content
stringlengths
1
63.8k
ইরান ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ে ধনাঢ্য উপসাগরীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। মার্কিন ড্রোন হামলার জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিসহ দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনার পর গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের সঙ্গে বৈঠক করেন পম্পেও।মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় নৌবহরের ওপর নজরদারির জন্য সহযোগীদের সঙ্গে একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি এ এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা ও ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করেছে ওয়াশিংটন।সৌদি আরবে পৌঁছে পম্পেও সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় উপসাগরীয় এলাকায় জাহাজের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য পায়।সৌদি আরবের জেদ্দা শহর থেকে এক টুইট বার্তায় পম্পেও জানান, নৌ চলাচলে সর্বাধিক স্বাধীনতা দেওয়া হবে।আবুধাবিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে সক্রিয় নিষেধাজ্ঞা জারি করতে প্রহরার ব্যবস্থা করছে মার্কিন নৌবাহিনী। তিনি বলেন, কয়েকটি দেশের জোট গঠিত হলে বস্তুগত এবং আর্থিক ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি তিনি।কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরানিরা মার্কিন ড্রোনে হামলা চালাচ্ছে, এ অঞ্চলের অন্যান্য ড্রোনে গুলি চালাচ্ছে, শুধু এ অঞ্চলেই নয়, যেকোনো জায়গায় হামলা চালাচ্ছে—এর প্রধান কারণ তারা চায় না আমরা তাদের ওপর নজরদারি করি।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন আরেক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, এ পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য ওমান উপসাগরীয় অঞ্চল বা হরমুজ প্রণালির অন্তর্বর্তীকালীন জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের অংশীদারদের বেশির ভাগ জাহাজ সরবরাহ করা। ওই এলাকায় নিজেদের নজরদারি বাড়াতে এ ধরনের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।পুরো ব্যাপার বর্ণনা করে ওই কর্মকর্তা বলেন, এখনো এমন কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। মিত্রদের পক্ষ থেকে কী ধরনের সাড়া পাওয়া যায়, তার ওপর বাকিটা নির্ভর করছে।আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পম্পেও। এ সময় হরমুজ প্রণালিতে সামুদ্রিক নিরাপত্তা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।পম্পেও বলেন, ‘আপনাদের সবার সহযোগিতা লাগবে আমাদের, আপনাদের সামরিক সহায়তা প্রয়োজন। প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড ট্রাম্প) এই দায় একা ঘাড়ে না নিয়ে মিত্রদের মধ্যে ভাগ করে নিতে আগ্রহী।’ সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং অন্যান্য ২০টি দেশের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান তিনি।হরমুজ প্রণালিতে সৌদি মালিকানাধীন দুটিসহ মোট ছয়টি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার দায় অস্বীকার করেছে তেহরান। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্যামেরা, দুরবিন এবং মার্কিন জাহাজও নজরদারির আওতাভুক্ত থাকবে।
টাঙ্গাইলে স্কুলছাত্র মো. সজিব মিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবলসহ সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তার স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার টাঙ্গাইল শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে এ দাবি জানানো হয়।মো. সজিব মিয়া সদর উপজেলার আয়নাপুর এ এম মডেল হাইস্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আজ সকালে ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা টাঙ্গাইল শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন এ এম মডেল স্কুলের শিক্ষক মো. আসলাম মিয়া, মো. ফারুক মিয়া, পারুল বেগম, শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার ও রুবেল মিয়া।বক্তারা অভিযোগ করেন, পুলিশ সাধারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়। আর পুলিশ কনস্টেবল মোশারফ হোসেন স্কুলছাত্র সজিব মিয়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।সজিব মিয়া ১৪ জুন বিকেলে সদর উপজেলার মগড়া ইউনিয়নের বাহির শিমুল গ্রামে নানার বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলে করে বের হয়। এর পর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। ১৬ জুন দুপুরে কালিহাতী উপজেলার হাতিয়া এলাকায় অজ্ঞাত এক তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই সজিবের মা জাহানারা বেগম লাশটি তার ছেলের বলে শনাক্ত করেন। পরের দিন জাহানারা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে কালিহাতী থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ এই ঘটনার সঙ্গে কনস্টেবল মোশারফ হোসেন ও সজিব মিয়ার বন্ধু মো. সজিবের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। তাদের দুজনকে গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। স্বীকারোক্তিতে তাঁরা বলেন, সজিব মিয়ার দূরসম্পর্কের চাচা মনিরুজ্জামানের প্ররোচনায় তাঁরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে পুলিশ মনিরুজ্জামানকেও গ্রেপ্তার করে।
বহুল আলোচিত দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হচ্ছে। এ জন্য একটি বিল জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে। এতে আইনটির মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।আজ মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুতবিচার) (সংশোধন) বিল- ২০১৯’ জাতীয় সংসদে তোলেন।পরে বিলটি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।বিএনপি জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালে দ্রুত বিচার আইন সংসদে পাস হয়। ওই সময় এই আইনের মেয়াদ ছিল ২ বছর। আইনটি পাসের পর সে সময়ের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ব্যাপক সমালোচনা করেছিল। তবে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগও এই আইনটির মেয়াদ দফায় দফায় বাড়িয়েছে। মোট ৬ দফায় এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালে এই আইনের মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানো হয়। গত ৯ এপ্রিল আইনটির মেয়াদ শেষ হয়। এই অবস্থায় আইনটির মেয়াদ আবার ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছিল, চাঁদাবাজি, যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও সন্ত্রাস সৃষ্টি, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র কেনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন অপরাধ দ্রুততার সঙ্গে বিচারের জন্য এই আইন। এই আইনে দোষী প্রমাণিত হলে দুই থেকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে। প্রতি জেলায় গঠিত এক বা একাধিক দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এই আইনে মামলার বিচার চলে।দ্রুত বিচার আইনে ১২০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ নিষ্পত্তি করার বিধান আছে। এই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা না গেলে আরও ৬০ দিন সময় পাওয়া যায়।
দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহকে স্মরণ করা হয়েছে। তাঁর স্মরণে ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ শীর্ষক এ স্মরণসভার আয়োজন করে মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স সিঙ্গাপুর। গত রোববার (২৩ জুন) সন্ধ্যায় পেঞ্জুরু রিক্রিয়েশন সেন্টারে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশটির বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সেলর মোহাম্মদ আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ও সামা সামার (মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স মুভমেন্ট) সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা কারি তামুরা।শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স সিঙ্গাপুরের প্রধান রিপন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘গান ও কবিতার মাধ্যমে রুদ্র এখনো বেঁচে আছেন আমাদের মাঝে। তাই সুদূর সিঙ্গাপুরে তাঁকে স্মরণ করার ছোট্ট এক প্রয়াস এটি।’দ্বিতীয় পর্বে সিঙ্গাপুরপ্রবাসী লেখক ওমর ফারুকী শিপনের নতুন বই ‘প্রারম্ভিক প্রেম’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।তৃতীয় পর্বে ছিল কবিতা, গান ও নৃত্য। কবিতা পাঠ করেন সাইফ তমাল, টিটু প্রধান, সাইদুর রহমান লিটন, কিরণ মাহমুদ মান্না, শাহ মিনহাজ, মনির আহমদ ও জাকির হোসেন খোকন। ‘ভালো আছি, ভালো থেকো’ গানে নৃত্য পরিবেশন করেন নিজামুল হক ও উচি। কবি রুদ্রের বিভিন্ন গান গেয়ে শোনান ড্রিম এরাইভড ব্যান্ডের সদস্যরা।অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন কবি শরীফ উদ্দিন।
বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডসকে নিয়ে বিসিবির মধ্যে আছে অসন্তুষ্টি। কর্মকর্তাদের অনেকেই মনে করেন কাউন্টি দলের কোচ হিসেবে যোগ্য হলেও জাতীয় দলের কোচ হওয়ার যোগ্যতা তাঁর নেই। পথপ্রদর্শনের নেতৃত্বগুণও নাকি নেই তাঁর!‘আমাকে আর ছয় মাস রাখলে আমি বাংলাটা আরও ভালোভাবে শিখে ফেলতাম’-আফগানিস্তান ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন শেষে রসিকতা করলেন বাংলাদেশ দলের কোচ স্টিভ রোডস। শুনে বাংলাদেশের এক সাংবাদিকদের পাল্টা রসিকতা, ‘আপনি আমাদের বিশ্বকাপ এনে দিন। আপনাকে আমরা আরও ছয় বছর রেখে দেব।’কিন্তু রসিকতার ছলেই-বা হঠাৎ রোডস ওই কথা কেন বলবেন! বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে তাঁর চুক্তি আগামী বছর অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। তাহলে মাত্র ছয় মাসের চিন্তা কেন আসবে ইংলিশ কোচের মনে? তবে কি স্টিভ রোডসও বুঝে গেছেন, বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে এই বিশ্বকাপের পরই শেষ দেখে ফেলতে পারেন তিনি!না, এখনো সে রকম কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিসিবি। কিন্তু আড়ালে-আবডালে প্রসঙ্গটা আসছেই। জাতীয় দলের ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে দেশ থেকে বিশ্বকাপ দেখতে আসা বিসিবি কর্তাদের আলোচনা-সর্বত্রই রোডসকে নিয়ে অসন্তুষ্টি। বিসিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে জাতীয় দলের অনেক সদস্যও একমত-কাউন্টি দলের কোচ হিসেবে হয়তো যোগ্য উস্টারশায়ারের সাবেক এই কোচ। কিন্তু জাতীয় দলের কোচ হওয়ার মতো যথেষ্ট যোগ্যতা তাঁর নেই। রোডসের মধ্যে নেই বাংলাদেশের মতো উন্নতির সিঁড়িতে থাকা একটা দলের পথপ্রদর্শক হওয়ার মতো নেতৃত্বগুণও।রোডস মানুষ হিসেবে অতি নরমসরম। বিশ্বকাপের আগে কোচিং স্টাফকে শক্তপোক্ত করতে একপর্যায়ে তো ডিরেক্টর অব কোচেস পদ দিয়ে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ড্যারেন লেম্যানকে দলের সঙ্গে যুক্ত করারও চিন্তা করেছিল বিসিবি। তবে বিশ্বকাপের আগে এ ধরনের সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীত হতে পারে। কোচদের মধ্যে তৈরি হতে পারে ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব। এসব আশঙ্কা থেকে চিন্তাটি আর বাস্তবতার দেখা পায়নি।দলের ওপর কর্তৃত্বের অভাব, ভালো গেমপ্ল্যান তৈরি করতে না-পারা, ম্যাচ পরিস্থিতির দাবি মেনে মাঠে সঠিক বার্তা পাঠাতে ব্যর্থতা-মূলত এই ব্যাপারগুলোই প্রশ্ন তুলছে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে রোডসের যোগ্যতা নিয়ে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয় ও বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোতেও কোচের ভূমিকা সামান্যই মনে করে বোর্ড এবং ক্রিকেটারদের অনেকে। জাতীয় দলের এক ক্রিকেটারের মন্তব্য, ‘উনি খুব ভালো মানুষ। কিন্তু ভালো কোচ নন। টিম মিটিংয়ে উনি নিজে একটা ব্রিফ পর্যন্ত দেন না। দলের কেউ তাকে ভয় পায় না, কোচের যেটুকু সম্মান পাওয়া উচিত, সেটুকুও তিনি পান না।’টিম মিটিংয়ে খেলোয়াড়দের গেমপ্ল্যান বুঝিয়ে দেওয়ার কাজটা নিয়মিতই করে আসছেন দলের কম্পিউটার-বিশ্লেষক শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন। কোচ থাকেন নির্বাক¯শ্রোতার ভূমিকায়। অথচ হওয়ার কথা উল্টোটি। সাধারণত প্রতিপক্ষ ও নিজেদের খেলোয়াড়দের তথ্য-পরিসংখ্যান ঘাঁটাঘাঁটি করে কম্পিউটার-বিশ্লেষকেরাই গেমপ্ল্যানের ছক এঁকে দেন। নিজের অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রধান কোচ সেটিকে আরও নিশ্ছিদ্র করে তুলে খেলোয়াড়দের তা বুঝিয়ে দেন। বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে সেই দিন গত হয়েছে অনেক দিন। গেমপ্ল্যান তৈরি থেকে সেটি খেলোয়াড়দের বুঝিয়ে দেওয়ার কাজটাও এখন করছেন সম্প্রতি বিসিবির চাকরিতে স্থায়ী হওয়া ভারতীয় কম্পিউটার-বিশ্লেষক শ্রীনিবাস।২০১৭ সালের শেষ দিকে চুক্তির মাঝপথে বাংলাদেশ কোচের চাকরি ছেড়ে দেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। নতুন কোচ খুঁজতে পিটার কারস্টেনকে প্রায় ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে দায়িত্ব দেয় বিসিবি। সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারের পরামর্শেই গত বছরের জুন মাসে প্রায় ২৩ হাজার ডলার বেতনে ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত বিসিবি রোডসকে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেয়। ইংল্যান্ডের হয়ে ১১টি টেস্ট ও ৯টি ওয়ানডে খেলেছেন সাবেক উইকেটকিপার রোডস। উস্টারশায়ারের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন সাকিব আল হাসানের সঙ্গে। এর বাইরে রোডসের সবচেয়ে বড় খ্যাতি-তিনি একজন ভালো মানুষ। হাথুরুসিংহের সঙ্গে একটার পর একটা তিক্ত অভিজ্ঞতার পর পরবর্তী কোচের মধ্যে এই গুণটিও দেখতে চেয়েছিলেন বিসিবি ও খেলোয়াড়েরা।কিন্তু রোডসের অতিরিক্ত ভালোমানুষিটাই এখন তাঁর বিপক্ষে যাচ্ছে। নিয়োগ দেওয়ার সময় কোচ রোডসের মধ্যে বিসিবি এমন কিছু খুঁজে পেয়েছিল, যা ছিল না হাথুরুসিংহের চরিত্রে। হাথুরুসিংহের অতিরিক্ত কঠোর আচরণ অনেককেই অনেক সময় আঘাত দিয়েছে। নতুন কোচও সে রকম হোক, তা চায়নি বোর্ড। কিন্তু এখন নতুন সমস্যা, ভালো কোচ হিসেবে হাথুরুসিংহের মধ্যে যা ছিল, সেটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না রোডসের মধ্যে। খেলোয়াড়দের নিজ থেকে ডেকে কখনোই কিছু বলেন না তিনি। দেন না কোনো পরিকল্পনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক পরিচালকের মন্তব্য, ‘কোচের আরও শক্ত হওয়া উচিত, যেটা হাথুরুসিংহের মধ্যে ছিল। শুধু ভালো মানুষ দিয়ে তো হবে না, ভালো কোচ হতে হবে। কথা না বললে, একটু কঠোর না হলে, খেলোয়াড়েরাও তো তাকে সমীহ করবে না।’ শুধু তা-ই নয়, হাথুরুসিংহেকে আবার ফিরিয়ে আনার গুঞ্জনও শোনা যায় কান পাতলে। যদিও বিসিবির এক পরিচালক সে সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘নতুন কোচ পেতে হয়তো সমস্যা হবে। তবে যে গেছে তাকে আবার ফিরিয়ে আনার প্রশ্নই ওঠে না।’দল ভালো খেলার পরও কোচকে নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা অস্বাভাবিকই। বিসিবিও তাই ক্রিকেট বিশ্বকাপের মধ্যে বিষয়টিতে হাত দিতে চাচ্ছে না। তা ছাড়া ভালো একজন নতুন কোচ খুঁজে পাওয়াটাও তো সহজ নয়। এ নিয়ে তাই সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ। তবে স্টিভ রোডসের আকাশে উড়তে থাকা সমালোচনার বাষ্প পূর্বাভাস দিচ্ছে, বাংলাদেশ দলে তাঁর সময় হয়তো শেষই হয়ে আসছে। বাংলাদেশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠলেই কেবল একটা ‘লাইফলাইন’ পেতে পারেন তিনি। সেটিও অবশ্য তখনই হবে, যখন দলের সাফল্যে কোচের ভূমিকা খুঁজে পাবেন বোর্ড ও খেলোয়াড়েরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সুমন এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শৈশবে বাতজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন সুমন। পরিণত বয়সে রোগটি তাঁর শরীরে নানা জটিলতা তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডের একটি ভালভ অকেজো হয়ে পড়েছে। হৃদ্‌রোগ ও ফুসফুসের সংক্রমণের চিকিৎসা চলাকালে তাঁর স্ট্রোক হয়। এখন তাঁর পরিস্থিতি সংকটজনক। তাঁর চিকিৎসা সহায়তায় আগামী শুক্রবার নাটকসরণিখ্যাত রাজধানীর বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে নাটক ‘হ্যাপি ডেইজ’ ।ইতিমধ্যে ঢাকার মঞ্চে বেশ প্রশংসিত হয়েছে ফরাসি দূতাবাস প্রযোজিত মণিপুরি থিয়েটার ও হৃৎমঞ্চ পরিবেশিত ‘হ্যাপি ডেজ’ নাটকটি। স্যামুয়েল বেকেট রচিত নাটকটিতে অভিনয় করেছেন জ্যোতি সিনহা আর নির্দেশনায় শুভাশিস সিনহা।নির্দেশক শুভাশিস সিনহা প্রথম আলোকে জানান, শুক্রবার নাটকের প্রথম প্রদর্শনী হবে বিকেল সাড়ে ৫টায়। দ্বিতীয় প্রদর্শনী হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। টিকিটমূল্য রাখা হয়েছে ১০০, ২০০, ৩০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা। এ ছাড়া কেউ যদি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিশেষ সহায়তামূলক দর্শনী দিতে চান, তা সাদরে গ্রহণ করা হবে। টিকিট বিক্রির সব অর্থ সুমনের সহায়তা তহবিলে দেওয়া হবে। টিকিট শোর আগে কাউন্টারে পাওয়া যাবে।‘হ্যাপি ডেজ’ নাটকটি উইনি নামের নিঃসঙ্গ এক নারীকে কেন্দ্র করে লেখা। সে নিজের প্রেমকে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। উইনি উদ্ভট সব কল্পনায় সাজিয়ে রাখে নিজের দিনগুলো। কিন্তু সে বুঝতে পারে, সেই আনন্দের দিন মানুষের জীবনে কখনো আসে না। দুই দিনের এই আয়োজন করেছে মণিপুরি থিয়েটার।নির্দেশক শুভাশিস সিনহা বলেন, ‘নাটকটি প্রথম প্রদর্শনীর পরই বেশ প্রশংসিত হয়। এ ছাড়া এই সময়ে মানুষ একধরনের একাকিত্বের মধ্যে বাস করছে। কল্পনায় তৈরি করে হলেও তারা একটু আনন্দ পেতে চায়। এই নাটকে সে বিষয়টি উঠে এসেছে।‘হ্যাপি ডেজ’ নাটকের অভিজ্ঞতা নিয়ে জ্যোতি সিনহা বলেন, ‘নাটকটি আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এতে অভিনয়ের ধরনটা আলাদা। দর্শকেরা আমাকে গ্রহণ করেছেন। দর্শকেরা গ্রহণ করলেই অভিনয়ের সার্থকতা। কাজটি করে প্রত্যেক দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছি। তাঁরা নিজেদের ভেতরে অনুভব করেছেন এক নিঃসঙ্গ মানুষ বাস করে। আসলে এই সময়ে পৃথিবীতে সব মানুষই একা হয়ে পড়ছে এবং একা মানুষটাকে অনুভব করতে পেরেছে। সেই অনুভূতিটা আমি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। এখানেই সার্থকতা।’
ছয় মাসের বেশি সময় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাটিয়ে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরেছেন কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার তিন নভোচারী। আজ মঙ্গলবার তাঁরা কাজাখস্তানে কাজাখ শহরের কাছে সফলভাবে অবতরণ করেন।নভোচারীদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার অ্যান ম্যাকক্লেইন, রাশিয়ার ওলেগ কনোনেনকো, কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি নভোচারী ডেভিড সেইন্ট জ্যাকস।তাঁদের অবতরণের দৃশ্য নাসা টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সেখানে দেখা যায়, তিনজন হাসিমুখে চেয়ারে বসে আছেন।গত ডিসেম্বরে তাঁরা সেখানে যান। পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে ম্যাকক্লেইন (৪০) এক টুইটে বলেন, স্পেস স্টেশনে শেষ বাতি বন্ধ করার পর আফ্রিকার ওপরে সুন্দর একটি রাত কাটল।প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাটানো ম্যাকক্লেইন দুবার স্পেসওয়াক করেছেন। সেইন্ট-জ্যাকসেরও এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ভ্রমণ ছিল।
ফেনীর সোনাগাজীতে এক স্কুলছাত্রীকে (১৩) অপহরণের পর আটকে রেখে ধর্ষণের দায়ে এক ব্যক্তির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে। চার ব্যক্তির ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানা হয়েছে। মামলা রায়ে পাঁচজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।আজ মঙ্গলবার দুপুরে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এই রায় ঘোষণা করেন। জরিমানার অর্থ আইন অনুযায়ী আদায় করে ভুক্তভোগীকে দেওয়ার জন্য ফেনীর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন আবু বক্কর ছিদ্দিক ওরফে সাগর। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন।১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম, মেজবাহ উদ্দিন, বায়েজিদ ফয়সাল ও রিয়াদ ওরফে রিয়াদ হোসেন। খালাস পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন বিবি কাউছার, আবু নাছের সোহাগ, ইকবাল হোসেন সুমন, আলাউদ্দিন আলো ও মো. মাসুদ। রায় ঘোষণার সময় তাঁরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।সরকারি কৌঁসুলি হাফেজ আহম্মদ জানান, ২০১৩ সালের ২৫ মে সোনাগাজীর এক ছাত্রী (১৩) প্রাইভেট পড়ার জন্য বাড়ি থেকে স্কুলে যাচ্ছিল। এ সময় সাগরের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা আগে থেকেই রাস্তায় ওত পেতে ছিলেন। তাঁরা স্কুলছাত্রীকে টেনে-হিঁচড়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন। অপহরণের তিন দিন পর বান্দরবানের একটি পাহাড়ের পরিত্যক্ত ঘর থেকে ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করে সোনাগাজী থানা-পুলিশ। ওই ঘরে স্কুলছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়।এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন।তদন্ত শেষে সোনাগাজী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমার বড়ুয়া ২০১৩ সালের ১২ জুলাই সাগরসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজ রায় ঘোষণা করলেন আদালত।
বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে কিস্তিতে বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে ওই অর্থ রাসেলকে দিয়ে ১৫ তারিখের মধ্যে আদালতে অর্থ পরিশোধবিষয়ক প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।ক্ষতিপূরণের টাকা কমানো ও কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের আরজি জানিয়ে গ্রিন লাইনের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন। শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের অর্থ হ্রাস করার কোনো সুযোগ নেই।’গ্রিন লাইনের আইনজীবীকে আদালত বলেন, ‘আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করার কোনো ফন্দিফিকির করা হলে আপনাদের সরকার কীভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে, তা আমরা দেখব। কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আপনারা যথেষ্ট বেয়াদবি করেছেন। আপনাদের আচরণ কোনোভাবেই শোভনীয় নয়।’আদালতে গ্রিন লাইনের মালিকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম।ক্রাচে ভর দিয়ে আজ আদালতে উপস্থিত হন রাসেল সরকার।এর আগে গত ২২ মে হাইকোর্ট নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতির ওপর আদেশের জন্য আজকের (২৫ জুন) দিন ধার্য করেছিলেন।রাসেলের পা হারানোর ঘটনায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনজীবী উম্মে কুলসুমের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট এক আদেশে দুই সপ্তাহের মধ্যে ভুক্তভোগীকে (রাসেল) ৫০ লাখ টাকা দিতে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রয়োজন হলে রাসেলের পায়ে অস্ত্রোপচার এবং কাটা পড়া বাঁ পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পা লাগানোর খরচ দিতে ওই পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জীবনে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। দেশের ঈদের আমেজ ও আনন্দ প্রবাসী মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা অনেক মিস করেন। তাই তাদের নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গত রোববার (২৩ জুন) জাপানের আশিকাগা সিটিতে বাংলাদেশ কমিউনিটির (কিতা কানতো) উদ্যোগে আয়োজন করা হয় উৎসবে আনন্দে আশিকাগা ঈদ আয়োজনের।আশিকাগা সিটি ও এর আশপাশের বিভিন্ন শহরের ৬০টি পরিবারের প্রায় ২৫০ জন সদস্য এই ঈদ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। এ ঈদ আয়োজন জাপানের কানতো অঞ্চলের বাঙালিদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। রংবেরঙের নতুন নতুন শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে সবাই ঈদের আমেজে উপস্থিত হন অনুষ্ঠানে।আশিকাগা ঈদ আয়োজনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন সুইয়ামা লুবনা। আরিয়ানের পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের। এরপর ছিল সোনামণিদের নিয়ে প্রথম পর্ব। এ পর্বে ছিল সোনামণিদের ঈদের চিত্রাঙ্কন নিয়ে ‘রং-তুলি পর্ব’। সুন্দর চিত্রাঙ্কনের জন্য পুরস্কার লাভ করে আয়ান, মিমনুন, ফৌজি, আরোহা, নাবা ও সোহান। সবার গলায় মেডেল পড়িয়ে দেন শান্তা, বন্যা, সুমনা, সাথি ও নওশী। সবার হাতে বিশেষ পুরস্কার তুলে দেন কাজী ইনসানুল হক। জাপানের জনপ্রিয় গান পাপুরিকার সঙ্গে নাচ করে জেসিন, তিরানা, রুজাইনা, লাইবা, আরোহা ও নাবা। পাপুরিকা গানটি পরিবেশন করে সুহান। বাচ্চাদের সবাইকে চকলেট বিতরণ করেন চম্পা।দ্বিতীয় পর্বেরমধ্যাহ্নভোজনে ছিল সবার হাতে তৈরি মজাদার খাবারের সমাহার। বাংলাদেশের বাহারী খাবারের মধ্যে স্বাদের কমতি ছিল না। প্রায় সব নারী এক বা একাধিক পদ নিয়ে এসেছিলেন।তৃতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ পর্ব শুরু হয় রেইন করিমের গান দিয়ে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আরও গান পরিবেশন করে নাঈম, বন্যা, নওশী, মোস্তফা ও সুমনা-সোহাগ জুটি। ঈদের রেসিপি নিয়ে হাসির নাটকে অভিনয় করেন বন্যা, সুমনা ও সোহাগ। তিনজনের সাবলীল অভিনয় দর্শকের মন জয় করে নেয়। চমৎকার কবিতা ‘সেই গল্পটা’ আবৃতি করে ইরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল নৃত্যশিল্পী পূজার ও নাবার নাচ। এই দুজনের নাচ দর্শকের মন জয় করে নেয়।আশিকাগা ঈদ আয়োজনে বাংলাদেশ কমিউনিটির (কিতা কানতো) পক্ষ থেকে শিশুশিল্পী আজরিন কারিমা নাবাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাকে ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথি কাজী ইনসানুল হক ও দিদার কচি। এ সময় উপস্থিত দর্শকেরা করতালির মাধ্যমে নাবাকে অভিনন্দন জানান। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন কুমার নন্দী, রোমন, রশিদ, মামুন, সাদেক প্রমুখ।বিকেলের নাশতায় ছিল হাতের তৈরি কাঁচাগোল্লা, কালোজাম, সেমাই, পায়েস, কেক, পুডিং ও শিঙারা। আরও ছিল অসাধারণ মজাদার লাচ্ছি। খাবার পরিবেশন ও অন্যান্য কাজে সাহায্য করেন আলম, মিন্টু, মিলন, সাজ্জাদ, ইমন, মিজান, ফরহাদ, শাহাদাৎ, তাহের, বাবুল ও রাজা।এরপর শুরু হয় আশিকাগা ঈদ আয়োজন সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব জাপানের একমাত্র বাংলা ব্যান্ড দল ঝিঁঝি পোকার কনসার্ট। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যান্ড দল ঝিঁঝি পোকার পথচলা শুরু হয়। ঝিঁঝি পোকার আড়াই ঘণ্টাব্যাপী মনোমুগ্ধকর গান উপস্থিত দর্শকেরা মন ভরে উপভোগ করেন। জাপানে বাংলা ব্যান্ড দলের প্রথম কনসার্টের কারণে দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ছিল ঝিঁঝি পোকার এই কনসার্ট নিয়ে। সব সদস্যর পারফরম্যান্স ছিল এক কথা অসাধারণ। কনসার্ট শেষ হয় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে। এই সময় উপস্থিত দর্শকেরা দাঁড়িয়ে সম্মান জানান জাতীয় সংগীতকে।কনসার্টে আগে বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া দিয়ে ঝিঁঝি পোকাকে বরণ করে নেন লুবনা, বন্যা, সুমনা ও চম্পা।প্রথম কনসার্ট উপলক্ষে ঝিঁঝি পোকাকে ক্রেস্ট তুলে দেন নোমান, মোস্তফা, সাজ্জাদ, লুৎফুর ও সোহাগ। বিশেষ দুটি সুভেনিয়র ঝিঁঝি পোকাকে তুলে দেন কাজী ইনসানুল হক ও সুইয়ামা লুবনা।সব শেষে ছিল র‌্যাফল ড্র। পাঁচজন ছোট সোনামণি পাঁচটি নাম তোলে বক্স থেকে। র‌্যাফল ড্রর পাঁচটি পুরস্কার জিতে নেন ঊর্মি, রিনি, শওকত, রায়েদ ও লুবনা।সুন্দর একটি আয়োজনের জন্য অতিথিদের পক্ষ থেকে সুইয়ামা লুবনাকে ফুলের তোড়া উপহার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের ছবির তোলার দায়িত্ব পালন করেন মনসুর আহমেদ মিলন ও রাহাত বশর। পরিচালনা করেন সুইয়ামা লুবনা, নোমান সৈয়দ ও গোলাম মোস্তফা।
অননুমোদিত ড্রোন উড্ডয়নের কারণে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে এক সপ্তাহে মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দেশটির সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি (সিএএসি) জানিয়েছে, ড্রোন এবং খারাপ আবহাওয়াজনিত সমস্যায় ১৮টি ফ্লাইট দেরিতে ছাড়া এবং সাতটি ফ্লাইট বদল করা হয়।গত সপ্তাহে ড্রোনের উপস্থিতি টের পেয়ে চাঙ্গিতে একটি রানওয়ের ব্যবহার স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে ডজনখানেক ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হয়। শুধু চাঙ্গি নয়, বিশ্বব্যাপী ড্রোনের অবাধ ব্যবহারে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিমানবন্দরগুলো।আজ মঙ্গলবার সিএএসি এক বিবৃতিতে বলেছে, খারাপ আবহাওয়া ও অননুমোদিত ড্রোনের কারণে ১৫টি বিমানের গমন ও ৩টি বিমানের আগমনে বিলম্ব ঘটে। ৭টি ফ্লাইট বদল করা হয়। জনসাধারণকে সদস্যদের মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে কর্তৃপক্ষ মানবহীন ড্রোনের অপারেশনের ত্রুটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। এ ধরনের ত্রুটি বিমান চালনার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বা অন্যের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিপন্ন করতে পারে।এ ব্যাপারে তদন্ত এখনো চলমান বলে জানায় সংস্থাটি। ড্রোন–সংক্রান্ত নিয়ম অমান্য করলে ২০ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার জরিমানা অথবা ১২ মাসের কারাদণ্ড হতে পারে।চাঙ্গি বিমানবন্দর বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পরিবহনকেন্দ্র। একই সপ্তাহের মধ্যে দুইবার ড্রোনের আনাগোনা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে কর্তৃপক্ষের কপালে। এর আগে সিএএসি গত বুধবার ড্রোনের কারণে ৩৮টি ফ্লাইটের চলাচল ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়েছিল।ড্রোনের কারণে গত ডিসেম্বরে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার যাত্রী নিয়ে বিপাকে পড়ে গেটউইক বিমানবন্দর। যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দরটির রানওয়ে তিন দিনে প্রায় ৩৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এর ফলে হাজারখানেক ফ্লাইট বাতিল বা দেরিতে ছাড়তে হয়। ড্রোনবিরোধী প্রযুক্তি ব্যবহারে মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করছে গেটউইক ও হিথ্রো বিমানবন্দর।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে রডের ওপর যে হারে ভ্যাট বৃদ্ধি ও অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে, সেটিকে অবাস্তব হিসেবে উল্লেখ করেছে ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীদের তিন সংগঠন। তারা বলছে, টনপ্রতি রডের দাম ১২ হাজার টাকা বেড়ে যেতে পারে। সেটি হলে উন্নয়নের গতি শ্লথ ও ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে।বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ), বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে।সংবাদ সম্মেলনে তিন সংগঠনের নেতারা বলেন, রডের কাঁচামাল, উৎপাদন ও বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট বৃদ্ধি ও তিন পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর আরোপ করায় রডের দাম টনপ্রতি ১২ হাজার ৩০০ টাকা বৃদ্ধি পাবে। তাতে খুচরা পর্যায়ে রডের দাম টনপ্রতি ৭৫ হাজার টাকা হতে পারে। সেটি হলে রডের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।অবশ্য গতকাল সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে বিলেট বিক্রয়ে অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশ থেকে হ্রাস করে দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। সেটি হিসাবে নিলে টনপ্রতি রডে বৃদ্ধি পাবে ১০ হাজার ৯২৫ টাকা বলে জানান বিএসএমএর চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন।মানোয়ার হোসেন বলেন, স্টিল পণ্যের দাম সহনীয় থাকায় দেশের অবকাঠামো ও গ্রাম পর্যায়ে আবাসন নির্মাণে গত ১০ বছরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮ সালে দেশে স্টিলের ব্যবহার ছিল মাত্র ১৬ লাখ টন। বর্তমানে সেটি বেড়ে ৫৫ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া রডের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর বিপক্ষে। তবে এনবিআরের নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির পেছনে নানা অজুহাত দাঁড় করাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বিষয়টি বুঝতে পারবেন।রডের কাঁচামাল, উৎপাদন ও বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট বৃদ্ধি এবং তিন পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর আরোপের বিষয়টি ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। অবশ্য তার আগেই বিষয়গুলো সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘৩০ জুন পর্যন্ত আমরা রডের বাজার শক্তভাবে তদারকি করছি, যাতে বাজার কোনোভাবেই অস্থিতিশীল না হয়। এই সময়ে কেউ (ব্যবসায়ী) রডের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তাঁকে আমরা উৎপাদকেরা পণ্য দেওয়া বন্ধ করে দেব।’আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ বিক্রিতে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে টনপ্রতি স্ক্র্যাপে ভ্যাট ৩০০ টাকা। বিলেট বিক্রিতে টনপ্রতি ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা ভ্যাট নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি টন রডে ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা ভ্যাট এবং খুচরা পর্যায়ে রড বিক্রিতে প্রতি টনে ২০০ টাকার পরিবর্তে ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাজেটে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ, বিলেট ও রড বিক্রিতে টনপ্রতি ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা স্ক্র্যাপ বিক্রিতে প্রতি টনে ৪৫০ টাকা, বিলেটে ৭৫০ টাকা, রডের উৎপাদন পর্যায়ে ৭৫০ টাকা ও বিক্রয় পর্যায়ে ৩০০ টাকা ভ্যাট আরোপ করার দাবি জানান।এ ছাড়া স্ক্র্যাপ ও বিলেট বিক্রিতে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করে কেবল রডের ওপর টনপ্রতি ৩০০ টাকা অগ্রিম আয়কর নির্ধারণের দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলুর রহমান, রি-রোলিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর হোসেন, সহসভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, বিএসএমএর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাসাদুল আলম, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শহিদউল্লাহ, এমএস রড মার্চেন্ড অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন প্রমুখ।
বগুড়ার শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিশুসহ দুজন নিহত হয়েছেন। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে উপজেলার ধনকুন্ডি উত্তরপাড়া এলাকায় আজ মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসটি গাইবান্ধায় যাচ্ছিল। বিপরীতমুখী পাথরবোঝাই ট্রাকটি যাচ্ছিল সিরাজগঞ্জের দিকে। বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ট্রাকটির চালক ট্রাকের ভেতরে আটকা পড়েন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।বাসের চালকের পেছনের আসনে ৯ বছর বয়সী সন্তান রাব্বীকে নিয়ে বসা ছিলেন পিচতারা বেগম। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই শিশুটির মৃত্যু হয়। শিশুটির মা আহত হন। তাদের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের জামিরবাড়ি গ্রামে। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় আহত মেহেদী হাসান (২৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তাঁর বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রামের নিমাইদিঘী দক্ষিণপাড়া গ্রামে।দুর্ঘটনায় আহত ট্রাকচালক আবদুল জলিলসহ (৫৫) ছয়জনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।শেরপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা রতন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ট্রাকের ভেতরে আটকে থাকা ট্রাকচালককে উদ্ধার করা হয়েছে।হাইওয়ে পুলিশের কুন্দারহাট ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) কাজল নন্দী দুর্ঘটনায় শিশুসহ দুজন নিহত হওয়ার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর বাসের চালক ও তাঁর সহকারী পালিয়ে গেছেন। আর বাস ও ট্রাককে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
কাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে কাফ মাসলে চোট পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। শঙ্কা ছিল তাঁর চোটটি গুরুতর কিনা! তবে আজ জানা গেছে খুব গুরুতর নয় তাঁর চোট।আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে চোট পেয়ে খুঁড়িয়ে রান নিচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ব্যাপারটা ভাবিয়ে তুলেছিল সবাইকে। চোটের অস্বস্তির পরেও তাঁর ২৭ রান কিন্তু পরিস্থিতি বিচারে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ফিল্ডিংয়ের সময় তাঁর মাঠে না থাকা দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল তবে কী গুরুতর চোটে পড়লেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই তারকা? তবে ইংল্যান্ড থেকে যে খবর এসেছে, তাতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারেন সবাই। খুব বড় চোটে পড়েননি মাহমুদউল্লাহ।বাংলাদেশের ফিজিও থিলান চন্দ্রমোহন জানিয়েছেন, কাফ মাসলে চোট পেয়েছ মাহমুদউল্লাহ। চোটটি খুব গুরুতর কিছু নয়। ‘গ্রেড ওয়ান’ ধরনের। আগামী কয়েক দিন বিশেষ পর্যবেক্ষণে থাকবে সে। বাংলাদেশের পরের ম্যাচে তাঁর খেলা নির্ভর করছে চোট সেরে ওঠার ওপর।’বাংলাদেশের মিডল অর্ডার মাহমুদউল্লাহর ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৩ বলে ৪৬ করেছিলেন তিনি। মাঝে রান না পেলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫০ বলে ৬৯ করে নিজেকে দারুণভাবে ফিরিয়েছিলেন ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম দুই সেঞ্চুরির মালিক এই ব্যাটসম্যান।
শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতায় এ কথা জানানোর পর এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। কী পদ্ধতিতে, শিক্ষার কোন পর্যায়ে বিদেশি শিক্ষক আনা হবে, সে ব্যাপারেও রয়েছে ধোঁয়াশা।বাংলাদেশের শিক্ষার মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থায় মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার মধ্যেই নিত্যনতুন পরীক্ষণ, বদলে যাওয়া নীতি এবং শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও কোচিং–বাণিজ্য শিক্ষার মানকে নাজুক করেছে। অর্থমন্ত্রী বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার কথা বললেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এটা শুধুই একটি উপমা। বিদেশ থেকে শিক্ষক এনে শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে দেশীয় শিক্ষকদের কাজের সুযোগ তাঁরা নষ্ট করতে চান না।বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও এই উদ্যোগের চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্বেগ জানান বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করেন, বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই, নীতিনির্ধারণ ও কর্মপদ্ধতি চূড়ান্ত করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে না পারলে সুফল পুরোপুরি আসবে না। তাঁরা মনে করেন, বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার আগে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, শিক্ষা–বাণিজ্য এবং ক্রমে দরিদ্রদের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়া শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার বিষয়টি তুলে আনেন। বাজেট বক্তৃতায় ১৮০০ শতকের (শাসন আমল ১৮৬৮ থেকে ১৯১২) জাপানের সম্রাট মেইজির উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, সে সময় পাশ্চাত্যের শিক্ষক এনে জাপানের শিক্ষাব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করা হয়, যা পরে জাপানকে জ্ঞান–বিজ্ঞানে একটি সফল রাজ্যে পরিণত করে।বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আঠারো শতকের শেষার্ধে মেইজি পুনর্গঠন শুরুর আগে জাপান ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানে একটি পশ্চাৎপদ দেশ। সম্রাট মেইজি জাপানিজদের, এমনকি রাজপুত্রকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোয় পাঠিয়ে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও প্রযুক্তিজ্ঞান আহরণ করার তাগিদ দেন। সম্রাট মেইজি বুঝতে পারলেন, জাপানে ছাত্রের অভাব নেই। অভাব আছে উপযুক্ত শিক্ষকের। তাই তিনি পাশ্চাত্য দেশসমূহ থেকে বিভিন্ন প্রযুক্তিনির্ভর কয়েক হাজার শিক্ষককে জাপান নিয়ে এলেন জাপানের শিক্ষাব্যবস্থাকে সময় উপযোগী করে তোলার জন্য। এরূপ প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নীতির কারণে জাপান শুধু পশ্চিমাদের সমকক্ষ হয়েই থাকেনি, বরং সারা বিশ্বে সবার আগে শতভাগ শিক্ষিতের দেশ হওয়ার গৌরব লাভ করেছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্দেশ্যে শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ, গুণগত উৎকর্ষ সাধন ও শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। আমরা মনে করি, সম্রাট মেইজিকে অনুসরণ করার সময় আমাদেরও এসেছে।’শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামও বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন। তবে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার অর্থের জোগান কোথা থেকে আসবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, যার বড় অংশ পরিচালনায় ব্যয় হবে। উন্নয়নে যে এক-তৃতীয়াংশ রাখা হয়েছে, তা যদি বিদেশি শিক্ষক আনার ব্যয় আসে, তবে সেটা চলমান উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে।’ সব স্তরে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের অভিযোগ করে সৈয়দ মনজুরুল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। প্রায় প্রতিটি নিয়োগপ্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকে। যাঁরা নিয়োগ পান, তাঁদের দায়িত্ব পালনের চেয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সন্তুষ্ট রাখার প্রচেষ্টা থাকে। এ ছাড়া শিক্ষা–বাণিজ্য, কোচিং শিক্ষার দাপট ও প্রশ্নপত্র ফাঁস শিক্ষাব্যবস্থাকে শুধু মানহীন করেনি, ক্রমেই দরিদ্রদের নাগালের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।’ এসব অরাজকতা বন্ধ না করে শুধু আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষক আনা বা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার বিতর্কে বিষয়টিকে ‘গণমাধ্যমের অপব্যাখ্যা’ বলে উল্লেখ করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, বাজেট বক্তৃতায় জাপানের সম্রাট মেইজির উদাহরণ টেনে যা বলা হয়েছে, তা শুধুই একটি উপমা। এর অর্থ কখনো এমন নয় যে বাস্তবেই অন্য কোনো দেশ থেকে শিক্ষক আনা হবে। শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিছুতেই অন্য কোনো দেশের শিক্ষক দিয়ে আমাদের দেশের শিক্ষকদের কাজের সুযোগ নষ্ট করতে চাই না। বরং আমাদের চাওয়া, শিক্ষকেরা যেন পাঠদানে আরও দক্ষ ও কার্যকর হয়ে ওঠেন। এ লক্ষ্যে আমরা শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণের পরিমাণ ও ব্যাপ্তি বাড়াতে চাই।’মেইজির উদাহরণ দেওয়া হলেও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে ঠিক মেইজি যেভাবে বিদেশ থেকে শিক্ষক এনেছেন, তা হুবহু অনুসরণের কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন মহিবুল হাসান চৌধুরী । তিনি বলেন, ‘মেইজির যুগে তথ্যপ্রযুক্তি তেমন উন্নত ছিল না বলে বিদেশ থেকে শিক্ষক এনে শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আমরা অনলাইনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে বা প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেই শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করতে পারব বলে বিশ্বাস করছি।’দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের শিক্ষার মান নিয়ে কাজ করা গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, শিক্ষার উন্নয়নে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার এই প্রস্তাব প্রমাণ করে, সরকার শিক্ষার উন্নয়নে আন্তরিক এবং তারা অবস্থার উত্তরণের চেষ্টা করছে। শিক্ষাব্যবস্থার ঠিক কোন স্তরে বিদেশি শিক্ষক আনার পরিকল্পনা করছেন, এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করে না বলায় এই উদ্যোগ শিক্ষা ব্যবস্থাকে কতখানি পরিবর্তন করতে পারবে, সে বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়ন একটি দীর্ঘদিনের চাওয়া। সরকারও এই বিষয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ করছে। সে পরিক্রমায় ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার একটি শিক্ষানীতি প্রস্তাব করে, যা নয় বছরেও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। বিদেশি শিক্ষক আনার এই প্রস্তাব কত দিনে বাস্তবায়ন করা হয় এবং তার সুফল কত দিনে বাংলাদেশ পেতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন রাখেন তিনি।সরাসরি বিদেশি শিক্ষক নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেন প্রকৌশলী ও শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি বলেন, যদি বিদেশি শিক্ষক এসে একটা নির্দিষ্ট সময় থেকে শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে পারেন, তবে সেটা অবশ্যই একটা ভালো উদ্যোগ। তবে প্রস্তাবটি ভাবা হচ্ছে একটা আদর্শ অবস্থা থেকে, যা কার্যক্ষেত্রে নাও থাকতে পারে। বিদেশি শিক্ষক নিয়োগে কী ধরনের সাবধানতা সরকারের নেওয়া উচিত, এ বিষয়ে মুহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, বিশেষজ্ঞ নিয়োগ বাংলাদেশের নতুন কিছু নয়। শিক্ষায় যখন এ রকম বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হবে, তখন তাদের মান যাচাইয়ের বিষয়ে জোর দেওয়া আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে মান নিশ্চিত না করতে পারলে পুরো প্রচেষ্টা বিফলে যাবে বলে মনে করেন তিনি।শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা উন্নয়নে বিদেশ থেকে শিক্ষক আসার বিষয়টি নতুন নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রায়ই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষক খণ্ডকালীন ভিত্তিতে আসেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন পেশাদার প্রশিক্ষণে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনা হয়। আমরা বরং চাই, এ দেশে আরও বেশি “মাস্টার ট্রেইনার” তৈরি হোক। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নে স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পের (এসটিইপ) আওতায় কারিগরি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা সরকার বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যেই প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, আরও দেওয়া হবে।’নতুন অর্থবছরে শতকরার হিসাবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায়। গত বছরের বরাদ্দের প্রায় ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়িয়ে এ বছর এখাতে বাজেট বরাদ্দ ৭ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।২০১৯-২০ অর্থবছরে শিক্ষার একটি মন্ত্রণালয় ও দুটি বিভাগে মোট বরাদ্দ ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। আপাতদৃষ্টিতে এই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে মনে হলেও এই বরাদ্দ মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরেই এর মান ছিল বাজেটের মোট বরাদ্দের ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।শিক্ষায় বরাদ্দের প্রায় ৬৬ শতাংশ অর্থ রাখা হয়েছে পরিচালনার কাজে এবং মাত্র ৩৪ শতাংশ ব্যয় করা হবে শিক্ষার উন্নয়নে। এই উন্নয়ন বরাদ্দ কীভাবে ব্যয় হবে, তার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বাজেট বক্তৃতায় ছিল না। তবে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার উদাহরণ থেকে ধারণা করা হয়, ব্যয়ের বড় অংশ যাবে শিক্ষকদের উন্নয়ন করে শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে।আর্থিক বিষয়টিকে সুরক্ষিত রাখতে পারলে বিদেশ থেকে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষক এনে শিক্ষার মান উন্নয়নের বিষয়টির পক্ষেই মত দেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার উন্নয়নে সরাসরি বিদেশের ওপর নির্ভর না হয়ে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কর্মরত বাংলাদেশি শিক্ষকদের ব্যবহার করা যেতে পারে প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যাঁরা বিশ্বের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যান, তাঁরা প্রায় সবাই ভালো করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান নিয়মনীতি অনুযায়ী তাঁরা দেশে এসে কাজ করার সুযোগ পান না। এসব প্রবাসী শিক্ষককে শিক্ষা ও গবেষণার কাজে সংযুক্ত করা যেতে পারে।’
কাতারভিত্তিক বাংলাদেশি সংগঠন বাংলাদেশ ফোরাম কাতার দেশীয় পণ্য ও পরিষেবা নিয়ে কাতারে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করতে যাচ্ছে। কাতারে বাংলাদেশিদের ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফোরাম কাতার এই প্রদর্শনীর কথা জানায়।কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যৌথভাবে দোহা এক্সিবিশন অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে আগামী ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনীটি হবে। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। প্রদর্শনীতে ১০০টি স্টল বসবে।বাংলাদেশ ফোরাম কাতারের সভাপতি ইফতেখার আহমেদ বলেন, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাতারের বাজার ধরার জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।সংগঠনটির সহসভাপতি ইউসুফ সাঈদ বলেন, এই প্রদর্শনী বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে পণ্য ও পরিষেবা প্রদর্শনের সুযোগ করে দেবে। কাতারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে সহায়তা করবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কাতারে প্রায় ৪ লাখ অনাবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। তবে সেখানে বাংলাদেশের পণ্যের পরিমাণ খুব কম। বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সেখানে পণ্য রপ্তানি করে। পাশের দেশ ভারতের নানা পণ্যও কাতারের বাজারে রয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্বের ধনী দেশগুলোর একটি কাতার। সেখানে ব্যবসার অনেক সুযোগ রয়েছে। কাতার কিছু প্রতিবেশী দেশ দ্বারা অবরোধের শিকার। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কাতার এখন পণ্য আমদানি করছে। বাংলাদেশি পণ্যও সেখানে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দ্বারা গঠিত বাংলাদেশ ফোরাম কাতার ২০১৮ সালে চালু হয়। কাতার আর্থিক কেন্দ্র থেকে নিবন্ধিত সংগঠন এটি।সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফোরাম কাতারের সদস্য মনিরুল হুদা, ইসরাত আরা ইউনুস, কাতারি ব্যবসায়ী জাফর আলী আল-সরাফ।
ব্যান্ড তারকা জেমস যাচ্ছেন ইউরোপ। ডেনমার্ক ও সুইডেনে ‘জেমস নাইট’ নামে দুটো কনসার্টে অংশ নেবেন তিনি। আজ মঙ্গলবার সকালে সুইডেনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা জেমসের। সেখান থেকে ডেনমার্ক যাবেন তিনি।গতকাল সুইডেন ও ডেনমার্কের অনুষ্ঠান দুটির ব্যাপারে প্রথম আলোকে জানান জেমসের ব্যবস্থাপক রবিন ঠাকুর। তিনি জানান, ২৮ জুন সুইডেনের স্টকহোমে গাইবেন জেমস। এরপর ২৯ জুন গাইবেন ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে। জেমস নাইটের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ডেনমার্ক এবং ফেস মিডিয়া ইভেন্ট।আয়োজন নিয়ে কথা হয় জেমসের সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘সুইডেন ও ডেনমার্কের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামনে গাইব। বরাবরই এমন আয়োজনে গাইতে ভালো লাগে। এবারও তেমন প্রত্যাশা নিয়ে যাচ্ছি।’ জেমস জানান, সাত দিনের এই সংগীতসফর শেষে আগামী ১ জুলাই ঢাকায় ফিরবেন তিনি।আপাতত এভাবেই দেশ ও দেশের বাইরের কনসার্টগুলো নিয়ে ব্যস্ত নগরবাউল জেমস। ইউরোপ থেকে ফিরে এসে দেশে কনসার্ট করবেন তিনি। তবে এর বাইরের কোনো কাজের ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি তিনি।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে বাসের ছাদের ওপর লাশ ফেলে গেছেন সন্ত্রাসীরা। পুলিশ গতকাল সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে বাস মালিক সমিতির ওই সদস্যের লাশ চরফ্যাশন বাসস্ট্যান্ডের ‘হাজী কে আলী’ বাসের ওপর থেকে উদ্ধার করেছে।চরফ্যাশন থানার পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তির নাম সোহাগ ভূঁইয়া (৩৫)। তিনি উপজেলার আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল্লাহপুর গ্রামের মরহুম আ. বারেক ভূঁইয়ার ছেলে। সোহাগ ভূঁইয়া ভোলা বাস মালিক সমিতির সদস্য। তবে তিনি নিজে কোনো বাসের মালিক ছিলেন না। রাহাত এন্টারপ্রাইজ বাসের মালিক মো. রাহাতের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করতেন তিনি।চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরও বলেন, খবর পেয়ে তাঁরা লাশটি বাসস্ট্যান্ড থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। লাশের নাক, মুখ ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।ওসি আরও জানান, নিহত ব্যক্তির সঙ্গীরা পলাতক। তাদের খুঁজে পেলে হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটিত হতে পারে।ভোলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, সোহাগ ভূঁইয়া গাড়ির মালিক নন। তিনি বাস স্টাফ-সুপার ভাইজার। তিনি ও তাঁর শ্যালক জিয়াউর রহমান বাসমালিক রাহাতের কাছ থেকে বাসটি ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করতেন। কী কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনো অনিশ্চিত।
সহজভাবে কোনো কিছুর চূড়ান্ত ও সফল জাগরণকে বুমিং বলে। বিজ্ঞানের জগতে গবেষকেরা বুমিং-লাইক আবিষ্কারের জন্য ছোটেন। ব্যবসার জগতে বড় বড় প্রতিষ্ঠান বুমিং আইডিয়ার জন্য দৌড়ায়। খেলার জগতে সবাই জেতার জন্য দৌড়ায়। শুধু দৌড় আর দৌড়।বুমিং নিয়ে একটি উদাহরণ দিয়ে আজকের লেখা। টেকনোলজির ক্ষেত্রে গুগল-ম্যাপও এ রকম একটি বুমিং আবিষ্কার। ১৯৯০-এর দশকে Garmin-এর জিপিএস সিস্টেম অনেক ভালো ছিল। কিন্তু সম্ভবত ২০০৭-০৮ সালে গুগল-ম্যাপ আসার পরে নেভিগেশনের সুফল আমরা চলাফেরায় প্রতিনিয়ত পাচ্ছি। ধরুন আগামীকাল আপনার একটি Invitation আছে, গুগল-ম্যাপও আছে। কোনো চিন্তা নাই। দরজা খোলা থাকলে Google Navigation আপনাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে ছাড়বে।তবে এই সফল জাগরণের নেপথ্যে থাকে অনেক চেষ্টা, অনেক শ্রম ও অনেক সৃষ্টিশীল অবদান। চূড়ান্ত সফলতায় হয় তার প্রমাণ। খেলাধুলার জগতে প্রতিষ্ঠান ও জনগণ দুইই অবকাঠামোর অংশ। ক্রিকেটে ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার জাগরণ যেমন ছিল খেলোয়াড়সহ ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা, তেমনি ছিল শ্রীলঙ্কানদের হৃদয় নিংড়ানো সমর্থন। সামগ্রিক অনুপ্রেরণা আর অবকাঠামো কতভাবে সামনে এগিয়ে নিতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ তখনকার শ্রীলঙ্কা।পরবর্তীতে ছোট দ্বীপদেশটি ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালিস্ট ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য ২০০৭ সালে গিলক্রিস্টের অসামান্য অবদান আর বৃষ্টি এবং ২০১১ সালে ধোনির অসাধারণ ক্রিকেট ও নেতৃত্বের কাছে তাদের হার মানতে হয়। শ্রীলঙ্কার এই ক্রিকেট জাগরণের অন্যতম কারণ ছিল একসঙ্গে কয়েকজন প্লেয়ারের উত্থান। সময়োপযোগী খেলার স্টাইল অনুসরণ করে তার ওপর বিশ্বাস রাখা এবং জনগণের চাওয়া।বর্তমান বাংলাদেশ টিমে তামিম-সাকিব-সৌম্য-মুশফিক-রিয়াদ-মাশরাফিসহ অন্যদের সুস্থিত সমন্বয়ে আমাদের ক্রিকেট জাগরণ আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হোক।স্পোর্টস বিশেষজ্ঞদের মতে, জনগণের চাওয়ার সঙ্গে অবকাঠামোর সুন্দর সম্পর্ক আছে। আবার এই চাওয়া থেকে সার্বিকভাবে খেলোয়াড়দের ভালো খেলার প্রেরণা আসে। দর্শকদের চাওয়াও কেন্দ্রীভূত না। বিশেষ খেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে ক্লাব থেকে ক্লাবে, দেশ থেকে দেশে তা বিস্তারিত হয়। যেমন অবকাঠামো যদি ভালো থাকে, কাছাকাছি ক্লাব বা দেশের ভালো দল হয়ে ওঠা। ক্রিকেটে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। আবার ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, জাপান-কোরিয়া, জার্মানি-ইতালি, স্পেন-পর্তুগাল, ফ্রান্স-বেলজিয়াম। ক্লাব খেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। যেমন আমাদের আবাহনী-মোহামেডান।খেলার জগতে কোনো বিশেষ টিমের জাগরণ যেমন ভালো, তেমন এর সঠিক পরিচালনাও দরকার। ১৯৯৬ সালের শ্রীলঙ্কার পিঞ্চ হিটিং ১৯৯৯ সালে বুমেরাং ছিল, কাজ করেনি। বর্তমানে অনেক টিমই প্রথমে উইকেট ধরে রেখে পরবর্তীতে বিগ হিটিংয়ে নজর দেয়। সেই সঙ্গে সময়োপযোগী কিছু সিদ্ধান্তও অনেক ক্ষেত্রে মানসিকভাবে একটি টিমকে অনেক সফল করে তোলে। যেমন সম্প্রতি আমাদের টিমে লিটন দাস ও মোসাদ্দেকের অন্তর্ভুক্তি।পৃথিবীতে সম্ভবত বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে প্রায় শতভাগ দর্শকই একটি বিশেষ খেলার ভক্ত। আর সেই খেলাটি হচ্ছে ক্রিকেট। ক্রিকেটের এই জাগরণ অব্যাহত থাকুক। আমাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আছে। এখন দরকার সুন্দর অবকাঠামো, সঠিক পরিচর্যা ও সার্বিক দিকনির্দেশনা।জাপানে রাত জেগে আমাদের এই ক্রিকেট জাগরণ উপভোগের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি গানের প্রথম অংশ দিয়েই শেষ করি।‘জাগরণে যায় বিভাবরী, আঁখি হতে ঘুম নিল হরি, কে নিল হরি?’এই মুহূর্তে শুধুই ক্রিকেট।
সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন আটককেন্দ্রে পশ্চিম ইউরোপের কিছু নাগরিক আইএসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বন্দী আছেন। তাঁদের অনেকের সঙ্গে তাঁদের স্ত্রী ও শিশুসন্তানেরাও আছে। সম্প্রতি ইরাকের আদালত আইএসে জড়িত ৯ জন ফরাসি নাগরিককে হত্যা ও নির্যাতন করার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এর সুবাদে সিরিয়া ও ইরাকে আইএস সদস্য সন্দেহে আটক ইউরোপীয় নাগরিকদের পশ্চিমা দেশগুলো ফেরত নেবে কি না, সে প্রশ্নটি আবার দেখা দিয়েছে।পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো যে আগের মতোই তাঁদের নাগরিকদের ফেরত না নেওয়ার বিষয়ে অটল আছে, সে বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হচ্ছে।ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডসসহ পশ্চিমা দেশগুলো বলে আসছে, আইএসে জড়িত সন্দেহে বিদেশের মাটিতে তাঁদের যেসব নাগরিক বন্দী হয়েছেন, নিরাপত্তাঝুঁকি ও আনুষঙ্গিক কিছু চ্যালেঞ্জের কারণে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা অথবা আইনি সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে কসোভো, তুরস্ক, রাশিয়া, বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো দেখিয়ে দিয়েছে, নিজেদের নাগরিকদের দেশে ফেরানোর আন্তরিক ইচ্ছা থাকলে তা করার একটা না একটা পন্থা বের করা সম্ভব।মধ্য এশিয়ার তিন দেশ কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান এ পর্যন্ত তাদের ৭৫৬ জন নাগরিককে (তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু) দেশে ফিরিয়ে এনেছে। কিরগিজস্তানও তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।অন্যদিকে এসব দেশের তুলনায় বিপুল সম্পদ ও সামর্থ্য থাকার পরও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো এ বিষয়ে অনীহা দেখাচ্ছে। তারা শুধু শিশুদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কিছুটা নিমরাজি ভাব দেখাচ্ছে। নরওয়ে এ মাসের শুরুতে উত্তর–পূর্ব সিরিয়া থেকে পাঁচজন এতিম শিশুকে ফিরিয়ে এনেছে। তবে এখনো সেখানে ৩৫ জন শিশু রয়ে গেছে। ফ্রান্স গত মার্চ পর্যন্ত উত্তর–পূর্ব সিরিয়া থেকে ১৭ জন এবং ইরাক থেকে একজন শিশুকে ফিরিয়ে এনেছে। তাদেরও বেশির ভাগের বাবা–মা মারা গেছেন। সিরিয়া সরকার বলছে, চার শর বেশি ফরাসি নাগরিক তাদের কারাগারে বন্দী আছে, যাদের অর্ধেকই শিশু এবং এই নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে ফ্রান্স সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। সিরিয়া থেকে এ পর্যন্ত সুইডেন সাতজন এবং নেদারল্যান্ডস দুজন শিশুকে নিজ দেশে নিয়েছে। জার্মানি ইরাক থেকে ১০ জনের কমসংখ্যক লোককে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে।এটি ঠিক যে আইএসের মতো একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হওয়া নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। চাইলেই তাদের নিয়ে আসা সম্ভব নয়। ইরাক সরকার আইএসে জড়িত সন্দেহে আটক শত শত বিদেশির বিচার করছে। এসব লোকের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। ইরাক কর্তৃপক্ষ শিশুর বিরুদ্ধে কোনো রকম অভিযোগ না এনে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চায়।উত্তর–পূর্ব সিরিয়া এখন কুর্দি নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিহীন সরকারের দখলে। সেখানে অ-ইরাকি ১৩ হাজার বিদেশি তাদের হাতে বন্দী রয়েছে। এদের মধ্যে দুই হাজার পুরুষ এবং ১১ হাজার নারী ও শিশু। তাদের সবাইকে কোনো রকম বিচার না করেই কুর্দিরা নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চায়।অনেক বন্দীর, বিশেষ করে শিশুদের জন্মসনদ বা তার জাতীয়তা নিশ্চিত করার মতো কোনো কাগজপত্র নেই। অনেক শিশু আছে, যাদের বাবা–মা ভিন্ন দেশের। এ অবস্থায় তারা কোন দেশের নাগরিক, তা নির্ধারণ করা নিয়েও জটিলতা রয়ে গেছে।এসব বন্দীকে নিজ নিজ দেশে পাঠানোর পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো, যে দেশে তাদের প্রত্যর্পণ করা হবে সেখানকার জনধারণা। ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকারগুলো মনে করে, তাদের যদি দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং তারা বা তাদের সন্তানেরা যদি কোনো জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে, তাহলে দেশবাসী সরকার পরিচালনাকারী দলের ওপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নেবে। এ বিষয়ে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো অনেক বেশি উদারতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা যাদের ফিরিয়ে আনছে, তাদের ওপর নিবিড় নজরদারি বজায় রাখা হচ্ছে। তাদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে কি না, তা মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে দেওয়া হচ্ছে।ইউরোপীয় দেশগুলোকেও মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মানুষের নিজ দেশে ফেরার অধিকার আছে। তাদের ফিরিয়ে আনা এবং ভিনদেশে যাদের বিচার চলছে, তারা যাতে ন্যায্য বিচার পায় তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।আল–জাজিরা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিতরেটা টেইলর: হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিষয়ক সিনিয়র গবেষক
রিও ডি জেনিরোয় আজ চিলিকে ১-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে উরুগুয়ে। এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হলো কোয়ার্টার ফাইনালের আট দলম্যাচটা ড্র হলে ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে চিলি উঠে যেত কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু এডিনসন কাভানি ভেবে রেখেছিলেন অন্য কিছু। ৮২ মিনিটে তাঁর জয়সূচক গোলে কোপা আমেরিকার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ১-০ গোলে হারিয়েছে উরুগুয়ে। আজ সকালে রিও ডি জেনিরোয় তুলে নেওয়া এ জয়ে ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে উরুগুয়ে নাম লিখিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে। এর মধ্যে নিশ্চিত হলো কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা আট দল।প্রথমার্ধের খেলায় দাপট দেখিয়েছে চিলি। উরুগুয়ে গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরার পরীক্ষা নিয়েছেন চিলির মিডফিল্ডার চার্লস আরানগুইজ ও ফরোয়ার্ড অ্যালেক্সিস সানচেজ। কোপা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে ২০০তম ম্যাচ খেলতে নামা উরুগুয়ে জয়সূচক গোলের দেখা পেয়েছে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ৮ মিনিট আগে। জোনাথন রদ্রিগেজের ক্রস থেকে হেডে গোল করেন কাভানি। এ ম্যাচে উরুগুয়ে কোচ অস্কার তাবারেজও গড়েছেন দারুণ এক রেকর্ড। ইতিহাসে প্রথম কোচ হিসেবে নির্দিষ্ট একটি জাতীয় দলের হয়ে ২০০তম ম্যাচের মাইলফলক গড়লেন তাবারেজ।শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াই। সেদিন বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৬টায় প্যারাগুয়ের মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। পরদিন রাত ১টায় (বাংলাদেশ সময়) ভেনেজুয়েলার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। একই দিন ভোর ৫টায় কলম্বিয়ার মুখোমুখি হবে চিলি। পরদিন রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ লড়াইয়ে উরুগুয়ের বিপক্ষে লড়বে পেরু।কোয়ার্টার ফাইনালের সূচি:           ম্যাচ     তারিখ সময় (বাংলাদেশ সময়)ব্রাজিল–প্যারাগুয়ে২৮–৬–২০১৯ভোর ৬টা ৩০ভেনেজুয়েলা–আর্জেন্টিনা২৯–৬–২০১৯রাত ১টাকলম্বিয়া–চিলি২৯–৬–২০১৯ভোর ৫টাউরুগুয়ে–পেরু৩০–৬–২০১৯রাত ১টা
ই-কমার্স খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ভ্যাট আরোপিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে হাজারো ছোট, বড় ও মাঝারি উদ্যোক্তা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে অনলাইনে পণ্য ও সেবা বিক্রি, অর্থাৎ ই-কমার্স খাতে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কারণে সম্ভাবনা ও বিকাশমান এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করেছেন ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা।ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওয়াহেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সঙ্গে ই-কমার্স মিলিয়ে ফেললে হবে না। দেশের নীতিনির্ধারক ও আমাদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এর জন্যই আমরা বারবার তাদের ই-কমার্সের ওপর ভ্যাট না বসানোর কথা বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছি। এবারের বাজেট প্রস্তাবনায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সংজ্ঞার সঙ্গে ই-কমার্সকে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে। এর ফলেই মূলত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।’আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘ই-কমার্স একটা নতুন খাত। কেবল একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে। এখনই সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট বসানো হলে হাজারো উদ্যোক্তা ঝড়ে পড়বে। নতুন উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন না। ই-ক্যাব আগামী তিন বছরে সারা দেশে আরও ১০ রাখ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে ই-কমার্সের সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার উদ্যোক্তা সরাসরিভাবে জড়িত। ই-কমার্সের ওপর প্রস্তাবিত ভ্যাট তাদের সবার জন্য একটা ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। শুধু উদ্যোক্তাদের এই খাতে এলেই চলবে না, গ্রাহকদেরও নিয়ে আসতে হবে। নতুন করে এই খাতের ওপর প্রস্তাবিত ভ্যাট উদ্যোক্তা-গ্রাহক উভয়কেই এ খাত থেকে দূরে সরিয়ে দেবে।’রকমারি ডট কমের প্রধান নির্বাহী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আসলে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণের ফলে দেশের অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। ফলে, দেশের এই খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে আগামী পাঁচ বছরে ই-কমার্সের ওপর ভ্যাট না রাখা।’চালডাল ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) জিয়া আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন‌, ‘প্রস্তাবিত ভ্যাট আরোপ করা হলে অনলাইনে কেনাকাটা কমে যাবে। একজন ক্রেতা কেন বেশি টাকা দিয়ে অনলাইন থেকে কেনাকাটা করবে? আমরা এখনো ভালোভাবে দাঁড়াতেই পারিনি। আমাদের ওপর ভ্যাট বসানো হলে পথে বসতে হবে। দুই বছর আগে অনলাইনে প্রতিদিন সব মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার অর্ডার ছিল। এখন তা প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ হাজারের মতো। এদিকে গ্রাহকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। তবে ভ্যাট বসানোয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে তা গ্রাহকদের আর আকর্ষণ করবে না।’সম্প্রতি ই-কমার্সের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে ‘ই-কমার্স এন্ট্রাপ্রেনিউর্স অ্যান্ড কনজুমারস’–এর ব্যানারে ভ্যাট আরোপের ফলে এ খাতের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। গত রোববার ডেইলি স্টারে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সঠিক নীতি ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশে আগামী তিন বছরে ১০ লাখের বেশি তরুণের সরাসরি কর্মসংস্থান হতে পারে ডিজিটাল কমার্স খাতে। এবারের বাজেট প্রস্তাবনায় ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার ক্রয় বিক্রয়কে বর্তমানে নির্ধারিত আলাদা সেবা কোড ‘S ০৯৯.৫০’ থেকে সরিয়ে ‘সোশ্যাল মিডিয়া ও ভার্চ্যুয়াল বিজনেস’–এ (S ০৭৯.০০) অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে এবং ভ্যাট অব্যাহতি তালিকা থেকে ‘অনলাইন পণ্য বিক্রয়’–কে বাদ দেওয়া হয়েছে। অনলাইন পণ্য ও সেবা বিক্রয়কে আলাদা সার্ভিস হিসেবে বিবেচনা ও অনলাইনে পণ্য ও সেবা বিক্রয়কে আগামী তিন বছরের জন্য ভ্যাট অব্যাহতির দাবি জানান তাঁরা।
সাকিব আল হাসানের দারুণ প্রশংসা করেছেন ভারতের সাবেক পেসার জহির খান। তাঁর মতে, ২০১১ বিশ্বকাপে যুবরাজ সিংয়ের মতোই এবার পারফর্ম করছেন সাকিববিশ্বকাপে জীবনের সেরা ফর্মে আছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ যে তিন ম্যাচ জিতেছে, সব কটিতেই সাকিব ম্যাচসেরা। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে যাওয়া ম্যাচগুলোতেও সাকিব ছিলেন পারফরমার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকাল তো স্পিন ভেলকিতে তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রান সাকিবের, বিভিন্ন রেকর্ড তাঁর পায়ে পড়ছে লুটিয়ে। সাকিবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রিকেট দুনিয়া। ভারতের সাবেক পেসার জহির খান তো সাকিবকে ‘যুবরাজ সিং’ই মনে করছেন।২০১১ বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। সেবার দেশের বিশ্বকাপ জয়ে দারুণ অবদান ছিল যুবরাজ সিংয়ের। ব্যাটে-বলে যুবরাজের পারফরম্যান্স ছিল অনন্য। সাকিবকে তিনি তাই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যুবরাজ মনে করছেন।কাল আফগানদের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক ম্যাচে ব্যাট হাতে ফিফটি আর বল হাতে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। তাঁর পারফরম্যান্স যে অনেকটা ২০১১ সালের যুবরাজের মতো, সেটিই মনে করিয়ে দিয়েছেন জহির। টুর্নামেন্ট-সেরা হওয়া যুবরাজ ব্যাটিংয়ে ৩৬২ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ১৫ উইকেট। এর মধ্যে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৫০ রান করার আগে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন যুবরাজ। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এত দিন সেটাই ছিল এক ম্যাচে ফিফটির সঙ্গে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড কোনো খেলোয়াড়ের।কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন যুবরাজ। সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচে বিশেষজ্ঞের মতামত দেওয়ার সময় যুবরাজের প্রসঙ্গ টেনে সাকিবের প্রশংসা করেন জহির। কোনো রাখঢাক না রেখেই জহির বলেছেন, ২০১১ বিশ্বকাপ যুবরাজ যেমন কাটিয়েছেন এবার সাকিবেরও তেমন বিশ্বকাপ কাটছে।জহির বলেন, ‘সে যুবরাজ সিংয়ের মতো টুর্নামেন্ট পার করছে। ২০১১ বিশ্বকাপে যুবরাজ প্রতি ম্যাচেই ব্যাটে-বলে অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের হয়ে সাকিব ঠিক এ কাজটাই করছে। এটা তার জন্য দারুণ এক টুর্নামেন্ট। দিন দিন সে আরও ভালো পারফর্ম করছে। তার সবচেয়ে কম রান বোধ হয় ৪১। ব্যাট হাতে সে ভীষণ ধারাবাহিক আর বল হাতেও ১০ ওভারের কোটা পূরণ করছে। বোলিংয়ে একটা দিন খারাপ যেতেই পারে। কিন্তু ম্যাচের ফলে সে প্রভাব (ইমপ্যাক্ট) রাখছে।’ক্রিকেট বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ৬ ম্যাচে সাকিবের সংগ্রহ—৭৫, ৬৪, ১২১, ১২৪*, ৪১ ও ৫১। শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই ন্যূনতম ৫০ রানের দেখা পাননি সাকিব। জহির মনে করেন, বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে ‘দলকে টেনে তোলার সঠিক উদাহরণ হতে পারেন সাকিব।’ জহির খানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ভারতের ব্যাটসম্যান রবিন উথাপ্পা। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সে সাকিবের সতীর্থ হিসেবে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে উথাপ্পার। সেই অভিজ্ঞতা থেকে উথাপ্পা বলেন, ‘সে (সাকিব) বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। ভীষণ লড়াকু। সব সময় পারফর্ম করতে চায়। একা জেতাতে চায়। যেকোনো দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। বোলিং শুরু করাতে চান, করবে। তিনে ব্যাট করতে হবে, পারবে। কিংবা পিঞ্চ হিটারের ভূমিকাও নিতে পারে।’
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বিভিন্ন দেশের সরকারকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিয়ন্ত্রণের এই ভার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রধান (গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স) ও যুক্তরাজ্যের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ক্লেগ গতকাল এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন।বিবিসিকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে ক্লেগ বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বড় বা ছোট যা-ই হোক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেসব আইনকানুনের প্রয়োজন সেগুলো প্রণয়ন করার দায়িত্ব তাঁদের নয়। গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় এই দায়িত্ব গণতন্ত্রকামী রাজনীতিবিদদেরই।যুক্তরাজ্যের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক নেতা ক্লেগ আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা, নির্বাচনী নিয়মনীতি মানাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নতুন আইনকানুন প্রণয়নের জোরালো প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি বলেন, একই সময়ে ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত নিয়মকানুন প্রণয়নে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি পরিপক্ব ভূমিকা রাখা।
দেশে এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৯। শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ৪৫ টিতে। সংখ্যা হিসাবে নেহাত কম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিত্যদিনই লাউঞ্জ কিংবা ক্লাবের আড্ডায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খালি হবে হবে’ থাকা উপাচার্য, সহ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ পদ নিয়ে কথাবার্তা শোনা যায়। কারা কারা এই পদগুলোর জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন, কোথায় কোথায় ধরনা দিচ্ছেন সবকিছু নিয়েই আলোচনা হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এর মধ্যে সবচেয়ে দামি উপাচার্য পদটি। আবার কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে কিছুটা গলার স্বর পরিবর্তন করে বলেন, তাঁরা সরকারের পক্ষ থেকে উপাচার্য হওয়ার যোগ্য হিসেবে ‘অফার’ পেয়েছেন, কিন্তু তাঁরা আগ্রহী নন বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।আবার যাঁরা দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা বেশির ভাগই বলেন, ‘তাঁরা ছেড়ে দিতে চান কিন্তু সরকার পক্ষের অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারছেন না’, তাই দ্বিতীয় মেয়াদ সেই অনুরোধেরই অবদান। একেবারে হাতে গোনা দু-একজন ছাড়া কেউই বলেন না এই অতি লোভনীয় উপাচার্য পদে যাওয়ার জন্য তাঁদের তদবির বা লবিংয়ের কথা, বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়ে, কখনো কখনো আঞ্চলিকতাকে কাজে লাগিয়ে কিংবা ‘এত দিনেও কিছু পাইনি আমি’জাতীয় বাক্যকে বাজারজাত করে সেই পদটি বাগিয়ে নেওয়ার কথা। বেশির ভাগই বলেন, তাঁরা এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। হঠাৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ফোন পেয়েই জানতে পেরেছেন। এই রকম গল্প যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁরা নিজেরাও হয়তো এই রকম ‘অতি চমকে’ দেওয়ার ফোন পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন বলে মনে হয়। তবে এ ধরনের গল্প বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা একেবারেই সীমিত।কয়েক মাস ধরে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম, বরিশাল, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে আসীন হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে যে ধরনের তৎপরতা এবং প্রতিযোগিতা দেখা গেছে, তা কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। অথচ এই বছর দশেক আগেও বোধ হয় বিষয়গুলো এই রকম ছিল না। দিনে দিনে এটি দৌড় প্রতিযোগিতার মতো হয়ে উঠেছে।বাংলাদেশের চারটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত অর্থাৎ এগুলো’ ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী চলার কথা। এ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী যেভাবে উপাচার্য নিয়োগের বিধান আছে, তা সাধারণত পালন করা হয় না। নিয়মিত সিনেট নির্বাচন দেওয়ার কথা থাকলেও সে নির্বাচনও যথার্থভাবে নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হয় না। সিনেটকে সক্রিয় রাখতে হলে যেভাবে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটদের নির্বাচন করার কথা, সেটিও অনুসরণ করা হয় না। ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট নির্বাচনের মাধ্যমে তিন সদস্যের প্যানেল নির্বাচন করে সেখান থেকে মাননীয় আচার্যের একজনকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে।সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে উপাচার্য পদে আসীন ব্যক্তিও পরিবর্তিত হয়। একবার কেউ উপাচার্য হলে সেখান থেকে নড়তে চান না। চার বছর পার হলেও আবারও সেই পদে থাকতে চান। মজার বিষয় হলো সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঘিরে যে ক্ষমতাবান বা শিক্ষক রাজনীতিতে হেভিওয়েট বলে খ্যাত শিক্ষকদের শক্ত সিন্ডিকেটের দম্ভ গাড়েন, যাঁরা উপাচার্যকে বিপদে-আপদে আগলে রাখেন-থাকেন, তাঁদের অনেকেই আবার ভিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কিংবা অন্য কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংকেত পেলেই সেই উপাচার্য হটিয়ে কীভাবে নিজেরা উপাচার্য হতে পারবেন, সে জন্য আদাজল খেয়ে লেগে পড়েন।তবে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো, উপাচার্য পদে আসীন হতে সাম্প্রতিক সময়ে পাবলিক এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ধরনের সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে সেটি। প্রার্থীরা যে নিজেদের সম্পর্কে জোরালো তদবির করেই ক্ষান্ত থাকেন তা নয়, অন্য প্রার্থীদের দোষের পাল্লা খুলে সেগুলো সরকারের নীতিনির্ধারক উচ্চমহলে প্রচারের ব্যবস্থা করেন এবং সম্ভাব্য নারী প্রার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনের দোষক্রটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।আসলে এই উপাচার্য পদে কী কী ধরনের ক্ষমতার মধু আছে? তবে ‘কিছুমিছু’ যে আছে, তা এই পদে আসীন শিক্ষকদের তদবির লাইন এবং আকাঙ্ক্ষার উচ্চতা মাপলেই বোঝা যাবে। তা ছাড়া গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্যও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে এ কথা এখন সবাই একবাক্যে মেনে নেবেন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য হতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক যোগ্যতার মাপজোখ হয় না। সরকারি দলে শতভাগ আনুগত্য প্রদর্শন, শক্ত তদবির এবং হালে প্রাধান্য পাওয়া আঞ্চলিক রাজনীতি গুরুত্ব পায়। এ প্রতিযোগিতায় আরও ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ পান উপাচার্য প্রার্থীর পক্ষীয় নেতা, সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীরাও।এখন শিক্ষাব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর এর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে? শিক্ষার্থীরা জানছেন তাঁদের কোন কোন শিক্ষক নিজে পড়াশোনা, গবেষণা কিংবা পড়ানোর বাইরে পদ-পদবি হাতড়াতে ব্যস্ত। শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার চেয়ে তাঁদের তাগাদার চাকা এখন নীতিনির্ধারকদের রুমের দিকে। শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাঁরা তাঁদের সমস্ত মেধা, শক্তি বিনিয়োগ করছেন, তাঁরা সহকর্মীকে হেয় করে, একে অন্যের বিরুদ্ধে নোংরা কথাবার্তা, উড়োচিঠি দিচ্ছেন। সেই শিক্ষকেরা যখন শ্রেণিকক্ষে যাবেন, তখন শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হওয়াটা নিশ্চিতভাবেই তাঁদের জন্য কঠিন। হয়তো তাঁরা এসব নিয়ে মাথা ঘামান না, কারণ তাঁদের মাথা তো এখন অন্যদিকে ঝুঁকে আছে।এই সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া কি একেবারেই অসম্ভব? সঠিক সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে সিনেটকে সক্রিয় করে সিনেট সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত তিন সদস্যের প্যানেল থেকে উপাচার্য নির্বাচনের ধারাবাহিক সংস্কৃতি চালু করা কি আসলেই সমস্যার? হ্যাঁ, সমস্যা আছে, সেটি মনে হয় সরকারের দিকনির্দেশনার। সরকারের মনোভাব অক্ষরে অক্ষরে বোঝা এবং পালন করার ওপরেই নির্ভর করে উপাচার্যদের ক্ষমতার কেদারা। তাই রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সিনেট নির্বাচন দেওয়া না–দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখানে ভয় থাকে সরকারের। সিনেট সদস্যরা যদি ভোট দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম সমর্পণে আগ্রহী শিক্ষকদের নির্বাচিত করেন, তাহলে সরকার বিপদে পড়তে পারে।কিন্তু এই উপাচার্য দৌড়ের সংস্কৃতি চলতে থাকলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক মান নিয়ে জারি থাকা শাখা-প্রশাখা বিস্তারকারী প্রশ্নগুলো অচিরেই বটগাছ হয়ে যাবে, আর তার ছায়ায় বসেই একবারেই বিশ্রামে চলে যাবে পুরো উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাটিই।জোবাইদা নাসরীন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকzobaidanasreen@gmail. com
ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান হেরে যাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন পাকিস্তানের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ মিকি আর্থার। এতটাই যে রীতিমতো আত্মহত্যা করার ইচ্ছা জেগেছিল তাঁর মধ্যে।২০০৭ বিশ্বকাপে বব উলমারের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। সেবার পাকিস্তানের দায়িত্বে থাকা এ বিশ্বখ্যাত ইংলিশ কোচের মৃতদেহ মিলেছিল হোটেল কক্ষ থেকে। সে মৃত্যু রহস্যের কিনারা হয়নি আজও। এবারের বিশ্বকাপেও ঘটতে পারত আরেক ট্র্যাজিক ঘটনা। অস্বস্তিতে পড়তে হতো পাকিস্তান ক্রিকেটকে। সরফরাজ-আমিরদের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ মিকি আর্থার এতটাই চাপে ছিলেন যে তাঁর মনে হয়েছিল যে তিনি আত্মহত্যা করবেন।আপাতত কিছুটা নির্ভার বোধ করছেন আর্থার। ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান হেরে যাওয়ার পর তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। সেটি তিনি হয়তো করেই ফেলতেন, যদি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তান না জিতত! আপাতত অলক্ষুনে ভাবনা থেকে সরে এসেছেন তিনি।কেন আত্মহত্যার ভাবনা জেগেছিল আর্থারের মনে? বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ প্রোটিয়া কোচ বলেছেন, ‘ভারতের বিপক্ষে হারের পর আমি প্রচণ্ড হতাশ ছিলাম। আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছি। একটা ম্যাচে হারের পর আরেকটি ম্যাচর ধাক্কা। এটি সামলানো বেশ কঠিন। ক্রিকেট বিশ্বকাপে সব দলকেই প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকতে হয়। সমর্থকদের প্রত্যাশা, সংবাদমাধ্যম সবকিছু সামলে নিজের অস্তিত্ব বাঁচানোই কঠিন হয়ে পড়ে।’ এমনিতেই আর্থারের ওপর খুশি নন পাকিস্তানি ক্রিকেট প্রশাসকেরা। বিশ্বকাপের পরপরই হয়তো তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। চুক্তি শেষ হয়ে যাবে খুব শিগগিরই। এরপর আর সেটির মেয়াদ না বাড়ানোরই চিন্তা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের। সে হিসাবে ভবিষ্যৎও অন্ধকার এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচের। এর মধ্যে যদি একের পর এক হারের ধাক্কা সামলাতে হয়, সেটি কঠিন হয়ে পড়ে যেকোনো মানুষের জন্যই।দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের পর নিজের দলের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। তিনি নিজেও মানসিকভাবে অনেকটাই চাঙা, ‘আমাদের ভালো কিছুর দরকার ছিল। সামনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ, সে ম্যাচে জিততেই মাঠে নামব। একটা ভালো পারফরম্যান্সই দলকে উজ্জীবিত করে তুলেছে।’
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ নিয়ে রাজধানীতে শুরু হতে যাচ্ছে ‘ক্যারিয়ার মেলা-২০১৯ ’। ‘ক্যাম্পাস টু করপোরেট’ শিরোনামে আয়োজিত এই মেলায় ১০০ টির বেশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানি, উন্নয়ন সংস্থাসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।আগামী বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দুই দিনব্যাপী এই মেলা শুরু হবে। মেলার আয়োজন করছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস অব ক্যারিয়ার সার্ভিসেস অ্যান্ড অ্যালামনাই রিলেশনস (অকসার)। এতে সহযোগিতা করছে এনআরবি জবস। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মেলার উদ্বোধন করবেন।মেলা উপলক্ষে গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে নামীদামি সব প্রতিষ্ঠানের সরাসরি যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এই ক্যারিয়ার মেলা ভূমিকা রাখবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মেলা চলবে।মেলায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম। ২৮ জুন মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
অবশেষে ইউনেসকো সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশ করেছে। সিদ্ধান্তটি ইউনেসকোর সদর দপ্তর প্যারিস থেকে বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র কর্তৃক ৭ জুন ২০১৯ প্রকাশিত প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। ঘোষণাটি বাংলাদেশের জনগণকে অবাক করে এই কারণে যে ২০১৭ সালে পোল্যান্ডে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি ৪১তম সভায় সুন্দরবনের ওপর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সে সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার জনসাধারণকে জানিয়ে আশ্বস্ত করেছিল যে ইউনেসকো সুন্দরবনের সন্নিকটে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র রামপাল নির্মাণে তার আপত্তি প্রত্যাহার করেছে। এরপর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ চলমান রাখা হয়। কিন্তু ৭ জুন ২০১৯ প্রকাশিত ইউনেসকোর প্রতিবেদন এবং ২০১৭ সালে পোল্যান্ডে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪১তম সভার সিদ্ধান্ত লক্ষ করলে দেখা যায় যে সরকার কর্তৃক জনসাধারণকে দেওয়া তথ্যটি পুরোপুরি ভুল ছিল। ভুলটি অনিচ্ছাকৃত, না কোনো বিশেষ মহলের স্বার্থ হাসিলের জন্য ইচ্ছাকৃত কৌশলী ভুল, নাকি নেহাত মিথ্যাচার ছিল, তার বিশ্লেষণ হতেই পারে। তবে এসবের যেকোনোটিই সরকারের জন্য বিব্রতকর হবে, তা নিশ্চিত। যা-ই হোক, ইউনেসকোর বর্তমান সুপারিশটি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৩তম সভায় চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করা হবে।৭ জুন ২০১৯ প্রকাশিত ইউনেসকোর সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের দূষণের বিপদ ঠেকাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির অনুরোধ সত্ত্বেও রামপাল কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা অবলম্বন করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি; বরং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ চলমান রাখা হয়েছে। নদীর ভাটি এলাকায় বায়ু ও পানিদূষণের উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি, নদীতে অধিকতর হারে জাহাজ চলাচল, নদীর খননকাজ ইত্যাদির ব্যাপারে কমিটির উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত ৪১ সিওএম ৭ বি.২৫ মারফত বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছিল, এটি যেন নিশ্চিত করা হয় যে সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা করার আগে কোনো ধরনের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা অন্য অবকাঠামো নির্মাণকাজ করা থেকে বিরত থাকবে। কমিটির উপরিউক্ত সিদ্ধান্তে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। অধিকন্তু মোংলা বন্দরের আশপাশে গৃহীত ১৫৪টি শিল্প প্রকল্পের বাস্তবায়ন সুন্দরবন এলাকায় অধিকতর হারে জাহাজ চলাচল ও নদী খননকাজ বৃদ্ধি করবে এবং প্রতিটি প্রকল্প পরিবেশদূষণে প্রভাব ফেলবে। অতএব, এটি সুপারিশ করা হলো যে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুক।সুন্দরবনের কাছে রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্তৃপক্ষ দুটি ভুল ধারণা ধরে নিয়ে প্রথম থেকে এগিয়ে চলেছে। যথা ১. রামপাল কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না। ২. যে দূষণ কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে সৃষ্টি হবে, তা অত্যাধুনিক যন্ত্রাদির দ্বারা সবটা আটকে দেওয়া হবে। এ দুটি ধারণাকেই দেশি-বিদেশি পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরা এবং ইউনেসকো অযৌক্তিক বলে নাকচ করে দেয়। এদিকে দেশি পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সুন্দরবন রক্ষা কমিটি তাদের চলমান আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকারের অতি উচ্চপর্যায়ে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পায় যে কমিটি যেন সরকারি বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে, যাতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সুন্দরবনের ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যায়। এই কর্তাব্যক্তি অনেকটা জনসমক্ষেই এ মত প্রকাশ করেন যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে বলে যাঁরা দাবি করছেন, তাঁরা নেহাত না জেনে বা না বুঝেই তা করছেন। এমতাবস্থায় জাতীয় সুন্দরবন রক্ষা কমিটির সদস্যরা আমন্ত্রণটি আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেন এবং তাঁদের বৈজ্ঞানিক তথ্য ও বক্তব্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে উপস্থাপন করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ওই কর্তাব্যক্তিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। শুধু তা-ই নয়, রামপালের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হওয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাসহ ১৩টি রিপোর্ট ওই কর্তার নির্দেশিত দপ্তর ঠিকানায় পৌঁছে দেয়, যাতে অপর পক্ষের আলোচকদের আলোচনা করতে সুবিধা হয়। কিন্তু প্রায় দেড় বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও আলোচনার কোনো তারিখ বা ইঙ্গিত কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি, যদিও ইতিমধ্যে জাতীয় সুন্দরবন রক্ষা কমিটি দুটি তাগিদপত্র প্রদান করেছে।রামপাল কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের যে দূষণ ও ক্ষতি হবে, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাসহ যে ১৩টি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে, সেগুলো কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রভাব নিয়ে কাজ করে, এমন অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রণীত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক চার্লস ড্রিসকল (রামপাল থেকে নির্গত পারদের দূষণ), ড. চার্লস নরিস (রামপাল থেকে নির্গত ছাইয়ের দূষণ), ড. রণজিৎ সাহু (রামপাল থেকে নির্গত গ্যাসের দূষণ), অধ্যাপক ডেভ নেইমার (রামপাল থেকে নির্গত কয়লার গুঁড়ার দূষণ), ডোনা লিসেনবি (রামপাল থেকে নির্গত পানির দূষণ) অন্তর্গত। এ ছাড়া বিশ্বখ্যাত পরিবেশবিষয়ক সংস্থা গ্রিনপিস কর্তৃক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে দূষণের সামগ্রিক পর্যালোচনা এবং রামপাল দূষণের ওপর ইউনেসকোর নিজস্ব মূল্যায়ন উল্লেখযোগ্য। এসব রিপোর্টে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে এসব দূষণ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোধ করা হবে বলে যে দাবি করা হয়, তাতে দ্বিমত পোষণ করা হয়।সুন্দরবনের ওপর রামপালের দূষণ সম্পর্কে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের বিস্তর নেতিবাচক মূল্যায়ন থাকা সত্ত্বেও এটি নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ তা আমলে না নিয়ে কেন একগুঁয়েমি মনোভাবে অনড় রয়েছে, তা বোধগম্য নয়। ইউনেসকো ২০১৭ সালে রামপালের বিষয়ে তার মূল্যায়নের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়ে সতর্ক করে ও পরামর্শ অনুয়ায়ী সুন্দরবনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায়। শর্ত অনুযায়ী ইউনেসকো দুই বছরব্যাপী বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণে রাখে ও বাংলাদেশের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো পুনর্মূল্যায়ন করে ইউনেসকো তার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী ইউনেসকো বর্তমানে সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশ করে। দুঃখজনক যে বাংলাদেশ ইউনেসকোর সঙ্গে একটি সমঝোতামূলক কার্যক্রম চালাতে ব্যর্থ হয়েছে; সুন্দরবনের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিতে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশ এসব কিছুর মধ্যে সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখেনি, বরং পুরো বিষয়টি নিয়ে কখনো ভুল, কখনো অসত্য তথ্য দিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করেছে।ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আমাদের সুন্দরবন এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদাটি হারাতে বসেছে। সুন্দরবন ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে পরবর্তী সময়ে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এটা হবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। তাই বাংলাদেশের উচিত হবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীদের যুক্তি ও ইউনেসকোর পরামর্শ আমলে নিয়ে সুন্দরবনের ওপর রামপাল কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষিত প্রভাব রোধ করার লক্ষ্যে রামপাল প্রকল্প বাতিল করা। এতে সরকারের ভাবমূর্তি সমুন্নত থাকবে। ইতিহাস তা মনে রাখবে।বদরূল ইমাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক
আগামী অর্থবছরের বাজেটে উৎপাদন থেকে বিক্রয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এবং অগ্রিম আয়কর বাড়ানোর প্রস্তাবের কারণে প্রতি টন রডের দাম ১০ হাজার ৯২৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। তাতে প্রতি টন রডের দাম ৭০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি টন রডের দাম ব্র্যান্ডভেদে ৬২ হাজার থেকে ৬৭ হাজার টাকা।রড উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, রডের দাম ১০ হাজার টাকার বেশি বাড়লে ভবনের কাঠামোর নির্মাণ খরচ ১০-১২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। সেটি হলে চাপে পড়বেন ভোক্তারা। পাশাপাশি সরকারের অবকাঠামো নির্মাণ ব৵য়ও বাড়বে। তা ছাড়া নির্মাণ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩ হাজার ৬০০ পণ্য ও সেবার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ বিক্রয়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে টনপ্রতি স্ক্র্যাপে ভ্যাট ৩০০ টাকা। আর স্ক্র্যাপ আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বাজেটে বিলেট বিক্রয়ে প্রতি টনে ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা, উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি টনে রডে ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে রড বিক্রিতে প্রতি টনে ২০০ টাকার পরিবর্তে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বাজেটে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ, বিলেট ও রড বিক্রিতে টনপ্রতি সর্বনিম্ন ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপের প্রস্তাবের কথা বলা হয়। অবশ্য গতকাল সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে বিলেট বিক্রয়ে অগ্রিম আয়কর হ্রাস করে দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) সমিতি হিসাব দিয়ে বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাটের হার বাড়ানোর কারণে টনপ্রতি রডে ৭ হাজার ৬৫০ টাকা খরচ বাড়বে। আর তিনটি পর্যায়ে নতুন করে অগ্রিম আয়কর আরোপ করায় বাড়বে ৩ হাজার ২৭৫ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি টন রডের দাম ১০ হাজার ৯২৫ টাকা বাড়তে পারে।জানতে চাইলে বিএসএমএর চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতি টন রডে ১০ হাজার ৯২৫ টাকা দাম বাড়লে তা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। পুরো বাজারেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে।’ তিনি বলেন, রডের দাম বাড়লে সরকারের অবকাঠামো নির্মাণ খরচও বৃদ্ধি পাবে। তাতে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যাবে।স্ক্র্যাপ আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম কর আরোপের বিষয়ে মানোয়ার হোসেন বলেন, কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম কর দিতে হলে কারখানাগুলোর পরিচালন মূলধনে টান পড়বে। এটি শুধু বাণিজ্যিক আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়া দরকার।রডের দাম বাড়লে নির্মাণ ব্যয় বাড়বেচাপে পড়বেন ভোক্তারা সরকারের অবকাঠামো নির্মাণ খরচও বাড়বেরড উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর কমানোর বিষয়ে গত রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা রডের দাম কত বাড়তে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা দেন। একই সঙ্গে স্ক্র্যাপ বিক্রিতে প্রতি টনে ৪৫০ টাকা, বিলেটে ৭৫০ টাকা, রডের উৎপাদন পর্যায়ে ৭৫০ টাকা ও বিক্রয় পর্যায়ে ৩০০ টাকা ভ্যাট আরোপ করার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, এতে করে ৪৬৭ কোটি টাকা বাড়তি ভ্যাট আসবে।এ ছাড়া স্ক্র্যাপ ও বিলেট বিক্রিতে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা কেবল রড বিক্রিতে টনপ্রতি ৩০০ টাকা অগ্রিম আয়কর দিতে চান। এতে বাড়তি ১৬৫ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে এনবিআরকে আশ্বাস দেন ব্যবসায়ীরা।মানোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্রামগঞ্জের মানুষ পাকা বাড়িঘর নির্মাণ করেন। রডের দাম বাড়লে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী রডের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে সুনজর দেবেন। সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।’
বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে ৫৭ হাজার ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, এটি অবিশ্বাস্য ঘটনা নয়। বরং ফলাফল উল্টো হলেই অবিশ্বাস্য মনে হতো। আবার এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী টি জামান নিকেতা যে ৩২ হাজার ভোট পেয়েছেন, তাতে প্রমাণ করে না যে সারা দেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিএনপির কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবেন।বহু বছর ধরে বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বগুড়ার সাতটি আসনই বিএনপির দখলে ছিল; যেমন গোপালগঞ্জের সব আসন আওয়ামী লীগ পেত, এখনো পাচ্ছে, ভবিষ্যতেও পাবে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মহাবিজয়ের সময়ও বিএনপি বগুড়ায় পাঁচটি আসন ধরে রেখেছিল। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি বগুড়ায় দুটি করে আসন পায়। একটি পান স্বতন্ত্র প্রার্থী।৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এই আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পেয়েছিলেন ২ লাখ ৫ হাজার ৯৮৭ ভোট এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর পান ৩৯ হাজার ৯৬১ ভোট। বগুড়ার সাংবাদিক বন্ধুরা বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বর বগুড়া-৬ আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। অন্যান্য আসনে বিরোধী দলকে নানাভাবে নাজেহাল করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু দলীয় সংহতির স্বার্থে মির্জা ফখরুল শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে আসনটি শূন্য হয়ে যায়। যদিও বিএনপির অপর সাত বিজয়ী প্রার্থী শপথ নিয়েছেন এবং সংসদেও গিয়েছেন।বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচন বিশ্লেষণ করলে আমরা যেসব বৈশিষ্ট্য পাই, তা হলো: এই নির্বাচনে ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত না থাকলেও কমিশন ভোটের হার অবিশ্বাস্য রকম বাড়িয়ে দেয়নি। ভোটের আগের দিন বিরোধী দলের প্রার্থী এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো হয়নি। ভোটের দিন সকালে সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে কাউকে সশস্ত্র মহড়া দিতেও দেখা যায়নি। ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৩৪ শতাংশ, যা ৩০ ডিসেম্বরের অর্ধের কিছু বেশি। ৩০ ডিসেম্বর ভোট পড়েছিল ৬৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এই নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে মাঠের ভোটচিত্রের খুব একটা ফারাক নেই।এই প্রেক্ষাপটে নির্বচন কমিশন বগুড়া উপনির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ বলে দাবি করতে পারে। তাদের এ দাবি হয়তো পুরোপুরি অন্যায্য নয়। কিন্তু একটি প্রশ্নটি করতেই হয়, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কৃতিত্ব কার? নির্বাচন কমিশনের, না সরকারের? প্রশাসন হস্তক্ষেপ করেনি বলেই নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশন যদি এর কৃতিত্ব দাবি করে, তাহলে দ্বিতীয় প্রশ্ন, তারা আগে নির্বাচনগুলো কেন সুষ্ঠু করল না? শুধু জাতীয় নির্বাচন না, সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, যেখানেই হুদা কমিশন হাত দিয়েছে, সেখানে নির্বাচনের বারোটা বেজেছে। জনগণ ভোটকেন্দ্রে এক চিত্র দেখেছে। আর কমিশনের ফলাফলে অন্য চিত্র উঠে এসেছে। বগুড়া-৬–এর উপনির্বাচনে সেটি তারা করেনি বলে ধন্যবাদ জানাই। তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে অন্তত একটি উপনির্বাচন সুষ্ঠু হলো।সিইসি কে এম নূরুল হুদা একবার খেদের সঙ্গে বলেছিলেন, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না এলে তাঁদের কিছু করার নেই। খুবই হক কথা বলেছেন। নির্বাচন কমিশন তো ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরে বেঁধে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারে না। কিন্তু ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না আসা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন যে প্রায় সব ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য ভোটের হার দেখিয়েছে, সেটি ভোটের নামে একধরনের জালিয়াতি। নির্বাচন কমিশনারদের বিবেকের কাছে (যদি আদৌ বিবেক বলে কিছু থেকে থাকে) একটি প্রশ্ন রাখতে চাই, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে বলে যে প্রচার তাঁরা করেছেন, সেটি কি তাঁরা নিজেরা বিশ্বাস করেন? বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কোন দলের প্রার্থী জিতেছেন বা কোন দলের প্রার্থী হেরেছেন, তার চেয়েও বড় হলো নির্বাচনটি পরাজিত হয়নি। নির্বাচন কমিশনও কেন্দ্রে ভোটার থাকুক আর না-ই থাকুক, ভোট প্রদানের অবিশ্বাস্য হার ঘোষণা করেনি। বলতে হবে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। কিন্তু এই শুভবুদ্ধি একটি উপনির্বাচনে সীমিত থাকবে, না পরবর্তী সব নির্বাচনে, সেই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র নির্বাচন কমিশনই দিতে পারে।ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের ধানের শীষ পেয়েছেন ৮৯ হাজার ৭৪২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত টি জামান নিকেতা নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩২ হাজার ২৯৭ ভোট। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমরের লাঙ্গল প্রতীকে পড়েছে ৭ হাজার ২২১ ভোট। বগুড়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বগুড়া সদর আসন। এই আসনে ভোটার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৮ জন। এবারে এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ছাড়াও মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৪১টি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। ভোট পড়েছে ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সব দলের প্রার্থীরা বলছেন, বগুড়ার এই আসনে এবার ভোটের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে এবং সব প্রার্থীকে প্রচার-প্রচারণায় সমানভাবে সহযোগিতা করেছে।গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে ও পরে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। অনেকে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। অনেকে গ্রেপ্তার এবং হয়রানির শিকার হয়েছেন। ভোটের দিন সহিংসতা হয়েছে। কিন্তু উপনির্বাচনের আগে বা পরে এসবের কিছুই ঘটেনি। যে কারণে বিজয়ী ও পরাজিত সব প্রার্থী বলেছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।নির্বাচন কমিশন কি দেশবাসীকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারবে যে ভবিষ্যতে প্রতিটি নির্বাচন বগুড়ার উপনির্বাচনের মতো সুষ্ঠু হবে। পরাজিত প্রার্থীও সেই নির্বাচন সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না।সোহরাব হাসান: লেখক ও সাংবাদিক।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া এলাকার বরমচালে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন ঠিক হয়েছে। চালু হয়েছে সিলেটের সঙ্গে ট্রেন চলাচল। তবে ট্রেন ছাড়ার সময়সূচি ঠিক না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা ট্রেন ছাড়ার সময় সকাল সোয়া ১০টায়, বেলা সোয়া ১১টায়ও তার খবর নেই। দুর্ভোগে যাত্রীরা। রেলওয়ে স্টেশন, সিলেট, ২৫ জুন।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ধনী কয়েকজন সম্পদের ওপর কর দেওয়ার বিষয়টি ফিরিয়ে আনতে দেশটির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক বৈষম্য ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য করারোপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা। বিনিয়োগকারী জর্জ সরোস, ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিস হিউজ ও কোটিপতি চার্লি মুঙ্গারের মেয়ে মলি মুঙ্গার এক চিঠিতে এই আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁদের অতিরিক্ত সম্পদের ওপর কর বসানো যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্ব।ধনীদের এই দলটি বলেছে, তারা কোনো দল বা প্রার্থীকে সমর্থন করে না। খোলা চিঠিতে ধনীরা বলেন, সম্পদের কর তাঁদের জলবায়ু সংকট কাটাতে, অর্থনৈতিক উন্নতি, স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে সাহায্য করবে। এটি গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে জোরদার করবে। সম্পদের করের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ তাঁদের দেশের প্রয়োজন মেটাবে।১৮ জন ধনীর মধ্যে ওয়াল্ট ডিজনির উত্তরসূরি ও হায়াত হোটেলের কর্ণধার রয়েছেন। অনেকে জলবায়ু পরিবর্তন ও সম্পদের বৈষম্য কমাতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে চান। চিঠিতে এও বলা হয়, কোটিপতি ওয়ারেন বাফেট বলেছেন, তিনি তাঁর সহকারীর চেয়েও কম কর দেন।ধনীদের এই দলটি নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করেনি। তবে ধনীরা সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন, যাঁর ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কর আরোপের বিষয়ে তাঁর দেওয়া প্রস্তাবের প্রশংসা করেছেন। সিনেটর ওয়ারেন পাঁচ কোটি ডলারের বেশি সম্পদ যাঁদের রয়েছে, তাঁদের সম্পদের ওপর করারোপের প্রস্তাব দিয়েছেন। ৭৫ হাজার সম্পদশালী পরিবারের ওপর এর প্রভাব পড়বে। ওয়ারেন অনুমান করে বলেন, আগামী ১০ বছরে এই সম্পদ ২ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন হবে। চিঠিতে যাঁদের অনেক সম্পদ, তাঁদের ওপর উচ্চ করারোপের প্রতি সমর্থন দেওয়া হয়েছে।অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের তথ্যানুসারে ৪০টি দেশের মধ্যে সম্পদ কেন্দ্রীভূত করে রাখে—এমন ষষ্ঠ দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। চিঠিতে বলা হয়, বেশি ধনীদের সম্পদের ওপর কর বসালে সম্পদ কেন্দ্রীভূত করে রাখার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে আসবে।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯৯৯ সালে একবারের জন্য সম্পদের ওপর কর বসানোর প্রস্তাব দেন। সেটি তাঁর নির্বাচনী প্রচারনীতির অংশ ছিল না।
রুশ বিমানবাহিনীর একটি সামরিক বিমান গতকাল সোমবার ভেনেজুয়েলার প্রধান বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং বিমান চলাচল অনুসরণকারী একটি ওয়েবসাইট এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। মাস তিনেক আগে একইভাবে একটি বিমান অবতরণের ঘটনা ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করে।গত মার্চ মাসে রাশিয়ার বিমানবাহিনীর আন্তনভ-১২৪ বিমান ও একটি ছোট জেট ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে অবতরণ করে। উড়োজাহাজগুলোতে করে প্রায় ১০০ জন সেনা ও ৩৫ টনের মতো সরঞ্জাম আনা হয়। ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক সংকটে এটি ‘অসংযত উসকানি’ হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন বিশ্লেষকেরা। এ ধরনের পদক্ষেপে দক্ষিণ আমেরিকার সংগ্রামরত জাতির দুরবস্থার ‘বেপরোয়া মাত্রা বৃদ্ধি’ করায় রাশিয়াকে দুষেছিল যুক্তরাষ্ট্র।বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গতকাল সোমবার ভেনেজুয়েলার মাইকেটিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পার্ক করা হয় একটি ইলিউশিন ৬২ জেট বিমান। বিমানটির টেইল নম্বর ছিল আরএ-৮৬৪৯৬। এই নম্বর থেকে জানা যায়, এটি রুশ বিমানবাহিনীর জেট বিমান। ফ্লাইটরাডার২৪ নামে একটি ওয়েবসাইট এই টেইল নম্বর থেকে একে মার্চ মাসে আসা সেই একই বিমান বলে শনাক্ত করে।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্চ মাসে ভেনেজুয়েলা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে রাশিয়া। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য দাবি করেছিল, বিমানে করে দেশটিতে কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে পাঠানো হয়েছে। অস্ত্র বিক্রি চুক্তিসংক্রান্ত কাজে এসেছিলেন তাঁরা।ভেনেজুয়েলার তথ্য মন্ত্রণালয় এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া। লাতিন আমেরিকার এই দেশকে কোটি কোটি ডলার ঋণ ও দেশটির তেলশিল্প ও সামরিক শক্তিকে সব সময় সমর্থন দিচ্ছে তারা। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ ও নিষেধাজ্ঞার কঠোর সমালোচনা করে আসছে রাশিয়া।সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর মস্কো ও ভেনেজুয়েলার মধ্যকার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। গত ডিসেম্বরে ভেনেজুয়েলায় দুটি পরমাণু বোমারু টিইউ-১৬০ বিমান পাঠায় রাশিয়া। মাদুরোর প্রতি সমর্থন ও একই সঙ্গে নিজেদের সামরিক শক্তি প্রকাশের জন্য এ বিমান পাঠায় তারা। ওই বিমান দুটি ব্ল্যাক জ্যাক নামে পরিচিত। এর সঙ্গে রয়েছে একটি এএন-১২৪ পরিবহন বিমান এবং আইএল-৬২ যাত্রীবাহী বিমান।
মাস চারেক আগের কথা। বরমচালের মিয়া বাজারে ফাজু চৌধুরী নামের এক ব্যবসায়ী আছেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি ফেসবুকে ছবিসহ ওই এলাকার রেললাইনের বেহাল দশা কথা লিখেছিলেন। প্রশ্ন তুলেছিলেন, ক্লিপ ছাড়া কেমনে চলছে রেল? আশঙ্কা করেছিলেন বড় দুর্ঘটনার। স্টেশনমাস্টারের সঙ্গে দেখা করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কুলাউড়া, মৌলভীবাজার, সিলেটের ফেসবুকের পাতায় পাতায় সংক্রমিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল ফাজু চৌধুরীর সেই সচিত্র পোস্ট। নাগরিকের দায়িত্বের মধ্যে না পড়লেও ফাজু চৌধুরী সরকারি সংস্থার দায়িত্বের অনেকটাই পালন করেছিলেন। কিন্তু কী করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ?সামাজিক মাধ্যমে অপছন্দের কোনো খবর মাটিতে পড়ার আগেই খড়ের গাদা থেকে সোনামুখী সুই খুঁজে বের করার স্টাইলে প্রেরককে পাতি পাতি করে খুঁজে বের করে ফেলেন দায়িত্বশীলেরা। তারপর তাঁকে ফাটকে ভরতে যখন সময় লাগে না, তখন বরমচালের ফাজু চৌধুরী কীভাবে ছাড় পেলেন কে জানে? তিনি তো প্রশ্ন তুলছিলেন, রেলপাতে ক্লিপ ছাড়া কেমনে চলছে ট্রেন? আশঙ্কা করেছিলেন বড় দুর্ঘটনার। কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না যে তারা রেললাইন আর রেলসেতুর বেহাল দশা সম্পর্কে জানত না। যদিও দায় এড়ানোর জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছেন যে ‘রোববারের ঘটনাটি নিছকই একটি দুর্ঘটনা।’ দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কর্তারা নানা থিওরি আওড়ে যাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তিতাস নদে ওপরে একটি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় সড়কপথে যাত্রা ব্যাহত হওয়ার কারণে কয়েক দিন ধরে ট্রেনের ওপরে চাপ বেড়ে যায়।’ মানে যাত্রীর চাপে ট্রেন উল্টেছে। সোজা কথায় পাবলিকের দোষ। ট্রেনের মতো ভারী যান যাত্রীর ভারে উল্টে যায়—এটা এক ঐতিহাসিক আবিষ্কার। আমাদের এক রসিক বন্ধু এসব দেখে লিখেছেন, রানা প্লাজা ধসে জন্ম নিয়েছিল ‘থিওরি অব শেকিং’ আর কুলাউড়া ট্রেন দুর্ঘটনায় জন্ম নিল ‘থিওরি অব ওভারলোডেড প্যাসেঞ্জার’।বিএনপি আমলে এক মন্ত্রী বাবার বুকে থাকা সন্তান গুলিতে নিহত হলে ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন’ থিওরি দিয়েছিলেন। রানা প্লাজা ধস নাকি বিএনপি কর্মীদের ওই ভবনের থাম ঝাঁকানোর ফল। ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়া নাকি উন্নত কর্মসংস্থানের ফল। রাস্তায় যানজট নাকি দেশের উন্নতির লক্ষণ। আর এখন যাত্রীর ভারে ট্রেন উল্টানো গল্প! কী বিচিত্র এক দেশ আর সে দেশের মন্ত্রীমহোদয়গণ।২.রেললাইন থেকে ছিটকে ঘাস-কাদায় শুয়ে পড়ে কয়েকটি বগি। গত রোববার রাত আড়াইটা পর্যন্ত সাত যাত্রীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছিল, আহত হওয়ার গণনা চলছিল। দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে লাশের সংখ্যা কমে যায়। রেল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ঘটনায় নিহত তিন নারীসহ চারজনের মৃতদেহ কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্থানীয় কর্মকর্তারা পাঁচজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন। কুলাউড়া সাবস্টেশন থেকে বলা হয়, হাসপাতালে নেওয়ার পর একজন মারা যান। লাশ নিয়ে কর্তৃপক্ষের এই লুকোচুরি ১৯৫২ সাল থেকে চলে আসছে। গত ৬৭ বছরে পোশাক-আশাকের আর পতাকার রং পরিবর্তন হলেও খাসলতের কোনো রকমফের হয়নি। লাশের সংখ্যা কম হওয়ায় কর্তৃপক্ষ এখন বুক ফুলিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে বলে বেড়াচ্ছে, যত বড় দুর্ঘটনা, তত বড় ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি মাপার একক যখন লাশ, তখন তাদের কাছে এর চেয়ে বেশি আর কী আশা করা যায়? কোনো লাশ পাওয়া না গেলে হয়তো বলত, কোনো দুর্ঘটনাই ঘটেনি।বরমচালে এই দুর্ঘটনার পর থেকেই সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। রাত ১১টায় দুর্ঘটনা ঘটলেও পরদিন সকালের আগে উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষার সময় জনজীবনের দুর্ভোগ, যাত্রীসেবা ও পণ্য পরিবহন বন্ধের আর্থিক ও সামাজিক লোকসানকেও আমলে নিতে হয়। চিন্তা করতে হয় মানুষ কি আর আগের মতো নিরাপদ বোধ করবে, না নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। নিরাপত্তা লাপাত্তা হওয়ারও একটা আর্থিক মূল্য আছে। সড়কে আস্থা হ্রাস পাওয়ায় সময় একটু বেশি লাগলেও মানুষ রেলের প্রতি ঝুঁকছিল, সেটাকে পুঁজি করে রেলের যখন পরিষেবা আরও উন্নত করে মানুষকে রেলের প্রতি আস্থাশীল রাখার চেষ্টা করা উচিত, তখন বাঁশের পট্টি দিয়ে রেললাইনের দায়সারা মেরামতের ছবি দেখি পত্রিকার পাতায় পাতায়।যেকোনো যানবাহন দুর্ঘটনা, বিশেষ করে রেল দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তির সংখ্যা নির্ধারিত হয় দুর্ঘটনার সময়, প্রকৃতি, স্থান এবং যানবাহনটি কত গতিবেগে ছুটছিল তার ওপর। মূলত, গতিবেগই হতাহত ব্যক্তির সংখ্যা নির্ধারণের প্রধান নিয়ামক। বাংলাদেশে যেসব রেলগাড়ি যাতায়াত করে, সেগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ গতি গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার। সড়কের মতো যানজটের বালাই না থাকলেও কেন রেলগাড়ি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই গতিসীমার বাইরে যেতে পারে না, তার কারণ আমাদের সবার জানা। এই গতিসীমা রেলসেতুগুলোর ওপরে চলার সময় বা নাজুক আর ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইনে আরও নিয়ন্ত্রিত থেকে। ঘণ্টায় পাঁচ কি দশ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলে না। হতাহত ব্যক্তির সংখ্যা কম হওয়ার এটাই মূল কারণ।প্রায় ২৬ হাজারের মতো লোকবল নিয়ে তিন হাজার কিলোমিটারের রেলপথ আছে বাংলাদেশে। রেললাইন নিরাপদ রাখার জন্য ব্রিটিশদের করে দেওয়া রক্ষণাবেক্ষণ ম্যানুয়াল মেনে চললে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার কথা নয়। বাংলাদেশের পরিবহন নিয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি জানান, রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি কমই নজর দেওয়া হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণ করে নিরাপদ আর টেকসই রাখার সংস্কৃতিটা আমাদের গড়ে উঠেছে না। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় স্থানীয় লোকজন রেলপথের ত্রুটির বিষয়গুলো তুলে ধরে। ফলে, অনেক সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বরমচালের ক্ষেত্রেও স্থানীয় লোকজন বিপদের বাঁশি বাজিয়েছিল অনেক আগেই। কর্তৃপক্ষের কানে সেটা পৌঁছায়নি বা পাত্তা পায়নি। রূপপুরের বালিশের নিচে সেসব চাপা পড়তে পারে বা হারিয়ে যেতে পারে ঈদের চাঁদের বিতর্কে।কুলাউড়ার দুর্ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি হয়েছে। দুটি কমিটির সবাই রেল কর্মকর্তা। নিজেদের গাফিলতির কী তদন্ত তাঁরা করবেন? কোনো নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে কেন তদন্ত কমিটিতে রাখা হলো না?সমস্যা সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে—সমস্যাটা স্বীকার করা। সেটা না করে অং বং চং দিয়ে সবকিছু বালিশের নিচে চাপা দিলে কে জানে কবে তাদের মোবাইলেও শেষ বার্তা আসবে ‘আম্মা আমি ঢাকায় যাচ্ছি’। অথবা একটি বালিকাকে দুর্ঘটনাস্থলে বলতে শোনা যাবে, ‘আম্মার মাথা পাচ্ছি না।’গওহার নঈম ওয়ারা: লেখক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মী।
ছোট মঞ্চ। তাতে একদল শিশু গোল হয়ে মনের আনন্দে ছড়া কাটছে, ‘ফড়িংকে খাব—খেতে দিব না...তালাটাকে ভাঙব—ভাঙতে দেব না...’। মঞ্চের সামনে গোলাকৃতির একচিলতে ফাঁকা জায়গা। তাতে আরেক দল কচিকাঁচা মেতেছে কাবাডি খেলায়। ফাঁকা জায়গার পাশ ঘেঁষে বাঁশের উঁচু দেয়াল। পাহাড়ে চড়ার মতো করে সেটি বেয়ে ওপরে উঠছে ওরা। কেউ কেউ বাঁশের কাঠামোতে বাঁধা রশির জাল বেয়ে নামছে নিচে। আর গ্যালারিতে বসে শিশু–কিশোরদের এসব কসরত প্রাণভরে উপভোগ করছেন আবাসিকের বড়রা। শিশু–কিশোরদের বিনোদনের সংকটের এই যান্ত্রিক নগরে এমন দৃশ্যকাব্যের দেখা মিলল মোহাম্মদপুরে।মোহাম্মদপুরের বছিলায় ওয়াসিপুর আবাসিক এলাকার একটি ফাঁকা প্লটে শিশু–কিশোরদের জন্য তৈরি করা হয়েছে খেলার এসব অস্থায়ী স্থাপনা। প্রতিটি স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে বাঁশ দিয়ে। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে ‘ব্যাম্বু প্লে স্পেস’। তবে শিশুদের কাছে এটি পরিচিত ‘খেলাঘর’ নামে।‘পাড়া’নামের একটি গবেষণাধর্মী স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান এই ‘ব্যাম্বু প্লে স্পেস’ নির্মাণের উদ্যোক্তা। ‘লিডো পিস হোম’ নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের সহায়তায় বুয়েট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা এর নকশা ও নির্মাণে কাজ করেছে।বাঁশের এই অভিনব খেলাঘরটিতে রয়েছে ২০ ফুট উঁচু একটি ‘রক ক্লাইম্ব’। বাঁশের খাড়া দেয়ালের সঙ্গে আংটা লাগানো। তা বেয়ে ওপরে উঠছিল দুই কিশোরী আরজু রহমান ও জেসমিন আক্তার। তারা বলল, ‘এখানে প্রতি বিকেলে আসি ক্লাইম্বিংয়ের টানে। টেলিভিশনে পর্দায় দেখতাম অভিযাত্রীরা রশি বেয়ে পাহাড়ে উঠছে। এখানে ক্লাইম্ব করে চূড়ায় ওঠার রোমাঞ্চটা উপভোগ করি।’রক ক্লাইম্বের পাশেই রয়েছে ১৫ ফুট উঁচু একটি ‘স্পাইডার ওয়েব’। স্থাপনাটা ঘিরে শিশুরা বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে নিত্যদিন। স্থাপনাটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে শিশুরা খুব সহজেই ওপর থেকে নিচে, নিচ থেকে ওপরে ওঠানামা করতে পারে। পা ফসকালেও দুর্ঘটনা ঘটার কোনো আশঙ্কা নেই, মাকড়সার জালের মতো দড়ির বিশেষ ধরনের বুননে আটকে থাকবে শরীর। ছোট মঞ্চের পাশ ঘেঁষে ১০ ফুট উঁচু ‘র‌্যাম্প স্পেস’ পুরো স্থাপনাটিকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছে, যাতে উঠলে পাখির চোখে পুরো খেলাঘরের কার্যক্রম উপভোগ করা যায়। ব্যতিক্রমী নকশার কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরাও এটি সহজেই ব্যবহার করতে পারবে।এ ছাড়া বাঁশের খেলাঘরে রয়েছে একটি ছোট মঞ্চ। এখানে শিশু–কিশোর থেকে আবাসিকের বাসিন্দারাও খুব সহজেই নাটক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারে। মঞ্চের সামনে দর্শকদের জন্য রয়েছে ৮০ থেকে ৯০ আসনের একটি ছোট গ্যালারি। আর বিশেষ ধরনের দুলুনি ‘টায়ার সুইং’ ব্যাম্বু প্লে স্পেসে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।ব্যতিক্রমী নির্মাণসৌকর্য ও সহজলভ্য উপকরণ বাঁশ দিয়ে স্থাপনাটি নির্মাণ করার ফলে এটি দেখতে আশপাশের আবাসিক এলাকার অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন ভিড় করে। এমন একজন মোহাম্মদপুরের নুরুল হুদা তাঁর চার সন্তান নিয়ে স্থাপনাটি দেখতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই এক টুকরো জায়গার মধ্যে শিশুরা কাবাডি খেলছে, পাহাড় বেয়ে উঠছে, দুলুনিতে দুলছে—সত্যিই অবিশ্বাস্য। ঢাকা শহরে খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। তাই এ রকম শিশুবান্ধব খেলাঘর প্রতিটি আবাসিক এলাকায় সহজেই হতে পারে।’স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান পাড়া সূত্রে জানা গেছে, বুয়েট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষার্থী, ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক ও ৯ জন স্থানীয় বাঁশের কারিগর ৮০০ বাঁশ দিয়ে স্থাপনাটি নির্মাণ করেছেন। চলতি বছরের গত মে মাসে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। তারপর ৩ মে থেকে থেকেই এটি সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ওই দিন লিডো পিস হোমের শিশু–কিশোরেরা এখানে নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। খেলাঘরের এই জায়গা ব্যক্তিগত। মালিকের সঙ্গে দুই বছরের জন্য উদ্যোক্তাদের চুক্তি হয়েছে। ফলে এই বাঁশের খেলাঘর এখানে থাকবে আগামী ২০২১ সালের মে পর্যন্ত। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে বা সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে এ ধরনের স্থাপনা করতে আগ্রহী হলে তাঁরা সে ক্ষেত্রে সহায়তা করবেন।গবেষণাধর্মী স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ‘পাড়া’র অন্যতম গবেষক জাকারিয়া প্রিন্স ‘ব্যাম্বু প্লে স্পেস’ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতার থেকে আমরা একটি অংশ্রগ্রহণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপনাটি নির্মাণ করেছি। আমরা মনে করি, এ রকম স্থাপনা সাধারণ শিশু–কিশোর, বিশেষ করে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন শিশুদের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে আবাসিকের মানুষের মধ্যে দৃঢ় সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।’
নিখোঁজের পরের দিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ছয় বছর বয়সী এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার সাহাপুরের চরগড়গড়ি গ্রামের করলা খেত থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।নিহত শিশুটির নাম সোহাগ হোসেন। সে চরগড়গড়ি ক্যানেলপাড়া গুচ্ছগ্রামের কৃষক আকমল খাঁর ছেলে। একই গ্রামের বৌটুবানী পাঠশালা স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে।শিশুর বাবা আকমল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সোহাগ গতকাল সোমবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। সন্ধ্যায়ও ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি শুরু করে পরিবারের লোকজন। শিশু সোহাগকে খুঁজে না পেয়ে রাতে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে মাইকিং করা হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে করলা খেতে সোহাগের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন মাঠের কৃষকেরা। তাঁরা তাঁকে খবর দেন। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলের লাশ দেখতে পান।আকমল হোসেন বলেন, কে বা কারা তাঁর ছেলেকে হত্যা করেছে, তিনি জানেন না। তিনি থানায় মামলা করবেন।ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, খবর পেয়ে সকালে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের পাশে শিশুটির খেলার ফুটবলটিও পাওয়া গেছে। গলা ও পিঠসহ শিশুটির শরীরের কয়েকটি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচনে নিজের প্রচার বেশ জোরেশোরে শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স রানিংমেট হবেন কি না, সে ব্যাপারটি ট্রাম্প এখনো খোলাসা করেননি। গত সপ্তাহে ফক্স টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে (রানিংমেট) ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়। জবাবে ট্রাম্প বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এখনো আসেনি। এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে অনেক দেরি আছে। এখনই এ ব্যাপারে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস না করতে বলেন তিনি।পেন্সকে বাদ দিয়ে সাউথ ক্যারোলাইনার সাবেক গভর্নর নিকি হ্যালিকে রানিংমেট করার জন্য ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়ছে। ‘ডেমোক্র্যাটস ফর ট্রাম্প’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি অ্যান্ড্রু স্টাইন দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য, পেন্সের বদলে হ্যালিকে যদি রানিংমেট করা হয়, তা হলে ট্রাম্পের পক্ষে মধ্যবিত্ত ও শহুরে নারীদের সমর্থন পাওয়া সহজ হবে।হ্যালিকে রানিংমেট হিসেবে মনোনীত করা হলে যেসব মধ্যপন্থী ও রিপাবলিকান মনোভাবাপন্ন নারী ভোটার, যাঁরা বর্তমানে ট্রাম্পের প্রতি বিরুদ্ধ মনোভাব পোষণ করেন, তাঁদের দলে ভেড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন স্টাইন।স্টাইনের প্রস্তাবটি এমন এক সময়ে এল, যখন আরও এক নারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন।জনপ্রিয় উপদেশমূলক কলাম লেখক জিন ক্যারল অভিযোগ করেছেন, এখন থেকে ২০ বছর আগে ম্যানহাটনের এক ডিপার্টমেন্ট স্টোরে তাঁকে ধর্ষণ করেন ট্রাম্প। অন্ততপক্ষে দুজন বন্ধুকে তিনি সে সময়ই এই ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন।ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রাম্প বলেছেন, এই নারী মোটেই তাঁর ‘টাইপ’ নয়।অধিকাংশ ভাষ্যকার মনে করেন, হ্যালিকে রানিংমেট করা হলে ট্রাম্প সুবিধা পাবেন। নারী ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি যে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে, তা কিছুটা হলেও ঘোচানো সম্ভব হবে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে।২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প মাত্র ৪১ শতাংশ নারী ভোটারের সমর্থন পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ট্রাম্পের সঙ্গে নারী ভোটারদের দূরত্ব আরও বেড়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পান মূলত নারী ভোটারদের ট্রাম্পবিরোধী মনোভাবের কারণেই।ভারতীয় বংশোদ্ভূত হ্যালি ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় প্রথম দুই বছর জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। সে সময়ই ভাবা হয়েছিল, তিনি হয় ২০২০ সালে ট্রাম্পের রানিংমেট হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। অথবা ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।ট্রাম্প-হ্যালির (প্রেসিডেন্ট-রানিংমেট) নির্বাচনের সম্ভাবনা রিপাবলিকান মহলে বিপুল উৎসাহের সঞ্চার করেছে। রিপাবলিকান নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ আরিক উইয়ারসন সিএনএনের ওয়েবসাইটে এক নিবন্ধে বলেছেন, এই দুজন জুটি বাঁধলে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ট্রাম্পের বিজয় ঠেকানো অসম্ভব হবে।
তমালিকা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর আরণ্যকের ‘রাঢ়াঙ’ প্রদর্শনী কিছুদিন বন্ধ ছিল। এ বছরের জানুয়ারিতে উৎসব উপলক্ষে নাটকটির কয়েকটি বিশেষ প্রদর্শনী হয়। তখন ছিলেন না তমালিকা কর্মকার। আবারও রাঢ়াঙ-এ মঞ্চে দেখা যাবে তাঁকে।আজ মঙ্গলবার ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে রাঢ়াঙ। নাটকের এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ১১ মাস পর মঞ্চে ফিরছেন তমালিকা। এত দিন পর মঞ্চে ফেরা নিয়ে তিনি উচ্ছ্বসিত যেমন, তেমনি ভীতও। তমালিকা বলেন, ‘আমাকে তো সব সময় মঞ্চ টানে। ভালোবাসি মঞ্চনাটক। আবারও সেই ভালোবাসার জায়গায় ফিরছি। মাঝে চারটা শো করতে পারিনি। কিছুটা কষ্ট ছিল। এখন আবার নিয়মিত হচ্ছি, ভাবতেই অন্য রকম ভালো লাগছে।’যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর রাঢ়াঙ প্রদর্শনী বন্ধের প্রসঙ্গ তুলতেই তমালিকা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ভীষণ সম্মানিত বোধ করেছি। আমার জন্য সর্বোচ্চ সম্মান। একজন গুরু, একজন শিক্ষক, একজন নির্দেশকের কাছ থেকে এমন সম্মান পাওয়া ভীষণ সৌভাগ্যের।’ রাঢ়াঙ নাটকের রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ।মঞ্চে তো ফিরলেন, টেলিভিশন নাটকেও কি অভিনয় শুরু করেছেন কিনা—জানতে চাইলে তমালিকা বলেন, ‘মাত্রই তো দেশে ফিরলাম। মঞ্চে কাজ শুরু করেছি। কয়েক দিনের মহড়ায় মঞ্চনাটকের জন্য প্রস্তুত হয়েছি। টেলিভিশন নাটকের জন্য কেউ ডাকলে তখন ঠিকই অভিনয় শুরু করব। আমি তো অভিনয়ের মানুষ, অভিনয় করাটাই আমার কাজ।’জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর অনেকেই বলেছিলেন, তমালিকা আর দেশে ফিরবেন না। বিষয়টি মনে করিয়ে দিতেই তমালিকা বলেন, ‘এটা খুব হাস্যকর ব্যাপার ছিল। সবাই যদি খোঁজ নেয়, তাহলে দেখবে, দুই বছর পরপরই আমি কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছি। এবারও আমি একটু বিরতি নিতেই গিয়েছি।’
ফেসবুকের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার পরিকল্পনা সামনে আসার কয়েক দিনের মধ্যে বিটকয়েনের দাম তরতর করে বেড়ে চলেছে। ১৫ মাসের বেশি সময় পর গতকাল সোমবার রেকর্ড উচ্চতায় উঠে যায় বিটকয়েনের মূল্য। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিটকয়েনের মূল্য ১১ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি সপ্তাহে ফেসবুকের লিব্রা ক্রিপটোকারেন্সি চালু হওয়ার খবর আসার পর থেকেই বিটকয়েনের দাম বাড়তে থাকে। এ সপ্তাহে দুই হাজার ডলার পর্যন্ত দাম বেড়েছে এ মুদ্রার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে বিটকয়েনের মূল্য।২০১৭ সালে এ মুদ্রার মূল্য ২০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। তবে এরপর গত বছর থেকে এর দাম কমতে শুরু করলে অনেক বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্ব মুদ্রাবাজারে বিটকয়েনের আবির্ভাব ঘটে ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে। লেনদেন পুরোটাই ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বা অনলাইনে।বিটকয়েন মূলত ইন্টারনেটের জগতে অনেকটা শেয়ার বা মুদ্রার মতো লেনদেন হয়। তাই নিয়মিত এর দর বা বিনিময়মূল্য ওঠানামা করে। এটি নিজেই ডলার বা ইউরো এসব আন্তর্জাতিক মুদ্রার মতো বিনিময়মাধ্যম।পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে সীমিত পরিসরে বিটকয়েনকে ব্যবহার করা হয় নিজস্ব মুদ্রার মতো। ক্রিটোগ্রাফিক প্রক্রিয়ায় বিটকয়েনের লেনদেন সম্পন্ন হয়।
ভারতকে হারানোও অসম্ভব নয়, বলছেন সাকিবসাকিব আল হাসান যা বললেন, তা থেকে কালকের ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন নিয়ে প্রতিবেদনের শিরোনাম দিয়ে দেওয়া যায় ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’।ক্রিকেট বিশ্বকাপে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি রান সাকিবের। এক ম্যাচে সবচেয়ে ভালো বোলিং সাকিবের। যৌথভাবে সবচেয়ে বেশিবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন সাকিব। পুরো বিশ্বকাপেই সবচেয়ে সুখী খেলোয়াড়ও তো সাকিবেরই হওয়ার কথা! তো এই যে তিনি সুখের হাওয়ায় ভেসে ভেসে একটার পর একটা সাফল্য তুলে নিচ্ছেন, এর পেছনের রহস্যটা কী?আঁকাবাঁকা ও চড়াই-উতরাই পথ পেরিয়ে রোজ বোলের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে গিয়ে আবারও জানা গেল, সবকিছুর গোড়ায় তাঁর ফিটনেস। আইপিএলে ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেয়ে ফিটনেসের ওপর জোর দিয়েছিলেন সাকিব। ওজন কমিয়ে ঝরঝরে হয়ে ফিট তো হয়েছেনই, সঙ্গে পেয়েছেন অফুরান আত্মবিশ্বাস। কাল অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সাকিবের কথা, ‘শারীরিক ফিটনেস আমাকে মানসিকভাবেও শক্ত হতে অনেক সাহায্য করেছে। কঠিন পরিস্থিতি সামলাতে শারীরিক ফিটনেসটা দরকার। আমার মনে হয়, সে জন্যই আমি কঠিন পরিস্থিতিতে ভালো খেলতে পারছি।’সংবাদ সম্মেলনে একটু আগে এসে যাওয়ায় পেছনে বসে আফগান অধিনায়ক গুলবদিন নাইবের কথাও শুনতে পেয়েছেন সাকিব। ইংরেজি, পশতু—দুই ভাষাতেই গুলবদিন শুধু সাকিবের প্রশংসাই করে গেলেন। শুনে মৃদু হেসেছেন সাকিব। তবে গুলবদিন টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোটাকে সঠিক সিদ্ধান্ত দাবি করলেও সাকিব বলেছেন ভিন্ন কথা, ‘আমরা একটু বিস্মিত হয়েছি। কারণ, আগের ম্যাচটাও এই উইকেটে হয়েছে। যারা টসে জিতবে, তারা আগে ব্যাটিং নেবে, এটাই আমাদের ধারণা ছিল।’বাংলাদেশ ২৬২ রান করলেও রোজ বোলের উইকেটে ২৪০ রানই জেতার মতো স্কোর বলেছেন সাকিব, ‘এটা কিন্তু ৩০০-৩৫০ রান করার উইকেট নয়। আমাদের লক্ষ্য ছিল ৫০ ওভার ব্যাট করে অন্তত ২৪০ রান করা। আমরা তা থেকেও ২০-২২ রান বেশি করেছি।’ বোলিংয়ে বাংলাদেশ দলের মূল পরিকল্পনা ছিল যত বেশি ডট বল দিয়ে আফগানিস্তানকে চাপে ফেলা। গুলবদিনের দল নিতে পারেনি সেই চাপটাই।সেমিফাইনালে যাওয়ার প্রথম শর্ত এখন ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের দুটি ম্যাচেই জেতা। সাকিবের কাছে অসম্ভব মনে হচ্ছে না সেটিও, ‘ভারতের বিপক্ষে পরের ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওরা চ্যাম্পিয়ন হতেই এসেছে। ওদের হারাতে আমাদের অনেক ভালো খেলতে হবে। আমার বিশ্বাস, আমাদের সেই সামর্থ্য আছে।’কালকের জয়ের পর ৭ পয়েন্ট নিয়ে আবারও পয়েন্ট তালিকার পাঁচে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ কম খেলা ইংল্যান্ড ৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে। সাকিবের চোখে বাংলাদেশের চেয়ে সেমিফাইনালে যাওয়াটা ইংল্যান্ডের জন্যই সহজ, ‘ওদের তিন ম্যাচের একটিতে জিততে হবে। আমাদের দুই ম্যাচে জিততে হবে দুটি। কাজটা কঠিন, তবে ভালো খেললে অসম্ভব নয়।’বার্মিংহামে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ ২ জুলাই। তার আগের এই লম্বা বিরতির প্রথম চার দিন ক্রিকেটারদের ছুটি। দলের কেউ কেউ লন্ডন বা ইংল্যান্ডেরই অন্য শহরে ঘুরতে যাবেন। কেউ যাবেন সংক্ষিপ্ত ইউরোপ ভ্রমণে। সাকিবের সপরিবার যাওয়ার কথা প্যারিসে। আইফেল টাওয়ারে উঠেই হয়তো দেখতে চান ওপর থেকে দুনিয়াটা কেমন লাগে। সুখী মানুষ সাকিব যে এখন বিশ্বকাপেও আছেন সবার ওপরে!
নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শর্ত শিথিল করে অনগ্রসর এলাকার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও এমপিওভুক্তির উদ্যোগ।শেষ সময়ে এসে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিভুক্ত করার শর্ত কিছুটা শিথিল করার কথা ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সব উপজেলায় এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান রাখতে এবং হাওর, চরাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা, নারী এবং প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনগ্রসর এলাকার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতেই মূলত ওই সব এলাকার প্রতিষ্ঠানের জন্য শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। আবার এমপিওভুক্ত করার জন্য এখন বিভিন্ন এলাকার সাংসদসহ ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের চাপও রয়েছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য ‘প্রভাবশালী ব্যক্তিরা’ জোরালো তদবির করছেন। তবে নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য সব কটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এখন সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সম্মতি পেলেই তালিকা ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ‘প্রচুর চাপ’ থাকায় এমপিওভুক্তি নিয়ে কিছুটা সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা আছে তাদের মধ্যে। এর আগে ২০১০ সালে এমপিওভুক্তির সময় সংকট দেখা দেয়। তখন একবার তালিকা ঘোষণা করেও তালিকা বাতিল করতে হয়েছিল। পরে তালিকা সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা উপদেষ্টার মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছিল।শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নীতিমালার আলোকে আবেদন করেও যেসব উপজেলায় কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি, সেসব উপজেলার ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করার কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে সব উপজেলাতেই এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ মাসে সম্ভব না হলে আগামী মাসেই এমপিওভুক্তির তালিকা ঘোষণা করা হবে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হচ্ছে।এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, এমপিওভুক্তির বিষয়টি এখন চূড়ান্ত অবস্থায় আছে। খুব তাড়াতাড়ি ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁরা।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, তাঁরা নীতিমালার আলোকে যোগ্য হওয়া সব কটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে চান। যদিও সাংসদের অনেকে শুধু নীতিমালার ভিত্তিতে এমপিওভুক্তির পক্ষে নন। তাঁদের বক্তব্য, নীতিমালার পাশাপাশি তাঁদের সুপারিশ গ্রহণ করতে হবে। ১১ জুন সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছে এই প্রস্তাব দেন সরকারদলীয় সাংসদ খন্দকার গোলাম ফারুক। যদিও মন্ত্রী বলেছেন, নীতিমালার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে মাসে মূল বেতন ও কিছু ভাতা পেয়ে থাকেন। বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২৬ হাজারের বেশি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে সাড়ে ৫ হাজারের মতো। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছিল। এরপর এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছেন।গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির জন্য জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা, ২০১৮ জারি করে। তার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার—এই চার মানদণ্ড অনুযায়ী, এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেওয়া হয়। মোট ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করে। সব শর্ত পূরণ করে যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে ২ হাজার ৭৬২টি। এর মধ্যে বিদ্যালয় ও কলেজ ১ হাজার ৬২৯টি এবং মাদ্রাসা ৫৫১টি ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫৮২টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এমপিওভুক্তি কার্যক্রমের জন্য ‘প্রয়োজনীয় অর্থের’ জোগান রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।বাজেট ঘোষণার পর এমপিওভুক্তির কাজের গতি পায়। এখন শেষবারের মতো প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার এ নিয়ে সভা হতে পারে। নীতিমালাতেও অনগ্রসর এলাকার জন্য শর্ত শিথিলের সুযোগ রয়েছে।নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায় প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চান স্বীকৃতি পাওয়া সব কটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই দ্রুত এমপিওভুক্ত করে ঘোষণা দেওয়া হোক।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় অস্ত্রের মুখে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে দুষ্কৃতকারীরা। গতকাল সোমবার রাতে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।নিহত অংসিংচিং মারমা (৩৭) পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কর্মী বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।স্থানীয় লোকজনের তথ্যমতে, মগ পার্টির সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। জেএসএস অভিযোগ, মগ পার্টি একটি সশস্ত্র সংগঠন। আরাকান লিবারেশন আর্মি নামের একটি সশস্ত্র সংগঠনের কিছু দলছুট সদস্য এবং স্থানীয় কিছু বিপথগামী যুবক মিলে এই সংগঠন গড়ে তুলেছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় কিছু নেতার ছত্রচ্ছায়ায় এই সংগঠন কাজ করছে বলে দলটির অভিযোগ। যদিও আওয়ামী লীগ এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এর কোনো অস্তিত্ব স্বীকার করে না।পুলিশ ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে থোয়াইঅংগ্যপাড়ায় দিবাগত রাত একটার দিকে একদল দুষ্কৃতকারী আসে। তারা জেএসএসের সমর্থক অংসিংচিং মারমাকে খোঁজ করতে থাকে। পরে বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ঘুম থেকে তুলে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যায়।রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চহ্লামং মারমা বলেছেন, পাড়া থেকে পৌনে এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে যাওয়ার সন্ত্রাসীরা অংসিংচিং মারমাকে গুলি করে হত্যা করে। পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন সেখানে গিয়ে অংসিংচিংয়ের লাশ উদ্ধার করে। চহ্লামং বলেছেন, অংসিংচিং আগে জেএসএস করলেও পরে নিষ্ক্রিয় ছিলেন।রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থোয়াইঅংগ্যপাড়ার কিছু দূর থেকে আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে অংসিংচিং মারমার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানী লোকজন জানান, আগে তিনি জেএসএস করতেন। তবে বর্তমানে কোনো দল করেন না। তাঁকে কেন এবং কারা হত্যা করেছে, তদন্তে জানা যাবে।বান্দরবানে গত মাসেই আওয়ামী লীগ ও জনসংহতি সমিতির একাধিক নেতা-কর্মী অপহরণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ৭ মে বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের তাইংখালী এলাকায় বিনয় তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা ও ফোলাধন তঞ্চঙ্গ্যাকে অপহরণ করা হয়। এর দুই দিন পর ৯ মে একই উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের ৩ নম্বর রাবারবাগানে জয়মনি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁরা সবাই জেএসএসের কর্মী-সমর্থক ছিলেন। এরপর ১৮ মে রাজবিলা ৮ নম্বর রাবারবাগানে আওয়ামী লীগ নেতার ভাই ক্যচিংথোয়াই মারমাকে গুলি করে হত্যা করে দুষ্কৃতকারীরা। ২২ মে রাতে কুহালং ইউনিয়নের উজিমুখ হেডম্যানপাড়া এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের পৌর শাখার সহসভাপতি চথোয়াইমং মারমাকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও জেএসএস একে অপরকে দায়ী করেছে। তবে দুই দল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পাট ও আউশ ধান আবাদের ভরা মৌসুমেও যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ছয় জেলার ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৬ হেক্টর চাষযোগ্য জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকছে। যা মোট চাষযোগ্য জমির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ফলে এ বছর পাট ও খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা রয়েছে।বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প থেকে চলতি মৌসুমে কৃষক সময়মতো প্রয়োজনীয় পানি পাননি। এদিকে বৃষ্টিপাতও এ বছর তুলনামূলক কম। খরায় পুড়ছে মাঠ। সেচ খরচ বাড়ার ভয়ে কৃষক ধান ও পাট চাষে তেমন আগ্রহ দেখাননি। এ ছাড়া গত বোরো মৌসুমে কৃষক ধানের ন্যায্য দাম পাননি। ফলে আউশ ধান চাষে কৃষক নিরুৎসাহিত হয়েছেন। এতে কৃষিজমি অনাবাদি পড়ে থাকছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগের যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫৩ হেক্টর। এর মধ্যে চলতি খরিপ-১ (১৬ মার্চ থেকে ১৫ জুলাই) মৌসুমে পাট, আউশ ধান, সবজিসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হেক্টর ৬১৭ হেক্টর জমিতে। হিসাব অনুযায়ী অনাবাদি থাকছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৬ হেক্টর জমি।জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের উপপরিচালক সুধেন্দু শেখর মালাকার বলেন, ‘এ বছর আউশ ও পাট মৌসুমে কুষ্টিয়ার জিকে প্রজেক্ট থেকে সময়মতো প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করা হয়নি। যে কারণে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহের প্রত্যন্ত মাঠে কৃষক কম খরচে সেচের পানি পায়নি। এ জন্য অনেকে সেচ খরচ বাড়ার ভয়ে আউশ ধান চাষে ততটা আগ্রহী হয়নি। বৃষ্টিপাতও এবার অনেক কম। এ ছাড়া এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু কৃষক ধানের তেমন দাম পায়নি। ফলে তারা ধান চাষে কিছুটা আগ্রহ হারিয়েছে।’জিকে প্রকল্পের আওতায় সেচ কার্যক্রম চলমান রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে গত ২৯ মে পাউবো কুষ্টিয়ার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে একটি চিঠি পাঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক।ওই চিঠিতে বলা হয়, জিকে প্রকল্পের আওতায় সেচ কার্যক্রম চলমান না থাকায় আউশ ধান আবাদে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া আবাদকৃত আউশের জমি পানির অভাবে ইতিমধ্যে ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে কুষ্টিয়ার খাদ্য উৎপাদনে কাক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘জিকে সেচ প্রকল্পের পানি কৃষক সময়মতো পায়নি। এতে আউশ আবাদে সমস্যা হয়েছে।’জানতে চাইলে পাউবো কুষ্টিয়ার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুণ্ডু বলেন, ‘ওই সময়ে সেচপাম্প বন্ধ রেখে বার্ষিক মেরামতের কাজ করা হয়েছে। যে কারণে তখন পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে ১০ জুন থেকে সেচের পানি খালে সরবরাহ করা হচ্ছে।’কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৬ মার্চ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত আউশ আবাদের মৌসুম। ১৫ জুন পর্যন্ত ছয় জেলার মধ্যে মাগুরায় আউশ ধানের আবাদ সবচেয়ে কম হয়েছে। এই জেলায় ৫ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২ হাজার ৩৮০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। এ ছাড়া যশোরে ১৯ হাজার ১৫০ হেক্টরের বিপরীতে ৪ হাজার ৩৬০ হেক্টরে, ঝিনাইদহে ৩৩ হাজার ৮৫ হেক্টরের বিপরীতে ২৫ হাজার ৩৪০, কুষ্টিয়ায় ২৯ হাজার ২৩১ হেক্টরের বিপরীতে ২০ হাজার ২২৫, চুয়াডাঙ্গায় ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টরের বিপরীতে ১১ হাজার ১৮০ ও মেহেরপুরে ১৯ হাজার ৯০০ হেক্টরের বিপরীতে ১২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।যশোর সদর উপজেলার সাড়াপোল গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান এ বছর চার বিঘা জমিতে আউশ ধানের আবাদ করেছেন। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফসলের মাঠে এখন খরা চলছে। দিনে দুবার সেচ দিয়ে খেত ভেজাতে হচ্ছে। এতে তাঁর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, ‘আউশ ধান করার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণসহ এক হাজার টাকা ভর্তুকি পেয়েছি। ওই টাকা না নিলে আমি এ বছর আউশ ধান করতাম না। গত বোরো ধানের ন্যায্য দাম পাইনি। সে ধান এখনো ঘরে রয়েছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেচ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এবারও লোকসান গুনতে হবে।’এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের উপপরিচালক সুধেন্দু বলেন, ‘আউশ ধানের বীজতলার বয়স ২০ থেকে ২২ দিন হলে চারা রোপণ করা যায়। এ ধান লাগানোর সময় আছে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত। বৃষ্টিপাত একটু বাড়লে এ সময়ের আউশ ধানের আবাদ আরও কিছু জমিতে বাড়তে পারে।’
দেড় বছর আগে ধর্মান্তরিত হয়ে পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেন তাজকিরা বেগম (২০)। গত শুক্রবার তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার শেখেরহাট গোমস্তাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।তাজকিরার বাবার বাড়ি কিশোরগঞ্জে বলে জানায় পুলিশ। তবে পূর্ণ ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি।নিহত ব্যক্তির স্বামীর পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা জানান, বছর দুয়েক আগে ঢাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন তাজকিরা। তখন তাঁর নাম ছিল জবা রানী। এ সময় দামোদরপুর ইউনিয়নের শেখেরহাট গোমস্তাপাড়া গ্রামের আল আমিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রেম। আল আমিন সেখানে রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। তাজকিরা ধর্মান্তরিত হওয়ার পর শরিয়ত মোতাবেক তাঁকে বিয়ে করেন আল আমিন। বিয়ের দুই-তিন দিন পরেই তাজকিরাকে বদরগঞ্জে এনে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়ে ঢাকায় ফিরে যান আল আমিন। তখন থেকে তাজকিরা ওই মাদ্রাসাতেই থাকতেন। গত ঈদের ছুটিতে স্বামীর বাড়িতে আসেন তাজকিরা। আল আমিনও বাড়ি আসেন। ঈদের পর তাজকিরা মাদ্রাসায় ফিরে যেতে আপত্তি জানালে এ বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কয়েকবার ঝগড়া হয়। অবশেষে গত শনিবার তাঁকে মাদ্রাসায় রেখে আল আমিন ঢাকা ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে শুক্রবার কীটনাশক পান করেন তাজকিরা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর রাতেই তিনি মারা যান।দুজন প্রতিবেশী বলেন, জোর করে মাদ্রাসায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পারায় সে আত্মহত্যা করেছে বলে তাঁদের ধারণা।ঘটনার পর থেকে আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তাঁর মা আকলিমা বেগম বলেন, কিন্তু গত শুক্রবার স্বামীর সামনেই তাজকিরা বিষ পান করেছে।বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান গতকাল সোমবার বলেন, মেয়ের বাবার নাম–ঠিকানা পাওয়া না যাওয়ায় লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দামোদরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হকের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে স্বামীর ভিটায় তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
বর্ষার ঝুম বৃষ্টিতে যখন ভিজতে থাকবে আপনার জানালার কার্নিশ, পাচিলের ওপর কালো দাঁড়কাক; আম-জাম-জামরুলের দুঃখ ভুলে একচিলতে বারান্দায় ঝোলানো মানি প্ল্যান্ট আর টবে লাগানো পাতাবাহারের তিরতিরে কাঁপন দেখে যখন শৈশবের আমকুড়ানি দুরন্তপনার কথা ভেবে আকুল হবেন, ঠিক তখন যদি আপনার সদ্য পড়তে শেখা শিশুটি আপন মনে গেয়ে ওঠে,ঝড় এল এল ঝড়আম পড় আম পড়কাঁচা আম ডাঁসা আমটক টক মিষ্টি…।তখন কোনো এক গোপন গভীর অব্যক্ত ঊর্ধ্বমুখী অভিমান আপনার গলা বেয়ে ঝাপসা করে দেবে চোখের পাতা! হয়তো আপনিও নিজের অজান্তে গাইতে শুরু করবেন, ‘… তার চেয়ে চল যাই/ করি কিছু খাটনি,/ নুন-ঝাল-তেল মেখে/ করে নিই চাটনি।/ কি যে মজা চাটনিতে/ টক-ঝাল-মিষ্টি,/ দেখলেই জিভ পুরে/ আসে পানি বৃষ্টি,…’। চোখের সঙ্গে সঙ্গে আপনার জিবও তখন আর্দ্র হতে শুরু করবে।বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতিতে আম শুধু একটি ফল নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ। এই একটি ফল আমাদের জীবনে তৈরি করে বয়সভিত্তিক গাদাগুচ্ছের স্মৃতি। মানসপটে তো বটেই, শারীরিকভাবেও আমরা সেসব স্মৃতিকে বয়ে চলি জীবনভর।আমরা যখন ঠিক বাঙালি হয়ে উঠিনি, প্রায় ছয় হাজার বছর থেকে এই ফল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের মানুষ হিসেবে আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। আমের একটি নাম ‘সোমধারা’। পাকা আমের মিষ্টি রসকে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে তা হয়ে যায় সোমধারা! আর কে না জানে, দুধের সঙ্গে আমের রস মিশিয়ে খাওয়া বাঙালির চিরাচরিত অভ্যাস। সোমধারা নামটি থেকে বাঙালি জীবনে আমের গুরুত্ব আর প্রাচীনত্ব বোঝা যায়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, পরিপক্ব আমই শুধু বাঙালি খায় না। মুকুল থেকে খাওয়া শুরু হয়। তারপর কাঁচা ও পাকা আম দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের খাবার। এখন হয়তো আর খাওয়া হয় না, কিন্তু আমের মুকুল দিয়ে তৈরি চাটনি, ঝোল খাওয়ার রেওয়াজ বাঙালির অনেক প্রাচীন।ওপরের ছড়াটিতে নুন-ঝাল-তেল মেখে আমের চাটনি বানানোর কথা বলা হয়েছে। কাঁচা আম কুচি কুচি করে কেটে সরিষার তেল, লবণ, কাঁচা মরিচ বা শুকনো মরিচের গুঁড়ো মেখে তৈরি হয় আমের চাটনি। কোনো কোনো অঞ্চলে এটি ‘ঝালা’ নামেও পরিচিত, সম্ভবত এর ঝাঁজালো স্বাদের জন্য। আম বেশি টক হলে অল্প পরিমাণ চিনি বা গুড় মিশিয়ে নিলে সেটা সবার খাবার যোগ্য হয়ে ওঠে। অঞ্চলভেদে চাটনি খাবার অনেক প্রণালি রয়েছে। সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ এখানে নেই। মূল কথা হলো, আম খাওয়া শুরু হয় এই চাটনি দিয়ে।কাঁচা আমে তৈরি আচার হচ্ছে বাঙালি জীবনের আর এক অধ্যায়ের নাম। প্রায় সব ধরনের ফল এবং সবজি দিয়ে আচার তৈরি করা গেলেও আমের আচার এক এবং অদ্বিতীয়। এটি সংরক্ষণ করে রেখে প্রায় সারা বছর খাওয়া যায়। আচার শুধু খাদ্যবস্তুই নয়, বাঙালির হারিয়ে যাওয়া ছাদ বিলাসের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গও বটে। সরিষার তেল আর বিভিন্ন মসলায় জাড়িত বিচিত্র কায়দায় বানানো আমের আচার কাচের বয়ামে রেখে, মুখ আটকে শরীকি ছাদের এজমালি রোদে শুকানোর স্মৃতি আমাদের প্রাচীন নারীদের এখনো মুগ্ধ করে বৈকি। প্রায় সারা দেশে চাষ হওয়া আম থেকে তৈরি হয় বিচিত্র সব আচার। আম দিয়ে অনেক পদের টক খাবার তৈরি করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো আমচূড়। পরিপক্ব কাঁচা আম সরু ফালি করে কেটে কড়া রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা খাবারই হলো আমচূড়। প্রধানত মসুর ডাল রান্নায় আমচূড় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহী অঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় মাষকলাইয়ের ডালেও আমচূড় ব্যবহার করা হয়। কাঁচা আম দিয়ে আমডাল খাবার প্রচলনও রয়েছে আমাদের দেশে এবং এটি জনপ্রিয় খাবার হিসেবেই পরিচিত। মসুর ডাল রান্নার সময় পাঁচফোড়নে কাঁচা আম সাতলে নিয়ে রান্না করা আমডাল না খেলে আমের মৌসুম ঠিক জমে না বাঙালির। এ ছাড়া আমের টকও জনপ্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত। চোঁচা ফেলে পরিপক্ব কাঁচা আম চাকা চাকা করে কেটে শুকনো মরিচ আর পাঁচফোড়নে সম্ভার দিয়ে রান্না করা হয় আমের টক। সঙ্গে কোথাও কোথাও গুড় বা চিনির ব্যবহারও দেখা যায়। কাঁচা আমের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের শাক রান্নারও প্রচলন রয়েছে। প্রচলন রয়েছে ছোট মাছ দিয়ে কাঁচা আমের তরকারি রান্নার। তবে এসব খাবারের থেকে একেবারে ভিন্ন খাবার হলো আমসত্ত্ব।পাকা আম ভালোভাবে পরিষ্কার করে খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে চিপে রস বের করে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে আঁশহীন করে নেওয়া আমসত্ত্ব তৈরির প্রথম ধাপ। এরপর বড় আকারের প্লেটে অল্প সরিষার তেল মাখিয়ে রোদে রেখে গরম করে নিয়ে তার ওপর রস ঢেলে রোদে শুকিয়ে নিয়ে তৈরি করা হয় আমসত্ত্ব। এভাবে কয়েকটি স্তরে তৈরি করা যায় আমসত্ত্ব। যদি আম টক হয় তবে সে ক্ষেত্রে চিনির বা গুড়ের সিরা মিশিয়ে আমের রসকে মিষ্টি করতে হবে (আম্রকুঁড়ির গন্ধে তোমায় স্বাগত বৈশাখ, মাহবুব সিদ্দিকী)। আমসত্ত্ব তো তৈরি হলো। এবার খাওয়া হবে কীভাবে? রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং সে পথ বাতলে দিয়েছেন, “আমসত্ত্ব দুধে ফেলি/ তাহাতে কদলী দলি/ সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে/ হাপুস হুপুস শব্দ চারিদিক নিস্তব্ধ/ পিপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে।” দুধে আমসত্ত্ব দিয়ে তাতে পাকা কলা আর সন্দেশের সংযোগ মানেই বেচারা পিঁপড়ার কান্না!শুধু বিভিন্ন খাদ্যই তো নয়। আম দিয়ে পানীয়ও তৈরি হয়। বিভিন্ন ‘জুস বারে’ গ্রিন ম্যাঙ্গো জুস পান করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। কাঁচা আম আগুনে পুড়িয়ে চিপে সেই রস দিয়ে বানানো ‘আমের পানা’ আমাদের জীবনে এখন কিছুটা অপ্রচলিত। তবে পাকা আমের রসের আমদুধ এখনো খাওয়া হয় কোনো কোনো পরিবারে। এই বল-বীর্যবর্ধক আমদুধের কারণেই আমের আর এক নাম ‘সোমধারা’।সে জন্য আগেই বলেছি, আম বাঙালি জীবনে শুধু একটি ফল নয়। এটি জীবনচর্যার অনুষঙ্গও বটে।
চলচ্চিত্রে ভালো গানের জন্য অনেক পরিচালক বিদেশ যাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, দেশে ভালো মানের শিল্পী, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক থাকা সত্ত্বেও বিদেশ যাওয়াটা মোটেও ঠিক নয়। যারা যাচ্ছেন, তাঁদের মতে, পেশাদারত্ব ও মানসম্মত গান তৈরির ক্ষেত্রে বহু বিকল্পের সুযোগ থাকায় তাঁরা বাইরে কাজ করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যারা বাইরে কাজ করেন তাঁদের মতে, দেশে সবারই মেধা আছে, শুধু মানসিকতার পরিবর্তন করতে পারলে বাইরের চেয়ে অনেক ভালো কাজ দেশে সম্ভব।দেশের চলচ্চিত্রে ভারতীয় সুরকার ও সংগীত পরিচালকদের মধ্যে নিয়মিত কাজ করছেন আকাশ সেন ও স্যাভি। এর বাইরেও আছেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, ডাব্বু ঘোষাল ও লিংকন। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া আলোচিত সিনেমা বসগিরি, রক্ত, অগ্নি, ডুব, দেবী, আয়নাবাজি, সম্রাট, নবাব, ঢাকা অ্যাটাক এবং সর্বশেষ পাসওয়ার্ড ছবিতে দেশের বাইরের শিল্পী ও সংগীত পরিচালকসহ অনেক শিল্পী কলাকুশলী কাজ করেছেন।আগে থেকে বাংলাদেশে বিদেশি শিল্পীরা টুকটাক কাজ করলেও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার বদৌলতে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় বলে চলচ্চিত্রপাড়ার অনেকে মনে করেন। ২০১৩ সালে আমি শুধু চেয়েছি তোমায় চলচ্চিত্রে পরিচালক অনন্য মামুন বাইরের দেশের শিল্পী দিয়ে গান করান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে গুণী শিল্পী, গীতিকার ও সংগীত পরিচালকের অভাব নেই। কিন্তু গুণের অভাব আছে।’ বিষয়টি পরিচালক ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘দেখা যায়, আমি কোনো সংগীত পরিচালককে দিয়ে মিউজিক করিয়ে বললাম, গানটি অমুক শিল্পীকে দিয়ে গাওয়াব, এটা তিনি মানতে পারেন না। অথবা সুর করিয়ে অন্যকে দিয়ে সংগীত পরিচালনা করাব বললেও আপত্তি তোলেন। বিদেশে এ সমস্যায় পড়তে হয় না।’জাজ মাল্টিমিডিয়া তাদের ছবির অর্ধেকের বেশি গানের কাজ করিয়েছে ভারত থেকে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলিমুল্লাহ খোকন বলেন, ‘বিদেশের শিল্পীরা অনেক বেশি পেশাদার। আমাদের দেশেও প্রতিভাবান শিল্পী, গীতিকার, সুরকার সংগীত পরিচালক আছেন। হঠাৎ যারা বেশি কাজ পান কিংবা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন, তাঁদের আচরণে বড় একটা পরিবর্তন আসে। বাধ্য হয়ে বাইরে যেতে হয়।’বসগিরি সিনেমা দিয়ে আলোচিত শামীম আহমেদ রনি। তিনি তাঁর প্রতিটি ছবিতে ভারতীয় শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেন। তিনি বললেন, ‘দেশের একজন সংগীত পরিচালক গান বানানোর পর যদি ছবির পরিচালকের মনঃপূত না হয়, তবে সংগীত পরিচালক তা পরিবর্তন করতে চান না। তিনি বলেন, পরিচালকের বর্ণনামতোই তো গান তৈরি করেছেন, তাই এখন পরিবর্তন করবেন কেন? অর্থাৎ সংগীত পরিচালকেরা নিজের জায়গায় অনড় থাকেন। তাই আমরা দেশের বাইরে থেকে গান তৈরি করি। সেখানে এ সমস্যা নেই।’সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চলচ্চিত্রের গানের ক্ষেত্রে পরিচালক যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই কাজটা হওয়া উচিত। এক গানের অনেকবার সংশোধন হতে পারে। এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত। আমরাও তা দেখি। এসব কারণে দেশের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দুঃখজনক।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিল্পীও বলেন, ‘কোনো সংগীত পরিচালকের সঙ্গে একটি গান নিয়ে কথা হয়, শুরুতে খুব আগ্রহ দেখান। কিন্তু সময়মতো গানটি তিনি দিতে পারেন না। কোনো গানের কথা কিংবা সুর পছন্দ হচ্ছে না বললে যেন অপরাধও হয়।’সত্তা ছবির সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদার বলেন, ‘বিদেশের যেকোনো জিনিস ভালো, এই মানসিকতা আমাদের অনেক দিনের। এটা একধরনের মানসিক দীনতা। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় মানসিকতার পরিবর্তন।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চলচ্চিত্রের দুজন গীতিকবি বলেন, এ দেশে কোনো গায়ক কিংবা সংগীত পরিচালক জনপ্রিয় হলে তাঁকে সময়মতো খুঁজেই পাওয়া যায় না। সংশোধনের কথা জানালে বলেন, এত বছর সংগীত পরিচালনা করছি, আমাদের আবার গান শেখাতে আসে! এমনও হয়, সংগীত পরিচালককে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কিছুদিন পর শুনতে হয়, মাথায় সুর আসছে না। আরও ভাবতে হবে। আসল ব্যাপার হচ্ছে, গানটা নিয়ে তিনি কিংবা তাঁরা কোনো কিছু ভাবেননি!’গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘আমাদের মধ্যে উন্নসিকতা চরম আকার ধারণ করেছে। দূরের বাদ্যই আমরা শুনতে ভালোবাসি অথচ আমরা একবারও ভাবি না আমাদের সংস্কৃতি উন্নত।’
টুর্নামেন্টের শুরুতে শীর্ষ ফেবারিট থাকা ইংল্যান্ড এখন কিছুটা ঝুঁকির মুখে। শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর তাদের ম্যাচগুলো এখন তিনটি শক্ত দলের বিপক্ষে। দলগুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারত। শেষ চারে পৌঁছাতে হলে এই দলগুলোর বিপক্ষে জিততে হবে। এর মধ্যে প্রথমটি আজ তাদের পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লর্ডসে। অস্ট্রেলিয়া গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন। ওরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে, এখন ছন্দটাও মনে হয় পেয়ে গেছে।শুরুতে জেসন রয় যে বিধ্বংসী শুরুটা এনে দিত, ওর চোটের কারণে ইংল্যান্ড সেটা পাচ্ছে না। এ কারণে জস বাটলারের ওপর রান বাড়ানোর অতিরিক্ত চাপ এসে পড়েছে। যার ফলে সে তার বিধ্বংসী রূপটা পুরোপুরি মেলে ধরতে পারছে না। ইংল্যান্ডের বোলিং মোটামুটি ভালো হলেও খুব একটা আতঙ্ক ছড়াতে পারছে না। ওদের ব্যাটসম্যানরা বড় রান করে দেখে দলটির বোলাররা কিছুটা সুবিধা পায়। ইংল্যান্ডের দুটি হারই রান তাড়া করতে নেমে, যেটা ওদের জন্য আরেকটা চিন্তার বিষয়।অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া শুধু ভারতের কাছেই হেরেছে। সেই ম্যাচের পর থেকে তাদের ব্যাটসম্যানরাও ভালো করছে। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার দুজনই এই টুর্নামেন্টে সেঞ্চুরি করেছে। খাজা আর স্মিথও রান করায় ওদের ব্যাটিং এখন খুব শক্তিশালী মনে হচ্ছে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও মনের আনন্দে খেলছে এবং শেষ ওভারগুলোতে রানের গতি বাড়াচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বোলিংটা আরও ভালো হচ্ছে।মিচেল স্টার্ক দ্রুতগতির সঙ্গে ভয়ংকর বোলিং করছে। প্যাট কামিন্স ও কেন রিচার্ডসনও গতির সঙ্গে নিখুঁত বোলিংয়ে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ ধরে রাখছে। জাম্পাও উইকেট তুলে নিচ্ছে, যে কারণে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং ভারসাম্যপূর্ণ ও শক্তিশালী।ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈরথ ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ থেকেও পুরোনো। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কারণে স্মিথ ও ওয়ার্নার নিষিদ্ধ হয়েছিল। ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা সেটা ওদের ভুলতে দিচ্ছে না। যতবারই ওরা মাঠে নামে, প্রতিপক্ষ যে–ই হোক না কেন ব্রিটিশ জনতা ওদের সেটা মনে করিয়ে দেয়। এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এই দুজনকে সেটা আরও বেশি সামলে নিতে হবে। এখন পর্যন্ত ওরা দুজনই তা খুব ভালো সামলে এসেছে এবং পাত্তা না দিয়ে রান করছে। অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারত ম্যাচে বিরাট কোহলি যেভাবে দর্শকদের স্টিভ স্মিথ ও ওয়ার্নারকে দুয়ো না দিয়ে হাততালি দিতে বলল, সেটাই খেলার সত্যিকারের চেতনা। এটা ভারত অধিনায়ককে আকাশের উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে এবং কঠিন হৃদয়ের অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যেও ভালোবাসার জায়গা দিয়েছে।গত কয়েকটি খেলা টান টান উত্তেজনার ছিল আর এই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া দ্বৈরথও তেমনই হবে মনে হচ্ছে।
আম দিয়ে তৈরি করা যায় নানা খাবার। দেশি-বিদেশি স্বাদের মিষ্টান্নও বানানো যায় সহজেইআমের রাবরিউপকরণদুধ ১ লিটার, কনডেন্সড মিল্ক আধা কাপ, খোয়া আধা কাপ, পাকা আমের মণ্ড আধা কাপ, আমের টুকরা ১ কাপ, চিনি আধা কাপ, কাজু কুচি ৩ টেবিল চামচ।প্রণালিকড়াইতে দুধ দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে হবে। সর পড়লে এক পাশে সরিয়ে দিতে হবে ও ক্রমাগত নাড়ুন। দুধ যখন আধা হয়ে আসবে, তখন খোয়া চিনি, কাজু কুচি দিয়ে আবারও নাড়তে হবে। কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে নেড়ে ফুটে উঠলে নামিয়ে আমের মণ্ড দিয়ে নাড়তে হবে। ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে ওপরে আমের টুকরা দিয়ে পরিবেশন করুন। আমের কাশ্মীরি আচারউপকরণকাঁচা আম ২০০ গ্রাম, আদাকুচি ১ টেবিল চামচ, শুকনো মরিচকুচি ২টি, চিনি আধা কাপ, ভিনেগার সিকি কাপ, লবণ সিকি চা-চামচ, আম হালকা সেদ্ধ করার জন্য পানি পরিমাণমতো।প্রণালিআমের খোসা ছাড়িয়ে লম্বা লম্বা টুকরা করে কেটে নিতে হবে। আম লবণপানিতে অল্প একটু সেদ্ধ করে পানিটা ঝরিয়ে নিন। কড়াইয়ে ভিনেগার ও চিনি একসঙ্গে দিয়ে দিন। চিনি গলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। চিনি গলে গেলে এই শিরায় আম দিয়ে ফুটতে দিন। আম একটু সেদ্ধ হলে আদাকুচি দিয়ে দিন। আম ও আদা স্বচ্ছ হয়ে এলে এবং রস ঘন হয়ে এলে শুকনো মরিচকুচি দিয়ে নামিয়ে ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন আমের কাশ্মীরি আচার। চিজ কেকে আম জেলিউপকরণক্রিম চিজ ৩০০ গ্রাম, দুধ ৫০ মিলিলিটার, গুঁড়া চিনি দেড় কাপ, ক্রিম ১৫০ মিলিলিটার, আমের ক্বাথ ১ কাপ (দুই কাপ আমের ক্বাথে চিনি মিশিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে), জেলেটিন সাড়ে তিন চা-চামচ, বাদাম কুকিজ ১০-১২টি, মাখন ৫০ গ্রাম, আমের জেলি ১ প্যাকেট।প্রণালিকুকিজগুলো গুঁড়া করে গলানো মাখন দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। পাশ থেকে খোলা যায়, এমন ছোট কাপ কেকের পাত্রে মাখন ও কাগজ লাগিয়ে ওপরে বিছিয়ে দিন গুঁড়া। রেফ্রিজারেটরে ৩০ মিনিট রাখতে হবে। ক্রিম চিজে দুধ দিয়ে বিটার দিয়ে বিট করে নিন। এতে চিনি মিশিয়ে আবার বিট করুন। ফ্রেশ ক্রিম ফেটিয়ে নিতে হবে। ফেটানো ক্রিম এই ক্রিম চিজ মিশ্রণে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এতে আমের ক্বাথ মেশাতে হবে। জেলেটিনে গরম পানি মিশিয়ে ভালো করে গুলে নিন। এবার গোলা জেলেটিন ক্রিম চিজ মিশ্রণে মেশান। এরপর এই মিশ্রণ জমে যাওয়া কুকিজের গুঁড়ার ওপর ঢেলে দিয়ে আবার রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে ৫-৬ ঘণ্টা। আমের জেলি বানিয়ে নিতে হবে প্যাকেটের নিয়ম অনুযায়ী। জেলি ঠান্ডা হয়ে এলে জমে যাওয়া ক্রিম চিজ কাপ কেকগুলোর ওপরে ঢেলে দিন। রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে ২-৩ ঘণ্টা। জমে গেলে ক্লিপ খুলে পাশের রিং সরিয়ে দিতে হবে। পছন্দমতো সাজিয়ে ঠান্ডা পরিবেশন করুন। আমের শ্রীখণ্ডউপকরণদই ২৫০ গ্রাম, গুঁড়া চিনি পরিমাণমতো, আমের পিউরি ১ কাপ, এলাচি ২টি (গুঁড়ো করা), পেস্তা ও কাঠবাদাম কুচি পরিমাণমতো।প্রণালিপ্রথমে দই একটা কাপড়ে বেঁধে ২ ঘণ্টার জন্য ঝুলিয়ে রাখতে হবে। যাতে দইয়ের সব পানি ঝরে যায়। এবার আমের খোসা ছাড়িয়ে পিউরি করে নিতে হবে। একটি বাটিতে আমের পিউরি, গুঁড়া চিনি, পানি ঝরানো দই খুব ভালোভাবে মেশাতে হবে, যাতে কোনো দানা না থাকে। এর মধ্যে এলাচিগুঁড়া, পেস্তা, কাঠবাদামের কুচি মেশাতে হবে। এবার ছোট ছোট বাটিতে ঢেলে দিয়ে ওপরে পেস্তা ও কাঠবাদামের কুচি ছড়িয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে ১-২ ঘণ্টার জন্য। ফ্রিজ থেকে বের করে ঠান্ডা পরিবেশন করুন। আম ব্লুবেরির ড্যানিশপাফ তৈরি করার উপকরণময়দা ৭০০ গ্রাম, মাখন ১০০ গ্রাম, লবণ ২ চা-চামচ, পানি ৫০০ মিলিলিটার, মার্জারিন ৪৫০ গ্রাম।ব্লুবেরি জ্যাম বানানোর উপকরণব্লুবেরি ১৫০ গ্রাম, চেরি ও ম্যাঙ্গো ১ কাপ, চিনি ১ কাপ, গুঁড়া চিনি সাজানোর জন্য, ডিম ১টি। প্রণালিপাফ তৈরি করার জন্য ময়দায় মাখন, লবণ ও পানি দিয়ে চার থেকে পাঁচ মিনিট ধরে মাখতে হবে। মেখে রাখা খামিটা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে ১৫-২০ মিনিট। ২০ মিনিট পর ডো বের করে নিতে হবে। ডোকে লম্বা করে চৌকো আকারে বেলতে হবে। এবার মাঝখানে মার্জারিন দিয়ে দুপাশ থেকে ভাঁজ করুন। ভাঁজটা দেখতে অনেকটা বইয়ের মতো হবে। এরপর আবার বেলে নিতে হবে। এভাবে পদ্ধতিটা পাঁচ থেকে ছয়বার করুন। এরপর পরিষ্কার ফিল্ম দিয়ে মুড়ে ফ্রিজে রেখে দিন। এভাবে পাফ পেস্ট্রি শিট তৈরি করে ফিল্মে মুড়িয়ে ৩ মাস পর্যন্ত ডিপ ফ্রিজে রেখে দেওয়া যায়। ব্লুবেরি জ্যাম তৈরি করার জন্য ব্লুবেরিগুলোকে ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে। চুলায় প্যান বসিয়ে তার মধ্যে ব্লুবেরিগুলো দিয়ে দিন। তারপর এর মধ্যে চিনি দিন। চিনি গলে ব্লুবেরির সঙ্গে ভালোভাবে মিশে গেলে নামিয়ে নিতে হবে।পাফ পেস্ট্রি শিটগুলো ছোট ছোট চৌকো করে কেটে নিতে হবে। পাফ পেস্ট্রি শিটগুলোর চারপাশ কেটে নিন। ভাঁজ করে পিন হুইলের আকার দিতে হবে। মধ্যে ব্লুবেরি জ্যাম এবং তার ওপর চেরি বসিয়ে দিন। তৈরি করে রাখা ড্যানিশগুলোর ওপর ডিম ব্রাশ করে ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় প্রি-হিট ওভেনে ১৫-২০ মিনিট বেক করতে হবে। বেক হলে তাজা আম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
প্রাচীনকালের কংসহট্ট পরবর্তী সময়ে কানসাট নাম ধারণ করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের রাজবাড়িকে বলা হয়ে থাকে কুঁজা রাজার বাড়ি। এই রাজার শতাধিক বছর বয়সী একটি আমবাগান রয়েছে। বিরাট বাগানটি ‘কানসাট রাজার বাগান’ নামেই পরিচিত। আমের মৌসুমে কানসাটের আরেক পরিচিতি ফুটে ওঠে দেশের বৃহত্তম আমবাজার হিসেবে। তাই আমের রাজ্যে বেড়াতে এসে কানসাট আমের বাজার দেখলেন না, তা কি কখনো হয়!জেলা সদর থেকে মহানন্দা নদীর ওপর বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু পাড়ি দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়ক ধরে যেতে হবে শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে। শিবগঞ্জ যেতে পথের দুই ধারে সারি সারি আমগাছ আপনাকে স্বাগত জানাবে। যেতে যেতেই চোখে পড়বে গাছে গাছে থোকায় থোকায় আম। হাতের নাগালে অনেক আম। এমনকি শুয়ে-বসেও ছোঁয়া যায় এসব আম। আমবাগানের এমন অপরূপ শোভা চোখ জুড়াবে আপনার। পথ চলতেই আরও চোখে পড়বে আমের ডালিবোঝাই বাইসাইকেল আর রিকশাভ্যানের সারি। সবাই ছুটছেন কানসাট আমবাজারের দিকে। দূরদূরান্ত থেকেও আসেন এসব রিকশাভ্যান ও সাইকেলওয়ালা। আসেন আশপাশের উপজেলাগুলো থেকেও। তাঁরা আগের দিন বিকেল থেকে আম পাড়েন গাছ থেকে। এরপর ডালি সাজান। রওনা দেন ভোরের আলো ফোটার আগেই। তবে আশপাশের বাগানগুলো থেকে খুব সকালে আম পেড়ে কানসাট বাজারে নিয়ে আসা হয়। সাইকেলের দুই চাকার মধ্যে চেইনকভারের ওপর বসানো পাটাতনের দুই পাশে বড় দুই ডালিতে পাঁচ মণ পর্যন্ত আম বহন করা হয়। দূরত্ব বিচারে নির্ধারিত হয় মজুরি। কানসাটের বাজারে আমের সরবরাহ এই সাইকেল ও রিকশাভ্যানওয়ালাদের ওপর নির্ভরশীল। খ্যাতে নাই খইলানে জড়ো১৭ জুন কানসাট আমবাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে বিরাট এলাকাজুড়ে সারি সারি আমবোঝাই রিকশাভ্যান ও বাইসাইকেল। এসবের মধ্য দিয়েই এই গরমে গা ঘেঁষে চলাফেরা করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এখানকার আমচাষি ও আমের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার আমের উত্পাদন গত বছরের তুলনায় অনেক কম। কারও মতে অর্ধেক, কারও মতে আরও কম। তবে আগে স্বীকার না করলে এখন পরিস্থিতি দেখে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানালেন, এবারের উত্পাদন গত বছরের তুলনায় ৭০ শতাংশের বেশি নয়। এই হিসাব মানতে রাজি নন আমচাষিরা। তাঁদের বক্তব্য, টানা তিন বছর আমের দরপতনের কারণে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব অসংখ্য আমচাষি ও ব্যবসায়ী আমবাগান পরিচর্যার জন্য ব্যয়বহুল ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। যাঁরা করেছেন, তাঁরাই কেবল ফলন পেয়েছেন। আবার আবহাওয়াও ছিল কিছুটা বৈরী। কিন্তু কানসাট গিয়ে আমের এত সমারোহ দেখে ফলন কমের বিষয়টি মোটেও বোঝার উপায় নেই। এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শ্যামপুর ইউনিয়নের ভবানীপুরের আমচাষি জালাল উদ্দীন বলেন, ‘হারঘ দ্যাশে একটা কথা চালু আছে, খ্যাতে নাই খইলানে (ফসল মাড়াইয়ের বড় উঠান) জড়ো। সে রকুমই হয়্যাছে এবারকার আমের অবস্থা। কানসাটের বাজারে আম দেখ্যা বুঝা যাইবে না ফলনের অবস্থা।’ আম বহনকারী সাইকেলওয়ালাআমবাগান থেকে আম পেড়ে ডালি সাজিয়ে বাজারে বিক্রি পর্যন্ত কাজ করেন সাইকেলওয়ালারা। দূরত্বভেদে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। সঙ্গে দুপুরে খাওয়া। কানসাট আমবাজারে কথা হয় তাঁদের মধ্যে মনাকষার গোপালনগরের ডালিম, সাহাপাড়ার তৌহিদুর রহমান, শ্যামপুর আজগুবির মিকাইল, ভবানীপুরের ইব্রাহিমসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরা জানান, এ সময় শিবগঞ্জের শত শত সাইকেলওয়ালা আড়াই-তিন মাস কাজ করে অন্তত ছয় মাসের খোরাক জোগাড় করেন। এই বাজারে আম বিক্রির সময় কয়েকবার হাতবদল হয়। শেষ পর্যন্ত আমবোঝাই সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা। প্রতি হাত বদলে বাড়তি আয় হয় ১০০ টাকা করে। দু-তিন থেকে সর্বোচ্চ পাঁচবার হাতবদল হয়ে থাকে। সকালে কাঁচা, বিকেলে পাকাকানসাটের আমের বাজারে সকালে বসে কাঁচা আমের বাজার। সকালের দিকে পাকা আমের খোঁজে হয়রান হলেও আপনি কোনো পাকা আম পাবেন না। তবে বিকেলে মিলবে নানা বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদের রসাল সব আম৷ ছোট ‘মণ’ বড় ‘মণ’কানসাট আমের বাজার ও আড়তগুলোতে কাঁচা আম বিক্রির ক্ষেত্রে মণ ধরা হয় ৪৬ থেকে ৪৮ কেজিতে। বহু বছর থেকেই এ ব্যবস্থা চলে আসছে। জেলা প্রশাসন আমচাষিদের কাছ থেকে ৪০ কেজিতে মণ ধরে আম কেনার সিদ্ধান্ত দেয়। কিন্তু বাইরে থেকে আসা আমের ব্যাপারীরা ৪৬ থেকে ৪৮ কেজিতে মণ দরে আম কিনতে অভ্যস্ত হওয়ায় তাঁরা কানসাটের বাজারে না এসে অন্য বাজারে চলে যাচ্ছেন। এতে কানসাটের আমের ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়ছে। এ অভিযোগে তাঁরা গত রোববার আম বেচাকেনা বন্ধ রাখেন। সেদিন বাজারে আম নিয়ে এসে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। পরে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আম ব্যবসায়ীদের বৈঠকের মধ্যে সমঝোতা হয় যে আগের নিয়মেই বেচাকেনা হবে। তবে পাকা আমের ক্ষেত্রে এ মণ ছোট। অর্থাৎ ৪৩ কেজিতে মণ ধরে পাকা আম বিক্রি হচ্ছে এ বছর থেকে। আগের বছরগুলোতে বিক্রি হতো ৪২ কেজিতে মণ ধরে। কীভাবে যাবেনঢাকার শ্যামলী, কল্যাণপুর, আবদুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে হানিফ, দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন বাসযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বড় ইন্দারা মোড়ে হোটেল স্কাই ভিউ ইন, শান্তির মোড়সংলগ্ন আল নাহিদ ও মহাসড়কের পাশে স্বপ্নপুরী আবাসিক হোটেলে পাবেন থাকার সুব্যবস্থা।
আম দিয়ে তৈরি করা যায় নানা পদ। মনমতো মসলা মেশালেই তৈরি হয়ে যায় নানা পদের কাঁচা বা পাকা আমের আচার ও আমসত্ত্ব।বাদামের আমসত্ত্বউপকরণপাকা আমের মণ্ড ১ কাপ, চিনাবাদাম আধা কাপ, চিনি আধা কাপ বা স্বাদমতো, ঘি ১ চা-চামচ।প্রণালিপাকা আমের থেকে রস বের করে নিন। আমের মণ্ডের সঙ্গে চিনি মেশান। চুলায় মাঝারি আঁচে ঘন ঘন নাড়ুন, যেন পাত্রের নিচে লেগে বা পুড়ে না যায়। ছড়ানো কোনো পাত্র বা ডালায় ঘি ব্রাশ করে আমের মণ্ড ও বাদাম পাতলা করে ছড়িয়ে দিন। রোদে শুকাতে দিন। রোদ না থাকলে চুলার তাপে অথবা ওভেনে ১২০ ডিগ্রিতে ১ ঘণ্টা বেক করেও আমসত্ত্ব তৈরি করে নিতে পারেন। পছন্দমতো কেটে পরিবেশন করুন অথবা সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। আমসত্ত্বউপকরণপাকা আম ২ কেজি, চিনি ১ কাপ, লবণ সামান্য (না দিলেও চলে), ঘি বা সরষের তেল ১ চা-চামচ।প্রণালিপাকা আমের রস বের করে ছেঁকে নিন, যাতে কোনো আঁশ না থাকে। এবার স্বাদমতো চিনি ও সামান্য লবণ মেশান। চুলায় মাঝারি আঁচে নাড়ুন, যেন পাত্রের নিচে লেগে পুড়ে না যায়। ঘন হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। ডালা অথবা ডালার মতো ছড়ানো কোনো পাত্রে ঘি অথবা সরিষার তেল ব্রাশ করে আমের সেদ্ধ মণ্ড পাতলা করে ছড়িয়ে রোদে দিন। রেখে দিন যতক্ষণ পর্যন্ত ভালোভাবে না শুকায়। এভাবে কয়েক লেয়ারে শুকাতে পারেন। রোদ না থাকলে চুলার নিচে দিয়ে শুকিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে বাতাস ঢুকবে না এমন বয়ামে রেখে সংরক্ষণ করুন। আমের মোরব্বাউপকরণকাঁচা আম ২ কেজি, চিনি ৩ কাপ, দারুচিনি ২ টুকরা, তেজপাতা ২-৩টি, এলাচি ২-৩টি, লবণ আধা চা-চামচ, খাবার চুন আধা চা-চামচ।প্রণালিকাঁচা আমের সবুজ আবরণ ও অাঁটি ফেলে দুই টুকরা অথবা লম্বা করে চার টুকরা করে নিন। কাঁটাচামচ দিয়ে ভালোভাবে কেচে নিন। দেড় লিটার পানিতে চুন মিশিয়ে আম কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এতে আমের টক বের হয়ে যাবে। এবার চুনের পানি থেকে তুলে সাধারণ পানি দিয়ে আম ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন। আমের সঙ্গে চিনি, এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা ও সামান্য লবণ দিয়ে চুলায় পাত্র বসান। আম যখন কিছুটা লালচে ও চিনি ঘন হয়ে আসবে, তখন চুলা বন্ধ করে দিন। ঠান্ডা হলে বয়ামে ঢেলে সংরক্ষণ করুন। আমের চাটনিউপকরণকাঁচা আম ১ কেজি, চিনি ২ কাপ, পাঁচফোড়ন ১ চা-চামচ, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, লবণ আধা চা-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, সরিষাবাটা ১ চা-চামচ, তেজপাতা ১টি, কিশমিশ আধা কাপ, মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, গুঁড়া করা শুকনা মরিচ ১ চা-চামচ।প্রণালিকাঁচা আম পাতলা করে টুকরা করে নিন। আমের সঙ্গে চিনি, সরিষাবাটা, লবণ, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, তেজপাতা দিয়ে আম সেদ্ধ করে নিন। অন্য পাত্রে সরিষার তেল গরম করে পাঁচফোড়ন ও গুঁড়া করা শুকনা মরিচ ভেজে সেদ্ধ আম ও কিশমিশ ঢেলে নাড়ুন। চাটনির মতো ঘন হয়ে এলে চুলা বন্ধ করে নিন। কাঁচা আমের মসলাদার আমসত্ত্বউপকরণকাঁচা আম ১ কেজি, চিনি আধা কাপ, বিট লবণ ১ চা-চামচ, চাট মসলা ১ চা-চামচ, গুঁড়া করা শুকনা মরিচ ১ চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া সিকি চা-চামচ, সরিষার তেল ১ চা-চামচ।প্রণালিআমের বিচি ও সবুজ আবরণ ফেলে টুকরা করে সেদ্ধ করে নিন। ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। কাঁচা আমের পাল্পের সঙ্গে সব মসলা, চিনি ও লবণ মেশান। ডালা অথবা বেশি জায়গা আছে এমন একটি পাত্রে সরিষার তেল ব্রাশ করে পাতলা করে কাঁচা আমের মণ্ড বিছিয়ে রোদে শুকাতে দিন। চুলার আগুন মাঝারি আঁচে রেখে চুলার নিচে শুকাতে হবে। যখন পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে, তখন ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন পুরো এক বছর।
প্রসারিত পাপড়ির আম ফুলযা লাগবে: ১টি বড় পাকা আম ও ১টি কার্ভিং ছুরি।প্রণালি: প্রথমে আমের এক পিঠের মাঝখানে ছোট ১টি বৃত্ত এঁকে নিন। এরপর বৃত্তের চারপাশ গোল করে কেটে নিন। এখন বৃত্তের মাঝখানে চিহ্ন দিয়ে তিনটি পাপড়ি কেটে নিন। বৃত্তের বাইরের অংশে পাঁচটি পাপড়ি চিহ্নিত করে নিন। পাপড়িগুলো কেটে নিন। মাথা একটু চৌকো করে কাটতে হবে। পেছনের অংশ একটু কেটে ফেলে নিন। এভাবে আরেক সারি পাপড়ি কেটে নিন। এরপর পেছনের অংশ কেটে ফেলে চারপাশে পাঁচটি পাতা চিহ্নিত করে কেটে নিতে হবে। তারপর পাতার মাঝে শিরা কাটুন। নিচে একটু কেটে ফেলে নিন। তারপর সাজিয়েপরিবেশন করুন।আমের গোলাপযা লাগবে: ১টি লম্বা বড় ফজলি আম ও ২টি কার্ভিং ছুরি।প্রণালি: প্রথমে আমে ১টি বৃত্ত চিহ্ন দিয়ে কেটে নিন। বৃত্তের ভেতরের এক পাশে ১টি করে পাপড়ি কেটে নিন। ভেতরে আবার কেটে নিন। এখন ভেতর থেকে একটু অংশ কেটে ফেলে নিন। একইভাবে এক সারি পাপড়ি কেটে নিতে হবে। তারপর আবার বৃত্তটি গোল করে কেটে একইভাবে আবার আরেক সারি পাপড়ি কাটুন। পুরো বৃত্ত কেটে নিন এভাবে। এখন বৃত্তের বাইরের অংশের এক পাশ থেকে ১টি পাপড়ি কাটুন। কাটার সময় পাপড়িটা একটু বাঁকাভাবে ঢেউয়ের মতো করে কাটুন। একটু পেছন থেকে আবার কেটে নিন। এভাবে এক সারি পাপড়ি কেটে নিন। এবার এই সারির পেছন থেকে আবার একটু কেটে ফেলে দিতে হবে। এখন শেষ পাপড়ির পেছন থেকে শুরু করে আবার আরেক সারি পাপড়ি কেটে নিন। পেছন থেকে আবার কেটে ফেলে দিতে হবে। যে পাশে আমটি একটু প্রশস্ত, সে পাশে দুটি অর্ধবৃত্ত কেটে নিন। আরেক পাশে আবার একটি অর্ধবৃত্ত কাটুন। তিনটি অর্ধবৃত্ত কাটা হলে, চার–পাঁচটি পাতা কেটে নিন, যতটা গোল করে কাটা যায়। পাতার পেছনের অংশ আস্তে আস্তে একটু করে কেটে ফেলে নিন। এখন ঠান্ডা পানিতে একটু ভিজিয়ে রাখুন। এরপর সাজিয়ে পরিবেশন করুন। পাকা ফুলযা লাগবে: ১টি সতেজ শক্ত পাকা আম ও ১টি কার্ভিং ছুরি।প্রণালি: প্রথমে আমের এক পিঠের মাঝখানে বৃত্ত এঁকে নিন। এই বৃত্তের চারপাশ কেটে নিন। তারপর বৃত্তের ভেতরে এক পাশে একটি পাপড়ি কেটে নিন পাতলা করে। এর মধ্য থেকে আবার কেটে নিন, একটু ফেলে নিন। আবার একইভাবে পাপড়ি কেটে নিন। এভাবে এক সারি পাপড়ি কেটে আবার বৃত্তটি গোল করে নিন। তবে ভেতরে আবার আরেক সারি পাপড়ি কেটে নিন। সম্পূর্ণ বৃত্ত কেটে নিতে হবে গোলাপ ফুলের মতো করে। এখন বৃত্তের বাইরের অংশে ছয়টি পাপড়ি এঁকে, পাপড়ির আকারে কাটুন। পাপড়ির মাথায় একটু সবুজ অংশ রেখে দিন। পাপড়ির দুই পাশে একটু জিগজ্যাগ করে কেটে নিতে হবে। দুই পাপড়ির মাঝখানে আবার একইভাবে পাপড়ি কেটে নিন। এভাবে তিন সারি পাপড়ির আকারে কেটে নিন। এরপর পেছনের অংশ একটু কেটে ফেলে দিন, যাতে পাপড়ির নিচের অংশ না দেখা যায়।
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের কি ব্যর্থতা নেই? অবশ্যই আছে। নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ভুল আর ব্যর্থতার বিষয়টি সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন তিনি। তাঁর সেই ভুলটি ছিল অ্যান্ড্রয়েডের সঙ্গে পেরে না ওঠা। অ্যাপলের আইওএস প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে তিনি অ্যান্ড্রয়েডের উঠে আসাকে ঠেকাতে পারেননি। বার্তা সংস্থা সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ভিলেজ গ্লোবালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিল গেটস দুবার তাঁর ব্যর্থতার কথাটি স্বীকার করেছেন। মাইক্রোসফট যেভাবে গুগলের কাছে হেরেছে, সে বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে তাঁর ব্যর্থতার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।বিল গেটস বলেন, ‘সফটওয়্যারের দুনিয়ায় বিশেষ করে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিজয়ীরা সব বাজার দখল করতে পারে। তাই এ খাতে ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বড় ধরনের ভুলে করে অ্যান্ড্রয়েড আজ যে অবস্থানে আছে, মাইক্রোসফটকে সেখানে নিতে পারিনি। অ্যাপল বাদে মোবাইল প্ল্যাটফর্মের জন্য অ্যান্ড্রয়েড এখন মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যাপলবিহীন অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাত্র একটির জন্য জায়গা খালি আছে।’ দীর্ঘদিন ধরেই কম্পিউটার খাতে অ্যাপলকে হারিয়ে শীর্ষস্থানে মাইক্রোসফট। কিন্তু স্মার্টফোনের যুগে দ্রুত নিজেদের পরিবর্তন করতে পারেনি বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। ২০০০ সালে উইন্ডোজ মোবাইল নামে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ছাড়ে মাইক্রোসফট। ২০০৭ সালে আইফোন বাজারে আনে অ্যাপল। এরপর ২০০৮ সালে অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্ম উন্মুক্ত করে গুগল। সবার আগে মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম আনার পরেও অ্যাপল ও গুগলের চেয়ে পিছিয়ে পড়ে মাইক্রোসফট।ওয়াশিংটনে গতকাল সোমবার ইকোনমিক ক্লাবে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, ‘ওই সময় মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে চলা অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা তাঁর লক্ষ্যভ্রষ্ট করেছিল। মোবাইল খাতে কাজ করতে তিনি যেসব কর্মী নিয়োগ দিয়েছিলেন,তাদের দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল মাইক্রোসফট।’ বিল গেটস বলেন, ‘আমরা জানতাম,মোবাইল ফোন জনপ্রিয় হবে। তাই আমরা উইন্ডোজ মোবাইল তৈরি করছিলাম। আমরা মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমে আধিপত্য করার বিষয়টি থেকে সরে যায়। আমাদের দক্ষতার মধ্যে যা ছিল,সেটা প্রয়োগ করার বিষয়টিতে বড় ভুল হয়েছিল। আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানের ওই লক্ষ্য অর্জন করা উচিত ছিল। আমরা তা করিনি।’মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘ভুল পদক্ষেপের ফলে মাইক্রোসফটের কোটি কোটি ডলার খরচ হয়েছে আর তা চলে গেছে গুগলের পকেটে।’ যুক্তরাষ্ট্রে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড। ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের ৮৫ শতাংশই অ্যান্ড্রয়েডনির্ভর ছিল।বিল গেটস বলেন, ‘এখনো আমরা উইন্ডোজ ও মাইক্রোসফট অফিসের ক্ষেত্রে অনেক শক্তিশালী ও শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। আমরা যদি ওই একটি ভুল না করতাম, তাহলে শীর্ষস্থান পাকাপোক্ত করে রাখতাম পারতাম।’বিল গেটস অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন। ২০০৮ সালে মাইক্রোসফটের দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে অবসরে যান। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাইক্রোসফট পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তিনি সরে দাঁড়ান।
এখন ফলের বাজারে গেলে যেন আমের ঘ্রাণ পাগল করে। বাজারে থরে থরে সাজানো পাকা আম। কিন্তু কিনতে গেলেই অনেকের মনে খটকা লাগে, এত আমের মধ্যে আসলে কিনব কোন আম? কোনটা বেশি স্বাদের হবে—মিষ্টি রসের গোলায় মুখ ভরে যাবে?আবার সন্দেহ জাগে, এগুলো খাঁটি আম তো? মানে কোনো রাসায়নিক দিয়ে আম দূষিত করা হয়েছে কি না? ফল খেলে বল বাড়ে সত্য, কিন্তু কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো এসব আম খেলে মনে হয়, এই বুঝি রসাতলে যেতে হবে।আমের আসল স্বাদটাই যেন কেমিক্যালে পাকা আমে খুঁজে পাওয়া যায় না। বিশেষ ক‌রে যদি আম পাকানোর জন্য কোনো রাসায়নিক বা রাইপেনিং হরমোন ব্যবহার করা হয়। এত সব চিন্তা করতে করতে কারও কারও হয়তো আর আম কেনার সাহসই হয় না। কিংবা সাহস করে কিনলেও সেই পাকা আম খেয়ে রসনার তৃপ্তি মেটে না। তাই বলে কি আমের মৌসুমে আম খাব না? দরদাম যা–ই হোক, খেতে চাই নিরাপদ আম। কীভাবে মিলবে তা? আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া সঠিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে আম কিনছি, তা সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্ত কি না। তবে কেনার আগে বা কেনার সময় কিছু বিষয় জানা থাকলে ও আম চিনলে ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ আম কেনায় তা কিছুটা সাহায্য করতে পারে। হাজার জাতের আমবাংলাদেশে যত রকমের আম হয়, কারও প‌ক্ষেই তার সব চেনা সম্ভব নয়। এ দেশে একসময় দেশি জাতের প্রচুর আম ছিল। একসময় গবেষকেরা ভারতীয় উপমহাদেশে আমের প্রায় ১ হাজার ৬৫০টি জাতের একটা তালিকা তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়। এ দেশে আমের সেই বৈচিত্র্যভরা ভুবনে এখনো রয়েছে হাজারখানেক জাতের আম। ঢাকায় কয়েক দিন আগে শেষ হওয়া জাতীয় ফল প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছিল আমের ৭৫টি জাত। প্রতিটি জাতের আমের চেহারা, রং, রূপ, ঘ্রাণ, স্বাদ, মিষ্টতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য আলাদা। এখনো চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় গেলে অনেক স্থানীয় জাতের আমের দেখা পাওয়া যায়। ভোলাহাট ও গোমস্তাপুরেও আছে অনেক জাতের দেশি আম। ক্ষীরভোগ, মোহনভোগ, রাজভোগ, রানিভোগ, রানিপছন্দ, সিন্দুরা, সুবর্ণরেখা, কুয়াপাহাড়ি, নাক ফজলি, ফজলি, চিনি ফজলি, সুরমাই ফজলি, চিনি মিছরি, জগৎমোহিনী, রাখালভোগ, রাঙ্গাগুড়ি, গোবিন্দভোগ, তোতাপুরি, মিশ্রিকান্ত, জালিবান্ধা, বোম্বাই, ভুতো বোম্বাই, পাহাড়িয়া, গোলাপখাস, কাকাতুয়া, দাদভোগ, চম্পা, সূর্যপুরি, কাঁচামিঠা, কলামোচা, শীতলপাটি, লক্ষ্মণভোগ, গোলাপবাস, কিষাণভোগ, বান্দিগুড়ি, কুয়াপাহারী, রাংগোয়াই, আশ্বিনা, ভাদুরিগুটি, বনখাসা বউ ফুসলানি, ক্ষীরমন, দুধসর, রঙভিলা, পারিজা, আনোয়ারা, দিলশাদ, আম্রপালি, মল্লিকা, বেগমবাহার, পূজারিভোগ, পলকপুরি, রাজলক্ষ্মী, দুধকুমারী, শ্যামলতা, খাট্টাশে, জাওনা, দমমিছরি, মিছরি মালা, মিছরিবসন্ত, মেসোভুলানী, আনোয়ারা, ফুনিয়া, গোলাপবাস, বাতাসাভোগ, ইটাকালি, গোল্লাছুট, পোল্লাদাগী, মোহনবাঁশি, পরানভোগ, বিড়া, ভারতী, বাদশাপছন্দ, বেগমপছন্দ, রাজাপছন্দ, বনখাসা, বাগানপল্লি, কালিগুটি, পাকচারা, কালিয়াভোগ, দুধসর, কোহিতুর, কালিগুলি, হাঁড়িভাঙা, বালিশা ইত্যাদি জাতের আম এখনো দেখা যায়। আধুনিক ও বিদেশি জাতের আমদেশি জাতের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে অনেক আধুনিক ও বিদেশি জাতের আম। কিন্তু সত্যি বলতে কি, দেশি বা স্থানীয় সেসব জাতের স্বাদই ছিল অন্য রকম। আজকাল তো টক বা চুকা আম খুঁজেই পাওয়া যায় না—সবই প্রায় মিষ্টি আর আঁশবিহীন। আগে যে দেশি ল্যাংড়া আম ছিল, তা দিয়ে দুধভাত খেলে অনেকক্ষণ সেই আমের ঘ্রাণ হাতে লেগে থাকত। এখন বড় বড় আধুনিক ল্যাংড়া জাতের আম থেকে আর সেরূপ সুমিষ্ট ঘ্রাণ তীব্রভাবে পাওয়া যায় না। তেমনি খুদি ক্ষীরশা ও ক্ষীরশা বা ক্ষীরশাপাতি আমের বেলায়ও। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী অঞ্চলে এ আম ক্ষীরশাপাতি নামে পরিচিত হলেও আসলে তা হিমসাগর জাতেরই একটি প্রকার। মিষ্টতা ও স্বাদে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি জাতের মতো জনপ্রিয়তা আর কোনো আমের নেই।কোন আম কখন আসেমৌসুমে সবার আগে দেখা যায় গোপালভোগ জাতের আম। গোপালভোগ আম মাঝারি আকারের, পাকা আমের রং হলুদাভ সবুজ, পাকলে খোসা পুরোপুরি হলুদ হয় না, আঁটি পাতলা, আঁশ নেই ও মিষ্টি। তারপর ওঠে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি আম। এ জাতের আমও পাকলে হলুদাভ সবুজ হয়, কখনো কখনো ময়লা হলুদ হয়, মাঝারি আকারের, কমলা শাঁস, খুব মিষ্টি, সুঘ্রাণযুক্ত ও সুস্বাদু। এটাই মনে হয় সেরা আম। ক্ষীরশাপাতি আমের আসল জায়গা হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এরপর ল্যাংড়া। ল্যাংড়া আম অনেকটা আয়তাকার গোল, হালকা সবুজ রঙের খোসা, পাকলেও হলুদ হয় না, খোসা পাতলা, হলুদ শাঁস, ভালোভাবে না পাকলে আম খেলে মুখ চুলকাতে পারে। সুঘ্রাণের সুখ্যাতি রয়েছে ল্যাংড়া আমের। এ সময় লক্ষ্মণভোগ বা লখনা আমও পাওয়া যায়। পাকলে এ জাতের আম উজ্জ্বল হলুদ হয়ে যায়, বোঁটার কাছে লালাভ রং ধরে। এ জন্য একে রঙিন আমও বলে। ঘ্রাণ ভালো। রাজশাহীতে পাওয়া যায় লখনা আম।এরপর ওঠে হাঁড়িভাঙা আম—রংপুর অঞ্চলে এ জাতের আম পাওয়া যায়। ভরা মৌসুম শেষ হলেও গাছে ও বাজারে আরও কিছু জাতের আম থাকে। কিছুটা নাবি জাত হিসেবে ইতিমধ্যে আম্রপালি যেন আমের রানি হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বলে রুপালি আম, আসলে আম্রপালি। আম্রপালি ছিল প্রাচীন ভারতের সেরা নর্তকী। তাই তাঁর সম্মানে সেরা জাতের এই আমের নাম রাখা হয়েছে আম্রপালি। আম্রপালি আমের খোসা মসৃণ বা তেলতেলে, ছোট থেকে মাঝারি আকারের আম, পাকা আম হলুদাভ সবুজ, অগ্রভাগ কিছুটা সরু, শাঁস কমলা ও অনেক মিষ্টি, পাকা আম্রপালি আম বেশ কয়েক দিন ঘরে রাখা যায়। সারা দেশেই আম্রপালি আম পাওয়া যায়। এখন পাহাড়ি অঞ্চলেও আম্রপালি ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। নাবি জাত হিসেবে ফজলি ও আশ্বিনা এখনো জনপ্রিয়। বলতে গেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যত আম হয়, তার অর্ধেকই আশ্বিনা। নাবি জাত আশ্বিনা কালচে সবুজ রঙের, ফজলি আম সবুজ রঙের। আশ্বিনা আমের স্বাদ টক-মিষ্টি, ফজলি টকগন্ধযুক্ত মিষ্টি স্বাদের বড় আম। এখন নাবি জাতের আম হিসেবে অনেকের কাছে প্রিয়। মাঝারি-বড় আকারের বারি আম-৪ জাত ও গৌরমতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ দুটি জাতের আমই সুমিষ্ট ও সুন্দর চেহারার। বছরে তিনবার ধরে, এমন জাত হিসেবে বারি আম–১১ ও থাইল্যান্ডের কাটিমন জাত চাষের প্রতি অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আশা করা যায়, কয়েক বছরের মধ্যে আমরা এ জাতের আমও বাজার থেকে কিনতে পারব। ছোট-বড় নানা আকার-আকৃতির আম রয়েছে এ দেশে। পাকা কাটিমন হলুদ সুঘ্রাণযুক্ত মিষ্টি। এ দেশের সবচেয়ে বড় জাতের আমগুলো হলো ব্রুনাই কিং, বালিশা, আরাজান, বোম্বাই ফজলি ইত্যাদি। ব্রুনাই কিং আম লম্বাটে, মুখের দিকটা সরু, একটা আমের ওজন তিন-চার কেজি। ফজলি আমও বড়, একটা আমের ওজন এক থেকে দেড় কেজি হয়।আমের দিনপঞ্জিআম তো আম-ই, অতশত জাতপাত চেনার দরকার কী? দরকার এ জন্য যে সব জাতের আম একই সময়ে পাকে না। তাই জাতগুলো চেনা থাকলে ও কোন অঞ্চলে কোন জাতের আম কখন পাকে, তা জানা থাকলে জোর করে পাকানো আবাত্তি আম কিনে আমের আসল স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হবে না। গোপালভোগ আম পাকা শুরু হয় ২০ মে থেকে। বিশেষ করে নাটোর ও রাজশাহীতে এ সময় থেকে ভালো পাকা গোপালভোগ পাওয়া যায়। লক্ষ্মণভোগ ২৫ মে ও ক্ষীরশাপাতি আম পাকা শুরু হয় ২৮ মে থেকে। ৬ জুন থেকে পাকতে শুরু করে ল্যাংড়া। ফজলি, সুরমা ফজলি, চিনি ফজলি, নাক ফজলি ইত্যাদি জাত পাকা শুরু হয় ১৬ জুন থেকে। এরপর পাকে আম্রপালি, ২০ জুনের পর থেকে ভালো পাকা আম্রপালি আম পাওয়া যায়। আশ্বিনা আম পাকে ১ জুলাই থেকে। বিভিন্ন জাতের আম কেনার সময় পরিপক্বতার এই সময়গুলো খেয়াল রাখলে ভালো পাকা আম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলার পাহাড়ের আমবাগানে প্রধানত আম্রপালি ও রাংগোয়াই জাতের আম হয়। পাহাড়ে এসব জাতের আম একটু আগে পাকে। স্থান ও আবহাওয়ার কারণে কোনো কোনো জাতের আম পাকার সময় কিছুটা হেরফের হতে পারে।যেসব আম রাসায়নিক বা কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হয়, সেসব আমের রং বদলে যায়, হরমোনের প্রভাবে খোসায় চমৎকার আকর্ষণীয় রং তৈরি হয়। সেসব টসটসে রং দেখে সহজে মন ভোলে, কিন্তু সেসব আমের প্রকৃত স্বাদ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই যে জাতের পাকা আমের স্বাভাবিক যে রং হওয়া উচিত, তা দেখে আম কেনা উচিত। এ জন্য কিছুটা অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। ওটা না থাকলে পরিচিত লোকজনের সাহায্যে আমের বাগান থেকে সরাসরি আম সংগ্রহ করে কুরিয়ারে বাসায় নিয়ে আসা যায়।  কিনতে পারেন বাগান থেকেওএখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর আমবাগান থেকে অনেকেই আম কিনছেন। কিছুটা খোঁজখবর নিয়ে বিশ্বস্ত কোনো বাগান থেকে আম কিনতে পারলে দূষণের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বর্তমানে ল্যাংড়া ও ক্ষীরশাপাতি আম বাগানে এবং বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। ২০ কেজি আম ঝুড়িতে প্যাকিং করতে খরচ ৬০ টাকা, কুরিয়ারে ঢাকায় আনতে খরচ কেজি প্রতি ১০ টাকা। অন্যান্য জেলাতেও আছে কুরিয়ার সার্ভিস। নিজেদের গাড়িতে এবং বিভিন্ন পরিবহনের বাসে করেও আম আনা যায়। নিজেরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমসফর দিয়ে সেখান থেকে দেখেশুনেও আম কিনে আনা যায়। তাহলে একসঙ্গে রথ দেখা আর কলা বেচা—দুটোই হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে আমের বা ফলের মেলা হয়, সেসব জায়গা থেকেও আম কেনা যেতে পারে।লেখক: কৃষিবিদ
দেশের দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবায় সাহায্য করবে ডেনমার্ক। এ লক্ষ্যে ‘ডিজিটালাইজেশন অব আইল্যান্ডস এলং বে অব বেঙ্গল অ্যান্ড হাওর এরিয়া প্রকল্প’–এর মাধ্যমে দেশের দুর্গম দ্বীপ ও হাওর অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবায় ১০ কোটি ইউরো সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি ইসরাফ পিটারসনের সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ সম্প্রতি আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে বৈঠক করেন। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর জ্যাকব কাল জেপসন, বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগমসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকে জানানো হয়, প্রকল্পে সাবমেরিন ফাইবার অপটিক ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চলে সংযোগ স্থাপন করে সেবা পৌঁছে দেওয়া হবে। উপকূলীয় হাওর ও দেশের উত্তর-পূর্ব দ্বীপ অঞ্চলে ফাইবার অপটিক্যাল সংযোগের মাধ্যমে উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ই-সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রামীণ আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে। প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০টি আইসিটি রিসোর্স সেন্টার তৈরি করা হবে। বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হবে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করা যাবে। অবকাঠামোর মাধ্যমে হাওর ও দ্বীপাঞ্চলের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে এবং এর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হবে।প্রতিমন্ত্রী ডেনমার্ককে আইসিটিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। হাইটেক পার্কসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগকারীদের জন্য শুল্ক মওকুফসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাড়িতে পাকা আমের সুবাস, আর বাইরে ঝুম বৃষ্টির ছন্দ। সুস্বাদের অভিলাষী প্রকৃতিপ্রেমী কেউ দারুণ খুশি হবেন নিশ্চয়ই। আমের আমেজ অন্দরে। ধারণাটি নতুন বটে। বেশ অন্য রকমও। নানানভাবে আম খাওয়া হয় এ দেশে, তবে অন্দরসজ্জায় ‘আম’ বহুল প্রচলিত কোনো ‘থিম’ নয়। লবণ-মরিচ মাখানো কাঁচা আমের কথা লিখতে গিয়েও যেন স্বাদগ্রন্থির নিঃসরণ বেড়ে গেল! সোজা বাংলায় যাকে বলে জিবে জল আসা। পাকা আম কেটে, না কেটে, রস করে, দুধ মিশিয়ে—কতভাবেই না খাওয়া হয়। আম খাবার পর আঁটি ফেলে অঙ্কুরোদ্‌গমের স্বপ্নে বিভোর হতাম একসময়। স্বপ্ন পূরণও হতো। কেউ একজন ‘আম আঁটির ভেঁপু’ তৈরি করে দিচ্ছেন, এমন স্মৃতিও ভেসে আসছে মনে। বিভূতিভূষণের অপু-দুর্গার মতো বয়সটাতে ফিরে তো আর যাওয়ার সুযোগ নেই। শহুরে যান্ত্রিকতার মাঝে আম খাওয়া ছাড়া আমের আমেজ আনার জন্য অন্দরসজ্জাটাকেই তাই বেছে নিতে পারেন।রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের প্রধান ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলসান নাসরীন চৌধুরীর কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাক কীভাবে অন্দরে আমের আমেজ আনা যায়— প্রবেশপথেদরজার পাশে বেত বা কাঠ দিয়ে তৈরি আমের আকৃতির আয়না রাখতে পারেন। আয়নার মাপ হতে পারে দেড় ফুট বা আড়াই ফুট। বাড়িতে ঢোকার সময়ই বোঝা গেল বাড়ির মানুষেরা আম ভালোবাসেন।বসার ঘরেআমের ‘থিম’ ব্যবহার করে অন্দর সাজাতে পারেন অনায়াসে। ড্রয়িং রুমের সোফার কভার হয়তো সবুজ। সেন্টার টেবিলে আমের রং ও আকৃতির টেবিলম্যাট রাখতে পারেন। সোফার পেছনের অংশে ঝোলানোর রুমাল হতে পারে পাকা আমের রঙে। রুমালের আকৃতিও হতে পারে আমের মতো। আবার এই রুমালের আকৃতি এমনও হতে পারে, যাতে তা একটি আম আর দুপাশে দুটি পাতা বোঝায়। আম আর পাতার প্রাকৃতিক রঙের সঙ্গে মিল রেখেই বেছে নিন এই কৃত্রিম আম ও পাতার কাপড়ের রং। কুশন কভার হতে পারে কাঁচা-পাকা নানান আমের রঙে। কুশনের আকৃতিও হতে পারে আমের মতো। লিভিং রুমের কুশনগুলো হতে পারে নানান রকম আমের আকৃতি ও রঙের।খাবার ঘরখাবার টেবিলের জন্য চাপা সাদা রঙের কভার বেছে নিতে পারেন। রানার ও টেবিলম্যাটের আকৃতিতে আম আর আমপাতা নিয়ে আসতে পারেন। হয়তো তিনটি আমপাতার আকৃতি জুড়ে দিয়ে একটা রানার তৈরি হলো, টেবিলম্যাট হলো আমের আকৃতির। পাতার রং সত্যিকার পাতার মতোই বেছে নিন, আমের রংও হোক ‘আম’-এর মতো। আবার একইভাবে টেবিলম্যাটে আমের পাশ থেকে পাতা ঝুলে আছে, এমনটাও ফুটিয়ে তোলা যায়।দেয়ালে ফলের ডালা বা আমভর্তি ঝুড়ির চিত্রকর্ম ঝোলাতে পারেন, যাতে অনেক রকম আম। এ ধরনের তিনটা পেইন্টিংয়ের কোলাজ বানিয়ে ফ্রেম তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে।ফ্রিজ বা ডিপফ্রিজে নানান আকারের আমের স্টিকার বা ফ্রিজ ম্যাগনেট আটকে দিতে পারেন। দরজার সামনে আমপাতা গেঁথে ঝুলিয়ে দিতে পারেন কিছুদিনের জন্য। অতিথি আপ্যায়নে কিংবা ঘরের পর্দায়আমের আকার দেওয়া নানা রকম সিরামিক বা কাঠের বাসনকোসন মিলবে কিছু কিছু দোকানে। খাবার পরিবেশনে সেটা ব্যবহার করতে পারেন। আমের জুস পরিবেশনের ট্রে-টি যদি হয় আম কিংবা আমপাতা আকৃতির, তা নজর কাড়বে সহজেই। আমের আকৃতির ক্রোকারিজ তাই এই মৌসুমে ব্যবহার করতে পারেন। ঘরের পর্দায় সবুজ-কমলার সমন্বয় ঘটাতে পারেন। একটি পর্দার বিভিন্ন অংশে এমন রং ব্যবহার করা যেতে পারে, আবার পাশাপাশি কয়েকটি পর্দা মিলিয়েও সমন্বয়টি তৈরি করতে পারেন। শোবার ঘরশোবার ঘরের একটা দেয়াল হয়তো পাকা আমের রঙে করিয়ে নিলেন। অন্য দিকগুলো হালকা সবুজ বা অফ হোয়াইট রঙের থাকল। কিংবা পাকা আমের রঙের পর্দা বেছে নিলেন। আমপাতা গেঁথে পেলমেটের মতো তৈরি করতে পারেন। দেয়ালে একটা ফটোগ্রাফ বা পেইন্টিং রাখতে পারেন আমবাগানের। হয়তো একটা আমবাগানের গাছ থেকে একটা ছোট্ট সাঁওতাল মেয়ে আম পাড়ছে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা হয়তো আমের আকৃতিতে বানিয়ে নিলেন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চা-বাগানঘেরা এলাকা বরমচাল। এখানকার রেলস্টেশনের পাশেই বাড়ি জাহাঙ্গীর উদ্দিনের। গতকাল সোমবার ভোররাত পৌনে চারটার দিকে জাহাঙ্গীরকে দেখা গেল হাঁটুসমান পানিতে টর্চলাইটের আলো ফেলে খোঁজাখুঁজি করতে। কী খুঁজছেন—জানতে চাইতেই বললেন, ‘আহত মানুষ’।চা-বাগান থেকে নেমে আসা বড়ছড়া খালের ওপর ছোট রেলসেতুটি ভেঙে গত রোববার রাতে উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি পানিতে পড়ে যায়। রাতভরই এখানে হতাহত মানুষের খোঁজে পানিতে খোঁজাখুঁজি চালিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। অন্য রকম এক মানবতায় রাত পেরিয়ে ভোর আসে বরমচালে। দিনের আলোয় দূরদূরান্তের লোকও ছুটে আসেন। রেললাইন উপুড় হয়ে, উল্টে-পাল্টে থাকা বগিগুলো দেখে তাঁরাও আর্তনাদ করে ওঠেন।ট্রেনের যাত্রীরা বলছেন, দুর্ঘটনার পরপরই গ্রামবাসী এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। আধা ঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিট পর আসে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্য বাহিনীগুলো। শুধু হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারই নয়, তাঁদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া, ট্রেনযাত্রীদের রাতে আশ্রয় দেওয়া এবং অতিথির মতো রাতে ও সকালের খাবারও খাইয়েছেন স্থানীয় লোকজন।ভোররাত চারটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলে পাওয়া গেলে কুলাউড়ার ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে। বরমচাল স্টেশন থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরের ভাটেরা গ্রাম থেকে উদ্ধারে অংশ নিতে এসেছেন শ-খানেক লোক। ইউপি চেয়ারম্যান তাঁদের নেতৃত্বে। দুর্ঘটনাস্থলে চিৎকার করতে করতে গলা ভেঙে গেছে নজরুল ইসলামের। জানালেন, দুর্ঘটনার খবর শুনেই তিনি পুরো এলাকার মসজিদে মাইকিং করার ব্যবস্থা করেন। ঘুমাতে যাওয়ার সময় মাইকিং শুনে ঘর থেকে বের হয়ে ঘটনাস্থলে আসেন গ্রামবাসী। চলে হাতে হাতে উদ্ধার তৎপরতা।একটি বগি থেকে নিহত একজন ও চারজন নারী যাত্রীকে উদ্ধার করেছেন বলে জানালেন কুলাউড়া স্টেশনের রিকশাচালক মোহাম্মদ ফারুক ও কৃষক হিরা মিয়া। দুজনই জানালেন, ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ার পর একনাগাড়ে ট্রেনের বগিগুলো থেকে যাত্রীদের বের করার কাজ করেন। এরপর পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ প্রশাসনের লোকজন আসেন। তারপর উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের মধ্য থেকে জখমপ্রাপ্তদের হাসপাতালে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। কৃষক হিরা মিয়া বলেন, ‘সারা দিন খেতে আছলাম। বাড়িত গিয়া চোখটা লাগা মাত্র মাইকে ঘটনা জানি। উদলা (খালি গায়ে) শরীরে বাইর অইয়া উদ্ধারে লাগছি।’শুধু হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারই নয়, তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া, যাত্রীদের রাতের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয়রা।এই দুজনের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন মসজিদে ফজরের আজান শোনা যাচ্ছিল। আঁধার কাটার সঙ্গে সঙ্গে সিলেট ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ট্রেনের বগিগুলোতে তল্লাশি শুরু হয়। ১১টি দলে ভাগ হয়ে তল্লাশির পর ট্রেনে আর কোনো মানুষ নেই বলে তাঁরা জানালে হাঁপ ছাড়েন উদ্বিগ্ন স্থানীয় লোকজন।ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা যখন ঘটনাস্থলে আসি, তখন স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা কেমন হবে, এ নিয়ে সংশয়ে ছিল। রেললাইনের পাশের কিছু মানুষ তো চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে বলেও শোনা যায়। সে কারণে দলের সব সদস্যের মাথায় হেলমেট ছিল। কিন্তু ঘটনাস্থলে এসে দেখা গেল ফায়ারের সদস্যদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন স্থানীয় লোকজন।’আর বরমচাল রেলস্টেশন লাগোয়া কালা মিয়া বাজারের সব ব্যবসায়ীই এসে দাঁড়িয়েছিলেন বিপদে পড়া যাত্রীদের পাশে। বাজারের পানের দোকানদার লিলু মিয়ার বাড়ি রেললাইনের পশ্চিমে ইসলামপুর গ্রামে। রাতে বাড়ি ফিরে যখন খেতে বসেছিলেন, তখনই দুর্ঘটনা। সেই অবস্থাতেই ছুটে আসেন তিনি। যাঁরা আহত, তাঁদের হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করার পাশাপাশি যাঁরা অক্ষত ছিলেন, রাতে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।বাজারের মুদি ব্যবসায়ী জুনাব আলীর বাড়িসহ আশপাশের ছয়টি বাড়িতে ২১ জন নারী ও শিশু ট্রেনযাত্রী আশ্রয় নিয়েছিলেন। সকালে মোট ৪০ জনের নাশতার জন্য বাজার করতে হয়েছে জুনাব আলীকে। তিনি বলেন, ‘রাতে মনে অইছিল আমরা বুঝি দিনে শুধু লাশ আর লাশ বহন করব। শুকরিয়া, সকালবেলা তেমনটা আর দেখি নাই।’চায়ের ফ্লাস্ক হাতে সকাল আটটার দিকে কালা মিয়া বাজারের পাশে একজন গৃহিণীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। জানালেন, উদ্ধারকারীদের চা-পান করাতে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। রাত থেকেই মানুষের সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছিলেন কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবুল লাইছ। আশপাশের মানুষের মানবিকতায় মুগ্ধ এই কর্মকর্তা দুপুরে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘কত আশঙ্কাই না ছিল। কিন্তু সবাই মানবিক থাকায় এখন সবকিছুই কেমন জানি অলৌকিক মনে হচ্ছে।’
বাংলাদেশের জনগণের একটি বিশাল অংশ রাষ্ট্র থেকে কিছুই আশা করে না। নিজের ইচ্ছায় দুনিয়াতে তারা আসেওনি, অনিচ্ছা সত্ত্বেও চলে যেতে হবে। কোনোরকমে বেঁচে থাকাতেই তারা সন্তুষ্ট। কারও প্রতি তাদের কোনো অনুযোগ নেই। আরেকটি শ্রেণি আছে, তারা অতি অল্প প্রাপ্তিতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু সেই অল্প সুযোগ-সুবিধাও যখন তারা পায় না, তখন তারা মনে খুব কষ্ট পায়। অন্য একটি ছোট শ্রেণি আছে, তাদের চাওয়া-পাওয়ার যেমন শেষ নেই, রাষ্ট্র থেকে প্রাপ্তিরও শেষ নেই। দেশের সব খাসজমি এবং ব্যাংকগুলোর সব টাকা তাদের মধ্যে বিলিবণ্টন করে দিলেও তাদের সন্তুষ্টি নেই।সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অন্তর্জ্বালায় দগ্ধ হয়, যখন তারা দেখতে পায়, একটি গোত্রের প্রতি রাষ্ট্র গভীর দয়া প্রদর্শন করছে। রাষ্ট্র নিজে একটি জড় বস্তু, তার নিজের কোনো ছেলেমেয়ে, ভাগনে-ভাগনি, শালা-ভগ্নিপতি নেই। যার কোনো স্বজন নেই, তার স্বজনপ্রীতির প্রশ্ন আসে না। মায়া-মমতা থাকলে আছে রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপক বা পরিচালকদের। সাধারণ মানুষ তাদের অল্প বুদ্ধি দিয়ে ভেবে একটি বিষয়ের কূলকিনারা পায় না যে কী কারণে আইন অমান্যকারী একশ্রেণির প্রতি ব্যবস্থাপকদের এত মমতা।বাংলাদেশকে এখন আর কেউ গরিব দেশ বলে হেয়প্রতিপন্ন করতে পারবে না। তার এখন অঢেল টাকা। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলতে পারবে না। তবে বাংলাদেশ না হলেও বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো তলাবিহীন ঝুড়ি। ‘মাত্র ৩৯ মাসে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ২১০ কোটি টাকা। আর এ সময়ে ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ হাজার ৪৩৬ জন। এ হিসাব ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ফলে ২০১৮ সাল শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। আর এ সময়ে খেলাপি হয়ে গেছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ জন গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠান।’ [প্রথম আলো, ২৩ জুন ২০১৯ ]এই তথ্য পাওয়া গেছে ২২ জুন জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বের অর্থমন্ত্রীর দেওয়া লিখিত জবাবে। এ সময় শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির নামও প্রকাশ করা হয়। তালিকা অনুযায়ী এই ৩০০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে আটকা আছে ৫১ হাজার কোটি টাকা। পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণের তথ্য দেওয়া হয়। এ হিসাবে ৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন, এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১৪ হাজার ৬১৭ জন। তাঁদের ঋণের পরিমাণ ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ১৮৩ কোটি টাকা।এই খবর পড়ে গ্রামের একজন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রী দুঃখবোধ করতে পারে। সে মনে করতে পারে, দেশের এত ব্যবসায়ী ও বড়লোক ফতুর হয়ে গেছেন যে তাঁরা ঋণের টাকাও পরিশোধ করতে পারছেন না। কিন্তু কিশোর-কিশোরী পাঠক জানে না যে ঋণ নিয়ে কেউই দেউলিয়া হননি। তাঁরা দিব্যি ভালো আছেন, সুখে আছেন। ‘থাকেন শতকোটি টাকার আলিশান বাড়িতে, চড়েন কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়িতে। নিজ ও পরিবারের নামে করেছেন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা-মসজিদ। নামে-বেনামে কিনেছেন জমি, নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ছেন। সমাজে প্রভাব-প্রতিপত্তিও বিপুল। নিয়মিত যান বিদেশে। আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়েছেন সেকেন্ড হোম। পাচার করছেন অর্থ। সবই ঠিক চলছে। শুধু ব্যাংকঋণের টাকা ফেরত দেওয়াতে যত অনীহা।’ [কালের কণ্ঠ, ২৩ জুন ২০১৯ ]ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ সোনার বাংলা ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এই একমাত্র মাটি, যেখানে ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে ধনকুবের হওয়া যায়। যাঁরা ঋণখেলাপি হয়েছেন, নিন্দুকেরা তাঁদের প্রশংসা করবে না, কিন্তু তাঁদের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা হাওলাত যাঁরা দিয়েছেন, তাঁদের পরিচয় জানাও দরকার। কারণ, খেলাপিরা কেউই বাড়ি থেকে বস্তা নিয়ে গিয়ে ব্যাংকের টাকা তাতে ভর্তি করে মুটের মাথায় দিয়ে নিয়ে আসতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানের কঠিন নিয়মকানুনের ভেতর দিয়েই ঋণ পেয়ে ধন্য হয়েছেন খাতক। স্রেফ বোকাও বোঝে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান যদি যথাযথ দায়িত্ব পালন করত, তাহলে অল্প কিছু মানুষ ছাড়া এত বেশি খেলাপি হওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব হতো না।মানুষ সন্দেহপ্রবণ প্রাণী। তারা অনেক বিষয়ে সন্দেহ করে, যা অমূলক নয়, তার কিছুটা হলেও সত্য। যেসব কর্মকর্তার হাত দিয়ে কোটি কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, তাঁরা চা-সিগারেট খাওয়ার জন্য কিছুই পাননি, তা অবিশ্বাস্য। আর যদি পার্সেন্টেজ বা বখরার মাধ্যমে হয়ে থাকে, তাহলে তো আনন্দের সীমা নেই।শুধু কর্মকর্তাদের ঘাড়ে সব দায় চাপানো সুবিচারের কাজ হবে না। একজন কর্মকর্তার কাছে যদি ওপর থেকে চাপ আসে, তাঁর পিতা-পিতামহের পক্ষেও সম্ভব নয় তা অগ্রাহ্য করা। প্রতিটি ব্যাংকের মাথায় রয়েছেন তার চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকেরা। সরকারে আছেন তাঁদের মামা। যে দেশে ব্যাংকের পিয়ন, মেসেঞ্জার, ক্লিনারের চাকরি-বদলি চেয়ারম্যান-এমডির অনুমতি ছাড়া হয় না, সেখানে শত শত কোটি টাকা একজন এসে নিয়ে যাবেন, তাঁরা কিছুই জানবেন না, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।ব্যাংক হলো টাকার জাহাজ। পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতার লেখকদের অবস্থা আদার ব্যাপারীর মতো। জাহাজের খোল-মাস্তুল নিয়ে যেমন আদার ব্যাপারীর মাথা ঘামানো অর্থহীন, তেমনি বঙ্গীয় ঋণখেলাপিদের নিয়ে আমাদের আলোচনাও অর্থহীন। তাঁদের তাতে কিছুই যায়-আসে না। তাঁরা কর্জের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য নন। মানুষ জানে, ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিয়ে তা আত্মসাৎ করা বা পরিশোধ না করা শক্ত দেওয়ানি অপরাধ। তবে বাংলাদেশে আইন নিজস্ব গতিতে না চললেও অপরাধীরা নিজস্ব গতিতেই চলেন। তাঁদের সাবলীল গতি কে রুধিবে দিয়ে লেখালেখির বালির বাঁধ?অনিবার্য কারণে অনেকে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন না। টাকা খাটিয়ে কোনো কারণে ব্যবসায় লোকসান হয় এবং পুঁজিটাও খোয়া যায়। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। কেউ ভবলীলা সাঙ্গ করে না-ফেরার দেশে চলে যান। তাঁদের কথা আলাদা। কিন্তু ঋণ নিয়ে না-ফেরার দেশে নয়, ফেরার দেশে গিয়ে সে দেশের ব্যাংকে টাকা জমা রাখবেন বা বিষয়সম্পত্তি করবেন, নিজের এলাকায় স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা-মসজিদ বানাবেন নিজের, স্ত্রীর বা মরহুম মা-বাবার নামে, তাঁদের নিয়ে ভাববার বিষয়।বাংলাদেশের ঋণখেলাপিরা শুধু অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আলোচনা-গবেষণার বিষয় নয়, তাঁদের নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীদের। তাঁদের পূর্বপুরুষের ইতিহাস এবং তাঁদের নিজেদের জীবন ও মনোজগতের বিশ্লেষণ করা দরকার। কেন তাঁরা ঋণ নিয়ে ব্যবসায় না খাটিয়ে জোতজমি কেনায় লাগাচ্ছেন, সপরিবার বিশ্ব ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এলাকায় দাতা কর্ণ হিসেবে পরিচিতি পেতে নিজেদের নামে প্রতিষ্ঠান গড়ছেন। কেন তাঁরা তা করেন, তা তাঁদের জিন বা বংশানুগতি বিশ্লেষণ ছাড়া বোঝা যাবে না।তবে এই মুহূর্তে বিষয়টি শুধু গবেষণার নয়। আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে রাষ্ট্র ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব হবে, কিন্তু ঋণখেলাপিবান্ধব নয়। সে জন্য রাজনীতিকদের দায় সবচেয়ে বেশি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁদের ভূমিকা প্রধান। খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, সেই সঙ্গে নিতে হবে খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা। তা না হলে অনেক অর্জন সত্ত্বেও দুর্বল গণতান্ত্রিক দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে।সৈয়দ আবুল মকসুদ: লেখক ও গবেষক
ঘরে ঘরে এখন আমের জয়জয়কার। এই ফল খেতে ভালোবাসে না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়াও ভার। পাকা আমের মধুর রস যাদের ভালো লাগে না, তাদেরও মেনে নিতে হবে যে আম গুণী একটা ফল। মোট ২০ ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যে ফলে আছে, তা গুণী না হয়ে যায় কোথায়! তাই আম শুধু খেয়েই নয়, ত্বকের যত্নেও ব্যবহার করা যায়। এমন তথ্য দিলেন হারমনি স্পার কর্ণধার ও আয়ুর্বেদিক রূপ বিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা।পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি, কে, বি৬ ইত্যাদি রয়েছে। ত্বকের জন্য এটি খুব উপকারী। আম তো ঘরে আছেই। কয়েকটা প্যাক বানিয়ে ত্বকের যত্ন শুরু করে দিতে পারেন। রাহিমা সুলতানা বাতলে দিলেন কীভাবে এই প্যাকগুলো তৈরি করতে হয়। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন পাকা আমের প্যাক ব্যবহার করলে ত্বক থাকবে সতেজ ও উজ্জ্বল। বজায় থাকবে সঠিক আর্দ্রতা। ২ টেবিল চামচ আমের মণ্ড, ১ চা-চামচ দুধ ও আধা চা-চামচ মধু নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই প্যাক ত্বকের যত্নে ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। ত্বকের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়।  পাকা আমের খোসাও কিন্তু বেশ উপকারী। রোদে শুকিয়ে ১ টেবিল চামচ টক দইয়ের সঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বক সুস্থ করতে চাইলে এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। লাল আটার সঙ্গে আমের মণ্ড মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিতে পারেন। এই প্যাক ব্রণের গভীরে ঢুকতে পারে। ব্রণ শুকিয়ে নতুন টিস্যু তৈরি করতে সাহায্য করে।  বলিরেখা কিংবা ত্বকের পোড়া ভাব দূর করতে পাকা আমের ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। ঘরে বসেই তৈরি করতে পারবেন এই ক্রিম। প্রথমে ৪ টেবিল চামচ আমের মণ্ড নিয়ে ছেঁকে নেবেন। এর সঙ্গে পরে ২ টেবিল চামচ গোলাপজল, ১ চা-চামচ গ্লিসারিন, ২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও ব্লেন্ড করা অ্যালোভেরার মণ্ড মিশিয়ে নিন। বাজার থেকে কেনা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার না করে তাজা অ্যালোভেরা ব্যবহার করাই উত্তম। সঙ্গে আরও মেশাতে পারেন কাঁচা হলুদের পেস্ট অথবা গুঁড়া। তবে হলুদে যদি কারও অ্যালার্জি থাকে তাহলে তা না মেশালেও হবে। সবকিছু একসঙ্গে ব্লেন্ডারে মিশিয়ে নিলে ক্রিম প্রস্তুত হয়ে যাবে। কাচের বয়ামে ভরে এই ক্রিম ফ্রিজে রেখে দিতে পারবেন অন্তত সাত দিন পর্যন্ত। ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিটের মতো রেখে ধুয়ে ফেলতে পারেন।
আহ! ঠান্ডা এক গ্লাস শরবত। সেটা যদি হয় আমের, বাড়তি পাওনাই যেন। এখন আমের মৌসুম। বানানো যাবে নানা পদের ঠান্ডা পানীয়।আম কোলাডাউপকরণআমের পিউরি ১ কাপ, নারকেল দুধ আধা কাপ, ডাবের পানি ১ কাপ, চিনির সিরাপ ২ টেবিল চামচ, বরফ কিউব প্রয়োজনমতো।প্রণালিসব একসঙ্গে ব্লেন্ড করে গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করুন। পাকা আমের মোহিতো উপকরণআমের পিউরি আধা কাপ, লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, মাল্টার রস ২ টেবিল চামচ, পুদিনাপাতা আধা মুঠো, বড় লেবু অর্ধেকটা (গোল পাতলা করে কেটে নেওয়া), মাল্টা অর্ধেকটা গোল করে কেটে নেওয়া, ঘন চিনির সিরাপ ৩ টেবিল চামচ, আইস কিউব (ক্রাশ করা) ও সোডা পানি প্রয়োজনমতো।প্রণালিগ্লাসে লেবুর টুকরা, মাল্টার টুকরা, পুদিনাপাতা দিয়ে ভালো করে গুঁড়া (ক্রাশ করা) করে নিন। এবার ওপরে গুঁড়া করা আইস, লেবুর রস, চিনির সিরাপ, আমের পিউরি ও সোডা পানি ঢেলে সাজিয়ে পরিবেশন করুন ঠান্ডা মোহিতো।সোডা পানির বদলে স্বচ্ছ কোমল পানীয়ও ব্যবহার করতে পারেন।কাঁচা আমের ঠান্ডাইউপকরণমিহি করা কাঁচা আম ১ কাপ, চিনি পৌনে ১ কাপ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, পুদিনা কুচি ৩ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ আধা চা-চামচ, বিট লবণ আধা চা-চামচ, ভাজা জিরার গুঁড়া পৌনে ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি স্বাদমতো, ঠান্ডা পানি ২ কাপ, বরফ কিউব ১ কাপ।প্রণালিসব একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে গ্লাসে ঢেলে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।পাকা আমের স্মুদিউপকরণপাকা আমের পিউরি ১ কাপ, দই আধা কাপ, ঠান্ডা তরল দুধ ১ কাপ, চিনি স্বাদমতো, বরফ কুচি প্রয়োজনমতো।প্রণালিসব একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পরিবেশন গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করুন।
নগরে এবার আগেভাগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও আগের তুলনায় বেশি। নিয়মিত ওষুধ না ছিটানো এবং ঢাকায় বাসাবাড়িতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার জীবাণুবাহী এডিস মশা জন্মের হার বাড়ায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ আগের চেয়ে বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, গেল কয়েক বছরের হিসাব বলছে, জানুয়ারি থেকেই কমবেশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তরা হাসপাতালে আসেন। তবে এবার রোগীর সংখ্যা বেশি। গেল বছরের মে মাসে ৫২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবার মে মাসে এই সংখ্যা তিন গুণ (১৫৫ জন)। এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ৮৩৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছর জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের এ সংখ্যা ছিল ৪২৮ জন। এ বছর আক্রান্তদের মধ্যে দুজন এপ্রিলে মারা গেছেন। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন ৭৩৪ জন এবং বর্তমানে ১০৩ জন ভর্তি আছেন।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু রোগী বাড়ার দুটি কারণ চিহ্নিত করছে। প্রথম কারণ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নির্মাণযজ্ঞ। এখানে বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে, আরও চলছে রাস্তাঘাট নির্মাণ। এ কারণে পুরো ঢাকায় রাস্তাঘাট ও মাটি কেটে রাখা আছে। এসব জায়গায় ও চারপাশে সহজে পানি জমছে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মশা বেড়ে গেছে। থেমে থেমে বৃষ্টি ও তাপমাত্রার পরিবর্তন এডিস মশা জন্মানোর অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে।পুরান ঢাকার কায়েতটুলীর মারুফুল ইসলাম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি আছেন। মহাখালী থেকে আসা শাহাদাত হোসেনও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একই বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্ত দুজন জানালেন, তিন-চার দিন জ্বরে ভুগে হাসপাতালে এসে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয়। তাঁরা জানান, বাসার আশপাশটা অপরিচ্ছন্ন। বাসা কিংবা কর্মস্থলের কোথাও মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেননি।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তেজগাঁও, তুরাগ, পল্লবী, মগবাজারে, উত্তরা, গুলশান, বনানী, কাফরুল, খিলগাঁও, রামপুরা, মিরপুর, পীরেরবাগ, মোহাম্মদপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, বনানী, গুলশান, বারিধারায় সবচেয়ে বেশি এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, স্বামীবাগ, গেণ্ডারিয়াসহ আশপাশের এলাকা, দক্ষিণ মুগদাপাড়া, বাসাবো, মানিকনগর বিশ্বরোড, শেরেবাংলা রোড, হাজারীবাগ, মগবাজার ও রমনা, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, হাজারীবাগ, ফরাশগঞ্জ, শ্যামপুর, উত্তর যাত্রাবাড়ীতে ডেঙ্গুর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে।ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন এলাকায় তাঁরা মশা মারার কোনো কাজ দেখছেন না। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত একাধিক ব্যক্তি ও দুই সিটি করপোরেশনের মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, বাড্ডা, খিলগাঁও, লালবাগ এলাকায় ও বাড়িঘর দোকানে দিনে-রাতে মশার উপদ্রব আছে। তাঁরা এসব এলাকায় করপোরেশনের মশা মারার জন্য ওষুধ ছিটানো বা ফগিং দেখেননি।বাজেট বাড়ে, ডেঙ্গুও বাড়েমশা নিধনে প্রতিবছর বাজেট বাড়ছে। কিন্তু বাস্তবে মশার উপদ্রব বাড়ছে। ডেঙ্গুসহ নানান মশাবাহিত রোগও বাড়ছে। দুই সিটি করপোরেশনের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নগরে মশা নিধনে বাজেট ছিল ২১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তিনটি অর্থবছরের ব্যবধানে মশক নিধনে বাজেট দ্বিগুণ হয়েছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই সিটি মিলে মশা নিধনে সাড়ে ৪৯ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে। কিন্তু পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি।খুঁড়ে রাখা জায়গায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশার প্রজনন বাড়ছে গেল বছরের মে মাসে ৫২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবার মে মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা তিন গুণ (১৫৫ জন) হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন ৭৩৪ জন বর্তমানে হাসপাতালে ১০৩ জন ভর্তি আছেন এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও তীব্র হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষের হিসাব বলছে, ২০১৫ সালে দেশে ৩ হাজার ১৬২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল তিন গুণের বেশি (১০ হাজার ১৪৮ জন)।তবে ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে নগরবাসীর সচেতনতা এবং নিজেদের আশপাশকে পরিচ্ছন্ন রাখাতেই গুরুত্ব দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান বলেন, মশা মারার জন্য পাঁচটি অঞ্চলে, সব ওয়ার্ড কাউন্সিলর, হাউজিং সোসাইটির প্রধান ব্যক্তি, বিভিন্ন সোসাইটির প্রধান ব্যক্তি এবং এলাকার প্রতিনিধিদের নিয়ে মে মাসে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করা হয়েছে। তবে তিনি জানান, সরঞ্জাম বা ওষুধ পর্যাপ্ত থাকলেও লোকবলসংকট আছে। ডিএনসিসির নিজস্ব কর্মীসহ পাঁচটি অঞ্চলে ২৮০ জন কর্মী মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য যথেষ্ট নয়।আর ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শরীফ আহমেদ বলেন, জানুয়ারি মাসে ডিএসসিসির সারা বছরের মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। এ জন্য প্রথমে তাঁরা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো, পুরোনো পাঁচটি অঞ্চলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, মসজিদের ইমাম, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম করেন। ইতিমধ্যে তাঁরা পাঁচটি অঞ্চলে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করেছেন। এরপর ২৭ জুন বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিয়ে সেমিনার করা হবে। এ ছাড়া বাড়ির মালিক, ভাড়াটে ও জনগণের জন্য বিভিন্ন প্রচারপত্র ছাপানো ও বিতরণ করা হয়েছে। এলাকার মশক নিধন কর্মীদের আরও প্রশিক্ষণ দেওয়া ও সকালে লার্ভিসাইড ও বিকেলে ফগিং করা হয়।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা প্রথম আলোকে বলেন, এখন জ্বর হলে প্রথম দিনই পরীক্ষা করেই ডেঙ্গুর ভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব। তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়ার পরিবর্তন, বৈশ্বিকভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখছেন। এ ছাড়া ঢাকার মানুষের জীবনাচরণে পরিবর্তন, বেশি ঘরবাড়ি-সড়ক নির্মাণ, দ্রুত নগরায়ণ, বাড়িঘরে ফুলের টব রাখা, শীতাতপনিয়ন্ত্রণের যন্ত্র, রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজের ব্যবহারকারী বেড়ে যাওয়াকে ডেঙ্গু মশা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী বা মেহেরপুরের আমবাগানে বেড়ানোর সুযোগ পেলে তো কথাই নেই। নানা রকম আমের সান্নিধ্য পাবেন সরাসরি। কিন্তু যাঁদের সে সুযোগ নেই, তাঁরা আপাতত চলুন ঘুরে আসি রাজধানীর বুকে বসা নানা রকম আমের মেলায়।এই সময়ে ঢাকা শহরের স্থানে স্থানে বসেছে আমের মেলা। একেকটি আমের মেলা সেজেছে থোকা থোকা আমের ছবি–সংবলিত ডিজিটাল পোস্টারে। রাতে আবার ঝলমল করে ওঠে মরিচবাতির টিপটিপ আলোতে। ভোর থেকে শুরু করে খোলা থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত। প্রধান সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠায় চলতি পথের নজর এড়ায় না।এসব মেলায় মিলছে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রংপুর, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নানা প্রজাতির আম। জাত অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে মেলায় এসে হাজির হচ্ছে ক্ষীরশাপাতি বা হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া, নাগফজলি, হাঁড়িভাঙা, রানিপছন্দ, নবাবপছন্দ, লক্ষ্মণভোগ (লকনা), গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, মিস্রিভোগ, মল্লিকা, কাঁচামিঠা, সূর্যপুরি, কহিতুর, আলতাপেটি, চোষা, গুটি আম, সুন্দরী আম, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, সুরমা ফজলি ও ফজলি আম। জাতভেদে দাম কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১৫০ টাকা। বাজারে নতুন আসা ব্যানানা ম্যাঙ্গোর দাম পড়ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। তবে রাজশাহীর আমবাগানের আমের ফলন আসতে শুরু করেছে মাত্র। প্রথম দিকে হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া, নাগফজলি, হাঁড়িভাঙা আমের উপস্থিতিই দেখা যাচ্ছে অধিক সংখ্যায়। ধীরে ধীরে অন্যান্য জাতের আমও এসে সঙ্গ দেবে এদের সঙ্গে।আমের পাশাপাশি মৌসুমি লিচুও মিলছে কোথাও কোথাও। তবে লিচুর মৌসুম খুব সংক্ষিপ্ত হওয়ায় লিচুর উপস্থিতি কমছে দিন দিন। সেই সঙ্গে দামও বাড়ছে একটু একটু। জাত ও আকারভেদে প্রতি শ লিচুর দাম পড়ছে ২৫০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।আমের মেলার দেখা পাবেন ধানমন্ডির ক্যাপিটাল মার্কেটের পাশে, ধানমন্ডি ৮, ধানমন্ডি ১৫, জিগাতলা, ফার্মগেট এয়ারপোর্ট রোডের মনিপুরিপাড়া ১ নম্বর গেট–সংলগ্ন, মিরপুর ৬০ ফুট রোডে, মহাখালী ডিওএইচএস, সায়েদাবাদ ও কলাবাগান মাঠ–সংলগ্ন আমের বাজারে। এর বাইরেও আমের বিপুল সমাহার পাবেন রাজধানীর সুপার শপগুলোয়।
এ বছরের লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূল ভেঙে যাচ্ছে। বেশ কয়েকজন তৃণমূল সাংসদ ও বিধায়ক এর মধ্যে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনে জিতেছেনও। তৃণমূলের দখলে থাকা পাঁচটি পৌরসভাও বিজেপি দখল করে দিয়েছে। গতকাল সোমবার একটি জেলা পরিষদের দখল নিয়েছে।দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদে এবার সবচেয়ে চমক এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলা পরিষদে তৃণমূলের দখল ছিল। গতকাল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ হাতছাড়া হয়ে গেল। এই জেলা পরিষদের তৃণমূলের ১০ জন সদস্য গতকাল দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে গিয়ে সে দলে যোগ দিয়েছেন। এই জেলা পরিষদে রয়েছেন ১৮ জন সদস্য।বিজেপি বলেছে, আরও চারজন শিগগিরই যোগ দিচ্ছেন। ফলে, এই জেলা পরিষদ কার্যত বিজেপির দখলে গেল। এটিই এই রাজ্যের প্রথম জেলা পরিষদ, বিজেপি যেটি দখল করে নিল। আরও যোগ দিয়েছেন জেলা পরিষদের সাবেক সভাপতি এবং তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। যোগ দিয়েছেন আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনির তৃণমূল বিধায়ক উইলসন চন্দ্রামারিও।লোকসভা নির্বাচনের আগে এবং পরে বেশ কয়েকজন সাংসদ ও বিধায়ক তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এখনো তৃণমূল ভেঙে বিজেপিতে যোগদানের ধারা চলছে। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিজেপির জয় যে অনেকটাই সুনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, তার আলামত এখনই পড়ে গেছে রাজ্য রাজনীতিতে। তাই তৃণমূলের অনেক নেতা–কর্মী যোগ দিচ্ছেন বিজেপিতে। ফলে, তৃণমূলের বহু পৌরসভা ভেঙে যাচ্ছে। তৃণমূলের সাংসদ–বিধায়কেরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।তৃণমূলের পাঁচটি পৌরসভার দখল নিয়েছে বিজেপি। কাঁচড়াপাড়া, হালিশহর, নোয়াখালী, ভাটপাড়া ও গারুলিয়া পৌরসভা বিজেপির দখলে। বনগাঁ পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলর যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। ফলে, এই পৌরসভারও দখল চলে গেছে বিজেপির হাতে। বনগাঁ উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসও যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।তৃণমূল লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট আসনটি হারায়। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় রয়েছে লোকসভার একটি মাত্র আসন বালুরঘাট। এই আসনে বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদারের কাছে হেরে যান তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ অর্পিতা ঘোষ। পরাজয়ের পর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রকে সরিয়ে অর্পিতা ঘোষকে আনেন। বিপ্লব মিত্র গতকাল বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।বিজেপিতে যোগদানের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায় প্রমুখ।
ভোলার চরফ্যাশনে আওয়ামী লীগের একজন নেতার নেতৃত্বে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের খবরটি এই ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করে যে ক্ষমতাসীন দলের নেতা হলেই বোধ হয় যা খুশি তাই করা যায়।সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরে আলমের নেতৃত্বে কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী চরফ্যাশনের বেতুয়া লঞ্চঘাটের পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমি দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন। শনিবার থেকে এই নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।স্থাপনা নির্মাণের জন্য বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫০ গজ দখল করা হয়েছে। সেখানে বন বিভাগের চারটি গাছ কাটার তোড়জোড় চলছে। অবৈধ দখলের বিষয়ে স্থানীয় লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এভাবে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হলে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধটি হুমকির মুখে পড়বে এবং এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। কেননা ইতিমধ্যেই বাঁধসংলগ্ন বেতুয়া লঞ্চঘাট এলাকায় দৃষ্টিনন্দন পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। উপকূলীয় বন বিভাগ ওই বাঁধে ও নিচের জমিতে বনায়ন করেছে।নিয়ম অনুযায়ী, পাউবোর জমি বার্ষিক ইজারা নিয়ে ভোগদখল করা যায়। তবে সেখানে স্থায়ী পাকা ভবন নির্মাণ করা যায় না। বোঝাই যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলে নুরে আলম কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। তবে নুরে আলম শুধু একা নন, দেশজুড়েই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা এভাবে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে চলেছেন। তাঁরা পাউবো, সওজসহ সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন জমিতে আবাসন প্রকল্প, বিপণিবিতান, স্কুল-কলেজ, গাড়ির গ্যারেজ, এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন এবং করছেন। কিন্তু তাঁদের যেন বলার কিছু নেই। ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় মানেই যেন যা খুশি করার অবাধ লাইসেন্স। এমন অভিযোগও রয়েছে যে সরকারের যেসব কর্তৃপক্ষের জমি এভাবে ক্ষমতাসীন নেতা-কর্মীরা দখল করছেন, সেসব কর্তৃপক্ষের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের সহায়তা করে থাকেন। মাঝেমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতাও থাকে। এগুলো খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।আমরা এ ব্যাপারে সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। কিছু নেতা-কর্মীর এ ধরনের অপকর্ম যে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, তা কি তারা বুঝতে পারছে না? এসব দখলবাজ নেতা-কর্মীকে আইনের আওতায় এনে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে সহায়তা করছেন, তাঁদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।আমরা চাই চরফ্যাশনের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ বন্ধে পাউবো কর্তৃপক্ষ দ্রুত উদ্যোগ নেবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকেও এ ধরনের অপতৎপরতা রোধে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
‘বন্দুকযুদ্ধে’ মানব পাচার মামলার পলাতক ৩ আসামি নিহকক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মানব পাচারের ঘটনায় করা মামলার পলাতক তিনজন আসামি নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে টেকনাফ উপজেলার মহেশখালীপাড়া নৌকাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।নিহত তিনজন হলেন সাবরাং নয়াপাড়ার গোলাপাড়ার আবদুল শুক্কুরের ছেলে কুরবান আলী (৩০), টেকনাফ পৌরসভার কে কে পাড়ার আলী হোসেনের ছেলে আবদুল কাদের (২৫) ও একই এলাকার সুলতান আহমদের ছেলে আবদুর রহমান (৩০)। তাঁরা তিনজনই মানব পাচারের ঘটনায় করা মামলার পলাতক আসামি। পুলিশের তথ্যমতে, ঘটনাস্থল থেকে তিনটি দেশীয় অস্ত্র (এলজি), শটগানের ১৫টি তাজা গুলি ও গুলির ২০টি খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কাজী সায়েফ, কনস্টেবল মং চিন সু ও কনস্টেবল মো. শুক্কুর আহত হয়েছেন।ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, পলাতক আসামি গ্রেপ্তার করতে রাতে পুলিশের একটি দল উপজেলার টেকনাফ মহেশখালীপাড়ার নৌকাঘাট এলাকায় পৌঁছায়। সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে মানব পাচারকারী দলের সদস্যরা গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে কয়েকজন পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ তিন পলাতক আসামিকে উদ্ধার করা হয়।আসামিদের উদ্ধার করে দ্রুত টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নেওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনজন মারা যান। লাশ তিনটি ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। নিহত তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মানব পাচার ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা রয়েছে।টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শোভন দাস প্রথম আলোকে বলেন, আজ মঙ্গলবার ভোররাত চারটার দিকে পুলিশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনজন ও আহত তিন পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে আনে। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। গুলিবিদ্ধ তিনজনের শরীরে তিনটি করে গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, নিহত ব্যক্তিরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোক পাচার মামলার পলাতক আসামি। তাঁরা অনেক দিন ধরে বিভিন্ন রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির থেকে রোহিঙ্গা লোকজন সুকৌশলে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করে আসছিলেন।গত বছরের ৪ মে থেকে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এ নিয়ে র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ, এলাকায় মাদকের প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের ঘটনায় কক্সবাজার জেলায় ১২১ জন নিহত হয়েছেন। গত ১৪ মে থেকে এখন পর্যন্ত টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে মানব পাচারকারীদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন রোহিঙ্গা নাগরিক ও চারজন বাংলাদেশি।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী একটি ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তিন নারীসহ চারজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেন উপবন এক্সপ্রেস বরমচাল স্টেশন অতিক্রম করে কুলাউড়া আসার পথে রেলপথের একটি কালভার্ট ভেঙে পেছনের পাঁচটি যাত্রীবাহী বগি খালে পড়লে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬২ জন। মারাত্মক আঘাত থাকায় ২০ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও গতকাল সকালে তা ফের শুরু হয়।তুলনামূলক নিরাপদ বাহন হিসেবে বিবেচনা করে মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করতে আগ্রহী হয়। কিন্তু সেই ট্রেনে যদি একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে? গত বছর ট্রেনে কাটা পড়ে কয়েক শ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যদিও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এর জন্য নাগরিকদের অসচেতনতাকে দায়ী করেছে। কিন্তু কুলাউড়ার ঘটনায় যাত্রী বা সাধারণ মানুষের ওপর দায় চাপানোর সুযোগ নেই। রেলওয়ে সচিব বলেছেন, দুর্ঘটনাটি গুরুতর। কিন্তু কীভাবে এমন দুর্ঘটনাটি ঘটল এবং এর জন্য কারা দায়ী, তা আদৌ জানা যাবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় কাটানো কঠিন। অতীতে এ ধরনের দুর্ঘটনায় খুব কম ক্ষেত্রেই দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (পূর্বাঞ্চল) মো. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাঁদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি সেতু ভেঙে যাওয়ায় ছয় দিন ধরে ঢাকা-সিলেট রুটে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে। ফলে ঢাকা-সিলেট রুটের ওই ট্রেনটিতে যাত্রীদের ভিড় অনেক বেশি ছিল। অন্যদিকে, কুলাউড়া থেকে ট্রেন ছাড়তে দেরি হওয়ায় চালক নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে ট্রেনের গতিও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রী ও অতিরিক্ত গতির কারণেই কালভার্টটি ভেঙে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কালভার্টের সামনে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি ছিল—সর্বোচ্চ সীমা ২০ কিলোমিটার। কিন্তু সে সময় ট্রেনের গতি ৮০ কিলোমিটার বা এর কাছাকাছি ছিল বলে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের যাত্রীরা জানিয়েছেন। তাই এ দুর্ঘটনার দায় কোনোভাবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। ট্রেন দুর্ঘটনায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি। সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ দাবি মোটেই অযৌক্তিক নয়। রেলওয়ের সর্বত্র অনিয়ম ও দুর্নীতি জেঁকে বসেছে। ঢাকা-সিলেটসহ রেলওয়ের বিভিন্ন রুটে যেসব সেতু ও কালভার্ট আছে, সেগুলো ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হয় কি না, সে বিষয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। রেললাইন থেকে ক্রসিং পয়েট সবটাই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। রেলওয়ের একজন সাবেক মন্ত্রী রেলওয়ের কালো বিড়াল ধরতে গিয়ে নিজেই ধরা খেয়েছিলেন। নতুন রেলমন্ত্রী রেলওয়েকে ঢেলে সাজানোর কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। বরং গত ঈদে ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল। এভাবে কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।সবশেষে আরেকটি সামাজিক বাস্তবতার প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার বলে মনে করি। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এলাকাবাসী দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেছেন, তঁারা মাইকিং করেও এলাকার লোকজনকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন। এটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু এই সুযোগে স্থানীয় কতিপয় দুর্বৃত্ত দুর্ঘটনাকবলিত বগিগুলো থেকে যাত্রীদের মালামাল চুরি করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই নৈতিক অবক্ষয় থেকে উদ্ধারের উপায় কী!
সাকিব আল হাসান এবার বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। ৬ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৪৭৬ রান। বল হাতে ৬ ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইকেট। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে কোনো ক্রিকেটারই এক টুর্নামেন্টে এমন অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখাতে পারেনি। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল-পর্ব এখনো শুরু না হলেও টুর্নামেন্ট-সেরার পুরস্কারটা তো সাকিবের হাতে এখনই তুলে দেওয়া যায়!আফগানিস্তান তখন হার দেখছে। জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ। স্ট্রেট অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসা বল ডাইভ দিয়ে থামানোর চেষ্টা করলেন সাকিব আল হাসান। পারলেন না। ধারাভাষ্যকক্ষে ইয়ান স্মিথ বলে উঠলেন, ‘হি ইজ হিউম্যান! সাকিব ইজ অফিশিয়ালি হিউম্যান’!ভিনগ্রহের খেলোয়াড়—কথাটাকে ফুটবলে একধরনের ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ করে নিয়েছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ক্রিকেটে এ বিশেষণ খুব বেশি ব্যবহার হয় না। আর বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের কেউ এমন মনে করবেন, তা ভাবতেই কেমন রোমাঞ্চ জাগে। নিউজিল্যান্ডের সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান স্মিথ সাকিবের ওই ফিল্ডিং মিসের আগ পর্যন্ত তাঁকে রক্ত-মাংসের মানুষ বলেই মনে করেননি, মানে ভিনগ্রহের কেউ! অত্যুক্তি মনে করে স্মিথকে দোষ দিতে পারবেন না। সাকিবের পারফরম্যান্সই বলছে ব্যাটে-বলে এমন ‘সব্যসাচী’ ক্রিকেটার বিশ্বকাপের এক সংস্করণে এর আগে দেখা যায়নি।সাকিব এরই মধ্যে চলতি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। ৬ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৪৭৬ রান। বল হাতেও ভেলকি দেখাচ্ছেন ভালোই। এ ৬ ম্যাচে তাঁর শিকার ১০ উইকেট। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে কোনো ক্রিকেটারই এক টুর্নামেন্টে এমন অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখাতে পারেনি। অর্থাৎ বিশ্বকাপের ইতিহাসে সাকিবই প্রথম ক্রিকেটার যিনি, এক টুর্নামেন্টে ন্যূনতম ৪০০ রানের পাশাপাশি ১০ উইকেট নিলেন। এমন অনন্য কীর্তি গড়া ক্রিকেটারের হাতে এবার বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠবে তো?প্রশ্নবোধক চিহ্নটা রাখতেই হচ্ছে। কারণ, বিশ্বকাপে ‘প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট’ মানে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার চালুর পর একটি অলিখিত নিয়ম চলে আসছে। ন্যূনতম সেমিফাইনাল খেলেছে এমন দলের পারফরমারদের হাতে উঠেছে টুর্নামেন্ট-সেরার পুরস্কার। বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ যে একেবারেই নেই তা নয়। কিন্তু ধরুন, উঠতে পারল না তবুও কিন্তু সাকিবের এ অর্জন অনন্য হয়েই থাকবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার সাকিবের হাতে তো এখনই তুলে দেওয়া যায়!বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯৯২ সংস্করণ থেকে। সেবার ৪৫৬ রান করে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান মার্টিন ক্রো। তাঁর দল হেরেছিল সেমিফাইনালে। পরের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হলো শ্রীলঙ্কা। দলটির ওপেনার সনাথ জয়াসুরিয়া ২২১ রান ও ৭ উইকেট নিয়ে হলেন টুর্নামেন্ট–সেরা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ তো ল্যান্স ক্লুজনারের। সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়া দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ২৮১ রানের পাশাপাশি ১৭ উইকেট নিয়েছেন সাবেক এ অলরাউন্ডার।২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা শচীন টেন্ডুলকার ভারতের হয়ে ৬৭৩ রানের পাশাপাশি ২টি উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন টুর্নামেন্ট-সেরা। এরপর ২০০৭ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একাই ২৬ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট-সেরা হন গ্লেন ম্যাকগ্রা। পরের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা ভারতের যুবরাজ সিং ৩৬২ রান করার সঙ্গে তুলে নিয়েছিলেন ১৫ উইকেটও। টুর্নামেন্ট-সেরার পুরস্কারটা তাঁর হাতেই উঠেছিল। আর সবশেষ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় মিচেল স্টার্ক অস্ট্রেলিয়ার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ২২ উইকেট নিয়ে দুর্দান্ত অবদান রেখেছিলেন। সাকিব কিন্তু ব্যাটে-বলে এসব পারফরমারদেরও ওপরে।চলতি ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে এত দিন এ টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সেরা অলরাউন্ড নৈপুণ্য হিসেবে দেখা হতো দুজনের অবদানকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ক্লুজনারের ২৮১ রানের পাশাপাশি ১৭ উইকেট এবং ২০১১ বিশ্বকাপে যুবরাজ সিংয়ের ৩৬২ রানের সঙ্গে ১৫ উইকেটশিকার। উইকেটসংখ্যায় সাকিব এখনো তাঁদের ধরতে পারেননি বটে কিন্তু রানসংখ্যায় দুজন তাঁর পেছনে। কিন্তু অলরাউন্ড নৈপুণ্যের মাইলফলক হিসেবে ৪০০ রান ও ন্যূনতম ১০ উইকেট ধরলে সাকিবের ধারে-কাছে কেউ নেই। আর এবার বিশ্বকাপে তিনে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব বলতে গেলে একাই টানছেন দলকে, বোলিংয়েও নতুন বলে বল করার চাপ নিচ্ছেন, রান আটকাচ্ছেন, উইকেট নিচ্ছেন—এবার বিশ্বকাপে আর কোনো ক্রিকেটার ব্যাটে-বলে দলের জন্য নিজেকে এতটা নিংড়ে দিতে পেরেছেন?বিশ্বকাপে তো নেই, এমনকি ওয়ানডে ইতিহাসেই নির্দিষ্ট কোনো সিরিজে ন্যূনতম ৪০০ রানের পাশাপাশি ১০ উইকেট নেওয়ার নজির আছে শুধু বেনসন অ্যান্ড হেজেজ ওয়ার্ল্ড সিরিজ কাপে। ১৯৮০ সালে ১৪ ম্যাচে তা করে দেখিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি গ্রেগ চ্যাপেল। এরপর দুবার মাইলফলকটি ছুঁয়েছেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডস; ১৯৮১ ও ১৯৮৫ সালে বেনসন অ্যান্ড হেজেজ ওয়ার্ল্ড সিরিজ কাপে। যথাক্রমে ১৪ ও ১৩ ম্যাচ খেলে মাইলফলকটির দেখা পেয়েছিলেন ভিভ রিচার্ডস। সাকিব এখানেও অনন্য। এ মাইলফলক ছুঁতে তাঁর লাগল মাত্র ৬ ম্যাচ।বাংলাদেশ এ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে এখনো দুটি ম্যাচ খেলবে। অর্থাৎ রান ও উইকেটসংখ্যা আরও বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন সাকিব। ধরে নেওয়া যাক, বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠতে পারল না কিন্তু বিশ্বকাপে অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সের মানদণ্ড সাকিব যে উচ্চতায় স্থাপন করলেন, তাতে টুর্নামেন্ট-সেরার পুরস্কারটা কি তাঁর প্রাপ্য নয়?
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন চন্দনাইশ পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল আনোয়ার। এ মামলায় গতকাল সোমবার হাইকোর্ট থেকে জামিন পান শাহাদাত।সম্প্রতি দলীয় ফোরামে নুরুল আনোয়ার নগর বিএনপি সভাপতির সমালোচনা করায় দুই নেতার মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বাড়ি ভাঙচুর ও হুমকি-ধমকির অভিযোগে শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন নুরুল আনোয়ার। এর আগে দুই নেতার মধ্যে মুঠোফোনে বাক্যবিনিময়ের সময় শাহাদাতকে ‘রোহিঙ্গা’ বলে কটাক্ষ করেন নুরুল।চট্টগ্রাম বিএনপির দুই নেতার বিরোধে অস্বস্তিতে আছেন দলের নেতারা।১৮ জুন সন্ধ্যায় চন্দনাইশ বিএনপির দ্বন্দ্ব মেটাতে একটি সভা ডাকা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান তাঁর বাসভবনে সভাটি ডাকেন। ওই সভায় শাহাদাত হোসেনের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন নুরুল আনোয়ার।দলীয় সূত্র জানায়, পরদিন ১৯ জুন দুপুরে শাহাদাত হোসেন মুঠোফোনে নুরুল আনোয়ারকে ফোন দিয়ে সমালোচনা করার কারণ জানতে চান। এ সময় দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এর জের ধরে যুবদল ও ছাত্রদলের কিছু নেতা নুরুল আনোয়ারের চান্দগাঁও এলাকার বাড়িতে যান। তাঁরা শাহাদাত হোসেনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে নুরুল আনোয়ারকে অনুরোধ জানান। এর মধ্যে নুরুল আনোয়ারের ছেলের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান একজন কর্মী। এর জের ধরে কিছু কর্মী নুরুল আনোয়ারের বাড়ির দরজায় আঘাত করেন। ওই রাতেই শাহাদাত হোসেন ও নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করেন নুরুল আনোয়ার।দলীয় একটি সূত্র জানায়, ১৯ জুন দুপুরে দুজনের মধ্যে মুঠোফোনে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের সময় নুরুল আনোয়ার শাহাদাত হোসেনকে উদ্দেশ করে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেন। এতে আরও ক্ষুব্ধ হন শাহাদাত। এ কারণে পরিস্থিতি অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়।এই দুজনের বিরোধে দলের অনেক নেতাই অস্বস্তিতে আছেন। আর শাহাদাতের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় কেন্দ্রীয় ও জেলার অনেক নেতা বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানান।জানতে চাইলে নুরুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চন্দনাইশের বিরোধ মেটাতে হলে শাহাদাত হোসেনকে দক্ষিণ জেলার রাজনীতি নিয়ে মাথা না ঘামাতে দলীয় ফোরামে পরামর্শ দিয়েছিলাম। কারণ, শাহাদাত সব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান। এ জন্য চন্দনাইশ বিএনপির বিরোধ রয়ে গেছে। শাহাদাত পরদিন আমাকে ফোন করে দলীয় ফোরামে দেওয়া বক্তব্যের কৈফিয়ত চান।’নুরুল আনোয়ার আরও বলেন, ‘ফোনালাপে শাহাদাত আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আমি তাঁকে রোহিঙ্গা বলেছি। কারণ, তাঁর বাড়ি চন্দনাইশের যে এলাকায় সেটা রোহিঙ্গা পাড়া। আমি কি ভুল বলেছি? এ জন্য তিনি আমার বাড়িতে যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের পাঠান। ওরা আমার বাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করলে মামলা করি।’নুরুল আনোয়ারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন তাঁকে ‘মানসিক রোগী’ অভিহিত করেন। শাহাদাত বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি। দক্ষিণ জেলা বিএনপির রাজনীতি নিয়ে আমি মাথা ঘামানোর কে? অথচ নুরুল আনোয়ার অপ্রাসঙ্গিকভাবে দলীয় ফোরামে আমাকে টেনে এনেছেন। এ জন্য তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তিনি দুর্ব্যবহার করেন।’শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, নুরুল আনোয়ার এর আগে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ২০০৮ সালে চন্দনাইশে বিএনপির প্রার্থী মিজানুল হক চৌধুরীর সঙ্গেও তিনি খারাপ ব্যবহার করেন। এ জন্য ২০১৫ সালে দল থেকে একবার বহিষ্কৃত হন নুরুল আনোয়ার।নুরুল আনোয়ারের বাসায় হামলার অভিযোগের বিষয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কারণে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতারা আনোয়ারের বাসায় যান। তিনি যেন দুঃখ প্রকাশ করেন, সে জন্য কথা বলতে গিয়েছিলেন। অথচ তাঁর বাসায় আমার নেতৃত্বে নাকি হামলা হয়েছে। এ জন্য থানায় মামলা হয়।’
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওরাকল করপোরেশন সম্প্রতি চতুর্থ প্রান্তিকসহ গত বছরের আয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় এ বছর চতুর্থ প্রান্তিকের মোট আয় ১ শতাংশ বেড়ে ১১ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। ক্লাউড সেবা ও লাইসেন্স সাপোর্ট আয় ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। ক্লাউড সেবায় আয় বেড়েছে ৬ শতাংশ।ওরাকলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাফরা ক্যাটজ বলেন, ‘চতুর্থ প্রান্তিকে এসে আমাদের পরিচালন আয় ৭ শতাংশ বেড়েছে। ফিউশন ও নেটসুইট ক্লাউড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবসা দ্রুত বাড়ছে।’বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির তথ্য অনুযায়ী, এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশন সাস সেবাদাতাদের মধ্যে তিন বছরে ওরাকল সবচেয়ে বেশি বাজার দখল করেছে।ওরাকলের চেয়ারম্যান ল্যারি এলিসন বলেন, ‘চতুর্থ প্রান্তিকে আমরা প্রায় চার হাজারেরও বেশি স্বয়ংক্রিয় ডেটাবেইস নিয়ে কাজ করেছি। দ্বিতীয় প্রজন্মের ক্লাউড কাঠামোব্যবস্থাও এ সময় আনা হয়েছে।’
মাঝারি সারির স্মার্টফোনের জন্য নতুন চিপসেট আনল চীনা প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। হুয়াওয়ে তাদের ফ্ল্যাগশিপ চিপসেট কিরিন ৯৮০–এর আদলে ৭ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে কিরিন ৮১০ তৈরি করেছে। তাদের দাবি, কিরিন ৮১০ মডেলের চিপসেট মধ্যম বাজেটের হ্যান্ডসেটের জন্য সেরা চিপসেট। এ চিপসেটের বাজারে এলে কোয়ালকম ও স্ন্যাপড্রাগন ৬ এক্সএক্সের রাজত্ব শেষ হবে।হুয়াওয়ে এক বিবৃতিতে জানায়, কিরিন ৭১০ এবং কোয়ালকম¯স্ন্যাপড্রাগন ৭৩০ চিপকে হটিয়ে আনটুটু বেঞ্চমার্কের তালিকায় ওপরে উঠে এসেছে কিরিন ৮১০।গত শুক্রবার হুয়াওয়ে চীনের উহানে এক অনুষ্ঠানে নতুন এ চিপসেট উন্মোচন করে। একই অনুষ্ঠানে নতুন তিন স্মার্টফোন নোভা ৫, নোভা ৫ প্রো এবং নোভা ৫আই উন্মুক্ত করা হয়।অনুষ্ঠানে হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ১০ কোটি স্মার্টফোন বাজারে এনেছে তারা। এ ছাড়া এই সময় পর্যন্ত ২০ লাখের বেশি জিটি স্মার্টওয়াচ বিক্রি করেছে।আনটুটু বেঞ্চমার্ক পরীক্ষায় ২,৩৭,০০০ পয়েন্ট পেয়েছে নতুন এই চিপসেট, যা কিরিন ৭১০ প্রসেসরের চেয়ে ১৬২ শতাংশ ভালো পারফরমেন্স দেবে। এ ছাড়া এটি কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন ৭৩০ প্রসেসরের চেয়ে ১২ শতাংশ এবং গ্রাফিকস প্রসেসিংয়ে অ্যাড্রিনো ৬১৮ অপেক্ষা ৪৪ শতাংশ ভালো পারফরমেন্স দেবে।নোভা ৫ ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে নতুন কিরিন ৮১০ প্রসেসর। নোভা ৫ প্রোতে ব্যবহার করা হয়েছে কিরিন ৯৮০ প্রসেসর, যা এর আগে হুয়াওয়ের পি৩০ প্রো এবং মেট ২০ ডিভাইসে দেখা গেছে।
অভিনন্দনের গোঁফকে জাতীয় গোঁফ ঘোষণার দাবি লোকসভার কংগ্রেসদলীয় নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, ভারতীয় বিমানসেনা অভিনন্দন বর্তমানকে তাঁর সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য যথাযথ সম্মান দেওয়া উচিত। তাঁকে ভারতশ্রী সম্মান দেওয়া হোক। পাশাপাশি তাঁর ঐতিহাসিক গোঁফকে জাতীয় গোঁফের মর্যাদা দেওয়া হোক।গতকাল সোমবার লোকসভায় ভারতের রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে এসব কথা বলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী।অভিনন্দন ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট। তিনি উইং কমান্ডার হিসেবে কর্মরত। তাঁর বাড়ি ভারতের তামিলনাড়ুতে।গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা হয়। এতে ৪০ জন জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে। এই ঘটনার ১২ দিন পর পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আকাশযুদ্ধে রূপ নেয়। আকাশযুদ্ধে ভারত দুটি যুদ্ধবিমান হারায়। অন্যদিকে, পাকিস্তান হারায় একটি যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান বাহিনীর হাতে বন্দী হন ভারতীয় পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন। পরে তাঁকে ভারতের কাছে ফিরিয়ে দেয় পাকিস্তান।এই ঘটনায় অভিনন্দন প্রচারের আলোয় চলে আসেন। তাঁকে বীর হিসেবে অভিহিত করে ভারত। তাঁর গোঁফ দেখে উচ্ছ্বসিত হন অনেকে। অভিনন্দনের গোঁফের স্টাইলে অনেকেই গোঁফ রাখতে শুরু করেন।এবার সেই অভিনন্দনের বীরত্বকে সম্মান জানানোর দাবি তুললেন পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ ও লোকসভায় কংগ্রেসদলীয় নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী।আরও পড়ুন:ভারতীয় পাইলটকে ফিরিয়ে দিল পাকিস্তানপাকিস্তানিদের ধাওয়ায় পুকুরে ঝাঁপ দেন ভারতীয় পাইলট
পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসন মারা গেছেন ১০ বছর হয়ে গেল। এখনো তাঁকে নিয়ে বিশ্বের অগণিত মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। কারণ, গানের ভুবনে তিনি অনন্য।মাইকেল জ্যাকসন মারা যান ২০০৯ সালের ২৫ জুন। তাঁর বয়স তখন ৫০। বেঁচে থাকলে এ বছর ৬১ বছরে পা দিতেন তিনি। জীবন তাঁকে হাত ভরে দিয়েছিল ঐশ্বর্য। পেয়েছিলেন ১৫টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। লাখো ক্যাসেট আর সিডি বিক্রি হয়েছে তাঁর। মাইকেল জ্যাকসন শুধু গান-গাওয়া তারকা ছিলেন না; তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, নৃত্যশিল্পী ও অভিনেতা। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি বদলে দিয়েছিলেন সংগীতবিশ্ব।মাইকেল জ্যাকসন দাঁড়িয়েছিলেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। ১৯৮২ সালে তাঁর ‘বিলি জিন’, এরপর ‘থ্রিলার’ তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল কোন উচ্চতায়, সে কথা সবাই জানে। নতুন করে সেসব বলা নিরর্থক। শুধু বলে রাখা ভালো, মিউজিক ভিডিও কেমন হওয়া উচিত, সেটা বুঝি ‘থ্রিলার’ হাতে–কলমে দেখিয়ে দিয়েছিল। ১৪ মিনিটের এই ভিডিও তৈরি করতে খরচ হয়েছিল তখনকার সময়ের পাঁচ কোটি ডলার। জ্যাকসনের ‘মুনওয়াক’-এর কথাও নিশ্চয়ই অনেকের মনে পড়ে যাবে। আর হ্যাঁ, তাঁর কনসার্টগুলো ছিল দেখার মতো। একদিকে জ্যাকসন গাইছেন গান, অন্যদিকে দর্শক-শ্রোতার দল যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে। উন্মাদের মতো আচরণ করছে তারা। কেউ কেউ উত্তেজনায় অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে!নাহ! মাইকেল জ্যাকসন একটা ব্যাপার ছিল বটে! তাঁর কনসার্টের ব্যাপারে দুটো কথা বলা যাক। বিশ্বজুড়ে বিশাল মাপের কনসার্টের জন্যও মাইকেল জ্যাকসনকে স্মরণ করতে হবে। ১৯৯২ সালে ‘দ্য ডেনজারাস ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ চলেছিল পাঁচ মাস ধরে। এই সময়ের মধ্যে জ্যাকসন করেছিলেন ৬০টি কনসার্ট।মৃত্যুর আগে জ্যাকসনের মাথায় সে রকমই একটি ভাবনা এসেছিল। ভেবেছিলেন, কনসার্ট নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়বেন বিশ্ব সফরে। প্রথম ১০টি কনসার্ট থেকে আয় করবেন পাঁচ কোটি ডলার। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তার আগেই জীবনকে বিদায় জানান তিনি।মৃত্যুর ১০ বছর পর একটি তথ্যচিত্রে নোংরাভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই পপ তারকাকে। তাঁর বিরুদ্ধে শিশু নিপীড়নের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’। জ্যাকসন তত্ত্বাবধায়কেরা মনে করেন, তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য বহু বছর আগে মীমাংসিত একটি ঘটনাটিকে পুনরায় সামনে নিয়ে এসেছে এইচবিও।২৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয় ৪ ঘণ্টার এ তথ্যচিত্র। কথিত আছে, মাইকেল জ্যাকসন ৭ ও ১০ বছরের দুই শিশুকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন। তাঁরা এখন তিরিশের যুবক। ওয়েড রবসন একজন কোরিওগ্রাফার আর জেমস সেফচাক একজন টিভি অভিনেতা। কেবল তাঁদের ভাষ্য নিয়ে নির্মিত হয়েছে ওই তথ্যচিত্র।২০০৩ সালে মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। সে বছর পুলিশ তাঁর ক্যালিফোর্নিয়ার খামারবাড়ি ‘নেভারল্যান্ড’-এ তল্লাশি চালায়। খামারবাড়িটির নামানুসারে তথ্যচিত্রের নামকরণ করা হয়েছে। জ্যাকসনের তত্ত্বাবধায়কদের দাবি, তথ্যচিত্রে ওয়েড রবসন ও জেমস সেফচাককেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, জ্যাকসনের ঘনিষ্ঠরা সেখানে উপেক্ষিত। তথ্যচিত্রটি একপেশে। জ্যাকসন কখনোই শিশুদের সঙ্গে বাজে আচরণ করতেন না।তথ্যচিত্রটি টেলিভিশনে প্রচারের পর থেকে জ্যাকসনের গান অনলাইনে বিক্রি ও শোনায় ভাটা পড়েছে। প্রায় ৪ শতাংশ কমে গেছে অ্যালবাম বিক্রি। অনলাইনে তাঁর অডিও-ভিডিওর চাহিদা কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। এমনকি রেডিওতে তাঁর গান প্রচার কমে গেছে ১৩ শতাংশ।বেশ কয়েকবার দাম কমিয়েও বিক্রি করা যাচ্ছে না মাইকেল জ্যাকসনের আলোচিত সেই খামারবাড়িটি। ২০১৫ সালে বিক্রির জন্য নেভারল্যান্ড র‍্যাঞ্চের দাম চাওয়া হয়েছিল ১০ কোটি ডলার। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে দাম কমিয়ে একবার সেটি করা হলো ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার, পরে মাত্র ৩ কোটি ১০ লাখ ডলারে সেটি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, নেভারল্যান্ড নামটি বদলে নতুন করে এর নাম রাখা হয়েছে সাইকেমোর ভ্যালি র‍্যাঞ্চ। খামারবাড়িটির যৌথ মালিকানায় রয়েছে দ্য সান্তা বারবারা ও ক্যালিফোর্নিয়া হাউস নামে দুটি প্রতিষ্ঠান।জ্যাকসনের মৃত্যুর আগে ২ হাজার ৭০০ একরের ওই খামারবাড়িতে অনেক কিছু সংযোজন করা হয়। সেখানে আছে রেললাইন, অগ্নিসহায়তা কেন্দ্র, বিস্তীর্ণ বাগানসহ আরও নানা কিছু। ১৯৮২ সালে বিরাট এই বাগানবাড়ির স্থাপত্যশৈলীর নকশা করেছিলেন রবার্ট অলটেভার্স। ১৯৮৯ সালে জ্যাকসন এটি কিনেছিলেন ১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। তারপর নিজের মতো করে তিনি সেটার নকশা বদলে নেন। বাড়িটির মূল দালানে আছে ছয়টি শোয়ার ঘর, নয়টি বাথরুম, একটি মাস্টার বেডরুম, দুটি মাস্টার টয়লেটসহ একটি চিলেকোঠা। ভেতরে লেক, সুইমিং পুলসহ খেলার ব্যবস্থা ছাড়াও আছে একটি বড় থিয়েটার হল। সূত্র: হলিউড রিপোর্টার, পিপল, ফোর্বস, বিবিসি
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান অভিনীত ‘ডন’ সিরিজটিকে আর টেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ছবির প্রযোজক রিতেশ সিদওয়ানি ও ফারহান আখতারের ভেতরে সিরিজের জন্য নতুন ছবি বানানোর তাড়নাও কাজ করছে না। তবে কি ধরে নেওয়া যায় ডনের মৃত্যু হচ্ছে?শাহরুখের বাজার খারাপ! অন্য কেউ এসে যে রাতারাতি ডন হয়ে যাবেন, সে রকম কোনো সম্ভাবনাও নেই। সবচেয়ে বড় কথা, নতুন কোনো গল্পও পাওয়া যাচ্ছে না। ফারহান আখতার এসব নিয়ে মাথাও ঘামাচ্ছেন না। তিনি আছেন নিজের অভিনয় আর গান-বাজনা নিয়ে। গত নয় বছর হলো নিজে কোনো ছবি পরিচালনাও করছেন না এই তরুণ বলিউড তারকা। ২০১১ সালে তাঁর পরিচালনায় নির্মিত হয় শাহরুখ অভিনীত ‘ডন টু’। সুতরাং ‘ডন’ শেষ!ফারহানের কাছের এক পরিচালক বন্ধু একই মন্তব্য করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেছেন, ‘ফারহানের ভেতরে এ নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখিনি। রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার “তুফান” ছবির বক্সারের চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। এই ছবি নিয়ে চলতি বছর এবং আগামী বছরের বেশির ভাগ সময় পার করবে সে। কিছুদিন আগেই সে সোনালি বসুর “দ্য স্কাই ইজ পিংক” ছবিটা করে শেষ করল। তাহলে বলুন, পরিচালনার সময় কোথায় তাঁর?’কিন্তু আরেক প্রযোজক? তাঁর কী বক্তব্য? জানার জন্য যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি রিতেশ সিদওয়ানিকে। কেবলই নীরব থেকেছেন তিনি। কোনো কোনো পরিস্থিতিতে নীরবতাও শব্দের চেয়ে শক্তিশালী নয়?এর আগে রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার ‘ভাগ মিলকা ভাগ’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ফারহান আখতার। ডেকান ক্রনিকেল
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিনবার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন সাকিব আল হাসান। সেটি এবার টুর্নামেন্টের এক সংস্করণেই এবং এ তিন ম্যাচেই জিতেছে বাংলাদেশক্রিকেট বিশ্বকাপে তাঁকে দেখে গ্রিক পুরানের সেই রাজার কথা মনে পড়তে পারে। গোলাপের দেশ ফ্রিজিয়ার রাজা মাইডাস এবং তাঁর সোনালি স্পর্শ—কোনো কিছু ছুঁলেই তা সোনায় পরিণত হতো! সাকিব আল হাসানও যেন এবার বিশ্বকাপে পুরানের সেই রাজা মাইডাস, মাঠে নামলেই উঠে আসছে সোনালি পারফরম্যান্স। এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যে তিন ম্যাচ জিতেছে, তার নায়ক তো সাকিব।তবে সাকিবের নিজেরই এ কথায় আপত্তি আছে। একাই জিতিয়েছেন এমনটি তিনি ভাবেন না। সে কথা আরেকবার বলেছেন কাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচসেরা হওয়ার পর। দলের সবারই কিছু না কিছু অবদান রয়েছে বলে মনে করেন ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয় এ অলরাউন্ডার। তা হয়তো আছে। কিন্তু সাকিব তাঁর পারফরম্যান্স দিয়েই ছাপিয়ে গেছেন সবাইকে। কাল যেমন টপকে গেলেন ইমরুল কায়েস আর মোহাম্মদ আশরাফুলকে। এর আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ দুবার ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ইমরুল ও আশরাফুল। সাকিব বিশ্বকাপের এক টুর্নামেন্টেই পেছনে ফেললেন তাঁদের।দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু। সে ম্যাচে ৭৫ রানের পাশাপাশি ৫০ রানে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন সাকিব। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মহাকাব্যিক সেই রান তাড়া করে জয়ের ‘নিউক্লিয়াস’ ছিলেন সাকিব। সেঞ্চুরির পাশাপাশি ২ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচসেরাও। আর কাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফিফটির পর ঘূর্ণিফাঁস পরিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। ২৯ রানে তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ম্যাচসেরা কে—তা না বললেও চলে। সাকিব ছাড়া আর কে! অর্থাৎ এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তিনজয়েই ম্যাচসেরা সাকিব। বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের এত দাপুটে খেলা এর আগে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের জয়ে সাকিবের মতো টানা পারফর্ম করে যাওয়ার নজিরও নেই।আর এই টানা পারফর্ম দিয়েই ইমরুল ও আশরাফুলের গড়া নজিরকে পেছনে ফেলেছেন সাকিব। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও হল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ইমরুল। তার আগের সংস্করণ ২০০৭ বিশ্বকাপে বারমুডা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচসেরা হন মোহাম্মদ আশরাফুল। সাকিব কাল তৃতীয়বারের মতো ম্যাচসেরা হওয়ার আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে ইমরুল ও আশরাফুলই সর্বোচ্চ দুবার ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের আরও দুটি ম্যাচ আছে। সাকিবের যে ফর্ম, তাতে বাকি দুই ম্যাচেও সেরা খেলোয়াড় হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সাকিবের হাতে যে এখন মাইডাস টাচ!
দর্শকে স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারকে দুয়ো দিলে তাঁদের থামাবেন না, এমনটাই বলেছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক এউইন মরগান।অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলোয়াড়ি চেতনার দারুণ দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ভারতীয় সমর্থকেরা যখন ফিল্ডিংয়ের সময় স্টিভেন স্মিথকে দুয়ো দিচ্ছিলেন, কোহলি তখন ইশারায় সমর্থকদের দুয়ো দিতে বারণ করেছিলেন। তবে ইংলিশ অধিনায়ক এউইন মরগান সে পথে হাঁটবেন না। খোলাখুলিই বলে দিয়েছেন, দর্শকেরা স্মিথ-ওয়ার্নারকে দুয়ো দিলে থামাতে যাবেন না!আজ লর্ডসে মুখোমুখি হচ্ছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে তাই মরগানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা স্মিথ-ওয়ার্নারকে দর্শক দুয়ো দিলে কোহলির মতো তিনিও তাঁদের থামাবেন কি না। উত্তরে মরগান পক্ষ নিলেন দর্শকদেরই। বলেছেন, দর্শকেরা কীভাবে আচরণ করবেন, সে ব্যাপারে অন্তত কোনো দিকনির্দেশনা দেবেন না অধিনায়ক।ইংলিশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘দর্শকেরা অনেক টাকা খরচ করে খেলা দেখতে আসেন। তাঁদের যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। দর্শকেরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, সেটি আপনি ঠিক করে দিতে পারেন না। দুজন ক্রিকেটার নিষিদ্ধ হয়েছে, শাস্তি ভোগ করে ফিরে এসেছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই সমর্থকেরা তাদের মেনে নেবেন। দর্শকদেরও সময় দরকার।’স্মিথ-ওয়ার্নারদের কীভাবে স্বাগত জানানো হবে, সেটি দর্শকদের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছেন মরগান, ‘আমি কোনো কিছুই প্রত্যাশা করছি না। বিশ্বজুড়ে দর্শক-সমর্থকেরা একেক রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সেটিই স্বাভাবিক। দেখা যাক কী হয়।’এদিকে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ বলেছেন, দর্শকেরা দুয়ো দিলেও স্মিথ-ওয়ার্নারদের পারফরম্যান্সে কোনো হেরফের হবে না। বরং দর্শকদের দুয়ো তাঁদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে, এমনটাই মনে করছেন ফিঞ্চ, ‘লোকজন কী বলছে, একজন খেলোয়াড় হিসেবে আপনি সেসবে কান দিতে পারেন না। ব্যাট করতে নামার সময় স্মিথ ও ওয়ার্নারের মাথায় এসব একদমই থাকবে না। গুটিকয়েক লোক দুয়ো দিক বা পুরো স্টেডিয়াম, তা কোনো পার্থক্য তৈরি করবে না। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমাদের খেলোয়াড়দের ওপর এসব ঘটনা কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং এটা তাদের অনুপ্রেরণাই দিয়েছে।’এর আগে ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টোও আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দর্শকেরা দুয়ো দিতে চাইলে তাঁদের কিছু করার নেই। দুয়ো প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বেয়ারস্টো টেনে এনেছেন ২০১৩-১৪ অ্যাশেজের কথা। তখনকার অস্ট্রেলীয় কোচ ড্যারেন লেম্যান স্টুয়ার্ট ব্রডকে দুয়ো দিয়ে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য স্বাগতিক সমর্থকদের উসকে দিয়েছিলেন। সেই ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে বেয়ারস্টো বলেছেন, ‘দুয়ো দেওয়া উচিত না অনুচিত, সে ব্যাপারে কিছু বলছি না আমি। তবে যা হবে, সেটা দুই পক্ষের তরফেই হওয়া উচিত। আমরা করতে পারব, কিন্তু তোমরা করতে পারবে না, এমন মনোভাব থাকাটা একটু অদ্ভুতই বটে।’
• বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা বোলিং ফিগার• বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট• বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান• ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক—লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান, সাকিব আল হাসান।সাকিবকে নিয়ে কাল ফেসবুকে নিজেদের পেজে এভাবে পোস্ট দিয়েছে আইসিসি। আইসিসি সবই বলল, শুধু যোগ করেনি একটা শব্দ—লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান, এই হচ্ছেন ‘লিজেন্ড’ সাকিব আল হাসান!এক সাংবাদিক কাল সংবাদ সম্মেলনে তাঁর সব কীর্তির কথা মনে করিয়ে দিয়ে জানতে চাইলেন, এখন কি সাকিবের আগে ‘লিজেন্ড’ শব্দটা ব্যবহার করা যায়? সাকিব হেসে বললেন, ‘আমি কীভাবে বলব বলেন! এটা আপনারা ভালো বলতে পারবেন। এটা নিয়ে আসলে কখনো চিন্তা করিনি।’ ঠিক, সাকিব নিজের প্রশংসা নিজে করবেন কীভাবে?তবে সুনীল যোশি নিশ্চয়ই করতে পারেন। বাংলাদেশ দলের স্পিন কোচের কোনো সংশয় নেই যে সাকিব একজন কিংবদন্তি, ‘অবশ্যই। কেন নয়? সে এই মুহূর্তে ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। সে একজন কিংবদন্তি, কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ দলে তার মতো একজন খেলোয়াড় থাকা গর্বের ব্যাপার। সে হচ্ছে মিস্টার কনসিসটেন্ট, সেটা ব্যাটে হোক, বলে হোক কিংবা ফিল্ডিংয়ে।’এই বিশ্বকাপে সাকিব আশ্চর্য ধারাবাহিক। কি ব্যাটিং, কি বোলিং—দুই বিভাগেই দলের কান্ডারি। ট্রেন্ট ব্রিজে প্রসঙ্গটা তাই উঠেছিল—বাংলাদেশ কি ‘ওয়ান ম্যান আর্মি?’ মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছিলেন, মোটেও তা নয়। কাল অধিনায়কের কথার পুনরাবৃত্তি করলেন সাকিবও, ‘ঠিক তা নয়। আজ (কাল) যদি দেখেন মুশফিক ভাইয়ের ইনিংস, রিয়াদ ভাইয়ের (মাহমুদউল্লাহ) অবদান। তামিম-মোসাদ্দেকের অবদান খুব দরকার ছিল। এ ধরনের উইকেটে এমন স্কোর গড়তে গেলে সবার অবদান খুব দরকার। হ্যাঁ, হয়তো আমার একটু বেশি ভালো যাচ্ছে। কিন্তু দলের সবার অবদান না থাকলে ফল এমন হতো না। বোলিংয়েও একই বিষয়। কেউ না কেউ অবদান রাখছে। মোস্তাফিজ সাইফউদ্দিন দুজনই ১০টা করে উইকেট পেয়ে গেছে। এটা তাদের জন্য বড় অর্জন। সবাই বলে, আমাদের বলে অত বেশি গতি নেই, স্কিল নেই, তারপরও ওদের জায়গা থেকে যতটুকু করার করছে। এটা খুব দরকার জিততে। কেউ হয়তো অনেক বেশি অবদান রাখবে। তবে ছোট ছোট অবদান জিততে ভীষণ সহায়তা করে করে।’২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে কটি ম্যাচ জিতেছে, প্রতিটিতেই ম্যাচের নায়ক হয়েছেন সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে যদি বলা হয় এ টুর্নামেন্টে নিজের কোন পারফরম্যান্সকে বেশি এগিয়ে রাখবেন, তাঁকে একটু বেকায়দায় পড়তে হবে। সাকিবের কাছে সব পারফরম্যান্সই সমান, ‘আমি আমার পারফরম্যান্সকে র‍্যাঙ্ক করি না। তবে এটা তৃপ্তিদায়ক যে ব্যাটে-বলে সমান অবদান রাখতে পারছি।’সাকিবের অবদান মানেই তো প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রেকর্ড, নতুন নতুন মাইলফলক ছোঁয়া। এত এত অর্জনে কেমন লাগে সাকিবের? তাঁর প্রতিক্রিয়া হলো ম্যাচে কৃপণ বোলিংয়ের মতোই, ‘নতুন রেকর্ড গড়তে ভালো লাগে। কোনো লক্ষ্য থাকলে সেটা অর্জনের তাড়না থাকে। অর্জন করতে পারলে ভীষণ ভালো লাগে।’সাকিবের অর্জনে ভীষণ ভালো লাগে পুরো বাংলাদেশেরই—এখন যেমন লাগছে!
সময়টা এখন সাকিব আল হাসানের। তিনি এখন ভিজছেন অভিনন্দনের বৃষ্টিতে। চারদিকে শুধু সাকিব-স্তুতি। বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে নিয়ে প্রশংসার এই সুযোগ হাতছাড়া করছে না সানরাইজার্স হায়দরাবাদও। কাল সাকিবকে তারা অভিনন্দন জানিয়েছে ফেসবুকে নিজেদের পেজে। অথচ গত আইপিএলে এই হায়দরাবাদের একাদশে নিয়মিত সুযোগ পাননি বাংলাদেশ অলরাউন্ডার।কাল সংবাদ সম্মেলনে এক ভারতীয় সাংবাদিক জানতে চাইলেন, আইপিএলের পর তিনি কি নিজেকে প্রমাণের তাড়না অনুভব করেছেন? সে কারণেই নিজেকে অন্যভাবে তৈরি করেছেন? সাকিবের সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘আমি নিজেকে তৈরি করেছি (বিশ্বকাপের জন্য), তবে আমার প্রমাণের কিছু নেই। বিশ্বকাপ শুরুর আগে যেভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার আমি নিয়েছি। আমার সৌভাগ্য, এটা এখন কাজে দিচ্ছে।’হায়দরাবাদের একাদশে সাকিব যখন উপেক্ষিত, তখন তিনি বসে থাকেননি। কাজ করেছেন ফিটনেস নিয়ে। দলের স্পিন কোচ সুনীল যোশি জানালেন, সাকিব এ সময়ে পাঁচ থেকে ছয় কেজি ওজন কমিয়েছেন। রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে অনেক স্বচ্ছন্দ হয়েছেন। এই ফিটনেস কতটা উপকৃত করছে, সেটি কাল আরেকবার বললেন সাকিব, ‘ফিটনেস আমাকে অনেক সহায়তা করেছে। মানসিকভাবেও অনেক সহায়তা করেছে। শারীরিক-মনস্তাত্ত্বিকভাবে একটি আরেকটির পরিপূরক। অনেক পরিশ্রম করেছি। এটা মানসিকভাবে অনেক সহায়তা করেছে।’ সাকিবকে একাদশে না নেওয়া বাংলাদেশের দর্শকেরা হায়দরাবাদের কম নিন্দে করেনি। আইপিএল খেলে ক্লান্ত হননি, বরং চনমনে সাকিবকে পাওয়া গেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে, যেটির ফল এখন মিলছে। হায়দরাবাদকে একটা ধন্যবাদ দিতে পারে বাংলাদেশের দর্শকেরা!
টেলিভিশনের পর্দায় আজ যেসব খেলা দেখবেন:বিশ্বকাপ ক্রিকেটবিটিভি, মাছরাঙা, গাজী, স্টার স্পোর্টস ১, ২ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াবেলা ৩-৩০ মি.মেয়েদের বিশ্বকাপ ফুটবলসনি টেন ২ইতালি-চীনরাত ১০টাহল্যান্ড-জাপান      রাত ১টাএনবিএ       সনি ইএসপিএনঅ্যাওয়ার্ডস নাইট সন্ধ্যা ৭টা
ইন্টারনেটের বর্তমান অখণ্ড রূপ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিছু দেশ কয়েক বছর ধরে নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। সাইবার জগতে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে, এমন আশঙ্কা করে দেশগুলো ইন্টারনেটে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার কথা বলছে।‘নিজস্ব ইন্টারনেট’ তৈরিতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত মাসেই এমন ব্যবস্থা তৈরির জন্য নতুন আইন পাস করিয়েছেন। প্রযুক্তিবিষয়ক সাময়িকী ‘অয়ারড’ বলছে, রাশিয়ার পথে এগোচ্ছে ইরানও। গত মাসে ইরান ঘোষণা দিয়েছে, ‘জাতীয় তথ্য নেটওয়ার্ক’ প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ করেছে দেশটি। প্রকল্পটি ইরানের ‘নিজস্ব ইন্টারনেট’ ব্যবস্থা গড়ার অংশ।ইন্টারনেটে সার্বভৌম ক্ষমতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা বিশ্বে নতুন নয়। এখন পর্যন্ত চীন এ পথে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বৈশ্বিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা থেকে চীনের নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা এখন পরিচিত ‘দ্য গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না’ নামে। এটা এক বিশাল সেন্সরশিপ ব্যবস্থা। স্বাধীন মত প্রকাশে চীনের জনগণের ওপর এই সেন্সরশিপ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও প্রকল্পটির অর্থনৈতিক প্রভাব বেশ গভীর। এর আওতায় চীন ইন্টারনেটভিত্তিক শত কোটি ডলার মূল্যের কোম্পানি গড়তে পেরেছে।সফটওয়্যারনির্ভর এই সেন্সরশিপ ব্যবস্থা দিয়ে চীন আসলে জনগণের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। জনগণ কোন তথ্য, আধেয় বা কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবে, সেটা এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যবস্থা ইন্টারনেটের উপরিতলের নিয়ন্ত্রণ। কারণ বিকল্প পদ্ধতি (ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা টর প্রজেক্ট) ব্যবহার করে চীনের এই সেন্সরশিপ সহজে পাশ কাটানো যায়।তবে নিজস্ব ইন্টারনেট তৈরিতে রাশিয়া ভিন্ন কিছু ভাবছে। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশনের’ সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক রবার্ট মোগেস বলেন, ইন্টারনেট নিয়ে রাশিয়ার আকাঙ্ক্ষা ভিন্ন। আরও গভীরভাবে ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় রাশিয়া।রাশিয়ার নিজস্ব ইন্টারনেটপৃথিবীর কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলো ২০১০ সালের পরে বড় ধরনের ধাক্কা খায়। এ সময় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে সূচিত ‘আরব বসন্তের’ মতো আন্দোলনের ঢেউ দেশে দেশ ছড়িয়ে পড়ে। টলে যায় দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা একনায়কদের মসনদ। ক্ষমতা হারান হোসনি মোবারক, বেন আলি ও গাদ্দাফির মতো শাসক। অন্যদিকে, ২০১১ থেকে ২০১২ সালে রাশিয়ায় ‘উইন্টার অব প্রোটেস্ট’ শীর্ষক এক আন্দোলনেও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম তথা ইন্টারনেটের ভূমিকা ছিল।এসব আন্দোলনের পরে ইন্টারনেটে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাশিয়া ও চীন খোলামেলা কথা বলতে শুরু করে। এই সময় রাশিয়ার নাগরিকদের ওপর ‘বিকৃত প্রভাব’ বিস্তার করা থেকে পশ্চিমাদের বিরত থাকার আহ্বান জানায় মস্কো।আন্দোলনের পরে ইন্টারনেটে চীনের মতো ডিজিটাল সীমান্ত গড়ার কথা ভাবতে শুরু করে রাশিয়া। তবে চীনের দেখানো পদ্ধতিতে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করাটা রাশিয়ার পক্ষে সম্ভব ছিল না।যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘দ্য কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনের’ সাইবার বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম সিগাল বলেন, চীনের নিয়ন্ত্রণপদ্ধতি সাধারণত ইন্টারনেটের আধেয় (শব্দ, লেখা, ভিডিও, অডিও) নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এই পদ্ধতি রাশিয়াতে কাজ করত না।যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী পল বাফেডের তৈরি মানচিত্রের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগের পাইপলাইন বসানো হয়। বাফেড বলেন, রাশিয়ার মতো দেশ বাকি বিশ্বের সঙ্গে জটিল সংযোগ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ইন্টারনেটে যুক্ত। দেশটি নিজেও জানে না কতটি এবং কতভাবে তারা বৈশ্বিক ইন্টারনেটে যুক্ত। ফলে দেশের সংযোগের ওপর নজরদারি করে ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ করাটা রাশিয়ার জন্য সহজ নয়। তবে শুরুতে এ বিষয়ে নজর দেওয়ায় চীন এ ভাবেও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। বাধ্য হয়েই রাশিয়া ভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে।ইন্টারনেটের একটি মৌলিক বিষয় হলো ডিএনএস। এটা বলে দেয় কীভাবে ইন্টারনেটের আইপি অ্যাড্রেসকে পাঠযোগ্য করতে হয়। যেমন, প্রথম আলোর আইপি অ্যাড্রেস 35.200.199.101। ডিএনএস এটাকে অনুবাদ করে পাঠযোগ্য www.prothomalo.com করে তোলে।রাশিয়া এই ডিএনএস ব্যবস্থার (বর্তমান সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে) একটি নিজস্ব কপি তৈরি করেছে। এতে করে কেউ রাশিয়া থেকে গুগলের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে গেলে তিনি স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলে যাবেন দেশটির নিজস্ব সার্চইঞ্জিন ইয়ানডেস্কে। একইভাবে ফেসবুকে ঢুকতে গেলে চলে যাবেন রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিকেতে। গত এপ্রিলে এই বিষয়ে সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া।মোগেস বলেন, এই প্রকল্প সফল হলে রাশিয়ার আর সেন্সরশিপের প্রয়োজন হবে না। এমনকি রাশিয়ার ইন্টারনেট ট্রাফিক কখনোই বাইরে যাবে না। নাগরিকেরা দেশটির বাইরের কোনো তথ্যভান্ডারেও প্রবেশের সুযোগ পাবেন না।রাশিয়ার প্রকল্পে সরকারের এতটাই গভীর নিয়ন্ত্রণ যে, কোনো ‘ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক’ অথবা ‘টর প্রজেক্টের’ মাধ্যমেও বিকল্প নেটওয়ার্ক তৈরি করে বৈশ্বিক ইন্টারনেটে প্রবেশ করা যাবে না। চীনে এখনো যেটা সম্ভব।বৈশ্বিক মুক্ত ইন্টারনেটে সমস্যা কোথায়? বৈশ্বিক ইন্টারনেট ও এর প্রযুক্তিগত গঠন প্রক্রিয়ার (যেমন-ডোমেইন সিস্টেম, কেবল) নিয়ন্ত্রণ পশ্চিমাদের হাতে। এ নিয়ন্ত্রণে অনেক রাষ্ট্রই খুশি নয়।অখুশি রাষ্ট্র যাদের কর্তৃত্ববাদীও বলা হয়, সেই দেশগুলো ইন্টারনেটের তথ্য প্রকাশ ব্যবস্থার ওপর অসন্তুষ্ট। বৈশ্বিক ইন্টারনেটে অবাধে তথ্য প্রকাশ করা যায়। তা যেকোনো তথ্যই হোক না কেন। ফলে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলোকে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়।অন্যদিকে, মুক্ত ইন্টারনেটে এমন কিছু সমস্যা আছে, যা সব দেশের জন্যই সমান গুরুতর। বর্তমান সাইবার দুনিয়ায় একটি দেশের জনগণ সে দেশের সামরিক স্থাপনা কিংবা বিদ্যুৎ বা জরুরি পানি ব্যবস্থাপনার মতোই ঝুঁকিপূর্ণ।মোগেস বলেন, বিশাল ও উন্মুক্ত তথ্য জগতে প্রবেশের সুযোগ মানুষকে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর প্রভাব রাখতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। অন্যদের তুলনায় বেশ আগেই এটা রাশিয়া ও চীন বুঝতে পেরেছে।এ জন্য রাশিয়া ও চীনের দর্শন হলো, অন্য যেকোনো স্পর্শকাতর বিষয়ের মতো দেশের জনগণও গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক স্থাপনা যেভাবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে রক্ষার করতে হয়, একইভাবে জনগণকেও রক্ষা করা উচিত। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঙ্কন পিগম্যানের মতে, ইন্টারনেট জগতে ‘ভুয়া সংবাদ’ বাস্তব পৃথিবীর ‘ভাইরাসের’ মতোই ক্ষতিকর।অন্যদিকে, বৈশ্বিক ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। যুক্তরাষ্ট্র চাইলে এর মাধ্যমে চরবৃত্তিও চালাতে পারে। বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের এমন কর্মকাণ্ড ফাঁস করে আলোড়ন তুলেছিল এডওয়ার্ড স্নোডেন। এ ছাড়া, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাইবার হামলাও উদ্বেগের কারণ। তবে নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরিতে বড় ধরনের ঝুঁকি আছে।বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভনিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরিতে রাশিয়া বা ইরানের মতো দেশের প্রধান ঝুঁকিটি হলো অর্থনৈতিক। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন এখন বৈশ্বিক ইন্টারনেটর ওপর নির্ভরশীল। ফলে বৈশ্বিক ইন্টারনেট থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবেও একঘরে হয়ে যেতে পারে।তবে এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ দেখাতে পরে চীনের প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’। ‘একুশ শতকের সিল্করুট’ হিসেবে বিবেচিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে চীন বাকি বিশ্বের সঙ্গে স্থলপথ, সমুদ্রবন্দর ও টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে চায়।বিবিসি বলছে, ৮০টিরও বেশি দেশের টেলিকমিউনিকেশন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে চীন। কেবল বসানো থেকে শুরু করে মূল নেটওয়ার্ক তৈরিতেও চীন দেশগুলোকে সহায়তা করছে। এর মধ্য দিয়ে চীন বিকল্প বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।ভূরাজনীতি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান স্ট্রার্টফরের বিশেষজ্ঞ সিম ট্যাকের মতে, এই নেটওয়ার্ক প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মধ্য দিয়ে চীন ও রাশিয়া নিজেদের মতো একটা অর্থনৈতিক বলয় তৈরি করতে পারবে। পশ্চিমাভিত্তিক ইন্টারনেট ও অর্থনৈতিক বলয় থেকে বের হয়ে টিকে থাকার এটাই বিকল্প পথ হতে পারে।ট্যাকের মতে, একটি বিকল্প অর্থনৈতিক বলায় তৈরিতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট আগ্রহী দেশ আছে।রাজনৈতিক প্রভাবনিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরিতে রাশিয়া, ইরান ও চীনের মতো দেশের প্রচেষ্টার রাজনৈতিক প্রভাব গভীর হবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। এ বিষয়ে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ একটি সম্পাদকীয় লিখেছে। সংবাদমাধ্যমটি আশঙ্কা করছে, খুব দ্রুতই বিশ্ব হয়তো কয়েক ভাগে বিভক্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থা দেখতে চলেছে। তাদের আশঙ্কা, মুক্ত ইন্টারনেটের পরিবর্তে এই ধরনের ব্যবস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যবহার হতে পারে। ইন্টারনেটে সার্বভৌমত্ব অর্জন রাষ্ট্রগুলোকে একই সঙ্গে নাগরিকদের ওপর অতিমাত্রায় নজরদারি করার ক্ষমতা দেবে। এতে সংকুচিত হয়ে পড়বে নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা।মুক্ত ইন্টারনেট ক্যাম্পিং প্রতিষ্ঠান ওপেন রাইট গ্রুপের মারিয়া ফ্যারেল বলেন, রাশিয়া ও চীনের এই পদক্ষেপে অন্যান্য দেশেও উদ্বুদ্ধ হবে। বিশেষত, জিম্বাবুয়ে, জিবুতি ও উগান্ডার মতো দেশগুলো এই প্রকল্পের অংশ হতে চাইবে।নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশনের একটি গবেষণায় ৫০টি রাষ্ট্রের কথা উঠে এসেছে যারা ইন্টারনেট নিয়ে বিকল্প কিছু করার কথা ভাবছে। এই রাষ্ট্রগুলোকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিজিটাল ডিসাইডার’। এর মধ্য রয়েছে, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরায়েলের মতো দেশ। আগামীর ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিয়ে এই দেশগুলোর সামনে এখন দুটো পথ আছে। একটি, বিদ্যমান বৈশ্বিক মুক্ত ইন্টারনেট। অন্যটি, সার্বভৌম ও নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট। মোগেস বলছেন, যদি রাশিয়া ও ইরান নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সফল হয়, তাহলে এই ‘ডিজিটাল ডিসাইডার’ রাষ্ট্রগুলো নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়তে উদ্যোগী হতে পারে।অয়ার্ড বলছে, যদি রাশিয়া ও ইরান তাদের চেষ্টায় সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন এক ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরি হবে যেটার সঙ্গে বর্তমানের কোনো কিছুরই তুলনা চলে না। এই প্রচেষ্টটার পেছনে বিশাল প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ আছে, আছে অনেক অর্থনৈতিক বিষয়, তবে নিজস্ব ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠার পথ একেবারে অসম্ভব নয়।
নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় ট্রাক্টরের ধাক্কায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অপর দুই ব্যক্তি। সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভবানীপুর বাজারের পাশে স্লুইসগেট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।নিহত ওই যুবকের নাম মোয়াজ্জেম হোসেন (২৯)। উপজেলার মহাদিঘী গ্রামের শামসুর রহমান খাঁনের ছেলে তিনি। আহত দুজন হলেন মাহাবুর রহমান (৫৭) ও সুমন হোসেন (৪৫)। আহত মাহাবুর উপজেলার বিহারীপুর গ্রামের মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে এবং আহত সুমন রানীনগর এলাকার মৃত আবেদ আলীর ছেলে।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যায় মোয়াজ্জেম হোসেন, মাহাবুর রহমান ও সুমন রানীনগর থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে বাড়ি ফিরছিলেন। বিপরীত দিক থেকে আসা ইট বোঝাই একটি ট্রাক্টর অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁরা তিনজন আহত হন। পরে ট্রাক্টর চালকই তাঁদের উদ্ধার করে আত্রাই উপজেলা কমপ্লেক্সে রেখে তিনি সটকে পড়েন। গুরুতর আহত মোয়াজ্জেম হোসেন সেখানে মারা যান। পরে আহত অপর দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।এ বিষয়ে আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। ট্রাক্টর চালক পালিয়ে যাওয়ায় তাঁকে আটক করা যায়নি। তবে তাঁকে আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ওই ঘটনায় আহত দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিসহ দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার হোয়াট হাউসে এ সংক্রান্ত একটি নিষেধাজ্ঞাপত্রে সাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে গত শনিবার তিনি ইরানের ওপর ‘গুরুতর নিষেধাজ্ঞা’ আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।এএফপির প্রতিবেদন বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞাকে ইরানের প্রতি ‘শক্ত ও উচিত জবাব’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব চাই না। এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ইরানের ওপর নির্ভর করছে। ইরান চাইলে আগামীকালই এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হতে পারে...আর তা না হলে এখন থেকে এটি বছর থেকে বছর চলবে।’নতুন নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফকে ও দেশটির এলিট ফোর্স রেভল্যুশনারি গার্ডের শীর্ষ আট কর্মকর্তাকে কালো তালিকাভুক্ত করতে যাচ্ছে। ট্রাম্প বলেন, ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র এটাই চায়। এটা এখন ইরানের ভাবনার বিষয়। এর আগে রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডারের হুঁশিয়ার জবাবে বলেন, যুদ্ধ নয়, বরং চলমান সংকট নিরসনে ইরানের সহায়তা চায় যুক্তরাষ্ট্র। তেহরানের সঙ্গে কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না তাঁর দেশ। ট্রাম্পের মন্তব্য, পারস্য অঞ্চলে যেকোনো সংঘর্ষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর ফলে এ অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে।ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। উপসাগরীয় এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা ও ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে গত শনিবার নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে নিষেধাজ্ঞা কী ধরনের, সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি। এদিকে ইরান তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার কথা অস্বীকার করলেও মার্কিন সামরিক ড্রোনের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তা ভূপাতিত করার কথা স্বীকার করেছে।
বিশ্বকাপে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক হাজার রান ও ৩০ উইকেট পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। সে সঙ্গে বিশ্বকাপের এক আসরে ৪০০ এর বেশি রান ও ১০ উইকেট নেওয়া প্রথম ক্রিকেটারও হয়ে গেছেন সাকিবশুধু ব্যাটে-বলে নয়, এ বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের কথাবার্তাতেও যেন অন্যরকম সুর! সাধারণত ব্যক্তিগত রেকর্ড-পরিসংখ্যানকে খুব একটা পাত্তা দিতে চান না তিনি। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, রেকর্ডটির কথা তিনি জানতেন কি না। একটু অবাক করে দিয়ে সাকিব জানালেন, রেকর্ডের কথা তাঁর মাথায় ছিল!কী সে রেকর্ড, এতক্ষণে নিশ্চয়ই তা জানা হয়ে গেছে আপনার। তবে এমন দিনে মধুর রেকর্ডের কথা বারবার শুনলেও নতুনের মতোই লাগে! ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার অর্জনের দিনে আরও বড় রেকর্ডের দখল নিয়েছেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০০ রান ও ৩০ উইকেটের ডাবল পূর্ণ করেছেন সাকিব। এর আগে ৯০০ রান ও ২৫ উইকেটের ডাবল ছিল মাত্র দুজনের, স্টিভ ওয়াহ ও সনাথ জয়াসুরিয়া। সবাইকে ছাপিয়ে সাকিব আজ উঠে গেলেন নতুন এক চূড়ায়।তাহলে কি রেকর্ডটি মাথায় নিয়েই খেলতে নেমেছিলেন সাকিব? উত্তর শুনে মনে হলো, মনের এক কোনায় নিশ্চয়ই উঁকিঝুঁকি মারছিল রেকর্ডের কথা। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে খুব সংক্ষেপে বললেন, ‘লক্ষ্য অর্জন করার তাড়না সব সময়ই থাকে। পূরণ করতে পারলে ভালো লাগে।’আরেকটি রেকর্ডের কথা বোধ হয় এখনো জানেন না সাকিব। এ বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত ৪৭৬ রান করেছেন, উইকেট সংখ্যাও হয়ে গেছে ১০টি। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ৪০০ এর বেশি রান ও ১০ উইকেটের মালিক হয়ে গেছেন তিনি।২০১৯  ক্রিকেট বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত যে তিনটি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ, সব কটিতেই ম্যাচসেরা তিনি। বাংলাদেশ দলে তিনি কি তাহলে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’? সাকিব এক কথায় নাকচ করে দিলেন তা। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের পাশাপাশি বোলারদেরও দিতে চাইলেন প্রাপ্য কৃতিত্বটা, ‘মোস্তাফিজ-সাইফ দুজনেই ৯-১০টার মতো উইকেট নিয়েছে। আমাদের পেসারদের হয়তো অত গতি বা স্কিল নেই। কিন্তু তাঁদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করছে তারা।’
সাউদাম্পটনে সোমবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬২ রানের দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ৫১ রান এবং বল হাতে ৫ উইকেট নিয়ে সাকিব একাই আফগানদের সব বাধাকে তুচ্ছ প্রমাণ করেছেনবিশ্বকাপটা সাকিব নিজের রঙে রাঙাতেই এসেছেন। ব্যাট হাতে ওয়ার্নার-রুটদের পাত্তা দিচ্ছেন না মোটেই, ৬ ম্যাচ থেকে ৪৭৬ রান করে আসরের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। ৬ ম্যাচে ৩ অর্ধশতক এবং দুই শতকে বিশ্বসেরা সব ব্যাটসম্যানদের পেছনে ঠেলে ব্যাটিং প্রতিভার জানান দিচ্ছেন জোরেশোরে।সাউদাম্পটনের উইকেট এমনিতেই স্পিনবান্ধব। আগের ম্যাচে আফগান স্পিনের সামনে নাকাল হয়েছিলেন কোহলি-রোহিতরা। বাংলাদেশকেও ম্যাচের আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন আফগান দলপতি, স্পিন দিয়েই নাকি ঘায়েল করবেন তামিম-মুশফিকদের। কথা-কাজে মিল রেখে আফগান অধিনায়ক বোলিং উদ্বোধন করালেন মুজিব উর রেহমানকে দিয়ে। দলীয় ২৩ রানের মাথায় সেই অফ স্পিনারের বলেই বিদায় নেন লিটন।স্পিনের চাপটা তখন থেকেই শুরু। তবে সেই চাপ সামাল দিতে বোধ করি বর্তমান ফর্মের সাকিবের চেয়ে ভালো ব্যাটসম্যান পাওয়া মুশকিল। নেমেই নিজের জাত চেনাতে শুরু করেন সাকিব। তামিম ধীরগতিতে খেলতে থাকলেও সাকিব নিজের সহজাত খেলা দিয়েই রানের চাকা সচল রাখেন। ২০১৯ বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় ফিফটি তুলে নিয়ে দলকে লড়াকু সংগ্রহের দিকে এগিয়ে দেন।ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে আফগান ব্যাটিংয়ের কোমর ভেঙে দিয়েছেন সাকিব, তাই সেটাই তাঁকে বেশি তৃপ্তি দিয়েছে, ‘পাঁচ উইকেট পেয়ে বেশি ভালো লেগেছে, তবে ফিফটি করতে বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে।’ এ সময় স্পিনবান্ধব উইকেটে আফগান বোলারদের বিপক্ষে একটি লড়াইয়ের সংগ্রহ দাঁড় করাতে দলের সবার অবদানের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব, ‘মুশফিক কার্যকর একটি ইনিংস খেলেছে, তাঁর ইনিংসটা ছাড়া এত রান করা সম্ভব হতো না। তা ছাড়া তামিম এবং মোসাদ্দেকও দারুণ ব্যাটিং করেছে।’বিশ্বকাপের আগে আইপিএলে অংশ নিতে খুব বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি সাকিব। তবে সময়টা হেলায় না কাটিয়ে বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন, ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিক হতে ঘাম ঝরিয়েছেন অনেক। তাঁর ফলই এখন হাতেনাতে পাচ্ছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব, ‘বিশ্বকাপের আগে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। যাতে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করা যায়, এখন সেই পরিশ্রমের প্রতিদান পাচ্ছি।’সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের সামনে লিগ পর্বের শেষ তিন ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। আজ আফগানিস্তানের সঙ্গে জয় পেলেও তাই খুব একটা স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই। পরের দুই ম্যাচে যে ভারত-পাকিস্তানের মোকাবিলা করতে হবে। সাকিব নিজেও সেই দুই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে, ‘পরের দুটি ম্যাচ ভারত এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে, দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আমাদের এভাবেই খেলতে হবে।’
সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। সোমবার রাত নয়টা ২০ মিনিটে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ওই পথে স্বাভাবিকভাবে যাত্রা করে।এর আগে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল এলাকায় রোববার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেলযোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত বগিগুলো উদ্ধার করে ক্ষতিগ্রস্ত রেল সেতু মেরামত করা হয়। এরপর সোমবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে একটি রেলইঞ্জিন নিরাপদে সেতু পার হলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক বলে ঘোষণা করেন গণপূর্ত রেলপথের প্রকৌশল বিভাগ। এরপর নয়টা ২০ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেসে ওই সেতু পাড়ি দেয়।ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক বলে ঘোষণা দেন কুলাউড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত গণপূর্ত রেলপথের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, উদ্ধার অভিযান ও সেতু মেরামতের পরে রাত ৯টা ২০ মিনিটে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়েছে।উল্লেখ্য রোববার রাত সাড়ে ১১টায় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেসের পাঁচটি বগি বরমচাল এলাকার রেল সেতু থেকে ছিটকে পড়ে।
চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার একটি বাসা থেকে এক নারী পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।নিহত পুলিশ সদস্যের নাম কবিতা রানী (২০)। তিনি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন।পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কবিতা রানীর স্বামী মিঠুন চন্দ্রও এপিবিএনে কনস্টেবল পদে কর্মরত। তাঁরা চক্রেসো কানন আবাসিক এলাকার সোলেমান ম্যানশনের দোতলায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। কবিতার বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায়। মিঠুনের বাড়ি ফেনীতে।নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রিটন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার দুপুরে অফিস থেকে বাসায় ফেরেন কবিতা। তাঁর স্বামী মিঠুন বিকেলে অফিস থেকে বাসায় এসে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ পান। পরে লোকজন ডেকে এনে দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখেন বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে স্ত্রীর লাশ ঝুলছে।পরিদর্শক প্রিটন বলেন, প্রাথমিকভাবে এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে ধারণা করছে পুলিশ। তিনি বলেন, কবিতা রানীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
৭ ম্যাচ থেকে ৭ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালের পথে টিকে থাকতে হলে পরের দুই ম্যাচেও জয় প্রয়োজন বাংলাদেশেরবিশ্বকাপটা জমিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য শ্রীলঙ্কার। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়ে একঘেয়ে হয়ে ওঠার শঙ্কায় পড়া বিশ্বকাপের প্রাণ এনে দিয়েছে দলটি। সে সুবাদে বাংলাদেশসহ আরও বেশ কটি দল সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখতে পারছে।সাত ম্যাচ খেলে সাত পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশের ওপরে আছে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ড। কাল অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচে পয়েন্ট টেবিল বেশ পরিষ্কার একটি চেহারা পেয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন টিকে রয়েছে আট দলেরই। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানই দর্শক হয়ে কাটাবে ২০১৯ বিশ্বকাপ।বিশ্বকাপের বর্তমান পয়েন্ট টেবিলদলম্যাচপয়েন্টরান রেটনিউজিল্যান্ড৬১১১.৩০৬অস্ট্রেলিয়া৬১০০.৮৪৯ভারত৫৯০.৮০৯ইংল্যান্ড৬৮১.৪৫৭বাংলাদেশ৭৭-০.১৩৩শ্রীলঙ্কা৬৬-১.১১৯পাকিস্তান৬৫-১.২৬৫ওয়েস্ট ইন্ডিজ৬৩০.১৯দক্ষিণ আফ্রিকা৭৩-০.৩২৪আফগানিস্তান৭০-১.৬৩৪
বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান স্কোরটস: আফগানিস্তানবাংলাদেশরানবল৪৬লিটন ক শহীদি ব মুজিব১৬১৭২০তামিম ব নবী৩৬৫৩৪০সাকিব এলবিডব্লু ব মুজিব৫১৬৯১০মুশফিক ক নবী ব দওলত৮৩৮৭৪১সৌম্য এলবিডব্লু ব মুজিব৩১০০০মাহমুদউল্লাহ ক নবী ব নাইব২৭৩৮২০মোসাদ্দেক ব নাইব৩৫২৪৪০সাইফউদ্দিন অপরাজিত২২০০অতিরিক্ত (ও ৯)৯   মোট ৫০ ওভারে, ৭ উইকেটে               ২৬২   উইকেট পতন: ১–২৩ (লিটন, ৪.২), ২–৮২ (তামিম, ১৬.৬), ৩–১৪৩ (সাকিব, ২৯.২), ৪–১৫১ (সৌম্য, ৩১.৬), ৫–২০৭ (মাহমুদউল্লাহ, ৪২.৬), ৬–২৫১ (মুশফিক, ৪৮.৩), ৭–২৬২ (মোসাদ্দেক, ৪৯.৬বোলিং: মুজিব ১০–০–৩৯–৩ (ও ৩), দওলত ৯–০–৬৪–১ (ও ৩), নবী ১০–০–৪৪–১ (ও ১), নাইব ১০–১–৫৬–২, রশিদ ১০–০–৫২–০ (ও ১), রহমত ১–০–৭–০ আফগানিস্তানরানবল৪৬নাইব ক লিটন ব সাকিব৪৭৭৫৩০রহমত ক তামিম ব সাকিব২৪৩৫৩০শহীদি স্টা মুশফিক ব মোসাদ্দেক১১৩১০০আফগান ক অতি. ব সাকিব২০৩৮১০নবী ব সাকিব০২০০শিনোয়ারি অপরাজিত৪৯৫১৩১খিল রানআউট১১১২১০নজিব স্টা মুশফিক ব সাকিব২৩২৩২০রশিদ ক মাশরাফি ব মোস্তাফিজ২৩০০দওলত ক মুশফিক ব মোস্তাফিজ০৮০০মুজিব ব সাইফউদ্দিন০৪০০অতিরিক্ত (বা ১, লেবা ৬, ও ৬)১৩   মোট (৪৭ ওভারে অলআউট)২০০   উইকেট পতন: ১–৪৯ (রহমত, ১০.৫), ২–৭৯ (শহীদি, ২০.৫), ৩–১০৪ (নাইব, ২৮.১), ৪–১০৪ (নবী, ২৮.৩), ৫–১১৭ (আফগান, ৩২.২), ৬–১৩২ (খিল, ৩৫.১), ৭–১৮৮ (নজিব, ৪২.৪), ৮–১৯১ (রশিদ, ৪৩.৩), ৯–১৯৫ (দওলত, ৪৫.৪), ১০–২০০ (মুজিব, ৪৬.৬)বোলিং: মাশরাফি ৭–০–৩৭–০ (ও ২), মোস্তাফিজ ৮–১–৩২–২ (ও ২), সাইফউদ্দিন ৮–০–৩৩–১ (ও ১), সাকিব ১০–১–২৯–৫, মিরাজ ৮–০–৩৭–০, মোসাদ্দেক ৬–০–২৫–১ফল: বাংলাদেশ ৬২ রানে জয়ীম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় বন্য হাতির আক্রমণে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামে বুধবার রাত আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।নিহত বৃদ্ধার নাম মোমেনা খাতুন (৬৫)। তিনি বটতলী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের মৃত আবু তাহেরের স্ত্রী।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মোমেনা বুধবার রাতে ঘর থেকে বের হন। তবে এ সময় উঠানে হাতি থাকার বিষয়টা তিনি জানতেন না। ঘর থেকে বের হওয়া মাত্রই তিনি হাতির সামনে পড়েন। এ সময় হাতি মোমেনাকে শুঁড় দিয়ে ওপরে তুলে আছাড় দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, ১০ দিন ধরে আনোয়ারার বৈরাগ, বটতলী এলাকা এবং কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ও কেইপিজেড এলাকায় তিনটি হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে।বটতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম এ মান্নান চৌধুরী বলেন, রাত আটটার দিকে ওই নারী হাতির আক্রমণে নিহত হন। ঘটনার পর বর্তমানে পুরো দেয়াং পাহাড় এলাকায় হাতির আতঙ্ক বিরাজ করছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জুবায়ের আহমেদ বলেন, নিহত হওয়ার বিষয়টি তিনি বন বিভাগকে জানিয়েছেন। এ ছাড়া এলাকায় বন্য হাতির ঘুরে বেড়ানোটাও বন বিভাগকে জানানো হয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় এক কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালিকা) তত্ত্বাবধায়ক তাসনিম ফেরদৌসী বাদী হয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এই মামলার তিন আসামি হলেন নাঈম হাসান নামে এক যুবক, পুলিশের নায়েক সাইদুল ও নারী কনস্টেবল রোকসানা।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক মওদুদ হাওলাদার বুধবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার এজাহারে নাম থাকা আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অপহরণ মামলার ভুক্তভোগী হয়ে ওই কিশোরী গত বছরের ১৬ এপ্রিল গাজীপুরের কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে আসে। পরে ২৫ জুলাই ওই কিশোরীকে ঢাকার আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের নায়েক সাইদুল ও নারী কনস্টেবল রোকসানার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ওই কিশোরী আসামি নাঈম হাসানের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়। পরে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। ওই কিশোরী সন্তানও প্রসব করে। পুলিশের সহযোগিতার কারণে আদালতের নিরাপত্তামূলক হেফাজতে থাকা অবস্থায় এই ঘটনা ঘটেছে।গত ১৪ জানুয়ারি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এ প্রতিবেদন দিয়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র জানায়, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ওই কিশোরী ২৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় কীভাবে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হলো- তা তদন্ত করে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।ওই কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ জানুয়ারি প্রাথমিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা। পরে কিশোরীকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, সে ২৭ সপ্তাহ এক দিনের অন্তঃসত্ত্বা। পরে জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরী সব খুলে বলে।শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কাছে দেওয়া কিশোরীর জবানবন্দিও আদালতে জমা দেওয়া হয়। সেখানে কিশোরী বলেছে, গাজীপুরের শিশুকেন্দ্র থেকে বাসে করে ঢাকার আদালতে হাজিরা দিতে যায় সে। তার সঙ্গে ছিলেন পুলিশের এক পুরুষ ও এক নারী সদস্য। ঢাকার আদালতে হাজিরা দিয়ে পাশের একটি রেস্টুরেন্টে সে খেতে যায়। সেখানে দেখা হয় কিশোরীর বাবার করা অপহরণ মামলার আসামির সঙ্গে। সেই আসামিকে প্রেমিক বলে দাবি করে ওই কিশোরী। পুলিশকে ওয়াশ রুমে যাওয়ার কথা বলে প্রেমিকের সঙ্গে নির্মাণাধীন খালি রুমে কথা বলে সে। একপর্যায়ে সেখানে প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। এ বিষয়টি সে সবার কাছে গোপন রাখে।মামলার কাগজপত্র বলছে, কাফরুল এলাকায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় গত বছরের ১৭ মার্চ বাড়ি থেকে কথিত প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যায় সে। পরে কিশোরীর বাবা ঢাকার আদালতে ওই যুবকের (২৬) বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। মামলার পর ১ এপ্রিল আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে কাফরুল থানা-পুলিশ। একই দিন কিশোরীকেও উদ্ধার করে আদালতে হাজির করা হয়। মা-বাবার কাছে যেতে না চাওয়ায় আদালতের নির্দেশে কিশোরীকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পান আসামি নাঈম হাসান। কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান কিশোরীর কথিত প্রেমিক ওই আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের ৩১ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনার সময় কিশোরীর বয়স ছিল ১৬ বছর ৭ মাস ১৫ দিন। আসামির সঙ্গে তার বিয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ইয়াকুব আলী শেখ (৩৮) নিখোঁজ হওয়ার এক দিন পরও তাঁর কোনো খোঁজ মেলেনি। বুধবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়সহ আশপাশ এলাকায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়েও তাঁর কোনো হদিস পায়নি।গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নৈশপ্রহরী ইয়াকুব আলীর রক্তমাখা শার্ট, মশারি, বালিশ ও মুঠোফোন। বারান্দার মেঝেতে ছিল ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। কিন্তু তিনি ছিলেন নিখোঁজ।ইয়াকুব আলী শেখ ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের পশ্চিম বিলনালিয়া গ্রামের সালাম শেখের ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক। সাত বছর ধরে তিনি শহরের স্টেশন রোডের ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তবে এর পাশাপাশি তিনি শহরের দক্ষিণ আলীপুরে একটি সেলুনে কাজ করতেন।ইয়াকুবের স্ত্রী ছকিনা বেগম বলেন, তাঁর স্বামীর নিখোঁজ হওয়া ও রক্তমাখা শার্ট উদ্ধারের ঘটনায় সন্তান ও পরিবার নিয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়। তিনি বলেন, তাঁর স্বামীর কোনো শত্রু ছিল না। বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীর কাজ করার জন্য মাদক সেবনকারীদের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়েছিল। এর বেশি কিছু তাঁদের জানা নেই। এই অবস্থায় স্বামীকে দ্রুত ফেরত পেতে সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন ছকিনা।ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, ‘নিখোঁজ ঘটনায় ইয়াকুব আলীর স্ত্রী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। আমরা তাঁকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।’প্রসঙ্গত, বুধবার দৈনিক প্রথম আলোর ৯–এর পাতায় ‘নৈশপ্রহরী নিখোঁজ বারান্দায় রক্ত’ শিরোনামে এ–সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
বরিশালে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অপরাধে এক তরুণকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু আজাদ শামীম বুধবার দুপুরে এ আদেশ দেন। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম আবু বক্কর সিদ্দিক (২৫)। তিনি সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতের রায়ে আরও বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনার পর জন্ম নেওয়া শিশুকে আবু বক্কর সিদ্দিকের সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ওই শিশু সাবালক না হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণের দায়িত্বও আবু বক্করের বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যর্থ হলে আসামির সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। ওই সম্পদ দিয়ে সন্তানের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা হবে।নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফজলুল হক বলেন, ২০০৫ সালের ১৩ মার্চ আবু বক্কর তাঁর আত্মীয় এক কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় কিশোরী গর্ভবতী হয়ে পড়ে। বিষয়টি প্রকাশ পেলে স্থানীয় লোকজন সালিস করে কিশোরীকে বিয়ের করতে আবু বক্করকে নির্দেশ দেন। তবে তিনি বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। এ ঘটনায় কিশোরী বাদী হয়ে ২০০৬ সালের ১৬ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করে। তদন্ত শেষে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এরপর ১৬ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘বিশ্বের কল্যাণমূলক রাষ্ট্রগুলোতে ট্যাক্স রেশিও অনেক বেশি। ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। তবে সেসব দেশে ধনবান, সম্পত্তিশালীদের কাছ থেকে ট্যাক্স নিয়ে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করে সরকার। আর বাংলাদেশে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু যাদের টাকাপয়সা যত বেশি, তাঁদের ট্যাক্স তত কম। এটার একটা বড় কারণ হচ্ছে, যাদের বেশি টাকা, তাদের টাকার কোনো আইনগত হিসাব নেই।’বুধবার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাজেট ২০১৯-২০: কতটা উন্নয়নের, কতটা বৈষম্যের’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের একটি কক্ষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘সরকারের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বৈষম্য বাড়ছে। দেশের সকল অর্থনীতিবিদ এটা স্বীকার করছেন এবং সরকারের মন্ত্রীরাও বলেন যে, আমাদের বৈষম্য বাড়ছে, এটা কমানো দরকার। কিন্তু যে হিসাব অনুযায়ী বৈষম্যের কথা বলা হচ্ছে, সে হিসাবটা অসম্পন্ন। কারণ দেশের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীদের আয়ের হিসাব কেউ জানে না। তাঁদের আয়কে ভদ্রভাবে বলা হয়, অপ্রদর্শিত আয়।’ তিনি বলেন, ‘এই অপ্রদর্শিত আয়ের বড় অংশই আসলে চোরাই (কালো) টাকা। বাংলাদেশে এখন যে জিডিপি, সেই জিডিপির অর্ধেকেরও বেশি হচ্ছে এই চোরাই টাকার অর্থনীতি। এই চোরাই অর্থনীতি বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপরাধের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়।’তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু, অর্থমন্ত্রী ঋণখেলাপিদের যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে প্রধান ঋণখেলাপিদের নাম নাই। নির্দিষ্ট শর্তে ঋণ খেলাপিদের পার পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে সরকার। ফলে ব্যাংকে যে শূন্যতা তৈরি হচ্ছে, তা পূরণ করা হচ্ছে জনগণের করের টাকা দিয়ে।’আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘খেলাপি ঋণের টাকা দিতে গিয়ে শিক্ষা খাতের বাজেট কমে যাচ্ছে। একটি দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগ খাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কথা। অথচ বিশ্বের কাছে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ ও পারমাণবিক ব্যয়কেও শিক্ষা খাতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘গ্লোবালি সরকার যেসব রিপোর্ট দেয়, বেশির ভাগেই ভুল তথ্য এবং অতিরঞ্জিত থাকে। যেমন ঢাকা শহরের বেশির ভাগ জায়গায়ই নিরাপদ পানি নাই। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে সরকার রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে ৯৯ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পান করে বলে দেখানো হয়েছে।’বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সুস্মিতা মরিয়মের সভাপতিত্বে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমরান হাবিব আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান।
রিফাত শরীফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে কয়েকজন। তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তার তা ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফের চলল হামলা, যতক্ষণ না রক্তাক্ত হচ্ছেন শরীফ। বরগুনা শহরে দিনেদুপুরে এমন নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন রিফাত শরীফ (২২)। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডার গার্টেনের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এই হামলার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নিহত রিফাত শরীফ সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের দুলাল শরীফের ছেলে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নয়ন ও রিফাত ফরাজী নামের দুজনের নাম বলতে পেরেছেন নিহত ব্যক্তির বন্ধুরা।প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, রিফাত শরীফ আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তাঁরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। রিফাত শরীফের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা বরগুনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। আয়েশাকে বিয়ে করা নিয়ে নয়নের সঙ্গে রিফাত শরীফের দ্বন্দ্ব চলছিল। এ কারণে রিফাত শরীফ প্রতিদিন আয়েশাকে কলেজে পৌঁছে দিতেন। স্ত্রীকে কলেজে দিয়ে ফেরার পথে হামলার শিকার হন রিফাত শরীফ। প্রথমে তাঁকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ জানান, দুই মাস আগে তাঁর ছেলে রিফাত শরীফ বরগুনা পুলিশ লাইনস এলাকার আয়েশা আক্তার ওরফে মিন্নিকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে আয়েশাকে নিজের সাবেক স্ত্রী দাবি করে পশ্চিম কলেজ সড়কের নয়ন নামের এক তরুণ তাঁকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করেন। একপর্যায়ে নয়ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করেন। এ নিয়ে রিফাত শরীফের সঙ্গে নয়নের বিরোধ হয়। এর জেরে নয়ন ও তাঁর বন্ধু রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, রাব্বি আকন ফরাজীসহ কয়েকজন মিলে তাঁর ছেলে রিফাত শরীফকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যান। বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রিফাতের বুক, ঘাড় ও পিঠে গুরুতর আঘাত থাকায় প্রচুর রক্ষক্ষরণ হচ্ছিল। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে বরিশাল পাঠানো হয়। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে হাসপাতালে আনার পর দ্রুত তাঁকে অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। রিফাতের লাশ হাসপাতালের মর্গে আছে। কাল বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।রিফাতের চাচা সালাম শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো মানুষ এভাবে কাউকে কুপিয়ে হত্যা করতে পারে, আগে ভাবিনি। আমার ভাইয়ের ছেলেকে ওরা এত নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা...।’ কথা শেষ করতে পারেননি সালাম শরীফ, কাঁদতে থাকেন তিনি।বরগুনার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মাদ হোসেন বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ধরতে তাঁদের বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। নয়নকে গ্রেপ্তারে থানা-পুলিশ ও ডিবি সমন্বিত অভিযান চালাচ্ছে। নয়নের বিরুদ্ধে আগে থেকেই একাধিক মামলা আছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন মোবাইল ফোনে রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ও সংবাদ প্রচারে নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত করেছে সরকার। এ বিষয়ে মতামত নিতে সংশ্লিষ্ট চার সংগঠনের নেতাদের মন্ত্রণালয়ে ডেকেছিল তথ্য মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার বিকেলে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন টেলিভিশন নাট্যকার সংঘের সভাপতি মাসুম রেজা, ডাইরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু, টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইরেশ যাকের এবং অভিনয় শিল্পী সংঘের নবনির্বাচিত সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম। তথ্যসচিবের কাছে ১৯টি সুপারিশ দেন নেতারা।তিন বছর আগে দেশের নাট্য-সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর শিল্পী-কলাকুশলীরা আন্দোলনে নেমেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিক দেশীয় টেলিভিশনে প্রচার করা যাবে না। কারণ, বিদেশি ধারাবাহিক প্রচারের কারণে দেশীয় নাট্যশিল্প হুমকির মুখে পড়ছে। এই হুমকি মোকাবিলায় নাটকের সব সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশনের (এফটিপিও) ব্যানারে সেই আন্দোলন করে। যদিও সেই আন্দোলনের সুফল এখনো পাওয়া যায়নি। সেবার শিল্পী ও কলাকুশলীরা মাঠে নেমেছিলেন ৫ দফা দাবি নিয়ে, যা পরবর্তী সময়ে ৮ দফায় পরিণত হয়। কিন্তু কোনো দফাই কার্যকর না হওয়ায় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছিল সংগঠনটি। সেই আন্দোলন তথা শিল্পী-নির্মাতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ে ডাকা হয়েছিল বলে প্রথম আলোকে জানান অভিনয় শিল্পী সংঘের নবনির্বাচিত সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম। মন্ত্রণালয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে আজ তথ্যসচিব আবদুল মালেকের সঙ্গে আলোচনা সভায় বসেন নাট্য প্রযোজক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও লেখক সমিতির চার সভাপতি—ইরেশ যাকের, সালাহউদ্দিন লাভলু, শহীদুজ্জামান সেলিম ও মাসুম রেজা। তথ্যসচিবের সঙ্গে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা আলোচনা হয়। শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘আমরা ১৯টি সুপারিশ নিয়ে গিয়েছিলাম মন্ত্রণালয়ে। তথ্যসচিব শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি প্রতিটি সুপারিশ যথাযথ মনে করেছেন। সেগুলো বাস্তবায়ন হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন।’ ২০১৬ সালের নভেম্বরে ‘ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন’ (এফটিপিও) শিরোনামে প্ল্যাটফর্মে আন্দোলন শুরু করেছি সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। নাট্যজন মামুনুর রশীদকে আহ্বায়ক ও গাজী রাকায়েতকে সদস্যসচিব নির্বাচিত করে এই আন্দোলনে মাঠে নামেন দেশের সর্বস্তরের টিভি শিল্পী-কুশলীরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় জমায়েত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে, ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর। এফটিপিও নেতারা সেদিন কণ্ঠে তুলেছিলেন কিছু যৌক্তিক দাবি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বেসরকারি চ্যানেলগুলোতে বাংলায় ডাবকৃত বিদেশি সিরিয়াল বা অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করা, টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ, ক্রয় ও প্রচারের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট/এজেন্সির হস্তক্ষেপ ছাড়া চ্যানেলের অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা, টেলিভিশন শিল্পের সর্বক্ষেত্রে এআইটির ন্যূনতম ও যৌক্তিক হার পুনর্নির্ধারণ করা, দেশের টেলিভিশন শিল্পে বিদেশি শিল্পী-কলাকুশলীদের অবৈধভাবে কাজ করা বন্ধ করা, ডাউনলিংক ফিতে সমতা আনা, দেশের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে প্রচার না করা ইত্যাদি।
জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেছেন, অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন স্মার্ট বাজেট দেবেন। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাজেট মোটেই স্মার্ট হয়নি। বরং বাজেটের পদে পদে গোঁজামিল ও শুভংকরের ফাঁকি।বুধবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ফখরুল ইমাম এ কথা বলেন।ফখরুল ইমাম বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ যে বাজেট দিয়েছিলেন, তা ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার। এবারের বাজেট তার থেকে প্রায় ৬৩৬ গুণ। বাজেটের আকার বা টাকার পরিমাণ বিষয় নয়, বিষয়টা হচ্ছে আদর্শের। তাজউদ্দীনের বাজেট আর বর্তমান বাজেটের দর্শনগত ভিত্তি বিপরীত। তাজউদ্দীনের বাজেট ছিল সমাজতন্ত্রমুখী আর গত তিন দশকের বাজেট হলো পুঁজিবাদের নয়া উদারবাদী ধারা।বিএনপির সাংসদ আমিনুল ইসলাম বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো প্রতিহিংসামূলক নির্বাচন অতীতে হয়নি। আর যেন এ ধরনের নির্বাচন না হয়। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।সরকারি দলের সাংসদ আবুল কালাম আজাদ স্মার্টফোনের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, এতে ডিজিটালাইজেশনের গতি বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, শিশু ও নারী ধর্ষণ, নির্যাতনের বিষয়ে সরকারের আরও দৃষ্টি দেওয়া দরকার।ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ আছে। এমনিই নৌকায় পাল লাগিয়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাব, তা নয়। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আর সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ধৈর্য ও সক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর আছে।শাহজাহান খান বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা এখনো তৎপর। তাদের কারণে ভালো সিদ্ধান্ত নষ্ট হতে বসেছে। বাড়ি ভাড়ার কোনো নিয়ম–নীতি নাই। বাড়িভাড়া বছর বছর বাড়ছে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, এ বি তাজুল ইসলাম, এ কে এম শাহজাহান কামাল, মুহিবুর রহমান, শিরীন আহমেদ, আসলাম হোসেন সওদাগর, কাজিম উদ্দীন, রমেশ চন্দ্র সেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান আটকানোর দায়িত্বটা ভালোই পালন করছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তেমন উইকেট না পেলেও দল জিতলেই সন্তুষ্ট এ স্পিনারআন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০১৬ সালে মেহেদী হাসান মিরাজের আবির্ভাব ধূমকেতুর মতো। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অবিশ্বাস্য বল করেছিলেন। পরের বছর অভিষেক ঘটল সংক্ষিপ্ত সংস্করণে। রূপান্তরটা ঘটছে তার পর থেকেই। টেস্টে যে স্পিনার উইকেটশিকারি, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে সেই বোলারই রান আটকানোর দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্বকাপের মিরাজকেই দেখুন, বাংলাদেশের সর্বশেষ তিন ম্যাচেই উইকেটশূন্য। এর মধ্যে বেশ কিপটে বোলিং করছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে। মিরাজ উইকেট না পাওয়ায় দলের আর যা–ই হোক স্বস্তিতে থাকার কথা না!তবে মিরাজের কাছে কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয়। টিম হোটেলের সামনে বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘যখন বোলিংয়ে আসছি, বলা হচ্ছে বা চিন্তা করছি রান সেভ করলে অন্য প্রান্তে উইকেট বের করার সুযোগ আসে। দেখবেন বোলিংয়ে এলে চেষ্টা করি টাইট বোলিং করে চাপ দিতে। এতে করে অন্য প্রান্তে ঠিকই উইকেট চলে আসে। এটাই চেষ্টা করছি। হয়তো আমি উইকেট পাচ্ছি না, তবে দল জিতছে। এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।’ওয়ানডেতে কোনো ম্যাচে মিরাজ সবশেষ ৪ উইকেট পেয়েছেন গত বছর ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে আঁটসাঁট বোলিং বিচার করলে ২০১৯ বিশ্বকাপে মিরাজই বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কিপটে বোলার। এ পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ইকোনমি রেট ৫.৪৫। মঙ্গলবার বার্মিংহামে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার আশা জিইয়ে রাখতে ম্যাচটা জেতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। মিরাজ মনে করেন, ভারতের বিপক্ষে মাঝের ওভারগুলোয় স্পিনারদের কৃপণ বল করে ভূমিকা রাখতে হবে, ‘স্পিনারদের চ্যালেঞ্জ সব সময়ই থাকবে। ভারতের বিপক্ষে জিতলে বড় পাওয়া হবে, পরের ধাপ সহজ হয়ে যাবে। স্পিনারদের কৃপণ বোলিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। মাঝের ওভারগুলোয় ভালো করতে হবে।’ইংলিশ কন্ডিশন ও উইকেট তেমন একটা স্পিনবান্ধব নয়। এমন উইকেটে ৬ ম্যাচে এ পর্যন্ত ৫ উইকেট নিতে পেরেছেন মিরাজ। স্পিন বিভাগে মিরাজের পরামর্শকের ভূমিকায় সাকিব আল হাসান তো আছেনই। মিরাজ মনে করেন, সাকিব একজন কিংবদন্তি এবং বোলিংয়ে তাঁর কাছ থেকে নানা পরামর্শও পেয়ে থাকেন। ‘সাকিব ভাই সব কন্ডিশনেই ভালো করেন। তিনি এটা বছরের পর বছর প্রমাণ করেছেন। তিনি যে একজন কিংবদন্তি, সেটি প্রমাণ করেছেন। এ বিশ্বকাপেই তো দেখতে পাচ্ছি। অবশ্যই ভালো লাগছে তাঁর সঙ্গে খেলছি, ড্রেসিংরুম শেয়ার করছি। আমাকে অনেক সাহায্য করেন। কোন উইকেটে কেমন বোলিং করব, না করব, এটা আমার অনেক বড় পাওয়া যে সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে খেলছি’, বলেন মিরাজ।বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করছে বলেই মনে করেন মিরাজ। সেমিফাইনালে যেতেই হবে না ভেবে খেলার ধারাটা বজায় রাখতে চান এ অফ স্পিনার। তাহলে ভালো ফল আসবে বলে বিশ্বাস করেন মিরাজ, ‘আমরা খুব ভালো খেলছি। বড় চারটা দল আমাদের নিচে আছে। সবাই ভালো খেলছি বলেই পাঁচে আছি। আগের ম্যাচ যেভাবে খেলেছি, যে তিনটা ম্যাচ যেভাবে জিতেছি, খেলার প্রক্রিয়া ঠিক থাকলে সামনেও ভালো করব। সেমিফাইনালে যেতেই হবে, এটা না ভেবে ধারাটা ঠিক রেখে খেললে আশা করি ভালো কিছুই হবে।’
নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১১ ওভারের মধ্যেই ২ উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান।২৩৮ রানের লক্ষ্যটা খুব বেশি বড় নয়। কিন্তু ব্যাটিংয়ের জন্য কিছুটা কঠিন উইকেট ও নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ মিলিয়ে এই লক্ষ্যই পাকিস্তানের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। ইনিংসের শুরুর ভাগেই পাকিস্তানের দুই ওপেনারকে তুলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড।এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাকিস্তানের সংগ্রহ ১৬ ওভারে ২ উইকেটে ৭১ রান। বাবর আজম ব্যাট করছেন ২৩ রানে, সঙ্গী মোহাম্মদ হাফিজের সংগ্রহ ২০।প্রথম দুই ওভারের মধ্যেই তিনটি বাউন্ডারি মেরে ফেলেছিলেন দুই পাকিস্তানি ওপেনার ইমাম-উল-হক ও ফখর জামান। ট্রেন্ট বোল্টের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শুরুটাও চার দিয়েই করেছিলেন ফখর। কিন্তু ওই ওভারেরই শেষ বলে ফখরকে তুলে নিয়ে শেষ হাসি হেসেছেন বোল্ট। অন সাইডে খেলতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেছিলেন ফখর, পয়েন্টে কিছুটা পেছনে দৌড়ে ক্যাচ নিয়েছেন মার্টিন গাপটিল।এরপর বেশ স্বচ্ছন্দেই এগোচ্ছিলেন তিনে নামা বাবর আজম ও ইমাম। ম্যাট হেনরি খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না দেখে একাদশ ওভারে লকি ফার্গুসনকে আক্রমণে আনেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। প্রথম ওভারেই দলকে সাফল্য এনে দিয়েছেন ফার্গুসন। মাথা তাক করা নিখুঁত ও গতিশীল বাউন্সার এড়াতে পারেননি ইমাম, এবার পয়েন্ট থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ লুফেছেন সেই গাপটিলই।ঠিক পরের বলেই রান আউট হতে গিয়ে বেঁচেছেন হাফিজ। জিমি নিশাম নিশানা ঠিক রাখতে পারলে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরতে হতো পাকিস্তানের অন্যতম অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যানকে।
চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে বলে মন্তব্য করেছে তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স-আত্মা। প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ি এবং নিম্নস্তরে সিগারেটের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রাখায় এগুলোর প্রকৃত মূল্য কমে যাবে এবং ব্যবহার বাড়বে। তবে জর্দা-গুলের মতো ক্ষতিকর ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করে খুচরা মূল্যে করারোপ করায় প্রশংসা করেছে সংগঠনগুলো।গণমাধ্যমে পাঠানো প্রজ্ঞার এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, টানা তৃতীয় বছরের মতো সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক প্রায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এতে তামাক কোম্পানিগুলো লাভবান হবে বলে মনে করছে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো।এ ছাড়া বাজেটে অপ্রক্রিয়াজাত তামাকের রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার এবং উপকরণ কর রেয়াত করায় তামাক কোম্পানিগুলো লাভবান হবে। সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। একই সঙ্গে তামাক চাষ উৎসাহিত হবে, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছে সংগঠনগুলো।প্রজ্ঞার পক্ষ থেকে জানানো হয়, তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের চারটি মূল্যস্তরের পরিবর্তে দুটি মূল্যস্তর প্রচলন এবং সম্পূরক শুল্ক এডভ্যালোরেম (মূল্যের শতকরা হার) পদ্ধতির পাশাপাশি একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর (স্পেসিফিক ট্যাক্স) হিসেবে আরোপ করার দাবি জানানো হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই।সিগারেটের মূল্যস্তর অপরিবর্তিত রাখায় এর ব্যবহার কমবে না। বরং ভোক্তা তার সামর্থ্য অনুযায়ী নিম্নস্তরের ব্রান্ড বেছে নিতে পারবে। বাজেটে নিম্নস্তরের প্রতি শলাকা সিগারেটের মূল্য মাত্র ২০ পয়সা (৫ দশমিক ৭ শতাংশ) বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, অথচ এ সময়ে জনগণের মাথাপিছু আয় (নমিনাল) বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ।সংবাদ বিবৃতিতে ২০১৯-২০ সালের চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৩৭ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা; নিম্নস্তরের সিগারেটের ওপর বিদ্যমান ৫৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের পরিবর্তে ৬০ শতাংশ এবং মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে বিদ্যমান ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের পরিবর্তে ৭০ শতাংশ নির্ধারণ করা। প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা; সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা চারটি থেকে কমিয়ে দুইটিতে নিয়ে আসা; বিড়ির ফিল্টার-ননফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দিয়ে ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ এবং ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা; জনস্বার্থে তামাক কোম্পানিগুলোর উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ সুযোগ বাতিল করতে বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ৪৬ ধারার অন্তর্গত উপধারা ৩ এর দফা ঙ পুনর্বহাল করা এবং সকল প্রকার ই-সিগারেট এবং হিটেড (আইকিউওএস) তামাকপণ্যের উৎপাদন, আমদানি এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এই বাজেট পেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. কামাল উদ্দীন। সিনেটে আলোচনার পর বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাজেটের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে৷বেলা তিনটায় সিনেট অধিবেশন শুরু হয়৷ অধিবেশনের শুরুতেই গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো ও উন্নয়ন ফি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে সিনেট ভবনের বাইরে মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন। সিনেট অধিবেশনে অংশ নেওয়ার আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তাঁদের সঙ্গে দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করেন ও নোট নেন।৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকার এ বাজেট বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ৬৯৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অনুদান দেবে আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি, ভর্তি ফরম বিক্রি, বেতন-ভাতা থেকে কর্তন, সম্পত্তিসহ নিজস্ব খাতগুলো থেকে ৭০ কোটি টাকা আয় হবে। এই দুই খাত থেকে ৭৬৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আয় হলেও বাজেটে ৪৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ঘাটতি থাকবে।অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও পেশ করা হয়৷ সংশোধিত বাজেটের আকার ৭৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা৷ ইউজিসি থেকে ৬৫৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা অনুদান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ৬৬ কোটি টাকাসহ এতে মোট আয় হয়েছে ৭২২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা৷ ফলে সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা৷‘গবেষণায় বরাদ্দ’পণ্য ও সেবাখাত এবং অন্যান্য অনুদান খাতের আওতায় গবেষণার জন্য মোট বরাদ্দ ৪০ কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার টাকা (বাজেটের ৫.০৪ শতাংশ), যা গতবার ছিল ৪৯ কোটি ৬ লাখ টাকা (বাজেটের ৬.৬২ শতাংশ)৷ ফলে গবেষণায় মোট বরাদ্দ এবার কমছে৷ তবে এই খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাজেট ও বিশেষ অনুদান মিলিয়ে প্রকৃত বরাদ্দ ১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা (বাজেটের ২.১ শতাংশ), গতবার যা ছিল ৮ কোটি ৮৬ লাখ (১.২ শতাংশ)৷গবেষণায় বরাদ্দ কমার বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ মো. কামাল উদ্দীন বলেন, ‘গতবার হেকেপের একটি প্রকল্প ছিল বলে গবেষণা বাজেটের আকারটি কিছুটা বড় ছিল। প্রকল্পটি শেষ হয়ে যাওয়ায় এবার তা কিছুটা কমেছে। তবে ইউজিসি এবার আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।’‘বিএনপিপন্থী শিক্ষকের বক্তব্যের একাংশ এক্সপাঞ্জ’সিনেট অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল থেকে নির্বাচিত সিনেট সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, গত ১১ মার্চ ডাকসুর যে নির্বাচন হয়েছে, সেটি ছিল একটি ‘কলঙ্কিত’ নির্বাচন। দীর্ঘ সময় পর নির্বাচন উপহার দিতে পারাটা উপাচার্যের যেমন প্রশংসার ব্যাপার, তেমনি ‘কলঙ্কের’ দায়টিও এড়ানো যায় না। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ওই আন্দোলনের সময় উপাচার্যের বাসবভবনে হামলার ঘটনা তদন্তে যে কমিটি করা হয়েছিল, তাঁরা কী করছে? কাদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে?’রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নিজাম চৌধুরী তাঁর এ বক্তব্যের আপত্তি জানালে আওয়ামী লীগ-সমর্থক শিক্ষকেরাও তাতে অংশ নেন৷ বক্তব্য শেষে লুৎফর রহমান সিনেট সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিরক্তিসহকারে আমার বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।'পরে সিনেট সভার সভাপতি ও উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ডাকসু নির্বাচনে কোনো কারচুপি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি, দু'একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে৷ তাই এটি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই৷ অধ্যাপক লুৎফরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিরক্তিসহকারে নয়, সবাই ধৈর্যসহকারেই বক্তব্যটি শুনেছেন। তাই আপনার বক্তব্যের এই অংশটি এক্সপাঞ্জ করা হলো৷’অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, সাংসদ আবদুস সোবহান গোলাপ, অধ্যাপক বজলুল হক, অধ্যাপক জিয়া রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন৷‘ছাত্রপ্রতিনিধিরা যা বললেন১৯৯৩ সালের পর এবারই সিনেট অধিবেশনে ডাকসু মনোনীত শিক্ষার্থীদের পাঁচজন প্রতিনিধি অংশ নেন। তাঁরা হলেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক, জিএস গোলাম রাব্বানী, সদস্য তিলোত্তমা শিকদার এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস৷সিনেট অধিবেশনে বক্তব্য দেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী। জিএস গোলাম রাব্বানী রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তির বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনকে শিক্ষার্থীবান্ধব করে তোলা ও অটোমেশনের আওতায় আনাসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান। ডাকসু নির্বাচনে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হলেও কোনো ‘অনিয়ম’ হয়নি বলে দাবি করেন তিনি৷বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন-ব্যবস্থা ও খাবারের মানোন্নয়নের দাবি জানান ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অ্যালামনাইদের সম্পৃক্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উন্নয়ন ও পরিধি বাড়ানো, ডাকসুর বাজেট বাড়ানোসহ কয়েকটি দাবি জানান তিনি।
প্রতিদিন সকাল যখন দুপুরের দিকে রওনা করে, তখন তিনি একটু ঘুমিয়ে নেন। আজ তাঁর ঘুম আসছিল না। সকাল থেকেই বাড়িতে আসছিল মানুষ। তাতে তিনি খুশিই হচ্ছিলেন। শরীর ভালো নয়। এখনো হাঁটতে গেলে ভারসাম্য রাখতে কষ্ট হয়। তবে দিনে দিনে সুস্থ হয়ে উঠছেন।আজ ছিল সংস্কৃতিকর্মী কামাল লোহানীর জন্মদিন। ছিয়াশিতে পড়লেন তিনি। স্মৃতিশক্তি টনটনে। এখনো অনর্গল কথা বলে যেতে পারেন। সন-তারিখ মোটামুটি ঠিক রেখে বলে যেতে পারেন কথা। কথা বলতে খুব ভালো লাগে তাঁর। কিন্তু শরীরের এই অবস্থায় বেশি কথা বলা চিকিৎসকের বারণ। তাই কিছুদিনের জন্য তাঁর টেলিফোন বন্ধ করে (সুইচড অফ) রেখেছিলেন বন্যা লোহানী—কামাল লোহানীর বড় মেয়ে। তাতে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন তা নয়।বিকেলে যখন ফোন করি, তখনো তাঁর বাড়িতে দর্শনার্থীরা অপেক্ষা করছেন। দীর্ঘ দিন তাঁকে ক্লান্ত করেছিল, তাই তিনি কিছুক্ষণের জন্য ঘুমাতে গেছেন। বন্যা লোহানী বললেন, আজ তাঁর খুব ভালো লাগছে। মাঝেমাঝেই জিজ্ঞেস করছেন, ‘ও এসেছিল? কেন আসেনি?’ মেয়ে বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘এই যানজট ঠেলে সবাইকে আসতে হবে কেন? যদি চাও ফোন করতে পারি।’ তাতে কিছুটা শান্ত হয় তাঁর মন। এখন ফোন খুলে দেওয়া হয়েছে। ফোন এলে কথা বলেন। ভালোই লাগে।২.কামাল লোহানী—সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী। এ দেশের ঐতিহাসিক নানা ঘটনার সঙ্গে রয়েছে তাঁর যুক্ততা। ১৯৬১ সালে অন্য অনেকের সঙ্গে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে তাঁরও ছিল দৃঢ় ভূমিকা।তাঁর সম্পর্কে অল্প কিছু বলা যাক। তাঁর পুরো নাম কিন্তু আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার খান সনতলা গ্রামে। ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন। মা হারান ৬-৭ বছর বয়সে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার মধ্য দিয়ে স্কুলজীবন শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে চলে আসেন পাবনায়। ভাষা আন্দোলনের বছর পাস করেন মাধ্যমিক পরীক্ষা। সে সময় থেকেই রাজনীতিকে পেলেন বন্ধু হিসেবে। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি প্রচলিত শিক্ষার ইতি টানেন। রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতিচর্চায় এরপর ঢেলে দেন মন।প্রথম গ্রেপ্তার হন ১৯৫৩ সালে। সে সময় পাবনার তৎকালীন জিন্নাহ্ পার্কে (বর্তমান স্টেডিয়াম) মুসলিম লীগ কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সময় অন্য নেতাদের সঙ্গে নুরুল আমিনও এসেছিলেন। তাঁর আগমনের প্রতিবাদে যে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী বিক্ষোভ করেন, তাঁদের একজন ছিলেন কামাল লোহানী। পাবনার রাজনৈতিক নেতা, এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি গ্রেপ্তার হন। এরপর একাধিকবার তাঁর জায়গা হয় জেলখানায়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে কাজ করেন। ১৯৫৪ সালের ২৯ মে ৯২-(ক) ধারা দিয়ে পূর্ববাংলায় ‘গভর্নরের শাসন’ চালু করার পর আবার ধরপাকড় শুরু হয়। এ সময় গ্রেপ্তার হন তিনি। ১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে ছাড়া পান। বাড়িতে পড়াশোনা নিয়ে মতবিরোধ হয়। ছোট চাচা তাসাদ্দুক লোহানীর কাছ থেকে ১৫ টাকা নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। শুরু হয় জীবনসংগ্রাম। তিনি তত দিনে মার্ক্সবাদের অনুসারী হয়ে উঠেছেন। শুরু হয় সাংবাদিকতার জীবন। ১৯৫৫ সালে যোগ দেন দৈনিক ‘মিল্লাত’ পত্রিকায়। চাকরি পেতে সহযোগিতা করেন চাচাতো ভাই ফজলে লোহানী। এ বছরই তিনি ন্যাপে যোগ দেন এবং জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি হলে তিনি আত্মগোপনে যান।এর কিছুদিন পর থেকেই নাচের প্রতি আগ্রহ জন্মে কামাল লোহানীর। বুলবুল ললিতকলা একাডেমির হয়ে কামাল লোহানীর নৃত্যগুরু জি এ মান্নান ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ প্রযোজনা করলে কামাল লোহানী তাতে অংশ নেন। পাকিস্তান সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে তিনি যান।ছায়ানট, উদীচী, ক্রান্তিসহ বহু সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। ষাটের দশক থেকে রাজনীতি আর সংস্কৃতি যখন পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলেছিল, তখন তিনি ছিলেন সেই বন্ধনের একজন রূপকার।৩.চাচাতো বোন দীপ্তি লোহানীকে ১৯৬০ সালে বিয়ে করলেন কামাল লোহানী। তাঁদের এক ছেলে দুই মেয়ে—সাগর লোহানী, বন্যা লোহানী ও ঊর্মি লোহানী।পাকিস্তান আমলে তিনি এরপর চাকরি করেন দৈনিক ‘আজাদ’, দৈনিক ‘সংবাদ’, ‘পূর্বদেশে’। ১৯৬২ সালে স্বল্পকাল কারাবাসের পর কামাল লোহানী ‘ছায়ানট' সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হন। সাড়ে চার বছর এই দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন ‘ক্রান্তি' নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন। ১৯৬৭ সালের ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর উদ্বোধন হয় ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে। আয়োজন করেন গণসংগীতের অনুষ্ঠান ‘ধানের গুচ্ছে রক্ত জমেছে’। নাটক ‘আলোর পথযাত্রী’ পরিচালনা ও এতে অভিনয় করেন কামাল লোহানী। নৃত্যনাট্য ‘জ্বলছে আগুন ক্ষেতে ও খামারে’ বিবেকের ভূমিকায় নেচেছিলেন তিনি। আমি চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই, ‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্যে বজ্রসেন হিসেবে তাঁর ছবিটি।৪.মুক্তিযুদ্ধের সময় কামাল লোহানী স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন ঢাকা বেতারের। ১৯৭৩ সালে ‘দৈনিক জনপদ’ নামে একটি নতুন পত্রিকায় যোগ দিয়ে আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়। ১৯৭৪ সালে ‘বঙ্গবার্তা’, এরপর ‘দৈনিক বাংলার বাণী’ পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৭৭ সালে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বার্তা’র নির্বাহী সম্পাদক হন। ১৯৭৮ সালে তাঁকে সম্পাদক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ হলে ‘দৈনিক বার্তা’ছেড়ে ‘বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট’ এ যোগ দেন। ১৯৯১ সালে তিনি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ষোলো মাসের মাথায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি পিআইবিতে ফিরে আসেন। ২০০৮ সালে দুই বছরের জন্য আবার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।৫.আজ বিকেলে ঘুম থেকে ওঠার পর বসার ঘরেই ছিলেন। টেলিভিশন চ্যানেলের লোকজন এসেছিলেন, এসেছিলেন অনেকে শুভেচ্ছা জানাতে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। গুমোট দিনে গরমের মধ্যে বসে থাকা খুবই কঠিন। তারপরও হাসিমুখে সবাইকে সময় দিয়েছেন। রাত নয়টার দিকে ফিরে এসেছেন শোয়ার ঘরে।জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেমন লাগছে আজকের দিনটায়? ৮৬ বছর বয়সেও তো আপনাকে যুবক মনে হয়!’মৃদু হেসে বললেন, ‘এবারের অসুখটা আমাকে কাহিল করে দিয়েছে।’‘বন্যাদি বললেন, একটু সুস্থ হলেই আপনার পায়ের ভারসাম্য ফিরে আসবে।’‘হ্যাঁ, আসবে বোধ হয়।’এরপর তিনি জানতে চাইলেন আমাদের পরিবারের কথা, ধরে ধরে প্রত্যেকে কে কেমন আছে জানতে চাইলেন। ফোন ছেড়ে ভাবতে বসলাম, এ রকম মানুষের সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। অসুস্থ শরীরে নিজের এই বয়সেও তিনি নিজের মতো করে জানতে চাইছেন অন্যদের কুশল।শুভ জন্মদিন, কামাল লোহানী।আপনি ভালো থাকুন। জন্মদিনে আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
‘স্বৈরশাসক’ হটাতে জনগণের ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, যারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায়, তাদের পরাজিত করতে হবে। সে জন্য এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য ঐক্য ঐক্য।আজ বুধবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এই আহ্বান জানান। রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবস-২০১৯ উপলক্ষে ‘নীরবতাও নির্যাতনের কারণ হতে পারে’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়। সেমিনারের শুরুতে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘রাইট টু লাইভ’ উপস্থাপন করা হয়। মানবাধিকার ডেস্কের প্রতিবেদন তুলে ধরেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী।বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রধান দাবি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি। এর পরের দাবি হচ্ছে, অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।’‘আমাদের জনগণের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের যাঁরা বুদ্ধিজীবী আছেন, বিভিন্ন সংগঠনে আছেন, মানবাধিকারে কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আমাদের ভাইয়েরা-বোনেরা যাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন, তাঁরা বারবার এ কথা বলছেন, “আমরা নির্যাতিত হয়েছি কিন্তু আমরা মানসিক দিক দিয়ে পরাজিত হইনি। আমরা চাই যে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদেরকে পরাজিত করব। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এদেরকে পরাজিত করতে সক্ষম হব”।’গত এক দশকে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দেশে বিগত এক যুগেরও ওপরে অত্যন্ত সুপরিকল্পতভাবে সচেতনভাবে জনগণের ওপর নির্যাতনে স্টিমরোলার চলছে। উদ্দেশ্য একটি, ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করে রাখা। উদ্দেশ্য একটি, একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে চিরস্থায়ী করা। বাংলাদেশে যে চিত্র আমরা দেখছি, আমাদের সকলের কাছে তা অত্যন্ত পরিচিত একটা চিত্র। ২০০৭ সালে এক-এগারোর সরকার আসার পর থেকে যে নির্যাতন এদেশে শুরু হয়েছে, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিরাজনৈতিকীকরণ, রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে হবে গোটা জাতিকে। আরেকটি, যাঁরা রাজনীতি করছেন, তাঁদের সমাজে হেয় মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে এবং রাজনীতি সুন্দর মানুষদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে এবং সেটা ভয় দেখিয়ে, নির্যাতন করে, যৌন নির্যাতন করে।’ফখরুল বলেন, ‘আজকে বিশ্বে সেই সোভিয়েত ইউনিয়নে যাওয়া দরকার নাই তো। আমরা আমাদের দেশেই যা দেখতে পাই, আমরা নর্থ কোরিয়াতে দেখতে পাই, আমরা রাশিয়াতে দেখতে পাই, আমরা সিরিয়াতে দেখতে পাই, আফগানিস্তানে দেখতে পাই, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে দেখতে পাই। অর্থাৎ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্যে এই নির্যাতনকে বড় হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।’তিনি বলেন, ‘১২/১৩ বছর ধরে এই দেশে যা চলছে, এটা আমার মতে সাম্প্রতিককালে বিশ্বে এই ধরনের নির্যাতন নজিরবিহীন। আপনারা নির্যাতিতদের ‍মুখে শুনেছেন। এখানে বসে আছেন আমাদের ভাই-বোনেরা। ওই কোনায় এক বোন বসে আছেন, যিনি নির্বাচনের পূর্বে একটা দলের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তার চোখ দুইটি চলে গেছে, এখানে এক বোন কথা বলেছেন, তাঁর সম্ভ্রম লুন্ঠিত হয়েছে। অসংখ্য অসংখ্য চিত্র।’‘আমাদের সামনে বড় উদাহরণ, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি শুধু এই সরকারের একদলীয় শাসনের পাকাপোক্ত করবার যে চক্রান্ত, সেই চক্রান্তের কারণে তাঁকে আজকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তাঁকে নির্যাতন করে পঙ্গু করে নির্বাসিত করা হয়েছে। আমাদের কারাগারের মধ্যে আমাদের সহকর্মী সতীর্থরা এখনো রয়েছেন। আমাদের আবদুস সালাম পিন্টু ভাই, হাবিব–উন–নবী খান সোহেল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ইসহাক সরকার অসংখ্য অসংখ্য বন্দী হয়ে আছেন।’‘খালেদার মুক্তি হবে শিগগিরিই’বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার ইনশা আল্লাহ মুক্তি হবে। আমি আগেও বলেছি গত সাপ্তাহে বলেছিলাম, এক সাপ্তাহের মধ্যে জামিন হবে। এক সাপ্তাহের মধ্যে দুইটার জামিন হয়েছে।’‘আরও দুটি জামিনের অপেক্ষায় আছি। ইনশাল্লাহ আমি আশা করছি, আইনের মাধ্যমে তাঁকে বের করার চেষ্টা করছি এবং করব। তিনি খুব শিগগিরই আবার আমাদের মাঝে জামিনের মাধ্যমে মুক্তি পেয়ে ফিরে আসবেন এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন। তাঁরই নেতৃত্বে দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র ফিরে আসবে।’আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের ত্যাগের প্রসঙ্গ টেনে মওদুদ বলেন, ‘আমরা পিছিয়ে থাকব না, আমরা পিছিয়ে পড়ব না, যতই অত্যাচার-নির্যাতন হোক। আমাদের ওপরে অনেক অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, ১০ বছর যাবৎ আমরা নিপীড়িত। আজকে আমাদের নেত্রী একটা মিথ্যা ভুয়া মামলায় ১ বছর ৫ মাস জেলখানায় আছেন, নির্যাতিত অবস্থায় আছেন।’‘আমি মনে করি, এত নিপীড়ন-নির্যাতনের পরও বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভবপর হবে না। আগামী শত বছরের জন্য বিএনপিকে এই সরকার অত্যাচার-নিপীড়ন করে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে। এখানে দেখেছেন নির্যাতিতদের পা চলে গেছে, হাত-পা চলে গেছে, পঙ্গু হয়ে গেছে, কিন্তু তারপরও তারা বিএনপির কথা বলছে। এরা কোনো দিন আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন করবে না।’দলের মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে ফারজানা শারমিন, জাহেদুল আলম হিটো ও জুয়েল মণ্ডলের পরিচালনায় সেমিনারে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বক্তব্য দেন।বিগত বছর নির্যাতিত নোয়াখালীর সুবর্ণচরের পারুল বেগম, সিরাজগঞ্জের মেরিনা মেরী, ময়মনসিংহের কক নুরুজ্জামান চান, রাজশাহীর দুর্গাপুরের মোশতাক আহমেদ, চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইয়াসিন, ঢাকার আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, আকরাম হোসেন, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখেরা বর্তমান সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র কর্মীদের নির্মমতায় নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।নরসিংদীর তানজিরুল হক লিমনকে হুইল চেয়ারে অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে আসার পর তার অবস্থা তুলে ধরেন তা মা মমতাজ বেগম।অনুষ্ঠানে বিএনপির সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শামীমুর রহমান শামীম, হারুনুর রশীদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, মীর হেলালউদ্দিন, কাজী আবুল বাশার, আনোয়ার হোসেইন, মোরতাজুল করীম বাদরু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, আবুল কালাম আজাদ, শাহ নেছারুল হক, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান, ইউএনডিপিসহ কয়েকটি দেশের কুটনীতিকেরা উপস্থিত ছিলেন।