content
stringlengths
1
63.8k
পিরোজপুরের কাউখালীতে নারী লাঞ্ছনায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তির দায়ের কোপে পুলিশ কর্মকর্তা গুরুতর আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে উপজেলার জয়কুল গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।আহত পুলিশ কর্মকর্তার নাম রফিকুল ইসলামকে (৩৫)। তিনি কাউখালী থানায় পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)। শরীরে একাধিক কোপের জখম থাকায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম হায়দার হাওলাদার। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিবেশী এক নারী হায়দারের বিরুদ্ধে লাঞ্ছনার অভিযোগ তোলেন। ওই অভিযোগ তদন্তে এএসআই রফিকুল অভিযুক্ত হায়দারের বাড়িতে গেলে এই ঘটনা ঘটে।কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ওই পুলিশ কর্মকর্তার বাঁ হাতের কবজির ওপরের অংশে রগ কেটে গেছে। এ ছাড়া ডান হাত, মুখমণ্ডলসহ শরীরে চারটি কোপের জখম রয়েছে। তিনি জানান, রফিকুলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বরিশালে পাঠানো হয়েছে।কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, উপজেলার জয়কুল গ্রামের হায়দার হাওলাদারের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী এক নারী থানায় লাঞ্ছনার অভিযোগ করেন। আজ সকালে এএসআই রফিকুল ইসলামকে অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বেলা ১১টার দিকে হায়দারের বাড়িতে যান। ঘরে ঢোকার সময় হায়দার ধারালো দা দিয়ে রফিকুলকে কুপিয়ে জখম করেন।ওসি জানান, এলোপাতাড়ি কোপে রফিকুল ইসলামের হাত ও মাথায় চার থেকে পাঁচটি জখম হয়েছে। স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় রফিকুলকে উদ্ধার করে প্রথমে কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। হায়দারকে আটকের চেষ্টা চলছে।
অনলাইনে সহিংস চরমপন্থী কনটেন্ট সরাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি নানা উদ্যোগ নিচ্ছে কানাডার। এ কাজে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল, ফেসবুক, টুইটার, মাইক্রোসফটের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করবে দেশটি। গত বুধবার দেশটির পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।কানাডার পাবলিক সেফটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, টেক অ্যাগেইনস্ট টেররিজম প্রোগ্রামের জন্য সরকার এক মিলিয়ন কানাডীয় ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মাধ্যমে একটি ডিজিটাল ডেটাবেইস তৈরি করা হবে এবং চরমপন্থী কনটেন্ট শনাক্ত হলে তা প্রতিরোধ করার জন্য ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হবে।‘ক্রাইস্টচার্চ কল টু অ্যাকশন’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে অনলাইন থেকে সহিংস ও চরমপন্থী কনটেন্ট সরানোর অংশ হিসেবে কাজ করছে কানাডা। গত মে মাসে ‘ক্রাইস্টচার্চ কল টু অ্যাকশন’ উদ্যোগে যুক্ত হয় কানাডা। গত মার্চে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ভয়াবহ সহিংস হামলার পর থেকে ‘ক্রাইস্টচার্চ কল টু অ্যাকশন’ নামে একটি নন-বাইন্ডিং চুক্তি হয়।কানাডা অনলাইনে সহিংস চরমপন্থা ঠেকাতে তরুণ সম্মেলন, ডানপন্থীদের উত্থান বিষয়ে গবেষণা খাতেও অর্থ খরচ করছে।
এক মাস তিন দিনের অবস্থান কর্মসূচির মাথায় এবার আমরণ অনশন শুরু করেছেন ‘ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা’। চার দফা দাবি পূরণে আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে কোনো আশ্বাস না পেয়ে তাদের নতুন এই কর্মসূচি।আজ শুক্রবার বেলা দুইটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তাঁরা আমরণ অনশনে বসেন। তাঁরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি মানতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া অংশের সদস্যরা। তবে এই সময়ের মধ্যে দাবির পক্ষে কোনো আশ্বাস না মেলায় আজ তাঁরা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।তাঁদের চার দফা দাবি হলো, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ, পদ শূন্য ঘোষিত ছাত্রলীগের কমিটির ১৯ জনের পদসহ নাম প্রকাশ, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে পদবঞ্চিতদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে কমিটিতে পদায়ন এবং মধুর ক্যানটিনে (১৩ মে) ও টিএসসিতে (১৯ মে) তাঁদের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচার ৷আমরণ অনশন কর্মসূচির বিষয়ে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া অংশের মুখপাত্র ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল কোনো পর্যায় থেকে দাবি পূরণের কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় আমরা আমরণ অনশন শুরু করেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। আমাদের প্রাণের বিনিময়ে যদি ছাত্রলীগ কলঙ্কমুক্ত হয়, তবে তা-ই হোক।’অনশনে অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের বিগত কমিটির উপদপ্তর সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম বলেন, আলোচনার দরজা এখনো খোলা আছে। আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীলদের আশ্বাসের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া অন্তত ৩৫ জন নেতা অনশনে অংশ নেবেন বলে জানান তিনি।‘যা যা ঘটেছে’এই সংকটের শুরু গত ১৩ মে। ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি প্রকাশের প্রায় ১০ মাস পর সেদিন ঘোষণা করা হয় সংগঠনের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কমিটি করতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। কমিটি ঘোষণার দিন সন্ধ্যায় কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে কয়েকজন নারী নেত্রীসহ ১০-১২ জন আহত হন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।সেদিন রাতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে গেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী পদবঞ্চিতদের তোপের মুখে পড়ে ফিরে যান। পরদিন সকালে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ারা। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে অনশন ও সংগঠন থেকে গণপদত্যাগের মতো কর্মসূচির হুমকিও দেন তাঁরা।এর পরদিন দুপুরে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গণভবনে ডেকে ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন রাতেই সংবাদ সম্মেলন করে অভিযুক্তদের বহিষ্কারে ২৪ ঘণ্টা সময় নেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সেখানে বিতর্কিত ১৬ জনের নামও প্রকাশ করেন তাঁরা। তার পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটিতে থাকা ‘বিতর্কিত’ ও ‘অযোগ্য’ ৯৯ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেন পদবঞ্চিতরা।১৯ মে টিএসসিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের হাতে ফের মারধরের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন পদবঞ্চিতরা। এক দিনের মাথায় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আশ্বাসে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান। পরের দিন মধুর ক্যানটিনের ঘটনায় ৫ জনকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃত হওয়ার দুঃখে রাতেই জারিন দিয়া নামের এক নেত্রী ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।এরপর ২৬ মে রাতে নবগঠিত কমিটির সবাইকে নিয়ে পরদিন ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ। সেদিন দিবাগত রাত থেকে এখনো পর্যন্ত টানা অবস্থানে রয়েছেন পদবঞ্চিতরা। ৫ জুন ঈদুল ফিতরের দিনটিও তাঁরা সেখানেই কাটান। এর মধ্যে ২৮ মে দিবাগত রাতে কমিটির বিতর্কিত ১৯ জনের পদ শূন্য ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে যাঁদের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের নাম প্রকাশ করেনি ছাত্রলীগ।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক যুবকের কাঠের টুকরার আঘাতে আহত মোহাম্মদ জিয়াবুল (৩৪) নামের এক যুবলীগ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।মোহাম্মদ জিয়াবুল সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের করইয়ানগর এলাকার আবদুচ ছবুরের ছেলে। তিনি তিন সন্তানের জনক।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ১৫-২০ দিন আগে স্থানীয় একটি পুকুর থেকে মাছ চুরির ঘটনা ঘটে। জিয়াবুল ওই মাছ চুরির ঘটনায় জসিমের জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে এর প্রতিবাদ জানান। ২১ জুন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঠাকুরদীঘির পশ্চিম পাশে নেজামের দোকান এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা মাছ চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে জসিমকে একটি ঘরে আটকে রাখেন। এ সময় মোহাম্মদ জিয়াবুলও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জসিম ওই ঘরের পেছনের বেড়া খুলে কৌশলে বের হয়ে আসেন। এ সময় তিনি কাঠের টুকরা নিয়ে জিয়াবুলের ওপর হামলা চালান। জিয়াবুলের মাথা ও মুখে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যান জসিম।স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে লোহাগাড়ার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। পরে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।জিয়াবুলের বাবা আবদুচ ছবুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো দিন কারও ক্ষতি করে নাই। অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে মাত্র। সমাজের একটি পুকুর থেকে মাছ চুরির বিষয়ে প্রতিবাদ করার কারণে সন্ত্রাসী জসিম আমার ছেলেকে কাঠের টুকরা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীর বিচার চাই।’এ ব্যাপারে জানার জন্য মো. জসিমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নেজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জিয়াবুল যুবলীগের রাজনীতি করতেন। জিয়াবুলের হত্যাকারী জসিম এলাকায় মাদকাসক্ত, মাদক বিক্রেতা ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিউল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, মাছ চুরির ঘটনার প্রতিবাদ করায় জিয়াবুলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে জসিম পালিয়ে গেছেন। বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে জসিমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
১০০ টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে বাল্যবন্ধু শুভংকরকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন সাইফুল। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা শুভংকর হাওলাদার (২০) হত্যা মামলায় সাইফুল ইসলামকে (২১) গ্রেপ্তারের পর তাঁর দেওয়া তথ্যে এ কথা জানা যায়।আজ শুক্রবার দুপুর ১২টায় পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানানো হয়। নিহত শুভংকর হাওলাদার পটুয়াখালীর বাউফলের নওমালা ইউনিয়নের বটকাজল গ্রামের বাসিন্দা ও ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি পটুয়াখালীর আবদুল করিম মৃধা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সাইফুলের তথ্যমতে তিনি একাই শুভংকরকে হত্যা করেন। ১০০ টাকা নিয়ে সাইফুলের সঙ্গে শুভংকরের বিরোধ চলছিল। গত শনিবার ১০০ টাকার জন্য শুভংকর তার লোকজন নিয়ে সাইফুলকে মারধর করেন। এর প্রতিশোধ নিতেই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। গত সোমবার দুপুরে সাইফুল তাঁর বাবার মুঠোফোন দিয়ে শুভংকরের সঙ্গে কথা বলেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁকে দেখা করতে বলেন। সন্ধ্যায় শুভংকর বাড়ি থেকে সাইকেলে করে সাইফুলের সঙ্গে সোলাবুনিয়া বাজারে দেখা করেন এবং চা-সিগারেট খান। পরে সাইফুল শুভংকরকে নিয়ে গোলাবাড়ী বাজারে যান এবং একটি দোকানে আবার চা-সিগারেট খান। এরপর মাদক সেবনের কথা বলে শুভংকরের সঙ্গে থাকা সাইকেলটি বাজারের পাশে বাগানে রেখে দুজন রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোলাবাড়ী খালের পাশে পৌঁছান। এক সময় শুভংকর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে জঙ্গলে যান। সাইফুলও তার পিছু পিছু যান। তিনি শুভংকরকে পেছন থেকে লাথি মারেন। শুভংকর উপুড় হয়ে পড়ে যান। এরপর কোমরের বেল্ট খুলে শুভংকরের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। পরে লাশ খালে ফেলে দেন সাইফুল।শুভংকরের সাইকেল ও ব্যবহৃত একটি মুঠোফোন সাইফুলের খালু রহিম মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাউফলের আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের আতোষখালী গ্রামের গোলাবাড়ী খাল থেকে একটি মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মৃতদেহটি শুভংকরের বলে শনাক্ত করেন তাঁর স্বজনেরা। দুই দিন ধরে শুভংকর নিখোঁজ ছিলেন। ওই দিন রাতেই শুভংকরের বাবা সত্য হাওলাদার বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বাউফল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশ। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার আদাবাড়ীয়া ইউনিয়নের মিলঘর এলাকা থেকে শুভংকরের বাল্যবন্ধু সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন সাইফুল।
দিনকাল মোটেও ভালো যাচ্ছে না বলিউড অভিনেতা ও প্রযোজক আদিত্য পাঞ্চোলির। বারবার আদালতে যাওয়া–আসা করতে হচ্ছে তাঁকে। এবার ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হলো তাঁর বিরুদ্ধে। এক অভিনেত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার তাঁর নামে মামলা করল মুম্বাইয়ের ভারসোভা থানার পুলিশ। অভিযুক্ত অভিনেতার নামে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬, ৩২৮, ৩৮৪, ৩৪১, ৩৪২, ৩২৩ ও ৫০ ধারায় মামলা হয়েছে। গত বুধবারের ঘটনা এটি। পুলিশ অভিযোগকারীর নাম উল্লেখ করেনি। তবে অনেকেই ধারণা করছেন কঙ্গনা রনৌতই এ অভিযোগ করেছেন।ভারতের গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভি বলছে, থানায় করা ওই অভিযোগে ওই অভিনেত্রী দাবি করেন, বেশ কয়েক বছর আগে তাঁকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেছেন আদিত্য। এ বিষয়ে সম্প্রতি অভিযুক্ত অভিনেতার নামে একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি। অতীতেও এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন ওই অভিনেত্রী। তখন দাবি করেছিলেন, ১৭ বছর বয়সে প্রথম তাঁকে ধর্ষণ করেন আদিত্য। এই ঘটনার পর পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, আদিত্যকে শুধু হুঁশিয়ারি দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয়। ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের পরও তাঁর নামে কোনো এফআইআর দায়ের করা হয়নি।এ প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, অভিনেত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা করা হয়েছে। তবে ১০ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রমাণ কীভাবে জোগাড় করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া না গেলে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ করা খুবই সমস্যার।একই দিনে অর্থাৎ বুধবারই আদিত্য পাঞ্চোলির দায়ের করা মানহানির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কঙ্গনা রনৌত ও তাঁর বোনের নামে সমন পাঠিয়েছে আন্ধেরি আদালত। আগামী ২৬ জুলাই এই মামলার শুনানিতে তাঁদের হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে অনেকেই ধারণা করেছেন কঙ্গনা রনৌতই আদিত্য পাঞ্চোলির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এমনিতে ‘ঠোঁটকাটা’ বা ‘স্পষ্টভাষী’ হিসেবেও বলিউডে তাঁর পরিচিতি আছে। বেফাঁস কথা বলে বিপাকেও পড়েছেন বহুবার। তাঁর সঙ্গে এখন পর্যন্ত আদিত্য পাঞ্চোলি, অজয় দেবগনসহ আরও কয়েকজনের প্রেমের খবর চাউর হয়েছে। একাধিক প্রেমের কথা অকপটে স্বীকারও করেছেন এ তারকা।ঘটনার দুই বছর আগের। ২০১৭ সালে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার আদিত্য ও তাঁর স্ত্রী সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন কঙ্গনা। তাঁর বোন রঙ্গোলিও এই দম্পতির নামে আপত্তিকর টুইট করেন বলে অভিযোগ। এরপরই তাঁদের নামে মানহানির মামলা করেন আদিত্য ও তাঁর স্ত্রী জারিনা ওয়াহাব। তার ভিত্তিতে মোট চারটি আলাদা মামলায় সমন জারি করেছেন আন্ধেরির আদালত।জানা গেছে, কোনো একসময় আদিত্য পাঞ্চোলির সঙ্গে কঙ্গনা রনৌতের দারুণ সখ্য ছিল। সে সময় বলিউডে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছিলেন কঙ্গনা। সে সময় বয়সে ২০ বছরের বড় বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক আদিত্য পাঞ্চোলির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান কঙ্গনা। পরে অবশ্য তিনি আদিত্যর সঙ্গে প্রেম এবং ভেঙে যাওয়া প্রেমের কথা জানান। আদিত্যর সঙ্গে কঙ্গনার প্রেমের খবরে শোরগোল উঠেছিল বলিউডে। কঙ্গনাকে বাড়ি কিনে দেওয়ার জন্য বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়েছিলেন আদিত্য। এ ছাড়া কঙ্গনার বোন অ্যাসিড হামলার শিকার হওয়ার পর তাঁর চিকিৎসার খরচও দিয়েছিলেন আদিত্য। স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে কঙ্গনার সঙ্গে থিতু হওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন আদিত্য। পরে অবশ্য তাঁদের সম্পর্ক টেকেনি। কঙ্গনার সঙ্গে প্রতারণার পাশাপাশি তাঁর গায়ে হাত তোলার অভিযোগ উঠেছিল আদিত্যর বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশের বাজারে আসা নতুন ধরনের মাদক আইসসহ (ক্রিস্টাল ম্যাথ) নাইজেরিয়ার এক নাগরিককে আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ইনটেলিজেন্স) মেহেদী হাসান এই তথ্য জানিয়েছেন। মেহেদী হাসান বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকার গোয়েন্দা দল ফাঁদ পেতে হোটেল লা মেরিডিয়ানের বিপরীত দিকে এয়ারপোর্ট রোড থেকে আজাহ আনায়োচুকাওয়া ওনেয়ানুশি (৩৮) নামের নাইজেরিয়ার ওই নাগরিককে আটক করে। নতুন মাদক আইস বাংলাদেশের মাদক বাজার ধরার জন্য আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মাদক ব্যবসায়ীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন এক সংবাদের ভিত্তিতে এ ফাঁদ পাতা হয়।মেহেদী হাসান জানান, এই নাইজেরীয় ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তাঁর প্যান্টের পকেট থেকে ৫০ গ্রাম ক্রিস্টাল ম্যাথ, যা বাজারে আইস নামে পরিচিত ও একটি মোবাইল জব্দ করা হয়। পরে গতকাল রাতে অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মো. মোসাদ্দেক হোসেন রেজার নেতৃত্বে বসুন্ধরা এলাকায় আজাহর বাসায় অভিযান চালিয়ে ৪৭২ গ্রাম ক্রিস্টাল ম্যাথ জব্দ করা হয়।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জিজ্ঞাসাবাদে আজাহ জানান, তিনি ঢাকার আশা ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করে ঢাকাতেই পোশাকশিল্পের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর পরিবার নাইজেরিয়াতে থাকে। আজাহ নিষিদ্ধ ডার্ক নেটের সদস্য হয়ে পোশাকশিল্প ব্যবসার আড়ালে মাদকের ব্যবসা শুরু করেন। এ সময় তিনি ব্যাংকক, মালয়েশিয়া, ভারত, উগান্ডা, কেনিয়া যাতায়াত করেছেন। ইয়াবার চেয়ে শতগুণ শক্তিশালী ক্রিস্টাল ম্যাথ আফ্রিকা থেকে এনে এই দেশগুলোতে পাচার করতেন। বাংলাদেশে এই মাদককে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে পরিচিত করার জন্য দাম কমিয়ে বিক্রি করা শুরু করেন।আজাহ জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানান, প্রায় ছয় দিন আগে তাঁর কাছে উগান্ডা থেকে ডিএইচএল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আইস নামের মাদকের পার্সেল পাঠানো হয়। তাঁর মা মারা যাওয়ায় তিনি দ্রুত তা বিক্রি করে নাইজেরিয়াতে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, আজাহর কাছ থেকে দেশি–বিদেশি বিভিন্ন মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকার গোয়েন্দা দলের পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় নাইজেরিয়ার এই নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
চেস্টার-লি-স্ট্রিটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই দিমুথ করুণারত্নেকে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাজাতীয় সংগীত বাজানোর আনুষ্ঠানিকতা পালন হয় খেলা শুরুর আগে। শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত চলল প্রায় তিন মিনিট ধরে। দিমুথ করুণারত্নে ব্যাটিংয়ে নেমে এ সময়টুকুও টিকতে পারেননি। উইকেটে ছিলেন বড়জোর ১০ সেকেন্ড হবে!খেলা না দেখে থাকলে ঠিকই ধরেছেন। প্রথম বলেই আউট! শ্রীলঙ্কার বাঁচা-মরার ম্যাচে দলকে প্রথম বলেই বিপদে ফেলেছেন এ ওপেনার। আউট হওয়ার ধরনটাও ছিল ভীষণ অদ্ভুত। কাগিসো রাবাদার নিরীহ গতির ডেলিভারিটি যেন দেখতেই পাননি—লেগ স্টাম্পের বল খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন দ্বিতীয় স্লিপে! ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হান্নান সরকার, ২০১১ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের ব্রেন্ডন টেলর আর এবার মার্টিন গাপটিলের পর করুণারত্নে—ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম বলেই আউট হওয়া চার ওপেনার।করুণারত্নের এই জঘন্য শুরুর পর ভালোই শুরু করেছিলেন পেরেরা-আভিষ্কা ফার্নান্দো। ওভারপ্রতি গড়ে ছয়ের ওপরেই রান তুলছিলেন দুজন। কিন্তু ১০ম ওভারে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ফার্নান্দো (৩০)। মাঝে এক ওভার পর সেই প্রিটোরিয়াসের বলেই বোল্ড হন পেরেরা (৩০)। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার স্কোর ৫ উইকেটে ১১৫। শেষ ২০ ওভারে ৪৮ রান তুলেছে শ্রীলঙ্কা। সেমিফাইনালে ওঠার আশা টিকিয়ে রাখতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই শ্রীলঙ্কার। ৬ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সাতে রয়েছে করুণারত্নের দল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায় নিশ্চিত হয়েছে আগেই।[তাৎক্ষণিক আপডেটের কারণে শিরোনাম ও প্রতিবেদনে তথ্যের অমিল থাকতে পারে।]
আগামীকাল শনিবার ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারের (খুঁটি) ওপর বসছে পদ্মা সেতুর ১৪ তম স্প্যান। এই স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ২১শ মিটার দৃশ্যমান হবে। ইতিমধ্যে সেতুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ পাইল ডাইভিং শেষ হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ৩-সি নম্বর ১৪ তম স্প্যানটি বসানোর নির্ধারিত দিন ছিল। এ জন্য ওই দিন সকালে মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান ই’দিয়ে ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারের কাছে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। কিন্তু পিয়ারের কাছে ডুবো চরে আটকে যায় ক্রেনটি। এর পর নদী খননের কাজ শুরু হয়ে। শনিবার সকাল পর্যন্ত নদী খননের কাজ চলার পর সকাল ১০টার পর স্প্যানটি ওঠানোর কার্যক্রম শুরু হবে। এ নিয়ে চলতি বছরের ছয় মাস আটটি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হবে।পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মূল বা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল সেতুর পাইল ডাইভিং। এটি সম্পন্ন হয়েছে। এখন তো প্রকল্পের কাজ খুব দ্রুত চলছে। জাজিরায় অনেক স্প্যান বসে গেছে। মাওয়ার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে দূরত্ব কমে এসেছে। তাই কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে দুই একদিনের মধ্যেই একটি করে স্প্যান পিয়ারের ওপর বসানো সম্ভব। ১৩ টি পিয়ার নির্মাণকাজ শেষ হলে আশা করা যায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন করতে পারবে।গত ২৫ মে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিয়ারের ওপর ১৩তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ১ হাজার ৯৫০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হয়। এর ৩৫ দিন পর ১৪ তম স্প্যানটি বসানো হবে।২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত বছরের ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। পঞ্চম স্প্যান বসানো হয় গত বছরের ২৯ জুন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়। ২০১৮ শেষ দিকে মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিয়ারের ওপর একটি স্প্যান বসানো হয়। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের সপ্তম স্প্যান বসে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিয়ারের ওপর অষ্টম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর গত ২২ মার্চ নবম স্প্যান বসে। ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিয়ারের ওপর ১০ম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে সেতু ১ হাজার ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যে রূপ নেয়। ১৩ দিন পর ২৩ এপ্রিল পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর বসানো হয় ১১তম স্প্যান। ৬ মে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারের পর ১২তম স্প্যান বসানো হয়।পদ্মা সেতু প্রকল্পের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নকশা জটিলতা কেটে যাওয়ার পর সেতুর ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ২৯০টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। বাকি চারটি পাইল বসানোর কাজ এ মাসেই সম্পন্ন হবে। তা ছাড়া ৪১ পিয়ারের মধ্যে ২৯টি পিয়ার নির্মাণ হয়ে গেছে। বাকি ১২টি পিয়ার নির্মাণ এ বছরই হয়ে যাবে। মাওয়ার কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে আরও ১০টি স্প্যান প্রস্তুত হয়ে আছে। ৯টি স্প্যানের অংশ চীনে তৈরি হয়ে গেছে। দুটি স্প্যানের অংশ আগামী মাসের মধ্যে চলে আসবে। মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আসার পর প্রতি মাসে একটি করে স্প্যান জোড়া দেওয়া হয়।ডাঙার অংশ ধরলে পদ্মা সেতু প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ। দ্বিতল পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। পুরো সেতুতে মোট পিয়ারের সংখ্যা ৪২। প্রতিটি পিয়ারে রাখা হয়েছিল ছয়টি পাইল। একটি থেকে আরেকটি পিয়ারের দূরত্ব ১৫০ মিটার।বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণে কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।৪১টি স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হয় বাংলাদেশে। ফিটিং করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। তবে কাদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ১৪টি পিয়ারের মধ্যে ১টি করে পাইলের সংখ্যা বাড়ানো হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের নকশা চূড়ান্ত করা হয়।
যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় তাদের ইংরেজির দক্ষতা যাচাই করতে টেস্ট অব ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশনস বা টোয়েক। বিশ্বের ১৬০টি দেশ এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী বা কর্মীদের দক্ষতা যাচাই করে। প্রায় ৮ হাজার টাকা সমমূল্যের এই পরীক্ষা বিনামূল্যে দেওয়ার সুযোগ পায় ক্রাউন সিমেন্ট-প্রথম আলো তারুণ্যের জয়োৎসবের অংশগ্রহণকারীরা।আজ শুক্রবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এ পরীক্ষায় অংশ নেন ৩২ জন অংশগ্রহণকারী।টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাজ আ ফরেইন ল্যাঙ্গুয়েজ (টোফেল) এবং ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস) এর মতো টোয়েক ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৭০ লাখ মানুষ এই পরীক্ষা দেন। মাত্র এক বছর হয়েছে এই পরীক্ষা বাংলাদেশ থেকে দেওয়া যায়। প্রবাসী কর্মী নিয়োগ তো বটেই, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করে ইংরেজির দক্ষতা যাচাইয়ের এই পরীক্ষার ফলাফল।টোয়েকের এমন গ্রহণযোগ্যতার কারণে, গত ২৪ এপ্রিল ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হওয়া ক্রাউন সিমেন্ট-প্রথম আলো তারুণ্যের জয়োৎসবের জাতীয় পর্বে টোয়েক নিয়ে একটি সেশন হয়। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, টোয়েক নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ ও মক টেস্টে অংশ নিতে।সে অনুযায়ী গত ১৮ ও ১৯ মে আগ্রহীদের নিয়ে প্রথম আলো কার্যালয়ে টোয়েক কর্মশালায় আয়োজন করা হয়। প্রথম কর্মশালা শেষে অনুষ্ঠিত হয় মক টেস্ট। মক টেস্টে উত্তীর্ণ ৩৫ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয় বিনামূল্যে টোয়েক টেস্টে অংশ নিতে, যার মধ্যে ৩২ জন শুক্রবার এ পরীক্ষা দেন।টোয়েক বাংলাদেশের নির্বাহী রেশাদ রসুল কাজী বলেন, বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে হলে এই পরীক্ষা অত্যাবশ্যকীয়, আন্তর্জাতিক বাজারে কর্মীদেরও টোয়েক পরীক্ষার নাম্বারের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।শুক্রবার এই পরীক্ষায় অংশ নেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন সায়েন্স ও লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থী আনিকা হোসেন। তিনি বলেন, আমি উচ্চশিক্ষার জন্য জাপান বা তাইওয়ানে যেতে চাই, এ দেশগুলো টোয়েক পরীক্ষার স্কোর চাচ্ছে। তারুণ্যের জয়োৎসবে অংশ নিয়ে আমি জানতে পারি এই পরীক্ষায় এখন বাংলাদেশ থেকেও অংশ নেওয়া যায়। আমি এতে আবেদন করি এবং বিনামূল্যে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মনোনীত হই। টোয়েক পরীক্ষার এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তারুণ্যের জয়োৎসবের মতো আয়োজনকে ধন্যবাদ জানান আনিকা।টোয়েক পরীক্ষা ক্রাউন সিমেন্ট-প্রথম আলো তারুণ্যের জয়োৎসবের তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি কার্যক্রমের একটি অংশ।
দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় পার করে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ছেড়ে দিচ্ছেন অ্যাপল পণ্যের প্রধান নকশাকার হিসেবে পরিচিত জনি আইভ। নিজের নকশা প্রতিষ্ঠান চালু করতে এ বছরের শেষ দিকে অ্যাপল ছেড়ে দেবেন তিনি। অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস যে সংস্কৃতি তৈরি করেছিলেন, এরই প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আইভ। নিজের প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর পর অ্যাপল তার প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক হিসেবে কাজ করবে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। অ্যাপলের আইকনিক ডিভাইস আইপড থেকে শুরু করে আইফোনের নকশায় জনি আইভের ভূমিকা রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জনি আইভের অ্যাপল ছাড়ার বিষয়টি ঘোষণা দেয় অ্যাপল। তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য এ বছরের শেষ দিকে অ্যাপল ছাড়বেন বলে জানিয়েছেন। ১৯৯৮ সালের আইম্যাক ডিজাইনের সময় থেকেই তিনি অ্যাপলের নকশাকারী দলের অংশ হিসেবে কাজ করেছেন।লুপ ভেঞ্চারের বিশ্লেষক জিন মুনস্টার বলেন, জনি আইভের অ্যাপল ত্যাগের বিষয়টি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না। অ্যাপল ধীরে ধীরে তাঁর ভূমিকা খর্ব করে আসছিল। তাঁর কাজের খুব বেশি দায়িত্ব ছিল না। এটা অ্যাপলের ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের একটি উদাহরণ। তারা দীর্ঘ মেয়াদে এটা করে থাকে।আইভ এর আগেই অ্যাপলের প্রধান ডিজাইনের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ২০১৫ সালে তিনি অ্যাপলের কুপারটিনোর নতুন ক্যাম্পাস তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন। ওই কাজ শেষ হলে আবার তিনি ২০১৭ সালে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন দলে ফেরত আসেন। এরপর থেকে ওই দলের অনেক নামকরা নকশাবিদ অ্যাপল ছেড়ে যান।১৯৯৭ সালে স্টিভ জবস অ্যাপলে ফিরে আসার পর অ্যাপলের সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আইভ। ডুবতে থাকা অ্যাপলের কান্ডারি হয়ে একের পর এক আইম্যাক বাজারে আসে। এতে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশনে ট্রেনে উঠতে গিয়ে হাত পিছলে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। একই দিনে রেলজংশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। পুলিশ লাশ দুটির ময়নাতদন্তের জন্য আজ শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।রেলওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেন মহানগর গোধূলী আখাউড়া রেলজংশনের ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে। সেখানে যাত্রী ওঠা-নামা শেষে ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি দৌড়ে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তির হাত পিছলে গেলে তিনি রেললাইনের ওপর পড়ে যান। ওই সময় ট্রেনে কাটা পড়ে ওই ব্যক্তির মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। খবর পেয়ে আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশ নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসে। কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর বয়স ৪০ বছর। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।গতকাল বিকেলে আখাউড়া প্ল্যাটফর্ম থেকে অজ্ঞাতনামা (৫৫) এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কান্তি দাস দুটি দুর্ঘটনার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, তাঁদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিচয় পাওয়া না গেলে লাশ দুটি দাফনের জন্য আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে পাঠানো হবে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় দুটি ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন গরু ব্যবসায়ী আবদুল গনি (৩৮)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার শেরুয়া মৎস্য খামারের সামনে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।আবদুল গনির বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর থানার কালুয়াকান্দা এলাকায়।প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া বাজার থেকে ১৩টি গরু কিনে ট্রাকে তুলে নরসিংদীর শিবপুরে ফিরছিলেন ওই ব্যবসায়ী। ট্রাকের চালকের কেবিনে বসেছিলেন তিনি। রাত আটটায় উপজেলার শেরুয়া মৎস্য খামারের সামনে গরু বোঝাই ট্রাকটির সঙ্গে ঢাকাগামী একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ট্রাকের ওপর থেকে মহাসড়কে পড়ে যান আবদুল গনি। তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে।বগুড়ার হাইওয়ে পুলিশের কুন্দারহাট ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) কাজল নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পর দুই ট্রাকের চালক ও তাঁদের সহকারী মহাসড়কের ওপর গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায়। এতে মহাসড়কে অন্তত এক ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়। তাঁরা গাড়ি দুইটি হেফাজতে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন।গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
সুন্দরবনের সব খালে আগামী দুই মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। ১ জুলাই থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। মাছের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত সুন্দরবনের অভ্যন্তরে শতাধিক খালে কীটনাশক দিয়ে মাছ শিকার বন্ধসহ মৎস্য এবং মৎস্য প্রজাতির অবাধ প্রজনন ও সংরক্ষণে এ নির্দেশ জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটারের বেশি, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ। এই জলভাগে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে ১৩টি বড় নদ-নদীসহ ৪৫০টির মতো খাল। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া এই বনের নদ–নদী ও খালে ভেটকি, রুপচাঁদা, দাঁতিনা, চিত্রা, পাঙাশ, লইট্যা, ছুরি, মেদ, পাইস্যা, পোয়া, তপসে, লাক্ষা, কই, মাগুর, কাইন, ইলিশসহ ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ হয়ে থাকে। এ ছাড়া রয়েছে গলদা, বাগদা, চাকা, চালী, চামীসহ ২৪ প্রজাতির চিংড়ি রয়েছে। বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়াসহ ১৪ প্রজাতির কাঁকড়ার প্রজনন হয়ে থাকে এই বনের নদ–নদী ও খালে। রয়েছে ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও এক প্রজাতির লবস্টার। আরও রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন।বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান জানান, সুন্দরবনের কাঠ (জ্বালানি) সংগ্রহের জন্য বাওয়ালিরা নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব দিয়ে অনুমতি নিয়ে বনে প্রবেশ করে। আবার কেউ কেউ অবৈধভাবে বনে প্রবেশ করে থাকে। এদের মধ্যে অনেকে সুন্দরবনের মৎস্য ও মৎস্য প্রজাতির সম্পদ আহরণে বনে প্রবেশ করে। সাদা মাছের প্রজনন মৌসুমে মাছের আধিক্য থাকায় একশ্রেণির অসাধু জেলে অধিক মুনাফার জন্য সুন্দরবনের খালগুলোতে কীটনাশক দিয়ে মাছ আহরণ করেন। এই বিষ দেওয়ার কারণে খালের ছোট-বড় সব মাছসহ জলজ উদ্ভিদ ধ্বংস হয়ে যায়। এতে মৎস্য প্রজাতির প্রজনন এবং সংরক্ষণ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।ডিএফও মাহমুদুল হাসান জানান, এই অবস্থার কথা মাথায় রেখে আগামী জুলাই-আগস্ট এই দুই মাস সব খালে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। তবে এই দুই মাস সুন্দরবনের নির্দিষ্ট বড় বড় নদ-নদী থেকে মাছ আহরণের জন্য জেলেদের সীমিত আকারে অনুমতির পাস দেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে খালগুলোতে যাতে কেউ ঢুকতে বা মাছ আহরণ করতে না পারেন, সে জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করেছে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ।
জার্সি কি ম্যাচের ফল পাল্টে দিতে পারে? আর কেউ না মানলেও লঙ্কানরা মনে করছে অ্যাওয়ে জার্সিটাই এবার তাদের সৌভাগ্যের প্রতীক। এটি পরে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর বিশ্বকাপে বাকি ম্যাচগুলোতেও তারা অ্যাওয়ে জার্সিই ব্যবহার করবে। আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই জার্সি তাদের জন্য শুভ কিছু বয়ে আনতে পারে কিনা, দেখার বিষয় সেটিই।জয়ের জন্য মানুষ কত কিছুই না করে। লঙ্কানরা না হয় পছন্দের জার্সিটাই পরতে চেয়েছে। এতে আর এমন কী যাবে আসবে! গাঢ় নীলের সঙ্গে হলুদ রং মেশানো জার্সিটাই নাকি এবার শ্রীলঙ্কার জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক! এটি পরেই যে তারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে। আইসিসিও মানা করে নি। বাকি ম্যাচগুলো তাই শ্রীলঙ্কার অ্যাওয়ে জার্সিতেই খেলার অনুমতি দিয়েছে তারা। আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হলুদের প্রাধান্য থাকা জার্সিটি পরেই মাঠে নেমেছে লঙ্কানরা।ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপের মোড়টাই ঘুরিয়ে দিয়েছে লঙ্কানরা। শেষ চারে যাওয়ার স্বপ্নটা এখনো মরে যায়নি তাদের। তবে অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নের চোখের সামনে এখনো অনেক সমীকরণ। একে একে শুধু মিলিয়ে নিতে হবে, সেমিতে যাওয়ার জন্য। তবে শুধু ভালো খেললেই তো হয় না, ভাগ্যটাও সহায় থাকতে হয়। এটা জানেন করুণারত্নেরা। ভাগ্যকে সহায় করতে অ্যাওয়ে জার্সির ব্যবহারই এখন বড় হয়ে উঠেছে।জার্সি তো জার্সিই। এ নিয়ে এত ভাবার কী আছে? শ্রীলঙ্কার অনুরোধের পর আইসিসিও তাই দ্বিমত করে নি, অনুমতি দিয়ে দিয়েছে সেটি ব্যবহারে। এ প্রসঙ্গে আইসিসির মুখপাত্র জানান, ‘টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে প্রতিটি দলই একটি বিকল্প রং বেছে নিয়েছে। তাই আমরা শ্রীলঙ্কার হলুদ জার্সি পরার অনুরোধটা মেনে নিয়েছি।’শ্রীলঙ্কার সামনে এখনো তিনটি ম্যাচ বাকি। আজ দক্ষিণ আফ্রিকার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ভারত। সেমিফাইনালে যেতে হলে অন্তত দুটো ম্যাচ জিততেই হবে। দেখা যাক, একটা হলদে-নীল জার্সি কত দূর নিয়ে যেতে পারে করুণারত্নেদের!
স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলার অন্য আসামিরা নজরদারিতে রয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অচিরেই দেশবাসীকে আমরা সুখবর দিতে পারব বলে আশা করছি। কোনো আসামি গ্রেপ্তার এড়াতে পারবেন না।’বরিশাল নগরের উপপুলিশ কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞা গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় জড়িত কোনো আসামি যাতে পালাতে না পারেন, সে জন্য পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে। পুলিশ নানা কৌশলে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে।রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার রিফাতের বাবা আবদুল হালিম মামলা করেন। সাব্বির, রিফাত, রিশানসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।বুধবার সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফ নামের এক তরুণকে কুপিয়ে জখম করা হয়। গুরুতর আহত রিফাতকে প্রথমে বরগুনা সদর হাসপাতাল ও পরে বরিশালের শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিন বিকেলে হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় রিফাতের মৃত্যু হয়। রিফাতকে প্রকাশ্যে কোপানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পুলিশ নানা কৌশলে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের জন্য সব শক্তি নিয়োগ করছে।আরও পড়ুন:-বহু অভিযোগ নিয়েও দাপিয়ে বেড়াত ওরারিফাত হত্যার আসামিদের দেশত্যাগ ঠেকাতে রেড অ্যালার্ট
বিশ্বকাপে প্রতিদিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন সাকিব। প্রতিদিন তাঁর পায়ে লুটাচ্ছে একের পর এক রেকর্ড। এমনই এক রেকর্ড হাতছানি দিয়ে ডাকছে তাঁকে, যেটা অর্জিত হয়ে গেলে আক্ষরিক অর্থেই সাকিব হয়ে যাবেন অলরাউন্ডারদের অলরাউন্ডার।বিশ্বকাপে এর মধ্যেই দুটি সেঞ্চুরি, দুটি হাফ সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপের শীর্ষ রান সংগ্রাহক হওয়ার দৌড়ে বেশ ভালোভাবেই আছেন সাকিব। বল হাতেও তাঁর সাফল্য কম নয়। এর মধ্যেই ১০ উইকেট নেওয়া হয়ে গেছে তাঁর। বিশ্বকাপে সাকিব ভালো করবেন এটা জানা ছিল, কিন্তু তিনি যে এই ‘ভালো’কে ইতিহাসের অংশ বানিয়ে ফেলবেন, সেটি হয়তো অনেকেই ভাবেননি। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডার হতেও সাকিবের বেশি দেরি নেই!কীভাবে? আসুন দেখে নেওয়া যাক। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ন্যূনতম ১০ উইকেট ও ২৫০ রান করা খেলোয়াড়দের তালিকায় যাঁরা আছেন, সাকিবের উইকেট সংখ্যা এর মধ্যেই সবার চেয়ে বেশি। ৩৩ উইকেট নিয়ে সাকিব আছেন সবার ওপরে। সাকিবের নিচে আছেন যথাক্রমে কপিল দেব (২৮ উইকেট), মার্ক ওয়াহ ও সনাৎ জয়সুরিয়া (২৭ উইকেট), জ্যাক ক্যালিস (২১ উইকেট), যুবরাজ সিং (২০ উইকেট), তিলকারত্নে দিলশান (১৮ উইকেট), স্কট স্টাইরিস (১৭ উইকেট), অরবিন্দ ডি সিলভা (১৬ উইকেট), ক্রিস গেইল ও স্টিভ টিকোলো (১৫ উইকেট), স্যার ভিভ রিচার্ডস ও সৌরভ গাঙ্গুলী (১০ উইকেট)। বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিব ছাড়া এ তালিকায় আছেন শুধু গেইল। তাই বলা যায়, এ ক্ষেত্রে সাকিব একদমই ধরাছোঁয়ার বাইরে।বিশ্বকাপে ন্যূনতম ১০ উইকেট আর ২৫০ রান করা খেলোয়াড়দের তালিকায় সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহকারীদের মধ্যে ১ হাজার ১৬ রান নিয়ে সাকিবের অবস্থান ষষ্ঠ। প্রথমে আছেন জয়সুরিয়া (১ হাজার ১৬৫ রান)। এরপর যথাক্রমে আছেন জ্যাক ক্যালিস (১ হাজার ১৪৮ রান), ক্রিস গেইল (১ হাজার ১৪৪ রান), তিলকারত্নে দিলশান (১ হাজার ১১২ রান) ও অরবিন্দ ডি সিলভা (১০৬৪ রান)। অর্থাৎ, আর মাত্র ১৫০ রান করতে পারলেই জয়সুরিয়াকে টপকে বিশ্বকাপের ইতিহাসে অলরাউন্ডারদের অলরাউন্ডার হয়ে যাবেন সাকিব। অবশ্য রানের দৌড়ে গেইলও ভালোভাবেই আছেন। জয়সুরিয়াকে টপকাতে গেইলের লাগে ২১ রান।যেভাবে সাকিব এগোচ্ছেন, এই রেকর্ড যদি সাকিব নিজের করে না নিতে পারেন এই ক্রিকেট বিশ্বকাপে, সেটাই আশ্চর্যের হবে।
জর্জিয়া বাংলাদেশ সমিতির উদ্যোগে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ‘বাংলাদেশ মেলা’ ৩০ জুন অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানের একটি পরিবেশনায় থাকবেন বাংলাদেশ থেকে আসা জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ওমর সানি ও তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী মৌসুমী। স্থানীয় বার্কমার হাইস্কুল মিলনায়তনে জর্জিয়া বাংলাদেশ সমিতির আয়োজিত এ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল পাঁচটায়।অনুষ্ঠানে বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে থাকছেন চ্যানেল আই পুরস্কার প্রাপ্ত প্রবাসী জনপ্রিয় শিল্পী লাবনী। স্থানীয়দের মধ্যে থাকবেন—তাসলিমা সুলতানা পলি, হোসনে আরা বিন্দু, সৈকত প্রধান, রোমেল খান প্রমুখ। সবার জন্য উন্মুক্ত এ অনুষ্ঠানে কোনো প্রবেশ মূল্য নেই। অনুষ্ঠানে জর্জিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুষ্ঠান উপভোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি মোস্তফা মাহমুদ।মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও থাকবে বাংলাদেশি নানা খাবারের স্টল। শাড়ি-চুড়ি, লুঙি ও ফতুয়ার স্টল। দর্শক শ্রোতাদের অংশগ্রহণে র‍্যাফল ড্রর আয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ রাসেল। র‍্যাফল ড্রয়ে টিভি, ক্যামেরা ও ল্যাপটপসহ আকর্ষণীয় অনেক পুরস্কার রয়েছে।
সাতক্ষীরায় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর এবং আশাশুনি উপজেলার বুধহাটায় এ ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রতনপুর ইউনিয়নে বজ্রপাতে আদম আলী নামের এক ব্যক্তির দুই ছেলে ও পুত্রবধূর মারা গেছেন।কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের গড়ইখালি গ্রামের আদম আলী জানান, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিক থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাড়ির বারান্দায় বসে ছিলেন। বেলা ১১টার দিকে বজ্রপাত ঘটে। এতে তাঁর বড় ছেলে আলামিন হোসেন (২৮), আলামিনের স্ত্রী সাবিনা পারভীন (২৫) ও ছোট ছেলে রবিউল ইসলাম (২২) মারা যান। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আলামিনের ছেলে আমিনুর রহমান বাবু (৮)। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।একই সময় একই ইউনিয়নের বাগমারী গ্রামের মনসুর আলী (৪৮) বজ্রপাতে মারা গেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলে বাইরে থেকে দ্রুত পায়ে হেঁটে মনসুর আলী বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে বিজয়নগর এলাকায় বজ্রপাতে তাঁর মৃত্যু হয়।কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুর রহমান বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যুর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বজ্রপাতে আদম আলীর পরিবারে তিনজন মারা যাওয়ার ঘটনায় সবাই হতভম্ব। পরিবারটিতে শোকের মাতম চলছে।অপর দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের মাদ্রা এলাকায় বজ্রপাতে জুয়েল হোসেন (২৪) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান আ ব ম মোছাদেক জানান, বৃষ্টির সময় চিংড়ি ঘের শ্রমিক জুয়েল হোসেন পাশের একটি টোঙ ঘরে আশ্রয় নেন। বৃষ্টি একটু কমলে তিনি চিংড়ির খাবার দেওয়ার জন্য ঘেরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে তাঁর মৃত্যু হয়। আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক কিশোরীকে (১৭) দুই দিন ধরে আটকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। খবর পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নির্যাতনের শিকার কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।গ্রেপ্তার করা যুবকের নাম রফিকুল ইসলাম (২১)। তিনি ওই কিশোরীর কথিত প্রেমিক বলে জানিয়েছে পুলিশ।সোনাইমুড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার রাত ১০টার দিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলার বাড়ি থেকে ওই কিশোরীকে কৌশলে বের করে আনেন রফিকুল ইসলাম। কিশোরীকে ওই উপজেলায় মো. বাবু নামের এক বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে যান তিনি। বুধবার রাতে রফিকুল ইসলাম ও বাবু ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁদের আরেক বন্ধু সাইফুল ওই বাড়িতে এসে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন।ওসি জানান, খবর পেয়ে গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর অপর দুই বন্ধুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী বাদী হয়ে রফিকুল ইসলাম এবং তাঁর দুই বন্ধু বাবু ও সাইফুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় একটি মামলা করেছে।আজ শুক্রবার দুপুরে ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি।
জাপানের ওসাকায় আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলন। দুদিনব্যাপী এই সম্মেলনে যোগ দিতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে জাপানে পৌঁছেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন, ইরান ও তেল ইস্যু, সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য কমানোসহ বিভিন্ন বাণিজ্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।তবে এসব ইস্যুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর থাকছে সি ও ট্রাম্পের বৈঠকের ওপর। দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অবসানে এই বৈঠক হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে, আগামীকাল শনিবার জাপান সময় বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এই দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হোগান গিডলে বলেন, এই বৈঠকসহ নয়টি দেশের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প।অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাপান সফরে বেশ ব্যস্ত সময় পার করবেন। হোগান বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আজ শুক্রবার বেলা দুইটা নাগাদ বৈঠকে বসবেন ট্রাম্প। গতকাল নৈশভোজের মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হবে। এই নৈশভোজে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া শুক্রবার তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আবেকে নিয়ে একসঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর আবার মোদির সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকে বসবেন তিনি। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বোলসোনারোর সঙ্গেও বৈঠক করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।এদিকে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের আলোচ্য ইস্যু থেকে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে এই সম্মেলনে আলোচনা হবে। এই পরিবর্তন ঠেকাতে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের জন্য যে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে, এতে প্যারিস চুক্তিকে অপরিবর্তনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, প্যারিস চুক্তির উল্লেখ ছাড়া জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের প্রজ্ঞাপন মেনে নেবে না ফ্রান্স।ইরান জি-টোয়েন্টির সদস্য নয়। তারপরও ইরান ইস্যুতে আলোচনা হবে এই সম্মেলন থেকে। মাখোঁ বলেছেন, ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তিনি ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা পুনরায় শুরু করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তেল–বাণিজ্য ইস্যুতেও আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভ্লাদিমির পুতিন এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যকার বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ব্যাংক ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা সুদ কমিয়ে দেবে। এর ফলে চাপে পড়ছে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং ব্যাংক অব জাপানের ওপর। এ নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
‘আগামী দিনের সাংবাদিকতা পুরোটাই হবে মোবাইল-নির্ভর। এশিয়ায় নতুন ধারার এই সাংবাদিকতার জনপ্রিয়তা দিনদিন বেড়েই চলছে। মোবাইল ডিভাইসনির্ভর এই সাংবাদিকতার সঙ্গে সনাতনী গণমাধ্যমের একত্রীকরণ হওয়া ছাড়া কোনো গতি নেই।’এশিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক মোবাইল সাংবাদিকতা সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্যে এসব কথা বলেন কনরাড এডেনাউর স্টিফটঙ্গ (কেএএস) মিডিয়া প্রোগ্রামের এশিয়া পরিচালক ক্রিস্টোফ গ্রাভটিজ।শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল নয়টায় থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের নোভটেল হোটেলে এই সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের উদ্যোক্তা কনরাড এডেনাউর স্টিফটঙ্গ (কেএএস) মিডিয়া প্রোগ্রাম।এশিয়ায় এই সম্মেলনের আয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরে ক্রিস্টোফ গ্রাভটিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউরোপে আমরা যখন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করছি, তখন এশিয়ায় প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটছে। এই অঞ্চলে মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারদের সংখ্যা বেড়ে চলছে। এশিয়ায় অনেক গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে না। তাদের জন্য মোজো (মোবাইল সাংবাদিকতা) একটি সমাধান হতে পারে।সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এমন একটি সময়ে মোবাইল সাংবাদিকতার আবির্ভাব ঘটেছে, যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মূলধারার গণমাধ্যমের ওপর প্রভাব ফেলছে। মানুষ তাঁর হাতের মোবাইল ফোন দিয়ে সহজেই মানবিক ঘটনা, তাৎক্ষণিক ঘটনা বা ব্যক্তি-বিশেষের সাফল্যের গল্প তৈরি করতে পারছেন। এই গল্প তাঁরা পৌঁছে দিতে পারছেন বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে। ‘এশিয়ায় মোবাইল সাংবাদিকতা: প্রতিকূলতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক উদ্বোধনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন বিবিসির সাংবাদিক রিজিনি ভাইদিআনাথান, মিডিয়া উদ্যোক্তা হেলেনা সাইদ, এআরইউ নিউজের সাংবাদিক রাবিয়া নুর, এনডিটিভির সাংবাদিক উমাসংকর সিং প্রমুখ।দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে মোবাইল সাংবাদিকতা নিয়ে থাকছে মোট ১১টি কর্মশালা, মাস্টারক্লাস ও প্যানেল আলোচনা।এশিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত মোবাইল সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা এই সেশনগুলো পরিচালনা করবেন। এ ছাড়া মোবাইলে ভিডিও সম্পাদনার জনপ্রিয় অ্যাপ কিনেমাস্টারের ওপর থাকছে আলাদা কর্মশালা।থমসন ফাউন্ডেশন, কিনেমাস্টার অ্যাপ, গুগল নিউজের সহযোগিতায় আয়োজিত এই সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ৩০টির বেশি দেশের প্রায় ২০০ অংশগ্রহণকারী উপস্থিত হয়েছেন।
প্রায় এক যুগ আগে কৃষিবিদ এস এম কামরুজ্জামানের সহায়তায় নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের দুলশি গ্রামে গিয়েছিলাম একটি অচিন বৃ‌ক্ষের পরিচয় জানতে। বিশালাকৃতির এই বৃক্ষÿ তখন আমার কাছেও অচেনা। গাছটি ঘিরে স্থানীয়ভাবে অনেক লোকগল্প প্রচলিত। স্থানীয় লোকজন বিশ্বাস করেন, গাছটির কিছু আধ্যাত্মিক ক্ষমতা রয়েছে। এ কারণে গাছটি সংরক্ষণের ব্যাপারেও তাঁরা সোচ্চার। ঢাকায় ফিরে গাছটিকে খিরিবৃক্ষ হিসেবে শনাক্ত করে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন লিখি। এটি মূলত সফেদা পরিবারের গাছ। তারই সূত্র ধরে আমাকে অনেকেই ঢাকার লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের এই গাছের খোঁজ দিয়েছেন। গাছটি দেখতে গেলাম একদিন। দেখে মন ভরে গেল। গড়নটা এতই নিখুঁত, যেন টবের মধ্যে বসানো একটি গাছ। ডালপালাগুলো ঝুরির মতো নেমে এসেছে চারপাশে। খোলা মাঠের ধারে বিশাল ছাতার মতো রাজসিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় লোকজন মনে করেন গাছটি শতবর্ষী। জানামতে, ঢাকায় রমনা পার্কে এদের একটিমাত্র নিকটাত্মীয় আছে। সেটির বৈজ্ঞানিক নাম Manilkara kaukii। খিরিবৃক্ষ বা খিরনি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Manilkara hexandra। দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে এ গাছ দেখা যায়। একই কারণে এ গাছকে দুর্লভ এবং বিপন্ন মনে করা হয়। বিশাল আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ এটি। প্রসারিত মুকুট, বাকলে দুধের মতো ল্যাটেক্স আছে। পাতা সরল, ডালের আগায় দলবদ্ধভাবে জন্মে এবং ঝুলে থাকে। ফুল হালকা হলুদ বর্ণের। ফল রসাল, জলপাই আকৃতির, পাকলে লাল হয়। খাওয়া যায়। কাঠ মজবুত, আসবাব তৈরিতে কাজে লাগে। ফুল ও ফলের মৌসুম অগ্রহায়ণ থেকে শ্রাবণ। বীজ থেকে চারা হয়। আদি আবাস শ্রীলঙ্কা।
কুষ্টিয়ার বাজিতপুর গ্রামের এক কৃষকের চার মেয়ে, এক ছেলে। ছেলের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবার ঠাঁই হয়নি। মেয়েরা পালা করে তাঁকে রাখতেন। ব্যাপারটা জামাইদের পছন্দ হতো না। সেজ মেয়ের বাড়িতে এক রাতে খাবারের জন্য অনেকক্ষণ বসে থেকেও শেষ পর্যন্ত কেউ খাবার দিয়ে গেল না দেখে বৃদ্ধ ট্রেনে চেপে ঢাকায় চলে এলেন। এক হিতাকাঙ্ক্ষী তাঁকে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে গেলেন। সেখানে তিনি শান্তিতে আছেন। আমাদের গড় আয়ু বেড়ে এখন ৭২ বছর ৩ মাস ১৮ দিন। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ প্রবীণ। সামাজিক-পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধির ফলে তাঁদের জন্য ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। প্রথম আলোর এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রবীণেরা একাকিত্ব ও দারিদ্র্যে অসহায় এবং সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈষম্যের শিকার। প্রবীণহিতৈষী সংঘের মহাসচিব বলেন, প্রবীণ নারীর চেয়ে প্রবীণ পুরুষ সামলানো সহজ; যেমন বৃদ্ধাশ্রমে, তেমনি বাড়িতেও। এ সমাজব্যবস্থায় নারী শৈশবে পিতার, যৌবনে স্বামীর, বার্ধক্যে পুত্রের আশ্রিতা। তাই বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দারা নারী-পুরুষনির্বিশেষে পুত্রের ঘাড়ে দোষ চাপান। আবার বলা হয়, পুত্ররা তো ভালোই ছিল, তাদের প্ররোচিত করে তাদের স্ত্রীরা। নারীরা সন্তান জন্ম দেন, লালনপালন করেন। তাই আবেগটাও পিতার চেয়ে মাতারই অধিক। উপায়ান্তর না দেখে মায়েরা স্বেচ্ছায় হোমে যান। এমন কিছু নারীকে জানি, যাঁরা স্বাধীনচেতা। তাঁরা সন্তানদের মধ্যে ঝামেলা-যন্ত্রণার কারণ হতে চান না। পুত্র-পুত্রবধূ বা কন্যা-জামাতাদের নিজস্ব জীবনযাপনকে সম্মান দেখিয়ে নিজের মতো একান্ত জীবন খুঁজে নেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রবীণ নারী অধ্যাপক বলছিলেন, ‘নাতিদের নিয়ে মাঝেমধ্যে কদিন সময় কাটাতে ভালো লাগে। একটানা পেলে মানুষ করার ক্ষমতা আর নেই।’ কিন্তু কজন নানি-দাদি কর্মজীবী ছেলে-বউ, মেয়ে-জামাইয়ের মুখের ওপর বলে দিতে পারেন ‘আর পারব না বাপু, এই বেলা নিজেদের মতো করে খাও’। ইউরোপ-আমেরিকায় ভিসা পাওয়া কঠিন। কিন্তু প্রসবাসন্ন কন্যা-পুত্রবধূর আবেদন উন্নত বিশ্বের মানবিক সরকার অগ্রাহ্য করতে পারে না। ভিসা পেয়ে নাতি-পুতির মুখ দেখতে গিয়ে আটকে যান প্রবীণেরা। পিচ্চিরা বড় হয়, প্রবীণেরা হন আরও প্রবীণ। তখন বাস্তবতার চাপ এমন হয় যে হয় নিজভূমে ফিরতে হয়, না হলে সমগোত্রীয়দের পাশে বৃদ্ধাশ্রমে। ফেসবুকের কল্যাণে জানা গেল, লন্ডনবাসী সন্তানসন্ততিদের বিমুখতায় এক বয়সী নারী দেশে ফিরে আশ্রয় নিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমে। তিনি এখন ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন। সংগতি ও সহনীয় পরিবেশ থাকার পরও যে সন্তানেরা মমতাময় জনক-জননীকে দূরে ঠেলে দেয়, তাদেরও কি একদিন একই পরিণতি হতে পারে না? যেসব প্রবীণের আর্থিক সংগতি আছে বা নেই কিন্তু মর্যাদাবোধ ও ক্ষমতার লড়াইয়ে না যাওয়ার মানসিকতা আছে, তাদের জন্য প্রবীণনিবাস উপযুক্ত আনন্দাশ্রম। উন্নত বিশ্বে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রবীণ নিবাসগুলো নানা সুযোগ-সুবিধাপূর্ণ ও আরামদায়ক। ছোট পরিবারের যুগে এসে এখন আমাদের দেশের গ্রামের বাড়িতে অনেক প্রবীণ একা। কারণ, তাঁদের সন্তানেরা শহরে থাকে। আবার শহরের অনেক ফ্ল্যাটের রেলিং ধরে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকেন বৃদ্ধ বাসিন্দারা, কারণ তাঁদের পুত্র-কন্যারা বিদেশে। যঁাদের সংগতি আছে, তাঁরা দেশের ভেতরে-বাইরে মাঝেমধ্যে ঘুরে বেড়ান, যাঁদের নেই, তাঁদের কেবলই অপেক্ষা। বেশি বয়স্কদের সেবাযত্ন করার জন্য অবস্থাপন্ন সন্তানেরা লোক রেখে দেন। এসব লোকের কেউ কেউ অর্থসম্পদের লোভে নিরাপত্তাহীন বৃদ্ধদের নির্যাতন করে, হত্যার ঘটনাও একেবারে বিরল নয়। অনেক আগে যখন আমাদের দেশের যৌথ পরিবারের হই–হুল্লোড়ের মধ্যে শুনতাম বিদেশে নাকি বুড়ো হলে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসে, তখন ওসব দেশের লোকদের প্রতি ঘৃণা ও করুণা হতো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন বৃদ্ধাশ্রম বা প্রবীণনিবাস সময়ের দাবি। কিছুদিন আগে ভারত ভ্রমণে গিয়ে দেখলাম উন্নত বিশ্বের ওল্ড হোম বা নার্সিং হোম থেকে আসা বয়স্ক পর্যটকেরা প্রাণবন্ত, উৎসবমুখর। আমাদের দেশেও বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে আতঙ্ক বা ছুঁতমার্গের দিন শেষ হয়ে আসছে। কিছুদিন পর প্রবীণনিবাস প্রবীণদের কাছে ঈপ্সিত হয়ে উঠবে বলেও অনেকে বিশ্বাস করেন। কারণ, নিবাসগুলো যত দিন যাচ্ছে, ততই চাহিদাভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে হাজির হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের আদলে নিরাপত্তা, চিকিৎসা, বইপড়া, বিনোদন, ঘুরে বেড়ানো—সবই থাকছে এখানে। সরকারি সেবা কার্যক্রমে প্রবীণদের প্রবেশগম্যতা সীমিত। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশের ছয়টি বিভাগীয় সদরে প্রবীণনিবাস আছে বলে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান। প্রতিটিতে ৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। প্রবীণদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ভাতায়ও সীমাবদ্ধতা আছে। প্রবীণদের সম্পদ হিসেবে ভাবতে হবে। তাঁদের শারীরিক সক্ষমতা সীমিত হয়ে এলেও অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দিয়ে তরুণদের সমৃদ্ধ করতে পারেন। সরকারি-বেসরকারি-ব্যক্তিক—সব পর্যায় থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। একবার ফ্লাইট মিস হওয়াতে শিকাগো এয়ারপোর্টে রাত কাটাতে হয়েছিল। অনেক রাতে দেখলাম, এক অশীতিপর নারী জানালার কাচ মুছে বেড়াচ্ছেন। বেশ সচল। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর এক কোম্পানি তাঁকে কাজ দিয়েছে। তিনি এখন একা। এ বছরের উপার্জনটা তিনি কম্বোডিয়া ভ্রমণের জন্য জমাচ্ছেন বললেন।  বিশেষজ্ঞরা বলেন, জনসংখ্যার যে জনমিতির সুবিধা এখন বাংলাদেশে আছে, তা ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর আর থাকবে না। এই প্রবীণদের কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা এখন থেকেই ভাবতে হবে। ভাতা দেওয়ার পরিবর্তে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ফাউন্ডেশন গঠনের পরামর্শ দেন তঁারা। জন্মহার কমাতে কমাতে চীন-জাপানকে এখন বৃদ্ধদের দেশ বলে বিবেচনা করা হয়। চীনে প্রতি ১০ জনে ১ জন বৃদ্ধ। জাপানে মোট জনসংখ্যার শতকরা ৩৩ ভাগ বৃদ্ধ। আমরা প্রবীণদের ভালো রাখতে চাই। তার জন্য সরকারিভাবেও প্রয়োজন ব্যাপক কর্মসূচি। উম্মে মুসলিমা সাহিত্যকর্মীmuslima.umme@gmail.com
ভোট গ্রহণ এবং ফলাফলের এক সপ্তাহ পর আজ শুক্রবার অভিনয় শিল্পী সংঘের নতুন কার্যকরী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠান হচ্ছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বিকেল ৪টায় অভিষেক অনুষ্ঠান শুরু হবে।গত ২১ জুন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় অভিনয় শিল্পী সংঘের ২০১৯-২০২১ দ্বিবার্ষিক-বার্ষিক নির্বাচন। ওই দিন রাত ৮টা ২০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে তারকা শিল্পী শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি অভিনেতা তুষার খান ও মোহাম্মাদ মিজানুর রহমানকে পরজিত করেছেন। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেলেন অভিনেতা আহসান হাবিব নাসিম।। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান। সহসভাপতি পদে নির্বাচিত তিনজন হলেন-আজাদ আবুল কালাম, ইকবাল বাবু ও তানিয়া আহমেদ। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের জন্য দুটি পদে নির্বাচিত হয়েছেন রওনক হাসান এবং আনিসুর রহমান মিলন।অর্থ সম্পাদক পদে মোহাম্মাদ নূর এ আলম নয়ন, দপ্তর সম্পাদক শেখ মেরাজুল ইসলাম, অনুষ্ঠান সম্পাদক রাশেদ মামুন অপু, আইন ও কল্যাণ সম্পাদক শামীমা তুষ্টি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রাণ রায়, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক সুজাত শিমুল নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন মেয়াদে কমিটির ৭টি কার্য নির্বাহী সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন-নাদিয়া আহমেদ, সেলিম মাহবুব, জাকিয়া বারী মম, বন্যা মির্জা, মনিরা বেগম মেমী, শামস সুমন ও রাজীব সালেহীন।নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৬০৬ জন। এর মধ্যে টোকেন সংগ্রহ করে ভোট দিয়েছেন ৫১৪ জন। সেই হিসাবে ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে নির্বাচনে। ৫৭টি ব্যালট বাতিল হয়েছে। সঠিক হয়েছে ৪৫৭টি ব্যালট। প্রধান নির্বাচন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন খায়রুল আলম সবুজ। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মাসুম আজিজ ও বৃন্দাবন দাশ। তবে তারা ফল ঘোষণা করলেও দায়িত্ব গ্রহণ করতে তুলনামূলক বেশি সময় নিয়েছে নতুন কমিটি। কিছু জটিলতা বাধাগ্রস্ত করে নির্বাচন পরবর্তী কার্যক্রমকে। তবে ২৪ জুন সংগঠনটির নিকেতনের অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন নির্বাচনে বিজয়ীরা। সংগঠনের একাধিক সদস্য অভিযোগ করেন শপথ গ্রহণের আয়োজনের বিষয়ে তাদের জানানো হয়নি। তাদের দাবি গোপনেই নতুন কমিটি শপথ গ্রহণ করেছে।২৬ জুন অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি হিসেবে শহীদুজ্জামান সেলিম সচিবালয়ে গিয়ে তথ্যসচিব আবদুল মালেকের সঙ্গে এক আলোচনায় অংশ নেন। হঠাৎ করে কোন পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা ছাড়া শপথ গ্রহণ প্রসঙ্গে ২০১৯-২১ মেয়াদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে পুনর্নিবাচিত সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ সরকারিভাবে নিবন্ধিত সংস্থা। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমোদন পেয়েছি। সে আলোকে শপথও নিয়েছি। আজ আয়োজনে সাংবাদিক এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম, আগামী পরিকল্পনা জানিয়ে দেব।’
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ৩০ জনকে আটক করেছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার পুলিশ। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে কেন্দুয়া পৌর শহরের শামীম আহমেদ নামের এক ব্যক্তির বাসা থেকে তাঁদের আটক করা হয়। তাঁরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। চক্রটির প্রধান মুন্নাফকে আটক করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, আটক ৩০ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাৎক্ষণিকভাবে মুন্নাফ ও বুলবুল ছাড়া কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি। আটক করা ব্যক্তিদের থানা-পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আটক করার সময় তাঁদের কাছ থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল ফোন ও প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়। তাঁরা ওই ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে নতুন চাপ সৃষ্টি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার ঠিক আগের দিন টুইট করে ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, ভারত যে হারে শুল্ক বৃদ্ধি করেছে, তা অসমর্থনীয়। ভারতকে অবশ্যই ওই বৃদ্ধি প্রত্যাহার করতে হবে।মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই কড়া মনোভাব নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্তব্য করেননি ভারত সরকারের কোনো মন্ত্রীও। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপান চলে গেছেন। এই অবস্থায় ভারত কী করবে, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে মোদি কীভাবে ওই চাপ সামাল দেবেন, তা নিয়েই আপাতত জল্পনা চলছে।টুইটে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে কথা বলতে আমি মুখিয়ে রয়েছি। ভারত অনেক বছর ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধি করে রেখেছে। সম্প্রতি সেই শুল্কহার আরও বাড়ানো হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। শুল্ক কমাতেই হবে।’ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্রমোন্নতি সত্ত্বেও কয়েকটি বিষয় গলার কাঁটার মতো খচখচ করছে। যেমন রাশিয়া থেকে ৫০০ কোটি ডলারে অত্যাধুনিক এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার চুক্তি এবং শুল্ক বৃদ্ধি। কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমরা এত বোকা দেশ নই। ভারতকে দেখুন, বন্ধু দেশ। প্রধানমন্ত্রী মোদি এত ভালো বন্ধু। কিন্তু কী করেছেন! মোটরসাইকেলের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়েছেন। অথচ আমরা এক পয়সাও শুল্ক নিই না।’ ওই সাক্ষাৎকারের পর শুল্কহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ট্রাম্প বলেছেন, তা সত্ত্বেও ওই হার অযৌক্তিক।জাপানের ওসাকায় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগে ভারতে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। মোদি ও জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর মনোভাবের বিষয়টি পম্পেও উল্লেখ করেন। বৈঠকে দুই দেশই ‘জাতীয় স্বার্থের’ কথা উল্লেখ করেছেন। পম্পেওর সঙ্গে বৈঠকে ভারত এমন কোনো ইঙ্গিত দেয়নি যাতে মনে হয়, শীর্ষ সম্মেলনের আসরে মোদি নমনীয় হবেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রের মতে, সেই কারণে পম্পেওর সঙ্গে বৈঠকের পরপরই ট্রাম্প ওই টুইট মারফত ভারতের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করলেন।এস-৪০০ চুক্তির জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে ভারত। ভারত সেই নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় চাইছে। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানির ওপর ভারতকে কোনো শুল্ক দিতে হতো না। ১ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্র সেই সুবিধা তুলে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৫ জুন ভারতও ২৮টি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। ট্রাম্প ওই বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। টুইট মারফত চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যও তা-ই।
বিয়ের দাবিতে এক বিবাহিত নারীর বাড়ির সামনে অনশনে বসেছিল এক কিশোর (১৭)। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। কিশোরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন ওই নারীর বাবা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে । কিশোর কলেজছাত্র। সে এক  সন্তানের জননী ওই গৃহবধূর প্রেমে পড়েছে। ওই নারী তাঁর বাবার বাড়িতে থাকেন। সেই বাড়ির সামনে গতকাল সন্ধ্যায় গিয়ে কিশোর বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করে। বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত বাড়ি থেকে যাবে না বলে অবস্থান নেয়। স্থানীয় লোকজন চেষ্টা করেও কিশোরকে তার পরিবারের কাছে পাঠাতে পারেননি।গতকাল রাত ১০টার দিকে মোহনপুর থানার পুলিশ কলেজছাত্রকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। রাতেই ওই নারীর বাবা বাদী হয়ে কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা করেছেন। আজ শুক্রবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, ৩ বছর আগে পার্শ্ববর্তী বাগমারা উপজেলায় ওই নারীর বিয়ে হয়। তাঁর দুই বছরের ছেলেসন্তান রয়েছে। ওই নারীর স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। তিনি মোহনপুরে বেসরকারি সংস্থায় চাকরির সুবাদে তাঁর বাবার বাড়িতেই থাকেন।মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ জানান, কিশোরের বিরুদ্ধে এর আগে ওই নারীকে রাস্তায় উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে।
ফেনী পৌরসভার দুটি পৃথক স্থান থেকে এক যুবক ও এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ও রাতে লাশ উদ্ধারের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাহবুবর রহমান।পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল রাত ৮টার দিকে শহরের বিরিঞ্চি কদলগাজী রোডের স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পাশের কবরস্থানের একটি পুরোনো ভাঙা কবর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। পুলিশ সেখানে গিয়ে ওই ভাঙা কবর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় (২২) এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। তাঁর পরনে ছিল জিনসের হাফপ্যান্ট।পুলিশের ধারণা, ওই যুবককে ৫-৬ দিন আগে হত্যা করা হয়। এরপর লাশটি গুম করার উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা ওই ভাঙা কবরের মধ্যে ফেলে গেছে। এ ঘটনায় ফেনী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করেছে পুলিশ। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন মামলাটি তদন্ত করবেন।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেনী শহরের পাগলা মিয়া সড়কে (হাজারি রোড) এক কিশোর নির্মাণশ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখানে নির্মাণাধীন একটি ১০ তলা ভবনে কাজ করার সময় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে রাজমিস্ত্রির সহকারী ওই কিশোর মারা যায়। নিহত কিশোরের নাম তারেক হোসেন (১৫)। বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার চরবংশীতে। সপরিবারে ফেনীতে থাকত সে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
২০১৮ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৯ শতাংশ বা ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) গতকাল বৃহস্পতিবার ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০১৮’ বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখান থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার এ তথ্য পাওয়া গেছে।সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা।তবে ২০১৭ সালে ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ৪ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। বাংলাদেশি মুদ্রায় গতকাল এক সুইস ফ্রাঁর বিনিময়মূল্য ছিল ৮৬ টাকা ৪৩ পয়সা।২০১৬ সালের তুলনায় অবশ্য ২০১৭ সালে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার পরিমাণ কমে গিয়েছিল।সাধারণত সুইস ব্যাংক অর্থের উৎস গোপন রাখে। এসএনবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের বছরেও সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ বেড়েছিল। যেমন ২০১৩ সালে বিভিন্ন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ছিল ৩৭ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫১ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা ৪ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা।জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের বছরে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে যায়। তারই কিছুটা প্রমাণ সুইজারল্যান্ডের তথ্য থেকে পাওয়া গেছে।’আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আমরা দেখেছি, গত বছর আমদানি ব্যয় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ধারণা করা যায়, তার একটি অংশ পাচার হয়ে সুইজারল্যান্ডে গিয়ে জমা হয়েছে।’বাংলাদেশ থেকে অর্থ জমার পরিমাণ বাড়লেও ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকের জমার পরিমাণ কমেছে।সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থ জমার পরিমাণ কমার কারণ হিসেবে জানা গেছে, ভারত সরকারের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের এ-সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। ভারত সরকার সে দেশের অনেক অর্থ পাচারকারীর তথ্য সাম্প্রতিক সময়ে সুইজারল্যান্ড থেকে সংগ্রহ করেছে। তবে বাংলাদেশের বেলায় তেমনি ঘটেনি।আইন অনুযায়ী দেশ থেকে অর্থ পাচারের বিষয়টি তদারক করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। জানতে চাইলে সংস্থাটির প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে যত অর্থ জমা হয়েছে, তার সবই দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের হিসাবে প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশিদের যে অর্থ জমার তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থও রয়েছে। তাই জমা হওয়া অর্থের পুরোটাই যে অবৈধ বা পাচার হয়ে গেছে, তা বলা যাবে না। দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে কারা অর্থ জমা করেছে, আমরা নানাভাবে সেই তথ্য জানার চেষ্টা করেও জানতে পারিনি।’আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান আরও বলেন, ‘তথ্য জানতে হলে ব্যক্তির পুরো পরিচয় ধরে তথ্য চাইতে হয়। এ জন্য তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ভারত কী প্রক্রিয়ায় সুইজারল্যান্ড থেকে তথ্য নিয়েছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’
সময় যেন রকেটের চেয়েও দ্রুত ছোটে। তাকে থামাবে, সেই সাধ্য কারো নেই। নেই বলিউডের শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনেরও। তাই তো তাঁর আর কন্যা শ্বেতা বচ্চনের ছোট্টবেলার একটা ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, 'একদিন ও এরকম ছোট্ট ছিলো। আর কীভাবে যে এত বড় হয়ে গেলো টেরই পেলাম না।' সময় বহমান নদীর স্রোতের চেয়েও দ্রুত চলে গেছে। বড় হয়েছেন শ্বেতা, বুড়ো হয়েছেন অমিতাভ। কিন্তু সে তো শুধু ক্যালেন্ডারের হিসাব।সত্যি এটাই যে, বাবার কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না। আর সন্তানের কাছেও বাবা একই রকমভাবে বাবাই থেকে যায়। অমিতাভ বচ্চন কেবল ছোটবেলার শ্বেতা বচ্চন আর বড় হবার পরের শ্বেতা বচ্চনকে দেখে হিসাব মেলাতে পারছেন না। আত্মসমর্পন করেছেন সময়ের কাছে। যে সময় কারো কথা শোনে না, থেমে থাকে না কারও জন্য।এতটুকু অবসর পেয়ে তাই পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করতে বসে হিসাব কি একটু গোলমেলে হয়ে গেলো ৭৬ বছর বয়সী এই অভিনেতার? স্মৃতির হাওয়া টাইম মেশিন হয়ে এসে উড়িয়ে নিয়ে গেলো সেখানে, যেখানে শ্বেতা বচ্চন ছিলেন একেবারে শিশু। আর বাবা অমিতাভ বচ্চন তখন আর দশটা সাধারণ বাবার মতোই গোসল করাচ্ছিলেন তার সন্তানকে। ইনস্টাগ্রামে এই ছবি দেখে শ্বেতা বচ্চনের গাল লাল হয়েছে। নিজের ছোট্টবেলার ছবি নাকি এই লেখক, সাংবাদিক, উপস্থাপক, মডেল এবং দুই সন্তানের মাকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। বাবার পোস্টে তিনি মন্তব্য করেছেন, 'খুবই বিব্রতকর'।১৯৯৭ সালে শ্বেতার বিয়ে হয় ভারতের শিল্পপতি নিখিল নন্দার সঙ্গে। নিখিল বলিউডের প্রয়াত অভিনেতা রাজ কাপুরের নাতি। শ্বেতা ও নিখিলের সংসারেও দুই সন্তান নব্য নাভেলি ও অগস্ত্যা। অমিতাভ বচ্চন সময় পেলেই ঘুরে আসেন অতীতে, প্রায়ই পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করেন। শ্বেতা বচ্চন আর অভিষেক বচ্চনের ছোটবেলার ছবি শেয়ার করে জানান সন্তানের প্রতি এক সাধারণ বাবার অকৃত্রিম ভালোবাসা।গতবছরও তিনি শ্বেতার ছোটবেলার আর বড়বেলার দুটো ছবি কোলাজ করে প্রকাশ করেন। দুটোতেই শ্বেতার হাত ধরে রেখেছিলেন বাবা অমিতাভ। ছবিটি শেয়ার করে লিখেছিলেন, ‘আমি তার (শ্বেতার) হাত ধরে রেখেছিলাম, ধরে আছি আর সারা জীবন এভাবেই তার হাত ধরে রাখব...শ্বেতা আমার প্রথম সন্তান।’অমিতাভ বচ্চন বর্তমানে সুজিত সরকারের পরিচালনায় 'গুলাবো সিতাবো' ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত আছেন। এক সপ্তাহ আগে তিনি টুইটারে এই ছবিতে তাঁর 'ফার্স্ট লুক' প্রকাশ করেছেন। ছবিতে দেখা যায়, চোখে গোল ফ্রেমের চশমা, মুখ ভর্তি দাঁড়ি, গাঁয়ে ঢিলাঢালা পোশাক এবং মাথায় পেঁচানো কাপড়ে কৌতুহলী অমিতাভ বচ্চন। শুটিংয়ের প্রথম দিন এই ছবিটি সম্পর্কে লিখেছিলেন, 'একটি সিনেমা শেষ আর আরেকটি শুরু। আবারও একটা নতুন ভ্রমণ, নতুন জায়গা, নতুন শহর, নতুন ক্রু, নতুন গল্প এবং নতুন সহকর্মী। লক্ষ্ণৌতে আজ থেকে শুরু 'গুলাবো সিতাবো'।'
সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৪১৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ মৌসুমে এটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি।তিন দিন ধরে সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে বেশি। এতে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। সুরমা নদীর তীর উপচে পানি শহরের মাছবাজার, সবজিবাজার, উকিলপাড়া, সাহেববাড়ি ঘাট, বড়পাড়া, কাজীর পয়েন্ট, ওয়েজখালী এলাকায় ঢুকেছে। এসব এলাকায় রাস্তার ওপর কোনো কোনো জায়গায় হাঁটুপানি দেখা গেছে।এ ছাড়া শহরের কালীবাড়ি, মোহাম্মদপুর, ষোলোঘর কলোনি এলাকায়, পূর্ব নতুন পাড়া, রায়পাড়া, সোমপাড়া, হাজিপাড়া, জামতলা এলাকায় জলাবদ্ধতা বেড়েছে। মানুষের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে।নতুন পাড়া এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী প্রসেনজিৎ দে বলেন, রাত থেকে দুর্ভোগে পড়েছি। বাসার ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। রান্নাবান্নায় সমস্যা হয়েছে। নতুনপাড়া এলাকায় অনেকেরই এই অবস্থা। শহরের পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে।ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মঙ্গলকাটা বাজার ও আশপাশের এলাকা। তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কলাগাঁও ও আশপাশের এলাকার বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী জানিয়েছেন, তাঁর উপজেলায় পানি বাড়ছে। নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হবে বলে জানান তিনি।বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে শুক্রবার সকালে হাঁটু সমান পানি ছিল। উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রণজিৎ চৌধুরী জানান, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী বোগলাবাজার, বাংলাবাজার ও নরসিংহপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম জানান, উজান থেকে ঢল নামছে। একই সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। এর কারণে পানি বাড়ছে। ঢলের পানিতে বিভিন্ন গ্রামের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুঁইয়া জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় এই মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে উজান থেকে ঢল নামায় সুরমা নদীর পানি বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সুনামগঞ্জে বন্যা হয়ে যাবে। পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে পানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব জায়গায় সুরমা নদীর পানি তীর উপচে ঢোকেনি। পৌর শহরে যে পয়োব্যবস্থা আছে, এতে এত বৃষ্টির পানি ধারণ করার ক্ষমতা নেই। তাই পানি নামছে না। এ কারণেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেছেন, বৃষ্টি হচ্ছে, উজান থেকে ঢলও নামছে, যে কারণে পানি বাড়ছে। আমরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সব উপজেলায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উপমহাদেশের সেরা ক্রিকেট লড়াই কোনটি? অবশ্যই ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। অনেকে বলতে পারেন, সে তো টিকে আছে কাগজে-কলমে। আইসিসির ইভেন্ট ছাড়া গত অর্ধযুগে দুই প্রতিবেশী মুখোমুখি হলো কোথায়? তাদের দ্বৈরথ-সূর্য বরং অস্তগামী আর দিকচক্রবালে উঁকি দিচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথ।দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ভারত-পাকিস্তান সবশেষ মুখোমুখি হয়েছে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। রাজনৈতিক জটিলতায় এরপর আর কেউ কারও মাটিতে পা রাখেনি। এ সময়ে আইসিসির ইভেন্ট আর এশিয়া কাপ ছাড়া মুখোমুখি হয়নি দুই প্রতিবেশী। আর এই অচলায়তনের মধ্যে ভারতের নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঁকি দিয়েছে বাংলাদেশ। কথাটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। ভালো করে মনে করে দেখুন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারত-বাংলাদেশ লড়াইয়ের উত্তাপে ভোগেন দুই দেশেরই ক্রিকেটপ্রেমী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। উৎসবের নয়, বাগযুদ্ধের।আরেকটি ভারত-বাংলাদেশ লড়াই সামনে। বার্মিংহামে মঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সেমিফাইনালে ওঠার আশা টিকিয়ে রাখতে জয়ের বিকল্প নেই। এমন চাপের মুহূর্তে দুই দলের সাম্প্রতিক মুখোমুখি হওয়ার পরিসংখ্যান দেখলে আক্ষেপ বাড়বে। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর কেটে যাচ্ছে চার বছর। এ সময়ে ভারত-বাংলাদেশ খেলেছে মাত্র ৬টি ওয়ানডে! অর্থাৎ, চার বছরে গড়ে মাত্র দেড়টি করে ম্যাচ। বাংলাদেশ মাঠের লড়াইয়ে ধীরে ধীরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমিয়ে তুললেও অন্তত সাম্প্রতিক ম্যাচসংখ্যায় দ্বৈরথ বলার উপায় নেই। তাতে ক্ষতিটা হচ্ছে কার? অবশ্যই ক্রিকেটের।তা নয় তো কী? শ্রীলঙ্কা এখন ক্ষয়িষ্ণু শক্তি। আর পাকিস্তান? আজ ভালো তো কাল কী ঘটবে বলা যায় না। বিশ্বকাপেও ভারতের কাছে পাত্তাই পাচ্ছে না দলটি। ওয়ানডেতে এ উপমহাদেশের দলগুলোর মধ্যে ভারতের চোখে চোখ রেখে লড়াই করা সামর্থ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। দুটি দেশের ক্রিকেট বাজারই লাভের গুড়ে ভর্তি। এপার কিংবা ওপার—যে মাটিতেই ম্যাচ খেলান না কেন, গ্যালারিতে তিল ঠাঁই থাকে না! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব চলে। ক্রিকেটের এই রমরমা বাজারটুকু কেউ বোঝে না? অবশ্যই বোঝে, কিন্তু ঠিক কী কারণে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ এত কম মাঠে গড়াচ্ছে, সেটি ক্রিকেটের ‘রক্ষক’ সম্প্রদায় ছাড়া আর কে বলতে পারে!গত ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর মাত্র একবারই বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ভারত। সেটি ওই ২০১৫ সালেই। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরে দেশে ফিরেছিল ভারতীয় দল। এরপর ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে, তা আইসিসি ও এসিসির কল্যাণে। মানে, আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আর এশিয়া কাপ—যা আয়োজন করে থাকে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। আর গত বছর দুবাইয়ে এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ও শেষ ম্যাচটা (ফাইনাল) খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। লক্ষণীয় বিষয়, ২০১৬ সালে কিন্তু দুই দলের কোনো ম্যাচ দেখা যায়নি।ক্রিকেটের অন্তত সংক্ষিপ্ত সংস্করণে বাংলাদেশ এখন উপমহাদেশের ক্রিকেটশক্তি। একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। এশিয়া কাপ এ মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট। গত সাত বছরে চারবার মাঠে গড়িয়েছে এ টুর্নামেন্ট—যেখানে তিনবার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। ভারত-পাকিস্তান দুবার করে, শ্রীলঙ্কা একবার। শেষ পর্যন্ত হয়তো শিরোপা জিততে পারেনি, কিন্তু মন জিতে নেওয়ার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে থাকেনি। সবশেষ ফাইনালে ভারতের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের পর স্বয়ং ভারতের সাবেক ক্রিকেটার থেকে সমর্থকেরা প্রশংসা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলকে। আর সেটাই প্রথমবার ছিল না।বাংলাদেশ ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার ১৪ বছর আগে বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। অর্থাৎ, বেশ আগে থেকেই তারা ক্রিকেটের পরাশক্তিগুলোর একটি। এমন একটি দলের বিপক্ষে প্রথম হামাগুড়ি তারপর উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ। সেটিও এমন সময়ে, যখন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগুন প্রায় নেভার পথে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিদায় নিশ্চিত হওয়া সেই হার থেকে হিসাব করলে এই এক যুগে দুটি দলের লড়াইয়ে বিতর্ক কিংবা মুখরোচক অনেক গল্প-ঘটনাই আছে।২০১৫ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ‘নো বল’ বিতর্ক, মাহমুদউল্লাহর আউট, মওকা মওকা বিজ্ঞাপন, ওয়ানডে সিরিজে মোস্তাফিজকে ধোনির ধাক্কা, বাংলাদেশকে শেবাগের ‘অর্ডিনারি’ বলা কিংবা ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয়ের আগেই মুশফিকের অকালপক্ব উদ্‌যাপন—দ্বৈরথ বলার মতো বেশ ভালো ভালো উপকরণ মজুত আছে দুই দলের অতীত মুখোমুখির ইতিহাসে। সত্যি বলতে, ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের জায়গাটা ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ লড়াই—কিন্তু এ লড়াইকে এখনো দ্বৈরথ বলার সময় আসেনি। বলা ভালো, দ্বৈরথ বলতে দেওয়া হচ্ছে না। সেই দায়টুকু দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের ওপরই বর্তায়। নিয়মিত মুখোমুখি না হলে কী আর দ্বৈরথ বলা যায়?দুটি দেশের সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশাটুকু তাই থেকেই যায়—মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, ‘নিয়মিত’ কেন পাই না!
ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে মক্কার কুরাইশ, মদিনার ইহুদি, বেদুইন, পৌত্তলিকেরা সম্মিলিতভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছিল। খন্দক শব্দের অর্থ পরিখা বা গর্ত। যেহেতু এ যুদ্ধে অনেক পরিখা খনন করা হয়, তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে খন্দকের যুদ্ধ। এ যুদ্ধ আহজাব নামেও পরিচিত। আহজাব অর্থ সম্মিলিত বাহিনী।নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এই যুদ্ধে শত্রুদের সৈন্যসংখ্যা ছিল ১০ হাজার, যা ছিল মদিনার মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। মুসলিম বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল ৩ হাজার। কিন্তু তারা যে অভিনব যুদ্ধকৌশল অবলম্বন করে, তা শত্রুদের অজানা ছিল। ফলে তারা হতাশাগ্রস্ত ও পর্যুদস্ত হয়ে অবশেষে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মক্কা থেকে ১০ হাজার লোকের সম্মিলিত বাহিনী মদিনার দিকে যাত্রা করে। মক্কার সম্মিলিত বাহিনীর যুদ্ধযাত্রার খবর পেয়ে নবীজি (সা.) সাহাবিদের নিয়ে পরামর্শ করলেন। মদিনার তিন দিকে খেজুরগাছের বাগান। বাকি থাকে একদিক। (সালা পাহাড়কে পেছনে এবং ওহুদ পাহাড়কে সামনে রেখে পরিখা খনন হয়) সেদিকে পরিখা খননের কথা হজরত সালমান ফারসি (রা.) বললেন। পরিখা খনন ছিল পারস্য দেশের একটি যুদ্ধকৌশল। একটি ঘোড়া লাফ দিয়ে যতটুকু যেতে পারে, তার চেয়ে বেশি দূরত্বে গর্ত খনন করা হয়। তাই শুরু হলো পরিখা খনন। ১০ জন করে একটি গ্রুপ। প্রতিটি গ্রুপ দৈর্ঘ্য ১০ হাত, প্রস্থে ১০ হাত, গভীরতায় ১০ হাত পরিখা খনন করে। ছয় দিনে পরিখা খনন শেষ হয়। পরিখা খননকালে একটি বড় ও শক্ত পাথর সামনে পড়ে, যা ভাঙা অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাসুল (সা.)–কে বিষয়টি জানানো হলে তিনি এসে আঘাত করলে তা ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এ ঘটনা নবী করিম (সা.)-এর একটা বিশেষ মুজিজা।সম্মিলিত বাহিনী যখন মদিনায় এসে ‍উপনীত হয়, তখন সাহাবিদের খননকাজ শেষ। ১০ হাজার সেনার বাহিনী ওহুদ পাহাড়ের পাশে তাঁবু ফেলে। নবীজি হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৩ হাজার সাহাবি নিয়ে হাজির হলেন। দুই দল দুই দিকে, মাঝখানে খন্দক। কুরাইশ বাহিনী খন্দক দেখে হতভম্ব। তখন তারা মদিনা অবরোধ করে। শত্রুরা প্রায় এক মাস মদিনা অবরোধ করে রইল। এই অবরোধ এত কঠিন ছিল যে মুসলমানদের বহু বেলা খাবার না খেয়ে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু অবরোধকারীরা কিছুতেই পরিখা পার হতে পারল না।হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সৈন্যদের পরিখার বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করলেন। কাফেররা বাইরে থেকে পাথর ও তির ছুড়তে শুরু করলে এদিক থেকেও তার প্রত্যুত্তর দেওয়া হলো। এরই ভেতর বিক্ষিপ্তভাবে দু-একটি হামলাও চলতে লাগল। অবরোধ যত দীর্ঘায়িত হলো, শত্রুদের উৎসাহও তত কমতে লাগল। ১০ হাজার লোকের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। তার ওপর ছিল প্রচণ্ড শীত। এরই মধ্যে একদিন এমন প্রচণ্ড বেগে ঝড় বইল যে কাফেরদের সব ছাউনি উড়ে গেল। তাদের সৈন্যসামন্ত ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। তাদের ওপর যেন আল্লাহর আজাব নেমে এল। আর বাস্তবিকই আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের জন্য রহমত এবং কাফেরদের জন্য আজাব হিসেবেই এ ঝড় পাঠিয়েছিলেন। কাফেররা এ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারল না। অবস্থা বেগতিক দেখে ইহুদিরা আগেই সরে পড়েছিল। কুরাইশদেরও ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় রইল না।আহজাব যুদ্ধে ৮ জন মুসলিম শহীদ হন। অন্যদিকে, শত্রুপক্ষে ৪ জন মারা যায়। অবরোধের সময় কেউ বলেছেন ২৪ দিন, অন্য বর্ণনায় ১৫ দিন পাওয়া যায়। খন্দক যুদ্ধ সম্পর্কে আল্লাহপাক সুরা আহজাবে ৯ থেকে ২৭ পর্যন্ত ১৯টি আয়াত নাজিল করেন, যাতে এই যুদ্ধের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। খন্দক আমাদের এই শিক্ষা দেয়—ইমান ও ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহর ওপর আস্থা স্থাপন করলে আল্লাহর রহমত থেকে কেউ বঞ্চিত হয় না। ফেরদৌস ফয়সাল প্রথম আলোর হজ প্রতিবেদকafef78@gmail.com
রাজধানীর ৯২ ভাগ রিকশাই চলে টোকেনে। এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সমিতি, সংগঠন ও গ্যারেজ মালিকদের নামে এই টোকেন দেওয়া হয় নির্ধারিত চাঁদার বিনিময়ে। এই টোকেন স্টিকার আকারে রিকশার গায়ে লাগানো থাকে। রিকশার মালিকেরা গ্যারেজপ্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাসোহারা দিয়ে রিকশাগুলো সচল রাখেন। রিকশাচালকদের ওপর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) পরিচালিত গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা এই সংগঠনের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য গতকাল বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে বিলসের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।বিলসের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হতো। তবে ১৯৮৬ সালের পর থেকে রিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রয়েছে। তখন লাইসেন্সকৃত রিকশার সংখ্যা ছিল ৭৯ হাজার ৫৫৪টি। গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নগরে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রিকশা রয়েছে, যার ৯২ ভাগই চলছে টোকেন ব্যবহার করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, লাইসেন্সবিহীন রিকশাগুলোর বেশির ভাগই মাঝেমধ্যে জব্দ করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। জব্দ হওয়া ৭৯ ভাগ রিকশাই ঘুষের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়।গবেষণাটি সম্পন্ন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম খন্দকার এবং বিলসের কর্মকর্তা আবদুস সালাম। নগরের বাড্ডা, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও শাহজাহানপুর এলাকার ২০০ রিকশাচালকের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। এ ছাড়া ২০টি গ্যারেজ মালিক এবং দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। বিকল্প আরেকটি কাজের সুযোগ পেলেও রিকশা চালনা ছাড়তে চান না অনেক রিকশাচালকই। প্রতিবেদন অনুযায়ী এমন চালকের সংখ্যা ৮৫ ভাগ। এ ক্ষেত্রে চালকেরা তাঁদের আয়টাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কারণ রিকশাভাড়া, গ্যারেজের খরচ—এসব বাদে একজন রিকশাচালক মাসে গড়ে ১১ হাজার ১৫১ টাকা আয় করেন। দৈনিক ১২-১৬ ঘণ্টা রিকশা চালান যে চালকেরা, তাঁদের সর্বোচ্চ ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়।বিলসের ট্রেড ইউনিয়ন প্রশিক্ষক ও পরামর্শক খন্দকার আবদুস সালাম বলেন, সমাজে রিকশাচালকদের অবদানের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং আর্থসামাজিক অবস্থা, তাঁদের অধিকার, নিরাপত্তা, নাগরিক সুবিধা, বাসস্থানের অবস্থা প্রভৃতি বিষয় জানতে এই গবেষণা করা হয়েছে।বিলসের গবেষণা ৯৪ ভাগ রিকশাচালক অসুস্থ থাকেন জ্বর-কাশি, ঠান্ডা, গায়ে ব্যথা লেগেই থাকে ৩০ ভাগ চালক জন্ডিসে আক্রান্তগবেষণায় বলা হয়, জীবনমানে পিছিয়ে আছেন রিকশাচালকেরা। তাঁদের বিশ্রাম, খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগার সংকটে ভুগতে হয় প্রকটভাবে। জরিপ অনুযায়ী, ঢাকার ৯৪ ভাগ রিকশাচালক অসুস্থ থাকেন। জ্বর-কাশি, ঠান্ডা, গায়ে ব্যথা, দুর্বলতা লেগেই থাকে। ৩০ ভাগ চালক জন্ডিসে আক্রান্ত। কারণ, রাস্তাঘাটে সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া টয়লেটের সংকটে ভুগতে হয়।গবেষণায় রিকশাচালকদের বিভিন্ন সমস্যা ও ঝুঁকির বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ৪৭ ভাগ চালকই গ্যারেজে ঘুমান এবং একটি কক্ষে গড়ে ২১ জন রিকশাচালক বসবাস করেন। বাসকৃত গ্যারেজগুলোর মধ্যে ৯৬ ভাগেই বাতাস চলাচল অসন্তোষজনক। আর ৩৫ ভাগ চালক ভালো কোনো শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ পান না। এসব বিষয় ছাড়াও রিকশাচালকদের খাদ্য ও ধূমপান, মালিকানা ও গ্যারেজ থেকে সুবিধা, কাজের পরিবেশ, দুর্ঘটনা ও ক্ষতিপূরণসহ গবেষণার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।বিলসের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রতিবেদন প্রকাশের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংসদ শিরিন আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংসদ শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, রিকশা-ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি হারুণ-অর রশিদ।
বাবা-মায়ের কোল আলো করে এসেছিলেন তিনি। আদর করে বাবা নাম রাখলেন চাঁদের কণা। কে জানত বছর না ঘুরতে চাঁদের কণার জীবনে নেমে আসবে ঘোর অমাবস্যা। একদিন সেই অমানিশার ঘোর কাটবে—এ প্রত্যয়ে পাড়ি দিয়েছেন জীবনের ৩০ বছর। তবে এবার তাঁর দীর্ঘদিনের সংগ্রাম আর স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে চাঁদের কণা বাঁচার আকুতি নিয়ে আমরণ অনশন করছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তা চান প্রতিবন্ধী চাঁদের কণা। বাঁচার জন্য চান একটি চাকরি।সিরাজগঞ্জের প্রতিবন্ধী চাঁদের কণা দুদিন ধরে বাঁচার আকুতি নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করে যাচ্ছেন। পোলিও রোগ কেড়ে নিয়েছে তাঁর চলনশক্তি। শেষ সম্বল দুই হাত। অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে ২০১৬ সালে ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। তবে প্রতিবন্ধিতার কারণে যোগ্যতা অনুযায়ী কোথাও চাকরি পাচ্ছেন না চাঁদের কণা।চাঁদের কণার বাড়িতে উপার্জনক্ষমও কেউ নেই। চোখে দেখছেন অন্ধকার। তাই বাঁচার আকুতি তাঁর প্রধানমন্ত্রীর কাছে। চান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। নিজ উপার্জনে পরিবারের হাল ধরতে। ‘আমার মা নেই, প্রধানমন্ত্রী আমার মা। তাঁর বুকে একটু আশ্রয় চাই আমি’ লেখা প্ল্যাকার্ডটি তাঁর গলায় ঝোলানো। গত দুই দিন প্রেসক্লাবের সামনে হুইলচেয়ারে বসে নানান প্ল্যাকার্ড নিয়ে অনশনে বসেছেন তিনি।কথা বলে জানা গেল, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার বিয়াড়া গ্রামের আবদুল কাদেরের মেয়ে চাঁদের কণা। ৯ মাস বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে দুটি পা চলনশক্তিহীন হয়ে পড়ে। তখন চিকিৎসক বলেছিলেন, এর কোনো চিকিৎসা নেই। তবে নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে তা সারতে পারে। পরিবারে আর্থিক অভাব-অনটন ছিল। তাই কোনো ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা করা যায়নি। তখন কেবল এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী দুহাত। হাতে ভর দিয়ে এগিয়ে যাওয়া চাঁদের কণা তাঁর প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক মায়ের স্কুলেই স্কুলজীবন শুরু করেন। সেই শুরু। স্কুল ও কলেজজীবন চলতে থাকে নিজের অদম্য ইচ্ছা ও বাবা-মায়ের সহযোগিতায়। ভালোভাবেই চলছিল সব। বিপত্তি ঘটে ২০০৯ সালে। তিনি যখন স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী, তাঁর মা হাসনা হেনা বেগম পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। এর কিছুদিন পর তাঁর কলেজশিক্ষক বাবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এবং বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে তাঁর জীবনে প্রতিবন্ধিতার সঙ্গে নেমে আসে চরম দারিদ্র্য। শত কষ্টের মধ্যেও ২০১৬ সালে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে প্রথম বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।চাঁদের কণা বলেন, সব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন নিজেকে। গান, উপস্থাপনা, সংবাদপাঠ, প্রোগ্রাম প্রোডিউসিং, কম্পিউটারের নানান কাজে দক্ষতা অর্জন করেছেন বলে জানান। এরপর যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু পাননি। এ বছরই তাঁর সরকারি চাকরির বয়স শেষ। বাকি জীবনটা নিয়ে হতাশ তিনি।চাঁদের কণা আরও বলেন, ছোট দুই ভাইকে নিয়ে তিনি এখন ঘোর অমানিশা দেখতে পাচ্ছেন। একদিকে বাবা অসুস্থ, আর ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশোনা বন্ধের উপক্রম। তাই বাধ্য হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন তিনি।চাঁদের কণা বলেন, ‘আমিও তো একটা মানুষ। আমার যোগ্যতা আছে। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধিতার জন্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। জীবনের এই ঘোর সংকটে আজ শুধু বাঁচার আকুতি আমার।’ তিনি বলেন, ‘নিরুপায় হয়ে আজ পথে বসেছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমার কষ্টের কথা, সংগ্রামের কথা তাঁর কাছে বলতে চাই। বলতে চাই আমার জীবনের একটি গতি করে দিন।’
নব্বইয়ের দশকের বলিউড। মাধুরী দীক্ষিত ও গোবিন্দের নাচে মুগ্ধ হিন্দি ছবির ভক্তরা। এবার দুজন নাচলেন রিয়েলিটি শোতে। শুধু তাই নয়, গোবিন্দকে নাচও শেখালেন বলিউড নায়িকা মাধুরী দীক্ষিত।গোবিন্দ অভিনয়ে অনিয়মিত। মাধুরী এখনো অভিনয় করে চলেছেন। পাশাপাশি নাচও চলছে ঠিকঠাক। এখনো নাচছেন ঠিক আগের মতোই। টেলিভিশনের নাচের রিয়েলিটি শো ডান্স দিওয়ানের বিচারক তিনি। সেখানেই গোবিন্দ অতিথি বিচারক হিসেবে যান। বলিউডের জনপ্রিয় নাচের সঙ্গে দুজনে নাচেন । গোবিন্দ একসময় মাধুরীর কাছে কত্থক নাচের কৌশল শিখতে চান ।ভারতীয় গণমাধ্যম মুম্বাই মিরর বলছে, ওই রিয়েলিটি শোতে তাঁরা দুজন প্রথমেই রাজা বাবু সিনেমার একটি গানের সঙ্গে নাচেন। সে সময় তাঁরা মারাঠি ভাষায় কথাবার্তাও বলেন। এরপর একজন প্রতিযোগী ভরত নাট্যম পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন। লগান সিনেমার গানের সঙ্গে এটি পরিবেশিত হয়। এই নাচ দেখে গোবিন্দর মনে ধ্রুপদি নাচের কৌশল শেখার বাসনা জাগে। বিচারকের আসন থেকে তখন মাধুরী চলে আসেন মঞ্চে। গোবিন্দকে শিখিয়ে দেন কত্থক নাচের কিছু কৌশল। শুধু শিখেই শেষ নয়, মাধুরীর সঙ্গে গোবিন্দ নাচেন হাম দিল দে চুকে সানাম সিনেমার ‘আলবেলা সাজান’ গানের সঙ্গে।মাধুরী দীক্ষিতকে দেখা গেছে টোটাল ধামাল সিনেমায়। ছিলেন করণ জোহরের স্বপ্নের ছবি কলঙ্ক সিনেমাতেও। যদিও ছবিটি খুব একটা সফল হতে পারেনি বক্স অফিসে। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
কানাডার মন্ট্রিয়েলপ্রবাসী সুনামগঞ্জের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান দিলীপ কুমার চৌধুরী মারা গেছেন। তিনি সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সংস্কৃতিকর্মী ছিলেন।মন্ট্রিয়েলের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় ২৬ জুন বেলা দেড়টার দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন দিলীপ কুমার।মৃত্যুকালে দিলীপ কুমারের বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ।দিলীপ কুমার এক ছেলে, স্ত্রীসহ অনেক আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে বৃহত্তর সুনামগঞ্জবাসী গভীর শোক জানিয়েছে।
স্মার্টফোনের কারণের একসময়ের জনপ্রিয় অনেক পণ্য এখন ‘অচল’। এখন এর মধ্যে পড়ে গেছে ‘ডিজিটাল ক্যামেরা’। মানুষ এখন আর ছবি তুলতে খুব বেশি ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করছে না। ক্যামেরা অ্যান্ড ইমেজিং প্রোডাক্টস অ্যাসোসিয়েশন (সিআইপিএ) দীর্ঘদিন ধরে ডিজিটাল ক্যামেরা প্রযুক্তি পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে। এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৫১ সাল থেকে ডিজিটাল ক্যামেরার ব্যবহার শুধু বেড়েছে। এর মধ্যে ২০০৮ ও ২০১০ সালে ডিজিটাল ক্যামেরার বাজারের প্রবৃদ্ধি ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এরপর থেকে ক্রমাগত কমছে এর ব্যবহার।জার্মান বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টাটিসটা সিআইপিএর সদস্য অলিম্পাস, ক্যাসিও, ক্যানন, কোডাক, সনি ও নাইকনের মতো প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে বিশ্বব্যাপী সিআপিএ সদস্যদের তৈরি ফটো ডিভাইসের প্রবৃদ্ধি অনেক কমেছে। ২০১০ সালে সর্বোচ্চ ১২ কোটি ১০ লাখ ইউনিট ডিজিটাল ক্যামেরা বিক্রি হয়েছে। এরপর থেকে বাজারে ডিজিটাল ক্যামেরার চাহিদা ৮৪ শতাংশ কমে গেছে। গত বছরে মাত্র ১ কোটি ৯৪ লাখ ইউনিট ক্যামেরা বাজারে এসেছে, যা গত ১৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাজারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ কমেছে পোর্টেবল কম্প্যাক্ট ক্যামেরা, হাই-অ্যান্ড ইন্টারচেঞ্জেবল লেন্স ক্যামেরার ক্ষেত্রে।ক্যামেরায় মানুষের আগ্রহ কমার পেছনে দায়ী স্মার্টফোন। স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের স্মার্টফোন ও প্রথম আইফোনের সময় হয়তো ছবি তুলতে কম্প্যাক্ট ক্যামেরার প্রয়োজন বোধ করতেন অনেকেই। কিন্তু এখনকার যুগে আইফোন এক্সএস বা গ্যালাক্সি এস ১০–এর মতো ডিভাইসে অনেক ভালো ছবি তোলা যায়।বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৭ সালেই বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ২০০ বিলিয়ন ছবি তোলা হয়েছিল, যার ৮৫ শতাংশ ছবি তোলা হয়েছিল স্মার্টফোনে। মানব ইতিহাসে তখনই এটা সবচেয়ে বেশি তোলা ছবির রেকর্ড হয়ে গিয়েছিল। গত দুই বছরে এ সংখ্যা নিশ্চয়ই আরও অনেক বেড়ে গেছে! তথ্যসূত্র: এন্টারপ্রেনার ডটকম।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় এক নারীকে তাঁর নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাফরুজ্জামান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।নিহত নারীর নাম সাবিনা ইয়াসমিন (৪৮)। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, সাবিনা খোকসা মডেল টাউন এলাকায় একা থাকতেন। স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এই দম্পতির দুই ছেলে, এক মেয়ে। তাঁরা সবাই ঢাকায় থাকেন। বুধবার রাত থেকে সন্তানেরা মোবাইল ফোনে মা সাবিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ফোনে সাড়া না পেয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁরা হামিদা খাতুন নামের এক প্রতিবেশীকে বিষয়টি জানান। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাবিনার বাড়িতে যান হামিদা। সেখানে গিয়ে হামিদা দেখেন, বারান্দায় সাবিনার নিথর দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।খবর পেয়ে খোকসা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সাবিনার লাশ উদ্ধার করে। আজ শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।সাবিনার ছেলে বাঁধন বলেন, তাঁর মা টাকা দাদন দিতেন। দাদন থেকে অর্জিত অর্থে তাঁর পড়ালেখার খরচ চলত। দাদনের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে এই খুনের ঘটনা ঘটতে পারে।খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাফরুজ্জামান বলেন, সাবিনাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘরের বারান্দায় কাঁথা দিয়ে তাঁর লাশ ঢেকে রাখা ছিল।এই ঘটনায় সাবিনার মেয়ে শ্যামলী খাতুন বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছেন।পুলিশ জানায়, খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাবিনার সাবেক স্বামী বাদশা মিয়া ও অপর দুই নারীকে আটক করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় অ্যাম্বুলেন্স খাদে পড়ে একজন নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার নিশিন্ধা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।নিহত ব্যক্তির নাম মিজান (২২)। তিনি অ্যাম্বুলেন্সটির চালকের সহকারী ছিলেন। বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বাখালিয়া গ্রামে।ভালুকা হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল। নিশিন্ধা এলাকায় পৌঁছার পর চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে অ্যাম্বুলেন্সটি ১৫ থেকে ১৬ ফুট নিচে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মিজানের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অ্যাম্বুলেন্সের চালককে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁর পরিচয় জানা যায়নি।ভালুকা হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সালাম জানান, লাশ ও অ্যাম্বুলেন্সটি তাঁদের হেফাজতে আছে।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ এরশাদ (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এর এক দিন আগে গত বুধবার রাতে কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কে এরশাদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে অপর একটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে।মোহাম্মদ এরশাদ উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া মাইজপাড়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ ইউনুচের ছেলে। তিনি কেঁওচিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও কেরানীহাট প্রগতিশীল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সদস্য ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় লোকজন।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বুধবার রাতে মোহাম্মদ এরশাদ মোটরসাইকেলে করে বান্দরবান থেকে সাতকানিয়ার গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতকানিয়ার মাহালিয়া রাস্তার মাথা এলাকায় কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কে সামনের অন্য একটি মোটরসাইকেল হঠাৎ ইউটার্ন দিলে পেছনে থাকা এরশাদের মোটরসাইকেলটি ওই মোটরসাইকেলের সঙ্গে জোরে ধাক্কা খায়। এতে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে গিয়ে সড়কের পাশের একটি পিলারের সঙ্গে ধাক্কা খান এরশাদ। এ সময় অন্য মোটরসাইকেলের আরোহী মোহাম্মদ সাহেদও আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন আহত দুজনকে উদ্ধার করে কেরানীহাটের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করেন। এরশাদের অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাঁকে চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। সাতকানিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নাসির উদ্দিন রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুতগতির দুইটি মোটরসাইকেল আগে-পিছে ছুটছিল। সামনের মোটরসাইকেলটি কোনো সংকেত ছাড়া হঠাৎ ইউটার্ন করতে গেলে পেছনের মোটরসাইকেলটি এসে ধাক্কা খায়। এতে মোটরসাইকেলের আরোহী যুবলীগ নেতা এরশাদ মাথায় গুরুতর আঘাত পান। অন্য মোটরসাইকেলের আরোহী সামান্য আহত হন। গতকাল রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এরশাদ মারা যান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কলাম লেখক ই জা ক্যারলের ধর্ষণের অভিযোগ বিষয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন দুই নারী। ক্যারল মার্টিন ও লিসা বার্নব্যাচ নামের দুই নারী দাবি করেছেন, ধর্ষণের কথা তাঁরা জানতেন। ২৩ বছর আগে ঘটনার পরপর ক্যারল তাঁদের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে তাঁদের একজন পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে বললেও ট্রাম্প ক্ষমতাধর উল্লেখ করে অন্যজন ঘটনাটি পুলিশকে না জানাতে বলেছিলেন।নিউইয়র্ক টাইমসের পডকাস্ট দ্য ডেইলিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওই দুই নারীর বক্তব্য প্রচার করা হয়। ৩০ মিনিট ৭ সেকেন্ডের ওই অডিও সাক্ষাৎকারটি স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার প্রচারিত হয়। ক্যারল মার্টিন ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন। আর লিসা বার্নব্যাচ একজন লেখক।মার্কিন কলাম লেখক ক্যারলকে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ক্যারল ‘ডাহা মিথ্যা’ বলছেন এবং ‘তিনি আমার ধাঁচের না’।নিউইয়র্ক টাইমসের পডকাস্টে দুই নারীর প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলা প্রসঙ্গে আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইন সংবাদ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ৭৫ বছর বয়সী ক্যারল ১৬তম নারী, যিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনলেন। যদিও ৭৩ বছরের ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।বিশ্বজুড়ে খ্যাতনামা ফরাসিভিত্তিক জীবনযাপনবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘এল’–এর কলাম লেখক ক্যারল একই পডকাস্টে বলেছেন, ঘটনাটি ঘটার পর তিনি বার্নব্যাচকে ফোন করেছিলেন। তিনি তাঁকে (বার্নব্যাচ) বলেছিলেন যে ট্রাম্প তাঁকে জোর জবরদস্তি করেছেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বার্নব্যাচ তাঁকে বলেছিলেন, এটা ধর্ষণ এবং পুলিশকে তা জানানো উচিত।বার্নব্যাচ বলেন, ঘটনাটি শুনে তিনি ক্যারলকে বলেছিলেন, ‘চলো পুলিশের কাছে যাই। আমি তোমার সঙ্গে যাব।’ কিন্তু তাঁর বন্ধু পুলিশের কাছে যেতে অস্বীকৃতি জানান।ঘটনাটির বর্ণনা করতে গিয়ে ক্যারল বলেন, তাঁর ও ট্রাম্পের মধ্যে ওই সময় ‘লড়াই’ হয়েছিল, ‘অপরাধ’ নয়। তিনি বলেন, তাঁর এমন মনে হয়েছিল যে তাঁর উসকানিতে ট্রাম্প এমন আচরণ করেছেন। এ ঘটনায় নিজের কতটা দায় আছে বলে মনে করেন প্রশ্ন করলে ক্যারল জবাব দেন, ‘এক শ ভাগ’।ক্যারল জানান, ঘটনার দুই-তিন দিন পর তিনি তা মার্টিনকে জানান। মার্টিন তাঁকে পুলিশের কাছে যেতে নিষেধ করে বলেন, ট্রাম্প ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তাঁর বহু আইনজীবী আছেন।পডকাস্টে বিষয়টি তুলে ধরে মার্টিন বলেন, ‘আমি তাঁকে (ক্যারল) বলেছি, এটা কাউকে বলতে যেয়ো না। আমিও কাউকে বলব না।’এল ম্যাগাজিনে ১৯৯৩ সাল থেকে ‘আসক ই জিন’ শিরোনামের উপদেশমূলক কলাম লেখেন ক্যারল।গত শুক্রবার ই জা ক্যারল নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রথমবারের মতো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯৫ সালের শেষে বা ১৯৯৬ সালের শুরুতে। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বের্গডর্ফ গুডম্যান স্টোরে কেনাকাটা করতে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। ওই সময় তিনি ছিলেন উঠতি তারকা। আর ট্রাম্প আবাসন ব্যবসার কেউকেটা। ট্রাম্প অন্য এক নারীর জন্য পোশাক কিনতে গিয়ে তাঁর পরামর্শ চেয়েছিলেন এবং কৌতুকের সঙ্গে বলেছিলেন তিনি (ক্যারল) মডেল হিসেবে পোশাকটি পরে তাঁকে দেখাবেন কি না। ক্যারল জানান, ট্রাম্প আর তিনি পোশাক পরিবর্তনের কক্ষে যান। ওই সময় হঠাৎ ট্রাম্প তাঁকে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালে চেপে ধরেন এবং জোর–জবরদস্তি করতে থাকেন। অনেক চেষ্টার পর তিনি ট্রাম্পকে সরাতে সক্ষম হন।ক্যারল জানান, তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার কথা ভাবছেন।নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনে ক্যারলের সাক্ষাৎকার প্রকাশের এক দিন পর শনিবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে আনা ধর্ষণের অভিযোগকে ‘কল্পকাহিনি’ বলে উড়িয়ে দেন। ওই বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘ক্যারলের সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। নতুন বই বেচার চেষ্টা করছে সে, তার কর্মকাণ্ড সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। এই বই কল্পকাহিনি শাখায় বিক্রি করা উচিত।’ ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্যারল কিংবা নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনের সঙ্গে কাজ করছে, এমন কোনো তথ্য পেলে হোয়াইট হাউসকে জানাতে বলেছেন তিনি।গত সোমবার মার্কিন সংবাদপত্র দ্য হিলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও এ অভিযোগের বিষয়টি উড়িয়ে দেন ট্রাম্প। ক্যারল তাঁর নতুন বই ‘হোয়াট ডু উই নিড মেন ফর? এ মোডেস্ট প্রপোজাল’–এর কাটতি বাড়াতে এমন অভিযোগ করেছেন বলে দাবি করেন। ট্রাম্পের সঙ্গে ক্যারলের ছবি নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনে প্রকাশ হলেও ট্রাম্প তাঁকে চেনেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘তিনি (ক্যারল)...এটা ভয়ানক ব্যাপার যে মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারে।’ ক্যারলের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর এ নিয়ে তৃতীয়বারে মতো অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প।এর আগে ২০১৬ সালে ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে জেসিকা লিডস নামে আরেক নারীর অভিযোগও এভাবে অস্বীকার করেছিলেন। ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন, আশির দশকে উড়োজাহাজে তাঁকে বাজেভাবে স্পর্শ করেছিলেন ট্রাম্প।
এই বিশ্বকাপই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। তবে মাশরাফি বিন মুর্তজা ক্রিকেটকে বিদায় বলছেন না এখনই। খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বকাপের পরও।প্রশ্নটা বিব্রতকর। বিশ্বকাপের মধ্যে একটু স্পর্শকাতর। দল ভালো খেলছে। বাংলাদেশের চোখে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের স্বপ্ন। এই সময়ে দলের অধিনায়কের কাছে তাঁর অবসর-ভাবনা জানতে চাওয়া প্রশ্নকর্তার জন্যও সাহসের ব্যাপার। তবু মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেই কৌতূহল তো থাকেই। তবে প্রশ্নটা করে ফেলার পর মাশরাফি যা বললেন, তাতে মনে হলো এ রকম কিছুর জন্য তিনি তৈরিই ছিলেন।বিশ্বকাপের মধ্যেই মাশরাফি একদিন কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, অবসর নিয়ে তখনো কিছু ভাবেননি। ২০১৯ বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগে এ নিয়ে চিন্তাও করতে চান না। কিন্তু কাল সিদ্ধান্তটা এক রকম জানিয়েই দিলেন বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘এখনই খেলা ছাড়ছি না। আমি আরও খেলব। বোর্ড থেকে কোনো নির্দেশনা এলে আলাদা কথা। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার আপাতত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার চিন্তা নেই।’এবারের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পর যে বিশ্বকাপে আর খেলবেন না, সে ঘোষণা আগেই দিয়েছেন। পরের বিশ্বকাপ ২০২৩ সালে, মাশরাফির পক্ষে ওই পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়াও হয়তো সম্ভব হবে না। শেষ বিশ্বকাপ বলেই অনেকটা জোর করে স্ত্রী সুমনা হক, মেয়ে হুমায়রা ও ছেলে সাহিলকে ইংল্যান্ডে নিয়ে এসেছেন মাশরাফি। সুমনার এমনিতে ক্রিকেট দেখায় তেমন আগ্রহ নেই। এবার তবু গোটা চারেক ম্যাচ তিনি মাঠে বসে দেখেছেন। ভাই মোরসালিন বিন মুর্তজা মাশরাফির সঙ্গে আছেন বিশ্বকাপের শুরু থেকে। বিশ্বকাপের মধ্যে মাশরাফির বাবা গোলাম মুর্তজাও চলে আসেন ইংল্যান্ডে। সবার আসার একটিই উদ্দেশ্য—মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপের সাক্ষী থাকা। ‘বিশ্বকাপ আর খেলব না, এটা তো বলেই দিয়েছি। সে জন্যই চেয়েছি পরিবারের সবাই আসুক, খেলা দেখুক’—বলছিলেন মাশরাফি।শেষ বিশ্বকাপের ঘোষণা দেশে থাকতে দিলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফি, সে ব্যাপারে সবারই কৌতূহল আছে। ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর প্রায় ১৮ বছর হয়ে গেছে তাঁর ক্যারিয়ারের বয়স। চোট-আঘাত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বহুবার। দুই হাঁটুতে সাতবার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। মাশরাফি তবু থমকে যাননি। প্রতিবার ফিরেছেন দ্বিগুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে। চোটের সঙ্গে লড়াই জেতার এমন উদাহরণ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেই আর আছে কি না সন্দেহ।আবার এসব কারণে ওই প্রশ্নও ওঠে। বয়স প্রায় ৩৬ হয়ে গেছে। পেস বোলার হিসেবে শরীরটাকে আর কত টানতে পারবেন তিনি! পালন করতে হচ্ছে ওয়ানডে দলের অধিনায়কের দায়িত্বও। এবার তো সাংসদও নির্বাচিত হয়েছেন। বয়স এবং গুরুত্বপূর্ণ দুটি দায়িত্বের ভার সামলে খেলায় কতটা মনোযোগী থাকতে পারবেন মাশরাফি, সে প্রশ্নও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেই গত কয়েকটি ম্যাচ তিনি খেলছেন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে, যার কিছুটা প্রভাব তো খেলায় পড়ছেই। বিশ্বকাপের পরও খেলা চালিয়ে গেলে ফিটনেসের প্রসঙ্গ আরও বেশি করেই আসবে। অবসরের ব্যাপারে নিজের সিদ্ধান্ত মাশরাফিই এত দিন রহস্যাবৃত করে রেখেছিলেন। যখনই জানতে চাওয়া হয়েছে, বলেছেন, খেলা ছাড়বেন নাকি চালিয়ে যাবেন, সে সিদ্ধান্ত নেননি। কিন্তু পরশু প্রসঙ্গটা আবার উঠলে মাশরাফি জানিয়ে দিলেন, এখনই অবসর নিচ্ছেন না। তিনি আরও খেলবেন। আর যেহেতু বিশ্বকাপ চলছে, এই মুহূর্তে অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়া অনুচিতও মনে হয় তাঁর কাছে, ‘আমি আরও খেলব, এটা ঠিক। আর বিশ্বকাপের মধ্যে ও রকম কিছু করতেও চাই না। তাতে পুরো দলের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। খেলোয়াড়েরা যা-ই করবে, বলবে, ওরা এটা আমার জন্য করছে বা করতে চায়। এটা চাচ্ছি না। আমি চাই বিশ্বকাপটা সবাই নিজের মতো করে খেলুক। এখানে অন্য কিছু না আসুক।’ তবে নিজের একটা মনোভাব দলের মধ্যে গোপন রাখেননি মাশরাফি। ওয়ানডের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকেই দেখেন তিনি। সেদিন কী একটা প্রসঙ্গে ড্রেসিংরুমে মাশরাফি দলের ক্রিকেটারদের বলেছেন, ‘সামনে সাকিব অধিনায়ক হচ্ছে। তখন ওর সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করিস।’বিসিবির শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলে যতটুকু জানা গেছে, বিশ্বকাপের পর মাশরাফি খেলা চালিয়ে যেতে চাইলে বোর্ড তাঁর ইচ্ছাকে সম্মান দেখাবে। মাশরাফির নেতৃত্বেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাম্প্রতিক উত্থান। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘মাশরাফি’ একটা আবেগেরও নাম। বিসিবির যদিও ধারণা, বিশ্বকাপের পর হয়তো মাশরাফি নিজেই অবসরের ঘোষণা দেবেন, তবে না দিলেও তারা সেটিতে আপত্তি করবে না। মিডিয়া কমিটির প্রধান ও বিসিবির পরিচালক জালাল ইউনুস প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘মাশরাফির অবসরের ব্যাপারে বোর্ড কিছু বলবে না। সে এখনো আমাদের নেতা। ও যদি মনে করে খেলা চালিয়ে যাবে, তো খেলতে পারে। আবার ও যদি অবসর নিতে চায়, সেটাতেও বোর্ড বাধা দেবে না।’মাশরাফির কোর্টে ‘বল’ দিয়ে রাখার কারণটা অনুমেয়ই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাঁর শক্ত অবস্থান এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। মাশরাফিকে আগ বাড়িয়ে অবসর নিতে বলে সেগুলোর কোনোটারই প্রতিপক্ষ হতে চায় না বিসিবি। তবে আর সবার মতো কৌতূহলটা আছে তাদেরও, বিশ্বকাপের পরই কি বিদায় বলবেন মাশরাফি? কৌতূহলের পিঠেই থাকে গুঞ্জন। মাশরাফির অবসর নিয়েও আছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী বছর ঢাকায় বিশ্ব একাদশের ম্যাচ আয়োজন করার পরিকল্পনা বিসিবির। সে ম্যাচটিও নাকি হতে পারে মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচ।তবে এই প্রতিবেদককে দুষ্টুমির ছলে বলা মাশরাফির শেষ কথাটা কিন্তু ভিন্ন চিন্তারও খোরাক দেয়, ‘আর তো দুটো ম্যাচ। দেখেন...দুই ম্যাচ পর সিদ্ধান্ত বদলেও ফেলতে পারি।’
কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একাধিক মামলার পলাতক আসামি দুই ভাই নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার হ্নীলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পেছনে এ ঘটনা ঘটে।গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার হ্নীলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পেছনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন উপজেলার হ্নীলা ইউপির পূর্ব সিকদার পাড়ার মো. আব্দুস সালাম (২৮) ও তাঁর ভাই আব্দুর রহমান (৩০)।পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থল থেকে ২টি এলজি, ৫টি কার্তুজ, ১২টি গুলির খোসা, ২টি ছুরি ও ২টি কিরিচ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্য আহত হন। তাঁরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুজ্জমান, কনস্টেবল মো. হেলাল ও মো. রাসেল।পুলিশ জানায়, নিহত আব্দুল সালামের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাসহ ছয়টি এবং আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। তাঁরা পলাতক ছিলেন। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে আব্দুস সালাম ও আব্দুর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হয়। এ সময় তাঁদের সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে গুলিবিদ্ধ দুজনকে উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক তাঁদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালের দিকে দুজন মারা যান। টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. জাকারিয়া মাহমুদ বলেন, রাত দেড়টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাঁদের শরীরের তিনটি করে গুলির চিহ্ন দেখা গেছে।ওসি বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য দুজনের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ১২০ জন মারা গেছেন।
ভবিষ্যতে কর্মীরা আর বাঁধাধরা কাজে খুব বেশি আগ্রহ দেখাবেন না। তাঁরা ঝুঁকে পড়বেন ফ্রিল্যান্সিং কাজের দিকে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক চাকরির প্ল্যাটফর্ম টোটাল জবসের করা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন বিষয় উঠে এসেছে। ২০১৭ সালে মে মাস থেকে ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত ২ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এ সময়ের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং কাজ খোঁজার হার ১৩২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।ফ্রিল্যান্সিং কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহের বিষয়টি জানতে ২ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করেন টোটাল জবসের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা দাবি করেছেন, আগের চেয়ে যুক্তরাজ্যে প্রচলিত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চাকরির প্রথা ভাঙছে বেশি। সেখানকার কর্মীরা শিথিল নিয়ম ও বেশি বেতনের কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ জন্য চুক্তিভিত্তিক বা ফ্রিল্যান্সিং কাজ বাড়ছে দেশটিতে।ফ্রিল্যান্স কাজের আগ্রহ বাড়তে থাকায় চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দল বড় করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন খাতের দক্ষ কর্মীকে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে তাদের ব্যবসার মূল্য বাড়ছে এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ ও ধারণা যুক্ত হচ্ছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাকরিদাতাদের জন্য ফ্রিল্যান্সাররা প্রয়োজনে শূন্যতা পূরণের হাতিয়ার হতে পারেন। যত বেশি ফ্রিল্যান্সার এ ধরনের কাজে আগ্রহী হবেন, তত চাকরিদাতাদের মেধাবী ফ্রিল্যান্সার আকর্ষণের সুযোগ খুঁজে নিতে হবে। তবে ফ্রিল্যান্সারদের ধরে রাখতে ভালো সুযোগ-সুবিধাও বজায় রাখতে হবে।ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহ বাড়তে থাকায় চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রচলিত স্থায়ী চাকরির বিষয়গুলো নিয়ে কী করা যায়, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কাজের সময়ের ক্ষেত্রে নমনীয় হওয়া, দূরে বসে কাজের সুযোগের মতো বিষয়গুলো নিয়ে চাকরিদাতাদের ভাবতে হবে। চার দেয়ালের মধ্যে কর্মীকে আটকে রাখার বদলে তাদের ফ্রিল্যান্স কাজের সুযোগ সৃষ্টি করাটা জরুরি।
নোবেলজয়ী ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসে লেখালেখির জগৎ সম্পর্কে জানা আছে অনেকের। কিন্তু সাংবাদিক মার্কেসের জগৎ? সম্প্রতি বেরিয়েছে দ্য স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি অ্যান্ড আদার রাইটিংস শিরোনামে তাঁর একটি বই। এখানেই আছে সাংবাদিক মার্কেসের আদ্যোপান্ত। জাদুবাস্তবতার সবচেয়ে সফল প্রয়োগ যাঁর লেখনীতে ফুটে উঠেছে, তিনি হলেন কলম্বিয়ার নোবেলজয়ী ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। তাঁর কালজয়ী উপন্যাস এক শ বছরের নিঃসঙ্গতায় (ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিটিউড) একটি ঘটনার অদ্ভুত এক বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে পিস্তলের গুলিতে নিহত এক ব্যক্তির দেহনিঃসরিত রক্তস্রোত পৌঁছে যায় চেনা সড়কের পথ ধরে নিজের বাসভবনে, আর ওই রক্তের উপস্থিতিই গৃহকর্তার কাছে পৌঁছে দেয় সেই মৃত্যুসংবাদ। বাস্তবে নয়, কল্পনাতেই এটা সম্ভব। পুরো উপন্যাসে এমন অসংখ্য বর্ণনার দেখা আমরা পাই, যেগুলো বাস্তবকে মিশিয়ে দিয়েছে বর্ণালি এক জগতের সঙ্গে, কল্পনা এখানে ডানা মেলে মিশে গেছে আমাদের জীবনের সুখ-দুঃখের মধ্যে।মার্কেসের এসব কল্পনার উৎস কী, তা নিয়ে সরাসরি কোনো কিছু জীবদ্দশায় বলে যাননি লেখক। জীবনের একেবারে শেষ দিকে তিনি আত্মজীবনী রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যার প্রথম খণ্ড লিভিং টু টেল দ্য টেল (বেঁচে আছি গল্পটি বলব বলে) ছাপার মুখ দেখলেও এর পরবর্তী অংশ তিনি আর শুরু করতে পারেননি।আত্মজীবনীর সেই প্রকাশিত প্রথম অংশে আদি পৈতৃক নিবাস বিক্রি করে দেওয়ার জন্য মায়ের সঙ্গে লেখকের গ্রামের বাড়ি আরাকাতাকা-যাত্রার যে উল্লেখ আছে, প্রকারান্তরে তা-ই বলে দেয় এক শ বছরের নিঃসঙ্গতার পরিচিত গ্রাম মাকোন্দোর কথা। সেই বিবরণ অবশ্য লেখালেখির জগতে কীভাবে তিনি প্রবেশ করেছিলেন, তার ইঙ্গিতও আমাদের দেয়। জানতে পারি, সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালন লেখালেখির প্রতি মার্কেসের তখন পর্যন্ত সুপ্ত থেকে যাওয়া আকর্ষণকে আরও অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে সাংবাদিকতা থেকেই যে গল্পকথক মার্কেসের সূচনা, সে কথা বললে সত্যের অপলাপ হবে না। আত্মজীবনীতে তিনি নিজেই বলেছেন দৈনিক পত্রিকা এল এসপেতাদোর–এ নিয়মিত সংবাদভাষ্য লিখে কতটা আনন্দে কাটছিল তাঁর যৌবনের দিনগুলো।সম্ভবত যৌবনের সেই প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা সাংবাদিকতার দিনগুলোর কথা মনে করেই গার্সিয়া মার্কেস পেশা হিসেবে নিজেকে সব সময় লেখক নয়, বরং দেখেছেন সাংবাদিক হিসেবে। আর্থিক প্রাপ্তির দিক থেকে টানাটানির জীবন কাটাতে হলেও সাংবাদিকতা তাঁকে কাছে টেনে নিয়েছে। বলা যায় প্রায় আজীবন তিনি কাজ করে গেছেন দৈনিক পত্রিকা কিংবা সাময়িকীতে। এর বাইরে বিভিন্ন সময় নিজেও আবার সরাসরি যুক্ত ছিলেন কয়েকটি সাময়িকীর প্রকাশনার সঙ্গে।শেষ বয়সে মার্কেস এমন মন্তব্য করেছিলেন: ‘এক শ বছরের নিঃসঙ্গতার লেখক হিসেবে নয়, এমনকি সাহিত্যে নোবেলজয়ী হিসেবে নয়, বরং তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান একজন সাংবাদিক হিসেবে।’ সাংবাদিকতাকে তিনি উল্লেখ করেছেন ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পেশা’ এবং সেই সঙ্গে ‘মানবতার জৈবিক এক প্রয়োজনীয়তা’ হিসেবে।কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঔপন্যাসিক মার্কেস আমাদের কাছে যতটা পরিচিত, সাংবাদিক মার্কেস ঠিক ততটাই অপরিচয়ের। লাতিন আমেরিকার একটি দেশের সংবাদপত্রের সঙ্গে জীবনভর যুক্ত থাকা এবং বিশ্বের অন্যান্য ভাষায় সেসব লেখা খুব একটা প্রকাশিত না হওয়াই হয়তো এর প্রধান কারণ। আবার সাংবাদিক-গদ্যগুলো যেহেতু বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সীমিত গণ্ডির এবং কেবল সুনির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্যই কেবল প্রাসঙ্গিক, ফলে এসব রচনা নিয়ে বিদেশিদের মধ্যে সেভাবে আগ্রহ না থাকাই স্বাভাবিক। সম্ভবত এ জন্যই বেশির ভাগ সময় তা অনুবাদের বাইরে থেকে যায়। মার্কেসের সাংবাদিকতার লেখার বেলায়ও যে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি সেটা বলাই যায়, যদিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত অন্তত তিনটি গ্রন্থে সাংবাদিক মার্কেসের পরিচয় খুব সহজেই পেয়ে যাই আমরা।সেই তিন বইয়ের প্রথমটি হচ্ছে এক জাহাজডুবি নাবিকের গল্প (দ্য স্টোরি অব এ শিপ রেক্টড সেইলর)। যে বইয়ের কাহিনির সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, জাহাজডুবির পর প্রাণে বেঁচে যাওয়া নৌবাহিনীর এক নাবিকের সাক্ষাৎকার সাংবাদিক হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন মার্কেস। মূল স্প্যানিশ ভাষায় বেশ আগে বইটি প্রকাশিত হলেও এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে।এর এক বছর পর চিলিতে পিনোশের সামরিক শাসনের প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা আমরা পাই তাঁর চিলিতে গোপনে (ক্ল্যান্ডেস্টাইন ইন চিলি) শিরোনামের বইয়ে। চলচ্চিত্র নির্মাতা মিগুয়ে লিতিন বইটির প্রধান চরিত্র। এর ঠিক দশ বছর পর প্রকাশিত হয় সাংবাদিকতার ওপর ভিত্তি করে লেখা মার্কেসের তৃতীয় বই একটি অপহরণ সংবাদ (নিউজ অব আ কিডন্যাপিং)। মেদেইনের মাদকচক্রকে নিয়ে লেখা হয়েছে বইটি। ফলে মার্কেস যে কেবল উপন্যাস রচনায় নিয়োজিত থেকে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে দাবি করেছেন, মোটেই তা নয়। দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। এতটাই জড়িত ছিলেন যে ১৯৭০-এর দশকের শেষে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো নয়া বিশ্বের তথ্য ব্যবস্থার সম্ভাবনা পরীক্ষা করে দেখার জন্য আয়ারল্যান্ডের রাজনীতিবিদ শন ম্যাকব্রাইডের নেতৃত্বে যে কমিশন গঠন করেছিল, সেখানে একজন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন মার্কেস।২০১৪ সালে এ সাহিত্যিকের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ইংরেজি ভাষার পাঠকেরা এবার প্রথমবারের মতো সুযোগ পাচ্ছেন তাঁর সাংবাদিকতা-সংশ্লিষ্ট বাছাই কিছু রচনা পাঠের। যুক্তরাষ্ট্রের নামী প্রকাশনা কোম্পানি আলফ্রেড কনফ গেল মে মাসে বাজারে এনেছে দ্য স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি অ্যান্ড আদার রাইটিংস নামের সেই বই। বইটির ইংরেজি অনুবাদক অ্যান ম্যাকলিন।১৯৫০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে লেখা মার্কেসের কলাম, প্রতিবেদন ও অন্যান্য রচনার নির্বাচিত এক সংকলন হলো এই বই।মার্কেসের উপন্যাসে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর স্বদেশ কলম্বিয়া। সাংবাদিকতায় থাকা অবস্থায় লেখা তাঁর অধিকাংশ রচনার কেন্দ্রেও রয়েছে নিজের দেশ। তবে বিস্তৃতির দিক থেকে আলোচ্য বইটির পরিমণ্ডল আরও খানিকটা সম্প্রসারিত। নিকারাগুয়ার বিপ্লবে সান্দানিস্তা গেরিলা যোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ অবরোধের বর্ণনার পাশাপাশি বিমানভ্রমণ নিয়ে লেখকের মনে সব সময় দেখা দেওয়া আতঙ্কের কথাও পাঠক এর মধ্য দিয়ে জেনে নিতে পারবেন। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানকালে সমকালীন বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে দেওয়া মার্কেসের বর্ণনার মধ্যেও তাঁরা পেতে পারেন চমকের দেখা। খুব সহজ ভাষায় লেখকদের আর্থিক সংকটের বর্ণনা দিতে গিয়ে মার্কেস এখানে যেমন বলেছেন, শ্রেষ্ঠ লেখক হলেন তাঁরাই, যাঁরা লেখেন কম আর ধূমপান করেন অনেক বেশি। ফলে এটা খুবই স্বাভাবিক যে ২০০ পৃষ্ঠার একটি বই লিখতে তাঁদের দরকার হয় কম করে হলেও ২৯ হাজার সিগারেট। তাই অঙ্কের হিসাবে এর অর্থ হলো—ধূমপানে তাঁরা যে অর্থ ব্যয় করছেন, এর পরিমাণ বই লিখে যে অর্থ তাঁরা উপার্জন করবেন, তার চেয়ে বেশি।মার্কেসের সাংবাদিকতা কেবল লেখালেখির মধ্যেই সীমিত থাকেনি। ইউনেসকোর ম্যাকব্রাইড কমিশনে তাঁর অন্তর্ভুক্তির কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৯৪ সালে লাতিন আমেরিকার নব্য সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করতে কলম্বিয়ার কার্তাগেনায় যে ফাউন্ডেশন তিনি গড়ে তুলেছিলেন, তা এখনো সক্রিয় আছে। ফলে নানা দিক থেকে সাংবাদিকতার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন এই লেখক।এবার দেখা যাক, কী আছে মার্কেসের দ্য স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি অ্যান্ড আদার রাইটিংস-এ। বইটি শুরু হয়েছে ১৯৫০ সালে প্রকাশিত তাঁর একটি নিবন্ধ দিয়ে, যেখানে তিনি কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতির নাপিত বা ক্ষৌরকারের কথা বলতে গিয়ে কিছুটা হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে পাঠকদের শুনিয়েছেন তাঁর নিজের কল্পনায় দেখা সেই নাপিতের জীবনের একটি আকাঙ্ক্ষা কীভাবে বাস্তবায়িত হয়, সেই কথা। চলমান সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে মার্কেসের গভীর দূরদৃষ্টির দেখা সহজেই মেলে এই নিবন্ধের একেবারে শেষ বাক্যে এসে। মার্কেস কল্পনায় দেখছেন প্রেসিডেন্টের সেই ক্ষৌরকার, যে কিনা প্রতিদিন প্রেসিডেন্টের গলা ঘেঁষে ক্ষুরের ছোঁয়া বুলিয়ে দেয়, তার নিজের প্রেসিডেন্টের আসনে বসার সুযোগ হলে সেই ব্যক্তি কী করতেন? মার্কেস বলছেন, টেলিফোন অপারেটরকে অন্য প্রান্তে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার যে আদেশ হয়তো তিনি দিতেন, সেটা এমন শোনাতে পারত: ‘অপারেটর, জনমতের সঙ্গে আমাকে লাগিয়ে দিন তো।’সাংবাদিকদের যে কখনো কখনো লেখার বিষয়বস্তু খুঁজে পেতে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় ভুগতে হয়, মার্কেস নিজেও তা থেকে মুক্ত ছিলেন না। এ বিষয়টি বোঝা যায় তাঁর ‘চলমান বিষয়বস্তুর বিষয়’ শিরোনামের লেখায়। যেকোনো বিষয় নিয়ে লেখা শুরু করতে পারাকে তাঁর কাছে কঠিন কাজ বলেই মনে হয়েছে সব সময়। বিষয়বস্তু খুঁজে পাওয়ার অভাবকে সাংবাদিকদের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হলেও শেষ পর্যন্ত সংবাদপত্রে লেখার কোনো কমতি থাকে না। একেবারে কোনো কিছু যেখানে নেই, তাকেও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থিত করতে পারার মধ্যে সাংবাদিক হিসেবে সফল হতে পারার ইঙ্গিত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন, ‘এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা বিষয়বস্তুর অভাবকেই সাংবাদিকের জন্য আকর্ষণীয় বিষয়ে পরিণত করে নিতে পারেন।’ এই যে আমরা প্রতিদিনের সংবাদপত্রে নিয়মিতভাবে এ রকম খবরের মুখোমুখি হচ্ছি, সেই বর্ণনা দেওয়ার জন্য তিনি বিশেষ একটি দিনের দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন খবরের উল্লেখ করেছেন, এসবের মধ্যে ব্রাজিলের কফি-সংকট থেকে শুরু করে স্পেনের একনায়ক ফ্রাঙ্কোর কন্যার বিয়ের খবরও আছে। তবে এখানেও মার্কেসের লেখকসুলভ সূক্ষ্ম কৌতুকবোধের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যখন তিনি আমাদের জানিয়ে দেন যে স্পেনে জেনারেলিসমো ফ্রাঙ্কোর হবু জামাতাকে ইতিমধ্যে সান-ইন লসমো হিসেবে কেউ কেউ ডাকতে শুরু করেছেন।আর সম্পাদকীয় নিবন্ধের বেলায় মার্কেসের মন্তব্য খুবই খোলামেলা, ‘সম্পাদকীয় পড়ুন। প্রতিটি বিশেষণে দেখবেন অদম্য সেন্সরের বলিষ্ঠ উপস্থিতির ছাপ। ফলে কী আর করা? কমিকসের দিকেই শেষ পর্যন্ত নজর দিতে হয়।’সাংবাদিকতায় তিনি যে সব সময় কেবল সমকালীন অপ্রীতিকর ঘটনাবলির দিকে আলোকপাত করে লেখালেখি করেছেন, তা নয়। এমনকি পরবর্তী জীবনে লেখা তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসের প্লটও আগাম জায়গা করে নিতে পেরেছে সেখানে। যেমন, ১৯৫৪-তে লেখা ‘বেন্দিয়াদের বাড়ি’ প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো মার্কেসকে দেখা যায় এক শ বছরের নিঃসঙ্গতা উপন্যাসের প্লট খুঁজে পাওয়ায় নিয়োজিত থাকতে। ওই প্রতিবেদনকে একই সঙ্গে একটি উপন্যাসের জন্য লেখা সংক্ষিপ্ত নোট হিসেবেও তিনি উল্লেখ করেছেন। সেখানে আছেন কলম্বিয়ার বিপ্লবে যোগ দিয়ে ঘরে ফিরে আসা কর্নেল আরেলিয়ানো বেন্দিয়া, কর্নেলের স্ত্রী দোনা সোলেদাদ এবং পরিচিত সেই বাড়ি। ফলে বিশ্বখ্যাত এ উপন্যাসের কাহিনি যে অনেক দিন থেকেই মার্কেসকে আলোড়িত করে চলছিল, তাঁর সাংবাদিক গদ্যের মধ্যেও উঠে এসেছে তার বর্ণনা।১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এসে মার্কেস সক্রিয় সাংবাদিকতা থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলেও এ পেশার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কখনোই ছিন্ন হয়নি। নিয়মিতভাবে লিখে যাওয়ার বদলে বরং নিজের পছন্দের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এরপর থেকে অনিয়মিতভাবে কলাম লিখে গেছেন তিনি।১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে তাঁর যে দুটি লেখা অনেকের নজর কেড়েছে, সেগুলো ছিল ভেনেজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজ ও কলম্বীয় বংশোদ্ভূত পপতারকা শাকিরাকে নিয়ে। শাকিরার পৈতৃক নিবাস একসময় ছিল বারাঙ্কিলায়, কলম্বিয়ার যে শহরে মার্কেস কাটিয়েছেন জীবনের বড় একটি সময়।মার্কেসের সাংবাদিকতায় বিপ্লব-পরবর্তী কিউবার প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে এসেছে বারবার। এর কারণ যতটা না আদর্শগত দিক থেকে কিউবার বিপ্লবী চেতনার সঙ্গে তাঁর নিজের সম্পৃক্ত থাকা, এর চেয়ে বেশি হলো সাংবাদিকতার সূত্রে ফিদেল কাস্ত্রোসহ কিউবার বিপ্লবীদের সঙ্গে গড়ে ওঠা তাঁর গভীর বন্ধুত্ব। এই বন্ধুত্বের সূচনা হয়েছিল মার্কেসের প্রথম কিউবা সফর থেকেই।ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবার বিপ্লবীরা ফুলগেন্সিও বাতিস্তার সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের দুই সপ্তাহ পর ১৯৫৯ সালের জানুয়ারিতে সে দেশে গিয়েছিলেন মার্কেস। বিপ্লবের ঠিক পরপর বার্বুদোস নামে পরিচিত হয়ে ওঠা শ্মশ্রুধারী তরুণ বিপ্লবীদের একটি দল জরাজীর্ণ এক বিমানে ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে পৌঁছায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সেখান থেকে বিদেশি কয়েকজন সাংবাদিককে নিয়ে এসে বিপ্লব-পরবর্তী কিউবার পরিস্থিতির সঙ্গে সরাসরি পরিচয় করানো। মার্কেস ছিলেন সেই সাংবাদিকদের দলের একজন। পুরোনো ওই বিমানটি হাভানায় পৌঁছানোর পর সেখান থেকে প্রথম যে প্রতিবেদনটি তিনি পাঠান, তার শিরোনাম ছিল ‘শিরোনাম আমি ভেবে পাচ্ছি না’। ওই প্রতিবেদনে প্যারিসের লাতিন কোয়ার্টারে কিউবার কবি নিকোলাস গিয়েনের সঙ্গে কয়েক বছর আগের এক আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে মার্কেস লিখেছেন: ‘এমনকি প্যারিসের শীতকালের কঠিন সময়েও গিয়েন মোরগের ডাকে খুব সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে কফির কাপে চুমুক দিয়ে পত্রিকার পাতায় চোখ বোলানোর অভ্যাস ধরে রেখেছিলেন (যদিও প্যারিসে কোনো মোরগ ছিল না)...এরপর নিজের শহর কামাগুয়েতে যেমনটা তিনি করতেন, ঠিক সেভাবে ব্যালকনির জানালা খুলে লাতিন আমেরিকা-সংক্রান্ত সব কটি খবর কিউবার কথ্য ভাষায় অনুবাদ করে চিৎকার করে পড়তে পড়তে পাড়ার অন্যদের ঘুম ভাঙিয়ে দিতেন। ...তবে একদিন সকালে জানালা খুলে একটিমাত্র সংবাদ চিৎকার করে বলে যাচ্ছিলেন তিনি—“সেই মানুষটি মারা গেছেন!” ‘কে মারা গেলেন, তা নিয়ে ঘুমন্ত পাড়ায় হঠাৎ কেমন একটা উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। আর্জেন্টাইনরা ভেবেছিল, সেই ব্যক্তি হলেন হুয়ান দোমিঙ্গো পেরোন; প্যারাগুয়ের মানুষ ভেবেছিল, তিনি আলফ্রেদো স্ট্রয়েসনার; গুয়াতেমালানরা ভেবেছিল, কাস্তিলো আরমাস; ডোমিনিকানরা মনে করেছিল, রাফায়েল লিওনিদাস ত্রুহিলো; আর কিউবানরা ভেবেছিল, ফুলগেন্সিও বাতিস্তা। আসলে তিনি ছিলেন পেরোন। পরে এ নিয়ে কথা বলার সময় কিউবার নিদারুণ দৈন্যদশার বর্ণনা আমাদের কাছে দিয়েছিলেন গিয়েন। সবশেষে তিনি বলেছিলেন, “ভবিষ্যতের জন্য একমাত্র ভালো যা আমি দেখছি, তা হলো মেক্সিকোতে অনেক কিছু করে যাওয়া সেই যুবক।” এরপর ভবিষ্যদ্রষ্টার মতো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তিনি বক্তব্য শেষ করেন এই কথা বলে—“সেই যুবকের নাম ফিদেল কাস্ত্রো!”’সেই প্রথম ফিদেল কাস্ত্রোর নাম শুনেছিলেন মার্কেস। আর ওই ফিদেলের নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া বিপ্লবের সূচনালগ্নে নিজের হাভানায় পৌঁছে যাওয়ার বর্ণনা তিনি দিয়েছিলেন এভাবে: ‘দুপুরের আগেই আমাদের বিমান নেমে আসে হাভানার সবচেয়ে ধনী মানুষদের ব্যাবিলনীয় সব প্রাসাদকে চারদিকে রেখে দাঁড়িয়ে থাকা কাম্পো কলুম্বিয়া বিমানবন্দরে, যে বিমানবন্দর এর মধ্যেই পেয়েছে এক নতুন নাম—সিউদাদ লিবেরতাদ। মাত্র কয়েক দিন আগে যেখানে ছিল বাতিস্তার শক্ত দুর্গ, কামিলো সিয়েনফুয়েগোস সেখানে এখন তাঁর বিস্ময়ভরা চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখা বিপ্লবী কৃষক যোদ্ধাদের ঘাঁটি গড়ে নিয়েছেন। আমাদের প্রথম অনুভূতি ছিল যেন অনেকটা কৌতুককর, কেননা সাবেক সামরিক বিমানবাহিনীর যে সদস্যরা সেখানে আমাদের স্বাগত জানান, একেবারে শেষ মুহূর্তে তাঁরা বিপ্লবীদের পক্ষে যোগ দিয়েছেন এবং নিজেদের ব্যারাকে বসবাসরত অবস্থায় ইতিমধ্যে তাঁরা নিজেদের যেন বিপ্লবীদের মতো দেখা যায় সে জন্য শ্মশ্রুধারী হতে শুরু করেছেন।’সেই প্রথম কিউবাভ্রমণ থেকে ফিদেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে মার্কেসের, যা অটুট ছিল তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত। প্রথমবার ভ্রমণের পর বারবার মার্কেস গেছেন বিপ্লবী কিউবায়। কাছের কিছু মানুষের অপছন্দ সত্ত্বেও কিউবা আর ফিদেলের সমর্থনে অনবরত ধরেছেন কলম। যেমন, ‘অবরোধের মোকাবিলা করছেন কিউবার জনগণ’ শিরোনামে এক সাংবাদিক-গদ্যে কিউবার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে তিনি লিখেছিলেন: ‘অবরোধ যখন শুরু হয় সেই প্রথম রাতে কিউবায় ছিল ৪ লাখ ৮২ হাজার ৫৬০টি মোটরগাড়ি, ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩০০টি ফ্রিজ, ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭০০টি রেডিও, ৩ লাখ ৩ হাজার ৫০০টি টেলিভিশন, ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯০০টি বৈদ্যুতিক ইস্তিরি, ২ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০টি ফ্যান, ৪১ হাজার ৮০০ ওয়াশিং মেশিন, ৩৫ লাখ ১০ হাজার হাতঘড়ি, ৬৩টি লোকোমোটিভ বা রেল ইঞ্জিন এবং ১২টি বাণিজ্যিক জাহাজ। এর মধ্যে কেবল সুইজারল্যান্ডে তৈরি ঘড়ি ছাড়া বাদবাকি সবকিছু ছিল আমেরিকায় তৈরি।‘মনে হয় এসব প্রাণঘাতী সংখ্যা নিজেদের জীবনে কোন অর্থ বহন করবে, তা বুঝে ওঠার জন্য কিছুটা সময় কিউবার লোকজনের লাগবে। উৎপাদনের দৃষ্টিকোণ থেকে কিউবা দ্রুতই বুঝে উঠতে পারবে যে ভিন্ন কোনো অস্তিত্বের দেশ সেটি ছিল না, বরং দেশটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ।’মার্কেস এভাবে একের পর এক সাংবাদিক হিসেবে লিখেছেন নানা রকম লেখা। সেই লেখাগুলো সংকলিত হয়ে আছে সদ্য প্রকাশিত দ্য স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি অ্যান্ড আদার রাইটিংস বইয়ে। ফলে দেরিতে হলেও এ বইটি লেখক মার্কেসের পাশাপাশি সাংবাদিক মার্কেসকে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ করে দেবে।
ভারতে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘুদের মধ্যে। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশটিতে শহর ও গ্রামাঞ্চলের নারী-পুরুষের মধ্যে সংখ্যালঘুরাই বেশি বেকার। লোকসভায় গতকাল বৃহস্পতিবার এ সমীক্ষা তুলে ধরেন ভারতের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি।লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক প্রশ্নের জবাবে মুখতার আব্বাস নকভি ‘পিরিয়ডিক লেবার সোর্স সার্ভের’ বরাত দিয়ে সংখ্যালঘুদের বেকারত্বের চিত্র তুলে ধরেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ওই ‘২০১৭-১৮ সালের শ্রমিকদের সমীক্ষা বা’ পিরিয়ডিক লেবার সোর্স সার্ভে’ প্রতিবেদন।এতে বলা হয়, ভারতে শহরাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হিন্দু পুরুষ বেকার, নারীদের মধ্যে এই হার ১০ শতাংশ। অন্যদিকে, সাড়ে ৭ শতাংশ মুসলিম পুরুষ ও সাড়ে ১৪ শতাংশ মুসলিম নারী বেকার। খ্রিষ্টান পুরুষদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, নারী বেকারের হার ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। শিখ পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ শিখ নারী বেকার।গ্রামাঞ্চলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হিন্দু পুরুষ ও ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হিন্দু নারী বেকার। মুসলিম পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৭ শতাংশ মুসলিম নারী বেকার। খ্রিষ্টান পুরুষদের ৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং নারীদের ৮ দশমিক ৮ শতাংশ বেকার। শিখ পুরুষদের বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, নারী বেকারের হার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
অবস্থা এখন এমনই দাঁড়িয়েছে। যেটাই বেছে নেবেন, দুর্গতি অবশ্যম্ভাবী। খারাপের মধ্যেই বাছাই করতে হবে। এবার সিদ্ধান্ত আপনাদের। বাছবেন কোনটি?এমন পরিস্থিতিকে আখ্যা দিতে বাংলায় বেশ ভালো একটি প্রবাদ আছে, শাঁখের করাত। এই করাতে ধার সর্বত্র। তাই যেদিকেই যান ক্ষতবিক্ষত হতেই হবে। সেই ধার চলে আসতে পারে চাপাতি বা দা–তে। সেগুলো খড়্গ হয়ে নেমে আসতে পারে আপনার ঘাড়ে-গলায়। তবে ভাববেন না যে আপনি একা! অনেকেই আছে এদিক-সেদিক। কেউ হয়তো তাকিয়ে দেখছে অপলকে, কেউ চালু করেছে ক্যামেরা। এভাবেই আপনার মৃত্যু ইন্টারনেটে অক্ষয় রূপ ধারণ করবে। কিছুদিন হইচই হবে। ওই যা হয় আর কি! আগেও হয়েছে ঢের। একদিন সবাই আপনার নাম-পরিচয়-অবয়ব ভুলে যাবে, আপনার নিহত হওয়ার ‘আকর্ষণীয়’ ভিডিও মোবাইল থেকে মুছে যাবে। কারণ, তত দিনে চলে আসবে নতুন ভিডিও, নতুন মৃত্যু। হয়তো আগের দিন যিনি ভিডিও করেছিলেন, তাঁর মৃত্যুই ধারণ হবে ক্যামেরায়।এক বন্ধুর সৌজন্যে কিছুদিন আগে একটি শর্টফিল্ম দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। ভারতীয় নির্মাতা গৌরব শর্মার লেখা ও পরিচালনায় ছবিটির নাম ‘দ্যাট ম্যান ইন দ্য পিকচার’। একটি অনলাইন স্ট্রিমিং ওয়েবসাইটে দেখা যায় ছবিটি। ১৮ মিনিটের এই ছবির মূল কাহিনি একজন মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষকে কেন্দ্র করে লেখা। রাস্তায় ঘটে যাওয়া একটি অপরাধ নিরাপদ দূরত্বে থেকে অবলোকন করেছিল সে। ভয় পেয়েই তাতে জড়াতে চায়নি, অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করেনি। কিন্তু লোকটির নির্বিবাদে এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকার সেই দৃশ্য ধরা পড়ে যায় এক সিসিটিভি ক্যামেরায়। তবে তাতে তাকে চেনা যায়নি। আর যায় কোথায়! গণমাধ্যম সেই ছবি প্রকাশ করে ‘সাধারণ’ নাগরিকের ‘নির্লিপ্ত’ আচরণের সমালোচনায় মেতে ওঠে। ওই ব্যক্তিও পুড়তে থাকে অনুশোচনায়। শেষে নিজের বিপদেও একই অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। শুধু আক্রান্তের জায়গায় ছিল ছবির মূল চরিত্র এবং প্রতিবাদ না করে নির্বিবাদে পালিয়ে যাওয়ার তালিকায় দেখা যায় আরেক ‘সাধারণ’ নাগরিককে!এ দেশেও পরিস্থিতি ভিন্ন নয়। এখানেও রাস্তাঘাটে, বিভিন্ন ভবনে নানা আকারের সিসিটিভি ক্যামেরা দেখতে পাওয়া যায়। অপরাধের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা জানানোই এসব ক্যামেরার কাজ। তাতে অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। কিন্তু অপরাধের প্রতিকার কী হয়? হয় না। যদি হতো তবে ব্লগার-অ্যাকটিভিস্ট হত্যার বিচারও এত দিনে হতো। হয়নি। একজন অপরাধী যখন দেখছে, বইমেলা চলার সময় এত মানুষের মধ্যেও কাউকে কুপিয়ে জান নিকেশ করে সদর্পে বেরিয়ে যাওয়া যায়, তখন আর ভয় কীসের! তাই নির্ভীক চিত্তে চলে দা-তে শাণ দেওয়া। ঝকঝকে রোদে চকচকে ছুরি-দা নিয়ে চলে হামলা। আর তাতে কারও জীবনে পড়ে দাড়ি, আর কারও ফেসবুকে লাইক বাড়ে তাড়াতাড়ি।বরগুনায় বুধবার সকালে দিনদুপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে রিফাত শরিফকে। স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। পেশাগত কারণেই এই ঘটনার ভিডিও পুরোটা দেখতে হয়েছে। সে এক যন্ত্রণা বটে! মুখ দিয়ে হয়তো বেরিয়ে পড়ে, ‘কেউ এগিয়ে এল না?’ আয়েশারও অভিযোগ, কেউ এগিয়ে আসেনি। কিন্তু এগোবে কে? এই অতিমাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক সমাজের সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতা। নির্বিবাদে জীবন কাটানোই এখন মূলমন্ত্র, তাতে কারও মাথা কাটা গেলে যাক। আমার গর্দান টিকে থাকলেই হলো, সেই বেঁচে যাওয়া মস্তিষ্কই চালাবে ছিদ্রান্বেষণ! তা না হলে যে নিজের দোষ ঢাকা দেওয়া যাবে না।ঘটনাও যে একটি ঘটেছে, তা তো নয়। এমন অসংখ্য ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। চলতি মাসেই নরসিংদীতে ফুলন রানী বর্মণ নামের এত তরুণীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বুধবার সকালে তিনি মারা গেছেন। আবার বুধবার ভোরেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিউটি আক্তার নামের সংরক্ষিত নারী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বিউটি সকালে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন, সেখানেই হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এসব নিয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া হয়নি। কারণ, নিষ্ঠুরতার মাপকাঠিতে মেপে সর্বোচ্চটাতেই মানুষ গুরুত্ব দিয়েছে। সুতরাং জনসাধারণের ‘মনোযোগ’ পেতে মৃত্যু হতে হবে চমক–জাগানিয়া, শিহরণযোগ্য। তবেই ভার্চ্যুয়াল জগতে ঝড় উঠবে, শুরু হবে আলোচনা।জবাই ও কোপ নিয়ে উর্দু ভাষার বিখ্যাত গল্পকার সাদত হাসান মান্টো একটি দাঙ্গাবিষয়ক গল্প লিখেছিলেন। ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত মান্টোর গল্পগ্রন্থ ‘সিয়াহ হাশিয়ে’-তে গল্পটি আছে। তাতে দেখা যায়, জবাই আর কোপ দিয়ে হত্যার বর্ণনা দিচ্ছে দুই ব্যক্তি। একজন আরেকজনকে জানাচ্ছিল ধীরে ধীরে পোঁচ দিয়ে জবাই করার ‘বীরত্ব’। তাতেই মেজাজ খিঁচড়ে যায় আরেকজনের, কারণ তার মতে—কোপ দিয়ে ধড় আলাদা করা বেশি ভালো। তাই জবাই করায় মজা পাওয়া ব্যক্তির গলা এক কোপে আলাদা করে দেয় সে।দেশভাগের সময়কার দাঙ্গার নৃশংসতা এখনো দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে আরও তীব্রভাবে। আগে নৃশংসতার কাহিনির সঙ্গে পাল্লা দিত মানবিকতার গল্পও। ভয় পেলেও কেউ না কেউ দাঁড়াত আক্রান্তের পাশে। আর এ যুগে হাত দিয়ে কোপ ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা একা করে যায় আক্রমণের শিকার ব্যক্তি। ভয়ে কুঁচকে যাওয়া আমরা আঙুল টিপি মোবাইল স্ক্রিনে, শেয়ার করি হামলার ভিডিও। এর চেয়ে বেশি কিছু করতেও আমাদের বাধা সেই ‘ভয়’, প্রতিবাদ করতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণটা না আবার খোয়াতে হয়!আর তাই বিনয় মজুমদারের লেখা কবিতার ভাষায় বলতে গেলে, ‘...এত স্বাভাবিকভাবে সবই ব্যর্থ—ব্যর্থ, শান্ত, ধীর।’ (ফিরে এসো, চাকা)অর্ণব সান্যাল: সাংবাদিক arnab.sanyal@prothomalo.comআরও  পড়ুন :নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কী বিচার চাইবজবাই নাকি কোপ—পছন্দ কোনটা?রিফাত হত্যার আসামিদের দেশত্যাগ ঠেকাতে রেড অ্যালার্টবহু অভিযোগ নিয়েও দাপিয়ে বেড়াত ওরা বরিশালে আটক চার যুবককে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ বরগুনায় রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩‘রিফাতের শরীরে ছিল অসংখ্য আঘাত’
আজ পেনাল্টি শুটআউটে ব্রাজিলের বিপক্ষে গোল করতে পারেননি প্যারাগুয়ের স্ট্রাইকার দার্লিস গঞ্জালেস। গোল করতে পারলে হয়তো কোপা আমেরিকার সেমিতে ওঠা হতো না ব্রাজিলের।বিশ্বের কোটি কোটি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থক চাইলে প্যারাগুয়ের স্ট্রাইকার দার্লিস গঞ্জালেসকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন! ভদ্রলোক ছিলেন বলেই না কোপা আমেরিকার নকআউট রাউন্ডে এখনো টিকে আছে পরাশক্তি দল দুটি!কীভাবে? একটু বিশ্লেষণ করা যাক। প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে প্যারাগুয়ের সঙ্গে কোনো রকমে ১-১ গোলে ড্র করেছিল আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে প্যারাগুয়ের দেওয়া গোলটা পেনাল্টির মাধ্যমে দ্বিতীয়ার্ধে শোধ করে দেন লিওনেল মেসি। মেসির পেনাল্টির পরপরই সে ম্যাচে পেনাল্টি পেয়েছিল প্যারাগুয়ে, ডিফেন্ডার নিকোলাস ওটামেন্ডির ভুলে। দার্লিস গঞ্জালেসের নেওয়া পেনাল্টিটা দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানি। গোলটা হয়ে গেলে প্যারাগুয়ে জিতে যেত, আজ কোপা আমেরিকায় কোয়ার্টার ফাইনালে আর খেলা লাগত না মেসিদের। গঞ্জালেস পেনাল্টি মিস করেছিলেন বলেই তো আজ ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের রণকৌশল সাজাতে পারছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি!আজকেও মোটামুটি একই কাণ্ড ঘটেছে। ১০ জন নিয়ে ৯০ মিনিট ধরে ব্রাজিলের একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়ে দিয়ে ম্যাচটাকে পেনাল্টি শুটআউটে নিয়ে যাওয়া প্যারাগুয়ের চোখেমুখে তখন অঘটনের স্বপ্ন, ২০১১ ও ২০১৫ সালের স্মৃতি উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। সে দুবারও পেনাল্টি শুটআউটে ব্রাজিলকে কোপা থেকে বিদায় করে দিয়েছিল প্যারাগুয়ে। কিন্তু না, এবার আর ব্রাজিল বাদ পড়ল না। ওই যে, প্যারাগুয়েতে যে একজন দার্লিস গঞ্জালেস আছেন!দার্লিস গঞ্জালেস পেনাল্টি নিতে আসার আগে দুই দলই একটি করে পেনাল্টি মিস করেছিল। প্যারাগুয়ের প্রথম পেনাল্টিটা দুর্দান্তভাবে আটকে দেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার, আর দার্লিস আসার ঠিক আগে পোস্টের বাইরে বল মেরে মিস করেন রবার্তো ফিরমিনো। ফিরমিনোর মিসের সুযোগ নিয়ে দার্লিস গোল করে দলকে এগিয়ে দেবেন কি, উল্টো ফিরমিনোর মতো শট মারলেন পোস্টের কয়েক হাত বাইরে। শেষ শটে ঠান্ডা মাথায় গোল করে ব্রাজিলকে সেমিতে নিয়ে যান ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুস।এখন আপনিই বলুন, দার্লিস গঞ্জালেস না থাকলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার এখনো কোপায় টিকে থাকা হতো?
পাঠকের দৃষ্টিতে লেখক যেমন, এর বাইরেও নানা বাস্তবতা থাকে লেখকের, থাকে বিচিত্র দুর্বিপাক। আবার বস্তুগত দিক দিয়ে তাঁর প্রাপ্তির পরিমাণও প্রায় নেই বললেই চলে। তারপরও কেন লেখেন একজন লেখক? ১৯৬৬ সালে ‘মিস অ্যাডভেঞ্চারস অব আ রাইটার অব বুকস’ শিরোনামের এক লেখায় প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন মার্কেস। তাঁর সাংবাদিক–জীবনের বিভিন্ন লেখা নিয়ে সদ্য প্রকাশিত দ্য স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি অ্যান্ড আদার রাইটিংস বইয়ে সংকলিত হয়েছে এ লেখাটি। অনুবাদ করেছেন নুসরৎ নওরিনবই লেখা একটা আত্মঘাতী কাজ। তাৎক্ষণিক সুবিধাপ্রাপ্তির বিচারে আর কোনো কাজই এত সময়, শ্রম আর নিষ্ঠার দাবি করে না। ওই ২০০ পৃষ্ঠা কতগুলো ঘণ্টার মানসিক যন্ত্রণা এবং গার্হস্থ্য দুর্দশার বিনিময়ে তাঁদের লেখক লিখেছেন, আর সে জন্য তিনি কতটুকুই-বা পেয়েছেন—এসব ভেবে বিস্মিত হওয়ার মতো অনেক পাঠক রয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। যাঁরা জানেন না, তাঁদের অবগতির জন্য সংক্ষেপে বলা যায়, ক্রেতা যে মূল্যে দোকান থেকে বইটি কেনেন, লেখক তার মাত্র ১০ শতাংশ পেয়ে থাকেন। সুতরাং যে পাঠক ২০ পেসোতে (কলম্বিয়ার মুদ্রা) একটি বই কিনেছেন, লেখকের জীবিকায় তাঁর অবদান সাকল্যে ২ পেসো। ঝুঁকি নিয়ে যে প্রকাশক বইটি বের করেছেন, বাকি অংশটুকু তাঁর এবং বিক্রেতা-পরিবেশকদের। ব্যাপারটাকে আরও অন্যায় লাগে যখন আপনি ভাবেন যে শ্রেষ্ঠ লেখক তাঁরাই, যাঁদের লেখালেখিতে ঝোঁক অল্প কিন্তু ধূমপানে ঝোঁক বেশি, আর তাই এটা স্বাভাবিক যে ২০০ পৃষ্ঠার একটি বই লিখতে তাঁদের কমপক্ষে দুই বছর আর ২৯ হাজার সিগারেট খরচ হয়েছে। সোজা অঙ্কের হিসাবে বইটা থেকে যতটা তাঁদের আয় হবে, তাঁর চেয়েও বেশি তাঁরা ধূমপানেই ব্যয় করে ফেলেন।এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে আমার এক লেখক বন্ধু বলেছিল, ‘ওই প্রকাশক, পরিবেশক, বই বিক্রেতারা সবাই বড়লোক আর আমরা সব লেখকই গরিব।’অনুন্নত দেশগুলোতে সমস্যাটা ঘোরতর, যেখানে বই ব্যবসাটা অত জোরদার নয়, কিন্তু ব্যবসাটা তাদের একচেটিয়াও নয়। সফল লেখকদের জন্য স্বর্গভূমি যুক্তরাষ্ট্রেও সুলভ সংস্করণের দৌলতে রাতারাতি ধনী বনে যাওয়া প্রতিটি লেখকের বিপরীতে কয়েক শ মানসম্পন্ন লেখক রয়েছেন, যাঁরা ওই ফোঁটা ফোঁটা বরফচোয়ানো ১০ শতাংশের আমৃত্যু দণ্ডে দণ্ডিত। যুক্তরাষ্ট্রে ন্যায়সংগত বৈভব বৃদ্ধির সাম্প্রতিক দর্শনীয় ঘটনাটি ঘটেছে ট্রুমান কাপোটির ইন কোল্ড ব্লাড উপন্যাসের ক্ষেত্রে। প্রকাশের প্রথম কয়েক সপ্তাহেই এটি গ্রন্থাকারের জন্য ৫ লাখ ডলার আয় নিয়ে এসেছে, একই পরিমান এসেছে এর চলচ্চিত্র স্বত্ব থেকেও। বিপরীত দিকে, আলবেয়ার কামু, যিনি তখনো বইয়ের তাকে রয়ে যাবেন, যখন অবিশ্বাস্য ট্রুমান কাপোটিকে কেউ মনেও রাখবে না, তাঁকে বই লেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ছদ্মনামে সিনেমার চিত্রনাট্য লিখে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়েছে। নোবেল পুরস্কার—যেটি তিনি পেয়েছিলেন মৃত্যুর খুব বেশি একটা আগে নয়—তাঁকে পারিবারিক দুঃখ-দুর্দশা থেকে খুব সামান্যই ক্ষণিকের স্বস্তি দিতে পেরেছিল। এটা সঙ্গে করে এনেছিল হাজার চল্লিশেক ডলার, যা দিয়ে সেই সময় একটা বাড়ি কেনা যেত, যে ধরনের বাড়ির পেছনে বাচ্চাদের জন্য খেলার উঠোন থাকে। এর চেয়ে ভালো ছিল, যদিও অনিচ্ছাকৃত, পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে জাঁ পল সার্ত্রের ব্যবসাটাকে বাড়িয়ে নেওয়া, কারণ তাঁর এই মনোভাব স্বাধীনতার জন্য তাঁকে একটি ন্যায়সংগত ও প্রাপ্য খ্যাতি এনে দেয়—এটা তাঁর বইয়ের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছিল।অনেক লেখক পুরোনো ধাঁচের একজন পৃষ্ঠপোষকের আশায় আকুল হয়ে যান। এমন পৃষ্ঠপোষক যিনি একজন ধনী, উদার ভদ্রলোক ও শিল্পীদের সহায়তা করবেন, যাতে তাঁরা স্বস্তির সঙ্গে কাজ করতে পারেন। শিল্পের জন্য পৃষ্ঠপোষক আজও রয়েছে, যদিও তা অন্য রূপে। বড় আকারের ব্যবসা সমিতিগুলো, যেগুলো কখনো কখনো রাজস্ব কমানোর জন্য, অথবা তাদের সম্পর্কে জনমানসে যে রাক্ষুসে রূপটি থাকে, তা বদলাতে এবং কালেভদ্রে নিজেদের অপরাধী বিবেককে স্বস্তি দিতে, শিল্পীদের কাজকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু আমরা লেখকেরা আমাদের মন যেমনটা চায়, তা-ই করতে পছন্দ করি এবং আমরা সন্দেহ করি, সম্ভবত ভিত্তিহীনভাবেই, পৃষ্ঠপোষকতা চিন্তা ও প্রকাশের স্বাধীনতাকে ব্যাহত করে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় মেনে নিতে হয়। আমার নিজের ক্ষেত্রে, আমি কোনোরকম ভর্তুকি ছাড়াই লিখতে পছন্দ করি—তা শুধু এ কারণে নয় যে আমি অদ্ভুত একটি নিপীড়ন-জটিলতায় ভুগি, এবং এই কারণেও যে, লেখার শুরুতে আমার কোনো ধারণাই থাকে না এটা শেষ হলে আমি কার সঙ্গে চুক্তিতে যাব। লেখা শেষে যদি আমি পৃষ্ঠপোষকের মতাদর্শের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি, তবে সেটা অন্যায় হবে—বেশির ভাগ লেখকের ক্ষেত্রেই পরস্পরবিরোধী অসংগতিপূর্ণ মেজাজের কারণে যেটা হওয়া খুবই সম্ভব। একইভাবে এটি হতো সম্পূর্ণ অনৈতিকও, যদি আমি ভাগ্যক্রমে চুক্তিবদ্ধ হতাম।পৃষ্ঠপোষক ব্যবস্থা, পুঁজিবাদের পিতৃত্বসুলভ সাধারণ বৃত্তি, লেখককে রাষ্ট্রের বেতনভোগী কর্মচারী বলে বিবেচনা করার সমাজতান্ত্রিক প্রস্তাবের একটি প্রতিরূপ মনে হয়। নীতিগতভাবে সমাজতান্ত্রিক সমাধানটি সঠিক, কারণ লেখককে এটি মধ্যবর্তীদের শোষণ থেকে মুক্ত করে। কিন্তু এযাবৎ বাস্তবে এবং কে জানে কত দিন ধরে, এই ব্যবস্থার যেসব অন্যায়কে শোধরানোর কথা ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর অন্যায়ের জন্ম সে দিয়েছে। সম্প্রতি সোভিয়েতের দুজন দুর্ভাগা লেখক সাইবেরিয়ায় সশ্রম দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন, লেখা খারাপ হওয়ার জন্য নয় বরং পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে দ্বিমত করার জন্য। আমরা লেখকেরা যে একদল দুর্বৃত্ত, যারা জুতোর বাড়ির চেয়েও অন্ধবিশ্বাসী তাত্ত্বিকের স্ট্রেটজ্যাকেট (ভয়ানক অপরাধী কিংবা মানসিক রোগীকে অন্যকে আঘাত করা থেকে বিরত রাখার জন্য বিশেষ পোশাক) এবং এমনকি আইনগত ব্যবস্থাসমূহে, বেশি আঘাত পাই—যে শাসনব্যবস্থা এটা স্বীকার করার মতো যথেষ্ট পরিপক্বতা দেখাতে ব্যর্থ হয়, সেখানে লেখালেখি কতটা বিপজ্জনক এ ঘটনায় সেটা দেখিয়েছি।আমি বিশ্বাস করি, একজন লেখকের জন্য ভালো লেখা ছাড়া অন্য আর কোনো বিপ্লবী দায়িত্ব নেই। প্রথাবিরোধিতা, যেকোনো শাসনব্যবস্থায়, একটি অপরিহার্য শর্ত, যার ব্যত্যয় হওয়া চলে না। কারণ, একজন প্রথানুগত লেখক একজন ডাকাতের মতো এবং অতি অবশ্যই তিনি একজন বাজে লেখক।এই বিমর্ষ পর্যালোচনার পর, আমরা লেখকেরা কেন লিখি, তা ভেবে বিস্মিত হওয়াটা স্বাভাবিক। জবাবটি, অনিবার্যভাবেই, যতখানি না অকপট তার চেয়ে বেশি অতিনাটকীয়। আপনি একজন লেখক—ঠিক যেভাবে আপনি হয়তো একজন ইহুদি অথবা কৃষ্ণাঙ্গ। সাফল্য অনুপ্রেরণাদায়ী, পাঠকের সমর্থন সঞ্জীবনী, কিন্তু এগুলো সম্পূরক পুরস্কার—কারণ একজন ভালো লেখক ছেঁড়া জুতো নিয়ে এবং বই বিক্রি না হলেও লিখেই যাবেন। এটা একটা পেশাগত বিপত্তি, যেটা সামাজিক সেই বাতুলতার ব্যাখ্যা দেয় যে, কেন অসংখ্য নারী ও পুরুষ না খেয়ে মৃত্যুকে বরণ করেছে, এমন কিছুর জন্য, যেটা মোটের ওপর এবং সত্যি বলতে কোনো উদ্দেশ্যই সাধন করে না।এল এসপেকতাদোর, বোগোতা, জুলাই ১৯৬৬
দেশে পরিচিত প্রজেক্টর ব্র্যান্ড হিটাচি নাম পরিবর্তন করে ম্যাক্সেল নামে যাত্রা শুরু করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে নাম পরিবর্তনের এ ঘোষণা দেয় হিটাচি কর্তৃপক্ষ। দেশে ম্যাক্সেলের পণ্য বিপণন করবে ইউনিক বিজনেস সিস্টেম লিমিটেড।ইউনিক বিজনেস সিস্টেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হাকিম বলেন, ক্রেতা চাহিদা ও সেবার গুরুত্ব দিতে নতুন নতুন প্রযুক্তি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা। এখন ম্যাক্সেলের পণ্য দেশের বাজারে পরিচিত করতে কাজ করবেন তাঁরা।ম্যাক্সেলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সাতুরু টাকি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা নতুন প্রযুক্তি নিয়ে বরাবরই কাজ করছেন। ম্যাক্সেলের নতুন নতুন প্রযুক্তি বাংলাদেশের বাজারে আনা হবে। ২০১৩ সালে হিটাচি প্রজেক্টরের ব্যবসার অধিগ্রহণ করে ম্যাক্সেল। পরে পর্যায়ক্রমে অঞ্চলভিত্তিক বাজারে তা সম্প্রসারণ করছে। ব্র্যান্ডের নাম পরিবর্তন হলেও সেবা ও পণ্য একই রকম থাকবে। এ ছাড়া প্রযুক্তি উন্নয়নে আরও গুরুত্ব দেওয়া হবে।সাতুরু বলেন, হিটাচি বা ম্যাক্সেলের বাংলাদেশে কোনো অফিস নেই। তাঁরা পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
কখনো পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া বা ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো। আবার কখনো কম্পিউটার গ্রাফিকসে আপত্তিকর ছবি তৈরি করে তা দেখিয়ে ছাত্রীদের ব্ল্যাকমেল। এভাবে গত পাঁচ বছরে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অন্তত ২০ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেছেন এক শিক্ষক। ফাঁদে ফেলে শিক্ষার্থীর মাকেও ধর্ষণ করেছেন। সেগুলো আবার মুঠোফোনে ভিডিও করে রেখেছেন। কখনো মোটা টাকার দাবিও করেছেন।নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক শিক্ষককে গ্রেপ্তারের পর তাঁর সম্পর্কে এমন ভয়ংকর তথ্য জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। ওই শিক্ষকের নাম আরিফুল ইসলাম সরকার ওরফে আশরাফুল (৩০)। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকার অক্সফোর্ড হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক। বাড়ি মাদারীপুর জেলা সদরের শিলখাড়া এলাকায়।গতকাল বৃহস্পতিবার আরিফুলকে গ্রেপ্তারের পর র‍্যাব তাঁর মুঠোফোন ও ল্যাপটপ থেকে ধর্ষণের ভিডিওসহ আপত্তিকর ছবি পাওয়া গেছে বলে জানায়। আরিফুলকে মদদ দেওয়ার অভিযোগে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক জুলফিকার ওরফে রফিকুল ইসলামকেও (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।স্থানীয় লোকজন জানান, দুই দিন আগে বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দেন আরিফুল। ওই শিক্ষার্থী বিষয়টি জানায় তার মা–বাবাকে। গতকাল এলাকাবাসী শিক্ষক আরিফুল ও রফিকুলকে পিটুনি দেন। তাঁদের শাস্তি দাবিতে অক্সফোর্ড হাইস্কুল ঘিরে সকাল থেকে বিক্ষোভ করেন। পরে এলাকাবাসী বিষয়টি র‌্যাব-১১ কে জানান। পরে র‌্যাব কর্মকর্তারা আরিফুলের মুঠোফোন সার্চ করে একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও দেখতে পান।র‌্যাব-১১–এর কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন কৌশলে ফাঁদে ফেলে ২০১৪ সাল থেকে চলতি জুন মাস পর্যন্ত অক্সফোর্ড স্কুল এবং বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ মোট ২০ জনকে ধর্ষণের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব শিক্ষার্থী পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির। ওই শিক্ষকের মুঠোফোন, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ডিভাইস জব্দ করে ছাত্রী ধর্ষণ ও আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষক আরিফুল ২০ ছাত্রীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। তাঁকে মদদ দেওয়ার অভিযোগে প্রধান শিক্ষককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীন পারভেজ জানান, স্কুলের কাছাকাছি বুকস গার্ডেন নামে একটি বাড়িতে ছাত্রীদের কোচিং করাতেন আরিফুল। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
বরগুনায় রিফাত শরীফ নামের এক তরুণকে তাঁর স্ত্রীর সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এই ঘটনা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রথম আলো অনলাইন শিরোনাম করেছে: ‘এভাবে প্রকাশ্যে কোপাল!’সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের সরবতার নানা মাত্রা, নানা কোণ। একদল মুষড়ে পড়েছে, ভীষণ আঘাত পেয়ে স্তম্ভিত হয়েছে ঘটনার নৃশংসতার মাত্রার কারণে। কেউ কেউ বলছেন, হবেই তো এ রকম। কারণ, কতগুলো হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। কেউবা পাড়ছেন বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিচারের সাজা আপিলে হ্রাস করার উদাহরণ।মানুষের তীব্র প্রতিক্রিয়ার একটা উপলক্ষ রিফাত হত্যাকাণ্ডের মুহূর্তের ছবি, যাতে দেখা যাচ্ছে হন্তারকেরা অস্ত্র চালাচ্ছে, রিফাতের স্ত্রী বাধা দিচ্ছেন আর অনেক মানুষ, খুব কাছেই তারা, নিষ্ক্রিয় দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের মানুষ একজনের বিপদে আরেকজন এগিয়ে আসে, এই ক্ষেত্রে কেউ বাধা দিল না কেন? কারও কারও প্রশ্ন, ভিডিও না করে হন্তারকদের বাধা দিলে কি একটা প্রাণ বাঁচানো যেত না!অধ্যাপক আলী রীয়াজ তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন: ‘বরগুনায় রিফাতকে যখন কুপিয়ে হত্যা করা হয়, তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা যখন একাই হন্তারকদের মোকাবিলা করেছেন, কেউ এগিয়ে আসেনি; “ভয়ের সংস্কৃতি সম্মিলিত উদ্যোগের ধারণা লুপ্ত করে দেয়। এই প্রক্রিয়ার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। মানুষকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে রূপান্তরিত করা হয়। আতঙ্ক এবং সন্ত্রাস মানুষের প্রতিরোধের শক্তি চূর্ণ করে দেয়”’ (ভয়ের সংস্কৃতি: বাংলাদেশে আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের রাজনৈতিক অর্থনীতি, আলী রীয়াজ, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪)।আলী রীয়াজের তাঁর নিজের বই থেকে দেওয়া উদ্ধৃতিটা একটু সাধারণীকৃত; একটা পর্যবেক্ষণ, একটা উপলব্ধি অনেকটা মন্তব্যের মতো হলেও এর পেছনে ভাবনার খোরাক আছে। বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে ভাবা যায়, গভীর গবেষণা করা যায়। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আমরা নাগরিকেরা ভয়ের মধ্যে আছি, একদা কল্পিত ইথারের মতোই আমরা ভয়ের সমুদ্রে ডুবে আছি। আমরা কথা বলার আগে দুবার ভাবি, রাস্তায় পথ হাঁটার সময় পেছনে দুবার তাকাই। কিন্তু তাই বলে নাগরিকেরা সর্বত্র এই ভয়ের সংস্কৃতির কারণে নির্লিপ্ত, নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে, এভাবে ভাবাটা মানুষের সমাজকে রক্তকরবীর মতো একটা যক্ষপুরী কিংবা সমস্ত সমাজকে একটা যন্ত্র আর প্রত্যেক মানুষকে তার একটা নাট বা বল্টু ভাবার মতো অতিসরল বলে মনে হয়। রাশিয়ার চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘চিরকালই মানুষের সভ্যতায় একদল অখ্যাত লোক থাকে, তাদেরই সংখ্যা বেশি, তারাই বাহন; তাদের মানুষ হবার সময় নেই; দেশের সম্পদের উচ্ছিষ্টে তারা পালিত।...কথায় কথায় তারা রোগে মরে, উপোসে মরে, উপরওয়ালাদের লাথি ঝাঁটা খেয়ে মরে—জীবনযাত্রার জন্য যত-কিছু সুযোগ সুবিধে সব-কিছুর থেকেই তারা বঞ্চিত।’ কিন্তু আমাদের দেশে এই মানুষেরা অন্যের বিপদে এগিয়ে যায়। এরাই পড়শির বাড়ির আগুন নেভাতে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়, রানা প্লাজার সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকে পড়ে মানুষ বাঁচানোর চেষ্টায় নিজের জীবনকে বিপন্ন করে, বনানীর আগুনে পোড়া ভবনে উঠে মানুষকে উদ্ধারে ব্রতী হয়। ভদ্রলোকেরা সাধারণত অন্যের বিপদে নিজের প্রাইভেসির আড়াল খোঁজে। নিরাপদ তন্দ্রায় তারা আচ্ছন্ন কিংবা চিলেকোঠার সেপাই তারা। বরগুনার ওই নৃশংস ঘটনার সময় মানুষ বাধা দিল না কেন, ধাওয়া দিল না কেন—এই প্রশ্ন সংগত। এর রেডিমেড উত্তর আমাদের কাছে নেই। আলী রীয়াজের প্রস্তাবটা আমাদের বিবেচনায় নিতেই হচ্ছে।এরপর যে কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই দেখতে পাচ্ছি, আমার ফেসবুক-বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, গ্রেপ্তার হওয়া যুবককে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন অস্ত্র উদ্ধারে বেরোচ্ছে না? ইঙ্গিত খুবই স্পষ্ট। কারণ, সেই পুরোনো প্রেসনোট; গ্রেপ্তারকৃত সন্ত্রাসীদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বের হওয়ার পর আগে থেকে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা হামলা করে, তখন এনকাউন্টার বা ক্রসফায়ার হয়; গ্রেপ্তারকৃতরা মারা পড়ে। অর্থাৎ, সাধারণ মানুষের অনেকেই ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টারকে সমর্থন করছেন।এটাও সার্বিকভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেই তুলে ধরে। আমাদের বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, প্রকৃত অপরাধীদের সাজা না হওয়ার উদাহরণগুলো থেকেই মানুষ এই শর্টকাটের কথা ভাবতে পারছে।আমাদের বন্ধু সাংবাদিক অঞ্জন রায় তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন: ‘কিন্তু আলোচিত কোনো হত্যার ঘটনায় ক্রসফায়ারের দাবিটি আমার কাছে মধ্যযুগীয়। কারণ আমি যখন একজনকে ক্রসফায়ারে বা এনকাউন্টারে দেয়ার দাবি তুলব—তখন আমি নৈতিকভাবে মেনেই নেব, আমার এই বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা নাই। সমাজের বিশিষ্টজনেরা যখন যত ঘৃণ্য অপরাধই হোক—তার জন্য বিচারের বদলে অপরাধীকে কয়েকটি বুলেট খরচ করে মেরে ফেলার দাবি করেন, তা–ও সেই দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে—তখন শঙ্কা তৈরি হয়। ভয় হয় আমরা কি সত্যিই সোশ্যাল মিডিয়া হাতে পেয়ে গণ–হিস্টিরিয়ার রোগী হয়ে উঠছি? নাকি এটাই আমাদের অধিকাংশের মনোজগৎ?’এটা যদি আমাদের অধিকাংশের মনের কথা হয়ে থাকে, তাহলে তা আরও বেশি দুশ্চিন্তার কথা। আমাদের শাসনব্যবস্থা এই ভয়াবহ বাস্তবতা তৈরি করেছে। একটা সহজ কথা আমি বুঝতে পারি না, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি প্রচলিত বিচারব্যবস্থাতে দীর্ঘদিন ধরে হতে পারে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যদি ট্রাইব্যুনাল করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগসমেত প্রকাশ্যে দীর্ঘদিন ধরে হতে পারে, তাহলে আলোচিত অপরাধগুলোর বিচার কেন প্রকাশ্যে আইনানুগ পদ্ধতিতে হবে না! জাস্টিস ডিলেড, জাস্টিস ডিনায়েড। জাস্টিস হারিড, জাস্টিস বারিড। তবে প্রচলিত আইনে, দরকার হলে বিশেষ আইন করে বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠা করে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে। সেই শাস্তি নিশ্চয়ই দৃষ্টান্তমূলকও হবে। তবে রবীন্দ্রনাথের ওই কথাও মনে রাখতে বলি, ‘দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে/সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার। যার তরে প্রাণ/কোনো ব্যথা নাহি পায় তার দণ্ডদান প্রবলের অত্যাচার।’নিউইয়র্কে একজন বাঙালি ব্যবসায়ী জাকির খান হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় হয়েছে সম্প্রতি। তাঁর বাড়িওয়ালা তাহার মাহরান ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছুরি মেরে হত্যা করেছিলেন জাকির খানকে। বিচারের রায়ে মাহরানের ১০ বছরের জেল আর ৫ বছরের প্রবেশনকালের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। জাকিরের স্ত্রী রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ড হয়নি বলেই আমেরিকায় খুনিরা উৎসাহিত হয়ে পড়বে বলে মনে হয় না।আমাদের সমাজের কোনো গভীর গভীরতর অসুখ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে আছে বিচারহীনতা। এর মধ্যে আছে বিচার হবে না, জনমনে এই বদ্ধমূল ধারণা। বিচার তাই হাতে তুলে নিতে হবে বা ক্রসফায়ারই হবে ঠিক বিচার, এই মনোভাব প্রবল হচ্ছে। শিক্ষিত লোকেরাও কথায় কথায় ‘রক্ত চাই’, ‘মুণ্ডু চাই’ বলে চিৎকার করে উঠছেন। এই অসুখের চিকিৎসা রাষ্ট্রকেই করতে হবে। আর তা করতে হবে দৃষ্টান্তমূলক বিচার, বিচারের শাস্তি কার্যকর করার মাধ্যমে। কিন্তু তাতে যেন নিষ্ঠুরতা না থাকে। নিষ্ঠুর শাস্তি কার্যকর করে আমরা যেন মধ্যযুগের মতো উল্লাস না করি। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘আমাদের সকল সমস্যার সব চেয়ে বড়ো রাস্তা হচ্ছে শিক্ষা।’ কিন্তু যখন শিক্ষিতজনকেও দেখি বিচারের চেয়ে শাস্তির দিকে বেশি নজর, আর শাস্তিটা কী হবে, আর তা কীভাবে কার্যকর হবে, তা–ও তাঁরা বাতলে দিচ্ছেন, তখন মনে হয় এইটাই সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। আমাদের শিক্ষা আমাদের মানবিক করে তুলবে না? শর্টকাট পথের বদলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কষ্টকর দীর্ঘ সংগ্রামের পথ কি আমরা বেছে নিতে পারব না?আনিসুল হক: প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক
লেখকেরা যে সব সময় লেখালেখিতেই দিন গুজরান করতেন, তা নয়, ক্রিকেটও খেলতেন তাঁরা। অন্তর্জাল ঘেঁটে তেমন কয়েকজন বিশ্বখ্যাত লেখক।  তিনি পেশায় ছিলেন চিকিৎসক, পরে হয়েছিলেন জগদ্বিখ্যাত রহস্যোপন্যাস লেখক, শখের বশে আইন ব্যবসাও করেছেন, জিতেছেন দুটি মামলায়, ফুটবল খেলতেন পোর্টসমাউথ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ক্লাবে, গলফ খেলতেন সাসেক্সে, অগাধ জ্ঞান ছিল স্থাপত্যকলার ওপর, নকশা করেছিলেন বেশ কয়েকটি বাগানবাড়ির। সেই স্যার আর্থার কোনান ডয়েল যে একজন ক্রিকেটারও ছিলেন, তা কজন জানেন? বেশির ভাগ মানুষেরই ধারণা, লেখকেরা অন্তর্মুখী হন, তাঁরা হন ঘরকুনো। দিনমান ঘাড় গুঁজে শুধু লিখেই যান। খেলাধুলায় বিশেষ আগ্রহ থাকে না তাঁদের। কিন্তু এ অনুমান সর্বৈব সত্য নয়। পৃথিবীতে অনেক জনপ্রিয় লেখক ছিলেন, যাঁরা নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন। শার্লক হোমসের স্রষ্টা স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ছিলেন তাঁদের একজন। ডয়েল ১৮৯৯ থেকে ১৯০৭ সালের মধ্যে বিশ্বখ্যাত মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে অন্তত ১০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন। প্রথম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করার রেকর্ড রয়েছে তাঁর। ১৯০৫ সালে স্কটল্যান্ডে যখন ‘লেখক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন তিনি সেখানে ক্রিকেট দলের দলপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এই ক্লাবে খেলেছেন আর্থার কোনান ডয়েল। বোলার হিসেবে অবশ্য ছিলেন অনিয়মিত। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মাত্র একটি উইকেটই পেয়েছিলেন তিনি। আর সেটি ছিল বিখ্যাত ক্রিকেটার ডব্লিউ জে গ্রেসের। গ্রেসকে বলা হয় ক্রিকেটের অমর চরিত্র। ক্রিকেট খেলতেন স্যামুয়েল বেকেটও। বিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী নাট্যকার, যিনি ওয়েটিং ফর গডো লিখে বিশ্বসাহিত্যে অমরত্ব লাভ করেছেন, সেই বেকেটও ছিলেন একজন স্বনামধন্য ক্রিকেটার। তিনিই একমাত্র নোবেলজয়ী লেখক, যিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতেন। ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এবং বাঁহাতি মিডিয়াম পেস বোলার। পিছিয়ে ছিলেন না কবিরাও। ভাবুক বলে যাঁদের অখ্যাতি দুনিয়াজোড়া, তাঁরাও খেলেছেন ক্রিকেট। এ তালিকায় প্রথমেই স্মরণযোগ্য হয়ে আছেন রোমান্টিক কাব্যান্দোলনের পুরোধা কবি লর্ড বায়রন। ব্রিটিশ এই কবি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত, উদ্দাম এক অভিযাত্রিক। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই খেলতেন ক্রিকেট। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ইটন বনাম হ্যারোর ম্যাচে সব সময় তিনি হ্যারোরের হয়ে খেলেছেন। পরবর্তী সময়ে এই ম্যাচ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হিসেবে পরিচিত হয়। যাহোক, বায়রন তখন কী নামে খেলতেন, জানেন? জর্জ গর্ডন নোয়েল বায়রন। কারণ, এটিই ছিল তাঁর কেতাবি নাম। পরে বড় হয়ে যখন তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন, তখন লর্ড বায়রন নাম নেন রোমান্টিক এই কবি। নারী লেখকেরাও কি খেলতেন? তা-ও আবার ক্রিকেট? আপনার কুঞ্চিত ভ্রু এবার সোজা হয়ে যাবে যখন শুনবেন খোদ ভার্জিনিয়া উলফ খেলতেন ক্রিকেট! সেই উলফ, যাঁর পুরো নাম অ্যাডেলাইন ভার্জিনিয়া স্টিফেন উলফ, জন্মেছিলেন লন্ডনের দক্ষিণ কেনসিংটনে ২২ হাইড পার্কের একটি বাড়িতে ১৮৮২ সালের ২৫ জানুয়ারি, তাঁর ক্রিকেট খেলা কিছুটা অবিশ্বাস্যই বটে; বিশেষত সময়টা যখন আঠারো শতক। সেই সময় ক্রিকেট ছিল একান্তই ছেলেদের খেলা। কিন্তু ভার্জিনিয়া যাঁর নাম, তিনি কেন গতানুগতিক হবেন? তাই ছোটবেলাতেই প্রথা ভেঙে ব্যাট-বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন উনিশ শতকের আধুনিকতাবাদী এই লেখক। বয়স যখন পাঁচ-ছয়ের কোঠায়, তখন ভাই আদ্রিয়ান ও বোন ভানেসার সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে উলফ বলেছেন, ‘শৈশবে ভানেসা আর আমি ছিলাম যাকে বলে টমবয়। পাহাড়ে ওঠা, গাছে চড়া আর ক্রিকেট খেলা ছিল আমাদের নিত্যদিনের কর্ম।’ক্রিকেটকে নিত্যদিনের কর্মে পরিণত করেছিলেন আরেক বিখ্যাত নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টার। নোবেলজয়ী ব্রিটিশ এই নাট্যকার ছিলেন গাইয়েটিস ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি। দলকে উজ্জীবিত রাখতে নানা কসরত করতেন তিনি। প্রচণ্ড ক্রিকেটামোদী পিন্টার বলেছেন, সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে যে কয়েকটি ভালো জিনিস সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে ক্রিকেট অন্যতম।সূত্র: স্পোর্টসকিডা ডটকম
হাঁটার জুতা পায়ে গলিয়ে চাবি নিয়ে বের হন জিনাত নাহার। সকালে হাঁটতে বেরোতেই হবে—ডাক্তারের নির্দেশ। ওজন না কমালে আর চলছে না। শুধু ডায়েট মেনে, মিষ্টি ছেড়ে সুগার কমানো যাবে না। আর সুগার না কমালে কোনো কিছুই ঠিক হবে না। ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস পর্যন্ত ডায়াবেটিসের জন্য বাড়ে—ছেলের বউ জানিয়েছে এ কথা। বউটাও ডাক্তার, গাইনোকোলজিতে এমডি করছে। খুবই যোগ্য মেয়ে, সুন্দরী, ভদ্র। ছেলে প্রেম না করলে অত বড়ঘরের মেয়ে বিয়ে করানো যেত না কোনোমতেই। বউয়ের বাড়ির সবাই উচ্চশিক্ষিত, বহুদিন ঢাকা শহরে থাকে, বাড়ি-গাড়ি—সবই আছে। কিন্তু ছেলের বাপের মত ছিল না এই বিয়েতে। অত বড়ঘরের মেয়ে বিয়ে করলে ছেলে বিক্রি হয়ে যাবে—এই ছিল তার ভয়। এসব অমূলক ভয়-সন্দেহকে মিথ্যা প্রমাণ করে বউটা খুব সুন্দর মানিয়ে নিয়েছে এই বাড়ির সবার সঙ্গে। কিন্তু ছেলের বাপ যেন তাতেও খুশি না। বউয়ের কোনো না কোনো দোষ ধরতেই হবে। জিনাত নাহার এই মানসিকতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, প্রায় তিরিশ বছর ধরে একজন মানুষের সঙ্গে সংসার করলে তার সম্পর্কে কিছুই অজানা থাকে না।লিফট দিয়ে নিচে নেমে গ্যারেজে রাখা গাড়িটার দিকে একপলক তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নেন জিনাত। ফ্ল্যাট কিনতেই হবে, গাড়ি একটা লাগবেই—ফয়সালের বাবার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ তার ছিল না। সংসারের সব ব্যাপারেই তার নিজের কথাই শেষ কথা, ফয়সালের বিয়ের আগে একটা আস্ত কুরুক্ষেত্র জিতে নিতে হয়েছে মা-ছেলেকে। শান্তি বজায় রাখার জন্য জিনাত সারা জীবন অনেক চুপ করে থেকেছেন, কিন্তু এই স্বৈরাচারের কবলে পড়ে ছেলে নিজের পছন্দের জীবনসঙ্গিনী পাবে না, এটা মানতে পারেননি তিনি।ধানমন্ডি এলাকায় থাকছেন বছর চারেক হলো, আগে মোহাম্মদপুরে থাকতেন। ভাড়া বাসায়। উত্তরায়ও ফ্ল্যাট দেখেছিলেন ফয়সালের বাবা। এটা কেনার পর বড় ননদ আর নন্দাই এসেছিলেন নতুন ফ্ল্যাট দেখতে। রান্নাঘর থেকে শুনেছেন, তাদের সঙ্গে উত্তরায় আর মিরপুরে দেখা ফ্ল্যাটের গল্প করছে ফয়সালের বাবা। তাকে যে জানাননি, তাতে তিনি রাগ বা বিরক্ত হননি, অভিমানের সম্পর্ক কোনো দিন ছিলই না তাদের মধ্যে। এসব অবহেলায় তাই বহুদিন ধরেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।ধীরে ধীরে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেন জিনাত। বউমা কয়েক দিন আগে বলছিল, আম্মা, আপনি একটা এয়ারফোন কিনে নেন, মোবাইলে গান শুনতে শুনতে হাঁটলেন। তিনি যে গান শুনতে পছন্দ করেন, সেটাও এই মেয়ের চোখ এড়ায়নি। এয়ারফোনের প্রস্তাব তিনি হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই শহরের পথঘাটের কোনো বিশ্বাস নেই, কানে এয়ারফোন লাগিয়ে রাস্তায় হাঁটার মানে হলো মরণের ওষুধ কানে বাঁধা। এক্ষুনি মরার কোনো ইচ্ছা তার নেই। নাতি-নাতনি হবে, তাদের লালন–পালন করবেন—চাঁদের হাটের মধ্যে বিছানায় শুয়ে মারা যাবেন তিনি, রাস্তায় পড়ে বেঘোরে মরা কোনো কাজের কথা নয়।হাঁটতে হাঁটতে দু-একজন পরিচিত ভাবির সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। তিনি হাসিমুখে সালাম আদান-প্রদান করেন, থেমে গল্প করেন না। অত সময় নেই, ফিরে গিয়ে নাশতা বানাতে হবে। মলিনার হাতের ভাজিটা তা-ও সহ্য হয়, রুটি তিনি নিজেই খেতে পারেন না। এত চেষ্টা করেও পাতলা রুটি বানানো শেখাতে পারলেন না মেয়েটাকে। সবদিকে পাতলা আর মাঝখানটা মোটা করে রুটি বেলে, সেঁকলে পরে ফুলতেই চায় না। তা ছাড়া ভাবিরা অধিকাংশ সময়েই পারিবারিক তথ্য জানতে চায়, ছেলের বউয়ের বাপের বাড়ি থেকে কী কী দিল—এসব জানতে চাওয়া তার পছন্দ হয় না।জিনাত নাহার নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন এই বউমাকে পেয়ে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানান, এই জমানায় এমন মেয়ে পাওয়াই যায় না যে এককথায় শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে রাজি হয়ে যাবে। ফয়সালের বাবা এই শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন। বউয়ের বাড়ি থেকে গয়না ছাড়া আর কোনো জিনিস নেওয়া যাবে না, আর বউকে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। প্রথম শর্ত নিয়ে জিনাতের দ্বিমত ছিল না, কিন্তু দ্বিতীয় শর্তটা অত পরিষ্কার করে বলার দরকার কী? একটাই ছেলে তাদের, বাপ-মাকে ফেলে যেত নাকি? এই শর্ত দিয়ে দেওয়াতে লাভের লাভ এই হয়েছে যে বউয়ের বাপের বাড়ির লোকেরা তাদের ছোটলোক ভাবার সুযোগ পেয়ে গেল, যদিও তাদের আচরণে কিছুই প্রকাশ করেনি।বউমা এরই মধ্যে পোয়াতি, ফয়সালের বাবা এখনো শোনেননি সে কথা। শুনলে কি-না-কি বলবেন, জিনাত ফয়সালকে বলেছেন এখনই কাউকে জানানোর দরকার নেই। বউমাও যেন না বলে। আজকালের মেয়ে, আবার নিজে গাইনোকোলজিস্ট, এসব ব্যাপারে রাখঢাক না-ই থাকতে পারে। রাস্তায় বসা এক ভিখিরিনিকে দেখে বউমার কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েটা ঢাউস পেট নিয়ে বসে আছে একটা ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে। কোলে আরেকটা বাচ্চা। জিনাত ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে বের হন না, এমনকি মোবাইল ফোনটাও সঙ্গে নেন না। আধঘণ্টা-পঁয়তাল্লিশ মিনিট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে এমন কিছু দুনিয়া উল্টে যাবে না। ইচ্ছা করলেও মেয়েটাকে কয়টা টাকা দেওয়া সম্ভব হলো না। আর কয়জনকেই-বা দেবেন, শহর ভরাই তো ভিক্ষুক।আন্টি, এই ঠিকানাটা কোন দিকে?জিনাত একটু বিরক্ত হয়েই থামেন। প্রশ্নকারী রাস্তা পার হয়ে এই দিকে এসেছে তাকেই উদ্দেশ্য করে। এত সকালে রাস্তায় দু-একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ভিখিরি আর রিকশাচালক ছাড়া তেমন কেউ নেই। তার ওপর আজ শুক্রবার, স্কুলে আর অফিসে যারা যায় রোজ সকালে, তারাও বাসায় ঘুমাচ্ছে এখন। তাই বাধ্য হয়েই তাকে থামিয়েছে মেয়েটা। ভালো করে তাকান তিনি, বছর আঠারো হবে বয়স, কুড়িও হতে পারে, হালকা-পাতলা গড়ন বলে বোঝা যাচ্ছে না। পিঠে ব্যাকপ্যাক, মুখে ঘাম, চুলগুলো পনিটেল করে রাখা, তবু এলোমেলো হয়ে গেছে।নিজের অজান্তেই কাগজটা হাতে নেন, একটা খাকি কাগজে বাজে হাতের লেখায় একটা বাড়ির নম্বর আর নাম লেখা। কোনো রোড নম্বর, ব্লক নম্বর—কিচ্ছু নেই। বিরক্তি চেপে যথাসম্ভব নরম করে বলেন, কীভাবে বলব? এখানে তো কোনো রাস্তার নাম নেই।মেয়েটা প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, এটা কি ধানমন্ডি না?হ্যাঁ, ধানমন্ডিই, কিন্তু ধানমন্ডি এলাকা তো অনেক বড়। রাস্তার নাম না জানলে কীভাবে ঠিকানা পাবা?মেয়েটা এক হাতে মুখ মুছে শ্বাস নেয়। করবেন না করবেন না ভেবেও একটা প্রশ্ন করেই ফেলেন জিনাত, বাসা কই তোমার?টাঙ্গাইল।মানে এই মেয়ে ঢাকায় থাকে না। বোঝা দরকার ছিল, ঢাকায় বড় হওয়া বাচ্চারা আরও চালাক-চতুর হয়, এমন রাস্তার নম্বর ছাড়া ঠিকানা খুঁজে বেড়ানোটা বড় ধরনের বেকুবির লক্ষণ।কার সঙ্গে আসছ ঢাকায়?একাই।কাকে খুঁজতেছ?মেয়েটা কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেলে। জিনাত কাগজের টুকরোটার দিকে তাকান, কারও নাম নেই। বিরক্ত হওয়ার বদলে তার মন দ্রবীভূত হয়। মফস্বলের মেয়ে, নিশ্চয়ই বাসা থেকে না বলে এসেছে, প্রেমিকের খোঁজে হবে। আহা রে! কিন্তু একে সাহায্য করার কোনো উপায় তার নেই।হাঁটা চালিয়ে যাবেন কি না, ভাবতে ভাবতেই একটা দমকা বাতাসের সঙ্গে একগাদা ধুলা এসে গায়ে লাগে। এবার বসন্ত বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে। যেকোনো ঋতুর প্রকটত্ব তাকে কৈশোরের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। অনেক বৃষ্টি হলে ভিজে ভিজে স্কুল থেকে ফেরার কথা মনে পড়ে, স্কুলে থাকতে তার কখনো ছাতা ছিল না। অত ভিজলেও সর্দিটর্দি তেমন লাগত না, শক্ত-সমর্থ ছিলেন। খুব রোদ উঠলে আরও ছোটবেলার দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে, কী গরমের মধ্যে রোজার মাস আসত, বড় ডেকচিতে বরফ দিয়ে রুহ আফজার শরবত বানানো হতো তাদের বাড়ির খোলা উঠানে। রান্নাঘরটা উঠান পেরিয়ে উল্টা দিকে, বিদ্যুৎ চলে গেলে বাড়ির সবাই উঠানেই পাটি আর পিঁড়ি পেতে বসত ইফতার করতে।কী রঙিন সেই সব স্মৃতি...অথচ সেই সময়ের ঢাকার স্মৃতি তার কাছে ধূসর। একটা দোতলা বাড়ির সামনে একটা ভক্সওয়াগন, বাড়িটার আঙিনায় বড় আমগাছ, পাতাগুলোতেও ধুলার আস্তরণ—কোন এলাকা, সেটাও আর এখন মনে নেই। এই ধূসর শহরে এসে সারা জীবন থাকতে হবে, এমন কথা ভাবেননি কোনো দিন। ছোটবেলায় ঢাকায় কেন এসেছিলেন, কার সঙ্গে, তা-ও এখন আর মনে নেই।তবে কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে একবার একা ঢাকায় এসেছিলেন, এই মেয়েটার মতোই প্রায় অচেনা কাউকে খুঁজতে। জীবনের নানা ঘটনার ঘনঘটায় ভুলেই গিয়েছিলেন সেদিনের কথা। কলেজের ইউনিফর্মের ওপর একটা রঙিন ওড়না পরে সেলাই করা ওড়না আর বেল্ট খুলে ব্যাগে ভরে নিয়েছিলেন। তখন এত বোরকা পরার চল ছিল না, বোরকা পরে পরিচয় গোপন করতে চাইলে আরও বেশি চোখে পড়ে যেতেন হয়তো। ক্লাসের নাম করে বেরিয়ে বাসে চাপলেন, সেই বাসও তেমন লক্কড়ঝক্কড় মার্কা, সকালে রওনা করে ঢাকায় পৌঁছাতে দুপুর হলো। গন্তব্য মেডিকেল কলেজ। সেটা বিরাট বড় জায়গা, শুধু নাম দিয়ে একজনকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।তবু সেই মানুষের হদিস পাওয়া গিয়েছিল, মানুষটাকে পাওয়া যায়নি যদিও-বা। তার পরিচিত একজন জিজ্ঞেস করলেন, কিছু জানাতে হবে কি না, কিংবা কিছু পৌঁছানোর থাকলে দিয়ে যেতে, বিকেলের দিকে ক্যানটিনে আসার কথা, চাইলে অপেক্ষাও করতে পারেন জিনাত—এ কথা বলে চা সাধলেন সেই প্রায় অপরিচিতের পরিচিত। কিন্তু অপেক্ষা করার মতো সময় ছিল না, সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরতেই হবে। জিনাত সেদিন খুব বেশি আশাহত হয়েছিলেন কি? না মনে হয়, দেখা হলেও-বা কী হতো? শুধু দেখাটাই হতো বড়জোর, এর বেশি কিছু নয়। প্রায় অপরিচিত সেই সুপুরুষ তার নামটাই জানতেন, তার মনের দশা নয়।সেই দিন সন্ধ্যা নয়, ফিরতে রাত হয়ে গেল। বাড়িতে তখন কান্নাকাটির রোল পড়ে গেছে। আব্বা থানায় গেছেন, বড় ভাইজান হাসপাতালে, আম্মা মাথা ঘুরে পড়েছেন বেশ কয়েকবার, জেঠি জায়নামাজে। ছোট ভাইজান না থাকলে বড় জ্যাঠা হয়তো সেদিন তাকে খুনই করে ফেলতেন।সেদিনের পর থেকে জোরেশোরে বিয়ের চেষ্টা শুরু হলো। পরীক্ষা শেষ হতেই বিয়ের তারিখ পড়ে গেল। জিনাতের আপত্তি ধোপে টিকবে না জেনে ছোট ভাইজান বললেন আবার পালাতে। কই যাব, জিজ্ঞেস করাতে রাগ-ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছোট ভাইজান বললেন, ‘সেই দিন কই গেছিলি? সেইখানে যা।’ তখন কেঁদে ফেললেও জিনাত স্পষ্ট বুঝতে পারছিলেন, তার কাটা ঘায়ে লেবু চিপে দেওয়ার জন্য বলা হয়নি কথাটা, নিষ্ফল অসহায় রাগ থেকেই বলেছিলেন, রাগটা তার ওপর নয় একেবারেই। বাবা-জ্যাঠাদের সঙ্গে তর্ক করা আর নিজের পায়ে কুড়াল মারা একই কথা, ছোট ভাইজান করতে পারেননি সে কাজ।চিন্তায় ছেদ পড়ে সাইরেনের আওয়াজে। কোথাও একটা আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। জিনাতের বুকের ভেতর কী যেন লাফাতে থাকে। আসার সময় গ্যাস অফ করে এসেছিলেন কি? সকালে হাঁটতে বেরোনোর আগে এক কাপ লেবু-চা খান তিনি, চিনি ছাড়া। মলিনা এত রাত পর্যন্ত কাজ করে, সকালে তাকে ডেকে ওঠাতে মায়া লাগে, তাই নিজেই করে নেন চা। এখন পর্যন্ত গ্যাস অফ না করে রান্নাঘর থেকে বেরোনোর রেকর্ড নেই তার, কিন্তু মানুষেরই তো ভুল হয়। মলিনা মাঝেমধ্যে চুলা কমিয়ে রেখে অন্যান্য কাজ করে, বকলে হাসে, বলে, ‘আম্মা, আবার ইট্টু পরেই জ্বালান লাগব, হুদাই ম্যাচ খরচ কইরা কাম কী?’ গ্রামের মেয়ে, লেখাপড়া করেনি, গ্যাস লিকের ঝুঁকির ব্যাখ্যা শুনেও পুরোপুরি বোঝে না।নাকি ইলেকট্রিসিটির শর্টসার্কিট? গ্যারেজে দারোয়ান একটা লাইন থেকে মাল্টিপ্লাগ দিয়ে অনেকগুলো জিনিস চালায়, মোবাইলে চার্জ দেয়, টেবিল ফ্যান চালায়। সেখান থেকে কিছু হলো না তো? জিনাত আর কিছু না ভেবে বাড়ির দিকে রওনা করেন। দ্রুত পায়ে।সাইরেনের শব্দটা কাছে চলে আসছে। হাঁটা আর দৌড়ের মাঝামাঝি গতিতে ছিলেন তিনি। এখন একেবারে দৌড় শুরু করেন। দোয়া ইউনুস পড়তে শুরু করেন মনে মনে। কোথায় আগুন লেগেছে, তা নিশ্চিত না হয়েই। ফয়সাল, ফয়সালের বউ তানিয়া, মলিনা, ফয়সালের বাবা—কিছু হলে ওরা সাততলা থেকে নামতে পারবে তো সময়মতো?পেছন থেকে মেয়েটা আকুল হয়ে ডাকতে ডাকতে দৌড় দেয়, ‘আন্টি, আমার ঠিকানাটা।’ আরও দু-একবার ডেকেছে সে, জিনাত শুনতে পাননি। এবার তিনি থেমে পেছন ফিরে হাত বাড়িয়ে কাগজটা দিতে চান, মেয়েটার হাতে পৌঁছানোর আগেই আরেকটা দমকা বাতাসে উড়ে যায় ঠিকানা লেখা ছোট্ট কাগজটা।
‘ক্রিকেটপাগল মানুষ ক্রিকেট ছাড়া আর বোঝেটা কী?’ক্রিকেট নিয়ে লেখা বিখ্যাত বেয়ন্ড আ বাউন্ডারি বইয়ে ক্যারিবিয়ার লেখক সি এল আর জেমস বিদ্রূপের ছলে প্রশ্নটি ছুড়ে দিয়েছেন। বিদ্রূপটা ছিল ঔপনিবেশিক শক্তি ব্রিটিশদের প্রতি, যারা সেখানে খেলাটির প্রচলন করেছিল। বর্ণনায় ক্রিকেটকে জেমস নিছক একটি খেলা হিসেবে দেখেননি, দেখেছেন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে। দেখিয়েছেন ক্রিকেট কীভাবে একাধারে শাসকের সংস্কৃতির অংশ, আবার সেই শাসকেরই বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র। জেমসের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তী পরবর্তীকালে খেলাটিকে উল্লেখ করেছেন ‘দৃষ্টি ফেরানো’ হিসেবে; পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান থেকে চোখ ফিরিয়ে ঔপনিবেশিক ক্ষমতাকে নজরে রাখার সুযোগ হিসেবে ক্রিকেট ছিল শাসিত জনগোষ্ঠীর এক জরুরি মাধ্যম।ক্রিকেট এমন খেলা, যা আবিষ্কার আর ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। ব্রিটিশ উচ্চবিত্তের আয়ত্তে থাকা খেলাটি পরে ভারতীয় অর্থে আর তারই রাজনৈতিক প্রয়োজনে বেড়ে ওঠে। তাই বিংশ শতাব্দীতে ভারতে ক্রিকেটের প্রসারের কথা বলতে গেলে ‘গ্লোবালাইজেশন’ না বলে বরং ‘ইন্ডিয়ানাইজেশন’ বলা ভালো। ভারতীয় মনস্তত্ত্ববিদ ও লেখক আশিস নন্দী তাঁর প্রবন্ধে বলেন, ক্রিকেট মূলত ভারতীয় খেলা, যা দুর্ঘটনাবশত আবিষ্কৃত হয়েছে ইংল্যান্ডে। ঠিক যেমন মরিচ কোনো ভুলে দক্ষিণ আমেরিকায় উৎপন্ন হয়ে মধ্যযুগে ভারতে এসে শেষে ভারতীয় খাবারের অপরিহার্য উপাদান হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ভারত, পাকিস্তান, আরও পরে বাংলাদেশে ক্রিকেটের উত্থান পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার অভাবনীয় উদাহরণ, যার পেছনে দায়ী রাজনৈতিক বাস্তবতা। কিন্তু এককালের ঔপনিবেশিক শক্তির উচ্চশ্রেণির দখলে থাকা খেলা কী করে অতীতের শোষিত সাধারণ মানুষের হাতে চলে যায়?ইউরোপের বিখ্যাত ক্রিকেট লেখক ও সমালোচক নেভিল কার্ডসের মতে, দর্শকই ক্রিকেটের প্রাণ আর তার সঙ্গে প্রয়োজন রচনা বা সাহিত্য; ক্যারিবীয় তথা সারা পৃথিবীর জন্য যা করেছেন সি আর এল জেমস। একইভাবে বেসবল বা রাগবি নিয়ে হাজার রচনা আমেরিকায় খেলাগুলোকে জনপ্রিয় করে তোলে। দর্শক আর সাহিত্য—এই দুইয়ে মিলে খেলার ইতিহাস রচিত হয়। খেলার ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সাক্ষী। দেখা যায়, অতীতের ব্রিটিশ উপনিবেশ যেসব স্থানে বিকাশ লাভ করেছিল, ক্রিকেটও বিকশিত হয়েছে ঠিক সেসব স্থানে। এখন নিষ্পাপ কণ্ঠে কেউ জানতে চাইতে পারে, ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্ত হওয়ার পর যেখানে জাতীয়তাবাদের উত্থানের জোয়ারে ঔপনিবেশিক অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করার কথা, সেখানে ক্রিকেটকে আমরা আঁকড়ে ধরলাম কেন? দিন শেষে জাতীয়তাবোধ নিজেই একটি বৈশ্বিক ধারণা। অখণ্ড ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর দক্ষিণ আফ্রিকায় উপনিবেশ-পরবর্তীকালে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা সেই প্রমাণ বহন করে। আবার ঔপনিবেশিকতা কেবল একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ নয়, সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বজনীন হওয়ার পথে এক অধ্যায়ও। ঔপনিবেশিকতা শাসক ও শোষিত—দুইয়ের ওপরই গভীর ছাপ ফেলে, যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা বয়ে বেড়ায়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার নৃতত্ত্ববিদ অর্জুন আপাদুরাই মনে করেন, ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্ত হতে চাওয়া আসলে অতীতের ঔপনিবেশিক আমলের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী বোঝাপড়া। অন্যদিকে বহুদিনের অভ্যাস বা জীবনাচরণ চাইলেই চট করে বদলে ফেলা যায় না। তাই সচেতনভাবে হোক বা না হোক, আমরা বহু প্রজন্মের অভ্যাসসমেত বৈশ্বিক আচরণের দিকে ধাবিত হই। আবার বৈশ্বিক হতে চাইলেই কিন্তু আমাদের জাতীয়তাবাদের চেতনা মরে যায় না। বিদেশের মাটিতে দুজন বাঙালির দেখা হলে তারা দেশি সংস্কৃতি-সাহিত্যের আলাপই করে বেশি।ক্রিকেট যেখানে ভারত বা বাংলাদেশে জীবন-মরণ, সেখানে সেভাবে ব্রিটিশ উপনিবেশ হয়ে না ওঠা মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরে সামান্য কৌতূহলমাত্র। আর দর্শক যেহেতু খেলার প্রাণ, তাই বারবারের চেষ্টায়ও ক্রিকেট এসব স্থানে প্রসার লাভ করেনি, যা বিনা চেষ্টায় করেছে অখণ্ড ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা বা ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ওদিকে আমেরিকায় কেন করেনি? অনেকটা সেই একই কারণে হয়তো। ফ্রেঞ্চ বা স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সঙ্গে ক্রিকেটের সম্পর্ক ছিল না। তাই কিছুদিন খেললেও অভ্যাসটির সঙ্গে তারা বেড়ে উঠতে পারেনি। তা ছাড়া আমেরিকার মানুষের জীবন দ্রুতগামী, যা হয়তো বেসবল, রাগবি বা সকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ক্রিকেটের মতো ধীরলয়ের একটা খেলায় মেতে ওঠার মনমানসিকতা এক বিশেষ সাংস্কৃতিক আচার। ক্রিকেট ধীরেসুস্থে দিনের পর দিন চলে, চলে অনির্ধারিত সময়ের জন্যও; একবার ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে খেলা শুরু হলো আর চলতেই থাকল। ফাঁকে ফাঁকে তিন দিনের বিরতিসহ ১৩ দিন পর অমীমাংসিতভাবেই শেষ হলো। কারণ, ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের দেশে ফেরার জাহাজ ছেড়ে দিচ্ছিল।ক্রিকেট খেলোয়াড়দের আগে সাদা পোশাকে দেখা যেত। জ্যাক উইলিয়ামসের ক্রিকেট অ্যান্ড ইংল্যান্ড বইয়ে উল্লেখ আছে, ভিক্টোরিয়ান আমলের মানুষের প্রিয় খেলা হিসেবে ক্রিকেট ছিল খ্রিষ্টীয় আদর্শে উদ্বুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে ইংরেজ সংস্কৃতির ধারক, যাকে তারা বলত ‘জেন্টলমেনস গেম’। তাই খেলোয়াড়দের থাকতে হতো বিশুদ্ধতা বা ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক হিসেবে, যা ইউরোপে সাদা রঙে বোঝানো হতো। ঔপনিবেশিক শক্তি শোষিতের ওপর নিজস্ব সংস্কৃতির ভার চাপায়। তেমনি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্রিকেটকে ইংরেজ একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেছিল মাত্র। এর মাধ্যমে তারা ভিক্টোরিয়ান আমলের নীতি ও রুচির বিস্তার ঘটাতে চেয়েছিল। আর চেয়েছিল শোষিতের মধ্যে উচ্চশ্রেণির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলতে। অর্জুন আপাদুরাইয়ের মতে, শোষিতের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে দাপ্তরিক কাজের বাইরে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে আরও বেশি করে শোষণের উপায় খুঁজে বের করা ছিল ইংরেজের অভিসন্ধি। উপনিবেশমুক্ত হওয়ার পর যখন জাতীয়তাবাদী নেতারা ইংরেজের শেখানো অভ্যাস থেকে জাতিকে মুক্ত করায় সচেষ্ট ছিলেন, তখন অল্প কিছু নেতাই ক্রিকেটের বিপক্ষে মত দিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে একটি আচার ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে এলেও তা বৈশ্বিক সংস্কৃতির সঙ্গে মিলে যেতে সময় লাগে না, ক্রিকেটের ক্ষেত্রে যা ঘটেছিল অস্বাভাবিক দ্রুত। অর্জুন আপাদুরাইয়ের রচনায় জানা যায় যে সপ্তম বা অষ্টম শতাব্দীর দিকে ভারতে আসা পারস্যের অভিবাসনকারীরা ইংরেজ ও ভারতীয় সংস্কৃতির আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সেতু হিসেবে কাজ করত। ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও তারা ছিল অগ্রণীর ভূমিকায়। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে ক্রিকেটের প্রসারে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।তারপরও ঠিক কোন কারণে একটি দেশে নির্দিষ্ট একটি খেলা প্রসার লাভ করে? আমেরিকার লেখক মার্কোভিটস ও হেলেরম্যানের অফসাইড: সকার অ্যান্ড আমেরিকান এক্সেপশনালিজম বইয়ে তাঁরা হেজিমনিক খেলার কথা উল্লেখ করেছেন। দেশটিতে সকার নিয়মিত খেলা হয়, লিগ থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ হয়, তবু সকার নিয়ে সেখানকার বেশির ভাগ মানুষ আলাপ করে না; ভক্তের সংখ্যা বেশি রাগবি আর বেসবলের। তাই লেখকদ্বয়ের মতে, খেলার হেজিমনি সংস্কৃতি তখনই গড়ে ওঠে, যখন খেলাটির সঙ্গে দেশের মানুষের আবেগ জড়িত থাকে। কিন্তু ভক্তের সঙ্গে খেলার আবেগময় সম্পর্কের কি কোনো মাপকাঠি আছে? মাপকাঠি আছে কেবল কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের: দেশটির সংবাদপত্রে কি খেলাটির খবর নিয়মিত আসে? টেলিভিশনে কি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়? ব্যবহারিক পণ্যদ্রব্যের প্রচারে কি খেলোয়াড়দের মুখ দেখা যায়? মানুষ কি এখানে-সেখানে খেলাটি নিয়ে প্রায়ই আলাপ করে? বাংলাদেশের ক্রিকেটের ব্যাপারে উত্তরগুলো আমাদের জানা। ২০১৬ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পত্রিকায় ক্রিকেটের খবর প্রচারে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। ভারতের অবস্থান সামান্য নিচে, আর ওপরে অবস্থান করছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের জন্য ক্রিকেট হেজিমনিক খেলা হয়ে গেছে অনেক আগে। ক্রিকেট সেই সৌভাগ্যের সিঁড়ি, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটিকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরবে, তা আমরা অনেক আগে জেনে গেছি।টেলিভিশনে প্রচারের উপযোগী খেলা বলতে ক্রিকেটের মতো দ্বিতীয়টি নেই, যাতে আছে উত্তেজনা আবার আছে জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগও। দর্শক ঘুরেফিরে দিনভর খেলা দেখতে অভ্যস্ত। ওদিকে বিরতিতে বিজ্ঞাপন প্রচার করে আয় বাড়ানোও সহজ। একসময় টেলিভিশনের বহুল ব্যবহার ক্রিকেটকে প্রচারে সাহায্য করেছে। অন্যপক্ষে খেলাটির জনপ্রিয়তা গণমাধ্যমকে অভাবনীয় হারে আয় বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। একে অপরের হাত ধরে চলতে চলতে খেলাটি হয়ে উঠেছে বিশ্বব্যাপী তুমুল আয়ের উৎস।আর হবে নাই-বা কেন, মানুষের ন্যূনতম আশ্রয়ের চাহিদা যখন হয়ে দাঁড়ায় বহুতলবিশিষ্ট অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ, জ্ঞান বিতরণকারী শিক্ষা হয়ে ওঠে প্রাতিষ্ঠানিক দৌরাত্ম্যের কার্যকলাপ, চিকিৎসাসেবার পরিবর্তে হয়ে যায় ভোগ, তখন খেলাই-বা ব্যবসা হবে না কেন! ক্রিকেট সফলভাবে বিলিয়ন ডলার অর্জনকারী ব্যবসা হয়েছে। শুধু ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগই বছরে ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে। ওদিকে বিচিত্র পণ্যদ্রব্যে লোগোর ব্যবহার থেকে শুরু করে ম্যাচকে কেন্দ্র করে হাজার রকমের ব্যবসার জাল পাতা। তা ছাড়া খেলার সরঞ্জাম বা পোশাক বিক্রির ব্যবসাও খেলার চেয়ে কম বড় নয়, যা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ দলের দিকে ধাবিত; যেমন স্ল্যাজিঞ্জার কোম্পানি একসময় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রচুর ব্যবসা করলেও তাদের বর্তমান মনোযোগ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বাজারে।লেখক ও ইতিহাসবিদ কেইথ স্যান্ডিফোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত ক্রিকেট শাসক ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির দখলে ছিল। এরপর থেকে যুক্ত হতে থাকে সাধারণ মানুষ। লেখক বেন ক্যারিংটন তাঁর মার্ক্সিজম, কালচারাল স্টাডিজ অ্যান্ড স্পোর্টস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, শোনা যায়, কার্ল মার্ক্স একবার ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল, নিম্নবিত্ত শোষিত শ্রেণি যদি উচ্চবিত্ত শাসকশ্রেণির সঙ্গে এমন ধীরলয়ের খেলায় ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতে থাকে, তবে ইংল্যান্ডে বিপ্লব এক দুরাশা। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ উডরো ওয়াট একই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ক্রিকেট যে জাতির জনপ্রিয় খেলা, তারা হয়তো কখনোই কমিউনিজমের স্বাদ পাবে না।বস্তুত, সাধারণ মানুষের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণে একসময় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ শুরু হয়, যাতে তাদের খেলার দিকে আরও বেশি টেনে আনা যায়। দর্শক-খেলোয়াড়-আয়োজকের ব্যবসা বাড়তে বাড়তে কেবল ‘ভদ্রলোকের খেলা’ ইমেজ ঘুচে গিয়ে খেলাটি ধীরে ধীরে পণ্যে পরিণত হয়; খেলাকেন্দ্রিক ক্ষমতা শাসকশ্রেণির হাত থেকে শোষিতের হাতে চলে যায়। ঔপনিবেশিক আমলের মতো খেলোয়াড়দের শ্রমজীবী শ্রেণি গণ্য করলে পরবর্তীকালে তাদের অপরিমেয় উন্নয়ন ঘটে। নিজেদের উপস্থিতি ও সুনাম তারা উচ্চ মূল্যে লেনদেন করতে পারে। কেউ অংশগ্রহণ করে, কেউ দেখে, কেউ বিক্রি করে, কেউ কেনে, তবে খেলার সঙ্গে জীবনের সম্বন্ধ গড়ে ওঠায় কোথাও বিনোদনের কমতি হয় না। ফ্রেঞ্চ সমাজবিজ্ঞানী পিয়ার বোর্দ্যুর সূত্র আবারও প্রমাণিত হয়, সমাজে সমগ্রভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে ঐতিহাসিক যাত্রাই আধুনিকতার মূল। ক্রিকেট লাভজনক ব্যবসা, যা খেলোয়াড়-আয়োজক-দর্শকনির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণে সামনে এগিয়ে যায়। তবে যেতে যেতে প্রশ্ন রেখে যায়, ব্যবসাটি লাভজনকতর হওয়ার প্রক্রিয়ায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে খেলার আনন্দ কি শেষে পথেই কোথাও যাবে হারিয়ে? খেলাকে ক্রমশ পণ্যে পরিণত করতে করতে খেলোয়াড়-আয়োজক-দর্শকের কপালে কি খেলার নামে আনন্দের বদলে ভয়ানক মানসিক চাপই থাকবে লেখা?পরিশেষে আবারও গণমাধ্যমের কথা; ক্রিকেট যে একসময় ব্রিটিশদেরই উল্টো রথে ঘোরাতে শুরু করে, তার একটি চমৎকার চিত্রায়ণ আছে লগন নামের ভারতীয় সিনেমায়। ঔপনিবেশিক আমলের পটভূমিতে দেখা যায়, শাসকশ্রেণি প্রজাদের কর মওকুফ করে দেওয়ার বাজি ধরে তাদের ক্রিকেট ম্যাচে অংশগ্রহণ করতে বলে। জিতলে কর মওকুফ, কিন্তু হারলে প্রজাকে দিগুণ কর গুনতে হবে, এই থাকে শর্ত। কর মওকুফের প্রলোভন দেখিয়ে অজানা খেলায় প্রজাদের হারিয়ে দ্বিগুণ হারে শোষণ করার পরিকল্পনা নেয় তারা। ওদিকে প্রজাদের কর দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাই তারা জান-প্রাণ দিয়ে খেলায় জিততে চায়। অথচ খেলার নিয়মকানুনে অজ্ঞতা তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সৌভাগ্যবশত এক ব্রিটিশ কর্মকর্তার বোন তাদের গোপনে খেলার কৌশল শেখায়। সেই সুবাদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে প্রজারা ব্রিটিশ দলকে পরাজিত করে। কাহিনিতে ক্রিকেটকে ব্যবহার করে বিদ্যমান হেজিমনি প্রতিস্থাপন ও অ্যান্টি-হেজিমনি উপস্থিত করার চাঞ্চল্যকর পরিবেশনা দেখা যায়।আজকের পৃথিবীতে প্রাচীন উপনিবেশ এবং বর্তমানে মুক্ত দেশের জন্য ক্রিকেট ঠিক তেমনি এক অ্যান্টি-হেজিমনি। যে কারণে বরাবর ফুলহাতা পরতে অভ্যস্ত সৌরভ গাঙ্গুলী ২০০২–এর ১৩ জুলাই লর্ডসে ইংল্যান্ডের দেওয়া টার্গেট ৩২৬ রানকে অতিক্রম করতে পেরে জার্সি খুলে মাথার ওপরে ঘোরান। যে কারণে আজ সার্বভৌম দেশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দল ঔপনিবেশিক শক্তির প্রেতাত্মাকে কথায় কথায় বুড়ো আঙুল দেখায়; ঠিক যেন শেক্‌সপিয়ারের টেমপেস্ট নাটকে প্রভু প্রসপেরোর অধীনে কর্মরত ক্রীতদাস, ক্যালিবান; প্রভুর ভাষা আয়ত্তে এনে তারপর সেই ভাষাতেই প্রতিনিয়ত প্রভুকে আক্রমণ করে।আফসানা বেগম: কথাসাহিত্যিক ও পিএইচডি গবেষক, নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়
এই যে এত দিন ইংল্যান্ডে আছেন, এতগুলো শহর ঘুরলেন, কোন শহরটা বেশি ভালো লাগল?বিশ্বকাপ-যাযাবর হয়ে যাঁরা ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের এ শহর থেকে ও শহর চষে বেড়াচ্ছেন, তাঁদের সবাইকেই কখনো না কখনো প্রশ্নটা শুনতে হচ্ছে। যাঁর ব্যস্ততা ভালো লাগে, নীরবতা পছন্দ নয়, তিনি হয়তো বলছেন লন্ডন, নটিংহামের কথা। যাঁর কোলাহল পছন্দ নয়, ভিড়ভাট্টা ভালো লাগে না, তিনি বলবেন টন্টন বা কার্ডিফ। কিন্তু মাশরাফি বিন মুর্তজা বললেন, ‘আমার কোনো শহরই ভালো লাগে না।’বার্মিংহামে এসে কয়েক দিনের ছুটি পেয়ে সে জন্যই হয়তো স্ত্রী-পরিবার নিয়ে স্নোডন নামের এক ছোট্ট শহরে ঘুরতে চলে গেছেন মাশরাফি। দেখে এসেছেন ইংল্যান্ডের গ্রাম, পাহাড়ি ঝরনা। ইংল্যান্ডের গ্রাম কেমন হয়, সেটি দেখার খুব শখ ছিল মাশরাফি ও তাঁর স্ত্রীর। বাড়ির সামনে নরম রোদে বসে কোনো বুড়ো-বুড়ি দম্পতি চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে গল্প করছেন—এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য নাকি তাঁদের চোখে আর কিছুই হয় না।মাশরাফির এ রকম মনে হওয়াই স্বাভাবিক। ক্রিকেটের সঙ্গে রাজনীতির ব্যস্ততা যোগ হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন অবসরের আর সুযোগ নেই। বিশ্বকাপে এসে তো চারদিকে আরও লোকে লোকারণ্য। সাংবাদিকদের ভিড়। সেলফি–শিকারিদের ভিড়। ভক্তদের নানা রকম আবদার। আইসিসির নিরাপত্তাকর্মীদের পাহারা। কোলাহল থেকে সরে পরিবার নিয়ে একটু অবসর কাটানো বিদেশেও তাই বড় পাওয়া মাশরাফির জন্য।বার্মিংহামে ভারত এবং পাকিস্তানের মানুষ বেশি। বাংলাদেশিও কম নয়। ২ জুলাই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে গ্যালারিতে কোন দেশের সমর্থকদের উপস্থিতি বেশি হবে, এ নিয়ে নাকি এখানকার বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের মধ্যে জোর প্রতিযোগিতা চলছে। মাশরাফির কাছে খবর আছে, ভারতীয় দর্শকদের মাঠে যাওয়া ঠেকাতে দারুণ এক ফন্দি এঁটেছেন বাংলাদেশিরা। তাঁরা নাকি দেড়-দুই গুণ দামের লোভ দেখিয়ে ভারতীয় সমর্থকদের কাছ থেকে যত পারা যায় টিকিট কিনে বাংলাদেশের লোকদের দিচ্ছেন। এভাবে যদি গ্যালারি দখলের যুদ্ধে ভারতকে হারানো যায়!খেলায়ও ভারতকে হারাতে পারলে ভবিষ্যতে বার্মিংহামও হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের প্রিয় ভেন্যু। তবে বিশ্বকাপ উপলক্ষে বাংলাদেশের যেসব খেলোয়াড়-সাংবাদিক এখানে এসেছেন, তাঁদের অনেকেরই এখন পর্যন্ত শহরটা পছন্দ হয়নি। ইংল্যান্ডের অন্যান্য শহরের তুলনায় সাজানো-গোছানো ভাবটা কম মনে হচ্ছে এখানে। যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর হলে কী হবে, বার্মিংহাম কেমন কাঠখোট্টা। কাজ ছাড়া এই শহরের মানুষ আর কিছু বোঝে না।বার্মিংহামে বাংলাদেশ দল আছে হায়াৎ রিজেন্সিতে। হোটেলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সরু খাল। খালের পাড় ধরে এগিয়ে একটা টানেলের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া যায় সিটি সেন্টারে। মূলত বুলরিং শপিং সেন্টার আর গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল শপিং মল মিলিয়েই বার্মিংহাম সিটি সেন্টার। তবে গত দুই দিন সিটি সেন্টার এলাকা ঘুরে মনে হলো, কেনাকাটা যা–ই হোক না কেন, ওখানে এলে একবার খ্যাপা ষাঁড়ের সামনে মানুষ দাঁড়াবেই।৬ টন ওজনের ব্রোঞ্জ দিয়ে বানানো একটা ষাঁড় দাঁড়িয়ে আছে সিটি সেন্টারের ঠিক মাঝখানে। সামনের এক পা তোলা, ঘাড়টা রাগতভাবে ঘোরানো, চোখে আক্রমণের হিংস্রতা। আকৃতিতে সত্যিকারের ষাঁড়ের দ্বিগুণ এই ষাঁড়ের কাগুজে নাম ‘দ্য গার্ডিয়ান’। সিটি সেন্টারে এসে খ্যাপা ষাঁড়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা রীতিমতো প্রথা হয়ে গেছে। কেউ কেউ আবার ছবি তুলতে এর পিঠেও চড়ে বসছেন। ইন্টারনেটে ‘দ্য গার্ডিয়ান’–এর খোঁজ করে জানা গেল, যুক্তরাজ্যের যেসব স্থাপনার সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি ছবি তোলে, এটি তার মধ্যে তৃতীয়। এর আগে আছে শুধু পার্লামেন্ট হাউস এবং লন্ডন আই।সিটি সেন্টারে খ্যাপা ষাঁড় কেন, সেটি ব্রোঞ্জের ওই ষাঁড়-মূর্তি দেখার পর থেকেই মনে উঁকি দিচ্ছিল। ইন্টারনেটে ঘেঁটে আর স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা গেল তার সারমর্ম, সিটি সেন্টার এলাকাটি বহু বছর আগে ছিল ভুট্টার বাজার। এর ঠিক মাঝখানের ময়দানে হতো ষাঁড়ের লড়াই। খেপিয়ে তোলা ষাঁড়ের নাকে একপর্যায়ে লোহার রিং পরিয়ে বশে এনে সেটাকে জবাই করা হতো। সে ইতিহাসকে ধরে রাখতেই ২০০৩ সালে ওখানে বসানো হয় বিশালাকৃতির ব্রোঞ্জের ষাঁড়, যেটি এখন বার্মিংহামেরই ট্রেডমার্ক হয়ে গেছে। বুলরিং শপিং মল নামকরণও সে কারণেই।খ্যাপা ষাঁড়ের শহরে যখন এসেই পড়েছেন, ব্যবসা নগরী বার্মিংহামের কোলাহল থেকে দূরে গিয়েও নিশ্চয়ই লড়াইয়ের ঘ্রাণ নাকে লেগেছে মাশরাফির। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটা তো শুধু বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপ ২০১৯ সেমিফাইনালের পথ পরিষ্কারেরই উপলক্ষ নয়, গত কয়েক বছরে হয়ে ওঠা উপমহাদেশের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ক্রিকেটযুদ্ধও।বাংলাদেশ, ভারত কে কার নাকে রিং পরিয়ে প্রতিপক্ষকে মাটিতে নামায়, আপাতত সেটি দেখারই রোমাঞ্চকর অপেক্ষায় আছে খ্যাপা ষাঁড়ের শহর বার্মিংহাম।
নবীন ছাপচিত্রী ইকবাল বাহার চৌধুরী তাঁর একক ছাপচিত্র প্রদর্শনী ‘মিটস অ্যান্ড হেইনস’ নিয়ে বর্তমানে আসন পেতেছেন ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে। মোট ৬০টি চিত্রকর্ম নিয়ে এ প্রদর্শনীতে রয়েছে এচিং, উড কার্ভিং ও উড ইন্ট্যাগ্লিভের কাজ। মিশ্র মাধ্যমের কাজ ছাড়াও আছে জলরঙের কিছু মনোমুগ্ধকর কাজ। ইকবালের প্রদর্শনী নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই কথা বলতে হবে তাঁর করণকৌশল নিয়ে। কেননা, তাঁর করণকৌশলে আছে প্রবল পর্যবেক্ষণ এবং নিরীক্ষণের তদারকি। ছাপচিত্র সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। এক প্রকারের উপকরণের উপরিতলে খোদাই চিত্রের ওপর রোলার দিয়ে রং করে কাগজে ছাপ নেওয়া হয়। প্লেটের খোদাই করা অংশ রং ছাড়া সাদায় প্রস্ফুটিত হয়ে ছাপাই ছবির নকশার অংশ হয়ে ওঠে। যেমন উডকাঠ ও লিথোগ্রাফ। আরেক প্রকার পদ্ধতি হলো ইন্ট্যাগলিও। এই পদ্ধতিতে অ্যাসিড দিয়ে কপার বা জিঙ্ক প্লেটে প্রচুর রেখার সমাহারে রং প্রয়োগ করে ফুটিয়ে তোলা হয় ছবি। এচিং, অ্যাকুয়াটিন্ট হলো এই মাধ্যমের ছবি। ইকবালের প্রিয় মাধ্যম ইন্ট্যাগলিও। ফলে প্রদর্শনীতে তাঁর বেশির ভাগ কাজই এ পদ্ধতির। এই শিল্পীর ছবির বিষয়বস্তু তাঁর মনোজগৎ। শিল্পীর মনোজগতের বিশ্লেষণিক পরিভাষাই দর্শক দেখতে পান তাঁর কাজে। কক্সবাজারে জন্ম নেওয়া এই শিল্পীর ছবির সারফেসও সাগরতটের নুড়ি-কণার মতো রঙের টেক্সচারে নান্দনিক। শুধু রং নয়, তাঁর আছে অন্য আরও কিছু কৌশল। যেমন ‘টেস্ট অব টাইম-১’ ছবিতে রঙের টেক্সচার আনতে ইকবাল ব্যবহার করেছেন টিসু পেপার, নেট, কার্টনের অসমতল কাগজ, পাতলা কাপড় প্রভৃতি। শেওলা সবুজ রঙের এ ছবিতে ধরা পড়েছে ফেলে আসা সময়ের দারুণ এক দুপুরের নির্জীবতা।ইকবালের ছবিগুলো বিমূর্ত হয়েও যেন বিমূর্ততায় নির্লিপ্ত নয়। ‘রিলেশন’ সিরিজের কাজগুলোতে যে ফিগারেটিভ ফর্ম ব্যবহার করা হয়েছে, তা যেন ছবির সারফেসের সঙ্গে পরিপূরক হয়ে উঠেছে। প্রদর্শনীতে কিছু ছোট ছোট মাপের জলরঙের ছবিও দেখা গেল। সাদা কাগজে জলরঙের ওয়াশ দিয়ে নিজস্ব ফর্মে চিত্তাকর্ষক কিছু অনুভূতি সৃষ্টি করেছেন শিল্পী। ১৪ জুন শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ২৯ জুন পর্যন্ত।
ইমরান মাঝিবাঁশবাগানের রাজকন্যাএকটা কাঠবিড়ালি মেরে সে যে যাচ্ছিল এই পথেদুই দিকে পানি ছিল সবুজ ধানখেতে।পথে ছিল ইটবাঁকা ছিল পিঠ গো তাঁর বাঁকা ছিল পিঠ।পিঠে ছিল ঝুড়িও তাঁর পেছনে এক বুড়ি—আর সামনে একটা পোলাচুল বাতাসে খোলা।হাঁটায় ছন্দ ভরাও তাঁর জামাকাপড় ঝুড়ি গুলতি নিজের হাতে গড়া।ও সে পাহাড় ধরে হাঁটেমাঝে মাঝে দা চালিয়ে লতাপাতা কাটে। ও সে তাকায় যেন হরিণছানাচলে যেন আছে ডানা,বলে যেন হাস,ও সে বাঁশবাগানের রাজকন্যা, চারিদিকে বাঁশ।ও তার সবুজ বনে খুব গহিনে হলুদ বাঁশের ঘরও সে প্রাণী হয়ে প্রাণীর সাথে বাঁচে পরস্পর। মিছিল খন্দকারশান্ত দিনযেভাবে বাতাস স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চলে আসেসেভাবেই আসো।শিশির দেখতে এলে ধরো,সকালের রৌদ্র তুমি; সম্পর্কের উজ্জ্বল বিভ্রান্তি—এমনই তো ক্ষণস্থায়ী যাত্রা আমাদের।যদিবা গন্তব্যের কথা আসে—আকাশে আকাশে যত ধাবমান মেঘ; বাস্তু-উদাসীন—তাদের কোথাও কোনো যাওয়া নেই ঝরে যাওয়া ছাড়া। আমরাও তাই—হয়তো আগুন পরে ছাই।যতটুকু পাই তা তো উত্তাপে জাজ্বল্যমান শিখা,ঈষৎ দূরত্ব থেকে আলো।যেহেতু কারণ প্রকরণে নেই,ফলে এসোযেভাবে মুহূর্তে এসে অন্ধকারে বিদ্যুৎ চমকাল। কুশল ইশতিয়াকদি ভয়েস অব কালারআমাকে ঘিরে রাখে দুর্বোধ্য আলোকমধ্যরাত্রে আকাশে ঝলক। যেন বিদ্যুৎযান ধসে যাচ্ছেপৃথিবীর কোথাও।একটা বেগুনি আলো—প্রায়ই টের পাই মাঝরাতেআমাকে খেয়াল করে। ঝড়ের আগের আলো ঠিকঠাক বুঝি না।তবে সামনে একটা ঝড়—খুব বুঝতে পারি।এ রকম আরও অনেক আছে। সন্ধ্যায় ধূপের ধোঁয়ার মতনঅজ্ঞাত একটা রং আমার পিঠে টোকা দেয়। যখন বসে থাকি একেবারে একা।অতীত থেকে আলো আসে। আলো আসে ভবিষ্যৎ থেকেও।অন্ধকার নামের আলোটা আমাকে কিছু বলতে চায়। ভাষাটাঠিকঠাক বুঝি না। শিখছিসেই মাতৃগর্ভ থেকে
আকরাম খান। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, এখন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিজয়ী বাংলাদেশ অধিনায়ক বলছেন তাঁর প্রিয় ৫ নিয়ে।১. প্রিয় শিল্পীতিনি কিশোর কুমারযাঁর গান সেই শৈশব থেকে শুনছি এবং এখনো শুনে চলেছি, তিনি কিশোর কুমার। এখন মাঝেমধ্যেই আমার মেয়ে বলে, ‘বাবা আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন তুমি যাঁর গান শুনেছ, এখনো তাঁর গান শুনছ!’ কিশোর কুমারের ‘জিন্দেগি কা সফর হ্যায় ইয়ে ক্যাইসা সফর’ গানটা আমি প্রায় সময়ই গুনগুন করে গাই। মানুষের জীবনের সঙ্গে মিলিয়েই যেন গানটা সৃষ্টি করা। আমাদের এই জীবন তো একটা ভ্রমণ, একটা সময় যেটা শেষ হয়ে যাবে, সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই জীবনবোধ ‘জিন্দেগি’ গানে অসাধারণ মহিমায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।২. প্রিয় নায়িকারেখা ও মাধুরী দীক্ষিতসিনেমা দেখছি সেই ভিসিআর–ভিসিপির যুগ থেকে। কত সিনেমা যে দেখলাম! হিন্দি সিনেমা একটু বেশি দেখা হয় আমার। তবে আমার প্রিয় নায়িকা কে—প্রশ্নটা করলে বলব যে সব সময় রেখা আর মাধুরী দীক্ষিতের অভিনয় পছন্দ করে আসছি আমি। রেখার মুকাদ্দার কা সিকান্দার বেশি টেনেছে। এই সিনেমায় রেখার অভিনয় ভুলতে পারি না। আর মাধুরীর অভিনয় সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে বেটা সিনেমায়।৩. প্রিয় খেলোয়াড়বিরাট কোহলিকে অনেক ভালো লাগেআমার খেলোয়াড়িজীবনে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগত ওয়াসিম আকরাম আর শচীন টেন্ডুলকারকে। এই দুজনের প্রতিভা, ধারাবাহিকতা ভীষণ মুগ্ধ করত। আমার কাছে তাঁরা হিরো। অনেক বেশি ফলো করতাম তাঁদের। কিন্তু এখন পছন্দ কিছুটা বদলেছে, বিরাট কোহলিকে অনেক ভালো লাগে। ফিটনেস, চিন্তাভাবনা, আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারণে কোহলিকে বেশি ভালো লাগে এই সময়ে। ৪. প্রিয় বইআমার পড়া সেরা উপন্যাস ‘কালবেলা’সত্যি বলতে, ব্যস্ততার কারণে এখন বই পড়ার খুব একটা সুযোগ হয় না। তবে যে বইটা একসময় আমার জীবনে ভীষণভাবে প্রভাব রেখেছিল, সেটি সমরেশ মজুমদারের কালবেলা। মনে আছে, বইটা পড়েছিলাম আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে, যখন আমি প্রেম করতাম। হা হা হা! অনিমেষকে নায়ক করে গড়ে ওঠা এই উপন্যাস তখন দারুণভাবে দাগ কেটেছিল মনে। বইটি নিয়ে আমি একবার বিস্তারিত সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম ভোরের কাগজ–এ, তা–ও তো অনেক দিন হয়ে গেছে। সেই যে কলকাতার রাস্তায় অনিমেষ পা রাখল আর দাঙ্গা শুরু হলো...। আদতে উপন্যাসটার অনেক কিছুই স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছে এখন। তারপরও এটা বলতে পারি, আমার পড়া সেরা উপন্যাস কালবেলা।৫. প্রিয় সিনেমাটান টান গল্পের ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’অষ্টম-নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে সিনেমা হলে দিয়ে সিনেমা দেখা শুরু। সিনেমা হলে যাওয়াটাও তখন একটা অ্যাডভেঞ্চার ছিল। বিশেষত, স্কুলে পড়াকালে নানা কায়দা–কসরত করে তবেই পৌঁছাতে হতো হলের দোরগোড়ায়। কিন্তু যে চলচ্চিত্রটা আমার সবচেয়ে প্রিয়, সেই মুকাদ্দার কা সিকান্দার কখনো সিনেমা হলে বসে দেখা হয়নি। ছবিটা অবশ্য সেই ছোটবেলা থেকেই দেখছি। কতবার যে দেখেছি, তার শেষ নেই! যতবার দেখি, ততবারই ভালো লাগে। কেন এই ভালো লাগা? প্রথমত টান টান গল্প, দ্বিতীয়ত রেখা ও অমিতাভের অভিনয়। তবে এই সিনেমায় অমিভাভ বচ্চনের অনবদ্য অভিনয়ই আমাকে বেশি মুগ্ধ করে।অনুলিখন: রানা আব্বাস
সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা কত নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ, তা সর্বশেষ ট্রেন দুর্ঘটনায় আবার উন্মোচিত হয়েছে। রেল ও সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার দুর্দশা অত্যন্ত গভীর। শুধু কুলাউড়া ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে পুরো চিত্র পাওয়া যাবে না। রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম বলেছেন, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ‘ব্রিজ ভেঙে নয়, দুর্বল লাইন ও নাটবল্টুর কারণে।’ আরও এক বিস্ময়কর মন্তব্য তিনি করেছেন: যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে ওঠার কারণেই দুর্ঘটনা, তাই রেল মন্ত্রণালয়ের দায় নেই। রেললাইন দুর্বল, নাটবল্টু ঢিলে—এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা আসলে ব্যাপক। কুলাউড়ার মতো দুর্ঘটনা আরও অনেক স্থানেই যেকোনো সময় ঘটতে পারে। মহাসড়কের অবস্থাও ভালো নয়।এই মুহূর্তে দরকার সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে একাধিক সমমানসম্পন্ন বিকল্প যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করা। রেল ও মহাসড়কের প্রতিটি ইঞ্চিকে ত্রুটিমুক্ত ও ঝুঁকিমুক্ত করা প্রয়োজন। অস্থায়ী ভিত্তিতে জোড়াতালি দিয়ে যা চলছে, তা মানুষের চলাচলে ও পণ্য পরিবহনে সার্বক্ষণিক ঝুঁকি তৈরি করে রেখেছে। শাহবাজপুরের সেতুসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেতু-কালভার্টের অবস্থা খারাপ। সিলেটবাসী ভ্রমণের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে ট্রেনের ওপরই বেশি ভরসা করেন, কিন্তু সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় তার গুরুত্বের ছাপ লক্ষ করা যায় না। কুলাউড়ায় কালভার্টে নাটবল্টু আলগা থাকাও কোনো বিরাট ব্যতিক্রম নয়। এ রকম দুরবস্থা আরও বহু স্থানে আছে। শাহবাজপুরে সেতুতে ভাঙনও ছিল স্বাভাবিক পরিণতি। ট্রেনে যাত্রীর চাপ বাড়ার সঙ্গেও দুর্নীতি রোধ না করতে পারার ব্যর্থতা ছিল। শাহবাজপুরের সেতু সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করার পরও কী করে বছরের পর বছর কেটে গেল, কারা অভিযুক্ত, তাদের শাস্তি দেওয়া ছাড়া যোগাযোগব্যবস্থার নৈরাজ্য রোধ করা যাবে না।বাংলাদেশের আঞ্চলিক উন্নয়নে, বিশেষ করে রেমিট্যান্স এবং বিদেশের সঙ্গে যত বড় বড় অর্থনৈতিক স্বার্থ ও সম্ভাবনা, তার সিংহভাগের সঙ্গেই কমবেশি সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার একটা যোগসূত্র থাকে। সুতরাং জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রামের যাতায়াতব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও নিরাপদ করা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের সঙ্গে মোকাবিলা করার দাবি রাখে। সত্য বটে, আমরা রেল খাতের বিরাট উন্নয়ন ও বিরাট কর্মসূচির পরিকল্পনা সময়ে সময়ে জেনে আসছি। যেমন দেশের বিদ্যমান ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথ সম্প্রসারণ করে ৪ হাজার ৭০০ কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনার অগ্রগতি কী, তা জানা যায় না। আমরা অবশ্যই সরকারের সুদূরপ্রসারী যোগাযোগ উন্নয়ন কৌশলকে স্বাগত জানাই। কিন্তু সেই কারণে বিদ্যমান মহাসড়ক ও রেলপথের যে দুর্দশা ও নৈরাজ্যিক অবস্থা চলছে, তা থেকে আমরা মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারি না। এগুলোর চলমান ঝুঁকিপূর্ণ দুর্দশা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে দূর করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।কুলাউড়া ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ অলৌকিক নয়, তার তদন্তে কোনো জটিলতা থাকারও কথা নয়। নাজুক অবস্থা বিদ্যমান ছিল এবং সংশ্লিষ্ট কারও কাছেই তা গোপন ছিল না। সুতরাং ঝুঁকি দূর করায় গাফিলতির জন্য জবাবদিহি চাওয়া উচিত। শাহবাজপুরের সেতু ভাঙনের পর যে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি ভারী যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী; এটিরও বিভিন্ন স্থান খানাখন্দময় ও সংকীর্ণ হওয়ায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে। ৫ ঘণ্টার জায়গা পেরোতে ১৫ ঘণ্টার বেশি লাগছে।সিলেটের সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ত্রুটিমুক্ত করতে সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রকৃতিতে যখন বসন্ত আসে, মানুষের দেহমনেও প্রভাব পড়ে তার। বনে যখন ফুল ফোটে, ফোটে তখন মনেও। বাইরে যখন বৃষ্টি ঝরে, ছাট এসে লাগে গায়ে। মনে জাগে ঐকতান—ধীর, দ্রুত কিংবা মধ্যলয়ে, ধারাপাতের গতি ও ঝংকারের সঙ্গে সংগতি রেখে। দূর অতীত থেকে স্মরণে উঠে আসে পড়শিবাড়ির টিনের চালের ওপর সহসা ঝেঁপে আসা বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ আর তার সঙ্গে মেশানো সে বাড়ির মেয়েটির নামতাপাঠের সুর। বৃষ্টির ধারাবিবরণী আর মেয়েটির ধারাপাতপাঠ—উভয়ের মধ্যে ঘটে নিবিড় সুরসম্প্রীতি। পাশে তখন রেডিওতে হেমন্তের কণ্ঠে বর্ষার গান, ঠাকুরের সেই স্নিগ্ধ–নিবিড় বর্ষাসংগীত, ‘এমনও দিনে তারে বলা যায়...’। তখন ‘জগতে যেন কেহ নাহি আর’। তখন ‘যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে, সে কথা আজি যেন বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়’। তখন বৃষ্টিতে ঝাপসা হতে হতে একসময় একেবারে মুছে যায় সমস্ত জগৎ। তখন শুধু ক্রিয়াপদে, শুধু ক্রিয়াকৌশলে নিষ্পন্ন হতে থাকে একেকটি বাক্য।সেই প্রিয় পড়শিরা হায়, একদিন ওই টিনের চাল, জানালা, উঠান, রক্তজবা, তুলসীতলা—সবকিছু রিক্ত ও শূন্য করে দিয়ে চলে যায় সে কোথায় কোন দূরদেশে! সেই সঙ্গে একটু একটু করে হারিয়ে যায় আমারও শৈশব। পড়শিবাড়ির মেয়েটি অজান্তে নিয়ে চলে গেছে আমার সেই শৈশববৃষ্টির সৌগন্ধ, ব্যঞ্জনা ও অনুপ্রাস।বিকেলে বৃষ্টি ঝরছে একটানা, অঝোর ধারায়। জানালার বাইরে মাঠ। মাঠের প্রান্তে সারি সারি তালগাছ। তাদের মাথার ওপর তালপাতার তৈরি ছাতা। গাছেরা দাঁড়িয়ে আছে প্রতীক্ষায়, কখন ছাতিয়ানতলির বিল থেকে, কচুরিপানার তলা থেকে, ধানখেত পেরিয়ে উঠে আসবে উল্লসিত সব কই মাছ, দু-চারটা মাগুর মাছও, অল্প জল জমা মাঠের উচ্ছল সবুজ ঘাসের মধ্য দিয়ে কানকো টেনে টেনে চলে আসবে গাছেদের দিকে। তারপর তালগাছের গা বেয়ে দু-একটা কই মাছ যেন উঠতে চাইবে আকাশের দিকে, যেখান থেকে ঝরে এমন ব্যাকুল করা মধুরসিক বৃষ্টি। কইবাহিনীর সে এক অপরূপ শোভাযাত্রা, এক অবাধ প্রীতিদৌড়ের প্রতিযোগ। প্রকৃতির এক মনোজ্ঞ প্রীতিব্যবস্থা।পড়শিবাড়ির মেয়েটি সঙ্গে করে নিয়ে চলে গেছে আমার সেই শৈশববৃষ্টির সৌগন্ধ, ব্যঞ্জনা ও অনুপ্রাস।এবং টিপটিপ বৃষ্টির সন্ধ্যা। সে এক আধো বাস্তব আধো অবাস্তব সময়কাল। চারপাশ যেন হয়ে ওঠে ঝাপসা আলো-আঁধারশাসিত সান্ধ্য রূপকথার দেশ। নতুন পানিতে ভরে ওঠা ডোবায় মত্ত দাদুর-দাদুরির বিরতিহীন মকমকি, কোটরনিবাসী প্যাঁচার ঘন ঘন ঘুৎকার, বাঁশঝাড়ে আধো ভেজা শেয়ালসম্প্রদায়ের হাঁকডাক, দূরে নৈশ স্টিমারের ভৌতিক ভেঁপু, মধ্যনদীতে পোঁতা বাঁশের আড়কাঠিতে রামতা মাঝির ঝোলানো জলপথ-নির্দেশক লণ্ঠন আর সেই লণ্ঠন-আলেয়ার মিটিমিটি হাতছানি...। এমনই এক টিপটিপ বৃষ্টি–উপদ্রুত অন্ধকার সন্ধ্যায় একা হাট থেকে ফিরছিলেন পিতামহ, জোড়া ইলিশ নিয়ে। পথিমধ্যে টের পান, ব্যাগ থেকে বের হয়ে থাকা লেজ ধরে কে যেন টান দিচ্ছে থেকে থেকে। এক সুরসিক ভূতাত্মা। শুধু টান দিয়েই ক্ষান্ত নয় ভূত। কিছুক্ষণ পরপর আবদারও জানাচ্ছে নাকি সুরে, ‘দিঁয়া যাঁ এঁকটা ইঁলিশ।’ইলিশের প্রতি ভূতের লিপ্সা নিঃশর্ত ও অনিঃশেষ এবং বংশপরম্পরাগত। দাদুও নাছোড়। একপর্যায়ে হঠাৎ এক কালো, ভেজা বেড়ালের রূপ ধরে হাঁটতে থাকে ভূত, দাদুর আগে আগে। অদৃশ্য হয়ে যায় আবার। আবার বেড়াল। আবার অদৃশ্য। ভূতের এ রকম পরাবাস্তব আচরণে বিরক্ত হয়ে পিতামহ খপ করে ধরে ফেলেন ভূতের বিগ্রহটাকে। তারপর ছাতার ভেতর ভূতটাকে ঢুকিয়ে বগলতলায় ফেলে চাপতে চাপতে বাড়ি ফেরেন। ছাতাটা বাহিরবাড়ির বৈঠকখানার বেড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে কলপাড়ে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে ঢোকেন দাদু। বাড়ির ও পড়শিবাড়ির লোকজনের মধ্যে সারা রাত সে কী কৌতূহল আর চাঞ্চল্য! পরদিন ভোরবেলা উঠে সবার সামনে ছাতাটা ঝাড়লেন দাদু। ঝরে পড়ল মরা কালো এক দাঁড়কাক—অদৃশ্য ভূতের এক দৃশ্যমান, মিশিকৃষ্ণ রূপান্তর; এক ভিন্নতর ভূতবিগ্রহ।মাধাইনগর হাইস্কুল। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ পর্ব চলছে। এমন সময় ঝমঝম করে বৃষ্টি। সবাই দৌড়ে গিয়ে উঠেছে লম্বা স্কুলবারান্দায়। ঠিক সে সময়ে এক তরুণ, খালি গা, এলোমেলো রুক্ষ চুল, পরনে জেলেদের মতো লুঙ্গি মালকোচা দেওয়া, হাত পা মুখ মাথায় ঘন কালিঝুলি মাখানো, মাছ ধরা জালে জড়ানো সারা শরীর। বৃষ্টির মধ্যে স্কুলের বারান্দার সামনে দিয়ে বাঁশি বাজাতে বাজাতে চলে যাচ্ছে কৃশকায় হারাবতী নদীর দিকে। বাঁশিতে কেমন অদ্ভুত এক সুর! সেই সুরে আবার এসে মিশছে মধুর বৃষ্টিনিনাদ। আর বৃষ্টিজলে দেহ থেকে কালিঝুলি ধুয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে।রাস্তার ওপারে পাকুড়গাছ। ওই দিক থেকে এসেছে মানুষটা। সে কি এই স্কুলের ছাত্র, যেমন খুশি তেমন সাজোর একজন প্রতিযোগী, নাকি জেলেপাড়ার এক উদাসীন সুরপাগল তরুণ জেলে, গায়ে গাবের রসে ভেজানো জাল মুড়ি দিয়ে বৃষ্টির ভেতর শর্টকাট পথ ধরে চলে যাচ্ছে হারাবতীর দিকে—জানে না তা কেউই, কেউই চিনতে পারেনি তাকে।বৃষ্টি থেমে গেছে সেই কখন। শেষ হয়ে গেছে প্রতিযোগিতার সব পর্ব। দিন শেষে পুরস্কার বিতরণ। যেমন খুশি তেমন সাজোতে ওই জালমোড়ানো বাঁশরিয়াই বিবেচিত হয়েছে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের জন্য। কিন্তু তার তো আর দেখা নেই। কে সে—কোন ক্লাসের ছাত্র, কী নাম, হঠাৎ উদয়ই-বা হয়েছিল কোত্থেকে বৃষ্টির ভেতর—জানে না কেউই। বৃষ্টির এ-ও এক রহস্য উসকানো কৃতি।মানুষ, প্রকৃতি এবং এই যে জড় ও জীবজগৎ—কোন রূপে, কোন বিন্যাসে বিন্যস্ত হয়ে আছে এরা, কীভাবে নিষ্পন্ন হচ্ছে এদের নিরবচ্ছিন্ন আন্তযোগাযোগ, কোন ভাষ্যে লেখা হয়ে চলেছে আকাশ-মাটির মধ্যকার প্রেমের উপাখ্যান, কী উপায়ে ক্রমাগত চরিতার্থ হয়ে চলেছে বিশ্বের বিচিত্র অভিপ্রায়, আর কোন প্রক্রিয়ায়ই-বা মীমাংসিত হয়ে চলেছে জগতের নানা অসংগতি—মাঝেমধ্যে সেসব উন্মোচন করে দেখাতে চায় প্রকৃতি। বর্ষা যেন তারই এক সক্রিয় সজীব মহড়া, এক সজল উদ্‌যাপন।
যুক্তরাষ্ট্রে বসে অনলাইনে ও পত্রিকায় বরগুনার খবরটি দেখে শিউরে উঠলাম। এতে শুধু ক্ষুব্ধ ও হতাশই নই, সব মিলিয়ে মনের মধ্যে আতঙ্ক অনুভূত হচ্ছে। কারণ, দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলছে। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আদালতও বলেছেন, সমাজ কোথায় যাচ্ছে? এ রকম পরিস্থিতিতে একজন উন্নয়ন ও সমাজকর্মী হিসেবে প্রশ্ন জাগে, পরিবার ও সমাজে কী ঘটছে? রাষ্ট্র এখানে কী করছে? সমাজে দেখছি একধরনের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যেখানে প্রকাশ্যে অপরাধ সংঘটিত হলেও এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। বরগুনায় দিনদুপুরে কলেজের সামনে এমন একটি বর্বর ঘটনা ঘটল। অথচ কেউ এগিয়ে এল না।একজন নারী আপ্রাণ চেষ্টা করেও তাঁর স্বামীকে রক্ষা করতে পারলেন না। কলেজের তরুণ শিক্ষার্থীরা তাহলে কোথায় ছিল? এই বয়সে তাদের তো এগিয়ে আসার কথা ছিল। কেউ জরুরি নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করতে পারত। আশপাশের লোকজনেরও কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এ রকম পরিস্থিতির জন্য কাকে দায়ী করব? এই ঘটনাটি তো আর ঘরের মধ্যে রাতের আঁধারে হয়নি, যা নারীদের সঙ্গে প্রায়ই করা হয়। এখানে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে প্রকাশ্যে ঘটনাটি ঘটল। তাহলে বলতে হয়, আমাদের শিক্ষা কোথায় যাচ্ছে। কোন মূল্যবোধ শেখাচ্ছে। কেউ যদি এসে ধাওয়াও দিত, তাহলেও হয়তো রিফাত শরীফকে বাঁচানো যেত। এর আগে বিশ্বজিৎ (পুরান ঢাকায় নৃশংসভাবে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল) ও অভিজিৎকে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জঙ্গিদের হাতে নিহত) বাঁচানো যায়নি। এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য আমরা কী করছি, তা ভেবে দেখা দরকার। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ভয় পাইনি, তাহলে আজ কাকে ভয় পাচ্ছি? কেন প্রতিরোধ করতে পারছি না? বিচার চাইতে গিয়েও কিন্তু ফেঁসে যাওয়ার ভয় কাজ করে। এই বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করার সময় এসেছে। আর পরীক্ষাকেন্দ্রিক পড়াশোনা থেকে বের হয়ে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরির দিকে জোর দিতে হবে।বরগুনার এই ঘটনা এখন খুব আলোচনা হচ্ছে। হয়তো আবার কোনো ঘটনা ঘটবে, তখন আবার এটি ভুলে যাব। দেখে মনে হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। গণমাধ্যমকেও অনুরোধ করব, বিচার না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকার জন্য। সর্বোপরি পার পাওয়ার সংস্কৃতির দানবটাকে সরাতে হবে।লেখক: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
নদী দখল ও দূষণ নিয়ে খবর নতুন কিছু নয়। প্রাত্যহিক জীবনের অংশের মতো নদী দখল ও দূষণের বিষয়টি মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি বলা যায় চালু হয়ে গেছে। প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এসব দূষণ ও দখলের পেছনে থাকেন বলে এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা সাধারণত কথা বলেন না। তবে এই কাজ যদি কোনো সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান করে, তখন সেটি অধিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক সেই ধরনের একটি খবর: জামালপুরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শহরের ময়লা-আবর্জনা ট্রাকে করে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলছেন। এই খবর পড়েই বোঝা যায়, একটি পৌরসভায় প্রতিদিন যে বর্জ্য জমা হয়, তার সবটাই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ব্রহ্মপুত্রের বুকে ঢালছেন। তার মানে টন টন বর্জ্য সেখানে ফেলা হচ্ছে আর মৃতপ্রায় ব্রহ্মপুত্রের মৃত্যু ত্বরান্বিত হচ্ছে। পৌর মেয়র দাবি করেছেন, তিনি বিষয়টি জানতেন না। সেখানে আর বর্জ্য ফেলা হবে না বলে তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু ইতিমধ্যে যে ক্ষতি হয়ে গেছে তা কীভাবে পূরণ করা হবে, সে জবাব দেওয়ার কেউ নেই। জামালপুর পৌর শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদটি শুকিয়ে যাওয়ায় জেগে ওঠা চর এখন শহরবাসীর বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। আর সেখানেই পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শহরের ময়লা-আবর্জনা ট্রাকে করে নিয়ে নদে ফেলেছেন। আবর্জনার দুর্গন্ধে এখন নদের পাড়ে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। লোকজন নদের তীরে আগের মতো বেড়াতে যেতে পারছে না। পরিবেশদূষণের পাশাপাশি আবর্জনায় ভরাট হচ্ছে নদটি। লক্ষণীয় বিষয় হলো শহরের পলাশগড় এলাকায় প্রায় আড়াই একর জমির মধ্যে বর্জ্য ফেলার নির্ধারিত স্থান রয়েছে। কিন্তু পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেখানে না ফেলে ফৌজদারি ও পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় নদে বর্জ্য ফেলছেন। এটি সাধারণ জ্ঞানের বিষয়। জনসচেতনতার বিষয়। আইনকানুন দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা কঠিন। এত বড় একটি অনিয়ম হচ্ছে অথচ পৌর মেয়র তা জানতেন না, এটি দুঃখজনক। তবে তিনি যখন শেষ পর্যন্ত তা জানতে পেরেছেন, তখন এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু উপায় নির্ধারণে তাঁকেই সচেষ্ট হতে হবে। ইতিমধ্যে ময়লা–আবর্জনা ফেলে যতটুকু জায়গা ভরাট করা হয়েছে এবং পরিবেশদূষণ করা হয়েছে, তা দ্রুত ঠিক করার ব্যবস্থা পৌরসভাকেই করতে হবে। জামালপুর পৌরসভার মতো প্রতিটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষের মাথায় রাখা দরকার, নাগরিকেরা পৌর কর দেন সেবা পাওয়ার জন্য, পৌর কর্মীদের ভুল কাজের কারণে ভুক্তভোগী হওয়ার জন্য নয়।
‘আজ আমরা নয়, দেশে ফিরতে পারত আমাদের মৃতদেহ।’ ভয়ংকর এই কথাটা নিউজিল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে ফেরার বিমানে উঠতে উঠতে বলেছিলেন তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। এ কথার মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলের নির্মম অভিজ্ঞতা। একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষ ক্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে ঢুকে ধর্ম ও বর্ণের দোহাই দিয়ে হত্যা করে ৫১ জন নিরীহ মানুষকে। মিনিট পাঁচেক এদিক–সেদিক হলে সেদিন এ হামলায় শেষ হয়ে যেতে পারত বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল, যাঁরা সেই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যাচ্ছিলেন। ঘটনা থেকে বাঁচার পরিপ্রেক্ষিতেই তামিমের ওই উক্তিটি। দেশে বসে আমরা যখন তাঁদের এই অভিজ্ঞতার কথা টিভি কিংবা অনলাইন স্ট্রিমিং করে জানছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল দুর্ধর্ষ কোনো থ্রিলার চলচ্চিত্র চলছে।তিনজন সাংবাদিক বাস্তবে ঘটা এই থ্রিলার দেখেছেন একেবারে সামনে থেকে। তাঁদেরই একজন উৎপল শুভ্র। বাংলাদেশের বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক তিনি। ওই সফর কাভার করার জন্য বাংলাদেশের দলের সঙ্গে ওই সময় ছিলেন নিউজিল্যান্ডে। তাঁর লেখা নিউজিল্যান্ড: দুঃস্বপ্নের আগে ও পরে নামের বইটিতে সেই অভিজ্ঞতার বিশদ বর্ণনা তুলে এনেছেন তিনি। একই সঙ্গে ঘটনাটি খেলোয়াড়দের কীভাবে নাড়া দিয়ে গেছে, লিখেছেন তা-ও। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে উৎপল শুভ্র কেবল নিউজিল্যান্ডে ঘটে যাওয়া সেই লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনাই দেননি, ঘটনার আগে ও পরে তাঁর দেখা নিউজিল্যান্ডের একটি পাঠও দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আমাদের। মাত্র কয়েক মুহূর্তের একটি ঘটনা কীভাবে নিউজিল্যান্ড নামের দেশ এবং তার সম্পর্কে যাবতীয় ধারণাকে বদলে দিয়েছে, তার বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা উঠে এসেছে বইটিতে।একদল ক্রিকেটার, যাঁরা একটি দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন, সেই দলটি আকস্মিক এক ধাক্কায় কী আতঙ্ক ও অসহায়ত্বের ভেতরে পড়েছেন, বর্ণিত হয়েছে তার পুরোটাই। যেমন, এখানে তামিমকে তাঁর ছেলেকে ফোনে বলতে শোনা যায়, ‘জানো আরেকটু হলে বাবা আর থাকত না।’ কতটা অসহায় হলে একজন বাবার কণ্ঠ থেকে ভেসে আসে এমন আর্তনাদের স্বর? বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘মিস্টার ডিপেন্ডবল’ কিংবা ‘ওয়াল’ হিসেবে বিবেচিত মুশফিকের কান্নার সেই বর্ণনা ছুঁয়ে গেছে আমাদেরও। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে কয়েক মিনিট বেশি না লাগলে কিংবা গাড়িতে ওঠার আগে ড্রেসিংরুমের সেই মিনিট দুয়েকের ফুটবল খেলাটা না হলে গোটা ঘটনাটার চেহারা অন্য রকম হয়ে যেতে পারত হয়তো, এটুকু লিখতে লিখতে কেমন যেন আঁতকে উঠতে হয়। যা লিখছি তা আসলেই ঘটেছিল তো?বইটি পড়তে পড়তেও বেশ কয়েকবার মনে জেগেছে এই প্রশ্ন। আসলেই এই সব ঘটনা ঘটেছিল, নাকি কোনো দুঃস্বপ্নের বর্ণনা? যেমনটা বইয়ের শুরুতে বলছিলেন উৎপল শুভ্র। এই সফরের শুরু থেকেই কোনোকিছু ঠিকভাবে এগোচ্ছিল না তাঁর। টস দেখাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলা লেখক অসুস্থতার জন্য টস দেখতে পারলেন না। এমনকি অসুস্থতার মধ্যে দেখতে লাগলেন উদ্ভট সব দুঃস্বপ্ন। ব্যাপারটা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, লেখক একপর্যায়ে নিজের মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখতে শুরু করেছিলেন। এ যেন শেষে যে গা ছমছমে থ্রিলার অপেক্ষা করছে তারই একটা আভাস। কিন্তু মানুষের তো সাধ্য নেই অমন বীভৎস ঘটনার আগাম ধারণা পাওয়ার। তার ক্ষমতা খুবই সামান্য। ফলে লেখক যখন লেখেন ‘নিউজিল্যান্ডকে প্রকৃতি দুহাত ভরে দিয়েছে। প্রতিটি শহরই তার মতো করে সুন্দর।’ তাঁকেই পরে আবার লিখতে হয়, ‘আমি হারিয়ে যাওয়া সেই নিউজিল্যান্ডের জন্য কাঁদছি।’ পুরো বইটি নিউজিল্যান্ডের সেই ঘটনাকে ধরেই এগিয়েছে। তবে লেখক যেহেতু ক্রীড়া সাংবাদিক, তাই এর পরতে পরতে রয়েছে ক্রিকেট। ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেই তো লেখক লাভ করেছেন এই কিউই দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতাগুলো তাঁকে যেমন রবার্ট বার্নসের মূর্তি এবং ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য রকম নবীনবরণ দেখার সৌভাগ্য দিয়েছে, তেমনি আবার দেখিয়েছে মুদ্রার উল্টোপিঠও, যেখানে আছে কেবল রক্ত ও হিংসা। আর আছে মানুষের ভয়ার্ত অসহায় মুখ। সেই মুখগুলোর কথা পড়তে পড়তে, এই বইটি পড়তে পড়তে পাঠক হিসেবে আপনিও কাঁদবেন, যেমন কেঁদেছি আমরা। এই বইটিকে তাই বলতে পারি নিউজিল্যান্ডের জন্য কান্নার দলিল। উৎপল শুভ্রকে ধন্যবাদ সত্য ঘটনার ওপর এমন মর্মস্পর্শী একটি পুস্তক রচনার জন্য।
বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন তোলার পর পুলিশ বলছে, হত্যার মূল অভিযোগ যাঁদের দিকে, সেই সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন (২৫) ও রিফাত ফরাজীর (২৫) বিরুদ্ধে আগেও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সাব্বিরের বিরুদ্ধে মাদকসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। আর রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে বিভিন্নজনকে কুপিয়ে আহত করা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগ অনেক পুরোনো। এমনকি এক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতে ঢুকে চাপাতি দিয়ে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।স্থানীয় লোকজন বলছেন, রিফাত ও তাঁর ভাই রিশান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। প্রভাবশালীদের সঙ্গে আত্মীয়তার জোরে তাঁরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন। এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুই বছর ধরে তাঁদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’নিহত রিফাত শরীফ বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের আবদুল হালিম ওরফে দুলাল শরিফের একমাত্র ছেলে। তাঁদের বাড়িতে কান্নার রোল। ঘরের মধ্যে স্বজন, প্রতিবেশীরা তাঁর মা ডেইজি আক্তারকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেরাই কাঁদছিলেন। মা বলেন, ‘আমার ছেলেটাকে কেন জানে মারল। পঙ্গু করে দিলেও তো আমার বুক আগলে থাকত!’বরিশালে ময়নাতদন্ত শেষে বেলা তিনটার দিকে রিফাতের লাশ গ্রামে পৌঁছালে স্বজনদের কান্নার রোল পড়ে যায়। বিকেলে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। রিফাতের মাথা, বুক ও গলায় আটটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনটি আঘাত গুরুতর।প্রতিরোধ করেছিলেন একজনই বুধবারের এই হামলার সময় বরগুনা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বাধা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘শহরে যাওয়ার পথে দেখি রিফাত শরীফকে টানাটানি করছে চার-পাঁচজন। হাতে ধারালো অস্ত্র। একটা মেয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছে। আমিও সাহস করে এগিয়ে গেলাম, কিন্তু কিছুতেই ওদের থামানো গেল না। রক্তে ভিজে যাচ্ছিল রিফাত। কাউকে এগিয়ে আসতে না দেখে ভীষণ অসহায় লাগছিল।’রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় গতকাল সকালে তাঁর বাবা আবদুল হালিম মামলা করেছেন। সাব্বির, রিফাত, রিশানসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত পুলিশ এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি চন্দন, ৯ নম্বর আসামি মো. হাসান ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে শনাক্ত করে আরেকজনকে আটক করার কথা জানিয়েছে। বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এঁদের একজনের নাম তদন্তের স্বার্থে বলতে চাচ্ছি না। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে ব্যাপক অভিযান চলছে।’আসামিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অসংখ্য অভিযোগ প্রভাবশালীদের সঙ্গে আত্মীয়তার জোরে তাঁরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন।আসামিরা পুরোনো অপরাধীআসামি রিফাত ও সাব্বিরের বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক বিক্রি, সেবন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বরগুনা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুলাল ফরাজীর বড় ছেলে রিফাত। বছর দুয়েক আগে রিফাত পুলিশের এসআই দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করেন। এসআই দেলোয়ার বর্তমানে ঝালকাঠি সদর থানায়। তিনি বলেন, ‘এই রিফাত প্রায় দুই বছর আগে আমার বাসার সামনে বখাটেদের নিয়ে আড্ডা দিত। আমার স্ত্রী প্রতিবাদ করায় আমার বাসায় চাপাতি দিয়ে হামলা চালায় সে। তার সঙ্গে অনেক প্রভাবশালীর ছেলেরা থাকত এবং নেশা করত। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলেও কিছুদিন পর ছাড়া পেয়ে যায়।’২০১৭ সালের ১৫ জুলাই তরিকুল ইসলাম নামের এক প্রতিবেশীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন রিফাত ফরাজী। এ ছাড়া ধানসিঁড়ি রোড, কেজি স্কুল বাজার, ডিকেপি রোড এলাকায় লোকজনকে মারধর করে মুঠোফোন, অর্থ ‍ছিনিয়ে নেওয়া ছিল তাঁর নৈমিত্তিক ঘটনা। কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও ছাড়া পেয়ে আবার আগেরই মতোই অপরাধে জড়ান।আরেক আসামি সাব্বিরের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রি, সেবন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বরগুনা থানায় অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। ২০১৭ সালের ৫ মার্চ রাতে নিজের বাড়ি থেকে ৩০০টি ইয়াবা, ১০০ গ্রাম হেরোইন, ১২ বোতল ফেনসিডিল, ২টি রামদাসহ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। এ ছাড়া বছর দুয়েক আগে ডিকেপি সড়কের রাজু নামের এক তরুণকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন নয়ন ও তাঁর সহযোগী রিফাত ফরাজী।
বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যার আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে এই তথ্য জানানো হয়।পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় অভিযোগে থাকা আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।রিফাত শরীফকে হত্যা মামলার আসামিরা যাতে সীমান্ত অতিক্রম ও দেশ ত্যাগ করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে গতকাল বৃহস্পতিবারই মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। গতকাল সকালে ঘটনাটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস। আদালত বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। দেশের সবাই এ ঘটনায় মর্মাহত। সমাজটা কোথায় যাচ্ছে!আসামিদের যেকোনো মূল্যে গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় বুধবার তাঁর বাবা আবদুল হালিম মামলা করেন। সাব্বির, রিফাত, রিশানসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।বুধবার বরগুনা শহরে প্রকাশ্যে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।আরও পড়ুন:‘আমি শত চেষ্টা করেও তাঁকে রক্ষা করতে পারিনি’এই রামদা কে দিয়েছে?আয়েশা সিদ্দিকার কান্না ও রাষ্ট্রের নীরবতাহত্যার স্বাভাবিকীকরণের ফল নিষ্ক্রিয়তারিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১সমাজটা কোথায় যাচ্ছে: হাইকোর্টএভাবে প্রকাশ্যে কোপাল!
নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর পাকিস্তান দলের প্রশংসা করেছিলেন শোয়েব আখতার। কিন্তু পাকিস্তানের পেস কিংবদন্তির প্রশংসার সঙ্গে একমত হতে পারেননি ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান ও বিশ্লেষক আকাশ চোপড়াএজবাস্টনে কাল নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান। এরপর থেকেই প্রশংসায় ভেসে যাচ্ছে সরফরাজ আহমেদের দল। পাকিস্তান কোণঠাসা হলে কী ঘটতে পারে, সরফরাজরা যেন তা আবারও দেখিয়ে দিলেন। দেশটির সাবেক ক্রিকেটাররা তো পাকিস্তান দলের লড়াকু মনোভাবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শোয়েব আখতার যেমন বলেছেন, পাকিস্তান দলকে কখনো কোণঠাসা করো না। তাঁর এ মন্তব্যে চুপ করে থাকতে পারেননি ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান আকাশ চোপড়া। শোয়েবের বাউন্সারে চোপড়া যেন হুক করলেন!সরফরাজরা কাল কিউইদের হারানোর পর টুইট করেন শোয়েব, ‘পাকিস্তানকে কখনো কোণঠাসা করো না। তোমরা এটা করলে আমরা বাঘ হয়ে যাই। অভিনন্দন, ছেলেরা ভালো খেলেছ।’ ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলকে নিয়ে ‘কর্নারড টাইগার্স’ কথাটা বলেছিলেন তাদের তখনকার অধিনায়ক ইমরান খান। এরপর থেকে কোনো টুর্নামেন্টে পাকিস্তান বেকায়দায় পড়লে ‘কোণঠাসা বাঘ’ কথাটা ব্যবহার করা হয়। এবার বিশ্বকাপে মোটেও ভালো শুরু করতে পারেনি পাকিস্তান। দেশটির কিংবদন্তি পেসার শোয়েব নিজেই চরম সমালোচনা করেছিলেন দলের। সরফরাজকে বলেছিলেন ‘ঘিলুহীন’ অধিনায়ক।আকাশ চোপড়া শোয়েবের এ কথার সঙ্গে একমত হতে পারেননি। কেন একমত নন, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি পাল্টা টুইট করেন, ‘কে কোণঠাসা করল ভাই? তোমারই দলই এমন খেলেছে যে চরম অবস্থায় চলে যেতে হয়েছে...আর পাকিস্তান সব সময় এসব জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়াতেও পারেনি। তা না হলে একবারের বেশি বিশ্বকাপ জিততে পারতে।’ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হার দিয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপ শুরু করেছিল পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের কাছে হারের পর দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল সরফরাজদের। পরশু নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে টেবিলের ছয়ে উঠে এসেছে পাকিস্তান। ৭ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৭ পয়েন্ট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কাল ফিফটি তুলে নেন বিরাট কোহলি। ৭২ রানের ইনিংসটি খেলার সময় দারুণ এক রেকর্ড গড়েছেন ভারতীয় অধিনায়কমাইলফলক যেন তাঁর পিছু ছোটে! মাঠে নামলেই টুপটাপ খসে পড়ে নানা রেকর্ড। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যেমন গড়লেন নতুন এক কীর্তি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ২০ হাজার রানের রেকর্ড এখন বিরাট কোহলির।কাল ভারতের কাছে হারে বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এ ম্যাচে মাঠে নামার আগে মাইলফলকটি গড়তে ৩৭ রান দরকার ছিল কোহলির। আগে ব্যাটিং করা ভারতের ইনিংসে ২৫তম ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে রেকর্ডটি গড়েন তিনি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ক্যারিয়ারের ৪১৭তম ইনিংসে এসে ২০ হাজার রানের মাইলফলকের দেখা পেলেন কোহলি। এর আগে যুগ্মভাবে রেকর্ডটির মালিক ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার ও ব্রায়ান লারা। দুজনেই নিজেদের ৪৫৩তম ইনিংসে এসে ২০ হাজার রানের দেখা পেয়েছিলেন।আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২০ হাজার রানের দেখা পাওয়া ১২তম ব্যাটসম্যান কোহলি। ভারতে শচীন টেন্ডুলকার ও রাহুল দ্রাবিড়ের পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে মাইলফলকটির দেখা পেলেন দলটির বর্তমান এ অধিনায়ক। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮২ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলেন কোহলি। ক্রিকেট বিশ্বকাপে এটি তাঁর টানা চতুর্থ ফিফটি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে টানা চার ফিফটির দেখা পেলেন তিনি। এর আগে একই মাইলফলকের দেখা পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ (২০০৭) ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যারন ফিঞ্চ (২০১৯)।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দেওয়া মমতার বক্তব্যকে বিকৃত করার অভিযোগ এনে কলকাতার তিনটি সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ দিল তৃণমূল। গতকাল বৃহস্পতিবার দলটি দাবি করে, মুখ্যমন্ত্রী কোনো কংগ্রেস-তৃণমূলের সঙ্গে জোটের কথা বলেননি। সাম্প্রতিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে একসঙ্গে প্রতিবাদ করার কথা বলেছেন।ঘটনার শুরু গত বুধবার। রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন ভাষণে মমতা বিরোধীদলীয় নেতা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান এবং সিপিএমের পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে আসা দরকার। সিপিএম আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে পারে। কংগ্রেস আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে পারে। কিন্তু দেশটা ওরা ভেঙে তছনছ করে দেবে, তা আমি বিশ্বাস করি না। এ রাজ্যে বিজেপি ছাড়া সব দল সৎ। কয়েকটা আসন দখল করে ভাববেন না যে কেউ পালাবে। বিজেপিকে উৎখাত করবই।’মমতা বলেন, ‘বিজেপি সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করছে। ধর্মীয় উন্মাদনা বাড়াচ্ছে। বিভেদ সৃষ্টি করছে। বিজেপিকে ভোট দিলে কী হয়, তার উদাহরণ ভাটপাড়া। একটা ভাটপাড়া দেখে নিন। বিজেপিকে ভোট দিলে কী হয় বুঝে নিন।’রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে মমতার এই মন্তব্যে হতবাক হয়ে যান বিরোধীরা। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন ওঠে, মমতার কি তবে বোধোদয় হলো? মমতা কি বুঝতে পারছেন, তিনিই খাল কেটে কুমির এনেছেন? ধর্মান্ধ দল বিজেপির উত্থানের অন্যতম কারিগর তিনি? তাঁর পায়ের তলের মাটি কি সরে যাচ্ছে? বিধানসভাতেই মুখ খোলেন বিরোধীরা।বিজেপি নেতা মুকুল রায় মমতার এই মন্তব্যের পর বলেন, এবার তাহলে মমতাই স্বীকার করলেন বিজেপিকে রোখা তাঁর একার পক্ষে সম্ভব নয়। বিজেপিই পশ্চিমবঙ্গের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। তাই তিনি কংগ্রেস, সিপিএমকে নিয়ে এক জোট হতে চাইছেন। এটাও প্রমাণ হয়ে গেল, তৃণমূল এখন ক্ষয়িষ্ণু শক্তি।রাজ্য বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলের নেতা সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘তৃণমূল ডুবন্ত নৌকা। আমরা সবাই মমতার পাশে দাঁড়াব, এমন দিবাস্বপ্ন দেখবেন না। বাম ফ্রন্টের কোনো বিকল্প নেই। আর এই বিজেপির শ্রীবৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছেন এই মমতাই। তিনিই বিজেপির বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী।’বিরোধীদলীয় নেতা ও কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হওয়ার কোনো কারণ নেই। তৃণমূলের সঙ্গে জোটেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। এ রাজ্যে বিজেপির বৃদ্ধির জন্য তৃণমূল দায়ী। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত এর জন্য ক্ষমা চাওয়া।পরে বিধানসভায় তৃণমূলের নেতা বিধায়ক তাপস রায় এ নিয়ে মমতার প্রকৃত বক্তব্য পেশ করতে গেলে বিতর্ক বাধে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস-বাম দলের বিধায়কদের। একপর্যায়ে এর প্রতিবাদে অধিবেশন বর্জন করে বাম-কংগ্রেস দল।মমতার ওই বক্তব্য কলকাতার সব সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ পায়। এরপরই গতকাল বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতার ওই বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রকাশ করেছে কলকাতার সংবাদপত্রগুলো। তৃণমূলের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী সাম্প্রতিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে একসঙ্গে প্রতিবাদ করার কথা বলেছেন।এরপর কলকাতার তিনটি বাংলা দৈনিককে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ দেয় তৃণমূল কংগ্রেস ।তৃণমূলের পরিষদীয় দলের এক নেতা বলেন, যেসব সংবাদপত্র খবরটি প্রথম পাতায় ছেপেছে, তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হচ্ছে। যেসব সংবাদপত্র খবরটি ভেতরের পাতায় ছেপেছে, বুঝতে হবে তারা খবরটিকে গুরুত্ব দেয়নি। তাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে না।
বগুড়া শহরের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় দুজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দুজন। আজ শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রেজাউল করিম।স্থানীয় লোকজনের তথ্যমতে, কাঁঠাল বোঝাই করে একটি ট্রাক চট্টগ্রামে যাচ্ছিল। বগুড়া শহরের দ্বিতীয় বাইপাসের বুজরুকবড়িয়া স্থানে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এসে ট্রাকটি বিকল হয়ে যাওয়ায় রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। পাশের ওয়ার্কশপ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে মিস্ত্রি এসে বিকল ট্রাকের ইঞ্জিন মেরামত করছিলেন। অটোরিকশা নিয়ে চালক ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভোর পৌনে ৫টার দিকে আরেকটি পণ্যবাহী ট্রাক বিকল ট্রাকটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এ সময় ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশাচালক আল আমিন ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। বিকল ট্রাকের চালকের সহকারীও ঘটনাস্থলে নিহত হন।নিহত ব্যক্তিরা হলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আল আমিন (২৮) ও বিকল ট্রাকের চালকের সহকারী বিপ্লব (২৭)। আল আমিন শিবগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ি মহাস্থানের বাসিন্দা। বিপ্লবের বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার দীঘলকান্দিতে।রেজাউল করিম বলেন, আজ ভোরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। বিকল ট্রাকের চালক আর ঘাতক ট্রাকের চালকের সহকারী গুরুতর আহত হন। আহত ব্যক্তিরা শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
টিভিকে একসময় বোকার বাক্স বলা হতো। কিন্তু নতুন যুগের টিভিগুলো এখন অনেক বুদ্ধিমান। টিভিতে এখন ইন্টারনেট সংযোগ থাকে এবং ভিডিও স্ট্রিমিং করা যায়। টিভি ব্যবহারের ধরন বুঝে কনটেন্ট দেখার পরামর্শ দেওয়ার মতো বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছে টিভি। অটোমেটিক কনটেন্ট রিকগনিশন (অসিআর) ফিচারের মাধ্যমে টিভিতে দেখানো কনটেন্টগুলোর তথ্য শনাক্ত করে রাখে। বিভিন্ন টিভি নির্মাতা এ ফিচারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে দেন। আপনার ওপর টিভির গোয়েন্দাগিরি বা নজরদারির বিষয়টি চাইলে ঠেকাতে পারেন। এতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ থাকবে। কয়েকটি টিভির অপশন সম্পর্কে জেনে নিন:এলজি: সেটিংস মেন্যু থেকে লাইভ প্লাস অপশন বন্ধ রাখুন। নতুন টিভি মডেলগুলোর ক্ষেত্রে মূল মেন্যু থেকে সেটিংস অপশনে যেতে হবে। এরপর অল সেটিংসের জেনারেল অপশনে যেতে হবে। স্ক্রল করলে লাইভ প্লাস অপশনটি পাবেন। পুরোনো মডেলের টিভিতে অ্যাবাউট দিস টিভি অপশনে গিয়ে ইউজার এগ্রিমেন্টসের অধীনে ব্যবহারবিধি, প্রাইভেসি নীতিমালা, ভিউয়িং ইনফরমেশন অ্যান্ড পার্সোনালাইজড অ্যাডভার্টাজিং বিষয়গুলো বন্ধ করে দিতে পারেন।সনি: ইন্টারঅ্যাকটিভ টিভি সেটিংস বা সাম্বা টিভি ইন্টারঅ্যাকটিভ টিভি অপশন বন্ধ করে দিন। সনির অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক স্মার্টটিভিতে সেটিংস থেকে সিস্টেম প্রিফারেন্সে যেতে হবে। সেখানে ইন্টারঅ্যাকটিভ টিভি সেটিংস পাওয়া যাবে। পুরোনো সনি টিভিতে সেটিংস থেকে প্রিফারেন্সে গিয়ে সেটআপ ও তারপর নেটওয়ার্কে যেতে হবে। সেখানে সাম্বা ইন্টারঅ্যাকটিভ টিভি বন্ধ রাখতে হবে।স্যামসাং: ভিউয়িং ইনফরমেশন সার্ভিসেস বন্ধ করে দিন। নতুন মডেলের টিভিতে মূল মেনু থেকে সেটিংসে গিয়ে সাপোর্টের টার্মস অ্যান্ড পলিসিতে যান। সেখানে ভিউয়িং ইনফরমেশন সার্ভিসেস ও ভয়েস রিকগনিশন সার্ভিসেস বন্ধ রাখুন। পুরোনো মডেলের ক্ষেত্রে সেটিংসে গিয়ে টার্মস অ্যান্ড পলিসির অধীনে সিনকপ্লাস অপশনে গিয়ে ভয়েস রিকগনিশন সার্ভিসেস বন্ধ করে দিতে হবে। এতে অবশ্য টিভিতে ভয়েস রিকগনিশন সুবিধা বন্ধ থাকবে।শাওমি: সেটিংস থেকে ‘ইউজার এগ্রিমেন্ট ইনফরমেশন অ্যান্ড হেলপ আস ইমপ্রুভ আওয়ার ডিভাইস’ অপশনটি বন্ধ রাখুন।ভু: সেটিংস থেকে সাম্বা ইন্টারঅ্যাকটিভ টিভি অপশনটি বন্ধ করে দিন।টিভিতে ম্যালওয়্যার থেকে বাঁচতেএখন স্মার্টটিভিতে ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর প্রোগ্রাম থাকতে পারে বলে সতর্ক করছেন টিভি নির্মাতারা। স্যামসাং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্প্রতি টিভিতে নিয়মিত ভাইরাস স্ক্যান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। স্মার্টটিভিতে মূলত ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও ডাউনলোডের কারণে ম্যালওয়্যার আসতে পারে। টিভিতে ম্যালওয়্যার আক্রমণ হয়েছে কি না, তা সহজে দেখে নিতে পারেন।স্যামসাং: সেটিংস থেকে জেনারেল অপশনে যান। সেখান থেকে যান সিস্টেম ম্যানেজারে। সেখানকার স্মার্ট সিকিউরিটি অপশন থেকে স্ক্যান করতে পারেন।অন্যান্য: গুগলের অফিশিয়াল অ্যান্ড্রয়েড টিভি অপারেটিং সিস্টেমে চালিত টিভিতে অ্যাপ চালানো যায়। টিভি নিরাপদ রাখতে বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাপ ডাউনলোড করে তা কোনো ড্রাইভের সাহায্যে টিভিতে ইনস্টল করতে পারেন। অ্যাপ ইনস্টল হলে তা দিয়ে স্ক্যান করুন। মনে রাখতে হবে, এসব অ্যাপ মোবাইল প্ল্যাটফর্মের জন্য তৈরি অ্যাপের দিকনির্দেশনা দিতে মাউস ও কি–বোর্ডের দরকার পড়বে। তথ্যসূত্র: গ্যাজেটস নাউ।
পেনাল্টি শুটআউটে প্যারাগুয়েকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিল।সবকিছু ‘চিত্রনাট্য’ অনুযায়ীই এগোচ্ছিল প্যারাগুয়ের জন্য। ২০১১ ও ২০১৫ সালের কোপা আমেরিকার মতো এবারও কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে পেয়েছিল তারা। সে দুবার পেনাল্টি শুটআউটের ভাগ্যে চড়ে ব্রাজিলকে কাঁদিয়েছিল প্যারাগুয়ে। এবারও কোয়ার্টার ফাইনালে সেই ব্রাজিলকে পেয়েছিল তারা। ৯০ মিনিট দাঁতে দাঁত চেপে ব্রাজিলের মুহুর্মুহু আক্রমণ সামলে পেনাল্টি শুটআউট পর্যন্ত পৌঁছেও গিয়েছিল তারা। কিন্তু এবার আর পেনাল্টি শুটআউট জেতা হলো না। অ্যালিসন বেকার ছিলেন যে!লিভারপুলে খেলা এই ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক কিছুদিন আগেই জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ। বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হিসেবে তাঁর নাম এখন বেশ ভালোভাবেই আসে। কেন আসে, সেটা এবার ব্রাজিল ভক্তদের ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেন তিনি। পেনাল্টি শুটআউটে প্যারাগুয়ের একটা শট আটকে না দিলে ব্রাজিলের যে আজ সেমিফাইনালে যাওয়া হয় না! ৯০ মিনিট গোলশূন্য থাকার পর পেনাল্টি শুটআউটে প্যারাগুয়েকে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিতে উঠেছে ব্রাজিল।ম্যাচের শুরুতেই একটা দুঃসংবাদ মাথায় নিয়ে খেলতে নামে ব্রাজিল। গোটা টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা এভারটনের উইঙ্গার রিচার্লিসন মাম্পসে আক্রান্ত হয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যান। শোনা যাচ্ছে, বাকি কোপা আমেরিকাতেও আর খেলা হবে না তাঁর। ওদিকে নিষেধাজ্ঞার খাঁড়ায় পড়ে কাসেমিরো নেই, চোটের বলি হয়েছেন ফার্নান্দিনহো। এই অবস্থায় প্যারাগুয়ের বিপক্ষে খেলতে নামে ব্রাজিল। স্প্যানিশ লিগের খেলা যাঁরা নিয়মিত দেখে থাকেন, তাঁরা প্যারাগুয়ের বর্তমান কোচ এদুয়ার্দো বেরিজ্জোকে চিনে থাকবেন। সেল্টা ভিগো, সেভিয়া ও অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মতো ক্লাবকে কোচিং করানো এই ম্যানেজার আক্রমণাত্মক ম্যানেজার হিসেবেই সুবিদিত। কিন্তু এ ম্যাচে ব্রাজিলকে আটকানোর জন্য শরীরনির্ভর খেলা বেছে নিলেন তিনি। প্রথম থেকেই মোটামুটি মেরে-ধরে খেলা শুরু করে প্যারাগুয়ে। প্রথমার্ধে তিনটি হলুদ কার্ড দেখে ফেলা যার প্রমাণ। দ্বিতীয়ার্ধের ১৩ মিনিটের মাথায় লিভারপুলের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনোকে অনৈতিকভাবে আটকাতে গিয়ে লাল কার্ড দেখে বসেন ওয়েস্ট হামে খেলা ডিফেন্ডার ফাবিয়ান বালবুয়েনা। এ কারণে রেফারি প্রথমে পেনাল্টি দিলেও পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফ্রি-কিক দেন ব্রাজিলকে। শেষ ৩৩ মিনিট দশজন নিয়েই খেলতে হয় প্যারাগুয়েকে। একজন বেশি নিয়েও প্যারাগুয়ের রক্ষণভাগ টলাতে পারেননি জেসুস-ফিরমিনো-উইলিয়ানরা। ফলে পেনাল্টিতে গড়ায় খেলা।প্যারাগুয়ের প্রথম শটটাই আটকে দেন গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। পরে একে একে ব্রাজিলের হয়ে গোল করেন উইলিয়ান, মার্কিনহোস ও ফিলিপ কুতিনহো। ওদিকে প্যারাগুয়ের হয়ে গোল করেন মিগুয়েল আলমিরন, ব্রুনো ভালদেজ ও রদ্রিগো রোহাস। ব্রাজিলের হয়ে ফিরমিনো পেনাল্টি মিস করলে ২০১১ ও ২০১৫ সালের দুঃসহ স্মৃতি ক্ষণিকের জন্য ফিরে আসে ব্রাজিল সমর্থকদের মনে। কিন্তু ঠিক পরমুহূর্তেই স্ট্রাইকার দার্লিস গঞ্জালেস পেনাল্টি মিস করে প্যারাগুয়েকে পিছিয়ে দেন। শেষ পেনাল্টিতে ব্রাজিলের হয়ে গোল করতে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের কোনো সমস্যা হয়নি।আজ দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও ভেনেজুয়েলা। এই ম্যাচে যারা জিতবে, সেমিতে তারা খেলবে ব্রাজিলের বিপক্ষে।
বরগুনায় রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে আটক চার যুবককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হত্যার ঘটনায় তাঁদের সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ।গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে চার যুবককে আটক করে কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশ। এই চার যুবক এমভি মানামী লঞ্চে করে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছিলেন। লঞ্চ ছাড়ার আগেই তাঁদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। দিবাগত রাত তিনটার দিকে তাঁদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চার যুবকের বাড়ি বরগুনায়। আটকের পর তাঁদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তাঁরা সম্পৃক্ত নয়। তাঁরা এই হত্যা মামলার আসামিও নন। তাই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।নিহত রিফাতের বাবা বুধবার ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।বুধবার বরগুনা শহরের কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডারগার্টেনের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।আরও পড়ুন:‘আমি শত চেষ্টা করেও তাঁকে রক্ষা করতে পারিনি’এই রামদা কে দিয়েছে?আয়েশা সিদ্দিকার কান্না ও রাষ্ট্রের নীরবতাহত্যার স্বাভাবিকীকরণের ফল নিষ্ক্রিয়তারিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১সমাজটা কোথায় যাচ্ছে: হাইকোর্টএভাবে প্রকাশ্যে কোপাল!
দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘দুদকের ভেতরে যদি কোনো দুর্নীতিবাজ থাকে, তাহলে সেই ক্যানসারগুলোকে ছেঁটে ফেলতে হবে।’ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এই মন্তব্য করেন। সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় নিরীহ পাটকলশ্রমিক জাহালমের কারাভোগ ও ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুল শুনানিতে আদালত এই মন্তব্য করেন। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানকে আদালত বলেন, দেশের অর্থনীতির এখন স্বর্ণযুগ চলছে। তাই এখন অর্থনৈতিক অপরাধ হওয়ার সুযোগ থাকছে। আমরা চাই দুদক যথাযথভাবে কাজ করবে। নতুন বিধিতে দুদককে অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতার যাতে অপব্যবহার না হয়, তা গুরুত্বপূর্ণ। সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দুদককে কাজ করতে হবে। দুদক শক্তিশালী না হলে অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে না। আর দুদকের মধ্যে দুর্নীতিবাজ থাকলে সেসব দুর্নীতিবাজ ক্যানসারকে ছেঁটে ফেলতে হবে। আদালত বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ভেতর সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যা সামনে এলে তা যথাযথভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা ঢেকে রাখার চেষ্টা হলে মানুষের আস্থা থাকে না। ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’ শিরোনামে গত ২৮ জানুয়ারি প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। সোনালী ব্যাংক থেকে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন আবু সালেক নামের এক লোক। কিন্তু দুদক সালেকের স্থলে জাহালমকে জেলে ঢুকিয়ে দেয়। প্রতিবেদনটি সেদিন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুল দেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তি দিতে আইজি প্রিজনকে নির্দেশ দেন। প্রায় তিন বছর পর সেদিন মুক্তি পান তিনি। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। শুনানিতে জাহালমসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট মামলার নথিপত্র ও সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, জাহালমের বিষয়ে দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির তদন্ত শেষ হয়েছে। এখন কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায়। শুনানি নিয়ে দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ১১ জুলাই আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পিতলের তৈরি শোভাবর্ধনের একটি আসবাব। রাজকীয় সভা কিংবা অভিজাত বাসাবাড়িতে ব্যবহারের ঐতিহ্য রয়েছে। সঙ্গে মাথার ছাতা। ঐতিহ্যের এ দুটো জিনিস সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর জন্য ‘উপহার’ হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন সিলেট সফরে আসা ভারতের আসাম রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটোয়ারি।গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগর ভবনে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে উপহার হস্তান্তর করেন। মেয়র উপহারগুলো গ্রহণ করেন। এ সময় আসাম ঐতিহ্যের ছাতা মাথায় পরেন মেয়র। তিনি বলেন, আসাম সিলেটের প্রতিবেশী। একসময় একসঙ্গে ছিল। এ জন্য আসাম ঐতিহ্যের অনেক কিছু সিলেটে ব্যবহৃত হয়। ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে ব্যবহারের আসবাব রয়েছে আসামের। এর জবাবে আসামের মন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটোয়ারিও জানান, ব্যবহারের জিনিসপত্র ছাড়াও সিলেটি অনেক খাবারও আসামে জনপ্রিয়।এ রকম কুশলাদি বিনিময়ের পর মেয়রের সঙ্গে আসামের মন্ত্রীসহ প্রতিনিধিদলের সৌজন্য মতবিনিময় সভা হয়। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসামের সঙ্গে সিলেটের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসাম, মেঘালয়সহ সেভেন সিস্টার্সভুক্ত রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অতীতের মতো এখনো বজায় রাখতে হবে। তবেই আসামসহ সেভেন সিস্টার্সভুক্ত রাজ্যগুলোর সঙ্গে সিলেটসহ বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।চন্দ্র মোহন পাটোয়ারি মেয়রকে জানান, সীমান্তবর্তী বৃহত্তর সিলেটের মানুষের সঙ্গে আসামের মানুষের অতীতের সুসম্পর্ক বজায় রেখে তা আরও সুদৃঢ় করতে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে সব সময় বিবেচনা করে ভারত।মেয়রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে আসাম রাজ্যসভার অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি যীষ্ণু বড়ুয়া, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি অবিনাশ যোশী, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার এল কৃষ্ণমূর্তি, ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব এম এস নবনীতা চক্রবর্তী এবং সিলেট প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সচিব মোহাম্মদ বদরুল হক, প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বরিশাল থেকে চার যুবককে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে তাঁদের আটক করে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ। আটক করা চার যুবক বরিশাল থেকে ঢাকাগামী এমভি মানামী লঞ্চে চড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছিলেন। তবে লঞ্চ ছাড়ার আগেই পুলিশ তাঁদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম প্রথম আলোর কাছে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আটক চারজনের বাড়ি বরগুনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় বলে জানালেও পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের নাম-পরিচয় বলা হয়নি। ওসি মো. নুরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকেই বরিশাল নগরের বাসস্ট্যান্ড ও লঞ্চঘাটে পুলিশের সদস্যরা নজরদারি করছিলেন, যাতে রিফাত হত্যা মামলার কোনো আসামি বরিশাল হয়ে পালাতে না পারেন। রাতে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী সব লঞ্চে তল্লাশি করা হয়। সে সময় এমভি মানামী লঞ্চের নিচতলার ডেক থেকে চার যুবককে আটক করা হয়। তিনি জানান, আটক যুবকদের মধ্যে একজনের চেহারা রিফাত হত্যা মামলার এক আসামির সঙ্গে মিল রয়েছে। এ মুহূর্তে থানায় পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আটক যুবকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বলে জানা গেছে। রিফাতের ওপর হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখেও তাঁদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আটক যুবকদের শনাক্তে বরগুনা জেলা পুলিশের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। রিফাত হত্যায় তাঁদের সম্পৃক্ততা পেলে আটক চারজনকে বরগুনা জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর সম্পৃক্ততা না থাকলে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশের এই কর্মকর্তা আটক চার যুবকের নাম বলতে চাননি। তিনি বলেন, তাঁরা যে নাম-ঠিকানা বলছেন, তা সত্য কি না যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তাঁদের বলা নাম-পরিচয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হলে প্রকাশ করা হবে। রাত সোয়া ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় তাঁদের থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল।এর আগে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিন আসামির মধ্যে মামলার ৪ নম্বর আসামি চন্দনকে (২১) বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দুপুরে গ্রেপ্তার হয় মামলার ৯ নম্বর আসামি হাসান (১৯)। তদন্তের স্বার্থে দুপুরে গ্রেপ্তার আরেক আসামির নাম জানায়নি পুলিশ।নিহত রিফাতের বাবা বুধবার ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ–ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।উল্লেখ্য, বুধবার সকালে বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডারগার্টেনের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই হামলার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। নিহত রিফাত সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের দুলাল শরীফের ছেলে।আরও পড়ুন...বরগুনায় রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনের সমাপনী দিনে বৃহস্পতিবারও মার্চে অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। ভিপি নুরুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে অসংখ্য অনিয়ম হয়েছে’। তবে ক্ষমতাসীন দল-সমর্থক শিক্ষকদের কেউ কেউ দাবি করেন, নির্বাচনে তেমন ‘অনিয়ম’ হয়নি৷ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদার বলেন, ছাত্রলীগের সদিচ্ছার কারণে ‘অনিয়ম’ ছাড়াই ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। যাঁরা এই নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করছেন, তাঁরা ডাকসুর নির্বাচন চান না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।এর জবাবে ভিপি নুরুল সিনেটের উদ্দেশে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের খবরগুলো আমরা মূলত গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। যদি কোনো অনিয়ম না-ই হয়ে থাকে, সৎসাহস থাকলে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা করুন। এই নির্বাচনে অসংখ্য অনিয়ম হয়েছে, তাই সাফাই গাওয়া উচিত নয়৷’সিনেট অধিবেশনে বক্তব্যের শুরুতে ভিপি নুরুল হক বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাঁর ওপর হামলা চালাচ্ছে। ছাত্রলীগের সঙ্গে ব্যবহৃত ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটি এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। আর ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদার ছাত্রলীগের সঙ্গে ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটি ব্যবহারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান৷তিলোত্তমা শিকদার বলেন,‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধীরে ধীরে একটি সার্টিফিকেটভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হচ্ছে, যা দুঃখজনক। পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে শিক্ষার্থীরা বিদেশগামী হচ্ছেন। এখানে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই, মানসম্মত শিক্ষকও নেই৷ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক নেই—তিলোত্তমার এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান সিনেটের শিক্ষক-প্রতিনিধি পাপিয়া হক। একে ‘ঢালাও মন্তব্য’ আখ্যা দিয়ে তা এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান তিনি। তবে উপাচার্য সেই দাবি আমলে নেননি।এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, বৈধ উন্নয়ন ফি নির্ধারণ, রেজিস্ট্রার ভবনের আধুনিকায়ন, জালিয়াত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার, ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা, ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা করাসহ বেশ কিছু দাবি জানান তিলোত্তমা।‘উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন দাবি, উপাচার্যের নীরবতা’সিনেট অধিবেশনে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি রামেন্দু মজুমদার ও নাসির উদ্দীন। এ ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম।তবে গণতান্ত্রিকভাবে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য শিগগিরই সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রামেন্দু মজুমদার। তবে বিষয়টি এড়িয়ে যান উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন বলেন, ‘উপাচার্য সরকারের প্রতিনিধি। আমরা এখানে যাঁরা সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছি, সরকারি দল থেকেই নির্বাচিত হয়েছি। যাঁরা বিষয়টি এখানে উত্থাপন করেছেন, আমি মনে করি সেটি যথাযথ হয়নি। বিষয়টি উপাচার্য মহোদয়ের কাছে ব্যক্তিগতভাবেই উপস্থাপন করা উচিত।’উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবি নিয়ে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান অধিবেশনে কোনো মন্তব্য করেননি, বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এই অধ্যাপককে উপাচার্য পদে সাময়িক নিয়োগ দেন। তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্যের (প্রশাসন) দায়িত্বে ছিলেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল শিক্ষকদের ‘সেশন বেনিফিট’ রহিত করার প্রস্তাব নিয়ে আরও আলোচনার সুযোগ দাবি করেন। পরে বিষয়টি পরবর্তী সভায় আলোচনার সিদ্ধান্ত নেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান৷অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন মো. আবদুল আজিজ, অধ্যাপক নাজমা শাহীন, অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিবেকবর্জিত যে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।শনিবার বিকেলে রাজধানীতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শিল্প মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৭’ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যে ভেজাল মিশিয়ে ও নিম্নমানের পণ্যদ্রব্য বিক্রির মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে প্রতারিত করছে।রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘মানুষের সাথে প্রতারণা করবেন না। সৎ ও সাধু ব্যবসায়ীদের জন্য আমাদের সরকারের দরজা সব সময়ই খোলা রয়েছে। অসৎ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে আমাদের সরকার পিছপা হবে না।’ ব্যবসাকে একটি মহৎ পেশা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলামেও ব্যবসাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু অসৎ ও অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে আজ সৎ ও ভালো ব্যবসায়ীদের সুনামও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ইউরোপ ও আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন সুপার স্টোরের পণ্যের গায়ে যখন “মেড ইন বাংলাদেশ” লেখা লোগো দেখি, তখন আমি গর্ববোধ করি। কিন্তু আবার যখন ভেজাল বা নিম্নমানের কারণে বিদেশে বাংলাদেশি কোনো পণ্য নিষিদ্ধ হয় বা বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে হয় তখন বাণিজ্যিক ক্ষতির পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিরও ক্ষতি হয়।’রাষ্ট্রপতি এ সময় কিছু খাবারের মান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।আবদুল হামিদ শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মানের সঙ্গে আপস না করতে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি গত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, কৃষি, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে পাশাপাশি অন্যান্য খাতের মতো দেশের শিল্প খাতে মানসম্পন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক উন্নতি দেখতে পেয়েছে।টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে আরও বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সরকার বর্তমানে বেসরকারি খাত এবং উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদান করছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) এক সংখ্যার সুদে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।আবদুল হামিদ দেশব্যাপী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে এ সকল অঞ্চলে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং রপ্তানি বার্ষিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।
বিদ্যমান কর ও শুল্ক হার পরিবর্তনের বিধান করে শনিবার জাতীয় সংসদে অর্থবিল-২০১৯ সংশোধিত আকারে পাস করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন। বিলটি গত ১৩ জুন উত্থাপন করা হয়।বিলে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু অর্থবছরের জন্য আর্থিক বিধান সংবলিত কর ও শুল্ক প্রস্তাবের জন্য কতিপয় আইন ও বিধানের সংশোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিলে উল্লিখিত বিধানসমূহ ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করারও বিধান করা হয়েছে। এ বিলের বিভিন্ন কর প্রস্তাবের ওপর বেশ কয়েকটি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়।সরকারি দলের আ স ম ফিরোজ, আবদুস শহীদ, ইসরাফিল আলম, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, মশিউর রহমান রাঙ্গা, পীর ফজলুর রহমান, রওশন আরা মান্নান, মজিবুল হক চুন্নু, রুস্তম আলী ফরাজী, লিয়াকত হোসেন খোকা, বিএনপির হারুনুর রশীদ, রুমিন ফারহানা, জাসদের শিরীন আকতার ও গণফোরামের মোকাব্বির খান বিলের ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনীর প্রস্তাব আনেন।এর মধ্যে আ স ম ফিরোজ, আবদুস শহীদ, ইসরাফিল আলম, কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, মজিবুল হক চুন্নু, মশিউর রহমান রাঙ্গা, রওশন আরা মান্নান এবং হারুনুর রশীদ আনা ২৯টি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়। বাকি সংশোধনী ও অন্যান্য প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
গ্রাহকদের পর্যাপ্ত সেবা না দেওয়ার অভিযোগে গাজীপুরের টুরিস্ট স্পট ‘দ্য বেজ ক্যাম্প’ দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে সরেজমিনে অভিযান শেষে এই জরিমানা করা হয়।মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনা হয়। বেজ ক্যাম্পকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেওয়া হয়। শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী তাদের দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।রাকিব হাসনাত সুমন নামের একজন গ্রাহক গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি বলেন, ফেসবুকে ‘দ্য বেজ ক্যাম্প, বাংলাদেশ’ নামে একটি টুরিস্ট স্পটের বিজ্ঞাপন দেখে সপরিবারে সেখানে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে ভ্রমণের প্রায় এক মাস আগে গত ১৩ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে ৫০ হাজার টাকা জমা দেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ছয় পরিবারের ১৮ জন সদস্য বেজ ক্যাম্পে যান। অভিযোগ তারা উল্লেখ করেন, বেজ ক্যাম্পের আশপাশে শৌচাগার নেই।লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, সন্ধ্যার পর তাঁবুতে এসেছিলেন অন্তত দেড় শ মানুষ। তাঁবুতে আলো বা পানির ব্যবস্থা নেই। চারদিকে জঙ্গল। মশার ভন ভন শব্দ। কোথাও চোখে পড়ল না ফার্স্ট এইড বক্স। গভীর রাতে হঠাৎ বৃষ্টি নামে। তাঁবুর ফুটো দিয়ে পানি পড়ে অনেকের বিছানা ভিজে যায়। অন্ধকারে বাচ্চারা কাঁদতে শুরু করে। বেসক্যাম্পের কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি।রাকিব হাসনাতের অভিযোগের ওপর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গাজীপুর জেলা কার্যালয়ে গত ১৯ জুন শুনানির জন্য উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আজ বেজক্যাম্পে অভিযান চালানো হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানির দায়ে এক যুবককে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ শনিবার বিকেলে এ সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম ও ভালুকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোমেন শর্মা।সাজা পাওয়া ব্যক্তির নাম রাফিক মিয়া (২৫)। তিনি ভালুকা উপজেলার বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও আদালত সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এক ছাত্রী বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। এ সময় রাফিক তার পথ আটকে দাঁড়ান। তবে ওই ছাত্রী রফিকের পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে রফিক ওই ছাত্রীর শরীরে হাত দিতে যান। এ সময় মেয়েটি চিৎকার করতে গেলে রফিক তার মুখ চেপে ধরেন। মেয়েটি এ সময় রফিকের হাতে কামড় দেয়। এরপর চিৎকার শুরু করে। এ সময় চিৎকার শুনে আশপাশের লোক এগিয়ে এলে রফিক পালিয়ে যান। পরে বিষয়টি এলাকাবাসীর মধ্যে জানাজানি হলে তাঁরা শনিবার দুপুরে রাফিককে আটক করে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেন। পরে বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত রফিককে সাজা দেন।ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম ও ভালুকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোমেন শর্মা বলেন, শ্লীলতাহানির যথাযথ প্রমাণ ও রফিক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ায় এ সাজা দেওয়া হয়েছে।
নীলফামারীতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে ৪-১ গোলের বড় জয় পেয়েছে বসুন্ধরা কিংস। এ জয়ে ১৬ ম্যাচে ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থানটা আরেকটু সংহত করেছে প্রথমবার প্রিমিয়ারে খেলা দলটি।বসুন্ধরা কিংস ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মধ্যকার ম্যাচটি দেখে থাকলে মৌচাকে ঢিল মারার আপ্তবাক্যাটি মনে পড়ে যাওয়ার কথা। নীলফামারীতে যেন মৌচাকে ঢিল মারার খেসারতই দিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। বসুন্ধরার জালে প্রথমে বল পাঠিয়েও শেষ পর্যন্ত এক হালি গোল হজম করে মাঠ ছেড়েছে দলটি। ৪-১ গোলের বড় জয়ে বসুন্ধরাও শিরোপার পথে এগিয়ে গেল আরেক ধাপ। প্রথমার্ধের ১২ মিনিটেই গোল খেয়ে বসে বসুন্ধরা। মুক্তিযোদ্ধার আইভরি কোস্টের স্ট্রাইকার বাল্লো ফামুসার সাজিয়ে দেওয়া বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শট নেন মিডফিল্ডার রয়েল। বল সাইড পোস্টের গোড়ায় লেগে ঢুকে যায় জালে। ৩৩ মিনিটে সমতায় ফেরে বসুন্ধরা। দানিয়েল কলিনদ্রেসের কর্নার থেকে হেড করেছিলেন নাসির, ডি বক্সে জটলার মধ্যে নোলকের গায়ে লেগে বল জালে জড়ায়। রেফারি অবশ্য গোল দিয়েছেন নাসিরের নামেই।সমতায় ফিরে ধীরে ধীরে নিজেদের ফিরে পেতে শুরু করে বসুন্ধরা। প্রায় ৭০ শতাংশ বল নিয়ন্ত্রণে রেখে ছোট ছোট পাসে আক্রমণে উঠছিল, প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করে অ্যাটাকিং থার্ডে জায়গাও তৈরি করছিল। তবে প্রথমার্ধে আর গোলের দেখা পায়নি কোনো দলই।তবে ঘরের মাঠে দ্বিতীয়ার্ধে পুরোপুরি দাপট ছিল বসুন্ধরার। ৪৯ মিনিটে ডিফেন্ডার নাসিরই আবার এগিয়ে নেন বসুন্ধরাকে। ইব্রাহিমের বাড়ানো ক্রস থেকে মাপা শটে বল জালে জড়ান নাসির।সেন্টারব্যাক নাসিরের নামের পাশে জমা হয়ে গেছে জোড়া গোল। বসুন্ধরার স্ট্রাইকারদের তখন তাই দায় মেটানোর পালা। ৬৭ মিনিটে দায় মোচন করে ফেললেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার মার্কোস ভিনিসিয়ুস। ইমন বাবুর পাস থেকে বক্সে ঢুকে প্লেসিং করেন ভিনিসিয়ুস। তিন গোল করে অনেকটাই নির্ভার হয়ে যায় বসুন্ধরা। তবে গোলের ক্ষুধাটা তখনো মেটেনি। শেষ মুহূর্তে আলমগীর রানার কল্যাণে ৪-১ গোলের বড় জয়ই পেয়েছে বসুন্ধরা।এই জয়ে ১৬ ম্যাচে ৪৬ পয়েন্ট হলো বসুন্ধরার। সমান ম্যাচে ঢাকা আবাহনীর পয়েন্ট ৩৯। লিগে ম্যাচ বাকি আর ৬টি করে। তবে বসুন্ধরা যে গতিতে এগোচ্ছে, তাদের রোখাটা একটু কঠিনই হবে। নোয়াখালীতে বিজেএমসির সঙ্গে এক পয়েন্ট হারানো ছাড়া পুরো লিগেই আর কোনো পয়েন্ট হারায়নি দলটি। বসুন্ধরার পরের ম্যাচ ৩ জুলাই, রহমতগঞ্জের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে।
বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত একটা ভ্যান কিনেছিলেন বাবা। পরিবারের খরচ, ঋণের কিস্তি আর ছেলেমেয়ের লেখাপড়ায় অর্থের জোগানে একমাত্র সম্বল ছিল ভ্যানটি। বাবা আর কিশোর ছেলে মিলে ভ্যানটি চালাতেন। তবে শুক্রবার দুর্বৃত্তরা কিশোর ছেলেকে গুরুতর জখম করে কেড়ে নিয়েছে ভ্যানটি।ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানায়। আহত কিশোরের নাম শাহীন (১৪)। সে যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে ও মঙ্গলকোর্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। শাহিনের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে শুক্রবার সকালে বেরিয়েছিল কিশোর শাহীন। দুপুরের দিকে কয়েকজন যাত্রীবেশী দুর্বৃত্ত তার ভ্যানটি ভাড়া নেয়। শাহীন তাদের নিয়ে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়ার নামক এলাকায় যাচ্ছিল। পথে ধানদিয়া এলাকার একটা পাটখেতের পাশে শাহীনের ভ্যানটি দাঁড় করায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ওই দুর্বৃত্তরা শাহীনের মাথায় আঘাত করে ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়। আঘাত ও রক্তক্ষরণের ফলে অচেতন হয়ে পড়েছিল শাহীন। পরে চেতনা ফিরে এলে কান্না শুরু করে সে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানায় খবর দেয়।পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হোসেন বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে শাহীনকে উদ্ধার করা হয়। তার চিকিৎসার জন্য খুলনার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তিনি জেনেছেন, শনিবার সন্ধ্যার দিকে শাহীনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা থেকে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে।ওসি রেজাউল আরও বলেন, এ ঘটনায় শাহীনের বাবা হায়দার আলী বাদী হয়ে শনিবার অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।শাহীনের বাবা হায়দার আলী বলেন, বসতভিটে ছাড়া তাঁদের কিছু নেই। সম্প্রতি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনি ভ্যানটি কেনেন। বাবা-ছেলে মিলে ওই ভ্যানটি চালিয়ে সংসারের চালাতেন। এখন ছেলের বেঁচে থাকা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তানের ম্যাচ জয়ের নায়ক অবশ্যই ইমাদ ওয়াসিম। চাপের মুখে অপরাজিত ৪৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে ৩ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। কিন্তু এ ম্যাচ জয়ের জন্য আম্পায়ার ও গুলবদিন নাইবকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত পাকিস্তানের। দুই আম্পায়ারের দুই ভুল সিদ্ধান্ত ও নাইবের নায়ক হতে চাওয়ার চেষ্টার সর্বোচ্চ সুবিধা পেয়েছে পাকিস্তান।শেষ ওভারে ৬ রান দরকার ছিল। প্রথম দুই বলে ২ রান হলো। তৃতীয় বলে ঝুঁকিপূর্ণ ১ রান নিতে গেলেন পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যান। বোলিং প্রান্তে সহজ এক বল ধরতে পারলেন না নাইব। ভুল ফিল্ডিংয়ে এল দুই রান। পরের বলেই চার। ম্যাচ শেষ হলো ২ বল আগেই। তবে নাইব পাকিস্তানকে ম্যাচ উপহার দিয়েছেন এর আগেই। ৪৬তম ওভারে যখন বোলিংয়ে এলেন নাইব তখন।৫ ওভারে ৪৬ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। আফগান স্পিনারদের বলে চোখে অন্ধকার দেখছিল পাকিস্তান। শিনোয়ারি, রশিদ ও মুজিবের মোট ৫ ওভারই বাকি ছিল। পার্ট টাইমার হলেও আজ শিনোয়ারি দুর্দান্ত বল করছিলেন। লেগ স্পিনে দুটো ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের। নিজের বলে সে ক্যাচ নিতে পারেননি। ৪৪তম ওভারেই মাত্র ২ রান দিয়েছেন শিনোয়ারি। ৪৬ ও ৪৮তম ওভারের জন্য তাঁর হাতে বল দেওয়াটা উচিত ছিল। নিউজিল্যান্ড ম্যাচেও পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা কেন উইলিয়ামসনের বলে স্পিনের বিপক্ষে অস্বস্তির কথা টের পাইয়ে দিয়েছিল জোরেশোরে।আগের ৮ ওভারে ৪৭ রান দেওয়া নাইব সেসব চিন্তা মাথাতেই আনলেন না। নিজের হাতেই বল তুলে নিলেন। এরপর এমনই এক ওভার করলেন, যেটা এ বিশ্বকাপের অন্যতম বাজে ওভার বলে গণ্য হতে বাধ্য। লাইন লেংথের কোনো বালাই নেই, স্লোয়ার দিতে গিয়ে টানা ফুলটস দিচ্ছেন। ওয়াইড দিয়েছেন, করেছেন হাফভলি। ওই ওভারে এল ১৮ রান। ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যাওয়া পাকিস্তান ফিরে লে ম্যাচে। এর আগের ওভারেও ৭১ শতাংশ জয়ের সম্ভাবনা ছিল আফগানিস্তানের, সেটা ৩০ ভাগ কমে গেল নাইবের বলেই।পরের ৩ ওভারে ২২ রান তুলে নিয়েছেন ইমাদ ও ওয়াহাব রিয়াজ। শেষ ওভারে আবারও বল হাতে নেওয়া নাইবের অবদান তো শুরুতেই জানানো হলো। এটুকু পরেই এ ম্যাচে আফগানদের হারের দায় শুধু নাইবের কাঁধে পড়তে পারে। তবে পাকিস্তানের জয়ে কিন্তু আম্পায়ার উইলসনের অবদানও কম নয়। ৫ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তখন কাঁপছিল। ম্যাচ সেরা ওয়াসিম তখনো মাত্র ১ রানে। এমন অবস্থায় রশিদের একটি বল প্যাডে লেগেছিল। আফগানদের জোরালো আবেদনেও নড়লেন না আম্পায়ার উইলসন। রিভিউ না থাকায় আফগানরাও সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেনি। পরে দেখা গেল, ওটা নিশ্চিত আউট ছিল।আম্পায়ারদের ভুল এই প্রথম নয়। হারিস সোহেলও জীবন পেয়েছিলেন আম্পায়ারের ভুলে। সেবার আম্পায়ার ছিলেন নাইজল লং। হারিসের ব্যাটের ছোঁয়া নিয়ে উইকেটকিপারের কাছে বল গিয়েছিল কিন্তু লং আউট দেননি। সেবার দুর্ভাগা বোলার ছিলেন নাইব নিজেই। কিন্তু ওই যে রিভিউ আগেই নষ্ট হয়েছে!রিভিউ নষ্ট হওয়ার পেছনেও নাইবের অবদান। মুজিবের বলে বল প্যাডে লেগেছিল বাবর আজমের। অফ স্টাম্পের বাইরে ইমপ্যাক্ট থাকায় আউট দেননি আম্পায়ার। উইকেটরক্ষক আলীখিল ও বোলার মুজিব উর রেহমানও আবেদন নিয়ে অতটা নিশ্চিন্ত ছিলেন না। রিভিউর ক্ষেত্রে বোলার ও উইকেটরক্ষকের দ্বিধা থাকলে কেউই আর সে পথে হাঁটেন না। কিন্তু এমন অবস্থায় আচমকা রিভিউ নিয়ে বসলেন নাইব। ফলাফল ম্যাচের ১০ ওভার পেরোনোর আগেই রিভিউ শেষ আফগানিস্তানের। সে ভুলের খেসারত তো তারা ম্যাচ হেরেই দিল।এর আগে ছোট সংগ্রহ নিয়ে লড়াই করতে হলে শুরুতে উইকেট দরকার ছিল আফগানিস্তানের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ফখর জামানকে ফিরিয়ে দিয়ে আফগানদের সেই শুরু এনে দেন মুজিব উররেহমান। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ৭২ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ থেকে সব আকর্ষণ উধাও করার বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলেন ইমাম ও বাবর। এরপরই পাকিস্তানকে জোড়া ধাক্কা দিয়েছেন মোহাম্মদ নবী। ১৬তম ওভারের শেষ বলে ইমামকে (৩৬) ফেলেছেন স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে। নিজের পরের ওভারে তুলেছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ও পাকিস্তানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান বাবর আজমকে (৪৫) করেছেন বোল্ড। ৮১ রানে ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তানকে এর পর মোহাম্মদ হাফিজ (১৯), সোহেল (২৭) ও সরফরাজরা (১৮) টানার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আফগান স্পিনারদের সুবাদে ১৫৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় পাকিস্তান।শাদাবকে (১১) নিয়ে এরপর আফগান স্পিনারদের বিপক্ষে থরহরিকম্প অবস্থায় জুটি গড়েছেন ইমাদ ওয়াসিম। এর মাঝেই ৪২তম ওভারে বল করতে এসে আবার ৮ রান দিয়ে কিছুটা চাপ কমিয়েছিলেন নাইব! এর পর তো ১৮ রানের সেই ৪৬তম ওভার। শাদাবকে ৪৭তম ওভারে রান আউট করে দায় মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন নাইব। কিন্তু ওতে কি আর ম্যাচে ফেরা যায়!ম্যাচের মাঝপথে ও শেষে আফগান সমর্থকদের মাঝে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষ দেখা গেছে, সেটা যদি পুরো জাতির মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবে আজ ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে অনেক অপ্রীতিকর প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে নাইবকে!
উসমান খাজা, মিচেল স্টার্ক ও জেসন বেরেনডর্ফকে আউট করে ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক পেয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এটি একাদশ হ্যাটট্রিক।অনেকটা খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতোই রিভিউটা নিয়েছিলেন জেসন বেরেনডর্ফ। লাভ হয়নি, রিভিউয়ের পরও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকল। আর এতেই ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন ট্রেন্ট বোল্ট। ক্রিকেট বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেলেন বোল্ট।নিজের প্রথম ৯ ওভারে মাত্র এক উইকেট পাওয়া বোল্ট হ্যাটট্রিক পেয়েছেন ইনিংসের একদম শেষ ওভারে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিচেল স্টার্কের ইয়র্কার এখনো যাদের চোখে লেগে আছে, তারা চাইলে বোল্টের হ্যাটট্রিকটিও একবার দেখে নিতে পারেন। তিনটি উইকেটই যে পেয়েছেন দুর্দান্ত ইয়র্কারে।বোল্টের প্রথম শিকার ৮৮ রান করা উসমান খাজা। অন সাইডে খেলার জন্য উইকেট ছেড়ে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছিলেন খাজা। ঘণ্টায় ১৩৭ কিলোমিটার গতিতে রিভার্স সুইং করা ইয়র্কারটি ঠেকাতে পারেননি খাজা। বোল্টের দ্বিতীয় শিকার হয়েছেন মিচেল স্টার্ক। তিন ইয়র্কারের মধ্যে এটিই সম্ভবত সেরা ছিল। একেবারে নিখুঁত এক ইয়র্কারে স্টার্কের মিডল স্টাম্প উপড়ে ফেলেছেন। আর পঞ্চম বলে লেগ স্টাম্পে করা ফুল লেংথের বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি বেরেনডর্ফ, আবেদনের সঙ্গে সঙ্গেই আউট দিয়েছেন আম্পায়ার। শেষ ভরসা হিসেবে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি বেরেনডর্ফ।লাসিথ মালিঙ্গার পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ‘ডাবল হ্যাটট্রিক’টাও পেয়ে যেতে পারতেন বোল্ট। খাজার মতোই প্রায় তিন স্টাম্প ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন নাথান লায়ন। অল্পের জন্য বলটি স্টাম্পে আঘাত করেনি। শেষ পর্যন্ত ১০ ওভারে ৫১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন বোল্ট। অস্ট্রেলিয়াও ৫০ ওভার শেষে থেমেছে ৯ উইকেটে ২৪৩ রানে।ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি বোল্টের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। গত বছরের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে পেয়েছিলেন নিজের প্রথম হ্যাটট্রিক। মোহাম্মদ শামির পর এ বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করা দ্বিতীয় বোলারও হয়ে গেলেন এ বাঁহাতি পেসার। বোল্টকে নিয়ে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের ‘একাদশ’ও পূর্ণ হয়ে গেল। বোল্টের হ্যাটট্রিকটি বিশ্বকাপ ইতিহাসের ১১তম হ্যাটট্রিক। বিশ্বকাপে দুটি হ্যাটট্রিক আছে কেবল লাসিথ মালিঙ্গার। ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপে এ কীর্তি করেছিলেন মালিঙ্গা।
মোসাদ্দেক হোসেনের ভূমিকাটা হচ্ছে লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমে ঝড় তুলতে হবে, দলের স্কোরটা বড় করতে হবে। কাজটা মোটেও সহজ নয়। কঠিন কাজটা কীভাবে করছেন সেটিই বললেন মোসাদ্দেকআবাহনীর হয়ে খেলেই কি জায়গা করে নিলেন বিশ্বকাপ দলে? বিশ্বকাপে রওনা দেওয়ার আগে মোসাদ্দেক হোসেনকে এমন অপ্রিয় প্রশ্ন যে শুনতে হয়নি, তা নয়। প্রশ্নটা উঠেছিল কারণ, তিনি সুযোগ পাননি ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে। জায়গা হয়নি তাঁর নিউজিল্যান্ড সফরেও। এই তিনটি সিরিজ ভূমিকা রেখেছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল গঠনে।উল্লিখিত তিনটি সিরিজই যেহেতু খেলেননি—মোসাদ্দেক ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স দিয়েই জায়গা পেয়েছেন বিশ্বকাপ দলে। আবাহনীর হয়ে খেললেও তাঁর জায়গা পাওয়াটা যে প্রশ্নবিদ্ধ নয়, সেটি তিনি দূর করে দিয়েছেন আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ২৭ বলে অপরাজিত ৫২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে। সেই ছন্দটা তিনি ধরে রেখেছেন ক্রিকেট বিশ্বকাপেও।টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছে, লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমে ঝড় তুলতে হবে, দলের স্কোরটা বড় করতে হবে। আর বোলিংয়ে ইনিংসের মাঝে সাকিব আল হাসান-মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে প্রতিপক্ষকে চাপ দিতে হবে। কাজটা তিনি ভালোভাবেই করছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ২০ বলে ২৬ আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৪ বলে ৩৫—দুটি ম্যাচেই বাংলাদেশকে ভালো স্কোর এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে তাঁর ছোট্ট দুটি ঝড়। খণ্ডকালীন অফস্পিনার হিসেবেও তিনি দলকে ভালো সেবা দিচ্ছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এক ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন।সময় থাকে না, বলও তেমন থাকে না—সাতে নেমে ঝড় তুলতে হয়। আবার ইনিংসের মাঝে সেট ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখার কাজটা করতে হয়। কঠিন কাজ কীভাবে সামলাচ্ছেন, সেটি আজ টিম হোটেলে বললেন মোসাদ্দেক, ‘অবশ্যই শুধু আমার জন্য না, ‘সবার কাজই কঠিন। অনেক চাপ থাকে। তবে সাতে নেমে নিজের দিকে তাকানোর চেয়ে দলের রান তোলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যত দ্রুত রান তোলা যায়, তত দলের ভালো। (গত) ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এটাই চেষ্টা করেছি, বেশির ভাগ ম্যাচে ১০০-এর ওপর স্ট্রাইক রাখতে চেয়েছি। বিশ্বকাপেও সে চেষ্টাই করছি স্ট্রাইকরেট ১০০-এর ওপরে রাখতে। আর বোলিংয়ে জানি আমাকে ৫-৬ ওভার করতে হলে অনেক ডট বল দিতে হবে। উইকেট শিকারের চেয়ে তখন ডট বল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি চেষ্টা করছি সেটাই করতে।’
কৌশলে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এসেছে রাজধানীর দশম শ্রেণির এক ছাত্রী। আজ শনিবার ঢাকার কেরানীগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মুগদা শাখায় পড়ে।পুলিশ ও ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ শনিবার দুপুরে স্কুলের সামনে থেকে একদল দুর্বৃত্ত ওই ছাত্রীকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অপহরণকারীরা তাকে নেশাজাতীয় দ্রব্য দিয়ে অচেতন করে ফেলে। বিকেল চারটার দিকে মাইক্রোবাসটি ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় ওই ছাত্রীর চেতনা ফিরে আসে। সে কৌশলে গাড়ির দরজা খুলে রাস্তায় লাফিয়ে পড়ে। এরপর দৌড়ে পাশের একটি ফলের দোকানে গিয়ে আবার অচেতন হয়ে পড়ে।ফলের দোকানদার দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েটি হঠাৎ দৌড়ে এসে আমার দোকানের সামনে অচেতন হয়ে পড়ে। এ সময় মেয়েটি ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিল না।’ তিনি বলেন, মেয়েটির সঙ্গে থাকা স্কুলের পরিচয়পত্র দেখে জানা যায় সে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মুগদা শাখার ছাত্রী। কিছুটা সুস্থ হয়ে মেয়েটি বাসার মুঠোফোনের নম্বর জানায়। খবর পেয়ে মেয়েটির বাবা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।দেলোয়ারের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা বলেন, ‘মেয়েটি আমাদের দোকানে আসার পর বাচ্চাদের মতো কান্না করতে থাকে। এ সময় সে বলতে থাকে, “আমাকে স্কুল থেকে কিডন্যাপ (অপহরণ) করা হয়েছে। আপনারা আমাকে বাঁচান, আমি আম্মুর কাছে যাব। ”’কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ওই ছাত্রী সাংবাদিকদের বলে, ওই গাড়িতে তার সঙ্গে আরও তিনটা মেয়ে ছিল। তাকে গাড়িতে তোলার পর মুখে কিছু একটি দিয়ে চেপে ধরা হয়। এতে সে অচেতন হয়ে পড়ে। তবে মাঝে মাঝে সে অপহরণকারীদের কথা শুনতে পাচ্ছিল। একপর্যায়ে সে গাড়ির সুইচ চেপে দরজা খুলে রাস্তায় লাফিয়ে পড়ে।ওই ছাত্রীর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর বাসাবো এলাকায় থাকেন তাঁরা। তাঁর মেয়ে আজ সকালে পরীক্ষা দিতে স্কুলে যায়। তিনি বলেন, ‘বিকেলে বাসা থেকে মুঠোফোনে সংবাদ পাই সে কেরানীগঞ্জের একটি ফলের দোকানে আছে। এখানে এসে দেখি আমার মেয়ে মেঝেতে শুয়ে আছে। লোকমুখে শুনছি, আমার মেয়েকে স্কুলের সামনে থেকে কে বা কারা অপহরণ করে নিয়ে এসেছে।’কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে মেয়েটি সম্ভবত পাচারকারীদের হাতে পড়েছিল। তবে বুদ্ধির জোরে কৌশলে অপহরণকারীদের হাত থেকে বেঁচে গেছে। মেয়েটিকে তার বাবার কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা মুগদা থানায় মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় দুই শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়ার পথে একটি প্লাস্টিক প্যাকেট থেকে তিন লাখেরও বেশি টাকা পায়। স্কুলে যাওয়ার পথে একটি বাঁশবাগানে ওই প্যাকেটটি পায় তারা।ঘটনাটি ঘটেছে আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার শোল্লা রাজবংশীপাড়া কালীমন্দির এলাকায়।এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ১০টার দিকে মন্দিরের পাশ দিয়ে স্কুলে যাচ্ছিল ওই দুই শিক্ষার্থী। এ সময় মন্দিরসংলগ্ন বাঁশ ঝাড়ে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি বসে ছিলেন। ওই ব্যক্তি এলাকায় অচেনা। শিক্ষার্থী দুজনকে দেখে ওই ব্যক্তি একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ ছুড়ে পালিয়ে যান। এ সময় ওই দুই শিক্ষার্থী ব্যাগের কাছে এগিয়ে যায়। পরে ব্যাগ খুলে ভেতরে টাকা দেখতে পায়। এ সময় টাকা নিয়ে তারা বাড়িতে চলে যায়। দুপুরের দিকে খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে গ্রামের উৎসুক জনতা ওই শিক্ষার্থীদের বাড়িতে ভিড় করে। বিকেলের দিকে থানা-পুলিশ খবর পেয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে টাকাগুলো উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।নবাবগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুন্সি আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাগ থেকে পুলিশ ৩ লাখ ১৫ হাজার ৭০১ টাকা উদ্ধার করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কেউ এই টাকার দাবি করেনি। মালিক না পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী টাকার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্বকাপের আগে থেকেই দারুণ ফর্মে ছিল ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে কী হলো কে জানে, এখন সেমিফাইনালের আগেই বিদায়ের শঙ্কা। মরগানদের এমন পারফরম্যান্স অবাক করেছে বিরাট কোহলিকেও। ভারতীয় এই অধিনায়ক মনে করেন অতিরিক্ত চাপই এর জন্য দায়ী।কী ভেবেছিলাম আর কী হলো! ইংল্যান্ডকে নিয়ে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির মন্তব্যটা অনেকটা এরকম । বিশ্বকাপের আগে যেই দলের ভয়ে রীতিমতো খাবি খাচ্ছিলেন সবাই, সেই দলই কি না বিশ্বকাপের শেষ চার নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তায়। বিশ্বকাপে মরগানদের এমন পারফরম্যান্স সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটারদের মতো অবাক করেছে কোহলিকেও।আগামীকালের ম্যাচ নিয়ে কোহলিদের অবশ্য সেরকম কোনো চিন্তা নেই, শেষ চার প্রায় নিশ্চিত করেছে ভারত। যত চিন্তা ইংল্যান্ডের। তবে বিশ্বকাপের আগেও যাদের পা মাটিতে পরছিল না সেই ইংল্যান্ডেরই টুর্নামেন্টে এমন বাজে অবস্থা হবে ব্যাপারটা যেন কল্পনাতেও ভাবতে পারেননি ভারতীয় অধিনায়ক, ‘ইংল্যান্ডের এমন পারফরম্যান্স সবাইকেই অবাক করেছে। আমরা ভেবেছিলাম, ওদের কন্ডিশনে দাপট দেখাবে। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই বলেছি, চাপ অনেক বড় ব্যাপার। ছোট স্কোরও রক্ষা করতে জানতে হবে। কারণ, আমি আগে দুই বিশ্বকাপ খেলেছি, যে কেউই যে কাউকে হারাতে পারে। আফগানিস্তানের বিপক্ষেই কঠিন সময় পার করেছি আমরা। আপনি কোনো ম্যাচকেই হালকাভাবে নিতে পারেন না।’এবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে শুধু র‍্যাঙ্কিং সেরা ছিল বলেই নয়, গত তিন বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে দুর্দান্ত ছিল ইংল্যান্ড। গত বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর নিজেদের সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলা ইংল্যান্ড বলতে গেলে সবার জন্যই ছিল আতঙ্কের কারণ। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী সেরকম কিছুই হয়নি, বরং সেমিফাইনালে কীভাবে পৌঁছাবে তা নিয়েই এখন চিন্তা। কোহলির ধারণা স্বাভাবিক ক্রিকেট খেললেই এ দশা হতো না ইংল্যান্ডের, ‘অন্য দলগুলো ইংল্যান্ডের চেয়ে ভালো খেলেছে, এটা হতেই পারে। নিজেদের সমস্যার সমাধান ইংল্যান্ডকেই করতে হবে। বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতায় খেলা যতটা স্বাভাবিক রাখা যায় তত ভালো। এসব ক্ষেত্রে আবেগী বা উত্তেজিত হলে নিজেদের ওপরই চাপ সৃষ্টি হয়।’শেষ চারে যেতে হলে আগামীকাল যে করেই হোক এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা জিততে হবে মরগানদের। ভারতীয় দর্শকদের সাম সামাল দিতে পারবে তারা?
মাসটাও জুন! চরিত্রগুলোর মধ্যে আছে ইংল্যান্ড, ভারত...এবং বাংলাদেশও। এজবাস্টনকে কখনো কখনো পলাশীর প্রান্তরও মনে হচ্ছে। চারদিকে কান পাতলেই যে কত কত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব! ভারত নাকি ইচ্ছে করেই হারবে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানকে বাড়ি ফেরার বিমান টিকিট ধরিয়ে দিতে! ওদিকে ইংলিশ মিডিয়া উইকেটের চরিত্র দেখে থ বনে গেছে। খেলা ইংল্যান্ডে হচ্ছে, নাকি ভারতে! এই উইকেট যেন ভারতের রেসিপি মেনে বানানো—ঠারোঠোরে নয়, ইংলিশ মিডিয়া এখন এমন কথা বলতে শুরু করেছে বেশ জোরেই। ব্রিটেনের বেশির ভাগ প্রভাবশালী পত্রিকা অভিন্ন সুরে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে’র কথা বলছে!এই যড়যন্ত্র তত্ত্ব বিষয়টা কী, ‌দ্য সানের সিনিয়র ক্রিকেট প্রতিবেদক জন এথেরিজ প্রেসবক্সে বসে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন, ‘উইকেটে টার্ন দেখে ইংল্যান্ড অবাক হয়েছে। তারা গত চার বছর ঘরের মাঠে ব্যাটিং-সহায়ক উইকেটে খেলে অভ্যস্ত। নিজেদের সেভাবেই তৈরি করেছে। ৩৫০ এমনকি ৪০০ রানের স্কোর ইংল্যান্ড অনায়াসে পেয়েছে। বল ভালো ব্যাটে এসেছে। অথচ এখানে টার্ন দেখা যাচ্ছে। আর ষড়যন্ত্র-তত্ত্বটা হচ্ছে, এই যে পিচ অনেক মন্থর দেখা যাচ্ছে, বল প্রচুর টার্ন করছে, আইসিসি দেখভাল করছে পিচগুলো। ভারত যেহেতু পরাশক্তি, পিচ তাদের দিক তাকিয়ে তৈরি হচ্ছে। এটাই একেবারেই যে ভুল তা নয়। তবে ইংল্যান্ডের এটা অজুহাত হিসেবে দেখা ঠিক নয়। তাদের ভালো খেলতে হবে, ভালোভাবে তৈরি হতে হবে। উইকেটে মানিয়ে নিয়েই ভালো খেলতে হবে।’ইংল্যান্ড উইকেট নিয়ে ভীষণ চিন্তিত বলেই এজবাস্টনের কিউরেটরকে ভীষণ ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল আজ। বারবার তাঁকে ‘ব্রিফ’ করতে হলো ইংলিশ টিম ম্যানেজমেন্টকে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের অবশ্য আপত্তি আছে ইংল্যান্ডের এ যড়যন্ত্র তত্ত্বের। পুরো ইংল্যান্ড চষে বেড়াচ্ছেন ভারতীয় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সন্দীপন ব্যানার্জি। ভারতের ম্যাচ তো আছেই, অন্য দলগুলোর ম্যাচও তিনি সমান উৎসাহে কাভার করছেন। বেশির ভাগ মাঠের উইকেট কেমন আচরণ করছে, খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হচ্ছে তাঁর। সন্দীপনের প্রশ্ন, ‘ষড়যন্ত্রই যদি হবে, আচ্ছা কিউরেটর কাদের? সবাই তো ইসিবির (ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড) বেতনভুক্ত। যাদের চাকরি করছে, তাদের বেকায়দায় ফেলতে চাইবেন কিউরেটররা? আবহাওয়া গরম থাকলে উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হয়ে যায়। শুষ্ক উইকেটে পেসারদের তেমন কিছু থাকে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ওরা ব্যবহৃত উইকেটে বেশি খেলেছে। ব্যবহৃত উইকেটে একটু মন্থর-টার্ন থাকে। ফ্রেশ উইকেটে কিন্তু ওরা অনেক রান তুলেছে।’ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির সংবাদ সম্মেলনেও উইকেটের প্রসঙ্গটা উঠল। ভারতীয় অধিনায়কের মনে হচ্ছে ইংল্যান্ড চাপ নিতে পারছে না, ‘সবাই কিছুটা অবাক হয়েছে, সবাই ভেবেছে ইংল্যান্ড তাদের কন্ডিশনে দাপট দেখাবে। তবে টুর্নামেন্টের শুরুতে বলেছিলাম চাপ একটা বড় ফ্যাক্টর এখানে। আপনাকে সেটা সামলাতে হবে। লো স্কোর ডিফেন্ড করতে হবে। আমি দুটো ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলেছি তো জানি, এটাই হয় বড় টুর্নামেন্টে। এখানে সব দলই যে শক্তিশালী। নির্দিষ্ট দিনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কিছু দল দুর্দান্ত খেলেছে বলে তারা হেরেছে। এটা হয়।’ ইংলিশদের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব নিয়ে অবশ্য বাংলাদেশের খুব বেশি ভাবার সুযোগ নেই। উপমহাদেশের দল হিসেবে উইকেট মন্থর-টার্ন থাকলে বাংলাদেশ বরং খুশিই। দলের তরুণ অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন যেমন বললেন, ‘উইকেটের কথা বললে সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমরা স্পিন-সহায়ক উইকেট পেয়েছিোস। আর টুর্নামেন্টে যে স্পিনারা ভালো করেছে বেশির ভাগ রিস্ট স্পিনার। রিস্ট স্পিনাররা সবখানেই বল ঘুরাতে পারবে। এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। এখনো পর্যন্ত আমরা ভালো খেলছি । যা হয়েছে আমাদের জন্য ভালোই হয়েছে।’বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা অবশ্য এটার ভালো-মন্দ কোনো দিকই খুঁজতে গেলেন না, ‘এখানে সব দলই যার যার স্বার্থ দেখবে। ইংল্যান্ডও দেখছে। আমাদের জন্য যেটা ভালো হবে, মাঠে আমরা সেটাই তো চাইব।’যে উইকেট নিয়ে এত কথা, ইংলিশরা কাল এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে ‘ফ্রেশ’ উইকেটই পাচ্ছে। সতেজ উইকেটে ইংলিশরা ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ কতটা পেছনে ফেলতে পারে, সেটিই দেখার।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ‘প্যাকেজ আন্দোলন কর্মসূচি’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আজ শনিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে।বৈঠকের পর ব্রিফ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনিও কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেন।বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই সভা অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করার জন্য এবং অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কবে নাগাদ আন্দোলনের কর্মসূচি আসবে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যেই এই কর্মসূচিগুলো আসবে।’খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন বেগবান করতে বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি দেবে বলে সর্বশেষ ২২ জুন স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়।গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকেলে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক হয়। বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বরগুনায় রিফাত হত্যাকাণ্ড, ছাত্রদলের চলমান সংকটসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। লন্ডন থেকে স্কাইপেতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই বৈঠকে যুক্ত ছিলেন।এই বৈঠকে মহাসচিব ছাড়াও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ছিলেন।বয়সসীমা তুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের আন্দোলনে সৃষ্ট সংকট সমাধানে কি হয়েছে প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, এগুলোর বিষয়ে যাদের দায়িত্ব রয়েছে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। ছাত্রদলের ব্যাপারে যাদের দায়িত্ব আছে তারাই পরে আপনাদের জানাবেন।মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, উনি এই ধরনের কথা প্রায়ই বলেন, এই ধরনের কথা আগেও বলেছেন। আমরা মনে করি যে, তাদের যে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা এসব তারই বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, আমি মনে করি, এই ধরনের চিন্তা রাজনৈতিক কোনো চিন্তা বলে মনে হয় না।রিফাত হত্যাকাণ্ড: সরকারের ব্যর্থতা ও উদাসীনতাসংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব বরগুনায় রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, সভায় রিফাত হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়েছে। সাম্প্রতিককালে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকারের ব্যর্থতা ও উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে বলে সভা মনে করে। যেহেতু এই সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, ফলে কোনো জবাবদিহি নেই। সে জন্য রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে বিগত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সন্ত্রাস ও অস্ত্রের মুখে জনগণের অধিকার হরণ করেছে, সেহেতু রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে এবং একটা চরম অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট বিরাজ করছে দেশে। সভা মনে করে, এই সংকট নিরসনের একমাত্র উপায় হচ্ছে, যিনি সারা জীবন গণতন্ত্রের লড়াই করেছে খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক কারণে যে সমস্ত নেতা-কর্মীকে বন্দী করে রাখা হয়েছে তাদের মুক্তি এবং অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সংসদ গঠন করা।
২ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে জিতল পাকিস্তানইমাম-উল-হক ও বাবর আজম মিলে পাকিস্তানকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন ভালোভাবেই। কিন্তু মাত্র আট বলের ব্যবধানে দুজনকেই তুলে নিয়ে ম্যাচে ফিরে এসেছে আফগানিস্তান। পাকিস্তানকে হারিয়ে স্বপ্ন দেখছে ক্রিকেট বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নেওয়ার। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২২ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৯১ রান।ছোট সংগ্রহ নিয়ে লড়াই করতে হলে শুরুতে উইকেট দরকার ছিল আফগানিস্তানের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ফখর জামানকে ফিরিয়ে দিয়ে আফগানদের সেই শুরু এনে দেন মুজিব উর-রেহমান। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ৭২ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ থেকে সব আকর্ষণ উধাও করার বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলেন ইমাম ও বাবর।এরপরই পাকিস্তানকে জোড়া ধাক্কা দিয়েছেন মোহাম্মদ নবী। ১৬তম ওভারের শেষ বলে ইমামকে (৩৬) ফেলেছেন স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে। নিজের পরের ওভারে তুলেছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ও পাকিস্তানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান বাবর আজমকে (৪৫) করেছেন বোল্ড।পাকিস্তানি স্পিনাররা উইকেট থেকে সহায়তা পেয়েছিলেন ভালোই। আফগান স্পিনাররাও বল ঘোরাচ্ছেন ভালোই। পাকিস্তানের ভরসা হয়ে উইকেটে আছেন মোহাম্মদ হাফিজ (৬) ও হারিস সোহেল (৩)।
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার এক বাজারে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ১৫ জনকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ১০ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আজ শনিবার সকালে উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের করেঙ্গাতলী বাজারে এই ঘটনা ঘটে।এই ঘটনার জন্য জনসংহতি সমিতিকে (এমএন লারমা) দায়ী করেছে স্থানীয়রা। তবে সংগঠনটি তা অস্বীকার করেছে।স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গ্রামপ্রধান ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আজ করেঙ্গাতলী বাজারে হাটের দিন ছিল। সকাল সাড়ে আটটার দিকে বাজার জমে উঠতেই আট থেকে ১০ জন অস্ত্রধারী প্রবেশ করে। তারা বাজারে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। এ সময় বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে বিভিন্ন গ্রামে থেকে আসা অন্তত ১৫ ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এর মধ্যে নেওয়ার পথে ও বিকেলে ১০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, পূর্ণ সাধন চাকমা (৪০), তপন চাকমা (২৮), মংগে চাকমা, কান্দারা চাকমা, সচারুময় চাকমা, শান্তি কুমার চাকমা, প্রিয়ময় চাকমা, অমর চার্য চাকমা, ধন কুমার চাকমা ও সুবেশ চাকমা।গ্রামপ্রধান ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, অহরণকারীদের হাতে এখনো আটক আছেন পাঁচজন। আটক ব্যক্তিরা হলেন, বঙ্গলতলী ইউনিয়নের বঙ্গলতলী গ্রামের অঙ্গত চাকমা (৪০), একই ইউনিয়নের ডুলুবন্যা গ্রামের সন্তোষ কুমার চাকমা (৪৪), ভালুকমাজ্জ্যা গ্রামের সঞ্চয় চাকমা (২৮) ও মারিশ্যা ইউনিয়নের খেদারছড়া গ্রামের অজয় চাকমা (৪৫) এবং ভূঁইয়োছড়া গ্রামের অরুণ চাকমা। অপহরণকারীরা আজ দুপুরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য স্বজন ও গ্রাম প্রধানদের খবর দিয়েছে। গ্রামপ্রধানরা জানিয়েছেন, তাঁরা অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, অস্ত্রধারীরা সবাই জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সশস্ত্র কর্মী। তারা কাচালং নদী পাড় হয়ে বাজারে প্রবেশ করেছিল। এরপর এসব ব্যক্তিদের ধরে নদীর ওপারে রূপকারী গ্রামের দিকে নিয়ে যায়। করেঙ্গাতলী বাজার কমিটির সভাপতি নিকাশ দে প্রথম আলোকে বলেন, সকালে ঘটনার পর বাজার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বাজারে আসা লোকজন সবাই চলে যায়।বঙ্গলতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্ঞানজ্যোতি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে ১৫ জন সাধারণ মানুষকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে পরে বিভিন্ন সময় ১০ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। বঙ্গলতলী ও মারিশ্যা ইউনিয়নের পাঁচ গ্রাম থেকে ৫ জনকে এখনো ছেড়ে দেওয়া হয়নি। তাঁদের স্বজন ও গ্রামের মুরব্বিরা অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখা জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সভাপতি সুরেশ কান্তি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘করেঙ্গাতলী বাজারে ঘটনা ও অপহরণের বিষয়ে আমাদের দল দায়ী নয়। এমএন লারমাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ী করা হচ্ছে। এমএন লারমা গণতান্ত্রিক বিশ্বাসী, এ ধরনের ঘটনার সংশ্লিষ্টতা প্রশ্নেও আসে না।’বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল মঞ্জুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘করেঙ্গাতলী বাজারে দুর্বৃত্তরা ফাঁকাগুলি ছোড়ার ঘটনা শুনেছি। ঘটনার পর বেশ কয়েকজনকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কতজন আটকে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে আমাদের কেউ কিছু বলেনি।’
হেডিংলিতে আজ মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। মাঠের বাইরে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন দুই দেশের সমর্থকেরা।রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক এখন বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকে। সেই উত্তেজনার রেশ আজ ছড়িয়েছে বিশ্বকাপের ময়দানে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আফগানিস্তান যখন ধুঁকছে, স্টেডিয়ামের বাইরে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছেন দুই দেশের সমর্থকেরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, পাকিস্তানের জার্সি পরিহিত এক দর্শকের ওপর চড়াও হয়েছে আফগান সমর্থকেরা।আফগানিস্তানের সমর্থকেরা শুধু প্রতিপক্ষ দেশের সমর্থকদের সঙ্গেই মারামারি করেই থামেননি। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায় নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গেও হাতাহাতিতে জড়িয়েছেন তারা। হেডিংলিতে শুরু হওয়া ম্যাচে বেশ কিছু আফগান দর্শক দেয়াল পেরিয়ে মাঠে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। কিছু দর্শক টিকিট ছাড়া গ্যালারিতে গিয়ে বসেছিলেনও। নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের বের করে দিতে গেলে উল্টো চড়াও হয়ে ওঠে। টুইটার বার্তায় বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন এক আফগান সাংবাদিকই।সমর্থকেরা মাঠের বাইরে মারামারি করছে, আর মাঠের খেলাতেও একেবারে যাচ্ছে তাই অবস্থা আফগানিস্তানের। আজকের ম্যাচের আগে সাতটি ম্যাচ খেলে একটিতেও জয় পায়নি তারা। আজ প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ২২৭ রান করেছে। দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা আফগানিস্তানের জন্য ম্যাচটা নিয়ম রক্ষার হলেও পাকিস্তানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ম্যাচে জয় পেলে সেমিফাইনালে খেলার আশা বেঁচে থাকবে তাদের।
আজ লর্ডসে মুখোমুখি হয়েছে দুই তাসমান প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। ম্যাচে স্টিভ স্মিথকে ফেরাতে অভাবনীয় এক ক্যাচ তালুবদ্ধ করেছেন মার্টিন গাপটিল।বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দিলে ফিকোয়াওকে ফেরাতে সীমানার কাছ থেকে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েছিলেন বেন স্টোকস। সাবেক ইংলিশ স্পিনার ফিল টাফনেল তো বিবিসিতে এসে দাবিই করে বসলেন, এটিই নাকি ‘শতাব্দীর সেরা ক্যাচ।’ তাঁর সঙ্গে তখন কেউ একমত হয়েছেন, আবার কেউ সেটিকে ‘অত্যুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে আজ স্টিভ স্মিথকে ফেরাতে মার্টিন গাপটিল যে ক্যাচটি তালুবদ্ধ করেছেন, তা দেখে খোদ ফিল টাফনেলও হয়তো নিজের আগের মন্তব্যটি নিয়ে আরেকবার ভাববেন।অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের ১২তম ওভারে কিউই পেসার লকি ফার্গুসনের শর্ট লেংথের বলটিকে সজোরে হুক করেছিলেন স্টিভ স্মিথ। কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ঠিক এই শটটি ঠেকানোর জন্যই মার্টিন গাপটিলকে লেগ গালি পজিশনে রেখেছিলেন। তবে ফার্গুসনের ৮৮ মাইল গতিতে করা বাউন্সার স্মিথের ব্যাটের ছোঁয়া পেয়ে যেন আরও গতিময় হয়ে ওঠে। কিন্তু ম্যাচে এর আগে দুটি ক্যাচ ফেলা গাপটিল এবার নিজেকে শূন্যে ভাসিয়ে এক হাতে দুর্দান্ত ভঙ্গিতে বলটি তালুবদ্ধ করেন। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে লর্ডসের গ্যালারি সমস্বরে গর্জে উঠল, গাপটিলের ক্যাচটির মহিমা এমনই।গাপটিলের অতিমানবীয় ক্যাচের বন্দনায় টুইটারও মেতে উঠেছে। ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে ক্যাচটির প্রশংসা করে টুইটে লিখেছেন, ‘একজন ভালো ফিল্ডার একটি ক্যাচ মিস করলে সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে চাইবেন। গাপটিল দুটি সুযোগ নষ্ট করে তৃতীয়বারে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন। সে হয়তো ক্যাচটা যেন হাতে জমে যায় সে জন্য প্রার্থনা করছিল।’ সাবেক অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার মার্ক ওয়াহ স্টোকসের ক্যাচকে সরিয়ে দিয়ে গাপটিলের ক্যাচটিকেই টুর্নামেন্টের সেরা হিসেবে অভিহিত করেছেন।ক্রিকেট পরিসংখ্যান বিশ্লেষক ফ্রেডি ওয়াইল্ড টুইটারে ক্যাচটির মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘স্টোকস এবং কটরেলের ক্যাচগুলোর থেকে গাপটিলের এই ক্যাচটি তর্কসাপেক্ষে অনেক ভালো। লেগ গালি পজিশনে দাঁড়িয়ে ক্যাচটি নিয়েছেন তিনি, মানে বলটি দেখতে তাঁর বেগ পেতে হয়েছিল। তারপর এত দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সেটিকে হাতে জমানো, ক্যাচটি বিস্ময়কর!’গাপটিলের মতো দারুণ পারফরম্যান্স তাঁর দলের বোলারদের। ৯২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। উসমান খাজা ও অ্যালেক্স ক্যারি আপাতত দলকে টেনে তোলার কাজটা করছেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩৭ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭২ রান অস্ট্রেলিয়ার।দেখে নিন সে ক্যাচ:
কঙ্গনা রনৌতের ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’ নিয়ে বিতর্ক, মামলা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ—সব মিলিয়ে এত সমস্যা, যে কাউকে পাগল করে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এবার জানা গেল, ছবির নামে আর ‘মেন্টাল’ শব্দটি থাকছে না। বদলে যাচ্ছে ছবির নাম। রাজ কুমার রাও আর কঙ্গনা রনৌত অভিনীত এই ছবির নতুন নাম ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’।এই ছবির প্রথম পোস্টার প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় বিতর্ক। একতা কাপুরের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বালাজি মোশন পিকচার্স প্রযোজিত এই ছবির প্রথম পোস্টার দেখে রীতিমতো খেপেছিল ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটি (আইপিএস)। তারা সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের (সিবিএফসি) চেয়ারম্যান প্রসূন যোশিকে ছবিটির ছাড়পত্র না দেওয়ার জন্য একটি চিঠি দেয়।ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা চলচ্চিত্রের নাম নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছি, এটি মানসিক সমস্যা এবং যাঁরা মানসিকভাবে অসুস্থ, তাঁদের প্রতি অবমাননাকর, অরুচিশীল এবং অমানবিক। ছবির নামে যাঁরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন, তাঁদের ব্যঙ্গ ও অবমাননা করা হয়েছে। তাই ওই চলচ্চিত্রের নাম অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।’ চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘মানসিক সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের অধিকার লঙ্ঘনকারী যেকোনো ঘটনাকে ছবি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য দাবি করছি।’আইপিএসের সেই দাবি এবার পূরণ হলো। ‘মেন্টাল’ হলো ‘জাজমেন্টাল’। বালাজি মোশন পিকচার্সের একজন মুখপাত্র ছবির নাম পরিবর্তন হওয়ার পর জানালেন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মতো একটা সংবেদনশীল বিষয়কে কোনোভাবে আঘাত করা বা ছোট করা তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। তাই এই ছবির নির্মাতারা সবাই মিলে ঠিক করেছেন, বদলে ফেলবেন ছবির নাম। কঙ্গনা আর রাজকুমার দুজনই ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। বড় পর্দায় ছবিটি দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে কারও তর সইছে না বলেও যোগ করেন ওই মুখপাত্র।কঙ্গনা রনৌত গত বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমাদের ছবির ট্রেলার মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। তার কিছুদিন আগে এই ট্রেলার ছাড়পত্রের জন্য জমা দেওয়া হয়। তখন অল ইন্ডিয়া সাইকিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট থেকে আপত্তি জানানো হয়। আমরা তাদের আপত্তি মেনে ছবির নামের পরিবর্তন করতে পেরে আনন্দিত। কারণ, তারা তো সরকারেরই অংশ। আর আমাদের অবশ্যই সরকারকে সম্মান করতে হবে। তারা এই ছবিটি খুবই ভালোবেসেছে আর পুরো ছবির কোথাও কোনো কর্তন করেনি।’কঙ্গনা আরও যোগ করেছেন, তারা কেবল একটি পরিবর্তন চেয়েছে। আর সেটা হলো ‘মেন্টাল’ শব্দ। গত বছর থেকে নাকি সেন্সর বোর্ড ‘পাগলা’ এবং ‘পাগল’-এর মতো কয়েকটি শব্দ নিষিদ্ধ করেছে। সেন্সর বোর্ড তাই ছবির নাম সম্পর্কে মন্তব্য করেছে, একটু বেশি কর্কশ।‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’ ছবি নাকি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে বানানো হয়েছে। এখানে কাউকে ছোট করে দেখানোর সুযোগ নেই। ছবি মুক্তির কয়েক সপ্তাহ আগে নাম নিয়ে আপত্তি আসায় নির্মাতারা দ্রুত নতুন নাম দিয়েছেন। নতুন করে এই নাম নিবন্ধনও করা হয়েছে। আর সেই সঙ্গে সেন্সর বোর্ড থেকে সার্টিফিকেটও পেয়েছে।প্রকাশ কোভালামুড়ি পরিচালিত এই ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল আরও এক সপ্তাহ আগে, ২১ জুন। কিন্তু নাম, কুরুচিপূর্ণ পোস্টারের অভিযোগ, ‘সুপার থার্টি’ ছবির সঙ্গে সংঘাত—সব মিলিয়ে পেছাতে হয়েছে ছবি মুক্তির তারিখ। নতুন নামের সঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন পোস্টারও। এবার সবকিছু ঠিক থাকলে আর নতুন কোনো ঝামেলা না হলে ছবিটি ২৬ জুলাই মুক্তি দেওয়া হবে। তবে শর্ত একটাই, নতুন করে কোনো ঝামেলা না হলে।কিন্তু কঙ্গনার ছবির নতুন করে কোনো ঝামেলা হবে না, সেই নিশ্চয়তা কে দেবে?
পাবনার শহীদ এম মনসুর আলী কলেজে বহিরাগত বখাটেদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এতে শিক্ষকেরা বাধা দিলে বখাটেরা ক্যাম্পাসে হামলা ও ভাঙচুর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শনিবার সকালে ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বখাটেদের বাধা দেওয়ায় তারা পিস্তল উঁচিয়ে ওই কলেজের অধ্যক্ষের প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বখাটেদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসের সামনে পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন।শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলেজের আশপাশের এলাকার বখাটেরা প্রায়ই ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। তারা শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়। মাঝেমধ্যে ছাত্রীদের বিশ্রামকক্ষে গিয়ে তাদের উত্ত্যক্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকালে পাঁচ থেকে ছয়জনের একদল বখাটে ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করে। একপর্যায়ে বখাটেরা ছাত্রীদের বিশ্রামকক্ষে ঢুকে তাদের উত্ত্যক্ত করতে থাকে। শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বিষয়টি অধ্যক্ষসহ কলেজ প্রশাসনকে জানায়। খবর পেয়ে অধ্যক্ষ অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে বখাটেদের কলেজ থেকে বের করে দেন।শিক্ষার্থীরা জানায়, এর আধা ঘণ্টা পরেই ওই বখাটেরা আরও লোকজন নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা ভেতরে ঢুকে অধ্যক্ষ ও অন্য শিক্ষকদের গালিগালাজ শুরু করে। একপর্যায়ে বখাটেরা অধ্যক্ষের কক্ষ, বাইরে রাখা ফুলের টবসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করে। এ সময় অধ্যক্ষ এগিয়ে এলে বখাটেরা পিস্তল উঁচিয়ে তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা একত্র হতে শুরু করলে ও পুলিশ আসার খবর পেয়ে বখাটেরা পালিয়ে যায়।প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, বখাটেরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কে অবস্থান নেন। বিক্ষোভ শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে কলেজে বখাটেপনা বন্ধ ও হামলা-ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।বিক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বখাটেরা দীর্ঘদিন ধরে কলেজে ঢুকে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে আসছে। অনেক সময় গ্রাম থেকে কলেজে আসা বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা ও মুঠোফোন কেড়ে নিচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গেলে তারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে ও মারধর করে।কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান, বখাটেদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হতে হয়।কলেজের অধ্যক্ষ আবদুস সামাদ বলেন, ‘বহিরাগত এই বখাটেদের অত্যাচারের মধ্য দিয়ে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। বখাটেদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হক বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। বর্তমানে কলেজে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্যাম্পাস এখন শান্ত আছে। সকালের ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেছেন। আসামিদের ধরতে ইতিমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। কলেজের বখাটেপনা বন্ধ করতে নজরদারি বাড়ানো হবে।
‘এক হাজার ভাগ নিশ্চিত নেইমার পিএসজিতেই থাকবেন’—সেসব দিন এখন অতীত। নেইমারকে কোনো কিছুর বিনিময়েই বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে পিএসজি, সে খবরও এখন পুরোনো। ক্লাব সভাপতি নাসের আল-খেলাইফি কিছুদিন আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, নেইমারকে বিক্রি করতে প্রস্তুত তারা। এবার জানা গেল ফ্রেঞ্চ ক্লাবটির চাহিদাও। নগদ অর্থের পাশাপাশি দুজন খেলোয়াড়কে পেলেই কেবল বার্সেলোনার কাছে নেইমারকে বিক্রি করবে পিএসজি!এর আগে দুই দফা পিএসজির চাহিদার কথা শোনা গিয়েছিল। প্রথমে জানা গিয়েছিল, ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর কমে নেইমারকে ছাড়বে না তারা। এরপর খবর রটে, যে দামে বার্সেলোনা থেকে নেইমারকে কিনে এনেছিল, সেই ২২২ মিলিয়নেই বিক্রি করবে তাঁকে। এবার ফরাসি পত্রিকা লে পারিসিয়েন জানিয়েছে পিএসজির নতুন চাহিদার কথা।পত্রিকাটির দাবি, নেইমারকে বিক্রির ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে পিএসজির মালিকপক্ষ। নগদ ১৩০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ইউরো তো লাগবেই, সঙ্গে বার্সেলোনার দুজন খেলোয়াড়কেও চাই তাদের! তাও আবার যেকোনো দুজন হলে হবে না। উসমান ডেমবেলে, ফিলিপ কুতিনহো, ইভান রাকিটিচ ও স্যামুয়েল উমতিতি—এই চারজনের মধ্যে যেকোনো দুজনকে চায় ফ্রেঞ্চ চ্যাম্পিয়নরা।পিএসজির এই চাহিদা বার্সেলোনা পূরণ করবে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। দুদিন আগেই কাতালান ক্লাবটির সহসভাপতি জর্দি কারদোনের জানিয়েছিলেন, নেইমারকে ফেরানোর ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি তারা। কারদোনের বলেছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত যা পড়েছি এবং এটা নিশ্চিত যে নেইমার বার্সেলোনাতে ফিরতে চায়। কিন্তু বার্সেলোনা নেইমারকে কিনতে চায় এ কথায় (পত্রিকার দাবি) আমাদের আপত্তি আছে। খেলোয়াড় তার ইচ্ছের কথা জানিয়েছে এবং আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। মিডিয়া যা বলছে (বার্সেলোনাও কিনতে চায়),সেটা বাড়িয়ে বলেছে। আমরা যারা সিদ্ধান্ত নেব তারা এখনো নিশ্চিত নই নেইমারকে চাই কি না। আমি এখনো অনিশ্চিত এ কারণে যে, আমরা ওর সঙ্গে যোগাযোগ করিনি।’নেইমারের মতো খেলোয়াড়কে পেলে বার্সেলোনার জন্য ভালো হবে, সেটা স্বীকার করেছেন কারদোনের। কিন্তু নেইমারের অতীত তাদের একটু সাবধানে এগোতে বাধ্য করছে, ‘সে নিজে বার্সেলোনা ছেড়েছে। সে অবশ্যই দারুণ খেলোয়াড় এবং খেলোয়াড়ি দিক থেকে ওর মূল্য আমরা সবাই জানি। কিন্তু ও যেভাবে বিদায় নিয়েছিল সেটা নিয়ে আমাদের আরও ভাবতে হবে। আমার মনে হয়, গণমাধ্যমে কিছু তথ্য বলা হচ্ছে যা সত্য নয়। যখনই কোনো নাম উচ্চারিত হয় (দলবদল নিয়ে), আমরা উত্তেজিত হয়ে যাই। কিন্তু আমাদের একটি বাজেট আছে। আমাদের আগে দেখতে হবে কাদের বিক্রি করা যাবে, তারপর কাদের আনা যাবে।’বাজেট পূরণ করতে কি পিএসজির চাহিদা অনুযায়ী খেলোয়াড় ছাড়বে বার্সেলোনা? না কি নেইমারের ফেরার ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যাবে?