয়েছে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চলের পরিবর্তে হয়েছে উত্তরাখন্ড, উড়িষ্যার পরিবর্তে হয়েছে ওডিশা, ত্রিবাঙ্কুর-কোচিনের পরিবর্তে কেরালা, মাদ্রাজের পরিবর্তে তামিলনাড়ু এবং মহীশূরের পরিবর্তে হয়েছে কর্ণাটক রাজ্য। |
আসছে ঈদুল আজহা। ঈদুল ফিতর শেষে অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন টেলিভিশন তারকারা। ফের ঈদুল আজহা ঘিরে নাটকে অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তাঁরা। পরিচালকেরাও পরিকল্পনা করছেন ঈদকে ঘিরে। ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে চলছে শুটিং পরিকল্পনা। শুটিং মাঠে নেমেও গেছেন কেউ। তবে ১ জুলাই থেকে শুরু হবে পুরোদস্তুর শুটিং।পরিচালক ও ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কারণে ঈদের নাটকের পরিকল্পনা করতে সবারই কমবেশি সময় লাগছে। আবার অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন ছিল। এবার আমি দুটি সাত পর্বের আর একটি টেলিছবি বানাব। আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু করব।’ঈদ আসতে এক মাসের বেশি সময় বাকি। এই সময়ের মধ্যে টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর চাহিদা মেটাতে অভিনয়শিল্পীরা ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। জানা গেছে, অসংখ্য নাটকের শিডিউল মেলাতে কাজ করতে হতে পারে গভীর রাত পর্যন্ত। বরাবরের মতো এবারও নাটকগুলোতে থাকছেন জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, আফরান নিশো,অপূর্ব, সজল,নাঈম,নিলয়, ইরফান সাজ্জাদ, তৌসিফ মাহবুব, মনোজ, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মম, মেহ্জাবীন, অপর্ণা ঘোষ, মৌসুমী হামিদ,শবনম ফারিয়া, সাবিলা নূর, তানজিন তিশা, সাফা কবির প্রমুখ। এক ঘণ্টার নাটক ও টেলিছবির পাশাপাশি অনেকের হাতে রয়েছে ধারাবাহিক নাটকও।ঈদুল ফিতরে প্রচারের জন্য নির্মিত কিছু নাটকও এই ঈদে কিছু চ্যানেলে প্রচারিত হবে। চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘এবার বেশি নাটকে অভিনয়ের ইচ্ছা নেই। রোজার ঈদে গোটা বিশেক নাটকে অভিনয় করেছিলাম। কিছু নাটক প্রচারিত হয়েছে। বাকিগুলো রয়ে গেছে। এর বাইরে সাতটি নাটকের কাজ শুরু করছি।’এবারের ঈদে অভিনেতা সজলের ১০টির মতো নাটক প্রচারিত হবে। কথাবার্তা সেভাবেই ঠিক করে নিয়েছেন পরিচালকদের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘কাজ শুরু করেছি। ঢিমেতালে চলছে। ১ জুলাই থেকে ভালোভাবে শুরু হবে।’এই মুহূর্তে নুসরাত ইমরোজ তিশা আছেন লন্ডনে। এসেই ঈদের নাটকের শুটিংয়ে ঢুকে পড়বেন।এবার বেছে বেছে কাজ করবেন শবনম ফারিয়া। তিনি বলেন, ‘অনেক বেশি কাজ করতে গেলে মান ধরে রাখাটা মুশকিল। তাই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত, ১০টির বেশি নাটক নয়।’বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিনয়শিল্পী সাবিলা নূর মিডটার্ম পরীক্ষার জন্য শিডিউল মেলাতে গিয়ে ১০ জুন থেকেই নাটকের শুটিং শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘তিনটি নাটকের শুটিং এরই মধ্যে শেষ। বাকি আছে পাঁচ-ছয়টি নাটকের কাজ। জুলাই থেকে আবার শুরু করব।’প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ১৯৫২ এন্টারটেইনমেন্টের ঈদের নাটকের ব্যস্ততা শুরু হবে সোমবার থেকে। জানালেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সাজু মুনতাসির। |
অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অভিষেক অনুষ্ঠানে একত্র হয়েছিলেন অভিনয়শিল্পীরা। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার বিকেলে অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়, প্রদীপ প্রজ্বালনের পাশাপাশি ছিল নতুন কমিটির সামনের কাজগুলো নিয়ে অঙ্গীকারের আয়োজন।শুরুতে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালেন সংঘের নবনির্বাচিত সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিমসহ ২১ জন অভিনয়শিল্পী। শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয় নির্বাচন কমিশনারদের।অনুষ্ঠানে শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, শিল্পীদের যথাযোগ্য পারিশ্রমিকের নিশ্চয়তাসহ পেশার নিরাপত্তা ও পেশাদারত্ব রক্ষার বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করবে অভিনয় শিল্পী সংঘ। প্রতিবছর জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের কর্মজীবনের ওপর নির্মাণ করা হবে তথ্যচিত্র। সেগুলো দিয়ে গড়া হবে আর্কাইভ। চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো টেলিভিশনের অভিনয়শিল্পীদের জন্যও জাতীয় পুরস্কার প্রবর্তনের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। জাতীয়ভাবে অভিনয়শিল্পীদের পৃথক পরিচয়পত্র প্রদানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হবে।দ্বিতীয় পর্বে ছিল গান ও পাঠ। ‘জিতবে একুশ, হারবে না কেউ’ স্লোগানে ২১ জুন অনুষ্ঠিত হয় অভিনয়শিল্পী সংঘের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সাজু খাদেম। |
ব্রিটিশ ক্রিকেটার ও ক্রীড়া সাংবাদিক রবিন মারলার। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের নামও যখন অনেকে জানেন না, সে সময় তিনি আঁচ করেছিলেন বাংলাদেশে ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। সানডে টাইমস পত্রিকায় আগ্রহ নিয়ে লিখেছিলেন ‘উইদার বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত সেই যুগান্তকারী প্রতিবেদন বাংলাদেশে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনে ভূমিকা রেখেছিল। সহজ করেছিল আইসিসির সদস্য পদ পাওয়ার পথ। রবিন মারলারকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন।সাউদাম্পটনের হ্যাম্পশায়ার বোলে গত রোববার দুপুরে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন মাত্রই শেষ হয়েছে। হঠাৎ কী মনে করে মুঠোফোনের কন্টাক্ট লিস্ট থেকে তাঁর নম্বরটা বের করে আরেকবার কল দেওয়া হলো। অনেকভাবেই তো চেষ্টা হলো, আরেকটিবার আঁধার হাতড়ে দেখাই যাক—যদি পাওয়া যায়। টুত…টুত…ফোন বাজছে! রিসিভারটা তিনিই ওঠাবেন তো?ইংলিশ সাংবাদিকদের কাছ থেকেই জেনেছি, তিনি মোবাইল, ই-মেইল কিছুই ব্যবহার করেন না। সেখানে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ফেসবুক, টুইটার আবার কী! তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম সাসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব আর একটা ল্যান্ডফোন নম্বর। নানা চেষ্টাচরিত করে এই নম্বরটা পাওয়া গেছে সানডে টাইমস–এর সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক গ্রেগ স্ট্রাথার্সের কাছ থেকে। যোগাযোগের উপায় খুঁজতে সানডে টাইমস বরাবর ই-মেইল করা হয়েছিল। সৌজন্য দেখিয়ে সে বার্তার উত্তরে গ্রেগ একটা নম্বর দিয়েছিলেন, তবে নিশ্চয়তা দিতে পারেননি আদৌ এই নম্বরে কাঙ্ক্ষিত মানুষটির সঙ্গে কথা বলা যাবে কি না।এ এক লম্বা যাত্রা—যে যাত্রার শুরুটা গত বছরের জানুয়ারি থেকে। দেশ-বিদেশের পরিচিত-অপরিচিত ক্রীড়া সাংবাদিক, লেখক, সংগঠকের কাছে পাওয়া ছোট-বড় নানা তথ্য-উপাত্ত জোড়া লাগিয়ে রহস্য উপন্যাসের মতো অবশেষে ধাঁধার উত্তর মেলানো গেল সোমবার, যখন কানে ভেসে এল—‘ইয়েস, আই অ্যাম রবিন মারলার।’ অনেক চেষ্টার পর যেন ঝিনুক থেকে মুক্তার সন্ধান মিলল! একটা অদ্ভুত রোমাঞ্চ আর ভালো লাগার আবেশ ছড়িয়ে পড়ল মনে—অবশেষে রবিন মারলারকে পাওয়া গেল!গত বছর বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কদের নিয়ে একটা গবেষণাধর্মী কাজ করতে গিয়ে রবিন মারলার নামটার সঙ্গে খুব ভালোভাবে পরিচয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট আজ যে শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে, ৪৩ বছর আগে সেটির ভিত গড়া হয়েছিল যে কজন মানুষের হাতে, সেখানে সবচেয়ে উজ্জ্বল এই ব্রিটিশ ভদ্রলোক, কেমব্রিজ ব্লু পাওয়া, সাবেক সাসেক্স অধিনায়ক রবিন মারলার—যাঁর খেলোয়াড়ি জীবন যেমন সমৃদ্ধ, খেলা ছাড়ার পর প্রখ্যাত হয়েছেন ক্রিকেট লিখিয়ে হিসেবে। সাফল্য আছে সংগঠক হিসেবেও।বাংলাদেশিদের ক্রিকেটপ্রীতি জানল বিশ্ববাংলাদেশ ক্রিকেটে মারলারের অবদান কী, সেটি জানতে ফিরে যেতে হবে চার দশক আগে। স্বাধীনতার পরের বছর, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (পরে অবশ্য ‘কন্ট্রোল’ শব্দটা ছেঁটে ফেলা হয়েছে)। একই বছরে ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু হলেও সেটিতে গতি আসতে সময় লাগে আরও কয়েক বছর। সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশের ক্রিকেট অবকাঠামো সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। নিজের মতো করে চালিয়ে নেওয়া ঘরোয়া ক্রিকেটকে অবলম্বন করে ধীর পায়ে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। একেবারেই দৃষ্টির আড়ালে থাকা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যিনি প্রথম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচয় করিয়ে দিলেন—রবিন মারলার। ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সানডে টাইমস–এ মারলার একটি প্রতিবেদন লিখলেন ‘বাংলাদেশ কোথায়’ শিরোনামে।এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেট প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে বিশদ ধারণা পেল। ১৯৭৫-৭৬ ঘরোয়া ক্রিকেটের মৌসুম শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্সের (এখনকার ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি) কাছে আবেদন করল সহযোগী সদস্য পদের জন্য। ১৯৭৬ সালের জুনে আইসিসির সভায় উঠল বাংলাদেশের সদস্য পদ পাওয়ার বিষয়টি। আইসিসি বিসিসিবিকে পরামর্শ দিল মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবকে (এমসিসি) আমন্ত্রণ জানাতে। এমসিসির ট্যুর রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে আইসিসির সিদ্ধান্ত। বিসিসিবি আমন্ত্রণ জানাল এমসিসিকে।বিসিসিবির ধারাবাহিক যোগাযোগে এমসিসি বাংলাদেশে এল ১৯৭৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর। বিসিসিবি দলকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করল। ১৫ দিনের সফরে আসা এমসিসি শুরুতে দুই দিনের দুটি ম্যাচ খেলল উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে। ১৯৭৭ সালের ৭, ৮ ও ৯ জানুয়ারি ঢাকা স্টেডিয়ামে (এখনকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) বিসিসিবির যে দলটি এমসিসির বিপক্ষে তিন দিনের ম্যাচ খেলল, এ ম্যাচটিই বাংলাদেশ দলের প্রথম ম্যাচ। তখনকার পত্রপত্রিকায় লেখা হলো, বাংলাদেশের প্রথম ‘আনঅফিশিয়াল টেস্ট ম্যাচ’। বাংলাদেশ ক্রিকেট আজ এ পর্যায়ে আসতে এমসিসির কাছে যেমন অনেক ঋণ, ঋণ আছে মারলারের কাছেও।নিজের শক্তিশালী কলমকে কাজে লাগিয়ে ক্রিকেট বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশকে তুলে ধরাই শুধু নয়, এমসিসিকে বাংলাদেশ সফরে রাজি করাতেও মারলারের অবদান কম নয়। সত্তর দশকের সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে কদিন আগে একটা বই লিখেছেন ২৮৯ প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে ৯৭০ উইকেট পাওয়া এই অফ স্পিনার। মারলার বইটার শিরোনাম দিয়েছেন গোল্ডেন মিনোজ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১৯: আফগানিস্তান অ্যান্ড বাংলাদেশ হিট দ্য বিগ টাইম। বইটার প্রথম অর্ধেক বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস নিয়ে, বাকিটা আফগানদের উত্থানের গল্প। মাত্র ৫০০ কপি ছাপা হওয়া দুর্লভ বইটার সন্ধান পাওয়া গেল ট্রেন্ট ব্রিজ গ্রন্থাগারে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ কাভার করতে গিয়ে ট্রেন্ট ব্রিজের গ্রন্থাগারিক ওয়েইন থমাসের কাছে মিলেছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই বইয়ের সন্ধান।বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর ভালোবাসার সম্পর্কঅনেক চেষ্টা করে গত রোববার যখন ফোনে পাওয়া গেল মারলারকে, শুরুতেই তিনি বললেন, ‘তুমি আমার বইটা যদি পারো সংগ্রহ করে নিয়ো। সাসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব মিউজিয়াম অ্যান্ড এডুকেশন ট্রাস্ট থেকে এটা বের করা হয়েছে। যা জানতে চাইছ, ওখানে সব উত্তর পেয়ে যাবে।’বইয়ে পাওয়া যাবে, কিন্তু আপনার মুখ থেকে যে সরাসরি শুনতে চাই। এত দিন ধরে আপনাকে খোঁজ করছি, একটু কথা না বললে যে এ চেষ্টার পূর্ণতা পায় না—বলতেই খুব খুশি হলেন মারলার, ‘সমস্যা নেই। আমার বয়স ৮৯ চলছে। সৌভাগ্যবান যে এখনো বেঁচে আছি! তোমার হাতে কলম বা পেনসিল আছে? আমি বলে যাচ্ছি, নোট নাও।’ফোনের ও প্রান্ত থেকে ভেসে আসা খুক খুক কাশি বলে দিচ্ছে, শরীর খুব একটা ভালো নেই মারলারের। তবুও আনন্দ নিয়ে এক নিশ্বাসে বলে গেলেন সত্তর দশকে সেই ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতা, ‘তখন বাংলাদেশ নিয়ে কেউ আগ্রহী ছিল না। কিন্তু আমি ভীষণ আগ্রহী হয়ে উঠলাম। কেন? আমি একজন সাংবাদিক। সানডে টাইমস–এর হয়ে কাজ করতাম। স্বাধীনতার কিছু পর গিয়েছিলাম ঢাকায়, ব্রিটিশ ক্রিকেট অঙ্গনের আমি একমাত্র ব্যক্তি, যে আগ্রহী হয়েছিলাম বাংলাদেশে যেতে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের তেমন কোনো অবকাঠামো ছিল না তখন। তবে ক্রিকেটে জড়িয়ে থাকা মানুষদের কাছে যে অভ্যর্থনা পেয়েছিলাম, সেটি অবিশ্বাস্য! ওয়ান্ডারফুল, টেরিফিক! অনেক ভালোবাসা পেয়েছিলাম। বাংলাদেশের সঙ্গে আমার তো সম্পর্ক ভালোবাসারই। লেখার রসদ খুঁজতে তখনকার ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা বিস্তারিত লিখেছি আমার নতুন বইয়ে।’ঢাকা থেকে ফেরার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে যখন মারলার তাঁর সহকর্মী কিংবা এমসিসিকে বললেন, দৃশ্যে খুব একটা বদল এল না। কেউ খুব একটা আগ্রহই দেখাল না। জীবনের গোধূলিতে দাঁড়ানো মারলার স্মৃতির আলমারি থেকে বের করলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সহায়তা করার সে অভিজ্ঞতা, ‘যখন লন্ডনে ফিরলাম, তখন কেউ এটা নিয়ে আগ্রহী নয়। যাকেই বলি শুধু বলে নো, নো, নো! বাংলাদেশ খুব করে চাইছিল এমসিসি যেন সফরটা করে। আমি লিখেছিলাম, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অবজ্ঞা করা যাবে না। বাংলাদেশের ক্রিকেট–সম্ভাবনা উপেক্ষা করা যাবে না। এমসিসিকে আনতে তখন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের রাইস খান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। আচ্ছা, তিনি কি বেঁচে আছেন?’মারলারকে একটু সংশোধনী দিতে হলো, রাইস খান নয়; রইসউদ্দিন আহমেদ, বিসিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ‘তাই নাকি! আমি তাহলে বইয়ে তাঁর নামটা ভুল লিখেছি, এটার সংশোধনী দিতে হবে। যা হোক, মাসের পর মাস অপেক্ষা শেষে এমসিসি শেষ পর্যন্ত রাজি হলো বাংলাদেশে যেতে। পরে তো আরও চারবার এমসিসি বাংলাদেশ সফরে গেল।’মারলার পরে এমসিসির সঙ্গেও ঢাকা সফরে এসেছিলেন। বিশেষ আমন্ত্রণে এসেছিলেন ২০০০ সালে বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেকের সেই আনন্দক্ষণেও। তাঁর বইয়ে বাংলাদেশকে তুলনা করেছেন ফিনিক্স পাখির সঙ্গে, যাদের গল্প দারিদ্র্য আর নানা প্রতিবন্ধকতার ছাই থেকে জেগে ওঠার, পাখা মেলে সাফল্যের দিগন্তে ওড়ার।আজ যখন দেখেন ৪৩-৪৪ বছর আগের সে নবজাতক ক্রিকেটের কুলীন সমাজের সদস্য, বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে চোখে চোখে রেখে লড়ছে শক্তিশালী দলগুলোর সঙ্গে, মারলারের বুকটা ভরে যায় গর্বে, ‘এটা আমার জন্য অনেক ভালো লাগার অনুভূতি। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ভালো করছে। আমি রোমাঞ্চিত, আমি অনেক অনেক খুশি। তবে ওই সফরটা ভুলতে পারি না, আমার জীবনের অন্যতম সেরা এক অভিজ্ঞতা ছিল যে সেটা।’একজন ভিনদেশি সাংবাদিক হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি যাঁর এত মমতা, এত বড় অবদান—রবিন মারলার আপনাকেও ভুলবে না বাংলাদেশ ক্রিকেট। |
সিন্ডিকেটের কারণে গেল বছর কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটের দরপত্র আহ্বানের পর অর্ধেক হাটের ইজারাদার পায়নি ডিএসসিসি। শেষ বেলায় গিয়ে ইজারা না হওয়া হাটগুলো খাস বরাদ্দ পান ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরাই। ইজারা না হওয়ায় সিটি করপোরেশন রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়। তবে এবার সিন্ডিকেট বড় কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে জানালেন সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।ঈদুল আজহার বাকি প্রায় দেড় মাস। ১৪টি হাটের দরপত্র আহ্বান করে ইতিমধ্যে ১১ টিতে ইজারাদার পেয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বাকি তিনটিতেও ইজারাদার পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী সংস্থাটি।১০ জুন ১৪টি পশুর হাটের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৫ জুন ছিল দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। এই ১৪টি হাটের জন্য ৪০টি দরপত্র জমা পড়ে। সর্বোচ্চ দরদাতা ১১ জনকে হাটের ইজারাদার হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রত্যাশিত মূল্য না পাওয়ায় বাকি তিনটি হাটের জন্য পুনঃ দরপত্র দেওয়া হবে।ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানান, গত বছর ১৫টি হাটের দরপত্র ঘোষণা করে ৭ টিতে ইজারাদার পেয়েছিল সংস্থাটি। বাকি ৮টি হাট থেকে খাস আদায় হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী খাস আদায়ের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধির হাটে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও স্থানীয় নেতা–কর্মীরাই এসব হাট নিয়ন্ত্রণে রাখতেন বলে জানিয়েছেন সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, এসব হাট থেকে স্থানীয় নেতা–কর্মীরা খাজনা আদায় করে নামমাত্র টাকা সিটি করপোরেশনে জমা দেন। এতে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয় সিটি করপোরেশন।এবার ১১টি হাটে ইতিমধ্যে ৮ কোটি ১৭ লাখ ৫২ হাজার ৮৪১ টাকার ইজারা চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি তিনটি হাটের সরকার–নির্ধারিত সর্বনিম্ন দর ১ কোটি ৮২ লাখ ৩৮ হাজার ২৪৮ টাকা।ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর কোরবানির অস্থায়ী হাট থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৮৯ লাখ ২৭ হাজার ১৫০ টাকা। এর মধ্যে ইজারা না হওয়া আটটি হাট থেকে খাস আদায় হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। কিন্তু ওই হাটগুলোর ইজারার জন্য সরকার–নির্ধারিত সর্বনিম্ন দর ছিল ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। ইজারা হলে ওই হাটগুলো থেকে নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ পাওয়া যেত বলে জানান ডিএসসিসির কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, এবার দরপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইজারা হওয়া ১১টি হাটে নির্ধারিত সর্বনিম্ন দরপত্রের চেয়ে প্রায় ২ কোটি ১১ লাখ টাকা বেশি পাওয়া গেছে।পশুর হাটের ইজারাএবার দক্ষিণ সিটিতে ১৪টি কোরবানির পশুর হাট বসছেইতিমধ্যে ১১ টির ইজারাদার পাওয়া গেছেখাস আদায়ের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার ব্যাপক অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবার এই প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসতেই সবগুলো হাটের ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সদ্য বদলি হওয়া ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। ২০ জুন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালনকালে এসব দরপত্রের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছিলেন মো. আসাদুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিটি হাটেরই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ঈদুল আজহার সময় যে হাটগুলো ইজারা দেওয়া যায়নি, সেগুলোর মধ্যে লালবাগ-চকবাজার থানাধীন বেড়িবাঁধ ও রাজনারায়ণ ধর রোডে হাটের খাস আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ডিএসসিসির ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান। সামসাবাদ মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গার হাট থেকে খাস আদায় করেছেন বংশাল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন। গোলাপবাগ মাঠসংলগ্ন সিটি করপোরেশন স্কুলমাঠ ও ডিএসসিসির খালি জায়গায় হাট বসিয়ে খাস আদায় করেছিলেন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া কাউয়ারটেকে আওয়ামী লীগের কর্মী মো. রুমেল, ঢাকা হাইড মাঠে জাহিদুল ইসলাম ও পোস্তগোলা শিল্পাঞ্চলে কামাল পারভেজ হাট বসিয়ে খাস আদায় করেছিলেন।যে হাটগুলোর ইজারা হয়েছেএ বছর চূড়ান্ত হওয়া অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের মধ্যে মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গার সরকার–নির্ধারিত মূল্য ছিল ৭৮ লাখ ১৪ হাজার ১৪৫ টাকা। ১ কোটি ৪০ লাখ ৫ হাজার টাকায় এই হাটের ইজারা হয়েছে। জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গার নির্ধারিত মূল্য ছিল ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৬৭ টাকা। ৯৮ লাখ টাকায় ইজারা হয়েছে এই হাট।৩২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার সামসাবাদ মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা এবার ১ কোটি ৫২ লাখ ৭৭ হাজার ৫১০ টাকায় ইজারা হয়েছে। শনির আখড়া ও ধনিয়া মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা ১ কোটি ১২ লাখ টাকায় ইজারা হয়েছে।লিটিল ফ্রেন্ডস ক্লাব–সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম–সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গার সরকার–নির্ধারিত দর ছিল ৪০ লাখ ২০ হাজার টাকা। ১ কোটি ৮১ লাখ ৮১ হাজার ১৮১ টাকায় ইজারা হয়েছে। ৪১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় কাউয়ারটেক মাঠ–সংলগ্ন খালি জায়গার ৩৬ লাখ ৭ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছে। ধূপখোলা মাঠসংলগ্ন আশপাশের এলাকায় ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছে।পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ২৮ লাখ ৫ হাজার ইজারা হয়েছে। কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানবাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছে। রহমতগঞ্জ খেলার মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ১২ লাখ ৭ হাজার ১৫০ টাকায় ইজারা হয়েছে। উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছে। |
বর্তমান বিশ্বে তথ্যসন্ধানী মানুষের সবচেয়ে বড় ভরসাস্থল হলো গুগল। আমি তাকে স্যারই বলব। স্যার বলব এ জন্য যে স্যার কথাটার চেয়ে সম্মানসূচক কোনো শব্দ অন্তত আমার জানা নেই।আমি আমার লেখার প্রয়োজনে মাঝে মাঝেই আমার ওই গুগল স্যারের শরণাপন্ন হই। এবং যেসব তথ্য জানার জন্য আমাকে বহু ক্রোশ পাড়ি দিতে হতো, বহু পণ্ডিতের দুয়ারে ধরনা দিতে হতো, বহু বই পড়তে হতো—গুগল স্যার এখন সেসব সংবাদ ও তথ্য-উপাত্ত চোখের পলকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন।এই যে আইসিসি আয়োজিত দ্বাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা চলছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ১১টি ক্রিকেট ভেন্যুতে, এই নিয়ে আমাদের উপমহাদেশের পাঁচটি দেশ (ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও আফগনিস্তান) মূলপর্বে অংশ নিচ্ছে। আশ্চর্য যে এই বিশ্ব ক্রিকেট কাপের প্রতিযোগী ১০ দেশের অর্ধেক দেশই হচ্ছে আমাদের নিকট প্রতিবেশী। ফলে চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে আমাদের মধ্যে আবেগ ও উত্তেজনার শেষ নেই।অন্য যে পাঁচটি দেশ (ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ) অংশ নিচ্ছে এই ক্রিকেটযুদ্ধে সেই দেশগুলোর সম্মিলিত জনসংখ্যা আমাদের জনসংখ্যার এক–দশমাংশের বেশি হবে না। তার মানে—ক্রিকেট হচ্ছে মূলত আমাদের এই উপমহাদেশেরই জনপ্রিয় খেলা। তার জন্ম এবং শৈশব-কৈশোর যেখানেই কাটুক না কেন।আমরা আছি বলেই ক্রিকেট আছে। আমরা না থাকলে ক্রিকেট নেই। ক্রিকেট প্রায় থাকেই না। আমরা স্পনসর না করলে ক্রিকেট চলবে কেমন করে? ক্রিকেটাররা টাকা পাবে কই? দর্শক পাবে কই?৭৩০ কোটি মানুষের এই গ্রহটিতে কমবেশি ২০০ কোটি মানুষ ক্রিকেট ভালোবাসে। এর বেশি নয়। ফলে ফুটবলের বিশ্বকাপ যেমন বিশ্বজুড়ে উত্তাপ ও উত্তেজনা ছড়ায়, ক্রিকেট তার ধারেকাছেও নেই। ১৩০ কোটির দেশ চীনকে ক্রিকেট–বিশ্বে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল আইসিসি। বাংলাদেশের ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম সেই দায়িত্ব নিয়ে চীনে কাটিয়েছেন কিছুকাল। কিন্তু তিনি চীনকে টানতে পারেননি।উত্তর আমেরিকা বা দক্ষিণ আমেরিকা তো ক্রিকেটের নাম শুনেছে বলেই মনে হয় না।কানাডা ক্রিকেটে এসেছিল, কিন্তু তার আসাটাকে কবিগুরুর গানের ভাষায় বলা যায়—এসেছিলে তবু আস নাই, জানায়ে গেলে।এই যখন অবস্থা, তখন একজন ক্রিকেট–ভক্ত হিসেবে আমার খারাপ লাগলেও গুগল স্যারকে আর দোষ দিই কী করে?আমি বিশ্বের খেলাধুলা নিয়ে রচিত বিশ্বখ্যাত কিছু গ্রন্থের নাম ও গ্রন্থের লেখকের নাম জানার জন্য আমার শ্রদ্ধেয় গুগল স্যারকে প্রশ্ন করেছিলাম।The top 100 Sports Book of All time শিরোনামে একটি পেজ আমার চোখের সামনে মেলে ধরলেন গুগল স্যার।ভাবলাম এই শত গ্রন্থের তালিকায় ক্রিকেট নিয়ে রচিত কিছু গ্রন্থের হদিস নিশ্চয়ই এবার পাব। কিন্তু হায়, একে একে ১০০টি বই ও লেখকের নাম এবং গ্রন্থসমূহের সংক্ষিপ্তসার পাঠ করেও ক্রিকেট নিয়ে লেখা একটি বইও পেলাম না। পেলাম না মানে পেলামই না। নো বুক অন ক্রিকেট।রেসলিং, ফুটবল, বেসবল, বাস্কেটবল, হকি, জিমন্যাস্টিকস, অ্যাথলেটিকস—সব বিষয়ভিত্তিক বইয়ের খবর পেলাম। ওই সব বইয়ের অনেকগুলোই বেস্ট সেলার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস-এর বিচারে। জানলাম, বেশ কিছু ছবিও নাকি নির্মিত হয়েছে ওই গ্রন্থগুলো নিয়ে।কিন্তু ক্রিকেট নৈব নৈব চ। একটি বইও পেলাম না ক্রিকেট নিয়ে লেখা।প্রশ্ন জাগল মনে, ২০০ কোটি মানুষের প্রিয় খেলা ক্রিকেটকে বাদ দিয়ে ক্রীড়াবিশ্ব পূর্ণতা পায় কীভাবে?হায় ক্রিকেট–সাহিত্যের জনক নেভিল কার্ডাস। হায় মাইক ব্রিয়ারলি, হায় রামচন্দ্র গুহ, হায় নির্মলেন্দু গুণ, ক্রিকেট নিয়ে লেখা আপনাদের বইগুলোর একটিও আটলান্টিকের ওপারে পৌঁছেনি? গুগল স্যার তো এমনটিই জানালেন।ক্রিকেট নিয়ে রচিত গ্রন্থের কিছু গ্রন্থ কি সর্বকালের সেরা ক্রীড়াগ্রন্থের তালিকায় স্থান পেতে পারত না? ক্রিকেট খেলাটি কি স্পোর্টসের বাইরের কিছু?বলি, ক্রিকেটের মতো দীর্ঘ সময় ধরে দর্শকদের আনন্দ ও উত্তেজনায় মাতিয়ে রাখার মতো খেলা, ক্রিকেট ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কোন খেলাটা আছে?ক্রিকেটই তো একমাত্র খেলা, যে খেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি খেলোয়াড়ের সাফল্য ও ব্যর্থতার রেকর্ড সযতনে সংরক্ষিত হয়। |
ঈদের ছুটিতে গিয়েছিলাম মহাচীনে। আমার সঙ্গে ছিল আরেক ভ্রমণকন্যা (নারী ভ্রমণকারীদের জন্য আমাদের এই বিশেষণ) শিখা। চীন দেশে পা রাখতেই আমাদের দুজনের সঙ্গে জুটল আরও একজন। বাংলাদেশি সেই কন্যা টুম্পা, চীনেই পড়াশোনা করে। তিনজনের প্রথম গন্তব্য ছিল হুনান প্রদেশের ঝাংজিয়াজি। পাহাড়ি জায়গা। এখানেই আছে অ্যাভাটার মাউন্টেইন, গ্লাস ব্রিজ আর সেই বিখ্যাত তিয়ানমেন পর্বত।ঝাংজিয়াজি পৌঁছে বুঝলাম, এটা ছোট্ট এক শহর। ওদের দেশে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশন দিদির গাড়িতে করে হোটেলে এলাম। ঐতিহ্যবাহী চীনা স্থাপত্যের বাড়ি। ছাদটা টিনের চালের মতো নেমে এসে কোনার দিকে বাঁকানো। কর্মীরা যথারীতি ইংরেজি বোঝে না। টুম্পার কল্যাণে আমরা ভাষার দূরত্ব ঘোচালাম। সাততলার বারান্দা থেকেই পাহাড় হাতছানি দেয়। নতুন জায়গা দেখার উত্তেজনায় ভোরে উঠেই তৈরি।আমাদের প্রথম গন্তব্য কাচের তৈরি সেই সেতু। ৯৮০ ফুট গভীর গিরিখাতের ওপরে ১ হাজার ৪১০ ফুট দূরের দুটি পাহাড়ের চূড়াকে এক করেছে এই সেতু। পৃথিবীর শুধু দীর্ঘতম কাচের তৈরি সেতুই নয়, সর্বোচ্চ উচ্চতার খেতাবও দখল করে রেখেছে তা।বাসস্টেশনে গিয়ে ২২ ইউয়ান (চীনা মুদ্রা) দিয়ে টিকিট কেটে রওনা দিলাম। সেদিন আমাদের আধা ঘণ্টার মতো লাগল উলিংইউয়ান এলাকায় গ্রান্ডক্যানিয়নের প্রবেশপথে পৌঁছাতে। কিছুক্ষণ সিঁড়ি দিয়ে পাহাড়ে উঠতে হয়, তারপর টিকিট ঘর। টিকিট সংগ্রহ করে কয়েকটা নিরাপত্তা ফটক পার হতে হয় (চীন নিরাপত্তার ব্যাপারে খুবই কঠোর, প্রতিটি সারি তিনবার করে তল্লাশি করে প্রবেশ করায়)। জুতার জন্য একটা লাল রঙের কভার দেয়, সেটা পরেই ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। ভেতরে ঢুকেই একটা ধাক্কা খেলাম মেঘ দেখে! মনে হচ্ছিল ব্রিজটার অর্ধেক কাজ এখনো অসম্পূর্ণ, আদতে তা ডুবে আছে মেঘের রাজ্যে। একটু উত্তেজনা, একটু ভয় নিয়ে এগিয়ে গেলাম। কাচের সেতুর ওপর দাঁড়াতেই মনে হচ্ছিল, মেঘের ওপরেই ভেসে আছি। পায়ের নিচে স্বচ্ছ কাচের মধ্য দিয়েও দেখি, মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে।একটু মন খারাপই হলো। মেঘের জন্য অনতিদূরের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে আকাশ পরিষ্কার, সূর্য উঁকি দিল। পায়ের নিচের থেকে মেঘ সরে যেতেই দেখি, প্রায় হাজার ফুট নিচে সূক্ষ্ম সুতার মতো নদীতে গিয়ে মিশেছে ঝরনা। এ এক আশ্চর্য সুন্দর। আমাদেরও একটু ভয় ভয় করছিল যদিও, কাচের তৈরি বলে কথা, যদি ফাটল ধরে। আশপাশে তাকাতেই মনে হলো, আমরাই বেশি সাহসী। কয়েকজনকে দেখলাম রেলিং ধরে ধরে পার হচ্ছে। কেউ কেউ আবার প্রিয়জনের হাত শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করেই পার হচ্ছে। কেউ কেউ ভয়ে নিচের দিকে তাকাচ্ছে না। আবার কেউ কেউ অতি-সাহসী হয়ে পা ঠুকে দেখছে কাচ ভাঙে কি না! যদিও পাগলামিতে আমাদের জুড়ি নেই। ধুপ করে উপুড় হয়েই শুয়ে পড়লাম কাচের এই হাঁটা পথে। পরিষ্কার কাচে চিবুক ঠেকাতেই দেখা গেল ৯০০ ফুট নিচের সবুজ উপত্যকা, রুপালি সুতার মতো নদী আর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পিঁপড়ার মতো মানুষ। মনে ভাবলাম, ওই নিচে কীভাবে যাব! চুপ করে কিছুক্ষণের জন্য ধ্যানে চলে গেলাম যেন। মুনি-ঋষিরা মনে হয় এই মৌনতার জন্যই পাহাড় বেছে নিতেন।এরপরই আরেক পাগলামি করে বসি আমরা। বাঙালি মেয়ে, শাড়ি নিয়ে এসেছি ব্যাগে করে। শাড়িতে জড়িয়ে দাঁড়াতেই দেখি আশপাশের মানুষজন স্ট্যাচু হয়ে তাকিয়ে আছে, এই প্রথম শাড়ি পরা কাউকে দেখল মনে হয়। একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে। আমাদের তো থোড়াই কেয়ার ভাব। নিজেদের মতোই ছবি তুলছিলাম। হুট করে একজন এসে পাশে দাঁড়িয়ে ফোন দিয়ে ইশারায় বলে, আমাদের সঙ্গে ছবি তুলতে চায়। চীনা মানুষ ভিনদেশিদের সঙ্গে খুব ছবি তুলতে পছন্দ করে শুনেছিলাম। এবার নিজেদের বিদেশি বিদেশি লাগতে লাগল। সবাই এসে আমাদের সঙ্গে ছবি তুলল। ভয়ডর কোথায় জানি উবে গেল।কাচের সেতুতে দেরি করলে চলবে না, পুরো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তখনো বাকি যে। ছবি তোলায় বিরতি দিয়ে এগোলাম। মনে হলো শূন্যে ভেসে ভেসেই অন্য পাশের পাহাড়ে চলে এলাম। এবার লক্ষ্য এই ৯৮০ মিটার পাহাড়ের গা ঘেঁষে বানানো কাঠের সিঁড়ি দিয়ে খাদে নামা। হাজারখানেক ধাপ। কখনো পাহাড়ের গায়ের সঙ্গে, কখনোবা গুহার ভেতর দিয়ে। মাঝেমধ্যে এমন সরু যে একজনের বেশি একসঙ্গে নামা যায় না। ওরা একে বলে আকাশসিঁড়ি। নামতে নামতে রাবণের কথা মনে হচ্ছিল। লঙ্কারাজ রাবণ একসময় নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, স্বর্গে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি বানাবেন। বানালে বুঝি এমনটাই হতো।কেউ যদি এত সিঁড়ি না নামতে চায়, তারা ২২ ইউয়ানের বিনিময়ে এলিভেটর দিয়ে নামিয়ে দেবে অর্ধেকটা পথ। পাহাড়ের গা ছুঁয়ে, নিচে পাথরের গায়ে আছড়ে পড়া ‘ফ্লাইং ফক্স’ ঝরনার শব্দ কানে নিয়ে হাজারখানেক ধাপের সিঁড়ি পার হয়ে পৌঁছালাম ঝরনার কাছে। ছিটে আসা পানিতে ভিজে এবার সেই পাহাড়ি নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফেরা। হাঁটতে হাঁটতে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছি। শব্দহীনতা যেন সৌন্দর্যকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। কখনো গুহার ভেতর দিয়ে, কখনোবা নদীর পাশের কাঠের ব্রিজ দিয়ে হেঁটে পৌঁছালাম এক নীল–সবুজ হ্রদে। কাঠের তৈরি নৌকা আমাদেরই অপেক্ষায় ছিল সভ্যতার মধ্যে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। তাতে কী, এই সবুজ সুন্দরের নেশার অনুভূতি ইট–কাঠের মধ্যেও অক্সিজেন দেবে। |
বছরজুড়েই বাজারে কদর থাকে লালশাকের। কৃষকেরা লালশাক উৎপাদন করেন। লালশাকের কাণ্ড শক্ত হওয়ার আগেই বিক্রির উপযোগী হয়। চুপিনগর, শাজাহানপুর, বগুড়ার গ্রামীণ মাঠে এক সকালে লালশাক তোলা কিছু দৃশ্য। |
প্রস্তাবিত বাজেটে হালকা প্রকৌশলশিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়নি। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর আরোপ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক।প্রথম আলো: প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর আরোপ করায় হালকা প্রকৌশলশিল্পে কি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে?আবদুর রাজ্জাক: প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর আরোপ করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। এর ফলে আমাদের খরচ বেড়ে যাবে। এতে করে অনেক ছোট ছোট কারখানা উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি আনতে পারবে না। অগ্রিম কর আমাদের জন্য অনেকটা বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা বার্ষিক লেনদেনের ওপর ৪ শতাংশ টার্নওভার কর আরোপ করা হয়েছে। এটিও আমাদের জন্য অনেক বেশি। আমাদের দাবি, আগের মতো টার্নওভার কর ৩ শতাংশ বহাল রাখা হোক। তা না হলে হালকা প্রকৌশলের মতো ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দেবে।প্রথম আলো: কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি কি পূরণ হলো?আবদুর রাজ্জাক: হালকা প্রকৌশলশিল্পের মূল কাঁচামাল হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম ইংগট, জিংক ইংগট, কপার, অ্যালয় স্টিল ইত্যাদি। এসব কাঁচামালের কয়েকটি আমদানিতে ৫ শতাংশ ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ শুল্ক আছে। আমরা কাঁচামাল আমদানির শুল্ক ১ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি করেছিলাম। আমরা প্রতিবছরই এটি কমানোর অনুরোধ করি, তবে সেখানে দৃষ্টি দেওয়া হয় না। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে শিল্পায়নের জন্য কাঁচামাল আমদানির শুল্ক কমানো জরুরি।প্রথম আলো: হালকা প্রকৌশল অগ্রাধিকার শিল্প খাত। সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এই খাতের জন্য কী করা দরকার?আবদুর রাজ্জাক: হালকা প্রকৌশলশিল্পের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়নে আমরা কাজ করছি। সমিতির পক্ষ থেকে নীতিমালার একটি খসড়া করে আমরা মন্ত্রণালয়ে জমা দেব। সেখানে এ শিল্পের জন্য করণীয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে। নীতিমালাটি বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশে শুধু মোটরসাইকেল না, প্লেনের যন্ত্রাংশও তৈরি করা যাবে। ১৭ কোটি মানুষের দেশ আমরা এখনো গাড়ি তৈরি করি না, এটি হতে পারে না। আড়াই কোটি মানুষের দেশ তাইওয়ানে ৩-৪টি গাড়ি তৈরির কারখানা আছে। থাইল্যান্ড গাড়ি বানাচ্ছে। আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তির পরই হালকা প্রকৌশল খাতে মূল্য সংযোজন কর সবচেয়ে বেশি। তাই এ শিল্পের প্রতি সরকারের সঠিক নজর দরকার। |
ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে লিবিয়ার মাটিতে পা রেখেছিলাম ছয় মাস আগে। আজ সবকিছু হারিয়ে ফিরে এসেছি শূন্য হাতে। স্বপ্ন দেখার মনটাও মরে গেছে। তারপরও মৃত্যুকূপ থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছি, এটাই অনেক।বাংলাদেশ থেকে ভারত, দুবাই, তিউনিসিয়া হয়ে লিবিয়া। পথে পথে বুঝেছি, আমি এক অচেনা-অজানা জগতে এসেছি। সর্বশেষ উড়োজাহাজে লিবিয়ায় নামার পরই দালালের মাফিয়া বাহিনী আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আটকে রাখে একটি ঘরে। চুক্তির ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা তাদের বাংলাদেশি এজেন্টকে দেওয়ার পর তারা ছেড়ে দেয়।অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কের জীবনলিবিয়ায় অনিশ্চিত জীবনের শুরু হলো। আমাদের মাদারীপুরের ভাই ও বন্ধুদের খোঁজ করি, যাঁদের আশ্বাসেই আমি পা বাড়িয়েছিলাম। তাঁরাই আমাকে একসময় একটা কাজ জোগাড় করে দেন। এক মাসের মতো কাজ করি। কিন্তু কাজটা ভালো ছিল না। সেখানে আমাদের মাদারীপুরের একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনিই আমাকে ইতালি যাওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘এখানে যারা নতুন আসে, তারা মাফিয়াদের কাছে বিক্রি হয়ে যায়। তাই বিক্রি হওয়ার চেয়ে একটু কষ্ট হলেও ইতালি যাওয়া ভালো।’ইতালি যাওয়ার জন্য সাগর পাড়ি দিতে হয় নৌকায়, তবে জাহাজে যাওয়ারও সুযোগ আছে। আমি যদি এখন গেমে (অবৈধ যাত্রা) উঠি, তবে জাহাজে যাওয়া যাবে বলে একটি জাহাজের ছবিও দেখান লোকটা। আরও বলেন, ‘নয়তো মাফিয়াদের হাতে পড়লে মারও খাবে, এমনকি জীবনও চলে যেতে পারে। তাই সময় থাকতে চলো।’প্রথমে রাজি হইনি। পরে ভাবলাম, একই জেলার লোক, ভরসাও দিচ্ছেন, খারাপ কী। প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। তখন তিনি শর্ত দিয়ে বসেন। শর্তটা হলো, তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। চুক্তির টাকা যাত্রার আগেই দিতে হবে। অনেক চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম, মাফিয়াদের হাতে মরার চেয়ে ইতালি যাওয়ার সুযোগটা নিই। যদি যেতে পারি, তাহলে তো ভাগ্যের চাকা খুলে গেল। বিষয়টা বাড়িতে জানাই। বাড়ি থেকে আবার ধারদেনা করে আড়াই লাখ টাকা পাঠায়। সেই টাকা তুলে দিই ওই লোকের হাতে।টাকা পেয়েই আমাকে শহরের একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে যান ওই লোক। সেখানে একটি ভবনে আমাকে তোলেন। গিয়ে দেখি, আমার মতো আরও অনেক মানুষ এখানে আটকা। এটাকে গেমঘর (অবৈধ পথে যাত্রার আগে যেখানে রাখা হয়) বলে। ঘরে কোনো আলো-বাতাস নেই। অপেক্ষমাণ সবাইকে দেখলাম হাহাকার করছেন। কেউ একটু শব্দ করলেই তাঁর ওপর নেমে আসছে অত্যাচার। তখন আমিও তাঁদেরই একজন।প্রায় চার মাস সেই ঘরে আটক ছিলাম। এক বেলাও ঠিকমতো খাবার পাইনি। চারটা মাস এক দিনও পেট ভরে খাইনি। একটু পানি বেশি খরচ করলে কোনো কোনো দিন খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিত। সেখানে সব ধরনের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। নীরবে কেঁদেছি, আর আল্লাহর কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছি।ভয়ংকর যাত্রার শুরুযাঁর হাত ধরে এই অনিশ্চিত পথে পা বাড়ালাম, সেই রাসেল একদিন এলেন। বললেন, ২২ রমজান যাত্রার তারিখ। যাত্রার দিন আমাদের প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ হাঁটিয়ে সাগরপাড়ে নেওয়া হলো। সেখানে গিয়েই তো অবাক হয়ে গেলাম। দেখি জাহাজ নয়, অপেক্ষা করছে স্পিডবোট। দুটি বড়সড় স্পিডবোটে আমাদের ৭৫ জনকে জোর করে তোলা হয়। কেউ কেউ উঠতে চাইলেন না। তাঁদের ওপর নেমে এল নির্মম নির্যাতন, গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি। বাধ্য হয়ে সবাই উঠে পড়ি। সেদিন সারা রাত সাগরে স্পিডবোট চলে। পরদিন ভোরবেলা লিবিয়া সীমান্তের কাছে এলে একটা বোটে সবাইকে উঠতে বলা হলো। অন্য বোটটিতে শুধুই দালাল রাসেল আর তিন সহযোগী। দালালেরা আমাদের বোটের মিসরীয় চালককে একটি ম্যাপ দিয়ে ইতালি যেতে বলেন। তাঁরা লিবিয়ায় ফিরে যান।খাবার ছাড়া নৌকায়এক নৌকায় ৭৫ জন আমরা। কারও সঙ্গেই নেই কোনো খাবার। পরদিন বিকেলবেলা ঝড় শুরু হলো। সাগরে তখন বিশাল বিশাল ঢেউ। নৌকার সবাই চিৎকার শুরু করেছেন। কারণ নৌকাটি সাগরে একবার উল্টে গেলে সবাই মারা যাবে।সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমরা সাগরে ওঠা ঝড় কোনোভাবে কাটিয়ে উঠি। সাগরে তিন দিন সবাই না খাওয়া। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে ঢলে পড়েছেন। কারও শরীরে শক্তি নেই। সবাই যেন ক্রমশ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। সাগরে তৃতীয় দিন কাটানোর পর একটি আলো দেখতে পাই। পরে নৌকা নিয়ে আমরা ওখানে গেলে দেখি তিউনিসিয়ার একটি তেলবাহী বড় জাহাজ। আমরা ওই জাহাজে উঠতে চাইলে তারা আমাদের প্রথমে ওঠায়নি। তখন আমাদের নৌকায় জ্বালানি শেষ, ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। ওই জাহাজের কাছে জ্বালানি তেল চাইলে তারাও তেল দেয়নি।ওই জাহাজের পাশেই আমরা একদিন ভাসতে থাকি। বুঝতে পারি, আমরা দুর্ঘটনার শিকার হলে তখন ওই জাহাজের নাবিকেরা আমাদের উদ্ধার করবে। পরে আমরা কয়েকজন তেলের ড্রাম সাগরে ভাসিয়ে লাফিয়ে পড়ি। আর ওই জাহাজের কাছে সাঁতরে যাই। জাহাজের নাবিকেরা আমাদের অসহায়ত্ব বুঝতে পেরে আমাদের উদ্ধার করেন। এরপর জাহাজে কেটে যায় ১৯ দিন। জাহাজের লোকজন আমাদের কমবেশি খেতে দিতেন।ওই জাহাজটি তিউনিসিয়ার বন্দর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ভাসমান রাখে। পরে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস ও আইওএমের (আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থা) লোকজন এলে ওরা আমাদের দেশে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে। আমরা প্রথমে দেশে ফিরে যেতে চাইনি, বলেছি, এখানেই আমাদের কাজের ব্যবস্থা করে দাও। কিন্তু তারা দেশে ফিরে যেতে বলে আমাদের সঙ্গে চুক্তি সই করে। পরে তারাই ২৫ দিনের মাথায় আমাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়।অনুলিখিত |
‘টাইগার ভাই’ বলে সম্বোধন করতেই অপর প্রান্তে হাসির এক নির্মল ধারা। অপরিচিতজনের কাছে যিনি এখন ‘টাইগার ভাই’। আসল নাম কী? বললেন, ‘আমার নাম মোহাম্মদ ইমাদ আহমেদ। তবে সবুজ নামে সবাই ডাকে।’লন্ডনের ওভাল কিংবা কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন, যেখানেই বাংলাদেশ খেলছে, সেখানেই লাল-সবুজের উচ্ছ্বাস। এদের মধ্যে বাহারি পোশাক আর বিচিত্র ভঙ্গিতে মাঠকাঁপানো ভক্তদের আলাদা করে খুঁজে নেয় ক্যামেরার চোখ। এবারের বিশ্বকাপে গোটা একটা বাঘের অবয়ব আর ক্ষিপ্র ভঙ্গিতে গ্যালারি মাতানো ইমাদ আহমেদও তারকা সমর্থক বনে গেছেন। বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই টিভি পর্দায় তাঁর উপস্থিতি। এই টাইগার ভক্ত জানালেন, খেলা দেখতে মাঠে গেলে ‘টাইগার ভাই’ বলে সবাই ছুটে আসে। ছবি তোলে। বিষয়টা বেশ মজা লাগে তাঁর কাছে।পূর্ব লন্ডনের শ্যাডওয়েল এলাকার বাসিন্দা এই টাইগার ভাই। বাবা ছানোয়ার আহমেদ বেঁচে নেই। মা শারমিন সুলতানা ও তিন ভাইবোন নিয়ে তাঁদের পরিবার। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেটের বালাগঞ্জের গহরপুরের আনোয়ারপুর গ্রামে। বালাগঞ্জের দেওয়ান আবদুর রহিম দ্বিপাক্ষিক উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ভর্তি হয়েছিলেন মদন মোহন কলেজে। কিন্তু এইচএসসি শেষ না করেই ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি একটি বিয়ে ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেন।ইমাদ আহমেদ বলছিলেন, ‘লন্ডনের বৈশাখী মেলা উপলক্ষে গত বছর বাঘের পোশাক ও মুখোশ কিনেছিলাম। নিতান্তই মজা করার জন্য এসব পরে মাঠে যাই।’ কিন্তু তাঁর উপস্থিতি যে এতটা নজর কাড়বে, তা ভাবতে পারেননি। বাংলাদেশ থেকে বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন টেলিফোন করে জানান, টিভি পর্দায় তাঁকে দেখাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন খবরে তাঁর ছবি। এসব তাঁর উদ্যাপন শক্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের এ পর্যন্ত সব খেলা তিনি গ্যালারিতে বসে দেখেছেন। বাকি ম্যাচের টিকিটও কাটা আছে। দূরের মাঠের খেলাগুলো দেখতে আগের রাতেই গিয়ে হাজির হন বলে জানান এই ক্রিকেটপ্রেমী।এই ভক্ত বলেন, দলের হারে প্রচণ্ড কষ্ট পান। আর দল জিতে গেলে তাঁর সমস্ত ক্লান্তি উবে যায়। ভিনদেশের মাটিতে নিজ দেশকে সমর্থন জোগাতে পেরে ভীষণ গর্বিত ‘টাইগার ভাই’। |
দুই পাহাড়কে আলাদা করেছে খরস্রোতা এক নদী। সেতুটি তৈরি হয়েছে দুই পাহাড় আর পাহাড়ি মানুষদের সংযুক্ত করতেই। তবে সেতুটি ঘাসে বোনা দড়ির তৈরি! কল্পনা নয়, এটা বাস্তব।পেরুর কাস্কো প্রদেশের আপরিমাক নদীর ওপর একই জায়গায় ৬০০ বছরের বেশি সময় ধরে তৈরি হচ্ছে ইনকা সভ্যতার সেতুটি। যার নাম কেসওয়াচাকা। পাহাড়ি গ্রামের সঙ্গে ইনকা সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কিছু শহর-বন্দরকে একত্রে সংযুক্ত করত এই সেতু। ২০১৩ সালে ইউনেসকো থেকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শনের মর্যাদাও পায় কেসওয়াচাকা।কেসওয়াচাকা সেতুটি প্রতিবছর নতুন করে তৈরি করা হয়। সেতুটি মোট ছয়টি মোটা দড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়, চারটি থাকে সেতুর মেঝে হিসেবে আর দুই পাশে ধরার জন্য দুটি মোটা দড়ি লাগে। দড়িগুলো তৈরি করা হয় ‘কোয়া ইচু’ নামের অসম্ভব শক্ত এক জাতের ঘাস দিয়ে। দড়িগুলোকে আরও মজবুত ও টেকসই করার জন্য ঘাসগুলোকে দড়ি হিসেবে পাকানোর আগে পানিতে ভিজিয়ে, পাথরে পিটিয়ে নেওয়া হয়। সেতুটির মূল দড়িগুলো প্রায় এক ফুট মোটা হয়, যাতে প্রায় ১২০টি ছোট দড়ি থাকে।সেতু তৈরির প্রথম দিনে স্থানীয় পুরুষেরা এক হয়ে দড়িগুলোকে সাজায়। নদীর গিরিখাতের দুই পাশের বড় পাথরের সঙ্গে বেঁধে সেতু তৈরি শুরু হয়। এটি তৈরির সময় কোনো ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কাঠ, কুড়াল আর মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠে নতুন সেতু। এই সেতু তৈরির বেশির ভাগ সময় দড়িগুলো বাঁধার পর এটি কতটা শক্তিশালী হলো সেটি নির্ণয় করতে চলে যায়। ঘাসের তৈরি সেতুটি তৈরিতে সময় লাগে ঠিক চার দিন।প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে কেসওয়াচাকাকে নতুন করে তৈরির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন স্থানীয় ইনকা গ্রামবাসী। গ্রামের প্রতিটি পরিবার অন্ততপক্ষে দুটি মোটা দড়ির অংশবিশেষ তৈরি করে থাকে। কিন্তু সেতু নির্মাণে যে মোটা দড়িগুলো ব্যবহৃত হয়, তা শুধু পুরুষেরাই তৈরি করে থাকেন। নারীরা অপেক্ষাকৃত ছোট দড়িগুলো তৈরি করেন। প্রতিবছর জুনের দ্বিতীয় রোববার সেতু তৈরির কাজ শেষ হয়। এর আগে চার দিন ধরে খাদ্য, পানীয় আর সুরের মূর্ছনায় ডুবে যাওয়া গ্রামগুলো যেন হয়ে ওঠে প্রাচীন ইনকা সাম্রাজ্যের জীবন্ত উদাহরণ।সামিহা আকবরসূত্র: বিবিসি |
রেকর্ড ছুঁয়ে ভাঙার অপেক্ষায় বাংলাদেশের ত্রিরত্ন—সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমএক যুগ আগে ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে আবির্ভাবেই হইচই ফেলেছিলেন তাঁরা। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের দারুণ সেই জয়ে ফিফটি পেয়েছিলেন তিন তরুণ সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। সেই শুরু, এরপর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই সাকিব-তামিম-মুশফিকদের ম্যাচও।আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ত্রিরত্নের আবির্ভাবের পর চার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে ২৭টি। সব কটি ম্যাচেই দলে থেকে দারুণ এক রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলেছেন সাকিব, তামিম ও মুশফিক। বিশ্বকাপ ইতিহাসে কোনো দলের নির্দিষ্ট তিন খেলোয়াড়কে নিয়ে টানা সর্বোচ্চ ২৭ ম্যাচ খেলার উদাহরণ আছে আরও দুটি। দুটি উদাহরণই শ্রীলঙ্কানদের দুটি প্রজন্মের।১৯৯৬ থেকে ২০০৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত একসঙ্গে টানা ২৭টি ম্যাচ খেলেছেন সনাৎ জয়াসুরিয়া, মুত্তিয়া মুরালিধরন ও চামিন্ডা ভাস। ২০০৭ থেকে ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত টানা ২৭ ম্যাচ খেলে তাঁদের সেই রেকর্ডে পরে ভাগ বসিয়েছেন মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা ও তিলকরত্নে দিলশান।সাকিব-তামিম-মুশফিকদের সুযোগ এবার লঙ্কানদের ছাড়িয়ে যাওয়ার। ২ জুলাই এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামলেই রেকর্ডটা এককভাবে নিজেদের করে নেবেন বাংলাদেশের ত্রিরত্ন। বৃষ্টিতে এবারের বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি কিংবা ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি একেবারেই ভেসে না গেলে অবশ্য টানা ২৯ ম্যাচ খেলে ফেলতেন সাকিব-তামিম-মুশফিকরা।যা হয়নি তা নিয়ে আফসোস করে লাভ নেই। তবে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ত্রয়ীর আরেকটি বিশ্বকাপ রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলার সম্ভাবনা আছে। রেকর্ডটা বিশ্বকাপে তিন খেলোয়াড়ের একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার। সেই রেকর্ডে ভাগ বসাতে হলে অবশ্য ফাইনালে উঠতে হবে বাংলাদেশকে। আর বৃষ্টিতে একেবারেই ভেসে যাওয়া চলবে না কোনো ম্যাচ। ক্রিকেট বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার তিন খেলোয়াড় গ্লেন ম্যাকগ্রা, রিকি পন্টিং ও অ্যাডাম গিলক্রিস্ট একসঙ্গে খেলেছেন ৩১টি ম্যাচ। তিনজন অবশ্য একটানা সর্বোচ্চ ১৯টি ম্যাচ খেলেছেন একত্রে। শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়াসুরিয়া, মুত্তিয়া মুরালিধরন ও চামিন্ডা ভাসও বিশ্বকাপে একত্রে খেলেছেন ৩১টি ম্যাচ।বাংলাদেশ এবার ফাইনালে উঠে গেলে বিশ্বকাপে একসঙ্গে ৩১টি ম্যাচ খেলা হবে সাকিব-তামিম-মুশফিকদেরও।বিশ্বকাপে ত্রয়ীর টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ:২৭ সনাৎ জয়াসুরিয়া+মুত্তিয়া মুরালিধরন+চামিন্ডা ভাস শ্রীলঙ্কা (২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬-১২ এপ্রিল ২০০৭)২৭ মাহেলা জয়াবর্ধনে+কুমার সাঙ্গাকারা+তিলকরত্নে দিলশান শ্রীলঙ্কা (১৫ মার্চ ২০০৭-১৮ মার্চ ২০১৫)২৭* সাকিব আল হাসান+তামিম ইকবাল+মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশ (১৭ মার্চ ২০০৭-২৪ জুন ২০১৯)বিশ্বকাপে ত্রয়ীর সবচেয়ে বেশি ম্যাচ :৩১ গ্লেন ম্যাকগ্রা+রিকি পন্টিং+অ্যাডাম গিলক্রিস্ট অস্ট্রেলিয়া (১৬ মে ১৯৯৯-২৮ এপ্রিল ২০০৭)৩১ সনাৎ জয়াসুরিয়া+মুত্তিয়া মুরালিধরন+চামিন্ডা ভাস শ্রীলঙ্কা (২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬-২৮ এপ্রিল ২০০৭)২৮ মুত্তিয়া মুরালিধরন+মাহেলা জয়াবর্ধনে+কুমার সাঙ্গাকারা শ্রীলঙ্কা (১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৩-২ এপ্রিল ২০১১)২৭ মাহেলা জয়াবর্ধনে+কুমার সাঙ্গাকারা+তিলকরত্নে দিলশান শ্রীলঙ্কা (১৫ মার্চ ২০০৭-১৮ মার্চ ২০১৫)২৭* সাকিব আল হাসান+তামিম ইকবাল+মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশ (১৭ মার্চ ২০০৭-২৪ জুন ২০১৯) |
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ সামরিক শাসন জারি করে জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান দিক হলো ব্যাংকিং সেক্টরে দারুণ কারচুপি এবং দুর্নীতি। সার্বিকভাবে প্রকল্প বিশ্লেষণ না করে ও অর্থনৈতিক কার্যকারিতার বিচার ছাড়াই এবং অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ নীতিমালা অমান্য করে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান নামমাত্র ছিল। এদের প্রায় সবাই রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন দল বা নেতা বা পদস্থ কর্মকর্তাদের বদৌলতে তাদের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে এ অর্থ লাভ করে এবং জনগণের গচ্ছিত জাতীয় সঞ্চয় অপচয় করে।’এরশাদ বিদায় নেওয়ার পর বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ১৯৯১-৯২ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘ঋণ ব্যবস্থাপনা বা আর্থিক খাতে নৈরাজ্য বিরাজমান। বিপুল পরিমাণ ঋণ অনাদায়যোগ্য হয়ে পড়েছে। ঋণ ব্যবস্থাপনায় এই নৈরাজ্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সংকটাপন্ন করে তুলেছে। ঋণ আদায় না হওয়ার কারণে অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানে সম্পদের অভাব দেখা দিয়েছে এবং তারা নতুন ঋণ দিতে প্রায় অক্ষম।’১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া বলেছিলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত অগ্রহণযোগ্য মাত্রার খেলাপি ঋণ বাংলাদেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে পঙ্গু করে রেখেছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়াতে ব্যাংকসমূহকে সুদের হার বাড়াতে হয়েছে। এর ফলে দেশে বিনিয়োগ, বিশেষত নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। খেলাপি ঋণ আর্থিক খাতে পারস্পরিক অবিশ্বাসের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।’হুবহু এই কথাগুলোই যদি আজ কেউ বলেন, একটুও ভুল হবে না। কারণ, পরিস্থিতি একই আছে।মজার বিষয় হলো, আগে অর্থমন্ত্রীরা বাজেট বক্তৃতায় খেলাপি ঋণ নিয়ে কিছু না কিছু কথা বলতেন। কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকে টানা ১০টি বাজেটে খেলাপি ঋণ নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। অথচ এই কালপর্বে ঋণখেলাপি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এই সময়ের অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঋণখেলাপি নিয়ে কিছু বলেননি।অবশ্য বলেছিলেন অনেক আগে, যখন তিনি অর্থমন্ত্রী ছিলেন না, তাঁর দলও ক্ষমতায় ছিল না। ১৯৯১ সালে তিনি গদিচ্যুত এরশাদ সরকারকে নিয়ে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাংকঋণ পরিশোধ না করাটা এখন একরকম সর্বজনীন অভ্যাস। বড় বড় ব্যবসায়ী, সফল শিল্পপতি বা গ্রামীণ মাতবর—কেউই ঋণ পরিশোধ করে না।...ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ ব্যক্তিরা গোষ্ঠী হিসাবে সরকারের সহযোগী, তাই এদের মর্জিই হলো সরকারের প্রচেষ্টা। বিশেষ গোষ্ঠীকে নিজের দলে রাখতে গেলে স্বভাবতই দেশের বা জনতার স্বার্থ বিসর্জন দিতে হয়।’তাঁর এই কথাগুলোও এখনকার পরিস্থিতিতে দিব্যি চালিয়ে দেওয়া যায়।বহু বছর পরে, এবারের বাজেটে ঋণখেলাপিদের প্রসঙ্গ আবার এনেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অবশ্য এ জন্য তাঁকে বাহবা দেওয়ার খুব বেশি সুযোগ নেই। কেননা তিনি একটি ‘ভালো ঋণ সংস্কৃতি’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে মূলত ঋণখেলাপিদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথাই বলেছেন। একটি ব্যাংক কমিশন গঠনের দাবির কথা তিনি যে দীর্ঘদিন শুনছেন, সে কথা জানিয়ে আলাপ–আলোচনা করে কিছু একটা করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। এমনটাই তো হওয়ার কথা। কারণ, বর্তমান অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব পেয়েই যেভাবে ঋণখেলাপিদের একের পর এক সুবিধা দিচ্ছেন, তার প্রতিফলন তো বাজেটে থাকবেই।ঋণখেলাপির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কী—২২ জুন সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রতি সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য বেগম লুৎফুন নেসা খানের এই প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছেন: ১. দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণ। ২. ব্যাংক কর্তৃক যথাযথভাবে ঋণগ্রহীতা নির্বাচন না করা। ৩. ঋণের বিপরীতে রাখা অপর্যাপ্ত জামানত, একই সম্পদ একাধিক ব্যাংকে জামানত রাখা ও জামানত বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দেখানো। ৪. গ্রাহকের সব দলিল সংগ্রহ ও সঠিকতা যাচাই না করা। ৫. ঋণগ্রহীতার তহবিল ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, প্রয়োজন ও সামর্থ্য বিচার না করেই অতিরিক্ত ঋণ দেওয়া, ঋণসীমা বাড়ানো, পুনঃ তফসিল করা এবং পুনর্গঠন সুবিধা দেওয়া।ঋণখেলাপি বাড়লে কী সমস্যা হয়, অর্থমন্ত্রী তা–ও জানেন। তিনি বলেছেন, ঋণ খেলাপ হয়ে পড়লে ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়।সব মিলিয়ে সংসদের ভাষায় বলা যায়, অর্থমন্ত্রীর উত্তর সঠিক হয়েছে। তবে এর সঙ্গে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণ দেওয়ার কথা বলা হলে উত্তরটা আরও নিখুঁত হতো। তা–ও মন্দের ভালো। সংসদে ওই দিন অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন, উৎপাদনশীল খাতসহ অন্যান্য খাতে স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ বজায় রাখাসহ ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ হ্রাস ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পুনঃ তফসিল ও এককালীন এক্সিট–সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।সত্যিই কি এই আশার কোনো ভিত্তি আছে? ব্যবস্থা না নিয়ে বরং ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে অর্থ আদায় করা গেছে, এমন উদাহরণ অন্তত বাংলাদেশে নেই। ওই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী নিজেই তো বলেছেন, ব্যবসায়িক প্রয়োজনীয়তা ও সামর্থ্য বিবেচনা না করে তার অনুকূলে অতিরিক্ত ঋণসুবিধাদি (যেমন নবায়ন, ঋণসীমা বৃদ্ধি, পুনঃ তফসিলীকরণ, পুনর্গঠন ইত্যাদি) প্রদান করাও খেলাপি ঋণকে উৎসাহিত করে। সুতরাং নতুন করে যে সুবিধার ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দীর্ঘ মেয়াদে আরও বাড়বে, এর সাম্প্রতিক উদাহরণ তো আমাদের সামনেই আছে। ২০১৫ সালে রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণ দেখিয়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ আছে, এমন ১১টি বড় কোম্পানির খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন স্কিম চালু করেছিল। কিন্তু সেই টাকা আর ফেরত আসেনি। এ অবস্থায় আবারও একই ধরনের সুবিধা দেওয়ার পেছনে অর্থনীতির চেয়েও রাজনীতিই বেশি ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে ৩০ ডিসেম্বর যে মডেলের নির্বাচন হয়েছে, তাতে নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়তো অবধারিত ছিল। মনে করিয়ে দিই, ঋণখেলাপিরা ছাড়াও নতুন বাজেটে বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন কালোটাকার মালিকেরা।এবার একটা ফাঁকির কথা বলি। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পুনঃ তফসিল ও এককালীন এক্সিট–সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছেন। এই সার্কুলারটি জারি করা হয় গত ১৬ মে। একই দিনে জারি করা আরও একটি সার্কুলারের বিষয়বস্তু ছিল ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রণোদনা দেওয়া। মূলকথা ছিল, যাঁরা ঋণ নিয়মিত ফেরত দিচ্ছেন, তাঁরা ফেরত দেওয়া ঋণের সুদের ১০ শতাংশ ফেরত পাবেন। বারবার ঋণখেলাপিদের সুযোগ দেওয়ায় সমালোচনা হচ্ছিল খুব। কেননা ঋণখেলাপিরা মাত্র ৯ শতাংশ সুদহারে কিস্তি পরিশোধের বিশেষ সুযোগ পাবেন, ভালো গ্রহীতাদের দিতে হবে ১০ শতাংশের বেশি হারে—এটা চরমতম অন্যায় ও অনৈতিক। এ সমালোচনার জবাবে একই দিনে নতুন এই সার্কুলার। আসলে এটিও নতুন কিছু নয়। ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ ঠিক একই সার্কুলার জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সার্কুলার সেটারই একটি কপি। সুতরাং এ নিয়েও নতুন করে বাহবা দেওয়ার কিছু নেই।ঋণখেলাপিদের নানা সুবিধা দেওয়ার মধ্যেই আবার ২২ জুন সংসদে শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সংসদে তালিকা প্রকাশ নতুন কিছু নয়। তবে সামাজিকভাবে লজ্জা দেওয়ার এটা একটা উপায় বটে। পাশের দেশ ভারত তো ঋণখেলাপিদের ছবিও প্রকাশ করে। কিন্তু কেবল তালিকা বা ছবি প্রকাশ করে খেলাপি ঋণ খুব বেশি কমানো গেছে, এমন উদাহরণ তেমন নেই। প্রয়োজন আইনকানুনের কঠোর প্রয়োগ। কিন্তু ঋণখেলাপিদের সরকারগুলোর বারবার সুবিধা দেওয়ার যে প্রবণতা, তাতে সেই গানটির মতো করেই বলা যায়, ‘বেশি কিছু আশা করা ভুল’। অর্থাৎ ঋণখেলাপিরা সুবিধা পেতেই থাকবেন। সুতরাং ঋণখেলাপিদের কারণে অর্থনীতি চাপে থাকলেও সুবিধা পেয়ে আনন্দেই আছেন তাঁরা।তবে যাঁরা এ নিয়ে খুব বেশি হতাশ, সান্ত্বনা পেতে তাঁদের মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কুষ্ঠরোগীর বউ’ গল্পের শুরুটা পড়তে বলি। ‘এ কথা কে না জানে যে পরের টাকা ঘরে আনার নাম অর্থোপার্জন এবং এ কাজটা বড় স্কেলে করতে পারার নাম বড়লোক হওয়া?...কম ও বেশি অর্থোপার্জনের উপায় তাই একেবারে নির্ধারিত হয়ে আছে, কপালের ঘাম আর মস্তিষ্কের শয়তানি। কারও ক্ষতি না করিয়া জগতে নিরীহ ও সাধারণ হইয়া বাঁচিতে চাও, কপালের পাঁচ শ ফোঁটা ঘামের বিনিময়ে একটি মুদ্রা উপার্জন করো: সকলে পিঠ চাপড়াইয়া আশীর্বাদ করিবে। কিন্তু বড়লোক যদি হইতে চাও মানুষকে ঠকাও, সকলের সর্বনাশ করো। তোমার জন্মগ্রহণের আগে পৃথিবীর সমস্ত টাকা মানুষ নিজেদের মধ্যে ভাগ করিয়া দখল করিয়া আছে। ছলে বলে কৌশলে যেভাবে পার তাহাদের সিন্দুক খালি করিয়া নিজের নামে ব্যাংকে জমাও। মানুষ পায়ে ধরিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে অভিশাপ দেবে। ধনী হওয়ারএ ছাড়া দ্বিতীয় পন্থা নাই।’আসুন, আমরাও কাঁদিতে কাঁদিতে অভিশাপ দিই।শওকত হোসেন: প্রথম আলোর বিশেষ বার্তা সম্পাদকshawkat.massum@prothomalo.com |
পুলিশ বলছে, তারা সর্বশক্তি দিয়েই বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে হত্যাকাণ্ডের তিন দিনেও মূল তিন আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন, রিফাত ফরাজী ও তাঁর ভাই রিশান ফরাজী গ্রেপ্তার হননি। স্থানীয় লোকজন বলছেন, পেছনে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রশ্রয় থাকায় এই তিনজন নানা অপকর্ম করে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন।এখন পর্যন্ত পুলিশ বলছে, সাব্বিরের সঙ্গে রিফাত শরীফের ব্যক্তিগত বিরোধকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকাণ্ড। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাকে আগে থেকে উত্ত্যক্ত করতেন সাব্বির। আয়শাকে তিনি বিয়ে করতে চান বা আয়শার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছে—এ রকম কথাও তিনি পরিচিত মহলে ছড়িয়েছেন। দুই মাস আগে আয়শার সঙ্গে রিফাতের বিয়ের পর সাব্বির ফেসবুকে নানা আপত্তিকর পোস্ট দেওয়া শুরু করেন। বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন নিহত রিফাত। এই বিরোধই শেষ পর্যন্ত নৃশংস হত্যাকাণ্ডে গড়ায়। পুলিশ বলছে, নিজের বিরোধের প্রতিশোধ নিতে সাব্বির তাঁর বন্ধু ও সহযোগীদের সাহায্য নেন। তাঁর গড়ে তোলা জিরো জিরো সেভেন (০০৭) ফেসবুক গ্রুপের বেশ কয়েকজন সদস্যও ওই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজে এঁদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাও বলেছেন, ভিডিওতে থাকা ওই তরুণেরাই তাঁদের প্রথমে আটকে তাঁর স্বামীকে মারধর শুরু করেন।গত বুধবার সকালে বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম মামলা করেন।মামলায় সাব্বির, রিফাত, রিশানসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার পুলিশ এজাহারভুক্ত দুই আসামি চন্দন ও হাসানকে সাত দিন করে এবং সন্দেহভাজন আসামি নাজমুলকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. রাসেল এই আদেশ দেন।মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, নিহত রিফাতকে লম্বা দা দিয়ে উপর্যুপরি কোপাচ্ছিলেন দুজন। তাঁদের একজন সাদা জামা পরা সাব্বির। অন্যজন কালো জামা, কালো সানগ্লাস পরা রিফাত ফরাজী। রিফাত ফরাজীর ভাই রিশান ফরাজী ও তাঁর সহযোগীরাই কলেজমাঠ থেকে মারতে মারতে রিফাত শরীফকে কলেজের বাইরের রাস্তায় নিয়ে এসেছিলেন। এ সময় কলেজের সামনের রাস্তার উত্তর ও পূর্ব পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিশানের সেই সহযোগীরা। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কলেজ রোডের বাসিন্দা টিকটক হৃদয়, ডিকেপি রোডের রায়হান, কলেজিয়েট স্কুল রোডের মুহাইমিনুল ইনলাম ওরফে সিফাত, ধানসিঁড়ি সড়কের বাসিন্দা তানভীর হোসেন এবং সোনালীপাড়া এলাকার রিফাত। তাঁরা সবাই রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি। পুলিশ জানিয়েছে, এই পাঁচজনের সবাই ছাত্র। তাঁরা বিভিন্ন কলেজে পড়েন, কেউ এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। ভিডিওতে সবুজ টি-শার্ট পরা একজনকে দেখা যায় হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে। তিনি জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সাহস করে ওদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুতেই থামানো গেল না। রক্তে ভিজে যাচ্ছিল ছেলেটি।’বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন গতকাল বলেন, এই মামলায় এরই মধ্যে এজাহারভুক্ত দুই আসামি এবং ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে আরেকজনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আসামিরা নজরদারির মধ্যে এসেছে। অচিরেই দেশবাসীকে আমরা সুখবর দিতে পারব বলে আশা করছি। কোনো আসামি গ্রেপ্তার এড়াতে পারবে না।’পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন ০০৭ গ্রুপের সদস্যরা রিফাতকে কোপান দুজন অন্যরা সহযোগিতা করেছেনপুরোনো অপরাধী সাব্বির, রিফাতদের বিরুদ্ধে এখন নানা অভিযোগ উঠছে। তাহলে এত দিন পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার বলেন, সাব্বিরের বিরুদ্ধে দুটি মাদক, একটি অস্ত্রসহ আটটি মামলা রয়েছে। আটটি মামলাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, পরে তিনি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। সব কটি মামলাতেই পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল। আর রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ছিল। তিনটিতেই তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন। এ মামলাগুলোর তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ।বরিশালের পুলিশ জানায়, আসামিদের ধরতে বরিশাল বিভাগের সব কটি জেলা ও উপজেলায় গোয়েন্দা পুলিশ ও সাদাপোশাকধারী পুলিশের তৎপরতা রয়েছে। দূরপাল্লার বাস, লঞ্চগুলোতেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বরিশাল নদীবন্দর এলাকায় কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ তল্লাশি চালানোর সময় সন্দেহভাজন চার যুবককে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাত হত্যার সঙ্গে তাঁদের কোনো যোগসাজশ না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলে পরিবারের জিম্মায় রাতেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম গতকাল বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে শুধু বরিশাল বিভাগ নয়, সারা দেশে তৎপরতা চলছে। তারা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকার নিরাপত্তায় তাঁর বাবার বাড়িতে গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আয়শার চাচা আবু সালেহ বলেন, রিফাত শরীফ নিহত হওয়ার পর থেকেই আয়শা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।আরও পড়ুন:‘নয়ন বন্ড’ ও 007 গ্রুপ |
সাকিবের মতো মানসিক দৃঢ়তা ও নিজেকে বিশ্লেষণ করার সামর্থ্য না থাকলে অন্ধের মতো তাঁকে অনুকরণ হিতে বিপরীত হতে পারেকোনো তরুণ ক্রিকেটারকে যদি বলা হয়, সাকিব আল হাসানকে দেখে শেখা উচিত না, সেই ক্রিকেটার নিশ্চয়ই বিস্মিত হবেন। শুধু কোনো তরুণ ক্রিকেটার কেন, যে কারওরই চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা হবে কথাটা শুনলে। সাকিব বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা ক্রিকেটার। পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত তাঁর যা অর্জন, সেটা সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো। তাহলে সাকিবকে আদর্শ কেন মানবেন না একজন তরুণ ক্রিকেটার! কিন্তু শাহরিয়ার নাফিস, বাংলাদেশের হয়ে ২৪ টেস্ট ও ৭৫ ওয়ানডে খেলার পর নিজ অভিজ্ঞতা থেকে সাফ জানিয়ে দিলেন, উঠতি ক্রিকেটাররা যেন সাকিবকে অনুকরণ না করে!কেন, সেটার একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নাফিস। ক্রিকেটারদের আড্ডায় নিয়মিত আলোচনা হয়, এ বিষয়টা নিয়ে। সাকিব খুব বেশি অনুশীলন করেন না, কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার তিনি। নাফিস এই উদাহরণ টেনেই বললেন, ‘একেকটা মানুষ একেক রকম। মুশফিকের কথা ধরুন, আমরা জানি মুশফিক অনুশীলনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দেয়। সাকিব তেমন না। আমরা ক্রিকেটাররা নিজেদের মধ্যে সব সময় একটা কথা বলে থাকি, সাকিব আল হাসানকে কোনো খেলোয়াড় যেন অনুকরণ না করে। সাকিবের অনুশীলনের ধরন অনুকরণ করা সবার জন্য আদর্শ না-ও হতে পারে। সাকিব মানসিকভাবে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করে, সেটা অনুকরণীয়।’কিন্তু সাকিব সব সময়ই এমন ছিলেন না। তরুণ সাকিব অনুশীলনে যথেষ্ট সময় কাটিয়েছেন। ঘাম ঝরিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নিজেকে গড়ে তুলেছেন তিল তিল করে। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শক্ত ভিত সেখানেই গড়ে নিয়েছেন। ক্রিকেটারদের প্রিয় কোচ নাজমুল আবেদীন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই সাকিবকে দেখে এসেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বললেন, ‘আমাদের একটু গোড়া থেকে দেখতে হবে। ওর যখন বয়স কম ছিল, তখন ওর পরিশ্রম ছিল অনেক। অনুশীলনে সময় অনেক কাটিয়েছে সে।’২০০৬-০৭ সালের দিকে যখন আন্তর্জাতিক অভিষেক সাকিবের, বাংলাদেশের সূচি তখন এত ঠাসা ছিল না। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি তখন মাত্র শুরু। আইপিএল, বিপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটও ছিল না। সময়ের সঙ্গে জাতীয় দলের ব্যস্ততা বেড়েছে। বেড়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ব্যস্ততা। একজন পুরোদস্তুর অলরাউন্ডারের ওয়ার্কলোড বিবেচনা করেই ম্যাচের বাইরের অনুশীলন কমিয়ে এনেছেন সাকিব।নাজমুল আবেদীনের ব্যাখ্যায়, ‘যতই সময় গড়িয়েছে, ওর ম্যাচের বাইরে অনুশীলন কমে এসেছে। কমার কারণ হচ্ছে, শুরুতে তো ম্যাচ খেলার সুযোগ ছিল না। তখন অনুশীলনটা প্রয়োজন ছিল। ক্রিকেটার হিসেবে নিজের ভিত্তিটা তৈরির জন্য সেটা দরকার ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচের সংখ্যা এতই বাড়ল যে অনুশীলনটা সেই অনুপাতে কমাতে হয়েছে। সে কারণেই অনুশীলনটা খুব চোখে পড়ে না। এত ম্যাচ খেলার পাশাপাশি ওই কাজের চাপটাও মানিয়ে নিতে হয় ওকে।’সাকিবের গুরু কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন খুব কাছ থেকে নিজের শিষ্যকে বিশ্বসেরা হয়ে উঠতে দেখেছেন। এবারের বিশ্বকাপের আগে সালাউদ্দিনের সঙ্গে বিশেষ অনুশীলন করেছেন সাকিব, যার ফল হাতেনাতে পাচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘সাকিবের বোঝার সামর্থ্য অনেক। সে অপ্রয়োজনে কোনো কিছু করে সময় কাটায় না। যা দরকার ঠিক তাই করে সে। অন্যদের যেমন কোনো কিছু বারবার বলতে হয়, সাকিব তেমন না।’প্রধান কোচ স্টিভ রোডসের ভোটও সাকিবের পক্ষে। ২০১০ সালে সাকিব যখন উস্টারশায়ারের হয়ে খেলতে গিয়েছিলেন তখন কোচ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন রোডস। সাকিব আজকের সাকিব হয়ে ওঠার আগেই তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন রোডস। গত এশিয়া কাপের আগে তিনি বলেছিলেন, ‘সাকিব যখন তরুণ ছিল, তখনই যা অনুশীলন করার করে নিয়েছে। ম্যাচ অনুশীলনও কম করেননি সাকিব। প্রতিটি টেস্টে ৫০ ওভার করে বল করেছে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই। তাঁর সব সময় অনুশীলন করার খুব প্রয়োজন নেই।’হাইপারফরম্যান্স প্রোগ্রামে ‘ডিপ প্র্যাকটিস’ নামের একটা বিষয় আছে। অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে, কোনো ভুল ধরা পড়লে সেই নির্দিষ্ট ভুল নিয়ে কাজ করে যাওয়াকে ডিপ প্র্যাকটিস বলে। একে একে ভুলগুলো শুধরে ফেলাই ডিপ প্র্যাকটিসের মূলকথা। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল ঠিক তাই করে থাকেন। অনুশীলনে শুধু দু-একটি বিষয় নিয়েই কাজ করে থাকেন এই দুজন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলনে সময় কাটান না। বাংলাদেশ দলের সাবেক মনোবিদ আলী খান বিষয়টি আরও পরিষ্কার করেছেন এভাবে, ‘সব সময় অনেক অনুশীলন করলেই বিশ্বমানের পারফরমার হওয়া যায় না। ডিপ প্র্যাকটিসের মাধ্যমেও বড় পারফরমার হওয়া যায়। এটা হাইপারফরম্যান্স প্রোগ্রামের পরিচিত ধারণা। এর মাধ্যমে ছয় সপ্তাহের কাজ ছয় দিনে করা যায়।’সবার কথা থেকে এটা পরিষ্কার, সাকিব আল হাসান তরুণ ক্রিকেটারদের পথপ্রদর্শক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাঁর মতো মানসিক দৃঢ়তা ও নিজেকে বিশ্লেষণ করার সামর্থ্য না থাকলে অন্ধের মতো সাকিবকে অনুকরণ করে যাওয়া হিতে বিপরীত হতে পারে। |
‘আমি তাঁকে দেখিনি কখনো। তিনিও দেখেননি আমাকে। কিন্তু মাসান্তে বৃত্তির টাকাটা ঠিক এসে পৌঁছে যায় আমার হাতে। আমি টের পাই, না দেখা সেই মানুষটি অদৃশ্যভাবে সব সময় আমার পাশেই আছেন। আমার আজন্ম কৃতজ্ঞতা সেই নৈতিক অভিভাবকের প্রতি।’মুঠোফোনের অন্য প্রান্ত থেকে সুমাইয়া আশরাফের কৃতজ্ঞতার অনুভূতি এভাবেই ভেসে আসে। এপ্রান্ত থেকে তাঁর মুখটা দেখা যায় না। কিন্তু চোখ বন্ধ করে তাকালে ঠিক দেখতে পাওয়া যায়, কৃতজ্ঞতাবোধের ঔজ্জ্বল্যে সব মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মেধাবী সুমাইয়া আশরাফ তাঁর বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। নৈতিক অভিভাকত্বের মানবিক ধারণাটি তাঁর পিতার মৃত্যুতে ফ্যাকাশে হয়ে আসা স্বপ্নকে আবার রঙিন করে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।মাগুরার এক প্রত্যন্ত গ্রামের রাজিব হোসেনের গল্পটিও নাড়া দেয় আমাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন যখন ধীরে ধীরে দুঃস্বপ্নে রূপান্তরিত হচ্ছিল, ঠিক তখনই একজন ‘মোরাল প্যারেন্ট’ (নৈতিক অভিভাবক) পাশে এসে দাঁড়ান। রাজিব এখন মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। ‘আমার নৈতিক অভিভাবক সৌদিপ্রবাসী। যখনই প্রয়োজন হবে, আমি সন্তানের মতোই তাঁর পাশে থাকব আজীবন’—বলছিলেন রাজিব।শুধু রাজিব হোসেন কিংবা সুমাইয়া আশরাফই নন, সেলিম রেজা, হাবিবুর রহমান, জ্যোতি খাতুন কিংবা রিয়াজুল ইসলাম—এমন আরও অনেক স্বপ্নাহত-স্বপ্নভাঙা মানুষের ফের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প জড়িয়ে আছে ‘নৈতিক অভিভাবকত্ব’ ধারণাটির সঙ্গে।নৈতিক অভিভাবকত্ব এবং একজন মাহবুবুর রহমান ‘নৈতিক অভিভাবকত্ব’ ইংরেজি ‘মোরাল প্যারেন্টিং’–এর বাংলাকরণ। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল অবধি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে শিক্ষা সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়ানোর কাজ করেন ড. মো. মাহবুবুর রহমান। পেশাগত জীবনের আহ্বানে যখন ছেড়ে আসেন কাজটি, তখনই একটি সুতীব্র অনুভূতি অনুভব করেন নিজের ভেতর। কত অসম্ভব মেধাবী শিক্ষার্থী ঝরে যায় অল্প কিছু অর্থের জন্য! এরপর বৃত্তি নিয়ে জাপানে পড়তে গিয়ে দেখেছেন সে দেশের শিক্ষার্থীদের প্রাচুর্যপূর্ণ জীবন। মালয়েশিয়ায় অধ্যাপনা করতে গিয়ে খুব কাছ থেকে দেখেছেন সে দেশের শিক্ষার্থীদের। তখন থেকেই প্রাপ্ত বৃত্তির একটি ছোট অংশ কিংবা উপার্জিত অর্থের একটি নির্দিষ্ট অঙ্ক পাঠাতেন মায়ের কাছে। মা সেই টাকা দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন কিংবা কিনে দিতেন শিক্ষাসরঞ্জাম। একসময় বুঝতে পারলেন, বিদেশ–বিভুঁই থেকে কিছু অর্থসাহায্য পাঠিয়ে খুব একটা কার্যকরী উপকার করতে পারছেন না। সত্যিকারভাবেই ফলপ্রসূ কিছু করতে হলে খুব কাছ থেকে নিবিড়ভাবে করতে হবে। দেশে ফিরে আসার অন্যান্য কারণের সঙ্গে এ বিষয়টিও গভীরভাবে জড়িয়ে যায়। দেশে ফিরে এসে ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে নৈতিক অভিভাবকত্বের ধারণাটি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করেন।প্রথমে নিজের ঘনিষ্ঠজনদের কাছে তুলে ধরেন ধারণাটি। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী খুঁজে বের করে সচ্ছল সহৃদয় কোনো বন্ধুকে অনুরোধ করেন অন্তত একজন শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিতে। ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব যখন সাড়া দিতে শুরু করলেন, বুকে সাহস পেলেন মাহবুবুর রহমান। একসময় বন্ধুর বন্ধু, তাঁদের পরিচিতজন এবং ধীরে ধীরে অপরিচিতজন অনেক মানবিক মানুষ এগিয়ে এলেন।মানবিক এবং সংগ্রামমুখর মানুষদের মিলনস্থলনৈতিক অভিভাবক এবং নৈতিক সন্তানদের মধ্যে একটি মানবিক সেতুবন্ধ মোরাল প্যারেন্টিং প্রত্যয়টি। এই কর্মযজ্ঞের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক মানুষ যেমন মানবতার আলোয় উদ্ভাসিত, তেমনি সংগ্রামমুখর জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বর্তমানে ৯০ জন নৈতিক অভিভাবক ২০০ জনের অধিক মোরাল চাইল্ডের (নৈতিক সন্তান) দায়িত্ব পালন করছেন। এই অভিভাবকদের অধিকাংশই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে সংগ্রাম করে সংগ্রামে সফল হয়েছেন। ফলে জীবন নিয়ে নিরন্তর সংগ্রাম করে চলা শিক্ষার্থীদের প্রতি একধরনের নৈতিক দায়বদ্ধতাই যেন অনুভব করেন তাঁরা।ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেওয়া হয় এই বৃত্তি। বৃত্তির টাকার অঙ্কটি খুব বেশি নয়। কিন্তু অঙ্কের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গড়ে ওঠা সম্পর্ক। যে সম্পর্ক শুধু বৃত্তি দান-গ্রহণে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পিতামাতা-সন্তানের এক চিরায়ত সম্পর্ক। হুলুস্থুল জীবনের কাজ ফুরিয়ে যায় একসময়, ব্যস্ততা কমে যায়, ধীরে ধীরে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে মানুষ, প্রিয়জনেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। সেই নিঃসঙ্গ সময়ে এই অগণন নৈতিক সন্তানদের কেউ না কেউ নিশ্চয়ই পাশে এসে দাঁড়াবে। নৈতিক সন্তানেরা নিয়মিত চিঠি লিখে নিজেদের কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা জানায় নৈতিক অভিভাবকদের। মাঝেমধ্যে মুঠোফোনে যোগাযোগ, অভিভাবকদের দিকনির্দেশনা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার এক অনুপম উৎস যেন। ৪ মে মোরাল প্যারেন্টিংয়ের সাত সদস্যবিশিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ড গঠিত হয়েছে। জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী যুক্ত হয়েছেন উপদেষ্টা হিসেবে। নৈতিক সমাজ গঠনের প্রত্যয়ে এই মানবিক আহ্বানে এগিয়ে আসছেন আরও অনেকেই।নৈতিক অভিভাবক হওয়ার জন্য অর্থের প্রাচুর্য নয়, বরং মানবিক হৃদয়ের অধিকারী হওয়া চাই—বলছিলেন ড. মাহবুব। সৎ পথে উপার্জিত অর্থ দান-দক্ষিণার মানসিকতায় নয়, বরং নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই প্রতিটি মোরাল প্যারেন্ট দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। কতগুলো প্রতিশ্রুতি রয়েছে নৈতিক সন্তানদেরও। প্রাপ্ত বৃত্তি শুধুই শিক্ষার কাজে ব্যয় করা, কোনো অনৈতিক কাজে না জড়ানো কিংবা নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ঠিক একইভাবে অন্তত দুজন নৈতিক সন্তানের দায়িত্ব নেওয়া—এমনই সব প্রতিশ্রুতি।৯০ শতাংশ তত্ত্বজীবনের শতভাগের সবটুকু শুধুই নিজের জন্য ব্যয় করে কতটুকু সুখী হতে পারে মানুষ। নিজের পরিবার–পরিজন, সন্তানসন্ততি—সবার জন্য শতভাগ দিয়েও একটি শতভাগ সুখী জীবন কি নিশ্চিত করা যায়! বরং ব্যাপারটি যদি এমন হয়, ৯০ ভাগ থাকুক নিজের পরিবার–পরিজনের জন্য, বাকি দশ ভাগ থাকুক সমাজের জন্য, পরের জন্য। নিজ মেধা, শ্রম, অর্থ এবং সময়—সবকিছুর ১০ শতাংশ ব্যয়িত হোক পরার্থে। তাহলে একটি অর্থপূর্ণ আনন্দময় জীবন বোধ হয় পাওয়া যেতে পারে। এভাবেই ৯০ শতাংশ তত্ত্বের ব্যাখ্যা করছিলেন তত্ত্বের উদ্ভাবক মো. মাহবুবুর রহমান। যে তত্ত্বটি মোরাল প্যারেন্টিং ধারণাটির অন্যতম অনুঘটক। |
পুরো নাম সাব্বির আহম্মেদ। এলাকায় পরিচিত নয়ন নামে। তবে কয়েক বছর আগে থেকে সাব্বির নিজের নামের সঙ্গে বন্ড জুড়ে দিয়ে ‘নয়ন বন্ড’ নামে নিজের পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। বন্ধু মহল থেকে শেষতক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপরাধীর তালিকাতেও তিনি বনে যান নয়ন বন্ড।হলিউডি অ্যাকশন থ্রিলার ঘরানার জেমস বন্ড সিরিজের চলচ্চিত্রগুলো এ দেশেও ভীষণ জনপ্রিয়। ‘বন্ড, জেমস বন্ড’ বলে নিজের পরিচয় দেওয়া ওই চলচ্চিত্রগুলোর প্রধান চরিত্রটির কাণ্ডকারখানা অতিমানবীয়। কোনো বাধাই তাঁকে রুখতে পারে না, নারী মহলেও সবাই তাকেই চায়, তবে তিনি কোনো বাঁধনে জড়ান না। এ রকম কোনো মোহ থেকেই হয়তো বরগুনার সাব্বির আহম্মেদ নিজের নামের সঙ্গে বন্ড লাগিয়েছিলেন বলে ধারণা এলাকাবাসীর। গড়ে তুলেছিলেন জেমস বন্ডের এজেন্ট নম্বর ধরে ‘007’ নামে ফেসবুক গ্রুপ। পার্থক্যটা হচ্ছে চলচ্চিত্রগুলোতে জেমস বন্ডের ভাবমূর্তি নায়কোচিত। আর বরগুনা শহরে সাব্বিরকে সবাই চেনেন প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা সন্ত্রাসী হিসেবেই। 007 গ্রুপের সদস্যরাও এলাকায় বখাটে হিসেবেই পরিচিত, যার কারণে কেউ টুঁ শব্দটি না করেই এত দিন ধরে তাঁর সব গুন্ডামি সহ্য করে গেছেন।বরগুনার সরকারি কলেজ এলাকায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড এখন সারা দেশেই আলোচিত। পুলিশ বলছে, তাঁকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে। সাব্বিরসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অপরাধীরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য সতর্ক থাকতে বলেছেন হাইকোর্ট।বরগুনা সরকারি কলেজের পেছনেই একটি সেমি পাকা ঘরে মাকে নিয়ে থাকেন সাব্বির। বাবা আবু বক্কর সিদ্দিকী বেশ কয়েক বছর আগে মারা যান। তাঁর একমাত্র বড় ভাই সিঙ্গাপুরপ্রবাসী। মূলত প্রবাসী ভাইয়ের আয়েই চলে সংসার। ২০১১ সালে বরগুনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাসের পর শহরের আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন সাব্বির। এরপর তিনি নিজেকে বরগুনা সরকারি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে কলেজে যেতেন। তবে কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ গতকাল বলেন, ‘সাব্বির আমাদের কলেজের ছাত্র নয়।’শহরের ধানসিঁড়ি এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, মাদক সেবনের টাকার জন্য কয়েক বছর আগে ছিঁচকে চুরি, মুঠোফোন ছিনতাই, ছোটখাটো চাঁদাবাজি শুরু করেন সাব্বির। পেছনে ছিলেন স্থানীয় এক প্রভাবশালীর ছেলে। তাঁর সন্ত্রাসীপনায় অতিষ্ঠ হলেও তেমন কিছু করার ছিল না। একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে আবার ফিরেছেন এলাকায়। পরে হেরোইন ব্যবসা ও সেবনের কারণে শহরের প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তবে তাঁর সব কর্মকাণ্ড ছিল সরকারি কলেজকেন্দ্রিক।কোনো পদ-পদবি না থাকলেও সাব্বির কখনো নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী বা নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের বিষয়টিও জানতেন এলাকার লোকজন। আর এসব কারণে বরগুনা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি দাপট ধরে রেখেছেন।তবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান বলেন, ‘ও (সাব্বির) কোনো দিনই ছাত্রলীগের রাজনীতি কিংবা কোনো কমিটিতে ছিল না। কেউ প্রমাণও দিতে পারবে না। এটা অপপ্রচার। সাব্বির কাদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব করত, সেটা এই শহরের সবাই জানে।’পুলিশ জানায়, সাব্বিরের বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগে মাদক ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা হলেও জামিনে বের হয়ে যান। মাস দুয়েক আগেও আরেকটি মামলায় কারাগার থেকে জামিনে বের হন সাব্বির। তাঁর বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় মাদক, অস্ত্র, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ নানা অপরাধে আটটি মামলা রয়েছে।বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, সাব্বিরের বিরুদ্ধে মাদকের দুটি, অস্ত্রের একটি এবং মারামারির পাঁচটি মামলা রয়েছে। সেগুলোর সব কটিতেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাব্বিরের বিষয়ে পুলিশ কখনোই কঠোর ছিল না। কারণ, এলাকার প্রভাবশালী মহল তাঁর প্রশ্রয়দাতা।আরও পড়ুন: মূল আসামিরা ধরা পড়েনি |
আপনি নিজেই আপনার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন শতকরা ৯০ থেকে ৯৬ ভাগ। বাকিটা আমরা ফেট বা নিয়তি বলতে পারি। ভাগ্য অনেক সময় অনির্দিষ্ট কারণে আপনা থেকেও গতিপথ বদলাতে পারে। এখানে রাশিচক্রে আমি ‘নিউমারলজি’ বা ‘সংখ্যা-জ্যোতিষ’ পদ্ধতি প্রয়োগ করেছি।মেষ ২১ মার্চ-২০ এপ্রিল। ভর # ৬মেষ নারী-পুরুষ রাশিগতভাবেই ভ্রমণপিপাসু। সুযোগ পেলেই এঁরা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। চলতি সপ্তাহে মেষ জাতক-জাতিকার সামনে ভ্রমণের সুযোগ আসবে। প্রস্তুত থাকুন।বৃষ ২১ এপ্রিল-২১ মে। ভর # ১বৃষ বিখ্যাত তাঁর সৌন্দর্যপ্রিয়তা ও সুরুচির জন্য। সমাজের কাছে তাঁর এই গুণগুলো যেন একটা প্রতীক। প্রিয় বৃষ, এ সপ্তাহে এই কথাগুলো মনে রাখবেন।মিথুন ২২ মে-২১ জুন। ভর # ৬অতিরিক্ত চুপ হয়ে থাকবেন না। কথা বলুন। নিজের মনের কথা অন্যকে জানতে দিন। তাহলেই আপনার সপ্তাহটা ভালো কাটবে। কল্যাণ হোক।কর্কট ২২ জুন-২২ জুলাই। ভর # ২প্রতিযোগিতায় অন্যকে হারানো আপনার জন্য সহজ। তবে, চলতি সপ্তাহে আপনি নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। অন্যকে হারানো...সে তো আপনি পারবেনই।সিংহ ২৩ জুলাই-২৩ আগস্ট। ভর # ১সাধারণভাবে বলতে গেলে সিংহ নারী-পুরুষের জন্য সপ্তাহটি খুবই সফল হওয়ার কথা। মনের শক্তি অটুট রেখে কাজে নামুন। আপনি পারবেন না কেন, অবশ্যই পারবেন। আপনার চলার পথে আমাদের শুভ ইচ্ছা রইল।কন্যা ২৪ আগস্ট-২৩ সেপ্টেম্বর। ভর # ২চলতি সপ্তাহে আপনার মনে একটু দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। এগুলো কাটিয়ে উঠুন, তাহলেই আপনার সপ্তাহ সফল হবে। চিন্তার কিছু নেই।তুলা ২৪ সেপ্টেম্বর-২৩ অক্টোবর। ভর # ২অশান্তিকে সরিয়ে দিয়ে মনের প্রশান্তি বজায় রাখুন। শান্তি লাভের মতো অনেক কিছুই এ সপ্তাহে ঘটবে।বৃশ্চিক ২৪ অক্টোবর-২২ নভেম্বর। ভর # ২আপনার মুখে হাসি দেখলে অন্যরাও খুশি হয়। অন্তত এই কথাটুকু মনে রেখে চলতি সপ্তাহটি হাসিমুখে কাটিয়ে দিন। অন্যরা খুশি মনে থাকলে সেটা আপনাকেও আনন্দ দেবে।ধনু ২৩ নভেম্বর-২১ ডিসেম্বর। ভর # ৯এ সপ্তাহে আপনার মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটবে। আপনি নিজে জাগবেন, অন্যকেও জাগাবেন। এটা হবে আপনার একটা মহান কাজ। কল্যাণ হোক!মকর ২২ ডিসেম্বর-২০ জানুয়ারি। ভর # ৩আমি যত দূর দেখি, চলতি সপ্তাহটি মকরের জন্য একটি অত্যন্ত শুভ সপ্তাহ। মনের মধ্যে কোনো দুর্বলতা জমতে দেবেন না। তাহলেই হবে।কুম্ভ ২১ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি। ভর # ৯চলতি সপ্তাহে আপনার মনটা একটু খারাপ থাকতে পারে। এটাকে বেশি পাত্তা দেবেন না। মন খারাপকে পাত্তা দিলেই সেটা আরও বেশি পেয়ে বসে। শুভ চাই আপনার।মীন ১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ। ভর # ৩নিজের মনকে বিকশিত করুন। সেই সঙ্গে অন্যকেও জাগিয়ে তুলুন। এখানেই মহান মীন রাশির জয়। শুভ হোক! |
নিয়মিত ভ্রমণবিষয়ক ছবি তোলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। পোশাকি নাম ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ট্রাভেল ফটো কনটেস্ট-২০১৯। প্রতিযোগিতায় তিনটি বিভাগে আলোকচিত্র আহ্বান করা হয়েছিল। নগর, প্রকৃতি ও মানুষ—এই তিনটি বিভাগে সারা বিশ্বের আলোকচিত্রীদের পাঠানো ছবি থেকেই ১২ জুন বিজয়ী ছবির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ‘নগর’ বিভাগে সেরা ছবির তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের জনজীবনের একটি আলোকচিত্র।নগর বিভাগের তৃতীয় সেরা সেই ছবিটি তুলেছেন ভারতের কলকাতার আলোকচিত্রী সান্দীপনি চট্টোপাধ্যায়। সান্দীপনির ‘স্ট্রিটস অব ঢাকা’ শিরোনামে ছবিটি বিশ্ব ইজতেমার সময়কার। সেদিন ছিল আখেরি মোনাজাত। লাখ লাখ মানুষের সমাগম ছিল টঙ্গী এলাকায়। টঙ্গী ব্রিজের কাছেই ক্যামেরা কাঁধে বসেছিলেন সান্দীপনি। ইজতেমার ময়দান পেরিয়ে একসময় মহাসড়কে দাঁড়িয়ে নামাজে শরিক হয়েছিলেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নামাজ আদায় করার সেই মুহূর্তের ছবিই তোলেন সান্দীপনি চট্টোপাধ্যায়। মেসেঞ্জারে তিনি বলছিলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমার জমায়েতের কথা আমার জানা ছিল। অনেক দেশি-বিদেশি আলোকচিত্রী সে সময় ঢাকায় যান, ছবি তোলেন। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও আমি শৌখিন আলোকচিত্রী। আমারও আগ্রহ ছিল সে সময় যাব। বাংলাদেশি আলোকচিত্রী বন্ধুদের আমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছিলাম ঢাকায়। সাত দিনের সেই সফরে ইজতেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেক ছবিও তুলেছিলাম।’২০১৮ সালে তোলা সেই ছবিগুলো থেকেই ‘স্ট্রিটস অব ঢাকা’ শিরোনামের ছবিটি পাঠিয়েছিলেন ভ্রমণবিষয়ক প্রতিযোগিতার জন্য। প্রতিযোগিতার কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে তাঁর ছবিটি পুরস্কার পেয়েছে। অপর প্রান্ত থেকে পুরস্কার পাওয়ার আনন্দ প্রকাশ করছিলেন সান্দীপনি, ‘এই আনন্দের কোনো তুলনা হয় না। বিশ্বের নামকরা আলোকচিত্রীরা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এই প্রতিযোগিতায় ছবি পাঠান। সেই নামজাদা মানুষদের মধ্য থেকে আমার ছবি পুরস্কৃত হয়েছে, এ তো বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়।’নগর বিভাগে প্রথম পুরস্কার পাওয়া ছবিটি আলোকচিত্রী উইমিন চুর তোলা। ‘গ্রিনল্যান্ডিক উইন্টার’ শিরোনামে দৃষ্টিনন্দন ছবিটিতে তুষার ঢাকা নানা রঙের কিছু বাড়ি দেখা যায়। উইমিন ছবিটি তুলেছেন গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা থেকে। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছে জ্যাসেন তদোরোভ নামের এক আলোকচিত্রীর ‘ইন দ্য এজ অব অ্যাভিয়েশন’ ছবিটি। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের অংশবিশেষ দেখা যায় ছবিটিতে। |
ভারতের পুনেতে এক আবাসিক ভবনের দেয়াল ধসে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। ভারী বর্ষণের কারণে গতকাল শুক্রবার রাতে মহারাষ্ট্র রাজ্যের শহরটিতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারটি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি।পুলিশ জানায়, পুনের কোন্ধয়া এলাকায় ভেঙে পড়া দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ এখনো রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এ কারণে আটকা পড়েছে শত শত গাড়ি। অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের পাশেই ছিল টিনের ছাউনি। পাশের এক নির্মাণাধীন ভবনের শ্রমিকদের থাকার জন্য বানানো হয়েছিল এটি। অ্যাপার্টমেন্টের প্রাচীর ধসে ওই ছাউনির ওপরে পড়ে। সেখানে অবস্থানরত শ্রমিকসহ পার্ক করে রাখা গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়।জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী ও দমকল বাহিনীর উদ্ধারকর্মীরা এখনো ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন। এখনো কেউ ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে আছেন কি না, তা খুঁজে বের করতে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দিবাগত রাত প্রায় দেড়টার দিকে দেয়ালটি ধসে পড়ে।জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনীর কর্মকর্তা সদানন্দ গৌড় বলেন, যে ভবনটির দেয়াল ধসে পড়েছে, এর পাশেই নির্মাণাধীন একটি ভবনের শ্রমিকেরাই মূলত এ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী, দমকল বাহিনী ও পুনে পুলিশ একসঙ্গে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। আহত ব্যক্তিদের ঘটনাস্থলের পাশে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।গতকাল থেকে পুনেতে ভারী বর্ষণ চলছে। গোটা রাজ্যে বৃষ্টির ভয়াবহতা শুরু এর আরও এক দিন আগে থেকে। গতকাল রাত পর্যন্ত পুনেতে ২৪ ঘণ্টায় ৭৩ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ২০১০ সালের জুনের পরে এটিই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।গতকাল মহারাষ্ট্রে বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনায় আটজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। মুম্বাই শহরে ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বিলম্বিত বৃষ্টির প্রকোপ শুরু হয়েছে। এর জেরে ইতিমধ্যে তিনজন নিহত হয়েছেন, আহত পাঁচজন।আজ শনিবার সকালে মুম্বাইয়ের চেম্বুরে এক অটোরিকশার ওপর দেয়াল ধসে পড়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত হতাহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। |
তিনি বলিউড সিনেমা খুব যে দেখেন, এমনটা নয়। তবে টিভির রিমোট হাতে এ চ্যানেল-ও চ্যানেল ঘুরে হিন্দি গানেও কিছুটা সময় চোখ রাখেন। সেদিনও এমনই এক সিনেমার গানে দৃষ্টি ছিল। রাজা নটবরলাল সিনেমার সেই গানের একটি মুহূর্তে নায়ক এমরান হাশমিকে আবিষ্কার করেন একটি রঙিন গাড়িসমেত। গানটা সেদিন যতটা না মনে ধরেছিল, তার চেয়ে ঢের ধরেছিল সেই ছাদ খোলা ছিমছাম গাড়িটা।২০১৪ সালের গল্প এটি। আকাশ আহমেদ নামের ২৩ বছরের সেই তরুণ আগ্রহ নিয়ে তাঁর স্বপ্নের গাড়ি সম্পর্কে জানলেনও। ইতালির বিলাসবহুল স্পোর্টস কার ‘ল্যাম্বরগিনি’ এটি। দরদাম জেনে নিজেকেই হয়তো বোঝালেন, এ তো রীতিমতো ‘গরিবের ঘোড়া রোগ’। কিন্তু তিনি থামলেন না, ল্যাম্বরগিনি কেনা যেহেতু সম্ভব হবে না, সংকল্প করলেন—নিজেই বানাবেন দামি গাড়িটির আদলে একটি বাহন। বানালেনও তাই! সেই গাড়ির সুবাদে তিনি যেন এখন ল্যাম্বরগিনি আকাশ!সেই গাড়িতে বসেই আকাশ শোনাচ্ছিলেন গল্পটা, ‘আমি নিজে নিজে গাড়ি বাড়ানোর সাহস করেছিলাম আমাদের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তৈরির কারখানার কল্যাণে। এখানেই ধীরে ধীরে কাজটি করেছি।’নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিমপাড়া এলাকায় আকাশদের সেই ‘নবী অ্যান্ড সন্স’ নামের কারখানাটি। যার মূল কারিগর আকাশ নিজেই। কারখানার কারিগর হয়েছেন পড়াশোনায় ইস্তফা দিয়ে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলে যাওয়ায় ইতি টানেন। কাজ নেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি জাহাজ নির্মাণপ্রতিষ্ঠানে। সেখানে তিনি দেড় বছর ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেন। সেটা ছেড়ে রাজধানীর শ্যামপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভারতীয় ট্রেন লাইনের বার তৈরির কাজও করেছেন। এরপর ২০১৬ সালে ফিরে আসেন নারায়ণগঞ্জের ধর্মগঞ্জে, সেখানেই মামা আবুল হোসেনের অটোরিকশা ওয়ার্কশপে অটোরিকশা তৈরির ডাইস, হাইড্রোলিক বডি প্রেস তৈরিসহ নানা কাজ শেখেন। এরপর নিজের কারখানা।২০১৮ সালে সেই কারখানাতেই গাড়ির কাজ শুরু করেন। বাবা নবী হোসেন ছেলের কাজের উৎসাহী মনোভাব দেখে তাঁকে টাকাও দেন। সেই টাকা দিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ির আসন, চাকাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জোগাড় করা শুরু করেন। এরপর শুরু হয় ল্যাম্বরগিনি আদলে গাড়ি তৈরির প্রচেষ্টা।ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে ল্যাম্বরগিনির আদলে গাড়ির নকশা বানান। জাহাজ কাটার অভিজ্ঞতা থেকে ইস্পাতের পাত কেটে গাড়ির কাঠামো তৈরি করেন। গাড়িতে যুক্ত করেন ১২০০ ওয়াটের একটি মোটর, ১২ ভোল্টের ৫টি ব্যাটারি, স্টিয়ারিংটি ল্যান্সার গাড়ির, গিয়ার বক্স মিতসুবিশি গাড়ির—এভাবে বিভিন্ন গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যুক্ত করতে থাকেন গাড়িতে। ড্যাশবোর্ড, সাউন্ড সিস্টেম, বাতিসহ নানা কিছু যুক্ত হতে থাকে। আকাশ বলছিলেন, ‘গাড়ির চাকা আর স্টিয়ারিং হুইলটাই কেবল কিনে আনা হয়েছে, অন্য সব যন্ত্র হাতে তৈরি। চাকার সাসপেশন, হেডলাইট, ব্যাক লাইট, গিয়ার—এসবও আমার তৈরি, যা অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না।’দেড় বছরের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে সংগ্রহ করা সরঞ্জামে গাড়িটি তৈরি করেন আকাশ। এখন তাঁর গাড়িটি ৫ ঘণ্টা চার্জ দিলে ৫০ কিলোমিটার গতিতে প্রায় ১০ ঘণ্টা চলতে সক্ষম। আকাশ আহমেদ বলেন, ‘গাড়িটি তৈরি করতে এ পর্যন্ত তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। প্রথমে আমি যখন গাড়ি তৈরি করা শুরু করি, তখন অনেকেই হাসাহাসি করত। এখন তারাই আমার প্রশংসা করে। এটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে।’জৈব জ্বালানিবিহীন বলেই আকাশের গাড়িটি পরিবেশবান্ধব। আকাশ যোগ করলেন, ‘দামেও সাশ্রয়ী। সহযোগিতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে চাই এ রকম গাড়িটি।’ |
কুমিল্লা নগরের চকবাজার বাসস্ট্যান্ডের যে বেহাল চিত্র বুধবার প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এটা আদৌ বাসস্ট্যান্ড কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। কুমিল্লার রাজগঞ্জ-চকবাজার সড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত বাসস্ট্যান্ডটি গর্তে ভরা। ফলে সব সময় পানি জমে থাকে। এই পানির ওপরই বাস দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। একটি জায়গায় অন্তত এক ফুট উঁচু কাদামাটি জমে আছে। এই পানি ও কাদামাটি মাড়িয়েই যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকদের বাসে উঠতে হয়। পরিবহনশ্রমিকদের যেহেতু রোজ এই পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে নেমে বাস ঠেলতে হয়, সে কারণে তাঁদের অনেকের হাত-পায়ে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।নগরের অন্যতম এই বাসস্ট্যান্ডের এমন করুণ দশা, অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনোই মাথাব্যথা নেই! বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এই বাসস্ট্যান্ড দেখভালের দায়িত্ব কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের। তারা যদি তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করত, তবে পরিস্থিতি এ রকম হতো না। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে প্রায় দুই একর জায়গা নিয়ে চকবাজার বাসস্ট্যান্ডের যাত্রা শুরু হয়। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিবছর এই বাসস্ট্যান্ড ইজারা দেয়। ইজারার বিনিময়ে পাওয়া টাকা বাসস্ট্যান্ড উন্নয়নেই ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বছরের পর বছর পার হচ্ছে, কিন্তু বাসস্ট্যান্ড সংস্কারের কোনো উদ্যোগই নেই। এই বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ফেনী, চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর ও কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী এলাকায় শত শত বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এসব যানবাহন থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা তোলা হয়। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডের কোনো সংস্কার হয় না।দেশের অন্যতম প্রাচীন শহর কুমিল্লা একসময় ব্যাংক, ট্যাংকের নগরী নামে পরিচিত ছিল। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতাও ছিল শহরটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য। ২০১১ সালের ১০ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক অধ্যাদেশে কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনের মর্যাদা দেয়। ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে কুমিল্লা মেগাসিটির আওতায় লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম প্রায় ৫৩ দশমিক ৪ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু সিটি করপোরেশন যে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন সড়ক এখনো ভাঙাচোরা। সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের অবৈধ পার্কিং থাকলেও উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগ নেই। বহু পুকুর ও দিঘি আবর্জনায় ভরে গেছে, পরিষ্কারের উদ্যোগ নেই। কিন্তু এভাবেই কি চলবে? এসব দিকে নজর দেওয়ার সময় হয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম বড়ুয়া বলেছেন যে তিনি চকবাজার বাসস্ট্যান্ডটি সংস্কার করবেন। আমাদের প্রত্যাশা, তিনি তাঁর কথা রাখবেন এবং দ্রুত বাসস্ট্যান্ড সংস্কারের কাজ শুরু করবেন। |
ঢাকা শহরে মানুষের বসবাসের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি যতটা জরুরি, তার চেয়ে কম জরুরি নয় সেসব ঘরবাড়ির বাসিন্দাদের চলাচলের বিষয়টি। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভবনের নকশা অনুমোদনে সিটি করপোরেশনসহ যে ১৬টি সংস্থার ছাড়পত্র নিতে হতো, গত মার্চ মাসে রাজউক তা শিথিল করেছে।গত ২৮ মার্চ রাজউকের জারি করা এক অফিস আদেশে বলা হয়, ‘নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিপিসিএ) ছাড়পত্র প্রয়োজন হবে না। একই আদেশে ১০ তলা বা ৩৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু ভবন নির্মাণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অনাপত্তিপত্রও জরুরি নয় বলে জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা বা কোম্পানি, সিটি করপোরেশন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানি, বাংলাদেশ পুলিশ, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কোনো ছাড়পত্র নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।রাজউকের এ সিদ্ধান্ত একতরফা ও পরিকল্পিত নগরায়ণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নগর-পরিকল্পনাবিদদের মতে, ভবনের পার্কিং, আবাসিক এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ের জন্য ডিপিসিএর ছাড়পত্র নেওয়া অত্যাবশ্যক। গণপূর্তমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, ‘নকশা অনুমোদনে ১৬টি দপ্তরের অনুমোদনের প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে আমার নির্বাহী ক্ষমতাবলে ১২টি দপ্তরের অনুমোদনের ধাপ বাদ দিয়েছি। আমরা আইন করে দিয়েছি, ৫৩ দিনের ভেতরে নকশা অনুমোদন হতে হবে, ভূমির ছাড়পত্র, নামপত্তন ৭ দিনের মধ্যে হতে হবে।’রাজউক ভবনের নকশা অনুমোদন সহজ করতে গিয়ে নগরবাসীর জীবনযাত্রাকে যে আরও কঠিন ও জটিল করেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। পূর্তমন্ত্রী ৫৩ দিনের মধ্যে নকশা অনুমোদন ও ৭ দিনের মধ্যে ভূমির ছাড়পত্র ও নামজারির যে কথা বলেছেন, সে বিষয়ে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু নগরের গুরুত্বপূর্ণ সেবা সংস্থাগুলোর ছাড়পত্র ছাড়া ভবনের নকশা অনুমোদন করা হলে যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে, সেসব বিষয়ও তাদের ভাবা উচিত ছিল। একটি সেবা সংস্থা হিসেবে রাজউক একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নগরবাসীর অন্যান্য সেবা সংস্থার সুবিধা-অসুবিধাও তাকে দেখতে হবে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১২-এর ৯(চ) উপধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্মিতব্য ভবন ও আবাসিক প্রকল্পে যানবাহনের প্রবেশ-নির্গমন ও চলাচলসংক্রান্ত (ট্রাফিক সার্কুলেশন) নকশা অনুমোদন ও তদারকির কাজ করবে ডিপিসিএ।ভবনের নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ হোক, সেটি আমরাও চাই। কিন্তু আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নির্ধারিত ৫৩ দিনে কেন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ছাড়পত্র নেওয়া যাবে না? এ ক্ষেত্রে রাজউক সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময়সীমা বেঁধে দিতে পারত। এখন রাজউক ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন করার পরও ডিপিসিএসহ অন্য সংস্থাগুলো যদি ছাড়পত্র না দেয়, তাহলে ভবন নির্মাণ হলেও সেখানকার বাসিন্দারা চলাচল করতে পারবেন না। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসেবা থেকেও বঞ্চিত হবেন তঁারা।তাই ডিপিসিএসহ সব সংস্থার ছাড়পত্র নিতে হবে নকশা অনুমোদনের আগেই। অন্যথায় রাজউকের নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করেও এর মালিকেরা মহাবিপদে পড়বেন। ঢাকায় যেসব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আছে, তারা সমন্বিতভাবে ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবে, সেটাই প্রত্যাশিত। কোনো সংস্থা গায়ের জোরে বা একতরফা সিদ্ধান্ত নিলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে। এমনিতেই ঢাকা শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার কারণে, একে কোনোভাবে বাড়তে দেওয়া যায় না। |
বাড়ির ফটকের ওপর ছোট একটি সাইনবোর্ড সাঁটা। সাদা রঙে তাতে লেখা, ‘ডা. বসন্ত কুমার রায়’। নামের নিচে আরেকটু ছোট হরফে লেখা, ‘এমবিবিএস’। তারপর উল্লেখ আছে রোগী দেখার সময়, এলাকার নাম। ১৯ জুন সেই বাড়িতে যখন পৌঁছাই, ঘড়ির কাঁটা তখন ১১টা ছুঁই–ছুঁই। দিনাজপুর শহরের কালীতলা এলাকার তিনতলা ভবনের এই বাড়ির নিচতলায় লম্বালম্বি ছোট একটি বারান্দা। সঙ্গেই লাগোয়া একটি ঘর। ঘর আর বারান্দায় পাতা বেঞ্চে বসে আছেন জনা ত্রিশেক নারী। যাঁদের অনেকের কোলেই বিভিন্ন বয়সী শিশু। ‘ওয়া’, ‘ওয়া’ শব্দে কয়েকটি শিশুর কান্নার শব্দ মিলিয়ে যাচ্ছে বৈদ্যুতিক পাখার শব্দের সঙ্গে।ঘরে তখন বসার জন্য একটি আসনই ফাঁকা। সেই আসনেই মিনিট পাঁচেক পর এসে বসলেন ডা. বসন্ত কুমার রায়। ৮১ বছর বয়সী এই চিকিৎসক চলনে–বলনে এখনো যেন ৩০ বছরের তরুণ। দিনাজপুর ও আশপাশের জেলার মানুষের পরিচিত মুখ তিনি। পরিচিত বলেই বসন্ত কুমার রায়ের রোগী দেখার জন্য নামমাত্র ফি আর আন্তরিক সেবার কাহিনি অনেকের জানা। তরুণ চিকিৎসক হিসেবে শুরুটা করেছিলেন মাত্র ২ টাকা ভিজিটে। এখন তা ৪০ টাকা। যাঁদের সাধ্য নেই তাঁরা চিকিৎসাসেবা পান বিনা পয়সায়। আবার এমনও অনেকে আসেন, যাঁদের ওষুধও কিনে দেন নিজের পয়সায়।বসন্ত কুমার রায় যখন সিরিয়াল মেনে রোগী দেখছিলেন, এই সুযোগে আমরা কথা বলেছিলাম অপেক্ষমাণ সাবিনা আক্তারের সঙ্গে। চার বছরের অসুস্থ নাতিকে নিয়ে বিরল উপজেলার দারোইল থেকে এসেছেন এই নারী। একসময় মেয়ে শারমিন আক্তারকেও এই ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসতেন। মেয়ের বিয়ে হয়েছে, নাতি হয়েছে কিন্তু চিকিৎসক বদল হয়নি সাবিনার। তাঁর মতো সেখানে অপেক্ষমাণ প্রায় প্রত্যেককে দেখেই বোঝা যায় নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। বসন্ত কুমারের কাছেই কেন আসেন তাঁরা?সাবিনা আক্তারের পাশেই ছিলেন চিরিরবন্দর উপজেলার বেলতলী থেকে আসা জেসমিন। শিশুকে শান্ত করতে করতে বলছিলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ। ভিজিট দিতে পারি না। বসন্ত ডাক্তার ছাড়া কার কাছে দেখাব?’ শুধু যে নামমাত্র ফি বলেই তাঁরা এখানে ভিড় করেন, এমনও নয়। অনেকেই বলছিলেন, অনেক সময় নিয়ে, দরদ দিয়ে রোগী দেখেন ডাক্তার বসন্ত।কিছুক্ষণ পর রোগীর ভিড় যখন কমে এল, আলাপের সুযোগ হলো বসন্ত কুমার রায়ের সঙ্গে। জীবনের খাতা মেলে ধরলেন বসন্ত কুমার রায়। কথায় কথায় এল ভিজিটের বিষয়ও। বসন্ত রায় বললেন, ‘জীবনে বেঁচে থাকতে হলে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। মানুষের সেবা করার যদি লক্ষ্য থাকে, তাহলে জীবনে সার্থকতা ধরা দেবেই। একটা ভালো কাজের জন্য সময় বা জীবনযাত্রার মান এ বিষয়গুলো বড় নয়, বড় হলো ত্যাগের মনোভাব, সেবার মানসিকতা।’তাই তো তিনি ১৯৬৭ সালে রোগী দেখা শুরু করেন ২ টাকায়। সেটা বেড়ে ৫৩ বছর পর হয়েছে ৪০ টাকা। বসন্ত রায় বলছিলেন, ‘তখন ২ টাকাও অনেক কিছু। অনেকের কাছে সেই দুই টাকাও থাকত না। তখন ফ্রি দেখতাম, এখনো কিন্তু অনেকের কাছে ফি নিই না। হয়তো তার ছেলেকে নিয়ে এসেছে দেখাতে, সেও একসময় আমার রোগী ছিল। আবার একেবারে হতদরিদ্র মানুষ এসেছে। কীভাবে টাকা নিই?’তাঁর প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। আমরা বরং ডুব দিই তাঁর চিকিৎসক জীবনের শুরুর দিনগুলোতে। ‘১৯৬৫ সালে আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করি। এলাকার মানুষের জন্য কিছু করব বলেই ফিরে আসি বাড়িতে।’ বলছিলেন বসন্ত কুমার রায়।তৎকালীন দিনাজপুর জেলার (বর্তমান পঞ্চগড়) দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদীঘি গ্রামে বসেই যেন তিনি পণ করে বসেন সরকারি চাকরি না করার। তিনি মানবসেবার এই পথের সন্ধান পেয়েছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনে। ছাত্রজীবনেই দিনাজপুরে রামকৃষ্ণ মিশনে যাতায়াত ছিল তাঁর। এমবিবিএস পাসের পর সেটা আরও যেন বেড়ে যায়। তিনি বললেন, ‘সে সময় রামকৃষ্ণ মিশনের দায়িত্বে ছিলেন মহারাজ অমৃতানন্দ। মূলত তাঁর সংস্পর্শে এসেই স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত হয়ে পড়ি।’ ভক্ত বসন্ত কুমার রায় শুরু করেন স্বামী বিবেকানন্দের জীবনচর্চা। নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন মানবসেবায়।মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করার সিদ্ধান্তে অবাক হননি বসন্ত কুমার রায়ের বাবা মধুসূদন রায় আর মা অহল্যা বালা রায়। পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে বসন্ত কুমার যে ছোটবেলা থেকেই খানিকটা অন্য রকম, তিনি যে এমন কিছুই করবেন, তা যেন পরিবারের সদস্যদের জানাই ছিল! তাই তাঁর প্রতি আস্থাই রেখেছিলেন মা-বাবা। মানুষের সেবার মাধ্যমে বসন্ত কুমার তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। নিজের আদর্শে ছোট ভাই অরুণ কুমারকে চিকিৎসক বানিয়েছেন। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে দুজন বাবার মতো চিকিৎসক হয়েছেন, অন্যজন রয়েছেন শিক্ষকতা পেশায়।স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত বসন্ত কুমার মুহূর্তেই অন্যকে আপন করে নিতে পারেন। মানুষকে আপন করে নেন বলেই হয়তো খানিকটা স্মৃতিকাতুরেও। তাই কথায় কথায় ফিরে গেলেন বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে, বন্ধুদের কথায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার বলরাম ক্যাম্পে চিকিৎসক হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেওয়ার স্মৃতিতে।কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়া এই মানুষটা সদাহাস্যোজ্জ্বল বন্ধুবৎসল। জীবনে অবসর বলে কিছু নেই তাঁর কাছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই চলে যান বাড়ির ছাদে। ফুল, ফল আর ভেষজ সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ রকমের গাছ ৪০০ টবে লাগানো রয়েছে। বাড়ির ছাদে ছোট ছোট মাচাংয়ে দুলছে করলা-চিচিঙ্গা। গাছে ধরেছে লেবু, ডালিম, করমচা। গোলাপ, গাঁদা, মালতী, দোপাটি, রজনীগন্ধাসহ বেশ কিছু ফুল যেন ভিন্ন সুরে গান তুলেছে। সপ্তাহের দুই দিন রেলবাজার আর বাহাদুর বাজার হাটে গিয়ে সামান্য বাজার করা, বাগানের পরিচর্যা আর সময় করে রোগী দেখা (বেলা ১১টা-২টা, সন্ধ্যা ৬টা-রাত ৮টা), এই নিয়ে তারুণ্যের দীপ্তিতে ৮১ বছর পার করতে চলেছেন বসন্ত কুমার রায়। জানালেন, যে কদিন বাঁচবেন, তার পুরোটাই এই রুটিনেই থাকতে চান তিনি।বসন্ত কুমার সম্পর্কে দিনাজপুর নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বললেন, ‘শিশুদের জন্য উপযুক্ত একজন চিকিৎসকের নাম বসন্ত কুমার। আমার দুই ছেলেমেয়ে (মেয়ের বয়স ৪৪ এবং ছেলের ৩৬ বছর)। এসএসসি পাস করার আগে পর্যন্ত সন্তানদের যেকোনো অসুখবিসুখে বসন্ত কুমারের কাছেই নিয়ে যেতাম। তখন তাঁর ভিজিট ছিল তিন টাকা। দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসাসেবায় সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি।’ |
রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর এক ফেসবুক সেলিব্রিটি পোস্ট দিয়ে বসলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে রিফাতের খুনিদের ‘ক্রসফায়ারে’ দিয়ে প্রমাণ করে যে তারা ‘ভালো’ উদ্দেশ্যে ‘ক্রসফায়ার’ করে। এই ভদ্রলোক এভাবে ‘ভালো ক্রসফায়ার’-এর ধারণা ছড়ানোর চেষ্টা করলেন। রিফাতের খুনিরা খারাপ খুন করেছে, নিরীহ একজনকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে মেরেছে। তাই উচিত হবে তাদের জন্য একটা ‘ভালো ক্রসফায়ার’-এর দৃষ্টান্ত হাজির করা। এই হলো তাঁর যুক্তি। এই যুক্তির সমর্থনে অনেক মানুষই পাওয়া যাবে এ দেশে।হত্যাও একটা নেশার মতো। কোনো নৃশংস হত্যাকাণ্ড অথবা ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেই একদল হই হই করে ক্রসফায়ারের দাবি তোলে। এদের ডাকেই দেশে হাজির হলো ভালো খুনের নায়ক ‘হারকিউলিস’। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, কমপক্ষে তিনজনকে হত্যা করে তাদের গলায় ‘ধর্ষক’ লেখা কাগজ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। যে হাত খুন করে, এই রক্তাক্ত হাত আরও আরও খুনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন কে বলবে তাদের কোন খুনটা ভালো আর কোনটা খারাপ? তখন তাদের থামাবে কে?‘ভালো খুনের’ দাবিতে এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকে জনপ্রিয় করেছিল বিএনপি সরকার। আজ তারা অভিযোগ তুলেছে, তারাই সবচেয়ে বেশি এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার। ‘আব্বু তুমি কানতিছ’ বলে যে মেয়েটি গুলির মুখে ক্রন্দনরত পিতাকে ডেকে উঠেছিল, সেই পিতা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছিলেন। এঁদের বাইরে আরও যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই নির্দলীয়। ক্রসফায়ারের তালিকায় নিরীহ সাধারণ মানুষের সংখ্যাই বেশি। অথচ এসব নিরীহ মানুষের অনেকেই ‘ন্যায়বিচারে’ আস্থা হারিয়ে ক্রসফায়ারের দাবি তুলছেন।অনেক রকম নেশায় আসক্ত বাংলাদেশিরা। তরুণদের মধ্যে বেড়েছে মাদকের নেশা আর ‘অসহায়’ জনগণের মধ্যে বেড়েছে প্রতিশোধে হত্যার নেশা। আইন ও প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষ বিচার ছাড়া যেকোনো হত্যাকাণ্ডই অপরাধ—এই ধারণায় যাঁরা বিশ্বাস করেন না, তাঁরা আসলে তাঁদেরই মৃত্যুপরোয়ানা তুলে দেন অজ্ঞাতনামা খুনিদের হাতে। এমনটাই যদি অনেকের কাছে মনে হয়, তাহলে সমাজে নিরাপত্তা বাড়বে, নাকি প্রতিষ্ঠা হবে অস্ত্রধারীদের শাসন!নুসরাত থেকে রিফাত—অধিকাংশ ঘটনায়ই খুনিদের সম্পর্ক মাদক ও মাফিয়ার সঙ্গে। খুনিদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতা ও থানা-পুলিশের সম্পর্ক। এক খুনির হাত থেকে বাঁচতে আমরা কি অসাধু নেতা ও বিপথগামী বন্দুকধারীদের হাতে খুন-খারাবির অধিকার তুলে দেব? যে দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতিতন্ত্র সব সমস্যার মূলে, তাদের বেলায় কী করা হবে? আইন ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে পারে জোরদার নাগরিক নজরদারি এবং ঐক্যবদ্ধ জনতা।বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য বিখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলৎজ বাংলাদেশে নাগরিক নিরাপত্তা বিষয়ে আশঙ্কা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি এমন অবস্থা আসে, যেখানে হাজার হাজার লোক বিনা বিচারে আটক হচ্ছে, হাজার হাজার লোক কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় মারা পড়ছে, সে অবস্থা ঠেকানোর কোনো প্রস্তুতি কি আপনাদের আছে?’ (২৪ জুলাই ২০০৬, সমকাল)। দল-মত না দেখে যে-কারও হত্যাকেই যদি আমরা সমানভাবে দেখি, তাহলেই কেবল আমরা জননিরাপত্তার দিকে এগোতে পারব।যে দেশে অনেক ঘটনায় বিচারের আগেই শাস্তি হয়ে যায়, সেখানে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। কে অপরাধী আর কে অপরাধী নয়, তা আদালত ঠিক করছেন না, ঠিক করে দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী কিংবা রাজনৈতিক ক্ষমতাধরেরা। এ জন্যই এর নাম হওয়া উচিত ‘ইচ্ছাখুন’। তাদের চোখে কিছু মানুষের আর বেঁচে থাকার অধিকার নেই। রোমান সাম্রাজ্যের আইনে এই ধরনের মানুষকে বলা হতো হোমো সাসের। হোমো সাসেরদের হত্যায় অপরাধ হতো না, আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো বালাই তাদের জন্য খাটত না। এমনকি তাদের মৃত্যু কখনো মহত্ত্বও পাবে না। তারা জড়বস্তু কিংবা নির্বাক প্রাণীদের মতো অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। তাদের জন্য রাষ্ট্র তৈরি করে রাখবে কিছু প্রতিষ্ঠান, যারা কাজ করে যাবে আইনের আওতার বাইরে, আবার আইনই তাদের দেবে দায়মুক্তি। এর নামই কি আইনের শাসন?‘ক্রসফায়ার’পন্থী জনতার কেউ কি খেয়াল করেছেন, দেশে ‘ক্রসফায়ার’ যত বাড়ছে, হত্যা-খুন-ধর্ষণ ও দুর্নীতিও তত বাড়ছে? ‘ক্রসফায়ার’ তো বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে। তাহলে কেন অপরাধ কমল না? ‘ক্রসফায়ার’ যে মানুষের হাতে মানুষের খুনকে স্বাভাবিক করে তুলেছে, মানুষকে জীবন নেওয়ায় অভ্যস্ত করে তুলেছে, সেই জিনিসটা এই চটজলদি বিচারবাদীরা খেয়াল করেন না। ‘ক্রসফায়ার’ যে এক রক্তপিপাসু জাতি তৈরি করেছে, সেই জাতির এক সন্তান চাপাতি-রামদা দিয়ে খুন করবে আর তার বদলা হিসেবে আরেক সন্তান বন্দুক দিয়ে গুলি করে তাদের মারবে, চোখের বদলে চোখ নেওয়ার এই নীতিতে যে আমরা সবাই ক্রমেই চোখ খুইয়ে অন্ধ হয়ে যাচ্ছি, সেই হুঁশ কি আছে?ভুল রাস্তায় জোর কদমে হাঁটাহাঁটি করলে শক্তি খরচ ছাড়া আর কিছু হয় না। গত বছরের মাঝামাঝি মাদক নির্মূলে সরকার ‘বন্দুকযুদ্ধ’ শুরু করল। এই যুদ্ধের প্রথম ১৩ দিনে ৯১টি লাশ পড়েছে। এর মধ্যে টেকনাফের কাউন্সিলর একরামও নিহত হলেন। কেউ কি বুকে হলফ দিয়ে বলতে পারবেন, মাদকের বিস্তার বা ব্যবসা কমেছে। মৌমাছির চাক অটুট রেখে এদিক-ওদিক কয়েক শ মৌমাছি মারায় রানি মৌমাছি ভয় পায় না। তারা তাদের কাজ চালিয়ে যায়।মাদকযুদ্ধে পোড়খাওয়া কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সিজার গাভিরিয়ার কথা আর ফেলা যায় না। ১৯৯০-৯৪ সাল পর্যন্ত তাঁর আমলে কলাম্বিয়ায় বিরাট মাদকবিরোধী অভিযান চলে। এই যুদ্ধে অস্ত্র, টাকা, গোয়েন্দা দিয়ে পাশে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের এক নম্বর মাদকসম্রাট পাবলো এসকোবারকে তিনি আটক করেন, মাদকচক্রকে আটকে রাখার জন্য বিরাট জেল বানান, এসকোবার জেল থেকে পালালে তাঁকে হত্যাও করান।কিন্তু গাভিরিয়া কী লিখেছেন দেখুন: ‘বেআইনি মাদক জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়, কিন্তু এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধু সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে জেতা যায় না। আরও বেশি সেনা ও পুলিশকে মাদকের বিরুদ্ধে লাগালে টাকার অপচয় তো হয়ই, সমস্যাটা আরও গুরুতর হয়ে দাঁড়ায়। অহিংস প্রতিবাদী ও মাদকসেবীদের জেলে ভরার ফল হলো উল্টো, সংগঠিত অপরাধী চক্র আরও শক্তিশালী হলো...মাদক চক্র ও মাদক দূর করার লাগাতার অভিযানে আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢাললাম। ...আমাদের মাদকবিরোধী ক্রুসেডে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেল, অনেক উজ্জ্বল রাজনীতিবিদ, বিচারক, পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিক (মাদক চক্রের হাতে) প্রাণও দিলেন। কিন্তু হলো কী? মাদক চক্র বিপুল অর্থ ঢেলে প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও আইনপ্রণেতাদের কিনে ফেলল।’এহেন যুদ্ধ ফিলিপাইন থেকে বাংলাদেশ; কম উন্নত, কম গণতান্ত্রিক এবং বেশি দুর্নীতির দেশগুলোয় কেন ছড়াচ্ছে? গাভিরিয়ার স্বীকারোক্তি, আসল কাজ না হলেও এতে সরকারের জনপ্রিয়তা সাময়িকভাবে বাড়ে। কিন্তু অটুট থেকে যায় দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক ক্ষমতা ও দুর্নীতিতন্ত্র। দেখা যাবে, এদের আশ্রয়েই থাকে অধিকাংশ অপরাধী। সেই তাদের হাতেই ‘ক্রসফায়ার’-এর নামে নির্বিচার হত্যার অধিকার তুলে দেওয়া কতটা আত্মঘাতী কাজ, তা আরেকবার ভেবে দেখুন।ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক faruk.wasif@prothomalo.com |
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক নিয়োগে নির্বাচনী বোর্ডের একজন আবেদনকারীকে অর্থের বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে দুজন শিক্ষকের মুঠোফোনের কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ ওই দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।একই সঙ্গে প্রশাসন অনিবার্য কারণ দেখিয়ে প্রভাষক পদের নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করেছে। আজ শনিবার নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই নিয়োগ-বাণিজ্যের অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ায় বোর্ড স্থগিত করা হলো।গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরখাস্ত ও নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের আদেশ দেয়। বিকেলে প্রথম আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আবদুল লতিফ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।বরখাস্ত হওয়া দুই শিক্ষক হলেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মো. রুহুল আমিন ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এস এম আবদুর রহিম। ২০১৭ সালে একই ধরনের অপরাধ করেছিলেন শিক্ষক রুহুল আমিন। সে সময় তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাজা দিয়েছিল।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সন্ধ্যায় শিক্ষক রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আগেও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলাম। এবারও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় আমাকে ষড়যন্ত্রে ফেলা হয়।’ তিনি দাবি করেন, ফাঁস হওয়া অডিওতে তিনি ওই আবেদনকারীকে টাকা না দিতে বলেছেন।শিক্ষক এস এম আবদুর রহিমের মুঠোফোন দুপুর থেকে সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যখনই প্রভাষক নিয়োগ হয়, তখনই আর্থিক বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। শিক্ষকেরাই এ অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষকদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের মুঠোফোনের কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়। পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে চলে দেনদরবার। এসব প্রভাষক নিয়োগে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। তবে এতে গুটিকয়েক শিক্ষকের নাম চলে আসে।এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গতকাল কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভা করে। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। এতে গোয়েন্দা সংস্থা বা বিচার বিভাগও থাকতে পারে। এর সঙ্গেও এ দুজন শিক্ষক ছাড়া আরও যাঁদের নাম আসবে তাঁদের প্রত্যেকের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। |
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার শঠিবাড়ি ফিলিং স্টেশনের সামনে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।দুর্ঘটনাকবলিত নাবিল পরিবহনের গাড়িটি আটক করা হলেও চালক ও সহযোগী পলাতক।পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে শঠিবাড়ি ফিলিং স্টেশনের সামনে ঢাকাগামী নাবিল পরিবহন অপর একটি গাড়িকে ওভারটেক করতে যায়। এ সময় রাস্তার পাশে মোটরসাইকেলের ওপর বসে থাকা দুই আরোহীকে ধাক্কা দেয় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই মুরাদ হোসেন (৩৪) ও মধু মিয়া (৩৬) নামের দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়। তাঁদের বাড়ি মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ি এলাকায়।পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা (ইনচার্জ) উপপরিদর্শক (এসআই) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার পর মোটরসাইকেলটির চাকার সঙ্গে বাসটি আটকে যায়। পরে গাড়ি রেখে চালক ও সহযোগী পালিয়ে যান। তাঁদের আটক করা সম্ভব হয়নি।নাবিল পরিবহনের গাড়িটি হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে রয়েছে। নিহত দুজনের লাশ তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। |
জেলার ছয় উপজেলায় এ বছর ১৫ হাজার ৯২৭ মেট্রিক টন চাল ক্রয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে জেলার ৪৩০ জন মিলমালিকের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়।শুধু সদর উপজেলায় ৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচ উপজেলায় ৭ হাজার ৪২৭ মেট্রিক টন বরাদ্দ রয়েছে।মিলারদের হিসাব অনুযায়ী, সদর উপজেলায় কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা হিসাবে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আর অন্য পাঁচ উপজেলায় কেজিপ্রতি ৬০ পয়সা হিসাবে ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা, আর অন্য পাঁচ উপজেলায় ৬০ পয়সা উৎকোচ নির্ধারণ করে পয়সা আদায় করছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। এই পয়সা না দিয়ে সরকারি গুদামে কোনো মিলমালিক চাল বিক্রি করতে পারছেন না।চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় ওই পয়সা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। না দিলে বরাদ্দপত্র পাচ্ছে না। এভাবে মিলগুলোর মালিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। মিলমালিকেরা অভিযোগ করেন, কেজিপ্রতি হিসাব কষে টাকা নেওয়ায় এবার তাঁদের চাল বিক্রিতে মোটা টাকা গুনতে হচ্ছে। কোনো কোনো মিলারকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকাও দিতে হচ্ছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরকে এই টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মিলমালিকেরা।হিসাব অনুযায়ী, জেলার ছয় উপজেলায় এ বছর ১৫ হাজার ৯২৭ মেট্রিক টন চাল ক্রয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে জেলার ৪৩০ জন মিলমালিকের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর জেলার বাকি পাঁচ উপজেলায় ৭ হাজার ৪২৭ মেট্রিক টন বরাদ্দ রয়েছে। এতে মিলারদের হিসাব অনুযায়ী সদর উপজেলায় কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা হিসাবে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আর অন্য পাঁচ উপজেলায় কেজিপ্রতি ৬০ পয়সা হিসাবে ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। মোটা অঙ্কের এই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর।জেলার শৈলকুপা উপজেলার দেশ অটোর মালিক টিপু সুলতান জানান, তিনি ৬৫০ মেট্রিক টন চাল বিক্রির বরাদ্দ পেয়েছেন। এই বিক্রির বরাদ্দপত্র পেতে তাঁকে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়েছে। চুক্তির সময় এই টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। টাকা না দিলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেন না বলে তিনি অভিযোগ করেন।সদর উপজেলার বিশ্বাস রাইস মিল ও আলতাফ রাইস মিলের মালিক আলতাফ হোসেন জানান, তিনি দুই মিল থেকে ৩ মেট্রিক টন চাল বিক্রির বরাদ্দ পেয়েছেন। এই বরাদ্দপত্র নিতে তাঁকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। বন্ধন মেজর রাইস মিলের মালিক ঝিনাইদহের হাটগোপালপুরের বিকাল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, নানা খরচের কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে অতিরিক্ত পয়সা নেওয়া হচ্ছে। গোটা বছর চাল তৈরি করে মিলাররা অপেক্ষা করেন সরকারি গুদামে চাল বিক্রি করবেন। এতে তাঁরা কিছুটা হলেও লাভ পাবেন। কিন্তু লাভের বিষয়টি সামনে এলেই নানা ধরনের উৎকোচ বেড়ে যায়। অন্য বছরের তুলনায় এবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের কর্মকর্তারা তাঁদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন।জোহান ট্রেডার্সের মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, শুধু চাল বিক্রিতে নয়, এবার মিলারদের লাইসেন্স নবায়নে অতিরিক্ত পয়সা দিতে হচ্ছে। প্রতিটি লাইসেন্সে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এভাবে পাঁচ শতাধিক মিলমালিকের কাছ থেকে আরও কয়েক লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ছোট ছোট অনেক মিলমালিক রয়েছেন, তাঁরা এই টাকা দিতেও কষ্ট পাচ্ছেন। তারপরও মিল চালু রাখতে তাঁরা এই বাড়তি টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।জেলার তেঁতুলতলা বাজারের ভাই ভাই রাইস মিলের মালিক মো. সমশের আলী জানান, তাঁর কাছ থেকেও লাইসেন্স নবায়নে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে। তিনি এই টাকা না দিতে চাইলে লাইসেন্স নবায়ন হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েছেন।এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাকিব সাদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, তাঁর দপ্তর থেকে কেজিপ্রতি এই টাকা নেওয়ার অভিযোগ মোটেও ঠিক নয়। এটা তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মিথ্যা প্রচার করছেন। এ ছাড়া লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। এখানে ব্যাংকের কিছু খরচ আছে। খরচের অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে, এটাও সম্পূর্ণ মিথ্যা। |
দেশসেরা প্রধান শিক্ষক হয়েছেন শাহনাজ কবীর। কিন্তু পুরস্কার হিসেবে তাঁকে যে সনদ, মেডেল ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়েছে, সবই ভুলে ভরা। এ জন্য ক্ষুব্ধ কিশোরগঞ্জ শহরের বাসিন্দা শাহনাজ ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা।কিশোরগঞ্জ এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীর। ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯’ উপলক্ষে ২০ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তাঁকে দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত করে। গত বুধবার শাহনাজ কবীর পুরস্কার গ্রহণ করেন। ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।শাহনাজ কবীর বলেন, প্রথমে ভুলের বিষয়টি তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়নি। পরে বাসায় ফিরে দেখেন, তিনটি পুরস্কারেই অনেক ভুল রয়েছে। যেমন তিনি এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু সনদপত্রে ‘এস ভি’ না লিখে লেখা হয়েছে ‘এম ভি’, আবার বিদ্যালয়টি কিশোরগঞ্জের হলেও সনদে লেখা হয়েছে ‘ময়মনসিংহ’। আবার তাঁর জন্য তৈরি একমাত্র মেডেলেও বিদ্যালয়ের নাম ‘এস ভি’ না লিখে ‘এম ভি’ লেখা হয়েছে। বালিকার জায়গায় ‘বালিক’ লেখা হয়েছে। একই ধরনের ভুল ক্রেস্টেও রয়েছে।শাহনাজ কবীর এসব ভুল সংশোধনের জন্য গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে বিষয়টি জানানোর পরিচালক, উপপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাউকে পাননি। ফলে ভুলে ভরা পুরস্কার নিয়েই ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।শাহনাজ কবীর দুঃখ করে বলেন, জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কারে এত ভুল মেনে নেওয়াটা কষ্টকর। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিনি বিদ্যালয়ের নাম-ঠিকানাসহ সবকিছু আগেই সঠিকভাবে লিখে জানিয়েছিলেন। পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁকে দেওয়া চিঠিতেও বিদ্যালয়ের নাম-ঠিকানা ঠিকঠাক ছিল। |
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক নারীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ওই নারী গত বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রেসক্লাবে এসে কলসপাড় ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আজগর আলীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন।অসহায় ওই নারীর নাম সুবেদা বেগম (৪০)। তিনি কলসপাড় ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের দিনমজুর নুরুল ইসলামের স্ত্রী। স্বামীর পাশাপাশি সুবেদাও দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।নারী শ্রমিক সুবেদার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বামী ও চার সন্তানসহ ছয়জনের সংসার তাঁর। স্বামী-স্ত্রীর দিনমজুরি থেকে উপার্জনের অর্থে সংসার চলে। তাঁদের বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। অর্থাভাবে মেজ ছেলে রফিকুল ইসলাম পড়ালেখা করতে পারেনি। এখন ঢাকায় একটি হোটেলে শ্রমিকের কাজ করে। অপর দুই সন্তান ছোট। সুবেদা বেগম ইউনিয়ন পরিষদের কাজ পেতে ২০১৭ সালে ইউপি সদস্য আজগর আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি ইউনিয়নে সারা বছর যেসব কাজ হয়, তাতে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত করার কথা বলে সুবেদার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন। ওই ঘটনার ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও কাজ না পাওয়ায় তিনি ইউপি সদস্যের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু আজগর আলী ‘দিচ্ছি, দেব’ বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। চার মাস আগেওই নারী বিষয়টি কলসপাড় ইউপির চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে অবগত করেন। চেয়ারম্যান ওই ইউপি সদস্যকে টাকা ফেরত দিতে বলেন। কিন্তু তিনি আজ পর্যন্ত টাকা ফেরত দেননি। টাকা চাইতে গেলে আজগর উল্টো রাগ দেখাচ্ছেন।সুবেদা বেগম তাঁর বড় ছেলে শফিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় প্রেসক্লাবে আসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।সুবেদা বেগম বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে ৩০ হাজার টাকা জুগাড় কইরা আজগর আলী মেম্বাররে দিছিলাম। এই টাকা ফিরত পাইতে অনেকবার মেম্বারের কাছে গেছি। অহন উল্টা আমারে দেখলে রাগ করে। আমরা গরিব মানুষ। দিন আইনা দিন খাই। একটা ছেলে কলেজে পড়ে। হাতে কাজকাম না থাহায় বিরাট অসুবিধায় আছি। টাকাডা পাইলে আমগর লাইগা বিরাট উপকার অইত।’সুবেদা বেগমের সঙ্গে থাকা ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় এখন তেমন কোনো কাজ নেই। মা ও বাবাকে বেশির ভাগ সময়ই বেকার থাকতে হচ্ছে। আমরা চার ভাইবোন। ৩০ হাজার টাকাটা ফেরত পেলে আমাদের সংসারের জন্য অনেক উপকার হয়।’বক্তব্য জানতে আজগর আলীর মুঠোফোন নম্বরে বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার একাধিকবার ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে কলসপাড় ইউপির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার মাস আগে বিষয়টি জানার পর আমি ইউপি সদস্য আজগরকে ওই টাকা ফেরত দিতে বলেছিলাম। তিনি টাকা ফেরত দেবেন বলে আমাকে বলেছিলেন। পরে ওই বিষয়ে আর কোনো খবর পাইনি। এখন দ্রুত ওই টাকা ফেরত দিতে আমি ইউপি সদস্যকে বলব।’ |
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের রণারচালা এলাকায় মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এতে পানিনিষ্কাশনের জন্য থাকা একটি কালভার্ট বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে। পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীদের উৎকট গন্ধ সহ্য করে ওই এলাকা পার হতে হচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।এলাকাবাসী জানান, প্রায় চার বছর আগে ওই এলাকায় ময়লা ফেলা শুরু হয়। গভীর রাতে কে বা কারা ভ্যান বা ট্রাকযোগে ময়লা ফেলত। মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরুর পর সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ হয়। বছরখানেক আগে মহাসড়কের ওই অংশে কালভার্ট নির্মাণকাজ শেষ হয়। এরপর সেখানে আবারও রাতের আঁধারে ময়লা ফেলা শুরু হয়।গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের পশ্চিম পাশে প্রায় ২০০ ফুট লম্বা এলাকাজুড়ে ময়লার ভাগাড়। ভাগাড়ের মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে পানিনিষ্কাশনের জন্য কালভার্ট। রণারচালা ও নাজিরপাড়াসহ আশপাশের এলাকার পানিনিষ্কাশনের জন্য থাকা খালের পানি এই কালভার্টের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী বংশাই নদে গিয়ে পড়ে বলে স্থানীয় লোকজন জানান।স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল হাছান বলেন, রাতের আঁধারে কে ময়লা ফেলে, তা ধরা যায় না। ময়লা ফেলার কারণে পানিনিষ্কাশনের কালভার্টের মুখের অধিকাংশ স্থান বন্ধ হয়ে গেছে।স্থানীয় একটি কারখানার কর্মী দুলালী রানী বলেন, ‘রাস্তার ময়লা বৃষ্টি আইলেই পানিতে মিশা আমাদের বাসার ভেতরে ঢুইকা যাইতাছে। ওই পানি পাড়ানোর কারণে পায়ে ঘা ধইরা গেছে। গেট খুললেই ময়লার গন্ধ আসে। গরমের সময় জানালা খুলা পারি না। পোলাপান বাইরে দাঁড়িয়ে একটু খেলব, হেই সুযোগও নাই।’ বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের বিপণন কর্মকর্তা আবদুর রহমান খান বলেন, ‘ময়লার কারণে আমরা শারীরিকভাবে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। শ্বাসকষ্ট হয়। গন্ধে টেকা যায় না। মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ছে। কালভার্টের মুখ বন্ধ হওয়ায় বৃষ্টির সময় ঠিকমতো পানিনিষ্কাশন হচ্ছে না। একপাশে বেশি পানি জমছে। বাসাবাড়িতে ময়লাসহ পানি ঢুকে যাচ্ছে।’মুদিদোকানি মফিজ প্রধান জানান, দুর্গন্ধের কারণে রাস্তায় হাঁটা যায় না। দম বন্ধ হয়ে আসে।গোড়াই শিল্পাঞ্চলের রণারচালা এলাকায় রাস্তার পাশে ওই স্থানে এর আগে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের সময় একটি পাইপের মাধ্যমে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছিল কর্তৃপক্ষ। সেটি এখনো রয়ে গেছে।গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আদিলুর রহমান বলেন, ‘কয় দিন আগে চৌকিদার খাড়া কইরা র্যাইখা চেক করছি। রাত ১২টার পর ময়লাগুলা ফেলত। পুরা গোড়াই এলাকার পাবলিক আসত, গাড়ি আর ভ্যান আসত ময়লা ফেলার জন্য। বাঁশ দিয়্যা বেড়া দেয়াতে কয় দিন ধইর্যা বন্ধ হইছে। অহন রোডস থিক্যা আরও বিপদে ফালাইছে। আগে রাস্তার পাশে ময়লা আছিল। রোডসের লোক এক্সকাভেটর দিয়্যা ধাক্কাইয়া ময়লা নিচে ফেইলা কালভার্টের মুখ বন্ধ কইর্যা ফালাইছে। আমরা এলাকাবাসী নিয়্যা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে কালভার্টের মুখ কিছুডা পরিষ্কার করছি। ময়লাগুলা জরুরিভাবে সরানো উচিত।’এ ব্যাপারে মির্জাপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী এনামুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসড়কটি বর্তমানে চার লেন প্রকল্পের অধীনে রয়েছে। কিছু করতে হলে সেই প্রকল্প থেকেই করতে হবে।’ বক্তব্য জানতে চার লেন প্রকল্পের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহাবুবুল আলমের মুঠোফোন নম্বরে গতকাল একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। |
চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই নৌযানে না ওঠায় দুবাইফেরত দুই প্রবাসী ভাইকে পিটিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছেন নৌযান শ্রমিকেরা। এ সময় শ্রমিকদের পিটুনিতে আহত হন একই পরিবারের আরও দুজন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের মালিকানাধীন চট্টগ্রামের কুমিরা-সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ফেরিঘাটের গুপ্তছড়া অংশে এ ঘটনা ঘটে।নৌযান শ্রমিকদের হামলার শিকার দুই প্রবাসী হলেন মো. সোহেল ও তাঁর ভাই মো. শিবলু। তাঁরা নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মারধরের সময় তাঁদের আরেক ছোট ভাই মো. শিহাবও আহত হন। নৌকায় নিজের সন্তানদের মারতে দেখে ঘাট থেকে প্রতিবাদ করায় তাঁদের বাবা মো. মানিককেও নাজেহাল ও মারধর করেন শ্রমিকেরা। আহতেরা সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুরের আলীমিয়ার বাজার এলাকার মান্দিরগো বাড়ির বাসিন্দা।ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নগরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. সোহেল গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁদের পরিবারের সাতজন কুমিরা থেকে সার্ভিস বোটে করে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে যাচ্ছিলেন। গুপ্তছড়া ঘাটে তীরে পানি কম থাকায় সার্ভিস বোট থেকে লাল বোটে করে যাত্রীদের তীরে নামানোর কাজ করছিলেন নৌযান শ্রমিকেরা।এ সময় তাঁকে লাল বোটে নামার জন্য বলেন নৌযানটির মাঝি। কিন্তু যাত্রী বেশি হওয়ায় তিনি পরে নামবেন বলে মাঝিকে জানান। এ সময় মাঝি তাঁর সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করেন। এর প্রতিবাদ করায় একপর্যায়ে তাঁকে জোর করে লাল বোটে নামিয়ে পেটানো শুরু করেন মাঝি ও শ্রমিকেরা। নৌযানটিতে থাকা গাছ দিয়ে চারজন মিলে তাঁকে মারধর করেন শ্রমিকেরা। ভাইকে মারতে দেখে অপর দুই ভাই এগিয়ে এলে তাঁরাও মারধরের শিকার হন। মারধরের একপর্যায়ে দুই প্রবাসীকে তীরের কাছাকাছি নিয়ে পানিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তাঁরা।সন্তানদের এগিয়ে নিতে ঘাটে আসা সোহেলের বাবা মো. মানিক মিয়া বিষয়টি দেখে আহাজারি করতে থাকেন। এ সময় ঘাটের শ্রমিকেরা তাঁকেও নাজেহাল করেন। গুরুতর আহত সোহেলসহ চারজন প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে জখম গুরুতর হওয়ায় সোহেল ও শিবলুকে গতকাল নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এই ঘাটটি পরিচালনা করছেন ইজারাদার এস এম আনোয়ার হোসেন। তিনি দেশের বাইরে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শরিফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গুপ্তছড়া ঘাটে যাত্রীদের ওপর হামলার বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ ঘটনার প্রতিবাদে সন্দ্বীপ উপজেলা ও চট্টগ্রাম শহরে গতকাল বিকেলে বিক্ষোভ–সমাবেশ করেছেন সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। সন্দ্বীপে এবি হাইস্কুল মাঠে ও শহরের হালিশহরে পৃথক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্দ্বীপ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।সভায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। গতকাল উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই ভাইকে দেখতে এসে ঘটনার দোষীদের শাস্তি পেতে হবে বলে জানান।প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল গুপ্তছড়া ঘাটে নৌযান উল্টে ১৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইয়ের কারণে ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ওই দুর্ঘটনার পর থেকে অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে নৌযানে পারাপারে যাত্রীদের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা তৈরি হয়। |
বাংলাদেশের বিপক্ষে বাজে ফিল্ডিং করলে চরম মূল্য দিতে হবে পাকিস্তানকে—সরফরাজদের সতর্ক করলেন দেশটির কিংবদন্তি লেগ স্পিনার আবদুল কাদিরজমে উঠেছে বিশ্বকাপ। একটি করে ম্যাচ হচ্ছে আর পাল্টে যাচ্ছে হিসাব-নিকাশ। নানা সমীকরণে মাথায় প্যাঁচ লেগে যাওয়ার দশা। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে টিকে থাকায় হিসাব-নিকাশ হচ্ছে আরও বেশি। নিজেদের লাভ বুঝে অন্যান্য ম্যাচে দলগুলোকে সমর্থন দিচ্ছেন বাংলাদেশের সমর্থকেরা। আজ যেমন পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচে সমর্থনের পাল্লা ভারী থাকবে আফগানদের দিকেই।আফগানিস্তান বেশ আগেই নিজেদের সব হিসাব-নিকাশের ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছে। মানে ৭ ম্যাচ খেলে জয়শূন্য আফগানিস্তান সেমিতে ওঠার দৌড়ে নেই। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান প্রায় পাশাপাশি অবস্থানে, পার্থক্য শুধু রানরেট। ৭ ম্যাচে ৩ জয়, ৩ হার ও ১টি নো-রেজাল্টে (বৃষ্টির জন্য) দুই দলেরই সংগ্রহ সমান ৭ পয়েন্ট। পাকিস্তানের (-০.৯৭৬) চেয়ে শুধু রানরেটে এগিয়ে বাংলাদেশ (-০.১৩৩)। গ্রুপ পর্বে আর দুটি করে ম্যাচ খেলবে দুই দল। সেমিতে ওঠার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় পাকিস্তানের দুটি ম্যাচে তাদের অমঙ্গল কামনা করাই বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য স্বাভাবিক।পাকিস্তানের সমর্থকেরা ঠিক তার উল্টো অবস্থানে। দেশটির কিংবদন্তি লেগ স্পিনার আবদুল কাদির যেমন পাকিস্তানের শেষ দুটি ম্যাচ নিয়ে চিন্তিত। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি নিয়ে বেশি ভাবছেন কাদির। এবার ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানি ফিল্ডাররা যেন বাজে ফিল্ডিংয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন! এ পর্যন্ত ক্যাচ ছাড়ার তালিকায় পাকিস্তান বাকিদের চেয়ে এগিয়ে। কাদির মনে করেন, বাংলাদেশের বিপক্ষেও বাজে ফিল্ডিং করলে চরম খেসারতই দিতে হবে।পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম নেশনকে কাদির বলেন, ‘সাতটি ক্যাচ ফেলেও পাকিস্তান যেভাবে জিতছে, তাতে এটা পরিষ্কার যে লাখো পাকিস্তানির প্রার্থনা সবুজ ক্যাপধারীদের জন্য অলৌকিক কাজই করেছে। কিন্তু পাকিস্তানকে এমন বিলাসিতার সুযোগ দেবে না বাংলাদেশ। একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটালে এবং সুযোগ দিলে তাদের চরম মূল্যই দিতে হবে। দল ভালো খেলেছে এবং একই মানসিকতা নিয়ে শেষ দুটি ম্যাচে তাদের মাঠে নামা উচিত।’আফগানিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার পর শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। সেমিতে ওঠার সমীকরণ সহজ করতে আগে নিজেদের ম্যাচ দুটি জিততে হবে সরফরাজ আহমেদের দলকে। আফগানিস্তানকে হারাতে পারলে তারপর কিছুদিনের জন্য পাকিস্তানকে দিতে হবে ভারতের সমর্থন। কারণ, সেমিতে ওঠার দৌড়ে তাদের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ভারত। আর এ দুই ম্যাচে ভারত জিতলে পাকিস্তানেরই লাভ।৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চারে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া আগেই নিশ্চিত করেছে সেমিফাইনাল। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের জন্যও সেমিতে ওঠা কেবলই সময়ের ব্যাপার। অর্থাৎ সেমির চতুর্থ স্থানটির জন্য লড়াই হচ্ছে বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা কাল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে নিজেদের সেমিতে ওঠার সমীকরণ মেলানো প্রায় অসম্ভব করে ফেলেছে। |
এসার প্রিডেটর হেলিওস ৩০০ মডেলের নতুন ল্যাপটপ বাজারে এনেছে স্মার্ট টেকনোলজিস। গেমারদের জন্য তৈরি এই ল্যাপটপে রয়েছে ইন্টেল অষ্টম জেনারেশন কোর আই ফাইভ প্রসেসর, ৮ জিবি ডিডিআর ৪ র্যাম, জিটিএক্স ১০৫০টি আই ৪ জিবি গ্রাফিকস কার্ড, ১২৮ জিবি এসএসডি, ১ টেরাবাইট হার্ডড্রাইভ ও ব্যাকলিট কিবোর্ড।ল্যাপটপে ১৫.৬ ইঞ্চি ফুল এইচডি আইপিএস ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে, যার রেজ্যুলেশন ১৯২০ * ১০৮০ এবং আসপেক্ট রেশিও ১৬: ৯। ওয়াইড অ্যাঙ্গেল এই ডিসপ্লেটির ভিউ অ্যাঙ্গেল ১৭০ ডিগ্রি। তা ছাড়া আলট্রা স্লিম এই ডিসপ্লেতে মার্কারি ফ্রি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।গেমারদের সুবিধার্থে ল্যাপটপটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে অপটিমাইজড ডলবি অডিও প্রিমিয়াম সাউন্ড এনহান্সমেন্ট প্রযুক্তি। লোয়ার ডিসটর্শন, ওয়াইডার ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ এবং হেডফোনের মতো স্পষ্ট ও শক্তিশালী সাউন্ড নিশ্চিতের জন্য এতে এসার ট্রু-হারমনি প্লাস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। দুই বছরের বিক্রয়োত্তর সেবাসহ মূল্য ৯৫ হাজার টাকা। |